hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের ইতিহাস ১ম খণ্ড

লেখকঃ মাওলানা আকবর শাহ খান নজিববাদী

১০৪
হযরত উমর ফারুক (রা)-এর ইসলাম গ্রহণ
হযরত হামযা (রা)-এর ইসলাম গ্রহণের সংবাদে কুরায়শদের দুশ্চিন্তা ও বিদ্বেষের মাত্রা আরো বেড়ে গেল। তারা নিজেদের মধ্যে পরামর্শ ও নানারূপ ফন্দি-ফিকির করতে লাগলো।

হযরত উমর ফারুক (রা) ছিলেন হযরত হামযা (রা)-এর মতো আরবের বিখ্যাত বীরপুরুষ। ইসলাম গ্রহণের পূর্বে মুসলমানদেরকে নির্যাতন এবং হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর বিরুদ্ধে তৎপরতায় তাঁর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিলো। তিনি মুসলমানদেরকে ধরে এনে বেদম প্রহার করতেন এবং প্রহার করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেলে থামতেন এবং বিশ্রাম নেওয়ার পর পুনরায় উঠে মারধর শুরু করতেন। মোটকথা, মুসলমানদেরকে ইসলাম থেকে মুরতাদ বানানোর জোর কোশেশ করেন কিন্তু ব্যর্থ হন। অবশেষে একদিন তিনি শেষ সিদ্ধান্ত নেন এবং কাফিরদের মজলিসে অঙ্গীকার করেন যে, এবার তিনি একাই কুরায়শদের উপর আপতিত এ ফিতনার মূলোচ্ছেদ করবেন অর্থাৎ এ ফিতনার প্রবর্তক মুহাম্মদ (সাঃ)-এর কণ্ঠ স্তব্ধ করে দেবেন।

আবু জাহেল তার এ ঘোষণা শুনে সোৎসাহে ঘোষণা করলেন : সত্যি সত্যি তুমি যদি এ কাজটি করে আসতে পার, তাহলে তোমাকে একশটি উট এবং এক হাজার উকিয়া পরিমাণ রৌপ্য বখশিশ স্বরূপ প্রদান করা হবে।

আর যায় কোথায়! কোষমুক্ত তলোয়ার হাতে উমর তক্ষণি হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর সন্ধানে বেরিয়ে পড়লেন। পথে সাআদ ইব্‌ন আবী ওয়াক্কাসের সাথে সাক্ষাৎ। তিনি জিজ্ঞেস করলেন : কি হে উমর! এ অবস্থায় কোথায় যাচ্ছ? জবাবে উমর বললেন :মুহাম্মদ (সাঃ)-কে কতল করতে যাচ্ছি, কেননা, আজ আমি সংকল্প করেছি যে, কুরায়শ কওমকে আপদমুক্ত করবো এবং তাদের রকমারি তদবিরকে সহজ করে দেবো। হযরত সাআদ (রা) জিজ্ঞেস করলেন : বনী হাশিম-এর প্রতিশোধের ভয় কর না? জান না যে, মুহাম্মদ (সাঃ)-কে কতল করা চাট্টিখানি কথা নয়? জবাবে উমর বললেন : আমার হাতে এ কোষমুক্ত তলোয়ারখানা থাকতে আমি কাউকে পরোয়া করি না। তারপর হযরত সাআদ (রা)-কে লক্ষ্য করে বললেন : তুমিও বুঝি তার সমর্থক বনে গেছো? তাহলে প্রথমে তোমাকেই শেষ করছি! সাআদ (রা) বললেন : আমাকে এবং মুহাম্মদ (সাঃ)-কে পরেই বধ করো হে! আগে নিজের খবর নাও। তোমার বোন যে মুসলমান হয়ে গেছে আর ইসলাম তোমার নিজ ঘরেই ঢুকে পড়েছে, সে খবর রাখ?

হযরত সাআদ (রা)-এর এ জবাব হযরত উমর (রা)-এর কাটা ঘায়ে নুনের ছিটার মতো বিধলো। তিনি তৎক্ষণাৎ তাঁর বোনের বাড়ীর দিকে ছুটলেন। তিনি বেরিয়েছিলেন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-কে কতল করার সংকল্প নিয়ে। রাস্তায় গিয়ে পথ ধরলেন বোনের বাড়ীর। সেখানে যখন তিনি পৌঁছলেন তখন হযরত খাব্বাব ইবনুল আরাত (রা) উমরের বোন ফাতিমা (রা) এবং তাঁর স্বামী হযরত সাঈদ ইব্‌ন যায়দ (রা)-কে কুরআন শরীফ শিক্ষা দিচ্ছিলেন। উমরের উপস্থিতি টের পেয়ে তিনি ঘরের এক কোণে আত্মগোপন করলেন এবং যে পৃষ্ঠাসমূহে কুরআন শরীফের আয়াত লিখিত ছিলো তাড়াতাড়ি তাও লুকালেন। তিনি ঘরে ঢুকেই জিজ্ঞেস করলেন : তোমরা কি পড়ছিলে? তারপর ভগ্নিপতি সাঈদ ইব্‌ন যায়দ (রা)-কে ধরেই ফেলে দিলেন এবং বেদম প্রহার করতে লাগলেন এবং বললেন : তোমরা কেন মুসলমান হতে গেলে? স্বামীকে ভাইয়ের কবল থেকে মুক্ত করার জন্যে বোন আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে ভাইকে জাপটে ধরলেন। জাপটাজাপটিতে ফাতিমা (রা)-এর মাথায় এমনি আঘাত লাগলো যে দরদর করে তার মাথা থেকে রক্ত ঝরতে লাগল। উমর (রা) বোন এবং ভগ্নিপতির দু’জনকেই বেদম প্রহার করলেন। অবশেষে বোনটি বেপরোয়া হয়ে উঠলেন এবং বললেন :

قد اسلمنا وتابعنا محمدا افعل ما بذالك .

হাঁ, আমরা মুসলমান হয়ে গেছি এবং মুহাম্মদ (সাঃ)-এর আনুগত্য অবলম্বন করেছি। এ জন্যে তুমি যা করতে পার কর!

বোনের এ বেপরোয়া জবাব শুনে হযরত উমর (রা) যখন বোনের দিকে নজর তুলে তাকালেন তখন তাঁর রক্তাক্ত দেহের উপর চোখ পড়তেই তাঁর রাগ অনেকটা পানি হয়ে গেলো। বোনের রক্তমাখা দৃশ্য ভাইয়ের মনে পরিবর্তনের সূচনা করলো।

এবার অনেকটা শান্তস্বরে তিনি বোনকে বললেন : আচ্ছা, এই মাত্র তোমরা যা পড়ছিলে তা আমাকে দেখাও এবং পড়ে শোনাও যার আওয়াজ আমি ঘরে ঢুকবার সময় শুনতে পাচ্ছিলাম। উমর (রা)-এর কণ্ঠ অনেকটা শান্ত দেখে বোন আরো সাহসী হয়ে উঠলেন। তিনি বললেন : এ পবিত্র কিতাব পড়তে হলে প্রথমে তোমাকে গোসল করতে হবে। উমর (রা) তৎক্ষণাৎ গোসল করলেন। গোসল সেরেই কুরআন শরীফের আয়াতগুলো যে পৃষ্ঠাগুলোতে লিখিত ছিলো তা পড়তে লাগলেন। মাত্র কয়েকটি আয়াত পড়তে না পড়তেই মনের অজান্তে বলে উঠলেন : কী মধুর বাণী! এ বাণী আমার অন্তরে রেখাপাত করছে।

হযরত খাব্বাব (রা) ভেতরে লুকিয়েছিলেন। একথা শোনা মাত্র তিনি তৎক্ষণাৎ বের হয়ে এসে বলে উঠলেন : হে উমর (রা)! মুবারক, হো। হযরত মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের দু‘আ তোমার পক্ষেই কবূল হলো দেখছি। আমি কালই হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে দু‘আ করতে শুনেছি, “হে আল্লাহ! উমর ইবনুল খাত্তাব ও আবূ জাহেল এ দু’জনের একজনকে তুমি মুসলমান বানিয়ে দাও! তারপর হযরত খাব্বাব (রা) সূরা ত্বা-হার প্রথম রূকূ তিলাওয়াত করে শোনালেন। হযরত উমর (রা) সূরা ত্বা-হার এ তিলাওয়াত শুনতে শুনতে অঝোরধারায় কাঁদছিলেন। তিনি হযরত খাব্বাব (রা)-কে বললেন : আমাকে এক্ষুণি হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর কাছে নিয়ে চলো! সত্যি সত্যিই তিনি তাঁকে নিয়ে দারে আরকামের দিকে রওয়ানা হলেন। তখনো কোষমুক্ত তলোয়ারখানা তার হাতে ছিলো। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে তিনি সে তলোয়ারখানা নিয়ে বোনের বাড়ীর দিকে যাচ্ছিলেন, সে উদ্দেশ্য আর এখন ছিলো না।

আরকামের বাড়ীতে পৌঁছে হযরত উমর (রা) দরজায় করাঘাত করলেন। উমরের হাতে কোষমুক্ত তলোয়ার দেখে সাহাবায়ে কিরাম প্রথমে দরজা খুলতে দ্বিধাবোধ করেন এবং হুযুর (সাঃ)-কে জানান যে, উমর (রা) খোলা তলোয়ার হাতে দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন। হুযুর (সাঃ) বললেন : দরজা খুলে দাও! হযরত হামযা (রা)-ও তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন, আসতে দাও। সদিচ্ছা নিয়ে এসে থাকলে তো ভাল, নতুবা তারই তলোয়ারে তার শির উড়িয়ে দেবো।

দরজা খুলে দেয়া হলো। হযরত উমর (রা) ভিতরে প্রবেশ করলেন। তিনি ভিতরে প্রবেশ করতেই হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) অগ্রসর হয়ে তাঁর জামার এক প্রান্ত ধরে হেঁচকা টান দিয়ে বললেন : কী হে উমর! আর কতদিন বিরোধিতা করে চলবে? তুমি কি এখনো বিরত হবে না? জবাবে হযরত উমর (রা) আরয করলেন : ইয়া রাসূলাল্লাহ্ (সাঃ)! ঈমান আনার জন্যেই আপনার খিদমতে হাযির হয়েছি! একথা শুনতেই আনন্দ উচ্ছ্বাসে হযরত (সাঃ) উচ্চকণ্ঠে “আল্লাহু আকবার” বললেন। অমনি দারে আরকামে উপস্থিত সাহাবায়ে কিরামগণও গগনবিদারী কণ্ঠে সমবেতভাবে আল্লাহু আকবর উচ্চারণে মক্কার পাহাড়-পর্বত প্রকম্পিত করে তুললেন।

হযরত হামযা (রা) ও হযরত উমর (রা)-এর ইসলাম গ্রহণেমুসলমানদের শক্তি অনেক গুণে বৃদ্ধি পেলো। হযরত উমর (রা) মুসলমান হয়েই সোজা আবূ জাহেলের বাড়ীতে গিয়ে উপস্থিত হলেন এবং দরজায় করাঘাত করলেন। সে বের হয়েই আহলান ওয়া সাহ্‌লান এবং মারহাবা বলে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালো এবং তার আগমনের কারণ জিজ্ঞেস করলো। হযরত উমর (রা) বললেন : আল্লাহ্ তা‘আলার শোকর যে, আমি মুসলমান হয়ে গিয়েছি। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-কে রাসূল বলে মেনে নিয়েছি। কথাটি শুনেই আবূ জাহেল রাগান্বিত হয়ে অন্দরে চলে গেলো। হযরত উমর (রা)-ও ফিরে আসলেন। তার ইচ্ছেই ছিলো ইসলামের সবচাইতে বড় শত্রুকে তার ইসলাম গ্রহণের সংবাদ জানিয়ে আসবেন।

হযরত উমর (রা) মুসলমান হয়েই হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর কাছে নিবেদন করলেন : আমাদের এখন আর গোপনে ঘরে সালাত আদায়ের প্রয়োজন নেই। প্রকাশ্যে খানায়ে কা‘বাতেই আমাদের সালাত আদায় করা উচিত। সত্যি সত্যি তাই করা হলো। প্রথম প্রথম কুরায়শদের পক্ষ হয়ে যারাই প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করতো হযরত উমর (রা) তাদের মুকাবিলা করতেন। শেষ পর্যন্ত সকল বাধাই অপসারিত হলো এবং মুসলমানগণ বিনা বাধায় সেখানে সালাত আদায় করতে লাগলেন। ইসলাম এখন মক্কায় প্রকাশ্যে পালিত হতে লাগলো। এটা হচ্ছে নবুওয়াতের ষষ্ঠ বর্ষের শেষ মাসের কথা। হযরত উমর (রা)-এর বয়স তখন ছিল ৩৪ বছর। হযরত উমরের ইসলাম গ্রহণের সময় মক্কায় মুসলমানদের সংখ্যা দাঁড়ালো চল্লিশে। আবিসিনিয়ায় অবস্থানরত মুসলমান এর বাইরে ছিলেন।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন