hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের ইতিহাস ১ম খণ্ড

লেখকঃ মাওলানা আকবর শাহ খান নজিববাদী

৩২৭
নিহাওয়ান্দের যুদ্ধ
মাদায়েন ও জালুলা জয়ের পর ইয়ায্‌দেজিরদ ‘রাই’ নামক স্থানে বসবাস করতে থাকেন। কিন্তু সেখানকার শাসনকর্তা আবান জাদভিয়া ইয়ায্‌দেজিরদের এ অবস্থানকে তার রাষ্ট্রীয় অধিকার ও ক্ষমতার প্রতি হুমকিস্বরূপ মনে করে ইয়ায্‌দেজিরদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে মনস্থ করে এবং যখন এর চিহ্নাদি প্রকাশ পায় তখন ইয়ায্‌দেজিরদ ‘রাই’ থেকে ইসফাহান চলে যান। সেখানে কিছুদিন অবস্থান করার পর তিনি কিরমানের দিকে যাত্রা করেন। তারপর পুনরায় ইসফাহানে ফিরে আসেন। মুসলমানগণ যখন আহওয়ায প্রদেশ দখল করে নেন, তখন ইয়ায্‌দেজিরদ পূর্ব ইরান অর্থাৎ খুরাসানের মার্ভ শহরে চলে যান। সেখানে তিনি পুজা-অর্চনার উদ্দেশ্যে একটি অগ্নিকুণ্ড তৈরী করে নিশ্চিন্তভাবে বসবাস করতে থাকেন। তার ধারণা ছিল, আরবরা আর সম্মুখে অগ্রসর হবে না। কিন্তু মুসলিম বাহিনী কর্তৃক সমগ্র আহওয়ায দখল এবং হরমুযানকে বন্দী করে মদীনায় নিয়ে যাওয়ার সংবাদ যখন তার কানে গিয়ে পৌঁছে, তখন তিনি অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়েন। শেষ পর্যন্ত তিনি সমগ্র শক্তি নিয়োজিত করে মুসলমানগণের মূলোৎপাটনের উদ্দেশ্যে পুনরায় সেনা সংগ্রহে মনোনিবেশ করেন। তিনি বিভিন্ন অঞ্চলের শাসনকর্তা ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের কাছে চিঠি পাঠিয়ে মুসলমানগণের মুকাবিলায় তাদেরকে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করেন।

ইয়ায্‌দেজিরদের এ সমস্ত প্রচেষ্টার ফলে হঠাৎ যেন তাবারিস্তান, জুরজান, খুরাসান, ইসফাহান, হামাদান, সিন্ধু প্রভৃতি রাজ্যে ও প্রদেশে মুসলমানগণের বিরুদ্ধে ভীষণ রকমের যুদ্ধ প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। চতুর্দিক থেকে দলে দলে লোক এসে ইয়ায্‌দেজিরদের কাছে সমবেত হতে থাকে। ইয়ায্‌দেজিরদ ফিরূযকে (অপর বর্ণনা মতে মার্দান শাহকে) সেনাপতি নিয়োগ করে দেড় লক্ষ সৈন্যের একটি বিরাট বাহিনী নিহাওয়ান্দের দিকে প্রেরণ করেন। হযরত ফারূকে আযম (রা)-এর কাছে যখন এ সংবাদ পৌঁছে, তখন ইরানী বাহিনীর মুকাবিলা করার জন্য তিনি স্বয়ং নিহাওয়ান্দের দিকে রওয়ানা হতে মনস্থ করেন। কিন্তু হযরত আলী, হযরত উসমান গনী এবং হযরত তালহা (রা) এ ব্যাপারে তার সাথে দ্বিমত পোষণ করায় তিনি নিজে যুদ্ধাভিযানে অংশ গ্রহণ না করে নু‘মান ইব্‌ন মুকরিম (রা)-কে কূফায় অবস্থানকারী মুসলিম বাহিনীর সেনাপতি নিয়োগ করেন এবং তাকে নির্দেশ দেন : তুমি কূফার নিকটবর্তী কোন জলাশয়ের ধারে অবস্থান গ্রহণ কর। ঐ সময়ে হযরত ফারূকে আযম (রা) হযরত সা‘দ ইব্‌ন আবূ ওয়াক্কাস (রা)-কে মদীনা শরীফে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। হযরত সা‘দ (রা) তখন হযরত ফারুকে আযম (রা)-এর সাথেই ছিলেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি কুফায় কাকে আপনার স্থলাভিষিক্ত করে এসেছেন? তিনি জবাবে বললেন, হযরত আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন উতবান (রা)-কে। তখন হযরত ফারূকে আযম হযরত আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন আবদুল্লাহ ইব্‌ন উতবান (রা)-কে লিখেন : আপনি কূফার সেনাবাহিনীকে সংগঠিত করে হযরত হুযায়ফা (রা) ও ইব্‌ন ইয়ামান (রা)-এর নেতৃত্বে হযরত নাঈম ইব্‌ন মুকরিন (রা)-এর কাছে পাঠিয়ে দেন। উপরন্তু তিনি আহওয়াযে অবস্থানরত সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেন : আপনারা ফারিস ও ইসফাহানের পথে প্রতিরোধ সৃষ্টি করুন, যাতে নিহাওয়ান্দবাসীদের কাছে ইরানী সাহায্য পৌঁছতে না পারে। হযরত নু‘মান ইব্‌ন মুকরিন (রা)-এর কাছে যখন সৈন্যরা একত্র হলো, তখন তিনি তার ভাই হযরত নাঈম ইব্‌ন মুকরিন (রা)-কে অগ্রবাহিনীর, হযরত হুযায়ফাকে দক্ষিণ বাহিনীর এবং মুজাশি ইব্‌ন মাসঊদ (রা)-কে পশ্চাৎ বাহিনীর সেনাপতি নিয়োগ করেন। এ সমগ্র বাহিনীর সৈন্যসংখ্যা ছিল ত্রিশ হাজার। মুসলিম বাহিনী কূফা থেকে রওয়ানা হয়ে নিহাওয়ান্দের দিকে এগিয়ে যায় এবং সেখান থেকে আট মাইল দূরত্বে অবস্থান নেয়। ইরানী বাহিনীও তাদের দিকে এগিয়ে আসে। ইরানী বাহিনীর সৈন্য সংখ্যা ছিল দেড় লক্ষ।

বুধবার যুদ্ধ শুরু হয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। তবু জয়-পরাজয়ের কোন ফায়সালা হয় নি। শুক্রবার দিন ইরানী বাহিনী পুনরায় শহর ও শহর-প্রাচীরের অভ্যন্তরে চলে যায়। তারা শহরের বহির্ভাগে লোহার কাঁটা বিছিয়ে রেখেছিল, যার কারণে ইসলামী বাহিনী শহরের প্রাচীরের ধারে কাছেও ঘেষতে পারছিল না। অথচ, ইরানীরা যখন ইচ্ছা দরজা দিয়ে বের হয়ে মুসলমানদের উপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছিল। এ অবস্থা দেখে হযরত নু‘মান (রা) মুসলিম বাহিনীর বিভিন্ন সেনাপতিকে পরামর্শের উদ্দেশ্যে ডেকে পাঠান। প্রত্যেকেই তাদের মতামত পেশ করেন। শেষ পর্যন্ত হযরত তুলায়হা ইব্‌ন খালিদ (রা)-এর পরামর্শ সকলের কাছেই গ্রহণীয় হয়। সে অনুযায়ী ইসলামী বাহিনী সশস্ত্র ও সুশৃঙ্খল অবস্থায় শহর থেকে ছয়-সাত মাইল পিছিয়ে গিয়ে এক জায়গায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে এবং হযরত কা‘কা‘ (রা) একটি ক্ষুদ্র বাহিনী নিয়ে শহরবাসীদের উপর হামলা চালান। একটি ক্ষুদ্র বাহিনী দেখে ইরানীরা সাহসী হয়ে উঠে এবং তাদের মুকাবিলার জন্য শহর থেকে বেরিয়ে পড়ে। হযরত কা‘কা‘ (রা) ইরানীদের মুকাবিলা করতে করতে আস্তে আস্তে পিছনে হটতে থাকেন। ইরানীরা এ জয়ের খুশীতে দ্বিগুণ উৎসাহে মুসলমানগণকে হাঁকাতে হাঁকাতে দ্রুতবেগে এগিয়ে চলে। এভাবে অজান্তে তারা তাদের পরিখাসমূহ থেকে অনেক দূরে চলে যায় এবং মূল ইসলামী বাহিনীর নাগালের মধ্যে চলে আসে। এবার হযরত নু‘মান ইব্‌ন মুকরিন (রা) এবং সমগ্র ইসলামী বাহিনী এক সাথে তাকবীর ধ্বনি তুলে এমনভাবে ইরানী বাহিনীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে যে, তারা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পলায়ন করতে শুরু করে এবং মুসলমানগণ নির্বিঘ্নে তাদেরকে হত্যা করতে থাকে। সংঘর্ষ চলাকালে হযরত নু‘মান ইব্‌ন মুকরিন (রা) ভীষণভাবে আহত হয়ে ঘোড়া থেকে পড়ে গেলে তার ভাই হযরত নাঈম ইব্‌ন মুকরিন (রা) সাথে সাথে তার (নুমানের) পোশাক পরিধান করে ইসলামী পতাকা উর্ধ্বে তুলে ধরেন। ফলে মুসলিম বাহিনীর কেউই যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত জানতে পারে নি যে, তাদের প্রধান সেনাপতি শাহাদতবরণ করেছেন। ইরানী বাহিনী ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে পালাবার সময় তাদেরই বিছানো লোহার কাঁটায়ই বিদ্ধ হতে থাকে। শুধু এ সমস্ত কাঁটায় বিদ্ধ হয়েই কয়েক হাজার ইরানী প্রাণ ত্যাগ করে। ইরানী সেনাপতি নিহাওয়ান্দ থেকে পলায়ন করেন। এবার পলায়নকারীরা হামাদানে এসে সমবেত হয়। হযরত নাঈম (রা) ও হযরত কা‘কা‘ ওদের পশ্চাদ্ধাবন করতে করতে শেষ পর্যন্ত হামাদান অবরোধ করে ফেলেন এবং তা অতি সহজেই মুসলমানগণের দখলে চলে আসে। হযরত নু‘মান (রা)-এর শাহাদতের পর হযরত হুযায়ফা ইব্‌ন ইয়ামান (রা) ইসলামী বাহিনীর প্রধান সেনাপতি মনোনীত হন। তিনি নিহাওয়ান্দে পৌঁছে মালে গনীমত একত্রিত করেন এবং সেখানকার অগ্নিকুণ্ডের আগুনও নিবিয়ে দেন।

জনৈক অগ্নিপূজারী পুরোহিত অতি মূল্যবান হীরা-জহরতে ভর্তি একটি ছোট সিন্দুক, যা তার কাছে শাহী আমানত স্বরূপ রাখা হয়েছিল, স্বয়ং হযরত হুযায়ফা (রা)-এর হাতে তুলে দেয়। হযরত হুযায়ফা (রা) গনীমত-সামগ্রী মুজাহিদগণের মধ্যে বন্টন করেন এবং খুমুসের সাথে ঐ হীরা-জহরতের কাকনটিও হযরত সায়িব ইব্‌ন আকরা’ (রা)-এর মাধ্যমে হযরত ফারূকে আযমের কাছে প্রেরণ করেন। হযরত সায়িব ইব্‌ন আকরা’ (রা) হীরা-জহরত এবং সেই সাথে জয়ের সুসংবাদ নিয়ে পৌঁছেন। বেশ কয়েকদিন যাবত হযরত ফারূকে আযম (রা) মুসলিম বাহিনীর কোন সংবাদ না পেয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ছিলেন। তিনি সায়িবের মাধ্যমে বিজয় সংবাদ পেয়ে অত্যন্ত সন্তুষ্ট হন এবং হীরা-জহরতের সিন্দুকটি বায়তুল মালে জমা করে নেন। তিনি হযরত সায়িব (রা)-কে সঙ্গে সঙ্গে ফিরে যাবার নির্দেশ দেন। কিন্তু হযরত ফারূকে আযম (রা)-এর একজন দূত তার পিছনে পিছনে কূফায় প্রবেশ করেন এবং তাকে পুনরায় মদীনা তাইয়িবাতে ফিরিয়ে নিয়ে যান। হযরত ফারূকে আযম (রা) হযরত সায়িব (রা)-কে বলেন, আমি স্বপ্নে দেখলাম, এ হীরা-জহরত রাখার কারণে ফেরেশতারা আমাকে ধমকাচ্ছে। কাজেই, এগুলো আমি বায়তুল মালে রাখব না। তুমি বরং এগুলো নিয়ে যাও এবং বিক্রি করে যে অর্থ পাবে তা মুসলিম বাহিনীর মধ্যে বণ্টন করে দাও। হযরত সায়িব (রা) কূফায় গিয়ে এ হীরা-জহরত হযরত আমর ইব্‌ন হুরায়স (রা) মাখযুমীর কাছে দু’লাখ দিরহামে বিক্রি করে দেন এবং মুসলিম বাহিনীর মধ্যে সে অর্থ বণ্টন করে দেন। পরে আমর ইব্‌ন হুরায়স এ হীরা-জহরত ফারিসে নিয়ে গিয়ে চার লাখ দিরহামে বিক্রি করেছিলেন। হযরত ফারূকে আযম (রা)-এর হত্যাকারী আবূ লূলূ নিহাওয়ান্দের অধিবাসী ছিল এবং ঐ যুদ্ধেই সে মুসলমানগণের হাতে বন্দী হয়েছিল।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন