hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের ইতিহাস ১ম খণ্ড

লেখকঃ মাওলানা আকবর শাহ খান নজিববাদী

১৯২
হুনায়ন যুদ্ধ
মক্কা বিজয় ও অধিকাংশ কুরায়শের ইসলাম গ্রহণের কথা শুনে যেসব গোত্র মুসলমানদের মিত্র ছিল না, তারা অস্থির ও হতবুদ্ধি হয়ে পড়লো। হাওয়াযিন ও সাকীফ গোত্র ছিল তাদের অন্যতম। এরা তায়িফ ও মক্কার মাঝামাঝি স্থানে বাস করত এবং কুরায়শের প্রতিদ্বন্দ্বী ও প্রতিপক্ষ হিসাবে বিবেচিত হতো। এই গোত্রগুলো না মুসলমানদের মিত্র ছিল, না মক্কার কুরায়শদের। তারা ভাবলো, মুসলমানরা মক্কার পর এখন আমাদের উপর হামলা করবে। বনু হাওয়াযিনের সরদার মালিক ইব্‌ন আওফ বনূ হাওয়াযিন ও বনূ সাকীফের সবগুলো গোত্রকে যুদ্ধের জন্য উদ্বুদ্ধ করে নিজের চতুষ্পার্শ্বে একত্রিত করলো। নাসর, জুশাম, সা‘দ প্রভৃতি গোত্রও অনুপ্রাণিত হয়ে যুদ্ধে শরীক হলো। আওতাস নামক স্থানে এই বিরাট বাহিনী সমবেত হলো। হযরত নবী করীম (সাঃ) মক্কায় বসে যখন এই বিরাট সৈন্য সমাবেশের খবর পেলেন, তখন তিনি আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন আবূ হাদরাদ আসলামীকে গুপ্তচররূপে সংবাদ সংগ্রহের জন্য প্রেরণ করলেন। তিনি ফিরে এসে বললেন, শত্রুদের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তারা যুদ্ধের জন্য এখন প্রস্তুত। হযরত নবী করীম (সাঃ) তৎক্ষণাৎ যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করলেন। দশ হাজার মুহাজির ও আনসার তার সাথে মদীনা থেকে এসেছিলেন। তারা সবাই এবং দু’ হাজার মক্কাবাসীসহ মোট বারো হাজার লশকর তার সঙ্গে মক্কা থেকে রওয়ানা হলেন। মক্কাবাসী দু’ হাজার লোকের মধ্যে কিছু নও-মুসলিম ছিলেন। আর কিছু লোক ছিল যারা তখনো মুশরিকসুলভ মূলতত্ত্বে বিশ্বাসী ছিল।

অষ্টম হিজরীর পহেলা শাওয়াল ইসলামী লশকর তিহামা উপত্যকা অতিক্রম করে হুনায়নে পৌঁছলো। শত্রুপক্ষ ইসলামী লশকরের নিকটবর্তী হওয়ার খবর পেয়ে হুনায়নের উভয় দিকের গোপন ঘাঁটিতে ওঁৎ পেতে অপেক্ষা করলো।

মুসলমানগণ উপত্যকার শাখা-প্রশাখা ও অলিগলি ঘুরে নিম্নভূমিতে অবতরণ করছিলেন। সুব্‌হে কাযিবের অন্ধকার তখন সুবিস্তৃত। অকস্মাৎ শত্রুবাহিনী গোপন ঘাঁটি থেকে বের হয়ে তীর-নিক্ষেপ ও তীব্র আক্রমণ শুরু করলো। এই আকস্মিক আপতিত বিপদ ও অতর্কিত আক্রমণের ফলে মুসলিম পক্ষ ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলো। মক্কাবাসী দু’হাজার লোকই সর্বপ্রথম দিশেহারা হয়ে পলায়ন করলো। তাদের দেখাদেখি মুসলমানরাও যে যে দিকে পারলো ছুটাছুটি করতে লাগলেন। হযরত নবী করীম (সাঃ) ছিলেন উপত্যকার ডান দিকে। তার সঙ্গে ছিলেন হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রা), হযরত উমর ফারুক (রা), হযরত আলী (রা), হযরত আব্বাস (রা), হযরত ফযল ইব্‌ন হাইয়ান (রা), আবূ সুফিয়ান (রা), ইবনুল হারিছ ও সাহাবায়ে কিরামের একটি ক্ষুদ্র দল। তিনি তাঁর দুলদুল নামক সাদা খচ্চরের উপর সওয়ার ছিলেন। হযরত আব্বাস (রা) তার লাগাম ধারণ করেছিলেন। এই কঠিন বিপদ ও সংকটাবস্থায় তিনি উচ্চৈঃস্বরে বলে উঠলেন :

انا النبي لا كذب * انا ابن عبد المطلب

আমি (আল্লাহর) নবী একথা মিথ্যা নয়, আমি আবদুল মুত্তালিবের বংশধর জানবেন নিশ্চয়।

হযরত নবী করীম (সাঃ)-এর এরূপ দৃঢ়তা ও বীরত্ব মুসলমানদের হিম্মত বাড়িয়ে দিলো। তার চতুষ্পার্শ্বে শত্রুপক্ষ পূর্ণ শক্তিতে হামলা করছিল আর এই মুষ্টিমেয় কয়েকজন লোক তাদের সাথে লড়াই করছিল। হযরত আব্বাস (রা) ছিলেন উচ্চ কণ্ঠস্বরের অধিকারী। হযরত নবী করীম (সাঃ) তাঁকে বললেন—মুসলমানদের এদিকে ডাক দাও। হযরত আব্বাস (রা) প্রত্যেক গোত্রের নাম ধরে ধরে ডাক দেয়া শুরু করলেন : তোমরা এদিকে এসো।’ এই ডাক শুনে মুসলমানগণ এই ডাকের দিকে এমনভাবে ছুটে এলো, যেমনিভাবে গো-শাবক তার মায়ের ডাক শুনে তার দিকে ছুটে যায়। কিন্তু নবী করীম (সাঃ)-এর নিকট মাত্র শ’ খানেক লোক পৌঁছতে সক্ষম হলো। অন্যরা শত্রুপক্ষ মাঝখানে অন্তরায় হওয়ার দরুন তাঁর নিকট পৌঁছতে পারেনি। সেখানে থেকেই তারা লড়াই চালাতে লাগলো। তিনি ‘আল্লাহু আকবর’ বলে তার দুলদুল খচ্চরকে শত্রুপক্ষের দিকে ধাবিত করলেন এবং ঐ শ’ খানেক লোকের ক্ষুদ্র দলটি এমন তীব্র আক্রমণ চালালো যে, সম্মুখ থেকে শত্রুরা সরে গেলো। এরপর তারা শত্রুপক্ষের লোকদের গ্রেফতার করা শুরু করলো। হযরত নবী করীম (সাঃ)-এর না‘রা-ই-তাকবীর শুনে এবং শত্রুদের উপর তাকে হামলা করতে দেখে মুসলমানরাও চতুর্দিক থেকে জড়ো হয়ে শত্রুপক্ষের উপর না‘রা-ই-তাকবীর দিয়ে হামলা করলো। ফলে অনতিবিলম্বেই যুদ্ধের মোড় পাল্টে গেলো। শত্রুপক্ষ সম্পূর্ণ পরাজিত হলো। এই যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত মক্কাবাসী মুশরিকদের কারণে প্রথমে মুসলিমপক্ষের পরাজয় হয়েছে। কেননা, তারা নিজেরা পলায়ন করে অন্যদের কদমও নড়বড়ে করে দিয়েছিল। কিন্তু হযরত নবী করীম (সাঃ)-এর অসীম বীরত্ব ও দৃঢ়তা অত্যল্প কালের মধ্যেই মুসলমানদের সামলে নিলো এবং শত্রুপক্ষ চরম পরাজয় বরণ করলো।১ যুদ্ধ পরিস্থিতি যখন জটিল হয়ে উঠেছিল এবং মুসলমানদের মধ্যে যুদ্ধের বিভীষিকা ছড়িয়ে পড়েছিল, তখন মক্কার এক ব্যক্তি উৎফুল্ল কণ্ঠে বলে উঠলো—যাক, আজকে জাদুর পরিসমাপ্তি ঘটলো। আরেকজন বললো, মুসলমানদের পরাজয় আর ঠেকানো যাবে না। এরা এভাবেই পালাতে পালাতে সমুদ্র উপকূল পর্যন্ত চলে যাবে। শায়বা নামক এক ব্যক্তি বললো, আজ আমি মুহাম্মদ (সাঃ) থেকে প্রতিশোধ নেবো। এই বলে সে হযরত নবী করীম (সাঃ)-এর দিকে এগিয়ে গেলো। কিন্তু রাস্তার মধ্যে বেহুশ হয়ে পড়ে গেলো।

─────────────────১. ইতোপূর্বে সংঘটিত বদর, ওহুদ ও খন্দকসহ সকল যুদ্ধেই মুসলমানরা ছিল সংখ্যালঘিষ্ঠ আর বিরুদ্ধ পক্ষ কাফির মুশরিকরা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। এই প্রথম মুসলমানরা এমন এক শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করতে যাচ্ছিল যারা ছিল তাদের তুলনায় সংখ্যাশক্তিতে লঘিষ্ঠ। ফলে কিছু কিছু মুসলমান নিজেদের এই বিপুল সংখ্যাশক্তিতে বিভ্রান্ত ও গর্বিত হয়ে বলে ওঠেনঃ আজ আর আমরা সংখ্যায় কম নই বিধায় আমাদের পরাজিত হবার কোন আশংকা নেই। বিজয় তো আমাদের হাতের মুঠোয়।

বিষয়টি সকল কিছুর যিনি নিয়ামক, যিনি জয়-পরাজয়ের মালিক, আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের পছন্দ হয় নি। কেবল আল্লাহর সাহায্যই যে মুসলমানদের প্রতিটি বিজয়ের পেছনে ক্রিয়াশীল, সংখ্যা কিংবা অস্ত্রশক্তি নয় একথা তিনি মুসলমানদের হৃদয়ে গেঁথে দিতে চাইলেন। মুসলমানদের প্রতি সাহায্য-সমর্থনের প্রসারিত হাত তিনি যুদ্ধের প্রাথমিক অবস্থায় গুটিয়ে নিলেন। ফলে হাওয়াযিন গোত্রের অতর্কিত আক্রমণের মুখে মুসলমানরা ঘাবড়ে গিয়ে এমনভাবে পেছনে ফিরলেন যে, কেউ কারো দিকে একবার তাকিয়ে দেখেন নি কে কোথায়। এমনকি এ সময় তাদের প্রাণপ্রিয়, রাসূল (সাঃ) কোথায় সেদিকেও কারও খেয়াল ছিল না। কেবল স্বল্প সংখ্যক সাথী নিয়ে এমনতরো সংকটময় মুহূর্তেও যুদ্ধের ময়দানে আল্লাহর রাসূল সুস্থির দাঁড়িয়ে।

আল্লাহ তা‘আলা মুসলমানদের যতটুকু শিক্ষা দেবার এবং ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ভুলের পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে জন্য যেটুকু সতর্ক করার দরকার ছিল যা তিনি চেয়েছিলেন তা হয়ে গেল। সংখ্যাধিক্য তাদেরকে যতটুকু উৎফুল্ল করেছিল, আত্মপ্রসাদে উজ্জীবিত করেছিল আল্লাহ তা‘আলা (মক্কা) বিজয়ের মিষ্টতা উপভোগের পর পুনরায় পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ চাখালেন যাতে তাদের ঈমান অধিকতর মজবুত হয়, বিজয়ে তাদের ভেতর আত্মশ্লাঘা এবং পরাজয়ে কোনরূপ হতাশা সৃষ্টি না হয়। সেজন্য তিনি তাদেরকে পুনরায় আক্রমণাত্মক ভূমিকায় পৌঁছে দিলেন এবং আপন রাসূল ও সকল মুসলমানের উপর এক ধরনের প্রশান্তি (সকীনা) নাযিল করলেন। সেই সঙ্গে আল্লাহ তার পক্ষ থেকে অদৃশ্য এক সেনাবাহিনী পাঠান তার প্রিয় রাসূল ও মু’মিনদের সাহায্যার্থে। অতঃপর মুহূর্তেই যুদ্ধের চিত্র পাল্টে যায়। হাওয়াযিনদের পরাজয় ঘটে এবং মুসলমানরা জয়লাভে সক্ষম হন। কুরআন করীমের সূরা তাওবার ২৫-২৬ নং আয়াতে এরই স্বীকৃতি মিলে।

“আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করেছেন বহু ক্ষেত্রে এবং হুনায়ন যুদ্ধের দিনে যখন তোমাদেরকে উৎফুল্ল করেছিল তোমাদের সংখ্যাধিক্য, কিন্তু তা তোমাদের কোন কাজে আসে নি এবং বিস্তৃত হওয়া সত্ত্বেও পৃথিবী তোমাদের জন্য সংকুচিত হয়েছিল এবং পরে তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছিলে। অতঃপর আল্লাহ তার নিকট থেকে তাঁর রাসূল ও মু‘মিনদের ওপর প্রশান্তি বর্ষণ করেন এবং এমন এক সৈন্যবাহিনী অবতরণ করেন যা তোমরা দেখতে পাওনি এবং তিনি কাফিরদেরকে শাস্তি প্রদান করেন। আর এটাই কাফিরদের কর্মফল।”—সম্পাদক

যুদ্ধক্ষেত্রে হাওয়াযিন গোত্রের বহু লোক নিহত হলো এবং অবশেষে তারা ময়দান থেকে পলায়ন করলো। তাদের পর ছাকীফ গোত্রের লোকেরা কিছুক্ষণ যুদ্ধক্ষেত্র উত্তপ্ত রাখলো। শেষে তারাও পরাজয়ের গ্লানি বহন করতে বাধ্য হলো। এই যুদ্ধে শত্রুপক্ষের বড় বড় সরদার ও বাহাদুর ব্যক্তি মুসলমানদের হাতে নিহত হলো। কিন্তু তাদের প্রধান সেনাপতি মালিক ইব্‌ন আওফ পলায়ন করলো এবং তায়িফের দিকে চলে গেলো। আর বিরুদ্ধবাদী লোকেরা এই পলায়নকারীদেরকে আশ্রয় দিয়ে শহরের দরজা বন্ধ করে দিলো। পলায়নকারীদের একটি অংশ আওতাস নাম স্থানে সমবেত হলো এবং আরেকটি অংশ আশ্রয় নিলো নাখ্‌লা নামক স্থানে। হযরত নবী করীম (সাঃ) তাদের পশ্চাদ্ধাবনকল্পে আওতাস ও নাখলায় সেনাদল প্রেরণ করলেন এবং উভয় স্থানেই মুকাবিলা ও হতাহত হলো। কিন্তু মুসলিম পক্ষ উভয় স্থানেই শত্রুপক্ষকে পরাস্ত করে তাড়িয়ে দিলেন এবং মালে গনীমত ও যুদ্ধবন্দী নিয়ে ফিরে এলেন। হযরত নবী করীম (সাঃ) সমস্ত যুদ্ধবন্দী ও মালে গনীমত জি‘রানা নামক স্থানে জমা করার নির্দেশ দিলেন এবং হযরত মাসঊদ ইব্‌ন উমর গিফারী (রা)-কে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিযুক্ত করে তায়িফের উদ্দেশ্যে গমন করলেন। এই যুদ্ধে ছয় হাজার যুদ্ধবন্দী, চুয়াল্লিশ হাজার উট, চুয়াল্লিশ সহস্রাধিক মেষ-বকরী, চার হাজার উকিয়া (প্রতি উকিয়া এক তোলা সাত মাশা পরিমাণ) রৌপ্য মুসলমানদের হস্তগত হলো। এই যুদ্ধ হুনায়ন যুদ্ধ নামে খ্যাত। সবগুলো সাকীফ গোত্র তায়িফে একত্রিত হয়েছিল এবং তায়িফবাসী তাদের সমব্যথী বনেছিল।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন