hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলাম ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ

লেখকঃ ড. এম উমর চাপরা

৫০
মার্কসবাদ : বিশ্বদৃষ্টি ও কৌশল
জঙ্গি নাস্তিক্যবাদ (Militant Atheism)

মার্কবাদ হচ্ছে উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম ও মধ্যভাবে উদ্ভুত বিভিন্ন আদর্শগত সংশ্লেষণ। এ আদর্শিক চিন্তাধারাগুলো হচ্ছে তৎকালীন সেকুলার মুক্তচিন্তা, হেগেলের দ্বান্দ্বিক মতবাদ, ফুয়েরবাকের বস্তুবাদ, মিচেলের শ্রেণী সংগ্রাম তত্ত্ব, রিকার্ডো ও স্মিথের অর্থনৈতিক দর্শন এবং ফরাসী বিপ্লবের জঙ্গি আহক্ষাণ। ইহুদী পিতামাতার সাত সন্তানের অন্যতম কার্ল মার্কস এসব চিন্তাধারা, বিশেষ করে সেকুলার ও নাস্তিক্যবাদী ধ্যানধারণার মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠেন। তার পিতা ধর্মের ব্যাপারে তেমন রক্ষণশীল ছিলেন না। বিশ্বাসের তাগিদে নয় বরং পেশার প্রয়োজনে তিনি পরবর্তীতে ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন। যুবক বয়স হতে মার্কস গোঁড়া নাস্তিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন যার দর্শনের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘ধর্মশাস্ত্রের সমালোচনাই সকল সমালোচনা শাস্ত্রের মূল ভিত্তি’।

অন্যান্য সমাজ বিজ্ঞানীর মধ্যে মার্কও সমাজব্যবস্থার রোগ নির্ণয় এবং প্রতিকার বিধানের চেষ্ট করেছিলেন। এই প্রক্রিয়ায় তিনি শ্রেণী বিচ্যূতি, শোষণ, উদ্বৃত্ত-মূল্য, ব্যক্তিগত সম্পত্তি, শ্রেণী সংগ্রাম, মজুরি-দাসত্ব, অর্থনৈতিক নির্ণয়বাদ নামক কতিপয় ধারণার প্রবর্তন করেন। কিন্তু লেখক হিসেবে সুবিন্যস্ত ও সাবলীল লেখনীর অধিকারী না হওয়ায় তার এই সব ধারণাগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে অস্পষ্ট, অবোধগম্য ও ভাসাভাসা।

মার্কসের বিশ্লেষণের প্রধান তাত্ত্বিক ধারণা হচ্ছে ‘এলিনেশন’ (alienation) বা সম্পদের হস্তান্তর প্রক্রিয়া। বুর্জোয়া শ্রেণী কর্তৃক প্রলেতারিয়েত শ্রেণীকে শোষণের ফলে পুঁজিবাদী সমাজে এর উদ্ভব ঘটে। প্রলেতারিয়েত শ্রেণী হচ্ছে শিল্প শ্রমিক। উৎপাদন উপকরণের মালিক বিধায় তারা তাদের শ্রম বিক্রয় করে মজুরি-দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হতে বাধ্য হয়। বুর্জোয়া শ্রেণী হচ্ছে পুঁজিবাদী, যারা উৎপাদনের উপকরণসমূহের মালিক ও নিয়ন্তা। প্রলেতারিয়েত শ্রেণী সকল উদ্বৃত্ত মূল্যের স্রষ্টা হওয়া সত্ত্বেও তাদেরকে দেয়া হয় সর্বনিম্ন মজুরি যা তাদের কোনো রকমে বেঁচে থাকা ও নতুন শ্রমদাস প্রজননের চক্রে বেঁধে রাখে।

বুর্জোয়া শ্রেণী শ্রমিক শ্রেণী কর্তৃক সৃষ্ট উদ্বৃত্ত-মূল্য আত্মসাতের মাধ্যমে ক্রমাগতভাবে ফুলে ফেঁপে ওঠে এবং প্রলেতারীয় শ্রেণীকে চিরস্থায়ী মজুরি দাসত্বের নিগড়ে আবদ্ধ করে। এই প্রক্রিয়া মানুষকে তার সহজাত মর্যাদা হতে বঞ্চিত করে অমানবিক যন্ত্রে মানবসত্তার বিচূর্ণিত ভগ্নাংশে পরিণত করে। মানব সত্তার সম্ভাববনাসমূহের পরিপূর্ণ বিকাশের সুযোগ হতে তারা নির্মমভাবে বঞ্চিত হয়। এই শোষণ প্রক্রিয়া পরস্পর স্বার্থ বিরোধী বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করে অনিবার্যভাবে শ্রেণী সংগ্রামের সূচনা করে। মানব ইতিহাসের গতিপথের ক্রমবিবর্তনে এই শ্রেণী সংগ্রামই মূল নিয়ন্তাশক্তি। ব্যক্তি মানুষ কোনো স্বাধীন সত্তা নয়, বরং ইতিহাসের এই দাবার ছকের অসহায় গুটি মাত্র। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর বৈষয়িক স্বার্থের অনিবার্য সংঘাতই নিয়ন্ত্রণ করে মানব ভাগ্য (অর্থনৈতিক নির্ণয়বাদ)।

উপর্যুক্ত যুক্তি অনুসারে মানুষের চিন্তাধারা নয় বরং মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থাই ইতিহাসের মূল চালিকা শক্তি। বুর্জোয়া সমাজের ধর্ম ও রাষ্ট্র এ শ্রেণী সংঘাতের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং সর্বহারা শ্রেণীকে শোষণের জন্যে ধর্ম ও রাষ্ট্র উভয়কেই বুর্জোয়া শ্রেণী ব্যবহার করে। মানব সমাজের একাংশের ক্রমাগত দরিদ্র হতে দরিদ্রতর হওয়ার প্রক্রিয়ায় এ উভয় প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একটি শ্রেণীহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ এলিনেশন প্রক্রিয়া অপসৃত হবে এবং ইতিহাসের ক্রমবিবর্তনের এক পর্যায়ে রাষ্ট্রযন্ত্রেরই আর কোনো আবশ্যকতা থাকবেনা। তাই অত্যাবশ্যক প্রয়োজন হচ্ছে এ সমস্ত অববস্থার অপসারণ যে পরিপ্রেক্ষিতে মানুষ হয় অপমানিত, নিগৃহীত, পরিত্যক্ত ও শৃংখলিত। কিন্তু লক্ষণীয় যে, মার্কসীয় দর্শনের মধ্যেই অন্তর্নিহিত রয়েছে পরস্পর বিরোধিতা তথা চরম দ্বৈততা। মার্কসীয় দর্শনে একদিকে ব্যক্ত হয়েছে অর্থনৈতিক নির্ণয়বাদের চরম হতাশাব্যঞ্জক পরিণতির কথা, অর্থাৎ সেখানে শ্রেণী সংঘাত ও শোষণের অনিবার্য হাত হতে মুক্তির কোনো পথ নেই, অপর দিকে অর্থনৈতিক নির্ণয়বাদের কঠোর নিগূঢ় তত্ত্ব থেকে মানবতার মুক্তির স্বপ্নজাল বিস্তার করা হয়েছে।

মার্কসের মতানুসারে ‘ব্যক্তিস্বাতন্ত্রমূলক মানব প্রকৃতি বলে কিছু নেই’। এ মতবাদ মূলত অপরিবর্তনীয় ও স্থির এক ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যহীন সাধারণ মানব চরিত্রের নির্দেশ করে। যেহেতু ব্যক্তি মানুষের কোনো মৌলিক প্রকৃতি নেই, তাই মানুষের চেতনা রাজনৈতিক, সামাজিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে ক্রমাগত বদলে যাচ্ছে এবং এই পরিবর্তন তার জীবনে ‘বৈষয়িক অবস্থা তথা যে উৎপাদন পদ্ধতির সমাজে তার অবস্থান তা দ্বারা নির্ণীত হয়’। নরম্যান গ্রঅরাস মানব চরিত্র সম্পর্কে মার্কসের এ বহুল প্রচারিত মতের বিরোধিতা করেন। যাই হোক, মানব চরিত্র সম্পর্কে মার্কসের উপস্থাপিত ধারণা প্রামাণ্য বা গ্রহণযোগ্য নয়। তার ধারণা গ্রহণ করা হলে প্রকৃত প্রস্তাবে মার্কস ইতিহাসের বস্তুবাদী ধারণার উপর যে তাত্ত্বিক প্রাসাদ নির্মাণ করেছেন সেটাই ধ্বসে পড়ে। যদি ব্যক্তি মানব চরিত্র অপরিবর্তনীয় হয়, তবে মানব জীবনের বৈষয়িক অবস্থা ইতিহাসের গতিপথ নির্ধারণে ভূমিকা রাখতে বা ইতিহাসের দাবার ছকে মানুষকে নিছক গুটিতে পরিণত করতে পারেনা। এর দ্বারা মার্কসের নিজের মতবাদই খণ্ডিত হয়ে যায় অর্থাৎ মানব চরিত্রের এ অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্যই তখন ইতিহাসের ক্রমবিবর্তনের বিরুদ্ধে কাজ করে যাবে। কিন্তু মার্কস ইতিহাসের দ্বন্দ্ববাদী যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তাতে আমরা মানব চরিত্র সম্পর্কে তার পূর্বতন ধারণার প্রতিফলন দেখতে পাইনা। প্রকৃতপক্ষে, মার্কসের পরস্পর বিরোধী চিন্তাধারার বীজ মার্কস উপস্থাপিত বিভিন্ন তাত্ত্বিক ধারণার মধ্যে যে অন্তর্নিহিত অসামঞ্জস্যতা রয়েছে তার মধ্যেই বিদ্যমান। একদিকে মার্কসের ইতিহাসের বস্তুবাদী ব্যাখ্যা মানব চরিত্রে অন্তর্নিহিত নিজস্ব বৈশিষ্ট্যকে স্বীকার করেনা, অন্যদিকে তার ‘এলিনেশন’ সম্পর্কিত ধারণাটি এমন এক বৈশিষ্ট্যের অপরিহার্যতা দাবি করে। মার্কসের বস্তুবাদী ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ববাদ ও এলিনেশন সম্পর্কিত উপর্যুক্ত দুটি ধারণাই প্রকৃতপক্ষে পরস্পর বিরোধী ও সাংঘর্ষিক এবং এটাই মার্কসীয় দর্শন ও মতবাদ সম্পর্কে অস্পষ্টতা ও অসামঞ্জস্যতার যে সাধারণ অভিযোগ সমালোচক মহলে বিরাজিত তার মূল কারণ।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন