hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের ইতিহাস ১ম খণ্ড

লেখকঃ মাওলানা আকবর শাহ খান নজিববাদী

৪১৬
আযরাজ নামক স্থানে সালিশদ্বয়ের সিদ্ধান্ত
যখন ছয় মাসের অবকাশ প্রায় সমাপ্তির পথে তখন হযরত আলী (রা) হযরত আবদুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাস (রা)-কে বসরা থেকে ডেকে পাঠান এবং শুরায়হ ইব্‌ন হানী আল-হারিফীর নেতৃত্বে চারশো লোককে আবূ মূসা আশআরী (রা)-এর সাথে আযরাজের দিকে প্রেরণ করেন। ইব্‌ন আব্বাস (রা)-কে ঐ দলের সালাতের ইমাম নিয়োগ করা হয়। আলী (রা) শুরায়হ ইব্‌ন হানীকে বুঝিয়ে বলেন, যখন আযরাজে আমর ইবনুল ‘আস (রা)-এর সাথে তোমার সাক্ষাৎ হবে তখন তাকে বলো : সততা ও সত্যবাদিতা পরিত্যাগ করবেন না এবং কিয়ামতের কথা স্মরণ রাখবেন। অনুরূপভাবে হযরত মুআবিয়া (রা)-ও আমর ইবনুল ‘আস (রা)-এর সাথে চারশো লোক প্রেরণ করেন। এই ফায়সালা শোনার এবং আযরাজের বৈঠকে অংশগ্রহণের জন্য মক্কা এবং মদীনার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিকেও দাওয়াত করা হয়। তারা মুসলমানদের মধ্যকার এই মতানৈক্য দূর করার প্রচেষ্টায় শরীক হওয়ার উদ্দেশ্যে ঐ বৈঠকে যোগদান করতে অস্বীকার করেননি। অতএব হযরত আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন উমর, আবদুল্লাহ ইবনুয যুবায়র, সা‘দ ইব্‌ন ওয়াক্কাস (রা) প্রমুখ সাহাবী বৈঠকে যোগ দেন। আযরাজে একত্রিত হওয়ার পর ফায়সালা শোনার জন্য লোকেরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল। কিন্তু ফায়সালা ঘোষণার পূর্বে সালিশদ্বয়ের তো এ ব্যাপারে পরস্পর মত বিনিময়ের প্রয়োজন ছিল। তাছাড়া মক্কা-মদীনার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জন্যও অপেক্ষা করার প্রয়োজন ছিল।

আলী (রা) যখন আবূ মূসা আশআরী (রা)-কে কূফা থেকে আযরাজের দিকে পাঠাচ্ছিলেন তখন খারিজীদের পক্ষ থেকে হারকুস ইব্‌ন যুহায়র এসে তার কাছে নিবেদন করল, আপনি সালিসী ফায়সালা স্বীকার করে নিয়ে মস্তবড় ভুল করেছেন। এখনো তা থেকে বিরত হোন এবং শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য এগিয়ে যান। আমরা সবাই আপনার সাথে আছি। আলী (রা) উত্তরে বলেন, আমি কখনো আমার অঙ্গীকার ভঙ্গ করতে পারব না। এ হচ্ছে সেই হারকূস ইব্‌ন যুহায়র, যে ছিল হযরত উসমান (রা)-এর হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বিদ্রোহীদের একজন বিশিষ্ট নেতা এবং যখন খারিজীদলের অন্যতম নেতা হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। আবূ মূসা আশআরী (রা) কূফা থেকে রওয়ানা হওয়ার পর আলী (রা) তার কাছে প্রতিদিন চিঠি পাঠাতে থাকেন। অনুরূপভাবে প্রতিদিন আমর ইবনুল আসের কাছেও মুআবিয়া (রা)-এর চিঠি আসতে থাকে। ব্যাপারটির দিকে উভয় হাকিমেরই সতর্ক দৃষ্টি রাখার প্রয়োজন ছিল। আলী (রা)-এর পত্রাদি আবদুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাসের নামে এবং আমীরে মুআবিয়ার চিঠি আমর ইবনুল আসের নামে আসত। আমর ইবনুল আসের সঙ্গীদের মধ্যকার নিয়ম-শৃঙখলা ছিল খুবই সন্তোষজনক। তারা সকলেই ছিল তাঁর অনুগত। তাদের কোন ব্যক্তি জিজ্ঞেস করত না যে, মুআবিয়া (রা) আপনার কাছে কি লিখেছেন? কিন্তু আলী (রা)-এর পাঠানো চারশো ব্যক্তিরই অবস্থা ছিল এর ঠিক বিপরীত। তারা প্রতিদিন তার চিঠি আসার সাথে সাথে ইব্‌ন আব্বাসের চারপাশে ভিড় জমাত এবং প্রত্যেকেই জিজ্ঞেস করত, আলী (রা) আজকি লিখেছেন? ফলে তার সব কথাই সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ্যে জানাজানি হয়ে যেত। ইব্‌ন আব্বাস (রা) ভয়ানক বিপদের মধ্যে ছিলেন। উপস্থিত পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কিছু কিছু তথ্য গোপন রাখতে চাইতেন। কিন্তু তাতে লোকেরা তাঁর উপর অসন্তুষ্ট হত। এভাবে ক্রমান্বয়ে তার প্রায় সকল সঙ্গীই তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট হয় এবং প্রকাশ্যে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে থাকে যে, তিনি আলীর চিঠি গোপন করেন এবং আমাদের শোনাতে চান না।

যাহোক আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন উমর, আবদুর রহমান ইব্‌ন আবূ বকর, আবদুল্লাহ্ ইবনু যুবায়র, আবদুর রহমান ইবনুল হাব্‌স, আবদুর রহমান ইব্‌ন আবদে ইয়াগূস যুহরী, আবূ জাহম ইব্‌ন হুযায়ফা, মুগীরা ইব্‌ন শু‘বা, সা‘দ ইব্‌ন ওয়াক্কাস (রা) প্রমুখ গণ্যমান্য ব্যক্তি আযরাজে উপনীত হলে তাঁদের নিজের মধ্যে একটি বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তাতে আবূ মূসা আশআরী ও আমর ইবনুল আসও যোগদান করেন এবং ঐ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সামনেই তাদের পরস্পর কথাবার্তা শুরু হয়। আমর (রা) প্রথমে আবূ মূসাকে একথা স্বীকার করিয়ে নেন যে উসমান (রা)-কে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে। এরপর তাঁকে একথাও স্বীকার করিয়ে নেন যে, জ্ঞাতিভাই হওয়ার সুবাদে উসমান (রা)-এর হত্যার প্রতিশোধ দাবী করার অধিকার মুআবিয়ার রয়েছে। এ দু’টি কথার বিরুদ্ধে আবূ মূসা (রা) কখনো আপত্তি উত্থাপন করেন নি, বরং নির্দ্বিধায়ই তিনি তা স্বীকার করেন।

তারপর আমর ইবনুল ‘আস (রা) খিলাফতের ব্যাপারে আলোচনা শুরু করেন। তিনি বলেন, মুআবিয়া (রা) কুরায়শের একটি অতি অভিজাত ও প্রখ্যাত গোত্রের সাথে সম্পর্কিত। তিনি হচ্ছেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সহধর্মিণী উম্মে হাবীবা (রা)-এর ভাই। তিনি একাধারে সাহাবী ও কাতিবে ওয়াহী (ওয়াহী লিপিবদ্ধকারী)। এই কথাগুলো শুনে আবূ মূসা (রা) বলে উঠেন, মুআবিয়ার এই সমস্ত বৈশিষ্ট্য আমি অস্বীকার করি না। কিন্তু আলী (রা) ও অন্যান্য সম্মানিত ব্যক্তি বিদ্যমান থাকতে মুআবিয়ার হাতে খিলাফতের দায়িত্ব কীভাবে অর্পণ করা যেতে পারে? মুআবিয়ার উল্লিখিত বৈশিষ্ট্য তো আলী (রা)-এর মধ্যে আরো বেশী পরিমাণে বিদ্যমান। যেমন, তিনি আত্মীয়তার দিক দিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর অতি নিকটতম ব্যক্তি। তিনিও কুরায়শের একটি অভিজাত গোত্রের সাথে সম্পর্কিত এবং কুরায়শ বংশের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের অন্যতম। জ্ঞান, বীরত্ব, তাকওয়া প্রভৃতি গুণের দিক দিয়ে তো তিনি অনন্য। আমর (রা) বলেন, আমীরে মুআবিয়ার মধ্যে অধিকতর রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক যোগ্যতা রয়েছে। আর মূসা (রা) বলেন, তাকওয়া ও ঈমানদারীর মুকাবিলায় এই সমস্ত জিনিসের উল্লেখ করা চলে না। মোটকথা, এভাবে কথাবার্তা চলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত আবূ মূসা আশআরী (রা) বলেন, আমার তো অভিমত এই যে, আলী, মুআবিয়া উভয়কে খিলাফতের পদ থেকে অপসারণ করে আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন উমর (রা)-কেই খলীফা বানানো উচিত। আবদুল্লাহ ইব্‌ন উমর (রা) চোখ বন্ধ করে আপন চিন্তায় নিমগ্ন ছিলেন। এমনি সময়ে যখন নিজের নাম উচ্চারিত হতে শোনেন তখন চোখ খুলে উচ্চৈঃস্বরে বলে উঠেন, আমি এতে সম্মত নই। আমর (রা) তখন বলেন, তাহলে তুমি আমার ছেলে আবদুল্লাহকে মনোনীত করছ না কেন?

আবু মূসা বলেন, হাঁ, তোমার ছেলে আবদুল্লাহ্ অত্যন্ত পুণ্যবান বটে, কিন্তু তুমি তাকে এই যুদ্ধে শরীক করে ফিতনার মধ্যে নিক্ষেপ করেছ। এভাবে দীর্ঘক্ষণ আলাপ-আলোচনা চলার পরও যখন এমন কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছা গেল না যাতে উভয়ে একমত হতে পারেন তখন আমর (রা) এই অভিমত প্রকাশ করেন যে, যেহেতু মুআবিয়া ও আলীর পরস্পর বিরোধ ও যুদ্ধ বিগ্রহের কারণে সমগ্র মুসলমান আজ ভয়ানক বিপদের মধ্যে পতিত, অতএব এটাই শ্রেয় যে, আমরা তাদের উভয়কেই পদচ্যুত করব, এরপর সমগ্র মুসলমানকে অধিকার দেব, যেন তারা সম্পূর্ণ একমত হয়ে কিংবা সংখ্যাগরিষ্ঠের মত নিয়ে নিজেদের একজন খলীফা নির্বাচন করে। আমর (রা) আবূ মূসা (রা)-এর ঐ মত সমর্থন করেন। তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, বাইরে গিয়ে সাধারণ্যে এই ফায়সালার কথা জানিয়ে দেওয়া হবে। যদিও উভয় হাকিমই এ ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছিলেন, কিন্তু এই অভিমতও শংকামুক্ত ছিল না। কেননা আলী (রা) তার পদচ্যুতিকে কখনো মেনে নিতে পারতেন না। তাছাড়া মুআবিয়া (রা)-ও তার পিছনে সমগ্র সিরিয়ার সমর্থন এবং কিছু সংখ্যক সাহাবীর পৃষ্ঠপোষকতা থাকার কারণে ঐ ফায়সালা সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিতে পারতেন না। যাহোক, যখন ঘোষণা করা হল যে, এখনই সাধারণ সভায় উভয় হাকিমের ফায়সালা ঘোষণা করা হবে তখন অপেক্ষমাণ লোকেরা সঙ্গে সঙ্গে একটি জায়গায় সমবেত হয়ে গেল। সেখানে একটি মিম্বরও রাখা হল এবং উভয় হাকিম অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তির সাথে সেখানে এসে হাযির হলেন।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন