hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলাম ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ

লেখকঃ ড. এম উমর চাপরা

২৩
উপযোগবাদ (Utilitarianism)
ধর্মীয় অনুশাসন হতে যে সামাজিক শুভবুদ্ধি ও চেতনা জাগ্রত হয় তার অনুপস্থিতিতে কিভাবে ভালোমন্দ, কাঙ্ক্ষিত-অনাকাঙ্ক্ষিত অথবা ন্যায়-অন্যায় নির্ণয় করা যাবে? জেরেমি বেস্থাম, যিনি নিজে ছিলেন একজন নাস্তিক, এই প্রশ্নের উত্তর দেবার প্রয়াস পান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো সদুত্তর তিনি খুঁজে পাননি। নৈতিক মূল্যবোধের স্থান অধিকারী উপযোগবাদের ভোগবাদী মতবাদ হচ্ছে, যা কিছু কষ্টদায়ক তাই মন্দ। এভাবে আনন্দ ও কষ্টের ভিত্তিতে নির্ণীত হবে ভালোমন্দ, ন্যায়-অন্যায়ের মাপকাঠি। উপযোগবাদের এই নীতিকে অনেকটা গাণিতিক অংক শাস্ত্রের মতো মনে করা হলো। ১৭৭৯ সালে রেভারেন্ড জন ফরস্টারকে লিখিত এক পত্রে বেস্থাম বলেন, ‘উপযোগবাদ এমন এক দৈব শক্তির ন্যায় যা ভালোমন্দ সম্পর্কিত সকল প্রশ্নের সমাধান দিতে পারে’। তাই যে ব্যক্তি তার উপযোগ বৃদ্ধির চেষ্টা করেন তিনি একজন ভালো লোক এবং একটি ভালো সমাজ হচ্ছে তাই, যা তার সামগ্রিক উপযোগ বৃদ্ধির চেষ্টায় নিয়োজিত। নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বৃদ্ধির চেষ্টায় যদি প্রত্যেক ব্যক্তি নিয়োজিত হয়, তাহলে সর্বাধিক মানুষের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত হবে। ব্যক্তিস্বার্থ ও সামাজিক স্বার্থের মাঝেও সমন্বয় সাধিত হবে। বেস্থামের মতে, প্রত্যেক ব্যক্তি তার স্বীয় স্বার্থ অনুযায়ী পরিচালিত হবার অধিকার রাখে। সুতরাং বেস্থামের যুক্তি অনুযায়ী মানবাধিকার ক্ষুণ্ণ হবার ধারণা একটি ‘সারহীন বাহুল্য কথা মাত্র’।

যেহেতু সুখ হচ্ছে একটি মানসিক অবস্থা, সেহেতু কী কী উপাদান ব্যক্তি ও সমাজের সুখ বৃদ্ধি করে তার বিস্তৃত বিবরণ ও ব্যাখ্যা নেই বলে উপযোগিতাবাদ নীতিকে অস্পষ্ট ও অকার্যকর বলা যেতে পারে। লক্ষ কোটি মানুষের সুখকে পরিমাপ ও যোগ করা সম্ভব নয় বিধায় বিকল্প উপযোগবাদ নীতির মাধ্যমে কতটুকু সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য অর্জন সম্ভব তাও নির্ণয় করা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে কোনো প্রকার সর্বসম্মত ঐকমত্যে পৌঁছা সম্ভব নয়। কেননা সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তি তার স্বীয় স্বার্থের অনুসরণ করে; স্বীয় স্বার্থান্বেষণ অন্যের কল্যাণ-অকল্যাণের উপর কি প্রভাব ফেলবে সে বিষয়ে কোনো ব্যক্তি সচেতন নয়। তাছাড়া ক্ষমতাশালী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ নিজেদের অনুকূলে শক্তি ও ক্ষমতা খাটিয়ে অনেক কিছু করতে পারে। এখানে রাউলস এর ‘অজ্ঞতার পর্দা’ (veil of ignorance) নামক নীতির উল্লেখ করা যেতে পারে। সমাজের প্রত্যেকটি লোক তার নিজের স্বার্থ, সামাজিক অবস্থান, তার শ্রম ও প্রতিভা সম্পর্কে বাজার মূল্যের আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত উপাদান সম্পর্কে না জেনেই যদি নিজ নিজ পছন্দ বা অগ্রাধিকার ব্যক্ত করতে থাকে, তবে তা হবে একটি কল্পনাবিলাসী ব্যাপার। একটি সামাজিক সংগঠনের ন্যায়ভিত্তিক নীতিমালা হিসেবে এটি কার্যকরভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাই এই উপসংহারে উপনীত হওয়া যায় যে, উপযোগবাদ সাধারণ স্বাচ্ছন্দ্য বা ন্যায়নীতির কোনো দিকনির্দেশনা দিতে পারে না। বরং কোনো সুনির্দিষ্ট জবাব দিতে অক্ষম এমন হাজার প্রশ্নের জন্ম দেয়। অধিকন্তু, ধর্ম যেভাবে মানুষকে সামাজিক বাধ্যবাধকতা মেনে চলায় উদ্বুদ্ধ করতে পারে, উপযোগবাদ তা করতে পারে না। তাই পশ্চিমা বিশ্বেও উপযোগবাদের বিরোধিতা দেখা যায়। এ সবের ফলশ্রুতিতে নৈতিক নীতিমালার বিষয়ে উপযোগবাদের দৃষ্টিভংগির প্রতি সামগ্রিক বিকর্ষণ পরিলক্ষিত হয়।

এতদসত্ত্বেও গত দু’শতাব্দী ধরে পশ্চিমা দর্শনের উপর উপযোগবাদ ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে। পশ্চিমা জীবনাচরণ ও চিন্তাধারা বাকি বিশ্বকেও উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করেছে। উপযোগবাদ এবং বুদ্ধিবৃত্তিক ঐতিহ্য হিসেবে পরিচিত প্রয়োগবাদ উভয়ই নৈতিক মূল্যবোধের ধারণাকে পাল্টে দিয়েছে। প্রয়োগবাদ ধর্মীয় আবরণ হতে মুক্ত করে সেকুলার ব্যক্তি মানুষের কোনো কিছুর ‘প্রয়োজনীয়তা’ এবং ‘আর্থিক মূল্যে’র ভিত্তিতে নৈতিক মূল্যবোধের নতুন সংজ্ঞা নির্মাণ করেছে। ফলে বিশেষ কোনো নীতিমালার প্রতি আস্থা এবং সামাজিক ঐকমত্যের জন্য মানুষের সর্বসম্মত কোনো নৈতিক আচরণের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়। কেননা কোনো বিশেষ নৈতিক নীতিমালা দ্বারা আর্থিকভাবে কে কতটুকু লাভবান হবে, সে সম্পর্কে মানুষ ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করে। বার্ট্রান্ড রাসেলের ভাষায়, “সমাজের অধিকাংশ মানুষ অন্য মানুষের কল্যাণের চেয়ে নিজের সুখ সুবিধার প্রতি অধিক আগ্রহশীল”।

উপযোগবাদ মানুষের সম্পদ ও দৈহিক ভোগলালসাকে যৌক্তিক ভিত্তি প্রদান করে। এই মতবাদ ভোগকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড তথা মানুষের সকল শ্রম-সাধনার চূড়ান্ত লক্ষ্য বলে নির্ধারণ করে। উপযোগবাদের মতে, উপার্জন বৃদ্ধি ও ভোগ চরিতার্থকরণ একটি উৎকর্ষ মূল্যবোধ। এ লক্ষ্যে যা কিছু করা হবে তা হবে ন্যায়সংগত। এভাবে ব্যক্তিস্বার্থ পূরণের মাধ্যমে সামাজিক স্বার্থও পূরণ হবে। প্রকৃত প্রস্তাবে এই দর্শন নৈতিক মুল্যবোধের চরম অবক্ষয়ের সৃষ্টি করে। ১৯৭৮ সালে আলেকজান্ডার সোলঝেনিৎসীন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বক্তৃতায় বলেন, ‘দু’শত বছর এমনকি পঞ্চাশ বছর পূর্বেও আমেরিকায় একথা কল্পনা করা যেত না যে, একজন মানুষকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ছাড়া ব্যক্তিগত খেয়ালখুশি চরিতার্থ করার জন্য অসীম স্বাধীনতা প্রদান করা হবে। পরবর্তীতে পশ্চিমা জগতের সর্বত্র সবধরনের বাধা নিষেধ উঠে গেল। শতাব্দীব্যাপী যে খৃস্টিয় মূল্যবোধের ঐতিহ্য বজায় ছিল তার বন্ধন হতে সমগ্র পাশ্চাত্য জগত মুক্ত হয়ে গেল’।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন