hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের ইতিহাস ১ম খণ্ড

লেখকঃ মাওলানা আকবর শাহ খান নজিববাদী

২৯৯
হযরত আবূ উবায়দ মাসঊদ সাকাফী (রা)-এর শেষ কীর্তি
জালীনূস পরাজিত ও পর্যুদস্ত হয়ে যখন মাদায়েন গিয়ে পৌঁছেন, তখন সমগ্র রাজধানী ও রাজদরবারে ভয়ানক আতংকের সৃষ্টি হয়। প্রধান মন্ত্রীর রুস্তম দরবারে প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন এমন বীর কি কেউ আছে, যে আরবদের অগ্রযাত্রা প্রতিহত করতে পারে এবং এ যাবত ইরানীরা যে সমস্ত পরাজয় বরণ করেছে তার প্রতিশোধ গ্রহণ করতে পারে? উপস্থিত সবাই একবাক্যে বলল, বাহমান জাদাওয়ায়হ ছাড়া আমরা দ্বিতীয় কোন অভিজ্ঞ ও বীরোত্তম নির্ভরযোগ্য সেনাপতি দেখছি না, এবার রুস্তম তিন হাজার সৈন্য, তিনশ’ জঙ্গী হাতি এবং সেই সাথে সর্বপ্রকার সামরিক উপকরণ ও রসদ সামগ্রী দিয়ে বাহমান জাদওয়ায়হকে মুসলিমগণের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন এবং তার সাহায্যের জন্য জালীনূসকে মনোনীত করেন। বাহবান জাদওয়ায়হকে বলেন, যদি এবারও জালীনূস যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন করে তাহলে তার গর্দান যেন অবশ্যই উড়িয়ে দেওয়া হয়। বাহমান জাদওয়ায়হকে সেই ঐতিহ্যবাহী রাজকীয় পতাকাও প্রদান করা হল, যে পতাকা সম্পর্কে ইরানীদের এ বিশ্বাস ছিল যে, যে বাহিনীর সাথে এ পতাকা থাকে সে বাহিনী কখনো পরাজিত হয় না। বাহমান জাদওয়ায়হ যাবতীয় যুদ্ধ-সামগ্রী নিয়ে অত্যন্ত জাঁকজমকের সাথে মাদায়েন থেকে রওয়ানা হন। পথিমধ্যে তিনি যতগুলো শহর, জনবসতি ও গ্রাম-পল্লী অতিক্রম করেন সেখান থেকেই সেনাভর্তি করেন। সাথে সাথে স্থানীয় জনসাধারণকে মুসলমানগণের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি ফুরাত নদীর তীরবর্তী ‘কিসসে নাতিফ’ নামক স্থানে অবস্থান নেন। অপর দিকে হযরত আবূ উবায়দ ইব্‌ন মাসঊদ (রা) এ বিশাল বাহিনীর আগমনের সংবাদ শুনে কসকর থেকে রওয়ানা হন এবং ফুরাত নদীর অপর তীরবর্তী মারুহা নামক স্থানে অবতরণ করেন। যেহেতু ফুরাত নদী মধ্যখানে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল, তাই উভয় বাহিনীই কিছুদিন পর্যন্ত নীরব নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকে। শেষ পর্যন্ত উভয় বাহিনীর সম্মতিক্রমে ফুরাত নদীর উপর সেতু নির্মাণ করা হয়। সেতু নির্মিত হলে বাহমান জাদওয়ায়হ হযরত আবূ উবায়দ (রা)-এর কাছে এ মর্মে এক পয়গাম পাঠান : তুমি নদী অতিক্রম করে এপারে আসবে, না আমি নদী অতিক্রম করে ওপারে যাবো? যদিও অন্যান্য সেনাপতিরা এ মর্মে অভিমত ব্যক্ত করেছিলেন যে, ইরানী বাহিনীকেই এপারে আসার আহবান জানানো উচিত, কিন্তু হযরত আবূ উবায়দ (রা) সে অভিমত পছন্দ করলেন না। তিনি বললেন, আমরাই ওপারে গিয়ে ইরানীদের মুকাবিলা করবো। যাহোক তিনি ইসলামী বাহিনীকে ওপারে নিয়ে গেলেন। ওপারে ইরানী বাহিনী ও ফুরাত নদীর মধ্যখানে ছিল একটি ক্ষুদ্র মাঠ, তাই ইসলামী বাহিনীকে সেখানে একেবারে ঠাসাঠাসি অবস্থায় দাঁড়াতে হয়। শেষ পর্যন্ত উভয় বাহিনী সারিবদ্ধ হয়ে পরস্পরকে আক্রমণ করে। বাহমান জাদওয়ায়হ তার হস্তী বাহিনীকে মূল বাহিনীর সম্মুখভাগে রেখেছিলেন এবং তীরন্দাজরা সেগুলোর উপর চড়ে বসেছিলো আর মুসলিম বাহিনীর উপর অনবরত তীর নিক্ষেপ করছিলো। মুসলমানগণের ঘোড়া ইতিপূর্বে কখনো হাতি দেখেনি। তাই মুসলিম অশ্বারোহিগণ যখন আগে বেড়ে ইরানীদের হামলা করল তখন তাদের ঘোড়াগুলো হাতি দেখে শিউরে উঠল এবং বেকাবু হয়ে এদিক-ওদিক ছুটে পালাতে লাগলো। যুদ্ধের এ পরিস্থিতি লক্ষ্য করে হযরত আবূ উবায়দ (রা) হুকুম দিলেন ঘোড়া থেকে নেমে হামলা কর। অত্যন্ত বীরত্ব ও দুঃসাহসিকতার সাথে অনুরূপ হামলা চালানো হল, কিন্তু শত্রুপক্ষের হাতিসমূহ যখন ইসলামী বাহিনীর সারিসমূহ ছিন্ন ভিন্ন করে মুসলিম যোদ্ধাদেরকে দলিত-মথিত করতে শুরু করল, তখন সারিবদ্ধ মুসলিম বাহিনীর মধ্যে ভাংগন ও বিশৃঙ্খলা দেখা দিল। হযরত আবূ উবায়দ (রা) উচ্চৈঃস্বরে তাঁর বাহিনীকে উৎসাহ জুগিয়ে চললেন। তিনি নির্দেশ দিলেন, তরবারি চালিয়ে হাতির শুঁড় দ্বিখণ্ডিত করে ফেল। তিনি নিজেও হাতিগুলোকে আক্রমণ করলেন এবং পরপর কয়েকটি হাতির শুঁড় ও সামনের পা কেটে সেগুলোকে ভূলুণ্ঠিত করে তাদের উপরস্থ আরোহীদেরকে হত্যা করলেন।

নিজেদের সেনাপতির এ অতুলনীয় বীরত্ব প্রত্যক্ষ করে মুসলিম সেনাগণও ইরানী হাতিগুলোর উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। এভাবে রণক্ষেত্র যখন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল, ঠিক তক্ষুনি একটি ইরানী হাতি মুসলিম সেনাপতি হযরত আবূ উবায়দা (রা)-কে আক্রমণ করে বসে। হযরত উবায়দ (রা) অত্যন্ত ক্ষিপ্রগতিতে তরবারি চালিয়ে হাতির মাথা থেকে তার শুঁড়টি বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। কিন্তু এ অবস্থায়ও হাতিটি এগিয়ে এসে তাকে মাটিতে ফেলে দেয় এবং তার বুকের উপর পা রেখে তাকে এমনভাবে দলিত-মথিত করে যে, তার অস্থি একেবারে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়। হযরত আবূ উবায়দ (রা) শহীদ হওয়ার সাথে সাথে তার ভাই হযরত হাকাম (রা) আগে বেড়ে ইসলামী পতাকা নিজ হাতে তুলে নেন। কিন্তু তিনিও হাতির আক্রমণ চালিয়ে হযরত আবূ উবায়দ (রা)-এর ন্যায় শাহাদত বরণ করেন। তারপর বনূ ছাকীফ গোত্রের ছয় ব্যক্তি একের পর এক ইসলামী পতাকা উর্ধ্বে তুলে ধরেন, কিন্তু তাদেরকে একইভাবে শাহাদত বরণ করতে হয়। অষ্টম ব্যক্তি যিনি পতাকা উর্ধ্বে তুলে ধরেছিলেন, তিনি হলেন হযরত মুছান্না ইব্‌ন হারিছা (রা)। পতাকা হাতে নিয়েই তিনি দৃঢ়তার সাথে শত্রুবাহিনীকে প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত দুঃসাহসিক পরিচয় দেন। কিন্তু মুসলিম সেনাগণ একের পর এক তাদের সাতজন সেনাপতিকে নিহত হতে দেখে এবং হাতিগুলোর আক্রমণ সহ্য করতে না পেরে পলায়নপর হয়ে উঠেছিল। তাদেরকে নিরস্ত করার জন্য হযরত আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন মারসাদ ছাকাফী সেতুর তক্তাগুলো বিচ্ছিন্ন করে এবং রশিসমূহ কেটে দিয়ে উচ্চৈঃস্বরে বলতে থাকেন : হে লোক সকল! এবার পলায়নের রাস্তাও বন্ধ হয়ে গেল। কাজেই যেভাবে তোমাদের ভাই ও তোমাদের সেনাপতি শাহাদত বরণ করেছেন, তোমরাও সেভাবে শাহাদত বরণ কর। সেতু ভেঙ্গে ফেলার কারণে এ অসুবিধা দেখা দিয়েছিল যে, মানুষ এবার নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে হাবুডুবু খেতে থাকে। এমতাবস্থায়ও হযরত মুছান্না (রা) আবূ মিজহান ছাকাফী (রা) প্রমুখ দলনেতার সহায়তায় অবশিষ্ট সৈন্যদেরকে সামলে নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে পুনরায় শক্তভাবে দাঁড়িয়ে যান। সেই সাথে সেতুটিও পুনর্নির্মাণের নির্দেশ দেন। উপরন্তু তিনি সমগ্র মুসলিম বাহিনীর মধ্যে প্রচার করে দেন : আমি ইরানী বাহিনীকে রুখে দাঁড়িয়েছি। কাজেই আমাদের ব্যতিব্যস্ত হওয়ার কোন কারণ নেই। হযরত মুছান্না (রা) অত্যন্ত বীরত্ব ও সাহসিকতার সাথে ইরানীদের আক্রমণ প্রতিরোধ করেন। যখন মুসলিমগণ নদী অতিক্রম করে অপর পারে চলে যায়, তখন তিনিও একেবারে সবার শেষে সেতুপথ দিয়ে তাদের সাথে মিলিত হন। ঐ যুদ্ধে মুসলমানগণের সংখ্যা ছিল নয় হাজার। তার মধ্যে চার হাজার এবং কোন কোন বর্ণনা মতে ছয় হাজারই শাহাদত বরণ করেন। হযরত সামীত ইব্‌ন কায়স, উতবা, আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন কায়স, উবাদা ইব্‌ন কায়স ইব্‌ন মাসকান, আবূ উমাইয়া ফাযারী (রা) প্রমুখ সাহাবাও ঐ শহীদগণের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। ইরানী বাহিনীরও ছয় হাজার লোক নিহত হয়। কিন্তু ইতিপূর্বেকার সব যুদ্ধের অনুপাতে এ যুদ্ধেই মুসলমানগণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো সবচাইতে বেশী। এ যুদ্ধে এমন পরিস্থিতিরও সৃষ্টি হয়েছিল যে, ইরানীদের মুকাবিলায় কিছু সংখ্যক মুসলমান যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়েও গিয়েছিল। কিন্তু যারা এ কর্মটি করেছিল তারা আজীবন এতই লজ্জা ও অপমানবোধ করত যে, কাউকে নিজের চেহারাটি পর্যন্ত দেখাতে চাইত না। মুসলমানগণ সংখ্যায় অতি অল্প এবং মানসিক ও দৈহিক দিক দিয়ে বিপর্যস্ত হওয়া সত্ত্বেও বাহমান জাদওয়ার এমন সাহস হয়নি যে, সেতু অতিক্রম করে এপারে এসে মুসলমানগণকে পুনরায় আক্রমণ করে। কাজেই তিনি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সোজা মাদায়েনে প্রত্যাবর্তন করেন। এ যুদ্ধ হিজরী ১৩ সনের শা‘বান মাসে সংঘটিত হয়েছিল।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন