hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের ইতিহাস ১ম খণ্ড

লেখকঃ মাওলানা আকবর শাহ খান নজিববাদী

৩৪৬
আফ্রিকা বিজয়
হযরত আবদুল্লাহ ইব্‌ন সা‘দ (রা) হযরত উসমান গনী (রা)-এর কাছে উত্তর আফ্রিকায় বিজয় অভিযান পরিচালনার অনুমতি প্রার্থনা করেন। এ যুগে তো আফ্রিকা একটি মহাদেশের নাম, কিন্তু ঐ যুগে আফ্রিকা নামে একটি রাজ্যও ছিল, যা ত্রিপলী থেকে তান্‌জা (তাঞ্জানিয়া) পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। অবশ্য ঐ যুগে সম্মিলিতভাবে ঐ সমস্ত দেশকেও আফ্রিকা বলা হত, যা আজকাল আফ্রিকা মহাদেশের উত্তরাংশে অবস্থিত (যেমন ত্রিপলী, আলজিরিয়া, তিউনিসিয়া, মরক্কো ইত্যাদি)।

হযরত উসমান গনী (রা) হযরত আবদুল্লাহ ইব্‌ন সা‘দ (রা)-কে উত্তর আফ্রিকায় সৈন্য প্রেরণের অনুমতি প্রদান করেন। হযরত আবদুল্লাহ (রা) দশ হাজার সৈন্য নিয়ে মিসর থেকে বের হন এবং বারকাহ্ এলাকার সীমান্তবর্তী গোত্রপতিদের পরাজিত করেন। হযরত আমর ইব্‌ন ‘আস (রা)-এর শাসনামলেও ঐ সমস্ত গোত্রপতিদের উপর আক্রমণ পরিচালনা করা হয়েছিল এবং তারা জিযিয়া প্রদানের শর্তে হযরত আমর ইব্‌ন ‘আস (রা)-এর সাথে সন্ধি স্থাপনে বাধ্য হয়েছিল। অবশ্য পরে সুযোগ বুঝে তারা স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিল। এবারও তারা জিযিয়া প্রদানের শর্তে সন্ধি করে মুসলমানদের বশ্যতা স্বীকার করে। তারপর যখন হযরত আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন সা‘দ (রা) রাজ্যের মধ্যাংশ এবং ত্রিপলীর দিকে অগ্রসর হন, তখন হযরত উসমান গনী (রা) তার সাহায্যের জন্য মদীনা শরীফ থেকে একটি সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন। হযরত আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন আমর (রা), হযরত আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন আব্বাস (রা), হযরত আবদুল্লাহ ইব্‌ন যুবায়র (রা), হযরত আমর ইব্‌ন ‘আস (রা), হযরত হুসায়ন ইব্‌ন আলী (রা), হযরত ইব্‌ন জা‘ফর (রা) প্রমখ ঐ বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। ঐ বাহিনী যখন মিসর অতিক্রম করে বারকায় গিয়ে পৌঁছে তখন হযরত আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন সা‘দ (রা) তাদেরকে অভ্যর্থনা জানান। এবার সম্মিলিত বাহিনী ত্রিপলীর দিকে অগ্রসর হয়। রোমানরা ত্রিপলী থেকে বের হয়ে মুসলমানদের মুখোমুখি হয়, কিন্তু পরাজিত হয়ে পলায়ন করে। মুসলমানগণ ত্রিপলী দখল করে সেখানে নিজেদের শাসন প্রতিষ্ঠা করে। তারপর মূল আফ্রিকা রাজ্যের দিকে রওয়ানা হয়। তখন আফ্রিকার রাজা ছিলেন জর্জীর (গ্রেগরী) এবং আফ্রিকা ছিল কায়সারের অধীনে একটি করদ রাজ্য। রাজা জর্জীর যখন ইসলামী বাহিনীর আগমন সংবাদ জানতে পারেন তখন তিনি এক লক্ষ বিশ হাজার সৈন্য একত্র করে একদিন ও এক রাত্রির দূরত্ব অতিক্রম করে আগে বেড়েই মুসলমানগণের মুকাবিলা করেন। উভয় বাহিনী যখন মুখোমুখি দাঁড়ায় তখন হযরত আবদুল্লাহ ইব্‌ন সা‘দ সর্বপ্রথম খ্রিস্টান বাহিনীকে ইসলামের দাওয়াত দেন। জর্জীর যখন পরিষ্কার ভাষায় এ দাওয়াত অস্বীকার করল, তখন তাকে জিযিয়া প্রদানের জন্য বলা হল। যখন সে পরিষ্কার ভাষায় তাও অস্বীকার করল তখন মুসলমানগণ সারিবদ্ধভাবে তাদেরকে আক্রমণ করে বসল। এমন ভীষণ যুদ্ধ আরম্ভ হয় যে, জয় পরাজয় সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা এক দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। এরই মধ্যে মুসলিম বাহিনীর সাহায্যার্থে একদল সৈন্য এসে পৌঁছে এবং তাদেরকে দেখে সমগ্র বাহিনী উচ্চৈঃস্বরে তাকবীর ধ্বনি দিয়ে উঠে।

মূল ঘটনা হলো, অতিশয় দূরত্বের কারণে আফ্রিকার মুসলিম বাহিনীর সংবাদ যথাসময়ে মদীনা শরীফে পৌঁছতে পারেনি। হযরত উসমান গনী (রা) যখন দেখেন যে, আফ্রিকার ঐ বাহিনীর সংবাদ পেতে অনেক বিলম্ব হয়ে যাচ্ছে তখন তিনি হযরত আবদুর রহমান ইব্‌ন যুবায়র (রা)-এর নেতৃত্বে একদল সৈন্য আফ্রিকার দিকে প্রেরণ করেন। হযরত আবদুর রহমান ইব্‌ন যুবায়র (রা) তাঁর সেনাদল নিয়ে যখন মূল ইসলামী বাহিনীর সাথে মিলিত হন, তখন মুসলমানগণ তাকবীর ধ্বনি দিয়ে উঠে। জর্জীরের বাহিনী এ তাকবীর ধ্বনি শুনে যখন জিজ্ঞেস করল, মুসলমানগণের মধ্যে এ ধরনের ধ্বনি উঠল কেন—তখন তাদেরকে বলা হল, মুসলমানদের একটি নতুন দল মূল বাহিনীর সাহায্যার্থে এসে পৌঁছেছে। জর্জীর এটা শুনে খুবই চিন্তিত হন। কিন্তু ঐ দিন যুদ্ধের কোন ফায়সালা হলো না। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে উভয় বাহিনী নিজ নিজ তাঁবুতে ফিরে গেল। পরদিন যখন যুদ্ধ শুরু হলো তখন হযরত আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন যুবায়র (রা), হযরত আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন সা‘দ (রা)-কে যুদ্ধক্ষেত্রে না দেখে তার অনুপস্থিতির কারণ জিজ্ঞেস করেন। তখন তাকে বলা হয় যে, জর্জীর আজ এ মর্মে এক ঘোষণা দিয়েছেন যে, যে ব্যক্তি হযরত আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন সা‘দ (রা)-এর ছিন্ন মস্তক নিয়ে আসতে পারবে সে পুরস্কার স্বরূপ এক লক্ষ দীনার পাবে এবং তার সাথে জর্জীর আপন মেয়েকেও বিয়ে দেবেন। কাজেই, হযরত আবদুল্লাহ ইব্‌ন সা‘দ (রা) প্রাণের ভয়ে আজ যুদ্ধক্ষেত্রে আসেননি। একথা শুনে হযরত আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন যুবায়র (রা) হযরত আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন সা‘দ (রা)-এর তাঁবুতে গিয়ে তাকে বললেন : তুমিও তোমার সেনাবাহিনীর মধ্যে এ ঘোষণা দাও যে, যে ব্যক্তি জর্জীরের ছিন্ন মস্তক নিয়ে আসতে পারবে, তাকে মালে গনীমত থেকে এক লক্ষ দীনার দেওয়া হবে এবং জর্জীরের মেয়েকেও তার সাথে বিয়ে দেয়া হবে। উপরন্তু, তাকে জর্জীরের রাজ্যের প্রশাসকও নিযুক্ত করা হবে।

হযরত আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন সা‘দ (রা) তাঁর সমগ্র বাহিনীর মধ্যে ঐ ঘোষণা প্রদান করেন। ফলে জর্জীর ভয়ানক বিপদের সম্মুখীন হন। হযরত আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন সা‘দ (রা)-ও যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত হন। আজও উভয় বাহিনীর মধ্যে ফায়সালা হয়নি। রাতের বেলা পরামর্শ সভা বসল। তাতে হযরত আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন যুবায়র (রা) এ অভিমত প্রদান করেন যে, আগামীকাল ইসলামী বাহিনীর অর্ধেক সৈন্য যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে শত্রুদের মুকাবিলা করবে এবং বাকী অর্ধেক নিজ নিজ তাঁবুতে অবস্থান করবে। যখন উভয় বাহিনীর মধ্যে যথারীতি সন্ধ্যা পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে এবং ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে একে অপর থেকে পৃথক হয়ে নিজ নিজ তাঁবুতে চলে যাবে, ঠিক তখনি তাঁবুতে অপেক্ষমাণ সৈন্যরা তরবারি নিয়ে রোমানদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। এতে শীঘ্রই যুদ্ধের একটা চূড়ান্ত ফায়সালা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ ইব্‌ন যুবায়র (রা)-এর এ অভিমত সকলেই পছন্দ করেন। পরদিন অর্থাৎ যুদ্ধের তৃতীয় দিন মুসলিম বাহিনীর অর্ধেক সৈন্য যুদ্ধ করতে থাকে এবং বাকি অর্ধেক হযরত আবদুল্লাহ ইব্‌ন যুবায়র (রা)-এর নেতৃত্বাধীন নিজ নিজ তাঁবুতে অপেক্ষা করতে থাকেন। দুপুর পর্যন্ত উভয় বাহিনী লড়তে থাকেন এবং দুপুরের পর একে অপর থেকে পৃথক হয়ে যান। ঠিক সেই মুহূর্তে হযরত ইব্‌ন যুবায়র (রা) তাঁবুতে অপেক্ষমাণ সৈন্যদের নিয়ে রোমানদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। রোমানরা এ আকস্মিক অথচ জোরদার অভিযান সহ্য করতে না পেরে নিজ নিজ তাঁবুতে আশ্রয় নেয়। কিন্তু সেখানেও তারা পরিত্রাণ পায়নি। মুসলমান সৈন্যগণ তাদেরকে বন্দী ও হত্যা করতে থাকে।

জর্জীর হযরত আবদুল্লাহ ইব্‌ন যুবায়র (রা)-এর হাতে নিহত হন। পরদিন মুসলমানগণ যুদ্ধক্ষেত্র থেকে এগিয়ে চলে এবং আফ্রিকার রাজধানী সাবীতালাহ্ মুসলমানগণের অধিকারে আসে, এবং সেখান থেকে গনীমতস্বরূপ অপরিসীম ধন-সম্পদ মুসলমানগণের হস্তগত হয়। বন্টনের পর এক একজন অশ্বারোহীর ভাগে তিন হাজার দিরহাম পড়ে। সাবীতালাহ নগরী দখলের পর মুসলমানগণ আরো অগ্রসর হয়ে ‘জাম্ম’ দুর্গ অবরোধ করেন। দুর্গটি ছিল অত্যন্ত মজবুত ও সুদৃঢ়। তাও মুসলমানগণ যুদ্ধ ব্যতীতই জয় করেন। আফ্রিকানরা ইসলামী শক্তির সামনে নিজেদেরকে দুর্বল ও অসহায় দেখে দশ লক্ষ দীনার জিযিয়া প্রদানের শর্তে সন্ধি স্থাপন করে। হযরত ইব্‌ন যুবায়র (রা) আফ্রিকা বিজয়ের সুসংবাদ এবং প্রচুর ‘খুমুস’ (মালে গনীমতের এক-পঞ্চমাংশ যা রাষ্ট্রের প্রাপ্য) নিয়ে মদীনা শরীফের দিকে রওয়ানা হন। খলীফা হযরত উসমান গনী (রা)-এর সামনে যখন এ খুমুস পেশ করা হয়, তখন তিনি তা মারওয়ান আল-হাকামের কাছে পাঁচ লক্ষ দীনারে বিক্রি করেন। হযরত আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন সা‘দ (রা) এক বছর তিন মাস পর হিজরী ২৭ সনে আফ্রিকা থেকে মিসরে প্রত্যাবর্তন করেন। আফ্রিকানবাসীরা জর্জীরের পরিবর্তে নিজেদের একজন বাদশাহ নির্বাচিত করে এবং মুসলমানগণকে নির্ধারিত জিযিয়া প্রদান করতে থাকে। আফ্রিকার সেই রাজ্য বা দেশের নাম কার্থজানাহ কার্থেজ বলা হয়।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন