hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের ইতিহাস ১ম খণ্ড

লেখকঃ মাওলানা আকবর শাহ খান নজিববাদী

২৪৬
ধর্মত্যাগীদের ফিতনা
সাধারণত মানুষ মনে করে যে, হযরত নবী করীম (সাঃ)-এর ওফাতের পর মদীনা, মক্কা ও তায়িফ ছাড়া সমগ্র আরবদেশ এরূপ মুরতাদ হয়ে যায় যে, লোকেরা তাওহীদ ছেড়ে শিরকে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছিল এবং আল্লাহ্‌র স্থলে মূর্তিপূজা শুরু করে দিয়েছিল। অথচ এটা মনে করা সম্পূর্ণ ভুল ও বাস্তবতাবর্জিত। প্রকৃত ঘটনা ছিল এই যে, মিথ্যাবাদীরা অর্থাৎ নবুওয়াতের মিথ্যা দাবীদাররাও সালাত প্রভৃতি ইবাদতকে অস্বীকার করতো না। তারা ইসলাম ত্যাগ করে কুফর ও শির্‌কও গ্রহণ করেনি, বরং ইসলামের কোন কোন রুকন বিশেষ করে যাকাত দিতে অস্বীকার করে। এ অস্বীকারের কারণ ছিল আরব জাতি-গোষ্ঠীর প্রাচীন লাগামহীনতা ও উচ্ছৃংখলতা। ইসলাম মানুষের উপর যাকাত ফরয করেছিল। এটা ছিল ট্যাক্স বিশেষ। মালের পরিমাণ হিসাবে সাহেবে নিসাব লোকদেরকে তা (ট্যাক্স) আদায় করতে হতো। এই ট্যাক্স বা খাজনাকে স্বাধীনচেতা লোকেরা তাদের জন্য একটি বোঝা স্বরূপ মনে করতো। যারা তখন ভাল মতো ইসলামের স্বাদ আস্বাদন করেনি, তারা এই ইসলামী খাজনা পরিশোধ করতে অস্বীকার করে। অবশিষ্ট ইসলাম ধর্মকে তারা অস্বীকার করেনি। যাকাত অস্বীকার যেহেতু জাতি-গোষ্ঠীর মেজায ও বৈষয়িক স্বার্থের অনুকুল ছিল, তাই এই অস্বীকৃতির মধ্যে এক এক করে গোটা দেশ শরীক হয়ে যায়। কিন্তু এটা যেহেতু একটি বিদ্রোহ ছিল, তাই নও-মুসলিম বিদ্রোহীদেরকে মুসায়লামা ও তুলায়হা প্রমুখ মিথ্যাবাদী নিজেদের দিকে আকর্ষণ করার এবং আর্থিক ইবাদত ছাড়া দৈহিক ইবাদতের মধ্যেও লাঘব ঘটিয়ে নিজ নিজ নবুওয়াত মানানোর সুযোগ পায়।

যাহোক, শিরক ও মূর্তিপূজার বিষয়টি আদৌ আলোচনাধীন ছিল না। কিন্তু দীন-ইসলাম মানব জাতির মধ্যে যে নিয়ম-শৃংখলা ও বিধি-ব্যবস্থা কায়েম করতে চেয়েছিল, তা বাহ্যত ওলট-পালট হতে বসেছিল। এই ঘোর বিপদের চিকিৎসা ছিল মুশরিক ও কাফিরদের যুদ্ধবাজি থেকেও অধিক শক্ত ও কঠিন। কেননা, যাকাত অস্বীকারকারীদের সংকল্প ও ঘোষণা শোনামাত্রই হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রা) সাহাবায়ে কিরামকে একত্রিত করে পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত করেন। সভায় কোন কোন সাহাবা এই মত প্রকাশ করেন যে, যাকাত অস্বীকারকারীদের সাথে মুশরিক ও কাফিরদের ন্যায় যুদ্ধ করা ঠিক হবে না। কিন্তু এ অভিমতটিও ছিল ঠিক তেমনি দুর্বল, যেমন উসামা বাহিনীর যুদ্ধযাত্রার বিরুদ্ধে কোন কোন লোক প্রকাশ করেছিল। আর যে ভাবে এই অভিমত হযরত সিদ্দীকে আকবর (রা) মানেননি, তেমনিভাবে এই দুর্বল মতটিও তিনি গ্রহণযোগ্য মনে করেন নি। তিনি বলেন, “আল্লাহর কসম! যাকাতের একটি জন্তু বা একটি শস্যকণাও যদি কোন গোত্র পরিশোধ না করে, তবে আমি তার বিরুদ্ধে অবশ্যই যুদ্ধ করবো।”

মুরতাদদের প্রতিনিধি দল মদীনা মুনাওয়ারায় আগমন করে আবেদন করেছিল : সালাত আমরা আদায় করছি, যাকাত আমাদেরকে মাফ করে দিন। কিন্তু হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রা)-এর নিকট থেকে ঐ সাফ জবাব শুনে তারা নিজ নিজ গোত্রের মধ্যে ফিরে গেল। তৎক্ষণাৎ সারা দেশে হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রা)-এর এই দৃঢ় সংকল্পের খবর পৌঁছে গেলো এবং মুরতাদ ও যাকাত অস্বীকারকারীরা মুকাবিলা ও যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলো। প্রদেশসমূহের আলিমগণ তাদের নিজ নিজপ্রদেশের লোকদের বিদ্রোহী হওয়া এবং যাকাত আদায় না হওয়ার সংবাদ পাঠান। হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রা) পূর্ণ প্রস্তুতি, পূর্ণ সাহস ও স্থৈর্যের সাথে একজন সজাগ-মস্তিষ্ক ও রাষ্ট্রনায়ক শাহানশাহরূপে আলিমদের প্রতি যথাযথ নির্দেশনামা এবং গোত্রপতিদের নামে পত্র প্রেরণ করেন। একদিকে উসামা বাহিনী রোমকদের সাথে যুদ্ধরত ছিল, অন্যদিকে মদীনার আশেপাশে সমবেত মুরতাদগণ মদীনার উপর হামলা করার হুমকি দিচ্ছিল। হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রা) যেমন দূর-দূরান্তের মুরতাদদের নিকট চরম হুমকিমূলক পত্র প্রেরণ করেছিলেন, তেমনি আশেপাশের বিদ্রোহীদের হামলা প্রতিরোধ করার জন্যও প্রস্তুত ছিলেন।

তিনি মদীনা মুনাওয়ারার তদানীন্তন মুসলমানদের যুদ্ধযোগ্য লোকদেরকে মসজিদে নববীর সামনে সর্বক্ষণ উপস্থিত ও প্রস্তুত থাকার জন্য নির্দেশ দিয়ে রেখেছিলেন এবং হযরত আলী (রা), হযরত যুবায়র (রা), হযরত তালহা (রা), হযরত আবদুল্লাহ ইব্‌ন মাসঊদ (রা)-কে মদীনা মুনাওয়ারার আশপাশ পাহারা দেওয়ার জন্য আদিষ্ট করে রেখেছিলেন, যাতে মদীনার উপর কোন গোত্র আক্রমণ করলে সঙ্গে সঙ্গে সে খবর হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রা)-এর নিকট পৌঁছতে পারে। আবরাক নামক স্থানে আব্‌স গোত্র এবং যুল-কিসসা নামক স্থানে যুবয়ান গোত্র অবস্থান করছিল। বনূ আসাদ ও বনূ কিনানারও কিছু লোক তাদের মধ্যে ছিল। আব্‌স ও যুবয়ান গোত্রদ্বয় যখন জানতে পারলো যে, মদীনা মুনাওয়ারায় তখন স্বল্প সংখ্যক লোক অবশিষ্ট রয়েছে এবং যাকাত মাফ করার কথা হযরত সিদ্দীকে আকবর (রা) পরিষ্কার অস্বীকার করেছেন, তখন তারা একমত হয়ে মদীনার উপর হামলা করলো। এই হামলাকারীদেরকে হযরত আলী (রা) মদীনার বাইরেই প্রতিরোধ করে মদীনায় সিদ্দীকে আকবর (রা)-এর নিকট সংবাদ প্রেরণ করেন। এদিক থেকেও অনতিবিলম্বে সাহায্য প্রেরিত হলো। মুসলমানরা যূ-খাশাব পর্যন্ত তাদেরকে হটিয়ে দিলেন। শত্রুরা পরাজিত হয়ে পলায়ন করলো বটে, কিন্তু ভিন্ন পথে দফ ও নানারকম বাজনা বাজাতে বাজাতে ফিরে এলো। এতে মুসলমানদের উটগুলো ভয় পেয়ে মদীনায় পালিয়ে আসে। এই অবস্থা দেখে হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রা) নিজে মদীনা থেকে বের হলেন এবং শত্রুর উপর হামলা করেন। পাঁচ-ছয় ঘন্টার রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে মুরতাদরা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয় এবং মুসলমানদের হাতে বহু লোক নিহত হয়।

হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রা) হযরত নু‘মান ইব্‌ন মুকাররিন (রা) ও ছোট্ট একটি দলের মাধ্যমে গনীমতের মাল মদীনায় প্রেরণ করেন এবং স্বয়ং শত্রুর পশ্চাদ্ধাবনে যুল-কিসসা নামক স্থান পর্যন্ত অগ্রসর হন। এদিকে শত্রুদের একটি বিরাট দল ধোঁকা দিয়ে এবং দৃষ্টি এড়িয়ে মদীনা আক্রমণ করলো। তারা কতক মুসলমানকে শহীদ করলো এবং মালে গনীমত পুনরুদ্ধার করে চলে গেল। আবূ বকর সিদ্দীক (রা) ফিরে এসে এই ঘটনা শ্রবণ করে যারপরনাই দুঃখিত হলেন এবং শপথ করলেন যে, মুরতাদদের হাতে যতজন মুসলমান শাহাদাত বরণ করেছেন, ততজন মুরতাদ হত্যা না করে আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবো না। তিনি এই সংকল্প ও আয়োজনে রত থাকাবস্থায়ই হযরত উসামা (রা) মালে গনীমতুসহ মদীনায় প্রবেশ করেন। তিনি উসামা (রা) ও তাঁর বাহিনীকে সফরের ক্লান্তি দূরীকরণার্থে মদীনায় আরাম করার জন্য রেখে খোদ মদীনার মুসলমানদের ছোট্ট দলটি নিয়ে যুল-খাশাব ও যুল-কিসসার দিকে বের হয়ে পড়লেন। আবরাক নামক স্থানে আব্‌স, যুবয়ান, বনূ বকর, ছা‘লাবা ইব্‌ন সা‘দ প্রভৃতি গোত্র মুকাবিলায় প্রবৃত্ত হলো। ঘোর যুদ্ধ সংঘটিত হলো। শেষে মুরতাদরা পরাজিত হয়ে পলায়ন করলো। আবরাক নামক স্থানে হযরত সিদ্দীকে আকবর (রা) অবস্থান করলেন এবং বনূ যুবয়ানের জায়গাগুলো মুসলমানদের প্রদান করলেন। তাদের চারণভূমিগুলো মুজাহিদদের ঘোড়ার জন্য ওয়াক্‌ফ করলেন। এরপর সেখান থেকে তিনি যুল-কিসসা নামক স্থান পর্যন্ত গমন করেন এবং দুশমনদের ইচ্ছামতো কানমলা দিয়ে মদীনায় প্রত্যাগমন করেন। এতক্ষণে উসামা বাহিনীরও ক্লান্তি দূর হয়েছিল।

আরবদেশে হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রা) যেসব লোকের সাথে মুকাবিলা ও যুদ্ধ করেছিলেন, তারা দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। প্রথম, সেসব লোক—যারা নজ্‌দ, ইয়ামান, হাযরামাউত প্রভৃতি এলাকায় মুসায়লামা, তুলায়হা, সাজা প্রমুখ মিথ্যা নবুওয়াতদাবীকারীদের সাথে একমত হয়ে গিয়েছিল। এদের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষেত্রে কোন সাহাবীর দ্বিমত ছিল না। দ্বিতীয় সেসব গোত্র-যারা যাকাত পরিশোধ করতে অস্বীকার করতো। এদের সাথে যুদ্ধ করা কোন কোন সাহাবী সমীচীন মনে করেননি। কিন্তু হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রা)-এর রায় প্রদানের পর সব সাহাবীই তার রায়ের সাথে একমত হন। এই দুই ধরনের লোকের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য তো অবশ্যই ছিল, কিন্তু মুসলমানরা যখন উভয়ের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ করা সমান জরুরী সাব্যস্ত করেন, তখন ঐ দুই শ্রেণীর মধ্যে কোন পার্থক্য ও তফাৎ অবশিষ্ট ছিল না। আর প্রকৃত ঘটনাও এই যে, এই উভয় শ্রেণীই দুনিয়াদারী ও জড়বাদিতার একই সয়লাবে ভেসে গিয়েছিল যাদেরকে সিদ্দীকী কৌশল ও আধ্যাত্মিকতা ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা করে এবং এই ধ্বংসকারী তুফান থেকে নাজাত দিয়ে আরব সেনাবাহিনীকে বিজয়ের শীর্ষে নিরাপদে পৌঁছে দেয়।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন