hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের ইতিহাস ১ম খণ্ড

লেখকঃ মাওলানা আকবর শাহ খান নজিববাদী

৭২
দ্বিতীয় অধ্যায় হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ভোর হলো
সূর্যোদয়ের প্রাক্কালে পূর্ব গগনে হালকা আলোর আভা দেখা দিতে শুরু করে। উপরেই বর্ণিত হয়েছে, গোটা বিশ্ব তখন অজ্ঞতা ও কুফরের ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন ছিল। সেই বিশ্বজোড়া ঘন আঁধার রাতের অবসানে সূর্যোদয়ের শুভবার্তা ঘোষণার জন্যে ভোরের প্রথম আভা দেখা দিল। যে আরব ভুমি অন্ধকারের কেন্দ্র হয়ে গিয়েছিলো আর মরুপ্রান্তরে শিরক ও পাপের জোড় তুফান বয়ে চলছিলো। সেই আরব ভূমিতেই এমন কিছু আলামত জাহির হতে লাগলো যার দ্বারা প্রতীয়মান হচ্ছিল যে, অচিরেই নবুওয়াত-সূর্য উদিত হতে যাচ্ছে।

আরবের জাতিসমূহ হাজার হাজার বছর ধরে লাঞ্ছনা, বিড়ম্বনা, অজ্ঞতা ও গোমরাহীর মধ্যে জীবন-যাপন করে আসছিল। কিন্তু মহানবী (সাঃ)-এর নবুওয়াত লাভ নয় বরং তাঁর জন্মগ্রহণের সময় থেকেই আরব গোত্রসমূহের মধ্যে অভিজাতসুলভ প্রবণতা এবং পাপাচার ও নীচতার প্রতি ঘৃণার উদ্রেক হতে শুরু করে। ওয়ারাকা ইব্‌ন নাওফিল ইব্‌ন আসাদ ইব্‌ন আবদুল উযযা, উসমান ইবনুল হুওয়ায়রিছ ইব্‌ন আসাদ, যায়দ ইব্‌ন আমর ইব্‌ন নুফায়ল (উমর ইবনুল খাত্তাবের চাচা), উবায়দুল্লাহ্ ইব্‌ন জাহাশ প্রমুখ কতিপয় ব্যক্তি একত্রে সম্মিলিত হয়ে নিজেদের ধর্মবিশ্বাস ও আচার-আচরণ সম্পর্কে পর্যালোচনা ও চিন্তা-ভাবনা শুরু করেন। অবশেষে সকলেই এ ব্যাপারে একমত হন যে, পাথর ও গাছপালার পূজা বর্জনীয়। তারা তখন সঠিক ইবরাহীমী দীনের খোঁজে বিভিন্ন স্থানের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে পড়েন।

ওয়ারাকা ইব্‌ন নাওফিল খ্রিস্টীয় ধর্মে দীক্ষিত হন এবং অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে তাওরাত, ইনজীল প্রভৃতি আসমানী কিতাব অধ্যয়ন করেন। উবায়দুল্লাহ্ ইব্‌ন জাহাশ সমতে অটল থাকেন। অর্থাৎ দীনে হানীফ তথা সত্য ধর্মের সন্ধানে ব্যাপৃত থাকেন। ইসলামের অভ্যুদয় পর্যন্ত তাঁর এ অনুসন্ধিৎসা অব্যাহত থাকে। অবশেষে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং আবিসিনিয়ায় হিজরত করেন। সেখানে গিয়ে তিনি খ্রিস্ট ধর্মের দিকে ঝুঁকে পড়েন। উসমান ইব্‌ন হুওয়ায়রিছ রোম সম্রাটের দরবারে গিয়ে খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষিত হয়ে পড়েন। যায়দ ইব্‌ন আমর ইয়াহূদ-নাসারাও হলেন না। আবার মূর্তিপূজায় যোগ দিলেন না। তিনি রক্ত এবং মৃত জন্তু ভক্ষণ নিজের জন্যে হারাম করে নেন। তিনি আত্মীয়তা সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং নরহত্যা থেকেও বিরত থাকেন। যখন কেউ তাকে ধর্মের ব্যাপারে প্রশ্ন করতো তখন তিনি জবাব দিতেন আমি ইবরাহীম (আ)-এর প্রভুর উপাসনা করি। তিনি মূর্তিপূজার নিন্দাবাদ করতেন এবং নিজ সম্প্রদায়ের লোকজনকে ভর্ৎসনা করতেন এবং তাদেরকে সদুপদেশ দিতেন। তার মুখে প্রায়ই শোনা যেতো :

اللهم او اني اعلم اى الوجه لا احب اليك لعبادتك و لكن لا اعلم .

হে আল্লাহ! যদি আমি নিশ্চিতভাবে জানতে পারতাম যে, কিভাবে তোমার ইবাদত করতে হবে তবে আমি অবশ্যই তোমার ইবাদত করে তোমার সন্তুষ্টি হাসিল করতাম। কিন্তু আমি তো সে সম্পর্কে অজ্ঞ।

এ কথাগুলো বলেই তিনি সিজদায় চলে যেতেন। গণস্কার ও জ্যোতিষীরাও বলাবলি করতে লাগলো যে, আরব দেশে এক মহান নবীর আবির্ভাব হতে যাচ্ছে। অচিরেই তাঁর রাজত্বের সূচনা হবে।

উপরেই বর্ণিত হয়েছে যে, আরব দেশে ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানরাও বসবাস করতো। তাদের ধর্মযাজকরাও তাওরাত, ইনজীলের সু-সমাচার জনসমক্ষে বর্ণনা করতে লাগলেন যে, অচিরেই আরব ভূমিতে আখিরী যমানার নবীর অভ্যুদয় হতে যাচ্ছে।

স্বল্পকালের জন্যে ইয়ামান দেশ আবিসিনিয়া সম্রাটের করতলগত থাকে। আবদুল মুত্তালিবের আমলেও ইয়ামান এলাকাটি উক্ত সম্রাটের অধীনে ছিলো। সে সময় আবরাহা ছিলো আবিসিনিয়া রাজ্যের পক্ষ থেকে ইয়ামানের শাসনকর্তা। সে ইয়ামানে একটি উপাসনালয় নির্মাণ করে আরববাসীদেরকে কা‘বার পরিবর্তে তার সে উপাসনালয়ে হজ্জ করার জন্যে উদ্বুদ্ধ করে। কিন্তু তার সে উদ্দেশ্য সফল হলো না বরং সুযোগ বুঝে কেউ একজন তার সে উপাসনা-মন্দিরকে অবমাননার উদ্দেশ্যে সেখানে মলত্যাগ করে। তার প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে আবরাহা মক্কা আক্রমণ করে এবং খানা কা‘বা ধ্বংসের জন্য অগ্রসর হয়। তার সেনাদলে হাতিও ছিল বিধায় আরববাসীরা সে বাহিনীর নামকরণ করে আসহাবুল-ফীল এবং সে বছরের নাম দেয় আম-আলফীল বা হস্তীবর্ষ। মক্কার উপকণ্ঠে পৌঁছে আবরাহা যখন তার স্থাপন করলো তখন মক্কাবাসীরা ভীত-সন্ত্রস্ত হলো। কেননা, সে বাহিনীর মুকাবিলা করার সাধ্য তাদের ছিল না। তারা সকলে একত্র হয়ে আবদুল মুত্তালিবকে আবরাহার দরবারে গিয়ে তার একটা বিহিত করার জন্যে গিয়ে ধরলো। আবদুল মুত্তালিব আবরাহার কাছে গিয়ে পৌঁছলেন। তাঁর আভিজাত্যের ছাপমাখা গাম্ভীর্যপূর্ণ চেহারা দর্শনে এবং তাঁর সর্দারীর পরিচয় পেয়ে আবরাহা অভিভূত হলো এবং তাঁকে মর্যাদার আসনে উপবিষ্ট করে তার প্রতি স্ক্রম প্রদর্শন করলো। সে তার আগমনের কারণ জিজ্ঞেস করলো। জবাবে তিনি বললেন : আপনার সৈন্যরা আমার (চল্লিশটি, মতান্তরে দু’শটি) উট নিয়ে এসেছে। দয়া করে তা ফিরিয়ে দিন। আবরাহা বিস্ময়ের সাথে বললো : আমি তো আপনাকে একজন বিজ্ঞ লোক বলে মনে করতাম। কিন্তু এখন দেখছি আমার সে ধারণা ভুল। আপনি জ্ঞাত আছেন যে, আমি খানা কা‘বা ধ্বংস করার জন্যে এসেছি। আপনি নিজের উট উদ্ধারের জন্যে বেশ সচেষ্ট, কিন্তু কা‘বা রক্ষার কোন তদবিরই আপনি করছেন না। আবদুল মুত্তালিব মুখের উপর জবাব দিলেন।

أنا رب الا بل وللبيت رب يمنعه .

আমি তো কেবল আমার উটের প্রভু। ঐ ঘরেরও একজন প্রভু আছেন। তার ঘর রক্ষার ব্যবস্থা তিনি নিজেই করবেন।

জবাব শুনে আবরাহা ক্ষেপে গেলো। সে বললো, “আচ্ছা, দেখা যাবে মালিক (রাব্বুল বায়ত) কি করে আমাকে বিরত রাখে আর কিভাবে সে তার ঘর রক্ষা করে।”

তারপর তার বাহিনীর উপর ধ্বংস নেমে এলো এবং তারা ভক্ষিত তৃণের মতো নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলো। আবরাহার প্রতি উচ্চারিত আবদুল মুত্তালিবের এ জবাব এবং তারপর তার এ শিক্ষাপ্রদ ধ্বংস ছিলো আরববাসীদের জন্যে এক বিরাট উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এ ঘটনা আরববাসীদের মনে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি করে। লোকজন এবার অত্যাচার অবিচার খুন-খারাবি করতে রীতিমত ভয় পেতে লাগলো।

আসহাবুল ফীল বা হস্তী বাহিনীর এ ঘটনার অব্যবহিত পরেই ইয়ামান আবিসিনিয়া অধিপতির শাসন-শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়। এবার সাইফ ইব্‌ন যী-ইয়ান ইয়ামানের শাসন ক্ষমতা দখল করলেন। আবদুল মুত্তালিব কতিপয় কুরায়শ নেতাকে সঙ্গে নিয়ে অভিনন্দন জ্ঞাপন করতে ইয়ামানে গিয়েছিলেন।

সাইফ ইব্‌ন যী-ইয়ামন তার জ্ঞানানুসারে আবদুল মুত্তালিবকে এ সুসংবাদ দেন যে, আখিরী যামানার যে নবীর আগমনের জন্যে পৃথিবীর প্রতিটি দেশ প্রতিটি জাতি উন্মুখ হয়ে অধীর প্রতীক্ষায় দিন কাটাচ্ছে তিনি হবেন তোমারই বংশধর। একথাটি ব্যাপকভাবে প্রচার হয়ে যায়। প্রতিনিধিদলের প্রতিটি সদস্য ভাবতে থাকেন যে, সেই প্রতীক্ষিত নবী তারই বংশে জন্মগ্রহণ করবেন। তারা আহলে কিতাবসম্প্রদায়ের ধর্মযাজক ও সন্ন্যাসীদের কাছে গিয়ে। আখিরী যামানার নবীর নিদর্শনসমূহ সম্পর্কে খুঁটিনাটি ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জিজ্ঞেস করতে থাকে। উমাইয়া ইব্‌ন আবী খালফের ধারণা হয় যে, এই আখিরী নবী বুঝি তিনি নিজেই হবেন। তিনি আবূ সুফিয়ান ইব্‌ন হাবকে সঙ্গে নিয়ে শাম দেশের দিকে যাত্রা করেন, এবং কোন একজন ধর্মযাজকের নিজের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। কিন্তু সেখান থেকে নৈরাশ্যব্যঞ্জক জবাব আসে।

দুনিয়ায় যখনই কোন বড় নবী-রাসূলের নবুওয়াত লাভ বা জন্ম গ্রহণের ঘটনা ঘটেছে তখনই আকাশে ঘন ঘন এবং অস্বাভাবিক হারে নক্ষত্র পতনের দৃশ্য পরিদৃষ্ট হয়েছে। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের জন্মের প্রাক্কালে অনুরূপ ঘন ঘন ও অস্বাভাবিক হারে নক্ষত্র পতনের ঘটনা ঘটতে থাকে। আহলে কিতাব সম্প্রদায়ের ধর্মযাজকগণ তখন একে আখিরী যামানার নবীর আবির্ভাবের পূর্বলক্ষণ বলে অভিহিত করেন। সত্যি সত্যি হস্তীবর্ষের ৯ই রবিউল আউয়াল মুতাবিক পারস্য সম্রাট কিসরার চল্লিশতম অভিষেক বর্ষে মুতাবিক ৫৭১ খ্রিস্টাব্দের ২২ শে এপ্রিল সোমবার সুবহে সাদিকের পর ও সূর্যোদয়ের পূর্বে আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ভূমিষ্ঠ হন।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন