hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের ইতিহাস ১ম খণ্ড

লেখকঃ মাওলানা আকবর শাহ খান নজিববাদী

১২০
আকাবার দ্বিতীয় বায়‘আত
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এ কাফেলার আগমন সংবাদ আগেই পেয়ে গিয়েছিলেন। রাতের বেলায় তিনি ঘর থেকে বেরিয়েছেন এমন সময় চাচা আব্বাসের সাথে দেখা। আব্বাস (রা) তখনো মুসলমান না হলেও হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-কে তিনি অত্যন্ত ভালবাসতেন এবং তিনি তার প্রতি হামেশা সমমর্মী ছিলেন। কুরায়শদের ব্যাপক বিরোধিতার মধ্যেও পর্দার অন্তরালে তিনি যে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রতি সহানুভূতিশীল, তা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) জানতেন। হুযুর (সাঃ) তাঁকে সঙ্গে নিয়ে নিলেন। তিনি তাকে তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে জ্ঞাত করলেন। দু’জন রাতের আঁধারে আকাবা উপত্যকায় গিয়ে উপস্থিত হলেন।। মদীনা থেকে আগত কাফেলাটি সেখানে তার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এখানে শুধু মদীনা থেকে কেবল মুসলমানরাই হজ্জ করতে আসেননি, প্রাচীন প্রথা অনুসারে সেখানকার মুশরিকরাও হজ্জ করতে এসেছে। তারাও এসে মক্কার বাইরে তাঁবু গেড়েছিলো। কিন্তু আকাবার ঘাঁটিটি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সাথে সাক্ষাতের জন্যে নির্ধারিত ছিলো। সেখানে কেবল মদীনা থেকে আগত মুসলমান এবং তাঁদের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং ইসলামকে পছন্দ করতো এমন কিছু অমুসলিম ছিলেন। তাঁরা সকলেই হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জন্য উন্মুখ হয়ে প্রতীক্ষা করছিলেন। মদীনার অন্যান্য মুশরিক আকাবার এ সাক্ষাৎ সম্পর্কে ঘুণাক্ষরেও কিছু জানতো না। তারা তাদের মূল অবস্থান স্থলে ঘুমোচ্ছিল। তিনি আকাবায় পৌঁছে প্রতীক্ষারত মুসলমানদের সাথে সাক্ষাৎ করলেন। তাঁদের সাথে আলাপকালে তার মদীনায় চলে যাওয়ার আগ্রহের কথা শুনতে পেয়ে হযরত আব্বাস (রা) সময়োপযোগী ও জরুরী একটি ভাষণ দিলেন। তাতে তিনি বললেন :

হে মদীনাবাসীরা! মুহাম্মদ (সাঃ) এখানে তাঁর স্বগোত্রের সাথে আছেন। গোত্রের লোকজন তাঁর দেখাশোনা ও হিফাযত করে থাকে। তোমরা তাকে নিয়ে যেতে চাও ভাল কথা কিন্তু মনে রেখো, তোমাদেরকে তার দেখাশোনা ও হিফাযত করতে হবে। এ কিন্তু সহজসাধ্য কথা নয়, বলে রাখছি। তোমরা যদি বিরাট যুদ্ধের ঝুঁকি নিতে পার, তাহলেই কেবল তা সম্ভবপর। তোমরা যদি এরূপ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাক, তাহলে কেবল তাকে তোমাদের সঙ্গে নিয়ে যেতে পার, নতুবা তাকে সঙ্গে নেওয়ার কথাটিও উচ্চারণ করো না।

হযরত বারা ইব্‌ন মা‘রূর (রা) দাঁড়িয়ে বললেন : আব্বাস! আমরা আপনার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছি। এখন আমরা চাই যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-ও এ ব্যাপারে কিছু বলুন! তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-ও ভাষণ দিলেন। তিনি কুরআন মজীদের আয়াত পড়ে শোনালেন।

তাঁর ভাষণে হক্‌কুল্লাহ এবং হক্‌কুল ইবাদের বর্ণনা করলেন এবং তাঁকে সঙ্গে নিয়ে গেলে মদীনাবাসীদের উপর কি কি দায়িত্ব বর্তাবে তাও বর্ণনা করলেন। বারা ইব্‌ন মা‘রূর (রা) সব শুনে বললেন : আমরা এ সবের জন্যে প্রস্তুত। আবুল হায়ছামা ইব্‌ন তায়্যিহান (রা) বললেন : আপনি এটা অঙ্গীকার করুন যে, আপনি আমাদেরকে ত্যাগ করে স্বদেশে আবার চলে আসবেন না। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন : না, আমার বেঁচে থাকা এবং আমার মরে যাওয়া তোমাদের সাথে হবে। আবদুল্লাহ ইব্‌ন রাওয়াহা বললেন : এর বিনিময়ে আমরা কী পাবো ইয়া রাসূলাল্লাহ!

জবাবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন : জান্নাত এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি। আবদুল্লাহ বলে উঠলেন; ব্যস, সওদা হয়ে গেছে। এখন আপনিও কথা থেকে সরতে পারবেন না। আমরাও আমাদের কথা থেকে সরবো না। তারপর সকলে মিলে বায়‘আত হলেন। এ বায়‘আতে বারা ইব্‌ন মা‘রূর (রা) ছিলেন সকলের অগ্রগামী। এটাই আকাবার দ্বিতীয় বায়‘আত নামে বিখ্যাত। বায়‘আত সম্পন্ন হওয়ার পর আসআদ ইব্‌ন যুরারা সকলকে লক্ষ্য করে বললেন : লোক সকল! মনে রেখো, এ প্রতিজ্ঞার অর্থ হচ্ছে আমরা গোটা পৃথিবীর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্যে প্রস্তুত! সকলে সমস্বরে বলে উঠলো : প্রস্তুত। আমরা খুব ভাল করেই জানি যে, আমাদেরকে গোটা পৃথিবীর বিরুদ্ধে লড়তে হবে। তারপর হুযুর (সাঃ) তাঁদের মধ্যকার বারো জনকে নির্বাচিত করলেন এবং তাদেরকে ইসলাম প্রচারের বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে নিজের নকীব নিযুক্ত করলেন। তাদের নাম হলো।

১. হযরত আসআদ ইব্‌ন যুরারা (রা)

২. হযরত উসায়দ ইব্‌ন হুযায়র (রা)

৩. হযরত আবূল হায়ছাম ইবনুত তায়্যিহান (রা)

৪. হযরত বারা ইব্‌ন মা‘রূর (রা)

৫. হযরত আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন রাওয়াহা (রা)

৬. হযরত উবাদা ইব্‌ন সামিত (রা)

৭. হযরত সা‘দ ইবনুর রবী‘ (রা)

৮. হযরত সা‘দ ইব্‌ন উবাদা (রা)

৯. হযরত রাফি‘ ইব্‌ন মালিক (রা)

১০. হযরত আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন ‘আমর (রা)

১১. হযরত সা‘দ ইব্‌ন হায়ছামা (রা)

১২. হযরত মুনযির ইব্‌ন আমর (রা)

এ বারোজন সরদারের মধ্যে নয়জন ছিলেন খাযরাজ গোত্রের, আর বাকী তিনজন ছিলেন আওস গোত্রের। এ বারোজনকে লক্ষ্য করে তিনি বললেন :

“যেভাবে হযরত ঈসা (আ)-এর হাওয়ারিগণ যিম্মাদার ছিলেন, ঠিক তেমনি আমিও তোমাদেরকে তোমাদের স্বজাতিকে শিক্ষা দানের যিম্মাদারী অর্পণ করছি। আর আমি নিজে তোমাদের সকলের যিম্মাদাররূপে রইলাম।”

যে সময় আকাবার ঘাঁটিতে এ বায়‘আত কার্য সম্পন্ন হচ্ছিলো তখন পর্বতশীর্ষ থেকে একটি শয়তান মক্কাবাসীদেরকে লক্ষ্য করে চীৎকার করে বললো : দেখ, দেখ, মুহাম্মদ ও তার দলবল তোমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) ও মুসলমানগণ সেদিকে ভ্রূক্ষেপ মাত্র করলেন না। যখন সবকিছু চূড়ান্তভাবে ঠিকঠাক হয়ে গেলো, তখন হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) মদীনায় হিজরতের দিনকাল নির্ধারণের ব্যাপারটি আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশের উপর ছেড়ে দিলেন। তারপর একজন করে তারা নীরবে সে স্থান ত্যাগ করতে লাগলেন—যাতে কেউ তাদের এ সমাবেশ ও পরামর্শের কথা টের না পায়। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এবং হযরত আব্বাস (রা)-ও মক্কায় ফিরে আসলেন। কিন্তু ভোর না হতেই দেখা গেলো যে, রাতের এ পরামর্শের কথা কুরায়শদের কাছে জানাজানি হয়ে গেছে। তারা তৎক্ষণাৎ মদীনাবাসীদের তাঁবুতে গিয়ে উপনীত হলো এবং জিজ্ঞেস করলো যে, রাতের বেলা মুহাম্মদ (সাঃ) কি তোমাদের কাছে এসেছিলেন? মুশরিকরা নিজেরাই রাতের এ সমাবেশের ব্যাপারটি অবগত ছিলো না। এদের মধ্যে আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন উবায়্য ইব্‌ন সুলূলও ছিলো—যে পরবর্তীকালে মুনাফিকদের সর্দার হয়েছিল। সে সবিনয়ে বললো : মদীনাবাসীরা এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে আর আমি তা ঘুণাক্ষরেও টের পাবো না এমনটি তো হতে পারে না। কুরায়শরা তাতে সন্দেহমুক্ত হলো এবং সেখান থেকে ফিরে এলো।

মদীনাবাসীরা তখনই রওয়ানা হয়ে গেলো। কুরায়শরা মক্কায় ফিরে এসে বিশ্বস্ত সূত্রে পুনরায় রাতের সলা-পরামর্শের কথা জানতে পারলো। তারা পুনরায় সশস্ত্র হয়ে আকাবায় এসে পৌঁছলো। কিন্তু তখন মদীনার কাফেলা সেখান থেকে চলে গিয়েছে। কেবল হযরত সা‘দ ইব্‌ন উবাদা (রা) এবং হযরত মুনযির ইব্‌ন আমর (রা) কোনো প্রয়োজনে সেখানে থেকে গিয়েছিলেন। হযরত মুনযির (রা) কুরায়শদেরকে দেখেই স্থান ত্যাগ করলেন। ফলে তারা তার নাগাল পেলো না। কিন্তু হযরত সা‘দ ইব্‌ন উবাদা (রা) তাদের হাতে বন্দী হয়ে গেলেন। কুরায়শরা তাকে প্রহার করতে করতে মক্কায় নিয়ে এলো। হযরত সা‘দ ইব্‌ন উবাদা (রা) এ সম্পর্কে বলেন যে, মক্কাবাসীরা যখন আমাকে প্রহার করছিলো তখন লাল ও সাদা পোশাকধারী এক ব্যক্তিকে আমি আমার দিকে এগিয়ে আসতে দেখতে পেলাম। আমি মনে মনে ভাবলাম এ লোকটির কাছে হয়তো সদয় ব্যবহার পাবো।....... কিন্তু সে কাছে আসতেই আমাকে সজোরে একটা চপেটাঘাত করলো। তখনই আমার স্থির বিশ্বাস জন্মালো যে, এদের মধ্যে কোন ভাল লোক নেই—যার কাছে মানবতা বা বিবেকপূর্ণ ব্যবহার আশা করা যেতে পারে। এমন সময় আর এক ব্যক্তি এসে বললো, কি হে! কুরায়শদের মধ্যে তোমার কোন পরিচিত লোকজন নেই? আমি বললাম, হাঁ। যুবায়র ইব্‌ন মুত‘ঈম এবং হারিছ ইব্‌ন উমাইয়া—দু’জনেই আবদে মানাফের পৌত্র-আমার পরিচিত। তখন ঐ ব্যক্তি বললেন : তাহলে ঐ দু’জনের নাম ধরে তুমি সাহায্য প্রার্থনা করছ না কেন? আমাকে এ বুদ্ধি বাতলে দিয়ে তিনি ঐ দুই ব্যক্তির কাছে গিয়ে বললেন, খাযরাজ গোত্রের জনৈক ব্যক্তিকে বেদম প্রহার করা হচ্ছে আর লোকটি তোমাদের নাম নিয়ে নিয়ে সাহায্যের জন্যে ফরিয়াদ করছে। তারা জিজ্ঞেস করলেন লোকটির নাম কি? ঐ ব্যক্তি বললেন : ওর নাম সা‘দ ইব্‌ন উবাদা।... তখন তারা দু’জনে বললেন, হাঁ। ঐ ব্যক্তির যথেষ্ট ঋণ আমাদের উপর রয়েছে। আমরা ব্যবসা উপলক্ষে মদীনা গেলে ওর ওখানেই উঠি এবং সে আমাদের দেখাশোনা করে। তারপর ঐ দু’জন এসে আমাকে মারমুখী কুরায়শদের হাত থেকে উদ্ধার করে। আমি তক্ষণি ইয়াছরিবের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। এখানে উল্লেখ্য যে, আকাবার দ্বিতীয় বায়‘আতের বহু পূর্বেই আল্লাহ্ তা‘আলার তরফ থেকে প্রিয় নবী (সাঃ)-কে হিজরত করতে হতে পারে তা জানিয়ে দেয়া হয়েছিলো। এমন কি স্বপ্নে তিনি খেজুর গাছের সারি ঘেরা এক জায়গায় হিজরত করছেন দেখতে পান। পরে তিনি নিশ্চিত হন যে জনপদ হচ্ছে ইয়াছরিব (মদীনা)।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন