hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের ইতিহাস ১ম খণ্ড

লেখকঃ মাওলানা আকবর শাহ খান নজিববাদী

২৯১
দামিশ্‌ক বিজয়
ইয়ারমুক যুদ্ধে রোমান সেনাবাহিনী সম্পূর্ণ পরাজিত হয়ে পলায়ন করে এবং ‘ফুহল’ নামক স্থানে গিয়ে সমবেত হয়। হিরাক্লিয়াস এমন নির্দেশাদি জারি করেন, যাতে করে ফুহল এবং সেই সাথে দামিশ্‌ক ও রোমান বাহিনী মুসলমানগণের মুকাবিলা করতে উদ্যত হয়। দামিশ্‌ক নগরীকে খুব সুদৃঢ় ও দুর্ভেদ্য করে তোলা হয় এবং প্রয়োজনের সময় যাতে দামিশকবাসীদেরকে ফিলিস্তীন ও হিমসের দিক থেকে আরো সাহায্য পাঠানো যায় সে ব্যবস্থাও গৃহীত হয়।

দামিশক বাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিরাক্লিয়াস নাস্‌তাস ইব্‌ন নাসতূরাসকে সেখানে মোতায়েন করেন। মাহান নামীয় বিৎরীক (পাদ্রী) দামিশকের গভর্নর হিসাবে প্রথম থেকে সেখানে বিদ্যমান ছিলেন। ইসলামী বাহিনী তখন ইয়ারমুকেই অবস্থান করছিল। হযরত আবূ উবায়দা ইব্‌ন জার্‌রাহ্ (রা) হযরত ফারূকে আযম (রা)-এর নির্দেশ অনুযায়ী হাশিম ইব্‌ন উতবাকে ইরাকের সেই বাহিনীর আমীর নিযুক্ত করেন যারা হযরত খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদ (রা)-এর সাথে ইরাক থেকে এসেছিল। তারপর তাকে ইরাকের দিকে রওয়ানা করিয়ে দেন। একটি বাহিনী (ব্রিগেড)-কে ফুহলের দিকে প্রেরণ করা হয়। বাহিনীর বাকী সৈন্যগণকে বিভিন্ন অংশে বিভক্ত করে বিভিন্ন দিক প্রেরণ করেন। ‘যুলকিলা’ (রা)-এর নেতৃত্বে একটি অংশকে এ উদ্দেশ্যে রওয়ানা করা হয়, যাতে তারা দামিশক হিম্‌সের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান করে হিরাক্লিয়াস প্রেরিত বাহিনীকে বাধা প্রদান করে। আর একটি অংশকে ফিলিস্তীন ও দামিশকের মধ্যে মোতায়েন করা হয়, যাতে তারা রোমান বাহিনীকে ফিলিস্তীনের দিক থেকে দামিশ্‌কের দিকে আসতে না দেয়। বাকী সৈন্য নিয়ে খোদ হযরত আবূ উবায়দা (রা) দামিশ্‌ক অভিমুখে রওয়ানা হন। দামিশকে পৌঁছার পূর্বে তিনি তা জয় করেন। শেষ পর্যন্ত হিজরী ১৩ সনের রজব মাসে মুসলিম বাহিনী দামিশ্‌ক ঘিরে ফেলে। শহরের মধ্যে যথেষ্ট সৈন্য ছিলো, কিন্তু বাইরে বেরিয়ে এসে মুসলমানগণের মুকাবিলা করার মত সাহস রোমানদের ছিল না। তারা শহরের সুদৃঢ় প্রাচীর এবং নিজেদের প্রতিরক্ষা সামগ্রীর আশ্রয়ে থাকাকেই শ্রেয় জ্ঞান করে।

হযরত আবূ উবায়দা (রা) ‘বাবুল জাবিয়া’য় তাঁবু ফেলেন। আর হযরত খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদ (রা) ও হযরত আমর ইব্‌ন ‘আস (রা) অবতরণ করেন বাবে তূমায়।

হযরত শুরাহবিল ইব্‌ন হাসানা (রা) ফারাদীসে এবং ইয়াযীদ ইব্‌ন আবূ সুফিয়ান বাবে সাগীর ও বাবে কায়সানে অবতরণ করেন। এভাবে ইসলামী বাহিনী দামিশককে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলে। অভ্যন্তরে আটক শত্রুরা প্রাচীরে আরোহণ করে কখনো ‘মিনজানীক’ (পাথর নিক্ষেপ যন্ত্র)-এর সাহায্যে মুসলমানগণের প্রতি অনবরত পাথর নিক্ষেপ, আবার কখনো ধনুকের সাহায্যে মুষলধারে তীর বর্ষণ করতে থাকে। মুসলমানগণও যথাযথ উত্তর দিতে থাকে। এভাবে মুসলমানগণের এ অবরোধ হিজরী ১৩ সনের রজব থেকে হিজরী ১৪ সনের মুহাররম পর্যন্ত মোট ছয়মাস থাকে।

সম্রাট হিরাক্লিয়াস দামিশ্‌কবাসীদের সাহায্যার্থে হিমস থেকে যেসব বাহিনী প্রেরণ করেছিলেন, যুলকিলা’ (রা) পথিমধ্যে প্রতিরোধ সৃষ্টি করায় সেগুলো দামিশ্‌কে এসে পৌঁছতে পারে নি। কেননা, তিনি (যুলকিলা’) এ কাজের জন্যই দামিশ্‌ক ও হিমসের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান নিয়েছিলেন। যখন এভাবে ছয়মাস অতিক্রান্ত হলো তখন দামিশ্‌কবাসীরা হিরাক্লিয়াসের সাহায্য থেকে নিরাশ হয়ে গেল। সেই সাথে যুদ্ধ করার উৎসাহ-উদ্দীপনাও তারা হারিয়ে বসল। হযরত আবূ উবায়দা ইব্‌ন জার্‌রাহ (রা) এ পরিস্থিতির আলোকে দীর্ঘ ঘেরাও বহাল রাখা অপ্রয়োজনীয় বিবেচনা করে চারিদিকে অবস্থানকারী বাহিনীসমূহের সেনাপতিদেরকে নির্দেশ দিলেন যে, আগামী কালই শহরের উপর আক্রমণ পরিচালনা করতে হবে।

মুসলমানগণের এ যুদ্ধ প্রস্তুতি ও আক্রমণ পরিচালনা সম্পর্কে অবহিত হয়ে দামিশকের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের এক প্রতিনিধিদল ‘বাবে তূমার’ দিক থেকে হযরত খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদ (রা)-এর কাছে এসে আশ্রয় প্রার্থনা করে। হযরত খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদ (রা) তাদেরকে এক আশ্রয় পত্র (Deed of Trust) লিখে দেন এবং কোনরূপ সংঘর্ষ ছাড়াই শহরে প্রবেশ করেন। তিনি দামিশ্‌কবাসীদেরকে যে আশ্রয় পত্র লিখে দিয়েছিলেন, তার বিষয়বস্তু নিম্নরূপ :

“খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদ (রা) দামিশকবাসীদেরকে এ আশ্বাস প্রদান করেছেন যে, যখন ইসলামী বাহিনী দামিশকে প্রবেশ করবে তখন তাদেরকে নিরাপত্তা প্রদান করা হবে। তাদের জানমাল ও গির্জাসমূহের উপর কোনরূপ হস্তক্ষেপ করা হবে না। দামিশ্‌কের দুর্গ-প্রাচীর কিংবা কোন ঘরবাড়িও ধ্বংস করা হবে না। ইসলামী বাহিনীর কোন ব্যক্তিই শহরবাসীদের কোন ঘরে অবস্থান করবে না। মুসলমান এবং তাদের খলীফা দামিশ্‌কবাসীদের সাথে শুধু সদ্ব্যবহার করবেন, কোনরূপ দুর্ব্যবহার করবেন না যতক্ষণ তারা জিযিয়া (নিরাপত্তা কর) দিবে। হযরত খালিদ (রা) এক দিক থেকে যখন শহরে প্রবেশ করেন ঠিক তখনি অন্য দিক থেকেও ইসলামী বাহিনীর সেনাপতিরা দুর্গ প্রাচীরে সিঁড়ি লাগিয়ে এবং দরজাসমূহ ভেংগে চুরমার করে বীর দাপটে শহরে প্রবেশ করেন। শহরের মধ্যস্থলে হযরত খালিদ (রা) ও আবূ উবায়দা (রা)-এর মধ্যে পরস্পর সাক্ষাৎ ঘটে। তখন হযরত আবূ উবায়দা (রা) বলেন, আমি অস্ত্রবলে শহর জয় করেছি, আর হযরত খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদ (রা) বলেন, আমি আপোস চুক্তির মাধ্যমে শহর অধিকার করেছি। কোন কোন বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, বিৎরীক হাসান একদিকে খোদ দামিশকের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদেরকে পাঠিয়ে হযরত খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদ (রা)-এর কাছ থেকে একটি চুক্তিপত্র লিখিয়ে নিয়েছিল এবং অপর দিকে সে মুসলমানগণের আক্রমণের তীব্রতা ও তার ফলশ্রুতি প্রত্যক্ষ করতে চাচ্ছিলো। অর্থাৎ মুসলমানগণ যদি তাদের সম্মিলিত আক্রমণে ও অন্তিম প্রচেষ্টায় বিফল হয় এবং তরবারির জোরে দামিশ্‌কে প্রবেশ করতে না পারে তাহলে আগামীতে প্রতিরোধ অব্যাহত রাখা হবে এবং হযরত খালিদ (রা)-এর চুক্তিপত্রের প্রতি কোন সম্মান প্রদর্শন করা হবে না। অপর দিকে মুসলমানগণ যদি তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সফলকাম হয় এবং শক্তিবলে শহরে ঢুকে পড়ে তাহলে হযরত খালিদ (রা)-এর সাথে সম্পাদিত চুক্তির মাধ্যমে তাদের ঐ সমস্ত আচরণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে, যা অস্ত্রবলে কোন শহর বিজিত হওয়ার পর সমরনীতি অনুযায়ী সে শহরের অধিবাসীদের সাথে করা হয়। কাজেই একদিকে হযরত আবূ উবায়দা (রা) তরবারির বলে শহরে প্রবেশ করেন এবং অপরদিকে খোদ দামিশকবাসীরা দরজা খুলে দিয়ে হযরত খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদ (রা)-কে শহরের ভিতর ডেকে নিয়ে আসে। মোটকথা, এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমধর্মী কিছু একটা ঘটে থাকবে। তবে একথা নিশ্চিত যে, হযরত খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদ (রা) আপোস চুক্তির মাধ্যমে এবং হযরত আবূ উবায়দা ইব্‌ন জার্‌রাহ (রা) তরবারির জোরে দামিশকে প্রবেশ করেছিলেন।

শহরের মধ্যস্থলে যখন উভয় সেনাপতি পরস্পরের সাথে মিলিত হন, তখন দামিশ্‌ককে অস্ত্রবলে জয় করা হয়েছে, না আপোস চুক্তির মাধ্যমে অধিকার করা হয়েছে, সে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। কেউ কেউ বলেন, যেহেতু হযরত খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদ (রা) ইসলামী বাহিনীর প্রধান সেনাপতি ছিলেন না, তাই তার ঐ চুক্তিকে বৈধ মনে করা হবে না।

এ ধরনের চুক্তিপত্র শুধু হযরত আবূ উবায়দা (রা)-ই লিখে দিতে পারেন। কিন্তু হযরত আবূ উবায়দা (রা) বললেন, না, মুসলিম বাহিনীর একজন সাধারণ সৈন্যও কাউকে কোন প্রতিশ্রুতি দিলে সমগ্র বাহিনীকেই সে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে। কাজেই হযরত খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদ (রা)-এর সম্পাদিত চুক্তিকে বৈধ মনে করা হবে। শেষ পর্যন্ত এ প্রস্তাব উত্থাপিত হয় যে, শহরের মধ্যস্থল থেকে ‘তূমা’ পর্যন্ত অর্ধেক শহর অস্ত্রবলে অধিকৃত হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে। কিন্তু সে প্রস্তাব হযরত আবূ উবায়দা (রা)-এর মনঃপূত হয় নি। তাই হযরত খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদ (রা) সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী সমগ্র শহর অধিকৃত হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয় এবং হযরত খালিদ ইব্‌ন ওয়ালিদ (রা) তার চুক্তিপত্রে যে সমস্ত শর্তের উল্লেখ করেছিলেন সেগুলোকে অত্যন্ত কঠোরভাবে পালন করা হয়। আল্লামা ইব্‌ন খালদূনের বর্ণনা অনুযায়ী হযরত খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদ (রা) তরবারি চালিয়ে যখন তুমা’র দিককার সিংহদ্বার দিয়ে শহরে প্রবেশ করেন, তখন শহরবাসীরা বাকি সব সদর দরজার সম্মুখবর্তী সরদারদের সাথে আপোস আলোচনা করে অবিলম্বে আপোস চুক্তির মাধ্যমে মুসলমানগণকে শহরের ভিতরে নিয়ে যায়। যা হোক, মুসলমানগণ দামিশকবাসীদের সাথে আপোসমূলক আচরণ করেন। ফলে তাদেরকে কোনরূপ কষ্ট যন্ত্রণা বা অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় নি। হযরত আবূ উবায়দা ইব্‌ন জাররাহ (রা) হযরত ইয়াযীদ ইব্‌ন আবূ সূফিয়ানকে দামিশ্‌কের কর্মকর্তা নিয়োগ করেন এবং রোমান সেনাপতি ও সাধারণ সৈন্যদেরকে দামিশ্‌ক থেকে বের হয়ে যেখানে ইচ্ছা সেখানে চলে যাবার অনুমতি প্রদান করেন।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন