hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলাম ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ

লেখকঃ ড. এম উমর চাপরা

৮৪
কৌশলের ব্যর্থতা
পুঁজিবাদের সামাজিক-ডারউইনবাদী দর্শন হতে কল্যাণ রাষ্ট্র নিঃসন্দেহে একটি শুভ উত্তরণ। অন্যায় ও অসাম্যের বিরুদ্ধে মানবত্তা স্বাভাবিকভাবে পুঁজিবাদ সৃষ্ট বৈষম্যকে স্বীকার করে নিতে পারেনি। তিনশত বছরের সেকুলার মতবাদও বস্তুত মানবসত্তার মৌলিক মূল্যবো ও চেতনাকে ধ্বংস করতে পারেনি। যাই হোক, কল্যাণ রাষ্ট্রের লক্ষ্য মানবতাবাদ হলেও ও অর্জনে কার্যকর কৌশল উদ্ভাবনে এ মতাদর্শ ব্যর্থ হয়েছে। বস্তুত পুঁজিবাদী দর্শন বা বিশ্বদৃষ্টিতে কল্যাণ রাষ্ট্রের ধারণা মৌলিক কোনো পরিবর্তন আনয়ন করেনি। এ মতাদর্শের এমন কোনো কার্যকর কর্মসূচি বা প্রেরণা নেই, যা ইনসাফ অভিমুখী লক্ষ্যের পরিপন্থী সম্পদের অপচয়মূলক প্রেরণা নেই, যা ইনসাফ অভিমুখী লক্ষ্যের পরিপন্থী সম্পদের অপচয়মূলক ব্যবহার রোধ করতে পারে। কল্যাণ রাষ্ট্রের ব্যবস্থাপনায় একই পুঁজিবাদী জীবনব্যবস্থা, উৎপাদন পদ্ধতি এবং প্রতিষ্ঠানিক কাঠামো বজায় রাখা হয়েছে যা ধনী দরিদ্রের মধ্যে দুস্তর ব্যবধার সৃষ্টির জন্য দায়ী। অর্থনৈতিক মৌলিক পুনর্গঠন ও কোনো সামাজিক দর্শন ব্যতিরেকেই মূল্যবোধ নিরপেক্ষ বাজারব্যবস্থার সৃষ্ট বৈষম্যসমূহ সরকারের সক্রিয় ভূমিকা দ্বারা অপসারণ করা সম্ভব হবে- এ মর্মে যে ধারণা পোষণ করা হয়েছিল তা এক কল্পনাবিলাসের পর্যসবিত হয়েছে।

শিল্পোন্নত দেশসমূহে কল্যাণমূলক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা দরিদ্র মানুষের দুঃখ- দুদর্শা কিছুটা প্রশমিত করলেও সামগ্রিক দরিদ্র মানুষের মৌলিক প্রয়োজনও পূরণ হলো না। বিত্তশালী ও বিত্তহীনের ব্যবধান শুধু প্রকৃত আয়ের দিকেই নয়, বরং স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও গৃহায়ন সুবিধার প্রাপ্যতার দিকেও বাড়ছে। অবাক করার বিষয় হলো, জিডিপি’র উল্লেখযোগ্য অংশ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করা সত্ত্বেও (সুইডেনে ৯% এর উপর) গরীব ও বৃদ্ধরা ত্বরিৎ ও উপযুক্ত চিকিৎসা সুবিধা পাচ্ছে না। হৃৎপিণ্ডের শল্যচিকিৎসা থেকে চোখের অপারেশনসহ অনেক গুরুতর ক্ষেত্রে তাদের দীর্ঘ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। ঔষধপত্রের দুর্মূল্য সত্ত্বেও ঔষধপত্র তৈরির বৃহৎ কোম্পানীসমূহের চাপের মুখে সরকার ট্রেডমার্ক ঔষধের স্থলে সমমানের অথচ স্বল্প মূল্যের জেনেরিক ঔষধ বাজারে প্রচলন করতে পারছে না।

যুক্তরাষ্ট্রে যেখানে স্বাস্থ্যসেবা মূলত বেসরকারি খাত দ্বারা পরিচালিত, সেখানে জনসংখ্যার ১৩.৩% তথা ৩১.৩ মিলিয়ন আমেরিকান নাগরিকের কোনো স্বাস্থ্যবীমা নেই। এদের মধ্যে ৮.৬ মিলিয়ন হচ্ছে শিশু। দেশের প্রতি ছয়জন শিশুর একজন হচ্ছে এই শিশুরা। গৃহায়ন সুবিদা সবার জন্য বিশেষ করে দরিদ্র শ্রেণীর জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রকৃত গরীবদের নাগালে বস্তুত কোনো বাসস্থান সুবিধা নেই। অধিকাংশ গরীব মানুষ বাস করে ভাড়া বাড়িতে। গত দশকগুলোতে আয়ের চেয়ে বাড়ি ভাড়া দ্রুত হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কলেজ শিক্ষার ব্যয় আরো বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা তথাকথিত সমান সুযোগের অর্থনীতিকে তামাশায় পরিণত করেছে। আরো নির্মম পরিহাস হচ্ছে যে, প্রচলিত আর্থ-সামাজিক অবস্থা শুধু দরিদ্রকে দরিদ্রই রাখছে না, বরং দারিদ্রকে চিরস্থায়ীত্ব প্রদান করেছে। খুব নগণ্য সংখ্যক লোকই এ সর্বগ্রাসী কৃষ্ণবৃত্ত অনেক দেশের লক্ষ-নিযুত মানবসন্তান পুঁতিগন্ধময় বস্তির অন্ধ গলিতে বন্দী হয়ে আছে। কল্যাণ রাষ্ট্রের কথিত ছত্রচ্ছায়া সত্ত্বেও তাদের অবস্থা করুণ থেকে করুণতর হচ্ছে। মাতৃপিতৃ পরিচয়হীন শিশু, অপরাধ, মাদক, গ্যাং এবং হতাশা মিলিয়ে এ হচ্ছে এক দুঃস্বপ্নের জগৎ। কল্যাণ রাষ্ট্রসমূহের সম্পদ থাকা সত্ত্বেও ন্যায়পরায়নতাপূর্ণ সমাজের স্বপ্ন স্বপনই রয়ে গেছে। বর্তমান বিরাজমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এ কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, কল্যাণ রাষ্ট্র সম্পদের দক্ষ ও সুষম বিলিবণ্টনে ব্যর্থ হয়েছে। তা সত্ত্বেও যুক্তি দেখানো হয় যে, যদি কল্যাণ রাষ্ট্রের আবির্ভাব না হতো তবে নিয়ন্ত্রণহীন বাজার ব্যবস্থা সামাজিক বৈষম্যকে আরো তীব্রতর করে তুলত। এ কথা স্বীকার করে নিলেও কল্যাণ রাষ্ট্রকে তার বহুল স্বীকৃত ব্যর্থতার দায়ভার হতে অব্যাহতি দেয়া যায় না। কল্যাণ রাষ্ট্রের কল্যাণকর সমাজের স্বপ্ন অপূর্ণ থেকে গেলেও তার সকল কর্মসূচিই নিঃশেষিত হয়ে গেছে।

নিয়ন্ত্রণমূলক বিধিবিধিান, রাষ্ট্রায়করণ, ট্রেড ইউনিয়ন, রাজস্বনীতি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং পূর্ণ কর্মসংস্থানসহ কল্যাণমুখী সেবা সরবরাহে কল্যাণ রাষ্ট্রের সক্ষমতার বিষয়ে ব্যাপক আস্থাহীনতার সৃষ্টি হয়েছে। আলবার্ট হির্চম্যান বলিষ্ঠভাবে স্বীকার করেছেন যে, কল্যাণ রাষ্ট্র যে সংকটাপন্ন এ বিষয়ে আর কোনো বিতর্ক নেই।

১৯৫০ এবং ১৯৬০ এর দশকে ওইসিডি দেশসমূহের উচ্চহারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের ফলে সামাজিক কল্যাণমূলক খাতে অধিক হারে সরকারি ব্যয় সম্ভব হয়েছিল। ১৯৭০ এর দশকের প্রথম দিক হতে নিম্নহারের প্রবৃদ্ধি ও উচ্চহারের বাজেট ঘাটতি কল্যাণমূলক কর্মসূচিকে ব্যাহত করে। ফলে নতুন হাসপাতাল, কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মানের অর্থায়নে ভাটা পড়ে। বর্তমান সুযোগ সুবিধার উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ায় তা অদক্ষ হয়ে ওঠে এবং বাড়তি চাহিদা মেটাতে অক্ষম হয়ে পড়ে। কল্যাণ রাষ্ট্রের তাত্ত্বিক সীমাবদ্ধতার প্রেক্ষিতে অধিক অর্থের যোগানই সমস্যার সুস্পষ্ট সমাধান হিসেবে দেখা দেয়। এমনকি বৃটিশ লেবার পার্টির মতেও অধিক বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের জন্য অধিক সরকারি ঋণ ও ব্যয় অত্যাবশ্যক হিসেবে চিহ্নিত হয়। কিন্তু ট্যাক্স বা মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি না করে তা কী করে করা সম্ভব সেটা দেখাতে তারা ব্যর্থ হয়। বিশাল বাজেট ঘাটতি এবং তজ্জনিত মুদ্রাস্ফীতি প্রতিক্রিয়ার দরুণ পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে অধিক অর্থের যোগান দেয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। বস্তুত সত্তর দশকের দুই অংকের মুদ্রাস্ফীতি পরিহারের লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজন ছিল নিম্নমাত্রার সরকারি বাজেট ঘাটতি এবং ঋণ সংকোচন। কিন্তু ট্যাক্সের বিরুদ্ধে বিরূপ জনমতের প্রেক্ষিতে সরকারি ব্যয় হ্রাস ব্যতিরেকে ঘাটতি কমানো সম্ভব ছিল না।

শক্তিশালী কায়েমী স্বার্থবাদী মহল জাতীয় স্বার্থের নামে প্রতিরক্ষা ও তাদের স্বার্থের অনুকূল অন্যান্য খাতে ব্যয় হ্রাসে বাধা প্রদান করে। ফলে বেকার ভাতা, ন্যূনতম মজুরি, চিকিৎসা ভাতা ও অন্যান্য কল্যাণ সুবিধার মতো বহু সংখ্যক সামাজিক নীতি পুনর্বিবেচনার সম্মুখীন হয়েছে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক নীতির এ দ্বন্দ্ব কল্যাণ রাষ্ট্রকে সংকটে নিক্ষেপ করেছে। ‘আজকের হালনাগাদ চিন্তাধারাটি হচ্ছে কল্যাণ রাষ্ট্রের ক্রমপ্রসার ও প্রবৃদ্ধি সম্ভবত আর সম্ভব নয়, বা বলা যায় কাঙ্ক্ষিতও নয়’। বস্তুত ৬৪টি দেশের অবস্থা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্রণীত হ্যারল্ড ইউলেনস্কির রিপোর্ট অনুযায়ী দেখা যায় যে, ৭০ দশকে অনেক ধনী দেশে রাষ্টীয় সেবা বৃদ্ধির বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে।

রক্ষণশীল চিন্তার এ জোয়ার প্রায় সবগুলো কল্যাণ রাষ্ট্রকে প্লাবিত করে। তবে অবশ্যই এ ধরনের প্রতিক্রিয়া অনাকাঙ্ক্ষিত। কেননা অর্থনীতিতে রাষ্ট্রের সক্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ব্যতিরেকে কোনো বড় মানবগোষ্ঠীর পক্ষেই তার মানবতাবাদী লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। এমনকি পশ্চিমের পরিকল্পিত বাজার অর্থনীতির যে সাফল্য, তাও গড়ে উঠছে সেই কল্যাণমূলক সমাজের স্বপ্নের ভিতরে উপর ,যা কল্যাণ রাষ্ট্র সরবরাহ করেছে। তাই কল্যাণ রাষ্ট্রের চাকাকে দীর্ঘদিনের জন্য পেছন দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। যদি জনপ্রতিনিধিদের সময়ান্তরে বারবার নির্বাচনের জন্য জনতার মুখোমুখি হতে হয়, তবে তারা জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ না করে পারবে না। আর রাষ্ট্রের সক্রিয় কল্যাণমূখী ভূমিকা ছাড়া এসব প্রতিশ্রুতি পালন সম্ভব নয়। কল্যাণ রাষ্ট্র তাই উভয় সংকটে। তাহলে কি বলতে হবে, কোথাও কোনো ভুল রয়ে গেছে?

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন