hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের ইতিহাস ১ম খণ্ড

লেখকঃ মাওলানা আকবর শাহ খান নজিববাদী

৪১৯
নাহ্‌রাওয়ান যুদ্ধ
খারিজীরা কূফা থেকে চলে যাওয়ার পর আলী (রা) কূফাবাসীদের সিরিয়া আক্রমণের জন্য উৎসাহিত করেন। তিনি প্রথমে আমীরে মুআবিয়াকে সিরিয়া থেকে উৎখাত করতে চাচ্ছিলেন। তিনি সিরিয়া অভিযানের উপর খারিজী ফিতনাকে অগ্রাধিকার দিতে চাচ্ছিলেন না। তিনি বসরায় ইব্‌ন আব্বাস (রা)-এর কাছে লিখেন, সিরিয়া অভিযানের জন্য যে পরিমাণ সৈন্য সরবরাহ সম্ভব অবিলম্বে তা পাঠিয়ে দাও। বসরা থেকেও খারিজীরা চলে গিয়েছিল এবং এটা হযরত আলীর পক্ষে ভালই হয়েছিল। কেননা এরা শহরে না থাকায় সেখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিরও কোন সম্ভাবনা ছিল না। বসরায় তখন ষাট হাজার যোদ্ধা বিদ্যমান ছিল। কিন্তু যখন ইব্‌ন আব্বাস (রা) লোকদেরকে আলী (রা)-এর চিঠি পড়ে শোনান এবং তাদেরকে সিরিয়া আক্রমণে উদ্বুদ্ধ করেন তখন তাদের মধ্য থেকে মাত্র তিন হাজার লোক তৈরি হয়, অবশিষ্টরা হযরত আলীর নির্দেশ যেন শুনেও শুনেনি। কূফার লোকেরাও যেন নিরাসক্ত হয়ে পড়েছিল। বসরার ঐ তিন হাজার যোদ্ধা হারিছা ইব্‌ন কুদামার নেতৃত্বে কূফা পৌঁছলে আলী (রা) কূফাবাসীদের একত্রিত করে একটি ভাষণ দেন। তাতে তিনি সকলকে যুদ্ধের জন্য অনুপ্রাণিত করেন। শেষ পর্যন্ত কূফাবাসীরা যুদ্ধের জন্য তৈরি হয়ে যায় এবং চল্লিশ হাজারেরও অধিক সৈন্য আলী (রা)-এর পতাকাতলে সমবেত হয়। তিনি খারিজীদেরও আর এক দফা তার সাথে যুদ্ধে শরীক হওয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করা সঙ্গত মনে করেন। তিনি নাহ্‌রাওয়ানে ইব্‌ন ওয়াহবের কাছে একটি চিঠি পাঠান। তাতে তিনি বলেন, তোমরা সিরীয়দের মুকাবিলা করার জন্য আমাদের কাছে চলে এসো। আমি আমার প্রথম সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সিরীয়দের সাথে যুদ্ধ করতে সংকল্পবদ্ধ। ইব্‌ন ওয়াহব আলী (রা)-এর চিঠি তার সঙ্গীদের পড়ে শোনায় এবং সকলের পরামর্শ অনুযায়ী তার নিম্নোক্ত উত্তর দেয়–

তুমি আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের হুকুমের বিরোধিতা করে মধ্যস্থতাকারী হাকিমদ্বয় নিয়োগ করেছিলে এবং এখন সিরীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চাচ্ছ। এটাও তুমি তোমার রিপুর তাড়নায় করছ। যদি তুমি তোমার নিজের কাফির হওয়ার কথা স্বীকার কর এবং সেজন্য তওবা কর তাহলে আমরা তোমার সাহায্যের জন্য প্রস্তুত আছি। অন্যথায় আমরা তোমার সাথে যুদ্ধ করতে রাযী নই।

এই চিঠি পাওয়ার পর আলী (রা) খারিজীদের সম্পর্কে একেবারে নিরাশ হয়ে যান। কিন্তু তিনি তার সিরিয়া অভিযানের পরিকল্পনা বাতিল করলেন না। তিনি খারিজীদের সঠিক পথে আনার আপ্রাণ চেষ্টা করেন, কিন্তু তারা কোন মতেই একটা আপোস-মীমাংসায় আসল না। তিনি যখন ওদেরকে বলতেন, তোমরাই তো আমাকে যুদ্ধ বন্ধ করতে বাধ্য করেছিলে, অতএব এখন কি করে তোমরা আমাকে দোষী সাব্যস্ত করছ, তখন ওরা বলত, আমরা আমাদের ভুল স্বীকার করছি, তুমিও তোমার ভুল স্বীকার করে নাও। আমরা জানি যে, আমরা ভুল করে কাফির হয়ে গিয়েছিলাম; কিন্তু তওবা করে তো পুনরায় মুসলমান হয়েছি। এভাবে তুমিও তওবা করে মুসলমান হয়ে যাও। তাহলে আমরা তোমার উপর কূফরীর যে ফতওয়া দিয়েছিলাম তা উঠিয়ে নেব। অন্যথায় আমরা তোমাকে কাফির বলেই বিশ্বাস করব এবং তোমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাব।

এই সব পাগলামী কথাবার্তা উপেক্ষা করে আলী (রা) সিরিয়া আক্রমণের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হতে যাচ্ছিলেন। এমন সময় তার কাছে সাহাবী আবদুল্লাহ ইব্‌ন খাব্বাব (রা)-এর শাহাদতের সংবাদ এসে পৌঁছে। ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ এই যে, হযরত আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন খাব্বাব (রা) এক সফরে ছিলেন। তিনি নাহরাওয়ানের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময় খারিজীদের একটি দল জানতে পারেন যে, তিনি একজন সাহাবী। অমনি তারা এসে তাকে প্রশ্ন করে, আবূ বকর ও উমর (রা) সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? তিনি উত্তর দেন, তাঁরা উভয়েই পুণ্যবান এবং আল্লাহর সম্মানিত বান্দা ছিলেন। এরপর তারা প্রশ্ন করে, আপনি উসমানের খিলাফতের প্রথম ও শেষ যুগ সম্পর্কে কি বলেন? আবদুল্লাহ ইব্‌ন খাব্বাব (রা) উত্তর দেন, তিনি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সত্যপন্থী ও ন্যায়বান ছিলেন। তারপর তারা প্রশ্ন করে, আলী সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? তিনি মধ্যস্থতাকারী হাকিম নিয়োগ করার পূর্বে এবং পরে কিরূপ ছিলেন? তিনি উত্তরে বলেন, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের হুকুমকে বোঝা এবং তার উপর আমল করার ব্যাপারে আলী (রা) তোমাদের চাইতে অনেক অগ্রগামী। খারিজীরা একথা শুনতেই রাগে বেসামাল হয়ে আবদুল্লাহ ইব্‌ন খাব্বাব, তাঁর স্ত্রী ও সঙ্গী-সাথীদের হত্যা করে। আলী (রা), এই সংবাদ পেয়ে বিস্তারিত অবস্থা জানার জন্য হারছ ইব্‌ন মুররাকে সেখানে পাঠান। কিন্তু খারিজীরা তাকেও নির্মমভাবে হত্যা করে। এই সংবাদের সাথে সাথে আলী (রা)-এর কাছে এই সংবাদও পৌঁছে যে, খারিজীরা এখন যাকেই পায়, যে তাদের সমমতাবলম্বী নয় তাকেই হত্যা করে। এতে আলী (রা)-এর বাহিনীর লোকেরা এই ভেবে শংকিত হন যে, যদি তারা সিরিয়ার দিকে চলে যায় তাহলে সেই সুযোগে খারিজীরা কুফা, বসরা তথা সমগ্র ইরাক দখল করে নেবে এবং তাদের সন্তান-সন্ততি ও পরিবার-পরিজনকে হত্যা করবে। আলী (রা)-এর এই ধারণা জন্মে যে, খারিজীরা কূফা ও বসরা দখল করে নিয়ে সিরিয়ার উপর হামলা করে লাভের চেয়ে বরং ক্ষতিই হবে বেশি। অতএব তিনি সিরিয়া যুদ্ধ মুলতবি রেখে খারিজীদের দমনে রওয়ানা হন এবং নাহরাওয়ানের নিকটবর্তী হয়ে তাদের কাছে নিম্নোক্ত পয়গাম পাঠান।

তোমাদের মধ্যে যারা আমাদের ভাইদের হত্যা করেছ তাদের আমাদের হাতে সমর্পণ কর। আমরা তাদেরকে কিসাসস্বরূপ হত্যা করব এবং তোমাদেরকে তোমাদের অবস্থার উপর ছেড়ে দিয়ে সিরিয়া রওয়ানা হব। যতক্ষণ আমরা সিরিয়া-যুদ্ধে লিপ্ত থাকব আশা করি সেই সময়ের মধ্যে আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের সত্য পথে নিয়ে আসবেন।

এরপর আলী (রা) একের পর এক বেশ কয়েকজন গণ্যমান্য সাহাবীকে খারিজীদের কাছে পাঠান যাতে তারা ওয়ায-নসীহত ও উপদেশ প্রদানের মাধ্যমে তাদেরকে সঠিক পথে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। তিনি স্বয়ং খারিজীদের একদল প্রতিনিধিকে ডেকে পাঠিয়ে অনেক নসীহত করেন। তিনি তাদেরকে বলেন, মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ যদি ভুল হয়ে থাকে তাহলে সেজন্য তোমরাই দায়ী। যাহোক অতীতে যা কিছু ঘটেছে তা ভুলে যাও এবং আমার সাথে সিরিয়া অভিযানে চল। খারিজীরা প্রতিবারই ঐ একই উত্তর দেয় : নিঃসন্দেহে আমরা আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের হুকুমের বিরোধিতা করে কাফির হয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু তওবা করে পরে আবার মুসলমান হয়েছি। এখন তুমিও যতক্ষণ পর্যন্ত তোমার অপরাধ স্বীকার করে তওবা না করবে ততক্ষণ কাফিরই থেকে যাবে এবং অনুরূপ অবস্থায় আমরা সর্বক্ষণ তোমার বিরোধিতা করতে থাকব। আলী (রা) বলেন আমি আল্লাহর উপর ঈমান এনেছি, হিজরত করেছি এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করেছি। এমতাবস্থায় কি করে নিজেকে কাফির বলব? শেষ পর্যন্ত তিনি খোদ খারিজী বাহিনীর একেবারে সন্নিকটে চলে যান এবং তাদেরকে উপদেশ দিতে থাকেন। কিন্তু সাধারণ খারিজীরা তার উপদেশে প্রভাবিত হতে পারে এই আশংকায় তাদের নেতারা উচ্চৈঃস্বরে তাদের অনুসারীদের এই বলে উপদেশ দিতে থাকে—

তোমরা কখনো আলীর কথা শুনবে না এবং তার সাথে কথাও বলবে না। বরং তোমাদেরকে, একদিন যে আল্লাহর সম্মুখীন হতে হবে সে সম্পর্কে ভয় কর—অর্থাৎ যুদ্ধ শুরু করে দাও।

এই অবস্থা লক্ষ্য করে আলী (রা) সেখান থেকে পিছিয়ে আসেন এবং নিজ বাহিনীকে বিন্যস্ত করে প্রত্যেকটি খণ্ড বাহিনীর জন্য এক একজন অধিনায়ক নিয়োগ করেন। তিনি হযরত আবূ আইয়ুব আনসারী (রা)-কে পতাকা দিয়ে বলেন, আপনি এই পতাকা নিয়ে একটি উচ্চ ভূমিতে দাঁড়ান এবং উচ্চৈঃস্বরে ঘোষণা দিন : “যে ব্যক্তি যুদ্ধ না করে আমাদের কাছে আসবে তাকে নিরাপত্তা প্রদান করা হবে। আর যে ব্যক্তি কূফা অথবা মাদায়েনের দিকে চলে যাবে সেও নিরাপদ। এই ঘোষণা শুনে কিছু লোক কূফার দিকে এবং কিছু লোক মাদায়েনের দিকে চলে যায়। কিছু লোক এসে আলী (রা)-এর বাহিনীতেও যোগ দেয়। শেষ পর্যন্ত খারিজীদের বাহিনীতে এক-তৃতীয়াংশ লোক অবশিষ্ট থাকে। এই যুদ্ধে খারিজীদের প্রভাবশালী নেতা আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন ওয়াহব, যায়দ ইব্‌ন হুসায়ন, হারকূস ইব্‌ন যুহায়র, আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন শাজার, শুরায়হ্ ইব্‌ন আদানা প্রমুখ নিহত হয় এবং শুধু নয়জন খারিজী কোন মতে পালিয়ে গিয়ে প্রাণ রক্ষা করে। হযরত আলী (রা) খারিজীদের লাশসমূহ দাফন না করে সেই অবস্থায়ই ফেলে রেখে সেখান থেকে চলে আসেন।

ঐ যুদ্ধে বাহ্যত খারিজীদের সম্পূর্ণ শক্তি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। তাই এখন আর ওদের দিক থেকে কোন আশংকা বাকী ছিল না। হযরত আলী (রা) নাহরাওয়ান যুদ্ধ শেষ করে যখন সিরিয়া অভিমুখে রওয়ানা হওয়ার সংকল্প নেন তখন আশআস ইব্‌ন কায়স তাঁর কাছে নিবেদন করে : আপনি অনুগ্রহ করে আপাতত সিরিয়া অভিযান মুলতবি রেখে সৈন্যদেরকে কিছুদিন বিশ্রাম গ্রহণের সুযোগ দিন। কিন্তু তিনি একথা পছন্দ করেন নি। তিনি নাখীলায় এসে অবস্থান নেন এবং নির্দেশ দেন, সিরীয়দের উপর বিজয় লাভ করে ফিরে না আসা পর্যন্ত যেন কেউ কূফায় না যায়। কিন্তু লোকেরা তাঁর এই নির্দেশ মানেনি। তারা ছাউনি ত্যাগ করে নিজ নিজ ঘরে চলে যায়। আলী (রা) যখন দেখেন যে, ছাউনি একেবারে শূন্য হয়ে গেছে তখন তিনি নিজেও কূফায় চলে যান এবং সেখানে গিয়ে সব নেতাকে একত্রিত করে তাদের কাছে এই দায়িত্বহীনতা ও আরামপ্রিয়তার কারণ জিজ্ঞেস করেন। অতি অল্প সংখ্যক লোকই তার কথা শুনে এবং সিরিয়া আক্রমণের ব্যাপারে সম্মতি প্রকাশ করে বাকী সবাই নীরব থাকে। এরপর তিনি সকলকে একত্রিত করে সিরিয়া অভিযানের জন্য তাদেরকে অনুপ্রাণিত করেন। সকলে তার বক্তৃতা নীরবে শুনল বটে, কিন্তু যুদ্ধের ব্যাপারে কোন আগ্রহ দেখাল না। তিনি এই অবস্থা দেখে নীরব থাকতে বাধ্য হন। এরপর তিনি আর সিরিয়া আক্রমণ করতে পারেন নি।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন