hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের ইতিহাস ১ম খণ্ড

লেখকঃ মাওলানা আকবর শাহ খান নজিববাদী

১৪৯
যুদ্ধের ময়দানের দৃশ্য
এরপর নিশ্চিন্ত হয়ে তিনি পাহাড় থেকে নেমে এলেন। যুদ্ধের ময়দানে শহীদানের লাশগুলো দাফন করা হলো। ৬৫ জন আনসার এবং ৪ জন মুহাজির শাহাদত বরণ করেছিলেন। কাফিররা কোনো কোনো শহীদের লাশ টুকরো টুকরো করে ফেলেছিল। আবূ সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দা বিন্‌ত উত্‌বা সুযোগ পেয়ে হযরত আমীর হামযা (রা)-এর লাশের ‘মুছলা’ করলো। অর্থাৎ তার নাক, কান প্রভৃতি কেটে চেহারা বিকৃত করে ফেলেছিল। চক্ষু বের করে নিয়েছিল।

বুক চিরে কলিজা বের করে দাঁত দিয়ে চিবালো। কিন্তু গিলতে পারলো না। উগরে ফেলে দিলো। এজন্য সে ‘কলিজাখোর’ নামে কুখ্যাত হলো। হযরত যুবায়র ইবনুল আওয়াম (রা)-এর মাতা এবং হযরত হামযা (রা)-এর সহোদরা ভগ্নী হযরত সাফিয়্যা (রা) তাঁর ভাইয়ের লাশ দেখার জন্য এলেন। হযরত নবী করীম (সাঃ) যুবায়র (রা)-কে বললেন, সাফিয়্যা (রা)-কে লাশের কাছে যেতে বারণ করো। তিনি বারণ করলে হযরত সাফিয়্যা (রা) বললেন, আমি জানতে পেরেছি যে, আমার ভাইয়ের লাশ বিকৃত করা হয়েছে। আমি বিলাপ করতে আসিনি, আমি সবর করবো এবং তার মাগফিরাত কামনা করব। নবী করীম (সাঃ) একথা শুনে অনুমতি দিলেন। সাফিয়া (রা) তার ভাইয়ের লাশ ও তার কলিজার টুকরোগুলো মাটির উপর পড়ে থাকতে দেখে নীরবে সবর করলেন এবং ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলায়হি রাজিউন’ পড়লেন। মাগফিরাত কামনা করলেন এবং চলে এলেন। ইসলামের পতাকাবাহী হযরত মুসআব ইব্‌ন উমায়র (রা)-এর কাফনের জন্য কেবল একটি চাদর ছিল। এটি এতই ছোট ছিল যে, মাথা ঢাকলে পা উদোম হয়ে যেতো এবং পা ঢাকলে মাথা উদোম হয়ে যেতো। পরিশেষে মাথা ঢেকে দেয়া হয় এবং পায়ের উপর ইখির ঘাস দ্বারা আবৃত করা হয়। বিনা গোসলে এক একটি কবরে দু’ দু’জন করে শহীদকে দাফন করা হয়। যুদ্ধের ময়দান থেকে মদীনা মুনাওয়ারা ফেরার সময় পথে হযরত মুসআব ইব্‌ন উমায়েরের স্ত্রী হামনা বিন্‌ত জাহাশ (রা)-এর সাথে দেখা হল। তাকে তার মামা হযরত হামযা (রা)-এর শাহাদতের খবর জানানো হলো। তিনি ইন্না লিল্লাহ... পড়লেন। এরপর তার ভাই হযরত আবদুল্লাহ ইব্‌ন জাহাশ (রা)-এর শাহাদতের খবর দেয়া হলো। তিনি ইন্না লিল্লাহ... পড়ে তার মাগফিরাত কামনা করলেন। এরপর তাঁর স্বামী মুসআব ইব্‌ন উমায়র (রা)-এর শাহাদতের সংবাদ দেয়া হলো। একথা শুনে তিনি দিশেহারা হয়ে যান এবং কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। হযরত নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এই হাল দেখে বললেন, মেয়েরা স্বামীদের প্রতি অধিকতর প্রীত থাকে।

আনসারদের এক গোত্রের এক মহিলার পিতা, ভ্রাতা ও স্বামী তিনজনই শহীদ হয়েছিলেন। তিনি নবী (সাঃ)-এর শাহাদতের গুজব শুনে মদীনা মুনাওয়ারা রওয়ানা করেন। পথে তাকে কেউ খবর দিল যে, তোমার পিতা শহীদ হয়েছেন। তিনি বললেন, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সুস্থ আছেন কিনা-তাই বলো। তারপর তাকে বলা হলো, তোমার ভাইও শহীদ হয়েছেন। তিনি এ খবর শুনে ঐ একই কথা বললেন : আমাকে হযরত নবী করীম (সাঃ)-এর খবর শোনাও। তিনি নিরাপদ আছেন কিনা। তারপর তাঁকে বলা হলো, তোমার স্বামীও শহীদ হয়েছেন। তিনি এ খবর শুনেও সেই একই প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করলেন : হযরত নবী করীম (সাঃ) কেমন আছেন, তাই বলো। ইতিমধ্যে হযরত নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের নিকটে পৌঁছে গিয়েছিলেন। মহিলাকে বলা হলো-ঐ তো তিনি আসছেন। হযরত নবী করীম (সাঃ)-এর চেহারা মুবারক দেখে মহিলা বললেন : আপনি যখন সুস্থ আছেন তখন সব মুসীবতই তুচ্ছ। এ যুদ্ধ মদীনা থেকে মাত্র তিন-চার মাইল দূরে সংঘটিত হয়। চুক্তিপত্র অনুসারে মদীনা মুনাওয়ারার ইয়াহূদীদের মুসলমানদের পক্ষে এবং মক্কা মুয়াযযামার কাফিরদের বিপক্ষে যুদ্ধ করা উচিত ছিল।

আবদুল্লাহ ইব্‌ন উবায়্য-এর ফিরে আসার দরুন লোকসংখ্যা হ্রাস পাওয়ার পর কোন কোন সাহাবী নবী করীম (সাঃ)-কে বলেছিলেন ইয়াহূদীদের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করতে। কিন্তু হযরত রাসূল করীম (সাঃ) ইয়াহূদীদের নিকট সাহায্য চাওয়া পছন্দ করলেন না। সুতরাং ইয়াহূদীরা পরম আনন্দে নিজ নিজ গৃহে অবস্থান করলো এবং যুদ্ধের ফলাফল প্রত্যক্ষ করার অপেক্ষায় থাকলো। ইয়াহূদীদের মধ্যে মুখায়রিক নামক জনৈক ব্যক্তি তার সম্প্রদায়কে বললো যে, মুহাম্মদ (সাঃ)-কে সাহায্য করা তোমাদের উপর ফরয। তারা বললো, আজ শনিবার, তাই আমরা যুদ্ধ করতে পারি না। মুখায়রিক বললেন, এটা আল্লাহর নবী ও কাফিরের মধ্যে যুদ্ধ। এতে শনিবার অন্তরায় হতে পারে না। একথা বলে তিনি তলোয়ার হাতে তুলে নিলেন এবং সোজা যুদ্ধের ময়দানে পৌঁছে গেলেন। যাবার সময় ঘোষণা করে গেলেন : “আমি মারা গেলে মুহাম্মদ (সাঃ)-কে দোষারোপ করবে না। যুদ্ধে শরীক হলেন এবং নিহত হলেন। হযরত নবী (সাঃ) শুনে বললেন, ইয়াহূদীদের মধ্যে সে উত্তম ব্যক্তি ছিল। হারিছ ইব্‌ন সুওয়ায়দ নামক জনৈক মুনাফিক মুসলমানদের সাথে যুদ্ধের ময়দানে গিয়েছিল। তুমুল যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সে মুজযির ইব্‌ন যিয়াদ (রা) ও কায়স ইব্‌ন যায়দ (রা) নামে দু’জন মুসলমানকে শহীদ করে মক্কার দিকে পালিয়ে গেল। এর কিছুদিন পর সে মদীনায় ফিরে এলো এবং গ্রেফতার হয়ে হযরত উসমান ইব্‌ন আফফান (রা)-এর হাতে নিহত হলো। এ যুদ্ধে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ফায়দা হলো এই যে, তারা মুনাফিকদের ভাল করে চিনতে পেরেছেন। শত্রু ও মিত্রের মধ্যে তফাৎ করার সুযোগ হলো। মদীনায় পৌঁছার পর দিন অর্থাৎ তৃতীয় হিজরীর শাওয়াল মাসের রোববার হযরত নবী করীম (সাঃ) হুকুম দিলেন, যারা গতকাল আমাদের সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল, কেবল তারাই কাফিরদের সাথে মুকাবিলা করার জন্য যেন বের হয়। উহুদ যুদ্ধে যোগদান করেনি এরূপ নতুন কোন ব্যক্তিকে সঙ্গে নেয়ার অনুমতি ছিল না। শুধু হযরত জাবির ইব্‌ন আবদুল্লাহ (রা)-কে তিনি সঙ্গে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। সুতরাং উহুদ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সমস্ত সাহাবী এমনকি আহতরাও নবী (সাঃ)-এর সঙ্গে মদীনা থেকে বের হলেন। তিনি মদীনা থেকে রওয়ানা হয়ে আট মাইল চলার পর হামরাউল আসাদ নামক স্থানে তাঁবু গাড়েন এবং তিন দিন পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। ঘটনাক্রমে মক্কাগামী মা‘বাদ ইব্‌ন আবী মা‘বাদ খুযাঈ মক্কার দিকে এই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। রূহা নামক স্থানে পৌঁছে মুশরিকরা ভাবলো, এ যুদ্ধে আমাদের মুসলমানদের মুকাবিলায় কোনো বিজয় হয়নি। বড়জোর সমান সমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা বলা চলে। কেননা, আমরা যদি বলি যে, আমরা বিজয়ী বেশে ফিরে এসেছি, তবে লোকেরা বলবে যে, তোমাদের সাথে মুসলমান বন্দীরা কোথায়? তারপর জিজ্ঞেস করবে, গনীমতের মাল কোথায়? কাজেই আমাদের নিকট যখন কোন বন্দী নেই, গনীমতের মালও নেই এবং ওয়ালীদ ইব্‌ন আদী, আবূ উমাইয়া ইব্‌ন আবী হুযায়ফা, হিশাম ইব্‌ন আবী হুযায়ফা, উবায়্য ইব্‌ন খালাফ, আবদুল্লাহ ইব্‌ন হুমায়দ আসাদী, তালহা ইব্‌ন আবী তালহা, আবূ সাঈদ ইব্‌ন আবী তালহা, মাসাফি ও জিলাস নামক তালহার দুই পুত্র, আরতাত ইব্‌ন শারজীল প্রমুখ সতের জন বিখ্যাত কুরায়শ নেতা এবং পাঁচ-ছয়জন অপর বাহাদুর ব্যক্তিকে হারিয়ে এলাম, তখন আমাদেরকে বিজেতা বলবে কে? অন্যদিকে, আমরা কেবল হামযা (রা), মুসআব (রা) প্রমুখের মতো তিন-চারজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিকেই কতল করতে পেরেছি। একথা চিন্তা করে সবার মত পাল্টে গেলো। নতুন করে আবার যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুতি চললো। আবূ সুফিয়ান সমুদয় সৈন্য নিয়ে ‘রূহা’ থেকে মদীনার উপর হামলা করার প্রস্তুতি নিল। ইত্যবসরে মা‘বাদ ইব্‌ন আবী মা‘বাদ রূহায় এসে পৌঁছলো। সে আবূ সুফিয়ানকে তথ্য সরবরাহ করল যে, মুহাম্মদ (সাঃ) মদীনা থেকে বের হয়ে তোমার পশ্চাদ্ধাবনে এগিয়ে আসছেন। হামরাউল আসাদে আমি তাদের সেনাবাহিনী দেখতে পেয়েছি। সম্ভবত খুব শীঘ্রই তারা তোমাদের কাছে পৌঁছে যাবেন। এ খবর শোনা মাত্রই কাফির বাহিনী হতবুদ্ধি হয়ে সেখান থেকে সোজা মক্কার দিকে ছুটে চললো। মক্কায় পৌঁছে তারা যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো। হযরত নবী করীম (সাঃ) যখন নিশ্চিত হলেন যে, কাফিররা হতবুদ্ধি হয়ে মক্কার দিকে পালিয়ে যাচ্ছে, তখন তিনি মদীনায় ফিরে এলেন। তাঁর এ যুদ্ধযাত্রা ‘গাযওয়ায়ে হামরাউল আসাদ’ নামে খ্যাত। এর ফলে কাফিরদের অন্তরে মুসলমানদের ভয় দৃঢ় হয় এবং মদীনা তাদের আক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকে। উহুদ যুদ্ধে তীরন্দাজদের রাসূলে করীম (সাঃ)-এর নির্দেশ পালনে ভুল বুঝাবুঝির দরুন মুসলিম পক্ষে বিপদ দেখা দেয়। তারা হতবুদ্ধি হয়ে পড়ে। এই যুদ্ধ সম্পর্কে সাধারণভাবে মশহুর হয়ে আছে যে, মুসলিম পক্ষ পরাজিত হয়েছে। কিন্তু এটা অত্যন্ত বিরাট ভুল। মুসলমানগণ কাফিরদেরকে তাদের সম্মুখ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন এবং কাফিররা পরাস্ত হয়েছিল। পরে তারা পুনরায় আক্রমণ করে। কিন্তু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ও মুসলিম বাহিনী যুদ্ধের ময়দান ত্যাগ করেননি। কাফিররাই পরবর্তী বছরের জন্য যুদ্ধ মুলতবি করে এবং মুসলিম বাহিনী তাদের যুদ্ধ বিরতি মেনে নেয়। ময়দান থেকে প্রথমে কাফিররা মক্কার দিকে রওয়ানা হয়। তারপর মুসলমানগণ সেখান থেকে মদীনায় রওয়ানা করেন।

হামরাউল আসাদে মুসলমানদের আগমন সংবাদ পেয়ে কাফিররাই হতবুদ্ধি হয়ে পলায়ন করে। তবে এটা ঠিক যে, নিহত কাফিরদের তুলনায় মুসলিম শহীদদের সংখ্যা বেশী ছিল। এ হচ্ছে যুদ্ধক্ষেত্রে সাধারণ ঘটনা। এই যুদ্ধের পর যিলহাজ্জ মাস পর্যন্ত এ বছর আর কোন উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেনি। এ বছরই রমযান মাসের প্রায় মাঝামাঝি হযরত হাসান ইব্‌ন আলী (রা) জন্ম গ্রহণ করেন। উহুদ যুদ্ধে মুসলমানদের আঘাত প্রাপ্তির দরুন মদীনার মুনাফিক ও ইয়াহূদীরা খুব খুশী হয় এবং তাদের স্পর্ধা বেড়ে যায়। কিন্তু হযরত নবী করীম (সাঃ) তাদের উপেক্ষার চোখেই দেখতে থাকেন।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন