hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলাম ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ

লেখকঃ ড. এম উমর চাপরা

৪৮
সামাজিক অনিষ্টকারিতা
পুঁজিবাদের সেকুলার দর্শনের ট্রাজেডি হচ্ছে কতিপয় পুঁজিপতিদের লাগামহীন স্বার্থসিদ্ধির সুযোগ দানের বিনিময়ে সমাজে সিংহভাগ মানুষ অধিকার ও কল্যাণ হতে বঞ্চিত হয়েছে; শুধু তাই নয় বরং পুঁজিবাদ আরে অনেক সামাজিক অনিষ্টকারিতার জন্ম দিয়েছে। ঐশি নির্দেশনা এবং তা হতে উদ্ভুত সামাজিক মূল্যবোধগুলোকে অবহেলা ও অস্বীকৃতির মাধ্যমে পুঁজিবাদ এমন একটি বাঁধনহীন, লাগামহীন সমাজের জন্ম দিয়েছে যার পরতে পরতে দুর্নীতি ও দুষ্কৃতি বিস্তার লাভ করেছে। অধিক হতে অধিকতর ভোগবিলাসের লালসা, ছলেবলে কৌশলে যেভাবেই হোক অধিকতর সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার মানসিকতার ইন্ধন জুগিয়েছে।

পুঁজিবাদী দর্শনের ফসল নেতিবাচক ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদ ও আত্মস্বার্থপরতার অবাধ প্রচার ও প্রসার হাজার বছরের ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক পরিবার নামক প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি দুর্বল করে তোলে। অথচ একথা অনস্বীকার্য যে, সুস্থ ও সবল সামাজিক অগ্রগতিতে পারিবারিক প্রতিষ্ঠান ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। পারিবারিক আস্থা, বিশ্বাস ও নির্ভরশীলতা ব্যতিরেকে স্বামী ও স্ত্রী পরস্পরকে ভালোবাসার বন্ধনের মাঝে জড়িয়ে রাখতে পারে না। ঐ সমাজে এটা সম্ভব নয় যেখানে অবাধ যৌন স্বাধীনতা বিরাজ করে, স্বামী ও স্ত্রী উভয়েই প্রতারণামূলক যৌন অনাচারে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। এমন সমাজে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানের কাঠামো ভেঙে পড়াই স্বাভাবিক। ‘ঈশ্বর এখন মৃত’- এ দাম্ভিক ঘোষণার পরপরই এলো ‘পরিবার কাঠামোকে ভেঙে ফেল’- এই বাণিজ্যিক কৃষ্টির শ্লোগান। ‘শাসন-শোষণের নীড় ও শৃঙ্খল’ অভিধায় পরিবারকে চিহ্নিত করে এর নিন্দাবাদ উচ্চারিত হলো। ‘ঐতিহ্যের শিকল’ এবং ‘সমষ্টিগত সকল বন্ধন’ হতে মানুষের মুক্তি দেবার জন্য পশ্চিমা রেনেসাঁ আন্দোলনের স্বাভাবিক ফলাফল ছিল এগুলো।

বিবাহ বন্ধনের বাইরে যৌন সম্পর্কের অনুমোদন এবং অর্থ উপার্জনের অবাধ লিন্সার সাথে সন্তান লালনপালনের জন্য ত্যাগ স্বীকারের প্রয়োজন তা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। উপযুক্ত যত্ন ও স্নেহমমতার মাধ্যমে সন্তানকে সঠিকভাবে গড়ে তোলার জন্য মাতাপিতার পক্ষ থেকে যে উদ্যোগ ও প্রচেষ্টার প্রয়োজন, এর মাধ্যমে পরিপূর্ণ নতুন প্রজন্ম গড়ে তোলার কথা, তা এখন আর লভ্য নয়। শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য যে সময়টা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সে সময়টি মাতৃক্রোড়ের বদলে ডে-কেয়ার সেন্টারে হতে পারে না। তাই কিশোর অপরাধ বেড়ে চলছে এবং এমন এক প্রজন্ম বেড়ে উঠছে যাদের মাতাপিতা, ভাইবোন, মানুষ এবং সামাজিক মূল্যবোধ কোনো কিছুর প্রতিই কোনো শ্রদ্ধাবোধ নেই। মানুষের মানবিক মূল্যবোধের এরূপ অবনতিশীল পরিস্থিতিতে কি মানব সভ্যতা টিকে থাকতে পারে?

মুষ্টিমেয় বৃহৎ কতিপয় পুঁজিবাদী পরিবার কর্তৃক সমগ্র অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ এবং নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্ষেত-খামার আছে এমন ধরনের জনসংখ্যার ক্রমহ্রাসমান হার গ্রামাঞ্চল ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শহর হতে বিরাট জনগোষ্ঠীকে কাজের খোঁজে বৃহৎ নগরীর দিকে ধাবমান করে তুলেছে। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর নগরমুখী এই বৃহৎ অভিবাসন একান্নবর্তী পরিবারের ভাঙনের সাথে যুক্ত হয়ে পরমাণু আকৃতির ক্ষদ্র পরিবারের সমকালীন ধরণাকে বাস্তব রূপ দিচ্ছে। ফলে পরিবারের সদস্য হিসেবে পূর্বে একে অন্যের আপদে-বিপদে, সুখ-দুঃখে যে পারস্পরিক নির্ভরতা ও সহায়তা পেত, তা হতে বর্তমান একক পরমাণু পরিবারগুলো বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে দরিদ্র, আর্ত, রোগগ্রস্ত, বৃদ্ধ, বিকলাঙ্গ জনগণের দেখাশোনা করার সমগ্র বোঝা ও দায়িত্ব রাষ্ট্রের উপর বর্তায়, যেটা আনজাম দেবার শক্তি, সম্পদ ও সরঞ্জাম কোনোটাই রাষ্ট্রের নেই।

পরিবার নামক তৃণমূল প্রতিষ্ঠান ও যুথবদ্ধ সামাজিক জীবনের ভাঙন সামাজিক নিয়ন্ত্রণের একটি অতীব কার্যকর পথ ও পন্থার ভিত্তিভূমিকে প্রবলভাবে ক্ষয় ও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধিতে ইন্ধন যুগিয়েছে। দারিদ্র্য দ্বারা সৃষ্ট দস্যুতা, চুরি, ধর্ষণ ও অর্থের বিনিময়ে হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ এবং ধনিক শ্রেণী কর্তৃক ঘুষ, ভোক্তাকে প্রতারণা, বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন, নিম্নমানের দ্রব্য সামগ্রীর বাজারজাতকরণ, অন্যায্য শ্রমনীতি এবং কর ফাঁকি দেবার প্রচেষ্টা প্রভৃতি হোয়াইট কালার অপরাধ ও দুর্নীতিকে একত্রীভূত করলে যে অপরাধ ইনডেক্স বেরিয়ে আসবে তা ক্রমাগত উর্ধ্বমুখী। সরকারিভাবে অপরাধের যে পরিসংখ্যান পাওয়া যায় তা ডুবন্ত বিশাল হিমবাহের পানির উপরকার শীর্ষ দেশের মতো। সমাজদেহে অস্বাভাবিকতার সকল লক্ষণের বৃদ্ধি সুস্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে। এটি ব্যক্তি-মানুষের জীবনে অসুখি হবার অভিব্যক্তিরই প্রকাশ। দেহ এবং যৌন সম্ভোগ ও সম্পদ বৃদ্ধির বল্গাহীন প্রচষ্টার মাঝে যদি মানুষের সুখ ও প্রশান্তি নিহিত থাকত তবে সমাজদেহে যে অস্বাভাবিকতার লক্ষণ জাজ্বল্যমান হয়ে ফুটে উঠেছে তা এত তীব্র হয়ে দৃশ্যমান হতো না, যা বস্তুত সভ্য সমাজের অস্তিত্বকেই হুমকির সম্মুখীন করেছে।

অধিকাংশ সরকারই একথা উপলদ্ধি করতে পারছে না যে, কেবলমাত্র পুলিশী শক্তি বৃদ্ধির মাধ্যমে অপরাধ হ্রাস ও দমন করা সম্ভব নয়। অপরাধ হ্রাসের জন্য প্রয়োজন আর্থ-সামাজিক ন্যায়বিচার ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা এবং একই সাথে মৌলিক চেতনা ও মূল্যবোধের মাধ্যমে সমাজ দেহের পুনর্গঠন ও পুনর্বিন্যাস। অপরিহার্য বিষয়ের বাস্তবায়ন ব্যতীত অপরাধ হ্রাসের কথা উচ্চারণ ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেয়ার যুক্তির মতো অন্তঃসারশূণ্য। ফলে ব্যর্থতা অবধারিত। আর্থ-সামাজিক ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য অনিবার্যভাবে প্রয়োজন আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা ও ব্যবস্থাপনার আমূল সংস্কার, যা শুধু ঐশীবাণী প্রদর্শিত নৈতিক মূল্যবোধের জাগরণের মাধ্যমেই সম্ভব। কিন্তু দেখা যায়, পুঁজিবাদের বিশ্বদৃষ্টি ও কৌশল মানুষের নফসানিয়াতের তাড়না থেকে সৃষ্ট যা ঐশীবাণী নির্দেশিত মূল্যবোধকে অস্বীকার করে জৈবিক তাড়নার দিকে ধাবিত হয়েছে।

ফলশ্রুতিতে দেখা যাচ্ছে, বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদরাজির মালিকও দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সত্ত্বেও অধিক অগ্রসর পুঁজিবাদী দেশসমূহ দারিদ্র্য ও বেকারত্ব নিরসন, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের চাহিদাপূরণ এবং আয় ও সমাজের বিশাল বৈষম্য হ্রাসে সমর্থ্য হয়নি। শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার ৩৩.৬% তথা ৩ কোটি ২৪ লাখ লোক দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করছে। এদের এক চতুর্থাংশ আবার ‘দারিদ্র্য ও হতাশার দুষ্টচক্রে’ আবর্তিত। এরা হচ্ছে ‘বস্তি সংস্কৃতির বন্দী আদম সন্তান’। কিশোরী গর্ভবতী, পিতৃহীন পরিবার, অমোচনীয় বেকারত্ব, অপরাধ ও মাদকাসক্তির অবক্ষয়িত সমাজ ও সংস্কৃতির অন্ধগলিতে এদের জীবন তিলে তিলে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। ষাট ও সত্তর দশকে যখন লেইজে ফেয়ার দর্শন প্রত্যাখ্যাত হয়ে দারিদ্র্য দূরীকরণ রাষ্ট্রীয় কর্তব্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে এবং যার ফলে উন্নত কল্যাণ রাষ্ট্রসমূহের আবির্ভাব ঘটে, উপযুক্ত হতাশাব্যঞ্জক চিত্রসমূহ তখনকার ছবি। এমতাস্থায় দুর্দশা আরো কত গভীরতর হবে তা কল্পনাও করা যায় না, যখন রিগান ও থ্যাচার প্রশাসন পুনরায় লেইজে ফেয়ারের পথে ওকালতি করছেন এবং তারা দারিদ্র্যের জন্য দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে এবং তাদের ভর্তুকি দেবার সরকারি নীতিকেই দায়ী করছেন? এসবের সাথে যদি শ্লথ প্রবৃদ্ধির সমষ্টি অর্থনৈতিক বৈসাদৃশ্যকে যুক্ত করা হয় তবে নিশ্চিতভাবে এটা সবার দৃষ্টিগোচর ও হৃগয়ঙ্গম হবে যে, সম্পূর্ণ নতুন ধরনের অর্থনৈতিক মডেল ব্যতিরেকে এ অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন