hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের ইতিহাস ১ম খণ্ড

লেখকঃ মাওলানা আকবর শাহ খান নজিববাদী

৪০২
হযরত তালহা (রা)-ও সরে পড়লেন
যুদ্ধের প্রারম্ভেই তালহা ও যুবায়র (রা) যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পৃথক হয়ে গিয়েছিলেন। বিভিন্ন গোত্রের অধিনায়ক ও ছোট খাটো নেতারা নিজ নিজ বাহিনী নিয়ে হযরত আয়িশা (রা)-এর পক্ষে যুদ্ধ করার জন্য অটল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। স্বয়ং হযরত আয়িশা (রা) চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন, যাতে কোনও উপায়ে যুদ্ধ বন্ধ হয়ে যায় এবং আপোস-রফারও একটা পথ বেরিয়ে আসে। অতএব এই পক্ষের তথা আহলে জামালের পক্ষের সৈন্যবাহিনীর পরিচালনার জন্য সত্যিকার অর্থে কোন অধিনায়কই নিয়োজিত ছিল না। তাছাড়া সাধারণ যোদ্ধারাও জানত না, তারা যে যুদ্ধ করছে তা আসলে হযরত উম্মুল মু’মিনীনের মনঃপূত কিনা। হযরত উম্মুল মু’মিনীন এবং তার সমগ্র বাহিনী হযরত আলী (রা) সম্পর্কে এই ধারণা করে বসেন যে, তিনি আপোস-মীমাংসার কথাবার্তা বলে তাদেরকে ধোঁকা দিতে চেয়েছেন এবং শেষ পর্যন্ত অন্যায়ভাবে তাদের উপর আকস্মিক হামলা করে বসেছেন। এমতাবস্থায় তারা তো তাদের বাহিনীকে আক্রমণ বা প্রতিরোধ থেকে রুখে রাখতে পারেন না। অপর দিকে বসরাবাসীরা একথা বিশ্বাস করতে লাগলো যে, হযরত আলী (রা) বসরাবাসীদেরকে হত্যা করে তাদের স্ত্রী-পুত্র কন্যাদেরকে দাসদাসীতে পরিণত করার যে গুজব রটেছিল তা আসলে গুজব নয়, সত্য। মোটকথা উভয় পক্ষের দশ হাজারেরও অধিক মুসলমান নিহত হল, অথচ শেষ পর্যন্ত কেউই জানতে পারল না যে, কি করে এই যুদ্ধ সংঘটিত হল। প্রত্যেক পক্ষ তার বিরুদ্ধ পক্ষকে জালিম ও দোষী সাব্যস্ত করতে থাকলো। যেহেতু স্বয়ং আলী (রা) নিজ বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন তাই তার পক্ষ থেকে বিপক্ষ দলের উপর এমন ভয়ানক হামলা চালানো হয় যে, পিছু হটা ছাড়া তাদের সামনে কোন পথই খোলা ছিল না। শেষ পর্যন্ত হযরত আয়িশা (রা)-এর উট হযরত আলী (রা)-এর বাহিনীর আওতার মধ্যে চলে আসে। উটের নাকদড়ি ছিল কা‘বের হাতে। তিনিই আয়িশা (রা)-কে পরামর্শ দিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়ে এসেছিলেন যাতে যুদ্ধের পরিবর্তে আপোস-রফার একটা পথ বেরিয়ে আসে। যখন হযরত উম্মুল মু’মিনীন দেখলেন যে, হামলারত যোদ্ধারা কোন মতেই থামছে না এবং তার উট রক্ষায় নিয়োজিত যেসব বসরাবাসী পিছপা হয়ে গিয়েছিল তারাও নব উদ্যমে অটল হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং উভয় পক্ষের মধ্যে অত্যন্ত জোরেসোরে তরবারি যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে তখন তিনি কা‘বকে নির্দেশ দিলেন, তুমি উটের নাকদড়ি ছেড়ে দিয়ে এবং কুরআন মজীদ উচিয়ে ধরে সামনের দিকে অগ্রসর হও এবং লোকদের কুরআন মজীদের ফায়সালার দিকে আহ্বান কর। তুমি উচ্চৈঃস্বরে ঘোষণা কর : আমরা কুরআনের ফায়সালা মানি, তোমরাও কুরআনের ফায়সালা মানো। কা‘ব (রা) সম্মুখে অগ্রসর হয়ে ঐ ঘোষণা দেন। তখন আবদুল্লাহ ইব্‌ন সাবার লোকেরা একসাথে তার উপর অসংখ্য তীর বর্ষণ করে এবং তিনি সাথে সাথে শহীদ হয়ে যান। এতে বসরাবাসীরা আরো বেশি ক্ষিপ্ত হয় এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই হযরত আয়িশা (রা)-এর উটের আশেপাশে লাশের স্তুপ জমে যায়। বসরাবাসীরা অনবরত নিহত হচ্ছিল, কিন্তু তারা বিপক্ষ দলের কোন যোদ্ধাকে আয়িশা (রা)-এর ধারে কাছে ঘেষতে দিচ্ছিলো না। আলী (রা) এই দৃশ্য দেখে সঙ্গে সঙ্গে বুঝে নিলেন যে, যতক্ষণ পর্যন্ত এই উট যুদ্ধক্ষেত্রে দৃশ্যমান থাকবে ততক্ষণ যুদ্ধের স্ফুলিঙ্গ নির্বাপিত হবে না। আয়িশা (রা)-এর উট আক্রমণের লক্ষ্য বস্তুতে পরিণত হয়েছিল। চতুর্দিক থেকে তাঁর শিবিকার উপর তীর বর্ষিত হচ্ছিল এবং তিনি উসমান হত্যাকারীদের জন্য বদদু‘আ করছিলেন।

আলী (রা) তার লোকদের নির্দেশ দিলেন : যেভাবে পার এই উটকে আঘাত কর। উট ভূমিতে লুটিয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধেরও পরিসমাপ্তি ঘটবে। বিদ্রোহীদের নেতা আশতার আলী (রা)-এর পক্ষ নিয়ে অত্যন্ত বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করছিল। এভাবে অন্যান্য বিদ্রোহী প্রশংসনীয়ভাবে লড়ে যাচ্ছিল। হযরত আলীর পক্ষ থেকে একের পর এক অত্যন্ত জোরদার হামলা চালানো হলেও আহলে জামালের পক্ষ থেকে অত্যন্ত বীরত্ব ও সাহসিকতার সাথে সব কয়টি হামলাই প্রতিহত করা হয়। আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন যুবায়র (রা) ও মারওয়ান ইব্‌ন হাকাম হামলা প্রতিরোধ করতে গিয়ে আহত হন। আবদুর রহমান ইব্‌ন আত্তাব, জানদুব ইব্‌ন যুহায়র, আবদুল্লাহ ইব্‌ন হাকীম প্রমুখ হযরত আয়িশার উট রক্ষা করতে গিয়ে শাহাদত বরণ করেন। শেষ পর্যন্ত হযরত আয়িশা (রা)-এর পক্ষীয়রা এমন ভয়ানক হামলা করে যে, উটের সম্মুখভাগ বহুদর পর্যন্ত একেবারে পরিষ্কার হয়ে যায়। আলী (রা) তার বাহিনীকে পিছপা হতে দেখে, পুনরায় জোরদার আক্রমণ চালান এবং সামনে এগিয়ে যান। উটের সম্মুখবর্তী যোদ্ধারা বেশ কয়েকবার আগে বেড়ে পুনরায় পিছনে হটে যায়। শেষ পর্যন্ত জনৈক ব্যক্তি সুযোগ পেয়ে তরবারি দ্বারা উটের পায়ে আঘাত করে। সঙ্গে সঙ্গে উটটি চীৎকার দিয়ে বসে পড়ে।

ঐ সময় কা‘কা‘ ইব্‌ন আমর (রা) উটের একেবারে নিকটে পৌঁছে গিয়েছিলেন। উটটি ভূলুণ্ঠিত হওয়ার সাথে সাথে আয়িশা (রা)-এর বাহিনী বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে আলী (রা)-এর বাহিনী উটটি ঘিরে ফেলে। আলী (রা) মুহাম্মদ ইব্‌ন আবূ বকর (রা)-কে, যিনি তার সাথেই ছিলেন—নির্দেশ দেন, তুমি তাড়াতাড়ি গিয়ে তোমার বোনের হিফাযত কর, কেউ যেন তাঁকে কোন প্রকার কষ্ট না দেয়। কা‘কা‘ ইব্‌ন আমর (রা), মুহাম্মদ ইব্‌ন আবূ বকর ও আম্মার ইব্‌ন ইয়াসির (রা) শিবিকার রশি কেটে তা একটি পৃথক জায়গায় নিয়ে রাখেন এবং পর্দার উদ্দেশ্যে তার উপর চাদর জড়িয়ে দেন। স্বয়ং আলী (রা)-ও সেখানে যান এবং শিবিকার নিকটবর্তী হয়ে আয়িশা (রা)-কে সালাম জানিয়ে বলেন, ‘মা! আপনি কুশলে আছেন তো? আল্লাহ্ তা‘আলা আপনার প্রতিটি ভ্রান্তি ক্ষমা করুন। হযরত আয়িশা (রা) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা তোমারও প্রতিটি ভ্রান্তি ক্ষমা করুন। এরপর আলী (রা)-এর বাহিনীর অধিনায়করা একের পর এক হযরত উম্মুল মু’মিনীনকে সালাম করার জন্য হাযির হন। তখন কা‘কা‘কে হযরত আয়িশা (রা) বলেন হায়! এই ঘটনার বিশ বছর পূর্বে যদি আমার মৃত্যু হয়ে যেত! কা‘কা‘ (রা) একথা হযরত আলী (রা)-এর কাছে বললে তিনিও বলে উঠেন, হায়, আজ থেকে বিশ বছর পূর্বে যদি আমারও মৃত্যু হয়ে যেত।

এই যুদ্ধ ‘জামাল যুদ্ধ’ নামে খ্যাত। কারণ হযরত আয়িশা (রা) যে জামালে (উটে) আরোহণ করে যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়েছিলেন সেটাই যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল। এই যুদ্ধে হযরত আয়িশা (রা)-এর পক্ষে যোদ্ধার সংখ্যা ছিল ত্রিশ হাজার, যার মধ্যে নয় হাজারই নিহত হয়। আর আলী (রা)-এর পক্ষে যোদ্ধার সংখ্যা ছিল বিশ হাজার, যার মধ্যে এক হাজার সত্তরজন নিহত হয়। আলী (রা) সকল নিহতের জানাযা পড়েন এবং সকলকে কবরস্থও করেন। সেনাছাউনি এবং যুদ্ধক্ষেত্রে যেসব মাল পাওয়া গিয়েছিল সেগুলো সম্পর্কে ঘোষণা প্রদান করা হয়; যে ব্যক্তি এসে কোন মাল নিজের বলে শনাক্ত করবে সে অবাধে তা নিয়ে যেতে পারবে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে হযরত উম্মুল মু’মিনীনকে তাঁর ভাই মুহাম্মদ ইব্‌ন আবূ বকর বসরায় নিয়ে গিয়ে আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন খালাফ খুযাঈর ঘরে সাফিয়্যা বিনতুল হারিছ ইব্‌ন আবূ তালহার কাছে রাখেন। পরদিন হযরত আলী (রা) বসরায় প্রবেশ করেন। সমগ্র বসরাবাসী তার হাতে বায়‘আত করে। এরপর আলী (রা) হযরত উম্মুল মু’মিনীনের খিদমতে গিয়ে হাযির হন। যেহেতু আবদুল্লাহ ইব্‌ন খালাফ এই যুদ্ধে নিহত হয়েছিলেন তাই তার মা আলী (রা)-কে দেখে অনেক কটু কথা বলেন। কিন্তু আলী (রা) তার কোন প্রতিবাদ করেন নি। তার কোন কোন সঙ্গীর কাছে বিষয়টি অস্বস্তিকর মনে হলেও আলী (রা) তাদের বলেন, যেহেতু মহিলারা প্রকৃতিগতভাবে দুর্বল হয়ে থাকে, তাই আমরা গোটা মহিলা সমাজকেই ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখি। আর এরা তো হচ্ছে মুসলিম মহিলা। অতএব এদের প্রত্যেকটি কথাই সহ্য করে নেওয়া উচিত। আলী (রা) হযরত উম্মুল মু‘মিনীন (রা)-এর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করেন, আপনার কোন কষ্ট হয় নি তো? তারপর সব বিষয়েরই একটা মিটমাট হয়ে যায়। আলাপ-আলোচনা কালে হযরত আলী (রা) যেমন নিজের পক্ষ থেকে ওযর পেশ করেন, তেমনি ওযর পেশ করেন হযরত আয়িশা (রা)-ও। আলী (রা) আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন আব্বাস (রা)-কে বসরার হাকিম (গভর্নর) নিয়োগ করেন। এরপর মুহাম্মদ ইব্‌ন আবূ বকরকে সফরের প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দেন। সফরের যাবতীয় আসবাব-সামগ্রী সংগ্রহ করে হিজরী ৩৬ সনের ১লা রজব তারিখে হযরত আলী (রা) বসরার চল্লিশজন নেতৃস্থানীয় মহিলা সমভিব্যাহারে হযরত আয়িশা (রা)-কে মুহাম্মদ ইব্‌ন আবূ বকর (রা)-এর সাথে বসরা থেকে বিদায় দেন। তিনি কয়েক ক্রোশ-পর্যন্ত হযরত হাসান ইব্‌ন আলী (রা)-কে তাঁর সঙ্গে পাঠান। উম্মুল মু’মিনীন প্রথমে মক্কায় যান। যিলহাজ্জ পর্যন্ত তিনি মক্কায়ই অবস্থান করেন এবং হজ্জ আদায় করার পর হিজরী ২৭ সনের মুহাম্মদ মাসে মদীনায় ফিরে আসেন।

জামাল যুদ্ধে উমাইয়া বংশের অনেকে অংশ গ্রহণ করেছিল। তারা সবাই আয়িশা (রা)-এর পক্ষেই যুদ্ধ করেছিল। যুদ্ধের পর মারওয়ান, উত্‌বা ইব্‌ন আবূ সূফিয়ান, মারওয়ানের ভাই আবদুর রহমান ও ইয়াহইয়া প্রমুখ বনূ উমাইয়ার সব লোক বসরা থেকে সিরিয়া চলে যায় এবং দামিশকে গিয়ে হযরত আমীরে মুআবিয়ার সাথে মিলিত হয়। আবদুল্লাহ ইবনুল যুবায়র (রা) যিনি জামাল যুদ্ধে আহত হয়েছিলেন, বসরায় আযদ গোত্রের এক ব্যক্তির ঘরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। হযরত আয়িশা (রা) আপন ভাই মুহাম্মদ ইব্‌ন আবূ বকর (রা)-এর মাধ্যমে তাকে ডেকে পাঠান এবং নিজের সাথে মক্কায় নিয়ে আসেন।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন