hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের ইতিহাস ১ম খণ্ড

লেখকঃ মাওলানা আকবর শাহ খান নজিববাদী

৪১২
সিফফীন যুদ্ধের শেষ দু’দিন
পরিপূর্ণ এক সপ্তাহের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর হিজরী ৩৭ সনের ৮ই সফর বৃহস্পতিবার উভয় বাহিনী এক চূড়ান্ত যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়। বুধ ও বৃহস্পতিবারের মধ্যবর্তী সম্পূর্ণ রাত প্রস্তুতিতেই কেটে যায়। বৃহস্পতিবার দিন ফজরের নামাযের ঠিক পর পর আলী (রা) তাঁর সমগ্র বাহিনী নিয়ে সিরীয়দের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনি বাহিনীর মাঝখানে অবস্থান করছিলেন। তাঁর সাথে ছিলেন কূফা ও বসরার গণ্যমান্য ব্যক্তিবৃন্দ এবং মদীনাবাসী যাদের বেশীর ভাগ ছিল আনসার এবং স্বল্প সংখ্যকও বনূ খুযাআ ও বনূ কিনানার লোক। আলী (রা) আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন বুদায়ল-ইব্‌ন ওয়ারাকা খুযাঈকে তার ডান পাশের বাহিনীর এবং আবদুল্লাহকে বাম পাশের বাহিনীর অধিনায়ক নিয়োগ করেন। তিনি প্রত্যেকটি গোত্রের জন্য পৃথক পৃথক স্থান নির্ধারণ করে দেন। প্রত্যেকটি গোত্রেরই ছিল পৃথক পৃথক পতাকা ও পৃথক পৃথক অধিনায়ক। আম্মার ইব্‌ন ইয়াসির (রা)-কে কবিতা আবৃত্তিকারী ও কুরআন তিলাওয়াতকারীদের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। আর কায়স ইব্‌ন সা‘দকে ও আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন ইয়াযীদকে কবিতা-আবৃত্তিকারীদের নেতা নিয়োগ করা হয়।

আমীরে মুআবিয়া নিজের তাঁবুতে বসে লোকদের কাছ থেকে মৃত্যুর তথা আত্মবিসর্জনের বায়‘আত নেন। তার বাহিনীতে হাবীব ইব্‌ন মাসলামা ডান পাশের বাহিনীর এবং উবায়দুল্লাহ্ ইব্‌ন উমর বাম পাশের বাহিনীর অধিনায়ক ছিলেন। আলী (রা)-এর ডান পাশের বাহিনী প্রথমে অগ্রসর হয় এবং আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন বুদায়ল খুযাঈ তার অধীনস্থ বাহিনী অর্থাৎ ডান পাশের বাহিনী নিয়ে আমীরে মুআবিয়ার বাম পাশের বাহিনী অর্থাৎ হাবীব ইব্‌ন মাসলামার উপর হামলা চালান। যদিও এই হামলা ছিল অত্যন্ত জোরদার ও মারাত্মক, কিন্তু সিরীয় বাহিনীর জন্য তা সুবিধাজনক হয়ে দাঁড়ায়। আবদুল্লাহ ইব্‌ন বুদায়ল হাবীব ইব্‌ন মাসলামার বাহিনীকে পিছন দিকে ঠেলতে ঠেলতে সেই স্থানে নিয়ে যান যেখানে লোকেরা হযরত মুআবিয়ার হাতে মৃত্যুর বায়‘আত নিয়েছিল। ডান পাশের বাহিনীর এই নাজুক অবস্থা লক্ষ্য করে মুআবিয়া (রা) তার আশেপাশের সৈনিকদের হামলা করার নির্দেশ দেন। তারা এমন সাংঘাতিক হামলা চালায় যে, আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন বুদায়ল মাত্র আড়াইশ’ সৈন্যসহ সেখানে টিকে থাকেন। অবশিষ্ট সমগ্র ইরাকী সৈন্য সেখান থেকে পালিয়ে ঠিক সেই জায়গায় চলে আসে, যেখানে আলী (রা) দাঁড়িয়ে ছিলেন। নিজের ডান পাশের বাহিনীর এই করুণ অবস্থা দেখে তিনি সুহায়ল ইব্‌ন হানীফকে মদীনাবাসীদের অধিনায়ক নিয়োগ করেন এবং তাকে তৎক্ষণাৎ আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন বুদায়লের সাহায্যার্থে পাঠান। কিন্তু সিরীয়রা সুহায়লকে আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন বুদায়ল পর্যন্ত পৌঁছতে দেয়নি এবং অল্প কিছুক্ষণ পরই আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন বুদায়ল আপন সঙ্গীসাথীসহ সিরীয় বাহিনীর হাতে নিহত হন। একদিকে ডানপাশের বাহিনীর এই পরাজয় আলী (রা)-এর দৃষ্টি আকর্ষণ করছিল, অপরদিকে বাম পাশের বাহিনীও সিরীয়দের হাতে পর্যুদস্ত হচ্ছিলো। বাম পাশের বাহিনীতে শুধু রাবীআ গোত্র আপন জায়গায় অটল হয়ে দাঁড়িয়েছিল এবং বাকী সৈন্যরা পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিল। নিজের বাম পাশের বাহিনীকে পালিয়ে আসতে দেখে হযরত আলী (রা) আপন পুত্রয় হাসান, হুসায়ন ও মুহাম্মদকে সেদিকে পাঠান এই উদ্দেশ্যে যে, রাবীআ গোত্রও যেন সেখান থেকে পালিয়ে আসে। আলী (রা) আশতারকে নির্দেশ দেন যেন তিনি ডান পাশের পলায়নকারীদের গিয়ে বলেন, তোমরা এই মৃত্যু থেকে কোথায় পালিয়ে যাচ্ছ, যে মৃত্যুকে তোমরা কখনো নিজেদের বশে আনতে পারবে না। আশতার ঘোড়া হাঁকিয়ে ডান পাশের পলায়ন রত যোদ্ধাদের কাছে গিয়ে আলী (রা)-এর ঐ পয়গাম শোনান এবং অত্যন্ত উচ্চৈঃস্বরে তাদের বিবেকে আঘাত করে এমন কিছু কথা বলে তাদেরকে দাঁড় করান। এরপর তাদেরকে সাথে নিয়ে সিরীয়দের মুকাবিলায় আত্মনিয়োগ করেন। অপর দিকে বাম পাশের বাহিনীর অবস্থা সামাল দিতে স্বয়ং আলী (রা) এগিয়ে যান। রাবীআ গোত্রের লোকেরা যখন দেখে যে স্বয়ং আলী (রা) তাদের সাথে শরীক হয়ে তরবারি চালাচ্ছেন তখন তাদের সাহসও দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়।

স্বয়ং আলী (রা)-কে লড়তে দেখে আবূ সূফিয়ানের গোলাম আহমার সেদিকে ধেয়ে এলো। কিন্তু আলী (রা)-এর গোলাম কায়সান অগ্রসর হয়ে তার সাথে মুকাবিলা করতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত আহমারের হাতে কায়সান নিহত হয়। আলী (রা) নিজ গোলামকে এভাবে নিহত হতে দেখে আহমারের উপর হামলা চালান এবং রাগের বশে তাকে শূন্যে উঠিয়ে এমন জোরে মাটির উপর ছুড়ে মারেন যে, তার উভয় হাতই সঙ্গে সঙ্গে বেকার হয়ে পড়ে। সিরীয় বাহিনী আলী (রা)-কে যুদ্ধরত অবস্থায় দেখে তার উপর হামলা চালায়। কিন্তু রাবীআ গোত্রের লোকেরা শক্ত হাতে হামলা প্রতিহত করে। তাই তারা আলী (রা)-এর ধারে কাছেও পৌঁছতে পারেনি। অপর দিকে আশতারও ডানপাশের বাহিনীর অবস্থা সামলে নেন। ফলে আলী (রা)-এর বাহিনীর মধ্যে যে আশংকাজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে যাচ্ছিল তা কেটে যায়। এবার উভয় বাহিনী একেবারে অনড় থেকে তরবারি চালাতে লাগলো। আসরের পূর্ব পর্যন্ত এই অবস্থা অব্যাহত থাকে। ঠিক আসরের সময় মালিক আশতার আমীরে মুআবিয়ার বামপাশের বাহিনীকে পিছনের দিকে হটিয়ে দেন। কিন্তু তার আত্মোৎসর্গের জন্য বায়‘আতকারী বাহিনী নিজেদের বামপাশের বাহিনীর সহায়তা করে এবং আলী (রা)-এর ডানপাশের বাহিনীকে বেশ খানিকটা পিছনে হটিয়ে দেয়। তার পক্ষ থেকে আবদুল্লাহ ইব্‌ন হুসায়ন, যিনি হযরত আম্মার ইব্‌ন ইয়াসিরের সঙ্গীদের মধ্যে ছিলেন, কবিতা আবৃত্তি করতে করতে অগ্রসর হন। বিপক্ষ বাহিনী থেকে ওকবা ইব্‌ন হুদায়বা নুমায়রী অগ্রসর হয়ে তার মুকাবিলা করে। ওকবা নিহত হলে সিরীয়দের পক্ষ থেকে একটি অতি জোরদার হামলা চালানো হয়। ফলে ইরাকীদেরকে যথেষ্ট ক্ষতি স্বীকার করতে হয়। এতদসত্ত্বেও তারা নিজ নিজ অবস্থানে অটল থাকে। আলী (রা) ডানপাশের বাহিনীর সাহস বৃদ্ধি এবং তাদেরকে যুদ্ধের জন্য অনুপ্রাণিত করার উদ্দেশ্যে স্বয়ং বামপাশের বাহিনীর দিক থেকে ডানপাশে চলে আসেন। সেখানে অত্যন্ত জোরেসারে তরবারি যুদ্ধ চলছিলো। অপর দিকে যুলকালা হিময়ারী ও উবায়দুল্লাহ ইব্‌ন উমর (রা) আলী (রা)-এর ডানপাশের বাহিনীর উপর এমন জোরে হামলা চালান যে, রাবীআ গোত্রের লোকেরাও তাদের অবস্থানে টিকে থাকতে পারেনি। সেখানে লাশের স্তুপ জমে উঠে। বামপাশের বাহিনীর এই বিপর্যস্ত অবস্থা দেখে আবদুল কায়স অগ্রসর হয়ে রাবীআ গোত্রকে টিকিয়ে রাখেন এবং সিরীয়দের অগ্রযাত্রা প্রতিরোধ করেন। এই সময়োপযোগী সাহায্যের কারণে বামপাশের বাহিনীর অবস্থা পুনরায় চাঙ্গা হয়ে উঠে এবং তাতে যুলকালা ও আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন উমর উভয়ই নিহত হন।

মোটকথা, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উভয় পক্ষের ডানপাশের ও বামপাশের তীব্র তরবারি যুদ্ধ চলে। কিন্তু উভয় পক্ষেরই মধ্যবর্তী বাহিনী তখনো নীরব দাঁড়িয়েছিল। শেষ পর্যন্ত আলী (রা)-এর পক্ষ থেকে আম্মার ইয়াসির (রা) উচ্চৈঃস্বরে সকলকে সম্বোধন করে বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি চায় এবং নিজের ধন ও জনের দিকে ফিরে যাবার ইচ্ছা না রাখে সে যেন আমার সাথে আসে। তিনি এই বলে এগিয়ে যান। তার সাথে আরো অনেক লোক মারা অথবা মরার সংকল্প নিয়ে এগিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত তিনি আলী (রা)-এর পতাকাবাহী হাশিম ইব্‌ন উতবার কাছে গিয়ে পৌঁছেন। হাশিমও পতাকা নিয়ে তার সাথে এগিয়ে যান। আম্মার (রা) নিজের বিশেষ দলটি সঙ্গে নিয়ে সিরিয়ার মধ্যবর্তী বাহিনীর উপর হামলা চালান। তখন দিন শেষ হয়ে রাত ঘনিয়ে আসছিল। তার ঐ হামলা ছিল অত্যন্ত ভয়ংকর। আমর ইবনুল ‘আস (রা) অত্যন্ত কষ্টে তা প্রতিরোধ করেন। তারপর ভয়ানক তরবারি যুদ্ধ শুরু হয় এবং আম্মার (রা) শহীদ হন।

আম্মার (রা)-এর নিহত হওয়ার সংবাদ পেয়ে আলী (রা) অত্যন্ত মর্মাহত হন। তারপর সিরীয় বাহিনীর প্রত্যেকটি অংশই যুদ্ধে লিপ্ত হয়। তরবারির ঝনঝনানি, বর্শা নিক্ষেপকারীদের হট্টগোল, কবিতা আবৃত্তির আওয়ায এবং যোদ্ধাদের তাকবীর ধ্বনিতে রাতের নীরবতা ভেঙ্গে খান খান হয়ে যায়। এটা ছিল জুমুআর রাত যা ‘লায়লাতুল হারীর’ নামে খ্যাত। এই রাতে হযরত উয়ায়স কারনীও শহীদ হন। আলী (রা)-কে কখনো ডান পাশের বাহিনীতে, কখনো বামপাশের বাহিনীতে, আবার কখনো সম্মুখ বাহিনীতে তরবারি চালাতে দেখা যায়। আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন আব্বাস (রা) বামপাশের বাহিনী এবং আশতার ডানপাশের বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। অনুরূপভাবে আমীরে মুআবিয়া, আমর ইবনুল ‘আস ও অন্যান্য অধিনায়ক সিরীয় বাহিনীকে সব সময় যুদ্ধে নিয়োজিত রাখেন। এভাবে সারা রাত কেটে গেলো। কিন্তু যুদ্ধ শেষ হওয়ার কোন লক্ষণ দেখা গেল না। জুমুআর দিন যুদ্ধ শুরু হল। এদিনও সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উভয় বাহিনী পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত থাকলো।

লায়লাতুল হারীরের যুদ্ধে উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা ঘটেছিল। হযরত আলী (রা) বার হাজার অশ্বারোহীর একটি শক্তিশালী বাহিনী নিয়ে এত তড়িৎ বেগে প্রতিপক্ষের উপর হামলা চালান যে, একেবারে চোখের পলকে তিনি আমীরে মুআবিয়ার তাঁবু পর্যন্ত পৌঁছে যান। তিনি তখন আমীরে মুআবিয়াকে ডেকে বলেন, মুসলমানদের হত্যা করিয়ে কোন লাভ নেই। এসো আমরা যুদ্ধক্ষেত্রে পরস্পরের মুকাবিলা করি। আমাদের মধ্যে যে জয়ী হবে সে-ই খলীফা হবে। এই আওয়াজ শুনে আমর ইবনুল ‘আস (রা) আমীরে মুআবিয়া (রা)-কে বললেন, কথা তো ঠিকই, মুকাবিলার জন্য আপনার বের হওয়াই উচিত। তখন তিনি বললেন, তুমি এই সিদ্ধান্ত তোমার নিজের জন্য পছন্দ করছ না কেন? তুমি কি জান না যে, আলীর মুকাবিলার জন্য যে বের হয় সে আর ফিরে আসে না। অতঃপর হেসে বললেন, সম্ভবত তুমি আমাকে এজন্য যুদ্ধ ক্ষেত্রে পাঠাচ্ছ যাতে আমি মারা যাই এবং এই সুযোগে তুমি সিরিয়ার বাদশাহ বনে বস।

মোটকথা, আমীরে মুআবিয়ার পক্ষ থেকে আলী (রা)-কে কোন উত্তর দেওয়া হয়নি। অগত্যা তিনি তার বাহিনীতে ফিরে আসেন। জুমু‘আর দিনও দুপুর পর্যন্ত যথারীতি যুদ্ধ অব্যাহত থাকে। ত্রিশ ঘন্টারও বেশী সময় ধরে অনবরত যুদ্ধ চলছিল। এই সময়ের মধ্যে দুই পক্ষের প্রায় সত্তর হাজার লোক নিহত হয়। মুসলমানদের জন্য এর চাইতে দুঃখজনক বিষয় আর কী হতে পারে যে, এই ত্রিশ ঘন্টার মধ্যে তাদের যে পরিমাণ সমরশক্তি ধ্বংস হল তার মাধ্যমে তারা এই পৃথিবী কেন, এরূপ কয়েকটি পৃথিবী অনায়াসে জয় করতে পারত। যখন সূর্য কিছুটা ঢলে পড়ল তখন মালিক আশতার নিজের অধীনস্থ বাহিনীর দায়িত্ব আয়ান ইব্‌ন জুযার উপর অর্পণ করে স্বয়ং অশ্বারোহীদের একটি দল পৃথক করে নিয়ে তাদেরকে সিরিয়াবাসীদের উপর জোরদার হামলা চালাতে এবং প্রয়োজনবোধে এজন্য প্রাণ উৎসর্গ করতে উদ্বুদ্ধ করেন। অশ্বারোহীরাও কথা দিল, হয় আমরা বিজয় লাভ করব, নয়ত প্রাণ দেব। অশ্বারোহীদের একটি অংশ হযরত আলী (রা)-এর কমান্ডে থাকল এবং বড় অংশটি আশতারের সাথে চলে গেল। এবার আশতার একটি অনুকূল অবস্থান থেকে সিরীয়দের উপর হামলা চালান। যুদ্ধের একটি চূড়ান্ত ফায়সালার জন্য এ মুহূর্তটি ছিল আলী (রা)-এর বাহিনীর জন্য খুবই অনুকূল। কেননা গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দিন সিরীয় বাহিনীকে খুবই সজীব ও দুঃসাহসী মনে হচ্ছিল। ঐ দিন আলী (রা)-এর বাহিনীর অবস্থা সন্ধ্যা পর্যন্ত এতই নাজুক ছিল যে, মনে হচ্ছিলো পরাজয় বুঝি এদের ভাগ্যে রয়েছে। কিন্তু রাতের যুদ্ধে সিরীয়দের অধিক লোক নিহত হয়। আজ জুমু‘আর দিন সূর্য ঢলে পড়া পর্যন্ত যদিও উভয় বাহিনীকে সমানে সমান মনে হচ্ছিল, কিন্তু সিরীয়দের অর্ধেক লোকই ইতিমধ্যে মৃত্যু বরণ করেছে। ফলে তাদের সংখ্যা আশি হাজার থেকে নেমে এখন পঁয়ত্রিশ হাজারে গিয়ে পৌঁছেছে। আলী (রা)-এর বাহিনীতে এ যাবৎ বিশ থেকে পঁচিশ হাজার লোক নিহত হয়েছিল এবং তাদের মোট সংখ্যা এখনো ছিল ষাট হাজার। অর্থাৎ এখন তার সৈন্য সংখ্যা মুআবিয়া (রা)-এর সৈন্য সংখ্যার প্রায় দ্বিগুণ।

এভাবে শত্রুবাহিনীকে যুদ্ধে ব্যস্ত রেখে নিজের বাহিনী থেকে বাছাই করা একদল সৈন্য নিয়ে শত্রুবাহিনীর পিছন দিক থেকে আকস্মিক আক্রমণ চালিয়ে তাদেরকে ছিন্ন ভিন্ন করে দেওয়া এবং তাদের উপর জয়লাভ করা আলী (রা)-এর পক্ষে খুবই সহজ ছিল। এই প্রেক্ষিতেই মালিক আশতার তার প্রাণ-উৎসর্গকারী অশ্বারোহীদের নিয়ে শত্রুর উপর ভয়ানক আক্রমণ চালান। অশ্বারোহীদের মাধ্যমে এই আক্রমণ পরিচালনা বাঞ্ছনীয়ও ছিল। কেননা যে পদাতিক বাহিনী একাধারে ত্রিশ বত্রিশ ঘন্টা যাবত যুদ্ধরত ছিল তারা নিঃসন্দেহে এরূপ ক্লান্ত ও দুর্বল হয়ে পড়েছিল যে, তাদের মাধ্যমে জোরদার আক্রমণ চালিয়ে শত্রুবাহিনীকে ছিন্ন ভিন্ন করা মোটেই সহজ ছিল না। অপর দিকে অশ্বারোহীদেরকে তখন পর্যন্ত কাজে খুব একটা লাগানো হয়নি। তাই পদাতিক সৈন্যদের অনুপাতে তারা ছিল অধিকতর সজীব। আশতার তড়িৎ বেগে শত্রুদের উপর হামলা চালান এবং শত্রুদের মধ্যবর্তী বাহিনীর কাছে পৌঁছে যান। আলী (রা) যখন আশতারকে সাফল্যজনক হামলা পরিচালনা করতে দেখেন এবং এও লক্ষ্য করেন যে, তার বাহিনীর পতাকা ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে তখন তিনিও তার বাহিনী থেকে একের পর এক ছোট ছোট অশ্বারোহী দল আশতারের সাহায্যে পাঠাতে থাকেন যাতে তার আক্রমণ কোনভাবেই ব্যর্থ না হয় এবং সার্বিক জয়লাভ সুনিশ্চিত হয়ে উঠে।

আলী (রা)-এর এই কৌশল অব্যর্থ প্রমাণিত হয়। সিরীয় বাহিনীর পতাকাবাহী আশতারের হাতে নিহত হয় এবং আমর ইবনুল ‘আস ও মুআবিয়ার অবস্থান স্থলের সামনেই রক্তাক্ত যুদ্ধ আরম্ভ হয়ে যায়। ঘোরতর যুদ্ধে উভয় বাহিনীর অবস্থানস্থল এমনভাবে সংকুচিত হয়ে গিয়েছিল যে, ডানপাশের ও বামপাশের বাহিনী আপন মধ্যবর্তী বাহিনীর সাথে মিশে গেল এবং একে অপরকে হত্যা করার জন্য উদ্যত হয়ে উঠল। যদি ডানপাশের বাহিনীর ও বামপাশের বাহিনী ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকত এবং যুদ্ধের একটি কেন্দ্রভূমিও থাকত তাহলে আশতারের ঐ হামলা কোন চূড়ান্ত ফায়সালা করতে পারত না। কেননা অনুরূপ অবস্থায় বাহিনীর একটি অংশের শক্তি অন্য অংশের দিকে সহজেই স্থানান্তরিত করা যেত এবং প্রধান সেনাপতিও নিজের বাহিনীকে রক্ষা করার একটা না একটা কৌশল বের করতে পারতেন। কিন্তু ঐ আক্রমণ এমন সঠিক সময়ে করা হয়েছিল যে, সিরীয় বাহিনীর সামনে পরাজয় বরণ ছাড়া অন্য কোন পথই খোলা ছিল না। সিরীয় বাহিনীর অধিনায়ক বিপক্ষ বাহিনীকে এভাবে এগিয়ে আসতে এবং আপন পতাকাবাহীকে এভাবে নিহত হতে দেখে একেবারে দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। প্রতিপক্ষের সমগ্র সৈন্য দ্রুতবেগে এগিয়ে আসছিল এবং সেই হামলা প্রতিরোধ করার কোন ক্ষমতাই তার বাহিনীর মধ্যে অবশিষ্ট ছিল না। তখনো সিরীয়রা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করেনি, তবে তাদের পরাজিত হওয়ার ব্যাপারটি কয়েক ঘন্টা নয়, বরং কয়েক মিনিটের মধ্যে ঘটতে যাচ্ছিল। এমনি সময়ে আমর ইবনুল ‘আস এমন একটি কৌশল আঁটলেন যে, যুদ্ধের ফলাফল সম্পূর্ণ পাল্টে গেল।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন