hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের ইতিহাস ১ম খণ্ড

লেখকঃ মাওলানা আকবর শাহ খান নজিববাদী

৪১৫
খারিজী ফিতনা
হিজরী ৩৭ সনের ১৩ই সফর যখন হযরত আলী (রা) সিফফীনের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে কূফা প্রত্যাবর্তনের সংকল্প নেন তখন কিছু লোক তার কাছে এসে বলেন, আপনি কূফা প্রত্যাবর্তনের পরিকল্পনা ত্যাগ করে সিরীয়দেরকে আক্রমণ করুন। আলী (রা) বলেন, অঙ্গীকারপত্রে স্বাক্ষর করার পর আমি কী করে আমার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করতে পারি? এখন আমাদেরকে রমযান মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে এবং আপোস-মীমাংসার পর যুদ্ধ করা তো দূরের কথা, যুদ্ধের কথা চিন্তা করাও উচিত হবে না। একথা শুনে ওরা নীরবে তার কাছ থেকে চলে যায়। কিন্তু পৃথক হওয়ার পর তারা তাদের সমতাবলম্বী লোকদের প্ররোচিত করতে থাকে যেন তারা হযরত আলী (রা) থেকে পৃথক হয়ে নিজেরাই নিজেদের পথ বেছে নেয়। ফলে আলী (রা) যখন তার বাহিনী নিয়ে কূফা থেকে রওয়ানা হন তখন সমগ্র পথ জুড়ে তাদের মধ্যে পরস্পর ঝগড়া-ঝাটি ও কথা কাটাকাটি চলতে থাকে। কেউ বলছিলো, মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ করায় ভালই হয়েছে, কেউ বলছিলো মন্দ হয়েছে, কেউ বলছিলো, এ ব্যাপারে মধ্যস্থতাকারী হাকিম নিয়োগ করা শরীআতের দৃষ্টিতে বৈধ, কেউ বলছিল আল্লাহ তা‘আলা শুধুমাত্র স্বামী-স্ত্রীর ব্যাপারেই এভাবে মধ্যস্থতাকারী হাকিম নিয়োগের হুকুম দিয়েছেন। আবার কেউ বলছিল, এটাকে স্বামী-স্ত্রীর ব্যাপারের সাথে তুলনা করা ঠিক হয়নি, আমাদের নিজেদের বাহুবলেই এর মীমাংসা করা উচিত ছিল।

আবার কেউ এই বলে আপত্তি উত্থাপন করছিলো যে, উভয় হাকিমের ন্যায়পরায়ণ হওয়া অত্যাবশ্যকীয়। যদি তারা ন্যায়পরায়ণ না হয়ে থাকেন তাহলে কেন তাদেরকে হাকিম মেনে নেওয়া হল? আবার কেউ কেউ বলছিলো, আলী (রা) কর্তৃক যুদ্ধ মুলতবি রাখা এবং আশতারকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা ঠিক ছিল না। অতএব তার হুকুম মেনে নেওয়াটা আমাদের জন্য মোটেই উচিত হয়নি। এর উত্তরে আবার কেউ কেউ বলছিলো, আমরা যেহেতু আলী (রা)-এর হাতে বায়‘আত করেছি, অতএব তাঁর প্রত্যেকটি হুকুম মান্য করা আমাদের জন্য ফরয। এর উত্তরে আবার কেউ কেউ বলছিলো, আমরা কখনো তার কোন অন্যায় হুকুম মানব না, যে কোন হুকুম মানা না মানার ব্যাপারে আমরা স্বাধীন। আমাদেরও বিবেক-বুদ্ধি রয়েছে। আল্লাহর কিতাব এবং রাসূলের সুন্নাত আমাদের জন্য যথেষ্ট। এ দুটিকে ডিংগিয়ে আমরা অন্য কারো হুকুম মেনে নিতে পারি না। একথা শুনে আবার কেউ কেউ বলছিলো, আমরা আলী (রা)-এর সাথে রয়েছি এবং সর্বাবস্থায় তাঁর হুকুম মান্য করা আমাদের জন্য ফরয এবং এটাকে আমরা হুবহু শরীআত বলেই মনে করি। আমরা এটাও মনে করি যে, তাঁকে অমান্য করা কুফরী সমতুল্য। এভাবে কথা বাড়তে বাড়তে পরিস্থিতি এই পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়ায় যে, প্রত্যেক মনযিলেই পরস্পরের মধ্যে গালাগালি, এমন কি হাতাহাতি চলতে থাকে। আপন বাহিনীর এই ধ্বংসাত্মক অবস্থা নিরসনের জন্য আলী (রা) লোকদের নানাভাবে বোঝান, কিন্তু যেহেতু তাঁর বাহিনীর মধ্যে জ্বলন্ত আগুনে ঘি ঢালার মত লোকের অভাব ছিল না— তাই বলতে গেলে তাঁর সব চেষ্টাই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। যে বাহিনী কূফা থেকে সম্পূর্ণ ঐক্যবদ্ধ অবস্থায় সিফফীনে পৌঁছেছিল ইতিমধ্যে তাদের উপর দিয়ে অনৈক্যের এক প্রলয়ংকারী ঝড় বয়ে গেছে। ফলে মত ও পথের দিক দিয়ে এখন তারা ছিন্ন ভিন্ন শতধা বিভক্ত। গোটা বাহিনীর মধ্যে যে নিয়ম-শৃঙ্খলা থাকার কথা ছিল স্বাভাবিকভাবেই তাও নষ্ট হয়ে গেছে। তাদের মধ্যে এখন বহু সংখ্যক দল-উপদলের সৃষ্টি হয়েছে এবং প্রত্যেক দল উপদলই সম্পূর্ণ পৃথক ধারণা ও পৃথক আকীদা পোষণ করছে। তারা প্রকাশ্যে একে অন্যের বিরোধিতা করছে, এমন কি একে অন্যের বিরুদ্ধে তরবারি ধারণ করতেও ইতস্তত করছে না।

কিন্তু এদের মধ্যে দু’টি দল ছিল বিশেষ গুরুত্বের অধিকারী। তারা সংখ্যার দিক দিয়ে এবং উৎসাহ-উদ্দীপনার ক্ষেত্রেও ছিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাদের একটি দল আলী (রা)-কে দোষী সাব্যস্ত করত এবং তার আনুগত্য মোটেই জরুরী মনে করত না। অপর দলটি ছিল এদের সম্পূর্ণ বিপরীত। তারা হযরত আলীকে ভুলত্রুটি থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র মনে করত, এমন কি তাঁর আনুগত্যকে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের আনুগত্যের উপর প্রাধান্য দিতেও কসুর করত না। প্রথম দল ‘খাওয়ারিজ’ এবং দ্বিতীয় দল ‘শী‘আনে আলী’ নামে পরিচিতি লাভ করে। একটি লক্ষণীয় ব্যাপার এই যে, এ সমস্ত লোকই ইমাম বা নেতা ছিল যারা আলী (রা)-কে যুদ্ধ বন্ধ করতে বাধ্য করেছিল। তারা হযরত আলীকে বলেছিল, আপনি আশতারকে শীঘ্রই ফিরিয়ে আনুন এবং যুদ্ধ বন্ধ করুন। অন্যথায় আমরা আপনার সাথে সেই আচরণ করব যে আচরণ আমরা উসমানের সাথে করেছি। আলী (রা) তাদেরকে বার বার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিলেন, তোমরাই তো আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধ করিয়েছ এবং আপোস-মীমাংসাকেই পছন্দ করেছ। এখন আবার তোমরাই আপোস-মীমাংসা অপছন্দ করছ এবং আমাকে দোষী সাব্যস্ত করছ। কিন্তু তাঁর এ কথায় কেউই কান দিচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি এরূপ ধারণ করল যে, কূফার নিকটবর্তী হওয়ার পর বার হাজার লোক আলী (রা)-এর বাহিনী থেকে পৃথক হয়ে ‘হারূরার দিকে চলে গেল।

এটা ছিল ‘খাওয়ারিজ’-এর দল। তারা হারূরায় গিয়ে অবস্থান গ্রহণ করে এবং আবদুল্লাহ ইবনুল কাওয়াকে তাদের নামাযের ইমাম এবং শীছ ইব্‌ন রিবঈকে সেনাবাহিনী প্রধান নিয়োগ করে। ইনি হচ্ছেন সেই শীছ ইব্‌ন রিবঈ, যাকে আলী (রা) সিফফীনের যুদ্ধক্ষেত্রে অবস্থানকালে দুবার তার প্রতিনিধিদলের অন্তর্ভুক্ত করে আমীরে মুআবিয়ার কাছে পাঠিয়েছিলেন। আর প্রত্যেক বারই তিনি আমীরে মুআবিয়ার সাথে এমন রূঢ়ভাবে কথা বলেন যে, এরপর প্রতিনিধিদলকে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসতে হয়। এই দলটি হারূরায় নিজেদের সংগঠিত করে ঘোষণা দিল :

বায়‘আত শুধু আল্লাহর জন্য। আল্লাহর কিতাব এবং রাসূলের সুন্নাত অনুযায়ী পুণ্য কাজে আদেশ দেওয়া এবং পাপ কাজে নিষেধ করা আমাদের জন্য ফরয। কোন খলীফা বা আমীর নেই। বিজয় লাভের পর আমরা যাবতীয় কাজ মুসলমানদের পরামর্শে এবং তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠের মতানুসারে সম্পাদন করব। আমীরে মুআবিয়া (রা) ও আলী (রা) উভয়ই সমান এবং উভয়ই অপরাধী।

খারিজীদের এই গতিবিধি সম্পর্কে অবহিত হওয়ার পর হযরত আলী (রা) অত্যন্ত ধৈর্য, সহিষ্ণুতা ও ঔদার্যের পরিচয় দেন। কূফায় প্রবেশ করে তিনি সর্বপ্রথমে ঐ সমস্ত লোকের পরিবার-পরিজনের কাছে গিয়ে তাদের প্রতি সমবেদনা ও সহানুভূতি জানান যারা সিফফীন যুদ্ধে নিহত হয়েছিলেন। তিনি এই বলে তাদের সান্ত্বনা দেন যে, সিফফীন যুদ্ধে যারা নিহত হয়েছেন তারা আল্লাহর পথে শাহাদত বরণ করেছেন। এরপর খারিজীদের বুঝিয়ে সঠিক পথে নিয়ে আসার জন্য তিনি হযরত আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন আব্বাস (রা)-কে তাদের কাছে পাঠান। তিনি তাদের সেনাছাউনিতে গিয়ে পৌঁছে তাদেরকে বোঝাবার চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা তাঁর সাথে উল্টাপাল্টা তর্কবিতর্ক করে।

আবদুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাস (রা)-এর সাথে খারিজীদের তর্কবির্তক চলছিল। এমন সময় স্বয়ং আলী (রা) সেখানে গিয়ে পৌঁছেন। প্রথমে তিনি ইয়াযীদ ইব্‌ন কায়সের তাঁবুতে যান। কেননা ঐ দলের উপর ইয়াযীদ ইব্‌ন কায়সের প্রভাব ছিল সর্বাধিক। আলী (রা) ইয়াযীদের তাঁবুতে ঢুকে দু’রাকাআত নফল নামায আদায় করেন। এরপর তাকে ইসফাহান ও রায়-এর গভর্নর নিয়োগ করে সেই বৈঠকে যান, যেখানে ইব্‌ন আব্বাস (রা)-এর সাথে খারিজীরা তর্ক-বিতর্ক জুড়ে দিয়েছিল। তিনি খারিজীদের সম্বোধন করে বলেন, তোমাদের মধ্যে অধিক বুদ্ধিমান ও নেতৃস্থানীয় কে? তারা বলল, আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন কাওয়া। তিনি আবদুল্লাহকে সম্বোধন করে বলেন, তোমরা তো আমার হাতে বায়‘আত করেছিলে; এখন আমার বিরুদ্ধে চলে গেলে কেন? তারা বলে, আপনার অন্যায় সিদ্ধান্তের কারণে।

আলী (রা) বলেন, আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমি যুদ্ধ বন্ধ করার পক্ষে ছিলাম না। তোমরাই তো যুদ্ধ বন্ধ করাকে অপরিহার্য মনে করেছিলে, যার ফলে আমি মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ এবং তাদের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে বাধ্য হই। তবে আমি উভয় মধ্যস্থতাকারীর নিকট থেকেই এই মর্মে অঙ্গীকার নিয়েছি যে, তারা পবিত্র কুরআন অনুযায়ী ফায়সালা করবেন। যদি তারা কুরআন অনুযায়ী ফায়সালা করেন তাহলে তো এতে ক্ষতির কিছু নেই। আর যদি তারা কুরআনের বিরুদ্ধে ফায়সালা করেন তাহলে আমরা কখনো তা মেনে নেব না। একথা শুনে খারিজীরা বলল, মুআবিয়া মুসলমানদের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টির ব্যাপারে অগ্রণীয় ভূমিকা পালন করেছে। অতএব তার ক্ষেত্রে হাকিম বা মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ করা মোটেই ঠিক হয়নি। তাঁর সম্পর্কে কুরআনে এই মর্মে পরিষ্কার নির্দেশ রয়েছে যে, সে হত্যাযোগ্য অপরাধী। আলী (রা) বলেন, আমরা তো কোন মানুষকে হাকিম নিয়োগ করিনি। পবিত্র কুরআনই হচ্ছে প্রকৃত হাকিম। যাদেরকে হাকিম বা মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ করা হয়েছে তারা আমাদেরকে তাদের নিজেদের নয় বরং কুরআনেরই ফায়সালা শোনাবে। এরপর খারিজীরা আপত্তি উত্থাপন করে বলে, তাহলে এজন্য সুদীর্ঘ ছয় মাস সময় দেওয়ার কি প্রয়োজন ছিল? আলী (রা) বলেন, হয়ত এই সময়ের মধ্যে মুসলমানদের মধ্যকার মতবিরোধ আপনাআপনি শেষ হয়ে যাবে। মোটকথা, দীর্ঘক্ষণ পর্যন্ত এ ধরনের কথাবার্তা চলতে থাকে। খারিজীদের একজন নেতাকে আলী (রা) ইতিমধ্যে ইসফাহান এবং রায়-এর গভর্নর নিয়োগ করেছিলেন। তাছাড়া তাঁর কথাবার্তায়ও সাধারণ লোকেরা কিছুটা প্রভাবিত হয়। ফলে খারিজীরা সাময়িকভাবে হলেও চুপ হয়ে যায়। তারপর হযরত আলী (রা) তাদেরকে নম্রভাবে বলেন, চল এবার তোমরা কূফায় গিয়ে অবস্থান কর। এই ছয় মাসের মধ্যে তোমাদের বাহনগুলোও হৃষ্টপুষ্ট হয়ে যাবে। এরপর আমরা শত্রুর মুকাবিলায় বের হব। তারা তাঁর এ কথায় রাযী হয়ে গেল এবং তার সাথে কূফায় এসে মধ্যস্থতাকারী হাকিমদের ফায়সালা শোনার অপেক্ষায় রইলো। আলী (রা) ইব্‌ন আব্বাস (রা)-কে বসরায় প্রেরণ করেন। যেহেতু তিনি বসরার গভর্নর ছিলেন তাই এখন তাঁকেই সেখানকার শাসনব্যবস্থা পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করতে হবে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন