hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের ইতিহাস ১ম খণ্ড

লেখকঃ মাওলানা আকবর শাহ খান নজিববাদী

৪১৭
সিদ্ধান্ত ঘোষণা
আমর ইবনুল ‘আস (রা) আবূ মূসা আশআরী (রা)-কে বলেন, আমাদের মধ্যে যে ফায়সালা হয়েছে তা সবাইকে শুনিয়ে দিন। আবূ মূসা আশআরী (রা) মিম্বরের উপর দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেন।

লোকেরা! আমরা উভয়ে অনেক চিন্তাভাবনা করেছি এবং শেষ পর্যন্ত শুধু একটি সিদ্ধান্তের উপরই ঐকমত্যে পৌঁছেছি। এখন আমি তোমাদেরকে সেই সিদ্ধান্তই শুনিয়ে দিচ্ছি। আশা করি এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে মুসলমানদের মধ্যকার অনৈক্য দূর হয়ে যাবে এবং তাদের মধ্যে সৌভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। আমি এবং আমর ইবনুল ‘আস যে সিদ্ধান্তের উপর একমত হয়েছি তা এই যে, আমরা এই মুহূর্তে আলী এবং মুআবিয়া উভয়কেই পদচ্যুত করলাম এবং তোমাদেরকে অধিকার দিলাম, তোমরা ঐকমত্যের ভিত্তিতে যাকে ইচ্ছা, তোমাদের খলীফা নির্বাচিত করো।

আবু মূসা আশআরী তার ঘোষণা শেষ করে মিম্বর থেকে অবতরণ করেন। এরপর আমর ইবনুল ‘আস (রা) মিম্বরে দাঁড়িয়ে সকলকে সম্বোধন করে বলেন :

আপনারা সবাই সাক্ষী যে, আবূ মূসা আপন বন্ধু হযরত আলী (রা)-কে পদচ্যুত করেছেন। আমিও এ ব্যাপারে তার সাথে একমত। আমিও আলী (রা)-কে পদচ্যুত করছি। তবে মুআবিয়া (রা)-কে আমি পদচ্যুত করছি না, বরং স্বপদেই বহাল রাখছি। কেননা তিনি অন্যায়ভাবে নিহত খলীফার নিকটজন এবং তাঁর স্থলাভিষিক্ত হওয়ার যোগ্য।

যদি আমর ইবনুল ‘আস (রা) আবূ মূসা আশআরী (রা)-এর অভিমত পুরাপুরি সমর্থন করতেন এবং আমীরে মুআবিয়ার পক্ষে কিছু না বলতেন তা হলে পরে সালিশদ্বয়ের ফায়সালার যে বেইজ্জতী হয়েছে তা কখনো হত না। আবূ মূসা যা কিছু বলেছেন তাতে কিছু না কিছু দুর্বলতা বা ভ্রান্তি হয়ত থাকতে পারে, কিন্তু তাতে পক্ষপাতিত্ব ও অবিশ্বস্ততার লেশমাত্র ছিল না। এ ব্যাপারে তথায় সমবেত আটশ’ মুসলমানের মধ্যেও সম্ভবত কোন মতানৈক্য হত না। কেননা উভয় হাকিমের পক্ষ থেকে একজন খলীফা নির্বাচনের অধিকার তো তাদের দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে যা কিছু ঘটেছিল তার সবই পরেও ঘটার ছিল এবং তা হয়ত মুসলমানদের জন্য আরো বেশী মারাত্মক হত। কেননা আলী (রা) কখনো তাঁর পদচ্যুতিকে মেনে নিতেন না। অনুরূপভাবে মুআবিয়া (রা)-ও সিরিয়ার রাষ্ট্রক্ষমতা এবং নিজের দাবী কখনো ত্যাগ করতেন না। আর তৃতীয় যে খলীফা বা আমীরকে এই জনসভা নির্বাচন করত তিনি আমীরে মুআবিয়া (রা) বা হযরত আলী (রা) থেকে অধিক শক্তিশালী হতে পারতেন না। এভাবে দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর স্থলে তৃতীয় আর একজন প্রতিদ্বন্দ্বীর আবির্ভাব ঘটত এবং মুসলমানদের ধ্বংস হত আরো ব্যাপকতর এবং আরো বেশী ত্বরান্বিত।

প্রকৃত ব্যাপার এই যে, আমীরে মুআবিয়া আপোস-মীমাংসার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। যদি তিনি একান্তই আপোস-মীমাংসা চাইতেন তাহলে সিফফীন প্রান্তরে ব্যাপকতর যুদ্ধ আরম্ভ হওয়ার পূর্বে যখন আলী (রা)-এর পক্ষ থেকে আপোস-মীমাংসার চেষ্টা করা হয়েছিল তখন তিনি আপোস-মীমাংসার এই প্রস্তাব অর্থাৎ দুই পক্ষ থেকে দুইজন মধ্যস্থতাকারী নিয়োগের আবেদন পেশ করতে পারতেন। কিন্তু তিনি শুধু তখনই আপোস-মীমাংসার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন যখন তাঁর পরাজয় অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে। অতএব তার পক্ষ থেকে মধ্যস্থতাকারী নিয়োগের প্রস্তাব এবং هٰذَا كِتَابُ اللَّهُ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ (এই কিতাবই আমাদের এবং তোমাদের মধ্যে ফায়সালা করবে) এই উক্তি ঘাড়ের উপর থেকে বিপদ দূর করা ও পরাজয় থেকে রক্ষা পাওয়ার একটি যুদ্ধ কৌশল, একটি সামরিক প্রতারণা ছাড়া কিছুই ছিল না। অনুরূপভাবে আলী (রা)-ও মধ্যস্থতাকারী নিয়োগের এই প্রস্তাব আনন্দচিত্তে মেনে নেননি। তিনি তো এর বিরুদ্ধে ছিলেন; লোকেরাই তাকে এজন্য বাধ্য করেছিল। তারাই হুমকি দিয়ে আশতারকে ফিরিয়ে এনেছিল এবং যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণা করিয়েছিল। অতএব আমর ইবনুল ‘আস (রা) যদি সাধারণ সমাবেশে আবূ মূসা আশআরী (রা)-এর বক্তব্য অক্ষরে অক্ষরে সমর্থন করতেন এবং তাদের উভয়কে বরখাস্ত করতেন তবে তারা উভয়ে তা মেনে নিতেন কি না এটা বিশ্বাস করা মোটেই সহজ ছিল না। যাই হোক সালিশদ্বয় জনতার সামনে নিজ নিজ বক্তব্য পেশ করেন, যা উপরে বর্ণিত হয়েছে। আমর ইবনুল আসের বক্তব্য শুনে আবদুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাস এবং অন্যরা আবূ মূসা (রা)-কে এই বলে দোষারোপ করতে শুরু করেন যে, আপনি প্রতারিত হয়েছেন। আবূ মূসা (রা) আমর ইবনুল আসকে এই বলে তিরস্কার করেন যে, তুমি আমাদের মধ্যে গৃহীত সিদ্ধান্তের পরিপন্থী মত প্রকাশ করেছ এবং আমাকে ধোঁকা দিয়েছ। মোটকথা আমর (রা)-এর বক্তৃতার পর পরই সেখানে দারুণ হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলা শুরু হয়ে যায়।

শুরায়হ্ ইব্‌ন হানী আমর ইবনুল আসকে তরবারি দ্বারা আঘাত করেন। তিনি তা প্রতিহত করে শুরায়হের উপর পাল্টা আঘাত হানেন। ইতিমধ্যে লোকেরা তাদের মধ্যখানে এসে যায় এবং উভয়কেই যুদ্ধ থেকে নিরস্ত করে। এ মজলিসে বিশৃঙ্খলা ও বাড়াবাড়ি সৃষ্টি হওয়ার কারণেও আমীরে মুআবিয়া লাভবান হন এবং হযরত আলী হন ক্ষতিগ্রস্ত। কেননা এই অবস্থায় সিরীয় ও ইরাকী উভয় দলের এই জায়গায় অবস্থান উভয় পক্ষের নেতাদের চোখেই ছিল বিপজ্জনক। এমতাবস্থায় উভয় পক্ষের আটশো মুসলমানের পক্ষে সর্বসম্মতিক্রমে না কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব ছিল, আর না গণ্যমান্য সাহাবীদের পক্ষে সম্ভব ছিল আপোস-মীমাংসার ব্যাপারে কোনরূপ সাহায্য করা। আবূ মূসা আশআরী এবং আমর ইবনুল ‘আস (রা)-ও অতিদ্রুত সেখান থেকে দামিশকের দিকে যাত্রা করেন। শুরায়হ ও আবদুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাস তাদের সঙ্গীদের নিয়ে কূফা রওয়ানা হন। মক্কা ও মদীনা থেকে যে কয়জন গণ্যমান্য ব্যক্তি এসেছিলেন তারা অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হৃদয়ে নিজ নিজ গৃহ অভিমুখে রওয়ানা হন। মোটকথা, অতি অল্প সময়ের মধ্যেই আযরাজের জনসমাবেশ কোথায় যেন মিলিয়ে যায়।

সিরীয়রা অত্যন্ত আনন্দচিত্তে আমর ইবনুল আসের সঙ্গে দামিশকের দিকে যাচ্ছিল। এখান থেকেই তারা মুআবিয়া (রা)-কে আমীরুল মু’মিনীন ও খলীফাতুল মুসলিমীন বলতে শুরু করে। দামিশক পৌঁছে সিরীয়রা তাকে সাফল্যের সুসংবাদ দেয় এবং সকলে মিলে তাঁর হাতে বায়‘আত করে। কিন্তু ইরাকের লোক, যারা আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন আব্বাস (রা) ও শুরায়হ ইব্‌ন হানীর সাথে কূফার দিকে যাচ্ছিল তাদের অবস্থা ছিল সিরীয়দের ঠিক বিপরীত। তারা পরস্পর অনবরত কথা কাটাকাটি করছিল। কেউ আবূ মুসাকে দোষী সাব্যস্ত করছিল, আবার কেউ তাঁকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা করছিল। কেউ আলী (রা)-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করছিল এবং মধ্যস্থতাকারী হাকিম নিয়োগের ব্যাপারে তার সম্মতি প্রদানকে একটি ভুল পদক্ষেপ আখ্যা দিচ্ছিল। কেউ কেউ আবার আমর ইবনুল আসের প্রতারণামূলক বক্তব্য প্রদানের উপর তাকে গালিগালাজ করছিল। মোটকথা, এই চারশ’ লোকের অবস্থা ছিল ঠিক ঐ বাহিনীর মত যারা কিছু দিন পূর্বে সিফফীন থেকে আলী (রা)-এর সাথে কূফার দিকে যাচ্ছিল। যাহোক, কুফা পৌঁছার পর ইব্‌ন আব্বাস (রা) আলী (রা)-কে যাবতীয় ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করেন। তিনি আবূ মূসা এবং আমর ইবনুল ‘আস উভয়ের সিদ্ধান্তকে কুরআন বিরোধী আখ্যা দিয়ে তা মেনে নিতে অস্বীকার করেন এবং মুআবিয়া, আমর, হাবীব ইব্‌ন মাসলামা, আবদুর রহমান ইব্‌ন মুখাল্লাদ, দাহহাক ইব্‌ন কায়স, ওয়ালীদ ও আবুল আওয়ারকে অভিসম্পাত করেন। এই অভিশাপ প্রদানের খবর আমীরে মুআবিয়ার নিকট পৌঁছলে তিনিও আলীকে অনুরূপ অভিসম্পাত করেন। আর তখন থেকেই এ দু’পক্ষের পরস্পর অভিশাপ প্রদানের প্রচলন শুরু হয়।

انا لله وانا اليه راجعون .

আযরাজের ঘটনায় আমীরে মুআবিয়ার এতটুকু উপকার হয় যে, যারা তাকে সমর্থন করত, ইতিপূর্বে তারা তাঁকে আমীরুল মু’মিনীন বা ‘মুসলমানদের খলীফা’ বলত না, কিন্তু এখন থেকে তারা তাঁকে প্রকাশ্যে আমীরুল মু’মিনীন বলতে শুরু করে। কিন্তু আযরাজের ঘটনার ফলে নতুন কোন দল এসে তার হাতে বায়‘আত করেনি। আর হযরত আলী (রা) প্রথম থেকেই দ্বিগুণ অসুবিধার মধ্যে ছিলেন। এখন সে অসুবিধা তিন গুণ বৃদ্ধি পেল। মুআবিয়া (রা)-ও সিরীয়দের দমন করা এবং খারিজীদের কাবুতে রাখা ও দু’টি দায়িত্ব তো প্রথম থেকেই তার ঘাড়ে ন্যস্ত ছিল, এখন আবার তাঁর উপর ন্যস্ত হল তৃতীয় আর একটি কঠিন দায়িত্ব। তা হলো, স্বয়ং আপন বন্ধু-বান্ধব এবং অনুসারীদের একথা হৃদয়ঙ্গম করানো যে, উভয় হাকিম যেহেতু পরস্পর বিরোধী মত পোষণ করেছেন, তাই তাদের কারো ফায়সালাই মেনে নেওয়া যেতে পারে না। তাছাড়া উভয় হাকিমকে পবিত্র কুরআন এ অধিকার দেয়নি যে, তারা আল্লাহ ও রাসূলের হুকুম ছেড়ে নিজ নিজ ইচ্ছামত ফায়সালা করবে এবং জলাঞ্জলি দেবে। বেশ কয়েকদিন পর্যন্ত আলী (রা) কূফাবাসীদের একথাই বোঝাতে থাকলেন যে, যেহেতু উভয় হাকিমের ফায়সালাই মেনে নেওয়া যেতে পারে না তাই আমাদের উচিত সিরীয়দের উপর হামলা করা। যখন লোকেরা তাঁর একথা বুঝতে পারল এবং তিনি সিরিয়ার উপর আক্রমণ পরিচালনার প্রস্তুতি নিতে লাগলেন তখন খারিজীদের দল, যারা তখন কূফায় যথেষ্ট পরিমাণে ছিল, পুনরায় নিজেদের মত পরিবর্তন করল।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন