hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের ইতিহাস ১ম খণ্ড

লেখকঃ মাওলানা আকবর শাহ খান নজিববাদী

৩৭১
এক নযরে উসমানী খিলাফত
উসমানী খিলাফতের ঘটনাবলী অধ্যয়ন করলে অনায়াসে বোঝা যায় যে, আমরা নবী করীম (সাঃ)-এর যুগ এবং সিদ্দীকী ও ফারূকী খিলাফতের যুগ অতিক্রম করে এক নতুন যুগে প্রবেশ করেছি। এ যুগের আবহাওয়া চালচলন ধরন-করণ সবকিছুই যেন আলাদা। ফারূকী খিলাফত পর্যন্ত মুসলমানগণের কাছে পার্থিব ধন-সম্পদের কোন গুরুত্ব ছিল না। খোদ খলীফার অবস্থা, এরূপ ছিল যে, পরিবার-পরিজনের দৈনন্দিন খরচ মেটাবার জন্য তাঁর হাতে অন্যান্য লোকের চাইতেও অনেক কম অর্থ আসত। আর এ অভাব ও দারিদ্রকে খলীফা তার জন্য কোন বিপদ বলে মনে করতেন না। অনুরূপভাবে পার্থিব ধন-সম্পদের প্রতি সাধারণ মুসলমানদেরও কোন লোভ ছিল না। ইসলাম প্রচার এবং মহান আল্লাহর পথে প্রাণ বিসর্জন যেন ছিল তাদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। উসমানী যুগে এ অনুভূতি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। হযরত উসমান গনী (রা) প্রথম থেকেই বিত্তশালী ছিলেন। খলীফা হওয়ার পরও তার এবং তাঁর পূর্ববর্তী দুই খলীফার আর্থিক অবস্থার মধ্যে অনেক তফাত ছিল। তাছাড়া হযরত ফারূকে আযম (রা)-এর খিলাফতের শেষ যুগ পর্যন্ত দেশ জয়ের প্রক্রিয়া জারি থাকে এবং অনেক সম্পদশালী ও উর্বর এলাকা মুসলমানগণের অধিকারে আসে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সেখানকার বিত্ত-সম্পদও মুসলমানগণের হস্তগত হয়। কিন্তু তারা সেই বিত্ত-সম্পদ ব্যবহার এবং তা উপভোগ করার কৌশল পর্যন্ত জানত না। হযরত উসমান গনী (রা)-এর যুগেই মুসলমানগণ তাদের অর্জিত অর্থ-সম্পদ আয়েশ-আরামের কাজে নিয়োজিত করতে শুরু করে। মদীনা শরীফের সাধারণ ছাপড়াগুলোও দালান-কোঠায় রূপান্তরিত হয়। মানুষের অন্তরে ধন-সম্পদ অর্জন ও অর্থ সংগ্রহের স্পৃহা জাগে। সেই সাথে মুসলমানগণের মধ্যে যে বীরত্ব ও পৌরুষ ছিল এবং আরবদের একটি বৈশিষ্ট্য ছিল তা ধীরে ধীরে লোপ পেতে শুরু করে। সামরিক প্রবৃত্তির স্থান দখল করে আমীরী স্বভাব তথা বড়লোকী ঠাটবাট। আর তাই ছিল মুসলমানদের উপর আপতিত সবচেয়ে বড় বিপদ, ছিল তাদের দুর্ভাগ্য।

সিদ্দীকে আকবর (রা) ও ফারূকে আযম (রা)-এর যুগ পর্যন্ত কুরায়শী ও হিজাযী অধিকাংশ মুসলমানই হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর পবিত্র যুগ প্রত্যক্ষ করেছিল। ফলে তারা ভেদাভেদহীন একই জাতিতে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। তারা সকলেই ইসলামকে মনে করত নিজেদের সম্পদ এবং নিজেদেরকে ইসলামের উত্তরাধিকারী জ্ঞান করত। ইসলামের ঔদার্য তাদের অন্তর থেকে গোত্রীয় সংকীর্ণতাকে একেবারে মুছে ফেলেছিল। তাদের কাছে ইসলামের বন্ধনের চাইতে বড় বন্ধন আর কিছুই ছিল না। ইসলামই ছিল তাদের কাছে সবচেয়ে প্রিয় বস্তু। দেশ জয়ের আওতা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে ইসলামী রাষ্ট্রের আওতাভুক্ত প্রদেশের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেল। ধীরে ধীরে ইসলামী সেনাবাহিনী ও ইসলামী মিল্লাতের মধ্যে এমন লোকের সংখ্যাও রাতারাতি বৃদ্ধি পেল যারা অতি সম্প্রতি ইসলাম গ্রহণ করেছে। এ সমস্ত লোকের অন্তরে তখন পর্যন্ত গোত্র ও সম্প্রদায়গত ভেদ-বৈষম্যের স্থলে ইসলামের প্রেম-ভালবাসা প্রাধান্য লাভ করতে পারেনি। ফারূকী খিলাফতের বিজয় অভিযানসমূহে যেসব মুজাহিদ অংশগ্রহণ করে তাদের অধিকাংশই ছিল বনূ বকর, বনূ ওয়ায়েল, বনূ আবদুল কায়স, বনূ রাবীআ, বনূ আযদ, বনূ কিনদা, বনু তামীম, বনু কুযাআ’ প্রভৃতি গোত্রের লোক। তারা ইরান ও সিরিয়ার প্রদেশসমূহ, মিসর, ফিলিস্তীন ইত্যাদি জয় করেছিল। এদের হাতেই ইরানী ও রোমান সম্রাটের রাজমুকুট ভূলুণ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু এ গোত্রগুলোর মধ্যে একটি গোত্রও এমন ছিল না যারা হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর পবিত্র সংস্পর্শ পেয়েছিল। ব্যক্তিগতভাবে যাদের ভাগ্যে তা জুটেছিল তাদের সংখ্যা ছিল অতি নগণ্য। কাজেই দেখা যায়, যে সমস্ত গোত্রের সৈনিক দ্বারা ইসলামের দুর্বার সেনাবাহিনী গড়ে উঠেছিল তারা ঈমান ও ইসলামের প্রতি আন্তরিক আকর্ষণের দিক দিয়ে কুরায়শী হিজাযী সাহাবিগণের স্তরে পৌঁছতে পারিনি। তাছাড়া ফারূকে আযম (রা)-এর দৃষ্টি এতই প্রশস্ত ও গভীর ছিল যে, প্রত্যেকটি বিষয়ের খুঁটিনাটি দিকও তিনি জানতেন। তিনি এমন একটি ‘নিযাম’ (ব্যবস্থা) চালু করেছিলেন এবং মুহাজির ও আনসারের নেতৃত্বকে এমনভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছিলেন যে, তাঁর খিলাফত আমলে অন্যান্য লোক কখনো কল্পনাও করতে পারে নি যে, তারা মুহাজির কিংবা আনসারদের সমকক্ষ। হযরত ফারূকে আযম (রা) আনসার ও মুহাজিরগণকে এমন এক মর্যাদায় পৌঁছিয়ে দিয়েছিলেন যে, মনে হত যেন তাঁরা একটি রাজপরিবার এবং একটি মহাপরাক্রমশালী বিজেতা জাতির সদস্য। হযরত ফারূকে আযম (রা) আরবের দুর্দান্ত সেনাবাহিনীর বীরত্ব, দুঃসাহসিকতা ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণের প্রতি এতই যত্নবান ও সচেষ্ট ছিলেন যে, তিনি তাঁর খিলাফত আমলে সিরিয়ার জাঁকজমকপূর্ণ শহরসমূহ, আয়েশ-আরামে ভরা জনবসতিসমূহের, এমনকি সেগুলোর ধারে কাছেও ইসলামী সেনাবাহিনীর অবস্থানের কোন সুযোগ দেন নি। অপর দিকে তিনি এমন কিছু কৌশল অবলম্বন করেছিলেন যার ফলে সাধারণ লোকেরা মর্যাদাবান সাহাবিগণ থেকে কিছুটা তফাতে থাকতে বাধ্য হত। তাতে সাহাবিগণের প্রভাব ও মর্যাদা যেমন সংরক্ষিত হত তেমনি আরবের নয় বরং সমগ্র বিশ্বের নির্বাচন ও প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিরা তাদের সংসর্গ লাভের সুযোগ পেত।

হযরত উসমান গনী (রা)-এর যুগে এ সমস্ত বৈশিষ্ট্য একের পর এক মুছে যেতে থাকে। উপরে উল্লিখিত গোত্রসমূহের লোকেরা নিজেদেরকে মুহাজির, আনসার এবং কুরায়শী ও হিজাযীদের শুধু সমকক্ষ নয় বরং তাদের চাইতে শ্রেষ্ঠতর বলেও বিবেচনা করতে থাকে। সাহাবায়ে কিরাম, যারা শাহী বংশের মর্যাদা রাখতেন, দূর-দূরান্তের প্রদেশসমূহে ছড়িয়ে পড়েন। মদীনা শরীফের ঐক্য ও ঐতিহ্য ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যায়। রাজধানী মদীনা শরীফ রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস হয়ে আর থাকতে পারে নি। যার ফলে সেই জাতি ও গোত্রগত ভেদ বৈষম্য পুনরায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। প্রত্যেক গোত্র ও গোষ্ঠীর মধ্যে সেই বর্বর যুগের প্রথাপদ্ধতি ও সামাজিক রীতিনীতি পুনরায় পরিলক্ষিত হতে থাকে। ফলে ইসলামী সম্বন্ধ ও ধর্মীয় ভ্রাতৃত্বের প্রভাব স্বাভাবিকভাবে লোপ পায়। মুহাজির ও আনসারগণ নও মুসলিম জনসমুদ্রে মিশে গিয়ে একাকার হয়ে যায়। ফলে তাদের সেই প্রভাব ও মর্যাদা আর অক্ষুন্ন থাকে নি।

হযরত উসমান গনী (রা) অত্যন্ত নম্র স্বভাবের লোক ছিলেন ; কিন্তু রাষ্ট্রের আইন ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হলে সুষ্ঠু নম্র মেযাজে কাজ হয় না, প্রয়োজনবোধে শক্তি প্রয়োগ করা লাগে এবং কঠিন হতে হয়। হযরত উসমান গনী (রা)-এর যুগে একদিকে মুসলমানগণ অর্থ-বিত্ত ও আরাম-আয়েশের প্রতি আসক্ত হয়ে উঠেছিল এবং অন্যদিকে দেখা দিয়েছিল খলীফার প্রতি ভয়ভীতির পরিবর্তে কিছুটা উপেক্ষা ও তাচ্ছিল্যের ভাব। এ সুযোগে অর্থ ও খ্যাতিলোভী স্বার্থশিকারীরা জনসাধারণের মধ্যে নানা ধরনের প্রোপাগাণ্ডা চালানোর সুযোগ পায়। কুরায়শী ও হিজাযীদের মধ্যে যারা ক্ষমতালোভী ছিল তারা অত্যন্ত সহজেই ঐ সমস্ত নও-মুসলিম গোত্র এবং তাদের বিজয়ী সেনাবাহিনীর সাহায্য ও সমর্থন লাভে সক্ষম হয়।

ইসলাম-পূর্ব যুগে কুরায়শ বংশকে দু’ভাগে বিভক্ত বলে মনে করা হত। আর একটি ছিল বনূ উমাইয়া এবং অপরটি ছিল বনূ হাশিম। বনূ হাশিম ও বনূ উমাইয়া ছাড়াও কুরায়শ বংশের আরো অনেকগুলো গোত্র ছিল। কিন্তু যেহেতু বনূ উমাইয়া ছিল একে অপরের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী, তাই কুরায়শের বাকি গোত্রগুলো এদের কোন না কোন একটির পক্ষাবলম্বী ছিল। বনূ উমাইয়ার শক্তি ও প্রভাব ইসলামের আবির্ভাবের অব্যবহিত পূর্বে বনূ হাশিমের চাইতে কিছুটা বেশী ছিল। তবে এর অনেক পূর্বে তারা ছিল বনু হাশিমের চাইতে দুর্বল। যখন হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বনূ হাশিম গোত্রে আবির্ভূত হন তখন বনু উমাইয়া তাঁর এবং ইসলামের বিরোধিতা করে সবচাইতে বেশি। উহুদ ও আহযাবের ভয়ানক যুদ্ধে ইসলাম বিরোধী বাহিনীসমূহের প্রধান সেনাপতি ছিলেন আবূ সুফিয়ান এবং তিনি ছিলেন বনূ উমাইয়া গোত্রেরই লোক। শেষ পর্যন্ত খোদ আবূ সুফিয়ান এবং বনূ উমাইয়ার সব লোকই ইসলাম গ্রহণ করে। ফলে উমাইয়া ও হাশিমীদের মধ্যকার বিবাদ-বিসংবাদও লোপ পায়। হযরত আবূ বকর সিদ্দিক (রা) ও হযরত উমর ফারুক (রা)-এর খিলাফতকালে ঐ একই অবস্থা বিদ্যমান ছিল। তখন মনে হত, সবগুলো গোত্রই এক ও অভিন্ন এবং তাদের মধ্যে আদৌ কোন শত্রুতা বা ভেদাভেদ নেই। কিন্তু হযরত উসমান গনী (রা)-এর খিলাফতকালে বনূ উমাইয়ার অন্তরে সেই জাহিলী যুগের বিদ্বেষমূলক প্রতিদ্বন্দ্বী মনোভাব আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। আর যেহেতু হযরত উসমান গনী (রা) ছিলেন বনূ উমাইয়া গোত্রীয় এবং সেই সাথে আপন আত্মীয়-স্বজন তথা গোত্রীয় লোকদের উপকার সাধনের প্রতি অধিক মনোযোগী, তাই স্বাভাবিকভাবেই বনূ উমাইয়ারা তার থেকে অধিক পরিমাণে উপকৃত হতে থাকে। অপর দিকে মুসলমানদের সামরিক আধিপত্য বৃদ্ধির সাথে সাথে তাদের অন্তরে স্বাভাবিকভাবেই বিত্ত-সম্পদের লিপ্সাও জেগে উঠে। জনসাধারণের উপর থেকে খলীফার দাপট বা ভয়ভীতিও হ্রাস পায়। নও-মুসলিম যোদ্ধাদের আধিক্যের কারণে মুহাজির, আনসার এবং কুরায়শদের প্রভাব-প্রতিপত্তিও অনেকটা লোপ পায়। মদীনা শরীফেও আর সেই আনসার-মুহাজিরের ঐক্যবদ্ধ জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব ছিল না। তাছাড়া বনূ উমাইয়া তাদের ব্যক্তিগত ও গোত্রীয় স্বার্থ উদ্ধারের প্রতি ছিল সর্বদা সজাগ, সচেতন। হযরত উসমান গনী (রা)-এর নম্র মেজাজের সুযোগ গ্রহণ করে উমাইয়া গোত্রের মুখ্য সচিব (মীর মুনশী) মারওয়ান ইব্‌ন হাকামকে তারা বনূ উমাইয়ার এমনি এক কট্টর সহায়ক ও অন্ধ পক্ষাবলম্বীতে পরিণত করে যে, সে সর্বত্র, সর্বক্ষণ ও সর্বতোভাবে বনূ উমাইয়ার লোকদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের ব্যাপারে যেন পাগলপারা হয়ে উঠে। এক্ষেত্রে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর স্বার্থের প্রতি সে মোটেই দৃকপাত করত না।

যখন রাজ্য ও প্রদেশসমূহের গভর্নর পদে প্রধানত বনু উমাইয়ারা অধিষ্ঠিত হয় এবং ইসলামী রাষ্ট্রের প্রায় প্রত্যেকটি অঞ্চলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদও তাদের দখলে চলে যায়, তখন তাদের মধ্যে সেই পুরাতন মনোবৃত্তি আবার জেগে উঠে। অর্থাৎ তারা বনূ হাশিমের উপর নিজেদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার কাজে পুনরায় আত্মনিয়োগ করে। আর এর অনিবার্য ফলশ্রুতিতে বনূ হাশিম এবং অন্যান্য গোত্র ও বনূ উমাইয়ার এ মনোবৃত্তি সম্পর্কে সজাগ হয়ে উঠে। একথা বলা যে, খোদ হযরত উসমান গনী (রা) বনূ উমাইয়াদের এ আন্দোলন বা প্রচেষ্টার হোতা ছিলেন একটা গুরুতর অপবাদ ছাড়া কিছু নয়। কেননা, তার মধ্যে কোন ষড়যন্ত্র, কুট-কৌশল কিংবা কপটতার নাম-নিশানাও ছিল না। তার স্বভাব ও ক্ষমাপরায়ণতা এবং আত্মীয়-স্বজনের প্রতি সৌজন্যমূলক আচরণই বনূ উমাইয়াকে সেই সুযোগ প্রদান করেছিল যে, তারা তাদের গোত্র ও বংশগত প্রভাব-প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা-তদবীরে লিপ্ত হয় এবং এভাবে তাদের মধ্যে জাহিলী যুগের সেই বিস্মৃত প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও বিদ্বেষমূলক মনোবৃত্তি পুনরায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। আর এ সমস্ত মনোবৃত্তি চরিতার্থ করার কাজে ইন্দন জোগায় বিত্ত-সম্পদের প্রাচুর্য, আয়েশ-সামগ্রীর সহজলভ্যতা এবং সুখ-সম্ভোগের প্রতি জনসাধারণের আসক্তি। এ সমস্ত আচার-আচরণ ছিল সিদ্দিক ও ফারূকী খিলাফতকালে মানুষের কল্পনারও অতীত। অবশ্য একটি কথা না বলে উপায় নেই যে, যদিও স্বগোত্রের লোক এবং আত্মীয়-স্বজনের উপকার করা একটি অতি প্রশংসনীয় কাজ, কিন্তু একজন খলীফা যখন এ কাজটি করবেন, তখন তাকে খুবই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। আর তা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, এক্ষেত্রে যথার্থ সাবধানতা অবলম্বনের ব্যাপারে হযরত উসমান গনী (রা)-এর কিঞ্চিৎ শৈথিল্য লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে আপন চাচাত ভাই মারওয়ান ইব্‌ন হাকামকে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত একাধারে নিজের কাতিব তথা মীর মুনশী, মন্ত্রী ও উপদেষ্টা পদে বহাল রাখা নিঃসন্দেহে একটি সতর্কতা বিরোধী কাজ ছিল। আর তা এ কারণে নয় যে, সে তার আত্মীয় ছিল, বরং এ কারণে যে তাক্‌ওয়া, পরহিযগারী ও রূহানিয়াতের দিক দিয়ে সে এতই নিম্নমানের ছিল যে, স্বভাবচরিত্র ও আচার-আচরণের দিক দিয়ে ঐ বিরাট পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার কোন যোগ্যতাই তার মধ্যে ছিল না।

হযরত উসমান গনী (রা) খলীফা পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার সাথে সাথে ইরানের বিভিন্ন প্রদেশে বিদ্রোহ দেখা দেয়। কিন্তু ইসলামীবাহিনী প্রতিটি ক্ষেত্রে বিদ্রোহীদেরকে পরাজিত ও পর্যুদস্ত করে সমগ্র দেশব্যাপী পুনরায় শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে। এ সমস্ত বিদ্রোহ দমন করতে গিয়ে একটি উপকার এও হয়েছিল যে, প্রত্যেকটি বিদ্রোহ কবলিত প্রদেশের সীমান্ত এলাকাসমূহের প্রতি নজর দেওয়া হয়। ফলে অনেক নতুন নতুন এলাকার উপরও মুসলমানগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। যেমন, উত্তর ইরানের বিদ্রোহসমূহ দমন করতে গিয়ে সীস্তান ও কিরমানের প্রদেশসমূহও মুসলমানগণ দখল করে নেয়। উত্তর ও দক্ষিণ ইরানের বিদ্রোহ দমন এবং তুর্কী ও চীনাদের আক্রমণ প্রতিহত করতে গিয়ে মুসলমানগণ হিরাত, কাবুল, বলখ ও আমুদরিয়ার তীরস্থ এলাকাসমূহও দখল করে নেয়। রোমানরা মিসর ও ইস্কান্দারিয়াহ আক্রমণ করলে মুসলমানগণ তাদেরকে পরাস্ত করে এবং তাদের পশ্চাদ্ধাবন করতে গিয়ে সাইপ্রাস ও রোডস দ্বীপের উপরও নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে। আফ্রিকার রোমান গভর্নর সৈন্য সমাবেশ ঘটিয়ে মিসরের ইসলামী বাহিনীকে ভীতি প্রদর্শন করতে চাইলেন। যার ফলশ্রুতিতে বারকা, ত্রিপলী পর্যন্ত সমগ্র অঞ্চল মুসলমানগণ দখল করে নেন। অনুরূপভাবে এশিয়া মাইনরের রোমানবাহিনী কিছুটা হাত-পা ছুড়ে কসরত দেখাতে চাইলে মুসলমানগণ তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং আর্মেনিয়া ও তিফলিস পর্যন্ত সমগ্র এলাকার উপর নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে।

মোটকথা, হযরত উসমান গনী (রা)-এর খিলাফত কালেও মুসলমানগণ যথেষ্ট পরিমাণে এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিজয় লাভ করে। ফলে ইসলামী রাষ্ট্রের অনেক বিস্তৃতি ঘটে। খলীফা হযরত উসমান গনী (রা)-এর নির্দেশে ইরান, সিরিয়া প্রভৃতি রাজ্য বা প্রদেশের গভর্নরগণ রাস্তাঘাট নির্মাণ করেন, মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন এবং শিল্প বাণিজ্য ও কৃষি উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা অবলম্বন করেন। অর্থাৎ ইসলামী রাষ্ট্র বাহ্যিক উন্নতির সাথে সাথে শিল্পগত উন্নতিরও প্রচেষ্টা চালায়। অবশ্য এ সমস্ত উন্নয়নকর্ম উসমানী খিলাফতের প্রথম দিকে অর্থাৎ ছয় বছরের মধ্যে সম্পাদিত হয়। শেষ দিকে অর্থাৎ শেষ ছয় বছরে অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার উদ্ভব হয় এবং ক্রমে ক্রমে তার বিস্তার ঘটে। তার পূর্বে মুসলমানদের লক্ষ্য শুধু ইসলামের প্রচার এবং অংশীবাদিতার মূলোৎপাটন ছাড়া আর কিছুই ছিল না। কিন্তু, এখন তারা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হয়। ফলে পরস্পরের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ দেখা দেয় এবং দিনের পর দিন ভ্রাতৃত্ব বন্ধন ছিন্ন হতে থাকে। বনূ উমাইয়া মদীনা শরীফে তাদের জনসংখ্যা ও প্রভাব বৃদ্ধি করে। অন্যান্য রাজ্য বা প্রদেশেও দিন দিন তাদের প্রভাব বৃদ্ধি পেতে থাকে।

আর তা ঠিক নয় যে, বনূ উমাইয়ার এ কার্যধারা লক্ষ্য করে অন্যান্য মুসলিম গোত্রের লোকেরা আপনা-আপনি তাদের পক্ষাবলম্বন করেছিল কিংবা কোনরূপ বিচার-বিবেচনা ছাড়াই তাদের বিরোধিতা করে গোত্রীয় লড়াইয়ের আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল—বরং বনূ উমাইয়ার এ ভ্রান্ত কর্মধারা লক্ষ্য করার পর সাহাবায়ে কিরাম অর্থাৎ সর্বজনমান্য মুহাজির ও আনসারগণ যদি সহজভাবে ও দূরদর্শিতার সাথে জনসাধারণকে বোঝাতেন এবং ফিতনা ও বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ার আগেই তা দমন করার চেষ্টা করতেন, তাহলে তাঁদের প্রচেষ্টা কখনো বিফলে যেত না। কেননা, তখন পর্যন্ত মুহাম্মদিয়ার উপর তাদের এতটুকু প্রভাব ছিল যে, তারা তাদের কথা না মেনে পারত না। বনূ উমাইয়া তাদের ক্ষমতা ও প্রভাব বৃদ্ধির যে চেষ্টা শুরু করে তা বেশ কিছুদিন পর সাহাবায়ে কিরাম উপলব্ধি করতে পারত। কিন্তু যখন এ জিনিসটি তাদের উপলব্ধিতে আসে, তখন থেকে চেষ্টা শুরু করে দিলেও তারা এ বিশৃঙ্খলা দমনে সফলকাম হতে পারতেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ঠিক ঐ সময়ে উম্মতে মুসলিমার উপর আর একটা ভয়ানক বিপদ নেমে আসে আর তা হলো, ঠিক ঐ সময়ে আবদুল্লাহ ইব্‌ন সাবা নামীয় অতি চতুর, অতি সূক্ষ্মদর্শী ও তড়িৎকর্মা জনৈক ইয়াহূদী বাহ্যিকভাবে ইসলাম দরদী সেজেএকটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ভিত্তিতে ইসলাম ও মুসলিম জাতির ধ্বংস সাধনে নিজেকে সর্বতোভাবে নিয়োগ করে।

হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর যুগেও মুনাফিকদের হাতে মুসলমানগণ বার বার প্রতারিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উসমানী যুগে এসে আর একজন ইয়াহূদী মুনাফিকের হাতে মুসলমানগণ অশেষ দুর্ভোগের সম্মুখীন হয়। মুনাফিক আবদুল্লাহ ইব্‌ন উবায়্য ও মুনাফিক আবদুল্লাহ ইব্‌ন সাবার মধ্যে কে মুসলমানদের জন্য অধিক বিপজ্জনক ছিল তা নির্ণয় করা সত্যি কঠিন। তবে একথা অবশ্যই বলা যেতে পারে যে, আবদুল্লাহ ইব্‌ন উবায়্য তার বাতিল পরিকল্পনাসমূহ কার্যকরী করতে গিয়ে খুব কমই সাফল্য লাভ করেছে। কিন্তু আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন সাবা যদিও ব্যক্তিগত পর্যায়ে কোন সাফল্য অর্জন করতে পারে নি, কিন্তু মুসলিম মিল্লাতের ঐক্য ও সংহতিকে নিঃসন্দেহে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। ইসলাম ও মুসলিম জাতির ধ্বংস সাধনে সে যে পরিকল্পনা গ্রহণ করে তার সবচাইতে উল্লেখযোগ্য দিক হলো, সে বনূ উমাইয়ার বিরোধিতায় এক সাথে ও এককভাবে সমগ্র আরব গোত্রগুলোকে ক্ষেপিয়ে তুলে। এজন্য সে হযরত আলী (রা)-এর মুহাব্বত ও ভালবাসাকে মাধ্যম বা বাহানা হিসাবে গ্রহণ করে। আর যেসব গোত্রে সে বনূ উমাইয়ার প্রতি বিদ্বেষ ও হযরত উসমান গনী (রা)-এর প্রতি শত্রুতা সৃষ্টি করতে চাচ্ছিল তারা ছিল ঐ সমস্ত লোক যারা অমুসলিমদের বিরুদ্ধে বিজয়ের পর বিজয় লাভ করে দাম্ভিক হয়ে উঠেছিল এবং নিজেদের এ কৃতিত্বের কারণে কুরায়শ এবং হিজাযবাসীদেরকে থোড়াই কেয়ার করত। তারা সবেমাত্র ইসলাম গ্রহণ করেছিল। তাই পুরাতন মুসলিমগণের মত তারা ইসলামের মর্মকথা তখনও গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারেনি। আবদুল্লাহ ইব্‌ন সাবা অতি সহজেই অন্যান্য গোত্রের লোকদেরকে হযরত উসমান গনী (রা) ও বনু উমাইয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপনে উদ্বুদ্ধ করে। তারপর সে বসরা, কূফা, দামিশকে প্রভৃতি সামরিক কেন্দ্র পরিভ্রমণ করে এবং দামিশক ছাড়া অন্য সব জায়গায় সে তার অনুকূল আবহাওয়া ও পরিবেশ সৃষ্টিতে সফলকাম হয়। দামিশকেও যে সে একেবারে সাফল্য লাভ করেনি তা নয়। সেখানেও সে হযরত আবূ যর গিফারী (রা) কেন্দ্রিক ঘটনা থেকে যথেষ্ট ফায়দা উঠায়। তারপর সে মিসরে যায় এবং ইতিমধ্যে ইসলামী রাষ্ট্রের কেন্দ্রসমূহে যে আন্দোলনের সূচনা করে এসেছিল, সেখানে বসে বসে তা সুবিন্যস্ত করার প্রয়াস পায়। সে মিসরকে তার কেন্দ্রভূমিতে পরিণত করে এজন্য যে, সেখানকার গভর্নর আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন সা‘দ (রা) স্বেচ্ছাচারিতার দিক দিয়ে অন্যান্য গভর্নরদের চাইতে যতটুকু এগিয়ে ছিলেন, দূরদর্শিতার দিক দিয়ে ছিলেন ততটুকু পেছনে। তাছাড়া তিনি রোমানদের হামলা প্রতিরোধ এবং আফ্রিকা, ত্রিপলী প্রভৃতি অঞ্চলের প্রতিরক্ষায় এতই ব্যস্ত ছিলেন যে, আভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র ও বিশৃঙ্খলা দমনের প্রতি খুব একটা মনোযোগ দিতে পারছিলেন না। তাছাড়া আবদুল্লাহ ইব্‌ন সাবা মিসরে এমন দু’তিনজন সাহাবীকেও পেয়ে যায় যারা অতি সহজেই তার প্রতারণা জালে আবদ্ধ হয়ে তার লক্ষ্য অর্জনে সর্বতোভাবে সাহায্য করতে থাকেন।

আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন সাবা বসরায় হযরত তালহা (রা)-এর এবং কূফাতে হযরত যুবায়র (রা)-এর অত্যধিক জনপ্রিয়তা দেখে এর বিরুদ্ধে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। কেননা এ কথা সে ভালভাবেই জানত যে, ইসলামী বিশ্বে সামগ্রিকভাবে হযরত আলী (রা)-ই সর্বাধিক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। তাই সে কুফা, বসরা ও দামিশক ছেড়ে মিসরে চলে আসে। এখানে স্থির হয়ে বসে সে কূফা ও বসরাবাসীদের অন্তরে সেই বিদ্বেষভাবে ফলে ফুলে সুশোভিত করে তোলার কাজে আত্মনিয়োগ করে যা সে বনু উমাইয়া ও হযরত উসমান গনী (রা)-এর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে সৃষ্টি করে এসেছিল। তবে মিসরে ঐ বিদ্বেষভাব সৃষ্টি ছাড়াও সে হযরত আলী (রা)-কে ভালবাসা, তার অত্যাচারিত হওয়া, খিলাফত থেকে তাকে অন্যায়ভাবে বঞ্চিত রাখা, তার ‘ওয়াছী’ (রাসূলের প্রতিনিধি) হওয়া প্রভৃতি ধ্যান-ধারণাও মানুষের মধ্যে প্রচার করে। এ প্রচারের কাজেও সে অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করে এবং হযরত আলী (রা)-এর প্রতি সহানুভূতিশীল ও তার সমর্থনকারীদের একটি বিরাট দল গঠন করতে সক্ষম হয়। আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন সাবার এ কর্মতৎপরতা শীঘ্রই ইসলামী বিশ্বে এক বিরাট আলোড়নের সৃষ্টি করে এবং সেই সাথে গণ্যমান্য সাহাবায়ে কিরামের হাত থেকে সেই সুযোগ চলে যেতে থাকে যা অবলম্বনে তাঁরা বনূ উমাইয়াকে সঠিক পথে রাখার প্রচেষ্টায় সফলকাম হতে পারতেন। আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন সাবার দুষ্কর্মের জঘন্যতম দিকটি ছিল সে তার বিশ্বস্ত এজেন্টদের সাহায্যে মদীনা তাইয়িবা থেকে হযরত আলী (রা)-এর নামাংকিত, কল্পিত ও বানোয়াট চিঠিপত্র কূফা, বসরা ও মিসরবাসীদের কাছে পাঠাবার ব্যবস্থা করে। সে নিজেকে হযরত আলী (রা)-এর প্রতিনিধি হিসাবে পরিচিত করে তুলতেও সক্ষম হয়, যার ফলে সে মানুষকে ব্যাপকভাবে প্রতারণা করার সুবর্ণ সুযোগ লাভ করে। তারই প্রতারণার ফলে একদিকে হযরত উসমান গনী (রা)-কে নৃশংসভাবে শহীদ করা হয় এবং অন্যদিকে সেই অতীত থেকে আজ পর্যন্ত কিছু কিছু মানুষ এ ভ্রান্ত ধারণায় লিপ্ত হয়ে আছে যে, হযরত আলী (রা)-এর ইঙ্গিতে ও ষড়যন্ত্রেই (আল্লাহ্ পানাহ) হযরত উসমান গনী (রা)-কে শহীদ করা হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে এর চাইতে ভ্রান্ত, জঘন্য ও অমূলক কোন কথা আর হতে পারে না। আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন সাবা না হযরত উসমান গনী (রা)-এর বন্ধু ছিল, আর না ছিল হযরত আলী (রা)-এর প্রতি সহানুভূতিশীল। সে ছিল উভয়েরই শত্রু এবং ইসলামের ধ্বংস সাধনে সদা-তৎপর। এ কারণেই সে হযরত উসমান গনী (রা)-কে হত্যা করিয়েছে এবং অন্যদিকে হযরত আলী (রা)-কে ঐ হত্যার ষড়যন্ত্রকারী প্রমাণ করে তাঁর সম্মান ও মর্যাদার উপর মারাত্মক আঘাত হেনেছে।

হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রা) ও হযরত উমর ফারুক (রা)-এর পর যদি হযরত আলী (রা) খলীফা নির্বাচিত হতেন, তাহলে তা হত সময়ের বিবেচনায় ও ক্রমধারা অনুসারে সর্বাধিক সঙ্গত ও সমীচীন। যদি হযরত আলী (রা) হযরত উমর ফারূক (রা)-এর পর খিলাফতের আসনে অধিষ্ঠিত হতেন তাহলে তার ও হযরত উমর ফারুক (রা)-এর খিলাফতের মধ্যে এক অপূর্ব সামঞ্জস্য পরিলক্ষিত হত। হযরত উমর ফারুক (রা)-এর ন্যায় হযরত আলী (রা)-এর মধ্যে ছিল সেই সারল্য, সেই তাকওয়া ও ধর্মপরায়ণতা, বিত্তসম্পদের প্রতি সেই অনাসক্তি, জাতীয় ও গোত্রীয় পক্ষপাতিত্বের প্রতি সেই অনীহাভাব ইত্যাদি। তাই সম্ভবত দীর্ঘদিন পর্যন্ত মুসলিম মিল্লাতের মধ্যে স্বজনপ্রিয়তা ও গোত্রীয় পক্ষপাতিত্বের উদ্ভব হত না। হযরত উসমান গনী (রা)-এর পর হযরত আলী (রা)-এর খলীফা নির্বাচিত হওয়াটা যে তাঁর খিলাফত আমলের যাবতীয় ব্যর্থতার মূল কারণ তা আমাদের আগামী আলোচনা থেকে প্রতিপন্ন হবে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন