hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের ইতিহাস ১ম খণ্ড

লেখকঃ মাওলানা আকবর শাহ খান নজিববাদী

২২১
পরম সুচরিত্র
হযরত আবদুল্লাহ ইব্‌ন হারিছের উক্তি : আমি কোন ব্যক্তিকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) অপেক্ষা অধিক সুচরিত্রবান দেখিনি। নবী করীম (সাঃ) বলেন, বীর সেই ব্যক্তি নয়, যে লোকদেরকে কুস্তিতে হারিয়ে দেয়, বরং বীর সেই ব্যক্তি যে ক্রোধের সময় স্বীয় প্রবৃত্তিকে সংযত রাখে। হযরত আনাস (রা) বলেন, নবী করীম (সাঃ) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ সাহসী ব্যক্তি। একবারের ঘটনা। মদীনাবাসী হঠাৎ সন্ত্রস্ত হয়ে ওঠে। শত্রুর আক্রমণের মতো শোরগোল শুরু হয়। লোকেরা সেই শোরগোলের দিকে অগ্রসর হলো। কিন্তু তারা দেখতে পেলো যে, নবী করীম (সাঃ) সেই দিক থেকে ফিরে আসছেন। তিনি সবার আগে ঘোড়ার শূন্য পৃষ্ঠে আরোহণ করে সেই দিকে গিয়েছিলেন। তিনি লোকদের বললেন, ঘাবড়িও না, কোন ভয় ও আশংকার কারণ নেই। বারা’ ইব্‌ন আযিব (রা) বলেন, হুনায়ন যুদ্ধের দিন লোকেরা পলায়নপর ছিল আর এদিকে নবী করীম (সাঃ) এই রিজ্‌য (কবিতার ছন্দ) পাঠ করছিলেন : انا النبى لا كذب انا ابن عبد المطلب সেদিন তার চেয়ে বড় বাহাদুর ও সাহসী আর কোন লোককে দেখা যায়নি। যুদ্ধ যখন খুব তুমুল আকার ধারণ করতো, তখন আমরা তাঁর আশ্রয় খুঁজতাম। আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় বাহাদুর ও বীর সেই ব্যক্তি বিবেচিত হতো, যে যুদ্ধের ময়দানে নবী করীম (সাঃ)-এর বরাবর দাঁড়িয়ে থাকতে পারতো। হযরত আনাস (রা) বলেন, একদা আমি নবী করীম (সাঃ)-এর সহযাত্রী হয়েছিলাম। তিনি তখন একটি মোটা পাড়ের চাদর গায়ে দিয়ে ছিলেন। জনৈক বেদুঈন চাদরের আঁচল ধরে এমন জোরে টান দিলো যে, চাদরের পাড়ের ঘর্ষণে তার কাঁধ ও ঘাড়ে দাগ পড়ে গেল। তিনি তার দিকে তাকালে সে বললো : হে মুহাম্মদ (সাঃ)! আল্লাহর সেই সম্পদ থেকে যা তোমার নিকট গচ্ছিত আছে, আমার দু’টি উটের উপরও কিছু বোঝাই করে দাও। কেননা তার মধ্য থেকে তুমি আমাকে যা দেবে, তা তোমার বা তোমার বাবার সম্পত্তি নয়। এই তিক্ত ও রূঢ় কথা শুনে প্রথমে তিনি পরম ধৈর্য ও কৃপায় নীরব থাকলেন। তারপর বললেন, নিঃসন্দেহে সমস্ত সম্পদ আল্লাহর এবং আমি তার বান্দা। কিন্তু তুমি বলো, তোমার সাথেও কি ঐ রকম আচরণই করা হবে, যা তুমি আমার সাথে করেছো? সে বললো, না! তিনি বললেন, কেন নয়? সে বললো, কেননা, তুমি মন্দের বদলে মন্দ করো না। একথা শুনে তিনি মৃদু হাসলেন। তারপর তিনি ঐ ব্যক্তির এক উটের উপর যব ও আরেক উটের উপর খেজুর বোঝাই করে দিতে আদেশ করলেন।

একবার যায়দ ইব্‌ন সু‘আনী নামক জনৈক ইয়াহূদী ইসলাম গ্রহণের পূর্বে নবী করীম (সাঃ)-এর নিকট নিজের দেয়া কিছু ঋণের তাগাদা দিতে এলো এবং অনেক রকম বকাঝকা করতে লাগলো। বললো, তোমরা, আবদুল মুত্তালিবের বংশধররা কখনো ঋণ পরিশোধ করো না এবং ওয়াদা পালন করোনা। তার এই অবাধ্যাচরণ দেখে নবী করীম (সাঃ) মুচকি মুচকি হাসছিলেন। কিন্তু হযরত উমর (রা) তাকে ধমক দিয়ে এরূপ অবান্তর উক্তি করতে বাধা দিতে চাইলে তিনি তাঁকে বললেন, উমর! আমাদের দু’জনের ক্ষেত্রে তোমার যে ভূমিকা গ্রহণ করা উচিত ছিল, তা তুমি করতে ব্যর্থ হয়েছো। ওকে ধমক দেয়া তোমার উচিত হয়নি, বরং তাকে ভদ্র ও নম্রভাবে তাগাদা করার উপদেশ দেয়া এবং আমাকে ওয়াদা পালন ও ঋণ পরিশোধ করতে বলা উচিত ছিল। এরপর তিনি ঐ ইয়াহূদীর ঋণ পরিশোধ করে দেয়ার আদেশ দিলেন এবং ধমক ও ভর্ৎসনার বিনিময়ে অতিরিক্ত বিশ সা অর্থাৎ আরো দেড় মণ যব দিয়ে দিতে বললেন। অথচ ঋণ পরিশোধের মেয়াদ তখনো তিনদিন অবশিষ্ট ছিল। ইয়াহূদী লোকটি মেয়াদ শেষ না হতেই তাগাদা করতে এসেছিল। দয়া-ধৈর্যের এই সুচরিত্র দেখে ইয়াহূদী মুসলমান হয়ে গেলো।

হযরত আনাস (রা) বলেন, আমি নবী করীম (সাঃ)-এর সাথে আবূ সায়ফ কর্মকারের নিকট গেলাম। তাঁর স্ত্রী নবী করীম (সাঃ)-এর পুত্র ইবরাহীমকে দুধ পান করাতো। ইবরাহীমের তখন মুমূর্ষু অবস্থা। তাঁর এই অবস্থা দেখে নবী করীম (সাঃ)-এর চক্ষু অশ্রুসজল হয়ে উঠলো। তাঁকে অশ্রুসজল দেখে হযরত আবদুর রহমান ইব্‌ন আওফ (রা) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনিও অধৈর্য প্রকাশ করছেন? তিনি বললেন : হে ইব্‌ন আওফ! এ অশ্রু স্নেহ-মমতার কারণে; অধৈর্য ও অকৃতজ্ঞতার কারণে নয়। অন্তর অবশ্যই ব্যথিত হয় আর চক্ষু অশ্রু বিসর্জন করে। কিন্তু আমরা এমন কোন কথা উচ্চারণ করি না, যা আল্লাহর অসন্তোষ কুড়ায়।

আবু সাঈদ খুদরী (রা) বলেন, একবার আনসারদের কিছু লোক নবী করীম (সাঃ)-এর নিকট কিছু চাইল। তিনি তাদেরকে তা দিলেন। তারা আরো চাইল। তিনি তাদের আরো দিলেন। এমনকি তার কাছে যা ছিল সবই দিয়ে দিলেন। তারপর তিনি বললেন, আমার কাছে যা কিছু আসে, তা তোমাদেরকে না দিয়ে জমা করে রাখি না। তবে যে ব্যক্তি নিজকে ভিক্ষার অপমান থেকে রক্ষার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাকে সেই অপমান থেকে রক্ষা করেন। আর যে ব্যক্তি ধৈর্য অবলম্বন করে, আল্লাহ তাকে ধৈর্যশীল বানিয়ে দেন। ধৈর্য অপেক্ষা অধিক উত্তম কোন দান আল্লাহ কাউকে দান করেননি। হযরত আবূ হুরায়রা (রা) বর্ণনা করেন, নবী করীম (সাঃ) বারংবার বলেছেন, আমার নিকট যদি উহুদ পর্বতের সমান স্বর্ণও থাকে, তবু তা তিনদিন অতিক্রম করার পূর্বে বণ্টন করে দেয়ার মধ্যেই আমার আনন্দ। তবে ঋণ পরিশোধের জন্য আমি যা তুলে রাখি সেগুলো ছাড়া। কখনো কখনো তাঁর নিকট যখন কিছু থাকতো না এবং কোন অভাবগ্রস্ত এসে পড়তো, তখন ঋণ করে হলেও তার অভাব দূর করতে তিনি দ্বিধাবোধ করতেন না। সাধারণত তিনি এই ধরনের ঋণই করতেন। নিজের ব্যক্তিগত প্রয়োজন মিটানোর জন্য তিনি কখনো ঋণ করতেন না।

জাবির ইব্‌ন আবদিল্লাহ্ (রা) বলেন, আমি এক যুদ্ধে হযরত নবী করীম (সাঃ)-এর সাথে ছিলাম। আমার উটটি ক্লান্ত হয়ে পিছনে পড়ে গেলো। ইত্যবসরে নবী করীম (সাঃ) এসে পড়লেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, জাবির! তোমার কি হয়েছে? আমি বললাম, আমার উটটি ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তিনি আমার উটকে একটি তসমা (চামড়ার লম্বা টুকরো দ্বারা) মারলে সেটি খুব দ্রুত চলতে লাগলো। তারপর আমরা উভয়ে কথা বলতে বলতে চললাম। এক পর্যায়ে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি এই উটটি বিক্রি করবে? আমি বললাম, হাঁ।

তিনি সেটি আমার নিকট থেকে ক্রয় করলেন। তারপর তিনি আগে চলে এলেন এবং আমি কিছুটা বেলা বাড়ার পর পৌঁছলাম। আমি উট মসজিদের দরজায় বাঁধলাম। তিনি আমাকে দেখে বললেন, উট রেখে দাও এবং মসজিদে এসে দু’রাকাআত সালাত আদায় করো। আমি সালাত শেষ করলে তিনি হযরত বিলাল (রা)-কে উটের মূল্য পরিশোধ করতে বললেন। আমি মূল্য নিয়ে রওয়ানা হলাম। তিনি আবার আমাকে ডাকলেন। আমি আমার উট ফিরিয়ে দেয়ার আশংকা করলাম। কিন্তু আমি কাছে এলে তিনি বললেন, উটটিও নিয়ে যাও এবং তার মূল্যও তোমারই থাকবে।

একবার নবী করীম (সাঃ) একটি জঙ্গলে প্রবেশ করলেন। তাঁর সাথে একজন লোক ছিল। তিনি মাটি খুঁড়ে দু’টি মিসওয়াক বের করলেন। একটি সোজা ছিল, আরেকটি বাকা। নবী করীম (সাঃ) বাকাটি নিজে রাখলেন আর সোজাটি তাঁর সঙ্গীকে দিলেন। সঙ্গী বললেন, সোজাটি আপনি রাখুন। কিন্তু তিনি সেটি নিলেন না। বললেন, যে ব্যক্তি কারো সাহচর্যে থাকে, তা মুহূর্তের জন্যই হোক না কেন, কিয়ামতের দিন তাকে জিজ্ঞেস করা হবে যে, সাহচর্যের দাবী তুমি পালন করেছিলে কিনা?

হযরত ইব্‌ন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, জনৈক ইয়াহূদী ও বিশর নামীয় জনৈক মুনাফিক মুসলমানের মধ্যে কোন ব্যাপারে বিবাদ বাধে। তারা উভয়ে নবী করীম (সাঃ)-এর নিকট বিচার প্রার্থী হলো। তিনি উভয়ের অবস্থা তদন্ত করে ইয়াহূদীকে সত্যবাদী পেলেন এবং তার পক্ষে রায় ঘোষণা করলেন। বাইরে এসে বিশর বললো, এ রায় ঠিক হয়নি। চলো আমরা হযরত উমর (রা)-এর নিকট যাবো। সুতরাং তারা হযরত উমর (রা)-এর নিকট এলো। ইয়াহূদী এসেই বললো : আমরা দু’জনে নবী করীম (সাঃ)-এর নিকট গিয়েছিলাম। তিনি আমার পক্ষে রায় দিয়েছেন, কিন্তু সে তা মানেনি এবং আপনার কাছে নিয়ে এসেছে। এখন আপনি যে ফায়সালা করবেন তাই মান্য করা হবে। হযরত উমর (রা) বিশরের দ্বারা ইয়াহূদীর এই বর্ণনায় সত্যতা যাচাই করলেন। বিশর বললো : হাঁ, সে (ইয়াহূদী) সত্যই বলেছে। আমরা উভয়ে নবী করীম (সাঃ)-এর নিকট গিয়েছিলাম। কিন্তু আমি তার রায়ের উপর আপনার রায়কে প্রাধান্য দেই। হযরত উমর (রা) বললেন : তোমরা উভয়ে একটু দাঁড়াও। আমি এখনই ফায়সালা করে দিচ্ছি। একথা বলে তিনি অন্দরে চলে গেলেন এবং তলোয়ার নিয়ে এসে মুনাফিক বিশরের শিরোচ্ছেদ করলেন। বললেন, যে ব্যক্তি মুসলমান হয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ফায়সালা মানে না, আমি তার ফায়সালা এভাবেই করে থাকি। এতে তার সঙ্গের মুনাফিকরা অনেক শোরগোল করলো। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা ওয়াহীর মাধ্যমে হযরত উমর (রা)-এর এই কাজকে সমর্থন করলেন এবং সেদিন থেকেই তাঁর লকব হলো ‘ফারূক’।

মক্কা বিজয়ের পরের ঘটনা। বনূ মাখযূমের ফাতিমা বিনতুল আসওয়াদ নাম্নী জনৈক মহিলা চুরির অপরাধে গ্রেফতার হলো। অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার পর নবী করীম (সাঃ) তার হাত কাটার নির্দেশ দিলেন। কুরায়শের অভিজাত মহল এটা তাদের জন্য লজ্জাকর ভাবলো। তারা সুপারিশ করে ঐ মহিলাকে শাস্তি থেকে রক্ষা করতে চাইল। কিন্তু সুপারিশ করার সাহস হলো না। শেষে হযরত উসামা ইব্‌ন যায়দ (রা)-কে অনেক ধরাধরি করে রাযী করালেন। তিনি নবী করীম (সাঃ)-এর নিকট সুপারিশ করলেন। তখন নবী করীম (সাঃ) বললেন : উসামা! তুমি আল্লাহর নির্ধারিত দণ্ডের মধ্যে সুপারিশকে স্থান দিচ্ছ! তারপর তিনি উঠে দাঁড়ালেন এবং জনসমাবেশে ভাষণ দিলেন : জনমণ্ডলী! তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিগুলো এজন্যই ধ্বংস হয়ে গেছে। তাদের কোন অভিজাত পরিবারের কেউ চুরি করলে তারা তাকে ছেড়ে দিতো এবং কোন দুর্বল লোক চুরি করলে তাকে শাস্তি দিতো। আল্লাহ্ সাক্ষী, ফাতিমা বিন্‌ত মুহাম্মদ (সাঃ)-ও যদি চুরি করতো, আমি নির্ঘাত তার হাত কেটে ফেলতাম।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন