hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের ইতিহাস ১ম খণ্ড

লেখকঃ মাওলানা আকবর শাহ খান নজিববাদী

২৫৬
ঘোরতর যুদ্ধ
তাদের চল্লিশ হাজার বীর সৈনিক খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদ (রা)-এর তেরো হাজার সৈন্যের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। এ হামলা ছিল অতি ভীষণ ও প্রলয়ংকারী। মুসলিম পক্ষ অত্যন্ত ধৈর্য ও দৃঢ়তার সাথে এই হামলা প্রতিরোধ করলো। অতঃপর চতুর্দিক থেকে কুঞ্চিত হয়ে এবং নিজেদেরকে সামলে নিয়ে শত্রুর উপর ক্ষুধার্ত নেকড়ের মতো আক্রমণ করলো। ফলে মুসায়লামা বাহিনীর কদম দুলে উঠলো। তারা হতবুদ্ধি হয়ে ছত্রভঙ্গ ও পলায়ন করলো। মাহকাম ইব্‌ন তুফায়ল তার লশকরের এই অবস্থা দেখে উচ্চৈঃস্বরে বললো, “ওহে বনূ হানীফা! তোমরা উদ্যানে প্রবেশ করো। আমি তোমাদের পশ্চাদ্ধাবনকারী আক্রমণকারীদেরকে প্রতিরোধ করছি।” এই আহ্বান শ্রবণ করে পলায়নকারীরা সবাই উদ্যানে প্রবেশ করলো। মাহকাম ইব্‌ন তুফায়ল অল্প কিছুক্ষণ যুদ্ধরত ছিল। কিন্তু শেষে আবদুর রহমান ইব্‌ন আবূ বকরের হাতে নিহত হলো। কিন্তু তখনো জয়-পরাজয়ের চূড়ান্ত ফায়সালা হয়নি। মুরতাদরাও নিজেদেরকে সামলে নিয়ে পুনরায় আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হলো। উভয় পক্ষ থেকেই বীর বিক্রমে যুদ্ধ আরম্ভ হলো। মুসলিম পতাকাবাহী ছাবিত ইব্‌ন কায়স (রা) শহীদ হলেন। হযরত যায়দ ইব্‌ন খাত্তাব (রা) পতাকা তার হাতে তুলে নিলেন। মুসলমানরা এমন সামরিক বীরত্ব প্রদর্শন করলো যে, শত্রুপক্ষ পিছনে হটতে হটতে উদ্যান প্রাচীর প্রান্তে পৌঁছে গেলো। উদ্যান ফটকেও কিছুক্ষণ লড়াই চললো। শেষে মুসলমানরা উদ্যান-ফটকও ভেঙে ফেললো এবং এখানে-ওখানে প্রাচীর ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করলেন। লোকেরা মুসায়লামাকে জিজ্ঞেস করলো যে, “তোমার খোদা তোমার সাথে যে বিজয়ের ওয়াদা করেছে, তা কখন পূর্ণ হবে?” সে উত্তর দিলো, “এখন এরূপ প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার সময় নয়। প্রত্যেক ব্যক্তিকেই তার পরিবার-পরিজন রক্ষার জন্য লড়াই করা উচিত।” উদ্যান-অভ্যন্তরেও যখন দাঙ্গা-হাঙ্গামা জোরে-শোরে শুরু হলো, তখন মুসায়লামা বাধ্য হয়ে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঘোড়ার উপর সওয়ার হলো এবং তার লোকদেরকে লড়াই করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে লাগলো। কিন্তু সে যখন চতুর্দিকে মুসলমানদেরকে সবল ও শক্তিশালী দেখলো, তখন ঘোড়া থেকে অবতরণ করে সংগোপনে উদ্যান থেকে বের হয়ে যেতে লাগলো। ঘটনাক্রমে উদ্যান-ফটকের অদূরেই ওয়াহশী [হামযা (রা)-এর হন্তা] দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি তাঁর বর্শা নিক্ষেপ করলে তা মুসায়লামার লৌহবর্ম ফেটে তার উদর ভেদ করে বাইরে বেরিয়ে গেলো। অবশেষে শত্রুপক্ষ যে যেদিকে পারলো পলায়ন করলো এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই মুসলমান ছাড়া মুরতাদদের কাউকে আর দেখা গেলো না। এই যুদ্ধে শত্রুপক্ষের সতের হাজার লোক মুসলিম মুজাহিদদের হাতে নিহত হয় এবং এক হাজারের কিছু বেশী মুসলমান শাহাদত বরণ করেন।.... কিন্তু মুসলিম পক্ষের আহতদের সংখ্যা ছিল খুব বেশী। শাহাদতবরণকারীদের মধ্যে কুরআনের হাফিযও ছিলেন অনেক। তিনশ ষাটজন আনসার ও তিন শ’ ষাটজন তাবিঈন এই যুদ্ধে শহীদ হন। যুদ্ধশেষে হযরত খালিদ ওয়ালীদ (রা) মুজাআ ইব্‌ন মুরারাকে—যে বন্দী ছিল—সঙ্গে নিয়ে লাশ পরিদর্শন করে। আর মুসায়লামা বাহিনীর নেতৃবর্গ ও স্বয়ং মুসায়লামার লাশ শনাক্ত করলো মুজাআ ইব্‌ন মুরারা।

বনূ হানীফা অর্থাৎ মুসায়লামা বাহিনীর জীবিত ব্যক্তিরা এদিকে-ওদিক পলায়ন করেছিল। ইয়ামামার শহর ও দুর্গে নারী ও শিশু ছাড়া কোন পুরুষ লোক অবশিষ্ট ছিল না। তাই আহতদের সেবা-শুশ্রুষা জরুরী ভেবে হযরত খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদ (রা) ঐ দিনই ইয়ামামা শহর দখল করা প্রয়োজন মনে করেননি। তাঁর ইচ্ছা ছিল পরদিন ভোরে শহর দখলের পদক্ষেপ নেবেন। মুজাআ ইব্‌ন মুরারা এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে ক্রটি করলো না। সে খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদ (রা)-কে বললো, আমাদের নেতৃবর্গ মুসায়লামাসহ মারা গেছে বলে আপনি মনে করবেন না যে, আপনি আপনার অভিযান পূর্ণ করে ফেলেছেন। এখানে তাদের চাইতে অনেক বড় বড় বীর যোদ্ধা জীবিত রয়েছে।

আর তারা শহরের মযবুত প্রাচীর ও রসদ সামগ্রী তথা যুদ্ধ-উপকরণের বিপুল ভাণ্ডারের সাহায্যে আপনাকে পরাভূত করে ছাড়বে। তাই উত্তম এই যে, আপনি কিছুক্ষণের জন্য আমাকে ছেড়ে দিন। আমি শহরে গিয়ে তাদেরকে আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে নিষেদ করে আসবো এবং এইভাবে শহরকে তাদের সম্মতিতে সন্ধির মাধ্যমে আপনার হাতে ন্যস্ত করিয়ে দেবো। হযরত খালিদ মুজাআকে বললেন, আমি তোমাকে বন্দীত্ব হতে মুক্ত করে দিচ্ছি। তুমি গিয়ে তোমার সম্প্রদায়কে সন্ধির জন্য সম্মত করাবে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে একথাও বলে দিচ্ছি যে, আমি কেবল তাদের প্রাণের জন্যই সন্ধি করবো।

মুজাআ মুসলিম বাহিনী থেকে রওয়ানা হয়ে শহরে গেলো এবং শহরের নারীদেরকে সশস্ত্র হয়ে নগর-প্রাচীরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়ে যা কিছু বোঝানোর ছিল বুঝিয়ে এলো। সে ফিরে এসে বললো, আমার সম্প্রদায় নিছক তাদের প্রাণের জন্য সন্ধি করতে সম্মত নয়। হযরত খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদ (রা) শহরের দিকে তাকিয়ে দেখলেন, সমস্ত নগর-প্রাচীর তলোয়ার ও বর্শা-বল্লমে চিকচিক করছে এবং সশস্ত্র লোকের আধিক্য সম্পর্কে মুজাআ যে বর্ণনা দিয়েছিল তার যথার্থতা প্রমাণিত হচ্ছিল। হযরত খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদ (রা) আহতদের আধিক্য ও অভিযান দ্রুত সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সন্ধি করা উত্তম ভেবে এই মর্মে সম্মতি জ্ঞাপন করলেন যে, অর্ধেক মাল আসবাব, অর্ধেক ফল-ফসলাদি ও অর্ধেক যুদ্ধবন্দী বনূ হানীফাকে ছেড়ে দেবেন। মুজাআ পুনরায় শহরে গেলো এবং ফিরে এসে বললো, তারা এতেও সম্মত নয়। আপনি এক-চতুর্থাংশ মাল-আসবাব ইত্যাদি নিয়ে সন্ধি করতে পারেন। হযরত খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদ (রা) এক-চতুর্থাংশ মাল-আসবাব নিয়েই সন্ধি করলেন এবং সন্ধিপত্র লিখে দিলেন। এরপর দরজা খুলে যখন শহরে প্রবেশ করলেন, তখন সেখানে নারী ও শিশু ছাড়া একটি পুরুষ লোকও দেখতে পেলেন না। হযরত খালিদ তখন মুজাকে বললেন, তুমি আমাদের সাথে প্রতারণা করেছো। মুজাআ বললো, আমার সম্প্রদায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যেতো। আমার কর্তব্য ছিল আপন সম্প্রদায়কে এই বিপদ থেকে রক্ষা করা। আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। হযরত খালিদ (রা) নিশ্চুপ হয়ে রইলেন। চুক্তিপত্রের বরখেলাপ করার চিন্তা পর্যন্তও তার অন্তরে উদয় হলো না। এর কিছুক্ষণ পরই মুসায়লামা ইব্‌ন ওয়াকাশ হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রা)-এর একটি পত্র নিয়ে এসে পৌঁছলেন। তাতে তিনি লিখেছিলেন, তুমি যদি বনূ হানীফার উপর বিজয় লাভ করতে পারো, তবে তাদের প্রাপ্তবয়স্ক লোকদের হত্যা করবে এবং তাদের নারী ও শিশুদেরকে বন্দী করবে। কিন্তু এই পত্র পৌঁছার পূর্বেই সন্ধিপত্র লেখা সম্পন্ন হয়েছিল। সুতরাং তার হুকুম পালন করা সম্ভব হয়নি। অঙ্গীকার পালন ও ওয়াদা পূরণ করার দৃষ্টান্তসমূহের মধ্যে এ ঘটনাটিও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

হযরত খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদ (রা) বনূ হানীফার একটি প্রতিনিধিদল হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রা) সমীপে প্রেরণ করলেন। একটি পত্রও তিনি খলীফার নামে লিখে তাদের হাতে দিলেন। এই পত্রে বিজয়ের বিস্তৃত কাহিনী ও বনূ হানীফার পুনরায় ইসলাম গ্রহণের সংবাদ লিপিবদ্ধ ছিল। সিদ্দীকে আকবর (রা) এই প্রতিনিধি দলকে সসম্ভ্রমে সাক্ষাৎ দান করেন এবং সহৃদয়ে তাদের বিদায় দান করেন। ইয়ামামা যুদ্ধ ১১ হিজরীর যুলহাজ্জ মাসে সংঘটিত হয়।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন