HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

জিজ্ঞাসা ও জবাব (১ম খণ্ড)

লেখকঃ ড. খোন্দকার আব্দুলাহ জাহাঙ্গীর (রাহিমাহুল্লাহ)

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
জিজ্ঞাসা ও জবাব

ড. খোন্দকার আব্দুলাহ জাহাঙ্গীর (রাহিমাহুল্লাহ) (১৯৫৮-২০১৬)

পি-এইচ. ডি. (রিয়াদ), এম. এ. (রিয়াদ), এম.এম. (ঢাকা)

অধ্যাপক, আল-হাদীস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ,

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

আস-সুন্নাহ পাবলিকেশন্স

মোবাইল: ০১৭৮৮৯৯৯৯৬৮

www.assunnahtrust.com

লেখক পরিচিতি
ড. খোন্দকার আ. ন. ম. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রাহিমাহুল্লাহ) জন্ম: ঝিনাইদহ জেলায় ১৯৫৮ সালে। মৃত্যুঃ ১১ই মে ২০১৬।

পিতা মরহুম খোন্দকার আনোয়ারুজ্জামান। মাতা বেগম লুৎফুন্নাহার। ঝিনাইদহ আলিয়া মাদ্রাসায় ফাজিল পর্যন্ত অধ্যয়নের পর ১৯৭৯ সালে 'ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে প্রথম শ্রেণীতে অষ্টম স্থান অধিকার করে হাদীস বিষয়ে কামিল পাশ করেন। সৌদি আরবের রিয়াদস্থ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সাউদ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৬, ১৯৯২ ও ১৯৯৮ সালে যথাক্রমে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পি-এইচ.ডি ডিগ্রি লাভ করেন। দেশ ও বিদেশে যে সকল প্রসিদ্ধ আলিমের কাছে তিনি পড়াশোনা ও সাহচর্য গ্রহণ করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন খতীৰ মাওলানা ওবাইদুল হক (রাহ.), মাওলানা মিয়া মোহাম্মাদ কাসিমী (রাহ.), মাওলানা আনোয়ারুল হক কাসিমী (রাহ.), মাওলানা আব্দুল বারী সিলেটী (রাহ.), মাওলানা ড. আইউব আলী (রাহ.), মাওলানা আব্দুর রহীম (রাহ.), আল্লামা শাইখ আব্দুল্লাহ ইবন আব্দুল আযীয ইবন লায (রাহ.), আল্লামা আব্দুল্লাহ ইবন আব্দুর রহমান আল-জিবরীন (রাহ.), আল্লামা মুহাম্মাদ ইবন সালিহ ইবন মুহাম্মাদ আল-উসাইমীন (রাহ.), শাইখ সালিহ ইবন আব্দুল আযীয আল শাইখ, শাইখ সালিহ ইবন ফাওযান ইবন আব্দুল্লাহ আল ফাওযান। কর্ম জীবনে তিনি কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে হাদীস বিভাগে শিক্ষকতা শুরু করেন ১৯৯৮ সালে। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৬ সালের ১১ই মে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু বরণ করার আগ পর্যন্ত তিনি উক্ত বিভাগে। অধ্যাপক পদে কর্মরত ছিলেন। দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় বাংলা ইংরেজী ও আরবি ভাষায় তার প্রায় অর্ধশত প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তার প্রকাশিত গবেষণামূলক গ্রন্থের সংখ্যা ত্রিশের অধিক। গবেষণা কর্মের পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন। নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সাথে আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়ের লক্ষ্যে ১৯৯৮ খৃষ্টাব্দে তিনি “আল ফারুক একাডেমী" নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। বিশুদ্ধ ইসলামী জ্ঞান ও মূল্যবোধ প্রচার ও মানব সেবার উদ্দেশ্যে ২০১১ সালে "আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট' নামে একটি সেবা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন এবং ২০১২ HOT Education and Charity Foundation Jhenaidah নামে একটি শিক্ষা ও সমাজ সেবাসংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন। এ সকল প্রতিষ্ঠান শিক্ষাপ্রচার, ধর্ম প্রচার, দুস্থ নারী ও শিশুদের সেবা ও পুনর্বাসনে বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালনা করছে।

লেখকের প্রকাশিত কয়েকটি বই
১. কুরআন-সুন্নাহর আলোকে ইসলামী আকীদা

২. এহইয়াউস সুনান: সুন্নাতের পুনরুজ্জীবন ও বিদ'আতের বিসর্জন

৩. রাহে বেলায়াত: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর যিকির ও ওযীফা।

৪. হাদীসের নামে জালিয়াতি: প্রচলিত মিথ্যা হাদীস ও ভিত্তিহীন কথা।

৫. ফুরফুরার পীর আবু জাফর সিদ্দিকী রচিত। আল-মাউযূআত: একটি বিশ্লেষনাত্মক পর্যালোচনা।

৬. কুরআন-সুন্নাহর আলোকে, পোশাক, পর্দা ও দেহসজ্জা

৭. খুতবাতুল ইসলাম: জুমুয়ার খুতবা ও সমকালীন প্রসঙ্গ

৮, বাংলাদেশে উশর বা ফসলের যাকাত: গুরুত্ব ও প্রয়োগ

৯, ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ

১০. ইমাম আবু হানিফা (রাহ) রচিত আল-ফিকহুল আকবার: বঙ্গানুবাদ ও ব্যাখ্যা

১১. সিয়াম নির্দেশিকা

১২. ইসলামে পর্দা

১৩. মুসলমানী নেসাব: আরাকানে ইসলাম ও ওযীফায়ে রাসূল সা,

১৪. সহীহ হাদীসের আলোকে সালাতুল ঈদের অতিরিক্ত তাকবীর

১৫. সহীহ মাসনূন ওযীফা।

১৬. আল্লাহর পথে দাওয়াত

১৭. কুরআন-সুন্নাহর আলোকে শবেবরাত: ফযীলত ও আমল

১৮ সালাতের মধ্যে হাত বাধার বিধান

১৯. মুনাজাত ও নামায

২০. বুহুসুন ফী উলুমিল হাদীস (আরবি ভাষায় রচিত)

২১. রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পোশাক ও ইসলামী পোশাকের বিধান

২২. তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিল ও কুরআনের আলোকে কুরবানী ও জাবীহুল্লাহ।

২৩. কিতাবুল মোকাদ্দস, ইঞ্জিল শরীফ ও ঈসায়ী ধর্ম

২৪. পবিত্র বাইবেল পরিচিতি ও পর্যালোচনা

২৫. মুসনাদ আহমাদ (ইমাম আহমাদ রচিত) বঙ্গানুবাদ, (আংশিক)

২৬. ইহারুল হক্ক বা সত্যের বিজয়। (আল্লামা রাহমাতুল্লাহ কিরানবী রচিত), বঙ্গানুবাদ

২৭. ইসলামের তিন মূলনীতি: একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা (বঙ্গানুবাদ)

২৮, ফিকহুস সুনানি ওয়াল আসার

(মুফতি আমীমুল ইহসান রচিত হাদীস ভিত্তিক ফিকহ গ্রন্থ), বঙ্গানুবাদ

29. A Woman From Desert

ভূমিকা
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর জন্যই সকল হামদ। তিনি মানুষকে ইলম দান করেছেন, মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন তা যা সে জানতো না। তিনিই মানুষকে ইলমের মাধ্যমে উন্নত করেছেন। যারা জানে ও যারা জানে না তাদেরকে সমান বলেন নি। যুগে যুগে আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে তারাই ভালো যারা নবী ও রাসূল। তাদের অবর্তমানে তাদের ওয়ারিস আলেমগণ সবচেয়ে ভালো মানুষ। সে মানুষদের জন্যই যতো দুনিয়ার মর্যাদা ও আখরাতের মর্তবা। এদের জন্যই দোআ করে প্রতিটি প্রাণী এমনকি আকাশের পাখি ও পানির নিচের মাছ। তাদের জন্যই ডানা বিছিয়ে দেয় আল্লাহর মালাইকা। সারা দুনিয়াতে যত ভালো কাজ হয় তা তাদের আলোতে আলোকিত হওয়ার কারণেই হয়ে থাকে। তারাই দুনিয়াকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে আখেরাত বিনির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছে। তাদেরকেই আল্লাহ তা'আলা তাঁর নিজের পাশে সাক্ষ্য হিসেবে স্থান দিয়েছেন। তাদেরকেই আল্লাহ তা'আলা তার দীন জানার জন্য মাধ্যম হিসেবে ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ বলেন, “যদি তোমরা না জাননা তবে যারা যিকর (কুরআন ও সুন্নাহ) এর জ্ঞান রাখে তাদের জিজ্ঞাসা কর।”(সূরা আন-নাহল: ৪৩) কোনো এক যুদ্ধে এক সাহাবী আহত হলেন, তিনি পানি ব্যবহারে অসমর্থ হলেন, সাথে থাকা লোকদের কাছে তিনি এর প্রতিকার কী হতে পারে জানতে চাইলেন, কিন্তু তারা তাকে সঠিক পরামর্শ দিতে অসমর্থ হলো, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যারা জানে না, তাদের জানার ঔষধ হচ্ছে জেনে নেওয়া।”(সুনান আবী দাউদ: ৩৩৬,৩৩৭) কোনো মানুষের পক্ষেই সর্ববিষয়ে জ্ঞানী হওয়া সম্ভব হয় না। তাদের কতেকের ওপর অপর কতেককে আল্লাহ জ্ঞানী করেছেন। আল্লাহ বলেন, “আর প্রত্যেক জ্ঞানীর ওপরেই জ্ঞানী রয়েছে।”(সূরা ইউসুফ: ৭৫) জ্ঞানীরা তাদের জ্ঞান দিয়ে ইজতিহাদ করে থাকেন, ইজতিহাদ তাদের জ্ঞানকে শানিত করে, ইজতিহাদের কারণে তারা আল্লাহর কাছে পুরষ্কারপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “বিচারক যদি বিধান জানার জন্য কুরআন ও হাদীসে ইজতিহাদ করে আর সে তাতে ভুল করে তবুও সে এক সাওয়াব পাবে, আর যদি সঠিক মতে পৌঁছুতে পারে তো তার দু' সাওয়াব।”(বুখারী: ৭৩৫২; মুসলিম: ১৭১৬)

প্রতিটি মাসআলায় কুরআন ও সুন্নাহর দলীল খুঁজে বের করা অনেক কঠিন কাজ। তা আরও কঠিন হয় যখন তা তাৎক্ষনিক কোথাও উপস্থাপন করতে হয়। এ কাজ সবার দ্বারা হয়ে উঠে না। একাজ কেবল ফকীহগণের। যাদেরকে আল্লাহ তাঁর বিশেষ নেয়ামত দিয়ে সিক্ত করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে তিনি ফিকহের জ্ঞান দান করেন।”(বুখারী: ৭১; মুসলিম: ১০৩৭) এ ফকীহগণকে এ জন্যই ক্ষণজন্মা পুরুষ বলা হয়ে থাকে। ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেঈ ও ইমাম আহমদ রাহিমাহুমুল্লাহসহ উম্মতের সে সব ব্যক্তিবর্গকে আল্লাহ তা'আলা তাঁর বিশেষ নে'আমত হিসেবে আমাদের জন্য প্রদান করেছেন। তাদের মর্যাদা যারা বুঝে না তারা নিজেরাই অজ্ঞ, জ্ঞানীদের কাতারে তাদের কোনো স্থান নেই। প্রত্যেক যুগে ও এলাকায় এক বা একাধিক মুজতাহিদ থাকা বাঞ্ছনীয়। না থাকলে উম্মতের সমূহ ক্ষতি হয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ তা'আলা ইলমে একেবারে উঠিয়ে নিবেন না, তিনি আলেমগণকে নিয়ে যাবার মাধ্যমে ইলমকে উঠিয়ে নিবেন। অতঃপর যখন কোনো আলেম থাকবে না তখন লোকেরা তাদের মধ্যকার জাহিল লোকদেরকে তাদের নেতা বানাবে, তখন তাদের প্রশ্ন করা হবে আর তারা ইলম ব্যতীত উত্তর দিবে, এতে করে তারা নিজেরা পথভ্রষ্ট হবে অপরকেও পথভ্রষ্ট করবে।”(বুখারী: ১০০; মুসলিম: ২৬৭৩) বস্তুত: ইলমুল ফিকহ হচ্ছে প্রশ্নোত্তরের সমষ্টি। এজন্যই ইমাম আবু হানীফাকে ফিকহের জনক বলা হয়। কারণ তিনি প্রায় সকল প্রশ্নেরই অবতারণা করেছেন। আর তার অর্ধেক উত্তর তিনি দিয়ে গেছেন। বাকী উত্তরগুলোতে অন্য ফকীহগণ শেয়ার করেছেন। সুতরাং উম্মতের মধ্যে যারাই ফকীহ হবেন তারাই ইমাম আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহর পরিবারভুক্ত হবেন এটাই ইমাম শাফেঈর বক্তব্য। আর তা-ই যথার্থ। ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর ছিলেন তেমনি এক ক্ষণজন্মা মানুষ। যাকে আমরা সত্যিকারের একজন ভাষাবিদ, দাঈ ইলাল্লাহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও ফকীহ বলে বিশ্বাস করি। তিনি ইসলামিক টিভিতে নিয়মিত প্রশ্নোত্তর দিতেন। বিভিন্ন সভা-মাহফিলে জীবন জিজ্ঞাসার জবাব দিতেন। তাঁর উত্তরের বৈশিষ্ট্য ছিল এই যে, তিনি সর্বদা কুরআনে কারীমের আয়াত ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস দিয়ে তার উত্তরকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করতেন। তিনি কাউকে আক্রমন করতেন না। ইমামগণকে সম্মানের সাথে উল্লেখ করতেন। কোনো বিষয়ে কেউ তার বিরোধী মত পোষণ করলে সেটাকে দলীলের মাধ্যমে খণ্ডনের চেষ্টা করতেন। প্রচলিত দাওয়ার কাজে কর্মরত মানুষদের ভুল ধরার চেয়ে তাদের সংশোধনের চেষ্টা বেশি করতেন।

ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহিমাহুল্লাহর রেখে যাওয়া এ অমূল্য সম্পদের সংরক্ষণ ও যথাযথ প্রচার ইলম প্রচারেরই নামান্তর। আমাদের জাতির দুর্ভাগ্য যে আমরা জীবিত অবস্থায় মনীষীদের কদর করতে শিখিনি। যদি তিনি আরব বিশ্বের কেউ হতেন তাহলে হয়তো তার জীবনী ভিন্নভাবে লিখা হতো, আর তার জীবনকে ঘিরে থাকতত হাজারো ছাত্রের আনাগোনা!

আমার আনন্দ লাগছে যে, তাঁর প্রশ্নোত্তর পর্ব সমৃদ্ধ এ কাজটিতে আমি শরীক হতে পেরেছি। আল্লাহর কাছে দু'আ করি তিনি যেন এ মহতিকর্ম কবুল করেন এবং এগুলোকে তাঁর জন্য ও আমাদের মত তাঁর মুহিব্বীনদের জন্যও নাজাতের উসীলা হিসেবে গ্রহণ করেন। আমীন, সুম্মা আমীন।

ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া সহযোগী অধ্যাপক, আল-ফিকহ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

প্রশ্ন-০১: অমুসলিমদের সন্তান, যারা শৈশবে মারা যায়, তারা কি কাফের?
আবার মুসলিম শিশু শিরক করে শৈশবে মারা গেলে তাদেরকে কাফের সমোধন করা যাবে কি জানতে চাই।

উত্তর: এর দুটো দিক আছে। প্রথম হল একজন অমুসলিমের সন্তান শিশু অবস্থায় মারা গিয়েছে আমাদের প্রথমে বুঝতে হবে, ইসলাম মূলত মানুষের ঐচ্ছিক কর্মের উপর নির্ভর করে। জন্ম, বংশ, কার সন্তান, কার পরিবারে জন্ম নিয়েছে, কীভাবে মৃত্যুবরণ করেছে- এটা বড় বিষয় নয়। কাজেই যে শিশুটা জন্মেছে, এখনো বড় হয় নি, সে প্রাপ্তবয়স্ক হয় নি। তাই তার তো কোনো পাপ নেই। কাজেই, কোনো শিশু শিরক করতে পারে না। কুফর করতে পারে না। সে তো সচেতন হয় নি এখনো। এজন্য অমুসলিমের সন্তান যখন মারা যায় তখন তাকে অমুসলিম বা কাফের বলা যায় না, রাসূল (ﷺ) বলেছেন:

گل مولود يولد على الفطرة، فأبواه يهودانه، أو ينصرانه، أو مسايير

প্রতিটি মানবসন্তানই ফিতরাতের উপরে, মানবীয় প্রকৃতির উপরে, তাওহীদের উপরে জন্মগ্রহণ করে। তার ইয়াহুদী, খ্রিষ্টান, অগ্নিপূজক ইত্যাদি কোনো পাপ থাকে না। বড় হওয়ার পরে পিতামাতার মাধ্যমে বা সমাজের মাধ্যমে সে নির্দিষ্ট একটা ধর্ম গ্রহণ করে। কাজেই এই পর্যায়ে যাওয়ার আগে যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে তাকে আমরা মুশরিক বলতে পারি না। ঠিক তেমনি মুমিনের সন্তানও যদি মারা যায় এই পর্যায়ে, তাকেও আমরা কাফের বলতে পারছি না। সে যদি অপরাধ করেও থাকে সেটা পিতামাতাকে দেখে দেখে করে। সে পাপী নয়। [সহীহ বুখারি, হাদীস নং-১৩৮৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস-২৬৫৮ ]

প্রশ্ন-০২: নামাযের পরে মুনাজাতের ব্যাপারটা আমি জানতে চাই।
ওহাবি আর সুন্নি এই জিনিসটা আমার কাছে ক্লিয়ার না। আমার ছেলে হাফেয, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, সে ওহাবি মাদরাসায় পড়ে। এখন আমরা দেখি যে ওদের মাদরাসায় নামাযের পরে মুনাজাত হয় না। আমি ওকে বলি, আব্বু, তুমি মুনাজাত কর না কেন, মুনাজাত না করলে মনে হয় যেন নামাযটা পরিপূর্ণ হয় না। ও বলে, আম্মু, আমাদের মাদরাসায় ওগুলো করে না। এই মুনাজাতের ব্যাপারটা আমি জানতে চাই।

উত্তর: আপনি যে প্রশ্নটা করেছেন এটা বোঝার জন্য দীর্ঘ আলোচনা দরকার। ওহাবি শব্দটা এসেছে সৌদি আরবের একজন সংস্কারক মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাবের নাম থেকে। যিনি অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি জন্মগ্রহণ করেন এবং আমার যতদূর মনে পড়ে ১৭৯০/৯৫ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এই মুজাদ্দিদ বা সংস্কারক বিদআতের বিরুদ্ধে ছিলেন। তার কর্মের ভুলত্রুটি আছে কিন্তু তিনি বিদআতের বিরুদ্ধে ছিলেন। পরবর্তীতে সারা দুনিয়ার যে কোনো মানুষ বিদআতের বিরোধিতা করলেই তাকে ওহাবি বলা হয়। ওহাবিয়াতের কোনো ডেসক্রিপশন নেই। মুনাজাত না করলে তাকে ওহাবি বলা হয়। আবার অনেক জায়গায় ধুমপান না করলে তাকে ওহাবি বলা হয়। কোনো কোনো জায়গায় কেউ সুন্দর কিরাআত পড়লে তাকে ওহাবি বলা হয়। অর্থাৎ সমাজের প্রচলনের বাইরে যে গেল সে ওহাবি। এটা অনেকটা এমন, মুহাম্মাদ (ﷺ) যখন দীন প্রচার করতে লাগলেন, সমাজের মানুষেরা তাঁর কোনো কাজকে খারাপ বলতে পারল না, তখন কাফেররা বলতে লাগল মুহাম্মাদ সাবে’ হয়ে গেছে- সাবাআ মুহাম্মাদ। অর্থাৎ আমাদের বাপদাদার প্রচলিত ধর্ম ত্যাগ করে নতুন একটা ধর্ম নিয়ে এসেছে। এটা একটা গালি মাত্র। ঠিক তেমনি ওহাবি শব্দ একটা গালিতে পরিণত হয়েছে। মূলত ওহাবি বলে কোনো জিনিস নেই। দেখবেন সমাজে যারা কুরআন-সুন্নাহ মানতে চায়, রাসূল (ﷺ) এর অনুসরণ করতে চায়- বিদআতকে যারা ভালোবাসে তারা এইসব মানুষকে ওহাবি বলে গালি দেয়। আমরা সবাইকে অনুরোধ করব, যে ব্যক্তি মুহাম্মাদ (ﷺ) কে অনুসরণ করতে চায় তাকে আপনি কেন গালি দেন! তাহলে ততা মুহাম্মাদ (ﷺ) কে গালি দেয়া হয়। এটা হল মূল বিষয়। মূলত ওহাবি বলে কিছু নেই। কেউ বলে ওহাবিরা ওলিদের অস্বীকার করে, কেউ বলে ওহাবিরা রাসূল (ﷺ) কে মানে না- এগুলো সবই ভুল কথা। মূলত যাদেরকে আমরা ওহাবি বলি তারা সবই মানেন। তারা মাযহাব মানেন, তারা সুন্নাত মানেন, তারা ওলিদের মানেন, তারা কুরআন মানেন এবং তারা কেউ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহাবের ভক্ত নয়। কিন্তু তারা বিদআতের বিরোধিতা করেন। এটাই হল সমস্যা। এবার আসা যাক নামাযের পরের মুনাজাতের বিষয়ে। আসলে আমরা তো অভ্যাসের দাস। নামাযটাই মুনাজাত। মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:

إن أحدكم إذا قام يصلي إما يقوم يناجي ربه، فلينظر كيف يناجيه

অর্থাৎ যখন তোমাদের কেউ সালাতে দাঁড়ায়, তখন সে তার রবের সাথে মুনাজাত করে। মুনাজাত শব্দের অর্থ কথা বলা। চুপিচুপি কথা বলা। তো যখন আমরা সালাতে দাঁড়াই তখন আমরা মুনাজাত করি। কাজেই রাসূল (ﷺ) বলেছেন, তুমি কার সাথে কথা বলছ, কী কথা বলছ, সচেতন হয়ে কথা বলো। অতএব সালাতটা পুরোটাই মুনাজাত। আবার আমরা যে দুআ বলি; সালাত দুআ। রাসূল (ﷺ) সালাতের সিজদায় দুআ করতেন, সালাম ফিরানোর আগে দুআ করতেন। আর যেটা নিয়ে আমাদের গোলমাল, অর্থাৎ সালাতের পরের দুআ- এটাও রাসূল (ﷺ) করতেন। তবে সমস্যা হল, দলবদ্ধভাবে সবাই মিলে যে মুনাজাতটা করা হয় এভাবে রাসূল (ﷺ) কখনো করতেন না। রাসূল (ﷺ) মদীনার দশ বছরের জীবনে আঠারো হাজার ওয়াক্ত সালাত আদায় করেছেন, এক ওয়াক্ত সালাতেও তিনি সবাইকে নিয়ে দলবদ্ধভাবে হাত তুলে মুনাজাত করেছেন এমন একটা হাদীস নেই। কিন্তু এর বিপরীতে রাসূল (ﷺ) এর শতশত হাদীস আছে, তিনি সালাতের সালাম ফেরানোর পরে একা একা বিভিন্ন দুআ পড়েছেন। আল্লাহর সাথে কথা বলেছেন। এজন্য যারা রাসূল (ﷺ) এর পুরোপুরি অনুসরণ করতে চান তারা একাকি দুআকে পছন্দ করেন। আপনিও তো একাই দুআ করেন বোন! আপনার সন্তানও একাই দুআ করবে। (ইবন আবী শায়বা, আল মুসান্নাফ, হাদীস-৮৪৬২; বাযযার, আল মুসনাদ-৬১৪৮ ও ৬৪২৪; ইবন খুযাইমা, আস সহীহ-৪৭৪)

প্রশ্ন-০৩: এক্সিডেন্টে মারা গেলে শাহাদাতের মৃত্যু হয়? বিনা হিসাবে জান্নাতে যাওয়া যায়?
আমার বাবা এক্সিডেন্টে মারা গেছেন। আমি শুনেছি যে, এক্সিডেন্টে মারা গেলে শাহাদাতের মৃত্যু হয়, বিনা হিসাবে জান্নাতে যাওয়া যায়। এটা আমার জানা খুবই দরকার।

উত্তর: আপনি যেটা বলেছেন, অনেকটা সত্য। রাসূল (ﷺ) শহীদদের কথা বলেছেন যারা পানিতে ডুবে মারা যায়, কিছু চাপা পড়ে মারা যায় তারা শহীদ। অর্থাৎ আল্লাহ তো মুমিনের ভালো চান। যে মুমিন হঠাৎ করে দুর্ঘটনায় মারা গেল তার মৃত্যুটা দুঃখজনক, এর বিনিময়ে আল্লাহ তাকে শাহাদাত নসিব করেন। তো আপনার আব্বারও দুর্ঘটায় মৃত্যুর কারণে শাহাদাত নসিব হবে, যদি অন্য সমস্যা না থাকে। এবং তিনি শহীদের মর্যাদা ও সুবিধাগুলো পাবেন বলে আমরা আশা করি।

প্রশ্ন-০৪: অ্যাবরশন করলে কি গোনাহ হবে?
এক দেড় মাস হল আমার স্ত্রীর গর্ভে সন্তান এসেছে। কিন্তু আমরা আমাদের সমস্যার কারণে এই মুহূর্তে সন্তান নিতে চাচ্ছি না। আমরা এখন অ্যাবরশন করলে কি গোনাহ হবে?

উত্তর: জি, এটা গোনাহ হবে। যদি আপনার সমস্যাটা শরীআতসম্মত না হয়। সন্তান মায়ের গর্ভে যাওয়ার অর্থই হল, যেটা আল্লাহ কুরআনে বলেছেন:

في قرار مكين

["সূরা মুমিনূন, আয়াত-১৩; সূরা মুরসালাত, আয়াত-২১]

সে একটা নিরাপদ, সুন্দর অবস্থানে চলে গেছে। এই অবস্থায় তার নিশ্চিত জীবন থেকে তাকে বঞ্চিত করা, এটা হত্যার মতোই। আপনি জন্মবিরতি করেছেন এটা ভিন্ন কথা। কিন্তু সন্তান মাতৃগর্ভে অবস্থানের পরে অ্যাবরশন করা, এটা হত্যার শামিল। তবে যদি মায়ের জীবনের আশঙ্কা থাকে, নিশ্চিতভাবে জানা যায় মায়ের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ। সেক্ষেত্রে অ্যাবরশন করাতে পারেন। এটা ডাক্তারের কাছ থেকে নিশ্চিত হতে হবে।

প্রশ্ন-০৫: রমাযান মাসে রোযা রেখে নখ-চুল কি কাটা যাবে?
উত্তর: বোন, উত্তর দেয়ার আগে একটু পেছনে যাই। রমাযানের রোযা কেন নষ্ট হয়। ইবাদত তো আপনার জন্য। আপনি যেন ইবাদতের মাধ্যমে সুন্দর মানুষ হন। আল্লাহ তাআলা পানাহার নিষেধ করেছেন। কাজেই পানাহার নয় এমন সবই করা যায়। নখ চুল শুধু না, একটা হাত কেটে গেলেও রোযার কোনো ক্ষতি হবে না। আমরা অনেক সময় মনে করি, রক্ত বেরিয়ে গেলে রোযার ক্ষতি হয়। আসলে কিন্তু তা নয়। রাসূল (ﷺ) রোযা অবস্থায় নিজে চিকিৎসার জন্য শরীর ছিদ্র করে হিযামা (শিঙ্গা লাগিয়েছেন) করেছেন। কাজেই আমাদের বুঝতে হবে, রক্ত বেরোলেও রোযা ভাঙে না, ইঞ্জেকশন নিলেও রোযা ভাঙে না। নখ-চুল কাটলে তো রোযা ভাঙার প্রশ্নই আসে না। রোযার কোনো ক্ষতিও হয় না।

১০
প্রশ্ন-০৬ : হাফহাতা শার্ট বা টিশার্ট পরে কি নামায হবে?
উত্তর: পুরুষদের জন্য নাভি থেকে হাটু পর্যন্ত ঢেকে রাখা ফরয। আর দুই কাঁধসহ উপরের অংশটা ঢেকে রাখা ওয়াজিব বা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। কনুই ঢেকে রাখার কোনো জরুরত নেই। বাংলাদেশে অনেকেই বলেন, হাফহাতা শার্ট, গেঞ্জি ইত্যাদি পরে সালাত আদায় করলে সালাত হয় না- কথাটা আসলে ওই রকম নয়। আসল কথা হল, রাসূল (ﷺ) হজ্জে এবং অন্য সময়, হজ্জের ইহরামের সময় যে পোশাক পরা হয়, এটা পরেই তিনি আজীবন নামায পড়েছেন মদীনায়। দর্শক, আপনারা হয়ত দেখেছেন ইহরামের পোশাকে কনুইটা খুলে যায়। হাফহাতার মতোই। কাজেই কাঁধ। ঢেকে রাখা জরুরি, কনুই ঢেকে রাখা জরুরি নয়। অতএব গেঞ্জি বা হাফহাতা শার্ট পরে সালাত আদায় করলে সালাতের কোনো ক্ষতি হবে না।

১১
প্রশ্ন-০৭: আমরা জানি ফরয নামায আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে। কিন্তু ওয়াজিব নামায কোথা থেকে এসেছে?
উত্তর: এখানে বোঝার একটা সমস্যা রয়ে গেছে। আসলে ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত, নফল, মাকরুহ, হারাম সবই আমরা আল্লাহর তরফ থেকে পেয়েছি। সকল ইবাদতই আল্লাহ তাআলা দিয়েছেন। এবং সকল ইবাদতের বর্ণনাই রাসূল (ﷺ) দিয়েছেন। আমরা অনেক সময় মনে করি, ফরয আল্লাহর জন্য আর সুন্নাত রাসূল (ﷺ) এর জন্য। এটা গভীরভাবে চিন্তা করলে শিরক হয়ে যায়। সকল ইবাদত আল্লাহকে খুশি করতে এবং সকল ইবাদতই মুহাম্মাদ (ﷺ) এর তরিকায় হতে হবে। ফরটা যে ফরয এটা আমরা রাসূল (ﷺ) থেকে শিখেছি। মূল বিষয় হল, ফরয ছাড়া সবকিছুই নফল। ইসলামে দুটো ভাগ করা হয়েছে। ফরয এবং নফল। নফলের ভেতরে পর্যায় রয়েছে। যে নফলটা রাসূল (ﷺ) বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন, কোনো কোনো ফকীহ এটাকে ওয়াজিব বলেছেন। এটা ইমাম আবু হানীফা রাহ. এবং কোনো কোনো ফকীহর কথা। অন্যান্য ফকীহ ফরয ওয়াজিব আলাদা করেন নি। তাদের দৃষ্টিতে ফরয এবং নফল। ওয়াজিব পরিভাষাটা হানাফি মাযহাবে রয়েছে। এটা ওই সকল নফল, যেটা ফরয নয় কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এটাকে ওয়াজিব বলা হয়।

১২
প্রশ্ন-০৮: যারাহ পরিমাণ ঈমানের পরিমাপটা কী?
উত্তর: এটা আসলে ন্যূনতম বোঝাতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। একেবারে সামান্য পরিমাণ ঈমান, তাওহীদের বিশ্বাস যদি কারো থাকে, আল্লাহ তাকে মুক্তি দেবেন। এটা আল্লাহ তাআলা বুঝবেন যে, শিরকমুক্ত তাওহীদের বিশ্বাস ন্যূনতম কত ছিল।

১৩
প্রশ্ন-০৯: নামাযের সিজদার মধ্যে যে মুনাজাতটা আছে- এটা বিস্তারিত জানতে চাই।
উত্তর: এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, বিশেষ করে এই রমাযানে আমরা আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দুআ করব। রাসূল (ﷺ) এর শেষ অসিয়ত, রবিউল আউয়াল মাসের সম্ভবত ১২ তারিখ সোমবার দিন সকাল বেলায় তাঁর সাহাবিগণ ফজরের সালাত আদায় করছেন, রাসূল (ﷺ) ঘরেই আছেন, অসুস্থতার কারণে কাঁধে ভর দিয়ে দরজার কাছে দাঁড়ালেন। পর্দা সরানো হল। সাহাবায়ে কেরাম আনন্দে উল্লসিত হলেন, রাসূল (ﷺ) হয়ত সুস্থ হয়েছেন, তিনি নামাযে দাঁড়াবেন, ইমামতি করবেন। তিনি ইশারা করলেন যে তোমরা থাকো। তারপর বললেন, রুকুতে তোমরা রবের তাযীম প্রকাশ করবে, যখন সিজদা করবে, তখন বেশি বেশি দুআ করবে এবং সিজদার দুআ কবুল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি। কাজেই আমরা সিজদায় সব দুআই করব। সবকিছু চাইব। দুনিয়া আখেরাতের সকল বিষয় চাইব। তবে চওয়ার ভাষাটা হবে আল্লাহ তাআলার কাছে আবেদনের ভাষা। মানুষে মানুষে কথার ভাষা নয়। রাসূল (:) এর শেখানো সুন্নাত দুআগুলো মুখস্ত করলে ভালো হয়।

১৪
প্রশ্ন-১০: নামাযের সিজদার মধ্যে মাতৃভাষায় দুআ করা জায়েয কি না?
উত্তর: এটা আমাদের দেশের জন্য বেশ জটিল প্রশ্ন। কারণ আমাদের দেশে ফিকহের যে কিতাবগুলো পড়ানো হয় সেখানে লেখা হয়েছে যে মাতৃভাষায় দুআ করা মাকরুহ। কেউ কেউ বলেছেন মাকরুহ মানে মাকরুহে তানযীহি অনুচিত। কেউ বলেছেন মাকরুহে তাহরীমি। এটা হল হানাফি মাযহাবের ফকীহগণের মত। তবে মিশর, সৌদি, সিরিয়া, তুরস্কের হানাফি ফকীহগণ বলেন, অনারব ভাষায় মাতৃভাষায় সালাতের সিজদার মধ্যে দুআ করায় দোষ হতে পারে না। কারণ দুআ তো বান্দা আল্লাহ তাআলার কাছে নিজের মাতৃভাষাতেই করবেন। তবে আমরা কুরআনের আয়াতের দুআ অথবা হাদীসের দুআ দ্বারা দুআ করার চেষ্টা করব। এরপরেও যদি কেউ একান্ত না পারেন তবে নফল সালাতে, তাহাজ্জুদের সালাতে মাতৃভাষায় দুআ করতে পারেন। বিশেষ করে কুরআন হাদীসের দুআর অর্থগুলো মনের আবেগে বলতে পারেন।

১৫
প্রশ্ন-১১: মৃত মানুষের পাশে বসে কুরআন তিলাওয়াত করা বৈধ কি না?
উত্তর: আপনার কাছে আমার প্রশ্ন হল, মৃত মানুষের পাশে কুরআন পড়ার কোনো সুবিধা আছে কি না! বিষয়টা কি এমন যে আজীবন কুরআন শুনতে পায় নি, অনেক ব্যস্ত ছিল দুনিয়ায়, এখন মরার পরে অখণ্ড অবসর; তাই আমি কুরআন পড়ছি আপনার পাশে, আপনি মরে গিয়ে শুনছেন! আল্লাহ তাআলা কি মরা মানুষের শোনার জন্য কুরআন নাযিল করেছেন? এটা আমার প্রশ্ন। আসলে জীবিত মানুষের মৃত আত্মকে জীবন্ত করার জন্য আল্লাহ কুরআন দিয়েছেন,

أومن كان ميتا فأحييناه وجعلنا له تورا يمشي به في الناس

তার অন্তর মৃত ছিল, কুরআনের নূরে সে আলোকিত হবে। [সূরা আনআম, আয়াত- ১২২]

কাজেই মৃত মানুষের পাশে কুরআন পড়া, এটা ইসলামের মূল চেতনার পরিপন্থী। দ্বিতীয়ত মৃত মানুষের পাশে কুরআন পড়লে কোনো সোয়াৰ বা বরকত হয়, এটা কুরআন-হাদীসে কোথাও নেই। তৃতীয়ত রাসূল (ﷺ) এবং সাহাবিদের জীবনে অগণিত মানুষ মারা গিয়েছেন, কেউ মৃত মানুষের পাশে কুরআন পড়ান নি। তবে মৃতপথযাত্রী, এখনো জীবিত আছেন, মৃত্যুবরণ করবেন এমন মানুষের কাছে সূরা ইয়াছিন পড়ার কথা একটা হাদীসে এসেছে। হাদীসটা সনদগতভাবে দুর্বল। কিন্তু মরার পরে তার পাশে কুরআন পড়া, এটা কুরআনকে এক ধরনের অবজ্ঞা করা। এটা থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিত।

১৬
প্রশ্ন-১২: আমরা অনেকেই সন্তানের নাম রাখার সময় খুব আনকমন নাম রাখার চেষ্টা করি। আনকমন নাম রাখার ভেতর কি কোনো ফযীলত আছে?
উত্তর: রাসূল (ﷺ) বলেছেন:

أحب الأسماء إلى الله تعالى عبد الله، وعبد الرحمن

আব্দুল্লাহ, আব্দুর রাহমান, এই দুটো আল্লাহ তাআলার প্রিয়তম নাম'। তাই এই জাতীয় নাম রাখা উচিত।

১৭
প্রশ্ন-১৩: সাড়ে সাত তোলার উপর বাড়তি যে স্বর্ণ আছে এই অংশটুকুর যাকাত দিতে হবে? নাকি সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণসহ সবটুকুর যাকাত দিতে হবে?
আমি জানি যে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য থাকলে যাকাত ফরয হয়। আমার প্রশ্ন হল, ধরুন আমার সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ আছে, এরপর আরো দেড় তোলা স্বর্ণ হল- এখন সাড়ে সাত তোলার উপর বাড়তি যে স্বর্ণ আছে এই অংশটুকুর কি যাকাত দিতে হবে? নাকি সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণসহ সবটুকুর যাকাত দিতে হবে?

উত্তর: আসলে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ হওয়া এটা হল নিসাব বা সীমা। অর্থাৎ এর কম স্বর্ণ থাকলে আপনাকে যাকাত দিতে হবে না। কিন্তু এই পরিমাণ হলে পুরোটারই যাকাত দিতে হবে। অর্থাৎ আপনার আট থাকলে আট ভরি সোনারই যাকাত দিতে হবে। এমন নয় যে সাড়ে সাত বাদ দিয়ে শুধু অর্ধভরির যাকাত দেবেন। আপনার সাড়ে সাতভরি বা তার বেশি স্বর্ণ আছে, তার মানে আপনি সম্পদশালী, পুরো সম্পদের যাকাত আপনাকে দিতে হবে।

১৮
প্রশ্ন-১৪: যাকাত আদায় করার মতো নগদ টাকা নেই। আগামী এক বছরে অল্প অল্প করে যাকাত আদায় আমার জন্য বৈধ হবে কি না?
আমার নয় ভরি স্বর্ণ আছে, কিন্তু যাকাত আদায় করার মতো নগদ টাকা নেই। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আগামী এক বছরে অল্প অল্প করে যাকাত আদায় করব। এটা আমার জন্য বৈধ হবে কি না জানতে চাই।

উত্তর: যাকাত অগ্রিম দেয়া যায় আবার বাকিতেও দেয়া যায়। এখন আমার যাকাত ফরয হয়েছে কিন্তু দেয়ার মতো নগদ টাকা নেই, আমি কিছুদিন পরে দিলে আদায় হয়ে যাবে। এই দেরির জন্য ইনশাআল্লাহ কোনো গোনাহ হবে না। তবে যত দ্রুত সম্ভব আল্লাহর ঋণটা পরিশোধ করা উচিত।

১৯
প্রশ্ন-১৫: তারাবীহ নামাযের সময়সীমা কতটুকু? ইশার পর থেকে বারোটার ভেতরে শেষ করতে হবে নাকি বারোটার পরেও পড়া যাবে?
উত্তর: তারাবীহর সময়সীমা হল, ইশার পর থেকে ফজরের আগ পর্যন্ত। বরং যতো দেরি করে পড়া হবে ছওয়াব ততো বেশি হবে। উমার রা.এর যুগে মানুষ যখন প্রথম রাতে তারাবীহ পড়ত, তিনি বলতেন, শেষরাত্রে না ঘুমিয়ে তারাবীহ শেষরাত্রে পড়লে ছওয়াবটা বেশি হবে। কাজেই আপনি ফজরের আযানের পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত তারাবীহ পড়তে পারেন।

২০
প্রশ্ন-১৬: স্বর্ণের যাকাত কি হাজবেন্ড আদায় করবেন? যদি উনি না দেন তাহলে কি স্ত্রীর গোনাহ হবে?
আমার ত্রিশভরি স্বর্ণ আছে। আমি তো উপার্জন করি না, এই স্বর্ণের যাকাত কি আমার হাজবেন্ড আদায় করবেন? যদি উনি না দেন তাহলে কি আমার গোনাহ হবে?

উত্তর: স্বর্ণের মালিক আপনি। ইসলামি শরীআতে স্ত্রীর সম্পত্তিতে স্বামীর কোনো অধিকার নেই, কোনো দায়ও নেই। তাই আপনার স্বামী আপনার কাছ থেকে এক টাকাও যেমন চাইতে পারবে না ঠিক তেমনি স্বামী যাকাত না দিলে আপনাকেই দিতে হবে। স্বামী যদি দেন তো ভালো। নয়তো আপনাকে আপনার স্বর্ণের যাকাত দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

২১
প্রশ্ন-১৭: রোযা অবস্থায় অনিচ্ছাকৃতভাবে বমি হলে রোযার ক্ষতি হবে কি না?
উত্তর: অনিচ্ছাকৃত বমি হলে রোযার কোনো ক্ষতি হবে না। এমনকি মুখ ভরে বমি হলে বা রিপিটেড বমি হলেও রোযার ক্ষতি হবে না। তবে আল্লাহ না করুন, কেউ বমি খেয়ে ফেললে রোযার ক্ষতি হবে।

২২
প্রশ্ন-১৮: বিয়ের পর নাকফুল, চুড়ি বা গলায় কিছু না পরলে কি গোনাহ হবে?
উত্তর: এই যে নাকফুলকে আমরা বিয়ের সাথে সম্পৃক্ত করি- এই চিন্তাটাই ভারতীয়। যেটাকে আমরা হিন্দুয়ানি সংস্কৃতি বলি। হিন্দু ধর্মে বিয়ের সাথে মাথার সিঁদুর, হাতের শাখা এগুলোর সম্পর্ক। ইসলামে এগুলো নারীর সৌন্দর্য। বিয়ের সাথে এর কোনোই সম্পর্ক নেই। বিয়ের পরে আপনি পরতে পারেন, নাও পারেন। তবে স্বামীর জন্য, সৌন্দর্যের জন্য অলঙ্কার পরা, সাজগোজ করা ইবাদত এবং ছওয়াবের কাজ। এমনকি বিধবাদের জন্যও এই সৌন্দর্যে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। বিয়ের আগেও এগুলো পরাতে কোননা দোষ নেই। আবার বিয়ের পর না পরাতেও কোনো সমস্যা নেই।

২৩
প্রশ্ন-১৯: রমাযানে বেরোজাদার, মদ্যপ এবং অশ্লীলতাকারী তারাবীহ পড়লে, কুরআন খতম করলে জীবনের সমস্ত গোনাহ মাফ হয়ে যাবে?
অনেকেই রোযা রাখে না। মদ খায়, অশ্লীল কাজ করে। তারাবীহর নামাযে এদের কুরআন শরীফ খতম করা জায়েয আছে কি না? হাফেয সাহেবরা তাদেরকে বলেন, রমাযানে তারাবীহ পড়লে, কুরআন খতম করলে জীবনের সমস্ত গোনাহ মাফ হয়ে যায়। হাফেয সাহেবদের এসব বলা বন্ধ করা উচিত কি না জানাবেন।

উত্তরঃ আমরা সবাই জানি রোযা না রাখা মহাপাপ। আর ইসলামে অন্যের কর্মে আরেক জনের মুক্তির কোনো সুযোগ নেই। আপনি স্বেচ্ছায়, মনের আগ্রহে যে পাপ করবেন সেটা আপনার পাপ। আবার যে পূণ্য করবেন সেটা আপনার পূণ্য। কাজেই তারা যদি এই পাপ থেকে তাওবা করেন, কোনো বান্দার হক থাকলে ফিরিয়ে দেন, আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে অনুতপ্ত হয়ে আর করবেন না সিদ্ধান্ত নেন তাহলে ইনশাআল্লাহ, আল্লাহ মাফ করবেন। আর যদি এই অবস্থায় তারা মৃত্যুবরণ করেন তাহলে ব্যাপারটা আল্লাহ তাআলার উপরে চলে যাবে। আর দ্বিতীয় কথা হল, ইসলামে বিভিন্ন সময় বলা হয়েছে যে, নেক আমলের মাধ্যমে পাপ মাফ হয়। আবার অন্যান্য আয়াত ও হাদীসে বলা হয়েছে অমুক অমুক গোনাহ কখনো মাফ হয় না অথবা তাওবা ছাড়া মাফ হয় না। আমরা অনেক সময় বলি সন্তানেরা মায়ের সব কথা শুনতে পারে। কারণ মা সন্তানের এতো ভালো চান, প্রতি পদে তাকে গাইডেন্স দেন। ফলে সব মানা যায় না। কিছু ভুলভ্রান্তি হয়ে যায়। এর জন্য কিন্তু মায়ের সাথে দূরত্ব তৈরি হয়। ঠিক তেমনি আল্লাহ তার বান্দার এতো ভালো চান, তাকে অনেক রকম গাইডেন্স দিয়েছেন। এর ভেতর কিছু আছে পালন না করলে ছোট গোনাহ হয়। সেটা নেক আমল, রোযা, তারাবীহ, ওযু, পাঁচওয়াক্ত সালাত ইত্যাদি দ্বারা মাফ করে দেন। আর কিছু পাপ আছে বড় পাপ- কবীরা গোনাহ। এগুলো তাওবার মাধ্যমে মাফ হয়। আবার কিছু পাপ আছে যেটা বান্দার সাথে জড়িত। মদের গোনাহ তাওবায় মাফ হয়। কিন্তু কারো গীবত করা হয়েছে, কারো হোটেলে খেয়ে টাকা দেয়া হয় নি- এটা ওই ব্যক্তি ক্ষমা না করলে পূর্ণ ক্ষমা হবে না।

২৪
প্রশ্ন-২০: আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, মারা গেলে আমি কবরের ভেতর কীভাবে থাকব। এই চিন্তাটা ভালো না খারাপ?
উত্তর: মৃত্যুর চিন্তা করা অবশ্যই ভালো। আমরা একদিন এই দুনিয়া থেকে বিদায় নেব- এই চিন্তাটা খুবই ভালো। আমরা দুনিয়া নিয়ে এই যে মারামারি করছি, হিংসা প্রতিহিংসা, স্বার্থপরতা করি- মৃত্যুচিন্তা এটা থেকে আমাদের ফিরিয়ে আনে। এক সময় তো আমাদের চলেই যেতে হবে। যে কয়দিন থাকি, ভালো থাকি। পরের জীবনটাকে ভালো করি। তবে এজন্য দুশ্চিন্তা বা হতাশা নয়, আমরা যখন আগের জগতে ছিলাম আমাদের মায়ের পেটে, দুনিয়া কেমন জানতাম না। তাই দুনিয়াতে এসেই ভয়ে কেঁদে ফেলেছিলাম। পরের জগতটাও ইনশাআল্লাহ, ভালোই হবে আমরা যদি ভালো করতে পারি। এজন্য প্রস্তুতি নেয়া ভালো, দুশ্চিন্তা এবং হতাশা ভালো নয়।

২৫
প্রশ্ন-২১: আমার স্বামী, ছেচল্লিশ বছর বয়স, কিন্তু সে নামায রোযা কিছুই করে না। কী করলে আল্লাহ তার হেদায়াত করবেন?
আমার স্বামী, ছেচল্লিশ বছর বয়স, কিন্তু সে নামায রোযা কিছুই করে না। কী করলে তার এই গোনাহ মাফ হবে? কী করলে আল্লাহ তার হেদায়াত করবেন?

উত্তর: এই দুশ্চিন্তার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। কারণ স্ত্রী অন্যায় করলে স্বামী গোনাহগার হন। কিন্তু স্বামী অন্যায় করলে স্ত্রী গোনাহগার হন না। তারপরেও আপনার এই দুশ্চিন্তা করাটা আপনার ধার্মিকতা এবং স্বামীর প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ। আল্লাহ পাক কুরআনে বলেছেন, স্বামী-স্ত্রীকে আল্লাহ একই সাথে জান্নাতে রাখবেন। কাজেই এই দুনিয়ায় আপনাদের যে ইউনিটি, এটা জান্নাতেও বজায় থাকুক এটা আমরাও চাই। আপনার আদর-সোহাগ-ভালোবাসা এবং আপনার স্ত্রীত্ব দিয়ে আপনি আপনার স্বামীকে কাছে টানবেন। অল্প অল্প করে তাকে দীনের কথা বলবেন। বোঝাবেন। আমরা দুআ করি, আপনিও দুআ করবেন, কুরআনে আল্লাহ যে দুআটা শিখিয়েছেন:

ربنا هب لنا من أزواجنا وترياتنا قرة أغن

সূরা ফুরকানের ৭৪ নাম্বার আয়াতের যে দুআটা- এটা আপনি সিজদায় গিয়ে এবং অন্য সময় বারবার করবেন, স্বামীর জন্য হেদায়াত চাইবেন, আমরাও দুআ করি আল্লাহ আপনাদের দুনিয়া এবং আখিরাতে সুন্দর একটি দাম্পত্যজীবন দান করুন।

২৬
প্রশ্ন-২২: আমার একাউন্টে ৫০ হাজার টাকা আছে। ওটার যাকাত দিতে হবে কি না?
উত্তর: জি, আপনার এই পঞ্চাশ হাজার টাকা যদি পূর্ণ বছর থাকে, ৩৫৪ দিনের চান্দ্র বছর যদি অতিক্রম করে তাহলে আপনাকে যাকাত দিতে হবে। কারণ যাকাতের নিসাব। সোনা বা রূপা দ্বারা হয়। এবং রূপার দাম যেহেতু কম এজন্য রূপাকেই আমরা বেজ ধরব। তাতে আপনি যাকাত দানকারী হয়ে যাবেন আর গরিবেরও অধিকার বেড়ে যাবে। এজন্য সাধারণভাবে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা আমাদের বর্তমান বাজারে ত্রিশ পঁয়ত্রিশ হাজার টাকায় পাওয়া যায়। তাই পঞ্চাশ হাজার টাকা থাকলে আপনাকে যাকাত দিতে হবে।

২৭
প্রশ্ন-২৩: প্রাণির ছবিযুক্ত পোশাক পরে নামায হবে কি না?
উত্তর: অবশ্যই ক্ষতি হবে। শুধু প্রাণির ছবি নয় যে কোনো পূজ্য বিষয় যেমন পোশাকে বা গায়ে যদি ক্রুশের চিহ্ন থাকে; ক্রুশ কিন্তু কোনো প্রাণির ছবি নয়, কিন্তু একটা নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষ ওটাকে পূজার বিষয় মনে করে। এই ধরনের যে কোনো ছবি, প্রাণির ছবি শরীরে বা পোশাকে থাকলে সালাত মাকরুহ হবে। অত্যন্ত গোনাহের কাজ হবে। যেটা। হাদীস এবং ফিকহে বারবার বলা হয়েছে।

২৮
প্রশ্ন-২৪: কোনো ব্যক্তি যদি কোনো কারণবশত রোযা রাখতে না পারে, সেক্ষেত্রে কাফফারা দিলে কি আদায় হবে?
কোনো ব্যক্তি যদি কোনো কারণবশত রোযা রাখতে না পারে, হয়তো তার কষ্ট হয়, সেক্ষেত্রে কাফফারা দিলে কি আদায় হবে?

উত্তর: আসলে কষ্ট বলতে আপনি কী বোঝাচ্ছেন! কষ্টের মাত্রা রয়েছে। একটা হল আমার কষ্ট হচ্ছে। আরেকটা হল আমার শরীরের ক্ষতি হচ্ছে। সেরেফ কষ্টের জন্য ততা রোযা ছাড়া যাবে না। কিছু কষ্ট তো করতেই হবে। কষ্টের মাধ্যমেই আমাদের ইবাদত করতে হয় আমাদের নিজেদের কল্যাণের জন্য। কষ্ট করে শরীরচর্চা না করলে মেদ হয়ে যায়। কষ্ট করে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ না করলে অসুস্থ হয়ে পড়ব। এই কষ্টের জন্য রোযা বাদ দেয়ার প্রশ্ন ওঠে না। তবে যদি ক্ষতি হয়, রোগ বেড়ে যায়, অসুস্থতা আসে, সেক্ষেত্রে তিনি রোযা ছেড়ে দেবেন। যদি সামনে ভালো হওয়ার আশা থাকে তাহলে রোযাগুলোর কাজা করবেন। না হলে প্রতিটি রোযার বিনিময়ে একজন দরিদ্রকে দুই বেলা খাওয়াবেন। অথবা একটা রোযার জন্য একটা ফিতরা পরিমাণ বাদ্য বা অর্থ দরিদ্রকে দিয়ে দিবেন।

২৯
প্রশ্ন-২৫: মাযহাব মানাটা ফরয, ওয়াজিব নাকি সুন্নাত?
মাযহাব সম্পর্কে জানতে চাই। মাযহাব মানাটা ফরয, ওয়াজিব নাকি সুন্নাত? যদি মাযহাবই মানতে হয় তাহলে মুহাম্মাদ (ﷺ) যেভাবে নামায পড়েছেন ওই নামাটা কেন ফলো করি না। মুহাম্মাদ (ﷺ) কোন মাযহাবে ছিলেন?

উত্তর: আসলে মাযহাব নিয়ে আমরা অকারণে তিলকে তাল বানিয়ে ফেলেছি। মাযহাব মানে হল- মত। দীনকে বোঝার জন্য কোনো না কোনো একজন মানুষের মতামতের উপর নির্ভর করতে হয়। যারা মাযহাব মানার কথা বলছেন তারা কেউই আসলে মাযহাব মানেন না। ইমাম আবু হানীফা রাহ.এর কথা বলি। আমাদের সমাজের হানাফিরা কিন্তু এক নয়। এক হানাফি আরেক হানাফিকে কাফের বলছে। আমরা সবাই যদি হানাফি হতাম তাহলে কেন একজন আরেক জনকে কাফের বলছি! তার অর্থ হল আমরা আসলে কোনো না কোনো একজন আলেমের মত মানি। আমরা অনেক সময় মাযহাবকে ব্যবহার করি। আমরা নিজেকে হানাফি বলি। আবার নিজেরাই আবূ হানীফার অনেক মতের বিরোধিতা করি। এ জন্য মূল কথা হল, আমাদের দীন হল কুরআন এবং সুন্নাহ মেনে চলা। কুরআন সুন্নাহ মানার জন্য সাধারণ মানুষকে অবশ্যই কোনো না কোনো প্রাজ্ঞ আলেমের উপর নির্ভর করতে হবে। এমন কি আমরা যারা হাদীস মানতে চাই তারাও তো হাদীস বুঝি না। এই হাদীসটা সহীহ আমাকে এই কথাটা বলতে গেলে বলতে হয় এটা শায়খ আলবানি বলেছেন, নয়তো গোনাহগার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর বলেছেন। অথবা অন্য কেউ বলেছে। তার মানে আপনি আমার মাযহাব অনুসারে হাদীসটাকে সহীহ বললেন। তাই দীন বোঝার জন্য মাযহাবের সহায়তা নেয়া। মাযহাব একটা উপকরণ। এটাকে দীন মনে করার কোনো সুযোগ নেই। আবার কাউকেই মানব না তাহলে আমরা কুরআন সুন্নাহ বুঝব কী করে! এটা নিয়ে প্রান্তিকতা আমরা পরিহার করি। আরেকটা ব্যাপার আপনি জিজ্ঞেস করেছেন। আমরা কেন রাসূল (ﷺ) এর মতো সালাত আদায় করছি না! এটা নিয়েও আমরা প্রান্তিকতায় চলে গিয়েছি। হানাফি মাযহাবে যে সালাত আদায় করা হয়, আমরা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত রাসূল (ﷺ) এর আমলের বিপরীত কোন আমলটা করি? শুধু ৭/৮ বিষয়ে মতভেদ আছে। এক্ষেত্রেও উভয়পক্ষের হাদীস রয়েছে। হয়তো কেউ একটাকে জোরালো বলেছেন, কেউ অন্যটাকে জোরালো বলেছেন। কাজেই হানাফিরা অথবা শাফেয়িরা কিংবা আহলে হাদীসরা বা হাম্বলিরা রাসূল (ﷺ) এর সালাত আদায় করছেন - এটা ঠিক কথা নয়। সালাতের ভেতরে কয়েকশ বা হাজারখানেক সুন্নাত আমল আছে। এর ভেতরে মতভেদ মাত্র ৭/৮ জায়গায়। এই মতভেদের ক্ষেত্রেও একাধিক হাদীস রয়েছে। কাজেই আমরা প্রান্তিক না হই। আমাদের হৃদয়কে উদার করি। অন্তত হাদীস যতগুলো সহীহ আছে সবগুলোকে স্বীকৃতি দিই।

৩০
প্রশ্ন-২৬: জামাআতে সালাত আদায় করার সময় ইমামের পিছনে সুরা ফাতিহা পড়তে হবে কি না?
জামাআতে সালাত আদায় করার সময় ইমামের পিছনে সুরা ফাতিহা পড়তে হবে কি না? অনেক সময় দেখা যায় ফাতিহা পড়তে গেলে আমার পড়ার আগেই ইমাম সাহেব রুকুতে চলে যান। সেক্ষেত্রে আমি কী করতে পারি?

উত্তর: ইমামের পেছনে সুরা ফাতিহা- এক্ষেত্রে পড়া, না পড়া এবং কোনো কোনো সময় পড়া তিন রকম হাদীস রয়েছে। নিরপেক্ষ বিচারে হাদীসগুলোকে অস্বীকার করা ঠিক নয়। আপনি যেটা প্রশ্ন করেছেন তার সহজ, সংক্ষিপ্ত উত্তর হল, যে সালাতে কিরাআত জোরে পড়া হয়- ফজর, মাগরিব, ইশা, জুমুআ, ঈদ- এই সকল সালাতে আমরা সূরা ফাতিহা পড়ব না। আর যেসকল সালাতে কিরাআত আস্তে পড়া হয়, সেখানে আমরা সূরা ফাতিহা পড়ব। সুযোগ পেলে অন্য সূরাও পড়ব। হাদীসের আলোকে এবং ফিকহি ইমামগণের মতের আলোকে এটা অত্যন্ত সুন্দর, নির্ভরযোগ্য এবং সমন্বিত মত। ফকীহদের ভেতরে বাংলাদেশের খুব প্রসিদ্ধ আলেম শামসুল হক ফরিদপুরী রাহ. এটাকে খুব জোর দিয়েছেন। মুহাদ্দিসদের ভেতরে শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানি এটাকেই জোর দিয়েছেন। আর অন্যান্য পুরনো মত তো আছেই। এটাই সমম্বিত ও সুন্দর মত।

৩১
প্রশ্ন-২৭: তারাবীহ না পড়লে রোযার কোনো ক্ষতি হবে কি না?
উত্তর: জি, না। রোযা রমাযান মাসের একটা ফরয ইবাদত। তারাবীহ রমাযান মাসের একটা সুন্নাত ইবাদত। দুটো সম্পূর্ণ পৃথক ইবাদত। একই মাসে আমরা করি। কেউ যদি তারাবীহ পড়তে না পারেন বা কম পড়েন অথবা একা পড়েন বা মোটেও না পড়েন এর জন্য রোযার কোনো ক্ষতি হবে না। তবে রমাযান মাসের একটা অত্যন্ত। নেক আমল থেকে তিনি বঞ্চিত হবেন।

৩২
প্রশ্ন-২৮: আসমান ও জমিন কি আল্লাহর নির্দেশে স্থির রয়েছে? কিন্তু বিজ্ঞান তো বলছে কোনো কিছুই স্থির নয়।
পবিত্র কুরআনে সূরা রুমের পঁচিশ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে:

ومن آياته أن تقوم الماء والأرض بأمره

একটা অনুবাদে দেখলাম, এই আয়াতের অর্থ করা হয়েছে- এটাও আল্লাহর নিদর্শন যে আসমান ও জমিন তার নির্দেশে স্থির রয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞান তো বলছে কোনো কিছুই স্থির নয়। সবকিছু ঘুরছে। এই ব্যাপারটা জানতে চাচ্ছি।

উত্তর: এটা হল অনুবাদের ভুল। কুরআন পড়ার অর্থ অনুবাদ পড়া নয়। অনুবাদের মাধ্যমে একজন অনুবাদক কুরআন পড়ে যা বুঝেছেন সেটা আমরা বুঝি। একটা প্রাথমিক ধারণা গ্রহণ করি। কিন্তু আরবি থেকে কুরআন সরাসরি বুঝলে সঠিকভাবে বোঝা যায়। এটাই ধর্মগ্রন্থের বৈশিষ্ট্য। অন্য সকল ধর্মগ্রন্থ, বিশেষ করে বাইবেলের মূল ভাষার কোনো পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায় না। আমরা অনবাদ পড়ি। অনুবাদের অনুবাদ পড়ি। আর অনুবাদের মধ্যে কত তেলেসমাতি যে হয় সেটা বলার সময় নেই। কুরআনের মূল আরবি টেক্সটা আমাদের সংরক্ষণে আছে।

ومن آياته أن تقوم السماء والأرض بأمرير

এই আয়াতের মধ্যে (আরবি) এসেছে (আরবি) থেকে, যার অর্থ দণ্ডায়মান থাকা, প্রতিষ্ঠিত থাকা। এর অর্থ স্থির থাকা নয়। আমি নৌকার উপরে দাঁড়িয়ে থাকি, তার মানে নৌকা চলছে আমি দাঁড়িয়েই আছি। এখানে উদ্দেশ্য স্থির থাকা নয়, প্রতিষ্ঠিত থাকা, টিকে থাকা।

৩৩
প্রশ্ন-২৯: শর্ট জামা পরে নামায আদায় করলে নামায হবে কি না?
উত্তর: শর্ট জামা বলা হয় হাতা শর্ট অথবা ঝুলের দিক থেকে শর্ট। সালাতের মূল বিষয় হল, হাটুর নিচে থেকে শুরু করে নাভি পর্যন্ত ঢেকে রাখা ফরয। এবং দুই কাঁধসহ উপর অংশ ঢেকে রাখা ওয়াজিব অথবা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। কাঁধ যদি ঢাকা থাকে আর কনুই খোলা থাকে তাহলে সালাতের কোনো ক্ষতি নেই। তবে বড় হাতা গুটিয়ে রাখা নামাযের জন্য বেয়াদবি, এটা করবেন না। শর্ট হাতার জামা বা গেঞ্জিতে সালাত সহীহ হবে কোনো অসুবিধা নেই।

৩৪
প্রশ্ন-৩০: কুরআন খতমে একটা ওয়ার্ড ভুল পড়েছি। তিলাওয়াতের কারণে ছওয়াব হয়েছে নাকি ভুল পড়ার কারণে গোনাহ হয়েছে?
আমার প্রশ্ন হল, রোযা দশটা হলে আল্লাহর রহমতে আমি কুরআন খতম দিয়েছি। কিন্তু সমস্যা হল বিশ পারা পর্যন্ত একটা ওয়ার্ড আমি ভুল পড়েছি। কিন্তু একুশ পারা থেকে আবার সেটা শুদ্ধ করে নিয়েছি। এখন আমার জিজ্ঞাসা হল, এই কুরআন তিলাওয়াত থেকে আমার ছওয়াব হয়েছে নাকি ওই ভুল পড়ার কারণে গোনাহ হয়েছে?

উত্তর: আমাদের বুঝতে হবে, আমাদের যত লেনদেন অথবা মুআমালাত আছে, এর ভেতর সবচে’ সহজ, আন্তরিক, প্রিয় লেনদেন হল আল্লাহ তাআলার সাথে। আল্লাহ তাআলা আপনার মনের আগ্রহ এবং সাধ্যমতো চেষ্টা দেখবেন। আল্লাহ তাআলা এমন কোনো মহাজন নন যে, উনিশ-বিশ হলেই আপনার পুরোটা কেটে দেবেন। এমন কোনো স্কুল শিক্ষকও নন। কাজেই আপনি সাধ্যমতো পড়েছেন এবং অনিচ্ছাকৃত যে ভুল হয়েছে এটা আল্লাহ ক্ষমা করবেন। আপনার খতম হয়ে গেছে। হয়তো ওই ভুলটা করলে আপনার ছওয়াব আরেকটু বেশি হত। এই ভুলের জন্য ছওয়াব কিছুটা কমতে পারে। এটা ছাড়া আর কিছু নিয়ে আপনি দুশ্চিন্তা করবেন না।

৩৫
প্রশ্ন-৩১: মাকরুহ শব্দের অর্থ কী? এটা করলে গোনাহ হয় নাকি ছওয়াব হয়?
আমরা অনেক সময় বলি যে, এটা করলে নামায মাকরুহ হয় বা ওটা খাওয়া মাকরুহ। আসলে মাকরুহ শব্দের অর্থ কী? এটা করলে গোনাহ হয় নাকি ছওয়াব হয়?

উত্তর: মাহরুহ শব্দের অর্থ হল অপছন্দনীয় বা অপছন্দকৃত। যে কাজটা কুরআন বা সুন্নাহর আলোকে অপছন্দনীয় হয়, অল্প গোনাহ হয়, তবে হারাম নয়, মহাগোনাহ নয় এগুলোকে মাকরুহ বলা হয়। এটা করলে নামায মাকরুহ হবে অর্থাৎ নামাযের মধ্যে একটা অপছন্দনীয় কাজ করার কারণে আপনার সোয়ব কমে যাবে অথবা অল্পকিছু গোনাহ হবে যেটা আপনি তাওবা করলে আল্লাহ মাফ করে দেবেন।

৩৬
প্রশ্ন-৩২: আমার স্ত্রীর নিসাব পরিমাণ স্বর্ণ আছে। আমি কি তার যাকাত দেব না আমার স্ত্রী প্রদান কবে?
উত্তর: সোনা যার যাকাত তার। এটা যদি আপনার সোনা হয়, স্ত্রীকে পরার জন্য উপহার দিয়েছেন, চাইলেই নিয়ে নিতে পারবেন। তাহলে আপনাকেই যাকাত দিতে হবে। আর যদি স্ত্রীকে দিয়ে দেন, স্ত্রীর ইচ্ছার বাইরে নিতে পারবেন না, স্ত্রী ইচ্ছা করলে বিক্রয় করতে পারবেন, তাহলে ওটার মালিক আপনার স্ত্রী (এবং এটাই স্বাভাবিক। যদি স্ত্রীকে দেয়ার পরে আবার নিয়ে নেন তাহলে আপনি জালিম) । এ ক্ষেত্রে স্ত্রীই যাকাত দেবেন। আপনি যদি দিয়ে দেন এটা আপনার পক্ষ থেকে স্ত্রীর জন্য হাদিয়া হবে। এটা ভালো কাজ। আপনি ছওয়াব পাবেন। কিন্তু ফরয আপনার স্ত্রীর উপর।

৩৭
প্রশ্ন-৩৩: আমার পেটে প্রচণ্ড গ্যাস হয়, ওযু রাখতে পারি না। তো নামায এবং কুরআন তিলাওয়াত কীভাবে করতে পারি?
উত্তর: সালাত আদায় করতে যতটুকু সময় আপনার লাগে অতটুকু সময় যদি আপনি ওযু রাখতে পারেন, তাহলে আপনি প্রত্যেক সালাতের জন্য নতুন করে ওযু করবেন। আর ওযু অসম্ভব হলে তায়াম্মুম করবেন, যদি শারীরিক কোনো অসুবিধা থাকে। আর শুধু তিলাওয়াত করতে ওযু লাগে না। কুরআনের পিওর কপি ধরতে ওযু লাগে, এটা সাহাবিদের যুগ থেকে একটা সুদৃঢ় মত। সেক্ষেত্রে আপনি তাফসীর বা তরজমাসহ কুরআন পড়বেন, হাতে ধরে পড়বেন কোনো অসুবিধা নেই। আর এমন যদি হয় নামাযের ওই সময়টুকুও আপনি ওযু রাখতে পারেন না, এক্ষেত্রে আপনি মাযুর। ওযু। করে সালাত শুরু করবেন। সালাতের ভেতর ওযু চলে গেলে ওযু করা লাগবে না।

৩৮
প্রশ্ন-৩৪: আমার ডিপিএস আছে। এর উপর যাকাত দিতে হবে কি না?
উত্তর: জি, ডিপিএস এবং সকল রকমের সঞ্চিত অর্থের যাকাত দিতে হবে। যেটার মালিক আপনি। আপনি চাইলে ফেরত পাবেন। ডিপিএসসহ ব্যাংকে যতো রকম টাকা রাখা হয়, সবকিছুর মালিক আমরা। আমরা চাইলে ফেরত পাব। যে পরিমাণ অর্থ আমি জমা দিয়েছি এবং এই বছরে চাইলে যতটুকু লাভ আমি পাব (যদি শরীআহসম্মত হয়), এই পুরো টাকার যাকাত দিতে হবে। আমার অর্থের সম্পূর্ণ যাকাত দিতে হবে।

৩৯
প্রশ্ন-৩৫: চিল্লা দেয়ার মানত করেছিলাম কিন্তু চিল্লা দিতে পারছি না। এখন আমার করণীয় কী?
আমি প্রচণ্ড অসুস্থ ছিলাম, তখন চিল্লা দেয়ার মানত করেছিলাম। এখন আমি সুস্থ, কিন্তু চিল্লা দিতে পারছি না। এখন আমার করণীয় কী?

উত্তর: আল্লাহর কাছে কোনোকিছু নিয়ত করলে, কাজটা যদি শরীআতসম্মত হয়, সেটা পালন করতে হবে। আপনি আল্লাহর কাছে ওয়াদা করেছেন, পালন করতে হবে। কাজেই (চিল্লা এটা স্বাভাবিকভাবে শরীআতসম্মত কাজ) যদি আপনার শরীআতসম্মত অন্যকোনো বাধা না থাকে, স্ত্রী-পরিবারের দায়িত্ব না থাকে, তাদেরকে ঠিকমতো রেখে যেতে পারেন, তাহলে আপনি চেষ্টা করবেন অবশ্যই এই দায়িত্ব, যেটা আল্লাহর কাছে ওয়াদা করেছেন, এটা পালন করবেন। এটাই শরীআতের বিধান।

৪০
প্রশ্ন-৩৬: কুরআন শুধু তিলাওয়াত পড়ব নাকি অনুবাদসহ পড়ব?
আমি কুরআন খতম করতে চাই। ছয় পারা তিলাওয়াত করেছি। এখন চাচ্ছি শুধু তিলাওয়াত না, বরং অনুবাদসহ পড়ব। এখন এই ছয় পারা বাদ দিয়েই অনুবাদসহ পড়ব নাকি শুরু থেকে পড়া আরম্ভ করব?

উত্তর: শুরুতেই আপনাকে মোবারকবাদ জানাই যে অর্থসহ কুরআন পড়ার চেতনা আল্লাহ তাআলা আপনাকে দান করেছেন। আসলে কুরআন তিলাওয়াত একটি ইবাদত। তবে অর্থ অনুধাবন করা, হৃদয় নাড়িয়ে পড়া এটা মূল ইবাদত। আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেছেন:

الذين آتيناهم الكتاب يثلونه حق تلاوته

হক তিলাওয়াত অর্থ বুঝে তিলাওয়াত করা। হাদীসে এটাই এসেছে। এখন আপনার প্রশ্নের উত্তর হল, আল্লাহ তাআলার সাথে আমাদের যে লেনদেন, এটার চেয়ে সহজ আর কিছু নেই। আপনি যদি প্রথম থেকে পুরা অর্থসহ পড়েন ছওয়াবটা বেড়ে যাবে। আর আপনি যদি মনে করেন কুরআন খতমটা করতে হবে, বাকিটা অর্থসহ পড়ব আলহামদুল্লিাহ। পরের যে চব্বিশ পারা অর্থসহ পড়বেন এর ছওয়াবটা বেশি হবে। ওটারও তিলাওয়াত এবং খতমের ছওয়াব আপনি পেয়ে যাবেন। আপনি যদি মনে করেন শেষ করা দরকার, সপ্তম পারা থেকে অর্থসহ শুরু করেন। আমরা দুআ করি আল্লাহ তাআলা দ্রুত আপনাকে অর্থসহ কুরআন খতম করার তাওফীক দান করুন, আমীন।

৪১
প্রশ্ন-৩৭: আশেপাশে কোনো এক মসজিদে আযান দিলে কি আমি সাথে সাথে নামাযটা পড়তে পারব?
(এক নারীর প্রশ্ন) আমাদের আশেপাশে অনেক মসজিদ আছে। কোনো এক মসজিদে আযান দিলে কি আমি সাথে সাথে নামাযটা পড়তে পারব? নাকি সব মসজিদে আযান শেষ হওয়ার পর নামায পড়ব?

উত্তর: আসলে আযানের চেয়েও জরুরি হল ওয়াক্ত হওয়া, সময় হওয়া। আমাদের দেশে সাধারণত রমাযানে ফজরের আযান সময় মতো দেয়া হয়। মাগরিবেও সময় মতো দেয়া হয়। অনেক ওয়াক্তে বিলম্বে দেয়া হয়। যেমন যুহরের ওয়াক্ত বারোটার আগে বা বারোটার পরে শুরু হয়। আমরা আযান দিই সোয়া একটা বা তারও পরে। এজন্য যারা ঘরে সালাত আদায় করবেন, যাদের জামাআতে যাওয়ার কোনো জরুরত নেই, তারা ওয়াক্ত হলেই ঘরে সালাত আদায় করতে পারেন, কোনো অসুবিধা নেই। কাজেই আযান হওয়ার পরপরই আপনি সালাত আদায় করবেন। মসজিদের জামাআতের জন্য অপেক্ষা করা মহিলাদের জন্য কোনো নির্দেশনা নয়।

৪২
প্রশ্ন-৩৮: নাসিরুদ্দীন আলবানী রাহ. বই থেকে আমি জানতে পেরেছি নারী-পুরুষের নামাযে কোন পার্থক্য নেই- এটা কি সহীহ?
(এক নারীর প্রশ্ন) রাসূলের নামায নামের বই, যেটা লিখেছেন নাসিরুদ্দীন আলবানী রাহ., অনুবাদ করেছেন সিরাজুল ইসলাম, এই বই থেকে আমি জানতে পেরেছি নারী-পুরুষের নামাযের ভেতর কোন পার্থক্য নেই- এটা কি সহীহ? আমি পুরুষের মতো সেজদা করি দেখে একজন ১০০% নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে আমার নামায হচ্ছে না।

উত্তর: বড় দুঃখজনক, আমরা অন্য সব ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে জেনে বলি। বিজ্ঞান বিষয়ে, মেডিসিন বিষয়ে কথা বলতে জেনে বলি। না জানলে বলতে ভয় পাই যে, বলে আবার ঠকব কি না। কিন্তু দুর্ভাগ্য, দীনের ব্যাপারে আমরা সবাই মূর্ষতার সাথেই কথা বলি। আপনি ওই ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করেন যে, আপনি কোন বইয়ে, কোন কিতাবে পেয়েছেন যে ওরকম নামায পড়লে নামায হবে না! মাযহাবের হোক, বুযুর্গদের হোক একটা বই দেখান তো! সম্পূর্ণ না জেনে, মূখতার সাথে আমরা ফতোয়া দিতে থাকি। অথচ আল্লাহ পাক কুরআনে এটাকে মহাপাপ বলেছেন যে, “আমার নামে, দীনের নামে আন্দাজে কথা বলল না। বোন, জান্নাত যদি বাঙালিদের হাতে থাকত তাহলে কেউ আমরা জান্নাতে যেতে পারতাম না। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ জান্নাতকে নিজের হাতে রেখেছেন। আর আপনি শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী রাহ. এর কথা বলেছেন। তিনি বর্তমান বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস এবং ফকীহও বটে। তিনি তাঁর ‘সিফাতু সালাতিন নাবি' গ্রন্থে নারী পুরুষের সালাতের পার্থক্য নেই মর্মে একটা বক্তব্য এনেছেন ইবরাহীম নাখয়ি থেকে। ইবরাহীম নাখয়ি তাবেয়ি ফকীহ। মূলত ইবরাহীম নাখয়ির এই বক্তব্যটা অন্যান্য গ্রন্থে একটু ভিন্নরকম রয়েছে। নারী-পুরুষের সালাতের পার্থক্য আছে, কি নেই এটা সাহাবিদের যুগ থেকেই বিভিন্ন মত রয়েছে। হাদীস শরীফে নারী পুরুষের সালাতের পার্থক্যে তেমন কিছু বলা হয় নি। একটু দুর্বল হাদীসে মেয়েদের সাজদা একটু গোটাসোটা হয়ে করতে বলা হয়েছে। এই হাদীসটা মুরসাল সহীহ। সাহাবির নাম নেই এজন্য দুর্বল। আর কোনো কোনো আরো দুর্বল হাদীসে মেয়েদের রুকু এবং বসার ক্ষেত্রে ভিন্নতার সুযোগ দেয়া হয়েছে। অবশ্য ছেলেদের মতো উঁচু হয়ে বসতে মেয়েদের প্রকৃতিতেও একটু কষ্ট হয়। আর এই পার্থক্যগুলো সবই মুস্তাহাব পর্যায়ের। কোনো নারী যদি পুরুষের মতো সালাত আদায় করে, এটাতে কোনো সমস্যা নেই। আবার এই হাদীসগুলোর ভিত্তিতে রুকু সিজদা এবং বৈঠকে যদি একটু পার্থক্য করে তাতেও কোনো সমস্যা নেই। কারণ সাহাবিদের যুগ থেকেই বিভিন্ন সাহাবি এব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করেছেন।

৪৩
প্রশ্ন-৩৯: মুনিবের সাথে ক্রীতদাসীর ফিজিক্যাল রিলেশনের ব্যাপারে ইসলামের বক্তব্য জানতে চাই।
উত্তর: ইসলামই সর্বপ্রথম দাসপ্রথাকে সীমিত করে। দাসপ্রথা পৃথিবীর প্রায় শুরু থেকেই চলে আসছে। আমরা জানি, যখন থেকে পুঁজিব্যবস্থা তৈরি হয়, সামন্তব্যবস্থা তৈরি হয়, তখন থেকেই দাসপ্রথা জন্ম নেয়। বিভিন্ন ধর্মে, বাইবেলে, বেদে, গীতায় দাসপ্রথাকে সমর্থন করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা দাসপ্রথাকে একেবারে মিটিয়ে দেন নি। কারণ, তখন দাসপ্রথার উপর অর্থনীতির ভিত্তি ছিল। পাশাপাশি দাসদাসী যেন নতুন করে না হয়, যারা আছে তারা যেন মুক্ত হয় এ জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা দিয়েছেন।

বাধ্যতামূলক দাস মুক্ত করা, যাদের সামর্থ্য আছে তাদের মুক্ত করে দেয়া.... তারমধ্যে একটা হল, কারো যদি ক্রীতদাসী থাকে, তাকে যদি স্ত্রী হিসেবে ব্যবহার করে এবং তার গর্ভে সন্তান হয়- ওই দাসী আর দাসী থাকে না। সে মুক্ত হয়ে যায়। এই জন্য দাসীকে কেউ স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে চাইলে সে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। এবং এর মাধ্যমে তার মুক্তি পাওয়ার একটা পথ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে ইসলামের নির্দিষ্ট ব্যবস্থা রয়েছে। বিবাহের মতোই। অনেক শর্তসাপেক্ষ। আর যেহেতু দাস প্রথাই নেই, কাজেই কোনো স্বাধীন মানুষকে ক্রয় করা জঘন্যতম হারাম। বিক্রয় করা জঘন্যতম হারাম। এর মাধ্যমে কোনো দাসদাসী হয় না। যেগুলো ছিল তাদেরকে আস্তে আস্তে কমানো হয়েছে। এক পর্যায়ে উঠে গিয়েছে। কাজেই নতুন করে দাস বা দাসী হিসেবে কাউকে গ্রহণ করা, স্বাধীন মানুষকে বিক্রয় করা, ধরে এনে বিক্রয় করা এগুলো জঘন্যতম অপরাধ। এর মাধ্যমে কেউ দাস হিসেবে গণ্য হয় না। ইসলাম এই প্রথাকে খুবই নিরুৎসাহিত করেছে। প্রথমত একটা চৌবাচ্চায় পানি আসে। পানির নালাগুলো বন্ধ করে দিলে পানি আসা বন্ধ হয়ে যাবে। এরপরে যদি বেরোনোর ড্রেন করে দেন, তাহলে আস্তে আস্তে কমতে থাকবে। অনেক সময় আমাদের মনে হয়, মদের মতো দাসপ্রথা একবারে হারাম করে দিলেই তো হত। সমস্যা হয়েছিল যে, তঙ্কালীন অর্থনীতি, ব্যবসা, বাণিজ্য, ট্রেড- সবকিছু এই দাসব্যবস্থাপনার উপরে ছিল এবং দাসেরাও পরনির্ভর ছিল। আল্লাহ কুরআনে বলেছেন:

والذين يبتغون الكتاب يما ملكت أيمانكم فگابوهم إن علمتم فيهم خيرا

যদি কোনো ক্রীতদাস মুক্ত হতে চায়, তোমরা যদি তাদের যোগ্যতা পাও, তাদেরকে মুক্ত হতে সাহায্য করো। এবং সর্বশেষ ইনস্টলমেন্টগুলো তোমরা দিয়ে দাও। এটা সূরা নূরে আল্লাহ পাক বলেছেন। (সূরা নূর, আয়াত-৩৩) ।

৪৪
প্রশ্ন-৪০: সুদের টাকার সাথে যুক্ত হওয়ার কারণে আমার ইবাদত বন্দেগী কিছুই কাজে আসবে না? এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কী?
আমি ব্যাংকে চাকরি করি। কিন্তু বিভিন্ন মানুষ বলে যে ব্যাংকে চাকরি করা সম্পূর্ণ হারাম। সুদের কাজ। আবার অনেকে বলে যে, না, আপনি তো পারিশ্রমিকের বিনিময়ে টাকা নিচ্ছেন। সুদের টাকার সাথে যুক্ত হওয়ার কারণে আমার ইবাদত বন্দেগী তো কিছুই কাজে আসবে না। এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কী? এটাকে আমি মনেপ্রাণে ঘৃণা করছি বা অন্য জায়গায় যাওয়ার সুযোগ যদি না থাকে আমার, তাহলে আমি এখন কী করতে পারি?

উত্তর: আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ সুদের লেখক, সুদদাতা, সুদগ্রহীতা, সাক্ষী সবাইকে অভিশাপ দেন। আমরা বিশ্বাস করি, মানবতার বিরুদ্ধে যত অপরাধ আছে, সুদ একটা বড় অপরাধ। এটা নেশা এবং অন্যান্য অপরাধের চেয়েও বড় অপরাধ। যা দরিদ্র এবং ধনীর মধ্যে পার্থক্য বাড়ায়। এবং মানুষকে শোষণ করে। এই পাপে আপনি কোনো না কোনোভাবে অংশ নিচ্ছেন, এটা কষ্টকর। এবং আপনার ঈমানও এটা বলছে। তবে বিষয় হল বান্দার অবস্থা আল্লাহ জানেন। আপনি কতটুকু অসহায়, এটা আল্লাহ জানেন। আপনি আপনার অসহায়ত্ব আল্লাহকে বলবেন। চেষ্টা করবেন, দুআ করবেন, আল্লাহ এখান থেকে বের করে অন্য জায়গায় নেন। আর আপনি যে কথাটা বলেছিলেন, আমার ইবাদত কিছুই কবুল হচ্ছে না; বিষয়টা এরকম। আমরা যে দৈহিক ইবাদত করি এর ফরয আদায় হয়ে যাবে। আর আপনি যে ইনকাম করছেন এর ভেতরে সুদসম্পৃক্ত বিষয়টা হারাম। এই হারাম উপার্জন থেকে আমরা যে দান করি, আর্থিক ইবাদত করি, এটা কবুল হয় না। তবে আমাদের দৈহিক ইবাদত নামায রোযা এগুলো কবুল হয়। হারাম যিনি ভক্ষণ করেন তার দুআ কবুল হয় না। আপনি একটা সমস্যার ভেতরে আছেন- ধর্মীয়ভাবে, মানসিকভাবে। আমরা দুআ করি, আপনিও আল্লাহর কাছে দুআ করেন, অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন, হতাশ হবেন না।

৪৫
প্রশ্ন-৪১: আমার স্বামী অসুস্থতার কারণে পরের রোযা গুলো রাখতে পারে নি। এক্ষেত্রে আমার স্বামীর করণীয় কী?
আমার স্বামী একটি রোযা রেখেছে। কিন্তু অসুস্থতার কারণে পরের রোযা গুলো আর রাখতে পারে নি। এক্ষেত্রে আমার স্বামীর করণীয় কী?

উত্তর: যদি কেউ অসুস্থতার কারণে রোযা রাখতে না পারেন, তিনি সুস্থ হওয়ার আশা থাকলে কিছুই করবেন না। সুস্থ হওয়ার পরে রোগুলো কাজা করবেন। এতে কোনো গোনাহ হবে না। আর যদি এমন অসুস্থ হন, সুস্থ হয়ে রোযা রাখার আশা আর না। থাকে, তাহলে প্রতিটি রোযার বিনিময়ে একজন দরিদ্র মানুষকে দুইবেলা খাওয়াবেন। অথবা একটা ফিতরা সমপরিমাণ টাকা কোনো দরিদ্র মানুষকে দিয়ে দেবেন।

৪৬
প্রশ্ন-৪২: ঘুষ দিয়ে আমি যদি কোনো চাকরি নিই, সেই চাকরি থেকে আমি যে ইনকাম করব সেটা হারাম হবে কি না?
বর্তমানে ঘুষ ছাড়া তো চাকরি হয় না। ঘুষ দেয়া তো হারাম। ঘুষ দিয়ে আমি যদি কোনো চাকরি নিই, সেই চাকরি থেকে আমি যে ইনকাম করব সেটা হারাম হবে কি না?

উত্তর: ঘুষ দেয়ার দুটো পর্যায় রয়েছে। একটা হল: যোগ্যতা নেই, ঘুষের মাধ্যমে যোগ্যতা ছাড়াই আমি একটা চাকরি নিয়েছি। এক্ষেত্রে ঘুষও হারাম, চাকরিও হারাম। আরেকটা হল: আমার যোগ্যতা আছে। কিন্তু ঘুষ না দিলে চাকরিটা পাচ্ছি না। অথবা আমার একটা প্রাপ্য আছে- ব্যাংকে প্রাপ্য আছে অথবা জমাজমিতে প্রাপ্য আছে কিন্তু ঘুষ না দিলে আমি পাচ্ছি না। এক্ষেত্রে আমি মাজলুম। ঘুষ দেয়াটা হারাম। কিন্তু যেহেতু জুলুমের শিকার হয়ে দিচ্ছি, দিতে বাধ্য হচ্ছি, আমরা আশা করছি, তাওবার মাধ্যমে আল্লাহ এটা ক্ষমা করবেন। আর চাকরি বৈধ। চাকরির ব্যাপারে কোনো সমস্যা নেই।

৪৭
প্রশ্ন-৪৩: ফিক্সড ডিপোজিড করলেই কি যাকাত আসবে?
উত্তর: আপনার সম্পদ, নগদ অর্থ অথবা সোনা অথবা ব্যবসার পণ্য আপনার মালিকানায় যেখানেই থাক, যদি নিসাব পরিমাণ হয়, অন্তত পঁয়ত্রিশ-চল্লিশ হাজার টাকার বেশি হয়, তাহলে যাকাত দিতে হবে। কাজেই আপনি যদি ফিক্সড করে ব্যাংকে রাখেন অথবা যে কোনোভাবে ব্যাংকে রাখেন, সেই টাকা নিসাব পরিমাণ হলে যদি এক বছর পূর্ণ হয় অবশ্যই যাকাত দিতে হবে।

৪৮
প্রশ্ন-৪৪: একটা মসজিদে অবৈধ সংযোগের বিদ্যুৎ নেয়া হয়েছে। সেই মসজিদে আমি যদি নামায পড়ি আমার নামায হবে কি না?
উত্তর: প্রথম কথা হল, যিনি অবৈধ সংযোগ নিয়েছেন, যারা জানেন, সবাই পাপী হবেন। কিন্তু এর কারণে অন্যদের নামাযের কোনো ক্ষতি হবে না। নামায আপনি যে কোনো জায়গায় পড়ে নিলেই নামায হয়ে যাবে। তবে আপনি যেহেতু জেনেছেন, আমরা অনুরোধ করব, আপনি বিদ্যুতের টাকাটা দিয়ে বৈধ সংযোগ এনে দেন। আমরা সমালোচনা করতে অভ্যস্ত। কোনো ভালো কাজে ইনিশিয়েট করতে, পদক্ষেপ নিতে অনেক সময় অভ্যস্ত না। আপনি দয়া করে অন্যদেরকে বলে, সমালোচনা বা কটু কথা বলে মসজিদের জন্য একটা বৈধ সংযোগের ব্যবস্থা করেন। আল্লাহ তাআলা আপনাকে অনেক জাযা খায়ের (উত্তম প্রতিদান) দিন।

৪৯
প্রশ্ন-৪৫: ঘুমের ভেতরে যদি কোনো অশ্লীল স্বপ্ন দেখা হয় তাহলে কি রোযা ভেঙে যাবে?
উত্তর: আমার প্রশ্ন হল ঘুমের ভেতরে যদি কেউ মানুষ খুন করে তাহলে কি ফাসি হবে? আসলে ঘুমের ভেতরের কর্মের জন্য আপনি দায়ী নন। কোনো পাপও হবে না। রোযারও কোনো ক্ষতি হবে না। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ঘুমন্ত মানুষ যতক্ষণ ঘুমিয়ে থাকে তার যা কিছু কর্ম... এমনকি ঘুমন্ত মানুষ বিছানা থেকে পড়ে একজন মানুষকে যদি মেরেও ফেলে, এই জন্যও তার কোনো পাপ লেখা হবে না।

৫০
প্রশ্ন-৪৬: আমার স্বর্ণ আছে কিন্তু যাকাত দেয়ার মতো টাকা নেই। আমি কী করব?
উত্তর: মনে করি আপনার আট ভরি সোনা আছে। আট ভরি সোনার দাম হয়তো তিন লক্ষ টাকা। এর যাকাত আসবে ছয় বা সাত হাজার টাকা। তিন লক্ষ টাকার স্বর্ণ আমি ব্যবহার করতে পারি, অথচ এক বছর ধরে আমি ছয় হাজার টাকা আল্লাহর পাওনা দিতে পারব না এটা বাস্তবে মেলে না। আমার একটা সুন্দর বাড়ি আছে, ট্যাক্স হয়েছে বিশ হাজার টাকা। আমি কি বলতে পারব আমার বাড়ি আছে কিন্তু নগদ টাকা নেই, আমি ট্যাক্স দিতে পারব না! সরকার ট্যাক্স নিয়ে ভালো কাজ করেন। খারাপ কাজও করেন। আর আল্লাহ আপনার সম্পত্তির উপরে চেয়েছেন যে আপনি দরিদ্রদেরকে দেবেন। কোনো পুরোহিতকে নয়, আল্লাহকেও দেবেন না। দরিদ্রদেরকে দেবেন, সমাজ বিনির্মাণে দেবেন। আল্লাহ তাআলার কাছে ঋণ হিসেবে জমা থাকবে, তিনি ফিরিয়ে দেবেন আখিরাতে। কাজেই এক্ষেত্রে কৃপণতার সুযোগ নেই। আপনাকে যাকাত দিতেই হবে। অর্থ না থাকলে দুটোর একটা হয় সোনা কমিয়ে নিসাবের নিচে নিয়ে আসুন। অথবা মাসে মাসে জমিয়ে হলেও যাকাত পরিশোধ করে দিন।

৫১
প্রশ্ন-৪৭: অনেক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মেয়েরা গজল গায় বা অনেক কিছু পাঠ করে বা বক্তৃতা করে। এটা কি জায়েয?
উত্তর: মেয়েরা মেয়েদের মজলিসে এগুলো করতে পারে। মেয়েরা মেয়েরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করবেন এতে কোনো সমস্যা নেই। পুরুষদের মজলিসে পুরুষদেরকে শুনিয়ে সুললিত গলায় গজল বলা শরীআতে সঠিক নয়। আল্লাহ তাআলা নারী পুরুষের কথা বলতে নিষেধ করেন নি। কিন্তু কথা আর্কষণীয় করে বলতে নিষেধ করেছেন।

فلا تخضعن بالقول

কথা স্বাভাবিক বলতে হবে। কাজেই সাধারণ অনুষ্ঠানে মেয়েরা সুন্দর করে গান গাইবে, ইসলামি গান হলেও এটা আসলে শরীআহ সমর্থন করে না। তবে মেয়েদের মজলিসে তারা এটা করতে পারে।

৫২
প্রশ্ন-৪৮: কত টাকা হলে যাকাত ফরয হয়?
উত্তর: যদি কারো কাছে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার দাম অথবা সাড়ে সাত ভরি সোনার দাম থাকে, যেটা কম হয়, বর্তমানে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার দাম প্রায় বত্রিশ তেত্রিশ হাজার টাকা। এই পরিমাণ অর্থ যদি কারো কাছে এক বছর থাকে তাহলে যাকাত দিতে হবে। এর যত বেশি হবে পুরো টাকারই যাকাত দিতে হবে।

৫৩
প্রশ্ন-৪৯: হাত খরচের জন্য কখনো কখনো বাবাকে না বলে কিছু টাকা গ্রহণ করি। এটা আমার জন্য বৈধ কি না?
আমি বাবার সাথে ব্যবসা করি। তবে হাত খরচের জন্য কখনো কখনো বাবাকে না বলে কিছু টাকা গ্রহণ করি। এটা আমার জন্য বৈধ কি না?

উত্তর: যদি পুঁজি বাবার হয়, সবকিছু বাবার হয়, তাহলে বাবার অনুমতি লাগবে। প্রশ্ন শুনে আপনার কিছু পুঁজি বাবার কিছু পুঁজি এরকম মনে হল না। বাবার ব্যবসা, আপনি সেখানে কর্ম করেন, এমন মনে হল। এখানে একটি কথা বলে রাখি, আমাদের সমাজে ভাইয়ের দোকানে ভাই কাজ করে, বাবার ব্যবসায় ছেলে কাজ করে কিন্তু কোনো চুক্তি থাকে না। বেতনের কথা থাকে না। এটা ঠিক নয়। এতে যিনি কাজ করেন তার উপর জুলুম হয়। সন্তান হলেও পিতার দায়িত্ব- তুমি আমার এখানে কাজ করবে, তোমাকে এই পরিমাণ অর্থ বা হাত খরচ দেয়া হবে, এটা বলা। আমরা সন্তানদেরকে কর্মমুখী করব। পরনির্ভরশীল করব না। আর যদি এই ধরণের কোনো কথা না থাকে তাহলে আপনি বাবাকে না বলে টাকা নিতে পারেন না। বাবাকে বলতে হবে আমি মাঝে মাঝে হাত খরচ নেব।

৫৪
প্রশ্ন-৫o: সালামের উচ্চারণ কোনটা সঠিক?
আমাদের সমাজে অনেক রকম সালামের প্রচলন আছে। একেকজন একেক রকম উচ্চারণ করে। সালামের উচ্চারণ কোনটা সঠিক?

উত্তরঃ সালাম মানব সভ্যতায় অত্যন্ত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সম্ভাষণ। প্রত্যেক জাতিই অন্যকে দেখলে সম্ভাষণ করে। মনের মহাব্বত প্রকাশ করে। যেমন: নমস্তে, আদাব, হাই ইত্যাদি। এগুলোতে মনের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ প্রকাশ পায়। আর ইসলাম যেটা দিয়েছে সেটা স্পেশাল দুআও বটে। শ্রদ্ধাবোধের পাশাপাশি সবচে' বড় দুআ: তোমার উপর শাস্তি হোক, রহমত হোক, বরকত হোক। আমরা যখন সেলামালাইকুম বলি, এতে মনের ভালোবাসা প্রকাশ পেলেও কোনো দুআ হল না। বরং বদদুআ হতে পারে। কারণ, সেলাম বললে পাথর বোঝায়। তোমার উপর পাথর টাথর কিছু একটা পড়ুক। এজন্য আমি অনুরোধ করব, আমরা সুন্দর করে আসসালামু আলাইকুম বলব। যদি কেউ বাঙালি হওয়ার কারণে মাখরাজ না হয়, সমস্যা নেই। কিন্তু শব্দটা সুন্দর করে উচ্চারণ করব। আসসালামু আলাইকুম বলব। তাহলে আমরা ছওয়াব পাব। দুআ হবে। আমাদের পারস্পরিক সম্ভাষণও হবে। আল্লাহ কবুল করুন। আমীন।

৫৫
প্রশ্ন-৫১: আমার ৮ বছরের দুইটা বাচ্চার রোযা রাখাচ্ছি- এতে আমার গোনাহ হবে? আসলে এক্ষেত্রে আমার করণীয় কী?
আমার ৮ বছরের দুইটা বাচ্চা। গত বছর রোযা রাখছিল। আমি ভেঙে ভেঙে কয়েকটা রাখতে দিয়েছিলাম। কিন্তু এই বছর একেবারেই মানে না। রোযা থাকবেই। সাহরির আগ পর্যন্ত ঘুমাও না। যদি না ডাকি সাহরি খেয়ে তারপর ঘুমায়। অনেকে আমাকে বলে, এতটুকু বাচ্চার রোযা রাখাচ্ছি- এতে আমার গোনাহ হবে। আসলে এক্ষেত্রে আমার করণীয় কী?

উত্তর: প্রথম কথা আপনার কোনো গোনাহ হচ্ছে না। তবে তাদের শরীরের কোনো ক্ষতি না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। পনেরো ঘন্টার রোযা, ওদেরকে ছোট থেকেই অভ্যস্ত করাতে হবে। সাত বছর থেকে সালাতে অভ্যস্ত করা এবং রোযাও মাঝে মাঝে থাকলে কোনো দোষ নেই। তবে ওদের শরীরে কোনো ক্ষতি না হয়, খেয়াল রাখতে হবে। প্রচুর লিকুইড খাওয়াতে হবে। মাঝে মাঝে রাখবে মাঝে মাঝে ভাঙবে। ওরা যদি জিদ করে রাখে আর শারীরিকভাবে অসুস্থ না হয়, দিনের বেলা ক্লান্ত না হয়, দৌড়াদৌড়ি না করে তাহলে ইনশাআল্লাহ কোনো অসুবিধা নেই। আপনার কোনো গোনাহ হচ্ছে না।

৫৬
প্রশ্ন-৫২: আমার থেকে দচ্ছি আপন ভাইবোনকে যাকাত দেয়া যাবে কি না?
উত্তর: আপনার বোন অথবা ভাই আপনার থেকে আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল এটা বড় কথা নয়। বড় কথা হল যাকাতের যোগ্য কি না! যাকাতের যোগ্য বলতে যা আয় করেন তাতে সংসার চলে না, সবসময় অভাব লেগে থাকে, অস্বচ্ছল এবং ব্যাংকে ব্যালেন্স না থাকে তাহলে অবশ্যই তাকে যাকাত দেয় যাবে। বরং ভাইবোন, আপন আত্মীয়স্বজন, রক্তসম্পর্কের আত্মীয়দের আগে যাকাত দেয়া দরকার। তাদেরকে বাদ দিয়ে অন্যদেরকে দিলে বরং যাকাত কবুল না হওয়ার অনেক ভয় দেখিয়েছেন সাহাবি এবং তাবেয়িগণ। তাদের অধিকার বেশি। তবে সন্তান, সন্তানের সন্তান, পিতামাতা এদেরকে যাকাত দেয়া যাবে না। ভাইবোন অন্যান্য আত্মীয়দেরকে দেয়া যাবে।

৫৭
প্রশ্ন-৫৩: আমি প্রতিবন্ধী। জামাআতে সালাত আদায় করতে পারি না। আমার জন্য সালাত আদায়ের উত্তম সময় কোনটি?
উত্তরঃ আল্লাহর ওলি হওয়া, আল্লাহর প্রেম পাওয়া মানুষের জন্য সবচে’ সহজ। কারণ এখানে কোনো যোগ্যতা লাগে না। কাজেই একজন প্রতিবন্ধী একজন সুস্থ মানুষের চেয়ে অনেক আগে আরো বেশি আল্লাহর প্রিয় বান্দা হয়ে যেতে পারে। তিনি তার সাধ্যের ভেতরে আল্লাহর ইবাদত করবেন। মসজিদে যাওয়া তার জন্য যদি অসম্ভব হয়, তিনি প্রথম ওয়াক্তে সালাত আদায়ের চেষ্টা করবেন। রাসূল (ﷺ) বলেছেন:

أفضل الأعمال الصلاة في أول وقتها

প্রথম ওয়াক্তে সালাত আদায় করা উত্তম (সুনান আবু দাউদ-৪২৬) ।

তবে কোনো কোনো সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে রাসূল (ﷺ) শেষ সময়ের কথা বলেছেন। যেমন ইশার সালাত। ইশার সালাত যদি সুযোগ থাকে একটু দেরি করে, রাতের এক তৃতীয়াংশ পার হওয়ার পরে, দ্বিতীয়-তৃতীয়াংশের শুরুতে, অর্থাৎ রাত দুঘণ্টা হয়ে গেলে পড়া- এটা তিনি মাঝে মাঝে পড়তেন এবং এটাকে উত্তম বলেছেন। বলেছেন, মানুষের কষ্ট না হলে এটাকে আমি ওয়াক্ত হিসেবে ঠিক করে দিতাম। এটা বাদে বাকি সালাতগুলো আপনি প্রথম ওয়াক্তে পড়বেন।

৫৮
প্রশ্ন-৫৪: তাহাজ্জুদ নামায সুন্নাত না কি নফল?
উত্তর: আসলে আমরা অনেক অস্পষ্টতায় ভুগি। মূলত আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে যত বিধান দিয়েছেন তা দুই রকম। একটা হল ফরয। আরেকটা নফল। ফরযের বাইরে যা আছে সবই নফল। সুন্নাত, ওয়াজিব, মুস্তাহাব। সবকিছুই নফলের অন্তর্ভুক্ত। একটা ইবাদত যখন ফরয না হয়, সেটা নফল। নফলের ভেতর যেগুলো রাসূল (ﷺ) নিয়মিত করতেন এগুলোকে আমরা বলি নফল সুন্নাত। কাজেই তাহাজ্জুদ নফল। ফরয নয়। তবে সুন্নাত নফল। অর্থাৎ রাসূল (ﷺ) নিয়মিত এটা পালন করতেন। কুরআন সুন্নাহর আলোকে সবচে' গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত এবং মুআক্কাদ সুন্নাত হল তাহাজ্জুদের সালাত। রাসূল (ﷺ) কখনো ছাড়তেন না। ছাড়লে আপত্তি করতেন। এবং কুরআনে বারবার বলা হয়েছে, কিছু হলেও অন্তত কিয়ামুল লাইল বা তাহাজ্জুদ পড়া। এটা নফল কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ নফল।

৫৯
প্রশ্ন-৫৫: আমি যখন তাশাহহুদ পড়তে, সিজদা করতে যাই তখন পা প্রচণ্ড ব্যথা করে। কীভাবে নামায পড়লে সহীহ হবে?
আমার তিনবার মেজর অপারেশন হয়েছে। আমি দাঁড়াতে পারি ঠিকই, কিন্তু যখন বসি, তাশাহহুদ পড়তে যাই, সিজদা করতে যাই, তখন আমার পা প্রচণ্ড ব্যথা করে। কীভাবে নামায পড়লে আমার নামাযটা সহীহ হবে?

উত্তর: যদি মাটিতে বসে উঠে দাঁড়াতে খুব বেশি কষ্ট হয়, আপনি ফরয সালাত দাঁড়িয়ে পড়বেন। দাঁড়িয়ে সূরা কিরাআত পড়বেন। রুকু করবেন ইশারায়। সিজদাও করবেন ইশারায়। আত্তাহিয়্যাতু আপনি দাঁড়িয়েই পড়বেন। তবে শেষ বৈঠকে যেহেতু আর ওঠা লাগে না তাই শেষ বৈঠক আপনি বসে পড়তে পারেন। বান্দা তার সাধ্যের ভেতরে আল্লাহর ইবাদত করবে। সাধ্যের বাইরে নয়। দাঁড়ানো একটা ফরয। রুকু একটা ফরয। সিজদা একটা ফরয। প্রত্যেকটাকে পরিপূর্ণ আদায় করতে পারলে ভালো। নইলে যতটুকু পালন করা যায়। ফরয সালাত ছাড়া অন্যান্য সকল সালাত আপনি মাটিতে বসে অথবা চেয়ারে বসে উঁচু জায়গায় বসে ইশারায় পড়বেন। এতে সালাত আদায় হয়ে যাবে।

৬০
প্রশ্ন-৫৬: বিতরের নামায সঠিক কোনটা?
বিতরের নামায আমরা ছোটবেলা থেকে পড়ে আসছি, দ্বিতীয় রাকআতে বসি এবং তৃতীয় রাকআতে আরেকটা তাকবীর দিই। কিন্তু এখন শুনছি ওই বৈঠকটা নাকি নাই। এখন আমি এক বছর যাবত এই আমলটা করছি। আমার মনের ভেতর অনেক সন্দেহ। আসলে সঠিক কোনটা?

উত্তর: দুঃখজনক হলেও সত্য, জ্ঞান অনেক সময় আমাদেরকে বিতর্কে নিপতিত করে। রাসূল (ﷺ) প্রায় তেরো প্রকারে বিতর পড়তেন। তাহাজ্জুদসহ বিতর। কখনো একবারে আট রাকআত পড়ে নয় রাকআতে সালাম ফেরাতেন। মোটেও বসতেন না। কখনো একবারে সাত রাকআত পড়তেন। কখনো একবারে পাঁচ রাকআত পড়তেন। তিনি তিন রাকআত বিতির পড়তে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন:

لا تویژوا بتلاني، أوتروا تنفس، أو بسبع، ولا تشبهوا بصلاة المغرب

তোমরা মাগরিবের মতো তিন রাকআত বিতর পড়ো না। পাঁচ বা সাত রাকআত পড়ো। এই হাদীসের অর্থ এই নয় যে তিন রাকআত পড়ব, মাঝখানে বসব, এতেই হয়ে যাবে। তিনি নিশ্চিত বলেছেন পাঁচ বা সাত পড়ো। এর অর্থ হল বিতর তোমরা একটু বেশি করে পড়ো। তবে তিনি নিজে তিন রাকআত পড়েছেন। সাহাবিরা পড়েছেন। এজন্য বিতরের আগে কিছু পড়লে এই হাদীস অনুযায়ী কর্ম করা হবে। বিতর যখন আমরা তিন রাকআত পড়ব, তিনভাবে পড়তে পারি। প্রথম পদ্ধতি হল দুই রাকআত পড়ে সালাম ফিরিয়ে আবার উঠে দাঁড়িয়ে নতুন করে আরেক রাকআতের নিয়ত করে এরপরে সূরা ফাতিহা, সুরা ইখলাস পড়ে আল্লাহু আকবার বলে হাত মুনাজাতের মতো তুলে অথবা হাত বেঁধে কুনুত পড়ে এরপরে রুকু করব। দ্বিতীয় পদ্ধতি হল, আমরা যেভাবে বাংলাদেশে সচারচর পড়ে থাকি। এটা হাদীসে মোটামুটি বোঝা যায়। সাহাবিদের কর্ম দ্বারা প্রমাণিত। এভাবে পড়লে হবে না, অবৈধ, নিষিদ্ধ এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। বরং এটা বললে একটা বিশুদ্ধ পদ্ধতিকে অস্বীকার করা হয়। তৃতীয় পদ্ধতি হল, দুই রাকআত পড়ে মোটেও না বসে সরাসরি উঠে দাঁড়িয়ে তিন রাকআত একবারে পড়ে একইভাবে কুনুত পড়ে এরপরে রুকু করে সালাত শেষ করা। ("সহীহ ইবন হিব্বান ৬/১৮৫; সুনান দারাকুতনি ৪/৩৫৮; মুসতাদরাক হাকিম ১/৪৪৬; সুনান বাইহাকি ৩/৩১)

এটাও সাহাবিরা আমল করেছেন। এবং তাবেয়িনদের আমল আছে। এটাও প্রমাণিত। কাজেই আমার মনে হয় এই ধরনের বিতর্ক- এটা হবেই না, ওটা হবেই না, এক রাকআত বিতির পড়লে হলই না, তিন রাকাত পড়লে হলই না এই বিতর্ক ঠিক না। হাদীস যতটুকু প্রশস্ত আমরা নিজেদেরকে অতটুকু প্রশস্ত করে নিই। নফল, সুন্নাত, মুস্তাহাব, ওয়াজিব ইবাদতগুলো রাসূল (ﷺ) নিজেই বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে পড়েছেন। যেন আমাদের ভেতরে ইবাদতের একাগ্রতা আসে। সবসময় এক রকম পড়লে কম্পিউটার অটোরুটের মতো হয়ে যায়। আল্লাহু আকবার' বলে শুরু করি, সালাম ফিরিয়ে দিই- হুশ থাকে না।

৬১
প্রশ্ন-৫৭: সুদ গ্রহণ করলে নাকি দুআ কবুল হয় না। কথাটা কতটুকু সঠিক?
উত্তর: জি, খুবই সঠিক কথা। তবে শুধু সুদ নয়, যে কোনো হারাম ভক্ষণ করলে দুআ কবুল হয় না। বিভিন্ন হাদীসে বিষয়টা রয়েছে। সহীহ মুসলিমে রাসূল (ﷺ) বলেছেন: অনেক মানুষ আছে যারা আল্লাহর অনেক ইবাদত করে। হজ্জ-উমরাহ করে। আল্লাহর কাছে হাত তুলে দুআ করে। কিন্তু তার খাবার হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পোশাক হারাম, হারাম দিয়ে তার দেহ গঠন হয়েছে। তাই আল্লাহ তার দুআ কবুল করেন না। এতে সকল হারাম শামিল। হারাম মানেই মানুষের ক্ষতি। যৌতুক, চাঁদাবাজি, সুদ, ঘুষ, ফাঁকি দেয়া, পরের জমি দখল করা-সকল হারাম উপার্জন আমাদেরকে আল্লাহ থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে দেয়। এজন্য সুদ আমরা গ্রহণ করব না। জেনেশুনে সুদ নেব না। আল্লাহ সুদের উপার্জন থেকে আমাদের মুক্ত রাখুন।

৬২
প্রশ্ন-৫৮: শেয়ার ব্যবসা হালাল না হারাম জানতে চাই।
উত্তরঃ আসলে ব্যবসা তো হালাল। এবং ব্যবসার বড় দিক হল শেয়ার। আরবিতে যাকে মুশারাকাহ বলে। শেয়ার ব্যবসা মূলত নীতিগতভাবে বৈধ। ইসলাম এগুলোকে অনুমোদন করে। তবে আপনি কোন ব্যবসার শেয়ার করছেন, ব্যবসার প্রকৃতি কী, এবং শেয়ারের ধরন কী- এগুলো আপনাকে বিস্তারিত আলেমদের থেকে জেনে নিতে হবে। শেয়ার ব্যবসা মূলত জায়েয; যদি মূল ব্যবসা বৈধ হয় এবং শেয়ার গ্রহণের পদ্ধতিটা শরীআত সম্মত হয়।

৬৩
প্রশ্ন-৫৯: এক বছর পূর্ণ হওয়ার পরে ব্যবসায় বিনিয়োগের টাকার যাকাত দিতে হবে কি না?
আমার কাছে দশ লাখ টাকা আছে যেটা আমি ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছি। ওটা থেকে যা ইনকাম হয় সেটা দিয়ে আমার পরিবারের খরচটা চলে আর কি। আমার প্রশ্ন হল এক বছর পূর্ণ হওয়ার পরে এই টাকার যাকাত দিতে হবে কি না?

উত্তর: জি ভাই, অবশ্যই যাকাত আসবে। এটা আল্লাহ তাআলার পাওনা। আপনার অন্যান্য পাওনাদারের খরচের সাথে প্রতি মাসে এক দুই হাজার টাকা আল্লাহর পাওনা হিসাবে বরাদ্দ করতে হবে। ওই দশ লাখের উপার্জন থেকে দরকার হলে নিজেদের খাওয়াদাওয়া একটু কমিয়ে হলেও আল্লাহর পাওনা- যেটা আপনি আল্লাহকে ঋণ দিচ্ছেন- ওটা আদায় করতে হবে। এটা কর্যে হাসানা দিচ্ছেন আল্লাহকে। আল্লাহর কাছে ওটা জমা থাকবে। দুনিয়াতেও আল্লাহ বরকত হিসেবে ফিরিয়ে দেবেন।

৬৪
প্রশ্ন-৬০: প্যারালাইসড অবস্থায় নামাযের বিধান কী?
আমার দাদি ছয়মাস ধরে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় আছেন। কখনো তার সংজ্ঞা ফিরে আসে কখনো আসে না। কখন আসে কখন যায় সেটাও আমরা অনেক সময় টের পাই না। তিনি প্যারালাইসডও বটে। এই অবস্থায় তার নামাযের বিধান কী?

উত্তর: সালাতের সম্পর্ক চেতনার সাথে। হুশের সাথে। মানুষ যখন বেহুশ হয়ে যায়, চেতনা লুপ্ত হয়, তার সালাত থাকে না। অনেকেরই বৃদ্ধ বয়সে এমন হয়, আমরা উকণ্ঠিৎ হই- তার সালাতের কী হবে! অথবা কাফফারা দেয়ার চেষ্টা করি। বিষয় হল, মানুষের যখন চেতনা থাকে কিন্তু অক্ষম, তখন চোখের ইশারায়ও সালাত আদায় করতে পারেন। কিন্তু যখন উনি অচেতন হয়ে যান তার আর সালাত ফরযই থাকে না। কাজেই আপনার দাদির এখন আর সালাত ফরয নেই। যদি কখনো হুশ হয়, বুঝতে পারেন, সালাতের কথা বলবেন। যদি অনুভব করতে পারেন, তাহলে উনি পড়বেন। আপনি তায়াম্মুম করে দেবেন। না হলে তার কোনো সালাত ফরয নয়। আপনারা দুশ্চিন্তা করবেন না। তার সেবা করুন। তার শেষ জীবন যেন সুন্দর হয় দুআ করুন। আমরাও দুআ করি।

প্রশ্ন-৬১: রাসূল (ﷺ) এর দুআগুলো একত্রিত করে সূর্যাস্তের সময় এবং সূর্যোদয়ের সময় পড়ার আমলটা ঠিক আছে কি না?

রিয়াযুস সালেহীনের মধ্যে দুআর একটা অধ্যায় আছে। রাসূল (ﷺ) তাঁর সাহাবিদেরকে বিভিন্ন সময়ে দুআগুলো পড়ার তাগিদ দিতেন। ওই দুআগুলো একত্রিত করে সূর্যাস্তের সময় এবং সূর্যোদয়ের সময় আমি পড়ি। এই আমলটা ঠিক আছে কি না?

উত্তর: জি, সকাল-সন্ধ্যায় পড়ার জন্য রাসূল (ﷺ) অনেক দুআ শিখিয়েছেন। এছাড়াও সাধারণ অনেক দুআ আছে। আপনি সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয়ের সময়ে পড়ার কথা বলেছেন। ফজরের সালাতের পর থেকে বেলা ওঠা পর্যন্ত বসে তাসবীহ, তাহলীল, দুআ করা এবং বেলা ওঠার পর দুই বা চার রাকআত ইশরাক বা সালাতুত দোহা পড়া গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। রাসূল (ﷺ) বলেছেন এতে উমরাহর ছওয়াব হয়। আপনি যদি এই সময় দুআ করেন সেটা ভালো। সূর্যাস্তের আগে মাসনুন কিছু যিকির আছে এগুলো পড়বেন। এছাড়া সাজদায়, অন্যান্য সময় সুন্নাত দুআগুলো করতে পারেন।

৬৫
প্রশ্ন-৬২: আমরা ছয় বোন। আমাদের কোনো ভাই নেই। যদি আমাদের বাবা ইন্তেকাল করেন আমরা কি মাটি দিতে পারব?
উত্তর: মেয়েদের জন্য গোরস্থানে যাওয়ায় রাসূল (ﷺ) আপত্তি করতেন। তবে জানাযায় শরিক হওয়ার অনুমোদন আছে। আপনারা গোরস্থানে গিয়ে মাটি দেয়ায় শরিক হবেন এটা রাসূল (ছ) অনুমোদন করতেন না। আপত্তি করতেন। কাজেই এটা থেকে বিরত থাকা দরকার। আপনাদের স্বামীরা, আপনাদের সন্তানেরা আপনার বাবার দান কাফনে শরিক হবেন। তবে মেয়েদের জন্য সুযোগ থাকলে জানাযার সালাতে শরিক হওয়ার অনুমতি আছে।

৬৬
প্রশ্ন-৬৩; ইবাদত কবুলের পূর্বশর্ত নাকি হালাল রুযি। আমার রুযি যদি হালাল না হয় তাহলে কি আমার ইবাদত কবুল হবে না?
উত্তর: ইবাদত দুই রকমের। একটা দেহের ইবাদত। আরেকটা সম্পদের ইবাদত। যেমন টাকাপয়সা দানসাদকা করা। হারাম অর্থ দিয়ে আর্থিক ইবাদত কখনোই কবুল হবে না। বরং ঈমান নষ্ট হওয়ার ভয় থাকে। অর্থাৎ আল্লাহ বলছেন, বান্দা আমাকে তুমি খারাপ টাকাটা দিও না, আপনি জোর করে আল্লাহকে দিতে চাচ্ছেন। আর যেটা দৈহিক ইবাদত- সালাত আদায় করা, সিয়াম পালন করা- এতে যদি হারাম উপার্জন থাকেও, মূল ফরযটা আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু দুআ কবুল হওয়া এবং বরকত থেকে আপনি বঞ্চিত হবেন। এজন্য হালাল উপার্জনের দিকে আমাদের মনোেযোগ দিতে হবে। বিশেষ করে সকল হারাম উপার্জনের সাথে বান্দার হক জড়িত থাকে। আর বান্দার হকের পাপটা বান্দা মাফ না করলে আল্লাহ পুরো মাফ করবেন না।

৬৭
প্রশ্ন-৬৪: হুতি ব্যবসা হালাল না হারাম?
উত্তর: একজনের টাকা আরেকজনকে পৌছে দেয়া- নগদ হলে এটা বৈধ। তবে যে দেশে আপনি বসবাস করেন, সেই দেশের সরকারি আইন মেনে চলাটা রাসূল (ﷺ) বারবার নির্দেশ দিয়েছেন। কাজেই আইনের ভেতরে থেকে আপনি এটা করতে পারেন। যদি আইন এটা নিষেধ করে তাহলে করতে পারেন না।

৬৮
প্রশ্ন-৬৫: মহিলারা বাড়িতে ইমামের পেছনে কীভাবে তারাবীহ নামায পড়াবেন? পর্দার আড়ালে না সামনাসামনি?
মহিলারা বাড়িতে ইমামের পেছনে তারাবীহ নামায পড়ে। তখন ইমাম কীভাবে নামায পড়াবেন? পর্দার আড়ালে না সামনাসামনি?

উত্তর: পুরুষ ইমাম যদি একা এক ঘরে দাঁড়ান তাহলে তার সাথে কয়েকজন পুরুষ দাঁড়াতে হবে। ছোট হোক অথবা বড়। ইমাম একা এক ঘরে, মুক্তাদিরা ভিন্ন ঘরে - এটা মাকরুহ। আর একই ঘরে হলে পর্দা দিয়ে আড়াল করতে হবে। মেয়েদের থেকে ছেলেদের পর্দা রাখা উচিত, এটা উত্তম।

৬৯
প্রশ্ন-৬৬: ইশার নামায না পড়ে তারাবীহ পড়তে পারব? একা একা ইশার নামায পড়লে জামাআতের ছওয়াব পাব?
আমরা অনেক সময় মসজিদে গিয়ে দেখি তারাবীহর নামায ছয় রাকআত বা আট রাকআত চলছে। এই অবস্থায় ইশার নামায না পড়ে তো আমরা তারাবীহ পড়তে পারব না। এখন একা একা ইশার নামায পড়লে জামাআতের ছওয়াব পাব কি না?

উত্তর: প্রথমেই আপনি ফরয সালাত আদায় করবেন। এরপর দুই রাকআত সুন্নাত আদায় করবেন। তারপর তারাবীহতে শরিক হবেন। স্বভাবতই আপনি জামাআতের ছওয়াব পাবেন না। আর এটা যেন অভ্যাসে পরিণত না হয়। ইশার সালাত জামাআতে আদায় করা ওয়াজিব পর্যায়ের ইবাদত। জামাআত নষ্ট করলে গোনাহ হবে। তারাবীহর নামায জামাআতে আদায় করা এটা নফল সুন্নাত। ঘরে আদায় করলে গোনাহ হবে না। তাই আপনার যদি তারাবীহর জামাআত ধরার আগ্রহ হয় আর ইশার জামাআত ছুটে যায়- এটা খুবই দুঃখজনক।

৭০
প্রশ্ন-৬৭: যদি ইমাম সাহেব সালাম ফিরিয়ে দেন তাহলে আমি সাথে সাথে সালাম ফিরিয়ে দেব নাকি দুআ মাসুরা শেষে সালাম ফেরাব?
জামাআতের শেষ বৈঠকে আমার দুআ মাসুরা পড়ার আগেই যদি ইমাম সাহেব সালাম ফিরিয়ে দেন তাহলে আমি সাথে সাথে সালাম ফিরিয়ে দেব নাকি দুআ শেষ করে তারপর সালাম ফেরাব?

উত্তর: ইমাম সাহেবের সাথে অথবা একটু পরে- দুই এক সেকেন্ড দেরি হলে সমস্যা নেই। আর ইমাম সাহেবের দুই সালামের পরে সালাম ফেরানো, এটাও পাওয়া যায়। তবে বেশি দেরি যেন না হয়। ইমাম সাহেবের পেছনে পেছনে থাকতে হবে।

৭১
প্রশ্ন-৬৮: সালাতের মধ্যে ঘুমিয়ে গেলে ওযু ভেঙে যায় কি না জানতে চাই।
উত্তর: জি, না। সালাতের ভেতর ঘুমালে ওযু ভাঙে না। কারণ, অচেনতনভাবে কেউ যদি ঘুমায়, তাহলে ওযু ভেঙে যায়। ওযু ভাঙার সুযোগ থাকে। কিন্তু সালাতে দাঁড়িয়ে বা সিজদায় বা বসে ঘুমালে সাধারণত গভীর ঘুম হয় না। তার মতো আসতে পারে। এই রকম ঘুমালে ওযু ভাঙে না।

৭২
প্রশ্ন-৬৯: প্রভিডেন্ট ফান্ডে আমার চার লক্ষ টাকা জমা আছে। এই টাকার উপর যাকাত আসবে কি না জানতে চাই।
প্রভিডেন্ট ফান্ডে আমার চার লক্ষ টাকা জমা আছে। এর বাইরে আর কোনো সম্পদ নেই। এই টাকার উপর যাকাত আসবে কি না জানতে চাই।

উত্তর: আমরা জানি, প্রভিডেন্ট ফান্ডে বেতনের ১০% টাকা বাধ্যতামূলকভাবে সরকার কর্তন করে নেন। এই টাকার উপর কখনো আমার মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয় না। আমার এগ্রিমেন্টে সরকার লিখে দিয়েছিলেন, ১০% আমাকে কেটে দিতে হবে। আমার কর্ম শেষে সরকার ব্যাক দেবেন। যেহেতু এই টাকার আমি মালিক নই, আমি ওটা চাইলে পাব না, ঋণ নিতে পারব কিন্তু আবার ব্যাক করতে হবে, সেজন্য ওই টাকা যতক্ষণ

ফান্ডে রয়েছে ততক্ষণ আমাকে যাকাত দিতে হবে না। এটাই জোরালো মত। এক্ষেত্রে ভিন্ন মতও আছে। যেহেতু আধুনিক বিষয়, আলেমগণ নানা রকম ইজতিহাদ (গবেষণা) করতে পারেন। তবে যেটা আমার কাছে সঠিক মনে হয়, প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকাটা যতক্ষণ প্রভিডেন্ট ফান্ডে থাকবে, ওটার (১০% এর) যাকাত আমি দেব না। কারণ ওটার আমি মালিক নই। কর্মশেষে ওটা পাওয়ার পর আমি যাকাত দেব। তবে কেউ যদি অতিরিক্ত কাটান, নিজে মালিক হওয়ার পরে জমা দেন, এই অংশের জন্য যাকাত দিতে হবে। কারণ, আমি মালিক হওয়ার পরে ওটা সঞ্চয় করে রেখেছি।

৭৩
প্রশ্ন-৭০: আহাদনামার নাকি কোনো ভিত্তি নেই, কথাটা কি সত্যি?
উত্তর: আসলে আমাদের দুর্ভাগ্য, সমাজে আমরা দীন পালন করি না, যারা একটু পালন করি, নানা কুসংস্কার এবং মিথ্যা কথা আমাদের ভুল আমলে সময় নষ্ট করিয়ে দেয়। যেমন; আহাদনামা, দোয়া গাঞ্জল আরশ, দরুদে লাখি, দরুদে হাজারি- এইসব আজগুবি, চটকদার কথাবার্তা যা সমাজে আছে, সবই মিথ্যা ও বানোয়াট কথা। আসলে দীন হল খাদ্যগ্রহণের মতো। নিয়মিত ফরয ইবাদত পালন করা। সবসময় আল্লাহর যিকির, দুআ-প্রার্থনা, দরুদ শরীফ পড়া। এই যে ছোট ছোট বিভিন্ন দুআ আছে, সবই বানোয়াট। এই ব্যাপারে বিভিন্ন বইপুস্তক, আলহামদু লিল্লাহ, লেখা হচ্ছে। একটা বই আছে রাহে বেলায়াত’। এই বইতে জাল বিষয় এবং এর বিপরীতে যে সহীহ বর্ণনা আছে, এগুলোর বিস্তারিত বিবরণ পাবেন। আল্লাহ তাওফীক দিন। আমীন।

৭৪
প্রশ্ন-৭১: হায়েয হলে সাত দিন পর্যন্ত নামায পড়তে পারব না?
অনেকে বলে, হায়েয হলে সাত দিন পর্যন্ত নামায পড়া যায় না। আমি সাত দিনের আগেই সুস্থ হয়ে যাই। তাহলে আমি কি সাত দিনের আগে নামায পড়তে পারব না?

উত্তর: মেয়েদের বিভিন্ন অসুস্থতা আছে। যেমন সন্তান প্রসবের পর অনেকেই মনে করে চল্লিশ দিন বসে থাকা বোধ হয় ফরয। এটা ঠিক নয়। সাত দিন না, আপনি সুস্থ হলেই নামায পড়তে হবে। যখন নিশ্চিত হবেন আপনি সুস্থ হয়েছেন, পরিচ্ছন্ন হয়েছেন, আপনি গোসল করে পবিত্র হয়ে সালাত আদায় করবেন। সালাত ফরয হয়ে গেছে আপনার উপর। সংসারের অন্যান্য কাজও একইভাবে আপনার দায়িত্বে এসে গেছে।

৭৫
প্রশ্ন-৭২: আমার আম্মু খুব অসুস্থ। তিনি দাঁড়িয়ে ফরয নামায পড়েন। বিতর নামায কি তিনি বসে পড়তে পারবেন?
উত্তর: সক্ষম মানুষ, যারা সালাতে অন্তত দুই-তিন মিনিট দাঁড়াতে পারেন, তাদের জন্য দাঁড়িয়ে ফরয সালাত আদায় করা ফরয। বিতর অধিকাংশ ফকীহের মতে ওয়াজিব। কারো মতে ওয়াজিব পর্যায়ের সুন্নাত। এজন্য বিতরও ফরযের বিধানে পড়বে, এটা অনেকের মত। কাজেই বিতর আপনার আম্মা দাড়িয়ে পড়বেন এটাই সঠিক। তবে বাকি অন্যান্য সালাত তিনি বসে পড়তে পারেন, কোনো সমস্যা নেই। তবে যদি ওযর হয়, বেশি কষ্ট হয়, তাহলে বসে পড়তে পারেন।

৭৬
প্রশ্ন-৭৩: জীবিত অবস্থায় মন মতো আমার সম্পত্তি আমার সন্তানদের জন্য লিখে দিয়ে যেতে পারব কি না?
উত্তর: আল্লাহ কুরআন কারীমে ইনসাফের কথা বলেছেন। ইনসাফ মানে সবকিছু নিরপেক্ষ। আপনার সন্তানদের ভেতর ইনসাফ করা ফরয। এটা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। রাসূল (ﷺ) বলেছেন:

اغوا بين أولادكم

হে মানুষেরা, তোমরা তোমাদের সন্তানদের ভেতরে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করো (সুনান আবু দাউদ-৩৫৪৪; সুনান নাসায়ি-৩৬৮৭) । আপনি যদি জীবিত অবস্থায় সব সম্পদ অথবা কিছু সম্পদ সন্তানদের দেন, ছেলেমেয়ে সবাইকে সমান দিতে হবে। যদি কম-বেশি করেন, আপনি মহাপাপী হবেন। সন্তানরা সম্পত্তি ভোগ করবে আর আপনি আপনার জুলুমের জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে শাস্তি পাবেন। আর যদি আপনি বন্টননামা লিখে দেন, তাহলে শরীআহ মোতাবেক তারা বণ্টন করবে। ছেলেমেয়ে যে যার অংশ পাবে। আপনি শুধু তাদের সাজেশন দিতে পারেন। সকল সম্পত্তি যদি জুলুম করে বণ্টন করেন, আপনি প্রচণ্ড গোনাহগার হবেন। এবং জুলুমের গোনাহ মদ খাওয়া, ব্যভিচার করা- এগুলোর চেয়ে অনেক কঠিক গোনাহ। এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক হতে হবে। আর একটা ব্যাপার হল, জীবিত অবস্থায় নিজের সকল সম্পদ ওয়ারিশদেব লিখে দিয়ে নিজে সম্পদহীন হয়ে যাওয়া, এটা ইসলাম অনুমোদন করে না। ইসলাম বলে, কিছু দান করেন, সন্তানদের দেন, মৃত্যুর পরে সন্তানরা যার যার পাওনা পাবে।

৭৭
প্রশ্ন-৭৪: ছেলে হবে না মেয়ে হবে, এখন আলট্রাসনোর মাধ্যমে আগেই জানা যায়। এটা জানায় গোনাহ হবে কি না?
উত্তরঃ না, কখনোই নয়। আসলে আমরা অনেক সময় মনে করি, মাতৃগর্ভে কী আছে আল্লাহ জানেন, কাজেই আমরা জানতে গেলে বোধ হয় গোনাহ হবে। না, আল্লাহর ইলম আমরা জানতে পারি না।

إن الله عنده علم الساعة وينتيل الغيث ويعلم ما في الأرحام

আসলে একটা গর্ভে কী আছে গর্ভের ভেতর কী আছে তার পরিপূর্ণ পরিচয় কোনো যন্ত্রপাতি ছাড়া সব আল্লাহ জানেন। মানুষ জানে না। কিন্তু কেউ যদি পেট কেটে জানতে পারে, কোনো কারণে জানতে পারে, মেশিন দিয়ে জানতে পারে। এতে দোষের কিছু নেই। কাজেই আন্ট্রাসনোগ্রাম ব্যবহার করা চিকিৎসার জন্য যেমন বৈধ, তেমনি এর মাধ্যমে ছেলে বা মেয়ের পরিচয় জানাতে কোনো গোনাহ হবে না। (সহীহ ইবন হিব্বান ৬/১৮৫; সুনান দারাকুতনি ৪/৩৫৮; মুসতাদরাক হাকিম ১/৪৪৬; সুনান বাইহাকি ৩/৩১)

৭৮
প্রশ্ন-৭৫: ব্যাংকের সুদ হারাম। কিন্তু ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগে কতটুকু জায়েয?
আমি জানি ব্যাংকের সুদ হারাম। কিন্তু ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগে কতটুকু জায়েয? সাধারণ ব্যাংক আর ইসলামী ব্যাংকের মধ্যে তফাৎ আসলে কতটুকু?

উত্তর: বিষয় হল, ইসলামে ব্যবসাকে হালাল করা হয়েছে। সুদ হারাম করা হয়েছে। সুদ আর ব্যবসার ভেতর পার্থক্য হল- সময় গড়ানোর সাথে সাথে টাকার বিনিময়ে টাকা বৃদ্ধি পাওয়া- এটা হল সুদ। আর পণ্যের বিনিময়ে টাকা বাড়লে-কমলে এটা সুদ হবে না, এটা ব্যবসা। ব্যবসার ভেতর জুলুম হতে পারে তবে এটা সুদ নয়। বর্তমানের সাধারণ ব্যাংকগুলো শতভাগ সুদের উপর প্রতিষ্ঠিত। যেটা নিঃসন্দেহে ইসলামে হারাম। অনেকেই বলেন, সুদ মানে চক্রবৃদ্ধির সুদ। এটা মূখর্তাসুলভ কথা। ইসলামে চক্রবৃদ্ধি সুদ বলে কিছু নেই। যেমন, বেশি বেশি সুদ খেতে নিষেধ করা হয়েছে। সাধারণ সুদ খেতে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন গোনাহের কথা বলা হয়েছে তোমরা দারিদ্রের ভয়ে সন্তানদের হত্যা করো না। এর অর্থ এই নয় যে, অন্য কোনো ভয়ে সন্তান হত্যা করা যাবে। বা সন্তান ছাড়া আর কাউকে হত্যা করা যাবে- বিষয়টা এরকম নয়। বরং পাপের একটা বিশেষ পর্যায়কে হারাম করা হয়েছে। ঠিক তেমনি কখনো কখনো ছোট বড় সকল পাপকে হারাম করা হয়েছে। এজন্য সকল সুদই হারাম। তবে ইসলামি ব্যাংকিং যারা করেন, তারা গ্রাহককে টাকা না দিয়ে পণ্য দেয়ার চেষ্টা করেন। মূলনীতির দিক থেকে এটা শরীআতসম্মত। প্রয়োগের দিক থেকে অনেকেই ভুলভ্রান্তি করেন। তবে আশা করি কোনো গ্রাহক যদি এই ধরনের ব্যাংকের সাথে লেনদেন করেন, তিনি তার লেনদেনটা শরীআহ মতো রাখেন, ইনশাআল্লাহ কোনো সমস্যা নেই।

৭৯
প্রশ্ন-৭৬: রমাযানের পরে যে নফল রোযা আমরা রেখে বাকি এটা ঠিক কি না হাদীসের আলোকে জানতে চাই।
উত্তর: মুসলিম শরীফের সহীহ হাদীস, রাসূল (ﷺ) বলেছেন:

من صام رمضان ثم أتبعه ستا من شوال، گان گصيام الدهر

যদি কেউ রমাযানের রোযার পর শাওয়াল মাসের ছয়টা রোযা রাখে তাহলে তার পুরো বছরের রোযা রাখার ছওয়াব হবে। এটা নফল, খুবই ভালো, না করলে গোনাহ নেই।

(সহীহ মুসলিম-১১৬৪; সুনান তিরমিযি-৭৫৯)

৮০
প্রশ্ন-৭৭: ব্যাংকে অফিসের সময়ে ইবাদত করা যাবে কি?
(একজন নারীর প্রশ্ন) আমি একটা ব্যাংকে সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত জব করি। অনেক সময় থাকতে হয় বিধায় আমি অফিসেই অর্থসহ কুরআন শরীফ, নফল নামায, চাশতের নামায, তাহিয়্যাতুল ওযুর নামাযগুলো ফাঁকে ফাঁকে পড়ি। তো অফিসে সারাদিনের সময়টা থাকতে হচ্ছে। এই ইবাদতগুলো না করলে আমার ভালো লাগে না। অফিসের সময়ে এ রকম ইবাদত করা যাবে কি না?

উত্তর: জেনে ভালো লাগছে যে, বান্দার হকের চেতনা আমরা ফিরে পাচ্ছি। ইসলামে সবচে' বড় বিষয় হল মানুষের হক আদায় করা। সবচে' বড় পাপ হল মানুষের হক নষ্ট করা। সবচে' বড় বরকত হল কল্যাণ করা। সারারাত তাহাজ্জুদ পড়ার চেয়ে অনেক বেশি ছওয়াবের কাজ হল একটা মানুষের পাশে দাঁড়ানো। তেমনি পাপের ক্ষেত্রেও। আসলে আপনি যে চাকরি করেন এটার উপর নির্ভর করবে আপনার কর্ম। চাকরি যদি অনুমতি দেয়। যেমন, লাঞ্চ ব্রেক আছে, টয়লেটে যাওয়ার ব্যাপার আছে। এই সময় আপনি দুই-এক রাকআত নামায পড়েন, আপনার কর্মকর্তা যদি জানেন, তাহলে এটা বৈধ হবে। নইলে আপনি এটা করবেন না। আপনার যদি বসে থাকা দায়িত্ব হয়, আপনি বসে থাকবেন, যেন সেবাগ্রহীতারা সেবা নিতে পারে। কুরআন তিলাওয়াতেও একই বিধান। এতে সময় লাগে। তবে আপনি মুখে তাসবীহ পড়তে পারেন, যেটা কর্ম নষ্ট করে না। আপনি দুরুদ পড়ছেন, তাসবীহ পড়ছেন, এর ভেতরেই কাস্টমারের সাথে লেনদেন করতে পারেন। তবে সময় দিতে গেলে, হয় আপনাকে কর্মদাতার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে, অথবা সার্ভিস রুলের ভেতরে থেকে করতে হবে। মূলত কর্মটাই আপনার ইবাদত। আল্লাহ কবুল করুন।

৮১
প্রশ্ন-৭৮: আমি প্রাইভেট ব্যাংকে চাকরি করি। আমার প্রতিষ্ঠান সুদের সাথে জড়িত। আমার যে বেতন, এটা কি হল?
উত্তর: ব্যাংকে সুদ লেখা একটা কাজ। পাশাপাশি প্রশাসনিক অন্যান্য কাজ আছে। প্রশাসনিক কাজগুলো আশা করা যায় বৈধ। সুদ লেখা বা সুদের সাক্ষী হওয়া হারাম কাজ। আমরা আশা করি আপনার কিছু উপার্জন বৈধ, কিছু অবৈধ। আপনি মানুষের হক নষ্ট করার পাপ থেকে বেঁচে আছেন, আল্লাহর কাছে দুআ করেন কীভাবে আরো ভালো হালাল উপার্জনে যেতে পারেন। তবে আপনার উপার্জনের সাথে কিছু হারাম সংমিশ্রিত আছে।

৮২
প্রশ্ন-৭৯: বাবা, মেয়েদের রেখে দুই ভাইয়ের জন্য বাড়ি লিখে দেন। এর জন্য কি আমার বাবাকে শাস্তি পেতে হবে?
আমরা ছয় বোন, দুই ভাই। আমার বাবা যখন মারা যান, হয়তো না জেনে করেছেন, আমার বাবা আমার দুই ভাইয়ের জন্য খুলনার বাড়িটা লিখে দেন। আমার বাবা অনেক নামাযি ছিলেন। হজ্জও করেছেন। আমি খুবই চিন্তিত যে আমার বাবাকে জবাব দিতে হবে কি না আল্লাহর কাছে। আমরা সকল ভাইবোন বলছি যে আমরা মাফ করে দিব। আমরা এটা নিব না। তো এর জন্য কি আমার বাবাকে শাস্তি পেতে হবে?

উত্তর: জি, আপনার আব্বা আপনাদের হক নষ্ট করেছেন। বান্দার হক নষ্ট করেছেন। আপনারা যদি মাফ করে দেন তাহলে মাফ পেয়ে যাবেন।

৮৩
প্রশ্ন-৮০: শুক্রবারে সূরা দুখান, নিয়মিত সূরা মুলক, সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত এই আমলগুলোর ব্যাপারে বিস্তারিত বলবেন।
কুরআন শরীফে অনেক দুআ আছে। আমি সূরা দুখান শুক্রবারে পড়ি। সূরা মুলক নিয়মিত পড়ি। সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত ফজর নামাযের পর পড়ি। সূরা ওয়াকিয়াহ পড়ি। এই আমলগুলোর ব্যাপারে বিস্তারিত বলবেন।

উত্তর: আপনার ওযীফাগুলো কিছু সহীহ, কিছু জাল হাদীস নির্ভর। এখানে বিস্তারিত বলতে পারব না। আপনাকে একটু কষ্ট করতে হবে। আসলে ভালো জিনিস শিখতে গেলে কষ্ট করতে হয়। সমাজে, আলহামদুলিল্লাহ, সহীহ হাদীস নির্ভর বইপুস্তক আছে। যেমন ‘হিসনুল মুসলিম নামে একটা বই আছে। রাহে বেলায়াত ওযীফা নির্ভর একটা বই। এই জাতীয় সহীহ হাদীস নির্ভর বইগুলো পড়েন, তাহলে অনেক সহজে সহীহ দুআগুলো জানতে পারবেন।

৮৪
প্রশ্ন-৮১: অসুস্থতার কারণে চেয়ার-টেবিলে নামায পড়া বৈধ হবে কি না জানতে চাই।
উত্তর: আপনি চেয়ার টেবিলের কথা বলেছেন, আসলে সালাতে চেয়ারের সাথে টেবিল লাগে না। অনেকে মনে করে সিজদাটা টেবিলের উপর বা টুলের উপর দিলে ভালো হবে, এটা ঠিক না। আপনার ইশারাই যথেষ্ট। মূল বিষয় হল, যে ব্যক্তি সালাতের দুই তিন মিনিট দাঁড়াতে পারবেন, তিনি পুরো সালাত দাঁড়িয়ে পড়বেন। এমনকি রুকু সিজদায় অক্ষম হলে দাঁড়িয়েই ইশারায় রুকু সিজদা করবেন। আর যে ব্যক্তি একেবারেই দাঁড়াতে পারেন না, তিনি মাটিতে বসে, লম্বা করে দিয়ে সালাত আদায় করবেন। যিনি মাটিতেও বসতে পারেন না তিনি চেয়ারে বসতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে সিজদার জন্য সামনে টেবিল রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। তিনি ইশারায় সিজদা করবেন।

৮৫
প্রশ্ন-৮২: ভালো কাজের আগে মীলাদ শরীফ পাঠ করা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত?
আমরা কোনো ভালো কাজের আগে মীলাদ শরীফ পাঠ করে থাকি। তো ভালো কাজের আগে মীলাদ শরীফ পাঠ করা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত?

উত্তর: আমাদের ধর্মীয় কর্মগুলো দুই রকম। একটা হল কুরআন সুন্নাহ নির্দেশিত। এটা আপনার জন্য। এখানে হুজুর বা পুরোহিতদের কোনো স্বার্থ নেই। আর সমাজে কিছু আনুষ্ঠানিকতা তৈরি হয়েছে, এগুলোতে আপনারা আমাদের উপর নির্ভর করেন। এই আনুষ্ঠানিকতাগুলো কোনোটাই পুরোপুরি সুন্নাহনির্ভর নয়। কোনো ভালো কাজ শুরু করার আগে ভালো কাজের বরকতের জন্য নিজে দুআ করবেন। দরিদ্রদের খাওয়াবেন। কোনো আলেমকে ডেকে নামায পড়িয়ে নিতে পারেন। এটা সুন্নাতে পাওয়া যায়। এর বাইরে আমরা যা করি, এগুলো আনুষ্ঠানিকতা। এগুলো সুন্নাতে পাওয়া যায় না।

৮৬
প্রশ্ন-৮৩: বিশেষ কারণে বারো রাকআত বা যোলো রাকআত তারাবীহ আদায় জায়েয হবে কি না?
তারাবীহর নামায বিশ রাকআত আদায় করতে হয়। কেউ যদি বিশেষ কারণে বারো রাকআত বা যোলো রাকআত তারাবীহ আদায় করে এটা জায়েয হবে কি না?

উত্তর: আপনি সাধ্যমতো চেষ্টা করবেন। কিছু কমবেশি হলে কোনো সমস্যা নেই। এটা। সুন্নাত নামায। জামাআতে না পারলে ঘরে পড়বেন। পূর্ণ না পারলে কিছু পড়বেন, আল্লাহ কবুল করুন। আমীন।

৮৭
প্রশ্ন-৮৪: মানতের খাশির গোশত দিয়ে রোযাদারকে ইফতার করানো যাবে কি না?
উত্তর: শুরুতেই বলি, মানত না করা উচিত। সহীহ বুখারি, মুসলিম এবং অন্যান্য গ্রন্থের সহীহ হাদীস, আব্দুল্লাহ ইবন উমার রা. বলেছেন:

أن رسول الله صلى الله عليه وسلم نهى عن النذر، وقال : إنه لا يأتي بخي، إنما يستخرج به من البخيل

রাসুল সা, মানত করতে নিষেধ করতেন। তিনি বলতেন, মানত আসলে কৃপণদেরকে আল্লাহ বিপদে ফেলে মানতের মাধ্যমে কিছু বের করেন। উত্তম হল দান করা। কোনো বিপদ আপদে আপনি শর্তসাপেক্ষ মানত না করে আল্লাহর জন্য যা পারবেন দান করবেন। ছাগল-গরু জবাই করে গরিবদের খাওয়ান, টাকাপয়সা দেন, এটা হল উত্তম। দ্বিতীয় বিষয় হল, মানত যদি করে থাকেন সেটা একেবারে অসহায়, নিঃস্ব, দরিদ্রদের হক। এটা দিয়ে আপনি রোযাদার খাওয়াতে পারেন, সেটা অসহায়-নিঃস্ব রোযাদার। সাধারণ রোযাদারদের খাওয়ালে আপনার মানত আদায় হবে না। আপনিও গোনাহগার হবেন। রোযাদাররাও গোনাহগার হবে।

৮৮
প্রশ্ন-৮৫: আমি যদি বাসায় আমার মা, ছেলেমেয়ে, স্ত্রীকে নিয়ে তারাবীহ নামায পড়ি তাহলে কি আমার তারাবীহ নামায হবে?
উত্তর: পুরুষদের জন্য ইশার সালাত জামাআতে আদায় করা এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব বা অনেকের মতে ফরয দায়িত্ব। কাজেই আপনি এং সকল পুরুষ অত্যন্ত কঠিন অসুস্থ না হলে অবশ্যই ইশার সালাত মসজিদে জামাআতে আদায় করবেন। এরপরে বাড়িতে এসে যদি আপনি একা অথবা পরিবারের লোকদের নিয়ে জামাআতে তারাবীহ আদায় করেন, এটা ভালো। তবে সেক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের কাতার অবশ্যই ভিন্ন হতে হবে। একজন হলেও। আপনি সামনে দাঁড়াবেন। আপনার স্ত্রী পেছনে। যদি স্ত্রী, মেয়ে, মা থাকে তারা এক কাতারে দাঁড়াবেন। যদি ছেলে ও অন্যান্য পুরুষেরা থাকে- তারা এক কাতারে দাঁড়াবেন। কাতার পৃথক করে এভাবে আপনারা তারাবীহ জামাআতে পড়তে পারেন। এমনকি রাতের তাহাজ্জুদ এভাবে স্ত্রীকে নিয়ে, পরিবারকে নিয়ে জামাআতে পড়া যায়। (১০ সহীহ বুখারি-৬৬০৮, ৬৬৯২, ৬৬৯৩; সহীহ মুসলিম-১৬৩৯; সুনান আবু দাউদ-৩২৮৭; সুনান নাসায়ি-৩৮০১, ৩৮০২; সুনান ইবন মাজাহ-২১২)

৮৯
প্রশ্ন-৮৬: দোকান ভাড়া নেয়ার আগে যে জামানত আমরা দিয়ে থাকি সেই জামানতের টাকা কি যাকাতের হিসাবের ভেতর আসবে?
উত্তর: এটা সাধারণভাবে যিনি জামানত নিলেন, বিল্ডিঙের মালিক বা দোকনের মালিক, তার টাকার ভেতরে হিসাবটা যাবে। কারণ, টাকাটা তার মালিকানার ভেতর চলে গেছে। উনি ইচ্ছামতো খরচ করেন। যদি কখনো দোকান ফেরত হয়, উনি টাকাটা অন্য কারো কাছ থেকে নিয়ে ফেরত দেন, সাধারণত। এজন্য এই টাকার যাকাত দেবেন তিনি, যিনি গ্রহণ করেছেন বা দোকানের মালিক।

৯০
প্রশ্ন-৮৭: মহিলারা যখন ফরয সালাত আদায় করবেন তখন কি তাদের ইকামত দিতে হবে?
উত্তর: জি, না। সালাতের ইকামত মূলত জামাআতের জন্য। একা পড়লেও ইকামত দিতে হবে, এটাও হাদীসে এসেছে। তবে মহিলাদের জন্য ইকামতের কোনো কথা সুন্নাতে পাওয়া যায় না। মহিলারা ইকামত ছাড়াই সালাত আদায় করবেন।

৯১
প্রশ্ন-৮৮: নামাযের ভেতর দেখে দেখে কুরআন পড়া যায় কি না জানতে চাই।
উত্তর: সালাতের ভেতর কুরআন দেখে পড়া, এটা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এবং সাহাবিগণ কেউ কখনো করেন নি। আর কুরআন তো আল্লাহ মুখস্ত রাখার জন্যই নাযিল করেছেন। এজন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও সাহাবিগণ কেউ কখনো সালাতে কুরআন দেখে পড়েন নি। ফরয সালাতে না, অন্য সালাতেও না। তবে আয়েশা রা.এর একজন খাদেম ছিলেন যাকওয়ান নামে, তিনি মাঝে মাঝে রাতের তাহাজ্জুদে বা তারাবীহর নামাযে ইমামতি করতেন, পেছনে আয়েশা রা. ও অন্যান্য মহিলারা দাঁড়াতেন, তিনি কুরআন দেখে পড়তেন। এটা একজন সাহাবির ব্যক্তিগত ইজতিহাদ, এর মাধ্যমে কোনো কোনো ফকীহ বলেছেন, কিয়ামুল লাইল-রাতের নফল সালাতে কুরআন দেখে পড়া যাবে। তবে যেহেতু রাসূল (ﷺ) এবং সাহাবিরা কেউ এটা করেন নি এবং এটা ইসলামি মূল চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক। সর্বোপরি এটা অন্যান্য ধর্মের মানুষেরা করে, তারা তাদের ধর্মগ্রন্থ মুখস্ত রাখতে পারে না; এই জন্য যে প্রার্থনায় বাইবেল পড়তে হয় তারা দেখে দেখে পড়ে। আমাদের কুরআনের এই মহামুজিযাহ, পুরো কুরআন মুখস্ত রাখার যে মুজিযাহ, এটা আমরা কেন নষ্ট করব! এজন্য কুরআন দেখে পড়ার অভ্যাস মোটেও ঠিক নয়। আমাদের মুখস্ত পড়া উচিত।

৯২
প্রশ্ন-৮৯: মীলাদ তো ভালো কাজ। এটা নিয়ে এতো মতভেদ কেন?
মীলাদ মাহফিল নিয়ে অনেক মতভেদ দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এটাকে অবৈধ বলার কোনো কারণ দেখি না। কেননা এখানে নবীজির (ﷺ) গুণকীর্তণ বা তাঁর দুরুদ পাঠ করা হয়। আর ইয়া নবী সালামু আলাইকা’ যখন বলা হচ্ছে, তখন নবীজির সম্মানে দাঁড়ানো হচ্ছে। এটা তো ভালো কাজ। এটার ব্যাপারে কেন মতভেদ দেখা যাচ্ছে।

উত্তর: আপনি খুব ভালো বলেছেন। আসলে মূল সমস্যাটা আমরা এড়িয়ে চলি। যেমন, মনে করেন আপনার মসজিদে প্রতিদিন রাত দুটোর সময় আযান দিয়ে জামাআতের সাথে তাহাজ্জুদ পড়া হয়। একজন গিয়ে বলল, না না, এটা করবেন না, এটা ঠিক নয়। এটা ঠিক নয় মানে উনি তাহাজ্জুদ বিরোধী নন। এটা ঠিক নয় মানে উনি মসজিদে তাহাজ্জুদেরও বিরোধী নন। তিনি একটা নির্দিষ্ট পদ্ধতির বিরোধী। মীলাদ বা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্মের কথা বলা বা জন্মের আনন্দ প্রকাশ করা- এটা একটা সুন্দর ইবাদত। এটার একটা পদ্ধতি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও সাহাবিদের ছিল। সমস্যা হল পদ্ধতি নিয়ে। আপনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এবং সাহাবিদের পদ্ধতিতে যদি করেন, তাহলে কি সুন্দর হয় না ভাই! অথবা আপনি কি মনে করেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এবং সাহাবিরা যেভাবে করতেন ওটা এখন চলে না, আমাদেরকে নতুনভাবে করতে হবে! রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্মের সম্মান দেখানোর জন্য তিনি নিজে একটা পদ্ধতি আমাদের শিখিয়েছেন। সেটা হল সোমবার দিন রোযা রাখা। আর আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর দুরুদ ও সালাম যেভাবে পড়ি, সবই ভালো কাজ, কিন্তু পদ্ধতিটা সাহাবিরা করেন নি। তাঁরা সম্মানের সাথে বসে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জীবনী আলোচনা করতেন। যখন রাসূলুল্লাহর (ﷺ) এর নাম আসত, তখন দরুদ পড়তেন। এই যে নতুন পদ্ধতি আমরা বানিয়েছি, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, কোনো মুসলমান যদি দীনের ভেতরে নতুন কিছু বানায় আল্লাহ তাআলা সেটা কবুল করবেন না। তাহলে মীলাদের সমস্যা মূল মীলাদে নয়। মীলাদের যে পদ্ধতি আমরা বানিয়েছি এটা বাদ দিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এবং সাহাবিগণের পদ্ধতিতে আমরা মীলাদ পড়ব। যারা মীলাদের বিরোধিতা করেন আমাদের সমাজে, তাদের বক্তব্য এটাই বলে আমি মনে করি। তারা মীলাদের বিরোধিতা করেন না। পদ্ধতির বিরোধিতা করেন। আর যারা মিলাদ পড়ছেন তারাও মূলত একটা ভালো কাজ করছেন। যেমন একজন লোক রোযা রাখছেন অথবা তারাবীহ পড়ছেন। আমরা তার পদ্ধতিগত সমালোচনা করছি যে আপনার এই পদ্ধতিটা সুন্নাত মোতাবেক হচ্ছে না। আপনি সুন্নাহ মতো এটা আদায় করেন। আশা করি এটা বুঝতে পারছেন। আর বাকি বিস্তারিত বইপুস্তক পড়ে জানতে পারবেন।

৯৩
প্রশ্ন-৯০: তারাবীহর নামাযের মধ্যে সিজদার আয়াত এসেছে কিন্তু আয়াত না পড়েই সিজদা করেছি। এতে কি গোনাহ হয়েছে?
তারাবীহর নামাযের মধ্যে সিজদার আয়াত এসেছে কিন্তু আমি আয়াত না পড়েই সিজদা করেছি। এতে কি আমার গোনাহ হয়েছে।

উত্তর: সমস্যা তো একটু হয়েছে। আপনি একটা অতিরিক্ত সিজদা করেছেন যেটার কোনো দরকার ছিল না। সিজদার আয়াত পড়ার কারণেই সিজদা করতে হয়, পড়ার আবেগেই সেজদা করতে হয়। যেহেতু আপনি করে ফেলেছেন কিছু করার নেই। তবে আয়াতটা না পড়েই যদি আপনি চলে যান তাহলে কুরআনের পূর্ণ তিলাওয়াতটা হবে। অন্য সময় আপনি ওটা পড়বেন এবং সিজদাও করবেন।

৯৪
প্রশ্ন-৯১: বিতর নামাযের মধ্যে যে উল্টা তাকবীর দেয়া হয় এটা কতটুকু সঠিক?
উত্তর: কুনুতের আগে যে ‘আল্লাহু আকবার' বলে আমরা রুকুতে না গিয়ে উপরে হাত ওঠাই, এটাকে বাংলাদেশের মানুষ উল্টা তাকবীর বলে। কুনুতের আগে তাকবীর বলা এটা হযরত উমার রাসহ বিভিন্ন সাহাবি থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে। রাসূল (৪) রুকুর আগে বিতরের কুনুত পড়তেন, এটাও সহীহ প্রমাণিত এবং কুনুতের আগে তাকবীর আল্লাহু আকবার বলা, এটাও প্রমাণিত। তবে আল্লাহু আকবার বলার পরে হাত বাঁধব না কি মুনাজাতের মতো হাত তুলে দাঁড়াব, এ ব্যাপারে হাদীসে তেমন স্পষ্ট পাওয়া যায় না। কোনো সাহাবি মুনাজাতের মতো হাত তুলে কুনুত পড়তেন। তাবেয়িদের কেউ কেউ হাত বেঁধে ফেলতেন। তো এজন্য আল্লাহু আকবার বলাটা সহীহ সনদে প্রমাণিত। আপনি মুনাজাতের মতো হাত তুলে কুনুত পড়তে পারেন, আবার হাত বেঁধেও পড়তে পারেন।

৯৫
প্রশ্ন-৯২: আমার বাবা চান, কলেজে শিক্ষকতা করি। আমি যদি ইসলামি স্কুলে জয়েন করি আমার বাবার প্রতি অন্যায় করা হবে?
বাংলাদেশে ইসলামিক ইংলিশ মিডিয়াম অনেক স্কুল আছে। অমি (নারী) পড়াশোনা শেষ করে ওই ধরনের স্কুলে শিক্ষক হিসেবে জয়েন করতে চাই। তবে আমার বাবা চান, আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী আমি যেন অনার্স লেভেলের কলেজে শিক্ষকতা করি। যেহেতু জাগতিক বিচারে অনার্স লেভেলের শিক্ষকের মর্যাদা বেশি, তাই। তো আমি যদি ইসলামিক পরিবেশ আর ঈমানের দিক থেকে সহায়ক ইসলামি কোনো স্কুলে জয়েন করি তাহলে আমার মাবাবার প্রতি অন্যায় করা হবে কি না?

উত্তর: শুরুতে আমি আপনার বাবা-মার প্রতি অনুরোধ করব, মূলত দুনিয়াতে আমরা কী চাই? অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হওয়া। আর তো কিছু নয়! বাকি আমাদের হৃদয়ের শান্তি, সামাজিক শান্তি, পারিবারিক মর্যাদা- এটা তো আসল। আর এগুলো তখনই নিশ্চিত হয়, যখন আমরা দীন এবং ধর্মীয় মূল্যবোধগুলোকে সমুন্নত রাখতে পারি। পরিবারেও শান্তি হয়, আমাদের হৃদয়ও প্রশান্ত হয়। কাজেই অল্প কিছু টাকার ফারাকের চিন্তা না করে আমাদের আরো বেশি চিন্তা করতে হবে কীভাবে আমাদের দীন, বিবেক, মূল্যবোধ বজায় রেখে অন্তত মৃত্যু পর্যন্ত শান্তিতে থাকতে পারি এবং পরবর্তী জীবন সুন্দর করতে পারি। আপনার বাবা-মা যদি এমন কিছু বলেন, যেটা শরীআতের সাথে সাংঘর্ষিক, তাহলে সেটা মানা কোনো সন্তানের জন্য ফরয নয়। তবে এ জন্য বাবা-মার সাথে বেয়াদবি করা যাবে না। আপনি আপনার সিদ্ধান্ত নেবেন।

বাবা-মাকে আদবের সাথে বলবেন। ইনশাআল্লাহ বাবা-মা আস্তে আস্তে বুঝে যাবেন। তবে আপনি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, দীনি পরিবেশ সংরক্ষণ করে কর্ম করবেন, এটা অবশ্যই ঠিক করেছেন। এটা আপনার ঈমানের চাহিদা। এবং আমরাও আপনাকে এই পরামর্শই দিচ্ছি।

৯৬
প্রশ্ন-৯৩: যে আযান দিবে তাকেই কি ইকামত দিতে হবে?
উত্তর: একটা দুর্বল সনদের হাদীসে এসেছে

من أذن، فهو يقيم

যে আযান দেবে, সে ইকামত দেবে”। হাদীসটার সনদ দুর্বল। ফুকাহাগণ এটাকে মুস্তাহাব হিসেবে গ্রহণ করেছেন। যে আযান দেবে সে-ই যদি ইকামত দেয়, এটা উত্তম। তবে অন্য কেউ ইকামত দিলে কোন সমস্যা নেই। কেউ তাকে মাকরুহ বলেন নি। অনুচিতও বলেন নি এবং এর নযির আছে।

৯৭
প্রশ্ন-৯৪: রিংটোন হিসেবে কুরআন তিলাওয়াত দেয়া যাবে কি না?
উত্তর: কুরআনের কোনো কথা রিংটোন হিসেবে কোনো অবস্থাতেই ব্যবহার করা যাবে না। কারণ, এতে কুরআনের অবমাননা হয়। কুরআন পড়তে হয় মন দিয়ে শোনার জন্য অথবা অপরকে শোনানোর জন্য। তবে অন্যান্য ইসলামি কথা, গজল, দুআ অবশ্যই ব্যবহার করতে পারি।

৯৮
প্রশ্ন-৯৫: ডা. জাকির নায়েক যে পোশাক পরেন এটাকে কি ইসলামি পোশাক বলা যায়? বা ইসলামি পোশাক আসলে কোনটা?
উত্তর: প্রথমে একটা মূলনীতি আমাদের বুঝতে হবে। ইসলাম বিশ্বজনীন সর্বজনীন ধর্ম হিসেবে আমাদের কর্মকে দুইভাগে বিভক্ত করে। একটা ইবাদত। যেটা আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য আমরা করি। আরেকটা হল, যেটা জাগতিক কাজ। যেটা সকল ধর্মের মানুষ করে। বিশ্বাসী অবিশাসী সবাই করে। তো ইবাদত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পদ্ধতিতে হতেই হবে। আর পোশাক-আশাক, খাওয়া-দাওয়া, বাড়িঘর ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রশস্ততা রয়েছে। রাসূলুল্লাহর (ﷺ) নিজেই বলেছেন, তোমরা যা খুশি খাও, যা খুশি পান করো, যা খুশি পরো; তবে এই নির্ধারিত নিয়মের ভেতরে'। ইসলামি পোশাকের ভেতরে কয়েকটা পর্যায় রয়েছে। যে পোশাক রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পরতেন এটা হুবহু অনুসরণ করা ভালো। সাহাবিরা করেছেন। এটা কেউ করতে পারলে সোয়াব আছে। করলে গোনাহ নেই। দ্বিতীয় পর্যায়ে যে পোশাক পরলে প্রথম নজরেই আপনাকে মুত্তাকি মুসলিম হিসেবে চেনা যায়, এটা নিঃসন্দেহে উত্তম। তৃতীয় হল, যে পোশাক পরলে আপনাকে প্রথম নজরেই অমুসলিম অথবা কোনো পাপী গ্রুপের মনে হয়, এটা পরা নাজায়েজ। মাঝখানে যে পোশাকগুলো আছে, যেগুলো সবাই পরে, এগুলোর অধিকাংশই বৈধ। আমার নিজেরই লেখা একটা বই আছে পোশাকের ব্যাপারে, আপনারা দেখতে পারেন। আপনি জাকির নায়েকের পোশাকের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছেন, টাইয়ের ব্যাপারে অনেকের আপত্তি আছে, কেউ জায়েয বলেছেন। আর প্যান্ট এটা তো পায়জামার মতোই। বাকি শার্ট এটা বৈধ পোশাক। তবে এটাকে আমি ইসলামি বলব না। ইসলামসম্মত বলতে পারি।

৯৯
প্রশ্ন-৯৬: আমার ছোট ভাইয়ের বাচ্চা নিতে চাচ্ছি। এক্ষেত্রে এই বাচ্চার সাথে আমার স্ত্রীকে কি পর্দা করতে হবে?
আমার বিয়ের বয়স আট বছর। আমাদের বাচ্চা হচ্ছে না। তাই আমার ছোট ভাইয়ের বাচ্চা নিতে চাচ্ছি। এক্ষেত্রে এই বাচ্চার সাথে আমার স্ত্রীকে কি পর্দা করতে হবে?

উত্তর: সন্তান না হলে সন্তান নিতে পারেন। এর দুটো পর্যায় রয়েছে। যদি শিশু অবস্থায় নেন, সাধারণত সন্তান না হলে স্তনে দুধ আসে না, তারপরেও আধুনিক পদ্ধতিতে স্ত্রী যদি শিশুকে দুধ খাওয়ান তাহলে ওই সন্তান আপনার দুধসস্তানে পরিণত হবে। এক্ষেত্রে পর্দার কোনো প্রশ্ন থাকবে না। আর যদি এমনি লালনপালন করেন তাহলে ইসলামি শরীআতে সেটা আপনার ভাইয়েরই সন্তান থাকবে, উত্তরাধিকার ভাইয়ের থাকবে, আপনি শুধু পালন করেন এটার ছওয়াব আপনি পাবেন। তার ভরণপোষণ, খাওয়ানোর ছওয়াব পাবেন। আপনার উত্তরাধিকার সে পাবে না, আপনি যদি উইল করে না দেন।

১০০
প্রশ্ন-৯৭: টেলিভিশনে ইসলামি অনুষ্ঠানের ফাঁকে অনৈসলামিক বিজ্ঞাপন প্রচার কতটা যুক্তিযুক্ত?
উত্তর: আমরাও চাই না এই ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার হোক। আসলে একটা টিভি প্রোগ্রাম চালানোর জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। আমরা আশা করব টিভি কর্তৃপক্ষ আরো একটু ইসলামসম্মত করার চেষ্টা করবেন। তবে তাদের অর্থের প্রয়োজন। আমরা আপনাদের কাছে দুআ চাইব এবং আপনারাও সবাইকে বলবেন। যদি আমরা এমন স্পন্সর পেয়ে যাই, যারা বিজ্ঞাপন ছাড়া বা শরীআহসম্মত বিজ্ঞাপন দিয়ে এটা চালাতে পারেন, তাহলে টিভি কর্তৃপক্ষের তো কোনোই আপত্তি থাকার কথা না। আপনারা সবাই দুআ করেন, যেন এই ধরনের প্রোগ্রাম স্পন্সর করার মতো দীনদার মানুষ মিলে যায়।

১০১
প্রশ্ন-৯৮: স্বামী চাইলে স্ত্রীদের ভ্রু-প্লাক করা বৈধ হবে কি?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যারা ভ্রু বা শরীরের চুল টেনে তুলে ফেলে, তারা অভিশপ্ত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে বাড়াতে বলেছেন, স্বাভাবিকভাবে। তবে কৃত্রিম সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা, পশম তুলে ফেলা- এগুলো নিষেধ করেছেন। স্বামী এটা কেন চাইবেন! একটা নিষিদ্ধ কাজ স্বামী করতে বলবেন কেন! স্বামীর এটা উচিত নয়। স্বামী বললেও গোনাহের কাজ করা বৈধ নয়। স্বামী বললে, মুবাহ কাজ, যেখানে অপশন আছে, করা বৈধ। স্বাভাবিক পশম ভোলা যায় না। যদি এমন কোথাও পশম হয় যেটা অস্বাভাবিক, অবাঞ্চিত, সেটা তোলা যায়। কিন্তু চিকন চিকন করে তুলে ফেলা, এগুলো ইসলামসম্মত নয়।

১০২
প্রশ্ন-৯৯: আমরা বোরকা পরি, এতে হাত বের হয়ে থাকে। হাতের আঙটি পুরুষের ন্যরে পড়লে কি গোনাহ হবে?
উত্তর: হাদীসের আলোকে এটা বৈধ হবে বলেই মনে হয়। কারণ, রাসূলুল্লাহর (ﷺ) এর সামনে মহিলাদের হাতে মেহেদি না থাকলে আপত্তি করতেন। তার মানে মেহেদিসহ হাত খোলা থাকত। মেহেদি না থাকলে তিনি রাগ করতেন। বলতেন, তোমার হাত পুরুষের মতো কেন! আবার আঙটি পরা হাত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দেখেছেন। দেখে। আঙটির যাকাত দিতে বলেছেন। এটা আমরা হাদীসে পাই। এ জন্য আমরা আশা করি, এইটুকু সৌন্দর্য মেয়েরা বের করতে পারবেন। এতে গোনাহ হবে না। তবে ঢেকে রাখা ভালো।

১০৩
প্রশ্ন-১০০: আমরা হানাফি মাযহাবের মানুষেরা নামাযের ভেতর ডান দিকে এক সালাম ফিরিয়ে তারপর সাহু সিজদা করি। এটা ঠিক আছে কি না? বা এর নিয়মটা কী?
উত্তর: আসলে সাহু সিজদা বা ভুল হওয়ার কারণে সিজদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর হাদীসে বিভিন্নভাবে এসেছে। কখনো তিনি সালামের পরে সাজদা করেছেন। কখনো সালামের আগে সিজদা করে পরে সালাম করেছেন। এ জন্য, এক পদ্ধতি হল, আপনি আত্তাহিয়্যাতু পড়বেন, দুরুদ শরীফ পড়বেন, দুআ মাসুরা পড়বেন, সর্বশেষ দুটো সিজদা দিয়ে এরপর সালাম ফিরিয়ে দেবেন। এটা সহজ। দ্বিতীয় হল, আপনি আত্তাহিয়্যাতু পড়ে অথবা আরো কিছু পড়ে সালাম ফেরাবেন একদিকে বা দুই দিকে, এরপর সিজদা করবেন, আবারো আত্তাহিয়্যাতু পড়বেন, দুরুদ পড়ে সালাম ফিরিয়ে দেবেন। হাদীসের আলোকে বিভিন্ন পদ্ধতি পাওয়া যায়। আর মাযহাব বা ফিকহেও আমরা যদিও মনে করি এটাই বোধহয় হানাফি মাযহাব- একটু ভালো করে পড়লে আমরা দেখব আসলে মাযহাব এই রকম না। তারা বলেছেন এটা উত্তম, অন্যভাবে করা যেতে পারে। অধিকাংশ মাযহাবি বিষয়- যেটা নিয়ে আমরা বিতর্ক করি- এগুলো উত্তম অনুত্তমের প্রশ্ন। তারা বলেছেন, এটা আমাদের কাছে উত্তম মনে হয়, অন্য পদ্ধতিতে করলে কোনো সমস্যা নেই। কাজেই আমরা যেটা করি, একদিকে সালাম ফেরাননা, এই মর্মে কোনো হাদীস আমার নজরে পড়ে নি। (সহীহ হাদীস)

কিন্তু অনেক আছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সালামের পরে সিজদা করেছেন। এবং সিজদার পরে আবার আত্তাহিয়্যাতু পড়েছেন এরকমও হাদীসে এসেছে। এই জন্য সবমিলিয়ে বিভিন্ন পদ্ধতি বৈধ। আপনার কাছে যেটা সহজ হয় সেটা করবেন।

১০৪
প্রশ্ন-১০১: নবী নুরের তৈরি না মাটির তৈরি? এটা সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন উপকৃত হতাম।
নবী নুরের তৈরি না মাটির তৈরি, এটা নিয়ে আমাদের এলাকায় একটা গ্যাঞ্জাম হয়েছিল। এটা সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন উপকৃত হতাম।

উত্তম: এই বিতর্কটা তৈরিই করা হয়েছে আমাদেরকে আসল জায়গা থেকে সরিয়ে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কিসের তৈরি এটা কুরআন কারীমে কোথাও নেই। কোনো হাদীসে কোথাও নেই যে উনি নুরের তৈরি। তবে কুরআন কারীমে বারবার বলা হয়েছে তিনি মানুষ। আর মানুষ মাটির তৈরি এটা আমরা জানি। তো সর্বাবস্থায় রাসূলুল্লাহর (ﷺ) নুর, তাঁর ভেতরে হেদায়াতের নুর ছিল, নবুওয়াতের নুর ছিল- সবই ঠিক আছে। তাঁকে নুরের তৈরি বানালে কোনো মান বাড়বে এমন তো না! কারণ, ফেরেশতারা নুরের তৈরি ছিলেন, আদম আ. মাটির তৈরি ছিলেন। আদম আ.কে তাঁরা সেজদা করেছেন। নুরের তৈরি হলে মর্যাদা বাড়ে, এই চিন্তাটাই বিভ্রান্তিকর। আল্লাহ হেফাজত করেন।

১০৫
প্রশ্ন-১০২: মেয়েদের জন্য চাকরি করা জায়েয আছে কি না জানতে চাই।
উত্তর: সাধারণভাবে বলতে পারি, মেয়েদের জন্য চাকরি করা অবশ্যই বৈধ। তবে দুটো বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে। একটা হল, নারী প্রকৃতিকে বজায় রাখতে হবে। আরেকটা হল, দীনকে সংরক্ষণ করতে হবে। ইসলাম কর্ম করতে গিয়ে নারীকে পুরুষ হতে বলে না, পুরুষকে নারী হতে বলে না। কারণ, নারী পুরুষের প্রকৃতিগত ভিন্নতা সংরক্ষণের উপরে নির্ভর করে এই মানব সভ্যতার সংরক্ষণ। কাজেই যে কর্ম নারীকে পুরুষ করে তোলে বা পুরুষালি করে তোলে, তার নারী প্রকৃতি নষ্ট করে এই কর্ম ইসলাম উৎসাহ দেয় না। আপত্তি করে। আর পর্দা, শালীনতা বজায় রাখতে হবে। এই দুটো জিনিস বজায় রেখে নারী কর্ম করতে পারবেন। বৈধতা রয়েছে। তবে ইসলাম চায় যে পুরুষেরা কর্মের দায়িত্ব পালন করুক। নারীরা স্বাধীন থাকুক। প্রয়োজনে কর্ম করবে নইলে তাদের অর্থনৈতিক দায়ভার স্বামী বহন করবেন। এতে নারীদের জন্য ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সংরক্ষণ করা, প্রতিপালন করা, তাদের পেছনে সময় দেয়া অনেক সহজ হয়।

১০৬
প্রশ্ন-১০৩: রমাযান মাসে কবরবাসীর কবরের আযাব কি বন্ধ থাকে।
উত্তর: কোনো হাদীসে আমরা এ রকম পাচ্ছি না। রমাযান মাসে আল্লাহ গোনাহ মাফ করেন, রমাযান মাসে জীবিত-মৃত অগণিত মুসলিমকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন এগুলো সব সহীহ হাদীসে পাওয়া যায়। কিন্তু রমাযানে কবরের আযাব মাফ থাকে অথবা রমাযানে মৃত্যুবরণ করলে কবরের আযাব হয় না- এই রকম কোনো হাদীস নেই। তবে নেক আমলরত অবস্থায় মৃত্যু, এটা ভালো। যেমন একজন রোযা রাখা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন, ইবাদতের ভেতরে ছিলেন- এটা ভালো। তবে রমাযানে মৃত্যুবরণ করলে অথবা রমাযান মাসে কবরের আযাব হয় না, এই মর্মে কোনো সহীহ বা গ্রহণযোগ্য দুর্বল হাদীস আমাদের নজরে পড়ে নি।

১০৭
প্রশ্ন-১০৪: রমাযান মাসে যারা রোযা রাখে এবং ঠিকমতো তারাবীহ নামায পড়ে তাদেরকে কি আল্লাহ নিস্পাপ করে দেন?
রমাযান মাসে যারা রোযা রাখে এবং ঠিকমতো তারাবীহ নামায পড়ে তাদেরকে নাকি আল্লাহ নিস্পাপ করে দেন! এটা কি সবার জন্য প্রযোজ্য।

উত্তর: বিভিন্ন হাদীসে এসেছে যে, অমুক আমল করলে আল্লাহ গোনাহ মাফ করে দেন। এটার অর্থ এই নয় যে সকল গোনাহ। কিছু গোনাহ আছে যা সহজে মাফের যোগ্য। আর কিছু গোনাহ আছে, অন্যান্য হাদীসে সুস্পষ্ট বলা হয়েছে, তাওবা ছাড়া এগুলো মাফ হয় না। কিছু গোনাহ রয়েছে তাওবা করলেও মাফ হবে না। তাওবার শর্ত হিসেবে সংশ্লিষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। তাহলে পাপ আমরা কয়েক ক্যাটাগরির করতে পারি। মহা কবীরা গোনাহ, সেগুলো তাওবার মাধ্যমে মাফ হয়। সাধারণ ছোটখাটো গোনাহগুলো বিনা তাওবায় নেক আমলের মাধ্যমে মাফ হয়। আর মানুষের অধিকার সম্পর্কিত যে পাপ রয়েছে- খুন করেছেন, মানুষের টাকা কেড়ে নিয়েছেন, লুট করেছেন, চাঁদাবাজি করেছেন, যৌতুক নিয়েছেন, গীবত করেছেন, সম্মান নষ্ট করেছেন, মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন- এই গোনাহগুলো শুধু আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা চাইলেই মাফ হয় না। ক্ষমা চাওয়া এবং ক্ষমা পাওয়ার একটা শর্ত হল, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির হক ফিরিয়ে দিয়ে তার কাছ থেকে ক্ষমা নেয়া। কাজেই যখন আমরা বলি যে, রোযা রাখলে, তারাবীহ পড়লে অথবা কিয়ামুল লাইল করলে আল্লাহ গোনাহ মাফ করে দেন- এটার অর্থ সাধারণ মাফযোগ্য সগীরা গোনাহগুলো আল্লাহ মাফ করে দেন।

১০৮
প্রশ্ন-১০৫: রোযা রেখে কেউ যদি বদনাম করে তাহলে তার কী ধরনের গোনাহ হবে?
উত্তর: বদনাম বলতে গীবত। অনুপস্থিত ব্যক্তির বিষয়ে এমন কথা বলা, এমন অশালীন কটু মন্তব্য করা- যেটা সে জানলে কষ্ট পাবে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, গীবত হল কারো বিষয়ে তার অনুপস্থিতিতে এমন কিছু বলা যেটা তার কানে গেলে সে কষ্ট পাবে। যদিও সেটা সত্য হয়। এই গীবতকে আল্লাহ তাআলা কুরআন কারীমে মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া বলেছেন:

أيحب أحدكم أن يأكل لحم أخيه ميتا فگروه

তোমরা কি চাও মৃত ভাইয়ের গোশত খাবে? এটা ঘৃণ্য কাজ (সূরা হুজুরাত, আয়াত ১২) । ঠিক তেমনি গীবত করা, অনুপস্থিত ব্যক্তির বদনাম করা, এটা মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া। এখন আপনি কল্পনা করেন, হালাল টাকা দিয়ে হালাল গরু জবাই করে ঘরে রান্না করে রেখেছেন। রোযার চেতনায় আপনি ক্ষুধার্ত হওয়া সত্ত্বেও খাচ্ছেন। কিন্তু আপনি মরা ভাইয়ের গোশত খাচ্ছেন। এটা কত ঘৃণ্য কাজ! এজন্য গীবত করলে রোযার যে স্পিচুয়ালিটি, ছওয়াব, সব নষ্ট হয়ে যায়। তবে যেহেতু তিনি পানাহার থেকে এবং কামাচার থেকে বিরত থেকেছেন তাই ফরটা আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু ছওয়াব এবং সকল রকমের বরকত থেকে তিনি বঞ্চিত হবেন।

১০৯
প্রশ্ন-১০৬: তারাবীহর নামাযের প্রতি চার রাকআতের পর যে দুআটা পড়া হয়, সেটা নাকি ঠিক নয়?
আপনি অন্য এক জায়গায় বলেছিলেন, তারাবীহর নামাযের প্রতি চার রাকআতের পর যে দুআটা পড়া হয়, সেটা নাকি ঠিক নয়। কিন্তু সবাই তো এই দুআটা পড়ে। এখন আমি যদি না পড়ি তাহলে কি আমার গোনাহ হবে?

উত্তর: আমরা সব জায়গায়ই ফাকি দিচ্ছি। সাহাবিদের শেষ যুগে, তাবেয়িদের যুগে তারাবীহ পড় হতো ইশারা পর থেকে অর্থাৎ রাত আটটা ন'টা থেকে সাহরি পর্যন্ত। তাঁদের চার রাকআত সালাত আদায় করতে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় লেগে যেত। এ জন্য চার রাকআত পড়ে একটু শ্রিাম করতেন। এই বিশ্রামের সময় কোনো দুআ নেই। কারণ, বিশ্রাম তো রাসূলের (ﷺ) যুগে ছিলই না। কাজেই দুআ আসবে কী করে! সাহাবিরাও কোনো দুআ করতেন না এবং কোনো ফিকহের কিতাবেও দুআ লেখা নেই। আমরা যে দুআগুলো পড়ি, এগুলো অনেক পরের মানুষেরা বানিয়েছেন। মাসনুন কোনো দুআই না এগুলো। তাই এই সময় যদি বিশ্রাম করা হয়, আপনারা দুরুদ শরীফ পড়েন, তাসবীহ তাহলীল করেন, কুরআন তিলাওয়াত করেন, সূরা ইখলাস পড়েন। সহীহ হাদীস- মুসনাদে আহমাদের হাদীস- কেউ যদি দশ বার সূরা ইখলাস পড়ে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে একটা বাড়ি বানিয়ে রাখবেন। কাজেই ইমাম সাহেব যদি শ্রিাম করেনই, আপনি দশ বার সূরা ইখলাস পড়েন। এটা বরং সুন্নাহসম্মত একটা নেক আমল। যদিও তারাবীহর এই সময় এটা পড়তে হবে, এটা নির্ধারিত নয়। তবে একটা ভালো নেক আমল।

১১০
প্রশ্ন-১০৭: চাকরি শেষে টাকা পেয়ে ইসলামী ব্যাংকে রেখেছেন। ইসলামী ব্যাংক মাসে মাসে যে টাকা দেয়, ওটা কি হালাল?
আমার বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রাইমারি শিক্ষক। চাকরি শেষে উনি যে টাকা পেয়েছেন, ইসলামী ব্যাংকে রেখেছেন। ইসলামী ব্যাংক মাসে মাসে যে টাকা দেয়, ওটা কি আমরা পারিবারিক কাজে ব্যবহার করতে পারব?

উত্তর: প্রথমেই আপনাকে বলব, আপনি আপনার বৃদ্ধ পিতার টাকা দিয়ে সংসার চালাবেন, আপনারা কী করলেন? ইসলাম বৃদ্ধ পিতামাতাকে খাওয়ানো সন্তানের উপর ফরয করেছে। পিতামাতার যাবতীয় খরচ আপনাদের উপর ফরয। কাজেই পিতার টাকা দিয়ে কেন আপনি সংসার চালাবেন। আপনারা আয় করে পিতামাতাকে খাওয়াবেন এটাই তো সন্তানের গৌরব। দ্বিতীয় কথা হল, ব্যাংকব্যবস্থা সুদভিত্তিক।

তবে ইসলামি ব্যাংকিং যারা চালু করেছেন, তাদের যে ব্যবস্থাপনা-মূলনীতি এটা শরীআহভিত্তিক। তারা প্রচলিত আইনের ভেতরে থেকেই সুদকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন। কাগজে কলমে এগুলো ঠিক আছে। কাজেই যারা বাধ্য হন, তারা ইসলামী ব্যাংকের সাথে লেনদেন করতে পারেন, লভ্যাংশ ব্যবহার করতে পারেন। তবে এর দ্বারা প্রচলিত ইসলামি ব্যাংকিংকে আমরা যোলো আনা পারফেক্ট বলতে পারব না। তাদের নিজেদের লেনদেনে ভুল আছে। তবে এই ভুলের জন্য সাধারণ গ্রাহক, বিশেষ করে যারা রিটায়ার্ডমেন্টে গিয়েছেন, টাকা রাখার কোনো জায়গা নেই, তারা দায়ি হবেন। হালালের ভেতরে থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। আমি একজন চাল ব্যবসায়ীকে টাকা দিতে পারি। হিরোইন ব্যবসায়ীকে টাকা দিতে পারি না। চাল ব্যবসায়ী যদি ওজনে কম দেন আর আমি যদি না জানি, বা জেনেও কিছু করার না থাকে, ইনশাআল্লাহ আমি দায়ি হব না। কাজেই এই ধরনের ব্যাংক, যারা ইসলামি শরীআত মানার চেষ্টা করেন, মোটামুটি প্রমাণিত, সুদকে এ্যাভয়েড করছেন, তাদের সাথে লেনদেন করতে পারি। তাদের দেয়া লভ্যাংশ আমরা নিতে পারি ইনশাআল্লাহ।

১১১
প্রশ্ন-১০৮: টেস্টটিউব বেবির ব্যাপারে ইসলাম কী বলে?
উত্তর: মায়ের গর্ভধারণে জটিলতা থাকলে টেস্টটিউব ব্যবহার বৈধ। এটা বর্তমান যুগের সকল আলেম বৈধ বলেছেন। তবে যদি এমন হয়, পিতামাতা ভিন্ন, অন্য কারোর শুক্রাণু ডিম্বাণু গ্রহণ করতে হয়; এটা বৈধ নয়। পিতা এবং মাতার শুক্রাণু ডিম্বাণু এটা টেস্টটিউবে রেখে পরে মায়ের গর্ভে রাখলে এটা বৈধ। এক্ষেত্রে পিতৃত্বের পরিচয় মাতৃত্বের পরিচয় সবই ঠিক থাকে। শুধু গর্ভধারণের জন্য একটা পর্যায় পর্যন্ত প্রযুক্তির সহায়তা নেয়া হয়। কিন্তু অন্যের শুক্রাণু কিংবা অন্যের ডিম্বাণু বা অন্যের জরায়ু ব্যবহার শরীআতে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, হারাম। এতে জন্ম নিয়ে ছেলেখেলা করা হয়। পিতৃপরিচয় এবং রক্তের সম্পর্ক সবই নষ্ট হয়ে যায়।

১১২
প্রশ্ন-১০৯: আমি সাহরির সময় জাগতে না পারায় রোযা রাখি নি। এক্ষেত্রে আমার করণীয় কী?
উত্তর: আপনি কাজটা খুবই অন্যায় করেছেন। আমাদের ধারণা- সাহরি না খেলে রোযা হয়। এটা একেবারেই ভুল ধারণা। আবার তারাবীহ না পড়লে রোযা হয় না। এটাও ভুল কথা। সাহরি খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা ইবাদত। ছওয়াবের কাজ। কেউ যদি মনে করে সাহরি না খেলে রোযা বেশি ভালো হয়, এটা পাপ। কিন্তু কোনো কারণে সাহরি খেতে পারেন নি, এর জন্য রোযার কোনো ক্ষতি নেই। আপনি যে কাজটা করেছেন, খুবই অন্যায় করেছেন। তাওবা করবেন। একটা রোযা আপনি কাযা করবেন। এর বেশি আর কিছু করা লাগবে না। তবে ভবিষ্যতে যেন আমরা এমন কিছু না করি।

১১৩
প্রশ্ন-১১০: বামদিক থেকে ইকামত দেয়া বৈধ নয়?
আমরা একটা বাসায় ওয়াক্তিয়া নামায পড়ি। তো মাঝে মাঝে বামদিক থেকে ইকামত দেয়া হয়। একজন বলছে, বামদিক থেকে ইকামত দেয়া বৈধ নয়। এটা কতটুকু সঠিক?

উত্তর: এটা কুসংস্কার। জ্ঞানের অভাব। সবচে’ দুঃখজনক আমরা না জেনে আন্দাজে অনেক মাসআলা বলি। বিষয় হল, যিনি ইকামত দিচ্ছেন, তিনি ডানে-বামে-পেছনে যে কোনো দিক থেকে ইকামত দিতে পারেন। ইসলামে এর কোনো নির্দিষ্ট নির্দেশনা নেই যে, যিনি ইকামত দেবেন তাকে ইমামের ডানেই থাকতে হবে বা বামেই থাকতে হবে অথবা পিছনে সরাসরি থাকতে হবে বা দুই কাতার পিছনে হলে অসুবিধা হবে- এমন কোনো নির্ধারণ নেই।

১১৪
প্রশ্ন-১১১: নামাযে নাকি নিয়তের দরকার নেই। তাহলে কি আমরা নিয়ত ছাড়াই নামায রোযা করতে পারব?
এখনকার আলেমগণ বলে থাকেন, নামাযে নাকি নিয়তের দরকার নেই। তাহলে কি আমরা নিয়ত ছাড়াই নামায রোযা করতে পারব?

উত্তর: এখানে একটা ভুল আছে। নিয়ত করতেই হবে। নিয়ত করা ফরয। কিন্তু নিয়ত পড়তে হয় না। নিয়ত মানে মনের উদ্দেশ্য। আপনি সাহরির সময় ঘুম থেকে উঠেছেন অথবা রাত্রে ঘুমানোর সময় মনে মনে ভেবেছেন যে, সকালে রোযা রাখব। এটার নাম নিয়ত। এই যে রোযার সময় আমরা নিয়তটা পড়ি।

نويت أن أصوم غدا من شهر رمضان المبارك

এই নিয়তে কারো রোযা হয় না। কারণ হল, আমি নিয়ত করছি, আগামীকাল রোযা রাখব। তাহলে আজকের রোযার নিয়ত আপনি করেন নি। আর রাতের ভেতরে রোযার নিয়ত না করলে সেই রোযা হয় না। আর আগামীকালের জন্য যে রোযার নিয়ত করলেন ওটাও কার্যকর হবে না, কারণ আগামীকাল রাত আসার আগেই আপনি নিয়ত করে ফেলেছেন। এ জন্য এই নিয়ত দ্বারা কারোরই রোযা হয় না। তবে আলহামদু লিল্লাহ, আপনার মনের ভেতরে যে নিয়তটা আছে যে, আজকে রোযা রাখব, ওতেই হবে। এ জন্য নিয়ত করতে হবে। মনের ভেতর আপনার উদ্দেশ্য থাকবে। আর নিয়ত করা না করার পার্থক্য আপনি সাঁকো পার হতে গিয়ে যদি পানিতে পড়ে যান, তাহলে আপনি বিনা নিয়তে পানিতে পড়েছেন। বিনা নিয়তে গোসল করে ফেলেছেন। আর যদি গোসলের নিয়তে আপনি ঘাটে গিয়ে ঝাপ দেন, তাহলে আপনি নিয়তসহ গোসল করেছেন। এইটা হল পার্থক্য।

১১৫
প্রশ্ন-১১২; মেয়েদের জন্য তারাবীহর জামাআতে শরিক হওয়া বৈধ কি না জানতে চাই।
উত্তরঃ প্রথমেই আপনাদের অবগতির জন্য জানাই- তারাবীহর জামাআত শুরুই হয়েছে মহিলাদের দিয়ে। তারাবীহ মাসনুন নফল নামায। মূলত এই নামাযে জামাআত বৈধ না। শুধু জামাআত বৈধ হয়েছে কুরআন শোনার জন্য। আর কুরআন শোনার আবেগ, প্রয়োজন, অধিকার পুরুষদের মতো নারীদেরও একই। রাসূলুল্লাহ সা, তিনদিন জামাআতে তারাবীহ আদায় করেন। এটা হাদীসেই এসেছে স্পষ্ট- তিনি তার স্ত্রী ও মেয়েরেকে জামাআতে শরিক হতে বলেন। অন্য একটা হাদীস, সনদগত কিছু বিতর্ক আছে, উবাই বিন কাব রা. বাড়িতে মেয়েদের নিয়ে জামাআতে তারাবীহ পড়েন। উমার রা. যখন তারাবীহর জামাআত শুরু করলেন মসজিদে, মেয়েদের জন্য আলাদা, পুরুষদের জন্য আলাদা জামাআতের ব্যবস্থা করলেন। মেয়েদের জন্য একজন ইমাম আলাদা, পুরুষদের জন্য ইমাম আলাদা করে দিলেন। পরবর্তীতে উসমান রা. এবং আলি রা.এর যুগে এক জামাআতে, পেছনে, মেয়েরা নামায পড়তেন। কাজেই জামাআতে তারাবীহ পড়ার অধিকার মেয়েদেরও সমান। এ জন্য মেয়েদের যদি সুযোগ থাকে, মসজিদে পর্দার সাথে পৃথকভাবে জামাআতে আসতে পারেন, আলহামদুলিল্লাহ। নইলে নিজেদের বাড়িতে, খানকায়, বৈঠকখানায় তারা জামাআতে তারাবীহ পড়তে পারেন। ইমাম সাহেব কয়েকজন পুরুষকে নিয়ে পর্দা দিয়ে সামনে দাঁড়াবেন- এটা খুবই ভালো। আপত্তি যারা করেন তারা বস্তুত হাদীসও জানেন না, ফিকহও জানেন না হয়তো। আল্লাহ সর্বজ্ঞ। কোনো মাযহাবেও এটা আপত্তি করা হয় নি।

১১৬
প্রশ্ন-১১৩: তাযীমি বা সম্মানের সিজদা- এটা কুরআনে কি কোথাও আছে?
উত্তর: তাযীমি সিজদা রাসূলুল্লাহর (ﷺ) কঠিনভাবে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ কুরআনে নিষেধ করেছেন। তাযীমি সিজদা আগের যামানার উম্মতের ভেতর কিছু কিছু ছিল। আর তাযীমি সিজদাটা কী? মানুষ পীর, ওলিদেরকে যে সিজদা দেয়- এটা শিরক। এটা তাযীমি সিজদা না। এটা প্রভুত্বের সিজদা। যে ব্যক্তি মাকে সিজদা করছে না, বাবাকে করছে না, পীর সাহেবকে করছে- এটা পুরোটাই শিরক। এটা ইবাদতের সিজদা। ওই পীর সাহেবের ভেতর রুবুবিয়্যাত বা আল্লাহ তাআলার সাথে তার কোনো সম্পর্ক আছে মনে করেই ব্যক্তি বা কবরকে সিজদা করছে। পূর্ববর্তী উম্মতদের ভেতরে, যারা বাইবেল পড়বেন তারা ব্যাপকভাবে পাবেন, কুরআনেও আছে, ইউসুফ আ.এর বাবা-মা এবং ভাইয়েরা তাঁকে সম্মানের সিজদা করেন। এখানে কোনো রুবুবিয়্যাত উলুহিয়্যাত না, ভাইকে তারা সিজদা করেছে, ছেলেকে করেছেন- এটা সম্মানের সিজদা। আল্লাহ কুরআনে এটা নিষেধ করেছেন।

وأن المساجد لله فلا تدعوا مع الله أحدا

কাজেই সিজদাটা, সিজদার কর্মটা, সিজদার স্থানটা আল্লাহর। আর কাউকে শরিক করো না। প্রায় ১৭/১৮ জন সাহাবি থেকে বর্ণনা পাওয়া যায়, মুতাওয়াতির হাদীসে এসেছে, সাহাবিরা যখন সিরিয়ায় গেলন, দেখলেন, সিরিয়ার খ্রিস্টানেরা তাদের পাদ্রিদের সিজদা করছে। সম্মানের সিজদা। তাঁরা এসে রাসূল (ﷺ) কে সিজদা করতে গেলেন। তিনি বললেন, না, খবরদার! কোনো মাখলুককে সিজদা করা যাবে না! তোমরা আমাকে সিজদা কোরো না। তাহলে রাসূলুল্লাহ (ছ) কে যদি সিজদা করা না যায়, তাহলে পীর বা ওলিকে কীভাবে সিজদা করা যায়। এটা সত্যিই দুঃখজনক।

১১৭
প্রশ্ন-১১৪: আমার মা-বাবা ইন্তেকাল করেছেন। তাঁদের পক্ষ থেকে ছওয়াবের নিয়তে আমি কুরবানি করতে পারব কি না?
উত্তর: জি, কুরবানি করা যাবে এটাই সহীহ কথা। এটার পক্ষে দুটো হাদীস আছে। একটা সহীহ। একটা দুর্বল। সহীহ হাদীসটা হল, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মদীনায় থাকতে প্রতি বছরেই একটা কুরবানি করতেন নিজের এবং নিজের পরিবারের পক্ষ থেকে। আরেকটা করতেন উম্মতের যারা কুরবানি দেয় নি তাদের পক্ষ থেকে। উম্মতের ভেতর যারা কুরবানি দেয় নি তাদের অনেকে মারা গেছেন, অনেকে জন্মগ্রহণ করেন নি। তাদের পক্ষ থেকে তিনি কুরবানি দিতেন। এতে বোঝা যায়, মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানি করা বৈধ। অন্য একটা হাদীস আছে, হাদীসটা দুর্বল, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ইন্তেকালের পরে আলি রা, তাঁর পক্ষ থেকে কুরবানি করতেন। তো সর্বাবস্থায় মৃত পিতামাতার পক্ষ থেকে কুরবানি করা বৈধ, ইনশাআল্লাহ। অধিকাংশ ফকীহ এই। ব্যাপারে একমত। আপনি সোয়াব পাবেন। তারাও সোয়াব পাবেন।

১১৮
প্রশ্ন-১১৫: ছোট বাচ্চার পেশাব লেগে যাওয়া কাপড় পরে নামায পড়া যাবে কি না?
উত্তর: যদি একেবারে দুগ্ধপোষ্য হয়, দুধ ছাড়া কিছুই না খায়, সেক্ষেত্রে ছেলে বাচ্চা মেয়ে বাচ্চার ব্যাপারে কিছুটা পার্থক্য হাদীসে পাওয়া যায়; মেয়ে বাচ্চা পেশাব করলে রাসূলুল্লাহর (ﷺ) পুরাটা ধুতেন আর ছেলে বাচ্চা হলে শুধু একটু পানি ঢেলে দিতেন। এটার অন্যান্য কারণের ভেতর একটা কারণ হল, মেয়েদের পেশাবের সাথে অনেক সময় পায়খানা চলে যাওয়ার ভয় থাকে। ডাক্তরর ভালো জানেন এটা। ছেলেদের ক্ষেত্রে এটা হয় না। তো সর্বাবস্থায় উভয়েরই পানি ঢালার কথা আসছে। এ জন্য আমাদের সতর্ক থাকা দরকার। অন্তত সালাতের জন্য ভিন্ন কাপড় রাখা উচিত।

১১৯
প্রশ্ন-১১৬: ওযু করে বাচ্চাকে বুকের দুধ পান করালে কি ওযু ভেঙে যাবে?
উত্তর: জি না। ওযু যাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। আমাদের সমাজে ওযু বিষয়ে অনেক কুসংস্কার আছে- মাথার কাপড় পড়ে গেলে ওযু ভাঙে, সতর দেখলে ওযু ভাঙে, পরপুরুষ দেখলে ওযু ভাঙে, গালি দিলে ওযু ভাঙে। অনেক বিষয় আছে যেগুলোতে গোনাহ হতে পারে- যেমন কেউ যদি উলঙ্গ হয়, অন্য মানুষে দেখে, গোনাহ হবে। কিন্তু ওযু ভাঙবে না। ওযু ভাঙার নির্দিষ্ট কারণ আছে। দুধ খাওয়ালে কখনোই ওযু ভাঙবে না।

১২০
প্রশ্ন-১১৭: আমার প্রাইভেট কারের উপর কি যাকাত দিতে হবে?
উত্তর: নিজের ব্যবহারের কোনো কিছুর জন্যই যাকাত দিতে হবে না। যে কারটা বিক্রয়ের জন্য আছে ওটার পুরো মূল্যের উপর যাকাত দিতে হবে। আর যে কারটা আমি ব্যবহার করি তার কোনো যাকাত দিতে হবে না। এমন অন্যান্য বিষয়েরও একই বিধান। যে ঘরে থাকি সেটার যাকাত দিতে হবে না। কিন্তু ফ্ল্যাট কিনে রেখেছি, দাম উঠলে বিক্রয় করব, ওটার পুরো দামের যাকাত দিতে হবে।

১২১
প্রশ্ন-১১৮: আমার দু'বছরের বাচ্চা আছে। তাকে পরিপূর্ণভাবে দুধ পান করানোর জন্য কি আমি রোযা ভাঙতে পারব?
উত্তর: শিশু যখন ছোট থাকে, অন্য খাবার খেতে পারে না, প্রথম ছ'মাস, এর ভেতরে মা যদি মনে করেন রোযা রাখলে দুধ কম পড়বে, উনি রোযা ভেঙে পরে কাযা করবেন। কিন্তু আপনার সন্তানের বয়স দুই বছর, প্রায় দেড় বছর যাবত সে অন্যান্য খাবার খাচ্ছে। দুধ এখন তার জন্য নফল, অপশনাল। এক্ষেত্রে মা রোযা ভাঙবেন না। রোযা রাখবেন।

১২২
প্রশ্ন-১১৯: বিবাহবার্ষিকী পালন করা জায়েয কি না জানতে চাই। এই দিনে ফকির খাওয়ানো যাবে কি না?
উত্তর: বিবাহের সময়ের আনন্দটা হল মূল আনন্দ। বিবাহবার্ষিকী পালন করার যে প্রচলন এটা সম্পূর্ণ অনৈসলামিক রীতি। বছর ঘুরে আসার অপেক্ষায় কেন আমরা থাকব! আমাদের জীবন তো প্রতিদিন নতুন হয়। প্রতিদিন আমরা বিবাহ পালন করব। প্রতিদিন দাম্পত্যের আনন্দ উপভোগ করব। এ জন্য বিবাহের সময় আনন্দ করবেন। কিন্তু বিবাহবার্ষিকী পালন করা এটা ইসলামি নির্দেশনা নয়। বরং ইসলামের বাইরের একটা কালচার আমাদের ভেতর ঢুকে গেছে। আপনারা মাঝে মাঝেই দরিদ্রদের খাওয়াবেন। বছরে একদিন কেন, প্রতি মাসে দুয়েকজনকে খাওয়াবেন যেন পারিবারিক জীবন সুখের হয়।

১২৩
প্রশ্ন-১২০: পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে মহিলাদের নামায রোযা বন্ধ থাকে। পরবর্তীতে এই নামায রোযা কাযা করা লাগবে?
পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে মহিলাদের নামায রোযা বন্ধ থাকে। পরবর্তীতে এইনামায রোযা কাযা করা লাগবে কি না জানতে চাই।

উত্তরঃ এই জাতীয় অসুস্থতার কারণে যে নামায চলে যায় সেটা আর পড়তে হয় না।

এই নামায একেবারেই মাফ। আর যে রোযা বাদ পড়ে যায়, এটা সুস্থ হওয়ার পরে সুযোগ মতো কাযা করতে হবে।

১২৪
প্রশ্ন-১২১: যাকাত আদায়ের টাকাটা চুরি হয়ে গেছে। এখন আমাকে কি আবার যাকাত দিতে?
আমি যাকাত আদায়ের জন্য নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা আলাদা করে রেখেছিলাম। কিন্তু টাকাটা চুরি হয়ে গেছে। এখন আমাকে কি আবার যাকাত দিতে?

উত্তর: জি। আপনাকে যাকাত দিতে হবে। যেটা চুরি হয়েছে ওটা আপনার ভাগ থেকে চুরি হয়েছে। আর দরিদ্রদের পাওনা আপনার অবশিষ্ট টাকার মধ্যে এখনো রয়ে গেছে। যাকাত দিতে হবে।

১২৫
প্রশ্ন-১২২: আউট সোর্সিং এর মাধ্যমে উপার্জিত টাকা হালাল হবে কি না দয়া করে জানাবেন।
উত্তর: এখানে দুটো বিষয় আমাদের লক্ষ রাখতে হবে। যে সময়টা আমি আউট সোর্সিং-এ কাটাচ্ছি, এটা কি আমার সময় না অন্যের সময়? অর্থাৎ যারা কোনো কাজে চুক্তিবদ্ধ, যে কোনো কাজ হোক, আপনি ৮ টা থেকে ৩ টা বা ৫ টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত একটা কোম্পানিতে চুক্তিবদ্ধ- এর ফাঁকে বসে যদি আপনি আউট সোর্সিং করেন, তাহলে এটা বৈধ নয়। এই সময়টা আপনি বিক্রি করে দিয়েছেন। এটা অন্য কাউকে দিতে পারবেন না। এক্ষেত্রে আমরা, মুসলিমরা অনেক অবহেলা করি। আমরা অফিসে বসে আছি, কুরআন পড়ছি, সেবাগ্রহীতা আসছে তাদের সেবা দিচ্ছি না, এটা কঠিন গোনাহের কাজ। কারণ আমি তো এই সময়টা বিক্রয় করে দিয়েছি সেবাগ্রহীতাদের সেবা দেয়ার জন্য। এর বিনিময়ে পয়সা নিচ্ছি। কাজেই আপনি যে সময় আউট সোর্সিং করবেন, এটা আপনার সময় হতে হবে। অন্যের কাছে বিক্রয় করা সময়ে আপনি এটা করতে পারবেন না। দ্বিতীয় হল, যে কাজটা আপনি করছেন এটা বৈধ হতে হবে। এমন কাজ যেন না হয়, যেটা ইসলামের ক্ষতি করে। মানবতার ক্ষতি করে। এই দুটো শর্ত পূরণ করলে ইনশাআল্লাহ আপনার আউট সোর্সিং বৈধ।

১২৬
প্রশ্ন-১২৩: কাফেরদের শাস্তিস্বরূপ তাদের নারীদের দাসী বানানো হত। বিবাহ ছাড়া কি দাসীদেরকে স্ত্রীর মতো ব্যবহার করা যাবে?
আমি জেনেছি যে ইসলামের প্রাথমিক যুগে কাফেরদের শাস্তিস্বরূপ তাদের নারীদের দাসী বানানো হত। বিবাহ ছাড়া কি দাসীদেরকে স্ত্রীর মতো ব্যবহার করা যাবে?

উত্তর: দাসী শব্দটা ঠিক দাসী নয়; ক্রীতদাসী। দাসব্যবস্থা প্রাচীন যুগ থেকেই ছিল। আরব দেশেও এটা ছিল। তঙ্কালীন অর্থব্যবস্থা দাসব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল ছিল। দাসরা ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি কাজগুলো কর। ইসলাম দাসব্যবস্থাকে সংকুচিত করে। দাসীকে বিবাহ করার সুযোগ দেয়া হয়েছে মূলত তার মুক্তির জন্য। তার মুক্তির বিভিন্ন পদ্ধতির একটা পদ্ধতি হল বিবাহ। দাসীকে বিবাহ করার শর্ত অন্যান্য নারীর বিবাহের মতোই। তিনি স্বামীহীন হবেন, বিধবা হবেন, তার বিবাহের অন্য কোনো বাধা থাকবে না। এই রকম দাসীকে ক্রয়চুক্তির মাধ্যমে স্ত্রী হিসেবে স্বামী ব্যবহার করতে পারবেন। এর কারণে ওই দাসীর যখন সন্তান হবে, তিনি আজীবনের জন্য মুক্ত হয়ে যাবেন। আর তাকে বিক্রি করা যাবে না। এটা দাস মুক্তির একটা পদ্ধতি। এটা ওই সময় যারা ক্রীতদাসী ছিল তাদের জন্য প্রযোজ্য। কোনো স্বাধীন মানুষকে বিক্রি করা, ক্রয় করা এটা সম্পূর্ণ হারাম। ইসলাম বিরোধী কাজ। অত্যন্ত শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

১২৭
প্রশ্ন-১২৪: নামাযের মধ্যে ঘুম আসে, উদাসীনতা তৈরি হয়। এই সময় আমরা কী করব? নামায ছেড়ে দেব?
নামাযের মধ্যে অনেক সময় আমাদের ঘুম আসে, উদাসীনতা তৈরি হয়। এই সময় আমরা কী করব? নামায ছেড়ে দেব?

উত্তর: এখানে দুটো বিষয়। ঘুম আসা আর অমনোযোগ। অমনোযোগের ব্যাপারে হাদীস আছে। এক সাহাবি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে এসে বলছেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, নামাযের মধ্যে মনোযোগ চলে যায়। কী করব? তিনি বললেন, এটা শয়তানের কাজ। শয়তান মনোেযোগ নষ্ট করে। তুমি সালাতরত অবস্থায় ‘আউযু বিল্লাহি মিনাশ শায়তনির রাজীম’ বলে বামদিকে থুতু ফেলার মতো করবে। এতে শয়তান চলে যাবে। এজন্য অন্যদিকে মন চলে গেলে এই আমলটা করতে পারেন। এতে মনোযোগ ফিরে আসবে। আর মনোযোগের সবচে' বড় যে বিষয় হল, আমরা সালাত গতানুগতিকভাবে। পড়ব না। একই দুআ একই তাসবীহ, এটা পড়লে মনোযোগ আসবে না। সানা যেটা আমরা পড়ি, একেক সময় একেক সানা পড়বেন। সিজদার দুআ রুকুর দুআ, একেক সময় একেকটা পড়বেন। তাহলে মনোযোগ খুব ভালো থাকবে। এবং আল্লাহর সাথে কথা বলার চেতনা বেড়ে যাবে। আসলে আমরা সালাতে আল্লাহর সাথে কী কথা বলছি এটা বুঝতে হবে। প্রতিটি শব্দের অর্থ না হলেও অন্তত বাক্যের অর্থ শেখা, এটা অতি সহজ ব্যাপার। আমরা সালাতে যে দুআগুলো যিকিরিগুলো বলি, এর দ্বারা আমরা আল্লাহর সাথে কথা বলি। সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম, রাব্বিয়াল আ'লা- এই কথার দিকে যখন আমার মনোযোগ যাবে তখন আমার মনোেযোগ নষ্ট হবে না। বরং সালাতের পরে দেখবেন আপনার মনের দুশ্চিন্তা, হতাশা সব দূর হয়ে গেছে। আর দ্বিতীয়ত ক্লান্তির ব্যাপার। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নফল ইবাদতের ব্যাপারে বলেছেন:

دوا من الأعمال ما تطيقون، فإن الله لا يملك

তোমরা সাধ্যে কুলানোর মতো ইবাদত করো। যেটুকু আনন্দ উৎফুল্লতার সাথে করতে পারো সেটুকু করো। তোমরা ক্লান্ত না হলে আল্লাহ ক্লান্ত হন না। কাজেই আপনি যে সালাতের কথা বলছেন, এটা যদি ফরয সালাত হয়, তাহলে সময় মতো আদায় করতে হবে। ক্লান্তি দূর করে আদায় করতে হবে। আর যদি তাহাজ্জুদ নফল ইত্যাদি হয়, তাহলে আপনি উদ্দীপনার সাথে আদায় করার চেষ্টা করবেন। বেশি ক্লান্ত হলে ঘুমিয়ে পড়ে পরে উঠে ইবাদত করবেন। এরপরেও যদি সালাতে দাঁড়িয়ে ঘুম এসে যায়, তন্দ্রা লাগে আপনি এর ভেতরেই নিজের অনুভূতি ফিরিয়ে নিয়ে ইবাদত করতে পারেন। বিশ মিনিট আধা ঘণ্টার ইবাদতে আপনার দুচার মিনিট মনোযোগ নষ্ট হতে পারে, এ জন্য দুশ্চিন্তা করবেন না। (সহীহ বুখারি-৫৮৬১; মুসলিম-৭৮৫)

১২৮
প্রশ্ন-১২৫: নামযের ভেতর যদি আবেগে কান্না আসে, সশব্দে কাঁদলে নামাযের কোনো ক্ষতি হবে কি না?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজেও সালাতে কাদতেন। তাহাজ্জুদের সালাতে এমনভাবে কাঁদতেন, কান্নার শব্দকে মনে হত রান্নার হাঁড়ি গড়গড় শব্দ করছে। তবে শব্দ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। চোখে পানি আসবে, তিলাওয়াত না করতে পারলে থেমে যেতে হবে। চিঙ্কার করা বা শব্দ করা এটা ঠিক নয়।

১২৯
প্রশ্ন-১২৬: ওষুধের মাধ্যমে রমাযান মাসে পিরিয়ড বন্ধ রেখে রোযা রাখা জায়েয হবে কি না জানাবেন।
উত্তর: কেউ যদি ওষুধ খেয়ে তার সুস্থতা জারি রাখেন এবং রামাযানের সব রোযা রাখেন তাহলে তার রোযা হয়ে যাবে। এই রোযা আর কাযা করতে হবে না। তবে এই ধরনের ওষুধ ব্যবহারের আগে আপনারা চিকিত্সকের পরামর্শ নেবেন।

১৩০
প্রশ্ন-১২৭: কারো যদি কিছু স্বর্ণ থাকে এবং কিছু টাকা থাকে, উভয়কে একসাথে হিসাব করে যাকাত দেয়া হবে?
কারো যদি কিছু স্বর্ণ থাকে এবং কিছু টাকা থাকে, উভয়কে একসাথে হিসাব করে যাকাত দেয়া সহীহ হবে কি না জানতে চাই।

উত্তর: জি, যদি স্বর্ণের নিসাব হয়, টাকার নিসাব হয় তাহলে উভয়কে একসাথে হিসাব করে যাকাত দেবেন। অথবা মনে করেন সোনা আছে পাঁচ ভরি আবার টাকা আছে দুলাখ, দুটোকে একসাথে মিলিয়ে নিসাব পূর্ণ করবেন। এটাই সঠিক এবং নিরাপদ মত। প্রত্যেক বিষয় আলাদা করারও একটা মত আছে। তবে সহীহ কথা হল আপনার কিছু সোনা, কিছু টাকা থাকলে একসাথে মিলিয়ে নিসাব হয়ে গেলে আপনি যাকাত দিয়ে দেবেন।

১৩১
প্রশ্ন-১২৮: আমি তামাক কোম্পানিতে চাকরি করি। আমার চাকরি হালাল হবে কি না?
উত্তর: তামাকের বৈধ ব্যবহার নেই। এর ব্যবহারটা অবৈধ। তামাকের মাধ্যমে যা উৎপন্ন করা হয় বা তৈরি করা হয়, প্রায় সকল আলেম একমত, এটা হারাম বা মাকরুহে তাহরীমি। কাজেই এটার সাথে সংশ্লিষ্ট থাকা, চাষ করা বা বিক্রয় করা প্রায় সকল আলেম, অল্পকিছু আলেম বাদে, সবার নিকট এটা অবৈধ।

১৩২
প্রশ্ন-১২৯: জামাআতের নামাযে ইমামের সুরা ফাতেহা পড়ার পরে উচ্চস্বরে আমীন বলা জায়েয কি না?
উত্তর: আমীন জোরে বলার সহীহ হাদীস রয়েছে। সাহাবিরা আমীন জোরে বলতেন। তাবেয়িরাও বলতেন। আবার আমীন আস্তে বলারও হাদীস আছে। সনদগতভাবে অত্যন্ত সহীহ হাদীস রয়েছে। তবে মুহাদ্দিসগ এটাকে শা বলেছেন। সর্বাবস্থায় আমীন বলাটা একটা মুস্তাহাব কাজ। আমীন না বললেও সালাতের কোনো ক্ষতি হবে না। আমীন জোরে বা আস্তে দুভাবেই বলা যেতে পারে। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, আমাদের আশেপাশের মুসল্লিদের যেন কষ্ট না হয়। যে মসজিদে সবাই আস্তে বলেন, আমি যদি এমন জোরে বলি যে, পাশের মুসল্লি ভয় পেয়ে যান, নামাযের মনোযোগ নষ্ট হয়, মোবাইলের রিঙটোন বাজার মতো একটা অসুবিধা হয় তাহলে এতে আমার সোয়াব হবে না, গোনাহ হবে। যদি জোরে বলাকে কেউ উত্তম মনে করেন, তাহলে সামান্য জোরে আমীন বলবেন, এটাই যথেষ্ট। উভয় কর্মেরই হাদীস আছে। হাদীসের গ্রহণযোগ্যতার বিচারে ফকীহগণ এবং মুহাদ্দিসগণের মতভেদ আছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা জোরে আমীন বলি অথবা আস্তে, উভয় ক্ষেত্রে আমরা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে চাচ্ছি। এমন যেন না হয়, অমুক আস্তে বলছে। আমি জোরে বলব। অথবা অমুক জোরে বলে তাই আমি জোরে বলব না। আবার এমনও হয়, কেউ জোরে বললে আমরা মনে করি মহাপাপ হয়ে গেল। মসজিদ থেকে তাকে আমরা বের করে দিচ্ছি। এটা খুব দুঃখজনক। যেটা সুন্নাতে আছে, সাহাবিরা করেছেন, এটা অথবা ওটা, আমরা দুটোর যেটাকেই ঘৃণা করি, প্রকারান্তরে রাসূলের হাদীসকে ঘৃণা করছি। সাহাবিদের কর্মকে ঘৃণা করছি। আমার অনুরোধ হল, আমাদের মসজিদে মহাপাপীরা নামায পড়ে, কিছুই বলি না। কিন্তু জোরে আমীন বললে রাগ করি। অথচ আমলটা সহীহ সুন্নাহসম্মত। আবার মসজিদের ভেতর নামায হচ্ছে না এমন পাপ করা হচ্ছে, যেটা হাদীসেই বলা হয়েছে নামায হবে না, রুকু সিজদা হচ্ছে না; তাদেরকে কিছু বলছি না। আমীন আস্তে বললে বলছি যে, তোমার। নামাযই হয় নি। এটা খুবই দুঃখজনক।

১৩৩
প্রশ্ন-১৩০: তারাবীহ নামাযের ভেতর দ্রুত কুরআন পড়ার বিধান কী?
তারাবীহ নামাযে হাফেয সাহেবরা খুব দ্রুত কুরআন পড়েন। মুসল্লিরা ভালো মতো শব্দগুলো বুঝতেও পারে না। নামাযের ভেতর এমন দ্রুত কুরআন পড়ার বিধান কী?

উত্তরঃ আমরা কুরআন খতম করি। খতম করার দুটো অর্থ আছে। একটা হল পূর্ণ করা। আরেকটা হল হত্যা করা। আমরা তারাবীহতে কুরআন হত্যা করি। তারাবীহ পড়া আমাদের জন্য সুন্নাহ ইবাদত। কুরআন শোনা সুন্নাতের একটা মুস্তাহাব ইবাদত। যতটুকু শুনব ততটুকুই আমি ছওয়াব পাব। প্রত্যেকটা অক্ষর, তার সিফাত, মাদ, গুন্নাহসহ শুনলে আমি শোনার ছওয়াব পাব। কিন্তু হাফেয সাহেব যদি দ্রুত পড়েন, অনেক অক্ষর স্পষ্ট হয় না, এমনকি অনেক শব্দও বোঝা যায় না; এমন হলে খতম তো হবেই না বরং গোনাহ হবে কুরআন বিকৃত করার কারণে। আর সহীহভাবে, সুন্দর করে কুরআন পড়ে তারাবীহ পড়তে সর্বোচ্চ ৬০ মিনিট লাগে। আর নষ্ট করে হত্যা করে পড়লে ৪০ মিনিট লাগে। এই ২০ মিনিটের জন্য আমরা কুরআনকে হত্যা না করি। যদি একান্তই সময় আপনার না থাকে, আপনি সূরা তারাবীহ পড়েন। অন্তত কুরআন ধ্বংস করবেন না।

১৩৪
প্রশ্ন-১৩১: আল্লাহ রোযার পুরস্কার নিজ হাতে দেবেন। তাহলে অন্যান্য নেক আমলের পুরস্কার কে দেবেন?
আমি আপনাদের আলোচনায় শুনেছি, পত্রিকায় পড়েছি, রোযার ব্যাপারে আল্লাহ পাক বলেছেন, রোযার পুরস্কার আমি নিজ হাতে দেব। তাহলে অন্যান্য নেক আমলের পুরস্কার কে দেবেন? ব্যাখ্যাসহ জানালে উপকৃত হব।

উত্তর: আসলে হাদীসটা আপনি আরবিতে পুরাটা পড়লে বুঝতে পারতেন। আল্লাহ তাআলা হাদীসে কুদসিতে এই কথার শুরুতে বলেছেন, প্রত্যেক কর্মের ছওয়াব আমি দশগুণ থেকে সাতশত গুণ দেব। কিন্তু রোযা আমার জন্য, আমি এর পুরস্কার দেব। এটার সংখ্যাটা বলেন নি। আপনি সহজে বুঝতে পারবেন, প্রত্যেকটা ইবাদত আমরা বললেও কেউ না কেউ টের পায়। কিন্তু আপনি সাহরি খেয়েছেন, ইফতার খেয়েছেন, মাঝখানে দিনের বেলা কোনো এক সময় কিছু খেয়ে নিয়েছেন অথবা পান করেছেন; এটা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। তার মানে আপনি শুধু আল্লাহর ভয়েই পানাহার থেকে বিরত থেকেছেন। আমি খুব সংক্ষেপে একটা দুঃখের ঘটনা বলি। আমি যখন সৌদি আরবে পড়তাম তখন আমার সাথে সিরিয়ান এক ভাই পড়তেন। অনার্স করে ওই ভাই সিরিয়ায় গিয়ে একটা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করতেন। সিরিয়াতে রাশিয়া এবং সেভিয়েত ইউনিয়নের ছেলেমেয়েরা বর্তমানে ইসলাম শিখতে আসে। আমার বন্ধু বললেন, কমিউনিস্ট শাসনের যুগে ওখানকার মুসলিমরা সালাত আদায় করতেন না। তিন-চার প্রজন্ম নামায পড়তেন না। কারণ, নামায পড়লে কমিউনিস্ট পার্টির মেম্বর হওয়া যায় না। কিন্তু তারা রোযা রাখতেন। কারণ রোযা তো কেউ দেখে না। নামায পড়লে কেউ না কেউ দেখে ফেলার ভয় আছে। কিন্তু রোযা তো কেউ দেখে না। এ জন্য রোযা এমন একটা ইবাদত, যেটা আপনি নষ্ট করলে আল্লাহ ছাড়া কেউ টের পাবে না। তাই এর পুরস্কার আল্লাহ নিজ হাতে দেবেন।

১৩৫
প্রশ্ন-১৩২: মসজিদে মোমবাতি দেয়া জায়েয আছে কি না?
উত্তর: আমার প্রশ্ন হল, কী প্রয়োজনে মোমবাতিটা দেব? যদি মসজিদ অন্ধকার হয়, বিদ্যুৎ না থাকে, এমন জায়গায় হয় যেখানে বিদ্যুতের কোনো ব্যবস্থা নেই- অবশ্যই মোমবাতি দেব। আল্লাহ তাআলা অকারণ ব্যয় ঘৃণা করেন। বিশেষ করে মসজিদ বা কোথাও মোমবাতি দিলে এর দ্বারা বিশেষ কোনো উপকার পাবেন এই চিন্তা কুসংস্কার অথবা শিরক। কল্যাণ হল মানুষের উপকার করায়, মানুষকে ভালো পথে নিয়ে যাওয়ায়। কাজেই যে মসজিদে আলো আছে সেখানে মোমবাতি দেয়াটাই তো অপচয়। মসজিদে তো আল্লাহর ইবাদত হয় সেখানে মোমবাতি লাগতে পারে। কিন্তু মাযারে বা করে মোমবাতি দেয়াকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) অভিশাপের কাজ বলেছেন।

لعن رسول الله صلى الله عليه وسلم ( و في رواية : لعن الله ) زائرات القبور والتخذين عليها الماجد والشرج

যে সমস্ত মহিলারা বারবার কবর যিয়ারত করে এবং নারী পুরুষ যারাই কবরে মোমবাতি দেয়, আলো জ্বালায় অথবা কবরের উপরে মসজিদ বানায় আল্লাহ তাআলা (আল্লাহর রাসূল) তাদেরকে লানত করেছেন। অভিশাপ করেছেন।

১৩৬
প্রশ্ন-১৩৩: রাসূল (ﷺ) জুমআর খুতবা থামিয়ে বললেন, তুমি দুই রাকআত নামায পড়ে নাও। এই নামায আসলে কিসের নামায?
বুখারি শরীফের বাংলা একটা হাদীসে আমি দেখেছি, রাসূল (ﷺ) একদিন জুমআর নামাযে খুতবা দিচ্ছিলেন, এমন সময় এক সাহাবি মসজিদে প্রবেশ করলেন। রাসূল (ﷺ) খুতবা থামিয়ে দিয়ে বললেন, তুমি কি দুই রাকআত নামায পড়েছ? যদি না পড়ে থাকো তাহলে দুই রাকআত নামায পড়ে নাও। আবার খুতবা শোনা তো ওয়াজিব। তো এই নামায আসলে কিসের নামায? আমরা এটা পড়ব কি না?

উত্তর: আপনি যে সালাতের কথা বলেছেন, এটা হল দুখুলুল মাসজিদ বা তাহিয়্যাতুল মাসজিদের সালাত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:

إذا دخل أحدكم المسجد، فلا يجلسن حتى يصلي ركعتيني

তোমরা কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে অন্তত দুই রাকআত সালাত না পড়ে বসবে না। এটা মসজিদের হক। আপনি যদি ঢুকে কোনো ফরয নামাযেও দাঁড়িয়ে যান তাহলেও মসজিদের হক আদায় হয়ে যাবে। কোনো সালাত না পড়ে বসলে মসজিদের হক নষ্ট করা হয়। যখন আরবিতে খুতবা চলে এই অবস্থায় সালাতের কী হবে- এই যে হাদীসটার কথা আপনি বলেছেন, এটা সহীহ হাদীস। এই হাদীস অনুযায়ী আরবি খুতবা বা যে কোনো সময় ঢুকলেই আমাদের দুই রাকআত সালাত পড়ে বসা উচিত। কিন্তু অন্য আরেকটা হাদীস আছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দেখলেন, এক ব্যক্তি মসজিদে ঢুকেছেন, তিনি মানুষদের মাথার উপর দিয়ে ডিঙিয়ে ডিঙিয়ে সামনে আসছেন, তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তুমি বসে পড়ো। তুমি দেরি করে এসেছ আবার মানুষকে কষ্ট দিচ্ছ। এখানে সালাত পড়ে বসতে বলেন নি। এমনি বসে যেতে বলেছেন। তো সব মিলিয়ে এক্ষেত্রে ফুকাহাদের মতভেদ আছে। আমরা যে কোনো হাদীসের উপর আমল করতে পারি। আল্লাহ তাওফীক দিন। (সহীহ ইবন হিন-৩১৭৯; নাসায়ি-৪/৯৪-৯৫; তিরমিযি-৩২০; ইবন মাযাহ-১৫৭৫ * সহীহ বুখারি-৪৪৪; মুসলিম-৭১৪)

১৩৭
প্রশ্ন-১৩৪: জুমআর নামায কত রাকআত?
উত্তর: জুমআর নামায দুই রাকআত আমরা জানি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আগে কিছু সালাত পড়তেন। কয় রাকআত পড়তেন ক্লিয়ার নেই। সাহাবিরা কেউ চার রাকআত পড়তেন; বেশি পড়তেন কম পড়তেন। জুমআর পরে রাসূলুল্লাহর (ﷺ) দুই রাকআত অথবা চার রাকআত- দুই রকমই পড়তেন। দুটোই সহীহ। তবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নফলগুলো, সুন্নাতগুলো ঘরে গিয়ে পড়তেন। এটাও সহীহ। আমরা ঘরে পড়তে পারি। কোনো কোনো সাহাবি মসজিদে পড়েছেন। ঘরে পড়া উত্তম, মসজিদে পড়া বৈধ।

১৩৮
প্রশ্ন-১৩৫: নন-মাহরামের সাথে (গাইরে মাহরাম) আচরণের সীমা কেমন হওয়া উচিত?
আমি জানতে চাচ্ছি, নন-মাহরামের সাথে (গাইরে মাহরাম) আচরণের সীমা কেমন হওয়া উচিত? বাসায় যদি নন-মাহরাম আসে বা রাস্তায় যদি পরিচিত নন মাহরামের সাথে দেখা হয়, তাহলে সালাম দিয়ে কুশল জিজ্ঞেস করা যাবে কি না? নন মাহরাম বাসায় আসলে সামনে গিয়ে তাকে খাবার খাওয়ানো বা একই টেবিলে খাওয়া যাবে কি না?

উত্তর: জি বোন, অনেক ধন্যবাদ আপনার এই সচেতনতার জন্য। মেয়েদের জন্য গাইরে মাহরামের সাথে কথা বলার অনুমতি আছে অতি সাধারণভাবে। কণ্ঠের ভেতর যেন কোনো রকম আকর্ষণীয়তা সৃষ্টি না হয়। আপনি কথা বলতে পারেন, কুশল বিনিময় উচিত নয়। দেখা হলে একান্ত প্রয়োজনে সালাম দেয়া যেতে পারে। সেটাও কথা বলার প্রয়োজনে। শুধু সালাম নয়। আর বাড়িতে কেউ গেলে আপনি পর্দার সাথে খাবার সার্ভ করতে পারেন। তবে এই দায়িত্ব পুরুষদের উপর দিয়ে দেয়া উচিত। আর এক টেবিলে খাওয়া এড়িয়ে চলবেন। আসলে বাড়াবাড়ির সংজ্ঞাটা কী- এটা হল কথা। আমরা যদি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে আমাদের সীমা ধরি, তাহলে বেগানাদের সাথে একই টেবিলে খাওয়া বর্জন করা, এটা বাড়াবাড়ি নয়, উচিত। আর যদি আমাদের মতামতকে সীমা ধরি, তাহলে তো একেক জনের কাছে একেক রকম বাড়াবাড়ি। কারো কাছে নামায পড়াটাই বাড়াবাড়ি।

১৩৯
প্রশ্ন-১৩৬: নামাযে হাত কোথায় বাঁধব? নাভির নিচে, নাভির মাঝখানে নাকি নাভির উপরে?
উত্তর: আমার উত্তর হল, হাতটা ঝুলিয়ে রেখেন। ঝগড়া করার চেয়ে হাত ঝুলিয়ে রেখে সালাত আদায় করলে আদায় হয়ে যাবে, কোনো সমস্যা নেই। দুর্ভাগ্য যে আমরা ছোটছোট বিষয়কে অনেক বড় বানিয়ে ফেলেছি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে ১২/১৩ টা সহীহ হাদীস এসেছে, তিনি বলেছেন, সালাতের ভেতরে ডান হাতটাকে বাম হাতের উপরে রাখবে। কোথাও কজির উপরে কজি, কোথাও বাহুর উপরে হাত। এরপরে আসে হাতটা আমি কোথায় রাখব? বিশ্বাস করেন, আমি যতটুকু পড়াশেনা করেছি, এ বিষয়ে একটা হাদীসও সহীহ নয়। কোনো হাদীস নাভির নিচে আছে, এটা দুর্বল। কোনো হাদীসে বুকের উপর এসেছে এটাও দুর্বল, মুরসাল হাদীস। তো সব মিলিয়ে আপনি যেখানে হাত রাখলে সুবিধা পাবেন, স্বস্তি পাবেন, রাখবেন। ইনশাআল্লাহ সুন্নাত যোলো আনা আদায় হবে।

১৪০
প্রশ্ন-১৩৭: পারফিউম ব্যবহার করে নামায পড়া যাবে কি না?
উত্তর: পারফিউমে অ্যালকোহল থাকে তাই আমরা অনেক সময় মনে করি, অ্যালকোহল মানেই তো মদ। কাজেই এটা বোধহয় নাপাক। আসলে অ্যালকোহল একটা কেমিকেল টার্ম। অ্যালকোহল অর্থই মদ নয়। যে অ্যালকোহল পান করলে মানুষ মাতাল হয়, এটা শুধু মদ। অধিকাংশ অ্যালকোহলই মাদক নয়। বরং বিষাক্ত। খেলে মাতাল হবে না বরং মানুষ মারা যাবে। যেমন ডেটল ইত্যাদি দিয়ে আমরা হাত ধুই- এটাও অ্যালকোহল। অ্যালকোহল নাপাক নয়। শুধুমাত্র মদ, যেটা আঙুর বা খেজুর দিয়ে তৈরি, যার মধ্যে মাদকতা আছে- এই রকম হলে সেটা হারাম বা নাপাক হতে পারে। এ জন্য সাধারণ পারফিউম ব্যবহার করে সালাত আদায় করাতে কোনো সমস্যা নেই। (অবশ্য মহিলারা। পারফিউম ব্যবহার করে মসজিদে জামাআতে যাবে না।)

১৪১
প্রশ্ন-১৩৮: সুস্থ সক্ষম ব্যক্তি বসে নামায পড়লে সমস্যা আছে কি না?
উত্তর: ফরয সালাত দাঁড়িয়ে পড়া ফরয। যে ব্যক্তি দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন, অন্তত সালাত আদায় করার এই ২/৩ মিনিট সময় তিনি বসে ফরয সালাত আদায় করলে সালাত হবেই না। আর নফল সালাত বসে পড়লে হবে। তবে ছওয়াব কম হবে।

১৪২
প্রশ্ন-১৩৯: রাসূল (ﷺ) কি হাজির-নাজির?
অনেক আলেম বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) হাজির-নাজির। আবার কেউ কেউ বলেন, না, হাজির-নাজির নয়। কোনটা সঠিক?

উত্তর: আসলে আমরা কোন ইসলাম চাই? মুহাম্মাদ (ﷺ) যেটা দিয়ে গেছেন ওটাতে আমরা পরিতৃপ্ত নাকি আমাদের আরো কিছু বাড়িয়ে নেয়ার দরকার আছে- এটার উপর নির্ভর করবে আমাদের উত্তর। হাজির এবং নাজির দুটোই আরবি শব্দ। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ক্ষেত্রে এই দুটো বিশেষণ কুরআন বা হাদীসে কোথাও প্রয়োগ করা হয় নি। আমরা চার ইমামের অনুসরণের কথা বলি, বুযুর্গদের কথা বলি, আব্দুল কাদের জিলানির কথা বলি; তারা কেউ কখনো এই দুটো শব্দ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর উপর প্রয়োগ করেন নি। তাহলে আমার কেন করব! আমরা কি তাদের চেয়েও আল্লাহর বেশি প্রিয় হতে চাই? দ্বিতীয়ত হাজির-নাজির মানে হল যিনি সর্বত্র বিরাজমান এবং যিনি সবকিছু দেখেন। এই ধরনের বিশেষণ শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলার জন্য প্রযোজ্য।

وهو من أين ما كنتماد

কাজেই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে আল্লাহর বিশেষণ দিয়ে তাঁকে রব বানিয়ে আমাদের কী লাভ! আল্লাহ তাআলা কি তাঁর রুবুবিয়্যাত নষ্ট করে ফেলেছেন! তৃতীয়ত মুহাম্মাদ (ﷺ) কে এই গুণ দিলে তাঁর মর্যাদা কি বাড়ে? তিনি সারা জীবন কষ্ট করেছেন। দাওয়াত দিয়েছেন। ওফাতের পরে তিনি আল্লাহর দীদারে আছেন। উম্মত সালাম ও দুরুদ পড়লে ফেরেশতারা পৌঁছে দেন। তিনি কেন উম্মতের সবকিছু দেখার এই বাজে ঝামেলা নিতে যাবেন! এটা কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী। এবং এতে শিরকের একটা দরজা খুলে যায়।

১৪৩
প্রশ্ন-১৪০: মনে যদি কুফরি ভাব আসে তাহলে কি ঈমান চলে যায়।
উত্তর: মনের ভেতর কুফরি, ওয়াসওসা আসলে যে আপনার খারাপ লাগছে এটা প্রমাণ করে যে আপনি ভালো ঈমানদার। এই কথাটাই সাহাবাগণ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে জিজ্ঞেস করতেন- ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমাদের এমন কথা মনে আসে যেটা মুখে উচ্চারণ করার আগে কতল হয়ে যেতে আমরা রাজি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, এটাই তো ঈমান। যে পকেটে মোটে টাকা নেই সেখানে পকেটমার ঘোরে না তো! যে পকেটে টাকা আছে, পকেটমার তার আশেপাশে ঘোরার চেষ্টা করে। যে কালবে ঈমান আছে শয়তান তার আশেপাশে ঘোরে। এটাই প্রমাণ করে যে আপনার ঈমান আছে। কাজেই এই ধরনের ওয়াসওসায় দুশ্চিন্তা করবেন না। লা হাওলা ওয়া লা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ পড়বেন।

১৪৪
প্রশ্ন-১৪১: ঈমান বৃদ্ধির কোনো উপায় আছে কি না?
উত্তর: ঈমান বৃদ্ধি করতে হলে অবশ্যই আমাদেরকে দীন পালন করতে হবে। তবে সহজ পদ্ধতি হল আমরা সব সময় আল্লাহর যিকির করব- সুন্নাত যিকির। এ জন্য ওযু-গোসল লাগে না। যে কোনো অবস্থায় করা যায়। আল্লাহর সাথে কথা বলব। মনের কথা তাকে জানাব। এটা অত্যন্ত উপকারী। সবসময় দুরুদ শরীফ পড়ব। এ জন্যও ওযু গোসল জরুরি নয়। আর কুরআন তিলাওয়াত করব, বোঝার চেষ্টা করব। অতি সহজে আমাদের ঈমান বৃদ্ধি পাবে।

১৪৫
প্রশ্ন-১৪২: এত গোনাহ করেছি, আল্লাহর কাছে কীভাবে মাফ চাইব? মাফ চেয়ে কীভাবে আমি নিস্পাপ হয়ে যেতে পারব?
উত্তর: আল্লাহ তাআলা কুরআন কারীমে বলেছেন:

১৬ সূরা হাদীদ-০৪

قل يا عبادي الذين أسرفوا على أنفسهم لا تفتطوا من رحمة الله إن الله يغفر الذنوب

হে আমার বান্দারা, তোমরা যারা অনেক গোনাহ করেছ, আমার রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। আল্লাহ সব গোনাহ মাফ করতে পারেন। কাজেই আমরা তো গোনাহ করবই। মানুষের প্রকৃতিই গোনাহের দিকে যায়, অন্যায়ের দিকে যায়। অন্যায় করে ফেলি। আল্লাহ ক্ষমা করতে চান। আল্লাহ রাতে হাত বাড়িয়ে দেন, যেন দিনের পাপগুলো আমরা রাতে মাফ চেয়ে নিতে পারি। এইভাবে আল্লাহ সবসময় বান্দাকে মাফ করতে চান। মাফের জন্য প্রথম কাজ হল তাওবা। তাওবা মানে শুধু ক্ষমা চাওয়া নয়। আল্লাহ তাআলার কাছে অনুতপ্ত হওয়া, ক্ষমা চাওয়া, আর কখনোই এই পাপগুলো করব, এটা ওয়াদা করা এবং যদি কোনো বান্দার হক থাকে সেটা অবশ্যই ফিরিয়ে দেয়া বা মাফ চেয়ে নেয়া। এটা করলে আল্লাহ সকল গোনাহ মাফ করবেন। দুশ্চিন্তার কারণ নেই। আল্লাহ মাফ করতে চান। মাফ করতে পারলে খুশি হন।

১৪৬
প্রশ্ন-১৪৩: জমি কেনার জন্য আমি দেড় লক্ষ টাকা জমিয়েছি। এই টাকার উপর যাকাত আসবে কি না জানাবেন।
জমি কেনার জন্য আমি দেড় লক্ষ টাকা জমিয়েছি। কিন্তু জমি কিনতে পারি নি। এই টাকার উপর যাকাত আসবে কি না জানাবেন।

উত্তর: জি, সকল সঞ্চিত টাকা- জামি করার জন্য, হজ্জ করার জন্য, কোনো ভালো কাজে ব্যয় করার জন্য, বিবাহের খরচের জন্য টাকা জমা করেছেন, ব্যয় হয় নি, আপনার ওই সঞ্চিত টাকার এক বছর পূর্ণ হয়েছে, গত বছরের যাকাতের পর নতুন বছরের যাকাতের সময় এসেছে, সব টাকার যাকাত আপনাকে একত্রে দিতে হবে। যতক্ষণ তার মালিক আপনি রয়েছেন, ব্যয় করার ক্ষমতা আপনার রয়েছে ততক্ষণ এই টাকার যাকাত দিতে হবে।

১৪৭
প্রশ্ন-১৪৪: রোযা অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করলে যদি গোসল ফরয হয়ে যায় তাহলে তার কাযা-কাফফারা কীভাবে করতে হবে?
উত্তর: আমরা জানি রোযা ভাঙার কারণ হল পানাহার এবং স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক। কেউ যদি রোযা অবস্থায় এগুলো করে তাহলে তার রোযা ভেঙে যাবে। এক্ষেত্রে তার কঠিন গোনাহ হয়েছে। তিনি তাওবা করবেন। এই রোযার জন্য আরেকটা রোযা রাখবেন এবং আরো ৬০ টা রোযা একটানা রেখে এর কাফফারা করবেন। ৬০ টা রোযা রাখতে একান্তই সক্ষম না হলে ৬০ জন দরিদ্র মানুষকে খাওয়াবেন।

১৪৮
প্রশ্ন-১৪৫: ফজরের জামাআত শুরু হলে সুন্নাত নামাযের নিয়ত করা যাবে কি না?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) অনেকগুলো হাদীসে সুস্পষ্টভাবে এটা করতে নিষেধ করেছেন। এক তো সাধারণ একটা হাদীস আছেঃ

إذا أقيمت الصلاة فلا صلاة إلا المكتوبة

ইকামত হয়ে গেলে ফরয ছাড়া অন্য কোনো সালাত পড়া যাবে না। নতুন করে শুরু করা যাবে না। আর বিশেষ কয়েকটা সহীহ হাদীস রয়েছে- রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন দেখেছেন জামাআত শুরু হবে আর একজন একাকি নামাযে দাঁড়িয়েছে, তিনি তাকে নাড়া দিয়ে চলে গেছেন, যে তোমার নামায ভেঙে জামাআতে শরিক হও। এরপর রাসূলুল্লাহ সা, জামাআত শুরু করেছেন। একজন জামাআতের সময় সালাত পড়ছিল। দেখে তিনি বলেছিলেন তুমি কোন সালাত আল্লাহকে দিতে চাও? আমাদের সাথে যেটা পড়বে সেটা, না তুমি একা যেটা পড়লে সেটা? মূল কথা, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বারবার নিষেধ করেছেন। জামাআত শুরু হলে, ফজরের জামাআত শুরু হলেও আমরা সুন্নাত পড়া শুরু করব না। কেউ যদি পড়তে থাকেন তিনি শেষ করবেন। কেউ যদি বাড়িতে পড়েন, ভিন্ন কথা। আমরা সুন্নাতটা পরে পড়ব। আমাদের সুযোগ আছে পরে পড়ার। আমরা জামাআতের পর পড়ব অথবা বেলা ওঠার পর পড়ব। দুটোই হাদীসে রয়েছে।

১৪৯
প্রশ্ন-১৪৬: দাড়ি একমুষ্ঠির কম থাকলে সে নাকি কাফের- কুরআন-হাদীসের আলোকে এটার ব্যাখ্যা দিবেন।
উত্তর: একমুষ্ঠি বলতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দাড়ি বড় রাখতে বলেছেন। বর সীমা তিনি দেন নি। যত বড় হয় তত বড় রাখার একটা মত আছে। আরেকটা হল অন্তত একমুষ্ঠি রাখা। দাড়ি চেঁছে ফেলা হারাম। চাঁছলে কেউ কাফের হবে না। যদি কিছু রাখেন, অন্তত হারাম থেকে বেঁচে গেলেন। সুন্নাত পূর্ণ পালন হবে একমুষ্ঠি রাখলে। তবে এক্ষেত্রে আমরা বাড়াবাড়ি না করি। অর্থাৎ যিনি কিছু রেখেছেন তার কিছু রাখার মূল্যায়ন করতে হবে। অনেকের জন্য বড় রাখা কঠিন হয়ে যায়। তবে বড় না রাখলে। পূর্ণ সুন্নাত আদায় হবে না, এটা হাদীসের আলোকে আমাদের মানতে হবে।

১৫০
প্রশ্ন-১৪৭: তারাবীহর নামাযে সুবহানা যিলমুলকি এবং শেষে যে মুনাজাত করা হয়- এটা কুরআন-হাদীসে কোথাও আছে কি?
তারাবীহর নামাযের চার রাকআত পরপর যে দুআ পড়া হয় (সুবহানা যিলমুলকি) এবং শেষে যে মুনাজাত করা হয়- এটা কুরআন-হাদীসে কোথাও আছে কি, জানতে চাই।

উত্তর: দুআটা একেবারেই বানানো। সুন্নাতে অনেক দুআ আছে, কুরআনে অনেক দুআ আছে, হাদীসে অনেক দুআ আছে, কিন্তু এই দুআটা কোথাও নেই। তারাবীহর সাথে তো নেই-ই, অন্য কোনো ব্যাপারেও নেই। আর মুনাজাতে যেটা বলি, এটাও দুআ হিসেবে কুরআন-হাদীসে কোথাও পাওয়া যায় না। তারাবীহ বলতে যে বিশ্রাম- কোনো মাযহাবে, কোনো হাদীসে, কোনো ফিকহে নেই যে এর প্রতি চার রাকআত পর নির্দিষ্ট কোনো দুআ পড়তে হবে। এই সময় আমরা বিশ্রাম করতে পারি, দুরুদ শরীফ পড়তে পারি, কুরআন তিলাওয়াত করতে পারি, সূরা ইখলাস পড়তে পারি। নির্দিষ্ট ওই দুআ এবং মুনাজাত দুটোই অপ্রাসঙ্গিক এবং বানানো। এর অর্থে কোনো দোষ নেই। কিন্তু কোনো মাসনুন ইবাদতের ভেতরে বানানো জিনিসের সংমিশ্রণ করা অত্যন্ত আপত্তিকর। এর অর্থ হল রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর হুবহু পদ্ধতি আমাদের মজা লাগছে না। আরো কিছু যোগ না করলে, মরিচ একটু বেশি না দিলে টেস্ট লাগছে না, এরকম আর কি! (সহীহ মুসলিম-৭১০; আবু দাউদ-১২৬৬; তিরমিযি-৪২১; নাসায়ি-৮৬৫; ইবন মাযাহ-১১৫১)

১৫১
প্রশ্ন-১৪৮: বিয়ের অনুষ্ঠানে মেয়েদের অংশগ্রহণ করা জায়েয আছে কি না জানতে চাই।
উত্তর: মূলত বিবাহ এমন একটি অনুষ্ঠান যেখানে যেতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উৎসাহ দিয়েছেন। আনন্দ করতে উৎসাহ দিয়েছেন। কিন্তু দুঃখজনক হল, আমরা এই আনন্দের নামে ইসলাম বিরোধী এবং পাপপূর্ণ আনন্দে লিপ্ত আছি। নইলে মহিলাদের জন্য শরীআতের ভেতরে থেকে, পর্দার সাথে, শালীনতার সাথে বিবাহে আনন্দ করতে ইসলাম নির্দেশ দেয়। এমনকি রাসূলুল্লাহর (ﷺ) মেয়েদেরকে মেয়ের আসরে গীত গাইতে বলেছেন। ছেলেদেরকে ছেলের আসরে আনন্দ ফুর্তি করতে বলেছেন। কাজেই আপনি যে প্রশ্ন করেছেন, বিবাহের অনুষ্ঠানে যাওয়া যাবে কি না, এটা নির্ভর করে অনুষ্ঠানটা কেমন তার উপর। শরীআহ, সুন্নাহ, ইসলাম বিবাহে আনন্দ করতে নির্দেশ দেয়। মেয়েদেরকে যেতে নির্দেশ দেয়। শিশুদেরকে যেতে নির্দেশ দেয়। তবে যদি এই নির্দেশ মানতে গিয়ে শরীআতের অন্য নির্দেশ লঙ্ঘন হওয়ার নিশ্চিত ভয় থাকে তাহলে আপনারা এতে যোগ দেয়া থেকে বিরত থাকবেন।

১৫২
প্রশ্ন-১৪৯: যদি ছেলের জন্য দুইটা ছাগল দেয়া সম্ভব না হয়, একটা দিতে পারবে? আকীকার মাংস ভাগবাটোয়ারা করার পদ্ধতি কী?
আমরা জানি যে, ছেলের জন্য দুইটা ছাগল আর মেয়ের জন্য একটা ছাগল আকীকা দিতে হয়। কিন্তু কারো যদি ছেলের জন্য দুইটা ছাগল দেয়া সম্ভব না হয় সে কি একটা দিতে পারবে? আর আকীকার পশুর মাংস ভাগবাটোয়ারা করার পদ্ধতি কী?

উত্তর: আরবের মানুষেরা মেয়ে হলে পুঁতেই ফেলত, আকীকা দূরের কথা। এ জন্য রাসূলুল্লাহর (ﷺ) বললেন, মেয়ে হলে কিছু না হলে অন্তত একটা আকীকা দিতেই হবে। ছেলেদের জন্য দুটো অথবা একটা, দুই রকমই অনুমতি আছে। যেমন আবু দাউদ রহ.সহ অন্যান্য মুহাদ্দিস সংকলন করেছেন।

أن رسول الله صلى الله عليه وسلم عق عن الحسن، واختين كبشا گا

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হাসান এবং হুসাইনের জন্য একটা করে দুম্বা বা ভেড়া আকীকা দিয়েছিলেন (সুনান আবু দাউদ-২৮৪১; তাবারানি, আল মু'জামুল কাবীর-১১৮৫৬) ।

এ জন্য আপনি যদি একটা দেন, আকীকা হয়ে যাবে। কোনো সমস্যা নেই। ছেলের জন্য একটা, মেয়ের জন্য একটা। আর ছেলেদের জন্য দুটো দেয়ার কথাও অন্য হাদীসে বলা হয়েছে। আর দ্বিতীয় যে বিষয় প্রশ্ন করেছেন মাংস বণ্টনের ব্যাপারে, আকীকা মূলত সন্তানের জন্মে আনন্দ প্রকাশের জন্য। এখানে বলে রাখি, সন্তান জন্মের আনন্দ যদি বড় হওয়ার পরে কুরবানির সাথে দেন, তাহলে ওই সন্তানের উচিত বড় হয়ে পিতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা যে, আমার জন্মের সাত দিনের দিন আনন্দ করার কথা ছিল, তো লেট করলে কেন! সাত দিনের দিন আকীকা করতে হবে এটাই সুন্নাত। আর আকীকার গোশত আপনার ইচ্ছা মতো কিছু গরিবদের, কিছু আত্মীয়দের, আবার রান্না করে খাওয়াতে পারেন। এ ক্ষেত্রে শরীআত কোনো নির্ধারিত বণ্টন নীতিমালা দেয় নি। আপনি আপনার সুবিধা মতো আনন্দে সবাইকে শরিক করবেন।

১৫৩
প্রশ্ন-১৫০: মসজিদে লেখা থাকে জুমআর নামায শুরু হবে ১:১৫ তে কিন্তু পৌনে দুটায় আরম্ভ হয়। এটা কী প্রতারণা?
প্রায় মসজিদে লেখা থাকে জুমআর নামায শুরু হবে ১:১৫ তে। কিন্তু ইমাম সাহেব পৌনে দুটায় নামায আরম্ভ করেন। এটা আমার কাছে প্রতারণা মনে হয়। আপনার কাছে কী মনে হয়?

উত্তরঃ জুমআর সুন্নাত হল, ওয়াক্তের শুরুতেই অর্থাৎ বারোটা, সোয়া বারোটায়- ওয়াক্ত হলেই জুমা শুরু হবে, এটাই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সুন্নাত। উনি দেরি করতেন না। তবে জুমআর অর্থ শুধু দুই রাকআত নামায নয়। জুমআর খুতবাটাও কিন্তু জুমআর সালাতের অবিচ্ছেদ্য অংশ। জুমআর নামায অর্থ দুই রাকআত নামায পড়ে চলে আসা নয়। জুমার নামায অর্থ সামাজিক মেলা, সবার সাথে সাক্ষাৎ করা। এবং কিছু ঈমান, তাকওয়া বৃদ্ধির কথা শোনা। এ ব্যাপারে প্রচুর হাদীস রয়েছে। মূল কথা হল, যে সময় লেখা আছে ওই সময়ে যদি অন্তত আযান হয়ে খুতবা শুরু হয়ে যায়, তাহলে ঠিক আছে। যদি অনেক দেরি হয়, তাহলে ইমাম এবং কমিটির সচেতন হওয়া দরকার, যেন অন্তত খুতবাটা লিখিত সময়ের ভেতর শুরু করা যায়, মুসল্লিদের কষ্ট না হয়।

১৫৪
প্রশ্ন-১৫১: ব্যবহৃত বাড়ি-গাড়ির উপর যদি যাকাত না আসে তাহলে ব্যবহৃত স্বর্ণের উপর কেন যাকাত আসবে?
আমার নয় ভরি স্বর্ণ আছে, যেটা আমি ব্যবহার করি। ব্যবহৃত বাড়ি-গাড়ির উপর যদি যাকাত না আসে তাহলে ব্যবহৃত স্বর্ণের উপর কেন যাকাত আসবে?

উত্তর: এখানে দুটো বিষয়। প্রথমত মূল ব্যবস্থাপনা মুহাম্মাদ (ﷺ) দেন। এটাই আসল। আপনার যুক্তিটা আমি বলি- ব্যবহার হওয়ার কারণে যেটার মূল্য কমে এটার যাকাত হয় না। যেমন আমার কাপড়টা দুইদিন ব্যবহার করলে ওটা পূর্বের দামে আর কেউ কিনবে না। কিন্তু যেটার ব্যবহারে মূল্য কমে না, যেমন নগদ টাকা, চকচকে নোটটা ব্যবহার করতে করতে পুরাতন হয়ে গেছে, এতে কিন্তু মূল্য কমছে না। এর যাকাত দিতেই হবে। আপনার ৫০ হাজার নতুন টাকা আর ৫০ হাজার পুরাতন টাকার ভেতর কোনো পার্থক্য নেই। সোনা এবং রূপাও তাই। এর মূল্য কখনো কমে না। ব্যবহারের মাধ্যমে আপনার সম্পদ অটুট রয়েছে, কাজেই এর যাকাত দিতে হবে। আর যেটা আসল কথা- মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ব্যবহৃত অলঙ্কারে যাকাত দিতে বলেছেন, এ ব্যাপারে সহীহ হাদীস রয়েছে, শাইখ মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানীসহ অন্যান্য মুহাদ্দিস সহীহ বলেছেন। একবার রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে একজন মহিলা আসেন। সাথে তার মেয়ে রয়েছে। মেয়ের হাতে আঙটি রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তুমি কি আঙটির যাকাত দাও? সে বলল, না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তাহলে তো তোমাকে জাহান্নামে আগুনের আঙটি পরানো হবে। ঠিক একই ঘটনা আয়েশা রা, এর সাথে ঘটে। তিনি আঙটি বানালেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দেখে আঙটির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন। আয়েশা রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আপনার সামনে সুন্দর হওয়ার জন্য আঙটি বানিয়েছি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, যাকাত দেবে কিন্তু। নইলে এটার জন্য তোমাকে শাস্তি পেতে হবে। এ জন্য ব্যবহৃত অলঙ্কারের যাকাত দিতে হবে এটাই হাদীসের নির্দেশ।

১৫৫
প্রশ্ন-১৫২: আমার স্বামী চায় না, অথচ আমি শুনেছি দাওয়াতি কাজ করতেই হয়। তাহলে আমরা মেয়েরা দাওয়াতি কাজ কীভাবে করব?
উত্তর: মেয়েদের জন্য সংসারের কাজ প্রথম ফরয। এবং স্বামীর বিনা অনুমতিতে ঘরের বাইরে গিয়ে দাওয়াতি কাজ আপনি করতে পারবেন না। এটা আপনার উপর ফরয নয়। আপনি আপনার সীমাবদ্ধতার ভেতরে যেটুকু করবেন এতেই আপনি পূর্ণ ছওয়াব পাবেন। আর স্বামী অনুমতি দিলে সুযোগ থাকলে বাইরে যাবেন। তা না হলে যাবেন।

১৫৬
প্রশ্ন-১৫৩: ছোট বয়সে বাচ্চাদের মাদরাসায় দিলে নাকি অনেক সমস্যা হয়?
আমার ছেলের বয়স ২ বছর ৬ মাস। আমি ওকে নূরানি মাদরাসায় প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করিয়েছি। কিন্তু অনেকেই বলছে, ছোট বয়সে বাচ্চাদের মাদরাসায় দিলে নাকি অনেক সমস্যা হয়। তাই আপনার কাছে সাজেশন নিতে চাচ্ছি, ওকে আমি কোথায় পড়াব?

উত্তর: আমি নিজে মাদরাসা শিক্ষার লাইনের মানুষ, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করি, অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালাই- আমি ঠিক উল্টোটা জানি। সেটা হল বর্তমানে আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় শুধু পরীক্ষা এবং পাশ আছে। লেখাপড়া আর নেই। একমাত্র এই নূরানি মাদরাসা বা এই জাতীয় মাদরাসাগুলোতে শিক্ষকরা আল্লাহর জন্য পড়ান, ছাত্ররাও মহাব্বতে পড়াশোনা করে। আপনি দেখবেন- আখলাক, আচরণ, কথাবার্তা, ভদ্রতা, সালাম, মানসিক বিকাশ- আপনার আশেপাশের স্কুলের থেকে মাদরাসার অবস্থা ভালো। আমি সারা বাংলাদেশের অবস্থার প্রেক্ষাপটেই বলছি। কাজেই যারা বলেন, ছোটবেলায় মাদরাসায় দিলে শিশুর মানসিক বিকাশে ক্ষতি হবে, এটা তারা ঠিক বলেন নি। বরং ছোটবেলায় ওকে মাদরাসায় দিয়ে সবচে' ভালো কাজ করেছেন। আমরা বিভিন্ন শিক্ষাবিদের সাথে আলাপ করেছি, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা শুধু পরীক্ষা আর পাশের ভেতর ঢুকে গেছে। পরীক্ষা তোমাকে দিতেই হবে, পাশ তোমাকে করতেই হবে। পরীক্ষায় উপস্থিত না হলেও পাশ হতে হবে। এতে কোনো লেখাপড়া নেই। এ জন্য আমাদের বাচ্চাদের অন্তত ক্লাশ থ্রি-ফোর পর্যন্ত নূরানি মাদারাসায় পড়ানো উচিত।

১৫৭
প্রশ্ন-১৫৪: ব্যবহার করি আবার ভাড়াও দিই। এরকম মাইক্রোর উপর যাকাত আসবে?
আমাদের একটা মাইক্রো আছে। এটা আমরা নিজেরা ব্যবহার করি আবার ভাড়াও দিই। এই মাইক্রোর উপর যাকাত আসবে কি না জানতে চাই।

উত্তর: মাইক্রোর মূল্যের উপর যাকাত আসবে না। আপনি যেটা নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করেন এটার মূল্যের উপর যাকাত হয় না। তবে ভাড়া থেকে যে টাকাটা আসে, এটা বছর শেষে আপনার অন্যান্য সঞ্চিত টাকার সাথে মিশিয়ে যাকাত দিতে হবে।

১৫৮
প্রশ্ন-১৫৫: পাঁচ মাসেই আমার বাচ্চা ডেলিভারি হয়ে বাচ্চাটা মারা যায়। মা হিসেবে বাচ্চার জন্য আমি কেমন দুআ করতে পারি?
পাঁচ মাসেই আমার বাচ্চা ডেলিভারি হয়ে যায় এবং বাচ্চাটা মারা যায়। তাকে কবর দেয়া হয়েছে। মা হিসেবে বাচ্চার জন্য আমি কেমন দুআ করতে পারি?

উত্তর: আপনি তার কথা উল্লেখ করে নিজের জন্য দুআ করবেন- হে আল্লাহ, আমার এই সন্তানকে আমার জন্য সাক্ষী এবং সুপারিশকারী বানিয়ে দিন। আমাদেরকে জান্নাতে একত্রিত করুন।

১৫৯
প্রশ্ন-১৫৬: প্রভিডেন্ট ফান্ডে নিসাবেরও অতিরিক্ত টাকা জমা আছে। আবার আমার ঋণও আছে। আমার যাকাত আসবে?
আমি একজন সরকারি কর্মচারী। আমার প্রভিডেন্ট ফান্ডে নিসাবেরও অতিরিক্ত টাকা জমা আছে। আবার আমার ঋণও আছে। এই অবস্থায় আমার যাকাত আসবে কি না?

উত্তর: প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকার ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ম হল, বেতন থেকে সরকার বাধ্যতামূলকভাবে ১০% কেটে নেন। সরকার কখনোই এই টাকার মালিকানা দেন না। এমনকি আমি ঋণ নিলে ঋণ নিতে পারি। মালিক হতে পারি না। আবার ব্যাক করতে হয়। এ জন্য এই টাকার যাকাত দিতে হবে না। কারণ, ওটার মালিকানাই আমি পাই নি। ওটা সরকারের হাতে আছে। অবসরের সময় ওই টাকাট সরকার আমাকে একবারে দেবেন। আবার অন্য নিয়মও আছে, ১০% এর পরেও কেউ ১৫% বা ২০% কাটান। এক্ষেত্রে এই টাকাটা আপনি মালিক হওয়ার পরে সঞ্চয় করছেন। ফলে এটার যাকাত আপনাকে দিতে হবে।

১৬০
প্রশ্ন-১৫৭: প্রভিডেন্ট ফান্ডের যে লাভ আসে, সেটা গ্রহণ করা যাবে? ওটা সুদের ভেতর পড়বে?
সরকারি কর্মচারিদের বেতন থেকে বাধ্যতামূলক ১০% কেটে নেয়া হয়। এতে যে লাভ আসে, সেটা গ্রহণ করা যাবে কি না? অর্থাৎ ওটা সুদের ভেতর পড়বে কি জানতে চাই।

উত্তর: এটা নতুন বিষয় হিসেবে আলেমদের ভিন্ন মত আছে। যেহেতু সুদ লেখা হয়, সুদ হারে দেয়া হয় এ জন্য অনেকেই এটাকে নাজায়েয বলেছেন। তবে বড় অংশের গবেষক আলেমদের মতে, এবং আমি নিজেও এটাকে গ্রহণযোগ্য মনে করি যে টাকাটা সরকার আমাকে বেতন হিসেবে দিচ্ছেই না, আমার সাথে সরকারের চুক্তি, ১০০ টাকা বেতনের ৯০ টাকা আমাকে দিবেন, ১০ টাকা কখনোই আমাকে কর্মদাতা দিবেন না। কর্মের শেষে ওই টাকাটা বাড়িয়ে আমাকে বেতন হিসেবে দিবেন। তাহলে যে বৃদ্ধিটা এখানে আসছে, এটা আমার টাকার বিনিময়ে নয়। আমার কর্মের বিনিময়ে। কর্মদাতার সাথে কর্মের চুক্তি হিসাবে। এই বাধ্যতামূলক কর্তনের ১০% এর উপরে যে লাভটা আসে এটা আশা করা যায় টাকার বিনিময়ে টাকার বৃদ্ধি নয় বরং কর্মের বিনিময়ে টাকা বৃদ্ধি। কাজেই এটা গ্রহণযোগ্য। তবে কেউ যদি এর সাথে নিজের টাকা যোগ করেন তাহলে বৈধ হবে না।

১৬১
প্রশ্ন-১৫৮: ঋণের টাকায় কেনা জমির উপর যাকাত দিতে হবে?
আমি একজন ব্যাংকার। আমি জনতা ব্যাংকে চাকরি করি। সেখান থেকে আমি ৩১ লক্ষ টাকা লোন নিয়েছি বাড়ি করার জন্য। জমি কিনেছি কিন্তু এখনো বাড়ি করি নি। এখন এই জমির উপর কি আমাকে যাকাত দিতে হবে?

উত্তর: যে টাকা দিয়ে আপনি জমি কিনেছেন, নিজে ব্যবহার করবেন বলে কিনেছেন, তাহলে এই টাকার উপর যাকাত দিতে হবে না। আর এমন যদি হয়, জমি কিনে রেখেছেন, ভালো মূল্য পেলে বেচে দেবেন, তাহলে মূল জমির মূল্যের উপর যাকাত দিতে হবে।

১৬২
প্রশ্ন-১৫৯: আমি লোন নিয়ে ফ্ল্যাট কিনেছি। প্রতি মাসেই আমাকে লোনের কিস্তি দিতে হচ্ছে। এই ফ্ল্যাটের যাকাত আসবে কি না?
উত্তর: আপনি যদি নিজে ব্যবহারের জন্য ফ্ল্যাট কিনে থাকেন তাহলে এই ফ্ল্যাটের মূল্যের উপরে কোনো যাকাত নেই। আর যদি ফ্ল্যাট কিনে থাকেন বিক্রয়ের জন্য, ভালো দাম পেলে বিক্রয় করে দেবেন, তাহলে এটা বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে গণ্য হবে, এটার মূল্যের উপর যাকাত দিতে হবে। আর আপনি লোনের কিস্তি শোধ করছেন, কোনো লোনের টাকা যাকাত থেকে বাদ যাবে না। যেমন আপনার ২০ লক্ষ টাকা আছে এবং ব্যাংকে ফ্ল্যাট বাবদ ১৫ লক্ষ ঋণ আছে। এই ঋণ কিন্তু আপনার ২০ লক্ষ থেকে বাদ যাবে না। এর দুটো কারণ। একটা হল, যে কোনো ব্যাংক ঋণের বিনিময়ে একটা মটগেজ থাকে। একটা সম্পদ থাকে। এটা ঋণ নয়। দ্বিতীয়তঃ ব্যাংক আপনার কাছ থেকে একবারে ১৫ লক্ষ চায় না। সে মাসে একটা ইনস্টলমেন্ট চায়। যদি আপনার ৩ ইনস্টলমেন্ট বাকি পড়ে যায় তাহলে যাকাতের হিসাবের সময় এই ২/৩ ইনস্টলমেন্ট ঋণ হিসাবে ধরতে পারেন। এছাড়া মূল ব্যাংকের যে পাওনা, এটা যাকাতের হিসাব থেকে বাদ যাবে না।

১৬৩
প্রশ্ন-১৬০: তারাবীহ নামায আট রাকআত পড়লেই হয়ে যায়?
আপনার এক আলোচনায় আমি শুনেছি, তারাবীহ নামায আট রাকআত পড়লেই হয়ে যায়। আমার প্রশ্ন হল রেগুলার আট রাকআত পড়লে এটা সঠিক হবে কি না?

উত্তর: আমরা তারাবীহ নাম বললেও এটা কিয়ামুল লাইল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বারো মাসই কিয়ামুল লাইল করতেন। আট রাকআত নিয়মিত পড়তেন। কখনো কিছু কম পড়তেন। কখনো বাড়িয়ে দশ বা বারো রাকআত পড়তেন। তবে সবসময় দুই তিন ঘণ্টা সময় নিয়ে পড়তেন। কাজেই কেউ যদি দীর্ঘ সময় নিয়ে, এক দেড় ঘণ্টা ব্যয় করে আট রাকআত বারো মাস পড়েন- এটাও তার সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। তবে আমরা যেহেতু শুধু রমাযানে পড়ি, ঘনঘন ছোট ছোট সূরা দিয়ে পড়ি, একটু বেশি পড়লে, ২০ রাকআত পড়লে আরো ভালো। বিশেষ করে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:

من قام مع الإمام حتى ينصرف ترب له قيام ليلة

যে ব্যক্তি ইমামের সাথে শেষ পর্যন্ত পড়ে তার বাকি রাত (তাহাজ্জুদ) পড়ার ছওয়াব হয়। কাজেই আমরা এই ফযিলত অর্জনের চেষ্টা করব।

১৬৪
প্রশ্ন-১৬১: তাহাজ্জুদের সালাত ছয় রাকআত পড়তে হয় নাকি বেশি পড়া লাগে জানতে চাই।
উত্তর: তাহজুদের নামায কিয়ামুল লাইলের অংশ। ঘুমের থেকে উঠলে বলা হয় তাহাজ্জুদ। এটা চার রাকআত পড়লেও হবে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কখনো দুই, কখনো চার, কখনো হয়, আট, দশ, বারো পর্যন্ত পড়েছেন। তবে তিনি দীর্ঘ সময় নিয়ে পড়তেন। আপনি যদি চার রাকআত পড়েন, সিজদাগুলো দীর্ঘ করেন, আলহামদুলিল্লাহ সুন্নাত আদায় হবে।

১৬৫
প্রশ্ন-১৬২: গায়ে হলুদ জায়েয আছে কি না?
উত্তর: পুরুষদের জন্য গায়ে হলুদ জায়েয নয়। মেয়েদের জন্য সৌন্দর্যবর্ধক সবই জায়েয। বিবাহের আনন্দে, সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য জায়েয। তবে এটা জায়েয হওয়ার অর্থ এই নয় যে, পুরুষেরা নারীদের গায়ে হলুদ দেবে, বেপর্দা হবে, এবং সেখানে শরীআত বিরোধী কর্ম হবে- তা নয়। বিবাহে আনন্দ করতে উৎসাহ দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) । তবে এখানে যেন শালীনতা বিরোধী, পৰ্দা বিরোধী, শরীআত বিরোধী কোনো ব্যাপার না থাকে। এবং বিজাতীয় সংস্কৃতির কোনো ব্যাপার যেন না থাকে। ভয়ঙ্কর ব্যাপার হল, আমাদের জীবনের সবচে' বড় অংশ বিবাহিত জীবন। এই জীবনটাই যদি মহাপাপ দিয়ে শুরু করি তাহলে এটার গতি কী হবে! তাই চেষ্টা করতে হবে বিবাহ যেন সুন্নাহ পদ্ধতিতে হয়। তাহলে জীবন বরকতময় হবে। (সুনান আবু দাউদ-১৩৭৫; তিরমিযি-৮০৬; নাসায়ি-১৩৬৪; ইবনু মাজাহ-১৩২৭)

১৬৬
প্রশ্ন-১৬৩: মাগরিবের ওয়াক্ত কতটুকু সময় পর্যন্ত থাকে?
উত্তর: আমরা অনেকেই মনে করি, মাগরিবের কোনো সময় থাকে না, এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। প্রকৃত বাস্তবতা হল, মাগরিবের ওয়াক্ত আর ফজরের ওয়াক্ত এক। সুবহে সাদেক থেকে বেলা উঠতে যে সময় লাগে সূর্যাস্ত থেকে সূর্যের লাল আভা, সাদা আভা কাটতে সেই সময় লাগে। এক ঘণ্টা বিশ মিনিট মতো লাগে। কাজেই আমরা আযানের পর থেকে ঘণ্টাখানেক সময় মাগরিবের নামায পড়তে পারি। তবে সাধারণভাবে মাগরিবের নামাযে বেশি দেরি না করা উচিত। আমরা অনেক সময় যেটা করি, আযান দিয়েই নামায শুরু করি, এটাও ঠিক না। অন্তত দশ মিনিট সময় দেয়া উচিত। আর রোযার সময় ইফতারের কারণে ১৫ বা ২০ মিনিট সময় দেয়া হয়, এটা মোটেও অনুচিত নয়। বরং এটা সুন্নাহ সম্মত।

১৬৭
প্রশ্ন-১৬৪: জুমআর নামাযের আযান হওয়ার আগেই দুই রাকআত দুই রাকআত করে নামায পড়া জায়েয?
জুমআর নামায পড়তে মসজিদে গিয়ে দেখা যায় যে, আযান হওয়ার আগেই অনেকেই দুই রাকআত দুই রাকআত করে নামায পড়ে। এটা জায়েয কি না?

উত্তরঃ এটাই তো হাদীসের নির্দেশ, ‘তোমরা জুমআর দিন আগে আগে মসজিদে যাবে আর সালাত পড়তে থাকবে। তবে যখন মাকরুহ ওয়াক্ত হয়, অর্থাৎ ঠিক ওয়াক্ত হয় হয় মুহূর্তে সালাত আদায় করার ব্যাপারে কেউ কেউ নিষেধ করেছেন। কেউ কেউ পড়তে বলেছেন। কাজেই শুধু ওয়াক্ত হওয়া নয়, মসজিদে ঢুকে নিষিদ্ধ সময় বাদে বাকি সময় সালাত আদায় করা উত্তম।

১৬৮
প্রশ্ন-১৬৫: আমরা মীলাদে ইয়া নবী সালামু আলাইকা দুরুদ পড়ি, এই দুরুদ পড়া জায়েয কি না?
উত্তর: এই রকম সালাম দেয়াতে রাসূলুল্লাহর (ﷺ) এর সাথে একটু বেয়াদবি হয়। আল্লাহ তাআলা তাঁর নবীকে কখনো ইয়া নবী ডাকেন নি। ইয়া নবী মানে হল- এই একজন লোক! এভাবে অপরিচিত লোককে ডাকা হয়। আর আল্লাহ যখন নবীকে ডেকেছেন- ইয়া আইয়ুহান নাবী-হে আমার প্রিয় নবী’, এভাবে ডেকেছেন। এ জন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে হয় বলতে হবে, ইয়া রাসূলাল্লাহ অথবা ইয়া আইয়ুহার রাসূল বা ইয়া আইয়ুহান নাবী। ওইভাবে সালাম বলাটা নবীজিকে যেন ‘এই লোকটা এরকম ডাকা হয়। এটা আমাদের উচিত নয়। সুন্নাতে দরুদ এবং সালামের যে বাক্যগুলো আছে এগুলো আমাদের ব্যবহার করা উচিত।

১৬৯
প্রশ্ন-১৬৬: নিঃসন্তান স্বামী-স্ত্রী সন্তান প্রার্থনা করবে এমন কোনো দুআ আছে কি না জানতে চাই।
উত্তরঃ জি, কুরআনে সন্তান চাওয়ার জন্য এমন কিছু দুআ আছে। এখানে দুআগুলো বললে তো মনে রাখতে পারবেন না। সুরা আল ইমরানে, মারইয়ামে আছে- আল্লাহ আমাকে নেককার সন্তান দিন, আল্লাহ আমাকে একজন উত্তরাধিকার দিন। এই ধরনের। দুআগুলো আপনারা অন্তর দিয়ে পড়বেন। সিজদায় গিয়ে পড়বেন। এই জাতীয় দুআগুলো আপনারা মুখস্থ করে নেবেন।

১৭০
প্রশ্ন-১৬৭: অমুসলিমরা কি কিয়ামতে বলবে, হে আল্লাহ, আপনি কেন আমাদেরকে অমুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে পাঠালেন?
অমুসলিমরা কি কিয়ামতের ময়দানে আল্লাহ তাআলার সামনে এই কথা বলবে যে, হে আল্লাহ, আপনি কেন আমাদেরকে অমুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে পাঠালেন? এমন কোনো বক্তব্য তারা দেবেন কি না?

উত্তর: তার আগে আমার একটা প্রশ্ন আছে। মায়ের চেয়ে খালার দরদ বেশি হয় কি ? এই মানুষগুলোকে তো আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন। আর তাদের প্রতি দরদ আল্লাহর সব থেকে বেশি। কাজেই কোনো মানুষকেই আল্লাহ তাআলা তার প্রাপ্যের বাইরে সাজা দেবেন না। তবে প্রাপ্যের চেয়ে অনেক বেশি পুরস্কার দেবেন। প্রতিটি মানুষের অন্তরে আল্লাহ তাআলা একবার ডাক দেন যে, এটা ভালো, এটা তুমি করো। ওই ব্যক্তি যদি ডাকে সাড়া দেয়, মুক্তি পায়। যদি ইগনোর করে, উপেক্ষা করে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতে বলবেন, ওই দিন অমুক সময় আমি তোমার হৃদয়ে ডাক দিয়েছিলাম, তুমি শশান নি। কাজেই কে কী বলবে এটা আমরা তার এবং তার মালিকের হাতে ছেড়ে দেই।

১৭১
প্রশ্ন-১৬৮: চলতি একাউন্টের টাকার যাকাত কীভাবে দিব?
আমাদের চলতি একাউন্ট থাকে। চলতি একাউন্টে কখনো টাকা আসে, কখনো যায়। মনে করেন, হয়তো আজকে আমি যাকাত দেব, তো গতকাল কিছু টাকা একাউন্টে চলে এসেছে। তো আমার এই টাকারও যাকাত দিতে হবে কি না?

উত্তর: যিনি নিয়মিত যাকাত দেন, তিনি যাকাতের দিনে যত টাকা থাকে পুরাটা হিসাব করে যাকাত দেবেন। এটাই সহজ এবং অধিকাংশ ফকীহের মত। কারণ, প্রত্যেক টাকার বছর পূর্ণ করা অনেক ঝামেলার ব্যাপার।

১৭২
প্রশ্ন-১৬৯: ইসলামী ব্যাংকে আমার ফিক্সড ডিপোজিটে টাকা গচ্ছিত আছে। এই টাকার যাকাত দিতে হবে কি না জানতে চাই।
উত্তরঃ শুধু ইসলামী ব্যাংক নয়, যে কোনো ব্যাংকে টাকা সঞ্চিত থাকলে, যে টাকা আপনি চাইলেই পেয়ে যাবেন, ওই টাকার যাকাত দিতেই হবে।

১৭৩
প্রশ্ন-১৭০: কুরবানির গরু ভাগের ভেতর আকীকা দেয়া যাবে কি না?
উত্তর: আমার তো মনে হয়, যেই সন্তানের কুরবানির সাথে আকীকা দেয়া হয়, সেই সন্তানের বড় হয়ে বাবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা উচিত- রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন আমার জন্মের সাত দিনের দিন আমার জন্যে আনন্দ করবে, তুমি কেন এটা পিছিয়ে কুরবানির ভেতর নিলে? কুরবানি একটা পৃথক আনন্দ আর সন্তানের জন্মের আনন্দ পৃথক আনন্দ। আমরা দুটোকে একসাথে করব কেন? দ্বিতীয়ত রাসূল (ﷺ) এভাবে করতে বলেন নি। ফুকাহারা জায়েয বলেছেন। সুন্নাত হল সন্তানের জন্মের সাত দিনে বা পরবর্তীতে যত দ্রুত সম্ভব পৃথকভাবে আকীকা দেয়া।

১৭৪
প্রশ্ন-১৭১: রমাযান মাসে জামাআতে বিতর নামায আদায় করার পর তাহাজ্জুদ পড়া যাবে কি না?
উত্তরঃ জি, অবশ্যই পারবেন। অনেক সাহাবি বিতর পড়ে ঘুমিয়ে পড়তেন যদি শেষ রাতে ঘুম না ভাঙে সে জন্য। এরপর আবার উঠে তাহাজ্জুদ পড়তেন। এতে কোনো সমস্যা নেই।

১৭৫
প্রশ্ন-১৭২: জাদু-টোনা বা তাবিজ-কব্য দিয়ে চিকিৎসা করা জায়েয কি না?
উত্তর: কুরআন-সুন্নাহর কিছু দুআ আছে, কিছু দুআ রাসূল (ﷺ) শিখিয়েছেন, জায়েয কিছু কুরআনের আয়াত আছে, এ ব্যাপারে অনেক বই আছে। আমার নিজেরই লেখা একটা বই আছে রাহে বেলায়াত’ নামে; এটার একটা অধ্যায়ই আছে সুন্নাহসম্মত দুআ-তদবীরের উপরে, আপনারা পড়ে দেখতে পারেন।

১৭৬
প্রশ্ন-১৭৩: হাদীসের কিতাব পড়তে গেলে ওযু করতে হবে কি না?
উত্তর: হাদীসের বই, তাফসীর, মাসআলা-মাসায়েল ইত্যাদি বই পড়তে ওযু রাখার প্রয়োজন নেই। আপনি বিনা ওযুতে পড়তে পারেন।

১৭৭
প্রশ্ন-১৭৪: কুরআন তিলাওয়াত করতে করতে ক্লান্তি লাগলে শুয়ে শুয়ে পড়া যাবে কি ?
উত্তর: জি, শুয়ে শুয়ে কুরআন তিলাওয়াত করা যায়। আয়েশা রা. বলেছেন, রাসূলুল্লাহর (ﷺ) অনেক সময় আমার কোলে শোয়া অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত করতেন।

১৭৮
প্রশ্ন-১৭৫: আটরশীর একজন মুরীদ আমি নামায পড়ি বলে আমাকে ওহাবি বলে গালি দেয় এবং আমাকে নবীর দুশমন বলে।
আমাদের এলাকায় আটরশীর একজন মুরীদ আছে। আমি নামায পড়ি বলে সে আমাকে ওহাবি বলে গালি দেয় এবং তাকে নামাযের কথা বললে সে আমাকে নবীর দুশমন বলে।

উত্তর: এটা খুব সাধারণ জ্ঞানের ব্যাপার। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নামাযের কথা বলেছেন না বলেন নি? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মৃত্যুর আগের মুহূর্তে দাঁড়াতে পারেন নি, দুজন সাথীর কাঁধে ভর দিয়ে, পা হেঁচড়ে, মসজিদে কাতারে বসে সালাত আদায় করেছেন- তবুও জামাআতে নামায ত্যাগ করেন নি। ইনি হলেন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছ) । উমার রা.কে নামাযের ভেতর ছুরি মারা হয়েছে পেছন থেকে। তিনি রক্তাক্ত অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছেন। এরপরে উঠেছেন, রক্ত গলগল করে বেরোচ্ছে, লোকেরা বলছে, হে আমীরুল মুমিনীন, ফজরের সালাত কি আদায় করবেন? সালাত আদায় করব না মানে! সালাত আদায় না করলে তো কেউ মুসলিমই থাকতে পারে না! এই যদি হয় সাহাবায়ে কেরাম, তাহলে কে নবীর দুশমন আমরা সহজে বুঝতে পারি। আসলে ভাই এত প্রশ্ন লাগে না। আমাদের মানদণ্ড হলেন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) । তিনি যেটা করেছেন, আমরা করব। তিনি যেটা বলেছেন, আমরা বলব। এর বাইরে যাব না। নিরাপদে থাকব।

১৭৯
প্রশ্ন-১৭৬: কোনো এলাকার কিছু মানুষ যদি রোযার চাঁদ ওঠার কথা সময় মতো জানতে না পারে এক্ষেত্রে তাদের করণীয় কী?
কোনো ব্যক্তি অথবা কোনো এলাকার কিছু মানুষ যদি রোযার চাঁদ ওঠার কথা সময় মতো জানতে না পারে, বরং দিনের কিছু ভাগ অতিক্রম করার পর জানতে পারে; এক্ষেত্রে তাদের করণীয় কী?

উত্তর: যদি এমন হয় তাহলে তারা যখন জানবেন তখন থেকেই বাকি দিন রোযা থাকবেন। কিছু খাবেন না। তবে এর দ্বারা তাদের রোযার ইবাদত পূর্ণ হবে না। পরবর্তীতে সিয়াম পালন শেষে তারা এই দিনের রোযার কাযা করবেন।

১৮০
প্রশ্ন-১৭৭: এক ব্যক্তি দু'বছর রোযা রাখেন নি। এখন নোযাগুলোর যে কাযা করবেন, সম্ভব হচ্ছে না। তিনি কী করবেন?
উত্তরঃ আগে দেখতে হবে সম্ভব না হওয়াটা শরীআতের ওযর কি না। অর্থাৎ তিনি শারীরিকভাবে অক্ষম। এক্ষেত্রে তিনি সুস্থ হওয়ার অপেক্ষা করবেন। সুস্থ হয়ে তিনি কাযা আদায় করবেন। আর যদি সুস্থতার আশা না থাকে তাহলে তিনি রোযার জন্য ফিদিয়া দান করবেন। আর যদি অক্ষমতা মানে আলসেমি হয় অথবা ভয় পাচ্ছেন। এটা শরীআতে কোনো গ্রহণযোগ্য ওযর নয়।

১৮১
প্রশ্ন-১৭৮: চাঁদ দেখার সাক্ষ্যদানের ব্যাপারে ইসলামের বক্তব্য জানতে চাই।
উত্তর: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন

صوموا لرؤيته وأفطروا لرؤيته

তোমরা চাদ দেখলে সিয়াম পালন শুরু করো এবং চাঁদ দেখলে ঈদ আদায় করো। এই যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নির্দেশনা, এটা কোনো একক বা ব্যক্তিগত নির্দেশনা নয়। (২৩ সহীহ বুখারি-১৯০৯; মুসলিম-১০৮১)

ইসলামের সামাজিক এবং সামষ্টিক ইবাদতগুলো রাষ্ট্রীয় এবং সমাজ নিয়ন্ত্রিত। কাজেই একজন চাঁদ দেখবে আর বাকি সবাই রোযা রাখবে অথবা যে যেভাবে চায় রোযা রাখবে- এই ব্যবস্থা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দেন নি। অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহর (ﷺ) বলেছেন

الفطر يوم يفطر الناس، والأضحى يوم يضحي الناس

যেদিন সকল মানুষ ঈদুল ফিতর আদায় করবে সেদিনই ঈদুল ফিতর আদায় করতে হবে। যেদিন সকল মানুষ ঈদুল আযহা আদায় করবে সে দিনই ঈদুল আযহা আদায় করতে হবে, অথবা

يوم الأخر يوم ينكر الإمام

রাষ্ট্রপ্রধান যেদিন ঈদুল আযহা আদায় করবেন, সেদিন সবাইকে ঈদুল আযহা আদায় করতে হবে। অর্থাৎ রাষ্ট্র এবং সমাজকে নিয়ে এই উত্সব এবং এই ইবাদতগুলো পালন করতে হবে। এ জন্য চাঁদ দেখার পর তার সাক্ষ্য দেয়া এবং সাক্ষ্য গ্রহণ করার বিষয়টি ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে নারী পুরুষ সাক্ষ্য দিতে পারেন। এক্ষেত্রে যারা চাঁদ দেখবেন তারা চাঁদ দেখা কমিটি অথবা মেজিস্ট্রেট অথবা কাজি, আঞ্চলিক কাজি বা বিচারক- এদের কাছে গিয়ে সাক্ষ্য দেবেন। এবং এই সাক্ষ্য যদি সরকার গ্রহণ করেন, সরকারি ঘোষণার পরে সে দেশের মুসলিমেরা সিয়াম পালন করবেন। এ ব্যাপারে ব্যক্তিগতভাবে সিয়াম পালন করা অথবা ব্যক্তিগতভাবে কেউ কাউকে বলেছে যে, আমি চাঁদ দেখেছি, তার কথার ভিত্তিতে সিয়াম পালন করা- চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে এটা সঠিক পদ্ধতি নয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সময় থেকে চাঁদ দেখার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হত রাষ্ট্রীয়ভাবে।

১৮২
প্রশ্ন-১৭৯: নিজের দেশের সিদ্ধান্তকে বাদ দিয়ে অন্য দেশের মানুষের চাঁদ দেখার ভিত্তিতে ঈদ পালন করা বৈধ কি না?
উত্তর: আমরা একটা হাদীস অনেকেই জানি যে, চাদ দেখে রোযা রাখখা, চাঁদ দেখে ঈদ করো'। কিন্তু এই চাঁদ দেখা, প্রত্যেকে যার যার মতো দেখবে আর ঈদ করবে, একটা জাতির মুসলিম একেকজন একেকভাবে ঈদ করবে- এই ব্যবস্থা ইসলাম অনুমোদন করে না। ইসলামের সামাজিক ইবাদত, যেগুলো অনেক মানুষ একসাথে করে, এগুলো রাষ্ট্র এবং সমাজ নিয়ন্ত্রিত। এ জন্যই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যেদিন সব মানুষ ঈদ করবে, যেদিন রাষ্ট্র প্রধান ঈদ করে তোমরা সেদিন ঈদ করো। আমরা। বর্তমান সময়ে, একই দিনে সারাবিশে ঈদ উদযাপনের দাবি করে, সকল মুসলিমের ভেতর ঐক্য সৃষ্টির আকাঙ্ক্ষায় একই দেশে একাধিক দিনে ঈদ পালনের মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটতে দেখছি। (সুনান তিরমিযি-৮০২ তাবারানি, আল মু'জামুল আওসাত-৬৮০২)

সারা বিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন সম্ভব কি অসম্ভব এটা নিয়ে আলেমগণ আলোচনা করতে পারেন। পর্যালোচনা করতে পারেন। মতামত ব্যক্ত করতে পারেন। তবে আমাদের বুঝতে হবে আল্লাহ তাআলার দীন অত্যন্ত সহজ। রাসূলুল্লাহর (ﷺ) এর সময় থেকে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন দিনে ঈদ পালন হয়েছে। সাহাবিদের সময়ে যে হয়েছে, এটা নিশ্চিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সময়ে যোগাযোেগ ব্যবস্থা কষ্টকর থাকলেও ঈদুল আযহার চাঁদ দেখে ৫/৭ দিনের ভেতরে তল্কালীন মুসলিম বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে খবর পৌছে দেয়া খুবই সম্ভব ছিল। কিন্তু রাসূলুল্লাহর (ﷺ) কখনোই এই ধরনের চেষ্টা করেন নি। সাহাবিদের যুগে আমরা দেখি, যেটা সহীহ মুসলিমসহ অন্যান্য গ্রন্থের হাদীস, সিরিয়াতে যেদিন ঈদ হয়েছে, মদিনাবাসী তার পরের দিন ঈদ করেছেন। সিয়াম যেদিন সিরিয়ায় শুরু হয়েছে, তার পরের দিন মদিনাবাসী সিয়াম শুরু করেছেন। তারা রমাযান মাসের ভেতরেই খবর পেয়েছেন যে, সিরিয়াতে একদিন আগে চাঁদ দেখা গিয়েছে। কিন্তু একদিন পরে ঈদ করার ভেতরে কোনো অকল্যাণ, সংহতি নষ্ট হচ্ছে অথবা মুসলিমদের কোনো ক্ষতি হচ্ছে, আগামীতে যেন এ রকম না হয় সে জন্য কোনো সাবধানতামূলক পদ্ধতি অবলম্বন করা, সিরিয়াতে চাঁদ দেখলে সব দেশে জানিয়ে দেয়া, এসব তারা করেন নি। যুগে যুগে প্রত্যেক এলাকার মানুষেরা নিজ দেশে চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করেছেন। কাজেই এক দেশের মানুষ অন্য দেশের চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করবেন এটাই মূলত অবৈধ। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন

الفطر يوم يفطر الناس

যেদিন মানুষেরা ঈদুল ফিতর আদায় করবেন সেদিনই ঈদুল ফিতর হবে। কাজেই আমি যে সমাজের সাথে বসবাস করছি, সেই সমাজে বসবাস করে অন্য দেশের চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করব- এটা প্রথমত আমার জন্য বৈধ নয়। কারণ, আমার সরকার, আমার জনগণ ওই চাঁদ দেখাকে গ্রহণ করে নি। দ্বিতীয়ত আমি আমার সমাজের ঐক্য বিনষ্ট করেছি। রাসূলুল্লহ (%) এর নির্দেশনা লঙ্ঘন করেছি। অনেক ভাই তাকওয়ার কারণে- রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, চাদ দেখলে রোযা রাখো- অন্য দেশে চাঁদ দেখা গেছে, সে রোযা না রাখলে গোনাহ হবে কি না, তাই আগে থেকে রোযা রাখতে শুরু করেছে, রোযা ৩০ পূর্ণ হয়ে গিয়েছে; ফলে তার দেশের মানুষ পরে ঈদ করবে আর তিনি আগে ঈদ করতে বাধ্য হন। আসলে এটা আমাদের ইলমবিহীন আবেগ। চাঁদ দেখে রোযা রাখো' এটা যেমন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নির্দেশ, তেমনি তোমার দেশের মানুষের সাথে, রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে, রাষ্ট্রের সাথে ঈদ করা- এটাও রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নির্দেশ। উভয় নির্দেশকে সমন্বিতভাবে পালন করতে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফীক দান করুন।

১৮৩
প্রশ্ন-১৮০: রোযা শুরু এবং শেষ করার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে অনুসরণ করতে হবে কি না?
উত্তর: সাহাবিদের যুগ থেকে প্রত্যেক জনগোষ্ঠীর মানুষ তাদের চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করেছেন। তখন টেকনোলজি এতটা উন্নত হয় নি যে, এক দেশের মানুষ অন্য দেশের চাঁদ দেখার খবর জানতে পারবে। দ্বিতীয় যে বিষয়, এক দেশের মানুষ অন্য দেশের চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করতে পারবে কি না এটা নিয়ে উলামায়ে কেরাম গবেষণা করতে পারেন। উম্মতের ঐক্যের প্রয়োজন আছে। তবে যতক্ষণ না রাষ্ট্র স্বীকৃতি দেবে, ততক্ষণ একজন মুসলিমকে তার দেশের এবং স্বজাতির চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করতে হবে।

১৮৪
প্রশ্ন-১৮১: চাঁদ দেখা কি জরুরি?
উত্তরঃ জি, জরুরি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) চাঁদ দেখার সাথে সিয়াম পালনকে জুড়ে দিয়েছেন। কাজেই মুসলিম উম্মাহ এই বিষয়টাকে ফরযে কেফায়া হিসেবে গণ্য করেছেন। কেউ না কেউ চাঁদ দেখবে, সাক্ষ্য দেবে। সাক্ষ্য রাষ্ট্র যখন গ্রহণ করবে তখন সবাই সিয়াম পালন করবে। এটা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর বিভিন্ন হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি। কাজেই এই ব্যাপারে অবহেলা করা, শুধুমাত্র পঞ্জিকার উপর নির্ভর করা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নির্দেশনার সাথে সাংঘর্ষিক।

১৮৫
প্রশ্ন-১৮২: সিয়াম পালনের ব্যাপারে মুসলিমগণ কেন ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন না?
উত্তর: ঐক্য অবশ্যই ইসলামের মূল নির্দেশনা। তবে এ ক্ষেত্রে ঐক্যের পর্যায়গুলো আমাদের বুঝতে হবে। একটা হল একটা দেশ, একটা সমাজের মানুষের ঐক্য। আরেকটা হল সারা বিশ্বের মুসলিমদের ঐক্য। একটা জাতি, একটা দেশ, একটা সমাজে বসবাসরত মুসলিমদের ঐক্য- এটা আমাদের জন্য ফরয। আর সারাবিশ্বের মুসলিমদের সিয়াম পালনের ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ হওয়া না হওয়া এই বিষয়ে গবেষক আলেমদের মতবিনিময় করার, মতভেদ করার, সিদ্ধান্ত গ্রহণের অবকাশ রয়েছে। কিন্তু আমরা অন্তত, ন্যূনতম একই দেশের মানুষ একসাথে ঈদ পালন করব এটা ইসলামের নির্দেশনা। কাজেই কেউ যদি সারা বিশ্বের মুসলিমদের ঐক্যের দাবিতে একই দেশের মুসলিমদের ঐক্য বিনষ্ট করে, সেটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক হবে। সারা বিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন সম্ভব কি অসম্ভব এটা নিয়ে গবেষকদের ভেতরে বিভিন্ন মত রয়েছে। এ বিষয়ে দীর্ঘ গবেষণার প্রয়োজন আছে। কারণ এই বিষয়টা নতুন। প্রত্যেক দেশে আঞ্চলিকভাবে চাদ দেখে ঈদ পালন করাটা বিগত দেড় হাজার বছর ধরে মুসলিম সমাজে চলে আসছে। আর মুসলিম সমাজের নিয়ম দীন ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোনো নতুন বিষয় মুসলিম সমাজের ভেতরে, দীনের ভেতরে অন্তর্ভুক্ত করতে হলে এটা নিয়ে উলামায়ে কেরাম ব্যাপকভাবে গবেষণা পর্যালোচনা করে থাকেন। এবং এটা করা উচিত। কারণ, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে আমরা যে রীতি পেয়েছি এটা যুগের পরিবর্তনে কোনো কিছু পরিবর্তন করতে হবে কি না এটা যাচাই বাছাই করাটাই ইসলামের নির্দেশনা।

১৮৬
প্রশ্ন-১৮৩: বর্তমান সময়ে চাঁদ দেখতে করণীয় কী?
বর্তমান সময়ে নগর অঞ্চলে চাঁদ দেখা কঠিন। উঁচু উঁচু বিন্ডিং, আকাশে কারখানার ধোঁয়া, অনেক সময় চেষ্টা করলেও চাঁদ দেখা যায় না। এক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী?

উত্তর: চাঁদ দেখা ফরযে কেফায়া। একটা দেশের এক জায়গায় দেখা না গেলে অন্য জায়গায় তো দেখা যায়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মুসলিমরা চাঁদ দেখার চেষ্টা করবেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের জন্য দীনকে সহজ করে দিয়ে গেছেন। আমাদের সাধ্যের ভেতরে থেকে দেখার চেষ্টা করব।

১৮৭
প্রশ্ন-১৮৪: চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা বৈধ কি না?
উত্তর: স্বাভাবিকভাবে মাটিতে দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখা- এটাই ইসলামের নির্দেশনা। স্বভাবিকতার বাইরে যাওয়ার নির্দেশনা ইসলাম আমাদেরকে দেয় নি। কাজেই আগে থেকে চাঁদ দেখা, অথবা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে চাঁদ দেখা নিশ্চিত করা- এগুলো আমাদের ইবাদত পালনের জন্য জরুরি নয়। স্বাভাবিকভাবে চাঁদ দেখার চেষ্টা করতে হবে। এর মাধ্যমে চাঁদ দেখে আমরা রোযা শুরু করব। অথবা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে চাদ দেখার কোনো বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে। দেশের যেখান থেকে সহজে চাঁদ দেখা যায়, সেখান থেকে চাঁদ দেখে তারা সরকারের কাছে সাক্ষ্য প্রদান করবেন এবং এর ভিত্তিতে সরকার চাঁদ দেখার ঘোষণা করবেন।

১৮৮
প্রশ্ন-১৮৫ : এক ব্যক্তি রোযা শুরু করেছেন এক দেশে এবং শেষ করেছেন অন্য দেশে। এক্ষেত্রে তিনি কী করবেন?
এক ব্যক্তি রোযা শুরু করেছেন এক দেশে এবং শেষ করেছেন অন্য দেশে। এর ফলে রোযা কম বা বেশি হয়ে যাচ্ছে। যেমন ধরুন, কেউ সৌদি আরব থেকে রোযা রাখা শুরু করলেন, এবং রমাযানের শেষের দিকে তিনি বাংলাদেশে চলে আসলেন। সৌদিতে তিনি একদিন আগে রোযা রাখা শুরু করেছিলেন, ফলে যেদিন তার রোযা পূর্ণ হয়ে গেছে, ত্রিশটা হয়ে গেছে, সেদিন বাংলাদেশে রোযা চলছে। তার একটা রোযা বেশি হয়ে গেল। এক্ষেত্রে তিনি কী করবেন?

উত্তরঃ এক্ষেত্রে আমাদের বুঝতে হবে, ইসলাম সামাজিক ঐক্য এবং সংহতির উপর অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। এক্ষেত্রে দুই ধরনের সম্ভাবনা আছে। একটা হল রোযা কম হওয়া, আরেকটা হল রোযা বেশি হওয়া। অর্থাৎ হয়ত তিনি বাংলাদেশ থেকে অথবা জাপান থেকে অথবা এমন কোনো দেশ থেকে সিয়াম পালন শুরু করেছেন, যেখানে

পরে রোযা শুরু হয়েছে। তিনি বাংলাদেশ থেকে সিয়াম শুরু করে সৌদি আরবে চলে গেছেন। সেখানে গিয়ে তার যেদিন ২৮ রোযা হল, সেইদিনে সৌদি আরবে ঈদ হয়ে গেল। তিনি অবশ্যই ওই সমাজের মানুষের সাথে ঈদ আদায় করবেন। তাদের ঈদের দিনে তিনি সিয়াম পালন করতে পারবেন না। তবে একটা রোযা তাকে ঈদের পরে আদায় করে দিতে হবে। ঠিক তেমনিভাবে তিনি যখন সৌদি আরবে সিয়াম পালন শুরু করে বাংলাদেশে চলে আসবেন, হয়ত যেদিন সৌদি আরবে ঈদ হচ্ছে, সেই দিনে বাংলাদেশে সিয়াম পালন হচ্ছে। তিনি এদেশের মানুষের সাথে সিয়াম পালন করবেন এবং এদেশের মানুষের সাথে ঈদ পালন করবেন। কাজেই সামাজিক ঐক্য, সামষ্টিক ইবাদতগুলো একত্রে আদায় করার ব্যাপারে ইসলাম যে নির্দেশনা আমাদের দিয়েছে, সে ব্যাপারে আমাদের সচেতন থাকতে হবে।

১৮৯
প্রশ্ন-১৮৬: যে ব্যক্তি যে দেশে বসবাস করেন, তিনি কি সেই দেশের মানুষের সাথে ঈদ করতে বাধ্য।
উত্তরঃ জি, ইসলামের নির্দেশনা, যেদিন সব মানুষ ঈদ করবে, সিয়াম শেষ করবে, ওই দিনে তোমাদের সিয়াম শেষ করতে হবে, একসাথে ঈদ করতে হবে। সারা বিশ্বের মানুষের সাথে এক হতে গিয়ে নিজের দেশের মানুষের বিপরীতে যাওয়া, ঐক্য বিনষ্ট করা মুমিনের জন্য বৈধ নয়।

১৯০
প্রশ্ন-১৮৭: মনে মনে রোযা ভেঙে ফেলার পর কিছু না খায়, তাহলে তার রোযা ভেঙে যাবে, না কি রোযা পূর্ণ হয়ে যাবে?
কোনো মানুষ যদি মনে মনে রোযা ভেঙে ফেলার অর্থাৎ ইফতার করার নিয়ত করে, কিছু না খায়, তাহলে তার রোযা ভেঙে যাবে, না কি রোযা পূর্ণ হয়ে যাবে?

উত্তর: মূলত ইফতার একটা কর্ম। মনের নিয়তের সাথে কর্মের সমন্বয়ে এই ইবাদতটা পূর্ণ হয়। কাজেই শুধু নিয়ত করেছেন, কর্ম করেন নি, এটাতে ইবাদত হয় না। এ জন্য কেউ কেউ মনে মনে নিয়ত করেছেন- আমি রোযা ভেঙে দিলাম- এটা যথেষ্ট নয়। তবে কখনো কখনো এমন হতে পারে, ইফতারের সময় হয়েছে, কিন্তু তিনি কোনোভাবে ইফতার করার সুযোগ পাচ্ছেন না, তার হাতের কাছে ইফতার করার কোনোই উপকরণ নেই; তিনি নিয়ত করবেন আমি আমার সিয়াম ভেঙে দিলাম। আমি ইফতার করলাম। এটাতে যা হয়, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর যে নির্দেশনা, দ্রুত ইফতার করার নির্দেশনা, এটা পালনের জন্য একটা ধাপ আমাদের এগিয়ে যাওয়া হয়।

১৯১
প্রশ্ন-১৮৮: কেউ যদি নিজের শরীরের ভেতর আঙুল ঢুকিয়ে দেন, রোযা ভাঙবে কি না?
উত্তর: সিয়াম ভাঙার মূল কারণ পানাহার। পানাহারের বিধানে যা রয়েছে, অর্থাৎ আমাদের পাকস্থলিতে খাদ্য-পানীয় প্রবেশ করানো। কাজেই যে কাজ করলে পাকস্থলিতে খাদ্য-পানীয় প্রবেশ করে না, এর কারণে সিয়াম ভঙ্গ হয় না। আগের যামানায় অনেক ফকীহ অনেক সময় বলেছেন, কেটে গেলে সিয়াম ভেঙে যাবে অথবা দেহের ভেতরে ভেজা আঙুল ঢুকালে সিয়াম ভেঙে যাবে, কানের ভেতরে ওষুধ দিলে গলায় অনুভূত হলে সিয়াম ভেঙে যাবে- এই কথাগুলো কোনো কোনো ফকীহ বলেছেন। কিন্তু ফকীহদের সঠিক ও সুচিন্তিত মত হল, পানাহারের বিধানে আসে না এমন কোনো কর্মে সিয়াম ভাঙবে না। শরীরের ভেতর তো অনেক কিছুই প্রবেশ করে। যেমন আমরা যখন গোসল করি, পানিতে ডুব দেই, আমাদের লোমের গোড়া দিয়ে শরীরে পানি প্রবেশ করে। আমরা যখন কুলি করি, কুলি করে পানি ফেলে দিই, কিছু পানি গালের ভেতর থেকে যায়, যেটা আস্তে আস্তে গলা দিয়ে নেমে যায়। এগুলো নিয়ে আমাদের চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। মূলত যা পানাহারের বিধানে নয়, সে জাতীয় কর্মের দ্বারা সিয়াম ভাঙে না।

১৯২
প্রশ্ন-১৮৯: কিছু মানুষ নকল আযান শুনে সময়ের আগেই ইফতার করে ফেলেছে। তাদের রোযার বিধান কী হবে?
এক ব্যক্তি ইফতারের সময় হওয়ার আগেই মুআজ্জিনের সুর নকল করে আযান দিয়েছে। ফলে কিছু মানুষ ওই নকল আযান শুনে সময়ের আগেই ইফতার করে ফেলেছে। তাদের রোযার বিধান কী হবে?

উত্তর: তারা যেহেতু সময়ের আগেই ইফতার করেছেন, ওই রোযাটা পরে তাদের কাযা করতে হবে।

১৯৩
প্রশ্ন-১৯০: রোযা অবস্থায় চোখের ড্রপ ব্যবহার করার বিধান কী?
উত্তর: রোযা অবস্থায় চোখের ড্রপ, কানের ড্রপ ব্যবহার করা যাবে। এগুলোর কারণে সিয়াম ভঙ্গ হবে না। এমনকি কানের ওষুধ, চোখের ওষুধের স্বাদ যদি গলায় অনুভূত হয়, তবুও সিয়াম ভঙ্গ হবে না। কারণ, এগুলো পানাহারের বিষয় নয়। কান এবং চোখ পান বা আহারের পথও নয়। এ জন্য চোখ বা কানে ওষুধ ব্যবহার করলে সিয়াম ভঙ্গ হবে না।

১৯৪
প্রশ্ন-১৯১: সাহরি খাওয়া কোন সময় শেষ করতে হবে?
উত্তরঃ আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেছেন

وكلوا واشربوا حتى يتبين لكم الخيط الأبيض من الخيط الأسود من الفجر

সুবহে সাদিকের সাদা সুতা সুবহি কাযিবের কালো সুতার ভেতর থেকে যখন প্রকাশ পেয়ে যায় তখনই তোমরা পানাহার বন্ধ করে দাও। আর সুবহে সাদিক প্রকাশের সাথে সাথে ফজরের ওয়াক্ত হয়। কাজেই ফজরের আযানের সাথে সাথেই আমাদের পানাহার বন্ধ করতে হবে। পানাহার চালিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সুবহে সাদিক প্রকাশ পেয়েছে, পানাহার বন্ধ করে দিতে হবে। আর সাধারণভাবে মুআজ্জিনরা রমাযান মাসে সুবহে সাদিকের শুরুতেই আযান দেন। আগে দেন না। পরেও দেন না। এ জন্য সবচে' বড় বিষয়, সুবহে সাদিক হয়েছে কি না, হয় ঘড়ি দেখে অথবা ক্যালেন্ডার দেখে বা আযানের মাধ্যেমে নিশ্চিত হলে এরপরে আর খাওয়া যাবে না। খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। এমন যদি হয়, বাচ্ছেন, আযান শুরু হয়ে গেছে, সাথে সাথে খাবারের পাত্র রেখে দিতে হবে। খাবার আর মুখে নেয়া যাবে না। এই অবস্থায় যদি খাওয়া হয় তাহলে এটা সুবহে সাদিকের পরে খাওয়া হিসেবে গণ্য হবে এবং এটা রোযা নষ্ট করে দেবে। ২৩ সূরা বাকারাহ-১৮৭

১৯৫
প্রশ্ন-১৯২: রোযা রেখে ইনহিলার ব্যবহার করা যাবে কি না?
উত্তর: আসলে ইনহিলারের বিভিন্ন পর্যায় রয়েছে। আমরা আগেই বলেছি, সিয়াম ভঙ্গ হবে আমাদের পাকস্থলিতে খাদ্য-পানীয় গেলে। যেসব ইনহিলারের মাধ্যমে তরল পানীয় আমাদের পাকস্থলিতে যায়, সেগুলো দ্বারা সিয়াম ভেঙে যাবে বলে অধিকাংশ ফকীহ মত প্রকাশ করেছেন। আর যে ইনহিলারে শুধু বাতাস ফুসফুসে যায় এগুলোর মাধ্যমে সিয়াম ভঙ্গ হবে না। মূলত ইনহিলারের প্রকৃতি, এটার ব্যবহার পদ্ধতির উপর নির্ভর করে সিয়াম ভঙ্গ হওয়া অথবা না হওয়া। এই ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকার চেষ্টা করতে হবে। বিশেষ করে যারা নিয়মিত ইনহিলার ব্যবহার করেন, তারা যদি সাহরির সময় এক ডোজ ব্যবহার করেন, সাধারণত তারা ইফতার পর্যন্ত চলতে পারেন। এরপরেও যারা ইনহিলার ব্যবহার করতে বাধ্য হন, তারা ডাক্তারদের কাছে পরামর্শ নেবেন। সর্বোপরি কারো যদি এমন হয়, সিয়ামরত আছেন, ইনহিলার ব্যবহার না করলে অসুস্থ হয়ে পড়বেন, তিনি অবশ্যই ব্যবহার করবেন। এক্ষেত্রে তার রোযা কাযা করা লাগবে কি না এ ব্যাপারে ফকীহদের মতভেদ রয়েছে। অনেক ফকীহ বলেছেন, ইনহিলার যেহেতু পানাহারের বিধানে নয় এটাতে সিয়াম ভাঙবে না। অন্যরা বলেছেন, যদি ইনহিলারের তরল ওষুধ পাকস্থলিতে যায়, তাহলে রোযা ভাঙবে, নইলে ভাঙবে না।

১৯৬
প্রশ্ন-১৯৩: কেউ যদি ভুল করে পানাহার করে তার বিধান কী?
উত্তরঃ ভুল করে পানাহার করলে সিয়াম নষ্ট হয় না। মনে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে পানাহার বন্ধ করে দিতে হবে এবং ওই সিয়াম স্বাভাবিকভাবে চালিয়ে যেতে হবে।

১৯৭
প্রশ্ন-১৯৪: শরীর থেকে রক্ত, পুঁজ ইত্যাদি বের হলে রোযা ভাঙবে কি না?
উত্তর: আসলে সিয়াম বা রোযা ভঙ্গ হয় পানাহারের কারণে। পানাহার জাতীয় কর্ম এবং স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মাধ্যমে সিয়াম ভঙ্গ হয়। শরীর থেকে কিছু বেরোলে সিয়াম ভঙ্গ হবে এটা মূল নিয়ম নয়। রাসূলুল্লাহর (ﷺ) নিজে সিয়ামরত অবস্থায় শরীর কেটে রক্ত বের করেছেন। এটা বুখারিসহ অন্যান্য হাদীসের গ্রন্থে এসেছে।

اختكم التي صلى الله علي وسلم وهو صائم

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সিয়াম পালনরত অবস্থায় অস্ত্রের মাধ্যমে শরীর ছিদ্র করে রক্ত বের করেছেন। (সহীহ বুখারি-১৯৩৯; আবু দাউদ-২৩৭২; তিরমিযি-৭৭৬।) কাজেই রক্ত, পুঁজ বা এই জাতীয় কিছু শরীর দিয়ে বের হলে সিয়াম ভঙ্গ হবে এমন ধারণা মোটেও ঠিক নয়। রক্ত বের হলে, রক্ত দিলে রোযা ভাঙবে না।

১৯৮
প্রশ্ন-১৯৫: কোনো কারণে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে গেলে রোযা ভাঙবে কি না?
উত্তর: জি না। অজ্ঞান হলে সিয়াম ভাঙবে না।

১৯৯
প্রশ্ন-১৯৬: গোসল ফরজ অবস্থায় সিয়াম পালন শুরু করলে রোযা নষ্ট হবে কি?
গোসল ফরজ অবস্থায় কেউ যদি সিয়াম পালন শুরু করেন, অর্থাৎ রমাযানের রাতে গোসল ফরয হয়েছে, অলসতার কারণে বিলম্ব করেছেন, এতে রোযা নষ্ট হবে কি জানতে চাই।

উত্তরঃ এ কারণে সিয়াম নষ্ট হবে না। তবে ফজরের সালাত যদি ওয়াক্ত মতো আদায় না করেন এটা মহাপাপ হবে। একটা সিয়াম নষ্ট করার চেয়ে একটা সালাত নষ্ট করা অনেক বড় পাপ। এ জন্য কেউ যদি সুবহে সাদিকের আগে সাহরি খান, সুবহে সাদিকের পরে গোসল করে ফজরের সালাত আদায় করেন তাহলে কোনো সমস্যা নেই।

২০০
প্রশ্ন-১৯৭: কবীরা গোনাহ করলে সিয়াম নষ্ট হয় কি না জানাবেন।
উত্তর: সিয়ামের দুটো দিক রয়েছে। একটা হল একদম নষ্ট হয়ে যাওয়া। আরেকটা হল, ছওয়াব, বরকত, উপকারিতা, আল্লাহর সন্তুষ্টি নষ্ট হয়ে যাওয়া। সাধারণভাবে আমরা জানি, সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার এবং দাম্পত্য সম্ভোগ থেকে বিরত থাকার নাম সিয়াম। এই বিষয়গুলো স্বাভাবিকভাবে সিয়াম নষ্ট করে। তবে সিয়াম অর্থ এই নয় যে, আল্লাহ তাআলা যা হালাল করেছেন এগুলো আমরা বর্জন করব, আর আল্লাহ তাআলা যা হারাম করেছেন সেগুলোর ভেতর পুরোপুরি ডুবে যাব। সিয়াম অর্থ আমরা আল্লাহর নিষিদ্ধ হারামগুলো পুরোপুরি বর্জন করব এবং যেগুলো হালাল সেগুলো আমরা কিছু সময়ের জন্য বর্জনের মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন করব। যেমন শূকরের মাংস হারাম, সুদ হারাম, ঘুষ হারাম, আর আমার হালাল টাকা দিয়ে কেনা ফ্রিজে রাখা ঠান্ডা পানীয় অথবা খাদ্য এগুলো হালাল। আমি সিয়াম পালনরত অবস্থায় হালাল খাদ্য গ্রহণ করলাম না। কারণ, আল্লাহ তাআলা এতে অসম্ভষ্ট হবেন, গোনাহ হবে, সিয়াম নষ্ট হয়ে যাবে। অথচ আমি হারামগুলো ভক্ষণ করলাম, সুদ খেলাম, ঘুষ খেলাম; এটার নাম সিয়াম নয়। এ জন্য সিয়াম অবস্থায় কবিরা গোনাহ করলে সিয়ামের মূল উদ্দেশ্য নষ্ট হয়। তবে ওই সিয়াম কাজা করার প্রয়োজন হয় না।

সিয়ামের বরকত, ছওয়াব, সিয়ামের উদ্দেশ্য- এগুলো ব্যাহত হয়। আর এ জন্যই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন

من لم يدع قول الزور والعمل به، فليس له حاجة في أن يدع طعامه وشرابه

যে ব্যক্তি অন্যায় কর্ম, অন্যায় কথা পরিত্যাগ করতে না পারল, ওই ব্যক্তি শুধু শুধু পানাহার বর্জন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের ক্ষেত্রে তার কোনো উপকার হল না। (বুখারি-১৯০৩; আবু দাউদ-২৩৬২; তিরমিযি-৭০৭) কাজেই সিয়াম আমরা পালন করব, যে বাহ্যিক বিষয়গুলো সিয়াম নষ্ট করে, সেগুলো তো বর্জন করবই, এর আগে আল্লাহ যেগুলো স্থায়ীভাবে হারাম করেছেন সেগুলো আমাদের বর্জন করতে হবে।

২০১
প্রশ্ন-১৯৮: আল্লাহর উপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখি। কিন্তু চাকরির ব্যাপারে ভীষণ দুশ্চিন্তায় আছি। এই অবস্থায় কী করতে পারি?
আল্লাহ সর্বশক্তিমান, রিযিকদাতা। আমি আল্লাহর উপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখি। কিন্তু বর্তমান সময়ে টাকা ছাড়া চাকরি পাওয়া যায় না। চাকরির ব্যাপারে আমি ভীষণ দুশ্চিন্তায় আছি। এই অবস্থায় আমি কী করতে পারি?

উত্তর: দুশ্চিন্তা তোমার প্রাপ্য। কারণ, তুমি চাকরিকে গোল মনে করেছ। চাকরি তো গোল না। চাকরি গোল অর্জনের মাধ্যম মাত্র। চাকরি, ব্যবসা বা বিভিন্ন কর্মের মাধ্যমে গোল অর্জন করতে হবে এটাই হল আসল কথা।

২০২
প্রশ্ন-১৯৯: আমার পৃথিবীটা সংকীর্ণ হয়ে গেছে। আশা নেই। আছে দুশ্চিন্তা আর হতাশা। মরে গিয়ে বাঁচতে চাই সুন্দরভাবে।
আমার পৃথিবীটা সংকীর্ণ হয়ে গেছে। সব মানুষকে বিরক্তিকর প্রাণি মনে হয়। আশা নেই। আছে দুশ্চিন্তা আর হতাশা। কেউ আমাকে পছন্দ করে না। আমি মরে যেতে চাই। মরে গিয়ে বাঁচতে চাই সুন্দরভাবে। উত্তর: শয়তানের খপ্পরে পড়ে গেছ বাবা! আমার কাছে এসো, তোমার কী কী নেই সব দেখিয়ে দেব। তোমার চোখদুটো কানা হয়ে গেছে নিশ্চয়! তোমার শরীর ফেটে রক্ত বের হচ্ছে নিশ্চয়! একজন মানুষ ক্যান্সার আক্রান্ত, জানে, সে কিছুদিন পর মারা যাবে, তাও তার মনে আনন্দ আছে। আমার এক ফুফাতো ভাই, বেচারা ক্যান্সারে মারা গেছে। ডাক্তার বলেছিল বাঁচবে না। সে বাঁচবে না’র ভেতর দিয়ে সন্তানদের জন্য ঘরবাড়ি অনেক কিছু বানিয়েছে। মরার সময় তো মরবই। তো যার শরীর ফেটে রক্ত পড়ছে, যার গায়ে ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে, তার কোনো হতাশা নেই, আর সব হাতাশা তোমার ভেতর চলে আসল? শয়তানের মুরীদ হয়ে গেছ।

২০৩
প্রশ্ন-২০০: আমার নফল নামায, নফল রোযা, ভালো কাজ করার ঈমানি শক্তি চলে গেছে।
আমার নফল নামায, নফল রোযা, ভালো কাজ করার ঈমানি শক্তি চলে গেছে। এখন শুধু টিকে আছে পাঁচ ওয়াক্ত নামায। আগে প্রত্যেক রাতে কুরআন পড়তাম। এখন সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে। আমি খুব দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।

উত্তর: শয়তান আপনাকে মুরীদ বানিয়েছে। আপনার একজন পীর লাগবে। সাহেব বা সাথী লাগবে। শয়তানের বিরুদ্ধে একজন শক্তিশালী সাথী লাগবে।

২০৪
প্রশ্ন-২০১: জানাযায় মহিলাদের অংশ নেয়া যায় কি না জানাবেন।
উত্তর: অবশ্যই নেয়া যায়। জানাযায় মহিলাদের অংশ নেয়া সুন্নাত। হাদীসে এসেছে, মেয়েরা গোরস্তানে যাবে না, জানাযায় যেতে পারবে।

২০৫
প্রশ্ন-২০২: স্ত্রী মারা গেলে স্ত্রীর লাশ স্বামী দেখতে পারে কি না জানতে চাই।
উত্তর: বিষয়টা আমাদের দেশে জটিল। স্বামী মারা গেলে স্ত্রী দেখতে পারবে, এটা সাধারণ কথা। আর স্ত্রী মারা গেলে স্বামী দেখতে পারবে কি না এটা নিয়ে বিভিন্ন কথা আছে। আমাদের দেশের হানাফি মাযহাবের মত হল, স্ত্রীর লাশ স্বামী দেখতে পারবে। কারণ, মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে বিবাহ শেষ। বিবাহ যে শেষ হয়েছে এটার প্রমাণ হল, স্ত্রীর মৃত্যুর পরে স্ত্রীর বোনকে ওই স্বামী বিবাহ করতে পারে। কিন্তু জীবিত থাকা অবস্থায় পারত না। তালাক দিলে অথবা মারা গেলে পারে। এ কারণে হানাফি মাযহাবের আলেমগণ বলেন, স্ত্রী মারা গেলে স্বামী আর তাকে দেখতে পারবে না। স্ত্রী বেগানা মহিলায় পরিণত হবে। তবে হাদীসের আলোকে এই মতটা জোরালো না। হাদীসে আসছে, ফাতেমা রা. মারা গেলে আলি রা, তাঁকে গোসল দেন। আবু বাকার রা.এর স্ত্রী মারা গেলে তিনি তাঁকে গোসল দিয়েছেন। আর ‘না’র পক্ষে যে যুক্তিটা দেয়া হয়, ওটা জোরালো যুক্তি না। কারণ, মৃত্যুর কারণে বিবাহের জাগতিক সম্পর্ক ছিন্ন হওয়া আর বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হওয়া- দুটো এক নয় কিন্তু। কেননা, কুরআনে আছে, এই স্ত্রী আবার আখিরাতে বউ হবে। ফলে একেবারে নষ্ট হয়ে গেল, এ রকম মনে হয় না। আল্লাহই ভালো জানেন।

২০৬
প্রশ্ন-২০৩: কতটুকু রক্ত বের হলে ওযু নষ্ট হয়?
উত্তর: রক্ত বেরিয়ে গড়িয়ে পড়লে ওযু ভেঙে যায়। এটাই সহজ নিয়ম।

২০৭
প্রশ্ন-২০৪: খুব ইচ্ছা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ব। কিন্তু হল না। মরে গেলে যদি জান্নাতে যেতে পারি তবে আল্লাহর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ব।
খুব ইচ্ছা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ব। কিন্তু হল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন সংখ্যা খুবই কম। তাই খুব হতাশ লাগে। তবে আল্লাহর বিশ্ববিদ্যালয়ে সিটের অভাব নেই। মরে গেলে যদি জান্নাতে যেতে পারি তবে আল্লাহর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ব।

উত্তর: বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াটা কি কোনো সফলতা? বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াটা আমাদের জীবনের লক্ষ্য নাকি লক্ষ্য অর্জনের মাধ্যম? বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়ে তুমি প্রধানমন্ত্রী হতে পার, প্রেসিডেন্ট হতে পার, কোটিপতি হতে পার তাহলে বিশ্বদ্যিালয়ে লাথি মারি! সারাদিন বসে বসে স্যারদের বকা শোনার দরকার কী! আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য হল সুখে শান্তিতে বসবাস করা। অথবা বড় ধনী হওয়া। ঝিনাইদহে তো অনেক ধনী, অনেক পাওয়ারফুল লোক আছে, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে নি। বিশ্ববিদ্যালয় তো আসলে কোনো লক্ষ্য নয়। লক্ষ্য অর্জনের পথ মাত্র। কাজেই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অত টেনশন কোরো না। বরং তোমার জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করো যে- আমি একজন ভালো মুসলিম হব। সফল মানুষ হব। মানুষ হওয়ার অনেক পথ আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিট কম, কিন্তু মানুষ হওয়ার জন্য অনেক সিট আছে।

২০৮
প্রশ্ন-২০৫: বিশ্ব মুসলিমদের চরম অবক্ষয়ের কারণ কী? পরিত্রাণ লাভের জন্য আলেমগণ কোনো কাজ করছেন কি না?
সারা বিশ্বে মুসলিমদের চরম অবক্ষয়ের কারণ কী? এর থেকে পরিত্রাণ লাভের জন্য অর্থাৎ মুসলিমদের হারানো গৌরব ফিরে পাওয়ার জন্য আপনার মতো আলেমগণ বিশেষ কোনো কাজ করছেন কি না?

উত্তর: আমি ঐক্যবদ্ধ করার কাজ করছি। আর শয়তান তার কয়েক কোটি শিষ্য এবং কোটি কোটি ডলার নিয়ে বিচ্ছিন্ন করার কাজ করে যাচ্ছে। তো আমরা আর কতদূর যাব! দেশে মসজিদ বেড়েছে, মুসল্লি বেড়েছে, হাজার হাজার মাদরাসা হয়েছে, এসব দেখে শয়তান কষ্ট পায় না। কিন্তু মুসলিমরা এক হওয়ার কাজ করছে, এটা শুনলে শয়তান খুবই কষ্ট পায়। একবার মক্কায় নামায পড়ে সিঁড়ি দিয়ে নামছি, ঢাকার এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, তার সাথে দেখা। বললেন, স্যার, মুসলিমদের ঐক্যের জন্য কী করা যায়? আমি বললাম, আস্তে বলেন। শয়তান শুনলে নারাজ হয়ে। যাবে। এটা বাদে আপনি যা খুশি করেন, জিকির করেন, হজ্জ করেন- শয়তান নারাজ হবে না। কিন্তু এই কথাটা বললে শয়তান বেশি নারাজ হয়ে যায়।

২০৯
প্রশ্ন-২০৬: জীবজন্তুর ছবিঅলা পোশাক পরে নামায পড়লে নামায হবে কি না?
উত্তর: জি, নামায হবে। কিন্তু মাকরুহ হবে। গোনাহ হবে। এ জন্য আপনারা ছবিঅলা জামাকাপড় পরবেন না।

২১০
প্রশ্ন-২০৭: জোহরের চার রাকআত সুন্নাত নামায না পড়লে কোনো গোনাহ হবে কি?
জোহরের চার রাকআত সুন্নাত নামায না পড়লে কোনো গোনাহ হবে কি। আমাদের নবী (ﷺ) এই সুন্নাত পড়তেন কি না জানতে চাই।

উত্তর: আমাদের নবী (ﷺ) এই সুন্নাত নিয়মিত পড়তেন। ছাড়তেন না। গোনাহের কথা আপনারা কেন বলেন বুঝি না। আমাদের ছাত্ররা বলে, স্যার, তারাবীহ আট রাকআত পড়লে তো গোনাহ নেই! স্যার, সুন্নাত না পড়লে গোনাহ তো নেই! আমি বলি, তোমাকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি, তুমি যদি তোমার ইনকোর্স পরীক্ষা না দাও, এ্যাসাইনমেন্ট দাও, কোনো গোনাহ হবে না। পাশ করে যাবা। শুধু দশ নাম্বার মাইর’ যাবে। গোনাহ হওয়া মানে তো ফেল করা। দশ নাম্বার মাইর যাওয়া তো কোনো গোনাহ না। সোয়াব মাইর যাওয়া। গোনাহ মানে হল ফেল করা। আর সোেয়ব মাইর যাওয়া মানে নাম্বার কাটা যাওয়া। তো তুমি অ্যাসাইনমেন্ট দিবা না, মাত্র দুই নম্বর কাটা যাবে। ওরা বলে, না স্যার, অ্যাসাইনমেন্ট দেব। কত কষ্ট করে দুই নাম্বারের জন্য! স্যার দেয় এক নাম্বার। তো আমরা কোনটা নিয়ে চিন্তা করব? গোনাহ না হওয়া নাকি সোয়াব বেশি হওয়া? এই চিন্তায় আমরা জীবন শেষ করে ফেলছি। আমরা নামায পড়ি কি আল্লাহর জন্য? না। নামায পড়লে আমার লাভ হবে, আমার সোয়ব হবে, আমার বরকত বাড়বে, আমার দুনিয়ার জীবন সুন্দর হবে। আমি আল্লাহকে যতবার ডাকতে পারব ততবার আমার দুআ কবুল হবে। এই জন্য নামায পড়ি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিয়মিত এই সুন্নাত পড়তেন। এবং বলেছেন, যারা জোহরের আগে চার রাকআত, জোহরের পরে দুই রাকআত, মোট বারো রাকআত প্রতিদিন সুন্নাত পড়বে- আল্লাহ তাদের জন্য জান্নাতে বাড়ি বানিয়ে রাখবেন। গোনাহের ব্যাপারটা হল- যদি কেউ প্রয়োজনে মাঝেমধ্যে ছাড়ে, ইনশাআল্লাহ, গোনাহ হবে না। কিন্তু অভ্যাসে পরিণত করলে গোনাহ হবে।

২১১
প্রশ্ন-২০৮: এক মেয়ে দুপুরে বুঝতে পেরেছে যে, তার পিরিয়ড রাত্রে বন্ধ হয়েছে। তার কি ফজরের নামায কাযা করতে হবে?
এক মেয়ের পিরিয়ড শেষ হয়েছে রাতের বেলা। তখন সে বুঝতে পারে নি। দুপুরে বুঝতে পেরেছে যে, রাত্রে বন্ধ হয়েছে। তার কি ফজরের নামায কাযা করতে হবে?

উত্তর: জি, ফজরের নামায কাযা করতে হবে।

২১২
প্রশ্ন-২০৯: মানুষের জীবনে জীন বা ফেরেশতার প্রভাব কতটুকু?
মানুষের জীবনে জীন বা ফেরেশতার প্রভাব কতটুকু? মানুষ তো নিজের পদক্ষেপ নিজেই নেয়। জীন কি মানুষের পাপের আর ফেরেশতা মানুষের পূণ্যের সুপারিশ করবে? আমরা যদি মুখে প্রকাশ না করে কিছু লিখি তাহলে কি তারা বুঝতে পারে? তাদের কি আলাদা ভাষা আছে?

উত্তর: গায়েবি বিষয়ের কথা যতটুকু হাদীসে এসেছে এর বাইরে বিস্তারিত বলতে পারব। ওরা আমাদের সাথে থাকে। জীন আমাদের অনুপ্রেরণা দেয়। মনের ভেতর খারাপ কাজ, খারাপ চিন্তা জাগ্রত করে। কিন্তু কাজে বাস্তবায়ন করা আমাদের ইচ্ছা। ফেরেশতা আমাদের সুপথের অনুপ্রেরণা দেয়। কিন্তু গ্রহণ করা না করা আমাদের ইচ্ছা। তারা আমাদের মতোই মাখলুক। আমাদের আশেপাশেই থাকে। আমরা যা বলি, করি, দেখে। এটাই স্বাভাবিক।

২১৩
প্রশ্ন-২১০: আল্লাহ তো জোড়ায় জোড়ায় মানুষ সৃষ্টি করেছেন। তাহলে অনেক মানুষ যে বিয়ে করে না, তাদের জোড়া গেল কোথায়?
উত্তর: আল্লাহ জোড়ায় জোড়ায় মানুষ সৃষ্টি করেছেন, এই কথা ঠিক না।

خلفتاكم أزواجا

আমি তোমাদেরকে নারী-পুরুষ বানিয়ে সৃষ্টি করেছি। প্রত্যেক সৃষ্টির ব্যাপারেই বলেছেন তাদেরকে নারী-পুরুষ করে সৃষ্টি করেছেন। প্রত্যেকের ভেতরেই পজিটিভ নেগেটিভ আছে। কিন্তু প্রত্যেকের আলাদা আলাদা জোড়া আল্লাহ বানিয়ে দিয়েছেন, এই কথা তিনি কোথাও বলেন নি।

২১৪
প্রশ্ন-২১১; আমার কাছের জীন বা ফেরেশতার উদ্দেশ্যে আমি যদি কিছু বলি তাহলে এটা ঈমানের সাথে সাংঘর্ষিক হবে কি না?
উত্তর: কিছু বলার দরকার নেই। যা বলতে হবে আল্লাহর কাছে। এটাই তো ইসলাম এবং অন্যান্য ধর্মের পার্থক্য। আমরা জানি, মানুষের রুহ কবয করে মালাকুল মাউত। আমরা বলি আজরাইল। কিন্তু কোনো মুসলিম বলে না, আজরাইল তুমি আমার আয়ু বাড়িয়ে দাও, আমাকে মেরো না। তারা আল্লাহর কাছে বলে- আল্লাহ, আয়ু দাও। আর অন্য ধর্মে যমদূতের কাছে আয়ু চায়। যমের নামে পূজা করে। আমাদের যা কিছু বলার, সব আল্লাহর কাছে বলব। তবে শয়তানি ওয়াসওসা বাড়লে শয়তানকে কিছু বললে এতে দোষ নেই। যেমন ‘আউযু বিল্লাহি মিনাশ শায়তনির রাজীম’ বলে বামদিকে থুক দেয়া, অথবা শয়তান তুই যা- এভাবে বলাতে দোষের কিছু নেই।

২১৫
প্রশ্ন-২১২; গর্ভাবস্থায় আমরা কী কী আমল করব?
উত্তর: গর্ভাবস্থার খাস কোনো আমল সুন্নাতে নেই। তবে সন্তানের জন্য নেক দুআ, সাধারণ ইবাদত-বন্দেগি, কুরআন তিলাওয়াত করা বা শোনা- এগুলো বেশি বেশি করা দরকার।

২১৬
প্রশ্ন-২১৩: আরবিতে ; যবর রা, যবর গা, যবর খা পড়লে কোনো অসুবিধা হয় কি না?
উত্তর: না, কোনো অসুবিধা হয় না। মাখরাজ ঠিক না থাকলে অর্থ উল্টে যেতে পারে। মাখরাজ ঠিক রাখতে হবে। তবে র, রা, খ, খা, এগুলো কোনো ব্যাপারই না।

২১৭
প্রশ্ন-২১৪: ৩ এর উচ্চারণ আংতা না বলে আনতা বললে কোনো গোনাহ হবে কি ?
উত্তর: ইখফা, ইদগাম, ইযহার- এগুলো কুরআন তিলাওয়াতের জন্য। সাধারণ কথায় এগুলো প্রয়োগের প্রয়োজন নেই। আনতাই তো বলবেন সবসময়। শুধু কুরআন পড়ার সময় ইখফার গুন্নাহ করবেন- আংতা।

২১৮
প্রশ্ন-২১৫: কুরআনের একটি হরফ পড়লে দশটি নেকি পাওয়া যায়। বুঝে পড়লে নাকি না বুঝে পড়লে?
কুরআনের একটি হরফ পড়লে দশটি নেকি পাওয়া যায়। বুঝে পড়লে নাকি না বুঝে পড়লে? না বুঝে পড়লে কি দশ নেকি পাওয়া যাবে?

উত্তর: কুরআনের একটি হরফ পড়লে দশটি নেকি পাওয়া যায়, এটা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন। এর জন্য যে বোঝা শর্ত, এটা তিনি বলেন নি। তবে আল্লাহ পাক কুরআনে বলেছেন, বুঝে পড়লে হক পড়া হয়। তাহলে না বুঝে পড়লে না-হক পড়া হবে, এতে সোয়াব কিছু কম হবে এটাই স্বাভাবিক। এখানে আরেকটা পার্থক্য আছে। একজন আমাকে বলল, হুজুর, আমার জামা-গেঞ্জি-টুপি নেই, টুপি গেঞ্জি ছাড়া নামায কি হবে? আমি বললাম, হবে। সমস্যা নেই। এভাবেই পড়েন। নামায বাদ দিয়েন না। সে বলল, আলহামদু লিল্লাহ, বেঁচে গেলাম। জীবনে আর টুপিও কিনব না জামাও কিনব। তো আসলে না বুঝে পড়লে সোয়াব হবে, যদি আল্লাহ বুঝতে পারেন, বান্দার সাধ্য নেই তাই পড়ে নি; তাহলে সোয়াব হবে। কিন্তু বান্দা জীবনভর কোনো দিনই বোঝার চেষ্টা করল না- এখানে কিন্তু সমস্যা আছে।

২১৯
প্রশ্ন-২১৬: মুসলিম জবাই করলে পাঠার মাংস খাওয়া যাবে কি না?
উত্তর: পাঠার মাংস যে খাওয়া যাবে না এটাই তো ভুল কথা। পাঠা কী দোষ করেছে যে তার গোস্ত খাওয়া যাবে না? ষাড় খাওয়া যায়, পাঠা খাওয়া যায় না- এটা কে বলেছে? সৌদি আরবে যে ছাগল জবাই হয়, ৯৯.৯৯ ভাগই পাঠা। এতে প্রাণি কে কাটান দেবে! তবে কাটান দেয়া প্রাণি কুরবানি দেয়া- এটা রাসূলুল্লাহর (ﷺ) পছন্দ করতেন। কারণ, এর গোশত বেশি হয়, স্বাদ ভালো হয়। কিন্তু কাটান না দিলে, পাঠা হলে তার গোশত যে খাওয়া যাবে না এটা আমাদের, বাংলাদেশের সব জায়গার না, শুধু আমাদের এলাকার বানানো নিয়ম।

২২০
প্রশ্ন-২১৭: নিজেকে পীর বলে দাবি করা শরীআতসম্মত কি না? একজন পীরের কী কী গুণাবলি থাকা দরকার?
উত্তর: পীর একটা পোস্ট। এখন আমি যদি বলি, আমি স্কুলের মাস্টার- এটা বলাতে কোনো দোষ নেই। কেউ যদি বলে, আমি বিএ পাশ করেছি- এটা বলা তো অপরাধ নয়। তাই কোনো পীর যদি কাউকে পীর হিসেবে সনদ দেয়- সে দাবি করতেই পারে। পীর মানে কোনো কামেল জিনিস- এমন না। পীর মানে শিক্ষক। পীর মানে সে কামেল, আল্লাহর সাথে তার বিশেষ কোনো সম্পর্ক আছে, এটা না। আর পীরের যোগ্যতার ব্যাপারে আলেমগণ অনেক কিছুই লিখেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক, এখন কোনো যোগ্যতা লাগে না। আলেমগণ বলেছেন, পীর হতে গেলে আলেম হওয়া লাগবে, মিশকাত শরীফ পড়া লাগবে, হেদায়া পড়া লাগবে, শরহে বেকায়া পড়া লাগবে- এখন মূখরা বড় বড় পীর। এক লাইন আরবি পড়তে পারে না। তো কাউকে পীর বলা অপরাধ না। এটা একটা পোস্ট। যদিও ইসলামি কোনো পোস্ট না, পদবি। তবে পীরের কোনো বিশেষ পাওয়ার আছে এসব বলা খুবই আপত্তিকর কথা।

২২১
প্রশ্ন-২১৮: নিজের কাছে মুরীদ হওয়ার জন্য মানুষের ফযীলত বলা বৈধ কি না?
উত্তর: এগুলো তো বলতেই হবে। পীর একটা বাণিজ্যিক বিষয়। তো আপনি যখন পণ্য বিক্রি করবেন, পণ্যের গুণাগুণ বলে অ্যাড দেবেন না? তোতা যাদের পীরালি বাণিজ্যিক, তাদের তো অ্যাড দেয়াই লাগবে। আর যাদের পীরালি আল্লাহর দীন তাদের এসব লাগে না। আমি বারবার বলি, যারা বাণিজ্যিকভাবে ধর্মকে ব্যবহার করছেন, তারা মুরীদ বানানোর চেষ্টা করেন। এখানে কিছু করার নেই। তো আপনি পীরের কাছে কেন যাবেন? আপনি কুরআনকে পীর ধরেন, এটাই যথেষ্ট। কুরআন হাদীস মানেন। আলেমদের সোহবতে যান। বরং একজন লোকের মুরীদ হওয়া সুন্নাতবিরোধী। পীরের কাছে যাওয়ার উদ্দেশ্য হল একজন নেককারের সোহবতে যাওয়া। এটা ভালো। কিন্তু একজনের কাছে যাব, আর কারো কাছে যাব না, এটা নাজায়েয। তাবেয়িরা কখনো একজনের কাছে যেতেন না। হাসান বসরি শুধু আনাস রা.এর কাছে যেতেন না। অনেক সাহাবির কাছে যেতেন, বসতেন, ওয়াজ শুনতেন, নসিহত শুনতেন। একজন ছি তো ধরছিই আর কারো কাছে যাব না, এটা সুন্নাতবিরোধী এবং এর অনেক ক্ষতি আছে।

২২২
প্রশ্ন-২১৯: মুরীদ হওয়ার অর্থ কী? মারেফতের কামেল পীরের কাছে মুরীদ না হলে নাকি জান্নাতে যাওয়া যাবে না-এই কথাটা কি ঠিক?
উত্তর: এটা হল কাফেরদের কথা। যারা বলে মারেফতের কামেল পীরের কাছে মুরীদ হলে জান্নাতে যাওয়া যাবে না, এই কথাটা যারা বলে তারা বেঈমান। তারাই বরং জান্নাতে যেতে পারবে না। কারণ, এটা কুরআন হাদীসে কোথায় আছে? যাদের মাধ্যমে এই পীর প্রথার প্রচলন, যাদের নাম ভাঙিয়ে আমরা পীরালি করি সেই মুজাদ্দিদে আলফে সানি, সৈয়দ আহমদ বেরেলভি, শাহ ওয়ালি উল্লাহ দেহলভি, আশরাফ আলি থানভি, ফুরফুরার দাদা হুজুর, তারা সবাই নিজে লিখেছেন, পীরের মুরীদ হওয়া মুস্তাহাব পর্যায়ের একটা সুন্নাত কাজ। একজন নেক মানুষের সোহবতে যাওয়া। আর মারেফত মানেই হল মারার পথ। সে যে কামেল (পরিপূর্ণ) আর আমি নাকেস (অসম্পূর্ণ) এটা বুঝব কী করে! দুনিয়াতে প্রত্যেক জিনিসের বিচার আছে। যাচাই বাছাইয়ের ব্যাপার আছে। কিন্তু এই মারেফতের কোনো বিচার নেই। মারেফতের কামেল আর বাতেন ইলমের নাম দিয়ে সবকিছু চুরি করার ব্যবস্থা তারা করে রেখেছে। কারণ, অমুক পীরের খুব বেশি মারেফত, বুঝব কী রে! প্রমাণ তো নেই। কক্ষনো কুরআন হাদীস এটা বলে না। বরং বড় আলেম, পূর্ণ আলেম, কুরআন হাদীস নিজে বোঝে, মুত্তাকি তাদের সোহবতে যাওয়াটা হল ইবাদত। মুরীদ মানে ইচ্ছকারী। যে ইচ্ছা করেছে। পীরের মুরীদ হওয়ার মানে, পীর তখন মুরাদ হয়, লক্ষ্য হয়; পীর আমার আদর্শ। আমার উদ্দেশ্য হল আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূল (ঞ্জ) । নেককার মানুষের সোহবতে যাওয়াটা হল ইবাদত। মুরীদ হওয়া নয়। মূল কথা হল,

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ), এরপরে ফুরফুরা পীর ওলিউল্লাহ- এটা বলা ইসলামে আছে কি না?... কাজেই এরকম কিছু সংযোজন যারা করে, তারা হল ঈমানের বড় চোর। এদের উদ্দেশ্য আমাদের ঈমানহারা করা। এ জন্য মারেফত হল মারার পথ। করআনে হাদীসে মারেফতের কোনোই গুরুত্ব দেয়া হয় নি। বরং ইলম এবং ঈমানের গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেছেন, ইহুদি, খ্রিস্টান, কাফেরদের মোলআনা মারেফত ছিল।

يعرفون يغت الله ثم ينكرونها

পুরো মারেফত কাফেরদের ছিল। আমাদের ইমাম আবু হানীফা রাহ. লিখেছেন, মারেফতে যদি কাজ হত তাহলে ইহুদি খ্রিস্টানরাই জান্নাতে যেত। তবে যে বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ সেটা হল একটা হাদীস, এর সনদগত সমস্যা আছে; রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নামেও আছে আবার হাসান বসরির র. নামেও আছে। সেটা হল:

العلم علمان علم باللسان و علم بالقلب و علم باللسان ذلك حجة الله على خلقه و علم بالقلب هو العلم النافع

ইলম দুই প্রকার: একটা হল, জবানের ইলম। আরেকটা হল কালবের ইলম জবানের ইলম, এটা হল আল্লাহর দলিল। বান্দাকে আল্লাহ এই ইলম দিয়ে ধরবেন। আর কালবের ইলম হল উপকারি ইলম। এই দুটো একটু বোঝেন। মনে করেন, আপনি মোটামুটি নামায পড়েন। যুবক ছেলে। একদিন ঘুমাতে ঘুমাতে রাত হয়েছে, দুটো বেজে গেছে। ফজরের নামায পড়ার ইচ্ছা আছে। দেখা গেল ঘুম ভাঙে নি, সকাল আটটা বেজে গেছে। এ রকম ঘটে থাকে আমাদের। আবার ওই ছেলেটারই আরেক দিনের ঘটনা। তার চাকরির ইন্টারভিউ আছে অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা আছে। রাত চারটায় তার গাড়ি। তিনটায় উঠে স্টেশনে গিয়ে গাড়ি ধরতে হবে। চারটায় ঝিনাইদহ থেকে রওনা হলে সকাল এগারোটায় সে পরীক্ষা ধরতে পারবে। এই গাড়ি মিস হলে পরীক্ষা দিতে পারবে না। সে মোটামুটি গোছগাছ করতে করতে রাত বারোটা বেজে গেছে। তিনটায় উঠতে হবে। ঘুমিয়ে আছে। একটু পরপর ঘুম ভেঙে যায়। এ রকম কিন্তু ঘটে। খুব স্বাভাবিক। তাহলে বাস মিস হলে লস হবে, এই ইলমের কারণে ঘুম ভাঙে। আর নামায মিস হলে লস হবে, এই ইলমের কারণে ঘুম ভাঙে না। এইটা হল পার্থক্য। বাস মিস হলে লস হবে এটা কালবের ভেতরে ঢুকে গেছে। এ জন্য কালব ধাক্কা মেরে মেরে উঠিয়ে দিচ্ছে, এই ওঠ, বাসের সময় হয়ে গেল! ওঠ ওঠ! আর নামায মিস হলে লস হবে, এটা আমাদের জবানে আছে, কালবে এখনো ঢোকে নি। (সূরা নাহল, আয়াত-৮৩) কালবে ঢুকলে রাত এগারোটায় শুলেও চারটার সময় তাহাজ্জুদের জন্য ঘুম ভাঙার কথা। আর বারোটায় শুলে আর ঘুম হয় না। বারবার ঘড়ি দেখে, তাহাজ্জুদ বুঝি মিস হয়ে যায়! তো নামাযের ভালোবাসা কালবে ঢুকাতে হলে শরীআত পালন করতে হবে। কুরআন পড়বেন, হাদীস পড়বেন, নিয়মিত পড়বেন, পুরোপুরি শরীআত পালন করবেন। তখন এমন হবে, রাত বারোটায় ঘুমালে আর ঘুম হবে না, বারবার ঘুম ভেঙে যাবে তাহাজ্জুদ ব্রার জন্য। এটা হল ইলমুন নাফে' বা উপকারি ইলম। এই হাদীসের অপব্যাখ্যা দিয়ে মারেফত টারেফত নানান জিনিস বানানো হয়েছে। নামায পড়ে না, মিথ্যা কথা বলে, ঝগড়া করে কোনোই ব্যথা লাগে না। আবার নাকি মারেফত! মারেফত তো ওই জিনিস, যেটা আপনার ইয়াকীনে গেঁথে যাবে, আপনি আর গোনাহ করতে পারবেন না। আসলে ভণ্ডামি আর জালিয়াতির কোনো শেষ নেই। তবে আপনারা একটা জিনিস বুঝবেন, আল্লাহ তাআলা আপনার নবীজি (%) কে সিরাজুম মুনীর বানিয়েছেন- সূর্য। ওরা যা-ই বলুক, আপনি বলবেন, কুরআন হাদীস দিয়ে বলল, নয়ত মানব না। তাহলে বেঁচে যাবেন। কুরআন এবং হাদীস দিয়ে সরাসরি জালিয়াতি করা যায় না। ওরা যদি বলে পীরের মুরীদ হতে হবে, আপনি বলবেন, অন্য কোনো কথা শুনতে চাইনে, কুরআন হাদীসে কোথায় আছে মুরীদ হতে হবে, দেখাও। তাহলে মুরীদ হব। আর আপনি যদি কিছু না বুঝে তাদের পিছনে দৌড়ান তাহলে আপনার ব্যাপার।

২২৩
প্রশ্ন-২২০: চরমোনাই পীর ইসহাক সাহেবের লেখা বই ‘ভেদে মারেফত বা ইয়াদে খোদা’ বইয়ের বক্তব্য কি বিশ্বাস করা যায়?
চরমোনাই পীর ইসহাক সাহেবের লেখা বই ‘ভেদে মারেফত বা ইয়াদে খোদা’ আপনি কি পড়েছেন? বইয়ের বক্তব্য কি বিশ্বাস করা যায়?

উত্তর: পুরা বই আমি পড়ি নি। তবে ভেতর থেকে কয়েক জায়গা পড়েছি। খুবই আপত্তিকর কথা আছে। পীর সাহেবদের সাথে আমাদের কথা হয়েছে এটা নিয়ে। উনি একজন ভালো পীর সাহেব ছিলেন। চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ইলমের দিক থেকে পরবর্তী পীর সাহেবদের যে পড়াশোনা আছে, অতটা পড়াশোনা তার ছিল না। আমরা আশা করি পরবর্তী পীররা এই বইগুলো প্রচার করবেন না বা এই জাতীয় কথা বলবেন না। আল্লাহ তাআলা তার নেক আমলগুলো কবুল করেন। তার ভুলভ্রান্তিগুলো মাফ করে দেন।

২২৪
প্রশ্ন-২২১: ‘পীরকেবলা বলা যাবে কি না? পীরকেবলা শব্দটা সাধারণত ফুরফুরারা ব্যবহার করে। এটা কি ঠিক হচ্ছে?
উত্তর: না, ফুরফুরারা তো এই ব্যাপারে দুর্বল। আমাদের ফুরফুরায় কোনো কেবলা টেবলা নেই। কেবলাও নেই, শরীফও নেই। ওটা অনেক আগে বিদায় করে দেয়া হয়েছে। তবে আরো কিছু ফুরফুরা আছে, তারা কেবলা ব্যবহার করে। তবে তারাও দুর্বল। আমাদের দেশে অল্পকিছু পীর আছে, তারা পীরকেবলা ব্যবহার করে না। যেমন: চরমোনাইয়ের মুরীদরা কেবলা ব্যবহার করে না, আলহামদু লিল্লাহ। আল্লাহ তাদের উত্তম প্রতিদান দিন। অল্পকিছু বাদে বাকি ৯৯.৯৯% সবাই কেবলা। কেবলার সাথে আবার কাবাও লাগায়। কেবলা কাবা। মানুষের অধঃপতন কতটা হয়েছে! প্রত্যেক ঘরে ঘরে কেবলা। এখন নতুন একটা নবী বানিয়ে নিলে ষোলআনা পূর্ণ হয়। মুসলিমের কেবলা একটা। পীর সাহেবকে কেবলা বলা এটা ভয়ঙ্কর অন্যায় কাজ। কোনো মানুষকে কেবলা বলা যায় না। কেবলা আল্লাহ একটা দিয়েছেন। এটা ইসলামি পরিভাষা। এখন আমাদের হাজার হাজার কেবলা। সবচে' ভালো পীর কে ছিলেন? আর সবচে' ভালো মুরীদ কারা ছিলেন? নবী (ﷺ) ছিলেন সবচে ভালো পীর। সাহাবিরা কি নবী (ﷺ) কে কেবলা বলেছেন? হাসান বসরি কি সাহাবিদেরকে কেবলা বলেছেন? আবু হানীফার মুরীদরাআবু ইউসুফ, মুহাম্মদ, যুফার- তাঁরা কি আবু হানীফাকে কেবলা বলেছেন? তারা বড় ঈমানদার না আমরা বড় ঈমানদার? কাজেই যখন আমরা সুন্নাতকে মডেল বানাব, তখন আমরা এই ভয়ঙ্কর অধঃপতন থেকে বেঁচে যাব। আদবের মডেলও তাঁরা, দীনের মডেলও তাঁরা।

২২৫
প্রশ্ন-২২২: কালিমা তায়্যিবা পাঠ করা শিরক? লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর পরে ওয়া আন্না যোগ করতে হবে?
কালিমা তায়্যিবা পাঠ করা সঠিক কি না? এক শ্রেণির বক্তারা বলছে কালিমা তায়্যিবা পাঠ করা শিরক। এটা কতটুকু সঠিক? তারা বলে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর পরে ওয়া আন্না যোগ করতে হবে।

উত্তর: জি, এটা পাঠ করা সঠিক। যারা শিরক বলছে, এরা একেবারেই জাহেল। কিছুই বোঝে না। ওয়া আন্না' যোগ করা ভালো, দোষ নেই। যাই হোক লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ' বললে শিরক হবে, এটা নিয়ে একজন বই লিখেছেন। আমি তাকে চিনি। আহলে হাদীসের মানুষ। আর আহলে হাদীসের আরেকজন আলেম, তাকেও আমি চিনি, যেহেতু ঝগড়ার বিষয়, কারোর নাম বললাম না। পরের জন আবার বই লিখেছেন, ওই লোকটাকে কতল করা উচিত। সে মুসলিমদের কাফের বানিয়ে নিতে মুরতাদ হয়ে গেছে, শরীআতের বিধান হল তার কতল লাগবে। আসলে এই ধরনের কথা যারা বলে, তারা কেউ আলেম না। এবং আমি জানি, এই বইয়ের লেখক আলেম না। আধুনিক শিক্ষিত। কুরআন হাদীস পড়ে উল্টোপাল্টা বুঝেছে।

২২৬
প্রশ্ন-২২৩: নারী-পুরুষের নামাযের বিধান আলাদা নাকি এক?
উত্তর: নারী-পুরুষের সালাতের বিধান মূলত এক। দুটো তিনটে পার্থক্যের কথা কিছু হাদীসে এসেছে, হাদীসগুলো দুর্বল। রুকুটা হালকা দেবে, সিজদা গোটাসোটা হয়ে দেবে আর বসবে আসন গেড়ে। এই তিনটে কথাই শুধু আছে। এ ছাড়া কোনোকিছু পাওয়া যায় না। এগুলোও দুর্বল। কেউ যদি আমল করতে চায় করতে পারে। কেউ যদি পুরুষের মতো পড়ে কোনো সমস্যা নেই।

২২৭
প্রশ্ন-২২৪: তোমরা ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি কোরো না, মধ্যমপন্থা অবলম্বন করবে এই কথার অর্থ কী?
উত্তর: এই কথার অর্থ, রাসূলুল্লাহর (ﷺ) যেভাবে চলতেন ওইভাবে চলব। মধ্যমপন্থার মডেলও কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ﷺ) । ধর্মের নামে বাড়াবড়ি কোরো না' অর্থ এই না যে, আমি নামায পড়ি না, রোযা রাখি না, দাড়ি রাখি না, পর্দা করি না। আমাকে কেউ এগুলো বলতে পারবে না। কেউ আমাকে দাড়ি রাখতে বলল আর আমি বলে দিলাম ধর্মের নামে বাড়াবাড়ি কোরো না। এটা মনগড়া মধ্যপন্থা। মধ্যমপন্থী ছিলেন সাহাবাগণ। আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেছেন, উম্মাতান ওসাতা। বাড়াবাড়ি কোরো এর অর্থ দুটো জিনিস। একটা হল, আল্লাহ কুরআনে যা বলেন নি, হাদীসে যা বলেন নি, ওটা দীন বানিয়ে ঝগড়া কোরো না। যেটা আমরা অধিকাংশ সময় করে থাকি। আরেকটা হল, দীনের ইবাদত- যেটা আল্লাহ ফরয করেন নি- সেটা নিজের উপর ফরয বানিয়ে নেয়া। যেমন: নির্দিষ্ট একটা টুপি পরব। ওটাই পরে থাকব। টুপির উপর পাগড়ি, পাগড়ির উপর রুমাল- এটা পরেই থাকব। আল্লাহর রাসূল করেন নি। এমন। তিনি কখনো টুপি পরেছেন, কখনো খালি মাথায় থেকেছেন, সহীহ মুসলিমের হাদীস, মসজিদে খালি মাথায় বসে থেকেছেন, কখনো পাগড়ি পরেছেন, কখনো পাগড়ি পরেন নি। জুব্বা একটা বানিয়েছি, এই স্টাইলের বাইরে আর পরব না। অথবা কোনো নফল ইবাদতকে ফরযের মতো গুরুত্ব দেয়া- এটাও বাড়াবাড়ি। অর্থাৎ রাসূলুল্লাহর (ﷺ) এর পদ্ধতির বাইরে, কুরআন হাদীসে নেই, সেগুলো বিভিন্ন হুজুরের বক্তব্য শুনে ফরয বানিয়ে দেয়া; অথবা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যেটা মাঝে মাঝে করেছেন, মুস্তাহাব, সেটাকে জরুরি মনে করা- এই কাজগুলোই হল বাড়াবাড়ি, প্রান্তিকতা।

২২৮
প্রশ্ন-২২৫: সুন্নাত স্বীকার করি কিন্তু অবহেলবশত পালন করি না- এতে কি গোনাহ হবে?
উত্তর: গোনাহ হবে কি হবে না, এটা নির্ভর করবে সুন্নাতের গুরুত্বের উপরে। সবই কিন্তু সুন্নাত। নফলও সুন্নাত, মুস্তাহাবও সুন্নাত, সুন্নাতে মুআক্কাদাও সুন্নাত, গাইরে মুআক্কাদাও সুন্নাত। কাজেই রাসূলুল্লাহ (সা) যে সুন্নাত পালন না করলে রাগ করেন নি, ওই সুন্নাত না করলে গোনাহ হবে না। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছ) ডানকাতে শুতেন, আমি অবহেলা করে বামকাতে ঘুমিয়ে পড়ি। এতে গোনাহ হবে না, ইনশাআল্লাহ। তবে এই সুন্নাতকে ছোট মনে করলে- ওটা কিছু না- এমন ভাবলে গোনাহ হবে। আর কিছু সুন্নাত গুরুত্ব দিয়েছেন। নিয়মিত করেছেন। করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এগুলো পালন না করলে গোনাহ হবে। যেমন দাড়িকে অনেকে সুন্নাত বলে। কিন্তু এটা মূলত ফরয, ওয়াজিব। নবীজি (ﷺ) দাড়ি রেখেছেন, দাড়ি রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন, কাটতে নিষেধ করেছেন। এটা স্বীকার করেন কিন্তু পালন করেন না, এতে গোনাহ হবে। তবে অস্বীকার করার গোনাহ হবে না। সগীরা এবং কবীরা নির্ভর করে রাসূলুল্লাহর (ﷺ) এর গুরুত্বের উপরে। যেমন : প্রতি ফরয নামাযের আগে পরের নামায, যেগুলোকে আমরা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ বলি, এটা নবীজি (ﷺ) পালন করতেন, করতে উৎসাহ দিয়েছেন; এটা অবহেলা করে ছেড়ে দিলে গোনাহ হবে। ফজরের দু রাকআত সুন্নাতকে আরো গুরুত্ব দিয়েছেন। এটা ছাড়লে গোনাহ হবে।

২২৯
প্রশ্ন-২২৬: ৫০ ওয়াক্ত থেকে ৫ ওয়াক্তে নামাজ কমানোর হাদীসটা কি সহীহ?
আল্লাহ তাআলা রাসূল (ﷺ) কে ৫০ ওয়াক্ত নামায দিয়েছিলেন। কিন্তু মুসা (আ) নবীজিকে (ﷺ) বলেন, তোমার উম্মত এটা আদায় করতে পারবে না। তখন। আল্লাহ তাআলা ৫০ ওয়াক্ত থেকে ৫ ওয়াক্তে নামিয়ে দেন। এই হাদীসটা কি সহীহ?

উত্তর: জি, মেরাজের হাদীস সহীহ। মেরাজে আল্লাহর কাছ থেকে রাসূলুল্লাহর (ﷺ) যখন ফিরে আসেন, মুসা আ.এর সাথে দেখা হয়। মুসা আ. বলেন, আল্লাহ কী দিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, ৫০ ওয়াক্ত নামায দিয়েছেন। নামায আগেও ছিল। আগেও রাসূলুল্লাহ (ﷺ) প্রায় পাঁচ ওয়াক্তের মতো নামায পড়তেন বিভিন্ন সময়ে। আল্লাহ মেরাজে বাড়িয়ে দিলেন- ৫০ ওয়াক্ত। মুসা আ. বললেন, আপনি কমান। এটা উম্মত পারবে না। আল্লাহ বললেন, ঠিক আছে পাঁচই থাকল, পাঁচ ওয়াক্ত পড়লেই তোমার উম্মত পঞ্চাশের সোয়াব পাবে।

২৩০
প্রশ্ন-২২৭: ওয়াজিব বাদ গেলে নামায কি পুনরায় পড়তে হবে?
উত্তর: ওয়াজিব বাদ গেলে সাহু সিজদা করতে হবে। সাহু সিজদা ছাড়া নামায পড়ে ফেললে ওয়াক্ত থাকলে আবার পড়তে হবে।

২৩১
প্রশ্ন-২২৮: ‘ওয়াহদাতে উজুদ কী?
উত্তর: ওয়াহদাতে উজুদ হিন্দুদের কথা। সর্বেশ্বরবাদ। হরির উপরে হরি, হরি বসে রয়, হরিকে দেখিয়া হরি হরিতে পালায়। সাপও হরি, পানিও হরি, ব্যাঙও হরি- সবই হরি। এটা একটা কুফরি মতবাদ।

২৩২
প্রশ্ন-২২৯: মৃত্যুর পূর্বে মৃত্যুর স্থান ও সময় সম্পর্কে অবগত হওয়া সম্ভব কি?
উত্তর: আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, এটা সম্ভব না। কাজেই এই গল্পগুলো যারা বলে বেড়ায় তারা রাসূলুল্লাহর (ﷺ) এর কথা বলে না, সাহাবিদের কথা বলে না। বিভিন্ন বুজুর্গদের কিচ্ছা বলে। এই সবই মিছে কথা।

২৩৩
প্রশ্ন-২৩০: কারো অন্তরের খবর কেউ কি বলতে পারে?
উত্তর: কেউ পারে না। তবে যাদু এবং সাধনা করলে এক ধরনের ক্ষমতা আসে। এটা এক ধরনের যাদু। আপনি ইন্ডিয়া গেলে অনেক সাধু পাবেন, তারা আপনার মনের খবর বলে দেবে। এই সাধনা করতে হলে না খেয়ে থাকতে হয়, রাত জাগতে হয় ইত্যাদি। তখন আপনার দুটো ক্ষমতা আসবে। একটা হল, কিছু জিন আপনার হাতে এসে যাবে। শয়তান জিনের কাজ হল, মানুষদের কাফের বানানো। তারা যখন দেখে একজন লোক শয়তানের পথে আসছে, তখন তারা লোকটার ভক্ত হয়ে যায়। তার সহযোগিতা করে। এই ক্ষমতা আপনার অর্জন হয়ে গেলে যখন কেউ সামনে আসবে, আপনার মনে কিছু কথা উদয় হবে। বুঝবেন, এটাই ওই লোকের মনের অনুভূতি। এইভাবে যাদুচর্চার মাধ্যমে, সাধনার মাধ্যমে মানুষ কিছু ক্ষমতা অর্জন করতে পারে। এটা হিন্দুদের আছে, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ যোগিদের আছে। মুসলিম যোগি যারা, যারা শিরকি কাজ করে, তাদের ভেতর মাঝেমাঝে পাওয়া যায়। এটা যদি কারো ভেতর দেখেন, পালাবেন। এই ব্যাটা যাদুকর। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এবং সাহাবিগণ এই ধরনের কিছু করেন নি।

২৩৪
প্রশ্ন-২৩১: জীবিত বুযুর্গরা অন্যের কবরের অবস্থা কি বুঝতে পারে?
উত্তর: আমাদের সমাজে অনেক বুযুর্গ আছে, তারা কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কবরের হাল বলে দেয়। এখানে একটা কবর আছে, বাবা। তোমরা ঘিরে রেখ। একটু দান সদকা করে দিও, এই কবরবাসীর কষ্ট হচ্ছে। একে বলে 'কাশফুল কুনূর। এমন হুজুর আছে আমাদের সমাজে। সহীহ বুখারির হাদীস, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর দুধভাই, উসমান ইবনে মাউন রা., খুব বুযুর্গ ছিলেন, জাহিলি যুগে কোনো দিন মূর্তি পূজা করেন নি। কোনো দিন মদ খান নি। অথচ মদ তখন হালাল ছিল। উহুদের যুদ্ধে অথবা উহুদ যুদ্ধের আগে উসমান রা. মারা গেলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে এত ভালোবাসতেন, লাশের দেহে চুমু খেলেন। এত কাঁদছিলেন, তার দাড়ি ভিজে গিয়েছিল। নিজেই জানাযা পড়ান। জানাযার পরে নিজে লাশ নিয়ে কবরে নামেন। মৃত্যুর পরে একদিন, উসমান ইবনে মাযউন রা, যে আনসারের বাড়িতে থাকতেন, সেই বাড়ির এক মহিলা, সম্ভবত উম্মুল ফজল নাম, তিনি বলতে লাগলেন- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, উসমান ইবনে মাযউন, নিশ্চয় আল্লাহ আপনাকে সম্মানের সাথে রেখেছেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) শুনে ফেললেন। তিনি এই মহিলা সাহাবিকে প্রশ্ন করলেন- তুমি কী করে জানলে যে, কবরের যাওয়ার পরে আল্লাহ তাআলা উসমানকে সম্মানের সাথে রেখেছেন? সহজ কথা! কাশফুল কুনূরের মাধ্যমে জেনেছেন। চোখ বুজে জেনে গেছেন। আমাদের বুযুর্গরা তো তাই করেন। কিন্তু সাহাবি কী বললেন? বললেন, ইয়া রসুলাল্লাহ, আমি তো আসলে জানি। কিন্তু উসমানকে যদি আল্লাহ সম্মান না করেন তাহলে আর কাকে করবেন! আমি সুধারণার ভিত্তিতে এটা বলেছি। তাহলে বোঝা গেল, সাহাবিদের কাশফ আমাদের হুজুরদের চেয়ে কম ছিল! হয় তাঁরা সঠিক আমরা ভুল, অথবা তাঁরা কম বুযুর্গ আমরা বেশি বুযুর্গ। আপনারা ভেবে দেখেন কোনটা হবে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কী বলছেন এবার শশানেন। সহীহ বুখারির হাদীস, আমি আল্লাহর রাসূল হয়ে বলছি, আল্লাহর কসম খেয়ে বলছি, আমি আশা করি আল্লাহ তাকে ভালো রেখেছেন। কিন্তু কেয়ামতে আল্লাহ আমাদের কী করবেন আমি বলতে পারব না। তাহলে আমাদের হুজুররা কবরের অবস্থা বলে দেন, সাহাবিরা বলতে পারেন না। অবশ্য সাইয়েদ আহমাদ বেরেলভি রাহ, তার ‘সিরাতে মুস্তাকীম' নামক বইয়ে লিখেছেন, কাশফুল কুদূর এটা কাফেরদেরও হতে পারে। এইসব যাদু-সাধনা ইসলামের কিছু না।

২৩৫
প্রশ্ন-২৩২: মহররমের নোযা কি ১০ তারিখেই রাখতে হয়? ১১ তারিখে একটা এবং ১২ তারিখে আরেকটা রাখলে কি কোনো সমস্যা আছে?
উত্তর: জি হ্যাঁ, সমস্যা আছে। ৯ তারিখে একটা এবং ১০ তারিখে আরেকটা রাখতে হবে। একান্ত না পারলে ১০ এবং ১১ তারিখে রাখবেন। না হলে নফল রোযা রাখবেন না।

২৩৬
প্রশ্ন-২৩৩: ইয়াযিদকে ঘৃণা করা আমাদের উচিত কি না জানতে চাই।
উত্তর: ইয়াযিদ নিঃসন্দেহে মহা মহা কয়েকটা পাপ করেছে। কাজেই ইয়াযিদকে ঘৃণা করা খুবই স্বাভাবিক এবং তাকে ভালোবাসতে হবে এমন বড় কোনো কাজ তিনি করেন নি। তবে আমাদের রাজনীতির কালচার হল, মানুষের কোনো ভালোই স্বীকার করি। অমুক লোক মুক্তিযোদ্ধা ছিল, কিন্তু আমার দলের না, কাজেই সে রাজাকার, পাকিস্তানের দালাল। তার খারাপটা খারাপ, ভালোটা ভালো; তা না, ভালোটাও খারাপ। ইয়াযিদ সাহাবি তাবেয়িদের যুগের মানুষ। বাহ্যত তিনি নামাযি ছিলেন, ভালো মানুষ ছিলেন, এটাই স্বাভাবিক। মনে করেন, আমাদের দেশে একটা লোককে ইমাম নিয়োগ দেয়া হবে, যে কিনা নামায পড়ে না, মদ খায়; এটা সম্ভব না। সে আওআমী লীগ, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী যা-ই করুক, অন্তত বাহ্যিক ভালো কিছু গুণ তার থাকতে হবে। তা না হলে তার পিছনে কেউ নামায পড়বে না। তো সাহাবিদের যুগটাও এমন ছিল। ক্ষমতায় যারাই থাক, নামায-রোযা ইত্যাদি কাজগুলো স্বাভাবিক ছিল। তবে সে যুগের ভালো মুসলিম তখনই আমার কাছে ভালো মুসলিম হবে, যতক্ষণ সে আমার পক্ষে থাকবে। আর আমার বিপক্ষে গেলে সে নবীর নাতি হোক অন্য কেউ হোক তাকে কেটেকুটে সাফ করতে হবে। ইয়াযিদ ভয়ঙ্কর তিনটে মহাপাপ করেছেন। একটা হল, ইমাম হুসাইন রা.এর শাহাদাত তার যুগে ঘটেছে। যদিও ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তিনি হত্যার নির্দেশ দেন নি। কিন্তু হত্যাকাণ্ড হয়েছে, এতে তিনি খুশি হয়েছেন, হত্যাকারীদের কোনো শাস্তি তিনি দেন নি। দুই নাম্বার, মদিনায় তার বাহিনী গণহত্যা করেছে। তিন নাম্বার, তার বাহিনী মক্কায় গিয়ে কাবা ঘরে কামান দেগেছে। যে ক্ষমতার জন্য তিনি এতকিছু করেছেন, ভালো করে মনে রাখেন, রাজনীতিবিদরা তো এখানে আসে না; তবু আপনারা মনে রাখেন, ক্ষমতার জন্য এতকিছু করলেন, অথচ মজার ব্যাপার, ইয়াযিদের বংশের কেউ কখনো ক্ষমতায় যায় নি। উমাইয়া বংশে ইয়াযিদের ছেলে মুআবিয়া ছয় মাস রাজত্ব করেছে। এরপরেই সব শেষ।

২৩৭
প্রশ্ন-২৩৪: যদি কেউ ফরযের ব্যাপারে অবহেলা করে, সুন্নাত ও নফল নিয়ে বাড়াবাড়ি করে এক্ষেত্রে করণীয় কী?
উত্তর: কাজটা অন্যায় হচ্ছে। তাকে বোঝাতে হবে। আর যদি না বোঝে তাহলে বলা উচিত- ভাই, আপনি লুঙ্গি খুলে পাগড়ি বাঁধেন।

২৩৮
প্রশ্ন-২৩৫: আমরা প্রায় সবাই অন্যের অবজ্ঞা করি। উপহাস করি। এটা থেকে বেঁচে থাকা যায় কীভাবে?
উত্তর: মানুষের ব্যাপারে শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত রাখতে হবে। এটা কীভাবে করবেন? মনে করেন একটা লোক ফালতু কথা বলছে অথবা পোশাক খুব নোংরা। আপনার মনে অবজ্ঞা জন্মাচ্ছে। আপনি ভাববেন, কেয়ামতের দিন ওই লোকটা হয়ত আমার থেকে আল্লাহর বেশি প্রিয় হবে। কাজেই আমার অবজ্ঞা করার দরকার কী! আল্লাহ আমারটা কবুল করলেই হল। ওই লোকটার হয়ত অনেক নেক আমল আছে, আমার তা নেই। আমার নেক আমল হয়ত আল্লাহ কবুল করে নি। কাজেই লোকটার ব্যাপারে আমি খারাপ ধারণা রাখব না।

২৩৯
প্রশ্ন-২৩৬: কুরআন খতমের জন্য পারা ভাগ করে; লক্ষ লক্ষ কালিমা পড়া হয়। এগুলো কি আমলনামায় যোগ হবে?
গ্রামে কেউ মারা গেলে কুরআন খতমের জন্য পারা ভাগ করে দেয়া হয়। লক্ষ লক্ষ কালিমা পড়া হয়। এগুলো কি তার আমলনামায় যোগ হবে?

উত্তর: মৃতদের জন্য দান করা সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মৃতদের জন্য দুটো নিয়মিত কাজের কথা বলেছেন। কুরআনে একটা আছে। আরেকটা আছে হাদীসে। প্রথম হল, আপনি সবসময় তাদের জন্য দুআ করবেন। দুআটা কবুল হলে সঙ্গে সঙ্গে তার আমলনামায় একটি নেকি যোগ হবে। আমরা এটা বুঝি না। মনে করি দুআ মানেই হল হুজুর ডেকে দুআ করানো। অথবা টাকাপয়সা দিয়ে দুআ করানো। না, আপনি মুখে একবার বললেন, রব্বিগ ফিরলি ওয়ালি ওয়ালিদাইয়্যা। দুআ কবুল হলেই তার আমালনামায় নেকি যোগ হবে। দ্বিতীয় হল দান করা। সাদাকায়ে জারিয়া- স্থায়ী বড় দান, অথবা ছোট দান। এই দুটো সুন্নাত। এই দুটো করলে তারা পাবেন এটা নিশ্চিত। আর আমরা যেটা করি, কালিমা খতম, কুরআন খতম- এটা কোথাও নেই। সাহাবিরা করেন নি, তাবেয়িরা করেন নি। আলেমরা একটা যুক্তি দিয়েছেন, দান করলে যেহেতু পাবে কুরআন পড়লেও পাবে। কিন্তু কুরআনটা কে পড়বে? তার আত্মীয়স্বজন মহাব্বতের সাথে পড়বে। এই যে পারা ভাগ করে করে কুরআন আপনারা পড়ান এতে টাকাই যায় শুধু, কাজ কিছু হয় না। সামাজিকতা ঠেকাতে গিয়ে একটু পড়া হয়। আমরাও ছোটবেলায় পড়েছি। কোনো আন্তরিকতা থাকে না, আবেগ থাকে না, পুরো পড়েও না। আর কালিমা যখন পড়তাম- আমাদের উস্তাদরা বলতেন, মুঠো মুঠো দে! একটা একটা করে পড়ার সময় আছে নাকি! এগুলোতে আমাদের পেট ভরে। কিছু টাকাপয়সা আমরা পাই। এইসব আনুষ্ঠানিকতা পুরোহিতদের উপকার করে। আপনাদের ক্ষতি করে। ইসলামে পুরোহিত তন্ত্র নেই। আপনি সাদকা করবেন, দান করবেন, এতীম খাওয়াবেন- আপনার উপকার হবে। তবে হ্যা, আলেমদের সম্মান করবেন সেটা ভিন্ন জিনিস। কিন্তু আপনার বাপের দুআর জন্য আমাকে কেন ডেকে নিয়ে যেতে হবে! এটা বানানো ইসলাম। একজন আলেমকে দাওয়াত করে খাওয়াবেন এটা ভিন্ন ইবাদত। খুবই ভালো কাজ। কিন্তু আপনার আব্বার জন্য আপনি দান করবেন, দুআ করবেন। দানের ক্ষেত্রে অনানুষ্ঠানিক দান করবেন। মাদরাসায় দেবেন, এতীমখানায় দেবেন, গরিবদের দেবেন। আনুষ্ঠানিকতা করতে গেলেই দেখবেন সমাজের ফাসেক কাজেররা জায়গা দখল করে নেবে।

২৪০
প্রশ্ন-২৩৭: মীলাদে সুর করে দরুদ শরীফ পড়া হয়, এটা কি সুন্নাতসম্মত? যদি না হয় আমরা কী পাঠ করব?
উত্তর: মীলাদে যা আমরা পড়ি এটা সুন্নাতসম্মত না। দরুদের ক্ষেত্রে একটা মূলনীতি মনে রাখতে হবে। দরুদ এবং সকল দুআর তিনটে পর্যায় রয়েছে। জায়েয, সুন্নাত এবং বিদআত। জায়েয মানে আপনি আরবি মোটেই জানেন না, বাংলায় দরুদ পড়ছেন- আল্লাহ, আমার নবীকে সালাম দাও, দরুদ দাও। বা আল্লাহ, আমার গোনাহ মাফ করে দাও। এ রকম দরুদ এবং ইস্তেগফার করলে মূল সোয়াব পাওয়া যাবে। আর সুন্নাত মানে নবীজি (ﷺ) দুআর যে বাক্যগুলো শিখিয়েছেন হুবহু সেগুলো পাঠ করা। যে দরুদ তিনি শিখিয়েছেন, হুবহু সেই দরুদ পড়া। রাসূলের শেখানো দরুদ হল শ্রেষ্ঠ দরুদ। এই দরুদ যখন আপনি পড়বেন, আল্লাহ দেখবেন, আমার নবীর ভাষায় আমার নবীর জন্য দুআ করছে, ওরটা কবুল করে ওকে বেশি সোয়াব দিই। আর বিদআত কখন হবে? যখন আমাদের বানানো দুআগুলোকে নবীর শেখানো ইস্তেগফারের চেয়ে উত্তম মনে করব। আমাদের বানানো দরুদকে নবীর শেখানো দরুদের চেয়ে উত্তম মনে করব। নবীর দরুদ বাদ দিয়ে এটাকে পড়ার রেওয়াজ করে নেব তখন এটা নাজায়েয হবে। এজন্য সবসময় সুন্নাত দরুদ সুন্নাত পদ্ধতিতে আমাদের পড়া উচিত।

২৪১
প্রশ্ন-২৩৮: আমি একটা হারাম কাজ করে ফেলেছি কিন্তু শিরক করি নি। আমার এই গোনাহ ক্ষমা হবে কি না?
উত্তর: প্রথম কথা হল, শিরকও ক্ষমা হবে তাওবা করলে। তাওবা মানে আস্তাগফিরুল্লাহ বলা না। তাওবা মানে, আল্লাহ আমি আর কোনোদিন এই শিরক করব না। তুমি মাফ করে দাও। তাহলে শিরকও ক্ষমা হবে। বিষয়টা ভালো করে বোঝেন, কোনো গোনাহ হওয়ার পর আর কোনো দিন করব না, এই মর্মে প্রতিজ্ঞা করে আল্লাহর কাছে মাফ চাইলে সব গোনাহ মাফ হয়। শিরকের গোনাহ বিনা তাওবায় ক্ষমা করেন না। এছাড়া অন্যান্য গোনাহ, বান্দার হক ব্যতীত, আল্লাহ চাইলে ক্ষমা করে দিতে পারেন। হারাম কাজ তাওবা করলে আল্লাহ অবশ্যই ক্ষমা করবেন। তাওবা না করলে অন্য কোনো নেক আমলের দ্বারা ক্ষমা করতে পারেন। অথবা কারো সুপারিশ কিংবা নিজের দয়ায় আল্লাহ ক্ষমা করতে পারেন। আর না হলে এর শাস্তি পাওয়ার পর আল্লাহ জান্নাত দেবেন। তাই, তাওবা করলে সব পাপই মাফ হয়।

২৪২
প্রশ্ন-২৩৯: জীবনে একবার এক সৎ মেয়েকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে চুমু খাই। আমার এই গোনাহ কি আল্লাহ ক্ষমা করবেন?
আমি শিরক বিদআত করি না। কিন্তু জীবনে একবার এক সৎ মেয়েকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে চুমু খাই। আমার এই গোনাহ কি আল্লাহ ক্ষমা করবেন?

উত্তর: আল্লাহর কাছে তাওবা করলে অবশ্যই ক্ষমা হবে।

২৪৩
প্রশ্ন-২৪০: রুকু না পেয়ে সিজদায় ইমাম সাহেবকে পেলে ওই রাকআত কি পড়া হয়েছে বলে গণ্য হবে?
উত্তর: মুক্তাদি যদি ইমামের সাথে রুকু না পায় তাহলে ওই রাকআত হবে না। তবে সিজদা করতে হবে। সিজদার সোয়াব হবে। কিন্তু ওই রাকআতটা পুনরায় পড়তে হবে। ওই রাকআত পুরোটাই পড়তে হবে। অর্থাৎ আপনি রুকুতে ইমামকে পান নি। এসে দেখছেন ইমাম সিজদায় চলে গেছে। আপনি আল্লাহু আকবার' বলে তাকবীরে তাহরীমা বলে সিজদায় চলে যাবেন। পরে ওই রাকআতটা সিজদাসহই পড়বেন। আপনি রাকআত পান নি। পুরো রাকআত পড়তে হবে। তবে আপনি রাকআতের সিজদার সোয়াব পেয়েছেন। এই সিজদায় অংশ না নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে গোনাহ হবে। মাকরুহের গোনাহ হবে।

প্রশ্ন-২৪০: জোহরের প্রথম চার রাকআত সুন্নাত যদি পড়ার সুযোগ না থাকে, তার আগেই জামাআত দাঁড়িয়ে যায়, তাহলে ফরয নামায শেষ করে আগে কোন সুন্নাত পড়তে হবে? ফরযের আগের চার রাকআত নাকি পরের দুই রাকআত?

উত্তর: জোহরের সুন্নাত পড়া সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পড়েছেন। হাদীসে এসেছে। চার রাকআত সুন্নাত যদি পড়তে না পারেন, ফরয নামাযের পর প্রথমে দুই রাকআত। সুন্নাত পড়ে নিবেন। এরপরে চার রাকআত আগের সুন্নাতের কাজা পড়ে নেবেন। উল্টো পড়লেও কোনো দোষ নেই।

২৪৪
প্রশ্ন-২৪১: ফরয নামাযের পর সুন্নাত নামায পড়তে বিলম্ব করা মাকরুহ?
এক বইয়ে পড়েছি যে সব ফরয নামাযের পর সুন্নাত নামায রয়েছে সেসব নামাযে সুন্নাত পড়তে বিলম্ব করা মাকরুহ। আবার অন্য আরেক বইয়ে দেখেছি, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ফরয নামাযের পর বিভিন্ন আমল করেছেন? কোনটাকে আমরা সঠিক বলব?

উত্তর: হাদীসে দুই রকমই পাওয়া যায়। আমার রাহে বেলায়াতে’ এটা বিস্তারিত পাবেন। যেসব নামাযের পর সুন্নাত আছে, সুন্নাতটাও নামাযের অংশ। নেক আমলও নামাযের অংশ। ইমাম বেশি দেরি করবেন না। মুক্তাদিরা দুটোই করতে পারে। অর্থাৎ সুন্নাত পড়ে ওযীফা করা অথবা ওযীফা করে সুন্নাত পড়া। তবে উত্তম হল, রাসূলুল্লাহর (ﷺ) এর সামগ্রিক আমলে দেখা যায়, ফরয নামাযের পরে সাধারণ তাসবীহ তাহলীলগুলো পড়তেন। এটা পড়তে চারপাঁচ মিনিট লাগে। এরপর বাড়িতে যেতেন অথবা মসজিদে জায়গা পরিবর্তন করে সুন্নাত পড়তেন।

২৪৫
প্রশ্ন-২৪২: আমি অনেক দিন থেকে বেকার। কী আমল করলে আল্লাহ আমার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেবেন?
উত্তর: আমরা দুআ করি, আল্লাহ আপনার হালাল কর্মের ব্যবস্থা করে দেন। আল্লাহ তআলা আমাদের সকল বেকার ভাইকে কর্ম দিয়ে দেন। সবার কষ্ট দূর করে দেন। আপনি আমলের কথা জানতে চেয়েছেন। হাদীসে আছে, বেশি বেশি ইস্তেগফার করা। আর আমার রাহে বেলায়াতে’ দেখবেন যে অভাব অনটন মুক্তির জন্য কিছু দুআ আছে। ওগুলো শিখে নেবেন।

২৪৬
প্রশ্ন-২৪৩: রাগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায় কী?
উত্তর: প্রথমত রাগ এটা গোনাহ, সবসময় মনে রাখবেন। দ্বিতীয়ত, রাগলে আপনার ব্রেন আর কাজ করে না। ব্রেনের কাজ নিয়ে নেয় শয়তান। শয়তানকে এটা নিতে দেবেন না। যতক্ষণ রাগ থাকে মুখ বুজে থাকবেন। কোনো কথা যেন রাগের মাথায় না বলি। রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য আল্লাহর রাগের কথা মনে রাখবেন যে, আমি রাগলে আল্লাহও রেগে যাবেন। কাজেই আল্লাহ যেন না রাগেন তাই রাগ কন্ট্রোল করতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) রাগের সময় বারবার ‘আউযু বিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজীম’ পড়তে বলেছেন। চোখেমুখে পানি দেয়া, দাঁড়িয়ে থাকলে বসে পড়া, বসে থাকলে শুয়ে পড়া, ওযু করা- এগুলো হল রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর প্রেসক্রিপশন।

২৪৭
প্রশ্ন-২৪৪: কাউকে বকাবকি বা রাগ করার কারণে মনে কষ্ট পেলে বান্দার হক নষ্ট হয় কি না?
উত্তর: অন্যায় বকাবকি ঠিক না। মানুষকে গালি দেয়া, কষ্ট দেয়- এগুলো কবীরা গোনাহের অন্তর্ভূক্ত।

২৪৮
প্রশ্ন-২৪৫: আহলে হাদীসরা বলে, কাবলাল জুমআ, বা'দাল জুমআর নামায নাকি হাদীসে নেই। কতটুকু সঠিক?
উত্তর: এটা আহলে হাসীদের বলা উচিত না। এটা আহলে হাদীস বিরোধী কথা। আহলে হাদীসের লক্ষ্য যদি হয় মানুষকে নামায রোযা ত্যাগ করাননা- এটা খুবই দুঃখজনক। জুমআর আগে নামায পড়ার কথা হাদীসে আছে। যত পারো বেশি নামায পড়ার কথা আছে। সাহাবিরা চার রাকআত পড়তেন। নবীজি পড়তেন। কাজেই মানুষকে বলা যেতে পারে চার না, বেশি পড়। অথবা চারকে জরুরি মনে কোরো না। ‘কাবলাল জুমআ বলতে কিছু নেই'- এটা বলে যে মানুষকে ইবাদত মুক্ত করলেন এটা কোন হাদীসে আছে? বরং নবীজি (ﷺ) বলেছেন, মসজিদে যত পার নামায পড়। ইমাম আসা পর্যন্ত নামায পড়তে থাকো। বা'দালার জুমআর তো সহীহ হাদীস রয়েছে। তবে আমরা যে কাবলাল জুমআ বা বা'দাল জুমআ বলি, এই শব্দগুলো নবীজির যামানায় ছিল না। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহর (ﷺ) জুমআর নামাযের আগে নামায পড়তেন। সাহাবিরা চার রাকআত নামায পড়তেন। বেশি কমও পড়তেন। আর জুমআর পরে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) চার রাকআত পড়তেন, দু রাকআত পড়তেন। দুই রকম হাদীসই এসেছে।

২৪৯
প্রশ্ন-২৪৬: বাবামা যদি সন্তানের বিয়েতে সন্তুষ্ট না থাকে, এক্ষেত্রে সন্তানের করণীয় কী?
উত্তর: সন্তান বাবামার হক আদায় করবে। সূরা বানী ইসরাইলের ভেতর আল্লাহ পাক বলেছেন:

ربكم أعلم ما في نفوسكم إن تكونوا صالحين فإنه كان يؤابين فورا

তোমাদের মনে কী আছে আল্লাহ এটা ভালো জানেন। তোমরা যদি সৎ হও তাহলে আল্লাহ তাআলা নেককারদের গোনাহ মাফ করেন। আপনি প্রাণপনে মায়ের জন্য চেষ্টা করেন, বাবার জন্য চেষ্টা করেন। বাবাকে বোঝান। আল্লাহ তো জানছেন, আপনি অন্তর দিয়ে চেষ্টা করেছেন। কোনো অবহেলা করেন নি। এ জন্য টেনশন করবেন না। কারণ, মনে রাখতে হবে, কোনো বদদুআ আল্লাহ নিজে যাচাই না করে গ্রহণ করেন না। তবে সবসময় চেষ্টা করবেন পিতামাতার সন্তুষ্টির জন্য।

সূরা বানী ইসরাইল, আয়াত-২৫

২৫০
প্রশ্ন-২৪৭: ঘরে মানুষ বা প্রাণির ছবি ঢাকা বা লুকানো থাকলে সেই ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে কি না?
উত্তর: ছবি যদি ঢাকা থাকে ইনশাআল্লাহ অসুবিধা নেই। তবে ছবিয়ে টাঙিয়ে রাখা, প্রকাশ্যে রাখা ঠিক না।

২৫১
প্রশ্ন-২৪৮: জীবনে অনেক গীবত করেছি। সবার কাছে মাফ চওয়া সম্ভব না। এখন আমার করণীয় কী?
উত্তর: এটা আসলে আমাদের প্রায় সবারই হয়ে যায়। যাদের গীবত করেছি তাদের জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করতে হবে। সম্ভব হলে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। বেশি বেশি নেক আমল করতে হবে। এতে হয়ত আল্লাহ মাফ করবেন।

২৫২
প্রশ্ন-২৪৯: বাংলা উচ্চারণ দেখে কুরআন পড়া যাবে কি না জানতে চাই।
উত্তর: না, পড়া যাবে না। বাংলা উচ্চারণ দেখে পড়লে ঈমান চলে যাবে। আপনি যদি আরবি না পড়তে পারেন বাংলা অনুবাদ পড়েন। কুরআন তো সাপের মন্ত্র না। বুঝলাম না, সুঝলাম না, যা পারলাম উচ্চারণ করলাম- এমন না। কুরআন তো একটা ভাষা। একটা কথা। আপনি যখন ‘আলহামদু লিল্লাহ' (হামদ এর হ’ মোটা গলায় উচ্চারণ করা, ১) বলবেন, তখন আল্লাহকে গালি দেয়া হয়। আর যখন আলহামদুল্লিাহ (L১ হ’ এর উচ্চারণ গলার ভেতর থেকে) বলবেন, তখন আল্লাহর প্রশংসা করা হয়। আপনি কুরআন দেখে পড়তে গিয়ে সঠিক উচ্চারণের চেষ্টা করেছেন, ভুল হয়েছে, আল্লাহ ক্ষমা করবেন। বান্দার চেষ্টা যদি আন্তরিক হয়, আল্লাহ ক্ষমা করেন। কিন্তু আপনি আরবি উচ্চারণ না করে বাংলা দেখে পড়লেন- আ ল আল, হ আ-কার ম হাম, দ হ্রস্ব-উ কার হামদু, এভাবে পড়লে কুরআন তো তিলাওয়াত হবেই না, বরং কুরআন পড়তে গিয়ে ঈমানবিরোধী কথা বলে ঈমানটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এ ব্যাপারে সবাই সাবধান থাকবেন। আরবি শিখে পড়ার চেষ্টা করবেন। না পারলে বাংলা অনুবাদ পড়বেন। তাহলে কুরআনের মজা পাবেন।

২৫৩
প্রশ্ন-২৫০: সাতদিনের আগে আকীকা দেয়া বৈধ কি না?
উত্তর: আকীকা সাত দিনের দিন দেয়া সুন্নাত। আগে কেন দেবেন! আগে দেয়া যাবে না।

২৫৪
প্রশ্ন-২৫১: বিড়ি-সিগারেট খাওয়া কি গোনাহের কাজ।
উত্তর: জি, বিড়ি-সিগারেট খাওয়া গোনাহের কাজ।

২৫৫
প্রশ্ন-২৫২: যারা ইসলামের কাজ করছে, তাদেরকে জেলে আর তাবলীগ জামাআতকে সরকার সহযোগিতা করছে। এটা দ্বারা কী বুঝব?
যারা ইসলামের কাজ করছে, তাদেরকে সরকার জেলে ঢুকাচ্ছে। অথচ তাবলীগ জামাআতের ইজতেমায় সরকার সহযোগিতা করছে। এটা দ্বারা কী বুঝব?

উত্তর: এটা দ্বারা দুটো জিনিস বুঝব। একটা হল, যারা ইসলামের কাজ করছে, তারা ঠিকভাবে করছে না। এই জন্য সরকার ধরছে। অথবা তারাই ঠিকভাবে করছে, তাবলীগ ঠিকভাবে করছে না। আসলে আপনারা কী বোঝাতে চান এটা আমরা বুঝি। যারা ইসলামের কাজ করছে সবাইকে সরকার ধরলে এদেশে ইসলামের কাজ চলছে কীভাবে? এটা বলা ঠিক না। আবার যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল তখন জামায়াত ডাকসাইটে কাজ করেছে। অনেক কওমি মাদরাসা সেটা করতে পারে নি। তার মানে এই না যে, ওই সময় জামায়াত খারাপ ছিল আর কওমির হুজুররা ভালো। ছিল। মূল কথা হল, সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় জুলুম নির্যাতন আসতে পারে। এখানে সরকারের স্বার্থ থাকে, ইসলামবিরোধী মানুষগুলো সরকারের কাঁধে ভর করে। আবার দীনের দায়িদের ভুল থাকতে পারে। তাবলীগের ইজতেমা হচ্ছে, তারা ভালো কাজ করছে। তাদের সব কাজ যে ভালো, তা না। তাদেরও ভুলভ্রন্তি আছে। সরকার তাদের সাপোর্ট দিচ্ছে, সরকার বাধ্য হয়ে তাদের সাপোর্ট দেয়। সরকারের দায়িত্বেই কিন্তু বাইতুল মোকাররম চলে। তার মানে এই না যে সরকার এ ব্যাপারে খুব আগ্রহী। আবার সরকার অপছন্দ করে এরকমও না।

২৫৬
প্রশ্ন-২৫৩: আত্মহত্যাকীর জানাযার নামায কি আলেমরা করতে পারে?
উত্তর: তাদের জানাযার নামায হবে, কিন্তু আলেমরা করবেন না। আপনারা (সাধারণ মানুষ) করবেন।

২৫৭
প্রশ্ন-২৫৪: বেনামাযির জানাযার নামায কি আলেমদের করা ঠিক?
উত্তর: যারা স্থায়ী বেনামাযি, তাদের জানাযা আলেমদের করা ঠিক না। তাদের জানাযা আত্মীয়স্বজন সাধারণ মানুষ করবে। আলেমগণ করবেন না।

২৫৮
প্রশ্ন-২৫৫: জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে ইসলামের বিধান কী?
উত্তর: অস্থায়ী জন্ম বিরতিকরণ, যেখানে অন্য অবৈধ কিছু নেই, এটা জায়েয হবে।

২৫৯
প্রশ্ন-২৫৬: বাজারে উলের যেসব মোটা মোজা পাওয়া যায়, এর উপর মাসেহ করা বৈধ কি না?
উত্তর: চামড়ার মোজার উপর মাসেহ করা বৈধ। উম্মতের ঐক্য আছে এ ব্যাপারে। আর কাপড়ের উলের মোজা যদি মোটা হয়, মজবুত হয়, পায়ের সাথে টাইট হয়ে লেগে থাকে, চলাচল করার মতো হয়, আশা করা যায় মাসেহ করা যাবে। কিছু মতভেদ আছে।

২৬০
প্রশ্ন-২৫৭: কুরআনের ক্রমবিন্যাসে আগের সূরা পরে এবং পরের সূরা আগে নামাযের ভেতর পড়া জায়েয হবে কি?
উত্তর: ফরয নামাযে কুরআনের ক্রমবিন্যাস বজায় রাখা মুস্তাহাব বলা হয়েছে। ইচ্ছা করে উল্টালে মাকরুহ হতে পারে। রাসূলুল্লাহর (ﷺ) উল্টিয়ে পড়েছেন, এটা আছে হাদীসে। একই সূরা দুই রাকআতে পড়েছেন- এমনও আছে। ফরয নামাযেও পড়েছেন। ইচ্ছা করে তারতীব (ধারাক্রম) উল্টানো অনুচিত। অনিচ্ছাকৃত উল্টে গেলে কোনো সমস্যা নেই।

২৬১
প্রশ্ন-২৫৮: সকলেই কি কবরের আযাবের মুখখামুখি হবে? মুমিন ব্যক্তির কবরের আযাব কেমন হবে?
উত্তর: মুমিন ব্যক্তিরও কবরের আযাব হবে, তবে সবার না। এটা নির্ভর করবে তার আমলের উপর। আমলের উপরে বিভিন্ন ধরনের আযাব হতে পারে। মুমিনদেরও হতে পারে। তবে সবার জন্য নয়। সবার সমান নয়।

২৬২
প্রশ্ন-২৫৯: আল্লাহর রহমত ছাড়া যদি জান্নাতে যাওয়া না যায় তাহলে ‘আমলে নাজাত’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: আল্লাহর রহমত লাগে। তবে নাজাত পাওয়ার জন্য আপনার শখ আছে কি না, সেই শখের জন্য যে আমলগুলো করেন, এর নাম আমলে নাজাত। অর্থাৎ, আপনি অন্তর দিয়ে আল্লাহকে দেখিয়েছেন- আল্লাহ আমার নাজাতের শখ আছে। তোমার নাজাত আমি চাই। সাধ্যমতো করলাম। কিন্তু ভুলত্রুটি থেকে যায়। এই যে আমরা নামায পড়ি, মনের ভেতর কত কথা হয় নামাযের ভেতর, আল্লাহ যদি আমাদের একেবারে অফিশিয়াল হিসাব নেন, তিনি যদি বলেন, বান্দা, নামাযের পাঁচ মিনিটে তোমার উনচল্লিশ বার দুনিয়ার কথা মনে হয়েছে, এখন তুমিই বলো বান্দা, তোমার নামাযটা নেব কি না? তখন আমরা কী বলব, বলেন! এ জন্য কবুল হওয়া মানের ইবাদত আল্লাহর রহমত ছাড়া করা যায় না। আমরা করি, আর বলি, 'আল্লাহ, আর তো পারলাম না। আল্লাহ বলেন, 'যাহ, তোরটা নিয়ে নিলাম। আমলে নাজাত মানে যে, আমলগুলোর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর রহমত চাই, এটা দেখানো।

২৬৩
প্রশ্ন-২৬০: আমি এবার জমি থেকে ১১ মণ ধান এবং ১ মণ কলাই পেয়েছি। এর থেকে কতটুকু যাকাত দিতে হবে?
উত্তর: হাদীসের আলোকে যাকাতের নেসাব পূর্ণ হয় নি। এ জন্য যাকাত না দিলেও হবে। তারপরেও আপনি দিতে চাইলে ১০ ভাগের ১ ভাগ যাকাত দিবেন।

২৬৪
প্রশ্ন-২৬১: অনেক সময় দেখা যায় মসজিদের খাদেম-মুআজ্জিনকে মুসল্লিরা বকাবকি করে। এটা কি ঠিক?
উত্তর: এটাই তো নিয়ম। পানি সবসময় নিচের দিকে গড়ায়। আসলে এই মসজিদ পরিচালনায় খাদেম-মুআজ্জিনের কোনো ভূমিকাই থাকে না। অন্যায় করে কমিটি। কমিটি তো ভাসুর, কাজেই কমিটিকে কিছু বলতে পারে না। রাগ করে খাদেমের। ইমাম দুই মিনিট দেরি করে আসলে রাগ করে। আর প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত, এমপি সাহেব, মন্ত্রী সাহেব তিন ঘণ্টা দেরি করে আসলেও রাগ করে না। বসেই থাকে। অন্তর দিয়ে বসে থাকে। একবারও মনে করে না লোকটা দেরি করে আসল কেন! দেরি করে বাড়ি ফেরার সময়ও গাল দেয় না। মানসিকভাবে আমরা ইমামদেরকে চাকর মনে করি। আর ওদেরকে মালিক মনে করি। অথচ আইনত ওরা চাকর। ওরা আমার ট্যাক্সের টাকার বেতন নিয়ে চলে। আর ইমাম হল আমার নেতা। আল্লাহ তাকে নেতা বানিয়েছেন। এটা মানসিকতার অভাব। আমাদের ঝিনাইদহে এটা খুব বেশি। ঝিনাইদহ, যশোর, কুষ্টিয়া- আমাদের এলাকাতে এটা বেশি। কুমিল্লায় যান, বরিশালে যান, চট্টগ্রাম আর সিলেটে যান ওদিকে একজন ইমাম, একজন আলেমের অনেক মর্যাদা আছে। আমাদের এদিকে ইমাম-মুআজ্জিনকে মসজিদের কর্মচারি মনে করা হয়। এরা কর্মকর্তা-কর্মচারীর পার্থক্যও বোঝে না। অথবা বোঝে, কিন্তু বুঝতে চায় না।

২৬৫
প্রশ্ন-২৬২: ভালো আচরণ কি ইবাদত?
উত্তর: জি, ভালো আচরণ ইবাদত। (ভালো আচরণ করবেন এমপি, মন্ত্রী, নেতাদের সাথে! আর খারাপ আচরণ করবেন ইমাম, মুআজ্জিন, আলেমদের সাথে!)

২৬৬
প্রশ্ন-২৬৩: ৮০/৯০ কিলোমিটার দূরত্বে সফর করলে আমি কসর করতে পারব কি না?
উত্তর: জি, ৮০ কিলোমিটার দূরত্বে সফরের নিয়তে আপনি আপনার বাড়ি-ঘর-মহল্লা ত্যাগ করার পর থেকে কসর করতে পারবেন। অর্থাৎ ফরিদপুর যাওয়ার নিয়্যতে যখন আপনি ঝিনাইদহ ছেড়ে টার্মিনালে চলে যাবেন তখনই আপনি কসর করতে পারবেন।

২৬৭
প্রশ্ন-২৬৪: যাকাত দেয়ার সময় শুধু মূলধন হিসাব করব নাকি ওই সময় যত টাকার পণ্য আছে সবই হিসাবের ভেতর আনতে হবে?
উত্তর: মূলধন, লাভ মিলিয়ে যত টাকার পণ্য বিক্রয়ের যোগ্য আছে সবগুলো হিসাব করতে হবে।

২৬৮
প্রশ্ন-২৬৫: ফজরের সুন্নাতের আগে ওযুর নামায পড়া যাবে কি?
উত্তর: ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার পরে অন্য কোনো সুন্নাত নফল নামায পড়তে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিষেধ করেছেন। এ জন্য আপনি ওযু করেই যদি ফজরের সুন্নাত পড়েন, তাহলে আপনার আলাদা ওযুর নামায লাগবে না।

২৬৯
প্রশ্ন-২৬৬: জিন দিয়ে কোনো মানুষকে নষ্ট করা যায় কি না?
আমরা অনেক সময় বলে থাকি, অমুককে কোনো মানুষ জিন দিয়ে নষ্ট করেছে। প্রশ্ন হল জিন দিয়ে কোনো মানুষকে নষ্ট করা যায় কি না।

উত্তর: প্রথমত, এটা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভুয়া কথা। এদেশের একটা প্রথা হল, কোনো অসুবিধা হলেই আমরা বলি, জিন দিয়ে নষ্ট করা হয়েছে। মানুষ ইচ্ছা করলেই জিন দিয়ে কিছু করতে পারে না। আর জিনও আমাদের কিছু করতে পারে না। আমার রাহে বেলায়াতে’ পাবেন, মানুষের প্রচণ্ড ভয়, আতঙ্ক, লোভ, ইত্যাদি বিশেষ পরস্থিতিতে জিনেরা চাইলে আমাদের মনের উপর তাসির করতে পারে।

২৭০
প্রশ্ন-২৬৭: গলায় বা শরীরের কোথাও তাবিজ-মাদুলি ঝুলানো যাবে কি না?
উত্তর: তাবিজ-মাদুলি ঝুলানোকে হাদীসে বারবার শিরক বলা হয়েছে। সাহাবিরা দেখলে ছিড়ে ফেলতেন। দুআ পড়বেন, দুআর ফু নেবেন, আলেমদের কাছে গিয়ে দুআ পড়ে ফু নিতে পারেন- এগুলো সুন্নাত।

২৭১
প্রশ্ন-২৬৮: কাপড়ে সব্বোর্চ কতটুকু অংশ পেশাব লাগলে নামায হবে?
উত্তর: আসলে মোটেও পেশাব লাগাবেন না। লাগলে ধুয়ে ফেলবেন। আর যদি মাযুর হন, অর্থাৎ এমন জায়গায় আছেন, কাপড় বদলানোর সুযোগ নেই, তাহলে ওই কাপড়েই নামায পড়বেন। কেউ কেউ মাসআলায় বলে, আগের যুগের এক দিনহাম পরিমাণ লাগলে মাফ।

২৭২
প্রশ্ন-২৬৯: হাওয়া আলাইহাস সালামকে রাযিআল্লাহ তাআলা আনহা বলা যাবে কি না?
উত্তর: যেটা ইচ্ছা বলতে পারেন।

২৭৩
প্রশ্ন-২৭০: অবসাদগ্রস্ত অবস্থায় আমি নফল নামায পড়া সম্পর্কে জানতে চাই।
নিষিদ্ধ সময়গুলো বাদে দিনের যে কোনো সময় নফল নামায পড়া যাবে কি জানতে চাই। বিশেষ করে অবসাদগ্রস্ত অবস্থায় আমি নফল নামায পড়তে চাই।

উত্তর: জি, নিষিদ্ধ সময় বাদে যে কোনো সময় আপনি পড়তে পারেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর যখন মন খারাপ হত, অথবা বিপদ হত, তিনি নামাযে দাঁড়িয়ে যেতেন। আর আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, নামায এবং সবর দ্বারা সাহায্য চাইতে। অবসাদগ্রস্ত আছেন, খারাপ লাগছে, ওযু করে (দুই রাকআত) নামাযে দাঁড়িয়ে যাবেন। এটা আল্লাহর রাসূলের (ﷺ) নির্দেশ। তিনি বলেছেন:

الصلاة خير موضوع، فمن استطاع أن يستخير فليستير

নামায হল সবচে’ ভালো বিষয়। কাজেই যতবেশি পার নামায পড়বে”। যখন নিষিদ্ধ সময় না, তখন আপনি ইচ্ছা করলে নামায পড়তে পারেন।

(তাবারানি, আল মু'জামুল আওসাত-২৪৩)

প্রশ্ন-২৭১: রাসূলুল্লহ (ﷺ) বারযাখ জীবন যাপন করছেন, নাকি একবারে জান্নাতে প্রবেশ করবেন? অন্য নবীদের বেলায় কি একই?

রাসূলুল্লহ (ﷺ) বারযাখ জীবন যাপন করছেন, নাকি একবারে জান্নাতে প্রবেশ করবেন? অন্য নবীদের বেলায় কি বারযাখ জীবন প্রযোজ্য?

উত্তর: সবারই বারযাখি জীবন আছে। হাদীসে এসেছে:

الأنبياء أحياء في قبورهم يصلون

নবীরা কবরে জীবিত থাকেন, সালাত আদায় করেন। এটা বারযাখি একটা হালত। কুরআনে নবীদের বারযাখের ব্যাপারে কিছু নেই। শহীদদের ব্যাপারে আছে। তবে একটা সহীহ হাদীস পাওয়া যায়, যেটা বললাম- নবীরা কবরে জীবিত, তারা সালাত আদায় করেন। অন্যান্য হাদীসে আমাদের নবীর কথা এসেছে- দরুদ ও সালাম তাঁর কাছে পৌছানো হয়, তিনি সালামের উত্তর দেন ইত্যাদি।

(মুসনাদ আবু ইয়ালা-৩৪২৫; মুসনাদ বাযযার-৬৮৮৮)

২৭৪
প্রশ্ন-২৭২: পেশাবে পানি ব্যবহারের পর সেই পানি কাপড়ে লাগলে কোনো অসুবিধা আছে কি?
উত্তর : না, অসুবিধা নেই। পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলার পর যে পানি গায়ে লেগে থাকে তা পাক ;

২৭৫
প্রশ্ন-২৭৩: যদি আমি জুমআর সালাত আদায় করতে ব্যর্থ হই তাহলে কী করব?
উত্তর: কোনো ওযরবশত জুমআর সালাত আদায় করতে না পারলে জোহরের সালাত পড়তে হবে।

২৭৬
প্রশ্ন-২৭৪: ছুটে যাওয়া এক রাকআত আসরের নামায আমি স্থান পরিবর্তন করে পড়তে পারব কি না?
আসরের নামাযে আমি এক রাকআত মিস করেছি। সালাম ফিরিয়ে ছুটে যাওয়া এক রাকআত নামায আমি স্থান পরিবর্তন করে পড়তে পারব কি না?

উত্তর: কেউ যদি জামাআতে পুরো নামায না পান, অর্থাৎ মাসবুক হন। তিনি তো স্থান পরিবর্তন করতে পারবেন না। ইমামের সালাম ফেরানোর পরে তিনি ওই জায়গায় দাঁড়িয়ে বাকি নামায শেষ করবেন। তিনি তো সালাম ফেরাবেন না। তার নামায তো শেষ হয় নি। স্থান পরিবর্তন করলে, সালাম ফেরালে নামাযই তো ভেঙে যাবে। তবে যদি বেখেয়ালে সালাম ফিরিয়ে দেয়, অথবা সরে বসেছে, কিন্তু কেবলার দিকে তার বুক আছে, কোনো কথা বলে নি, তাহলে তিনি আগের নামায পূর্ণ করতে পারবেন।

হলে পুনরায় তাকে নামায পড়তে হবে।

২৭৭
প্রশ্ন-২৭৫: বাদ্যযন্ত্রসহ অথবা বাদ্যযন্ত্র ছাড়া গান শোনা শরীআতের দৃষ্টিতে জায়েয আছে কি না?
উত্তর: বাদ্যযন্ত্রকে ৯৯.৯৯ ভাগ আলেম হারাম বলেছেন। কারণ, বুখারিতে সহীহ হাদীস এসেছে, আখেরি যামানার কিছু মানুষ মদ এবং বাদ্যযন্ত্র হালাল বানিয়ে নেবে। তাহলে বোঝা গেল বাদ্যযন্ত্র এবং মদ একই রকম হারাম। আরো অনেক হাদীস আছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বাদ্যযন্ত্র বাজাতে নিষেধ করেছেন। দু'একজন আলেম বাদ্যযন্ত্র হালাল বলেছেন। তবে মুমিনের দায়িত্ব হল হাদীসে যেটাকে নিষেধ করা হয়েছে সেটা এড়িয়ে যাওয়া। বাদ্যযন্ত্রসহ গান শোনা এটা গোনাহের কাজ। তবে সুদ খাওয়া, ঘুষ খাওয়া, অশ্লীলতা বাদ্যযন্ত্র থেকেও বেশি গোনাহের কাজ। কাজেই কাউকে গান শুনতে দেখলে ঈমান বাড়ানোর দাওয়াত দেবেন। বলবেন যে, এগুলো ঈমান দুর্বল করে। মুনাফেকি তৈরি করে। তাকে পাপ থেকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করবেন।

২৭৮
প্রশ্ন-২৭৬: একজন বলল, গান শোনা এটা কুরআন হাদীসে কোথাও নেই গান শোনা যাবে না। এটা কতটুকু সঠিক?
একজন মাগরিবের নামায পড়ে এসে গান শুনতে লাগল। তাই দেখে আরেকজন বলল, গান শোনা এটা কুরআন হাদীসে কোথাও নেই গান শোনা যাবে না। এটা কতটুকু সঠিক?

উত্তর: অন্তত মাগরিবের নামায পড়েছে, এটা ভালো। অর্থাৎ বেনামাযি গান শোনাঅলার চেয়ে নামাযি গান শোনাঅলা ভালো। কারণ, নামায না পড়লে তো ঈমানই থাকে না। নামায তরক করা অনেক কঠিন গোনাহ। গান শোনাও গোনাহ, কবীরা গোনাহের অন্তর্ভূক্ত, তবে নামায তরক করার মতো বড় না। কুরআনে গানের ব্যাপারে স্পষ্ট কিছু নেই। বিভিন্ন তাফসীর আছে। তবে সহীহ বুখারির হাদীসে স্পষ্ট, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আখেরি যামানায় কিছু মানুষ মদ এবং বাদ্যযন্ত্র হালাল করে নেবে। আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করে দেবেন।

২৭৯
প্রশ্ন-২৭৭: নামাযরত অবস্থায় শরীর চুলকানো, জামা-প্যান্ট টানাটানি, এদিকে ওদিকে তাকানো যায় কি না?
নামাযরত অবস্থায় কোনো কাজ করা যায় কি না? যেমন অনেক মুসল্লিকে দেখি, নামাযের ভেতর বারবার শরীর চুলকায়, জামা-প্যান্ট টানাটানি করে, এদিকে ওদিকে তাকায়, টুপি ঠিক করে- এমন করা কি ঠিক?

উত্তর: এমন করা ঠিক না। তবে ওযরে করা জায়েয। অর্থাৎ কারো যদি প্রয়োজন হয় করতে পারে। তবে যথাসম্ভব না করার চেষ্টা করতে হবে।

২৮০
প্রশ্ন-২৭৮: ফরয নামাযের পর হাত তুলে দলবদ্ধ মুনাজাত নেই। আপনি এমন মুনাজাত করে অন্যদের উৎসাহিত করছেন কেন?
উত্তর: আমার ঈমান দুর্বল, তাই।

২৮১
প্রশ্ন-২৭৯: সতীদাহ প্রথা কি হিন্দুধর্মে শুরু থেকেই ছিল? এটা কী জন্য করা হয়?
উত্তর: এটা হিন্দু বুযুর্গদের কাছে জিজ্ঞেস করবেন। আমি হিন্দুদের পুরোহিত নাকি? আমার কাছে একটা ছেলে এসেছিল, দেড় সপ্তাহ আগে। হিন্দু ছেলে। মুসলিম হবে। ও বলল যে, স্যার আমার বাবা মারা যান মাস ছয়েক আগে। বাবাকে যখন পোড়ানো। হয়, আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল। লাশের নিচে খড়ি, উপরে খড়ি। যে বাবাকে কালকেও আদর করেছি, চুমু খেয়েছি, সেই বাবার লাশের উপর খড়ি চাপাচ্ছে। নিশ্চয় বাবার কষ্ট হচ্ছে। এরপর যখন আগুন লাগানো হল, লাশের গায়ে আগুন লাগলে হাতপা টেনে আসে। আমার বাবার পাটা লাফিয়ে উঠল। তখন সবাই বলতে লাগল- এই গোবিন্দ লাফাচ্ছে রে! বলে একটা খেটে নিয়ে বাড়ি মেরে পা'টা ভেঙে দিল। আমি অসুস্থ হয়ে পড়লাম। এরপর গোসাইদেরকে অনেক জিজ্ঞেস করেছি, তোমরা এই পোড়ানোটা কোথায় পেয়েছ? তোমাদের ধর্মের কোন জায়গায় আছে, দেখাও। দেখায় না। বলে যে, বাপ দাদা করে এসেছে তাই করতে হবে। এটা গেল শ্মশানে পোড়ানোর ব্যাপার। সতীদাহও একই ধরনের কথা। সতীদাহ প্রাচীন যুগ থেকেই আছে। মূলত হিন্দুধর্মের রেওয়াজগুলো আমাদের মতো নির্ধারিত কোনো ধর্মগ্রন্থের মাধ্যমে গড়ে ওঠে নি। তারা পরিবর্তন মেনে নেয়। এটা সকল ধর্মের জন্যই প্রযোজ্য। যেমন দুর্গাপূজা। হিন্দুদের সবচে' বড় পূজা। ৩০০ বছর আগেও দুর্গাপূজা নামে কিছু ছিল না। এটা বৃটিশ আমলে বাংলাদেশের এক জমিদার বানিয়েছিল। ব্যস, বৃটিশদের উৎসাহে এখন সারা ভারতবর্ষের হিন্দুদের প্রধান পূজা হয়ে গেছে। প্রাচীন যুগ থেকেই সতীদাহ আছে। কিন্তু কোন যুগ থেকে, এটা তো আমি অত ব্যাখ্যা করে পড়ি নি। এটা কেন হয়েছিল? কারণ, বউয়ের কোনো আলাদা অস্তিত্ব নেই। স্বামীর সাথে মরে দুজন এক সঙ্গে স্বর্গে থাকবে। এখনো ভারতের অনেকে বউ পোড়ানোর চেষ্টা করে।

২৮২
প্রশ্ন-২৮০: আসরের নামাযে শেষ বৈঠক করে উঠে দাঁড়িয়েছি, কী করতে হবে?
উত্তর: যে কোনো নামাযে শেষ বৈঠকে ভুলক্রমে দাঁড়ালে মনে পড়ার সাথে সাথে বসে যেতে হবে। এরপর সাহু সিজদা দিয়ে নামায শেষ করতে হবে। যদি পঞ্চম রাকআত পড়ে ফেলে, হানাফি মাযহাবের ফকীহগণ বলেছেন, পুরো নামায নফল হয়ে যাবে। সে ইচ্ছা করলে নামায ছেড়ে দিতে পারে বা ছয় অথবা পাঁচ রাকআত পড়ে নামায শেষ করে দিতে পারে। তবে নামাযের ফরয নষ্ট হয়ে গেছে। আবার পড়তে হবে।

২৮৩
প্রশ্ন-২৮১: প্রত্যেক মানুষে সাথে নাকি জিন থাকে, এটা কি সত্য? তাহলে তো মানুষ আর জিনের সংখ্যা সমান হয়ে গেল।
উত্তর: প্রত্যেক মানুষের সাথে জিন থাকে, কিন্তু একটা জিন থাকে আর কোনো জিন থাকে না এটা তো কেউ বলে না। আল্লাহ প্রত্যেক মানুষ সৃষ্টির সময় একজন ফেরেশতা আর একজন জিন লাগিয়ে দেন। তবে তাদের সংখ্যা আমাদের সমান হতে হবে এটা জরুরি না।

২৮৪
প্রশ্ন-২৮২: ছোট গোনাহ কোন গোনাহকে বলে? সুন্নাত বাদ গেলে কি গোনাহ হয়?
উত্তর: সুন্নাত যদি ওযরের কারণে মাঝে মাধ্যে বাদ যায় তাহলে গোনাহ হয় না। নিয়মিত বাদ দিলে গোনাহ হয়। ছোট গোনাহ বড় গোনাহর তালিকা আমার রাহে বেলায়াতে’ দেয়া আছে। ওখান থেকে দেখে নেবেন।

২৮৫
প্রশ্ন-২৮৩: বসা অপেক্ষা দাঁড়িয়ে দরুদ পড়া কি উত্তম? এতে কি নবীর প্রতি সম্মান বেশি হয়?
উত্তর: দাঁড়িয়ে পড়লে সম্মান যদি বেশি হয়, তাহলে আমরা নামাযের ভেতরে যে দরুদ পড়ি, বসে পড়ি না দাঁড়িয়ে পড়ি? বসে পড়ি। তার মানে বোঝা গেল, দাঁড়ালে সোয়াব বেশি হয় কিন্তু নবীজি উল্টো আমাদের বসার নিয়ম করে দিয়ে গেছেন। আসলে ইহুদি খ্রিস্টানদের তরীকায় দাঁড়িয়ে পড়লে ভালো হয়। আর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এবং সাহাবিদের তরীকায় বসাই ভালো। এখন আপনি যে তরীকা চান, সেটা বেছে নেন। দাঁড়ালে যে মানুষের সম্মান বেশি হয় এটাও ঠিক না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজেও অপছন্দ করতেন তাঁকে দেখে কেউ দাঁড়াক। তারপরেও একজন মানুষ আসলে তিনি দাঁড়িয়েছেন। আপনি দরুদ পড়ার জন্য দাঁড়াবেন, তাহলে আল্লাহর জিকির কেন বসে করেন? আল্লাহর দাম বেশি না নবীর দাম বেশি? তাহলে তো আল্লাহর জিকিরও দাড়িয়ে করতে হবে। বসা যাবে না। দরুদ, সালাম, যিকির, বিসমিল্লাহ- সবকিছু দাড়িয়ে পড়তে হবে। বসে আর কিছু করা যাবে না।

২৮৬
প্রশ্ন-২৮৪: মাহরাম ব্যক্তিদের তালিকা জানতে চাই।
উত্তর: মাহরামের ব্যাপারে জানতে হলে সুরা নিসার, চার পারার শেষ আয়াতটা পড়বেন। ওখানে সব আছে।

২৮৭
প্রশ্ন-২৮৫: কাযা নামায কি শুধু ফরযগুলো আদায় করতে হবে?
উত্তর: জি, শুধু ফরযগুলো।

২৮৮
প্রশ্ন-২৮৬: আমার ঠান্ডা-জ্বর। কিন্তু রাতের বেলা আমার যদি গোসল ফরয হয়, আমি কি তায়াম্মুম কতে পারব?
আমার ঠান্ডা-জ্বর। আমি গরম পানি অথবা ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ওযু করে নামায পড়ি। কিন্তু রাতের বেলা আমার যদি গোসল ফরয হয়, আমি কি তায়াম্মুম কতে পারব?

উত্তর: এটার সম্পর্ক আল্লাহ এবং বান্দার সাথে। যদি গরম পানি ব্যবহারের সুযোগ থাকে এবং সমস্যা না হয়, তাহলে গরম পানি দিয়ে গোসল করবেন। আর যদি পানি ব্যবহার করলে অসুস্থতা বৃদ্ধি পাওয়ার ভয় থাকে, অন্তত ৬০%, ৭০% ভয় থাকে, তাহলে আপনি তায়াম্মুম করতে পারবেন।

২৮৯
প্রশ্ন-২৮৭: ঈদে মীলাদুন্নবী উদযাপর করা বৈধ কি না?
উত্তর: ঈদে মীলাদুন্নবীর জন্ম হয়েছে ঈদে মীলাদুল মাসীহ থেকে। যেটা খ্রিস্টানরা পালন করে। আমাদের ঈদ ১২ রবিউল আউআল আর খ্রিস্টানদের ঈদ ২৫ ডিসেম্বর। দুটোই বানোয়াট। ঈসা মাসীহর জন্ম ২৫ ডিসেম্বর না। খোদ পোপও এটা লিখেছেন। কারণ ওরা বিদআত মেনে নেয়। হচ্ছে তো একটু ভালো কাজ, হোক! কিন্তু ২৫ ডিসেম্বর কখনোই ঈসা আ. এর জন্মদিন না এবং প্রথম তিনশ বছরে জন্মদিন-মৃত্যুদিন পালন করতে খ্রিস্টান ফাদাররা প্রচণ্ড নিষেধ করতেন যে, এটা বিদআত, এটা পালন করা যাবে না। আমাদেরও একই রকম। শুরুতে ছিল না। অনেক পরে হয়েছে। খ্রিস্টানরা যখন ক্রুসেড যুদ্ধে মুসলিম দেশগুলো দখল করে নিল, মুসলিমরা ওদের দেখে দেখে প্রায় একশ বছর পরে এটা চালু করে। এ জন্য আসল ঈদে মীলাদুন্নবী হল সোমবারে রোযা রাখা। আপনারা এটা করবেন।

প্রশ্ন-২৮৮: একজন সাহাবি নাকি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পেশাব খেয়েছিলেন? এই হাদীসটা কি সহীহ?

একজন সাহাবি নাকি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পেশাব খেয়েছিলেন। আর এ জন্য নাকি তাঁর জাহান্নাম হারাম হয়ে গেছে? পেশাব রাসূল (ﷺ) এর শরীরের অংশ। এই হাদীসটা কি সহীহ?

উত্তর: এই হাদীসটা সহীহ না। তবে পাওয়া যায়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পেশাব একজন না জেনে অথবা মুহাব্বতে খেয়ে ফেলেছেন, এর পুরস্কার অবশ্যই তিনি পাবেন। কিন্তু এটার সাথে ইসলামের কী সম্পর্ক! আমরা এখন নবীজির পেশাব পাচ্ছি কিন্তু তাঁর সুন্নাত তো আছে। আমি সুন্নাত মানছি না, নবীজির মতো আমার আখলাক না, নবীজির মতো আমার জিকির না, আবার আমি পেশাবের গল্প করছি।

এটা দ্বারা আপনারা কী বোঝাতে চান? পীর সাহেবের পেশাব খাবেন নাকি?

২৯০
প্রশ্ন-২৮৯: আমার বয়স চল্লিশ বছর। আগে কখনো নামায পড়ি নি। এখন আমি কী করব? এত কাযা পড়াও তো খুব কঠিন।
উত্তর: এটা নিয়ে অনেক রকমের কথা আছে ফুকাহাদের। আপনি ফরযগুলো পড়ে যাওয়ার সাধ্যমতো চেষ্টা করবেন। আল্লাহর কাছে তাওবা করবেন। না হলে বেশি বেশি নফল নামায পড়বেন।

২৯১
প্রশ্ন২৯০: রিসালাতের নামে তাকবীর দেয়া জায়েয কি না? আবার অনেকে পীর-ওলির নামে তাকবীর দেয়। এগুলো ঠিক কি না?
উত্তর: ইসলাম কোনটা নেবেন? যদি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আর সাহাবিদেরটা নেন, আবু হানীফারটা নেন, তাহলে কোনো তাকবীরই ঠিক না। তাকবীর আল্লাহর নামে হবে ‘আল্লাহু আকবার'। সাহাবিরা কখনো রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নামে তাকবীর দেন নি। আবু হানীফার শিষ্যরা কখনো ‘ইমাম আজম’ বলে তাকবীর দেন নি। এগুলো সব বানোয়াট। আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলের চেয়ে এইসব বুযুর্গরা আমাদের কাছে বড় হয়ে গেছে। আমরা উমার, উসমান, আলিকে বলি হযরত আলি, হযরত উমার, হযরত উসমান। কিন্তু আমাদের পীর সাহেবদের কথা শুধু হযরত দিয়ে বললে ছোট ছোট লাগে। নানান রকম উপাধি না দিলে জান ভরে না।

২৯২
প্রশ্ন-২৯১: নখ কাটলে কি ওযু নষ্ট হয়?
উত্তর: জি না, নখ কাটলে ওযু নষ্ট হয় না।

২৯৩
প্রশ্ন-২৯২: পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামাআতে পড়তে হবে, এটা কি কুরআনের কথা না হাদীসের কথা?
উত্তর: কুরআনেরও কথা, হাদীসেরও কথা। এবং জামাআত ছাড়া পড়লে যে নামায হবে না, এটা হাদীসের কথা। গোনাহ হবে এটা হাদীসের কথা।

২৯৪
প্রশ্ন-২৯৩: “যে মুরীদ হওয়া ছাড়া মরবে তার মৃত্যু জাহিলি যুগের মতো’- এই হাদীস দ্বারা তো বোঝা যায় অবশ্যই মুরীদ হতে হবে।
উত্তর: এটা টাটকা মিথ্যা কথা। দাজ্জাল শয়তানদের বানানো কথা। মুরীদ না হয়ে মরা জাহিলি যুগের মরা- এই কথা যে বলে সে দাজ্জাল। মিথ্যাবাদী। কোনো হাদীসে এই কথা নেই। মুরীদ শব্দটাই কুরআন হাদীসে নেই। বাইআত করতে হয় রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে। পীরের যে বাইআত হতে হয় এটাই ছিল না। আমরা এখন প্রেসিডেন্টের কাছে বাইআত করি। রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট শপথ নেয়, আমাদেরও শপথ হয়ে যায়। রাষ্ট্রপ্রধানের আনুগত্য লাগবে। রাষ্ট্রপ্রধানের বাইআতের হাদীসগুলোকে বিকৃত করে পীরের বাইআতের ভেতর ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। পীর কথাটা ইসলামের না। সোহবত নেয়া ভালো। আলেম-উলামা, নেককার মানুষের সোহবতে যাওয়ার কথা কুরআন। হাদীসে আসছে। মুরীদ হওয়ার কথা কোথাও নেই। দুই নাম্বার হল, ইলম শিক্ষা ইবাদত। মাদরাসায় নাম লেখানো ইবাদত নয়। কেউ যদি নেককার মানুষের সোহবতে গিয়ে দীন শেখে, তার লাভ হবে। কিন্তু মুরীদ হল, বাইআত হল, আর কিছু শিখল না; তাহলে তার কিছুই হল না। বরং, অনেক সময় এটা শিরকে পরিণত হয়। মূলত একজন পীরের মুরীদ হওয়া, এটা বিদআত কাজ। সাহাবি, তাবেয়িদের যুগে কেউ একজনের সোহবতে যেতেন না। হাসান বসরি একজনের কাছে যেতেন না। সব সাহাবির কাছে যেতেন। আব্দুল কাদের জিলানিও অনেকের কাছে যেতেন। একজন ধরে পড়ে আছে, এটা কঠিন অন্যায়। ওই লোকটা তখন পীরকে নবী বানিয়ে ফেলে। মুরীদ মানে হল, যে ইচ্ছা করে, চায়। আর মুরাদ মানে যাকে চাওয়া হয়। আমাদের মুরাদ হলেন আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূল। আমরা আল্লাহর ইবাদত করি নবীর তরীকায়। তো আপনি যখন এক পীরের মুরীদ হলেন, পীর আপনার মুরাদ হয়ে গেল। আপনি সব হারিয়ে ফেললেন।

২৯৫
প্রশ্ন-২৯৪: জোহরের নামায একা বাড়িতে পড়লে তাকবীর জোরে দিতে হবে কি না?
উত্তর: আস্তে দেয়া নিয়ম। তবে জোরে তাকবীর দিলে নামায নষ্ট হবে না। আর একা পড়বেন কেন! ওযর ছাড়া একা পড়লে কিন্তু আপনার গোনাহ হবে।

২৯৬
প্রশ্ন-২৯৫: ওযু করে গোসল করার পরে কি আবার ওযু করতে হবে।
উত্তর: না।

২৯৭
প্রশ্ন-২৯৬: শিয়াদের পিছনে কি নামায পড়া যায়?
উত্তর: শিয়ারা সাহাবিদেরকে কাফের মনে করে। আবু বাক্র, উমার, উসমান সবাইকে গালি দেয়। তাদের সাথে আমাদের অনেক গড়মিল। তারা রাসূলের বংশধরের মহাব্বতের নামে সাহাবিদের গালি দেয়। খুবই আপত্তিকর কথা বলে। এবং তাদের বিশ্বাসের সাথে পুরাটাই শিরিক জড়িত।

২৯৮
প্রশ্ন-২৯৭: হিন্দুর ঘরে জন্ম দিয়ে, হিন্দু পরিবেশে বড় করে তাকে ইসলাম না মানার শাস্তি দেয়া হবে কেন?
উত্তর: কে শাস্তি দিচ্ছে? এমন কোনো হিন্দু আছে নাকি আমরা তাকে ধরে মারছি? শাস্তি দিচ্ছি? মায়ের চেয়ে খালার দরদ বেশি হয় নাকি! যার শাস্তির কথা নিয়ে আপনার রাতে ঘুম হচ্ছে না, সে আপনার বান্দা নাকি আল্লাহর বান্দা! ওর প্রতি দরদ আপনার বেশি না আল্লাহর বেশি? আমরা আমাদের চিন্তা করি না। আল্লাহ কাকে শাস্তি দেবেন সেই চিন্তায় অস্থির! আল্লাহ কাকে কী শাস্তি দেবেন, সেটা আল্লাহ জানেন। তার ভেতরে কখন আল্লাহ ঈমান দিয়েছিলেন, সে ঈমান নিয়েছিল, কি নিয়েছিল না, সে বুঝেছে কি বোঝে নি, সব আল্লাহ জানেন। প্রত্যেককে আল্লাহ তার জানা অনুযায়ী দেবেন।

২৯৯
প্রশ্ন-২৯৮: দেনমহর শোধ করার জন্য সুদভিত্তিক ব্যাংকে ডিপিএস খুলেছিলাম। উক্ত সুদমিশ্রিত টাকা দিয়ে দেনমহর শোধ করা যাবে?
দেনমহর শোধ করার জন্য সুদভিত্তিক ব্যাংকে ডিপিএস খুলেছিলাম। প্রশ্ন হল, উক্ত সুদমিশ্রিত টাকা দিয়ে দেনমহর শোধ করা যাবে কি না?

উত্তর: জি না। আপনি নিজে হালাল টাকা দেবেন। মূল টাকা দেবেন। আর সুদের টাকা কোনো জনকল্যাণমূলক কাজে অথবা একান্ত অসহায় কাউকে দিয়ে দেবেন।

৩০০
প্রশ্ন-২৯৯: অর্থসহ কুরআন শরীফ বিনা ওযুতে ধরা যাবে কি না?
উত্তর: ধরা যাবে।

প্রশ্ন-৩০০: মুহাম্মাদ (ﷺ) কে সৃষ্টি না করলে আল্লাহ দুনিয়ার কিছুই সৃষ্টি করতেন না এটা সহীহ হাদীস কি না জানতে চাই।

উত্তর: না, এই হাদীসটা সহীহ না।

৩০১
প্রশ্ন-৩০১: এক ব্যক্তি বলেছে, আল্লাহ কোথাও জামাআতে নামাযের কথা বলেন নি। তার এই চ্যালেঞ্জ সঠিক কি না?
এক ব্যক্তি বলেছে যে, আল্লাহ কোথাও জামাআতে নামাযের কথা বলেন নি। যদি কেউ দেখাতে পারে তাহলে আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামাআতে পড়া শুরু করব। তার এই চ্যালেঞ্জ সঠিক কি না?

উত্তর: আল্লাহ কুরআনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের কথা বলেছেন, জামাআতে নামাযের কথাও বলেছেন। তবে আমার একটা কথা আছে, মাছ জবাই না করে খাওয়া যাবে, এটা কুরআনে কোথাও নেই। আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, জবাই ছাড়া কিছুই খাওয়া যাবে না। যে এটা বলেছে, সে যদি মাছ জবাই করে না খায় তাহলে তার কতল। পাওনা। কারণ, কুরআনে আল্লাহ ক্লিয়ার বলেছেন, মরা জিনিস খাওয়া যাবে না। আল্লাহর নাম নিয়ে জবাই না করলে কোনো কিছুই খাওয়া যাবে না। সে মাছ জবাই করে খায়, নাকি এমনি খায়? এমনি যদি খায় তাহলে কতল হবে। আল্লাহ মরা জিনিস খেতে নিষেধ করেছেন কুরআনে। সে মরা মাছ খায় কেন? কাজেই করআন দিয়ে চলবে, হাদীস নেবে না। তাহলে তো তার মাছ জবাই করে খেতে হবে। যাহোক, কুরআনে আল্লাহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের কথা বলেছেন, জামাআতে নামাযের কথা তো বারবারই বলেছেন।

واقوا مع الراكوينه

বারবার বলেছেন। নামাযিদের সবার সাথে নামায পড়ো’। (সূরা বাকারা, আয়াত-৪৩)

প্রশ্ন-৩০২: ছোট থেকে একটা গল্প জেনে এসেছি, এক বুড়ি রাসূলুল্লাহর (ﷺ) এর পথে কাঁটা দিত, এটা কি সঠিক ঘটনা?

উত্তর: জি না। এই গল্পটা সহীহ না।

৩০২
প্রশ্ন-৩০৩: বর্তমানে অধিকাংশ বক্তা টাকার চুক্তিতে ওয়াজ করেন। বিষয়টা আপনি কীভাবে দেখেন?
বর্তমানে অধিকাংশ বক্তা টাকার চুক্তিতে ওয়াজ করেন। আমাকে পাঁচ হাজার অথবা দশ হাজার ইত্যাদি টাকা দেয়া লাগবে। বিষয়টা আপনি কীভাবে দেখেন?

উত্তর: বিষয়টা আমি খুবই ভালোভাবে দেখি। কারণ, এই বক্তাগুলো গান গায়। আর যে কোনো গায়ক, (আমাদের যেমন মমতাজ বেগমসহ আরো অনেকে আছে) তারা তো টাকার বিনিময়ে গান গায়। তো যে গান গাইতে আসবে সে তো টাকা নিতেই। আসবে। যে ওয়ায়েজরা চুক্তি করে আসে, সেই ওয়ায়েজরা গান গায়। এবং আমরা গান শোনার জন্যই তাদের দাওয়াত দিই। যে যত বেশি মিথ্যা কথা বলে, আজগুবি গল্প করে, সুরের ফোয়ারা ছোটায়- তার তত বেশি টাকা দিয়ে আনে। কাজেই গান শোনার জন্য, গল্প শোনার জন্য টাকা দিয়ে আনা উচিত। এটা হল প্রথম কথা।দুই নাম্বার কথা হল, আমাদের দেশের মানুষ বড় অদ্ভুত। আমাদের দেশের মানুষেরা ডাক্তারের কাছে যাওয়ার আগে তার ডিগ্রি দেখে। সে কেমন ডাক্তার, খোজ খবর নেয়। আর আলেমদের ব্যাপারে কোনো খোজ খবর রাখে না। আলা হজরত, মুফতি, আল্লামা লিখে দিয়েছে, ব্যস। উনার শিক্ষাগত যোগ্যতা কী, উনি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আছেন, উনার এলমি যোগ্যতা কী, আলেম সমাজে গ্রহণযোগ্যতা কেমন- এগুলো বিচার করে না। তো এ জন্য এই বিজনেসটা এখন খুব ভালো চলছে। মিথ্যা গল্প শোনানোর জন্য আখিরাতে জাহান্নামে যাবে, তো দুনিয়ায় টাকা নেবে না, তা তো হয়। তাহলে তো দুনিয়া আখিরাত সবই গেল।

৩০৩
প্রশ্ন-৩০৪: লাল, কমলা, খয়েরি- এই ধরনের পোশাক পরা পুরুষের জন্য জায়েয কি না?
উত্তর: কমলা খয়েরিতে কোনো সমস্যা নেই। তবে লালের ব্যাপারে একটু আপত্তি আছে। লালের ব্যাপারে হাদীসে নিষেধ আছে আবার লাল নবীজি পরেছেন, এমনও আছে। এর ব্যাখ্যা আমার পোশাক বইতে পাবেন।

৩০৪
প্রশ্ন-৩০৫: নাসারা বলতে কাদের বোঝানো হয়।
উত্তর: আগে খ্রিস্টানদের একটা সম্প্রদায় ছিল। তাদেরকে নাজারীন বলা হত। তারা ঈসা আ.কে নবী মানত। এরাই মূলত নাসারা।

প্রশ্ন-৩০৬: রাসূলুল্লাহর (ﷺ) কে স্বপ্নে দেখা সম্ভব কি না? যদি যায়, চেনার উপায় কী?

উত্তর: চেনার উপায় হল তাঁকে দুনিয়ার আকৃতিতে দেখতে হবে। আপনি কিতাবের সাথে মিলাবেন। কিতাবের বর্ণনার মতো ঠিক ওই আকৃতি আছে কি না মিলাবেন।

৩০৫
প্রশ্ন-৩০৭: দীন প্রতিষ্ঠা করার হুকুম কী?
কেউ বলে ফরযে আইন, কেউ বলে ফরযে কেফায়া। কোনটা সঠিক?

উত্তর: আমার নিজের জীবনে দীন প্রতিষ্ঠা করা ফরযে আইন। আপনার জীবনে আমি প্রতিষ্ঠা করব কীভাবে! আমার ফরটা ফরয, সুন্নাতটা সুন্নাত, নফলটা নফল। দীন তো সিঙ্গেল কোনো কাজ নয়। অনেক কাজের সমষ্টি দীন। অন্যের জীবনে দীন প্রতিষ্ঠা করা যায় না। নিজের জীবনে দীন প্রতিষ্ঠা ফরযে আইন। অন্যের জীবনে ফরযে কেফায়া।

৩০৬
প্রশ্ন-৩০৮: ইস্তেঞ্জার পর শুধু কুলুপ ব্যবহার করা জায়েয কি না?
উত্তর: পানি ব্যবহার করা জরুরি। শুধু পানি ব্যবহার করলে হবে। কিন্তু শুধু কুলুপে হয়। তবে কেউ পানি না পেলে কুলুপ ব্যবহরা করে যদি ভালো করে মুছে ফেলতে পারে তাহলে হবে।

৩০৭
প্রশ্ন-৩০৯ নামাযের ভেতর দাঁতে আটকে থাকা খাবার যদি খেয়ে ফেলা হয় অথবা ফেলে দেয়া হয় তাহলে কি নামায হবে?
উত্তর: যদি কোনো খাদ্য বেরিয়ে আসে, ফেলে দেবেন। কোনো ক্ষতি হবে না। সাধারণত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নামাযের ভেতর থুতু ফেলতে নিষেধ করেছেন। তাই থুতু না ফেলে টিস্যু বা কাপড় দিয়ে মুছে নেবেন। আর যদি খুব ছোট টুকরো হয়, গলার ভেতর চলে যায়, সমস্যা নেই। বড় কিছু খেলে নামায ভেঙে যাবে।

৩০৮
প্রশ্ন-৩১০: মেয়েদের নেকাব পরার বিধান কী?
মেয়েদের নেকাব পরার বিধান কী? মেয়েদের সবচে' আকর্ষনীয় অঙ্গ চেহারা। কিন্তু কেউ কেউ বলে নেকাব পরার দরকার নেই। এই বিষয়ে জানতে চাই।

উত্তর: মেয়েদের নেকাব পরা ফরয। এই মতটা জোরালো। কেউ কেউ সুন্নাত বলেছে। এ সম্পর্কে আমার পোশাক বইয়ে বিস্তারিত পাবেন।

৩০৯
প্রশ্ন-৩১১: হায়াতুন নাবী’ অর্থ কী?
উত্তর: এর অর্থ আল্লাহ তাআলা আমাদের নবীকে বিশেষ বারযাখি জীবন দিয়েছেন। হাদীসে এসেছে, তাঁর কাছে আমাদের সালাম পাঠানো হয়, তিনি জবাব দেন। আর হায়াতুন নাবী' মানে আমাদের দুনিয়ার মতো একটা জীবন তাঁকে দেয়া হয়েছে, এটা বানোয়াট কথা।।

৩১০
প্রশ্ন-৩১২: বিতর নামায কি এক রাকআত পড়া যাবে?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কখনো এক রাকআত বিতর নামায পড়েন নি। তিন রাকআত, পাঁচ রাকআত, সাত রাকআত পড়েছেন। হাদীসে সবচে' বেশি এসেছে দুই রাকআত পড়ে সালাম ফিরিয়ে আবার নতুন এক রাকআতের নিয়ত করে এক রাকআত পড়া। এই এক রাকআতে প্রথমে সূরা ফাতিহা পড়ে সাথে একটা সূরা মিলিয়ে তাকবীর দিয়ে দুআ কুনুত পড়া। এই রকম হলে তিন রাকআত হল, কিন্তু আলাদা। এটা হাদীসে এসেছে। এভাবে কেউ যদি পড়ে, সমস্যা নেই। এরপরেও একটা সহীহ হাদীস, নাসায়িসহ অন্যান্য কিতাবে আছে। বিতর পড়া জরুরি। যে পাঁচ রাকআত পড়তে চায়, পড়বে। যে তিন রাকআত পড়তে চায়, পড়বে। কেউ এক রাকআত পড়তে চাইলে পড়বে। এ জন্য আলেমরা এক রাকআতকে জায়েয বলেছেন। তবে সাধারণ মানুষের জায়েয নাজায়েযের পঁাচে না পড়ে, যেটা আমরা করি, শরীআতে আছে, এটাই আমাদের করা উচিত। ইবাদত বাড়ানোর চেষ্টা করেন। কমানোর চেষ্টা না করা উচিত।

৩১১
প্রশ্ন-৩১৩: লুঙ্গি পরে কি নামায হবে?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর জীবনের প্রায় নব্বই ভাগ সময়ই তিনি লুঙ্গি পরে নামায পড়েছেন। তবে তিনি সাধারণত খোলা লুঙ্গি পরতেন, যেটা আমরা হজ্জে পরি। কাজেই লুঙ্গি পরে অবশ্যই নামায হবে।

৩১২
প্রশ্ন-৩১৪: বাথরুমে ঢোকার দুআ বাইরের দেয়ালে লেখা হয়। বের হওয়ার দুআ বাথরুমের ভেতরের দেয়ালে কি লেখা যাবে?
উত্তর: দুআ লেখার জিনিস না। দুআ পড়ার জিনিস। আর বাথরুম দুআ পড়ার জায়গা ! বাথরুম থেকে বেরিয়ে দুআ পড়বেন। বেরোনোর দুআ বাইরে লেখা যেতে পারে। সমস্যা নেই।

৩১৩
প্রশ্ন-৩১৫: অধিক ঘুমানোর কারণে কি রোযা ভেঙে যায়?
উত্তর: না, অধিক ঘুমানোর কারণে রোযা ভাঙে না। তবে রোযার হক পুরোপুরি আদায় হল না। এতে রোযার বরকত থেকে মাহরুম হবেন।

৩১৪
প্রশ্ন-৩১৬: টিভিতে খেলা বা খবর দেখলে কি ওযু ভেঙে যাবে?
উত্তর: ওযু ভাঙবে না। ওযু ভাঙার নির্ধারিত কিছু কারণ আছে। যেমন, মনে করেন, কেউ শূকরের মাংস খেলে ওযু ভাঙে না। কিন্তু ঘুমিয়ে গেলে ওযু ভাঙে। এখন কি বলবেন যে,শূকরের মাংস খাওয়ার চেয়ে ঘুম বেশি গোনাহ? গীবত করা অনেক কঠিন গোনাহ, কিন্তু গীবত করলে ওযু ভাঙে না। অনুরূপ খেলাধুলা দেখলে বা কোনো পাপের। জিনিস দেখলে ওযু ভাঙে না, কিন্তু গোনাহ হবে।

৩১৫
প্রশ্ন-৩১৭: সাহরির সময় যদি রোযার নিয়ত না করা হয়, তাহলে কি রোযা হবে না?
উত্তর: রোযার নিয়ত রাত্রে করতে হয়। আপনি যখন রাত্রে ঘুমাতে যান, তখন আপনি নিয়তসহই ঘুমাতে যান যে, শেষরাতে উঠে সাহরি খেয়ে রোযা রাখব। এটাই হল নিয়ত। সাহরি যখন আপনি খাচ্ছেন, আমার মনে হয়, পাগল ছাড়া কেউ নিয়ত ব্যতীত সাহরি খায় না। আপনি সাহরিতে উঠেছেন অথচ রোযার নিয়্যত নেই, এটা বাচ্চাদের হতে পারে।

৩১৬
প্রশ্ন-৩১৮: তারাবীহতে ভুলবশত প্রথম রাকআতে সালাম ফিরিয়ে নিলে, চার রাকআত পূর্ণ করতে পরের তিন রাকআত একসাথে পড়া যাবে?
তারাবীহর নামাযে ইমাম যদি ভুলবশত প্রথম রাকআতে সালাম ফিরিয়ে দেয়, তাহলে কি চার রাকআত পূর্ণ করার জন্য পরের তিন রাকআত একসাথে পড়া যাবে?

উত্তর: জি না। যদি সালাম ফেরানোর পর কোনো কথা না বলে, তাহলে নামায শেষ হয় না। ভুলে সালাম ফিরিয়ে দিলে 'সুবহানাল্লাহ' বলবেন অথবা বাঙালি কায়দায় ‘আল্লাহু আকবার' বলবেন। যেন ইমাম সাহেব বুঝতে পারেন, উঠে দাঁড়িয়ে যান। কেউ কোনো কথা না বললে নামায ভাঙে না। আরেক রাকআত পড়ে সহু সিজদা দেবেন। যদি এমন হয়, ইমাম সালাম ফিরিয়ে ফেলেছেন, সবাই কথাবার্তা বলছে, তাহলে নামায নষ্ট হয়ে যাবে। আবার এই দুই রাকআত নামায পড়তে হবে।

৩১৭
প্রশ্ন-৩১৯: টুপি পরে টয়লেটে যাওয়া বৈধ কি না জানতে চাই।
উত্তর: জি, বৈধ। বরং টয়লেটে যাওয়ার সময় মাথা ঢেকে রাখা- এটা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এবং সাহাবিগণ করতেন। তাঁরা মাথায় কিছু রেখে বাথরুমে যেতেন।

৩১৮
প্রশ্ন-৩২০: তাকবীরে তাশরীক’ কি ঈদুল ফিতরের নামায শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত পড়তে হবে?
উত্তর: এটা ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা থেকেই পড়বেন। আমাদের প্রচলন হল, মনে মনে পড়া। আবূ হানীফ রাহ. মনে মনে পড়তে বলেছেন। আবু ইউসুফ, মুহাম্মাদ জোরে পড়তে বলেছেন। অন্যান্য ফকীহগণও জোরে পড়তে বলেছেন। আপনারা পড়বেন। রাস্তায় যাওয়ার সময় পড়বেন, ঈদের মাঠে পড়বেন। খুতবার ভেতরেও রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকবীর বলতেন।

৩১৯
প্রশ্ন-৩২১: একটি আয়াত বাদ দিলে কি খতম তারাবীহ হবে?
উত্তর: একটি আয়াত বাদ দিলে একটি আয়াত বাদ হবে। এটা তো খুব সহজ ব্যাপার। আপনি যতটুকু শুনবেন, ততটুকু সোয়াব পাবেন। হাফেজরা আয়াত বাদ দেবেন না। তবে এর থেকেও বড় ব্যাপার হল, আপনাদের ধাক্কায় হাফেজ সাহেবরা যেভাবে পড়েন, তাতে একটা নয়, শত শত আয়াত বাদ হয়ে যায়।

৩২০
প্রশ্ন-৩২২: ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’কে ‘৭৮৬ দ্বারা প্রকাশ করা কতটুকু জায়েয?
উত্তর: আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের বারবার শেখাই- নামায শুরু করে তোমরা সানা পড়বে, আঊযু বিল্লাহি মিনাশ শায়তনির রাজীম পড়বে এরপর বলবে ৭৮৬, আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন। এটা একটা ভয়ঙ্কর বাজে কাজ। এর দ্বারা ঈমান নষ্ট হতে পারে। কারণ, ৭৮৬ মানে শুধু বিসমিল্লাহ না, আরো অনেক কিছু হতে পারে। শয়তানের নামও হতে পারে। সংখ্যা দিয়ে বিসমিল্লাহ লেখা যায় না। প্রকাশ করা যায় না। সংখ্যার ভেতর অনেক কারচুপি, প্রতারণা থাকতে পারে।

৩২১
প্রশ্ন-৩২৩: ইমামের আনুগত্য শুধু নামাযের ক্ষেত্রে নাকি সকল সময়?
সহীহ হাদীসের আলোকে বুঝিয়ে বলবেন। উত্তর: নামাযের ইমামের আনুগত্য নামাযের ক্ষেত্রে। রাষ্ট্রের ইমামের আনুগত্য রাষ্ট্রের

ক্ষেত্রে। বাড়ির ইমামের আনুগত্য বাড়ির ক্ষেত্রে। যে যেখানে ইমাম, সেখানে তার আনুগত্য।

৩২২
প্রশ্ন-৩২৪: বিয়ের জন্য কেমন মেয়ে বাছাই করা জায়েয?
উত্তর: ‘জায়েয না, বলতে হবে নির্দেশনা। ইসলাম কেমন মেয়ে বিয়ে করতে নির্দেশ দেয়! রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:

تنكح المرأة لأتبع إمالها ولجبها وجمالها ولدينها، فاظفر بذات الين، تربيت يداك

একজন মেয়েকে যখন বিবাহ করা হয়, তখন তার সৌন্দর্য দেখা হয়, তার সম্পদ দেখা হয়, তার বংশ দেখা হয়, তার দীনদারী দেখা হয়। তুমি যদি সফল হতে চও তাহলে দীনদারী সবচে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মুশকিল হল, আমাদের যারা অভিভাবক, বাবা-মা, দাদা-দাদি, বিয়ে দেয়ার সময় সুন্দরী খোঁজে। আর যে বিয়াই হবে, তার টাকা পয়সা খোজে। এরপর বছর দুইতিন যেতে যেতে আমাদের কাছে দুআ নিতে আসে- ছেলে কথা শোনে না। বউয়ের কথায় ছেলে খারাপ হয়ে গেছে। তো বউটা এনেছে কে? তুমি না ছেলে? তুমিই তো বেছে বেছে বেদীন একটা মেয়ে এনেছিলে। তো এ জন্য, আমরা অতীতে অনেক ভুল করেছি, আর যেন ভুল না করি। বিশেষ করে ছেলেরা যারা বিয়ে করবে, তাদের একটা জিনিস বুঝতে হবে, মরণ পর্যন্ত যদি শান্তির জীবন চাও, তাহলে সবচে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে দীনদারীকে। দীনদারী মানে এমন দীনদারী না- বিয়ের পরে বোরকা পরব, বিয়ের পরে নামায পড়ব- এটা না।

৩২৩
প্রশ্ন-৩২৫: বর্তমানে যেসব মেয়েকে টিভির পর্দায় দেখা যায় তাদেরকে বিয়ে করা ঠিক কি না?
উত্তর: মোটেও না।

৩২৪
প্রশ্ন-৩২৬: জোহর, আসর এবং ইশার পূর্বে যে সুন্নাত আছে, এগুলো দুই দুই রাকআত? নাকি একবারে চার রাকআত পড়তে হবে?
জোহর, আসর এবং ইশার পূর্বে যে চার রাকআত সুন্নাত আছে, এগুলো দুইদুই রাকআত করে পড়া যাবে কি না? নাকি একবারে চার রাকআত পড়তে হবে?

উত্তর: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে খুব স্পষ্ট সহীহ হাদীস আছে। শাইখ নাসীরুদ্দীন আলবানি এবং অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ হাদীসটা এনেছেন: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জোহরের আগের এবং আসরের আগের চার রাকআত সুন্নাত নামায একবারে পড়তেন। অর্থাৎ এক সালামে পড়তেন। এভাবেই পড়া সুন্নাতসম্মত এবং উত্তম। তবে দুই রাকআত করে পড়লেও ইনশাআল্লাহ হয়ে যাবে। (সহীহ বুখারি-৫০৯০; মুসলিম-১৪৬৬; আবু দাউদ-২০৪৭; নাসায়ি-৩২৩০; ইবন মাযাহ-১৮৫৮)

৩২৫
প্রশ্ন-৩২৭: কোন ধরনের উদ্ভাবনকে আমরা বিদআত বলব?
বিস্তারিত বুঝিয়ে বলবেন। উত্তর: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজেই বলেছেন। সেটা হল, দীনের ভেতরে কোনো কিছু উদ্ভাবন করা। বিদআতের ব্যাপারে কয়েকটা কথা মনে রাখেন। বিদআত কিন্তু কর্ম। বিদআত হল চেতনা। বিদআতকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মাকরুহ বলেন নি, হারাম বলেন নি। গোমরাহি বলেছেন। যেমন শিরক বা কুফর। এটা অধিকাংশ ক্ষেত্রে কর্ম নয়, চিন্তা। আপনি একজনের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। আপনি যদি মনে করেন তিনি অন্তরের সব জানেন, তিনি ভালো মন্দের মালিক। তাহলে এটা শিরক। আর ভয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন যদি, তাহলে এটা শিরক না। আপনি একজনের কথায় মদ খেয়েছেন। যদি আপনি জানের ভয়ে খান, তাহলে এটা শিরক না। আর যদি মনে করেন, হুজুর মদ খেতে বলেছেন বলে মদ জায়েয হয়ে গেছে। কাজেই মদ খেলে কোনো সমস্যা নেই, তাহলে এটা শিরক। মনের চেতনা মূলত কুফরি শিরকির সাথে জড়িত। বিদআতও তাই। বিদআতের মূল অর্থ হল, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও সাহাবাগণ যে কাজ করেন নি, সেই কাজকে দীনের অংশ মনে করা। যেমন, আমি বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছি। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দরুদ পড়ছি অথবা সালাম পড়ছি কিংবা জিকির করছি। এটা জায়েয। কমন সেন্সের ব্যাপার যে দাঁড়িয়ে জিকির করা বা দরুদ পড়া মোটেও নাজায়েয নয়। আমি এখানে বসে ছিলাম। বসে বসে কুরআন কারীম পড়ছিলাম বা জিকির করছিলাম। হঠাৎ আপনি আসলেন। ওই কুরআন পড়তে পড়তে অথবা জিকির করতে করতে আমি দাঁড়িয়ে গেলাম, আপনার সাথে মোসাফাহ করলাম। এটাও নাজায়েয নয়। এবার মনে করেন আমি বসে ছিলাম, বসে গল্প করছিলাম। হঠাৎ মনে হল, আল্লাহর জিকি করব অথবা কুরআন পড়ব। তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ালাম। দাড়িয়ে পড়তে শুরু করলাম। এটা বিদআত হবে। কারণ, আমি মনে করেছি, বসে দরুদ পড়লে, কুরআন পড়লে সোয়াব কম হবে। দাঁড়িয়ে পড়বে সোয়ব বেশি হবে। এ জন্য আমি কুরআন পড়ার জন্য দাঁড়িয়েছি। এই জন্য মনে করলাম যে, দাঁড়ানো কর্মটা ইবাদতের অংশ, দাড়িয়ে করলে সোয়াবটা বেশি হবে। দীনের ভেতরে ইবাদতের ভেতরে দাঁড়ানো নামক কর্মটা আমি ঢুকিয়ে দিলাম, এইটার নাম হল বিদআত। কর্মটা মূলত নাজায়েয না। কর্মটাকে দীন মনে করা নাজায়েয। কারণ, আপনি নবীর সুন্নাতকে ছোট মনে করলেন। বিদআতের পক্ষে একটা যুক্তি দেখেন। নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়া উত্তম। নফল নামাযে দাঁড়িয়ে আমরা কুরআন তিলাওয়াত করি। তাহলে নফল নামাযে কুরআন দাড়িয়ে পড়া উত্তম। আপনি এইটার উপর দলিল দিয়ে বললেন, তাহলে কুরআনও দাঁড়িয়ে পড়া উত্তম। আপনার যখন কুরআন পড়তে ইচ্ছা হল, আপনি ওযু করে এসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কুরআন পড়তে লাগলেন। এই যে আপনার চিন্তা, দাঁড়িয়ে কুরআন পড়া উত্তম, দাঁড়িয়ে কুরআন পড়লে সোয়াব বেশি হয়- এই চিন্তাটা হল বিদআত। এই চিন্তা নিয়ে যে দাঁড়ালেন, এই কর্মটা বিদআত। কারণ, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নফল নামাযে দাঁড়াতে বলেছেন, কুরআন তিলাওয়াতের সময় দাড়াতে বলেন নি। উনি বসে পড়তেন। তবে কেউ এমনিতে দাঁড়িয়ে কুরআন পড়লে দোষ নেই। কিন্তু দাঁড়িয়ে কুরআন পড়লে সোয়াব বেশি হয় মনে করাটা বিদআত। তো এ রকম শত সহস্র বিদআত আমাদের সমাজে আছে। অনেকে বলে, রাসূলের যুগে ফ্যান ছিল না, কারেন্ট ছিল না, প্লেন ছিল না। এইগুলোকে কেউ যদি দীন মনে করে বিদআত হবে। কেউ যদি মনে করে, ফ্যান ছাড়া নামায পড়লে সোয়াব কম হবে, অথবা, প্লেনে না গিয়ে বাসে হজ্জে গেলে সোয়াব বেশি হবে। তাহলে বিদআত হবে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যেটা করেন নি, যে পদ্ধতিতে করেন নি, যে উপকরণ দিয়ে করেন নি- সেই পদ্ধতি বা উপকরণ বা কর্মকে দীনের, ইবাদতের অংশ মনে করা, সোয়াবের উৎস মনে করা- এটা বিদআত। বিদআত গোমরাহি কেন! কারণ এর দ্বারা রসুলের সুন্নাতকে ছোট করা হয়। আমরা অনেক সময় মনে করি, কাজটা ভালো তো! অসুবিধা কি! ভালো কাজ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পদ্ধতিতে না হলে সেটা ভালো হয় না। একজন নামায পড়ছে, সিজদা করছে, প্রতি রাকআতে আটটা দশটা সিজদা করছে। এটা ভালো কাজ না খারাপ কাজ? নিশ্চয় খারাপ কাজ। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পদ্ধতির বাইরে গেলে সেটা আর ভালো থাকে না।

৩২৬
প্রশ্ন-৩২৮: দুই বছর ধরে আমার সঞ্চয় ১ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা। এই টাকার উপর যাকাত আসবে কি না জানাবেন।
আমি দুই বছর ধরে চাকরি করছি। এই দুই বছরে আমার সঞ্চয় ১ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা। তবে টাকাটা পুরো এক বছর ধরে আমার কাছে নেই। এই টাকার উপর যাকাত আসবে কি না জানাবেন।

উত্তর: যাকাত ফরয হতে মাত্র ৩৫ হাজার টাকা লাগে। প্রথম বছরেই আপনার যদি ৩৫ হাজার টাকা হয়ে যায়, তাহলে আপনি নিসাবওয়ালা হয়ে গেছেন। তাহলে প্রথম বছরের এবং দ্বিতীয় বছরের যাকাত দিতে হবে। প্রথম বছরে যেটুকু ছিল সেটুকুর। দ্বিতীয় বছরে যা বেড়েছে, সবটুকুর দিতে হবে।

৩২৭
প্রশ্ন-৩২৮: পরিবারে ৫/৬ ভরি স্বর্ণ আছে। বর্তমানে ৪০ হাজার টাকা আছে। এই অবস্থায় আমাদের উপর যাকাত ফরয কি না।
আমরা দুই ভাই একত্রে থাকি। আমাদের পরিবারে ৫/৬ ভরি স্বর্ণ আছে। বর্তমানে ৪০ হাজার টাকা আছে। এই অবস্থায় আমাদের উপর যাকাত ফরয কি না। জানতে চাই।

উত্তর: আপনারা যদি একত্রে থাকেন, এতে দোষের কিছু নেই। তবে যাকাত হবে ব্যক্তিগত। স্বর্ণ আপনার পরিবারে থাকলে যাকাত হবে না। ব্যক্তি মালিকানায় থাকতে হবে। মনে করুন, আল্লাহ না করুন, হয়ত আপনার এক ভরি সোনার আঙটি আছে, আপনি ওটা পরেন, আপনার স্ত্রীর আছে পাঁচ ভরি স্বর্ণ। দুটো একসাথে যোগ হবে না। স্ত্রীর মালিকানা স্ত্রীর। আপনার মালিকানা আপনার। এ জন্য সোনা যদি একক মালিকানায় না থাকে, তাহলে যাকাত আসবে না।

৩২৮
প্রশ্ন-৩২৯: এক সাথে অনেক মানুষ জিকির করা যাবে কি না? জিকির নীরবে করা উত্তম নাকি শব্দ করে করা উত্তম?
এক সাথে অনেক মানুষ জিকির করা যাবে কি না? জিকির নীরবে করা উত্তম নাকি শব্দ করে করা উত্তম? আমাদের হজুর বলেছে, ফজরের নামাযের পর হাশরের শেষ তিন আয়াত পাঠ করলে সত্তর হাজার ফেরেশতা তার জন্য দুআ করে। হাদীসটি সহীহ কি না জানতে চাই।

উত্তর: একসাথে তিনটা প্রশ্ন করেছেন। প্রথম হল, জিকির একসাথে করা যাবে কি না। উত্তরে যাওয়ার আগে একাট জিনিস বোঝেন। মনে করেন, আপনাদের মসজিদে প্রতিদিন রাত দুটোর সময় আযান দিয়ে তাহাজ্জুদের নামায জামাআতের সাথে পড়া হয়। এটাকে আপনারা কেউ ভালো বলবেন না। সব আলেম আপত্তি করবে। এখন মনে করেন, আমি এসে আপত্তি করলাম এভাবে তাহাজ্জুদ পড়া যাবে না। নাজায়েয। আপনারা তখন হইচই শুরু করে দিলেন- হুজুর তাহাজ্জুদ নামাযের বিরোধী। অথচ আমি তাহাজ্জুদের বিরোধী না। মসজিদের তাহাজ্জুদের বিরোধী না। প্রতিদিন আয়োজন করে আযান দিয়ে জামাআতের সাথে তাহাজ্জুদের বিরোধী আমি। এর মানে এই না যে আমি, তাহাজ্জুদের বিরোধী। ঠিক তেমনি, আমি যদি জোরে জিকিরের বিরোধিতা করি আপনারা হইচই শুরু করে দেবেন, হুজুর জিকিরের বিরোধী। আসল ব্যাপার কিন্তু তা না। জিকিরের ক্ষেত্রে উত্তম হল, নীরবে অথবা মৃদু স্বরে জিকির করা। এটা জিকিরের সুন্নাত নিয়ম। কারণ, আমরা ডাকছি আল্লাহকে। আল্লাহকে কব, তবে নিজের কথা নিজের কানে শোনাতে কোনো দোষ নেই। আল্লাহ কুরআনে বলে দিয়েছেন:

وانگر ربك في نفسك تضرعا وخيفة ودوت الجهر من القول ده

বেশি জোরে না, স্বাভাবিক জোরে। আপনারা এক হাজার মানুষ প্রত্যেকে যার যার মতো সুবহানাল্লাহ' জিকির করতে পারেন। (সূরা আরাফ, আয়াত-২০৫)

কোনো অসুবিধা নেই। আপনারা যার যার ইবাদত সে সে করছেন। যার যার ওযীফা সে সে করছেন। এই দুটো পর্যায় কিন্তু সুন্নাহ বিরোধীও নয়, নাজায়েযও নয়। তৃতীয় পর্যায় হল, আপনি সাউন্ডটা বাড়িয়ে দিলেন। চিঙ্কারের পর্যায়ে নিয়ে গেলেন। এটা আপত্তিকর। সীমালঙ্ঘন। কুরআনেও দুআর ক্ষেত্রে, জিকিরের ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন করতে নিষেধ করা হয়েছে। চতুর্থ পর্যায় হল, সবাই সমস্বরে, কোরাসে, একতালে জিকির করছেন। এটা সুন্নাতে পাওয়া যায়। এ জন্য সুন্নাত হল, জিকিরটা আমরা করব মনেমনে অথবা মৃদুস্বরে। জিকির হল নফল ইবাদত। নফল ইবাদতে জামাআত হয় না। যেমন আমরা জামাআতের সালাম ফেরানোর পরে প্রায় সবাই তেত্রিশ বার সুবহানাল্লাহ’র আমল করি। এটা আমরা কোরাসে পড়ি না। যার যার মতো পড়ি। এখন এক মসজিদে জামাআত করে দেয়া হল- সালাম ফিরিয়ে সবাই জামাআত ধরে, কোরাসে সুবহানাল্লাহ'র জিকির করছে। নতুন কেউ এসে দেখলেই কিন্তু আপত্তি করবে। কিন্তু আপনি দলিল দেবেন, রাসূলুল্লাহর (ﷺ) এই জিকিরের কথা বলেছেন, ফযীলতের বর্ণনা দিয়েছেন, তেত্রিশ বার পড়তে হবে, সহীহ হাদীস, একশটা হাদীস আছে। কেন পড়ব না, এটা তো ভালো কাজ, একা একা পড়লে অনেকে পড়ে না, একসাথে পড়লে সবাই পড়ে? এমন অনেক যুক্তি দেয়া যায়। যতই যুক্তি দেন, কাজটা কিন্তু সুন্নাত হল না। ঠিক তেমনি হাশরের শেষ তিন আয়াত যদি কোরাসে জামাআতবদ্ধ হয়ে পড়েন, এটাও কিন্তু সুন্নাত হবে না। হাশরের শেষ তিন আয়াত, শুধু ফজরে না, ফজর এবং মাগরিব, দুই ওয়াক্ত নামাযের পরে পড়ার কথা আছে। হুজুররা কিন্তু অন্যায় করেন। মাগরিবের কথা বলেন না। হাদীসে ফজর এবং মাগরিবের কথা আছে। ফজর এবং মাগরিবের পরে পড়লে সত্তর হাজার ফেরেশতা দুআ করবে- এটা হাদীসে আছে। হাদীসটার সনদ নিয়ে কথা আছে। মুহাদ্দিসগণ যয়ীফ (দুর্বল) বলেছেন। আমি সত্তর হাজারের আরেকটা সহীহ হাদীস বলি। যদি কেউ সকালে একজন অসুস্থ মানুষকে দেখতে যায়, সন্ধ্যা পর্যন্ত সত্তর হাজার ফেরেশতা তার জন্য দুআ করতে থাকে। আর যদি কেউ সন্ধ্যায় বা বিকেলে কোনো রোগীকে দেখতে যায়, তাহলে সত্তর হাজার ফেরেশতা সুবহে সাদিক পন্ত তার জন্য দুআ করতে থাকে। এটা সহীহ হাদীস। এটার ব্যাপারে কোনো মতভেদ নেই। যাই হোক, এই যে সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত, এটাও আয়াতুল কুরসি, সূরা নাস, সূরা ফালাক বা তেত্রিশ বার সুবহানাল্লাহর জিকিরের মতো একা পড়তে হবে। যদি আমরা নামাযের পর আয়াতুল কুরসি জামাআতের সাথে দলবদ্ধ হয়ে পড়ি, কেমন লাগবে? তেত্রিশ বার সুবহানাল্লাহর জিকির যদি জামাআতের সাথে পড়ি, কেমন লাগবে? মোটেও ঠিক হবে না। আমরা সবাই এটা নিয়ে আপত্তি করব। ঠিক তেমনি, সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত দলবদ্ধ হয়ে পড়- এটা ঠিক না। সুন্নাতবিরোধী। মাঝে মধ্যে ইমাম যদি শেবানোনার উদ্দেশ্যে পড়ান, তাহলে সুন্নাতের খেলাফ, জায়েয থাকবে। কিন্তু এটাকেই রেওয়াজ বানিয়ে নিলে বিদআত হয়ে যাবে। এ জন্য আমাদের সবারই সুন্নাতের ভেতরে থাকার চেষ্টা করা উচিত।

৩২৯
প্রশ্ন-৩৩০: অনৈতিক সম্পর্ক থেকে বেঁচে থাকতে কোনো আমলের কথা বলুন।
আমার বন্ধু এক মেয়ের সাথে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে। কিছুতেই ফিরে আসতে পারছে না। এমন কোনো আমলের কথা বলুন, যার দ্বারা সে এই গোনাহ থেকে বেঁচে থাকতে পারে।

উত্তর: এই পরিবেশটাকে কঠিনভাবে ত্যাগ করতে হবে। অর্থাৎ, এই মেয়ে যেখানে আছে, যে এলাকায় আছে, যে গ্রামে আছে, সেখান থেকে যে কোনো মূল্যে তাকে দূরে চলে যেতে হবে। সম্ভব হলে স্থায়ীভাবে দূরে কোনো মেস নিয়ে অথবা দূরের কোনো কলেজে ভর্তি হতে হবে। যেভাবেই হোক এই পরিবেশ তাকে ত্যাগ করতে হবে।

দ্বিতীয়ত কিছুদিনের জন্য কোনো ভালো পরিবেশে থাকতে হবে। চিল্লায় চলে যাক। তৃতীয়ত, স্থায়ীভাবে নেককার মানুষের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। আর আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করতে হবে। আমরাও দুআ করি, আল্লাহ তাআলা সবাইকে পাপ থেকে হেফাজত করুন।  

৩৩০
প্রশ্ন-৩৩১: ইকামতের জবাব দেয়া কি সুন্নাতি? কাদ কামাতিস সালাহ’ বলার সময় কী জবাব দেব?
উত্তর: ইকামতের জবাব দেয়া আযানের জবাব দেয়ার মতোই। হাদীসে এটাকেও আযান বলা হয়েছে। জবাব দেয়া মুস্তাহাব, এটা ভালো। কাদ কামাতিস সালাহ’ বলার সময়, একটা দুর্বল হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলতেন।

أقامها الله وأدامها

(আকামাহাল্লাহু ওয়া আদামাহা)

অর্থ, আল্লাহ সালাতকে প্রতিষ্ঠিত রাখুন, স্থায়ী রাখুন। (৩২ সুনান আবু দাউদ-৫২৮)

৩৩১
প্রশ্ন: নামাযের ভেতর প্রথম বৈঠকে বসার সময় ডান পা কীভাবে রাখব।
উত্তর: প্রথম বৈঠকে সবাই যেভাবে বসে, ওভাবেই বসতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো মতভেদ নেই। অর্থাৎ, ডান পা খাড়া থাকবে, আঙুলগুলো সম্ভব হলে কেবলামুখি হবে, বাম পা বিছিয়ে তার উপর বসবেন। শেষ বৈঠকে বসার সময় দ্বিতীয় আরেকটা পদ্ধতি সহীহ হাদীসে আছে। ডান পা খাড়া-ই থাকবে, আঙুলগুলো কেবলামুখি হবে, বাম পাটা ডান পায়ের নিচে দিয়ে বাইরে বেরিয়ে যাবে। অর্থাৎ নিতম্বের উপরে বসা। যেটা আমাদের মেয়েরা বসে বলে আপনারা জানেন। এটা মেয়েরা নয়, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বসতেন, সহীহ হাদীসে এসেছে। সমন্বয়ে আলেমদের মতভেদ আছে। কেউ বলেছেন, বিশেষ দরকারে এভাবে বসতে হবে। কেউ বলেছেন, এটাই সুন্নাত। দুই রকমই বসা যায়।

৩৩২
প্রশ্ন-৩৩২: স্বপ্নদোষ ইচ্ছাকৃত কবীরা গোনাহর ভেতর পড়ে কি না?
উত্তর: স্বপ্ন কোনো গোনাহ না। আর স্বপ্নদোষ কোনো দোষও না। এটা খুব স্বাভাবিক, ন্যাচারাল বিষয়।

৩৩৩
প্রশ্ন-৩৩৩: যারা প্রবাসে থাকেন, তাদের ফিতরা বাংলাদেশের টাকায় আদায় করলে সহীহ হবে কি?
উত্তর: বাংলাদেশের টাকায় না, তারা তাদের দেশের ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম খেজুর বা কিসমিসের যে দাম হয়, এই দামটা দেয়া বাধ্যতামূলক। তবে দামটা বাংলাদেশে দিতে পারেন। বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিতে পারেন। এবং ফিতরাটা ঈদের আগেই দিতে হবে।

৩৩৪
প্রশ্ন-৩৩৪: হারানো জিনিস পাওয়ার জন্য আমরা ফকীর কবিরাজের দ্বারস্থ হই। এটা কি শিরকের ভেতর পড়বে?
উত্তর: জি, গায়েব জানার জন্য অর্থাৎ কে চুরি করেছে, চোরাই মাল কোথায় আছে, চোর ধরার জন্য যত রকমের তদবীর, হুজুর দিক অথবা ফকীর দিক, সবই কুফরি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:

من أتی گاهنا، أو عتراقا، فصدقه بما يقول، فقد كفر بما أنزل على محمد ه

কাহানাত মানে গোপন। তোমার চোরাই মাল অমুক জায়গায় আছে, অমুক চুরি করেছে, কুরআনের আয়াত দিয়ে হাঁড়ি ঘুরায়, কলসি ঘুরায়- সব নাজায়েয। কুরআন দিয়েই করেন আর যাদু দিয়েই করেন, নাজায়েয কাজ। তবে হ্যা, চুরি হয়েছে, দুআ করা কী? দুআ করলে চোরাই মাল পাওয়া যাবে?’- এগুলো সমস্যা নেই। ('মুসনাদ আহমাদ-৯৫৩৬; আবু দাউদ-৩৯০৪; তিরমিযি-১৩৫)

৩৩৫
প্রশ্ন-৩৩৫: নাবালেগ ছেলে যদি বড়দের মাঝে নামাযে দাঁড়ায়, তাহলে নামাযের ক্ষতি হবে কি না?
উত্তর: নামাযের ক্ষতি হবে না। বাচ্চাদের কাতার যদি আলাদা থাকে, তারা সেখানে দাঁড়াবে নইলে বড়রা দাঁড়ানোর পরে বাচ্চারা দাঁড়াবে। তবে একেবারে শিশুদের মাঝখানে না রেখে পাশে রাখতে হবে। বড়রা ইমামের কাছে থাকবে। এটা রাসূলুল্লাহ সা, বলতেন। তবে যারা মোটামুটি নামাযের মতো হয়ে গেছে, ৮/১০ বছর বয়স, তারা দাঁড়াতে পারে। কারণ, আমাদের মসজিদ তো আটকানো। একদিক দিয়ে ঢুকতে হয়। পৃথক কাতারের ব্যবস্থা থাকে না। রাসূলের (সঃ) মসজিদ চারপাশ খোলা ছিল। বড়রা এসে সামনে দাঁড়াতেন। একটু পেছনে ছেলেদের কাতার। আমাদের তো তা না। বাচ্চারা পেছনে দাঁড়ালে আমরা সামনে আসব কীভাবে!

৩৩৬
প্রশ্ন-৩৩৬: নামাযে আরবি নিয়ত করা কি বিদআত?
উত্তর: আরবি নিয়ত বিদআত। এমনকি যারা মুখের নিয়তের কথা বলেছেন, তারা কোথাও আরবি নিয়তের কথা বলেন নি। নিয়ত মনের বিষয়। যে সব ফকীহ মুখে নিয়ত মুস্তাহাব বলেছেন, তারাও বলেন নি মুখের নিয়ত আরবিতে হতে হবে। বাংলায়ও হবে। মুখে নিয়ত এটাও বিদআত হওয়া উচিত। মুজাদ্দিদে আলফে সানি রহ., যার নামে মুজাদ্দেদিয়া তরীকা, তিনি বারবার কঠোরভাবে বলেছেন, মুখের নিয়তটা বিদআত, আরবি বাংলা যা-ই হোক।

৩৩৭
প্রশ্ন-৩৩৭: ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ব্যবসা করি, এই লোনের টাকার যাকাত দিতে হবে কি না?
উত্তর: জি, যাকাত দিতে হবে।

৩৩৮
প্রশ্ন-৩৩৮: ব্যবসার অনাদায়ী টাকার যাকাত দিতে হবে কি না?
আমি ব্যবসা করি, আমার অনেক টাকা চার পাঁচ বছর পর্যন্ত মার্কেটে পড়ে আছে। এই অনাদায়ী টাকার যাকাত দিতে হবে কি না?

উত্তর: যেগুলো পাওয়ার আশা আছে, যাকাত দিয়ে যেতে হবে। যেগুলো পাওয়ার আশা নেই, সেগুলোর যাকাত দিতে হবে না। তবে যে বছর পাবেন, ওই বছর পুরো বছরের যাকাত দিতে হবে। যে কয় বছর আপনি মালিক ছিলেন।

৩৩৯
প্রশ্ন-৩৩৯: আমি এক ব্যক্তিকে কিছু টাকা ধার দিই। সে আর টাকাটা ফেরত দিচ্ছে। এই টাকার যাকাত দিতে হবে কি না?
উত্তর: যদি না দেয়, খোয়া যায়, তাহলে যাকাত দিতে হবে না। তবে যদি পান, পুরো বছরের যাকাত দিতে হবে, যে কয় বছর আপনি ওই টাকার মালিক ছিলেন।

৩৪০
প্রশ্ন-৩৪০: নামাযের ভেতর অন্য নামাযির সামনে দিয়ে হাঁটা, শব্দ করে আমীন বলা, তারাবীহর দুআ এবং মুনাজাত না করা কেমন?
পিস টিভিতে সৌদি আরবের তারাবীহ নামায দেখায়। দেখা যায়, নামাযের ভেতর মুসল্লিরা অন্য নামাযির সামনে দিয়ে হাঁটছে। সবাই শব্দ করে আমীন বলে। তারাবীহর দুআ এবং মুনাজাত করে না। তাদের এই কাজগুলো কেমন?

উত্তর: খুব ভালো প্রশ্ন করেছেন। হালাল-হারাম, জায়েয-নাজায়েয সব একসাথে হয়েছে। এবং এটাই প্রমাণ করে দেখাদেখি কিছু হয় না। যেমন নামাযের সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়া হারাম। অনেক হাদীস আছে। মক্কায় হাঁটে। মক্কার হাঁটা দুই রকমের। মক্কার একটা হল মাতাফ। তাওয়াফের জায়গায় তাওয়াফ করা যায়। কারণ, তাওয়াফও নামায। বাকি মুসল্লিদের সামনে হাঁটা মক্কায়ও জায়েয নয়। দুটো কারণে লোকে হাঁটে। একটা হল, না জেনে হাঁটে। মক্কায় যারা যায়, ৯০% মানুষই কিছু জানে। আলেম না। তারা অন্যের দেখাদেখি হাঁটে। একজনকে হাঁটতে দেখল, ধরে নিল মক্কায় বোধহয় নামাযের সামনে দিয়ে হাঁটা জায়েয। হজ্জের সময় অনেক দেশের মেয়েরা আসে। তারা পুরুষের সামনে কাপড় খুলে ওযু করে। তাই দেখে অন্য মেয়েরা ভাবে, মক্কায় বোধহয় পর্দা লাগে না। তাই যারা হাঁটে, তাদের অধিকাংশই না জেনে হাঁটে। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে হাঁটে। বড় জামাআতে হাঁটতে বাধ্য হলে নামায অ্যাভয়েড করে এমনিতে চলার চেষ্টা করবে। আর আমীন জোরে বলার ব্যাপারে তো সহীহ হাদীস আছে। অনেক সহীহ হাদীস আছে। আস্তে বলারও হাদীস আছে। যদিও মুহাদ্দিসগণ শায’ বলেছেন। তবে সনদ সহীহ। এই মসজিদে এক হাজার মুসল্লির ভেতর যদি পঞ্চাশ জন জোরে আমীন বলে, আর নয়শ পঞ্চাশ জন যদি আস্তে বলে, শোনা যাবে কোনটা? জোরেটাই শোনা যাবে। মনে হবে সবাই যেন জোরে আমীন। বলছে। এই জন্য মক্কায়ও অমন। অনেকেই জোরে বলে। তবে সাধারণভাবে এটা। মক্কার মাসআলা। হাম্বলি, শাফি, মালেকি মাযহাবের লোকেরা আমীন জোরে বলে।

৩৪১
প্রশ্ন-৩৪১: রোযা রেখে রক্তদান করা, ইনহিলার গ্রহণ, ইনসুলিন নিলে তার বিধান কী?
উত্তর: ইনসুলিন, রক্তদান, রক্তগ্রহণ- কোনোটাই কোনো সমস্যা না। রোযা ভাঙে পানাহারে। আপনার গলা দিয়ে কোনো কিছু পাকস্থলিতে যেতে হবে। কাজেই শরীরের লোমকূপ দিয়ে, চামড়া দিয়ে গুকোজ ইনজেকশন যা-ই দেন, রোজা ভাঙবে না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) রোযা থেকে নিজে সিঙ্গা লাগিয়ে রক্ত বের করেছেন। কাজেই পানাহারের পদ্ধতি ছাড়া অন্য কোনোভাবে কিছু প্রবেশ করলে রোযা ভাঙবে না। ইনহিলারের ওষুধ যদি ফুসফুসে যায়, রোযা ভাঙে না। আর যদি পাকস্থলিতে যায়, রোযা ভেঙে যাবে। কারণ, আমাদের গলায় দুটো নালি আছে- একটা শাসনালী, আরেকটা খাদ্যনালী। খাদ্যনালী দিয়ে পাকস্থলিতে গেলে রোযা ভাঙবে। আর ফুসফুসে গেলে ভাঙে না। মধ্যপ্রচ্যের আলেমগণ বলেছেন, ইনহিলারে রোযা ভাঙে না। কারণ, এর ওষুধ ফুসফুসে যায়। কিন্তু আমাদের দেশের আলেমরা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, এর ওষুধ পাকস্থলিতে যায় তাই রোযা ভেঙে যাবে।

৩৪২
প্রশ্ন-৩৪২: ব্যবহৃত অলঙ্কারের যাকাত দেয়া লাগবে কি না জানতে চাই।
উত্তর: ব্যবহৃত টাকার যাকাত দেয়া লাগে কি না? টাকা ব্যবহার করে করে একদম ময়লা হয়ে গেছে, এর যাকাত দেবেন না? সোনা, রূপা, টাকা- ব্যবহারে এগুলোর মান কমে না। এ জন্য এর যাকাত দিতে হবে। আর একটা ব্যাপার হল, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজেই বলেছেন, ব্যবহৃত অলঙ্কারে যাকাত দিতে হবে।

প্রশ্ন-৩৪৩: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কি কখনো কোনো ইমামের পিছনে নামা আদায় করেছেন?

উত্তর: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) অল্পকিছু সময়ের জন্য আবু বাকর রা, এর পিছনে দাঁড়িয়েছিলেন। রাসূলুল্লাহর (ﷺ) বাইরে কাজে গেছিলেন। এক জায়গায় গোলমাল হচ্ছিল তিনি গিয়েছিলেন মিটমাট করতে। আবু বাকর রা.এর ইমামতিতে জামাআত দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আসলেন, নামাযে দাঁড়ালেন। তখন সাহাবিরা হাতে তালি দিতে লাগলেন। আবু বকর রা. যখন নামাযে দাঁড়াতেন, কোনো দিকে খেয়াল থাকত না। তিনি নামায পড়েই যাচ্ছেন। কিছুক্ষণ পরে যখন সবাই তালি দিচ্ছে, পেছনে তাকালেন। দেখলেন রাসূলুল্লাহর (ﷺ) মুক্তাদি। তখন আবু বকর রা. নামায অবস্থায় কেবলার দিকে বুক ঠিক রেখে পিছিয়ে আসতে লাগলেন। আপনারা তো ভাবছেন, সর্বনাশ! নামাযের ভেতর হাঁটল, নামায তো শেষ! তো রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হাত দিয়ে ইশারা করলেন- তুমি নামায পড়াও। তখন আবু বকর রা. নামাযের ভেতর কয়েক বার আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ হামদ পড়লেন। কয়েক মিনিট পর আবার পিছিয়ে আসলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইমামের জায়গায় দাঁড়ালেন। বাকি নামায শেষ করে তিনি আবু বকর রা.কে বললেন, আমি তো তোমাকে বললাম নামায শেষ করতে। তুমি পিছিয়ে আসলে কেন? তখন আবু বকর রা. বললেন, আবু কুহাফার ছেলের এই অধিকার নেই যে, নবীর উপরে ইমামতি করবে। এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সবাইকে বললেন, নামাযের ভেতর যদি কোনো সমস্যা হয়, তাহলে পুরুষেরা সুবহানাল্লাহ' বলবে আর নারীরা হাততালি দেবে।

প্রশ্ন-৩৪৪: মুহাম্মাদ (ﷺ) নবুওয়াত পাওয়ার আগে নিয়মিত সালাত আদায় করতেন কি না?

উত্তর: না, এমন কিছু পাওয়া যায় না।

৩৪৩
প্রশ্ন-৩৪৫: আমার স্ত্রী বাচ্চাটা পেটের ভেতর মারা যায়। স্ত্রী কি রোযা রাখতে পারবে?
আমার স্ত্রী চারমাস অন্তস্বত্বা থাকার পর বাচ্চাটা পেটের ভেতর মারা যায়। এরপর ডাক্তারের মাধ্যমে পেট ওয়াশ করা হয়। স্ত্রী কি রোযা রাখতে পারবে? শুনেছি চল্লিশ দিন পর্যন্ত নামায রোযা করা যায় না।

উত্তর: ব্লিডিং বন্ধ হয়ে গেলে রোযা রাখতে হবে। চল্লিশ দিন না, এর সম্পর্ক ব্লিডিঙের সাথে। ব্লিডিঙ বন্ধ হয়ে গেলে রোযা রাখতে হবে।

৩৪৪
প্রশ্ন-৩৪৬: হাটুর উপরে কাপড় উঠে গেলে কি ওযু ভাঙে।
উত্তর: জি না। উলঙ্গ হলেও ওযু ভাঙে না। আপনি যদি মানুষের সামনে ন্যাঙটা হন, গোনাহ হবে। একা ন্যাঙটা হলে গোনাহ হবে না, অনুচিত কাজ হবে। তবে ওযু ভাঙবে না।

৩৪৫
প্রশ্ন-৩৪৭: খালি মাথায় নামায পড়লে নামাজ কি মাকরুহ হবে? হাদীসের আলোকে জানতে চাই।
উত্তর: বিপদে ফেলে দিলেন। টুপি মাথায় দেয়া সুন্নাত। টুপি মাথায় দেয়া উত্তম। তবে খালি মাথায় পড়লে নামায মাকরুহ হবে এটা হাদীসের আলোকে বলা যায় না। ফুকাহারা কেউ বলেছেন, মাকরুহ কেউ বলেছেন, অনুচিত।

৩৪৬
প্রশ্ন-৩৪৮: রোযা রেখে গান শোনা জায়েয কি না?
উত্তর: রোযা রেখে কেন, রোযা না রেখে কি জায়েয হবে? যেটা গোনাহ, সবসময়ই গোনাহ। রোযার সময় বেশি গোনাহ।

৩৪৭
প্রশ্ন-৩৪৯: রোযা রেখে মিথ্যা বলে বেচাকেনা করলে রোযার ক্ষতি হবে কি না?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:

من لم يدع قول الور والعمل به، فليس له حاجة في أن يدع طعامه وشرابه

যে ব্যক্তি রোযা রেখে মিথ্যা কথা, মিথ্যা কাজ ছাড়তে পারল না, তার শুধু শুধু ক্ষুধা পিপাসায় কষ্ট করার দরকার নেই। কোননা লাভ হবে না। (সহীহ বুখারি-১১০৩; আবু দাউদ-২৩৬২)

৩৪৮
প্রশ্ন-৩৫০: সাহরি খাওয়ার শুরু ওয়াক্ত কোনটা, হাদীসের আলোকে জানতে চাই।
উত্তর: সাহরি শুরুর কোনো ওয়াক্ত নেই। তবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যথাসম্ভব দেরি করে খেতেন। অর্থাৎ ফজরের আযানের অল্প কিছু আগে খেয়ে নেয়া উচিত।

৩৪৯
প্রশ্ন-৩৫১: খাবার এবং নামায দুটোই তৈরি। কোনটা আগে করব?
উত্তর: এটা খাবারের চাহিদার উপর নির্ভরশীল। যদি ক্ষুধা থাকে, খাবার খেয়ে নামায পড়ব। আর যদি এমন সমস্যা না থাকে, নামায রেডি হয়ে গেছে, আগে নামায পড়ব।

৩৫০
প্রশ্ন-৩৫২: নামাযের সিজদার ভেতর উভয় পা উঁচু হয়ে গেলে নামাষের কোনো সমস্য হবে কি না?
উত্তর: রাসূলুল্লাহর (ﷺ) বলেছেন, সাতটি অঙ্গ একসাথে সিজদা করবে। দুই পা, দুই হাত, দুই হাটু, নাক এবং কপাল একত্রে- এই হল সাত। এই সাতটা অঙ্গের দুটো অঙ্গ একসাথে উঠে যাওয়া এবং দীর্ঘ সময় ওঠা অবস্থায় থাকা মানে, হাদীস পূর্ণ হল না। দুই পা একত্রে উচু হয়ে কিছুক্ষণ থাকলে ফুকাহারা বলেছেন, এর দ্বারা নামায় ভেঙে যাবে। তবে এক পা একটু উঠেছে, আরেক পা একটু উঠেছে, আপনি পাদুটো সরিয়ে ঠিকমতো কেবলামুখি করে নিয়েছেন-এতে দোষ নেই।

৩৫১
প্রশ্ন-৩৫৩: বিড়ি-সিগারেট খেলে ওযু তাতে কি না?
উত্তর: শূকরের মাংস খেলে ওযু ভাঙে না, বিড়ি সিগারেটের কী দোষ! ব্যাপার হল, বিড়ি সিগারেট খাওয়াটা গোনাহের কাজ। আলেমগণ যে বলেছেন, বিড়ি খেলে ওযু ভাঙে, এর অর্থ হল, বিড়ি খেয়ে মাথা ঘুরে যদি বেহুশ হয়ে যায়, তাহলে ওযু ভাঙে।

৩৫২
প্রশ্ন-৩৫৪: পান খাওয়া, গুল ব্যবহার করা জায়েয কি না?
উত্তর: পান খাওয়া নাজায়েয হবে না। তবে গুল তামাকের মতোই মাকরুহ হওয়া উচিত। যদিও আলেমরা অনেকে খান। তবু মাসআলা তো বলতে হবে।

৩৫৩
প্রশ্ন-৩৫৫: একমাস রোযা রেখে আবার রোযা, নামায ছেড়ে দিয়ে অন্যায় কাজে লিপ্ত হওয়া ব্যক্তির রোযা কি কবুল হবে?
একমাস রোযা রেখে, নামায পড়ে, অন্যায় কাজ ত্যাগ করে আবার রোযা চলে যাওয়ার সাথে সাথে নামায ছেড়ে দিয়ে অন্যায় কাজে লিপ্ত হওয়া ব্যক্তির রোযা কি কবুল হবে?

উত্তর: এটা খুবই অন্যায় কাজ। কবুল না হওয়ারই লক্ষণ। তবে তিনি যে ভালো কাজগুলো করেছেন, সেগুলোকে আমরা ভালো বলব। আরো ভালো কাজে ডাকব। আপনার প্রশ্নের আলোকে আমি একটা কথা বলতে চাই। আমি এক বিশ্ববিদ্যালয়ে রোযার আলোচনা করতে গিয়েছিলাম। তো ছেলেরা ঠিক এই রকম প্রশ্ন করেছিল। সিজনাল মুসলিমদের কী বিধান, তাদের রোযা কি কবুল হবে? আমি বললাম, সিজনাল মুসলিমদের কী হবে সেটা আমি বলতে পারব না। কিন্তু যারা রেগুলার মুসলিম, তাদের ব্যাপারে একটা কথা আমরা জানি। সেটা হল, যারা সিজনাল মুসলিমদের রেগুলার করে না, তাদের খবর আছে। আমাদের কাজ হল শুধু সমালোচনা করা। ও সারা বছর। গোনাহ করে, হজ্জ করে এসে গোনাহ করে আমরা খালি পরের দোষ খোঁজার চেষ্টা করি। তার মানে আল্লাহ আমাদের বিচারক বানিয়েছেন। কিয়ামতের দিন বলবেন, ও আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর, অমুককে দোযখে দেব নাকি বেহেশতে দেব! বিচারক তো আল্লাহ। তিনি বিচার করবেন। আমার কাজ হল যার খারাপ দেখব তাকে ডেকে ভালো করা। যে ব্যক্তি সিজনাল মুসলিম, অর্থাৎ রমাযানে নামাযও পড়ছে, রোযাও রাখছে, তার ঈমান আছে। কিন্তু তার ভেতরে কিছু ভুল বুঝ আছে। তার পরিণতির মাসআলা জেনে আমাদের উচিত সঠিক বুঝ দেয়া।

৩৫৪
প্রশ্ন-৫৫৬: রোযা রেখে ফরয নামায না পড়লে রোযা হবে কি না?
উত্তর: রোযা হবে। তবে সে পনেরো ঘণ্টার একটা ইবাদত করল, কিন্তু এর থেকে ভয়ঙ্কর পাপ করল। কারণ, নামাযের গুরুত্ব রোযার থেকে বেশি। বিষয়টা তাকে বোঝাতে হবে। কারণ যে মানুষ পনেরো ঘণ্টা কষ্ট করে, পাঁচ মিনিট কষ্ট করে না কেন! এটার কারণ হল, সে মনে করে রোযা একটা নেগেটিভ জিনিস, না খেয়ে সারাদিন পড়ে থাকব। নো প্রবলেম। কিন্তু ওযু করে মসজিদে যাওয়া, নামায পড়া বিরাট বোক মনে হয়। তার কিন্তু ঈমান আছে। নইলে তো রোযা রাখত না। দুনিয়ার সবচে' বড় কাজ হল দুটো। একটা হল খাওয়া। আরেকটা হল সংসার করা। খাওয়ার মজা। ততক্ষণ, খাবার মুখের ভেতর আছে যতক্ষণ। জিভের নিচে নামলে কিন্তু আর মজা থাকে না। গালের ভেতর খাবার কতক্ষণ থাকে? এই সামান্য সময়ের মজার জন্য। আমরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জন করছি। নোংরার ভেতর গিয়ে বাজার করছি। এরপর বেগম সাহেবা আমাদের জন্য রান্না করেন। খাওয়ার সময়ও কিন্তু গা ঘামে। ঝাল একটু বেশি হয়ে যায়, লবণ একটু কম হয়ে যায়। এরপেরও ভয়ঙ্কর ব্যাপার আছে। লোভ সামলাতে না পেরে বেশি খেয়ে ফেললে বদ হজম হয়, ঢেকুর ওঠে, বুক জ্বলে, বাথরুমের সমস্যা তো আছেই। তাহলে এই ষোলোআনার ভেতরে সাড়ে পনেরো আনা কষ্ট আর মজা আধা আনা। তার জন্য আমরা কত কষ্ট করি! আর নামাযের মজা হল যোলোআনা। ওযু করব, মজা। ভালো লাগে। আল্লাহর সামনে দাঁড়াব, একটু অলসতা লাগে, শয়তান লাগিয়ে দেয়। নামাযের মজাটা তাকে বোঝান। গুরুত্ব বোঝান। আল্লাহ সাথে বান্দার প্রিয় সম্পর্কটা বোঝান।

৩৫৫
প্রশ্ন-৩৫৭: তারাবীহর নামায বিশ রাকআত না আট রাকআত? কোনটা সহীহ, হাদীসের আলোকে জানাবেন।
উত্তর: হাদীসের আলোকে জানতে গেলে বইপত্র পড়তে হবে। তবে আমি কিন্তু কোনোটাই জানি না। তারাবীহর নামায আমার মতে মিনিমাম দুই ঘণ্টা। দুই ঘণ্টার কমে যারা তারাবীহ পড়ে, কারোর নামায সুন্নাত মতো হয় না। আট রাকআত তারাবীহ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পড়েছেন, সাহাবিরা পড়েছেন। সাহাবাগণ বিশ রাকআত পড়েছেন সহীহ হাদীস আছে। আর রাসূলুল্লাহর (ﷺ) সংখ্যা নির্ধারণ করেন নি। তাহলে আমরা সংখ্যা নিয়ে মারামারি করব কেন!

৩৫৬
প্রশ্ন-৩৫৮: ইচ্ছাকৃত রোযা ভাঙলে কাফফারা কী?
উত্তর: রোযা রেখে যদি কেউ রোযা ভেঙে ফেলে তার কাফফারা হল ৬০ টা রোযা।

৩৫৭
প্রশ্ন-৩৫৯: একজন নামাযি মানুষ মুসলিমকে বাদ দিয়ে হিন্দুকে দিয়ে দোকান পরিচালনা করাতে পারেন?
একজন নামাযি মানুষ মুসলিমকে বাদ দিয়ে হিন্দুকে দিয়ে দোকান পরিচালনা করে। এটা ইসলামের সাথে প্রতারণা কি না জানাবেন।

উত্তর: মুসলিম তো আমরা নামে মুসলিম। কামে তো আমরা মুসলিম না। অনেক মুসলিমের চেয়ে অনেক হিন্দুর আখলাক ভালো থাকে। কাজেই বেতন দিয়ে যদি হিন্দুকে কর্মচারি রাখেন, কোনো সমস্যা নেই। কারণ, অমুসলিমকে কর্মচারি রাখা শরীআতে নাজায়েয না।

৩৫৮
প্রশ্ন-৩৬০: কুরআনে আছে, জান্নাতে যেতে গেলে বেশি আমল লাগবে। এত বেশি আমল কীভাবে করা যাবে?
উত্তর: বেশি আমল করলে জান্নাতে যাওয়া যাবে এটা কে বলেছে! যার আমল উত্তম হবে সে জান্নাতে যাবে। তারপরেও আমল দিয়ে নয়, আল্লাহর রহমত লাগবে।

৩৫৯
প্রশ্ন-৩৬১: কেউ দুর্ঘটনায় মারা গেলে আমরা তার বিচার দাবি করি কেন? তার মৃত্যু তো আল্লহ লিখে রেখেছেন।
উত্তর: মৃত্যু আল্লাহ লিখে রেখেছেন এ জন্য আপনার বিচার দাবি করা হয় না। বরং আপনি তার ক্ষতি করেছেন এ জন্য বিচার দাবি করা হয়। বিষয় হল, আল্লাহ সব জানেন। আল্লাহর ইলমে আছে, অমুক ব্যক্তি নিজের ইচ্ছাশক্তি দিয়ে ইচ্ছা করে অমুকের ক্ষতি করতে যাবে। এই ইচ্ছার কারণে সে দায়ি হবে। তার শাস্তি হবে।

৩৬০
প্রশ্ন-৩৬২: বিপদে টাকা ধার দিই। কিন্তু পরে তারা আর ফেরত দেয় না। আমি কি তাহলে ধার দেয়া বন্ধ করে দেব?
বন্ধুবান্ধব বিপদে পড়লে তাদের টাকা ধার দিই। কিন্তু পরে তারা আর ফেরত দেয় না। আমি কি তাহলে ধার দেয়া বন্ধ করে দেব?

উত্তর: যারা ফেরত দেবে না তাদের ধার দেবেন না। দান করে দেবেন।

৩৬১
প্রশ্ন-৩৬৩: ইসলামী ব্যাংক ছাড়া অন্য ব্যাংকের ডিপিএসের ক্ষেত্রে যাকাতের টাকা কীভাবে নির্ধারণ করব?
উত্তর: আপনি যে মূল টাকা জমা দিয়েছেন, এর উপরে যাকাত দেবেন।

৩৬২
প্রশ্ন-৩৬৪: কুরআনে আছে, আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেশতারা নবীর উপর দরুদ পাঠ করে। ব্যাপারটা কেমন হয়ে যায় না?
উত্তর: কোন দরুদ পাঠ করে! এটা কুরআনে আসলে নেই। কুরআনে আছে:

إن الله وملايكته يصون على النبي

আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেশতারা নবীর উপর দরুদ পড়ে। শুধু তাই না, আরো মজার ব্যাপার হল, কুরআনে আছে, আল্লাহ এবং ফেরেশতারা আমাদের উপরও দরুদ পড়ে। এটা কোন দরুদ! আল্লাহ পাক বলেছেন:

هو الذي يصلي عليگم وملائكة تت

(সূরা আহযাব, আয়াত-৫৬)

এই সূরা আহযাবের ভেতর আল্লাহ আগে আমাদের উপর দরুদ পড়েছেন, তারপর নবীর উপর পড়েছেন। একই কথা। দুটো আয়াতের অর্থই এক। আল্লাহ এবং ফেরেশতারা আগে আমাদের উপর দরুদ পড়লেন, তারপর নবীর উপর। আসলে আল্লাহর সালাত মানে দরুদ পড়া নয়। রহমত করা। ভাষা না বুঝে আমরা দরুদ পড়া বলি। সালাত মানে হল রহমত অথবা প্রার্থনা। আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত দেয়া, বান্দার পক্ষ থেকে রহমত চাওয়া; এর নাম হল সালাত। তাহলে আল্লাহ যে বললেন:

هو الذي يصلي عليگم وقلايته

আল্লাহ এবং ফেরেশতারা তোমাদের উপর সালাত পাঠান। মানে আল্লাহ রহমত নাযিল করেন, ফেরেশতারা রহমতের জন্য দুআ করেন। (সূরা আহযাব, আয়াত-৪৩)

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:

إن الله وميته يصون على مايبي الوف

এর মানে হল, কাতারের ডানে যারা দাঁড়াবে আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেশতারা তাদের জন্য দরুদ পড়বেন। অর্থাৎ আল্লাহ রহমত নাজিল করবেন, ফেরেশতারা রহমতের দুআ করবেন। আমরা সালাত পড়ি মানে, আমরা বলি যে, আল্লাহ, তোমার নবীর উপর রহমত নাজিল করো, তাঁর মর্যাদা বাড়িয়ে দাও। কাজেই আল্লাহ এবং ফেরশতারা দরুদ পড়ে- এটা হল জাহেলদের তরজমা, বোঝে না। অথবা বুঝেও আমাদেরকে বিভ্রান্ত করে। (সুনান আবু দাউদ-৬৭৬; ইবন মাযাহ-১০০৫)

৩৬৩
প্রশ্ন-৩৬৫: ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে গরিব ও অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্য ও পোশাক বিতরণ করা জায়েয?
১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে গরিব ও অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্য ও পোশাক বিতরণ করা জায়েয হবে কি না?

উত্তর: অসহায় গরিব মানুষকে সাহায্য করার জন্য লক্ষ্মী পূজা, কালী পূজা, গণেশ পূজা ছাড়া আর দিন নেই? ভালোবাসা দিবসেই করা লাগবে! নাকি ভালোবাস দিবসে আমাদের দেশে ঝড়-বন্যা হয়েছে, ওই দিন ত্রাণ দিতে হবে! সব দিনেই করবেন। একদিন করবেন কেন! আমাদের দরকার কী ওদের অন্ধ অনুকরণের।

৩৬৪
প্রশ্ন-৩৬৬: দিনে দিনে ইসলাম মুছে যাচ্ছে। ইসলামকে কোণঠাসা করা হচ্ছে। আল্লাহর কাছে গিয়ে কি দায় এড়াতে পারব?
পাঠ্যবই থেকে দিনে দিনে ইসলাম মুছে যাচ্ছে। ইসলামকে কোণঠাসা করা হচ্ছে। একদিন মসজিদও মুসল্লি শূন্য হয়ে যাবে। সেদিন হয়ত আমরা দায়মুক্ত হব। প্রশ্ন হল, আল্লাহর কাছে গিয়ে কি দায় এড়াতে পারব? দায়মুক্ত হতে পারব?

উত্তর: আমরা আপনাদের মসজিদে আসতে বলি, ডাকি। এভাবে যদি দায়মুক্ত না হওয়া যায় তবে কীভাবে পাওয়া যাবে! আপনারা বলেন, বুদ্ধি দেন। আমরা সেইভাবে দায়মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করব। আমরা যেটা বুঝি, দায়মুক্ত হওয়ার পথ প্রতিটি বান্দা তার সাধ্যের ভেতরে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সুন্নাত মতো নিজের জীবনে দীন কায়েম করবে, অন্যদেরকে দীনের কথা বলবে। তাহলেই দায় শেষ।

يا أيها الذين آمنوا عليكم أنفسكم لا يضرم من ضل إذا اهتديم

হে ঈমানদারেরা, তোমাদের দায়িত্ব তোমাদের জীবন। তোমার বাইরে অন্য কেউ গোমরাহ হলে তোমার কোনো দায়ভার নেই (সূরা মায়িদা, আয়াত-১০৫) । আমি আমার সাধ্যের ভেতরে নিজের জীবনে, নিজের পরিবারের ভেতর দীন প্রতিষ্ঠা করব। অন্যদেরকে দীনের পথে দাওয়াত দেব, ডাকব। এরপরেও যদি মানুষ না শোনে এর জন্য আমার আর দায়ভার থাকে না।

৩৬৫
প্রশ্ন-৩৬৭: মুমিনের জীবনে হিজরত কতটা জরুরি?
উত্তর: হিজরত দুই প্রকারের। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:

والمهاجر من هجر ما نهى الله عنه

আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন, সেটা পরিত্যাগ যে করবে, সে মুহাজির”। আর অরিজিনাল হিজরত হল, নিজের দেশ, ঘরবাড়ি চিরতরে ত্যাগ করে অন্য দেশে চলে যাওয়া! এটা কখনো ফরয হয়ে যায়। যখন মুমিন নিজ এলাকায় দীন পালন করতে পারে না, তাকে শিরক করতে বাধ্য করা হয়, তার ফরযে আইন পালন করতে বাধা দেয়া হয় তখন তার জন্য হিজরত ফরয হয়ে যায়। এ ছাড়া বাকি ক্ষেত্রে হিজরত জরুরি না। তবে দীনের জন্য প্রয়োজনে হিজরত করতে হবে। আপনি নিজের দেশে ভালোই আছেন, অন্য একটা দেশে ইসলামের সমস্যা আছে, আপনি সেখানে হিজরত করে দীন প্রচারের জন্য চলে যেতে পারেন। তবে হিজরত মানে শুধু সফরে দুইদিন, পাঁচদিন, একমাস, দুবছর ঘুরে চলে আসা নয়। আপনার বাড়িঘর বেচে একেবারে স্থায়ীভাবে অন্য দেশে চলে যেতে হবে। এটা হলো শরয়ি হিজরত।

৩৬৬
প্রশ্ন-৩৬৮ : ফজরের আযান হওয়ার পর ফজরের দুই রাকআত সুন্নাত ব্যতীত আর কোনো নামায পড়া যায় না- এটা কি সঠিক?
উত্তর: জি। এটা হাদীসে এসেছে। রাসূলুল্লাহর (ﷺ) বলেছেন, ফজরের আযান হলে আর কোনো সুন্নাত নফল নামায পড়া যাবে না। বেলা ওঠা পর্যন্ত রিল্যাক্স। এই সময়ে তাসবীহ, তাহলীল, জিকির করতে পারেন। অন্য কোনো সুন্নাত নফল নামায পড়া যাবে না। এটা রাসূলুল্লাহ (ছ) মুখেও বলেছেন, কাজেও দেখিয়েছেন। তবে এক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক যে নামায জরুরি হয়- যেমন এই সময় তাওয়াফ করেছেন, দুই রাকআত তাওয়াফের নামায পড়বেন; অথবা ওই সময় ওযু করেছেন, দুই রাকআত ওযুর নামায পড়বেন- এই ধরনের নামাযগুলো পড়া যাবে কি না, এটা নিয়ে সাহাবাদের সময় থেকেই মতভেদ আছে। উমার রা, এই সময়ে ওই ধরনের নামাযগুলো পড়তেন না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিষেধ করেছেন, নিষেধটাই বড়। আদেশটা আর দরকার নেই। আবার তাঁর ছেলে, আব্দুল্লাহ ইবন উমার রা. তিনি পড়তেন। নবীজি নিষেধও করেছেন আদেশও করেছেন। আদেশটা আমার ঘাড়ের উপর এসে পড়েছে, আমি পড়ব। এই। ছিল তাঁর যুক্তি। (সহীহ বুখারি-১০ ও ৬৪৮৪; আবু দাউদ-২৪৮১; নাসায়ি-৪৯৯৬)

৩৬৭
প্রশ্ন-৩৬৯: মনের মধ্যে শুধু সংশয়। মনে হয়, দীন-ধর্ম সব মিথ্যা। আসলেই কি আল্লাহ আছে? তার অলৌকিক প্রমাণ কী?
আমি মুসলিম পরিবারের সন্তান। নামায পড়ার চেষ্টা করি। আমার মনের মধ্যে শুধু সংশয় তৈরি হয়। মনে হয়, দীন-ধর্ম সব মিথ্যা। আমার মনের ভেতর নানা জিজ্ঞাসা। আসলেই কি আল্লাহ আছে? তার অলৌকিক প্রমাণ কী?

উত্তর: মাথায় কত প্রশ্ন আসে দিচ্ছে না কেউ জবাব তার। সবাই বলে মিথ্যে বাজে বকিস নে আর খবরদার!

এমন হয়ে গেল না ব্যাপারটা! আল্লাহর অলৌকিক প্রমাণের দরকার কি! লৌকিক প্রমাণই তো আছে। মনে করেন, এখানে একটা গাড়ি এসেছে। খুব দামি গাড়ি। জীবনে কোনো দিন দেখেন নি। মালিক কাছে গেলে গাড়ির দরজা খুলে যাচ্ছে। মালিক ছাড়া অন্য কেউ কাছে গেলে সাইরেন বাজছে। সিটে বসার সাথে সাথে স্টার্ট নিচ্ছে। এত সুন্দর গাড়ি! আপনি বললেন, ভাই, এটা কোন কোম্পানির গাড়ি? ড্রাইভার বলল, না ভাই, এটা কোনো কোম্পানির গাড়ি না। যমুনা সেতুর পাশ দিয়ে ট্রাক যাচ্ছিল। আরেকটা ট্রাকে ধাক্কা লেগে ট্রাকদুটো যমুনার পানিতে পড়ে গিয়েছিল। হঠাৎ ওখান থেকে এই গাড়িটা বেরিয়ে এসেছে। এই গল্প কি আপনি বিশ্বাস করবেন? করবেন না। বলবেন, না না, এত সুন্দর গাড়ি এমনি এমনি হয় না। নিশ্চয় কোনো কোম্পানির গাড়ি। তো এই পৃথিবীটাও তেমন। এত নিখুঁত এর পরিচালনা! এই বিশ্ব ক্ৰমেক্রমে বাড়ছে। এই বাড়তে থাকা প্রমাণ করে এর শুরু আছে। আর যার শুরু আছে তার একজন সৃষ্টিকর্তা আছে। এই বিশ্বের যে বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা, প্রতিটি পরতে পরতে যে নিখুঁত ব্যবস্থাপনা- এটা প্রমাণ করে, এটা এমনি এমনি হয় নি। আপনার শরীরের পার্টসগুলো কখন কাজ করবে, হার্ট কখন কাজ করবে, হার্টে সমস্যা। হলে কীভাবে অন্যদিক থেকে রক্ত আসবে, খাবার বেশি খেলে হার্ট কীভাবে কাজ করবে- আমাদের শরীরের এই যে বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা, এটা নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করে, এর পেছনে কোনো একজন বৈজ্ঞানিক আছে। কেউ এটাকে বানিয়েছে। তবে হ্যা, আমরা দেখতে পাচ্ছি না। এখন দেখতে না পারলেই যদি না মানা যায়, তাহলে তো আমরা কতকিছুই দেখতে পাই না। গাড়ির কোম্পানিকে আমরা দেখি নি। কিন্তু ঠিকই বিশ্বাস করেছি। পুরো বিশ্বের দিকে তাকানো লাগবে না, শুধু আমাদের শরীরের দিকে তাকান, ডাক্তারি পড়ে দেখেন, আমাদের শরীর এমনভাবে বানানো- এটা এক অকল্পনীয় বিজ্ঞান। এক লক্ষ ডাক্তার এক হয়েও এমন একটা শরীর বানাতে পারবে। যা মানুষের দেহের ভেতরে আছে। আপনার কম্পিউটারের হার্ডডিক্স যত বড়ই হোক, মাঝে মাঝে মুছতে হয়। ডিলিট করতে হয়। ব্রেনে কোনো ডিলিট লাগে না। অটো ডিলিট ব্যবস্থা আছে। আবার অটো রিভাইব করা যায়। এগুলো সবই লৌকিক প্রমাণ। জাগতিক প্রমাণ। নাস্তিকরা আস্তিকদের থেকে অনেক বড় পাগল। কারণ, আস্তিকের কাছে ‘দেখি না’ ছাড়া সব প্রমাণ আছে। আর নাস্তিকের কাছে ‘দেখি না ছাড়া আর কোনো প্রমাণ নেই। একজন আস্তিক বিশ্বাস করে, এত সুন্দর গাড়ি কোম্পানি ছাড়া হতে পারে না। আর নাস্তিক মনে করে, যেহেতু রাস্তার পাশে পড়ে রয়েছে, কোনো কোম্পানির নাম গায়ে লেখা নেই- এটা আসলে যমুনার পানির ভেতর থেকেই বের হয়েছে। এগুলো সবই লৌকিক প্রমাণ। আর অলৌকিক প্রমাণ আপনি নিজেই অনুভব করবেন। মানুষের আত্মা নিজেই অনুভব করে আল্লাহ তার সাথে আছেন। আপনি দুআ করছেন, আল্লাহ কবুল করছেন। আপনি দেখতে পাচ্ছেন, আল্লাহ আপনাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তৃতীয় হল, দুনিয়াতেও দৃশ্যমান কিছু অলৌকিক ব্যাপার আছে। সবচে' বড় অলৌকিক প্রমাণ হল মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা) । অন্য কোনো কিছুর দরকার নেই। মাত্র তেইশ বছরের জীবনে তিনি বিশ্বকে পাল্টে দিয়েছেন। দুনিয়াতে এমন আর কেউ নেই। তেইশ’শ বছরেও বিশ্ব পাল্টানো যায় না। এইসব কিছুর দিকে তাকালে বোঝা যায়, আসলেই আল্লাহ আছেন।

৩৬৮
প্রশ্ন-৩৭০: মানুষের ভাগ্য যদি আগে থেকেই ঠিক করা থাকে তাহলে আমল করে লাভ কী?
উত্তর: ভাগ্য নিয়ে যারা চিন্তা করে তারা আল্লাহর কাজ নিয়ে চিন্তা করে। আল্লাহর ইলমে সব আছে। আল্লাহ আপনাকে কাজ করতে বলেছেন, আপনি কাজ করেন। আল্লাহ বলেছেন, তুমি কাজ করলে আল্লাহ ফল দেবেন। মনে করুন, একজন মালিক। তার কর্মচারীদের বলল, তোমরা ভালো মতো কাজ করো, বছর শেষে তোমাদের বোনাস দেব। কর্মচারীদের একজন নিজেদের ভেতর আলোচনা করছে- স্যার যা-ই বলুক, কাকে বোনাস দেবে আমরা জানি। স্যারের মনের ভেতর সব ঠিক করা আছে কাকে দেবে। তো একজন বারবার স্যারের কাছে যায়- স্যার, সত্যি নাকি, আপনি কাকে বোনাস দেবেন আগেই নাকি ঠিক করে রেখেছেন! মাঝে মাঝেই প্রশ্ন করে। আরেকজন বলে, বস বলেছে, কাজ করে যাই। যাকে দেয়, দেবে। আপনি বলেন তো বস আসলে কাকে পুরস্কার দেবে? যে কাজ করবে তাকেই দেবে। তোমার কাজ হল কাজ করে যাওয়া। আমি বলেছি দেব, আমার কথা যদি বিশ্বাস না করো ভেগে পড়ো।

৩৬৯
প্রশ্ন-৩৭১: জিহাদ ও কিতালের নির্দেশসম্বলিত আয়াতগুলোর প্রাসঙ্গিকতা আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে?
পবিত্র কুরআনে জিহাদ ও কিতালের নির্দেশসম্বলিত অনেক আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে আয়াতগুলোর প্রাসঙ্গিকতা আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে নাকি? মুসলিমদের উপর সারা বিশ্বে আগ্রাসন চালানো হচ্ছে। এই অবস্থায় কাফেরদের বিরুদ্ধে মুমিনের ভূমিকা কী হওয়া উচিত?

উত্তর: আল্লাহ তাআলা কুরআনে নামাযের অনেক আয়াত নাযিল করেছেন। কিন্তু নামাযের কিছু শর্ত আছে। সময় আছে। আল্লাহ যেহেতু কুরআনে নামাযের আয়াত নাজিল করেছেন, তাই ইচ্ছামতো পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণ নামায পড়লাম, ওযু গোসল করলাম না, অথবা উলঙ্গ হয়ে পড়লাম, অথবা সূর্যাস্তের সময় পড়লাম- নামায হবে নাকি? হবে না। ঠিক তেমনি আল্লাহ জিহাদেরও আয়াত নাজিল করেছেন। তিনি কুরআনে এর বিধিবিধান দিয়েছেন। জিহাদ অবশ্যই রাষ্ট্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে হবে। আল্লাহ কুরআনে এটা বলেছেন। হাদীসেও বলেছেন রাসূলুল্লাহর (ﷺ) বলেছেন, রাষ্ট্রপ্রধানের নেতৃত্বে জিহাদ করতে হবে। তাই যদি না হয় তাহলে তো আমি আমার গ্রুপ নিয়ে আর আপনি আপনার গ্রুপ নিয়ে মারামারি করে মরে যাব। দ্বিতীয়ত, কার বিরুদ্ধে জিহাদ করতে হবে এটাও আল্লাহ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। জিহাদ মুমিনের জীবন থেকে হারায় না। জিহাদ কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। রাষ্ট্র, প্রশাসনের দায়িত্ব জিহাদকে উজ্জীবিত রাখা। কেউ না করলে সে গোনাহগার হবে। মুমিনের দায়িত্ব জিহাদের দাওয়াত দেয়া, রাষ্ট্রকে বলা। তবে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণের বাইরে জিহাদ হয় না। খুনোখুনি হয়, মারামারি হয়। পৃথিবীতে ইসলামের বিরুদ্ধে আগ্রাসন ছিল না কবে! আর থাকবে না কবে! কিন্তু কোনো কিছুতে ইসলাম শেষ হয়ে যায় নি। আর অস্ত্র তুলে নিলেই ইসলাম কায়েম হয় নি। আফগানিস্তানে অনেক বছর জিহাদ হয়েছে। কিন্তু সেখানে ইসলাম কিছুই আগায় নি। আবার জিহাদ ছাড়াই তুরস্কে ইসলাম অনেক এগিয়ে গেছে। জিহাদের পরিবেশ আসলে জিহাদ হবে। কাফেরদের মেরে ফেললেই সব মরে যাবে, এমন না। আবার তারা বেঁচে থাকলেই জিতে যাবে, এমন না। আমার উপর যা দায়িত্ব, তা আমি পালন করব। জিহাদের যদি সুযোগ থাকে জিহাদ করব। জিহাদের সুযোগ নেই আমি দাওয়াত দেব। আপনি যে অস্থিরতায় ভুগছেন, সব শেষ করে দেব- আপনি শেষ করলেই সব শেষ হবে না। এই অস্থিরতার জন্যই আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেছেন:

عليكم أنفسكم لا يضركم من ضل إذا اهتديتم

তোমার দায়িত্ব তোমার। তুমি সুপথে ডাকার পরেও কেউ না আসলে তাদের এই পথভ্রষ্টতা তোমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।

৩৭০
প্রশ্ন-৩৭২: হাদীস অনুযায়ী আমাদের ঘাড়ে দুইজন ফেরেশতা এবং দুইজন জিন থাকে?
উত্তর: না। হাদীসে এ রকম কিছু নেই। সাথী থাকে। সাথী ঘাড়ে থাকে, এমন না। আর ফেরেশতারা যারা লেখে, তারা থাকে ঘাড়ে, ডানে আর বামে।

প্রশ্ন-৩৭৩: অনেকে বলে, রাসূলুল্লাহর (ﷺ) সন্তুষ্টির জন্য আমরা কাজ করি। কথাটা কি ঠিক?

উত্তর: সন্তুষ্টির জন্য কাজ করা হল ইবাদত। আর ইবাদত করতে হয় আল্লাহর। রাসূলুল্লাহ (স) এর অনুসরণের দ্বারা আল্লাহর সাথে সাথে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) খুশি হন। বটে, কিন্তু আমাদের কাজের উদ্দেশ্য হল আল্লাহর সন্তুষ্টি।

৩৭১
প্রশ্ন-৩৭৪: আরবের লোকেরা কন্যা সন্তান পুঁতে ফেলত। তাহলে তারা বহুবিবাহ কীভাবে করত? এত মেয়ে তারা কোথায় পেত?
উত্তর: সব কন্যা তো মারত না। মারার প্রচলন ছিল। কিন্তু সবাই তো মারত না। কেউ কেউ মারত।

৩৭২
প্রশ্ন-৩৭৫: জুমআর ফরয নামাযের আগে কয় রাকআত নামায পড়তে হয়? এটা কি সুন্নাত নামায?
উত্তর: জুমআর আগে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এবং সাহাবিরা পড়তেন। আপনারাও পড়বেন। চার রাকআত বা এর কম বেশি সব রকমেরই হাদীস আছে।

৩৭৩
প্রশ্ন-৩৭৬: গোনাহ বর্জনের উপায় কী?
উত্তর: গোনাহ তো হয়ে যায়। আল্লাহর কাছে বারবার তাওবা করতে হবে। নিয়ত করতে হবে গোনাহ না করার। যে কারণে গোনাহ হয়, সেই কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে। ঈমান-আমল বাড়াতে হবে। ঈমান যত বাড়বে, পাপের আগ্রহ তত কমবে। এরপরেও ভুলভ্রান্তি হলে তাওবা করতে হবে।

৩৭৪
প্রশ্ন-৩৭৭: মেয়েদের ব্যবহৃত স্বর্ণের উপর কোন উপায়ে যাকাত দিতে হবে?
উত্তর: মেয়েদের ব্যবহৃত স্বর্ণের উপর স্বাভাবিক যাকাত দিতে হবে। অর্থাৎ সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা তার থেকে বেশি হলে পুরো স্বর্ণের উপর যাকাত দি হবে।

৩৭৫
প্রশ্ন-৩৭৮: ওজুতে গর্দান মাসেহ করা সম্পর্কে বলুন।
উত্তর: ওযুতে ঘাড় মাসেহ করার ব্যাপারে কোনো সহীহ হাদীস পাওয়া যায় না। খুব দুর্বল হাদীস আছে। এ জন্য কেউ বলেছেন, ঘাড় মাসেহ করা মুস্তাহাব। কেউ বলেছেন, এটা কোনো ইবাদত না। হানাফি মাযহাবের কুদুরি এবং অন্যান্য অনেক কিতাবে ঘাড় মাসেহ করার কথা নেই। কোনো কোনো কিতাবে আছে। অন্যান্য মাযহাবের ফকীহরা বলেন, ঘাড় মাসেহ করার ওযুর অংশ না।

৩৭৬
প্রশ্ন-৩৭৯: একজন বলেছে, যারা মুজিযা এবং কারামাতে বিশাস করে, তারা বিদআতি। কথাটা কতটুকু সঠিক?
উত্তর: মুজিযা মানে নবীদের অলৌকিক কর্ম। কারামত মানে ওলীদের অলৌকিক কর্ম। মুজিযা অবশ্যই সত্য। কারামতিও হতে পারে। এখানে দুটো বিষয়। কারামতি দেখে ওলী চেনা যাবে না। অলৌকিক কাজ ওলিও করতে পারে শয়তানও করতে পারে। অলৌকিক কাজ ওলি হওয়ার আলামত না। বাতাসে উড়ে যাচ্ছে, পানির উপর হেঁটে যাচ্ছে- শয়তানও হতে পারে, ভালো মানুষও হতে পারে। মানুষের মনের কথা বলে দিচ্ছে যে, সে সাঁইবাবাও হতে পারে আবার পীরবাবাও হতে পারে। কাজেই এগুলো ওলি হওয়ার আলামত না। তবে যদি কোনো নেককার মানুষ, যিনি সুন্নাত মোতাবেক চলেন, জীবন ও কর্ম দেখে মনে হয় আল্লাহওয়ালা মানুষ তার থেকে যদি অলৌকিক কোনো কাজ প্রকাশ পায়, আমরা বলতে পারি কারামত। দুই নাম্বার হল, আমরা কারামতির নামে যা বলি ৯৫% মিথ্যা কথা। কোনো সনদ নেই।

৩৭৭
প্রশ্ন-৩৮০: সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পড়ার হাদীসটি ইমাম তিরমিযি বলেছেন, হাদীসটি গরীব। আমল করা যাবে কি না?
উত্তর: আমল করতে পারেন। তবে আমল মানে কী? নামাযের পর আয়াতুল কুরসি পড়ার হাদীস সহীহ। তার মানে তো দল ধরে পড়া যাবে না। দলবদ্ধ হয়ে পড়া। বিদআত। নামাযের পরের যত ওযীফা আছে, সব একা একা পড়ার ইবাদত।

প্রশ্ন-৩৮১: রাসূলের (ﷺ) সাহবিরা সত্যের মাপকাঠি কি না বুঝিয়ে বলবেন।

উত্তর: আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাহাবিরা আমদের জন্য। অনুকরণীয় আদর্শ।

৩৭৮
প্রশ্ন-৩৮২: এই আয়াতে কুরআন ক ভাবে মুমিনের জন্য শিফা বা রোগমুক্তি হল দয়া করে বলবেন।
উত্তর: অর্থাৎ আল্লাহ কুরআনের ভেতর যা নাযিল করেন এর ভেতরে মুমিনের জন্য রহমত এবং শেফা রয়েছে। অর্থাৎ রহমত আপনি দুনিয়া এবং আখিরাতে পাবেন। আবার কুরআন থেকে যদি নিতে পারেন, কিছু শেফা পাবেন। যেমন, আল্লাহ পরিচ্ছন্ন থাকতে বলেছেন। ওযু করতে বলেছেন। আপনি যদি পরিচ্ছন্ন থাকেন, পেশাব পায়খানায় পাকসাফ থাকেন, তাহলে অসুস্থতা থেকে বেঁচে থাকতে পারবেন। আবার আত্মার সুস্থতা পাবেন। আত্মা যখন সুস্থ হয়, দেহের সুস্থতা বাড়ে। এ জন্য কুরআনের বিধিবিধান আপনি যদি মানেন দেহের এবং আত্মার সুস্থতা পাবেন।

৩৭৯
প্রশ্ন-৩৮৩: সুদ ভিত্তিক ব্যাংকে লেনদেনের কারণে প্রাপ্ত সুদের টাকা গরিব আত্মীয়স্বজনের মাঝে ব্যয় করা যাবে কি না?
উত্তর: যাবে। আপনি সুদভিত্তিক ব্যাংকের সাথে লেনদেন না করার চেষ্টা করবেন। যদি বাধ্য হয়ে করেন, তাদের দেয়া সুদ অসহায় কোনো গরিব আত্মীয়কে, চিকিত্সা করবে, মেয়ে বিয়ে দেবে তাদেরকে দিয়ে দিতে পারেন। একজন বা একাধিককে দিতে পারেন।

৩৮০
প্রশ্ন-৩৮৪: সাহাবিগণ জানার জন্য সরাসরি প্রশ্ন করতেন। আপনি লেখার নিয়ম করেছেন। এটা কি সুন্নাত বিরোধী নয়?
সাহাবিগণ জানার জন্য রাসূলের কাছে সরাসরি প্রশ্ন করতেন। আপনি লেখার নিয়ম করেছেন। এটা কি সুন্নাত বিরোধী নয়?

উত্তর: আমি লেখার নিয়ম করি নি। সরাসরি আমার ট্রাস্টে চলে যান, মুখে মুখে প্রশ্ন করবেন, মুখে মুখে উত্তর পাবেন। তবে সুন্নাত বিরোধী যে মোবাইলটা, মোবাইলে প্রশ্ন করা- ওটা বাদ দিয়ে দিয়েছি।

৩৮১
প্রশ্ন-৩৮৫: স্বামীর ঋণ পরিশোধের সামর্থ্য নেই। স্ত্রীর যাকাত নিয়ে ঋণ শোধ দেয়া যাবে কি না?
উত্তর: আমাদের হানাফি মাযহাবে এটা নিষেধ। অর্থাৎ, স্ত্রীর যাকাত স্বামী নিতে পারবে। তবে হাদীসে এসেছে, স্বামী যদি গরিব হয়, স্ত্রীর যাকাত গ্রহণ করতে পারবে। নেয়ার পর যা খুশি ব্যয় করতে পারবে। এই সুরত অন্যান্য মাযহাবে আছে। কিন্তু আমাদের দেশে প্রচলন নেই।

৩৮২
প্রশ্ন-৩৮৬: এটি কোন ক্ষেত্রে পড়তে হয়? এর অর্থ কী?
উত্তর: এর অর্থ, আল্লাহ, আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, আমাকে ক্ষমা করে দেন। এটা কদরের রাতে পড়তে হয়। এ ছাড়া সবসময়ই পড়তে পারেন। মাসনুন দুআ।

৩৮৩
প্রশ্ন-৩৮৭: সাক্ষী রোযা বলে কি আসলে কোনো রোযা আছে?
উত্তর: শাওয়াল মাসের ছয় রোযা। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যদি কেউ রমাযানে রোযা রেখে এরপর শাওয়ালের ছয়টি রোযা রাখে তাহলে বারোমাস রোযা রাখার মতো সোয়ব সে পেয়ে যাবে। আমাদের এক সিনিয়র প্রফেসর, কুষ্টিয়ায় জুমআর আলোচনায় এই ওয়াজটা করেছেন। নামায থেকে বেরোনোর পরে এক রিকশাওয়ালা উনাকে বলছে, হুজুর, আসসালামু আলাইকুম, আপনি আমারে বাঁচালেন। হুজুর, রমাযানের রোযা রাখতে পারছিলাম না, মনে খুব কষ্ট ছিল। শাওয়ালের ছয়টা রোযা রাখলে যদি বারোমাস রোযা হয় তাহলে তো হয়েই গেল। আসল ব্যাপার হল, রমাযানের রোযা রেখে তারপর শাওয়ালের রোযা রাখতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) রাখতে বলেছেন। ভালো ইবাদত। আপনি ঈদের পরদিন থেকে রাখতে পারেন। পুরো মাসের ভেতর একসাথে বা ভেঙে ভেঙে রাখতে পারেন। নফল রোযা। রাখতে পারলে অনেক সোয়াব। আমাদের দেশে কিছু কুসংস্কার আছে। সেটা হল, এই রোযা না রাখলে রমাযানের রোযা কবুল হবে না। এই রোযা রমাযানের রোযার সাক্ষী দেবে। এই ভাবনা ঠিক না।

৩৮৪
প্রশ্ন-৩৮৮: আব্বা জীবিত অবস্থায় মসজিদে চাঁদা দিতেন। তার মৃত্যুর পর আমি চাঁদা দিই। এতে কি আব্বার সোয়াব হচ্ছে?
আমার আব্বা জীবিত অবস্থায় মসজিদে মাসিক চাঁদা দিতেন। তার মৃত্যুর পর আমি নিয়মিত চাঁদা দিই। এতে কি আমার আব্বার সোয়াব হচ্ছে?

উত্তর: জি, আপনি আপনার আব্বার নিয়তে দেবেন, পৌছাবে। মনে মনে নিয়ত করবেন, হে আল্লাহ, এই টাকাটা আব্বার পক্ষ থেকে দান করলাম। হয়ে যাবে।

৩৮৫
প্রশ্ন-৩৮৯: সৌদি আরবের সাথে আমাদের বা তাদের শবে কদর মিস হয়ে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে কি?
সৌদি আরবের রোযার সাথে আমাদের রোযা মেলে না। তাই আমাদর জোড় রোজার দিন তাদের নোযা হয় বেজোড়। আবার আমাদের বেজোড়ের দিন তাদের হয় জোড়। এ ক্ষেত্রে আমাদের বা তাদের শবে কদর মিস হয়ে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে কি?

উত্তর: আল্লাহ যদি আমাদের বাঙালি জমিদার বা মন্ত্রীর মতো হতেন, তাহলে মিস হয়ে যেত। কারণ, একশ টাকা আছে, একজনকে দেবে। আপনাদের কবে থেকে এই চিন্তা হল যে আল্লাহর কাছে একশ টাকাই আছে, সৌদি আরবে দিয়ে দিলে আমাদের আর দিতে পারবে না! কবে থেকে আপনাদের এই ধারণাটা হল! আল্লাহর দীন সহজ। তিনি বান্দাকে দেয়ার জন্য ভাণ্ডার উন্মুক্ত করে রেখেছেন। যে দেশে যেদিন বেজোড়, সে দেশে সেই দিনে দেবেন। আল্লাহ এক রাতেই দেবেন, আর পাবে না কেউ, কে বলেছে আপনাদের! বাঙালি মানসিকতা সংকীর্ণ হতে হতে এই জায়গায় এসে পৌঁছেছে। আল্লাহর দীন সেই শুরু থেকে সবার জন্য সহজ পালনীয়। কোনো কষ্ট নেই। তার সমাজ, রাষ্ট্র শবে কদরের ঘোষণা দেবে, সে আমল করবে, আল্লাহ দিয়ে দেবেন। কাজেই শবে বরাত একদিন হলে আরেক দিন হতে পারে না, শবে কদর একদিন হলে আরেক দিন হতে পারে না। এই বাঙালি চিন্তা আমাদের বাদ দিতে হবে।

৩৮৬
প্রশ্ন-৩৯০: আল্লাহ তাআলার পবিত্র নাম শুনলে কি অভাব দূর হয়?
আল্লাহ তাআলার পবিত্র নাম শুনলে কি অভাব দূর হয়? অনেক কিতাবে লেখা আ- একশ বার ইয়া ওয়াহহাবু, ইয়া লাতীফু পাঠ করলে অভাব দূর হয়। এটা কতটুকু সঠিক?

উত্তর: আল্লাহ তাআলার নাম ধরে ডাকবেন। তাঁর নামের ওয়াসিলা দিয়ে দুআ চাইবেন। এটা ভালো। তবে আমাদের দেশের কিতাবগুলোতে যে আমলগুলো দেয়া। থাকে, এগুলো সুন্নাত না। এমনিতে আল্লাহর নাম ডাকাতে কোনো সমস্যা নেই। অভাব মিটানোর জন্য রাসূলুল্লাহর (ﷺ) বিভিন্ন আমল বলেছেন। কিছু আছে একটু কষ্টকর। যেমন, বাবামার খেদমত করতে হবে। আত্মীয়স্বজনের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে। মানুষের উপকার করতে হবে। ইস্তেগফার বেশি বেশি করতে হবে। আর কিছু দুআ আছে। এগুলো এখন বললে আপনারা বুঝবেন না, মনে রাখতে পারবেন। এগুলো আমার রাহে বেলায়াতে’ পাবেন। ঋণ থেকে মুক্ত হওয়ার, অভাব থেকে মুক্ত হওয়ার কিছু দুআ আছে। এই মাসনুন দুআগুলো পড়লে বরং ভালো হয়। রাসূলুল্লাহর (ﷺ) নিজে বলেছেন যে, এগুলো পড়লে আল্লাহ স্বচ্ছলতা দেবেন।

৩৮৭
প্রশ্ন-৩৯১: আমাদের দেশে ইফতারির সময় কেন দুই তিন মিনিট পরে নির্ধারণ করা হয়?
রাসূলুল্লাহর (ﷺ) বলেছেন, যতদিন আমার উম্মত তাড়াতাড়ি ইফতার করবে ততদিন তারা শান্তির উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। অন্য হাদীসে আছে, দেরি করে ইফতার করা ইহুদিদের নিয়ম। কিন্তু তারপরেও আমাদের দেশে ইফতারির সময় কেন দুই তিন মিনিট পরে নির্ধারণ করা হয়?

উত্তর: দেরি করে ইফতার করা মানে দুই তিন মিনিট দেরি না। আমি নিজেও দুই তিন মিনিট দেরি করার পক্ষে না। তবে বিষয়টা হল, আমি বেলা ডোবা দেখছি না। বেলা ডুবেছে নিশ্চিত হওয়ার পরে পাঁচ সেকেন্ডও দেরি করা ঠিক না। অনুচিত। কিন্তু বেলা ডোবা আমি দেখছি না। ঘড়িতে দেখছি। ঘড়িতে দেখেও যদি আমি নিশ্চিত হই, তাহলে নিশ্চিত হওয়ার পরেও সাবধান হওয়া এটা জায়েয না। তবে ঘড়ির কাঁটা যেহেতু এক আধ মিনিট এদিক ওদিক থাকে, এ জন্য যদি কেউ এক আধ মিনিট দেরি করে, এটাকে আমরা ওই ইহুদিদের পর্যায়ে নিতে পারব না। কারণ, আমরা বেলা ডোবা দেখছি না। এবং ঘড়ির কাঁটায় অনেক সময় অনিশ্চয়তা থাকে। আর আপনি যদি কনফার্ম হন, আপনার ঘড়ি ঠিক আছে, আর বেলা ডুবে গেছে, আপনি ইফতার করবেন।

৩৮৮
প্রশ্ন-৩৯২: আমরা কুরআন শরীফের সিজদার আয়াত পড়ে সিজদা দিই কেন?
উত্তরঃ এটা বিরাট প্রশ্ন! আমাদের দেশে এমন অনেক প্রশ্ন আছে। বিতরের নামায কেন তিন রাকআত হল! আল্লাহর এক রাকআত, জিবরাইলের এক রাকআত, নবীর এক রাকআত। অদ্ভুত ব্যাপার। তিলাওয়াতে সিজদা কেন দিতে হয় এই প্রশ্নটা এসেছে না বোঝার কারণে। যদি বুঝতেন তাহলে আপনি ওই জায়গায় সেজদা না দিয়ে থাকতে পারতেন না। ওখানে সিজদার কথা আছে। ওখানে লেখা আছে, আল্লাহর বান্দারা আল্লাহর নাম শুনে সিজদা দেয়। ওই সময় সিজদা না দিয়ে আপনি থাকতে পারবেন। ওখানে লেখা আছে, কাফেররা আল্লাহর নাম শুনে সিজদা দেয় না। তখন আপনারই মনে হবে আমি আগে সিজদাটা দিয়ে নিই। কুরআন কারীমে যে যে জায়গায় আমরা সিজদা দিই সবখানে সিজদা দেয়ার কথা বলা আছে। এই জন্য আমরা সিজদা দিই।

৩৮৯
প্রশ্ন-৩৯৩: আমার মোবাইলে কুরআনের একটা এ্যাপস আছে। এই কুরআন পড়ার সময় কি ওযু করতে হবে?
উত্তর: কুরআন পড়ার সময় ওযু জরুরি না। কুরআন ধরার জন্য, অর্থাৎ যেটা পিওর কুরআন, যাতে কোনো তাফসীর নেই, তরজমা নেই, এই ধরনের কুরআন ধরতে গেলে ওযু করতে হয়। ওযু অবস্থায় ধরতে হয়। এটা সহীহ হাদীসের কথা।

لا يمس القرآن إلا طاهر ده

বর্তমানে অ্যান্ড্রোয়েড ফোনে যে কুরআন থাকে, এটা কিন্তু কাচের সাথে থাকে না। এটা ভিতরে থাকে। কাজেই আপনি ওযু ছাড়া কাচের উপর হাত দিয়ে এটা সরাতে পারেন। (মুআত্তা মালিক ১/১৯৯; তাবারানি, আল মু'জামুস সাগীর ২/২৭৭; আল মু'জামুল কাবীর ১২৩১৩; হাইসামি, মাজমাউয যাওয়ায়িদ ১/৬১৬; আলবানি, সহীহুল জামি" ২/১২৮৪; ইরওয়াউল গালীল ১/১৫৮-১৬১)

৩৯০
প্রশ্ন-৩৯৪: বুখারি শরীফ পড়ার সময় কি ওযু করতে হয়?
উত্তর: জি না। হাদীস পড়তে ওযু লাগে না। ওযু থাকলে ভালো। না থাকলে কোনো সমস্যা নেই।

৩৯১
প্রশ্ন-৩৯৫: নাস্তিক ব্যক্তির বই পড়ে সেখান থেকে কোনো জ্ঞান অর্জন করলে কোনো সমস্যা আছে কি না?
উত্তর: জ্ঞান তো সবখান থেকেই সংগ্রহ করা যায়। হিন্দু থেকে, কাফের থেকে, মুশরিক থেকে, ইমরুল কায়েস থেকে নেয়া যায়। তবে নাস্তিক ব্যক্তির নাস্তিকতা প্রচারমূলক বই না পড়া উচিত। আর নাস্তিকতাটা কী? মনে করেন আপনি রান্না করে খান। নাস্তিক এসে বলল, আপনি এই তরকারিটা ধুয়ে তারপর রান্না করেন। কারণ, বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে এই সবজিতে বিষ আছে। অথবা আপনি এই যে এই খড়ি দিয়ে রান্না করেন এতে পরিবশে দূষিত হয়। এটা দিয়ে রান্না করবেন না। তাহলে কী করা খাবার খাব কীভাবে! সে বলর, চলেন আমাদের বাড়িতে যাই। আপনি নাস্তিকের সাথে তার বাড়িতে গেলেন। গিয়ে দেখলেন তার বাড়িও নেই, খাবারও নেই। সে জঙ্গলে থাকে আর কাঁচা মাংস খায়। নাস্তিকতা হল এমন। তারা পারে শুধু সমালোচনা করতে। তাদের কাছে কোনো সমাধান নেই। মানবতার জন্য কোনো ব্যবস্থাপত্র নেই। জঙ্গলে থাকা আর কাঁচা মাংস খাওয়ার মতো তাদের ব্যাপার। আমি রান্না করে খাই, সে জন্য তুমি সমালোচনা করছ। আর তুমি যে কাচা খাও! আল্লাহ তাআলা যত কিছু সৃষ্টি করেছেন। প্রতিটি প্রাণি, প্রতিটি দ্রব্য, প্রতিটি বস্তু- সবাই মুসলিম। তারা আল্লাহর শরীআত মানে। কোনো মানুষ খুন করলে আমরা বলি, ও পশুর মতো হয়ে গেছে। কিন্তু পশু কি কখনো খুন করে? করে না। পশুর নির্দিষ্ট শরীআত আছে। খাদ্যর জন্য, জীবন ধারণের প্রয়োজন ছাড়া সে অন্য কোনো পশুকে হত্যা করে না। এর বাইরে কোনো পশু প্রতিশোধ নিতে কিংবা বিনোদনের জন্য অন্য পশুকে খুন করেছে এটা কল্পনা করা যায় না। এটা অসম্ভব। তারা খাদ্য অপচয় করে না। শিকার করার পর সেটা না ফুরানো পর্যন্ত নতুন শিকার করে না। তারা সিন্ডিকেট করে না। খাদ্য সঞ্চয় করে না। এ জন্য কোটি বছর চলে যাবে, কিন্তু পশুদের জঙ্গলে কোনো পুলিশ দারগা। লাগবে না। একমাত্র সৃষ্টি মানুষ, যাকে আল্লাহ তাআলা শরীআত লঙ্ঘনের ক্ষমতা দিয়েছেন, বিবেক দিয়েছেন, এবং এর উপর তার বিচার হবে। এখন এর জন্য যদি কোনো ব্যবস্থা না থাকে তাহলে মানুষ ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই এই ব্যবস্থাপত্র দিয়েছে ধর্ম। ধর্মের অনুকরণে এখন কিছু আইনও তৈরি করা হয়েছে। এগুলোও ধর্ম থেকে আসছে। নাস্তিকরা ছোট ছোট কিছু বিষয় নিয়ে সমালোচনা করে যুবকদের ভেতর আলোড়ন তোলে। তাদের খপ্পরে পড়ে যুবকরা লাফায়- তাই তো! ধর্মের তো অনেক সমস্যা! কিন্তু সমালোচনার বাইরে তারা কোনো সমধান দিতে পারে না। এই জন্য নাস্তিক লেখকদের নাস্তিকবাদী বই আপনারা পড়বেন না। কারণ, এর ভেতরে বিষ ঢোকানো থাকে।

৩৯২
প্রশ্ন-৩৯৬: শাড়ি বা ম্যাক্সি পরে মহিলারা নামায পড়তে পারবে কি না?
উত্তর: শাড়ি একটা অশালীন পোশাক। এটা সর্বোচ্চ বিছানায় শোয়ার সময় পরা যেতে পারে। চাদর পরে কি রিকশা চালানো যায়? মাটি কাটা যায়? চাদরের মতো শাড়ি, এটা কর্মে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী এবং অশোভন পোশাক। এটা পরে সতর রক্ষা করা যায় না। পুরোপুরি পর্দা হয় না। হাফ পর্দাও হয় না। এ জন্য মুসলিম মেয়েদের শাড়ি পরা উচিত নয়। আবার শাড়ির সাথে যে পোশাক আমরা পরি, শাড়িটা তো উপরের চাদর, এর নিচে ব্লাউজ পরি, সেটা ছোট। এ জন্য শাড়ি পরে নামায হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা এক ভাগ। কারণ, নামাযের মধ্যে শুধু মুখমণ্ডল এবং হাতের দুই কজি ছাড়া বাকি সব ঢেকে রাখা ফরয। কাপড় নেই, উলঙ্গ হয়ে নামায পড়তে পারে। কিন্তু কাপড় যার আছে, সে তো পারে না। শাড়ি পরে মাথায় কাপড় দিলে রুকু সিজদায় সরে যায়। কান বেরিয়ে যায়। চুল বেরিয়ে যায়। আবার কনুই বেরিয়ে যায়। পেটের দিকে বেরিয়ে যায়। মুসলিম মেয়েদের সুন্নত পোশাক হল, আপনারা তো পুরুষদের টুপি পাঞ্জাবির সুন্নাত নিয়ে মারামারি করেন, মেয়েদের সুন্নাত এবং ফরয পোশাক হল। ম্যাক্সি। ম্যাক্সির হাট বড় হবে। পায়ের দিকে গোড়ালির নিচ পর্যন্ত কুল থাকবে। মহিলা সাহাবিরা এটা পরতেন। আর উপরে পরবে বড় ওড়না। নিচে থাকবে সায়া অথবা পায়জামা। আর স্বাভাবিক জামা যেটা, আমরা যাকে কামিস বলি, আজকাল কামিসও অশালীন হয়ে গিয়েছে, যদি কামিসের হাতা বড় হয়, ঢিলেঢালা হয়, তাহলে এটা পরে নামায হতে পারে। এ জন্য আমাদের নারীদের সুন্নাত পোশক হল ম্যাক্সি। রাসূলের স্ত্রীগণ, কন্যাগণ, মাহিলা সাহাবিগ এটা পরতেন। আবার তাঁরা নামাযের জন্য জিলবাব, বড় চাদর, বোরকার মতো, এটা পরতেন।

৩৯৩
প্রশ্ন-৩৯৭: যেদিন জন্ম হয়েছে সেদিন চুল-নখ ইত্যাদি কাটা যাবে কি না?
উত্তর: বেশি বেশি করে কাটবেন। যেদিন জন্ম ওইদিন কাটবেন। কারণ, আমাদের দেশে কুসংস্কার আছে, জন্মদিনে নখ-চুল কাটলে ক্ষতি হয়। আরবিতে একে বলে তিয়ারা।

الطيره شرك

অশুভ, অমঙ্গল, অযাত্রা বিশ্বাস করা শিরক। যখনই এই শিরকি চিন্তা মনে আসবে তাড়াতাড়ি নাপিতের কাছে বসে যাবেন। আমার নানি ছোটবেলায় বলতেন, এই, জন্মদিনে কাটতে হয় না। তখন তাড়াতাড়ি করে কাটতাম। যদি ভুলে যাই কাটার কথা, তাহলে তো শিরক হয়ে যাবে।

৩৯৪
প্রশ্ন-৩৯৮: কিরাআত চলছে, তখন যদি আমি জামাআতে শামিল হই, আমার কি সানা পড়তে হবে?
প্রথম রাকআতে ইমাম সাহেব নামায শুরু করে দিয়েছেন, কিরাআত চলছে, তখন যদি আমি মসিজদে প্রবেশ করে জামাআতে শামিল হই, আমার কি সানা পড়তে হবে?

উত্তর: যদি জাহরি নামায হয়, কিরাআত শুনতে হবে। আর সিররি নামায হলে সানা পড়বেন।

৩৯৫
প্রশ্ন-৩৯৯: তারাবীহতে এক রাকআত মিস করলে দ্বিতীয় রাকআত কি একা একা পড়ে নিতে হবে নাকি ইমামের সাথে সালাম ফেরাতে হবে?
তারাবীহ নামাযে এক রাকআত মিস করলে দ্বিতীয় রাকআত কি একা একা পড়ে নিতে হবে নাকি ইমামের সাথে সালাম ফেরাতে হবে?

উত্তর: অবশ্যই এক রাকআত একা একা পড়তে হবে। অন্যন্য নামাযের মতোই নিয়ম।

৩৯৬
প্রশ্ন-৪০০: রোযা রেখে থুতু গেলা যাবে কি না?
উত্তর: রোযা রেখে থুতু গেলা যাবে, রোযার বাইরেও থুতু গেলা যাবে। যত খুশি থুতু গিলবেন। সৌদি আরবে একমাত্র বাঙালি ছাড়া আর কাউকে দেখা যাবে না যে মসজিদ থেকে বেরিয়ে থুতু ফেলছে। থুতু ফেলা একটা ঘৃণ্য অভ্যাস। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, থুতু ফেলার প্রয়োজন হলে কাপড়ে মুছতে হবে। থুক করে থুতু ফেলার এই বদঅভ্যাস বিশ্বে একমাত্র বাঙালি ছাড়া সম্ভবত আর কারো নেই। একা অসুবিধা হলে আপনি টিস্যুতে মোছেন। অথবা গায়ের চাদরে মোছেন - সেও ভালো। তাও ফেলবেন না। এটা অশালীন অসভ্য কাজ। ইসলামে নিষিদ্ধ। (আবু দাউদ-৩৯১০; ইবন মাযাহ-৩৫৩৮)

৩৯৭
প্রশ্ন-৪০১: জামাআতে মুজাদিরা কি সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলবে?
উত্তর: না। শুধু রাব্বানা লাকাল হামদ’ বলবে।

৩৯৮
প্রশ্ন-৪০২: রুকু থেকে উঠে হাত বুলিয়ে রাখতে হবে নাকি বাঁধতে হবে?
উত্তর: রুকু থেকে ওঠার পরে হাত বাঁধতে হবে নাকি ঝুলিয়ে রাখতে হবে এটা নিয়ে মাশাআল্লাহ অনেক মারামারি আছে। বর্তমান যুগের খুব নাম করা আলেম, আমাদের উস্তাদ, শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায, তিনি বলেছেন হাতদুটো বুকে বা পেটের উপর বেঁধে রাখা সুন্নাত। এর বিপরীতে মুহাম্মদ নাসিরুদ্দীন আলবানি বলেছেন, হাত বাঁধা বিদআত, নাজায়েয, হারাম। ঝুলিয়ে রাখতে হবে। এখন আমাদের দেশের হাদীসপন্থী মানুষ, যারা নিজেদেরকে হাদীসঅলা বলেন, তারা আলবানি আর ইবনে বাযের গোলমাল দেখে কিছু বলে না। দুজনই আলেম তাই কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আবু হানীফা আর শাফিয়ির গোলমাল দেখলে বলে, ওরা আলেম না। ওরা অন্যায় করেছে। আমরা ভালো। বিষয়টা হল, আলেমরা, ইমামরা, ফকীহরা ইখতিলাফ করতে পারেন। আহমাদ বিন হাম্বল বলেছেন, হাত বাঁধা ভালো, ঝুলিয়ে রাখলে সমস্যা নেই। হানাফি মাযহাবের ফকীহরা বলেছেন, যে নামাযে আমরা শুধু রব্বানা লাকাল হামদ’ না বলে আরো লম্বা দুআ করি, নফল নামায, তাহাজ্জুদ নামায, কিয়ামুল লাইল এক্ষেত্রে বাধা সুন্নাত। তাদের মূলনীতি হল, যে দাঁড়ানোতে সুন্নাত জিকির আছে, সেই দাঁড়ানোতে হাত বাঁধতে হবে। আর যে দাড়ানোতে কোনো জিকির নেই, বাঁধবে না। কাজেই দাড়ানো যদি দীর্ঘ হয় তাহলে হাত বাঁধাটাই হানাফি ফিকহের কথা। আর বিস্তারিত আমার হাত বাঁধা বিষয়ক ছোট বইটাতে দলিল সহকারে পাবেন।

৩৯৯
প্রশ্ন-৪০৩: যাকাত ফিতার টাকা আপনজনকে না বলে দিলে জায়েয হবে কি না?
উত্তর: আপনি যদি নিশ্চিত হন, ওই আত্মীয় যাকাত পাওয়ার যোগ্য, আপনি তাকে না বলে যাকাতের টাকা দেবেন, কোনো সমস্যা নেই। আপনার নিয়ত থাকবে আপনি যাকাত দিচ্ছেন। আর যদি সন্দেহ থাকে, দেয়ার আগে বলতে হবে, আমি যাকাত দেব, তোমরা যাকাতের হকদার কি না, শুনে নিতে হবে।

৪০০
প্রশ্ন-৪০৪: এক ব্যক্তিকে চল্লিশ হাজার বা তার থেকে বেশি টাকা একবারে যাকাত দেয়া জায়েয কি না?
উত্তর: একই ব্যক্তিকে একবারে নিসাবের থেকে বেশি দেয়ার ব্যাপারে হানাফি ফকীহরা অনেকে আপত্তি করেন। তবে সহীহ কথা হল, একজনের অনেক টাকা প্রয়োজন, চিকিত্সা করাবে অথবা মেয়ের বিয়ে দেবে কিংবা প্রচুর ঋণী হয়ে গেছে, তাকে আপনি একবারে দিতে পারবেন।

৪০১
প্রশ্ন-৪০৫: কোনো অমুসলিম বা কোনো প্রাণি মারা গেলে ‘ইন্না লিল্লাহ’ পড়া যাবে কি।
উত্তর: প্রাণি মারা যাওয়া দুই রকমের। যেমন আপনার একটা প্রাণি মারা গেছে। আপনি কষ্ট পেয়েছেন। অর্থনৈতিক বিপদে পড়েছেন। সেক্ষেত্রে পড়বেন। ইন্না লিল্লাহ পড়তে হয় বিপদে। আল্লাহ, তুমি বিপদ দিয়েছ, তোমার কাছেই আমরা চলে যাব। আপনার গরু মারা গেছে, পঞ্চাশ হাজার টাকা লস হয়েছে, সাইকেল ভেঙে গেছে, সাইকেল কিন্তু প্রাণি না, তাও আপনি ইন্না লিল্লাহ পড়তে পারেন। কারণ, এটা আপনার বিপদ। আপনার বেদনায় আপনি আল্লাহর কাছে সারেন্ডার করলেন। আর কোনো অমুসলিম মারা গেলে ঈমানি চেতনায় আমরা ব্যথা পাই না। তার মতো সে চলে গেছে। এ জন্য অমুসলিমের মৃত্যুতে ইন্না লিল্লাহ পড়ার কোনো বিধান নেই।

৪০২
প্রশ্ন-৪০৬: ফরয নামায পড়ে বসে থাকা, বিলম্ব করা মাকরুহ?
আপনি এক আলোচনায় বলেছিলেন, যে ফরয নামাযের পরে সুন্নাত নামায আছে, সেই ফরয নামায পড়ে বসে থাকা বিলম্ব করা মাকরুহ। অথচ হাদীসে জানা যায়, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ফরয নামাযের বিভিন্ন দুআ পড়তেন। তাহলে তো রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নামায মাকরুহ হয়ে গেল।

উত্তর: যারা হানাফি মাযহাবের চর্চা করেন, তাদের জন্য বলছি, যে নামাযের পরে সুন্নাত আছে সেই নামাযের পর 'আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম' এই পরিমাণ বসা ছাড়া এর থেকে বেশি বসা মাকরুহ। এ জন্য হানাফি মাযহাবের ফকীহগণ বলেন, যত প্রকার তাসবীহ আছে, সব সুন্নাতের পর পড়তে হয়। আর হানফি মাযহাবের মূল কিতাবে বোঝা যায়, ইমাম নামাযের জায়গায় থাকলে মাকরুহ হবে। ইমামকে সরতেই হবে। মুসল্লিরা যদি দু’পাঁচ মিনিট তাসবীহ পড়ে তাহলে সমস্যা নেই। আর হাম্বলিসহ অন্যান্য মাযহাবে বলা হয়, সকল নামাযে তাসবীহ তাহলীল করে সুন্নাত পড়বে কোনো সমস্যা নেই। তারা বলেন, 'আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম’- এই পরিমাণ বসার পর ইমামের ঘুরে বসাটা জরুরি। এরপরে সোজা বসে থাকলে বিদআত হবে। এ ব্যাপারে অবশ্য সব মাযহাবই একমত। আর বাকি বিষয়গুলো আমার রাহে বেলায়াতে’ দলিলসহ পাবেন। মুনাজাত ও নামায বইতেও আছে।

৪০৩
প্রশ্ন-৪০৭: এতেকাফ করে ঈদের দিন বাড়ি গিয়ে পরিবারের সাথে ঈদ করতে পারছে না পারলে এতেকাফ করা কতটা জরুরি?
এক ব্যক্তি এতেকাফ করে ঈদের দিন বাড়ি গিয়ে পরিবারের সাথে ঈদ করতে পারছে না। এমন এতেকাফ করা কতটা জরুরি?

উত্তর: এতেকাফ করা কখনোই জরুরি না। এতেকাফ সুন্নাত আমল। করলে খুবই ভালো না করলে গোনাহ নেই। কাজেই এতেকাফের কারণে ঈদ করতে পারে না এ রকম মানুষ খুবই কম। আজ নতুন শুনলাম এমন কথা। যারাই এতেকাফ করেন, হিসাব রাখেন এতেকাফ করে ঈদের রাতে বাড়ি চলে যাবে। কেউ নিজের শহরে করে। কেউ একটু দূরে কোনো আলেমের মসজিদে করে। এবং যারা দূরে করে তারা বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করে রাখে। কাজেই এতেকাফের কারণে ঈদ করতে পারছে না। এমন কথা আজই প্রথম শুনলাম। এমন হলে তিনি এতেকাফ না করতে পারেন। এতেকাফ তো জরুরি না। নিজের গ্রামে গিয়ে করবেন যদি সুযোগ থাকে।

৪০৪
প্রশ্ন-৪০৮: সূরা তারাবীহ বিশ রাকআত আর খতম তারাবীহ বারো রাকআত কি সমান?
উত্তর: আপনাদের প্রতি অনুরোধ হল, আমরা মনের বিদআত দূর করি। বিশ রাকআত তারাবীহ এটা সাহাবিদের সুন্নাত। প্রমাণিত। আবার রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আট রাকআত পড়েছেন, সাহাবিরা আট রাকআত পড়েছেন, উমারের যামানায় আট রাকআত পড়েছেন- এটা সহীহ সুন্নাত। এখানে বিদআতটা হল দ্বিতীয়টাকে অস্বীকার করা। আর আরেকটা বিদআত হল, সাহাবিরা বিশ রাকআত পড়েছেন ছয় ঘণ্টা ধরে আর আমরা আধা ঘণ্টায় বিশ রাকআত পড়ে দাবি করছি আমরা সাহাবির দলে আছি। এ জন্য কেউ যদি আট রাকআত, বারো রাকআত পড়েন, দীর্ঘ সময় নিয়ে সুন্দর করে পড়েন, তাহলে একটা রেওয়ায়াতের সুন্নাত আদায় হল। আর একটা ব্যাপার খেয়াল করবেন। বিশ রাকআত কিন্তু শুধু হানাফি মাযহাবে না, হানাফি, শাফিয়ি, মালিকি, হাম্বলি- সব মাযহাবে বিশ রাকআত তারাবীহকে সুন্নাত বলা হয়েছে। আমাদের হানাফি মাযহাবের খুব নাম করা ফকীহ, ফাতহুল কাদীরের লেখক, ইবনুল হুমাম, তিনি বলেছেন, আট রাকআত সুন্নাতে মুআক্কাহ, বাকি বারো রাকআত সুন্নাতে গাইরে মুআক্কাদাহ। কাজেই আট রাকআতই যদি কেউ দীর্ঘ সময় নিয়ে পড়ে, আলহামদু লিল্লাহ।

৪০৫
প্রশ্ন-৪০৯: অনেক দ্রলোক মসজিদে জায়নামায বিছিয়ে জায়গা ঠিক করে রাখেন। এটা কতটুকু সঠিক?
উত্তর: মসজিদে জায়গা দখল করতে হয় না। এটা তো আল্লাহর ঘর। তবে কেউ যদি আগে এসে জায়নামায বিছিয়ে ওযু করতে যায়, এটা ঠিক আছে। এটা তার হক। আর এসে জায়নামায বিছানো ঠিক না। অনেক সময় হয় কি, যেমন জেলা প্রশাসক নামাযে আসবেন, এমপি সাহেব নামাযে আসবেন, তো তার জন্য ফাঁকা না রেখে তার নিজস্ব কোনো লোক বসিয়ে দিতে হয়। তিনি আসলে সে উঠে যাবে। যাতে সাধারণ কোনো মুসল্লিকে স্থানচ্যুত না করা হয়। মসজিদ আল্লাহর ঘর। এখানে সবাই সমান। এ জন্য আগে থেকে মসজিদে কারো জন্য জায়গা ঠিক করে রাখা এটা উচিত না।

৪০৬
প্রশ্ন-৪১০: কবরে মানুষের কাছে ফেরেশতারা চেহারা নিয়ে আসবে। তারা কি মানুষের নাকি কোনো পশু পাখির চেহারা নিয়ে আসবে?
কবরে মানুষের কাছে ফেরেশতারা আসবে। ভালো মানুষের কাছে ভালো চেহারা নিয়ে আসবে। খারাপ মানুষের কাছে খারাপ চেহারা নিয়ে অসবে। প্রশ্ন হল তারা কি মানুষের চেহারা নিয়ে আসবে নাকি কোনো পশু পাখির চেহারায় আসবে?

উত্তর: আখিরাত বা গায়েবি জগতের কথা যেটুকু আছে ওটুকুই মানতে হয়। তবে ফেরেশতারা সাধারণত মানুষের চেহারা নিয়ে আসে। কাজেই আমরা ধরে নিই, মানুষের চেহারায় আসবেন। এটাই হাদীসের আলোকে বোঝা যায়। আক্ষরিকভাবে হাদীসে কিছু লেখা নেই।

৪০৭
প্রশ্ন-৪১১: শাইখ আনোয়ার আওলাকির জিহাদের পুনর্জাগরণকে খারাপ চোখে দেখি কেন?
জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের খতীব শাইখ আনোয়ার আওলাকি রচিত ‘আল্লাহ আমাদের বিজয়ের জন্য প্রস্তুত করেছেন’ নামক বইতে তিনি জিহাদের পুনর্জাগরণকে মুসলিমদের বিজয়ের পূর্বাভাস বলে উল্লেখ করেছেন। যার পক্ষে অনেক যুক্তি উপস্থিত করেছেন। প্রশ্ন হল, তাহলে কেন আমরা জিহাদের এই পুনর্জাগরণকে খারাপ চোখে দেখি?

উত্তর: শাইখ আনোয়ার আওলাকি উনি আলেম ছিলেন না। যতটুকু জানি, উনি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। আমেরিকার ভালো খতীব ছিলেন। আমেরিকান সরকার অন্যায়ভাবে তাকে জেলে দেয়। জেলে থেকে তিনি আল কায়দা হয়ে যান। এরপরে উনি ইয়ামানে চলে আসেন। সেখানেই তিনি নিহত হন। আল্লাহ তার শাহাদাত নসিব করেন। তিনি ভালো মানুষ ছিলেন। কিন্তু জেলের আগের আওলাকি আর পরের আওলাকির ভেতর আকাশ পাতাল তফাত। আগে বলতেন অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা যাবে না। যেমন ফিলিস্তিনের ইহুদিদের কারণে আমেরিকার ইহুদিদের মারা যাবে না। কিন্তু তিনি জেল থেকে বেরিয়ে বলছেন, আমেরিকান যেখানে আছে- ধরো, মারো। তো জিহাদের পুনর্জাগরণকে তো কেউ খারাপ চোখে দেখছে। জিহাদ আল্লাহর একটা ফরয ইবাদত। কথা হল, জিহাদ বলতে তুমি কী বোঝাচ্ছা? জিহাদটা কী জিনিস? আমি তো জিহাদ বুঝলাম না। জিহাদ অবশ্যই করতে হবে কিন্তু আনোয়ার আওলাকি যে জিহাদ করেছেন বা যে জিহাদ করতে চাচ্ছেন, এ তো জিহাদ না। জিহাদের জন্য একটা রাষ্ট্র লাগবে। সেই রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানের নেতৃত্বে জিহাদের ঘোষণা হবে। অন্যান্য রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জিহাদ চলবে। এটা হল জিহাদ। রাষ্ট্র ছাড়া জিহাদ হয় না। আফগানিস্তানের জিহাদকে আমরা শরীআহ সম্মত জিহাদ মেনেছি। কিন্তু ফলাফল আমরা পাই নি। শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভি রাহ.এর চিন্তা ও চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সাইয়িদ আহমাদ বেরেলভি রহ, জিহাদ করেছেন। শরীআতসম্মত জিহাদ। তিনি একটা রাষ্ট্র থেকে বেরিয়ে গেছেন। যেটাকে বলে দারুল হারব। তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার রাষ্ট্রের আয়তন এক বিঘাত হোক। তারপর তিনি জিহাদের ঘোষণা দিয়েছেন। জিহাদ করেছেন। কিন্তু সেই জিহাদের বড় রকমের সুফল আমরা পাই নি। তোমরা মনে কর জিহাদ হলে সব হয়ে যাবে, জিহাদ হলেই সব মিটে যায় না। তুমি কী জিহাদ করছ, কার বিরুদ্ধে করছ, কার নেতৃত্বে করছ, এটা ঠিক করতে হবে। আমরা মনে করি, সব অন্যায় মিটিয়ে আমরা পৃথিবী ভালো করে ফেলব। আরে দুনিয়া আল্লাহ বানিয়েছেন ন্যায় আর অন্যায় দিয়ে। এ জন্য শরীআতসম্মত জিহাদ অবশ্যই থাকবে। সেই জিহাদে শাহাদাতের তামান্না মুমিনের থাকবে। কিন্তু সমস্যা হল, জিহাদের সাথে বান্দার হক জড়িত। একটা মানুষের রক্তপাত করা দুনিয়ার সবচে’ নিকৃষ্ট হারাম। ষোলোআনা বৈধ হলেই তুমি জিহাদ করতে পার। আন্দাজে কারো ক্ষতি করা, সম্পদ নষ্ট করা ভয়ঙ্করতম হারাম। লক্ষ রাখতে হবে, একটা ইবাদতের নামে আমি যেন হারামে নিপতিত না হই। আমার জানা মতে বর্তমানে শরীআতসম্মত জিহাদ হচ্ছে ফিলিস্তিনে। অধিকাংশ ফকীহ আলেম সিরিয়ার জিহাদকে শরীআতসম্মত জিহাদ বলছেন। যেহেতু তারা সরকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। সরকারের নেতৃত্বে জিহাদ করছেন। সেখানে আরব দেশের অনেক মুজাহিদ যাচ্ছেন। তোমার শখ হলে তুমি চলে যেতে পার। এটা ইসলামের কোনো সমাধান না। প্রত্যেক মুসলিমের দায়িত্ব নিজ নিজ এলাকায় কাজ করা। তোমার দায়িত্ব হল, নিজে দীন শেখো। মানুষকে দাওয়াত দিয়ে আল্লাহর পথে নিয়ে এসো। আমাদের সবসময় একই আক্ষেপ- সমাজ ভালো না হলে কিছু ভালো হবে না। কদিন আগে এক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রোগ্রামে গিয়েছিলাম। আমার অনেক সিনিয়র এক স্যার বলছেন, এই রোযায় তাকওয়া হবে না। যতক্ষণ না ইসলামি রাষ্ট্র-সমাজ হবে, ততক্ষণ রোযার মাধ্যমে তাকওয়া হবে না। অবশ্যই আমরা ইসলামি রাষ্ট্র সমাজ চাই। যে চায় না সে তো মুমিনই না। তাহলে বক্তব্য এই দাঁড়াল যে, ইসলামি রাষ্ট্র-সমাজ না হওয়া পর্যন্ত নামায রোযার দরকার নেই। আমাদের সমাজের শতকরা পাঁচজন মানুষ ব্যক্তি জীবনে পুরো মুসলিম। নামায পড়ি আমরা শতকরা পনেরো বিশজন। এই পনেরো বিশজনের ভেতর অনেকেই সুদ খায়, ঘুষ খায়, পর্দা করে না। তাহলে ব্যক্তি জীবনে আমরা ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি এমন মুসলিম পাঁচজন। এখন এই পাঁচজনও নামায রোযা বাদ দিই। যেহেতু ইসলামি সমাজ-রাষ্ট্র নেই, তাহলে নামায রোযা করার দরকার কী! তো ইসলাম কায়েম তো করা লাগবে, দাওয়াত তো দেব না, এখন মারধোর করে, অথবা অন্য কোনোভাবে কিংবা নিজেরাও শেষ হয়ে যাই। ফলে এই পাঁচজনও শেষ হয়ে যাই। তাহলে লাভটা হল কী! সবসময় মনে রাখতে হবে সমাজ একটা নৌকার মতো। আমি কয়দিন আছি, এক সময় চলে যাব, কিন্তু সমাজ চলতে থাকবে। আমার ফরয হল ব্যক্তি জীবনে দীন প্রতিষ্ঠা করা। অন্যদেরকে দাওয়াত দেয়া। আল্লাহ যদি দাওয়াতে সফলতা দেন, জিহাদের পরিবেশ আসে, তাহলে ইনশাআল্লাহ জিহাদ হবে। কত নবী চলে গেছেন, জিহাদ তো দূরের কথা, উম্মতই পান নি। এ জন্য জিহাদ আল্লাহর দীনের বড় ইবাদত এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু জিহাদের শর্ত পূরণ হতে হবে।

৪০৮
প্রশ্ন-৪১২: ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ির দুটো পর্যায় রয়েছে। যেটা আল্লাহ বলেন নি সেটা দীনের অংশ বানিয়ে নেয়া। মনগড়া দীন বানানো। যেমন আমাদের সমাজে আছে- কেউ মরে গেলে থানা করা। অথচ খানার সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্কই নেই। অমুক বাড়ি বানালো, মীলাদ দিল না, ওর সাথে মিশবি না। এ হল এক বাড়াবাড়ি বানোয়াট ধর্ম। আরেক বাড়াবাড়ি হল, ধর্ম পালনে অথবা ধর্মের দাওয়াতে বাড়াবাড়ি। অর্থাৎ আমি ধর্ম পালন করব, ছোটখাটো একটা গোনাও করব না। সারারাত তাহাজ্জুদ পড়ব। এই যে জযবা, এটা ঠিক না। রাসূলুল্লাহর (ﷺ) আপত্তি করতেন। তিনি বলতেন, তোমরা মধ্যমপন্থী ইবাদত করে যাও। একবারে ছেড়ে দিও না আবার সব করে ফেলবে এমনও না। অনেক সময় বান্দার জযবা আসে। আমি একটাও গোনাহ করব না, বিশাল পাগড়ি পরব, সারারাত তাহাজ্জুদ পড়ব, নফল রোযা একটাও বাদ দেব না, যত জিকির আছে সব করব- এটা আসলে মানবীয় গুণের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এটা গেল এক বাড়াবাড়ি। আরেক রকম বাড়াবাড়ি আছে। বুখারি শরীফে এসেছে, সেটা হল মানুষের ভালো করার বাড়াবাড়ি। সেটা হল জিহাদ। খারেজি সম্প্রদায় তারা এইদুটো বাড়াবাড়ি একসাথে করত। তারা আলি রা. কে কাফের বলত। কারণ, আলি রা, কুরআনের আইন মানে নি, মানুষের আইন মেনেছে। তাই সে কাফের। তাঁর পক্ষে যত লোক আছে সব কাফের। এদের বিরুদ্ধে জিহাদ করো আর কতল করো। আর ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করো। এদের খুব আবেগ ছিল। রাতদিন ইবাদত করত। সারাদিন নফল রোযা রাখত, সারারাত তাহাজ্জুদ পড়ত। এরা একদিন সাহাবি জুনদুব ইবন আব্দুল্লাহ রা.কে বলল, আমাদের কিছু নসিহত করুন। জুনদুন রা. বললেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তোমরা দীনকে কঠিন বানিয়ে নিয়ো না। নিজের ব্যক্তি জীবনেও না, মানুষকে দাওয়াত দেয়ার ক্ষেত্রেও না। জোর করেই মানুষকে মুসলিম বানিয়ে ফেলবে, ব্যাপার এমন না। দাওয়াত দাও, ডাকো, বলো। জোরের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্রকে জোর করতে বললা। না হলে রাষ্ট্রের কাছে দাওয়াত দাও। না শুনলে রাষ্ট্র গোনাহগার হবে। এই হল দীন নিয়ে বাড়াবাড়ি। একটা হল বানোয়াট দীন, দীন পালনে রাসূলুল্লাহর (ﷺ) এর নীতির বাইরে চলে যাওয়া। আরেকটা হল, দীনের পথে দাওয়াত দেয়ার ক্ষেত্রে মারামারি হানাহানি করা।

৪০৯
প্রশ্ন-৪১৩: কারো নাম বিকৃত করলে সে যদি মনে কষ্ট না পায় তাহলে কি গোনাহ হবে?
উত্তর: বিকৃত দুই ধরনের। এমনিতে বিকৃত করাটাই ঠিক না। যেমন, করিম্যা, সেলিম্যা! এগুলো অনুচিত। বদ আখলাক। যাকে এভাবে ডাকা হয় সে যদি কষ্ট পায় অবশ্যই গোনাহ হবে। আরেক ধরনের বিকৃতি আছে। যেমন আব্দুর রহীমকে রহীম ডাকা। এর দ্বারা আল্লাহর সাথে বেয়াদবি হয়। সে তো রহীম না। আব্দুর রহীম (রহীমের বান্দা)। এগুলো অনেক সময় ঈমানের সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে যায়। যেমন আব্দুর রহমানকে রহমান ডাকা। আব্দুল গাফফারকে গাফফার ডাকা। এগুলো খুবই অনুচিত।

৪১০
প্রশ্ন-৪১৪: সেভো বা হাতাঅলা গেঞ্জি ব্যবহারের সুন্নাত তরীকা কী?
উত্তর: আসলে গেঞ্জি তো সুন্নাত না। আপনারা জানেন, আমি একটু বেশি কথা বলি। আমাদের বড় জ্বালা আছে। আমরা পোশাকের সুন্নাত খুঁজি, জিকিরের সুন্নাত খুঁজি না। মীলাদ সুন্নাত লাগবে না, জিকির সুন্নাত লাগবে না, নামায সুন্নাত লাগবে না। তবে পোশাক-আশাক, চুল-টুপি-দাড়ি হতে হবে নবীর তরীকায়। অর্থাৎ নবীজি আমাদের চুল দাড়ি আর টুপি পরানো শেখাতে এসেছিলেন। আর ইবাদত বন্দেগি হুজুরদের উপর ছেড়ে দিয়েছেন। যদি বলা হয়, নবীজি এভাবে জিকির করতে বলেছেন, আপনারা বলবেন, না, আমাদের হুজুর অন্যভাবে করতে বলেছেন। এটা বিদআতে হাসানা। আর পোশাকের ক্ষেত্রে নবীজির পাগড়ি কয় হাত লম্বা ছিল, এটা নিয়ে আমরা ব্যস্ত। পোশাকের সুন্নাত দেখিয়ে অনেক ভণ্ড শিরকে নিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের বুঝতে হবে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ইবাদতের দুটো দিক আছে। একটা ইবাদত আরেকটা মুআমালাত। ইবাদতের ক্ষেত্রে সুন্নাতের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। সুন্নাতের বাইরে যদি ইবাদত করা হয় এতে গোনাহ হবে, বিদআত হবে, নবীজির সুন্নাতকে অবহেলা করা হবে। কারণ, সোয়াবের উৎস হল সুন্নাত। আর ইবাদত করা হয় সোয়াবের জন্য। সুন্নাতের বাইরে কোনো সোয়াব নেই। আর মুআমালাতের ক্ষেত্রে সবসময় সোয়াব উদ্দেশ্য না। যেমন আমরা ভাত খাই। ভাত খাওয়া সুন্নাত না। আমরা ভাত সোয়াবের জন্য খাই না। খেজুর খেয়ে থাকতে পারি না তাই পেটের দায়ে খাই। এ জন্য মুআমালাতের ক্ষেত্রে সুন্নাতের বাইরে যাওয়া যাবে, যদি হারাম না হয়। গেঞ্জি বা সেভো গেঞ্জি ভালো পোশাক না। কারণ, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, নামাযের সময় কাঁধ। ঢাকতে হবে। এজন্য হাতাঅলা গেঞ্জি পরা উচিত। তবে সেন্ডো গেঞ্জি নাজাযেজ নয়। সেন্ডো গেঞ্জি পরে নামায পড়লে গোনাহ হবে। আর গেঞ্জি পরতে পারেন, খালি গায়ে থাকতে পারেন, জায়েয আছে, দোষ নেই। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর যুগে গেঞ্জি ছিল না, তবে ছোট কামিস ছিল।

৪১১
প্রশ্ন-৪১৫: ফিলিস্তিনিদের মেরে ফেলছে ইসরাইলিরা। তাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে ফেলছে। সেখানে জিহাদ করা বৈধ কি না?
উত্তর: ইসারইলের জিহাদ এমনিতে বৈধ। কারণ, তারা অবৈধভাবে রাষ্ট্র দখল করেছে। ফিলিস্তিনিদের জানমালের নিরাপত্তার জন্য জিহাদ বৈধ এবং তাদের বিকল্প সরকার আছে।

৪১২
প্রশ্ন-৪১৬: দোকনটি উদ্বোধন করতে সুন্নাতের আলোকে করণীয় কী?
আমি একটি দোকান তৈরি করেছি। দোকনটি উদ্বোধন করতে চাচ্ছি। এক্ষেত্রে সুন্নাতের আলোকে করণীয় কী? কোনো আলেমকে ডেকে এনে নামায পড়ানো বা লোকজন ডেকে মীলাদ দিলে কি বিদআত হবে?

উত্তর: আলহামদু লিল্লাহ! আপনার ভেতর সুন্নাতের চিন্তা এসেছে, এটা খুব বড় কথা। উদ্বোধনের জন্য কোনো অনুষ্ঠান সাহাবিরা করতেন এমন দেখা যায় না। উদ্বোধন বলতে আমি নিজে সুন্নাত মতো করব। নিজে দুআ করে দোকান শুরু করব। দান সাদকার মাধ্যমে শুরু করব এটাই সুন্নাত। তবে দোকান বা বাড়িতে কোনো আলেমকে ডেকে এনে বসানো, ওয়াজ নসিহত করানো, নামায পড়ানো এটা করা যেতে পারে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে সাহাবিরা দাওয়াত দিয়ে বাড়িতে নিয়ে যেতেন। অথবা নবীজি তাদের বাড়িতে গিয়ে দুই রাকআত নামায পড়ে দিতেন। কাজেই ভালো আলেমকে দোকানে নিয়ে যাওয়া, এটা করা যেতে পারে। তবে এটা উদ্বোধনের সাথে সম্পৃক্ত না। আমরা যে আনুষ্ঠানিকতা করি, এই রকম আনুষ্ঠানিকতা রাসূলের যুগ, সাহাবিদের যুগ এবং তাবেয়িদের যুগে ছিল বলে আমার জানা নেই।

৪১৩
প্রশ্ন-৪১৭: দাড়ি রাখার সঠিক বিধান কী? ছোট করে রাখলে সুন্নাত আদায় হবে কি না?
উত্তর: দাড়ি রাখা ওয়াজিব, দাড়ি রাখা ফরয। দাড়ি কাটা হারাম। ছোট রাখলে সুন্নাত হবে না। রাসূলুল্লাহর (ﷺ) বড় রেখেছেন, বড় রাখতে বলেছেন। তবে যদি কেউ ছোট রাখে, অন্তত চেঁছে ফেলার হারাম গোনাহ থেকে সে বেঁচে গিয়েছে। সুন্নাত তার পূর্ণ হয় নি। তবে কিছুটা সে আদায় করেছে। এমন লোকদের আমরা বলি, ওরে ছোট রাখা আর চেঁছে ফেলা এক। এট বলা ঠিক না। তার মানে একজন কাছা মেরেছে। আপনি বললেন, আরে কাছা মারা আর ন্যাংটা হওয়া একই। কাজেই কাপড় খুলে ফেলো। এটা কোনো যুক্তির কথা হল না। কাছা মারা আর ন্যাংটা হওয়া এক না। আমাদের অনেক সময় পরিবেশ দেখতে হয়। যেমন আমার দাড়ি, পেশাদার দাড়ি। দাড়ি না রাখলে আমার ইমামতি থাকবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি অবশ্য থাকবে। কিন্তু একটা যুবক ছেলে, এমন পরিবেশে থাকে, সেখানে সে বড় দাড়ি রাখতে পারছে। ছোট হলেও তো সে রেখেছে। এটা স্বীকার করতে হবে। সে একধাপ এগিয়েছে। তবে ছোট দাড়িতে সুন্নাত পূর্ণ আদায় হয় না।

৪১৪
প্রশ্ন-৪১৮: সাহাবিরা কি কখনো সৌদি আরবের সাথে মিলিয়ে ঈদ করেছে?
উত্তর: সৌদি আরবই তো তখন ছিল না। সাহাবিদের সময় যার যার দেশে তার তার মতো ঈদ হত। সব দেশ মিলিয়ে তারা ঈদ করেন নি। মুসলিম শরীফের হাদীসে এসেছে।

৪১৫
প্রশ্ন-৪১৯: কুফরি সংবিধানের উপর আনুগত্য করলে মুশরিক হয়ে যাবে?
বাংলাদেশের সংবিধান কুফরি মতের উপর প্রতিষ্ঠিত। আর আপনি এই কুফরি সংবিধানের উপর আনুগত্য করতে বলেন। আপনি কি মুসলিমদেরকে মুশরিক বানাতে চান?

উত্তর: আমরা সংবিধানের আনুগত্য করি না। যদি এই সংবিধানের আনুগত্য করলে কুফরি হয় তাহলে সারা বিশ্বের সব মুসলিম কাফের। ইংল্যান্ডের মুসলিম কাফের, ইন্ডিয়ার মুসলিম কাফের, আমেরিকার মুসলিম কাফের, পাকিস্তানের মুসলিম কাফের সবই তো কাফের হয়ে যাবে। তাহলে তো দুনিয়ায় আর কোনো মুসলিম নেই। দ্বিতীয় ব্যাপার হল মুসলিম যখন কোনো কুফরি কথা বলে, যতক্ষণ সম্ভব এটার ভালো ব্যাখ্যা দিতে হয়। গণতন্ত্র যে কুফরি এটা আমার জানা নেই। গনতন্ত্রে কুফরির ব্যবহার আছে। জায়েয ব্যবহার আছে। সমাজতন্ত্র সরাসরি কুফরি আমার জানা নেই। কুফরি আছে, না-কুফরি আছে। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ মূলত কুফরি। সেকুলারিজম কুফরি। কারণ, সেকুলারিজম মানে শুধু ধর্মনিরপেক্ষতা না, বরং সেকুলারিজম মানে ধর্মহীনতা। রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ধর্মমুক্ত করা। এটা কুফরি। যদিও কেউ কেউ এর ইসলামি ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেন। বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভেতর কুফরি আছে আমার জানা নেই। বাঙালি জাতীয়তাবাদ কুফরি হলে তো আরবরা সব কাফের। তারা আরব জাতি হিসেবে গর্ব করে। মূল বিষয় হল, এগুলোকে কেউ যদি ইসলামের উপরে স্থান দেয়, কুফরি হবে। আর ইসলামের নিচে রাখলে কুফরি হবে না। আর আমরা কোনো মতবাদের আনুগত্য করতে বলি না। যে সরকার যে দেশে থাকে তার আনুগত্য করতে হয়। আপনার যদি আনুগত্য করতে ইচ্ছা না হয়, করেন না। ইন্ডিয়া তো আরো খারাপ। সেখানকার মুসলিমরা সব কাফের!? তারা সেকুলারিজম চায়। তারা সেকুলারিজমের জন্য পাগল। ইংল্যান্ডের মুসলিমরা সেকুলারিজমের জন্য পাগল।

৪১৬
প্রশ্ন-৪২০: ঈমান আনার পর প্রথম শর্ত হল মুসলিম ভূমির প্রতিরক্ষা। আমরা এই দায়িত্ব কতটুকু পালন করছি?
ড. আব্দুল্লাহ আযযাম রহ. বলেছেন, ঈমান আনার পর প্রথম শর্ত হল মুসলিম ভূমির প্রতিরক্ষা। আমরা এই দায়িত্ব কতটুকু পালন করছি?

উত্তর: ড. আব্দুল্লাহ আযযাম রাহ. আমার জানা মতে পয়গাম্বর ছিলেন না। তোমরা যদি তাকে কেউ পয়গাম্বর মান, সেটা ভিন্ন কথা। আমি মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পরে কাউকে পয়গাম্বর মানি না। রাসূলুল্লাহর (ﷺ) এবং তাঁর সাহাবিরা কখনোই বলেন নি, ঈমান আনার পর প্রথম শর্ত মুসলিম ভূমির নিরাপত্তা রক্ষা করা। কক্ষনো বলেন নি। কুরআনেও নেই, হাদীসেও নেই। সাহাবিরাও বলেন নি। ড, আব্দুল্লাহ আযযাম রাহ, এমন একটা দেশে জন্মেছিলেন, সে দেশে লাশের ভেতর থাকতে হয়। অস্ত্রের ভেতর তার জন্ম। সে জন্য তার অমন মানসিকতা গড়ে উঠেছে। তিনি তার মতো চিন্তা করেছেন। আল্লাহ তাকে শহীদ হিসেবে কবুল করেন। আমরা তার জন্য দুআ করি। তবে তিনি পয়গাম্বর ছিলেন না।

৪১৭
প্রশ্ন-৪২১: শাসক যদি কুফরি আইন দিয়ে দেশ চালায় স্বশস্ত্র জিহাদের মাধ্যমে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে ন্যায়পরায়ণ শাসক বসাতে হবে?
ইবনে কাসীরসহ বেশকিছু কিতাবে উল্লেখ আছে যে, শাসক যদি কুফরি আইন দিয়ে দেশ চালায় স্বশস্ত্র জিহাদের মাধ্যমে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে ন্যায়পরায়ণ শাসক বসাতে হবে। আমাদের শাসক কুফরি আইন দিয়ে দেশ চালাচ্ছে। তাহলে এই শাসকের বিরুদ্ধে কেন আমরা সশস্ত্র জিহাদ করে ক্ষমতাচ্যুত করছি না?

উত্তর: দুটোর একটাও ঠিক না। আমাদের শাসক কুফরি আইন দিয়ে দেশ চালাচ্ছে, এটাও ঠিক না। তোমরা আলেমদের সাথে বসো, দেখো, সরকার কোন জায়গায় স্পষ্টভাবে কুরআন হাদীস অস্বীকার করেছে! দুই নাম্বার কথা হল, কুফরি দিয়ে রাষ্ট্র চালালেই স্বশস্ত্র জিহাদ বৈধ হবে এটাও ঠিক না। ইবনে কাসীর কী বলেছেন এটা নিয়ে আমার কথা না। আমার দেখার বিষয় হল, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল কী বলেছেন! যখন শাসক সুস্পষ্ট কুফরিতে লিপ্ত হয়, কুরআন মানে না, কুরআন পড়তে বাধা দেয়, যে কুফরির ব্যাপারে আর কোনো ব্যাখ্যা থাকে না, তখন তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ বৈধ। কিন্তু বৈধ হলেই করা যায় না। ভারতের শাসকের বিরুদ্ধে সেখানকার মুসলিমদের বিদ্রোহ। করা বৈধ। তাই বলে তারা কি বিদ্রোহ করে সবাই মারা যাবে? আমেরিকা, ইরোপের বিরুদ্ধেও বিদ্রোহ করা বৈধ। বুঝতে হবে, বিদ্রোহ করা বৈধ হওয়া এক জিনিস আর কাজে নামা আরেক জিনিস। তুমি জিহাদ করো। কিন্তু জিহাদের ফলটা কী হবে? আরেকটা জিনিস বুঝবে। তুমি যে জিহাদ করতে চাচ্ছ, অস্ত্রগুলো কারা দেবে, বাবা? আমার জানা মতে অস্ত্র দেয় আমেরিকা। টাকা দেয় আমেরিকা। তুমি কি মনে কর, আমেরিকা ইসলামের স্বার্থে টাকা দেয়। যদি কোনো হুজুরের অস্ত্র বানানোর যোগ্যতা থাকে, আমাকে ধরব দিও। হুজুরের কাছ থেকে অস্ত্র নিয়ে কিছু করা যায় কি না দেখব। আবেগি হলে চলবে না, বাবারা! আগে দেখতে হবে জিহাদের বৈধতা। বৈধ হলেও করা যাবে কি না দেখতে হবে। এতে ইসলামের কতটুকু উপকার হয় দেখতে হবে।

৪১৮
প্রশ্ন-৪২২: খুরাসানের ভেতর থেকে কালো পতাকাধারী দল বের? হাদীস অনুযায়ী তাদের সাথে আমাদের শরিক হওয়া উচিত?
বেশ কিছু সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, খুরাসানের ভেতর থেকে কালো পতাকাধারী দল বের হবে। তাদের সাথে শামিল হতে আমাদের তাগিদ দেয়া হয়েছে। যা আফগান মুজাহিদদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাহলে হাদীস অনুযায়ী তাদের সাথে আমাদের শরিক হওয়া উচিত কি না?

উত্তর: এটাই তো জ্বালা। কালো পতাকা তো লাখলাখ দলের আছে। কালো পতাকার সাথে আরো ভালো কথা আছে। কালো পাকা হতে হবে, মাহদির হাতে বাইআত হবে, ওই দল মাহদির কাছে যাবে। এখন কালো পতাকার হাদীস দেখে বাংলাদেশে একদল কালো পতাকা বেরিয়ে গেল আর তুমি তাদের পিছনে দৌড় শুরু করলে, তাহলে তো মুশকিল। এরপরেও তোমার শখ হলে আফগান চলে যাও।

৪১৯
প্রশ্ন-৪২৩: মসজিদে প্রকাশ্য সাহায্য চাওয়া সম্পূর্ণ হারাম। বিষয়টা কতটুকু সহীহ?
এক মসজিদের ইমামের কাছে একজন অসহায় মানুষ অনুরোধ করেছিল, মুসল্লিরা যেন তাকে সাহায্য করেন, তিনি যেন মুসল্লিদের বলে দেন। কিন্তু সেই ইমাম সাথেসাথে মাইকে বললেন, এভাবে মসজিদে সাহায্য চাওয়া সম্পূর্ণ হারাম। বিষয়টা কতটুকু সহীহ?

উত্তর: মসজিদে সাহায্য চাওয়া হারাম এটা আমার জানা নেই। মসজিদে তো সাহায্য চাইতেই পারে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর যুগে অভাবী মানুষেরা আসত। বা এখনো মসজিদের কাছাকাছি দুস্থ মানুষেরা এসে দাঁড়ায়, সাহায্য চায়। ইমাম সাহেবের কাছে বলা, অনুরোধ করা এটাও ভালো কাজ। ওই ইমাম সাহেব করেন নি, সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমার জানা মতে মসজিদের ভেতরে ইমামকে কষ্টের কথা বলা, এটা নাজায়েয তো নয়-ই; বরং যুগ যুগ ধরে এটা মুসলিমদের সমাজে আছে। এবং ইমামদেরও উচিত সত্যিকারের অসহায় মানুষদেরকে সাহায্য করতে উদ্বুদ্ধ করা।

৪২০
প্রশ্ন-৪২৪: রমাযান মাসে মেয়েদের মাসিক শুরু হলে ওই দিনের রোযা কাযা করতে হবে কি না?
উত্তর: জি, যেদিন অসুস্থতা শুরু হয়েছে সেদিনসহ যে কয়দিন অসুস্থ থাকবে প্রত্যেক দিনের রোযা কাযা করতে হবে। অন্তত পরের বছরের রোযা আসার আগ দিয়েই কাগুলো আদায় করে ফেলতে হবে। যদি একজন মহিলা সুস্থ থাকেন, রোযা আছেন, ইফতারের দুমিনিট আগে অসুস্থ হন, তাও ওই দিনের রোযা কাযা করতে হবে। অসুস্থতা চলাকালীন রোযা রাখা যাবে না।

৪২১
প্রশ্ন-৪২৫: একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী বলেছেন, মেয়েদের হিজাব পরা চলবে না। এই ধরনের কথা কুফরির পর্যায়ে পড়ে কি না?
একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী বলেছেন, মেয়েদের হিজাব পরা চলবে না। হিজাব প্রগতির অন্তরায়। এই ধরনের কথা কুফরির পর্যায়ে পড়ে কি না?

উত্তর: হিজাব দ্বারা তিনি যদি পর্দা বোঝান, হিজাব প্রগতির অন্তরায় বলেন- অবশ্যই কুফরি কথা। যে ব্যক্তি এই কথা বলেছেন, যদি বলে থাকেন, তিনি এই কথার মাধ্যমে কুফরিতে লিপ্ত হয়েছেন। তবে তার না জানার ওযর থাকতে পারে। কথাটা কুফরি। আর যদি মুখ ঢাকার ব্যাপার হয়, তাহলে মুখ খোলার পক্ষে বিপক্ষে হাদীস আছে। হিজাব এটা আল্লাহর ফরয এবং এটা নারীর অন্তরায় নয়। মুশকিল হল, আমাদের রাজনীতিবিদদের ঘাড়ে এখন নাস্তিকতা চেপেছে। একদিকে তোমরা জিহাদ করবে, তো জিহাদ ঠেকানোর জন্য এই নাস্তিকদের চাপানো হয়েছে। পাঁচজন মুসলিম জিহাদ করে ইসলাম কায়েম করবে সে জন্য পাঁচানব্বই জন মুসলিম নাস্তিক চাপিয়েছে, মুজাহিদদের ঠেকাও আগে। দাওয়াতের কোনো খোঁজ নেই। কষ্ট করো, তালীম ছড়াও, দীনের পথে মানুষকে ডাকো।।

৪২২
প্রশ্ন-৪২৬: হাদীসের বইয়ে নামাযের যে নিয়তগুলো পাওয়া যায়, এগুলো কি সঠিক?
উত্তর: হাদীসের বইয়ে নামাযের নিয়ত পাওয়া যায় না। নিয়ত পাওয়া যায় নামায শিক্ষা বইয়ে। হাদীস বলতে নবীর কথা। বুখারি, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযি এসব হল হাদীসের বই। নামাযের যে নিয়তগুলো আছে, এগুলো সব বানোয়াট। এগুলো পরবর্তী যুগের হুজুররা বানিয়েছেন। আমাদের চার ইমাম এগুলো জানতেনই। এসব পুরাই ফালতু কাজ। এর পেছনে সময় নষ্ট করার কোনো মানেই হয় না। মনে মনে আমি জোহরের চার রাকআত ফরয নামায পড়ছি এটুকুই যথেষ্ট। যারা মুখে নিয়ত মুস্তাহাব বলেন, তারাও বলেন নি আরবিতে বলতে হবে। আপনি বাংলায় বলেন। আমি অমুক নামায পড়ছি। হয়ে গেল। আরবির বিশ পঁচিশটা নিয়ত মুখস্ত করে, কুরআনের সূরা, দুআ মুখস্ত করতে পারে না। এগুলোর পেছনে আপনার সময় নষ্ট করবেন না।

৪২৩
প্রশ্ন-৪২৭: পবিত্রতার জন্য গোলাপ জল ব্যবহার করা উচিত কি না?
উত্তর: নাজায়েয কিছু না। ভালো কিছুও না।

৪২৪
প্রশ্ন-৪২৮: মৃত ব্যক্তির সন্তানেরা যদি মৃতের উদ্দেশে দান বা কুরআন খতম করে, সোয়াব মৃতের আমলনামায় যোগ হয়?
মৃত ব্যক্তির সন্তানেরা যদি মৃতের উদ্দেশে দান বা কুরআন খতম করে, এর সোয়াব মৃতের আমলনামায় যোগ হয় কি না? আমরা তো শুনি যে মারা গেলে মানুষের আমল বন্ধ হয়ে যায়।

উত্তর: মারা যাওয়ার সাথে সাথে ওই ব্যক্তির আমল বন্ধ হয়ে যায়, যে মারা গেছে। কিন্তু তার উত্তরাধিকাররা যদি তিন প্রকার কাজ করে তাহলে তিনি কবরে সোয়াব পেতে পারেন। একটা হল দুআ- আল্লাহ, আমার আব্বার মাফ করে দাও। রাব্বিরহামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি সাগীরা। এই দুআ কবুল হলে সঙ্গে সঙ্গে তার আমলনামায় একটা সোয়াব যোগ হবে। আমরা মনে করি, দুআ মানে হুজুর ডেকে আনুষ্ঠানিক দুআ। বিষয় এমন না। আপনি মুখে দুআ করবেন, আরবি না পারলে বাংলায় করবেন আল্লাহর, আমার আব্বার মাফ করো, আমার আম্মার মাফ করো, আমার দাদার মাফ করো, আমার দাদির মাফ করো। দুআ কবুল হলেই তাদের। আমালনামায় সোয়াব লেখা হবে। আরেকটা হল দান। আপনি একটাকা, দুটাকা, দশটাকা দান করেন গরিবদেরকে, অথবা সদাকায়ে জারিয়া করেন, এক কাঠা দু কাঠা জমি অথবা কোনো দীনি প্রতিষ্ঠানের নির্মাণকাজে দান করেন। এবং হজ্জ উমরাহ। মৃত পিতামাতার পক্ষ থেকে হজ্জ উমরাহ করার বিধান আছে। তারা সোয়াব পাবেন। হাদীসের আলোকে বোঝা যায়, তাদের পক্ষ থেকে কুরবানিও করা যায়। তারা সোয়াব পাবেন। মৃতের উদ্দেশে কুরআন খতম কালিমা খতম করলে তিনি সোয়াব পাবেন এটা হাদীসে নেই। মানে বখশে দেয়ার নিয়তে পড়লে নেই। এমনিতে সন্তান যা আমল করবে তার সোয়াব বাবা-মা পাবেন। সন্তানের সকল আমলের সোয়াব আব্বা আম্মা পাবেন। কারণ, আব্বা আম্মার অসিলায় সন্তানের জন্ম এবং প্রতিপালন। কিন্তু আমরা স্পেশালি আব্বার জন্য কুরআন খতম করলাম, হাদীসে এরকম নেই। সুন্নাতে নেই। সাহাবি এবং তাবেয়িদের যুগে এমন ছিল না। আলেমনগণ বলেছেন, কুরআন খতম করলেও ইনশাআল্লাহ সোয়াব পাবেন।

৪২৫
প্রশ্ন-৪২৯: পিতার আগে পুত্রের মৃত্যু হলে পুত্রের সন্তান দাদার সম্পত্তির অংশ পায় কি? এই বিষয়ে ইসলাম কী বলে?
পিতার আগে পুত্রের মৃত্যু হলে পুত্রের সন্তান দাদার সম্পত্তির অংশ পায় কি ? বর্তমানে বাংলাদেশে আইয়ুব খানের যে আইন, সেই আইন মোতাবেক পিতার মৃত্যুর পর দাদার সম্পত্তিতে নাতি অংশ পায়। এই বিষয়ে ইসলাম কী বলে?

উত্তর: তোমরা যে কুফরি আইন কুফরি আইন বল, বাংলাদেশে একমাত্র কুফরি আইন জারি করেছিল আইয়ুব খান। তোমরা তো গণতন্ত্রের বিরোধী, যখনই স্বৈরাচার থাকে, অর্থাৎ গণতন্ত্র থাকে না, জনগণের কাছে ভোট নেয়ার কোনো দরকার থাকে না, তখন সব ইসলাম বিরোধী কাজগুলো হয়। জনগণের ঈমান ইসলাম যা-ই থাক, জনগণের কাছে জবাবদিহিতার ভয় থাকলে সরকার সহজে উল্টাপাল্টা করার সাহস পায় না। আইয়ুব খানের সেই ভয়টা ছিল না। এটা আইয়ুব খান করে গেছে পরে আর কেউ পাল্টায় নি। তো পুত্র মারা গেলে দাদা তার নাতিদেরকে পৃথক অসিয়ত করে সম্পত্তি দেবে, এটা ইসলামের বিধান। কিন্তু এখন অসিয়ত করা লাগে না, এখন যেহেতু আইনে পেয়ে যাচ্ছে এখন আর অসিয়ত করা লাগে না।

৪২৬
প্রশ্ন-৪৩০: জিহাদের জন্য রাষ্ট্র লাগবে, রাষ্ট্রপ্রধান লাগবে? অথচ ইমাম মাহদি রাষ্ট্রপতি না হয়েই যুদ্ধ করবেন।
ইমাম মাহদি অনেক যুদ্ধে পরাজিত হয়ে বাইতুল্লাহ শরীফে আশ্রয়গ্রহণ করবেন। সেখানে তার হাতে জনগণ বাইআত হবে। অথচ তিনি তখন রাষ্ট্রপ্রধান নন। বরং তিনি তখন প্রতিরোধ যোদ্ধা থাকবেন। তো আপনি বলেন, জিহাদের জন্য রাষ্ট্র লাগবে, রাষ্ট্রপ্রধান লাগবে- অথচ ইমাম মাহদির জীবনের দিকে তাকালে দেখা যায় তিনি রাষ্ট্রপতি না হয়েই যুদ্ধ করবেন। আপনার বক্তব্য তো এর সাথে মেলে না।

উত্তর: তোমরা হাদীস পড় নি। ইমাম মাহদি অনেক যুদ্ধে পরাজিত হয়ে তারপর বাইআত হবে- কথাটা ঠিক না। ইমাম মাহদিকে জোর করে ধরে এনে বাইআত করা হবে। তোমরা ভালো করে হাদীসগুলোর ইবারত পড়ো। তুমি তো বই পড়েছ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও দাজ্জাল। বই তো আর রেফারেন্স না। তুমি হাদীস পড়ো। মাহদি সম্পর্কিত জাল হাদীস, সহীহ হাদীস, জয়ীফ হাদীস মিলানো আছে। সামান্য কয়েকটা সহীহ হাদীস পাওয়া যায়। ইমাম মাহদি পালাবেন। যখন মুসলিমদের যুদ্ধ হবে, মারামারি-হানাহানি, গৃহযুদ্ধ চলবে- তখন উনি পালাবেন। তখন তাকে জোর করে ধরে এনে লোকে বাইআত হবে। এরপর যুদ্ধ চলবে। উনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ হবে। এক গ্রুপ এসে ধ্বংস হবে। আরেক গ্রুপ এসে পরাজিত হবে। যদি উনি রাষ্ট্রপ্রধান না হলেন, তাহলে জিহাদ করবেন কীভাবে! তার আন্ডারে লোকজন পাবেন কীভাবে যদি রাষ্ট্রপ্রধান হন! কাজেই শরীআত পরিপন্থী আলতু ফালতু কথা কিতাবে থাকলেই হয় না। ভালো করে হাদীসগুলো তোমরা পড়ো, মন দিয়ে পড়ো।

৪২৭
প্রশ্ন-৪৩১: ঈমান আনার পূর্বশর্ত হল তাগুতকে বর্জন করা। কিন্তু আপনি তাগুতদের আনুগত্যের কথা বলেন।
ঈমান আনার পূর্বশর্ত হল তাগুতকে বর্জন করা। ইমাম কুরতুবি, ইবনে কাসীর, ইবনে তাইমিয়ার মতে তাগুত হল ওই সকল মাবুদ, লিডার, মুরব্বি যারা নিজেদের মনগড়া আইন দিয়ে বিচার করে, আইন রচনা করে। আমরা এইসব তাগুতের আনুগত্যের মাধ্যমে ইসলাম বিরোধী আইনের আনুগত্য করে কুফরিতে লিপ্ত হচ্ছি। আর আপনিও তাদের আনুগত্যের কথা বলেন।

উত্তর: কুরতুবি, ইবনে কাসীর, ইবনে তাইমিয়ার নামে তোমরা যা বলছ সব মিথ্যা কথা। লিডার, মুরব্বি এই শব্দগুলো তারা জানতেন না। তোমাদের নিয়ে বড় বিপদ। তোমরা একবার বলবে কুরআন হাদীসের বাইরে কারো কথা শুনব না। আর যেই কুরতুবিদের কথা নিজের পছন্দ হবে, অমনি তাদের গ্রহণ করবে- কেন রে বাবা! আল্লাহ কুরআনেই তো তাগুতের পরিচয় দিয়েছেন। তাগুত বর্জন করার মানে কী? আল্লাহ তাআলা বলছেন:

والذين اجتنبوا الطاغوت أن يعبدوهاده

আল্লাহ তাগুতের ইবাদত বর্জন করতে বলেছেন। (সূরা যুমার-১৭)

আর তাগুত কী? আল্লাহ তাআলা বলেছেন:

الذين آمنوا يقاتلون في سبيل الله والذين كفروا يقاتلون في سبيل الطاغوت فقالوا

أولياء الشيطان

তাগুত হল মূলত শয়তান। আর তাগুত বর্জন করা মানে, তাগুতে ইবাদত বর্জন করতে হবে। (সূরা নিসা-৭৬)

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করতে হবে। কাজেই তোমরা যাদের কথা বলেছ, তারা এগুলো বলেন নি। তুমি বলেছ, তাগুতের আনুগত্য করতে গিয়ে আমরা কুফরি করছি। প্র, তুমি শয়তানের আনুগত্য করতে গিয়ে দাড়ি চেঁছেছ, সুদ খেয়েছ, ঘুষ খেয়েছ, বেপর্দা চলেছ, ব্যভিচার করেছ- তার মানে তুমি কাফের হয়ে গেছ? একটা ছেলে বাপের হুকুমে বা বউয়ের কথা দাড়ি চেঁছে ফেলল- সে কাফের হয়ে যাবে? তার এই দাড়ি চাঁছাটা কুফরি? একজনের আনুগত্য করে আল্লাহর হুকুম অমান্য করলে কাফের হয় এইসব বুদ্ধি কে দিয়েছে তোমাদের? আল্লাহ কুরআনে খুব ক্লিয়ার বলেছেন, তাগুতের ইবাদত বর্জন করো, একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করো। আল্লাহর আইনের বাইরে অন্যের আনুগত্য করা পাপ। তবে সেটাকে বৈধ বললে কুফরি হবে। মনগড়া আইন বানানোর কথা বলেছ। মানুষ তো আইন বানাবেই। আল্লাহ আইন বানানোর সুযোগ মানুষকে দিয়েছেন। আইন যদি কুরআন হাদীসের বিপরীত হয়, সেই আইন বানানো দীনের সাথে কুফরি। যদি কেউ মনে করে আল্লাহর দীন অচল, আল্লাহর আইন চলবে না, নতুন আইন লাগবে, তাহলে সে কাফের। আর কেউ যদি মনে করে আল্লাহর আইন ঠিক, কিন্তু মানুষের ভয়ে, ক্ষমতা হারানোর ভয়ে আল্লাহর আইনের বিপরীতে বিচার করে তাহলে সে মহাপাপী, ফাসেক। কিন্তু আমাদের সমাজে যে আইন বানানো হচ্ছে, তোমরা কি জাননা, ব্রিটিশ এবং আইয়ুব খানের পরে আমাদের দেশে একটা আইনও সরাসরি আল্লাহর দীনের সাথে কুফরি করে করা হয়। জনগণের ভোটের কারণে করা হয়। ব্রিটিশ সময়ে কুরআন বিরোধী কিছু আইন বানানো হয়েছিল, সেটা এখনো মেনে চলা হয়। কেউ কুফরির কারণে, কেউ মুনাফেক হওয়ার কারণে, কেউ না জেনে, কেউ ঈমানের দুর্বলতার কারণে মেনে চলে। এদের ভেতর কেউ কাফের, কেউ মুনাফেক, কেউ জাহেল, কেউ পাপী আর কেউ পাপী দুর্বল ঈমানদার। সাহাবিরা ইয়াযিদের আনুগত্য করতে বলেছেন। উমাইয়া যুগে সাহাবিরা মদখোর ইমামের পিছনে নামায পড়েছেন। আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ নামায পড়ছেন উকবা ইবন আবি মুইতের পেছনে। উকবা মাতাল অবস্থায় ফজরের নামায চার রাকআত পড়েছে। সালাম ফিরিয়ে বলছে, নামায কি কম হল! আরো বেশি লাগবে! আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ বললেন, বেশি দেয়া হয়ে গেছে, আর লাগবে না। দুই রাকআতের জায়গায় চার রাকআত দিয়েছ। আর দরকার নেই। তো আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ কাফের হয়ে গেছে? একজন পাপীর আনুগত্য কখনো বৈধ, কখনো হারাম, কিন্তু কুফরি না। আর পাপীর ইবাদত- আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর ইবাদত, এটা কুফরি।

৪২৮
প্রশ্ন-৪৩২: মীলাদ এবং দুআ করার আগে আমরা সুর করে যে দরুদ শরীফ পড়ি, এটা কি সত্যিই কোনো দরুদ?
মীলাদ এবং দুআ করার আগে আমরা সুর করে যে দরুদ শরীফ পড়ি, এটা কি সত্যিই কোনো দরুদ? এটা পাঠ করা কি বিদআত?

উত্তর: এটা দরুদ। দরুদ যে কোনো শব্দে পড়লেই দরুদ। কুরআন হাদীসে অবশ্য দুরুদ শব্দটা নেই। সালাত আছে। আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ- এটুকুই সালাত বা দরুদ। যারা বলে এটা দরুদ না, তারা ভুল বলে। যেমন দুআ করা- আল্লাহ আমাকে মাফ করে দাও- এটাও দুআ। মাসনুন শব্দের বাইরেও নিজের বানানো শব্দে দুআ করা যায়। আল্লাহ, আমার নবীর উপর সালাম বর্ষণ করো, তাঁকে দরুদ দাও- এটাও হবে। কাজেই সুর করে যে দরুদ পড়া হয় এটা নাজায়েয নয়। যারা বলেন এটা দরুদ না, তারা আসলে সাহাবিদের যুগের আমল জানেন না। দরুদে ইবরাহীম ছাড়াও সাহাবাগণ, তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীরা বিভিন্ন দরুদ নিজেদের ভাষায় বানিয়েছেন। তবে এখানে দুটো কিন্তু আছে। একটা হল, সুন্নাত শব্দ উত্তম। কেউ যদি সুন্নাতের বাইরে অন্যকিছুকে রীতি বানিয়ে নেয়, সুন্নাতকে অবজ্ঞা করে, আরে দরুদে ইবরাহীম লাগবে না, আমাদের বানানো দরুদই ভালো- ওই ব্যক্তি বিদআতি। কারণ সে সুন্নাতকে অবজ্ঞা করেছে। দুই নাম্বার হল, সুর করে পড়া, সমবেত হয়ে পড়া, এটা সুন্নাত না। এটা রেওয়াজ করলে বিদআত হবে।

৪২৯
প্রশ্ন-৪৩৩: নামাযে দাঁড়িয়ে ডান পা নাড়ানো যাবে কি না?
উত্তর: নামাযে দাঁড়িয়ে ডান পা বাম পা সব নাড়ানো যাবে। দৌড়ানো যাবে। নামাযে দাঁড়িয়ে ডান পায়ের বুড়ো আঙুল নাড়ানো যাবে না এটা বানোয়াট ইসলাম। সহীহ বুখারির হাদীস, আবু বার আল আসলামি রা, নামায পড়ছেন, উটের রশি ধরে। উট কিন্তু অনেক শক্তিশালী। উট খেতে খেতে একটু আগাচ্ছে, উনিও রশি ধরে একটু আগাচেছন। উট থামছে, তিনিও থামছেন। আশেপাশে বাঙালিদের মতো কিছু মসলি ছিল। তারা বলতে লাগল- এই দেখো, হুজুর নামায পড়ছে আর হাঁটছে! উনি সালাম ফিরিয়ে বললেন, দেখো, আমি আবু বার আসলামি নবীর সাথে এত বছর থেকেছি, এতটা জিহাদ করেছি। এই নামাযই আমাকে শিখিয়েছেন রাসূলুল্লাহ () । আমি যদি উটটা ছেড়ে দিই, নামাযে মন বসবে না। আবার উট চলে গেলে দৌড়াতে হবে। আর যদি উট ধরে বসে থাকি, সময় চলে যাবে, নামাযটা পড়া হবে না। নামাযের ভেতরে কাতার সোজা করার জন্য, কাতারের ফঁাক পূরণ করার জন্য শুধু ডান পা না, হাঁটাহাঁটি করা যাবে। আপনার সামনের কাতারের জায়গা ফাঁকা হয়ে গেছে, আপনি হেঁটে গিয়ে পূরণ করবেন। ডানে বামে সরে গিয়ে খালি জায়গা পূরণ করবেন। আর ডান পা তো নড়াতেই হবে। তা না হলে সিজদা করবেন কীভাবে! বৈঠকে বসবেন কীভাবে! কাজেই যারা বলে নামাযে ডান পা নড়ানো যায় না তাদের কথাটা ঠিক না।

আস-সুন্নাহ পাবলিকেশন্স

আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট, পৌর বাস টার্মিনাল, ঝিনাইদহ-৭৩০০

মোবাইলঃ ০১৭৮৮৯৯৯৯৬৮

Dr. Khandaker Abdullah Jahangir

Sunnah trust

www.assunnahtrust.com

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন