hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের ইতিহাস ১ম খণ্ড

লেখকঃ মাওলানা আকবর শাহ খান নজিববাদী

২৮৯
হযরত খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদ (রা)-এর পদচ্যুতি
হযরত সিদ্দীকে আকবর (রা) হযরত খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদ (রা)-কে সিরিয়ায় যুদ্ধরত মুসলিম বাহিনীর প্রধান সেনাপতি করে পাঠিয়েছিলেন। হযরত খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদ (রা) একজন বিরাট যোদ্ধা ও অসম সাহসী বীর সেনাপতি ছিলেন। ইরাকেও তখন পর্যন্ত হযরত খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদ (রা)-ই প্রধান সেনাপতি ছিলেন। তার বিস্ময়কর বীরত্ব ও সামরিক যোগ্যতা ইরানী ও সাসানী সাম্রাজ্যকে বিস্ময়াভিভূত ও ভীত-সন্ত্রস্ত করে তুলেছিল। রোমান সাম্রাজ্যকেও এভাবে ভীত-সন্ত্রস্ত করে তোলার জন্য প্রথম দিকে একটি শক্ত ধাক্কার প্রয়োজন ছিল। কাজেই হযরত সিদ্দীকে আকবর (রা) হযরত খালিদ সায়ফুল্লাহ (আল্লাহর অসি)-কে প্রধান সেনাপতি করে সিরিয়ার দিকে পাঠান এবং তাঁর সে অনুমান অত্যন্ত সঠিক বলে প্রমাণিত হয়। কেননা, হযরত খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদ (রা) সিরিয়ায় উপনীত হয়ে ইয়ারমুকের যুদ্ধক্ষেত্রে এমন শক্ত ধাক্কা লাগান যে, তাতে রোমান সাম্রাজ্যের মাজা একেবারে ভেঙ্গে পড়ে এবং রোমান সম্রাট কায়সারের পরাক্রম ও প্রতাপের উপর দিয়ে এক প্রলয়ংকরী ঝড় বয়ে যায়। প্রথম দিকের এ সমস্ত যুদ্ধের পর ইরান ও রোমের আবাদকৃত সবুজ শ্যামল প্রদেশসমূহ মুসলিম বাহিনীর দখলে আসার এবং ঐ দুই সাম্রাজ্যের নিয়মিত সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। এমতাবস্থায় ইসলামী সেনাবাহিনীকে শুধু একজন দিগ্বিজয়ী সেনাপতিরই নয়, বরং একজন বিচক্ষণ ও সুকৌশলী অফিসারের কর্তৃত্বাধীনে নিয়োজিত রাখার প্রয়োজন ছিল।

হযরত ফারূকে আযম (রা) হযরত খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদ (রা)-এর সামরিক যোগ্যতার কথা অস্বীকার করতেন না, তবে তাকে তিনি কিছুটা অসতর্ক ও হঠকারী মনে করতেন। প্রথম থেকেই তার এ আশংকা ছিল যে, হযরত খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদ (রা)-এর অসাবধানতার কারণে না যেন আবার মুসলিম বাহিনী ধ্বংসের সম্মুখীন হয়ে পড়ে। হযরত সিদ্দীকে আকবর (রা)-ও হযরত ফারূকে আযম (রা)-এর এ চিন্তাধারার বিরোধী ছিলেন না। তবে, ইরাক ও সিরিয়ার প্রাথমিক যুদ্ধসমূহে হযরত খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদের নেতৃত্বের অনুপম গুণাবলীর মুকাবিলায় খুঁতগুলোর পরিমাণ খুবই কম। আর তাই তিনি বিশ্বের সবচাইতে শক্তিশালী দু’টি সাম্রাজ্য (ইরান ও রোম)-এর সামনে ‘সায়ফুল্লাহ’র বীরত্ব ও পরাক্রম প্রদর্শনকে জরুরী বলে মনে করেছিলেন। যেহেতু তার এ লক্ষ্য ইতিমধ্যে অর্জিত হয়ে গিয়েছিল, তাই এখন আর হযরত খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদ (রা)-এর প্রধান সেনাপতি থাকার প্রয়োজন ছিল না। এখানে ঐ কথাগুলো পুনরায় স্মরণ করা যেতে পারে, যা হযরত সিদ্দীকে আকবর (রা) তাঁর জীবনের অন্তিম মুহূর্তে ইরাকের মুসলিম বাহিনী সম্পর্কে হযরত ফারূকে আযম (রা)-কে সম্বোধন করে বলেছিলেন এবং যা ইতিপূর্বে উল্লিখিত হয়েছে। হযরত ফারূকে আযম (রা) সর্বদা বলতেন, আল্লাহ্ তা‘আলা হযরত আবূ বকর (রা)-এর প্রতি অজস্র ধারায় রহমত নাযিল করুন। কেননা, তিনি হযরত খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদ (রা)-এর নেতৃত্বের দোষত্রুটি গোপন করে গেছেন। তিনি আমাকে হযরত খালিদ (রা)-এর সংগীদের সম্পর্কে তাঁর জীবনের অন্তিম মুহূর্তে নির্দেশ দেন যে, তাদেরকে ইরাকের দিকে পাঠিয়ে দাও। কিন্তু, তিনি তাতে হযরত খালিদ (রা)-এর উল্লেখ করেননি।

এ থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় যে, হযরত উমর ফারুক (রা) হযরত খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদ (রা)-এর পদচ্যুতির যে নির্দেশ দিয়েছিলেন তা হযরত সিদ্দীকে আকবর (রা)-এর ইচ্ছার বিরুদ্ধে ছিল না। আর এটা কিভাবে সম্ভব যে, হযরত ফারূকে আযম (রা) খলীফা হওয়ার সাথে সাথে সর্বপ্রথম সে কাজই করবেন যা হযরত সিদ্দীকে আকবর (রা)-এর ইচ্ছা ও বাসনার সম্পূর্ণ বিপরীত। হযরত ফারূকে আযম (রা)-এর খিলাফতের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে ঐতিহাসিকগণ সাধারণভাবে একেবারে শুরুতেই একথাও ভুলে যান যে, হযরত সিদ্দীকে আকবর (রা) হযরত ফারূকে আযম (রা)-কে উসামা (রা)-এর বাহিনী থেকে পৃথক করে নিজের কাছে এজন্য রেখে দিয়েছিলেন যাতে খিলাফত সংক্রান্ত কার্যাবলীতে তিনি তাঁর পরামর্শ (থেকে সাহায্য) গ্রহণ করতে পারেন। আর হযরত সিদ্দীকে আকবরের খিলাফতের সূচনা থেকে শেষ পর্যন্ত হযরত ফারুকে আযম (রা)-ই হযরত সিদ্দীকে আকবর (রা)-এর মন্ত্রী ও উপদেষ্টা ছিলেন। হযরত ফারুকে আযম (রা)-এর সাথে আলোচনা-পর্যালোচনা ও বিচার-বিবেচনা না করে হযরত সিদ্দীকে আকবর (রা) কোন কাজই করতেন না। বিশ্বের অনেক লোকেরই দৃষ্টি স্থূল ও ভাসাভাসা। তারা তাদের বুদ্ধির অপরিপক্কতার কারণে মহান ব্যক্তিদের প্রতি এমন কিছু কথা আরোপ করতে মোটেই সতর্ক নয়। হযরত ফারূকে আযম (রা) হযরত খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদ (রা)-এর কোন কোন অসতর্কতামূলক কাজের প্রতি অবশ্যই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন, কিন্তু তা ঐ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল যে পর্যন্ত শরীআত এবং তাঁর গবেষণা-পর্যালোচনা ইজতিহাদের সম্পর্ক ছিল। এ অসন্তোষ প্রকাশ বিদ্বেষ ও শত্রুতার পর্যায়ে পৌঁছতে পারে না এবং প্রকৃত পক্ষে পৌঁছেও নি। যে ফারূকে আযম (রা) বদর যুদ্ধের বন্দীদের সম্পর্কে নির্দ্বিধায় এ প্রস্তাব দিয়েছিলেন যে, তাদের মধ্যে যে যার আত্মীয়কে হত্যা করবে—তার সম্পর্কে এ অভিমত ব্যক্ত করা যে, হযরত খালিদ (রা)-এর প্রতি তার কিছুটা বিদ্বেষ বা ব্যক্তিগত শত্রুতা ছিল—সরাসরি জুলুম এবং নেহায়েত স্থূল ও অমূলক ধারণা বৈ কিছু নয়।

হযরত ফারূকে আযম (রা) হযরত খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদ (রা)-কে পদচ্যুত করে মুসলিম উম্মাহকে এক বিরাট কৃতজ্ঞতার পাশে আবদ্ধ করেন এবং একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন যে, দীনকে দুনিয়ার উপর অগ্রাধিকার প্রদানের এবং দীনী খিদমতের মুকাবিলায় আপন সত্তাকে হেয় জ্ঞান করার দৃষ্টান্ত খুঁজতে গেলে আমরা সর্বপ্রথম হযরত খালিদ (রা)-এর নামই স্মরণ করি। হযরত খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদ (রা) তাঁর জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত যদি মুসলিম বাহিনীর প্রধান সেনাপতি থাকতেন তবুও তিনি বীরত্ব ও সামরিক যোগ্যতার ক্ষেত্রে এর চাইতে বেশী খ্যাতি অর্জন করতে পারতেন না যা আজ তার রয়েছে। কিন্তু, এ পদচ্যুতির ঘটনা হযরত খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদ (রা)-এর সম্মান ও মাহাত্ম্যের সাথে এমন এক বিরাট মর্যাদা সংযোজন করে দিয়েছে যার সামনে তাঁর সেনাপতিত্ব ও বীরত্বের মর্যাদা ম্লান হয়ে পড়ে। আমরা একদিকে হযরত খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদ (রা)-এর সামরিক কৃতিত্বপূর্ণ কার্যাবলীর উপর গর্ব করি। অন্যদিকে প্রশংসা করি মহান আল্লাহর প্রতি তাঁর একনিষ্ঠতার এবং ‘উলুল আমর’ বা খলীফার প্রতি কায়মনোবাক্যে তার আনুগত্য প্রদর্শনের।

কোন কোন ঐতিহাসিক এক্ষেত্রে তাদের একটি সূক্ষ্ম অভিমত ব্যক্ত করেছেন। আর তা হলো, যেহেতু হযরত খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদ (রা) প্রত্যেকটি যুদ্ধেই জয় লাভ করছিলেন, তাই জনসাধারণের মনে এ ধারণার সৃষ্টি হতে পারত যে, হযরত খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদ (রা)-এর সেনাপতিত্বই এসব বিজয়ের কারণ। প্রকৃতপক্ষে, মুসলমানগণের সাফল্য ও বিজয় কোন ব্যক্তি বিশেষের সাথে সংশ্লিষ্ট নয় বরং এর মূল কারণ মহান আল্লাহর ইচ্ছা এবং ইসলামের বরকত। এ বর্ণনার সত্যতা এভাবেও প্রমাণিত হয় যে, হযরত ফারূকে আযম (রা) যেভাবে সিরীয় বাহিনীর সেনাপতিত্বে পরিবর্তন ঘটান সেভাবে পরিবর্তন ঘটান ইরাকী বাহিনীর সেনাপতিত্বেও। তিনি হযরত মুছান্না ইব্‌ন হারিছাকে পদচ্যুত কর তাকে আবূ উবায়দা ইব্‌ন মাসঊদ (রা)-এর অধীনস্থ করে দেন। আজো যদি মুসলমানগণ ইসলামের আনুগত্যের ক্ষেত্রে সাহাবায়ে কিরাম (রা)-কে নমুনা হিসাবে গ্রহণ করে তাহলে তারাও সেই বিজয় ও সাফল্য লাভ করতে পারবে যা প্রথম যুদ্ধের মুসলমানগণ করেছিলেন।

হযরত উমর ফারুক (রা) খলীফা নির্বাচিত হওয়ার পর উল্লেখযোগ্য যেসব সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন, তার মধ্যে সর্বপ্রথম কাজ ছিল তিনি হযরত খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদ (রা)-কে সিরিয়ার মুসলিম বাহিনীর প্রধান সেনাপতিত্ব থেকে পদচ্যুত করে হযরত আবূ ‘উবায়দা ইবনুল জাররাহ্ (রা)-কে সে পদে অধিষ্ঠিত করেন। এ আদেশ সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হয়। তারপর খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদ (রা) হযরত আবূ উবায়দা (রা)-এর অধীনে আত্মোৎসর্গ ও কাফির নিধনের ক্ষেত্রে শুধু পূর্বের চাইতে অধিক তৎপরতাই দেখান নি, বরং হযরত আবূ উবায়দা (রা)-কে সর্বদা যুদ্ধ সম্পর্কিত অত্যন্ত উপকারী পরামর্শও দিতে থাকেন। তা হলো, সেই বৈশিষ্ট্য যা হযরত খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদ (রা) মর্যাদা ও সম্মানকে সমগ্র বিশ্ববাসীর সামনে অনেক বড় করে তুলে ধরে এবং বিশ্বের এমন একজন অতুলনীয় সেনাপতি ও বিশুদ্ধচিত্ত খাঁটি মুসলিম হিসাবে প্রতিপন্ন করে, আর একথাও প্রতিপন্ন করে যে, তার অন্তরে ছিল শুধু মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের স্পৃহা! তাতে না ছিল সুখ্যাতি অর্জন বা লোক দেখানোর নাম-নিশানা। হযরত ফারূকে আযম (রা)-এর দ্বিতীয় কাজ ছিল, তিনি হযরত আবূ উবায়দ ইব্‌ন মাসঊদ (রা)-কে একটি বাহিনীসহ ইরাকের দিকে প্রেরণ করেন এবং তাকে ইরাকে অবস্থানকারী সমগ্র মুসলিম বাহিনীর প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত করেন। হযরত আবূ উবায়দ ইব্‌ন মাসঊদ (রা)-কে যাত্রা করিয়ে দেয়ার পর হযরত ফারূকে আযম (রা) তৃতীয় যে কাজটি করেছিলেন তা হলো, তিনি হযরত ইয়া‘লা ইব্‌ন উমাইয়া (রা)-কে ইয়ামানের দিকে রওয়ানা করিয়ে নেন যাতে হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সেই অন্তিম উপদেশ পরিপূর্ণতা লাভ করে যাতে তিনি বলেছিলেন, আরব দেশে মুসলমান ব্যতীত কোন ইয়াহূদী বা খ্রিস্টান যেন না থাকতে পারে। যেহেতু মুসলমানগণ হযরত সিদ্দীকে আকবর (রা)-এর সোয়া দু’বছরের খিলাফত কালে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কার্য সম্পাদনে ব্যাপৃত ছিলেন, তাই হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর ঐ অন্তিম উপদেশ বাস্তবায়নের সুযোগ তারা তখন পর্যন্ত পান নি।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন