hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের ইতিহাস ১ম খণ্ড

লেখকঃ মাওলানা আকবর শাহ খান নজিববাদী

৪০৭
সিফ্‌ফীন যুদ্ধের পটভূমি
হযরত আলী (রা) কূফায় গিয়ে সিরিয়া আক্রমণের প্রস্তুতি গ্রহণে মনোনিবেশ করেন। হযরত আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন আব্বাস (রা) তাঁর বাহিনী নিয়ে বসরা থেকে রওয়ানা হন। এই সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে আলী (রা)-ও কূফায় আবূ মাসঊদ আনসারী (রা)-কে তার স্থলাভিষিক্ত নিয়োগ করে নাখীলায় চলে যান এবং সেনাবাহিনীর শৃংখলা বিধানে আত্মনিয়োগ করেন। আবদুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাস (রা)-ও বসরী বাহিনী নিয়ে সেখানে এসে পৌঁছেন। সেখান থেকে আলী (রা) যিয়াদ ইব্‌ন নাসর হারিছীর নেতৃত্বে অগ্রবর্তী বাহিনী হিসাবে আট হাজার সৈন্য প্রেরণ করেন। এরপর শুরায়হ ইব্‌ন হানীর নেতৃত্বে চার হাজার সৈন্যের আর একটি বাহিনী যিয়াদের পিছে পিছে প্রেরণ করেন। তিনি নিজে নাখীলা থেকে রওয়ানা হয়ে মাদায়েনে গিয়ে পৌঁছেন এবং সেখানে মাসঊদ সাকাফীকে গভর্নর নিয়োগ করে মাকাল ইব্‌ন কায়সের নেতৃত্বে তিন হাজার সৈন্য প্রেরণ করেন। এরপর তিনি মাদায়েন থেকে রিক্কার দিকে রওয়ানা হন। তিনি রিক্কার নিকটস্থ ফুরাত নদী অতিক্রম করেন এবং সেখানে যিয়াদ, শুরায়হ, মাকাল প্রমুখ অধিনায়কের বাহিনীগুলোকে একত্রিত করেন। অপর দিকে হযরত মুআবিয়া যখন জানতে পারেন যে, আলী (রা) এক বিরাট বাহিনী নিয়ে সিরিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন তখন তিনি আবুল আওয়ার সালামীর নেতৃত্বে একটি অগ্রবর্তী বাহিনী প্রেরণ করেন। আলী (রা) ফুরাত নদী অতিক্রম করার পর যিয়াদ এবং শুরায়হ্ উভয়ে পুনরায় অগ্রবর্তী বাহিনীর অধিনায়ক হিসাবে প্রেরণ করেন। যিয়াদ ও শুরায়হ সিরিয়া সীমান্তে প্রবেশ করার পর জানতে পারেন যে আবুল আওয়ার সালামী সিরিয়া থেকে একটি বাহিনী নিয়ে আসছে। তারা সঙ্গে সঙ্গে হযরত আলী (রা)-কে এ সম্পর্কে অবহিত করেন। আলী (রা) তখন আশতারকে প্রেরণ করেন এবং নির্দেশ দেন : তুমি যখন যিয়াদ ও শুরায়হের কাছে গিয়ে পৌঁছবে তখন সমগ্র বাহিনীর নেতৃত্ব গ্রহণ করে যিয়াদ ও শুরায়হকে যথাক্রমে ডান পাশের ও বাম পাশের বাহিনীর অধিনায়ক নিয়োগ করবে। আর সিরীয় বাহিনী যতক্ষণ না তোমাদের উপর হামলা করে, তোমরা তাদের উপর হামলা করবে না। আশতার সেখানে গিয়ে সমগ্র বাহিনীর অধিনায়কত্ব গ্রহণ করেন এবং যিয়াদ ও শুরায়হকে যথাক্রমে ডান পাশের ও বামপাশের বাহিনীর অধিনায়ক নিয়োগ করেন। অপর দিকে আবুল আওয়ারও তাদের মুখোমুখি তাঁবু স্থাপন করেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উভয় বাহিনী পরস্পরের বিপরীত নিজ নিজ তাঁবুতে অবস্থান করে। কিন্তু ঠিক সন্ধ্যার পর আবুল আওয়ার হামলা করে বসেন। তবে কিছুক্ষণ যুদ্ধ করার পর উভয় বাহিনী পরস্পর থেকে পৃথক হয়ে যায়। পরদিন সকাল বেলা আবুল আওয়ার তার বাহিনীর সম্মুখসারি থেকে যুদ্ধক্ষেত্রে এগিয়ে আসেন। অপর দিক থেকে হাশিম ইব্‌ন উত্‌বা এগিয়ে গিয়ে তার মুকাবিলা করেন। আসরের সময় পর্যন্ত উভয়ে যুদ্ধ করতে থাকেন। এরপর তারা পরস্পর থেকে পৃথক হয়ে নিজ নিজ বাহিনীর দিকে ফিরে যাচ্ছিলেন। এমন সময় আশতার তার বাহিনীকে প্রতিপক্ষের উপর আক্রমণের নির্দেশ দেন। আবুল আওয়ারও আপন লোকদের হামলার নির্দেশ দেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলে। তবে রাতের আধার ঘনিয়ে আসায় সেদিনকার মত তা মুলতবি হয়ে যায়।

পরদিন হযরত আলী (রা)-ও সেখানে এসে পৌঁছেন এবং জানা যায় যে, আমীরে মুআবিয়া (রা)-ও আপন বাহিনী নিয়ে শীঘ্রই সেখানে এসে পৌঁছেছেন। এ খবর পেয়ে আলী (রা) আশতারকে নির্দেশ দেন : তুমি তাড়াতাড়ি ফুরাত উপকূলে পৌঁছে পানির উপর নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা কর। কিন্তু আশতার সেখানে পৌঁছে দেখতে পান, মুআবিয়া (রা) ইতিমধ্যে পানির উপর নিজের দখল প্রতিষ্ঠা করে নিয়েছেন। আলী (রা) এ সংবাদ পেয়ে সা‘সা ইব্‌ন সাওহানকে একটি পয়গামসহ মুআবিয়া (রা)-এর কাছে পাঠান। উক্ত পয়গামে আমীরে মুআবিয়াকে সম্বোধন করে বলা হয় : আমরা তোমাদের সাথে ততক্ষণ পর্যন্ত লড়ব না, যতক্ষণ না তোমাদের ওযর-আপত্তি শ্রবণ করি এবং সত্য প্রচারের মাধ্যমে তোমাদের উপর হুজ্জত (দলীল) প্রতিষ্ঠা করি। কিন্তু আক্ষেপের বিষয় যে, তোমরা ফুরাত দখল করে আমাদের পানি বন্ধ করে দিয়েছ। ফলে পিপাসায় মানুষ কাতর হয়ে পড়েছে। তোমরা তোমাদের লোকদেরকে নির্দেশ দাও যাতে নদী থেকে পানি নিতে ওরা আমাদের বাধা না দেয়, যতক্ষণ না আমাদের মধ্যকার বিবাদের একটা মীমাংসা হয়ে যায়। আর তোমরা যদি এই চাও যে, যে উদ্দেশ্যে আমরা এখানে এসেছি সেটা ভুলে গিয়ে তোমরা পানিকে উপলক্ষ করেই যুদ্ধ করবে এবং এই যুদ্ধে যে জয়ী হবে একমাত্র সেই পানি পান করার অধিকার পাবে তাহলে তার জন্যও আমরা প্রস্তুত রয়েছি। আমীরে মুআবিয়া সঙ্গে সঙ্গে আপন উপদেষ্টাদের ডেকে পাঠান এবং তাদের সামনে বিষয়টি পেশ করেন। তখন মিসরের প্রাক্তন গভর্নর আবদুল্লাহ ইব্‌ন সা‘দ এবং ওয়ালীদ ইব্‌ন উকবা বলেন, পানির উপর থেকে আমাদের অধিকার প্রত্যাহার করা চলবে না, বরং ওদেরকে তৃষিত রেখেই মারতে হবে। কেননা ওরা হযরত উসমান (রা)-এর পানি বন্ধ করে দিয়েছিল এবং তৃষিত অবস্থায়ই তাকে শহীদ করেছে। কিন্তু আমর ইবনুল ‘আস (রা) তাদের বিরোধিতা করে বলেন, পানি বন্ধ করা কিংবা আলী (রা)-এর বাহিনীকে তৃষ্ণায় কষ্ট দেওয়া মোটেই উচিত হবে না। এই বৈঠকেই সা‘সা এবং ওয়ালীদ ইব্‌ন উকবার মধ্যে কিছুটা শক্ত কথা কাটাকাটি হয়, এমন কি তা গালিগালাজের পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছে। সা‘সা‘ সেখান থেকে অসন্তুষ্ট হয়ে আলী (রা)-এর কাছে আসেন এবং বলেন, ওরা আমাদের পানি আনার অনুমতি দেয় না। আলী (রা) আশআস্ ইব্‌ন কায়সকে একটি বাহিনীসহ প্রেরণ করেন এবং বলেন, তোমরা জোর করে পানির উপর অধিকার প্রতিষ্ঠা কর। অপর দিকে আবুল আওয়ার সালামীও মুকাবিলার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন এবং উভয় পক্ষের মধ্যে রক্তাক্ত যুদ্ধ শুরু হয়। কিন্তু যুদ্ধের একটা চূড়ান্ত ফায়সালা হওয়ার পূর্বেই আমর (রা) মু‘আবিয়া (রা)-কে বুঝিয়ে বলেন, যদি আপনি পানির উপর থেকে আপনার দখল প্রত্যাহার না করেন, আর আলী (রা)-এর লোকেরা পানিতে কষ্ট পায় তাহলে অনিবার্যভাবে আপনার বাহিনীর অনেক লোকের অন্তরেই ওদের প্রতি দয়া ও করুণার উদ্রেক হবে এবং তারা আপনাকে পরিত্যাগ করে আলীর বাহিনীতেই গিয়ে যোগ দেবে। অতঃপর তারা আপনাকে পাষাণ-হৃদয় ও জুলুমের অভিযোগে অভিযুক্ত করবে এবং আলীর পক্ষ নিয়ে আপনার বিরুদ্ধে লড়বে। আমীরে মু‘আবিয়া তখনই আপন বাহিনীর মধ্যে ঘোষণা দেন : বিপক্ষ দলকে পানি থেকে বাধা দেওয়া বা পানিতে কষ্ট দেওয়া চলবে না। এভাবে একটি হাঙ্গামা চরম আকার ধারণ করার পূর্বেই প্রশমিত হয়ে যায়।

এরপর দু’দিন পর্যন্ত যুদ্ধ ছাড়াই উভয় বাহিনী পরস্পরের বিপরীতে নীরবে অবস্থান করে। ইতিমধ্যে হিজায, ইয়ামন ও আরবের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এবং হামাদান প্রভৃতি ইরানী অঞ্চল থেকে অনেক লোক আলী (রা)-এর বাহিনীতে এসে যোগ দেয় এবং বাহিনীর মোট সৈন্য সংখ্যা নব্বই হাজারে গিয়ে দাঁড়ায়। আমীর মুআবিয়ার বাহিনীর মোট সৈন্যসংখ্যা ছিল আশি হাজার। দুই বাহিনীর প্রধান সেনাপতি ছিলেন যথাক্রমে হযরত আলী ও হযরত মু‘আবিয়া (রা)। উভয় বাহিনীর বড় বড় অংশের জন্য পৃথক পৃথক অধিনায়ক নিয়োগ করা হয়। আলী (রা)-এর বাহিনীতে আশতারকে কূফার অশ্বারোহী বাহিনীর, সুহায়ল ইব্‌ন হানাফীকে বসরার অশ্বারোহী বাহিনীর, আম্মার ইব্‌ন ইয়াসিরকে কূফার পদাতিক বাহিনীর এবং কায়স ইব্‌ন সা‘দকে বসরার পদাতিক বাহিনীর অধিনায়ক নিয়োগ করা হয়। অবশিষ্ট গোত্রসমূহ এবং প্রদেশসমূহের বাহিনীসমূহের জন্য পৃথক পৃথক অধিনায়ক নিয়োগ করা হয় এবং তাদেরকে পৃথক পৃথক পতাকাও প্রদান করা হয়। আর আমীরে মু‘আবিয়ার বাহিনীতে যুলকালা’ হামীরীকে ডান পাশের বাহিনীর, হাবীব ইব্‌ন মাসলামাকে বামপাশের বাহিনীর, আবুল আওয়ার সালামীকে সম্মুখবর্তী বাহিনীর, আমর ইবনুল আসকে দামিশকের অশ্বারোহী বাহিনীর এবং মুসলিম ইব্‌ন ওকবাকে পদাতিক বাহিনীর অধিনায়ক নিয়োগ করা হয়। এছাড়াও বাহিনীর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশের জন্য আবদুর রহমান ইব্‌ন খালিদ, উবায়দুল্লাহ ইব্‌ন উমর, বশীর ইব্‌ন মালিক কিনদী প্রমুখকে অধিনায়ক নিয়োগ করা হয়।

উভয় বাহিনীর নীরবতার পর তৃতীয় দিন (হিজরী ৩৬ সনের ১লা যিলহাজ্জ) আলী (রা), মুআবিয়া (রা)-কে বুঝিয়ে আনুগত্য স্বীকারে উদ্বুদ্ধ করার জন্য তার কাছে বশীর ইব্‌ন আমর ইব্‌ন মুহসিন আনসারী, সাঈদ ইব্‌ন কায়স এবং শীছ ইব্‌ন রিবঈ তামীমীর সমন্বয়ে একটি প্রতিনিধিদল প্রেরণ করেন। এই প্রতিনিধিদল আমীরে মু‘আবিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করে সর্ব প্রথম বশীর ইব্‌ন আমর বলেন, “হে মুআবিয়া! তুমি মুসলমানদের মধ্যে দলাদলি ও রক্তারক্তির সৃষ্টি করো না। মু‘আবিয়া উত্তরে বলেন, তুমি তোমার বন্ধু আলীকেও এই উপদেশ দিয়েছ কি? বশীর (রা) উত্তরে বলেন, ইসলাম গ্রহণে অগ্রগামী এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকটাত্মীয় হওয়ার কারণে তিনি খিলাফত পদের অধিক হকদার। অতএব তোমার উচিত তার হাতে বায়‘আত করা। মু‘আবিয়া (রা) উত্তরে বলেন, এটা কোন মতেই সম্ভব নয় যে, আমরা উসমান হত্যার দাবী ছেড়ে দেব। শীছ ইব্‌ন রিবঈ বলেন, হে মুআবিয়া, তুমি উসমান হত্যার কিসাসের যে দাবী করছ তার অন্তরালে তোমার কি মতলব লুকিয়ে রয়েছে তা আমরা ভাল করেই বুঝি। তুমি উসমানের সাহায্যে এগিয়ে যেতে এজন্য বিলম্ব করেছ যাতে তিনি শহীদ হয়ে যান এবং তুমি তার খুনের দাবীকে উপলক্ষ করে খিলাফতের দাবী উত্থাপন করতে পার। হে মুআবিয়া! তুমি তোমার ঐ খামখেয়ালী থেকে বিরত হও এবং আলীর সাথে ঝগড়া করতে যেয়ো না। মুআবিয়া তখন অত্যন্ত কঠোর ভাষায় শীছের উত্তর দেন। শীছও ছেড়ে কথা বলার পাত্র নন।

তিনিও মুআবিয়ার উদ্দেশ্যে কঠোর ভাষা ব্যবহার করেন। শেষ পর্যন্ত প্রতিনিধিদল আপোস-মীমাংসায় ব্যর্থ হয়ে আলী (রা)-এর কাছে ফিরে আসে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন