hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের ইতিহাস ১ম খণ্ড

লেখকঃ মাওলানা আকবর শাহ খান নজিববাদী

৪০০
উষ্ট্রের যুদ্ধ
ভোর বেলা হযরত আলী (রা) তার বাহিনীকে অগ্রসর হওয়ার নির্দেশ দেন। বিদ্রোহীদের যে বাহিনী মদীনা থেকে হযরত আলীর সফরসঙ্গী হয়েছিল তাদের একটি অংশ তার বাহিনীর সাথেই মিশে থাকে। পথিমধ্যে বকর ইব্‌ন ওয়ায়েল, আবদুল কায়স প্রভৃতি গোত্রের লোকেরাও আলীর বাহিনীতে যোগ দেয়। বসরার সন্নিকটে পৌঁছার পর আলী (রা) ‘আসরে উবায়দুল্লাহ্’র মাঠে তার তাঁবু খাটান। অপর দিকে হযরত আয়িশা, তালহা ও যুবায়র (রা) তাঁদের বাহিনীসহ একই মাঠে এসে অবস্থান গ্রহণ করেন। তিন দিন পর্যন্ত উভয় বাহিনী একদম চুপচাপ পরস্পর মুখোমুখি হয়ে অবস্থান করে। ঐ সময়ে যুবায়র (রা)-এর কোন কোন সঙ্গী বলে, আমাদের যুদ্ধ শুরু করে দেওয়া উচিত। যুবায়র বলেন, কা‘কা‘ ইব্‌ন আমরের মাধ্যমে আপোস-মীমাংসার আলাপ-আলোচনা চলছে। আমাদের উচিত, এর ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করা। আপোস-মীমাংসার কথাবার্তা চলাকালে বিপক্ষের উপর আক্রমণ পরিচালনা কোনভাবেই বৈধ নয়। আলী (রা)-এর কাছে তার বাহিনীর কোন কোন লোক যুদ্ধ শুরু করে দেওয়ার দাবী জানায়। কিন্তু তিনিও একই কথা বলেন। একদা জনৈক ব্যক্তি আলী (রা)-কে জিজ্ঞেস করে, আপনি বসরার দিকে এসেছেন কেন। তিনি বলেন, বিশৃঙ্খলা দমন ও মুসলমানদের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপনের জন্য। সে বলে, বসরাবাসীরা যদি আপনার কথা না মানে এবং আপনার বিপক্ষ দলও আপনার সাথে আপোস-মীমাংসায় না আসে তাহলে আপনি কি করবেন? আলী (রা) বলেন, আমি তাদের প্রতিরোধ করব। ইতিমধ্যে একটি লোক বলে উঠে, তালহা, যুবায়র প্রমুখ বলে থাকেন, আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বের হয়েছি। আপনার মতে কি তাদের কাছে উসমান হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণের কোন প্রমাণ আছে? সে আরো বলে, আপনার কাছেও কি এমন প্রমাণ আছে, যার ভিত্তিতে আপনি উসমান হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে বিলম্ব করছেন? আলী (রা) উত্তরে বলেন, যখন কোন বিষয় সন্দেহজনক হয়ে পড়ে এবং প্রকৃত ঘটনা হৃদয়ঙ্গম করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায় তখন তাড়াহুড়া না করে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত। এরপর ঐ লোকটি জিজ্ঞেস করল, যদি আগামীকাল উভয় পক্ষ মুখোমুখি হয়ে পড়ে এবং যুদ্ধ বেঁধে যায় তখন আমাদের এবং ওদের কি পরিণাম হবে। আলী (রা) বলেন, আমাদের এবং ওদের অর্থাৎ উভয় পক্ষের নিহত ব্যক্তিরা জান্নাতে যাবে।

এরপর আলী (রা) হাকাম ইব্‌ন সালাম এবং মালিক ইব্‌ন হাবীবের মাধ্যমে হযরত তালহা ও যুবায়রের কাছে এই মর্মে একটি অনুরোধবার্তা পাঠান : আপনারা যদি আপনাদের সেই সিদ্ধান্তে অটল থাকেন, যে সম্পর্কে কা‘কা‘ ইব্‌ন আমর (রা) আমাকে অবহিত করেছেন তাহলে যতক্ষণ পর্যন্ত একটা কথা পাকাপাকি না হয় আপনারা যুদ্ধ থেকে বিরত থাকুন। উত্তরে তালহা এবং যুবায়র (রা) বলেন, আপনি নিশ্চিত থাকুন, আমরা আমাদের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছি। এরপর হযরত যুবায়র এবং হযরত তালহা (রা) তাঁদের বাহিনীর সম্মুখ সারি থেকে আগে বেড়ে দুই বাহিনীর মধ্যবর্তী স্থানে আসেন। তাদেরকে এই অবস্থায় দেখে হযরত আলী (রা) তার বাহিনী থেকে বের হয়ে তাঁদের এতটুকু নিকটবর্তী হয়ে যান যে, তাদের একজনের ঘোড়ার মুখ অন্য জনের ঘোড়ার মুখ স্পর্শ করে। আলী (রা) প্রথমে তালহাকে সম্বোধন করে বলেন, তুমি শত্রুতা ও বিদ্বেষবশত এই বাহিনী সংগ্রহ করেছ এবং আমার সাথে মুকাবিলা করতে এসেছ। তুমি আল্লাহর কাছে কি এর কোন ওযর পেশ করতে পারবে এবং তোমার এই কাজকে বৈধ প্রমাণিত করতে পারবে? আমি কি তোমার দীনী ভাই নই? তোমার উপর কি আমার এবং আমার উপর কি তোমার রক্ত (অর্থাৎ পরস্পরকে হত্যা করা) হারাম নয়? তালহা (রা) উত্তরে বলেন, তুমি কি উসমান হত্যার ব্যাপারে ষড়যন্ত্র কর নি? আলী (রা) বলেন, আল্লাহ্ তা‘আলা সবই দেখেন এবং সবই জানেন এবং তিনি উসমান হত্যাকারীদের যথোপযুক্ত শাস্তি দেবেন। হে তালহা! তুমি কি আমার হাতে বায়‘আত করনি? তালহা উত্তরে বলেন, হাঁ, আমি বায়‘আত করেছি, তবে ঐ সময়ে আমার মাথার উপর তরবারি ঝুলছিল। অর্থাৎ আমি বাধ্য হয়ে বায়‘আত করেছি এবং তাও এই শর্তে যে, উসমান হত্যাকারীদের থেকে কিসাস নেওয়া হবে।

এরপর আলী (রা) যুবায়রকে সম্বোধন করে বলেন, তোমার কি ঐ দিনের কথা মনে পড়েছে, যেদিন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তোমাকে বলেছিলেন, তুমি এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে লড়বে এবং এটা হবে তার উপর তোমার অত্যাচার। একথা শুনে যুবায়র বলেন, হাঁ, মনে পড়ছে। কিন্তু মদীনা থেকে আমার রওয়ানা হওয়ার পূর্বে আপনি তো একথা আমাকে বলেননি। অন্যথায় আমি মদীনা থেকে বেরই হতাম না। এখন আল্লাহর কসম করে বলছি, আমি আপনার বিরুদ্ধে কখনো যুদ্ধ করব না। এই কথোপকথনের পর তারা পরস্পর থেকে পৃথক হয়ে যান। হযরত যুবায়র তখন হযরত আয়িশা (রা)-এর কাছে গিয়ে বলেন, আজ আলী (রা) আমাকে এমন একটি কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যার কারণে আমি কোন অবস্থায়ই তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারি না। এখন আমার ইচ্ছা সকলকে ত্যাগ করে আমি মদীনায় ফিরে যাব। উম্মুল মু’মিনীনও প্রথম থেকেই অনুরূপ সংকল্প পোষণ করছিলেন। কেননা স্বপ্নকূপে উপনীত হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সেই ভবিষ্যদ্বাণীটি তাঁর মনে পড়েছিল। কিন্তু উম্মুল মু‘মিনীন যুবায়রের কথা, কোন উত্তর দেওয়ার পূর্বেই আবদুল্লাহ ইব্‌ন যুবায়র (রা) তাঁর পিতা যুবায়র (রা)-কে সম্বোধন করে বলতে থাকেন, আপনি দুই পক্ষকে যুদ্ধক্ষেত্রে এনে দাঁড় করিয়েছেন, একের বিরুদ্ধে অন্যকে ক্ষেপিয়ে তুলেছেন এবং এখন আবার যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগের উদ্যোগ নিচ্ছেন। আমার তো মনে হচ্ছে, আপনি আলী (রা)-এর কাহিনী দেখে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন এবং আপনার মধ্যে কাপুরুষতা দেখা দিয়েছে। একথা শুনে যুবায়র সঙ্গে সঙ্গে উঠে পড়েন এবং অস্ত্রসজ্জিত হয়ে একাকি হযরত আলী (রা)-এর বাহিনীর দিকে চলে যান এবং তাদের অভ্যন্তরে ঢুকে এদিক ঘোরাফেরা করে পুনরায় ফিরে আসেন। আলী (রা) কে আসতে দেখে প্রথমেই নিজের লোকদের বলে রেখেছিলেন, সাবধান! কেউ যেন তাকে কোনরূপ বাধা না দেয় এবং তার সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত না হয়। ফলে কেউই তার সাথে কোন অশিষ্ট আচরণ করেনি।

যুবায়র (রা) ফিরে গিয়ে তার ছেলেকে বলেন, আমি যদি প্রকৃতই ভয় পেতাম তাহলে আলী (রা)-এর বাহিনীর মধ্যে এভাবে ঢুকে পড়তাম না। আসল কথা হল, আমি আলী (রা)-এর সামনে কসম করে বলেছি যে, আমি তার মুকাবিলায় দাঁড়াব না এবং তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব না। আবদুল্লাহ ইব্‌ন যুবায়র বলেন, আপনি আপনার কসমের কাফফারাস্বরূপ একটি ক্রীতদাস মুক্ত করে দিন। যুবায়র (রা) তখন বলেন, আমি আলী (রা)-এর বাহিনীতে আম্মার (রা)-কে দেখেছি এবং হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আম্মারকে একদল বিদ্রোহী হত্যা করবে। মোটকথা, যুদ্ধ ও সংঘর্ষের ধারণা উভয় পক্ষের নেতৃবৃন্দ তাদের অন্তর থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়েছিলেন এবং তারই ফলশ্রুতিতে আলী (রা)-এর পক্ষ থেকে আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন আব্বাস (রা) তালহা ও যুবায়র (রা)-এর কাছে আসেন এবং মুহাম্মদ ইব্‌ন তালহা (রা) তালহা ও যুবায়র (রা)-এর পক্ষ থেকে আলী (রা)-এর কাছে আসেন। পরস্পর আলোচনার ভিত্তিতে তৃতীয় দিন সন্ধ্যার সময় আপোস-মীমাংসার শর্তাবলী নির্ধারণ ও চূড়ান্ত করা হয় এবং সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, পরদিন ভোর বেলায় আপোস চুক্তি লিপিবদ্ধ করা হবে এবং উভয় পক্ষই তাতে স্বাক্ষর করবে। উভয় বাহিনী তিন দিন পর্যন্ত মুখোমুখি অবস্থায়ই ছিল। আবদুল্লাহ ইব্‌ন সাবার দল এবং অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠী, যারা আলী (রা)-এর ধারে কাছেই অবস্থান করছিল, এই তিন দিনের মধ্যে তাদের চক্রান্ত বাস্তবায়নের কোন সুযোগই পায় নি। এবার যখন তারা জানতে পারল যে, ভোর বেলায়ই আপোস চুক্তি লিপিবদ্ধ করা হবে তখন তারা অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়ে এবং রাতভর বিভিন্ন সলা-পরামর্শ করতে থাকে। শেষ পর্যন্ত অতি প্রত্যুষে তারা তালহা ও যুবায়র (রা)-এর বাহিনীর উপর অতর্কিতে হামলা করে বসে। প্রতিপক্ষ বাহিনীর যে অংশের উপর হামলা করা হয়েছিল তারা তা প্রতিরোধের জন্য নিজ নিজ অস্ত্র হাতে তুলে নেয়। আর যখন একাংশের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় তখন উভয় পক্ষের সকল সৈন্যই একে অন্যের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।

যুদ্ধের এই হৈ চৈ শুনে তালহা ও যুবায়র (রা) নিজ নিজ তাঁবু থেকে বের হয়ে এর কারণ জিজ্ঞেস করে জানতে পারেন যে, আলী (রা)-এর সৈন্যরা অকস্মাৎ তাদের বাহিনীর উপর হামলা করে বসেছে। তখন তারা আক্ষেপ করে বলেন, হায়! আলী (রা) দেখছি রক্তপাত ছাড়া ক্ষান্ত হবেন না। অপর দিকে আলী (রা) তাঁর তাঁবু থেকে বের হয়ে হৈ চৈ-এর কারণ জিজ্ঞেস করলো, আবদুল্লাহ ইব্‌ন সাবা কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে পূর্ব থেকে তাঁর তাঁবুর পাশে দণ্ডায়মান কয়েক ব্যক্তি প্রায় সমস্বরে বলে উঠে, তালহা ও যুবায়র (রা) অন্যমনস্কতার সুযোগ নিয়ে আকস্মিকভাবে আমাদের উপর হামলা করে বসেছেন এবং বাধ্য হয়ে তাঁদের হামলা প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের লোকেরা তাদের উপর প্রতি-হামলা করেছে। আলী (রা) আক্ষেপ করে বলেন, হায়! তালহা ও যুবায়র দেখছি রক্তপাত ছাড়া ক্ষান্ত হবে না। তারপর তিনি তার বাহিনীকে শত্রুদের মুকাবিলা করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। শেষ পর্যন্ত ঘোরতর যুদ্ধ শুরু হয়। দুই পক্ষের সেনাপতিরা একে অপরকে অপরাধী সাব্যস্ত করে এবং আসল ব্যাপার উভয়ের কাছেই অজ্ঞাত থেকে যায়। তবে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর উভয় বাহিনীর অধিনায়করা নিজ নিজ বাহিনীর উদ্দেশ্যে একই ধরনের নির্দেশ জারি করেন। তা হলো, যদি কেউ এই যুদ্ধ থেকে পলায়ন করে তবে যেন তার পশ্চাদ্ধাবন না করা হয়। কোন আহত ব্যক্তিকে যেন আক্রমণ না করা হয় এবং কারো ধন-সম্পদ যেন লুটপাট না করা হয়। এর দ্বারা একথাই প্রমাণিত হয় যে, তালহা, যুবায়র ও আলী (রা) কারো অন্তরেই পরস্পরের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ বা শত্রুতা ছিল না বরং উভয় পক্ষের কাছেই এই যুদ্ধ ছিল নেহাৎ অবাঞ্ছিত ও অকল্পনীয় এবং তাঁরা একান্ত বাধ্য হয়েই যুদ্ধক্ষেত্রে এসেছিলেন। আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন সাবার দল এবং মিসর ও অন্যান্য অঞ্চলের বিদ্রোহীরা খুব স্ফূর্তির সাথে যুদ্ধক্ষেত্রে নিজ নিজ বীরত্ব প্রদর্শন করতে থাকে। তারা সব সময়ই হযরত আলীর আশেপাশে থেকে বিশেষ করে তাকেই যেন তাদের বাহাদুরী দেখিয়ে চলে। কা‘ব ইব্‌ন মিসওয়ার হযরত উম্মুল মু’মিনীনের কাছে গিয়ে নিবেদন করে : যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় এটাই সমীচীন যে, আপনি উটে আরোহণ করুন এবং সোজা যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে দাঁড়ান। সম্ভাবনা রয়েছে যে, আপনার জন্তুযান দেখে লোকেরা যুদ্ধ থেকে বিরত থাকবে এবং পরস্পর আপোস-মীমাংসার একটা পন্থা বের হয়ে আসবে। কথাটি হযরত উম্মুল মু’মিনীনের পছন্দ হয় এবং তিনি উটে আরোহণ করে যুদ্ধক্ষেত্রে রওয়ানা হন। সাবধানতা অবলম্বন করতে গিয়ে লোকেরা তার শিবিকার উপর বর্ম ছড়িয়ে দেয় এবং উটটিকে এমন একটি জায়গায় নিয়ে দাঁড় করায় যেখান থেকে যুদ্ধের দৃশ্য পরিষ্কার নজরে পড়ে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা (রা)-এর সওয়ারী দেখে যুদ্ধের আগুন প্রশমিত হওয়ার পরিবর্তে যেন আরো দাউদাউ করে জ্বলে উঠে।

তার পক্ষের যোদ্ধারা ভাবল, উম্মুল মু’মিনীন সেনাপতি হিসাবে যুদ্ধক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয়েছেন এবং আমাদেরকে আরও বেশী বীরত্বের সাথে লড়ার জন্য অনুপ্রাণিত করছেন। অপর দিকে হযরত আলী (রা) প্রতিপক্ষের এই অবাঞ্ছিত নির্মমতা প্রত্যক্ষ করে স্বয়ং অস্ত্রসজ্জিত হয়ে প্রতিপক্ষের উপর আক্রমণ পরিচালনা এবং আপন বাহিনীকে যুদ্ধের জন্য উদ্বুদ্ধ করা জরুরী মনে করেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরই তালহা (রা)-এর পায়ে একটি তীর এসে বিদ্ধ হয় এবং তার সমস্ত মোজা রক্তে ভরে যায়। তীরের আঘাত ছিল মারাত্মক। তাই কোনমতেই রক্ত বন্ধ হচ্ছিল না। কা‘ কা‘ ইব্‌ন আমর (রা), যিনি হযরত আলী (রা)-এর পক্ষে লড়ছিলেন, তালহার ঐ অবস্থা দেখে উচ্চৈঃস্বরে বলে উঠেন, হে আবূ মুহাম্মদ! আপনার যখম (ক্ষত) খুবই মারাত্মক। অতএব আপনি অবিলম্বে বসরায় ফিরে যান। তালহা (রা) বসরার দিকে রওয়ানা হলেন কিন্তু বসরায় প্রবেশ করার সাথে সাথে ক্ষতস্থানের ব্যথায় চেতনা হারিয়ে ফেলেন এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই ইনতিকাল করেন। তাঁকে সেখানেই সমাধিস্থ করা হয়। মারওয়ান ইবনুল হাকাম ঐ যুদ্ধে হযরত তালহা এবং যুবায়রের বাহিনীতে যোগ দেন। যখন যুদ্ধ শুরু হয় তখন তালহা (রা) সংকল্প নেন, তিনি কখনো আলী (রা)-এর মুকাবিলা করবেন না। তাই তিনিও বাহিনী থেকে পৃথক হয়ে যান এবং কিছুটা তফাতে দাঁড়িয়ে আলী (রা)-এর মধ্যকার কথোপকথন এবং আম্মার (রা)-এর ভবিষ্যদ্বাণীর ব্যাপারটি পুনরায় ভেবে দেখেন এবং সেই প্রেক্ষিতে এই যুদ্ধ থেকে একদম আলাদা এবং সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থাকার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ঠিক এই অবস্থায় যখন মারওয়ান তাঁকে দেখল এবং পরিষ্কার বুঝতে পারল যে, তিনি এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করে এখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার সংকল্প নিয়েছেন তখন তিনি আপন ভৃত্যকে অর্থপূর্ণ একটি ইঙ্গিত করে এবং সে সাথে সাথে তার (মারওয়ানের) মুখের উপর এমনভাবে একটি চাদর লেপটে দেয় যে, তাকে তখন আর চেনাই যাচ্ছিল না। এমতাবস্থায় মারওয়ান তার ধনুকে একটি বিষমাখা তীর লাগিয়ে তালহা (রা)-কে লক্ষ্য করে তা ছুড়ে মারে। তীরটি তাঁর পা ভেদ করে তার ঘোড়ার পেটে গিয়ে আঘাত হানে। ফলে ঘোড়াটি তালহা (রা)-কে নিয়ে ভূমিতে লুটিয়ে পড়ে। হযরত তালহা (রা) উঠে আলী (রা)-এর এক গোলামকে (যে ঘটনাক্রমে তার সামনে এসে পড়েছিল), ডেকে আলীর প্রতিনিধি হিসাবে তার হাতে অথবা হযরত কা’কা‘ (রা)-এর হাতে (যিনি ঘটনাক্রমে সেখানে এসে পড়েছিলেন) নতুনভাবে বায়‘আত হন। এরপর তিনি বসরা ফিরে যান এবং সেখানেই ইনতিকাল করেন। হযরত আলী (রা) তা জানতে পেরে তালহা (রা)-এর জন্য দু‘আ করেন, তার প্রশংসা করেন এবং তার জন্য আক্ষেপ করতে থাকেন।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন