hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের ইতিহাস ১ম খণ্ড

লেখকঃ মাওলানা আকবর শাহ খান নজিববাদী

৪২৪
তিন নেতার হত্যায় খারিজীদের ভয়ংকর পরিকল্পনা
উপরে বর্ণিত হয়েছে যে, নাহরাওয়ান যুদ্ধে শুধু নয়জন খারিজী প্রাণে বেঁচে গিয়েছিল। তারা ছিল নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি। তারা প্রথমে পারস্যের বিভিন্ন এলাকায় আলী (রা)-এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও উত্তেজনা সৃষ্টির প্রয়াস পায়। কিন্তু তাতে সাফল্য লাভ করতে না পেরে তারা ইরাক ও হিজাযে এসে এদিক-ওদিক ঘোরাফেরা করতে থাকে। শেষ পর্যন্ত আবদুর রহমান ইব্‌ন মুলজিম মুরাদী, বারক ইব্‌ন আবদুল্লাহ্ তামীমী ও আমর ইব্‌ন বকর তামীমী এই তিন ব্যক্তি মক্কা মুআয্‌যমায় একত্রিত হয় এবং আপোসে নাহরাওয়ানের নিহতদের স্মরণ করে আন্তরিক বেদনা প্রকাশ করে। এরপর তারা এ ব্যাপারে একমত হয় যে, যে সমস্ত নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি বর্তমানে ইসলামী বিশ্বকে উত্তপ্ত করে রেখেছে তাদেরকে অবশ্যই হত্যা করতে হবে। তিন জন এ কথায় অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়। তারপর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, আবদুর রহমান ইব্‌ন মুলজিম মুরাদী মিসরী আলী (রা)-কে, বারক ইব্‌ন আবদুল্লাহ্ তামীমী মুআবিয়া (রা)-কে এবং আমর ইব্‌ন বকর তামীমী সা‘দ মিসরের শাসনকর্তা আমর ইব্‌ন ‘আস (রা)-কে হত্যা করবে। আর তিনটি হত্যাকাণ্ডই হবে একই দিনে ও একই সময়ে। অর্থাৎ ১৬ই রমযান শুক্রবার ঠিক ফজরের সময়। এরপর ওরা তিনজন যথাক্রমে কূফা, দামিশক ও মিসরে চলে যায়।

রমযান মাসের ঐ নির্দিষ্ট দিনে বারক ইব্‌ন আবদুল্লাহ তামীমী দামিশকের মসজিদে প্রবেশ করে। মুআবিয়া (রা) যখন ফজরের নামাযের ইমামতি করছিলেন তখন তাঁকে আঘাত করে এবং আঘাত ঠিকমত লেগেছে মনে করে সেখান থেকে দৌড়ে পালায়। কিন্তু তাকে বন্দী করা হয়। ঐ আঘাতে মুআবিয়া আহত হয়েছিলেন, কিন্তু তা তেমন মারাত্মক ছিল না। তাই কিছুদিনের মধ্যেই তিনি আরোগ্য লাভ করেন। এক বর্ণনা অনুযায়ী বারককে ঐ মুহূর্তেই এবং অপর বর্ণনা অনুযায়ী কয়েক বছর বন্দীশালায় রেখে কোন এক সময় হত্যা করা হয়। মুআবিয়া (রা) এ ঘটনার পর থেকে মসজিদে একটি সংরক্ষিত স্থান নির্মাণ করান এবং যথারীতি পাহারারও ব্যবস্থা করেন। ঐ নির্দিষ্ট দিনে ও নির্দিষ্ট সময়ে আমর ইব্‌ন বকর মিসরের মসজিদে প্রবেশ করে খারিজা ইব্‌ন আবী হাবীবাকে আমর ইবনুল ‘আস মনে করে তরবারির একটিমাত্র আঘাতে হত্যা করে ফেলে। ঘটনাচক্রে ঐদিন আমর (রা) অসুস্থ থাকায় তার পরিবর্তে খারিজা নামীয় জনৈক সামরিক অফিসার মিসরের মসজিদে ফজরের নামাযের ইমামতি করছিলেন। একই দিনে ও একই সময়ে আবদুর রহমান ইব্‌ন মুলজিম মসজিদের মধ্যে হযরত আলী (রা)-এর উপর হামলা চালায়। তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন, যার ফলে মাত্র দুদিন পর অর্থাৎ হিজরী ৪০ সনের ১৭ই রমযান তিনি ইনতিকাল করেন। এই দুঃখজনক ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ এই যে, ইব্‌ন মুলজিম কূফায় এসে তার বন্ধুদের সাথে মিলিত হয়। কিন্তু কারো কাছে তার পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করেনি। শেষ পর্যন্ত সে শাবীব ইব্‌ন শাজারাহ আশজাঈ নামীয় জনৈক বন্ধুকে নিজের গোপন উদ্দেশ্যের কথা ব্যক্ত করে তার সাহায্য কামনা করে। সে তার কাছে পরিষ্কার বলে আমরা নাহরাওয়ানের নিহতদের বদলা নিতে আলী (রা)-কে হত্যা করতে চাই। প্রথমে শাবীব তাকে তার এ সংকল্প থেকে বিরত রাখতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত চিন্তা-ভাবনা করে তাকে সাহায্য প্রদানে সম্মত হয়। তামীম গোত্রের দশ ব্যক্তি, যারা খারিজীদের অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং নাহরাওয়ান যুদ্ধে নিহত হয়েছিল, তাদের যেসব আত্মীয়-স্বজন কূফায় থাকত তারা আলী (রা)-এর প্রতি অসন্তুষ্ট ও বিদ্বেষভাবাপন্ন ছিল।

ইবন মুলজিম ঐসব লোকদের সাথে মেলামেশা করতে প্রায়ই ওদের ঘরে যেত। সেখানেই সে ‘কাতাম’ নাম্নী এক অতি সুন্দরী নারীকে দেখতে পায়। কাতামের পিতা এবং কাতামের কাছে তার বিয়ের পয়গাম পাঠায়। তখন কাতাম বলে, তুমি যদি প্রথমে মাহর পরিশোধ করে দাও তাহলে আমি বিয়ের জন্য তৈরি আছি। তার কাছে মাহরের পরিমাণ জিজ্ঞেস করা হলে সে উত্তরে বলল, তিন হাজার দিরহাম, একটি দাসী, একটি দাস এবং আলীর কর্তিত মাথা হচ্ছে আমার মাহর। ইব্‌ন মুলজিম তো এসেই ছিল আলী (রা)-কে হত্যা করার উদ্দেশ্যে। অতএব সে বিনা-দ্বিধায় বলে উঠল, শুধু সর্বশেষ শর্তটিই আমি পূরণ করতে পারি। বাকি শর্তগুলো এখনই পূর্ণ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

কাতাম বলল, যদি তুমি শেষ শর্তটি পূরণ করে দাও তাহলে আমি প্রথম শর্তগুলো ছেড়ে দেব। ইব্‌ন মুলজিম বলল, যদি আমি সত্যি সত্যি আলী (রা)-কে হত্যা করতে সক্ষম হই তাহলে তুমি একথা কোথাও প্রকাশ করতে পারবে না। কাতাম তা গোপন রাখার প্রতিশ্রুতি দিল এবং ইব্‌ন মুলজিমকে তার কাজে সাহায্য করার জন্য ‘ওয়ারদান’ নামীয় আপন এক আত্মীয়কেও নিয়োগ করল। শেষ পর্যন্ত সেই নির্দিষ্ট দিন অর্থাৎ ১৬ই রমযান শুক্রবার ঘনিয়ে এল। ইব্‌ন মুলজিম, শাবীব ইব্‌ন শাজারা এবং ওয়ারদান-এর তিন জনই পূর্ববর্তী রাতে কূফা মসজিদে এল এবং দরজার কাছে ঘাপটি মেরে বসে থাকল। হযরত আলী (রা) আপন অভ্যাস অনুযায়ী মানুষকে নামাযের জন্য আহবান জানাতে মসজিদে এসে প্রবেশ করেন। সর্বপ্রথম ওয়ারদান আগে বেড়ে তাকে আঘাত করে। কিন্তু তার তরবারি দরজার চৌকাঠে কিংবা দেওয়ালে আটকে যায় এবং আলী (রা) সামনে এগিয়ে যান। ইব্‌ন মুলজিম তড়িৎ বেগে আগে বেড়ে তার কপালের উপর তরবারির আঘাত করে। আঘাতটি ছিল খুবই মারাত্মক। তিনি আহত হওয়ার পর নির্দেশ দেন, এদেরকে পাকড়াও কর। লোকেরা নামাযের জন্য মসজিদে এসে পড়েছিল। এ আদেশ শুনতেই তারা খুনীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ইতিমধ্যে ওয়ারদান ও শাবীব মসজিদ থেকে বের হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু ইব্‌ন মুলজিম বের হতে পারেনি। সে মসজিদের এক কোণায় লুকিয়েছিল। সেখান থেকেই তাকে বন্দী করা হয়। শাবীবকে হাদরামী নামক জনৈক ব্যক্তি ধরেছিল, কিন্তু সে তার হাত থেকে ছুটে পালায়। ওয়ারদান ঊর্ধ্বশ্বাসে তাকে ধরে ফেলে এবং সেখানেই হত্যা করে। ইব্‌ন মুলজিমকে বন্দী অবস্থায় আলী (রা)-এর সামনে হাযির করা হলে নির্দেশ দেন, যদি আমি এই আঘাতের কারণে মৃত্যুবরণ করি, তাহলে তোমরা ওকেও হত্যা করবে। আর যদি আমি সুস্থ হয়ে উঠি তাহলে আমি যা সঙ্গত মনে করি তাই করব। এরপর তিনি বনূ মুত্তালিবকে ওসীয়ত করেন। তিনি বলেন, ‘আমার হত্যাকে তোমরা মুসলমানদের রক্তারক্তির ওসীলায় পরিণত করো না। স্রেফ এই একটি লোককে কিসাস স্বরূপ হত্যা করবে, যে আমার হত্যাকারী। এরপর তিনি নিজ পুত্র হাসান (রা)-কে সম্বোধন করে বলেন, হে হাসান! যদি আমি এই ক্ষতের কারণে মৃত্যুমুখে পতিত হই তাহলে তুমি তারই তরবারি দিয়ে তাকে এমনভাবে আঘাত করবে যাতে সে মারা যায়। কখনো ‘মুসলা’ (নিহতের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কর্তন) করো না। কেননা রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) তা নিষেধ করেছেন।

ইবন মুলজিমের তরবারির আঘাত আলী (রা)-এর কানের লতি পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল এবং তরবারির ধারালো প্রান্ত নেমে গিয়েছিল একেবারে মস্তিষ্ক পর্যন্ত। এই অবস্থায় তিনি শুক্রবার দিন জীবিত থেকে ১৭ই রমযান শনিবার ইনতিকাল করেন। ওফাতের পূর্বে জুনদুব ইব্‌ন আবদুল্লাহ তার কাছে এসে নিবেদন করেন, আপনি যদি আমাদের থেকে পৃথক হয়ে যান অর্থাৎ যদি আপনার ইনতিকাল হয়ে যায় তাহলে কি আমরা হাসান (রা)-এর হাতে বায়‘আত করবো? তিনি উত্তর দেন, আমি এ ব্যাপারে কিছুই বলব না, তোমরা যা সঙ্গত মনে করবে তাই করবে। এরপর তিনি হুসায়ন (রা)-কে ডেকে পাঠান এবং বলেন, আমি তোমাকে তাকওয়া অবলম্বন এবং দুনিয়া নিয়ে মগ্ন না থাকার জন্য ওসীয়ত করছি। কোন জিনিস অর্জিত না হলে তুমি সেজন্য আক্ষেপ করো না। সব সময় হক কথা বলো, ইয়াতীমদের দয়া করো এবং অসহায়দের সাহায্য করো। জালিমদের শত্রু এবং মজলুমদের সাহায্যকারী হয়ে থাক। কুরআনের অনুসরণ কর। এজন্য কেউ যদি তোমাকে দোষারোপ বা গালি-গালাজ করে তাহলে ভয় পেয়ো না। এরপর তিনি মুহাম্মদ ইবনুল হানাফিয়াকে সম্বোধন করে বলেন, আমি তোমাকেও ঐ সময় কথা মেনে চলতে এবং তোমার দু’ভাইয়ের মর্যাদার প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে ওসীয়ত করছি। তাদের হক তোমার উপর বেশি। তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তোমার কোন কথা বলা উচিত নয়। এরপর তিনি হুসায়নকে সম্বোধন করে বলেন, তোমাদেরও উচিত মুহাম্মাদ ইবনুল হানাফিয়ার সাথে সব সময় সদাচরণ করা এবং তাকে স্নেহের দৃষ্টিতে দেখা। এরপর তিনি তার সাধারণ ওসীয়ত লিপিবদ্ধ করাতে থাকেন। তার নিঃশ্বাস ফুরিয়ে যাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছিল এবং তখন তাঁর মুখ থেকে শুধু ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ছাড়া আর কোন শব্দ বের হচ্ছিল না।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন