hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের ইতিহাস ১ম খণ্ড

লেখকঃ মাওলানা আকবর শাহ খান নজিববাদী

৩০৪
হযরত কায়স ইব্‌ন যারারাহ (রা)-এর ভাষণ
ইয়ায্‌দেজিরদ হযরত নু‘মান (রা)-এর কথা শুনে খুবই ক্রুদ্ধ হন। কিন্তু নিজেকে কোনমতে সামলে নিয়ে বলেন : তোমরা তো অসভ্য জংলী লোক। তোমাদের জনসংখ্যাও অনেক কম। তোমরা আমাদের ভূখণ্ডের প্রতি লিপ্সা করো না। হাঁ, আমরা তোমাদের প্রতি এতটুকু সদয় ব্যবহার করতে পারি যে, আমরা তোমাদের আহারের জন্য খাদ্য এবং পরণের জন্য বস্ত্র প্রদান করবো এবং তোমাদের উপর এমন একজন শাসক নিয়োগ করবো যিনি তোমাদের সাথে শালীন ব্যবহার করবেন। একথা শুনে হযরত কায়স ইব্‌ন যারারাহ সম্মুখে অগ্রসর হয়ে বললেন, এখানে যারা তোমাদের সামনে বিদ্যমান তারা আরবের নেতৃস্থানীয় ও অভিজাত শ্রেণীর লোক। আর আরবের অভিজাতেরা এ ধরনের বাজে কথার উত্তর দিতেও লজ্জাবোধ করে। যাহোক, আমি তোমার কথার জবাব দিব এবং তাঁরা সবাই আমার কথা সমর্থন করবেন। শোন, তুমি আরব ও আরববাসীদের যে অবস্থা বর্ণনা করেছ, আমরা তার চাইতেও খারাপ অবস্থার মধ্যে ছিলাম। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তাঁর অপার করুণাগুণে আমাদের পথ প্রদর্শনের জন্য একজন নবী পাঠিয়েছেন। এ নবী আমাদেরকে সৎপথ প্রদর্শন করেছেন, ন্যায় ও সত্যের শত্রুদেরকে পরাজিত ও লাঞ্ছিত করেছেন এবং এ মর্মে প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছেন যে, অদূর ভবিষ্যতে দুনিয়ায় হবে আমাদেরই জয়জয়কার। কাজেই তোমাদের জন্য এই সমীচীন যে, তোমরা হয় জিযিয়া প্রদান কর, নয়ত ইসলাম গ্রহণ কর। যদি এর কোনটিই না কর, তাহলে আমাদের ও তোমাদের মধ্যকার ব্যাপারটির ফায়সালা একমাত্র তরবারিই করবে।

ইয়ায্‌দেজিরদ একথা শুনে একেবারে বেসামাল হয়ে পড়লেন এবং চীৎকার দিয়ে বলে উঠলেন, যদি প্রতিনিধিদের হত্যা করা বৈধ হত, তাহলে আমি তোমাদেরকে অবশ্যই হত্যা করতাম। তারপর তিনি তার ভৃত্যদেরকে নির্দেশ দিলেন : এক ঝুড়ি মাটি নিয়ে এস এবং যে লোকটি এদের নেতা তার মাথায় তুলে দিয়ে এদের সবাইকে মাদায়েন থেকে বের করে দাও। তারপর তিনি মুসলিম প্রতিনিধিদলকে সম্বোধন করে বললেন : রুস্তম শীঘ্রই তোমাদেরকে কাদিসিয়ার গর্তে দাফন করবে। ইতিমধ্যে মাটি ভর্তি ঝুড়ি এসে গেল। হযরত আসিম (রা) তৎক্ষণাৎ দাঁড়িয়ে ঝুঁড়িটি কাঁধে তুলে নিয়ে বললেন, আমিই এ প্রতিনিধি দলের নেতা। যাহোক মুসলিম প্রতিনিধি দল ইয়াযদেজিরদের দরবার থেকে বের হয়ে নিজ নিজ ঘোড়ায় আরোহণ করে মাটি ভর্তি ঐ ঝুড়িটি সঙ্গে নিয়ে হযরত সা‘দ ইব্‌ন আবূ ওয়াক্কাস (রা)-এর কাছে হাযির হন এবং শ্লোগান তুলে : ইরান সাম্রাজ্যের বিজয় শুভ হোক। আল্লাহ্ তা‘আলা প্রথম পদক্ষেপেই আমাদেরকে ঐ দেশের মাটি দান করেছেন।” ইয়াযদেজিরদ প্রদত্ত মাটি দ্বারা প্রতিনিধি দলটি মুসলমানদের ভবিষ্যৎ সৌভাগ্য সম্পর্কে যে ভবিষ্যদ্বাণী করে তাতে সা‘দ ইব্‌ন আবূ ওয়াক্কাস (রা)-ও অত্যন্ত আনন্দিত ও আশান্বিত হন।

এ প্রতিনিধি দলটি ফিরে আসার পর ইরানের শাহী দরবার থেকে সাবাতে অবস্থানকারী রুস্তমের কাছে একটি জরুরী নির্দেশ এল এবং সেই সাথে এক সহায়ক বাহিনীও এসে পৌঁছল। ষাট হাজার সৈন্যের সিংহভাগ রুস্তমের অধীনে ছিল। অগ্রবর্তী বাহিনীর সেনাপতি ছিলেন জালীনূস। তার বাহিনীতেও চল্লিশ হাজার সৈন্য ছিল। পশ্চাদবর্তী বাহিনীর সৈন্যসংখ্যা ছিল বিশ হাজার। ত্রিশ হাজার সৈন্য সম্বলিত ডান পাশের বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন হরমুযান এবং অপর ত্রিশ হাজার সৈন্য নিয়ে গঠিত বাম পাশের বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন মাহরান ইব্‌ন বাহরাম। এভাবে ইরানী সৈন্য সংখ্যা এক লক্ষ আশি হাজারে গিয়ে পৌঁছেছিল। এছাড়াও রুস্তমের সাথে মধ্যবর্তী বাহিনীতে ত্রিশটি যুদ্ধহস্তী ছিল। কঠোর নিয়ম-শৃঙ্খলা ও আসবাব সামগ্রীর সাথে রুস্তম সাবাত থেকে যাত্রা করে ‘কুছ’ নামক স্থানে গিয়ে পৌঁছেন এবং সেখানেই তাঁবু খাটান। কাদিসিয়া এবং মাদায়েনের মধ্যে দূরত্ব ছিল ত্রিশ থেকে চল্লিশ ক্রোশ। কাজেই ইরানী ও ইসলামী বাহিনীর দূরত্ব অনেকটা হ্রাস পেল। এবার রসদ সামগ্রী লুট করার জন্য প্রত্যেক দিনই উভয় পক্ষের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বাহিনীসমূহ একে অন্যের উপর আকস্মিক হামলা চালাতে থাকে। রুস্তম যুদ্ধ এড়িয়ে যেতে চাচ্ছিলেন। তাই, তিনি মাদায়েন থেকে কাদিসিয়া পর্যন্ত পৌঁছতে ছয় মাস সময় লাগিয়ে দেন। কুছা নামক স্থান থেকে যাত্রা করে রুস্তম কাদিসিয়ার সম্মুখবর্তী ‘আতীক’ নামক স্থানে তাঁবু ফেলেন। ইরানে শাহী দরবার থেকে বারবার রুস্তমের কাছে এ মর্মে তাকীদ আসছিলো : শীঘ্রই আরবদের মুকাবিলা ছাড়াই কাজ সেরে নিতে। কাদিসিয়ায় পৌঁছে তিনি হযরত সা‘দ ইব্‌ন আবূ ওয়াক্কাস (রা)-এর কাছে এ মর্মে পয়গাম পাঠান যে, সন্ধিচুক্তির ব্যাপারে আলাপ-আলোচনার জন্য যেন তার কাছে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানো হয়।

হযরত সা‘দ ইব্‌ন আবূ ওয়াক্কাস (রা) হযরত রিবঈ ইব্‌ন আমের (রা)-কে দূত হিসাবে রুস্তমের কাছে প্রেরণ করেন। ঐ দিন রুস্তম অত্যন্ত শান-শওকত ও জাঁকজমকের সাথে তার দরবার সজ্জিত করেন। সোনার সিংহাসন স্থাপন করা হয় এবং তার চারপাশে রেশমী ও রোমান কার্পেট বিছানো হয়। তাকিয়া ও সামিয়ানাসমূহের ঝালর ছিল মণি-মাণিক্যের। যাহোক হযরত রিবঈ ইব্‌ন আমের (রা) এ জাঁকজমকপূর্ণ দরবারে প্রবেশ করেন। কার্পেটের শেষ প্রান্তে যে বিরাট তাকিয়াটি পড়েছিল তিনি তার সাথেই আপন ঘোড়াটি বাঁধেন এবং তীরের ফলা ঠুকতে ঠুকতে এবং রুস্তমের বিছানো মহামূল্যবান কার্পেটের উপর ছিদ্র ও ক্ষতের সৃষ্টি করতে করতে সিংহাসনের দিকে অগ্রসর হন এবং একেবারে রুস্তমের পাশে গিয়ে বসেন। লোকেরা হযরত বিবঈ (রা)-কে সিংহাসন থেকে নামাতে এবং তার কাছ থেকে হাতিয়ারসমূহ কেড়ে নিতে চাইলো। তখন রিবঈ (রা) তাদেরকে বললেন, আমি নিজের কোন দাবী নিয়ে এখানে আসিনি, তোমরাই আমাকে ডেকে পাঠিয়েছ। আমাদের ধর্মে এটা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ যে, এক ব্যক্তি খোদা হয়ে বসবে এবং বাকি সবাই ক্রীতদাসের মত হাত জোড় করে তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকবে। রুস্তম নিজেই তার লোকদেরকে সতর্ক করে দিলেন যেন কেউ একে বিরক্ত না করে। কিন্তু হঠাৎ কি যেন চিন্তা করে রিবঈ (রা) নিজেই রুস্তমের নিকট থেকে উঠে যান এবং সিংহাসন থেকে নেমে আপন ছোরা দ্বারা বিছানো কার্পেটটি কেটে খালি ভূমির কিছু অংশ বের করে তাতে উপবেশন করেন। তারপর রুস্তমকে সম্বোধন করে বলেন, তোমার ঐ জাঁকজমকপূর্ণ শয্যার কোন প্রয়োজন আমার নেই। মহান আল্লাহর বিছানো মৃত্তিকা শয্যাই আমার জন্য যথেষ্ট। তারপর দোভাষীর সাহায্যে রুস্তম হযরত রিবঈ (রা)-কে জিজ্ঞেস করেন, তোমাদের এ যুদ্ধ-বিগ্রহের লক্ষ্য কি? হযরত রিবঈ (রা) উত্তরে বলেন :

আমরা মহান আল্লাহর বান্দাদেরকে দুনিয়ার সংকীর্ণতা থেকে পরকালের বিশালতার দিকে নিয়ে যেতে চাই এবং বাতিল ধর্মসমূহের পরিবর্তে ন্যায়, সত্য তথা ইসলামের প্রচার ও প্রসার কামনা করি। যে ব্যক্তি ন্যায়, সত্য ও ইসলামের উপর কায়েম থাকবে আমরা তার দিকে, তার দেশের দিকে এবং বিষয় সম্পত্তির দিকে ফিরেও তাকাবো না। যে আমাদের পথে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে, আমরা তার সাথে যুদ্ধ করব, যতক্ষণ না শাহাদত বরণ করে জান্নাতে গিয়ে উপনীত হই, কিংবা জয়লাভ করি। যদি তোমরা জিযিয়া প্রদান করতে সম্মত হও, তাহলে আমরা তা গ্রহণ করব এবং তোমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসব এবং তোমাদের জান ও মালের হিফাযত করব।

এ সমস্ত কথা শুনে রুস্তম প্রশ্ন করলেন, তুমি কি মুসলমানদের নেতা? হযরত রিবঈ (রা) জবাব দিলেন, না, আমি নেতা নই, বরং আমি একজন সাধারণ সৈনিক। কিন্তু আমাদের একজন সাধারণ লোকও নেতৃস্থানীয় লোকের পক্ষ থেকে কোন কিছুর অনুমোদন দিতে পারে এবং প্রত্যেকটি ব্যক্তিই প্রতিটি ব্যাপারেই স্বাধিকার রাখে। একথা শুনে রুস্তম ও সভাসদরা একেবারে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। তারপর রুস্তুম বললেন, তোমার তরবারির খাপ একেবারে জীর্ণ, মলিন। হযরত রিবঈ সঙ্গে সঙ্গে খাপ থেকে তরবারি বের করে বললেন, এটাকে এই মাত্র তেজ করা হয়েছে। তারপর রুস্তম বললেন, তোমার বর্শার ফলা খুবই ছোট ; যুদ্ধে কি কাজে আসবে? হযরত রিবঈ (রা) জবাব দিলেন, এ ফলা শত্রুদের বক্ষ ভেদ করে একবারে এপার-ওপার হয়ে যেতে পারে। তুমি দেখনি যে, আগুনের একটি ক্ষুদ্র ফুলিঙ্গও সমগ্র শহর পুড়িয়ে ছারখার করে দিতে পারে। এ ধরনের খোঁচা-খুঁচি কথাবার্তার পর রুস্তম বললেন, আচ্ছা, আমরা তোমার কথাগুলো ভেবে দেখব এবং আমাদের উপদেষ্টাদের সাথে এ ব্যাপারে সলা-পরামর্শ করব। তারপর রিবঈ (রা) সেখান থেকে উঠে অশ্বারোহী সোজা হযরত সা‘দ ইব্‌ন আবূ ওয়াক্কাস (রা)-এর কাছে চলে যান।

পরদিন রুস্তম হযরত সা‘দ (রা)-এর কাছে পুনরায় পয়গাম পাঠালেন, আজও আপনার দূতকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিন। এবার হযরত সা‘দ (রা) হযরত হুযায়ফা ইব্‌ন মুহসিন (রা)-কে পাঠান। হযরত হুযায়ফা (রা)-ও আজ সেইরূপ বেপরোয়া ভঙ্গিতে রুস্তমের দরবারে গিয়ে হাযির হন, যেরূপ গতকাল হযরত রিবঈ (রা) গিয়েছিলেন। উপরন্তু, তিনি রুস্তমের সামনে পৌঁছা সত্ত্বেও ঘোড়া থেকে অবতরণ করলেন না, বরং ঘোড়ার পিঠে বসেই তার সিংহাসন ঘেঁষে দাঁড়ালেন। যখন রুস্তম বললেন, এর মধ্যে কি কারণ থাকতে পারে যে, আজ তোমাকে পাঠানো হয়েছে এবং গতকালকের ঐ ব্যক্তিকে পাঠানো হয়নি? হযরত হুযায়ফা জবাব দিলেন, আমাদের নেতা অত্যন্ত ন্যায়নিষ্ঠ। তিনি প্রত্যেক কাজের জন্য প্রত্যেক ব্যক্তিকেই সুযোগ দিয়ে থাকেন। গতকাল ঐ ব্যক্তির পালা ছিল। আজ আমার পালা এসেছে। রুস্তম বললেন, তুমি আমাদেরকে কত দিনের অবকাশ দিতে পার? হযরত হুযায়ফা (রা) বললেন, আজ থেকে তিন দিন পর্যন্ত। রুস্তম এ কথা শুনে একেবারে চুপ হয়ে গেলেন। তখন হযরত হুযায়ফা (রা) লাগাম টেনে ঘোড়ার মুখ ঘুরিয়ে সোজা ইসলামী বাহিনীর কাছে ফিরে এলেন। আজ হযরত হুযায়ফা (রা)-এর এ বেপরোয়া ভাব ও প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব প্রত্যক্ষ করে রুস্তমের সভাসদবৃন্দ আরো বেশি স্তম্ভিত হল। পরদিনও রুস্তম ইসলামী বাহিনীর একজন দূতকে ডেকে পাঠান। আজ হযরত মুগীরা ইব্‌ন শু‘বাহ (রা)-কে পাঠানো হয়। হযরত মুগীরা (রা)-কে রুস্তম একাধারে প্রলোভিত ও ভীতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করেন। এতদসত্ত্বেও হযরত মুগীরা (রা) অত্যন্ত কড়া ও যথাযথ জবাব দেন। তাতে রুস্তম রাগান্বিত হয়ে বলে উঠেন, আমি তোমাদের সাথে কখনো সন্ধি করব না, বরং তোমাদের সকলকে হত্যা করব। তখন হযরত মুগীরা (রা) সেখান থেকে উঠে মুসলিম বাহিনীর দিকে চলে আসেন।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন