hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলাম ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ

লেখকঃ ড. এম উমর চাপরা

৪৬
অর্থনৈতিক সমস্যা
অর্থনৈতিক মন্দাকে মোকাবিলা করার জন্য কিনস প্রস্তাবিত ঘাটতি ব্যয়ের অস্ত্র অধিকাংশ সরকার সমাজকল্যাণ বা প্রতিরক্ষা খাতে অর্থায়নে অথবা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করেছে। অধিকাংশ দেশে সরকারি খাতে এই ব্যয় বৃদ্ধি বেসরকারি ভোগখাতে ব্যয় হ্রাস না করেই সংঘটিত হয়েছে। বিশ্বব্যাপী ব্যাপ্তি লাভকারী ভোগবাদ, আর্কষণীয় বিজ্ঞাপন, ব্যাংকের ভোগখাতে ঋণের প্রসার বেসরকারি ভোগখাতকে বরং চাঙ্গা করে তুলেছে। এ ভোগব্যয় বৃদ্ধিটি এমন যে, একে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। কেননা বিরাজমান ভোগবাদী পরিবেশে জীবনের পরম লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে যত বেশি ভোগ করা যায় তা এবং দেখা গেছে সমাজের কেউই অন্যের জন্য ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত নয়। সমাজে যদি সবাই মান্য করে এমন ত্যাগ স্বীকারকারী মূল্যবোধের অস্তিত্ব ও তার প্রতি আনুগত্য না থাকে তবে এমন অবস্থা সৃষ্টি হওয়াই খুব স্বাভাবিক এবং প্রত্যাশিত। সরকারি ও বেসরকারি খাতে এরূপ ব্যয় বৃদ্ধি পঞ্চাশ ও ষাট এই দুই দশকে পাশ্চাত্যে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বজায় রেখেছিল। এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থা সীমিত অর্থনৈতিক সম্পদের পরিসীমায় অর্থনীতির উপর যে প্রচণ্ড চাপ ও ভার সৃষ্টি করেছে তাতে নব নব গুরুতর সমস্যার উদ্ভব হয়েছে। উদ্ভূত সমস্যাসমূহের অন্যতম হচ্ছে অতিরিক্ত মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধিজনিত মূল্যস্ফীতির হার। অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরু থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত প্রায় দু’শতাব্দী দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পরিমাণ ছিল মাত্র ৩৩%। কিন্তু ১৯৪০ এর দশকে গড় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ছয় গুণ। কোনো ব্যাখ্যা দ্বারা একে মেনে নেয়া যায় না। কেননা এটা এখন সর্বজনস্বীকৃত যে, এ ধরনের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি দক্ষতা ও ন্যায়পরতা উভয়ের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। মুদ্রাস্ফীতির ফলে প্রাথমিকভাবে দেখা যায় যে, উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা যায় উচ্চ অর্থনীতি স্টাগফ্লেশন (Stagflation) দ্বারা আক্রান্ত হয়ে ওঠে। অর্থাৎ দেখা যায় উচ্চ দ্রব্যমূল্য ও উচ্চ মজুরি হারের সাথে হাতে হাত রেখে পড়তি চাহিদা, নিম্ন উৎপাদন, অধিক বেকারত্ব ও উৎপাদন ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহারের অসমর্থতা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। অধিকাংশ শিল্পোন্নত দেশে প্রবৃদ্ধির হার কমে আসে এবং বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পায়। এমতাবস্থায় কিনসীয় পদ্ধতিতে মোট চাহিদার পরিমাণ অক্ষুন্ন রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এটা আবার একদিকে প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে কোনো ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে না। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতিকে আরো অবনতিশীল পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়। এখন একথা সর্বজনস্বীকৃত যে, প্রকৃত প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি ও বেকারত্ব হ্রাস করার জন্য দ্রব্যমূল্যের স্থিতিশীলতা একটি অপরিহার্য পূর্বশর্ত।

১৯৮০ এর দশকে মূল্যস্ফীতির হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেলেও অর্থনীতিবিদগণ একে একটি সাময়িক স্থিতিশীলতা বলে মনে করেন এবং ধারণা পোষণ করেন যে, মূল্যস্ফীতি আবারও একটি গুরুতর সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল বাজেট ঘাটতি যদি অব্যাহত থাকে। এ অবস্থার আরো অবনতি হবে যদি রাশিয়া ও অন্যান্য পূর্ব ইউরোপীয় দেশসমূহ তাদের অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে অর্থবাজার হতে ব্যাপকভাবে ঋণ গ্রহণ করে থাকে এবং অন্যান্য শিল্পোন্নত দেশগুলোও অধিক প্রবৃদ্ধি অর্জন ও বেকারত্বের হার হ্রাসের জন্য উচ্চমাত্রার সরকারি ব্যয় অব্যাহত রাখে। দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে, অর্থবাজারে অত্যধিক লেনদেনের তারল্য সৃষ্টির ফলে বৈদেশিক মুদ্রা স্টক ও পণ্য বাজারে সৃষ্ট উচ্চমাত্রার অস্থিতিশীলতা। ব্রাডি কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী পুঁজিবাজার ক্রমশই ঝুঁকপূর্ণ ও বিপজ্জনকভাবে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে এবং এ বিষয়ে প্রতিরোধমূলক কিছু করারও অবকাশ দেখা যাচ্ছে না। যখন বিশাল বাজেট ঘাটতি, নাটকীয়ভাবে স্থিতিহীন সুদের ও বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের হার বিরাজ করে এবং স্বল্পমেয়াদের পণ্য আন্তঃদেশে দমকা বাতাসের মতো অর্থের আগমন ও নির্গমন হয়, তখন অর্থবাজার বিপজ্জনকভাবে অস্থিতিশীল হয়ে দাঁড়ায়। পুঁজিবাদী অর্থনীতির অস্থিতিশীলতার অন্যান্য কারণগুলো হচ্ছে, সুদভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ঋণদানের অত্যধিক প্রসারণ বা সংকোচন, সম্পদ ও আয়ের বিরাট বৈষম্য, যাকে হেইলব্রোনার ‘পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থার পরিকল্পনাহীন ও নৈরাজ্যবাদী চরিত্র’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। সুষম অর্থ ও রাজস্বনীতি প্রবর্তন এবং পুঁজিবাদী অর্থনীতির কাঠামোগত পরিবর্তন ব্যতিরেকে অস্থিতিশীলতার এইসব উৎসের মূল্যেৎপাটন করা সম্ভব নয়।

তৃতীয় সমস্যা হচ্ছে, ঘাটতি বাজেটের অর্থায়নের জন্য অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের ফলে ঋণের ক্রমবর্ধমান সুদের বোঝা। তুলনামূলকভাবে অধিক ঋণের হার ও বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারের অস্থিরতা অর্থনীতিতে আবার নতুন নেতিবাচক মাত্রা যোগ করে। ঘাটতি বাজেটের জন্য অর্থ সংগ্রহ সকল দেশের জন্য ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়ালেও উন্নয়নশীল দেশের জন্য এ প্রক্রিয়া সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব উন্নয়নশীল দেশের জন্য বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের বিষয়টি সমগ্র আন্তর্জাতিক অর্থবাজারের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করে দিয়েছে। চরমভাবে ঋণগ্রস্ত দেশসমূহের দুঃসহ অভাব লাঘবের জন্য বেশ কিছু আন্তর্জাতিক প্রস্তাব রাখা হয়েছে। কিন্তু উপযুক্ত পরিমাণ অর্থের সংকুলান করা যায়নি বলে এসব কর্মসূচি গতিশীলতা লাভ করতে পারেনি। ইতোমধ্যে কতিপয় দেশ তাদের রপ্তানি আয়ের সুনির্দিষ্ট অনুপাতে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। বৃহৎ ঋণগ্রস্ত দেশসমূহ যদি একই পরিকল্পনা ঘোষণা করে তাহলে ব্যাংকসমূহের জন্য সমস্যা প্রকট হয়ে দেখা দিবে।

চতুর্থ সমস্যা হচ্ছে, সরকারি ও বেসরকারি খাতে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বৃদ্ধির ফলে সঞ্চয়ের হার হ্রাস পাওয়া। যেহেতু সঞ্চয় ও বিনিয়োগ সরাসরিভাবে সম্পৃক্ত, তাই বিনিয়োগ স্বাভাবিকভাবেই হ্রাস পেয়েছে। ১৩টি মুখ্য ওইসিডি দেশে সঞ্চয় ও বিনিয়োগের হার ১৯৬০-৭১ দশকের ১৭.৫% ও ১৭.৬% হতে হ্রাস পেয়ে ১৯৮০-৮৭ সালে ১০.৭% ও ১০.৮% এ এসে দাঁড়িয়েছে। রাশিয়া, পূর্ব ইউরোপ ও একত্রীভূত জার্মানী কর্তৃক বিনিয়োগের জন্য সংকুচিত বিশ্ব-সঞ্চয়ের ভাণ্ডারের উপর যেহেতু অধিকতর চাহিদা ও চাপ সৃষ্টি হবে, তাই বিশ্ব অর্থনীতির দিগন্তে সুদের হার বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা অবশ্যম্ভাবী হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ব-সঞ্চয় ভাণ্ডার বিশেষত উচ্চ সঞ্চয়কারী দেশ জাপানেও সঞ্চয়ের ফলে বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগ, প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান এবং স্টক, দ্রব্য সামগ্রী ও বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

পঞ্চম সমস্যা হচ্ছে, ভোগের ইচ্ছা চরিতার্থকরণ ও প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির উপর অত্যধিক ও অপ্রয়োজনীয় গুরুত্ব আরোপের ফলে অনবায়নযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদের মজুদের ক্রমবর্ধমান হ্রাস এবং প্রাণী ও পরিবেশের ক্ষেত্রে ভারসাম্য বিনষ্ট হওয়ার এই গ্রহে জীবনের উপর হুমকির সৃষ্টি হয়েছে। এখন এটা সর্বমহলে উপলদ্ধি হচ্ছে যে, ‘বিশ্বের পরিবেশগত সংকট মোকাবিলার জন্য বিশ্ব অর্থনীতি ও বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহের মৌলিক নীতিমালার বৈপ্লবিক পরিবর্তন ব্যতিরেকে গত্যন্তর নেই’। বিশ্বের বিভিন্ন মহল থেকে এ বিষয়ে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় প্রস্তাব উত্থাপিত হওয়া সত্ত্বেও এক্ষেত্রে অনিবার্যভাবে প্রয়োজনীয় একটি বিশেষ দিকের প্রতি স্বল্পই সচেতনতা ও উপলদ্ধি সৃষ্টি হয়েছে। তা হচ্ছে ‘সম্ভোগের জড়তা’ থেকে গা ঝাড়া দিয়ে উঠে নৈতিক মূল্যবোধ ও সহজ সরল জীবনযাত্রার দিকে প্রত্যাবর্তনের অনুরাগ ও অনুভূতি।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন