hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের ইতিহাস ১ম খণ্ড

লেখকঃ মাওলানা আকবর শাহ খান নজিববাদী

২৮৬
কতিপয় বিশেষ বৈশিষ্ট্য
হযরত ফারূকে আযম (রা) ইসলাম গ্রহণের পূর্বে ‘উকায নামক স্থানে, যেখানে বিষয় বিশেষজ্ঞদের বার্ষিক সমাবেশ হতো এবং এক বিরাট মেলা বসতো, সেখানে ভূমিতে প্রায়ই মল্লযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতেন। তখন তাকে আরবের অন্যতম বিখ্যাত মল্লযোদ্ধা হিসাবে গণ্য করা হতো। অশ্বারোহণে তিনি এতই পারদর্শী ছিলেন যে, এক লাফে ঘোড়ার উপর সওয়ার হয়ে এরূপ স্থির হয়ে বসতেন যে, তার দেহ মোটেই এদিক ওদিক হত না। ‘ফুতুহুল কুলদান’-এর বর্ণনামতে, হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর নবুওয়াত প্রকাশের সময় কুরায়শ বংশে শুধু সতের জন লোক লেখাপড়া জানতেন। আর হযরত উমর ইব্‌ন খাত্তাব (রা) ছিলেন তাঁদের অন্যতম। চল্লিশ জন পুরুষ ও এগার জন মহিলার পর তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। কারো কারো মতে, উনচল্লিশ জন পুরুষ ও তেইশজন মহিলা, আবার কারো কারো মতে, পঁয়তাল্লিশজন পুরুষ ও এগারজন মহিলার পর তিনি ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নেন। তিনি ‘সাবিকীন’ (ইসলাম গ্রহণে অগ্রবর্তী ব্যক্তিবৃন্দ) ও ‘আশারায়ে মুবাশশারা’ (জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত দশ ব্যক্তি)-এর অন্যতম। তিনি ছিলেন হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর শ্বশুর। তিনি আলিম ও যাহিদ (ধর্মের জন্য উৎসর্গীকৃত প্রাণ) হিসাবে সাহাবীদের মধ্যে পরিগণিত হতেন। তাঁর থেকে পাঁচশ’ ঊনচল্লিশখানি হাদীস বর্ণিত আছে, যা তিনি হযরত উসমান (রা), হযরত আলী (রা), হযরত তালহা (রা), সা‘দ (রা), ইব্‌ন মাসঊদ (রা), আবূ যার (রা), আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন উমর (রা), আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন আব্বাস (রা), আবদুল্লাহ ইব্‌ন যুবায়র (রা), আনাস (রা), আবূ হুরায়রা (রা), আমর ইব্‌ন ‘আস (রা), আবূ মূসা আশ’আরী (রা), বারা ইব্‌ন আযিব (রা), আবূ সাঈদ খুদরী (রা) এবং আরো কয়েকজন সাহাবী (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন।

হযরত ইব্‌ন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত আছে, যে দিন হযরত উমর ফারুক (রা) ইসলাম গ্রহণ করেন, সেদিন মুশরিকরা বলেছিল, “আজ মুসলমানরা আমাদের থেকে কড়ায় গণ্ডায় প্রতিশোধ গ্রহণ করলো। ঐদিন নিম্নের আয়াত অবতীর্ণ হয় :

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ حَسْبُكَ اللَّهُ وَمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ

হে নবী! আপনার জন্য ও আপনার অনুসারী বিশ্বাসিগণের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। (৮:৬৪)

হযরত ইব্‌ন মাসঊদ (রা) থেকে বর্ণিত : যেদিন হযরত উমর ফারূক (রা) ইসলাম গ্রহণ করেন, সেদিন থেকে ইসলামের সম্মান ও প্রতিপত্তি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। তার ইসলাম গ্রহণ ছিল যেন ইসলামের জয়ের প্রতীক। তার হিজরত ছিল যেন একটি নুসরাত বা বিরাট সাহায্য। তাঁর ইমামত বা নেতৃত্ব ছিল একটি রহমত। কা‘বা শরীফে গিয়ে সালাত আদায় করব সে সাধ্য আমাদের ছিল না। কিন্তু যখন হযরত উমর ফারুক (রা) ঈমান আনেন, তখন তিনি মুশরিকদের সাথে এমন বাক-যুদ্ধ বাঁধিয়ে দেন যে, আমাদের জন্য কা‘বা শরীফে সালাত আদায়ের বাধা অপসারিত হয়। হযরত হুযায়ফা (রা) বলেন, যখন থেকে হযরত উমর ফারুক (রা) ঈমান আনেন, তখন থেকে ইসলাম যেন একজন ভাগ্যবান মানুষের রূপ নেয়। প্রতিটি পদে সে উন্নতি লাভ করতে থাকে। আর যখন তিনি শাহাদত বরণ করেন, তখন ইসলামের ভাগ্যাকাশে দুর্যোগ নেমে আসে এবং প্রতি পদেই উন্নতি ব্যাহত হতে থাকে।

হযরত ইব্‌ন সা‘দ (রা) বলেন, যখন হযরত উমর (রা) ঈমান আনেন, প্রকৃতপক্ষে তখনই ইসলাম প্রকাশ লাভ করে। তখন হতে আমরা কা‘বা শরীফের তাওয়াফ করতে, মুশরিকের কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করতে এবং তাদের প্রত্যুত্তর দিতে শুরু করি। ইব্‌ন আসাকির হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন, প্রত্যেক ব্যক্তিই গোপনে হিজরত করেছে, কিন্তু যখন হযরত উমর (রা) হিজরত করতে মনস্থ করেন, তিনি এক হাতে মুক্ত তরবারি নেন এবং অপর হাতে তীর ও পিঠে ধনুক ঝুলিয়ে পবিত্র কা‘বা ঘরে আসেন, সাতবার কা‘বা শরীফ তাওয়াফ করেন এবং মাকামে ইবরাহীমের কাছে দাঁড়িয়ে দু’রাকাআত সালাত আদায় করেন। তারপর কুরায়শ নেতাদের একটি সমাবেশে যান এবং একের পর এক তাদের সবাইকে সম্বোধন করে বলেন, “তোমাদের সর্বনাশ হোক, যে কেউ আপন মাকে নিঃসন্তান এবং স্ত্রীকে বিধবা দেখতে চায়, সে আমার মুকাবিলা করুক।’ তখন কেউই তাকে বাধা দেওয়ার দুঃসাহস করেনি।

ইমাম নববী (র) বলেন, হযরত উমর (রা) প্রত্যেকটি যুদ্ধে হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথী ছিলেন এবং উহুদ যুদ্ধে তিনি স্বীয় স্থানে অটল থাকেন। হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, আমি স্বপ্নে দেখলাম, একটি স্ত্রীলোক জান্নাতের একটি প্রাসাদের পাশে বসে ওক করছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ প্রাসাদটি কার? জানতে পারলাম, এটা উমরের। তারপর তিনি হযরত উমর (রা)-কে সম্বোধন করে ইরশাদ করেন, তোমার ‘গায়রাত’ (মর্যাদাবোধ)-এর কথা আমার মনে পড়ল এবং আমি সেখান থেকে ফিরে এলাম। হযরত উমর (রা) কান্নায় ভেংগে পড়েন এবং আরয করেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার সাথে আমার কিসের গায়রাত? একবার হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, আমি স্বপ্নে দেখলাম, আমি দুধ পান করেছি এবং তার সজীবতা আমার নখ পর্যন্ত পৌঁছেছে। তারপর আমি সে দুধ উমরকে দিলাম। লোকেরা জিজ্ঞেস করলো, হুযূর! এর তা‘বীর (ব্যাখ্যা) কি? তিনি উত্তর দিলেন, দুধ অর্থ জ্ঞান। এক সময় হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, আমি স্বপ্নে দেখলাম, আমার সামনে কিছু লোক হাযির করা হয়েছে এবং তারা কামীস (জামা পরে আছে। তাদের কারো কারো কামীস বক্ষদেশ পর্যন্ত, আবার কারো কারো কামীস তার চাইতেও অধিক লম্বা। কিন্তু উমরের কামীস এতই লম্বা যে, তা মাটি হেঁচড়ে যায়। লোকেরা আরয করল, এখানে কামীস দ্বারা কি বোঝানো হয়েছে? তিনি উত্তর দিলেন, ‘দীন’ (ধর্ম)। এক সময় হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) হযরত উমর (রা)-কে জানালেন, আল্লাহর কসম, তুমি যে রাস্তা দিয়ে যাবে শয়তান কখনো সে রাস্তা মাড়াতে পারবে না, বরং সে অন্য রাস্তা ধরবে। একবার নবী (সাঃ) ইরশাদ করেন, আমার পরে যদি কেউ নবী হতো, তাহলে নিশ্চয় উমরই হতো। একবার নবী (সাঃ) ঘোষণা করেন, উমর ফারুক (রা) জান্নাতবাসীদের মধ্যে উজ্জ্বল প্রদীপ। আরেকবার হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) মন্তব্য করেন, উমর যতক্ষণ তোমাদের মধ্যে থাকবেন ততক্ষণ বাহুল্য ও বাড়াবাড়ির দরজা বন্ধ থাকবে। নবী (সাঃ) ঘোষণা করেন, আসমানের প্রত্যেক ফেরেশতা উমরকে সমীহ করে এবং যমীনের প্রত্যেক শয়তান তাকে ভয় করে। হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রা)-এর হাদীসে উল্লিখিত আছে, হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) জিজ্ঞাসিত হলেন, যত নবী আবির্ভূত হয়েছেন, তাঁদের উম্মতের মধ্যে একজন ‘মুহাদ্দাছ’ অবশ্যই ছিলেন। যদি আমার মধ্যেও কেউ মুহাদ্দাছ হতে পারেন, তাহলে তিনি উমর (রা)। লোকেরা আরয করল, ‘মুহাদ্দাছ’ কাকে বলে? তিনি জবাবে ইরশাদ করেন, যার মুখ দিয়ে ফেরেশতারা কথা বলে।

হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রা) বলেন, এ পৃথিবীতে আমার কাছে উমর (রা)-এর চাইতে আদরের কোন ব্যক্তি নেই। হযরত আলী (রা) বলেন, মহান আল্লাহর পিয়ারা রাসূলের পরে আমরা হযরত উমর রাযিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুকেই অধিক প্রতিভাবান পেয়েছি।

হযরত আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন মাসঊদ (রা) বলেন, যদি দুনিয়ার সমগ্র জ্ঞান তুলাদণ্ডের এক পাল্লায় রাখা হয় এবং হযরত উমর (রা)-এর জ্ঞান অপর পাল্লায় রাখা হয় তাহলে হযরত উমর (রা)-এর পাল্লাই ভারী হবে। হযরত হুযায়ফা (রা) বলেন, সমগ্র বিশ্বের জ্ঞান হযরত উমর (রা)-এর কোলে পড়ে আছে। অথচ হযরত উমর (রা) ভিন্ন এরূপ কোন ব্যক্তি নেই, যে অত্যন্ত দুঃসাহসিকতার সাথে মহান আল্লাহর পথে বিশ্রী গালিগালাজ শুনেছে। হযরত আলী (রা) হযরত উমর (রা)-কে বস্ত্রে জড়ানো অবস্থায় দেখে বললেন, বস্ত্রে জড়ানো এ ব্যক্তির চেয়ে আমার কাছে প্রিয় আর কেউ নেই। জনৈক ব্যক্তির প্রশ্নের জবাবে হযরত আলী (রা) বলেন, হযরত উমর (রা) সংকল্পের দৃঢ়তা, বিচক্ষণতা ও বীরত্বে ভরপুর। হযরত ইব্‌ন মাসঊদ (রা) বলেন, হযরত উমর (রা)-এর প্রকৃষ্টতার কথা এ চারটি ঘটনা থেকে জানা যায়। এক. বদর যুদ্ধের বন্দীদেরকে তিনি হত্যা করার প্রস্তাব দেন। তারপর এ আয়াত নাযিল হয় :

لَوْلَا كِتَابٌ مِنَ اللَّهِ سَبَقَ لَمَسَّكُمْ فِيمَا أَخَذْتُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ

আল্লাহর পূর্ব-বিধান না থাকলে তোমরা যা গ্রহণ করেছ, সেজন্য তোমাদের উপর মহাশাস্তি আপতিত হতো। (৮; ৬৮)

দুই. তিনি হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সহধর্মিণীদের পর্দা করার জন্য বলেন। তারপর পর্দার আয়াত নাযিল হয়। এজন্যই হযরত উমর (রা)-কে তারা বলেছিলেন, ওয়াহী তো আমাদের ঘরে নাযিল হয়, কিন্তু তোমার অন্তরে পূর্বেই তা ঢেলে দেওয়া হয়। তিন. হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর এ দু‘আ—“হে আমাদের প্রতিপালক। উমরকে মুসলমান করে ইসলামকে সাহায্য কর। চার. সর্বাগ্র হযরত আবূ বকর (রা)-এর হাতে তাঁর বায়‘আত করা। হযরত মুজাহিদ (র) বলেন, আমরা প্রায়ই একথা বলাবলি করতাম যে, হযরত উমর (রা)-এর খিলাফত কালে শয়তান বন্দী ছিল এবং তার ইন্তিকালের পর সে বন্ধনমুক্ত হয়ে গেছে। হযরত আবূ উসামা (রা) বলেন, তোমরা তো জানই হযরত আবূ বকর (রা) ও হযরত উমর (রা) কে? তারা ইসলামের জন্য পিতামাতা তুল্য। হযরত জা‘ফর সাদিক (র)-এর উক্তি, আমি সেই ব্যক্তির প্রতি অসন্তুষ্ট, যে হযরত আবূ বকর ও হযরত উমর (রা)-এর প্রতি অশিষ্ট।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন