hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলাম ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ

লেখকঃ ড. এম উমর চাপরা

৫১
রণ কৌশলের ভুল প্রয়োগ
‘এলিনেশন’ প্রক্রিয়ার অবসানের একমাত্র উপায় হচ্ছে এর উৎস ব্যক্তিগত মালিকানার উচ্ছেদ সাধান। এর ফলে বুর্জোয়া শ্রেণীর সামাজিক আধিপত্য এবং তাদের রাজনৈতিক ও শোষণ-নিপীড়নমূলক ক্ষমতার বিলোপ ঘটবে। এই লক্ষ্যে সবচেয়ে কার্যকরী পন্থা হচ্ছে প্রলেতারীয় শ্রেণী কর্তৃক সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার পতন ঘটানো। মার্কস ‘ইউরোপীয় সমাজতন্ত্রীদের প্রস্তাবিত শান্তিপূর্ণ পন্থায় সমাজ পরিবর্তনের ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করেন। কেননা এ পন্থা শ্রেণী সংগ্রামের মৌলিক হাতিয়ারকে ভোঁতা করে দেবে। মার্কস পুঁজিবাদী সমাজ থেকে ধাপে ধাপে ক্রমবিবর্তনের ধারণাকেও বাতিল করেন দেন। কেননা সমাজে পুঁজিবাদী শাসক শ্রেণীর সর্বগ্রাসী ক্ষমতা ও শক্তির কারণে এ ধরণের পরিবতর্/ন সাধান করা সম্ভব হবেনা। গতানুগতিক সরকার কর্তৃক বন্টন ব্যবস্থার সংস্কার প্রচেষ্টাও সফল সমাজতন্ত্র বিনির্মাণ করতে পারেনা। ‘প্রত্যেকে তার যোগ্যতা অনুসারে কাজ করবে এবং ব্যকিব্ত মালিকানাধীন সকল উৎপাদন উপকরণের জাতীয়করণের মাধ্যমে একটি প্রগতিশীল ন্যায়পরায়নতাভিত্তিক সমাজ গঠিত হবে, যেখানে ক্রমান্বয়ে মজুরি, বিনিময়ের মাধ্যমে মুদ্রা, সামাজিক শ্রেণী বিভাজন এবং পরিশেষে রাষ্ট্রযন্ত্রের বিলুপ্তি ঘটাবে; সৃজিত হবে ‘বিবেক চেতনা ও উদ্দেশ্যমূলক নিয়ন্ত্রণের আওতায় উৎপাদক শ্রেণীর এক মুক্ত সমবায়ী ব্যবস্থা’। ফলে বুর্জোয়া পতন ও সর্বহারা (প্রলেতারিয়েত) শ্রেণীর বিজয় হবে আবশ্যম্ভাবী।

প্রলেতারীয় শ্রেণীকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায় অভিসিক্ত করে তাদের বিচ্ছিন্নতার অবসান, তাদের জীবন যাত্রা ও কর্মপরিবেশের উন্নয়ন এবং এভাবে শ্রেণী সংঘাত অবসানের মহতি উদ্দেশ্য যদিও প্রশংসার দাবিদার, তবু মার্কস প্রস্তাবিত উদ্দেশ্য সাধনের পন্থা ও কৌশল ভ্রান্তি ও ত্রুটিপূর্ণ। ইতিহাসের জড়বাদী মার্কসীয় মতবাদের দার্শনিক দিকটি বাদ দিলে তার লক্ষ্য অর্জনের রণকৌশল হিসেবে বাকি থাকে বুর্জোয়া শ্রেণীর উচ্ছেদ, উৎপাদন উপকরণসমূহের রাষ্ট্রীয়করণ এবং কেন্দ্রীয় পরিকল্পনাভিত্তিক অর্থনীতির প্রবর্তন। কিন্তু তিনি যৌক্তিক বিশ্বাসযোগ্যতার ভিত্তিতে উপস্থাপন করতে পারেননি যে, কিভাবে এলিনেশন প্রক্রিয়ার অবসান নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে তার প্রস্তাবিত মতাদর্শ ও পদ্ধতিগত কৌশল শোষণ ও মজুরি দাসত্বের অবসানের মাধ্যেমে প্রলেতারীয় শ্রেণীর আএর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন এবং কমিউনিজম প্রতিষ্ঠার উচ্চতর ধাপে একটি শ্রেণী বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে সকল শোষণের অবসান ঘটবে।

পুঁজিবাদী ব্যস্থাপনার আওতাধীনে রাষ্ট্রযন্ত্র ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যদি শোষণের হাতিয়ার হয়ে থাকে তবে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী দর্শনে যা সমাজের একশ্রেণী কর্তৃক অন্য একটি শ্রেনীকে সম্পূর্ণ নির্মূলের প্রবক্তা- সে ব্যস্থাপনা উৎপাদন উপকরণের রাষ্ট্রীয়করণ ও কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার মাধ্যমে যখন বিজয়ী শ্রেণীকে লাগামহীন ক্ষমতা প্রদান করা হবে, তখন জনগণের দুঃখ-দুর্দশা যে আরো বৃদ্ধি পাবে না তা আশংকা না করার কোনো যুক্তিসংগত কারণ নেই। দ্বান্দ্বিক দর্শন, শ্রেণীশত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে একশ্রেণীর মানুষকে নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড ও বলপূর্বক সম্পদ দখলে বিশ্বাসী মতাদর্শের ভিত্তিতে প্রতিটি সমাজে আর যাই হোক মানুষের ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। মানব হিতৈষী ভ্রাতৃত্ববোধের দর্শন দাবি করে সমাজের শক্তিশালী অংশ কর্তৃ সমাজের দরিদ্রতর ও ভাগ্য বিড়ম্বিত অংশের জন্যে ত্যাগ স্বীকার ও শর্তহীন সেবা প্রদান। অপর দিকে মার্কসীয় দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী মতবাদ ডারউইনের ‘শক্তিমানের বেঁচে থাকার অধিকার’ ভিত্তিক চিন্তাদর্শনেরই প্রতিধ্বনি।

হত্যাকাণ্ড ও বলপূর্বক সম্পদ দখলের মাধ্যমে বুর্জোয়া রাষ্ট্রযন্ত্র উৎখাত করে প্রলেতারীয় শ্রণীর প্রতিনিধিত্বের ধ্বজাধারীরা যখন একচ্ছত্র ক্ষমতার মালিক ও একনায়কতান্ত্রিক বুর্জোয়া রাষ্ট্রযন্ত্র হতে অধিকতর ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রযন্ত্রের নিয়ন্তা হবে তখন কি নিশ্চয়তা রয়েছে যে, তরা নিজেরাই শোষক ও নিপীড়কে পরিণত হবে না? মনে রাখা প্রয়োজন যে, কমিউনিস্ট মতাদর্শিক সর্বগ্রাসী রষ্ট্রযন্ত্রে জনগণের সবার অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে নয় বরং কতিপয় ব্যক্তিবর্গ দ্বারাই চালিত হবে। কেননা রাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের ব্যবস্থাপনায় সমাজের সকল সদস্যের অংশগ্রহণের ধারণা বাস্তবসম্মত নয়। সুতরাং পার্টির কতিপয় ব্যক্তি যারা একচ্ছত্র শাসন ক্ষমতাধারী রাষ্ট্রযন্ত্রের শীর্ষে থাকবে তারা পূর্বতন বুর্জোয়া শ্রণী হতেও অধিক নিপীড়নকারী বলে প্রমাণি হতে পারে। ব্যক্তিগত মালিকানাধীন সমাজে বিকেন্দ্রীভূত সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শ্রমিক শ্রণি অন্তত কিছুটা স্বাধীনতা ভোগ করে। তার বিপরীতে উৎপাদন উপকরণসমূহের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্রযন্ত্রে কতিপয় ব্যক্তিবর্গের হাতে ক্ষমতা কুক্ষিগত হলে শ্রমিক শ্রেণীর ততটুকু স্বাধীনতা ভোগেরও আর অবকাশ থাকবেনা। এর কি নিশ্চয়তা রয়েছে যে, ফরাসি বিপ্লবের উদ্দেশ্যে যেভাবে বিপ্লব সংঘটনকারীদেরই বিশ্বাসঘাতকতা দ্বারা পদদলিত হয়েছিল, একইভাবে মার্কসীয় বিপ্লবের পতাকাধারী সর্বহারা শ্রেণীর একনায়করা (Dictatorship of Proletariat) বিপ্লবের বাণীকেও প্রতারিত করবেনা? যদি এলিনেশন প্রক্রিয়ার জন্যে শুধুমাত্র সম্পদের মালিকানাই দায়ি হয়, তবে ব্যক্তিগত সম্পত্তির বিলোপের মাঝেই সমধান নিহিত –এ মার্কসীয় ধারণার সাথে একমত হতে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু ব্যক্তিগত সম্পত্তি হলো মানব সমাজে বিভিন্ন ক্ষমতা রমাঝে একটি মাত্র উৎস। এছাড়াও ক্ষমতার অন্যান্য উৎস রয়েছে, যেমন- শারীরিক যোগ্যতা, মানসিক ক্ষমতা, শিক্ষা, সৃজনশীলতা, উচ্চাকাঙ্ক্ষা, কঠোর পরিশ্রম, পারিবারিক সম্পর্ক এবং সমাজ ও রাষ্ট্রে নেতৃত্বের অবস্থান। বিভিন্ন অমার্কসীয় পদ্ধতিতে ব্যক্তিগত সম্পত্তির পরিমাণ হ্রাস বা এর শোষণ ক্ষমতা ভোঁতা করে দেয়া সম্ভব হলেও সভ্যতার ভিত্তি ও স্থিতিশীলতা বিনষ্ট না করে মার্কসীয় পদ্ধতিতে ক্ষমতার অন্যান্য উৎসবসমূহের অপসারণ সম্ভব নাও হতে পারে। এটা মনে রাখা প্রয়োজন যে, এই এলিনেশন প্রক্রিয়া কোনো বিশেষ একক শ্রেণী বা গোষ্ঠীর আরোপিত বিষয় নয়। ক্ষমতা সম্পত্তি বা সামাজিক অবস্থান যেখান থেকেই আসুক না কেন অথবা যিনি এই ক্ষমতা ব্যবহার করবেন তিনি বুর্জোয়া বা প্রলেতারিয়েত যাই হোন না কেন, এরূপ ক্ষমতার অধিকারী যে কেউ এ ক্ষমতর অপব্যহার করতে পারে। তবে মার্কসীয় মতাদর্শে ক্ষমতার উৎস ব্যক্তগত সম্পত্তি বিলোপের পর উৎপাদন ব্যবস্থার কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার মাধ্যমে সকল ক্ষমতা পলিটব্যুরোর সদস্যদের হাতে ন্যস্ত হয়, যারা চাকরি প্রদান ও সম্পদ বন্টন, পুরস্কার বা শাস্তি প্রদান, শ্রম শিবিরে প্রেরণের মতো সকল ক্ষমতার অধিকারী। আশ্চর্যের কিছু নেই যে, মার্কসীয় মতাদর্শ যেসব দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেসব সমাজে এই মতাদর্শ এলিনেশন প্রক্রিয়ার অবস্থান পরিবর্তন ঘটাতে বা কমিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়েছে। একটি ভুল ব্যবস্থাপত্র প্রকৃতপক্ষে রোগ নিরাময়ের পরিবর্তে তাকে আরো জটিল করে তোলে।

মার্কসের মতাদর্শ প্রকৃত প্রস্তাবে মানুষের উর অনাস্থাই প্রকাশ করে। এ মতবাদ মনে করে মানুষের চরিত্র কখনোই সংশোধন করা সম্ভব নয়। যেহেতু ব্যক্তিগত সম্পত্তি ক্ষমতার উৎস এবং শোষণের সুযোগ সৃষ্টি করে, তাই ব্যক্তিগত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করাই সমীচীন। কিন্তু মনে রাখা দরকার যে, একদলীয় শাসন ব্যবস্থায় রাষ্টের শাসক ব্যক্ত বিপুল ক্ষমতার অধিকারী, যে ক্ষমতা ব্যক্তিগত সম্পদের মালিকদের ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি। যদি একজন ব্যক্তিকে তার নিজস্ব ব্যবসা পরিচলনায় তিনি সামাজিক কল্যাণ সীমাকে লঙ্ঘন করবেন এ আশংকায় বিশ্বাস করা না যায়, তবে সামগ্রিক জাতীয় উৎপাদন ব্যবস্থা নিরঙ্কুশভাবে নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে একদলীয় রাষ্ট্রের শাসকবর্গকে কি করে বিশ্বাস করা যেতে পারে? পলিটব্যুরোর এ শাসক ব্যক্তিরা একই ধরনের মানুষের ভিতর থেকে এসেছে এ বিশ্বাস কি স্থাপন করা যায়না? পুঁজিপতিদের তুলনায় তারা কি দেবদূত? যদি তা না হয় তবে সকল উৎপাদন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তাদের হাতে যে বিপুল ক্ষমতা পুঞ্জিভূত হয় সে ক্ষমতা যে তারা তাদের স্বার্থে ব্যবহার করবেন না, তার নিশ্চয়তা কোথায়? মার্কস সম্ভবত এ ধরণের সম্ভাবনা আঁচ করতে পেয়েছিলেন। রাষ্ট্রহীন সমাজের যে স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন তার মূল কারণ বোধহয় এটি। কিন্তু মার্কস এটা বুঝতে পারেননি, যে রাষ্ট্রহীন সমাজে বিভিন্ন কায়েমী স্বার্থাবাদী মহলের পরস্পরের সংঘর্ষের ফলে শোষণ ও অবিচারের অধিকতর সম্ভাবনা থেকে যায়।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন