hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের ইতিহাস ১ম খণ্ড

লেখকঃ মাওলানা আকবর শাহ খান নজিববাদী

১৭৭
খায়বার বিজয় হিজরতের সপ্তম বছর
হুদায়বিয়া সন্ধির পর নবী করীম (সাঃ) মক্কার মুশরিকদের তরফ থেকে নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু মদীনা এসে জানা গেল যে, খায়বার এলাকায় মুসলমানদের মূলোচ্ছেদ ও মদীনা আক্রমণের আয়োজন সম্পন্ন হতে চলছে। মদীনা থেকে বনু নাযীর ও বনু কুরায়যা দেশান্তরিত হয়ে খায়বারেই বসতি স্থাপন করেছিল। এইসব ইয়াহূদীর অন্তরে মুসলমানদের শত্রুতার অগ্নিকুণ্ড দাউ দাউ করে জ্বলছিল। তারা খায়বারের ইয়াহূদীদেরকেও মুসলমানদের বিরুদ্ধে দ্রুত সংগঠিত করে ফেললো। মক্কার পরে তখন মুসলমানদের বিরোধিতা ও শত্রুতার সবচেয়ে বড় কেন্দ্র ছিল খায়বার। তারা ইয়াহূদীদের প্রায় সবগুলো শক্তিশালী গোত্রকেই মুসলমানদের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করতে ব্যাপৃত ছিল। এখন তারা মুসলমানদের মুকাবিলা ও মূলোৎপাটনের রণ-প্রস্তুতি আরম্ভ করলো। আরবের বনূ গাতফানকে তারা মদীনার অর্ধেক ফসলদানের শর্তে নিজেদের সাথে শরীক করলো।

ইয়াহূদীদের রণ-প্রস্তুতি সামান্য ছিল না বরং তার পরিধি ছিল অতি বিস্তৃত ও তাদের ষড়যন্ত্র ছিল অতি ভয়াবহ। তারা মদীনার মুনাফিকদেরকে তাদের দোসর বানিয়ে নিয়েছিল। ঐ মুনাফিক গুপ্তচরদের মাধ্যমে তারা খায়বারের দূর প্রদেশে বসেও মুসলমানদের প্রতিটি কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবহিত থাকতো। হযরত নবী করীম (সাঃ) ইয়াহূদীদের এইসব আয়োজনের কথা শুনে সপ্তম হিজরীর মুহাররম মাসে পনেরশ’ সাহাবা নিয়ে—যাদের মধ্যে দু’শ’ ছিলেন আরোহী-মদীনা থেকে খায়বারের দিকে যাত্রা করলেন এবং মদীনায় হযরত সাব্বাআ ইব্‌ন আরফাতা (রা)-কে শাসক বানিয়ে রেখে গেলেন। তিনি খায়বারের কাছাকাছি পৌঁছে খায়বার ও বনূ গাতফানের মধ্যবর্তী রাজী নামক স্থানে শিবির স্থাপন করলেন। বনু গাতফান আশংকা করলো যে, মুসলমানরা তাদের বস্তির উপর হামলা করতে পারে। তাই তারা নিজেদের ঘরেই প্রতিরোধ ও মুকাবিলার জন্য অবস্থান করলো, খায়বারের ইয়াহূদীদের সাহায্যার্থে যেতে পারলো না।

খায়বার এলাকায় ইয়াহূদীদের নিকট পরস্পরের কাছাকাছি ছয়টি বিশাল দুর্গ ছিল। ইয়াহূদীরা ইসলামী সৈন্য পৌঁছার পর ময়দানে বের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী আহবান করলেন। তাদের মধ্যে মারহাব ও ইয়াসির নামক দুইজন মস্ত বড় বাহাদুর ও হস্তী-বপু যোদ্ধা ছিলেন। তারা যখন ময়দানে বের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী আহবান করলো, তখন মুসলমানদের পক্ষ থেকে হযরত মুহাম্মদ ইব্‌ন মাসলামা (রা) ও হযরত যুবায়র ইবনুল আওয়াম (রা) সামনে এলেন। মুহাম্মদ ইব্‌ন মাসলামা (রা) মারহাবকে এবং যুবায়র ইবনুল আওয়াম (রা) ইয়াসিরকে হত্যা করলেন। কোন কোন রিওয়ায়াতে মারহাব হযরত আলী (রা) কর্তৃক নিহত হয়েছে বলে বর্ণিত হয়েছে।

যুদ্ধের ময়দানে ইয়াহূদীরা মুসলমানদের মুকাবিলা করা কঠিন ভাবলো। তাই তারা কিল্লাবন্দী ও দুর্গাশ্রয়ী হওয়া শ্রেয় মনে করলো। এই দুর্গগুলোর মধ্যে মাআব ইব্‌ন মু‘আযের দুর্গটি সবচেয়ে বেশী মজবুত ও এমন স্থানে অবস্থিত ছিল, যেখান থেকে অন্য সবগুলো দুর্গে সাহায্য পৌঁছে যেতো। মুসলিম বাহিনী সর্ব প্রথম নাঈম দুর্গে আক্রমণ করলেন এবং কঠিন পরিশ্রম ও মুকাবিলার পর নাঈম দুর্গ দখল করলেন। এই দুর্গ আক্রমণ করার সময় হযরত মুহাম্মদ ইব্‌ন মাসলামা (রা)-এর উপর দুর্গবাসীরা উপর থেকে পাথরের একটি যাঁতা ফেলে দিয়েছিল এবং তাতেই তিনি শাহাদত বরণ করেন। তারপর আবুল হাকীক ইয়াহূদীর কামূস দুর্গ আক্রমণ করা হলো। এ দুর্গটিও মুসলমানদের দখলে এলো। এই দুর্গ থেকে সাফিয়্যা বিন্‌ত হুই ইব্‌ন আখতাব ও অন্যান্য বহু কয়েদী মুসলমানদের করায়ত্ত হলো। সাফিয়্যা বিন্‌ত হুই’র বিবাহ কিনানা ইব্‌নুর রবীঈ ইব্‌ন আবিল হাকীক-এর সাথে হয়েছিল। গ্রেফতারের পর তিনি হযরত দাহ্‌য়া কালবী (রা)-এর ভাগে পড়েছিলেন। তাঁর নিকট থেকে হযরত নবী করীম (সাঃ) তাকে খরিদ করে আযাদ করে দেন। তারপর তিনি হযরত নবী করীম (সাঃ)-এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কামূসের পর সাইব ইব্‌ন মুআযের দুর্গ বিজিত হলো। এরপর খায়বারের চতুর্থ দুর্গও মুসলমানদের দখলে এলো।

অবশেষে ওয়াতীহ্ ও মুসলিম নামক দু’টি দুর্গ বাকী থাকলো। মুসলমানরা সে দুটিকে দশ দিন পর্যন্ত অবরোধ করে রাখলেন। অবরুদ্ধ ইয়াহূদীরা যখন অবরোধের তীব্রতার দরুন কাবু হয়ে পড়লো, তখন তারা হযরত নবী করীম (সাঃ)-এর নিকট বার্তা পাঠালো যে, খাজনা (খারাজ) হিসাবে অর্ধেক ফসল নেয়ার শর্তে যদি আমাদেরকে আমাদের জমির মালিক রাখা হয়, তাহলে আমরা আপনার আনুগত্য মেনে নিতে প্রস্তুত। সেমতে ঐ সব ইয়াহূদীকে কৃষি ভূমি ও বাগানের অর্ধেক ফসল খাজনা (খারাজ) দেয়ার শর্তে প্রজা হিসাবে তাদের ভূ-সম্পত্তি দখলে রাখতে ও বসবাস করতে দেয়া হলো। হযরত উমর (রা)-এর খিলাফতের শেষ সময় পর্যন্ত খায়বারে তারা বসবাস করে।

খায়বারের এই যুদ্ধে পনের জন মুসলমান শাহাদত বরণ করেন : চারজন মুহাজির ও এগার জন আনসার। আর ৯২ জন ইয়াহূদী নিহত হয়। এই যুদ্ধেই গৃহপালিত গাধার গোশত মুসলমানদের জন্য হারাম ঘোষণা করা হয়। এই যুদ্ধে মুত্‌আ বিবাহ চিরদিনের জন্য হারাম করা হয়। ইয়াহূদীদের এক সরদার সালাম ইব্‌ন মাশকামের স্ত্রী যয়নাব বিনতুল হারিছ বিষ মিশ্রিত একটি আস্ত ভুনা বকরী নবী করীম (সাঃ)-কে হাদিয়া স্বরূপ দান করেছিল। তিনি এবং তার সাথে হযরত বিশর ইবনুল বারা’ ইব্‌ন মারূর সেটি খেতে আরম্ভ করলেন। হযরত নবী করীম সেটি মুখে দিয়েই থু থু করে ফেলে দিলেন এবং বললেন, এই বকরীর হাড়গুলোই আমাকে বলছে যে, এতে বিষ মিশ্রিত রয়েছে। কিন্তু হযরত বিশর (রা) সেটির কিছু গোশত চিবিয়ে গিলে ফেলেছিলেন। তাই তিনি তৎক্ষণাৎ শাহাদত বরণ করলেন। ইয়াহূদী নারী যয়নাবকে ডাকা হলো। সে বিষ মিশ্রণ করার কথা স্বীকার করলো। তাই তাকে হযরত বিশর (রা)-এর ওয়ারিছদের হাতে সোপর্দ করা হলো। কিন্তু তারা তাকে হত্যা করলেন না। কেননা সে ইসলাম গ্রহণ করেছিল।

তখন খায়বার থেকে মদীনায় ফিরে আসার প্রস্তুতি চলছিল। এই সময় আবিসিনিয়া থেকে প্রত্যাবর্তনকারী মুহাজিরদের কাফেলা আবিসিনিয়া সম্রাটের চিঠি ও হাদিয়া নিয়ে হযরত নবী করীম (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলো। এই কাফেলায় হযরত জা‘ফর ইব্‌ন আবী তালিব (রা), তাঁর স্ত্রী আসমা বিন্‌ত উমায়স (রা), তাঁর পুত্র আবদুল্লাহ্ (রা), আওন (রা), মুহাম্মদ (রা) এবং হযরত খালিদ ইব্‌ন সাঈদ ইবনুল ‘আস ইব্‌ন উমাইয়া (রা), তার স্ত্রী আমীনা বিনত খুলাফা ও তাঁর পুত্র সাঈদ (রা) এবং হযরত উম্মে খালিদ (রা), হযরত আমর ইব্‌ন সাঈদ (রা), হযরত আবূ মূসা আশআরী (রা), হযরত জাহ্‌ম ইব্‌ন কায়স (রা), হযরত হারছ ইব্‌ন খালিদ (রা), হযরত মুহায়না ইব্‌ন হাতিব ইব্‌ন আমর, হযরত মুআম্মার ইব্‌ন আবদুল্লাহ্ (রা), হযরত আবূ হাতিব ইব্‌ন আমর (রা), হযরত মালিক ইব্‌ন রবীআ ইব্‌ন কায়স (রা) ও হযরত আমর ইব্‌ন উমাইয়া দামরী (রা)—যিনি এদেরকে আনতে গিয়েছিলেন—শামিল ছিলেন। হযরত নবী করীম (সাঃ) এই মু’মিনদের মাঝে মিলিত হয়ে খুব খুশী হলেন।

খায়বার থেকে ফেরার পথে অদূরেই ফাদাক নামক স্থান। সেখানকার ইয়াহূদীরা বার্তা পাঠালো যে, আমাদেরকে শুধু আমাদের জীবনের নিরাপত্তা দান করা হোক, আমাদের ধন-সম্পদের কোন প্রয়োজন নেই। হযরত নবী করীম (সাঃ) তাদের এই আবেদন মনযূর করলেন। তাই ফাদাক আক্রমণ করা হলো না এবং তাদের উপর কোন আরোহী ও পদাতিকের অসি ও বর্শা চালানোর কোন সুযোগ মেলেনি। তাই আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ অনুসারে ঐ ধন-সম্পদগুলোকে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের সম্পদ মনে করা হলো এবং সেগুলো বায়তুল মালের সম্পদরূপে গণ্য হলো।

সেখান থেকে রওয়ানা হয়ে মুসলিম বাহিনী ওয়াদিল কুরা’ চলে এলেন। সেখানকার ইয়াহূদীরা মুসলমানদের উপর তীর নিক্ষেপ শুরু করলো। তাই তাদেরকেও অবরোধ করা হলো এবং অবশেষে খায়বারবাসীদের মতো অর্ধেক ফসল খাজনা (খারাজ) দেয়ার শর্তে আনুগত্য স্বীকার করলো। ওয়াদিল কুরায় মাত্র একজন সাহাবী হযরত মুদআম (রা) শহীদ হন। ওয়াদিল কুরার অদূরে তায়মা নামক একটি স্থান ছিল। সেখানকার ইয়াহূদীরাও ওয়াদিল কুরার অধিবাসীদের মতোই আনুগত্য স্বীকার করলো।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন