hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের ইতিহাস ১ম খণ্ড

লেখকঃ মাওলানা আকবর শাহ খান নজিববাদী

২৫
ব্যক্তিশাসন ও রাজতন্ত্র
যখন কোন ব্যক্তি রাজ্যের বা সিংহাসনের মালিক বনে বসে তখন রক্ত ও বংশের সম্পর্ক এবং সহজাত প্রবৃত্তি তাকে এ জন্যে উদ্বুদ্ধ করে যেন সে তার সন্তানকে তার ব্যক্তিগত সম্পদরাশির উত্তরাধিকারী করার সাথে সাথে তার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও সিংহাসনের উত্তরাধিকারী করে যায়। কিন্তু আসলে এটা তার ভুল বৈ কিছু নয়। কেননা, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা তার ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ছিল না বরং এটা ছিল একটা আমানত—যা দেশ ও জাতি তার উপর অর্পণ করে রেখেছিল। এ আমানতে খিয়ানত করে অপর কাউকে স্বেচ্ছায় তা হস্তান্তরিত করার অধিকার তাকে কে দিয়েছে? আমানত তার প্রকৃত মালিকের হাতেই প্রত্যর্পণ করতে হয়। তাই ঐ শাসকের পর শাসন ক্ষমতায় অন্য কাউকে আসীন করা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট জাতির দায়িত্ব। তা ঐ শাসকের দায়িত্ব নয়। কিন্তু বাদশাহ, খলীফা বা শাসক যেহেতু শক্তির সমস্ত উৎস ও কেন্দ্রের উপর ক্ষমতাবান থাকে তাই তাকে তার খিয়ানত থেকে বিরত রাখার জন্যে বিপুল সৎ সাহস ও মনোবলের প্রয়োজন। ইসলাম তার প্রতিটি অনুসারীর মধ্যে সেই সৎ সাহস ও মনোবল সৃষ্টি করতে চায় এবং হুযুর সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ও কুরআনুল কারীম সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে তা সৃষ্টি করেও ছিলেন। মুসলমানরা ইসলামের শিক্ষা থেকে যতই দূরে সরে যেতে লাগলো ততই তাদের মধ্যে সেই সৎ সাহসের অভাব দেখা দিতে লাগলো এবং শেষ পর্যন্ত তারা তা হারিয়ে ফেললো-যা দ্বারা তারা শক্তিমান শাসকদেরকে খিয়ানত থেকে বিরত রাখতে পারতো। ফলে তারা শাসকদের খিয়ানতের কাছেই আত্মসমর্পণ করে বসলো। অবশেষে খিলাফতে রাশিদার সোনালী যুগে মিটে যাওয়া ব্যক্তিতন্ত্র বা রাজতন্ত্রের পুনরাবির্ভাব ঘটলো মুসলিম সমাজে। এ বদ রুসূমের কাছে আত্মসমর্পণের কুফলও অনেকবারই মুসলমানদেরকে হাড়ে হাড়ে ভুগতে হয়েছে। উত্তরাধিকারীদেরকে শাসনভার হস্তান্তরের এ কুপ্রথার ফলে অনেক সময় এমন সব অযোগ্য অকর্মণ্য লোক মুসলমানদের শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে যাদের মামুলী ভদ্রলোকদের দরবারে বসার মত যোগ্যতাও ছিল না। অবশ্যই মুসলমানদের এমন একজন সুলতান বা খলীফা হওয়া উচিত—যিনি হবেন সমস্ত মুসলিম সমাজের যোগ্যতম ব্যক্তি বা অধিকাংশ মুসলমানের বা সকলের সমর্থনপুষ্ট ও সকলের দ্বারা নির্বাচিত। কোন ব্যক্তির সুলতান বা উত্তরাধিকারী হয়ে যাওয়াটা নিশ্চয়ই তার খলীফা হওয়ার যোগ্যতার নিশ্চিত প্রমাণ হতে পারে না।

মুসলমানদের মধ্যে যদি উত্তরাধিকারীদেরকে রাজ্যক্ষমতা হস্তান্তর তথা রাজতন্ত্রের এ কুপ্রথা জারি না হতো এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা খুলাফায়ে রাশিদীনের যুগের মতো পবিত্র আমানতের মর্যাদা নিয়ে অবশিষ্ট থাকতো তাহলে আজ ইসলামী হুকুমত ও মুসলমানদের বর্তমান দুরবস্থা আমাদের দেখতে হতো না। কিন্তু আল্লাহ্‌র মর্যী বুঝি এরূপই ছিল এবং অদৃষ্টের সে লিখনই বাস্তবায়িত হলো। মুসলিম সমাজ যদি গোড়াতেই এর বিরোধিতা করতো এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ব্যাপারটিকে সুসংরক্ষিত রাখতে ত্রুটি না করতো তা হলে প্রথম প্রথম হয়তো তাদেরকে এজন্যে বড় বড় ত্যাগ স্বীকার করতে হতো, তারপর কোন শাসকের এরূপ দুর্গতি হতো না যে নিজের পরে সে তার পুত্রকে শাসক মনোনীত করতে বা যুবরাজ বলে ঘোষণা করতে পারে।

হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রা)-এর একাধিক পুত্র রাজ্য পরিচালনার যোগ্যতাসম্পন্ন ছিলেন। কিন্তু তাঁর দৃষ্টিতে যেহেতু উমর ফারূক (রা)-ই মুসলমানদের মধ্যে যোগ্যতম ব্যক্তি বিবেচিত হয়েছেন, তাই তিনি তাকে শাসক নিযুক্তির পক্ষেই মুসলমানদেরকে সুপারিশ করেন। হযরত উমর (রা)-এর পুত্র হযরত আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন উমর নিঃসন্দেহে মুসলমানদের খলীফা হওয়ার যোগ্যতার অধিকারী ছিলেন। কিন্তু হযরত উমর (রা) যেহেতু রাজতন্ত্রের কুপ্রথাকে নির্মূল করতে আগ্রহী ছিলেন, তাই তিনি ওসীয়ত করে যান যেন অবশ্য তাঁর পুত্রকে খলীফা নির্বাচিত করা না হয়।

লোকে মূর্খতা ও অনভিজ্ঞতার দরুন ব্যক্তিতন্ত্র বা রাজতন্ত্রের কুফলাদি দর্শনে তার মৌল কারণ সম্পর্কে না জেনে সাধারণভাবেই এর বিরুদ্ধাচরণ করে গণতন্ত্রের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠে। ব্যক্তিতন্ত্র বা রাজতন্ত্রের যত কুফল আমাদের চোখে পড়ে তার মূল কারণ হচ্ছে রাজতন্ত্রের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যক্তিগত উত্তরাধিকারে পর্যবসিত হয়ে পড়ে এবং শাসক নির্বাচিত করার জনগণের অধিকারকে ছিনিয়ে নেয়া হয়। তাই যুক্তির কথা হলো, আমরা অকল্যাণের আসল হেতু বা উৎস উত্তরাধিকারকে রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে হস্তক্ষেপের সুযোগ দেবো না এবং পিতার পর পুত্র যদি প্রকৃতপক্ষে সমাজের যোগ্যতম ব্যক্তি না হয়ে থাকে তবে অবশ্যই তাকে আমাদের শাসক হতে দেব না। আর যদি প্রকৃতপক্ষে সে ব্যক্তিটিই রাজ্যের বা জাতির যোগ্যতম ব্যক্তি হয়ে থাকে, তবে জনসাধারণের সম্মতি বা রায় পাওয়ার পরই কেবল শাসকরূপে বরণ করা হবে। এটা কোথাকার বুদ্ধিমানের কথা যে, একটি ভুলের কবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে আরেকটি ভুলের শিকার হতে হবে। ব্যক্তিতন্ত্র বা রাজতন্ত্রে জনসাধারণের সৎ সাহসের অভাবের দরুনই বাদশাহদের জনগণকে শোষণ ও অত্যাচার করার সাহস বেড়ে যায়। কাউকে যোগ্যতম ব্যক্তি জেনে তার আনুগত্য করা এবং তার জুলুমের ভয়ে তার আনুগত্য করার মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য রয়েছে। একথাটি হয়তো এভাবে বোধগম্য হতে পারে যে, হযরত উমর (রা)-এর কোন কোন প্রাদেশিক গভর্নর বলেন, আমাদের কাছে এরূপ মনে হতো, হযরত উমর (রা)-এর এক হাত আমাদের উপরের চোয়ালের উপর, এবং অপর হাত আমাদের নীচের চোয়ালের উপর রয়েছে। মনে হতো, আমরা যদি একটুও ব্যতিক্রম করি, তবে তিনি তৎক্ষণাৎ আমাদের উভয় চোয়াল টেনে ছিঁড়ে ফেলে দিবেন। হযরত উমর ফারুক (রা)-এর আদেশ খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদের কাছে পৌঁছলো। তৎক্ষণাৎ তিনি প্রধান সেনাপতির পদ থেকে মামুলী সৈন্যের পর্যায়ে নেয়ে গেলেন। আর খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদের মতো বিজয়ী বীর বিনা বাক্য ব্যয়ে তা তাৎক্ষণিকভাবেই মেনে নিচ্ছেন। আবার অন্য দিকে দেখুন, প্রকাশ্য মিম্বরে উমর ফারূক (রা)-এর মত জাদরেল শাসককে চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে, আর মামুলী প্রজা তার আমানতদারী ও বিশ্বস্ততার পরীক্ষা নিচ্ছে। জনৈক অবলা মহিলা মোহরানার ব্যাপারে হযরত উমর ফারুক (রা)-এর খুতবা শুনে নিঃসংকোচে আপত্তি উত্থাপন করছে আর খলীফাও মিম্বরের উপর দাঁড়িয়ে প্রকাশ্যে অঙ্গীকার ব্যক্ত করলেন যে, মদীনার রমণীরা যদি এভাবে তাঁকে ভুল ধরিয়ে দেয়, তবে তিনি অবশ্যই তাদের সঙ্গত আপত্তির মর্যাদা রক্ষা করবেন। এবার চিন্তা করুন, এ কেমন ধরনের আনুগত্য-যা হযরত উমর ফারুক (রা)-এর জনগণ তার সাথে দেখিয়েছে। অপরদিকে পরবর্তী যুগের মোগল বাদশাহদের প্রতি প্রজা-সাধারণের আনুগত্যের নমুনাও লক্ষ্য করুন। কেবল পাঞ্জাব, সিন্ধু, দাক্ষিণাত্য ও বাংলার মত দূরবর্তী অঞ্চলের স্বাধীনচেতা জনগণই তাদের ফরমানের বিরুদ্ধাচরণ করেনি, বরং আগ্রা, এলাহাবাদ ও দিল্লীতেও শাহী ফরমানের যথার্থ তামিল হতো না।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন