hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলাম ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ

লেখকঃ ড. এম উমর চাপরা

৯১
ন্যায়পরতা নীতির প্রতি অবহেলা
একটি বিশ্বাস বিস্তৃতি লাভ করল যে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও আর্থ-সামাজিক সুবিচার-উভয় লক্ষ্য একসাথে অর্জন সম্ভবত সংগতিপূর্ণ নয়। যদি প্রবৃদ্ধিকে লক্ষ্য স্থির করা হয়, তবে ন্যায়ভিত্তিক বণ্টনের লক্ষ্যকে পরিত্যাগ করতে হবে। উন্নয়ন পরিকল্পনায় অবশ্য একথা রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার বিবেচনায় সোচ্চারভাবে উচ্চারণ করার অবকাশ নেই। তাই পরিকল্পনাসমূহের লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে আর্থ-সামাজিক সুবিচারের কথাটি কাগুজে প্রতিশ্রুতি হিসেবে আওড়ানো হতে থাকে। উন্নয়নশীল দেশসমূহের মধ্যে ১৯৫২ সালে প্রণীত ভারতের প্রথম পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্র হিসেবে পূর্ণাঙ্গ কর্মসংস্থান ও সর্বোচ্চ উৎপাদনের পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক ন্যায্যতা অর্জনের কথা ব্যক্ত করা হয়। পাকিস্তানের ১৯৫৬ সনের শাসনতন্ত্রে রাষ্ট্রীয় নীতিমালার মৌলিক দিকনির্দেশনা হিসেবে গণমানুষের স্বার্থের পরিপন্থি কতিপয় ব্যক্তির হাতে সম্পদের কেন্দ্রীভূতকরণকে প্রতিহত করার ঘোষণা ব্যক্ত করা হয়। জাতীয় পরিকল্পনা বোর্ডের কার্যপরিধি ও প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্যসমূহ ব্যক্ত হয় ন্যায়ভিত্তিক ধ্যানধারণার পরিভাষায়। পাকিস্তানের দ্বিতীয় পরিকল্পনায়ও প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মতো ন্যায়ভিত্তিক আদর্শকে পুনর্ব্যক্ত করা হয়। তবে প্রকৃতপক্ষে আর্থ-সামাজিক সুবিচারের লক্ষ্যকে বাস্তবে রূপায়িত করার জন্য ভারত, পাকিস্তান ও অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

১৯৫৫ সালে উন্নয়ন সাহিত্যে ন্যায়পরতা বিরোধী তত্ত্বপ্রবাত নিয়ে আসলেন স্যার আর্থার লুইস। পরবর্তী দেড় দশক যাবত তাত্ত্বিক মতবাদ চালু ছিল। তিনি বললেন, প্রথমেই মনে রাখা দরকার আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে প্রবৃদ্ধি অর্জন, বণ্টন-ন্যায়পরতা নিশ্চিত করা নয়। বেয়ার এবং ইয়ামী ১৯৫৭ সালে বলেন, ‘দরিদ্র জনগণের মাঝে আয়ের সমবণ্টনের নীতিমালার মাধ্যমে মাথাপিছু আয়ভিত্তিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নয়। এমনকি জাতিসংঘও বণ্টন ন্যায়পরতাকে তার নীতিমালার লক্ষ্য হিসেবে স্থির করেনি, বরং জাতিসংঘের দলিলে বলা হয়, অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাধারণ লক্ষ্য হচ্ছে জাতীয় আয় বা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হারকে বৃদ্ধি করা। অধ্যাপক হ্যারি জনসন ১৯৬৪ সালে জোর দিয়ে বলেন, ‘দ্রুত উন্নয়নে আগ্রহী একটি দেশের জন্য আয়ের সমবণ্টনের নীতির উপর জোর দেয়া বিজ্ঞতারর পরিচায়ক হবে না’। ১৯৬৪ সনে প্রকাশিত জেরাল্ড মেয়ার এর বহুল পঠিত Leading Issues in Economic Development এর প্রথম সংস্করণে দারিদ্র্য, অন্যায়পরতা এবং আয়ের বণ্টনের বিষয়গুলো সম্পূর্ণ অনুপস্থিত ছিল। এমনকি মধ্য ষাটের দশকে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্পর্কিত কোনো কনফারেন্সের লক্ষ্য হিসেবে দারিদ্র্য ও অন্যায়পরতা নিরসনের কোনো উল্লেখ দেখা যায় না। ১৯৬৬ সনের সেমিনার, সিম্পোজিয়ামের কার্যবিবরণী পড়লে তা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে।

দ্রুত উন্নয়নের কিছু প্রবক্তা এতদূর অগ্রসর হন যে, তারা বলতে থাকেন, আয়ের বৈষম্য বেড়ে ও্ঠা আরো বেশি জরুরি, কেননা এতে ধনীরা অধিক সঞ্চয়ের সুযোগ পাবে। পুঁজি গঠন তরান্বিত হবে। এ ধারণার অনুকূলে প্রধান বিষয়ে হিসেবে কুজনেটস এর Inverted U-curve কে উপস্থাপন করা হতে থাকে। যদিও কুজনেটসের উক্ত রেখা, লেখা বা পরিসংখ্যান হতে এ রূপ ধারণার কোনো সমর্থন পাওয় যায় না। কুজনেট কার্ভে বরং দেখানো হয়েছে উন্নয়নের প্রথম পর্যায়ে আয়ের বৈষম্য দেখা দেয়, যা পরবর্তীতে ক্রমশ হ্রাস পায়। আয় বৈষম্যের পক্ষাবলম্বনকারী প্রবক্তারা এ কথা ভুলে যান যে, কুজনেটস কার্ভেল প্রদর্শিত প্রবণতা প্রকৃতির অলংঘনীয় কোনো নিয়মের প্রকাশ নয়। এমনটিও তো হতে পারে যে, কুজনেটসের কার্ভের চিত্রটি প্রকৃতির কোনো দৃঢ় আইন নয়, বরং অনুসৃত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও পদ্ধতির ফসল মাত্র।

উপর্যুক্ত মতবাদের পক্ষে বলা হয় যে, শিল্পবিপ্লবের সময় তীব্র আয় বৈষম্যের কারণে উচ্চতর সঞ্চয় হার অর্জন সম্ভব হয়েছিল। এডাম স্মিথ হতে শুরু করে অনেক অর্থনৈতিক ইতিহাসবিদ বৈষম্য ও প্রবৃদ্ধির মাঝে যোগসূত্র টানার চেষ্টার করেছেন। তৃতীয় বিশ্বের শ্রম-আধিক্যপূর্ণ দেশসমূহের জন্য এ সূত্রকে মডেল হিসেবে ধরে নেয়া হয়েছে। অবশ্য সাক্ষ্য প্রামণ উপযুক্ত তত্ত্বের অনুকূলে কিছু পরিবেশন করতে পারেনি। আয় বৈষম্যের কারণে বৃটেনে বা আমেরিকায় সঞ্চয়ের উদ্ভব ঘটেনি। সমকালীন সময়ে বিভিন্ন দেশে সঞ্চয়ের পিছনেও এরূপ বৈষম্যের কোনো অবদান দেখা যায় না।

পরিকল্পিতভাবে মুদ্রাস্ফীতিকে একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের তত্ত্বও উপস্থাপন করা হয়েছে। কেননা মুদ্রাস্ফীতি সরকারের ঋণ পরিশোধের ভার লাঘব করে এবং জনগণকে সঞ্চয়ে বাধ্য করে। যুক্তি প্রদর্শন করা হয় যে, মুদ্রাস্ফিতর ফলে আয় এমন শ্রেণীর অনুকূলে পুনর্বণ্টিত হয় যারা অধিক সঞ্চয়প্রবণ। প্রফেসর হেইস যুক্তি দেখান যে, মুদ্রাস্ফীতিজনিত মূল্যবৃদ্ধিতে শিল্প ও বণিক শ্রেণীর লাভের হার বৃদ্ধি পেয়ে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ বাড়ে। এ যুক্তি এক ভুল ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে, যেন শ্রমিকের বেতন মজুরির প্রতিটি টাকা ভোগের কাজে ব্যয় হয়। আর যে টাকাটি শ্রমিককে দেয়া হয় না তা সঞ্চয় ও বিনিয়োগের কাজে ব্যবহৃত হয়।

এই চিন্তাধারা উন্নয়নশীল দেশসমূহের নেতা ও নীতিনির্ধারকদের প্রভাবিত করে। এমনকি জওহরলাল নেহেরুর মতো সামাজিক সুবিচারে আস্থাশীল ব্যক্তিও ভঅরতে আয় বৈষম্য প্রবণতাকে এ বলে মেনে নেন যে, ‘বর্ধিষ্ণু একটি অর্থনীতিতে কিছু মাত্রায় আয় বৈষম্য অবশ্যম্ভাবী’। কিছু মুসলিম অর্থনীতিবিদ এ কোরাসে যোগ দেন। কিন্তু আর্থ-সামাজিক সুবিচারের প্রশ্নে ইসলামের অবস্থান সুস্পষ্ট। এসব মুসলিম অথনীতিবিদ সেকুলার সামাজিক-ডারউইনবাদকে তুলে ধরে বলেন আর্থ-সামাজিক সুবিচারের ধারণাটি একটি বিলাস যা কেবলমাত্র ধনী দেশগুলোই বহন করতে পারে। মাহবুবুল হক, যিনি পরবর্তীতে পাকিস্তানের অর্থ ও পরিরকল্পনা মন্ত্রী হয়েছিলেন, তিনি লিখেছেন, ‘অনুন্নত দেশসমূহকে অত্যন্ত সচেতনভাবে প্রবৃদ্ধির দর্শনকে গ্রহণ করতে হবে এবং ন্যায়সঙ্গতবণ্টন ও কল্যাণ রাষ্ট্রের ধ্যান ধারণাগুলোকে ভবিষ্যতের সূতিকাগারে জমা রাখতে হবে। এটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, এ ধারণগুলো হচ্ছে ধনিক দেশগুলোর উপযোগী বিলাসিতা’। সম্ভবত এ কথাটি বিবেচনায় আনা হয়নি যে, ইসলামী মূল্যবোধে অবিচার করা, তাকে সমর্থন করা বা ক্ষমার চোখে দেখা একটি বড় অপরাধ। উন্নয়নশীল অর্থনীতির সমাজতান্ত্রিক প্রবণতা তাই সামাজিক সুবিচার নিশ্চিতকরণের বিষয়ে কোনো উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেনি। অথচ আমরা জানি পাশ্চাত্য ও সমাজতান্ত্রিক দুনিয়ায় সমাজতন্ত্রের দুনিয়ায় সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা ছিল অন্যতম লক্ষ্য। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশে সমাজতন্ত্রের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে, সামাজিক সুবিচার নয়, বরং পরিকল্পনা ও রাষ্ট্রযন্ত্রের শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি তরান্বিত করার এক অদম্য আকাঙ্ক্ষা। উন্নয়নশীল দেশে সমাজতন্ত্র তাই রূপ নিয়েছে এক ভিন্ন প্রকৃতির যা কমিউনিস্ট বিশ্ব ও পশ্চিমা বিশ্ব হতে ভিন্ন এক তৃতীয় ধারা। তৃতীয় বিশ্বে সমাজতন্ত্র তার অন্য সকল লক্ষ্য ও দর্শন হারিয়ে হয়ে দাঁড়িয়েছে শুধুমাত্র অর্থনীতির বৃহৎ অংশের রাষ্ট্র কর্তৃক মালিকানা ও পরিচালনা। সমাজতন্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে যান্ত্রিক পরিকল্পনার অপর নাম। যদিও এ সময়ে কিছু অর্থনীতিবিদ সমাজতন্ত্রের ন্যায়বিচারের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন, তারা ছিলেন সংখ্যালঘিষ্ঠ। মূলধারার মতবাদটি ছিল ‘trickle-down’ বা ‘চুঁইয়ে পড়া’ মতবাদ, যাতে বলা হয়েছে, প্রবৃদ্ধি তরান্বিত হলে তা পরে ছড়িয়ে পড়ে দারিদ্র্য ও আয় বণ্টনের সমস্যা সমাধান করবে। কিন্তু বাস্তবে ‘চুঁইয়ে পড়া’ পদ্ধতি গুরুতরভাবে অকার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। এটাই হবার কথা। কেননা দারিদ্র্য এবং আয় বৈষম্য এত বেশি বিস্তৃত, অতলস্পর্শী ও অমোচনীয় যে, অর্থনীতিতে বড় ধরনের কাঠামোগত সংস্কার, অর্থব্যবস্থার পরিবর্তন, উপযুক্ত মূল্যবোধ ও প্রেরণা সৃষ্টি ব্যতিরেকে এর অপনোদন প্রত্যাশা করা অবাস্তব স্বপ্নমাত্র।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন