hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলাম ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ

লেখকঃ ড. এম উমর চাপরা

১৯৯
ক্ষুদ্র ও ব্যষ্টিক প্রতিষ্ঠানের সম্ভাবনা
বৃহদায়তন মূলধননিবিড় প্রতিষ্ঠানসমূহ কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর একটি ক্ষুদ্র অংশের চেয়ে বেশি জনগণকে সার্থকভাবে কর্মে নিয়োজিত করতে সক্ষম নয়। যেহেতু দরিদ্র মুসলিম দেশগুলোতে উদ্বৃত্ত শ্রমশক্তি আছে, কিন্তু মুলধন ও বৈদেশিক মুদ্রার এবং জটিল প্রযুক্তি সম্পর্কে প্রশিক্ষণের শিক্ষাগত অবকাঠামোর অভাব রয়েছে, সেহেতু ক্ষুদ্র ও ব্যষ্টিক শিল্পের দ্রুত বিকাশের মাধ্যমে আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ সমপ্রসারণ করা তাদের জন্য উত্তম হবে। ইমাম হাসান আল-বান্না ইসলামী আদর্শের আলোকে অর্থনৈতিক সংস্কার আলোচনায় কুটির শিল্পকে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দিয়েছে। তিনি মনে করেন, কুটির শিল্প দরিদ্র পরিবারের সকল সদস্যের জন্য উৎপাদনমুখী কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং বেকারত্ব ও দারিদ্র্য দূরীকরণে সহায়ক হবে। মুহাম্মদ ইউনুস ক্ষুদ্র ও ব্যষ্টিক উদ্যোগের অনন্য বৈশিষ্ট্য এভাবে বর্ণনা করেন, ‘দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য মজুরি ভিত্তিতে নিয়োগ কোনো ভালো পন্থা নয়’ এবং আত্ম-কর্মসংস্থান ‘ব্যক্তিগত সম্‌ পদ ভিত্তিক উন্নয়নের মজুরিভিত্তিক নিয়োগ অপেক্ষা অধিকতর কার্যকর’। যেহেতু সকল জনশক্তিকে আত্ম-কর্মসংস্থানে নিয়োজিত করা সম্ভব হবে- এরূপ প্রত্যাশা করা যুক্তিযুক্ত নয়, সেহেতু মজুরিভিত্তিক নিয়োগ একদম বাদ দেয়া যাবে না। সুতরাং, এ বিষয়টি নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা চালাতে হবে, যাতে ইসলামী আদর্শ অনুযায়ী শ্রমিকগণ ন্যায্য মজুরি পায়, ভ্রাতৃসুলভ সম্মানজনক ও মানবিক আচরণ পায় এবং তাদেরকে যেন সৃজনশীল ও শৈল্পিক গুণাবলী বিকাশের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে বৃহৎ যন্ত্রের চাকার মর্যাদায় অবনমতি করা না হয়। ক্ষুদ্র ও ব্যষ্টিক প্রতিষ্ঠানে যত বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, মানবিক উদ্দেশ্য সাধনের সাফল্যের সম্ভাবনা ততই অধিক হবে।

সমপ্রতি এ সম্পর্কে সচেতনা সৃষ্টি হয়েছে যে, ‘বিগত দশক ধরে চলে আসা বৃহদায়তন আধুনিক শিল্পায়ন পদ্ধতি পৃথিবীর অনুন্নয়ন ও দারিদ্র্য সমস্যা দূর করতে ব্যর্থ হয়েছে’। মিচিগান স্টেট ইউনিভার্সিটি কর্তৃক কয়েকটি দেশে পরিচালিত এক গবেষণায় সুস্পষ্টভাবে দেখা গেছে যে, কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধিতে ক্ষুদ্র ও ব্যষ্টিক প্রতিষ্ঠান বিপুল অবদান দেখা গেছে যে, কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধিতে ক্ষুদ্র ও ব্যষ্টিক প্রতিষ্ঠান বিপুল অবদান রাখতে সক্ষম। এগুলো কেবল প্রত্যক্ষভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে তাই নয়, বরং পরোক্ষভাবে আয়, দ্রব্য ও সেবার চাহিদা, যন্ত্রপাতি ও কাঁচামালের চাহিা এবং রপ্তানিও বৃদ্ধি করে। এগুলো শমঘন প্রতিষ্ঠান এবং এজন্য স্বল্প মূলধন ও স্বল্প বৈদেশিক মুদ্রা প্রয়োজন হয়। প্রাথমিকভাবে এ সকল প্রতিষ্ঠান ব্যক্তিগত সঞ্চয় ও অব্যবহৃত আয়ের উপর নির্ভর করে এবং বৃহদায়তন শিল্পের তুলনায় সরকার ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ সুবিধা কম প্রয়োজন হয়। এগুলো নতুন পণ্য উদ্ভাবন করে, হারানো দক্ষতা ফিরিয়ে আনে এবং অর্থনীতিকে নতুন কর্মের দিকে পরিচালিত করতে সাহায্য করে। এ সকল প্রতিষ্ঠান ব্যাপক এলাকায় সমপ্রসারিত হতে পারে। ফলে ব্যক্তির কর্মক্ষেত্রে এবং গৃহের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষায় সাহায্য করে। কিন্তু বৃহদায়তন শিল্প প্রতিষ্ঠান ব্যাপক নগরায়ণ ও সামাজিক পরিবেশের উপর ক্ষতিকর অবদান রাখে। অধিককন্তু এ সকল প্রতিষ্ঠান অন্ততপক্ষে বৃহদায়তন শিল্পের মতা দক্ষতায় কাজ করতে সক্ষম। মিচিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা গেছে, এ সকল প্রতিষ্ঠান সর্বাদাই বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠানের তুলনায় মূলধনের একক প্রতি অধিক উৎপাদন করে। লিটন, স্কিটভস্কি ও স্কট মন্তব্য করেছেন, “ক্ষুদ্র হস্তশিল্প ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠানের তুলনায় বৃহদায়তন আধুনিক শিল্প প্রতিষ্ঠান সাধারণত কম লাভজনক মূলধন ও স্বল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিবেচনায় অধিকতর ব্যববহুল। কতিপয় বিশেষজ্ঞ অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশে উদ্বৃত্ত শ্রমশক্তি ও মূলধন ঘাটতি বিরাজমান থাকায় এ সকল দেশে বৃহদায়তন শিল্প আদৌ উপযোগী কিনা এ বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। সুতরাং, ক্ষুদ্র ও ব্যষ্টিক প্রতিষ্ঠানকে ‘প্রবৃদ্ধি ও ইনসাফ- উভয় অর্জনের লক্ষ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বেসরকারি খাতের ভূমিকা বিকাশের ক্ষেত্রে একটি কার্যকর পন্থা’ হিসেবে ব্যাপকভাবে বিবেচনা করা হয়।

এমনকি ওইসিডি দেশসমূহ ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানসমূহের কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনা উপলব্ধি করতে পেরেছে। বিগত দশক ধরে এ দেশগুলোতে আনুপাতিক হারে অধিক নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং এসব শিল্পোন্নত দেশগুলোতে ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানসমূহ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে ও বেকারত্বের হার কমাতে অধিক সাফল্য অর্জন করেছে। ক্ষুদ্র শিল্প দীর্ঘদিন ধরে বণিক সম্প্রদায়ের নিকট অস্বীকৃত থাকেনি, বরং সকল মতাবলম্বী রাজনৈতিক ব্যক্তিগণই একে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করে থাকেন। ইটালিতে কারিগরবৃন্দ প্রধানত পারিবারিক ব্যবসায় নিযুক্ত থাকেন এবং এটি ইটালীর অলংকার, স্বর্ণ, রৌপ্য, চামড়া শিল্প, নকশা, কাঁচের কাজ, আসবাবপত্র, মৃৎশিল্প, জুতা তৈরি ও পোশাক শিল্পের মতো খাতগুলোর উন্নয়নের পশ্চাতে প্রধান কারণ হিসেবে অবদান রেখেছে। জার্মানীতে পারিবারিক মালিকানাভুক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ অর্থনীতিতে একটি প্রধান ভূমিকা পালন করেছে এবং সেখানে ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে নতুনভাবে সচেতনতা সৃষ্টি হচ্ছে।

জাপানের রপ্তানি সাফল্যের গুরুত্বপূর্ণ কারণ হরো তাদের অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতার শক্তি। জাপানের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কাজের উল্লেখযোগ্য অংশ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীগণকে সাব-কন্ট্রাক্ট প্রদানের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করেছে। জাপানের অভ্যন্তরীণ বাজারেও ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানসমূহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রতিষ্ঠানসমূহ জাপানের মোট শিল্প-উৎপাদনের 50% উৎপাদ কর এবং 75% কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে থাকে। জাপানে এখনো খুচরা বিক্রয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বিশেষত্ব প্রাপ্ত খুচরা বিক্রেতা ও পারিবারিকভাবে পরিচালিত ক্ষুদ্র দোকানের মাধ্যমে সমপ্রাদিত হয়। এগুলো আইনের দ্বারা সংরক্ষিত। এ ব্যবস্থা এবং ব্যাপক লভ্যাংশে অংশগ্রহণ পদ্ধতির (profit-sharing system) কারণেই সম্ভবত শিল্পেন্নত দেশগুলোর মাধ্যে জাপানের বেকারত্বের হার সবেচেয়ে কম। যে সকল উন্নত দেশে ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান ঐতিহ্যগতভাবে দুর্বল, সে সকল দেশে বেকারত্বের হার বেশি। এজন্য ঐ সকল সরকারসমূহ ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানের নিকাশে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ফলে ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য সরকারি ও বেসরকারি খাতে বহু উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

উৎপাদনের বিক্রেন্দীকরণ এবং কম মূলধননিবিড় ক্ষুদ্র ও ব্যষ্টিক প্রতিষ্ঠানের বিকাশ সম্ভবত মুসলিম দেশসমূহে গ্রামীণ ভূমিহীনদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশকে লাভজনকভাবে কর্মে নিয়োগ করার ক্ষেত্রে সর্বাধিক কার্যকর পন্থা। শুধু তাই নয়, স্বল্পভূমির মালিকানা বিশিষ্ট পরিবারসমূহের কর্মে আংশিকভাবে নিয়োজিত সদস্যদেরকেও (স্বামী, স্ত্রী, মাতাপিতা, সন্তান) লাভজনকভাবে কাজে নিয়োগ করার জন্যও এটি শ্রেষ্ঠ পন্থা। এ নীতি হবে পূর্বের আলোচিত কৃষি সংস্কারের পরিপূরক এবং গ্রাম উন্নয়নে সহায়ক। এ দ্বারা গ্রামীণ জনগণের আয় এবং উন্নত বীজ, সার ও প্রযুক্তি ক্রয়ের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। এর দ্বারা কৃষি উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া গ্রাম থেকে শহরে জনসংখ্যা স্থানান্তর হ্রাস পাওয়ায় পারিবারিক সংহতি রক্ষা পাবে এবং নৈতিক উন্নয়ন ও দুষকৃতি কমানে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যসমূহের মধ্যে একটি অন্যতম। অন্যান্য উন্নয়নশলি দেশের ন্যায় মুসলিম দেশগুলোও তাদের উপনিবেশিক প্রভুরদেরকে সমালোচনা করে যে, তারা সমাজের সকল ভিত্তি ও সূত্র পদ্ধতিগতভাবে ধ্বংস করেছিল। কিন্তু তারা স্বাধীনতা লাভের পর ধ্বংসপ্রাপ্ত দক্ষতা ও হস্তশিল্প কৌশল পুনরুদ্ধারের জন্য কমই প্রচেষ্টা চালিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ক্ষুদ্র ও ব্যষ্টিক প্রতিষ্ঠানকে অবদমন করা এবং ব্যাপক সংরক্ষণ সুবিধা, উদার আমদানি লাইসেন্স, রেয়াতি আর্থিক সুবিধা, ভর্তুকি মূল্যে উপকরণ প্রদান ও কর রেয়াতের সময় দেয়ার মাধ্যমে বৃহদায়তন শিল্প ও বাণিজ্যকে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ মন্তব্য এমন বৃহদায়তন শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো রায় নয়, যেগুলো অর্থনীতির বিশেষ বিশেষ খাতে অপরিহার্য। যেক্ষেত্রে প্রয়োজন সে ক্ষেত্রে এগুলো উৎসাহিত করা ও প্রতিষ্ঠিত করা উচিত, তবে শর্ত এটাই যে এগুলোর ব্যয় অপেক্ষা আর্থ-সামাজিক সুফল অবশ্যই অধিক হতে হবে এবং স্থায়ী ও ব্যাপক সংরক্ষণ ব্যবস্থা প্রয়োজন হবে না।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন