HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

জিজ্ঞাসা ও জবাব (১ম খণ্ড)

লেখকঃ ড. খোন্দকার আব্দুলাহ জাহাঙ্গীর (রাহিমাহুল্লাহ)

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
জিজ্ঞাসা ও জবাব

ড. খোন্দকার আব্দুলাহ জাহাঙ্গীর (রাহিমাহুল্লাহ) (১৯৫৮-২০১৬)

পি-এইচ. ডি. (রিয়াদ), এম. এ. (রিয়াদ), এম.এম. (ঢাকা)

অধ্যাপক, আল-হাদীস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ,

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

আস-সুন্নাহ পাবলিকেশন্স

মোবাইল: ০১৭৮৮৯৯৯৯৬৮

www.assunnahtrust.com

লেখক পরিচিতি
ড. খোন্দকার আ. ন. ম. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রাহিমাহুল্লাহ) জন্ম: ঝিনাইদহ জেলায় ১৯৫৮ সালে। মৃত্যুঃ ১১ই মে ২০১৬।

পিতা মরহুম খোন্দকার আনোয়ারুজ্জামান। মাতা বেগম লুৎফুন্নাহার। ঝিনাইদহ আলিয়া মাদ্রাসায় ফাজিল পর্যন্ত অধ্যয়নের পর ১৯৭৯ সালে 'ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে প্রথম শ্রেণীতে অষ্টম স্থান অধিকার করে হাদীস বিষয়ে কামিল পাশ করেন। সৌদি আরবের রিয়াদস্থ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সাউদ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৬, ১৯৯২ ও ১৯৯৮ সালে যথাক্রমে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পি-এইচ.ডি ডিগ্রি লাভ করেন। দেশ ও বিদেশে যে সকল প্রসিদ্ধ আলিমের কাছে তিনি পড়াশোনা ও সাহচর্য গ্রহণ করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন খতীৰ মাওলানা ওবাইদুল হক (রাহ.), মাওলানা মিয়া মোহাম্মাদ কাসিমী (রাহ.), মাওলানা আনোয়ারুল হক কাসিমী (রাহ.), মাওলানা আব্দুল বারী সিলেটী (রাহ.), মাওলানা ড. আইউব আলী (রাহ.), মাওলানা আব্দুর রহীম (রাহ.), আল্লামা শাইখ আব্দুল্লাহ ইবন আব্দুল আযীয ইবন লায (রাহ.), আল্লামা আব্দুল্লাহ ইবন আব্দুর রহমান আল-জিবরীন (রাহ.), আল্লামা মুহাম্মাদ ইবন সালিহ ইবন মুহাম্মাদ আল-উসাইমীন (রাহ.), শাইখ সালিহ ইবন আব্দুল আযীয আল শাইখ, শাইখ সালিহ ইবন ফাওযান ইবন আব্দুল্লাহ আল ফাওযান। কর্ম জীবনে তিনি কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে হাদীস বিভাগে শিক্ষকতা শুরু করেন ১৯৯৮ সালে। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৬ সালের ১১ই মে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু বরণ করার আগ পর্যন্ত তিনি উক্ত বিভাগে। অধ্যাপক পদে কর্মরত ছিলেন। দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় বাংলা ইংরেজী ও আরবি ভাষায় তার প্রায় অর্ধশত প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তার প্রকাশিত গবেষণামূলক গ্রন্থের সংখ্যা ত্রিশের অধিক। গবেষণা কর্মের পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন। নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সাথে আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়ের লক্ষ্যে ১৯৯৮ খৃষ্টাব্দে তিনি “আল ফারুক একাডেমী" নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। বিশুদ্ধ ইসলামী জ্ঞান ও মূল্যবোধ প্রচার ও মানব সেবার উদ্দেশ্যে ২০১১ সালে "আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট' নামে একটি সেবা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন এবং ২০১২ HOT Education and Charity Foundation Jhenaidah নামে একটি শিক্ষা ও সমাজ সেবাসংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন। এ সকল প্রতিষ্ঠান শিক্ষাপ্রচার, ধর্ম প্রচার, দুস্থ নারী ও শিশুদের সেবা ও পুনর্বাসনে বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালনা করছে।

লেখকের প্রকাশিত কয়েকটি বই
১. কুরআন-সুন্নাহর আলোকে ইসলামী আকীদা

২. এহইয়াউস সুনান: সুন্নাতের পুনরুজ্জীবন ও বিদ'আতের বিসর্জন

৩. রাহে বেলায়াত: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর যিকির ও ওযীফা।

৪. হাদীসের নামে জালিয়াতি: প্রচলিত মিথ্যা হাদীস ও ভিত্তিহীন কথা।

৫. ফুরফুরার পীর আবু জাফর সিদ্দিকী রচিত। আল-মাউযূআত: একটি বিশ্লেষনাত্মক পর্যালোচনা।

৬. কুরআন-সুন্নাহর আলোকে, পোশাক, পর্দা ও দেহসজ্জা

৭. খুতবাতুল ইসলাম: জুমুয়ার খুতবা ও সমকালীন প্রসঙ্গ

৮, বাংলাদেশে উশর বা ফসলের যাকাত: গুরুত্ব ও প্রয়োগ

৯, ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ

১০. ইমাম আবু হানিফা (রাহ) রচিত আল-ফিকহুল আকবার: বঙ্গানুবাদ ও ব্যাখ্যা

১১. সিয়াম নির্দেশিকা

১২. ইসলামে পর্দা

১৩. মুসলমানী নেসাব: আরাকানে ইসলাম ও ওযীফায়ে রাসূল সা,

১৪. সহীহ হাদীসের আলোকে সালাতুল ঈদের অতিরিক্ত তাকবীর

১৫. সহীহ মাসনূন ওযীফা।

১৬. আল্লাহর পথে দাওয়াত

১৭. কুরআন-সুন্নাহর আলোকে শবেবরাত: ফযীলত ও আমল

১৮ সালাতের মধ্যে হাত বাধার বিধান

১৯. মুনাজাত ও নামায

২০. বুহুসুন ফী উলুমিল হাদীস (আরবি ভাষায় রচিত)

২১. রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পোশাক ও ইসলামী পোশাকের বিধান

২২. তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিল ও কুরআনের আলোকে কুরবানী ও জাবীহুল্লাহ।

২৩. কিতাবুল মোকাদ্দস, ইঞ্জিল শরীফ ও ঈসায়ী ধর্ম

২৪. পবিত্র বাইবেল পরিচিতি ও পর্যালোচনা

২৫. মুসনাদ আহমাদ (ইমাম আহমাদ রচিত) বঙ্গানুবাদ, (আংশিক)

২৬. ইহারুল হক্ক বা সত্যের বিজয়। (আল্লামা রাহমাতুল্লাহ কিরানবী রচিত), বঙ্গানুবাদ

২৭. ইসলামের তিন মূলনীতি: একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা (বঙ্গানুবাদ)

২৮, ফিকহুস সুনানি ওয়াল আসার

(মুফতি আমীমুল ইহসান রচিত হাদীস ভিত্তিক ফিকহ গ্রন্থ), বঙ্গানুবাদ

29. A Woman From Desert

ভূমিকা
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর জন্যই সকল হামদ। তিনি মানুষকে ইলম দান করেছেন, মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন তা যা সে জানতো না। তিনিই মানুষকে ইলমের মাধ্যমে উন্নত করেছেন। যারা জানে ও যারা জানে না তাদেরকে সমান বলেন নি। যুগে যুগে আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে তারাই ভালো যারা নবী ও রাসূল। তাদের অবর্তমানে তাদের ওয়ারিস আলেমগণ সবচেয়ে ভালো মানুষ। সে মানুষদের জন্যই যতো দুনিয়ার মর্যাদা ও আখরাতের মর্তবা। এদের জন্যই দোআ করে প্রতিটি প্রাণী এমনকি আকাশের পাখি ও পানির নিচের মাছ। তাদের জন্যই ডানা বিছিয়ে দেয় আল্লাহর মালাইকা। সারা দুনিয়াতে যত ভালো কাজ হয় তা তাদের আলোতে আলোকিত হওয়ার কারণেই হয়ে থাকে। তারাই দুনিয়াকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে আখেরাত বিনির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছে। তাদেরকেই আল্লাহ তা'আলা তাঁর নিজের পাশে সাক্ষ্য হিসেবে স্থান দিয়েছেন। তাদেরকেই আল্লাহ তা'আলা তার দীন জানার জন্য মাধ্যম হিসেবে ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ বলেন, “যদি তোমরা না জাননা তবে যারা যিকর (কুরআন ও সুন্নাহ) এর জ্ঞান রাখে তাদের জিজ্ঞাসা কর।”(সূরা আন-নাহল: ৪৩) কোনো এক যুদ্ধে এক সাহাবী আহত হলেন, তিনি পানি ব্যবহারে অসমর্থ হলেন, সাথে থাকা লোকদের কাছে তিনি এর প্রতিকার কী হতে পারে জানতে চাইলেন, কিন্তু তারা তাকে সঠিক পরামর্শ দিতে অসমর্থ হলো, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যারা জানে না, তাদের জানার ঔষধ হচ্ছে জেনে নেওয়া।”(সুনান আবী দাউদ: ৩৩৬,৩৩৭) কোনো মানুষের পক্ষেই সর্ববিষয়ে জ্ঞানী হওয়া সম্ভব হয় না। তাদের কতেকের ওপর অপর কতেককে আল্লাহ জ্ঞানী করেছেন। আল্লাহ বলেন, “আর প্রত্যেক জ্ঞানীর ওপরেই জ্ঞানী রয়েছে।”(সূরা ইউসুফ: ৭৫) জ্ঞানীরা তাদের জ্ঞান দিয়ে ইজতিহাদ করে থাকেন, ইজতিহাদ তাদের জ্ঞানকে শানিত করে, ইজতিহাদের কারণে তারা আল্লাহর কাছে পুরষ্কারপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “বিচারক যদি বিধান জানার জন্য কুরআন ও হাদীসে ইজতিহাদ করে আর সে তাতে ভুল করে তবুও সে এক সাওয়াব পাবে, আর যদি সঠিক মতে পৌঁছুতে পারে তো তার দু' সাওয়াব।”(বুখারী: ৭৩৫২; মুসলিম: ১৭১৬)

প্রতিটি মাসআলায় কুরআন ও সুন্নাহর দলীল খুঁজে বের করা অনেক কঠিন কাজ। তা আরও কঠিন হয় যখন তা তাৎক্ষনিক কোথাও উপস্থাপন করতে হয়। এ কাজ সবার দ্বারা হয়ে উঠে না। একাজ কেবল ফকীহগণের। যাদেরকে আল্লাহ তাঁর বিশেষ নেয়ামত দিয়ে সিক্ত করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে তিনি ফিকহের জ্ঞান দান করেন।”(বুখারী: ৭১; মুসলিম: ১০৩৭) এ ফকীহগণকে এ জন্যই ক্ষণজন্মা পুরুষ বলা হয়ে থাকে। ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেঈ ও ইমাম আহমদ রাহিমাহুমুল্লাহসহ উম্মতের সে সব ব্যক্তিবর্গকে আল্লাহ তা'আলা তাঁর বিশেষ নে'আমত হিসেবে আমাদের জন্য প্রদান করেছেন। তাদের মর্যাদা যারা বুঝে না তারা নিজেরাই অজ্ঞ, জ্ঞানীদের কাতারে তাদের কোনো স্থান নেই। প্রত্যেক যুগে ও এলাকায় এক বা একাধিক মুজতাহিদ থাকা বাঞ্ছনীয়। না থাকলে উম্মতের সমূহ ক্ষতি হয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ তা'আলা ইলমে একেবারে উঠিয়ে নিবেন না, তিনি আলেমগণকে নিয়ে যাবার মাধ্যমে ইলমকে উঠিয়ে নিবেন। অতঃপর যখন কোনো আলেম থাকবে না তখন লোকেরা তাদের মধ্যকার জাহিল লোকদেরকে তাদের নেতা বানাবে, তখন তাদের প্রশ্ন করা হবে আর তারা ইলম ব্যতীত উত্তর দিবে, এতে করে তারা নিজেরা পথভ্রষ্ট হবে অপরকেও পথভ্রষ্ট করবে।”(বুখারী: ১০০; মুসলিম: ২৬৭৩) বস্তুত: ইলমুল ফিকহ হচ্ছে প্রশ্নোত্তরের সমষ্টি। এজন্যই ইমাম আবু হানীফাকে ফিকহের জনক বলা হয়। কারণ তিনি প্রায় সকল প্রশ্নেরই অবতারণা করেছেন। আর তার অর্ধেক উত্তর তিনি দিয়ে গেছেন। বাকী উত্তরগুলোতে অন্য ফকীহগণ শেয়ার করেছেন। সুতরাং উম্মতের মধ্যে যারাই ফকীহ হবেন তারাই ইমাম আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহর পরিবারভুক্ত হবেন এটাই ইমাম শাফেঈর বক্তব্য। আর তা-ই যথার্থ। ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর ছিলেন তেমনি এক ক্ষণজন্মা মানুষ। যাকে আমরা সত্যিকারের একজন ভাষাবিদ, দাঈ ইলাল্লাহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও ফকীহ বলে বিশ্বাস করি। তিনি ইসলামিক টিভিতে নিয়মিত প্রশ্নোত্তর দিতেন। বিভিন্ন সভা-মাহফিলে জীবন জিজ্ঞাসার জবাব দিতেন। তাঁর উত্তরের বৈশিষ্ট্য ছিল এই যে, তিনি সর্বদা কুরআনে কারীমের আয়াত ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস দিয়ে তার উত্তরকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করতেন। তিনি কাউকে আক্রমন করতেন না। ইমামগণকে সম্মানের সাথে উল্লেখ করতেন। কোনো বিষয়ে কেউ তার বিরোধী মত পোষণ করলে সেটাকে দলীলের মাধ্যমে খণ্ডনের চেষ্টা করতেন। প্রচলিত দাওয়ার কাজে কর্মরত মানুষদের ভুল ধরার চেয়ে তাদের সংশোধনের চেষ্টা বেশি করতেন।

ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহিমাহুল্লাহর রেখে যাওয়া এ অমূল্য সম্পদের সংরক্ষণ ও যথাযথ প্রচার ইলম প্রচারেরই নামান্তর। আমাদের জাতির দুর্ভাগ্য যে আমরা জীবিত অবস্থায় মনীষীদের কদর করতে শিখিনি। যদি তিনি আরব বিশ্বের কেউ হতেন তাহলে হয়তো তার জীবনী ভিন্নভাবে লিখা হতো, আর তার জীবনকে ঘিরে থাকতত হাজারো ছাত্রের আনাগোনা!

আমার আনন্দ লাগছে যে, তাঁর প্রশ্নোত্তর পর্ব সমৃদ্ধ এ কাজটিতে আমি শরীক হতে পেরেছি। আল্লাহর কাছে দু'আ করি তিনি যেন এ মহতিকর্ম কবুল করেন এবং এগুলোকে তাঁর জন্য ও আমাদের মত তাঁর মুহিব্বীনদের জন্যও নাজাতের উসীলা হিসেবে গ্রহণ করেন। আমীন, সুম্মা আমীন।

ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া সহযোগী অধ্যাপক, আল-ফিকহ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

প্রশ্ন-০১: অমুসলিমদের সন্তান, যারা শৈশবে মারা যায়, তারা কি কাফের?
আবার মুসলিম শিশু শিরক করে শৈশবে মারা গেলে তাদেরকে কাফের সমোধন করা যাবে কি জানতে চাই।

উত্তর: এর দুটো দিক আছে। প্রথম হল একজন অমুসলিমের সন্তান শিশু অবস্থায় মারা গিয়েছে আমাদের প্রথমে বুঝতে হবে, ইসলাম মূলত মানুষের ঐচ্ছিক কর্মের উপর নির্ভর করে। জন্ম, বংশ, কার সন্তান, কার পরিবারে জন্ম নিয়েছে, কীভাবে মৃত্যুবরণ করেছে- এটা বড় বিষয় নয়। কাজেই যে শিশুটা জন্মেছে, এখনো বড় হয় নি, সে প্রাপ্তবয়স্ক হয় নি। তাই তার তো কোনো পাপ নেই। কাজেই, কোনো শিশু শিরক করতে পারে না। কুফর করতে পারে না। সে তো সচেতন হয় নি এখনো। এজন্য অমুসলিমের সন্তান যখন মারা যায় তখন তাকে অমুসলিম বা কাফের বলা যায় না, রাসূল (ﷺ) বলেছেন:

گل مولود يولد على الفطرة، فأبواه يهودانه، أو ينصرانه، أو مسايير

প্রতিটি মানবসন্তানই ফিতরাতের উপরে, মানবীয় প্রকৃতির উপরে, তাওহীদের উপরে জন্মগ্রহণ করে। তার ইয়াহুদী, খ্রিষ্টান, অগ্নিপূজক ইত্যাদি কোনো পাপ থাকে না। বড় হওয়ার পরে পিতামাতার মাধ্যমে বা সমাজের মাধ্যমে সে নির্দিষ্ট একটা ধর্ম গ্রহণ করে। কাজেই এই পর্যায়ে যাওয়ার আগে যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে তাকে আমরা মুশরিক বলতে পারি না। ঠিক তেমনি মুমিনের সন্তানও যদি মারা যায় এই পর্যায়ে, তাকেও আমরা কাফের বলতে পারছি না। সে যদি অপরাধ করেও থাকে সেটা পিতামাতাকে দেখে দেখে করে। সে পাপী নয়। [সহীহ বুখারি, হাদীস নং-১৩৮৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস-২৬৫৮ ]

প্রশ্ন-০২: নামাযের পরে মুনাজাতের ব্যাপারটা আমি জানতে চাই।
ওহাবি আর সুন্নি এই জিনিসটা আমার কাছে ক্লিয়ার না। আমার ছেলে হাফেয, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, সে ওহাবি মাদরাসায় পড়ে। এখন আমরা দেখি যে ওদের মাদরাসায় নামাযের পরে মুনাজাত হয় না। আমি ওকে বলি, আব্বু, তুমি মুনাজাত কর না কেন, মুনাজাত না করলে মনে হয় যেন নামাযটা পরিপূর্ণ হয় না। ও বলে, আম্মু, আমাদের মাদরাসায় ওগুলো করে না। এই মুনাজাতের ব্যাপারটা আমি জানতে চাই।

উত্তর: আপনি যে প্রশ্নটা করেছেন এটা বোঝার জন্য দীর্ঘ আলোচনা দরকার। ওহাবি শব্দটা এসেছে সৌদি আরবের একজন সংস্কারক মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাবের নাম থেকে। যিনি অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি জন্মগ্রহণ করেন এবং আমার যতদূর মনে পড়ে ১৭৯০/৯৫ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এই মুজাদ্দিদ বা সংস্কারক বিদআতের বিরুদ্ধে ছিলেন। তার কর্মের ভুলত্রুটি আছে কিন্তু তিনি বিদআতের বিরুদ্ধে ছিলেন। পরবর্তীতে সারা দুনিয়ার যে কোনো মানুষ বিদআতের বিরোধিতা করলেই তাকে ওহাবি বলা হয়। ওহাবিয়াতের কোনো ডেসক্রিপশন নেই। মুনাজাত না করলে তাকে ওহাবি বলা হয়। আবার অনেক জায়গায় ধুমপান না করলে তাকে ওহাবি বলা হয়। কোনো কোনো জায়গায় কেউ সুন্দর কিরাআত পড়লে তাকে ওহাবি বলা হয়। অর্থাৎ সমাজের প্রচলনের বাইরে যে গেল সে ওহাবি। এটা অনেকটা এমন, মুহাম্মাদ (ﷺ) যখন দীন প্রচার করতে লাগলেন, সমাজের মানুষেরা তাঁর কোনো কাজকে খারাপ বলতে পারল না, তখন কাফেররা বলতে লাগল মুহাম্মাদ সাবে’ হয়ে গেছে- সাবাআ মুহাম্মাদ। অর্থাৎ আমাদের বাপদাদার প্রচলিত ধর্ম ত্যাগ করে নতুন একটা ধর্ম নিয়ে এসেছে। এটা একটা গালি মাত্র। ঠিক তেমনি ওহাবি শব্দ একটা গালিতে পরিণত হয়েছে। মূলত ওহাবি বলে কোনো জিনিস নেই। দেখবেন সমাজে যারা কুরআন-সুন্নাহ মানতে চায়, রাসূল (ﷺ) এর অনুসরণ করতে চায়- বিদআতকে যারা ভালোবাসে তারা এইসব মানুষকে ওহাবি বলে গালি দেয়। আমরা সবাইকে অনুরোধ করব, যে ব্যক্তি মুহাম্মাদ (ﷺ) কে অনুসরণ করতে চায় তাকে আপনি কেন গালি দেন! তাহলে ততা মুহাম্মাদ (ﷺ) কে গালি দেয়া হয়। এটা হল মূল বিষয়। মূলত ওহাবি বলে কিছু নেই। কেউ বলে ওহাবিরা ওলিদের অস্বীকার করে, কেউ বলে ওহাবিরা রাসূল (ﷺ) কে মানে না- এগুলো সবই ভুল কথা। মূলত যাদেরকে আমরা ওহাবি বলি তারা সবই মানেন। তারা মাযহাব মানেন, তারা সুন্নাত মানেন, তারা ওলিদের মানেন, তারা কুরআন মানেন এবং তারা কেউ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহাবের ভক্ত নয়। কিন্তু তারা বিদআতের বিরোধিতা করেন। এটাই হল সমস্যা। এবার আসা যাক নামাযের পরের মুনাজাতের বিষয়ে। আসলে আমরা তো অভ্যাসের দাস। নামাযটাই মুনাজাত। মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:

إن أحدكم إذا قام يصلي إما يقوم يناجي ربه، فلينظر كيف يناجيه

অর্থাৎ যখন তোমাদের কেউ সালাতে দাঁড়ায়, তখন সে তার রবের সাথে মুনাজাত করে। মুনাজাত শব্দের অর্থ কথা বলা। চুপিচুপি কথা বলা। তো যখন আমরা সালাতে দাঁড়াই তখন আমরা মুনাজাত করি। কাজেই রাসূল (ﷺ) বলেছেন, তুমি কার সাথে কথা বলছ, কী কথা বলছ, সচেতন হয়ে কথা বলো। অতএব সালাতটা পুরোটাই মুনাজাত। আবার আমরা যে দুআ বলি; সালাত দুআ। রাসূল (ﷺ) সালাতের সিজদায় দুআ করতেন, সালাম ফিরানোর আগে দুআ করতেন। আর যেটা নিয়ে আমাদের গোলমাল, অর্থাৎ সালাতের পরের দুআ- এটাও রাসূল (ﷺ) করতেন। তবে সমস্যা হল, দলবদ্ধভাবে সবাই মিলে যে মুনাজাতটা করা হয় এভাবে রাসূল (ﷺ) কখনো করতেন না। রাসূল (ﷺ) মদীনার দশ বছরের জীবনে আঠারো হাজার ওয়াক্ত সালাত আদায় করেছেন, এক ওয়াক্ত সালাতেও তিনি সবাইকে নিয়ে দলবদ্ধভাবে হাত তুলে মুনাজাত করেছেন এমন একটা হাদীস নেই। কিন্তু এর বিপরীতে রাসূল (ﷺ) এর শতশত হাদীস আছে, তিনি সালাতের সালাম ফেরানোর পরে একা একা বিভিন্ন দুআ পড়েছেন। আল্লাহর সাথে কথা বলেছেন। এজন্য যারা রাসূল (ﷺ) এর পুরোপুরি অনুসরণ করতে চান তারা একাকি দুআকে পছন্দ করেন। আপনিও তো একাই দুআ করেন বোন! আপনার সন্তানও একাই দুআ করবে। (ইবন আবী শায়বা, আল মুসান্নাফ, হাদীস-৮৪৬২; বাযযার, আল মুসনাদ-৬১৪৮ ও ৬৪২৪; ইবন খুযাইমা, আস সহীহ-৪৭৪)

প্রশ্ন-০৩: এক্সিডেন্টে মারা গেলে শাহাদাতের মৃত্যু হয়? বিনা হিসাবে জান্নাতে যাওয়া যায়?
আমার বাবা এক্সিডেন্টে মারা গেছেন। আমি শুনেছি যে, এক্সিডেন্টে মারা গেলে শাহাদাতের মৃত্যু হয়, বিনা হিসাবে জান্নাতে যাওয়া যায়। এটা আমার জানা খুবই দরকার।

উত্তর: আপনি যেটা বলেছেন, অনেকটা সত্য। রাসূল (ﷺ) শহীদদের কথা বলেছেন যারা পানিতে ডুবে মারা যায়, কিছু চাপা পড়ে মারা যায় তারা শহীদ। অর্থাৎ আল্লাহ তো মুমিনের ভালো চান। যে মুমিন হঠাৎ করে দুর্ঘটনায় মারা গেল তার মৃত্যুটা দুঃখজনক, এর বিনিময়ে আল্লাহ তাকে শাহাদাত নসিব করেন। তো আপনার আব্বারও দুর্ঘটায় মৃত্যুর কারণে শাহাদাত নসিব হবে, যদি অন্য সমস্যা না থাকে। এবং তিনি শহীদের মর্যাদা ও সুবিধাগুলো পাবেন বলে আমরা আশা করি।

প্রশ্ন-০৪: অ্যাবরশন করলে কি গোনাহ হবে?
এক দেড় মাস হল আমার স্ত্রীর গর্ভে সন্তান এসেছে। কিন্তু আমরা আমাদের সমস্যার কারণে এই মুহূর্তে সন্তান নিতে চাচ্ছি না। আমরা এখন অ্যাবরশন করলে কি গোনাহ হবে?

উত্তর: জি, এটা গোনাহ হবে। যদি আপনার সমস্যাটা শরীআতসম্মত না হয়। সন্তান মায়ের গর্ভে যাওয়ার অর্থই হল, যেটা আল্লাহ কুরআনে বলেছেন:

في قرار مكين

["সূরা মুমিনূন, আয়াত-১৩; সূরা মুরসালাত, আয়াত-২১]

সে একটা নিরাপদ, সুন্দর অবস্থানে চলে গেছে। এই অবস্থায় তার নিশ্চিত জীবন থেকে তাকে বঞ্চিত করা, এটা হত্যার মতোই। আপনি জন্মবিরতি করেছেন এটা ভিন্ন কথা। কিন্তু সন্তান মাতৃগর্ভে অবস্থানের পরে অ্যাবরশন করা, এটা হত্যার শামিল। তবে যদি মায়ের জীবনের আশঙ্কা থাকে, নিশ্চিতভাবে জানা যায় মায়ের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ। সেক্ষেত্রে অ্যাবরশন করাতে পারেন। এটা ডাক্তারের কাছ থেকে নিশ্চিত হতে হবে।

প্রশ্ন-০৫: রমাযান মাসে রোযা রেখে নখ-চুল কি কাটা যাবে?
উত্তর: বোন, উত্তর দেয়ার আগে একটু পেছনে যাই। রমাযানের রোযা কেন নষ্ট হয়। ইবাদত তো আপনার জন্য। আপনি যেন ইবাদতের মাধ্যমে সুন্দর মানুষ হন। আল্লাহ তাআলা পানাহার নিষেধ করেছেন। কাজেই পানাহার নয় এমন সবই করা যায়। নখ চুল শুধু না, একটা হাত কেটে গেলেও রোযার কোনো ক্ষতি হবে না। আমরা অনেক সময় মনে করি, রক্ত বেরিয়ে গেলে রোযার ক্ষতি হয়। আসলে কিন্তু তা নয়। রাসূল (ﷺ) রোযা অবস্থায় নিজে চিকিৎসার জন্য শরীর ছিদ্র করে হিযামা (শিঙ্গা লাগিয়েছেন) করেছেন। কাজেই আমাদের বুঝতে হবে, রক্ত বেরোলেও রোযা ভাঙে না, ইঞ্জেকশন নিলেও রোযা ভাঙে না। নখ-চুল কাটলে তো রোযা ভাঙার প্রশ্নই আসে না। রোযার কোনো ক্ষতিও হয় না।

১০
প্রশ্ন-০৬ : হাফহাতা শার্ট বা টিশার্ট পরে কি নামায হবে?
উত্তর: পুরুষদের জন্য নাভি থেকে হাটু পর্যন্ত ঢেকে রাখা ফরয। আর দুই কাঁধসহ উপরের অংশটা ঢেকে রাখা ওয়াজিব বা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। কনুই ঢেকে রাখার কোনো জরুরত নেই। বাংলাদেশে অনেকেই বলেন, হাফহাতা শার্ট, গেঞ্জি ইত্যাদি পরে সালাত আদায় করলে সালাত হয় না- কথাটা আসলে ওই রকম নয়। আসল কথা হল, রাসূল (ﷺ) হজ্জে এবং অন্য সময়, হজ্জের ইহরামের সময় যে পোশাক পরা হয়, এটা পরেই তিনি আজীবন নামায পড়েছেন মদীনায়। দর্শক, আপনারা হয়ত দেখেছেন ইহরামের পোশাকে কনুইটা খুলে যায়। হাফহাতার মতোই। কাজেই কাঁধ। ঢেকে রাখা জরুরি, কনুই ঢেকে রাখা জরুরি নয়। অতএব গেঞ্জি বা হাফহাতা শার্ট পরে সালাত আদায় করলে সালাতের কোনো ক্ষতি হবে না।

১১
প্রশ্ন-০৭: আমরা জানি ফরয নামায আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে। কিন্তু ওয়াজিব নামায কোথা থেকে এসেছে?
উত্তর: এখানে বোঝার একটা সমস্যা রয়ে গেছে। আসলে ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত, নফল, মাকরুহ, হারাম সবই আমরা আল্লাহর তরফ থেকে পেয়েছি। সকল ইবাদতই আল্লাহ তাআলা দিয়েছেন। এবং সকল ইবাদতের বর্ণনাই রাসূল (ﷺ) দিয়েছেন। আমরা অনেক সময় মনে করি, ফরয আল্লাহর জন্য আর সুন্নাত রাসূল (ﷺ) এর জন্য। এটা গভীরভাবে চিন্তা করলে শিরক হয়ে যায়। সকল ইবাদত আল্লাহকে খুশি করতে এবং সকল ইবাদতই মুহাম্মাদ (ﷺ) এর তরিকায় হতে হবে। ফরটা যে ফরয এটা আমরা রাসূল (ﷺ) থেকে শিখেছি। মূল বিষয় হল, ফরয ছাড়া সবকিছুই নফল। ইসলামে দুটো ভাগ করা হয়েছে। ফরয এবং নফল। নফলের ভেতরে পর্যায় রয়েছে। যে নফলটা রাসূল (ﷺ) বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন, কোনো কোনো ফকীহ এটাকে ওয়াজিব বলেছেন। এটা ইমাম আবু হানীফা রাহ. এবং কোনো কোনো ফকীহর কথা। অন্যান্য ফকীহ ফরয ওয়াজিব আলাদা করেন নি। তাদের দৃষ্টিতে ফরয এবং নফল। ওয়াজিব পরিভাষাটা হানাফি মাযহাবে রয়েছে। এটা ওই সকল নফল, যেটা ফরয নয় কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এটাকে ওয়াজিব বলা হয়।

১২
প্রশ্ন-০৮: যারাহ পরিমাণ ঈমানের পরিমাপটা কী?
উত্তর: এটা আসলে ন্যূনতম বোঝাতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। একেবারে সামান্য পরিমাণ ঈমান, তাওহীদের বিশ্বাস যদি কারো থাকে, আল্লাহ তাকে মুক্তি দেবেন। এটা আল্লাহ তাআলা বুঝবেন যে, শিরকমুক্ত তাওহীদের বিশ্বাস ন্যূনতম কত ছিল।

১৩
প্রশ্ন-০৯: নামাযের সিজদার মধ্যে যে মুনাজাতটা আছে- এটা বিস্তারিত জানতে চাই।
উত্তর: এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, বিশেষ করে এই রমাযানে আমরা আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দুআ করব। রাসূল (ﷺ) এর শেষ অসিয়ত, রবিউল আউয়াল মাসের সম্ভবত ১২ তারিখ সোমবার দিন সকাল বেলায় তাঁর সাহাবিগণ ফজরের সালাত আদায় করছেন, রাসূল (ﷺ) ঘরেই আছেন, অসুস্থতার কারণে কাঁধে ভর দিয়ে দরজার কাছে দাঁড়ালেন। পর্দা সরানো হল। সাহাবায়ে কেরাম আনন্দে উল্লসিত হলেন, রাসূল (ﷺ) হয়ত সুস্থ হয়েছেন, তিনি নামাযে দাঁড়াবেন, ইমামতি করবেন। তিনি ইশারা করলেন যে তোমরা থাকো। তারপর বললেন, রুকুতে তোমরা রবের তাযীম প্রকাশ করবে, যখন সিজদা করবে, তখন বেশি বেশি দুআ করবে এবং সিজদার দুআ কবুল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি। কাজেই আমরা সিজদায় সব দুআই করব। সবকিছু চাইব। দুনিয়া আখেরাতের সকল বিষয় চাইব। তবে চওয়ার ভাষাটা হবে আল্লাহ তাআলার কাছে আবেদনের ভাষা। মানুষে মানুষে কথার ভাষা নয়। রাসূল (:) এর শেখানো সুন্নাত দুআগুলো মুখস্ত করলে ভালো হয়।

১৪
প্রশ্ন-১০: নামাযের সিজদার মধ্যে মাতৃভাষায় দুআ করা জায়েয কি না?
উত্তর: এটা আমাদের দেশের জন্য বেশ জটিল প্রশ্ন। কারণ আমাদের দেশে ফিকহের যে কিতাবগুলো পড়ানো হয় সেখানে লেখা হয়েছে যে মাতৃভাষায় দুআ করা মাকরুহ। কেউ কেউ বলেছেন মাকরুহ মানে মাকরুহে তানযীহি অনুচিত। কেউ বলেছেন মাকরুহে তাহরীমি। এটা হল হানাফি মাযহাবের ফকীহগণের মত। তবে মিশর, সৌদি, সিরিয়া, তুরস্কের হানাফি ফকীহগণ বলেন, অনারব ভাষায় মাতৃভাষায় সালাতের সিজদার মধ্যে দুআ করায় দোষ হতে পারে না। কারণ দুআ তো বান্দা আল্লাহ তাআলার কাছে নিজের মাতৃভাষাতেই করবেন। তবে আমরা কুরআনের আয়াতের দুআ অথবা হাদীসের দুআ দ্বারা দুআ করার চেষ্টা করব। এরপরেও যদি কেউ একান্ত না পারেন তবে নফল সালাতে, তাহাজ্জুদের সালাতে মাতৃভাষায় দুআ করতে পারেন। বিশেষ করে কুরআন হাদীসের দুআর অর্থগুলো মনের আবেগে বলতে পারেন।

১৫
প্রশ্ন-১১: মৃত মানুষের পাশে বসে কুরআন তিলাওয়াত করা বৈধ কি না?
উত্তর: আপনার কাছে আমার প্রশ্ন হল, মৃত মানুষের পাশে কুরআন পড়ার কোনো সুবিধা আছে কি না! বিষয়টা কি এমন যে আজীবন কুরআন শুনতে পায় নি, অনেক ব্যস্ত ছিল দুনিয়ায়, এখন মরার পরে অখণ্ড অবসর; তাই আমি কুরআন পড়ছি আপনার পাশে, আপনি মরে গিয়ে শুনছেন! আল্লাহ তাআলা কি মরা মানুষের শোনার জন্য কুরআন নাযিল করেছেন? এটা আমার প্রশ্ন। আসলে জীবিত মানুষের মৃত আত্মকে জীবন্ত করার জন্য আল্লাহ কুরআন দিয়েছেন,

أومن كان ميتا فأحييناه وجعلنا له تورا يمشي به في الناس

তার অন্তর মৃত ছিল, কুরআনের নূরে সে আলোকিত হবে। [সূরা আনআম, আয়াত- ১২২]

কাজেই মৃত মানুষের পাশে কুরআন পড়া, এটা ইসলামের মূল চেতনার পরিপন্থী। দ্বিতীয়ত মৃত মানুষের পাশে কুরআন পড়লে কোনো সোয়াৰ বা বরকত হয়, এটা কুরআন-হাদীসে কোথাও নেই। তৃতীয়ত রাসূল (ﷺ) এবং সাহাবিদের জীবনে অগণিত মানুষ মারা গিয়েছেন, কেউ মৃত মানুষের পাশে কুরআন পড়ান নি। তবে মৃতপথযাত্রী, এখনো জীবিত আছেন, মৃত্যুবরণ করবেন এমন মানুষের কাছে সূরা ইয়াছিন পড়ার কথা একটা হাদীসে এসেছে। হাদীসটা সনদগতভাবে দুর্বল। কিন্তু মরার পরে তার পাশে কুরআন পড়া, এটা কুরআনকে এক ধরনের অবজ্ঞা করা। এটা থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিত।

১৬
প্রশ্ন-১২: আমরা অনেকেই সন্তানের নাম রাখার সময় খুব আনকমন নাম রাখার চেষ্টা করি। আনকমন নাম রাখার ভেতর কি কোনো ফযীলত আছে?
উত্তর: রাসূল (ﷺ) বলেছেন:

أحب الأسماء إلى الله تعالى عبد الله، وعبد الرحمن

আব্দুল্লাহ, আব্দুর রাহমান, এই দুটো আল্লাহ তাআলার প্রিয়তম নাম'। তাই এই জাতীয় নাম রাখা উচিত।

১৭
প্রশ্ন-১৩: সাড়ে সাত তোলার উপর বাড়তি যে স্বর্ণ আছে এই অংশটুকুর যাকাত দিতে হবে? নাকি সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণসহ সবটুকুর যাকাত দিতে হবে?
আমি জানি যে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য থাকলে যাকাত ফরয হয়। আমার প্রশ্ন হল, ধরুন আমার সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ আছে, এরপর আরো দেড় তোলা স্বর্ণ হল- এখন সাড়ে সাত তোলার উপর বাড়তি যে স্বর্ণ আছে এই অংশটুকুর কি যাকাত দিতে হবে? নাকি সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণসহ সবটুকুর যাকাত দিতে হবে?

উত্তর: আসলে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ হওয়া এটা হল নিসাব বা সীমা। অর্থাৎ এর কম স্বর্ণ থাকলে আপনাকে যাকাত দিতে হবে না। কিন্তু এই পরিমাণ হলে পুরোটারই যাকাত দিতে হবে। অর্থাৎ আপনার আট থাকলে আট ভরি সোনারই যাকাত দিতে হবে। এমন নয় যে সাড়ে সাত বাদ দিয়ে শুধু অর্ধভরির যাকাত দেবেন। আপনার সাড়ে সাতভরি বা তার বেশি স্বর্ণ আছে, তার মানে আপনি সম্পদশালী, পুরো সম্পদের যাকাত আপনাকে দিতে হবে।

১৮
প্রশ্ন-১৪: যাকাত আদায় করার মতো নগদ টাকা নেই। আগামী এক বছরে অল্প অল্প করে যাকাত আদায় আমার জন্য বৈধ হবে কি না?
আমার নয় ভরি স্বর্ণ আছে, কিন্তু যাকাত আদায় করার মতো নগদ টাকা নেই। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আগামী এক বছরে অল্প অল্প করে যাকাত আদায় করব। এটা আমার জন্য বৈধ হবে কি না জানতে চাই।

উত্তর: যাকাত অগ্রিম দেয়া যায় আবার বাকিতেও দেয়া যায়। এখন আমার যাকাত ফরয হয়েছে কিন্তু দেয়ার মতো নগদ টাকা নেই, আমি কিছুদিন পরে দিলে আদায় হয়ে যাবে। এই দেরির জন্য ইনশাআল্লাহ কোনো গোনাহ হবে না। তবে যত দ্রুত সম্ভব আল্লাহর ঋণটা পরিশোধ করা উচিত।

১৯
প্রশ্ন-১৫: তারাবীহ নামাযের সময়সীমা কতটুকু? ইশার পর থেকে বারোটার ভেতরে শেষ করতে হবে নাকি বারোটার পরেও পড়া যাবে?
উত্তর: তারাবীহর সময়সীমা হল, ইশার পর থেকে ফজরের আগ পর্যন্ত। বরং যতো দেরি করে পড়া হবে ছওয়াব ততো বেশি হবে। উমার রা.এর যুগে মানুষ যখন প্রথম রাতে তারাবীহ পড়ত, তিনি বলতেন, শেষরাত্রে না ঘুমিয়ে তারাবীহ শেষরাত্রে পড়লে ছওয়াবটা বেশি হবে। কাজেই আপনি ফজরের আযানের পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত তারাবীহ পড়তে পারেন।

২০
প্রশ্ন-১৬: স্বর্ণের যাকাত কি হাজবেন্ড আদায় করবেন? যদি উনি না দেন তাহলে কি স্ত্রীর গোনাহ হবে?
আমার ত্রিশভরি স্বর্ণ আছে। আমি তো উপার্জন করি না, এই স্বর্ণের যাকাত কি আমার হাজবেন্ড আদায় করবেন? যদি উনি না দেন তাহলে কি আমার গোনাহ হবে?

উত্তর: স্বর্ণের মালিক আপনি। ইসলামি শরীআতে স্ত্রীর সম্পত্তিতে স্বামীর কোনো অধিকার নেই, কোনো দায়ও নেই। তাই আপনার স্বামী আপনার কাছ থেকে এক টাকাও যেমন চাইতে পারবে না ঠিক তেমনি স্বামী যাকাত না দিলে আপনাকেই দিতে হবে। স্বামী যদি দেন তো ভালো। নয়তো আপনাকে আপনার স্বর্ণের যাকাত দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

২১
প্রশ্ন-১৭: রোযা অবস্থায় অনিচ্ছাকৃতভাবে বমি হলে রোযার ক্ষতি হবে কি না?
উত্তর: অনিচ্ছাকৃত বমি হলে রোযার কোনো ক্ষতি হবে না। এমনকি মুখ ভরে বমি হলে বা রিপিটেড বমি হলেও রোযার ক্ষতি হবে না। তবে আল্লাহ না করুন, কেউ বমি খেয়ে ফেললে রোযার ক্ষতি হবে।

২২
প্রশ্ন-১৮: বিয়ের পর নাকফুল, চুড়ি বা গলায় কিছু না পরলে কি গোনাহ হবে?
উত্তর: এই যে নাকফুলকে আমরা বিয়ের সাথে সম্পৃক্ত করি- এই চিন্তাটাই ভারতীয়। যেটাকে আমরা হিন্দুয়ানি সংস্কৃতি বলি। হিন্দু ধর্মে বিয়ের সাথে মাথার সিঁদুর, হাতের শাখা এগুলোর সম্পর্ক। ইসলামে এগুলো নারীর সৌন্দর্য। বিয়ের সাথে এর কোনোই সম্পর্ক নেই। বিয়ের পরে আপনি পরতে পারেন, নাও পারেন। তবে স্বামীর জন্য, সৌন্দর্যের জন্য অলঙ্কার পরা, সাজগোজ করা ইবাদত এবং ছওয়াবের কাজ। এমনকি বিধবাদের জন্যও এই সৌন্দর্যে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। বিয়ের আগেও এগুলো পরাতে কোননা দোষ নেই। আবার বিয়ের পর না পরাতেও কোনো সমস্যা নেই।

২৩
প্রশ্ন-১৯: রমাযানে বেরোজাদার, মদ্যপ এবং অশ্লীলতাকারী তারাবীহ পড়লে, কুরআন খতম করলে জীবনের সমস্ত গোনাহ মাফ হয়ে যাবে?
অনেকেই রোযা রাখে না। মদ খায়, অশ্লীল কাজ করে। তারাবীহর নামাযে এদের কুরআন শরীফ খতম করা জায়েয আছে কি না? হাফেয সাহেবরা তাদেরকে বলেন, রমাযানে তারাবীহ পড়লে, কুরআন খতম করলে জীবনের সমস্ত গোনাহ মাফ হয়ে যায়। হাফেয সাহেবদের এসব বলা বন্ধ করা উচিত কি না জানাবেন।

উত্তরঃ আমরা সবাই জানি রোযা না রাখা মহাপাপ। আর ইসলামে অন্যের কর্মে আরেক জনের মুক্তির কোনো সুযোগ নেই। আপনি স্বেচ্ছায়, মনের আগ্রহে যে পাপ করবেন সেটা আপনার পাপ। আবার যে পূণ্য করবেন সেটা আপনার পূণ্য। কাজেই তারা যদি এই পাপ থেকে তাওবা করেন, কোনো বান্দার হক থাকলে ফিরিয়ে দেন, আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে অনুতপ্ত হয়ে আর করবেন না সিদ্ধান্ত নেন তাহলে ইনশাআল্লাহ, আল্লাহ মাফ করবেন। আর যদি এই অবস্থায় তারা মৃত্যুবরণ করেন তাহলে ব্যাপারটা আল্লাহ তাআলার উপরে চলে যাবে। আর দ্বিতীয় কথা হল, ইসলামে বিভিন্ন সময় বলা হয়েছে যে, নেক আমলের মাধ্যমে পাপ মাফ হয়। আবার অন্যান্য আয়াত ও হাদীসে বলা হয়েছে অমুক অমুক গোনাহ কখনো মাফ হয় না অথবা তাওবা ছাড়া মাফ হয় না। আমরা অনেক সময় বলি সন্তানেরা মায়ের সব কথা শুনতে পারে। কারণ মা সন্তানের এতো ভালো চান, প্রতি পদে তাকে গাইডেন্স দেন। ফলে সব মানা যায় না। কিছু ভুলভ্রান্তি হয়ে যায়। এর জন্য কিন্তু মায়ের সাথে দূরত্ব তৈরি হয়। ঠিক তেমনি আল্লাহ তার বান্দার এতো ভালো চান, তাকে অনেক রকম গাইডেন্স দিয়েছেন। এর ভেতর কিছু আছে পালন না করলে ছোট গোনাহ হয়। সেটা নেক আমল, রোযা, তারাবীহ, ওযু, পাঁচওয়াক্ত সালাত ইত্যাদি দ্বারা মাফ করে দেন। আর কিছু পাপ আছে বড় পাপ- কবীরা গোনাহ। এগুলো তাওবার মাধ্যমে মাফ হয়। আবার কিছু পাপ আছে যেটা বান্দার সাথে জড়িত। মদের গোনাহ তাওবায় মাফ হয়। কিন্তু কারো গীবত করা হয়েছে, কারো হোটেলে খেয়ে টাকা দেয়া হয় নি- এটা ওই ব্যক্তি ক্ষমা না করলে পূর্ণ ক্ষমা হবে না।

২৪
প্রশ্ন-২০: আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, মারা গেলে আমি কবরের ভেতর কীভাবে থাকব। এই চিন্তাটা ভালো না খারাপ?
উত্তর: মৃত্যুর চিন্তা করা অবশ্যই ভালো। আমরা একদিন এই দুনিয়া থেকে বিদায় নেব- এই চিন্তাটা খুবই ভালো। আমরা দুনিয়া নিয়ে এই যে মারামারি করছি, হিংসা প্রতিহিংসা, স্বার্থপরতা করি- মৃত্যুচিন্তা এটা থেকে আমাদের ফিরিয়ে আনে। এক সময় তো আমাদের চলেই যেতে হবে। যে কয়দিন থাকি, ভালো থাকি। পরের জীবনটাকে ভালো করি। তবে এজন্য দুশ্চিন্তা বা হতাশা নয়, আমরা যখন আগের জগতে ছিলাম আমাদের মায়ের পেটে, দুনিয়া কেমন জানতাম না। তাই দুনিয়াতে এসেই ভয়ে কেঁদে ফেলেছিলাম। পরের জগতটাও ইনশাআল্লাহ, ভালোই হবে আমরা যদি ভালো করতে পারি। এজন্য প্রস্তুতি নেয়া ভালো, দুশ্চিন্তা এবং হতাশা ভালো নয়।

২৫
প্রশ্ন-২১: আমার স্বামী, ছেচল্লিশ বছর বয়স, কিন্তু সে নামায রোযা কিছুই করে না। কী করলে আল্লাহ তার হেদায়াত করবেন?
আমার স্বামী, ছেচল্লিশ বছর বয়স, কিন্তু সে নামায রোযা কিছুই করে না। কী করলে তার এই গোনাহ মাফ হবে? কী করলে আল্লাহ তার হেদায়াত করবেন?

উত্তর: এই দুশ্চিন্তার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। কারণ স্ত্রী অন্যায় করলে স্বামী গোনাহগার হন। কিন্তু স্বামী অন্যায় করলে স্ত্রী গোনাহগার হন না। তারপরেও আপনার এই দুশ্চিন্তা করাটা আপনার ধার্মিকতা এবং স্বামীর প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ। আল্লাহ পাক কুরআনে বলেছেন, স্বামী-স্ত্রীকে আল্লাহ একই সাথে জান্নাতে রাখবেন। কাজেই এই দুনিয়ায় আপনাদের যে ইউনিটি, এটা জান্নাতেও বজায় থাকুক এটা আমরাও চাই। আপনার আদর-সোহাগ-ভালোবাসা এবং আপনার স্ত্রীত্ব দিয়ে আপনি আপনার স্বামীকে কাছে টানবেন। অল্প অল্প করে তাকে দীনের কথা বলবেন। বোঝাবেন। আমরা দুআ করি, আপনিও দুআ করবেন, কুরআনে আল্লাহ যে দুআটা শিখিয়েছেন:

ربنا هب لنا من أزواجنا وترياتنا قرة أغن

সূরা ফুরকানের ৭৪ নাম্বার আয়াতের যে দুআটা- এটা আপনি সিজদায় গিয়ে এবং অন্য সময় বারবার করবেন, স্বামীর জন্য হেদায়াত চাইবেন, আমরাও দুআ করি আল্লাহ আপনাদের দুনিয়া এবং আখিরাতে সুন্দর একটি দাম্পত্যজীবন দান করুন।

২৬
প্রশ্ন-২২: আমার একাউন্টে ৫০ হাজার টাকা আছে। ওটার যাকাত দিতে হবে কি না?
উত্তর: জি, আপনার এই পঞ্চাশ হাজার টাকা যদি পূর্ণ বছর থাকে, ৩৫৪ দিনের চান্দ্র বছর যদি অতিক্রম করে তাহলে আপনাকে যাকাত দিতে হবে। কারণ যাকাতের নিসাব। সোনা বা রূপা দ্বারা হয়। এবং রূপার দাম যেহেতু কম এজন্য রূপাকেই আমরা বেজ ধরব। তাতে আপনি যাকাত দানকারী হয়ে যাবেন আর গরিবেরও অধিকার বেড়ে যাবে। এজন্য সাধারণভাবে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা আমাদের বর্তমান বাজারে ত্রিশ পঁয়ত্রিশ হাজার টাকায় পাওয়া যায়। তাই পঞ্চাশ হাজার টাকা থাকলে আপনাকে যাকাত দিতে হবে।

২৭
প্রশ্ন-২৩: প্রাণির ছবিযুক্ত পোশাক পরে নামায হবে কি না?
উত্তর: অবশ্যই ক্ষতি হবে। শুধু প্রাণির ছবি নয় যে কোনো পূজ্য বিষয় যেমন পোশাকে বা গায়ে যদি ক্রুশের চিহ্ন থাকে; ক্রুশ কিন্তু কোনো প্রাণির ছবি নয়, কিন্তু একটা নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষ ওটাকে পূজার বিষয় মনে করে। এই ধরনের যে কোনো ছবি, প্রাণির ছবি শরীরে বা পোশাকে থাকলে সালাত মাকরুহ হবে। অত্যন্ত গোনাহের কাজ হবে। যেটা। হাদীস এবং ফিকহে বারবার বলা হয়েছে।

২৮
প্রশ্ন-২৪: কোনো ব্যক্তি যদি কোনো কারণবশত রোযা রাখতে না পারে, সেক্ষেত্রে কাফফারা দিলে কি আদায় হবে?
কোনো ব্যক্তি যদি কোনো কারণবশত রোযা রাখতে না পারে, হয়তো তার কষ্ট হয়, সেক্ষেত্রে কাফফারা দিলে কি আদায় হবে?

উত্তর: আসলে কষ্ট বলতে আপনি কী বোঝাচ্ছেন! কষ্টের মাত্রা রয়েছে। একটা হল আমার কষ্ট হচ্ছে। আরেকটা হল আমার শরীরের ক্ষতি হচ্ছে। সেরেফ কষ্টের জন্য ততা রোযা ছাড়া যাবে না। কিছু কষ্ট তো করতেই হবে। কষ্টের মাধ্যমেই আমাদের ইবাদত করতে হয় আমাদের নিজেদের কল্যাণের জন্য। কষ্ট করে শরীরচর্চা না করলে মেদ হয়ে যায়। কষ্ট করে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ না করলে অসুস্থ হয়ে পড়ব। এই কষ্টের জন্য রোযা বাদ দেয়ার প্রশ্ন ওঠে না। তবে যদি ক্ষতি হয়, রোগ বেড়ে যায়, অসুস্থতা আসে, সেক্ষেত্রে তিনি রোযা ছেড়ে দেবেন। যদি সামনে ভালো হওয়ার আশা থাকে তাহলে রোযাগুলোর কাজা করবেন। না হলে প্রতিটি রোযার বিনিময়ে একজন দরিদ্রকে দুই বেলা খাওয়াবেন। অথবা একটা রোযার জন্য একটা ফিতরা পরিমাণ বাদ্য বা অর্থ দরিদ্রকে দিয়ে দিবেন।

২৯
প্রশ্ন-২৫: মাযহাব মানাটা ফরয, ওয়াজিব নাকি সুন্নাত?
মাযহাব সম্পর্কে জানতে চাই। মাযহাব মানাটা ফরয, ওয়াজিব নাকি সুন্নাত? যদি মাযহাবই মানতে হয় তাহলে মুহাম্মাদ (ﷺ) যেভাবে নামায পড়েছেন ওই নামাটা কেন ফলো করি না। মুহাম্মাদ (ﷺ) কোন মাযহাবে ছিলেন?

উত্তর: আসলে মাযহাব নিয়ে আমরা অকারণে তিলকে তাল বানিয়ে ফেলেছি। মাযহাব মানে হল- মত। দীনকে বোঝার জন্য কোনো না কোনো একজন মানুষের মতামতের উপর নির্ভর করতে হয়। যারা মাযহাব মানার কথা বলছেন তারা কেউই আসলে মাযহাব মানেন না। ইমাম আবু হানীফা রাহ.এর কথা বলি। আমাদের সমাজের হানাফিরা কিন্তু এক নয়। এক হানাফি আরেক হানাফিকে কাফের বলছে। আমরা সবাই যদি হানাফি হতাম তাহলে কেন একজন আরেক জনকে কাফের বলছি! তার অর্থ হল আমরা আসলে কোনো না কোনো একজন আলেমের মত মানি। আমরা অনেক সময় মাযহাবকে ব্যবহার করি। আমরা নিজেকে হানাফি বলি। আবার নিজেরাই আবূ হানীফার অনেক মতের বিরোধিতা করি। এ জন্য মূল কথা হল, আমাদের দীন হল কুরআন এবং সুন্নাহ মেনে চলা। কুরআন সুন্নাহ মানার জন্য সাধারণ মানুষকে অবশ্যই কোনো না কোনো প্রাজ্ঞ আলেমের উপর নির্ভর করতে হবে। এমন কি আমরা যারা হাদীস মানতে চাই তারাও তো হাদীস বুঝি না। এই হাদীসটা সহীহ আমাকে এই কথাটা বলতে গেলে বলতে হয় এটা শায়খ আলবানি বলেছেন, নয়তো গোনাহগার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর বলেছেন। অথবা অন্য কেউ বলেছে। তার মানে আপনি আমার মাযহাব অনুসারে হাদীসটাকে সহীহ বললেন। তাই দীন বোঝার জন্য মাযহাবের সহায়তা নেয়া। মাযহাব একটা উপকরণ। এটাকে দীন মনে করার কোনো সুযোগ নেই। আবার কাউকেই মানব না তাহলে আমরা কুরআন সুন্নাহ বুঝব কী করে! এটা নিয়ে প্রান্তিকতা আমরা পরিহার করি। আরেকটা ব্যাপার আপনি জিজ্ঞেস করেছেন। আমরা কেন রাসূল (ﷺ) এর মতো সালাত আদায় করছি না! এটা নিয়েও আমরা প্রান্তিকতায় চলে গিয়েছি। হানাফি মাযহাবে যে সালাত আদায় করা হয়, আমরা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত রাসূল (ﷺ) এর আমলের বিপরীত কোন আমলটা করি? শুধু ৭/৮ বিষয়ে মতভেদ আছে। এক্ষেত্রেও উভয়পক্ষের হাদীস রয়েছে। হয়তো কেউ একটাকে জোরালো বলেছেন, কেউ অন্যটাকে জোরালো বলেছেন। কাজেই হানাফিরা অথবা শাফেয়িরা কিংবা আহলে হাদীসরা বা হাম্বলিরা রাসূল (ﷺ) এর সালাত আদায় করছেন - এটা ঠিক কথা নয়। সালাতের ভেতরে কয়েকশ বা হাজারখানেক সুন্নাত আমল আছে। এর ভেতরে মতভেদ মাত্র ৭/৮ জায়গায়। এই মতভেদের ক্ষেত্রেও একাধিক হাদীস রয়েছে। কাজেই আমরা প্রান্তিক না হই। আমাদের হৃদয়কে উদার করি। অন্তত হাদীস যতগুলো সহীহ আছে সবগুলোকে স্বীকৃতি দিই।

৩০
প্রশ্ন-২৬: জামাআতে সালাত আদায় করার সময় ইমামের পিছনে সুরা ফাতিহা পড়তে হবে কি না?
জামাআতে সালাত আদায় করার সময় ইমামের পিছনে সুরা ফাতিহা পড়তে হবে কি না? অনেক সময় দেখা যায় ফাতিহা পড়তে গেলে আমার পড়ার আগেই ইমাম সাহেব রুকুতে চলে যান। সেক্ষেত্রে আমি কী করতে পারি?

উত্তর: ইমামের পেছনে সুরা ফাতিহা- এক্ষেত্রে পড়া, না পড়া এবং কোনো কোনো সময় পড়া তিন রকম হাদীস রয়েছে। নিরপেক্ষ বিচারে হাদীসগুলোকে অস্বীকার করা ঠিক নয়। আপনি যেটা প্রশ্ন করেছেন তার সহজ, সংক্ষিপ্ত উত্তর হল, যে সালাতে কিরাআত জোরে পড়া হয়- ফজর, মাগরিব, ইশা, জুমুআ, ঈদ- এই সকল সালাতে আমরা সূরা ফাতিহা পড়ব না। আর যেসকল সালাতে কিরাআত আস্তে পড়া হয়, সেখানে আমরা সূরা ফাতিহা পড়ব। সুযোগ পেলে অন্য সূরাও পড়ব। হাদীসের আলোকে এবং ফিকহি ইমামগণের মতের আলোকে এটা অত্যন্ত সুন্দর, নির্ভরযোগ্য এবং সমন্বিত মত। ফকীহদের ভেতরে বাংলাদেশের খুব প্রসিদ্ধ আলেম শামসুল হক ফরিদপুরী রাহ. এটাকে খুব জোর দিয়েছেন। মুহাদ্দিসদের ভেতরে শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানি এটাকেই জোর দিয়েছেন। আর অন্যান্য পুরনো মত তো আছেই। এটাই সমম্বিত ও সুন্দর মত।

৩১
প্রশ্ন-২৭: তারাবীহ না পড়লে রোযার কোনো ক্ষতি হবে কি না?
উত্তর: জি, না। রোযা রমাযান মাসের একটা ফরয ইবাদত। তারাবীহ রমাযান মাসের একটা সুন্নাত ইবাদত। দুটো সম্পূর্ণ পৃথক ইবাদত। একই মাসে আমরা করি। কেউ যদি তারাবীহ পড়তে না পারেন বা কম পড়েন অথবা একা পড়েন বা মোটেও না পড়েন এর জন্য রোযার কোনো ক্ষতি হবে না। তবে রমাযান মাসের একটা অত্যন্ত। নেক আমল থেকে তিনি বঞ্চিত হবেন।

৩২
প্রশ্ন-২৮: আসমান ও জমিন কি আল্লাহর নির্দেশে স্থির রয়েছে? কিন্তু বিজ্ঞান তো বলছে কোনো কিছুই স্থির নয়।
পবিত্র কুরআনে সূরা রুমের পঁচিশ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে:

ومن آياته أن تقوم الماء والأرض بأمره

একটা অনুবাদে দেখলাম, এই আয়াতের অর্থ করা হয়েছে- এটাও আল্লাহর নিদর্শন যে আসমান ও জমিন তার নির্দেশে স্থির রয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞান তো বলছে কোনো কিছুই স্থির নয়। সবকিছু ঘুরছে। এই ব্যাপারটা জানতে চাচ্ছি।

উত্তর: এটা হল অনুবাদের ভুল। কুরআন পড়ার অর্থ অনুবাদ পড়া নয়। অনুবাদের মাধ্যমে একজন অনুবাদক কুরআন পড়ে যা বুঝেছেন সেটা আমরা বুঝি। একটা প্রাথমিক ধারণা গ্রহণ করি। কিন্তু আরবি থেকে কুরআন সরাসরি বুঝলে সঠিকভাবে বোঝা যায়। এটাই ধর্মগ্রন্থের বৈশিষ্ট্য। অন্য সকল ধর্মগ্রন্থ, বিশেষ করে বাইবেলের মূল ভাষার কোনো পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায় না। আমরা অনবাদ পড়ি। অনুবাদের অনুবাদ পড়ি। আর অনুবাদের মধ্যে কত তেলেসমাতি যে হয় সেটা বলার সময় নেই। কুরআনের মূল আরবি টেক্সটা আমাদের সংরক্ষণে আছে।

ومن آياته أن تقوم السماء والأرض بأمرير

এই আয়াতের মধ্যে (আরবি) এসেছে (আরবি) থেকে, যার অর্থ দণ্ডায়মান থাকা, প্রতিষ্ঠিত থাকা। এর অর্থ স্থির থাকা নয়। আমি নৌকার উপরে দাঁড়িয়ে থাকি, তার মানে নৌকা চলছে আমি দাঁড়িয়েই আছি। এখানে উদ্দেশ্য স্থির থাকা নয়, প্রতিষ্ঠিত থাকা, টিকে থাকা।

৩৩
প্রশ্ন-২৯: শর্ট জামা পরে নামায আদায় করলে নামায হবে কি না?
উত্তর: শর্ট জামা বলা হয় হাতা শর্ট অথবা ঝুলের দিক থেকে শর্ট। সালাতের মূল বিষয় হল, হাটুর নিচে থেকে শুরু করে নাভি পর্যন্ত ঢেকে রাখা ফরয। এবং দুই কাঁধসহ উপর অংশ ঢেকে রাখা ওয়াজিব অথবা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। কাঁধ যদি ঢাকা থাকে আর কনুই খোলা থাকে তাহলে সালাতের কোনো ক্ষতি নেই। তবে বড় হাতা গুটিয়ে রাখা নামাযের জন্য বেয়াদবি, এটা করবেন না। শর্ট হাতার জামা বা গেঞ্জিতে সালাত সহীহ হবে কোনো অসুবিধা নেই।

৩৪
প্রশ্ন-৩০: কুরআন খতমে একটা ওয়ার্ড ভুল পড়েছি। তিলাওয়াতের কারণে ছওয়াব হয়েছে নাকি ভুল পড়ার কারণে গোনাহ হয়েছে?
আমার প্রশ্ন হল, রোযা দশটা হলে আল্লাহর রহমতে আমি কুরআন খতম দিয়েছি। কিন্তু সমস্যা হল বিশ পারা পর্যন্ত একটা ওয়ার্ড আমি ভুল পড়েছি। কিন্তু একুশ পারা থেকে আবার সেটা শুদ্ধ করে নিয়েছি। এখন আমার জিজ্ঞাসা হল, এই কুরআন তিলাওয়াত থেকে আমার ছওয়াব হয়েছে নাকি ওই ভুল পড়ার কারণে গোনাহ হয়েছে?

উত্তর: আমাদের বুঝতে হবে, আমাদের যত লেনদেন অথবা মুআমালাত আছে, এর ভেতর সবচে’ সহজ, আন্তরিক, প্রিয় লেনদেন হল আল্লাহ তাআলার সাথে। আল্লাহ তাআলা আপনার মনের আগ্রহ এবং সাধ্যমতো চেষ্টা দেখবেন। আল্লাহ তাআলা এমন কোনো মহাজন নন যে, উনিশ-বিশ হলেই আপনার পুরোটা কেটে দেবেন। এমন কোনো স্কুল শিক্ষকও নন। কাজেই আপনি সাধ্যমতো পড়েছেন এবং অনিচ্ছাকৃত যে ভুল হয়েছে এটা আল্লাহ ক্ষমা করবেন। আপনার খতম হয়ে গেছে। হয়তো ওই ভুলটা করলে আপনার ছওয়াব আরেকটু বেশি হত। এই ভুলের জন্য ছওয়াব কিছুটা কমতে পারে। এটা ছাড়া আর কিছু নিয়ে আপনি দুশ্চিন্তা করবেন না।

৩৫
প্রশ্ন-৩১: মাকরুহ শব্দের অর্থ কী? এটা করলে গোনাহ হয় নাকি ছওয়াব হয়?
আমরা অনেক সময় বলি যে, এটা করলে নামায মাকরুহ হয় বা ওটা খাওয়া মাকরুহ। আসলে মাকরুহ শব্দের অর্থ কী? এটা করলে গোনাহ হয় নাকি ছওয়াব হয়?

উত্তর: মাহরুহ শব্দের অর্থ হল অপছন্দনীয় বা অপছন্দকৃত। যে কাজটা কুরআন বা সুন্নাহর আলোকে অপছন্দনীয় হয়, অল্প গোনাহ হয়, তবে হারাম নয়, মহাগোনাহ নয় এগুলোকে মাকরুহ বলা হয়। এটা করলে নামায মাকরুহ হবে অর্থাৎ নামাযের মধ্যে একটা অপছন্দনীয় কাজ করার কারণে আপনার সোয়ব কমে যাবে অথবা অল্পকিছু গোনাহ হবে যেটা আপনি তাওবা করলে আল্লাহ মাফ করে দেবেন।

৩৬
প্রশ্ন-৩২: আমার স্ত্রীর নিসাব পরিমাণ স্বর্ণ আছে। আমি কি তার যাকাত দেব না আমার স্ত্রী প্রদান কবে?
উত্তর: সোনা যার যাকাত তার। এটা যদি আপনার সোনা হয়, স্ত্রীকে পরার জন্য উপহার দিয়েছেন, চাইলেই নিয়ে নিতে পারবেন। তাহলে আপনাকেই যাকাত দিতে হবে। আর যদি স্ত্রীকে দিয়ে দেন, স্ত্রীর ইচ্ছার বাইরে নিতে পারবেন না, স্ত্রী ইচ্ছা করলে বিক্রয় করতে পারবেন, তাহলে ওটার মালিক আপনার স্ত্রী (এবং এটাই স্বাভাবিক। যদি স্ত্রীকে দেয়ার পরে আবার নিয়ে নেন তাহলে আপনি জালিম) । এ ক্ষেত্রে স্ত্রীই যাকাত দেবেন। আপনি যদি দিয়ে দেন এটা আপনার পক্ষ থেকে স্ত্রীর জন্য হাদিয়া হবে। এটা ভালো কাজ। আপনি ছওয়াব পাবেন। কিন্তু ফরয আপনার স্ত্রীর উপর।

৩৭
প্রশ্ন-৩৩: আমার পেটে প্রচণ্ড গ্যাস হয়, ওযু রাখতে পারি না। তো নামায এবং কুরআন তিলাওয়াত কীভাবে করতে পারি?
উত্তর: সালাত আদায় করতে যতটুকু সময় আপনার লাগে অতটুকু সময় যদি আপনি ওযু রাখতে পারেন, তাহলে আপনি প্রত্যেক সালাতের জন্য নতুন করে ওযু করবেন। আর ওযু অসম্ভব হলে তায়াম্মুম করবেন, যদি শারীরিক কোনো অসুবিধা থাকে। আর শুধু তিলাওয়াত করতে ওযু লাগে না। কুরআনের পিওর কপি ধরতে ওযু লাগে, এটা সাহাবিদের যুগ থেকে একটা সুদৃঢ় মত। সেক্ষেত্রে আপনি তাফসীর বা তরজমাসহ কুরআন পড়বেন, হাতে ধরে পড়বেন কোনো অসুবিধা নেই। আর এমন যদি হয় নামাযের ওই সময়টুকুও আপনি ওযু রাখতে পারেন না, এক্ষেত্রে আপনি মাযুর। ওযু। করে সালাত শুরু করবেন। সালাতের ভেতর ওযু চলে গেলে ওযু করা লাগবে না।

৩৮
প্রশ্ন-৩৪: আমার ডিপিএস আছে। এর উপর যাকাত দিতে হবে কি না?
উত্তর: জি, ডিপিএস এবং সকল রকমের সঞ্চিত অর্থের যাকাত দিতে হবে। যেটার মালিক আপনি। আপনি চাইলে ফেরত পাবেন। ডিপিএসসহ ব্যাংকে যতো রকম টাকা রাখা হয়, সবকিছুর মালিক আমরা। আমরা চাইলে ফেরত পাব। যে পরিমাণ অর্থ আমি জমা দিয়েছি এবং এই বছরে চাইলে যতটুকু লাভ আমি পাব (যদি শরীআহসম্মত হয়), এই পুরো টাকার যাকাত দিতে হবে। আমার অর্থের সম্পূর্ণ যাকাত দিতে হবে।

৩৯
প্রশ্ন-৩৫: চিল্লা দেয়ার মানত করেছিলাম কিন্তু চিল্লা দিতে পারছি না। এখন আমার করণীয় কী?
আমি প্রচণ্ড অসুস্থ ছিলাম, তখন চিল্লা দেয়ার মানত করেছিলাম। এখন আমি সুস্থ, কিন্তু চিল্লা দিতে পারছি না। এখন আমার করণীয় কী?

উত্তর: আল্লাহর কাছে কোনোকিছু নিয়ত করলে, কাজটা যদি শরীআতসম্মত হয়, সেটা পালন করতে হবে। আপনি আল্লাহর কাছে ওয়াদা করেছেন, পালন করতে হবে। কাজেই (চিল্লা এটা স্বাভাবিকভাবে শরীআতসম্মত কাজ) যদি আপনার শরীআতসম্মত অন্যকোনো বাধা না থাকে, স্ত্রী-পরিবারের দায়িত্ব না থাকে, তাদেরকে ঠিকমতো রেখে যেতে পারেন, তাহলে আপনি চেষ্টা করবেন অবশ্যই এই দায়িত্ব, যেটা আল্লাহর কাছে ওয়াদা করেছেন, এটা পালন করবেন। এটাই শরীআতের বিধান।

৪০
প্রশ্ন-৩৬: কুরআন শুধু তিলাওয়াত পড়ব নাকি অনুবাদসহ পড়ব?
আমি কুরআন খতম করতে চাই। ছয় পারা তিলাওয়াত করেছি। এখন চাচ্ছি শুধু তিলাওয়াত না, বরং অনুবাদসহ পড়ব। এখন এই ছয় পারা বাদ দিয়েই অনুবাদসহ পড়ব নাকি শুরু থেকে পড়া আরম্ভ করব?

উত্তর: শুরুতেই আপনাকে মোবারকবাদ জানাই যে অর্থসহ কুরআন পড়ার চেতনা আল্লাহ তাআলা আপনাকে দান করেছেন। আসলে কুরআন তিলাওয়াত একটি ইবাদত। তবে অর্থ অনুধাবন করা, হৃদয় নাড়িয়ে পড়া এটা মূল ইবাদত। আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেছেন:

الذين آتيناهم الكتاب يثلونه حق تلاوته

হক তিলাওয়াত অর্থ বুঝে তিলাওয়াত করা। হাদীসে এটাই এসেছে। এখন আপনার প্রশ্নের উত্তর হল, আল্লাহ তাআলার সাথে আমাদের যে লেনদেন, এটার চেয়ে সহজ আর কিছু নেই। আপনি যদি প্রথম থেকে পুরা অর্থসহ পড়েন ছওয়াবটা বেড়ে যাবে। আর আপনি যদি মনে করেন কুরআন খতমটা করতে হবে, বাকিটা অর্থসহ পড়ব আলহামদুল্লিাহ। পরের যে চব্বিশ পারা অর্থসহ পড়বেন এর ছওয়াবটা বেশি হবে। ওটারও তিলাওয়াত এবং খতমের ছওয়াব আপনি পেয়ে যাবেন। আপনি যদি মনে করেন শেষ করা দরকার, সপ্তম পারা থেকে অর্থসহ শুরু করেন। আমরা দুআ করি আল্লাহ তাআলা দ্রুত আপনাকে অর্থসহ কুরআন খতম করার তাওফীক দান করুন, আমীন।

৪১
প্রশ্ন-৩৭: আশেপাশে কোনো এক মসজিদে আযান দিলে কি আমি সাথে সাথে নামাযটা পড়তে পারব?
(এক নারীর প্রশ্ন) আমাদের আশেপাশে অনেক মসজিদ আছে। কোনো এক মসজিদে আযান দিলে কি আমি সাথে সাথে নামাযটা পড়তে পারব? নাকি সব মসজিদে আযান শেষ হওয়ার পর নামায পড়ব?

উত্তর: আসলে আযানের চেয়েও জরুরি হল ওয়াক্ত হওয়া, সময় হওয়া। আমাদের দেশে সাধারণত রমাযানে ফজরের আযান সময় মতো দেয়া হয়। মাগরিবেও সময় মতো দেয়া হয়। অনেক ওয়াক্তে বিলম্বে দেয়া হয়। যেমন যুহরের ওয়াক্ত বারোটার আগে বা বারোটার পরে শুরু হয়। আমরা আযান দিই সোয়া একটা বা তারও পরে। এজন্য যারা ঘরে সালাত আদায় করবেন, যাদের জামাআতে যাওয়ার কোনো জরুরত নেই, তারা ওয়াক্ত হলেই ঘরে সালাত আদায় করতে পারেন, কোনো অসুবিধা নেই। কাজেই আযান হওয়ার পরপরই আপনি সালাত আদায় করবেন। মসজিদের জামাআতের জন্য অপেক্ষা করা মহিলাদের জন্য কোনো নির্দেশনা নয়।

৪২
প্রশ্ন-৩৮: নাসিরুদ্দীন আলবানী রাহ. বই থেকে আমি জানতে পেরেছি নারী-পুরুষের নামাযে কোন পার্থক্য নেই- এটা কি সহীহ?
(এক নারীর প্রশ্ন) রাসূলের নামায নামের বই, যেটা লিখেছেন নাসিরুদ্দীন আলবানী রাহ., অনুবাদ করেছেন সিরাজুল ইসলাম, এই বই থেকে আমি জানতে পেরেছি নারী-পুরুষের নামাযের ভেতর কোন পার্থক্য নেই- এটা কি সহীহ? আমি পুরুষের মতো সেজদা করি দেখে একজন ১০০% নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে আমার নামায হচ্ছে না।

উত্তর: বড় দুঃখজনক, আমরা অন্য সব ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে জেনে বলি। বিজ্ঞান বিষয়ে, মেডিসিন বিষয়ে কথা বলতে জেনে বলি। না জানলে বলতে ভয় পাই যে, বলে আবার ঠকব কি না। কিন্তু দুর্ভাগ্য, দীনের ব্যাপারে আমরা সবাই মূর্ষতার সাথেই কথা বলি। আপনি ওই ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করেন যে, আপনি কোন বইয়ে, কোন কিতাবে পেয়েছেন যে ওরকম নামায পড়লে নামায হবে না! মাযহাবের হোক, বুযুর্গদের হোক একটা বই দেখান তো! সম্পূর্ণ না জেনে, মূখতার সাথে আমরা ফতোয়া দিতে থাকি। অথচ আল্লাহ পাক কুরআনে এটাকে মহাপাপ বলেছেন যে, “আমার নামে, দীনের নামে আন্দাজে কথা বলল না। বোন, জান্নাত যদি বাঙালিদের হাতে থাকত তাহলে কেউ আমরা জান্নাতে যেতে পারতাম না। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ জান্নাতকে নিজের হাতে রেখেছেন। আর আপনি শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী রাহ. এর কথা বলেছেন। তিনি বর্তমান বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস এবং ফকীহও বটে। তিনি তাঁর ‘সিফাতু সালাতিন নাবি' গ্রন্থে নারী পুরুষের সালাতের পার্থক্য নেই মর্মে একটা বক্তব্য এনেছেন ইবরাহীম নাখয়ি থেকে। ইবরাহীম নাখয়ি তাবেয়ি ফকীহ। মূলত ইবরাহীম নাখয়ির এই বক্তব্যটা অন্যান্য গ্রন্থে একটু ভিন্নরকম রয়েছে। নারী-পুরুষের সালাতের পার্থক্য আছে, কি নেই এটা সাহাবিদের যুগ থেকেই বিভিন্ন মত রয়েছে। হাদীস শরীফে নারী পুরুষের সালাতের পার্থক্যে তেমন কিছু বলা হয় নি। একটু দুর্বল হাদীসে মেয়েদের সাজদা একটু গোটাসোটা হয়ে করতে বলা হয়েছে। এই হাদীসটা মুরসাল সহীহ। সাহাবির নাম নেই এজন্য দুর্বল। আর কোনো কোনো আরো দুর্বল হাদীসে মেয়েদের রুকু এবং বসার ক্ষেত্রে ভিন্নতার সুযোগ দেয়া হয়েছে। অবশ্য ছেলেদের মতো উঁচু হয়ে বসতে মেয়েদের প্রকৃতিতেও একটু কষ্ট হয়। আর এই পার্থক্যগুলো সবই মুস্তাহাব পর্যায়ের। কোনো নারী যদি পুরুষের মতো সালাত আদায় করে, এটাতে কোনো সমস্যা নেই। আবার এই হাদীসগুলোর ভিত্তিতে রুকু সিজদা এবং বৈঠকে যদি একটু পার্থক্য করে তাতেও কোনো সমস্যা নেই। কারণ সাহাবিদের যুগ থেকেই বিভিন্ন সাহাবি এব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করেছেন।

৪৩
প্রশ্ন-৩৯: মুনিবের সাথে ক্রীতদাসীর ফিজিক্যাল রিলেশনের ব্যাপারে ইসলামের বক্তব্য জানতে চাই।
উত্তর: ইসলামই সর্বপ্রথম দাসপ্রথাকে সীমিত করে। দাসপ্রথা পৃথিবীর প্রায় শুরু থেকেই চলে আসছে। আমরা জানি, যখন থেকে পুঁজিব্যবস্থা তৈরি হয়, সামন্তব্যবস্থা তৈরি হয়, তখন থেকেই দাসপ্রথা জন্ম নেয়। বিভিন্ন ধর্মে, বাইবেলে, বেদে, গীতায় দাসপ্রথাকে সমর্থন করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা দাসপ্রথাকে একেবারে মিটিয়ে দেন নি। কারণ, তখন দাসপ্রথার উপর অর্থনীতির ভিত্তি ছিল। পাশাপাশি দাসদাসী যেন নতুন করে না হয়, যারা আছে তারা যেন মুক্ত হয় এ জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা দিয়েছেন।

বাধ্যতামূলক দাস মুক্ত করা, যাদের সামর্থ্য আছে তাদের মুক্ত করে দেয়া.... তারমধ্যে একটা হল, কারো যদি ক্রীতদাসী থাকে, তাকে যদি স্ত্রী হিসেবে ব্যবহার করে এবং তার গর্ভে সন্তান হয়- ওই দাসী আর দাসী থাকে না। সে মুক্ত হয়ে যায়। এই জন্য দাসীকে কেউ স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে চাইলে সে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। এবং এর মাধ্যমে তার মুক্তি পাওয়ার একটা পথ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে ইসলামের নির্দিষ্ট ব্যবস্থা রয়েছে। বিবাহের মতোই। অনেক শর্তসাপেক্ষ। আর যেহেতু দাস প্রথাই নেই, কাজেই কোনো স্বাধীন মানুষকে ক্রয় করা জঘন্যতম হারাম। বিক্রয় করা জঘন্যতম হারাম। এর মাধ্যমে কোনো দাসদাসী হয় না। যেগুলো ছিল তাদেরকে আস্তে আস্তে কমানো হয়েছে। এক পর্যায়ে উঠে গিয়েছে। কাজেই নতুন করে দাস বা দাসী হিসেবে কাউকে গ্রহণ করা, স্বাধীন মানুষকে বিক্রয় করা, ধরে এনে বিক্রয় করা এগুলো জঘন্যতম অপরাধ। এর মাধ্যমে কেউ দাস হিসেবে গণ্য হয় না। ইসলাম এই প্রথাকে খুবই নিরুৎসাহিত করেছে। প্রথমত একটা চৌবাচ্চায় পানি আসে। পানির নালাগুলো বন্ধ করে দিলে পানি আসা বন্ধ হয়ে যাবে। এরপরে যদি বেরোনোর ড্রেন করে দেন, তাহলে আস্তে আস্তে কমতে থাকবে। অনেক সময় আমাদের মনে হয়, মদের মতো দাসপ্রথা একবারে হারাম করে দিলেই তো হত। সমস্যা হয়েছিল যে, তঙ্কালীন অর্থনীতি, ব্যবসা, বাণিজ্য, ট্রেড- সবকিছু এই দাসব্যবস্থাপনার উপরে ছিল এবং দাসেরাও পরনির্ভর ছিল। আল্লাহ কুরআনে বলেছেন:

والذين يبتغون الكتاب يما ملكت أيمانكم فگابوهم إن علمتم فيهم خيرا

যদি কোনো ক্রীতদাস মুক্ত হতে চায়, তোমরা যদি তাদের যোগ্যতা পাও, তাদেরকে মুক্ত হতে সাহায্য করো। এবং সর্বশেষ ইনস্টলমেন্টগুলো তোমরা দিয়ে দাও। এটা সূরা নূরে আল্লাহ পাক বলেছেন। (সূরা নূর, আয়াত-৩৩) ।

৪৪
প্রশ্ন-৪০: সুদের টাকার সাথে যুক্ত হওয়ার কারণে আমার ইবাদত বন্দেগী কিছুই কাজে আসবে না? এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কী?
আমি ব্যাংকে চাকরি করি। কিন্তু বিভিন্ন মানুষ বলে যে ব্যাংকে চাকরি করা সম্পূর্ণ হারাম। সুদের কাজ। আবার অনেকে বলে যে, না, আপনি তো পারিশ্রমিকের বিনিময়ে টাকা নিচ্ছেন। সুদের টাকার সাথে যুক্ত হওয়ার কারণে আমার ইবাদত বন্দেগী তো কিছুই কাজে আসবে না। এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কী? এটাকে আমি মনেপ্রাণে ঘৃণা করছি বা অন্য জায়গায় যাওয়ার সুযোগ যদি না থাকে আমার, তাহলে আমি এখন কী করতে পারি?

উত্তর: আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ সুদের লেখক, সুদদাতা, সুদগ্রহীতা, সাক্ষী সবাইকে অভিশাপ দেন। আমরা বিশ্বাস করি, মানবতার বিরুদ্ধে যত অপরাধ আছে, সুদ একটা বড় অপরাধ। এটা নেশা এবং অন্যান্য অপরাধের চেয়েও বড় অপরাধ। যা দরিদ্র এবং ধনীর মধ্যে পার্থক্য বাড়ায়। এবং মানুষকে শোষণ করে। এই পাপে আপনি কোনো না কোনোভাবে অংশ নিচ্ছেন, এটা কষ্টকর। এবং আপনার ঈমানও এটা বলছে। তবে বিষয় হল বান্দার অবস্থা আল্লাহ জানেন। আপনি কতটুকু অসহায়, এটা আল্লাহ জানেন। আপনি আপনার অসহায়ত্ব আল্লাহকে বলবেন। চেষ্টা করবেন, দুআ করবেন, আল্লাহ এখান থেকে বের করে অন্য জায়গায় নেন। আর আপনি যে কথাটা বলেছিলেন, আমার ইবাদত কিছুই কবুল হচ্ছে না; বিষয়টা এরকম। আমরা যে দৈহিক ইবাদত করি এর ফরয আদায় হয়ে যাবে। আর আপনি যে ইনকাম করছেন এর ভেতরে সুদসম্পৃক্ত বিষয়টা হারাম। এই হারাম উপার্জন থেকে আমরা যে দান করি, আর্থিক ইবাদত করি, এটা কবুল হয় না। তবে আমাদের দৈহিক ইবাদত নামায রোযা এগুলো কবুল হয়। হারাম যিনি ভক্ষণ করেন তার দুআ কবুল হয় না। আপনি একটা সমস্যার ভেতরে আছেন- ধর্মীয়ভাবে, মানসিকভাবে। আমরা দুআ করি, আপনিও আল্লাহর কাছে দুআ করেন, অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন, হতাশ হবেন না।

৪৫
প্রশ্ন-৪১: আমার স্বামী অসুস্থতার কারণে পরের রোযা গুলো রাখতে পারে নি। এক্ষেত্রে আমার স্বামীর করণীয় কী?
আমার স্বামী একটি রোযা রেখেছে। কিন্তু অসুস্থতার কারণে পরের রোযা গুলো আর রাখতে পারে নি। এক্ষেত্রে আমার স্বামীর করণীয় কী?

উত্তর: যদি কেউ অসুস্থতার কারণে রোযা রাখতে না পারেন, তিনি সুস্থ হওয়ার আশা থাকলে কিছুই করবেন না। সুস্থ হওয়ার পরে রোগুলো কাজা করবেন। এতে কোনো গোনাহ হবে না। আর যদি এমন অসুস্থ হন, সুস্থ হয়ে রোযা রাখার আশা আর না। থাকে, তাহলে প্রতিটি রোযার বিনিময়ে একজন দরিদ্র মানুষকে দুইবেলা খাওয়াবেন। অথবা একটা ফিতরা সমপরিমাণ টাকা কোনো দরিদ্র মানুষকে দিয়ে দেবেন।

৪৬
প্রশ্ন-৪২: ঘুষ দিয়ে আমি যদি কোনো চাকরি নিই, সেই চাকরি থেকে আমি যে ইনকাম করব সেটা হারাম হবে কি না?
বর্তমানে ঘুষ ছাড়া তো চাকরি হয় না। ঘুষ দেয়া তো হারাম। ঘুষ দিয়ে আমি যদি কোনো চাকরি নিই, সেই চাকরি থেকে আমি যে ইনকাম করব সেটা হারাম হবে কি না?

উত্তর: ঘুষ দেয়ার দুটো পর্যায় রয়েছে। একটা হল: যোগ্যতা নেই, ঘুষের মাধ্যমে যোগ্যতা ছাড়াই আমি একটা চাকরি নিয়েছি। এক্ষেত্রে ঘুষও হারাম, চাকরিও হারাম। আরেকটা হল: আমার যোগ্যতা আছে। কিন্তু ঘুষ না দিলে চাকরিটা পাচ্ছি না। অথবা আমার একটা প্রাপ্য আছে- ব্যাংকে প্রাপ্য আছে অথবা জমাজমিতে প্রাপ্য আছে কিন্তু ঘুষ না দিলে আমি পাচ্ছি না। এক্ষেত্রে আমি মাজলুম। ঘুষ দেয়াটা হারাম। কিন্তু যেহেতু জুলুমের শিকার হয়ে দিচ্ছি, দিতে বাধ্য হচ্ছি, আমরা আশা করছি, তাওবার মাধ্যমে আল্লাহ এটা ক্ষমা করবেন। আর চাকরি বৈধ। চাকরির ব্যাপারে কোনো সমস্যা নেই।

৪৭
প্রশ্ন-৪৩: ফিক্সড ডিপোজিড করলেই কি যাকাত আসবে?
উত্তর: আপনার সম্পদ, নগদ অর্থ অথবা সোনা অথবা ব্যবসার পণ্য আপনার মালিকানায় যেখানেই থাক, যদি নিসাব পরিমাণ হয়, অন্তত পঁয়ত্রিশ-চল্লিশ হাজার টাকার বেশি হয়, তাহলে যাকাত দিতে হবে। কাজেই আপনি যদি ফিক্সড করে ব্যাংকে রাখেন অথবা যে কোনোভাবে ব্যাংকে রাখেন, সেই টাকা নিসাব পরিমাণ হলে যদি এক বছর পূর্ণ হয় অবশ্যই যাকাত দিতে হবে।

৪৮
প্রশ্ন-৪৪: একটা মসজিদে অবৈধ সংযোগের বিদ্যুৎ নেয়া হয়েছে। সেই মসজিদে আমি যদি নামায পড়ি আমার নামায হবে কি না?
উত্তর: প্রথম কথা হল, যিনি অবৈধ সংযোগ নিয়েছেন, যারা জানেন, সবাই পাপী হবেন। কিন্তু এর কারণে অন্যদের নামাযের কোনো ক্ষতি হবে না। নামায আপনি যে কোনো জায়গায় পড়ে নিলেই নামায হয়ে যাবে। তবে আপনি যেহেতু জেনেছেন, আমরা অনুরোধ করব, আপনি বিদ্যুতের টাকাটা দিয়ে বৈধ সংযোগ এনে দেন। আমরা সমালোচনা করতে অভ্যস্ত। কোনো ভালো কাজে ইনিশিয়েট করতে, পদক্ষেপ নিতে অনেক সময় অভ্যস্ত না। আপনি দয়া করে অন্যদেরকে বলে, সমালোচনা বা কটু কথা বলে মসজিদের জন্য একটা বৈধ সংযোগের ব্যবস্থা করেন। আল্লাহ তাআলা আপনাকে অনেক জাযা খায়ের (উত্তম প্রতিদান) দিন।

৪৯
প্রশ্ন-৪৫: ঘুমের ভেতরে যদি কোনো অশ্লীল স্বপ্ন দেখা হয় তাহলে কি রোযা ভেঙে যাবে?
উত্তর: আমার প্রশ্ন হল ঘুমের ভেতরে যদি কেউ মানুষ খুন করে তাহলে কি ফাসি হবে? আসলে ঘুমের ভেতরের কর্মের জন্য আপনি দায়ী নন। কোনো পাপও হবে না। রোযারও কোনো ক্ষতি হবে না। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ঘুমন্ত মানুষ যতক্ষণ ঘুমিয়ে থাকে তার যা কিছু কর্ম... এমনকি ঘুমন্ত মানুষ বিছানা থেকে পড়ে একজন মানুষকে যদি মেরেও ফেলে, এই জন্যও তার কোনো পাপ লেখা হবে না।

৫০
প্রশ্ন-৪৬: আমার স্বর্ণ আছে কিন্তু যাকাত দেয়ার মতো টাকা নেই। আমি কী করব?
উত্তর: মনে করি আপনার আট ভরি সোনা আছে। আট ভরি সোনার দাম হয়তো তিন লক্ষ টাকা। এর যাকাত আসবে ছয় বা সাত হাজার টাকা। তিন লক্ষ টাকার স্বর্ণ আমি ব্যবহার করতে পারি, অথচ এক বছর ধরে আমি ছয় হাজার টাকা আল্লাহর পাওনা দিতে পারব না এটা বাস্তবে মেলে না। আমার একটা সুন্দর বাড়ি আছে, ট্যাক্স হয়েছে বিশ হাজার টাকা। আমি কি বলতে পারব আমার বাড়ি আছে কিন্তু নগদ টাকা নেই, আমি ট্যাক্স দিতে পারব না! সরকার ট্যাক্স নিয়ে ভালো কাজ করেন। খারাপ কাজও করেন। আর আল্লাহ আপনার সম্পত্তির উপরে চেয়েছেন যে আপনি দরিদ্রদেরকে দেবেন। কোনো পুরোহিতকে নয়, আল্লাহকেও দেবেন না। দরিদ্রদেরকে দেবেন, সমাজ বিনির্মাণে দেবেন। আল্লাহ তাআলার কাছে ঋণ হিসেবে জমা থাকবে, তিনি ফিরিয়ে দেবেন আখিরাতে। কাজেই এক্ষেত্রে কৃপণতার সুযোগ নেই। আপনাকে যাকাত দিতেই হবে। অর্থ না থাকলে দুটোর একটা হয় সোনা কমিয়ে নিসাবের নিচে নিয়ে আসুন। অথবা মাসে মাসে জমিয়ে হলেও যাকাত পরিশোধ করে দিন।

৫১
প্রশ্ন-৪৭: অনেক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মেয়েরা গজল গায় বা অনেক কিছু পাঠ করে বা বক্তৃতা করে। এটা কি জায়েয?
উত্তর: মেয়েরা মেয়েদের মজলিসে এগুলো করতে পারে। মেয়েরা মেয়েরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করবেন এতে কোনো সমস্যা নেই। পুরুষদের মজলিসে পুরুষদেরকে শুনিয়ে সুললিত গলায় গজল বলা শরীআতে সঠিক নয়। আল্লাহ তাআলা নারী পুরুষের কথা বলতে নিষেধ করেন নি। কিন্তু কথা আর্কষণীয় করে বলতে নিষেধ করেছেন।

فلا تخضعن بالقول

কথা স্বাভাবিক বলতে হবে। কাজেই সাধারণ অনুষ্ঠানে মেয়েরা সুন্দর করে গান গাইবে, ইসলামি গান হলেও এটা আসলে শরীআহ সমর্থন করে না। তবে মেয়েদের মজলিসে তারা এটা করতে পারে।

৫২
প্রশ্ন-৪৮: কত টাকা হলে যাকাত ফরয হয়?
উত্তর: যদি কারো কাছে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার দাম অথবা সাড়ে সাত ভরি সোনার দাম থাকে, যেটা কম হয়, বর্তমানে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার দাম প্রায় বত্রিশ তেত্রিশ হাজার টাকা। এই পরিমাণ অর্থ যদি কারো কাছে এক বছর থাকে তাহলে যাকাত দিতে হবে। এর যত বেশি হবে পুরো টাকারই যাকাত দিতে হবে।

৫৩
প্রশ্ন-৪৯: হাত খরচের জন্য কখনো কখনো বাবাকে না বলে কিছু টাকা গ্রহণ করি। এটা আমার জন্য বৈধ কি না?
আমি বাবার সাথে ব্যবসা করি। তবে হাত খরচের জন্য কখনো কখনো বাবাকে না বলে কিছু টাকা গ্রহণ করি। এটা আমার জন্য বৈধ কি না?

উত্তর: যদি পুঁজি বাবার হয়, সবকিছু বাবার হয়, তাহলে বাবার অনুমতি লাগবে। প্রশ্ন শুনে আপনার কিছু পুঁজি বাবার কিছু পুঁজি এরকম মনে হল না। বাবার ব্যবসা, আপনি সেখানে কর্ম করেন, এমন মনে হল। এখানে একটি কথা বলে রাখি, আমাদের সমাজে ভাইয়ের দোকানে ভাই কাজ করে, বাবার ব্যবসায় ছেলে কাজ করে কিন্তু কোনো চুক্তি থাকে না। বেতনের কথা থাকে না। এটা ঠিক নয়। এতে যিনি কাজ করেন তার উপর জুলুম হয়। সন্তান হলেও পিতার দায়িত্ব- তুমি আমার এখানে কাজ করবে, তোমাকে এই পরিমাণ অর্থ বা হাত খরচ দেয়া হবে, এটা বলা। আমরা সন্তানদেরকে কর্মমুখী করব। পরনির্ভরশীল করব না। আর যদি এই ধরণের কোনো কথা না থাকে তাহলে আপনি বাবাকে না বলে টাকা নিতে পারেন না। বাবাকে বলতে হবে আমি মাঝে মাঝে হাত খরচ নেব।

৫৪
প্রশ্ন-৫o: সালামের উচ্চারণ কোনটা সঠিক?
আমাদের সমাজে অনেক রকম সালামের প্রচলন আছে। একেকজন একেক রকম উচ্চারণ করে। সালামের উচ্চারণ কোনটা সঠিক?

উত্তরঃ সালাম মানব সভ্যতায় অত্যন্ত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সম্ভাষণ। প্রত্যেক জাতিই অন্যকে দেখলে সম্ভাষণ করে। মনের মহাব্বত প্রকাশ করে। যেমন: নমস্তে, আদাব, হাই ইত্যাদি। এগুলোতে মনের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ প্রকাশ পায়। আর ইসলাম যেটা দিয়েছে সেটা স্পেশাল দুআও বটে। শ্রদ্ধাবোধের পাশাপাশি সবচে' বড় দুআ: তোমার উপর শাস্তি হোক, রহমত হোক, বরকত হোক। আমরা যখন সেলামালাইকুম বলি, এতে মনের ভালোবাসা প্রকাশ পেলেও কোনো দুআ হল না। বরং বদদুআ হতে পারে। কারণ, সেলাম বললে পাথর বোঝায়। তোমার উপর পাথর টাথর কিছু একটা পড়ুক। এজন্য আমি অনুরোধ করব, আমরা সুন্দর করে আসসালামু আলাইকুম বলব। যদি কেউ বাঙালি হওয়ার কারণে মাখরাজ না হয়, সমস্যা নেই। কিন্তু শব্দটা সুন্দর করে উচ্চারণ করব। আসসালামু আলাইকুম বলব। তাহলে আমরা ছওয়াব পাব। দুআ হবে। আমাদের পারস্পরিক সম্ভাষণও হবে। আল্লাহ কবুল করুন। আমীন।

৫৫
প্রশ্ন-৫১: আমার ৮ বছরের দুইটা বাচ্চার রোযা রাখাচ্ছি- এতে আমার গোনাহ হবে? আসলে এক্ষেত্রে আমার করণীয় কী?
আমার ৮ বছরের দুইটা বাচ্চা। গত বছর রোযা রাখছিল। আমি ভেঙে ভেঙে কয়েকটা রাখতে দিয়েছিলাম। কিন্তু এই বছর একেবারেই মানে না। রোযা থাকবেই। সাহরির আগ পর্যন্ত ঘুমাও না। যদি না ডাকি সাহরি খেয়ে তারপর ঘুমায়। অনেকে আমাকে বলে, এতটুকু বাচ্চার রোযা রাখাচ্ছি- এতে আমার গোনাহ হবে। আসলে এক্ষেত্রে আমার করণীয় কী?

উত্তর: প্রথম কথা আপনার কোনো গোনাহ হচ্ছে না। তবে তাদের শরীরের কোনো ক্ষতি না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। পনেরো ঘন্টার রোযা, ওদেরকে ছোট থেকেই অভ্যস্ত করাতে হবে। সাত বছর থেকে সালাতে অভ্যস্ত করা এবং রোযাও মাঝে মাঝে থাকলে কোনো দোষ নেই। তবে ওদের শরীরে কোনো ক্ষতি না হয়, খেয়াল রাখতে হবে। প্রচুর লিকুইড খাওয়াতে হবে। মাঝে মাঝে রাখবে মাঝে মাঝে ভাঙবে। ওরা যদি জিদ করে রাখে আর শারীরিকভাবে অসুস্থ না হয়, দিনের বেলা ক্লান্ত না হয়, দৌড়াদৌড়ি না করে তাহলে ইনশাআল্লাহ কোনো অসুবিধা নেই। আপনার কোনো গোনাহ হচ্ছে না।

৫৬
প্রশ্ন-৫২: আমার থেকে দচ্ছি আপন ভাইবোনকে যাকাত দেয়া যাবে কি না?
উত্তর: আপনার বোন অথবা ভাই আপনার থেকে আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল এটা বড় কথা নয়। বড় কথা হল যাকাতের যোগ্য কি না! যাকাতের যোগ্য বলতে যা আয় করেন তাতে সংসার চলে না, সবসময় অভাব লেগে থাকে, অস্বচ্ছল এবং ব্যাংকে ব্যালেন্স না থাকে তাহলে অবশ্যই তাকে যাকাত দেয় যাবে। বরং ভাইবোন, আপন আত্মীয়স্বজন, রক্তসম্পর্কের আত্মীয়দের আগে যাকাত দেয়া দরকার। তাদেরকে বাদ দিয়ে অন্যদেরকে দিলে বরং যাকাত কবুল না হওয়ার অনেক ভয় দেখিয়েছেন সাহাবি এবং তাবেয়িগণ। তাদের অধিকার বেশি। তবে সন্তান, সন্তানের সন্তান, পিতামাতা এদেরকে যাকাত দেয়া যাবে না। ভাইবোন অন্যান্য আত্মীয়দেরকে দেয়া যাবে।

৫৭
প্রশ্ন-৫৩: আমি প্রতিবন্ধী। জামাআতে সালাত আদায় করতে পারি না। আমার জন্য সালাত আদায়ের উত্তম সময় কোনটি?
উত্তরঃ আল্লাহর ওলি হওয়া, আল্লাহর প্রেম পাওয়া মানুষের জন্য সবচে’ সহজ। কারণ এখানে কোনো যোগ্যতা লাগে না। কাজেই একজন প্রতিবন্ধী একজন সুস্থ মানুষের চেয়ে অনেক আগে আরো বেশি আল্লাহর প্রিয় বান্দা হয়ে যেতে পারে। তিনি তার সাধ্যের ভেতরে আল্লাহর ইবাদত করবেন। মসজিদে যাওয়া তার জন্য যদি অসম্ভব হয়, তিনি প্রথম ওয়াক্তে সালাত আদায়ের চেষ্টা করবেন। রাসূল (ﷺ) বলেছেন:

أفضل الأعمال الصلاة في أول وقتها

প্রথম ওয়াক্তে সালাত আদায় করা উত্তম (সুনান আবু দাউদ-৪২৬) ।

তবে কোনো কোনো সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে রাসূল (ﷺ) শেষ সময়ের কথা বলেছেন। যেমন ইশার সালাত। ইশার সালাত যদি সুযোগ থাকে একটু দেরি করে, রাতের এক তৃতীয়াংশ পার হওয়ার পরে, দ্বিতীয়-তৃতীয়াংশের শুরুতে, অর্থাৎ রাত দুঘণ্টা হয়ে গেলে পড়া- এটা তিনি মাঝে মাঝে পড়তেন এবং এটাকে উত্তম বলেছেন। বলেছেন, মানুষের কষ্ট না হলে এটাকে আমি ওয়াক্ত হিসেবে ঠিক করে দিতাম। এটা বাদে বাকি সালাতগুলো আপনি প্রথম ওয়াক্তে পড়বেন।

৫৮
প্রশ্ন-৫৪: তাহাজ্জুদ নামায সুন্নাত না কি নফল?
উত্তর: আসলে আমরা অনেক অস্পষ্টতায় ভুগি। মূলত আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে যত বিধান দিয়েছেন তা দুই রকম। একটা হল ফরয। আরেকটা নফল। ফরযের বাইরে যা আছে সবই নফল। সুন্নাত, ওয়াজিব, মুস্তাহাব। সবকিছুই নফলের অন্তর্ভুক্ত। একটা ইবাদত যখন ফরয না হয়, সেটা নফল। নফলের ভেতর যেগুলো রাসূল (ﷺ) নিয়মিত করতেন এগুলোকে আমরা বলি নফল সুন্নাত। কাজেই তাহাজ্জুদ নফল। ফরয নয়। তবে সুন্নাত নফল। অর্থাৎ রাসূল (ﷺ) নিয়মিত এটা পালন করতেন। কুরআন সুন্নাহর আলোকে সবচে' গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত এবং মুআক্কাদ সুন্নাত হল তাহাজ্জুদের সালাত। রাসূল (ﷺ) কখনো ছাড়তেন না। ছাড়লে আপত্তি করতেন। এবং কুরআনে বারবার বলা হয়েছে, কিছু হলেও অন্তত কিয়ামুল লাইল বা তাহাজ্জুদ পড়া। এটা নফল কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ নফল।

৫৯
প্রশ্ন-৫৫: আমি যখন তাশাহহুদ পড়তে, সিজদা করতে যাই তখন পা প্রচণ্ড ব্যথা করে। কীভাবে নামায পড়লে সহীহ হবে?
আমার তিনবার মেজর অপারেশন হয়েছে। আমি দাঁড়াতে পারি ঠিকই, কিন্তু যখন বসি, তাশাহহুদ পড়তে যাই, সিজদা করতে যাই, তখন আমার পা প্রচণ্ড ব্যথা করে। কীভাবে নামায পড়লে আমার নামাযটা সহীহ হবে?

উত্তর: যদি মাটিতে বসে উঠে দাঁড়াতে খুব বেশি কষ্ট হয়, আপনি ফরয সালাত দাঁড়িয়ে পড়বেন। দাঁড়িয়ে সূরা কিরাআত পড়বেন। রুকু করবেন ইশারায়। সিজদাও করবেন ইশারায়। আত্তাহিয়্যাতু আপনি দাঁড়িয়েই পড়বেন। তবে শেষ বৈঠকে যেহেতু আর ওঠা লাগে না তাই শেষ বৈঠক আপনি বসে পড়তে পারেন। বান্দা তার সাধ্যের ভেতরে আল্লাহর ইবাদত করবে। সাধ্যের বাইরে নয়। দাঁড়ানো একটা ফরয। রুকু একটা ফরয। সিজদা একটা ফরয। প্রত্যেকটাকে পরিপূর্ণ আদায় করতে পারলে ভালো। নইলে যতটুকু পালন করা যায়। ফরয সালাত ছাড়া অন্যান্য সকল সালাত আপনি মাটিতে বসে অথবা চেয়ারে বসে উঁচু জায়গায় বসে ইশারায় পড়বেন। এতে সালাত আদায় হয়ে যাবে।

৬০
প্রশ্ন-৫৬: বিতরের নামায সঠিক কোনটা?
বিতরের নামায আমরা ছোটবেলা থেকে পড়ে আসছি, দ্বিতীয় রাকআতে বসি এবং তৃতীয় রাকআতে আরেকটা তাকবীর দিই। কিন্তু এখন শুনছি ওই বৈঠকটা নাকি নাই। এখন আমি এক বছর যাবত এই আমলটা করছি। আমার মনের ভেতর অনেক সন্দেহ। আসলে সঠিক কোনটা?

উত্তর: দুঃখজনক হলেও সত্য, জ্ঞান অনেক সময় আমাদেরকে বিতর্কে নিপতিত করে। রাসূল (ﷺ) প্রায় তেরো প্রকারে বিতর পড়তেন। তাহাজ্জুদসহ বিতর। কখনো একবারে আট রাকআত পড়ে নয় রাকআতে সালাম ফেরাতেন। মোটেও বসতেন না। কখনো একবারে সাত রাকআত পড়তেন। কখনো একবারে পাঁচ রাকআত পড়তেন। তিনি তিন রাকআত বিতির পড়তে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন:

لا تویژوا بتلاني، أوتروا تنفس، أو بسبع، ولا تشبهوا بصلاة المغرب

তোমরা মাগরিবের মতো তিন রাকআত বিতর পড়ো না। পাঁচ বা সাত রাকআত পড়ো। এই হাদীসের অর্থ এই নয় যে তিন রাকআত পড়ব, মাঝখানে বসব, এতেই হয়ে যাবে। তিনি নিশ্চিত বলেছেন পাঁচ বা সাত পড়ো। এর অর্থ হল বিতর তোমরা একটু বেশি করে পড়ো। তবে তিনি নিজে তিন রাকআত পড়েছেন। সাহাবিরা পড়েছেন। এজন্য বিতরের আগে কিছু পড়লে এই হাদীস অনুযায়ী কর্ম করা হবে। বিতর যখন আমরা তিন রাকআত পড়ব, তিনভাবে পড়তে পারি। প্রথম পদ্ধতি হল দুই রাকআত পড়ে সালাম ফিরিয়ে আবার উঠে দাঁড়িয়ে নতুন করে আরেক রাকআতের নিয়ত করে এরপরে সূরা ফাতিহা, সুরা ইখলাস পড়ে আল্লাহু আকবার বলে হাত মুনাজাতের মতো তুলে অথবা হাত বেঁধে কুনুত পড়ে এরপরে রুকু করব। দ্বিতীয় পদ্ধতি হল, আমরা যেভাবে বাংলাদেশে সচারচর পড়ে থাকি। এটা হাদীসে মোটামুটি বোঝা যায়। সাহাবিদের কর্ম দ্বারা প্রমাণিত। এভাবে পড়লে হবে না, অবৈধ, নিষিদ্ধ এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। বরং এটা বললে একটা বিশুদ্ধ পদ্ধতিকে অস্বীকার করা হয়। তৃতীয় পদ্ধতি হল, দুই রাকআত পড়ে মোটেও না বসে সরাসরি উঠে দাঁড়িয়ে তিন রাকআত একবারে পড়ে একইভাবে কুনুত পড়ে এরপরে রুকু করে সালাত শেষ করা। ("সহীহ ইবন হিব্বান ৬/১৮৫; সুনান দারাকুতনি ৪/৩৫৮; মুসতাদরাক হাকিম ১/৪৪৬; সুনান বাইহাকি ৩/৩১)

এটাও সাহাবিরা আমল করেছেন। এবং তাবেয়িনদের আমল আছে। এটাও প্রমাণিত। কাজেই আমার মনে হয় এই ধরনের বিতর্ক- এটা হবেই না, ওটা হবেই না, এক রাকআত বিতির পড়লে হলই না, তিন রাকাত পড়লে হলই না এই বিতর্ক ঠিক না। হাদীস যতটুকু প্রশস্ত আমরা নিজেদেরকে অতটুকু প্রশস্ত করে নিই। নফল, সুন্নাত, মুস্তাহাব, ওয়াজিব ইবাদতগুলো রাসূল (ﷺ) নিজেই বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে পড়েছেন। যেন আমাদের ভেতরে ইবাদতের একাগ্রতা আসে। সবসময় এক রকম পড়লে কম্পিউটার অটোরুটের মতো হয়ে যায়। আল্লাহু আকবার' বলে শুরু করি, সালাম ফিরিয়ে দিই- হুশ থাকে না।

৬১
প্রশ্ন-৫৭: সুদ গ্রহণ করলে নাকি দুআ কবুল হয় না। কথাটা কতটুকু সঠিক?
উত্তর: জি, খুবই সঠিক কথা। তবে শুধু সুদ নয়, যে কোনো হারাম ভক্ষণ করলে দুআ কবুল হয় না। বিভিন্ন হাদীসে বিষয়টা রয়েছে। সহীহ মুসলিমে রাসূল (ﷺ) বলেছেন: অনেক মানুষ আছে যারা আল্লাহর অনেক ইবাদত করে। হজ্জ-উমরাহ করে। আল্লাহর কাছে হাত তুলে দুআ করে। কিন্তু তার খাবার হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পোশাক হারাম, হারাম দিয়ে তার দেহ গঠন হয়েছে। তাই আল্লাহ তার দুআ কবুল করেন না। এতে সকল হারাম শামিল। হারাম মানেই মানুষের ক্ষতি। যৌতুক, চাঁদাবাজি, সুদ, ঘুষ, ফাঁকি দেয়া, পরের জমি দখল করা-সকল হারাম উপার্জন আমাদেরকে আল্লাহ থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে দেয়। এজন্য সুদ আমরা গ্রহণ করব না। জেনেশুনে সুদ নেব না। আল্লাহ সুদের উপার্জন থেকে আমাদের মুক্ত রাখুন।

৬২
প্রশ্ন-৫৮: শেয়ার ব্যবসা হালাল না হারাম জানতে চাই।
উত্তরঃ আসলে ব্যবসা তো হালাল। এবং ব্যবসার বড় দিক হল শেয়ার। আরবিতে যাকে মুশারাকাহ বলে। শেয়ার ব্যবসা মূলত নীতিগতভাবে বৈধ। ইসলাম এগুলোকে অনুমোদন করে। তবে আপনি কোন ব্যবসার শেয়ার করছেন, ব্যবসার প্রকৃতি কী, এবং শেয়ারের ধরন কী- এগুলো আপনাকে বিস্তারিত আলেমদের থেকে জেনে নিতে হবে। শেয়ার ব্যবসা মূলত জায়েয; যদি মূল ব্যবসা বৈধ হয় এবং শেয়ার গ্রহণের পদ্ধতিটা শরীআত সম্মত হয়।

৬৩
প্রশ্ন-৫৯: এক বছর পূর্ণ হওয়ার পরে ব্যবসায় বিনিয়োগের টাকার যাকাত দিতে হবে কি না?
আমার কাছে দশ লাখ টাকা আছে যেটা আমি ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছি। ওটা থেকে যা ইনকাম হয় সেটা দিয়ে আমার পরিবারের খরচটা চলে আর কি। আমার প্রশ্ন হল এক বছর পূর্ণ হওয়ার পরে এই টাকার যাকাত দিতে হবে কি না?

উত্তর: জি ভাই, অবশ্যই যাকাত আসবে। এটা আল্লাহ তাআলার পাওনা। আপনার অন্যান্য পাওনাদারের খরচের সাথে প্রতি মাসে এক দুই হাজার টাকা আল্লাহর পাওনা হিসাবে বরাদ্দ করতে হবে। ওই দশ লাখের উপার্জন থেকে দরকার হলে নিজেদের খাওয়াদাওয়া একটু কমিয়ে হলেও আল্লাহর পাওনা- যেটা আপনি আল্লাহকে ঋণ দিচ্ছেন- ওটা আদায় করতে হবে। এটা কর্যে হাসানা দিচ্ছেন আল্লাহকে। আল্লাহর কাছে ওটা জমা থাকবে। দুনিয়াতেও আল্লাহ বরকত হিসেবে ফিরিয়ে দেবেন।

৬৪
প্রশ্ন-৬০: প্যারালাইসড অবস্থায় নামাযের বিধান কী?
আমার দাদি ছয়মাস ধরে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় আছেন। কখনো তার সংজ্ঞা ফিরে আসে কখনো আসে না। কখন আসে কখন যায় সেটাও আমরা অনেক সময় টের পাই না। তিনি প্যারালাইসডও বটে। এই অবস্থায় তার নামাযের বিধান কী?

উত্তর: সালাতের সম্পর্ক চেতনার সাথে। হুশের সাথে। মানুষ যখন বেহুশ হয়ে যায়, চেতনা লুপ্ত হয়, তার সালাত থাকে না। অনেকেরই বৃদ্ধ বয়সে এমন হয়, আমরা উকণ্ঠিৎ হই- তার সালাতের কী হবে! অথবা কাফফারা দেয়ার চেষ্টা করি। বিষয় হল, মানুষের যখন চেতনা থাকে কিন্তু অক্ষম, তখন চোখের ইশারায়ও সালাত আদায় করতে পারেন। কিন্তু যখন উনি অচেতন হয়ে যান তার আর সালাত ফরযই থাকে না। কাজেই আপনার দাদির এখন আর সালাত ফরয নেই। যদি কখনো হুশ হয়, বুঝতে পারেন, সালাতের কথা বলবেন। যদি অনুভব করতে পারেন, তাহলে উনি পড়বেন। আপনি তায়াম্মুম করে দেবেন। না হলে তার কোনো সালাত ফরয নয়। আপনারা দুশ্চিন্তা করবেন না। তার সেবা করুন। তার শেষ জীবন যেন সুন্দর হয় দুআ করুন। আমরাও দুআ করি।

প্রশ্ন-৬১: রাসূল (ﷺ) এর দুআগুলো একত্রিত করে সূর্যাস্তের সময় এবং সূর্যোদয়ের সময় পড়ার আমলটা ঠিক আছে কি না?

রিয়াযুস সালেহীনের মধ্যে দুআর একটা অধ্যায় আছে। রাসূল (ﷺ) তাঁর সাহাবিদেরকে বিভিন্ন সময়ে দুআগুলো পড়ার তাগিদ দিতেন। ওই দুআগুলো একত্রিত করে সূর্যাস্তের সময় এবং সূর্যোদয়ের সময় আমি পড়ি। এই আমলটা ঠিক আছে কি না?

উত্তর: জি, সকাল-সন্ধ্যায় পড়ার জন্য রাসূল (ﷺ) অনেক দুআ শিখিয়েছেন। এছাড়াও সাধারণ অনেক দুআ আছে। আপনি সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয়ের সময়ে পড়ার কথা বলেছেন। ফজরের সালাতের পর থেকে বেলা ওঠা পর্যন্ত বসে তাসবীহ, তাহলীল, দুআ করা এবং বেলা ওঠার পর দুই বা চার রাকআত ইশরাক বা সালাতুত দোহা পড়া গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। রাসূল (ﷺ) বলেছেন এতে উমরাহর ছওয়াব হয়। আপনি যদি এই সময় দুআ করেন সেটা ভালো। সূর্যাস্তের আগে মাসনুন কিছু যিকির আছে এগুলো পড়বেন। এছাড়া সাজদায়, অন্যান্য সময় সুন্নাত দুআগুলো করতে পারেন।

৬৫
প্রশ্ন-৬২: আমরা ছয় বোন। আমাদের কোনো ভাই নেই। যদি আমাদের বাবা ইন্তেকাল করেন আমরা কি মাটি দিতে পারব?
উত্তর: মেয়েদের জন্য গোরস্থানে যাওয়ায় রাসূল (ﷺ) আপত্তি করতেন। তবে জানাযায় শরিক হওয়ার অনুমোদন আছে। আপনারা গোরস্থানে গিয়ে মাটি দেয়ায় শরিক হবেন এটা রাসূল (ছ) অনুমোদন করতেন না। আপত্তি করতেন। কাজেই এটা থেকে বিরত থাকা দরকার। আপনাদের স্বামীরা, আপনাদের সন্তানেরা আপনার বাবার দান কাফনে শরিক হবেন। তবে মেয়েদের জন্য সুযোগ থাকলে জানাযার সালাতে শরিক হওয়ার অনুমতি আছে।

৬৬
প্রশ্ন-৬৩; ইবাদত কবুলের পূর্বশর্ত নাকি হালাল রুযি। আমার রুযি যদি হালাল না হয় তাহলে কি আমার ইবাদত কবুল হবে না?
উত্তর: ইবাদত দুই রকমের। একটা দেহের ইবাদত। আরেকটা সম্পদের ইবাদত। যেমন টাকাপয়সা দানসাদকা করা। হারাম অর্থ দিয়ে আর্থিক ইবাদত কখনোই কবুল হবে না। বরং ঈমান নষ্ট হওয়ার ভয় থাকে। অর্থাৎ আল্লাহ বলছেন, বান্দা আমাকে তুমি খারাপ টাকাটা দিও না, আপনি জোর করে আল্লাহকে দিতে চাচ্ছেন। আর যেটা দৈহিক ইবাদত- সালাত আদায় করা, সিয়াম পালন করা- এতে যদি হারাম উপার্জন থাকেও, মূল ফরযটা আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু দুআ কবুল হওয়া এবং বরকত থেকে আপনি বঞ্চিত হবেন। এজন্য হালাল উপার্জনের দিকে আমাদের মনোেযোগ দিতে হবে। বিশেষ করে সকল হারাম উপার্জনের সাথে বান্দার হক জড়িত থাকে। আর বান্দার হকের পাপটা বান্দা মাফ না করলে আল্লাহ পুরো মাফ করবেন না।

৬৭
প্রশ্ন-৬৪: হুতি ব্যবসা হালাল না হারাম?
উত্তর: একজনের টাকা আরেকজনকে পৌছে দেয়া- নগদ হলে এটা বৈধ। তবে যে দেশে আপনি বসবাস করেন, সেই দেশের সরকারি আইন মেনে চলাটা রাসূল (ﷺ) বারবার নির্দেশ দিয়েছেন। কাজেই আইনের ভেতরে থেকে আপনি এটা করতে পারেন। যদি আইন এটা নিষেধ করে তাহলে করতে পারেন না।

৬৮
প্রশ্ন-৬৫: মহিলারা বাড়িতে ইমামের পেছনে কীভাবে তারাবীহ নামায পড়াবেন? পর্দার আড়ালে না সামনাসামনি?
মহিলারা বাড়িতে ইমামের পেছনে তারাবীহ নামায পড়ে। তখন ইমাম কীভাবে নামায পড়াবেন? পর্দার আড়ালে না সামনাসামনি?

উত্তর: পুরুষ ইমাম যদি একা এক ঘরে দাঁড়ান তাহলে তার সাথে কয়েকজন পুরুষ দাঁড়াতে হবে। ছোট হোক অথবা বড়। ইমাম একা এক ঘরে, মুক্তাদিরা ভিন্ন ঘরে - এটা মাকরুহ। আর একই ঘরে হলে পর্দা দিয়ে আড়াল করতে হবে। মেয়েদের থেকে ছেলেদের পর্দা রাখা উচিত, এটা উত্তম।

৬৯
প্রশ্ন-৬৬: ইশার নামায না পড়ে তারাবীহ পড়তে পারব? একা একা ইশার নামায পড়লে জামাআতের ছওয়াব পাব?
আমরা অনেক সময় মসজিদে গিয়ে দেখি তারাবীহর নামায ছয় রাকআত বা আট রাকআত চলছে। এই অবস্থায় ইশার নামায না পড়ে তো আমরা তারাবীহ পড়তে পারব না। এখন একা একা ইশার নামায পড়লে জামাআতের ছওয়াব পাব কি না?

উত্তর: প্রথমেই আপনি ফরয সালাত আদায় করবেন। এরপর দুই রাকআত সুন্নাত আদায় করবেন। তারপর তারাবীহতে শরিক হবেন। স্বভাবতই আপনি জামাআতের ছওয়াব পাবেন না। আর এটা যেন অভ্যাসে পরিণত না হয়। ইশার সালাত জামাআতে আদায় করা ওয়াজিব পর্যায়ের ইবাদত। জামাআত নষ্ট করলে গোনাহ হবে। তারাবীহর নামায জামাআতে আদায় করা এটা নফল সুন্নাত। ঘরে আদায় করলে গোনাহ হবে না। তাই আপনার যদি তারাবীহর জামাআত ধরার আগ্রহ হয় আর ইশার জামাআত ছুটে যায়- এটা খুবই দুঃখজনক।

৭০
প্রশ্ন-৬৭: যদি ইমাম সাহেব সালাম ফিরিয়ে দেন তাহলে আমি সাথে সাথে সালাম ফিরিয়ে দেব নাকি দুআ মাসুরা শেষে সালাম ফেরাব?
জামাআতের শেষ বৈঠকে আমার দুআ মাসুরা পড়ার আগেই যদি ইমাম সাহেব সালাম ফিরিয়ে দেন তাহলে আমি সাথে সাথে সালাম ফিরিয়ে দেব নাকি দুআ শেষ করে তারপর সালাম ফেরাব?

উত্তর: ইমাম সাহেবের সাথে অথবা একটু পরে- দুই এক সেকেন্ড দেরি হলে সমস্যা নেই। আর ইমাম সাহেবের দুই সালামের পরে সালাম ফেরানো, এটাও পাওয়া যায়। তবে বেশি দেরি যেন না হয়। ইমাম সাহেবের পেছনে পেছনে থাকতে হবে।

৭১
প্রশ্ন-৬৮: সালাতের মধ্যে ঘুমিয়ে গেলে ওযু ভেঙে যায় কি না জানতে চাই।
উত্তর: জি, না। সালাতের ভেতর ঘুমালে ওযু ভাঙে না। কারণ, অচেনতনভাবে কেউ যদি ঘুমায়, তাহলে ওযু ভেঙে যায়। ওযু ভাঙার সুযোগ থাকে। কিন্তু সালাতে দাঁড়িয়ে বা সিজদায় বা বসে ঘুমালে সাধারণত গভীর ঘুম হয় না। তার মতো আসতে পারে। এই রকম ঘুমালে ওযু ভাঙে না।

৭২
প্রশ্ন-৬৯: প্রভিডেন্ট ফান্ডে আমার চার লক্ষ টাকা জমা আছে। এই টাকার উপর যাকাত আসবে কি না জানতে চাই।
প্রভিডেন্ট ফান্ডে আমার চার লক্ষ টাকা জমা আছে। এর বাইরে আর কোনো সম্পদ নেই। এই টাকার উপর যাকাত আসবে কি না জানতে চাই।

উত্তর: আমরা জানি, প্রভিডেন্ট ফান্ডে বেতনের ১০% টাকা বাধ্যতামূলকভাবে সরকার কর্তন করে নেন। এই টাকার উপর কখনো আমার মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয় না। আমার এগ্রিমেন্টে সরকার লিখে দিয়েছিলেন, ১০% আমাকে কেটে দিতে হবে। আমার কর্ম শেষে সরকার ব্যাক দেবেন। যেহেতু এই টাকার আমি মালিক নই, আমি ওটা চাইলে পাব না, ঋণ নিতে পারব কিন্তু আবার ব্যাক করতে হবে, সেজন্য ওই টাকা যতক্ষণ

ফান্ডে রয়েছে ততক্ষণ আমাকে যাকাত দিতে হবে না। এটাই জোরালো মত। এক্ষেত্রে ভিন্ন মতও আছে। যেহেতু আধুনিক বিষয়, আলেমগণ নানা রকম ইজতিহাদ (গবেষণা) করতে পারেন। তবে যেটা আমার কাছে সঠিক মনে হয়, প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকাটা যতক্ষণ প্রভিডেন্ট ফান্ডে থাকবে, ওটার (১০% এর) যাকাত আমি দেব না। কারণ ওটার আমি মালিক নই। কর্মশেষে ওটা পাওয়ার পর আমি যাকাত দেব। তবে কেউ যদি অতিরিক্ত কাটান, নিজে মালিক হওয়ার পরে জমা দেন, এই অংশের জন্য যাকাত দিতে হবে। কারণ, আমি মালিক হওয়ার পরে ওটা সঞ্চয় করে রেখেছি।

৭৩
প্রশ্ন-৭০: আহাদনামার নাকি কোনো ভিত্তি নেই, কথাটা কি সত্যি?
উত্তর: আসলে আমাদের দুর্ভাগ্য, সমাজে আমরা দীন পালন করি না, যারা একটু পালন করি, নানা কুসংস্কার এবং মিথ্যা কথা আমাদের ভুল আমলে সময় নষ্ট করিয়ে দেয়। যেমন; আহাদনামা, দোয়া গাঞ্জল আরশ, দরুদে লাখি, দরুদে হাজারি- এইসব আজগুবি, চটকদার কথাবার্তা যা সমাজে আছে, সবই মিথ্যা ও বানোয়াট কথা। আসলে দীন হল খাদ্যগ্রহণের মতো। নিয়মিত ফরয ইবাদত পালন করা। সবসময় আল্লাহর যিকির, দুআ-প্রার্থনা, দরুদ শরীফ পড়া। এই যে ছোট ছোট বিভিন্ন দুআ আছে, সবই বানোয়াট। এই ব্যাপারে বিভিন্ন বইপুস্তক, আলহামদু লিল্লাহ, লেখা হচ্ছে। একটা বই আছে রাহে বেলায়াত’। এই বইতে জাল বিষয় এবং এর বিপরীতে যে সহীহ বর্ণনা আছে, এগুলোর বিস্তারিত বিবরণ পাবেন। আল্লাহ তাওফীক দিন। আমীন।

৭৪
প্রশ্ন-৭১: হায়েয হলে সাত দিন পর্যন্ত নামায পড়তে পারব না?
অনেকে বলে, হায়েয হলে সাত দিন পর্যন্ত নামায পড়া যায় না। আমি সাত দিনের আগেই সুস্থ হয়ে যাই। তাহলে আমি কি সাত দিনের আগে নামায পড়তে পারব না?

উত্তর: মেয়েদের বিভিন্ন অসুস্থতা আছে। যেমন সন্তান প্রসবের পর অনেকেই মনে করে চল্লিশ দিন বসে থাকা বোধ হয় ফরয। এটা ঠিক নয়। সাত দিন না, আপনি সুস্থ হলেই নামায পড়তে হবে। যখন নিশ্চিত হবেন আপনি সুস্থ হয়েছেন, পরিচ্ছন্ন হয়েছেন, আপনি গোসল করে পবিত্র হয়ে সালাত আদায় করবেন। সালাত ফরয হয়ে গেছে আপনার উপর। সংসারের অন্যান্য কাজও একইভাবে আপনার দায়িত্বে এসে গেছে।

৭৫
প্রশ্ন-৭২: আমার আম্মু খুব অসুস্থ। তিনি দাঁড়িয়ে ফরয নামায পড়েন। বিতর নামায কি তিনি বসে পড়তে পারবেন?
উত্তর: সক্ষম মানুষ, যারা সালাতে অন্তত দুই-তিন মিনিট দাঁড়াতে পারেন, তাদের জন্য দাঁড়িয়ে ফরয সালাত আদায় করা ফরয। বিতর অধিকাংশ ফকীহের মতে ওয়াজিব। কারো মতে ওয়াজিব পর্যায়ের সুন্নাত। এজন্য বিতরও ফরযের বিধানে পড়বে, এটা অনেকের মত। কাজেই বিতর আপনার আম্মা দাড়িয়ে পড়বেন এটাই সঠিক। তবে বাকি অন্যান্য সালাত তিনি বসে পড়তে পারেন, কোনো সমস্যা নেই। তবে যদি ওযর হয়, বেশি কষ্ট হয়, তাহলে বসে পড়তে পারেন।

৭৬
প্রশ্ন-৭৩: জীবিত অবস্থায় মন মতো আমার সম্পত্তি আমার সন্তানদের জন্য লিখে দিয়ে যেতে পারব কি না?
উত্তর: আল্লাহ কুরআন কারীমে ইনসাফের কথা বলেছেন। ইনসাফ মানে সবকিছু নিরপেক্ষ। আপনার সন্তানদের ভেতর ইনসাফ করা ফরয। এটা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। রাসূল (ﷺ) বলেছেন:

اغوا بين أولادكم

হে মানুষেরা, তোমরা তোমাদের সন্তানদের ভেতরে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করো (সুনান আবু দাউদ-৩৫৪৪; সুনান নাসায়ি-৩৬৮৭) । আপনি যদি জীবিত অবস্থায় সব সম্পদ অথবা কিছু সম্পদ সন্তানদের দেন, ছেলেমেয়ে সবাইকে সমান দিতে হবে। যদি কম-বেশি করেন, আপনি মহাপাপী হবেন। সন্তানরা সম্পত্তি ভোগ করবে আর আপনি আপনার জুলুমের জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে শাস্তি পাবেন। আর যদি আপনি বন্টননামা লিখে দেন, তাহলে শরীআহ মোতাবেক তারা বণ্টন করবে। ছেলেমেয়ে যে যার অংশ পাবে। আপনি শুধু তাদের সাজেশন দিতে পারেন। সকল সম্পত্তি যদি জুলুম করে বণ্টন করেন, আপনি প্রচণ্ড গোনাহগার হবেন। এবং জুলুমের গোনাহ মদ খাওয়া, ব্যভিচার করা- এগুলোর চেয়ে অনেক কঠিক গোনাহ। এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক হতে হবে। আর একটা ব্যাপার হল, জীবিত অবস্থায় নিজের সকল সম্পদ ওয়ারিশদেব লিখে দিয়ে নিজে সম্পদহীন হয়ে যাওয়া, এটা ইসলাম অনুমোদন করে না। ইসলাম বলে, কিছু দান করেন, সন্তানদের দেন, মৃত্যুর পরে সন্তানরা যার যার পাওনা পাবে।

৭৭
প্রশ্ন-৭৪: ছেলে হবে না মেয়ে হবে, এখন আলট্রাসনোর মাধ্যমে আগেই জানা যায়। এটা জানায় গোনাহ হবে কি না?
উত্তরঃ না, কখনোই নয়। আসলে আমরা অনেক সময় মনে করি, মাতৃগর্ভে কী আছে আল্লাহ জানেন, কাজেই আমরা জানতে গেলে বোধ হয় গোনাহ হবে। না, আল্লাহর ইলম আমরা জানতে পারি না।

إن الله عنده علم الساعة وينتيل الغيث ويعلم ما في الأرحام

আসলে একটা গর্ভে কী আছে গর্ভের ভেতর কী আছে তার পরিপূর্ণ পরিচয় কোনো যন্ত্রপাতি ছাড়া সব আল্লাহ জানেন। মানুষ জানে না। কিন্তু কেউ যদি পেট কেটে জানতে পারে, কোনো কারণে জানতে পারে, মেশিন দিয়ে জানতে পারে। এতে দোষের কিছু নেই। কাজেই আন্ট্রাসনোগ্রাম ব্যবহার করা চিকিৎসার জন্য যেমন বৈধ, তেমনি এর মাধ্যমে ছেলে বা মেয়ের পরিচয় জানাতে কোনো গোনাহ হবে না। (সহীহ ইবন হিব্বান ৬/১৮৫; সুনান দারাকুতনি ৪/৩৫৮; মুসতাদরাক হাকিম ১/৪৪৬; সুনান বাইহাকি ৩/৩১)

৭৮
প্রশ্ন-৭৫: ব্যাংকের সুদ হারাম। কিন্তু ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগে কতটুকু জায়েয?
আমি জানি ব্যাংকের সুদ হারাম। কিন্তু ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগে কতটুকু জায়েয? সাধারণ ব্যাংক আর ইসলামী ব্যাংকের মধ্যে তফাৎ আসলে কতটুকু?

উত্তর: বিষয় হল, ইসলামে ব্যবসাকে হালাল করা হয়েছে। সুদ হারাম করা হয়েছে। সুদ আর ব্যবসার ভেতর পার্থক্য হল- সময় গড়ানোর সাথে সাথে টাকার বিনিময়ে টাকা বৃদ্ধি পাওয়া- এটা হল সুদ। আর পণ্যের বিনিময়ে টাকা বাড়লে-কমলে এটা সুদ হবে না, এটা ব্যবসা। ব্যবসার ভেতর জুলুম হতে পারে তবে এটা সুদ নয়। বর্তমানের সাধারণ ব্যাংকগুলো শতভাগ সুদের উপর প্রতিষ্ঠিত। যেটা নিঃসন্দেহে ইসলামে হারাম। অনেকেই বলেন, সুদ মানে চক্রবৃদ্ধির সুদ। এটা মূখর্তাসুলভ কথা। ইসলামে চক্রবৃদ্ধি সুদ বলে কিছু নেই। যেমন, বেশি বেশি সুদ খেতে নিষেধ করা হয়েছে। সাধারণ সুদ খেতে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন গোনাহের কথা বলা হয়েছে তোমরা দারিদ্রের ভয়ে সন্তানদের হত্যা করো না। এর অর্থ এই নয় যে, অন্য কোনো ভয়ে সন্তান হত্যা করা যাবে। বা সন্তান ছাড়া আর কাউকে হত্যা করা যাবে- বিষয়টা এরকম নয়। বরং পাপের একটা বিশেষ পর্যায়কে হারাম করা হয়েছে। ঠিক তেমনি কখনো কখনো ছোট বড় সকল পাপকে হারাম করা হয়েছে। এজন্য সকল সুদই হারাম। তবে ইসলামি ব্যাংকিং যারা করেন, তারা গ্রাহককে টাকা না দিয়ে পণ্য দেয়ার চেষ্টা করেন। মূলনীতির দিক থেকে এটা শরীআতসম্মত। প্রয়োগের দিক থেকে অনেকেই ভুলভ্রান্তি করেন। তবে আশা করি কোনো গ্রাহক যদি এই ধরনের ব্যাংকের সাথে লেনদেন করেন, তিনি তার লেনদেনটা শরীআহ মতো রাখেন, ইনশাআল্লাহ কোনো সমস্যা নেই।

৭৯
প্রশ্ন-৭৬: রমাযানের পরে যে নফল রোযা আমরা রেখে বাকি এটা ঠিক কি না হাদীসের আলোকে জানতে চাই।
উত্তর: মুসলিম শরীফের সহীহ হাদীস, রাসূল (ﷺ) বলেছেন:

من صام رمضان ثم أتبعه ستا من شوال، گان گصيام الدهر

যদি কেউ রমাযানের রোযার পর শাওয়াল মাসের ছয়টা রোযা রাখে তাহলে তার পুরো বছরের রোযা রাখার ছওয়াব হবে। এটা নফল, খুবই ভালো, না করলে গোনাহ নেই।

(সহীহ মুসলিম-১১৬৪; সুনান তিরমিযি-৭৫৯)

৮০
প্রশ্ন-৭৭: ব্যাংকে অফিসের সময়ে ইবাদত করা যাবে কি?
(একজন নারীর প্রশ্ন) আমি একটা ব্যাংকে সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত জব করি। অনেক সময় থাকতে হয় বিধায় আমি অফিসেই অর্থসহ কুরআন শরীফ, নফল নামায, চাশতের নামায, তাহিয়্যাতুল ওযুর নামাযগুলো ফাঁকে ফাঁকে পড়ি। তো অফিসে সারাদিনের সময়টা থাকতে হচ্ছে। এই ইবাদতগুলো না করলে আমার ভালো লাগে না। অফিসের সময়ে এ রকম ইবাদত করা যাবে কি না?

উত্তর: জেনে ভালো লাগছে যে, বান্দার হকের চেতনা আমরা ফিরে পাচ্ছি। ইসলামে সবচে' বড় বিষয় হল মানুষের হক আদায় করা। সবচে' বড় পাপ হল মানুষের হক নষ্ট করা। সবচে' বড় বরকত হল কল্যাণ করা। সারারাত তাহাজ্জুদ পড়ার চেয়ে অনেক বেশি ছওয়াবের কাজ হল একটা মানুষের পাশে দাঁড়ানো। তেমনি পাপের ক্ষেত্রেও। আসলে আপনি যে চাকরি করেন এটার উপর নির্ভর করবে আপনার কর্ম। চাকরি যদি অনুমতি দেয়। যেমন, লাঞ্চ ব্রেক আছে, টয়লেটে যাওয়ার ব্যাপার আছে। এই সময় আপনি দুই-এক রাকআত নামায পড়েন, আপনার কর্মকর্তা যদি জানেন, তাহলে এটা বৈধ হবে। নইলে আপনি এটা করবেন না। আপনার যদি বসে থাকা দায়িত্ব হয়, আপনি বসে থাকবেন, যেন সেবাগ্রহীতারা সেবা নিতে পারে। কুরআন তিলাওয়াতেও একই বিধান। এতে সময় লাগে। তবে আপনি মুখে তাসবীহ পড়তে পারেন, যেটা কর্ম নষ্ট করে না। আপনি দুরুদ পড়ছেন, তাসবীহ পড়ছেন, এর ভেতরেই কাস্টমারের সাথে লেনদেন করতে পারেন। তবে সময় দিতে গেলে, হয় আপনাকে কর্মদাতার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে, অথবা সার্ভিস রুলের ভেতরে থেকে করতে হবে। মূলত কর্মটাই আপনার ইবাদত। আল্লাহ কবুল করুন।

৮১
প্রশ্ন-৭৮: আমি প্রাইভেট ব্যাংকে চাকরি করি। আমার প্রতিষ্ঠান সুদের সাথে জড়িত। আমার যে বেতন, এটা কি হল?
উত্তর: ব্যাংকে সুদ লেখা একটা কাজ। পাশাপাশি প্রশাসনিক অন্যান্য কাজ আছে। প্রশাসনিক কাজগুলো আশা করা যায় বৈধ। সুদ লেখা বা সুদের সাক্ষী হওয়া হারাম কাজ। আমরা আশা করি আপনার কিছু উপার্জন বৈধ, কিছু অবৈধ। আপনি মানুষের হক নষ্ট করার পাপ থেকে বেঁচে আছেন, আল্লাহর কাছে দুআ করেন কীভাবে আরো ভালো হালাল উপার্জনে যেতে পারেন। তবে আপনার উপার্জনের সাথে কিছু হারাম সংমিশ্রিত আছে।

৮২
প্রশ্ন-৭৯: বাবা, মেয়েদের রেখে দুই ভাইয়ের জন্য বাড়ি লিখে দেন। এর জন্য কি আমার বাবাকে শাস্তি পেতে হবে?
আমরা ছয় বোন, দুই ভাই। আমার বাবা যখন মারা যান, হয়তো না জেনে করেছেন, আমার বাবা আমার দুই ভাইয়ের জন্য খুলনার বাড়িটা লিখে দেন। আমার বাবা অনেক নামাযি ছিলেন। হজ্জও করেছেন। আমি খুবই চিন্তিত যে আমার বাবাকে জবাব দিতে হবে কি না আল্লাহর কাছে। আমরা সকল ভাইবোন বলছি যে আমরা মাফ করে দিব। আমরা এটা নিব না। তো এর জন্য কি আমার বাবাকে শাস্তি পেতে হবে?

উত্তর: জি, আপনার আব্বা আপনাদের হক নষ্ট করেছেন। বান্দার হক নষ্ট করেছেন। আপনারা যদি মাফ করে দেন তাহলে মাফ পেয়ে যাবেন।

৮৩
প্রশ্ন-৮০: শুক্রবারে সূরা দুখান, নিয়মিত সূরা মুলক, সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত এই আমলগুলোর ব্যাপারে বিস্তারিত বলবেন।
কুরআন শরীফে অনেক দুআ আছে। আমি সূরা দুখান শুক্রবারে পড়ি। সূরা মুলক নিয়মিত পড়ি। সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত ফজর নামাযের পর পড়ি। সূরা ওয়াকিয়াহ পড়ি। এই আমলগুলোর ব্যাপারে বিস্তারিত বলবেন।

উত্তর: আপনার ওযীফাগুলো কিছু সহীহ, কিছু জাল হাদীস নির্ভর। এখানে বিস্তারিত বলতে পারব না। আপনাকে একটু কষ্ট করতে হবে। আসলে ভালো জিনিস শিখতে গেলে কষ্ট করতে হয়। সমাজে, আলহামদুলিল্লাহ, সহীহ হাদীস নির্ভর বইপুস্তক আছে। যেমন ‘হিসনুল মুসলিম নামে একটা বই আছে। রাহে বেলায়াত ওযীফা নির্ভর একটা বই। এই জাতীয় সহীহ হাদীস নির্ভর বইগুলো পড়েন, তাহলে অনেক সহজে সহীহ দুআগুলো জানতে পারবেন।

৮৪
প্রশ্ন-৮১: অসুস্থতার কারণে চেয়ার-টেবিলে নামায পড়া বৈধ হবে কি না জানতে চাই।
উত্তর: আপনি চেয়ার টেবিলের কথা বলেছেন, আসলে সালাতে চেয়ারের সাথে টেবিল লাগে না। অনেকে মনে করে সিজদাটা টেবিলের উপর বা টুলের উপর দিলে ভালো হবে, এটা ঠিক না। আপনার ইশারাই যথেষ্ট। মূল বিষয় হল, যে ব্যক্তি সালাতের দুই তিন মিনিট দাঁড়াতে পারবেন, তিনি পুরো সালাত দাঁড়িয়ে পড়বেন। এমনকি রুকু সিজদায় অক্ষম হলে দাঁড়িয়েই ইশারায় রুকু সিজদা করবেন। আর যে ব্যক্তি একেবারেই দাঁড়াতে পারেন না, তিনি মাটিতে বসে, লম্বা করে দিয়ে সালাত আদায় করবেন। যিনি মাটিতেও বসতে পারেন না তিনি চেয়ারে বসতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে সিজদার জন্য সামনে টেবিল রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। তিনি ইশারায় সিজদা করবেন।

৮৫
প্রশ্ন-৮২: ভালো কাজের আগে মীলাদ শরীফ পাঠ করা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত?
আমরা কোনো ভালো কাজের আগে মীলাদ শরীফ পাঠ করে থাকি। তো ভালো কাজের আগে মীলাদ শরীফ পাঠ করা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত?

উত্তর: আমাদের ধর্মীয় কর্মগুলো দুই রকম। একটা হল কুরআন সুন্নাহ নির্দেশিত। এটা আপনার জন্য। এখানে হুজুর বা পুরোহিতদের কোনো স্বার্থ নেই। আর সমাজে কিছু আনুষ্ঠানিকতা তৈরি হয়েছে, এগুলোতে আপনারা আমাদের উপর নির্ভর করেন। এই আনুষ্ঠানিকতাগুলো কোনোটাই পুরোপুরি সুন্নাহনির্ভর নয়। কোনো ভালো কাজ শুরু করার আগে ভালো কাজের বরকতের জন্য নিজে দুআ করবেন। দরিদ্রদের খাওয়াবেন। কোনো আলেমকে ডেকে নামায পড়িয়ে নিতে পারেন। এটা সুন্নাতে পাওয়া যায়। এর বাইরে আমরা যা করি, এগুলো আনুষ্ঠানিকতা। এগুলো সুন্নাতে পাওয়া যায় না।

৮৬
প্রশ্ন-৮৩: বিশেষ কারণে বারো রাকআত বা যোলো রাকআত তারাবীহ আদায় জায়েয হবে কি না?
তারাবীহর নামায বিশ রাকআত আদায় করতে হয়। কেউ যদি বিশেষ কারণে বারো রাকআত বা যোলো রাকআত তারাবীহ আদায় করে এটা জায়েয হবে কি না?

উত্তর: আপনি সাধ্যমতো চেষ্টা করবেন। কিছু কমবেশি হলে কোনো সমস্যা নেই। এটা। সুন্নাত নামায। জামাআতে না পারলে ঘরে পড়বেন। পূর্ণ না পারলে কিছু পড়বেন, আল্লাহ কবুল করুন। আমীন।

৮৭
প্রশ্ন-৮৪: মানতের খাশির গোশত দিয়ে রোযাদারকে ইফতার করানো যাবে কি না?
উত্তর: শুরুতেই বলি, মানত না করা উচিত। সহীহ বুখারি, মুসলিম এবং অন্যান্য গ্রন্থের সহীহ হাদীস, আব্দুল্লাহ ইবন উমার রা. বলেছেন:

أن رسول الله صلى الله عليه وسلم نهى عن النذر، وقال : إنه لا يأتي بخي، إنما يستخرج به من البخيل

রাসুল সা, মানত করতে নিষেধ করতেন। তিনি বলতেন, মানত আসলে কৃপণদেরকে আল্লাহ বিপদে ফেলে মানতের মাধ্যমে কিছু বের করেন। উত্তম হল দান করা। কোনো বিপদ আপদে আপনি শর্তসাপেক্ষ মানত না করে আল্লাহর জন্য যা পারবেন দান করবেন। ছাগল-গরু জবাই করে গরিবদের খাওয়ান, টাকাপয়সা দেন, এটা হল উত্তম। দ্বিতীয় বিষয় হল, মানত যদি করে থাকেন সেটা একেবারে অসহায়, নিঃস্ব, দরিদ্রদের হক। এটা দিয়ে আপনি রোযাদার খাওয়াতে পারেন, সেটা অসহায়-নিঃস্ব রোযাদার। সাধারণ রোযাদারদের খাওয়ালে আপনার মানত আদায় হবে না। আপনিও গোনাহগার হবেন। রোযাদাররাও গোনাহগার হবে।

৮৮
প্রশ্ন-৮৫: আমি যদি বাসায় আমার মা, ছেলেমেয়ে, স্ত্রীকে নিয়ে তারাবীহ নামায পড়ি তাহলে কি আমার তারাবীহ নামায হবে?
উত্তর: পুরুষদের জন্য ইশার সালাত জামাআতে আদায় করা এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব বা অনেকের মতে ফরয দায়িত্ব। কাজেই আপনি এং সকল পুরুষ অত্যন্ত কঠিন অসুস্থ না হলে অবশ্যই ইশার সালাত মসজিদে জামাআতে আদায় করবেন। এরপরে বাড়িতে এসে যদি আপনি একা অথবা পরিবারের লোকদের নিয়ে জামাআতে তারাবীহ আদায় করেন, এটা ভালো। তবে সেক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের কাতার অবশ্যই ভিন্ন হতে হবে। একজন হলেও। আপনি সামনে দাঁড়াবেন। আপনার স্ত্রী পেছনে। যদি স্ত্রী, মেয়ে, মা থাকে তারা এক কাতারে দাঁড়াবেন। যদি ছেলে ও অন্যান্য পুরুষেরা থাকে- তারা এক কাতারে দাঁড়াবেন। কাতার পৃথক করে এভাবে আপনারা তারাবীহ জামাআতে পড়তে পারেন। এমনকি রাতের তাহাজ্জুদ এভাবে স্ত্রীকে নিয়ে, পরিবারকে নিয়ে জামাআতে পড়া যায়। (১০ সহীহ বুখারি-৬৬০৮, ৬৬৯২, ৬৬৯৩; সহীহ মুসলিম-১৬৩৯; সুনান আবু দাউদ-৩২৮৭; সুনান নাসায়ি-৩৮০১, ৩৮০২; সুনান ইবন মাজাহ-২১২)

৮৯
প্রশ্ন-৮৬: দোকান ভাড়া নেয়ার আগে যে জামানত আমরা দিয়ে থাকি সেই জামানতের টাকা কি যাকাতের হিসাবের ভেতর আসবে?
উত্তর: এটা সাধারণভাবে যিনি জামানত নিলেন, বিল্ডিঙের মালিক বা দোকনের মালিক, তার টাকার ভেতরে হিসাবটা যাবে। কারণ, টাকাটা তার মালিকানার ভেতর চলে গেছে। উনি ইচ্ছামতো খরচ করেন। যদি কখনো দোকান ফেরত হয়, উনি টাকাটা অন্য কারো কাছ থেকে নিয়ে ফেরত দেন, সাধারণত। এজন্য এই টাকার যাকাত দেবেন তিনি, যিনি গ্রহণ করেছেন বা দোকানের মালিক।

৯০
প্রশ্ন-৮৭: মহিলারা যখন ফরয সালাত আদায় করবেন তখন কি তাদের ইকামত দিতে হবে?
উত্তর: জি, না। সালাতের ইকামত মূলত জামাআতের জন্য। একা পড়লেও ইকামত দিতে হবে, এটাও হাদীসে এসেছে। তবে মহিলাদের জন্য ইকামতের কোনো কথা সুন্নাতে পাওয়া যায় না। মহিলারা ইকামত ছাড়াই সালাত আদায় করবেন।

৯১
প্রশ্ন-৮৮: নামাযের ভেতর দেখে দেখে কুরআন পড়া যায় কি না জানতে চাই।
উত্তর: সালাতের ভেতর কুরআন দেখে পড়া, এটা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এবং সাহাবিগণ কেউ কখনো করেন নি। আর কুরআন তো আল্লাহ মুখস্ত রাখার জন্যই নাযিল করেছেন। এজন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও সাহাবিগণ কেউ কখনো সালাতে কুরআন দেখে পড়েন নি। ফরয সালাতে না, অন্য সালাতেও না। তবে আয়েশা রা.এর একজন খাদেম ছিলেন যাকওয়ান নামে, তিনি মাঝে মাঝে রাতের তাহাজ্জুদে বা তারাবীহর নামাযে ইমামতি করতেন, পেছনে আয়েশা রা. ও অন্যান্য মহিলারা দাঁড়াতেন, তিনি কুরআন দেখে পড়তেন। এটা একজন সাহাবির ব্যক্তিগত ইজতিহাদ, এর মাধ্যমে কোনো কোনো ফকীহ বলেছেন, কিয়ামুল লাইল-রাতের নফল সালাতে কুরআন দেখে পড়া যাবে। তবে যেহেতু রাসূল (ﷺ) এবং সাহাবিরা কেউ এটা করেন নি এবং এটা ইসলামি মূল চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক। সর্বোপরি এটা অন্যান্য ধর্মের মানুষেরা করে, তারা তাদের ধর্মগ্রন্থ মুখস্ত রাখতে পারে না; এই জন্য যে প্রার্থনায় বাইবেল পড়তে হয় তারা দেখে দেখে পড়ে। আমাদের কুরআনের এই মহামুজিযাহ, পুরো কুরআন মুখস্ত রাখার যে মুজিযাহ, এটা আমরা কেন নষ্ট করব! এজন্য কুরআন দেখে পড়ার অভ্যাস মোটেও ঠিক নয়। আমাদের মুখস্ত পড়া উচিত।

৯২
প্রশ্ন-৮৯: মীলাদ তো ভালো কাজ। এটা নিয়ে এতো মতভেদ কেন?
মীলাদ মাহফিল নিয়ে অনেক মতভেদ দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এটাকে অবৈধ বলার কোনো কারণ দেখি না। কেননা এখানে নবীজির (ﷺ) গুণকীর্তণ বা তাঁর দুরুদ পাঠ করা হয়। আর ইয়া নবী সালামু আলাইকা’ যখন বলা হচ্ছে, তখন নবীজির সম্মানে দাঁড়ানো হচ্ছে। এটা তো ভালো কাজ। এটার ব্যাপারে কেন মতভেদ দেখা যাচ্ছে।

উত্তর: আপনি খুব ভালো বলেছেন। আসলে মূল সমস্যাটা আমরা এড়িয়ে চলি। যেমন, মনে করেন আপনার মসজিদে প্রতিদিন রাত দুটোর সময় আযান দিয়ে জামাআতের সাথে তাহাজ্জুদ পড়া হয়। একজন গিয়ে বলল, না না, এটা করবেন না, এটা ঠিক নয়। এটা ঠিক নয় মানে উনি তাহাজ্জুদ বিরোধী নন। এটা ঠিক নয় মানে উনি মসজিদে তাহাজ্জুদেরও বিরোধী নন। তিনি একটা নির্দিষ্ট পদ্ধতির বিরোধী। মীলাদ বা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্মের কথা বলা বা জন্মের আনন্দ প্রকাশ করা- এটা একটা সুন্দর ইবাদত। এটার একটা পদ্ধতি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও সাহাবিদের ছিল। সমস্যা হল পদ্ধতি নিয়ে। আপনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এবং সাহাবিদের পদ্ধতিতে যদি করেন, তাহলে কি সুন্দর হয় না ভাই! অথবা আপনি কি মনে করেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এবং সাহাবিরা যেভাবে করতেন ওটা এখন চলে না, আমাদেরকে নতুনভাবে করতে হবে! রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্মের সম্মান দেখানোর জন্য তিনি নিজে একটা পদ্ধতি আমাদের শিখিয়েছেন। সেটা হল সোমবার দিন রোযা রাখা। আর আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর দুরুদ ও সালাম যেভাবে পড়ি, সবই ভালো কাজ, কিন্তু পদ্ধতিটা সাহাবিরা করেন নি। তাঁরা সম্মানের সাথে বসে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জীবনী আলোচনা করতেন। যখন রাসূলুল্লাহর (ﷺ) এর নাম আসত, তখন দরুদ পড়তেন। এই যে নতুন পদ্ধতি আমরা বানিয়েছি, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, কোনো মুসলমান যদি দীনের ভেতরে নতুন কিছু বানায় আল্লাহ তাআলা সেটা কবুল করবেন না। তাহলে মীলাদের সমস্যা মূল মীলাদে নয়। মীলাদের যে পদ্ধতি আমরা বানিয়েছি এটা বাদ দিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এবং সাহাবিগণের পদ্ধতিতে আমরা মীলাদ পড়ব। যারা মীলাদের বিরোধিতা করেন আমাদের সমাজে, তাদের বক্তব্য এটাই বলে আমি মনে করি। তারা মীলাদের বিরোধিতা করেন না। পদ্ধতির বিরোধিতা করেন। আর যারা মিলাদ পড়ছেন তারাও মূলত একটা ভালো কাজ করছেন। যেমন একজন লোক রোযা রাখছেন অথবা তারাবীহ পড়ছেন। আমরা তার পদ্ধতিগত সমালোচনা করছি যে আপনার এই পদ্ধতিটা সুন্নাত মোতাবেক হচ্ছে না। আপনি সুন্নাহ মতো এটা আদায় করেন। আশা করি এটা বুঝতে পারছেন। আর বাকি বিস্তারিত বইপুস্তক পড়ে জানতে পারবেন।

৯৩
প্রশ্ন-৯০: তারাবীহর নামাযের মধ্যে সিজদার আয়াত এসেছে কিন্তু আয়াত না পড়েই সিজদা করেছি। এতে কি গোনাহ হয়েছে?
তারাবীহর নামাযের মধ্যে সিজদার আয়াত এসেছে কিন্তু আমি আয়াত না পড়েই সিজদা করেছি। এতে কি আমার গোনাহ হয়েছে।

উত্তর: সমস্যা তো একটু হয়েছে। আপনি একটা অতিরিক্ত সিজদা করেছেন যেটার কোনো দরকার ছিল না। সিজদার আয়াত পড়ার কারণেই সিজদা করতে হয়, পড়ার আবেগেই সেজদা করতে হয়। যেহেতু আপনি করে ফেলেছেন কিছু করার নেই। তবে আয়াতটা না পড়েই যদি আপনি চলে যান তাহলে কুরআনের পূর্ণ তিলাওয়াতটা হবে। অন্য সময় আপনি ওটা পড়বেন এবং সিজদাও করবেন।

৯৪
প্রশ্ন-৯১: বিতর নামাযের মধ্যে যে উল্টা তাকবীর দেয়া হয় এটা কতটুকু সঠিক?
উত্তর: কুনুতের আগে যে ‘আল্লাহু আকবার' বলে আমরা রুকুতে না গিয়ে উপরে হাত ওঠাই, এটাকে বাংলাদেশের মানুষ উল্টা তাকবীর বলে। কুনুতের আগে তাকবীর বলা এটা হযরত উমার রাসহ বিভিন্ন সাহাবি থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে। রাসূল (৪) রুকুর আগে বিতরের কুনুত পড়তেন, এটাও সহীহ প্রমাণিত এবং কুনুতের আগে তাকবীর আল্লাহু আকবার বলা, এটাও প্রমাণিত। তবে আল্লাহু আকবার বলার পরে হাত বাঁধব না কি মুনাজাতের মতো হাত তুলে দাঁড়াব, এ ব্যাপারে হাদীসে তেমন স্পষ্ট পাওয়া যায় না। কোনো সাহাবি মুনাজাতের মতো হাত তুলে কুনুত পড়তেন। তাবেয়িদের কেউ কেউ হাত বেঁধে ফেলতেন। তো এজন্য আল্লাহু আকবার বলাটা সহীহ সনদে প্রমাণিত। আপনি মুনাজাতের মতো হাত তুলে কুনুত পড়তে পারেন, আবার হাত বেঁধেও পড়তে পারেন।

৯৫
প্রশ্ন-৯২: আমার বাবা চান, কলেজে শিক্ষকতা করি। আমি যদি ইসলামি স্কুলে জয়েন করি আমার বাবার প্রতি অন্যায় করা হবে?
বাংলাদেশে ইসলামিক ইংলিশ মিডিয়াম অনেক স্কুল আছে। অমি (নারী) পড়াশোনা শেষ করে ওই ধরনের স্কুলে শিক্ষক হিসেবে জয়েন করতে চাই। তবে আমার বাবা চান, আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী আমি যেন অনার্স লেভেলের কলেজে শিক্ষকতা করি। যেহেতু জাগতিক বিচারে অনার্স লেভেলের শিক্ষকের মর্যাদা বেশি, তাই। তো আমি যদি ইসলামিক পরিবেশ আর ঈমানের দিক থেকে সহায়ক ইসলামি কোনো স্কুলে জয়েন করি তাহলে আমার মাবাবার প্রতি অন্যায় করা হবে কি না?

উত্তর: শুরুতে আমি আপনার বাবা-মার প্রতি অনুরোধ করব, মূলত দুনিয়াতে আমরা কী চাই? অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হওয়া। আর তো কিছু নয়! বাকি আমাদের হৃদয়ের শান্তি, সামাজিক শান্তি, পারিবারিক মর্যাদা- এটা তো আসল। আর এগুলো তখনই নিশ্চিত হয়, যখন আমরা দীন এবং ধর্মীয় মূল্যবোধগুলোকে সমুন্নত রাখতে পারি। পরিবারেও শান্তি হয়, আমাদের হৃদয়ও প্রশান্ত হয়। কাজেই অল্প কিছু টাকার ফারাকের চিন্তা না করে আমাদের আরো বেশি চিন্তা করতে হবে কীভাবে আমাদের দীন, বিবেক, মূল্যবোধ বজায় রেখে অন্তত মৃত্যু পর্যন্ত শান্তিতে থাকতে পারি এবং পরবর্তী জীবন সুন্দর করতে পারি। আপনার বাবা-মা যদি এমন কিছু বলেন, যেটা শরীআতের সাথে সাংঘর্ষিক, তাহলে সেটা মানা কোনো সন্তানের জন্য ফরয নয়। তবে এ জন্য বাবা-মার সাথে বেয়াদবি করা যাবে না। আপনি আপনার সিদ্ধান্ত নেবেন।

বাবা-মাকে আদবের সাথে বলবেন। ইনশাআল্লাহ বাবা-মা আস্তে আস্তে বুঝে যাবেন। তবে আপনি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, দীনি পরিবেশ সংরক্ষণ করে কর্ম করবেন, এটা অবশ্যই ঠিক করেছেন। এটা আপনার ঈমানের চাহিদা। এবং আমরাও আপনাকে এই পরামর্শই দিচ্ছি।

৯৬
প্রশ্ন-৯৩: যে আযান দিবে তাকেই কি ইকামত দিতে হবে?
উত্তর: একটা দুর্বল সনদের হাদীসে এসেছে

من أذن، فهو يقيم

যে আযান দেবে, সে ইকামত দেবে”। হাদীসটার সনদ দুর্বল। ফুকাহাগণ এটাকে মুস্তাহাব হিসেবে গ্রহণ করেছেন। যে আযান দেবে সে-ই যদি ইকামত দেয়, এটা উত্তম। তবে অন্য কেউ ইকামত দিলে কোন সমস্যা নেই। কেউ তাকে মাকরুহ বলেন নি। অনুচিতও বলেন নি এবং এর নযির আছে।

৯৭
প্রশ্ন-৯৪: রিংটোন হিসেবে কুরআন তিলাওয়াত দেয়া যাবে কি না?
উত্তর: কুরআনের কোনো কথা রিংটোন হিসেবে কোনো অবস্থাতেই ব্যবহার করা যাবে না। কারণ, এতে কুরআনের অবমাননা হয়। কুরআন পড়তে হয় মন দিয়ে শোনার জন্য অথবা অপরকে শোনানোর জন্য। তবে অন্যান্য ইসলামি কথা, গজল, দুআ অবশ্যই ব্যবহার করতে পারি।

৯৮
প্রশ্ন-৯৫: ডা. জাকির নায়েক যে পোশাক পরেন এটাকে কি ইসলামি পোশাক বলা যায়? বা ইসলামি পোশাক আসলে কোনটা?
উত্তর: প্রথমে একটা মূলনীতি আমাদের বুঝতে হবে। ইসলাম বিশ্বজনীন সর্বজনীন ধর্ম হিসেবে আমাদের কর্মকে দুইভাগে বিভক্ত করে। একটা ইবাদত। যেটা আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য আমরা করি। আরেকটা হল, যেটা জাগতিক কাজ। যেটা সকল ধর্মের মানুষ করে। বিশ্বাসী অবিশাসী সবাই করে। তো ইবাদত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পদ্ধতিতে হতেই হবে। আর পোশাক-আশাক, খাওয়া-দাওয়া, বাড়িঘর ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রশস্ততা রয়েছে। রাসূলুল্লাহর (ﷺ) নিজেই বলেছেন, তোমরা যা খুশি খাও, যা খুশি পান করো, যা খুশি পরো; তবে এই নির্ধারিত নিয়মের ভেতরে'। ইসলামি পোশাকের ভেতরে কয়েকটা পর্যায় রয়েছে। যে পোশাক রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পরতেন এটা হুবহু অনুসরণ করা ভালো। সাহাবিরা করেছেন। এটা কেউ করতে পারলে সোয়াব আছে। করলে গোনাহ নেই। দ্বিতীয় পর্যায়ে যে পোশাক পরলে প্রথম নজরেই আপনাকে মুত্তাকি মুসলিম হিসেবে চেনা যায়, এটা নিঃসন্দেহে উত্তম। তৃতীয় হল, যে পোশাক পরলে আপনাকে প্রথম নজরেই অমুসলিম অথবা কোনো পাপী গ্রুপের মনে হয়, এটা পরা নাজায়েজ। মাঝখানে যে পোশাকগুলো আছে, যেগুলো সবাই পরে, এগুলোর অধিকাংশই বৈধ। আমার নিজেরই লেখা একটা বই আছে পোশাকের ব্যাপারে, আপনারা দেখতে পারেন। আপনি জাকির নায়েকের পোশাকের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছেন, টাইয়ের ব্যাপারে অনেকের আপত্তি আছে, কেউ জায়েয বলেছেন। আর প্যান্ট এটা তো পায়জামার মতোই। বাকি শার্ট এটা বৈধ পোশাক। তবে এটাকে আমি ইসলামি বলব না। ইসলামসম্মত বলতে পারি।

৯৯
প্রশ্ন-৯৬: আমার ছোট ভাইয়ের বাচ্চা নিতে চাচ্ছি। এক্ষেত্রে এই বাচ্চার সাথে আমার স্ত্রীকে কি পর্দা করতে হবে?
আমার বিয়ের বয়স আট বছর। আমাদের বাচ্চা হচ্ছে না। তাই আমার ছোট ভাইয়ের বাচ্চা নিতে চাচ্ছি। এক্ষেত্রে এই বাচ্চার সাথে আমার স্ত্রীকে কি পর্দা করতে হবে?

উত্তর: সন্তান না হলে সন্তান নিতে পারেন। এর দুটো পর্যায় রয়েছে। যদি শিশু অবস্থায় নেন, সাধারণত সন্তান না হলে স্তনে দুধ আসে না, তারপরেও আধুনিক পদ্ধতিতে স্ত্রী যদি শিশুকে দুধ খাওয়ান তাহলে ওই সন্তান আপনার দুধসস্তানে পরিণত হবে। এক্ষেত্রে পর্দার কোনো প্রশ্ন থাকবে না। আর যদি এমনি লালনপালন করেন তাহলে ইসলামি শরীআতে সেটা আপনার ভাইয়েরই সন্তান থাকবে, উত্তরাধিকার ভাইয়ের থাকবে, আপনি শুধু পালন করেন এটার ছওয়াব আপনি পাবেন। তার ভরণপোষণ, খাওয়ানোর ছওয়াব পাবেন। আপনার উত্তরাধিকার সে পাবে না, আপনি যদি উইল করে না দেন।

১০০
প্রশ্ন-৯৭: টেলিভিশনে ইসলামি অনুষ্ঠানের ফাঁকে অনৈসলামিক বিজ্ঞাপন প্রচার কতটা যুক্তিযুক্ত?
উত্তর: আমরাও চাই না এই ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার হোক। আসলে একটা টিভি প্রোগ্রাম চালানোর জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। আমরা আশা করব টিভি কর্তৃপক্ষ আরো একটু ইসলামসম্মত করার চেষ্টা করবেন। তবে তাদের অর্থের প্রয়োজন। আমরা আপনাদের কাছে দুআ চাইব এবং আপনারাও সবাইকে বলবেন। যদি আমরা এমন স্পন্সর পেয়ে যাই, যারা বিজ্ঞাপন ছাড়া বা শরীআহসম্মত বিজ্ঞাপন দিয়ে এটা চালাতে পারেন, তাহলে টিভি কর্তৃপক্ষের তো কোনোই আপত্তি থাকার কথা না। আপনারা সবাই দুআ করেন, যেন এই ধরনের প্রোগ্রাম স্পন্সর করার মতো দীনদার মানুষ মিলে যায়।

১০১
প্রশ্ন-৯৮: স্বামী চাইলে স্ত্রীদের ভ্রু-প্লাক করা বৈধ হবে কি?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যারা ভ্রু বা শরীরের চুল টেনে তুলে ফেলে, তারা অভিশপ্ত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে বাড়াতে বলেছেন, স্বাভাবিকভাবে। তবে কৃত্রিম সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা, পশম তুলে ফেলা- এগুলো নিষেধ করেছেন। স্বামী এটা কেন চাইবেন! একটা নিষিদ্ধ কাজ স্বামী করতে বলবেন কেন! স্বামীর এটা উচিত নয়। স্বামী বললেও গোনাহের কাজ করা বৈধ নয়। স্বামী বললে, মুবাহ কাজ, যেখানে অপশন আছে, করা বৈধ। স্বাভাবিক পশম ভোলা যায় না। যদি এমন কোথাও পশম হয় যেটা অস্বাভাবিক, অবাঞ্চিত, সেটা তোলা যায়। কিন্তু চিকন চিকন করে তুলে ফেলা, এগুলো ইসলামসম্মত নয়।

১০২
প্রশ্ন-৯৯: আমরা বোরকা পরি, এতে হাত বের হয়ে থাকে। হাতের আঙটি পুরুষের ন্যরে পড়লে কি গোনাহ হবে?
উত্তর: হাদীসের আলোকে এটা বৈধ হবে বলেই মনে হয়। কারণ, রাসূলুল্লাহর (ﷺ) এর সামনে মহিলাদের হাতে মেহেদি না থাকলে আপত্তি করতেন। তার মানে মেহেদিসহ হাত খোলা থাকত। মেহেদি না থাকলে তিনি রাগ করতেন। বলতেন, তোমার হাত পুরুষের মতো কেন! আবার আঙটি পরা হাত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দেখেছেন। দেখে। আঙটির যাকাত দিতে বলেছেন। এটা আমরা হাদীসে পাই। এ জন্য আমরা আশা করি, এইটুকু সৌন্দর্য মেয়েরা বের করতে পারবেন। এতে গোনাহ হবে না। তবে ঢেকে রাখা ভালো।

১০৩
প্রশ্ন-১০০: আমরা হানাফি মাযহাবের মানুষেরা নামাযের ভেতর ডান দিকে এক সালাম ফিরিয়ে তারপর সাহু সিজদা করি। এটা ঠিক আছে কি না? বা এর নিয়মটা কী?
উত্তর: আসলে সাহু সিজদা বা ভুল হওয়ার কারণে সিজদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর হাদীসে বিভিন্নভাবে এসেছে। কখনো তিনি সালামের পরে সাজদা করেছেন। কখনো সালামের আগে সিজদা করে পরে সালাম করেছেন। এ জন্য, এক পদ্ধতি হল, আপনি আত্তাহিয়্যাতু পড়বেন, দুরুদ শরীফ পড়বেন, দুআ মাসুরা পড়বেন, সর্বশেষ দুটো সিজদা দিয়ে এরপর সালাম ফিরিয়ে দেবেন। এটা সহজ। দ্বিতীয় হল, আপনি আত্তাহিয়্যাতু পড়ে অথবা আরো কিছু পড়ে সালাম ফেরাবেন একদিকে বা দুই দিকে, এরপর সিজদা করবেন, আবারো আত্তাহিয়্যাতু পড়বেন, দুরুদ পড়ে সালাম ফিরিয়ে দেবেন। হাদীসের আলোকে বিভিন্ন পদ্ধতি পাওয়া যায়। আর মাযহাব বা ফিকহেও আমরা যদিও মনে করি এটাই বোধহয় হানাফি মাযহাব- একটু ভালো করে পড়লে আমরা দেখব আসলে মাযহাব এই রকম না। তারা বলেছেন এটা উত্তম, অন্যভাবে করা যেতে পারে। অধিকাংশ মাযহাবি বিষয়- যেটা নিয়ে আমরা বিতর্ক করি- এগুলো উত্তম অনুত্তমের প্রশ্ন। তারা বলেছেন, এটা আমাদের কাছে উত্তম মনে হয়, অন্য পদ্ধতিতে করলে কোনো সমস্যা নেই। কাজেই আমরা যেটা করি, একদিকে সালাম ফেরাননা, এই মর্মে কোনো হাদীস আমার নজরে পড়ে নি। (সহীহ হাদীস)

কিন্তু অনেক আছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সালামের পরে সিজদা করেছেন। এবং সিজদার পরে আবার আত্তাহিয়্যাতু পড়েছেন এরকমও হাদীসে এসেছে। এই জন্য সবমিলিয়ে বিভিন্ন পদ্ধতি বৈধ। আপনার কাছে যেটা সহজ হয় সেটা করবেন।

১০৪
প্রশ্ন-১০১: নবী নুরের তৈরি না মাটির তৈরি? এটা সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন উপকৃত হতাম।
নবী নুরের তৈরি না মাটির তৈরি, এটা নিয়ে আমাদের এলাকায় একটা গ্যাঞ্জাম হয়েছিল। এটা সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন উপকৃত হতাম।

উত্তম: এই বিতর্কটা তৈরিই করা হয়েছে আমাদেরকে আসল জায়গা থেকে সরিয়ে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কিসের তৈরি এটা কুরআন কারীমে কোথাও নেই। কোনো হাদীসে কোথাও নেই যে উনি নুরের তৈরি। তবে কুরআন কারীমে বারবার বলা হয়েছে তিনি মানুষ। আর মানুষ মাটির তৈরি এটা আমরা জানি। তো সর্বাবস্থায় রাসূলুল্লাহর (ﷺ) নুর, তাঁর ভেতরে হেদায়াতের নুর ছিল, নবুওয়াতের নুর ছিল- সবই ঠিক আছে। তাঁকে নুরের তৈরি বানালে কোনো মান বাড়বে এমন তো না! কারণ, ফেরেশতারা নুরের তৈরি ছিলেন, আদম আ. মাটির তৈরি ছিলেন। আদম আ.কে তাঁরা সেজদা করেছেন। নুরের তৈরি হলে মর্যাদা বাড়ে, এই চিন্তাটাই বিভ্রান্তিকর। আল্লাহ হেফাজত করেন।

১০৫
প্রশ্ন-১০২: মেয়েদের জন্য চাকরি করা জায়েয আছে কি না জানতে চাই।
উত্তর: সাধারণভাবে বলতে পারি, মেয়েদের জন্য চাকরি করা অবশ্যই বৈধ। তবে দুটো বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে। একটা হল, নারী প্রকৃতিকে বজায় রাখতে হবে। আরেকটা হল, দীনকে সংরক্ষণ করতে হবে। ইসলাম কর্ম করতে গিয়ে নারীকে পুরুষ হতে বলে না, পুরুষকে নারী হতে বলে না। কারণ, নারী পুরুষের প্রকৃতিগত ভিন্নতা সংরক্ষণের উপরে নির্ভর করে এই মানব সভ্যতার সংরক্ষণ। কাজেই যে কর্ম নারীকে পুরুষ করে তোলে বা পুরুষালি করে তোলে, তার নারী প্রকৃতি নষ্ট করে এই কর্ম ইসলাম উৎসাহ দেয় না। আপত্তি করে। আর পর্দা, শালীনতা বজায় রাখতে হবে। এই দুটো জিনিস বজায় রেখে নারী কর্ম করতে পারবেন। বৈধতা রয়েছে। তবে ইসলাম চায় যে পুরুষেরা কর্মের দায়িত্ব পালন করুক। নারীরা স্বাধীন থাকুক। প্রয়োজনে কর্ম করবে নইলে তাদের অর্থনৈতিক দায়ভার স্বামী বহন করবেন। এতে নারীদের জন্য ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সংরক্ষণ করা, প্রতিপালন করা, তাদের পেছনে সময় দেয়া অনেক সহজ হয়।

১০৬
প্রশ্ন-১০৩: রমাযান মাসে কবরবাসীর কবরের আযাব কি বন্ধ থাকে।
উত্তর: কোনো হাদীসে আমরা এ রকম পাচ্ছি না। রমাযান মাসে আল্লাহ গোনাহ মাফ করেন, রমাযান মাসে জীবিত-মৃত অগণিত মুসলিমকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন এগুলো সব সহীহ হাদীসে পাওয়া যায়। কিন্তু রমাযানে কবরের আযাব মাফ থাকে অথবা রমাযানে মৃত্যুবরণ করলে কবরের আযাব হয় না- এই রকম কোনো হাদীস নেই। তবে নেক আমলরত অবস্থায় মৃত্যু, এটা ভালো। যেমন একজন রোযা রাখা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন, ইবাদতের ভেতরে ছিলেন- এটা ভালো। তবে রমাযানে মৃত্যুবরণ করলে অথবা রমাযান মাসে কবরের আযাব হয় না, এই মর্মে কোনো সহীহ বা গ্রহণযোগ্য দুর্বল হাদীস আমাদের নজরে পড়ে নি।

১০৭
প্রশ্ন-১০৪: রমাযান মাসে যারা রোযা রাখে এবং ঠিকমতো তারাবীহ নামায পড়ে তাদেরকে কি আল্লাহ নিস্পাপ করে দেন?
রমাযান মাসে যারা রোযা রাখে এবং ঠিকমতো তারাবীহ নামায পড়ে তাদেরকে নাকি আল্লাহ নিস্পাপ করে দেন! এটা কি সবার জন্য প্রযোজ্য।

উত্তর: বিভিন্ন হাদীসে এসেছে যে, অমুক আমল করলে আল্লাহ গোনাহ মাফ করে দেন। এটার অর্থ এই নয় যে সকল গোনাহ। কিছু গোনাহ আছে যা সহজে মাফের যোগ্য। আর কিছু গোনাহ আছে, অন্যান্য হাদীসে সুস্পষ্ট বলা হয়েছে, তাওবা ছাড়া এগুলো মাফ হয় না। কিছু গোনাহ রয়েছে তাওবা করলেও মাফ হবে না। তাওবার শর্ত হিসেবে সংশ্লিষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। তাহলে পাপ আমরা কয়েক ক্যাটাগরির করতে পারি। মহা কবীরা গোনাহ, সেগুলো তাওবার মাধ্যমে মাফ হয়। সাধারণ ছোটখাটো গোনাহগুলো বিনা তাওবায় নেক আমলের মাধ্যমে মাফ হয়। আর মানুষের অধিকার সম্পর্কিত যে পাপ রয়েছে- খুন করেছেন, মানুষের টাকা কেড়ে নিয়েছেন, লুট করেছেন, চাঁদাবাজি করেছেন, যৌতুক নিয়েছেন, গীবত করেছেন, সম্মান নষ্ট করেছেন, মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন- এই গোনাহগুলো শুধু আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা চাইলেই মাফ হয় না। ক্ষমা চাওয়া এবং ক্ষমা পাওয়ার একটা শর্ত হল, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির হক ফিরিয়ে দিয়ে তার কাছ থেকে ক্ষমা নেয়া। কাজেই যখন আমরা বলি যে, রোযা রাখলে, তারাবীহ পড়লে অথবা কিয়ামুল লাইল করলে আল্লাহ গোনাহ মাফ করে দেন- এটার অর্থ সাধারণ মাফযোগ্য সগীরা গোনাহগুলো আল্লাহ মাফ করে দেন।

১০৮
প্রশ্ন-১০৫: রোযা রেখে কেউ যদি বদনাম করে তাহলে তার কী ধরনের গোনাহ হবে?
উত্তর: বদনাম বলতে গীবত। অনুপস্থিত ব্যক্তির বিষয়ে এমন কথা বলা, এমন অশালীন কটু মন্তব্য করা- যেটা সে জানলে কষ্ট পাবে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, গীবত হল কারো বিষয়ে তার অনুপস্থিতিতে এমন কিছু বলা যেটা তার কানে গেলে সে কষ্ট পাবে। যদিও সেটা সত্য হয়। এই গীবতকে আল্লাহ তাআলা কুরআন কারীমে মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া বলেছেন:

أيحب أحدكم أن يأكل لحم أخيه ميتا فگروه

তোমরা কি চাও মৃত ভাইয়ের গোশত খাবে? এটা ঘৃণ্য কাজ (সূরা হুজুরাত, আয়াত ১২) । ঠিক তেমনি গীবত করা, অনুপস্থিত ব্যক্তির বদনাম করা, এটা মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া। এখন আপনি কল্পনা করেন, হালাল টাকা দিয়ে হালাল গরু জবাই করে ঘরে রান্না করে রেখেছেন। রোযার চেতনায় আপনি ক্ষুধার্ত হওয়া সত্ত্বেও খাচ্ছেন। কিন্তু আপনি মরা ভাইয়ের গোশত খাচ্ছেন। এটা কত ঘৃণ্য কাজ! এজন্য গীবত করলে রোযার যে স্পিচুয়ালিটি, ছওয়াব, সব নষ্ট হয়ে যায়। তবে যেহেতু তিনি পানাহার থেকে এবং কামাচার থেকে বিরত থেকেছেন তাই ফরটা আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু ছওয়াব এবং সকল রকমের বরকত থেকে তিনি বঞ্চিত হবেন।

১০৯
প্রশ্ন-১০৬: তারাবীহর নামাযের প্রতি চার রাকআতের পর যে দুআটা পড়া হয়, সেটা নাকি ঠিক নয়?
আপনি অন্য এক জায়গায় বলেছিলেন, তারাবীহর নামাযের প্রতি চার রাকআতের পর যে দুআটা পড়া হয়, সেটা নাকি ঠিক নয়। কিন্তু সবাই তো এই দুআটা পড়ে। এখন আমি যদি না পড়ি তাহলে কি আমার গোনাহ হবে?

উত্তর: আমরা সব জায়গায়ই ফাকি দিচ্ছি। সাহাবিদের শেষ যুগে, তাবেয়িদের যুগে তারাবীহ পড় হতো ইশারা পর থেকে অর্থাৎ রাত আটটা ন'টা থেকে সাহরি পর্যন্ত। তাঁদের চার রাকআত সালাত আদায় করতে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় লেগে যেত। এ জন্য চার রাকআত পড়ে একটু শ্রিাম করতেন। এই বিশ্রামের সময় কোনো দুআ নেই। কারণ, বিশ্রাম তো রাসূলের (ﷺ) যুগে ছিলই না। কাজেই দুআ আসবে কী করে! সাহাবিরাও কোনো দুআ করতেন না এবং কোনো ফিকহের কিতাবেও দুআ লেখা নেই। আমরা যে দুআগুলো পড়ি, এগুলো অনেক পরের মানুষেরা বানিয়েছেন। মাসনুন কোনো দুআই না এগুলো। তাই এই সময় যদি বিশ্রাম করা হয়, আপনারা দুরুদ শরীফ পড়েন, তাসবীহ তাহলীল করেন, কুরআন তিলাওয়াত করেন, সূরা ইখলাস পড়েন। সহীহ হাদীস- মুসনাদে আহমাদের হাদীস- কেউ যদি দশ বার সূরা ইখলাস পড়ে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে একটা বাড়ি বানিয়ে রাখবেন। কাজেই ইমাম সাহেব যদি শ্রিাম করেনই, আপনি দশ বার সূরা ইখলাস পড়েন। এটা বরং সুন্নাহসম্মত একটা নেক আমল। যদিও তারাবীহর এই সময় এটা পড়তে হবে, এটা নির্ধারিত নয়। তবে একটা ভালো নেক আমল।

১১০
প্রশ্ন-১০৭: চাকরি শেষে টাকা পেয়ে ইসলামী ব্যাংকে রেখেছেন। ইসলামী ব্যাংক মাসে মাসে যে টাকা দেয়, ওটা কি হালাল?
আমার বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রাইমারি শিক্ষক। চাকরি শেষে উনি যে টাকা পেয়েছেন, ইসলামী ব্যাংকে রেখেছেন। ইসলামী ব্যাংক মাসে মাসে যে টাকা দেয়, ওটা কি আমরা পারিবারিক কাজে ব্যবহার করতে পারব?

উত্তর: প্রথমেই আপনাকে বলব, আপনি আপনার বৃদ্ধ পিতার টাকা দিয়ে সংসার চালাবেন, আপনারা কী করলেন? ইসলাম বৃদ্ধ পিতামাতাকে খাওয়ানো সন্তানের উপর ফরয করেছে। পিতামাতার যাবতীয় খরচ আপনাদের উপর ফরয। কাজেই পিতার টাকা দিয়ে কেন আপনি সংসার চালাবেন। আপনারা আয় করে পিতামাতাকে খাওয়াবেন এটাই তো সন্তানের গৌরব। দ্বিতীয় কথা হল, ব্যাংকব্যবস্থা সুদভিত্তিক।

তবে ইসলামি ব্যাংকিং যারা চালু করেছেন, তাদের যে ব্যবস্থাপনা-মূলনীতি এটা শরীআহভিত্তিক। তারা প্রচলিত আইনের ভেতরে থেকেই সুদকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন। কাগজে কলমে এগুলো ঠিক আছে। কাজেই যারা বাধ্য হন, তারা ইসলামী ব্যাংকের সাথে লেনদেন করতে পারেন, লভ্যাংশ ব্যবহার করতে পারেন। তবে এর দ্বারা প্রচলিত ইসলামি ব্যাংকিংকে আমরা যোলো আনা পারফেক্ট বলতে পারব না। তাদের নিজেদের লেনদেনে ভুল আছে। তবে এই ভুলের জন্য সাধারণ গ্রাহক, বিশেষ করে যারা রিটায়ার্ডমেন্টে গিয়েছেন, টাকা রাখার কোনো জায়গা নেই, তারা দায়ি হবেন। হালালের ভেতরে থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। আমি একজন চাল ব্যবসায়ীকে টাকা দিতে পারি। হিরোইন ব্যবসায়ীকে টাকা দিতে পারি না। চাল ব্যবসায়ী যদি ওজনে কম দেন আর আমি যদি না জানি, বা জেনেও কিছু করার না থাকে, ইনশাআল্লাহ আমি দায়ি হব না। কাজেই এই ধরনের ব্যাংক, যারা ইসলামি শরীআত মানার চেষ্টা করেন, মোটামুটি প্রমাণিত, সুদকে এ্যাভয়েড করছেন, তাদের সাথে লেনদেন করতে পারি। তাদের দেয়া লভ্যাংশ আমরা নিতে পারি ইনশাআল্লাহ।

১১১
প্রশ্ন-১০৮: টেস্টটিউব বেবির ব্যাপারে ইসলাম কী বলে?
উত্তর: মায়ের গর্ভধারণে জটিলতা থাকলে টেস্টটিউব ব্যবহার বৈধ। এটা বর্তমান যুগের সকল আলেম বৈধ বলেছেন। তবে যদি এমন হয়, পিতামাতা ভিন্ন, অন্য কারোর শুক্রাণু ডিম্বাণু গ্রহণ করতে হয়; এটা বৈধ নয়। পিতা এবং মাতার শুক্রাণু ডিম্বাণু এটা টেস্টটিউবে রেখে পরে মায়ের গর্ভে রাখলে এটা বৈধ। এক্ষেত্রে পিতৃত্বের পরিচয় মাতৃত্বের পরিচয় সবই ঠিক থাকে। শুধু গর্ভধারণের জন্য একটা পর্যায় পর্যন্ত প্রযুক্তির সহায়তা নেয়া হয়। কিন্তু অন্যের শুক্রাণু কিংবা অন্যের ডিম্বাণু বা অন্যের জরায়ু ব্যবহার শরীআতে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, হারাম। এতে জন্ম নিয়ে ছেলেখেলা করা হয়। পিতৃপরিচয় এবং রক্তের সম্পর্ক সবই নষ্ট হয়ে যায়।

১১২
প্রশ্ন-১০৯: আমি সাহরির সময় জাগতে না পারায় রোযা রাখি নি। এক্ষেত্রে আমার করণীয় কী?
উত্তর: আপনি কাজটা খুবই অন্যায় করেছেন। আমাদের ধারণা- সাহরি না খেলে রোযা হয়। এটা একেবারেই ভুল ধারণা। আবার তারাবীহ না পড়লে রোযা হয় না। এটাও ভুল কথা। সাহরি খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা ইবাদত। ছওয়াবের কাজ। কেউ যদি মনে করে সাহরি না খেলে রোযা বেশি ভালো হয়, এটা পাপ। কিন্তু কোনো কারণে সাহরি খেতে পারেন নি, এর জন্য রোযার কোনো ক্ষতি নেই। আপনি যে কাজটা করেছেন, খুবই অন্যায় করেছেন। তাওবা করবেন। একটা রোযা আপনি কাযা করবেন। এর বেশি আর কিছু করা লাগবে না। তবে ভবিষ্যতে যেন আমরা এমন কিছু না করি।

১১৩
প্রশ্ন-১১০: বামদিক থেকে ইকামত দেয়া বৈধ নয়?
আমরা একটা বাসায় ওয়াক্তিয়া নামায পড়ি। তো মাঝে মাঝে বামদিক থেকে ইকামত দেয়া হয়। একজন বলছে, বামদিক থেকে ইকামত দেয়া বৈধ নয়। এটা কতটুকু সঠিক?

উত্তর: এটা কুসংস্কার। জ্ঞানের অভাব। সবচে’ দুঃখজনক আমরা না জেনে আন্দাজে অনেক মাসআলা বলি। বিষয় হল, যিনি ইকামত দিচ্ছেন, তিনি ডানে-বামে-পেছনে যে কোনো দিক থেকে ইকামত দিতে পারেন। ইসলামে এর কোনো নির্দিষ্ট নির্দেশনা নেই যে, যিনি ইকামত দেবেন তাকে ইমামের ডানেই থাকতে হবে বা বামেই থাকতে হবে অথবা পিছনে সরাসরি থাকতে হবে বা দুই কাতার পিছনে হলে অসুবিধা হবে- এমন কোনো নির্ধারণ নেই।

১১৪
প্রশ্ন-১১১: নামাযে নাকি নিয়তের দরকার নেই। তাহলে কি আমরা নিয়ত ছাড়াই নামায রোযা করতে পারব?
এখনকার আলেমগণ বলে থাকেন, নামাযে নাকি নিয়তের দরকার নেই। তাহলে কি আমরা নিয়ত ছাড়াই নামায রোযা করতে পারব?

উত্তর: এখানে একটা ভুল আছে। নিয়ত করতেই হবে। নিয়ত করা ফরয। কিন্তু নিয়ত পড়তে হয় না। নিয়ত মানে মনের উদ্দেশ্য। আপনি সাহরির সময় ঘুম থেকে উঠেছেন অথবা রাত্রে ঘুমানোর সময় মনে মনে ভেবেছেন যে, সকালে রোযা রাখব। এটার নাম নিয়ত। এই যে রোযার সময় আমরা নিয়তটা পড়ি।

نويت أن أصوم غدا من شهر رمضان المبارك

এই নিয়তে কারো রোযা হয় না। কারণ হল, আমি নিয়ত করছি, আগামীকাল রোযা রাখব। তাহলে আজকের রোযার নিয়ত আপনি করেন নি। আর রাতের ভেতরে রোযার নিয়ত না করলে সেই রোযা হয় না। আর আগামীকালের জন্য যে রোযার নিয়ত করলেন ওটাও কার্যকর হবে না, কারণ আগামীকাল রাত আসার আগেই আপনি নিয়ত করে ফেলেছেন। এ জন্য এই নিয়ত দ্বারা কারোরই রোযা হয় না। তবে আলহামদু লিল্লাহ, আপনার মনের ভেতরে যে নিয়তটা আছে যে, আজকে রোযা রাখব, ওতেই হবে। এ জন্য নিয়ত করতে হবে। মনের ভেতর আপনার উদ্দেশ্য থাকবে। আর নিয়ত করা না করার পার্থক্য আপনি সাঁকো পার হতে গিয়ে যদি পানিতে পড়ে যান, তাহলে আপনি বিনা নিয়তে পানিতে পড়েছেন। বিনা নিয়তে গোসল করে ফেলেছেন। আর যদি গোসলের নিয়তে আপনি ঘাটে গিয়ে ঝাপ দেন, তাহলে আপনি নিয়তসহ গোসল করেছেন। এইটা হল পার্থক্য।

১১৫
প্রশ্ন-১১২; মেয়েদের জন্য তারাবীহর জামাআতে শরিক হওয়া বৈধ কি না জানতে চাই।
উত্তরঃ প্রথমেই আপনাদের অবগতির জন্য জানাই- তারাবীহর জামাআত শুরুই হয়েছে মহিলাদের দিয়ে। তারাবীহ মাসনুন নফল নামায। মূলত এই নামাযে জামাআত বৈধ না। শুধু জামাআত বৈধ হয়েছে কুরআন শোনার জন্য। আর কুরআন শোনার আবেগ, প্রয়োজন, অধিকার পুরুষদের মতো নারীদেরও একই। রাসূলুল্লাহ সা, তিনদিন জামাআতে তারাবীহ আদায় করেন। এটা হাদীসেই এসেছে স্পষ্ট- তিনি তার স্ত্রী ও মেয়েরেকে জামাআতে শরিক হতে বলেন। অন্য একটা হাদীস, সনদগত কিছু বিতর্ক আছে, উবাই বিন কাব রা. বাড়িতে মেয়েদের নিয়ে জামাআতে তারাবীহ পড়েন। উমার রা. যখন তারাবীহর জামাআত শুরু করলেন মসজিদে, মেয়েদের জন্য আলাদা, পুরুষদের জন্য আলাদা জামাআতের ব্যবস্থা করলেন। মেয়েদের জন্য একজন ইমাম আলাদা, পুরুষদের জন্য ইমাম আলাদা করে দিলেন। পরবর্তীতে উসমান রা. এবং আলি রা.এর যুগে এক জামাআতে, পেছনে, মেয়েরা নামায পড়তেন। কাজেই জামাআতে তারাবীহ পড়ার অধিকার মেয়েদেরও সমান। এ জন্য মেয়েদের যদি সুযোগ থাকে, মসজিদে পর্দার সাথে পৃথকভাবে জামাআতে আসতে পারেন, আলহামদুলিল্লাহ। নইলে নিজেদের বাড়িতে, খানকায়, বৈঠকখানায় তারা জামাআতে তারাবীহ পড়তে পারেন। ইমাম সাহেব কয়েকজন পুরুষকে নিয়ে পর্দা দিয়ে সামনে দাঁড়াবেন- এটা খুবই ভালো। আপত্তি যারা করেন তারা বস্তুত হাদীসও জানেন না, ফিকহও জানেন না হয়তো। আল্লাহ সর্বজ্ঞ। কোনো মাযহাবেও এটা আপত্তি করা হয় নি।

১১৬
প্রশ্ন-১১৩: তাযীমি বা সম্মানের সিজদা- এটা কুরআনে কি কোথাও আছে?
উত্তর: তাযীমি সিজদা রাসূলুল্লাহর (ﷺ) কঠিনভাবে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ কুরআনে নিষেধ করেছেন। তাযীমি সিজদা আগের যামানার উম্মতের ভেতর কিছু কিছু ছিল। আর তাযীমি সিজদাটা কী? মানুষ পীর, ওলিদেরকে যে সিজদা দেয়- এটা শিরক। এটা তাযীমি সিজদা না। এটা প্রভুত্বের সিজদা। যে ব্যক্তি মাকে সিজদা করছে না, বাবাকে করছে না, পীর সাহেবকে করছে- এটা পুরোটাই শিরক। এটা ইবাদতের সিজদা। ওই পীর সাহেবের ভেতর রুবুবিয়্যাত বা আল্লাহ তাআলার সাথে তার কোনো সম্পর্ক আছে মনে করেই ব্যক্তি বা কবরকে সিজদা করছে। পূর্ববর্তী উম্মতদের ভেতরে, যারা বাইবেল পড়বেন তারা ব্যাপকভাবে পাবেন, কুরআনেও আছে, ইউসুফ আ.এর বাবা-মা এবং ভাইয়েরা তাঁকে সম্মানের সিজদা করেন। এখানে কোনো রুবুবিয়্যাত উলুহিয়্যাত না, ভাইকে তারা সিজদা করেছে, ছেলেকে করেছেন- এটা সম্মানের সিজদা। আল্লাহ কুরআনে এটা নিষেধ করেছেন।

وأن المساجد لله فلا تدعوا مع الله أحدا

কাজেই সিজদাটা, সিজদার কর্মটা, সিজদার স্থানটা আল্লাহর। আর কাউকে শরিক করো না। প্রায় ১৭/১৮ জন সাহাবি থেকে বর্ণনা পাওয়া যায়, মুতাওয়াতির হাদীসে এসেছে, সাহাবিরা যখন সিরিয়ায় গেলন, দেখলেন, সিরিয়ার খ্রিস্টানেরা তাদের পাদ্রিদের সিজদা করছে। সম্মানের সিজদা। তাঁরা এসে রাসূল (ﷺ) কে সিজদা করতে গেলেন। তিনি বললেন, না, খবরদার! কোনো মাখলুককে সিজদা করা যাবে না! তোমরা আমাকে সিজদা কোরো না। তাহলে রাসূলুল্লাহ (ছ) কে যদি সিজদা করা না যায়, তাহলে পীর বা ওলিকে কীভাবে সিজদা করা যায়। এটা সত্যিই দুঃখজনক।

১১৭
প্রশ্ন-১১৪: আমার মা-বাবা ইন্তেকাল করেছেন। তাঁদের পক্ষ থেকে ছওয়াবের নিয়তে আমি কুরবানি করতে পারব কি না?
উত্তর: জি, কুরবানি করা যাবে এটাই সহীহ কথা। এটার পক্ষে দুটো হাদীস আছে। একটা সহীহ। একটা দুর্বল। সহীহ হাদীসটা হল, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মদীনায় থাকতে প্রতি বছরেই একটা কুরবানি করতেন নিজের এবং নিজের পরিবারের পক্ষ থেকে। আরেকটা করতেন উম্মতের যারা কুরবানি দেয় নি তাদের পক্ষ থেকে। উম্মতের ভেতর যারা কুরবানি দেয় নি তাদের অনেকে মারা গেছেন, অনেকে জন্মগ্রহণ করেন নি। তাদের পক্ষ থেকে তিনি কুরবানি দিতেন। এতে বোঝা যায়, মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানি করা বৈধ। অন্য একটা হাদীস আছে, হাদীসটা দুর্বল, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ইন্তেকালের পরে আলি রা, তাঁর পক্ষ থেকে কুরবানি করতেন। তো সর্বাবস্থায় মৃত পিতামাতার পক্ষ থেকে কুরবানি করা বৈধ, ইনশাআল্লাহ। অধিকাংশ ফকীহ এই। ব্যাপারে একমত। আপনি সোয়াব পাবেন। তারাও সোয়াব পাবেন।

১১৮
প্রশ্ন-১১৫: ছোট বাচ্চার পেশাব লেগে যাওয়া কাপড় পরে নামায পড়া যাবে কি না?
উত্তর: যদি একেবারে দুগ্ধপোষ্য হয়, দুধ ছাড়া কিছুই না খায়, সেক্ষেত্রে ছেলে বাচ্চা মেয়ে বাচ্চার ব্যাপারে কিছুটা পার্থক্য হাদীসে পাওয়া যায়; মেয়ে বাচ্চা পেশাব করলে রাসূলুল্লাহর (ﷺ) পুরাটা ধুতেন আর ছেলে বাচ্চা হলে শুধু একটু পানি ঢেলে দিতেন। এটার অন্যান্য কারণের ভেতর একটা কারণ হল, মেয়েদের পেশাবের সাথে অনেক সময় পায়খানা চলে যাওয়ার ভয় থাকে। ডাক্তরর ভালো জানেন এটা। ছেলেদের ক্ষেত্রে এটা হয় না। তো সর্বাবস্থায় উভয়েরই পানি ঢালার কথা আসছে। এ জন্য আমাদের সতর্ক থাকা দরকার। অন্তত সালাতের জন্য ভিন্ন কাপড় রাখা উচিত।

১১৯
প্রশ্ন-১১৬: ওযু করে বাচ্চাকে বুকের দুধ পান করালে কি ওযু ভেঙে যাবে?
উত্তর: জি না। ওযু যাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। আমাদের সমাজে ওযু বিষয়ে অনেক কুসংস্কার আছে- মাথার কাপড় পড়ে গেলে ওযু ভাঙে, সতর দেখলে ওযু ভাঙে, পরপুরুষ দেখলে ওযু ভাঙে, গালি দিলে ওযু ভাঙে। অনেক বিষয় আছে যেগুলোতে গোনাহ হতে পারে- যেমন কেউ যদি উলঙ্গ হয়, অন্য মানুষে দেখে, গোনাহ হবে। কিন্তু ওযু ভাঙবে না। ওযু ভাঙার নির্দিষ্ট কারণ আছে। দুধ খাওয়ালে কখনোই ওযু ভাঙবে না।

১২০
প্রশ্ন-১১৭: আমার প্রাইভেট কারের উপর কি যাকাত দিতে হবে?
উত্তর: নিজের ব্যবহারের কোনো কিছুর জন্যই যাকাত দিতে হবে না। যে কারটা বিক্রয়ের জন্য আছে ওটার পুরো মূল্যের উপর যাকাত দিতে হবে। আর যে কারটা আমি ব্যবহার করি তার কোনো যাকাত দিতে হবে না। এমন অন্যান্য বিষয়েরও একই বিধান। যে ঘরে থাকি সেটার যাকাত দিতে হবে না। কিন্তু ফ্ল্যাট কিনে রেখেছি, দাম উঠলে বিক্রয় করব, ওটার পুরো দামের যাকাত দিতে হবে।

১২১
প্রশ্ন-১১৮: আমার দু'বছরের বাচ্চা আছে। তাকে পরিপূর্ণভাবে দুধ পান করানোর জন্য কি আমি রোযা ভাঙতে পারব?
উত্তর: শিশু যখন ছোট থাকে, অন্য খাবার খেতে পারে না, প্রথম ছ'মাস, এর ভেতরে মা যদি মনে করেন রোযা রাখলে দুধ কম পড়বে, উনি রোযা ভেঙে পরে কাযা করবেন। কিন্তু আপনার সন্তানের বয়স দুই বছর, প্রায় দেড় বছর যাবত সে অন্যান্য খাবার খাচ্ছে। দুধ এখন তার জন্য নফল, অপশনাল। এক্ষেত্রে মা রোযা ভাঙবেন না। রোযা রাখবেন।

১২২
প্রশ্ন-১১৯: বিবাহবার্ষিকী পালন করা জায়েয কি না জানতে চাই। এই দিনে ফকির খাওয়ানো যাবে কি না?
উত্তর: বিবাহের সময়ের আনন্দটা হল মূল আনন্দ। বিবাহবার্ষিকী পালন করার যে প্রচলন এটা সম্পূর্ণ অনৈসলামিক রীতি। বছর ঘুরে আসার অপেক্ষায় কেন আমরা থাকব! আমাদের জীবন তো প্রতিদিন নতুন হয়। প্রতিদিন আমরা বিবাহ পালন করব। প্রতিদিন দাম্পত্যের আনন্দ উপভোগ করব। এ জন্য বিবাহের সময় আনন্দ করবেন। কিন্তু বিবাহবার্ষিকী পালন করা এটা ইসলামি নির্দেশনা নয়। বরং ইসলামের বাইরের একটা কালচার আমাদের ভেতর ঢুকে গেছে। আপনারা মাঝে মাঝেই দরিদ্রদের খাওয়াবেন। বছরে একদিন কেন, প্রতি মাসে দুয়েকজনকে খাওয়াবেন যেন পারিবারিক জীবন সুখের হয়।

১২৩
প্রশ্ন-১২০: পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে মহিলাদের নামায রোযা বন্ধ থাকে। পরবর্তীতে এই নামায রোযা কাযা করা লাগবে?
পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে মহিলাদের নামায রোযা বন্ধ থাকে। পরবর্তীতে এইনামায রোযা কাযা করা লাগবে কি না জানতে চাই।

উত্তরঃ এই জাতীয় অসুস্থতার কারণে যে নামায চলে যায় সেটা আর পড়তে হয় না।

এই নামায একেবারেই মাফ। আর যে রোযা বাদ পড়ে যায়, এটা সুস্থ হওয়ার পরে সুযোগ মতো কাযা করতে হবে।

১২৪
প্রশ্ন-১২১: যাকাত আদায়ের টাকাটা চুরি হয়ে গেছে। এখন আমাকে কি আবার যাকাত দিতে?
আমি যাকাত আদায়ের জন্য নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা আলাদা করে রেখেছিলাম। কিন্তু টাকাটা চুরি হয়ে গেছে। এখন আমাকে কি আবার যাকাত দিতে?

উত্তর: জি। আপনাকে যাকাত দিতে হবে। যেটা চুরি হয়েছে ওটা আপনার ভাগ থেকে চুরি হয়েছে। আর দরিদ্রদের পাওনা আপনার অবশিষ্ট টাকার মধ্যে এখনো রয়ে গেছে। যাকাত দিতে হবে।

১২৫
প্রশ্ন-১২২: আউট সোর্সিং এর মাধ্যমে উপার্জিত টাকা হালাল হবে কি না দয়া করে জানাবেন।
উত্তর: এখানে দুটো বিষয় আমাদের লক্ষ রাখতে হবে। যে সময়টা আমি আউট সোর্সিং-এ কাটাচ্ছি, এটা কি আমার সময় না অন্যের সময়? অর্থাৎ যারা কোনো কাজে চুক্তিবদ্ধ, যে কোনো কাজ হোক, আপনি ৮ টা থেকে ৩ টা বা ৫ টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত একটা কোম্পানিতে চুক্তিবদ্ধ- এর ফাঁকে বসে যদি আপনি আউট সোর্সিং করেন, তাহলে এটা বৈধ নয়। এই সময়টা আপনি বিক্রি করে দিয়েছেন। এটা অন্য কাউকে দিতে পারবেন না। এক্ষেত্রে আমরা, মুসলিমরা অনেক অবহেলা করি। আমরা অফিসে বসে আছি, কুরআন পড়ছি, সেবাগ্রহীতা আসছে তাদের সেবা দিচ্ছি না, এটা কঠিন গোনাহের কাজ। কারণ আমি তো এই সময়টা বিক্রয় করে দিয়েছি সেবাগ্রহীতাদের সেবা দেয়ার জন্য। এর বিনিময়ে পয়সা নিচ্ছি। কাজেই আপনি যে সময় আউট সোর্সিং করবেন, এটা আপনার সময় হতে হবে। অন্যের কাছে বিক্রয় করা সময়ে আপনি এটা করতে পারবেন না। দ্বিতীয় হল, যে কাজটা আপনি করছেন এটা বৈধ হতে হবে। এমন কাজ যেন না হয়, যেটা ইসলামের ক্ষতি করে। মানবতার ক্ষতি করে। এই দুটো শর্ত পূরণ করলে ইনশাআল্লাহ আপনার আউট সোর্সিং বৈধ।

১২৬
প্রশ্ন-১২৩: কাফেরদের শাস্তিস্বরূপ তাদের নারীদের দাসী বানানো হত। বিবাহ ছাড়া কি দাসীদেরকে স্ত্রীর মতো ব্যবহার করা যাবে?
আমি জেনেছি যে ইসলামের প্রাথমিক যুগে কাফেরদের শাস্তিস্বরূপ তাদের নারীদের দাসী বানানো হত। বিবাহ ছাড়া কি দাসীদেরকে স্ত্রীর মতো ব্যবহার করা যাবে?

উত্তর: দাসী শব্দটা ঠিক দাসী নয়; ক্রীতদাসী। দাসব্যবস্থা প্রাচীন যুগ থেকেই ছিল। আরব দেশেও এটা ছিল। তঙ্কালীন অর্থব্যবস্থা দাসব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল ছিল। দাসরা ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি কাজগুলো কর। ইসলাম দাসব্যবস্থাকে সংকুচিত করে। দাসীকে বিবাহ করার সুযোগ দেয়া হয়েছে মূলত তার মুক্তির জন্য। তার মুক্তির বিভিন্ন পদ্ধতির একটা পদ্ধতি হল বিবাহ। দাসীকে বিবাহ করার শর্ত অন্যান্য নারীর বিবাহের মতোই। তিনি স্বামীহীন হবেন, বিধবা হবেন, তার বিবাহের অন্য কোনো বাধা থাকবে না। এই রকম দাসীকে ক্রয়চুক্তির মাধ্যমে স্ত্রী হিসেবে স্বামী ব্যবহার করতে পারবেন। এর কারণে ওই দাসীর যখন সন্তান হবে, তিনি আজীবনের জন্য মুক্ত হয়ে যাবেন। আর তাকে বিক্রি করা যাবে না। এটা দাস মুক্তির একটা পদ্ধতি। এটা ওই সময় যারা ক্রীতদাসী ছিল তাদের জন্য প্রযোজ্য। কোনো স্বাধীন মানুষকে বিক্রি করা, ক্রয় করা এটা সম্পূর্ণ হারাম। ইসলাম বিরোধী কাজ। অত্যন্ত শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

১২৭
প্রশ্ন-১২৪: নামাযের মধ্যে ঘুম আসে, উদাসীনতা তৈরি হয়। এই সময় আমরা কী করব? নামায ছেড়ে দেব?
নামাযের মধ্যে অনেক সময় আমাদের ঘুম আসে, উদাসীনতা তৈরি হয়। এই সময় আমরা কী করব? নামায ছেড়ে দেব?

উত্তর: এখানে দুটো বিষয়। ঘুম আসা আর অমনোযোগ। অমনোযোগের ব্যাপারে হাদীস আছে। এক সাহাবি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে এসে বলছেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, নামাযের মধ্যে মনোযোগ চলে যায়। কী করব? তিনি বললেন, এটা শয়তানের কাজ। শয়তান মনোেযোগ নষ্ট করে। তুমি সালাতরত অবস্থায় ‘আউযু বিল্লাহি মিনাশ শায়তনির রাজীম’ বলে বামদিকে থুতু ফেলার মতো করবে। এতে শয়তান চলে যাবে। এজন্য অন্যদিকে মন চলে গেলে এই আমলটা করতে পারেন। এতে মনোযোগ ফিরে আসবে। আর মনোযোগের সবচে' বড় যে বিষয় হল, আমরা সালাত গতানুগতিকভাবে। পড়ব না। একই দুআ একই তাসবীহ, এটা পড়লে মনোযোগ আসবে না। সানা যেটা আমরা পড়ি, একেক সময় একেক সানা পড়বেন। সিজদার দুআ রুকুর দুআ, একেক সময় একেকটা পড়বেন। তাহলে মনোযোগ খুব ভালো থাকবে। এবং আল্লাহর সাথে কথা বলার চেতনা বেড়ে যাবে। আসলে আমরা সালাতে আল্লাহর সাথে কী কথা বলছি এটা বুঝতে হবে। প্রতিটি শব্দের অর্থ না হলেও অন্তত বাক্যের অর্থ শেখা, এটা অতি সহজ ব্যাপার। আমরা সালাতে যে দুআগুলো যিকিরিগুলো বলি, এর দ্বারা আমরা আল্লাহর সাথে কথা বলি। সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম, রাব্বিয়াল আ'লা- এই কথার দিকে যখন আমার মনোযোগ যাবে তখন আমার মনোেযোগ নষ্ট হবে না। বরং সালাতের পরে দেখবেন আপনার মনের দুশ্চিন্তা, হতাশা সব দূর হয়ে গেছে। আর দ্বিতীয়ত ক্লান্তির ব্যাপার। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নফল ইবাদতের ব্যাপারে বলেছেন:

دوا من الأعمال ما تطيقون، فإن الله لا يملك

তোমরা সাধ্যে কুলানোর মতো ইবাদত করো। যেটুকু আনন্দ উৎফুল্লতার সাথে করতে পারো সেটুকু করো। তোমরা ক্লান্ত না হলে আল্লাহ ক্লান্ত হন না। কাজেই আপনি যে সালাতের কথা বলছেন, এটা যদি ফরয সালাত হয়, তাহলে সময় মতো আদায় করতে হবে। ক্লান্তি দূর করে আদায় করতে হবে। আর যদি তাহাজ্জুদ নফল ইত্যাদি হয়, তাহলে আপনি উদ্দীপনার সাথে আদায় করার চেষ্টা করবেন। বেশি ক্লান্ত হলে ঘুমিয়ে পড়ে পরে উঠে ইবাদত করবেন। এরপরেও যদি সালাতে দাঁড়িয়ে ঘুম এসে যায়, তন্দ্রা লাগে আপনি এর ভেতরেই নিজের অনুভূতি ফিরিয়ে নিয়ে ইবাদত করতে পারেন। বিশ মিনিট আধা ঘণ্টার ইবাদতে আপনার দুচার মিনিট মনোযোগ নষ্ট হতে পারে, এ জন্য দুশ্চিন্তা করবেন না। (সহীহ বুখারি-৫৮৬১; মুসলিম-৭৮৫)

১২৮
প্রশ্ন-১২৫: নামযের ভেতর যদি আবেগে কান্না আসে, সশব্দে কাঁদলে নামাযের কোনো ক্ষতি হবে কি না?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজেও সালাতে কাদতেন। তাহাজ্জুদের সালাতে এমনভাবে কাঁদতেন, কান্নার শব্দকে মনে হত রান্নার হাঁড়ি গড়গড় শব্দ করছে। তবে শব্দ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। চোখে পানি আসবে, তিলাওয়াত না করতে পারলে থেমে যেতে হবে। চিঙ্কার করা বা শব্দ করা এটা ঠিক নয়।

১২৯
প্রশ্ন-১২৬: ওষুধের মাধ্যমে রমাযান মাসে পিরিয়ড বন্ধ রেখে রোযা রাখা জায়েয হবে কি না জানাবেন।
উত্তর: কেউ যদি ওষুধ খেয়ে তার সুস্থতা জারি রাখেন এবং রামাযানের সব রোযা রাখেন তাহলে তার রোযা হয়ে যাবে। এই রোযা আর কাযা করতে হবে না। তবে এই ধরনের ওষুধ ব্যবহারের আগে আপনারা চিকিত্সকের পরামর্শ নেবেন।

১৩০
প্রশ্ন-১২৭: কারো যদি কিছু স্বর্ণ থাকে এবং কিছু টাকা থাকে, উভয়কে একসাথে হিসাব করে যাকাত দেয়া হবে?
কারো যদি কিছু স্বর্ণ থাকে এবং কিছু টাকা থাকে, উভয়কে একসাথে হিসাব করে যাকাত দেয়া সহীহ হবে কি না জানতে চাই।

উত্তর: জি, যদি স্বর্ণের নিসাব হয়, টাকার নিসাব হয় তাহলে উভয়কে একসাথে হিসাব করে যাকাত দেবেন। অথবা মনে করেন সোনা আছে পাঁচ ভরি আবার টাকা আছে দুলাখ, দুটোকে একসাথে মিলিয়ে নিসাব পূর্ণ করবেন। এটাই সঠিক এবং নিরাপদ মত। প্রত্যেক বিষয় আলাদা করারও একটা মত আছে। তবে সহীহ কথা হল আপনার কিছু সোনা, কিছু টাকা থাকলে একসাথে মিলিয়ে নিসাব হয়ে গেলে আপনি যাকাত দিয়ে দেবেন।

১৩১
প্রশ্ন-১২৮: আমি তামাক কোম্পানিতে চাকরি করি। আমার চাকরি হালাল হবে কি না?
উত্তর: তামাকের বৈধ ব্যবহার নেই। এর ব্যবহারটা অবৈধ। তামাকের মাধ্যমে যা উৎপন্ন করা হয় বা তৈরি করা হয়, প্রায় সকল আলেম একমত, এটা হারাম বা মাকরুহে তাহরীমি। কাজেই এটার সাথে সংশ্লিষ্ট থাকা, চাষ করা বা বিক্রয় করা প্রায় সকল আলেম, অল্পকিছু আলেম বাদে, সবার নিকট এটা অবৈধ।

১৩২
প্রশ্ন-১২৯: জামাআতের নামাযে ইমামের সুরা ফাতেহা পড়ার পরে উচ্চস্বরে আমীন বলা জায়েয কি না?
উত্তর: আমীন জোরে বলার সহীহ হাদীস রয়েছে। সাহাবিরা আমীন জোরে বলতেন। তাবেয়িরাও বলতেন। আবার আমীন আস্তে বলারও হাদীস আছে। সনদগতভাবে অত্যন্ত সহীহ হাদীস রয়েছে। তবে মুহাদ্দিসগ এটাকে শা বলেছেন। সর্বাবস্থায় আমীন বলাটা একটা মুস্তাহাব কাজ। আমীন না বললেও সালাতের কোনো ক্ষতি হবে না। আমীন জোরে বা আস্তে দুভাবেই বলা যেতে পারে। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, আমাদের আশেপাশের মুসল্লিদের যেন কষ্ট না হয়। যে মসজিদে সবাই আস্তে বলেন, আমি যদি এমন জোরে বলি যে, পাশের মুসল্লি ভয় পেয়ে যান, নামাযের মনোযোগ নষ্ট হয়, মোবাইলের রিঙটোন বাজার মতো একটা অসুবিধা হয় তাহলে এতে আমার সোয়াব হবে না, গোনাহ হবে। যদি জোরে বলাকে কেউ উত্তম মনে করেন, তাহলে সামান্য জোরে আমীন বলবেন, এটাই যথেষ্ট। উভয় কর্মেরই হাদীস আছে। হাদীসের গ্রহণযোগ্যতার বিচারে ফকীহগণ এবং মুহাদ্দিসগণের মতভেদ আছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা জোরে আমীন বলি অথবা আস্তে, উভয় ক্ষেত্রে আমরা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে চাচ্ছি। এমন যেন না হয়, অমুক আস্তে বলছে। আমি জোরে বলব। অথবা অমুক জোরে বলে তাই আমি জোরে বলব না। আবার এমনও হয়, কেউ জোরে বললে আমরা মনে করি মহাপাপ হয়ে গেল। মসজিদ থেকে তাকে আমরা বের করে দিচ্ছি। এটা খুব দুঃখজনক। যেটা সুন্নাতে আছে, সাহাবিরা করেছেন, এটা অথবা ওটা, আমরা দুটোর যেটাকেই ঘৃণা করি, প্রকারান্তরে রাসূলের হাদীসকে ঘৃণা করছি। সাহাবিদের কর্মকে ঘৃণা করছি। আমার অনুরোধ হল, আমাদের মসজিদে মহাপাপীরা নামায পড়ে, কিছুই বলি না। কিন্তু জোরে আমীন বললে রাগ করি। অথচ আমলটা সহীহ সুন্নাহসম্মত। আবার মসজিদের ভেতর নামায হচ্ছে না এমন পাপ করা হচ্ছে, যেটা হাদীসেই বলা হয়েছে নামায হবে না, রুকু সিজদা হচ্ছে না; তাদেরকে কিছু বলছি না। আমীন আস্তে বললে বলছি যে, তোমার। নামাযই হয় নি। এটা খুবই দুঃখজনক।

১৩৩
প্রশ্ন-১৩০: তারাবীহ নামাযের ভেতর দ্রুত কুরআন পড়ার বিধান কী?
তারাবীহ নামাযে হাফেয সাহেবরা খুব দ্রুত কুরআন পড়েন। মুসল্লিরা ভালো মতো শব্দগুলো বুঝতেও পারে না। নামাযের ভেতর এমন দ্রুত কুরআন পড়ার বিধান কী?

উত্তরঃ আমরা কুরআন খতম করি। খতম করার দুটো অর্থ আছে। একটা হল পূর্ণ করা। আরেকটা হল হত্যা করা। আমরা তারাবীহতে কুরআন হত্যা করি। তারাবীহ পড়া আমাদের জন্য সুন্নাহ ইবাদত। কুরআন শোনা সুন্নাতের একটা মুস্তাহাব ইবাদত। যতটুকু শুনব ততটুকুই আমি ছওয়াব পাব। প্রত্যেকটা অক্ষর, তার সিফাত, মাদ, গুন্নাহসহ শুনলে আমি শোনার ছওয়াব পাব। কিন্তু হাফেয সাহেব যদি দ্রুত পড়েন, অনেক অক্ষর স্পষ্ট হয় না, এমনকি অনেক শব্দও বোঝা যায় না; এমন হলে খতম তো হবেই না বরং গোনাহ হবে কুরআন বিকৃত করার কারণে। আর সহীহভাবে, সুন্দর করে কুরআন পড়ে তারাবীহ পড়তে সর্বোচ্চ ৬০ মিনিট লাগে। আর নষ্ট করে হত্যা করে পড়লে ৪০ মিনিট লাগে। এই ২০ মিনিটের জন্য আমরা কুরআনকে হত্যা না করি। যদি একান্তই সময় আপনার না থাকে, আপনি সূরা তারাবীহ পড়েন। অন্তত কুরআন ধ্বংস করবেন না।

১৩৪
প্রশ্ন-১৩১: আল্লাহ রোযার পুরস্কার নিজ হাতে দেবেন। তাহলে অন্যান্য নেক আমলের পুরস্কার কে দেবেন?
আমি আপনাদের আলোচনায় শুনেছি, পত্রিকায় পড়েছি, রোযার ব্যাপারে আল্লাহ পাক বলেছেন, রোযার পুরস্কার আমি নিজ হাতে দেব। তাহলে অন্যান্য নেক আমলের পুরস্কার কে দেবেন? ব্যাখ্যাসহ জানালে উপকৃত হব।

উত্তর: আসলে হাদীসটা আপনি আরবিতে পুরাটা পড়লে বুঝতে পারতেন। আল্লাহ তাআলা হাদীসে কুদসিতে এই কথার শুরুতে বলেছেন, প্রত্যেক কর্মের ছওয়াব আমি দশগুণ থেকে সাতশত গুণ দেব। কিন্তু রোযা আমার জন্য, আমি এর পুরস্কার দেব। এটার সংখ্যাটা বলেন নি। আপনি সহজে বুঝতে পারবেন, প্রত্যেকটা ইবাদত আমরা বললেও কেউ না কেউ টের পায়। কিন্তু আপনি সাহরি খেয়েছেন, ইফতার খেয়েছেন, মাঝখানে দিনের বেলা কোনো এক সময় কিছু খেয়ে নিয়েছেন অথবা পান করেছেন; এটা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। তার মানে আপনি শুধু আল্লাহর ভয়েই পানাহার থেকে বিরত থেকেছেন। আমি খুব সংক্ষেপে একটা দুঃখের ঘটনা বলি। আমি যখন সৌদি আরবে পড়তাম তখন আমার সাথে সিরিয়ান এক ভাই পড়তেন। অনার্স করে ওই ভাই সিরিয়ায় গিয়ে একটা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করতেন। সিরিয়াতে রাশিয়া এবং সেভিয়েত ইউনিয়নের ছেলেমেয়েরা বর্তমানে ইসলাম শিখতে আসে। আমার বন্ধু বললেন, কমিউনিস্ট শাসনের যুগে ওখানকার মুসলিমরা সালাত আদায় করতেন না। তিন-চার প্রজন্ম নামায পড়তেন না। কারণ, নামায পড়লে কমিউনিস্ট পার্টির মেম্বর হওয়া যায় না। কিন্তু তারা রোযা রাখতেন। কারণ রোযা তো কেউ দেখে না। নামায পড়লে কেউ না কেউ দেখে ফেলার ভয় আছে। কিন্তু রোযা তো কেউ দেখে না। এ জন্য রোযা এমন একটা ইবাদত, যেটা আপনি নষ্ট করলে আল্লাহ ছাড়া কেউ টের পাবে না। তাই এর পুরস্কার আল্লাহ নিজ হাতে দেবেন।

১৩৫
প্রশ্ন-১৩২: মসজিদে মোমবাতি দেয়া জায়েয আছে কি না?
উত্তর: আমার প্রশ্ন হল, কী প্রয়োজনে মোমবাতিটা দেব? যদি মসজিদ অন্ধকার হয়, বিদ্যুৎ না থাকে, এমন জায়গায় হয় যেখানে বিদ্যুতের কোনো ব্যবস্থা নেই- অবশ্যই মোমবাতি দেব। আল্লাহ তাআলা অকারণ ব্যয় ঘৃণা করেন। বিশেষ করে মসজিদ বা কোথাও মোমবাতি দিলে এর দ্বারা বিশেষ কোনো উপকার পাবেন এই চিন্তা কুসংস্কার অথবা শিরক। কল্যাণ হল মানুষের উপকার করায়, মানুষকে ভালো পথে নিয়ে যাওয়ায়। কাজেই যে মসজিদে আলো আছে সেখানে মোমবাতি দেয়াটাই তো অপচয়। মসজিদে তো আল্লাহর ইবাদত হয় সেখানে মোমবাতি লাগতে পারে। কিন্তু মাযারে বা করে মোমবাতি দেয়াকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) অভিশাপের কাজ বলেছেন।

لعن رسول الله صلى الله عليه وسلم ( و في رواية : لعن الله ) زائرات القبور والتخذين عليها الماجد والشرج

যে সমস্ত মহিলারা বারবার কবর যিয়ারত করে এবং নারী পুরুষ যারাই কবরে মোমবাতি দেয়, আলো জ্বালায় অথবা কবরের উপরে মসজিদ বানায় আল্লাহ তাআলা (আল্লাহর রাসূল) তাদেরকে লানত করেছেন। অভিশাপ করেছেন।

১৩৬
প্রশ্ন-১৩৩: রাসূল (ﷺ) জুমআর খুতবা থামিয়ে বললেন, তুমি দুই রাকআত নামায পড়ে নাও। এই নামায আসলে কিসের নামায?
বুখারি শরীফের বাংলা একটা হাদীসে আমি দেখেছি, রাসূল (ﷺ) একদিন জুমআর নামাযে খুতবা দিচ্ছিলেন, এমন সময় এক সাহাবি মসজিদে প্রবেশ করলেন। রাসূল (ﷺ) খুতবা থামিয়ে দিয়ে বললেন, তুমি কি দুই রাকআত নামায পড়েছ? যদি না পড়ে থাকো তাহলে দুই রাকআত নামায পড়ে নাও। আবার খুতবা শোনা তো ওয়াজিব। তো এই নামায আসলে কিসের নামায? আমরা এটা পড়ব কি না?

উত্তর: আপনি যে সালাতের কথা বলেছেন, এটা হল দুখুলুল মাসজিদ বা তাহিয়্যাতুল মাসজিদের সালাত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:

إذا دخل أحدكم المسجد، فلا يجلسن حتى يصلي ركعتيني

তোমরা কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে অন্তত দুই রাকআত সালাত না পড়ে বসবে না। এটা মসজিদের হক। আপনি যদি ঢুকে কোনো ফরয নামাযেও দাঁড়িয়ে যান তাহলেও মসজিদের হক আদায় হয়ে যাবে। কোনো সালাত না পড়ে বসলে মসজিদের হক নষ্ট করা হয়। যখন আরবিতে খুতবা চলে এই অবস্থায় সালাতের কী হবে- এই যে হাদীসটার কথা আপনি বলেছেন, এটা সহীহ হাদীস। এই হাদীস অনুযায়ী আরবি খুতবা বা যে কোনো সময় ঢুকলেই আমাদের দুই রাকআত সালাত পড়ে বসা উচিত। কিন্তু অন্য আরেকটা হাদীস আছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দেখলেন, এক ব্যক্তি মসজিদে ঢুকেছেন, তিনি মানুষদের মাথার উপর দিয়ে ডিঙিয়ে ডিঙিয়ে সামনে আসছেন, তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তুমি বসে পড়ো। তুমি দেরি করে এসেছ আবার মানুষকে কষ্ট দিচ্ছ। এখানে সালাত পড়ে বসতে বলেন নি। এমনি বসে যেতে বলেছেন। তো সব মিলিয়ে এক্ষেত্রে ফুকাহাদের মতভেদ আছে। আমরা যে কোনো হাদীসের উপর আমল করতে পারি। আল্লাহ তাওফীক দিন। (সহীহ ইবন হিন-৩১৭৯; নাসায়ি-৪/৯৪-৯৫; তিরমিযি-৩২০; ইবন মাযাহ-১৫৭৫ * সহীহ বুখারি-৪৪৪; মুসলিম-৭১৪)

১৩৭
প্রশ্ন-১৩৪: জুমআর নামায কত রাকআত?
উত্তর: জুমআর নামায দুই রাকআত আমরা জানি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আগে কিছু সালাত পড়তেন। কয় রাকআত পড়তেন ক্লিয়ার নেই। সাহাবিরা কেউ চার রাকআত পড়তেন; বেশি পড়তেন কম পড়তেন। জুমআর পরে রাসূলুল্লাহর (ﷺ) দুই রাকআত অথবা চার রাকআত- দুই রকমই পড়তেন। দুটোই সহীহ। তবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নফলগুলো, সুন্নাতগুলো ঘরে গিয়ে পড়তেন। এটাও সহীহ। আমরা ঘরে পড়তে পারি। কোনো কোনো সাহাবি মসজিদে পড়েছেন। ঘরে পড়া উত্তম, মসজিদে পড়া বৈধ।

১৩৮
প্রশ্ন-১৩৫: নন-মাহরামের সাথে (গাইরে মাহরাম) আচরণের সীমা কেমন হওয়া উচিত?
আমি জানতে চাচ্ছি, নন-মাহরামের সাথে (গাইরে মাহরাম) আচরণের সীমা কেমন হওয়া উচিত? বাসায় যদি নন-মাহরাম আসে বা রাস্তায় যদি পরিচিত নন মাহরামের সাথে দেখা হয়, তাহলে সালাম দিয়ে কুশল জিজ্ঞেস করা যাবে কি না? নন মাহরাম বাসায় আসলে সামনে গিয়ে তাকে খাবার খাওয়ানো বা একই টেবিলে খাওয়া যাবে কি না?

উত্তর: জি বোন, অনেক ধন্যবাদ আপনার এই সচেতনতার জন্য। মেয়েদের জন্য গাইরে মাহরামের সাথে কথা বলার অনুমতি আছে অতি সাধারণভাবে। কণ্ঠের ভেতর যেন কোনো রকম আকর্ষণীয়তা সৃষ্টি না হয়। আপনি কথা বলতে পারেন, কুশল বিনিময় উচিত নয়। দেখা হলে একান্ত প্রয়োজনে সালাম দেয়া যেতে পারে। সেটাও কথা বলার প্রয়োজনে। শুধু সালাম নয়। আর বাড়িতে কেউ গেলে আপনি পর্দার সাথে খাবার সার্ভ করতে পারেন। তবে এই দায়িত্ব পুরুষদের উপর দিয়ে দেয়া উচিত। আর এক টেবিলে খাওয়া এড়িয়ে চলবেন। আসলে বাড়াবাড়ির সংজ্ঞাটা কী- এটা হল কথা। আমরা যদি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে আমাদের সীমা ধরি, তাহলে বেগানাদের সাথে একই টেবিলে খাওয়া বর্জন করা, এটা বাড়াবাড়ি নয়, উচিত। আর যদি আমাদের মতামতকে সীমা ধরি, তাহলে তো একেক জনের কাছে একেক রকম বাড়াবাড়ি। কারো কাছে নামায পড়াটাই বাড়াবাড়ি।

১৩৯
প্রশ্ন-১৩৬: নামাযে হাত কোথায় বাঁধব? নাভির নিচে, নাভির মাঝখানে নাকি নাভির উপরে?
উত্তর: আমার উত্তর হল, হাতটা ঝুলিয়ে রেখেন। ঝগড়া করার চেয়ে হাত ঝুলিয়ে রেখে সালাত আদায় করলে আদায় হয়ে যাবে, কোনো সমস্যা নেই। দুর্ভাগ্য যে আমরা ছোটছোট বিষয়কে অনেক বড় বানিয়ে ফেলেছি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে ১২/১৩ টা সহীহ হাদীস এসেছে, তিনি বলেছেন, সালাতের ভেতরে ডান হাতটাকে বাম হাতের উপরে রাখবে। কোথাও কজির উপরে কজি, কোথাও বাহুর উপরে হাত। এরপরে আসে হাতটা আমি কোথায় রাখব? বিশ্বাস করেন, আমি যতটুকু পড়াশেনা করেছি, এ বিষয়ে একটা হাদীসও সহীহ নয়। কোনো হাদীস নাভির নিচে আছে, এটা দুর্বল। কোনো হাদীসে বুকের উপর এসেছে এটাও দুর্বল, মুরসাল হাদীস। তো সব মিলিয়ে আপনি যেখানে হাত রাখলে সুবিধা পাবেন, স্বস্তি পাবেন, রাখবেন। ইনশাআল্লাহ সুন্নাত যোলো আনা আদায় হবে।

১৪০
প্রশ্ন-১৩৭: পারফিউম ব্যবহার করে নামায পড়া যাবে কি না?
উত্তর: পারফিউমে অ্যালকোহল থাকে তাই আমরা অনেক সময় মনে করি, অ্যালকোহল মানেই তো মদ। কাজেই এটা বোধহয় নাপাক। আসলে অ্যালকোহল একটা কেমিকেল টার্ম। অ্যালকোহল অর্থই মদ নয়। যে অ্যালকোহল পান করলে মানুষ মাতাল হয়, এটা শুধু মদ। অধিকাংশ অ্যালকোহলই মাদক নয়। বরং বিষাক্ত। খেলে মাতাল হবে না বরং মানুষ মারা যাবে। যেমন ডেটল ইত্যাদি দিয়ে আমরা হাত ধুই- এটাও অ্যালকোহল। অ্যালকোহল নাপাক নয়। শুধুমাত্র মদ, যেটা আঙুর বা খেজুর দিয়ে তৈরি, যার মধ্যে মাদকতা আছে- এই রকম হলে সেটা হারাম বা নাপাক হতে পারে। এ জন্য সাধারণ পারফিউম ব্যবহার করে সালাত আদায় করাতে কোনো সমস্যা নেই। (অবশ্য মহিলারা। পারফিউম ব্যবহার করে মসজিদে জামাআতে যাবে না।)

১৪১
প্রশ্ন-১৩৮: সুস্থ সক্ষম ব্যক্তি বসে নামায পড়লে সমস্যা আছে কি না?
উত্তর: ফরয সালাত দাঁড়িয়ে পড়া ফরয। যে ব্যক্তি দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন, অন্তত সালাত আদায় করার এই ২/৩ মিনিট সময় তিনি বসে ফরয সালাত আদায় করলে সালাত হবেই না। আর নফল সালাত বসে পড়লে হবে। তবে ছওয়াব কম হবে।

১৪২
প্রশ্ন-১৩৯: রাসূল (ﷺ) কি হাজির-নাজির?
অনেক আলেম বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) হাজির-নাজির। আবার কেউ কেউ বলেন, না, হাজির-নাজির নয়। কোনটা সঠিক?

উত্তর: আসলে আমরা কোন ইসলাম চাই? মুহাম্মাদ (ﷺ) যেটা দিয়ে গেছেন ওটাতে আমরা পরিতৃপ্ত নাকি আমাদের আরো কিছু বাড়িয়ে নেয়ার দরকার আছে- এটার উপর নির্ভর করবে আমাদের উত্তর। হাজির এবং নাজির দুটোই আরবি শব্দ। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ক্ষেত্রে এই দুটো বিশেষণ কুরআন বা হাদীসে কোথাও প্রয়োগ করা হয় নি। আমরা চার ইমামের অনুসরণের কথা বলি, বুযুর্গদের কথা বলি, আব্দুল কাদের জিলানির কথা বলি; তারা কেউ কখনো এই দুটো শব্দ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর উপর প্রয়োগ করেন নি। তাহলে আমার কেন করব! আমরা কি তাদের চেয়েও আল্লাহর বেশি প্রিয় হতে চাই? দ্বিতীয়ত হাজির-নাজির মানে হল যিনি সর্বত্র বিরাজমান এবং যিনি সবকিছু দেখেন। এই ধরনের বিশেষণ শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলার জন্য প্রযোজ্য।

وهو من أين ما كنتماد

কাজেই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে আল্লাহর বিশেষণ দিয়ে তাঁকে রব বানিয়ে আমাদের কী লাভ! আল্লাহ তাআলা কি তাঁর রুবুবিয়্যাত নষ্ট করে ফেলেছেন! তৃতীয়ত মুহাম্মাদ (ﷺ) কে এই গুণ দিলে তাঁর মর্যাদা কি বাড়ে? তিনি সারা জীবন কষ্ট করেছেন। দাওয়াত দিয়েছেন। ওফাতের পরে তিনি আল্লাহর দীদারে আছেন। উম্মত সালাম ও দুরুদ পড়লে ফেরেশতারা পৌঁছে দেন। তিনি কেন উম্মতের সবকিছু দেখার এই বাজে ঝামেলা নিতে যাবেন! এটা কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী। এবং এতে শিরকের একটা দরজা খুলে যায়।

১৪৩
প্রশ্ন-১৪০: মনে যদি কুফরি ভাব আসে তাহলে কি ঈমান চলে যায়।
উত্তর: মনের ভেতর কুফরি, ওয়াসওসা আসলে যে আপনার খারাপ লাগছে এটা প্রমাণ করে যে আপনি ভালো ঈমানদার। এই কথাটাই সাহাবাগণ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে জিজ্ঞেস করতেন- ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমাদের এমন কথা মনে আসে যেটা মুখে উচ্চারণ করার আগে কতল হয়ে যেতে আমরা রাজি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, এটাই তো ঈমান। যে পকেটে মোটে টাকা নেই সেখানে পকেটমার ঘোরে না তো! যে পকেটে টাকা আছে, পকেটমার তার আশেপাশে ঘোরার চেষ্টা করে। যে কালবে ঈমান আছে শয়তান তার আশেপাশে ঘোরে। এটাই প্রমাণ করে যে আপনার ঈমান আছে। কাজেই এই ধরনের ওয়াসওসায় দুশ্চিন্তা করবেন না। লা হাওলা ওয়া লা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ পড়বেন।

১৪৪
প্রশ্ন-১৪১: ঈমান বৃদ্ধির কোনো উপায় আছে কি না?
উত্তর: ঈমান বৃদ্ধি করতে হলে অবশ্যই আমাদেরকে দীন পালন করতে হবে। তবে সহজ পদ্ধতি হল আমরা সব সময় আল্লাহর যিকির করব- সুন্নাত যিকির। এ জন্য ওযু-গোসল লাগে না। যে কোনো অবস্থায় করা যায়। আল্লাহর সাথে কথা বলব। মনের কথা তাকে জানাব। এটা অত্যন্ত উপকারী। সবসময় দুরুদ শরীফ পড়ব। এ জন্যও ওযু গোসল জরুরি নয়। আর কুরআন তিলাওয়াত করব, বোঝার চেষ্টা করব। অতি সহজে আমাদের ঈমান বৃদ্ধি পাবে।

১৪৫
প্রশ্ন-১৪২: এত গোনাহ করেছি, আল্লাহর কাছে কীভাবে মাফ চাইব? মাফ চেয়ে কীভাবে আমি নিস্পাপ হয়ে যেতে পারব?
উত্তর: আল্লাহ তাআলা কুরআন কারীমে বলেছেন:

১৬ সূরা হাদীদ-০৪

قل يا عبادي الذين أسرفوا على أنفسهم لا تفتطوا من رحمة الله إن الله يغفر الذنوب

হে আমার বান্দারা, তোমরা যারা অনেক গোনাহ করেছ, আমার রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। আল্লাহ সব গোনাহ মাফ করতে পারেন। কাজেই আমরা তো গোনাহ করবই। মানুষের প্রকৃতিই গোনাহের দিকে যায়, অন্যায়ের দিকে যায়। অন্যায় করে ফেলি। আল্লাহ ক্ষমা করতে চান। আল্লাহ রাতে হাত বাড়িয়ে দেন, যেন দিনের পাপগুলো আমরা রাতে মাফ চেয়ে নিতে পারি। এইভাবে আল্লাহ সবসময় বান্দাকে মাফ করতে চান। মাফের জন্য প্রথম কাজ হল তাওবা। তাওবা মানে শুধু ক্ষমা চাওয়া নয়। আল্লাহ তাআলার কাছে অনুতপ্ত হওয়া, ক্ষমা চাওয়া, আর কখনোই এই পাপগুলো করব, এটা ওয়াদা করা এবং যদি কোনো বান্দার হক থাকে সেটা অবশ্যই ফিরিয়ে দেয়া বা মাফ চেয়ে নেয়া। এটা করলে আল্লাহ সকল গোনাহ মাফ করবেন। দুশ্চিন্তার কারণ নেই। আল্লাহ মাফ করতে চান। মাফ করতে পারলে খুশি হন।

১৪৬
প্রশ্ন-১৪৩: জমি কেনার জন্য আমি দেড় লক্ষ টাকা জমিয়েছি। এই টাকার উপর যাকাত আসবে কি না জানাবেন।
জমি কেনার জন্য আমি দেড় লক্ষ টাকা জমিয়েছি। কিন্তু জমি কিনতে পারি নি। এই টাকার উপর যাকাত আসবে কি না জানাবেন।

উত্তর: জি, সকল সঞ্চিত টাকা- জামি করার জন্য, হজ্জ করার জন্য, কোনো ভালো কাজে ব্যয় করার জন্য, বিবাহের খরচের জন্য টাকা জমা করেছেন, ব্যয় হয় নি, আপনার ওই সঞ্চিত টাকার এক বছর পূর্ণ হয়েছে, গত বছরের যাকাতের পর নতুন বছরের যাকাতের সময় এসেছে, সব টাকার যাকাত আপনাকে একত্রে দিতে হবে। যতক্ষণ তার মালিক আপনি রয়েছেন, ব্যয় করার ক্ষমতা আপনার রয়েছে ততক্ষণ এই টাকার যাকাত দিতে হবে।

১৪৭
প্রশ্ন-১৪৪: রোযা অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করলে যদি গোসল ফরয হয়ে যায় তাহলে তার কাযা-কাফফারা কীভাবে করতে হবে?
উত্তর: আমরা জানি রোযা ভাঙার কারণ হল পানাহার এবং স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক। কেউ যদি রোযা অবস্থায় এগুলো করে তাহলে তার রোযা ভেঙে যাবে। এক্ষেত্রে তার কঠিন গোনাহ হয়েছে। তিনি তাওবা করবেন। এই রোযার জন্য আরেকটা রোযা রাখবেন এবং আরো ৬০ টা রোযা একটানা রেখে এর কাফফারা করবেন। ৬০ টা রোযা রাখতে একান্তই সক্ষম না হলে ৬০ জন দরিদ্র মানুষকে খাওয়াবেন।

১৪৮
প্রশ্ন-১৪৫: ফজরের জামাআত শুরু হলে সুন্নাত নামাযের নিয়ত করা যাবে কি না?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) অনেকগুলো হাদীসে সুস্পষ্টভাবে এটা করতে নিষেধ করেছেন। এক তো সাধারণ একটা হাদীস আছেঃ

إذا أقيمت الصلاة فلا صلاة إلا المكتوبة

ইকামত হয়ে গেলে ফরয ছাড়া অন্য কোনো সালাত পড়া যাবে না। নতুন করে শুরু করা যাবে না। আর বিশেষ কয়েকটা সহীহ হাদীস রয়েছে- রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন দেখেছেন জামাআত শুরু হবে আর একজন একাকি নামাযে দাঁড়িয়েছে, তিনি তাকে নাড়া দিয়ে চলে গেছেন, যে তোমার নামায ভেঙে জামাআতে শরিক হও। এরপর রাসূলুল্লাহ সা, জামাআত শুরু করেছেন। একজন জামাআতের সময় সালাত পড়ছিল। দেখে তিনি বলেছিলেন তুমি কোন সালাত আল্লাহকে দিতে চাও? আমাদের সাথে যেটা পড়বে সেটা, না তুমি একা যেটা পড়লে সেটা? মূল কথা, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বারবার নিষেধ করেছেন। জামাআত শুরু হলে, ফজরের জামাআত শুরু হলেও আমরা সুন্নাত পড়া শুরু করব না। কেউ যদি পড়তে থাকেন তিনি শেষ করবেন। কেউ যদি বাড়িতে পড়েন, ভিন্ন কথা। আমরা সুন্নাতটা পরে পড়ব। আমাদের সুযোগ আছে পরে পড়ার। আমরা জামাআতের পর পড়ব অথবা বেলা ওঠার পর পড়ব। দুটোই হাদীসে রয়েছে।

১৪৯
প্রশ্ন-১৪৬: দাড়ি একমুষ্ঠির কম থাকলে সে নাকি কাফের- কুরআন-হাদীসের আলোকে এটার ব্যাখ্যা দিবেন।
উত্তর: একমুষ্ঠি বলতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দাড়ি বড় রাখতে বলেছেন। বর সীমা তিনি দেন নি। যত বড় হয় তত বড় রাখার একটা মত আছে। আরেকটা হল অন্তত একমুষ্ঠি রাখা। দাড়ি চেঁছে ফেলা হারাম। চাঁছলে কেউ কাফের হবে না। যদি কিছু রাখেন, অন্তত হারাম থেকে বেঁচে গেলেন। সুন্নাত পূর্ণ পালন হবে একমুষ্ঠি রাখলে। তবে এক্ষেত্রে আমরা বাড়াবাড়ি না করি। অর্থাৎ যিনি কিছু রেখেছেন তার কিছু রাখার মূল্যায়ন করতে হবে। অনেকের জন্য বড় রাখা কঠিন হয়ে যায়। তবে বড় না রাখলে। পূর্ণ সুন্নাত আদায় হবে না, এটা হাদীসের আলোকে আমাদের মানতে হবে।

১৫০
প্রশ্ন-১৪৭: তারাবীহর নামাযে সুবহানা যিলমুলকি এবং শেষে যে মুনাজাত করা হয়- এটা কুরআন-হাদীসে কোথাও আছে কি?
তারাবীহর নামাযের চার রাকআত পরপর যে দুআ পড়া হয় (সুবহানা যিলমুলকি) এবং শেষে যে মুনাজাত করা হয়- এটা কুরআন-হাদীসে কোথাও আছে কি, জানতে চাই।

উত্তর: দুআটা একেবারেই বানানো। সুন্নাতে অনেক দুআ আছে, কুরআনে অনেক দুআ আছে, হাদীসে অনেক দুআ আছে, কিন্তু এই দুআটা কোথাও নেই। তারাবীহর সাথে তো নেই-ই, অন্য কোনো ব্যাপারেও নেই। আর মুনাজাতে যেটা বলি, এটাও দুআ হিসেবে কুরআন-হাদীসে কোথাও পাওয়া যায় না। তারাবীহ বলতে যে বিশ্রাম- কোনো মাযহাবে, কোনো হাদীসে, কোনো ফিকহে নেই যে এর প্রতি চার রাকআত পর নির্দিষ্ট কোনো দুআ পড়তে হবে। এই সময় আমরা বিশ্রাম করতে পারি, দুরুদ শরীফ পড়তে পারি, কুরআন তিলাওয়াত করতে পারি, সূরা ইখলাস পড়তে পারি। নির্দিষ্ট ওই দুআ এবং মুনাজাত দুটোই অপ্রাসঙ্গিক এবং বানানো। এর অর্থে কোনো দোষ নেই। কিন্তু কোনো মাসনুন ইবাদতের ভেতরে বানানো জিনিসের সংমিশ্রণ করা অত্যন্ত আপত্তিকর। এর অর্থ হল রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর হুবহু পদ্ধতি আমাদের মজা লাগছে না। আরো কিছু যোগ না করলে, মরিচ একটু বেশি না দিলে টেস্ট লাগছে না, এরকম আর কি! (সহীহ মুসলিম-৭১০; আবু দাউদ-১২৬৬; তিরমিযি-৪২১; নাসায়ি-৮৬৫; ইবন মাযাহ-১১৫১)

১৫১
প্রশ্ন-১৪৮: বিয়ের অনুষ্ঠানে মেয়েদের অংশগ্রহণ করা জায়েয আছে কি না জানতে চাই।
উত্তর: মূলত বিবাহ এমন একটি অনুষ্ঠান যেখানে যেতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উৎসাহ দিয়েছেন। আনন্দ করতে উৎসাহ দিয়েছেন। কিন্তু দুঃখজনক হল, আমরা এই আনন্দের নামে ইসলাম বিরোধী এবং পাপপূর্ণ আনন্দে লিপ্ত আছি। নইলে মহিলাদের জন্য শরীআতের ভেতরে থেকে, পর্দার সাথে, শালীনতার সাথে বিবাহে আনন্দ করতে ইসলাম নির্দেশ দেয়। এমনকি রাসূলুল্লাহর (ﷺ) মেয়েদেরকে মেয়ের আসরে গীত গাইতে বলেছেন। ছেলেদেরকে ছেলের আসরে আনন্দ ফুর্তি করতে বলেছেন। কাজেই আপনি যে প্রশ্ন করেছেন, বিবাহের অনুষ্ঠানে যাওয়া যাবে কি না, এটা নির্ভর করে অনুষ্ঠানটা কেমন তার উপর। শরীআহ, সুন্নাহ, ইসলাম বিবাহে আনন্দ করতে নির্দেশ দেয়। মেয়েদেরকে যেতে নির্দেশ দেয়। শিশুদেরকে যেতে নির্দেশ দেয়। তবে যদি এই নির্দেশ মানতে গিয়ে শরীআতের অন্য নির্দেশ লঙ্ঘন হওয়ার নিশ্চিত ভয় থাকে তাহলে আপনারা এতে যোগ দেয়া থেকে বিরত থাকবেন।

১৫২
প্রশ্ন-১৪৯: যদি ছেলের জন্য দুইটা ছাগল দেয়া সম্ভব না হয়, একটা দিতে পারবে? আকীকার মাংস ভাগবাটোয়ারা করার পদ্ধতি কী?
আমরা জানি যে, ছেলের জন্য দুইটা ছাগল আর মেয়ের জন্য একটা ছাগল আকীকা দিতে হয়। কিন্তু কারো যদি ছেলের জন্য দুইটা ছাগল দেয়া সম্ভব না হয় সে কি একটা দিতে পারবে? আর আকীকার পশুর মাংস ভাগবাটোয়ারা করার পদ্ধতি কী?

উত্তর: আরবের মানুষেরা মেয়ে হলে পুঁতেই ফেলত, আকীকা দূরের কথা। এ জন্য রাসূলুল্লাহর (ﷺ) বললেন, মেয়ে হলে কিছু না হলে অন্তত একটা আকীকা দিতেই হবে। ছেলেদের জন্য দুটো অথবা একটা, দুই রকমই অনুমতি আছে। যেমন আবু দাউদ রহ.সহ অন্যান্য মুহাদ্দিস সংকলন করেছেন।

أن رسول الله صلى الله عليه وسلم عق عن الحسن، واختين كبشا گا

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হাসান এবং হুসাইনের জন্য একটা করে দুম্বা বা ভেড়া আকীকা দিয়েছিলেন (সুনান আবু দাউদ-২৮৪১; তাবারানি, আল মু'জামুল কাবীর-১১৮৫৬) ।

এ জন্য আপনি যদি একটা দেন, আকীকা হয়ে যাবে। কোনো সমস্যা নেই। ছেলের জন্য একটা, মেয়ের জন্য একটা। আর ছেলেদের জন্য দুটো দেয়ার কথাও অন্য হাদীসে বলা হয়েছে। আর দ্বিতীয় যে বিষয় প্রশ্ন করেছেন মাংস বণ্টনের ব্যাপারে, আকীকা মূলত সন্তানের জন্মে আনন্দ প্রকাশের জন্য। এখানে বলে রাখি, সন্তান জন্মের আনন্দ যদি বড় হওয়ার পরে কুরবানির সাথে দেন, তাহলে ওই সন্তানের উচিত বড় হয়ে পিতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা যে, আমার জন্মের সাত দিনের দিন আনন্দ করার কথা ছিল, তো লেট করলে কেন! সাত দিনের দিন আকীকা করতে হবে এটাই সুন্নাত। আর আকীকার গোশত আপনার ইচ্ছা মতো কিছু গরিবদের, কিছু আত্মীয়দের, আবার রান্না করে খাওয়াতে পারেন। এ ক্ষেত্রে শরীআত কোনো নির্ধারিত বণ্টন নীতিমালা দেয় নি। আপনি আপনার সুবিধা মতো আনন্দে সবাইকে শরিক করবেন।

১৫৩
প্রশ্ন-১৫০: মসজিদে লেখা থাকে জুমআর নামায শুরু হবে ১:১৫ তে কিন্তু পৌনে দুটায় আরম্ভ হয়। এটা কী প্রতারণা?
প্রায় মসজিদে লেখা থাকে জুমআর নামায শুরু হবে ১:১৫ তে। কিন্তু ইমাম সাহেব পৌনে দুটায় নামায আরম্ভ করেন। এটা আমার কাছে প্রতারণা মনে হয়। আপনার কাছে কী মনে হয়?

উত্তরঃ জুমআর সুন্নাত হল, ওয়াক্তের শুরুতেই অর্থাৎ বারোটা, সোয়া বারোটায়- ওয়াক্ত হলেই জুমা শুরু হবে, এটাই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সুন্নাত। উনি দেরি করতেন না। তবে জুমআর অর্থ শুধু দুই রাকআত নামায নয়। জুমআর খুতবাটাও কিন্তু জুমআর সালাতের অবিচ্ছেদ্য অংশ। জুমআর নামায অর্থ দুই রাকআত নামায পড়ে চলে আসা নয়। জুমার নামায অর্থ সামাজিক মেলা, সবার সাথে সাক্ষাৎ করা। এবং কিছু ঈমান, তাকওয়া বৃদ্ধির কথা শোনা। এ ব্যাপারে প্রচুর হাদীস রয়েছে। মূল কথা হল, যে সময় লেখা আছে ওই সময়ে যদি অন্তত আযান হয়ে খুতবা শুরু হয়ে যায়, তাহলে ঠিক আছে। যদি অনেক দেরি হয়, তাহলে ইমাম এবং কমিটির সচেতন হওয়া দরকার, যেন অন্তত খুতবাটা লিখিত সময়ের ভেতর শুরু করা যায়, মুসল্লিদের কষ্ট না হয়।

১৫৪
প্রশ্ন-১৫১: ব্যবহৃত বাড়ি-গাড়ির উপর যদি যাকাত না আসে তাহলে ব্যবহৃত স্বর্ণের উপর কেন যাকাত আসবে?
আমার নয় ভরি স্বর্ণ আছে, যেটা আমি ব্যবহার করি। ব্যবহৃত বাড়ি-গাড়ির উপর যদি যাকাত না আসে তাহলে ব্যবহৃত স্বর্ণের উপর কেন যাকাত আসবে?

উত্তর: এখানে দুটো বিষয়। প্রথমত মূল ব্যবস্থাপনা মুহাম্মাদ (ﷺ) দেন। এটাই আসল। আপনার যুক্তিটা আমি বলি- ব্যবহার হওয়ার কারণে যেটার মূল্য কমে এটার যাকাত হয় না। যেমন আমার কাপড়টা দুইদিন ব্যবহার করলে ওটা পূর্বের দামে আর কেউ কিনবে না। কিন্তু যেটার ব্যবহারে মূল্য কমে না, যেমন নগদ টাকা, চকচকে নোটটা ব্যবহার করতে করতে পুরাতন হয়ে গেছে, এতে কিন্তু মূল্য কমছে না। এর যাকাত দিতেই হবে। আপনার ৫০ হাজার নতুন টাকা আর ৫০ হাজার পুরাতন টাকার ভেতর কোনো পার্থক্য নেই। সোনা এবং রূপাও তাই। এর মূল্য কখনো কমে না। ব্যবহারের মাধ্যমে আপনার সম্পদ অটুট রয়েছে, কাজেই এর যাকাত দিতে হবে। আর যেটা আসল কথা- মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ব্যবহৃত অলঙ্কারে যাকাত দিতে বলেছেন, এ ব্যাপারে সহীহ হাদীস রয়েছে, শাইখ মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানীসহ অন্যান্য মুহাদ্দিস সহীহ বলেছেন। একবার রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে একজন মহিলা আসেন। সাথে তার মেয়ে রয়েছে। মেয়ের হাতে আঙটি রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তুমি কি আঙটির যাকাত দাও? সে বলল, না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তাহলে তো তোমাকে জাহান্নামে আগুনের আঙটি পরানো হবে। ঠিক একই ঘটনা আয়েশা রা, এর সাথে ঘটে। তিনি আঙটি বানালেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দেখে আঙটির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন। আয়েশা রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আপনার সামনে সুন্দর হওয়ার জন্য আঙটি বানিয়েছি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, যাকাত দেবে কিন্তু। নইলে এটার জন্য তোমাকে শাস্তি পেতে হবে। এ জন্য ব্যবহৃত অলঙ্কারের যাকাত দিতে হবে এটাই হাদীসের নির্দেশ।

১৫৫
প্রশ্ন-১৫২: আমার স্বামী চায় না, অথচ আমি শুনেছি দাওয়াতি কাজ করতেই হয়। তাহলে আমরা মেয়েরা দাওয়াতি কাজ কীভাবে করব?
উত্তর: মেয়েদের জন্য সংসারের কাজ প্রথম ফরয। এবং স্বামীর বিনা অনুমতিতে ঘরের বাইরে গিয়ে দাওয়াতি কাজ আপনি করতে পারবেন না। এটা আপনার উপর ফরয নয়। আপনি আপনার সীমাবদ্ধতার ভেতরে যেটুকু করবেন এতেই আপনি পূর্ণ ছওয়াব পাবেন। আর স্বামী অনুমতি দিলে সুযোগ থাকলে বাইরে যাবেন। তা না হলে যাবেন।

১৫৬
প্রশ্ন-১৫৩: ছোট বয়সে বাচ্চাদের মাদরাসায় দিলে নাকি অনেক সমস্যা হয়?
আমার ছেলের বয়স ২ বছর ৬ মাস। আমি ওকে নূরানি মাদরাসায় প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করিয়েছি। কিন্তু অনেকেই বলছে, ছোট বয়সে বাচ্চাদের মাদরাসায় দিলে নাকি অনেক সমস্যা হয়। তাই আপনার কাছে সাজেশন নিতে চাচ্ছি, ওকে আমি কোথায় পড়াব?

উত্তর: আমি নিজে মাদরাসা শিক্ষার লাইনের মানুষ, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করি, অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালাই- আমি ঠিক উল্টোটা জানি। সেটা হল বর্তমানে আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় শুধু পরীক্ষা এবং পাশ আছে। লেখাপড়া আর নেই। একমাত্র এই নূরানি মাদরাসা বা এই জাতীয় মাদরাসাগুলোতে শিক্ষকরা আল্লাহর জন্য পড়ান, ছাত্ররাও মহাব্বতে পড়াশোনা করে। আপনি দেখবেন- আখলাক, আচরণ, কথাবার্তা, ভদ্রতা, সালাম, মানসিক বিকাশ- আপনার আশেপাশের স্কুলের থেকে মাদরাসার অবস্থা ভালো। আমি সারা বাংলাদেশের অবস্থার প্রেক্ষাপটেই বলছি। কাজেই যারা বলেন, ছোটবেলায় মাদরাসায় দিলে শিশুর মানসিক বিকাশে ক্ষতি হবে, এটা তারা ঠিক বলেন নি। বরং ছোটবেলায় ওকে মাদরাসায় দিয়ে সবচে' ভালো কাজ করেছেন। আমরা বিভিন্ন শিক্ষাবিদের সাথে আলাপ করেছি, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা শুধু পরীক্ষা আর পাশের ভেতর ঢুকে গেছে। পরীক্ষা তোমাকে দিতেই হবে, পাশ তোমাকে করতেই হবে। পরীক্ষায় উপস্থিত না হলেও পাশ হতে হবে। এতে কোনো লেখাপড়া নেই। এ জন্য আমাদের বাচ্চাদের অন্তত ক্লাশ থ্রি-ফোর পর্যন্ত নূরানি মাদারাসায় পড়ানো উচিত।

১৫৭
প্রশ্ন-১৫৪: ব্যবহার করি আবার ভাড়াও দিই। এরকম মাইক্রোর উপর যাকাত আসবে?
আমাদের একটা মাইক্রো আছে। এটা আমরা নিজেরা ব্যবহার করি আবার ভাড়াও দিই। এই মাইক্রোর উপর যাকাত আসবে কি না জানতে চাই।

উত্তর: মাইক্রোর মূল্যের উপর যাকাত আসবে না। আপনি যেটা নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করেন এটার মূল্যের উপর যাকাত হয় না। তবে ভাড়া থেকে যে টাকাটা আসে, এটা বছর শেষে আপনার অন্যান্য সঞ্চিত টাকার সাথে মিশিয়ে যাকাত দিতে হবে।

১৫৮
প্রশ্ন-১৫৫: পাঁচ মাসেই আমার বাচ্চা ডেলিভারি হয়ে বাচ্চাটা মারা যায়। মা হিসেবে বাচ্চার জন্য আমি কেমন দুআ করতে পারি?
পাঁচ মাসেই আমার বাচ্চা ডেলিভারি হয়ে যায় এবং বাচ্চাটা মারা যায়। তাকে কবর দেয়া হয়েছে। মা হিসেবে বাচ্চার জন্য আমি কেমন দুআ করতে পারি?

উত্তর: আপনি তার কথা উল্লেখ করে নিজের জন্য দুআ করবেন- হে আল্লাহ, আমার এই সন্তানকে আমার জন্য সাক্ষী এবং সুপারিশকারী বানিয়ে দিন। আমাদেরকে জান্নাতে একত্রিত করুন।

১৫৯
প্রশ্ন-১৫৬: প্রভিডেন্ট ফান্ডে নিসাবেরও অতিরিক্ত টাকা জমা আছে। আবার আমার ঋণও আছে। আমার যাকাত আসবে?
আমি একজন সরকারি কর্মচারী। আমার প্রভিডেন্ট ফান্ডে নিসাবেরও অতিরিক্ত টাকা জমা আছে। আবার আমার ঋণও আছে। এই অবস্থায় আমার যাকাত আসবে কি না?

উত্তর: প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকার ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ম হল, বেতন থেকে সরকার বাধ্যতামূলকভাবে ১০% কেটে নেন। সরকার কখনোই এই টাকার মালিকানা দেন না। এমনকি আমি ঋণ নিলে ঋণ নিতে পারি। মালিক হতে পারি না। আবার ব্যাক করতে হয়। এ জন্য এই টাকার যাকাত দিতে হবে না। কারণ, ওটার মালিকানাই আমি পাই নি। ওটা সরকারের হাতে আছে। অবসরের সময় ওই টাকাট সরকার আমাকে একবারে দেবেন। আবার অন্য নিয়মও আছে, ১০% এর পরেও কেউ ১৫% বা ২০% কাটান। এক্ষেত্রে এই টাকাটা আপনি মালিক হওয়ার পরে সঞ্চয় করছেন। ফলে এটার যাকাত আপনাকে দিতে হবে।

১৬০
প্রশ্ন-১৫৭: প্রভিডেন্ট ফান্ডের যে লাভ আসে, সেটা গ্রহণ করা যাবে? ওটা সুদের ভেতর পড়বে?
সরকারি কর্মচারিদের বেতন থেকে বাধ্যতামূলক ১০% কেটে নেয়া হয়। এতে যে লাভ আসে, সেটা গ্রহণ করা যাবে কি না? অর্থাৎ ওটা সুদের ভেতর পড়বে কি জানতে চাই।

উত্তর: এটা নতুন বিষয় হিসেবে আলেমদের ভিন্ন মত আছে। যেহেতু সুদ লেখা হয়, সুদ হারে দেয়া হয় এ জন্য অনেকেই এটাকে নাজায়েয বলেছেন। তবে বড় অংশের গবেষক আলেমদের মতে, এবং আমি নিজেও এটাকে গ্রহণযোগ্য মনে করি যে টাকাটা সরকার আমাকে বেতন হিসেবে দিচ্ছেই না, আমার সাথে সরকারের চুক্তি, ১০০ টাকা বেতনের ৯০ টাকা আমাকে দিবেন, ১০ টাকা কখনোই আমাকে কর্মদাতা দিবেন না। কর্মের শেষে ওই টাকাটা বাড়িয়ে আমাকে বেতন হিসেবে দিবেন। তাহলে যে বৃদ্ধিটা এখানে আসছে, এটা আমার টাকার বিনিময়ে নয়। আমার কর্মের বিনিময়ে। কর্মদাতার সাথে কর্মের চুক্তি হিসাবে। এই বাধ্যতামূলক কর্তনের ১০% এর উপরে যে লাভটা আসে এটা আশা করা যায় টাকার বিনিময়ে টাকার বৃদ্ধি নয় বরং কর্মের বিনিময়ে টাকা বৃদ্ধি। কাজেই এটা গ্রহণযোগ্য। তবে কেউ যদি এর সাথে নিজের টাকা যোগ করেন তাহলে বৈধ হবে না।

১৬১
প্রশ্ন-১৫৮: ঋণের টাকায় কেনা জমির উপর যাকাত দিতে হবে?
আমি একজন ব্যাংকার। আমি জনতা ব্যাংকে চাকরি করি। সেখান থেকে আমি ৩১ লক্ষ টাকা লোন নিয়েছি বাড়ি করার জন্য। জমি কিনেছি কিন্তু এখনো বাড়ি করি নি। এখন এই জমির উপর কি আমাকে যাকাত দিতে হবে?

উত্তর: যে টাকা দিয়ে আপনি জমি কিনেছেন, নিজে ব্যবহার করবেন বলে কিনেছেন, তাহলে এই টাকার উপর যাকাত দিতে হবে না। আর এমন যদি হয়, জমি কিনে রেখেছেন, ভালো মূল্য পেলে বেচে দেবেন, তাহলে মূল জমির মূল্যের উপর যাকাত দিতে হবে।

১৬২
প্রশ্ন-১৫৯: আমি লোন নিয়ে ফ্ল্যাট কিনেছি। প্রতি মাসেই আমাকে লোনের কিস্তি দিতে হচ্ছে। এই ফ্ল্যাটের যাকাত আসবে কি না?
উত্তর: আপনি যদি নিজে ব্যবহারের জন্য ফ্ল্যাট কিনে থাকেন তাহলে এই ফ্ল্যাটের মূল্যের উপরে কোনো যাকাত নেই। আর যদি ফ্ল্যাট কিনে থাকেন বিক্রয়ের জন্য, ভালো দাম পেলে বিক্রয় করে দেবেন, তাহলে এটা বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে গণ্য হবে, এটার মূল্যের উপর যাকাত দিতে হবে। আর আপনি লোনের কিস্তি শোধ করছেন, কোনো লোনের টাকা যাকাত থেকে বাদ যাবে না। যেমন আপনার ২০ লক্ষ টাকা আছে এবং ব্যাংকে ফ্ল্যাট বাবদ ১৫ লক্ষ ঋণ আছে। এই ঋণ কিন্তু আপনার ২০ লক্ষ থেকে বাদ যাবে না। এর দুটো কারণ। একটা হল, যে কোনো ব্যাংক ঋণের বিনিময়ে একটা মটগেজ থাকে। একটা সম্পদ থাকে। এটা ঋণ নয়। দ্বিতীয়তঃ ব্যাংক আপনার কাছ থেকে একবারে ১৫ লক্ষ চায় না। সে মাসে একটা ইনস্টলমেন্ট চায়। যদি আপনার ৩ ইনস্টলমেন্ট বাকি পড়ে যায় তাহলে যাকাতের হিসাবের সময় এই ২/৩ ইনস্টলমেন্ট ঋণ হিসাবে ধরতে পারেন। এছাড়া মূল ব্যাংকের যে পাওনা, এটা যাকাতের হিসাব থেকে বাদ যাবে না।

১৬৩
প্রশ্ন-১৬০: তারাবীহ নামায আট রাকআত পড়লেই হয়ে যায়?
আপনার এক আলোচনায় আমি শুনেছি, তারাবীহ নামায আট রাকআত পড়লেই হয়ে যায়। আমার প্রশ্ন হল রেগুলার আট রাকআত পড়লে এটা সঠিক হবে কি না?

উত্তর: আমরা তারাবীহ নাম বললেও এটা কিয়ামুল লাইল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বারো মাসই কিয়ামুল লাইল করতেন। আট রাকআত নিয়মিত পড়তেন। কখনো কিছু কম পড়তেন। কখনো বাড়িয়ে দশ বা বারো রাকআত পড়তেন। তবে সবসময় দুই তিন ঘণ্টা সময় নিয়ে পড়তেন। কাজেই কেউ যদি দীর্ঘ সময় নিয়ে, এক দেড় ঘণ্টা ব্যয় করে আট রাকআত বারো মাস পড়েন- এটাও তার সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। তবে আমরা যেহেতু শুধু রমাযানে পড়ি, ঘনঘন ছোট ছোট সূরা দিয়ে পড়ি, একটু বেশি পড়লে, ২০ রাকআত পড়লে আরো ভালো। বিশেষ করে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:

من قام مع الإمام حتى ينصرف ترب له قيام ليلة

যে ব্যক্তি ইমামের সাথে শেষ পর্যন্ত পড়ে তার বাকি রাত (তাহাজ্জুদ) পড়ার ছওয়াব হয়। কাজেই আমরা এই ফযিলত অর্জনের চেষ্টা করব।

১৬৪
প্রশ্ন-১৬১: তাহাজ্জুদের সালাত ছয় রাকআত পড়তে হয় নাকি বেশি পড়া লাগে জানতে চাই।
উত্তর: তাহজুদের নামায কিয়ামুল লাইলের অংশ। ঘুমের থেকে উঠলে বলা হয় তাহাজ্জুদ। এটা চার রাকআত পড়লেও হবে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কখনো দুই, কখনো চার, কখনো হয়, আট, দশ, বারো পর্যন্ত পড়েছেন। তবে তিনি দীর্ঘ সময় নিয়ে পড়তেন। আপনি যদি চার রাকআত পড়েন, সিজদাগুলো দীর্ঘ করেন, আলহামদুলিল্লাহ সুন্নাত আদায় হবে।

১৬৫
প্রশ্ন-১৬২: গায়ে হলুদ জায়েয আছে কি না?
উত্তর: পুরুষদের জন্য গায়ে হলুদ জায়েয নয়। মেয়েদের জন্য সৌন্দর্যবর্ধক সবই জায়েয। বিবাহের আনন্দে, সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য জায়েয। তবে এটা জায়েয হওয়ার অর্থ এই নয় যে, পুরুষেরা নারীদের গায়ে হলুদ দেবে, বেপর্দা হবে, এবং সেখানে শরীআত বিরোধী কর্ম হবে- তা নয়। বিবাহে আনন্দ করতে উৎসাহ দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) । তবে এখানে যেন শালীনতা বিরোধী, পৰ্দা বিরোধী, শরীআত বিরোধী কোনো ব্যাপার না থাকে। এবং বিজাতীয় সংস্কৃতির কোনো ব্যাপার যেন না থাকে। ভয়ঙ্কর ব্যাপার হল, আমাদের জীবনের সবচে' বড় অংশ বিবাহিত জীবন। এই জীবনটাই যদি মহাপাপ দিয়ে শুরু করি তাহলে এটার গতি কী হবে! তাই চেষ্টা করতে হবে বিবাহ যেন সুন্নাহ পদ্ধতিতে হয়। তাহলে জীবন বরকতময় হবে। (সুনান আবু দাউদ-১৩৭৫; তিরমিযি-৮০৬; নাসায়ি-১৩৬৪; ইবনু মাজাহ-১৩২৭)

১৬৬
প্রশ্ন-১৬৩: মাগরিবের ওয়াক্ত কতটুকু সময় পর্যন্ত থাকে?
উত্তর: আমরা অনেকেই মনে করি, মাগরিবের কোনো সময় থাকে না, এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। প্রকৃত বাস্তবতা হল, মাগরিবের ওয়াক্ত আর ফজরের ওয়াক্ত এক। সুবহে সাদেক থেকে বেলা উঠতে যে সময় লাগে সূর্যাস্ত থেকে সূর্যের লাল আভা, সাদা আভা কাটতে সেই সময় লাগে। এক ঘণ্টা বিশ মিনিট মতো লাগে। কাজেই আমরা আযানের পর থেকে ঘণ্টাখানেক সময় মাগরিবের নামায পড়তে পারি। তবে সাধারণভাবে মাগরিবের নামাযে বেশি দেরি না করা উচিত। আমরা অনেক সময় যেটা করি, আযান দিয়েই নামায শুরু করি, এটাও ঠিক না। অন্তত দশ মিনিট সময় দেয়া উচিত। আর রোযার সময় ইফতারের কারণে ১৫ বা ২০ মিনিট সময় দেয়া হয়, এটা মোটেও অনুচিত নয়। বরং এটা সুন্নাহ সম্মত।

১৬৭
প্রশ্ন-১৬৪: জুমআর নামাযের আযান হওয়ার আগেই দুই রাকআত দুই রাকআত করে নামায পড়া জায়েয?
জুমআর নামায পড়তে মসজিদে গিয়ে দেখা যায় যে, আযান হওয়ার আগেই অনেকেই দুই রাকআত দুই রাকআত করে নামায পড়ে। এটা জায়েয কি না?

উত্তরঃ এটাই তো হাদীসের নির্দেশ, ‘তোমরা জুমআর দিন আগে আগে মসজিদে যাবে আর সালাত পড়তে থাকবে। তবে যখন মাকরুহ ওয়াক্ত হয়, অর্থাৎ ঠিক ওয়াক্ত হয় হয় মুহূর্তে সালাত আদায় করার ব্যাপারে কেউ কেউ নিষেধ করেছেন। কেউ কেউ পড়তে বলেছেন। কাজেই শুধু ওয়াক্ত হওয়া নয়, মসজিদে ঢুকে নিষিদ্ধ সময় বাদে বাকি সময় সালাত আদায় করা উত্তম।

১৬৮
প্রশ্ন-১৬৫: আমরা মীলাদে ইয়া নবী সালামু আলাইকা দুরুদ পড়ি, এই দুরুদ পড়া জায়েয কি না?
উত্তর: এই রকম সালাম দেয়াতে রাসূলুল্লাহর (ﷺ) এর সাথে একটু বেয়াদবি হয়। আল্লাহ তাআলা তাঁর নবীকে কখনো ইয়া নবী ডাকেন নি। ইয়া নবী মানে হল- এই একজন লোক! এভাবে অপরিচিত লোককে ডাকা হয়। আর আল্লাহ যখন নবীকে ডেকেছেন- ইয়া আইয়ুহান নাবী-হে আমার প্রিয় নবী’, এভাবে ডেকেছেন। এ জন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে হয় বলতে হবে, ইয়া রাসূলাল্লাহ অথবা ইয়া আইয়ুহার রাসূল বা ইয়া আইয়ুহান নাবী। ওইভাবে সালাম বলাটা নবীজিকে যেন ‘এই লোকটা এরকম ডাকা হয়। এটা আমাদের উচিত নয়। সুন্নাতে দরুদ এবং সালামের যে বাক্যগুলো আছে এগুলো আমাদের ব্যবহার করা উচিত।

১৬৯
প্রশ্ন-১৬৬: নিঃসন্তান স্বামী-স্ত্রী সন্তান প্রার্থনা করবে এমন কোনো দুআ আছে কি না জানতে চাই।
উত্তরঃ জি, কুরআনে সন্তান চাওয়ার জন্য এমন কিছু দুআ আছে। এখানে দুআগুলো বললে তো মনে রাখতে পারবেন না। সুরা আল ইমরানে, মারইয়ামে আছে- আল্লাহ আমাকে নেককার সন্তান দিন, আল্লাহ আমাকে একজন উত্তরাধিকার দিন। এই ধরনের। দুআগুলো আপনারা অন্তর দিয়ে পড়বেন। সিজদায় গিয়ে পড়বেন। এই জাতীয় দুআগুলো আপনারা মুখস্থ করে নেবেন।

১৭০
প্রশ্ন-১৬৭: অমুসলিমরা কি কিয়ামতে বলবে, হে আল্লাহ, আপনি কেন আমাদেরকে অমুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে পাঠালেন?