hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের ইতিহাস ১ম খণ্ড

লেখকঃ মাওলানা আকবর শাহ খান নজিববাদী

১৮৩
মূতার যুদ্ধ
হযরত নবী করীম (সাঃ) যে দাওয়াতী চিঠিপত্র রাজা-বাদশাহদের নামে লিখেছিলেন, তন্মধ্যে একটি চিঠি হারিছ ইব্‌ন উমায়র আযদী (রা) মারফত বসরার শাসনকর্তার নামে প্রেরণ করেছিলেন। হারিছ ইব্‌ন উমায়র আযদী (রা) রওয়ানা হয়ে বসরা যাওয়ার পথে সিরিয়া সীমান্তের সন্নিকটবর্তী মূতা নামক স্থানে পৌঁছতেই সেখানকার শাসনকর্তা শুরাহবীল ইব্‌ন উমর গাস্‌সানী যিনি রোম সম্রাটের তরফ থেকে ঐ এলাকার গভর্নর ছিলেন—তাকে গ্রেফতার করলেন এবং ইনি বসরার শাসনকর্তার নিকট হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর চিঠি নিয়ে যাচ্ছেন—একথা অবগত হয়ে তাঁকে শহীদ করে ফেললো। হারিছ ইব্‌ন উমায়র (রা)-এর অহেতুক হত্যাকাণ্ডের খবর যখন মদীনা মুনাওয়ারায় পৌঁছল তখন মুসলমানগণ প্রচণ্ড আঘাত পেলেন। হযরত নবী করীম (সাঃ) এই উদ্ধত গাস্‌সানী সরদারকে শায়েস্তা করার জন্য একটি অভিযান প্রেরণ করলেন। এই অভিযান প্রেরণে যদি বিন্দু মাত্র বিলম্ব হতো, তাহলে সিরিয়ার পক্ষ থেকে মদীনা আক্রান্ত হওয়া ছিল অবশ্যম্ভাবী। হযরত নবী করীম (সাঃ) মুসলমানদেরকে নিজ নিজ যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে হারাক নামক স্থানে সমবেত হতে বললেন। সুতরাং তিন হাজার ইসলামী সৈন্য হারাক নামক স্থানে সমবেত হলো। নবী করীম (সাঃ) যায়দ ইব্‌ন হারিছা (রা)-কে এই দলের সৈনাপত্য দান করে বললেন—যায়দ ইব্‌ন হারিছা যদি শহীদ হয়, জা‘ফর ইব্‌ন আবী তালিব এই দলের সেনাপতি হবে। জা‘ফরও যদি শহীদ হয়, তবে আবদুল্লাহ ইব্‌ন রাওয়াহা সেনাপতি হবে। সেও যদি শহীদ হয়; তবে তারপর সেনাদল যাকে পছন্দ করবে, তাকে সেনাপতি বানিয়ে নেবে। হযরত নবী করীম (সাঃ) এই দলটিকে কিছুদূর পর্যন্ত বিদায় জানাতে গেলেন। তারপর মদীনায় ফিরে এলেন।

হযরত যায়দ ইব্‌ন হারিছা (রা) তার বাহিনী নিয়ে মাআন নামক স্থান পর্যন্ত অগ্রসর হলেন। মাআনে পৌঁছে সংবাদ পাওয়া গেলো মূতার শাসনকর্তা শারজীল ইব্‌ন আমর মুসলমানদের মুকাবিলার জন্য একলাখ সুদক্ষ সৈন্য সমাবেশ করেছেন এবং এক লাখ সৈন্যসহ মূতা থেকে কিছুদূর পিছনে অবস্থিত বাল্‌কা’ উপত্যকায় স্বয়ং রোম সম্রাট ডেরা ফেলে রয়েছেন। এই খবর শুনে মুসলিম বাহিনীর মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার ভাব দেখা দিলো। মুসলিমপক্ষ দু’দিন পর্যন্ত মাআনে অবস্থান করলো এবং পরস্পরের মধ্যে এরূপ সলা-পরামর্শ চলতে লাগলো যে, নবী করীম (সাঃ)-কে এ ব্যাপারে চিঠি লিখতে হবে এবং তার নির্দেশ ও সাহায্যের অপেক্ষা করতে হবে। তখনো কোন বিশেষ সিদ্ধান্ত স্থির হয়নি। ইত্যবসরে হযরত আবদুল্লাহ ইব্‌ন রাওয়াহা (রা) উঠে দাঁড়ালেন এবং উচ্চকণ্ঠে লোকদেরকে সম্বোধন করে বললেন :

তোমরা শাহাদতের অন্বেষণে বের হয়েছো। কাফিরদের সাথে আমরা লোক গণনা অর্থাৎ সংখ্যা, শুমার ও শক্তি দ্বারা যুদ্ধ করি না বরং আমরা সেই দীনের জন্য যুদ্ধ করি, যা আল্লাহ আমাদেরকে দান করেছেন। কাজেই তোমরা মূতা ও হিরাক্লিয়াস বাহিনীর দিকে অগ্রসর হও এবং নিজ বাহিনীর মায়মানা (ডান পার্শ্ব) ও মায়সারা (বাম পার্শ্ব) ঠিক করে কাফিরদের মুকাবিলা করো। এর পরিণাম এই দুই পুণ্যের যে কোন একটি অবশ্যই হবে : হয় আমরা জয়লাভ করবো, অথবা শাহাদত লাভ করবো।

হযরত আবদুল্লাহ ইব্‌ন রাওয়াহা (রা)-এর এই বীরত্বব্যঞ্জক ভাষণ শ্রবণ করে হযরত যায়দ ইব্‌ন হারিছা (রা) এক হাতে বর্শা ও অন্য হাতে ঝাণ্ডা নিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। সমস্ত মুসলমানের মধ্যে জোশ ও শাহাদতের আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হলো। মুসলিম বাহিনী মাআন থেকে রওয়ানা হলো। মাশারিফ নামক একটি গ্রামের কাছে শত্রুপক্ষের একটি বিরাট দল সামনে দেখা গেলো। কিন্তু মুসলমানরা সেখানে তাদের মুকাবিলা করা উপযোগী মনে করলেন না। তারা সেখান থেকে পাশ কাটিয়ে মূতার দিকে অগ্রসর হলেন যাতে যুদ্ধের জন্য উপযুক্ত ময়দান হস্তগত হয়। অবশেষে মূতা ময়দানে উভয় বাহিনীর মুকাবিলা হলো। একদিকে ছিল এক লাখ বীর যোদ্ধা। অপরদিকে ছিল তিন হাজার মুসলিম মুজাহিদ। এই মুজাহিদ বাহিনীর মধ্যে হযরত খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদ (রা)-ও শামিল ছিলেন এবং মুসলমান হওয়ার পর ইসলামের পক্ষ থেকে এই প্রথম বারের মতো তার বীরত্ব প্রদর্শনের সুযোগ ঘটেছিল। রোমের কায়সার ও মুসলমানদের মধ্যে এটা ছিল প্রথম যুদ্ধ। এ যুদ্ধকে মুসলমান ও খ্রিস্টানদের প্রথম যুদ্ধও বলা যেতে পারে। যদিও সিরীয় সীমান্তের কাছাকাছি আরো কয়েকটি ছোট ছোট যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। কিন্তু উল্লেখযোগ্য লড়াইগুলোর মধ্যে এটি ছিল সর্বপ্রথম লড়াই, যা মুসলমানরা সিরিয়া সীমান্তে লড়েছিলেন। হযরত যায়দ ইব্‌ন হারিছা (রা) ঝাণ্ডা হাতে নিয়ে কলব (মধ্যবর্তী বাহিনী)-এর সামনে সবার আগে ছিলেন। মায়মানা (রাইট উইং) কুতায়বা ইব্‌ন কাতাদা ‘উযরীর উপর ন্যস্ত ছিল। মায়সারায় (লেফট উইং) ছিলেন আবায়া ইব্‌ন মালিক আনসারী (রা)। যায়দ ইব্‌ন হারিছা (রা) লড়াই করতে করতে এবং কাফিরদের কতল করতে করতে অনেক দূর অগ্রসর হলেন। কাফিররা চতুর্দিক থেকে তাঁকে ঘিরে ফেললো। তিনি শাহাদত বরণ করলেন। তিনি শহীদ হওয়ার পর হযরত জা‘ফর (রা) ঝাণ্ডা তুলে নিলেন এবং বহু কাফিরকে হত্যা করলেন। শেষে তার ঘোড়াটি যখমী হয়ে পড়ে গেলো এবং তিনি পদাতিক শত্রুর সাথে লড়তে লাগলেন। শত্রুরা তাকেও ঘেরাও করে ফেললো। তার ডান হাত কেটে পড়ে গেলো। কিন্তু তিনি বাম হাত দিয়ে ঝাণ্ডা সামলে নিলেন। যখন বাম হাতও কেটে পড়ে গেলো, তখন গর্দানের সাথে ঝাণ্ডা লাগিয়ে সীনা দ্বারা তা উচিয়ে রাখলেন। এই অবস্থায়ই তিনি শাহাদত বরণ করলেন। তার শাহাদতের পর হযরত আবদুল্লাহ ইব্‌ন রাওয়াহা (রা) সামনে অগ্রসর হয়ে ঝাণ্ডা তার হাতে নিলেন। কিছুক্ষণ লড়াই করে তিনিও শহীদ হলেন এবং ইসলামের ঝাণ্ডা মাটিতে পড়ে গেলো। মুসলমানদের মধ্যে অস্থিরতার চিহ্ন দেখা দিল। হযরত ছাবিত ইব্‌ন আকরাম (রা) চট করে সামনে অগ্রসর হয়ে ঝাণ্ডা তুলে নিলেন এবং উচ্চকণ্ঠে বললেন :

হে মুসলমানগণ! তোমরা সম্মিলিতভাবে কোন একজনকে তোমাদের সেনাপতি বানিয়ে নাও।

ইসলামী লশকরের তরফ থেকে সম্মিলিত কণ্ঠে উচ্চারিত হলো رضينابك (আমরা তোমার সৈনাপত্যেই সন্তুষ্ট!) হযরত ছাবিত ইব্‌ন আকরাম জবাব দিলেন :

ما أنا بقاعل اتفقوا على الد بن ولید

(আমি এ দায়িত্ব পালন করতে অক্ষম। তোমরা খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদকে সেনাপতি বানিয়ে নাও)। ইসলামী লশকরের পক্ষ থেকে তৎক্ষণাৎ উচ্চারিত হলো-আমরা খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদের সৈনাপত্য মেনে নিলাম। একথা শুনেই হযরত খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদ (রা) তৎক্ষণাৎ সামনে অগ্রসর হয়ে হযরত ছাবিত ইব্‌ন আকরামের হাত থেকে ঝাণ্ডা গ্রহণ করলেন এবং রোমক বাহিনীর উপর আঘাত হানলেন।তখনো পর্যন্ত রোমক বাহিনী বিজয়ী ও মুসলিম বাহিনী পরাজিত দৃষ্ট হচ্ছিল। কোন কোন মুসলিম সেনা এই অবস্থা দেখে হতোদ্যম হয়ে পড়েছিল। কিন্তু হযরত খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদ ঝাণ্ডা হাতে নিয়েই মুসলিম বাহিনীকে হুঙ্কার দিয়ে যুদ্ধের আহবান জানালেন এবং ধিক্কার দিয়ে বীর-বিক্রমে যুদ্ধের জন্য নতুনভাবে প্রস্তুত করলেন। তারপর এমন সুনিপুণভাবে বিশাল শত্রুবাহিনীর উপর উপর্যুপরি আঘাত হানলেন যে, রোমকরা হতচকিত হয়ে গেলো। হযরত খালিদ ইব্‌ন ওয়ালিদ (রা) কেবল নিজেই বীর-বিক্রমে লড়াই করেননি বরং তার সৈন্যের বিন্যাস ও গতিবিধিকেও অতি দক্ষতার সাথে তাঁর আয়ত্তে রাখেন। তিনি কখনো মায়সারাকে সামনে অগ্রসর করান, কখনো মায়মানাকে পিছে হটান। নিজেও হামলা করতেন এবং নিজ বাহিনীর বিভিন্ন অংশ দ্বারাও শত্রুদের আক্রমণ করাতেন। হযরত খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদ (রা) বিদ্যুতের মতো যুদ্ধক্ষেত্রে চমকাচ্ছিলেন এবং ইসলামী লশকরের প্রতিটি অংশকে স্বয়ং সাহায্য করছিলেন। মোটকথা, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হযরত খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদ (রা) তাঁর তিন হাজার সৈন্যকে রোমের এক লাখ বীর সেনার সাথে যুদ্ধরত রাখলেন। যখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো, তখন রোমকরা মুসলমানদের মুকাবিলা থেকে পলায়নের গ্লানি স্বীকার করলো এবং ভগ্নোৎসাহ হয়ে পিঠটান দিলো। মুসলমানরা কিছুদূর পর্যন্ত পশ্চাদ্ধাবন করলেন এবং কিছু মালে গনীমতও হস্তগত হলো। এই যুদ্ধে মুসলিম পক্ষে মোট বারো জন সাহাবী শহীদ হন। নিহত কাফিরদের সঠিক সংখ্যা জানা যায় নি।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন