HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
তাফসীরুল কুরআন বিল কুরআন
লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
বিষয়ভিত্তিক
তাফসীরুল কুরআন বিল কুরআন
কুরআনে আলোচিত বিভিন্ন বিষয়ের কুরআনিক ব্যাখ্যা
শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
আরবি প্রভাষক :
আলহাজ্জ মোহাম্মদ ইউসুফ মেমোরিয়াল দারুল হাদীস মাদরাসা
৮-৯ লুৎফর রহমান লেন, সুরিটোলা, ঢাকা- ১১০০
সম্পাদনা
মোহাম্মদ ইমাম হোসাইন কামরুল
ব্যবস্থাপনা পরিচালক
ইমাম পাবলিকেশন্স লিঃ
তাফসীরুল কুরআন বিল কুরআন
কুরআনে আলোচিত বিভিন্ন বিষয়ের কুরআনিক ব্যাখ্যা
শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
আরবি প্রভাষক :
আলহাজ্জ মোহাম্মদ ইউসুফ মেমোরিয়াল দারুল হাদীস মাদরাসা
৮-৯ লুৎফর রহমান লেন, সুরিটোলা, ঢাকা- ১১০০
সম্পাদনা
মোহাম্মদ ইমাম হোসাইন কামরুল
ব্যবস্থাপনা পরিচালক
ইমাম পাবলিকেশন্স লিঃ
১. এ গ্রন্থের মধ্যে কুরআন মাজীদে আলোচিত বিভিন্ন বিষয় সংক্রান্ত আয়াতসমূহ বিভিন্ন স্থান থেকে খুঁজে বের করে একত্রে সন্নিবেশিত করা হয়েছে।
২. আয়াতগুলো এমনভাবে সাজানো হয়েছে যেন একটি আয়াত অন্য একটি আয়াতের সম্পূরক এবং ব্যাখ্যা। এজন্য এ গ্রন্থের নাম দেয়া হয়েছে- ‘তাফসীরুল কুরআন বিল কুরআন’ অর্থাৎ কুরআন দিয়ে কুরআনের ব্যাখ্যা। কারণ, اَلْقُرْاٰنُ يُفَسِّرُ بَعْضُهٗ بَعْضًا - কুরআনের এক অংশ অন্য অংশের ব্যাখ্যা করে।
৩. এ তাফসীরটি পড়ে সকলেই এমনকি স্বল্পশিক্ষিত লোকেরাও বিভিন্ন বিষয়ে কুরআনের বক্তব্য কী তা সহজে জেনে নিতে পারবেন।
৪. কোন বিষয় সম্পর্কে বিভিন্ন আয়াত হতে যেসব মাসআলা বা পয়েন্ট বের হয় তা শিরোণাম আকারে লিখা হয়েছে এবং ঐ কথার দলীলস্বরূপ নিচে কুরআনের আয়াত উল্লেখ করা হয়েছে। এরপর আয়াতের সহজসরল বাংলা অনুবাদ দেয়া হয়েছে। সাথে সাথে এটা কোন্ সূরার কত নম্বর আয়াত তাও উল্লেখ করা হয়েছে।
৫. আয়াত উল্লেখ করার সময় অধিকাংশ ক্ষেত্রে আলোচ্য বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট অংশটুকুই উল্লেখ করা হয়েছে- যাতে মুখস্থ করা ও দলীল হিসেবে উপস্থাপন করা সহজ হয়।
৬. কুরআনের এমন অনেক আয়াত আছে যেগুলোর শানে নুযূল বা ব্যাখ্যা না জানলে আয়াতের মর্ম বুঝা যায় না। সেজন্য প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে শানে নুযূল ও ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে।
৭. অনেক ব্যাখ্যা এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, এর মাধ্যমে পাঠক কুরআনকে বাস্তবতার নিরিখে গভীরভাবে অনুধাবন করতে সক্ষম হবেন।
৮. সম্মানিত ইমাম, খতীব, বক্তা ও দাঈগণ কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করার সময় প্রথমে ঐ বিষয়ে কুরআনের বক্তব্য উপস্থাপন করে থাকেন। এ ক্ষেত্রে এ তাফসীরটি সকলের জন্য সহায়ক ভূমিকা রাখবে- ইনশা-আল্লাহ।
৯. কুরআন মাজীদ হেফ্জ করার সাথে সাথে এ তাফসীরটিও পড়লে হাফিজ হওয়ার পাশাপাশি কুরআনের বিধিবিধান সম্পর্কেও জানা যাবে।
১০. এ তাফসীরটি হাদীসের কিতাবের ন্যায় পর্ব ও অধ্যায় আকারে সাজানো হয়েছে। তাই পাঠক এ গ্রন্থের যে অধ্যায়টি পড়বেন সে অধ্যায়ের সাথে যে কোন হাদীস গ্রন্থের সংশ্লিষ্ট অধ্যায়টিও মিলিয়ে পড়লে ঐ বিষয়ে কুরআন ও হাদীসের বক্তব্য পুরোপুরি স্পষ্ট হয়ে যাবে।
২. আয়াতগুলো এমনভাবে সাজানো হয়েছে যেন একটি আয়াত অন্য একটি আয়াতের সম্পূরক এবং ব্যাখ্যা। এজন্য এ গ্রন্থের নাম দেয়া হয়েছে- ‘তাফসীরুল কুরআন বিল কুরআন’ অর্থাৎ কুরআন দিয়ে কুরআনের ব্যাখ্যা। কারণ, اَلْقُرْاٰنُ يُفَسِّرُ بَعْضُهٗ بَعْضًا - কুরআনের এক অংশ অন্য অংশের ব্যাখ্যা করে।
৩. এ তাফসীরটি পড়ে সকলেই এমনকি স্বল্পশিক্ষিত লোকেরাও বিভিন্ন বিষয়ে কুরআনের বক্তব্য কী তা সহজে জেনে নিতে পারবেন।
৪. কোন বিষয় সম্পর্কে বিভিন্ন আয়াত হতে যেসব মাসআলা বা পয়েন্ট বের হয় তা শিরোণাম আকারে লিখা হয়েছে এবং ঐ কথার দলীলস্বরূপ নিচে কুরআনের আয়াত উল্লেখ করা হয়েছে। এরপর আয়াতের সহজসরল বাংলা অনুবাদ দেয়া হয়েছে। সাথে সাথে এটা কোন্ সূরার কত নম্বর আয়াত তাও উল্লেখ করা হয়েছে।
৫. আয়াত উল্লেখ করার সময় অধিকাংশ ক্ষেত্রে আলোচ্য বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট অংশটুকুই উল্লেখ করা হয়েছে- যাতে মুখস্থ করা ও দলীল হিসেবে উপস্থাপন করা সহজ হয়।
৬. কুরআনের এমন অনেক আয়াত আছে যেগুলোর শানে নুযূল বা ব্যাখ্যা না জানলে আয়াতের মর্ম বুঝা যায় না। সেজন্য প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে শানে নুযূল ও ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে।
৭. অনেক ব্যাখ্যা এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, এর মাধ্যমে পাঠক কুরআনকে বাস্তবতার নিরিখে গভীরভাবে অনুধাবন করতে সক্ষম হবেন।
৮. সম্মানিত ইমাম, খতীব, বক্তা ও দাঈগণ কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করার সময় প্রথমে ঐ বিষয়ে কুরআনের বক্তব্য উপস্থাপন করে থাকেন। এ ক্ষেত্রে এ তাফসীরটি সকলের জন্য সহায়ক ভূমিকা রাখবে- ইনশা-আল্লাহ।
৯. কুরআন মাজীদ হেফ্জ করার সাথে সাথে এ তাফসীরটিও পড়লে হাফিজ হওয়ার পাশাপাশি কুরআনের বিধিবিধান সম্পর্কেও জানা যাবে।
১০. এ তাফসীরটি হাদীসের কিতাবের ন্যায় পর্ব ও অধ্যায় আকারে সাজানো হয়েছে। তাই পাঠক এ গ্রন্থের যে অধ্যায়টি পড়বেন সে অধ্যায়ের সাথে যে কোন হাদীস গ্রন্থের সংশ্লিষ্ট অধ্যায়টিও মিলিয়ে পড়লে ঐ বিষয়ে কুরআন ও হাদীসের বক্তব্য পুরোপুরি স্পষ্ট হয়ে যাবে।
কুরআন মাজীদের তাফসীর করার পাঁচটি মূলনীতি রয়েছে। আর তা হলো :
(১) تَفْسِيْرُ الْقُرْاٰنِ بِالْقُرْاٰنِ - কুরআন দিয়ে কুরআনের তাফসীর করা :
কুরআনের এক অংশ অপর অংশের তাফসীর করে। কেননা কুরআনের একটি আয়াত অপর আয়াতের ব্যাখ্যাস্বরূপ। যে বিষয়টি কোন জায়গায় সংক্ষেপে বলা হয়েছে অন্য জায়গায় তা বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
اَللهُ نَزَّلَ اَحْسَنَ الْحَدِيْثِ كِتَابًا مُّتَشَابِهًا
‘‘আল্লাহ সবচেয়ে সুন্দর বাণী কিতাব আকারে নাযিল করেছেন, যা পরস্পর সাদৃশ্যপূর্ণ।’’
(সূরা যুমার- ২৩)
(২) تَفْسِيْرُ الْقُرْاٰنِ بِالسُّنَّةِ - নবী ﷺ এর হাদীসের মাধ্যমে কুরআনের তাফসীর করা :
রাসূল ﷺ ছিলেন কুরআনের ব্যাখ্যাদাতা। কেননা তাঁর উপর কুরআন নাযিল হয়েছে এবং কোন্ আয়াত দ্বারা কী বুঝানো হয়েছে তা আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে জানিয়ে দিয়েছেন। নবী ﷺ তাঁর জীবদ্দশায় কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের ব্যাখ্যা বুঝিয়ে দিতেন। বর্তমানে এর ব্যাখ্যা হলো হাদীস গ্রন্থসমূহ। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
وَاَنْزَلْنَاۤ اِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ اِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُوْنَ
‘‘আমি তোমার প্রতি এ উপদেশবাণী নাযিল করেছি, যাতে মানুষের প্রতি যা নাযিল হয়েছে তুমি তা সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিতে পার এবং তারাও যেন চিমত্মাভাবনা করে।’’ (সূরা নাহল- ৪৪)
(৩) تَفْسِيْرُ الْقُرْاٰنِ بِاَقْوَالِ الصَّحَابَةِ - সাহাবীগণের উক্তির মাধ্যমে কুরআনের তাফসীর করা :
কেননা তারা রাসূল ﷺ এর ছাত্র ছিলেন এবং রাসূল ﷺ এর ব্যাখ্যার আলোকেই তারা কুরআনের ব্যাখ্যা করেছেন।
(৪) تَفْسِيْرُ الْقُرْاٰنِ بِاَقْوَالِ التَّابِعِيْنَ - তাবেঈগণের উক্তির মাধ্যমে কুরআনের তাফসীর করা :
কারণ তারা সাহাবীগণের নিকট থেকে কুরআনের ব্যাখ্যা শিখেছেন। নবী ﷺ বলেছেন,
خَيْرُ النَّاسِ قَرْنِيْ ثُمَّ الَّذِيْنَ يَلُوْنَهُمْ ثُمَّ الَّذِيْنَ يَلُوْنَهُمْ
‘‘মানুষের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম লোক হলো আমার যুগের লোক; অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরাম (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম)। তারপর যারা তাদের পরে আসবে, তারপর তাদের পরে যারা আসবে।’’ অর্থাৎ যথাক্রমে তাবেঈন এবং তাবে তাবেঈনগণ (রাহিমাহুমুল্লাহ)।
(সহীহ বুখারী, হা/২৬৫২; সহীহ মুসলিম, হা/৬৬৩২)
(৫) تَفْسِيْرُ الْقُرْاٰنِ بِمَا تَقْتَضِيْهِ اللُّغَةُ الْعَرَبِيَّةُ - আরবি ভাষার চাহিদার আলোকে কুরআনের তাফসীর করা :
কেননা আল্লাহ তা‘আলা আরবি ভাষায় কুরআন নাযিল করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
اِنَّا جَعَلْنَاهُ قُرْاٰنًا عَرَبِيًّا لَّعَلَّكُمْ تَعْقِلُوْنَ
আমি এটা আরবি ভাষায় কুরআনরূপে (অবতীর্ণ) করেছি, যাতে তোমরা বুঝতে পার।
(সূরা যুখরুফ- ৩)
(১) تَفْسِيْرُ الْقُرْاٰنِ بِالْقُرْاٰنِ - কুরআন দিয়ে কুরআনের তাফসীর করা :
কুরআনের এক অংশ অপর অংশের তাফসীর করে। কেননা কুরআনের একটি আয়াত অপর আয়াতের ব্যাখ্যাস্বরূপ। যে বিষয়টি কোন জায়গায় সংক্ষেপে বলা হয়েছে অন্য জায়গায় তা বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
اَللهُ نَزَّلَ اَحْسَنَ الْحَدِيْثِ كِتَابًا مُّتَشَابِهًا
‘‘আল্লাহ সবচেয়ে সুন্দর বাণী কিতাব আকারে নাযিল করেছেন, যা পরস্পর সাদৃশ্যপূর্ণ।’’
(সূরা যুমার- ২৩)
(২) تَفْسِيْرُ الْقُرْاٰنِ بِالسُّنَّةِ - নবী ﷺ এর হাদীসের মাধ্যমে কুরআনের তাফসীর করা :
রাসূল ﷺ ছিলেন কুরআনের ব্যাখ্যাদাতা। কেননা তাঁর উপর কুরআন নাযিল হয়েছে এবং কোন্ আয়াত দ্বারা কী বুঝানো হয়েছে তা আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে জানিয়ে দিয়েছেন। নবী ﷺ তাঁর জীবদ্দশায় কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের ব্যাখ্যা বুঝিয়ে দিতেন। বর্তমানে এর ব্যাখ্যা হলো হাদীস গ্রন্থসমূহ। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
وَاَنْزَلْنَاۤ اِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ اِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُوْنَ
‘‘আমি তোমার প্রতি এ উপদেশবাণী নাযিল করেছি, যাতে মানুষের প্রতি যা নাযিল হয়েছে তুমি তা সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিতে পার এবং তারাও যেন চিমত্মাভাবনা করে।’’ (সূরা নাহল- ৪৪)
(৩) تَفْسِيْرُ الْقُرْاٰنِ بِاَقْوَالِ الصَّحَابَةِ - সাহাবীগণের উক্তির মাধ্যমে কুরআনের তাফসীর করা :
কেননা তারা রাসূল ﷺ এর ছাত্র ছিলেন এবং রাসূল ﷺ এর ব্যাখ্যার আলোকেই তারা কুরআনের ব্যাখ্যা করেছেন।
(৪) تَفْسِيْرُ الْقُرْاٰنِ بِاَقْوَالِ التَّابِعِيْنَ - তাবেঈগণের উক্তির মাধ্যমে কুরআনের তাফসীর করা :
কারণ তারা সাহাবীগণের নিকট থেকে কুরআনের ব্যাখ্যা শিখেছেন। নবী ﷺ বলেছেন,
خَيْرُ النَّاسِ قَرْنِيْ ثُمَّ الَّذِيْنَ يَلُوْنَهُمْ ثُمَّ الَّذِيْنَ يَلُوْنَهُمْ
‘‘মানুষের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম লোক হলো আমার যুগের লোক; অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরাম (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম)। তারপর যারা তাদের পরে আসবে, তারপর তাদের পরে যারা আসবে।’’ অর্থাৎ যথাক্রমে তাবেঈন এবং তাবে তাবেঈনগণ (রাহিমাহুমুল্লাহ)।
(সহীহ বুখারী, হা/২৬৫২; সহীহ মুসলিম, হা/৬৬৩২)
(৫) تَفْسِيْرُ الْقُرْاٰنِ بِمَا تَقْتَضِيْهِ اللُّغَةُ الْعَرَبِيَّةُ - আরবি ভাষার চাহিদার আলোকে কুরআনের তাফসীর করা :
কেননা আল্লাহ তা‘আলা আরবি ভাষায় কুরআন নাযিল করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
اِنَّا جَعَلْنَاهُ قُرْاٰنًا عَرَبِيًّا لَّعَلَّكُمْ تَعْقِلُوْنَ
আমি এটা আরবি ভাষায় কুরআনরূপে (অবতীর্ণ) করেছি, যাতে তোমরা বুঝতে পার।
(সূরা যুখরুফ- ৩)
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ‐ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى رَسُوْلِهٖ مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِهٖ وَصَحْبِهٖ اَجْمَعِيْنَ
‘তাফসীরুল কুরআন বিল কুরআন’ গ্রন্থটি প্রকাশ করতে পেরে মহান আল্লাহর অগণিত শুকরিয়া আদায় করছি। অসংখ্য দরূদ ও সালাম পেশ করছি বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবায়ে কেরাম (রিদ্বওয়ানুল্লাহি ‘আলাইহিম আজমাঈন) এর উপর।
আল্লাহ তা‘আলা নিজ ক্ষমতায় এ বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করেছেন। তাঁর অসংখ্য সৃষ্টির মধ্যে মানবজাতিকে আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে নির্বাচিত করেছেন এবং তাদেরকে জানার, বুঝার এবং ভাল-মন্দের মধ্যে পার্থক্য করার ক্ষমতাও দিয়েছেন। মানুষকে খলিফা হিসেবে নিযুক্ত করার সময় আল্লাহ তা‘আলা আদম (আঃ) এর সকল বংশধর থেকে তাওহীদের সাক্ষ্য নিয়েছেন এবং জানিয়ে দিয়েছেন যে, একমাত্র তিনিই সকলের রব। আমাদেরকে কেবল তারই দাসত্ব করতে হবে। অন্য কারো দাসত্ব করার জন্য তিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেননি।
আদম ও হাওয়া (আঃ) কে সৃষ্টি করার পর আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে জান্নাতে বসবাস করতে দেন। পরে তাদেরকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেন। পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেয়ার সময় আল্লাহ তা‘আলা জানিয়ে দেন যে, একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তোমাদেরকে পৃথিবীতে অবস্থান করতে হবে। এখানে বসবাস করার জন্য যা কিছু লাগবে সবই তোমাদেরকে দেয়া হবে। এ পৃথিবী তোমাদের জন্য পরীক্ষাকেন্দ্র। পরীক্ষার সময় শেষ হলে তোমরা আবার আমার কাছে ফিরে আসবে। এ পৃথিবীতে আমার পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট হেদায়াতের বাণী আসবে। যারা এ হেদায়াতের অনুসরণ করবে তারা তাদের স্থায়ী ঠিকানা জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যারা আমার দেয়া হেদায়াতের অনুসরণ করবে না, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম। সেখানে তারা চিরকাল শাস্তি ভোগ করবে।
প্রাথমিক যুগের মানুষ আল্লাহপ্রদত্ত হেদায়াতের উপরই প্রতিষ্ঠিত ছিল। তাদের সকলের ধর্ম ছিল ইসলাম। তারা সবাই তাওহীদের অনুসারী ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে মানুষ এ সঠিক দ্বীন থেকে সরে গেছে। তারা বিভিন্ন সত্তাকে আল্লাহর সাথে শরীক করেছে এবং বিভিন্ন মতবাদ ও ধর্ম তৈরি করেছে। পথভোলা এই মানুষগুলোকে বাধ্য করে দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখার পদ্ধতি আল্লাহ গ্রহণ করেননি। কেননা তিনি মানুষকে ভালো-মন্দ দু’টিই করার স্বাধীনতা দিয়েছেন এবং পরীক্ষাস্বরূপ এ দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। আবার মানবজাতির কাছ থেকে সংশোধনের সুযোগ কেঁড়ে নিয়ে মুহূর্তেই তাদেরকে ধ্বংস করার নীতিও তিনি গ্রহণ করেননি। বরং তিনি মানবজাতির মধ্য থেকে কিছু মানুষকে নবী ও রাসূল হিসেবে নির্বাচিত করেছেন এবং তাদের নিকট হেদায়াতের বাণী পাঠিয়েছেন। এসব নবী-রাসূল এবং তাদের অনুসারীরা সেই মূল তাওহীদের দিকে মানবজাতিকে আহবান করেছেন। যারা নবীদের কথা মেনেছে তারা মুক্তি পেয়েছে। আর যারা মানেনি তারা পর্যায়ক্রমে ধ্বংস হয়েছে।
শেষ পর্যায়ে আল্লাহ তা‘আলা আরব দেশে মুহাম্মাদ ﷺ কে নবী হিসেবে পাঠালেন। পূর্বের নবীগণকে তিনি যে দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছিলেন, মুহাম্মাদ ﷺ এর উপরও সেই একই দায়িত্ব অর্পণ করেন। সর্বস্তরের মানুষকে তিনি আল্লাহর দ্বীনের দিকে আহবান জানান। সবাইকে তাওহীদের পথ গ্রহণের দাওয়াত দেন। সবার কাছে আল্লাহর হেদায়াত পৌঁছে দেয়া এবং এ হেদায়াত গ্রহণকারীদেরকে এমন একটি উম্মতে পরিণত করা ছিল তাঁর কাজ, যারা একদিকে আল্লাহর হেদায়াতের উপর নিজেদের জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করবে এবং অন্যদিকে সমগ্র দুনিয়ার সংশোধন ও সংস্কার সাধনের জন্য প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম চালাবে। এ দাওয়াত ও হেদায়াতের কিতাবটি হচ্ছে আল-কুরআন। মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর এ কিতাবটি অবতীর্ণ হয়েছে। কিয়ামত পর্যন্ত এ কিতাবটি মানবজাতির জন্য চূড়ান্ত সনদ হিসেবে বহাল থাকবে।
কুরআনই হেদায়াত লাভের মূল উৎস :
কুরআনের হেদায়াতই হচ্ছে আসল হেদায়াত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
تَرَكْتُ فِيْكُمْ اَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوْا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا كِتَابَ اللهِ وَسُنَّةَ نَبِيِّهٖ
‘‘আমি তোমাদের কাছে দু’টি জিনিস রেখে গেলাম। যতদিন পর্যন্ত তোমরা এ দু’টিকে আঁকড়ে ধরবে ততদিন পর্যন্ত তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। তা হলো, আল্লাহর কিতাব এবং তাঁর নবীর সুন্নাত।’’ [. মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৫৯৫; মিশকাত, হা/১৮৬; মুসনাদুল বাযযার, হা/৮৯৯৩; সুনানে দার কুতনী, হা/৪৬০৬।]
আবু শুরাইহ (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের মাঝে উপস্থিত হলেন এবং বললেন, তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ করো, তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ করো। তোমরা কি এ সাক্ষ্য দাও না যে, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল? আমরা বললাম, হ্যাঁ এরপর রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন,
اِنَّ هٰذَا الْقُرْاٰنَ سَبَبٌ طَرْفُهٗ بِيَدِ اللهِ وَطَرْفُهٗ بِاَيْدِيْكُمْ فَتَمَسَّكُوْا بِهٖ فَاِنَّكُمْ لَنْ تَضِلُّوْا وَلَنْ تُهْلِكُوْا بَعْدَهٗ اَبَدًا
‘‘এ কুরআন হলো একটি রশি। এর এক মাথা হচ্ছে আল্লাহর হাতে, আর অপর মাথা হচ্ছে তোমাদের হাতে। সুতরাং তোমরা এটাকে আঁকড়ে ধরো। তাহলে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না এবং ধ্বংসও হবে না।’’ [. সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/১২২।]
কুরআনের মধ্যে রয়েছে পূর্ববর্তীদের ইতিহাস, রয়েছে ভবিষ্যতের সংবাদ, এটা ফায়সালাদানকারী। এটাকে বাদ দিয়ে যে ব্যক্তি অন্য কোথাও হেদায়াত অনুসন্ধান করবে আল্লাহ তাকে পথভ্রষ্ট করে দেবেন। এটা আল্লাহর এক মজবুত রশি এবং জ্ঞানময় উপদেশ। আর এটাই সিরাতে মুস্তাকীম বা সোজা পথ। এর আশ্চর্যকারিতা কখনো শেষ হয় না। জ্ঞানার্জনকারীরা এর থেকে কখনো বিমুখ হয় না। এটা বার বার পাঠ করলেও বিরক্তি আসে না। জিনেরা এটা শোনার পর একথা না বলে পারেনি যে, ‘‘আমরা এমন এক আশ্চর্যজনক কুরআন শুনেছি, যা সঠিক পথের সন্ধান দেয়। ফলে আমরা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি।’’ [. সূরা জিন- ১, ২।] যে ব্যক্তি কুরআন দিয়ে কথা বলবে সে সত্য বলবে। যে কুরআনের উপর আমল করবে সে এর প্রতিদান পাবে। যে এর মাধ্যমে বিচার করবে সে ইনসাফ করবে। যে এটাকে আঁকড়ে ধরবে সে সঠিক পথের সন্ধান পাবে। [. মুসনাদুদ দারেমী, হা/৩৩৭৪; মুসনাদুল বাযযার, হা/৮৩৬; তিরমিযী, হা/২৯০৬।]
কুরআনের হেদায়াত পেতে হলে যা করণীয় :
একজন মানুষ বড় হওয়ার সাথে সাথে তার পরিবার ও সমাজের রীতিনীতি তার উপর প্রভাব বিস্তার করে। সে তার মাতাপিতা, পরিবার ও সমাজকে যে ধর্ম, দল ও মাযহাবের অনুসারী পায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে সে তারই অনুসরণ করে। যার ফলে বিশেষ কোন দল বা মতের চিন্তা-চেতনার আলোকে সে তার জীবন গড়ে তুলে। এজন্য চিন্তা ও কর্মের দিক থেকে যে মানুষ যে অবস্থানে রয়েছে সে অবস্থানে অনড় থেকেই যদি সে কুরআন পড়ে, তবে কুরআনের যেসব বিষয় তার বিশ্বাস ও কর্মের সাথে মিলে না, সেগুলো সে মেনে নিতে চায় না। পরিশেষে সে কুরআনের হেদায়াত থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়।
এ জন্য কুরআনকে প্রকৃত অর্থে বুঝতে হলে এবং এ থেকে হেদায়াত পেতে হলে যখনই কেউ কুরআন অধ্যয়ন শুরু করবে, তখন তাকে খোলা মন নিয়ে কুরআন অধ্যয়ন করতে হবে। কুরআন যে বিষয়ে যে রকম আকীদা পেশ করে সে রকম আকীদা নিজের মধ্যে গড়ে তুলতে হবে। কুরআন যে কাজের নির্দেশ দেয় তা পালন করতে হবে; আর যে কাজ করতে নিষেধ করে তা থেকে বিরত থাকতে হবে। এমনটি করতে পারলে যে কেউ কুরআন থেকে হেদায়াত পাবে এবং কুরআনের আলোকে তার জীবন গড়ে ওঠবে। কিন্তু যারা নিজেদের চিন্তা ও কর্মকে পরিবর্তন করে কুরআনের আলোকে গড়ে তুলতে চায় না; বরং কুরআনকে নিজেদের চিন্তা ও কর্মের আলোকে পরিবর্তন করতে চায়, তারা কখনো কুরআনের হেদায়াত পায় না। কুরআন পড়া সত্ত্বেও তারা গোমরাহীর দিকে এগিয়ে যায়।
কুরআনের মূল লক্ষ্য :
কুরআনের চূড়ান্ত লক্ষ্য ও বক্তব্য হচ্ছে, মানুষকে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মনীতি অবলম্বনের প্রতি আহবান জানানো। আল্লাহর হেদায়াতকে স্পষ্টভাবে মানবজাতির সামনে তুলে ধরা। কিসের মধ্যে মানুষের কল্যাণ ও সফলতা এবং কিসের মধ্যে তাদের অকল্যাণ ও ব্যর্থতা, সে বিষয়গুলো জানিয়ে দেয়াই হচ্ছে কুরআনের মূল লক্ষ্য।
কুরআনের আলোচ্য বিষয় :
কুরআনের মূল আলোচ্য বিষয় হলো মানুষ। মানুষ সৃষ্টির প্রক্রিয়া, পৃথিবী ও আকাশের গঠনাকৃতি, বিশ্বজগতের নিদর্শনসমূহ এবং অতীতের বিভিন্ন জাতির ঐতিহাসিক ঘটনাবলি কুরআনে আলোচনা করা হয়েছে। কুরআনে বিভিন্ন জাতির আকীদা-বিশ্বাস ও কর্মকান্ডের সমালোচনা করা হয়েছে। প্রকৃত সত্য সম্পর্কে মানুষের ভুল ধারণা দূর করা এবং যথার্থ সত্যটি মানুষের মনের মধ্যে গেঁথে দেয়াই এর উদ্দেশ্য। এ কারণেই এতে প্রতিটি বিষয়ের আলোচনা কেবলমাত্র ততটুকুই করা হয়েছে যতটুকু আলোচনা তার মূল লক্ষ্যের জন্য প্রয়োজন। নবীদের জীবনী বর্ণনার ক্ষেত্রে মূল শিক্ষণীয় অংশটুকুই কুরআন বর্ণনা করেছে। ইবাদাত সংক্রান্তত বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে এর মূল শিক্ষা কী এবং একেকটি ইবাদাত মানুষের মধ্যে কোন্ ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে চায়- কুরআন সেদিকে ইঙ্গিত করেছে। সেই সাথে কিছু কিছু বিধানও বর্ণনা করা হয়েছে। তবে ইবাদাতের বিস্তারিত বিধান নবী ﷺ এর বাস্তব শিক্ষার মাধ্যমে জানানো হয়েছে, যা হাদীস গ্রন্থগুলোতে মওজুদ রয়েছে।
সাধারণ বই ও কুরআনের মধ্যে পার্থক্য :
আমরা সাধারণত যেসব বই-পুস্তক পড়ে অভ্যস্ত এসব বই এক বা একাধিক বিষয় নিয়ে লেখা হয়ে থাকে। আবার ঐ বিষয়টি বিভিন্ন পর্ব ও অধ্যায়ে সাজানো থাকে এবং বইয়ের শুরুতে একটি বিষয়সূচী থাকে। ঐ সূচী দেখেই পাঠক তার কাঙ্ক্ষিত অধ্যায়টি পড়ে নিতে পারে। কিন্তু কুরআন মাজীদ এর ব্যতিক্রম। এর শুরুতে কোন বিষয়সূচী নেই। এর বক্তব্যসমূহ বিভিন্ন সূরায় বিভক্ত। এ সূরাগুলোর সূচীই কুরআনের শুরুতে রয়েছে। বিষয়কেন্দ্রিক কোন সূচী না থাকার কারণ হলো- কুরআন একসাথে কিতাব আকারে নাযিল হয়নি। এটি নাযিল হয়েছে ভাষণ আকারে। পরবর্তীতে এ ভাষণগুলো এক বা একাধিক ভাষণের সমন্বয়ে ১১৪টি সূরায় সন্নিবেশিত করা হয়েছে। যার ফলে একটি বিষয় সংক্রান্ত আলোচনা বিভিন্ন সূরায় কোথাও সংক্ষেপে কোথাও বিস্তারিত আকারে রয়েছে।
এজন্য যারা কুরআন অধ্যয়নের জন্য বেশি সময় দিতে পারেন না বা যারা আরবি ভাষা বুঝেন না তাদের জন্য বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে কুরআনের বক্তব্য জানা কষ্টকর হয়ে যায়। একটি বিষয় সম্পর্কিত সকল আয়াত একত্র করে ঐ বিষয়ে পূর্ণ ধারণা লাভ করা সম্ভব হয় না।
কেন এই তাফসীর :
আল্লাহ তা‘আলা মানবজাতির হেদায়াতের জন্য মহাগ্রন্থ আল-কুরআনুল কারীম নাযিল করেছেন। এজন্য তিনি এ কিতাবে জীবনের সকল বিভাগের প্রতিটি মৌলিক বিষয় সম্পর্কে সর্বোত্তম দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন। কুরআনের বক্তব্য বুঝার সুবিধার্থে এমন একটি গ্রন্থের অতীব প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছিলাম, যে গ্রন্থে কুরআনে বর্ণিত জ্ঞানসমূহ বিষয় আকারে সাজানো থাকবে। এতে করে সর্বস্তরের জনগণ বিভিন্ন বিষয়ে কুরআনের বিধান কী- তা সহজে জানতে পারবে। মহান আল্লাহর অশেষ মেহেরবানী যে, তিনি আমাকে এ বিষয়ে কিছু কাজ করার তাওফীক দান করেছেন। দীর্ঘদিন যাবৎ সাধনা ও গবেষণা করার পর কুরআনের উপর একটি বিষয়ভিত্তিক গ্রন্থ জনগণের হাতে তুলে দিতে পেরেছি, এজন্য মালিকের নিকট অসংখ্য শুকরিয়া আদায় করছি। আর দু‘আ করছি, তিনি যেন এ গ্রন্থের মাধ্যমে বিশ্ব-মানবতাকে উপকৃত করেন এবং কুরআনের জ্ঞান লাভ করে ইসলামী জীবন গড়ার তাওফীক দান করেন এবং এটাকে সকলের নাজাতের ওসীলা বানিয়ে দেন- আমীন
যেভাবে কাজটি করেছি :
ছাত্রজীবনে আমি নিজের জন্য একটি স্থায়ী রুটিন করে নিয়েছিলাম যে, প্রতিদিন দিনের কাজ শুরু করতাম কুরআনের তাফসীর পড়ার মাধ্যমে। নিয়মিত কুরআন পড়ার সময় একটি বিষয় আমাকে খুবই প্রভাবিত করত। আর তা হলো, যখন একটি সূরা পড়তে বসি তখন কোন বিষয় সম্পর্কে আলোচনা আসে, পরে আবার অন্য প্রসঙ্গ চলে আসে। আরেকটু সামনে বাড়লে বা অন্য সূরায় গেলে দেখা যায় পূর্বের বিষয়টির আলোচনা আবার এসেছে। তখন থেকেই একেকটি বিষয় সম্পর্কে আলোচনা যেখানে পেতাম তা নোট করতাম। তারপর যখন এ বিষয়গুলো কিতাব আকারে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিলাম, তখন একই বিষয় সংক্রান্ত আয়াতগুলো সামনে রেখে এসব আয়াত থেকে যেসব পয়েন্ট বের হয় তা লিখে পুরো বিষয়টিকে ধারাবাহিকভাবে সাজাতাম। এভাবে প্রতিটি বিষয়কে অধ্যায় আকারে সাজিয়ে গ্রন্থাকারে রূপদান করি। এ গ্রন্থটির কাজ সমাপ্ত করতে ২০০০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৫ বছর সময় লেগেছে।
যাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করলেই নয় :
সকল প্রশংসা মূলত আল্লাহরই। তিনি যাকে দিয়ে যে কাজ করানোর ইচ্ছা করেন তাকে দিয়ে সে কাজ করিয়ে নেন। আল্লাহ আমাকে দিয়ে এ কাজ করিয়েছেন, এজন্য আমি তাঁর শুকরিয়া আদায় করছি।
আল্লাহ তা‘আলার শুকরিয়া আদায়ের পর আমি যাদের কাছে কৃতজ্ঞ তাদের মধ্যে রয়েছেন-
প্রথমত আমার পিতামাতা। তারা আমাকে দ্বীনের ইলিম শিক্ষা করার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
মাতাপিতার পর আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার শ্রদ্ধেয় উস্তাজ আল্লামা ইদ্রীস আহমদ সেবনগরী সাহেবের। তিনি একজন বিখ্যাত আলেমে দ্বীন ছিলেন। শেষ বয়সে চাকরি থেকে অবসর নিয়ে নিজ বাড়িতে অবস্থান করেই ইলিম শিক্ষাদান অব্যাহত রাখেন। ১৯৯৩ সালে কানাইঘাট মনসূরিয়া কামিল মাদরাসায় ভর্তি হওয়ার পর থেকে প্রায় দশ বছর আমি তাঁর কাছে ইলমে দ্বীন শিক্ষা করার সুযোগ লাভ করি। পার্থিব কোন বিনিময় ছাড়াই অতি গুরুত্বের সাথে তিনি আমাকে পড়াতেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে এর উত্তম বিনিময় দান করুন। আমীন
এরপর আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার সহধর্মিণী মাহমুদা খাতুনের। এ গ্রন্থের পান্ডলিপি তৈরি এবং প্রুফ দেখার কাজে তিনি যথেষ্ট শ্রম দিয়েছেন। তাছাড়া এ গ্রন্থের বিভিন্ন কাজে আমার অনেক ছাত্র পরিশ্রম করেছেন। আমি তাদের সকলের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
আমি আরো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার দ্বীনি ভাই মোহাম্মদ ইমাম হোসাইন কামরুল সাহেবের। তিনি অনেক সুপরামর্শ ও উপায়-উপকরণ দিয়ে আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন। যার ফলে আমি প্রশান্ত মনে এ গ্রন্থটির কাজ সমাপ্ত করতে পেরেছি। আল্লাহ সকলকে জাযায়ে খায়ের দান করুন। আমীন
কুরআনের শিক্ষাকে সহজ ও নির্ভুলভাবে তুলে ধরার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা হয়েছে। গ্রন্থের পান্ডলিপি প্রস্তুত হয়ে যাওয়ার পরও দীর্ঘদিন যাবৎ এর পরিমার্জন ও সংশোধনীর কাজ করা হয়েছে। তারপরও কোথাও কোন সংশোধনীর প্রয়োজন মনে হলে বা কোন পরামর্শ থাকলে তা জানানোর অনুরোধ রইল।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে কুরআন বুঝার এবং কুরআন অনুযায়ী জীবন গড়ার তাওফীক দান করুন- যাতে আমরা দুনিয়াতে শান্তি এবং পরকালে জান্নাত লাভ করতে পারি। আমীন
দু‘আপ্রার্থী
শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
তারিখ, ঢাকা।
১৮ই মুহররম- ১৪৩৬ হিজরী
১২ই নভেম্বর- ২০১৪ ইং
‘তাফসীরুল কুরআন বিল কুরআন’ গ্রন্থটি প্রকাশ করতে পেরে মহান আল্লাহর অগণিত শুকরিয়া আদায় করছি। অসংখ্য দরূদ ও সালাম পেশ করছি বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবায়ে কেরাম (রিদ্বওয়ানুল্লাহি ‘আলাইহিম আজমাঈন) এর উপর।
আল্লাহ তা‘আলা নিজ ক্ষমতায় এ বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করেছেন। তাঁর অসংখ্য সৃষ্টির মধ্যে মানবজাতিকে আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে নির্বাচিত করেছেন এবং তাদেরকে জানার, বুঝার এবং ভাল-মন্দের মধ্যে পার্থক্য করার ক্ষমতাও দিয়েছেন। মানুষকে খলিফা হিসেবে নিযুক্ত করার সময় আল্লাহ তা‘আলা আদম (আঃ) এর সকল বংশধর থেকে তাওহীদের সাক্ষ্য নিয়েছেন এবং জানিয়ে দিয়েছেন যে, একমাত্র তিনিই সকলের রব। আমাদেরকে কেবল তারই দাসত্ব করতে হবে। অন্য কারো দাসত্ব করার জন্য তিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেননি।
আদম ও হাওয়া (আঃ) কে সৃষ্টি করার পর আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে জান্নাতে বসবাস করতে দেন। পরে তাদেরকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেন। পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেয়ার সময় আল্লাহ তা‘আলা জানিয়ে দেন যে, একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তোমাদেরকে পৃথিবীতে অবস্থান করতে হবে। এখানে বসবাস করার জন্য যা কিছু লাগবে সবই তোমাদেরকে দেয়া হবে। এ পৃথিবী তোমাদের জন্য পরীক্ষাকেন্দ্র। পরীক্ষার সময় শেষ হলে তোমরা আবার আমার কাছে ফিরে আসবে। এ পৃথিবীতে আমার পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট হেদায়াতের বাণী আসবে। যারা এ হেদায়াতের অনুসরণ করবে তারা তাদের স্থায়ী ঠিকানা জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যারা আমার দেয়া হেদায়াতের অনুসরণ করবে না, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম। সেখানে তারা চিরকাল শাস্তি ভোগ করবে।
প্রাথমিক যুগের মানুষ আল্লাহপ্রদত্ত হেদায়াতের উপরই প্রতিষ্ঠিত ছিল। তাদের সকলের ধর্ম ছিল ইসলাম। তারা সবাই তাওহীদের অনুসারী ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে মানুষ এ সঠিক দ্বীন থেকে সরে গেছে। তারা বিভিন্ন সত্তাকে আল্লাহর সাথে শরীক করেছে এবং বিভিন্ন মতবাদ ও ধর্ম তৈরি করেছে। পথভোলা এই মানুষগুলোকে বাধ্য করে দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখার পদ্ধতি আল্লাহ গ্রহণ করেননি। কেননা তিনি মানুষকে ভালো-মন্দ দু’টিই করার স্বাধীনতা দিয়েছেন এবং পরীক্ষাস্বরূপ এ দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। আবার মানবজাতির কাছ থেকে সংশোধনের সুযোগ কেঁড়ে নিয়ে মুহূর্তেই তাদেরকে ধ্বংস করার নীতিও তিনি গ্রহণ করেননি। বরং তিনি মানবজাতির মধ্য থেকে কিছু মানুষকে নবী ও রাসূল হিসেবে নির্বাচিত করেছেন এবং তাদের নিকট হেদায়াতের বাণী পাঠিয়েছেন। এসব নবী-রাসূল এবং তাদের অনুসারীরা সেই মূল তাওহীদের দিকে মানবজাতিকে আহবান করেছেন। যারা নবীদের কথা মেনেছে তারা মুক্তি পেয়েছে। আর যারা মানেনি তারা পর্যায়ক্রমে ধ্বংস হয়েছে।
শেষ পর্যায়ে আল্লাহ তা‘আলা আরব দেশে মুহাম্মাদ ﷺ কে নবী হিসেবে পাঠালেন। পূর্বের নবীগণকে তিনি যে দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছিলেন, মুহাম্মাদ ﷺ এর উপরও সেই একই দায়িত্ব অর্পণ করেন। সর্বস্তরের মানুষকে তিনি আল্লাহর দ্বীনের দিকে আহবান জানান। সবাইকে তাওহীদের পথ গ্রহণের দাওয়াত দেন। সবার কাছে আল্লাহর হেদায়াত পৌঁছে দেয়া এবং এ হেদায়াত গ্রহণকারীদেরকে এমন একটি উম্মতে পরিণত করা ছিল তাঁর কাজ, যারা একদিকে আল্লাহর হেদায়াতের উপর নিজেদের জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করবে এবং অন্যদিকে সমগ্র দুনিয়ার সংশোধন ও সংস্কার সাধনের জন্য প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম চালাবে। এ দাওয়াত ও হেদায়াতের কিতাবটি হচ্ছে আল-কুরআন। মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর এ কিতাবটি অবতীর্ণ হয়েছে। কিয়ামত পর্যন্ত এ কিতাবটি মানবজাতির জন্য চূড়ান্ত সনদ হিসেবে বহাল থাকবে।
কুরআনই হেদায়াত লাভের মূল উৎস :
কুরআনের হেদায়াতই হচ্ছে আসল হেদায়াত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
تَرَكْتُ فِيْكُمْ اَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوْا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا كِتَابَ اللهِ وَسُنَّةَ نَبِيِّهٖ
‘‘আমি তোমাদের কাছে দু’টি জিনিস রেখে গেলাম। যতদিন পর্যন্ত তোমরা এ দু’টিকে আঁকড়ে ধরবে ততদিন পর্যন্ত তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। তা হলো, আল্লাহর কিতাব এবং তাঁর নবীর সুন্নাত।’’ [. মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৫৯৫; মিশকাত, হা/১৮৬; মুসনাদুল বাযযার, হা/৮৯৯৩; সুনানে দার কুতনী, হা/৪৬০৬।]
আবু শুরাইহ (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের মাঝে উপস্থিত হলেন এবং বললেন, তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ করো, তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ করো। তোমরা কি এ সাক্ষ্য দাও না যে, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল? আমরা বললাম, হ্যাঁ এরপর রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন,
اِنَّ هٰذَا الْقُرْاٰنَ سَبَبٌ طَرْفُهٗ بِيَدِ اللهِ وَطَرْفُهٗ بِاَيْدِيْكُمْ فَتَمَسَّكُوْا بِهٖ فَاِنَّكُمْ لَنْ تَضِلُّوْا وَلَنْ تُهْلِكُوْا بَعْدَهٗ اَبَدًا
‘‘এ কুরআন হলো একটি রশি। এর এক মাথা হচ্ছে আল্লাহর হাতে, আর অপর মাথা হচ্ছে তোমাদের হাতে। সুতরাং তোমরা এটাকে আঁকড়ে ধরো। তাহলে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না এবং ধ্বংসও হবে না।’’ [. সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/১২২।]
কুরআনের মধ্যে রয়েছে পূর্ববর্তীদের ইতিহাস, রয়েছে ভবিষ্যতের সংবাদ, এটা ফায়সালাদানকারী। এটাকে বাদ দিয়ে যে ব্যক্তি অন্য কোথাও হেদায়াত অনুসন্ধান করবে আল্লাহ তাকে পথভ্রষ্ট করে দেবেন। এটা আল্লাহর এক মজবুত রশি এবং জ্ঞানময় উপদেশ। আর এটাই সিরাতে মুস্তাকীম বা সোজা পথ। এর আশ্চর্যকারিতা কখনো শেষ হয় না। জ্ঞানার্জনকারীরা এর থেকে কখনো বিমুখ হয় না। এটা বার বার পাঠ করলেও বিরক্তি আসে না। জিনেরা এটা শোনার পর একথা না বলে পারেনি যে, ‘‘আমরা এমন এক আশ্চর্যজনক কুরআন শুনেছি, যা সঠিক পথের সন্ধান দেয়। ফলে আমরা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি।’’ [. সূরা জিন- ১, ২।] যে ব্যক্তি কুরআন দিয়ে কথা বলবে সে সত্য বলবে। যে কুরআনের উপর আমল করবে সে এর প্রতিদান পাবে। যে এর মাধ্যমে বিচার করবে সে ইনসাফ করবে। যে এটাকে আঁকড়ে ধরবে সে সঠিক পথের সন্ধান পাবে। [. মুসনাদুদ দারেমী, হা/৩৩৭৪; মুসনাদুল বাযযার, হা/৮৩৬; তিরমিযী, হা/২৯০৬।]
কুরআনের হেদায়াত পেতে হলে যা করণীয় :
একজন মানুষ বড় হওয়ার সাথে সাথে তার পরিবার ও সমাজের রীতিনীতি তার উপর প্রভাব বিস্তার করে। সে তার মাতাপিতা, পরিবার ও সমাজকে যে ধর্ম, দল ও মাযহাবের অনুসারী পায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে সে তারই অনুসরণ করে। যার ফলে বিশেষ কোন দল বা মতের চিন্তা-চেতনার আলোকে সে তার জীবন গড়ে তুলে। এজন্য চিন্তা ও কর্মের দিক থেকে যে মানুষ যে অবস্থানে রয়েছে সে অবস্থানে অনড় থেকেই যদি সে কুরআন পড়ে, তবে কুরআনের যেসব বিষয় তার বিশ্বাস ও কর্মের সাথে মিলে না, সেগুলো সে মেনে নিতে চায় না। পরিশেষে সে কুরআনের হেদায়াত থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়।
এ জন্য কুরআনকে প্রকৃত অর্থে বুঝতে হলে এবং এ থেকে হেদায়াত পেতে হলে যখনই কেউ কুরআন অধ্যয়ন শুরু করবে, তখন তাকে খোলা মন নিয়ে কুরআন অধ্যয়ন করতে হবে। কুরআন যে বিষয়ে যে রকম আকীদা পেশ করে সে রকম আকীদা নিজের মধ্যে গড়ে তুলতে হবে। কুরআন যে কাজের নির্দেশ দেয় তা পালন করতে হবে; আর যে কাজ করতে নিষেধ করে তা থেকে বিরত থাকতে হবে। এমনটি করতে পারলে যে কেউ কুরআন থেকে হেদায়াত পাবে এবং কুরআনের আলোকে তার জীবন গড়ে ওঠবে। কিন্তু যারা নিজেদের চিন্তা ও কর্মকে পরিবর্তন করে কুরআনের আলোকে গড়ে তুলতে চায় না; বরং কুরআনকে নিজেদের চিন্তা ও কর্মের আলোকে পরিবর্তন করতে চায়, তারা কখনো কুরআনের হেদায়াত পায় না। কুরআন পড়া সত্ত্বেও তারা গোমরাহীর দিকে এগিয়ে যায়।
কুরআনের মূল লক্ষ্য :
কুরআনের চূড়ান্ত লক্ষ্য ও বক্তব্য হচ্ছে, মানুষকে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মনীতি অবলম্বনের প্রতি আহবান জানানো। আল্লাহর হেদায়াতকে স্পষ্টভাবে মানবজাতির সামনে তুলে ধরা। কিসের মধ্যে মানুষের কল্যাণ ও সফলতা এবং কিসের মধ্যে তাদের অকল্যাণ ও ব্যর্থতা, সে বিষয়গুলো জানিয়ে দেয়াই হচ্ছে কুরআনের মূল লক্ষ্য।
কুরআনের আলোচ্য বিষয় :
কুরআনের মূল আলোচ্য বিষয় হলো মানুষ। মানুষ সৃষ্টির প্রক্রিয়া, পৃথিবী ও আকাশের গঠনাকৃতি, বিশ্বজগতের নিদর্শনসমূহ এবং অতীতের বিভিন্ন জাতির ঐতিহাসিক ঘটনাবলি কুরআনে আলোচনা করা হয়েছে। কুরআনে বিভিন্ন জাতির আকীদা-বিশ্বাস ও কর্মকান্ডের সমালোচনা করা হয়েছে। প্রকৃত সত্য সম্পর্কে মানুষের ভুল ধারণা দূর করা এবং যথার্থ সত্যটি মানুষের মনের মধ্যে গেঁথে দেয়াই এর উদ্দেশ্য। এ কারণেই এতে প্রতিটি বিষয়ের আলোচনা কেবলমাত্র ততটুকুই করা হয়েছে যতটুকু আলোচনা তার মূল লক্ষ্যের জন্য প্রয়োজন। নবীদের জীবনী বর্ণনার ক্ষেত্রে মূল শিক্ষণীয় অংশটুকুই কুরআন বর্ণনা করেছে। ইবাদাত সংক্রান্তত বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে এর মূল শিক্ষা কী এবং একেকটি ইবাদাত মানুষের মধ্যে কোন্ ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে চায়- কুরআন সেদিকে ইঙ্গিত করেছে। সেই সাথে কিছু কিছু বিধানও বর্ণনা করা হয়েছে। তবে ইবাদাতের বিস্তারিত বিধান নবী ﷺ এর বাস্তব শিক্ষার মাধ্যমে জানানো হয়েছে, যা হাদীস গ্রন্থগুলোতে মওজুদ রয়েছে।
সাধারণ বই ও কুরআনের মধ্যে পার্থক্য :
আমরা সাধারণত যেসব বই-পুস্তক পড়ে অভ্যস্ত এসব বই এক বা একাধিক বিষয় নিয়ে লেখা হয়ে থাকে। আবার ঐ বিষয়টি বিভিন্ন পর্ব ও অধ্যায়ে সাজানো থাকে এবং বইয়ের শুরুতে একটি বিষয়সূচী থাকে। ঐ সূচী দেখেই পাঠক তার কাঙ্ক্ষিত অধ্যায়টি পড়ে নিতে পারে। কিন্তু কুরআন মাজীদ এর ব্যতিক্রম। এর শুরুতে কোন বিষয়সূচী নেই। এর বক্তব্যসমূহ বিভিন্ন সূরায় বিভক্ত। এ সূরাগুলোর সূচীই কুরআনের শুরুতে রয়েছে। বিষয়কেন্দ্রিক কোন সূচী না থাকার কারণ হলো- কুরআন একসাথে কিতাব আকারে নাযিল হয়নি। এটি নাযিল হয়েছে ভাষণ আকারে। পরবর্তীতে এ ভাষণগুলো এক বা একাধিক ভাষণের সমন্বয়ে ১১৪টি সূরায় সন্নিবেশিত করা হয়েছে। যার ফলে একটি বিষয় সংক্রান্ত আলোচনা বিভিন্ন সূরায় কোথাও সংক্ষেপে কোথাও বিস্তারিত আকারে রয়েছে।
এজন্য যারা কুরআন অধ্যয়নের জন্য বেশি সময় দিতে পারেন না বা যারা আরবি ভাষা বুঝেন না তাদের জন্য বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে কুরআনের বক্তব্য জানা কষ্টকর হয়ে যায়। একটি বিষয় সম্পর্কিত সকল আয়াত একত্র করে ঐ বিষয়ে পূর্ণ ধারণা লাভ করা সম্ভব হয় না।
কেন এই তাফসীর :
আল্লাহ তা‘আলা মানবজাতির হেদায়াতের জন্য মহাগ্রন্থ আল-কুরআনুল কারীম নাযিল করেছেন। এজন্য তিনি এ কিতাবে জীবনের সকল বিভাগের প্রতিটি মৌলিক বিষয় সম্পর্কে সর্বোত্তম দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন। কুরআনের বক্তব্য বুঝার সুবিধার্থে এমন একটি গ্রন্থের অতীব প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছিলাম, যে গ্রন্থে কুরআনে বর্ণিত জ্ঞানসমূহ বিষয় আকারে সাজানো থাকবে। এতে করে সর্বস্তরের জনগণ বিভিন্ন বিষয়ে কুরআনের বিধান কী- তা সহজে জানতে পারবে। মহান আল্লাহর অশেষ মেহেরবানী যে, তিনি আমাকে এ বিষয়ে কিছু কাজ করার তাওফীক দান করেছেন। দীর্ঘদিন যাবৎ সাধনা ও গবেষণা করার পর কুরআনের উপর একটি বিষয়ভিত্তিক গ্রন্থ জনগণের হাতে তুলে দিতে পেরেছি, এজন্য মালিকের নিকট অসংখ্য শুকরিয়া আদায় করছি। আর দু‘আ করছি, তিনি যেন এ গ্রন্থের মাধ্যমে বিশ্ব-মানবতাকে উপকৃত করেন এবং কুরআনের জ্ঞান লাভ করে ইসলামী জীবন গড়ার তাওফীক দান করেন এবং এটাকে সকলের নাজাতের ওসীলা বানিয়ে দেন- আমীন
যেভাবে কাজটি করেছি :
ছাত্রজীবনে আমি নিজের জন্য একটি স্থায়ী রুটিন করে নিয়েছিলাম যে, প্রতিদিন দিনের কাজ শুরু করতাম কুরআনের তাফসীর পড়ার মাধ্যমে। নিয়মিত কুরআন পড়ার সময় একটি বিষয় আমাকে খুবই প্রভাবিত করত। আর তা হলো, যখন একটি সূরা পড়তে বসি তখন কোন বিষয় সম্পর্কে আলোচনা আসে, পরে আবার অন্য প্রসঙ্গ চলে আসে। আরেকটু সামনে বাড়লে বা অন্য সূরায় গেলে দেখা যায় পূর্বের বিষয়টির আলোচনা আবার এসেছে। তখন থেকেই একেকটি বিষয় সম্পর্কে আলোচনা যেখানে পেতাম তা নোট করতাম। তারপর যখন এ বিষয়গুলো কিতাব আকারে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিলাম, তখন একই বিষয় সংক্রান্ত আয়াতগুলো সামনে রেখে এসব আয়াত থেকে যেসব পয়েন্ট বের হয় তা লিখে পুরো বিষয়টিকে ধারাবাহিকভাবে সাজাতাম। এভাবে প্রতিটি বিষয়কে অধ্যায় আকারে সাজিয়ে গ্রন্থাকারে রূপদান করি। এ গ্রন্থটির কাজ সমাপ্ত করতে ২০০০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৫ বছর সময় লেগেছে।
যাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করলেই নয় :
সকল প্রশংসা মূলত আল্লাহরই। তিনি যাকে দিয়ে যে কাজ করানোর ইচ্ছা করেন তাকে দিয়ে সে কাজ করিয়ে নেন। আল্লাহ আমাকে দিয়ে এ কাজ করিয়েছেন, এজন্য আমি তাঁর শুকরিয়া আদায় করছি।
আল্লাহ তা‘আলার শুকরিয়া আদায়ের পর আমি যাদের কাছে কৃতজ্ঞ তাদের মধ্যে রয়েছেন-
প্রথমত আমার পিতামাতা। তারা আমাকে দ্বীনের ইলিম শিক্ষা করার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
মাতাপিতার পর আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার শ্রদ্ধেয় উস্তাজ আল্লামা ইদ্রীস আহমদ সেবনগরী সাহেবের। তিনি একজন বিখ্যাত আলেমে দ্বীন ছিলেন। শেষ বয়সে চাকরি থেকে অবসর নিয়ে নিজ বাড়িতে অবস্থান করেই ইলিম শিক্ষাদান অব্যাহত রাখেন। ১৯৯৩ সালে কানাইঘাট মনসূরিয়া কামিল মাদরাসায় ভর্তি হওয়ার পর থেকে প্রায় দশ বছর আমি তাঁর কাছে ইলমে দ্বীন শিক্ষা করার সুযোগ লাভ করি। পার্থিব কোন বিনিময় ছাড়াই অতি গুরুত্বের সাথে তিনি আমাকে পড়াতেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে এর উত্তম বিনিময় দান করুন। আমীন
এরপর আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার সহধর্মিণী মাহমুদা খাতুনের। এ গ্রন্থের পান্ডলিপি তৈরি এবং প্রুফ দেখার কাজে তিনি যথেষ্ট শ্রম দিয়েছেন। তাছাড়া এ গ্রন্থের বিভিন্ন কাজে আমার অনেক ছাত্র পরিশ্রম করেছেন। আমি তাদের সকলের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
আমি আরো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার দ্বীনি ভাই মোহাম্মদ ইমাম হোসাইন কামরুল সাহেবের। তিনি অনেক সুপরামর্শ ও উপায়-উপকরণ দিয়ে আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন। যার ফলে আমি প্রশান্ত মনে এ গ্রন্থটির কাজ সমাপ্ত করতে পেরেছি। আল্লাহ সকলকে জাযায়ে খায়ের দান করুন। আমীন
কুরআনের শিক্ষাকে সহজ ও নির্ভুলভাবে তুলে ধরার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা হয়েছে। গ্রন্থের পান্ডলিপি প্রস্তুত হয়ে যাওয়ার পরও দীর্ঘদিন যাবৎ এর পরিমার্জন ও সংশোধনীর কাজ করা হয়েছে। তারপরও কোথাও কোন সংশোধনীর প্রয়োজন মনে হলে বা কোন পরামর্শ থাকলে তা জানানোর অনুরোধ রইল।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে কুরআন বুঝার এবং কুরআন অনুযায়ী জীবন গড়ার তাওফীক দান করুন- যাতে আমরা দুনিয়াতে শান্তি এবং পরকালে জান্নাত লাভ করতে পারি। আমীন
দু‘আপ্রার্থী
শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
তারিখ, ঢাকা।
১৮ই মুহররম- ১৪৩৬ হিজরী
১২ই নভেম্বর- ২০১৪ ইং
বিশ্বজগতের সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা ও মালিক হলেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘আলা। আল্লাহ শব্দটি অন্যান্য ধর্ম বা জাতির মধ্যে প্রচলিত ভগবান, ঈশ্বর ও গড ইত্যাদি শব্দের প্রতিশব্দ নয়। এটি একটি মৌলিক বিশেষ্য। এ নাম কেবল আল্লাহর জন্যই নির্ধারিত। আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। তাঁর কোন অংশীদার নেই। আল্লাহ তা‘আলার অনেক গুণবাচক নাম রয়েছে। এসব গুণবাচক নামের মধ্যেই তাঁর পরিচয় পাওয়া যায়। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর যেসব পরিচয় আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন তা নিচে আলোচনা করা হলো।
সূরা ফাতেহায় বর্ণিত আল্লাহ তা‘আলার গুণাবলি :
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ‐ اَلرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ مَالِكِ يَوْمِ الدِّيْنِ ‐ اِيَّاكَ نَعْبُدُ وَاِيَّاكَ نَسْتَعِيْنُ ‐ اِهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيْمَ ‐ صِرَاطَ الَّذِيْنَ اَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ ‐ غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّآلِّيْنَ
আল্লাহর নামে শুরু করছি, যিনি পরম করুণাময় ও অতি দয়ালু। সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহর জন্য, যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক। যিনি পরম করুণাময় ও অতিশয় দয়ালু। যিনি প্রতিফল দিবসের মালিক। আমরা কেবল আপনারই ইবাদাত করি এবং আপনার নিকটই সাহায্য প্রার্থনা করি। আপনি আমাদেরকে সরলসঠিক পথপ্রদর্শন করুন। তাদের পথ, যাদের প্রতি আপনি অনুগ্রহ করেছেন; তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি আপনার গযব অবতীর্ণ হয়েছে এবং তাদের পথও নয়, যারা পথভ্রষ্ট।
ব্যাখ্যা : সূরা ফাতেহা হলো কুরআন মাজীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সূরা। আবু সাঈদ ইবনে মু‘আলা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি যখন সালাত আদায় করছিলাম, তখন নবী ﷺ আমাকে ডাকলেন, কিন্তু আমি তাঁর ডাকে সাড়া দিলাম না। পরে আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি সালাত আদায় করছিলাম। এরপর রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আল্লাহ তা‘আলা কি বলেননি? ‘‘হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ডাকে সাড়া দাও, যখন তারা তোমাদেরকে আহবান করেন।’’ (সূরা আনফাল- ২৪)
তারপর নবী ﷺ বললেন, আমি কি তোমাকে কুরআনের সর্বোত্তম সূরা শিক্ষা দেব না? অতঃপর তিনি বললেন, তা হচ্ছে সূরা ফাতেহা- যা বার বার পঠিত সাতটি আয়াতের সমন্বয়ে গঠিত। এ সূরা এবং মহান কিতাব আল-কুরআন আমাকে প্রদান করা হয়েছে। (সহীহ বুখারী, হা/৫০০৬)
সূরা ফাতেহার প্রথম তিনটি আয়াতে আল্লাহ তা‘আলার গুণাবলি বর্ণনা করা হয়েছে। তার পরের আয়াতে আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণা দেয়া হয়েছে এবং শেষ তিনটি আয়াতে মুমিন বান্দার জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিষয় অর্থাৎ সিরাতে মুস্তাকীম বা সঠিক পথের সন্ধান পাওয়ার দু‘আ শিক্ষা দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলার প্রথম পরিচয় হচ্ছে, তিনি সারা বিশ্বের রব। রব বলতে ঐ সত্তাকে বুঝায়, যিনি কোন জিনিসকে তার মঙ্গলের দিকে দৃষ্টি রেখে পর্যায়ক্রমে উন্নতির সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে দেন। গোটা বিশ্বে যা কিছু আছে সবকিছুর রব হলেন তিনি। তিনিই সবকিছুর মালিক এবং সবকিছুর প্রতিপালক ও পরিচালনাকারী। তাঁর মালিকানা ও পরিচালনায় অন্য কারো হাত নেই। এজন্য সকল প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য একমাত্র তিনিই। আল্লাহ হলেন ‘রহমান’ ও ‘রহীম’ তথা বড়ই মেহেরবান ও অশেষ দয়াময়। আমরা আল্লাহর অসংখ্য নিয়ামতের মধ্যে ডুবে আছি। মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘তোমরা আমার নিয়ামত গণনা করতে শুরু করলে তা শেষ করতে পারবে না।’’ (সূরা নাহল- ১৮)
যে সকল নিয়ামত একান্ত প্রয়োজনীয়, তা তিনি এত ব্যাপক করে দিয়েছেন যে, এর কোন অভাব হয় না। যেমন- সূর্যের আলো, পানি, বাতাস ও আগুন ইত্যাদি। তিনি কারো কাছ থেকে এগুলোর কোন বিনিময় গ্রহণ করেন না; কেবল নিজ দয়া ও অনুগ্রহে এসব দান করেছেন। এ দুনিয়াতে তাঁর রহমত এত ব্যাপক যে, তিনি কাফির, মুশরিক ও জীবজন্তু সবাইকে রিযিক দেন এবং তাদের প্রয়োজনীয় সবকিছু সরবরাহ করেন।
আল্লাহ তা‘আলা হলেন বিচার দিনের মালিক। এ দুনিয়াতে মানুষ যা কিছু করে তার সঠিক বিচার ও পরিপূর্ণ প্রতিদান পাওয়ার জন্য আমাদের সামনে একটি দিবসের আগমন ঘটবে, যার নাম হলো কিয়ামত দিবস। আর সেদিনের বিচারক হবেন স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা। তিনি কারো প্রতি যুলুম করবেন না। দুনিয়াতে যারা ঈমান আনবে এবং সৎকর্ম করবে, তাদেরকে তিনি নিয়ামতপূর্ণ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আর যারা পাপকাজ করে অপরাধী হবে, তাদেরকে জাহান্নামের আগুনে ফেলে শাস্তি দেবেন। সে দিনের সকল ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব একমাত্র তাঁরই হাতে থাকবে।
আয়াতুল কুরসীতে বর্ণিত আল্লাহ তা‘আলার গুণাবলি :
اَللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ۚ اَلْحَيُّ الْقَيُّوْمُۚ لَا تَاْخُذُهٗ سِنَةٌ وَّلَا نَوْمٌؕ لَهٗ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَ رْضِ ؕ مَنْ ذَا الَّذِيْ يَشْفَعُ عِنْدَهٗۤ اِلَّا بِاِذْنِهٖ ؕ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْۚ وَلَا يُحِيْطُوْنَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهٖۤ اِلَّا بِمَا شَآءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضَ ۚ وَلَا يَئُوْدُهٗ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ
আল্লাহ এমন সত্তা, যিনি ব্যতীত কোন (প্রকৃত) উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব ও সবকিছুর ধারক বাহক। তন্দ্রা এবং নিদ্রা কোনকিছুই তাঁকে স্পর্শ করে না। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছু তাঁরই মালিকানাধীন। তাঁর হুকুম ব্যতীত এমন কে আছে, যে তাঁর নিকট সুপারিশ করতে পারে? তাদের সম্মুখে ও পেছনে যা কিছু আছে সবকিছু তিনি জানেন। তিনি যতটুকু ইচ্ছা করেন ততটুকু ছাড়া তাঁর জ্ঞানসমুদ্র হতে তারা কিছুই আয়ত্ত করতে পারে না। তাঁর সিংহাসন আসমান ও জমিনকে বেষ্টন করে আছে। আর সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ তাঁকে মোটেই ক্লান্ত করে না। তিনি সর্বোচ্চ ও সুমহান। (সূরা বাক্বারা- ২৫৫)
ব্যাখ্যা : সাধারণত কুরসী শব্দটি কর্তৃত্ব, ক্ষমতা ও রাষ্ট্রশক্তি অর্থে রূপক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আয়াতুল কুরসীর সারমর্ম হচ্ছে, সকল সার্বভৌম ক্ষমতা, প্রতিপত্তি ও শাসন কর্তৃত্ব নিরঙ্কুশভাবে একমাত্র সে সত্তার অধীনে, যাঁর জীবন কারো দান নয় বরং তিনি নিজস্ব জীবনী শক্তিতে স্বয়ং জীবিত। যাঁর শক্তির উপর নির্ভর করে এ বিশ্বের সমগ্র ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠেছে। নিজের এ বিশাল রাজ্যের যাবতীয় শাসন ও ক্ষমতার একচ্ছত্র মালিক তিনি একাই। তাঁর গুণাবলিতে দ্বিতীয় কোন সত্তার অংশীদারিত্ব নেই। কাজেই তাঁকে বাদ দিয়ে বা তাঁর সাথে শরীক করে পৃথিবীতে বা আকাশে কোথাও অন্য কাউকে মা‘বুদ, ইলাহ্ ও প্রভু বানানো হলে তা নিরেট মিথ্যা ছাড়া আর কিছু নয়। আল্লাহর আদালতে কোন শ্রেষ্ঠতম নবী এবং কোন নিকটতম ফেরেশতাও পৃথিবী ও আকাশের মালিকের নিকট বিনা অনুমতিতে একটি শব্দও উচ্চারণ করার সাহস রাখেন না। মানুষ, জিন, ফেরেশতা বা অন্য যেকোন সৃষ্টিই হোক না কেন সবার জ্ঞান অসম্পূর্ণ ও সীমিত। বিশ্বের সমগ্র সত্য ও রহস্য কারো আয়ত্তে নেই। বিশ্বজাহানের প্রভু ও পরিচালক মহান আল্লাহই ভালো-মন্দের পুরোপুরি জ্ঞান রাখেন। কাজেই এ ক্ষেত্রে জ্ঞানের মূল উৎস মহান আল্লাহর হেদায়াত ও পথনির্দেশনার উপর জীবন পরিচালনা করা ছাড়া মানুষের জন্য দ্বিতীয় আর কোন পথ নেই।
সূরা ইখলাসে বর্ণিত আল্লাহ তা‘আলার ৪টি গুণাবলি :
قُلْ هُوَ اللهُ اَحَدٌ ‐ اَللهُ الصَّمَدُ ‐ - لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُوْلَدْ ‐ وَلَمْ يَكُنْ لَّهٗ كُفُوًا اَحَدٌ
১. বলো, তিনি আল্লাহ একক।
২. তিনি স্বয়ংসম্পূর্ণ।
৩. তাঁর থেকে কেউ জন্ম নেয়নি এবং তিনিও কারো থেকে জন্মগ্রহণ করেননি।
৪. আর তাঁর সমতুল্য কেউ নেই। (সূরা ইখলাস)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ কোন এক ব্যক্তিকে একটি সেনাদলের অধিনায়ক করে কোন এক যুদ্ধে পাঠান। তিনি সালাতে যখন সঙ্গীদের ইমামতি করতেন, তখন সূরা ইখলাস দিয়ে সালাত শেষ করতেন। (অভিযান শেষে) ফিরে আসলে লোকজন এ বিষয়টি নবী ﷺ এর কাছে বললে তিনি তাদেরকে বললেন, সে কেন এমন করল, তাকেই জিজ্ঞেস করো। অতঃপর তারা তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, এ সূরাতে মহান আল্লাহর গুণাবলি (তাওহীদের) কথা বর্ণিত হয়েছে। তাই আমি তা পাঠ করতে বেশি ভালোবাসি। একথা শুনে নবী ﷺ বললেন, তাকে জানিয়ে দাও যে, আল্লাহও তাকে ভালোবাসেন। (সহীহ বুখারী, হা/৭৩৭৫)
তাওহীদ তথা আল্লাহর একত্ববাদের বিষয়টি এ সূরায় স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সূরা ইখলাসের সারমর্ম হচ্ছে, আল্লাহ অতুলনীয়, তাঁর উপর ঈমান আনতে হলে তাঁর গুণাবলি দেখেই ঈমান আনতে হবে। তাঁর গুণাবলিই তাঁর পরিচয় বহন করে। আল্লাহ হলেন একক সত্তা, তাঁর জাত ও সিফাতের মধ্যে কোন অংশীদারিত্ব নেই। তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন, বরং সকল সৃষ্টিই তাঁর মুখাপেক্ষী। তিনি কারো থেকে জন্মগ্রহণ করেননি। তাঁর সমকক্ষ ও সমতুল্য কিছুই নেই। এ সূরায় বর্ণিত আল্লাহর গুণাবলিসমূহ আল্লাহ এবং অন্যান্য উপাস্যের মধ্যে পার্থক্য কী তা স্পষ্ট করে দেয়। সূরা ইখলাসে বর্ণিত গুণাবলিসমূহ এক আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্য কোন সত্তার উপর প্রযোজ্য হয় না, সুতরাং আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ উপাস্য হওয়ার যোগ্য নয়। যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে নিজেদের মনগড়া উপাস্য বানিয়ে তাদের উপাসনা করছে তারা স্পষ্ট বিভ্রান্তির মধ্যে ডুবে আছে। মানুষের স্রষ্টা ও পালনকর্তা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা। তাই আন্তরিকতা ও ইখলাসের সাথে তাঁর ইবাদাত করাই মানুষের কর্তব্য।
ইবরাহীম (আঃ) এর ভাষায় আল্লাহর গুণাবলি :
فَاِنَّهُمْ عَدُوٌّ لِّۤيْ اِلَّا رَبَّ الْعَالَمِيْنَ -‐ اَ لَّذِيْ خَلَقَنِيْ فَهُوَ يَهْدِيْنِ ‐ - وَالَّذِيْ هُوَ يُطْعِمُنِيْ وَيَسْقِيْنِ ‐ - وَاِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِيْنِ ‐ - وَالَّذِيْ يُمِيْتُنِيْ ثُمَّ يُحْيِيْنِ ‐ - وَالَّذِيْۤ اَطْمَعُ اَنْ يَّغْفِرَ لِيْ خَطِيْٓئَتِيْ يَوْمَ الدِّيْنِ
নিশ্চয় (মূর্তিগুলো) সবই আমার শত্রু, জগতসমূহের প্রতিপালক ব্যতীত। যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনিই আমাকে পথপ্রদর্শন করেছেন। যিনি আমাকে খাদ্য ও পানীয় দান করেছেন। যখন আমি রোগাক্রামত্ম হই, তখন তিনিই আমাকে রোগমুক্ত করেন এবং তিনিই আমার মৃত্যু ঘটাবেন, অতঃপর পুনরায় জীবিত করবেন। আর আমি আশা করি যে, কিয়ামত দিবসে তিনিই আমার অপরাধসমূহ ক্ষমা করবেন। (সূরা শু‘আরা, ৭৭-৮২)
মূসা (আঃ) এর ভাষায় আল্লাহর পরিচয় :
قَالَ فِرْعَوْنُ وَمَا رَبُّ الْعَالَمِيْنَ ‐ - قَالَ رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا ؕ اِنْ كُنْتُمْ مُّوْقِنِيْنَ ‐ - قَالَ لِمَنْ حَوْلَهٗۤ اَلَا تَسْتَمِعُوْنَ ‐ - قَالَ رَبُّكُمْ وَرَبُّ اٰبَآئِكُمُ الْاَ وَّلِيْنَ ‐ - قَالَ اِنَّ رَسُوْلَكُمُ الَّذِيْۤ اُرْسِلَ اِلَيْكُمْ لَمَجْنُوْنٌ -‐ قَالَ رَبُّ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَمَا بَيْنَهُمَاؕ اِنْ كُنْتُمْ تَعْقِلُوْنَ
ফিরাউন বলল, জগতসমূহের প্রতিপালক আবার কে? মূসা বললেন, তিনি আসমান, জমিন এবং উভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুর প্রতিপালক, যদি তোমরা দৃঢ় বিশ্বাসী হও। ফিরাউন তার পরিষদবর্গকে লক্ষ্য করে বলল, তোমরা শুনছ তো! মূসা বললেন, তিনি তোমাদের প্রতিপালক এবং তোমাদের পূর্বপুরুষদেরও প্রতিপালক। ফিরাউন বলল, নিশ্চয় তোমাদের প্রতি প্রেরিত রাসূল (একজন) পাগল। মূসা বললেন, তিনি পূর্ব ও পশ্চিমের এবং তাদের মধ্যবর্তী সবকিছুর প্রতিপালক; যদি তোমরা বুঝতে পারতে। (সূরা শু‘আরা, ২৩-২৮)
আল্লাহর সাদৃশ্য কিছুই নেই :
لَيْسَ كَمِثْلِهٖ شَيْءٌۚ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ
কোনকিছুই তাঁর সাদৃশ্য নয়, তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। (সূরা শূরা- ১১)
ব্যাখ্যা : ‘আল্লাহর জন্য সাদৃশ্য তৈরি করো না’ অর্থাৎ আল্লাহকে দুনিয়ার রাজা-বাদশাহদের সমপর্যায়ে রেখে বিবেচনা করো না। দুনিয়ার রাজা-বাদশাহদের অনুচর, সভাসদ ও বিশেষ ব্যক্তিবর্গের মাধ্যম ছাড়া তাদের কাছে কেউ নিজের আবেদন নিবেদন পৌঁছাতে পারে না। তেমনি আল্লাহর ব্যাপারেও তোমরা এ ধারণা করো না যে, অন্যান্য মাধ্যম ছাড়া তাঁর কাছে কারো কোন কাজ পৌঁছতে পারে না।
তাঁর মতো গুণাবলিসম্পন্ন কেউ নেই :
رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا فَاعْبُدْهُ وَاصْطَبِرْ لِعِبَادَتِهٖؕ هَلْ تَعْلَمُ لَهٗ سَمِيًّا
তিনি আকাশসমূহ ও পৃথিবী এবং এদের মধ্যবর্তী যা কিছু আছে সবকিছুর প্রতিপালক। সুতরাং তোমরা তাঁরই ইবাদাত করো এবং তাঁর ইবাদাতে ধৈর্যশীল হও। তুমি কি তাঁর মতো (গুণাবলিসম্পন্ন অপর) কাউকে জান? (সূরা মারইয়াম- ৬৫)
আল্লাহর গুণাবলি লিখে শেষ করা যায় না :
وَلَوْ اَنَّمَا فِى الْاَ رْضِ مِنْ شَجَرَةٍ اَقْلَامٌ وَّالْبَحْرُ يَمُدُّهٗ مِنْ ۢبَعْدِهٖ سَبْعَةُ اَبْحُرٍ مَّا نَفِدَتْ كَلِمَاتُ اللهِؕ اِنَّ اللهَ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
সমগ্র পৃথিবীতে যত গাছ আছে তা সবই যদি কলম হয় এবং যত সমুদ্র রয়েছে তার সাথে যদি আরো সাতটি সমুদ্র একত্র হয়ে কালি হয়, তবুও আল্লাহর বাণী (লিখে) শেষ হবে না। নিশ্চয় আল্লাহ প্রতাপশালী ও মহাবিজ্ঞ। (সূরা লুক্বমান- ২৭)
قُلْ لَّوْ كَانَ الْبَحْرُ مِدَادًا لِّكَلِمَاتِ رَبِّيْ لَنَفِدَ الْبَحْرُ قَبْلَ اَنْ تَنْفَدَ كَلِمَاتُ رَبِّيْ وَلَوْ جِئْنَا بِمِثْلِهٖ مَدَدًا
বলো, আমার প্রতিপালকের কথা লিপিবদ্ধ করার জন্য (গোটা) সমুদ্র যদি কালিতে পরিণত হয়, তবুও আমার প্রতিপালকের কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই সমুদ্র নিঃশেষ হয়ে যাবে- যদিও আমরা এর (সাহায্যার্থে) অনুরূপ আরো সমুদ্র নিয়ে আসি। (সূরা কাহফ- ১০৯)
ব্যাখ্যা : ‘আল্লাহর কথা’ অর্থ তাঁর সৃষ্টিকর্ম এবং তাঁর শক্তি ও জ্ঞানের নিদর্শন। এ পৃথিবীর গাছগুলো কেটে কলম তৈরি করলে এবং পৃথিবীর সাগরের পানির সাথে আরো সাতটি সাগরের পানিকে কালিতে পরিণত করলেও তা দিয়ে আল্লাহর শক্তি, জ্ঞান ও সৃষ্টির কথা লিখে শেষ করা সম্ভব হবে না। এ বর্ণনা দ্বারা আসলে এ ধরনের একটি ধারণা দেয়াই উদ্দেশ্য যে, যে আল্লাহ এত বড় বিশ্বজাহানকে অস্তিত্ব দান করেছেন এবং আদি থেকে অনন্তকাল পর্যন্ত এর যাবতীয় ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করে চলেছেন, তাঁর সার্বভৌম কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে মানুষ যেসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সত্তাকে উপাস্যে পরিণত করেছে তাদের কোন গুরুত্ব নেই।
আল্লাহই প্রথম ও শেষ, প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য :
هُوَ الْاَ وَّلُ وَالْاٰخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُۚ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ
তিনিই শুরু, তিনিই শেষ, তিনিই প্রকাশ্য, তিনিই অপ্রকাশ্য এবং তিনি সবকিছু সম্পর্কে অধিক অবহিত। (সূরা হাদীদ- ৩)
আল্লাহ কখনো ধ্বংস হবেন না :
كُلُّ شَيْءٍ هَالِكٌ اِلَّا وَجْهَهٗؕ لَهُ الْحُكْمُ وَاِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ
আল্লাহর নিজ সত্তা ব্যতীত সবকিছুই ধ্বংসশীল। বিধান তাঁরই এবং তাঁরই নিকট তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা কবাসাস- ৮৮)
কেউ তাঁকে দেখে না কিন্তু তিনি সবাইকে দেখেন :
لَا تُدْرِكُهُ الْاَ بْصَارُ وَهُوَ يُدْرِكُ الْاَ بْصَارَ ۚ وَهُوَ اللَّطِيْفُ الْخَبِيْرُ
কোন চোখই তাঁকে আয়ত্ত করতে পারে না, কিন্তু তিনিই সকল দৃষ্টিকে আয়ত্ত করেন। আর তিনিই সূক্ষ্মদর্শী এবং সব খবর রাখেন। (সূরা আন‘আম- ১০৩)
মূসা (আঃ) আল্লাহকে দেখতে চেয়েছিলেন কিন্তু পারেননি :
وَلَمَّا جَآءَ مُوْسٰى لِمِيْقَاتِنَا وَكَلَّمَهٗ رَبُّهٗ قَالَ رَبِّ اَرِنِۤيْ اَنْظُرْ اِلَيْكَؕ قَالَ لَنْ تَرَانِيْ وَلٰكِنِ انْظُرْ اِلَى الْجَبَلِ فَاِنِ اسْتَقَرَّ مَكَانَهٗ فَسَوْفَ تَرَانِيْۚ - فَلَمَّا تَجَلّٰى رَبُّهٗ لِلْجَبَلِ جَعَلَهٗ دَكًّا وَّخَرَّ مُوْسٰى صَعِقًاۚ فَلَمَّاۤ اَفَاقَ قَالَ سُبْحَانَكَ تُبْتُ اِلَيْكَ وَاَنَاْ اَوَّلُ الْمُؤْمِنِيْنَ
মূসা বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে দেখা দাও, আমি তোমাকে দেখতে চাই। তিনি বললেন, তুমি আমাকে কখনই দেখতে পারবে না। বরং তুমি পাহাড়ের প্রতি লক্ষ্য করো, সেটা যদি স্বস্থানে স্থির থাকে তবে তুমি আমাকে দেখতে পারবে। যখন তাঁর প্রতিপালক পাহাড়ের উপর জ্যোতি প্রকাশ করলেন তখন তা পাহাড়কে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিল এবং মূসা অজ্ঞান হয়ে পড়ল। তারপর যখন সে জ্ঞান ফিরে পেল তখন বললেন, আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, আমি অনুতপ্ত হয়ে তোমার কাছেই প্রত্যাবর্তন করলাম এবং মুমিনদের মধ্যে আমিই প্রথম। (সূরা আ‘রাফ- ১৪৩)
আল্লাহ ওহীর মাধ্যম ছাড়া মানুষের সাথে কথা বলেন না :
وَمَا كَانَ لِبَشَرٍ اَنْ يُّكَلِّمَهُ اللهُ اِلَّا وَحْيًا اَوْ مِنْ وَّرَآءِ حِجَابٍ اَوْ يُرْسِلَ رَسُوْلًا فَيُوْحِيَ بِاِذْنِه مَا يَشَآءُؕ اِنَّهٗ عَلِيٌّ حَكِيْمٌ
মানুষের জন্য অসম্ভব যে, আল্লাহ তার সাথে কথা বলবেন ওহীর মাধ্যম ছাড়া, অথবা পর্দার অন্তরাল ব্যতীত অথবা এমন দূত প্রেরণ করা ছাড়া, যে তাঁর অনুমতিক্রমে তিনি যা চান তা ব্যক্ত করে। নিশ্চয় তিনি সমুন্নত ও প্রজ্ঞাবান। (সূরা শূরা- ৫১)
আল্লাহ আহার করান, তাঁকে কেউ আহার করায় না :
قُلْ اَغَيْرَ اللهِ اَتَّخِذُ وَلِيًّا فَاطِرِ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِ وَهُوَ يُطْعِمُ وَلَا يُطْعَمُ
বলো, আমি কি আসমান ও জমিনের স্রষ্টা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করব? অথচ তিনিই (আমাদেরকে) আহার করান; কিন্তু তাঁকে কেউ আহার করায় না। (সূরা আন‘আম- ১৪)
- مَاۤ اُرِيْدُ مِنْهُمْ مِّنْ رِّزْقٍ وَّمَاۤ اُرِيْدُ اَنْ يُّطْعِمُوْنِ ‐ - اِنَّ اللهَ هُوَ الرَّزَّاقُ ذُو الْقُوَّةِ الْمَتِيْنُ
আমি তাদের নিকট হতে কোন রিযিক চাই না এবং এও চাই না যে, তারা আমার আহার যোগাবে। নিশ্চয় আল্লাহ (ঐ সত্তা) যিনি রিযিকদাতা এবং সুদৃঢ় শক্তির অধিকারী। (সূরা যারিয়াত- ৫৭, ৫৮)
আল্লাহ কিছুই ভুলেন না :
قَالَ عِلْمُهَا عِنْدَ رَبِّيْ فِيْ كِتَابٍۚ لَا يَضِلُّ رَبِّيْ وَلَا يَنْسٰى
মূসা বললেন, এটার জ্ঞান আমার প্রতিপালকের নিকট এক কিতাবে রয়েছে। আমার প্রতিপালক ভুল করেন না এবং কোনকিছু ভুলেও যান না। (সূরা ত্বা-হা- ৫২)
ব্যাখ্যা : সবকিছুর রেকর্ড আল্লাহর কাছে সংরক্ষিত আছে। আল্লাহই জানেন, পৃথিবীতে কার ভূমিকা কী ছিল এবং কার পরিণাম কী হবে। আমাদেরকেও চিন্তা করা উচিত যে, আমাদের ভূমিকা কী এবং আমরা কোন ধরনের পরিণামের সম্মুখীন হব।
আল্লাহর মর্যাদা সর্বশ্রেষ্ঠ :
وَلَهُ الْمَثَلُ الْاَ عْلٰى فِى السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِؕ وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
আসমান ও জমিনে সর্বোচ্চ মর্যাদা তাঁরই। আর তিনিই প্রতাপশালী ও মহাবিজ্ঞ। (সূরা রূম- ২৭)
সকল বড়ত্ব আল্লাহর :
وَلَهُ الْكِبْرِيَآءُ فِى السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِ وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
আসমান ও জমিনে তাঁরই বড়ত্ব বিরাজমান রয়েছে এবং তিনি মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাবান। (সূরা জাসিয়া- ৩৭)
আল্লাহ আরশের মালিক :
لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَۚ رَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيْمِ
তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই; আর তিনিই সম্মানিত আরশের (একক) অধিপতি। (সূরা মু’মিনূন- ১১৬)
اَللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ
আল্লাহ তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই; আর তিনি মহান আরশের অধিপতি। (সূরা নামল- ২৬)
فَاِنْ تَوَلَّوْا فَقُلْ حَسْبِيَ اللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَؕ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ
এরপরও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে তুমি বলে দাও, আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ছাড়া কোন মা‘বুদ নেই। আর আমি তাঁরই উপর ভরসা করছি এবং তিনিই হচ্ছেন মহান আরশের অধিপতি। (সূরা তাওবা- ১২৯)
আল্লাহ আরশের উপর সমাসীন :
اَلرَّحْمٰنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوٰى
দয়াময় (আল্লাহ) আরশের উপর সমাসীন। (সূরা ত্বা-হা- ৫)
هُوَ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضَ فِيْ سِتَّةِ اَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوٰى عَلَى الْعَرْشِ
তিনি ছয় দিনে আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর আরশে সমাসীন হয়েছেন। (সূরা হাদীদ- ৪)
আল্লাহ আসমান ও জমিনের নূর :
اَللهُ نُوْرُ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِ
আল্লাহ আসমান ও জমিনের আলো। (সূরা নূর- ৩৫)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ আসমান ও জমিনের নূর- এ কথাটির অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ তা‘আলা আসমান এবং জমিনবাসীর হেদায়াত দানকারী ও পরিচালক। কেননা আল্লাহ তা‘আলা শুধু স্রষ্টাই নন, তিনি আসমান এবং জমিনে যা কিছু সৃষ্টি করেছেন সবকিছুকে তার প্রয়োজন অনুপাতে পথনির্দেশনা দিয়েছেন এবং সবকিছু পরিচালনা করছেন।
আল্লাহর নূরের উদাহরণ :
مَثَلُ نُوْرِهٖ كَمِشْكَاةٍ فِيْهَا مِصْبَاحٌ ؕ اَلْمِصْبَاحُ فِيْ زُجَاجَةٍؕ الزُّجَاجَةُ كَاَنَّهَا كَوْكَبٌ دُرِّيٌّ يُّوْقَدُ مِنْ شَجَرَةٍ مُّبَارَكَةٍ زَيْتُوْنَةٍ لَّا شَرْقِيَّةٍ وَّلَا غَرْبِيَّةٍ يَّكَادُ زَيْتُهَا يُضِيْٓءُ وَلَوْ لَمْ تَمْسَسْهُ نَارٌؕ نُوْرٌ عَلٰى نُوْرٍ ؕ يَهْدِى اللهُ لِنُوْرِهٖ مَنْ يَّشَآءُؕ وَيَضْرِبُ اللهُ الْاَ مْثَالَ لِلنَّاسِؕ وَاللهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ
তাঁর জ্যোতির উপমা যেন একটি চেরাগের মতো, যার মধ্যে রয়েছে এক প্রদীপ। আর প্রদীপটি রাখা হয়েছে একটি কাঁচের আবরণের মধ্যে, কাঁচের আবরণটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো- এটা প্রজ্বলিত করা হয় পূত-পবিত্র যায়তূন গাছের তেল দ্বারা, যা পূর্বেরও নয় এবং পশ্চিমেরও নয়। অগ্নি সেটাকে স্পর্শ না করলেও যেন তার তেল উজ্জ্বল আলো দিচ্ছে; জ্যোতির উপর জ্যোতি! আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাঁর জ্যোতির দিকে পথনির্দেশ করেন, (প্রয়োজনে) আল্লাহ মানুষের জন্য উপমা দিয়ে থাকেন; আর আল্লাহ সকল বিষয়ে সর্বজ্ঞ। (সূরা নূর- ৩৫)
আল্লাহর নূর ছাড়া অন্য কোন নূর নেই :
وَمَنْ لَّمْ يَجْعَلِ اللهُ لَهٗ نُوْرًا فَمَا لَهٗ مِنْ نُّوْرٍ
আল্লাহ যাকে জ্যোতি দান করেন না তার জন্য কোন জ্যোতিই নেই। (সূরা নূর- ৪০)
আল্লাহর নূর হাশরের মাঠকে আলোকিত করবে :
وَاَشْرَقَتِ الْاَ رْضُ بِنُوْرِ رَبِّهَا وَوُضِعَ الْكِتَابُ وَجِيْٓءَ بِالنَّبِيِّيْنَ وَالشُّهَدَآءِ وَقُضِيَ بَيْنَهُمْ بِالْحَقِّ وَهُمْ لَا يُظْلَمُوْنَ
সেদিন সমস্ত পৃথিবী তার প্রতিপালকের নূরে আলোকিত হবে, আমলনামা পেশ করা হবে এবং নবী ও সাক্ষীগণকে হাজির করা হবে। অতঃপর সকলের মধ্যে ন্যায়বিচার করা হবে; আর তাদের প্রতি কোন যুলুম করা হবে না। (সূরা যুমার- ৬৯)
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ‐ اَلرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ مَالِكِ يَوْمِ الدِّيْنِ ‐ اِيَّاكَ نَعْبُدُ وَاِيَّاكَ نَسْتَعِيْنُ ‐ اِهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيْمَ ‐ صِرَاطَ الَّذِيْنَ اَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ ‐ غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّآلِّيْنَ
আল্লাহর নামে শুরু করছি, যিনি পরম করুণাময় ও অতি দয়ালু। সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহর জন্য, যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক। যিনি পরম করুণাময় ও অতিশয় দয়ালু। যিনি প্রতিফল দিবসের মালিক। আমরা কেবল আপনারই ইবাদাত করি এবং আপনার নিকটই সাহায্য প্রার্থনা করি। আপনি আমাদেরকে সরলসঠিক পথপ্রদর্শন করুন। তাদের পথ, যাদের প্রতি আপনি অনুগ্রহ করেছেন; তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি আপনার গযব অবতীর্ণ হয়েছে এবং তাদের পথও নয়, যারা পথভ্রষ্ট।
ব্যাখ্যা : সূরা ফাতেহা হলো কুরআন মাজীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সূরা। আবু সাঈদ ইবনে মু‘আলা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি যখন সালাত আদায় করছিলাম, তখন নবী ﷺ আমাকে ডাকলেন, কিন্তু আমি তাঁর ডাকে সাড়া দিলাম না। পরে আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি সালাত আদায় করছিলাম। এরপর রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আল্লাহ তা‘আলা কি বলেননি? ‘‘হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ডাকে সাড়া দাও, যখন তারা তোমাদেরকে আহবান করেন।’’ (সূরা আনফাল- ২৪)
তারপর নবী ﷺ বললেন, আমি কি তোমাকে কুরআনের সর্বোত্তম সূরা শিক্ষা দেব না? অতঃপর তিনি বললেন, তা হচ্ছে সূরা ফাতেহা- যা বার বার পঠিত সাতটি আয়াতের সমন্বয়ে গঠিত। এ সূরা এবং মহান কিতাব আল-কুরআন আমাকে প্রদান করা হয়েছে। (সহীহ বুখারী, হা/৫০০৬)
সূরা ফাতেহার প্রথম তিনটি আয়াতে আল্লাহ তা‘আলার গুণাবলি বর্ণনা করা হয়েছে। তার পরের আয়াতে আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণা দেয়া হয়েছে এবং শেষ তিনটি আয়াতে মুমিন বান্দার জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিষয় অর্থাৎ সিরাতে মুস্তাকীম বা সঠিক পথের সন্ধান পাওয়ার দু‘আ শিক্ষা দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলার প্রথম পরিচয় হচ্ছে, তিনি সারা বিশ্বের রব। রব বলতে ঐ সত্তাকে বুঝায়, যিনি কোন জিনিসকে তার মঙ্গলের দিকে দৃষ্টি রেখে পর্যায়ক্রমে উন্নতির সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে দেন। গোটা বিশ্বে যা কিছু আছে সবকিছুর রব হলেন তিনি। তিনিই সবকিছুর মালিক এবং সবকিছুর প্রতিপালক ও পরিচালনাকারী। তাঁর মালিকানা ও পরিচালনায় অন্য কারো হাত নেই। এজন্য সকল প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য একমাত্র তিনিই। আল্লাহ হলেন ‘রহমান’ ও ‘রহীম’ তথা বড়ই মেহেরবান ও অশেষ দয়াময়। আমরা আল্লাহর অসংখ্য নিয়ামতের মধ্যে ডুবে আছি। মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘তোমরা আমার নিয়ামত গণনা করতে শুরু করলে তা শেষ করতে পারবে না।’’ (সূরা নাহল- ১৮)
যে সকল নিয়ামত একান্ত প্রয়োজনীয়, তা তিনি এত ব্যাপক করে দিয়েছেন যে, এর কোন অভাব হয় না। যেমন- সূর্যের আলো, পানি, বাতাস ও আগুন ইত্যাদি। তিনি কারো কাছ থেকে এগুলোর কোন বিনিময় গ্রহণ করেন না; কেবল নিজ দয়া ও অনুগ্রহে এসব দান করেছেন। এ দুনিয়াতে তাঁর রহমত এত ব্যাপক যে, তিনি কাফির, মুশরিক ও জীবজন্তু সবাইকে রিযিক দেন এবং তাদের প্রয়োজনীয় সবকিছু সরবরাহ করেন।
আল্লাহ তা‘আলা হলেন বিচার দিনের মালিক। এ দুনিয়াতে মানুষ যা কিছু করে তার সঠিক বিচার ও পরিপূর্ণ প্রতিদান পাওয়ার জন্য আমাদের সামনে একটি দিবসের আগমন ঘটবে, যার নাম হলো কিয়ামত দিবস। আর সেদিনের বিচারক হবেন স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা। তিনি কারো প্রতি যুলুম করবেন না। দুনিয়াতে যারা ঈমান আনবে এবং সৎকর্ম করবে, তাদেরকে তিনি নিয়ামতপূর্ণ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আর যারা পাপকাজ করে অপরাধী হবে, তাদেরকে জাহান্নামের আগুনে ফেলে শাস্তি দেবেন। সে দিনের সকল ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব একমাত্র তাঁরই হাতে থাকবে।
আয়াতুল কুরসীতে বর্ণিত আল্লাহ তা‘আলার গুণাবলি :
اَللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ۚ اَلْحَيُّ الْقَيُّوْمُۚ لَا تَاْخُذُهٗ سِنَةٌ وَّلَا نَوْمٌؕ لَهٗ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَ رْضِ ؕ مَنْ ذَا الَّذِيْ يَشْفَعُ عِنْدَهٗۤ اِلَّا بِاِذْنِهٖ ؕ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْۚ وَلَا يُحِيْطُوْنَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهٖۤ اِلَّا بِمَا شَآءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضَ ۚ وَلَا يَئُوْدُهٗ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ
আল্লাহ এমন সত্তা, যিনি ব্যতীত কোন (প্রকৃত) উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব ও সবকিছুর ধারক বাহক। তন্দ্রা এবং নিদ্রা কোনকিছুই তাঁকে স্পর্শ করে না। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছু তাঁরই মালিকানাধীন। তাঁর হুকুম ব্যতীত এমন কে আছে, যে তাঁর নিকট সুপারিশ করতে পারে? তাদের সম্মুখে ও পেছনে যা কিছু আছে সবকিছু তিনি জানেন। তিনি যতটুকু ইচ্ছা করেন ততটুকু ছাড়া তাঁর জ্ঞানসমুদ্র হতে তারা কিছুই আয়ত্ত করতে পারে না। তাঁর সিংহাসন আসমান ও জমিনকে বেষ্টন করে আছে। আর সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ তাঁকে মোটেই ক্লান্ত করে না। তিনি সর্বোচ্চ ও সুমহান। (সূরা বাক্বারা- ২৫৫)
ব্যাখ্যা : সাধারণত কুরসী শব্দটি কর্তৃত্ব, ক্ষমতা ও রাষ্ট্রশক্তি অর্থে রূপক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আয়াতুল কুরসীর সারমর্ম হচ্ছে, সকল সার্বভৌম ক্ষমতা, প্রতিপত্তি ও শাসন কর্তৃত্ব নিরঙ্কুশভাবে একমাত্র সে সত্তার অধীনে, যাঁর জীবন কারো দান নয় বরং তিনি নিজস্ব জীবনী শক্তিতে স্বয়ং জীবিত। যাঁর শক্তির উপর নির্ভর করে এ বিশ্বের সমগ্র ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠেছে। নিজের এ বিশাল রাজ্যের যাবতীয় শাসন ও ক্ষমতার একচ্ছত্র মালিক তিনি একাই। তাঁর গুণাবলিতে দ্বিতীয় কোন সত্তার অংশীদারিত্ব নেই। কাজেই তাঁকে বাদ দিয়ে বা তাঁর সাথে শরীক করে পৃথিবীতে বা আকাশে কোথাও অন্য কাউকে মা‘বুদ, ইলাহ্ ও প্রভু বানানো হলে তা নিরেট মিথ্যা ছাড়া আর কিছু নয়। আল্লাহর আদালতে কোন শ্রেষ্ঠতম নবী এবং কোন নিকটতম ফেরেশতাও পৃথিবী ও আকাশের মালিকের নিকট বিনা অনুমতিতে একটি শব্দও উচ্চারণ করার সাহস রাখেন না। মানুষ, জিন, ফেরেশতা বা অন্য যেকোন সৃষ্টিই হোক না কেন সবার জ্ঞান অসম্পূর্ণ ও সীমিত। বিশ্বের সমগ্র সত্য ও রহস্য কারো আয়ত্তে নেই। বিশ্বজাহানের প্রভু ও পরিচালক মহান আল্লাহই ভালো-মন্দের পুরোপুরি জ্ঞান রাখেন। কাজেই এ ক্ষেত্রে জ্ঞানের মূল উৎস মহান আল্লাহর হেদায়াত ও পথনির্দেশনার উপর জীবন পরিচালনা করা ছাড়া মানুষের জন্য দ্বিতীয় আর কোন পথ নেই।
সূরা ইখলাসে বর্ণিত আল্লাহ তা‘আলার ৪টি গুণাবলি :
قُلْ هُوَ اللهُ اَحَدٌ ‐ اَللهُ الصَّمَدُ ‐ - لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُوْلَدْ ‐ وَلَمْ يَكُنْ لَّهٗ كُفُوًا اَحَدٌ
১. বলো, তিনি আল্লাহ একক।
২. তিনি স্বয়ংসম্পূর্ণ।
৩. তাঁর থেকে কেউ জন্ম নেয়নি এবং তিনিও কারো থেকে জন্মগ্রহণ করেননি।
৪. আর তাঁর সমতুল্য কেউ নেই। (সূরা ইখলাস)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ কোন এক ব্যক্তিকে একটি সেনাদলের অধিনায়ক করে কোন এক যুদ্ধে পাঠান। তিনি সালাতে যখন সঙ্গীদের ইমামতি করতেন, তখন সূরা ইখলাস দিয়ে সালাত শেষ করতেন। (অভিযান শেষে) ফিরে আসলে লোকজন এ বিষয়টি নবী ﷺ এর কাছে বললে তিনি তাদেরকে বললেন, সে কেন এমন করল, তাকেই জিজ্ঞেস করো। অতঃপর তারা তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, এ সূরাতে মহান আল্লাহর গুণাবলি (তাওহীদের) কথা বর্ণিত হয়েছে। তাই আমি তা পাঠ করতে বেশি ভালোবাসি। একথা শুনে নবী ﷺ বললেন, তাকে জানিয়ে দাও যে, আল্লাহও তাকে ভালোবাসেন। (সহীহ বুখারী, হা/৭৩৭৫)
তাওহীদ তথা আল্লাহর একত্ববাদের বিষয়টি এ সূরায় স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সূরা ইখলাসের সারমর্ম হচ্ছে, আল্লাহ অতুলনীয়, তাঁর উপর ঈমান আনতে হলে তাঁর গুণাবলি দেখেই ঈমান আনতে হবে। তাঁর গুণাবলিই তাঁর পরিচয় বহন করে। আল্লাহ হলেন একক সত্তা, তাঁর জাত ও সিফাতের মধ্যে কোন অংশীদারিত্ব নেই। তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন, বরং সকল সৃষ্টিই তাঁর মুখাপেক্ষী। তিনি কারো থেকে জন্মগ্রহণ করেননি। তাঁর সমকক্ষ ও সমতুল্য কিছুই নেই। এ সূরায় বর্ণিত আল্লাহর গুণাবলিসমূহ আল্লাহ এবং অন্যান্য উপাস্যের মধ্যে পার্থক্য কী তা স্পষ্ট করে দেয়। সূরা ইখলাসে বর্ণিত গুণাবলিসমূহ এক আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্য কোন সত্তার উপর প্রযোজ্য হয় না, সুতরাং আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ উপাস্য হওয়ার যোগ্য নয়। যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে নিজেদের মনগড়া উপাস্য বানিয়ে তাদের উপাসনা করছে তারা স্পষ্ট বিভ্রান্তির মধ্যে ডুবে আছে। মানুষের স্রষ্টা ও পালনকর্তা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা। তাই আন্তরিকতা ও ইখলাসের সাথে তাঁর ইবাদাত করাই মানুষের কর্তব্য।
ইবরাহীম (আঃ) এর ভাষায় আল্লাহর গুণাবলি :
فَاِنَّهُمْ عَدُوٌّ لِّۤيْ اِلَّا رَبَّ الْعَالَمِيْنَ -‐ اَ لَّذِيْ خَلَقَنِيْ فَهُوَ يَهْدِيْنِ ‐ - وَالَّذِيْ هُوَ يُطْعِمُنِيْ وَيَسْقِيْنِ ‐ - وَاِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِيْنِ ‐ - وَالَّذِيْ يُمِيْتُنِيْ ثُمَّ يُحْيِيْنِ ‐ - وَالَّذِيْۤ اَطْمَعُ اَنْ يَّغْفِرَ لِيْ خَطِيْٓئَتِيْ يَوْمَ الدِّيْنِ
নিশ্চয় (মূর্তিগুলো) সবই আমার শত্রু, জগতসমূহের প্রতিপালক ব্যতীত। যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনিই আমাকে পথপ্রদর্শন করেছেন। যিনি আমাকে খাদ্য ও পানীয় দান করেছেন। যখন আমি রোগাক্রামত্ম হই, তখন তিনিই আমাকে রোগমুক্ত করেন এবং তিনিই আমার মৃত্যু ঘটাবেন, অতঃপর পুনরায় জীবিত করবেন। আর আমি আশা করি যে, কিয়ামত দিবসে তিনিই আমার অপরাধসমূহ ক্ষমা করবেন। (সূরা শু‘আরা, ৭৭-৮২)
মূসা (আঃ) এর ভাষায় আল্লাহর পরিচয় :
قَالَ فِرْعَوْنُ وَمَا رَبُّ الْعَالَمِيْنَ ‐ - قَالَ رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا ؕ اِنْ كُنْتُمْ مُّوْقِنِيْنَ ‐ - قَالَ لِمَنْ حَوْلَهٗۤ اَلَا تَسْتَمِعُوْنَ ‐ - قَالَ رَبُّكُمْ وَرَبُّ اٰبَآئِكُمُ الْاَ وَّلِيْنَ ‐ - قَالَ اِنَّ رَسُوْلَكُمُ الَّذِيْۤ اُرْسِلَ اِلَيْكُمْ لَمَجْنُوْنٌ -‐ قَالَ رَبُّ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَمَا بَيْنَهُمَاؕ اِنْ كُنْتُمْ تَعْقِلُوْنَ
ফিরাউন বলল, জগতসমূহের প্রতিপালক আবার কে? মূসা বললেন, তিনি আসমান, জমিন এবং উভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুর প্রতিপালক, যদি তোমরা দৃঢ় বিশ্বাসী হও। ফিরাউন তার পরিষদবর্গকে লক্ষ্য করে বলল, তোমরা শুনছ তো! মূসা বললেন, তিনি তোমাদের প্রতিপালক এবং তোমাদের পূর্বপুরুষদেরও প্রতিপালক। ফিরাউন বলল, নিশ্চয় তোমাদের প্রতি প্রেরিত রাসূল (একজন) পাগল। মূসা বললেন, তিনি পূর্ব ও পশ্চিমের এবং তাদের মধ্যবর্তী সবকিছুর প্রতিপালক; যদি তোমরা বুঝতে পারতে। (সূরা শু‘আরা, ২৩-২৮)
আল্লাহর সাদৃশ্য কিছুই নেই :
لَيْسَ كَمِثْلِهٖ شَيْءٌۚ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ
কোনকিছুই তাঁর সাদৃশ্য নয়, তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। (সূরা শূরা- ১১)
ব্যাখ্যা : ‘আল্লাহর জন্য সাদৃশ্য তৈরি করো না’ অর্থাৎ আল্লাহকে দুনিয়ার রাজা-বাদশাহদের সমপর্যায়ে রেখে বিবেচনা করো না। দুনিয়ার রাজা-বাদশাহদের অনুচর, সভাসদ ও বিশেষ ব্যক্তিবর্গের মাধ্যম ছাড়া তাদের কাছে কেউ নিজের আবেদন নিবেদন পৌঁছাতে পারে না। তেমনি আল্লাহর ব্যাপারেও তোমরা এ ধারণা করো না যে, অন্যান্য মাধ্যম ছাড়া তাঁর কাছে কারো কোন কাজ পৌঁছতে পারে না।
তাঁর মতো গুণাবলিসম্পন্ন কেউ নেই :
رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا فَاعْبُدْهُ وَاصْطَبِرْ لِعِبَادَتِهٖؕ هَلْ تَعْلَمُ لَهٗ سَمِيًّا
তিনি আকাশসমূহ ও পৃথিবী এবং এদের মধ্যবর্তী যা কিছু আছে সবকিছুর প্রতিপালক। সুতরাং তোমরা তাঁরই ইবাদাত করো এবং তাঁর ইবাদাতে ধৈর্যশীল হও। তুমি কি তাঁর মতো (গুণাবলিসম্পন্ন অপর) কাউকে জান? (সূরা মারইয়াম- ৬৫)
আল্লাহর গুণাবলি লিখে শেষ করা যায় না :
وَلَوْ اَنَّمَا فِى الْاَ رْضِ مِنْ شَجَرَةٍ اَقْلَامٌ وَّالْبَحْرُ يَمُدُّهٗ مِنْ ۢبَعْدِهٖ سَبْعَةُ اَبْحُرٍ مَّا نَفِدَتْ كَلِمَاتُ اللهِؕ اِنَّ اللهَ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
সমগ্র পৃথিবীতে যত গাছ আছে তা সবই যদি কলম হয় এবং যত সমুদ্র রয়েছে তার সাথে যদি আরো সাতটি সমুদ্র একত্র হয়ে কালি হয়, তবুও আল্লাহর বাণী (লিখে) শেষ হবে না। নিশ্চয় আল্লাহ প্রতাপশালী ও মহাবিজ্ঞ। (সূরা লুক্বমান- ২৭)
قُلْ لَّوْ كَانَ الْبَحْرُ مِدَادًا لِّكَلِمَاتِ رَبِّيْ لَنَفِدَ الْبَحْرُ قَبْلَ اَنْ تَنْفَدَ كَلِمَاتُ رَبِّيْ وَلَوْ جِئْنَا بِمِثْلِهٖ مَدَدًا
বলো, আমার প্রতিপালকের কথা লিপিবদ্ধ করার জন্য (গোটা) সমুদ্র যদি কালিতে পরিণত হয়, তবুও আমার প্রতিপালকের কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই সমুদ্র নিঃশেষ হয়ে যাবে- যদিও আমরা এর (সাহায্যার্থে) অনুরূপ আরো সমুদ্র নিয়ে আসি। (সূরা কাহফ- ১০৯)
ব্যাখ্যা : ‘আল্লাহর কথা’ অর্থ তাঁর সৃষ্টিকর্ম এবং তাঁর শক্তি ও জ্ঞানের নিদর্শন। এ পৃথিবীর গাছগুলো কেটে কলম তৈরি করলে এবং পৃথিবীর সাগরের পানির সাথে আরো সাতটি সাগরের পানিকে কালিতে পরিণত করলেও তা দিয়ে আল্লাহর শক্তি, জ্ঞান ও সৃষ্টির কথা লিখে শেষ করা সম্ভব হবে না। এ বর্ণনা দ্বারা আসলে এ ধরনের একটি ধারণা দেয়াই উদ্দেশ্য যে, যে আল্লাহ এত বড় বিশ্বজাহানকে অস্তিত্ব দান করেছেন এবং আদি থেকে অনন্তকাল পর্যন্ত এর যাবতীয় ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করে চলেছেন, তাঁর সার্বভৌম কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে মানুষ যেসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সত্তাকে উপাস্যে পরিণত করেছে তাদের কোন গুরুত্ব নেই।
আল্লাহই প্রথম ও শেষ, প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য :
هُوَ الْاَ وَّلُ وَالْاٰخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُۚ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ
তিনিই শুরু, তিনিই শেষ, তিনিই প্রকাশ্য, তিনিই অপ্রকাশ্য এবং তিনি সবকিছু সম্পর্কে অধিক অবহিত। (সূরা হাদীদ- ৩)
আল্লাহ কখনো ধ্বংস হবেন না :
كُلُّ شَيْءٍ هَالِكٌ اِلَّا وَجْهَهٗؕ لَهُ الْحُكْمُ وَاِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ
আল্লাহর নিজ সত্তা ব্যতীত সবকিছুই ধ্বংসশীল। বিধান তাঁরই এবং তাঁরই নিকট তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা কবাসাস- ৮৮)
কেউ তাঁকে দেখে না কিন্তু তিনি সবাইকে দেখেন :
لَا تُدْرِكُهُ الْاَ بْصَارُ وَهُوَ يُدْرِكُ الْاَ بْصَارَ ۚ وَهُوَ اللَّطِيْفُ الْخَبِيْرُ
কোন চোখই তাঁকে আয়ত্ত করতে পারে না, কিন্তু তিনিই সকল দৃষ্টিকে আয়ত্ত করেন। আর তিনিই সূক্ষ্মদর্শী এবং সব খবর রাখেন। (সূরা আন‘আম- ১০৩)
মূসা (আঃ) আল্লাহকে দেখতে চেয়েছিলেন কিন্তু পারেননি :
وَلَمَّا جَآءَ مُوْسٰى لِمِيْقَاتِنَا وَكَلَّمَهٗ رَبُّهٗ قَالَ رَبِّ اَرِنِۤيْ اَنْظُرْ اِلَيْكَؕ قَالَ لَنْ تَرَانِيْ وَلٰكِنِ انْظُرْ اِلَى الْجَبَلِ فَاِنِ اسْتَقَرَّ مَكَانَهٗ فَسَوْفَ تَرَانِيْۚ - فَلَمَّا تَجَلّٰى رَبُّهٗ لِلْجَبَلِ جَعَلَهٗ دَكًّا وَّخَرَّ مُوْسٰى صَعِقًاۚ فَلَمَّاۤ اَفَاقَ قَالَ سُبْحَانَكَ تُبْتُ اِلَيْكَ وَاَنَاْ اَوَّلُ الْمُؤْمِنِيْنَ
মূসা বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে দেখা দাও, আমি তোমাকে দেখতে চাই। তিনি বললেন, তুমি আমাকে কখনই দেখতে পারবে না। বরং তুমি পাহাড়ের প্রতি লক্ষ্য করো, সেটা যদি স্বস্থানে স্থির থাকে তবে তুমি আমাকে দেখতে পারবে। যখন তাঁর প্রতিপালক পাহাড়ের উপর জ্যোতি প্রকাশ করলেন তখন তা পাহাড়কে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিল এবং মূসা অজ্ঞান হয়ে পড়ল। তারপর যখন সে জ্ঞান ফিরে পেল তখন বললেন, আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, আমি অনুতপ্ত হয়ে তোমার কাছেই প্রত্যাবর্তন করলাম এবং মুমিনদের মধ্যে আমিই প্রথম। (সূরা আ‘রাফ- ১৪৩)
আল্লাহ ওহীর মাধ্যম ছাড়া মানুষের সাথে কথা বলেন না :
وَمَا كَانَ لِبَشَرٍ اَنْ يُّكَلِّمَهُ اللهُ اِلَّا وَحْيًا اَوْ مِنْ وَّرَآءِ حِجَابٍ اَوْ يُرْسِلَ رَسُوْلًا فَيُوْحِيَ بِاِذْنِه مَا يَشَآءُؕ اِنَّهٗ عَلِيٌّ حَكِيْمٌ
মানুষের জন্য অসম্ভব যে, আল্লাহ তার সাথে কথা বলবেন ওহীর মাধ্যম ছাড়া, অথবা পর্দার অন্তরাল ব্যতীত অথবা এমন দূত প্রেরণ করা ছাড়া, যে তাঁর অনুমতিক্রমে তিনি যা চান তা ব্যক্ত করে। নিশ্চয় তিনি সমুন্নত ও প্রজ্ঞাবান। (সূরা শূরা- ৫১)
আল্লাহ আহার করান, তাঁকে কেউ আহার করায় না :
قُلْ اَغَيْرَ اللهِ اَتَّخِذُ وَلِيًّا فَاطِرِ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِ وَهُوَ يُطْعِمُ وَلَا يُطْعَمُ
বলো, আমি কি আসমান ও জমিনের স্রষ্টা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করব? অথচ তিনিই (আমাদেরকে) আহার করান; কিন্তু তাঁকে কেউ আহার করায় না। (সূরা আন‘আম- ১৪)
- مَاۤ اُرِيْدُ مِنْهُمْ مِّنْ رِّزْقٍ وَّمَاۤ اُرِيْدُ اَنْ يُّطْعِمُوْنِ ‐ - اِنَّ اللهَ هُوَ الرَّزَّاقُ ذُو الْقُوَّةِ الْمَتِيْنُ
আমি তাদের নিকট হতে কোন রিযিক চাই না এবং এও চাই না যে, তারা আমার আহার যোগাবে। নিশ্চয় আল্লাহ (ঐ সত্তা) যিনি রিযিকদাতা এবং সুদৃঢ় শক্তির অধিকারী। (সূরা যারিয়াত- ৫৭, ৫৮)
আল্লাহ কিছুই ভুলেন না :
قَالَ عِلْمُهَا عِنْدَ رَبِّيْ فِيْ كِتَابٍۚ لَا يَضِلُّ رَبِّيْ وَلَا يَنْسٰى
মূসা বললেন, এটার জ্ঞান আমার প্রতিপালকের নিকট এক কিতাবে রয়েছে। আমার প্রতিপালক ভুল করেন না এবং কোনকিছু ভুলেও যান না। (সূরা ত্বা-হা- ৫২)
ব্যাখ্যা : সবকিছুর রেকর্ড আল্লাহর কাছে সংরক্ষিত আছে। আল্লাহই জানেন, পৃথিবীতে কার ভূমিকা কী ছিল এবং কার পরিণাম কী হবে। আমাদেরকেও চিন্তা করা উচিত যে, আমাদের ভূমিকা কী এবং আমরা কোন ধরনের পরিণামের সম্মুখীন হব।
আল্লাহর মর্যাদা সর্বশ্রেষ্ঠ :
وَلَهُ الْمَثَلُ الْاَ عْلٰى فِى السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِؕ وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
আসমান ও জমিনে সর্বোচ্চ মর্যাদা তাঁরই। আর তিনিই প্রতাপশালী ও মহাবিজ্ঞ। (সূরা রূম- ২৭)
সকল বড়ত্ব আল্লাহর :
وَلَهُ الْكِبْرِيَآءُ فِى السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِ وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
আসমান ও জমিনে তাঁরই বড়ত্ব বিরাজমান রয়েছে এবং তিনি মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাবান। (সূরা জাসিয়া- ৩৭)
আল্লাহ আরশের মালিক :
لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَۚ رَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيْمِ
তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই; আর তিনিই সম্মানিত আরশের (একক) অধিপতি। (সূরা মু’মিনূন- ১১৬)
اَللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ
আল্লাহ তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই; আর তিনি মহান আরশের অধিপতি। (সূরা নামল- ২৬)
فَاِنْ تَوَلَّوْا فَقُلْ حَسْبِيَ اللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَؕ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ
এরপরও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে তুমি বলে দাও, আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ছাড়া কোন মা‘বুদ নেই। আর আমি তাঁরই উপর ভরসা করছি এবং তিনিই হচ্ছেন মহান আরশের অধিপতি। (সূরা তাওবা- ১২৯)
আল্লাহ আরশের উপর সমাসীন :
اَلرَّحْمٰنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوٰى
দয়াময় (আল্লাহ) আরশের উপর সমাসীন। (সূরা ত্বা-হা- ৫)
هُوَ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضَ فِيْ سِتَّةِ اَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوٰى عَلَى الْعَرْشِ
তিনি ছয় দিনে আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর আরশে সমাসীন হয়েছেন। (সূরা হাদীদ- ৪)
আল্লাহ আসমান ও জমিনের নূর :
اَللهُ نُوْرُ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِ
আল্লাহ আসমান ও জমিনের আলো। (সূরা নূর- ৩৫)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ আসমান ও জমিনের নূর- এ কথাটির অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ তা‘আলা আসমান এবং জমিনবাসীর হেদায়াত দানকারী ও পরিচালক। কেননা আল্লাহ তা‘আলা শুধু স্রষ্টাই নন, তিনি আসমান এবং জমিনে যা কিছু সৃষ্টি করেছেন সবকিছুকে তার প্রয়োজন অনুপাতে পথনির্দেশনা দিয়েছেন এবং সবকিছু পরিচালনা করছেন।
আল্লাহর নূরের উদাহরণ :
مَثَلُ نُوْرِهٖ كَمِشْكَاةٍ فِيْهَا مِصْبَاحٌ ؕ اَلْمِصْبَاحُ فِيْ زُجَاجَةٍؕ الزُّجَاجَةُ كَاَنَّهَا كَوْكَبٌ دُرِّيٌّ يُّوْقَدُ مِنْ شَجَرَةٍ مُّبَارَكَةٍ زَيْتُوْنَةٍ لَّا شَرْقِيَّةٍ وَّلَا غَرْبِيَّةٍ يَّكَادُ زَيْتُهَا يُضِيْٓءُ وَلَوْ لَمْ تَمْسَسْهُ نَارٌؕ نُوْرٌ عَلٰى نُوْرٍ ؕ يَهْدِى اللهُ لِنُوْرِهٖ مَنْ يَّشَآءُؕ وَيَضْرِبُ اللهُ الْاَ مْثَالَ لِلنَّاسِؕ وَاللهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ
তাঁর জ্যোতির উপমা যেন একটি চেরাগের মতো, যার মধ্যে রয়েছে এক প্রদীপ। আর প্রদীপটি রাখা হয়েছে একটি কাঁচের আবরণের মধ্যে, কাঁচের আবরণটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো- এটা প্রজ্বলিত করা হয় পূত-পবিত্র যায়তূন গাছের তেল দ্বারা, যা পূর্বেরও নয় এবং পশ্চিমেরও নয়। অগ্নি সেটাকে স্পর্শ না করলেও যেন তার তেল উজ্জ্বল আলো দিচ্ছে; জ্যোতির উপর জ্যোতি! আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাঁর জ্যোতির দিকে পথনির্দেশ করেন, (প্রয়োজনে) আল্লাহ মানুষের জন্য উপমা দিয়ে থাকেন; আর আল্লাহ সকল বিষয়ে সর্বজ্ঞ। (সূরা নূর- ৩৫)
আল্লাহর নূর ছাড়া অন্য কোন নূর নেই :
وَمَنْ لَّمْ يَجْعَلِ اللهُ لَهٗ نُوْرًا فَمَا لَهٗ مِنْ نُّوْرٍ
আল্লাহ যাকে জ্যোতি দান করেন না তার জন্য কোন জ্যোতিই নেই। (সূরা নূর- ৪০)
আল্লাহর নূর হাশরের মাঠকে আলোকিত করবে :
وَاَشْرَقَتِ الْاَ رْضُ بِنُوْرِ رَبِّهَا وَوُضِعَ الْكِتَابُ وَجِيْٓءَ بِالنَّبِيِّيْنَ وَالشُّهَدَآءِ وَقُضِيَ بَيْنَهُمْ بِالْحَقِّ وَهُمْ لَا يُظْلَمُوْنَ
সেদিন সমস্ত পৃথিবী তার প্রতিপালকের নূরে আলোকিত হবে, আমলনামা পেশ করা হবে এবং নবী ও সাক্ষীগণকে হাজির করা হবে। অতঃপর সকলের মধ্যে ন্যায়বিচার করা হবে; আর তাদের প্রতি কোন যুলুম করা হবে না। (সূরা যুমার- ৬৯)
আল্লাহ একজন :
وَاِلٰهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ ؕ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الرَّحْمٰنُ الرَّحِيْمُ
তোমাদের ইলাহ্ কেবল একজন। তিনি ব্যতীত অন্য কোন (প্রকৃত) ইলাহ্ নেই। তিনি করুণাময় ও অতি দয়ালু। (সূরা বাক্বারা- ১৬৩)
قُلْ اِنَّمَاۤ اَنَاْ بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوْحٰۤى اِلَيَّ اَنَّمَاۤ اِلٰهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ
বলো, আমি তো তোমাদের মতোই একজন মানুষ। আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়েছে যে, তোমাদের মা‘বুদ হচ্ছেন একজন। (সূরা কাহফ- ১১০)
আল্লাহ দু’জন নন :
وَقَالَ اللهُ لَا تَتَّخِذُوْاۤ اِلٰهَيْنِ اثْنَيْنِۚ اِنَّمَا هُوَ اِلٰهٌ وَّاحِدٌۚ فَاِيَّايَ فَارْهَبُوْنِ
আল্লাহ বলেন, তোমরা দুই ইলাহ্ গ্রহণ করো না; তিনিই তো একমাত্র ইলাহ্। সুতরাং আমাকেই ভয় করো। (সূরা নাহল- ৫১)
আল্লাহ তিনজনও নন :
وَلَا تَقُوْلُوْا ثَلَاثَةٌؕ اِنْتَهُوْا خَيْرًا لَّكُمْؕ اِنَّمَا اللهُ اِلٰهٌ وَّاحِدٌؕ سُبْحَانَهٗۤ اَنْ يَّكُوْنَ لَهٗ وَلَدٌۘ - لَهٗ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَ رْضِؕ وَكَفٰى بِاللهِ وَكِيْلًا
এ কথা বলো না যে, (মা‘বুদের সংখ্যা) তিন। তোমরা এ থেকে বেঁচে থাকো, এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর। (কেননা) নিশ্চয় আল্লাহ একমাত্র ইলাহ্; তাঁর সন্তান হবে- এটা হতে তিনি পবিত্র। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবই তাঁর; আর অভিভাবক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। (সূরা নিসা- ১৭১)
আল্লাহর কোন সমত্মান নেই :
مَا كَانَ لِلّٰهِ اَنْ يَّتَّخِذَ مِنْ وَّلَدٍ سُبْحَانَهٗ
সমত্মান গ্রহণ করা আল্লাহর কাজ নয়, তিনি (এ থেকে) পবিত্র। (সূরা মারইয়াম- ৩৫)
وَمَا يَنْۢبَغِيْ لِلرَّحْمٰنِ اَنْ يَّتَّخِذَ وَلَدًا
সমত্মান গ্রহণ করা দয়াময়ের জন্য শোভনীয় নয়। (সূরা মারইয়াম- ৯২)
مَا اتَّخَذَ اللهُ مِنْ وَّلَدٍ وَّمَا كَانَ مَعَهٗ مِنْ اِلٰهٍ اِذًا لَّذَهَبَ كُلُّ اِلٰهٍ ۢبِمَا خَلَقَ وَلَعَلَا بَعْضُهُمْ عَلٰى بَعْضٍؕ سُبْحَانَ اللهِ عَمَّا يَصِفُوْنَ
আল্লাহ কোন সমত্মান গ্রহণ করেননি এবং তাঁর সাথে অপর কোন ইলাহ্ নেই। যদি থাকত তবে প্রত্যেক ইলাহ্ স্বীয় সৃষ্টি নিয়ে পৃথক হয়ে যেত এবং একে অপরের উপর প্রাধান্য বিসত্মার করত। (জেনে রেখো) তারা যেভাবে গুণান্বিত করে আল্লাহ তা হতে অনেক পবিত্র! (সূরা মু’মিনূন- ৯১)
আল্লাহর কোন মেয়ে নেই :
اَفَاَصْفَاكُمْ رَبُّكُمْ بِالْبَنِيْنَ وَاتَّخَذَ مِنَ الْمَلَآئِكَةِ اِنَاثًاؕ اِنَّكُمْ لَتَقُوْلُوْنَ قَوْلًا عَظِيْمًا
তোমাদের প্রতিপালক কি তোমাদেরকে পুত্র সমত্মানের জন্য নির্বাচিত করেছেন এবং তিনি নিজে ফেরেশতাদেরকে কন্যা হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছেন? নিশ্চয় তোমরা ভয়ানক কথা বলে থাক। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৪০)
اَصْطَفَى الْبَنَاتِ عَلَى الْبَنِيْنَ ‐ مَا لَكُمْ كَيْفَ تَحْكُمُوْن
তিনি কি পুত্রসন্তানের পরিবর্তে কন্যাসন্তানকে বেছে নিয়েছেন? তোমাদের কী হলো, তোমরা এ কেমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছ। (সূরা সাফ্ফাত- ১৫৩, ১৫৪)
আল্লাহর কোন স্ত্রীও নেই :
اَنّٰى يَكُوْنُ لَهٗ وَلَدٌ وَّلَمْ تَكُنْ لَّهٗ صَاحِبَةٌ
তাঁর সন্তান হবে কীভাবে? তাঁর তো কোন স্ত্রী-ই নেই। (সূরা আন‘আম- ১০১)
وَاَنَّهٗ تَعَالٰى جَدُّ رَبِّنَا مَا اتَّخَذَ صَاحِبَةً وَّلَا وَلَدًا
নিশ্চয় আমাদের প্রতিপালকের মর্যাদা সবকিছু থেকে ঊর্ধেব; তিনি কখনো কোন স্ত্রী গ্রহণ করেননি এবং কোন সন্তানও গ্রহণ করেননি। (সূরা জিন- ৩)
আল্লাহর কোন শরীক নেই :
قُلِ الْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ لَمْ يَتَّخِذْ وَلَدًا وَّلَمْ يَكُنْ لَّهٗ شَرِيْكٌ فِى الْمُلْكِ وَلَمْ يَكُنْ لَّهٗ وَلِيٌّ مِّنَ الذُّلِّ وَكَبِّرْهُ تَكْبِيْرًا
বলো, সমস্ত প্রশংসা কেবল আল্লাহরই। যিনি কোন সমত্মান গ্রহণ করেননি, (যার কারণে) তাঁর সার্বভৌমত্বে কোন অংশীদারও নেই। তিনি কখনো দুর্দশাগ্রসত্ম হন না, যে কারণে তাঁর অভিভাবকের প্রয়োজন হয়। সুতরাং তোমরা তাঁর মহত্ত্ব ঘোষণা করো। (সূরা বনী ইসরাঈল- ১১১)
لَا شَرِيْكَ لَهٗۚ وَبِذٰلِكَ اُمِرْتُ وَاَنَاْ اَوَّلُ الْمُسْلِمِيْنَ
তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি এরই জন্য আদিষ্ট হয়েছি; আর আমিই প্রথম মুসলিম। (সূরা আন‘আম- ১৬৩)
ব্যাখ্যা : মহান আল্লাহই এ বিশ্বজাহানের সর্বময় কর্তৃত্বের মালিক এবং তাঁর শাসন ক্ষমতায় কারো সামান্যতমও অংশ নেই। এখন যদি একথা জানা যায় যে, মহান আল্লাহ ছাড়া এ বিশ্বজাহানে অন্য কারো কর্তৃত্ব নেই এবং তিনিই সবচেয়ে বড় ক্ষমতাবান, তিনি ইচ্ছা করলে মুহূর্তেই সকল অস্তিত্ব ধ্বংস করে দিতে পারেন, তিনিই সবকিছু পরিচালনা করেন, তিনিই রিযিক প্রদান করেন, তাহলে কোন মাথা বিনয় প্রকাশ করার জন্য তাঁকে ছাড়া আর কারো সামনে নত হবে না, কোন হাতও অন্য কারো সামনে নজরানা পেশ করার জন্য এগিয়ে যাবে না, কোন কণ্ঠও অন্য কারো প্রশংসাগীতি গাবে না এবং কোনকিছু প্রার্থনাও করবে না। আর এ কাজগুলো দুনিয়ার কোন নিরেট মূর্খ ও অজ্ঞ ব্যক্তির পক্ষেও সম্ভব হবে না।
وَاِلٰهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ ؕ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الرَّحْمٰنُ الرَّحِيْمُ
তোমাদের ইলাহ্ কেবল একজন। তিনি ব্যতীত অন্য কোন (প্রকৃত) ইলাহ্ নেই। তিনি করুণাময় ও অতি দয়ালু। (সূরা বাক্বারা- ১৬৩)
قُلْ اِنَّمَاۤ اَنَاْ بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوْحٰۤى اِلَيَّ اَنَّمَاۤ اِلٰهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ
বলো, আমি তো তোমাদের মতোই একজন মানুষ। আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়েছে যে, তোমাদের মা‘বুদ হচ্ছেন একজন। (সূরা কাহফ- ১১০)
আল্লাহ দু’জন নন :
وَقَالَ اللهُ لَا تَتَّخِذُوْاۤ اِلٰهَيْنِ اثْنَيْنِۚ اِنَّمَا هُوَ اِلٰهٌ وَّاحِدٌۚ فَاِيَّايَ فَارْهَبُوْنِ
আল্লাহ বলেন, তোমরা দুই ইলাহ্ গ্রহণ করো না; তিনিই তো একমাত্র ইলাহ্। সুতরাং আমাকেই ভয় করো। (সূরা নাহল- ৫১)
আল্লাহ তিনজনও নন :
وَلَا تَقُوْلُوْا ثَلَاثَةٌؕ اِنْتَهُوْا خَيْرًا لَّكُمْؕ اِنَّمَا اللهُ اِلٰهٌ وَّاحِدٌؕ سُبْحَانَهٗۤ اَنْ يَّكُوْنَ لَهٗ وَلَدٌۘ - لَهٗ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَ رْضِؕ وَكَفٰى بِاللهِ وَكِيْلًا
এ কথা বলো না যে, (মা‘বুদের সংখ্যা) তিন। তোমরা এ থেকে বেঁচে থাকো, এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর। (কেননা) নিশ্চয় আল্লাহ একমাত্র ইলাহ্; তাঁর সন্তান হবে- এটা হতে তিনি পবিত্র। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবই তাঁর; আর অভিভাবক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। (সূরা নিসা- ১৭১)
আল্লাহর কোন সমত্মান নেই :
مَا كَانَ لِلّٰهِ اَنْ يَّتَّخِذَ مِنْ وَّلَدٍ سُبْحَانَهٗ
সমত্মান গ্রহণ করা আল্লাহর কাজ নয়, তিনি (এ থেকে) পবিত্র। (সূরা মারইয়াম- ৩৫)
وَمَا يَنْۢبَغِيْ لِلرَّحْمٰنِ اَنْ يَّتَّخِذَ وَلَدًا
সমত্মান গ্রহণ করা দয়াময়ের জন্য শোভনীয় নয়। (সূরা মারইয়াম- ৯২)
مَا اتَّخَذَ اللهُ مِنْ وَّلَدٍ وَّمَا كَانَ مَعَهٗ مِنْ اِلٰهٍ اِذًا لَّذَهَبَ كُلُّ اِلٰهٍ ۢبِمَا خَلَقَ وَلَعَلَا بَعْضُهُمْ عَلٰى بَعْضٍؕ سُبْحَانَ اللهِ عَمَّا يَصِفُوْنَ
আল্লাহ কোন সমত্মান গ্রহণ করেননি এবং তাঁর সাথে অপর কোন ইলাহ্ নেই। যদি থাকত তবে প্রত্যেক ইলাহ্ স্বীয় সৃষ্টি নিয়ে পৃথক হয়ে যেত এবং একে অপরের উপর প্রাধান্য বিসত্মার করত। (জেনে রেখো) তারা যেভাবে গুণান্বিত করে আল্লাহ তা হতে অনেক পবিত্র! (সূরা মু’মিনূন- ৯১)
আল্লাহর কোন মেয়ে নেই :
اَفَاَصْفَاكُمْ رَبُّكُمْ بِالْبَنِيْنَ وَاتَّخَذَ مِنَ الْمَلَآئِكَةِ اِنَاثًاؕ اِنَّكُمْ لَتَقُوْلُوْنَ قَوْلًا عَظِيْمًا
তোমাদের প্রতিপালক কি তোমাদেরকে পুত্র সমত্মানের জন্য নির্বাচিত করেছেন এবং তিনি নিজে ফেরেশতাদেরকে কন্যা হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছেন? নিশ্চয় তোমরা ভয়ানক কথা বলে থাক। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৪০)
اَصْطَفَى الْبَنَاتِ عَلَى الْبَنِيْنَ ‐ مَا لَكُمْ كَيْفَ تَحْكُمُوْن
তিনি কি পুত্রসন্তানের পরিবর্তে কন্যাসন্তানকে বেছে নিয়েছেন? তোমাদের কী হলো, তোমরা এ কেমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছ। (সূরা সাফ্ফাত- ১৫৩, ১৫৪)
আল্লাহর কোন স্ত্রীও নেই :
اَنّٰى يَكُوْنُ لَهٗ وَلَدٌ وَّلَمْ تَكُنْ لَّهٗ صَاحِبَةٌ
তাঁর সন্তান হবে কীভাবে? তাঁর তো কোন স্ত্রী-ই নেই। (সূরা আন‘আম- ১০১)
وَاَنَّهٗ تَعَالٰى جَدُّ رَبِّنَا مَا اتَّخَذَ صَاحِبَةً وَّلَا وَلَدًا
নিশ্চয় আমাদের প্রতিপালকের মর্যাদা সবকিছু থেকে ঊর্ধেব; তিনি কখনো কোন স্ত্রী গ্রহণ করেননি এবং কোন সন্তানও গ্রহণ করেননি। (সূরা জিন- ৩)
আল্লাহর কোন শরীক নেই :
قُلِ الْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ لَمْ يَتَّخِذْ وَلَدًا وَّلَمْ يَكُنْ لَّهٗ شَرِيْكٌ فِى الْمُلْكِ وَلَمْ يَكُنْ لَّهٗ وَلِيٌّ مِّنَ الذُّلِّ وَكَبِّرْهُ تَكْبِيْرًا
বলো, সমস্ত প্রশংসা কেবল আল্লাহরই। যিনি কোন সমত্মান গ্রহণ করেননি, (যার কারণে) তাঁর সার্বভৌমত্বে কোন অংশীদারও নেই। তিনি কখনো দুর্দশাগ্রসত্ম হন না, যে কারণে তাঁর অভিভাবকের প্রয়োজন হয়। সুতরাং তোমরা তাঁর মহত্ত্ব ঘোষণা করো। (সূরা বনী ইসরাঈল- ১১১)
لَا شَرِيْكَ لَهٗۚ وَبِذٰلِكَ اُمِرْتُ وَاَنَاْ اَوَّلُ الْمُسْلِمِيْنَ
তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি এরই জন্য আদিষ্ট হয়েছি; আর আমিই প্রথম মুসলিম। (সূরা আন‘আম- ১৬৩)
ব্যাখ্যা : মহান আল্লাহই এ বিশ্বজাহানের সর্বময় কর্তৃত্বের মালিক এবং তাঁর শাসন ক্ষমতায় কারো সামান্যতমও অংশ নেই। এখন যদি একথা জানা যায় যে, মহান আল্লাহ ছাড়া এ বিশ্বজাহানে অন্য কারো কর্তৃত্ব নেই এবং তিনিই সবচেয়ে বড় ক্ষমতাবান, তিনি ইচ্ছা করলে মুহূর্তেই সকল অস্তিত্ব ধ্বংস করে দিতে পারেন, তিনিই সবকিছু পরিচালনা করেন, তিনিই রিযিক প্রদান করেন, তাহলে কোন মাথা বিনয় প্রকাশ করার জন্য তাঁকে ছাড়া আর কারো সামনে নত হবে না, কোন হাতও অন্য কারো সামনে নজরানা পেশ করার জন্য এগিয়ে যাবে না, কোন কণ্ঠও অন্য কারো প্রশংসাগীতি গাবে না এবং কোনকিছু প্রার্থনাও করবে না। আর এ কাজগুলো দুনিয়ার কোন নিরেট মূর্খ ও অজ্ঞ ব্যক্তির পক্ষেও সম্ভব হবে না।
আল্লাহর রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম :
قُلِ ادْعُوا اللهَ اَوِ ادْعُوا الرَّحْمٰنَؕ اَيًّا مَّا تَدْعُوْا فَلَهُ الْاَ سْمَآءُ الْحُسْنٰى
বলো, তোমরা ‘আল্লাহ’ নামে আহবান করো অথবা ‘রাহ্মান’ নামে আহবান করো, তোমরা যে নামেই আহবান করো না কেন সকল সুন্দর নাম তো তাঁরই। (সূরা বনী ইসরাঈল- ১১০)
هُوَ اللهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْاَ سْمَآءُ الْحُسْنٰى
তিনিই আল্লাহ, সৃষ্টিকর্তা, উদ্ভাবনকর্তা ও রূপদাতা। আর সকল উত্তম নাম তাঁরই। (সূরা হাশর- ২৪)
আল্লাহকে এসব নাম দিয়েই ডাকতে হবে :
وَلِلّٰهِ الْاَ سْمَآءُ الْحُسْنٰى فَادْعُوْهُ بِهَا
আল্লাহর জন্য রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম। অতএব তোমরা তাঁকে সেসব নামেই ডাকো। (সূরা আ‘রাফ- ১৮০)
আল্লাহর নাম কত মহান :
تَبَارَكَ اسْمُ رَبِّكَ ذِى الْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ
কত মহান তোমার প্রতিপালকের নাম, যিনি মহাপ্রতাপশালী ও পরম অনুগ্রহশীল! (সূরা আর রহমান- ৭৮)
আল্লাহর নামের অমর্যাদা করা পাপ :
وَذَرُوا الَّذِيْنَ يُلْحِدُوْنَ فِۤي اَسْمَآئِهٖؕ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
যারা তাঁর নাম বিকৃত করে তাদেরকে বর্জন করো; অচিরেই তাদের কৃতকর্মের ফল তাদেরকে দিয়ে দেয়া হবে। (সূরা আ‘রাফ- ১৮০)
ব্যাখ্যা : ‘ইলহাদ’ হচ্ছে, এমনভাবে আল্লাহর নামকরণ করা, যাতে তাঁর মর্যাদাহানি হয়। যার মাধ্যমে তাঁর প্রতি দোষ-ত্রুটি আরোপ করা হয় অথবা যার সাহায্যে তাঁর উন্নত ও পবিত্র সত্তা সম্পর্কে কোন ভুল আকীদা-বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটে থাকে। যে নাম একমাত্র আল্লাহর জন্য উপযোগী, সৃষ্টিজগতের কাউকে সে নামে ডাকাও ইলহাদের অন্তর্ভুক্ত। আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহর নামের ব্যাপারে যারা সত্য থেকে বিচ্যুত হয়ে যায় তাদেরকে বর্জন করো অর্থাৎ সহজভাবে বুঝানোর পরও যদি তারা না বুঝে, তাহলে তাদের সাথে অনর্থক বিতর্কে জড়িত হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। নিজেদের গোমরাহীর ফল তারা নিজেরাই ভোগ করবে।
আল্লাহর কতিপয় নাম :
هُوَ اللهُ الَّذِيْ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَؕ اَلْمَلِكُ الْقُدُّوْسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيْزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُؕ سُبْحَانَ اللهِ عَمَّا يُشْرِكُوْنَ ‐ - هُوَ اللهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْاَسْمَآءُ الْحُسْنٰىؕ يُسَبِّحُ لَهٗ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِۚ وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত (সত্য) কোন মা‘বুদ নেই। তিনিই অধিপতি, অতীব পবিত্র, পরিপূর্ণ শান্তিদাতা, নিরাপত্তা দানকারী, রক্ষক, পরাক্রমশালী, প্রবল, অতীব মহিমান্বিত; আর তারা (মুশরিকরা) তাঁর সাথে যা শরীক স্থাপন করেছে তিনি তা থেকে অনেক পবিত্র। তিনিই আল্লাহ সৃজনকর্তা, উদ্ভাবনকর্তা ও রূপদাতা, সকল উত্তম নাম তাঁরই। আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সবকিছুই তাঁর মহিমা ঘোষণা করে। তিনি অতি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাবান। (সূরা হাশর- ২৩, ২৪)
আল্লাহ চিরস্থায়ী :
هُوَ الْحَيُّ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ فَادْعُوْهُ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ ؕ اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
তিনি চিরঞ্জীব, তিনি ব্যতীত (প্রকৃত) কোন ইলাহ্ নেই; সুতরাং তাঁর ইবাদাতে একনিষ্ঠ হয়ে তোমরা তাঁকেই আহবান করো। যাবতীয় প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য। (সূরা মু’মিন- ৬৫)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ তাঁর জীবনই বাস্তব ও প্রকৃত জীবন। একমাত্র তিনিই আপন ক্ষমতায় জীবিত। তাঁর জীবন ছাড়া আর কারো জীবনই চিরস্থায়ী নয়।
اَللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّوْمُ
আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী। (সূরা আলে ইমরান- ২)
كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ ‐ وَيَبْقٰى وَجْهُ رَبِّكَ ذُو الْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ
ভূপৃষ্ঠে যা কিছু আছে সবই ধ্বংসশীল। আর অবশিষ্ট থাকবে শুধু তোমার মহিমাময় ও মহানুভব প্রতিপালকের চেহারা (সত্তা)। (সূরা আর রহমান- ২৬, ২৭)
ব্যাখ্যা : এখানে জিন ও মানুষকে এক মহাসত্য সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। আর তা হলো, তোমরা নিজেরাও অবিনশ্বর নও এবং সেসব সাজ-সরঞ্জামও চিরস্থায়ী নয়, যা তোমরা এ পৃথিবীতে ভোগ করছ। অবিনশ্বর ও চিরস্থায়ী শুধুমাত্র সুমহান আল্লাহ। কোন নির্বোধ যদি তার ক্ষমতার ক্ষুদ্র গন্ডীর মধ্যে নিজের শ্রেষ্ঠত্বের ঢঙ্কা বাজায়, কিংবা কতিপয় মানুষকে তার কর্তৃত্ব স্বীকার করায় তাহলে তার এ মিথ্যা বেশি দিন চলতে পারে না। মহাবিশ্বের বিশাল বিস্তৃতির মধ্যে পৃথিবীর অনুপাত যেখানে মটরশুটির দানার মতোও নয়, তার এক নিভৃত কোণে দশ বিশ কিংবা পঞ্চাশ ষাট বছর যে কর্তৃত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব চলে এবং তারপরই অতীত কাহিনীতে রূপান্তরিত হতে হয়- তা এমন কোন কর্তৃত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব নয়, যার জন্য কেউ গর্ব করতে পারে।
আল্লাহ প্রশংসিত :
وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ غَنِيٌّ حَمِيْدٌ
জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ সম্পদশালী ও প্রশংসিত। (সূরা বাক্বারা- ২৬৭)
اِنَّهٗ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ
নিশ্চয় তিনি প্রচুর প্রশংসা ও বিপুল সম্মানের অধিকারী। (সূরা হুদ- ৭৩)
আল্লাহ সম্মানিত :
فَاِنَّ الْعِزَّةَ لِلّٰهِ جَمِيْعًا
নিশ্চয় সকল সম্মান আল্লাহরই জন্য। (সূরা নিসা- ১৩৯)
আল্লাহ হেকমতওয়ালা :
اِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ
নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা- ২৮; সূরা আন‘আম- ৮৩)
وَاللهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ
আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা নূর- ৫৮)
আল্লাহ গুণগ্রাহী :
وَاللهُ شَكُوْرٌ حَلِيْمٌ
আল্লাহ গুণগ্রাহী ও সহনশীল। (সূরা তাগাবুন- ১৭)
ব্যাখ্যা : যখন شُكْرٌ (শুকর) শব্দটি আল্লাহর পক্ষ হতে বান্দার প্রতি শুকরিয়া আদায় করার জন্য ব্যবহৃত হয় তখন তার অর্থ হয়, কাজের স্বীকৃতি দেয়া, মূল্যায়ন করা ইত্যাদি। আর যখন বান্দার পক্ষ থেকে আল্লাহর প্রতি শুকর করার কথা বলা হয় তখন এর অর্থ হয়, নিয়ামতের স্বীকৃতি দান করা। আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার শুকরিয়া আদায় করার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ বান্দার কাজের যথার্থ মূল্যায়ন করার ব্যাপারে কুণ্ঠিত নন। বান্দা তাঁর পথে যে ধরনের যতটুকু কাজ করে আল্লাহ তার যথার্থ মূল্যায়ন করেন। বান্দার কোন কাজ পারিশ্রমিক ও পুরস্কার লাভ থেকে বঞ্চিত থাকে না। বরং তিনি মুক্তহস্তে তার প্রত্যেকটি কাজের বিনিময় তার প্রাপ্যের চেয়ে অনেক বেশি দিয়ে থাকেন।
আল্লাহ ধৈর্যশীল :
وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ غَفُوْرٌ حَلِيْمٌ
জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও ধৈর্যশীল। (সূরা বাক্বারা- ২৩৫)
আল্লাহ সর্বশ্রোতা :
وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা বাক্বারা- ২৪৪)
وَلَه مَا سَكَنَ فِى اللَّيْلِ وَالنَّهَارِؕ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
রাত ও দিনে যা কিছু থাকে তা তাঁরই, আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা আন‘আম- ১৩)
وَاِمَّا يَنْزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللهِؕ اِنَّهٗ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে তবে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাও, নিশ্চয় তিনি সবকিছু শুনেন ও জানেন। (সূরা আ‘রাফ- ২০০)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ একই সময়ে সমগ্র বিশ্বজাহানের আওয়াজ আলাদা আলাদাভাবে শুনছেন এবং কোন আওয়াজ তাঁর শ্রবণে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না, যার ফলে একটি শুনলে অন্যটি শুনেন না। অনুরূপভাবে তিনি একই সময়ে সমগ্র বিশ্বজাহানের প্রতিটি জিনিস ও ঘটনা বিস্তারিত আকারে দেখছেন।
আল্লাহ সবই দেখেন :
اِعْمَلُوْا مَا شِئْتُمْ اِنَّهٗ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
তোমরা যা ইচ্ছা তা আমল কর; নিশ্চয় তোমরা যা কর তিনি তা দেখেন। (সূরা হামীম সাজদা- ৪০)
اِنَّ رَبَّكَ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيَقْدِرُؕ اِنَّهٗ كَانَ بِعِبَادِهٖ خَبِيْرًا ۢبَصِيْرًا
তোমার প্রতিপালক যাকে চান তার রিযিক বাড়িয়ে দেন, আবার যাকে চান কমিয়ে দেন। তিনি তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে ভালোভাবেই জানেন এবং তাদেরকে পর্যবেক্ষণ করেন। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩০)
وَاتَّقُوا اللهَ وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
আর আল্লাহকে ভয় করো এবং জেনে রেখো, তোমরা যা কর আল্লাহ তা অবশ্যই দেখেন। (সূরা বাক্বারা- ২৩৩)
আল্লাহ সবকিছু রক্ষণাবেক্ষণ করেন :
اِنَّ رَبِّيْ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ حَفِيْظٌ
নিশ্চয় আমার প্রতিপালক সমসত্ম কিছুর রক্ষণাবেক্ষণকারী। (সূরা হুদ- ৫৭)
فَاللهُ خَيْرٌ حَافِظًا وَّهُوَ اَرْحَمُ الرَّاحِمِيْنَ
আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ রক্ষণাবেক্ষণকারী এবং তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু। (সূরা ইউসুফ- ৬৪)
وَرَبُّكَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ حَفِيْظٌ
আপনার প্রতিপালক সর্ববিষয়ের রক্ষণাবেক্ষণকারী। (সূরা সাবা- ২১)
আল্লাহ বরকতময় :
تَبَارَكَ الَّذِيْ بِيَدِهِ الْمُلْكُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
বরকতময় সেই সত্তা, যাঁর হাতে সার্বভৌমত্ব; তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। (সূরা মুলক- ১)
ব্যাখ্যা : تَبَارَكَ (তাবারাকা) শব্দটি বহু অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন-
(১) মহা অনুগ্রহকারী ও সর্বজ্ঞ।
(২) বড়ই মর্যাদাশীল ও সম্মানী। কারণ পৃথিবী ও আকাশের সকল রাজত্ব তাঁরই।
(৩) বড়ই পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন। কারণ তাঁর সত্তা সকল প্রকার শিরকের গন্ধমুক্ত। তাঁর সমজাতীয় কেউ নেই, ফলে তাঁর সত্তার সার্বভৌমত্বে স্থলাভিষিক্তের জন্য কোন পুত্রের প্রয়োজন নেই।
(৪) শক্তির পূর্ণতার দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠ। কারণ তিনি বিশ্বজাহানের প্রত্যেকটি জিনিসের সৃষ্টিকর্তা।
সকল বাদশাহী আল্লাহর হাতে :
اَلَمْ تَعْلَمْ اَنَّ اللهَ لَهٗ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِؕ وَمَا لَكُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ مِنْ وَّلِيٍّ وَّلَا نَصِيْرٍ
তুমি কি জান না যে, আকাশ ও পৃথিবীর আধিপত্য আল্লাহরই। আর আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন বন্ধু নেই এবং কোন সাহায্যকারীও নেই। (সূরা বাক্বারা- ১০৭)
আল্লাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা দেন এবং যার থেকে চান ক্ষমতা কেঁড়ে নেন :
قُلِ اللّٰهُمَّ مَالِكَ الْمُلْكِ تُؤْتِى الْمُلْكَ مَنْ تَشَآءُ وَتَنْزِعُ الْمُلْكَ مِمَّنْ تَشَآءُ وَتُعِزُّ مَنْ تَشَآءُ وَتُذِلُّ مَنْ تَشَآءُؕ بِيَدِكَ الْخَيْرُ ؕ اِنَّكَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
বলো, হে আল্লাহ! আপনিই রাজত্বের মালিক। আপনি যাকে চান তাকে রাজত্ব দান করেন, আবার যার থেকে চান রাজত্ব কেঁড়ে নেন। আর যাকে চান সম্মানিত করেন, আবার যাকে চান অপদস্থ করেন। আপনার হাতেই কল্যাণ; নিশ্চয় আপনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। (সূরা আলে ইমরান- ২৬)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ কোন একটি গোত্র বা জাতিকে স্থায়ী কর্তৃত্ব দান করেন না, এটা তাঁর বিরাট অনুগ্রহ। তিনি পৃথিবীতে বিভিন্ন সময় একটি দলকে দিয়ে অন্য একটি দলকে প্রতিহত করেন। অন্যথায় যদি কোন একটি নির্দিষ্ট দলকে কোথাও স্থায়ী কর্তৃত্ব দান করতেন, তাহলে তাদের প্রভাব ও ক্ষমতার বড়াইয়ের ফলে যে ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড শুরু হতো তাতে শুধু প্রাসাদ, রাজনীতি এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানই ধ্বংস হতো না, বরং ইবাদাতগৃহগুলোও বিধ্বস্ত হয়ে যেত।
কিয়ামত দিবসের বাদশাও একমাত্র আল্লাহ :
وَلَهُ الْمُلْكُ يَوْمَ يُنْفَخُ فِى الصُّوْرِؕ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِؕ وَهُوَ الْحَكِيْمُ الْخَبِيْرُ
যেদিন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে, সেদিন কর্তৃত্ব তাঁরই থাকবে। তিনি অদৃশ্য ও দৃশ্য সবকিছু সম্বন্ধে অবগত রয়েছেন। আর তিনিই প্রজ্ঞাময় ও সম্যক অবগত। (সূরা আন‘আম- ৭৩)
يَوْمَ هُمْ بَارِزُوْنَۚ لَا يَخْفٰى عَلَى اللهِ مِنْهُمْ شَيْءٌؕ لِمَنِ الْمُلْكُ الْيَوْمَ ؕ لِلّٰهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ
যেদিন তারা (কবর হতে) বের হয়ে পড়বে, সেদিন আল্লাহর নিকট তাদের কোনকিছুই গোপন থাকবে না। (আললাহ জিজ্ঞেস করবেন) আজ কর্তৃত্ব কার? (বলা হবে) প্রবল পরাক্রমশালী এক আল্লাহরই। (সূরা মু’মিন- ১৬)
ব্যাখ্যা : পৃথিবীতে বহু অহংকারী ও ভ্রান্ত লোক নিজেদের বাদশাহী ও শক্তিমত্তার অহংকার করে থাকে এবং বহু সংখ্যক লোকও তাদের বাদশাহী ও শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে নেয়, তাদের হুকুম পালন করে; এমনকি অনেকে তাদেরকেই নিজেদের প্রভু মনে করতে থাকে। কিন্তু পরকালে তাদের কাছে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে যাবে। তখন আল্লাহ বলবেন, এখন বলো! প্রকৃতপক্ষে বাদশাহী কার? ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের প্রকৃত মালিক কে? আর কার হুকুমে সবকিছু পরিচালিত হয়? এটা এমন একটা বিষয় যে, কোন ব্যক্তি যদি তা বুঝার চেষ্টা করে তাহলে সে যত বড় বাদশাহ কিংবা মহানায়কই হয়ে থাকুক না কেন সে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে এবং তার মন-মগজ থেকে শক্তিমত্তার সমস্ত অহংকার বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
সকল মালিকানা আল্লাহর :
وَلِلّٰهِ مِيْرَاثُ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِ
আসমান ও জমিনের মালিকানা আল্লাহরই। (সূরা হাদীদ- ১০)
আসমান ও জমিনের সকল বাহিনী আল্লাহর :
وَلِلّٰهِ جُنُوْدُ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِؕ وَكَانَ اللهُ عَزِيْزًا حَكِيْمًا
আসমান ও জমিনের সকল সেনাবাহিনী আল্লাহর হাতেই রয়েছে। তিনি মহাশক্তিশালী ও সুকৌশলী। (সূরা ফাতহ- ৭)
আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী :
وَاِنَّ اللهَ لَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা আলে ইমরান- ৬২)
اِنَّ رَبَّكَ لَهُوَ الْعَزِيْزُ الرَّحِيْمُ
নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক মহাপরাক্রমশালী ও পরম দয়ালু। (সূরা শু‘আরা- ৬৮)
আল্লাহ মহাকৌশলী :
وَاُمْلِيْ لَهُمْ اِنَّ كَيْدِيْ مَتِيْنٌ
আমি তাদেরকে সুযোগ দিয়ে থাকি, নিশ্চয় আমার কৌশল অত্যন্ত বলিষ্ঠ। (সূরা আ‘রাফ- ১৮৩)
وَمَكَرُوْا وَمَكَرَ اللهُؕ وَاللهُ خَيْرُ الْمَاكِرِيْنَ
আর তারা কৌশল করেছিল ফলে আল্লাহও কৌশল গ্রহণ করলেন। মূলত আল্লাহই উত্তম কৌশলী।
(সূরা আলে ইমরান- ৫৪)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর কৌশলের অর্থ হচ্ছে, যদি কেউ সত্যকে না মানে এবং সে অনুযায়ী নিজেদের মনোভাব পরিবর্তন না করে, তাহলে তিনি তাদেরকে বিদ্রোহাত্মক নীতি অবলম্বন করে চলার সুযোগ দেবেন। যতদিন তারা বেঁচে থাকবে ততদিন তিনি তাদেরকে নিজের পক্ষ থেকে রিযিক ও অনুগ্রহ দান করতে থাকবেন। ফলে তাদের জীবনসামগ্রী তাদেরকে অমনোযোগী করে রাখবে। আর তারা যা কিছু করবে আল্লাহর ফেরেশতারা নীরবে তা লিখতে থাকবেন। এভাবে হঠাৎ মৃত্যুর সময় এসে যাবে। তখন নিজেদের কৃতকর্মের হিসাব দেয়ার জন্য তাদেরকে ধরে নিয়ে যাওয়া হবে। এভাবে আল্লাহ এমন কৌশল অবলম্বন করেন- যার ফলে মানুষ সূচনায় কখনো তার পরিণামের কল্পনাও করতে পারে না। আল্লাহর পরিকল্পনা এমন সূক্ষ্ম ও অজ্ঞাত পদ্ধতিতে বাস্তবায়িত হয় যে, যতক্ষণ পর্যন্ত তা চূড়ান্ত পর্যায়ে না পৌঁছে ততক্ষণ পর্যন্ত মানুষ বিষয়টি সম্পর্কে বিন্দুমাত্রও অবগত হতে পারে না।
আল্লাহ হিসাব গ্রহণকারী :
اِنَّ اللهَ كَانَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ حَسِيْبًا
নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ের হিসাব গ্রহণকারী। (সূরা নিসা- ৮৬)
হিসাবের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট :
فَاِنَّمَا عَلَيْكَ الْبَلَاغُ وَعَلَيْنَا الْحِسَابُ
তোমার কর্তব্য তো কেবল প্রচার করা; আর হিসাব-নিকাশ তো আমার কাজ। (সূরা রা‘দ- ৪০)
اِنَّ اِلَيْنَاۤ اِيَابَهُمْ ‐ ثُمَّ اِنَّ عَلَيْنَا حِسَابَهُمْ
নিশ্চয় আমার দিকেই তাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর আমার উপরই তাদের হিসাব-নিকাশ (গ্রহণের ভার)। (সূরা গাশিয়া- ২৫, ২৬)
আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী :
وَهُوَ سَرِيْعُ الْحِسَابِ
তিনি দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী। (সূরা রা‘দ- ৪১)
اَلْيَوْمَ تُجْزٰى كُلُّ نَفْسٍ ۢبِمَا كَسَبَتْؕ لَا ظُلْمَ الْيَوْمَؕ اِنَّ اللهَ سَرِيْعُ الْحِسَابِ
আজ প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার কৃতকর্মের বিনিময় দেয়া হবে; আজ কারো প্রতি যুলুম করা হবে না। নিশ্চয় আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী। (সূরা মু’মিন- ১৭)
وَاللهُ سَرِيْعُ الْحِسَابِ
নিশ্চয় আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী। (সূরা নূর- ৩৯)
وَمَنْ يَّكْفُرْ بِاٰيَاتِ اللهِ فَاِنَّ اللهَ سَرِيْعُ الْحِسَابِ
আর যে আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করবে, (তার জেনে রাখা উচিত) আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।
(সূরা আলে ইমরান- ১৯)
ব্যাখ্যা : মানবজাতির হিসাব গ্রহণ করতে আল্লাহর কোন বিলম্ব হবে না। যেভাবে তিনি গোটা বিশ্বের সমস্ত সৃষ্টিকে একসাথে রিযিক দান করছেন এবং কাউকে রিযিক পৌঁছানোর ব্যবস্থাপনায় এমন ব্যস্ত নন যে, অন্যদের রিযিক দেয়ার অবকাশই তিনি পান না, যেভাবে তিনি গোটা বিশ্বের প্রতিটি ব্যক্তি বা বস্তুকে দেখছেন, সমস্ত শব্দ শুনছেন, প্রতিটি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর এবং বৃহৎ থেকে বৃহত্তর ব্যাপারের ব্যবস্থাপনাও করছেন, তেমনি তিনি প্রত্যেক ব্যক্তির হিসাব গ্রহণ করবেন। একটি বিচারের শুনানিতে তিনি এতটা ব্যস্ত হয়ে পড়বেন না যে, সে সময়ে অন্যান্য মামলার শুনানি করতে পারবেন না। তাছাড়া তাঁর আদালতে এ কারণেও কোন বিলম্ব হবে না যে, মামলার পটভূমি ও ঘটনাবলির বিচার-বিশ্লেষণ এবং তার সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহ করা কঠিন হবে। কেননা আদালতের বিচারক নিজেই সরাসরি বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে অবগত থাকবেন। মামলার বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষের সবকিছুই তাঁর জানা থাকবে। সমস্ত ঘটনার খুঁটি-নাটি অনস্বীকার্য সাক্ষ্য প্রমাণসহ সবিস্তারে পেশ করা হবে। আর এতে তাঁর একটুও বিলম্ব হবে না। ফলে সমস্ত মামলার ফায়সালা তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে।
আল্লাহ প্রতিশোধ গ্রহণকারী :
وَاللهُ عَزِيْزٌ ذُو انْتِقَامٍ
আর আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রতিশোধ গ্রহণকারী। (সূরা আলে ইমরান- ৪)
وَمَنْ عَادَ فَيَنْتَقِمُ اللهُ مِنْهُؕ وَاللهُ عَزِيْزٌ ذُو انْتِقَامٍ
কেউ তা (পাপ) পুনরায় করলে আল্লাহ তার কাছ থেকে প্রতিশোধ নেবেন; আর আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রতিশোধ গ্রহণে প্রবল শক্তিমান। (সূরা মায়েদা- ৯৫)
اِنَّا مِنَ الْمُجْرِمِيْنَ مُنْتَقِمُوْنَ
অবশ্যই আমি পাপীদের থেকে প্রতিশোধ নেব। (সূরা সাজদা- ২২)
اَلَيْسَ اللهُ بِعَزِيْزٍ ذِى انْتِقَامٍ
আল্লাহ কি মহাপরাক্রমশালী ও প্রতিশোধ গ্রহণকারী নন? (সূরা যুমার- ৩৭)
আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা :
وَاِنَّ رَبَّكَ لَشَدِيْدُ الْعِقَابِ
নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক কঠোর শাসিত্মদানকারী। (সূরা রা‘দ- ৬)
وَاعْلَمُوْا ۤاَنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে খুবই কঠোর। (সূরা আনফাল- ২৫)
وَاللهُ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
আর আল্লাহ কঠোর শাস্তিদানকারী। (সূরা আলে ইমরান- ১১)
فَاِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা। (সূরা বাক্বারা- ২১১)
আল্লাহ দ্রুত শাস্তিদানকারী :
اِنَّ رَبَّكَ سَرِيْعُ الْعِقَابِ وَاِنَّهٗ لَغَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক শাস্তিদানে খুবই দ্রুততর, নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল ও দয়াময়। (সূরা আন‘আম- ১৬৫)
আল্লাহ বিশ্বের সবকিছু লালন-পালন করেন :
قُلْ اَغَيْرَ اللهِ اَبْغِيْ رَبًّا وَّهُوَ رَبُّ كُلِّ شَيْءٍ
বলো, আমি কি আল্লাহকে ছেড়ে অন্য কোন প্রতিপালককে খুঁজব? অথচ তিনিই সবকিছুর প্রতিপালক।
(সূরা আন‘আম- ১৬৪)
رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا وَرَبُّ الْمَشَارِقِ
তিনি আসমান ও জমিন এবং উভয়ের মাঝে অবস্থিত সবকিছুর প্রতিপালক এবং তিনি সকল উদয়স্থলের প্রতিপালক। (সূরা সাফফাত- ৫)
জীবন ও মৃত্যু আল্লাহর হাতে :
هُوَ الَّذِيْ يُحْيِيْ وَيُمِيْتُۚ فَاِذَا قَضٰۤى اَمْرًا فَاِنَّمَا يَقُوْلُ لَهٗ كُنْ فَيَكُوْنُ
তিনিই জীবিত করেন ও মৃত্যু ঘটান। যখন তিনি কোনকিছু করার সিদ্ধান্ত নেন তখন তিনি বলেন, হও অতঃপর তা হয়ে যায়। (সূরা মু’মিন- ৬৮)
لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ يُحْيِيْ وَيُمِيْتُ
তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই, তিনিই জীবিত করেন এবং মৃত্যু ঘটান। (সূরা আ‘রাফ- ১৫৮)
وَاللهُ يُحْيِيْ وَيُمِيْتُؕ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
আল্লাহই জীবিত করেন ও মৃত্যু ঘটান; আর তোমরা যা কর আল্লাহ তা পর্যবেক্ষণ করেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৬)
قُلِ ادْعُوا اللهَ اَوِ ادْعُوا الرَّحْمٰنَؕ اَيًّا مَّا تَدْعُوْا فَلَهُ الْاَ سْمَآءُ الْحُسْنٰى
বলো, তোমরা ‘আল্লাহ’ নামে আহবান করো অথবা ‘রাহ্মান’ নামে আহবান করো, তোমরা যে নামেই আহবান করো না কেন সকল সুন্দর নাম তো তাঁরই। (সূরা বনী ইসরাঈল- ১১০)
هُوَ اللهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْاَ سْمَآءُ الْحُسْنٰى
তিনিই আল্লাহ, সৃষ্টিকর্তা, উদ্ভাবনকর্তা ও রূপদাতা। আর সকল উত্তম নাম তাঁরই। (সূরা হাশর- ২৪)
আল্লাহকে এসব নাম দিয়েই ডাকতে হবে :
وَلِلّٰهِ الْاَ سْمَآءُ الْحُسْنٰى فَادْعُوْهُ بِهَا
আল্লাহর জন্য রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম। অতএব তোমরা তাঁকে সেসব নামেই ডাকো। (সূরা আ‘রাফ- ১৮০)
আল্লাহর নাম কত মহান :
تَبَارَكَ اسْمُ رَبِّكَ ذِى الْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ
কত মহান তোমার প্রতিপালকের নাম, যিনি মহাপ্রতাপশালী ও পরম অনুগ্রহশীল! (সূরা আর রহমান- ৭৮)
আল্লাহর নামের অমর্যাদা করা পাপ :
وَذَرُوا الَّذِيْنَ يُلْحِدُوْنَ فِۤي اَسْمَآئِهٖؕ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
যারা তাঁর নাম বিকৃত করে তাদেরকে বর্জন করো; অচিরেই তাদের কৃতকর্মের ফল তাদেরকে দিয়ে দেয়া হবে। (সূরা আ‘রাফ- ১৮০)
ব্যাখ্যা : ‘ইলহাদ’ হচ্ছে, এমনভাবে আল্লাহর নামকরণ করা, যাতে তাঁর মর্যাদাহানি হয়। যার মাধ্যমে তাঁর প্রতি দোষ-ত্রুটি আরোপ করা হয় অথবা যার সাহায্যে তাঁর উন্নত ও পবিত্র সত্তা সম্পর্কে কোন ভুল আকীদা-বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটে থাকে। যে নাম একমাত্র আল্লাহর জন্য উপযোগী, সৃষ্টিজগতের কাউকে সে নামে ডাকাও ইলহাদের অন্তর্ভুক্ত। আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহর নামের ব্যাপারে যারা সত্য থেকে বিচ্যুত হয়ে যায় তাদেরকে বর্জন করো অর্থাৎ সহজভাবে বুঝানোর পরও যদি তারা না বুঝে, তাহলে তাদের সাথে অনর্থক বিতর্কে জড়িত হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। নিজেদের গোমরাহীর ফল তারা নিজেরাই ভোগ করবে।
আল্লাহর কতিপয় নাম :
هُوَ اللهُ الَّذِيْ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَؕ اَلْمَلِكُ الْقُدُّوْسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيْزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُؕ سُبْحَانَ اللهِ عَمَّا يُشْرِكُوْنَ ‐ - هُوَ اللهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْاَسْمَآءُ الْحُسْنٰىؕ يُسَبِّحُ لَهٗ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِۚ وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত (সত্য) কোন মা‘বুদ নেই। তিনিই অধিপতি, অতীব পবিত্র, পরিপূর্ণ শান্তিদাতা, নিরাপত্তা দানকারী, রক্ষক, পরাক্রমশালী, প্রবল, অতীব মহিমান্বিত; আর তারা (মুশরিকরা) তাঁর সাথে যা শরীক স্থাপন করেছে তিনি তা থেকে অনেক পবিত্র। তিনিই আল্লাহ সৃজনকর্তা, উদ্ভাবনকর্তা ও রূপদাতা, সকল উত্তম নাম তাঁরই। আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সবকিছুই তাঁর মহিমা ঘোষণা করে। তিনি অতি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাবান। (সূরা হাশর- ২৩, ২৪)
আল্লাহ চিরস্থায়ী :
هُوَ الْحَيُّ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ فَادْعُوْهُ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ ؕ اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
তিনি চিরঞ্জীব, তিনি ব্যতীত (প্রকৃত) কোন ইলাহ্ নেই; সুতরাং তাঁর ইবাদাতে একনিষ্ঠ হয়ে তোমরা তাঁকেই আহবান করো। যাবতীয় প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য। (সূরা মু’মিন- ৬৫)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ তাঁর জীবনই বাস্তব ও প্রকৃত জীবন। একমাত্র তিনিই আপন ক্ষমতায় জীবিত। তাঁর জীবন ছাড়া আর কারো জীবনই চিরস্থায়ী নয়।
اَللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّوْمُ
আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী। (সূরা আলে ইমরান- ২)
كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ ‐ وَيَبْقٰى وَجْهُ رَبِّكَ ذُو الْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ
ভূপৃষ্ঠে যা কিছু আছে সবই ধ্বংসশীল। আর অবশিষ্ট থাকবে শুধু তোমার মহিমাময় ও মহানুভব প্রতিপালকের চেহারা (সত্তা)। (সূরা আর রহমান- ২৬, ২৭)
ব্যাখ্যা : এখানে জিন ও মানুষকে এক মহাসত্য সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। আর তা হলো, তোমরা নিজেরাও অবিনশ্বর নও এবং সেসব সাজ-সরঞ্জামও চিরস্থায়ী নয়, যা তোমরা এ পৃথিবীতে ভোগ করছ। অবিনশ্বর ও চিরস্থায়ী শুধুমাত্র সুমহান আল্লাহ। কোন নির্বোধ যদি তার ক্ষমতার ক্ষুদ্র গন্ডীর মধ্যে নিজের শ্রেষ্ঠত্বের ঢঙ্কা বাজায়, কিংবা কতিপয় মানুষকে তার কর্তৃত্ব স্বীকার করায় তাহলে তার এ মিথ্যা বেশি দিন চলতে পারে না। মহাবিশ্বের বিশাল বিস্তৃতির মধ্যে পৃথিবীর অনুপাত যেখানে মটরশুটির দানার মতোও নয়, তার এক নিভৃত কোণে দশ বিশ কিংবা পঞ্চাশ ষাট বছর যে কর্তৃত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব চলে এবং তারপরই অতীত কাহিনীতে রূপান্তরিত হতে হয়- তা এমন কোন কর্তৃত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব নয়, যার জন্য কেউ গর্ব করতে পারে।
আল্লাহ প্রশংসিত :
وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ غَنِيٌّ حَمِيْدٌ
জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ সম্পদশালী ও প্রশংসিত। (সূরা বাক্বারা- ২৬৭)
اِنَّهٗ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ
নিশ্চয় তিনি প্রচুর প্রশংসা ও বিপুল সম্মানের অধিকারী। (সূরা হুদ- ৭৩)
আল্লাহ সম্মানিত :
فَاِنَّ الْعِزَّةَ لِلّٰهِ جَمِيْعًا
নিশ্চয় সকল সম্মান আল্লাহরই জন্য। (সূরা নিসা- ১৩৯)
আল্লাহ হেকমতওয়ালা :
اِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ
নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা- ২৮; সূরা আন‘আম- ৮৩)
وَاللهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ
আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা নূর- ৫৮)
আল্লাহ গুণগ্রাহী :
وَاللهُ شَكُوْرٌ حَلِيْمٌ
আল্লাহ গুণগ্রাহী ও সহনশীল। (সূরা তাগাবুন- ১৭)
ব্যাখ্যা : যখন شُكْرٌ (শুকর) শব্দটি আল্লাহর পক্ষ হতে বান্দার প্রতি শুকরিয়া আদায় করার জন্য ব্যবহৃত হয় তখন তার অর্থ হয়, কাজের স্বীকৃতি দেয়া, মূল্যায়ন করা ইত্যাদি। আর যখন বান্দার পক্ষ থেকে আল্লাহর প্রতি শুকর করার কথা বলা হয় তখন এর অর্থ হয়, নিয়ামতের স্বীকৃতি দান করা। আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার শুকরিয়া আদায় করার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ বান্দার কাজের যথার্থ মূল্যায়ন করার ব্যাপারে কুণ্ঠিত নন। বান্দা তাঁর পথে যে ধরনের যতটুকু কাজ করে আল্লাহ তার যথার্থ মূল্যায়ন করেন। বান্দার কোন কাজ পারিশ্রমিক ও পুরস্কার লাভ থেকে বঞ্চিত থাকে না। বরং তিনি মুক্তহস্তে তার প্রত্যেকটি কাজের বিনিময় তার প্রাপ্যের চেয়ে অনেক বেশি দিয়ে থাকেন।
আল্লাহ ধৈর্যশীল :
وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ غَفُوْرٌ حَلِيْمٌ
জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও ধৈর্যশীল। (সূরা বাক্বারা- ২৩৫)
আল্লাহ সর্বশ্রোতা :
وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা বাক্বারা- ২৪৪)
وَلَه مَا سَكَنَ فِى اللَّيْلِ وَالنَّهَارِؕ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
রাত ও দিনে যা কিছু থাকে তা তাঁরই, আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা আন‘আম- ১৩)
وَاِمَّا يَنْزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللهِؕ اِنَّهٗ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে তবে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাও, নিশ্চয় তিনি সবকিছু শুনেন ও জানেন। (সূরা আ‘রাফ- ২০০)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ একই সময়ে সমগ্র বিশ্বজাহানের আওয়াজ আলাদা আলাদাভাবে শুনছেন এবং কোন আওয়াজ তাঁর শ্রবণে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না, যার ফলে একটি শুনলে অন্যটি শুনেন না। অনুরূপভাবে তিনি একই সময়ে সমগ্র বিশ্বজাহানের প্রতিটি জিনিস ও ঘটনা বিস্তারিত আকারে দেখছেন।
আল্লাহ সবই দেখেন :
اِعْمَلُوْا مَا شِئْتُمْ اِنَّهٗ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
তোমরা যা ইচ্ছা তা আমল কর; নিশ্চয় তোমরা যা কর তিনি তা দেখেন। (সূরা হামীম সাজদা- ৪০)
اِنَّ رَبَّكَ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيَقْدِرُؕ اِنَّهٗ كَانَ بِعِبَادِهٖ خَبِيْرًا ۢبَصِيْرًا
তোমার প্রতিপালক যাকে চান তার রিযিক বাড়িয়ে দেন, আবার যাকে চান কমিয়ে দেন। তিনি তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে ভালোভাবেই জানেন এবং তাদেরকে পর্যবেক্ষণ করেন। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩০)
وَاتَّقُوا اللهَ وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
আর আল্লাহকে ভয় করো এবং জেনে রেখো, তোমরা যা কর আল্লাহ তা অবশ্যই দেখেন। (সূরা বাক্বারা- ২৩৩)
আল্লাহ সবকিছু রক্ষণাবেক্ষণ করেন :
اِنَّ رَبِّيْ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ حَفِيْظٌ
নিশ্চয় আমার প্রতিপালক সমসত্ম কিছুর রক্ষণাবেক্ষণকারী। (সূরা হুদ- ৫৭)
فَاللهُ خَيْرٌ حَافِظًا وَّهُوَ اَرْحَمُ الرَّاحِمِيْنَ
আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ রক্ষণাবেক্ষণকারী এবং তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু। (সূরা ইউসুফ- ৬৪)
وَرَبُّكَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ حَفِيْظٌ
আপনার প্রতিপালক সর্ববিষয়ের রক্ষণাবেক্ষণকারী। (সূরা সাবা- ২১)
আল্লাহ বরকতময় :
تَبَارَكَ الَّذِيْ بِيَدِهِ الْمُلْكُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
বরকতময় সেই সত্তা, যাঁর হাতে সার্বভৌমত্ব; তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। (সূরা মুলক- ১)
ব্যাখ্যা : تَبَارَكَ (তাবারাকা) শব্দটি বহু অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন-
(১) মহা অনুগ্রহকারী ও সর্বজ্ঞ।
(২) বড়ই মর্যাদাশীল ও সম্মানী। কারণ পৃথিবী ও আকাশের সকল রাজত্ব তাঁরই।
(৩) বড়ই পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন। কারণ তাঁর সত্তা সকল প্রকার শিরকের গন্ধমুক্ত। তাঁর সমজাতীয় কেউ নেই, ফলে তাঁর সত্তার সার্বভৌমত্বে স্থলাভিষিক্তের জন্য কোন পুত্রের প্রয়োজন নেই।
(৪) শক্তির পূর্ণতার দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠ। কারণ তিনি বিশ্বজাহানের প্রত্যেকটি জিনিসের সৃষ্টিকর্তা।
সকল বাদশাহী আল্লাহর হাতে :
اَلَمْ تَعْلَمْ اَنَّ اللهَ لَهٗ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِؕ وَمَا لَكُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ مِنْ وَّلِيٍّ وَّلَا نَصِيْرٍ
তুমি কি জান না যে, আকাশ ও পৃথিবীর আধিপত্য আল্লাহরই। আর আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন বন্ধু নেই এবং কোন সাহায্যকারীও নেই। (সূরা বাক্বারা- ১০৭)
আল্লাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা দেন এবং যার থেকে চান ক্ষমতা কেঁড়ে নেন :
قُلِ اللّٰهُمَّ مَالِكَ الْمُلْكِ تُؤْتِى الْمُلْكَ مَنْ تَشَآءُ وَتَنْزِعُ الْمُلْكَ مِمَّنْ تَشَآءُ وَتُعِزُّ مَنْ تَشَآءُ وَتُذِلُّ مَنْ تَشَآءُؕ بِيَدِكَ الْخَيْرُ ؕ اِنَّكَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
বলো, হে আল্লাহ! আপনিই রাজত্বের মালিক। আপনি যাকে চান তাকে রাজত্ব দান করেন, আবার যার থেকে চান রাজত্ব কেঁড়ে নেন। আর যাকে চান সম্মানিত করেন, আবার যাকে চান অপদস্থ করেন। আপনার হাতেই কল্যাণ; নিশ্চয় আপনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। (সূরা আলে ইমরান- ২৬)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ কোন একটি গোত্র বা জাতিকে স্থায়ী কর্তৃত্ব দান করেন না, এটা তাঁর বিরাট অনুগ্রহ। তিনি পৃথিবীতে বিভিন্ন সময় একটি দলকে দিয়ে অন্য একটি দলকে প্রতিহত করেন। অন্যথায় যদি কোন একটি নির্দিষ্ট দলকে কোথাও স্থায়ী কর্তৃত্ব দান করতেন, তাহলে তাদের প্রভাব ও ক্ষমতার বড়াইয়ের ফলে যে ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড শুরু হতো তাতে শুধু প্রাসাদ, রাজনীতি এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানই ধ্বংস হতো না, বরং ইবাদাতগৃহগুলোও বিধ্বস্ত হয়ে যেত।
কিয়ামত দিবসের বাদশাও একমাত্র আল্লাহ :
وَلَهُ الْمُلْكُ يَوْمَ يُنْفَخُ فِى الصُّوْرِؕ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِؕ وَهُوَ الْحَكِيْمُ الْخَبِيْرُ
যেদিন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে, সেদিন কর্তৃত্ব তাঁরই থাকবে। তিনি অদৃশ্য ও দৃশ্য সবকিছু সম্বন্ধে অবগত রয়েছেন। আর তিনিই প্রজ্ঞাময় ও সম্যক অবগত। (সূরা আন‘আম- ৭৩)
يَوْمَ هُمْ بَارِزُوْنَۚ لَا يَخْفٰى عَلَى اللهِ مِنْهُمْ شَيْءٌؕ لِمَنِ الْمُلْكُ الْيَوْمَ ؕ لِلّٰهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ
যেদিন তারা (কবর হতে) বের হয়ে পড়বে, সেদিন আল্লাহর নিকট তাদের কোনকিছুই গোপন থাকবে না। (আললাহ জিজ্ঞেস করবেন) আজ কর্তৃত্ব কার? (বলা হবে) প্রবল পরাক্রমশালী এক আল্লাহরই। (সূরা মু’মিন- ১৬)
ব্যাখ্যা : পৃথিবীতে বহু অহংকারী ও ভ্রান্ত লোক নিজেদের বাদশাহী ও শক্তিমত্তার অহংকার করে থাকে এবং বহু সংখ্যক লোকও তাদের বাদশাহী ও শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে নেয়, তাদের হুকুম পালন করে; এমনকি অনেকে তাদেরকেই নিজেদের প্রভু মনে করতে থাকে। কিন্তু পরকালে তাদের কাছে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে যাবে। তখন আল্লাহ বলবেন, এখন বলো! প্রকৃতপক্ষে বাদশাহী কার? ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের প্রকৃত মালিক কে? আর কার হুকুমে সবকিছু পরিচালিত হয়? এটা এমন একটা বিষয় যে, কোন ব্যক্তি যদি তা বুঝার চেষ্টা করে তাহলে সে যত বড় বাদশাহ কিংবা মহানায়কই হয়ে থাকুক না কেন সে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে এবং তার মন-মগজ থেকে শক্তিমত্তার সমস্ত অহংকার বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
সকল মালিকানা আল্লাহর :
وَلِلّٰهِ مِيْرَاثُ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِ
আসমান ও জমিনের মালিকানা আল্লাহরই। (সূরা হাদীদ- ১০)
আসমান ও জমিনের সকল বাহিনী আল্লাহর :
وَلِلّٰهِ جُنُوْدُ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِؕ وَكَانَ اللهُ عَزِيْزًا حَكِيْمًا
আসমান ও জমিনের সকল সেনাবাহিনী আল্লাহর হাতেই রয়েছে। তিনি মহাশক্তিশালী ও সুকৌশলী। (সূরা ফাতহ- ৭)
আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী :
وَاِنَّ اللهَ لَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা আলে ইমরান- ৬২)
اِنَّ رَبَّكَ لَهُوَ الْعَزِيْزُ الرَّحِيْمُ
নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক মহাপরাক্রমশালী ও পরম দয়ালু। (সূরা শু‘আরা- ৬৮)
আল্লাহ মহাকৌশলী :
وَاُمْلِيْ لَهُمْ اِنَّ كَيْدِيْ مَتِيْنٌ
আমি তাদেরকে সুযোগ দিয়ে থাকি, নিশ্চয় আমার কৌশল অত্যন্ত বলিষ্ঠ। (সূরা আ‘রাফ- ১৮৩)
وَمَكَرُوْا وَمَكَرَ اللهُؕ وَاللهُ خَيْرُ الْمَاكِرِيْنَ
আর তারা কৌশল করেছিল ফলে আল্লাহও কৌশল গ্রহণ করলেন। মূলত আল্লাহই উত্তম কৌশলী।
(সূরা আলে ইমরান- ৫৪)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর কৌশলের অর্থ হচ্ছে, যদি কেউ সত্যকে না মানে এবং সে অনুযায়ী নিজেদের মনোভাব পরিবর্তন না করে, তাহলে তিনি তাদেরকে বিদ্রোহাত্মক নীতি অবলম্বন করে চলার সুযোগ দেবেন। যতদিন তারা বেঁচে থাকবে ততদিন তিনি তাদেরকে নিজের পক্ষ থেকে রিযিক ও অনুগ্রহ দান করতে থাকবেন। ফলে তাদের জীবনসামগ্রী তাদেরকে অমনোযোগী করে রাখবে। আর তারা যা কিছু করবে আল্লাহর ফেরেশতারা নীরবে তা লিখতে থাকবেন। এভাবে হঠাৎ মৃত্যুর সময় এসে যাবে। তখন নিজেদের কৃতকর্মের হিসাব দেয়ার জন্য তাদেরকে ধরে নিয়ে যাওয়া হবে। এভাবে আল্লাহ এমন কৌশল অবলম্বন করেন- যার ফলে মানুষ সূচনায় কখনো তার পরিণামের কল্পনাও করতে পারে না। আল্লাহর পরিকল্পনা এমন সূক্ষ্ম ও অজ্ঞাত পদ্ধতিতে বাস্তবায়িত হয় যে, যতক্ষণ পর্যন্ত তা চূড়ান্ত পর্যায়ে না পৌঁছে ততক্ষণ পর্যন্ত মানুষ বিষয়টি সম্পর্কে বিন্দুমাত্রও অবগত হতে পারে না।
আল্লাহ হিসাব গ্রহণকারী :
اِنَّ اللهَ كَانَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ حَسِيْبًا
নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ের হিসাব গ্রহণকারী। (সূরা নিসা- ৮৬)
হিসাবের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট :
فَاِنَّمَا عَلَيْكَ الْبَلَاغُ وَعَلَيْنَا الْحِسَابُ
তোমার কর্তব্য তো কেবল প্রচার করা; আর হিসাব-নিকাশ তো আমার কাজ। (সূরা রা‘দ- ৪০)
اِنَّ اِلَيْنَاۤ اِيَابَهُمْ ‐ ثُمَّ اِنَّ عَلَيْنَا حِسَابَهُمْ
নিশ্চয় আমার দিকেই তাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর আমার উপরই তাদের হিসাব-নিকাশ (গ্রহণের ভার)। (সূরা গাশিয়া- ২৫, ২৬)
আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী :
وَهُوَ سَرِيْعُ الْحِسَابِ
তিনি দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী। (সূরা রা‘দ- ৪১)
اَلْيَوْمَ تُجْزٰى كُلُّ نَفْسٍ ۢبِمَا كَسَبَتْؕ لَا ظُلْمَ الْيَوْمَؕ اِنَّ اللهَ سَرِيْعُ الْحِسَابِ
আজ প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার কৃতকর্মের বিনিময় দেয়া হবে; আজ কারো প্রতি যুলুম করা হবে না। নিশ্চয় আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী। (সূরা মু’মিন- ১৭)
وَاللهُ سَرِيْعُ الْحِسَابِ
নিশ্চয় আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী। (সূরা নূর- ৩৯)
وَمَنْ يَّكْفُرْ بِاٰيَاتِ اللهِ فَاِنَّ اللهَ سَرِيْعُ الْحِسَابِ
আর যে আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করবে, (তার জেনে রাখা উচিত) আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।
(সূরা আলে ইমরান- ১৯)
ব্যাখ্যা : মানবজাতির হিসাব গ্রহণ করতে আল্লাহর কোন বিলম্ব হবে না। যেভাবে তিনি গোটা বিশ্বের সমস্ত সৃষ্টিকে একসাথে রিযিক দান করছেন এবং কাউকে রিযিক পৌঁছানোর ব্যবস্থাপনায় এমন ব্যস্ত নন যে, অন্যদের রিযিক দেয়ার অবকাশই তিনি পান না, যেভাবে তিনি গোটা বিশ্বের প্রতিটি ব্যক্তি বা বস্তুকে দেখছেন, সমস্ত শব্দ শুনছেন, প্রতিটি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর এবং বৃহৎ থেকে বৃহত্তর ব্যাপারের ব্যবস্থাপনাও করছেন, তেমনি তিনি প্রত্যেক ব্যক্তির হিসাব গ্রহণ করবেন। একটি বিচারের শুনানিতে তিনি এতটা ব্যস্ত হয়ে পড়বেন না যে, সে সময়ে অন্যান্য মামলার শুনানি করতে পারবেন না। তাছাড়া তাঁর আদালতে এ কারণেও কোন বিলম্ব হবে না যে, মামলার পটভূমি ও ঘটনাবলির বিচার-বিশ্লেষণ এবং তার সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহ করা কঠিন হবে। কেননা আদালতের বিচারক নিজেই সরাসরি বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে অবগত থাকবেন। মামলার বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষের সবকিছুই তাঁর জানা থাকবে। সমস্ত ঘটনার খুঁটি-নাটি অনস্বীকার্য সাক্ষ্য প্রমাণসহ সবিস্তারে পেশ করা হবে। আর এতে তাঁর একটুও বিলম্ব হবে না। ফলে সমস্ত মামলার ফায়সালা তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে।
আল্লাহ প্রতিশোধ গ্রহণকারী :
وَاللهُ عَزِيْزٌ ذُو انْتِقَامٍ
আর আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রতিশোধ গ্রহণকারী। (সূরা আলে ইমরান- ৪)
وَمَنْ عَادَ فَيَنْتَقِمُ اللهُ مِنْهُؕ وَاللهُ عَزِيْزٌ ذُو انْتِقَامٍ
কেউ তা (পাপ) পুনরায় করলে আল্লাহ তার কাছ থেকে প্রতিশোধ নেবেন; আর আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রতিশোধ গ্রহণে প্রবল শক্তিমান। (সূরা মায়েদা- ৯৫)
اِنَّا مِنَ الْمُجْرِمِيْنَ مُنْتَقِمُوْنَ
অবশ্যই আমি পাপীদের থেকে প্রতিশোধ নেব। (সূরা সাজদা- ২২)
اَلَيْسَ اللهُ بِعَزِيْزٍ ذِى انْتِقَامٍ
আল্লাহ কি মহাপরাক্রমশালী ও প্রতিশোধ গ্রহণকারী নন? (সূরা যুমার- ৩৭)
আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা :
وَاِنَّ رَبَّكَ لَشَدِيْدُ الْعِقَابِ
নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক কঠোর শাসিত্মদানকারী। (সূরা রা‘দ- ৬)
وَاعْلَمُوْا ۤاَنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে খুবই কঠোর। (সূরা আনফাল- ২৫)
وَاللهُ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
আর আল্লাহ কঠোর শাস্তিদানকারী। (সূরা আলে ইমরান- ১১)
فَاِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা। (সূরা বাক্বারা- ২১১)
আল্লাহ দ্রুত শাস্তিদানকারী :
اِنَّ رَبَّكَ سَرِيْعُ الْعِقَابِ وَاِنَّهٗ لَغَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক শাস্তিদানে খুবই দ্রুততর, নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল ও দয়াময়। (সূরা আন‘আম- ১৬৫)
আল্লাহ বিশ্বের সবকিছু লালন-পালন করেন :
قُلْ اَغَيْرَ اللهِ اَبْغِيْ رَبًّا وَّهُوَ رَبُّ كُلِّ شَيْءٍ
বলো, আমি কি আল্লাহকে ছেড়ে অন্য কোন প্রতিপালককে খুঁজব? অথচ তিনিই সবকিছুর প্রতিপালক।
(সূরা আন‘আম- ১৬৪)
رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا وَرَبُّ الْمَشَارِقِ
তিনি আসমান ও জমিন এবং উভয়ের মাঝে অবস্থিত সবকিছুর প্রতিপালক এবং তিনি সকল উদয়স্থলের প্রতিপালক। (সূরা সাফফাত- ৫)
জীবন ও মৃত্যু আল্লাহর হাতে :
هُوَ الَّذِيْ يُحْيِيْ وَيُمِيْتُۚ فَاِذَا قَضٰۤى اَمْرًا فَاِنَّمَا يَقُوْلُ لَهٗ كُنْ فَيَكُوْنُ
তিনিই জীবিত করেন ও মৃত্যু ঘটান। যখন তিনি কোনকিছু করার সিদ্ধান্ত নেন তখন তিনি বলেন, হও অতঃপর তা হয়ে যায়। (সূরা মু’মিন- ৬৮)
لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ يُحْيِيْ وَيُمِيْتُ
তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই, তিনিই জীবিত করেন এবং মৃত্যু ঘটান। (সূরা আ‘রাফ- ১৫৮)
وَاللهُ يُحْيِيْ وَيُمِيْتُؕ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
আল্লাহই জীবিত করেন ও মৃত্যু ঘটান; আর তোমরা যা কর আল্লাহ তা পর্যবেক্ষণ করেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৬)
আল্লাহ সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা :
اَللهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ وَّهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ وَّكِيْلٌ
আল্লাহ সবকিছুর স্রষ্টা এবং তিনিই সবকিছুর ব্যবস্থাপক। (সূরা যুমার- ৬২)
ذٰلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمْۚ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَۚ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ فَاعْبُدُوْهُۚ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ وَّكِيْلٌ
তিনিই আল্লাহ, যিনি তোমাদের প্রতিপালক; তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই। তিনিই সবকিছুর স্রষ্টা; সুতরাং তোমরা তাঁরই ইবাদাত করো; তিনি সবকিছুর তত্ত্বাবধায়ক। (সূরা আন‘আম- ১০২)
আল্লাহ হলেন বিজ্ঞ স্রষ্টা :
فَتَبَارَكَ اللهُ اَحْسَنُ الْخَالِقِيْنَ
সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ কতই না মহান! (সূরা মু’মিনূন- ১৪)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ বিশ্বজাহানের প্রত্যেকটি জিনিসের কেবল অস্তিত্বই দান করেননি; বরং তিনি প্রত্যেকটি জিনিসকে তার সত্তার সাথে সম্পর্কিত আকার-আকৃতি, শক্তি, যোগ্যতা, গুণাগুণ, বৈশিষ্ট্য, কাজ ও কাজের পদ্ধতি, স্থায়িত্বের সময়কাল, উত্থান ও ক্রমবিকাশের সীমা এবং অন্যান্য বিষয়াবলি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তারপর সেসব কার্যর্কলাপ, উপায়-উপকরণ ও সুযোগসুবিধার বদৌলতে প্রত্যেকটি সত্তা নিজ নিজ কর্মসীমার মধ্যে তথা নিজ নিজ সামর্থ্যানুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে।
اِنَّ رَبَّكَ هُوَ الْخَلَّاقُ الْعَلِيْمُ
নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক মহাস্রষ্টা ও মহাজ্ঞানী। (সূরা হিজর- ৮৬)
আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন :
وَرَبُّكَ يَخْلُقُ مَا يَشَآءُ وَيَخْتَارُؕ مَا كَانَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ ؕ سُبْحَانَ اللهِ وَتَعَالٰى عَمَّا يُشْرِكُوْنَ
তোমার প্রতিপালক যা ইচছা সৃষ্টি করেন এবং যাকে ইচ্ছা মনোনীত করেন, তাতে তাদের কোন হাত নেই। আল্লাহ পবিত্র এবং মহান; আর তারা যাকে শরীক করে তা হতে তিনি অনেক পবিত্র ও মহান। (সূরা ক্বাসাস- ৬৮)
আল্লাহর সকল সৃষ্টিই সুন্দর :
اَلَّذِيْۤ اَحْسَنَ كُلَّ شَيْءٍ خَلَقَهٗ
যিনি সবকিছুকে অতি সুন্দররূপে সৃজন করেছেন। (সূরা সাজদা- ৭)
ব্যাখ্যা : দুনিয়ার প্রতিটি জিনিস তাঁরই নির্মাণ কৌশলে নির্মিত হয়েছে। প্রতিটি জিনিসকে তিনিই আকার-আকৃতি, শক্তি, যোগ্যতা, গুণ ও বিশেষত্ব দান করেছেন। দুনিয়ায় কাজ করার জন্য হাতের যে গঠনাকৃতির প্রয়োজন ছিল, তা তিনি দিয়েছেন। পায়ের জন্য যে সর্বাধিক উপযুক্ত গঠনাকৃতির প্রয়োজন, তাও দিয়েছেন। মানুষ, পশু, উদ্ভিদ, বাতাস, পানি, আলো, প্রত্যেককে তিনি এমন বিশেষ আকৃতি দান করেছেন- যা এ বিশ্বজাহানে তার নিজের কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজন ছিল। তারপর তিনি প্রতিটি জিনিসকে কেবল তার বিশেষ আকৃতি দান করেই ছেড়ে দেননি; বরং তিনি সবাইকে পথও দেখিয়েছেন। দুনিয়ায় এমন কোন জিনিস নেই, যাকে তিনি নিজের গঠনাকৃতিকে কাজে লাগানোর এবং নিজের সৃষ্টির উদ্দেশ্য পূর্ণ করার পদ্ধতি শেখাননি। কানকে শোনা ও চোখকে দেখা তিনিই শিখিয়েছেন। মাছকে সাঁতার কাটার এবং পাখিকে উড়ার শিক্ষা তিনিই দিয়েছেন। গাছকে ফুল ও ফল দেয়ার ও মাটিকে উদ্ভিদ উৎপাদন করার নির্দেশ তিনিই দিয়েছেন। মোটকথা তিনি কেবল সারা বিশ্বজাহান এবং তাঁর সমস্ত সৃষ্টিকুলের স্রষ্টাই নন; বরং তাদের শিক্ষক ও পথপ্রদর্শকও।
আল্লাহ সুন্দরভাবে আকৃতি গঠন করেন :
هُوَ الَّذِيْ يُصَوِّرُكُمْ فِى الْاَ رْحَامِ كَيْفَ يَشَآءُؕ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
তিনি ঐ সত্তা, যিনি মাতৃগর্ভে নিজ ইচ্ছানুযায়ী তোমাদের আকৃতি গঠন করেছেন। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তিনি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা আলে ইমরান- ৬)
خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضَ بِالْحَقِّ وَصَوَّرَكُمْ فَاَحْسَنَ صُوَرَكُمْۚ وَاِلَيْهِ الْمَصِيْرُ
তিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে এবং তোমাদেরকে অতি সুন্দর আকৃতি দান করেছেন; আর তোমাদের প্রত্যাবর্তন তো তাঁরই দিকে। (সূরা তাগাবুন- ৩)
আল্লাহ সবকিছু পরিমাণ অনুযায়ী সৃষ্টি করেন :
اِنَّا كُلَّ شَيْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ
আমি সবকিছু সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত পরিমাণে। (সূরা ক্বামার- ৪৯)
আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে কোন খুঁত নেই :
مَا تَرٰى فِيْ خَلْقِ الرَّحْمٰنِ مِنْ تَفَاوُتٍؕ فَارْجِعِ الْبَصَرَ هَلْ تَرٰى مِنْ فُطُوْرٍ
দয়াময় আল্লাহর সৃষ্টিতে তুমি কোন খুঁত দেখতে পাবে না। অতএব তুমি চক্ষু ফিরিয়ে দেখো, (তাঁর সৃষ্টিতে) কোন ত্রুটি দেখতে পাও কি? (সূরা মুলক- ৩)
ثُمَّ ارْجِعِ الْبَصَرَ كَرَّتَيْنِ يَنْقَلِبْ اِلَيْكَ الْبَصَرُ خَاسِئًا وَّهُوَ حَسِيْرٌ
অতঃপর তুমি (প্রতিটি সৃষ্টির দিকে) দু’বার করে দৃষ্টি ফিরাও, সেই দৃষ্টি ব্যর্থ ও ক্লান্ত হয়ে তোমার দিকেই ফিরে আসবে। (সূরা মুলক- ৪)
আল্লাহ প্রতিটি জিনিস জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন :
وَمِنْ كُلِّ شَيْءٍ خَلَقْنَا زَوْجَيْنِ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ
আমি প্রত্যেক বস্তু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করতে পার। (সূরা যারিয়াত- ৪৯)
سُبْحَانَ الَّذِيْ خَلَقَ الْاَزْوَاجَ كُلَّهَا مِمَّا تُنْۢبِتُ الْاَ رْضُ وَمِنْ اَنْفُسِهِمْ وَمِمَّا لَا يَعْلَمُوْنَ
তিনি পবিত্র, যিনি উদ্ভিদ, মানুষ এবং তারা যা জানে না তাদের প্রত্যেককেই জোড়া জোড়া করে সৃষ্টি করেছেন। (সূরা ইয়াসীন- ৩৬)
আল্লাহ সৃষ্টির মধ্যে যা ইচ্ছা বৃদ্ধি করেন :
يَزِيْدُ فِى الْخَلْقِ مَا يَشَآءُؕ اِنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
তিনি সৃষ্টির মধ্যে যা ইচ্ছা বাড়িয়ে দেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা ফাতির- ১)
তিনি পৃথিবীর কোনকিছুই অনর্থক সৃষ্টি করেননি :
وَمَا خَلَقْنَا السَّمَآءَ وَالْاَ رْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا بَاطِلًاؕ ذٰلِكَ ظَنُّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاۚ فَوَيْلٌ لِّلَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنَ النَّارِ
আর আমি আসমান, জমিন ও এ উভয়ের মধ্যে অবস্থিত কোনকিছুই অনর্থক সৃষ্টি করিনি। (আমি এসব অনর্থক সৃষ্টি করেছি) এরূপ ধারণা তো তাদের যারা কাফির। সুতরাং কাফিরদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের দুর্ভোগ। (সূরা সোয়াদ- ২৭)
সকল সৃষ্টিই একেকটি নিয়মে চলছে :
خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضَ بِالْحَقِّۚ يُكَوِّرُ اللَّيْلَ عَلَى النَّهَارِ وَيُكَوِّرُ النَّهَارَ عَلَى اللَّيْلِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَؕ كُلٌّ يَّجْرِيْ لِاَجَلٍ مُّسَمًّىؕ اَ لَا هُوَ الْعَزِيْزُ الْغَفَّارُ
তিনি যথাযথভাবে আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। তিনি রাত দিয়ে দিনকে আচ্ছাদিত করেন এবং দিন দিয়ে রাতকে আচ্ছাদিত করেন। তিনি নিয়মাধীন করেছেন সূর্য ও চন্দ্রকে। প্রত্যেকেই নির্ধারিত সময় পর্যন্ত চলতে থাকবে। জেনে রেখো, তিনি মহাপরাক্রমশালী ও পরম ক্ষমাশীল। (সূরা যুমার- ৫)
আল্লাহ তাঁর সৃষ্টিকে দেখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন :
قُلْ سِيْرُوْا فِى الْاَ رْضِ فَانْظُرُوْا كَيْفَ بَدَاَ الْخَلْقَ ثُمَّ اللهُ يُنْشِئُ النَّشْاَةَ الْاٰخِرَةَؕ اِنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
বলো, তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ করো এবং অনুধাবন করো যে, কীভাবে তিনি সৃষ্টি আরম্ভ করেছেন? অতঃপর আল্লাহ সৃষ্টি করবেন পরবর্তী সৃষ্টিকে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। (সূরা আনকাবূত- ২০)
اَوَلَمْ يَنْظُرُوْا فِيْ مَلَكُوْتِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِ وَمَا خَلَقَ اللهُ مِنْ شَيْءٍ
তারা কি লক্ষ্য করে না, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌম কর্তৃত্ব সম্পর্কে এবং আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন সে সম্পর্কে। (সূরা আ‘রাফ- ১৮৫)
আল্লাহর অনেক সৃষ্টি সম্পর্কে মানুষ জানে না :
وَالْخَيْلَ وَالْبِغَالَ وَالْحَمِيْرَ لِتَرْكَبُوْهَا وَزِيْنَةًؕ وَيَخْلُقُ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ
তিনি তোমাদের আরোহণ ও শোভার জন্য সৃষ্টি করেছেন ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা। আর তিনি সৃষ্টি করেছেন এমন অনেক কিছু, যা তোমরা অবগত নও। (সূরা নাহল- ৮)
এ বিশাল আকাশ ও পৃথিবী আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন :
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضَ وَجَعَلَ الظُّلُمَاتِ وَالنُّوْرَؕ ثُمَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِرَبِّهِمْ يَعْدِلُوْنَ
সকল প্রশংসা আল্লাহরই যিনি আসমানসমূহ ও জমিন সৃষ্টি করেছেন, আর সৃষ্টি করেছেন অন্ধকার ও আলো। এরপরও কাফিররা তাদের প্রতিপালকের সমকক্ষ দাঁড় করায়। (সূরা আন‘আম- ১)
তিনি আকাশ ও জমিনকে স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন :
اَلَّذِيْ خَلَقَ سَبْعَ سَمٰوَاتٍ طِبَاقًا
তিনি সৃষ্টি করেছেন সাতটি আকাশ স্তরে স্তরে। (সূরা মুলক- ৩)
اَللهُ الَّذِيْ خَلَقَ سَبْعَ سَمٰوَاتٍ وَّمِنَ الْاَ رْضِ مِثْلَهُنَّؕ يَتَنَزَّلُ الْاَمْرُ بَيْنَهُنَّ لِتَعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌؕ وَاَنَّ اللهَ قَدْ اَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا
আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন সপ্তাকাশ এবং অনুরূপভাবে পৃথিবীও। এগুলোর মধ্যে নেমে আসে তাঁর নির্দেশ; যেন তোমরা বুঝতে পার যে, আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান এবং আল্লাহ জ্ঞান দিয়ে সবকিছুই পরিবেষ্টন করে রেখেছেন। (সূরা তালাক্ব- ১২)
আল্লাহ আকাশকে সুসজ্জিত করেছেন :
اِنَّا زَيَّنَّا السَّمَآءَ الدُّنْيَا بِزِيْنَةِنِ الْكَوَاكِبِ
নিশ্চয় আমি পৃথিবীর আকাশকে সুসজ্জিত করেছি নক্ষত্রমালার সৌন্দর্য দিয়ে। (সূরা সাফ্ফাত- ৬)
وَلَقَدْ جَعَلْنَا فِى السَّمَآءِ بُرُوْجًا وَّزَيَّنَّاهَا لِلنَّاظِرِيْنَ
আমি আকাশে গ্রহ-নক্ষত্র সৃষ্টি করেছি এবং সেটাকে সুশোভিত করেছি দর্শকদের জন্য। (সূরা হিজর- ১৬)
ব্যাখ্যা : দুনিয়ার আকাশ বলতে বুঝানো হয়েছে দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশকে, যা আমরা কোন দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্য ছাড়াই খালি চোখে দেখতে পাই। এছাড়াও আমরা বিভিন্ন প্রকার শক্তিশালী পর্যবেক্ষণ যন্ত্রপাতির সাহায্যে যে বিশ্বকে দেখি এবং যেসব বিশ্ব এখনো আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়নি, সেগুলো সবই দূরবর্তী আকাশ।
আল্লাহ এ আকাশ ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন :
وَهُوَ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضَ فِيْ سِتَّةِ اَيَّامٍ
আর তিনিই আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। (সূরা হুদ- ৭)
اَلَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِيْ سِتَّةِ اَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوٰى عَلَى الْعَرْشِۚ اَلرَّحْمٰنُ فَاسْاَلْ بِهٖ خَبِيْرًا
তিনি আকাশ-জমিন ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন; অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হয়েছেন। তিনিই ‘রহমান’, তাঁর সম্বন্ধে যে অবগত আছে তাকে জিজ্ঞেস করে দেখো। (সূরা ফুরক্বান- ৫৯)
আল্লাহ সৃষ্টির কাজে ক্লান্ত হন না :
وَلَقَدْ خَلَقْنَا السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِيْ سِتَّةِ اَيَّامٍ وَّمَا مَسَّنَا مِنْ لُّغُوْبٍ
আমি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী এবং এগুলোর মধ্যস্থিত সবকিছু সৃষ্টি করেছি ছয় দিনে। আর (এসব সৃষ্টিতে) কোন ক্লান্তি আমাকে স্পর্শ করেনি। (সূরা ক্বাফ- ৩৮)
তিনি রাত-দিন ও চন্দ্র-সূর্য সৃষ্টি করেছেন :
وَهُوَ الَّذِيْ خَلَقَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَؕ كُلٌّ فِيْ فَلَكٍ يَّسْبَحُوْنَ
আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিবস এবং সূর্য ও চন্দ্র; প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণ করে। (সূরা আম্বিয়া- ৩৩)
আল্লাহ বিভিন্ন আকৃতির প্রাণী সৃষ্টি করেছেন :
وَاللهُ خَلَقَ كُلَّ دَآبَّةٍ مِّنْ مَّآءٍۚ فَمِنْهُمْ مَّنْ يَّمْشِيْ عَلٰى بَطْنِهٖۚ وَمِنْهُمْ مَّنْ يَّمْشِيْ عَلٰى رِجْلَيْنِۚ وَمِنْهُمْ مَّنْ يَّمْشِيْ عَلٰۤى اَرْبَعٍؕ يَخْلُقُ اللهُ مَا يَشَآءُؕ اِنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
আল্লাহ সমসত্ম জীব সৃষ্টি করেছেন পানি হতে, তাদের কতক পেটে ভর দিয়ে চলে, কতক দু’পায়ে চলে এবং কতক চলে চার পায়ে। আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন, নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা নূর- ৪৫)
আল্লাহ জিন জাতিকে আগুন দিয়ে সৃষ্টি করেছেন :
وَخَلَقَ الْجَآنَّ مِنْ مَّارِجٍ مِّنْ نَّارٍ
আর তিনি জিন (জাতি) কে সৃষ্টি করেছেন অগ্নিশিখা হতে। (সূরা আর রহমান- ১৫)
আল্লাহ মানুষকে সুন্দরভাবে সৃষ্টি করেছেন :
لَقَدْ خَلَقْنَا الْاِنْسَانَ فِۤيْ اَحْسَنِ تَقْوِيْمٍ
আমি মানুষকে সুন্দরতম আকৃতিতে সৃষ্টি করেছি। (সূরা তীন- ৪)
ব্যাখ্যা : কয়েকটি নিষ্প্রাণ উপাদানের সমাহার এবং রাসায়নিক সংযোগের মাধ্যমে মানুষ নামক একটি বিস্ময়কর সত্তা সৃষ্টি করা হয়েছে, তার মধ্যে সংযুক্ত করা হয়েছে আবেগ, অনুভূতি, চেতনা, বুদ্ধিবৃত্তি ও চিন্তা-কল্পনার এমনসব অদ্ভুত শক্তি যাদের কোন একটির উৎসও তার মৌলিক উপাদানগুলোর মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় না। তারপর শুধু এতটুকুই নয় তার মধ্যে এমনসব অদ্ভুত প্রজনন শক্তিও সৃষ্টি করে দেয়া হয়েছে, যার ফলে কোটি কোটি মানুষ সেই একই কাঠামো এবং ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যের ধারক হিসেবে বের হয়ে আসছে। মানুষ সৃষ্টির এ মহৎ পরিকল্পনা, তাকে বাস্তব কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগ করা আল্লাহর অসীম কুদরতের প্রমাণ। মানুষ যদি শুধুমাত্র নিজের জন্মের উপরই চিন্তা-ভাবনা করে তাহলে জানতে পারবে যে, এক একটি মানুষের অস্তিত্বের মধ্যে আল্লাহর বাস্তব ব্যবস্থাপনা ও কলা-কৌশল সর্বক্ষণ সক্রিয় রয়েছে। প্রত্যেকের অস্তিত্ব, বৃদ্ধি ও বিকাশের প্রতিটি পর্যায়ই তাঁর ইচ্ছার ভিত্তিতে স্থির হয়। তাকে সৃষ্টি করা, সুন্দর আকৃতি প্রদান করা, মাতৃগর্ভে ধারণ করা, জন্মদান করা, লালন-পালন করা এবং জীবিকা নির্বাহে প্রতিদিনের চলাফেরা সবকিছুই আল্লাহর ইচ্ছাতে সংঘঠিত হয়।
মানুষের মেয়াদ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন :
هُوَ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ طِيْنٍ ثُمَّ قَضٰۤى اَجَلًاؕ وَاَجَلٌ مُّسَمًّى عِنْدَهٗ ثُمَّ اَنْتُمْ تَمْتَرُوْنَ
তিনিই তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর একটি কাল নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন এবং আরো একটি নির্ধারিত কাল আছে যা তিনিই জ্ঞাত, তারপরও তোমরা সন্দেহ কর। (সূরা আন‘আম- ২)
মানুষের মধ্যে আত্মীয়তা সৃষ্টি করেছেন :
وَهُوَ الَّذِيْ خَلَقَ مِنَ الْمَآءِ بَشَرًا فَجَعَلَهٗ نَسَبًا وَّصِهْرًاؕ وَكَانَ رَبُّكَ قَدِيْرًا
তিনিই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পানি হতে; অতঃপর তাকে বংশগত ও বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ করেছেন। আর তোমার প্রতিপালক (এসব বিষয়ে) সর্বশক্তিমান। (সূরা ফুরক্বান- ৫৪)
ব্যাখ্যা : তিনি মানুষের একটি নয় বরং দু’টি আলাদা আলাদা নমুনা (নর ও নারী) তৈরি করেছেন। তারপর এ জোড়াগুলো মিলিয়ে দুনিয়াতে তাদের মাঝে ভারসাম্য তৈরি করে দিয়েছেন। একদিকে তাদের থেকে পুত্র ও নাতিদের একটি ধারা চলছে, যারা অন্যের ঘর থেকে বিয়ে করে স্ত্রী নিয়ে আসছে। আবার অন্যদিকে কন্যা ও নাতনীদের একটি ধারা চলছে, যারা স্ত্রী হয়ে অন্যের ঘরে চলে যাচ্ছে। এভাবে এক পরিবারের সাথে অন্য পরিবার মিশে বংশ ও সভ্যতার বিকাশ ঘটছে।
প্রশান্তির জন্য জোড়া সৃষ্টি করেছেন :
هُوَ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ وَّجَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا لِيَسْكُنَ اِلَيْهَا
তিনিই তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তা হতে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন, যাতে সে তার নিকট প্রশান্তি লাভ করতে পারে। (সূরা আ‘রাফ- ১৮৯)
ব্যাখ্যা : স্রষ্টার প্রজ্ঞার পূর্ণতা হচ্ছে, তিনি মানুষকে দু’টি জাতির আকারে সৃষ্টি করেছেন। তারা প্রত্যেকে একে অন্যের জোড়ায় পরিণত হয়েছে। প্রত্যেকের শরীর, প্রবৃত্তি এবং উদ্যোগসমূহ অন্যের শারীরিক ও প্রবৃত্তির দাবীসমূহের পরিপূর্ণ জবাব। সেই স্রষ্টা এ উভয় জাতির লোকদেরকে সৃষ্টির সূচনা থেকেই আনুপাতিক হারে সৃষ্টি করে আসছেন। কোন এলাকায় কেবল পুত্রসন্তানই অথবা কেবল কন্যাসন্তানই জন্মলাভ করছে এমন কথা শোনা যায় না। এটা এমন জিনিস, যার মধ্যে কোন মানুষের সামান্যতম হস্তÿÿপের অবকাশও নেই। হাজার হাজার বছর থেকে কোটি কোটি মানুষের জন্মলাভে এ ব্যবস্থা সুসামঞ্জস্য পদ্ধতিতে কার্যকর থাকা কখনো নিছক আকস্মিক ঘটনা হতে পারে না। আবার বহু ইলাহের সম্মিলিত ব্যবস্থাপনার ফলও হতে পারে না।
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি করেছেন :
وَمِنْ اٰيَاتِهٖۤ اَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِّنْ اَنْفُسِكُمْ اَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوْاۤ اِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَّوَدَّةً وَّرَحْمَةًؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ
আর তাঁর দৃষ্টান্তগুলোর মধ্যে একটি এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের নিজেদের মধ্য থেকে স্ত্রীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি লাভ করতে পার। অতঃপর তিনি তোমাদের মাঝে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করে দিয়েছেন। নিশ্চয় এতে ঐসব লোকদের জন্য রয়েছে নিদর্শন, যারা গভীরভাবে চিন্তা করে। (সূরা রূম- ২১)
ব্যাখ্যা : স্রষ্টা নিজেই পরিকল্পিতভাবে এ ব্যবস্থা করেছেন, যার ফলে পুরুষ তার প্রাকৃতিক দাবী নারীর কাছে এবং নারী তার প্রাকৃতিক চাহিদা পুরুষের কাছে লাভ করবে এবং তারা উভয়ে পরস্পরের সাথে সম্পর্কিত থেকেই প্রশান্তি ও সুখ লাভ করবে। এ বিজ্ঞানময় ব্যবস্থাপনাকে স্রষ্টা একদিকে মানব বংশধারা অব্যাহত থাকার এবং অন্যদিকে মানবিক সভ্যতার মাধ্যম হিসেবে পরিণত করেছেন। স্রষ্টা নিজের জ্ঞান ও প্রজ্ঞার দ্বারা পুরুষ ও নারীর মধ্যে পরস্পরের এমন চাহিদা সৃষ্টি করেছেন, যার ফলে তারা উভয়ে মিলে একসাথে না থাকলে শান্তি ও সুখ লাভ করতে পারে না। শান্তির আশায় তাদেরকে একত্রে ঘর বাঁধতে বাধ্য করে। এরই বদৌলতে পরিবার ও গোত্র অস্তিত্ব লাভ করে। হাজার হাজার বছর থেকে অনবরত অসংখ্য পুরুষ ও নারীকে এ বিশেষ অস্থিরতা সহকারে সৃষ্টি করা এটা কেবল একজন জ্ঞানীর প্রজ্ঞার সুস্পষ্ট নিদর্শন। ভালোবাসা নারী ও পুরুষের মধ্যে এমন একটি আকর্ষণ, যা তাদেরকে পরস্পরের সাথে সংলগ্ন করে রাখে। আর রহমত অর্থ হচ্ছে এমন আত্মিক সম্পর্ক, যা স্বামী-স্ত্রীর জীবনে পর্যায়ক্রমে বিকাশ লাভ করে। এর বদৌলতে তারা দু’জনে একে অপরের কল্যাণকামী ও সুখ-দুঃখে সহানুভূতিশীল হয়ে যায়। কোটি কোটি মানুষ তাদের জীবনে যে ভালোবাসা লাভ করেছে এগুলো কোন সাধারণ বস্তু নয়। এগুলোকে পরিমাপ করা অসম্ভব। মানুষের শারীরিক গঠনে যেসব উপাদানের সমাবেশ ঘটানো হয়েছে, তার মধ্যে কোথাও এদের উৎস চিহ্নিত করা যেতে পারে না। একজন প্রজ্ঞাবান স্রষ্টা স্বেচ্ছায় একটি উদ্দেশ্য সামনে রেখে পূর্ণ সামঞ্জস্য সহকারে মানুষের মধ্যে তা সংস্থাপন করে দিয়েছেন।
আল্লাহ বিশ্বজগৎ পরিচালনা করেন :
يُدَبِّرُ الْاَمْرَ مِنَ السَّمَآءِ اِلَى الْاَ رْضِ ثُمَّ يَعْرُجُ اِلَيْهِ فِيْ يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهٗۤ اَلْفَ سَنَةٍ مِّمَّا تَعُدُّوْنَ
তিনি আসমান থেকে জমিন পর্যন্ত যাবতীয় বিষয় নিয়ন্ত্রণ করেন। অবশেষে তা তাঁর নিকট পৌঁছাবে এমন একদিনে, যার পরিমাণ হবে তোমাদের গণনায় হাজার বছরের সমান। (সূরা সাজদা- ৫)
আল্লাহ রাত ও দিনের আবর্তন ঘটান :
يُوْلِجُ اللَّيْلَ فِى النَّهَارِ وَيُوْلِجُ النَّهَارَ فِى اللَّيْلِ
তিনি রাতকে দিনে প্রবেশ করান এবং দিনকে রাতে প্রবেশ করান। (সূরা ফাতির- ১৩)
قُلْ اَرَاَيْتُمْ اِنْ جَعَلَ اللهُ عَلَيْكُمُ اللَّيْلَ سَرْمَدًا اِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَنْ اِلٰهٌ غَيْرُ اللهِ يَاْتِيْكُمْ بِضِيَآءٍؕ اَفَلَا تَسْمَعُوْنَ ‐ قُلْ اَرَاَيْتُمْ اِنْ جَعَلَ اللهُ عَلَيْكُمُ النَّهَارَ سَرْمَدًا اِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَنْ اِلٰهٌ غَيْرُ اللهِ يَاْتِيْكُمْ بِلَيْلٍ تَسْكُنُوْنَ فِيْهِؕ اَفَلَا تُبْصِرُوْنَ
বলো, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, আল্লাহ যদি রাতকে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করে দেন তবে আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন ইলাহ্ আছে কি, যে তোমাদেরকে আলো এনে দিতে পারে? তবুও কি তোমরা কর্ণপাত করবে না? বলো, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, আল্লাহ যদি দিনকে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করেন তবে আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন ইলাহ্ আছে কি, যে তোমাদের জন্য রাতের আবির্ভাব ঘটাবে যেন তোমরা বিশ্রাম করতে পার? তবুও কি তোমরা ভেবে দেখবে না? (সূরা ক্বাসাস- ৭১, ৭২)
ব্যাখ্যা : সূর্য ও পৃথিবীর মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের সুশৃঙ্খল পরিবর্তনের কারণে রাত-দিনের পরিবর্তন সাধিত হয়। এটি একজন বিশ্বজনীন ব্যবস্থাপক ও সমগ্র বিশ্বের উপর নিরঙ্কুশ কর্তৃত্বশালী শাসকের অস্তিত্বের সুস্পষ্ট আলামত। এর মধ্যে সুস্পষ্ট নৈপূণ্য, বিজ্ঞতা ও উদ্দেশ্যমূলক তৎপরতাও দেখা যায়। কারণ দুনিয়ার সমস্ত প্রয়োজন ও অভাব পূরণ এ দিন-রাতের আবর্তনের সাথে যুক্ত রয়েছে। এ থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, যিনি পৃথিবীর বুকে এসব বস্তু সৃষ্টি করেছেন তিনি নিজেই তাদের স্থিতি ও স্থায়িত্বের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই সরবরাহ করেন। এ বিশ্বজনীন ব্যবস্থাপক মাত্র একজন। তিনি খেলাচ্ছলে এ বিশ্বের কোনকিছুই সৃষ্টি করেননি বরং উদ্দেশ্যমূলকভাবে তিনি কাজ করছেন। অনুগ্রহকারী ও পালনকারী হিসেবে তিনিই ইবাদাত লাভের হকদার এবং দিন-রাতের আবর্তনের অধীন কোন সত্তাই রব ও প্রভু নয় বরং রবের অধীনস্থ দাস মাত্র।
আল্লাহ জীবিত থেকে মৃত ও মৃত থেকে জীবিতকে বের করেন :
يُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَيُخْرِجُ الْمَيِّتَ مِنَ الْحَيِّ وَيُحْيِى الْاَ رْضَ بَعْدَ مَوْتِهَاؕ وَكَذٰلِكَ تُخْرَجُوْنَ
তিনি জীবিতকে মৃত থেকে এবং মৃতকে জীবিত থেকে বের করে আনেন। তিনিই জমিনকে তার মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত করেন। আর এভাবেই তোমাদেরকে (মৃত্যুর পর পুনরায়) বের করে আনা হবে। (সূরা রূম- ১৯)
আল্লাহ দুর্বলকে সবল করেন, সবলকে দুর্বল করেন :
اَللهُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ ضُعْفٍ ثُمَّ جَعَلَ مِنْ ۢبَعْدِ ضُعْفٍ قُوَّةً ثُمَّ جَعَلَ مِنْ ۢبَعْدِ قُوَّةٍ ضُعْفًا وَّشَيْبَةًؕ يَخْلُقُ مَا يَشَآءُۚ وَهُوَ الْعَلِيْمُ الْقَدِيْرُ
আল্লাহ ঐ সত্তা, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেন দুর্বল অবস্থায়। অতঃপর তিনি দুর্বলতার পর শক্তি দান করেন, তারপর শক্তির পর পুনরায় দুর্বলতা ও বার্ধক্য দান করেন। তিনি যা ইচ্ছা তা-ই সৃষ্টি করেন এবং তিনিই সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান। (সূরা রূম- ৫৪)
আল্লাহ হাসান এবং কাঁদান :
وَاَنَّهٗ هُوَ اَضْحَكَ وَاَبْكٰى
আর তিনিই হাসান এবং তিনিই কাঁদান। (সূরা নাজম- ৪৩)
আল্লাহই মারেন এবং বাঁচান :
وَاَنَّهٗ هُوَ اَمَاتَ وَاَحْيَا
আর তিনিই মারেন ও তিনিই বাঁচান। (সূরা নাজম- ৪৪)
তিনিই সম্পদ দান করেন :
وَاَنَّهٗ هُوَ اَغْنٰى وَاَقْنٰى
আর তিনিই অভাবমুক্ত ও পরিতুষ্ট করেন। (সূরা নাজম- ৪৮)
আল্লাহ মানুষের অন্তর পরিবর্তন করেন :
وَنُقَلِّبُ اَفْئِدَتَهُمْ وَاَبْصَارَهُمْ كَمَا لَمْ يُؤْمِنُوْا بِهٖۤ اَوَّلَ مَرَّةٍ وَّنَذَرُهُمْ فِيْ طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُوْنَ
তারা যেমন প্রথমবার তাতে ঈমান আনেনি, তাই আমিও তাদের মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে দেব এবং তাদেরকে তাদের অবাধ্যতার আবর্তে ঘুরপাক খাওয়ার জন্য ছেড়ে দেব। (সূরা আন‘আম- ১১০)
আল্লাহ ঘুম দেন ও জাগ্রত করেন :
وَهُوَ الَّذِيْ يَتَوَفَّاكُمْ بِاللَّيْلِ وَيَعْلَمُ مَا جَرَحْتُمْ بِالنَّهَارِ ثُمَّ يَبْعَثُكُمْ فِيْهِ لِيُقْضٰۤى اَجَلٌ مُّسَمًّىۚ ثُمَّ اِلَيْهِ مَرْجِعُكُمْ ثُمَّ يُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
তিনিই রাতে তোমাদের মৃত্যু ঘটান এবং দিবসে তোমরা যা কর, তা তিনি জানেন। অতঃপর দিবসে তোমাদেরকে পুনর্জাগরণ করেন, যেন নির্ধারিত কাল পূর্ণ হয়। অতঃপর তাঁর দিকেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর তোমরা (দুনিয়াতে) যা করেছিলে, সে সম্বন্ধে তোমাদেরকে অবহিত করবেন। (সূরা আন‘আম- ৬০)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ নিজের সৃষ্টির প্রতি বড়ই করুণাশীল। মানুষ দুনিয়ায় অনবরত পরিশ্রম করতে পারে না। প্রত্যেকবার কয়েক ঘণ্টা পরিশ্রমের পর তাকে কয়েক ঘণ্টা বিশ্রাম নিতে হয়, যাতে সে আবার কয়েক ঘণ্টা কাজ করার শক্তি পায়। প্রজ্ঞাময় আল্লাহ তা‘আলা এ উদ্দেশ্যে মানুষের মধ্যে নিদ্রার এমন চাহিদা ঢেলে দিয়েছেন, যার ফলে কোন ব্যক্তির ইচ্ছা ছাড়াই কয়েক ঘণ্টা জাগরণের পর কয়েক ঘণ্টা বিশ্রাম নিতে বাধ্য করে এবং প্রয়োজন শেষ হয়ে গেলে স্বাভাবিকভাবেই বিশ্রাম ত্যাগ করে। এটি জন্মগতভাবে মানুষের প্রকৃতিতে রেখে দেয়া হয়েছে।
আল্লাহ বিদ্যুৎ চমকান :
هُوَ الَّذِيْ يُرِيْكُمُ الْبَرْقَ خَوْفًا وَّطَمَعًا وَّيُنْشِئُ السَّحَابَ الثِّقَالَ
তিনিই তোমাদেরকে পর্যবেক্ষণ করান বিজলী। (অতঃপর এর মাধ্যমে) ভয় ও ভরসা সঞ্চার করান এবং তিনিই সৃষ্টি করেন ভারী মেঘ। (সূরা রা‘দ- ১২)
আল্লাহ আকাশ থেকে বজ্রপাত করেন :
وَيُرْسِلُ الصَّوَاعِقَ فَيُصِيْبُ بِهَا مَنْ يَّشَآءُ وَهُمْ يُجَادِلُوْنَ فِى اللهِۚ وَهُوَ شَدِيْدُ الْمِحَالِ
তিনি বজ্রপাত করেন এবং যাকে ইচ্ছা তা দ্বারা আঘাত করেন। আর তারা আল্লাহ সম্বন্ধে ঝগড়া করে, অথচ তিনি মহাশক্তিশালী। (সূরা রা‘দ ১৩)
আল্লাহ বৃষ্টি তৈরি করেন :
اَللهُ الَّذِيْ يُرْسِلُ الرِّيَاحَ فَتُثِيْرُ سَحَابًا فَيَبْسُطُهٗ فِى السَّمَآءِ كَيْفَ يَشَآءُ وَيَجْعَلُهٗ كِسَفًا فَتَرَى الْوَدْقَ يَخْرُجُ مِنْ خِلَالِه ۚ فَاِذَاۤ اَصَابَ بِهٖ مَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِه ۤ اِذَا هُمْ يَسْتَبْشِرُوْنَ
আল্লাহ এমন সত্তা, যিনি বাতাস প্রেরণ করেন। অতঃপর বাতাস মেঘরাশিকে সঞ্চালন করে; তারপর তিনি মেঘরাশিকে যেমন ইচ্ছা আকাশে পরিব্যাপ্তি করে দেন এবং কখনো তা খন্ড-বিখন্ড করে দেন। অতঃপর তুমি দেখতে পাও যে, তার মধ্য থেকে বের হয়ে আসে বৃষ্টিধারা। তিনি যখন (সঞ্চালন করার) ইচ্ছা করেন, তখন তার বান্দাদের মধ্যে যাদেরকে ইচ্ছা তা পৌঁছে দেন। (ফলে) তারা আনন্দ করতে থাকে। (সূরা রূম- ৪৮)
আল্লাহ মৃত জমিনকে জীবিত করেন :
اِعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ يُحْيِى الْاَ رْضَ بَعْدَ مَوْتِهَاؕ قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ الْاٰيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُوْنَ
জেনে রেখো, আল্লাহই পৃথিবীকে তার মৃত্যুর পর জীবন দান করেন। আমি তো কেবল নিদর্শনগুলো তোমাদের জন্য বিশদভাবে বর্ণনা করি, যেন তোমরা বুঝতে পার। (সূরা হাদীদ- ১৭)
وَاللهُ اَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَحْيَا بِهِ الْاَ رْضَ بَعْدَ مَوْتِهَاؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّسْمَعُوْنَ
আল্লাহ আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন এবং এর দ্বারা মৃত ভূমিকে জীবিত করেন। অবশ্যই যে সম্প্রদায় কথা শুনে তাদের জন্য এতে নিদর্শন রয়েছে। (সূরা নাহল- ৬৫)
আল্লাহ বিশ্বের ভারসাম্য ঠিক রাখেন :
اِنَّ اللهَ يُمْسِكُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضَ اَنْ تَزُوْلًا ۚ وَلَئِنْ زَالَتَاۤ اِنْ اَمْسَكَهُمَا مِنْ اَحَدٍ مِّنْ ۢبَعْدِهٖؕ اِنَّهٗ كَانَ حَلِيْمًا غَفُوْرًا
নিশ্চয় আল্লাহ আসমান ও জমিনকে স্থিরভাবে ধরে রাখেন, যেন তা (স্বীয় কক্ষপথ থেকে) সরে না যায়। যদি এরা সরে যায় তবে তিনি ছাড়া কে এদেরকে ধরে রাখবে? নিশ্চয় তিনি অতিশয় সহনশীল ও পরম ক্ষমাশীল। (সূরা ফাতির- ৪১)
আল্লাহ সর্বদা কর্মতৎপর :
يَسْاَلُهٗ مَنْ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِؕ كُلَّ يَوْمٍ هُوَ فِيْ شَاْنٍ
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা আছে সবই তাঁর নিকট প্রতিদিন প্রার্থনা করে, তিনি সর্বদা মহান কার্যে রত। (সূরা আর রহমান- ২৯)
ব্যাখ্যা : মহাবিশ্বের এ কর্মক্ষেত্রে প্রতি মুহূর্তে আল্লাহ তা‘আলার কর্মতৎপরতার এক সীমাহীন ধারাবাহিকতা চলছে। কাউকে তিনি মারছেন আবার কাউকে জীবন দান করছেন। কারো উত্থান ঘটাচ্ছেন আবার কারো পতন ঘটাচ্ছেন। কাউকে আরোগ্য দান করছেন আবার কাউকে রোগাক্রান্ত করছেন। কাউকে ডুবন্ত অবস্থা থেকে রক্ষা করছেন আবার কাউকে নিমজ্জিত করছেন। সকল সৃষ্টিকে নানাভাবে রিযিক দান করছেন। অসংখ্য বস্তুকে নতুন নতুন আকার-আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি করছেন। তাঁর পৃথিবী কখনো এক অবস্থায় অপরিবর্তিত থাকে না। তাঁর পরিবেশ ও অবস্থা প্রতি মুহূর্তে পরিবর্তিত হতে থাকে।
اَللهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ وَّهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ وَّكِيْلٌ
আল্লাহ সবকিছুর স্রষ্টা এবং তিনিই সবকিছুর ব্যবস্থাপক। (সূরা যুমার- ৬২)
ذٰلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمْۚ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَۚ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ فَاعْبُدُوْهُۚ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ وَّكِيْلٌ
তিনিই আল্লাহ, যিনি তোমাদের প্রতিপালক; তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই। তিনিই সবকিছুর স্রষ্টা; সুতরাং তোমরা তাঁরই ইবাদাত করো; তিনি সবকিছুর তত্ত্বাবধায়ক। (সূরা আন‘আম- ১০২)
আল্লাহ হলেন বিজ্ঞ স্রষ্টা :
فَتَبَارَكَ اللهُ اَحْسَنُ الْخَالِقِيْنَ
সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ কতই না মহান! (সূরা মু’মিনূন- ১৪)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ বিশ্বজাহানের প্রত্যেকটি জিনিসের কেবল অস্তিত্বই দান করেননি; বরং তিনি প্রত্যেকটি জিনিসকে তার সত্তার সাথে সম্পর্কিত আকার-আকৃতি, শক্তি, যোগ্যতা, গুণাগুণ, বৈশিষ্ট্য, কাজ ও কাজের পদ্ধতি, স্থায়িত্বের সময়কাল, উত্থান ও ক্রমবিকাশের সীমা এবং অন্যান্য বিষয়াবলি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তারপর সেসব কার্যর্কলাপ, উপায়-উপকরণ ও সুযোগসুবিধার বদৌলতে প্রত্যেকটি সত্তা নিজ নিজ কর্মসীমার মধ্যে তথা নিজ নিজ সামর্থ্যানুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে।
اِنَّ رَبَّكَ هُوَ الْخَلَّاقُ الْعَلِيْمُ
নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক মহাস্রষ্টা ও মহাজ্ঞানী। (সূরা হিজর- ৮৬)
আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন :
وَرَبُّكَ يَخْلُقُ مَا يَشَآءُ وَيَخْتَارُؕ مَا كَانَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ ؕ سُبْحَانَ اللهِ وَتَعَالٰى عَمَّا يُشْرِكُوْنَ
তোমার প্রতিপালক যা ইচছা সৃষ্টি করেন এবং যাকে ইচ্ছা মনোনীত করেন, তাতে তাদের কোন হাত নেই। আল্লাহ পবিত্র এবং মহান; আর তারা যাকে শরীক করে তা হতে তিনি অনেক পবিত্র ও মহান। (সূরা ক্বাসাস- ৬৮)
আল্লাহর সকল সৃষ্টিই সুন্দর :
اَلَّذِيْۤ اَحْسَنَ كُلَّ شَيْءٍ خَلَقَهٗ
যিনি সবকিছুকে অতি সুন্দররূপে সৃজন করেছেন। (সূরা সাজদা- ৭)
ব্যাখ্যা : দুনিয়ার প্রতিটি জিনিস তাঁরই নির্মাণ কৌশলে নির্মিত হয়েছে। প্রতিটি জিনিসকে তিনিই আকার-আকৃতি, শক্তি, যোগ্যতা, গুণ ও বিশেষত্ব দান করেছেন। দুনিয়ায় কাজ করার জন্য হাতের যে গঠনাকৃতির প্রয়োজন ছিল, তা তিনি দিয়েছেন। পায়ের জন্য যে সর্বাধিক উপযুক্ত গঠনাকৃতির প্রয়োজন, তাও দিয়েছেন। মানুষ, পশু, উদ্ভিদ, বাতাস, পানি, আলো, প্রত্যেককে তিনি এমন বিশেষ আকৃতি দান করেছেন- যা এ বিশ্বজাহানে তার নিজের কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজন ছিল। তারপর তিনি প্রতিটি জিনিসকে কেবল তার বিশেষ আকৃতি দান করেই ছেড়ে দেননি; বরং তিনি সবাইকে পথও দেখিয়েছেন। দুনিয়ায় এমন কোন জিনিস নেই, যাকে তিনি নিজের গঠনাকৃতিকে কাজে লাগানোর এবং নিজের সৃষ্টির উদ্দেশ্য পূর্ণ করার পদ্ধতি শেখাননি। কানকে শোনা ও চোখকে দেখা তিনিই শিখিয়েছেন। মাছকে সাঁতার কাটার এবং পাখিকে উড়ার শিক্ষা তিনিই দিয়েছেন। গাছকে ফুল ও ফল দেয়ার ও মাটিকে উদ্ভিদ উৎপাদন করার নির্দেশ তিনিই দিয়েছেন। মোটকথা তিনি কেবল সারা বিশ্বজাহান এবং তাঁর সমস্ত সৃষ্টিকুলের স্রষ্টাই নন; বরং তাদের শিক্ষক ও পথপ্রদর্শকও।
আল্লাহ সুন্দরভাবে আকৃতি গঠন করেন :
هُوَ الَّذِيْ يُصَوِّرُكُمْ فِى الْاَ رْحَامِ كَيْفَ يَشَآءُؕ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
তিনি ঐ সত্তা, যিনি মাতৃগর্ভে নিজ ইচ্ছানুযায়ী তোমাদের আকৃতি গঠন করেছেন। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তিনি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা আলে ইমরান- ৬)
خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضَ بِالْحَقِّ وَصَوَّرَكُمْ فَاَحْسَنَ صُوَرَكُمْۚ وَاِلَيْهِ الْمَصِيْرُ
তিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে এবং তোমাদেরকে অতি সুন্দর আকৃতি দান করেছেন; আর তোমাদের প্রত্যাবর্তন তো তাঁরই দিকে। (সূরা তাগাবুন- ৩)
আল্লাহ সবকিছু পরিমাণ অনুযায়ী সৃষ্টি করেন :
اِنَّا كُلَّ شَيْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ
আমি সবকিছু সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত পরিমাণে। (সূরা ক্বামার- ৪৯)
আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে কোন খুঁত নেই :
مَا تَرٰى فِيْ خَلْقِ الرَّحْمٰنِ مِنْ تَفَاوُتٍؕ فَارْجِعِ الْبَصَرَ هَلْ تَرٰى مِنْ فُطُوْرٍ
দয়াময় আল্লাহর সৃষ্টিতে তুমি কোন খুঁত দেখতে পাবে না। অতএব তুমি চক্ষু ফিরিয়ে দেখো, (তাঁর সৃষ্টিতে) কোন ত্রুটি দেখতে পাও কি? (সূরা মুলক- ৩)
ثُمَّ ارْجِعِ الْبَصَرَ كَرَّتَيْنِ يَنْقَلِبْ اِلَيْكَ الْبَصَرُ خَاسِئًا وَّهُوَ حَسِيْرٌ
অতঃপর তুমি (প্রতিটি সৃষ্টির দিকে) দু’বার করে দৃষ্টি ফিরাও, সেই দৃষ্টি ব্যর্থ ও ক্লান্ত হয়ে তোমার দিকেই ফিরে আসবে। (সূরা মুলক- ৪)
আল্লাহ প্রতিটি জিনিস জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন :
وَمِنْ كُلِّ شَيْءٍ خَلَقْنَا زَوْجَيْنِ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ
আমি প্রত্যেক বস্তু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করতে পার। (সূরা যারিয়াত- ৪৯)
سُبْحَانَ الَّذِيْ خَلَقَ الْاَزْوَاجَ كُلَّهَا مِمَّا تُنْۢبِتُ الْاَ رْضُ وَمِنْ اَنْفُسِهِمْ وَمِمَّا لَا يَعْلَمُوْنَ
তিনি পবিত্র, যিনি উদ্ভিদ, মানুষ এবং তারা যা জানে না তাদের প্রত্যেককেই জোড়া জোড়া করে সৃষ্টি করেছেন। (সূরা ইয়াসীন- ৩৬)
আল্লাহ সৃষ্টির মধ্যে যা ইচ্ছা বৃদ্ধি করেন :
يَزِيْدُ فِى الْخَلْقِ مَا يَشَآءُؕ اِنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
তিনি সৃষ্টির মধ্যে যা ইচ্ছা বাড়িয়ে দেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা ফাতির- ১)
তিনি পৃথিবীর কোনকিছুই অনর্থক সৃষ্টি করেননি :
وَمَا خَلَقْنَا السَّمَآءَ وَالْاَ رْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا بَاطِلًاؕ ذٰلِكَ ظَنُّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاۚ فَوَيْلٌ لِّلَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنَ النَّارِ
আর আমি আসমান, জমিন ও এ উভয়ের মধ্যে অবস্থিত কোনকিছুই অনর্থক সৃষ্টি করিনি। (আমি এসব অনর্থক সৃষ্টি করেছি) এরূপ ধারণা তো তাদের যারা কাফির। সুতরাং কাফিরদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের দুর্ভোগ। (সূরা সোয়াদ- ২৭)
সকল সৃষ্টিই একেকটি নিয়মে চলছে :
خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضَ بِالْحَقِّۚ يُكَوِّرُ اللَّيْلَ عَلَى النَّهَارِ وَيُكَوِّرُ النَّهَارَ عَلَى اللَّيْلِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَؕ كُلٌّ يَّجْرِيْ لِاَجَلٍ مُّسَمًّىؕ اَ لَا هُوَ الْعَزِيْزُ الْغَفَّارُ
তিনি যথাযথভাবে আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। তিনি রাত দিয়ে দিনকে আচ্ছাদিত করেন এবং দিন দিয়ে রাতকে আচ্ছাদিত করেন। তিনি নিয়মাধীন করেছেন সূর্য ও চন্দ্রকে। প্রত্যেকেই নির্ধারিত সময় পর্যন্ত চলতে থাকবে। জেনে রেখো, তিনি মহাপরাক্রমশালী ও পরম ক্ষমাশীল। (সূরা যুমার- ৫)
আল্লাহ তাঁর সৃষ্টিকে দেখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন :
قُلْ سِيْرُوْا فِى الْاَ رْضِ فَانْظُرُوْا كَيْفَ بَدَاَ الْخَلْقَ ثُمَّ اللهُ يُنْشِئُ النَّشْاَةَ الْاٰخِرَةَؕ اِنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
বলো, তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ করো এবং অনুধাবন করো যে, কীভাবে তিনি সৃষ্টি আরম্ভ করেছেন? অতঃপর আল্লাহ সৃষ্টি করবেন পরবর্তী সৃষ্টিকে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। (সূরা আনকাবূত- ২০)
اَوَلَمْ يَنْظُرُوْا فِيْ مَلَكُوْتِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِ وَمَا خَلَقَ اللهُ مِنْ شَيْءٍ
তারা কি লক্ষ্য করে না, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌম কর্তৃত্ব সম্পর্কে এবং আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন সে সম্পর্কে। (সূরা আ‘রাফ- ১৮৫)
আল্লাহর অনেক সৃষ্টি সম্পর্কে মানুষ জানে না :
وَالْخَيْلَ وَالْبِغَالَ وَالْحَمِيْرَ لِتَرْكَبُوْهَا وَزِيْنَةًؕ وَيَخْلُقُ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ
তিনি তোমাদের আরোহণ ও শোভার জন্য সৃষ্টি করেছেন ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা। আর তিনি সৃষ্টি করেছেন এমন অনেক কিছু, যা তোমরা অবগত নও। (সূরা নাহল- ৮)
এ বিশাল আকাশ ও পৃথিবী আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন :
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضَ وَجَعَلَ الظُّلُمَاتِ وَالنُّوْرَؕ ثُمَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِرَبِّهِمْ يَعْدِلُوْنَ
সকল প্রশংসা আল্লাহরই যিনি আসমানসমূহ ও জমিন সৃষ্টি করেছেন, আর সৃষ্টি করেছেন অন্ধকার ও আলো। এরপরও কাফিররা তাদের প্রতিপালকের সমকক্ষ দাঁড় করায়। (সূরা আন‘আম- ১)
তিনি আকাশ ও জমিনকে স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন :
اَلَّذِيْ خَلَقَ سَبْعَ سَمٰوَاتٍ طِبَاقًا
তিনি সৃষ্টি করেছেন সাতটি আকাশ স্তরে স্তরে। (সূরা মুলক- ৩)
اَللهُ الَّذِيْ خَلَقَ سَبْعَ سَمٰوَاتٍ وَّمِنَ الْاَ رْضِ مِثْلَهُنَّؕ يَتَنَزَّلُ الْاَمْرُ بَيْنَهُنَّ لِتَعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌؕ وَاَنَّ اللهَ قَدْ اَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا
আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন সপ্তাকাশ এবং অনুরূপভাবে পৃথিবীও। এগুলোর মধ্যে নেমে আসে তাঁর নির্দেশ; যেন তোমরা বুঝতে পার যে, আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান এবং আল্লাহ জ্ঞান দিয়ে সবকিছুই পরিবেষ্টন করে রেখেছেন। (সূরা তালাক্ব- ১২)
আল্লাহ আকাশকে সুসজ্জিত করেছেন :
اِنَّا زَيَّنَّا السَّمَآءَ الدُّنْيَا بِزِيْنَةِنِ الْكَوَاكِبِ
নিশ্চয় আমি পৃথিবীর আকাশকে সুসজ্জিত করেছি নক্ষত্রমালার সৌন্দর্য দিয়ে। (সূরা সাফ্ফাত- ৬)
وَلَقَدْ جَعَلْنَا فِى السَّمَآءِ بُرُوْجًا وَّزَيَّنَّاهَا لِلنَّاظِرِيْنَ
আমি আকাশে গ্রহ-নক্ষত্র সৃষ্টি করেছি এবং সেটাকে সুশোভিত করেছি দর্শকদের জন্য। (সূরা হিজর- ১৬)
ব্যাখ্যা : দুনিয়ার আকাশ বলতে বুঝানো হয়েছে দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশকে, যা আমরা কোন দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্য ছাড়াই খালি চোখে দেখতে পাই। এছাড়াও আমরা বিভিন্ন প্রকার শক্তিশালী পর্যবেক্ষণ যন্ত্রপাতির সাহায্যে যে বিশ্বকে দেখি এবং যেসব বিশ্ব এখনো আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়নি, সেগুলো সবই দূরবর্তী আকাশ।
আল্লাহ এ আকাশ ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন :
وَهُوَ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضَ فِيْ سِتَّةِ اَيَّامٍ
আর তিনিই আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। (সূরা হুদ- ৭)
اَلَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِيْ سِتَّةِ اَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوٰى عَلَى الْعَرْشِۚ اَلرَّحْمٰنُ فَاسْاَلْ بِهٖ خَبِيْرًا
তিনি আকাশ-জমিন ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন; অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হয়েছেন। তিনিই ‘রহমান’, তাঁর সম্বন্ধে যে অবগত আছে তাকে জিজ্ঞেস করে দেখো। (সূরা ফুরক্বান- ৫৯)
আল্লাহ সৃষ্টির কাজে ক্লান্ত হন না :
وَلَقَدْ خَلَقْنَا السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِيْ سِتَّةِ اَيَّامٍ وَّمَا مَسَّنَا مِنْ لُّغُوْبٍ
আমি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী এবং এগুলোর মধ্যস্থিত সবকিছু সৃষ্টি করেছি ছয় দিনে। আর (এসব সৃষ্টিতে) কোন ক্লান্তি আমাকে স্পর্শ করেনি। (সূরা ক্বাফ- ৩৮)
তিনি রাত-দিন ও চন্দ্র-সূর্য সৃষ্টি করেছেন :
وَهُوَ الَّذِيْ خَلَقَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَؕ كُلٌّ فِيْ فَلَكٍ يَّسْبَحُوْنَ
আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিবস এবং সূর্য ও চন্দ্র; প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণ করে। (সূরা আম্বিয়া- ৩৩)
আল্লাহ বিভিন্ন আকৃতির প্রাণী সৃষ্টি করেছেন :
وَاللهُ خَلَقَ كُلَّ دَآبَّةٍ مِّنْ مَّآءٍۚ فَمِنْهُمْ مَّنْ يَّمْشِيْ عَلٰى بَطْنِهٖۚ وَمِنْهُمْ مَّنْ يَّمْشِيْ عَلٰى رِجْلَيْنِۚ وَمِنْهُمْ مَّنْ يَّمْشِيْ عَلٰۤى اَرْبَعٍؕ يَخْلُقُ اللهُ مَا يَشَآءُؕ اِنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
আল্লাহ সমসত্ম জীব সৃষ্টি করেছেন পানি হতে, তাদের কতক পেটে ভর দিয়ে চলে, কতক দু’পায়ে চলে এবং কতক চলে চার পায়ে। আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন, নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা নূর- ৪৫)
আল্লাহ জিন জাতিকে আগুন দিয়ে সৃষ্টি করেছেন :
وَخَلَقَ الْجَآنَّ مِنْ مَّارِجٍ مِّنْ نَّارٍ
আর তিনি জিন (জাতি) কে সৃষ্টি করেছেন অগ্নিশিখা হতে। (সূরা আর রহমান- ১৫)
আল্লাহ মানুষকে সুন্দরভাবে সৃষ্টি করেছেন :
لَقَدْ خَلَقْنَا الْاِنْسَانَ فِۤيْ اَحْسَنِ تَقْوِيْمٍ
আমি মানুষকে সুন্দরতম আকৃতিতে সৃষ্টি করেছি। (সূরা তীন- ৪)
ব্যাখ্যা : কয়েকটি নিষ্প্রাণ উপাদানের সমাহার এবং রাসায়নিক সংযোগের মাধ্যমে মানুষ নামক একটি বিস্ময়কর সত্তা সৃষ্টি করা হয়েছে, তার মধ্যে সংযুক্ত করা হয়েছে আবেগ, অনুভূতি, চেতনা, বুদ্ধিবৃত্তি ও চিন্তা-কল্পনার এমনসব অদ্ভুত শক্তি যাদের কোন একটির উৎসও তার মৌলিক উপাদানগুলোর মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় না। তারপর শুধু এতটুকুই নয় তার মধ্যে এমনসব অদ্ভুত প্রজনন শক্তিও সৃষ্টি করে দেয়া হয়েছে, যার ফলে কোটি কোটি মানুষ সেই একই কাঠামো এবং ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যের ধারক হিসেবে বের হয়ে আসছে। মানুষ সৃষ্টির এ মহৎ পরিকল্পনা, তাকে বাস্তব কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগ করা আল্লাহর অসীম কুদরতের প্রমাণ। মানুষ যদি শুধুমাত্র নিজের জন্মের উপরই চিন্তা-ভাবনা করে তাহলে জানতে পারবে যে, এক একটি মানুষের অস্তিত্বের মধ্যে আল্লাহর বাস্তব ব্যবস্থাপনা ও কলা-কৌশল সর্বক্ষণ সক্রিয় রয়েছে। প্রত্যেকের অস্তিত্ব, বৃদ্ধি ও বিকাশের প্রতিটি পর্যায়ই তাঁর ইচ্ছার ভিত্তিতে স্থির হয়। তাকে সৃষ্টি করা, সুন্দর আকৃতি প্রদান করা, মাতৃগর্ভে ধারণ করা, জন্মদান করা, লালন-পালন করা এবং জীবিকা নির্বাহে প্রতিদিনের চলাফেরা সবকিছুই আল্লাহর ইচ্ছাতে সংঘঠিত হয়।
মানুষের মেয়াদ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন :
هُوَ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ طِيْنٍ ثُمَّ قَضٰۤى اَجَلًاؕ وَاَجَلٌ مُّسَمًّى عِنْدَهٗ ثُمَّ اَنْتُمْ تَمْتَرُوْنَ
তিনিই তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর একটি কাল নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন এবং আরো একটি নির্ধারিত কাল আছে যা তিনিই জ্ঞাত, তারপরও তোমরা সন্দেহ কর। (সূরা আন‘আম- ২)
মানুষের মধ্যে আত্মীয়তা সৃষ্টি করেছেন :
وَهُوَ الَّذِيْ خَلَقَ مِنَ الْمَآءِ بَشَرًا فَجَعَلَهٗ نَسَبًا وَّصِهْرًاؕ وَكَانَ رَبُّكَ قَدِيْرًا
তিনিই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পানি হতে; অতঃপর তাকে বংশগত ও বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ করেছেন। আর তোমার প্রতিপালক (এসব বিষয়ে) সর্বশক্তিমান। (সূরা ফুরক্বান- ৫৪)
ব্যাখ্যা : তিনি মানুষের একটি নয় বরং দু’টি আলাদা আলাদা নমুনা (নর ও নারী) তৈরি করেছেন। তারপর এ জোড়াগুলো মিলিয়ে দুনিয়াতে তাদের মাঝে ভারসাম্য তৈরি করে দিয়েছেন। একদিকে তাদের থেকে পুত্র ও নাতিদের একটি ধারা চলছে, যারা অন্যের ঘর থেকে বিয়ে করে স্ত্রী নিয়ে আসছে। আবার অন্যদিকে কন্যা ও নাতনীদের একটি ধারা চলছে, যারা স্ত্রী হয়ে অন্যের ঘরে চলে যাচ্ছে। এভাবে এক পরিবারের সাথে অন্য পরিবার মিশে বংশ ও সভ্যতার বিকাশ ঘটছে।
প্রশান্তির জন্য জোড়া সৃষ্টি করেছেন :
هُوَ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ وَّجَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا لِيَسْكُنَ اِلَيْهَا
তিনিই তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তা হতে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন, যাতে সে তার নিকট প্রশান্তি লাভ করতে পারে। (সূরা আ‘রাফ- ১৮৯)
ব্যাখ্যা : স্রষ্টার প্রজ্ঞার পূর্ণতা হচ্ছে, তিনি মানুষকে দু’টি জাতির আকারে সৃষ্টি করেছেন। তারা প্রত্যেকে একে অন্যের জোড়ায় পরিণত হয়েছে। প্রত্যেকের শরীর, প্রবৃত্তি এবং উদ্যোগসমূহ অন্যের শারীরিক ও প্রবৃত্তির দাবীসমূহের পরিপূর্ণ জবাব। সেই স্রষ্টা এ উভয় জাতির লোকদেরকে সৃষ্টির সূচনা থেকেই আনুপাতিক হারে সৃষ্টি করে আসছেন। কোন এলাকায় কেবল পুত্রসন্তানই অথবা কেবল কন্যাসন্তানই জন্মলাভ করছে এমন কথা শোনা যায় না। এটা এমন জিনিস, যার মধ্যে কোন মানুষের সামান্যতম হস্তÿÿপের অবকাশও নেই। হাজার হাজার বছর থেকে কোটি কোটি মানুষের জন্মলাভে এ ব্যবস্থা সুসামঞ্জস্য পদ্ধতিতে কার্যকর থাকা কখনো নিছক আকস্মিক ঘটনা হতে পারে না। আবার বহু ইলাহের সম্মিলিত ব্যবস্থাপনার ফলও হতে পারে না।
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি করেছেন :
وَمِنْ اٰيَاتِهٖۤ اَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِّنْ اَنْفُسِكُمْ اَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوْاۤ اِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَّوَدَّةً وَّرَحْمَةًؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ
আর তাঁর দৃষ্টান্তগুলোর মধ্যে একটি এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের নিজেদের মধ্য থেকে স্ত্রীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি লাভ করতে পার। অতঃপর তিনি তোমাদের মাঝে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করে দিয়েছেন। নিশ্চয় এতে ঐসব লোকদের জন্য রয়েছে নিদর্শন, যারা গভীরভাবে চিন্তা করে। (সূরা রূম- ২১)
ব্যাখ্যা : স্রষ্টা নিজেই পরিকল্পিতভাবে এ ব্যবস্থা করেছেন, যার ফলে পুরুষ তার প্রাকৃতিক দাবী নারীর কাছে এবং নারী তার প্রাকৃতিক চাহিদা পুরুষের কাছে লাভ করবে এবং তারা উভয়ে পরস্পরের সাথে সম্পর্কিত থেকেই প্রশান্তি ও সুখ লাভ করবে। এ বিজ্ঞানময় ব্যবস্থাপনাকে স্রষ্টা একদিকে মানব বংশধারা অব্যাহত থাকার এবং অন্যদিকে মানবিক সভ্যতার মাধ্যম হিসেবে পরিণত করেছেন। স্রষ্টা নিজের জ্ঞান ও প্রজ্ঞার দ্বারা পুরুষ ও নারীর মধ্যে পরস্পরের এমন চাহিদা সৃষ্টি করেছেন, যার ফলে তারা উভয়ে মিলে একসাথে না থাকলে শান্তি ও সুখ লাভ করতে পারে না। শান্তির আশায় তাদেরকে একত্রে ঘর বাঁধতে বাধ্য করে। এরই বদৌলতে পরিবার ও গোত্র অস্তিত্ব লাভ করে। হাজার হাজার বছর থেকে অনবরত অসংখ্য পুরুষ ও নারীকে এ বিশেষ অস্থিরতা সহকারে সৃষ্টি করা এটা কেবল একজন জ্ঞানীর প্রজ্ঞার সুস্পষ্ট নিদর্শন। ভালোবাসা নারী ও পুরুষের মধ্যে এমন একটি আকর্ষণ, যা তাদেরকে পরস্পরের সাথে সংলগ্ন করে রাখে। আর রহমত অর্থ হচ্ছে এমন আত্মিক সম্পর্ক, যা স্বামী-স্ত্রীর জীবনে পর্যায়ক্রমে বিকাশ লাভ করে। এর বদৌলতে তারা দু’জনে একে অপরের কল্যাণকামী ও সুখ-দুঃখে সহানুভূতিশীল হয়ে যায়। কোটি কোটি মানুষ তাদের জীবনে যে ভালোবাসা লাভ করেছে এগুলো কোন সাধারণ বস্তু নয়। এগুলোকে পরিমাপ করা অসম্ভব। মানুষের শারীরিক গঠনে যেসব উপাদানের সমাবেশ ঘটানো হয়েছে, তার মধ্যে কোথাও এদের উৎস চিহ্নিত করা যেতে পারে না। একজন প্রজ্ঞাবান স্রষ্টা স্বেচ্ছায় একটি উদ্দেশ্য সামনে রেখে পূর্ণ সামঞ্জস্য সহকারে মানুষের মধ্যে তা সংস্থাপন করে দিয়েছেন।
আল্লাহ বিশ্বজগৎ পরিচালনা করেন :
يُدَبِّرُ الْاَمْرَ مِنَ السَّمَآءِ اِلَى الْاَ رْضِ ثُمَّ يَعْرُجُ اِلَيْهِ فِيْ يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهٗۤ اَلْفَ سَنَةٍ مِّمَّا تَعُدُّوْنَ
তিনি আসমান থেকে জমিন পর্যন্ত যাবতীয় বিষয় নিয়ন্ত্রণ করেন। অবশেষে তা তাঁর নিকট পৌঁছাবে এমন একদিনে, যার পরিমাণ হবে তোমাদের গণনায় হাজার বছরের সমান। (সূরা সাজদা- ৫)
আল্লাহ রাত ও দিনের আবর্তন ঘটান :
يُوْلِجُ اللَّيْلَ فِى النَّهَارِ وَيُوْلِجُ النَّهَارَ فِى اللَّيْلِ
তিনি রাতকে দিনে প্রবেশ করান এবং দিনকে রাতে প্রবেশ করান। (সূরা ফাতির- ১৩)
قُلْ اَرَاَيْتُمْ اِنْ جَعَلَ اللهُ عَلَيْكُمُ اللَّيْلَ سَرْمَدًا اِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَنْ اِلٰهٌ غَيْرُ اللهِ يَاْتِيْكُمْ بِضِيَآءٍؕ اَفَلَا تَسْمَعُوْنَ ‐ قُلْ اَرَاَيْتُمْ اِنْ جَعَلَ اللهُ عَلَيْكُمُ النَّهَارَ سَرْمَدًا اِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَنْ اِلٰهٌ غَيْرُ اللهِ يَاْتِيْكُمْ بِلَيْلٍ تَسْكُنُوْنَ فِيْهِؕ اَفَلَا تُبْصِرُوْنَ
বলো, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, আল্লাহ যদি রাতকে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করে দেন তবে আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন ইলাহ্ আছে কি, যে তোমাদেরকে আলো এনে দিতে পারে? তবুও কি তোমরা কর্ণপাত করবে না? বলো, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, আল্লাহ যদি দিনকে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করেন তবে আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন ইলাহ্ আছে কি, যে তোমাদের জন্য রাতের আবির্ভাব ঘটাবে যেন তোমরা বিশ্রাম করতে পার? তবুও কি তোমরা ভেবে দেখবে না? (সূরা ক্বাসাস- ৭১, ৭২)
ব্যাখ্যা : সূর্য ও পৃথিবীর মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের সুশৃঙ্খল পরিবর্তনের কারণে রাত-দিনের পরিবর্তন সাধিত হয়। এটি একজন বিশ্বজনীন ব্যবস্থাপক ও সমগ্র বিশ্বের উপর নিরঙ্কুশ কর্তৃত্বশালী শাসকের অস্তিত্বের সুস্পষ্ট আলামত। এর মধ্যে সুস্পষ্ট নৈপূণ্য, বিজ্ঞতা ও উদ্দেশ্যমূলক তৎপরতাও দেখা যায়। কারণ দুনিয়ার সমস্ত প্রয়োজন ও অভাব পূরণ এ দিন-রাতের আবর্তনের সাথে যুক্ত রয়েছে। এ থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, যিনি পৃথিবীর বুকে এসব বস্তু সৃষ্টি করেছেন তিনি নিজেই তাদের স্থিতি ও স্থায়িত্বের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই সরবরাহ করেন। এ বিশ্বজনীন ব্যবস্থাপক মাত্র একজন। তিনি খেলাচ্ছলে এ বিশ্বের কোনকিছুই সৃষ্টি করেননি বরং উদ্দেশ্যমূলকভাবে তিনি কাজ করছেন। অনুগ্রহকারী ও পালনকারী হিসেবে তিনিই ইবাদাত লাভের হকদার এবং দিন-রাতের আবর্তনের অধীন কোন সত্তাই রব ও প্রভু নয় বরং রবের অধীনস্থ দাস মাত্র।
আল্লাহ জীবিত থেকে মৃত ও মৃত থেকে জীবিতকে বের করেন :
يُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَيُخْرِجُ الْمَيِّتَ مِنَ الْحَيِّ وَيُحْيِى الْاَ رْضَ بَعْدَ مَوْتِهَاؕ وَكَذٰلِكَ تُخْرَجُوْنَ
তিনি জীবিতকে মৃত থেকে এবং মৃতকে জীবিত থেকে বের করে আনেন। তিনিই জমিনকে তার মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত করেন। আর এভাবেই তোমাদেরকে (মৃত্যুর পর পুনরায়) বের করে আনা হবে। (সূরা রূম- ১৯)
আল্লাহ দুর্বলকে সবল করেন, সবলকে দুর্বল করেন :
اَللهُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ ضُعْفٍ ثُمَّ جَعَلَ مِنْ ۢبَعْدِ ضُعْفٍ قُوَّةً ثُمَّ جَعَلَ مِنْ ۢبَعْدِ قُوَّةٍ ضُعْفًا وَّشَيْبَةًؕ يَخْلُقُ مَا يَشَآءُۚ وَهُوَ الْعَلِيْمُ الْقَدِيْرُ
আল্লাহ ঐ সত্তা, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেন দুর্বল অবস্থায়। অতঃপর তিনি দুর্বলতার পর শক্তি দান করেন, তারপর শক্তির পর পুনরায় দুর্বলতা ও বার্ধক্য দান করেন। তিনি যা ইচ্ছা তা-ই সৃষ্টি করেন এবং তিনিই সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান। (সূরা রূম- ৫৪)
আল্লাহ হাসান এবং কাঁদান :
وَاَنَّهٗ هُوَ اَضْحَكَ وَاَبْكٰى
আর তিনিই হাসান এবং তিনিই কাঁদান। (সূরা নাজম- ৪৩)
আল্লাহই মারেন এবং বাঁচান :
وَاَنَّهٗ هُوَ اَمَاتَ وَاَحْيَا
আর তিনিই মারেন ও তিনিই বাঁচান। (সূরা নাজম- ৪৪)
তিনিই সম্পদ দান করেন :
وَاَنَّهٗ هُوَ اَغْنٰى وَاَقْنٰى
আর তিনিই অভাবমুক্ত ও পরিতুষ্ট করেন। (সূরা নাজম- ৪৮)
আল্লাহ মানুষের অন্তর পরিবর্তন করেন :
وَنُقَلِّبُ اَفْئِدَتَهُمْ وَاَبْصَارَهُمْ كَمَا لَمْ يُؤْمِنُوْا بِهٖۤ اَوَّلَ مَرَّةٍ وَّنَذَرُهُمْ فِيْ طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُوْنَ
তারা যেমন প্রথমবার তাতে ঈমান আনেনি, তাই আমিও তাদের মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে দেব এবং তাদেরকে তাদের অবাধ্যতার আবর্তে ঘুরপাক খাওয়ার জন্য ছেড়ে দেব। (সূরা আন‘আম- ১১০)
আল্লাহ ঘুম দেন ও জাগ্রত করেন :
وَهُوَ الَّذِيْ يَتَوَفَّاكُمْ بِاللَّيْلِ وَيَعْلَمُ مَا جَرَحْتُمْ بِالنَّهَارِ ثُمَّ يَبْعَثُكُمْ فِيْهِ لِيُقْضٰۤى اَجَلٌ مُّسَمًّىۚ ثُمَّ اِلَيْهِ مَرْجِعُكُمْ ثُمَّ يُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
তিনিই রাতে তোমাদের মৃত্যু ঘটান এবং দিবসে তোমরা যা কর, তা তিনি জানেন। অতঃপর দিবসে তোমাদেরকে পুনর্জাগরণ করেন, যেন নির্ধারিত কাল পূর্ণ হয়। অতঃপর তাঁর দিকেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর তোমরা (দুনিয়াতে) যা করেছিলে, সে সম্বন্ধে তোমাদেরকে অবহিত করবেন। (সূরা আন‘আম- ৬০)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ নিজের সৃষ্টির প্রতি বড়ই করুণাশীল। মানুষ দুনিয়ায় অনবরত পরিশ্রম করতে পারে না। প্রত্যেকবার কয়েক ঘণ্টা পরিশ্রমের পর তাকে কয়েক ঘণ্টা বিশ্রাম নিতে হয়, যাতে সে আবার কয়েক ঘণ্টা কাজ করার শক্তি পায়। প্রজ্ঞাময় আল্লাহ তা‘আলা এ উদ্দেশ্যে মানুষের মধ্যে নিদ্রার এমন চাহিদা ঢেলে দিয়েছেন, যার ফলে কোন ব্যক্তির ইচ্ছা ছাড়াই কয়েক ঘণ্টা জাগরণের পর কয়েক ঘণ্টা বিশ্রাম নিতে বাধ্য করে এবং প্রয়োজন শেষ হয়ে গেলে স্বাভাবিকভাবেই বিশ্রাম ত্যাগ করে। এটি জন্মগতভাবে মানুষের প্রকৃতিতে রেখে দেয়া হয়েছে।
আল্লাহ বিদ্যুৎ চমকান :
هُوَ الَّذِيْ يُرِيْكُمُ الْبَرْقَ خَوْفًا وَّطَمَعًا وَّيُنْشِئُ السَّحَابَ الثِّقَالَ
তিনিই তোমাদেরকে পর্যবেক্ষণ করান বিজলী। (অতঃপর এর মাধ্যমে) ভয় ও ভরসা সঞ্চার করান এবং তিনিই সৃষ্টি করেন ভারী মেঘ। (সূরা রা‘দ- ১২)
আল্লাহ আকাশ থেকে বজ্রপাত করেন :
وَيُرْسِلُ الصَّوَاعِقَ فَيُصِيْبُ بِهَا مَنْ يَّشَآءُ وَهُمْ يُجَادِلُوْنَ فِى اللهِۚ وَهُوَ شَدِيْدُ الْمِحَالِ
তিনি বজ্রপাত করেন এবং যাকে ইচ্ছা তা দ্বারা আঘাত করেন। আর তারা আল্লাহ সম্বন্ধে ঝগড়া করে, অথচ তিনি মহাশক্তিশালী। (সূরা রা‘দ ১৩)
আল্লাহ বৃষ্টি তৈরি করেন :
اَللهُ الَّذِيْ يُرْسِلُ الرِّيَاحَ فَتُثِيْرُ سَحَابًا فَيَبْسُطُهٗ فِى السَّمَآءِ كَيْفَ يَشَآءُ وَيَجْعَلُهٗ كِسَفًا فَتَرَى الْوَدْقَ يَخْرُجُ مِنْ خِلَالِه ۚ فَاِذَاۤ اَصَابَ بِهٖ مَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِه ۤ اِذَا هُمْ يَسْتَبْشِرُوْنَ
আল্লাহ এমন সত্তা, যিনি বাতাস প্রেরণ করেন। অতঃপর বাতাস মেঘরাশিকে সঞ্চালন করে; তারপর তিনি মেঘরাশিকে যেমন ইচ্ছা আকাশে পরিব্যাপ্তি করে দেন এবং কখনো তা খন্ড-বিখন্ড করে দেন। অতঃপর তুমি দেখতে পাও যে, তার মধ্য থেকে বের হয়ে আসে বৃষ্টিধারা। তিনি যখন (সঞ্চালন করার) ইচ্ছা করেন, তখন তার বান্দাদের মধ্যে যাদেরকে ইচ্ছা তা পৌঁছে দেন। (ফলে) তারা আনন্দ করতে থাকে। (সূরা রূম- ৪৮)
আল্লাহ মৃত জমিনকে জীবিত করেন :
اِعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ يُحْيِى الْاَ رْضَ بَعْدَ مَوْتِهَاؕ قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ الْاٰيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُوْنَ
জেনে রেখো, আল্লাহই পৃথিবীকে তার মৃত্যুর পর জীবন দান করেন। আমি তো কেবল নিদর্শনগুলো তোমাদের জন্য বিশদভাবে বর্ণনা করি, যেন তোমরা বুঝতে পার। (সূরা হাদীদ- ১৭)
وَاللهُ اَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَحْيَا بِهِ الْاَ رْضَ بَعْدَ مَوْتِهَاؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّسْمَعُوْنَ
আল্লাহ আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন এবং এর দ্বারা মৃত ভূমিকে জীবিত করেন। অবশ্যই যে সম্প্রদায় কথা শুনে তাদের জন্য এতে নিদর্শন রয়েছে। (সূরা নাহল- ৬৫)
আল্লাহ বিশ্বের ভারসাম্য ঠিক রাখেন :
اِنَّ اللهَ يُمْسِكُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضَ اَنْ تَزُوْلًا ۚ وَلَئِنْ زَالَتَاۤ اِنْ اَمْسَكَهُمَا مِنْ اَحَدٍ مِّنْ ۢبَعْدِهٖؕ اِنَّهٗ كَانَ حَلِيْمًا غَفُوْرًا
নিশ্চয় আল্লাহ আসমান ও জমিনকে স্থিরভাবে ধরে রাখেন, যেন তা (স্বীয় কক্ষপথ থেকে) সরে না যায়। যদি এরা সরে যায় তবে তিনি ছাড়া কে এদেরকে ধরে রাখবে? নিশ্চয় তিনি অতিশয় সহনশীল ও পরম ক্ষমাশীল। (সূরা ফাতির- ৪১)
আল্লাহ সর্বদা কর্মতৎপর :
يَسْاَلُهٗ مَنْ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِؕ كُلَّ يَوْمٍ هُوَ فِيْ شَاْنٍ
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা আছে সবই তাঁর নিকট প্রতিদিন প্রার্থনা করে, তিনি সর্বদা মহান কার্যে রত। (সূরা আর রহমান- ২৯)
ব্যাখ্যা : মহাবিশ্বের এ কর্মক্ষেত্রে প্রতি মুহূর্তে আল্লাহ তা‘আলার কর্মতৎপরতার এক সীমাহীন ধারাবাহিকতা চলছে। কাউকে তিনি মারছেন আবার কাউকে জীবন দান করছেন। কারো উত্থান ঘটাচ্ছেন আবার কারো পতন ঘটাচ্ছেন। কাউকে আরোগ্য দান করছেন আবার কাউকে রোগাক্রান্ত করছেন। কাউকে ডুবন্ত অবস্থা থেকে রক্ষা করছেন আবার কাউকে নিমজ্জিত করছেন। সকল সৃষ্টিকে নানাভাবে রিযিক দান করছেন। অসংখ্য বস্তুকে নতুন নতুন আকার-আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি করছেন। তাঁর পৃথিবী কখনো এক অবস্থায় অপরিবর্তিত থাকে না। তাঁর পরিবেশ ও অবস্থা প্রতি মুহূর্তে পরিবর্তিত হতে থাকে।
আল্লাহ সর্বোত্তম রিযিকদাতা :
قُلْ مَا عِنْدَ اللهِ خَيْرٌ مِّنَ اللَّهْوِ وَمِنَ التِّجَارَةِ ؕ وَاللهُ خَيْرُ الرَّازِقِيْنَ
(হে মুহাম্মাদ) বলো, আল্লাহর নিকট যা আছে তা খেলতামাশা ও ব্যবসা অপেক্ষা উৎকৃষ্ট। আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ রিযিকদাতা। (সূরা জুমু‘আ- ১১)
وَالَّذِيْنَ هَاجَرُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ ثُمَّ قُتِلُوْاۤ اَوْ مَاتُوْا لَيَرْزُقَنَّهُمُ اللهُ رِزْقًا حَسَنًاؕ وَاِنَّ اللهَ لَهُوَ خَيْرُ الرَّازِقِيْنَ
যারা আল্লাহর পথে হিজরত করেছে, অতঃপর নিহত হয়েছে অথবা মারা গেছে, আল্লাহ তাদেরকে অবশ্যই উৎকৃষ্ট জীবিকা দান করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বোত্তম রিযিকদাতা। (সূরা হজ্জ- ৫৮)
ব্যাখ্যা : যদি পৃথিবী ও আকাশের অগণিত শক্তিকে জীবিকার উপকরণ সৃষ্টি করার কাজে না লাগিয়ে দেয়া হতো এবং পৃথিবীতে মানুষের জন্য জীবিকার অসংখ্য উপায় সৃষ্টি না করা হতো, তাহলে মানুষ নিজেদের জীবিকার সন্ধানই খুঁজে পেত না। আল্লাহ তা‘আলা মানবজাতির জন্য এ সবকিছুর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এমনকি তাদের জীবিকার অনুসন্ধান এবং তা উপার্জনের জন্য উপযোগী অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এবং দৈহিক ও মানসিক যোগ্যতাও দান করেছেন।
আল্লাহ সকল প্রাণীকে রিযিক দান করেন :
وَمَا مِنْ دَآبَّةٍ فِى الْاَ رْضِ اِلَّا عَلَى اللهِ رِزْقُهَا وَيَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَاؕ كُلٌّ فِيْ كِتَابٍ مُّبِيْنٍ
ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী সকলের জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহরই। তিনি তাদের স্থায়ী ও অস্থায়ী সকল অবস্থান সম্পর্কে অবহিত; সবকিছুই সুস্পষ্ট কিতাবে (লিপিবদ্ধ) রয়েছে। (সূরা হুদ- ৬)
وَكَاَيِّنْ مِّنْ دَآبَّةٍ لَّا تَحْمِلُ رِزْقَهَا ؕ اَللهُ يَرْزُقُهَا وَاِيَّاكُمْ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
এমন কতক জীবজন্তু আছে যারা নিজেদের খাদ্য মওজুদ রাখে না। আল্লাহই তাদেরকে ও তোমাদেরকে রিযিক দান করেন; আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা আনকাবূত- ৬০)
আল্লাহ সবাইকে সমানভাবে রিযিক দান করেন না :
وَاللهُ فَضَّلَ بَعْضَكُمْ عَلٰى بَعْضٍ فِى الرِّزْقِ
আল্লাহ জীবিকা প্রদানে তোমাদের কাউকে কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। (সূরা নাহল- ৭১)
আল্লাহ রিযিক বৃদ্ধি করেন এবং কমান :
اَوَلَمْ يَعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيَقْدِرُؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ
তারা কি জানে না যে, আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা রিযিক বর্ধিত করেন এবং (যার জন্য ইচ্ছা) হ্রাস করেন। এতে অবশ্যই মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা যুমার- ৫২)
اِنَّ رَبَّكَ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيَقْدِرُؕ اِنَّهٗ كَانَ بِعِبَادِهٖ خَبِيْرًا ۢبَصِيْرًا
তোমার প্রতিপালক যার জন্য ইচ্ছা রিযিক বর্ধিত করেন এবং (যার জন্য ইচ্ছা) হ্রাস করেন; তিনি তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে সবকিছু জানেন এবং দেখেন। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩০)
اَللهُ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيَقْدِرُ وَفَرِحُوْا بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَاؕ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا فِى الْاٰخِرَةِ اِلَّا مَتَاعٌ
আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা তার জীবিকা বর্ধিত করেন এবং সংকুচিতও করেন। ফলে তারা পার্থিব জীবনে উল্লাসিত হয়, অথচ দুনিয়ার জীবন আখিরাতের তুলনায় ক্ষণস্থায়ী ভোগমাত্র। (সূরা রা‘দ- ২৬)
সবাইকে অঢেল রিযিক না দেয়ার কারণ :
وَلَوْ بَسَطَ اللهُ الرِّزْقَ لِعِبَادِهٖ لَبَغَوْا فِى الْاَ رْضِ وَلٰكِنْ يُّنَزِّلُ بِقَدَرٍ مَّا يَشَآءُۚ اِنَّهٗ بِعِبَادِهٖ خَبِيْرٌ ۢبَصِيْرٌ
আল্লাহ তাঁর বান্দাদের রিযিক বাড়িয়ে দিলে তারা পৃথিবীতে অবশ্যই সীমালঙ্ঘন করত; কিন্তু তিনি তাঁর ইচ্ছানুযায়ী পরিমাণ মতো দিয়ে থাকেন। তিনি তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে সবকিছু জানেন এবং দেখেন। (সূরা শূরা- ২৭)
ব্যাখ্যা : রিযিকের স্বল্পতা ও প্রাচুর্যতা আল্লাহর বিধানের উপর নির্ভরশীল। সেই বিধানের উদ্দেশ্যও সম্পূর্ণ ভিন্ন। মক্কাবাসীরা যে সচ্ছলতা ও শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেছিল তা তাদেরকে এতটাই অহংকারী করে তুলেছিল যে, তারা আল্লাহর নবীর কথা শুনতে কোনভাবেই প্রস্তুত ছিল না। এ কারণে আল্লাহ যদি সংকীর্ণমনা লোকদের জন্য রিযিকের দরজা খুলে দেন, তাহলে তারা পুরোপুরিভাবে গর্বে ফেটে পড়বে। তাই তিনি তাদেরকে পর্যবেক্ষণে রেখেছেন এবং বুঝেশুনে একটি পরিমাণ মতো রিযিক দিচ্ছেন।
তিনি যাকে চান তাকে অপরিমিত রিযিক দান করেন :
وَاللهُ يَرْزُقُ مَنْ يَّشَآءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ
আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অপরিমিত জীবিকা দান করেন। (সূরা নূর- ৩৮)
اِنَّ اللهَ يَرْزُقُ مَنْ يَّشَآءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ
নিশ্চয় আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন অপরিমিত রিযিক দান করেন। (সূরা আলে ইমরান- ৩৭)
ব্যাখ্যা : আরবি ভাষায় রিযিক এর অর্থ শুধু খাদ্যবস্তুর মধ্যে সীমিত নয়; বরং দান ও অনুগ্রহ অর্থেও তা ব্যবহৃত হয়। আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে দুনিয়ায় যা কিছু দিয়েছেন তা সবই মানুষের জন্য রিযিক। এমনকি ইলিম এবং বিভিন্ন গুণাবলিও রিযিকের অন্তর্ভুক্ত।
আল্লাহর হাত প্রশস্ত :
وَقَالَتِ الْيَهُوْدُ يَدُ اللهِ مَغْلُوْلَةٌ ؕ غُلَّتْ اَيْدِيْهِمْ وَلُعِنُوْا بِمَا قَالُوْا بَلْ يَدَاهُ مَبْسُوْطَتَانِ يُنْفِقُ كَيْفَ يَشَآءُ
ইয়াহুদিরা বলে, ‘আল্লাহর হাত রুদ্ধ’; (বরং) তারাই রুদ্ধহস্ত এবং তারা যা বলে সেজন্য তারা অভিশপ্ত। আর আল্লাহর উভয় হাতই প্রসারিত; যেভাবে ইচ্ছা তিনি দান করেন। (সূরা মায়েদা- ৬৪)
قُلْ مَا عِنْدَ اللهِ خَيْرٌ مِّنَ اللَّهْوِ وَمِنَ التِّجَارَةِ ؕ وَاللهُ خَيْرُ الرَّازِقِيْنَ
(হে মুহাম্মাদ) বলো, আল্লাহর নিকট যা আছে তা খেলতামাশা ও ব্যবসা অপেক্ষা উৎকৃষ্ট। আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ রিযিকদাতা। (সূরা জুমু‘আ- ১১)
وَالَّذِيْنَ هَاجَرُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ ثُمَّ قُتِلُوْاۤ اَوْ مَاتُوْا لَيَرْزُقَنَّهُمُ اللهُ رِزْقًا حَسَنًاؕ وَاِنَّ اللهَ لَهُوَ خَيْرُ الرَّازِقِيْنَ
যারা আল্লাহর পথে হিজরত করেছে, অতঃপর নিহত হয়েছে অথবা মারা গেছে, আল্লাহ তাদেরকে অবশ্যই উৎকৃষ্ট জীবিকা দান করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বোত্তম রিযিকদাতা। (সূরা হজ্জ- ৫৮)
ব্যাখ্যা : যদি পৃথিবী ও আকাশের অগণিত শক্তিকে জীবিকার উপকরণ সৃষ্টি করার কাজে না লাগিয়ে দেয়া হতো এবং পৃথিবীতে মানুষের জন্য জীবিকার অসংখ্য উপায় সৃষ্টি না করা হতো, তাহলে মানুষ নিজেদের জীবিকার সন্ধানই খুঁজে পেত না। আল্লাহ তা‘আলা মানবজাতির জন্য এ সবকিছুর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এমনকি তাদের জীবিকার অনুসন্ধান এবং তা উপার্জনের জন্য উপযোগী অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এবং দৈহিক ও মানসিক যোগ্যতাও দান করেছেন।
আল্লাহ সকল প্রাণীকে রিযিক দান করেন :
وَمَا مِنْ دَآبَّةٍ فِى الْاَ رْضِ اِلَّا عَلَى اللهِ رِزْقُهَا وَيَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَاؕ كُلٌّ فِيْ كِتَابٍ مُّبِيْنٍ
ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী সকলের জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহরই। তিনি তাদের স্থায়ী ও অস্থায়ী সকল অবস্থান সম্পর্কে অবহিত; সবকিছুই সুস্পষ্ট কিতাবে (লিপিবদ্ধ) রয়েছে। (সূরা হুদ- ৬)
وَكَاَيِّنْ مِّنْ دَآبَّةٍ لَّا تَحْمِلُ رِزْقَهَا ؕ اَللهُ يَرْزُقُهَا وَاِيَّاكُمْ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
এমন কতক জীবজন্তু আছে যারা নিজেদের খাদ্য মওজুদ রাখে না। আল্লাহই তাদেরকে ও তোমাদেরকে রিযিক দান করেন; আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা আনকাবূত- ৬০)
আল্লাহ সবাইকে সমানভাবে রিযিক দান করেন না :
وَاللهُ فَضَّلَ بَعْضَكُمْ عَلٰى بَعْضٍ فِى الرِّزْقِ
আল্লাহ জীবিকা প্রদানে তোমাদের কাউকে কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। (সূরা নাহল- ৭১)
আল্লাহ রিযিক বৃদ্ধি করেন এবং কমান :
اَوَلَمْ يَعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيَقْدِرُؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ
তারা কি জানে না যে, আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা রিযিক বর্ধিত করেন এবং (যার জন্য ইচ্ছা) হ্রাস করেন। এতে অবশ্যই মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা যুমার- ৫২)
اِنَّ رَبَّكَ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيَقْدِرُؕ اِنَّهٗ كَانَ بِعِبَادِهٖ خَبِيْرًا ۢبَصِيْرًا
তোমার প্রতিপালক যার জন্য ইচ্ছা রিযিক বর্ধিত করেন এবং (যার জন্য ইচ্ছা) হ্রাস করেন; তিনি তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে সবকিছু জানেন এবং দেখেন। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩০)
اَللهُ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيَقْدِرُ وَفَرِحُوْا بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَاؕ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا فِى الْاٰخِرَةِ اِلَّا مَتَاعٌ
আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা তার জীবিকা বর্ধিত করেন এবং সংকুচিতও করেন। ফলে তারা পার্থিব জীবনে উল্লাসিত হয়, অথচ দুনিয়ার জীবন আখিরাতের তুলনায় ক্ষণস্থায়ী ভোগমাত্র। (সূরা রা‘দ- ২৬)
সবাইকে অঢেল রিযিক না দেয়ার কারণ :
وَلَوْ بَسَطَ اللهُ الرِّزْقَ لِعِبَادِهٖ لَبَغَوْا فِى الْاَ رْضِ وَلٰكِنْ يُّنَزِّلُ بِقَدَرٍ مَّا يَشَآءُۚ اِنَّهٗ بِعِبَادِهٖ خَبِيْرٌ ۢبَصِيْرٌ
আল্লাহ তাঁর বান্দাদের রিযিক বাড়িয়ে দিলে তারা পৃথিবীতে অবশ্যই সীমালঙ্ঘন করত; কিন্তু তিনি তাঁর ইচ্ছানুযায়ী পরিমাণ মতো দিয়ে থাকেন। তিনি তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে সবকিছু জানেন এবং দেখেন। (সূরা শূরা- ২৭)
ব্যাখ্যা : রিযিকের স্বল্পতা ও প্রাচুর্যতা আল্লাহর বিধানের উপর নির্ভরশীল। সেই বিধানের উদ্দেশ্যও সম্পূর্ণ ভিন্ন। মক্কাবাসীরা যে সচ্ছলতা ও শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেছিল তা তাদেরকে এতটাই অহংকারী করে তুলেছিল যে, তারা আল্লাহর নবীর কথা শুনতে কোনভাবেই প্রস্তুত ছিল না। এ কারণে আল্লাহ যদি সংকীর্ণমনা লোকদের জন্য রিযিকের দরজা খুলে দেন, তাহলে তারা পুরোপুরিভাবে গর্বে ফেটে পড়বে। তাই তিনি তাদেরকে পর্যবেক্ষণে রেখেছেন এবং বুঝেশুনে একটি পরিমাণ মতো রিযিক দিচ্ছেন।
তিনি যাকে চান তাকে অপরিমিত রিযিক দান করেন :
وَاللهُ يَرْزُقُ مَنْ يَّشَآءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ
আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অপরিমিত জীবিকা দান করেন। (সূরা নূর- ৩৮)
اِنَّ اللهَ يَرْزُقُ مَنْ يَّشَآءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ
নিশ্চয় আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন অপরিমিত রিযিক দান করেন। (সূরা আলে ইমরান- ৩৭)
ব্যাখ্যা : আরবি ভাষায় রিযিক এর অর্থ শুধু খাদ্যবস্তুর মধ্যে সীমিত নয়; বরং দান ও অনুগ্রহ অর্থেও তা ব্যবহৃত হয়। আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে দুনিয়ায় যা কিছু দিয়েছেন তা সবই মানুষের জন্য রিযিক। এমনকি ইলিম এবং বিভিন্ন গুণাবলিও রিযিকের অন্তর্ভুক্ত।
আল্লাহর হাত প্রশস্ত :
وَقَالَتِ الْيَهُوْدُ يَدُ اللهِ مَغْلُوْلَةٌ ؕ غُلَّتْ اَيْدِيْهِمْ وَلُعِنُوْا بِمَا قَالُوْا بَلْ يَدَاهُ مَبْسُوْطَتَانِ يُنْفِقُ كَيْفَ يَشَآءُ
ইয়াহুদিরা বলে, ‘আল্লাহর হাত রুদ্ধ’; (বরং) তারাই রুদ্ধহস্ত এবং তারা যা বলে সেজন্য তারা অভিশপ্ত। আর আল্লাহর উভয় হাতই প্রসারিত; যেভাবে ইচ্ছা তিনি দান করেন। (সূরা মায়েদা- ৬৪)
আল্লাহ সর্ববিষয়ে জ্ঞান রাখেন :
اِنَّ اللهَ كَانَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمًا
নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ। (সূরা নিসা- ৩২)
ব্যাখ্যা : عَلِيْمٌ (‘আলীম) শব্দের অর্থ সর্বজ্ঞ, মহাজ্ঞানী। অর্থাৎ তিনি ছোট-বড়, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সবকিছু সম্পর্কে জানেন। তার জ্ঞানের বাহিরে কোন জিনিস থাকতে পারে না। তিনি কোন বিষয়ে অনুমান করেন না; বরং সবকিছু সম্পর্কে সরাসরি জানেন। সুতরাং অনুভূতি ও ইন্দ্রিয়বহির্ভূত বিষয়ে তিনি যেসব তথ্য দিচ্ছেন, তার সবগুলোই সঠিক। আর তা না মানার অর্থ হচ্ছে, অজ্ঞতার অনুসরণ করা। একইভাবে তিনি মানুষের উন্নতির পথ ও পদ্ধতি সম্পর্কেও জানেন। তাঁর প্রতিটি শিক্ষা সঠিক ও জ্ঞানভিত্তিক, যার মধ্যে ভুলভ্রান্তির কোন সম্ভাবনা নেই। অতএব তাঁর পথনির্দেশনা গ্রহণ না করার অর্থ হচ্ছে, সঠিক পথে চলতে না চাওয়া এবং ভ্রান্ত পথে চলতে থাকা। তাছাড়া মানুষের কোন গতিবিধি তাঁর নিকট গোপন থাকতে পারে না। এমনকি তিনি মানুষের অন্তর্নিহিত সকল ধরনের ইচ্ছা সম্পর্কেও জানেন, যা তাদের সমস্ত কাজকর্মের মূল চালিকাশক্তি। তাই মানুষ কোন অজুহাত দেখিয়ে তাঁর শাস্তি থেকে রক্ষা পাবে না।
لَهٗ مَقَالِيْدُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِۚ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيَقْدِرُؕ اِنَّهٗ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর চাবিসমূহ তাঁরই নিকট। তিনি যাকে ইচ্ছা তার রিযিক বর্ধিত করেন অথবা সংকুচিত করেন। তিনি সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ। (সূরা শূরা- ১২)
আল্লাহর জ্ঞান সবকিছুকে বেষ্টন করে আছে :
اَنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ وَّاَنَّ اللهَ قَدْ اَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا
আল্লাহ সর্ববিষয়ে শক্তিমান এবং আল্লাহ তাঁর জ্ঞান দ্বারা সবকিছুই পরিবেষ্টন করে রেখেছেন। (সূরা তালাক্ব- ১২)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর জ্ঞান ও তাঁর পাকড়াও হতে কেউ বাঁচতে পারে না। পাথরের মধ্যে ছোট্ট একটি কণা মানুষের দৃষ্টির অগোচরে থাকতে পারে কিন্তু তাঁর কাছে তা সুস্পষ্ট। আকাশে একটি ক্ষুদ্রতম কণিকা মানুষ থেকে বহু দূরবর্তী হতে পারে, ভূমির গভীরে অবস্থিত কোন জিনিসের প্রতি তার দৃষ্টি শেষ হয়ে যেতে পারে; কিন্তু তা আল্লাহর অতি নিকটতর। কাজেই তুমি কোথাও এমন কোন সৎ বা অসৎকাজ করতে পার না, যা আল্লাহর অগোচরে থেকে যায়। তিনি তা জানেন কেবল তা নয় বরং যখন হিসাব-নিকাশের সময় আসবে তখন তিনি তোমাদের প্রত্যেকটি কাজের রেকর্ডও তোমাদের সামনে উপস্থাপন করবেন।
অতীত-ভবিষ্যৎ সবই আল্লাহ জানেন :
يَعْلَمُ مَا بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْؕ وَاِلَى اللهِ تُرْجَعُ الْاُمُوْرُ
তাদের সম্মুখে এবং পশ্চাতে যা কিছু আছে তিনি তা জানেন। আর সমসত্ম বিষয় তো আল্লাহর দিকেই প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা হজ্জ- ৭৬)
আসমান-জমিনের সবকিছুই আল্লাহ জানেন :
قُلْ اِنْ تُخْفُوْا مَا فِيْ صُدُوْرِكُمْ اَوْ تُبْدُوْهُ يَعْلَمْهُ اللهُؕ وَيَعْلَمُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَ رْضِؕ وَاللهُ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
বলো, তোমাদের অন্তরে যা আছে তা গোপন রাখ অথবা প্রকাশ কর আল্লাহ সে সম্পর্কে অবগত আছেন। এমনকি আসমান ও জমিনে যা আছে সবকিছু সম্পর্কে তিনি অবগত আছেন। আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা আলে ইমরান- ২৯)
اَنَّ اللهَ يَعْلَمُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَ رْضِ وَاَنَّ اللهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ
আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে আল্লাহ সে সম্পর্কে জানেন; নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ। (সূরা মায়েদা- ৯৭)
সবকিছু জানা আল্লাহর জন্যই শোভা পায় :
اَلَا يَعْلَمُ مَنْ خَلَقَؕ وَهُوَ اللَّطِيْفُ الْخَبِيْرُ
যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি জানেন না? তিনি সূক্ষ্মদর্শী ও সবকিছুর খবর রাখেন। (সূরা মুলক- ১৪)
জলে-স্থলে কী আছে সবই আল্লাহর জানা আছে :
وَيَعْلَمُ مَا فِى الْبَرِّ وَالْبَحْرِ
জলে ও স্থলে যা কিছু আছে সে সম্পর্কে তিনি অবগত। (সূরা আন‘আম- ৫৯)
গাছের পাতা ঝরলে তাও জানেন :
وَمَا تَسْقُطُ مِنْ وَّرَقَةٍ اِلَّا يَعْلَمُهَا وَلَا حَبَّةٍ فِيْ ظُلُمَاتِ الْاَ رْضِ وَلَا رَطْبٍ وَّلَا يَابِسٍ اِلَّا فِيْ كِتَابٍ مُّبِيْنٍ
তাঁর অজ্ঞাতসারে একটি পাতাও পড়ে না। মাটির অন্ধকারে এমন কোন শস্যকণাও রসযুক্ত কিংবা শুষ্ক হয় না, যা সুস্পষ্ট কিতাবে নেই। (সূরা আন‘আম- ৫৯)
জমিনে যা প্রবেশ করে এবং আকাশে যা উঠে আল্লাহ তাও জানেন :
يَعْلَمُ مَا يَلِجُ فِى الْاَ رْضِ وَمَا يَخْرُجُ مِنْهَا وَمَا يَنْزِلُ مِنَ السَّمَآءِ وَمَا يَعْرُجُ فِيْهَاؕ وَهُوَ الرَّحِيْمُ الْغَفُوْرُ
তিনি জানেন যা কিছু জমিনে প্রবেশ করে এবং যা কিছু সেখান থেকে বের হয়। আর যা কিছু আসমান থেকে নাযিল হয় এবং যা কিছু সেখানে আরোহণ করে। তিনি পরম দয়ালু ও অত্যন্ত ক্ষমাশীল। (সূরা সাবা- ২)
يَعْلَمُ مَا يَلِجُ فِى الْاَ رْضِ وَمَا يَخْرُجُ مِنْهَا وَمَا يَنْزِلُ مِنَ السَّمَآءِ وَمَا يَعْرُجُ فِيْهَاؕ وَهُوَ مَعَكُمْ اَيْنَ مَا كُنْتُمْؕ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
তিনি জানেন যা কিছু ভূমিতে প্রবেশ করে ও যা কিছু তা হতে বের হয় এবং আকাশ হতে যা কিছু নামে ও আকাশে যা কিছু উঠে। তোমরা যেখানেই থাক না কেন তিনি (জানার দিক দিয়ে) তোমাদের সঙ্গেই আছেন। আর তোমরা যা কিছু কর আল্লাহ তা দেখেন। (সূরা হাদীদ- ৪)
নারীর জরায়ুতে সন্তানের কী অবস্থা তাও জানেন :
اَللهُ يَعْلَمُ مَا تَحْمِلُ كُلُّ اُنْثٰى وَمَا تَغِيْضُ الْاَ رْحَامُ وَمَا تَزْدَادُؕ وَكُلُّ شَيْءٍ عِنْدَهٗ بِمِقْدَارٍ
প্রত্যেক নারী যা গর্ভে ধারণ করে এবং জরায়ুতে যা কিছু কমে ও বাড়ে আল্লাহ তাও জানেন এবং তাঁর বিধানে প্রত্যেক বস্তুরই একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ রয়েছে। (সূরা রা‘দ- ৮)
ব্যাখ্যা : মাতৃগর্ভে ভ্রূণের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, শক্তি-সামর্থ্য, যোগ্যতা ও মানসিক ক্ষমতার মধ্যে যাবতীয় হ্রাস-বৃদ্ধি আল্লাহর সরাসরি তত্ত্বাবধানে সাধিত হয়।
গর্ভধারণ, প্রসব ও বয়স সবই তাঁর জ্ঞানের আওতায় :
وَمَا تَحْمِلُ مِنْ اُنْثٰى وَلَا تَضَعُ اِلَّا بِعِلْمِه ؕ وَمَا يُعَمَّرُ مِنْ مُّعَمَّرٍ وَّلَا يُنْقَصُ مِنْ عُمُرِه ۤ اِلَّا فِيْ كِتَابٍؕ اِنَّ ذٰلِكَ عَلَى اللهِ يَسِيْرٌ
কোন নারীই গর্ভধারণ করে না এবং সন্তানও প্রসব করে না তাঁর অজান্তে। আর কোন বয়স্ক ব্যক্তির দীর্ঘায়ু লাভ করা হয় না আবার তার আয়ু কমও করা হয় না, কিন্তু তা তো লিপিবদ্ধ রয়েছে এক কিতাবে (লাওহে মাহফুযে)। নিশ্চয় এ কাজ আল্লাহর পক্ষে অতি সহজ। (সূরা ফাতির- ১১)
পাঁচটি জিনিসের বিশেষ জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর কাছে :
اِنَّ اللهَ عِنْدَهٗ عِلْمُ السَّاعَةِۚ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَۚ وَيَعْلَمُ مَا فِى الْاَ رْحَامِؕ وَمَا تَدْرِيْ نَفْسٌ مَّاذَا تَكْسِبُ غَدًاؕ وَّمَا تَدْرِيْ نَفْسٌ ۢبِاَيِّ اَرْضٍ تَمُوْتُؕ اِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ خَبِيْرٌ
নিশ্চয় আল্লাহর কাছে রয়েছে কিয়ামত সম্পর্কে জ্ঞান। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তিনিই জানেন যা কিছু গর্ভে আছে। কেউ জানে না আগামীকাল সে কী আয় করবে এবং কেউ জানে না কোন স্থানে সে মৃত্যুবরণ করবে। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু জানেন এবং সব খবর রাখেন। (সূরা লুক্বমান- ৩৪)
ব্যাখ্যা : মানুষের সচ্ছলতা-অসচ্ছলতা নির্ভর করে বৃষ্টির উপর। কিন্তু আল্লাহর হাতে রয়েছে এর চাবিকাঠি। তিনি যখন যেখানে যতটুকু চান পানি বর্ষণ করেন এবং যখনই চান থামিয়ে দেন। কেউ এতটুকুও জানে না যে, কোথায় কখন কতটুকু বৃষ্টি হবে এবং কোন্ ভূখন্ড তা হতে বঞ্চিত হবে অথবা কেন্ ভূখন্ডে বৃষ্টি উল্টো ক্ষতিকর প্রমাণিত হবে। পুরুষের বীর্যে স্ত্রীদের গর্ভসঞ্চার হয় এবং এর সাথে মানুষের বংশধারার ভবিষ্যৎ জড়িত। কিন্তু মানুষ জানে না যে, এ গর্ভে কী লালিত হচ্ছে এবং কোন্ আকৃতিতে ও কোন্ ধরনের কল্যাণ বা অকল্যাণ নিয়ে তা বের হয়ে আসবে। আগামীকাল তাদের কী হবে, তাও তারা জানে না। একটি আকস্মিক দুর্ঘটনা মানুষের ভাগ্য বদলে দিতে পারে। কিন্তু এক মিনিট আগেও মানুষ তার খবর পায় না। মানুষ এটাও জানে না যে, তাদের এ জীবনের সমাপ্তি কোথায় এবং কী অবস্থায় ঘটবে। এ সমস্ত তথ্যজ্ঞান আল্লাহ নিজের কাছে রেখেছেন। এভাবে দুনিয়ার শেষ ক্ষণটির ব্যাপারেও আল্লাহর ফায়সালার প্রতি আস্থা রাখা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
মানুষের অবস্থা আল্লাহই ভালো জানেন :
رَبُّكُمْ اَعْلَمُ بِكُمْؕ اِنْ يَّشَاْ يَرْحَمْكُمْ اَوْ اِنْ يَّشَاْ يُعَذِّبْكُمْ
তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের ব্যাপারে ভালোভাবে জানেন। ইচ্ছা করলে তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করেন এবং ইচ্ছা করলে তোমাদেরকে শাসিত্ম দেন। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৫৪)
সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষকে জানেন :
هُوَ اَعْلَمُ بِكُمْ اِذْ اَنْشَاَكُمْ مِّنَ الْاَ رْضِ وَاِذْ اَنْتُمْ اَجِنَّةٌ فِيْ بُطُوْنِ اُمَّهَاتِكُمْۚ فَلَا تُزَكُّوْاۤ اَنْفُسَكُمْؕ هُوَ اَعْلَمُ بِمَنِ اتَّقٰى
তিনি তোমাদের সম্পর্কে সম্যক অবগত- যখন তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছিলেন মাটি হতে এবং এক সময় তোমরা মাতৃগর্ভে ভ্রুণরূপে ছিলে। অতএব তোমরা আত্মপ্রশংসা করো না, তিনিই ভালো জানেন কে মুত্তাক্বী। (সূরা নাজম- ৩২)
তিনি পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের সম্পর্কে জানেন :
وَلَقَدْ عَلِمْنَا الْمُسْتَقْدِمِيْنَ مِنْكُمْ وَلَقَدْ عَلِمْنَا الْمُسْتَاْخِرِيْنَ
তোমাদের মধ্য হতে পূর্বে যারা গত হয়েছে আমি তাদেরকে জানি এবং পরে যারা আসবে তাদেরকেও জানি। (সূরা হিজর- ২৪)
মানুষের মনের কথাও তিনি জানেন :
وَاَسِرُّوْا قَوْلَكُمْ اَوِ اجْهَرُوْا بِهٖؕ اِنَّهٗ عَلِيْمٌ ۢبِذَاتِ الصُّدُوْرِ
তোমরা তোমাদের কথা চুপে চুপে বল অথবা উচ্চৈঃস্বরে বল, তিনি তো অন্তরের গোপনীয়তা সম্পর্কে সর্বজ্ঞ। (সূরা মুলক- ১৩)
اِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ ۢبِذَاتِ الصُّدُوْرِ
নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের অন্তরের বিষয় সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত আছেন। (সূরা আলে ইমরান- ১১৯)
وَاللهُ يَعْلَمُ مَا فِيْ قُلُوْبِكُمْؕ وَكَانَ اللهُ عَلِيْمًا حَلِيْمًا
তোমাদের অন্তরে যা আছে তা আল্লাহ জানেন। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী ও সহনশীল। (সূরা আহযাব- ৫১)
وَاِنَّ رَبَّكَ لَيَعْلَمُ مَا تُكِنُّ صُدُوْرُهُمْ وَمَا يُعْلِنُوْنَ
তাদের অন্তর যা গোপন করে এবং তারা যা প্রকাশ করে অবশ্যই তোমার প্রতিপালক তা জানেন। (সূরা নামল- ৭৪)
اِنْ تُبْدُوْا شَيْئًا اَوْ تُخْفُوْهُ فَاِنَّ اللهَ كَانَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمًا
যদি তোমরা কোন বিষয় প্রকাশ কর কিংবা তা গোপন রাখ তবে আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়েই অবগত আছেন। (সূরা আহযাব- ৫৪)
কথা আস্তে বলা বা জোরে বলা উভয়ই তাঁর নিকট সমান :
سَوَآءٌ مِّنْكُمْ مَّنْ اَسَرَّ الْقَوْلَ وَمَنْ جَهَرَ بِهٖ وَمَنْ هُوَ مُسْتَخْفٍ ۢبِاللَّيْلِ وَسَارِبٌ ۢبِالنَّهَارِ
তোমাদের মধ্যে যে কথা গোপন রাখে এবং যে প্রকাশ করে, আর যে রাত্রিতে আত্মগোপন করে এবং যে দিবসে প্রকাশ্যে বিচরণ করে, তারা সমভাবে আল্লাহর জ্ঞানগোচরেই আছে। (সূরা রা‘দ- ১০)
وَاِنْ تَجْهَرْ بِالْقَوْلِ فَاِنَّهٗ يَعْلَمُ السِّرَّ وَاَخْفٰى
যদি তুমি উচ্চকণ্ঠে কথা বল, তবে তিনি তো যা গুপ্ত ও অব্যক্ত সবকিছুই জানেন। (সূরা ত্বা-হা- ৭)
اِنَّهٗ يَعْلَمُ الْجَهْرَ مِنَ الْقَوْلِ وَيَعْلَمُ مَا تَكْتُمُوْنَ
তিনি জানেন, তোমরা যে কথা ব্যক্ত কর এবং যা গোপন কর। (সূরা আম্বিয়া- ১১০)
قَالَ رَبِّيْ يَعْلَمُ الْقَوْلَ فِى السَّمَآءِ وَالْاَ رْضِ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
সে বলল, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সমসত্ম কথাই আমার প্রতিপালক অবগত আছেন এবং তিনিই সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা আম্বিয়া- ৪)
গুপ্ত বিষয়গুলো তিনি একদিন প্রকাশ করবেন :
وَاللهُ مُخْرِجٌ مَّا كُنْتُمْ تَكْتُمُوْنَ
তোমরা যা গোপন করেছিলে আল্লাহ তার প্রকাশকারী। (সূরা বাক্বারা- ৭২)
কেউ খারাপ চিন্তা করলে তাও জানেন :
وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْاِنْسَانَ وَنَعْلَمُ مَا تُوَسْوِسُ بِهٖ نَفْسُهٗۚ وَنَحْنُ اَقْرَبُ اِلَيْهِ مِنْ حَبْلِ الْوَرِيْدِ
আমিই মানুষকে সৃষ্টি করেছি এবং তার অন্তর তাকে যে কুমন্ত্রণা দেয় তা আমি জানি। আমি তার ঘাড়ের শাহরগ অপেক্ষাও নিকটতর। (সূরা ক্বাফ- ১৬)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর ক্ষমতা ও জ্ঞান এমনভাবে মানুষকে পরিবেষ্টন করে আছে যে, তাঁর ক্ষমতা মানুষের যতটা নিকটে তার ঘাড়ের শিরাও ততটা নিকটে নয়। মানুষের কথা শোনার জন্য তাঁকে কোথাও থেকে আসতে হয় না। তার মনের মধ্যে উদিত কল্পনাসমূহ পর্যন্ত আল্লাহ সরাসরি জানেন। অনুরূপভাবে তাকে যদি কোন সময় আল্লাহ পাকড়াও করতে চান, তখনও তাঁকে কোথাও থেকে এসে তাকে পাকড়াও করতে হয় না। মানুষ যেখানেই থাকুক না কেন সর্বদা সে আল্লাহর আয়ত্তাধীন রয়েছে।
মানুষের সলাপরামর্শেরও খবর রাখেন :
اَنَّ اللهَ يَعْلَمُ سِرَّهُمْ وَنَجْوَاهُمْ وَاَنَّ اللهَ عَلَّامُ الْغُيُوْبِ
(তারা কি জানে না যে) আল্লাহ তাদের অন্তরের গোপন কথা ও তাদের গোপন পরামর্শ সম্পর্কেও অবগত আছেন এবং যা অদৃশ্য তাও তিনি বিশেষভাবে জানেন। (সূরা তাওবা- ৭৮)
সলাপরামর্শে মানুষ যতজন হয় তার মধ্যে আল্লাহ একজন :
مَا يَكُوْنُ مِنْ نَّجْوٰى ثَلَاثَةٍ اِلَّا هُوَ رَابِعُهُمْ وَلَا خَمْسَةٍ اِلَّا هُوَ سَادِسُهُمْ وَلَاۤ اَدْنٰى مِنْ ذٰلِكَ وَلَاۤ اَكْثَرَ اِلَّا هُوَ مَعَهُمْ اَيْنَ مَا كَانُوْاۚ ثُمَّ يُنَبِّئُهُمْ بِمَا عَمِلُوْا يَوْمَ الْقِيَامَةِؕ اِنَّ اللهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ
তিনজনের এমন কোন পরামর্শ হয় না, যাতে তিনি তাদের চতুর্থ না হন; আর পাঁচ জনেরও এমন কোন পরামর্শ হয় না, যাতে তিনি তাদের ষষ্ঠ না হন। (এ সলাপরামর্শকারীদের সংখ্যা) তার চেয়ে কম হোক কিংবা বেশি হোক তারা যেখানেই থাকুক না কেন, তিনি তাদের সাথে আছেন। অতঃপর তারা যা করে কিয়ামতের দিন তাদেরকে তিনি জানিয়ে দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে জ্ঞানী। (সূরা মুজাদালা- ৭)
মানুষ কী উপার্জন করছে তাও আল্লাহ জানেন :
وَهُوَ اللهُ فِى السَّمَاوَاتِ وَفِى الْاَ رْضِؕ يَعْلَمُ سِرَّكُمْ وَجَهْرَكُمْ وَيَعْلَمُ مَا تَكْسِبُوْنَ
আসমান ও জমিনে তিনিই আল্লাহ, তোমাদের গোপন ও প্রকাশ্য সবকিছু তিনি জানেন এবং তোমরা যা অর্জন কর, তাও তিনি অবগত আছেন। (সূরা আন‘আম- ৩)
يَعْلَمُ مَا تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍؕ وَسَيَعْلَمُ الْكُفَّارُ لِمَنْ عُقْبَى الدَّارِ
প্রত্যেক ব্যক্তি যা করে তা তিনি জানেন। (সুতরাং) কাফিররা শীঘ্রই জানতে পারবে যে, পরকালের শুভ পরিণাম কাদের জন্য। (সূরা রা‘দ- ৪২)
আল্লাহ মানুষের কর্মকান্ডের খবর রাখেন :
وَاللهُ يَعْلَمُ اَعْمَالَكُمْ
আল্লাহ তোমাদের সব আমল সম্পর্কেই ভালো করে জানেন। (সূরা মুহাম্মাদ- ৩০)
وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
তোমরা যা করছ, আল্লাহ তার পর্যবেক্ষণকারী। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৬)
وَهُوَ الَّذِيْ يَتَوَفَّاكُمْ بِاللَّيْلِ وَيَعْلَمُ مَا جَرَحْتُمْ بِالنَّهَارِ
তিনিই রাতে তোমাদের মৃত্যু ঘটান এবং দিবসে তোমরা যা কর তা তিনি জানেন। (সূরা আন‘আম- ৬০)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ প্রত্যেক ব্যক্তিকে সব অবস্থায় নিজেই সরাসরি দেখছেন এবং তার সমস্ত গতিবিধি ও কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত রয়েছেন। আল্লাহর নিযুক্ত তত্ত্বাবধায়কও প্রত্যেক ব্যক্তির সাথে রয়েছেন এবং তারা তার জীবনের সমস্ত কার্যক্রমের রেকর্ডও সংরক্ষণ করছেন। এমন অকল্পনীয় ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্বের অধীনে থেকে যারা একথা মনে করে জীবন-যাপন করে যে, তাদেরকে লাগামহীন উটের মতো দুনিয়ায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে এবং তাদের কার্যকলাপের জন্য কারো কাছে জবাবদিহি করতে হবে না তারা আসলে নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনে।
চোখের খেয়ানত সম্পর্কেও জানেন :
يَعْلَمُ خَآئِنَةَ الْاَعْيُنِ وَمَا تُخْفِى الصُّدُوْرُ
চক্ষুর অপব্যবহার ও অন্তরে যা গোপন আছে সে সম্বন্ধে তিনি অবহিত। (সূরা মু’মিন- ১৯)
কেউ নেক আমল করলেও তিনি জানেন :
وَمَا تَفْعَلُوْا مِنْ خَيْرٍ فَاِنَّ اللهَ كَانَ بِهٖ عَلِيْمًا
আর তোমরা যেসব সৎকাজ কর, নিশ্চয় আল্লাহ সে সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত। (সূরা নিসা- ১২৭)
وَمَا تَفْعَلُوْا مِنْ خَيْرٍ يَّعْلَمْهُ اللهُ
তোমরা যে কোন সৎকর্ম কর না কেন আল্লাহ তা জানেন। (সূরা বাক্বারা- ১৯৭)
কিছু ব্যয় করলে তারও খবর রাখেন :
وَمَاۤ اَنْفَقْتُمْ مِّنْ نَّفَقَةٍ اَوْ نَذَرْتُمْ مِّنْ نَّذْرٍ فَاِنَّ اللهَ يَعْلَمُهٗ
তোমরা যে বস্তু দান কর অথবা যা কিছু মান্নত কর, আল্লাহ সে বিষয়ে অবগত আছেন। (সূরা বাক্বারা- ২৭০)
কে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে আল্লাহ তাও জানেন :
اَلَّذِيْ يَرَاكَ حِيْنَ تَقُوْمُ- وَتَقَلُّبَكَ فِى السَّاجِدِيْنَ
তিনি তোমাকে দেখেন যখন তুমি দন্ডায়মান হও এবং সিজদাকারীদের সাথে উঠাবসা কর। (সূরা শু‘আরা- ২১৮, ২১৯)
ব্যাখ্যা : এখানে উঠার কয়েকটি অর্থ হতে পারে।
(১) নামাযরত ব্যক্তি যখন জামা‘আতের সাথে নামায পড়ার সময় মুকতাদীদের সাথে উঠাবসা ও রুকু সিজদা করেন, তখন আল্লাহ তাকে দেখতে থাকেন।
(২) ব্যক্তি নিজের সাথিদের পরকাল গড়ার জন্য এবং আল্লাহর বান্দাদের সংশোধন করার জন্য যেসব প্রচেষ্টা, সংগ্রাম ও সাধনা চালিয়ে যায়, আল্লাহ সে সম্পর্কে সবকিছু অবগত আছেন।
(৩) ব্যক্তি সিজদাকারী লোকদের দলে যেসব তৎপরতা চালিয়ে যায়, আল্লাহ তা পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি জানেন উক্ত বান্দা কীভাবে তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, কীভাবে তাদেরকে পরিশুদ্ধ করছে, কীভাবে ভেজাল সোনাকে খাঁটি সোনায় পরিণত করছে।
রাতের বেলায় তাহাজ্জুদে দাঁড়ালে তাও আল্লাহ জানেন :
اِنَّ رَبَّكَ يَعْلَمُ اَنَّكَ تَقُوْمُ اَدْنٰى مِنْ ثُلُثَيِ اللَّيْلِ وَنِصْفَهٗ وَثُلُثَهٗ وَطَآئِفَةٌ مِّنَ الَّذِيْنَ مَعَكَ
তোমার প্রতিপালক তো জানেন যে, তুমি জাগরণ কর কখনো রাত্রির প্রায় দুই তৃতীয়াংশ, কখনো অর্ধাংশ এবং কখনো এক তৃতীয়াংশ এবং তোমার সাথে যারা আছে তাদের একটি দলও জাগে। (সূরা মুয্যাম্মিল- ২০)
তিনি মানুষের সকল কাজ পরিদর্শন করেন :
وَمَا تَكُوْنُ فِيْ شَاْنٍ وَّمَا تَتْلُوْ مِنْهُ مِنْ قُرْاٰنٍ وَّلَا تَعْمَلُوْنَ مِنْ عَمَلٍ اِلَّا كُنَّا عَلَيْكُمْ شُهُوْدًا اِذْ تُفِيْضُوْنَ فِيْهِؕ وَمَا يَعْزُبُ عَنْ رَّبِّكَ مِنْ مِّثْقَالِ ذَرَّةٍ فِى الْاَ رْضِ وَلَا فِى السَّمَآءِ وَلَاۤ اَصْغَرَ مِنْ ذٰلِكَ وَلَاۤ اَكْبَرَ اِلَّا فِيْ كِتَابٍ مُّبِيْنٍ
তুমি যে অবস্থায়ই থাক এবং তুমি কুরআন হতে যা কিছুই তিলাওয়াত কর কিংবা তোমরা যে কাজই কর না কেন, যখনই তোমরা তাতে প্রবৃত্ত হও তখন আমি তোমাদের পরিদর্শক হই। আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর অনুপরিমাণ বস্তুও তোমার প্রতিপালকের অগোচরে নয় এবং তা অপেক্ষা ক্ষুদ্রতর অথবা বৃহত্তর কিছুই নেই, যা সুস্পষ্ট কিতাবে নেই। (সূরা ইউনুস- ৬১)
আল্লাহ সবকিছুর উপর সাক্ষী আছেন :
اِنَّ اللهَ كَانَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ شَهِيْدًا
নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে লক্ষ্য করেন। (সূরা নিসা- ৩৩, সূরা আহযাব- ৫৫)
وَكَفٰى بِاللهِ شَهِيْدًا
সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। (সূরা নিসা- ৭৯)
আল্লাহ বান্দার উপর তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখেন :
اِنَّ اللهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيْبًا
নিশ্চয় আল্লাহই তোমাদের উপর তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখেন। (সূরা নিসা- ১)
কেউ দুর্বল থাকলে তাও জানেন :
وَعَلِمَ اَنَّ فِيْكُمْ ضَعْفًا
তিনি তো অবগত আছেন যে, তোমাদের মধ্যে দুর্বলতা আছে। (সূরা আনফাল- ৬৬)
কেউ অসুখ থাকলে তাও জানেন :
عَلِمَ اَنْ سَيَكُوْنُ مِنْكُمْ مَّرْضٰى
তিনি জানেন যে, তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়বে। (সূরা মুয্যাম্মিল- ২০)
কেউ মিথ্যা বললে তাও আল্লাহ জানতে পারেন :
وَاِنَّا لَنَعْلَمُ اَنَّ مِنْكُمْ مُّكَذِّبِيْنَ
নিশ্চয় আমি জানি যে, তোমাদের মধ্যে মিথ্যাপ্রতিপন্নকারী কিছু লোকও রয়েছে। (সূরা হাক্কাহ- ৪৯)
যালিমদের সম্পর্কেও আল্লাহ জানেন :
وَاللهُ اَعْلَمُ بِالظَّالِمِيْنَ
আর আল্লাহ যালিমদের সম্বন্ধে অধিক অবহিত। (সূরা আন‘আম- ৫৮)
ফাসাদকারীদেরকেও আল্লাহ জানেন :
فَاِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ ۢبِالْمُفْسِدِيْنَ
তবে ফাসাদকারীদের সম্পর্কে অবশ্যই আল্লাহ ভালো জানেন। (সূরা আলে ইমরান- ৬৩)
وَ رَبُّكَ اَعْلَمُ بِالْمُفْسِدِيْنَ
তোমার প্রতিপালক অশান্তি সৃষ্টিকারীদের সম্বন্ধে সম্যক অবহিত। (সূরা ইউনুস- ৪০)
আল্লাহ জানেন কারা সীমালঙ্ঘনকারী :
اِنَّ رَبَّكَ هُوَ اَعْلَمُ بِالْمُعْتَدِيْنَ
নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক সীমালঙ্ঘনকারীদের সম্বন্ধে ভালোভাবেই জানেন। (সূরা আন‘আম- ১১৯)
মুনাফিক কারা তা আল্লাহ জানেন :
وَمِمَّنْ حَوْلَكُمْ مِّنَ الْاَعْرَابِ مُنَافِقُوْنَؕ وَمِنْ اَهْلِ الْمَدِيْنَةِؕ مَرَدُوْا عَلَى النِّفَاقِؕ لَا تَعْلَمُهُمْ نَحْنُ نَعْلَمُهُمْؕ سَنُعَذِّبُهُمْ مَّرَّتَيْنِ ثُمَّ يُرَدُّوْنَ اِلٰى عَذَابٍ عَظِيْمٍ
মরুবাসীদের মধ্যে যারা তোমাদের আশেপাশে আছে তাদের কেউ কেউ মুনাফিক এবং মদিনাবাসীদের মধ্যেও কেউ কেউ কপটতায় সিদ্ধ। তুমি তাদেরকে জান না; আমি তাদেরকে জানি। অচিরেই আমি তাদেরকে দু’বার শাস্তি দেব। অতঃপর তারা প্রত্যাবর্তিত হবে মহাশাস্তির দিকে। (সূরা তাওবা- ১০১)
মুসলিমদের শত্রু কারা তাও জানেন :
وَاللهُ اَعْلَمُ بِاَعْدَآئِكُمْؕ وَكَفٰى بِاللهِ وَلِيًّا وَّكَفٰى بِاللهِ نَصِيْرًا
আল্লাহ তোমাদের শত্রুদেরকে ভালোভাবে জানেন। অভিভাবকত্বে আল্লাহই যথেষ্ট এবং সাহায্যেও আল্লাহ যথেষ্ট। (সূরা নিসা- ৪৫)
মুত্তাক্বীদের সম্পর্কেও জানেন :
وَمَا يَفْعَلُوْا مِنْ خَيْرٍ فَلَنْ يُّكْفَرُوْهُؕ وَاللهُ عَلِيْمٌ ۢبِالْمُتَّقِيْنَ
আর তারা যে ভালো কাজই করুক না কেন তা অবমূল্যায়ন করা হবে না। আর আল্লাহ মুত্তাক্বীদের সম্পর্কে জানেন। (সূরা আলে ইমরান- ১১৫)
কারা কৃতজ্ঞ আল্লাহ তা জানেন :
اَلَيْسَ اللهُ بِاَعْلَمَ بِالشَّاكِرِيْنَ
আল্লাহ কি কৃতজ্ঞ লোকদের সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত নন? (সূরা আন‘আম- ৫৩)
কে কোন পথে ঘুরছে আল্লাহ জানেন :
وَاللهُ يَعْلَمُ مُتَقَلَّبَكُمْ وَمَثْوَاكُمْ
আল্লাহ তোমাদের তৎপরতার খবরও রাখেন এবং তোমাদের (শেষ) ঠিকানা সম্পর্কেও (অবগত আছেন)। (সূরা মুহাম্মাদ- ১৯)
আল্লাহ গাফিল নন :
وَمَا اللهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ
তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আল্লাহ অমনোযোগী নন। (সূরা বাক্বারা- ৭৪)
وَلَا تَحْسَبَنَّ اللهَ غَافِلًا عَمَّا يَعْمَلُ الظَّالِمُوْنَؕ اِنَّمَا يُؤَخِّرُهُمْ لِيَوْمٍ تَشْخَصُ فِيْهِ الْاَبْصَارُ
তুমি কখনো মনে করো না যে, যালিমরা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ গাফিল, তবে তিনি তাদেরকে সেদিন পর্যমত্ম অবকাশ দেন যেদিন তাদের চক্ষু স্থির হয়ে যাবে। (সূরা ইবরাহীম- ৪২)
আল্লাহ মানুষকে দেখছেন :
اَلَمْ يَعْلَمْ بِاَنَّ اللهَ يَرٰى
সে কি জানে না যে, আল্লাহ তাকে দেখছেন? (সূরা আলাক্ব- ১৪)
আল্লাহ জানার দিক থেকে মানুষের অতি নিকটে :
وَنَحْنُ اَقْرَبُ اِلَيْهِ مِنْ حَبْلِ الْوَرِيْدِ
আমি (জ্ঞানের দিক দিয়ে) তার ঘাড়ের শাহরগ অপেক্ষাও নিকটতর । (সূরা ক্বাফ- ১৬)
وَهُوَ مَعَكُمْ اَيْنَ مَا كُنْتُمْؕ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
তোমরা যেখানেই থাক না কেন তিনি (জানার দিক দিয়ে) তোমাদের সঙ্গে আছেন, তোমরা যা কিছু কর আল্লাহ তা দেখেন। (সূরা হাদীদ- ৪)
মানুষের মৃত্যুও আল্লাহ পর্যবেক্ষণ করেন :
فَلَوْلَاۤ اِذَا بَلَغَتِ الْحُلْقُوْمَ ‐ - وَاَنْتُمْ حِيْنَئِذٍ تَنْظُرُوْنَ - ‐ وَنَحْنُ اَقْرَبُ اِلَيْهِ مِنْكُمْ وَلٰكِنْ لَّا تُبْصِرُوْنَ
প্রাণ যখন কণ্ঠনালীতে উপস্থিত হয় আর তখন তোমরা তাকিয়ে দেখ। আর আমি তোমাদের অপেক্ষা (জানার দিক দিয়ে) তার নিকটতর; কিন্তু তোমরা দেখতে পাও না। (সূরা ওয়াক্বিয়া, ৮৩-৮৫)
কার আবাস কোথায় হবে আল্লাহ জানেন :
وَمَا مِنْ دَآبَّةٍ فِى الْاَ رْضِ اِلَّا عَلَى اللهِ رِزْقُهَا وَيَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَا كُلٌّ فِيْ كِتَابٍ مُّبِيْنٍ
ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী সকলের জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহরই। তিনি তাদের স্থায়ী ও অস্থায়ী অবস্থান সম্বন্ধে অবহিত; সুস্পষ্ট কিতাবে সবকিছুই আছে। (সূরা হুদ- ৬)
গায়েবের (অদৃশ্য বিষয়ের) জ্ঞান কেবল আল্লাহরই রয়েছে :
قُلْ لَّا يَعْلَمُ مَنْ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِ الْغَيْبَ اِلَّا اللهُؕ وَمَا يَشْعُرُوْنَ اَيَّانَ يُبْعَثُوْنَ
বলো, আল্লাহ ব্যতীত আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে কেউ অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান রাখে না এবং তারা জানে না যে, কখন তারা উত্থিত হবে। (সূরা নামল- ৬৫)
وَعِنْدَهٗ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لَا يَعْلَمُهَاۤ اِلَّا هُوَ
অদৃশ্যের চাবিকাঠি তাঁরই নিকট রয়েছে, তিনি ব্যতীত তা অন্য কেউ জানে না। (সূরা আন‘আম- ৫৯)
وَلِلّٰهِ غَيْبُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِؕ وَاِلَيْهِ يُرْجَعُ الْاَمْرُ كُلُّهٗ فَاعْبُدْهُ وَتَوَكَّلْ عَلَيْهِؕ وَمَا رَبُّكَ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহরই এবং তাঁরই নিকট সমসত্ম কিছুর প্রত্যাবর্তন হবে। সুতরাং তুমি তাঁর ইবাদাত কর এবং তাঁর উপর নির্ভর করো। তোমরা যা করো সে সম্বন্ধে তোমার প্রতিপালক গাফিল নন। (সূরা হুদ- ১২৩)
عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ الْكَبِيْرُ الْمُتَعَالِ
যা অদৃশ্য ও যা দৃশ্যমান তিনি তা অবগত; তিনি মহান ও সর্বোচ্চ মর্যাদাবান। (সূরা রা‘দ- ৯)
اِنَّ اللهَ يَعْلَمُ غَيْبَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِؕ وَاللهُ بَصِيْرٌ ۢبِمَا تَعْمَلُوْنَ
নিশ্চয় আল্লাহ আসমান ও জমিনের গায়েবী বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন। আর তোমরা যা কিছু করছ তিনি তা দেখছেন। (সূরা হুজুরাত- ১৮)
اِنَّ اللهَ عَالِمُ غَيْبِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِؕ اِنَّهٗ عَلِيْمٌ ۢبِذَاتِ الصُّدُوْرِ
নিশ্চয় আল্লাহ আসমান ও জমিনের যাবতীয় গুপ্ত বিষয় সম্পর্কে পরিজ্ঞাত। নিশ্চয় তিনি অন্তরের বিষয় সম্বন্ধেও অবগত আছেন। (সূরা ফাতির- ৩৮)
ذٰلِكَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ الْعَزِيْزُ الرَّحِيْمُ
তিনি অপ্রকাশ্য ও প্রকাশ্য সকল বিষয় সম্পর্কে পরিজ্ঞাত, প্রতাপশালী ও পরম দয়ালু। (সূরা সাজদা- ৬)
ব্যাখ্যা : غَائِبٌ (গায়েব) শব্দের অর্থ লুকানো, অদৃশ্য বা আবৃত। পারিভাষিক অর্থে গায়েব হচ্ছে এমন জিনিস যা অজানা এবং যাকে উপায়-উপকরণ দ্বারা আয়ত্ত করা যায় না। এ ব্যাপারেও মহান আল্লাহ একক সত্তা। পৃথিবী ও আকাশে ফেরেশতা, জিন, নবী, আউলিয়া অথবা মানুষ যে কোন সৃষ্টিই হোক না কেন সকলের জ্ঞানই সীমাবদ্ধ। কিছু না কিছু বিষয় সবার কাছ থেকে গোপন রয়েছে। সবকিছুর জ্ঞান যদি কারো থাকে তাহলে তিনি হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ। এ বিশ্বের কোন জিনিস এবং কোন কথা তাঁর কাছে গোপন নেই। তিনি অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সবকিছু সম্পর্কে অবগত আছেন। মানুষের মন এ সত্যটি সুস্পষ্টভাবে জানে যে, ভাগ্যের ভাঙ্গা-গড়া, ফরিয়াদ শোনা, প্রয়োজন পূর্ণ করা এবং প্রত্যেক সাহায্যপ্রার্থীকে সাহায্য করা কেবলমাত্র এমন এক সত্তার কাজ হতে পারে, যিনি সবকিছু জানেন এবং যার কাছে কোনকিছুই গোপন নেই। এখন যদি এটি সত্য হয়ে থাকে যে, আল্লাহ ছাড়া আর কেউ স্রষ্টা, ফরিয়াদ শ্রবণকারী ও রিযিকদাতা নেই, তাহলে সাথে সাথে এটিও সত্য যে, আল্লাহ ছাড়া দ্বিতীয় কোন সত্তা অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারীও নয়। এটি ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে যতটুকু চান জ্ঞান দান করেন। কিন্তু অদৃশ্য জ্ঞান সামগ্রিকভাবে কেউ লাভ করতে পারে না। সুতরাং ‘আলিমুল গায়েব’ বা অদৃশ্য জ্ঞানী উপাধি একমাত্র আল্লাহ রাববুল আলামীনের জন্য নির্দিষ্ট। কোন সৃষ্টি অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী হতে পারে এ ধারণা কুরআন নাকচ করে দেয়। এমনকি অন্যান্য নবী এবং স্বয়ং মুহাম্মাদ ﷺ এর ব্যাপারেও এ বিষয়টি পরিষ্কার যে, তারা অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী নন। তাঁকে অদৃশ্যের কেবলমাত্র ততটুকু জ্ঞান আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে যতটুকু রিসালাতের দায়িত্ব পালন করার জন্য প্রয়োজন ছিল। আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী মনে করা এবং যা কিছু আছে ও যা কিছু হবে এর জ্ঞান আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো আছে একথা বিশ্বাস করা শিরক। আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি দাবী করে যে, মুহাম্মদ ﷺ আগামীকাল কী হবে তা জানেন, সে আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে। কারণ আল্লাহ বলেন, হে নবী! তুমি বলে দাও আল্লাহ ছাড়া আসমান ও জমিনের অধিবাসীদের মধ্যে আর কেউ অদৃশ্যের জ্ঞান রাখে না।’’
(সহীহ বুখারী, হা/৪৮৫৫)
আল্লাহ গায়েবের কিছু বিষয় রাসূলদের কাছে প্রকাশ করেন :
عَالِمُ الْغَيْبِ فَلَا يُظْهِرُ عَلٰى غَيْبِهٖۤ احَدًا ‐ اِلَّا مَنِ ارْتَضٰى مِنْ رَّسُوْلٍ فَاِنَّهٗ يَسْلُكُ مِنْ ۢبَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهٖ رَصَدًا
তিনি অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী, তিনি তাঁর অদৃশ্যের জ্ঞান কারো নিকট প্রকাশ করেন না। তবে তাঁর মনোনীত রাসূল ব্যতীত। নিশ্চয় তিনি তার সামনে এবং পেছনে প্রহরী নিয়োজিত করে রেখেছেন (যাতে শয়তান কোন মিশ্রণ ঘটাতে না পারে)। (সূরা জিন-২৬, ২৭)
আসমান ও জমিনের কোনকিছুই আল্লাহর কাছে গোপন নয় :
وَمَا يَخْفٰى عَلَى اللهِ مِنْ شَيْءٍ فِى الْاَ رْضِ وَلَا فِى السَّمَآءِ
পৃথিবী ও আকাশমন্ডলীর কোনকিছুই আল্লাহর নিকট গোপন থাকে না। (সূরা ইবরাহীম- ৩৮)
اِنَّ اللهَ لَا يَخْفٰى عَلَيْهِ شَيْءٌ فِى الْاَ رْضِ وَلَا فِى السَّمَآءِ
নিশ্চয় আল্লাহর কাছে পৃথিবী ও আকাশমন্ডলীর কিছুই গোপন থাকে না। (সূরা আলে ইমরান- ৫)
সরিষা পরিমাণ কোন জিনিসও আল্লাহর জ্ঞানের বাইরে নয় :
وَمَا يَعْزُبُ عَنْ رَّبِّكَ مِنْ مِّثْقَالِ ذَرَّةٍ فِى الْاَ رْضِ وَلَا فِى السَّمَآءِ وَلَاۤ اَصْغَرَ مِنْ ذٰلِكَ وَلَاۤ اَكْبَرَ اِلَّا فِيْ كِتَابٍ مُّبِيْنٍ
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর অণুপরিমাণ কোন জিনিসও তোমার প্রতিপালকের অগোচরে নয় এবং তার চেয়ে ছোট অথবা বড় কিছুই নেই, যা সুস্পষ্ট কিতাবে নেই। (সূরা ইউনুস- ৬১)
لَا يَعْزُبُ عَنْهُ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ فِى السَّمَاوَاتِ وَلَا فِى الْاَ رْضِ وَلَاۤ اَصْغَرُ مِنْ ذٰلِكَ وَلَاۤ اَكْبَرُ اِلَّا فِيْ كِتَابٍ مُّبِيْنٍ
আকাশ ও পৃথিবীতে অণুপরিমাণ জিনিসও তাঁর অজানা নয়, কিংবা তদপেক্ষা ক্ষুদ্র বা বৃহৎ (তাঁর অজানা নয়) কিন্তু এ সবই সুস্পষ্ট গ্রন্থেহ লিপিবদ্ধ আছে। (সূরা সাবা- ৩)
এতো কিছু জানা আল্লাহর পক্ষে কঠিন নয় :
اَلَمْ تَعْلَمْ اَنَّ اللهَ يَعْلَمُ مَا فِى السَّمَآءِ وَالْاَ رْضِ اِنَّ ذٰلِكَ فِيْ كِتَابٍ اِنَّ ذٰلِكَ عَلَى اللهِ يَسِيْرٌ
তুমি কি জান না যে, আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু রয়েছে আল্লাহ তা জানেন। এ সবই আছে এক কিতাবে; নিশ্চয় এটা আল্লাহর নিকট সহজ। (সূরা হজ্জ- ৭০)
اِنَّ اللهَ كَانَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمًا
নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ। (সূরা নিসা- ৩২)
ব্যাখ্যা : عَلِيْمٌ (‘আলীম) শব্দের অর্থ সর্বজ্ঞ, মহাজ্ঞানী। অর্থাৎ তিনি ছোট-বড়, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সবকিছু সম্পর্কে জানেন। তার জ্ঞানের বাহিরে কোন জিনিস থাকতে পারে না। তিনি কোন বিষয়ে অনুমান করেন না; বরং সবকিছু সম্পর্কে সরাসরি জানেন। সুতরাং অনুভূতি ও ইন্দ্রিয়বহির্ভূত বিষয়ে তিনি যেসব তথ্য দিচ্ছেন, তার সবগুলোই সঠিক। আর তা না মানার অর্থ হচ্ছে, অজ্ঞতার অনুসরণ করা। একইভাবে তিনি মানুষের উন্নতির পথ ও পদ্ধতি সম্পর্কেও জানেন। তাঁর প্রতিটি শিক্ষা সঠিক ও জ্ঞানভিত্তিক, যার মধ্যে ভুলভ্রান্তির কোন সম্ভাবনা নেই। অতএব তাঁর পথনির্দেশনা গ্রহণ না করার অর্থ হচ্ছে, সঠিক পথে চলতে না চাওয়া এবং ভ্রান্ত পথে চলতে থাকা। তাছাড়া মানুষের কোন গতিবিধি তাঁর নিকট গোপন থাকতে পারে না। এমনকি তিনি মানুষের অন্তর্নিহিত সকল ধরনের ইচ্ছা সম্পর্কেও জানেন, যা তাদের সমস্ত কাজকর্মের মূল চালিকাশক্তি। তাই মানুষ কোন অজুহাত দেখিয়ে তাঁর শাস্তি থেকে রক্ষা পাবে না।
لَهٗ مَقَالِيْدُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِۚ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيَقْدِرُؕ اِنَّهٗ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর চাবিসমূহ তাঁরই নিকট। তিনি যাকে ইচ্ছা তার রিযিক বর্ধিত করেন অথবা সংকুচিত করেন। তিনি সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ। (সূরা শূরা- ১২)
আল্লাহর জ্ঞান সবকিছুকে বেষ্টন করে আছে :
اَنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ وَّاَنَّ اللهَ قَدْ اَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا
আল্লাহ সর্ববিষয়ে শক্তিমান এবং আল্লাহ তাঁর জ্ঞান দ্বারা সবকিছুই পরিবেষ্টন করে রেখেছেন। (সূরা তালাক্ব- ১২)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর জ্ঞান ও তাঁর পাকড়াও হতে কেউ বাঁচতে পারে না। পাথরের মধ্যে ছোট্ট একটি কণা মানুষের দৃষ্টির অগোচরে থাকতে পারে কিন্তু তাঁর কাছে তা সুস্পষ্ট। আকাশে একটি ক্ষুদ্রতম কণিকা মানুষ থেকে বহু দূরবর্তী হতে পারে, ভূমির গভীরে অবস্থিত কোন জিনিসের প্রতি তার দৃষ্টি শেষ হয়ে যেতে পারে; কিন্তু তা আল্লাহর অতি নিকটতর। কাজেই তুমি কোথাও এমন কোন সৎ বা অসৎকাজ করতে পার না, যা আল্লাহর অগোচরে থেকে যায়। তিনি তা জানেন কেবল তা নয় বরং যখন হিসাব-নিকাশের সময় আসবে তখন তিনি তোমাদের প্রত্যেকটি কাজের রেকর্ডও তোমাদের সামনে উপস্থাপন করবেন।
অতীত-ভবিষ্যৎ সবই আল্লাহ জানেন :
يَعْلَمُ مَا بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْؕ وَاِلَى اللهِ تُرْجَعُ الْاُمُوْرُ
তাদের সম্মুখে এবং পশ্চাতে যা কিছু আছে তিনি তা জানেন। আর সমসত্ম বিষয় তো আল্লাহর দিকেই প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা হজ্জ- ৭৬)
আসমান-জমিনের সবকিছুই আল্লাহ জানেন :
قُلْ اِنْ تُخْفُوْا مَا فِيْ صُدُوْرِكُمْ اَوْ تُبْدُوْهُ يَعْلَمْهُ اللهُؕ وَيَعْلَمُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَ رْضِؕ وَاللهُ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
বলো, তোমাদের অন্তরে যা আছে তা গোপন রাখ অথবা প্রকাশ কর আল্লাহ সে সম্পর্কে অবগত আছেন। এমনকি আসমান ও জমিনে যা আছে সবকিছু সম্পর্কে তিনি অবগত আছেন। আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা আলে ইমরান- ২৯)
اَنَّ اللهَ يَعْلَمُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَ رْضِ وَاَنَّ اللهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ
আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে আল্লাহ সে সম্পর্কে জানেন; নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ। (সূরা মায়েদা- ৯৭)
সবকিছু জানা আল্লাহর জন্যই শোভা পায় :
اَلَا يَعْلَمُ مَنْ خَلَقَؕ وَهُوَ اللَّطِيْفُ الْخَبِيْرُ
যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি জানেন না? তিনি সূক্ষ্মদর্শী ও সবকিছুর খবর রাখেন। (সূরা মুলক- ১৪)
জলে-স্থলে কী আছে সবই আল্লাহর জানা আছে :
وَيَعْلَمُ مَا فِى الْبَرِّ وَالْبَحْرِ
জলে ও স্থলে যা কিছু আছে সে সম্পর্কে তিনি অবগত। (সূরা আন‘আম- ৫৯)
গাছের পাতা ঝরলে তাও জানেন :
وَمَا تَسْقُطُ مِنْ وَّرَقَةٍ اِلَّا يَعْلَمُهَا وَلَا حَبَّةٍ فِيْ ظُلُمَاتِ الْاَ رْضِ وَلَا رَطْبٍ وَّلَا يَابِسٍ اِلَّا فِيْ كِتَابٍ مُّبِيْنٍ
তাঁর অজ্ঞাতসারে একটি পাতাও পড়ে না। মাটির অন্ধকারে এমন কোন শস্যকণাও রসযুক্ত কিংবা শুষ্ক হয় না, যা সুস্পষ্ট কিতাবে নেই। (সূরা আন‘আম- ৫৯)
জমিনে যা প্রবেশ করে এবং আকাশে যা উঠে আল্লাহ তাও জানেন :
يَعْلَمُ مَا يَلِجُ فِى الْاَ رْضِ وَمَا يَخْرُجُ مِنْهَا وَمَا يَنْزِلُ مِنَ السَّمَآءِ وَمَا يَعْرُجُ فِيْهَاؕ وَهُوَ الرَّحِيْمُ الْغَفُوْرُ
তিনি জানেন যা কিছু জমিনে প্রবেশ করে এবং যা কিছু সেখান থেকে বের হয়। আর যা কিছু আসমান থেকে নাযিল হয় এবং যা কিছু সেখানে আরোহণ করে। তিনি পরম দয়ালু ও অত্যন্ত ক্ষমাশীল। (সূরা সাবা- ২)
يَعْلَمُ مَا يَلِجُ فِى الْاَ رْضِ وَمَا يَخْرُجُ مِنْهَا وَمَا يَنْزِلُ مِنَ السَّمَآءِ وَمَا يَعْرُجُ فِيْهَاؕ وَهُوَ مَعَكُمْ اَيْنَ مَا كُنْتُمْؕ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
তিনি জানেন যা কিছু ভূমিতে প্রবেশ করে ও যা কিছু তা হতে বের হয় এবং আকাশ হতে যা কিছু নামে ও আকাশে যা কিছু উঠে। তোমরা যেখানেই থাক না কেন তিনি (জানার দিক দিয়ে) তোমাদের সঙ্গেই আছেন। আর তোমরা যা কিছু কর আল্লাহ তা দেখেন। (সূরা হাদীদ- ৪)
নারীর জরায়ুতে সন্তানের কী অবস্থা তাও জানেন :
اَللهُ يَعْلَمُ مَا تَحْمِلُ كُلُّ اُنْثٰى وَمَا تَغِيْضُ الْاَ رْحَامُ وَمَا تَزْدَادُؕ وَكُلُّ شَيْءٍ عِنْدَهٗ بِمِقْدَارٍ
প্রত্যেক নারী যা গর্ভে ধারণ করে এবং জরায়ুতে যা কিছু কমে ও বাড়ে আল্লাহ তাও জানেন এবং তাঁর বিধানে প্রত্যেক বস্তুরই একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ রয়েছে। (সূরা রা‘দ- ৮)
ব্যাখ্যা : মাতৃগর্ভে ভ্রূণের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, শক্তি-সামর্থ্য, যোগ্যতা ও মানসিক ক্ষমতার মধ্যে যাবতীয় হ্রাস-বৃদ্ধি আল্লাহর সরাসরি তত্ত্বাবধানে সাধিত হয়।
গর্ভধারণ, প্রসব ও বয়স সবই তাঁর জ্ঞানের আওতায় :
وَمَا تَحْمِلُ مِنْ اُنْثٰى وَلَا تَضَعُ اِلَّا بِعِلْمِه ؕ وَمَا يُعَمَّرُ مِنْ مُّعَمَّرٍ وَّلَا يُنْقَصُ مِنْ عُمُرِه ۤ اِلَّا فِيْ كِتَابٍؕ اِنَّ ذٰلِكَ عَلَى اللهِ يَسِيْرٌ
কোন নারীই গর্ভধারণ করে না এবং সন্তানও প্রসব করে না তাঁর অজান্তে। আর কোন বয়স্ক ব্যক্তির দীর্ঘায়ু লাভ করা হয় না আবার তার আয়ু কমও করা হয় না, কিন্তু তা তো লিপিবদ্ধ রয়েছে এক কিতাবে (লাওহে মাহফুযে)। নিশ্চয় এ কাজ আল্লাহর পক্ষে অতি সহজ। (সূরা ফাতির- ১১)
পাঁচটি জিনিসের বিশেষ জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর কাছে :
اِنَّ اللهَ عِنْدَهٗ عِلْمُ السَّاعَةِۚ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَۚ وَيَعْلَمُ مَا فِى الْاَ رْحَامِؕ وَمَا تَدْرِيْ نَفْسٌ مَّاذَا تَكْسِبُ غَدًاؕ وَّمَا تَدْرِيْ نَفْسٌ ۢبِاَيِّ اَرْضٍ تَمُوْتُؕ اِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ خَبِيْرٌ
নিশ্চয় আল্লাহর কাছে রয়েছে কিয়ামত সম্পর্কে জ্ঞান। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তিনিই জানেন যা কিছু গর্ভে আছে। কেউ জানে না আগামীকাল সে কী আয় করবে এবং কেউ জানে না কোন স্থানে সে মৃত্যুবরণ করবে। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু জানেন এবং সব খবর রাখেন। (সূরা লুক্বমান- ৩৪)
ব্যাখ্যা : মানুষের সচ্ছলতা-অসচ্ছলতা নির্ভর করে বৃষ্টির উপর। কিন্তু আল্লাহর হাতে রয়েছে এর চাবিকাঠি। তিনি যখন যেখানে যতটুকু চান পানি বর্ষণ করেন এবং যখনই চান থামিয়ে দেন। কেউ এতটুকুও জানে না যে, কোথায় কখন কতটুকু বৃষ্টি হবে এবং কোন্ ভূখন্ড তা হতে বঞ্চিত হবে অথবা কেন্ ভূখন্ডে বৃষ্টি উল্টো ক্ষতিকর প্রমাণিত হবে। পুরুষের বীর্যে স্ত্রীদের গর্ভসঞ্চার হয় এবং এর সাথে মানুষের বংশধারার ভবিষ্যৎ জড়িত। কিন্তু মানুষ জানে না যে, এ গর্ভে কী লালিত হচ্ছে এবং কোন্ আকৃতিতে ও কোন্ ধরনের কল্যাণ বা অকল্যাণ নিয়ে তা বের হয়ে আসবে। আগামীকাল তাদের কী হবে, তাও তারা জানে না। একটি আকস্মিক দুর্ঘটনা মানুষের ভাগ্য বদলে দিতে পারে। কিন্তু এক মিনিট আগেও মানুষ তার খবর পায় না। মানুষ এটাও জানে না যে, তাদের এ জীবনের সমাপ্তি কোথায় এবং কী অবস্থায় ঘটবে। এ সমস্ত তথ্যজ্ঞান আল্লাহ নিজের কাছে রেখেছেন। এভাবে দুনিয়ার শেষ ক্ষণটির ব্যাপারেও আল্লাহর ফায়সালার প্রতি আস্থা রাখা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
মানুষের অবস্থা আল্লাহই ভালো জানেন :
رَبُّكُمْ اَعْلَمُ بِكُمْؕ اِنْ يَّشَاْ يَرْحَمْكُمْ اَوْ اِنْ يَّشَاْ يُعَذِّبْكُمْ
তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের ব্যাপারে ভালোভাবে জানেন। ইচ্ছা করলে তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করেন এবং ইচ্ছা করলে তোমাদেরকে শাসিত্ম দেন। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৫৪)
সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষকে জানেন :
هُوَ اَعْلَمُ بِكُمْ اِذْ اَنْشَاَكُمْ مِّنَ الْاَ رْضِ وَاِذْ اَنْتُمْ اَجِنَّةٌ فِيْ بُطُوْنِ اُمَّهَاتِكُمْۚ فَلَا تُزَكُّوْاۤ اَنْفُسَكُمْؕ هُوَ اَعْلَمُ بِمَنِ اتَّقٰى
তিনি তোমাদের সম্পর্কে সম্যক অবগত- যখন তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছিলেন মাটি হতে এবং এক সময় তোমরা মাতৃগর্ভে ভ্রুণরূপে ছিলে। অতএব তোমরা আত্মপ্রশংসা করো না, তিনিই ভালো জানেন কে মুত্তাক্বী। (সূরা নাজম- ৩২)
তিনি পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের সম্পর্কে জানেন :
وَلَقَدْ عَلِمْنَا الْمُسْتَقْدِمِيْنَ مِنْكُمْ وَلَقَدْ عَلِمْنَا الْمُسْتَاْخِرِيْنَ
তোমাদের মধ্য হতে পূর্বে যারা গত হয়েছে আমি তাদেরকে জানি এবং পরে যারা আসবে তাদেরকেও জানি। (সূরা হিজর- ২৪)
মানুষের মনের কথাও তিনি জানেন :
وَاَسِرُّوْا قَوْلَكُمْ اَوِ اجْهَرُوْا بِهٖؕ اِنَّهٗ عَلِيْمٌ ۢبِذَاتِ الصُّدُوْرِ
তোমরা তোমাদের কথা চুপে চুপে বল অথবা উচ্চৈঃস্বরে বল, তিনি তো অন্তরের গোপনীয়তা সম্পর্কে সর্বজ্ঞ। (সূরা মুলক- ১৩)
اِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ ۢبِذَاتِ الصُّدُوْرِ
নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের অন্তরের বিষয় সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত আছেন। (সূরা আলে ইমরান- ১১৯)
وَاللهُ يَعْلَمُ مَا فِيْ قُلُوْبِكُمْؕ وَكَانَ اللهُ عَلِيْمًا حَلِيْمًا
তোমাদের অন্তরে যা আছে তা আল্লাহ জানেন। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী ও সহনশীল। (সূরা আহযাব- ৫১)
وَاِنَّ رَبَّكَ لَيَعْلَمُ مَا تُكِنُّ صُدُوْرُهُمْ وَمَا يُعْلِنُوْنَ
তাদের অন্তর যা গোপন করে এবং তারা যা প্রকাশ করে অবশ্যই তোমার প্রতিপালক তা জানেন। (সূরা নামল- ৭৪)
اِنْ تُبْدُوْا شَيْئًا اَوْ تُخْفُوْهُ فَاِنَّ اللهَ كَانَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمًا
যদি তোমরা কোন বিষয় প্রকাশ কর কিংবা তা গোপন রাখ তবে আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়েই অবগত আছেন। (সূরা আহযাব- ৫৪)
কথা আস্তে বলা বা জোরে বলা উভয়ই তাঁর নিকট সমান :
سَوَآءٌ مِّنْكُمْ مَّنْ اَسَرَّ الْقَوْلَ وَمَنْ جَهَرَ بِهٖ وَمَنْ هُوَ مُسْتَخْفٍ ۢبِاللَّيْلِ وَسَارِبٌ ۢبِالنَّهَارِ
তোমাদের মধ্যে যে কথা গোপন রাখে এবং যে প্রকাশ করে, আর যে রাত্রিতে আত্মগোপন করে এবং যে দিবসে প্রকাশ্যে বিচরণ করে, তারা সমভাবে আল্লাহর জ্ঞানগোচরেই আছে। (সূরা রা‘দ- ১০)
وَاِنْ تَجْهَرْ بِالْقَوْلِ فَاِنَّهٗ يَعْلَمُ السِّرَّ وَاَخْفٰى
যদি তুমি উচ্চকণ্ঠে কথা বল, তবে তিনি তো যা গুপ্ত ও অব্যক্ত সবকিছুই জানেন। (সূরা ত্বা-হা- ৭)
اِنَّهٗ يَعْلَمُ الْجَهْرَ مِنَ الْقَوْلِ وَيَعْلَمُ مَا تَكْتُمُوْنَ
তিনি জানেন, তোমরা যে কথা ব্যক্ত কর এবং যা গোপন কর। (সূরা আম্বিয়া- ১১০)
قَالَ رَبِّيْ يَعْلَمُ الْقَوْلَ فِى السَّمَآءِ وَالْاَ رْضِ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
সে বলল, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সমসত্ম কথাই আমার প্রতিপালক অবগত আছেন এবং তিনিই সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা আম্বিয়া- ৪)
গুপ্ত বিষয়গুলো তিনি একদিন প্রকাশ করবেন :
وَاللهُ مُخْرِجٌ مَّا كُنْتُمْ تَكْتُمُوْنَ
তোমরা যা গোপন করেছিলে আল্লাহ তার প্রকাশকারী। (সূরা বাক্বারা- ৭২)
কেউ খারাপ চিন্তা করলে তাও জানেন :
وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْاِنْسَانَ وَنَعْلَمُ مَا تُوَسْوِسُ بِهٖ نَفْسُهٗۚ وَنَحْنُ اَقْرَبُ اِلَيْهِ مِنْ حَبْلِ الْوَرِيْدِ
আমিই মানুষকে সৃষ্টি করেছি এবং তার অন্তর তাকে যে কুমন্ত্রণা দেয় তা আমি জানি। আমি তার ঘাড়ের শাহরগ অপেক্ষাও নিকটতর। (সূরা ক্বাফ- ১৬)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর ক্ষমতা ও জ্ঞান এমনভাবে মানুষকে পরিবেষ্টন করে আছে যে, তাঁর ক্ষমতা মানুষের যতটা নিকটে তার ঘাড়ের শিরাও ততটা নিকটে নয়। মানুষের কথা শোনার জন্য তাঁকে কোথাও থেকে আসতে হয় না। তার মনের মধ্যে উদিত কল্পনাসমূহ পর্যন্ত আল্লাহ সরাসরি জানেন। অনুরূপভাবে তাকে যদি কোন সময় আল্লাহ পাকড়াও করতে চান, তখনও তাঁকে কোথাও থেকে এসে তাকে পাকড়াও করতে হয় না। মানুষ যেখানেই থাকুক না কেন সর্বদা সে আল্লাহর আয়ত্তাধীন রয়েছে।
মানুষের সলাপরামর্শেরও খবর রাখেন :
اَنَّ اللهَ يَعْلَمُ سِرَّهُمْ وَنَجْوَاهُمْ وَاَنَّ اللهَ عَلَّامُ الْغُيُوْبِ
(তারা কি জানে না যে) আল্লাহ তাদের অন্তরের গোপন কথা ও তাদের গোপন পরামর্শ সম্পর্কেও অবগত আছেন এবং যা অদৃশ্য তাও তিনি বিশেষভাবে জানেন। (সূরা তাওবা- ৭৮)
সলাপরামর্শে মানুষ যতজন হয় তার মধ্যে আল্লাহ একজন :
مَا يَكُوْنُ مِنْ نَّجْوٰى ثَلَاثَةٍ اِلَّا هُوَ رَابِعُهُمْ وَلَا خَمْسَةٍ اِلَّا هُوَ سَادِسُهُمْ وَلَاۤ اَدْنٰى مِنْ ذٰلِكَ وَلَاۤ اَكْثَرَ اِلَّا هُوَ مَعَهُمْ اَيْنَ مَا كَانُوْاۚ ثُمَّ يُنَبِّئُهُمْ بِمَا عَمِلُوْا يَوْمَ الْقِيَامَةِؕ اِنَّ اللهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ
তিনজনের এমন কোন পরামর্শ হয় না, যাতে তিনি তাদের চতুর্থ না হন; আর পাঁচ জনেরও এমন কোন পরামর্শ হয় না, যাতে তিনি তাদের ষষ্ঠ না হন। (এ সলাপরামর্শকারীদের সংখ্যা) তার চেয়ে কম হোক কিংবা বেশি হোক তারা যেখানেই থাকুক না কেন, তিনি তাদের সাথে আছেন। অতঃপর তারা যা করে কিয়ামতের দিন তাদেরকে তিনি জানিয়ে দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে জ্ঞানী। (সূরা মুজাদালা- ৭)
মানুষ কী উপার্জন করছে তাও আল্লাহ জানেন :
وَهُوَ اللهُ فِى السَّمَاوَاتِ وَفِى الْاَ رْضِؕ يَعْلَمُ سِرَّكُمْ وَجَهْرَكُمْ وَيَعْلَمُ مَا تَكْسِبُوْنَ
আসমান ও জমিনে তিনিই আল্লাহ, তোমাদের গোপন ও প্রকাশ্য সবকিছু তিনি জানেন এবং তোমরা যা অর্জন কর, তাও তিনি অবগত আছেন। (সূরা আন‘আম- ৩)
يَعْلَمُ مَا تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍؕ وَسَيَعْلَمُ الْكُفَّارُ لِمَنْ عُقْبَى الدَّارِ
প্রত্যেক ব্যক্তি যা করে তা তিনি জানেন। (সুতরাং) কাফিররা শীঘ্রই জানতে পারবে যে, পরকালের শুভ পরিণাম কাদের জন্য। (সূরা রা‘দ- ৪২)
আল্লাহ মানুষের কর্মকান্ডের খবর রাখেন :
وَاللهُ يَعْلَمُ اَعْمَالَكُمْ
আল্লাহ তোমাদের সব আমল সম্পর্কেই ভালো করে জানেন। (সূরা মুহাম্মাদ- ৩০)
وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
তোমরা যা করছ, আল্লাহ তার পর্যবেক্ষণকারী। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৬)
وَهُوَ الَّذِيْ يَتَوَفَّاكُمْ بِاللَّيْلِ وَيَعْلَمُ مَا جَرَحْتُمْ بِالنَّهَارِ
তিনিই রাতে তোমাদের মৃত্যু ঘটান এবং দিবসে তোমরা যা কর তা তিনি জানেন। (সূরা আন‘আম- ৬০)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ প্রত্যেক ব্যক্তিকে সব অবস্থায় নিজেই সরাসরি দেখছেন এবং তার সমস্ত গতিবিধি ও কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত রয়েছেন। আল্লাহর নিযুক্ত তত্ত্বাবধায়কও প্রত্যেক ব্যক্তির সাথে রয়েছেন এবং তারা তার জীবনের সমস্ত কার্যক্রমের রেকর্ডও সংরক্ষণ করছেন। এমন অকল্পনীয় ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্বের অধীনে থেকে যারা একথা মনে করে জীবন-যাপন করে যে, তাদেরকে লাগামহীন উটের মতো দুনিয়ায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে এবং তাদের কার্যকলাপের জন্য কারো কাছে জবাবদিহি করতে হবে না তারা আসলে নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনে।
চোখের খেয়ানত সম্পর্কেও জানেন :
يَعْلَمُ خَآئِنَةَ الْاَعْيُنِ وَمَا تُخْفِى الصُّدُوْرُ
চক্ষুর অপব্যবহার ও অন্তরে যা গোপন আছে সে সম্বন্ধে তিনি অবহিত। (সূরা মু’মিন- ১৯)
কেউ নেক আমল করলেও তিনি জানেন :
وَمَا تَفْعَلُوْا مِنْ خَيْرٍ فَاِنَّ اللهَ كَانَ بِهٖ عَلِيْمًا
আর তোমরা যেসব সৎকাজ কর, নিশ্চয় আল্লাহ সে সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত। (সূরা নিসা- ১২৭)
وَمَا تَفْعَلُوْا مِنْ خَيْرٍ يَّعْلَمْهُ اللهُ
তোমরা যে কোন সৎকর্ম কর না কেন আল্লাহ তা জানেন। (সূরা বাক্বারা- ১৯৭)
কিছু ব্যয় করলে তারও খবর রাখেন :
وَمَاۤ اَنْفَقْتُمْ مِّنْ نَّفَقَةٍ اَوْ نَذَرْتُمْ مِّنْ نَّذْرٍ فَاِنَّ اللهَ يَعْلَمُهٗ
তোমরা যে বস্তু দান কর অথবা যা কিছু মান্নত কর, আল্লাহ সে বিষয়ে অবগত আছেন। (সূরা বাক্বারা- ২৭০)
কে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে আল্লাহ তাও জানেন :
اَلَّذِيْ يَرَاكَ حِيْنَ تَقُوْمُ- وَتَقَلُّبَكَ فِى السَّاجِدِيْنَ
তিনি তোমাকে দেখেন যখন তুমি দন্ডায়মান হও এবং সিজদাকারীদের সাথে উঠাবসা কর। (সূরা শু‘আরা- ২১৮, ২১৯)
ব্যাখ্যা : এখানে উঠার কয়েকটি অর্থ হতে পারে।
(১) নামাযরত ব্যক্তি যখন জামা‘আতের সাথে নামায পড়ার সময় মুকতাদীদের সাথে উঠাবসা ও রুকু সিজদা করেন, তখন আল্লাহ তাকে দেখতে থাকেন।
(২) ব্যক্তি নিজের সাথিদের পরকাল গড়ার জন্য এবং আল্লাহর বান্দাদের সংশোধন করার জন্য যেসব প্রচেষ্টা, সংগ্রাম ও সাধনা চালিয়ে যায়, আল্লাহ সে সম্পর্কে সবকিছু অবগত আছেন।
(৩) ব্যক্তি সিজদাকারী লোকদের দলে যেসব তৎপরতা চালিয়ে যায়, আল্লাহ তা পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি জানেন উক্ত বান্দা কীভাবে তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, কীভাবে তাদেরকে পরিশুদ্ধ করছে, কীভাবে ভেজাল সোনাকে খাঁটি সোনায় পরিণত করছে।
রাতের বেলায় তাহাজ্জুদে দাঁড়ালে তাও আল্লাহ জানেন :
اِنَّ رَبَّكَ يَعْلَمُ اَنَّكَ تَقُوْمُ اَدْنٰى مِنْ ثُلُثَيِ اللَّيْلِ وَنِصْفَهٗ وَثُلُثَهٗ وَطَآئِفَةٌ مِّنَ الَّذِيْنَ مَعَكَ
তোমার প্রতিপালক তো জানেন যে, তুমি জাগরণ কর কখনো রাত্রির প্রায় দুই তৃতীয়াংশ, কখনো অর্ধাংশ এবং কখনো এক তৃতীয়াংশ এবং তোমার সাথে যারা আছে তাদের একটি দলও জাগে। (সূরা মুয্যাম্মিল- ২০)
তিনি মানুষের সকল কাজ পরিদর্শন করেন :
وَمَا تَكُوْنُ فِيْ شَاْنٍ وَّمَا تَتْلُوْ مِنْهُ مِنْ قُرْاٰنٍ وَّلَا تَعْمَلُوْنَ مِنْ عَمَلٍ اِلَّا كُنَّا عَلَيْكُمْ شُهُوْدًا اِذْ تُفِيْضُوْنَ فِيْهِؕ وَمَا يَعْزُبُ عَنْ رَّبِّكَ مِنْ مِّثْقَالِ ذَرَّةٍ فِى الْاَ رْضِ وَلَا فِى السَّمَآءِ وَلَاۤ اَصْغَرَ مِنْ ذٰلِكَ وَلَاۤ اَكْبَرَ اِلَّا فِيْ كِتَابٍ مُّبِيْنٍ
তুমি যে অবস্থায়ই থাক এবং তুমি কুরআন হতে যা কিছুই তিলাওয়াত কর কিংবা তোমরা যে কাজই কর না কেন, যখনই তোমরা তাতে প্রবৃত্ত হও তখন আমি তোমাদের পরিদর্শক হই। আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর অনুপরিমাণ বস্তুও তোমার প্রতিপালকের অগোচরে নয় এবং তা অপেক্ষা ক্ষুদ্রতর অথবা বৃহত্তর কিছুই নেই, যা সুস্পষ্ট কিতাবে নেই। (সূরা ইউনুস- ৬১)
আল্লাহ সবকিছুর উপর সাক্ষী আছেন :
اِنَّ اللهَ كَانَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ شَهِيْدًا
নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে লক্ষ্য করেন। (সূরা নিসা- ৩৩, সূরা আহযাব- ৫৫)
وَكَفٰى بِاللهِ شَهِيْدًا
সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। (সূরা নিসা- ৭৯)
আল্লাহ বান্দার উপর তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখেন :
اِنَّ اللهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيْبًا
নিশ্চয় আল্লাহই তোমাদের উপর তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখেন। (সূরা নিসা- ১)
কেউ দুর্বল থাকলে তাও জানেন :
وَعَلِمَ اَنَّ فِيْكُمْ ضَعْفًا
তিনি তো অবগত আছেন যে, তোমাদের মধ্যে দুর্বলতা আছে। (সূরা আনফাল- ৬৬)
কেউ অসুখ থাকলে তাও জানেন :
عَلِمَ اَنْ سَيَكُوْنُ مِنْكُمْ مَّرْضٰى
তিনি জানেন যে, তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়বে। (সূরা মুয্যাম্মিল- ২০)
কেউ মিথ্যা বললে তাও আল্লাহ জানতে পারেন :
وَاِنَّا لَنَعْلَمُ اَنَّ مِنْكُمْ مُّكَذِّبِيْنَ
নিশ্চয় আমি জানি যে, তোমাদের মধ্যে মিথ্যাপ্রতিপন্নকারী কিছু লোকও রয়েছে। (সূরা হাক্কাহ- ৪৯)
যালিমদের সম্পর্কেও আল্লাহ জানেন :
وَاللهُ اَعْلَمُ بِالظَّالِمِيْنَ
আর আল্লাহ যালিমদের সম্বন্ধে অধিক অবহিত। (সূরা আন‘আম- ৫৮)
ফাসাদকারীদেরকেও আল্লাহ জানেন :
فَاِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ ۢبِالْمُفْسِدِيْنَ
তবে ফাসাদকারীদের সম্পর্কে অবশ্যই আল্লাহ ভালো জানেন। (সূরা আলে ইমরান- ৬৩)
وَ رَبُّكَ اَعْلَمُ بِالْمُفْسِدِيْنَ
তোমার প্রতিপালক অশান্তি সৃষ্টিকারীদের সম্বন্ধে সম্যক অবহিত। (সূরা ইউনুস- ৪০)
আল্লাহ জানেন কারা সীমালঙ্ঘনকারী :
اِنَّ رَبَّكَ هُوَ اَعْلَمُ بِالْمُعْتَدِيْنَ
নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক সীমালঙ্ঘনকারীদের সম্বন্ধে ভালোভাবেই জানেন। (সূরা আন‘আম- ১১৯)
মুনাফিক কারা তা আল্লাহ জানেন :
وَمِمَّنْ حَوْلَكُمْ مِّنَ الْاَعْرَابِ مُنَافِقُوْنَؕ وَمِنْ اَهْلِ الْمَدِيْنَةِؕ مَرَدُوْا عَلَى النِّفَاقِؕ لَا تَعْلَمُهُمْ نَحْنُ نَعْلَمُهُمْؕ سَنُعَذِّبُهُمْ مَّرَّتَيْنِ ثُمَّ يُرَدُّوْنَ اِلٰى عَذَابٍ عَظِيْمٍ
মরুবাসীদের মধ্যে যারা তোমাদের আশেপাশে আছে তাদের কেউ কেউ মুনাফিক এবং মদিনাবাসীদের মধ্যেও কেউ কেউ কপটতায় সিদ্ধ। তুমি তাদেরকে জান না; আমি তাদেরকে জানি। অচিরেই আমি তাদেরকে দু’বার শাস্তি দেব। অতঃপর তারা প্রত্যাবর্তিত হবে মহাশাস্তির দিকে। (সূরা তাওবা- ১০১)
মুসলিমদের শত্রু কারা তাও জানেন :
وَاللهُ اَعْلَمُ بِاَعْدَآئِكُمْؕ وَكَفٰى بِاللهِ وَلِيًّا وَّكَفٰى بِاللهِ نَصِيْرًا
আল্লাহ তোমাদের শত্রুদেরকে ভালোভাবে জানেন। অভিভাবকত্বে আল্লাহই যথেষ্ট এবং সাহায্যেও আল্লাহ যথেষ্ট। (সূরা নিসা- ৪৫)
মুত্তাক্বীদের সম্পর্কেও জানেন :
وَمَا يَفْعَلُوْا مِنْ خَيْرٍ فَلَنْ يُّكْفَرُوْهُؕ وَاللهُ عَلِيْمٌ ۢبِالْمُتَّقِيْنَ
আর তারা যে ভালো কাজই করুক না কেন তা অবমূল্যায়ন করা হবে না। আর আল্লাহ মুত্তাক্বীদের সম্পর্কে জানেন। (সূরা আলে ইমরান- ১১৫)
কারা কৃতজ্ঞ আল্লাহ তা জানেন :
اَلَيْسَ اللهُ بِاَعْلَمَ بِالشَّاكِرِيْنَ
আল্লাহ কি কৃতজ্ঞ লোকদের সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত নন? (সূরা আন‘আম- ৫৩)
কে কোন পথে ঘুরছে আল্লাহ জানেন :
وَاللهُ يَعْلَمُ مُتَقَلَّبَكُمْ وَمَثْوَاكُمْ
আল্লাহ তোমাদের তৎপরতার খবরও রাখেন এবং তোমাদের (শেষ) ঠিকানা সম্পর্কেও (অবগত আছেন)। (সূরা মুহাম্মাদ- ১৯)
আল্লাহ গাফিল নন :
وَمَا اللهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ
তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আল্লাহ অমনোযোগী নন। (সূরা বাক্বারা- ৭৪)
وَلَا تَحْسَبَنَّ اللهَ غَافِلًا عَمَّا يَعْمَلُ الظَّالِمُوْنَؕ اِنَّمَا يُؤَخِّرُهُمْ لِيَوْمٍ تَشْخَصُ فِيْهِ الْاَبْصَارُ
তুমি কখনো মনে করো না যে, যালিমরা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ গাফিল, তবে তিনি তাদেরকে সেদিন পর্যমত্ম অবকাশ দেন যেদিন তাদের চক্ষু স্থির হয়ে যাবে। (সূরা ইবরাহীম- ৪২)
আল্লাহ মানুষকে দেখছেন :
اَلَمْ يَعْلَمْ بِاَنَّ اللهَ يَرٰى
সে কি জানে না যে, আল্লাহ তাকে দেখছেন? (সূরা আলাক্ব- ১৪)
আল্লাহ জানার দিক থেকে মানুষের অতি নিকটে :
وَنَحْنُ اَقْرَبُ اِلَيْهِ مِنْ حَبْلِ الْوَرِيْدِ
আমি (জ্ঞানের দিক দিয়ে) তার ঘাড়ের শাহরগ অপেক্ষাও নিকটতর । (সূরা ক্বাফ- ১৬)
وَهُوَ مَعَكُمْ اَيْنَ مَا كُنْتُمْؕ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
তোমরা যেখানেই থাক না কেন তিনি (জানার দিক দিয়ে) তোমাদের সঙ্গে আছেন, তোমরা যা কিছু কর আল্লাহ তা দেখেন। (সূরা হাদীদ- ৪)
মানুষের মৃত্যুও আল্লাহ পর্যবেক্ষণ করেন :
فَلَوْلَاۤ اِذَا بَلَغَتِ الْحُلْقُوْمَ ‐ - وَاَنْتُمْ حِيْنَئِذٍ تَنْظُرُوْنَ - ‐ وَنَحْنُ اَقْرَبُ اِلَيْهِ مِنْكُمْ وَلٰكِنْ لَّا تُبْصِرُوْنَ
প্রাণ যখন কণ্ঠনালীতে উপস্থিত হয় আর তখন তোমরা তাকিয়ে দেখ। আর আমি তোমাদের অপেক্ষা (জানার দিক দিয়ে) তার নিকটতর; কিন্তু তোমরা দেখতে পাও না। (সূরা ওয়াক্বিয়া, ৮৩-৮৫)
কার আবাস কোথায় হবে আল্লাহ জানেন :
وَمَا مِنْ دَآبَّةٍ فِى الْاَ رْضِ اِلَّا عَلَى اللهِ رِزْقُهَا وَيَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَا كُلٌّ فِيْ كِتَابٍ مُّبِيْنٍ
ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী সকলের জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহরই। তিনি তাদের স্থায়ী ও অস্থায়ী অবস্থান সম্বন্ধে অবহিত; সুস্পষ্ট কিতাবে সবকিছুই আছে। (সূরা হুদ- ৬)
গায়েবের (অদৃশ্য বিষয়ের) জ্ঞান কেবল আল্লাহরই রয়েছে :
قُلْ لَّا يَعْلَمُ مَنْ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِ الْغَيْبَ اِلَّا اللهُؕ وَمَا يَشْعُرُوْنَ اَيَّانَ يُبْعَثُوْنَ
বলো, আল্লাহ ব্যতীত আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে কেউ অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান রাখে না এবং তারা জানে না যে, কখন তারা উত্থিত হবে। (সূরা নামল- ৬৫)
وَعِنْدَهٗ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لَا يَعْلَمُهَاۤ اِلَّا هُوَ
অদৃশ্যের চাবিকাঠি তাঁরই নিকট রয়েছে, তিনি ব্যতীত তা অন্য কেউ জানে না। (সূরা আন‘আম- ৫৯)
وَلِلّٰهِ غَيْبُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِؕ وَاِلَيْهِ يُرْجَعُ الْاَمْرُ كُلُّهٗ فَاعْبُدْهُ وَتَوَكَّلْ عَلَيْهِؕ وَمَا رَبُّكَ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহরই এবং তাঁরই নিকট সমসত্ম কিছুর প্রত্যাবর্তন হবে। সুতরাং তুমি তাঁর ইবাদাত কর এবং তাঁর উপর নির্ভর করো। তোমরা যা করো সে সম্বন্ধে তোমার প্রতিপালক গাফিল নন। (সূরা হুদ- ১২৩)
عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ الْكَبِيْرُ الْمُتَعَالِ
যা অদৃশ্য ও যা দৃশ্যমান তিনি তা অবগত; তিনি মহান ও সর্বোচ্চ মর্যাদাবান। (সূরা রা‘দ- ৯)
اِنَّ اللهَ يَعْلَمُ غَيْبَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِؕ وَاللهُ بَصِيْرٌ ۢبِمَا تَعْمَلُوْنَ
নিশ্চয় আল্লাহ আসমান ও জমিনের গায়েবী বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন। আর তোমরা যা কিছু করছ তিনি তা দেখছেন। (সূরা হুজুরাত- ১৮)
اِنَّ اللهَ عَالِمُ غَيْبِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِؕ اِنَّهٗ عَلِيْمٌ ۢبِذَاتِ الصُّدُوْرِ
নিশ্চয় আল্লাহ আসমান ও জমিনের যাবতীয় গুপ্ত বিষয় সম্পর্কে পরিজ্ঞাত। নিশ্চয় তিনি অন্তরের বিষয় সম্বন্ধেও অবগত আছেন। (সূরা ফাতির- ৩৮)
ذٰلِكَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ الْعَزِيْزُ الرَّحِيْمُ
তিনি অপ্রকাশ্য ও প্রকাশ্য সকল বিষয় সম্পর্কে পরিজ্ঞাত, প্রতাপশালী ও পরম দয়ালু। (সূরা সাজদা- ৬)
ব্যাখ্যা : غَائِبٌ (গায়েব) শব্দের অর্থ লুকানো, অদৃশ্য বা আবৃত। পারিভাষিক অর্থে গায়েব হচ্ছে এমন জিনিস যা অজানা এবং যাকে উপায়-উপকরণ দ্বারা আয়ত্ত করা যায় না। এ ব্যাপারেও মহান আল্লাহ একক সত্তা। পৃথিবী ও আকাশে ফেরেশতা, জিন, নবী, আউলিয়া অথবা মানুষ যে কোন সৃষ্টিই হোক না কেন সকলের জ্ঞানই সীমাবদ্ধ। কিছু না কিছু বিষয় সবার কাছ থেকে গোপন রয়েছে। সবকিছুর জ্ঞান যদি কারো থাকে তাহলে তিনি হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ। এ বিশ্বের কোন জিনিস এবং কোন কথা তাঁর কাছে গোপন নেই। তিনি অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সবকিছু সম্পর্কে অবগত আছেন। মানুষের মন এ সত্যটি সুস্পষ্টভাবে জানে যে, ভাগ্যের ভাঙ্গা-গড়া, ফরিয়াদ শোনা, প্রয়োজন পূর্ণ করা এবং প্রত্যেক সাহায্যপ্রার্থীকে সাহায্য করা কেবলমাত্র এমন এক সত্তার কাজ হতে পারে, যিনি সবকিছু জানেন এবং যার কাছে কোনকিছুই গোপন নেই। এখন যদি এটি সত্য হয়ে থাকে যে, আল্লাহ ছাড়া আর কেউ স্রষ্টা, ফরিয়াদ শ্রবণকারী ও রিযিকদাতা নেই, তাহলে সাথে সাথে এটিও সত্য যে, আল্লাহ ছাড়া দ্বিতীয় কোন সত্তা অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারীও নয়। এটি ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে যতটুকু চান জ্ঞান দান করেন। কিন্তু অদৃশ্য জ্ঞান সামগ্রিকভাবে কেউ লাভ করতে পারে না। সুতরাং ‘আলিমুল গায়েব’ বা অদৃশ্য জ্ঞানী উপাধি একমাত্র আল্লাহ রাববুল আলামীনের জন্য নির্দিষ্ট। কোন সৃষ্টি অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী হতে পারে এ ধারণা কুরআন নাকচ করে দেয়। এমনকি অন্যান্য নবী এবং স্বয়ং মুহাম্মাদ ﷺ এর ব্যাপারেও এ বিষয়টি পরিষ্কার যে, তারা অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী নন। তাঁকে অদৃশ্যের কেবলমাত্র ততটুকু জ্ঞান আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে যতটুকু রিসালাতের দায়িত্ব পালন করার জন্য প্রয়োজন ছিল। আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী মনে করা এবং যা কিছু আছে ও যা কিছু হবে এর জ্ঞান আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো আছে একথা বিশ্বাস করা শিরক। আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি দাবী করে যে, মুহাম্মদ ﷺ আগামীকাল কী হবে তা জানেন, সে আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে। কারণ আল্লাহ বলেন, হে নবী! তুমি বলে দাও আল্লাহ ছাড়া আসমান ও জমিনের অধিবাসীদের মধ্যে আর কেউ অদৃশ্যের জ্ঞান রাখে না।’’
(সহীহ বুখারী, হা/৪৮৫৫)
আল্লাহ গায়েবের কিছু বিষয় রাসূলদের কাছে প্রকাশ করেন :
عَالِمُ الْغَيْبِ فَلَا يُظْهِرُ عَلٰى غَيْبِهٖۤ احَدًا ‐ اِلَّا مَنِ ارْتَضٰى مِنْ رَّسُوْلٍ فَاِنَّهٗ يَسْلُكُ مِنْ ۢبَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهٖ رَصَدًا
তিনি অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী, তিনি তাঁর অদৃশ্যের জ্ঞান কারো নিকট প্রকাশ করেন না। তবে তাঁর মনোনীত রাসূল ব্যতীত। নিশ্চয় তিনি তার সামনে এবং পেছনে প্রহরী নিয়োজিত করে রেখেছেন (যাতে শয়তান কোন মিশ্রণ ঘটাতে না পারে)। (সূরা জিন-২৬, ২৭)
আসমান ও জমিনের কোনকিছুই আল্লাহর কাছে গোপন নয় :
وَمَا يَخْفٰى عَلَى اللهِ مِنْ شَيْءٍ فِى الْاَ رْضِ وَلَا فِى السَّمَآءِ
পৃথিবী ও আকাশমন্ডলীর কোনকিছুই আল্লাহর নিকট গোপন থাকে না। (সূরা ইবরাহীম- ৩৮)
اِنَّ اللهَ لَا يَخْفٰى عَلَيْهِ شَيْءٌ فِى الْاَ رْضِ وَلَا فِى السَّمَآءِ
নিশ্চয় আল্লাহর কাছে পৃথিবী ও আকাশমন্ডলীর কিছুই গোপন থাকে না। (সূরা আলে ইমরান- ৫)
সরিষা পরিমাণ কোন জিনিসও আল্লাহর জ্ঞানের বাইরে নয় :
وَمَا يَعْزُبُ عَنْ رَّبِّكَ مِنْ مِّثْقَالِ ذَرَّةٍ فِى الْاَ رْضِ وَلَا فِى السَّمَآءِ وَلَاۤ اَصْغَرَ مِنْ ذٰلِكَ وَلَاۤ اَكْبَرَ اِلَّا فِيْ كِتَابٍ مُّبِيْنٍ
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর অণুপরিমাণ কোন জিনিসও তোমার প্রতিপালকের অগোচরে নয় এবং তার চেয়ে ছোট অথবা বড় কিছুই নেই, যা সুস্পষ্ট কিতাবে নেই। (সূরা ইউনুস- ৬১)
لَا يَعْزُبُ عَنْهُ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ فِى السَّمَاوَاتِ وَلَا فِى الْاَ رْضِ وَلَاۤ اَصْغَرُ مِنْ ذٰلِكَ وَلَاۤ اَكْبَرُ اِلَّا فِيْ كِتَابٍ مُّبِيْنٍ
আকাশ ও পৃথিবীতে অণুপরিমাণ জিনিসও তাঁর অজানা নয়, কিংবা তদপেক্ষা ক্ষুদ্র বা বৃহৎ (তাঁর অজানা নয়) কিন্তু এ সবই সুস্পষ্ট গ্রন্থেহ লিপিবদ্ধ আছে। (সূরা সাবা- ৩)
এতো কিছু জানা আল্লাহর পক্ষে কঠিন নয় :
اَلَمْ تَعْلَمْ اَنَّ اللهَ يَعْلَمُ مَا فِى السَّمَآءِ وَالْاَ رْضِ اِنَّ ذٰلِكَ فِيْ كِتَابٍ اِنَّ ذٰلِكَ عَلَى اللهِ يَسِيْرٌ
তুমি কি জান না যে, আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু রয়েছে আল্লাহ তা জানেন। এ সবই আছে এক কিতাবে; নিশ্চয় এটা আল্লাহর নিকট সহজ। (সূরা হজ্জ- ৭০)
আল্লাহ উত্তম বিচারক :
اَلَيْسَ اللهُ بِاَحْكَمِ الْحَاكِمِيْنَ
আল্লাহ কি বিচারকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিচারক নন? (সূরা তীন- ৮)
وَاتَّبِعْ مَا يُوْحٰۤى اِلَيْكَ وَاصْبِرْ حَتّٰى يَحْكُمَ اللهُۚ وَهُوَ خَيْرُ الْحَاكِمِيْنَ
তোমার প্রতি যে ওহী অবতীর্ণ হয়েছে তুমি তার অনুসরণ করো এবং ধৈর্যধারণ করো, যে পর্যন্ত না আল্লাহ ফায়সালা করেন; আর তিনিই সর্বোত্তম ফায়সালাকারী। (সূরা ইউনুস- ১০৯)
فَاصْبِرُوْا حَتّٰى يَحْكُمَ اللهُ بَيْنَنَاۚ وَهُوَ خَيْرُ الْحَاكِمِيْنَ
অতএব ধৈর্যধারণ করো, যতক্ষণ না আল্লাহ আমাদের মধ্যে চূড়ান্ত ফায়সালা করে দেন; আর তিনিই উত্তম ফায়সালাকারী। (সূরা আ‘রাফ- ৮৭)
আল্লাহই সঠিক বিচারক :
وَاللهُ يَقْضِيْ بِالْحَقِّؕ وَالَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖ لَا يَقْضُوْنَ بِشَيْءٍؕ اِنَّ اللهَ هُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ
আল্লাহ ইনসাফের সাথে ফায়সালা করেন; আর তাঁর পরিবর্তে তারা যাদেরকে ডাকে তারা বিচার করতে অক্ষম। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। (সূরা মু’মিন- ২০)
আল্লাহ কারো হক নষ্ট করেন না :
اِنَّا لَا نُضِيْعُ اَجْرَ الْمُصْلِحِيْنَ
নিশ্চয় আমি সৎকর্মপরায়ণদের প্রতিদান নষ্ট করি না। (সূরা আ‘রাফ- ১৭০)
আল্লাহ পাপের চেয়ে বেশি শাস্তি দেন না :
وَالَّذِيْنَ كَسَبُوا السَّيِّئَاتِ جَزَآءُ سَيِّئَة ٍ ۢبِمِثْلِهَا
যারা মন্দকাজ করে তাদের প্রতিফল অনুরূপ মন্দই হবে। (সূরা ইউনুস- ২৭)
وَمَنْ جَآءَ بِالسَّيِّئَةِ فَلَا يُجْزَى الَّذِيْنَ عَمِلُوا السَّيِّئَاتِ اِلَّا مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
আর যে ব্যক্তি মন্দকর্ম নিয়ে উপস্থিত হবে, তার জন্য কেবল মন্দকর্মের অনুরূপই প্রতিদান দেয়া হবে। (সূরা ক্বাসাস- ৮৪)
আল্লাহ কারো প্রতি যুলুম করেন না :
وَمَا اللهُ يُرِيْدُ ظُلْمًا لِّلْعِبَادِ
আর আল্লাহ বান্দাদের প্রতি কোন যুলুম করতে চান না। (সূরা মু’মিন- ৩১)
اِنَّ اللهَ لَا يَظْلِمُ النَّاسَ شَيْئًا وَّلٰكِنَّ النَّاسَ اَنْفُسَهُمْ يَظْلِمُوْنَ
নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি কোন যুলুম করেন না, বরং মানুষ নিজেরাই নিজেদের প্রতি যুলুম করে থাকে। (সূরা ইউনুস- ৪৪)
مَنْ عَمِلَ صَالِحًا فَلِنَفْسِهٖ وَمَنْ اَسَآءَ فَعَلَيْهَاؕ وَمَا رَبُّكَ بِظَلَّامٍ لِّلْعَبِيْدِ
যে ব্যক্তি সৎকাজ করে সে নিজের কল্যাণের জন্যই করে; আর কেউ যদি মন্দকাজ করে তবে তার প্রতিফল সে-ই ভোগ করবে। তোমার প্রতিপালক তাঁর বান্দাদের প্রতি কোন যুলুম করেন না। (সূরা হামীম সাজদা- ৪৬)
আল্লাহ একটুও অবিচার করেন না :
اِنَّ اللهَ لَا يَظْلِمُ مِثْقَالَ ذَرَّةٍۚ وَاِنْ تَكُ حَسَنَةً يُّضَاعِفْهَا وَيُؤْتِ مِنْ لَّدُنْهُ اَجْرًا عَظِيْمًا
নিশ্চয় আল্লাহ বিন্দু পরিমাণও যুলুম করেন না; যদি সৎকর্মের পরিমাণ একটি হয় তবে তা দ্বিগুণ করে দেন এবং তার নিজের পক্ষ থেকে বড় কিছু পুরস্কার যোগ করে দেন। (সূরা নিসা- ৪০)
আল্লাহ ওয়াদা ভঙ্গ করেন না :
اِنَّ اللهَ لَا يُخْلِفُ الْمِيْعَادَ
নিশ্চয় আল্লাহ অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন না। (সূরা আলে ইমরান- ৯)
لَا يُخْلِفُ اللهُ وَعْدَهٗ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ
আল্লাহ তাঁর ওয়াদা ভঙ্গ করেন না; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। (সূরা রূম- ৬)
لَا يُخْلِفُ اللهُ الْمِيْعَادَ
আল্লাহ কখনো ওয়াদা ভঙ্গ করেন না। (সূরা যুমার- ২০)
আল্লাহর ওয়াদা সত্য :
فَاصْبِرْ اِنَّ وَعْدَ اللهِ حَقٌّ
সুতরাং তুমি ধৈর্যধারণ করো; নিশ্চয় আল্লাহর অঙ্গীকার সত্য। (সূরা মু’মিন- ৭৭)
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اِنَّ وَعْدَ اللهِ حَقٌّ فَلَا تَغُرَّنَّكُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَاؕ وَلَا يَغُرَّنَّكُمْ بِاللهِ الْغَرُوْرُ
হে মানুষ! নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য। সুতরাং পার্থিব জীবন যেন কিছুতেই তোমাদেরকে প্রতারিত না করে এবং প্রতারক (শয়তানও) যেন কিছুতেই তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারিত না করে। (সূরা ফাতির- ৫)
আল্লাহর কথা সত্য :
وَمَنْ اَصْدَقُ مِنَ اللهِ حَدِيْثًا
বর্ণনায় আল্লাহর চেয়ে অধিক সত্যবাদী আর কে আছে? (সূরা নিসা- ৮৭)
وَمَنْ اَصْدَقُ مِنَ اللهِ قِيْلًا
কথায় আল্লাহর চেয়ে অধিক সত্যবাদী আর কে? (সূরা নিসা- ১২২)
اَلَيْسَ اللهُ بِاَحْكَمِ الْحَاكِمِيْنَ
আল্লাহ কি বিচারকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিচারক নন? (সূরা তীন- ৮)
وَاتَّبِعْ مَا يُوْحٰۤى اِلَيْكَ وَاصْبِرْ حَتّٰى يَحْكُمَ اللهُۚ وَهُوَ خَيْرُ الْحَاكِمِيْنَ
তোমার প্রতি যে ওহী অবতীর্ণ হয়েছে তুমি তার অনুসরণ করো এবং ধৈর্যধারণ করো, যে পর্যন্ত না আল্লাহ ফায়সালা করেন; আর তিনিই সর্বোত্তম ফায়সালাকারী। (সূরা ইউনুস- ১০৯)
فَاصْبِرُوْا حَتّٰى يَحْكُمَ اللهُ بَيْنَنَاۚ وَهُوَ خَيْرُ الْحَاكِمِيْنَ
অতএব ধৈর্যধারণ করো, যতক্ষণ না আল্লাহ আমাদের মধ্যে চূড়ান্ত ফায়সালা করে দেন; আর তিনিই উত্তম ফায়সালাকারী। (সূরা আ‘রাফ- ৮৭)
আল্লাহই সঠিক বিচারক :
وَاللهُ يَقْضِيْ بِالْحَقِّؕ وَالَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖ لَا يَقْضُوْنَ بِشَيْءٍؕ اِنَّ اللهَ هُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ
আল্লাহ ইনসাফের সাথে ফায়সালা করেন; আর তাঁর পরিবর্তে তারা যাদেরকে ডাকে তারা বিচার করতে অক্ষম। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। (সূরা মু’মিন- ২০)
আল্লাহ কারো হক নষ্ট করেন না :
اِنَّا لَا نُضِيْعُ اَجْرَ الْمُصْلِحِيْنَ
নিশ্চয় আমি সৎকর্মপরায়ণদের প্রতিদান নষ্ট করি না। (সূরা আ‘রাফ- ১৭০)
আল্লাহ পাপের চেয়ে বেশি শাস্তি দেন না :
وَالَّذِيْنَ كَسَبُوا السَّيِّئَاتِ جَزَآءُ سَيِّئَة ٍ ۢبِمِثْلِهَا
যারা মন্দকাজ করে তাদের প্রতিফল অনুরূপ মন্দই হবে। (সূরা ইউনুস- ২৭)
وَمَنْ جَآءَ بِالسَّيِّئَةِ فَلَا يُجْزَى الَّذِيْنَ عَمِلُوا السَّيِّئَاتِ اِلَّا مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
আর যে ব্যক্তি মন্দকর্ম নিয়ে উপস্থিত হবে, তার জন্য কেবল মন্দকর্মের অনুরূপই প্রতিদান দেয়া হবে। (সূরা ক্বাসাস- ৮৪)
আল্লাহ কারো প্রতি যুলুম করেন না :
وَمَا اللهُ يُرِيْدُ ظُلْمًا لِّلْعِبَادِ
আর আল্লাহ বান্দাদের প্রতি কোন যুলুম করতে চান না। (সূরা মু’মিন- ৩১)
اِنَّ اللهَ لَا يَظْلِمُ النَّاسَ شَيْئًا وَّلٰكِنَّ النَّاسَ اَنْفُسَهُمْ يَظْلِمُوْنَ
নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি কোন যুলুম করেন না, বরং মানুষ নিজেরাই নিজেদের প্রতি যুলুম করে থাকে। (সূরা ইউনুস- ৪৪)
مَنْ عَمِلَ صَالِحًا فَلِنَفْسِهٖ وَمَنْ اَسَآءَ فَعَلَيْهَاؕ وَمَا رَبُّكَ بِظَلَّامٍ لِّلْعَبِيْدِ
যে ব্যক্তি সৎকাজ করে সে নিজের কল্যাণের জন্যই করে; আর কেউ যদি মন্দকাজ করে তবে তার প্রতিফল সে-ই ভোগ করবে। তোমার প্রতিপালক তাঁর বান্দাদের প্রতি কোন যুলুম করেন না। (সূরা হামীম সাজদা- ৪৬)
আল্লাহ একটুও অবিচার করেন না :
اِنَّ اللهَ لَا يَظْلِمُ مِثْقَالَ ذَرَّةٍۚ وَاِنْ تَكُ حَسَنَةً يُّضَاعِفْهَا وَيُؤْتِ مِنْ لَّدُنْهُ اَجْرًا عَظِيْمًا
নিশ্চয় আল্লাহ বিন্দু পরিমাণও যুলুম করেন না; যদি সৎকর্মের পরিমাণ একটি হয় তবে তা দ্বিগুণ করে দেন এবং তার নিজের পক্ষ থেকে বড় কিছু পুরস্কার যোগ করে দেন। (সূরা নিসা- ৪০)
আল্লাহ ওয়াদা ভঙ্গ করেন না :
اِنَّ اللهَ لَا يُخْلِفُ الْمِيْعَادَ
নিশ্চয় আল্লাহ অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন না। (সূরা আলে ইমরান- ৯)
لَا يُخْلِفُ اللهُ وَعْدَهٗ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ
আল্লাহ তাঁর ওয়াদা ভঙ্গ করেন না; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। (সূরা রূম- ৬)
لَا يُخْلِفُ اللهُ الْمِيْعَادَ
আল্লাহ কখনো ওয়াদা ভঙ্গ করেন না। (সূরা যুমার- ২০)
আল্লাহর ওয়াদা সত্য :
فَاصْبِرْ اِنَّ وَعْدَ اللهِ حَقٌّ
সুতরাং তুমি ধৈর্যধারণ করো; নিশ্চয় আল্লাহর অঙ্গীকার সত্য। (সূরা মু’মিন- ৭৭)
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اِنَّ وَعْدَ اللهِ حَقٌّ فَلَا تَغُرَّنَّكُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَاؕ وَلَا يَغُرَّنَّكُمْ بِاللهِ الْغَرُوْرُ
হে মানুষ! নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য। সুতরাং পার্থিব জীবন যেন কিছুতেই তোমাদেরকে প্রতারিত না করে এবং প্রতারক (শয়তানও) যেন কিছুতেই তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারিত না করে। (সূরা ফাতির- ৫)
আল্লাহর কথা সত্য :
وَمَنْ اَصْدَقُ مِنَ اللهِ حَدِيْثًا
বর্ণনায় আল্লাহর চেয়ে অধিক সত্যবাদী আর কে আছে? (সূরা নিসা- ৮৭)
وَمَنْ اَصْدَقُ مِنَ اللهِ قِيْلًا
কথায় আল্লাহর চেয়ে অধিক সত্যবাদী আর কে? (সূরা নিসা- ১২২)
আল্লাহ দানশীল :
رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوْبَنَا بَعْدَ اِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِنْ لَّدُنْكَ رَحْمَةًۚ اِنَّكَ اَنْتَ الْوَهَّابُ
হে আমাদের রব! হেদায়াত দানের পর আমাদের অন্তরকে বক্র করে দেবেন না। আর আপনার পক্ষ থেকে আমাদেরকে রহমত দান করুন; নিশ্চয় আপনি মহান দাতা। (সূরা আলে ইমরান- ৮)
তিনি অসীম অনুগ্রহের মালিক :
وَاللهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيْمِ
আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল। (সূরা আলে ইমরান- ৭৪)
وَرَبُّكَ الْغَفُوْرُ ذُو الرَّحْمَةِ
আর তোমার প্রতিপালক পরম ক্ষমাশীল ও দয়াবান। (সূরা কাহফ- ৫৮)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর রহমতের শেষ নেই। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল ﷺ এর নিকট থেকে শুনেছি যে, আল্লাহ যেদিন রহমত সৃষ্টি করেছেন সেদিন রহমতকে একশত ভাগে ভাগ করে একভাগ সমস্ত সৃষ্টিকে দিয়েছেন, আর বাকী নিরানববই ভাগ নিজের কাছে রেখেছেন। যদি কোন কাফির আল্লাহর নিকট যে রহমত আছে তার পরিমাণ সম্পর্কে জানত, তাহলে সে জান্নাতের ব্যাপারে নিরাশ হতো না। (অপরপক্ষে) কোন মুমিন যদি আল্লাহর কাছে যে শাস্তি রয়েছে তার পরিমাণ সম্পর্কে জানত, তবে (জাহান্নামের) আগুন থেকে নিজেকে নিরাপদ মনে করত না। (সহীহ বুখারী, হা/৬৪৬৯)
সকল অনুগ্রহই আল্লাহর হাতে :
قُلْ اِنَّ الْفَضْلَ بِيَدِ اللهِۚ يُؤْتِيْهِ مَنْ يَّشَآءُؕ وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ
বলো, সকল অনুগ্রহ আল্লাহর হাতে; তিনি যাকে চান তাকে অনুগ্রহ করেন। আর আল্লাহ প্রশস্ত ও মহাজ্ঞানী। (সূরা আলে ইমরান- ৭৩)
মুমিনদের ব্যাপারে আল্লাহ খুবই অনুগ্রহশীল:
وَاللهُ ذُوْ فَضْلٍ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ
নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্বাসীদের প্রতি অনুগ্রহশীল। (সূরা আলে ইমরান- ১৫২)
আল্লাহ মুমিনদের অভিভাবক :
وَاللهُ وَلِيُّ الْمُؤْمِنِيْنَ
আর আল্লাহ মুমিনদের অভিভাবক। (সূরা আলে ইমরান- ৬৮)
আল্লাহ মুত্তাক্বীদের অভিভাবক :
وَاللهُ وَلِيُّ الْمُتَّقِيْنَ
আর আল্লাহ মুত্তাক্বীদের অভিভাবক । (সূরা জাসিয়া- ১৯)
আল্লাহর রহমত সবকিছুর উপর বিস্তৃত :
وَرَحْمَتِيْ وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍؕ فَسَاَكْتُبُهَا لِلَّذِيْنَ يَتَّقُوْنَ وَيُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَالَّذِيْنَ هُمْ بِاٰيَاتِنَا يُؤْمِنُوْنَ
আমার অনুগ্রহ প্রত্যেক বস্তুর উপর বিস্তৃত। সুতরাং আমি সেটা তাদের জন্য নির্ধারণ করব যারা তাক্বওয়া অবলম্বন করে, যাকাত দেয় এবং আমার নিদর্শনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে। (সূরা আ‘রাফ- ১৫৬)
আল্লাহ অনুগ্রহ করাকে নিজ কর্তব্য করে নিয়েছেন :
قُلْ لِّمَنْ مَّا فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِؕ قُلْ لِّلّٰهِؕ كَتَبَ عَلٰى نَفْسِهِ الرَّحْمَةَ
বলো, আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে তা কার? বলো, ‘আল্লাহরই’। (জেনে রেখো) দয়া করা তিনি তাঁর কর্তব্য হিসেবে স্থির করে নিয়েছেন। (সূরা আন‘আম- ১২)
তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে নিজ অনুগ্রহে আপন করে নেন :
يَخْتَصُّ بِرَحْمَتِهٖ مَنْ يَّشَآءُؕ وَاللهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيْمِ
তিনি যাকে ইচ্ছা নিজ অনুগ্রহে বিশেষিত করেন; আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল। (সূরা আলে ইমরান- ৭৪)
আল্লাহর রহমত সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী থাকে :
اِنَّ رَحْمَةَ اللهِ قَرِيْبٌ مِّنَ الْمُحْسِنِيْنَ
নিশ্চয় আল্লাহর অনুগ্রহ সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী। (সূরা আ‘রাফ- ৫৬)
ব্যাখ্যা : আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা যখন সকল মাখলুককে সৃষ্টি করেন, তখন তাঁর কাছে আরশে রক্ষিত কিতাবে লিখলেন, ‘‘আমার রহমত আমার গযবের উপর সর্বদা বিজয়ী।’’ (সহীহ বুখারী, হা/৭৪০৪)
আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি মেহেরবান :
وَاللهُ رَءُوْفٌ ۢبِالْعِبَادِ
আর আল্লাহ বান্দাদের প্রতি খুবই স্নেহপরায়ণ। (সূরা বাক্বারা- ২০৭)
اِنَّ اللهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيْمًا
নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। (সূরা নিসা- ২৯)
আল্লাহ বান্দাদের প্রতি অনুগ্রহ বর্ষণ করেন :
هُوَ الَّذِيْ يُصَلِّيْ عَلَيْكُمْ وَمَلَآئِكَتُهٗ لِيُخْرِجَكُمْ مِّنَ الظُّلُمَاتِ اِلَى النُّوْرِؕ وَكَانَ بِالْمُؤْمِنِيْنَ رَحِيْمًا
তিনিই তোমাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন এবং তাঁর ফেরেশতারাও তোমাদের জন্য রহমত প্রার্থনা করে। যেন আল্লাহ তোমাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে বের করে আনেন। আর তিনি মুমিনদের প্রতি অত্যন্ত অনুগ্রহশীল। (সূরা আহযাব- ৪৩)
আল্লাহ পৃথিবীকে মানুষের জন্য বসবাসের উপযোগী করে দিয়েছেন :
اَللهُ الَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ الْاَ رْضَ قَرَارًا وَّالسَّمَآءَ بِنَآءً وَّصَوَّرَكُمْ فَاَحْسَنَ صُوَرَكُمْ وَرَزَقَكُمْ مِّنَ الطَّيِّبَاتِؕ ذٰلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمْۚ فَتَبَارَكَ اللهُ رَبُّ الْعَالَمِيْنَ
আল্লাহই তোমাদের জন্য পৃথিবীকে করেছেন বসবাসের উপযোগী, আকাশকে করেছেন ছাদ, তোমাদের আকৃতিকে করেছেন উৎকৃষ্ট এবং তোমাদেরকে দান করেছেন পবিত্র রিযিক। তিনিই আল্লাহ, তোমাদের প্রতিপালক। আল্লাহ কতই না মহান, যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক। (সূরা মু’মিন- ৬৪)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে সৃষ্টি করার পূর্বেই একটি সুরক্ষিত ও নিরাপদ আবাসস্থল প্রস্তুত করেছেন। তারপর তাদেরকে এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন যে, একটি সর্বোত্তম দেহ কাঠামো, উপযুক্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এবং উন্নত দেহ ও চিন্তাশক্তি দিয়েছেন। এ দেহ কাঠামো, হাত, পা, চোখ, নাক, কান, বাকশক্তিসম্পন্ন এ জিহবা এবং সর্বোত্তম যোগ্যতার ভান্ডার এ মস্তিষ্ক কেউ নিজে তৈরি করেনি, কারো বাবা-মাও তৈরি করেনি, কোন দেবতার মধ্যেও তা তৈরি করার ক্ষমতা নেই। এসব যোগ্যতা ও ক্ষমতার সৃষ্টিকারী হলেন সে মহাজ্ঞানী, দয়ালু ও সর্বশক্তিমান সত্তা, যিনি মানুষকে সৃষ্টি করার সময় পৃথিবীতে কাজ করার জন্য তাকে এ নজীরবিহীন দেহ দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর জন্মলাভ করার সাথে সাথে তাঁর দয়ায় তোমরা প্রচুর পবিত্র খাদ্য পেয়েছ এবং পানাহারের এমনসব পবিত্র উপকরণ লাভ করেছ- যা নোংরা বা বিস্বাদ নয় বরং সুস্বাদু, আবার পঁচা-গলা ও দুর্গন্ধময়ও নয় বরং সুবাসিত। পানি, খাদ্য, শস্য, তরকারী, ফলমূল, দুধ, মধু, গোশত, লবণ, মরিচ ও মসলা মানুষের পুষ্টি সাধন এবং জীবনের পরিপূর্ণ আস্বাদন লাভের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। ভূমি থেকে এ অগণিত খাদ্যভান্ডার উৎপাদনের এ ব্যবস্থা কে করেছে যে তার যোগান বন্ধ হয় না? চিন্তা করে দেখো, রিযিকের এ ব্যবস্থা না করেই যদি তোমাদেরকে সৃষ্টি করা হতো তাহলে তোমাদের জীবনের পরিস্থিতি কী দাঁড়াত? সুতরাং এটা কি এ বিষয়ের সুস্পষ্ট প্রমাণ নয় যে, তোমাদের স্রষ্টা শুধু স্রষ্টাই নন, বরং মহাজ্ঞানী স্রষ্টা এবং অত্যন্ত দয়ালু প্রভু।
আল্লাহ বিশ্রামের জন্য রাতকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করেছেন :
اَللهُ الَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ اللَّيْلَ لِتَسْكُنُوْا فِيْهِ وَالنَّهَارَ مُبْصِرًاؕ اِنَّ اللهَ لَذُوْ فَضْلٍ عَلَى النَّاسِ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَشْكُرُوْنَ
আল্লাহই তোমাদের বিশ্রামের জন্য সৃষ্টি করেছেন রাত্রি এবং আলোকিত করেছেন দিবসকে। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি অনুগ্রহশীল; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। (সূরা মু’মিন- ৬১)
আল্লাহ বৃষ্টি দিয়ে বান্দার প্রতি রহমত বর্ষণ করেন :
وَهُوَ الَّذِيْ يُنَزِّلُ الْغَيْثَ مِنْ ۢبَعْدِ مَا قَنَطُوْا وَيَنْشُرُ رَحْمَتَهٗؕ وَهُوَ الْوَلِيُّ الْحَمِيْدُ
তারা যখন নিরাশ হয়ে পড়ে তখনই তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তাঁর করুণা বিস্তার করেন। আর তিনিই তো প্রশংসিত অভিভাবক। (সূরা শূরা- ২৮)
আল্লাহ আসমানকে স্থির রেখেছেন :
وَيُمْسِكُ السَّمَآءَ اَنْ تَقَعَ عَلَى الْاَ رْضِ اِلَّا بِاِذْنِهٖؕ اِنَّ اللهَ بِالنَّاسِ لَرَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ
আর তিনিই আকাশকে স্থির রাখেন, যাতে সেটা তাঁর অনুমতি ব্যতীত পৃথিবীর উপর পতিত না হয়। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। (সূরা হজ্জ- ৬৫)
আল্লাহ তাঁর বিধানকে সহজ করেছেন :
مَا يُرِيْدُ اللهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُمْ مِّنْ حَرَجٍ وَّلٰكِنْ يُّرِيْدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهٗ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
আল্লাহ তোমাদেরকে কষ্ট দিতে চান না; বরং তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান ও তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ পূর্ণ করতে চান; যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর। (সূরা মায়েদা- ৬)
আল্লাহ মানুষকে ক্ষমা করতে চান :
يُرِيْدُ اللهُ لِيُبَيِّنَ لَكُمْ وَيَهْدِيَكُمْ سُنَنَ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَيَتُوْبَ عَلَيْكُمْؕ وَاللهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ
আল্লাহ ইচ্ছা করেন তোমাদের নিকট বিশদভাবে বর্ণনা করতে আর তোমাদের পূর্ববর্তীদের রীতিনীতি তোমাদেরকে অবহিত করতে এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করতে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা- ২৬)
আল্লাহ উত্তম উপদেশ প্রদানকারী :
اِنَّ اللهَ نِعِمَّا يَعِظُكُمْ بِهٖؕ اِنَّ اللهَ كَانَ سَمِيْعًا ۢبَصِيْراً
আল্লাহ তোমাদেরকে যে উপদেশ দেন তা কতই না উৎকৃষ্ট! নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। (সূরা নিসা- ৫৮)
আল্লাহ বান্দাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে ডাকেন :
هُوَ الَّذِيْ يُنَزِّلُ عَلٰى عَبْدِهٖۤ اٰيَاتٍ ۢبَيِّنَاتٍ لِّيُخْرِجَكُمْ مِّنَ الظُّلُمَاتِ اِلَى النُّوْرِؕ وَاِنَّ اللهَ بِكُمْ لَرَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ
তিনিই তাঁর বানদাদের প্রতি সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ অবতীর্ণ করেন, যাতে করে তিনি তোমাদেরকে সকল প্রকার অন্ধকার হতে আলোর দিকে বের করে নিয়ে আসতে পারেন; নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি করুণাময় ও পরম দয়ালু। (সূরা হাদীদ- ৯)
আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে জান্নাতের দিকে আহবান করেন :
وَاللهُ يَدْعُوْاۤ اِلٰى دَارِ السَّلَامِ ؕ وَيَهْدِيْ مَنْ يَّشَآءُ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
আল্লাহ শান্তির আবাসের দিকে আহবান করেন এবং যাকে ইচ্ছা সরল পথে পরিচালিত করেন। (সূরা ইউনুস- ২৫)
আল্লাহ মুমিনের আমল নষ্ট করেন না :
اِنَّهٗ مَنْ يَّتَّقِ وَيَصْبِرْ فَاِنَّ اللهَ لَا يُضِيْعُ اَجْرَ الْمُحْسِنِيْنَ
নিশ্চয় যে ব্যক্তি মুত্তাক্বী এবং ধৈর্যশীল, আর আল্লাহ সেরূপ সৎকর্মশীলদের শ্রমফল নষ্ট করেন না। (সূরা ইউসুফ- ৯০)
وَاَنَّ اللهَ لَا يُضِيْعُ اَجْرَ الْمُؤْمِنِيْنَ
নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের প্রতিদান বিনষ্ট করেন না। (সূরা আলে ইমরান- ১৭১)
আল্লাহ আমলের চেয়েও বেশি সওয়াব দেন :
مَنْ جَآءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهٗ عَشْرُ اَمْثَالِهَاۚ وَمَنْ جَآءَ بِالسَّيِّئَةِ فَلَا يُجْزٰۤى اِلَّا مِثْلَهَا وَهُمْ لَا يُظْلَمُوْنَ
কেউ কোন সৎকাজ করলে সে তার দশ গুণ পাবে এবং কেউ কোন অসৎকাজ করলে তাকে শুধু তারই প্রতিফল দেয়া হবে; আর তাদের প্রতি কোন যুলুম করা হবে না। (সূরা আন‘আম- ১৬০)
ব্যাখ্যা : বান্দা আল্লাহ সম্পর্কে যেরকম ধারণা করবে তাঁকে সেরকমই পাবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘আমার বান্দা আমার সম্পর্কে যেরকম ধারণা পোষণ করে, আমি তার জন্য সেরকমই। যখন সে আমাকে স্মরণ করে আমিও তাকে স্মরণ করি। যদি সে মনে মনে আমাকে স্মরণ করে আমিও মনে মনে তাকে স্মরণ করি। যদি সে লোকজনের মধ্যে আমাকে স্মরণ করে, তবে আমিও এমন জামা‘আতে তাকে স্মরণ করে থাকি, যা তার জামা‘আত থেকে উত্তম। আর যে আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয় আমি তার দিকে এক গজ অগ্রসর হই। আর যে আমার দিকে এক গজ অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে দু’গজ অগ্রসর হই। আর যে আমার দিকে হেঁটে অগ্রসর হয় আমি তার দিকে দৌড়ে অগ্রসর হই। (সহীহ বুখারী, হা/৭৪০৫)
আল্লাহ বান্দাদের পাপ ক্ষমা করেন :
وَاِنَّ رَبَّكَ لَذُوْ مَغْفِرَةٍ لِّلنَّاسِ عَلٰى ظُلْمِهِمْۚ وَاِنَّ رَبَّكَ لَشَدِيْدُ الْعِقَابِ
মানুষের সীমালঙ্ঘন সত্ত্বেও তোমার প্রতিপালক মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল এবং তোমার প্রতিপালক শাসিত্ম দানে খুবই কঠোর। (সূরা রা‘দ- ৬)
اِنْ تَجْتَنِبُوْا كَبَآئِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَنُدْخِلْكُمْ مُّدْخَلًا كَرِيْمًا
তোমাদেরকে যা নিষেধ করা হয়েছে তার মধ্যে যা গুরুতর তা হতে বিরত থাকলে তোমাদের ছোট গোনাহসমূহ ক্ষমা করব এবং তোমাদেরকে সম্মানজনক স্থানে প্রবেশ করাব। (সূরা নিসা- ৩১)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ সংকীর্ণমনা নন। ছোটখাটো ভুল-ভ্রান্তি ধরে তিনি তাঁর বান্দাদেরকে শাস্তি দেন না। আমাদের আমলনামায় যদি বড় বড় অপরাধ না থাকে তাহলে ছোটখাটো অপরাধগুলোকে তিনি উপেক্ষা করেন। তবে যদি আমরা বড় বড় অপরাধ করে থাকি, তাহলে তিনি আমাদের ছোটখাটো অপরাধগুলোও হিসাবের মধ্যে গণ্য করবেন এবং সেজন্য পাকড়াও করবেন।
আল্লাহ বান্দাদেরকে অযথা শাস্তি দিতে চান না :
مَا يَفْعَلُ اللهُ بِعَذَابِكُمْ اِنْ شَكَرْتُمْ وَاٰمَنْتُمْؕ وَكَانَ اللهُ شَاكِرًا عَلِيْمًا
তোমরা যদি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর ও ঈমান আনয়ন কর, তবে তোমাদেরকে শাস্তি দিয়ে আল্লাহর কী লাভ? আর আল্লাহ তো পুরস্কারদাতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা নিসা- ১৪৭)
আল্লাহ বান্দাদেরকে সংশোধনের সুযোগ দেন :
قَالَتْ رُسُلُهُمْ اَفِى اللهِ شَكٌّ فَاطِرِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِؕ يَدْعُوْكُمْ لِيَغْفِرَ لَكُمْ مِّنْ ذُنُوْبِكُمْ وَيُؤَخِّرَكُمْ اِلٰۤى اَجَلٍ مُّسَمًّى
তাদের রাসূলগণ বলেছিলেন, আল্লাহ সম্বন্ধে কি কোন সন্দেহ আছে, যিনি আসমান ও জমিনের সৃষ্টিকর্তা? তিনি তোমাদেরকে আহবান করেন তোমাদের পাপ মার্জনা করার জন্য এবং নির্দিষ্টকাল পর্যমত্ম তোমাদেরকে অবকাশ দেয়ার জন্য। (সূরা ইবরাহীম- ১০)
আল্লাহ বান্দাদের পরকালীন মঙ্গল চান :
تُرِيْدُوْنَ عَرَضَ الدُّنْيَا ۚ وَاللهُ يُرِيْدُ الْاٰخِرَةَؕ وَاللهُ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
তোমরা পার্থিব সম্পদ কামনা কর এবং আল্লাহ চান আখিরাতের কল্যাণ; আর আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা আনফাল- ৬৭)
আল্লাহ তাওবা কবুল করেন :
اَلَمْ يَعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ هُوَ يَقْبَلُ التَّوْبَةَ عَنْ عِبَادِهٖ وَيَاْخُذُ الصَّدَقَاتِ وَاَنَّ اللهَ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ
তারা কি জানে না যে, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের তাওবা কবুল করেন এবং ‘সাদাকা’ গ্রহণ করেন; নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা তাওবা- ১০৪)
وَهُوَ الَّذِيْ يَقْبَلُ التَّوْبَةَ عَنْ عِبَادِهٖ وَيَعْفُوْا عَنِ السَّيِّئَاتِ وَيَعْلَمُ مَا تَفْعَلُوْنَ
তিনিই তাঁর বান্দাদের তাওবা কবুল করেন এবং পাপসমূহ মোচন করেন; আর তোমরা যা কর তিনি তা জানেন। (সূরা শূরা- ২৫)
ব্যাখ্যা : কোন কোন ক্ষেত্রে উন্নত পর্যায়ের ঈমানদাররাও ভুল করতে পারে এবং তাদেরও ভুল হয়েছে। যতদিন মানুষ দুনিয়ায় মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকবে, ততদিন তার আমলনামায় শুধুমাত্র উৎকৃষ্ট মানের কার্যাবলি থাকবে এবং দোষ-ত্রুটি ও ভুল-ভ্রান্তি থাকবে না- এমনটি হতে পারে না। কিন্তু মহান আল্লাহর একটি বড় রহমত হচ্ছে, যতদিন মানুষ দাসত্বের অনিবার্য শর্তসমূহ পূর্ণ করবে, ততদিন আল্লাহ তার ভুল-ত্রুটি উপেক্ষা করতে থাকেন এবং তার কার্যাবলি যে ধরনের প্রতিদান লাভের যোগ্যতাসম্পন্ন হয়, নিজ অনুগ্রহে তার চেয়ে বেশি প্রতিদান দান করেন। অন্যথায় যদি প্রত্যেকটি ভুলের শাস্তি ও প্রত্যেকটি ভালো কাজের পুরস্কার আলাদাভাবে দেয়ার নিয়ম করা হতো, তাহলে কোন উন্নত পর্যায়ের সৎলোকও শাস্তি থেকে রেহাই পেত না। ক্ষমার দরজা আল্লাহ তা‘আলা সবসময় খোলা রাখেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমি নবী ﷺ কে বলতে শুনেছি, আল্লাহর এক বান্দা গোনাহ করল। তারপর দু‘আ করল, হে রব! আমি গোনাহ করে ফেলেছি। অতঃপর বলল, আমার গোনাহ মাফ করে দাও। তখন তার প্রতিপালক বলেন, আমার বান্দা কি জানে যে তার এমন একজন প্রতিপালক আছেন, যিনি গোনাহ মাফ করে থাকেন আর উক্ত গোনাহের কারণে পাকড়াও ও করে থাকেন। আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম। এরপর যতদিন আল্লাহর ইচ্ছা ততদিন সে এ অবস্থায় থাকল এবং আবার গোনাহ করল, এবারও সে বলল, হে প্রতিপালক! আমি গোনাহ করে ফেলেছি, আমার এ গোনাহ তুমি মাফ করে দাও। তখন আল্লাহ বললেন, আমার বান্দা কি জানে যে, তার এমন একজন রব আছেন, যিনি গোনাহ মাফ করেন আবার গোনাহের কারণে শাস্তিও দেন। আমি আমার বান্দাকে মাফ করে দিলাম। এরপর সে আল্লাহর ইচ্ছামত কিছুদিন এ অবস্থায় থাকল এবং পুনরায় গোনাহে লিপ্ত হলো। এবার সে বলল, হে রব! আমি আরেকটি গোনাহ করে ফেলেছি আমার এ গোনাহ মাফ করে দাও। তখন আল্লাহ বললেন, আমার বান্দা কি জানে যে, তার এমন একজন রব আছেন, যিনি গোনাহ মাফ করেন আবার গোনাহের কারণে শাস্তিও দেন। আচ্ছা আমি আমার বান্দাকে মাফ করে দিলাম। তিনবার এভাবে বললেন। (সহীহ বুখারী, হা/৭৫০৭)
غَافِرِ الذَّۢ نْبِ وَقَابِلِ التَّوْبِ شَدِيْدِ الْعِقَابِ ذِى الطَّوْلِ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ اِلَيْهِ الْمَصِيْرُ
যিনি পাপ ক্ষমাকারী, তাওবা কবুলকারী, যিনি শাস্তিদানে কঠোর ও শক্তিশালী। তিনি ব্যতীত (সত্য) কোন মা‘বূদ নেই। তাঁর নিকটই প্রত্যাবর্তন। (সূরা মু’মিন- ৩)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ গোনাহ মাফকারী ও তাওবা কবুলকারী। এটা তাঁর আশা ও উৎসাহ দানকারী গুণ। এ গুণটি বর্ণনা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, যারা এখন পর্যন্ত বিদ্রোহ করে চলেছে, তারা যেন নিরাশ না হয়ে নিজেদের আচরণ পুনর্বিবেচনা করে। এখনো যদি তারা এ আচরণ থেকে বিরত হয়, তাহলে তারা আল্লাহর রহমত লাভ করতে পারবে। তিনি কঠিন শাস্তিদাতা। এ গুণটি উল্লেখ করে মানুষকে এ মর্মে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, ইবাদাত ও দাসত্বের পথ অনুসরণকারীদের জন্য আল্লাহ তা‘আলা যতটা দয়াবান, বিদ্রোহ ও অবাধ্য আচরণকারীদের জন্য তিনি ঠিক ততটাই কঠোর। যে সীমা পর্যন্ত তিনি ভুল-ত্রুটি ক্ষমা ও উপেক্ষা করেন, যখন কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠি সে সীমা লঙ্ঘন করে তখন তারা তাঁর শাস্তির যোগ্য হয়ে যায়। আর তাঁর শাস্তি এমন ভয়াবহ যে, তা সহ্য করার ক্ষমতা কারো নেই। তিনি অত্যন্ত দয়ালু অর্থাৎ দানশীল, অভাবশূন্য এবং উদার। সমস্ত সৃষ্টিকূলের উপর প্রতি মুহূর্তে তাঁর নিয়ামত ও অনুগ্রহরাজি ব্যাপকভাবে বর্ষিত হচ্ছে। বান্দা যা কিছু লাভ করছে তা তাঁর দয়া ও অনুগ্রহেই লাভ করছে।
আল্লাহ বান্দার দু‘আ শুনেন এবং কবুল করেন :
اِنَّ رَبِّيْ لَسَمِيْعُ الدُّعَآءِ
আমার প্রতিপালক অবশ্যই প্রার্থনা শুনে থাকেন। (সূরা ইবরাহীম- ৩৯
আল্লাহ মুমিনদেরকে সাহায্য করেন :
وَكَانَ حَقًّا عَلَيْنَا نَصْرُ الْمُؤْمِنِيْنَ
আর মুমিনদের সাহায্য করা তো আমারই কর্তব্য। (সূরা রূম- ৪৭)
اَلَاۤ اِنَّ نَصْرَ اللهِ قَرِيْبٌ
শুনে নাও, নিশ্চয় আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটবর্তী। (সূরা বাক্বারা- ২১৪)
সাহায্যের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট :
وَكَفٰى بِاللهِ وَلِيًّا وَّكَفٰى بِاللهِ نَصِيْرًا
অভিভাবক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট এবং সাহায্যকারী হিসেবেও আল্লাহ যথেষ্ট। (সূরা নিসা- ৪৫)
তিনি যাকে ইচ্ছা সাহায্য করেন :
وَاللهُ يُؤَيِّدُ بِنَصْرِهٖ مَنْ يَّشَآءُؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَعِبْرَةً لِّاُولِى الْاَبْصَارِ
আল্লাহ যাকে চান তাকে নিজ সাহায্যের দ্বারা সাহায্য করেন। নিশ্চয় এর মধ্যে জ্ঞানীদের জন্য রয়েছে শিক্ষা। (সূরা আলে ইমরান- ১৩)
আল্লাহ সৎপথ দেখান :
لَيْسَ عَلَيْكَ هُدَاهُمْ وَلٰكِنَّ اللهَ يَهْدِيْ مَنْ يَّشَآءُ
তাদের হেদায়াতের দায়িত্ব তোমার উপর নয়। বরং আল্লাহ যাকে চান তাকেই হেদায়াত দান করেন। (সূরা বাক্বারা- ২৭২)
وَاللهُ يَهْدِيْ مَنْ يَّشَآءُ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
আল্লাহ যাকে চান তাকে সরল পথে পরিচালিত করেন। (সূরা নূর- ৪৬)
وَاَنَّ اللهَ يَهْدِيْ مَنْ يُّرِيْدُ
আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে পথপ্রদর্শন করেন। (সূরা হজ্জ- ১৬)
وَاِنَّ اللهَ لَهَادِ الَّذِيْنَ اٰمَنُواۤ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
যারা ঈমান এনেছে অবশ্যই আল্লাহ তাদেরকে সরল পথে পরিচালিত করেন। (সূরা হজ্জ- ৫৪)
আল্লাহকে আঁকড়ে ধরলেই হেদায়াত আসে :
وَمَنْ يَّعْتَصِمْ بِاللهِ فَقَدْ هُدِيَ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
আর যে ব্যক্তি শক্তভাবে আল্লাহকে ধারণ করবে, সে সৎপথে পরিচালিত হবে। (সূরা আলে ইমরান- ১০১)
আল্লাহর হেদায়াতই আসল হেদায়াত :
قُلْ اِنَّ الْهُدٰى هُدَى اللهِ
বলো, আল্লাহর হেদায়াতই হচ্ছে প্রকৃত হেদায়াত। (সূরা আলে ইমরান- ৭৩)
ব্যাখ্যা : মানুষের এক ধরনের প্রয়োজন হচ্ছে যে, তার একজন প্রতিপালক, আশ্রয়দাতা, প্রার্থনা শ্রবণকারী ও অভাব পূরণকারী থাকবে। বস্তুত আল্লাহই এসব গুণের অধিকারী। আরো এক ধরনের প্রয়োজন হচ্ছে যে, তার এমন একজন পথপ্রদর্শক থাকতে হবে, যিনি তাকে দুনিয়ায় বসবাস করার সঠিক নীতি নির্ধারণ করে দেবেন এবং পরিপূর্ণ আস্থার সাথে যার দেয়া জীবনবিধানের আনুগত্য করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রেও একমাত্র আল্লাহই হলেন পথপ্রদর্শক। দুনিয়ায় মানুষের প্রয়োজন খাদ্য, পানীয়, পোশাক ও জীবন-যাপনের জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি লাভ করা এবং বিপদাপদ ও ক্ষতি থেকে নিরাপদ থাকা। জীবন-যাপনের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে জানাও মানুষের একটি বড় প্রয়োজনীয় বিষয়। সাথে সাথে তাকে আরো জানতে হবে যে, নিজের ব্যক্তিসত্তার সাথে, নিজের শক্তি, সামর্থ্য, যোগ্যতা ও কর্মক্ষমতার সাথে, পৃথিবীতে যে উপায়-উপকরণ আছে তার সাথে, যে অসংখ্য মানুষের সাথে বিভিন্নভাবে তাকে জড়িত হতে হয় তাদের সাথে এবং সামগ্রিকভাবে যে বিশ্বব্যবস্থার অধীনে তাকে কাজ করতে হয় তার সাথে কী ব্যবহার করতে হবে। এটাও জানা এজন্য প্রয়োজন যে, তার জীবন যেন সামগ্রিকভাবে সফলকাম হয় এবং তার প্রচেষ্টা ও পরিশ্রম ভুল পথে নিয়োজিত হয়ে ধ্বংস হয়ে না যায়। যে পথনির্দেশনা মানুষকে এ পদ্ধতির দিকে নিয়ে যায় সেটিই ‘হকের হেদায়াত’ বা সত্যের পথনির্দেশনা। সত্যের পথনির্দেশনা লাভ করতে মানুষ আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদের কাছে যায় তারা মানুষের জীবন-যাপনের সঠিক মূলনীতি রচনা করার পুরোপুরি জ্ঞান রাখে না। মানুষের জীবনের সাথে সম্পর্কিত সমস্যাগুলো যে বিস্তীর্ণ পরিসরে ছড়িয়ে আছে তার সবকিছুর উপর একমাত্র আল্লাহর দৃষ্টিই পড়ে থাকে। অন্য কেউ সত্য পথনির্দেশনার উৎস হতে পারে না।
আল্লাহ তাঁর সৃষ্টিকে ভালোবাসেন :
وَهُوَ الْغَفُوْرُ الْوَدُوْدُ
আর তিনি ক্ষমাশীল ও প্রেমময়। (সূরা বুরুজ- ১৪)
اِنَّ رَبِّيْ رَحِيْمٌ وَّدُوْدٌ
নিশ্চয় আমার প্রতিপালক পরম দয়ালু ও প্রেমময়। (সূরা হুদ- ৯০)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ বান্দাকে কতই না ভালোবাসেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ফেরেশতাদেরকে বলেন, আমার বান্দা কোন গোনাহের কাজ করার ইচ্ছা করলে তা না করা পর্যন্ত তার জন্য কোন গোনাহ লিপিবদ্ধ করো না। তবে সে যদি উক্ত গোনাহের কাজটি করে ফেলে, তাহলে কাজটির অনুপাতে তার গোনাহ লিখ। আর যদি আমার কারণে তা পরিত্যাগ করে, তাহলে তার জন্য একটি নেকী লিপিবদ্ধ করো। আর সে যদি কোন নেকীর কাজ করতে ইচ্ছা করে কিন্তু এখনো তা করেনি, তাহলেও তার জন্য একটি নেকী লিপিবদ্ধ করো। আর যদি তা করে তাহলে কাজটির অনুপাতে তার জন্য দশগুণ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত নেকী (সওয়াব) লিপিবদ্ধ করো। (সহীহ বুখারী, হা/৭৫০১)
رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوْبَنَا بَعْدَ اِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِنْ لَّدُنْكَ رَحْمَةًۚ اِنَّكَ اَنْتَ الْوَهَّابُ
হে আমাদের রব! হেদায়াত দানের পর আমাদের অন্তরকে বক্র করে দেবেন না। আর আপনার পক্ষ থেকে আমাদেরকে রহমত দান করুন; নিশ্চয় আপনি মহান দাতা। (সূরা আলে ইমরান- ৮)
তিনি অসীম অনুগ্রহের মালিক :
وَاللهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيْمِ
আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল। (সূরা আলে ইমরান- ৭৪)
وَرَبُّكَ الْغَفُوْرُ ذُو الرَّحْمَةِ
আর তোমার প্রতিপালক পরম ক্ষমাশীল ও দয়াবান। (সূরা কাহফ- ৫৮)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর রহমতের শেষ নেই। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল ﷺ এর নিকট থেকে শুনেছি যে, আল্লাহ যেদিন রহমত সৃষ্টি করেছেন সেদিন রহমতকে একশত ভাগে ভাগ করে একভাগ সমস্ত সৃষ্টিকে দিয়েছেন, আর বাকী নিরানববই ভাগ নিজের কাছে রেখেছেন। যদি কোন কাফির আল্লাহর নিকট যে রহমত আছে তার পরিমাণ সম্পর্কে জানত, তাহলে সে জান্নাতের ব্যাপারে নিরাশ হতো না। (অপরপক্ষে) কোন মুমিন যদি আল্লাহর কাছে যে শাস্তি রয়েছে তার পরিমাণ সম্পর্কে জানত, তবে (জাহান্নামের) আগুন থেকে নিজেকে নিরাপদ মনে করত না। (সহীহ বুখারী, হা/৬৪৬৯)
সকল অনুগ্রহই আল্লাহর হাতে :
قُلْ اِنَّ الْفَضْلَ بِيَدِ اللهِۚ يُؤْتِيْهِ مَنْ يَّشَآءُؕ وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ
বলো, সকল অনুগ্রহ আল্লাহর হাতে; তিনি যাকে চান তাকে অনুগ্রহ করেন। আর আল্লাহ প্রশস্ত ও মহাজ্ঞানী। (সূরা আলে ইমরান- ৭৩)
মুমিনদের ব্যাপারে আল্লাহ খুবই অনুগ্রহশীল:
وَاللهُ ذُوْ فَضْلٍ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ
নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্বাসীদের প্রতি অনুগ্রহশীল। (সূরা আলে ইমরান- ১৫২)
আল্লাহ মুমিনদের অভিভাবক :
وَاللهُ وَلِيُّ الْمُؤْمِنِيْنَ
আর আল্লাহ মুমিনদের অভিভাবক। (সূরা আলে ইমরান- ৬৮)
আল্লাহ মুত্তাক্বীদের অভিভাবক :
وَاللهُ وَلِيُّ الْمُتَّقِيْنَ
আর আল্লাহ মুত্তাক্বীদের অভিভাবক । (সূরা জাসিয়া- ১৯)
আল্লাহর রহমত সবকিছুর উপর বিস্তৃত :
وَرَحْمَتِيْ وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍؕ فَسَاَكْتُبُهَا لِلَّذِيْنَ يَتَّقُوْنَ وَيُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَالَّذِيْنَ هُمْ بِاٰيَاتِنَا يُؤْمِنُوْنَ
আমার অনুগ্রহ প্রত্যেক বস্তুর উপর বিস্তৃত। সুতরাং আমি সেটা তাদের জন্য নির্ধারণ করব যারা তাক্বওয়া অবলম্বন করে, যাকাত দেয় এবং আমার নিদর্শনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে। (সূরা আ‘রাফ- ১৫৬)
আল্লাহ অনুগ্রহ করাকে নিজ কর্তব্য করে নিয়েছেন :
قُلْ لِّمَنْ مَّا فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِؕ قُلْ لِّلّٰهِؕ كَتَبَ عَلٰى نَفْسِهِ الرَّحْمَةَ
বলো, আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে তা কার? বলো, ‘আল্লাহরই’। (জেনে রেখো) দয়া করা তিনি তাঁর কর্তব্য হিসেবে স্থির করে নিয়েছেন। (সূরা আন‘আম- ১২)
তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে নিজ অনুগ্রহে আপন করে নেন :
يَخْتَصُّ بِرَحْمَتِهٖ مَنْ يَّشَآءُؕ وَاللهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيْمِ
তিনি যাকে ইচ্ছা নিজ অনুগ্রহে বিশেষিত করেন; আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল। (সূরা আলে ইমরান- ৭৪)
আল্লাহর রহমত সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী থাকে :
اِنَّ رَحْمَةَ اللهِ قَرِيْبٌ مِّنَ الْمُحْسِنِيْنَ
নিশ্চয় আল্লাহর অনুগ্রহ সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী। (সূরা আ‘রাফ- ৫৬)
ব্যাখ্যা : আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা যখন সকল মাখলুককে সৃষ্টি করেন, তখন তাঁর কাছে আরশে রক্ষিত কিতাবে লিখলেন, ‘‘আমার রহমত আমার গযবের উপর সর্বদা বিজয়ী।’’ (সহীহ বুখারী, হা/৭৪০৪)
আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি মেহেরবান :
وَاللهُ رَءُوْفٌ ۢبِالْعِبَادِ
আর আল্লাহ বান্দাদের প্রতি খুবই স্নেহপরায়ণ। (সূরা বাক্বারা- ২০৭)
اِنَّ اللهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيْمًا
নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। (সূরা নিসা- ২৯)
আল্লাহ বান্দাদের প্রতি অনুগ্রহ বর্ষণ করেন :
هُوَ الَّذِيْ يُصَلِّيْ عَلَيْكُمْ وَمَلَآئِكَتُهٗ لِيُخْرِجَكُمْ مِّنَ الظُّلُمَاتِ اِلَى النُّوْرِؕ وَكَانَ بِالْمُؤْمِنِيْنَ رَحِيْمًا
তিনিই তোমাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন এবং তাঁর ফেরেশতারাও তোমাদের জন্য রহমত প্রার্থনা করে। যেন আল্লাহ তোমাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে বের করে আনেন। আর তিনি মুমিনদের প্রতি অত্যন্ত অনুগ্রহশীল। (সূরা আহযাব- ৪৩)
আল্লাহ পৃথিবীকে মানুষের জন্য বসবাসের উপযোগী করে দিয়েছেন :
اَللهُ الَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ الْاَ رْضَ قَرَارًا وَّالسَّمَآءَ بِنَآءً وَّصَوَّرَكُمْ فَاَحْسَنَ صُوَرَكُمْ وَرَزَقَكُمْ مِّنَ الطَّيِّبَاتِؕ ذٰلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمْۚ فَتَبَارَكَ اللهُ رَبُّ الْعَالَمِيْنَ
আল্লাহই তোমাদের জন্য পৃথিবীকে করেছেন বসবাসের উপযোগী, আকাশকে করেছেন ছাদ, তোমাদের আকৃতিকে করেছেন উৎকৃষ্ট এবং তোমাদেরকে দান করেছেন পবিত্র রিযিক। তিনিই আল্লাহ, তোমাদের প্রতিপালক। আল্লাহ কতই না মহান, যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক। (সূরা মু’মিন- ৬৪)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে সৃষ্টি করার পূর্বেই একটি সুরক্ষিত ও নিরাপদ আবাসস্থল প্রস্তুত করেছেন। তারপর তাদেরকে এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন যে, একটি সর্বোত্তম দেহ কাঠামো, উপযুক্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এবং উন্নত দেহ ও চিন্তাশক্তি দিয়েছেন। এ দেহ কাঠামো, হাত, পা, চোখ, নাক, কান, বাকশক্তিসম্পন্ন এ জিহবা এবং সর্বোত্তম যোগ্যতার ভান্ডার এ মস্তিষ্ক কেউ নিজে তৈরি করেনি, কারো বাবা-মাও তৈরি করেনি, কোন দেবতার মধ্যেও তা তৈরি করার ক্ষমতা নেই। এসব যোগ্যতা ও ক্ষমতার সৃষ্টিকারী হলেন সে মহাজ্ঞানী, দয়ালু ও সর্বশক্তিমান সত্তা, যিনি মানুষকে সৃষ্টি করার সময় পৃথিবীতে কাজ করার জন্য তাকে এ নজীরবিহীন দেহ দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর জন্মলাভ করার সাথে সাথে তাঁর দয়ায় তোমরা প্রচুর পবিত্র খাদ্য পেয়েছ এবং পানাহারের এমনসব পবিত্র উপকরণ লাভ করেছ- যা নোংরা বা বিস্বাদ নয় বরং সুস্বাদু, আবার পঁচা-গলা ও দুর্গন্ধময়ও নয় বরং সুবাসিত। পানি, খাদ্য, শস্য, তরকারী, ফলমূল, দুধ, মধু, গোশত, লবণ, মরিচ ও মসলা মানুষের পুষ্টি সাধন এবং জীবনের পরিপূর্ণ আস্বাদন লাভের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। ভূমি থেকে এ অগণিত খাদ্যভান্ডার উৎপাদনের এ ব্যবস্থা কে করেছে যে তার যোগান বন্ধ হয় না? চিন্তা করে দেখো, রিযিকের এ ব্যবস্থা না করেই যদি তোমাদেরকে সৃষ্টি করা হতো তাহলে তোমাদের জীবনের পরিস্থিতি কী দাঁড়াত? সুতরাং এটা কি এ বিষয়ের সুস্পষ্ট প্রমাণ নয় যে, তোমাদের স্রষ্টা শুধু স্রষ্টাই নন, বরং মহাজ্ঞানী স্রষ্টা এবং অত্যন্ত দয়ালু প্রভু।
আল্লাহ বিশ্রামের জন্য রাতকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করেছেন :
اَللهُ الَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ اللَّيْلَ لِتَسْكُنُوْا فِيْهِ وَالنَّهَارَ مُبْصِرًاؕ اِنَّ اللهَ لَذُوْ فَضْلٍ عَلَى النَّاسِ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَشْكُرُوْنَ
আল্লাহই তোমাদের বিশ্রামের জন্য সৃষ্টি করেছেন রাত্রি এবং আলোকিত করেছেন দিবসকে। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি অনুগ্রহশীল; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। (সূরা মু’মিন- ৬১)
আল্লাহ বৃষ্টি দিয়ে বান্দার প্রতি রহমত বর্ষণ করেন :
وَهُوَ الَّذِيْ يُنَزِّلُ الْغَيْثَ مِنْ ۢبَعْدِ مَا قَنَطُوْا وَيَنْشُرُ رَحْمَتَهٗؕ وَهُوَ الْوَلِيُّ الْحَمِيْدُ
তারা যখন নিরাশ হয়ে পড়ে তখনই তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তাঁর করুণা বিস্তার করেন। আর তিনিই তো প্রশংসিত অভিভাবক। (সূরা শূরা- ২৮)
আল্লাহ আসমানকে স্থির রেখেছেন :
وَيُمْسِكُ السَّمَآءَ اَنْ تَقَعَ عَلَى الْاَ رْضِ اِلَّا بِاِذْنِهٖؕ اِنَّ اللهَ بِالنَّاسِ لَرَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ
আর তিনিই আকাশকে স্থির রাখেন, যাতে সেটা তাঁর অনুমতি ব্যতীত পৃথিবীর উপর পতিত না হয়। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। (সূরা হজ্জ- ৬৫)
আল্লাহ তাঁর বিধানকে সহজ করেছেন :
مَا يُرِيْدُ اللهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُمْ مِّنْ حَرَجٍ وَّلٰكِنْ يُّرِيْدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهٗ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
আল্লাহ তোমাদেরকে কষ্ট দিতে চান না; বরং তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান ও তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ পূর্ণ করতে চান; যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর। (সূরা মায়েদা- ৬)
আল্লাহ মানুষকে ক্ষমা করতে চান :
يُرِيْدُ اللهُ لِيُبَيِّنَ لَكُمْ وَيَهْدِيَكُمْ سُنَنَ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَيَتُوْبَ عَلَيْكُمْؕ وَاللهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ
আল্লাহ ইচ্ছা করেন তোমাদের নিকট বিশদভাবে বর্ণনা করতে আর তোমাদের পূর্ববর্তীদের রীতিনীতি তোমাদেরকে অবহিত করতে এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করতে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা- ২৬)
আল্লাহ উত্তম উপদেশ প্রদানকারী :
اِنَّ اللهَ نِعِمَّا يَعِظُكُمْ بِهٖؕ اِنَّ اللهَ كَانَ سَمِيْعًا ۢبَصِيْراً
আল্লাহ তোমাদেরকে যে উপদেশ দেন তা কতই না উৎকৃষ্ট! নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। (সূরা নিসা- ৫৮)
আল্লাহ বান্দাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে ডাকেন :
هُوَ الَّذِيْ يُنَزِّلُ عَلٰى عَبْدِهٖۤ اٰيَاتٍ ۢبَيِّنَاتٍ لِّيُخْرِجَكُمْ مِّنَ الظُّلُمَاتِ اِلَى النُّوْرِؕ وَاِنَّ اللهَ بِكُمْ لَرَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ
তিনিই তাঁর বানদাদের প্রতি সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ অবতীর্ণ করেন, যাতে করে তিনি তোমাদেরকে সকল প্রকার অন্ধকার হতে আলোর দিকে বের করে নিয়ে আসতে পারেন; নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি করুণাময় ও পরম দয়ালু। (সূরা হাদীদ- ৯)
আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে জান্নাতের দিকে আহবান করেন :
وَاللهُ يَدْعُوْاۤ اِلٰى دَارِ السَّلَامِ ؕ وَيَهْدِيْ مَنْ يَّشَآءُ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
আল্লাহ শান্তির আবাসের দিকে আহবান করেন এবং যাকে ইচ্ছা সরল পথে পরিচালিত করেন। (সূরা ইউনুস- ২৫)
আল্লাহ মুমিনের আমল নষ্ট করেন না :
اِنَّهٗ مَنْ يَّتَّقِ وَيَصْبِرْ فَاِنَّ اللهَ لَا يُضِيْعُ اَجْرَ الْمُحْسِنِيْنَ
নিশ্চয় যে ব্যক্তি মুত্তাক্বী এবং ধৈর্যশীল, আর আল্লাহ সেরূপ সৎকর্মশীলদের শ্রমফল নষ্ট করেন না। (সূরা ইউসুফ- ৯০)
وَاَنَّ اللهَ لَا يُضِيْعُ اَجْرَ الْمُؤْمِنِيْنَ
নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের প্রতিদান বিনষ্ট করেন না। (সূরা আলে ইমরান- ১৭১)
আল্লাহ আমলের চেয়েও বেশি সওয়াব দেন :
مَنْ جَآءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهٗ عَشْرُ اَمْثَالِهَاۚ وَمَنْ جَآءَ بِالسَّيِّئَةِ فَلَا يُجْزٰۤى اِلَّا مِثْلَهَا وَهُمْ لَا يُظْلَمُوْنَ
কেউ কোন সৎকাজ করলে সে তার দশ গুণ পাবে এবং কেউ কোন অসৎকাজ করলে তাকে শুধু তারই প্রতিফল দেয়া হবে; আর তাদের প্রতি কোন যুলুম করা হবে না। (সূরা আন‘আম- ১৬০)
ব্যাখ্যা : বান্দা আল্লাহ সম্পর্কে যেরকম ধারণা করবে তাঁকে সেরকমই পাবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘আমার বান্দা আমার সম্পর্কে যেরকম ধারণা পোষণ করে, আমি তার জন্য সেরকমই। যখন সে আমাকে স্মরণ করে আমিও তাকে স্মরণ করি। যদি সে মনে মনে আমাকে স্মরণ করে আমিও মনে মনে তাকে স্মরণ করি। যদি সে লোকজনের মধ্যে আমাকে স্মরণ করে, তবে আমিও এমন জামা‘আতে তাকে স্মরণ করে থাকি, যা তার জামা‘আত থেকে উত্তম। আর যে আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয় আমি তার দিকে এক গজ অগ্রসর হই। আর যে আমার দিকে এক গজ অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে দু’গজ অগ্রসর হই। আর যে আমার দিকে হেঁটে অগ্রসর হয় আমি তার দিকে দৌড়ে অগ্রসর হই। (সহীহ বুখারী, হা/৭৪০৫)
আল্লাহ বান্দাদের পাপ ক্ষমা করেন :
وَاِنَّ رَبَّكَ لَذُوْ مَغْفِرَةٍ لِّلنَّاسِ عَلٰى ظُلْمِهِمْۚ وَاِنَّ رَبَّكَ لَشَدِيْدُ الْعِقَابِ
মানুষের সীমালঙ্ঘন সত্ত্বেও তোমার প্রতিপালক মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল এবং তোমার প্রতিপালক শাসিত্ম দানে খুবই কঠোর। (সূরা রা‘দ- ৬)
اِنْ تَجْتَنِبُوْا كَبَآئِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَنُدْخِلْكُمْ مُّدْخَلًا كَرِيْمًا
তোমাদেরকে যা নিষেধ করা হয়েছে তার মধ্যে যা গুরুতর তা হতে বিরত থাকলে তোমাদের ছোট গোনাহসমূহ ক্ষমা করব এবং তোমাদেরকে সম্মানজনক স্থানে প্রবেশ করাব। (সূরা নিসা- ৩১)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ সংকীর্ণমনা নন। ছোটখাটো ভুল-ভ্রান্তি ধরে তিনি তাঁর বান্দাদেরকে শাস্তি দেন না। আমাদের আমলনামায় যদি বড় বড় অপরাধ না থাকে তাহলে ছোটখাটো অপরাধগুলোকে তিনি উপেক্ষা করেন। তবে যদি আমরা বড় বড় অপরাধ করে থাকি, তাহলে তিনি আমাদের ছোটখাটো অপরাধগুলোও হিসাবের মধ্যে গণ্য করবেন এবং সেজন্য পাকড়াও করবেন।
আল্লাহ বান্দাদেরকে অযথা শাস্তি দিতে চান না :
مَا يَفْعَلُ اللهُ بِعَذَابِكُمْ اِنْ شَكَرْتُمْ وَاٰمَنْتُمْؕ وَكَانَ اللهُ شَاكِرًا عَلِيْمًا
তোমরা যদি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর ও ঈমান আনয়ন কর, তবে তোমাদেরকে শাস্তি দিয়ে আল্লাহর কী লাভ? আর আল্লাহ তো পুরস্কারদাতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা নিসা- ১৪৭)
আল্লাহ বান্দাদেরকে সংশোধনের সুযোগ দেন :
قَالَتْ رُسُلُهُمْ اَفِى اللهِ شَكٌّ فَاطِرِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِؕ يَدْعُوْكُمْ لِيَغْفِرَ لَكُمْ مِّنْ ذُنُوْبِكُمْ وَيُؤَخِّرَكُمْ اِلٰۤى اَجَلٍ مُّسَمًّى
তাদের রাসূলগণ বলেছিলেন, আল্লাহ সম্বন্ধে কি কোন সন্দেহ আছে, যিনি আসমান ও জমিনের সৃষ্টিকর্তা? তিনি তোমাদেরকে আহবান করেন তোমাদের পাপ মার্জনা করার জন্য এবং নির্দিষ্টকাল পর্যমত্ম তোমাদেরকে অবকাশ দেয়ার জন্য। (সূরা ইবরাহীম- ১০)
আল্লাহ বান্দাদের পরকালীন মঙ্গল চান :
تُرِيْدُوْنَ عَرَضَ الدُّنْيَا ۚ وَاللهُ يُرِيْدُ الْاٰخِرَةَؕ وَاللهُ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
তোমরা পার্থিব সম্পদ কামনা কর এবং আল্লাহ চান আখিরাতের কল্যাণ; আর আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা আনফাল- ৬৭)
আল্লাহ তাওবা কবুল করেন :
اَلَمْ يَعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ هُوَ يَقْبَلُ التَّوْبَةَ عَنْ عِبَادِهٖ وَيَاْخُذُ الصَّدَقَاتِ وَاَنَّ اللهَ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ
তারা কি জানে না যে, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের তাওবা কবুল করেন এবং ‘সাদাকা’ গ্রহণ করেন; নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা তাওবা- ১০৪)
وَهُوَ الَّذِيْ يَقْبَلُ التَّوْبَةَ عَنْ عِبَادِهٖ وَيَعْفُوْا عَنِ السَّيِّئَاتِ وَيَعْلَمُ مَا تَفْعَلُوْنَ
তিনিই তাঁর বান্দাদের তাওবা কবুল করেন এবং পাপসমূহ মোচন করেন; আর তোমরা যা কর তিনি তা জানেন। (সূরা শূরা- ২৫)
ব্যাখ্যা : কোন কোন ক্ষেত্রে উন্নত পর্যায়ের ঈমানদাররাও ভুল করতে পারে এবং তাদেরও ভুল হয়েছে। যতদিন মানুষ দুনিয়ায় মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকবে, ততদিন তার আমলনামায় শুধুমাত্র উৎকৃষ্ট মানের কার্যাবলি থাকবে এবং দোষ-ত্রুটি ও ভুল-ভ্রান্তি থাকবে না- এমনটি হতে পারে না। কিন্তু মহান আল্লাহর একটি বড় রহমত হচ্ছে, যতদিন মানুষ দাসত্বের অনিবার্য শর্তসমূহ পূর্ণ করবে, ততদিন আল্লাহ তার ভুল-ত্রুটি উপেক্ষা করতে থাকেন এবং তার কার্যাবলি যে ধরনের প্রতিদান লাভের যোগ্যতাসম্পন্ন হয়, নিজ অনুগ্রহে তার চেয়ে বেশি প্রতিদান দান করেন। অন্যথায় যদি প্রত্যেকটি ভুলের শাস্তি ও প্রত্যেকটি ভালো কাজের পুরস্কার আলাদাভাবে দেয়ার নিয়ম করা হতো, তাহলে কোন উন্নত পর্যায়ের সৎলোকও শাস্তি থেকে রেহাই পেত না। ক্ষমার দরজা আল্লাহ তা‘আলা সবসময় খোলা রাখেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমি নবী ﷺ কে বলতে শুনেছি, আল্লাহর এক বান্দা গোনাহ করল। তারপর দু‘আ করল, হে রব! আমি গোনাহ করে ফেলেছি। অতঃপর বলল, আমার গোনাহ মাফ করে দাও। তখন তার প্রতিপালক বলেন, আমার বান্দা কি জানে যে তার এমন একজন প্রতিপালক আছেন, যিনি গোনাহ মাফ করে থাকেন আর উক্ত গোনাহের কারণে পাকড়াও ও করে থাকেন। আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম। এরপর যতদিন আল্লাহর ইচ্ছা ততদিন সে এ অবস্থায় থাকল এবং আবার গোনাহ করল, এবারও সে বলল, হে প্রতিপালক! আমি গোনাহ করে ফেলেছি, আমার এ গোনাহ তুমি মাফ করে দাও। তখন আল্লাহ বললেন, আমার বান্দা কি জানে যে, তার এমন একজন রব আছেন, যিনি গোনাহ মাফ করেন আবার গোনাহের কারণে শাস্তিও দেন। আমি আমার বান্দাকে মাফ করে দিলাম। এরপর সে আল্লাহর ইচ্ছামত কিছুদিন এ অবস্থায় থাকল এবং পুনরায় গোনাহে লিপ্ত হলো। এবার সে বলল, হে রব! আমি আরেকটি গোনাহ করে ফেলেছি আমার এ গোনাহ মাফ করে দাও। তখন আল্লাহ বললেন, আমার বান্দা কি জানে যে, তার এমন একজন রব আছেন, যিনি গোনাহ মাফ করেন আবার গোনাহের কারণে শাস্তিও দেন। আচ্ছা আমি আমার বান্দাকে মাফ করে দিলাম। তিনবার এভাবে বললেন। (সহীহ বুখারী, হা/৭৫০৭)
غَافِرِ الذَّۢ نْبِ وَقَابِلِ التَّوْبِ شَدِيْدِ الْعِقَابِ ذِى الطَّوْلِ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ اِلَيْهِ الْمَصِيْرُ
যিনি পাপ ক্ষমাকারী, তাওবা কবুলকারী, যিনি শাস্তিদানে কঠোর ও শক্তিশালী। তিনি ব্যতীত (সত্য) কোন মা‘বূদ নেই। তাঁর নিকটই প্রত্যাবর্তন। (সূরা মু’মিন- ৩)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ গোনাহ মাফকারী ও তাওবা কবুলকারী। এটা তাঁর আশা ও উৎসাহ দানকারী গুণ। এ গুণটি বর্ণনা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, যারা এখন পর্যন্ত বিদ্রোহ করে চলেছে, তারা যেন নিরাশ না হয়ে নিজেদের আচরণ পুনর্বিবেচনা করে। এখনো যদি তারা এ আচরণ থেকে বিরত হয়, তাহলে তারা আল্লাহর রহমত লাভ করতে পারবে। তিনি কঠিন শাস্তিদাতা। এ গুণটি উল্লেখ করে মানুষকে এ মর্মে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, ইবাদাত ও দাসত্বের পথ অনুসরণকারীদের জন্য আল্লাহ তা‘আলা যতটা দয়াবান, বিদ্রোহ ও অবাধ্য আচরণকারীদের জন্য তিনি ঠিক ততটাই কঠোর। যে সীমা পর্যন্ত তিনি ভুল-ত্রুটি ক্ষমা ও উপেক্ষা করেন, যখন কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠি সে সীমা লঙ্ঘন করে তখন তারা তাঁর শাস্তির যোগ্য হয়ে যায়। আর তাঁর শাস্তি এমন ভয়াবহ যে, তা সহ্য করার ক্ষমতা কারো নেই। তিনি অত্যন্ত দয়ালু অর্থাৎ দানশীল, অভাবশূন্য এবং উদার। সমস্ত সৃষ্টিকূলের উপর প্রতি মুহূর্তে তাঁর নিয়ামত ও অনুগ্রহরাজি ব্যাপকভাবে বর্ষিত হচ্ছে। বান্দা যা কিছু লাভ করছে তা তাঁর দয়া ও অনুগ্রহেই লাভ করছে।
আল্লাহ বান্দার দু‘আ শুনেন এবং কবুল করেন :
اِنَّ رَبِّيْ لَسَمِيْعُ الدُّعَآءِ
আমার প্রতিপালক অবশ্যই প্রার্থনা শুনে থাকেন। (সূরা ইবরাহীম- ৩৯
আল্লাহ মুমিনদেরকে সাহায্য করেন :
وَكَانَ حَقًّا عَلَيْنَا نَصْرُ الْمُؤْمِنِيْنَ
আর মুমিনদের সাহায্য করা তো আমারই কর্তব্য। (সূরা রূম- ৪৭)
اَلَاۤ اِنَّ نَصْرَ اللهِ قَرِيْبٌ
শুনে নাও, নিশ্চয় আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটবর্তী। (সূরা বাক্বারা- ২১৪)
সাহায্যের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট :
وَكَفٰى بِاللهِ وَلِيًّا وَّكَفٰى بِاللهِ نَصِيْرًا
অভিভাবক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট এবং সাহায্যকারী হিসেবেও আল্লাহ যথেষ্ট। (সূরা নিসা- ৪৫)
তিনি যাকে ইচ্ছা সাহায্য করেন :
وَاللهُ يُؤَيِّدُ بِنَصْرِهٖ مَنْ يَّشَآءُؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَعِبْرَةً لِّاُولِى الْاَبْصَارِ
আল্লাহ যাকে চান তাকে নিজ সাহায্যের দ্বারা সাহায্য করেন। নিশ্চয় এর মধ্যে জ্ঞানীদের জন্য রয়েছে শিক্ষা। (সূরা আলে ইমরান- ১৩)
আল্লাহ সৎপথ দেখান :
لَيْسَ عَلَيْكَ هُدَاهُمْ وَلٰكِنَّ اللهَ يَهْدِيْ مَنْ يَّشَآءُ
তাদের হেদায়াতের দায়িত্ব তোমার উপর নয়। বরং আল্লাহ যাকে চান তাকেই হেদায়াত দান করেন। (সূরা বাক্বারা- ২৭২)
وَاللهُ يَهْدِيْ مَنْ يَّشَآءُ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
আল্লাহ যাকে চান তাকে সরল পথে পরিচালিত করেন। (সূরা নূর- ৪৬)
وَاَنَّ اللهَ يَهْدِيْ مَنْ يُّرِيْدُ
আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে পথপ্রদর্শন করেন। (সূরা হজ্জ- ১৬)
وَاِنَّ اللهَ لَهَادِ الَّذِيْنَ اٰمَنُواۤ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
যারা ঈমান এনেছে অবশ্যই আল্লাহ তাদেরকে সরল পথে পরিচালিত করেন। (সূরা হজ্জ- ৫৪)
আল্লাহকে আঁকড়ে ধরলেই হেদায়াত আসে :
وَمَنْ يَّعْتَصِمْ بِاللهِ فَقَدْ هُدِيَ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
আর যে ব্যক্তি শক্তভাবে আল্লাহকে ধারণ করবে, সে সৎপথে পরিচালিত হবে। (সূরা আলে ইমরান- ১০১)
আল্লাহর হেদায়াতই আসল হেদায়াত :
قُلْ اِنَّ الْهُدٰى هُدَى اللهِ
বলো, আল্লাহর হেদায়াতই হচ্ছে প্রকৃত হেদায়াত। (সূরা আলে ইমরান- ৭৩)
ব্যাখ্যা : মানুষের এক ধরনের প্রয়োজন হচ্ছে যে, তার একজন প্রতিপালক, আশ্রয়দাতা, প্রার্থনা শ্রবণকারী ও অভাব পূরণকারী থাকবে। বস্তুত আল্লাহই এসব গুণের অধিকারী। আরো এক ধরনের প্রয়োজন হচ্ছে যে, তার এমন একজন পথপ্রদর্শক থাকতে হবে, যিনি তাকে দুনিয়ায় বসবাস করার সঠিক নীতি নির্ধারণ করে দেবেন এবং পরিপূর্ণ আস্থার সাথে যার দেয়া জীবনবিধানের আনুগত্য করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রেও একমাত্র আল্লাহই হলেন পথপ্রদর্শক। দুনিয়ায় মানুষের প্রয়োজন খাদ্য, পানীয়, পোশাক ও জীবন-যাপনের জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি লাভ করা এবং বিপদাপদ ও ক্ষতি থেকে নিরাপদ থাকা। জীবন-যাপনের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে জানাও মানুষের একটি বড় প্রয়োজনীয় বিষয়। সাথে সাথে তাকে আরো জানতে হবে যে, নিজের ব্যক্তিসত্তার সাথে, নিজের শক্তি, সামর্থ্য, যোগ্যতা ও কর্মক্ষমতার সাথে, পৃথিবীতে যে উপায়-উপকরণ আছে তার সাথে, যে অসংখ্য মানুষের সাথে বিভিন্নভাবে তাকে জড়িত হতে হয় তাদের সাথে এবং সামগ্রিকভাবে যে বিশ্বব্যবস্থার অধীনে তাকে কাজ করতে হয় তার সাথে কী ব্যবহার করতে হবে। এটাও জানা এজন্য প্রয়োজন যে, তার জীবন যেন সামগ্রিকভাবে সফলকাম হয় এবং তার প্রচেষ্টা ও পরিশ্রম ভুল পথে নিয়োজিত হয়ে ধ্বংস হয়ে না যায়। যে পথনির্দেশনা মানুষকে এ পদ্ধতির দিকে নিয়ে যায় সেটিই ‘হকের হেদায়াত’ বা সত্যের পথনির্দেশনা। সত্যের পথনির্দেশনা লাভ করতে মানুষ আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদের কাছে যায় তারা মানুষের জীবন-যাপনের সঠিক মূলনীতি রচনা করার পুরোপুরি জ্ঞান রাখে না। মানুষের জীবনের সাথে সম্পর্কিত সমস্যাগুলো যে বিস্তীর্ণ পরিসরে ছড়িয়ে আছে তার সবকিছুর উপর একমাত্র আল্লাহর দৃষ্টিই পড়ে থাকে। অন্য কেউ সত্য পথনির্দেশনার উৎস হতে পারে না।
আল্লাহ তাঁর সৃষ্টিকে ভালোবাসেন :
وَهُوَ الْغَفُوْرُ الْوَدُوْدُ
আর তিনি ক্ষমাশীল ও প্রেমময়। (সূরা বুরুজ- ১৪)
اِنَّ رَبِّيْ رَحِيْمٌ وَّدُوْدٌ
নিশ্চয় আমার প্রতিপালক পরম দয়ালু ও প্রেমময়। (সূরা হুদ- ৯০)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ বান্দাকে কতই না ভালোবাসেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ফেরেশতাদেরকে বলেন, আমার বান্দা কোন গোনাহের কাজ করার ইচ্ছা করলে তা না করা পর্যন্ত তার জন্য কোন গোনাহ লিপিবদ্ধ করো না। তবে সে যদি উক্ত গোনাহের কাজটি করে ফেলে, তাহলে কাজটির অনুপাতে তার গোনাহ লিখ। আর যদি আমার কারণে তা পরিত্যাগ করে, তাহলে তার জন্য একটি নেকী লিপিবদ্ধ করো। আর সে যদি কোন নেকীর কাজ করতে ইচ্ছা করে কিন্তু এখনো তা করেনি, তাহলেও তার জন্য একটি নেকী লিপিবদ্ধ করো। আর যদি তা করে তাহলে কাজটির অনুপাতে তার জন্য দশগুণ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত নেকী (সওয়াব) লিপিবদ্ধ করো। (সহীহ বুখারী, হা/৭৫০১)
যারা ইহসানকারী :
وَاَحْسِنُوْاۤ اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِيْنَ
আর তোমরা ইহসান করো; নিশ্চয় আল্লাহ ইহসানকারীদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা বাক্বারা- ১৯৫)
যারা তাওবাকারী :
اِنَّ اللهَ يُحِبُّ التَّوَّابِيْنَ
নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা বাক্বারা- ২২২)
যারা ধৈর্যশীল :
وَاللهُ يُحِبُّ الصَّابِرِيْنَ
আর আল্লাহ ধৈর্যশীলদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৪৬)
যারা আল্লাহর উপর ভরসাকারী :
فَتَوَكَّلْ عَلَى اللهِؕ اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِيْنَ
আল্লাহর প্রতি ভরসা করো; নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর উপর ভরসাকারীদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৯)
যারা ন্যায়বিচারক :
فَاحْكُمْ بَيْنَهُمْ بِالْقِسْطِؕ اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِيْنَ
তুমি তাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করো; নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়বিচারকদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা মায়েদা- ৪২)
যারা মুত্তাক্বী :
اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُتَّقِيْنَ
নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাক্বীদেরকে পছন্দ করেন। (সূরা তাওবা- ৪)
যারা পবিত্রতা অবলম্বনকারী :
وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِيْنَ
আর তিনি পবিত্রতা অবলম্বনকারীদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা বাক্বারা- ২২২)
যারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে :
اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الَّذِيْنَ يُقَاتِلُوْنَ فِيْ سَبِيْلِهٖ صَفًّا كَاَنَّهُمْ بُنْيَانٌ مَّرْصُوْصٌ
নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন, যারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে সারিবদ্ধভাবে শীশাঢালা প্রাচীরের মতো। (সূরা সাফ- ৪)
ব্যাখ্যা : নফল ইবাদাত দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয়। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল ﷺ বলেছেন, আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোন ওলীর সাথে শত্রুতা পোষণ করবে, আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করব। আমি যা কিছু আমার বান্দার উপর ফরয করে দিয়েছি তা দ্বারা সে আমার নৈকট্য লাভ করতে পারবে। আর বান্দা সর্বদা নফল ইবাদাত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করে, অবশেষে আমি (নফল ইবাদাতের কারণে) তাকে ভালোবাসতে থাকি। এমনকি আমি তার কান হয়ে যাই, যা দ্বারা সে শুনতে পায়। আমি তার হাত হয়ে যাই, যা দ্বারা সে স্পর্শ করে। আমি তার চোখ হয়ে যাই, যা দ্বারা সে দেখতে পায়। আমি তার পা হয়ে যাই, যা দ্বারা সে চলাফেরা করে। আর সে যদি আমার নিকট কোন কিছু প্রার্থনা করে তবে আমি তাকে অবশ্যই তা দান করি। আর সে যদি আমার নিকট কোন কিছু থেকে আশ্রয় চায় তবে আমি তাকে আশ্রয় দান করি। (সহীহ বুখারী, হা/৬৫০২)
وَاَحْسِنُوْاۤ اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِيْنَ
আর তোমরা ইহসান করো; নিশ্চয় আল্লাহ ইহসানকারীদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা বাক্বারা- ১৯৫)
যারা তাওবাকারী :
اِنَّ اللهَ يُحِبُّ التَّوَّابِيْنَ
নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা বাক্বারা- ২২২)
যারা ধৈর্যশীল :
وَاللهُ يُحِبُّ الصَّابِرِيْنَ
আর আল্লাহ ধৈর্যশীলদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৪৬)
যারা আল্লাহর উপর ভরসাকারী :
فَتَوَكَّلْ عَلَى اللهِؕ اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِيْنَ
আল্লাহর প্রতি ভরসা করো; নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর উপর ভরসাকারীদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৯)
যারা ন্যায়বিচারক :
فَاحْكُمْ بَيْنَهُمْ بِالْقِسْطِؕ اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِيْنَ
তুমি তাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করো; নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়বিচারকদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা মায়েদা- ৪২)
যারা মুত্তাক্বী :
اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُتَّقِيْنَ
নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাক্বীদেরকে পছন্দ করেন। (সূরা তাওবা- ৪)
যারা পবিত্রতা অবলম্বনকারী :
وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِيْنَ
আর তিনি পবিত্রতা অবলম্বনকারীদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা বাক্বারা- ২২২)
যারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে :
اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الَّذِيْنَ يُقَاتِلُوْنَ فِيْ سَبِيْلِهٖ صَفًّا كَاَنَّهُمْ بُنْيَانٌ مَّرْصُوْصٌ
নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন, যারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে সারিবদ্ধভাবে শীশাঢালা প্রাচীরের মতো। (সূরা সাফ- ৪)
ব্যাখ্যা : নফল ইবাদাত দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয়। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল ﷺ বলেছেন, আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোন ওলীর সাথে শত্রুতা পোষণ করবে, আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করব। আমি যা কিছু আমার বান্দার উপর ফরয করে দিয়েছি তা দ্বারা সে আমার নৈকট্য লাভ করতে পারবে। আর বান্দা সর্বদা নফল ইবাদাত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করে, অবশেষে আমি (নফল ইবাদাতের কারণে) তাকে ভালোবাসতে থাকি। এমনকি আমি তার কান হয়ে যাই, যা দ্বারা সে শুনতে পায়। আমি তার হাত হয়ে যাই, যা দ্বারা সে স্পর্শ করে। আমি তার চোখ হয়ে যাই, যা দ্বারা সে দেখতে পায়। আমি তার পা হয়ে যাই, যা দ্বারা সে চলাফেরা করে। আর সে যদি আমার নিকট কোন কিছু প্রার্থনা করে তবে আমি তাকে অবশ্যই তা দান করি। আর সে যদি আমার নিকট কোন কিছু থেকে আশ্রয় চায় তবে আমি তাকে আশ্রয় দান করি। (সহীহ বুখারী, হা/৬৫০২)
সকল নিয়ামত আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে :
وَمَا بِكُمْ مِّنْ نِّعْمَةٍ فَمِنَ اللهِ ثُمَّ اِذَا مَسَّكُمُ الضُّرُّ فَاِلَيْهِ تَجْاَرُوْنَ
তোমাদের নিকট যে সমসত্ম নিয়ামত রয়েছে তা তো আল্লাহর নিকট হতেই (আসে); আবার যখন তোমাদেরকে দুঃখ-কষ্ট স্পর্শ করে তখন তোমরা তাঁকেই ব্যাকুলভাবে আহবান কর। (সূরা নাহল- ৫৩)
আল্লাহর নিয়ামত গুণে শেষ করা যাবে না :
وَاِنْ تَعُدُّوْا نِعْمَةَ اللهِ لَا تُحْصُوْهَا
তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করলে এর সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না। (সূরা নাহল- ১৮)
وَاِنْ تَعُدُّوْا نِعْمَةَ اللهِ لَا تُحْصُوْهَاۤ اِنَّ الْاِنْسَانَ لَظَلُوْمٌ كَفَّارٌ
আর যদি তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা কর, তবে তার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না। নিশ্চয় মানুষ অতি মাত্রায় যালিম ও অকৃতজ্ঞ। (সূরা ইবরাহীম- ৩৪)
মানুষের প্রয়োজনীয় সবই তিনি দিয়েছেন :
وَاٰتَاكُمْ مِّنْ كُلِّ مَا سَاَلْتُمُوْهُ
আর তোমরা তাঁর নিকট যা কিছু চেয়েছ তা হতে তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন। (সূরা ইবরাহীম- ৩৪)
মানুষের জন্য নিয়ামত পূর্ণ করে দিয়েছেন :
اَلَمْ تَرَوْا اَنَّ اللهَ سَخَّرَ لَكُمْ مَّا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَ رْضِ وَاَسْبَغَ عَلَيْكُمْ نِعَمَهٗ ظَاهِرَةً وَّبَاطِنَةً
তোমরা কি দেখ না যে, আল্লাহই তোমাদের কাজে নিয়োজিত রেখেছেন যা কিছু আছে আসমানে ও যা কিছু জমিনে (সবকিছুকে) এবং তিনিই তোমাদের প্রতি তাঁর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নিয়ামত পূর্ণ করে দিয়েছেন। (সূরা লুক্বমান- ২০)
ব্যাখ্যা : মানুষ যেসব নিয়ামত অনুভব করে, সেগুলো প্রকাশ্য নিয়ামত। আর তারা যেসব নিয়ামত সম্পর্কে জানে না এবং অনুভবও করে না, সেগুলো গোপন নিয়ামত। মানুষের শরীরে ও বাইরে এমন অগণিত জিনিস রয়েছে, যা দুনিয়ায় তার জন্য উপকারী। কিন্তু মানুষ অনুভবও করে না যে, স্রষ্টা তাদের জন্য তা সংরক্ষণ করে রেখেছেন। তার দ্বারা তাদের জীবিকা দান করেন, তার বিকাশ ঘটান এবং তার কল্যাণার্থে কত রকমের সাজ-সরঞ্জাম যোগাড় করেন। মহান আল্লাহ জীবনের প্রতিটি বিভাগে মানুষের যাবতীয় প্রয়োজন বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করেন, তারপর এক একটি প্রয়োজন পূর্ণ করার ব্যবস্থা করেন। তিনি কোন কোন দিক থেকে কোন ধরনের কী পরিমাণ উপকরণ তৈরি করে দিয়েছেন তার বিস্তারিত বিবরণ যদি কেউ লিখতে বসে, তাহলে একটি বই তৈরি হয়ে যাবে। যেমন পোশাক ও বাসস্থানের দিক দিয়ে আল্লাহর নিয়ামতের পূর্ণতা, খাদ্যোপকরণের দিক দিয়ে আল্লাহর নিয়ামতের পূর্ণতা ইত্যাদি। মোটকথা তিনি মানবজাতির ছোট-বড় সবধরনের প্রয়োজনের প্রতি দৃষ্টি রেখে অসংখ্য উপকরণ সৃষ্টি করেছেন এবং সকল ক্ষেত্রে তাদের উপর তাঁর নিয়ামতকে পূর্ণভাবে প্রদান করেছেন।
আল্লাহ আকাশকে বানিয়েছেন ছাদস্বরূপ :
وَجَعَلْنَا السَّمَآءَ سَقْفًا مَّحْفُوْظًاۚ وَهُمْ عَنْ اٰيَاتِهَا مُعْرِضُوْنَ
আর আকাশকে করেছি সুরক্ষিত ছাদ; কিন্তু তারা আকাশে অবস্থিত নিদর্শনাবলি হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়। (সূরা আম্বিয়া- ৩২)
তিনি আকাশকে আটকিয়ে রাখেন :
وَيُمْسِكُ السَّمَآءَ اَنْ تَقَعَ عَلَى الْاَ رْضِ اِلَّا بِاِذْنِهٖؕ اِنَّ اللهَ بِالنَّاسِ لَرَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ
আর তিনিই আকাশকে স্থির রাখেন, যাতে সেটা তাঁর অনুমতি ব্যতীত পৃথিবীর উপর পতিত না হয়। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। (সূরা হজ্জ- ৬৫)
চন্দ্র ও সূর্যকে বানিয়েছেন সময় গণনার মাধ্যম :
فَالِقُ الْاِصْبَاحِۚ وَجَعَلَ اللَّيْلَ سَكَنًا وَّالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ حُسْبَانًاؕ ذٰلِكَ تَقْدِيْرُ الْعَزِيْزِ الْعَلِيْمِ
তিনিই সকালকে প্রকাশ করেন, তিনিই বিশ্রামের জন্য এবং গণনার জন্য সূর্য ও চন্দ্র সৃষ্টি করেছেন; এসবই মহাপরাক্রমশালী ও মহাজ্ঞানীর (আল্লাহর) নির্ধারিত নিয়ম। (সূরা আন‘আম- ৯৬)
পৃথিবীকে বানিয়েছেন বিছানাস্বরূপ :
اَلَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ الْاَ رْضَ مَهْدًا
যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে করেছেন বিছানাস্বরূপ। (সূরা যুখরুফ- ১০)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ তা‘আলা এখানে পৃথিবীকে দোলনার সাথে এবং অন্য আয়াতে বিছানার সাথে তুলনা করেছেন। অর্থাৎ একটি শিশু যেভাবে তার দোলনার মধ্যে আরামে শুয়ে থাকে, মহাশূন্যে ভাসমান এই বিশাল গ্রহকে আল্লাহ তেমনি আরামের জায়গা বানিয়ে দিয়েছেন। এর অভ্যন্তরে রয়েছে এমন আগুন, যা পাথরকেও গলিয়ে দেয়। কিন্তু এ সত্ত্বেও স্রষ্টা তাকে এতটা শান্ত বানিয়ে দিয়েছেন যে, মানুষ এর উপর বসবাস করে কিন্তু অনুভব পর্যন্ত করতে পারে না যে, এটি মহাশূন্যে ঝুলন্ত গ্রহ। মানুষ এর পিঠের উপর নিরাপদে চলাফেরা করছে অথচ তাদের এ ধারণাও নেই যে, বন্দুকের গুলীর চেয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন গাড়িতে তারা অবস্থান করছে। বিনা দ্বিধায় তাকে খনন করছে এবং তার পেট থেকে রিযিক বের করছে; অথচ কখনো কখনো ভূমিকম্পের অতি সাধারণ কম্পনও জানিয়ে দেয় যে, এটা কত ভয়ঙ্কর স্থান।
মানুষের বসবাসের জায়গা করে দিয়েছেন :
وَهُوَ الَّذِيْۤ اَنْشَاَكُمْ مِّنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ فَمُسْتَقَرٌّ وَّمُسْتَوْدَعٌ ؕ قَدْ فَصَّلْنَا الْاٰيَاتِ لِقَوْمٍ يَّفْقَهُوْنَ
তিনিই তোমাদেরকে একই ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের জন্য দীর্ঘ ও স্বল্পকালীন বাসস্থান তৈরি করে দিয়েছেন। আর আমি অনুধাবনকারী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করে দিয়েছি। (সূরা আন‘আম- ৯৮)
পৃথিবীকে স্থির রাখতে পাহাড় স্থাপন করেছেন :
وَجَعَلْنَا فِى الْاَ رْضِ رَوَاسِيَ اَنْ تَمِيْدَ بِهِمْ وَجَعَلْنَا فِيْهَا فِجَاجًا سُبُلًا لَّعَلَّهُمْ يَهْتَدُوْنَ
আর আমি পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছি সুদৃঢ় পর্বত, যাতে পৃথিবী তাদেরকে নিয়ে এদিক-ওদিক ঢলে না যায়। আর আমি তাতে করে দিয়েছি প্রশসত্ম পথ, যাতে তারা গমত্মব্যস্থলে পৌঁছতে পারে। (সূরা আম্বিয়া- ৩১)
পৃথিবীতে রাস্তা তৈরি করেছেন :
وَاَلْقٰى فِى الْاَ رْضِ رَوَاسِيَ اَنْ تَمِيْدَ بِكُمْ وَاَنْهَارًا وَّسُبُلًا لَّعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ
আর তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বত স্থাপন করেছেন, যাতে পৃথিবী তোমাদেরকে নিয়ে আন্দোলিত না হয়। আর এতে স্থাপন করেছেন নদ-নদী ও পথ, যাতে তোমরা তোমাদের গমত্মব্যস্থলে পৌঁছতে পার। (সূরা নাহল- ১৫)
وَاللهُ جَعَلَ لَكُمُ الْاَ رْضَ بِسَاطًا ‐ - لِتَسْلُكُوْا مِنْهَا سُبُلًا فِجَاجًا
আর আল্লাহ তোমাদের জন্য ভূমিকে করেছেন বিস্তৃত, যাতে তোমরা এর প্রশস্ত পথে চলাফেরা করতে পার। (সূরা নূহ- ১৯, ২০)
وَجَعَلَ لَكُمْ فِيْهَا سُبُلًا لَّعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ
তিনি পৃথিবীতে তোমাদের জন্য চলার পথ তৈরি করেছেন, যাতে তোমরা সঠিক পথ পেতে পার। (সূরা যুখরুফ- ১০)
ব্যাখ্যা : পাহাড়ের মাঝে গিরিপথ এবং পাহাড়ী ও সমতল ভূমির অঞ্চলে নদী হচ্ছে সেই প্রাকৃতিক পথ, যা আল্লাহ তৈরি করেছেন। এসব পথ ধরেই মানুষ পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে। পর্বত শ্রেণিকে যদি কোন ফাঁক ছাড়া প্রাচীরের মতো করে দাঁড় করানো হতো এবং ভূপৃষ্ঠের কোথাও কোন সমুদ্র, নদী-নালা না থাকত তাহলে মানুষ যেখানে জন্মগ্রহণ করেছিল সেখানেই আবদ্ধ হয়ে পড়ত। আল্লাহ আরো অনুগ্রহ করেছেন এই যে, তিনি গোটা ভূপৃষ্ঠকে একই রকম করে সৃষ্টি করেননি, বরং তাতে নানা ধরনের এমনসব পার্থক্যসূচক চিহ্ন রেখে দিয়েছেন, যার সাহায্যে মানুষ বিভিন্ন এলাকা চিনতে পারে এবং এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলের পার্থক্য উপলব্ধি করতে পারে। এটা আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়, যার সাহায্যে পৃথিবীতে মানুষের চলাচল সহজ হয়েছে। মানুষ যখন বিশাল কোন মরুভূমিতে যায়, যেখানে মাইলের পর মাইল কোন পার্থক্যসূচক চিহ্ন থাকে না এবং সে কোথা থেকে কোথায় এসে পৌঁছেছে তা বুঝতে পারে না, তখন সে এই নিয়ামতের মর্যাদা বুঝতে পারে। এসব প্রাকৃতিক রাস্তা ও রাস্তার চিহ্নসমূহের সাহায্যে তোমরা তোমাদের পথ চিনে নিতে পার এবং যেখানে যেতে চাও সেখানে যেতে পার। বহু সংখ্যক স্রষ্টা মিলে এ ব্যবস্থা করেনি, বরং এক মহাজ্ঞানী পালনকর্তা আছেন, যিনি তাঁর বান্দাদের প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ্য রেখে পাহাড় ও সমতল ভূমিতে এসব রাস্তা বানিয়েছেন এবং পৃথিবীর একেকটি অঞ্চলকে ভিন্ন ভিন্ন আকৃতি দান করেছেন, যার সাহায্যে মানুষ এক অঞ্চলকে অন্য অঞ্চল থেকে আলাদা করে চিনতে পারে।
জমিনে মানুষের চলাফেরা করার ব্যবস্থা করেছেন :
هُوَ الَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ الْاَ رْضَ ذَلُوْلًا فَامْشُوْا فِيْ مَنَاكِبِهَا وَكُلُوْا مِنْ رِّزْقِهٖؕ وَاِلَيْهِ النُّشُوْرُ
তিনিই তো তোমাদের জন্য জমিনকে চলাচলের উপযোগী করে দিয়েছেন। অতএব তোমরা তার দিক-দিগন্তে ও রাস্তাসমূহে বিচরণ করো এবং তাঁর দেয়া রিযিক হতে আহার করো, (জেনে রেখো) তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। (সূরা মুলক- ১৫)
هُوَ الَّذِيْ يُسَيِّرُكُمْ فِى الْبَرِّ وَالْبَحْرِ
তিনিই তোমাদেরকে জলে-স্থলে ভ্রমণ করান। (সূরা ইউনুস- ২২)
পথ চেনার জন্য চিহ্ন ও তারকা বানিয়েছেন :
وَعَلَامَاتٍ ؕ وَبِالنَّجْمِ هُمْ يَهْتَدُوْنَ
আর (তিনি সৃষ্টি করেছেন) পথ নির্ণায়ক চিহুসমূহও। (তাছাড়া) তারা (মানুষ) নক্ষত্রের সাহায্যেও পথের নির্দেশনা পায়। (সূরা নাহল- ১৬)
সর্বত্র মানুষকে ছড়িয়ে দিয়েছেন :
هُوَ الَّذِيْ ذَرَاَكُمْ فِى الْاَ رْضِ وَاِلَيْهِ تُحْشَرُوْنَ
তিনিই তোমাদেরকে পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং তোমাদেরকে তাঁরই কাছে একত্রিত করা হবে।
(সূরা মুলক- ২৪)
মানুষের সফরের জন্য সওয়ারীর ব্যবস্থা করেছেন :
وَالْخَيْلَ وَالْبِغَالَ وَالْحَمِيْرَ لِتَرْكَبُوْهَا وَزِيْنَةًؕ وَيَخْلُقُ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ
তিনি তোমাদের আরোহণের জন্য ও শোভার জন্য সৃষ্টি করেছেন অশ্ব, অশ্বতর ও গর্দভ এবং তিনি সৃষ্টি করেছেন এমন অনেক কিছু, যা তোমরা অবগত নও। (সূরা নাহল- ৮)
وَجَعَلَ لَكُمْ مِّنَ الْفُلْكِ وَالْاَنْعَامِ مَا تَرْكَبُوْنَ ‐ - لِتَسْتَوُوْا عَلٰى ظُهُوْرِهٖ ثُمَّ تَذْكُرُوْا نِعْمَةَ رَبِّكُمْ اِذَا اسْتَوَيْتُمْ عَلَيْهِ وَتَقُوْلُوْا سُبْحَانَ الَّذِيْ سَخَّرَ لَنَا هٰذَا وَمَا كُنَّا لَهٗ مُقْرِنِيْنَ
যিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন এমন নৌযান ও চতুষ্পদ জন্তু, যাতে তোমরা আরোহণ কর। যাতে তোমরা ওদের পৃষ্ঠে স্থির হয়ে বসতে পার, তারপর তোমাদের প্রতিপালকের নিয়ামত স্মরণ কর যখন তোমরা ওর উপর স্থির হয়ে বস এবং বল, তিনি পবিত্র ও মহান, যিনি এদেরকে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন, যদিও আমরা এদেরকে বশীভূত করতে সক্ষম ছিলাম না। (সূরা যুখরুফ- ১২, ১৩)
মানুষের ঘরবাড়ি তৈরির ব্যবস্থা করেছেন :
وَاللهُ جَعَلَ لَكُمْ مِّنْ ۢبُيُوْتِكُمْ سَكَنًا وَّجَعَلَ لَكُمْ مِّنْ جُلُوْدِ الْاَنْعَامِ بُيُوْتًا تَسْتَخِفُّوْنَهَا يَوْمَ ظَعْنِكُمْ وَيَوْمَ اِقَامَتِكُمْ وَمِنْ اَصْوَافِهَا وَاَوْبَارِهَا وَاَشْعَارِهَاۤ اَثَاثًا وَّمَتَاعًا اِلٰى حِيْنٍ
আল্লাহ তোমাদের গৃহকে করেন আবাসস্থল এবং তিনি তোমাদের জন্য পশুচর্মের তাঁবুর ব্যবস্থা করেন, তোমরা এটাকে সহজ মনে কর ভ্রমণকালে এবং অবস্থানকালে। আর তিনি তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেন তাদের পশম, লোম ও কেশ হতে কিছু কালের গৃহসামগ্রী ও ব্যবহার-উপকরণ। (সূরা নাহল- ৮০)
পোশাক দিয়েছেন :
وَجَعَلَ لَكُمْ سَرَابِيْلَ تَقِيْكُمُ الْحَرَّ وَسَرَابِيْلَ تَقِيْكُمْ بَاْسَكُمْؕ كَذٰلِكَ يُتِمُّ نِعْمَتَهٗ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تُسْلِمُوْنَ
তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেন পরিধেয় বস্ত্রের, সেটা তোমাদেরকে তাপ হতে রক্ষা করে এবং তিনি তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেন বর্মের, সেটা তোমাদেরকে যুদ্ধক্ষেত্রে রক্ষা করে। এভাবে তিনি তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ পূর্ণ করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আত্মসমর্পণ কর। (সূরা নাহল- ৮১)
পাহাড়েও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছেন :
وَاللهُ جَعَلَ لَكُمْ مِّمَّا خَلَقَ ظِلَالًا وَّجَعَلَ لَكُمْ مِّنَ الْجِبَالِ اَكْنَانًا
আর আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তা হতে তিনি তোমাদের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করেন এবং তোমাদের জন্য পাহাড়ে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেন। (সূরা নাহল- ৮১)
মানুষকে বিভিন্নভাবে রোজগারের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন :
نَحْنُ قَسَمْنَا بَيْنَهُمْ مَّعِيْشَتَهُمْ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَرَفَعْنَا بَعْضَهُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِّيَتَّخِذَ بَعْضُهُمْ بَعْضًا سُخْرِيًّاؕ وَرَحْمَةُ رَبِّكَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُوْنَ
আমিই তাদের মধ্যে তাদের পার্থিব জীবনে জীবিকা বণ্টন করি এবং একজনকে অপর জনের উপর মর্যাদায় উন্নত করি, যেন একে অপরের দ্বারা খেদমত করিয়ে নিতে পারে। (জেনে রেখো) তারা যা জমা করে তোমার প্রতিপালকের রহমত তা হতে অনেক উৎকৃষ্টতর। (সূরা যুখরুফ- ৩২)
ব্যাখ্যা : একজনকেই সবকিছু অথবা সবাইকে সবকিছু না দেয়া আল্লাহর চিরস্থায়ী একটি নিয়ম। সাধারণভাবে লক্ষ্য করলেই আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে সর্বক্ষেত্রেই এ পার্থক্য নজরে পড়বে। আল্লাহ কাউকে কোন জিনিস দিয়ে থাকলে আরেকটি জিনিস থেকে তাকে বঞ্চিত করেছেন এবং সেটি অন্য কাউকে দিয়েছেন। এমনটি করার কারণ হলো, কোন মানুষই যেন অন্য মানুষদের মুখাপেক্ষিতা থেকে মুক্ত না হয়। আল্লাহ একজনের মধ্যেই জ্ঞান, বুদ্ধি, সম্পদ, সৌন্দর্য, ক্ষমতা, কর্তৃত্ব এবং অন্যসব পূর্ণতার সমাবেশ ঘটাননি এবং কাউকে সবকিছু থেকে বঞ্চিতও করেননি। পৃথিবীতে জীবন-যাপন করার যে সাধারণ উপায়-উপকরণ আছে তার বণ্টনব্যবস্থাও আল্লাহ নিজের হাতেই রেখেছেন, অন্য কারো হাতে তুলে দেননি। আল্লাহ কাউকে সুশ্রী, কাউকে কুশ্রী, কাউকে শক্তিশালী এবং কাউকে দুর্বল, কাউকে মেধাবী এবং কাউকে মেধাহীন, কাউকে সুস্থ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অধিকারী, কাউকে বিকলাঙ্গ, অন্ধ অথবা বোবা, কাউকে আমীরের পুত্র এবং কাউকে গরীবের পুত্র, কাউকে উন্নতজাতির সদস্য এবং কাউকে পরাধীন হিসেবে সৃষ্টি করে থাকেন। জন্মগত এই ভাগ্যের ব্যাপারে কেউ সামান্যতম কর্তৃত্বও খাটাতে পারে না। আল্লাহ যাকে যা বানিয়েছেন সে তা-ই হতে বাধ্য; কারো তাকদীরের উপর জন্মগত অবস্থার যে প্রভাবই পড়ে তা পাল্টে দেয়ার সাধ্য কারো নেই। তাছাড়া আল্লাহই মানুষের মধ্যে রিযিক, ক্ষমতা, মর্যাদা, খ্যাতি, সম্পদ ও শাসন কর্তৃত্ব ইতাদি বণ্টন করেছেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে যে সম্মান লাভ করে কেউ তার মর্যাদাহানি করতে পারে না। আর আল্লাহর পক্ষ থেকে যার জন্য দুর্ভাগ্য ও অধঃপতন এসে যায় কেউ তাকে পতন থেকে রক্ষা করতে পারে না। আল্লাহর সিদ্ধান্তের মুকাবিলায় মানুষের সমস্ত চেষ্টা ও কৌশল কোন কাজেই আসে না।
মালামাল পরিবহনের ব্যবস্থা করেছেন :
وَتَحْمِلُ اَثْقَالَكُمْ اِلٰى بَلَدٍ لَّمْ تَكُوْنُوْا بَالِغِيْهِ اِلَّا بِشِقِّ الْاَنْفُسِؕ اِنَّ رَبَّكُمْ لَرَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ
আর পশুরা তোমাদের ভার বহন করে নিয়ে যায় এমন দেশে, যেথায় প্রাণামত্ম ক্লেশ ব্যতীত তোমরা পৌঁছতে পারতে না। নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক খুবই দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। (সূরা নাহল- ৭)
সমুদ্রে নৌকা চলার ব্যবস্থা করেছেন :
سَخَّرَ لَكُمُ الْفُلْكَ لِتَجْرِيَ فِى الْبَحْرِ بِاَمْرِهٖؕ وَسَخَّرَ لَكُمُ الْاَنْهَارَ
তিনি নৌযানকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, যেন তাঁর নির্দেশে সেটা সমুদ্রে বিচরণ করে এবং তিনি নদীসমূহকে তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন। (সূরা ইবরাহীম- ৩২)
আল্লাহ রিযিক তালাশের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন :
رَبُّكُمُ الَّذِيْ يُزْجِيْ لَكُمُ الْفُلْكَ فِى الْبَحْرِ لِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِهٖؕ اِنَّهٗ كَانَ بِكُمْ رَحِيْمًا
তিনিই তোমাদের প্রতিপালক, যিনি তোমাদের জন্য সমুদ্রে নৌযান পরিচালিত করেন, যেন তোমরা তাঁর অনুগ্রহ (রিযিক) সন্ধান করতে পার। নিশ্চয় তিনি তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৬৬)
রাতে বিশ্রাম ও দিনে রিযিক তালাশের সুযোগ করে দিয়েছেন :
وَمِنْ رَّحْمَتِهٖ جَعَلَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ لِتَسْكُنُوْا فِيْهِ وَلِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِهٖ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
তিনিই তাঁর দয়ায় তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন রাত ও দিন, যেন তোমরা তাতে বিশ্রাম করতে পার এবং তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার। হয়তো তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। (সূরা ক্বাসাস- ৭৩)
উত্তম রিযিক দান করেছেন :
وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِيْۤ اٰدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِى الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُمْ مِّنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلٰى كَثِيْرٍ مِّمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيْلًا
আমি তো আদম সমত্মানকে মর্যাদা দান করেছি, স্থলে ও সমুদ্রে তাদের চলাচলের বাহন দিয়েছি, তাদেরকে উত্তম রিযিক দান করেছি এবং আমি যাদেরকে সৃষ্টি করেছি তাদের অনেকের উপর তাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৭০)
আগুন জ্বালানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন :
اَلَّذِيْ جَعَلَ لَكُمْ مِّنَ الشَّجَرِ الْاَخْضَرِ نَارًا فَاِذَاۤ اَنْتُمْ مِّنْهُ تُوْقِدُوْنَ
যিনি সবুজ গাছ থেকে তোমাদের জন্য আগুন উৎপন্ন করেন, অতঃপর তোমরা তা থেকে (আগুন) জ্বালাও। (সূরা ইয়াসীন- ৮০)
পৃথিবীর সবকিছু মানুষের অধীন করে দিয়েছেন :
اَنَّ اللهَ سَخَّرَ لَكُمْ مَّا فِى الْاَ رْضِ وَالْفُلْكَ تَجْرِيْ فِى الْبَحْرِ بِاَمْرِهٖ
তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবকিছুকে আল্লাহ তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন এবং তাঁরই নির্দেশে সমুদ্রে বিচরণশীল নৌযানসমূহকেও (তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন)? (সূরা হজ্জ- ৬৫)
وَسَخَّرَ لَكُمُ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ دَآئِبَيْنِۚ وَسَخَّرَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ
তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, যারা অবিরাম একই নিয়মের অনুগামী। আর তিনি রাত ও দিনকেও তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন। (সূরা ইবরাহীম- ৩৩)
اَلَمْ تَرَوْا اَنَّ اللهَ سَخَّرَ لَكُمْ مَّا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَ رْضِ
তোমরা কি লক্ষ্য কর না যে, আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে, সবকিছুই আল্লাহ তোমাদের জন্য নিয়োজিত রেখেছেন। (সূরা লুক্বমান- ২০)
وَسَخَّرَ لَكُمْ مَّا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَ رْضِ جَمِيْعًا مِّنْهُؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ
তিনি তোমাদের জন্য নিয়োজিত করে দিয়েছেন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মধ্যে যা কিছু রয়েছে সবকিছু। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা জাসিয়া- ১৩)
ব্যাখ্যা : কোন জিনিসকে কারো জন্য অনুগত করে দেয়ার অর্থ হচ্ছে, ঐ জিনিসকে তার অধীন করে দেয়া। ঐ জিনিসকে নিজের অধীনে নিয়ে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে ব্যবহার ও ক্ষমতা প্রয়োগ করা। যেমন পৃথিবী ও আকাশের সমস্ত জিনিসকে অর্থাৎ আগুন, পানি, মাটি, উদ্ভিদ, খনিজ পদার্থ, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র ইত্যাদিকে আল্লাহ তা‘আলা মানুষের অনুগত করে দিয়েছেন।
তিনি মানুষের জীবিকা উৎপন্ন করেন :
يُنْۢبِتُ لَكُمْ بِهِ الزَّرْعَ وَالزَّيْتُوْنَ وَالنَّخِيْلَ وَالْاَعْنَابَ وَمِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ
তিনি তাদের জন্য তা দ্বারা উৎপন্ন করেন শস্য, যায়তুন, খেজুর বৃক্ষ, আঙ্গুর এবং সর্বপ্রকার ফল। অবশ্যই এতে চিমত্মাশীল সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা নাহল- ১১)
اَخْرَجَ مِنْهَا مَآءَهَا وَمَرْعَاهَا
তিনি তা থেকে বের করেছেন পানি ও চারণভূমি। (সূরা নাযি‘আত- ৩১)
পশু পালনের মধ্যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দিয়েছেন :
وَلَكُمْ فِيْهَا جَمَالٌ حِيْنَ تُرِيْحُوْنَ وَحِيْنَ تَسْرَحُوْنَ
আর যখন তোমরা তাদেরকে গোধূলি লগ্নে চারণভূমি হতে গৃহে নিয়ে আস এবং প্রভাতে তাদেরকে চারণভূমিতে নিয়ে যাও তখন তোমরা তার সৌন্দর্য উপভোগ কর। (সূরা নাহল- ৬)
চামড়ার উপকরণ ও গোশত দিয়েছেন :
وَالْاَنْعَامَ خَلَقَهَا لَكُمْ فِيْهَا دِفْءٌ وَّمَنَافِعُ وَمِنْهَا تَاْكُلُوْنَ
তিনি চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন; তাতে তোমাদের জন্য রয়েছে শীত নিবারক উপকরণ ও বহু উপকার। আর তা হতে তোমরা আহার করে থাক। (সূরা নাহল- ৫)
পশুর পশমকেও উপকারী করেছেন :
وَمِنْ اَصْوَافِهَا وَاَوْبَارِهَا وَاَشْعَارِهَاۤ اَثَاثًا وَّمَتَاعًا اِلٰى حِيْنٍ
তিনি তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেন তাদের পশম, লোম ও কেশ হতে কিছু কালের গৃহসামগ্রী ও ব্যবহার-উপকরণ। (সূরা নাহল- ৮০)
মেঘ বহনকারী বাতাস প্রেরণ করেন :
وَاللهُ الَّذِيْۤ اَرْسَلَ الرِّيَاحَ فَتُثِيْرُ سَحَابًا فَسُقْنَاهُ اِلٰى بَلَدٍ مَّيِّتٍ فَاَحْيَيْنَا بِهِ الْاَ رْضَ بَعْدَ مَوْتِهَاؕ كَذَالِكَ النُّشُوْرُ
আর তিনিই আল্লাহ যিনি বাতাস প্রেরণ করেন, তারপর তা মেঘমালাকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। অতঃপর আমি তা পরিচালিত করি মৃত ভূখন্ডের দিকে, তারপর আমি তা দিয়ে জমিনকে তার মৃত্যুর পর জীবিত করে দেই। ঠিক এভাবেই (একদিন মানুষেরও) পুনরুত্থান (হবে)। (সূরা ফাতির- ৯)
আল্লাহ আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করেন :
وَاَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَخْرَجَ بِهٖ مِنَ الثَّمَرَاتِ رِزْقًا لَّكُمْۚ فَلَا تَجْعَلُوْا لِلّٰهِ اَنْدَادًا وَّاَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
যিনি আকাশ হতে পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর তার দ্বারা তোমাদের জন্য জীবিকাস্বরূপ ফলসমূহ উৎপাদন করেন। অতএব তোমরা জেনে শুনে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করো না। (সূরা বাক্বারা- ২২)
وَهُوَ الَّذِيْۤ اَرْسَلَ الرِّيَاحَ بُشْرًا ۢبَيْنَ يَدَيْ رَحْمَتِهٖۚ وَاَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَآءِ مَآءً طَهُوْرًا
আর তিনি নিজ অনুগ্রহের প্রাক্কালে সুসংবাদবাহী বায়ু প্রেরণ করেন এবং আকাশ হতে বিশুদ্ধ পানি বর্ষণ করেন। (সূরা ফুরক্বান- ৪৮)
প্রাণীকুলের পিপাসা নিবারণ করেন :
لِنُحْيِيَ بِهٖ بَلْدَةً مَّيْتًا وَّنُسْقِيَهٗ مِمَّا خَلَقْنَاۤ اَنْعَامًا وَّاَنَاسِيَّ كَثِيْرًا
যার দ্বারা আমি মৃত ভূখন্ডকে সঞ্জীবিত করি এবং আমার সৃষ্টির মধ্যে বহু জীবজন্তু ও মানুষকে তা পান করাই। (সূরা ফুরক্বান- ৪৯)
وَاَرْسَلْنَا الرِّيَاحَ لَوَاقِحَ فَاَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَسْقَيْنَاكُمُوْهُۚ وَمَاۤ اَنْتُمْ لَهٗ بِخَازِنِيْنَ
আমি বৃষ্টি বহনকারী বায়ু প্রেরণ করি, তারপর আমিই আকাশ হতে পানি বর্ষণ করি। অতঃপর তোমাদেরকে তা পান করাই; তোমরা নিজেরা তো এর কোন ভান্ডার জমা করে রাখনি (যে, সেখান থেকে এসব আসছে)। (সূরা হিজর- ২২)
পানি দ্বারা ফসল উৎপাদন করেন :
فَاَنْشَاْنَا لَكُمْ بِهٖ جَنَّاتٍ مِّنْ نَّخِيْلٍ وَّاَعْنَابٍ لَّكُمْ فِيْهَا فَوَاكِهُ كَثِيْرَةٌ وَّمِنْهَا تَاْكُلُوْنَ
অতঃপর আমি এর দ্বারা তোমাদের জন্য খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান উৎপাদন করি। তোমাদের জন্য এতে আছে প্রচুর ফল; আর তোমরা তা হতে আহার করে থাক। (সূরা মু’মিনূন- ১৯)
পৃথিবীর পানিকে সংরক্ষণ করেন :
وَاَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَآءِ مَآءً ۢبِقَدَرٍ فَاَسْكَنَّاهُ فِى الْاَ رْضِ وَاِنَّا عَلٰى ذَهَابٍ ۢبِهٖ لَقَادِرُوْنَ
আর আমিই আকাশ হতে পানি বর্ষণ করি পরিমিত হারে। অতঃপর আমি তা মাটিতে সংরক্ষণ করি; আর আমি তাকে অপসারণ করতেও সক্ষম। (সূরা মু’মিনূন- ১৮)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ প্রত্যেক অঞ্চলের জন্য বৃষ্টির একটা গড় পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন, যা দীর্ঘকাল যাবৎ প্রতি বছর একইভাবে চলতে থাকে। তাছাড়া তিনি বিভিন্ন মওসুমের বিভিন্ন সময়ে বৃষ্টিকে বিক্ষিপ্ত করে বর্ষণ করেন, যা ভূমির উৎপাদন ক্ষমতার জন্য উপকারী। এ ব্যবস্থা আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী চলছে। একটি দেশের বৃষ্টিপাতের গড় পরিবর্তন কিংবা পৃথিবীর ব্যাপক এলাকায় তার বণ্টন হারে কোন পার্থক্য সৃষ্টি করা, অথবা কোন তুফানকে রোধ করা বা বৃষ্টিকে নিজ দেশে বর্ষণ করার জন্য বাধ্য করার সাধ্য কারো নেই।
দুই সাগরের মধ্যখানে পর্দা সৃষ্টি করেছেন :
هُوَ الَّذِيْ مَرَجَ الْبَحْرَيْنِ هٰذَا عَذْبٌ فُرَاتٌ وَّهٰذَا مِلْحٌ اُجَاجٌۚ وَجَعَلَ بَيْنَهُمَا بَرْزَخًا وَّحِجْرًا مَّحْجُوْرًا
তিনিই দু’টি দরিয়াকে মিলিতভাবে প্রবাহিত করেছেন, একটি মিষ্ট ও সুপেয় এবং অপরটি লোনা ও ক্ষার। আর উভয়ের মধ্যে রেখেছেন এক অমত্মরায় ও অনতিক্রম্য ব্যবধান। (সূরা ফুরক্বান- ৫৩)
ব্যাখ্যা : যেখানে কোন বড় নদী এসে সাগরে পড়ে এমন প্রত্যেক জায়গায় এ অবস্থা হয়। এছাড়া সমুদ্রের মধ্যেও বিভিন্ন জায়গায় মিঠা পানির স্রোত পাওয়া যায়। সমুদ্রের ভীষণ লবণাক্ত পানির মধ্যেও সে তার মিষ্টতা পুরোপুরি বজায় রাখে। এ হচ্ছে আয়াতের বাহ্যিক বিষয়বস্তু, যা আল্লাহ তা‘আলার একক ইলাহ্ ও একক রব হওয়ার প্রমাণ বহন করে। কিন্তু এসব শব্দাবলির অভ্যন্তর থেকে একটি সূক্ষ্ম ইশারা অন্য একটি বিষয়বস্তুর সন্ধান দেয়। সেটি হচ্ছে, মানবসমাজের সমুদ্র যতই লোনা হয়ে থাক না কেন, আল্লাহ যখনই চান তার তলদেশ থেকে একটি সৎকর্মশীল দলের মিঠা স্রোত বের করে আনতে পারেন। ফলে তাগুতের লোনা পানির তরঙ্গ যতই শক্তি প্রয়োগ করুক না কেন, তারা এই স্রোত গ্রাস করতে সক্ষম হবে না।
مَرَجَ الْبَحْرَيْنِ يَلْتَقِيَانِ ‐ - بَيْنَهُمَا بَرْزَخٌ لَّا يَبْغِيَانِ
তিনি দু’টি সমুদ্রকে প্রবাহিত করেন, যারা পরস্পর মিলিত হয়। আর এ দু’য়ের মধ্যে রয়েছে এক অন্তরাল, যা তারা অতিক্রম করতে পারে না। (সূরা আর রহমান- ১৯, ২০)
সমুদ্রে মাছ ও অলঙ্কার দিয়েছেন :
هُوَ الَّذِيْ سَخَّرَ الْبَحْرَ لِتَاْكُلُوْا مِنْهُ لَحْمًا طَرِيًّا وَّتَسْتَخْرِجُوْا مِنْهُ حِلْيَةً تَلْبَسُوْنَهَاۚ وَتَرَى الْفُلْكَ مَوَاخِرَ فِيْهِ وَلِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِهٖ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
তিনিই সমুদ্রকে তোমাদের অধীনস্থ করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা তা হতে তাজা গোশত (মাছ) ভক্ষণ করতে পার এবং তা হতে গহনা আহরণ করতে পার, যা তোমরা ভূষণরূপে পরিধান কর। আর তোমরা দেখতে পাও যে, এর বুক চিরে নৌযান চলাচল করে। এটা এজন্য যে, তোমরা যেন তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা নাহল- ১৪)
وَمَا يَسْتَوِى الْبَحْرَانِ هٰذَا عَذْبٌ فُرَاتٌ سَآئِغٌ شَرَابُهٗ وَهٰذَا مِلْحٌ اُجَاجٌؕ وَّمِنْ كُلٍّ تَاْكُلُوْنَ لَحْمًا طَرِيًّا وَّتَسْتَخْرِجُوْنَ حِلْيَةً تَلْبَسُوْنَهَاۚ وَتَرَى الْفُلْكَ فِيْهِ مَوَاخِرَ لِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِهٖ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
আর দু’টি সমুদ্র সমান নয়- একটি মিঠা পানিবিশিষ্ট, যা পিপাসা দূর করে এবং এর পানি পান করা সহজ। আর অপরটির পানি লবণাক্ত ও বিস্বাদ। তোমরা প্রত্যেকটি থেকেই টাটকা গোশত (মাছ) ভক্ষণ কর এবং মণি-মুক্তার অলঙ্কার আহরণ কর, যা তোমরা পরিধান কর। আর তুমি দেখতে পাও যে, তার বুক চিরে জাহাজ চলাচল করে। এটা এজন্য যে, যেন তোমরা তাঁর অনুগ্রহ তালাশ করতে পার এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা ফাতির- ১২)
يَخْرُجُ مِنْهُمَا اللُّؤْلُؤُ وَالْمَرْجَانُ
উভয় সমুদ্র হতে উৎপন্ন হয় মুক্তা ও প্রবাল। (সূরা আর রহমান- ২২)
তিনি বৃষ্টি দ্বারা মৃত জমিনকে ফসলের উপযোগী করেন :
اَلَمْ تَرَ اَنَّ اللهَ اَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَتُصْبِحُ الْاَ رْضُ مُخْضَرَّةً ؕ اِنَّ اللهَ لَطِيْفٌ خَبِيْرٌ
তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, আল্লাহ বারি বর্ষণ করেন আকাশ হতে যেন পৃথিবী সবুজ শ্যামল হয়ে উঠে? নিশ্চয় আল্লাহ সূক্ষ্মদর্শী ও পরিজ্ঞাত। (সূরা হজ্জ- ৬৩)
ব্যাখ্যা : لَطِيْفٌ (লাত্বিফ) শব্দের দু’টি অর্থ আছে। একটি অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি অত্যন্ত স্নেহ, মায়া ও বদান্যতাপ্রবণ। দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, তিনি অত্যন্ত সূক্ষ্মদর্শিতার সাথে তার এমন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রয়োজনের প্রতিও লক্ষ্য রাখেন, যেখানে কারো দৃষ্টি যায় না। সে প্রয়োজনগুলো তিনি এমনভাবে পূরণ করেন যে, বান্দা নিজেও উপলব্ধি করতে পারে না, কে কখন তার কোন্ প্রয়োজন পূরণ করছে।
وَهُوَ الَّذِيْ يُرْسِلُ الرِّيَاحَ بُشْرًا ۢبَيْنَ يَدَيْ رَحْمَتِهٖؕ حَتّٰۤى اِذَاۤ اَقَلَّتْ سَحَابًا ثِقَالًا سُقْنَاهُ لِبَلَدٍ مَّيِّتٍ فَاَنْزَلْنَا بِهِ الْمَآءَ فَاَخْرَجْنَا بِهٖ مِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِؕ كَذٰلِكَ نُخْرِجُ الْمَوْتٰى لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ
তিনিই স্বীয় অনুগ্রহে বায়ুকে সুসংবাদবাহীরূপে প্রেরণ করেন। যখন তা ঘন মেঘ বহন করে তখন আমি তা নির্জীব ভূখন্ডের দিকে চালনা করি, পরে তা হতে বৃষ্টি বর্ষণ করি, তারপর তার দ্বারা সর্বপ্রকার ফল উৎপাদন করি। (জেনে রেখো) এভাবেই আমি (কিয়ামতের দিন) মৃতকে (কবর থেকে) বের করে আনব, যেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। (সূরা আ‘রাফ- ৫৭)
তেল উৎপাদনের জন্য গাছ সৃষ্টি করেছেন :
وَشَجَرَةً تَخْرُجُ مِنْ طُوْرِ سَيْنَآءَ تَنْۢبُتُ بِالدُّهْنِ وَصِبْغٍ لِّلْاٰكِلِيْنَ
(আর আমি সৃষ্টি করি) এক বৃক্ষ, যা জন্মায় সিনাই পর্বতে। এতে উৎপন্ন হয় তৈল এবং আহারকারীদের জন্য ব্যঞ্জন। (সূরা মু’মিনূন- ২০)
বীজ থেকে গাছ বের করেন :
اِنَّ اللهَ فَالِقُ الْحَبِّ وَالنَّوٰىؕ يُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَمُخْرِجُ الْمَيِّتِ مِنَ الْحَيِّؕ ذٰلِكُمُ اللهُ فَاَنّٰى تُؤْفَكُوْنَ
আল্লাহই শস্য-বীজ ও আঁটি অঙ্কুরিত করেন, তিনিই প্রাণহীন হতে জীবন্তকে বের করেন এবং জীবন্ত হতে প্রাণহীনকে বের করেন। তিনিই তো আল্লাহ, সুতরাং তোমরা কোথায় ফিরে যাবে? (সূরা আন‘আম- ৯৫)
বিভিন্ন স্বাদবিশিষ্ট ফল ও বাগান বানিয়েছেন :ٰ
وَهُوَ الَّذِيْۤ اَنْشَاَ جَنَّاتٍ مَّعْرُوْشَاتٍ وَّغَيْرَ مَعْرُوْشَاتٍ وَّالنَّخْلَ وَالزَّرْعَ مُخْتَلِفًا اُكُلُهٗ - وَالزَّيْتُوْنَ وَالرُّمَّانَ مُتَشَابِهًا وَّغَيْرَ مُتَشَابِهٍؕ كُلُوْا مِنْ ثَمَرِهٖۤ اِذَاۤ اَثْمَرَ وَاٰتُوْا حَقَّهٗ يَوْمَ حَصَادِهٖ وَلَا تُسْرِفُوْاؕ اِنَّهٗ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِيْنَ
তিনিই লতা ও বৃক্ষ-উদ্যানসমূহ, খেজুর বৃক্ষ, বিভিন্ন স্বাদ বিশিষ্ট খাদ্যশস্য, যায়তুন ও ডালিম সৃষ্টি করেছেন- এগুলো একে অন্যের সাদৃশ্য এবং বৈসাদৃশ্য। সুতরাং যখন তা ফলবান হয় তখন তার ফল ভক্ষণ করো এবং ফসল তুলার দিন তার হক (ওশর) প্রদান করো। আর তোমরা অপচয় করো না; নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা আন‘আম- ১৪১)
সবকিছুই পরিমাণ মতো উৎপাদন করেন :
وَالْاَ رْضَ مَدَدْنَاهَا وَاَلْقَيْنَا فِيْهَا رَوَاسِيَ وَاَنْۢبَتْنَا فِيْهَا مِنْ كُلِّ شَيْءٍ مَّوْزُوْنٍ
আমি পৃথিবীকে বিস্তৃত করে দিয়েছি এবং তাতে পর্বতমালা স্থাপন করেছি। আর আমি তাতে প্রত্যেক বস্তু উৎপাদন করেছি সুপরিমিতভাবে। (সূরা হিজর- ১৯)
ব্যাখ্যা : এখানে আল্লাহর কুদরত, শক্তি ও জ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। উদ্ভিদের প্রতিটি প্রজাতির মধ্যে বংশবৃদ্ধির ক্ষমতা এত বেশি যে, যদি তার একটিমাত্র চারাকে দুনিয়ায় বংশ বৃদ্ধির সুযোগ দেয়া হয় তাহলে কয়েক বছরের মধ্যে পৃথিবীর চারদিকে শুধু তারই চারা দেখা যাবে, অন্য কোন উদ্ভিদের জন্য আর কোন জায়গা খালি থাকবে না। কিন্তু একজন মহাজ্ঞানী ও অসীম শক্তিধরের সুচিন্তিত পরিকল্পনা অনুযায়ী অসংখ্য প্রজাতির উদ্ভিদ এ বিশ্বচরাচরে উৎপন্ন হচ্ছে। প্রত্যেক প্রজাতির উৎপাদন একটি বিশেষ সীমায় পৌঁছে যাওয়ার পর থেমে যায়। এ প্রক্রিয়ার আরো একটি দিক হচ্ছে, প্রত্যেক প্রজাতির উদ্ভিদের আয়তন, বিস্তৃতি, উচ্চতা ও বিকাশের একটি সীমা নির্ধারিত আছে। কোন উদ্ভিদ এ সীমা অতিক্রম করতে পারে না। এর মাধ্যমে স্পষ্টভাবে জানা যায় যে, আল্লাহ প্রতিটি বৃক্ষ, এর চারা ও লতাপাতার জন্য উচ্চতা, আকৃতি, ফুল, ফল ও উৎপাদনের একটি পরিমাণ হিসাব করে নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
আল্লাহ পরিমাণের মধ্যে কমবেশি করেন না :
وَاِنْ مِّنْ شَيْءٍ اِلَّا عِنْدَنَا خَزَآئِنُهٗ وَمَا نُنَزِّلُهٗۤ اِلَّا بِقَدَرٍ مَّعْلُوْمٍ
আমারই নিকট আছে প্রত্যেক বস্তুর ভান্ডার এবং আমি তা পরিজ্ঞাত পরিমাণেই সরবরাহ করে থাকি। (সূরা হিজর- ২১)
ব্যাখ্যা : এখানে এ সত্যটি সম্পর্কে সজাগ করে দেয়া হয়েছে যে, সীমিত ও পরিকল্পিত প্রবৃদ্ধির এ নিয়ম কেবল উদ্ভিদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়; বরং যাবতীয় সৃষ্টির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। বাতাস, পানি, আলো, শীত, গ্রীষ্ম, জীব, জড়, উদ্ভিদ তথা প্রত্যেকটি জিনিস, প্রত্যেকটি প্রজাতি, প্রত্যেকটি শ্রেণি ও প্রত্যেকটি শক্তির জন্য আলাদা আলাদা সীমা নির্ধারিত রয়েছে। সবকিছুই নিজ নিজ সীমার মধ্যে অবস্থান করছে। তাদের জন্য যে পরিমাণ নির্ধারিত রয়েছে তার চেয়ে তারা কখনো বাড়েও না আবার কমেও না। একমাত্র আল্লাহর নির্ধারিত অবস্থার ফলে পৃথিবী থেকে আকাশ পর্যন্ত সমগ্র বিশ্বব্যবস্থায় ভারসাম্য ও সমন্বয় সাধিত হচ্ছে।
সকল প্রাণীর জীবিকার ব্যবস্থা করেন :
وَجَعَلْنَا لَكُمْ فِيْهَا مَعَايِشَ وَمَنْ لَّسْتُمْ لَهٗ بِرَازِقِيْنَ
আর তাতে জীবিকার ব্যবস্থা করেছি তোমাদের জন্য এবং তোমরা যাদের রিযিকদাতা নও, তাদের জন্যও। (সূরা হিজর- ২০)
প্রতিটি জিনিসকে পথনির্দেশ করেছেন :
رَبُّنَا الَّذِيْۤ اَعْطٰى كُلَّ شَيْءٍ خَلْقَهٗ ثُمَّ هَدٰى
আমাদের প্রতিপালক তিনিই, যিনি প্রত্যেক বস্তুকে তার আকৃতি দান করেছেন, অতঃপর পথনির্দেশ করেছেন। (সূরা ত্বা-হা- ৫০)
মানুষকে কান, চোখ ও বোধশক্তি দিয়েছেন :
وَاللهُ اَخْرَجَكُمْ مِّنْ ۢبُطُوْنِ اُمَّهَاتِكُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ شَيْئًا وَّجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْاَبْصَارَ وَالْاَفْئِدَةَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
আর আল্লাহ তোমাদেরকে নির্গত করেছেন তোমাদের মাতৃগর্ভ হতে এমন অবস্থায় যে, তোমরা কিছুই জানতে না। তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি এবং হৃদয়, যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা নাহল- ৭৮)
وَهُوَ الَّذِيْۤ اَنْشَاَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْاَبْصَارَ وَالْاَفْئِدَةَ قَلِيْلًا مَّا تَشْكُرُوْنَ
তিনিই তোমাদের জন্য কান, চোখ ও অমত্মর সৃষ্টি করেছেন; কিন্তু তোমরা খুব কমই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাক। (সূরা মু’মিনূন- ৭৮)
قُلْ هُوَ الَّذِيْۤ اَنْشَاَكُمْ وَجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْاَبْصَارَ وَالْاَفْئِدَةَ قَلِيْلًا مَّا تَشْكُرُوْنَ
বলো, তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদেরকে দিয়েছেন শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি ও অন্তর। তোমরা তো খুব কমই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাক। (সূরা মুলক- ২৩)
স্ত্রী ও সন্তান দান করেছেন :
وَاللهُ جَعَلَ لَكُمْ مِّنْ اَنْفُسِكُمْ اَزْوَاجًا وَّجَعَلَ لَكُمْ مِّنْ اَزْوَاجِكُمْ بَنِيْنَ وَحَفَدَةً وَّرَزَقَكُمْ مِّنَ الطَّيِّبَاتِ اَفَبِالْبَاطِلِ يُؤْمِنُوْنَ وَبِنِعْمَةِ اللهِ هُمْ يَكْفُرُوْنَ
আর আল্লাহ তোমাদের হতেই তোমাদের জোড়া সৃষ্টি করেছেন, তোমাদের যুগল হতে তোমাদের জন্য পুত্র-পৌত্রাদি সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ দান করেছেন। তবুও কি তারা মিথ্যার উপর বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং তারা কি আল্লাহর অনুগ্রহকে অস্বীকার করবে? (সূরা নাহল- ৭২)
মানুষকে জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন :
اَلَّذِيْ عَلَّمَ بِالْقَلَمِ ‐ عَلَّمَ الْاِنْسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ
যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না। (সূরা আলাক্ব- ৪, ৫)
কথা বলা শিখিয়েছেন :
خَلَقَ الْاِنْسَانَ ‐ - عَلَّمَهُ الْبَيَانَ
তিনিই সৃষ্টি করেছেন মানুষ, তিনি তাকে ভাব প্রকাশ করতে শিখিয়েছেন। (সূরা আর রহমান- ৩, ৪)
আল্লাহ কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন :
اَلرَّحْمٰنُ -‐ عَلَّمَ الْقُرْاٰنَ
পরম দয়াময় আল্লাহই শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন। (সূরা আর রহমান- ১, ২)
ব্যাখ্যা : এখানে আল্লাহ কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন বলার পরিবর্তে ‘রহমান’ শিক্ষা দিয়েছেন বলা হয়েছে। কারণ বান্দাদের হেদায়াতের জন্য কুরআন মাজীদ নাযিল করা সরাসরি আল্লাহর রহমত। যেহেতু তিনি তাঁর সৃষ্টির প্রতি অতীব দয়াবান; তাই তিনি তোমাদেরকে অন্ধকারে ছেড়ে দেয়া পছন্দ করেননি। তিনি তাঁর রহমতের দাবী অনুসারে এ কুরআন পাঠিয়ে তোমাদেরকে এমন জ্ঞান দান করেছেন, যার উপর পার্থিব জীবনে তোমাদের সত্যানুসরণ এবং পরকালীন জীবনের সফলতা নির্ভরশীল।
وَمَا بِكُمْ مِّنْ نِّعْمَةٍ فَمِنَ اللهِ ثُمَّ اِذَا مَسَّكُمُ الضُّرُّ فَاِلَيْهِ تَجْاَرُوْنَ
তোমাদের নিকট যে সমসত্ম নিয়ামত রয়েছে তা তো আল্লাহর নিকট হতেই (আসে); আবার যখন তোমাদেরকে দুঃখ-কষ্ট স্পর্শ করে তখন তোমরা তাঁকেই ব্যাকুলভাবে আহবান কর। (সূরা নাহল- ৫৩)
আল্লাহর নিয়ামত গুণে শেষ করা যাবে না :
وَاِنْ تَعُدُّوْا نِعْمَةَ اللهِ لَا تُحْصُوْهَا
তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করলে এর সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না। (সূরা নাহল- ১৮)
وَاِنْ تَعُدُّوْا نِعْمَةَ اللهِ لَا تُحْصُوْهَاۤ اِنَّ الْاِنْسَانَ لَظَلُوْمٌ كَفَّارٌ
আর যদি তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা কর, তবে তার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না। নিশ্চয় মানুষ অতি মাত্রায় যালিম ও অকৃতজ্ঞ। (সূরা ইবরাহীম- ৩৪)
মানুষের প্রয়োজনীয় সবই তিনি দিয়েছেন :
وَاٰتَاكُمْ مِّنْ كُلِّ مَا سَاَلْتُمُوْهُ
আর তোমরা তাঁর নিকট যা কিছু চেয়েছ তা হতে তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন। (সূরা ইবরাহীম- ৩৪)
মানুষের জন্য নিয়ামত পূর্ণ করে দিয়েছেন :
اَلَمْ تَرَوْا اَنَّ اللهَ سَخَّرَ لَكُمْ مَّا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَ رْضِ وَاَسْبَغَ عَلَيْكُمْ نِعَمَهٗ ظَاهِرَةً وَّبَاطِنَةً
তোমরা কি দেখ না যে, আল্লাহই তোমাদের কাজে নিয়োজিত রেখেছেন যা কিছু আছে আসমানে ও যা কিছু জমিনে (সবকিছুকে) এবং তিনিই তোমাদের প্রতি তাঁর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নিয়ামত পূর্ণ করে দিয়েছেন। (সূরা লুক্বমান- ২০)
ব্যাখ্যা : মানুষ যেসব নিয়ামত অনুভব করে, সেগুলো প্রকাশ্য নিয়ামত। আর তারা যেসব নিয়ামত সম্পর্কে জানে না এবং অনুভবও করে না, সেগুলো গোপন নিয়ামত। মানুষের শরীরে ও বাইরে এমন অগণিত জিনিস রয়েছে, যা দুনিয়ায় তার জন্য উপকারী। কিন্তু মানুষ অনুভবও করে না যে, স্রষ্টা তাদের জন্য তা সংরক্ষণ করে রেখেছেন। তার দ্বারা তাদের জীবিকা দান করেন, তার বিকাশ ঘটান এবং তার কল্যাণার্থে কত রকমের সাজ-সরঞ্জাম যোগাড় করেন। মহান আল্লাহ জীবনের প্রতিটি বিভাগে মানুষের যাবতীয় প্রয়োজন বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করেন, তারপর এক একটি প্রয়োজন পূর্ণ করার ব্যবস্থা করেন। তিনি কোন কোন দিক থেকে কোন ধরনের কী পরিমাণ উপকরণ তৈরি করে দিয়েছেন তার বিস্তারিত বিবরণ যদি কেউ লিখতে বসে, তাহলে একটি বই তৈরি হয়ে যাবে। যেমন পোশাক ও বাসস্থানের দিক দিয়ে আল্লাহর নিয়ামতের পূর্ণতা, খাদ্যোপকরণের দিক দিয়ে আল্লাহর নিয়ামতের পূর্ণতা ইত্যাদি। মোটকথা তিনি মানবজাতির ছোট-বড় সবধরনের প্রয়োজনের প্রতি দৃষ্টি রেখে অসংখ্য উপকরণ সৃষ্টি করেছেন এবং সকল ক্ষেত্রে তাদের উপর তাঁর নিয়ামতকে পূর্ণভাবে প্রদান করেছেন।
আল্লাহ আকাশকে বানিয়েছেন ছাদস্বরূপ :
وَجَعَلْنَا السَّمَآءَ سَقْفًا مَّحْفُوْظًاۚ وَهُمْ عَنْ اٰيَاتِهَا مُعْرِضُوْنَ
আর আকাশকে করেছি সুরক্ষিত ছাদ; কিন্তু তারা আকাশে অবস্থিত নিদর্শনাবলি হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়। (সূরা আম্বিয়া- ৩২)
তিনি আকাশকে আটকিয়ে রাখেন :
وَيُمْسِكُ السَّمَآءَ اَنْ تَقَعَ عَلَى الْاَ رْضِ اِلَّا بِاِذْنِهٖؕ اِنَّ اللهَ بِالنَّاسِ لَرَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ
আর তিনিই আকাশকে স্থির রাখেন, যাতে সেটা তাঁর অনুমতি ব্যতীত পৃথিবীর উপর পতিত না হয়। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। (সূরা হজ্জ- ৬৫)
চন্দ্র ও সূর্যকে বানিয়েছেন সময় গণনার মাধ্যম :
فَالِقُ الْاِصْبَاحِۚ وَجَعَلَ اللَّيْلَ سَكَنًا وَّالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ حُسْبَانًاؕ ذٰلِكَ تَقْدِيْرُ الْعَزِيْزِ الْعَلِيْمِ
তিনিই সকালকে প্রকাশ করেন, তিনিই বিশ্রামের জন্য এবং গণনার জন্য সূর্য ও চন্দ্র সৃষ্টি করেছেন; এসবই মহাপরাক্রমশালী ও মহাজ্ঞানীর (আল্লাহর) নির্ধারিত নিয়ম। (সূরা আন‘আম- ৯৬)
পৃথিবীকে বানিয়েছেন বিছানাস্বরূপ :
اَلَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ الْاَ رْضَ مَهْدًا
যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে করেছেন বিছানাস্বরূপ। (সূরা যুখরুফ- ১০)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ তা‘আলা এখানে পৃথিবীকে দোলনার সাথে এবং অন্য আয়াতে বিছানার সাথে তুলনা করেছেন। অর্থাৎ একটি শিশু যেভাবে তার দোলনার মধ্যে আরামে শুয়ে থাকে, মহাশূন্যে ভাসমান এই বিশাল গ্রহকে আল্লাহ তেমনি আরামের জায়গা বানিয়ে দিয়েছেন। এর অভ্যন্তরে রয়েছে এমন আগুন, যা পাথরকেও গলিয়ে দেয়। কিন্তু এ সত্ত্বেও স্রষ্টা তাকে এতটা শান্ত বানিয়ে দিয়েছেন যে, মানুষ এর উপর বসবাস করে কিন্তু অনুভব পর্যন্ত করতে পারে না যে, এটি মহাশূন্যে ঝুলন্ত গ্রহ। মানুষ এর পিঠের উপর নিরাপদে চলাফেরা করছে অথচ তাদের এ ধারণাও নেই যে, বন্দুকের গুলীর চেয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন গাড়িতে তারা অবস্থান করছে। বিনা দ্বিধায় তাকে খনন করছে এবং তার পেট থেকে রিযিক বের করছে; অথচ কখনো কখনো ভূমিকম্পের অতি সাধারণ কম্পনও জানিয়ে দেয় যে, এটা কত ভয়ঙ্কর স্থান।
মানুষের বসবাসের জায়গা করে দিয়েছেন :
وَهُوَ الَّذِيْۤ اَنْشَاَكُمْ مِّنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ فَمُسْتَقَرٌّ وَّمُسْتَوْدَعٌ ؕ قَدْ فَصَّلْنَا الْاٰيَاتِ لِقَوْمٍ يَّفْقَهُوْنَ
তিনিই তোমাদেরকে একই ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের জন্য দীর্ঘ ও স্বল্পকালীন বাসস্থান তৈরি করে দিয়েছেন। আর আমি অনুধাবনকারী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করে দিয়েছি। (সূরা আন‘আম- ৯৮)
পৃথিবীকে স্থির রাখতে পাহাড় স্থাপন করেছেন :
وَجَعَلْنَا فِى الْاَ رْضِ رَوَاسِيَ اَنْ تَمِيْدَ بِهِمْ وَجَعَلْنَا فِيْهَا فِجَاجًا سُبُلًا لَّعَلَّهُمْ يَهْتَدُوْنَ
আর আমি পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছি সুদৃঢ় পর্বত, যাতে পৃথিবী তাদেরকে নিয়ে এদিক-ওদিক ঢলে না যায়। আর আমি তাতে করে দিয়েছি প্রশসত্ম পথ, যাতে তারা গমত্মব্যস্থলে পৌঁছতে পারে। (সূরা আম্বিয়া- ৩১)
পৃথিবীতে রাস্তা তৈরি করেছেন :
وَاَلْقٰى فِى الْاَ رْضِ رَوَاسِيَ اَنْ تَمِيْدَ بِكُمْ وَاَنْهَارًا وَّسُبُلًا لَّعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ
আর তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বত স্থাপন করেছেন, যাতে পৃথিবী তোমাদেরকে নিয়ে আন্দোলিত না হয়। আর এতে স্থাপন করেছেন নদ-নদী ও পথ, যাতে তোমরা তোমাদের গমত্মব্যস্থলে পৌঁছতে পার। (সূরা নাহল- ১৫)
وَاللهُ جَعَلَ لَكُمُ الْاَ رْضَ بِسَاطًا ‐ - لِتَسْلُكُوْا مِنْهَا سُبُلًا فِجَاجًا
আর আল্লাহ তোমাদের জন্য ভূমিকে করেছেন বিস্তৃত, যাতে তোমরা এর প্রশস্ত পথে চলাফেরা করতে পার। (সূরা নূহ- ১৯, ২০)
وَجَعَلَ لَكُمْ فِيْهَا سُبُلًا لَّعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ
তিনি পৃথিবীতে তোমাদের জন্য চলার পথ তৈরি করেছেন, যাতে তোমরা সঠিক পথ পেতে পার। (সূরা যুখরুফ- ১০)
ব্যাখ্যা : পাহাড়ের মাঝে গিরিপথ এবং পাহাড়ী ও সমতল ভূমির অঞ্চলে নদী হচ্ছে সেই প্রাকৃতিক পথ, যা আল্লাহ তৈরি করেছেন। এসব পথ ধরেই মানুষ পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে। পর্বত শ্রেণিকে যদি কোন ফাঁক ছাড়া প্রাচীরের মতো করে দাঁড় করানো হতো এবং ভূপৃষ্ঠের কোথাও কোন সমুদ্র, নদী-নালা না থাকত তাহলে মানুষ যেখানে জন্মগ্রহণ করেছিল সেখানেই আবদ্ধ হয়ে পড়ত। আল্লাহ আরো অনুগ্রহ করেছেন এই যে, তিনি গোটা ভূপৃষ্ঠকে একই রকম করে সৃষ্টি করেননি, বরং তাতে নানা ধরনের এমনসব পার্থক্যসূচক চিহ্ন রেখে দিয়েছেন, যার সাহায্যে মানুষ বিভিন্ন এলাকা চিনতে পারে এবং এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলের পার্থক্য উপলব্ধি করতে পারে। এটা আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়, যার সাহায্যে পৃথিবীতে মানুষের চলাচল সহজ হয়েছে। মানুষ যখন বিশাল কোন মরুভূমিতে যায়, যেখানে মাইলের পর মাইল কোন পার্থক্যসূচক চিহ্ন থাকে না এবং সে কোথা থেকে কোথায় এসে পৌঁছেছে তা বুঝতে পারে না, তখন সে এই নিয়ামতের মর্যাদা বুঝতে পারে। এসব প্রাকৃতিক রাস্তা ও রাস্তার চিহ্নসমূহের সাহায্যে তোমরা তোমাদের পথ চিনে নিতে পার এবং যেখানে যেতে চাও সেখানে যেতে পার। বহু সংখ্যক স্রষ্টা মিলে এ ব্যবস্থা করেনি, বরং এক মহাজ্ঞানী পালনকর্তা আছেন, যিনি তাঁর বান্দাদের প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ্য রেখে পাহাড় ও সমতল ভূমিতে এসব রাস্তা বানিয়েছেন এবং পৃথিবীর একেকটি অঞ্চলকে ভিন্ন ভিন্ন আকৃতি দান করেছেন, যার সাহায্যে মানুষ এক অঞ্চলকে অন্য অঞ্চল থেকে আলাদা করে চিনতে পারে।
জমিনে মানুষের চলাফেরা করার ব্যবস্থা করেছেন :
هُوَ الَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ الْاَ رْضَ ذَلُوْلًا فَامْشُوْا فِيْ مَنَاكِبِهَا وَكُلُوْا مِنْ رِّزْقِهٖؕ وَاِلَيْهِ النُّشُوْرُ
তিনিই তো তোমাদের জন্য জমিনকে চলাচলের উপযোগী করে দিয়েছেন। অতএব তোমরা তার দিক-দিগন্তে ও রাস্তাসমূহে বিচরণ করো এবং তাঁর দেয়া রিযিক হতে আহার করো, (জেনে রেখো) তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। (সূরা মুলক- ১৫)
هُوَ الَّذِيْ يُسَيِّرُكُمْ فِى الْبَرِّ وَالْبَحْرِ
তিনিই তোমাদেরকে জলে-স্থলে ভ্রমণ করান। (সূরা ইউনুস- ২২)
পথ চেনার জন্য চিহ্ন ও তারকা বানিয়েছেন :
وَعَلَامَاتٍ ؕ وَبِالنَّجْمِ هُمْ يَهْتَدُوْنَ
আর (তিনি সৃষ্টি করেছেন) পথ নির্ণায়ক চিহুসমূহও। (তাছাড়া) তারা (মানুষ) নক্ষত্রের সাহায্যেও পথের নির্দেশনা পায়। (সূরা নাহল- ১৬)
সর্বত্র মানুষকে ছড়িয়ে দিয়েছেন :
هُوَ الَّذِيْ ذَرَاَكُمْ فِى الْاَ رْضِ وَاِلَيْهِ تُحْشَرُوْنَ
তিনিই তোমাদেরকে পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং তোমাদেরকে তাঁরই কাছে একত্রিত করা হবে।
(সূরা মুলক- ২৪)
মানুষের সফরের জন্য সওয়ারীর ব্যবস্থা করেছেন :
وَالْخَيْلَ وَالْبِغَالَ وَالْحَمِيْرَ لِتَرْكَبُوْهَا وَزِيْنَةًؕ وَيَخْلُقُ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ
তিনি তোমাদের আরোহণের জন্য ও শোভার জন্য সৃষ্টি করেছেন অশ্ব, অশ্বতর ও গর্দভ এবং তিনি সৃষ্টি করেছেন এমন অনেক কিছু, যা তোমরা অবগত নও। (সূরা নাহল- ৮)
وَجَعَلَ لَكُمْ مِّنَ الْفُلْكِ وَالْاَنْعَامِ مَا تَرْكَبُوْنَ ‐ - لِتَسْتَوُوْا عَلٰى ظُهُوْرِهٖ ثُمَّ تَذْكُرُوْا نِعْمَةَ رَبِّكُمْ اِذَا اسْتَوَيْتُمْ عَلَيْهِ وَتَقُوْلُوْا سُبْحَانَ الَّذِيْ سَخَّرَ لَنَا هٰذَا وَمَا كُنَّا لَهٗ مُقْرِنِيْنَ
যিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন এমন নৌযান ও চতুষ্পদ জন্তু, যাতে তোমরা আরোহণ কর। যাতে তোমরা ওদের পৃষ্ঠে স্থির হয়ে বসতে পার, তারপর তোমাদের প্রতিপালকের নিয়ামত স্মরণ কর যখন তোমরা ওর উপর স্থির হয়ে বস এবং বল, তিনি পবিত্র ও মহান, যিনি এদেরকে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন, যদিও আমরা এদেরকে বশীভূত করতে সক্ষম ছিলাম না। (সূরা যুখরুফ- ১২, ১৩)
মানুষের ঘরবাড়ি তৈরির ব্যবস্থা করেছেন :
وَاللهُ جَعَلَ لَكُمْ مِّنْ ۢبُيُوْتِكُمْ سَكَنًا وَّجَعَلَ لَكُمْ مِّنْ جُلُوْدِ الْاَنْعَامِ بُيُوْتًا تَسْتَخِفُّوْنَهَا يَوْمَ ظَعْنِكُمْ وَيَوْمَ اِقَامَتِكُمْ وَمِنْ اَصْوَافِهَا وَاَوْبَارِهَا وَاَشْعَارِهَاۤ اَثَاثًا وَّمَتَاعًا اِلٰى حِيْنٍ
আল্লাহ তোমাদের গৃহকে করেন আবাসস্থল এবং তিনি তোমাদের জন্য পশুচর্মের তাঁবুর ব্যবস্থা করেন, তোমরা এটাকে সহজ মনে কর ভ্রমণকালে এবং অবস্থানকালে। আর তিনি তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেন তাদের পশম, লোম ও কেশ হতে কিছু কালের গৃহসামগ্রী ও ব্যবহার-উপকরণ। (সূরা নাহল- ৮০)
পোশাক দিয়েছেন :
وَجَعَلَ لَكُمْ سَرَابِيْلَ تَقِيْكُمُ الْحَرَّ وَسَرَابِيْلَ تَقِيْكُمْ بَاْسَكُمْؕ كَذٰلِكَ يُتِمُّ نِعْمَتَهٗ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تُسْلِمُوْنَ
তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেন পরিধেয় বস্ত্রের, সেটা তোমাদেরকে তাপ হতে রক্ষা করে এবং তিনি তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেন বর্মের, সেটা তোমাদেরকে যুদ্ধক্ষেত্রে রক্ষা করে। এভাবে তিনি তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ পূর্ণ করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আত্মসমর্পণ কর। (সূরা নাহল- ৮১)
পাহাড়েও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছেন :
وَاللهُ جَعَلَ لَكُمْ مِّمَّا خَلَقَ ظِلَالًا وَّجَعَلَ لَكُمْ مِّنَ الْجِبَالِ اَكْنَانًا
আর আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তা হতে তিনি তোমাদের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করেন এবং তোমাদের জন্য পাহাড়ে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেন। (সূরা নাহল- ৮১)
মানুষকে বিভিন্নভাবে রোজগারের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন :
نَحْنُ قَسَمْنَا بَيْنَهُمْ مَّعِيْشَتَهُمْ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَرَفَعْنَا بَعْضَهُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِّيَتَّخِذَ بَعْضُهُمْ بَعْضًا سُخْرِيًّاؕ وَرَحْمَةُ رَبِّكَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُوْنَ
আমিই তাদের মধ্যে তাদের পার্থিব জীবনে জীবিকা বণ্টন করি এবং একজনকে অপর জনের উপর মর্যাদায় উন্নত করি, যেন একে অপরের দ্বারা খেদমত করিয়ে নিতে পারে। (জেনে রেখো) তারা যা জমা করে তোমার প্রতিপালকের রহমত তা হতে অনেক উৎকৃষ্টতর। (সূরা যুখরুফ- ৩২)
ব্যাখ্যা : একজনকেই সবকিছু অথবা সবাইকে সবকিছু না দেয়া আল্লাহর চিরস্থায়ী একটি নিয়ম। সাধারণভাবে লক্ষ্য করলেই আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে সর্বক্ষেত্রেই এ পার্থক্য নজরে পড়বে। আল্লাহ কাউকে কোন জিনিস দিয়ে থাকলে আরেকটি জিনিস থেকে তাকে বঞ্চিত করেছেন এবং সেটি অন্য কাউকে দিয়েছেন। এমনটি করার কারণ হলো, কোন মানুষই যেন অন্য মানুষদের মুখাপেক্ষিতা থেকে মুক্ত না হয়। আল্লাহ একজনের মধ্যেই জ্ঞান, বুদ্ধি, সম্পদ, সৌন্দর্য, ক্ষমতা, কর্তৃত্ব এবং অন্যসব পূর্ণতার সমাবেশ ঘটাননি এবং কাউকে সবকিছু থেকে বঞ্চিতও করেননি। পৃথিবীতে জীবন-যাপন করার যে সাধারণ উপায়-উপকরণ আছে তার বণ্টনব্যবস্থাও আল্লাহ নিজের হাতেই রেখেছেন, অন্য কারো হাতে তুলে দেননি। আল্লাহ কাউকে সুশ্রী, কাউকে কুশ্রী, কাউকে শক্তিশালী এবং কাউকে দুর্বল, কাউকে মেধাবী এবং কাউকে মেধাহীন, কাউকে সুস্থ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অধিকারী, কাউকে বিকলাঙ্গ, অন্ধ অথবা বোবা, কাউকে আমীরের পুত্র এবং কাউকে গরীবের পুত্র, কাউকে উন্নতজাতির সদস্য এবং কাউকে পরাধীন হিসেবে সৃষ্টি করে থাকেন। জন্মগত এই ভাগ্যের ব্যাপারে কেউ সামান্যতম কর্তৃত্বও খাটাতে পারে না। আল্লাহ যাকে যা বানিয়েছেন সে তা-ই হতে বাধ্য; কারো তাকদীরের উপর জন্মগত অবস্থার যে প্রভাবই পড়ে তা পাল্টে দেয়ার সাধ্য কারো নেই। তাছাড়া আল্লাহই মানুষের মধ্যে রিযিক, ক্ষমতা, মর্যাদা, খ্যাতি, সম্পদ ও শাসন কর্তৃত্ব ইতাদি বণ্টন করেছেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে যে সম্মান লাভ করে কেউ তার মর্যাদাহানি করতে পারে না। আর আল্লাহর পক্ষ থেকে যার জন্য দুর্ভাগ্য ও অধঃপতন এসে যায় কেউ তাকে পতন থেকে রক্ষা করতে পারে না। আল্লাহর সিদ্ধান্তের মুকাবিলায় মানুষের সমস্ত চেষ্টা ও কৌশল কোন কাজেই আসে না।
মালামাল পরিবহনের ব্যবস্থা করেছেন :
وَتَحْمِلُ اَثْقَالَكُمْ اِلٰى بَلَدٍ لَّمْ تَكُوْنُوْا بَالِغِيْهِ اِلَّا بِشِقِّ الْاَنْفُسِؕ اِنَّ رَبَّكُمْ لَرَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ
আর পশুরা তোমাদের ভার বহন করে নিয়ে যায় এমন দেশে, যেথায় প্রাণামত্ম ক্লেশ ব্যতীত তোমরা পৌঁছতে পারতে না। নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক খুবই দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। (সূরা নাহল- ৭)
সমুদ্রে নৌকা চলার ব্যবস্থা করেছেন :
سَخَّرَ لَكُمُ الْفُلْكَ لِتَجْرِيَ فِى الْبَحْرِ بِاَمْرِهٖؕ وَسَخَّرَ لَكُمُ الْاَنْهَارَ
তিনি নৌযানকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, যেন তাঁর নির্দেশে সেটা সমুদ্রে বিচরণ করে এবং তিনি নদীসমূহকে তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন। (সূরা ইবরাহীম- ৩২)
আল্লাহ রিযিক তালাশের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন :
رَبُّكُمُ الَّذِيْ يُزْجِيْ لَكُمُ الْفُلْكَ فِى الْبَحْرِ لِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِهٖؕ اِنَّهٗ كَانَ بِكُمْ رَحِيْمًا
তিনিই তোমাদের প্রতিপালক, যিনি তোমাদের জন্য সমুদ্রে নৌযান পরিচালিত করেন, যেন তোমরা তাঁর অনুগ্রহ (রিযিক) সন্ধান করতে পার। নিশ্চয় তিনি তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৬৬)
রাতে বিশ্রাম ও দিনে রিযিক তালাশের সুযোগ করে দিয়েছেন :
وَمِنْ رَّحْمَتِهٖ جَعَلَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ لِتَسْكُنُوْا فِيْهِ وَلِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِهٖ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
তিনিই তাঁর দয়ায় তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন রাত ও দিন, যেন তোমরা তাতে বিশ্রাম করতে পার এবং তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার। হয়তো তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। (সূরা ক্বাসাস- ৭৩)
উত্তম রিযিক দান করেছেন :
وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِيْۤ اٰدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِى الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُمْ مِّنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلٰى كَثِيْرٍ مِّمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيْلًا
আমি তো আদম সমত্মানকে মর্যাদা দান করেছি, স্থলে ও সমুদ্রে তাদের চলাচলের বাহন দিয়েছি, তাদেরকে উত্তম রিযিক দান করেছি এবং আমি যাদেরকে সৃষ্টি করেছি তাদের অনেকের উপর তাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৭০)
আগুন জ্বালানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন :
اَلَّذِيْ جَعَلَ لَكُمْ مِّنَ الشَّجَرِ الْاَخْضَرِ نَارًا فَاِذَاۤ اَنْتُمْ مِّنْهُ تُوْقِدُوْنَ
যিনি সবুজ গাছ থেকে তোমাদের জন্য আগুন উৎপন্ন করেন, অতঃপর তোমরা তা থেকে (আগুন) জ্বালাও। (সূরা ইয়াসীন- ৮০)
পৃথিবীর সবকিছু মানুষের অধীন করে দিয়েছেন :
اَنَّ اللهَ سَخَّرَ لَكُمْ مَّا فِى الْاَ رْضِ وَالْفُلْكَ تَجْرِيْ فِى الْبَحْرِ بِاَمْرِهٖ
তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবকিছুকে আল্লাহ তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন এবং তাঁরই নির্দেশে সমুদ্রে বিচরণশীল নৌযানসমূহকেও (তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন)? (সূরা হজ্জ- ৬৫)
وَسَخَّرَ لَكُمُ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ دَآئِبَيْنِۚ وَسَخَّرَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ
তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, যারা অবিরাম একই নিয়মের অনুগামী। আর তিনি রাত ও দিনকেও তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন। (সূরা ইবরাহীম- ৩৩)
اَلَمْ تَرَوْا اَنَّ اللهَ سَخَّرَ لَكُمْ مَّا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَ رْضِ
তোমরা কি লক্ষ্য কর না যে, আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে, সবকিছুই আল্লাহ তোমাদের জন্য নিয়োজিত রেখেছেন। (সূরা লুক্বমান- ২০)
وَسَخَّرَ لَكُمْ مَّا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَ رْضِ جَمِيْعًا مِّنْهُؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ
তিনি তোমাদের জন্য নিয়োজিত করে দিয়েছেন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মধ্যে যা কিছু রয়েছে সবকিছু। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা জাসিয়া- ১৩)
ব্যাখ্যা : কোন জিনিসকে কারো জন্য অনুগত করে দেয়ার অর্থ হচ্ছে, ঐ জিনিসকে তার অধীন করে দেয়া। ঐ জিনিসকে নিজের অধীনে নিয়ে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে ব্যবহার ও ক্ষমতা প্রয়োগ করা। যেমন পৃথিবী ও আকাশের সমস্ত জিনিসকে অর্থাৎ আগুন, পানি, মাটি, উদ্ভিদ, খনিজ পদার্থ, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র ইত্যাদিকে আল্লাহ তা‘আলা মানুষের অনুগত করে দিয়েছেন।
তিনি মানুষের জীবিকা উৎপন্ন করেন :
يُنْۢبِتُ لَكُمْ بِهِ الزَّرْعَ وَالزَّيْتُوْنَ وَالنَّخِيْلَ وَالْاَعْنَابَ وَمِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ
তিনি তাদের জন্য তা দ্বারা উৎপন্ন করেন শস্য, যায়তুন, খেজুর বৃক্ষ, আঙ্গুর এবং সর্বপ্রকার ফল। অবশ্যই এতে চিমত্মাশীল সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা নাহল- ১১)
اَخْرَجَ مِنْهَا مَآءَهَا وَمَرْعَاهَا
তিনি তা থেকে বের করেছেন পানি ও চারণভূমি। (সূরা নাযি‘আত- ৩১)
পশু পালনের মধ্যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দিয়েছেন :
وَلَكُمْ فِيْهَا جَمَالٌ حِيْنَ تُرِيْحُوْنَ وَحِيْنَ تَسْرَحُوْنَ
আর যখন তোমরা তাদেরকে গোধূলি লগ্নে চারণভূমি হতে গৃহে নিয়ে আস এবং প্রভাতে তাদেরকে চারণভূমিতে নিয়ে যাও তখন তোমরা তার সৌন্দর্য উপভোগ কর। (সূরা নাহল- ৬)
চামড়ার উপকরণ ও গোশত দিয়েছেন :
وَالْاَنْعَامَ خَلَقَهَا لَكُمْ فِيْهَا دِفْءٌ وَّمَنَافِعُ وَمِنْهَا تَاْكُلُوْنَ
তিনি চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন; তাতে তোমাদের জন্য রয়েছে শীত নিবারক উপকরণ ও বহু উপকার। আর তা হতে তোমরা আহার করে থাক। (সূরা নাহল- ৫)
পশুর পশমকেও উপকারী করেছেন :
وَمِنْ اَصْوَافِهَا وَاَوْبَارِهَا وَاَشْعَارِهَاۤ اَثَاثًا وَّمَتَاعًا اِلٰى حِيْنٍ
তিনি তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেন তাদের পশম, লোম ও কেশ হতে কিছু কালের গৃহসামগ্রী ও ব্যবহার-উপকরণ। (সূরা নাহল- ৮০)
মেঘ বহনকারী বাতাস প্রেরণ করেন :
وَاللهُ الَّذِيْۤ اَرْسَلَ الرِّيَاحَ فَتُثِيْرُ سَحَابًا فَسُقْنَاهُ اِلٰى بَلَدٍ مَّيِّتٍ فَاَحْيَيْنَا بِهِ الْاَ رْضَ بَعْدَ مَوْتِهَاؕ كَذَالِكَ النُّشُوْرُ
আর তিনিই আল্লাহ যিনি বাতাস প্রেরণ করেন, তারপর তা মেঘমালাকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। অতঃপর আমি তা পরিচালিত করি মৃত ভূখন্ডের দিকে, তারপর আমি তা দিয়ে জমিনকে তার মৃত্যুর পর জীবিত করে দেই। ঠিক এভাবেই (একদিন মানুষেরও) পুনরুত্থান (হবে)। (সূরা ফাতির- ৯)
আল্লাহ আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করেন :
وَاَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَخْرَجَ بِهٖ مِنَ الثَّمَرَاتِ رِزْقًا لَّكُمْۚ فَلَا تَجْعَلُوْا لِلّٰهِ اَنْدَادًا وَّاَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
যিনি আকাশ হতে পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর তার দ্বারা তোমাদের জন্য জীবিকাস্বরূপ ফলসমূহ উৎপাদন করেন। অতএব তোমরা জেনে শুনে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করো না। (সূরা বাক্বারা- ২২)
وَهُوَ الَّذِيْۤ اَرْسَلَ الرِّيَاحَ بُشْرًا ۢبَيْنَ يَدَيْ رَحْمَتِهٖۚ وَاَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَآءِ مَآءً طَهُوْرًا
আর তিনি নিজ অনুগ্রহের প্রাক্কালে সুসংবাদবাহী বায়ু প্রেরণ করেন এবং আকাশ হতে বিশুদ্ধ পানি বর্ষণ করেন। (সূরা ফুরক্বান- ৪৮)
প্রাণীকুলের পিপাসা নিবারণ করেন :
لِنُحْيِيَ بِهٖ بَلْدَةً مَّيْتًا وَّنُسْقِيَهٗ مِمَّا خَلَقْنَاۤ اَنْعَامًا وَّاَنَاسِيَّ كَثِيْرًا
যার দ্বারা আমি মৃত ভূখন্ডকে সঞ্জীবিত করি এবং আমার সৃষ্টির মধ্যে বহু জীবজন্তু ও মানুষকে তা পান করাই। (সূরা ফুরক্বান- ৪৯)
وَاَرْسَلْنَا الرِّيَاحَ لَوَاقِحَ فَاَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَسْقَيْنَاكُمُوْهُۚ وَمَاۤ اَنْتُمْ لَهٗ بِخَازِنِيْنَ
আমি বৃষ্টি বহনকারী বায়ু প্রেরণ করি, তারপর আমিই আকাশ হতে পানি বর্ষণ করি। অতঃপর তোমাদেরকে তা পান করাই; তোমরা নিজেরা তো এর কোন ভান্ডার জমা করে রাখনি (যে, সেখান থেকে এসব আসছে)। (সূরা হিজর- ২২)
পানি দ্বারা ফসল উৎপাদন করেন :
فَاَنْشَاْنَا لَكُمْ بِهٖ جَنَّاتٍ مِّنْ نَّخِيْلٍ وَّاَعْنَابٍ لَّكُمْ فِيْهَا فَوَاكِهُ كَثِيْرَةٌ وَّمِنْهَا تَاْكُلُوْنَ
অতঃপর আমি এর দ্বারা তোমাদের জন্য খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান উৎপাদন করি। তোমাদের জন্য এতে আছে প্রচুর ফল; আর তোমরা তা হতে আহার করে থাক। (সূরা মু’মিনূন- ১৯)
পৃথিবীর পানিকে সংরক্ষণ করেন :
وَاَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَآءِ مَآءً ۢبِقَدَرٍ فَاَسْكَنَّاهُ فِى الْاَ رْضِ وَاِنَّا عَلٰى ذَهَابٍ ۢبِهٖ لَقَادِرُوْنَ
আর আমিই আকাশ হতে পানি বর্ষণ করি পরিমিত হারে। অতঃপর আমি তা মাটিতে সংরক্ষণ করি; আর আমি তাকে অপসারণ করতেও সক্ষম। (সূরা মু’মিনূন- ১৮)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ প্রত্যেক অঞ্চলের জন্য বৃষ্টির একটা গড় পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন, যা দীর্ঘকাল যাবৎ প্রতি বছর একইভাবে চলতে থাকে। তাছাড়া তিনি বিভিন্ন মওসুমের বিভিন্ন সময়ে বৃষ্টিকে বিক্ষিপ্ত করে বর্ষণ করেন, যা ভূমির উৎপাদন ক্ষমতার জন্য উপকারী। এ ব্যবস্থা আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী চলছে। একটি দেশের বৃষ্টিপাতের গড় পরিবর্তন কিংবা পৃথিবীর ব্যাপক এলাকায় তার বণ্টন হারে কোন পার্থক্য সৃষ্টি করা, অথবা কোন তুফানকে রোধ করা বা বৃষ্টিকে নিজ দেশে বর্ষণ করার জন্য বাধ্য করার সাধ্য কারো নেই।
দুই সাগরের মধ্যখানে পর্দা সৃষ্টি করেছেন :
هُوَ الَّذِيْ مَرَجَ الْبَحْرَيْنِ هٰذَا عَذْبٌ فُرَاتٌ وَّهٰذَا مِلْحٌ اُجَاجٌۚ وَجَعَلَ بَيْنَهُمَا بَرْزَخًا وَّحِجْرًا مَّحْجُوْرًا
তিনিই দু’টি দরিয়াকে মিলিতভাবে প্রবাহিত করেছেন, একটি মিষ্ট ও সুপেয় এবং অপরটি লোনা ও ক্ষার। আর উভয়ের মধ্যে রেখেছেন এক অমত্মরায় ও অনতিক্রম্য ব্যবধান। (সূরা ফুরক্বান- ৫৩)
ব্যাখ্যা : যেখানে কোন বড় নদী এসে সাগরে পড়ে এমন প্রত্যেক জায়গায় এ অবস্থা হয়। এছাড়া সমুদ্রের মধ্যেও বিভিন্ন জায়গায় মিঠা পানির স্রোত পাওয়া যায়। সমুদ্রের ভীষণ লবণাক্ত পানির মধ্যেও সে তার মিষ্টতা পুরোপুরি বজায় রাখে। এ হচ্ছে আয়াতের বাহ্যিক বিষয়বস্তু, যা আল্লাহ তা‘আলার একক ইলাহ্ ও একক রব হওয়ার প্রমাণ বহন করে। কিন্তু এসব শব্দাবলির অভ্যন্তর থেকে একটি সূক্ষ্ম ইশারা অন্য একটি বিষয়বস্তুর সন্ধান দেয়। সেটি হচ্ছে, মানবসমাজের সমুদ্র যতই লোনা হয়ে থাক না কেন, আল্লাহ যখনই চান তার তলদেশ থেকে একটি সৎকর্মশীল দলের মিঠা স্রোত বের করে আনতে পারেন। ফলে তাগুতের লোনা পানির তরঙ্গ যতই শক্তি প্রয়োগ করুক না কেন, তারা এই স্রোত গ্রাস করতে সক্ষম হবে না।
مَرَجَ الْبَحْرَيْنِ يَلْتَقِيَانِ ‐ - بَيْنَهُمَا بَرْزَخٌ لَّا يَبْغِيَانِ
তিনি দু’টি সমুদ্রকে প্রবাহিত করেন, যারা পরস্পর মিলিত হয়। আর এ দু’য়ের মধ্যে রয়েছে এক অন্তরাল, যা তারা অতিক্রম করতে পারে না। (সূরা আর রহমান- ১৯, ২০)
সমুদ্রে মাছ ও অলঙ্কার দিয়েছেন :
هُوَ الَّذِيْ سَخَّرَ الْبَحْرَ لِتَاْكُلُوْا مِنْهُ لَحْمًا طَرِيًّا وَّتَسْتَخْرِجُوْا مِنْهُ حِلْيَةً تَلْبَسُوْنَهَاۚ وَتَرَى الْفُلْكَ مَوَاخِرَ فِيْهِ وَلِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِهٖ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
তিনিই সমুদ্রকে তোমাদের অধীনস্থ করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা তা হতে তাজা গোশত (মাছ) ভক্ষণ করতে পার এবং তা হতে গহনা আহরণ করতে পার, যা তোমরা ভূষণরূপে পরিধান কর। আর তোমরা দেখতে পাও যে, এর বুক চিরে নৌযান চলাচল করে। এটা এজন্য যে, তোমরা যেন তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা নাহল- ১৪)
وَمَا يَسْتَوِى الْبَحْرَانِ هٰذَا عَذْبٌ فُرَاتٌ سَآئِغٌ شَرَابُهٗ وَهٰذَا مِلْحٌ اُجَاجٌؕ وَّمِنْ كُلٍّ تَاْكُلُوْنَ لَحْمًا طَرِيًّا وَّتَسْتَخْرِجُوْنَ حِلْيَةً تَلْبَسُوْنَهَاۚ وَتَرَى الْفُلْكَ فِيْهِ مَوَاخِرَ لِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِهٖ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
আর দু’টি সমুদ্র সমান নয়- একটি মিঠা পানিবিশিষ্ট, যা পিপাসা দূর করে এবং এর পানি পান করা সহজ। আর অপরটির পানি লবণাক্ত ও বিস্বাদ। তোমরা প্রত্যেকটি থেকেই টাটকা গোশত (মাছ) ভক্ষণ কর এবং মণি-মুক্তার অলঙ্কার আহরণ কর, যা তোমরা পরিধান কর। আর তুমি দেখতে পাও যে, তার বুক চিরে জাহাজ চলাচল করে। এটা এজন্য যে, যেন তোমরা তাঁর অনুগ্রহ তালাশ করতে পার এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা ফাতির- ১২)
يَخْرُجُ مِنْهُمَا اللُّؤْلُؤُ وَالْمَرْجَانُ
উভয় সমুদ্র হতে উৎপন্ন হয় মুক্তা ও প্রবাল। (সূরা আর রহমান- ২২)
তিনি বৃষ্টি দ্বারা মৃত জমিনকে ফসলের উপযোগী করেন :
اَلَمْ تَرَ اَنَّ اللهَ اَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَتُصْبِحُ الْاَ رْضُ مُخْضَرَّةً ؕ اِنَّ اللهَ لَطِيْفٌ خَبِيْرٌ
তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, আল্লাহ বারি বর্ষণ করেন আকাশ হতে যেন পৃথিবী সবুজ শ্যামল হয়ে উঠে? নিশ্চয় আল্লাহ সূক্ষ্মদর্শী ও পরিজ্ঞাত। (সূরা হজ্জ- ৬৩)
ব্যাখ্যা : لَطِيْفٌ (লাত্বিফ) শব্দের দু’টি অর্থ আছে। একটি অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি অত্যন্ত স্নেহ, মায়া ও বদান্যতাপ্রবণ। দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, তিনি অত্যন্ত সূক্ষ্মদর্শিতার সাথে তার এমন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রয়োজনের প্রতিও লক্ষ্য রাখেন, যেখানে কারো দৃষ্টি যায় না। সে প্রয়োজনগুলো তিনি এমনভাবে পূরণ করেন যে, বান্দা নিজেও উপলব্ধি করতে পারে না, কে কখন তার কোন্ প্রয়োজন পূরণ করছে।
وَهُوَ الَّذِيْ يُرْسِلُ الرِّيَاحَ بُشْرًا ۢبَيْنَ يَدَيْ رَحْمَتِهٖؕ حَتّٰۤى اِذَاۤ اَقَلَّتْ سَحَابًا ثِقَالًا سُقْنَاهُ لِبَلَدٍ مَّيِّتٍ فَاَنْزَلْنَا بِهِ الْمَآءَ فَاَخْرَجْنَا بِهٖ مِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِؕ كَذٰلِكَ نُخْرِجُ الْمَوْتٰى لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ
তিনিই স্বীয় অনুগ্রহে বায়ুকে সুসংবাদবাহীরূপে প্রেরণ করেন। যখন তা ঘন মেঘ বহন করে তখন আমি তা নির্জীব ভূখন্ডের দিকে চালনা করি, পরে তা হতে বৃষ্টি বর্ষণ করি, তারপর তার দ্বারা সর্বপ্রকার ফল উৎপাদন করি। (জেনে রেখো) এভাবেই আমি (কিয়ামতের দিন) মৃতকে (কবর থেকে) বের করে আনব, যেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। (সূরা আ‘রাফ- ৫৭)
তেল উৎপাদনের জন্য গাছ সৃষ্টি করেছেন :
وَشَجَرَةً تَخْرُجُ مِنْ طُوْرِ سَيْنَآءَ تَنْۢبُتُ بِالدُّهْنِ وَصِبْغٍ لِّلْاٰكِلِيْنَ
(আর আমি সৃষ্টি করি) এক বৃক্ষ, যা জন্মায় সিনাই পর্বতে। এতে উৎপন্ন হয় তৈল এবং আহারকারীদের জন্য ব্যঞ্জন। (সূরা মু’মিনূন- ২০)
বীজ থেকে গাছ বের করেন :
اِنَّ اللهَ فَالِقُ الْحَبِّ وَالنَّوٰىؕ يُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَمُخْرِجُ الْمَيِّتِ مِنَ الْحَيِّؕ ذٰلِكُمُ اللهُ فَاَنّٰى تُؤْفَكُوْنَ
আল্লাহই শস্য-বীজ ও আঁটি অঙ্কুরিত করেন, তিনিই প্রাণহীন হতে জীবন্তকে বের করেন এবং জীবন্ত হতে প্রাণহীনকে বের করেন। তিনিই তো আল্লাহ, সুতরাং তোমরা কোথায় ফিরে যাবে? (সূরা আন‘আম- ৯৫)
বিভিন্ন স্বাদবিশিষ্ট ফল ও বাগান বানিয়েছেন :ٰ
وَهُوَ الَّذِيْۤ اَنْشَاَ جَنَّاتٍ مَّعْرُوْشَاتٍ وَّغَيْرَ مَعْرُوْشَاتٍ وَّالنَّخْلَ وَالزَّرْعَ مُخْتَلِفًا اُكُلُهٗ - وَالزَّيْتُوْنَ وَالرُّمَّانَ مُتَشَابِهًا وَّغَيْرَ مُتَشَابِهٍؕ كُلُوْا مِنْ ثَمَرِهٖۤ اِذَاۤ اَثْمَرَ وَاٰتُوْا حَقَّهٗ يَوْمَ حَصَادِهٖ وَلَا تُسْرِفُوْاؕ اِنَّهٗ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِيْنَ
তিনিই লতা ও বৃক্ষ-উদ্যানসমূহ, খেজুর বৃক্ষ, বিভিন্ন স্বাদ বিশিষ্ট খাদ্যশস্য, যায়তুন ও ডালিম সৃষ্টি করেছেন- এগুলো একে অন্যের সাদৃশ্য এবং বৈসাদৃশ্য। সুতরাং যখন তা ফলবান হয় তখন তার ফল ভক্ষণ করো এবং ফসল তুলার দিন তার হক (ওশর) প্রদান করো। আর তোমরা অপচয় করো না; নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা আন‘আম- ১৪১)
সবকিছুই পরিমাণ মতো উৎপাদন করেন :
وَالْاَ رْضَ مَدَدْنَاهَا وَاَلْقَيْنَا فِيْهَا رَوَاسِيَ وَاَنْۢبَتْنَا فِيْهَا مِنْ كُلِّ شَيْءٍ مَّوْزُوْنٍ
আমি পৃথিবীকে বিস্তৃত করে দিয়েছি এবং তাতে পর্বতমালা স্থাপন করেছি। আর আমি তাতে প্রত্যেক বস্তু উৎপাদন করেছি সুপরিমিতভাবে। (সূরা হিজর- ১৯)
ব্যাখ্যা : এখানে আল্লাহর কুদরত, শক্তি ও জ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। উদ্ভিদের প্রতিটি প্রজাতির মধ্যে বংশবৃদ্ধির ক্ষমতা এত বেশি যে, যদি তার একটিমাত্র চারাকে দুনিয়ায় বংশ বৃদ্ধির সুযোগ দেয়া হয় তাহলে কয়েক বছরের মধ্যে পৃথিবীর চারদিকে শুধু তারই চারা দেখা যাবে, অন্য কোন উদ্ভিদের জন্য আর কোন জায়গা খালি থাকবে না। কিন্তু একজন মহাজ্ঞানী ও অসীম শক্তিধরের সুচিন্তিত পরিকল্পনা অনুযায়ী অসংখ্য প্রজাতির উদ্ভিদ এ বিশ্বচরাচরে উৎপন্ন হচ্ছে। প্রত্যেক প্রজাতির উৎপাদন একটি বিশেষ সীমায় পৌঁছে যাওয়ার পর থেমে যায়। এ প্রক্রিয়ার আরো একটি দিক হচ্ছে, প্রত্যেক প্রজাতির উদ্ভিদের আয়তন, বিস্তৃতি, উচ্চতা ও বিকাশের একটি সীমা নির্ধারিত আছে। কোন উদ্ভিদ এ সীমা অতিক্রম করতে পারে না। এর মাধ্যমে স্পষ্টভাবে জানা যায় যে, আল্লাহ প্রতিটি বৃক্ষ, এর চারা ও লতাপাতার জন্য উচ্চতা, আকৃতি, ফুল, ফল ও উৎপাদনের একটি পরিমাণ হিসাব করে নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
আল্লাহ পরিমাণের মধ্যে কমবেশি করেন না :
وَاِنْ مِّنْ شَيْءٍ اِلَّا عِنْدَنَا خَزَآئِنُهٗ وَمَا نُنَزِّلُهٗۤ اِلَّا بِقَدَرٍ مَّعْلُوْمٍ
আমারই নিকট আছে প্রত্যেক বস্তুর ভান্ডার এবং আমি তা পরিজ্ঞাত পরিমাণেই সরবরাহ করে থাকি। (সূরা হিজর- ২১)
ব্যাখ্যা : এখানে এ সত্যটি সম্পর্কে সজাগ করে দেয়া হয়েছে যে, সীমিত ও পরিকল্পিত প্রবৃদ্ধির এ নিয়ম কেবল উদ্ভিদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়; বরং যাবতীয় সৃষ্টির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। বাতাস, পানি, আলো, শীত, গ্রীষ্ম, জীব, জড়, উদ্ভিদ তথা প্রত্যেকটি জিনিস, প্রত্যেকটি প্রজাতি, প্রত্যেকটি শ্রেণি ও প্রত্যেকটি শক্তির জন্য আলাদা আলাদা সীমা নির্ধারিত রয়েছে। সবকিছুই নিজ নিজ সীমার মধ্যে অবস্থান করছে। তাদের জন্য যে পরিমাণ নির্ধারিত রয়েছে তার চেয়ে তারা কখনো বাড়েও না আবার কমেও না। একমাত্র আল্লাহর নির্ধারিত অবস্থার ফলে পৃথিবী থেকে আকাশ পর্যন্ত সমগ্র বিশ্বব্যবস্থায় ভারসাম্য ও সমন্বয় সাধিত হচ্ছে।
সকল প্রাণীর জীবিকার ব্যবস্থা করেন :
وَجَعَلْنَا لَكُمْ فِيْهَا مَعَايِشَ وَمَنْ لَّسْتُمْ لَهٗ بِرَازِقِيْنَ
আর তাতে জীবিকার ব্যবস্থা করেছি তোমাদের জন্য এবং তোমরা যাদের রিযিকদাতা নও, তাদের জন্যও। (সূরা হিজর- ২০)
প্রতিটি জিনিসকে পথনির্দেশ করেছেন :
رَبُّنَا الَّذِيْۤ اَعْطٰى كُلَّ شَيْءٍ خَلْقَهٗ ثُمَّ هَدٰى
আমাদের প্রতিপালক তিনিই, যিনি প্রত্যেক বস্তুকে তার আকৃতি দান করেছেন, অতঃপর পথনির্দেশ করেছেন। (সূরা ত্বা-হা- ৫০)
মানুষকে কান, চোখ ও বোধশক্তি দিয়েছেন :
وَاللهُ اَخْرَجَكُمْ مِّنْ ۢبُطُوْنِ اُمَّهَاتِكُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ شَيْئًا وَّجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْاَبْصَارَ وَالْاَفْئِدَةَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
আর আল্লাহ তোমাদেরকে নির্গত করেছেন তোমাদের মাতৃগর্ভ হতে এমন অবস্থায় যে, তোমরা কিছুই জানতে না। তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি এবং হৃদয়, যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা নাহল- ৭৮)
وَهُوَ الَّذِيْۤ اَنْشَاَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْاَبْصَارَ وَالْاَفْئِدَةَ قَلِيْلًا مَّا تَشْكُرُوْنَ
তিনিই তোমাদের জন্য কান, চোখ ও অমত্মর সৃষ্টি করেছেন; কিন্তু তোমরা খুব কমই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাক। (সূরা মু’মিনূন- ৭৮)
قُلْ هُوَ الَّذِيْۤ اَنْشَاَكُمْ وَجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْاَبْصَارَ وَالْاَفْئِدَةَ قَلِيْلًا مَّا تَشْكُرُوْنَ
বলো, তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদেরকে দিয়েছেন শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি ও অন্তর। তোমরা তো খুব কমই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাক। (সূরা মুলক- ২৩)
স্ত্রী ও সন্তান দান করেছেন :
وَاللهُ جَعَلَ لَكُمْ مِّنْ اَنْفُسِكُمْ اَزْوَاجًا وَّجَعَلَ لَكُمْ مِّنْ اَزْوَاجِكُمْ بَنِيْنَ وَحَفَدَةً وَّرَزَقَكُمْ مِّنَ الطَّيِّبَاتِ اَفَبِالْبَاطِلِ يُؤْمِنُوْنَ وَبِنِعْمَةِ اللهِ هُمْ يَكْفُرُوْنَ
আর আল্লাহ তোমাদের হতেই তোমাদের জোড়া সৃষ্টি করেছেন, তোমাদের যুগল হতে তোমাদের জন্য পুত্র-পৌত্রাদি সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ দান করেছেন। তবুও কি তারা মিথ্যার উপর বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং তারা কি আল্লাহর অনুগ্রহকে অস্বীকার করবে? (সূরা নাহল- ৭২)
মানুষকে জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন :
اَلَّذِيْ عَلَّمَ بِالْقَلَمِ ‐ عَلَّمَ الْاِنْسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ
যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না। (সূরা আলাক্ব- ৪, ৫)
কথা বলা শিখিয়েছেন :
خَلَقَ الْاِنْسَانَ ‐ - عَلَّمَهُ الْبَيَانَ
তিনিই সৃষ্টি করেছেন মানুষ, তিনি তাকে ভাব প্রকাশ করতে শিখিয়েছেন। (সূরা আর রহমান- ৩, ৪)
আল্লাহ কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন :
اَلرَّحْمٰنُ -‐ عَلَّمَ الْقُرْاٰنَ
পরম দয়াময় আল্লাহই শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন। (সূরা আর রহমান- ১, ২)
ব্যাখ্যা : এখানে আল্লাহ কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন বলার পরিবর্তে ‘রহমান’ শিক্ষা দিয়েছেন বলা হয়েছে। কারণ বান্দাদের হেদায়াতের জন্য কুরআন মাজীদ নাযিল করা সরাসরি আল্লাহর রহমত। যেহেতু তিনি তাঁর সৃষ্টির প্রতি অতীব দয়াবান; তাই তিনি তোমাদেরকে অন্ধকারে ছেড়ে দেয়া পছন্দ করেননি। তিনি তাঁর রহমতের দাবী অনুসারে এ কুরআন পাঠিয়ে তোমাদেরকে এমন জ্ঞান দান করেছেন, যার উপর পার্থিব জীবনে তোমাদের সত্যানুসরণ এবং পরকালীন জীবনের সফলতা নির্ভরশীল।
আল্লাহ যা চান তাই করতে পারেন :
فَعَّالٌ لِّمَا يُرِيْدُ
তিনি যা চান তাই করেন। (সূরা বুরুজ- ১৬)
আল্লাহর কোন কাজ করার ইচ্ছা করলে ‘হও’ বললেই হয়ে যায় :
اِنَّمَاۤ اَمْرُهٗۤ اِذَاۤ اَرَادَ شَيْئًا اَنْ يَّقُوْلَ لَهٗ كُنْ فَيَكُوْنُ
বস্তুত তাঁর বিষয়টি এমন যে, যখন তিনি কোনকিছু করতে ইচ্ছা করেন তখন তিনি তাকে বলেন, ‘হও’ অমনি তা হয়ে যায়। (সূরা ইয়াসীন- ৮২)
اِذَا قَضٰۤى اَمْرًا فَاِنَّمَا يَقُوْلُ لَهٗ كُنْ فَيَكُوْنُ
যখন তিনি কোনকিছু করার সিন্ধান্ত নেন তখন বলেন, ‘হও’ তখন তা হয়ে যায়। (সূরা মারইয়াম- ৩৫)
তিনি জিজ্ঞাসাবাদ করেন, তাঁকে কেউ জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে না :
لَا يُسْاَلُ عَمَّا يَفْعَلُ وَهُمْ يُسْاَلُوْنَ
তিনি যা করেন সে বিষয়ে তিনি জিজ্ঞেসিত হবেন না; বরং তাদেরকেই প্রশ্ন করা হবে। (সূরা আম্বিয়া- ২৩)
আল্লাহ সর্ববিষয়ে শক্তিমান :
لِلّٰهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِ وَمَا فِيْهِنَّ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
আসমান ও জমিন এবং তাদের মধ্যে যা কিছু আছে তার সার্বভৌমত্ব আল্লাহরই এবং তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা মায়েদা- ১২০)
জমিনের নিচে যা আছে তাও তাঁরই :
لَهٗ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَ رْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا وَمَا تَحْتَ الثَّرٰى
আকাশমন্ডলী, পৃথিবী এবং উভয়ের মধ্যবর্তী স্থানে ও ভূগর্ভে যা আছে তা তাঁরই। (সূরা ত্বা-হা- ৬)
আসমান ও জমিনের উত্তরাধিকারী আল্লাহ :
اِنَّا نَحْنُ نَرِثُ الْاَ رْضَ وَمَنْ عَلَيْهَا وَاِلَيْنَا يُرْجَعُوْنَ
নিশ্চয় পৃথিবী ও তার উপর যারা আছে তাদের চূড়ামত্ম মালিকানা আমারই এবং তারা আমারই নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা মারইয়াম- ৪০)
তিনিই একদিন এ পৃথিবীকে উদ্ভিদশূন্য ময়দানে পরিণত করবেন :
اِنَّا جَعَلْنَا مَا عَلَى الْاَ رْضِ زِيْنَةً لَّهَا لِنَبْلُوَهُمْ اَيُّهُمْ اَحْسَنُ عَمَلًا ‐ - وَاِنَّا لَجَاعِلُوْنَ مَا عَلَيْهَا صَعِيْدًا جُرُزًا
পৃথিবীর উপর যা কিছু আছে আমি সেগুলোকে তার জন্য সুশোভিত করে দিয়েছি। যাতে করে মানুষকে এ পরীক্ষা করে নেয়া যায় যে, তাদের মধ্যে কর্মে কে শ্রেষ্ঠ। অতঃপর (একদিন) তার উপর যা কিছু আছে তা অবশ্যই আমি উদ্ভিদশূন্য ময়দানে পরিণত করব। (সূরা কাহফ- ৭, ৮)
আল্লাহ সবকিছুর উপর একক ক্ষমতাবান :
لِلّٰهِ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَ رْضِ
আকাশ এবং পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর। (সূরা বাক্বারা- ২৮৪)
তিনি খুঁটি ছাড়া আকাশকে উপরে স্থীর করে রেখেছেন :
خَلَقَ السَّمَاوَاتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا
তিনি আসমান সৃষ্টি করেছেন স্তম্ভ ব্যতীত, যা তোমরা দেখতেই পাচ্ছ। (সূরা লুক্বমান- ১০)
اَللهُ الَّذِيْ رَفَعَ السَّمَاوَاتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا
আল্লাহ ঐ সত্তা, যিনি আকাশমন্ডলীকে ঊর্ধ্বদেশে স্থাপন করেছেন সত্মম্ভ ব্যতীত; আর তোমরা তো তা দেখতেই পাচ্ছ। (সূরা রা‘দ- ২)
আল্লাহই সকল প্রাণীকে নিয়ন্ত্রণ করেন :
مَا مِنْ دَآبَّةٍ اِلَّا هُوَ اٰخِذٌ ۢبِنَاصِيَتِهَا
এমন কোন জীবজন্তু নেই, যে তাঁর পূর্ণ আয়ত্তাধীন নয়। (সূরা হুদ- ৫৬)
আল্লাহ সবকিছু পরিবেষ্টন করে আছেন :
وَلِلّٰهِ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَ رْضِؕ وَكَانَ اللهُ بِكُلِّ شَيْءٍ مُّحِيْطًا
আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর এবং সবকিছুকে আল্লাহ পরিবেষ্টন করে রেখেছেন। (সূরা নিসা- ১২৬)
সবকিছুর অবস্থা তিনি দেখেন ও শুনেন :
وَلَهٗ مَا سَكَنَ فِى اللَّيْلِ وَالنَّهَارِؕ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
রাত ও দিনে যা কিছু থাকে তা তাঁরই এবং তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী। (সূরা আন‘আম- ১৩)
কাউকে অনুগ্রহ করা বা না করা তাঁর ইচ্ছাধীন :
مَا يَفْتَحِ اللهُ لِلنَّاسِ مِنْ رَّحْمَةٍ فَلَا مُمْسِكَ لَهَاۚ وَمَا يُمْسِكْ فَلَا مُرْسِلَ لَهٗ مِنْ ۢبَعْدِهٖؕ وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
আল্লাহ মানুষের জন্য যে রহমত উন্মুক্ত করে দেন, তা কেউ প্রতিরোধ করতে পারে না এবং যা তিনি বন্ধ করে দেন, তা বন্ধ করার পরে কেউ উন্মুক্ত করতে পারে না। তিনিই মহাপ্রতাপশালী ও পরম কৌশলী। (সূরা ফাতির- ২)
ব্যাখ্যা : মুশরিকরা মনে করে, আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কেউ তাদের রিযিকদাতা, কেউ সন্তানদাতা এবং কেউ রোগ নিরাময়কারী। এ আয়াতে তাদের এ ভুল ধারণা দূর করা হয়েছে। শিরকের এ সমস্ত ধারণা একেবারেই ভিত্তিহীন। নির্ভেজাল সত্য এতটুকু যে, বান্দাদের কাছে যে ধরনের রহমতই আসে তা মহান আল্লাহর অনুগ্রহেই আসে। অন্য কারো এ রহমত দান করার ক্ষমতা নেই এবং একে রোধ করার শক্তিও কারো নেই। এ বিষয়টি কুরআন মাজীদ ও হাদীসের বহু স্থানে বিভিন্নভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে এ বিষয়টিও ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে যে, মানুষের ভাগ্যের ভাঙা-গড়ায় এক আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইখতিয়ার নেই।
আল্লাহই সুখ-দুঃখ দেয়ার অধিকার রাখেন :
وَاِنْ يَّمْسَسْكَ اللهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهٗۤ اِلَّا هُوَؕ وَاِنْ يَّمْسَسْكَ بِخَيْرٍ فَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
আল্লাহ তোমাকে কষ্ট দিলে তিনি ব্যতীত তা মোচনকারী আর কেউ নেই। আর তিনি যদি তোমার কল্যাণ করেন, তবে তিনিই তো সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। (সূরা আন‘আম- ১৭)
وَاِنْ يَّمْسَسْكَ اللهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهٗۤ اِلَّا هُوَؕ وَاِنْ يُّرِدْكَ بِخَيْرٍ فَلَا رَادَّ لِفَضْلِهٖؕ يُصِيْبُ بِهٖ مَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهٖ ؕ وَهُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ
আল্লাহ যদি তোমাকে কষ্ট দেন, তবে তিনি ব্যতীত তা মোচনকারী আর কেউ নেই। আর তিনি যদি তোমার মঙ্গল চান, তবে তাঁর অনুগ্রহ বন্ধ করারও কেউ নেই। তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তিনি মঙ্গল দান করেন; নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা ইউনুস- ১০৭)
আল্লাহ আকাশ থেকে খাবার পাঠাতে সক্ষম :
اِذْ قَالَ الْحَوَارِيُّوْنَ يَا عِيْسَى ابْنَ مَرْيَمَ هَلْ يَسْتَطِيْعُ رَبُّكَ اَنْ يُّنَزِّلَ عَلَيْنَا مَآئِدَةً مِّنَ السَّمَآءِؕ قَالَ اتَّقُوا اللهَ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
(স্মরণ করো) যখন হাওয়ারীরা বলেছিল, হে মারইয়ামের ছেলে ঈসা! তোমার প্রতিপালক কি আমাদের জন্য আসমান হতে খাদ্যভর্তি খাঞ্চা প্রেরণ করতে সক্ষম? সে বলেছিল, আল্লাহকে ভয় করো, যদি তোমরা মুমিন হও। (সূরা মায়েদা- ১১২)
قَالَ اللهُ اِنِّيْ مُنَزِّلُهَا عَلَيْكُمْ
আল্লাহ বললেন, আমি তোমাদের নিকট তা প্রেরণ করব। (সূরা মায়েদা- ১১৫)
আল্লাহ বৃদ্ধ বয়সেও সন্তান দিতে পারেন :
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ وَهَبَ لِيْ عَلَى الْكِبَرِ اِسْمَاعِيْلَ وَاِسْحَاقَ اِنَّ رَبِّيْ لَسَمِيْعُ الدُّعَآءِ
সমসত্ম প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি আমাকে আমার বার্ধক্যে ইসমাঈল ও ইসহাককে দান করেছেন। নিশ্চয় আমার প্রতিপালক প্রার্থনা শ্রবণ করে থাকেন। (সূরা ইবরাহীম- ৩৯)
قَالَ رَبِّ اَنّٰى يَكُوْنُ لِيْ غُلَامٌ وَّكَانَتِ امْرَاَتِيْ عَاقِرًا وَّقَدْ بَلَغْتُ مِنَ الْكِبَرِ عِتِيًّا ‐ قَالَ كَذٰلِكَۚ قَالَ رَبُّكَ هُوَ عَلَيَّ هَيِّنٌ وَّقَدْ خَلَقْتُكَ مِنْ قَبْلُ وَلَمْ تَكُ شَيْئًا
তিনি (যাকারিয়া) বললেন, হে আমার প্রতিপালক! কেমন করে আমার পুত্র হবে অথচ আমার স্ত্রী বন্ধ্যা আর আমিও বার্ধক্যের শেষ সীমায় উপনীত হয়েছি। আল্লাহ বললেন, এভাবেই হবে। তোমার প্রতিপালক বলেন, এটা আমার জন্য খুবই সহজ (বিষয়)। (তাছাড়া) আমি তো ইতোপূর্বে তোমাকেও সৃষ্টি করেছি যখন তুমি কিছুই ছিলে না। (সূরা মারইয়াম- ৮, ৯)
আল্লাহ বন্ধ্যার ঘরেও সন্তান দিতে পারেন :
قَالَ رَبِّ اَنّٰى يَكُوْنُ لِيْ غُلَامٌ وَّقَدْ بَلَغَنِيَ الْكِبَرُ وَامْرَاَتِيْ عَاقِرٌؕ قَالَ كَذٰلِكَ اللهُ يَفْعَلُ مَا يَشَآءُ
তিনি বললেন, হে আমার রব! কীভাবে আমার সন্তান হবে অথচ আমি বার্ধক্যে উপনীত হয়েছি এবং আমার স্ত্রীও বন্ধ্যা। আল্লাহ বললেন, এভাবেই হবে। আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। (সূরা আলে ইমরান- ৪০)
পিতা ছাড়াও মানুষ সৃষ্টি করতে পারেন :
قَالَتْ رَبِّ اَنّٰى يَكُوْنُ لِيْ وَلَدٌ وَّلَمْ يَمْسَسْنِيْ بَشَرٌؕ قَالَ كَذٰلِكِ اللهُ يَخْلُقُ مَا يَشَآءُؕ اِذَا قَضٰۤى اَمْرًا فَاِنَّمَا يَقُوْلُ لَهٗ كُنْ فَيَكُوْنُ
মারইয়াম বললেন, হে আমার রব! কেমন করে আমার সন্তান হবে? আমাকে তো কোন মানুষ স্পর্শ করেনি। আল্লাহ বললেন, এভাবেই। আল্লাহ যা চান তাই সৃষ্টি করেন। তিনি যখন কোন কাজের ফায়সালা করেন তখন বলেন, ‘হও’ ফলে তা হয়ে যায়। (সূরা আলে ইমরান- ৪৭)
আগুনের মাঝেও মানুষকে বাঁচাতে পারেন :
قُلْنَا يَا نَارُ كُوْنِيْ بَرْدًا وَّسَلَامًا عَلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ
আমি বললাম, হে অগ্নি! ইবরাহীমের জন্য শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও। (সূরা আম্বিয়া- ৬৯)
আল্লাহ মি‘রাজ সংঘটিত করাতে পারেন :
سُبْحَانَ الَّذِيْۤ اَسْرٰى بِعَبْدِهٖ لَيْلًا مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ اِلَى الْمَسْجِدِ الْاَقْصَى الَّذِيْ بَارَكْنَا حَوْلَهٗ لِنُرِيَهٗ مِنْ اٰيَاتِنَاؕ اِنَّهٗ هُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ
পবিত্র ও মহিমাময় তিনি, যিনি তাঁর বান্দাকে রজনীতে ভ্রমণ করিয়েছিলেন মাসজিদুল হারাম হতে মাসজিদুল আকসা পর্যমত্ম, যার পরিবেশকে করে দিয়েছিলাম বরকতময়। যাতে করে তাকে আমার নিদর্শনসমূহ দেখাতে পারি; নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। (সূরা বনী ইসরাঈল- ১)
তিনি ইচ্ছা করলে সবাইকে একই দলভুক্ত করতে পারেন :
وَلَوْ شَآءَ اللهُ لَجَعَلَكُمْ اُمَّةً وَّاحِدَةً وَّلٰكِنْ لِّيَبْلُوَكُمْ فِيْ مَاۤ اٰتَاكُمْ فَاسْتَبِقُوا الْخَيْرَاتِ
আল্লাহ যদি চাইতেন, তবে অবশ্যই তিনি তোমাদের সবাইকে এক সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত করে দিতেন। কিন্তু তিনি তোমাদেরকে যাচাই করতে চান, যা তিনি তোমাদের দিয়েছেন তার মাধ্যমে। অতএব তোমরা সৎকাজের প্রতি ধাবিত হও। (সূরা মায়েদা- ৪৮)
তিনি ইচ্ছা করলে সবাইকে হেদায়াত দিতে পারেন :
وَلَوْ شَآءَ اللهُ لَجَمَعَهُمْ عَلَى الْهُدٰى فَلَا تَكُوْنَنَّ مِنَ الْجَاهِلِيْنَ
আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদের সবাইকে অবশ্যই সৎপথে একত্র করতে পারতেন। সুতরাং তুমি মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সূরা আন‘আম- ৩৫)
فَلَوْ شَآءَ لَهَدَاكُمْ اَجْمَعِيْنَ
যদি তিনি ইচ্ছা করতেন তবে তোমাদের সবাইকে অবশ্যই সৎপথে পরিচালিত করতেন। (সূরা আন‘আম- ১৪৯)
ইচ্ছা করলে তিনি সবাইকে ঈমানদার বানাতে পারেন :
وَلَوْ شَآءَ رَبُّكَ لَاٰمَنَ مَنْ فِى الْاَ رْضِ كُلُّهُمْ جَمِيْعًاؕ اَفَاَنْتَ تُكْرِهُ النَّاسَ حَتّٰى يَكُوْنُوْا مُؤْمِنِيْنَ
তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করলে পৃথিবীতে যারা আছে তারা সকলে অবশ্যই ঈমান আনত; তবুও কি তুমি মুমিন হওয়ার জন্য মানুষের উপর জবরদস্তি করবে? (সূরা ইউনুস- ৯৯)
তিনি যাকে ইচ্ছা হেদায়াত দান করেন :
وَمَنْ يَّشَاْ يَجْعَلْهُ عَلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
আর তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে সরল পথে পরিচালিত করেন। (সূরা আন‘আম- ৩৯)
যাকে চান পবিত্র করেন :
اَلَمْ تَرَ اِلَى الَّذِيْنَ يُزَكُّوْنَ اَنْفُسَهُمْ بَلِ اللهُ يُزَكِّيْ مَنْ يَّشَآءُ
তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা নিজেদেরকে পবিত্র মনে করে? বরং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে পবিত্র করেন। (সূরা নিসা- ৪৯)
যাকে ইচ্ছা সন্তান-সন্ততি দিয়ে থাকেন :
يَخْلُقُ مَا يَشَآءُؕ يَهَبُ لِمَنْ يَّشَآءُ اِنَاثًا وَّيَهَبُ لِمَنْ يَّشَآءُ الذُّكُوْرَ ‐ اَوْ يُزَوِّجُهُمْ ذُكْرَانًا وَّاِنَاثًاۚ وَّيَجْعَلُ مَنْ يَّشَآءُ عَقِيْمًاؕ اِنَّهٗ عَلِيْمٌ قَدِيْرٌ
আল্লাহ যা ইচ্ছা তা-ই সৃষ্টি করেন। তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যাসন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্রসন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা তাকে বন্ধ্যা করে রাখেন। নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান। (সূরা শূরা- ৪৯, ৫০)
ব্যাখ্যা : এটা আল্লাহর নিরঙ্কুশ ক্ষমতার একটি সুস্পষ্ট প্রমাণ। কোন মানুষ, সে পার্থিব ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের যত বড় কর্তাই হোক না কেন, কিংবা তাকে আধ্যাত্মিক ক্ষমতার যত বড় মালিকই মনে করা হোক না কেন, অন্যদের সন্তান দেয়া তো দূরের কথা নিজের জন্য নিজের ইচ্ছানুসারে সন্তান জন্ম দানেও সে কখনো সক্ষম হয়নি। আল্লাহ যাকে বন্ধ্যা করে দিয়েছেন সে সন্তানওয়ালা হতে পারেনি। আল্লাহ যাকে শুধু কন্যাসন্তান দান করেছেন সে পুত্রসন্তানলাভ করতে পারেনি এবং আল্লাহ যাকে শুধু পুত্রসন্তানই দিয়েছেন সে কন্যাসন্তান লাভ করতে পারেনি, এ ক্ষেত্রে সবাই অসহায়। এসব দেখে শুনেও যদি কেউ আল্লাহর বাদশাহীতে সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী দাবী করে, কিংবা অন্য কাউকে তাঁর অংশীদার মনে করে, তাহলে সেটা তার নিজের অদূরদর্শিতা- যার পরিণাম সে নিজেই ভোগ করবে। কেউ নিজে নিজেই কোনকিছু বিশ্বাস করলে, তার কারণে প্রকৃত সত্যে কোন পরিবর্তন সাধিত হয় না।
আল্লাহ একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী :
وَهُوَ الْقَاهِرُ فَوْقَ عِبَادِهٖؕ وَهُوَ الْحَكِيْمُ الْخَبِيْرُ
তিনি তাঁর বান্দাদের উপর একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী, তিনি মহাজ্ঞানী ও সকল বিষয়ের খবর রাখেন। (সূরা আন‘আম- ১৮)
আল্লাহ চাইলে আরো উত্তম মানুষ আনতে পারেন :
اِنْ يَّشَاْ يُذْهِبْكُمْ اَيُّهَا النَّاسُ وَيَاْتِ بِاٰخَرِيْنَؕ وَكَانَ اللهُ عَلٰى ذٰلِكَ قَدِيْرًا
হে মানুষ! তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদেরকে অপসারণ করতে এবং (তোমাদের স্থলে) অপর কাউকে নিয়ে আসতে পারেন; আর আল্লাহ এটা করতে সম্পূর্ণ সক্ষম। (সূরা নিসা- ১৩৩)
اِنْ يَّشَاْ يُذْهِبْكُمْ وَيَاْتِ بِخَلْقٍ جَدِيْدٍ ‐ وَمَا ذٰلِكَ عَلَى اللهِ بِعَزِيْزٍ
যদি তিনি ইচ্ছা করেন তবে তোমাদেরকে অপসারণ করে দেবেন এবং তদস্থলে নতুন এক জাতি সৃষ্টি করবেন। আর এরূপ করা আল্লাহর পক্ষে মোটেই কঠিন নয়। (সূরা ফাতির- ১৬, ১৭)
اَلَمْ تَرَ اَنَّ اللهَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضَ بِالْحَقِّؕ اِنْ يَّشَاْ يُذْهِبْكُمْ وَيَاْتِ بِخَلْقٍ جَدِيْدٍ ‐ - وَمَا ذٰلِكَ عَلَى اللهِ بِعَزِيْزٍ
তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, আল্লাহ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছেন? তিনি ইচ্ছা করলেই তোমাদের অসিত্মত্ব বিলুপ্ত করতে পারেন এবং এক নতুন সৃষ্টি অসিত্মত্বে আনতে পারেন। আর এটা আল্লাহর জন্য আদৌ কঠিন নয়। (সূরা ইবরাহীম- ১৯, ২০)
আল্লাহ ইচ্ছা করলে পানি শুকিয়ে দিতে পারেন :
وَاَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَآءِ مَآءً ۢبِقَدَرٍ فَاَسْكَنَّاهُ فِى الْاَ رْضِ وَاِنَّا عَلٰى ذَهَابٍ ۢبِهٖ لَقَادِرُوْنَ
আমি আকাশ হতে বারি বর্ষণ করি পরিমিতভাবে; অতঃপর আমি সেটা মৃত্তিকায় সংরক্ষণ করি। আর আমি তাকে অপসারণ করতেও সক্ষম। (সূরা মু’মিনূন- ১৮)
قُلْ اَرَاَيْتُمْ اِنْ اَصْبَحَ مَآؤُكُمْ غَوْرًا فَمَنْ يَّاْتِيْكُمْ بِمَآءٍ مَّعِيْنٍ
বলো, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, যদি তোমাদের পানি ভূগর্ভের তলদেশে চলে যায় তবে কে তোমাদেরকে সে প্রবাহমান পানি এনে দেবে? (সূরা মুলক- ৩০)
আল্লাহ ইচ্ছা করলে ওহীর জ্ঞান ছিনিয়ে নিতে পারেন :
وَلَئِنْ شِئْنَا لَنَذْهَبَنَّ بِالَّذِيْۤ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ ثُمَّ لَا تَجِدُ لَكَ بِه عَلَيْنَا وَكِيْلًا
আমি ইচ্ছা করলে তোমার প্রতি যা ওহী করেছি তা অবশ্যই প্রত্যাহার করতে পারতাম; আর এ বিষয়ে তুমি আমার বিরুদ্ধে কোন সাহায্যকারী পেতে না। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৮৬)
আল্লাহ যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেন এবং যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন :
يَغْفِرُ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيُعَذِّبُ مَنْ يَّشَآءُؕ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন এবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি প্রদান করেন। আর আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল ও পরম করুণাময়। (সূরা আলে ইমরান- ১২৯)
اَلَمْ تَعْلَمْ اَنَّ اللهَ لَهٗ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِؕ يُعَذِّبُ مَنْ يَّشَآءُ وَيَغْفِرُ لِمَنْ يَّشَآءُؕ وَاللهُ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
তুমি কি জান না যে, আসমান ও জমিনের আধিপত্য আল্লাহরই। তিনি যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেন এবং যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। আল্লাহ সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান (সূরা মায়েদা- ৪০)
আল্লাহর শাস্তি কেউ প্রতিহত করতে পারে না :
وَلَا يُرَدُّ بَاْسُهٗ عَنِ الْقَوْمِ الْمُجْرِمِيْنَ
অপরাধী সম্প্রদায়ের উপর হতে তাঁর শাস্তি প্রতিহত করা হয় না। (সূরা আন‘আম- ১৪৭)
আল্লাহর পাকড়াও খুবই কঠোর :
وَكَذٰلِكَ اَخْذُ رَبِّكَ اِذَاۤ اَخَذَ الْقُرٰى وَهِيَ ظَالِمَةٌؕ اِنَّ اَخْذَهٗۤ اَلِيْمٌ شَدِيْدٌ
তোমার প্রতিপালকের শাসিত্ম এমনই! তিনি শাসিত্ম দান করেন জনপদবাসীকে, যখন তারা যুলুম করে থাকে। নিশ্চয় তাঁর শাসিত্ম মর্মান্তিক ও কঠিন। (সূরা হুদ- ১০২)
আল্লাহ বিভিন্নভাবে শাস্তি দিতে পারেন :
قُلْ هُوَ الْقَادِرُ عَلٰۤى اَنْ يَّبْعَثَ عَلَيْكُمْ عَذَابًا مِّنْ فَوْقِكُمْ اَوْ مِنْ تَحْتِ اَرْجُلِكُمْ اَوْ يَلْبِسَكُمْ شِيَعًا وَّيُذِيْقَ بَعْضَكُمْ بَاْسَ بَعْضٍؕ اُنْظُرْ كَيْفَ نُصَرِّفُ الْاٰيَاتِ لَعَلَّهُمْ يَفْقَهُوْنَ
বলো, তিনি তোমাদের ঊর্ধ্বদেশ অথবা পাদদেশ হতে শাস্তি প্রেরণ করতে অথবা তোমাদেরকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে অথবা একদলকে অপর দলের দ্বারা শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করাতে সক্ষম। দেখো, আমি কীভাবে বিভিন্ন প্রকার আয়াত বার বার বর্ণনা করি, যেন তারা অনুধাবন করে। (সূরা আন‘আম- ৬৫)
আল্লাহর আযাব খুবই দ্রুত আসতে পারে :
وَرَبُّكَ الْغَفُوْرُ ذُو الرَّحْمَةِؕ لَوْ يُؤَاخِذُهُمْ بِمَا كَسَبُوْا لَعَجَّلَ لَهُمُ الْعَذَابَؕ بَلْ لَّهُمْ مَّوْعِدٌ لَّنْ يَّجِدُوْا مِنْ دُوْنِه مَوْئِلًا
তোমার প্রতিপালক পরম ক্ষমাশীল ও দয়াবান। তাদের কৃতকর্মের জন্য যদি তিনি তাদেরকে পাকড়াও করতে চাইতেন তবে তিনি অবশ্যই তাদের শাসিত্ম ত্বরান্বিত করতেন। কিন্তু তাদের জন্য রয়েছে এক প্রতিশ্রুত মুহূর্ত, যা হতে তারা কখনই কোন আশ্রয়স্থল পাবে না। (সূরা কাহফ- ৫৮)
আল্লাহ জমিনকে ধসিয়ে দিতে সক্ষম :
اَاَمِنْتُمْ مَّنْ فِى السَّمَآءِ اَنْ يَّخْسِفَ بِكُمُ الْاَ رْضَ فَاِذَا هِيَ تَمُوْرُ
তোমরা কি নিরাপদ হয়ে গেছ যে, আকাশে যিনি রয়েছেন তিনি তোমাদেরকেসহ ভূমিকে ধসিয়ে দেবেন না? তখন ওটা আকস্মিকভাবে থরথর করে কাঁপতে থাকবে। (সূরা মুলক- ১৬)
শিলা দিয়েও ধ্বংস করতে পারেন :
اَفَاَمِنْتُمْ اَنْ يَّخْسِفَ بِكُمْ جَانِبَ الْبَرِّ اَوْ يُرْسِلَ عَلَيْكُمْ حَاصِبًا ثُمَّ لَا تَجِدُوْا لَكُمْ وَكِيْلًا
তোমরা কি নিরাপত্তা পেয়েছ যে, তিনি তোমাদেরকেসহ কোন অঞ্চল ধসিয়ে দেবেন না অথবা তোমাদের উপর শিলা বর্ষণ করবেন না? (যদি এমনটি ঘটতে শুরু করে) তখন তোমরা তোমাদের কোন অভিভাবক (খুঁজে) পাবে না। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৬৮)
সমুদ্রের মধ্যেও ডুবিয়ে দিতে পারেন :
اَمْ اَمِنْتُمْ اَنْ يُّعِيْدَكُمْ فِيْهِ تَارَةً اُخْرٰى فَيُرْسِلَ عَلَيْكُمْ قَاصِفًا مِّنَ الرِّيْحِ فَيُغْرِقَكُمْ بِمَا كَفَرْتُمْ ثُمَّ لَا تَجِدُوْا لَكُمْ عَلَيْنَا بِه تَبِيْعًا
অথবা তোমরা কি নিরাপত্তা পেয়েছ যে, তিনি তোমাদেরকে সমুদ্রে নিয়ে যাবেন না এবং তোমাদের উপর প্রচন্ড ঝড়ো হাওয়া পাঠাবেন না। অতঃপর তোমাদের কুফরীর জন্য তোমাদেরকে নিমজ্জিত করবেন না? তখন তোমরা এ বিষয়ে আমার বিরুদ্ধে কোন সাহায্যকারী পাবে না। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৬৯)
আল্লাহকে ব্যর্থ করার কেউ নেই :
وَمَا كَانَ اللهُ لِيُعْجِزَهٗ مِنْ شَيْءٍ فِى السَّمَاوَاتِ وَلَا فِى الْاَ رْضِؕ اِنَّهٗ كَانَ عَلِيْمًا قَدِيْرًا
আল্লাহ এমন নন যে, আসমান ও জমিনের কোনকিছু তাঁকে অক্ষম করতে পারে। তিনিই সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান। (সূরা ফাতির- ৪৪)
وَمَاۤ اَنْتُمْ بِمُعْجِزِيْنَ فِى الْاَ رْضِ وَمَا لَكُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ مِنْ وَّلِيٍّ وَّلَا نَصِيْرٍ
তোমরা পৃথিবীতে (আল্লাহকে) ব্যর্থ করতে পারবে না। আর আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন অভিভাবক নেই এবং কোন সাহায্যকারীও নেই। (সূরা শূরা- ৩১)
আল্লাহর কথার কোন পরিবর্তন হয় না :
مَا يُبَدَّلُ الْقَوْلُ لَدَيَّ وَمَاۤ اَنَاْ بِظَلَّامٍ لِّلْعَبِيْدِ
আমার কথার রদ-বদল হয় না এবং আমি আমার বান্দাদের প্রতি অত্যাচারীও নই। (সূরা ক্বাফ- ২৯)
আল্লাহ সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেন :
وَيُحِقُّ اللهُ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهٖ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُوْنَ
আল্লাহ তাঁর বাণী অনুযায়ী সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করবেন, যদিও অপরাধীরা এটা অপছন্দ করে। (সূরা ইউনুস- ৮২)
আল্লাহ সত্য প্রকাশে লজ্জাবোধ করেন না :
وَاللهُ لَا يَسْتَحْيِيْ مِنَ الْحَقِّ
আর আল্লাহ সত্য প্রকাশ করতে লজ্জা করেন না। (সূরা আহযাব- ৫৩)
আসমান ও জমিনের চাবিকাঠি আল্লাহর হাতে :
لَهٗ مَقَالِيْدُ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِ
আসমান ও জমিনের চাবিকাঠি তাঁরই অধিকারে। (সূরা যুমার- ৬৩)
لَهٗ مَقَالِيْدُ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِۚ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيَقْدِرُؕ اِنَّهٗ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ
আসমান ও জমিনের চাবিসমূহ তাঁরই অধিকারে। তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে রিযিক বৃদ্ধি করে দেন অথবা সংকুচিত করে দেন। নিশ্চয় তিনি সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ। (সূরা শূরা- ১২)
সবকিছুর ভান্ডার আল্লাহর হাতে :
وَلِلّٰهِ خَزَآئِنُ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِ وَلٰكِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ لَا يَفْقَهُوْنَ
আসমান ও জমিনের ধনভান্ডার তো আল্লাহরই; কিন্তু মুনাফিকরা তা বুঝে না। (সূরা মুনাফিকূন- ৭)
আল্লাহই সবকিছুর মধ্যে সমন্বয় সাধন করেন :
وَاِنْ مِّنْ شَيْءٍ اِلَّا عِنْدَنَا خَزَآئِنُهٗ وَمَا نُنَزِّلُهٗۤ اِلَّا بِقَدَرٍ مَّعْلُوْمٍ
আমারই নিকট আছে প্রত্যেক বস্তুর ধনভান্ডার এবং আমি তা পরিজ্ঞাত পরিমাণেই সরবরাহ করে থাকি।
(সূরা হিজর- ২১)
ব্যাখ্যা : এখানে এ সত্যটি সম্পর্কে সজাগ করে দেয়া হয়েছে যে, সীমিত ও পরিকল্পিত প্রবৃদ্ধির এ নিয়ম কেবল উদ্ভিদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়; বরং যাবতীয় সৃষ্টির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। বাতাস, পানি, আলো, শীত, গ্রীষ্ম, জীব, জড়, উদ্ভিদ তথা প্রত্যেকটি জিনিস, প্রত্যেকটি প্রজাতি, প্রত্যেকটি শ্রেণি ও প্রত্যেকটি শক্তির জন্য আলাদা আলাদা সীমা নির্ধারিত রয়েছে। সবকিছুই নিজ নিজ সীমার মধ্যে অবস্থান করছে। তাদের জন্য যে পরিমাণ নির্ধারিত রয়েছে তার চেয়ে তারা কখনো বাড়েও না আবার কমেও না। এ প্রজ্ঞামূলক নির্ধারিত অবস্থার ফলে পৃথিবী থেকে আকাশ পর্যন্ত সমগ্র বিশ্বব্যবস্থায় ভারসাম্য ও সমন্বয় সাধিত হচ্ছে। এ পৃথিবী যদি একটি আকস্মিক ঘটনার ফল হতো অথবা বহু উপাস্যের কর্মের ফল হতো, তাহলে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের অসংখ্য বস্তু ও শক্তির মধ্যে এ পর্যায়ের পূর্ণ ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া ও অব্যাহতভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকা সম্ভব হতো না।
فَعَّالٌ لِّمَا يُرِيْدُ
তিনি যা চান তাই করেন। (সূরা বুরুজ- ১৬)
আল্লাহর কোন কাজ করার ইচ্ছা করলে ‘হও’ বললেই হয়ে যায় :
اِنَّمَاۤ اَمْرُهٗۤ اِذَاۤ اَرَادَ شَيْئًا اَنْ يَّقُوْلَ لَهٗ كُنْ فَيَكُوْنُ
বস্তুত তাঁর বিষয়টি এমন যে, যখন তিনি কোনকিছু করতে ইচ্ছা করেন তখন তিনি তাকে বলেন, ‘হও’ অমনি তা হয়ে যায়। (সূরা ইয়াসীন- ৮২)
اِذَا قَضٰۤى اَمْرًا فَاِنَّمَا يَقُوْلُ لَهٗ كُنْ فَيَكُوْنُ
যখন তিনি কোনকিছু করার সিন্ধান্ত নেন তখন বলেন, ‘হও’ তখন তা হয়ে যায়। (সূরা মারইয়াম- ৩৫)
তিনি জিজ্ঞাসাবাদ করেন, তাঁকে কেউ জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে না :
لَا يُسْاَلُ عَمَّا يَفْعَلُ وَهُمْ يُسْاَلُوْنَ
তিনি যা করেন সে বিষয়ে তিনি জিজ্ঞেসিত হবেন না; বরং তাদেরকেই প্রশ্ন করা হবে। (সূরা আম্বিয়া- ২৩)
আল্লাহ সর্ববিষয়ে শক্তিমান :
لِلّٰهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِ وَمَا فِيْهِنَّ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
আসমান ও জমিন এবং তাদের মধ্যে যা কিছু আছে তার সার্বভৌমত্ব আল্লাহরই এবং তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা মায়েদা- ১২০)
জমিনের নিচে যা আছে তাও তাঁরই :
لَهٗ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَ رْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا وَمَا تَحْتَ الثَّرٰى
আকাশমন্ডলী, পৃথিবী এবং উভয়ের মধ্যবর্তী স্থানে ও ভূগর্ভে যা আছে তা তাঁরই। (সূরা ত্বা-হা- ৬)
আসমান ও জমিনের উত্তরাধিকারী আল্লাহ :
اِنَّا نَحْنُ نَرِثُ الْاَ رْضَ وَمَنْ عَلَيْهَا وَاِلَيْنَا يُرْجَعُوْنَ
নিশ্চয় পৃথিবী ও তার উপর যারা আছে তাদের চূড়ামত্ম মালিকানা আমারই এবং তারা আমারই নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা মারইয়াম- ৪০)
তিনিই একদিন এ পৃথিবীকে উদ্ভিদশূন্য ময়দানে পরিণত করবেন :
اِنَّا جَعَلْنَا مَا عَلَى الْاَ رْضِ زِيْنَةً لَّهَا لِنَبْلُوَهُمْ اَيُّهُمْ اَحْسَنُ عَمَلًا ‐ - وَاِنَّا لَجَاعِلُوْنَ مَا عَلَيْهَا صَعِيْدًا جُرُزًا
পৃথিবীর উপর যা কিছু আছে আমি সেগুলোকে তার জন্য সুশোভিত করে দিয়েছি। যাতে করে মানুষকে এ পরীক্ষা করে নেয়া যায় যে, তাদের মধ্যে কর্মে কে শ্রেষ্ঠ। অতঃপর (একদিন) তার উপর যা কিছু আছে তা অবশ্যই আমি উদ্ভিদশূন্য ময়দানে পরিণত করব। (সূরা কাহফ- ৭, ৮)
আল্লাহ সবকিছুর উপর একক ক্ষমতাবান :
لِلّٰهِ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَ رْضِ
আকাশ এবং পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর। (সূরা বাক্বারা- ২৮৪)
তিনি খুঁটি ছাড়া আকাশকে উপরে স্থীর করে রেখেছেন :
خَلَقَ السَّمَاوَاتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا
তিনি আসমান সৃষ্টি করেছেন স্তম্ভ ব্যতীত, যা তোমরা দেখতেই পাচ্ছ। (সূরা লুক্বমান- ১০)
اَللهُ الَّذِيْ رَفَعَ السَّمَاوَاتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا
আল্লাহ ঐ সত্তা, যিনি আকাশমন্ডলীকে ঊর্ধ্বদেশে স্থাপন করেছেন সত্মম্ভ ব্যতীত; আর তোমরা তো তা দেখতেই পাচ্ছ। (সূরা রা‘দ- ২)
আল্লাহই সকল প্রাণীকে নিয়ন্ত্রণ করেন :
مَا مِنْ دَآبَّةٍ اِلَّا هُوَ اٰخِذٌ ۢبِنَاصِيَتِهَا
এমন কোন জীবজন্তু নেই, যে তাঁর পূর্ণ আয়ত্তাধীন নয়। (সূরা হুদ- ৫৬)
আল্লাহ সবকিছু পরিবেষ্টন করে আছেন :
وَلِلّٰهِ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَ رْضِؕ وَكَانَ اللهُ بِكُلِّ شَيْءٍ مُّحِيْطًا
আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর এবং সবকিছুকে আল্লাহ পরিবেষ্টন করে রেখেছেন। (সূরা নিসা- ১২৬)
সবকিছুর অবস্থা তিনি দেখেন ও শুনেন :
وَلَهٗ مَا سَكَنَ فِى اللَّيْلِ وَالنَّهَارِؕ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
রাত ও দিনে যা কিছু থাকে তা তাঁরই এবং তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী। (সূরা আন‘আম- ১৩)
কাউকে অনুগ্রহ করা বা না করা তাঁর ইচ্ছাধীন :
مَا يَفْتَحِ اللهُ لِلنَّاسِ مِنْ رَّحْمَةٍ فَلَا مُمْسِكَ لَهَاۚ وَمَا يُمْسِكْ فَلَا مُرْسِلَ لَهٗ مِنْ ۢبَعْدِهٖؕ وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
আল্লাহ মানুষের জন্য যে রহমত উন্মুক্ত করে দেন, তা কেউ প্রতিরোধ করতে পারে না এবং যা তিনি বন্ধ করে দেন, তা বন্ধ করার পরে কেউ উন্মুক্ত করতে পারে না। তিনিই মহাপ্রতাপশালী ও পরম কৌশলী। (সূরা ফাতির- ২)
ব্যাখ্যা : মুশরিকরা মনে করে, আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কেউ তাদের রিযিকদাতা, কেউ সন্তানদাতা এবং কেউ রোগ নিরাময়কারী। এ আয়াতে তাদের এ ভুল ধারণা দূর করা হয়েছে। শিরকের এ সমস্ত ধারণা একেবারেই ভিত্তিহীন। নির্ভেজাল সত্য এতটুকু যে, বান্দাদের কাছে যে ধরনের রহমতই আসে তা মহান আল্লাহর অনুগ্রহেই আসে। অন্য কারো এ রহমত দান করার ক্ষমতা নেই এবং একে রোধ করার শক্তিও কারো নেই। এ বিষয়টি কুরআন মাজীদ ও হাদীসের বহু স্থানে বিভিন্নভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে এ বিষয়টিও ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে যে, মানুষের ভাগ্যের ভাঙা-গড়ায় এক আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইখতিয়ার নেই।
আল্লাহই সুখ-দুঃখ দেয়ার অধিকার রাখেন :
وَاِنْ يَّمْسَسْكَ اللهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهٗۤ اِلَّا هُوَؕ وَاِنْ يَّمْسَسْكَ بِخَيْرٍ فَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
আল্লাহ তোমাকে কষ্ট দিলে তিনি ব্যতীত তা মোচনকারী আর কেউ নেই। আর তিনি যদি তোমার কল্যাণ করেন, তবে তিনিই তো সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। (সূরা আন‘আম- ১৭)
وَاِنْ يَّمْسَسْكَ اللهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهٗۤ اِلَّا هُوَؕ وَاِنْ يُّرِدْكَ بِخَيْرٍ فَلَا رَادَّ لِفَضْلِهٖؕ يُصِيْبُ بِهٖ مَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهٖ ؕ وَهُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ
আল্লাহ যদি তোমাকে কষ্ট দেন, তবে তিনি ব্যতীত তা মোচনকারী আর কেউ নেই। আর তিনি যদি তোমার মঙ্গল চান, তবে তাঁর অনুগ্রহ বন্ধ করারও কেউ নেই। তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তিনি মঙ্গল দান করেন; নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা ইউনুস- ১০৭)
আল্লাহ আকাশ থেকে খাবার পাঠাতে সক্ষম :
اِذْ قَالَ الْحَوَارِيُّوْنَ يَا عِيْسَى ابْنَ مَرْيَمَ هَلْ يَسْتَطِيْعُ رَبُّكَ اَنْ يُّنَزِّلَ عَلَيْنَا مَآئِدَةً مِّنَ السَّمَآءِؕ قَالَ اتَّقُوا اللهَ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
(স্মরণ করো) যখন হাওয়ারীরা বলেছিল, হে মারইয়ামের ছেলে ঈসা! তোমার প্রতিপালক কি আমাদের জন্য আসমান হতে খাদ্যভর্তি খাঞ্চা প্রেরণ করতে সক্ষম? সে বলেছিল, আল্লাহকে ভয় করো, যদি তোমরা মুমিন হও। (সূরা মায়েদা- ১১২)
قَالَ اللهُ اِنِّيْ مُنَزِّلُهَا عَلَيْكُمْ
আল্লাহ বললেন, আমি তোমাদের নিকট তা প্রেরণ করব। (সূরা মায়েদা- ১১৫)
আল্লাহ বৃদ্ধ বয়সেও সন্তান দিতে পারেন :
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ وَهَبَ لِيْ عَلَى الْكِبَرِ اِسْمَاعِيْلَ وَاِسْحَاقَ اِنَّ رَبِّيْ لَسَمِيْعُ الدُّعَآءِ
সমসত্ম প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি আমাকে আমার বার্ধক্যে ইসমাঈল ও ইসহাককে দান করেছেন। নিশ্চয় আমার প্রতিপালক প্রার্থনা শ্রবণ করে থাকেন। (সূরা ইবরাহীম- ৩৯)
قَالَ رَبِّ اَنّٰى يَكُوْنُ لِيْ غُلَامٌ وَّكَانَتِ امْرَاَتِيْ عَاقِرًا وَّقَدْ بَلَغْتُ مِنَ الْكِبَرِ عِتِيًّا ‐ قَالَ كَذٰلِكَۚ قَالَ رَبُّكَ هُوَ عَلَيَّ هَيِّنٌ وَّقَدْ خَلَقْتُكَ مِنْ قَبْلُ وَلَمْ تَكُ شَيْئًا
তিনি (যাকারিয়া) বললেন, হে আমার প্রতিপালক! কেমন করে আমার পুত্র হবে অথচ আমার স্ত্রী বন্ধ্যা আর আমিও বার্ধক্যের শেষ সীমায় উপনীত হয়েছি। আল্লাহ বললেন, এভাবেই হবে। তোমার প্রতিপালক বলেন, এটা আমার জন্য খুবই সহজ (বিষয়)। (তাছাড়া) আমি তো ইতোপূর্বে তোমাকেও সৃষ্টি করেছি যখন তুমি কিছুই ছিলে না। (সূরা মারইয়াম- ৮, ৯)
আল্লাহ বন্ধ্যার ঘরেও সন্তান দিতে পারেন :
قَالَ رَبِّ اَنّٰى يَكُوْنُ لِيْ غُلَامٌ وَّقَدْ بَلَغَنِيَ الْكِبَرُ وَامْرَاَتِيْ عَاقِرٌؕ قَالَ كَذٰلِكَ اللهُ يَفْعَلُ مَا يَشَآءُ
তিনি বললেন, হে আমার রব! কীভাবে আমার সন্তান হবে অথচ আমি বার্ধক্যে উপনীত হয়েছি এবং আমার স্ত্রীও বন্ধ্যা। আল্লাহ বললেন, এভাবেই হবে। আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। (সূরা আলে ইমরান- ৪০)
পিতা ছাড়াও মানুষ সৃষ্টি করতে পারেন :
قَالَتْ رَبِّ اَنّٰى يَكُوْنُ لِيْ وَلَدٌ وَّلَمْ يَمْسَسْنِيْ بَشَرٌؕ قَالَ كَذٰلِكِ اللهُ يَخْلُقُ مَا يَشَآءُؕ اِذَا قَضٰۤى اَمْرًا فَاِنَّمَا يَقُوْلُ لَهٗ كُنْ فَيَكُوْنُ
মারইয়াম বললেন, হে আমার রব! কেমন করে আমার সন্তান হবে? আমাকে তো কোন মানুষ স্পর্শ করেনি। আল্লাহ বললেন, এভাবেই। আল্লাহ যা চান তাই সৃষ্টি করেন। তিনি যখন কোন কাজের ফায়সালা করেন তখন বলেন, ‘হও’ ফলে তা হয়ে যায়। (সূরা আলে ইমরান- ৪৭)
আগুনের মাঝেও মানুষকে বাঁচাতে পারেন :
قُلْنَا يَا نَارُ كُوْنِيْ بَرْدًا وَّسَلَامًا عَلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ
আমি বললাম, হে অগ্নি! ইবরাহীমের জন্য শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও। (সূরা আম্বিয়া- ৬৯)
আল্লাহ মি‘রাজ সংঘটিত করাতে পারেন :
سُبْحَانَ الَّذِيْۤ اَسْرٰى بِعَبْدِهٖ لَيْلًا مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ اِلَى الْمَسْجِدِ الْاَقْصَى الَّذِيْ بَارَكْنَا حَوْلَهٗ لِنُرِيَهٗ مِنْ اٰيَاتِنَاؕ اِنَّهٗ هُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ
পবিত্র ও মহিমাময় তিনি, যিনি তাঁর বান্দাকে রজনীতে ভ্রমণ করিয়েছিলেন মাসজিদুল হারাম হতে মাসজিদুল আকসা পর্যমত্ম, যার পরিবেশকে করে দিয়েছিলাম বরকতময়। যাতে করে তাকে আমার নিদর্শনসমূহ দেখাতে পারি; নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। (সূরা বনী ইসরাঈল- ১)
তিনি ইচ্ছা করলে সবাইকে একই দলভুক্ত করতে পারেন :
وَلَوْ شَآءَ اللهُ لَجَعَلَكُمْ اُمَّةً وَّاحِدَةً وَّلٰكِنْ لِّيَبْلُوَكُمْ فِيْ مَاۤ اٰتَاكُمْ فَاسْتَبِقُوا الْخَيْرَاتِ
আল্লাহ যদি চাইতেন, তবে অবশ্যই তিনি তোমাদের সবাইকে এক সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত করে দিতেন। কিন্তু তিনি তোমাদেরকে যাচাই করতে চান, যা তিনি তোমাদের দিয়েছেন তার মাধ্যমে। অতএব তোমরা সৎকাজের প্রতি ধাবিত হও। (সূরা মায়েদা- ৪৮)
তিনি ইচ্ছা করলে সবাইকে হেদায়াত দিতে পারেন :
وَلَوْ شَآءَ اللهُ لَجَمَعَهُمْ عَلَى الْهُدٰى فَلَا تَكُوْنَنَّ مِنَ الْجَاهِلِيْنَ
আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদের সবাইকে অবশ্যই সৎপথে একত্র করতে পারতেন। সুতরাং তুমি মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সূরা আন‘আম- ৩৫)
فَلَوْ شَآءَ لَهَدَاكُمْ اَجْمَعِيْنَ
যদি তিনি ইচ্ছা করতেন তবে তোমাদের সবাইকে অবশ্যই সৎপথে পরিচালিত করতেন। (সূরা আন‘আম- ১৪৯)
ইচ্ছা করলে তিনি সবাইকে ঈমানদার বানাতে পারেন :
وَلَوْ شَآءَ رَبُّكَ لَاٰمَنَ مَنْ فِى الْاَ رْضِ كُلُّهُمْ جَمِيْعًاؕ اَفَاَنْتَ تُكْرِهُ النَّاسَ حَتّٰى يَكُوْنُوْا مُؤْمِنِيْنَ
তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করলে পৃথিবীতে যারা আছে তারা সকলে অবশ্যই ঈমান আনত; তবুও কি তুমি মুমিন হওয়ার জন্য মানুষের উপর জবরদস্তি করবে? (সূরা ইউনুস- ৯৯)
তিনি যাকে ইচ্ছা হেদায়াত দান করেন :
وَمَنْ يَّشَاْ يَجْعَلْهُ عَلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
আর তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে সরল পথে পরিচালিত করেন। (সূরা আন‘আম- ৩৯)
যাকে চান পবিত্র করেন :
اَلَمْ تَرَ اِلَى الَّذِيْنَ يُزَكُّوْنَ اَنْفُسَهُمْ بَلِ اللهُ يُزَكِّيْ مَنْ يَّشَآءُ
তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা নিজেদেরকে পবিত্র মনে করে? বরং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে পবিত্র করেন। (সূরা নিসা- ৪৯)
যাকে ইচ্ছা সন্তান-সন্ততি দিয়ে থাকেন :
يَخْلُقُ مَا يَشَآءُؕ يَهَبُ لِمَنْ يَّشَآءُ اِنَاثًا وَّيَهَبُ لِمَنْ يَّشَآءُ الذُّكُوْرَ ‐ اَوْ يُزَوِّجُهُمْ ذُكْرَانًا وَّاِنَاثًاۚ وَّيَجْعَلُ مَنْ يَّشَآءُ عَقِيْمًاؕ اِنَّهٗ عَلِيْمٌ قَدِيْرٌ
আল্লাহ যা ইচ্ছা তা-ই সৃষ্টি করেন। তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যাসন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্রসন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা তাকে বন্ধ্যা করে রাখেন। নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান। (সূরা শূরা- ৪৯, ৫০)
ব্যাখ্যা : এটা আল্লাহর নিরঙ্কুশ ক্ষমতার একটি সুস্পষ্ট প্রমাণ। কোন মানুষ, সে পার্থিব ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের যত বড় কর্তাই হোক না কেন, কিংবা তাকে আধ্যাত্মিক ক্ষমতার যত বড় মালিকই মনে করা হোক না কেন, অন্যদের সন্তান দেয়া তো দূরের কথা নিজের জন্য নিজের ইচ্ছানুসারে সন্তান জন্ম দানেও সে কখনো সক্ষম হয়নি। আল্লাহ যাকে বন্ধ্যা করে দিয়েছেন সে সন্তানওয়ালা হতে পারেনি। আল্লাহ যাকে শুধু কন্যাসন্তান দান করেছেন সে পুত্রসন্তানলাভ করতে পারেনি এবং আল্লাহ যাকে শুধু পুত্রসন্তানই দিয়েছেন সে কন্যাসন্তান লাভ করতে পারেনি, এ ক্ষেত্রে সবাই অসহায়। এসব দেখে শুনেও যদি কেউ আল্লাহর বাদশাহীতে সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী দাবী করে, কিংবা অন্য কাউকে তাঁর অংশীদার মনে করে, তাহলে সেটা তার নিজের অদূরদর্শিতা- যার পরিণাম সে নিজেই ভোগ করবে। কেউ নিজে নিজেই কোনকিছু বিশ্বাস করলে, তার কারণে প্রকৃত সত্যে কোন পরিবর্তন সাধিত হয় না।
আল্লাহ একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী :
وَهُوَ الْقَاهِرُ فَوْقَ عِبَادِهٖؕ وَهُوَ الْحَكِيْمُ الْخَبِيْرُ
তিনি তাঁর বান্দাদের উপর একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী, তিনি মহাজ্ঞানী ও সকল বিষয়ের খবর রাখেন। (সূরা আন‘আম- ১৮)
আল্লাহ চাইলে আরো উত্তম মানুষ আনতে পারেন :
اِنْ يَّشَاْ يُذْهِبْكُمْ اَيُّهَا النَّاسُ وَيَاْتِ بِاٰخَرِيْنَؕ وَكَانَ اللهُ عَلٰى ذٰلِكَ قَدِيْرًا
হে মানুষ! তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদেরকে অপসারণ করতে এবং (তোমাদের স্থলে) অপর কাউকে নিয়ে আসতে পারেন; আর আল্লাহ এটা করতে সম্পূর্ণ সক্ষম। (সূরা নিসা- ১৩৩)
اِنْ يَّشَاْ يُذْهِبْكُمْ وَيَاْتِ بِخَلْقٍ جَدِيْدٍ ‐ وَمَا ذٰلِكَ عَلَى اللهِ بِعَزِيْزٍ
যদি তিনি ইচ্ছা করেন তবে তোমাদেরকে অপসারণ করে দেবেন এবং তদস্থলে নতুন এক জাতি সৃষ্টি করবেন। আর এরূপ করা আল্লাহর পক্ষে মোটেই কঠিন নয়। (সূরা ফাতির- ১৬, ১৭)
اَلَمْ تَرَ اَنَّ اللهَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضَ بِالْحَقِّؕ اِنْ يَّشَاْ يُذْهِبْكُمْ وَيَاْتِ بِخَلْقٍ جَدِيْدٍ ‐ - وَمَا ذٰلِكَ عَلَى اللهِ بِعَزِيْزٍ
তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, আল্লাহ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছেন? তিনি ইচ্ছা করলেই তোমাদের অসিত্মত্ব বিলুপ্ত করতে পারেন এবং এক নতুন সৃষ্টি অসিত্মত্বে আনতে পারেন। আর এটা আল্লাহর জন্য আদৌ কঠিন নয়। (সূরা ইবরাহীম- ১৯, ২০)
আল্লাহ ইচ্ছা করলে পানি শুকিয়ে দিতে পারেন :
وَاَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَآءِ مَآءً ۢبِقَدَرٍ فَاَسْكَنَّاهُ فِى الْاَ رْضِ وَاِنَّا عَلٰى ذَهَابٍ ۢبِهٖ لَقَادِرُوْنَ
আমি আকাশ হতে বারি বর্ষণ করি পরিমিতভাবে; অতঃপর আমি সেটা মৃত্তিকায় সংরক্ষণ করি। আর আমি তাকে অপসারণ করতেও সক্ষম। (সূরা মু’মিনূন- ১৮)
قُلْ اَرَاَيْتُمْ اِنْ اَصْبَحَ مَآؤُكُمْ غَوْرًا فَمَنْ يَّاْتِيْكُمْ بِمَآءٍ مَّعِيْنٍ
বলো, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, যদি তোমাদের পানি ভূগর্ভের তলদেশে চলে যায় তবে কে তোমাদেরকে সে প্রবাহমান পানি এনে দেবে? (সূরা মুলক- ৩০)
আল্লাহ ইচ্ছা করলে ওহীর জ্ঞান ছিনিয়ে নিতে পারেন :
وَلَئِنْ شِئْنَا لَنَذْهَبَنَّ بِالَّذِيْۤ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ ثُمَّ لَا تَجِدُ لَكَ بِه عَلَيْنَا وَكِيْلًا
আমি ইচ্ছা করলে তোমার প্রতি যা ওহী করেছি তা অবশ্যই প্রত্যাহার করতে পারতাম; আর এ বিষয়ে তুমি আমার বিরুদ্ধে কোন সাহায্যকারী পেতে না। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৮৬)
আল্লাহ যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেন এবং যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন :
يَغْفِرُ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيُعَذِّبُ مَنْ يَّشَآءُؕ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন এবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি প্রদান করেন। আর আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল ও পরম করুণাময়। (সূরা আলে ইমরান- ১২৯)
اَلَمْ تَعْلَمْ اَنَّ اللهَ لَهٗ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِؕ يُعَذِّبُ مَنْ يَّشَآءُ وَيَغْفِرُ لِمَنْ يَّشَآءُؕ وَاللهُ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
তুমি কি জান না যে, আসমান ও জমিনের আধিপত্য আল্লাহরই। তিনি যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেন এবং যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। আল্লাহ সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান (সূরা মায়েদা- ৪০)
আল্লাহর শাস্তি কেউ প্রতিহত করতে পারে না :
وَلَا يُرَدُّ بَاْسُهٗ عَنِ الْقَوْمِ الْمُجْرِمِيْنَ
অপরাধী সম্প্রদায়ের উপর হতে তাঁর শাস্তি প্রতিহত করা হয় না। (সূরা আন‘আম- ১৪৭)
আল্লাহর পাকড়াও খুবই কঠোর :
وَكَذٰلِكَ اَخْذُ رَبِّكَ اِذَاۤ اَخَذَ الْقُرٰى وَهِيَ ظَالِمَةٌؕ اِنَّ اَخْذَهٗۤ اَلِيْمٌ شَدِيْدٌ
তোমার প্রতিপালকের শাসিত্ম এমনই! তিনি শাসিত্ম দান করেন জনপদবাসীকে, যখন তারা যুলুম করে থাকে। নিশ্চয় তাঁর শাসিত্ম মর্মান্তিক ও কঠিন। (সূরা হুদ- ১০২)
আল্লাহ বিভিন্নভাবে শাস্তি দিতে পারেন :
قُلْ هُوَ الْقَادِرُ عَلٰۤى اَنْ يَّبْعَثَ عَلَيْكُمْ عَذَابًا مِّنْ فَوْقِكُمْ اَوْ مِنْ تَحْتِ اَرْجُلِكُمْ اَوْ يَلْبِسَكُمْ شِيَعًا وَّيُذِيْقَ بَعْضَكُمْ بَاْسَ بَعْضٍؕ اُنْظُرْ كَيْفَ نُصَرِّفُ الْاٰيَاتِ لَعَلَّهُمْ يَفْقَهُوْنَ
বলো, তিনি তোমাদের ঊর্ধ্বদেশ অথবা পাদদেশ হতে শাস্তি প্রেরণ করতে অথবা তোমাদেরকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে অথবা একদলকে অপর দলের দ্বারা শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করাতে সক্ষম। দেখো, আমি কীভাবে বিভিন্ন প্রকার আয়াত বার বার বর্ণনা করি, যেন তারা অনুধাবন করে। (সূরা আন‘আম- ৬৫)
আল্লাহর আযাব খুবই দ্রুত আসতে পারে :
وَرَبُّكَ الْغَفُوْرُ ذُو الرَّحْمَةِؕ لَوْ يُؤَاخِذُهُمْ بِمَا كَسَبُوْا لَعَجَّلَ لَهُمُ الْعَذَابَؕ بَلْ لَّهُمْ مَّوْعِدٌ لَّنْ يَّجِدُوْا مِنْ دُوْنِه مَوْئِلًا
তোমার প্রতিপালক পরম ক্ষমাশীল ও দয়াবান। তাদের কৃতকর্মের জন্য যদি তিনি তাদেরকে পাকড়াও করতে চাইতেন তবে তিনি অবশ্যই তাদের শাসিত্ম ত্বরান্বিত করতেন। কিন্তু তাদের জন্য রয়েছে এক প্রতিশ্রুত মুহূর্ত, যা হতে তারা কখনই কোন আশ্রয়স্থল পাবে না। (সূরা কাহফ- ৫৮)
আল্লাহ জমিনকে ধসিয়ে দিতে সক্ষম :
اَاَمِنْتُمْ مَّنْ فِى السَّمَآءِ اَنْ يَّخْسِفَ بِكُمُ الْاَ رْضَ فَاِذَا هِيَ تَمُوْرُ
তোমরা কি নিরাপদ হয়ে গেছ যে, আকাশে যিনি রয়েছেন তিনি তোমাদেরকেসহ ভূমিকে ধসিয়ে দেবেন না? তখন ওটা আকস্মিকভাবে থরথর করে কাঁপতে থাকবে। (সূরা মুলক- ১৬)
শিলা দিয়েও ধ্বংস করতে পারেন :
اَفَاَمِنْتُمْ اَنْ يَّخْسِفَ بِكُمْ جَانِبَ الْبَرِّ اَوْ يُرْسِلَ عَلَيْكُمْ حَاصِبًا ثُمَّ لَا تَجِدُوْا لَكُمْ وَكِيْلًا
তোমরা কি নিরাপত্তা পেয়েছ যে, তিনি তোমাদেরকেসহ কোন অঞ্চল ধসিয়ে দেবেন না অথবা তোমাদের উপর শিলা বর্ষণ করবেন না? (যদি এমনটি ঘটতে শুরু করে) তখন তোমরা তোমাদের কোন অভিভাবক (খুঁজে) পাবে না। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৬৮)
সমুদ্রের মধ্যেও ডুবিয়ে দিতে পারেন :
اَمْ اَمِنْتُمْ اَنْ يُّعِيْدَكُمْ فِيْهِ تَارَةً اُخْرٰى فَيُرْسِلَ عَلَيْكُمْ قَاصِفًا مِّنَ الرِّيْحِ فَيُغْرِقَكُمْ بِمَا كَفَرْتُمْ ثُمَّ لَا تَجِدُوْا لَكُمْ عَلَيْنَا بِه تَبِيْعًا
অথবা তোমরা কি নিরাপত্তা পেয়েছ যে, তিনি তোমাদেরকে সমুদ্রে নিয়ে যাবেন না এবং তোমাদের উপর প্রচন্ড ঝড়ো হাওয়া পাঠাবেন না। অতঃপর তোমাদের কুফরীর জন্য তোমাদেরকে নিমজ্জিত করবেন না? তখন তোমরা এ বিষয়ে আমার বিরুদ্ধে কোন সাহায্যকারী পাবে না। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৬৯)
আল্লাহকে ব্যর্থ করার কেউ নেই :
وَمَا كَانَ اللهُ لِيُعْجِزَهٗ مِنْ شَيْءٍ فِى السَّمَاوَاتِ وَلَا فِى الْاَ رْضِؕ اِنَّهٗ كَانَ عَلِيْمًا قَدِيْرًا
আল্লাহ এমন নন যে, আসমান ও জমিনের কোনকিছু তাঁকে অক্ষম করতে পারে। তিনিই সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান। (সূরা ফাতির- ৪৪)
وَمَاۤ اَنْتُمْ بِمُعْجِزِيْنَ فِى الْاَ رْضِ وَمَا لَكُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ مِنْ وَّلِيٍّ وَّلَا نَصِيْرٍ
তোমরা পৃথিবীতে (আল্লাহকে) ব্যর্থ করতে পারবে না। আর আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন অভিভাবক নেই এবং কোন সাহায্যকারীও নেই। (সূরা শূরা- ৩১)
আল্লাহর কথার কোন পরিবর্তন হয় না :
مَا يُبَدَّلُ الْقَوْلُ لَدَيَّ وَمَاۤ اَنَاْ بِظَلَّامٍ لِّلْعَبِيْدِ
আমার কথার রদ-বদল হয় না এবং আমি আমার বান্দাদের প্রতি অত্যাচারীও নই। (সূরা ক্বাফ- ২৯)
আল্লাহ সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেন :
وَيُحِقُّ اللهُ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهٖ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُوْنَ
আল্লাহ তাঁর বাণী অনুযায়ী সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করবেন, যদিও অপরাধীরা এটা অপছন্দ করে। (সূরা ইউনুস- ৮২)
আল্লাহ সত্য প্রকাশে লজ্জাবোধ করেন না :
وَاللهُ لَا يَسْتَحْيِيْ مِنَ الْحَقِّ
আর আল্লাহ সত্য প্রকাশ করতে লজ্জা করেন না। (সূরা আহযাব- ৫৩)
আসমান ও জমিনের চাবিকাঠি আল্লাহর হাতে :
لَهٗ مَقَالِيْدُ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِ
আসমান ও জমিনের চাবিকাঠি তাঁরই অধিকারে। (সূরা যুমার- ৬৩)
لَهٗ مَقَالِيْدُ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِۚ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيَقْدِرُؕ اِنَّهٗ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ
আসমান ও জমিনের চাবিসমূহ তাঁরই অধিকারে। তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে রিযিক বৃদ্ধি করে দেন অথবা সংকুচিত করে দেন। নিশ্চয় তিনি সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ। (সূরা শূরা- ১২)
সবকিছুর ভান্ডার আল্লাহর হাতে :
وَلِلّٰهِ خَزَآئِنُ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِ وَلٰكِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ لَا يَفْقَهُوْنَ
আসমান ও জমিনের ধনভান্ডার তো আল্লাহরই; কিন্তু মুনাফিকরা তা বুঝে না। (সূরা মুনাফিকূন- ৭)
আল্লাহই সবকিছুর মধ্যে সমন্বয় সাধন করেন :
وَاِنْ مِّنْ شَيْءٍ اِلَّا عِنْدَنَا خَزَآئِنُهٗ وَمَا نُنَزِّلُهٗۤ اِلَّا بِقَدَرٍ مَّعْلُوْمٍ
আমারই নিকট আছে প্রত্যেক বস্তুর ধনভান্ডার এবং আমি তা পরিজ্ঞাত পরিমাণেই সরবরাহ করে থাকি।
(সূরা হিজর- ২১)
ব্যাখ্যা : এখানে এ সত্যটি সম্পর্কে সজাগ করে দেয়া হয়েছে যে, সীমিত ও পরিকল্পিত প্রবৃদ্ধির এ নিয়ম কেবল উদ্ভিদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়; বরং যাবতীয় সৃষ্টির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। বাতাস, পানি, আলো, শীত, গ্রীষ্ম, জীব, জড়, উদ্ভিদ তথা প্রত্যেকটি জিনিস, প্রত্যেকটি প্রজাতি, প্রত্যেকটি শ্রেণি ও প্রত্যেকটি শক্তির জন্য আলাদা আলাদা সীমা নির্ধারিত রয়েছে। সবকিছুই নিজ নিজ সীমার মধ্যে অবস্থান করছে। তাদের জন্য যে পরিমাণ নির্ধারিত রয়েছে তার চেয়ে তারা কখনো বাড়েও না আবার কমেও না। এ প্রজ্ঞামূলক নির্ধারিত অবস্থার ফলে পৃথিবী থেকে আকাশ পর্যন্ত সমগ্র বিশ্বব্যবস্থায় ভারসাম্য ও সমন্বয় সাধিত হচ্ছে। এ পৃথিবী যদি একটি আকস্মিক ঘটনার ফল হতো অথবা বহু উপাস্যের কর্মের ফল হতো, তাহলে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের অসংখ্য বস্তু ও শক্তির মধ্যে এ পর্যায়ের পূর্ণ ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া ও অব্যাহতভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকা সম্ভব হতো না।
কা‘বাঘর আল্লাহর একটি নিদর্শন :
اِنَّ اَوَّلَ بَيْتٍ وُّضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِيْ بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَّهُدًى لِّلْعَالَمِيْنَ ‐ - فِيْهِ اٰيَاتٌ ۢبَيِّنَاتٌ مَّقَامُ اِبْرَاهِيْمَۚ وَمَنْ دَخَلَهٗ كَانَ اٰمِنًا
নিশ্চয় মানুষের জন্য সর্বপ্রথম নির্মিত ঘর মক্কায় অবস্থিত, যা বরকতময় এবং বিশ্ববাসীর জন্য পথপ্রদর্শক। সেখানে রয়েছে স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ (এর মধ্যে একটি হচ্ছে) মাকামে ইবরাহীম। আর যে ব্যক্তি এ ঘরে প্রবেশ করে, সে নিরাপদ হয়ে যায়। (সূরা আলে ইমরান- ৯৬, ৯৭)
রাত ও দিন আল্লাহর নিদর্শন :
اَلَمْ يَرَوْا اَنَّا جَعَلْنَا اللَّيْلَ لِيَسْكُنُوْا فِيْهِ وَالنَّهَارَ مُبْصِرًاؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ
তারা কি অনুধাবন করে না যে, আমি রাতকে সৃষ্টি করেছি তাদের বিশ্রামের জন্য এবং দিবসকে করেছি আলোকপ্রদ। তাতে মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে। (সূরা নামল- ৮৬)
দিন ও রাতের আবর্তন আল্লাহর নিদর্শন :
اِنَّ فِيْ خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَاٰيَاتٍ لِّاُولِى الْاَلْبَابِ
নিশ্চয় আসমান ও জমিনের সৃষ্টির মধ্যে এবং দিবস ও রাত্রির পরিবর্তনে জ্ঞানবানদের জন্য স্পষ্ট নিদর্শনাবলি রয়েছে। (সূরা আলে ইমরান- ১৯০)
ব্যাখ্যা : রাত ও দিনের এ ভিন্নতার মধ্যেও এ নিদর্শন রয়েছে যে, দু’টিই পূর্ণ নিয়মতান্ত্রিকভাবে একটার পর একটা আগমন করে। আবার এদিক দিয়েও নিদর্শন যে, একটি আলো অপরটি অন্ধকার। তাছাড়া এর নিদর্শন হওয়ার আরো একটি কারণ হচ্ছে, একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দিন ক্রমান্বয়ে ছোট এবং রাত বড় হতে থাকে এবং এক সময় দু’টিই এক সমান হয়ে যায়। তারপর আবার ক্রমান্বয়ে দিন বড় এবং রাত ছোট হতে থাকে। তারপর এক সময় দিন ও রাত আবার সমান হয়ে যায়। রাত ও দিনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের যে ভিন্নতা দেখা যায়, তাতে বিরাট উদ্দেশ্য জড়িত রয়েছে। এ উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে এ কথাই প্রমাণ করে যে, সূর্য, পৃথিবী এবং পৃথিবীর সবকিছুর স্রষ্টা একমাত্র আল্লাহ। তিনিই সবকিছুকে নিজ নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। আবু যোহা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন وَاِلٰهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ لَّاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الرَّحْمٰنُ الرَّحِيْمُ এ আয়াতটি নাযিল হয়, তখন মুশরিকরা আশ্চর্য হয়ে বলতে লাগল, আল্লাহ কি কেবল একজন? যদি তোমার কথা সত্য হয়ে থাকে তবে এর পক্ষে প্রমাণ পেশ করো। তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতটি নাযিল করেন। (সুনানে সা‘দ ইবনে মানসূর, হা/১৩৮)
চাঁদের পরিভ্রমণ ও হ্রাস-বৃদ্ধি আল্লাহর নিদর্শন :
وَالْقَمَرَ قَدَّرْنَاهُ مَنَازِلَ حَتّٰى عَادَ كَالْعُرْجُوْنِ الْقَدِيْمِ ‐ - لَا الشَّمْسُ يَنْۢبَغِيْ لَهَاۤ اَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلَا اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ ؕ وَكُلٌّ فِيْ فَلَكٍ يَّسْبَحُوْنَ
আমি চন্দ্রের জন্য নির্ধারণ করেছি বিভিন্ন স্তর, এমনকি তা ভ্রমণ শেষে ক্ষীণ হয়ে খেজুরের পুরাতন ডালের মতো হয়ে যায়। সূর্যের সাধ্য নেই যে, সে চন্দ্রকে ধরে ফেলে এবং রাত্রিও দিনের পূর্বে আসতে পারে না। প্রত্যেকেই নির্ধারিত কক্ষে বিচরণ করে। (সূরা ইয়াসীন, ৩৯-৪০)
ব্যাখ্যা : চাঁদের পরিবর্তন মাসের মধ্যে প্রতিদিন হতে থাকে। প্রথম দিন সে ছোট আকারে উদিত হয়, যাকে আরবি ভাষায় هِلَالٌ (হিলাল) বা নতুন চাঁদ বলা হয়। তারপর ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত চৌদ্দ দিনের রাতে তা পূর্ণতা লাভ করে। তারপর প্রতিদিন তার দেহ হ্রাস পেতে থাকে। এমনকি শেষ পর্যন্ত আবার হিলাল আকারে ফিরে আসে। হাজার হাজার বছর থেকে এ প্রক্রিয়া চলে আসছে এবং কখনো এর ব্যতিক্রম দেখা যায়নি।
আকাশে বিচরণকারী পাখি আল্লাহর নিদর্শন :
اَلَمْ يَرَوْا اِلَى الطَّيْرِ مُسَخَّرَاتٍ فِيْ جَوِّ السَّمَآءِؕ مَا يُمْسِكُهُنَّ اِلَّا اللهُؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ
তারা কি আকাশের শূন্য গর্ভে নিয়ন্ত্রণাধীন পাখির প্রতি লক্ষ্য করে না? সেগুলোকে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউই স্থির রাখেন না। অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য। (সূরা নাহল- ৭৯)
বিস্তৃত জমিন, পাহাড় ও নদ-নদী আল্লাহর নিদর্শন :
وَهُوَ الَّذِيْ مَدَّ الْاَ رْضَ وَجَعَلَ فِيْهَا رَوَاسِيَ وَاَنْهَارًاؕ وَمِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ جَعَلَ فِيْهَا زَوْجَيْنِ اثْنَيْنِ يُغْشِى اللَّيْلَ النَّهَارَؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ
তিনিই পৃথিবীকে করেছেন বিস্তৃত এবং এতে পর্বতমালা ও নদীসমূহও সৃষ্টি করেছেন। আর (এতে) প্রত্যেক প্রকারের ফল সৃষ্টি করেছেন জোড়ায় জোড়ায়। তিনি দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন। নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে চিমত্মাশীল সম্প্রদায়ের জন্য। (সূরা রা‘দ- ৩)
বাতাসের গতির পরিবর্তন আল্লাহর নিদর্শন :
وَمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ مِنَ السَّمَآءِ مِنْ رِّزْقٍ فَاَحْيَا بِهِ الْاَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا وَتَصْرِيْفِ الرِّيَاحِ اٰيَاتٌ لِّقَوْمٍ يَّعْقِلُوْنَ
আল্লাহ আকাশ হতে যে পানি বর্ষণ করার দ্বারা পৃথিবীকে তার মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন তাতে এবং বায়ুর পরিবর্তনে নিদর্শন রয়েছে জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য। (সূরা জাসিয়া- ৫)
ব্যাখ্যা : বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন উচ্চতায় বাতাস প্রবাহিত হয়, যার কারণে ঋতুর পরিবর্তন সংঘটিত হয়। পৃথিবীর পৃষ্ঠের উপরিভাগে একটি বিশাল বায়ু স্তর আছে। তাতে এমনসব উপাদান বিদ্যমান রয়েছে, যা প্রাণীকুলের শ্বাস গ্রহণের জন্য প্রয়োজন এবং নানা প্রকার আসমানী বিপদাপদ থেকে বাঁচার কারণ। এর সাথে এটাও দেখার বিষয় যে, এ বাতাস শুধু বায়ুমন্ডলে বিদ্যমান নয়, মাঝে মধ্যে তা বিভিন্নভাবে প্রবাহিত হতে থাকে। কখনো মৃদুভাবে, কখনো শুষ্কভাবে, কখনো আর্দ্রভাবে, কখনো বৃষ্টিবাহী হিসেবে এবং কখনো ঝড়ো হাওয়ার আকারে প্রবাহিত হয়। এসব বাতাস নিজ থেকেই প্রবাহিত হয় না এবং এলোমেলোভাবেও প্রবাহিত হয় না। এরও একটা শৃঙ্খলা আছে, যা সাক্ষ্য দেয় যে, এ ব্যবস্থা পূর্ণমাত্রায় যুক্তিনির্ভর এবং এর দ্বারা অতীব গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যাবলি পূরণ হচ্ছে। তাছাড়া পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যে প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল অবস্থা অনুসারে শীত ও গ্রীষ্মের যে হ্রাস বৃদ্ধি হয়, তার সাথেও এর অত্যন্ত গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। ঋতু পরিবর্তন ও বৃষ্টি বণ্টনের সাথেও এর অত্যন্ত গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এর সবগুলো জিনিসই ডেকে ডেকে বলছে, কোন অন্ধ প্রকৃতি আকষ্মিকভাবে এর ব্যবস্থা করে দেয়নি। কিংবা সূর্য ও পৃথিবী, বাতাস ও পানি এবং উদ্ভিদ ও প্রাণীকুলের জন্য আলাদা আলাদা কোন ব্যবস্থাপক নেই। বরং নিশ্চিতভাবে একমাত্র আল্লাহই এসবের স্রষ্টা এবং এক বিরাট উদ্দেশ্য সাধনের জন্য তাঁর জ্ঞান ও কৌশল এ ব্যবস্থা করেছে। তাঁর অসীম ক্ষমতাবলেই এ ব্যবস্থা পূর্ণ নিয়মতান্ত্রিকতার সাথে একটি নির্দিষ্ট নিয়মে চলছে।
সমুদ্রে জাহাজ চলাচল আল্লাহর নিদর্শন :
وَمِنْ اٰيَاتِهٖۤ اَنْ يُّرْسِلَ الرِّيَاحَ مُبَشِّرَاتٍ وَّلِيُذِيْقَكُمْ مِّنْ رَّحْمَتِهٖ وَلِتَجْرِيَ الْفُلْكُ بِاَمْرِهٖ وَلِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِهٖ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
আর তাঁর দৃষ্টান্তগুলোর মধ্যে একটি এই যে, তিনি বাতাস পাঠান সুখবর দানকারীরূপে। যাতে তিনি তোমাদেরকে তাঁর অনুগ্রহের স্বাদ ভোগ করান। আর যেন নৌযানসমূহ তাঁর নির্দেশে চলাচল করে, যেন তোমরা তাঁর অনুগ্রহ অন্বেষণ করতে পার এবং যেন তোমরা তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা রূম- ৪৬)
নৌকা ও অন্যান্য যানবাহন আল্লাহর নিদর্শন :
وَاٰيَةٌ لَّهُمْ اَنَّا حَمَلْنَا ذُرِّيَّتَهُمْ فِى الْفُلْكِ الْمَشْحُوْنِ ‐ - وَخَلَقْنَا لَهُمْ مِّنْ مِّثْلِهٖ مَا يَرْكَبُوْنَ
আর তাদের জন্য একটি নিদর্শন এই যে, আমি তাদের বংশধরদেরকে (এক সময় একটি) ভরা নৌকায় আরোহণ করিয়েছিলাম। আর আমি তাদের জন্য এরূপ (নৌযান) সৃষ্টি করেছি, যেন তারা আরোহণ করে। (সূরা ইয়াসীন- ৪১, ৪২)
সমুদ্রে চলমান জাহাজ আল্লাহর নিদর্শন :
وَمِنْ اٰيَاتِهِ الْجَوَارِ فِى الْبَحْرِ كَالْاَعْلَامِ
তাঁর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত হলো সমুদ্রে চলমান পর্বত সদৃশ নৌযানসমূহ। (সূরা শূরা- ৩২)
ব্যাখ্যা : পৃথিবীর তিনচতুর্থাংশ পানি এবং একচতুর্থাংশ স্থলভাগ। স্থলভাগেরও বহু সংখ্যক ছোট বড় অঞ্চলের মধ্যে জলভাগ অবস্থিত। পৃথিবীর এসব স্থলভাগে মানব বসতি বিস্তার এবং তাদের মাঝে পর্যটন ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হওয়া আদৌ সম্ভব হতো না, যদি পানি ও বাতাসকে এমন নিয়মের অধীন না করা হতো, যার কারণে নৌ-পরিবহন সম্ভব হয়েছে এবং মানুষ জাহাজ নির্মাণে সক্ষম হয়েছে। এটা কি এ বিষয়ের সুস্পষ্ট প্রমাণ নয় যে, এক সর্বশক্তিমান, দয়ালু ও মহাজ্ঞানী প্রভু আছেন, যিনি মানুষ, পৃথিবী, পানি, সমুদ্র, বাতাস এবং ভূপৃষ্ঠের সমস্ত জিনিসকে তাঁর নিজের বিশেষ পরিকল্পনানুসারে সৃষ্টি করেছেন?
বৃষ্টি তৈরি করা আল্লাহর নিদর্শন :
اَلَمْ تَرَ اَنَّ اللهَ يُزْجِيْ سَحَابًا ثُمَّ يُؤَلِّفُ بَيْنَهٗ ثُمَّ يَجْعَلُهٗ رُكَامًا فَتَرَى الْوَدْقَ يَخْرُجُ مِنْ خِلَالِهٖۚ وَيُنَزِّلُ مِنَ السَّمَآءِ مِنْ جِبَالٍ فِيْهَا مِنْ ۢبَرَدٍ فَيُصِيْبُ بِهٖ مَنْ يَّشَآءُ وَيَصْرِفُهٗ عَنْ مَّنْ يَّشَآءُؕ يَكَادُ سَنَا بَرْقِهٖ يَذْهَبُ بِالْاَبْصَارِ
তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ মেঘমালাকে সঞ্চালন করেন, তারপর তাদেরকে একত্র করেন এবং পরে পুঞ্জীভূত করেন। অতঃপর তুমি দেখতে পাও যে, তা হতে নির্গত হয় বারিধারা। (আরো দেখতে পাও যে) তিনি আকাশের শিলাস্তর হতে শিলা বর্ষণ করেন এবং এটা দ্বারা তিনি যাকে ইচ্ছা আঘাত করেন; আবার যার থেকে ইচ্ছা অন্যদিকে ফিরিয়ে দেন। মেঘের বিদ্যুৎ ঝলক (চোখে ধাঁধা লাগিয়ে দেয়া) মনে হয় তা যেন দৃষ্টিশক্তি কেঁড়ে নেবে। (সূরা নূর- ৪৩)
মৃত জমিনকে জীবিতকরণ আল্লাহর নিদর্শন : গুলো
وَاللهُ اَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَحْيَا بِهِ الْاَ رْضَ بَعْدَ مَوْتِهَاؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّسْمَعُوْنَ
আল্লাহ আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন এবং তা দ্বারা মৃত ভূমিকে পুনর্জীবিত করেন। অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে যে সম্প্রদায় কথা শুনে তাদের জন্য। (সূরা নাহল- ৬৫)
উদ্ভিদ ও বাগান আল্লাহর নিদর্শন :
اَوَلَمْ يَرَوْا اِلَى الْاَ رْضِ كَمْ اَنْۢبَتْنَا فِيْهَا مِنْ كُلِّ زَوْجٍ كَرِيْمٍ ‐ - اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةًؕ وَمَا كَانَ اَكْثَرُهُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
তারা কি জমিনের দিকে লক্ষ্য করে না? আমি তাতে প্রত্যেক প্রকারের কত উৎকৃষ্ট উদ্ভিদ উদগত করেছি! নিশ্চয় এতে রয়েছে নিদর্শন, কিন্তু তাদের অধিকাংশই মুমিন নয়। (সূরা শু‘আরা- ৭, ৮)
وَاٰيَةٌ لَّهُمُ الْاَ رْضُ الْمَيْتَةُۚ اَحْيَيْنَاهَا وَاَخْرَجْنَا مِنْهَا حَبًّا فَمِنْهُ يَاْكُلُوْنَ ‐ وَجَعَلْنَا فِيْهَا جَنَّاتٍ مِّنْ نَّخِيْلٍ وَّاَعْنَابٍ وَّفَجَّرْنَا فِيْهَا مِنَ الْعُيُوْنِ ‐ - لِيَاْكُلُوْا مِنْ ثَمَرِهٖ وَمَا عَمِلَتْهُ اَيْدِيْهِمْؕ اَفَلَا يَشْكُرُوْنَ
আর তাদের জন্য একটি নিদর্শন হলো মৃত জমিন। আমি তাকে সজীব করি এবং তা থেকে উৎপন্ন করি শস্য, ফলে তা থেকে তারা খেয়ে থাকে। আমি তাতে সৃষ্টি করি খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান এবং তাতে প্রবাহিত করি ঝর্ণাসমূহ। যেন তারা এর ফলমূল থেকে খাদ্য গ্রহণ করতে পারে। তাদের হাত এটা সৃষ্টি করেনি; তবুও কি তারা কৃতজ্ঞ হবে না? (সূরা ইয়াসীন, ৩৩-৩৫)
ব্যাখ্যা : মানুষ দিন-রাত ভূমি থেকে উৎপাদিত শস্য ও ফলমূল আহার করছে। তারা গাফলতির পর্দা ছিন্ন করে গভীরভাবে চিন্তা করলে জানতে পারবে যে, এ ভূমির আবরণ ভেদ করে সবুজ শ্যামল বন-বনানী সৃষ্টি এবং নদ-নদীর স্রোত প্রবাহিত হওয়া এমন কোন খেলা নয়, যা নিজে নিজেই চলছে। পৃথিবীর প্রকৃত রূপ সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করলে দেখা যাবে যে, এদের মধ্যে জীবনের নামমাত্রও নেই। এ নিষ্প্রাণ জমিনের বুক চিরে উদ্ভিদগুলোর জীবন লাভ করা সম্ভব হলো কেমন করে? কয়েকটি বড় বড় উপকরণ সংগৃহীত না হলে এ জীবনধারা আদৌ অস্তিত্ব লাভ করতে পারত না। আর তা হলো :
১. পৃথিবীর উপরিভাগে এমন উপাদানের পর্দা বিছানো আছে, যাতে উদ্ভিদের শিকড় তার মধ্যে বিস্তার লাভ করে খাদ্য গ্রহণ করতে পারে।
২. জমিনের উপর বিভিন্ন পদ্ধতিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে উদ্ভিদের শিকড়সমূহ তা চুষে নিতে সক্ষম হয়।
৩. শূন্য আকাশে বায়ু সৃষ্টি করা হয়েছে, যা বৃষ্টি বহনের কাজ করে। এর মধ্যে এমনসব গ্যাসের সমাবেশ ঘটে, যা উদ্ভিদের জীবন ও তাদের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন।
৪. সূর্য ও পৃথিবীর মধ্যে এমন সম্পর্ক স্থাপন করা হয়েছে, যার ফলে উদ্ভিদের জীবন গঠনে প্রয়োজনানুসারে উষ্ণতা এবং অনুকূল পরিবেশ লাভ করতে পারে।
এ চারটি বড় বড় উপকরণ সৃষ্টি করার পর উদ্ভিদের অস্তিত্ব লাভ করা সম্ভব হয়। এদের মধ্য থেকে প্রত্যেকের বীজ এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যার ফলে যখনই তা উপযোগী জমি, পানি ও বাতাস পায় তখনই তার মধ্যে উদ্ভিদ জন্ম নেয়া শুরু হয়ে যায়। এছাড়াও এ বীজের মধ্যে এমন ব্যবস্থাও করে দেয়া হয়েছে, যার ফলে প্রত্যেক উদ্ভিদ তার নিজ প্রজাতির চারা জন্ম দেয়। এসব উদ্ভিদ অসংখ্য শ্রেণির পশু ও মানবকুলের খাদ্য, ঔষধ, পোষাক ও অন্যান্য অগণিত প্রয়োজন পূরণ করে। এ বিস্ময়কর ব্যবস্থা সম্পর্কে যে ব্যক্তিই চিন্তা করবে, সে যদি হঠকারী ও সংকীর্ণ না হয় তাহলে তার অন্তর সাক্ষ্য দেবে যে, এ সবকিছু আপনা-আপনি হতে পারে না; মহান আল্লাহই এসব পরিচালনা করছেন।
বিভিন্ন স্বাদের ফলমূল আল্লাহর নিদর্শন :
وَفِى الْاَرْضِ قِطَعٌ مُّتَجَاوِرَاتٌ وَّجَنَّاتٌ مِّنْ اَعْنَابٍ وَّزَرْعٌ وَّنَخِيْلٌ صِنْوَانٌ وَّغَيْرُ صِنْوَانٍ يُّسْقٰى بِمَآءٍ وَّاحِدٍؕ وَنُفَضِّلُ بَعْضَهَا عَلٰى بَعْضٍ فِى الْاُكُلِؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَّعْقِلُوْنَ
পৃথিবীতে রয়েছে পরস্পর সংলগ্ন ভূখন্ড, এতে আছে আঙ্গুরের বাগান, শস্যক্ষেত্র, একাধিক শীষবিশিষ্ট অথবা এক শীষবিশিষ্ট খেজুর বৃক্ষ, এসব একই পানিতে সিঞ্চিত। আর আমি খাদ্য হিসেবে তাদের কতককে কতকের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ে থাকি। অবশ্যই এতে বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা রা‘দ- ৪)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ তা‘আলা সারা পৃথিবীতে একই ধরনের ভূখন্ড বানিয়ে রেখে দেননি। পরস্পর সংলগ্ন থাকা সত্ত্বেও আকার-আকৃতি, রং, গঠন, উপাদান, বৈশিষ্ট্য, শক্তি, যোগ্যতা এবং উৎপাদন ও খনিজ সম্পদ এসব দিক থেকে বিভিন্ন ভূখন্ড পরস্পর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। বিভিন্ন ভূখন্ডের সৃষ্টি এবং এদের মধ্যে নানা প্রকার ভিন্নতার অস্তিত্ব এত বিপুল পরিমাণ কল্যাণে পরিপূর্ণ যে, তা গণনা করে শেষ করা যাবে না। অন্যান্য সৃষ্টির কথা বাদ দিয়ে কেবল মানুষের স্বার্থকে সামনে রেখে যদি দেখা যায় তাহলে অনুমান করা যেতে পারে যে, মানুষের বিভিন্ন স্বার্থ ও চাহিদা এবং পৃথিবীর এসব ভূখন্ডের বৈচিত্র্যের মধ্যে যে সম্পর্ক ও সামঞ্জস্য পাওয়া যায় এবং এসবের বদৌলতে মানবসমাজ সম্প্রসারিত হওয়ার যে সুযোগ লাভ করে তা নিশ্চিতভাবেই কোন জ্ঞানী ও বিজ্ঞানময় সত্তার সুচিন্তিত পরিকল্পনা এবং বিজ্ঞতাপূর্ণ সংকল্পের ফলশ্রুতি। আল্লাহ তা‘আলা এ বিশ্বজাহানের সব স্থান একই অবস্থায় রাখেননি। পৃথিবী একই, কিন্তু এর ভূখন্ডের প্রত্যেকটির বর্ণ, আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য আলাদা। একই জমি ও একই পানি, কিন্তু তা থেকে বিভিন্ন প্রকার ফল ও ফসল উৎপন্ন হচ্ছে। কিছু কিছু খেজুর গাছের মূল থেকে একটি খেজুর গাছ বের হয়। আবার কিছু কিছুর মূল থেকে একাধিক খেজুর গাছ বের হয়। একই গাছ কিন্তু তার প্রত্যেকটি ফল একই জাতের হওয়া সত্ত্বেও তাদের আকৃতি, আয়তন ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য আলাদা। একই মূল থেকে দু’টি ভিন্ন গাছ বের হচ্ছে এবং তাদের প্রত্যেকটিই একক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। যে ব্যক্তি এসব বিষয় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে সে কখনো মানুষের স্বভাব, প্রকৃতি, প্রবণতা ও মেজাজের মধ্যে এত বেশি পার্থক্য দেখে অস্থির হবে না। বরং সে বলতে বাধ্য যে, এসব আল্লাহ তা‘আলারই নিদর্শন।
জমিনে ছড়িয়ে থাকা প্রাণীকুল আল্লাহর নিদর্শন :
وَمِنْ اٰيَاتِه خَلْقُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِ وَمَا بَثَّ فِيْهِمَا مِنْ دَآبَّةٍ ؕ وَهُوَ عَلٰى جَمْعِهِمْ اِذَا يَشَآءُ قَدِيْرٌ
তাঁর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত হলো আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং এতোদুভয়ের মধ্যে তিনি যেসব জীবজন্তু ছড়িয়ে দিয়েছেন সেগুলো; তিনি যখন ইচ্ছা তখনই তাদেরকে সমবেত করতে সক্ষম। (সূরা শূরা- ২৯)
ব্যাখ্যা : আমাদের চারদিকে অসংখ্য নিদর্শন ছড়িয়ে আছে। পৃথিবীর বুকে বিচরণশীল প্রাণীকুল এবং শূন্যে উড়ে চলা পাখিদের কোন একটি শ্রেণির জীবন সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করলে দেখা যায়, কীভাবে তাদেরকে অবস্থা ও পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তাদের আকৃতি নির্মাণ করা হয়েছে। কীভাবে তাদের সৃষ্টিগত স্বাভাবিক প্রবণতার মধ্যে তাদের প্রাকৃতিক প্রয়োজন অনুযায়ী শক্তি ও সামর্থ্যের সঞ্চার করা হয়েছে। কীভাবে তাদের জীবিকা দানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কীভাবে তাদের জন্য ভাগ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তারা তার সীমানা পেরিয়ে এগিয়েও যেতে পারে না, পিছিয়েও আসতে পারে না। কীভাবে তাদের এক একটি প্রাণীকে এবং এক একটি ছোট ছোট কীটপতঙ্গকেও তার নিজের স্থানে রক্ষণাবেক্ষণ ও পথপ্রদর্শন করা হচ্ছে। কীভাবে একটি নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের থেকে কাজ আদায় করে নেয়া হচ্ছে। কীভাবে তাদেরকে একটি নিয়ম-শৃঙ্খলার আওতাধীন করে রাখা হয়েছে। কীভাবে তাদের জন্ম, মৃত্যু ও বংশ বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা যথানিয়মে চলছে। আল্লাহর অসংখ্য নিদর্শনের মধ্য থেকে যদি কেবল একটি নিদর্শন সম্পর্কে মানুষ চিন্তা-ভাবনা করে তাহলে সে জানতে পারবে যে, আল্লাহর একত্ব এবং তাঁর গুণাবলির যে ধারণা কুরআন আমাদের সামনে পেশ করেছে তা যথার্থ ও প্রকৃত সত্য। কিন্তু আমরা নিজেদের চোখ মেলে এগুলো দেখি না এবং বুঝারও চেষ্টা করি না।
পশুর ভেতরে সুস্বাদু দুধ তৈরি করা আল্লাহর নিদর্শন :
وَاِنَّ لَكُمْ فِى الْاَنْعَامِ لَعِبْرَةً ؕ نُسْقِيْكُمْ مِّمَّا فِيْ بُطُوْنِهٖ مِنْ ۢبَيْنِ فَرْثٍ وَّدَمٍ لَّبَنًا خَالِصًا سَآئِغًا لِّلشَّارِبِيْنَ
অবশ্যই গবাদি পশুর মধ্যে তোমাদের জন্য শিক্ষা রয়েছে। তাদের উদরস্থিত গোবর ও রক্তের মধ্য হতে তোমাদেরকে পান করাই বিশুদ্ধ দুধ, যা পানকারীদের জন্য খুবই সুস্বাদু। (সূরা নাহল- ৬৬)
ব্যাখ্যা : পশু যে খাদ্য খায় তা থেকে একদিকে রক্ত তৈরি হয় এবং অন্যদিকে তৈরি হয় মলমূত্র। কিন্তু এ পশুদের স্ত্রীজাতির মধ্যে আবার একই খাদ্য থেকে তৃতীয় একটি জিনিস তৈরি হয়, যাকে আমরা দুধ বলি। বর্ণ, গন্ধ, গুণ, উপকারিতা ও উদ্দেশ্যের দিক দিয়ে আগের দু’টি থেকে এটি সম্পূর্ণ আলাদা। তারপর বিশেষ করে গবাদি পশুর মধ্যে এর উৎপাদন এত বেশি হয় যে, তারা নিজেদের সন্তানদের প্রয়োজন পূর্ণ করার পর মানুষের জন্যও এ উৎকৃষ্টতম খাদ্য বিপুল পরিমাণে সরবরাহ করতে পারে। এটা আল্লাহর কুদরতের এক নিদর্শন মাত্র।
চতুষ্পদ জন্তুর বিভিন্ন উপকারিতা আল্লাহর নিদর্শন :
وَاِنَّ لَكُمْ فِى الْاَنْعَامِ لَعِبْرَةًؕ نُسْقِيْكُمْ مِّمَّا فِيْ بُطُوْنِهَا وَلَكُمْ فِيْهَا مَنَافِعُ كَثِيْرَةٌ وَّمِنْهَا تَاْكُلُوْنَ ‐ - وَعَلَيْهَا وَعَلَى الْفُلْكِ تُحْمَلُوْنَ
তোমাদের জন্য অবশ্যই শিক্ষণীয় বিষয় আছে চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যে। তোমাদেরকে আমি পান করাই তাদের উদরে যা আছে তা হতে এবং তাতে তোমাদের জন্য রয়েছে প্রচুর উপকারিতা। তোমরা তা হতে আহার কর এবং তোমরা তাতে ও নৌযানে আরোহণও করে থাক। (সূরা মু’মিনূন- ২১, ২২)
ব্যাখ্যা : পৃথিবীতে যেসব জন্তু মানুষের সেবায় নিয়োজিত আছে তার মধ্যে বিশেষ করে আছে গরু, মেষ, ভেড়া, বকরী, উট ও ঘোড়া। এসব জন্তুর সৃষ্টিকর্তা এদেরকে এমন নকশা অনুসারে সৃষ্টি করেছেন যে, এগুলো অতি সহজেই মানুষের পোষ মানা সেবকে পরিণত হয়ে যায় এবং তাদের সাহায্যে মানুষের অসংখ্য প্রয়োজন পূরণ হয়। মানুষ এসবের উপর আরোহণ করে, এসবকে ভার বহন করার কাজে লাগায়, ক্ষেত, কৃষি ও ফসল উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করে এবং এদের দুধ দোহন করে পান করে। আবার তা দিয়ে মাখন, ঘি, দধি, পনির এবং নানা রকমের মিষ্টিও তৈরি করে। এদের গোশত খায় এবং চর্বি ব্যবহার করে। এদের লোম, চামড়া, নাড়িভুঁড়ি, হাড্ডি, রক্ত, গোবর তথা প্রতিটি জিনিস তার কাজে লাগে। এটা কি সুস্পষ্ট প্রমাণ নয় যে, মানুষের সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীতে তাকে সৃষ্টি করার পূর্বেই তার এ অসংখ্য প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ্য রেখে একটি বিশেষ পরিকল্পনা অনুযায়ী এসব জন্তুগুলোকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে সে তা দ্বারা উপকৃত হতে পারে।
মৌমাছি কর্তৃক মধু তৈরি করা আল্লাহর নিদর্শন :
وَاَوْحٰى رَبُّكَ اِلَى النَّحْلِ اَنِ اتَّخِذِيْ مِنَ الْجِبَالِ بُيُوْتًا وَّمِنَ الشَّجَرِ وَمِمَّا يَعْرِشُوْنَ ‐ ثُمَّ كُلِيْ مِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ فَاسْلُكِيْ سُبُلَ رَبِّكِ ذُلُلًاؕ يَّخْرُجُ مِنْ ۢبُطُوْنِهَا شَرَابٌ مُّخْتَلِفٌ اَلْوَانُهٗ فِيْهِ شِفَآءٌ لِّلنَّاسِؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ
তোমার প্রতিপালক মৌমাছিকে এ নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা গৃহ নির্মাণ করো পাহাড়ে, বৃক্ষে ও মানুষ যে গৃহ নির্মাণ করে তাতে। তারপর প্রত্যেক ফল হতে কিছু কিছু আহার করো, অতঃপর তোমার প্রতিপালকের সহজ পথ অনুসরণ করো। তার উদর হতে নির্গত হয় বিভিন্ন বর্ণের পানীয়, যাতে মানুষের জন্য রয়েছে আরোগ্য। অবশ্যই এতে রয়েছে নিদর্শন চিমত্মাশীল সম্প্রদায়ের জন্য। (সূরা নাহল- ৬৮, ৬৯)
ব্যাখ্যা : মধু একটি উপকারী ও সুস্বাদু খাদ্য। তাছাড়া এর মধ্যে রোগ নিরাময় শক্তিও রয়েছে। কারণ এর মধ্যে রয়েছে ফুল ও ফলের রস এবং উন্নত পর্যায়ের গ্লুকোজ। তাছাড়া মধুর একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তা নিজে কখনো পঁচে না এবং অন্য জিনিসকেও দীর্ঘদিন পর্যন্ত পঁচন থেকে সংরক্ষণ রাখে। এজন্য ঔষধ নির্মাণ শিল্পে এলকোহলের পরিবর্তে মধুর ব্যবহার হাজার বছর থেকে চলে আসছে। ‘রবের তৈরি করা পথ’ বলতে মৌমাছির দল যে ব্যবস্থা ও কর্মপদ্ধতির আওতাধীনে কাজ করে সেই ব্যবস্থা ও কর্মপদ্ধতিকে বুঝানো হয়েছে। মৌচাকের আকৃতি ও কাঠামো, তাদের দলগঠন প্রক্রিয়া, শ্রমবণ্টন প্রক্রিয়া, শ্রমনীতি এবং সংগ্রহনীতি- এসব হচ্ছে সেই পথ, যা তাদের রব তাদেরকে শিখিয়েছেন। এ ব্যাপারে তাদের নিজেদের চিন্তা-ভাবনা করার প্রয়োজন হয় না। এটা একটি নির্ধারিত ব্যবস্থা। এরই ভিত্তিতে একটি নির্ধারিত নিয়মে এ অগণিত মৌমাছিগুলো হাজার হাজার বছর ধরে কাজ করে চলছে। এটা আল্লাহর একত্ববাদের বিশেষ নিদর্শন।
বান্দাদের মধ্যে রিযিকের তারতম্য আল্লাহর নিদর্শন :
اَوَلَمْ يَرَوْا اَنَّ اللهَ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيَقْدِرُؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ
তারা কি দেখে না যে, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা প্রচুর রিযিক দেন এবং তা হ্রাস করেন। নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে ঐসব লোকদের জন্য, যারা বিশ্বাস করে। (সূরা রূম- ৩৭)
অতীত জাতির ধ্বংসের কাহিনীতে আল্লাহর নিদর্শন রয়েছে :
وَكَمْ اَهْلَكْنَا قَبْلَهُمْ مِّنْ قَرْنٍ هُمْ اَشَدُّ مِنْهُمْ بَطْشًا فَنَقَّبُوْا فِى الْبِلَادِ هَلْ مِنْ مَّحِيْصٍ ‐ - اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَذِكْرٰى لِمَنْ كَانَ لَهٗ قَلْبٌ اَوْ اَلْقَى السَّمْعَ وَهُوَ شَهِيْدٌ
আমি তাদের পূর্বে আরো বহু জাতি ধ্বংস করেছি, যারা ছিল তাদের অপেক্ষা শক্তিতে অনেক প্রবল। তারা দেশে-বিদেশে ভ্রমণ করে বেড়াত; কিন্তু তবুও (আল্লাহর আযাব থেকে তাদের) কোন পলায়নের জায়গা ছিল কি? নিশ্চয় এতে উপদেশ রয়েছে তার জন্যে, যার অন্তঃকরণ আছে অথবা যে একাগ্রচিত্তে শ্রবণ করে। (সূরা ক্বাফ- ৩৬, ৩৭)
মানুষের ভাষা ও বর্ণের ভিন্নতা আল্লাহর নিদর্শন :
وَمِنْ اٰيَاتِه خَلْقُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِ وَاخْتِلَافُ اَلْسِنَتِكُمْ وَاَلْوَانِكُمْؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّلْعَالِمِيْنَ
আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে আসমান ও জমিনের সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের ভিন্নতা। নিশ্চয় এতে জ্ঞানীদের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা রূম- ২২)
ব্যাখ্যা : যদিও প্রতিটি মানুষের মুখ ও জিহবার গঠন এবং মস্তিষ্কের গঠনাকৃতি একই ধরনের, তবুও পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে তোমাদের ভাষা বিভিন্ন রকম। তারপর একই ভাষায় যারা কথা বলে, তাদের বিভিন্ন শহর ও জনপদের ভাষাও আলাদা। আবার প্রত্যেক ব্যক্তির বলার রীতি, শব্দের উচ্চারণ এবং আলাপ-আলোচনার পদ্ধতিও আলাদা। অনুরূপভাবে তোমাদের সৃষ্টির উপাদান এবং গঠনসূত্র এক হওয়া সত্ত্বেও তোমাদের বর্ণ এত বেশি বিভিন্ন যে, একই বাপ-মায়ের দু’টি সন্তানের বর্ণও সম্পূর্ণ আলাদা। এছাড়াও দুনিয়ায় সকল দিকেই এত বেশি বৈচিত্র দেখা যায় যে, কোন ব্যক্তি বা বস্তুর যে কোন একটি শ্রেণিকে নেয়া হোক, দেখা যাবে তাদের প্রতিটির মধ্যে মৌলিক একাত্মতা সত্ত্বেও অসংখ্য ভিন্নতা বিরাজ করছে। এমনকি একটি গাছের দু’টি পাতার মধ্যেও পূর্ণ সাদৃশ্য পাওয়া যায় না। এ বিষয়টি পরিষ্কার জানিয়ে দিচ্ছে যে, এখানে এমন একজন দক্ষ কারিগর কাজ করছেন, যিনি প্রত্যেকটি জিনিসকে কোন নমুনা ছাড়াই তৈরি করেন। তাঁর উদ্ভাবন ক্ষমতা সর্বদা একটি নতুন মডেল বের করে চলেছে। যে ব্যক্তিই এ বিস্ময়কর দৃশ্য চোখ মেলে দেখবে সে নিশ্চিত বুঝতে পারবে যে, প্রতি মুহূর্তে আল্লাহ নতুন নতুন জিনিস সৃষ্টি করে যাচ্ছেন এবং নিজের সৃষ্ট প্রত্যেকটি জিনিসের উপর তিনি দৃষ্টিবান।
গোটা পৃথিবী আল্লাহর নিদর্শন :
وَفِى الْاَ رْضِ اٰيَاتٌ لِّلْمُوْقِنِيْنَ
পৃথিবীতে বিশ্বাসীদের জন্য রয়েছে অনেক নিদর্শন। (সূরা যারিয়াত- ২০)
ব্যাখ্যা : পৃথিবীর অস্তিত্ব, তার গঠন ও আকার-আকৃতি, সূর্য থেকে তার নির্দিষ্ট দূরত্ব, তার উপর উষ্ণতা ও আলোর ব্যবস্থা, সেখানে বিভিন্ন ঋতুর আগমন ও প্রস্থান, তার উপর বাতাস ও পানি সরবরাহ, তার অভ্যন্তরে অগণিত সম্পদের ভান্ডার সরবরাহ, তার উপরিভাগ একটি উর্বর আবরণ দিয়ে মুড়ে দেয়া এবং তার পৃষ্ঠদেশে ভিন্ন রকমের অগণিত উদ্ভিদ উৎপন্ন করে দেয়া, তাতে স্থল, জল ও বায়ুতে বিচরণকারী জীবজন্তু ও কীটপতঙ্গের অসংখ্য প্রজাতির বংশধারা চালু করা, প্রত্যেক প্রজাতির জীবন ধারণের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ ও উপযুক্ত খাদ্যের ব্যবস্থা করা, সেখানে মানুষকে অস্তিত্বদানের পূর্বে সব উপায়-উপকরণের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি আরো অগণিত নিদর্শনাদি আছে, যা দেখে যে কোন বিবেকবান ব্যক্তির মনে এ দৃঢ় বিশ্বাস জন্মাবে যে, এ চরম উন্নতমানের বৈজ্ঞানিক কীর্তি মহাশক্তিমান ও মহাজ্ঞানী এক আল্লাহরই সৃষ্টি।
মানুষের গোটা দেহ আল্লাহর নিদর্শন :
فَلْيَنْظُرِ الْاِنْسَانُ مِمَّ خُلِقَ ‐ - خُلِقَ مِنْ مَّآءٍ دَافِقٍ ‐ - يَخْرُجُ مِنْ ۢبَيْنِ الصُّلْبِ وَالتَّرَآئِبِ
সুতরাং মানুষের লক্ষ্য করা উচিত যে, তাকে কিসের দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে প্রবল বেগে নির্গত পানি হতে, যা বের হয় পিঠ ও বুকের হাঁড়ের মধ্য হতে। (সূরা তারেক, ৫-৭)
وَفِۤيْ اَنْفُسِكُمْ اَفَلَا تُبْصِرُوْنَ
আর নিদর্শন রয়েছে তোমাদের মধ্যেও! তোমরা কি অনুধাবন করবে না? (সূরা যারিয়াত- ২১)
ব্যাখ্যা : বাইরে দেখার প্রয়োজন নেই। শুধু নিজের মধ্যে দেখলেই মানুষ অসংখ্য নিদর্শন দেখতে পাবে। কীভাবে মাতৃদেহের একটি নিভৃত কোণে তাদের সৃষ্টির সূচনা করা হয়েছিল। অন্ধকারে সেই নিভৃত কোণে কীভাবে লালন-পালন করে ক্রমান্বয়ে তা বড় করা হয়েছে। কীভাবে তাদেরকে অনুপম আকৃতি ও দেহ এবং কর্মশক্তিসম্পন্ন শক্তি দেয়া হয়েছে। কীভাবে তাদের দেহাবয়বের পূর্ণতা প্রাপ্তি মাত্রই মাতৃগর্ভের অন্ধকার জগৎ থেকে বের করে এ বিশাল জগতে আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে অত্যন্ত শক্তিশালী একটি স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র স্থাপিত হয়েছে। এ যন্ত্র মানুষের জন্ম থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত শ্বাস গ্রহণ করা, খাদ্য হজম করা, রক্ত তৈরি করে শিরা উপশিরায় প্রবাহিত করা, মল নির্গমন করা, দেহের ধ্বংসপ্রাপ্ত অংশসমূহ আবার নির্মাণ করা এবং ক্লান্ত হওয়ার পর আরামের জন্য শুইয়ে দেয়ার কাজ পর্যন্ত নিজ থেকেই সম্পন্ন করে যাচ্ছে। জীবনের এ মৌলিক প্রয়োজনসমূহ পূরণের জন্য মানুষের চেষ্টা ও সাধনার সামান্যতম অংশও ব্যয় হয় না। তাদের মাথার খুলির মধ্যে একটি বিস্ময়কর মস্তিষ্ক বসিয়ে দেয়া হয়েছে- যার জটিল ভাঁজে ভাঁজে জ্ঞানবুদ্ধি, চিন্তা-ভাবনা, কল্পনা, উপলব্ধি, ন্যায়-অন্যায় বোধ, ইচ্ছা, স্মৃতিশক্তি, আকাঙ্খা, অনুভূতি, আবেগ, প্রবণতা এবং আরো অনেক শক্তির এক বিশাল ভান্ডার কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে আছে। তাদেরকে জ্ঞান অর্জন করার অনেক মাধ্যম দেয়া হয়েছে, যা চোখ, নাক, কান এবং গোটা দেহের স্নায়ুতন্ত্রীর সাহায্যে তাদেরকে সবরকমের সংবাদ পৌঁছিয়ে থাকে। তাদেরকে ভাষা এবং বাকশক্তি দেয়া হয়েছে, যার সাহায্যে তোমরা নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে পার। সর্বোপরি তাদের সত্তার এ গোটা সাম্রাজ্যের উপর তাদেরকে নেতা বানিয়ে বসিয়ে দেয়া হয়েছে, যাতে সবগুলো শক্তি কাজে লাগিয়ে মতামত গঠন ও এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে যে, কোন পথে তাদের সময় ও শ্রম ব্যয় করতে হবে, কোনটি বর্জন করতে হবে এবং কোনটি গ্রহণ করতে হবে, কোন বস্তুকে নিজের জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বানাতে হবে এবং কোনটিকে নয়।
মানুষকে একটি সত্তা বানিয়ে যখন পৃথিবীতে আনা হলো তখনই সে তার লালন-পালন, প্রবৃত্তি, উন্নতি ও পূর্ণতা সাধনের জন্য সবরকম সাজ-সরঞ্জাম এখানে প্রস্তুত পেয়েছে। এসব সাজ-সরঞ্জামের বদৌলতে জীবনের একটি পর্যায়ে পৌঁছে সে নিজের ক্ষমতা কাজে লাগানোর উপযুক্ত হয়েছে। প্রত্যেকের নিজের পছন্দ অনুসারে তার ইচ্ছাকে বাস্তবায়িত করার যে সুযোগ সে লাভ করেছে, তা কাজে লাগিয়ে কেউ সৎকর্মশীল হয়েছে এবং কেউ দুষ্কর্মশীল হয়েছে। কেউ পৃথিবীতে মৃত্যু পর্যন্ত কল্যাণের কাজ করেছে আবার কেউ জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কুকর্ম করেছে। কেউ ন্যায়কে সমুন্নত করার জন্য জীবনপাত করেছে। আবার কেউ বাতিলকে সমুন্নত করার জন্য ন্যায়ের অনুসারীদের উপর যুলুম চালিয়েছে। মানুষকে যেভাবে যেসব ক্ষমতা ও যোগ্যতা দিয়ে পৃথিবীতে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং যে মর্যাদা তাকে দেয়া হয়েছে তা নিশ্চিতভাবেই একটি অত্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত পরিকল্পনা। যে আল্লাহ এমন পরিকল্পনা করতে পারেন, তাঁর বিচক্ষণতা অনিবার্যরূপে দাবী করে যে, মানুষকে তার কাজকর্মের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। আর সেই আল্লাহর শক্তি-সামর্থ্য সম্পর্কে এ ধারণা পোষণ করা মোটেই উচিত নয় যে, তিনি যে মানুষকে অণুবীক্ষণ যন্ত্রে দেখার মতো একটি কোষ থেকে সৃষ্টি করে এ পর্যায়ে পৌঁছিয়েছেন তাকে তিনি পুনরায় অস্তিত্ব দান করতে পারবেন না।
اِنَّ اَوَّلَ بَيْتٍ وُّضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِيْ بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَّهُدًى لِّلْعَالَمِيْنَ ‐ - فِيْهِ اٰيَاتٌ ۢبَيِّنَاتٌ مَّقَامُ اِبْرَاهِيْمَۚ وَمَنْ دَخَلَهٗ كَانَ اٰمِنًا
নিশ্চয় মানুষের জন্য সর্বপ্রথম নির্মিত ঘর মক্কায় অবস্থিত, যা বরকতময় এবং বিশ্ববাসীর জন্য পথপ্রদর্শক। সেখানে রয়েছে স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ (এর মধ্যে একটি হচ্ছে) মাকামে ইবরাহীম। আর যে ব্যক্তি এ ঘরে প্রবেশ করে, সে নিরাপদ হয়ে যায়। (সূরা আলে ইমরান- ৯৬, ৯৭)
রাত ও দিন আল্লাহর নিদর্শন :
اَلَمْ يَرَوْا اَنَّا جَعَلْنَا اللَّيْلَ لِيَسْكُنُوْا فِيْهِ وَالنَّهَارَ مُبْصِرًاؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ
তারা কি অনুধাবন করে না যে, আমি রাতকে সৃষ্টি করেছি তাদের বিশ্রামের জন্য এবং দিবসকে করেছি আলোকপ্রদ। তাতে মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে। (সূরা নামল- ৮৬)
দিন ও রাতের আবর্তন আল্লাহর নিদর্শন :
اِنَّ فِيْ خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَاٰيَاتٍ لِّاُولِى الْاَلْبَابِ
নিশ্চয় আসমান ও জমিনের সৃষ্টির মধ্যে এবং দিবস ও রাত্রির পরিবর্তনে জ্ঞানবানদের জন্য স্পষ্ট নিদর্শনাবলি রয়েছে। (সূরা আলে ইমরান- ১৯০)
ব্যাখ্যা : রাত ও দিনের এ ভিন্নতার মধ্যেও এ নিদর্শন রয়েছে যে, দু’টিই পূর্ণ নিয়মতান্ত্রিকভাবে একটার পর একটা আগমন করে। আবার এদিক দিয়েও নিদর্শন যে, একটি আলো অপরটি অন্ধকার। তাছাড়া এর নিদর্শন হওয়ার আরো একটি কারণ হচ্ছে, একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দিন ক্রমান্বয়ে ছোট এবং রাত বড় হতে থাকে এবং এক সময় দু’টিই এক সমান হয়ে যায়। তারপর আবার ক্রমান্বয়ে দিন বড় এবং রাত ছোট হতে থাকে। তারপর এক সময় দিন ও রাত আবার সমান হয়ে যায়। রাত ও দিনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের যে ভিন্নতা দেখা যায়, তাতে বিরাট উদ্দেশ্য জড়িত রয়েছে। এ উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে এ কথাই প্রমাণ করে যে, সূর্য, পৃথিবী এবং পৃথিবীর সবকিছুর স্রষ্টা একমাত্র আল্লাহ। তিনিই সবকিছুকে নিজ নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। আবু যোহা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন وَاِلٰهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ لَّاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الرَّحْمٰنُ الرَّحِيْمُ এ আয়াতটি নাযিল হয়, তখন মুশরিকরা আশ্চর্য হয়ে বলতে লাগল, আল্লাহ কি কেবল একজন? যদি তোমার কথা সত্য হয়ে থাকে তবে এর পক্ষে প্রমাণ পেশ করো। তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতটি নাযিল করেন। (সুনানে সা‘দ ইবনে মানসূর, হা/১৩৮)
চাঁদের পরিভ্রমণ ও হ্রাস-বৃদ্ধি আল্লাহর নিদর্শন :
وَالْقَمَرَ قَدَّرْنَاهُ مَنَازِلَ حَتّٰى عَادَ كَالْعُرْجُوْنِ الْقَدِيْمِ ‐ - لَا الشَّمْسُ يَنْۢبَغِيْ لَهَاۤ اَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلَا اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ ؕ وَكُلٌّ فِيْ فَلَكٍ يَّسْبَحُوْنَ
আমি চন্দ্রের জন্য নির্ধারণ করেছি বিভিন্ন স্তর, এমনকি তা ভ্রমণ শেষে ক্ষীণ হয়ে খেজুরের পুরাতন ডালের মতো হয়ে যায়। সূর্যের সাধ্য নেই যে, সে চন্দ্রকে ধরে ফেলে এবং রাত্রিও দিনের পূর্বে আসতে পারে না। প্রত্যেকেই নির্ধারিত কক্ষে বিচরণ করে। (সূরা ইয়াসীন, ৩৯-৪০)
ব্যাখ্যা : চাঁদের পরিবর্তন মাসের মধ্যে প্রতিদিন হতে থাকে। প্রথম দিন সে ছোট আকারে উদিত হয়, যাকে আরবি ভাষায় هِلَالٌ (হিলাল) বা নতুন চাঁদ বলা হয়। তারপর ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত চৌদ্দ দিনের রাতে তা পূর্ণতা লাভ করে। তারপর প্রতিদিন তার দেহ হ্রাস পেতে থাকে। এমনকি শেষ পর্যন্ত আবার হিলাল আকারে ফিরে আসে। হাজার হাজার বছর থেকে এ প্রক্রিয়া চলে আসছে এবং কখনো এর ব্যতিক্রম দেখা যায়নি।
আকাশে বিচরণকারী পাখি আল্লাহর নিদর্শন :
اَلَمْ يَرَوْا اِلَى الطَّيْرِ مُسَخَّرَاتٍ فِيْ جَوِّ السَّمَآءِؕ مَا يُمْسِكُهُنَّ اِلَّا اللهُؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ
তারা কি আকাশের শূন্য গর্ভে নিয়ন্ত্রণাধীন পাখির প্রতি লক্ষ্য করে না? সেগুলোকে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউই স্থির রাখেন না। অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য। (সূরা নাহল- ৭৯)
বিস্তৃত জমিন, পাহাড় ও নদ-নদী আল্লাহর নিদর্শন :
وَهُوَ الَّذِيْ مَدَّ الْاَ رْضَ وَجَعَلَ فِيْهَا رَوَاسِيَ وَاَنْهَارًاؕ وَمِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ جَعَلَ فِيْهَا زَوْجَيْنِ اثْنَيْنِ يُغْشِى اللَّيْلَ النَّهَارَؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ
তিনিই পৃথিবীকে করেছেন বিস্তৃত এবং এতে পর্বতমালা ও নদীসমূহও সৃষ্টি করেছেন। আর (এতে) প্রত্যেক প্রকারের ফল সৃষ্টি করেছেন জোড়ায় জোড়ায়। তিনি দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন। নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে চিমত্মাশীল সম্প্রদায়ের জন্য। (সূরা রা‘দ- ৩)
বাতাসের গতির পরিবর্তন আল্লাহর নিদর্শন :
وَمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ مِنَ السَّمَآءِ مِنْ رِّزْقٍ فَاَحْيَا بِهِ الْاَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا وَتَصْرِيْفِ الرِّيَاحِ اٰيَاتٌ لِّقَوْمٍ يَّعْقِلُوْنَ
আল্লাহ আকাশ হতে যে পানি বর্ষণ করার দ্বারা পৃথিবীকে তার মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন তাতে এবং বায়ুর পরিবর্তনে নিদর্শন রয়েছে জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য। (সূরা জাসিয়া- ৫)
ব্যাখ্যা : বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন উচ্চতায় বাতাস প্রবাহিত হয়, যার কারণে ঋতুর পরিবর্তন সংঘটিত হয়। পৃথিবীর পৃষ্ঠের উপরিভাগে একটি বিশাল বায়ু স্তর আছে। তাতে এমনসব উপাদান বিদ্যমান রয়েছে, যা প্রাণীকুলের শ্বাস গ্রহণের জন্য প্রয়োজন এবং নানা প্রকার আসমানী বিপদাপদ থেকে বাঁচার কারণ। এর সাথে এটাও দেখার বিষয় যে, এ বাতাস শুধু বায়ুমন্ডলে বিদ্যমান নয়, মাঝে মধ্যে তা বিভিন্নভাবে প্রবাহিত হতে থাকে। কখনো মৃদুভাবে, কখনো শুষ্কভাবে, কখনো আর্দ্রভাবে, কখনো বৃষ্টিবাহী হিসেবে এবং কখনো ঝড়ো হাওয়ার আকারে প্রবাহিত হয়। এসব বাতাস নিজ থেকেই প্রবাহিত হয় না এবং এলোমেলোভাবেও প্রবাহিত হয় না। এরও একটা শৃঙ্খলা আছে, যা সাক্ষ্য দেয় যে, এ ব্যবস্থা পূর্ণমাত্রায় যুক্তিনির্ভর এবং এর দ্বারা অতীব গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যাবলি পূরণ হচ্ছে। তাছাড়া পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যে প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল অবস্থা অনুসারে শীত ও গ্রীষ্মের যে হ্রাস বৃদ্ধি হয়, তার সাথেও এর অত্যন্ত গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। ঋতু পরিবর্তন ও বৃষ্টি বণ্টনের সাথেও এর অত্যন্ত গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এর সবগুলো জিনিসই ডেকে ডেকে বলছে, কোন অন্ধ প্রকৃতি আকষ্মিকভাবে এর ব্যবস্থা করে দেয়নি। কিংবা সূর্য ও পৃথিবী, বাতাস ও পানি এবং উদ্ভিদ ও প্রাণীকুলের জন্য আলাদা আলাদা কোন ব্যবস্থাপক নেই। বরং নিশ্চিতভাবে একমাত্র আল্লাহই এসবের স্রষ্টা এবং এক বিরাট উদ্দেশ্য সাধনের জন্য তাঁর জ্ঞান ও কৌশল এ ব্যবস্থা করেছে। তাঁর অসীম ক্ষমতাবলেই এ ব্যবস্থা পূর্ণ নিয়মতান্ত্রিকতার সাথে একটি নির্দিষ্ট নিয়মে চলছে।
সমুদ্রে জাহাজ চলাচল আল্লাহর নিদর্শন :
وَمِنْ اٰيَاتِهٖۤ اَنْ يُّرْسِلَ الرِّيَاحَ مُبَشِّرَاتٍ وَّلِيُذِيْقَكُمْ مِّنْ رَّحْمَتِهٖ وَلِتَجْرِيَ الْفُلْكُ بِاَمْرِهٖ وَلِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِهٖ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
আর তাঁর দৃষ্টান্তগুলোর মধ্যে একটি এই যে, তিনি বাতাস পাঠান সুখবর দানকারীরূপে। যাতে তিনি তোমাদেরকে তাঁর অনুগ্রহের স্বাদ ভোগ করান। আর যেন নৌযানসমূহ তাঁর নির্দেশে চলাচল করে, যেন তোমরা তাঁর অনুগ্রহ অন্বেষণ করতে পার এবং যেন তোমরা তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা রূম- ৪৬)
নৌকা ও অন্যান্য যানবাহন আল্লাহর নিদর্শন :
وَاٰيَةٌ لَّهُمْ اَنَّا حَمَلْنَا ذُرِّيَّتَهُمْ فِى الْفُلْكِ الْمَشْحُوْنِ ‐ - وَخَلَقْنَا لَهُمْ مِّنْ مِّثْلِهٖ مَا يَرْكَبُوْنَ
আর তাদের জন্য একটি নিদর্শন এই যে, আমি তাদের বংশধরদেরকে (এক সময় একটি) ভরা নৌকায় আরোহণ করিয়েছিলাম। আর আমি তাদের জন্য এরূপ (নৌযান) সৃষ্টি করেছি, যেন তারা আরোহণ করে। (সূরা ইয়াসীন- ৪১, ৪২)
সমুদ্রে চলমান জাহাজ আল্লাহর নিদর্শন :
وَمِنْ اٰيَاتِهِ الْجَوَارِ فِى الْبَحْرِ كَالْاَعْلَامِ
তাঁর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত হলো সমুদ্রে চলমান পর্বত সদৃশ নৌযানসমূহ। (সূরা শূরা- ৩২)
ব্যাখ্যা : পৃথিবীর তিনচতুর্থাংশ পানি এবং একচতুর্থাংশ স্থলভাগ। স্থলভাগেরও বহু সংখ্যক ছোট বড় অঞ্চলের মধ্যে জলভাগ অবস্থিত। পৃথিবীর এসব স্থলভাগে মানব বসতি বিস্তার এবং তাদের মাঝে পর্যটন ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হওয়া আদৌ সম্ভব হতো না, যদি পানি ও বাতাসকে এমন নিয়মের অধীন না করা হতো, যার কারণে নৌ-পরিবহন সম্ভব হয়েছে এবং মানুষ জাহাজ নির্মাণে সক্ষম হয়েছে। এটা কি এ বিষয়ের সুস্পষ্ট প্রমাণ নয় যে, এক সর্বশক্তিমান, দয়ালু ও মহাজ্ঞানী প্রভু আছেন, যিনি মানুষ, পৃথিবী, পানি, সমুদ্র, বাতাস এবং ভূপৃষ্ঠের সমস্ত জিনিসকে তাঁর নিজের বিশেষ পরিকল্পনানুসারে সৃষ্টি করেছেন?
বৃষ্টি তৈরি করা আল্লাহর নিদর্শন :
اَلَمْ تَرَ اَنَّ اللهَ يُزْجِيْ سَحَابًا ثُمَّ يُؤَلِّفُ بَيْنَهٗ ثُمَّ يَجْعَلُهٗ رُكَامًا فَتَرَى الْوَدْقَ يَخْرُجُ مِنْ خِلَالِهٖۚ وَيُنَزِّلُ مِنَ السَّمَآءِ مِنْ جِبَالٍ فِيْهَا مِنْ ۢبَرَدٍ فَيُصِيْبُ بِهٖ مَنْ يَّشَآءُ وَيَصْرِفُهٗ عَنْ مَّنْ يَّشَآءُؕ يَكَادُ سَنَا بَرْقِهٖ يَذْهَبُ بِالْاَبْصَارِ
তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ মেঘমালাকে সঞ্চালন করেন, তারপর তাদেরকে একত্র করেন এবং পরে পুঞ্জীভূত করেন। অতঃপর তুমি দেখতে পাও যে, তা হতে নির্গত হয় বারিধারা। (আরো দেখতে পাও যে) তিনি আকাশের শিলাস্তর হতে শিলা বর্ষণ করেন এবং এটা দ্বারা তিনি যাকে ইচ্ছা আঘাত করেন; আবার যার থেকে ইচ্ছা অন্যদিকে ফিরিয়ে দেন। মেঘের বিদ্যুৎ ঝলক (চোখে ধাঁধা লাগিয়ে দেয়া) মনে হয় তা যেন দৃষ্টিশক্তি কেঁড়ে নেবে। (সূরা নূর- ৪৩)
মৃত জমিনকে জীবিতকরণ আল্লাহর নিদর্শন : গুলো
وَاللهُ اَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَحْيَا بِهِ الْاَ رْضَ بَعْدَ مَوْتِهَاؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّسْمَعُوْنَ
আল্লাহ আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন এবং তা দ্বারা মৃত ভূমিকে পুনর্জীবিত করেন। অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে যে সম্প্রদায় কথা শুনে তাদের জন্য। (সূরা নাহল- ৬৫)
উদ্ভিদ ও বাগান আল্লাহর নিদর্শন :
اَوَلَمْ يَرَوْا اِلَى الْاَ رْضِ كَمْ اَنْۢبَتْنَا فِيْهَا مِنْ كُلِّ زَوْجٍ كَرِيْمٍ ‐ - اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةًؕ وَمَا كَانَ اَكْثَرُهُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
তারা কি জমিনের দিকে লক্ষ্য করে না? আমি তাতে প্রত্যেক প্রকারের কত উৎকৃষ্ট উদ্ভিদ উদগত করেছি! নিশ্চয় এতে রয়েছে নিদর্শন, কিন্তু তাদের অধিকাংশই মুমিন নয়। (সূরা শু‘আরা- ৭, ৮)
وَاٰيَةٌ لَّهُمُ الْاَ رْضُ الْمَيْتَةُۚ اَحْيَيْنَاهَا وَاَخْرَجْنَا مِنْهَا حَبًّا فَمِنْهُ يَاْكُلُوْنَ ‐ وَجَعَلْنَا فِيْهَا جَنَّاتٍ مِّنْ نَّخِيْلٍ وَّاَعْنَابٍ وَّفَجَّرْنَا فِيْهَا مِنَ الْعُيُوْنِ ‐ - لِيَاْكُلُوْا مِنْ ثَمَرِهٖ وَمَا عَمِلَتْهُ اَيْدِيْهِمْؕ اَفَلَا يَشْكُرُوْنَ
আর তাদের জন্য একটি নিদর্শন হলো মৃত জমিন। আমি তাকে সজীব করি এবং তা থেকে উৎপন্ন করি শস্য, ফলে তা থেকে তারা খেয়ে থাকে। আমি তাতে সৃষ্টি করি খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান এবং তাতে প্রবাহিত করি ঝর্ণাসমূহ। যেন তারা এর ফলমূল থেকে খাদ্য গ্রহণ করতে পারে। তাদের হাত এটা সৃষ্টি করেনি; তবুও কি তারা কৃতজ্ঞ হবে না? (সূরা ইয়াসীন, ৩৩-৩৫)
ব্যাখ্যা : মানুষ দিন-রাত ভূমি থেকে উৎপাদিত শস্য ও ফলমূল আহার করছে। তারা গাফলতির পর্দা ছিন্ন করে গভীরভাবে চিন্তা করলে জানতে পারবে যে, এ ভূমির আবরণ ভেদ করে সবুজ শ্যামল বন-বনানী সৃষ্টি এবং নদ-নদীর স্রোত প্রবাহিত হওয়া এমন কোন খেলা নয়, যা নিজে নিজেই চলছে। পৃথিবীর প্রকৃত রূপ সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করলে দেখা যাবে যে, এদের মধ্যে জীবনের নামমাত্রও নেই। এ নিষ্প্রাণ জমিনের বুক চিরে উদ্ভিদগুলোর জীবন লাভ করা সম্ভব হলো কেমন করে? কয়েকটি বড় বড় উপকরণ সংগৃহীত না হলে এ জীবনধারা আদৌ অস্তিত্ব লাভ করতে পারত না। আর তা হলো :
১. পৃথিবীর উপরিভাগে এমন উপাদানের পর্দা বিছানো আছে, যাতে উদ্ভিদের শিকড় তার মধ্যে বিস্তার লাভ করে খাদ্য গ্রহণ করতে পারে।
২. জমিনের উপর বিভিন্ন পদ্ধতিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে উদ্ভিদের শিকড়সমূহ তা চুষে নিতে সক্ষম হয়।
৩. শূন্য আকাশে বায়ু সৃষ্টি করা হয়েছে, যা বৃষ্টি বহনের কাজ করে। এর মধ্যে এমনসব গ্যাসের সমাবেশ ঘটে, যা উদ্ভিদের জীবন ও তাদের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন।
৪. সূর্য ও পৃথিবীর মধ্যে এমন সম্পর্ক স্থাপন করা হয়েছে, যার ফলে উদ্ভিদের জীবন গঠনে প্রয়োজনানুসারে উষ্ণতা এবং অনুকূল পরিবেশ লাভ করতে পারে।
এ চারটি বড় বড় উপকরণ সৃষ্টি করার পর উদ্ভিদের অস্তিত্ব লাভ করা সম্ভব হয়। এদের মধ্য থেকে প্রত্যেকের বীজ এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যার ফলে যখনই তা উপযোগী জমি, পানি ও বাতাস পায় তখনই তার মধ্যে উদ্ভিদ জন্ম নেয়া শুরু হয়ে যায়। এছাড়াও এ বীজের মধ্যে এমন ব্যবস্থাও করে দেয়া হয়েছে, যার ফলে প্রত্যেক উদ্ভিদ তার নিজ প্রজাতির চারা জন্ম দেয়। এসব উদ্ভিদ অসংখ্য শ্রেণির পশু ও মানবকুলের খাদ্য, ঔষধ, পোষাক ও অন্যান্য অগণিত প্রয়োজন পূরণ করে। এ বিস্ময়কর ব্যবস্থা সম্পর্কে যে ব্যক্তিই চিন্তা করবে, সে যদি হঠকারী ও সংকীর্ণ না হয় তাহলে তার অন্তর সাক্ষ্য দেবে যে, এ সবকিছু আপনা-আপনি হতে পারে না; মহান আল্লাহই এসব পরিচালনা করছেন।
বিভিন্ন স্বাদের ফলমূল আল্লাহর নিদর্শন :
وَفِى الْاَرْضِ قِطَعٌ مُّتَجَاوِرَاتٌ وَّجَنَّاتٌ مِّنْ اَعْنَابٍ وَّزَرْعٌ وَّنَخِيْلٌ صِنْوَانٌ وَّغَيْرُ صِنْوَانٍ يُّسْقٰى بِمَآءٍ وَّاحِدٍؕ وَنُفَضِّلُ بَعْضَهَا عَلٰى بَعْضٍ فِى الْاُكُلِؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَّعْقِلُوْنَ
পৃথিবীতে রয়েছে পরস্পর সংলগ্ন ভূখন্ড, এতে আছে আঙ্গুরের বাগান, শস্যক্ষেত্র, একাধিক শীষবিশিষ্ট অথবা এক শীষবিশিষ্ট খেজুর বৃক্ষ, এসব একই পানিতে সিঞ্চিত। আর আমি খাদ্য হিসেবে তাদের কতককে কতকের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ে থাকি। অবশ্যই এতে বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা রা‘দ- ৪)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ তা‘আলা সারা পৃথিবীতে একই ধরনের ভূখন্ড বানিয়ে রেখে দেননি। পরস্পর সংলগ্ন থাকা সত্ত্বেও আকার-আকৃতি, রং, গঠন, উপাদান, বৈশিষ্ট্য, শক্তি, যোগ্যতা এবং উৎপাদন ও খনিজ সম্পদ এসব দিক থেকে বিভিন্ন ভূখন্ড পরস্পর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। বিভিন্ন ভূখন্ডের সৃষ্টি এবং এদের মধ্যে নানা প্রকার ভিন্নতার অস্তিত্ব এত বিপুল পরিমাণ কল্যাণে পরিপূর্ণ যে, তা গণনা করে শেষ করা যাবে না। অন্যান্য সৃষ্টির কথা বাদ দিয়ে কেবল মানুষের স্বার্থকে সামনে রেখে যদি দেখা যায় তাহলে অনুমান করা যেতে পারে যে, মানুষের বিভিন্ন স্বার্থ ও চাহিদা এবং পৃথিবীর এসব ভূখন্ডের বৈচিত্র্যের মধ্যে যে সম্পর্ক ও সামঞ্জস্য পাওয়া যায় এবং এসবের বদৌলতে মানবসমাজ সম্প্রসারিত হওয়ার যে সুযোগ লাভ করে তা নিশ্চিতভাবেই কোন জ্ঞানী ও বিজ্ঞানময় সত্তার সুচিন্তিত পরিকল্পনা এবং বিজ্ঞতাপূর্ণ সংকল্পের ফলশ্রুতি। আল্লাহ তা‘আলা এ বিশ্বজাহানের সব স্থান একই অবস্থায় রাখেননি। পৃথিবী একই, কিন্তু এর ভূখন্ডের প্রত্যেকটির বর্ণ, আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য আলাদা। একই জমি ও একই পানি, কিন্তু তা থেকে বিভিন্ন প্রকার ফল ও ফসল উৎপন্ন হচ্ছে। কিছু কিছু খেজুর গাছের মূল থেকে একটি খেজুর গাছ বের হয়। আবার কিছু কিছুর মূল থেকে একাধিক খেজুর গাছ বের হয়। একই গাছ কিন্তু তার প্রত্যেকটি ফল একই জাতের হওয়া সত্ত্বেও তাদের আকৃতি, আয়তন ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য আলাদা। একই মূল থেকে দু’টি ভিন্ন গাছ বের হচ্ছে এবং তাদের প্রত্যেকটিই একক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। যে ব্যক্তি এসব বিষয় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে সে কখনো মানুষের স্বভাব, প্রকৃতি, প্রবণতা ও মেজাজের মধ্যে এত বেশি পার্থক্য দেখে অস্থির হবে না। বরং সে বলতে বাধ্য যে, এসব আল্লাহ তা‘আলারই নিদর্শন।
জমিনে ছড়িয়ে থাকা প্রাণীকুল আল্লাহর নিদর্শন :
وَمِنْ اٰيَاتِه خَلْقُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِ وَمَا بَثَّ فِيْهِمَا مِنْ دَآبَّةٍ ؕ وَهُوَ عَلٰى جَمْعِهِمْ اِذَا يَشَآءُ قَدِيْرٌ
তাঁর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত হলো আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং এতোদুভয়ের মধ্যে তিনি যেসব জীবজন্তু ছড়িয়ে দিয়েছেন সেগুলো; তিনি যখন ইচ্ছা তখনই তাদেরকে সমবেত করতে সক্ষম। (সূরা শূরা- ২৯)
ব্যাখ্যা : আমাদের চারদিকে অসংখ্য নিদর্শন ছড়িয়ে আছে। পৃথিবীর বুকে বিচরণশীল প্রাণীকুল এবং শূন্যে উড়ে চলা পাখিদের কোন একটি শ্রেণির জীবন সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করলে দেখা যায়, কীভাবে তাদেরকে অবস্থা ও পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তাদের আকৃতি নির্মাণ করা হয়েছে। কীভাবে তাদের সৃষ্টিগত স্বাভাবিক প্রবণতার মধ্যে তাদের প্রাকৃতিক প্রয়োজন অনুযায়ী শক্তি ও সামর্থ্যের সঞ্চার করা হয়েছে। কীভাবে তাদের জীবিকা দানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কীভাবে তাদের জন্য ভাগ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তারা তার সীমানা পেরিয়ে এগিয়েও যেতে পারে না, পিছিয়েও আসতে পারে না। কীভাবে তাদের এক একটি প্রাণীকে এবং এক একটি ছোট ছোট কীটপতঙ্গকেও তার নিজের স্থানে রক্ষণাবেক্ষণ ও পথপ্রদর্শন করা হচ্ছে। কীভাবে একটি নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের থেকে কাজ আদায় করে নেয়া হচ্ছে। কীভাবে তাদেরকে একটি নিয়ম-শৃঙ্খলার আওতাধীন করে রাখা হয়েছে। কীভাবে তাদের জন্ম, মৃত্যু ও বংশ বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা যথানিয়মে চলছে। আল্লাহর অসংখ্য নিদর্শনের মধ্য থেকে যদি কেবল একটি নিদর্শন সম্পর্কে মানুষ চিন্তা-ভাবনা করে তাহলে সে জানতে পারবে যে, আল্লাহর একত্ব এবং তাঁর গুণাবলির যে ধারণা কুরআন আমাদের সামনে পেশ করেছে তা যথার্থ ও প্রকৃত সত্য। কিন্তু আমরা নিজেদের চোখ মেলে এগুলো দেখি না এবং বুঝারও চেষ্টা করি না।
পশুর ভেতরে সুস্বাদু দুধ তৈরি করা আল্লাহর নিদর্শন :
وَاِنَّ لَكُمْ فِى الْاَنْعَامِ لَعِبْرَةً ؕ نُسْقِيْكُمْ مِّمَّا فِيْ بُطُوْنِهٖ مِنْ ۢبَيْنِ فَرْثٍ وَّدَمٍ لَّبَنًا خَالِصًا سَآئِغًا لِّلشَّارِبِيْنَ
অবশ্যই গবাদি পশুর মধ্যে তোমাদের জন্য শিক্ষা রয়েছে। তাদের উদরস্থিত গোবর ও রক্তের মধ্য হতে তোমাদেরকে পান করাই বিশুদ্ধ দুধ, যা পানকারীদের জন্য খুবই সুস্বাদু। (সূরা নাহল- ৬৬)
ব্যাখ্যা : পশু যে খাদ্য খায় তা থেকে একদিকে রক্ত তৈরি হয় এবং অন্যদিকে তৈরি হয় মলমূত্র। কিন্তু এ পশুদের স্ত্রীজাতির মধ্যে আবার একই খাদ্য থেকে তৃতীয় একটি জিনিস তৈরি হয়, যাকে আমরা দুধ বলি। বর্ণ, গন্ধ, গুণ, উপকারিতা ও উদ্দেশ্যের দিক দিয়ে আগের দু’টি থেকে এটি সম্পূর্ণ আলাদা। তারপর বিশেষ করে গবাদি পশুর মধ্যে এর উৎপাদন এত বেশি হয় যে, তারা নিজেদের সন্তানদের প্রয়োজন পূর্ণ করার পর মানুষের জন্যও এ উৎকৃষ্টতম খাদ্য বিপুল পরিমাণে সরবরাহ করতে পারে। এটা আল্লাহর কুদরতের এক নিদর্শন মাত্র।
চতুষ্পদ জন্তুর বিভিন্ন উপকারিতা আল্লাহর নিদর্শন :
وَاِنَّ لَكُمْ فِى الْاَنْعَامِ لَعِبْرَةًؕ نُسْقِيْكُمْ مِّمَّا فِيْ بُطُوْنِهَا وَلَكُمْ فِيْهَا مَنَافِعُ كَثِيْرَةٌ وَّمِنْهَا تَاْكُلُوْنَ ‐ - وَعَلَيْهَا وَعَلَى الْفُلْكِ تُحْمَلُوْنَ
তোমাদের জন্য অবশ্যই শিক্ষণীয় বিষয় আছে চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যে। তোমাদেরকে আমি পান করাই তাদের উদরে যা আছে তা হতে এবং তাতে তোমাদের জন্য রয়েছে প্রচুর উপকারিতা। তোমরা তা হতে আহার কর এবং তোমরা তাতে ও নৌযানে আরোহণও করে থাক। (সূরা মু’মিনূন- ২১, ২২)
ব্যাখ্যা : পৃথিবীতে যেসব জন্তু মানুষের সেবায় নিয়োজিত আছে তার মধ্যে বিশেষ করে আছে গরু, মেষ, ভেড়া, বকরী, উট ও ঘোড়া। এসব জন্তুর সৃষ্টিকর্তা এদেরকে এমন নকশা অনুসারে সৃষ্টি করেছেন যে, এগুলো অতি সহজেই মানুষের পোষ মানা সেবকে পরিণত হয়ে যায় এবং তাদের সাহায্যে মানুষের অসংখ্য প্রয়োজন পূরণ হয়। মানুষ এসবের উপর আরোহণ করে, এসবকে ভার বহন করার কাজে লাগায়, ক্ষেত, কৃষি ও ফসল উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করে এবং এদের দুধ দোহন করে পান করে। আবার তা দিয়ে মাখন, ঘি, দধি, পনির এবং নানা রকমের মিষ্টিও তৈরি করে। এদের গোশত খায় এবং চর্বি ব্যবহার করে। এদের লোম, চামড়া, নাড়িভুঁড়ি, হাড্ডি, রক্ত, গোবর তথা প্রতিটি জিনিস তার কাজে লাগে। এটা কি সুস্পষ্ট প্রমাণ নয় যে, মানুষের সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীতে তাকে সৃষ্টি করার পূর্বেই তার এ অসংখ্য প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ্য রেখে একটি বিশেষ পরিকল্পনা অনুযায়ী এসব জন্তুগুলোকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে সে তা দ্বারা উপকৃত হতে পারে।
মৌমাছি কর্তৃক মধু তৈরি করা আল্লাহর নিদর্শন :
وَاَوْحٰى رَبُّكَ اِلَى النَّحْلِ اَنِ اتَّخِذِيْ مِنَ الْجِبَالِ بُيُوْتًا وَّمِنَ الشَّجَرِ وَمِمَّا يَعْرِشُوْنَ ‐ ثُمَّ كُلِيْ مِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ فَاسْلُكِيْ سُبُلَ رَبِّكِ ذُلُلًاؕ يَّخْرُجُ مِنْ ۢبُطُوْنِهَا شَرَابٌ مُّخْتَلِفٌ اَلْوَانُهٗ فِيْهِ شِفَآءٌ لِّلنَّاسِؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ
তোমার প্রতিপালক মৌমাছিকে এ নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা গৃহ নির্মাণ করো পাহাড়ে, বৃক্ষে ও মানুষ যে গৃহ নির্মাণ করে তাতে। তারপর প্রত্যেক ফল হতে কিছু কিছু আহার করো, অতঃপর তোমার প্রতিপালকের সহজ পথ অনুসরণ করো। তার উদর হতে নির্গত হয় বিভিন্ন বর্ণের পানীয়, যাতে মানুষের জন্য রয়েছে আরোগ্য। অবশ্যই এতে রয়েছে নিদর্শন চিমত্মাশীল সম্প্রদায়ের জন্য। (সূরা নাহল- ৬৮, ৬৯)
ব্যাখ্যা : মধু একটি উপকারী ও সুস্বাদু খাদ্য। তাছাড়া এর মধ্যে রোগ নিরাময় শক্তিও রয়েছে। কারণ এর মধ্যে রয়েছে ফুল ও ফলের রস এবং উন্নত পর্যায়ের গ্লুকোজ। তাছাড়া মধুর একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তা নিজে কখনো পঁচে না এবং অন্য জিনিসকেও দীর্ঘদিন পর্যন্ত পঁচন থেকে সংরক্ষণ রাখে। এজন্য ঔষধ নির্মাণ শিল্পে এলকোহলের পরিবর্তে মধুর ব্যবহার হাজার বছর থেকে চলে আসছে। ‘রবের তৈরি করা পথ’ বলতে মৌমাছির দল যে ব্যবস্থা ও কর্মপদ্ধতির আওতাধীনে কাজ করে সেই ব্যবস্থা ও কর্মপদ্ধতিকে বুঝানো হয়েছে। মৌচাকের আকৃতি ও কাঠামো, তাদের দলগঠন প্রক্রিয়া, শ্রমবণ্টন প্রক্রিয়া, শ্রমনীতি এবং সংগ্রহনীতি- এসব হচ্ছে সেই পথ, যা তাদের রব তাদেরকে শিখিয়েছেন। এ ব্যাপারে তাদের নিজেদের চিন্তা-ভাবনা করার প্রয়োজন হয় না। এটা একটি নির্ধারিত ব্যবস্থা। এরই ভিত্তিতে একটি নির্ধারিত নিয়মে এ অগণিত মৌমাছিগুলো হাজার হাজার বছর ধরে কাজ করে চলছে। এটা আল্লাহর একত্ববাদের বিশেষ নিদর্শন।
বান্দাদের মধ্যে রিযিকের তারতম্য আল্লাহর নিদর্শন :
اَوَلَمْ يَرَوْا اَنَّ اللهَ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيَقْدِرُؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ
তারা কি দেখে না যে, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা প্রচুর রিযিক দেন এবং তা হ্রাস করেন। নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে ঐসব লোকদের জন্য, যারা বিশ্বাস করে। (সূরা রূম- ৩৭)
অতীত জাতির ধ্বংসের কাহিনীতে আল্লাহর নিদর্শন রয়েছে :
وَكَمْ اَهْلَكْنَا قَبْلَهُمْ مِّنْ قَرْنٍ هُمْ اَشَدُّ مِنْهُمْ بَطْشًا فَنَقَّبُوْا فِى الْبِلَادِ هَلْ مِنْ مَّحِيْصٍ ‐ - اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَذِكْرٰى لِمَنْ كَانَ لَهٗ قَلْبٌ اَوْ اَلْقَى السَّمْعَ وَهُوَ شَهِيْدٌ
আমি তাদের পূর্বে আরো বহু জাতি ধ্বংস করেছি, যারা ছিল তাদের অপেক্ষা শক্তিতে অনেক প্রবল। তারা দেশে-বিদেশে ভ্রমণ করে বেড়াত; কিন্তু তবুও (আল্লাহর আযাব থেকে তাদের) কোন পলায়নের জায়গা ছিল কি? নিশ্চয় এতে উপদেশ রয়েছে তার জন্যে, যার অন্তঃকরণ আছে অথবা যে একাগ্রচিত্তে শ্রবণ করে। (সূরা ক্বাফ- ৩৬, ৩৭)
মানুষের ভাষা ও বর্ণের ভিন্নতা আল্লাহর নিদর্শন :
وَمِنْ اٰيَاتِه خَلْقُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِ وَاخْتِلَافُ اَلْسِنَتِكُمْ وَاَلْوَانِكُمْؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّلْعَالِمِيْنَ
আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে আসমান ও জমিনের সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের ভিন্নতা। নিশ্চয় এতে জ্ঞানীদের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা রূম- ২২)
ব্যাখ্যা : যদিও প্রতিটি মানুষের মুখ ও জিহবার গঠন এবং মস্তিষ্কের গঠনাকৃতি একই ধরনের, তবুও পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে তোমাদের ভাষা বিভিন্ন রকম। তারপর একই ভাষায় যারা কথা বলে, তাদের বিভিন্ন শহর ও জনপদের ভাষাও আলাদা। আবার প্রত্যেক ব্যক্তির বলার রীতি, শব্দের উচ্চারণ এবং আলাপ-আলোচনার পদ্ধতিও আলাদা। অনুরূপভাবে তোমাদের সৃষ্টির উপাদান এবং গঠনসূত্র এক হওয়া সত্ত্বেও তোমাদের বর্ণ এত বেশি বিভিন্ন যে, একই বাপ-মায়ের দু’টি সন্তানের বর্ণও সম্পূর্ণ আলাদা। এছাড়াও দুনিয়ায় সকল দিকেই এত বেশি বৈচিত্র দেখা যায় যে, কোন ব্যক্তি বা বস্তুর যে কোন একটি শ্রেণিকে নেয়া হোক, দেখা যাবে তাদের প্রতিটির মধ্যে মৌলিক একাত্মতা সত্ত্বেও অসংখ্য ভিন্নতা বিরাজ করছে। এমনকি একটি গাছের দু’টি পাতার মধ্যেও পূর্ণ সাদৃশ্য পাওয়া যায় না। এ বিষয়টি পরিষ্কার জানিয়ে দিচ্ছে যে, এখানে এমন একজন দক্ষ কারিগর কাজ করছেন, যিনি প্রত্যেকটি জিনিসকে কোন নমুনা ছাড়াই তৈরি করেন। তাঁর উদ্ভাবন ক্ষমতা সর্বদা একটি নতুন মডেল বের করে চলেছে। যে ব্যক্তিই এ বিস্ময়কর দৃশ্য চোখ মেলে দেখবে সে নিশ্চিত বুঝতে পারবে যে, প্রতি মুহূর্তে আল্লাহ নতুন নতুন জিনিস সৃষ্টি করে যাচ্ছেন এবং নিজের সৃষ্ট প্রত্যেকটি জিনিসের উপর তিনি দৃষ্টিবান।
গোটা পৃথিবী আল্লাহর নিদর্শন :
وَفِى الْاَ رْضِ اٰيَاتٌ لِّلْمُوْقِنِيْنَ
পৃথিবীতে বিশ্বাসীদের জন্য রয়েছে অনেক নিদর্শন। (সূরা যারিয়াত- ২০)
ব্যাখ্যা : পৃথিবীর অস্তিত্ব, তার গঠন ও আকার-আকৃতি, সূর্য থেকে তার নির্দিষ্ট দূরত্ব, তার উপর উষ্ণতা ও আলোর ব্যবস্থা, সেখানে বিভিন্ন ঋতুর আগমন ও প্রস্থান, তার উপর বাতাস ও পানি সরবরাহ, তার অভ্যন্তরে অগণিত সম্পদের ভান্ডার সরবরাহ, তার উপরিভাগ একটি উর্বর আবরণ দিয়ে মুড়ে দেয়া এবং তার পৃষ্ঠদেশে ভিন্ন রকমের অগণিত উদ্ভিদ উৎপন্ন করে দেয়া, তাতে স্থল, জল ও বায়ুতে বিচরণকারী জীবজন্তু ও কীটপতঙ্গের অসংখ্য প্রজাতির বংশধারা চালু করা, প্রত্যেক প্রজাতির জীবন ধারণের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ ও উপযুক্ত খাদ্যের ব্যবস্থা করা, সেখানে মানুষকে অস্তিত্বদানের পূর্বে সব উপায়-উপকরণের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি আরো অগণিত নিদর্শনাদি আছে, যা দেখে যে কোন বিবেকবান ব্যক্তির মনে এ দৃঢ় বিশ্বাস জন্মাবে যে, এ চরম উন্নতমানের বৈজ্ঞানিক কীর্তি মহাশক্তিমান ও মহাজ্ঞানী এক আল্লাহরই সৃষ্টি।
মানুষের গোটা দেহ আল্লাহর নিদর্শন :
فَلْيَنْظُرِ الْاِنْسَانُ مِمَّ خُلِقَ ‐ - خُلِقَ مِنْ مَّآءٍ دَافِقٍ ‐ - يَخْرُجُ مِنْ ۢبَيْنِ الصُّلْبِ وَالتَّرَآئِبِ
সুতরাং মানুষের লক্ষ্য করা উচিত যে, তাকে কিসের দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে প্রবল বেগে নির্গত পানি হতে, যা বের হয় পিঠ ও বুকের হাঁড়ের মধ্য হতে। (সূরা তারেক, ৫-৭)
وَفِۤيْ اَنْفُسِكُمْ اَفَلَا تُبْصِرُوْنَ
আর নিদর্শন রয়েছে তোমাদের মধ্যেও! তোমরা কি অনুধাবন করবে না? (সূরা যারিয়াত- ২১)
ব্যাখ্যা : বাইরে দেখার প্রয়োজন নেই। শুধু নিজের মধ্যে দেখলেই মানুষ অসংখ্য নিদর্শন দেখতে পাবে। কীভাবে মাতৃদেহের একটি নিভৃত কোণে তাদের সৃষ্টির সূচনা করা হয়েছিল। অন্ধকারে সেই নিভৃত কোণে কীভাবে লালন-পালন করে ক্রমান্বয়ে তা বড় করা হয়েছে। কীভাবে তাদেরকে অনুপম আকৃতি ও দেহ এবং কর্মশক্তিসম্পন্ন শক্তি দেয়া হয়েছে। কীভাবে তাদের দেহাবয়বের পূর্ণতা প্রাপ্তি মাত্রই মাতৃগর্ভের অন্ধকার জগৎ থেকে বের করে এ বিশাল জগতে আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে অত্যন্ত শক্তিশালী একটি স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র স্থাপিত হয়েছে। এ যন্ত্র মানুষের জন্ম থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত শ্বাস গ্রহণ করা, খাদ্য হজম করা, রক্ত তৈরি করে শিরা উপশিরায় প্রবাহিত করা, মল নির্গমন করা, দেহের ধ্বংসপ্রাপ্ত অংশসমূহ আবার নির্মাণ করা এবং ক্লান্ত হওয়ার পর আরামের জন্য শুইয়ে দেয়ার কাজ পর্যন্ত নিজ থেকেই সম্পন্ন করে যাচ্ছে। জীবনের এ মৌলিক প্রয়োজনসমূহ পূরণের জন্য মানুষের চেষ্টা ও সাধনার সামান্যতম অংশও ব্যয় হয় না। তাদের মাথার খুলির মধ্যে একটি বিস্ময়কর মস্তিষ্ক বসিয়ে দেয়া হয়েছে- যার জটিল ভাঁজে ভাঁজে জ্ঞানবুদ্ধি, চিন্তা-ভাবনা, কল্পনা, উপলব্ধি, ন্যায়-অন্যায় বোধ, ইচ্ছা, স্মৃতিশক্তি, আকাঙ্খা, অনুভূতি, আবেগ, প্রবণতা এবং আরো অনেক শক্তির এক বিশাল ভান্ডার কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে আছে। তাদেরকে জ্ঞান অর্জন করার অনেক মাধ্যম দেয়া হয়েছে, যা চোখ, নাক, কান এবং গোটা দেহের স্নায়ুতন্ত্রীর সাহায্যে তাদেরকে সবরকমের সংবাদ পৌঁছিয়ে থাকে। তাদেরকে ভাষা এবং বাকশক্তি দেয়া হয়েছে, যার সাহায্যে তোমরা নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে পার। সর্বোপরি তাদের সত্তার এ গোটা সাম্রাজ্যের উপর তাদেরকে নেতা বানিয়ে বসিয়ে দেয়া হয়েছে, যাতে সবগুলো শক্তি কাজে লাগিয়ে মতামত গঠন ও এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে যে, কোন পথে তাদের সময় ও শ্রম ব্যয় করতে হবে, কোনটি বর্জন করতে হবে এবং কোনটি গ্রহণ করতে হবে, কোন বস্তুকে নিজের জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বানাতে হবে এবং কোনটিকে নয়।
মানুষকে একটি সত্তা বানিয়ে যখন পৃথিবীতে আনা হলো তখনই সে তার লালন-পালন, প্রবৃত্তি, উন্নতি ও পূর্ণতা সাধনের জন্য সবরকম সাজ-সরঞ্জাম এখানে প্রস্তুত পেয়েছে। এসব সাজ-সরঞ্জামের বদৌলতে জীবনের একটি পর্যায়ে পৌঁছে সে নিজের ক্ষমতা কাজে লাগানোর উপযুক্ত হয়েছে। প্রত্যেকের নিজের পছন্দ অনুসারে তার ইচ্ছাকে বাস্তবায়িত করার যে সুযোগ সে লাভ করেছে, তা কাজে লাগিয়ে কেউ সৎকর্মশীল হয়েছে এবং কেউ দুষ্কর্মশীল হয়েছে। কেউ পৃথিবীতে মৃত্যু পর্যন্ত কল্যাণের কাজ করেছে আবার কেউ জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কুকর্ম করেছে। কেউ ন্যায়কে সমুন্নত করার জন্য জীবনপাত করেছে। আবার কেউ বাতিলকে সমুন্নত করার জন্য ন্যায়ের অনুসারীদের উপর যুলুম চালিয়েছে। মানুষকে যেভাবে যেসব ক্ষমতা ও যোগ্যতা দিয়ে পৃথিবীতে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং যে মর্যাদা তাকে দেয়া হয়েছে তা নিশ্চিতভাবেই একটি অত্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত পরিকল্পনা। যে আল্লাহ এমন পরিকল্পনা করতে পারেন, তাঁর বিচক্ষণতা অনিবার্যরূপে দাবী করে যে, মানুষকে তার কাজকর্মের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। আর সেই আল্লাহর শক্তি-সামর্থ্য সম্পর্কে এ ধারণা পোষণ করা মোটেই উচিত নয় যে, তিনি যে মানুষকে অণুবীক্ষণ যন্ত্রে দেখার মতো একটি কোষ থেকে সৃষ্টি করে এ পর্যায়ে পৌঁছিয়েছেন তাকে তিনি পুনরায় অস্তিত্ব দান করতে পারবেন না।
আল্লাহর কুদরতের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ :
اَلَمْ نَجْعَلِ الْاَ رْضَ مِهَادًا ‐ - وَّالْجِبَالَ اَوْتَادًا ‐ - وَّخَلَقْنَاكُمْ اَزْوَاجًا ‐ - وَّجَعَلْنَا نَوْمَكُمْ سُبَاتًا ‐ وَّجَعَلْنَا اللَّيْلَ لِبَاسًا ‐ وَّجَعَلْنَا النَّهَارَ مَعَاشًا ‐ وَّبَنَيْنَا فَوْقَكُمْ سَبْعًا شِدَادًا ‐ - وَّجَعَلْنَا سِرَاجًا وَّهَّاجًا ‐ - وَّاَنْزَلْنَا مِنَ الْمُعْصِرَاتِ مَآءً ثَجَّاجًا ‐ - لِّنُخْرِجَ بِهٖ حَبًّا وَّنَبَاتًا ‐ - وَّجَنَّاتٍ اَلْفَافًا
আমি কি জমিনকে বিছানাস্বরূপ বানাইনি? এবং পাহাড়সমূহকে পেরেকস্বরূপ (করিনি)? আর আমিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি জোড়ায় জোড়ায়। আমিই তোমাদের নিদ্রাকে করেছি আরামদায়ক এবং রাত্রিকে করেছি আবরণস্বরূপ। আর আমিই দিবসকে জীবিকা অর্জনের সময় করে দিয়েছি। আর আমিই নির্মাণ করেছি তোমাদের উপর সাতটি মজবুত আসমান এবং আমিই সৃষ্টি করেছি একটি দীপ্তমান প্রদীপ। আর আমিই মেঘমালা থেকে প্রচুর পানি বর্ষণ করি। যেন আমি তা দিয়ে উৎপন্ন করি শস্য ও উদ্ভিদ এবং বৃক্ষরাজিতে পরিপূর্ণ বাগানসমূহ। (সূরা নাবা, ৬-১৬)
اَلَمْ نَخْلُقْكُّمْ مِّنْ مَّآءٍ مَّهِيْنٍ ‐ - فَجَعَلْنَاهُ فِيْ قَرَارٍ مَّكِيْنٍ ‐ اِلٰى قَدَرٍ مَّعْلُوْمٍ ‐ فَقَدَرْنَا فَنِعْمَ الْقَادِرُوْنَ ‐ - وَيْلٌ يَّوْمَئِذٍ لِّلْمُكَذِّبِيْنَ ‐ - اَلَمْ نَجْعَلِ الْاَ رْضَ كِفَاتًا ‐ - اَحْيَآءً وَّاَمْوَاتًا ‐ - وَجَعَلْنَا فِيْهَا رَوَاسِيَ شَامِخَاتٍ وَّاَسْقَيْنَاكُمْ مَّآءً فُرَاتًا
আমি কি তোমাদেরকে তুচ্ছ পানি থেকে সৃষ্টি করিনি? অতঃপর আমি ওটাকে স্থাপন করেছি নিরাপদ স্থানে এক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। আমি একে গঠন করেছি সুবিন্যাস্তভাবে, অতএব আমি কতই না নিপুণ নিরূপণকারী! সেদিন মিথ্যারোপকারীদের জন্য দুর্ভোগ। আমি কি ভূমিকে জীবিত ও মৃতের জন্য বহনকারী রূপে সৃষ্টি করিনি? আমি তাতে স্থাপন করেছি সুদৃঢ় উচ্চ পর্বতমালা এবং তোমাদেরকে পান করিয়েছি সুপেয় পানি। (সূরা মুরসালাত, ২০-২৭)
বিশেষ চারটি জিনিসের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ :
اَفَلَا يَنْظُرُوْنَ اِلَى الْاِبِلِ كَيْفَ خُلِقَتْ ‐ - وَاِلَى السَّمَآءِ كَيْفَ رُفِعَتْ ‐ - وَاِلَى الْجِبَالِ كَيْفَ نُصِبَتْ ‐ - وَاِلَى الْاَ رْضِ كَيْفَ سُطِحَتْ
তারা কি উষ্ট্রপালের দিকে লক্ষ্য করে না যে, কীভাবে এগুলোকে সৃষ্টি করা হয়েছে? আকাশের দিকে (লক্ষ্য করে না যে) কীভাবে ওটাকে সমুচ্চ করা হয়েছে? পর্বতমালার দিকে (লক্ষ্য করে না যে) কীভাবে ওটাকে বসানো হয়েছে? আর পৃথিবীর দিকে (লক্ষ্য করে না যে) কীভাবে ওটাকে সমতল করা হয়েছে? (সূরা গাশিয়া, ১৭-২০)
সুন্দর আকাশের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ :
اَفَلَمْ يَنْظُرُوْاۤ اِلَى السَّمَآءِ فَوْقَهُمْ كَيْفَ بَنَيْنَاهَا وَزَيَّنَّاهَا وَمَا لَهَا مِنْ فُرُوْجٍ
এরা কি কখনো তাদের উপর অবস্থিত আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে না যে, কীভাবে আমি তা তৈরি করেছি ও তাকে সুশোভীত করেছি? আর তাতে কোন (সূক্ষ্মতম) ফাটলও নেই। (সূরা ক্বাফ- ৬)
ব্যাখ্যা : এখানে আসমান বলতে পুরো ঊর্ধবজগতকে বুঝানো হয়েছে। যা মানুষ রাত-দিন তার মাথার উপর ছেয়ে থাকতে দেখে। যেখানে দিনের বেলা সূর্য দীপ্তি ছড়ায়, রাতের বেলা চাঁদ এবং অসংখ্য তারকারাজি উজ্জল হয়ে দেখা দেয়। মানুষ যদি এগুলোকে খালি চোখেই দেখে তাহলেও সে বিস্মিত হয়ে পড়ে। আর দুরবিন লাগিয়ে দেখলে এমন একটি বিশাল সুবিস্তৃত সৃষ্টিজগৎ তার সামনে ভেসে ওঠে, যার কোন সীমা নেই। কোথায় শুরু এবং কোথায় শেষ হয়েছে বুঝা যাবে না। আমাদের পৃথিবীর চেয়ে লক্ষ লক্ষ গুণ বড় গ্রহসমূহ এর মধ্যে বলের মতো ঘুরপাক খাচ্ছে। আমাদের সূর্যের চেয়ে হাজার হাজার গুণ উজ্জল তারকা তার মধ্যে জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। আমাদের এ সৌরজগৎ তার একটিমাত্র ছায়াপথের এক কোণে পড়ে আছে। আল্লাহর কর্তৃত্ব কত ব্যাপক ও বিস্তৃত আমরা তার কোন অনুমানই করতে পারি না। আল্লাহ তা‘আলা এ বিশাল সৃষ্টিজগতকে অস্তিত্বদান করেছেন।
মানুষ ও পশুর খাবারের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ :
اَوَلَمْ يَرَوْا اَنَّا نَسُوْقُ الْمَآءَ اِلَى الْاَ رْضِ الْجُرُزِ فَنُخْرِجُ بِهٖ زَرْعًا تَاْكُلُ مِنْهُ اَنْعَامُهُمْ وَاَنْفُسُهُمْؕ اَفَلَا يُبْصِرُوْنَ
তারা কি লক্ষ্য করে না যে, আমি শুষ্ক ও পতিত জমিনে পানি প্রবাহিত করি; তারপর তার সাহায্যে শস্য উৎপাদন করি। অতঃপর তা থেকে ভক্ষণ করে তাদের চতুষ্পদ (চার পা বিশিষ্ট) জন্তুরা এবং তারা নিজেরাও? তবে কি তারা দেখে না? (সূরা সাজদা- ২৭)
فَلْيَنْظُرِ الْاِنْسَانُ اِلٰى طَعَامِهٖ ‐ - اَنَّا صَبَبْنَا الْمَآءَ صَبًّا ‐ - ثُمَّ شَقَقْنَا الْاَ رْضَ شَقًّا ‐ - فَاَنْۢبَتْنَا فِيْهَا حَبًّا ‐ - وَّعِنَبًا وَّقَضْبًا ‐ - وَّزَيْتُوْنًا وَّنَخْلًا ‐ - وَّحَدَآئِقَ غُلْبًا ‐ - وَّفَاكِهَةً وَّاَبًّا ‐ - مَّتَاعًا لَّكُمْ وَلِاَنْعَامِكُمْ
মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ্য করুক। আমিই প্রচুর পানি বর্ষণ করি, অতঃপর আমি ভূমিকে অদ্ভুতভাবে বিদীর্ণ করি এবং তাতে উৎপন্ন করি শস্য, আঙ্গুর, শাক-সবজি, যায়তুন, খেজুর, বহু নিবিড়-ঘন বাগান, ফল এবং গবাদি পশুর খাদ্য (ঘাস); তোমাদের ও তোমাদের পশুগুলোর ভোগের সামগ্রী হিসেবে। (সূরা আবাসা, ২৪-৩২)
মানুষের আয়ত্তাধীন পশুর দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ :
اَوَلَمْ يَرَوْا اَنَّا خَلَقْنَا لَهُمْ مِّمَّا عَمِلَتْ اَيْدِيْنَاۤ اَنْعَامًا فَهُمْ لَهَا مَالِكُوْنَ ‐ - وَذَلَّلْنَاهَا لَهُمْ فَمِنْهَا رَكُوْبُهُمْ وَمِنْهَا يَاْكُلُوْنَ ‐ - وَلَهُمْ فِيْهَا مَنَافِعُ وَمَشَارِبُ اَفَلَا يَشْكُرُوْنَ
তারা কি লক্ষ্য করেনি যে, আমি তাদের জন্য সৃষ্ট বস্তুসমূহের মধ্য থেকে চতুষ্পদ জন্তুগুলোকে সৃষ্টি করেছি? অতঃপর তারা এগুলোর মালিক হয়। আর আমি এগুলোকে তাদের অনুগত করে দিয়েছি, ফলে তারা এদের কতগুলোকে তাদের বাহনে পরিণত করে এবং কতগুলোকে ভক্ষণ করে। তাদের জন্য এগুলোর মধ্যে রয়েছে আরো অনেক উপকারিতা এবং বিভিন্ন ধরনের পানীয়। তবুও কি তারা শুকরিয়া আদায় করবে না? (সূরা ইয়াসীন, ৭১-৭৩)
নানা রঙ্গের পাহাড়, মানুষ ও পশুপাখির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ :
اَلَمْ تَرَ اَنَّ اللهَ اَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَخْرَجْنَا بِهٖ ثَمَرَاتٍ مُّخْتَلِفًا اَلْوَانُهَاؕ وَمِنَ الْجِبَالِ جُدَدٌ ۢبِيْضٌ وَّحُمْرٌ مُّخْتَلِفٌ اَلْوَانُهَا وَغَرَابِيْبُ سُوْدٌ -‐ وَمِنَ النَّاسِ وَالدَّوَآبِّ وَالْاَنْعَامِ مُخْتَلِفٌ اَلْوَانُهٗ كَذٰلِكَؕ اِنَّمَا يَخْشَى اللهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَآءُؕ اِنَّ اللهَ عَزِيْزٌ غَفُوْرٌ
তুমি কি লক্ষ্য করনি? আল্লাহ আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন। তারপর আমি তা দিয়ে নানা বর্ণের ফলমূল উৎপন্ন করি। আর পর্বতমালারও রয়েছে বিভিন্ন বর্ণের গিরিপথ- সাদা, লাল ও ঘোর কাল। আর এভাবে মানুষ, বিভিন্ন প্রাণী ও চতুষ্পদ জন্তুও বিভিন্ন বর্ণের হয়ে থাকে। আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই তাঁকে ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপ্রতাপশালী ও পরম ক্ষমাশীল। (সূরা ফাতির- ২৭, ২৮)
ফসল উৎপাদনের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ :
اَفَرَاَيْتُمْ مَّا تَحْرُثُوْنَ ‐ - اَاَنْتُمْ تَزْرَعُوْنَهٗۤ اَمْ نَحْنُ الزَّارِعُوْنَ ‐ - لَوْ نَشَآءُ لَجَعَلْنَاهُ حُطَامًا فَظَلْتُمْ تَفَكَّهُوْنَ ‐ - اِنَّا لَمُغْرَمُوْنَ ‐ - بَلْ نَحْنُ مَحْرُوْمُوْنَ
তোমরা যে বীজ বপন কর সে বিষয়ে চিন্তা করেছ কি? তোমরা কি তা অংকুরিত কর, না আমি অংকুরিত করি? আমি ইচ্ছা করলে একে খড়কুটায় পরিণত করতে পারি। তখন তোমরা হতবুদ্ধি হয়ে পড়বে, (বলবে) আমরা তো বরবাদ হয়ে গেছি! বরং আমরা বঞ্চিত। (সূরা ওয়াক্বিয়া, ৬৩-৬৭)
সুপেয় পানির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ :
اَفَرَاَيْتُمُ الْمَآءَ الَّذِيْ تَشْرَبُوْنَ ‐ اَاَنْتُمْ اَنْزَلْتُمُوْهُ مِنَ الْمُزْنِ اَمْ نَحْنُ الْمُنْزِلُوْنَ ‐ - لَوْ نَشَآءُ جَعَلْنَاهُ اُجَاجًا فَلَوْلَا تَشْكُرُوْنَ
তোমরা যে পানি পান কর সে বিষয়ে চিন্তা করেছ কি? তোমরা কি তা মেঘ হতে বর্ষাও, না আমিই বর্ষাই। আমি ইচ্ছা করলে ওটাকে লবণাক্ত বানাতে পারি। তবুও কি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে না? (সূরা ওয়াক্বিয়া, ৬৮-৭০)
আগুনের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ :
اَفَرَاَيْتُمُ النَّارَ الَّتِيْ تُوْرُوْنَ ‐ - اَاَنْتُمْ اَنْشَاْتُمْ شَجَرَتَهَاۤ اَمْ نَحْنُ الْمُنْشِئُوْنَ
তোমরা যে আগুন জ্বালাও তা লক্ষ্য করে দেখেছ কি? তোমরাই কি তার বৃক্ষ সৃষ্টি কর, না আমি সৃষ্টি করি? (সূরা ওয়াক্বিয়া- ৭১,৭২)
ব্যাখ্যা : কুরআন মাজীদ মোট ছয় প্রকার নিদর্শনাবলির দিকে ইঙ্গিত করেছে। আর তা হলো :
১. যে নিদর্শনগুলো পৃথিবী থেকে নিয়ে আকাশ পর্যন্ত প্রত্যেকটি জিনিসের এবং বিশ্বজাহানের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার মধ্যে পাওয়া যায়।
২. যে নিদর্শনগুলো মানুষের নিজের জন্ম এবং তার গঠনাকৃতি ও অস্তিত্বের মধ্যে পাওয়া যায়।
৩. যে নিদর্শনগুলো মানুষের অনুভূতিতে এবং তার নৈতিক চিন্তাধারায় পাওয়া যায়।
৪. যে নিদর্শনগুলো মানুষের ইতিহাসের ধারাবাহিকতার অভিজ্ঞতায় পাওয়া যায়।
৫. যে নিদর্শনাবলি মানুষের প্রতি অবতীর্ণ পার্থিব বিপদাপদ ও আসমানী বালা-মুসিবতের মধ্যে পাওয়া যায়।
৬. আল্লাহ তাঁর নবীগণের মাধ্যমে যেসব নিদর্শনাবলি প্রেরণ করেছেন সেগুলো।
মানুষকে বিভিন্নভাবে বুঝানোর জন্য এসব নিদর্শনাবলি উল্লেখ করা হয়েছে। অতঃপর সেসব নিদর্শনসমূহকে দেখার জন্য চোখ, শোনার জন্য কান এবং চিন্তার জন্য অন্তরও দান করা হয়েছে। এ সমস্ত নিদর্শন মানুষকে এ কথা বলে যাচ্ছে যে, তোমার উপাস্য মাত্র একজন। তাঁর ইবাদাত ও আনুগত্য ছাড়া তোমার দ্বিতীয় কোন পথ নেই। তোমাকে এ জগতে স্বাধীন, স্বেচ্ছাচারী ও দায়িত্বহীন করে পাঠানো হয়নি। জীবনের সমস্ত কাজ শেষ করে তোমাকে আল্লাহর সামনে হাজির হয়ে জবাবদিহি করতে হবে এবং সে কাজের প্রেক্ষিতে পুরস্কার বা শাস্তি পেতে হবে। কাজেই আল্লাহ তোমাকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য নবী ও কিতাবসমূহ পাঠিয়ে যে পথনির্দেশনা দিয়েছেন তা মেনে চলো এবং স্বেচ্ছাচারিতা থেকে বিরত থাকো। এরপরও সে যদি সমস্ত নিদর্শনের দিক থেকে চোখ ও কান বন্ধ করে নেয় এবং মন-মস্তিষ্ক দিয়েও উল্টা বুঝে, তাহলে তার চেয়ে বড় যালিম আর কেউ হতে পারে না। দুনিয়ায় পরীক্ষার মেয়াদ শেষ করে যখন সে আল্লাহর সামনে গিয়ে দাঁড়াবে, তখন সে পুরস্কার লাভের সকল ধরনের যোগ্যতাই হারিয়ে ফেলবে। ফলে সে জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি ভোগ করবে।
اَلَمْ نَجْعَلِ الْاَ رْضَ مِهَادًا ‐ - وَّالْجِبَالَ اَوْتَادًا ‐ - وَّخَلَقْنَاكُمْ اَزْوَاجًا ‐ - وَّجَعَلْنَا نَوْمَكُمْ سُبَاتًا ‐ وَّجَعَلْنَا اللَّيْلَ لِبَاسًا ‐ وَّجَعَلْنَا النَّهَارَ مَعَاشًا ‐ وَّبَنَيْنَا فَوْقَكُمْ سَبْعًا شِدَادًا ‐ - وَّجَعَلْنَا سِرَاجًا وَّهَّاجًا ‐ - وَّاَنْزَلْنَا مِنَ الْمُعْصِرَاتِ مَآءً ثَجَّاجًا ‐ - لِّنُخْرِجَ بِهٖ حَبًّا وَّنَبَاتًا ‐ - وَّجَنَّاتٍ اَلْفَافًا
আমি কি জমিনকে বিছানাস্বরূপ বানাইনি? এবং পাহাড়সমূহকে পেরেকস্বরূপ (করিনি)? আর আমিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি জোড়ায় জোড়ায়। আমিই তোমাদের নিদ্রাকে করেছি আরামদায়ক এবং রাত্রিকে করেছি আবরণস্বরূপ। আর আমিই দিবসকে জীবিকা অর্জনের সময় করে দিয়েছি। আর আমিই নির্মাণ করেছি তোমাদের উপর সাতটি মজবুত আসমান এবং আমিই সৃষ্টি করেছি একটি দীপ্তমান প্রদীপ। আর আমিই মেঘমালা থেকে প্রচুর পানি বর্ষণ করি। যেন আমি তা দিয়ে উৎপন্ন করি শস্য ও উদ্ভিদ এবং বৃক্ষরাজিতে পরিপূর্ণ বাগানসমূহ। (সূরা নাবা, ৬-১৬)
اَلَمْ نَخْلُقْكُّمْ مِّنْ مَّآءٍ مَّهِيْنٍ ‐ - فَجَعَلْنَاهُ فِيْ قَرَارٍ مَّكِيْنٍ ‐ اِلٰى قَدَرٍ مَّعْلُوْمٍ ‐ فَقَدَرْنَا فَنِعْمَ الْقَادِرُوْنَ ‐ - وَيْلٌ يَّوْمَئِذٍ لِّلْمُكَذِّبِيْنَ ‐ - اَلَمْ نَجْعَلِ الْاَ رْضَ كِفَاتًا ‐ - اَحْيَآءً وَّاَمْوَاتًا ‐ - وَجَعَلْنَا فِيْهَا رَوَاسِيَ شَامِخَاتٍ وَّاَسْقَيْنَاكُمْ مَّآءً فُرَاتًا
আমি কি তোমাদেরকে তুচ্ছ পানি থেকে সৃষ্টি করিনি? অতঃপর আমি ওটাকে স্থাপন করেছি নিরাপদ স্থানে এক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। আমি একে গঠন করেছি সুবিন্যাস্তভাবে, অতএব আমি কতই না নিপুণ নিরূপণকারী! সেদিন মিথ্যারোপকারীদের জন্য দুর্ভোগ। আমি কি ভূমিকে জীবিত ও মৃতের জন্য বহনকারী রূপে সৃষ্টি করিনি? আমি তাতে স্থাপন করেছি সুদৃঢ় উচ্চ পর্বতমালা এবং তোমাদেরকে পান করিয়েছি সুপেয় পানি। (সূরা মুরসালাত, ২০-২৭)
বিশেষ চারটি জিনিসের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ :
اَفَلَا يَنْظُرُوْنَ اِلَى الْاِبِلِ كَيْفَ خُلِقَتْ ‐ - وَاِلَى السَّمَآءِ كَيْفَ رُفِعَتْ ‐ - وَاِلَى الْجِبَالِ كَيْفَ نُصِبَتْ ‐ - وَاِلَى الْاَ رْضِ كَيْفَ سُطِحَتْ
তারা কি উষ্ট্রপালের দিকে লক্ষ্য করে না যে, কীভাবে এগুলোকে সৃষ্টি করা হয়েছে? আকাশের দিকে (লক্ষ্য করে না যে) কীভাবে ওটাকে সমুচ্চ করা হয়েছে? পর্বতমালার দিকে (লক্ষ্য করে না যে) কীভাবে ওটাকে বসানো হয়েছে? আর পৃথিবীর দিকে (লক্ষ্য করে না যে) কীভাবে ওটাকে সমতল করা হয়েছে? (সূরা গাশিয়া, ১৭-২০)
সুন্দর আকাশের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ :
اَفَلَمْ يَنْظُرُوْاۤ اِلَى السَّمَآءِ فَوْقَهُمْ كَيْفَ بَنَيْنَاهَا وَزَيَّنَّاهَا وَمَا لَهَا مِنْ فُرُوْجٍ
এরা কি কখনো তাদের উপর অবস্থিত আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে না যে, কীভাবে আমি তা তৈরি করেছি ও তাকে সুশোভীত করেছি? আর তাতে কোন (সূক্ষ্মতম) ফাটলও নেই। (সূরা ক্বাফ- ৬)
ব্যাখ্যা : এখানে আসমান বলতে পুরো ঊর্ধবজগতকে বুঝানো হয়েছে। যা মানুষ রাত-দিন তার মাথার উপর ছেয়ে থাকতে দেখে। যেখানে দিনের বেলা সূর্য দীপ্তি ছড়ায়, রাতের বেলা চাঁদ এবং অসংখ্য তারকারাজি উজ্জল হয়ে দেখা দেয়। মানুষ যদি এগুলোকে খালি চোখেই দেখে তাহলেও সে বিস্মিত হয়ে পড়ে। আর দুরবিন লাগিয়ে দেখলে এমন একটি বিশাল সুবিস্তৃত সৃষ্টিজগৎ তার সামনে ভেসে ওঠে, যার কোন সীমা নেই। কোথায় শুরু এবং কোথায় শেষ হয়েছে বুঝা যাবে না। আমাদের পৃথিবীর চেয়ে লক্ষ লক্ষ গুণ বড় গ্রহসমূহ এর মধ্যে বলের মতো ঘুরপাক খাচ্ছে। আমাদের সূর্যের চেয়ে হাজার হাজার গুণ উজ্জল তারকা তার মধ্যে জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। আমাদের এ সৌরজগৎ তার একটিমাত্র ছায়াপথের এক কোণে পড়ে আছে। আল্লাহর কর্তৃত্ব কত ব্যাপক ও বিস্তৃত আমরা তার কোন অনুমানই করতে পারি না। আল্লাহ তা‘আলা এ বিশাল সৃষ্টিজগতকে অস্তিত্বদান করেছেন।
মানুষ ও পশুর খাবারের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ :
اَوَلَمْ يَرَوْا اَنَّا نَسُوْقُ الْمَآءَ اِلَى الْاَ رْضِ الْجُرُزِ فَنُخْرِجُ بِهٖ زَرْعًا تَاْكُلُ مِنْهُ اَنْعَامُهُمْ وَاَنْفُسُهُمْؕ اَفَلَا يُبْصِرُوْنَ
তারা কি লক্ষ্য করে না যে, আমি শুষ্ক ও পতিত জমিনে পানি প্রবাহিত করি; তারপর তার সাহায্যে শস্য উৎপাদন করি। অতঃপর তা থেকে ভক্ষণ করে তাদের চতুষ্পদ (চার পা বিশিষ্ট) জন্তুরা এবং তারা নিজেরাও? তবে কি তারা দেখে না? (সূরা সাজদা- ২৭)
فَلْيَنْظُرِ الْاِنْسَانُ اِلٰى طَعَامِهٖ ‐ - اَنَّا صَبَبْنَا الْمَآءَ صَبًّا ‐ - ثُمَّ شَقَقْنَا الْاَ رْضَ شَقًّا ‐ - فَاَنْۢبَتْنَا فِيْهَا حَبًّا ‐ - وَّعِنَبًا وَّقَضْبًا ‐ - وَّزَيْتُوْنًا وَّنَخْلًا ‐ - وَّحَدَآئِقَ غُلْبًا ‐ - وَّفَاكِهَةً وَّاَبًّا ‐ - مَّتَاعًا لَّكُمْ وَلِاَنْعَامِكُمْ
মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ্য করুক। আমিই প্রচুর পানি বর্ষণ করি, অতঃপর আমি ভূমিকে অদ্ভুতভাবে বিদীর্ণ করি এবং তাতে উৎপন্ন করি শস্য, আঙ্গুর, শাক-সবজি, যায়তুন, খেজুর, বহু নিবিড়-ঘন বাগান, ফল এবং গবাদি পশুর খাদ্য (ঘাস); তোমাদের ও তোমাদের পশুগুলোর ভোগের সামগ্রী হিসেবে। (সূরা আবাসা, ২৪-৩২)
মানুষের আয়ত্তাধীন পশুর দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ :
اَوَلَمْ يَرَوْا اَنَّا خَلَقْنَا لَهُمْ مِّمَّا عَمِلَتْ اَيْدِيْنَاۤ اَنْعَامًا فَهُمْ لَهَا مَالِكُوْنَ ‐ - وَذَلَّلْنَاهَا لَهُمْ فَمِنْهَا رَكُوْبُهُمْ وَمِنْهَا يَاْكُلُوْنَ ‐ - وَلَهُمْ فِيْهَا مَنَافِعُ وَمَشَارِبُ اَفَلَا يَشْكُرُوْنَ
তারা কি লক্ষ্য করেনি যে, আমি তাদের জন্য সৃষ্ট বস্তুসমূহের মধ্য থেকে চতুষ্পদ জন্তুগুলোকে সৃষ্টি করেছি? অতঃপর তারা এগুলোর মালিক হয়। আর আমি এগুলোকে তাদের অনুগত করে দিয়েছি, ফলে তারা এদের কতগুলোকে তাদের বাহনে পরিণত করে এবং কতগুলোকে ভক্ষণ করে। তাদের জন্য এগুলোর মধ্যে রয়েছে আরো অনেক উপকারিতা এবং বিভিন্ন ধরনের পানীয়। তবুও কি তারা শুকরিয়া আদায় করবে না? (সূরা ইয়াসীন, ৭১-৭৩)
নানা রঙ্গের পাহাড়, মানুষ ও পশুপাখির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ :
اَلَمْ تَرَ اَنَّ اللهَ اَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَخْرَجْنَا بِهٖ ثَمَرَاتٍ مُّخْتَلِفًا اَلْوَانُهَاؕ وَمِنَ الْجِبَالِ جُدَدٌ ۢبِيْضٌ وَّحُمْرٌ مُّخْتَلِفٌ اَلْوَانُهَا وَغَرَابِيْبُ سُوْدٌ -‐ وَمِنَ النَّاسِ وَالدَّوَآبِّ وَالْاَنْعَامِ مُخْتَلِفٌ اَلْوَانُهٗ كَذٰلِكَؕ اِنَّمَا يَخْشَى اللهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَآءُؕ اِنَّ اللهَ عَزِيْزٌ غَفُوْرٌ
তুমি কি লক্ষ্য করনি? আল্লাহ আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন। তারপর আমি তা দিয়ে নানা বর্ণের ফলমূল উৎপন্ন করি। আর পর্বতমালারও রয়েছে বিভিন্ন বর্ণের গিরিপথ- সাদা, লাল ও ঘোর কাল। আর এভাবে মানুষ, বিভিন্ন প্রাণী ও চতুষ্পদ জন্তুও বিভিন্ন বর্ণের হয়ে থাকে। আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই তাঁকে ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপ্রতাপশালী ও পরম ক্ষমাশীল। (সূরা ফাতির- ২৭, ২৮)
ফসল উৎপাদনের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ :
اَفَرَاَيْتُمْ مَّا تَحْرُثُوْنَ ‐ - اَاَنْتُمْ تَزْرَعُوْنَهٗۤ اَمْ نَحْنُ الزَّارِعُوْنَ ‐ - لَوْ نَشَآءُ لَجَعَلْنَاهُ حُطَامًا فَظَلْتُمْ تَفَكَّهُوْنَ ‐ - اِنَّا لَمُغْرَمُوْنَ ‐ - بَلْ نَحْنُ مَحْرُوْمُوْنَ
তোমরা যে বীজ বপন কর সে বিষয়ে চিন্তা করেছ কি? তোমরা কি তা অংকুরিত কর, না আমি অংকুরিত করি? আমি ইচ্ছা করলে একে খড়কুটায় পরিণত করতে পারি। তখন তোমরা হতবুদ্ধি হয়ে পড়বে, (বলবে) আমরা তো বরবাদ হয়ে গেছি! বরং আমরা বঞ্চিত। (সূরা ওয়াক্বিয়া, ৬৩-৬৭)
সুপেয় পানির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ :
اَفَرَاَيْتُمُ الْمَآءَ الَّذِيْ تَشْرَبُوْنَ ‐ اَاَنْتُمْ اَنْزَلْتُمُوْهُ مِنَ الْمُزْنِ اَمْ نَحْنُ الْمُنْزِلُوْنَ ‐ - لَوْ نَشَآءُ جَعَلْنَاهُ اُجَاجًا فَلَوْلَا تَشْكُرُوْنَ
তোমরা যে পানি পান কর সে বিষয়ে চিন্তা করেছ কি? তোমরা কি তা মেঘ হতে বর্ষাও, না আমিই বর্ষাই। আমি ইচ্ছা করলে ওটাকে লবণাক্ত বানাতে পারি। তবুও কি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে না? (সূরা ওয়াক্বিয়া, ৬৮-৭০)
আগুনের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ :
اَفَرَاَيْتُمُ النَّارَ الَّتِيْ تُوْرُوْنَ ‐ - اَاَنْتُمْ اَنْشَاْتُمْ شَجَرَتَهَاۤ اَمْ نَحْنُ الْمُنْشِئُوْنَ
তোমরা যে আগুন জ্বালাও তা লক্ষ্য করে দেখেছ কি? তোমরাই কি তার বৃক্ষ সৃষ্টি কর, না আমি সৃষ্টি করি? (সূরা ওয়াক্বিয়া- ৭১,৭২)
ব্যাখ্যা : কুরআন মাজীদ মোট ছয় প্রকার নিদর্শনাবলির দিকে ইঙ্গিত করেছে। আর তা হলো :
১. যে নিদর্শনগুলো পৃথিবী থেকে নিয়ে আকাশ পর্যন্ত প্রত্যেকটি জিনিসের এবং বিশ্বজাহানের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার মধ্যে পাওয়া যায়।
২. যে নিদর্শনগুলো মানুষের নিজের জন্ম এবং তার গঠনাকৃতি ও অস্তিত্বের মধ্যে পাওয়া যায়।
৩. যে নিদর্শনগুলো মানুষের অনুভূতিতে এবং তার নৈতিক চিন্তাধারায় পাওয়া যায়।
৪. যে নিদর্শনগুলো মানুষের ইতিহাসের ধারাবাহিকতার অভিজ্ঞতায় পাওয়া যায়।
৫. যে নিদর্শনাবলি মানুষের প্রতি অবতীর্ণ পার্থিব বিপদাপদ ও আসমানী বালা-মুসিবতের মধ্যে পাওয়া যায়।
৬. আল্লাহ তাঁর নবীগণের মাধ্যমে যেসব নিদর্শনাবলি প্রেরণ করেছেন সেগুলো।
মানুষকে বিভিন্নভাবে বুঝানোর জন্য এসব নিদর্শনাবলি উল্লেখ করা হয়েছে। অতঃপর সেসব নিদর্শনসমূহকে দেখার জন্য চোখ, শোনার জন্য কান এবং চিন্তার জন্য অন্তরও দান করা হয়েছে। এ সমস্ত নিদর্শন মানুষকে এ কথা বলে যাচ্ছে যে, তোমার উপাস্য মাত্র একজন। তাঁর ইবাদাত ও আনুগত্য ছাড়া তোমার দ্বিতীয় কোন পথ নেই। তোমাকে এ জগতে স্বাধীন, স্বেচ্ছাচারী ও দায়িত্বহীন করে পাঠানো হয়নি। জীবনের সমস্ত কাজ শেষ করে তোমাকে আল্লাহর সামনে হাজির হয়ে জবাবদিহি করতে হবে এবং সে কাজের প্রেক্ষিতে পুরস্কার বা শাস্তি পেতে হবে। কাজেই আল্লাহ তোমাকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য নবী ও কিতাবসমূহ পাঠিয়ে যে পথনির্দেশনা দিয়েছেন তা মেনে চলো এবং স্বেচ্ছাচারিতা থেকে বিরত থাকো। এরপরও সে যদি সমস্ত নিদর্শনের দিক থেকে চোখ ও কান বন্ধ করে নেয় এবং মন-মস্তিষ্ক দিয়েও উল্টা বুঝে, তাহলে তার চেয়ে বড় যালিম আর কেউ হতে পারে না। দুনিয়ায় পরীক্ষার মেয়াদ শেষ করে যখন সে আল্লাহর সামনে গিয়ে দাঁড়াবে, তখন সে পুরস্কার লাভের সকল ধরনের যোগ্যতাই হারিয়ে ফেলবে। ফলে সে জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি ভোগ করবে।
মানুষ যেন এগুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে :
كَذٰلِكَ يُبَيِّنُ اللهُ لَكُمُ الْاٰيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَتَفَكَّرُوْنَ
এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য নিদর্শনসমূহ বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা চিন্তা-ভাবনা করতে পার। (সূরা বাক্বারা- ২১৯)
লোকেরা যেন সোজা পথে ফিরে আসে :
وَكَذٰلِكَ نُفَصِّلُ الْاٰيَاتِ وَلَعَلَّهُمْ يَرْجِعُوْنَ
এভাবেই আমি নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করি, যাতে তারা প্রত্যাবর্তন করে। (সূরা আ‘রাফ- ১৭৪)
মানুষ যেন হেদায়াত লাভ করে :
كَذٰلِكَ يُبَيِّنُ اللهُ لَكُمْ اٰيَاتِه لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ
এভাবে আল্লাহ তোমাদের সামনে তাঁর নিদর্শনসমূহ বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা হেদায়াত লাভ করতে পার। (সূরা আলে ইমরান- ১০৩)
তারপরও মানুষ নিদর্শনের ব্যাপারে উদাসীন :
وَكَاَيِّنْ مِّنْ اٰيَةٍ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِ يَمُرُّوْنَ عَلَيْهَا وَهُمْ عَنْهَا مُعْرِضُوْنَ
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে অনেক নিদর্শন রয়েছে। তারা এগুলোর উপর দিয়ে পথ অতিক্রম করে, কিন্তু তারা এসবের প্রতি উদাসীন। (সূরা ইউসুফ- ১০৫)
وَمَا تَاْتِيْهِمْ مِّنْ اٰيَةٍ مِّنْ اٰيَاتِ رَبِّهِمْ اِلَّا كَانُوْا عَنْهَا مُعْرِضِيْنَ
আর তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলির যে কোন নিদর্শনই তাদের কাছে আসে, তা থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়। (সূরা ইয়াসীন- ৪৬)
كَذٰلِكَ يُبَيِّنُ اللهُ لَكُمُ الْاٰيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَتَفَكَّرُوْنَ
এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য নিদর্শনসমূহ বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা চিন্তা-ভাবনা করতে পার। (সূরা বাক্বারা- ২১৯)
লোকেরা যেন সোজা পথে ফিরে আসে :
وَكَذٰلِكَ نُفَصِّلُ الْاٰيَاتِ وَلَعَلَّهُمْ يَرْجِعُوْنَ
এভাবেই আমি নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করি, যাতে তারা প্রত্যাবর্তন করে। (সূরা আ‘রাফ- ১৭৪)
মানুষ যেন হেদায়াত লাভ করে :
كَذٰلِكَ يُبَيِّنُ اللهُ لَكُمْ اٰيَاتِه لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ
এভাবে আল্লাহ তোমাদের সামনে তাঁর নিদর্শনসমূহ বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা হেদায়াত লাভ করতে পার। (সূরা আলে ইমরান- ১০৩)
তারপরও মানুষ নিদর্শনের ব্যাপারে উদাসীন :
وَكَاَيِّنْ مِّنْ اٰيَةٍ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِ يَمُرُّوْنَ عَلَيْهَا وَهُمْ عَنْهَا مُعْرِضُوْنَ
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে অনেক নিদর্শন রয়েছে। তারা এগুলোর উপর দিয়ে পথ অতিক্রম করে, কিন্তু তারা এসবের প্রতি উদাসীন। (সূরা ইউসুফ- ১০৫)
وَمَا تَاْتِيْهِمْ مِّنْ اٰيَةٍ مِّنْ اٰيَاتِ رَبِّهِمْ اِلَّا كَانُوْا عَنْهَا مُعْرِضِيْنَ
আর তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলির যে কোন নিদর্শনই তাদের কাছে আসে, তা থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়। (সূরা ইয়াসীন- ৪৬)
যারা মুমিন :
اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّلْمُؤْمِنِيْنَ
অবশ্যই এতে মুমিনদের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা হিজর- ৭৭)
যারা চিমত্মাশীল :
اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ
অবশ্যই এতে চিমত্মাশীল সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা নাহল- ১১)
যারা উপদেশ গ্রহণ করে :
اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّذَّكَّرُوْنَ
এতে রয়েছে নিশ্চিত নিদর্শন সে সম্প্রদায়ের জন্য, যারা উপদেশ গ্রহণ করে। (সূরা নাহল- ১৩)
যারা বোধশক্তিসম্পন্ন :
اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّعْقِلُوْنَ
এতে অবশ্যই বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা নাহল- ৬৫)
যারা অতি ধৈর্যশীল ও পরম কৃতজ্ঞ :
اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّكُلِّ صَبَّارٍ شَكُوْرٍ
নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে প্রত্যেক পরম ধৈর্যশীল ও কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য। (সূরা ইবরাহীম- ৫)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর নিদর্শন থেকে শুধু তারাই প্রকৃত সত্যে পৌঁছতে পারে, যাদের মধ্যে এসব গুণাবলি রয়েছে। তারা জাহেলী মনোভাব ত্যাগ করে ইলিম অর্জন করবে। ভুল থেকে মুক্ত হয়ে সঠিক পথে চলার ইচ্ছা তাদের মধ্যে থাকবে। তাদেরকে ধৈর্যশীল হতে হবে এবং তাদের পদক্ষেপে দৃঢ়তা থাকতে হবে। সহনীয়-অসহনীয় এবং ভালো-মন্দ সকল অবস্থায় তারা একটি সৎ ও সুস্থ বিশ্বাসের উপর অটল থাকবে। তাদের মধ্যে এ ধরনের কোন দুর্বলতা থাকবে না যে, দুঃসময়ের মুখোমুখি হলে আল্লাহর সামনে নতজানু হয়ে কান্নাকাটি করবে আর সুসময় আসার সাথে সাথেই সবকিছু ভুলে যাবে। অথবা এর বিপরীতে ভালো অবস্থায় আল্লাহকে মেনে চলবে এবং বিপদের একটি আঘাতেই আল্লাহকে গালি দিতে শুরু করবে। তাদেরকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী হতে হবে। তারা বিশ্বাসঘাতক হবে না, উপকারীর উপকার ভুলে যাবে না। বরং অনুগ্রহের কদর করবে এবং অনুগ্রহকারীর জন্য কৃতজ্ঞতার অনুভূতি নিজের মধ্যে জাগ্রত রাখবে। মানুষ কোন বড় রকমের বিপদের সম্মুখীন হলে অথবা মৃত্যু তার ভয়াবহ চেহারা নিয়ে সামনে এসে দাঁড়ালে তখন এক আল্লাহর আশ্রয় ছাড়া আর কোন আশ্রয়স্থল তার চোখে পড়ে না। বড় বড় মুশরিকরা এ সময় নিজেদের উপাস্য ও দেবতাদের কথা ভুলে এক আল্লাহকে ডাকতে থাকে। কট্টর আল্লাহদ্রোহী নাস্তিকও এ সময় আল্লাহর কাছে দু‘আ করে। কারণ আল্লাহভক্তি ও তাওহীদের সাক্ষ্য প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই বিদ্যমান। এর উপর গাফলতি ও অজ্ঞতার যতই আবরণ পড়ুক না কেন তবুও তা কখনো না কখনো দৃষ্টি সমক্ষে জেগে ওঠে। তারা যখন এ নিদর্শনগুলোর মাধ্যমে সত্যকে চিনতে পারবে তখন তারা চিরকালের জন্য তাওহীদের শিক্ষাকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরবে।
অহংকারীরা নিদর্শন থেকে ফায়দা পায় না :
سَاَصْرِفُ عَنْ اٰيَاتِيَ الَّذِيْنَ يَتَكَبَّرُوْنَ فِى الْاَ رْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّؕ وَاِنْ يَّرَوْا كُلَّ اٰيَةٍ لَّا يُؤْمِنُوْا بِهَاۚ وَاِنْ يَّرَوْا سَبِيْلَ الرُّشْدِ لَا يَتَّخِذُوْهُ سَبِيْلًاۚ وَّاِنْ يَّرَوْا سَبِيْلَ الْغَيِّ يَتَّخِذُوْهُ سَبِيْلًاؕ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَا وَكَانُوْا عَنْهَا غَافِلِيْنَ
পৃথিবীতে যারা অন্যায়ভাবে দম্ভ করে বেড়ায় তাদের দৃষ্টি আমার নিদর্শন হতে ফিরিয়ে দেব, তারা আমার প্রত্যেকটি নিদর্শন দেখলেও তাতে বিশ্বাস স্থাপন করবে না, তারা সৎপথ দেখলেও তাকে পথ বলে গ্রহণ করবে না, কিন্তু তারা ভ্রান্ত পথ দেখলে তাকে (সঠিক) পথ হিসেবে গ্রহণ করবে। কারণ তারা আমার নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করেছে; আর সে সম্বন্ধে তারা ছিল গাফিল। (সূরা আ‘রাফ- ১৪৬)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ যারা আল্লাহ থেকে বিমুখ, তারা কখনো কোন নিদর্শন দেখেও শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে না। কেননা তাদের জ্ঞানবুদ্ধির উপর গাফলতি ও গোঁড়ামির পর্দা পড়ে আছে। তার চক্ষু এ দৃশ্য অবশ্যই দেখে যে, বাতাস বয়ে গেল, মেঘরাশি উড়ে আসল, বিদ্যুৎ চমকাল ও বজ্র ধ্বনি হলো এবং বৃষ্টিপাত হলো; কিন্তু তার মস্তিষ্ক এটা ভেবে দেখে না যে, এসব কেন হচ্ছে, কে করছে এবং এ ব্যাপারে তার কী কী দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। যিনি এগুলো তাকে দিচ্ছেন, তিনি তার কাছে কী চাচ্ছেন।
আল্লাহর নিদর্শনাবলি মানুষের চোখ খুলে দেয় :
تَبْصِرَةً وَّذِكْرٰى لِكُلِّ عَبْدٍ مُّنِيْبٍ
এসব প্রত্যেক বিনীত ব্যক্তির জন্য জ্ঞান ও উপদেশস্বরূপ। (সূরা ক্বাফ- ৮)
ব্যাখ্যা : প্রত্যেক ব্যক্তি যদি আল্লাহ থেকে গাফিল না হয় এবং বিশ্বজাহানের নিদর্শনগুলোকে বিবেকবুদ্ধিহীন জন্তু-জানোয়ারের দৃষ্টিতে না দেখে গভীর পর্যবেক্ষণের দৃষ্টিতে দেখে; অতঃপর সে সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে, তাহলে সে প্রতিটি নিদর্শনের সাহায্যে খুব সহজে যথার্থ ও চূড়ান্ত সত্যের দ্বারে পৌঁছতে পারে। যার সামনে বিশ্বজগতের চারদিকে আল্লাহর একত্বের প্রমাণ ছড়িয়ে আছে তারপরও যে তার মধ্য হতে কোনকিছুই দেখতে পায় না, সে অন্ধ। আর চক্ষুষ্মান হচ্ছে এমন ব্যক্তি, যার দৃষ্টি সারা বিশ্বের প্রতিটি জিনিসের মধ্যে একজন অসাধারণ কারিগরের অতুলনীয় কৃতিত্ব দেখতে পায়। যে ব্যক্তি সত্যকে স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছে, সে কখনো দৃষ্টিহীন লোকদের মতো আচরণ করবে না এবং ভ্রান্ত পথে ঘুরে বেড়াবে না।
তারপরও মানুষ আল্লাহকে যথাযথ মূল্যায়ন করে না :
مَا قَدَرُوا اللهَ حَقَّ قَدْرِهٖؕ اِنَّ اللهَ لَقَوِيٌّ عَزِيْزٌ
তারা আল্লাহকে যথাযথ মর্যাদা দিতে পারেনি, নিশ্চয় আল্লাহ অসীম ক্ষমতাবান ও মহাপরাক্রমশালী। (সূরা হজ্জ- ৭৪)
اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّلْمُؤْمِنِيْنَ
অবশ্যই এতে মুমিনদের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা হিজর- ৭৭)
যারা চিমত্মাশীল :
اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ
অবশ্যই এতে চিমত্মাশীল সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা নাহল- ১১)
যারা উপদেশ গ্রহণ করে :
اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّذَّكَّرُوْنَ
এতে রয়েছে নিশ্চিত নিদর্শন সে সম্প্রদায়ের জন্য, যারা উপদেশ গ্রহণ করে। (সূরা নাহল- ১৩)
যারা বোধশক্তিসম্পন্ন :
اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّعْقِلُوْنَ
এতে অবশ্যই বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা নাহল- ৬৫)
যারা অতি ধৈর্যশীল ও পরম কৃতজ্ঞ :
اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّكُلِّ صَبَّارٍ شَكُوْرٍ
নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে প্রত্যেক পরম ধৈর্যশীল ও কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য। (সূরা ইবরাহীম- ৫)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর নিদর্শন থেকে শুধু তারাই প্রকৃত সত্যে পৌঁছতে পারে, যাদের মধ্যে এসব গুণাবলি রয়েছে। তারা জাহেলী মনোভাব ত্যাগ করে ইলিম অর্জন করবে। ভুল থেকে মুক্ত হয়ে সঠিক পথে চলার ইচ্ছা তাদের মধ্যে থাকবে। তাদেরকে ধৈর্যশীল হতে হবে এবং তাদের পদক্ষেপে দৃঢ়তা থাকতে হবে। সহনীয়-অসহনীয় এবং ভালো-মন্দ সকল অবস্থায় তারা একটি সৎ ও সুস্থ বিশ্বাসের উপর অটল থাকবে। তাদের মধ্যে এ ধরনের কোন দুর্বলতা থাকবে না যে, দুঃসময়ের মুখোমুখি হলে আল্লাহর সামনে নতজানু হয়ে কান্নাকাটি করবে আর সুসময় আসার সাথে সাথেই সবকিছু ভুলে যাবে। অথবা এর বিপরীতে ভালো অবস্থায় আল্লাহকে মেনে চলবে এবং বিপদের একটি আঘাতেই আল্লাহকে গালি দিতে শুরু করবে। তাদেরকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী হতে হবে। তারা বিশ্বাসঘাতক হবে না, উপকারীর উপকার ভুলে যাবে না। বরং অনুগ্রহের কদর করবে এবং অনুগ্রহকারীর জন্য কৃতজ্ঞতার অনুভূতি নিজের মধ্যে জাগ্রত রাখবে। মানুষ কোন বড় রকমের বিপদের সম্মুখীন হলে অথবা মৃত্যু তার ভয়াবহ চেহারা নিয়ে সামনে এসে দাঁড়ালে তখন এক আল্লাহর আশ্রয় ছাড়া আর কোন আশ্রয়স্থল তার চোখে পড়ে না। বড় বড় মুশরিকরা এ সময় নিজেদের উপাস্য ও দেবতাদের কথা ভুলে এক আল্লাহকে ডাকতে থাকে। কট্টর আল্লাহদ্রোহী নাস্তিকও এ সময় আল্লাহর কাছে দু‘আ করে। কারণ আল্লাহভক্তি ও তাওহীদের সাক্ষ্য প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই বিদ্যমান। এর উপর গাফলতি ও অজ্ঞতার যতই আবরণ পড়ুক না কেন তবুও তা কখনো না কখনো দৃষ্টি সমক্ষে জেগে ওঠে। তারা যখন এ নিদর্শনগুলোর মাধ্যমে সত্যকে চিনতে পারবে তখন তারা চিরকালের জন্য তাওহীদের শিক্ষাকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরবে।
অহংকারীরা নিদর্শন থেকে ফায়দা পায় না :
سَاَصْرِفُ عَنْ اٰيَاتِيَ الَّذِيْنَ يَتَكَبَّرُوْنَ فِى الْاَ رْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّؕ وَاِنْ يَّرَوْا كُلَّ اٰيَةٍ لَّا يُؤْمِنُوْا بِهَاۚ وَاِنْ يَّرَوْا سَبِيْلَ الرُّشْدِ لَا يَتَّخِذُوْهُ سَبِيْلًاۚ وَّاِنْ يَّرَوْا سَبِيْلَ الْغَيِّ يَتَّخِذُوْهُ سَبِيْلًاؕ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَا وَكَانُوْا عَنْهَا غَافِلِيْنَ
পৃথিবীতে যারা অন্যায়ভাবে দম্ভ করে বেড়ায় তাদের দৃষ্টি আমার নিদর্শন হতে ফিরিয়ে দেব, তারা আমার প্রত্যেকটি নিদর্শন দেখলেও তাতে বিশ্বাস স্থাপন করবে না, তারা সৎপথ দেখলেও তাকে পথ বলে গ্রহণ করবে না, কিন্তু তারা ভ্রান্ত পথ দেখলে তাকে (সঠিক) পথ হিসেবে গ্রহণ করবে। কারণ তারা আমার নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করেছে; আর সে সম্বন্ধে তারা ছিল গাফিল। (সূরা আ‘রাফ- ১৪৬)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ যারা আল্লাহ থেকে বিমুখ, তারা কখনো কোন নিদর্শন দেখেও শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে না। কেননা তাদের জ্ঞানবুদ্ধির উপর গাফলতি ও গোঁড়ামির পর্দা পড়ে আছে। তার চক্ষু এ দৃশ্য অবশ্যই দেখে যে, বাতাস বয়ে গেল, মেঘরাশি উড়ে আসল, বিদ্যুৎ চমকাল ও বজ্র ধ্বনি হলো এবং বৃষ্টিপাত হলো; কিন্তু তার মস্তিষ্ক এটা ভেবে দেখে না যে, এসব কেন হচ্ছে, কে করছে এবং এ ব্যাপারে তার কী কী দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। যিনি এগুলো তাকে দিচ্ছেন, তিনি তার কাছে কী চাচ্ছেন।
আল্লাহর নিদর্শনাবলি মানুষের চোখ খুলে দেয় :
تَبْصِرَةً وَّذِكْرٰى لِكُلِّ عَبْدٍ مُّنِيْبٍ
এসব প্রত্যেক বিনীত ব্যক্তির জন্য জ্ঞান ও উপদেশস্বরূপ। (সূরা ক্বাফ- ৮)
ব্যাখ্যা : প্রত্যেক ব্যক্তি যদি আল্লাহ থেকে গাফিল না হয় এবং বিশ্বজাহানের নিদর্শনগুলোকে বিবেকবুদ্ধিহীন জন্তু-জানোয়ারের দৃষ্টিতে না দেখে গভীর পর্যবেক্ষণের দৃষ্টিতে দেখে; অতঃপর সে সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে, তাহলে সে প্রতিটি নিদর্শনের সাহায্যে খুব সহজে যথার্থ ও চূড়ান্ত সত্যের দ্বারে পৌঁছতে পারে। যার সামনে বিশ্বজগতের চারদিকে আল্লাহর একত্বের প্রমাণ ছড়িয়ে আছে তারপরও যে তার মধ্য হতে কোনকিছুই দেখতে পায় না, সে অন্ধ। আর চক্ষুষ্মান হচ্ছে এমন ব্যক্তি, যার দৃষ্টি সারা বিশ্বের প্রতিটি জিনিসের মধ্যে একজন অসাধারণ কারিগরের অতুলনীয় কৃতিত্ব দেখতে পায়। যে ব্যক্তি সত্যকে স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছে, সে কখনো দৃষ্টিহীন লোকদের মতো আচরণ করবে না এবং ভ্রান্ত পথে ঘুরে বেড়াবে না।
তারপরও মানুষ আল্লাহকে যথাযথ মূল্যায়ন করে না :
مَا قَدَرُوا اللهَ حَقَّ قَدْرِهٖؕ اِنَّ اللهَ لَقَوِيٌّ عَزِيْزٌ
তারা আল্লাহকে যথাযথ মর্যাদা দিতে পারেনি, নিশ্চয় আল্লাহ অসীম ক্ষমতাবান ও মহাপরাক্রমশালী। (সূরা হজ্জ- ৭৪)
আল্লাহ পরম সত্য :
ذٰلِكَ بِاَنَّ اللهَ هُوَ الْحَقُّ وَاَنَّ مَا يَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖ هُوَ الْبَاطِلُ وَاَنَّ اللهَ هُوَ الْعَلِيُّ الْكَبِيْرُ
সেটা এজন্য যে, নিশ্চয় আল্লাহ, তিনিই সত্য এবং তারা তাঁর পরিবর্তে যাকে ডাকে তা মিথ্যা; নিশ্চয় আল্লাহ সুউচ্চ ও সুমহান। (সূরা হজ্জ- ৬২)
فَذٰلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمُ الْحَقُّۚ فَمَاذَا بَعْدَ الْحَقِّ اِلَّا الضَّلَالُۚ فَاَنّٰى تُصْرَفُوْنَ
তিনিই আল্লাহ, তোমাদের প্রকৃত প্রতিপালক। সত্য ত্যাগ করার পর বিভ্রান্তি ব্যতীত আর কী বাকি থাকে? সুতরাং তোমরা কোন দিকে ধাবিত হচ্ছ? (সূরা ইউনুস- ৩২)
ব্যাখ্যা : তিনিই সত্যিকার ক্ষমতার অধিকারী ও যথার্থ রব। তাঁর ইবাদাতকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে না। আর অন্যান্য সকল মা‘বুদই অসত্য ও মিথ্যা। তাদেরকে যেসব গুণাবলি ও ক্ষমতার মালিক মনে করা হয়েছে সেগুলোর কোন ভিত্তি নেই। সুতরাং আল্লাহর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে তাদের ভরসায় যারা বেঁচে থাকে তারা কখনো সফলতা লাভ করতে পারে না।
আল্লাহ সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত হওয়া যাবে না :
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يُّجَادِلُ فِى اللهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ
মানুষের মধ্যে কতক লোক এমনও রয়েছে, যারা অজ্ঞতাবশত আল্লাহ সম্বন্ধে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হয়। (সূরা হজ্জ- ৩)
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يُّجَادِلُ فِى اللهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَّلَا هُدًى وَّلَا كِتَابٍ مُّنِيْرٍ
মানুষের মধ্যে কিছু লোক আছে, যারা আল্লাহ সম্পর্কে কোন জ্ঞান অথবা পথনির্দেশ অথবা কোন উজ্জল গ্রন্থ ছাড়াই তর্কে লিপ্ত হয়। (সূরা লুক্বমান- ২০)
ব্যাখ্যা : মানুষের মধ্যে এমন কিছু লোক রয়েছে, যারা কোন ধরনের পর্যবেক্ষণ, অভিজ্ঞতা, পথনির্দেশনা কিংবা সঠিক কোন জ্ঞান ছাড়াই আল্লাহর ব্যাপারে বিতর্কে লিপ্ত হয়। যাতে করে তারা মানুষদেরকে আল্লাহর পথ থেকে দূরে রাখতে পারে। যেমন, আল্লাহ আছেন কি না? আল্লাহ কি একা না আরো আছেন? তাঁর গুণাবলি কী এবং তিনি কেমন? নিজের সৃষ্টিকুলের সাথে তাঁর সম্পর্ক কোন পর্যায়ের? এ ধরনের বিষয়াদি নিয়ে বিতর্ক করে। এরা এমন লোক, যাদেরকে দ্বীনের ব্যাপারে দাওয়াত দেয়া হলে কিংবা কোন সদুপদেশ দান করা হলে তাতে কর্ণপাত না করে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ফলে তারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হয় এবং অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করে।
আল্লাহকে কষ্ট দেয়া যাবে না :
اِنَّ الَّذِيْنَ يُؤْذُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ لَعَنَهُمُ اللهُ فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ وَاَعَدَّ لَهُمْ عَذَابًا مُّهِيْنًا
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ অবশ্যই তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে অভিসম্পাত করেন এবং তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন অবমাননাকর শাস্তি। (সূরা আহযাব- ৫৭)
ব্যাখ্যা : আল্লাহকে কষ্ট দেয়ার অর্থ দু’টি। (এক) আল্লাহর নাফরমানি করা। তাঁর মুকাবিলায় কুফরী, শিরক ও নাস্তিক্যবাদের পথ অবলম্বন করা। তিনি যা হারাম করেছেন তাকে হালাল করা। (দুই) তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়া। কারণ রাসূলের আনুগত্য যেমন আল্লাহর আনুগত্য, ঠিক তেমনি রাসূলের অবাধ্যতা আল্লাহর অবাধ্যতার সমান।
আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করা মহাপাপ :
اُنْظُرْ كَيْفَ يَفْتَرُوْنَ عَلَى اللهِ الْكَذِبَ ؕ وَكَفٰى بِهٖۤ اِثْمًا مُّبِيْنًا
লক্ষ্য করো, তারা আল্লাহ সম্পর্কে কীভাবে মিথ্যারোপ করে যাচ্ছে। আর প্রকাশ্য পাপ হিসেবে এটাই যথেষ্ট। (সূরা নিসা- ৫০)
যারা আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করে তারা সবচেয়ে বড় যালিম :
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرٰى عَلَى اللهِ كَذِبًا اَوْ كَذَّبَ بِاٰيَاتِهٖ ؕ اِنَّهٗ لَا يُفْلِحُ الظَّالِمُوْنَ
যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর মিথ্যা রচনা করে অথবা তাঁর নিদর্শনসমূহকে প্রত্যাখ্যান করে, তার চেয়ে অধিক যালিম আর কে হতে পারে? নিশ্চয় যালিমরা কখনো সফলকাম হয় না। (সূরা আন‘আম- ২১)
فَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرٰى عَلَى اللهِ كَذِبًا لِّيُضِلَّ النَّاسَ بِغَيْرِ عِلْمٍؕ اِنَّ اللهَ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
যে ব্যক্তি অজ্ঞতাবশত মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? নিশ্চয় আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (সূরা আন‘আম- ১৪৪)
আল্লাহর উপর মিথ্যারোপকারীরা কখনো সফল হবে না :
قُلْ اِنَّ الَّذِيْنَ يَفْتَرُوْنَ عَلَى اللهِ الْكَذِبَ لَا يُفْلِحُوْنَ
বলো, যারা আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করে তারা কখনই সফলকাম হবে না। (সূরা ইউনুস- ৬৯)
কাফিররাই আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করে :
وَلٰكِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا يَفْتَرُوْنَ عَلَى اللهِ الْكَذِبَؕ وَاَكْثَرُهُمْ لَا يَعْقِلُوْنَ
কিন্তু কাফিররা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে এবং তাদের অধিকাংশই তা উপলব্ধি করতে পারে না। (সূরা মায়েদা- ১০৩)
আল্লাহকে অস্বীকার করার কোন কারণ নেই :
كَيْفَ تَكْفُرُوْنَ بِاللهِ وَكُنْتُمْ اَمْوَاتًا فَاَحْيَاكُمْ ثُمَّ يُمِيْتُكُمْ ثُمَّ يُحْيِيْكُمْ ثُمَّ اِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ
তোমরা কীভাবে আল্লাহকে অস্বীকার করছ, অথচ তোমরা ছিলে মৃত? অতঃপর তিনিই তোমাদেরকে জীবন দান করেছেন। তারপর তিনিই তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন, পরে আবার জীবিত করবেন; অবশেষে তোমাদেরকে তাঁর দিকেই ফিরে যেতে হবে। (সূরা বাক্বারা- ২৮)
ذٰلِكَ بِاَنَّ اللهَ هُوَ الْحَقُّ وَاَنَّ مَا يَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖ هُوَ الْبَاطِلُ وَاَنَّ اللهَ هُوَ الْعَلِيُّ الْكَبِيْرُ
সেটা এজন্য যে, নিশ্চয় আল্লাহ, তিনিই সত্য এবং তারা তাঁর পরিবর্তে যাকে ডাকে তা মিথ্যা; নিশ্চয় আল্লাহ সুউচ্চ ও সুমহান। (সূরা হজ্জ- ৬২)
فَذٰلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمُ الْحَقُّۚ فَمَاذَا بَعْدَ الْحَقِّ اِلَّا الضَّلَالُۚ فَاَنّٰى تُصْرَفُوْنَ
তিনিই আল্লাহ, তোমাদের প্রকৃত প্রতিপালক। সত্য ত্যাগ করার পর বিভ্রান্তি ব্যতীত আর কী বাকি থাকে? সুতরাং তোমরা কোন দিকে ধাবিত হচ্ছ? (সূরা ইউনুস- ৩২)
ব্যাখ্যা : তিনিই সত্যিকার ক্ষমতার অধিকারী ও যথার্থ রব। তাঁর ইবাদাতকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে না। আর অন্যান্য সকল মা‘বুদই অসত্য ও মিথ্যা। তাদেরকে যেসব গুণাবলি ও ক্ষমতার মালিক মনে করা হয়েছে সেগুলোর কোন ভিত্তি নেই। সুতরাং আল্লাহর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে তাদের ভরসায় যারা বেঁচে থাকে তারা কখনো সফলতা লাভ করতে পারে না।
আল্লাহ সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত হওয়া যাবে না :
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يُّجَادِلُ فِى اللهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ
মানুষের মধ্যে কতক লোক এমনও রয়েছে, যারা অজ্ঞতাবশত আল্লাহ সম্বন্ধে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হয়। (সূরা হজ্জ- ৩)
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يُّجَادِلُ فِى اللهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَّلَا هُدًى وَّلَا كِتَابٍ مُّنِيْرٍ
মানুষের মধ্যে কিছু লোক আছে, যারা আল্লাহ সম্পর্কে কোন জ্ঞান অথবা পথনির্দেশ অথবা কোন উজ্জল গ্রন্থ ছাড়াই তর্কে লিপ্ত হয়। (সূরা লুক্বমান- ২০)
ব্যাখ্যা : মানুষের মধ্যে এমন কিছু লোক রয়েছে, যারা কোন ধরনের পর্যবেক্ষণ, অভিজ্ঞতা, পথনির্দেশনা কিংবা সঠিক কোন জ্ঞান ছাড়াই আল্লাহর ব্যাপারে বিতর্কে লিপ্ত হয়। যাতে করে তারা মানুষদেরকে আল্লাহর পথ থেকে দূরে রাখতে পারে। যেমন, আল্লাহ আছেন কি না? আল্লাহ কি একা না আরো আছেন? তাঁর গুণাবলি কী এবং তিনি কেমন? নিজের সৃষ্টিকুলের সাথে তাঁর সম্পর্ক কোন পর্যায়ের? এ ধরনের বিষয়াদি নিয়ে বিতর্ক করে। এরা এমন লোক, যাদেরকে দ্বীনের ব্যাপারে দাওয়াত দেয়া হলে কিংবা কোন সদুপদেশ দান করা হলে তাতে কর্ণপাত না করে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ফলে তারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হয় এবং অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করে।
আল্লাহকে কষ্ট দেয়া যাবে না :
اِنَّ الَّذِيْنَ يُؤْذُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ لَعَنَهُمُ اللهُ فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ وَاَعَدَّ لَهُمْ عَذَابًا مُّهِيْنًا
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ অবশ্যই তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে অভিসম্পাত করেন এবং তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন অবমাননাকর শাস্তি। (সূরা আহযাব- ৫৭)
ব্যাখ্যা : আল্লাহকে কষ্ট দেয়ার অর্থ দু’টি। (এক) আল্লাহর নাফরমানি করা। তাঁর মুকাবিলায় কুফরী, শিরক ও নাস্তিক্যবাদের পথ অবলম্বন করা। তিনি যা হারাম করেছেন তাকে হালাল করা। (দুই) তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়া। কারণ রাসূলের আনুগত্য যেমন আল্লাহর আনুগত্য, ঠিক তেমনি রাসূলের অবাধ্যতা আল্লাহর অবাধ্যতার সমান।
আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করা মহাপাপ :
اُنْظُرْ كَيْفَ يَفْتَرُوْنَ عَلَى اللهِ الْكَذِبَ ؕ وَكَفٰى بِهٖۤ اِثْمًا مُّبِيْنًا
লক্ষ্য করো, তারা আল্লাহ সম্পর্কে কীভাবে মিথ্যারোপ করে যাচ্ছে। আর প্রকাশ্য পাপ হিসেবে এটাই যথেষ্ট। (সূরা নিসা- ৫০)
যারা আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করে তারা সবচেয়ে বড় যালিম :
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرٰى عَلَى اللهِ كَذِبًا اَوْ كَذَّبَ بِاٰيَاتِهٖ ؕ اِنَّهٗ لَا يُفْلِحُ الظَّالِمُوْنَ
যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর মিথ্যা রচনা করে অথবা তাঁর নিদর্শনসমূহকে প্রত্যাখ্যান করে, তার চেয়ে অধিক যালিম আর কে হতে পারে? নিশ্চয় যালিমরা কখনো সফলকাম হয় না। (সূরা আন‘আম- ২১)
فَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرٰى عَلَى اللهِ كَذِبًا لِّيُضِلَّ النَّاسَ بِغَيْرِ عِلْمٍؕ اِنَّ اللهَ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
যে ব্যক্তি অজ্ঞতাবশত মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? নিশ্চয় আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (সূরা আন‘আম- ১৪৪)
আল্লাহর উপর মিথ্যারোপকারীরা কখনো সফল হবে না :
قُلْ اِنَّ الَّذِيْنَ يَفْتَرُوْنَ عَلَى اللهِ الْكَذِبَ لَا يُفْلِحُوْنَ
বলো, যারা আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করে তারা কখনই সফলকাম হবে না। (সূরা ইউনুস- ৬৯)
কাফিররাই আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করে :
وَلٰكِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا يَفْتَرُوْنَ عَلَى اللهِ الْكَذِبَؕ وَاَكْثَرُهُمْ لَا يَعْقِلُوْنَ
কিন্তু কাফিররা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে এবং তাদের অধিকাংশই তা উপলব্ধি করতে পারে না। (সূরা মায়েদা- ১০৩)
আল্লাহকে অস্বীকার করার কোন কারণ নেই :
كَيْفَ تَكْفُرُوْنَ بِاللهِ وَكُنْتُمْ اَمْوَاتًا فَاَحْيَاكُمْ ثُمَّ يُمِيْتُكُمْ ثُمَّ يُحْيِيْكُمْ ثُمَّ اِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ
তোমরা কীভাবে আল্লাহকে অস্বীকার করছ, অথচ তোমরা ছিলে মৃত? অতঃপর তিনিই তোমাদেরকে জীবন দান করেছেন। তারপর তিনিই তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন, পরে আবার জীবিত করবেন; অবশেষে তোমাদেরকে তাঁর দিকেই ফিরে যেতে হবে। (সূরা বাক্বারা- ২৮)
আল্লাহই একমাত্র বিধানদাতা :
وَهُوَ اللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَؕ لَهُ الْحَمْدُ فِى الْاُوْلٰى وَالْاٰخِرَةِ ؗ وَلَهُ الْحُكْمُ وَاِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ
তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই। দুনিয়া ও আখিরাতে সমস্ত প্রশংসা তাঁরই, বিধান তাঁরই; আর তোমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা ক্বাসাস- ৭০)
اِنِ الْحُكْمُ اِلَّا لِلّٰهِؕ يَقُصُّ الْحَقَّ وَهُوَ خَيْرُ الْفَاصِلِيْنَ
কর্তৃত্ব কেবল আল্লাহরই। তিনি সত্য বিবৃত করেন; আর ফায়সালাকারীদের মধ্যে তিনিই সর্বর্র্র্শ্রেষ্ঠ। (সূরা আন‘আম- ৫৭)
যিনি স্রষ্টা তিনিই হবেন আইনদাতা :
اَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَ الْاَ مْرُؕ تَبَارَكَ اللهُ رَبُّ الْعَالَمِيْنَ
জেনে রেখো, সৃজন ও আদেশ তাঁরই; যিনি মহিমাময় বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহ। (সূরা আ‘রাফ- ৫৪)
ব্যাখ্যা : যখন কোন ব্যক্তি এ কথা মেনে নেয় যে, একমাত্র আল্লাহই পৃথিবী ও আকাশের স্রষ্টা, তখন অনিবার্যভাবে তাকে এ কথাও মেনে নিতে হবে যে, ইলাহ্ ও রবও একমাত্র আল্লাহই। ইবাদাত ও আনুগত্যের হকদারও একমাত্র তিনিই। একমাত্র তাঁরই পবিত্রতা ও প্রশংসাবাণী উচ্চারণ করতে হবে। তিনি ছাড়া আর কারো কাছে প্রার্থনা করা যাবে না। নিজের সৃষ্টির জন্য আইন প্রণেতা ও শাসক তিনি ছাড়া আর কেউ হতে পারে না। একজন হবেন স্রষ্টা, অন্যজন হবে মা‘বুদ, তৃতীয়জন হবে সংকট নিরসনকারী, চতুর্থজন ক্ষমতাসীন ও আনুগত্যের অধিকারী- এটা সম্পূর্ণ বুদ্ধিবিরোধী কথা। এ কথা সে-ই বলতে পারে, যে মূর্খতার সাগরে ডুবে আছে। কোন জ্ঞানী ব্যক্তি এসব কথা মেনে নিতে পারে না। হালাল ও হারাম নির্ধারণ করার অধিকারও একমাত্র আললাহ ছাড়া অন্য কারো নেই। কেননা সকল প্রকার আইন প্রণয়ন করার অধিকার একমাত্র তাঁরই। সুতরাং অন্য যে ব্যক্তিই বৈধতা ও অবৈধতার ফায়সালা করার সাহস দেখাবে, সে-ই সীমালঙ্ঘন করবে।
বান্দার কল্যাণ কিসের মধ্যে নিহিত তা আল্লাহই ভালো জানেন :
وَالَّذِيْ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ مِنَ الْكِتَابِ هُوَ الْحَقُّ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِؕ اِنَّ اللهَ بِعِبَادِهٖ لَخَبِيْرٌۢ بَصِيْرٌ
আর যে কিতাব আমি ওহীরূপে আপনার প্রতি নাযিল করেছি তা সম্পূর্ণ সত্য, তা পূর্ববর্তী কিতাবের সমর্থক। নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ব্যাপারে সবকিছু জানেন ও দেখেন। (সূরা ফাতির- ৩১)
ব্যাখ্যা : বান্দার কল্যাণ কিসের মধ্যে রয়েছে এবং তার পথপ্রদর্শনের উপযোগী নীতি কোনটি- এখানে এ সত্যগুলো সম্পর্কে সতর্ক করে দেয়াই হচ্ছে আল্লাহর এ গুণাবলি বর্ণনা করার উদ্দেশ্য। এ বিষয়গুলো আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানতে পারে না। কারণ বান্দার প্রকৃতি ও চাহিদা একমাত্র তিনিই জানেন এবং তার প্রকৃত প্রয়োজন ও কল্যাণের প্রতি একমাত্র তিনিই দৃষ্টি রাখেন। বান্দা নিজেকে ততবেশি জানে না, যতবেশি তার স্রষ্টা তাকে জানেন। তাই সত্য একমাত্র সেটিই হতে পারে, যা তিনি ওহীর মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন।
আল্লাহ নিজ ইচ্ছায় আইন জারি করেন :
اِنَّ اللهَ يَحْكُمُ مَا يُرِيْدُ
নিশ্চয় আল্লাহ যা ইচ্ছা আদেশ করেন। (সূরা মায়েদা- ১)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ সার্বভৌম কর্তৃত্বের অধিকারী একচ্ছত্র শাসক। তিনি নিজের ইচ্ছানুযায়ী যে কোন হুকুম দেয়ার পূর্ণ ইখতিয়ার রাখেন। তাঁর বিধানের ব্যাপারে আপত্তি জানানোর অধিকার কোন মানুষের নেই। তাঁর সমস্ত বিধান জ্ঞান, প্রজ্ঞা, যুক্তি, ন্যায়নীতি ও কল্যাণের ভিত্তিতেই প্রতিষ্ঠিত।
اِنِ الْحُكْمُ اِلَّا لِلّٰهِؕ اَمَرَ اَلَّا تَعْبُدُوْاۤ اِلَّاۤ اِيَّاهُؕ ذٰلِكَ الدِّيْنُ الْقَيِّمُ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ
বিধান দেয়ার অধিকার কেবল আল্লাহরই। তিনি আদেশ দিয়েছেন তাঁকে ব্যতীত অন্য কারো ইবাদাত না করতে। এটাই শাশ্বত দ্বীন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এটা অবগত নয়। (সূরা ইউসুফ- ৪০)
সবকিছুর উপরই আল্লাহর আদেশ জারি হয় :
اَللهُ الَّذِيْ خَلَقَ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ وَّمِنَ الْاَ رْضِ مِثْلَهُنَّؕ يَتَنَزَّلُ الْاَ مْرُ بَيْنَهُنَّ لِتَعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ وَّاَنَّ اللهَ قَدْ اَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا
আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন সপ্তাকাশ এবং তাদের অনুরূপ অসংখ্য জমিন। উভয়ের মাঝখানে তার নির্দেশ জারি হয়; যাতে তোমরা বুঝতে পার যে, আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান এবং তাঁর জ্ঞান সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে রেখেছে। (সূরা তালাক্ব- ১২)
সবকিছুই আল্লাহর আদেশের অনুগত :
وَلَهٗ مَنْ فِى السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِ كُلٌّ لَّهٗ قَانِتُوْنَ
আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবই তাঁর; আর সকলেই তাঁর অনুগত। (সূরা রূম- ২৬)
আল্লাহর বিধান পরিবর্তন করার কেউ নেই :
وَاللهُ يَحْكُمُ لَا مُعَقِّبَ لِحُكْمِهٖؕ وَهُوَ سَرِيْعُ الْحِسَابِ
আল্লাহ আদেশ করেন, তাঁর আদেশ উল্টে দেয়ার কেউ নেই। আর তিনি হিসাব গ্রহণে খুবই তৎপর। (সূরা রা‘দ- ৪১)
আল্লাহই সকল ক্ষমতার উৎস :
اَنَّ الْقُوَّةَ لِلّٰهِ جَمِيْعًا
সমুদয় শক্তি আল্লাহরই। (সূরা বাক্বারা- ১৬৫)
اِنَّ رَبَّكَ هُوَ الْقَوِيُّ الْعَزِيْزُ
নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক সর্বশক্তিমান ও পরাক্রমশালী। (সূরা হুদ- ৬৬)
مَا قَدَرُوا اللهَ حَقَّ قَدْرِهٖؕ اِنَّ اللهَ لَقَوِيٌّ عَزِيْزٌ
তারা আল্লাহকে যথার্থ মর্যাদা দিতে পারেনি, নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমতাবান ও মহাপরাক্রমশালী। (সূরা হজ্জ- ৭৪)
ব্যাখ্যা : عَزِيْزٌ (‘আযীয) শব্দের অর্থ পরাক্রমশালী বা সবার উপর বিজয়ী। কারো ব্যাপারে তিনি যে সিদ্ধান্তই গ্রহণ করেন তা নিশ্চিতভাবেই কার্যকর হয়। তাঁর বিরুদ্ধে লড়াই করে কেউ বিজয়ী হতে পারে না। কিংবা কেউ তাঁর পাকড়াও থেকে বাঁচতেও পারে না। তাই তাঁর নির্দেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে কেউ যদি সফলতার আশা করে, তাহলে তা তার নিজের বোকামী ছাড়া আর কিছুই নয়।
আল্লাহর বিধান কেউ না মানলে সে নিজেরই ক্ষতি করবে :
وَمَنْ يَّتَوَلَّ فَاِنَّ اللهَ هُوَ الْغَنِيُّ الْحَمِيْدُ
আর যে মুখ ফিরিয়ে নেয় (সে জেনে রাখুক যে) নিশ্চয় আল্লাহ অভাবমুক্ত ও প্রশংসিত। (সূরা হাদীদ- ২৪)
وَلِلّٰهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِ وَاللهُ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
আসমান ও জমিনের রাজত্ব আল্লাহর জন্যই। আর আল্লাহ সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। (সূরা আলে ইমরান- ১৮৯)
اِنْ تَكْفُرُوْا فَاِنَّ اللهَ غَنِيٌّ عَنْكُمْؕ وَلَا يَرْضٰى لِعِبَادِهِ الْكُفْرَۚ وَاِنْ تَشْكُرُوْا يَرْضَهُ لَكُمْ
যদি তোমরা কুফরী কর, তবে (জেনে রেখো) আল্লাহ তোমাদের মুখাপেক্ষী নন। আর তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য কুফরী পছন্দ করেন না। (পক্ষান্তরে) যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও, তবে (জেনে রেখো) তিনি তোমাদের জন্য এটাই পছন্দ করেন। (সূরা যুমার- ৭)
ব্যাখ্যা : মানুষের কুফরীর কারণে আল্লাহর প্রভুত্বের সামান্যতম ক্ষতিও হতে পারে না। মানুষ তাকে মানলেও তিনি আল্লাহ, না মানলেও তিনি আল্লাহ; তিনি সর্বদা আছেন এবং থাকবেন। নিজের ক্ষমতায় তাঁর কর্তৃত্ব চলছে। মানুষের মানা বা না মানাতে তাঁর কিছু যায় আসে না। আর তিনি কারো প্রতি মুখাপেক্ষীও নন। তিনি নিজের কোন স্বার্থের জন্য নয়, বরং বান্দার স্বার্থের জন্যই কুফরী করা পছন্দ করেন না। কেননা কুফরী তাদের নিজেদের জন্যই ক্ষতিকর। এখানে আল্লাহ তা‘আলা এ কথাটিই বলছেন যে, তোমরা কুফরী করতে চাইলে করো। আমি জোর করে তাতে বাধা দিয়ে তোমাদেরকে মুমিন বানাব না। তবে তোমরা বান্দা হয়ে স্রষ্টার সাথে কুফরী করবে- তা আমার পছন্দ নয়। কারণ তা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর।
আল্লাহর দাসত্ব করাই মানুষের মূল কাজ :
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْاِنْسَ اِلَّا لِيَعْبُدُوْنِ
আমি জিন ও মানুষকে এজন্য সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমারই ইবাদাত করবে। (সূরা যারিয়াত- ৫৬)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ জিন ও মানুষের দাসত্বের মুখাপেক্ষী নন যে, তারা দাসত্ব করলে তাঁর প্রভুত্ব চলবে আর মুখ ফিরিয়ে নিলে তিনি আর আল্লাহ থাকতে পারবেন না। বরং তাঁর দাসত্ব করা মানুষের প্রকৃতির দাবি। এ উদ্দেশ্যেই তিনি তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরতে হবে :
وَاعْتَصِمُوْا بِاللهِؕ هُوَ مَوْلَاكُمْۚ فَنِعْمَ الْمَوْلٰى وَنِعْمَ النَّصِيْرُ
আল্লাহকে অবলম্বন করো, তিনিই তোমাদের অভিভাবক। অভিভাবক হিসেবে তিনি কতই না উত্তম এবং তিনি কতই না উত্তম সাহায্যকারী! (সূরা হজ্জ- ৭৮)
ব্যাখ্যা : আল্লাহকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরতে হবে অর্থাৎ সকল প্রকার পথনির্দেশনা ও জীবন-যাপনের বিধান তাঁর কাছ থেকেই নিতে হবে, তাঁরই আনুগত্য করতে হবে, তাঁকেই ভয় করতে হবে, আশা-আকাঙ্ক্ষার সকল বিষয় তাঁর সাথেই জড়িত করতে হবে, সাহায্যের জন্য তাঁর কাছেই হাত পাততে হবে এবং তাঁর উপরই নির্ভরশীল হয়ে জীবনের ভিত্তি গড়ে তুলতে হবে ।
وَهُوَ اللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَؕ لَهُ الْحَمْدُ فِى الْاُوْلٰى وَالْاٰخِرَةِ ؗ وَلَهُ الْحُكْمُ وَاِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ
তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই। দুনিয়া ও আখিরাতে সমস্ত প্রশংসা তাঁরই, বিধান তাঁরই; আর তোমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা ক্বাসাস- ৭০)
اِنِ الْحُكْمُ اِلَّا لِلّٰهِؕ يَقُصُّ الْحَقَّ وَهُوَ خَيْرُ الْفَاصِلِيْنَ
কর্তৃত্ব কেবল আল্লাহরই। তিনি সত্য বিবৃত করেন; আর ফায়সালাকারীদের মধ্যে তিনিই সর্বর্র্র্শ্রেষ্ঠ। (সূরা আন‘আম- ৫৭)
যিনি স্রষ্টা তিনিই হবেন আইনদাতা :
اَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَ الْاَ مْرُؕ تَبَارَكَ اللهُ رَبُّ الْعَالَمِيْنَ
জেনে রেখো, সৃজন ও আদেশ তাঁরই; যিনি মহিমাময় বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহ। (সূরা আ‘রাফ- ৫৪)
ব্যাখ্যা : যখন কোন ব্যক্তি এ কথা মেনে নেয় যে, একমাত্র আল্লাহই পৃথিবী ও আকাশের স্রষ্টা, তখন অনিবার্যভাবে তাকে এ কথাও মেনে নিতে হবে যে, ইলাহ্ ও রবও একমাত্র আল্লাহই। ইবাদাত ও আনুগত্যের হকদারও একমাত্র তিনিই। একমাত্র তাঁরই পবিত্রতা ও প্রশংসাবাণী উচ্চারণ করতে হবে। তিনি ছাড়া আর কারো কাছে প্রার্থনা করা যাবে না। নিজের সৃষ্টির জন্য আইন প্রণেতা ও শাসক তিনি ছাড়া আর কেউ হতে পারে না। একজন হবেন স্রষ্টা, অন্যজন হবে মা‘বুদ, তৃতীয়জন হবে সংকট নিরসনকারী, চতুর্থজন ক্ষমতাসীন ও আনুগত্যের অধিকারী- এটা সম্পূর্ণ বুদ্ধিবিরোধী কথা। এ কথা সে-ই বলতে পারে, যে মূর্খতার সাগরে ডুবে আছে। কোন জ্ঞানী ব্যক্তি এসব কথা মেনে নিতে পারে না। হালাল ও হারাম নির্ধারণ করার অধিকারও একমাত্র আললাহ ছাড়া অন্য কারো নেই। কেননা সকল প্রকার আইন প্রণয়ন করার অধিকার একমাত্র তাঁরই। সুতরাং অন্য যে ব্যক্তিই বৈধতা ও অবৈধতার ফায়সালা করার সাহস দেখাবে, সে-ই সীমালঙ্ঘন করবে।
বান্দার কল্যাণ কিসের মধ্যে নিহিত তা আল্লাহই ভালো জানেন :
وَالَّذِيْ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ مِنَ الْكِتَابِ هُوَ الْحَقُّ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِؕ اِنَّ اللهَ بِعِبَادِهٖ لَخَبِيْرٌۢ بَصِيْرٌ
আর যে কিতাব আমি ওহীরূপে আপনার প্রতি নাযিল করেছি তা সম্পূর্ণ সত্য, তা পূর্ববর্তী কিতাবের সমর্থক। নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ব্যাপারে সবকিছু জানেন ও দেখেন। (সূরা ফাতির- ৩১)
ব্যাখ্যা : বান্দার কল্যাণ কিসের মধ্যে রয়েছে এবং তার পথপ্রদর্শনের উপযোগী নীতি কোনটি- এখানে এ সত্যগুলো সম্পর্কে সতর্ক করে দেয়াই হচ্ছে আল্লাহর এ গুণাবলি বর্ণনা করার উদ্দেশ্য। এ বিষয়গুলো আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানতে পারে না। কারণ বান্দার প্রকৃতি ও চাহিদা একমাত্র তিনিই জানেন এবং তার প্রকৃত প্রয়োজন ও কল্যাণের প্রতি একমাত্র তিনিই দৃষ্টি রাখেন। বান্দা নিজেকে ততবেশি জানে না, যতবেশি তার স্রষ্টা তাকে জানেন। তাই সত্য একমাত্র সেটিই হতে পারে, যা তিনি ওহীর মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন।
আল্লাহ নিজ ইচ্ছায় আইন জারি করেন :
اِنَّ اللهَ يَحْكُمُ مَا يُرِيْدُ
নিশ্চয় আল্লাহ যা ইচ্ছা আদেশ করেন। (সূরা মায়েদা- ১)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ সার্বভৌম কর্তৃত্বের অধিকারী একচ্ছত্র শাসক। তিনি নিজের ইচ্ছানুযায়ী যে কোন হুকুম দেয়ার পূর্ণ ইখতিয়ার রাখেন। তাঁর বিধানের ব্যাপারে আপত্তি জানানোর অধিকার কোন মানুষের নেই। তাঁর সমস্ত বিধান জ্ঞান, প্রজ্ঞা, যুক্তি, ন্যায়নীতি ও কল্যাণের ভিত্তিতেই প্রতিষ্ঠিত।
اِنِ الْحُكْمُ اِلَّا لِلّٰهِؕ اَمَرَ اَلَّا تَعْبُدُوْاۤ اِلَّاۤ اِيَّاهُؕ ذٰلِكَ الدِّيْنُ الْقَيِّمُ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ
বিধান দেয়ার অধিকার কেবল আল্লাহরই। তিনি আদেশ দিয়েছেন তাঁকে ব্যতীত অন্য কারো ইবাদাত না করতে। এটাই শাশ্বত দ্বীন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এটা অবগত নয়। (সূরা ইউসুফ- ৪০)
সবকিছুর উপরই আল্লাহর আদেশ জারি হয় :
اَللهُ الَّذِيْ خَلَقَ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ وَّمِنَ الْاَ رْضِ مِثْلَهُنَّؕ يَتَنَزَّلُ الْاَ مْرُ بَيْنَهُنَّ لِتَعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ وَّاَنَّ اللهَ قَدْ اَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا
আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন সপ্তাকাশ এবং তাদের অনুরূপ অসংখ্য জমিন। উভয়ের মাঝখানে তার নির্দেশ জারি হয়; যাতে তোমরা বুঝতে পার যে, আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান এবং তাঁর জ্ঞান সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে রেখেছে। (সূরা তালাক্ব- ১২)
সবকিছুই আল্লাহর আদেশের অনুগত :
وَلَهٗ مَنْ فِى السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِ كُلٌّ لَّهٗ قَانِتُوْنَ
আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবই তাঁর; আর সকলেই তাঁর অনুগত। (সূরা রূম- ২৬)
আল্লাহর বিধান পরিবর্তন করার কেউ নেই :
وَاللهُ يَحْكُمُ لَا مُعَقِّبَ لِحُكْمِهٖؕ وَهُوَ سَرِيْعُ الْحِسَابِ
আল্লাহ আদেশ করেন, তাঁর আদেশ উল্টে দেয়ার কেউ নেই। আর তিনি হিসাব গ্রহণে খুবই তৎপর। (সূরা রা‘দ- ৪১)
আল্লাহই সকল ক্ষমতার উৎস :
اَنَّ الْقُوَّةَ لِلّٰهِ جَمِيْعًا
সমুদয় শক্তি আল্লাহরই। (সূরা বাক্বারা- ১৬৫)
اِنَّ رَبَّكَ هُوَ الْقَوِيُّ الْعَزِيْزُ
নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক সর্বশক্তিমান ও পরাক্রমশালী। (সূরা হুদ- ৬৬)
مَا قَدَرُوا اللهَ حَقَّ قَدْرِهٖؕ اِنَّ اللهَ لَقَوِيٌّ عَزِيْزٌ
তারা আল্লাহকে যথার্থ মর্যাদা দিতে পারেনি, নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমতাবান ও মহাপরাক্রমশালী। (সূরা হজ্জ- ৭৪)
ব্যাখ্যা : عَزِيْزٌ (‘আযীয) শব্দের অর্থ পরাক্রমশালী বা সবার উপর বিজয়ী। কারো ব্যাপারে তিনি যে সিদ্ধান্তই গ্রহণ করেন তা নিশ্চিতভাবেই কার্যকর হয়। তাঁর বিরুদ্ধে লড়াই করে কেউ বিজয়ী হতে পারে না। কিংবা কেউ তাঁর পাকড়াও থেকে বাঁচতেও পারে না। তাই তাঁর নির্দেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে কেউ যদি সফলতার আশা করে, তাহলে তা তার নিজের বোকামী ছাড়া আর কিছুই নয়।
আল্লাহর বিধান কেউ না মানলে সে নিজেরই ক্ষতি করবে :
وَمَنْ يَّتَوَلَّ فَاِنَّ اللهَ هُوَ الْغَنِيُّ الْحَمِيْدُ
আর যে মুখ ফিরিয়ে নেয় (সে জেনে রাখুক যে) নিশ্চয় আল্লাহ অভাবমুক্ত ও প্রশংসিত। (সূরা হাদীদ- ২৪)
وَلِلّٰهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِ وَاللهُ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
আসমান ও জমিনের রাজত্ব আল্লাহর জন্যই। আর আল্লাহ সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। (সূরা আলে ইমরান- ১৮৯)
اِنْ تَكْفُرُوْا فَاِنَّ اللهَ غَنِيٌّ عَنْكُمْؕ وَلَا يَرْضٰى لِعِبَادِهِ الْكُفْرَۚ وَاِنْ تَشْكُرُوْا يَرْضَهُ لَكُمْ
যদি তোমরা কুফরী কর, তবে (জেনে রেখো) আল্লাহ তোমাদের মুখাপেক্ষী নন। আর তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য কুফরী পছন্দ করেন না। (পক্ষান্তরে) যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও, তবে (জেনে রেখো) তিনি তোমাদের জন্য এটাই পছন্দ করেন। (সূরা যুমার- ৭)
ব্যাখ্যা : মানুষের কুফরীর কারণে আল্লাহর প্রভুত্বের সামান্যতম ক্ষতিও হতে পারে না। মানুষ তাকে মানলেও তিনি আল্লাহ, না মানলেও তিনি আল্লাহ; তিনি সর্বদা আছেন এবং থাকবেন। নিজের ক্ষমতায় তাঁর কর্তৃত্ব চলছে। মানুষের মানা বা না মানাতে তাঁর কিছু যায় আসে না। আর তিনি কারো প্রতি মুখাপেক্ষীও নন। তিনি নিজের কোন স্বার্থের জন্য নয়, বরং বান্দার স্বার্থের জন্যই কুফরী করা পছন্দ করেন না। কেননা কুফরী তাদের নিজেদের জন্যই ক্ষতিকর। এখানে আল্লাহ তা‘আলা এ কথাটিই বলছেন যে, তোমরা কুফরী করতে চাইলে করো। আমি জোর করে তাতে বাধা দিয়ে তোমাদেরকে মুমিন বানাব না। তবে তোমরা বান্দা হয়ে স্রষ্টার সাথে কুফরী করবে- তা আমার পছন্দ নয়। কারণ তা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর।
আল্লাহর দাসত্ব করাই মানুষের মূল কাজ :
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْاِنْسَ اِلَّا لِيَعْبُدُوْنِ
আমি জিন ও মানুষকে এজন্য সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমারই ইবাদাত করবে। (সূরা যারিয়াত- ৫৬)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ জিন ও মানুষের দাসত্বের মুখাপেক্ষী নন যে, তারা দাসত্ব করলে তাঁর প্রভুত্ব চলবে আর মুখ ফিরিয়ে নিলে তিনি আর আল্লাহ থাকতে পারবেন না। বরং তাঁর দাসত্ব করা মানুষের প্রকৃতির দাবি। এ উদ্দেশ্যেই তিনি তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরতে হবে :
وَاعْتَصِمُوْا بِاللهِؕ هُوَ مَوْلَاكُمْۚ فَنِعْمَ الْمَوْلٰى وَنِعْمَ النَّصِيْرُ
আল্লাহকে অবলম্বন করো, তিনিই তোমাদের অভিভাবক। অভিভাবক হিসেবে তিনি কতই না উত্তম এবং তিনি কতই না উত্তম সাহায্যকারী! (সূরা হজ্জ- ৭৮)
ব্যাখ্যা : আল্লাহকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরতে হবে অর্থাৎ সকল প্রকার পথনির্দেশনা ও জীবন-যাপনের বিধান তাঁর কাছ থেকেই নিতে হবে, তাঁরই আনুগত্য করতে হবে, তাঁকেই ভয় করতে হবে, আশা-আকাঙ্ক্ষার সকল বিষয় তাঁর সাথেই জড়িত করতে হবে, সাহায্যের জন্য তাঁর কাছেই হাত পাততে হবে এবং তাঁর উপরই নির্ভরশীল হয়ে জীবনের ভিত্তি গড়ে তুলতে হবে ।
ওহীর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, প্রত্যাদেশ, বার্তা, আদেশ, ইশারা ইত্যাদি। আর পারিভাষিক অর্থ হচ্ছে, এমন সূক্ষ্ম ও গোপন ইশারা, যা ইশারাকারী ও ইশারা গ্রহণকারী ছাড়া তৃতীয় কেউ বুঝতে পারে না। এ সম্পর্কের ভিত্তিতে এ শব্দটি اِلْقَاءُ (ইলকা) তথা মনের মধ্যে কোন কথা নিক্ষেপ করা ও اِلْهَامُ (ইলহাম) তথা গোপনে শিক্ষা ও উপদেশ দান করা অর্থে ব্যবহৃত হয়। মহান আল্লাহ তাঁর সৃষ্টিকে যে শিক্ষা দান করেন তা যেহেতু কোন মকতব, স্কুল বা বিদ্যালয়ে দেয়া হয় না বরং এমন সূক্ষ্ম পদ্ধতিতে দেয়া হয়, যা বাহ্যত কাউকে শিক্ষা দিতে এবং কাউকে শিক্ষা নিতে দেখা যায় না, তাই একে কুরআনে ওহী, ইলকা বা ইলহাম শব্দের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। কুরআনে আকাশ, পৃথিবী, মৌমাছি, মূসা (আঃ) এর মাতা- এদের প্রতিও ওহী হওয়ার কথা বলা হয়েছে। এসব মূলত শাব্দিক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। আর নবীদেরকে যে ওহী করা হতো, তা ছিল এক বিশেষ ধরনের ওহী। এ ওহীর বৈশিষ্ট্য অন্যান্য ওহী থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এতে যাকে ওহী করা হয় তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে এ ওহী আসার ব্যাপারে সম্পূর্ণ সচেতন ও নিশ্চিত থাকেন। এ ওহী হয় আকীদা-বিশ্বাস, বিধিবিধান, আইনকানুন ও নির্দেশনাবলি সংক্রান্ত। নবীগণ এ ওহীর মাধ্যমে তাদের জাতিকে পথনির্দেশ দিয়ে থাকেন।
আল্লাহ সকল নবীর কাছে ওহী পাঠিয়েছেন :
اِنَّاۤ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ كَمَاۤ اَوْحَيْنَاۤ اِلٰى نُوْحٍ وَّالنَّبِيِّيْنَ مِنْ ۢبَعْدِهٖۚ وَاَوْحَيْنَاۤ اِلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ وَاِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَ وَالْاَسْبَاطِ وَعِيْسٰى وَاَيُّوْبَ وَيُوْنُسَ وَهَارُوْنَ وَسُلَيْمَانَۚ وَاٰتَيْنَا دَاوُوْدَ زَبُوْرًا -
আমি তোমার নিকট ওহী প্রেরণ করেছি যেমনিভাবে নূহ ও তাঁর পরবর্তী নবীদের নিকট ওহী প্রেরণ করেছিলাম। আর ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব ও তাঁর বংশধর এবং ঈসা, আইয়ূব, ইউনুস, হারূন ও সুলায়মানের নিকটও ওহী প্রেরণ করেছিলাম; আর দাউদকে যাবূর (কিতাব) দান করেছিলাম। (সূরা নিসা- ১৬৩)
ওহীর জ্ঞানই সত্য এবং সঠিক :
وَالَّذِيْۤ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ مِنَ الْكِتَابِ هُوَ الْحَقُّ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِؕ اِنَّ اللهَ بِعِبَادِهٖ لَخَبِيْرٌ ۢبَصِيْرٌ
আর আমি যে কিতাব তোমার প্রতি ওহীরূপে নাযিল করেছি, তা সম্পূর্ণ সত্য; তা পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়নকারী। নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে ভালো করেই জানেন ও দেখেন। (সূরা ফাতির- ৩১)
কেবল ওহীর জ্ঞান দ্বারাই হেদায়াত লাভ করা যায় :
قُلْ اِنْ ضَلَلْتُ فَاِنَّمَاۤ اَضِلُّ عَلٰى نَفْسِيْۚ وَاِنِ اهْتَدَيْتُ فَبِمَا يُوْحِيْۤ اِلَيَّ رَبِّيْؕ اِنَّهٗ سَمِيْعٌ قَرِيْبٌ
বলো, যদি আমি পথভ্রষ্ট হই, তবে তো নিজেরই ক্ষতি করব; আর যদি আমি সরলসঠিক পথের উপর থাকি, তবে তা এজন্য সম্ভব হচ্ছে যে, আমার প্রতিপালক আমার প্রতি ওহী অবতীর্ণ করেন। নিশ্চয় তিনি সবকিছু শুনেন এবং তিনি অতি নিকটবর্তী। (সূরা সাবা- ৫০)
ওহীর মাধ্যমেই গায়েব সম্পর্কে জানা যায় :
ذٰلِكَ مِنْ اَنْۢبَآءِ الْغَيْبِ نُوْحِيْهِ اِلَيْكَ
এসব গায়েবের সংবাদ ওহীর মাধ্যমে আমি তোমাকে জানিয়ে দিয়েছি। (সূরা আলে ইমরান- ৪৪)
تِلْكَ مِنْ اَنْۢبَآءِ الْغَيْبِ نُوْحِيْهَاۤ اِلَيْكَۚ مَا كُنْتَ تَعْلَمُهَاۤ اَنْتَ وَلَا قَوْمُكَ مِنْ قَبْلِ هٰذَاؕ فَاصْبِرْ اِنَّ الْعَاقِبَةَ لِلْمُتَّقِيْنَ
এ সমসত্ম অদৃশ্যের সংবাদ আমি তোমাকে ওহীর মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছি, যা এর পূর্বে তুমি জানতে না এবং তোমার সম্প্রদায়েরও কেউ জানত না। সুতরাং ধৈর্যধারণ করো, নিশ্চয় শুভ পরিণাম মুত্তাক্বীদের জন্য। (সূরা হুদ- ৪৯)
ওহী নাযিলের পদ্ধতি :
وَمَا كَانَ لِبَشَرٍ اَنْ يُّكَلِّمَهُ اللهُ اِلَّا وَحْيًا اَوْ مِنْ وَّرَآءِ حِجَابٍ اَوْ يُرْسِلَ رَسُوْلًا فَيُوْحِيَ بِاِذْنِهٖ مَا يَشَآءُؕ اِنَّهٗ عَلِيٌّ حَكِيْمٌ ‐ وَكَذٰلِكَ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ رُوْحًا مِّنْ اَمْرِنَاؕ مَا كُنْتَ تَدْرِيْ مَا الْكِتَابُ وَلَا الْاِيْمَانُ وَلٰكِنْ جَعَلْنَاهُ نُوْرًا نَّهْدِيْ بِهٖ مَنْ نَّشَآءُ مِنْ عِبَادِنَاؕ وَاِنَّكَ لَتَهْدِيْۤ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
মানুষের জন্য অসম্ভব যে, আল্লাহ তার সাথে কথা বলবেন ওহীর মাধ্যম ছাড়া, অথবা পর্দার অন্তরাল ব্যতিরেকে অথবা এমন দূত প্রেরণ ছাড়া, যে দূত তাঁর অনুমতিক্রমে তিনি যা চান তা ব্যক্ত করে; নিশ্চয় তিনি সমুন্নত ও প্রজ্ঞাবান। এভাবেই আমি তোমার প্রতি ওহী করেছি রূহ (কুরআন) আমার নির্দেশে। তুমি তো জানতে না কিতাব কী ও ঈমান কী। আমি একে করেছি আলোকস্বরূপ, যা দ্বারা আমি আমার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা সঠিক পথ দেখাই; নিশ্চয় তুমি সরল পথের দিকেই পথপ্রদর্শন করে থাক। (সূরা শূরা- ৫১, ৫২)
ব্যাখ্যা : যেসব পদ্ধতিতে নবী ﷺ এর কাছে ওহী নাযিল হয়েছে তাহলো :
(১) আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী ﷺ এর কাছে ওহী আসার সূচনা হয়েছিল সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে- (সহীহ বুখারী, হা/৩)। এ ধারা পরবর্তী সময় পর্যন্ত জারি ছিল। হাদীসে তাঁর বহু সংখ্যক স্বপ্নের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যার মাধ্যমে হয় তাঁকে কোন শিক্ষা দেয়া হয়েছে কিংবা কোন বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। তাছাড়া কুরআন মাজীদেও নবী ﷺ এর একটি স্বপ্নের বিষয় সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। (ফাতহ- ২৭)
(২) মে‘রাজের রাত্রিতে নবী ﷺ কে দ্বিতীয় প্রকার ওহী দ্বারা সম্মানিত করা হয়ছে। কতিপয় হাদীসে নবী ﷺ কে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের নির্দেশ দেয়া এবং তা নিয়ে বার বার দরখাস্ত পেশ করার কথা যেভাবে উল্লেখিত হয়েছে তা থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, সে সময় আল্লাহ এবং তাঁর বান্দা মুহাম্মাদ ﷺ এর মধ্যে ঠিক তেমনি কথাবার্তা হয়েছিল যেমনটি তূর পাহাড়ের পাদদেশে মূসা (আঃ) ও আল্লাহর মধ্যে হয়েছিল।
(৩) ওহীর তৃতীয় প্রকারের ব্যাপারে কুরআন নিজেই সাক্ষ্য দেয় যে, কুরআনকে জিবরাঈল (আঃ) এর মাধ্যমে রাসূল ﷺ এর কাছে পৌঁছানো হয়েছে।
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা হারিস ইবনে হিশাম (রাঃ) রাসূল ﷺ কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার নিকট কীভাবে ওহী আসে? উত্তরে রাসূল ﷺ বললেন, কোন কোন সময় আমার নিকট তা ঘণ্টার ধ্বনির ন্যায় আসে। এ প্রকারের ওহী আমার নিকট খুবই কষ্টদায়ক মনে হয়। উক্ত কষ্টজনিত ক্লান্তি এভাবে সমাপ্ত হয় যে, সে যা বলে তা আমার মুখস্ত হয়ে যায়। আবার কোন কোন সময় ফেরেশতা মানুষের আকৃতিতে আমার সাথে কথা বলেন, আর আমি তা সাথে সাথে মুখস্থ করতে সক্ষম হই যা সে বলে। আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘‘অতি প্রচন্ড শীতের সময়ও ওহী নাযিলকালে আমি রাসূল ﷺ কে দেখেছি যে, ওহী নাযিলের পরপরই তাঁর ললাট থেকে ঘাম ঝরে পড়ত।’’ (সহীহ বুখারী, হা/২)
আল্লাহ সকল নবীর কাছে ওহী পাঠিয়েছেন :
اِنَّاۤ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ كَمَاۤ اَوْحَيْنَاۤ اِلٰى نُوْحٍ وَّالنَّبِيِّيْنَ مِنْ ۢبَعْدِهٖۚ وَاَوْحَيْنَاۤ اِلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ وَاِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَ وَالْاَسْبَاطِ وَعِيْسٰى وَاَيُّوْبَ وَيُوْنُسَ وَهَارُوْنَ وَسُلَيْمَانَۚ وَاٰتَيْنَا دَاوُوْدَ زَبُوْرًا -
আমি তোমার নিকট ওহী প্রেরণ করেছি যেমনিভাবে নূহ ও তাঁর পরবর্তী নবীদের নিকট ওহী প্রেরণ করেছিলাম। আর ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব ও তাঁর বংশধর এবং ঈসা, আইয়ূব, ইউনুস, হারূন ও সুলায়মানের নিকটও ওহী প্রেরণ করেছিলাম; আর দাউদকে যাবূর (কিতাব) দান করেছিলাম। (সূরা নিসা- ১৬৩)
ওহীর জ্ঞানই সত্য এবং সঠিক :
وَالَّذِيْۤ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ مِنَ الْكِتَابِ هُوَ الْحَقُّ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِؕ اِنَّ اللهَ بِعِبَادِهٖ لَخَبِيْرٌ ۢبَصِيْرٌ
আর আমি যে কিতাব তোমার প্রতি ওহীরূপে নাযিল করেছি, তা সম্পূর্ণ সত্য; তা পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়নকারী। নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে ভালো করেই জানেন ও দেখেন। (সূরা ফাতির- ৩১)
কেবল ওহীর জ্ঞান দ্বারাই হেদায়াত লাভ করা যায় :
قُلْ اِنْ ضَلَلْتُ فَاِنَّمَاۤ اَضِلُّ عَلٰى نَفْسِيْۚ وَاِنِ اهْتَدَيْتُ فَبِمَا يُوْحِيْۤ اِلَيَّ رَبِّيْؕ اِنَّهٗ سَمِيْعٌ قَرِيْبٌ
বলো, যদি আমি পথভ্রষ্ট হই, তবে তো নিজেরই ক্ষতি করব; আর যদি আমি সরলসঠিক পথের উপর থাকি, তবে তা এজন্য সম্ভব হচ্ছে যে, আমার প্রতিপালক আমার প্রতি ওহী অবতীর্ণ করেন। নিশ্চয় তিনি সবকিছু শুনেন এবং তিনি অতি নিকটবর্তী। (সূরা সাবা- ৫০)
ওহীর মাধ্যমেই গায়েব সম্পর্কে জানা যায় :
ذٰلِكَ مِنْ اَنْۢبَآءِ الْغَيْبِ نُوْحِيْهِ اِلَيْكَ
এসব গায়েবের সংবাদ ওহীর মাধ্যমে আমি তোমাকে জানিয়ে দিয়েছি। (সূরা আলে ইমরান- ৪৪)
تِلْكَ مِنْ اَنْۢبَآءِ الْغَيْبِ نُوْحِيْهَاۤ اِلَيْكَۚ مَا كُنْتَ تَعْلَمُهَاۤ اَنْتَ وَلَا قَوْمُكَ مِنْ قَبْلِ هٰذَاؕ فَاصْبِرْ اِنَّ الْعَاقِبَةَ لِلْمُتَّقِيْنَ
এ সমসত্ম অদৃশ্যের সংবাদ আমি তোমাকে ওহীর মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছি, যা এর পূর্বে তুমি জানতে না এবং তোমার সম্প্রদায়েরও কেউ জানত না। সুতরাং ধৈর্যধারণ করো, নিশ্চয় শুভ পরিণাম মুত্তাক্বীদের জন্য। (সূরা হুদ- ৪৯)
ওহী নাযিলের পদ্ধতি :
وَمَا كَانَ لِبَشَرٍ اَنْ يُّكَلِّمَهُ اللهُ اِلَّا وَحْيًا اَوْ مِنْ وَّرَآءِ حِجَابٍ اَوْ يُرْسِلَ رَسُوْلًا فَيُوْحِيَ بِاِذْنِهٖ مَا يَشَآءُؕ اِنَّهٗ عَلِيٌّ حَكِيْمٌ ‐ وَكَذٰلِكَ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ رُوْحًا مِّنْ اَمْرِنَاؕ مَا كُنْتَ تَدْرِيْ مَا الْكِتَابُ وَلَا الْاِيْمَانُ وَلٰكِنْ جَعَلْنَاهُ نُوْرًا نَّهْدِيْ بِهٖ مَنْ نَّشَآءُ مِنْ عِبَادِنَاؕ وَاِنَّكَ لَتَهْدِيْۤ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
মানুষের জন্য অসম্ভব যে, আল্লাহ তার সাথে কথা বলবেন ওহীর মাধ্যম ছাড়া, অথবা পর্দার অন্তরাল ব্যতিরেকে অথবা এমন দূত প্রেরণ ছাড়া, যে দূত তাঁর অনুমতিক্রমে তিনি যা চান তা ব্যক্ত করে; নিশ্চয় তিনি সমুন্নত ও প্রজ্ঞাবান। এভাবেই আমি তোমার প্রতি ওহী করেছি রূহ (কুরআন) আমার নির্দেশে। তুমি তো জানতে না কিতাব কী ও ঈমান কী। আমি একে করেছি আলোকস্বরূপ, যা দ্বারা আমি আমার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা সঠিক পথ দেখাই; নিশ্চয় তুমি সরল পথের দিকেই পথপ্রদর্শন করে থাক। (সূরা শূরা- ৫১, ৫২)
ব্যাখ্যা : যেসব পদ্ধতিতে নবী ﷺ এর কাছে ওহী নাযিল হয়েছে তাহলো :
(১) আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী ﷺ এর কাছে ওহী আসার সূচনা হয়েছিল সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে- (সহীহ বুখারী, হা/৩)। এ ধারা পরবর্তী সময় পর্যন্ত জারি ছিল। হাদীসে তাঁর বহু সংখ্যক স্বপ্নের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যার মাধ্যমে হয় তাঁকে কোন শিক্ষা দেয়া হয়েছে কিংবা কোন বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। তাছাড়া কুরআন মাজীদেও নবী ﷺ এর একটি স্বপ্নের বিষয় সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। (ফাতহ- ২৭)
(২) মে‘রাজের রাত্রিতে নবী ﷺ কে দ্বিতীয় প্রকার ওহী দ্বারা সম্মানিত করা হয়ছে। কতিপয় হাদীসে নবী ﷺ কে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের নির্দেশ দেয়া এবং তা নিয়ে বার বার দরখাস্ত পেশ করার কথা যেভাবে উল্লেখিত হয়েছে তা থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, সে সময় আল্লাহ এবং তাঁর বান্দা মুহাম্মাদ ﷺ এর মধ্যে ঠিক তেমনি কথাবার্তা হয়েছিল যেমনটি তূর পাহাড়ের পাদদেশে মূসা (আঃ) ও আল্লাহর মধ্যে হয়েছিল।
(৩) ওহীর তৃতীয় প্রকারের ব্যাপারে কুরআন নিজেই সাক্ষ্য দেয় যে, কুরআনকে জিবরাঈল (আঃ) এর মাধ্যমে রাসূল ﷺ এর কাছে পৌঁছানো হয়েছে।
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা হারিস ইবনে হিশাম (রাঃ) রাসূল ﷺ কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার নিকট কীভাবে ওহী আসে? উত্তরে রাসূল ﷺ বললেন, কোন কোন সময় আমার নিকট তা ঘণ্টার ধ্বনির ন্যায় আসে। এ প্রকারের ওহী আমার নিকট খুবই কষ্টদায়ক মনে হয়। উক্ত কষ্টজনিত ক্লান্তি এভাবে সমাপ্ত হয় যে, সে যা বলে তা আমার মুখস্ত হয়ে যায়। আবার কোন কোন সময় ফেরেশতা মানুষের আকৃতিতে আমার সাথে কথা বলেন, আর আমি তা সাথে সাথে মুখস্থ করতে সক্ষম হই যা সে বলে। আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘‘অতি প্রচন্ড শীতের সময়ও ওহী নাযিলকালে আমি রাসূল ﷺ কে দেখেছি যে, ওহী নাযিলের পরপরই তাঁর ললাট থেকে ঘাম ঝরে পড়ত।’’ (সহীহ বুখারী, হা/২)
মানবজাতির হেদায়াতের জন্য আল্লাহ কিতাব নাযিল করেছেন :
نَزَّلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ وَاَنْزَلَ التَّوْرَاةَ وَالْاِنْجِيْلَ -– مِنْ قَبْلُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَاَنْزَلَ الْفُرْقَانَ
তিনি সত্যসহকারে আপনার উপর কিতাব নাযিল করেছেন, যা পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়নকারী। তিনি ইতোপূর্বে আরো নাযিল করেছেন তাওরাত এবং ইঞ্জিল। (এগুলো ছিল) মানুষের জন্য পথপ্রদর্শনকারী, আর তিনি ফুরক্বান (কুরআন) নাযিল করেছেন। (সূরা আলে ইমরান- ৩, ৪)
আল্লাহর নাযিলকৃত সকল কিতাবের উপর ঈমান আনা আবশ্যক :
قُوْلُوْاۤ اٰمَنَّا بِاللهِ وَمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْنَا وَمَاۤ اُنْزِلَ اِلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ وَاِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَ وَالْاَسْبَاطِ وَمَاۤ اُوْتِيَ مُوْسٰى وَعِيْسٰى وَمَاۤ اُوْتِيَ النَّبِيُّوْنَ مِنْ رَّبِّهِمْۚ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ اَحَدٍ مِّنْهُمْؗ وَنَحْنُ لَهٗ مُسْلِمُوْنَ
তোমরা বলো, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং যা আমাদের প্রতি নাযিল হয়েছে, আর যা ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব ও তাদের বংশধরের প্রতি নাযিল হয়েছিল। আর মূসা ও ঈসাকে যা প্রদান করা হয়েছিল এবং অন্যান্য নবীগণ তাদের রবের পক্ষ হতে যা প্রদত্ত হয়েছিলেন তার প্রতিও ঈমান এনেছি। আমরা নবীদের কারো মধ্যে পার্থক্য করি না এবং আমরা তাঁরই প্রতি আত্মসমর্পণকারী। (সূরা বাক্বারা- ১৩৬)
মূসা (আঃ) কে তাওরাত দেয়া হয়েছিল :
وَلَقَدْ اٰتَيْنَا مُوْسَى الْكِتَابَ لَعَلَّهُمْ يَهْتَدُوْنَ
আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম, যাতে তারা হেদায়াত পায়। (সূরা মু’মিনূন- ৪৯)
اِنَّاۤ اَنْزَلْنَا التَّوْرَاةَ فِيْهَا هُدًى وَّنُوْرٌ
আমি তো অবতীর্ণ করেছিলাম তাওরাত, যাতে ছিল হেদায়াত ও নূর। (সূরা মায়েদা- ৪৪)
দাউদ (আঃ) কে যাবূর দেয়া হয়েছিল :
وَاٰتَيْنَا دَاوُوْدَ زَبُوْرًا
আমি দাউদকে যাবূর (কিতাব) প্রদান করেছি। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৫৫)
ঈসা (আঃ) কে ইঞ্জিল দেয়া হয়েছিল :
وَقَفَّيْنَا عَلٰۤى اٰثَارِهِمْ بِعِيْسَى ابْنِ مَرْيَمَ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ التَّوْرَاةِ۪ وَاٰتَيْنَاهُ الْاِنْجِيْلَ
আর আমি তাদের পরে পাঠিয়েছি ঈসা ইবনে মারইয়ামকে, তিনি ছিলেন পূর্বে প্রেরিত তাওরাতের সত্যতা প্রমাণকারী। আর আমি তাকে দিয়েছিলাম ইঞ্জিল। (সূরা মায়েদা- ৪৬)
মুহাম্মাদ ﷺ কে দেয়া হয়েছে মহাগ্রন্থ আল কুরআন :
وَكَذٰلِكَ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ قُرْاٰنًا عَرَبِيًّا
এভাবে আমি তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করেছি আরবি ভাষায়। (সূরা শূরা- ৭)
نَزَّلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ وَاَنْزَلَ التَّوْرَاةَ وَالْاِنْجِيْلَ -– مِنْ قَبْلُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَاَنْزَلَ الْفُرْقَانَ
তিনি সত্যসহকারে আপনার উপর কিতাব নাযিল করেছেন, যা পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়নকারী। তিনি ইতোপূর্বে আরো নাযিল করেছেন তাওরাত এবং ইঞ্জিল। (এগুলো ছিল) মানুষের জন্য পথপ্রদর্শনকারী, আর তিনি ফুরক্বান (কুরআন) নাযিল করেছেন। (সূরা আলে ইমরান- ৩, ৪)
আল্লাহর নাযিলকৃত সকল কিতাবের উপর ঈমান আনা আবশ্যক :
قُوْلُوْاۤ اٰمَنَّا بِاللهِ وَمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْنَا وَمَاۤ اُنْزِلَ اِلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ وَاِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَ وَالْاَسْبَاطِ وَمَاۤ اُوْتِيَ مُوْسٰى وَعِيْسٰى وَمَاۤ اُوْتِيَ النَّبِيُّوْنَ مِنْ رَّبِّهِمْۚ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ اَحَدٍ مِّنْهُمْؗ وَنَحْنُ لَهٗ مُسْلِمُوْنَ
তোমরা বলো, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং যা আমাদের প্রতি নাযিল হয়েছে, আর যা ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব ও তাদের বংশধরের প্রতি নাযিল হয়েছিল। আর মূসা ও ঈসাকে যা প্রদান করা হয়েছিল এবং অন্যান্য নবীগণ তাদের রবের পক্ষ হতে যা প্রদত্ত হয়েছিলেন তার প্রতিও ঈমান এনেছি। আমরা নবীদের কারো মধ্যে পার্থক্য করি না এবং আমরা তাঁরই প্রতি আত্মসমর্পণকারী। (সূরা বাক্বারা- ১৩৬)
মূসা (আঃ) কে তাওরাত দেয়া হয়েছিল :
وَلَقَدْ اٰتَيْنَا مُوْسَى الْكِتَابَ لَعَلَّهُمْ يَهْتَدُوْنَ
আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম, যাতে তারা হেদায়াত পায়। (সূরা মু’মিনূন- ৪৯)
اِنَّاۤ اَنْزَلْنَا التَّوْرَاةَ فِيْهَا هُدًى وَّنُوْرٌ
আমি তো অবতীর্ণ করেছিলাম তাওরাত, যাতে ছিল হেদায়াত ও নূর। (সূরা মায়েদা- ৪৪)
দাউদ (আঃ) কে যাবূর দেয়া হয়েছিল :
وَاٰتَيْنَا دَاوُوْدَ زَبُوْرًا
আমি দাউদকে যাবূর (কিতাব) প্রদান করেছি। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৫৫)
ঈসা (আঃ) কে ইঞ্জিল দেয়া হয়েছিল :
وَقَفَّيْنَا عَلٰۤى اٰثَارِهِمْ بِعِيْسَى ابْنِ مَرْيَمَ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ التَّوْرَاةِ۪ وَاٰتَيْنَاهُ الْاِنْجِيْلَ
আর আমি তাদের পরে পাঠিয়েছি ঈসা ইবনে মারইয়ামকে, তিনি ছিলেন পূর্বে প্রেরিত তাওরাতের সত্যতা প্রমাণকারী। আর আমি তাকে দিয়েছিলাম ইঞ্জিল। (সূরা মায়েদা- ৪৬)
মুহাম্মাদ ﷺ কে দেয়া হয়েছে মহাগ্রন্থ আল কুরআন :
وَكَذٰلِكَ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ قُرْاٰنًا عَرَبِيًّا
এভাবে আমি তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করেছি আরবি ভাষায়। (সূরা শূরা- ৭)
قُرْاٰنٌ (কুরআন) শব্দটি قَرَءَ ক্রিয়াপদের শব্দমূল। এর আসল অর্থ হচ্ছে- পড়া, অধ্যয়ন করা ইত্যাদি। শব্দমূলকে যখন কোন নাম হিসেবে ব্যবহার করা হয় তখন সংশ্লিষ্ট জিনিসটির মধ্যে শব্দমূলের অর্থ পুরোপুরি পাওয়া যায়। কাজেই এ কিতাবের নাম ‘কুরআন’ রাখার অর্থ হচ্ছে, এ কিতাব সকলের পড়ার জন্য এবং এটা বেশি বেশি করে পঠিত হওয়ার জিনিস। পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবগুলোতে যেসব সত্য শিক্ষা ছিল কুরআন তার সবগুলোই নিজের মধ্যে সংরক্ষিত করে নিয়েছে। কুরআন সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণকারী এ হিসেবে যে, এখন তাদের এ সত্য শিক্ষাগুলোর কোন অংশ নষ্ট হওয়ার আর সম্ভাবনা নেই। কুরআন সেগুলোর সমর্থক এ অর্থে যে, ঐ কিতাবগুলোতে যেসব বিষয় রয়েছে কুরআন তার সত্যতা প্রমাণ করে। কুরআন সেগুলোর উপর সাক্ষ্যদানকারী এ অর্থে যে, ঐ কিতাবগুলোতে আল্লাহর কালাম ও মানুষের বাণীর মধ্যে যে মিশ্রণ ঘটে গেছে কুরআনের সাক্ষ্যের মাধ্যমে তাকে আবার ছেঁটে আলাদা করা যেতে পারে। সেগুলোর মধ্যে যেগুলো কুরআনের সাথে সামঞ্জস্যশীল বুঝতে হবে তা আল্লাহর কালাম। আর যেগুলো কুরআন বিরোধী সেগুলো মানুষের কথা।
কুরআনের মূল উৎস হচ্ছে ‘লাওহে মাহফুজ’ :
بَلْ هُوَ قُرْاٰنٌ مَّجِيْدٌ – فِيْ لَوْحٍ مَّحْفُوْظٍ
এটা অতি উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন কুরআন, যা লাওহে মাহফুজে (সংরক্ষিত ফলকে) লিপিবদ্ধ আছে। (সূরা বুরুজ- ২১, ২২)
সূরা যুখরুফে এটাকে ‘উম্মুল কিতাব’ বলা হয়েছে :
- وَاِنَّهٗ فِۤيْ اُمِّ الْكِتَابِ لَدَيْنَا لَعَلِيٌّ حَكِيْمٌ
আর এটা রয়েছে আমার নিকট উম্মুল কিতাবে (লাওহে মাহফুজে) যা উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা যুখরুফ- ৪)
সূরা ওয়াক্বিয়ায় একে ‘কিতাবুম মাকনূন’ বলা হয়েছে :
اِنَّهٗ لَقُرْاٰنٌ كَرِيْمٌ – فِيْ كِتَابٍ مَّكْنُوْنٍ -
নিশ্চয় এটা সম্মানিত কুরআন, যা রয়েছে সুরক্ষিত কিতাবে। (সূরা ওয়াক্বিয়া- ৭৭, ৭৮)
ফেরেশতা ছাড়া কেউ এর সংস্পর্শে যেতে পারে না :
لَا يَمَسُّهٗۤ اِلَّا الْمُطَهَّرُوْنَ
পুতঃপবিত্র আত্মা (ফেরেশতা) ব্যতীত অন্য কেউ তা স্পর্শ করে না। (সূরা ওয়াক্বিয়া- ৭৯)
ফেরেশতারা এর লেখা-লেখির কাজ করে থাকে :
كَلَّاۤ اِنَّهَا تَذْكِرَةٌ – فَمَنْ شَآءَ ذَكَرَهٗ -– فِيْ صُحُفٍ مُّكَرَّمَةٍ -– مَرْفُوْعَةٍ مُّطَهَّرَةٍ – بِاَيْدِيْ سَفَرَةٍ - – كِرَامٍ ۢبَرَرَةٍ
কখনও নয়, এটা তো উপদেশবাণী; যে ইচ্ছা করে সে এটা স্মরণ রাখবে, এটা সম্মানিত কিতাবে (লাওহ মাহফুজে) লিপিবদ্ধ আছে, যা উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন ও পবিত্র। এটা এমন লেখকদের হাতে থাকে যারা সম্মানিত ও সৎ। (সূরা আবাসা, ১১-১৬)
কুরআনের মূল উৎস হচ্ছে ‘লাওহে মাহফুজ’ :
بَلْ هُوَ قُرْاٰنٌ مَّجِيْدٌ – فِيْ لَوْحٍ مَّحْفُوْظٍ
এটা অতি উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন কুরআন, যা লাওহে মাহফুজে (সংরক্ষিত ফলকে) লিপিবদ্ধ আছে। (সূরা বুরুজ- ২১, ২২)
সূরা যুখরুফে এটাকে ‘উম্মুল কিতাব’ বলা হয়েছে :
- وَاِنَّهٗ فِۤيْ اُمِّ الْكِتَابِ لَدَيْنَا لَعَلِيٌّ حَكِيْمٌ
আর এটা রয়েছে আমার নিকট উম্মুল কিতাবে (লাওহে মাহফুজে) যা উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা যুখরুফ- ৪)
সূরা ওয়াক্বিয়ায় একে ‘কিতাবুম মাকনূন’ বলা হয়েছে :
اِنَّهٗ لَقُرْاٰنٌ كَرِيْمٌ – فِيْ كِتَابٍ مَّكْنُوْنٍ -
নিশ্চয় এটা সম্মানিত কুরআন, যা রয়েছে সুরক্ষিত কিতাবে। (সূরা ওয়াক্বিয়া- ৭৭, ৭৮)
ফেরেশতা ছাড়া কেউ এর সংস্পর্শে যেতে পারে না :
لَا يَمَسُّهٗۤ اِلَّا الْمُطَهَّرُوْنَ
পুতঃপবিত্র আত্মা (ফেরেশতা) ব্যতীত অন্য কেউ তা স্পর্শ করে না। (সূরা ওয়াক্বিয়া- ৭৯)
ফেরেশতারা এর লেখা-লেখির কাজ করে থাকে :
كَلَّاۤ اِنَّهَا تَذْكِرَةٌ – فَمَنْ شَآءَ ذَكَرَهٗ -– فِيْ صُحُفٍ مُّكَرَّمَةٍ -– مَرْفُوْعَةٍ مُّطَهَّرَةٍ – بِاَيْدِيْ سَفَرَةٍ - – كِرَامٍ ۢبَرَرَةٍ
কখনও নয়, এটা তো উপদেশবাণী; যে ইচ্ছা করে সে এটা স্মরণ রাখবে, এটা সম্মানিত কিতাবে (লাওহ মাহফুজে) লিপিবদ্ধ আছে, যা উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন ও পবিত্র। এটা এমন লেখকদের হাতে থাকে যারা সম্মানিত ও সৎ। (সূরা আবাসা, ১১-১৬)
কুরআন নাযিল হয়েছে এক বরকতময় রাত্রিতে :
حٰمٓ – وَالْكِتَابِ الْمُبِيْنِ – اِنَّاۤ اَنْزَلْنَاهُ فِيْ لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ اِنَّا كُنَّا مُنْذِرِيْنَ
হা-মীম। শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের, আমি এটা অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় রাত্রিতে; নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। (সূরা দুখান, ১-৩)
এ রাতটি হচ্ছে লাইলাতুল ক্বদর :
اِنَّاۤ اَنْزَلْنَاهُ فِيْ لَيْلَةِ الْقَدْرِ – - وَمَاۤ اَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ -– لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ اَلْفِ شَهْرٍ
আমি একে নাযিল করেছি লাইলাতুল ক্বদরে। আর আপনি কি জানেন লাইলাতুল ক্বদর কী? লাইলাতুল ক্বদর হলো, হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। (সূরা ক্বদর, ১-৩)
এ রাতটি রমাযান মাসে রয়েছে :
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيْۤ اُنْزِلَ فِيْهِ الْقُرْاٰنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدٰى وَالْفُرْقَانِ
রমাযান তো সেই মাস যে মাসে কুরআন নাযিল করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য পথপ্রদর্শক এবং হেদায়াতের স্পষ্ট নিদর্শন ও ফুরক্বান (সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী)। (সূরা বাক্বারা- ১৮৫)
কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল হয়েছে :
تَنْزِيْلُ الْكِتَابِ مِنَ اللهِ الْعَزِيْزِ الْحَكِيْمِ
এ কিতাব মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাবান আল্লাহর পক্ষ হতে অবতীর্ণ। (সূরা জাসিয়া- ২)
تَنْزِيْلَ الْعَزِيْزِ الرَّحِيْمِ
এ কিতাব মহাপরাক্রমশালী ও দয়াময় আল্লাহর পক্ষ হতে অবতীর্ণ। (সূরা ইয়াসীন- ৫)
ব্যাখ্যা : এখানে কুরআন নাযিলকারীর দু’টি গুণের কথা বলা হয়েছে।
(এক) তিনি প্রবল ও পরাক্রমশালী। (দুই) তিনি করুণাময়।
প্রথম গুণটি বর্ণর্না করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, এ সত্য সম্পর্কে সতর্ক করা যে, এ কুরআন কোন অক্ষম উপদেষ্টার উপদেশ নয়; বরং এটি এমন এক সত্তার বাণী যিনি সবকিছুর উপর প্রবল, যাঁর ফায়সালাসমূহ প্রয়োগ করার পথে কোন শক্তি বাধা সৃষ্টি করতে পারে না এবং যাঁর পাকড়াও থেকে বাঁচার ক্ষমতা কারো নেই। আর দ্বিতীয় গুণটি বর্ণনা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, এ অনুভূতি সৃষ্টি করা যে, তিনি তোমাদের উপর দয়াবান হয়ে এ মহান কিতাবটি তাঁর রাসূলের উপর নাযিল করেছেন। যাতে তোমরা এর দ্বারা গোমরাহীমুক্ত হয়ে এমন সরলসঠিক পথে হেদায়াতপ্রাপ্ত হতে পার, যে পথে চললে দুনিয়া ও আখিরাতের সাফল্য লাভ করতে পারবে।
حٰمٓ – وَالْكِتَابِ الْمُبِيْنِ – اِنَّاۤ اَنْزَلْنَاهُ فِيْ لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ اِنَّا كُنَّا مُنْذِرِيْنَ
হা-মীম। শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের, আমি এটা অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় রাত্রিতে; নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। (সূরা দুখান, ১-৩)
এ রাতটি হচ্ছে লাইলাতুল ক্বদর :
اِنَّاۤ اَنْزَلْنَاهُ فِيْ لَيْلَةِ الْقَدْرِ – - وَمَاۤ اَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ -– لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ اَلْفِ شَهْرٍ
আমি একে নাযিল করেছি লাইলাতুল ক্বদরে। আর আপনি কি জানেন লাইলাতুল ক্বদর কী? লাইলাতুল ক্বদর হলো, হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। (সূরা ক্বদর, ১-৩)
এ রাতটি রমাযান মাসে রয়েছে :
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيْۤ اُنْزِلَ فِيْهِ الْقُرْاٰنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدٰى وَالْفُرْقَانِ
রমাযান তো সেই মাস যে মাসে কুরআন নাযিল করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য পথপ্রদর্শক এবং হেদায়াতের স্পষ্ট নিদর্শন ও ফুরক্বান (সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী)। (সূরা বাক্বারা- ১৮৫)
কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল হয়েছে :
تَنْزِيْلُ الْكِتَابِ مِنَ اللهِ الْعَزِيْزِ الْحَكِيْمِ
এ কিতাব মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাবান আল্লাহর পক্ষ হতে অবতীর্ণ। (সূরা জাসিয়া- ২)
تَنْزِيْلَ الْعَزِيْزِ الرَّحِيْمِ
এ কিতাব মহাপরাক্রমশালী ও দয়াময় আল্লাহর পক্ষ হতে অবতীর্ণ। (সূরা ইয়াসীন- ৫)
ব্যাখ্যা : এখানে কুরআন নাযিলকারীর দু’টি গুণের কথা বলা হয়েছে।
(এক) তিনি প্রবল ও পরাক্রমশালী। (দুই) তিনি করুণাময়।
প্রথম গুণটি বর্ণর্না করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, এ সত্য সম্পর্কে সতর্ক করা যে, এ কুরআন কোন অক্ষম উপদেষ্টার উপদেশ নয়; বরং এটি এমন এক সত্তার বাণী যিনি সবকিছুর উপর প্রবল, যাঁর ফায়সালাসমূহ প্রয়োগ করার পথে কোন শক্তি বাধা সৃষ্টি করতে পারে না এবং যাঁর পাকড়াও থেকে বাঁচার ক্ষমতা কারো নেই। আর দ্বিতীয় গুণটি বর্ণনা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, এ অনুভূতি সৃষ্টি করা যে, তিনি তোমাদের উপর দয়াবান হয়ে এ মহান কিতাবটি তাঁর রাসূলের উপর নাযিল করেছেন। যাতে তোমরা এর দ্বারা গোমরাহীমুক্ত হয়ে এমন সরলসঠিক পথে হেদায়াতপ্রাপ্ত হতে পার, যে পথে চললে দুনিয়া ও আখিরাতের সাফল্য লাভ করতে পারবে।
ফেরেশতাদের মধ্যে জিবরাঈল (আঃ) ওহী নিয়ে আসতেন :
قُلْ مَنْ كَانَ عَدُوًّا لِّجِبْرِيْلَ فَاِنَّهٗ نَزَّلَهٗ عَلٰى قَلْبِكَ بِاِذْنِ اللهِ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ وَهُدًى وَّبُشْرٰى لِلْمُؤْمِنِيْنَ
(হে নবী) আপনি বলুন, কে সে ব্যক্তি যে জিবরাঈলের সাথে শত্রুতা রাখে? সে তো কুরআনকে আল্লাহর হুকুমে তোমার অন্তরে নাযিল করে, যা তাদের নিকট থাকা বিষয়সমূহের সত্যতা স্বীকার করে। আর তা মুমিনদের জন্য হেদায়াত ও সুসংবাদস্বরূপ। (সূরা বাক্বারা- ৯৭)
তার উপাধি হলো রূহুল আমীন :
وَاِنَّهٗ لَتَنْزِيْلُ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ – - نَزَلَ بِهِ الرُّوْحُ الْاَمِيْنُ – - عَلٰى قَلْبِكَ لِتَكُوْنَ مِنَ الْمُنْذِرِيْنَ
নিশ্চয় কুরআন জগতসমূহের প্রতিপালকের পক্ষ হতে অবতীর্ণ। রুহুল আমীন (জিবরাঈল) এটা নিয়ে অবতরণ করেছে তোমার হৃদয়ে, যাতে তুমি সতর্ককারীদের অন্তর্ভুক্ত হতে পার। (সূরা শু‘আরা, ১৯২-১৯৪)
তিনি অনেক শক্তিশালী :
عَلَّمَهٗ شَدِيْدُ الْقُوٰى – - ذُوْ مِرَّةٍ فَاسْتَوٰى
তাকে শিক্ষা দান করেন শক্তিশালী ও মহাশক্তিধর (ফেরেশতা) যিনি প্রজ্ঞাসম্পন্ন; অতঃপর (তিনি একদিন) নিজ আকৃতিতে (তার সামনে এসে) স্থির হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। (সূরা নাজম- ৫, ৬)
তিনি সম্মানিত ও আমানতদার :
اِنَّهٗ لَقَوْلُ رَسُوْلٍ كَرِيْمٍ – -ذِيْ قُوَّةٍ عِنْدَ ذِى الْعَرْشِ مَكِيْنٍ – مُطَاعٍ ثَمَّ اَمِيْنٍ
নিশ্চয় এ কুরআন সম্মানিত বার্তাবাহকের আনীত বাণী। তিনি শক্তিশালী, আরশের মালিকের নিকট মর্যাদাসম্পন্ন, সেখানে তাকে মান্য করা হয় এবং সে বিশ্বাসভাজন। (সূরা তাকভীর, ১৯-২১)
জিবরাঈল (আঃ) আল্লাহর অনুমতি ছাড়া ওহী নিয়ে আসতেন না :
وَمَا نَتَنَزَّلُ اِلَّا بِاَمْرِ رَبِّكَۚ لَهٗ مَا بَيْنَ اَيْدِيْنَا وَمَا خَلْفَنَا وَمَا بَيْنَ ذٰلِكَۚ وَمَا كَانَ رَبُّكَ نَسِيًّا
আমরা আপনার প্রতিপালকের আদেশ ব্যতীত অবতরণ করি না; যা আমাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে আছে এবং যা উভয়ের মধ্যবর্তী স্থলে আছে তা তাঁরই এবং আপনার প্রতিপালক ভুলে যাওয়ার মতো নন। (সূরা মারইয়াম- ৬৪)
kv‡b byh~j : রাসূলুল্লাহ ﷺ জিবরাঈল (আঃ) কে বলেন, তুমি আমার নিকট যতবার আসো তার চেয়ে অধিকবার আসাতে তোমাকে কিসে বাধা দিচ্ছে? তখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (সহীহ বুখারী, হা/৪৭৩১)
ব্যাখ্যা : জিবরাঈল (আঃ) সাহাবী দিহয়াতুল কালবী (রাঃ) এর রূপ ধারণ করে আসতেন। আবু ওসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জানতে পেরেছি, কোন এক সময় জিবরাঈল (আঃ) নবী ﷺ এর কাছে আগমন করেন। তখন উম্মে সালামা (রাঃ) তাঁর কাছে ছিলেন। জিবরাঈল (আঃ) কথা বলা আরম্ভ করলে, নবী ﷺ উম্মে সালামা (রাঃ) কে প্রশ্ন করলেন, বল তো ইনি কে? তিনি বললেন, ইনি দিহয়াতুল কালবী। তারপর জিবরাঈল (আঃ) উঠে দাঁড়ালে (উম্মে সালামা) বললেন, (আল্লাহর কসম!) যতক্ষণ পর্যন্ত না নবী ﷺ এর ভাষণে জিবরাঈল (আঃ) সম্পর্কে শুনেছি, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি তাঁকে দিহয়াতুল কালবী ছাড়া অন্য কেউ মনে করিনি। (সহীহ বুখারী, হা/৪৯৮০)
قُلْ مَنْ كَانَ عَدُوًّا لِّجِبْرِيْلَ فَاِنَّهٗ نَزَّلَهٗ عَلٰى قَلْبِكَ بِاِذْنِ اللهِ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ وَهُدًى وَّبُشْرٰى لِلْمُؤْمِنِيْنَ
(হে নবী) আপনি বলুন, কে সে ব্যক্তি যে জিবরাঈলের সাথে শত্রুতা রাখে? সে তো কুরআনকে আল্লাহর হুকুমে তোমার অন্তরে নাযিল করে, যা তাদের নিকট থাকা বিষয়সমূহের সত্যতা স্বীকার করে। আর তা মুমিনদের জন্য হেদায়াত ও সুসংবাদস্বরূপ। (সূরা বাক্বারা- ৯৭)
তার উপাধি হলো রূহুল আমীন :
وَاِنَّهٗ لَتَنْزِيْلُ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ – - نَزَلَ بِهِ الرُّوْحُ الْاَمِيْنُ – - عَلٰى قَلْبِكَ لِتَكُوْنَ مِنَ الْمُنْذِرِيْنَ
নিশ্চয় কুরআন জগতসমূহের প্রতিপালকের পক্ষ হতে অবতীর্ণ। রুহুল আমীন (জিবরাঈল) এটা নিয়ে অবতরণ করেছে তোমার হৃদয়ে, যাতে তুমি সতর্ককারীদের অন্তর্ভুক্ত হতে পার। (সূরা শু‘আরা, ১৯২-১৯৪)
তিনি অনেক শক্তিশালী :
عَلَّمَهٗ شَدِيْدُ الْقُوٰى – - ذُوْ مِرَّةٍ فَاسْتَوٰى
তাকে শিক্ষা দান করেন শক্তিশালী ও মহাশক্তিধর (ফেরেশতা) যিনি প্রজ্ঞাসম্পন্ন; অতঃপর (তিনি একদিন) নিজ আকৃতিতে (তার সামনে এসে) স্থির হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। (সূরা নাজম- ৫, ৬)
তিনি সম্মানিত ও আমানতদার :
اِنَّهٗ لَقَوْلُ رَسُوْلٍ كَرِيْمٍ – -ذِيْ قُوَّةٍ عِنْدَ ذِى الْعَرْشِ مَكِيْنٍ – مُطَاعٍ ثَمَّ اَمِيْنٍ
নিশ্চয় এ কুরআন সম্মানিত বার্তাবাহকের আনীত বাণী। তিনি শক্তিশালী, আরশের মালিকের নিকট মর্যাদাসম্পন্ন, সেখানে তাকে মান্য করা হয় এবং সে বিশ্বাসভাজন। (সূরা তাকভীর, ১৯-২১)
জিবরাঈল (আঃ) আল্লাহর অনুমতি ছাড়া ওহী নিয়ে আসতেন না :
وَمَا نَتَنَزَّلُ اِلَّا بِاَمْرِ رَبِّكَۚ لَهٗ مَا بَيْنَ اَيْدِيْنَا وَمَا خَلْفَنَا وَمَا بَيْنَ ذٰلِكَۚ وَمَا كَانَ رَبُّكَ نَسِيًّا
আমরা আপনার প্রতিপালকের আদেশ ব্যতীত অবতরণ করি না; যা আমাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে আছে এবং যা উভয়ের মধ্যবর্তী স্থলে আছে তা তাঁরই এবং আপনার প্রতিপালক ভুলে যাওয়ার মতো নন। (সূরা মারইয়াম- ৬৪)
kv‡b byh~j : রাসূলুল্লাহ ﷺ জিবরাঈল (আঃ) কে বলেন, তুমি আমার নিকট যতবার আসো তার চেয়ে অধিকবার আসাতে তোমাকে কিসে বাধা দিচ্ছে? তখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (সহীহ বুখারী, হা/৪৭৩১)
ব্যাখ্যা : জিবরাঈল (আঃ) সাহাবী দিহয়াতুল কালবী (রাঃ) এর রূপ ধারণ করে আসতেন। আবু ওসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জানতে পেরেছি, কোন এক সময় জিবরাঈল (আঃ) নবী ﷺ এর কাছে আগমন করেন। তখন উম্মে সালামা (রাঃ) তাঁর কাছে ছিলেন। জিবরাঈল (আঃ) কথা বলা আরম্ভ করলে, নবী ﷺ উম্মে সালামা (রাঃ) কে প্রশ্ন করলেন, বল তো ইনি কে? তিনি বললেন, ইনি দিহয়াতুল কালবী। তারপর জিবরাঈল (আঃ) উঠে দাঁড়ালে (উম্মে সালামা) বললেন, (আল্লাহর কসম!) যতক্ষণ পর্যন্ত না নবী ﷺ এর ভাষণে জিবরাঈল (আঃ) সম্পর্কে শুনেছি, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি তাঁকে দিহয়াতুল কালবী ছাড়া অন্য কেউ মনে করিনি। (সহীহ বুখারী, হা/৪৯৮০)
নবী ﷺ এর উপর নাযিল হওয়া সর্বপ্রথম ওহী :
اِقْرَاْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِيْ خَلَقَ - – خَلَقَ الْاِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍ – - اِقْرَاْ وَرَبُّكَ الْاَكْرَمُ – - اَلَّذِيْ عَلَّمَ بِالْقَلَمِ – - عَلَّمَ الْاِنْسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ
পড়ুন, আপনার পালনকর্তার নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ঝুলন্ত রক্তপিন্ড হতে। পড়ুন, আপনার পালনকর্তা অতি সম্মানিত। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে, যা সে জানত না। (সূরা আলাক্ব, ১-৫)
ব্যাখ্যা : সর্বপ্রথম কুরআন নাযিলের ঘটনা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে : আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট ওহী আগমনের সূচনা হয় ঘুমের মধ্যে সত্য স্বপ্নরূপে। স্বপ্নে তিনি যা দেখতেন তা-ই প্রভাতের আলোর ন্যায় বাস্তবে প্রতিফলিত হতো। এ অবস্থায় কিছুকাল চলার পর নিজ থেকেই তাঁর অন্তরে নির্জনে থাকার প্রেরণা জাগ্রত হয়। ফলে তিনি (মক্কা নগরী হতে তিন মাইল দূরে) হেরা গুহায় নির্জনে (ইবাদাতের উদ্দেশ্যে) অবস্থান করতে লাগলেন। তিনি তাঁর পরিবারের নিকট না গিয়ে সেথায় কয়েক রাত পর্যন্ত ইবাদাতে মগ্ন থাকতেন। এজন্য তিনি সঙ্গে কিছু খাবার নিয়ে আসতেন। তারপর খাদীজা (রাঃ) এর নিকট ফিরে যেতেন। পুনরায় কিছু খাবার নিয়ে (একাধারে ইবাদাতে রত হওয়ার জন্য) হেরা গুহায় চলে যেতেন। এমনিভাবে হেরা গুহায় থাকাকালীন হঠাৎ তাঁর নিকট হক্ব (ওহী) এলো। অর্থাৎ ফেরেশতা জিবরাঈল (আঃ) আসলেন। অতঃপর বললেন, اِقْرَاْ (ইক্বরা) (হে নবী) ‘‘আপনি পড়ুন।’’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘‘আমি তো পড়তে জানি না।’’ রাসূল ﷺ বলেন, (এ কথা শুনে জিবরাঈল) আমাকে ধরে এমন জোরে চাপ দিলেন, যাতে আমার খুব কষ্ট অনুভব হলো। তারপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, ‘আপনি পড়ুন!’ জবাবে আমি বললাম, আমি তো পড়তে জানি না। এটা শুনে আবার (তিনি) আমাকে ধরে এমন জোরে চাপ দিলেন, এতে আমার আরো বেশি কষ্ট অনুভব হতে লাগল। তারপর আমাকে ছেড়ে দিয়ে পুনরায় বললেন, ‘‘আপনি পড়ুন’’। জবাবে আমি আগের ন্যায় বললাম, ‘‘আমি তো পড়তে জানি না।’’ এটা শুনে জিবরাঈল (আঃ) তৃতীয় বার আমাকে জোরে চাপ দিলেন, তারপর ছেড়ে দিয়ে সূরা আলাক্ব এর প্রথম পাঁচটি আয়াত পাঠ করতে বললেন। তারপর রাসূল ﷺ উক্ত আয়াতসমূহ নিয়ে বাড়ি ফিরলেন। তখন ভয়ে তাঁর অন্তর কাঁপতেছিল। তিনি তাঁর স্ত্রী খাদীজা বিনতে খুয়াইলিদ (রাঃ) এর কাছে এসে বললেন, আমাকে চাদর জড়িয়ে দাও! আমাকে চাদর জড়িয়ে দাও। অতঃপর খাদীজা (রাঃ) তাঁকে চাদর জড়িয়ে দিলেন। কিছুক্ষণ পর তাঁর থেকে ভয় কেটে গেলে তিনি স্ত্রী খাদীজাকে সব ঘটনা খুলে বললেন। অতঃপর বললেন, আমি আমার জীবন নিয়ে ভয় করছি। তখন খাদীজা (রাঃ) রাসূল ﷺ কে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, আল্লাহর কসম! মহান আল্লাহ আপনাকে কখনো চিন্তায় ফেলবেন না। কেননা আপনি আত্মীয়স্বজনের সাথে ভালো ব্যবহার করেন। ইয়াতীম, বিধবা, অন্ধ ও অক্ষমদের খাওয়া-পরা ও থাকার ব্যবস্থা করেন। বেকারদের কর্মসংস্থান করেন। মেহমানের সমাদর করেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে দুর্দশাগ্রস্ত জনগণকে সাহায্য করেন। (অতএব এ অবস্থায় আপনার ভয়ের কোন কারণ নেই)।
এরূপ সান্ত্বনা দেয়ার পর খাদীজা (রাঃ) রাসূল ﷺ কে সাথে নিয়ে স্বীয় চাচাত ভাই ওয়ারাকা ইবনে নাওফেল এর নিকট গেলেন। যিনি জাহেলী যুগে ঈসায়ী ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি হিব্রু ভাষায় কিতাব লিখতেন। আল্লাহ যতটুকু চাইতেন তিনি ইঞ্জিল হতে ততটুকু হিব্রু ভাষায় লিখতেন। তিনি সেসময় খুব বৃদ্ধ হওয়ায় অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। খাদীজা (রাঃ) তাঁকে বললেন, হে চাচাত ভাই! আপনি আপনার ভাতিজার কথা শুনুন। তখন ওয়ারাকা ইবনে নাওফেল রাসূল ﷺ কে লক্ষ্য করে বললেন, হে ভাতিজা! তুমি কী দেখেছ? তখন রাসূল ﷺ তাঁকে সব কাহিনী খুলে বললেন। কাহিনী শুনার পর ওয়ারাকা ইবনে নাওফেল রাসূল ﷺ কে বললেন, ইনি তো সেই জিবরাঈল, যাকে আল্লাহ মূসা (আঃ) এর নিকট পাঠিয়েছিলেন। আফসোস! (তোমার নবুওয়াতের প্রচারকালে) যদি আমি ক্ষমতাশালী যুবক হতাম, আর যদি আমি সেদিন জীবিত থাকতাম, যেদিন তোমার জাতি তোমাকে দেশান্তরিত করে ছাড়বে! এ কথা শুনে রাসূল ﷺ আশ্চর্যান্বিত হয়ে বললেন, আমার দেশবাসী কি আমাকে বিতাড়িত করবে? উত্তরে তিনি বললেন, হ্যাঁ! তুমি সত্য দ্বীন নিয়ে প্রেরিত হয়েছ। তোমার ন্যায় যাঁরা পূর্বে এরূপ সত্য দ্বীন নিয়ে এসেছিলেন, তাঁদের সকলের সাথেই শত্রুতা করা হয়েছে। (আমি তোমাকে কথা দিলাম) যদি আমি সেদিন জীবিত থাকি, তাহলে অবশ্যই প্রবলভাবে তোমাকে সাহায্য করব। এ কাহিনীর অল্পদিন পরই ওয়ারাকা ইন্তেকাল করেন। এরপর (কিছু দিন) ওহী নাযিল হওয়া বন্ধ ছিল। (সহীহ বুখারী, হা/৩)
কিছু দিন পর আবার ধারাবাহিকভাবে কুরআন নাযিল শুরু হয় :
وَالضُّحٰى ‐ - وَاللَّيْلِ اِذَا سَجٰى ‐ - مَا وَدَّعَكَ رَبُّكَ وَمَا قَلٰى
কসম পূর্বাহ্নের এবং রাতের, যখন তা নিঝুম হয়। আপনার প্রতিপালক আপনাকে পরিত্যাগ করেননি এবং আপনার প্রতি বিরূপও হননি। (সূরা যোহা, ১-৩)
kv‡b byh~j : জুনদুব ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার সাময়িকভাবে জিবরাঈল (আঃ) নবী ﷺ এর কাছে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থাকেন। এতে জনৈকা কুরাইশ মহিলা বলল, তার শয়তানটি তাঁর কাছে আসতে বিলম্ব করছে। তখন সূরা যোহা নাযিল হয়। (সহীহ বুখারী, হা/১১২৫)
يَاۤ اَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ – قُمْ فَاَنْذِرْ – وَرَبَّكَ فَكَبِّرْ – وَثِيَابَكَ فَطَهِّرْ – وَالرُّجْزَ فَاهْجُرْ
‘‘হে বস্ত্রাচ্ছাদিত! উঠুন, আপনি লোকদেরকে সতর্ক করুন। আপনার প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন, আপনার পোষাক পবিত্র করুন এবং অপবিত্রতা দূর করুন।’’ (সূরা মুদ্দাস্সির, ১-৫)।
শানে নুযূল : জাবির ইবনে আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) ওহী বন্ধ থাকাকালীন অবস্থা প্রসঙ্গে বর্ণনা করেন, রাসূল ﷺ বলেন, ‘‘একদিন আমি পথ চলার সময় আকাশের দিক থেকে বিকট আওয়াজ শুনতে পেয়ে উপর দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলাম, যে ফেরেশতা হেরা গুহায় আমার নিকট এসেছিলেন সেই ফেরেশতা আসমান ও জমিনের মাঝখানে একটি চেয়ারে বসে আছেন। তাঁর এ অবস্থা দেখে আমি খুবই ভয় পেলাম। অতঃপর আমি ভয়ার্ত অবস্থায় বাড়ি ফিরে এসে বললাম, তোমরা আমাকে চাদর দ্বারা আবৃত করো, আমাকে চাদর দ্বারা আবৃত করো। তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতগুলো নাযিল করেন। এরপর থেকে পুরোদমে পর পর ওহী নাযিল হতে লাগল। (সহীহ বুখারী, হা/৪)
কুরআন নাযিল হয়েছে আরবি ভাষায় :
وَهٰذَا كِتَابٌ مُّصَدِّقٌ لِّسَانًا عَرَبِيًّا
এ কিতাব (পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের) সত্যতা প্রকাশকারী। এটা আরবি ভাষায় অবতীর্ণ করা হয়েছে। (সূরা আহকাফ- ১২)
وَكَذٰلِكَ اَنْزَلْنَاهُ حُكْمًا عَرَبِيًّا
এভাবেই আমি একে বিধানরূপে আরবি ভাষায় অবতীর্ণ করেছি। (সূরা রা‘দ- ৩৭)
اِقْرَاْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِيْ خَلَقَ - – خَلَقَ الْاِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍ – - اِقْرَاْ وَرَبُّكَ الْاَكْرَمُ – - اَلَّذِيْ عَلَّمَ بِالْقَلَمِ – - عَلَّمَ الْاِنْسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ
পড়ুন, আপনার পালনকর্তার নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ঝুলন্ত রক্তপিন্ড হতে। পড়ুন, আপনার পালনকর্তা অতি সম্মানিত। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে, যা সে জানত না। (সূরা আলাক্ব, ১-৫)
ব্যাখ্যা : সর্বপ্রথম কুরআন নাযিলের ঘটনা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে : আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট ওহী আগমনের সূচনা হয় ঘুমের মধ্যে সত্য স্বপ্নরূপে। স্বপ্নে তিনি যা দেখতেন তা-ই প্রভাতের আলোর ন্যায় বাস্তবে প্রতিফলিত হতো। এ অবস্থায় কিছুকাল চলার পর নিজ থেকেই তাঁর অন্তরে নির্জনে থাকার প্রেরণা জাগ্রত হয়। ফলে তিনি (মক্কা নগরী হতে তিন মাইল দূরে) হেরা গুহায় নির্জনে (ইবাদাতের উদ্দেশ্যে) অবস্থান করতে লাগলেন। তিনি তাঁর পরিবারের নিকট না গিয়ে সেথায় কয়েক রাত পর্যন্ত ইবাদাতে মগ্ন থাকতেন। এজন্য তিনি সঙ্গে কিছু খাবার নিয়ে আসতেন। তারপর খাদীজা (রাঃ) এর নিকট ফিরে যেতেন। পুনরায় কিছু খাবার নিয়ে (একাধারে ইবাদাতে রত হওয়ার জন্য) হেরা গুহায় চলে যেতেন। এমনিভাবে হেরা গুহায় থাকাকালীন হঠাৎ তাঁর নিকট হক্ব (ওহী) এলো। অর্থাৎ ফেরেশতা জিবরাঈল (আঃ) আসলেন। অতঃপর বললেন, اِقْرَاْ (ইক্বরা) (হে নবী) ‘‘আপনি পড়ুন।’’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘‘আমি তো পড়তে জানি না।’’ রাসূল ﷺ বলেন, (এ কথা শুনে জিবরাঈল) আমাকে ধরে এমন জোরে চাপ দিলেন, যাতে আমার খুব কষ্ট অনুভব হলো। তারপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, ‘আপনি পড়ুন!’ জবাবে আমি বললাম, আমি তো পড়তে জানি না। এটা শুনে আবার (তিনি) আমাকে ধরে এমন জোরে চাপ দিলেন, এতে আমার আরো বেশি কষ্ট অনুভব হতে লাগল। তারপর আমাকে ছেড়ে দিয়ে পুনরায় বললেন, ‘‘আপনি পড়ুন’’। জবাবে আমি আগের ন্যায় বললাম, ‘‘আমি তো পড়তে জানি না।’’ এটা শুনে জিবরাঈল (আঃ) তৃতীয় বার আমাকে জোরে চাপ দিলেন, তারপর ছেড়ে দিয়ে সূরা আলাক্ব এর প্রথম পাঁচটি আয়াত পাঠ করতে বললেন। তারপর রাসূল ﷺ উক্ত আয়াতসমূহ নিয়ে বাড়ি ফিরলেন। তখন ভয়ে তাঁর অন্তর কাঁপতেছিল। তিনি তাঁর স্ত্রী খাদীজা বিনতে খুয়াইলিদ (রাঃ) এর কাছে এসে বললেন, আমাকে চাদর জড়িয়ে দাও! আমাকে চাদর জড়িয়ে দাও। অতঃপর খাদীজা (রাঃ) তাঁকে চাদর জড়িয়ে দিলেন। কিছুক্ষণ পর তাঁর থেকে ভয় কেটে গেলে তিনি স্ত্রী খাদীজাকে সব ঘটনা খুলে বললেন। অতঃপর বললেন, আমি আমার জীবন নিয়ে ভয় করছি। তখন খাদীজা (রাঃ) রাসূল ﷺ কে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, আল্লাহর কসম! মহান আল্লাহ আপনাকে কখনো চিন্তায় ফেলবেন না। কেননা আপনি আত্মীয়স্বজনের সাথে ভালো ব্যবহার করেন। ইয়াতীম, বিধবা, অন্ধ ও অক্ষমদের খাওয়া-পরা ও থাকার ব্যবস্থা করেন। বেকারদের কর্মসংস্থান করেন। মেহমানের সমাদর করেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে দুর্দশাগ্রস্ত জনগণকে সাহায্য করেন। (অতএব এ অবস্থায় আপনার ভয়ের কোন কারণ নেই)।
এরূপ সান্ত্বনা দেয়ার পর খাদীজা (রাঃ) রাসূল ﷺ কে সাথে নিয়ে স্বীয় চাচাত ভাই ওয়ারাকা ইবনে নাওফেল এর নিকট গেলেন। যিনি জাহেলী যুগে ঈসায়ী ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি হিব্রু ভাষায় কিতাব লিখতেন। আল্লাহ যতটুকু চাইতেন তিনি ইঞ্জিল হতে ততটুকু হিব্রু ভাষায় লিখতেন। তিনি সেসময় খুব বৃদ্ধ হওয়ায় অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। খাদীজা (রাঃ) তাঁকে বললেন, হে চাচাত ভাই! আপনি আপনার ভাতিজার কথা শুনুন। তখন ওয়ারাকা ইবনে নাওফেল রাসূল ﷺ কে লক্ষ্য করে বললেন, হে ভাতিজা! তুমি কী দেখেছ? তখন রাসূল ﷺ তাঁকে সব কাহিনী খুলে বললেন। কাহিনী শুনার পর ওয়ারাকা ইবনে নাওফেল রাসূল ﷺ কে বললেন, ইনি তো সেই জিবরাঈল, যাকে আল্লাহ মূসা (আঃ) এর নিকট পাঠিয়েছিলেন। আফসোস! (তোমার নবুওয়াতের প্রচারকালে) যদি আমি ক্ষমতাশালী যুবক হতাম, আর যদি আমি সেদিন জীবিত থাকতাম, যেদিন তোমার জাতি তোমাকে দেশান্তরিত করে ছাড়বে! এ কথা শুনে রাসূল ﷺ আশ্চর্যান্বিত হয়ে বললেন, আমার দেশবাসী কি আমাকে বিতাড়িত করবে? উত্তরে তিনি বললেন, হ্যাঁ! তুমি সত্য দ্বীন নিয়ে প্রেরিত হয়েছ। তোমার ন্যায় যাঁরা পূর্বে এরূপ সত্য দ্বীন নিয়ে এসেছিলেন, তাঁদের সকলের সাথেই শত্রুতা করা হয়েছে। (আমি তোমাকে কথা দিলাম) যদি আমি সেদিন জীবিত থাকি, তাহলে অবশ্যই প্রবলভাবে তোমাকে সাহায্য করব। এ কাহিনীর অল্পদিন পরই ওয়ারাকা ইন্তেকাল করেন। এরপর (কিছু দিন) ওহী নাযিল হওয়া বন্ধ ছিল। (সহীহ বুখারী, হা/৩)
কিছু দিন পর আবার ধারাবাহিকভাবে কুরআন নাযিল শুরু হয় :
وَالضُّحٰى ‐ - وَاللَّيْلِ اِذَا سَجٰى ‐ - مَا وَدَّعَكَ رَبُّكَ وَمَا قَلٰى
কসম পূর্বাহ্নের এবং রাতের, যখন তা নিঝুম হয়। আপনার প্রতিপালক আপনাকে পরিত্যাগ করেননি এবং আপনার প্রতি বিরূপও হননি। (সূরা যোহা, ১-৩)
kv‡b byh~j : জুনদুব ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার সাময়িকভাবে জিবরাঈল (আঃ) নবী ﷺ এর কাছে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থাকেন। এতে জনৈকা কুরাইশ মহিলা বলল, তার শয়তানটি তাঁর কাছে আসতে বিলম্ব করছে। তখন সূরা যোহা নাযিল হয়। (সহীহ বুখারী, হা/১১২৫)
يَاۤ اَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ – قُمْ فَاَنْذِرْ – وَرَبَّكَ فَكَبِّرْ – وَثِيَابَكَ فَطَهِّرْ – وَالرُّجْزَ فَاهْجُرْ
‘‘হে বস্ত্রাচ্ছাদিত! উঠুন, আপনি লোকদেরকে সতর্ক করুন। আপনার প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন, আপনার পোষাক পবিত্র করুন এবং অপবিত্রতা দূর করুন।’’ (সূরা মুদ্দাস্সির, ১-৫)।
শানে নুযূল : জাবির ইবনে আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) ওহী বন্ধ থাকাকালীন অবস্থা প্রসঙ্গে বর্ণনা করেন, রাসূল ﷺ বলেন, ‘‘একদিন আমি পথ চলার সময় আকাশের দিক থেকে বিকট আওয়াজ শুনতে পেয়ে উপর দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলাম, যে ফেরেশতা হেরা গুহায় আমার নিকট এসেছিলেন সেই ফেরেশতা আসমান ও জমিনের মাঝখানে একটি চেয়ারে বসে আছেন। তাঁর এ অবস্থা দেখে আমি খুবই ভয় পেলাম। অতঃপর আমি ভয়ার্ত অবস্থায় বাড়ি ফিরে এসে বললাম, তোমরা আমাকে চাদর দ্বারা আবৃত করো, আমাকে চাদর দ্বারা আবৃত করো। তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতগুলো নাযিল করেন। এরপর থেকে পুরোদমে পর পর ওহী নাযিল হতে লাগল। (সহীহ বুখারী, হা/৪)
কুরআন নাযিল হয়েছে আরবি ভাষায় :
وَهٰذَا كِتَابٌ مُّصَدِّقٌ لِّسَانًا عَرَبِيًّا
এ কিতাব (পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের) সত্যতা প্রকাশকারী। এটা আরবি ভাষায় অবতীর্ণ করা হয়েছে। (সূরা আহকাফ- ১২)
وَكَذٰلِكَ اَنْزَلْنَاهُ حُكْمًا عَرَبِيًّا
এভাবেই আমি একে বিধানরূপে আরবি ভাষায় অবতীর্ণ করেছি। (সূরা রা‘দ- ৩৭)
প্রত্যেক নবীকে তাঁর জাতির ভাষায় পাঠানো হয় :
وَمَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ رَّسُولٍ اِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهٖ لِيُبَيِّنَ لَهُمْؕ فَيُضِلُّ اللهُ مَنْ يَّشَآءُ وَيَهْدِيْ مَنْ يَّشَآءُؕ وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
আমি প্রত্যেক রাসূলকেই তার স্বজাতির ভাষায় পাঠিয়েছি। তাদের নিকট পরিষ্কারভাবে এ ব্যাখ্যা দান করার জন্য যে, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিভ্রামত্ম করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন এবং তিনি মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা ইবরাহীম- ৪)
ব্যাখ্যা : আরবি ভাষায় কুরআন নাযিল করার অর্থ এ নয় যে, এটা শুধু আরবরাই বুঝবে। অন্যরা বুঝতে পারবে না। মানবজাতির ব্যাপক ও সার্বজনীন হেদায়াতের জন্য যাই পেশ করা হবে তা অবশ্যই মানবসমাজে প্রচলিত ভাষাগুলোর যে কোন একটিতেই পেশ করা হবে। অতঃপর এর হেদায়াত পেশকারী এটিকে যে জাতির ভাষায় নাযিল করছেন প্রথমে সে জাতিকে এর শিক্ষা দ্বারা পুরোপুরি প্রভাবিত করার চেষ্টা করবেন। তারপর এ জাতিই অন্যান্য জাতির কাছে এর শিক্ষা পৌঁছানোর মাধ্যম হিসেবে পরিণত হবে। কোন দাওয়াতকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সম্প্রসারিত করার জন্য এটি একটি বাস্তব ও স্বাভাবিক পদ্ধতি।
মুহাম্মাদ ﷺ ও তাঁর জাতির ভাষা ছিল আরবি :
فَاِنَّمَا يَسَّرْنَاهُ بِلِسَانِكَ لِتُبَشِّرَ بِهِ الْمُتَّقِيْنَ وَتُنْذِرَ بِهٖ قَوْمًا لُّدًّا
আমি কুরআনকে তোমার ভাষায় সহজ করে দিয়েছি, যাতে তুমি এর দ্বারা মুত্তাক্বীদেরকে সুসংবাদ দিতে পার এবং ঝগড়াটে সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে পার। (সূরা মারইয়াম- ৯৭)
বুঝার সুবিধার্থে আরবি ভাষায় অবতীর্ণ করা হয়েছে :
اِنَّا جَعَلْنَاهُ قُرْاٰنًا عَرَبِيًّا لَّعَلَّكُمْ تَعْقِلُوْنَ
আমি এটা আরবি ভাষায় কুরআনরূপে (অবতীর্ণ) করেছি, যাতে তোমরা বুঝতে পার। (সূরা যুখরুফ- ৩)
মানুষ যাতে উপদেশ গ্রহণ করতে পারে :
وَكَذٰلِكَ اَنْزَلْنَاهُ قُرْاٰنًا عَرَبِيًّا وَّصَرَّفْنَا فِيْهِ مِنَ الْوَعِيْدِ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُوْنَ اَوْ يُحْدِثُ لَهُمْ ذِكْرًا
এভাবেই আমি কুরআনকে আরবি ভাষায় অবতীর্ণ করেছি এবং তাতে বিশদভাবে বিবৃত করে দিয়েছি সতর্কবাণী, যাতে তারা ভয় করে অথবা তাদের জন্য এটা উপদেশবাণীতে পরিণত হয়। (সূরা ত্বা-হা- ১১৩)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ এরা নিজেদের গাফলতি থেকে সজাগ হবে, ভুলে যাওয়া শিক্ষাকে স্মরণ করবে এবং পথ ভুলে কোন পথে যাচ্ছে আর এর পরিণাম কী হবে- সে সম্পর্কে অনুভূতি জাগবে।
বিরোধীরা যাতে কোন অভিযোগ তুলতে না পারে :
وَلَوْ جَعَلْنَاهُ قُرْاٰنًا اَعْجَمِيًّا لَّقَالُوْا لَوْلَا فُصِّلَتْ اٰيَاتُهٗؕ اَ اَعْجَمِيٌّ وَّعَرَبِيٌّ ؕ قُلْ هُوَ لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا هُدًى وَّشِفَآءٌ
আমি যদি কুরআন অনারবি ভাষায় অবতীর্ণ করতাম তবে তারা অবশ্যই বলত, এর আয়াতগুলো কেন বিশদভাবে বর্ণনা করা হলো না? কী আশ্চর্য যে, এর ভাষা অনারবি অথচ রাসূল আরবি। বলো, মুমিনদের জন্য এটা পথপ্রদর্শক ও ব্যাধির প্রতিকার। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৪৪)
وَمَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ رَّسُولٍ اِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهٖ لِيُبَيِّنَ لَهُمْؕ فَيُضِلُّ اللهُ مَنْ يَّشَآءُ وَيَهْدِيْ مَنْ يَّشَآءُؕ وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
আমি প্রত্যেক রাসূলকেই তার স্বজাতির ভাষায় পাঠিয়েছি। তাদের নিকট পরিষ্কারভাবে এ ব্যাখ্যা দান করার জন্য যে, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিভ্রামত্ম করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন এবং তিনি মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা ইবরাহীম- ৪)
ব্যাখ্যা : আরবি ভাষায় কুরআন নাযিল করার অর্থ এ নয় যে, এটা শুধু আরবরাই বুঝবে। অন্যরা বুঝতে পারবে না। মানবজাতির ব্যাপক ও সার্বজনীন হেদায়াতের জন্য যাই পেশ করা হবে তা অবশ্যই মানবসমাজে প্রচলিত ভাষাগুলোর যে কোন একটিতেই পেশ করা হবে। অতঃপর এর হেদায়াত পেশকারী এটিকে যে জাতির ভাষায় নাযিল করছেন প্রথমে সে জাতিকে এর শিক্ষা দ্বারা পুরোপুরি প্রভাবিত করার চেষ্টা করবেন। তারপর এ জাতিই অন্যান্য জাতির কাছে এর শিক্ষা পৌঁছানোর মাধ্যম হিসেবে পরিণত হবে। কোন দাওয়াতকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সম্প্রসারিত করার জন্য এটি একটি বাস্তব ও স্বাভাবিক পদ্ধতি।
মুহাম্মাদ ﷺ ও তাঁর জাতির ভাষা ছিল আরবি :
فَاِنَّمَا يَسَّرْنَاهُ بِلِسَانِكَ لِتُبَشِّرَ بِهِ الْمُتَّقِيْنَ وَتُنْذِرَ بِهٖ قَوْمًا لُّدًّا
আমি কুরআনকে তোমার ভাষায় সহজ করে দিয়েছি, যাতে তুমি এর দ্বারা মুত্তাক্বীদেরকে সুসংবাদ দিতে পার এবং ঝগড়াটে সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে পার। (সূরা মারইয়াম- ৯৭)
বুঝার সুবিধার্থে আরবি ভাষায় অবতীর্ণ করা হয়েছে :
اِنَّا جَعَلْنَاهُ قُرْاٰنًا عَرَبِيًّا لَّعَلَّكُمْ تَعْقِلُوْنَ
আমি এটা আরবি ভাষায় কুরআনরূপে (অবতীর্ণ) করেছি, যাতে তোমরা বুঝতে পার। (সূরা যুখরুফ- ৩)
মানুষ যাতে উপদেশ গ্রহণ করতে পারে :
وَكَذٰلِكَ اَنْزَلْنَاهُ قُرْاٰنًا عَرَبِيًّا وَّصَرَّفْنَا فِيْهِ مِنَ الْوَعِيْدِ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُوْنَ اَوْ يُحْدِثُ لَهُمْ ذِكْرًا
এভাবেই আমি কুরআনকে আরবি ভাষায় অবতীর্ণ করেছি এবং তাতে বিশদভাবে বিবৃত করে দিয়েছি সতর্কবাণী, যাতে তারা ভয় করে অথবা তাদের জন্য এটা উপদেশবাণীতে পরিণত হয়। (সূরা ত্বা-হা- ১১৩)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ এরা নিজেদের গাফলতি থেকে সজাগ হবে, ভুলে যাওয়া শিক্ষাকে স্মরণ করবে এবং পথ ভুলে কোন পথে যাচ্ছে আর এর পরিণাম কী হবে- সে সম্পর্কে অনুভূতি জাগবে।
বিরোধীরা যাতে কোন অভিযোগ তুলতে না পারে :
وَلَوْ جَعَلْنَاهُ قُرْاٰنًا اَعْجَمِيًّا لَّقَالُوْا لَوْلَا فُصِّلَتْ اٰيَاتُهٗؕ اَ اَعْجَمِيٌّ وَّعَرَبِيٌّ ؕ قُلْ هُوَ لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا هُدًى وَّشِفَآءٌ
আমি যদি কুরআন অনারবি ভাষায় অবতীর্ণ করতাম তবে তারা অবশ্যই বলত, এর আয়াতগুলো কেন বিশদভাবে বর্ণনা করা হলো না? কী আশ্চর্য যে, এর ভাষা অনারবি অথচ রাসূল আরবি। বলো, মুমিনদের জন্য এটা পথপ্রদর্শক ও ব্যাধির প্রতিকার। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৪৪)
কুরআনের মধ্যে পরিবর্তন করার ক্ষমতা কারো নেই :
وَاتْلُ مَاۤ اُوْحِيَ اِلَيْكَ مِنْ كِتَابِ رَبِّكَؕ لَا مُبَدِّلَ لِكَلِمَاتِهٖ وَلَنْ تَجِدَ مِنْ دُوْنِهٖ مُلْتَحَدًا
তোমার প্রতিপালকের কিতাব থেকে যা তোমার প্রতি ওহী করা হয়েছে তা পাঠ করে শুনাও। তাঁর বাক্য পরিবর্তন করার ক্ষমতা কারো নেই। আর তুমি কখনই তাঁকে ব্যতীত অন্য কোন আশ্রয় খুঁজে পাবে না। (সূরা কাহফ- ২৭)
নবী ﷺ কুরআনের মধ্যে কোন পরিবর্তন করেননি :
قُلْ مَا يَكُوْنُ لِۤيْ اَنْ اُبَدِّلَهٗ مِنْ تِلْقَآءِ نَفْسِيْۚ اِنْ اَتَّبِعُ اِلَّا مَا يُوْحٰۤى اِلَيَّ اِنِّۤيْ اَخَافُ اِنْ عَصَيْتُ رَبِّيْ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيْمٍ
(হে নবী) আপনি বলুন, ‘নিজ হতে এটা বদলানো আমার কাজ নয়। আমি কেবল তারই অনুসরণ করি যা আমার প্রতি ওহী করা হয়। আমি আমার প্রতিপালকের অবাধ্যতা করলে অবশ্যই আমি মহাদিবসের শাস্তির আশঙ্কা করি। (সূরা ইউনুস- ১৫)
যা ওহী করা হতো তিনি ঠিক তা-ই প্রচার করতেন :
وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوٰى – - اِنْ هُوَ اِلَّا وَحْيٌ يُّوْحٰى
তিনি প্রবৃত্তি হতে কথা বলেন না। এটা তো এক ওহী, যা তাঁর প্রতি প্রত্যাদেশ করা হয়। (সূরা নাজম- ৩, ৪)
নবী ﷺ পরিবর্তন করলে আল্লাহ তাকেও শাস্তি দিতেন :
وَلَوْ تَقَوَّلَ عَلَيْنَا بَعْضَ الْاَقَاوِيْلِ – - لَاَخَذْنَا مِنْهُ بِالْيَمِيْنِ – - ثُمَّ لَقَطَعْنَا مِنْهُ الْوَتِيْنَ
যদি রাসূল নিজে কোন কথা বানিয়ে আমার কথা বলে চালিয়ে দিতেন, তবে অবশ্যই আমি তাঁর ডান হাত ধরে ফেলতাম অতঃপর তাঁর শাহরগ (শ্বাসনালী) কেটে দিতাম। (সূরা হাক্কাহ, ৪৪-৪৬)
কুরআনের সাথে বাতিলের সংমিশ্রণ সম্ভব নয় :
وَاِنَّهٗ لَكِتَابٌ عَزِيْزٌ – - لَا يَاْتِيْهِ الْبَاطِلُ مِنْ ۢبَيْنِ يَدَيْهِ وَلَا مِنْ خَلْفِهٖؕ تَنْزِيْلٌ مِّنْ حَكِيْمٍ حَمِيْدٍ
এটা অবশ্যই এক মহিমাময় গ্রন্থ। এর মধ্যে অগ্র ও পশ্চাৎ কোন দিক হতে মিথ্যা প্রবেশ করবে না। এটা প্রজ্ঞাবান ও প্রশংসিত আল্লাহর নিকট হতে অবতীর্ণ। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৪১, ৪২)
ব্যাখ্যা : বাতিলের অনুসারীরা এর বিরুদ্ধে যেসব চক্রান্ত করছে তার দ্বারা একে পরাভূত করা সম্ভব নয়। কেননা এর মধ্যে আছে সততার শক্তি, সত্য জ্ঞানের শক্তি, যুক্তি-প্রমাণের শক্তি, প্রেরণাকারী আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্বের শক্তি এবং উপস্থাপনকারী রাসূলের ব্যক্তিত্বের শক্তি। কেউ যদি মিথ্যা প্রচারের হাতিয়ার দিয়ে একে ব্যর্থ করে দিতে চায়, তাহলে তা সম্ভব হবে না। সামনের দিক থেকে বাতিল না আসতে পারার অর্থ হচ্ছে, কেউ যদি কুরআনের উপর সরাসরি আক্রমণ করে তার কোন কথা ভুল বা বাতিল প্রমাণ করতে চায়, তাহলে সে সফলকাম হতে পারবে না। আর পেছন দিক থেকে না আসতে পারার অর্থ হচ্ছে, কখনো এমন কোন সত্য প্রকাশ পাবে না, যা কুরআনে পেশকৃত সত্যের পরিপন্থী। এমন কোন জ্ঞান-বিজ্ঞান উদ্ভাবিত হতে পারে না, যা কুরআনে বর্ণিত জ্ঞান-বিজ্ঞানকে অস্বীকার করে। যে জিনিসকে এ গ্রন্থ ন্যায় ও সত্য বলে ঘোষণা করেছে তা কখনো বাতিল প্রমাণিত হবে না। আবার এর অর্থ এও হতে পারে যে, বাতিল সম্মুখ দিক থেকে এসে হামলা করুক বা প্রতারণামূলক পথে এসে আকস্মিকভাবে হামলা করুক, কুরআন যে দাওয়াত পেশ করছে, তাকে সে কোনভাবেই পরাজিত করতে পারবে না। বিরোধীদের সবরকম গোপন ও প্রকাশ্য চক্রান্ত থাকা সত্ত্বেও এর দাওয়াত প্রসার লাভ করবে এবং কেউ একে ব্যর্থ করতে পারবে না।
কুরআনের হেফাজতকারী স্বয়ং আল্লাহ :
اِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَاِنَّا لَهٗ لَحَافِظُوْنَ
আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই এর সংরক্ষক। (সূরা হিজর- ৯)
ব্যাখ্যা : পারিভাষিক অর্থে ‘যিকির’ বা বাণী শব্দটি কুরআন মাজীদে আল্লাহর বাণীর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। আর এ বাণী হচ্ছে উপদেশমালায় পরিপূর্ণ। পূর্ববর্তী নবীদের উপর যতগুলো কিতাব নাযিল হয়েছিল সেগুলো সবই ‘যিকির’ ছিল এবং এ কুরআন মাজীদও যিকির। যিকিরের অর্থ হচ্ছে- স্মরণ করিয়ে দেয়া, সতর্ক করা এবং উপদেশ দেয়া। আল্লাহ কুরআনের বিরোধীদেরকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, তোমরা এ বাণীর কোন ক্ষতি করতে পারবে- তা মনে করো না। কেননা এটি সরাসরি আমার হেফাজতে রয়েছে। ফলে তোমাদের চেষ্টায় একে বিলুপ্ত করা যাবে না। তোমরা একে ধামাচাপা দিতে চাইলেও দিতে পারবে না। তোমাদের আপত্তির ফলে এর মর্যাদাও কমে যাবে না। তোমরা ঠেকাতে চাইলেও এর দাওয়াতকে ঠেকাতে পারবে না। একে বিকৃত করা বা এর মধ্যে পরিবর্তন সাধন করার সুযোগও তোমরা কোন দিন পাবে না।
وَاتْلُ مَاۤ اُوْحِيَ اِلَيْكَ مِنْ كِتَابِ رَبِّكَؕ لَا مُبَدِّلَ لِكَلِمَاتِهٖ وَلَنْ تَجِدَ مِنْ دُوْنِهٖ مُلْتَحَدًا
তোমার প্রতিপালকের কিতাব থেকে যা তোমার প্রতি ওহী করা হয়েছে তা পাঠ করে শুনাও। তাঁর বাক্য পরিবর্তন করার ক্ষমতা কারো নেই। আর তুমি কখনই তাঁকে ব্যতীত অন্য কোন আশ্রয় খুঁজে পাবে না। (সূরা কাহফ- ২৭)
নবী ﷺ কুরআনের মধ্যে কোন পরিবর্তন করেননি :
قُلْ مَا يَكُوْنُ لِۤيْ اَنْ اُبَدِّلَهٗ مِنْ تِلْقَآءِ نَفْسِيْۚ اِنْ اَتَّبِعُ اِلَّا مَا يُوْحٰۤى اِلَيَّ اِنِّۤيْ اَخَافُ اِنْ عَصَيْتُ رَبِّيْ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيْمٍ
(হে নবী) আপনি বলুন, ‘নিজ হতে এটা বদলানো আমার কাজ নয়। আমি কেবল তারই অনুসরণ করি যা আমার প্রতি ওহী করা হয়। আমি আমার প্রতিপালকের অবাধ্যতা করলে অবশ্যই আমি মহাদিবসের শাস্তির আশঙ্কা করি। (সূরা ইউনুস- ১৫)
যা ওহী করা হতো তিনি ঠিক তা-ই প্রচার করতেন :
وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوٰى – - اِنْ هُوَ اِلَّا وَحْيٌ يُّوْحٰى
তিনি প্রবৃত্তি হতে কথা বলেন না। এটা তো এক ওহী, যা তাঁর প্রতি প্রত্যাদেশ করা হয়। (সূরা নাজম- ৩, ৪)
নবী ﷺ পরিবর্তন করলে আল্লাহ তাকেও শাস্তি দিতেন :
وَلَوْ تَقَوَّلَ عَلَيْنَا بَعْضَ الْاَقَاوِيْلِ – - لَاَخَذْنَا مِنْهُ بِالْيَمِيْنِ – - ثُمَّ لَقَطَعْنَا مِنْهُ الْوَتِيْنَ
যদি রাসূল নিজে কোন কথা বানিয়ে আমার কথা বলে চালিয়ে দিতেন, তবে অবশ্যই আমি তাঁর ডান হাত ধরে ফেলতাম অতঃপর তাঁর শাহরগ (শ্বাসনালী) কেটে দিতাম। (সূরা হাক্কাহ, ৪৪-৪৬)
কুরআনের সাথে বাতিলের সংমিশ্রণ সম্ভব নয় :
وَاِنَّهٗ لَكِتَابٌ عَزِيْزٌ – - لَا يَاْتِيْهِ الْبَاطِلُ مِنْ ۢبَيْنِ يَدَيْهِ وَلَا مِنْ خَلْفِهٖؕ تَنْزِيْلٌ مِّنْ حَكِيْمٍ حَمِيْدٍ
এটা অবশ্যই এক মহিমাময় গ্রন্থ। এর মধ্যে অগ্র ও পশ্চাৎ কোন দিক হতে মিথ্যা প্রবেশ করবে না। এটা প্রজ্ঞাবান ও প্রশংসিত আল্লাহর নিকট হতে অবতীর্ণ। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৪১, ৪২)
ব্যাখ্যা : বাতিলের অনুসারীরা এর বিরুদ্ধে যেসব চক্রান্ত করছে তার দ্বারা একে পরাভূত করা সম্ভব নয়। কেননা এর মধ্যে আছে সততার শক্তি, সত্য জ্ঞানের শক্তি, যুক্তি-প্রমাণের শক্তি, প্রেরণাকারী আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্বের শক্তি এবং উপস্থাপনকারী রাসূলের ব্যক্তিত্বের শক্তি। কেউ যদি মিথ্যা প্রচারের হাতিয়ার দিয়ে একে ব্যর্থ করে দিতে চায়, তাহলে তা সম্ভব হবে না। সামনের দিক থেকে বাতিল না আসতে পারার অর্থ হচ্ছে, কেউ যদি কুরআনের উপর সরাসরি আক্রমণ করে তার কোন কথা ভুল বা বাতিল প্রমাণ করতে চায়, তাহলে সে সফলকাম হতে পারবে না। আর পেছন দিক থেকে না আসতে পারার অর্থ হচ্ছে, কখনো এমন কোন সত্য প্রকাশ পাবে না, যা কুরআনে পেশকৃত সত্যের পরিপন্থী। এমন কোন জ্ঞান-বিজ্ঞান উদ্ভাবিত হতে পারে না, যা কুরআনে বর্ণিত জ্ঞান-বিজ্ঞানকে অস্বীকার করে। যে জিনিসকে এ গ্রন্থ ন্যায় ও সত্য বলে ঘোষণা করেছে তা কখনো বাতিল প্রমাণিত হবে না। আবার এর অর্থ এও হতে পারে যে, বাতিল সম্মুখ দিক থেকে এসে হামলা করুক বা প্রতারণামূলক পথে এসে আকস্মিকভাবে হামলা করুক, কুরআন যে দাওয়াত পেশ করছে, তাকে সে কোনভাবেই পরাজিত করতে পারবে না। বিরোধীদের সবরকম গোপন ও প্রকাশ্য চক্রান্ত থাকা সত্ত্বেও এর দাওয়াত প্রসার লাভ করবে এবং কেউ একে ব্যর্থ করতে পারবে না।
কুরআনের হেফাজতকারী স্বয়ং আল্লাহ :
اِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَاِنَّا لَهٗ لَحَافِظُوْنَ
আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই এর সংরক্ষক। (সূরা হিজর- ৯)
ব্যাখ্যা : পারিভাষিক অর্থে ‘যিকির’ বা বাণী শব্দটি কুরআন মাজীদে আল্লাহর বাণীর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। আর এ বাণী হচ্ছে উপদেশমালায় পরিপূর্ণ। পূর্ববর্তী নবীদের উপর যতগুলো কিতাব নাযিল হয়েছিল সেগুলো সবই ‘যিকির’ ছিল এবং এ কুরআন মাজীদও যিকির। যিকিরের অর্থ হচ্ছে- স্মরণ করিয়ে দেয়া, সতর্ক করা এবং উপদেশ দেয়া। আল্লাহ কুরআনের বিরোধীদেরকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, তোমরা এ বাণীর কোন ক্ষতি করতে পারবে- তা মনে করো না। কেননা এটি সরাসরি আমার হেফাজতে রয়েছে। ফলে তোমাদের চেষ্টায় একে বিলুপ্ত করা যাবে না। তোমরা একে ধামাচাপা দিতে চাইলেও দিতে পারবে না। তোমাদের আপত্তির ফলে এর মর্যাদাও কমে যাবে না। তোমরা ঠেকাতে চাইলেও এর দাওয়াতকে ঠেকাতে পারবে না। একে বিকৃত করা বা এর মধ্যে পরিবর্তন সাধন করার সুযোগও তোমরা কোন দিন পাবে না।
মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসার জন্য :
كِتَابٌ اَنْزَلْنَاهُ اِلَيْكَ لِتُخْرِجَ النَّاسَ مِنَ الظُّلُمَاتِ اِلَى النُّوْرِ بِاِذْنِ رَبِّهِمْ اِلٰى صِرَاطِ الْعَزِيْزِ الْحَمِيْدِ
এ কিতাব তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি যেন তুমি মানবজাতিকে তাদের প্রতিপালকের নির্দেশক্রমে অন্ধকার হতে আলোর দিকে বের করে আনতে পার; মহাপরাক্রমশালী ও প্রশংসিত আল্লাহর পথে। (সূরা ইবরাহীম- ১)
هُوَ الَّذِيْ يُنَزِّلُ عَلٰى عَبْدِهٖۤ اٰيَاتٍ ۢبَيِّنَاتٍ لِّيُخْرِجَكُمْ مِّنَ الظُّلُمَاتِ اِلَى النُّوْرِؕ وَاِنَّ اللهَ بِكُمْ لَرَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ
তিনিই তাঁর বান্দার প্রতি সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ অবতীর্ণ করেছেন, যাতে তিনি তোমাদেরকে অন্ধকার হতে আলোর দিকে বের করে আনতে পারেন। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি করুণাময় ও পরম দয়ালু। (সূরা হাদীদ- ৯)
ব্যাখ্যা : কুরআনের মধ্যে আছে অন্তর্দৃষ্টির আলো। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, যারা একে মেনে নেয় তারা সঠিক পথ পেয়ে যায়। অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে আনার অর্থ হচ্ছে, শয়তানের পথ থেকে সরিয়ে আল্লাহর পথে নিয়ে আসা। অন্য কথায়, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে নেই সে আসলে অজ্ঞতা ও মূর্খতার অন্ধকারে বিভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে। সে নিজেকে যতই উন্নত চিন্তার অধিকারী এবং জ্ঞানী মনে করুক না কেন তাতে আসল অবস্থার কোন পরিবর্তন হয় না। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আল্লাহর পথের সন্ধান পেয়েছে, একজন অশিক্ষিত লোক হলেও সে আসলে জ্ঞানের আলোর রাজ্যে পৌঁছে গেছে।
মানুষকে সঠিক পথের সন্ধান দেয়ার জন্য :
كَذٰلِكَ يُبَيِّنُ اللهُ لَكُمْ اٰيَاتِهٖ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ
এভাবে আল্লাহ তাঁর নিদর্শনসমূহ তোমাদের সামনে বর্ণনা করেন, যাতে করে তোমরা হেদায়াত লাভ করতে পার। (সূরা আলে ইমরান- ১০৩)
মানুষকে পথভ্রষ্টতার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য :
يُبَيِّنُ اللهُ لَكُمْ اَنْ تَضِلُّوْاؕ وَاللهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ
তোমরা পথভ্রষ্ট হবে- (এ আশঙ্কায়) আল্লাহ তোমাদেরকে স্পষ্টভাবে (সবকিছু) জানিয়ে দিয়েছেন; আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে অবহিত। (সূরা নিসা- ১৭৬)
يٰسٓ ‐ وَالْقُرْاٰنِ الْحَكِيْمِ – - اِنَّكَ لَمِنَ الْمُرْسَلِيْنَ -‐ عَلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ – -تَنْزِيْلَ الْعَزِيْزِ الرَّحِيْمِ – - لِتُنْذِرَ قَوْمًا مَّاۤ اُنْذِرَ اٰبَآؤُهُمْ فَهُمْ غَافِلُوْنَ
ইয়া-সীন। বিজ্ঞানময় কুরআনের শপথ। নিশ্চয় আপনি প্রেরিত রাসূলদের অন্তর্ভুক্ত। আপনি সরলসঠিক পথের উপর আছেন। এ কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে প্রবল প্রতাপশালী ও পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে। যেন আপনি এমন লোকদেরকে সতর্ক করেন, যাদের পূর্বপুরুষদেরকে সতর্ক করা হয়নি, ফলে তারা গাফিল রয়ে গেছে। (সূরা ইয়াসীন, ১-৬)
মানুষের মাঝে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার জন্য :
اِنَّاۤ اَنْزَلْنَاۤ اِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ لِتَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ بِمَاۤ اَرَاكَ اللهُ
আমি তো তোমার প্রতি সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যাতে করে আল্লাহ তোমাকে যা জানিয়েছেন সে অনুসারে মানুষের মধ্যে মীমাংসা করে দিতে পার। (সূরা নিসা- ১০৫)
বিভিন্ন মতভেদের মধ্যে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছার জন্য :
وَمَاۤ اَنْزَلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ اِلَّا لِتُبَيِّنَ لَهُمُ الَّذِى اخْتَلَفُوْا فِيْهِ وَهُدًى وَّرَحْمَةً لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ
আমি তোমার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছি- যারা এ বিষয়ে মতভেদ করে তাদেরকে সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য; আর এটা মুমিনদের জন্য পথনির্দেশ ও রহমত। (সূরা নাহল- ৬৪)
পাপের পথ কোনটি তা পরিষ্কার করে দেয়ার জন্য :
وَكَذٰلِكَ نُفَصِّلُ الْاٰيَاتِ وَلِتَسْتَبِيْنَ سَبِيْلُ الْمُجْرِمِيْنَ
এভাবে আমি আয়াতসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করি; যাতে করে অপরাধীদের পথ স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়ে যায়। (সূরা আন‘আম- ৫৫)
মানুষকে আখিরাতের ব্যাপারে সতর্ক করার জন্য :
وَكَذٰلِكَ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ قُرْاٰنًا عَرَبِيًّا لِّتُنْذِرَ اُمَّ الْقُرٰى وَمَنْ حَوْلَهَا وَتُنْذِرَ يَوْمَ الْجَمْعِ لَا رَيْبَ فِيْهِ
এভাবে আমি তোমার প্রতি আরবি ভাষায় কুরআন অবতীর্ণ করেছি, যেন তুমি সতর্ক করতে পার মক্কা ও তার আশপাশের জনগণকে এবং সতর্ক করতে পার কিয়ামত দিবস সম্পর্কে, যে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। (সূরা শূরা- ৭)
يُلْقِى الرُّوْحَ مِنْ اَمْرِهٖ عَلٰى مَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهٖ لِيُنْذِرَ يَوْمَ التَّلَاقِ
তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তার প্রতি স্বীয় আদেশসহ রূহ (ওহী) প্রেরণ করেন, যেন সে (মানুষদেরকে) সাক্ষাৎ দিবস (কিয়ামত) সম্পর্কে সতর্ক করতে পারে। (সূরা মু’মিন- ১৫)
ব্যাখ্যা : নবুওয়াতের এ রূহ বা প্রাণসত্তায় উজ্জীবিত হয়েই নবীগণ দাওয়াতী কাজ করেন ও কথা বলেন। স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক জীবনে প্রাণের যে মর্যাদা এ ওহী ও নবুওয়াতী প্রাণসত্তা নৈতিক জীবনে একই মর্যাদার অধিকারী। তাই কুরআনের বিভিন্ন স্থানে তার জন্য ‘রূহ’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর মাধ্যমে নবী ﷺ সেসব লোককে খারাপ পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করে দেন, যারা আল্লাহর সাথে কুফরী করেছে এবং আল্লাহ ছাড়া অন্যদের দাসত্ব করে নিজের প্রতি যুলুম করেছে।
সৎকর্মশীলদেরকে সুসংবাদ দেয়া ও পাপীদেরকে ভয় দেখানোর জন্য :
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْۤ اَنْزَلَ عَلٰى عَبْدِهِ الْكِتَابَ وَلَمْ يَجْعَلْ لَّهٗ عِوَجًا – - قَيِّمًا لِّيُنْذِرَ بَاْسًا شَدِيْدًا مِّنْ لَّدُنْهُ وَيُبَشِّرَ الْمُؤْمِنِيْنَ الَّذِيْنَ يَعْمَلُوْنَ الصَّالِحَاتِ اَنَّ لَهُمْ اَجْرًا حَسَنًا
সমসত্ম প্রশংসা আল্লাহর, যিনি এ কিতাব তাঁর বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছেন এবং তাতে কোন বক্রতা রাখেননি। তিনি একে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন তাঁর কঠিন শাসিত্ম সম্পর্কে সতর্ক করার জন্য এবং সৎকর্মশীল মুমিনদেরকে এ সুসংবাদ দেয়ার জন্য যে, তাদের জন্য রয়েছে উত্তম পুরস্কার। (সূরা কাহফ- ১, ২)
ব্যাখ্যা : এ কিতাব সুসংবাদ দানকারী ও ভীতিপ্রদর্শনকারী। একে মেনে চলার ফলাফল অত্যন্ত শুভ এবং না মানার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ ও ধ্বংসের কারণ। এ ধরনের গ্রন্থকে কেবল কোন নির্বোধই উপেক্ষা করতে পারে।
পরকালে মানুষের অভিযোগ তুলার পথ বন্ধ করে দেয়ার জন্য :
وَهٰذَا كِتَابٌ اَنْزَلْنَاهُ مُبَارَكٌ فَاتَّبِعُوْهُ وَاتَّقُوْا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ – - اَنْ تَقُوْلُوْاۤ اِنَّمَاۤ اُنْزِلَ الْكِتَابُ عَلٰى طَآئِفَتَيْنِ مِنْ قَبْلِنَا وَاِنْ كُنَّا عَنْ دِرَاسَتِهِمْ لَغَافِلِيْنَ – - اَوْ تَقُوْلُوْا لَوْ اَنَّاۤ اُنْزِلَ عَلَيْنَا الْكِتَابُ لَكُنَّاۤ اَهْدٰى مِنْهُمْ ۚ فَقَدْ جَآءَكُمْ بَيِّنَةٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَهُدًى وَّرَحْمَةٌۚ فَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ كَذَّبَ بِاٰيَاتِ اللهِ وَصَدَفَ عَنْهَاؕ سَنَجْزِى الَّذِيْنَ يَصْدِفُوْنَ عَنْ اٰيَاتِنَا سُوْٓءَ الْعَذَابِ بِمَا كَانُوْا يَصْدِفُوْنَ
আমি এ কিতাব নাযিল করেছি যা কল্যাণময়। সুতরাং তার অনুসরণ করো এবং সাবধান হও, হয়তো তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করা হবে। যাতে করে পরবর্তীতে এ কথা বলতে না পার যে, ‘কিতাব তো শুধু আমাদের পূর্বের দু’সম্প্রদায়ের প্রতিই অবতীর্ণ হয়েছিল; আর আমরা তাদের পাঠ সম্বন্ধে গাফিল ছিলাম’। কিংবা তোমরা এ কথাও বলতে না পার যে, ‘যদি আমাদের প্রতি কিতাব অবতীর্ণ হতো, তাহলে আমরা তাদের চেয়ে অধিক হেদায়াতপ্রাপ্ত হতাম। সুতরাং এখন তোমাদের নিকট তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে স্পষ্ট প্রমাণ, হেদায়াত ও রহমত এসেছে। অতঃপর যে ব্যক্তি আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে প্রত্যাখ্যান করবে এবং তা হতে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? আর যারা আমার নিদর্শনসমূহ হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়, অচিরেই আমি তাদেরকে তাদের এ জঘন্য আচরণের জন্য নিকৃষ্ট শাস্তি দেব। (সূরা আন‘আম, ১৫৫-১৫৭)
يُلْقِى الرُّوْحَ مِنْ اَمْرِهٖ عَلٰى مَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهٖ لِيُنْذِرَ يَوْمَ التَّلَاقِ
তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তার প্রতি স্বীয় আদেশসহ রূহ (ওহী) প্রেরণ করেন, যেন সে (মানুষদেরকে) সাক্ষাৎ দিবস (কিয়ামত) সম্পর্কে সতর্ক করতে পারে। (সূরা মু’মিন- ১৫)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে তাঁর মুকাবিলায় এ মর্মে প্রতিবাদ জানানোর সুযোগ দিতে চান না যে, আপনি প্রকৃত সত্য সম্পর্কে আমাদেরকে অবগত করেননি এবং আমাদেরকে সঠিক পথ সম্পর্কে জানানোর কোন ব্যবস্থাও করেননি। ফলে অজ্ঞতাবশত আমরা যখন ভুল পথে চলতে শুরু করেছি অমনি আমাদেরকে পাকড়াও করতে শুরু করেছেন। এ যুক্তি প্রদর্শনের পথ রোধ করার জন্য আল্লাহ নবী পাঠিয়েছেন এবং কিতাব নাযিল করেছেন। এভাবে জিন ও মানবজাতিকে সত্যপথ সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে অবগত করেছেন। এরপরও লোকেরা ভুল পথে চললে এবং আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দিলে- এর যাবতীয় দায়-দায়িত্ব তাদের উপর বর্তায়, আল্লাহর উপর নয়।
كِتَابٌ اَنْزَلْنَاهُ اِلَيْكَ لِتُخْرِجَ النَّاسَ مِنَ الظُّلُمَاتِ اِلَى النُّوْرِ بِاِذْنِ رَبِّهِمْ اِلٰى صِرَاطِ الْعَزِيْزِ الْحَمِيْدِ
এ কিতাব তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি যেন তুমি মানবজাতিকে তাদের প্রতিপালকের নির্দেশক্রমে অন্ধকার হতে আলোর দিকে বের করে আনতে পার; মহাপরাক্রমশালী ও প্রশংসিত আল্লাহর পথে। (সূরা ইবরাহীম- ১)
هُوَ الَّذِيْ يُنَزِّلُ عَلٰى عَبْدِهٖۤ اٰيَاتٍ ۢبَيِّنَاتٍ لِّيُخْرِجَكُمْ مِّنَ الظُّلُمَاتِ اِلَى النُّوْرِؕ وَاِنَّ اللهَ بِكُمْ لَرَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ
তিনিই তাঁর বান্দার প্রতি সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ অবতীর্ণ করেছেন, যাতে তিনি তোমাদেরকে অন্ধকার হতে আলোর দিকে বের করে আনতে পারেন। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি করুণাময় ও পরম দয়ালু। (সূরা হাদীদ- ৯)
ব্যাখ্যা : কুরআনের মধ্যে আছে অন্তর্দৃষ্টির আলো। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, যারা একে মেনে নেয় তারা সঠিক পথ পেয়ে যায়। অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে আনার অর্থ হচ্ছে, শয়তানের পথ থেকে সরিয়ে আল্লাহর পথে নিয়ে আসা। অন্য কথায়, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে নেই সে আসলে অজ্ঞতা ও মূর্খতার অন্ধকারে বিভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে। সে নিজেকে যতই উন্নত চিন্তার অধিকারী এবং জ্ঞানী মনে করুক না কেন তাতে আসল অবস্থার কোন পরিবর্তন হয় না। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আল্লাহর পথের সন্ধান পেয়েছে, একজন অশিক্ষিত লোক হলেও সে আসলে জ্ঞানের আলোর রাজ্যে পৌঁছে গেছে।
মানুষকে সঠিক পথের সন্ধান দেয়ার জন্য :
كَذٰلِكَ يُبَيِّنُ اللهُ لَكُمْ اٰيَاتِهٖ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ
এভাবে আল্লাহ তাঁর নিদর্শনসমূহ তোমাদের সামনে বর্ণনা করেন, যাতে করে তোমরা হেদায়াত লাভ করতে পার। (সূরা আলে ইমরান- ১০৩)
মানুষকে পথভ্রষ্টতার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য :
يُبَيِّنُ اللهُ لَكُمْ اَنْ تَضِلُّوْاؕ وَاللهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ
তোমরা পথভ্রষ্ট হবে- (এ আশঙ্কায়) আল্লাহ তোমাদেরকে স্পষ্টভাবে (সবকিছু) জানিয়ে দিয়েছেন; আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে অবহিত। (সূরা নিসা- ১৭৬)
يٰسٓ ‐ وَالْقُرْاٰنِ الْحَكِيْمِ – - اِنَّكَ لَمِنَ الْمُرْسَلِيْنَ -‐ عَلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ – -تَنْزِيْلَ الْعَزِيْزِ الرَّحِيْمِ – - لِتُنْذِرَ قَوْمًا مَّاۤ اُنْذِرَ اٰبَآؤُهُمْ فَهُمْ غَافِلُوْنَ
ইয়া-সীন। বিজ্ঞানময় কুরআনের শপথ। নিশ্চয় আপনি প্রেরিত রাসূলদের অন্তর্ভুক্ত। আপনি সরলসঠিক পথের উপর আছেন। এ কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে প্রবল প্রতাপশালী ও পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে। যেন আপনি এমন লোকদেরকে সতর্ক করেন, যাদের পূর্বপুরুষদেরকে সতর্ক করা হয়নি, ফলে তারা গাফিল রয়ে গেছে। (সূরা ইয়াসীন, ১-৬)
মানুষের মাঝে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার জন্য :
اِنَّاۤ اَنْزَلْنَاۤ اِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ لِتَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ بِمَاۤ اَرَاكَ اللهُ
আমি তো তোমার প্রতি সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যাতে করে আল্লাহ তোমাকে যা জানিয়েছেন সে অনুসারে মানুষের মধ্যে মীমাংসা করে দিতে পার। (সূরা নিসা- ১০৫)
বিভিন্ন মতভেদের মধ্যে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছার জন্য :
وَمَاۤ اَنْزَلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ اِلَّا لِتُبَيِّنَ لَهُمُ الَّذِى اخْتَلَفُوْا فِيْهِ وَهُدًى وَّرَحْمَةً لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ
আমি তোমার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছি- যারা এ বিষয়ে মতভেদ করে তাদেরকে সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য; আর এটা মুমিনদের জন্য পথনির্দেশ ও রহমত। (সূরা নাহল- ৬৪)
পাপের পথ কোনটি তা পরিষ্কার করে দেয়ার জন্য :
وَكَذٰلِكَ نُفَصِّلُ الْاٰيَاتِ وَلِتَسْتَبِيْنَ سَبِيْلُ الْمُجْرِمِيْنَ
এভাবে আমি আয়াতসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করি; যাতে করে অপরাধীদের পথ স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়ে যায়। (সূরা আন‘আম- ৫৫)
মানুষকে আখিরাতের ব্যাপারে সতর্ক করার জন্য :
وَكَذٰلِكَ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ قُرْاٰنًا عَرَبِيًّا لِّتُنْذِرَ اُمَّ الْقُرٰى وَمَنْ حَوْلَهَا وَتُنْذِرَ يَوْمَ الْجَمْعِ لَا رَيْبَ فِيْهِ
এভাবে আমি তোমার প্রতি আরবি ভাষায় কুরআন অবতীর্ণ করেছি, যেন তুমি সতর্ক করতে পার মক্কা ও তার আশপাশের জনগণকে এবং সতর্ক করতে পার কিয়ামত দিবস সম্পর্কে, যে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। (সূরা শূরা- ৭)
يُلْقِى الرُّوْحَ مِنْ اَمْرِهٖ عَلٰى مَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهٖ لِيُنْذِرَ يَوْمَ التَّلَاقِ
তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তার প্রতি স্বীয় আদেশসহ রূহ (ওহী) প্রেরণ করেন, যেন সে (মানুষদেরকে) সাক্ষাৎ দিবস (কিয়ামত) সম্পর্কে সতর্ক করতে পারে। (সূরা মু’মিন- ১৫)
ব্যাখ্যা : নবুওয়াতের এ রূহ বা প্রাণসত্তায় উজ্জীবিত হয়েই নবীগণ দাওয়াতী কাজ করেন ও কথা বলেন। স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক জীবনে প্রাণের যে মর্যাদা এ ওহী ও নবুওয়াতী প্রাণসত্তা নৈতিক জীবনে একই মর্যাদার অধিকারী। তাই কুরআনের বিভিন্ন স্থানে তার জন্য ‘রূহ’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর মাধ্যমে নবী ﷺ সেসব লোককে খারাপ পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করে দেন, যারা আল্লাহর সাথে কুফরী করেছে এবং আল্লাহ ছাড়া অন্যদের দাসত্ব করে নিজের প্রতি যুলুম করেছে।
সৎকর্মশীলদেরকে সুসংবাদ দেয়া ও পাপীদেরকে ভয় দেখানোর জন্য :
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْۤ اَنْزَلَ عَلٰى عَبْدِهِ الْكِتَابَ وَلَمْ يَجْعَلْ لَّهٗ عِوَجًا – - قَيِّمًا لِّيُنْذِرَ بَاْسًا شَدِيْدًا مِّنْ لَّدُنْهُ وَيُبَشِّرَ الْمُؤْمِنِيْنَ الَّذِيْنَ يَعْمَلُوْنَ الصَّالِحَاتِ اَنَّ لَهُمْ اَجْرًا حَسَنًا
সমসত্ম প্রশংসা আল্লাহর, যিনি এ কিতাব তাঁর বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছেন এবং তাতে কোন বক্রতা রাখেননি। তিনি একে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন তাঁর কঠিন শাসিত্ম সম্পর্কে সতর্ক করার জন্য এবং সৎকর্মশীল মুমিনদেরকে এ সুসংবাদ দেয়ার জন্য যে, তাদের জন্য রয়েছে উত্তম পুরস্কার। (সূরা কাহফ- ১, ২)
ব্যাখ্যা : এ কিতাব সুসংবাদ দানকারী ও ভীতিপ্রদর্শনকারী। একে মেনে চলার ফলাফল অত্যন্ত শুভ এবং না মানার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ ও ধ্বংসের কারণ। এ ধরনের গ্রন্থকে কেবল কোন নির্বোধই উপেক্ষা করতে পারে।
পরকালে মানুষের অভিযোগ তুলার পথ বন্ধ করে দেয়ার জন্য :
وَهٰذَا كِتَابٌ اَنْزَلْنَاهُ مُبَارَكٌ فَاتَّبِعُوْهُ وَاتَّقُوْا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ – - اَنْ تَقُوْلُوْاۤ اِنَّمَاۤ اُنْزِلَ الْكِتَابُ عَلٰى طَآئِفَتَيْنِ مِنْ قَبْلِنَا وَاِنْ كُنَّا عَنْ دِرَاسَتِهِمْ لَغَافِلِيْنَ – - اَوْ تَقُوْلُوْا لَوْ اَنَّاۤ اُنْزِلَ عَلَيْنَا الْكِتَابُ لَكُنَّاۤ اَهْدٰى مِنْهُمْ ۚ فَقَدْ جَآءَكُمْ بَيِّنَةٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَهُدًى وَّرَحْمَةٌۚ فَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ كَذَّبَ بِاٰيَاتِ اللهِ وَصَدَفَ عَنْهَاؕ سَنَجْزِى الَّذِيْنَ يَصْدِفُوْنَ عَنْ اٰيَاتِنَا سُوْٓءَ الْعَذَابِ بِمَا كَانُوْا يَصْدِفُوْنَ
আমি এ কিতাব নাযিল করেছি যা কল্যাণময়। সুতরাং তার অনুসরণ করো এবং সাবধান হও, হয়তো তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করা হবে। যাতে করে পরবর্তীতে এ কথা বলতে না পার যে, ‘কিতাব তো শুধু আমাদের পূর্বের দু’সম্প্রদায়ের প্রতিই অবতীর্ণ হয়েছিল; আর আমরা তাদের পাঠ সম্বন্ধে গাফিল ছিলাম’। কিংবা তোমরা এ কথাও বলতে না পার যে, ‘যদি আমাদের প্রতি কিতাব অবতীর্ণ হতো, তাহলে আমরা তাদের চেয়ে অধিক হেদায়াতপ্রাপ্ত হতাম। সুতরাং এখন তোমাদের নিকট তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে স্পষ্ট প্রমাণ, হেদায়াত ও রহমত এসেছে। অতঃপর যে ব্যক্তি আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে প্রত্যাখ্যান করবে এবং তা হতে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? আর যারা আমার নিদর্শনসমূহ হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়, অচিরেই আমি তাদেরকে তাদের এ জঘন্য আচরণের জন্য নিকৃষ্ট শাস্তি দেব। (সূরা আন‘আম, ১৫৫-১৫৭)
يُلْقِى الرُّوْحَ مِنْ اَمْرِهٖ عَلٰى مَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهٖ لِيُنْذِرَ يَوْمَ التَّلَاقِ
তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তার প্রতি স্বীয় আদেশসহ রূহ (ওহী) প্রেরণ করেন, যেন সে (মানুষদেরকে) সাক্ষাৎ দিবস (কিয়ামত) সম্পর্কে সতর্ক করতে পারে। (সূরা মু’মিন- ১৫)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে তাঁর মুকাবিলায় এ মর্মে প্রতিবাদ জানানোর সুযোগ দিতে চান না যে, আপনি প্রকৃত সত্য সম্পর্কে আমাদেরকে অবগত করেননি এবং আমাদেরকে সঠিক পথ সম্পর্কে জানানোর কোন ব্যবস্থাও করেননি। ফলে অজ্ঞতাবশত আমরা যখন ভুল পথে চলতে শুরু করেছি অমনি আমাদেরকে পাকড়াও করতে শুরু করেছেন। এ যুক্তি প্রদর্শনের পথ রোধ করার জন্য আল্লাহ নবী পাঠিয়েছেন এবং কিতাব নাযিল করেছেন। এভাবে জিন ও মানবজাতিকে সত্যপথ সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে অবগত করেছেন। এরপরও লোকেরা ভুল পথে চললে এবং আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দিলে- এর যাবতীয় দায়-দায়িত্ব তাদের উপর বর্তায়, আল্লাহর উপর নয়।
কুরআনের সত্যতার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই :
ذٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ فِيْهِ هُدًى لِّلْمُتَّقِيْنَ
এটা ঐ গ্রন্থ, যার মধ্যে কোন সন্দেহ নেই; আর এটা মুত্তাক্বীদের জন্য হেদায়াতস্বরূপ। (সূরা বাক্বারা- ২)
يُلْقِى الرُّوْحَ مِنْ اَمْرِهٖ عَلٰى مَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهٖ لِيُنْذِرَ يَوْمَ التَّلَاقِ
তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তার প্রতি স্বীয় আদেশসহ রূহ (ওহী) প্রেরণ করেন, যেন সে (মানুষদেরকে) সাক্ষাৎ দিবস (কিয়ামত) সম্পর্কে সতর্ক করতে পারে। (সূরা মু’মিন- ১৫)
ব্যাখ্যা : এ কুরআন এমন একটি গ্রন্থ, যা সম্পূর্ণটাই নির্ভুল ও সত্য জ্ঞানে সমৃদ্ধ। এর রচয়িতা হচ্ছেন এমন এক মহান সত্তা, যিনি সমস্ত তত্ত্ব ও সত্যের জ্ঞান রাখেন। কাজেই এর মধ্যে সন্দেহের কোন অবকাশই নেই।
وَمَا كَانَ هٰذَا الْقُرْاٰنُ اَنْ يُّفْتَرٰى مِنْ دُوْنِ اللهِ وَلٰكِنْ تَصْدِيْقَ الَّذِيْ بَيْنَ يَدَيْهِ وَتَفْصِيْلَ الْكِتَابِ لَا رَيْبَ فِيْهِ مِنْ رَّبِّ الْعَالَمِيْنَ
এ কুরআন আল্লাহ ব্যতীত অপর কারো রচনা নয়। পক্ষান্তরে এর পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে এটা তার সমর্থন করে এবং তা বিধানসমূহের বিশদ ব্যাখ্যা। এটা জগতসমূহের প্রতিপালকের পক্ষ হতে (অবতীর্ণ হয়েছে), এতে কোন সন্দেহ নেই। (সূরা ইউনুস- ৩৭)
আল্লাহ সন্দেহ করতে নিষেধ করেছেন :
اَفَغَيْرَ اللهِ اَبْتَغِيْ حَكَمًا وَّهُوَ الَّذِيْۤ اَنْزَلَ اِلَيْكُمُ الْكِتَابَ مُفَصَّلًاؕ وَالَّذِيْنَ اٰتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَعْلَمُوْنَ اَنَّهٗ مُنَزَّلٌ مِّنْ رَّبِّكَ بِالْحَقِّ فَلَا تَكُوْنَنَّ مِنَ الْمُمْتَرِيْنَ
বলো, ‘তবে কি আমি আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে বিচারক মানব, যদিও তিনি তোমাদের প্রতি সুস্পষ্ট কিতাব অবতীর্ণ করেছেন!’ আর আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছি তারা জানে যে, তা তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে সত্যসহ অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তুমি সন্দেহকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সূরা আন‘আম- ১১৪)
কুরআন যে সত্য তা জ্ঞানীরা ভালোভাবে জানে :
وَيَرَى الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْعِلْمَ الَّذِۤيْ اُنْزِلَ اِلَيْكَ مِنْ رَّبِّكَ هُوَ الْحَقَّ وَيَهْدِيْۤ اِلٰى صِرَاطِ الْعَزِيْزِ الْحَمِيْدِ
যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে তারা জানে যে, আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা সত্য। আর এটি মহাপরাক্রমশালী ও প্রশংসিত আল্লাহর (দিকেই) পথপ্রদর্শন করে। (সূরা সাবা- ৬)
اَفَمَنْ يَّعْلَمُ اَنَّمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكَ مِنْ رَّبِّكَ الْحَقُّ كَمَنْ هُوَ اَعْمٰىؕ اِنَّمَا يَتَذَكَّرُ اُولُو الْاَ لْبَابِ
তোমার প্রতিপালক হতে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, যে ব্যক্তি তা সত্য বলে জানে- সে আর অন্ধ কি সমান? নিশ্চয় কেবল বিবেকবান ব্যক্তিগণই উপদেশ গ্রহণ করে। (সূরা রা’দ- ১৯)
কুরআন সম্পর্কে আল্লাহ ও ফেরেশতাদের সাক্ষ্য প্রদান :
لٰكِنِ اللهُ يَشْهَدُ بِمَاۤ اَنْزَلَ اِلَيْكَ اَنْزَلَهٗ بِعِلْمِهٖۚ وَالْمَلَآئِكَةُ يَشْهَدُوْنَ وَكَفٰى بِاللهِ شَهِيْدًا
আল্লাহ সাক্ষ্য দেন যে, তিনি তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছেন তা তাঁর নিজ জ্ঞানেই অবতীর্ণ করেছেন এবং ফেরেশতাগণও এর সাক্ষ্য দেয়। আর সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। (সূরা নিসা- ১৬৬)
ذٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ فِيْهِ هُدًى لِّلْمُتَّقِيْنَ
এটা ঐ গ্রন্থ, যার মধ্যে কোন সন্দেহ নেই; আর এটা মুত্তাক্বীদের জন্য হেদায়াতস্বরূপ। (সূরা বাক্বারা- ২)
يُلْقِى الرُّوْحَ مِنْ اَمْرِهٖ عَلٰى مَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهٖ لِيُنْذِرَ يَوْمَ التَّلَاقِ
তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তার প্রতি স্বীয় আদেশসহ রূহ (ওহী) প্রেরণ করেন, যেন সে (মানুষদেরকে) সাক্ষাৎ দিবস (কিয়ামত) সম্পর্কে সতর্ক করতে পারে। (সূরা মু’মিন- ১৫)
ব্যাখ্যা : এ কুরআন এমন একটি গ্রন্থ, যা সম্পূর্ণটাই নির্ভুল ও সত্য জ্ঞানে সমৃদ্ধ। এর রচয়িতা হচ্ছেন এমন এক মহান সত্তা, যিনি সমস্ত তত্ত্ব ও সত্যের জ্ঞান রাখেন। কাজেই এর মধ্যে সন্দেহের কোন অবকাশই নেই।
وَمَا كَانَ هٰذَا الْقُرْاٰنُ اَنْ يُّفْتَرٰى مِنْ دُوْنِ اللهِ وَلٰكِنْ تَصْدِيْقَ الَّذِيْ بَيْنَ يَدَيْهِ وَتَفْصِيْلَ الْكِتَابِ لَا رَيْبَ فِيْهِ مِنْ رَّبِّ الْعَالَمِيْنَ
এ কুরআন আল্লাহ ব্যতীত অপর কারো রচনা নয়। পক্ষান্তরে এর পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে এটা তার সমর্থন করে এবং তা বিধানসমূহের বিশদ ব্যাখ্যা। এটা জগতসমূহের প্রতিপালকের পক্ষ হতে (অবতীর্ণ হয়েছে), এতে কোন সন্দেহ নেই। (সূরা ইউনুস- ৩৭)
আল্লাহ সন্দেহ করতে নিষেধ করেছেন :
اَفَغَيْرَ اللهِ اَبْتَغِيْ حَكَمًا وَّهُوَ الَّذِيْۤ اَنْزَلَ اِلَيْكُمُ الْكِتَابَ مُفَصَّلًاؕ وَالَّذِيْنَ اٰتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَعْلَمُوْنَ اَنَّهٗ مُنَزَّلٌ مِّنْ رَّبِّكَ بِالْحَقِّ فَلَا تَكُوْنَنَّ مِنَ الْمُمْتَرِيْنَ
বলো, ‘তবে কি আমি আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে বিচারক মানব, যদিও তিনি তোমাদের প্রতি সুস্পষ্ট কিতাব অবতীর্ণ করেছেন!’ আর আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছি তারা জানে যে, তা তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে সত্যসহ অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তুমি সন্দেহকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সূরা আন‘আম- ১১৪)
কুরআন যে সত্য তা জ্ঞানীরা ভালোভাবে জানে :
وَيَرَى الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْعِلْمَ الَّذِۤيْ اُنْزِلَ اِلَيْكَ مِنْ رَّبِّكَ هُوَ الْحَقَّ وَيَهْدِيْۤ اِلٰى صِرَاطِ الْعَزِيْزِ الْحَمِيْدِ
যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে তারা জানে যে, আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা সত্য। আর এটি মহাপরাক্রমশালী ও প্রশংসিত আল্লাহর (দিকেই) পথপ্রদর্শন করে। (সূরা সাবা- ৬)
اَفَمَنْ يَّعْلَمُ اَنَّمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكَ مِنْ رَّبِّكَ الْحَقُّ كَمَنْ هُوَ اَعْمٰىؕ اِنَّمَا يَتَذَكَّرُ اُولُو الْاَ لْبَابِ
তোমার প্রতিপালক হতে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, যে ব্যক্তি তা সত্য বলে জানে- সে আর অন্ধ কি সমান? নিশ্চয় কেবল বিবেকবান ব্যক্তিগণই উপদেশ গ্রহণ করে। (সূরা রা’দ- ১৯)
কুরআন সম্পর্কে আল্লাহ ও ফেরেশতাদের সাক্ষ্য প্রদান :
لٰكِنِ اللهُ يَشْهَدُ بِمَاۤ اَنْزَلَ اِلَيْكَ اَنْزَلَهٗ بِعِلْمِهٖۚ وَالْمَلَآئِكَةُ يَشْهَدُوْنَ وَكَفٰى بِاللهِ شَهِيْدًا
আল্লাহ সাক্ষ্য দেন যে, তিনি তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছেন তা তাঁর নিজ জ্ঞানেই অবতীর্ণ করেছেন এবং ফেরেশতাগণও এর সাক্ষ্য দেয়। আর সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। (সূরা নিসা- ১৬৬)
প্রথম পর্যায়ে পূর্ণ কুরআন বানানোর চ্যালেঞ্জ :
اَمْ يَقُوْلُوْنَ تَقَوَّلَهٗۚ بَلْ لَّا يُؤْمِنُوْنَ – - فَلْيَاْتُوْا بِحَدِيْثٍ مِّثْلِهٖۤ اِنْ كَانُوْا صَادِقِيْنَ
তারা কি বলে যে, (এ কুরআন) তাঁর {মুহাম্মাদ ﷺ এর} নিজের বানানো? আসলে তারা বিশ্বাস করতে চায় না। তারা যদি সত্যবাদী হয়, তবে তারাও কুরআনের ন্যায় কোন গ্রন্থ নিয়ে আসুক। (সূরা তূর- ৩৩, ৩৪)
দ্বিতীয় পর্যায়ে দশটি সূরা বানানোর চ্যালেঞ্জ :
اَمْ يَقُوْلُوْنَ افْتَرَاهُؕ قُلْ فَاْتُوْا بِعَشْرِ سُوَرٍ مِّثْلِهٖ مُفْتَرَيَاتٍ وَّادْعُوْا مَنِ اسْتَطَعْتُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ
তারা কি বলে, (মুহাম্মাদ) এটা নিজে রচনা করেছে? বলো, তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে তোমরা এর অনুরূপ দশটি স্বরচিত সূরা আনয়ন করো এবং আল্লাহ ব্যতীত যাকে পার (তাকে সাহায্যের জন্য) ডেকে নাও। (সূরা হুদ- ১৩)
শেষ পর্যায়ে ছোট একটি সূরা বানানোর চ্যালেঞ্জ :
اَمْ يَقُوْلُوْنَ افْتَرَاهُؕ قُلْ فَاْتُوْا بِسُوْرَةٍ مِّثْلِهٖ وَادْعُوْا مَنِ اسْتَطَعْتُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ
তারা কি বলে, সে (মুহাম্মাদ) এটা রচনা করেছে? বলো, তবে তোমরা এটার অনুরূপ একটি সূরা আনয়ন করো এবং আল্লাহ ব্যতীত অপর যাকে পার আহবান করো, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’ (সূরা ইউনুস- ৩৮)
وَاِنْ كُنْتُمْ فِيْ رَيْبٍ مِّمَّا نَزَّلْناَ عَلٰى عَبْدِنَا فَاْتُوْا بِسُوْرَةٍ مِّنْ مِّثْلِهٖ۪ وَادْعُوْا شُهَدَآءَكُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ
আমি আমার বান্দার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছি তাতে তোমরা যদি সন্দেহ কর, তবে এর সমতুল্য একটি সূরা তৈরি করে নিয়ে এসো এবং আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের অন্যান্য সাহায্যকারীদেরকেও ডেকে নাও; যদি তোমরা সত্যবাদী হও। (সূরা বাক্বারা- ২৩)
এ চ্যালেঞ্জের মুকাবিলা কেউ করতে পারেনি আর পারবেও না :
قُلْ لَّئِنِ اجْتَمَعَتِ الْاِنْسُ وَالْجِنُّ عَلٰۤى اَنْ يَّاْتُوْا بِمِثْلِ هٰذَا الْقُرْاٰنِ لَا يَاْتُوْنَ بِمِثْلِهٖ وَلَوْ كَانَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ ظَهِيْرًا
বলো, যদি কুরআনের অনুরূপ কুরআন আনয়নের জন্য মানুষ ও জিন উভয়ই সমবেত হয় এবং তারা পরস্পরকে সাহায্য করে তবুও তারা এটার অনুরূপ কোন গ্রন্থ আনয়ন করতে পারবে না। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৮৮)
اَمْ يَقُوْلُوْنَ تَقَوَّلَهٗۚ بَلْ لَّا يُؤْمِنُوْنَ – - فَلْيَاْتُوْا بِحَدِيْثٍ مِّثْلِهٖۤ اِنْ كَانُوْا صَادِقِيْنَ
তারা কি বলে যে, (এ কুরআন) তাঁর {মুহাম্মাদ ﷺ এর} নিজের বানানো? আসলে তারা বিশ্বাস করতে চায় না। তারা যদি সত্যবাদী হয়, তবে তারাও কুরআনের ন্যায় কোন গ্রন্থ নিয়ে আসুক। (সূরা তূর- ৩৩, ৩৪)
দ্বিতীয় পর্যায়ে দশটি সূরা বানানোর চ্যালেঞ্জ :
اَمْ يَقُوْلُوْنَ افْتَرَاهُؕ قُلْ فَاْتُوْا بِعَشْرِ سُوَرٍ مِّثْلِهٖ مُفْتَرَيَاتٍ وَّادْعُوْا مَنِ اسْتَطَعْتُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ
তারা কি বলে, (মুহাম্মাদ) এটা নিজে রচনা করেছে? বলো, তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে তোমরা এর অনুরূপ দশটি স্বরচিত সূরা আনয়ন করো এবং আল্লাহ ব্যতীত যাকে পার (তাকে সাহায্যের জন্য) ডেকে নাও। (সূরা হুদ- ১৩)
শেষ পর্যায়ে ছোট একটি সূরা বানানোর চ্যালেঞ্জ :
اَمْ يَقُوْلُوْنَ افْتَرَاهُؕ قُلْ فَاْتُوْا بِسُوْرَةٍ مِّثْلِهٖ وَادْعُوْا مَنِ اسْتَطَعْتُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ
তারা কি বলে, সে (মুহাম্মাদ) এটা রচনা করেছে? বলো, তবে তোমরা এটার অনুরূপ একটি সূরা আনয়ন করো এবং আল্লাহ ব্যতীত অপর যাকে পার আহবান করো, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’ (সূরা ইউনুস- ৩৮)
وَاِنْ كُنْتُمْ فِيْ رَيْبٍ مِّمَّا نَزَّلْناَ عَلٰى عَبْدِنَا فَاْتُوْا بِسُوْرَةٍ مِّنْ مِّثْلِهٖ۪ وَادْعُوْا شُهَدَآءَكُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ
আমি আমার বান্দার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছি তাতে তোমরা যদি সন্দেহ কর, তবে এর সমতুল্য একটি সূরা তৈরি করে নিয়ে এসো এবং আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের অন্যান্য সাহায্যকারীদেরকেও ডেকে নাও; যদি তোমরা সত্যবাদী হও। (সূরা বাক্বারা- ২৩)
এ চ্যালেঞ্জের মুকাবিলা কেউ করতে পারেনি আর পারবেও না :
قُلْ لَّئِنِ اجْتَمَعَتِ الْاِنْسُ وَالْجِنُّ عَلٰۤى اَنْ يَّاْتُوْا بِمِثْلِ هٰذَا الْقُرْاٰنِ لَا يَاْتُوْنَ بِمِثْلِهٖ وَلَوْ كَانَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ ظَهِيْرًا
বলো, যদি কুরআনের অনুরূপ কুরআন আনয়নের জন্য মানুষ ও জিন উভয়ই সমবেত হয় এবং তারা পরস্পরকে সাহায্য করে তবুও তারা এটার অনুরূপ কোন গ্রন্থ আনয়ন করতে পারবে না। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৮৮)
তারা বলে, এ কুরআন পুরানো দিনের গল্প :
اِذَا تُتْلٰى عَلَيْهِ اٰيَاتُنَا قَالَ اَسَاطِيْرُ الْاَ وَّلِيْنَ
যখন তার নিকট আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন সে বলে, এটা তো পূর্ববর্তীদের কাহিনী!
(সূরা মুতাফফিফীন- ১৩)
وَقَالُوْاۤ اَسَاطِيْرُ الْاَ وَّلِيْنَ اكْتَتَبَهَا فَهِيَ تُمْلٰى عَلَيْهِ بُكْرَةً وَّاَصِيْلًا
তারা বলে, এগুলো তো পূর্ববর্তীদের কাহিনী, যা সে লিখিয়ে নিয়েছে; এগুলো সকাল-সন্ধ্যায় তার নিকট পাঠ করা হয়। (সূরা ফুরক্বান- ৫)
وَمِنْهُمْ مَّنْ يَّسْتَمِعُ اِلَيْكَۚ وَجَعَلْنَا عَلٰى قُلُوْبِهِمْ اَكِنَّةً اَنْ يَّفْقَهُوْهُ وَفِۤيْ اٰذَانِهِمْ وَقْرًاؕ وَاِنْ يَّرَوْا كُلَّ اٰيَةٍ لَّا يُؤْمِنُوْا بِهَاؕ حَتّٰۤى اِذَا جَآءُوْكَ يُجَادِلُوْنَكَ يَقُوْلُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اِنْ هٰذَاۤ اِلَّاۤ اَسَاطِيْرُ الْاَوَّلِيْنَ
তাদের মধ্যে কতক তোমার দিকে কান পেতে রাখে, কিন্তু আমি তাদের অন্তরের উপর আবরণ দিয়ে রেখেছি, যেন তারা তা উপলদ্ধি করতে না পারে এবং তাদেরকে বধির করে রেখেছি। সুতরাং তারা সমস্ত নিদর্শন প্রত্যক্ষ করলেও তাতে (কুরআনের প্রতি) ঈমান আনবে না; এমনকি তারা যখন তোমার নিকট উপস্থিত হয়ে বিতর্কে লিপ্ত হয় তখন কাফিররা বলে, ‘এটা তো পূর্ববর্তীদের রূপকথা ব্যতীত আর কিছুই নয়।’ (সূরা আন‘আম- ২৫)
এগুলো পুরাতন মিথ্যা কথা :
وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَوْ كَانَ خَيْرًا مَّا سَبَقُوْنَاۤ اِلَيْهِؕ وَاِذْ لَمْ يَهْتَدُوْا بِهٖ فَسَيَقُوْلُوْنَ هٰذَاۤ اِفْكٌ قَدِيْمٌ
কাফিররা ঈমানদারদের সম্পর্কে বলে, যদি (এ কিতাবকে মেনে নেয়া সত্যিই) কোন ভালো কাজ হতো, তাহলে তারা এ বিষয়ে আমাদেরকে ছাড়িয়ে যেতে পারত না। যেহেতু তারা এ থেকে হেদায়াত পেল না, সেহেতু তারা বলবে যে, এটা তো পুরাতন মিথ্যা (কাহিনী) মাত্র। (সূরা আহকাফ- ১১)
وَقَالُوْا مَا هٰذَاۤ اِلَّاۤ اِفْكٌ مُّفْتَرًى
তারা আরো বলে যে, এটা তো মিথ্যা রচনা ছাড়া আর কিছু নয়। (সূরা সাবা- ৪৩)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ এর ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করার জন্য কুরাইশ নেতারা বলত, ‘এ কুরআন যদি সত্য হতো এবং মুহাম্মাদ যদি সঠিক দ্বীনের দাওয়াত দিতেন, তাহলে তার সম্প্রদায়ের নেতা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অগ্রসর হয়ে তা গ্রহণ করে নিত। এটা কী করে হতে পারে যে, কতিপয় অনভিজ্ঞ বালক এবং কিছু সংখ্যক নীচু পর্যায়ের ক্রীতদাস একটি যুক্তিসঙ্গত কথা মেনে নেবে; কিন্তু জাতির গণ্যমান্য ব্যক্তিরা তা প্রত্যাখ্যান করবে? নতুন এই দাওয়াতে অবশ্যই মন্দ কিছু আছে। তাই কওমের গণ্যমান্য ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ তা মানছে না। অতএব তোমরাও তা থেকে দূরে সরে যাও। এভাবে তারা প্রতারণামূলক যুক্তি পেশ করে সাধারণ মানুষকে এ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করত।
এগুলো এলোমেলো স্বপ্ন :
بَلْ قَالُوْاۤ اَضْغَاثُ اَحْلَامٍ ۢبَلِ افْتَرَاهُ بَلْ هُوَ شَاعِرٌۚ فَلْيَاْتِنَا بِاٰيَةٍ كَمَاۤ اُرْسِلَ الْاَ وَّلُوْنَ
তারা এটাও বলে যে, এগুলো অলীক কল্পনা- হয় সে এটা উদ্ভাবন করেছে, নতুবা সে একজন কবি। অতএব সে আমাদের নিকট একটি নিদর্শন আনয়ন করুক, যেরূপ নিদর্শনসহ পূর্ববর্তীগণ প্রেরিত হয়েছিলেন। (সূরা আম্বিয়া- ৫)
এগুলো পাগলের শেখানো বুলি :
ثُمَّ تَوَلَّوْا عَنْهُ وَقَالُوْا مُعَلَّمٌ مَّجْنُوْنٌ
অতঃপর তারা তাকে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে বলে, সে তো শেখানো (বুলি বলছে), সে তো এক পাগল। (সূরা দুখান- ১৪)
এগুলো মনগড়া উক্তি :
مَا سَمِعْنَا بِهٰذَا فِى الْمِلَّةِ الْاٰخِرَةِۚ اِنْ هٰذَاۤ اِلَّا اخْتِلَاقٌ
এরূপ কথা তো আমরা পূর্ববর্তী ধর্মে শুনিনি। এটা তো মনগড়া উক্তি ছাড়া আর কিছু নয়। (সূরা সোয়াদ- ৭, ৮)
মানুষের সহযোগিতায় এটা বানানো হয়েছে :
وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اِنْ هٰذَاۤ اِلَّاۤ اِفْكُ نِ افْتَرَاهُ وَاَعَانَهٗ عَلَيْهِ قَوْمٌ اٰخَرُوْنَۚ فَقَدْ جَآءُوْا ظُلْمًا وَّزُوْرًاۚ وَقَالُوْاۤ اَسَاطِيْرُ الْاَ وَّلِيْنَ اكْتَتَبَهَا فَهِيَ تُمْلٰى عَلَيْهِ بُكْرَةً وَّاَصِيْلًا
কাফিররা বলে, ‘এটা মিথ্যা ব্যতীত কিছুই নয়, সে এটা উদ্ভাবন করেছে এবং ভিন্ন সম্প্রদায়ের লোক তাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করেছে।’ এভাবে তারা অবশ্যই যুলুম ও মিথ্যায় উপনীত হয়েছে। তারা বলে, ‘এগুলো তো পূর্বকালের উপকথা, যা সে লিখিয়ে নিয়েছে; এগুলো সকাল-সন্ধ্যায় তার নিকট পাঠ করা হয়।’ (সূরা ফুরক্বান- ৪, ৫)
ব্যাখ্যা : তারা বলত, এ ব্যক্তি তো নিরক্ষর, সে নিজে পড়শুনা করে কোন নতুন জ্ঞান আহরণ করতে পারে না এবং ইতোপূর্বেও সে কোনদিন কারো কাছে কোন শিক্ষা অর্জন করেনি। আজ তার মুখ থেকে যেসব কথা বের হচ্ছে বিগত চল্লিশ বছর বয়সেও তো সে তা জানতো না। তাহলে এখন হঠাৎ এসব জ্ঞান আসছে কোথা থেকে? তাহলে এগুলোর উৎস নিশ্চয় আগের যুগের লোকদের কিছু কিতাব। রাতের বেলা চুপিসারে সেগুলো থেকে কিছু কিছু অংশ কারো কাছ থেকে অনুবাদ করিয়ে নেয়। অতঃপর তা দিনের বেলায় পাঠ করে আমাদেরকে শুনিয়ে দেয়। এর জবাবে বলা হয়েছে, তোমরা সত্যের প্রতি যুলুম করছ এবং পরিষ্কার বেইনসাফী ও অযৌক্তিক অভিযোগ আরোপ করছ। তোমরা তার ব্যাপারে যেসব কথা বলছ, তা কখনো বাস্তব হতে পারে না। কেননা তোমাদের কথা অনুযায়ী যদি তাই হতো, তবে তার পক্ষে তোমাদের দৃষ্টি ফাঁকি দেয়া সম্ভবপর ছিল না। তাছাড়া এটা হচ্ছে ঐ সত্তার কালাম, যিনি আকাশ ও পৃথিবীর সকল গোপন রহস্য সম্পর্কে অবগত আছেন। সুতরাং এ কালামকে নিয়ে মিথ্যা রটনা করলে, তিনিই তার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। যার কারণে প্রত্যেক শ্রোতার কাছে তাদের এ অভিযোগ এমনিতেই ছিল অর্থহীন ও অযৌক্তিক। তাই শুধুমাত্র এ অভিযোগের জবাব দেয়ার জন্য কুরআনে একে উদ্ধৃত করা হয়নি, বরং এ কথা বলার জন্য উল্লেখ করা হয়েছে যে, দেখো! সত্যের বিরুদ্ধাচরণ করার ক্ষেত্রে এরা কেমন অন্ধ হয়ে গেছে এবং কত মারাত্মক মিথ্যা ও জগন্য পথ বেছে নিয়েছে।
কুরআনের মতো এরকম কথা আমরাও বানাতে পারি :
وَاِذَا تُتْلٰى عَلَيْهِمْ اٰيَاتُنَا قَالُوْا قَدْ سَمِعْنَا لَوْ نَشَآءُ لَقُلْنَا مِثْلَ هٰذَاۤ اِنْ هٰذَاۤ اِلَّاۤ اَسَاطِيْرُ الْاَ وَّلِيْنَ
যখন তাদের নিকট আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন তারা বলে, আমরা শ্রবণ করলাম; ইচ্ছা করলে আমরাও এর অনুরূপ বলতে পারি, এটা তো শুধু পূর্ববর্তীদের কাহিনী মাত্র। (সূরা আনফাল- ৩১)
এটা সুস্পষ্ট যাদু :
وَاِذَا تُتْلٰى عَلَيْهِمْ اٰيَاتُنَا بَيِّنَاتٍ قَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِلْحَقِّ لَمَّا جَآءَهُمْ هٰذَاۤ اِلَّا سِحْرٌ مُّبِيْنٌ
যখন এদেরকে আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ পড়ে শুনানো হয়, তখন কাফিররা সে সত্য সম্পর্কে বলে, যা তাদের সামনে এসে গেছে- এটা তো স্পষ্ট যাদু ছাড়া কিছু নয়। (সূরা আহকাফ- ৭)
وَلَمَّا جَآءَهُمُ الْحَقُّ قَالُوْا هٰذَا سِحْرٌ وَّ اِنَّا بِهٖ كَافِرُوْنَ
যখন তাদের নিকট সত্য এসে গেল তখন তারা বলল, এটা তো যাদু। অবশ্যই আমরা এটাকে অস্বীকার করি। (সূরা যুখরুফ- ৩০)
اِذَا تُتْلٰى عَلَيْهِ اٰيَاتُنَا قَالَ اَسَاطِيْرُ الْاَ وَّلِيْنَ
যখন তার নিকট আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন সে বলে, এটা তো পূর্ববর্তীদের কাহিনী!
(সূরা মুতাফফিফীন- ১৩)
وَقَالُوْاۤ اَسَاطِيْرُ الْاَ وَّلِيْنَ اكْتَتَبَهَا فَهِيَ تُمْلٰى عَلَيْهِ بُكْرَةً وَّاَصِيْلًا
তারা বলে, এগুলো তো পূর্ববর্তীদের কাহিনী, যা সে লিখিয়ে নিয়েছে; এগুলো সকাল-সন্ধ্যায় তার নিকট পাঠ করা হয়। (সূরা ফুরক্বান- ৫)
وَمِنْهُمْ مَّنْ يَّسْتَمِعُ اِلَيْكَۚ وَجَعَلْنَا عَلٰى قُلُوْبِهِمْ اَكِنَّةً اَنْ يَّفْقَهُوْهُ وَفِۤيْ اٰذَانِهِمْ وَقْرًاؕ وَاِنْ يَّرَوْا كُلَّ اٰيَةٍ لَّا يُؤْمِنُوْا بِهَاؕ حَتّٰۤى اِذَا جَآءُوْكَ يُجَادِلُوْنَكَ يَقُوْلُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اِنْ هٰذَاۤ اِلَّاۤ اَسَاطِيْرُ الْاَوَّلِيْنَ
তাদের মধ্যে কতক তোমার দিকে কান পেতে রাখে, কিন্তু আমি তাদের অন্তরের উপর আবরণ দিয়ে রেখেছি, যেন তারা তা উপলদ্ধি করতে না পারে এবং তাদেরকে বধির করে রেখেছি। সুতরাং তারা সমস্ত নিদর্শন প্রত্যক্ষ করলেও তাতে (কুরআনের প্রতি) ঈমান আনবে না; এমনকি তারা যখন তোমার নিকট উপস্থিত হয়ে বিতর্কে লিপ্ত হয় তখন কাফিররা বলে, ‘এটা তো পূর্ববর্তীদের রূপকথা ব্যতীত আর কিছুই নয়।’ (সূরা আন‘আম- ২৫)
এগুলো পুরাতন মিথ্যা কথা :
وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَوْ كَانَ خَيْرًا مَّا سَبَقُوْنَاۤ اِلَيْهِؕ وَاِذْ لَمْ يَهْتَدُوْا بِهٖ فَسَيَقُوْلُوْنَ هٰذَاۤ اِفْكٌ قَدِيْمٌ
কাফিররা ঈমানদারদের সম্পর্কে বলে, যদি (এ কিতাবকে মেনে নেয়া সত্যিই) কোন ভালো কাজ হতো, তাহলে তারা এ বিষয়ে আমাদেরকে ছাড়িয়ে যেতে পারত না। যেহেতু তারা এ থেকে হেদায়াত পেল না, সেহেতু তারা বলবে যে, এটা তো পুরাতন মিথ্যা (কাহিনী) মাত্র। (সূরা আহকাফ- ১১)
وَقَالُوْا مَا هٰذَاۤ اِلَّاۤ اِفْكٌ مُّفْتَرًى
তারা আরো বলে যে, এটা তো মিথ্যা রচনা ছাড়া আর কিছু নয়। (সূরা সাবা- ৪৩)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ এর ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করার জন্য কুরাইশ নেতারা বলত, ‘এ কুরআন যদি সত্য হতো এবং মুহাম্মাদ যদি সঠিক দ্বীনের দাওয়াত দিতেন, তাহলে তার সম্প্রদায়ের নেতা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অগ্রসর হয়ে তা গ্রহণ করে নিত। এটা কী করে হতে পারে যে, কতিপয় অনভিজ্ঞ বালক এবং কিছু সংখ্যক নীচু পর্যায়ের ক্রীতদাস একটি যুক্তিসঙ্গত কথা মেনে নেবে; কিন্তু জাতির গণ্যমান্য ব্যক্তিরা তা প্রত্যাখ্যান করবে? নতুন এই দাওয়াতে অবশ্যই মন্দ কিছু আছে। তাই কওমের গণ্যমান্য ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ তা মানছে না। অতএব তোমরাও তা থেকে দূরে সরে যাও। এভাবে তারা প্রতারণামূলক যুক্তি পেশ করে সাধারণ মানুষকে এ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করত।
এগুলো এলোমেলো স্বপ্ন :
بَلْ قَالُوْاۤ اَضْغَاثُ اَحْلَامٍ ۢبَلِ افْتَرَاهُ بَلْ هُوَ شَاعِرٌۚ فَلْيَاْتِنَا بِاٰيَةٍ كَمَاۤ اُرْسِلَ الْاَ وَّلُوْنَ
তারা এটাও বলে যে, এগুলো অলীক কল্পনা- হয় সে এটা উদ্ভাবন করেছে, নতুবা সে একজন কবি। অতএব সে আমাদের নিকট একটি নিদর্শন আনয়ন করুক, যেরূপ নিদর্শনসহ পূর্ববর্তীগণ প্রেরিত হয়েছিলেন। (সূরা আম্বিয়া- ৫)
এগুলো পাগলের শেখানো বুলি :
ثُمَّ تَوَلَّوْا عَنْهُ وَقَالُوْا مُعَلَّمٌ مَّجْنُوْنٌ
অতঃপর তারা তাকে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে বলে, সে তো শেখানো (বুলি বলছে), সে তো এক পাগল। (সূরা দুখান- ১৪)
এগুলো মনগড়া উক্তি :
مَا سَمِعْنَا بِهٰذَا فِى الْمِلَّةِ الْاٰخِرَةِۚ اِنْ هٰذَاۤ اِلَّا اخْتِلَاقٌ
এরূপ কথা তো আমরা পূর্ববর্তী ধর্মে শুনিনি। এটা তো মনগড়া উক্তি ছাড়া আর কিছু নয়। (সূরা সোয়াদ- ৭, ৮)
মানুষের সহযোগিতায় এটা বানানো হয়েছে :
وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اِنْ هٰذَاۤ اِلَّاۤ اِفْكُ نِ افْتَرَاهُ وَاَعَانَهٗ عَلَيْهِ قَوْمٌ اٰخَرُوْنَۚ فَقَدْ جَآءُوْا ظُلْمًا وَّزُوْرًاۚ وَقَالُوْاۤ اَسَاطِيْرُ الْاَ وَّلِيْنَ اكْتَتَبَهَا فَهِيَ تُمْلٰى عَلَيْهِ بُكْرَةً وَّاَصِيْلًا
কাফিররা বলে, ‘এটা মিথ্যা ব্যতীত কিছুই নয়, সে এটা উদ্ভাবন করেছে এবং ভিন্ন সম্প্রদায়ের লোক তাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করেছে।’ এভাবে তারা অবশ্যই যুলুম ও মিথ্যায় উপনীত হয়েছে। তারা বলে, ‘এগুলো তো পূর্বকালের উপকথা, যা সে লিখিয়ে নিয়েছে; এগুলো সকাল-সন্ধ্যায় তার নিকট পাঠ করা হয়।’ (সূরা ফুরক্বান- ৪, ৫)
ব্যাখ্যা : তারা বলত, এ ব্যক্তি তো নিরক্ষর, সে নিজে পড়শুনা করে কোন নতুন জ্ঞান আহরণ করতে পারে না এবং ইতোপূর্বেও সে কোনদিন কারো কাছে কোন শিক্ষা অর্জন করেনি। আজ তার মুখ থেকে যেসব কথা বের হচ্ছে বিগত চল্লিশ বছর বয়সেও তো সে তা জানতো না। তাহলে এখন হঠাৎ এসব জ্ঞান আসছে কোথা থেকে? তাহলে এগুলোর উৎস নিশ্চয় আগের যুগের লোকদের কিছু কিতাব। রাতের বেলা চুপিসারে সেগুলো থেকে কিছু কিছু অংশ কারো কাছ থেকে অনুবাদ করিয়ে নেয়। অতঃপর তা দিনের বেলায় পাঠ করে আমাদেরকে শুনিয়ে দেয়। এর জবাবে বলা হয়েছে, তোমরা সত্যের প্রতি যুলুম করছ এবং পরিষ্কার বেইনসাফী ও অযৌক্তিক অভিযোগ আরোপ করছ। তোমরা তার ব্যাপারে যেসব কথা বলছ, তা কখনো বাস্তব হতে পারে না। কেননা তোমাদের কথা অনুযায়ী যদি তাই হতো, তবে তার পক্ষে তোমাদের দৃষ্টি ফাঁকি দেয়া সম্ভবপর ছিল না। তাছাড়া এটা হচ্ছে ঐ সত্তার কালাম, যিনি আকাশ ও পৃথিবীর সকল গোপন রহস্য সম্পর্কে অবগত আছেন। সুতরাং এ কালামকে নিয়ে মিথ্যা রটনা করলে, তিনিই তার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। যার কারণে প্রত্যেক শ্রোতার কাছে তাদের এ অভিযোগ এমনিতেই ছিল অর্থহীন ও অযৌক্তিক। তাই শুধুমাত্র এ অভিযোগের জবাব দেয়ার জন্য কুরআনে একে উদ্ধৃত করা হয়নি, বরং এ কথা বলার জন্য উল্লেখ করা হয়েছে যে, দেখো! সত্যের বিরুদ্ধাচরণ করার ক্ষেত্রে এরা কেমন অন্ধ হয়ে গেছে এবং কত মারাত্মক মিথ্যা ও জগন্য পথ বেছে নিয়েছে।
কুরআনের মতো এরকম কথা আমরাও বানাতে পারি :
وَاِذَا تُتْلٰى عَلَيْهِمْ اٰيَاتُنَا قَالُوْا قَدْ سَمِعْنَا لَوْ نَشَآءُ لَقُلْنَا مِثْلَ هٰذَاۤ اِنْ هٰذَاۤ اِلَّاۤ اَسَاطِيْرُ الْاَ وَّلِيْنَ
যখন তাদের নিকট আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন তারা বলে, আমরা শ্রবণ করলাম; ইচ্ছা করলে আমরাও এর অনুরূপ বলতে পারি, এটা তো শুধু পূর্ববর্তীদের কাহিনী মাত্র। (সূরা আনফাল- ৩১)
এটা সুস্পষ্ট যাদু :
وَاِذَا تُتْلٰى عَلَيْهِمْ اٰيَاتُنَا بَيِّنَاتٍ قَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِلْحَقِّ لَمَّا جَآءَهُمْ هٰذَاۤ اِلَّا سِحْرٌ مُّبِيْنٌ
যখন এদেরকে আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ পড়ে শুনানো হয়, তখন কাফিররা সে সত্য সম্পর্কে বলে, যা তাদের সামনে এসে গেছে- এটা তো স্পষ্ট যাদু ছাড়া কিছু নয়। (সূরা আহকাফ- ৭)
وَلَمَّا جَآءَهُمُ الْحَقُّ قَالُوْا هٰذَا سِحْرٌ وَّ اِنَّا بِهٖ كَافِرُوْنَ
যখন তাদের নিকট সত্য এসে গেল তখন তারা বলল, এটা তো যাদু। অবশ্যই আমরা এটাকে অস্বীকার করি। (সূরা যুখরুফ- ৩০)
এ কুরআন রাসূল ﷺ এর বানানো- এ কথার জবাব :
اَمْ يَقُوْلُوْنَ افْتَرَاهُؕ قُلْ اِنِ افْتَرَيْتُهٗ فَلَا تَمْلِكُوْنَ لِيْ مِنَ اللهِ شَيْئًاؕ هُوَ اَعْلَمُ بِمَا تُفِيْضُوْنَ فِيْهِ ؕ كَفٰى بِهٖ شَهِيْدًا ۢبَيْنِيْ وَبَيْنَكُمْؕ وَهُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ
তবে কি তারা বলতে চায় যে, রাসূল নিজেই তা রচনা করে নিয়েছে? (হে রাসূল!) আপনি বলুন, আমি যদি নিজেই রচনা করে থাকি তাহলে তোমরা আমাকে আল্লাহর পাকড়াও থেকে মোটেই বাঁচাতে পারবে না। তোমরা যেসব কথা বানাচ্ছ তা আল্লাহ ভালো করেই জানেন। আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী হিসেবে তিনিই যথেষ্ট; তিনি বড়ই ক্ষমাশীল ও দয়াবান। (সূরা আহকাফ- ৮)
اَمْ يَقُوْلُوْنَ افْتَرٰى عَلَى اللهِ كَذِبًاۚ فَاِنْ يَّشَاِ اللهُ يَخْتِمْ عَلٰى قَلْبِكَؕ وَيَمْحُ اللهُ الْبَاطِلَ وَيُحِقُّ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهٖؕ اِنَّهٗ عَلِيْمٌ ۢبِذَاتِ الصُّدُوْرِ
তারা কি বলে যে, সে (রাসূল) আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা বানিয়েছে। সুতরাং যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন, তবে তোমার হৃদয়ে মোহর মেরে দেবেন। আল্লাহ মিথ্যাকে মুছে দেন এবং নিজ বাণী দ্বারা সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেন। নিশ্চয় তিনি অন্তরে যা আছে সে বিষয়ে অবহিত। (সূরা শূরা- ২৪)
اَمْ يَقُوْلُوْنَ افْتَرَاهُؕ قُلْ اِنِ افْتَرَيْتُهٗ فَعَلَيَّ اِجْرَامِيْ وَاَنَاْ بَرِيْٓءٌ مِّمَّا تُجْرِمُوْنَ
তারা কি বলে যে, সে এটা রচনা করেছে? বলো, যদি আমি এটা রচনা করে থাকি, তবে আমিই আমার অপরাধের জন্য দায়ী হব। (কিন্তু এখন) তোমরা যে অপরাধ করছ তা হতে আমি দায়মুক্ত। (সূরা হুদ- ৩৫)
নবী ﷺ কে কেউ এটা শিখিয়ে দেয়- এ কথার জবাব :
وَلَقَدْ نَعْلَمُ اَنَّهُمْ يَقُوْلُوْنَ اِنَّمَا يُعَلِّمُهٗ بَشَرٌؕ لِسَانُ الَّذِيْ يُلْحِدُوْنَ اِلَيْهِ اَعْجَمِيٌّ وَّهٰذَا لِسَانٌ عَرَبِيٌّ مُّبِيْنٌ – - اِنَّ الَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِ لَا يَهْدِيْهِمُ اللهُ وَلَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
আমি তো জানি, তারা বলবে যে, তাকে শিক্ষা দেয় এক মানুষ। তারা যার প্রতি এটা আরোপ করে তার ভাষা তো আরবি নয়; কিন্তু কুরআনের ভাষা স্পষ্ট আরবি। যারা আল্লাহর নিদর্শনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না আল্লাহ তাদেরকে হেদায়াত করেন না; আর তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাসিত্ম। (সূরা নাহল- ১০৩, ১০৪)
কুরআন কবির কাব্য- এ কথার জবাব :
فَلَاۤ اُقْسِمُ بِمَا تُبْصِرُوْنَ ‐ - وَمَا لَا تُبْصِرُوْنَ ‐ - اِنَّهٗ لَقَوْلُ رَسُوْلٍ كَرِيْمٍ ‐ - وَمَا هُوَ بِقَوْلِ شَاعِرٍؕ قَلِيْلًا مَّا تُؤْمِنُوْنَ
আমি ঐ জিনিসের শপথ করি, যা তোমরা দেখতে পাও এবং যা তোমরা দেখতে পাও না। নিশ্চয় এটা (কুরআন) এক সম্মানিত রাসূলের আনীত বাণী, এটা কোন কবির কথা নয়; তোমরা তো খুব অল্পই বিশ্বাস স্থাপন করে থাক। (সূরা হাক্কাহ, ৩৮-৪১)
وَمَا عَلَّمْنَاهُ الشِّعْرَ وَمَا يَنْۢبَغِيْ لَهٗۤ اِنْ هُوَ اِلَّا ذِكْرٌ وَّقُرْاٰنٌ مُّبِيْنٌ
আমি তাঁকে (রাসূলকে) কবিতা শিক্ষা দেইনি, আর তাঁর জন্য তা শোভনীয়ও নয়। এটা তো কেবল এক উপদেশ এবং সুস্পষ্ট কুরআন। (সূরা ইয়াসীন- ৬৯)
ব্যাখ্যা : কবিদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, সেখানে কোথাও প্রেমচর্চা ও শরাব পানের বিষয় আলোচিত হয়, কোথাও অশ্লীল কাহিনী বর্ণনা করা হয়, কোথাও মিথ্যা আসর বসে, কোথাও কারো নিন্দাবাদ করা হয়, কোথাও কারো অযথা প্রশংসা করা হয়, কোথাও প্রতিশোধের আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়। তাদের নিজস্ব চিন্তা ও বাকশক্তি ব্যবহার করার কোন একটি নির্ধারিত পথ নেই। তাদের কণ্ঠ থেকে যা বের হয় তা সত্য ও ন্যায় কি না সেদিকে দৃষ্টি রাখার কোন প্রয়োজনই অনুভব করা হয় না। সুতরাং যারা কবিদের এ পরিচিত বৈশিষ্ট্যাবলি সম্পর্কে জ্ঞান রাখে, তারা কেমন করে এ কুরআনের বাহককে কবিত্বের অভিযোগে অভিযুক্ত করতে পারে? কারণ তাঁর বক্তব্য দ্ব্যর্থহীন, তাঁর পথ একেবারে সুস্পষ্ট ও নির্ধারিত এবং সত্য ও ন্যায়ের দিকে আহবান করা ছাড়া তাঁর অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই।
কুরআন গণকের কথা- এ কথার জবাব :
وَلَا بِقَوْلِ كَاهِنٍؕ قَلِيْلًا مَّا تَذَكَّرُوْنَ – تَنْزِيْلٌ مِّنْ رَّبِّ الْعَالَمِيْنَ
এটা কোন গণকের কথা নয়, তোমরা খুব অল্পই উপদেশ গ্রহণ করে থাক। এটা জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট হতে অবতীর্ণ। (সূরা হাক্কাহ- ৪২, ৪৩)
কুরআন পাগলের কথা- এ কথার জবাব :
اِنَّهٗ لَقَوْلُ رَسُوْلٍ كَرِيْمٍ – - ذِيْ قُوَّةٍ عِنْدَ ذِى الْعَرْشِ مَكِيْنٍ – - مُطَاعٍ ثَمَّ اَمِيْنٍ – - وَمَا صَاحِبُكُمْ بِمَجْنُوْنٍ
নিশ্চয় এ কুরআন সম্মানিত বার্তাবাহকের আনীত বাণী। সে শক্তিশালী আরশের মালিকের নিকট মর্যাদাবান, সেখানে তাকে মান্য করা হয় এবং সে বিশ্বাসভাজন। আর তোমাদের সাথি (মুহাম্মাদ) পাগল নয়। (সূরা তাকভীর, ১৯-২২)
কুরআন শয়তানের শেখানো কথা- এ কথার জবাব :
وَمَا هُوَ بِقَوْلِ شَيْطَانٍ رَّجِيْمٍ
এটা (কুরআন) কোন অভিশপ্ত শয়তানের কথা নয়। (সূরা তাকভীর- ২৫)
وَمَا تَنَزَّلَتْ بِهِ الشَّيَاطِيْنُ ‐ - وَمَا يَنْۢبَغِيْ لَهُمْ وَمَا يَسْتَطِيْعُوْنَ ‐ - اِنَّهُمْ عَنِ السَّمْعِ لَمَعْزُوْلُوْنَ
শয়তানরা তা (কুরআন) সহ অবতীর্ণ হয়নি। তারা এ কাজের যোগ্য নয় এবং তারা এর সামর্থ্যও রাখে না। তাদেরকে তো শ্রবণের সুযোগ হতে দূরে রাখা হয়েছে। (সূরা শু‘আরা, ২১০-২১২)
আল্লাহ কিছুই নাযিল করেননি- এ কথার জবাব :
وَمَا قَدَرُوا اللهَ حَقَّ قَدْرِهٖۤ اِذْ قَالُوْا مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ عَلٰى بَشَرٍ مِّنْ شَيْءٍؕ قُلْ مَنْ اَنْزَلَ الْكِتَابَ الَّذِيْ جَآءَ بِهٖ مُوْسٰى نُوْرًا وَّهُدًى لِّلنَّاسِ تَجْعَلُوْنَهٗ قَرَاطِيْسَ تُبْدُوْنَهَا وَتُخْفُوْنَ كَثِيْرًاۚ وَعُلِّمْتُمْ مَّا لَمْ تَعْلَمُوْاۤ اَنْتُمْ وَلَاۤ اٰبَآؤُكُمْؕ قُلِ اللهُ ثُمَّ ذَرْهُمْ فِيْ خَوْضِهِمْ يَلْعَبُوْنَ
তারা আল্লাহর যথার্থ মর্যাদা উপলব্ধি করেনি। যখন তারা বলে, আল্লাহ মানুষের নিকট কিছুই নাযিল করেননি। (তখন তাদেরকে) বলো, কে নাযিল করেছেন মূসার আনীত কিতাব, যা ছিল মানুষের জন্য আলো ও পথনির্দেশ? তা তোমরা বিভিন্ন পৃষ্ঠায় লিপিবদ্ধ করে কিছু প্রকাশ কর আর এর অধিকাংশই গোপন রাখ। (এটা ছিল এমন কিতাব, যাতে) তোমরা যা জানতে না এবং তোমাদের পিতৃপুরুষরা যা জানত না তাও শিক্ষা দেয়া হয়েছিল? বলো, ‘আল্লাহই’ (এটা নাযিল করেছেন) অতএব তুমি তাদেরকে নিরর্থক আলোচনায় মত্ত থাকতে দাও। (সূরা আন‘আম- ৯১)
এটা ধনী লোকের উপর অবতীর্ণ হলো না কেন- এ কথার জবাব :
وَقَالُوْا لَوْلَا نُزِّلَ هٰذَا الْقُرْاٰنُ عَلٰى رَجُلٍ مِّنَ الْقَرْيَتَيْنِ عَظِيْمٍ – - اَهُمْ يَقْسِمُوْنَ رَحْمَةَ رَبِّكَؕ نَحْنُ قَسَمْنَا بَيْنَهُمْ مَّعِيْشَتَهُمْ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَرَفَعْنَا بَعْضَهُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِّيَتَّخِذَ بَعْضُهُمْ بَعْضًا سُخْرِيًّاؕ وَرَحْمَةُ رَبِّكَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُوْنَ
তারা বলে, এ কুরআন দু’টি জনপদের কোন প্রতাপশালী ব্যক্তির উপর অবতীর্ণ করা হলো না কেন? তারা কি তোমার প্রতিপালকের রহমত বণ্টন করে? আমিই তাদেরকে তাদের পার্থিব জীবনে জীবিকা বণ্টন করি এবং একজনকে অপরজনের উপর মর্যাদায় উন্নীত করি, যাতে একে অপর থেকে সেবা নিতে পারে। আর তারা যা জমা করে তা হতে তোমার প্রতিপালকের রহমত খুবই উৎকৃষ্ট। (সূরা যুখরুফ- ৩১, ৩২)
কুরআন অন্য কোন ভাষায় নাযিল হলো না কেন- এ কথার জবাব :
وَلَوْ جَعَلْنَاهُ قُرْاٰنًا اَعْجَمِيًّا لَّقَالُوْا لَوْلَا فُصِّلَتْ اٰيَاتُهٗؕ اَ اَعْجَمِيٌّ وَّعَرَبِيٌّؕ قُلْ هُوَ لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا هُدًى وَّشِفَآءٌؕ وَالَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ فِۤيْ اٰذَانِهِمْ وَقْرٌ وَّهُوَ عَلَيْهِمْ عَمًىؕ اُولٰٓئِكَ يُنَادَوْنَ مِنْ مَّكَانٍ ۢبَعِيْدٍ
যদি আমি অনারবি ভাষায় কুরআন অবতীর্ণ করতাম তবে অবশ্যই তারা বলত, এর আয়াতগুলো বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়নি কেন? কী আশ্চর্য যে, এর ভাষা অনারবি, অথচ রাসূল আরবি ভাষী। বলো, মুমিনদের জন্য এটা পথনির্দেশক ও (মানুষের যাবতীয় রোগের) প্রতিকার; কিন্তু যারা অবিশ্বাসী তাদের কর্ণে রয়েছে বধিরতা এবং কুরআন হবে তাদের জন্য অন্ধত্ব। তারা এমন, যেন তাদেরকে বহু দূর হতে আহবান করা হয়। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৪৪)
কুরআন এক সাথে নাযিল হলো না কেন- এর প্রশ্নের জবাব :
وَقُرْاٰنًا فَرَقْنَاهُ لِتَقْرَاَهٗ عَلَى النَّاسِ عَلٰى مُكْثٍ وَّنَزَّلْنَاهُ تَنْزِيْلًا
আমি কুরআনকে (খন্ডাকারে) বিভক্ত করে দিয়েছি, যাতে করে তুমিও ক্রমে ক্রমে তা মানুষদের সামনে পড়তে পার। আর আমি তা ধারাবাহিকভাবে অবতীর্ণ করেছি। (সূরা বনী ইসরাঈল- ১০৬)
ব্যাখ্যা : স্মৃতির ভান্ডারে একে হুবহু ও অক্ষরে অক্ষরে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। লেখার আকারে নয়, বরং একজন নিরক্ষর নবীর মাধ্যমে নিরক্ষর মানব গোষ্ঠীর মধ্যে মৌখিক ভাষণের আকারে এর প্রচার ও প্রসার হচ্ছে। এর শিক্ষাগুলো ভালোভাবে হৃদয়ঙ্গম করা যেতে পারে। এজন্য থেমে থেমে, ছোট ছোট বাক্যাকারে কথা বলা বেশি উপযোগী। এ কিতাব যে জীবনপদ্ধতি শেখায় তা পর্যায়ক্রমে নাযিল হওয়াটাই বেশি যুক্তিসঙ্গত। হক ও বাতিলের লাগাতার সংঘাতের সময় নবী ও তাঁর অনুসারীদের মনে সাহস সঞ্চার করে যেতে হবে। এজন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে যাবতীয় বাধা-বিপত্তির মুকাবিলা করার জন্য বার বার বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তাদের কাছে পয়গাম আসা বেশি কার্যকর হয়ে থাকে। মানুষের বুদ্ধিমত্তা, বোধশক্তি ও গ্রহণশক্তির মধ্যে ত্রুটি রয়েছে, যেজন্য একই সঙ্গে সকল কথা বুঝাতে পারে না এবং বুঝানো সমস্ত কথা তার মনে দৃঢ়ভাবে বদ্ধমূলও হতে পারে না। তাই মহান আল্লাহ নিজ প্রজ্ঞার বলে এ ব্যবস্থা করেন যে, জিবরাঈল (আঃ) এ কালামকে অল্প অল্প করে নিয়ে আসবেন। একই কথাকে বার বার বিভিন্ন পদ্ধতিতে হৃদয়ঙ্গম করার চেষ্টা করবেন, যাতে বিভিন্ন যোগ্যতাসম্পন্ন সত্যানুসন্ধানীরা ঈমান আনতে পারে এবং ঈমান আনার পর তাদের জ্ঞান, বিশ্বাস, প্রত্যয়, বোধ ও দৃষ্টি শক্তিশালী হতে পারে।
اَمْ يَقُوْلُوْنَ افْتَرَاهُؕ قُلْ اِنِ افْتَرَيْتُهٗ فَلَا تَمْلِكُوْنَ لِيْ مِنَ اللهِ شَيْئًاؕ هُوَ اَعْلَمُ بِمَا تُفِيْضُوْنَ فِيْهِ ؕ كَفٰى بِهٖ شَهِيْدًا ۢبَيْنِيْ وَبَيْنَكُمْؕ وَهُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ
তবে কি তারা বলতে চায় যে, রাসূল নিজেই তা রচনা করে নিয়েছে? (হে রাসূল!) আপনি বলুন, আমি যদি নিজেই রচনা করে থাকি তাহলে তোমরা আমাকে আল্লাহর পাকড়াও থেকে মোটেই বাঁচাতে পারবে না। তোমরা যেসব কথা বানাচ্ছ তা আল্লাহ ভালো করেই জানেন। আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী হিসেবে তিনিই যথেষ্ট; তিনি বড়ই ক্ষমাশীল ও দয়াবান। (সূরা আহকাফ- ৮)
اَمْ يَقُوْلُوْنَ افْتَرٰى عَلَى اللهِ كَذِبًاۚ فَاِنْ يَّشَاِ اللهُ يَخْتِمْ عَلٰى قَلْبِكَؕ وَيَمْحُ اللهُ الْبَاطِلَ وَيُحِقُّ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهٖؕ اِنَّهٗ عَلِيْمٌ ۢبِذَاتِ الصُّدُوْرِ
তারা কি বলে যে, সে (রাসূল) আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা বানিয়েছে। সুতরাং যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন, তবে তোমার হৃদয়ে মোহর মেরে দেবেন। আল্লাহ মিথ্যাকে মুছে দেন এবং নিজ বাণী দ্বারা সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেন। নিশ্চয় তিনি অন্তরে যা আছে সে বিষয়ে অবহিত। (সূরা শূরা- ২৪)
اَمْ يَقُوْلُوْنَ افْتَرَاهُؕ قُلْ اِنِ افْتَرَيْتُهٗ فَعَلَيَّ اِجْرَامِيْ وَاَنَاْ بَرِيْٓءٌ مِّمَّا تُجْرِمُوْنَ
তারা কি বলে যে, সে এটা রচনা করেছে? বলো, যদি আমি এটা রচনা করে থাকি, তবে আমিই আমার অপরাধের জন্য দায়ী হব। (কিন্তু এখন) তোমরা যে অপরাধ করছ তা হতে আমি দায়মুক্ত। (সূরা হুদ- ৩৫)
নবী ﷺ কে কেউ এটা শিখিয়ে দেয়- এ কথার জবাব :
وَلَقَدْ نَعْلَمُ اَنَّهُمْ يَقُوْلُوْنَ اِنَّمَا يُعَلِّمُهٗ بَشَرٌؕ لِسَانُ الَّذِيْ يُلْحِدُوْنَ اِلَيْهِ اَعْجَمِيٌّ وَّهٰذَا لِسَانٌ عَرَبِيٌّ مُّبِيْنٌ – - اِنَّ الَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِ لَا يَهْدِيْهِمُ اللهُ وَلَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
আমি তো জানি, তারা বলবে যে, তাকে শিক্ষা দেয় এক মানুষ। তারা যার প্রতি এটা আরোপ করে তার ভাষা তো আরবি নয়; কিন্তু কুরআনের ভাষা স্পষ্ট আরবি। যারা আল্লাহর নিদর্শনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না আল্লাহ তাদেরকে হেদায়াত করেন না; আর তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাসিত্ম। (সূরা নাহল- ১০৩, ১০৪)
কুরআন কবির কাব্য- এ কথার জবাব :
فَلَاۤ اُقْسِمُ بِمَا تُبْصِرُوْنَ ‐ - وَمَا لَا تُبْصِرُوْنَ ‐ - اِنَّهٗ لَقَوْلُ رَسُوْلٍ كَرِيْمٍ ‐ - وَمَا هُوَ بِقَوْلِ شَاعِرٍؕ قَلِيْلًا مَّا تُؤْمِنُوْنَ
আমি ঐ জিনিসের শপথ করি, যা তোমরা দেখতে পাও এবং যা তোমরা দেখতে পাও না। নিশ্চয় এটা (কুরআন) এক সম্মানিত রাসূলের আনীত বাণী, এটা কোন কবির কথা নয়; তোমরা তো খুব অল্পই বিশ্বাস স্থাপন করে থাক। (সূরা হাক্কাহ, ৩৮-৪১)
وَمَا عَلَّمْنَاهُ الشِّعْرَ وَمَا يَنْۢبَغِيْ لَهٗۤ اِنْ هُوَ اِلَّا ذِكْرٌ وَّقُرْاٰنٌ مُّبِيْنٌ
আমি তাঁকে (রাসূলকে) কবিতা শিক্ষা দেইনি, আর তাঁর জন্য তা শোভনীয়ও নয়। এটা তো কেবল এক উপদেশ এবং সুস্পষ্ট কুরআন। (সূরা ইয়াসীন- ৬৯)
ব্যাখ্যা : কবিদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, সেখানে কোথাও প্রেমচর্চা ও শরাব পানের বিষয় আলোচিত হয়, কোথাও অশ্লীল কাহিনী বর্ণনা করা হয়, কোথাও মিথ্যা আসর বসে, কোথাও কারো নিন্দাবাদ করা হয়, কোথাও কারো অযথা প্রশংসা করা হয়, কোথাও প্রতিশোধের আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়। তাদের নিজস্ব চিন্তা ও বাকশক্তি ব্যবহার করার কোন একটি নির্ধারিত পথ নেই। তাদের কণ্ঠ থেকে যা বের হয় তা সত্য ও ন্যায় কি না সেদিকে দৃষ্টি রাখার কোন প্রয়োজনই অনুভব করা হয় না। সুতরাং যারা কবিদের এ পরিচিত বৈশিষ্ট্যাবলি সম্পর্কে জ্ঞান রাখে, তারা কেমন করে এ কুরআনের বাহককে কবিত্বের অভিযোগে অভিযুক্ত করতে পারে? কারণ তাঁর বক্তব্য দ্ব্যর্থহীন, তাঁর পথ একেবারে সুস্পষ্ট ও নির্ধারিত এবং সত্য ও ন্যায়ের দিকে আহবান করা ছাড়া তাঁর অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই।
কুরআন গণকের কথা- এ কথার জবাব :
وَلَا بِقَوْلِ كَاهِنٍؕ قَلِيْلًا مَّا تَذَكَّرُوْنَ – تَنْزِيْلٌ مِّنْ رَّبِّ الْعَالَمِيْنَ
এটা কোন গণকের কথা নয়, তোমরা খুব অল্পই উপদেশ গ্রহণ করে থাক। এটা জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট হতে অবতীর্ণ। (সূরা হাক্কাহ- ৪২, ৪৩)
কুরআন পাগলের কথা- এ কথার জবাব :
اِنَّهٗ لَقَوْلُ رَسُوْلٍ كَرِيْمٍ – - ذِيْ قُوَّةٍ عِنْدَ ذِى الْعَرْشِ مَكِيْنٍ – - مُطَاعٍ ثَمَّ اَمِيْنٍ – - وَمَا صَاحِبُكُمْ بِمَجْنُوْنٍ
নিশ্চয় এ কুরআন সম্মানিত বার্তাবাহকের আনীত বাণী। সে শক্তিশালী আরশের মালিকের নিকট মর্যাদাবান, সেখানে তাকে মান্য করা হয় এবং সে বিশ্বাসভাজন। আর তোমাদের সাথি (মুহাম্মাদ) পাগল নয়। (সূরা তাকভীর, ১৯-২২)
কুরআন শয়তানের শেখানো কথা- এ কথার জবাব :
وَمَا هُوَ بِقَوْلِ شَيْطَانٍ رَّجِيْمٍ
এটা (কুরআন) কোন অভিশপ্ত শয়তানের কথা নয়। (সূরা তাকভীর- ২৫)
وَمَا تَنَزَّلَتْ بِهِ الشَّيَاطِيْنُ ‐ - وَمَا يَنْۢبَغِيْ لَهُمْ وَمَا يَسْتَطِيْعُوْنَ ‐ - اِنَّهُمْ عَنِ السَّمْعِ لَمَعْزُوْلُوْنَ
শয়তানরা তা (কুরআন) সহ অবতীর্ণ হয়নি। তারা এ কাজের যোগ্য নয় এবং তারা এর সামর্থ্যও রাখে না। তাদেরকে তো শ্রবণের সুযোগ হতে দূরে রাখা হয়েছে। (সূরা শু‘আরা, ২১০-২১২)
আল্লাহ কিছুই নাযিল করেননি- এ কথার জবাব :
وَمَا قَدَرُوا اللهَ حَقَّ قَدْرِهٖۤ اِذْ قَالُوْا مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ عَلٰى بَشَرٍ مِّنْ شَيْءٍؕ قُلْ مَنْ اَنْزَلَ الْكِتَابَ الَّذِيْ جَآءَ بِهٖ مُوْسٰى نُوْرًا وَّهُدًى لِّلنَّاسِ تَجْعَلُوْنَهٗ قَرَاطِيْسَ تُبْدُوْنَهَا وَتُخْفُوْنَ كَثِيْرًاۚ وَعُلِّمْتُمْ مَّا لَمْ تَعْلَمُوْاۤ اَنْتُمْ وَلَاۤ اٰبَآؤُكُمْؕ قُلِ اللهُ ثُمَّ ذَرْهُمْ فِيْ خَوْضِهِمْ يَلْعَبُوْنَ
তারা আল্লাহর যথার্থ মর্যাদা উপলব্ধি করেনি। যখন তারা বলে, আল্লাহ মানুষের নিকট কিছুই নাযিল করেননি। (তখন তাদেরকে) বলো, কে নাযিল করেছেন মূসার আনীত কিতাব, যা ছিল মানুষের জন্য আলো ও পথনির্দেশ? তা তোমরা বিভিন্ন পৃষ্ঠায় লিপিবদ্ধ করে কিছু প্রকাশ কর আর এর অধিকাংশই গোপন রাখ। (এটা ছিল এমন কিতাব, যাতে) তোমরা যা জানতে না এবং তোমাদের পিতৃপুরুষরা যা জানত না তাও শিক্ষা দেয়া হয়েছিল? বলো, ‘আল্লাহই’ (এটা নাযিল করেছেন) অতএব তুমি তাদেরকে নিরর্থক আলোচনায় মত্ত থাকতে দাও। (সূরা আন‘আম- ৯১)
এটা ধনী লোকের উপর অবতীর্ণ হলো না কেন- এ কথার জবাব :
وَقَالُوْا لَوْلَا نُزِّلَ هٰذَا الْقُرْاٰنُ عَلٰى رَجُلٍ مِّنَ الْقَرْيَتَيْنِ عَظِيْمٍ – - اَهُمْ يَقْسِمُوْنَ رَحْمَةَ رَبِّكَؕ نَحْنُ قَسَمْنَا بَيْنَهُمْ مَّعِيْشَتَهُمْ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَرَفَعْنَا بَعْضَهُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِّيَتَّخِذَ بَعْضُهُمْ بَعْضًا سُخْرِيًّاؕ وَرَحْمَةُ رَبِّكَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُوْنَ
তারা বলে, এ কুরআন দু’টি জনপদের কোন প্রতাপশালী ব্যক্তির উপর অবতীর্ণ করা হলো না কেন? তারা কি তোমার প্রতিপালকের রহমত বণ্টন করে? আমিই তাদেরকে তাদের পার্থিব জীবনে জীবিকা বণ্টন করি এবং একজনকে অপরজনের উপর মর্যাদায় উন্নীত করি, যাতে একে অপর থেকে সেবা নিতে পারে। আর তারা যা জমা করে তা হতে তোমার প্রতিপালকের রহমত খুবই উৎকৃষ্ট। (সূরা যুখরুফ- ৩১, ৩২)
কুরআন অন্য কোন ভাষায় নাযিল হলো না কেন- এ কথার জবাব :
وَلَوْ جَعَلْنَاهُ قُرْاٰنًا اَعْجَمِيًّا لَّقَالُوْا لَوْلَا فُصِّلَتْ اٰيَاتُهٗؕ اَ اَعْجَمِيٌّ وَّعَرَبِيٌّؕ قُلْ هُوَ لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا هُدًى وَّشِفَآءٌؕ وَالَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ فِۤيْ اٰذَانِهِمْ وَقْرٌ وَّهُوَ عَلَيْهِمْ عَمًىؕ اُولٰٓئِكَ يُنَادَوْنَ مِنْ مَّكَانٍ ۢبَعِيْدٍ
যদি আমি অনারবি ভাষায় কুরআন অবতীর্ণ করতাম তবে অবশ্যই তারা বলত, এর আয়াতগুলো বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়নি কেন? কী আশ্চর্য যে, এর ভাষা অনারবি, অথচ রাসূল আরবি ভাষী। বলো, মুমিনদের জন্য এটা পথনির্দেশক ও (মানুষের যাবতীয় রোগের) প্রতিকার; কিন্তু যারা অবিশ্বাসী তাদের কর্ণে রয়েছে বধিরতা এবং কুরআন হবে তাদের জন্য অন্ধত্ব। তারা এমন, যেন তাদেরকে বহু দূর হতে আহবান করা হয়। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৪৪)
কুরআন এক সাথে নাযিল হলো না কেন- এর প্রশ্নের জবাব :
وَقُرْاٰنًا فَرَقْنَاهُ لِتَقْرَاَهٗ عَلَى النَّاسِ عَلٰى مُكْثٍ وَّنَزَّلْنَاهُ تَنْزِيْلًا
আমি কুরআনকে (খন্ডাকারে) বিভক্ত করে দিয়েছি, যাতে করে তুমিও ক্রমে ক্রমে তা মানুষদের সামনে পড়তে পার। আর আমি তা ধারাবাহিকভাবে অবতীর্ণ করেছি। (সূরা বনী ইসরাঈল- ১০৬)
ব্যাখ্যা : স্মৃতির ভান্ডারে একে হুবহু ও অক্ষরে অক্ষরে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। লেখার আকারে নয়, বরং একজন নিরক্ষর নবীর মাধ্যমে নিরক্ষর মানব গোষ্ঠীর মধ্যে মৌখিক ভাষণের আকারে এর প্রচার ও প্রসার হচ্ছে। এর শিক্ষাগুলো ভালোভাবে হৃদয়ঙ্গম করা যেতে পারে। এজন্য থেমে থেমে, ছোট ছোট বাক্যাকারে কথা বলা বেশি উপযোগী। এ কিতাব যে জীবনপদ্ধতি শেখায় তা পর্যায়ক্রমে নাযিল হওয়াটাই বেশি যুক্তিসঙ্গত। হক ও বাতিলের লাগাতার সংঘাতের সময় নবী ও তাঁর অনুসারীদের মনে সাহস সঞ্চার করে যেতে হবে। এজন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে যাবতীয় বাধা-বিপত্তির মুকাবিলা করার জন্য বার বার বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তাদের কাছে পয়গাম আসা বেশি কার্যকর হয়ে থাকে। মানুষের বুদ্ধিমত্তা, বোধশক্তি ও গ্রহণশক্তির মধ্যে ত্রুটি রয়েছে, যেজন্য একই সঙ্গে সকল কথা বুঝাতে পারে না এবং বুঝানো সমস্ত কথা তার মনে দৃঢ়ভাবে বদ্ধমূলও হতে পারে না। তাই মহান আল্লাহ নিজ প্রজ্ঞার বলে এ ব্যবস্থা করেন যে, জিবরাঈল (আঃ) এ কালামকে অল্প অল্প করে নিয়ে আসবেন। একই কথাকে বার বার বিভিন্ন পদ্ধতিতে হৃদয়ঙ্গম করার চেষ্টা করবেন, যাতে বিভিন্ন যোগ্যতাসম্পন্ন সত্যানুসন্ধানীরা ঈমান আনতে পারে এবং ঈমান আনার পর তাদের জ্ঞান, বিশ্বাস, প্রত্যয়, বোধ ও দৃষ্টি শক্তিশালী হতে পারে।
মুমিন কুরআন দ্বারা হেদায়াত পায়, আর অন্যরা পথভ্রষ্ট হয় :
وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْاٰنِ مَا هُوَ شِفَآءٌ وَّرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ وَلَا يَزِيْدُ الظَّالِمِيْنَ اِلَّا خَسَارًا
আমি কুরআন অবতীর্ণ করি, যা মুমিনদের জন্য আরোগ্য ও রহমতস্বরূপ, কিন্তু সেটা যালিমদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৮২)
ব্যাখ্যা : যারা এ কুরআনকে নিজেদের পথপ্রদর্শক এবং নিজেদের জন্য আইনের কিতাব বলে মেনে নেয়, তাদের জন্য এটি আল্লাহর রহমত এবং যাবতীয় মানসিক ও নৈতিক রোগের চিকিৎসা। কিন্তু যেসব যালিম এর পথনির্দেশনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে নিজেদের উপর যুলুম করে, এ কুরআন তাদেরকে আরো বেশি ক্ষতির মধ্যে ঠেলে দেয়। এর কারণ যতদিন কুরআন আসেনি, ততদিন তাদের ক্ষতি ছিল নিছক অজ্ঞতার ক্ষতি। কিন্তু যখন কুরআন তাদের সামনে এসে গেল এবং তা হক ও বাতিলের পার্থক্য সুস্পষ্ট করে দেখিয়ে দিল, তখন তাদের উপর আল্লাহর দাবী অকাট্যভাবে সঠিক প্রমাণিত হয়ে গেল। এখন যদি তারা একে প্রত্যাখ্যান করে গোমরাহীর উপর অবিচল থাকার জন্য জোর দেয়, তাহলে এর অর্থ হয়- তারা অজ্ঞ নয় বরং যালিম ও বাতিলপন্থী। এখন তাদের অবস্থা হবে এমন ব্যক্তির মতো, যে বিষ ও বিষের প্রতিষেধক উভয়টি দেখে বিষকে বেছে নেয়।
وَاِذَا مَاۤ اُنْزِلَتْ سُوْرَةٌ فَمِنْهُمْ مَّنْ يَّقُوْلُ اَيُّكُمْ زَادَتْهُ هٰذِهٖۤ اِيْمَانًاۚ فَاَمَّا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا فَزَادَتْهُمْ اِيْمَانًا وَّهُمْ يَسْتَبْشِرُوْنَ – وَاَمَّا الَّذِيْنَ فِيْ قُلُوْبِهِمْ مَّرَضٌ فَزَادَتْهُمْ رِجْسًا اِلٰى رِجْسِهِمْ وَمَاتُوْا وَهُمْ كَافِرُوْنَ
যখনই কোন সূরা অবতীর্ণ হয় তখন তাদের কেউ কেউ বলে, এটা তোমাদের মধ্যে কার ঈমান বৃদ্ধি করল? (প্রকৃতপক্ষে) যারা মুমিন এটা তাদেরই ঈমান বৃদ্ধি করে এবং তারাই আনন্দিত হয়। আর যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে, এটা তাদের অপবিত্রতার সাথে আরো অপবিত্রতা যুক্ত করে এবং তাদের মৃত্যু ঘটে কাফির অবস্থায়। (সূরা তাওবা- ১২৪, ১২৫)
ব্যাখ্যা : একই কথা যা হেদায়াতপ্রাপ্ত লোকদের জন্য আরো হেদায়াতের কারণ হতো। অথচ তা শুনে কাফির ও মুনাফিকরা জিজ্ঞেস করত যে, একটু আগে তিনি কী বলেছেন? যে মজলিস থেকে এ দুর্ভাগারা অযথা সময় নষ্ট করে উঠে যেত, সৌভাগ্যবানরা সে মজলিস থেকেই জ্ঞানের এক নতুন ভান্ডার ভরে নিয়ে যেত। তারা নিজেদের মধ্যে যে তাক্বওয়ার যোগ্যতা সৃষ্টি করে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে সে তাওফীকই দান করেন।
هُوَ الَّذِيْۤ اَنْزَلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ مِنْهُ اٰيَاتٌ مُّحْكَمَاتٌ هُنَّ اُمُّ الْكِتَابِ وَاُخَرُ مُتَشَابِهَاتٌؕ فَاَمَّا الَّذِيْنَ فِيْ قُلُوْبِهِمْ زَيْغٌ فَيَتَّبِعُوْنَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ ابْتِغَآءَ الْفِتْنَةِ وَابْتِغَآءَ تَاْوِيْلِهٖۚ وَمَا يَعْلَمُ تَاْوِيْلَهٗۤ اِلَّا اللهُ وَالرَّاسِخُوْنَ فِى الْعِلْمِ يَقُوْلُوْنَ اٰمَنَّا بِهٖ كُلٌّ مِّنْ عِنْدِ رَبِّنَاۚ وَمَا يَذَّكَّرُ اِلَّاۤ اُولُو الْاَ لْبَابِ
তিনিই আপনার উপর কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। এর মধ্যে কতক আয়াত রয়েছে মুহকামাত (স্পষ্ট), এগুলোই কিতাবের মূল; আর অন্যগুলো মুতাশাবিহাত (অস্পষ্ট)। সুতরাং যাদের অন্তরে বক্রতা রয়েছে তারা ফেতনা এবং ব্যাখ্যা তালাশের উদ্দেশ্যে মুতাশাবিহাতের অনুসরণ করে। অথচ এগুলোর ব্যাখ্যা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। আর যারা গভীর জ্ঞানের অধিকারী তারা বলে, আমরা এগুলোতে ঈমান এনেছি, সবই আমাদের রবের পক্ষ থেকে। আর বুদ্ধিমান ব্যক্তি ছাড়া কেউ (এ থেকে) উপদেশ গ্রহণ করে না। (সূরা আলে ইমরান- ৭)
ব্যাখ্যা : ঈমানদারদের মধ্যে এ বাণী হৃদয়ের শীতলতা ও আত্মার খাদ্য হয়ে প্রবেশ করে। কিন্তু অপরাধীদের অন্তরে তা বারুদের মতো আঘাত করে এবং তা শুনে তাদের মনে আগুন জ্বলে উঠে। যারা সত্য ও দ্বীনের কথা বুঝতে চায় না, সত্যের মর্ম অনুসন্ধান করে না, তাদের দৃষ্টি কেবল শব্দের বাইরের কাঠামোর উপর নিবদ্ধ থাকে। তারা ঐ জিনিসগুলো থেকে বিপরীত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সত্য থেকে আরো দূরে চলে যায়। অপর দিকে যারা নিজেরাই সত্যসন্ধানী এবং সঠিক দৃষ্টিশক্তির অধিকারী তারা ঐসব কথার মধ্যে সূক্ষ্ম জ্ঞানের আলো দেখতে পায়।
وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْاٰنِ مَا هُوَ شِفَآءٌ وَّرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ وَلَا يَزِيْدُ الظَّالِمِيْنَ اِلَّا خَسَارًا
আমি কুরআন অবতীর্ণ করি, যা মুমিনদের জন্য আরোগ্য ও রহমতস্বরূপ, কিন্তু সেটা যালিমদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৮২)
ব্যাখ্যা : যারা এ কুরআনকে নিজেদের পথপ্রদর্শক এবং নিজেদের জন্য আইনের কিতাব বলে মেনে নেয়, তাদের জন্য এটি আল্লাহর রহমত এবং যাবতীয় মানসিক ও নৈতিক রোগের চিকিৎসা। কিন্তু যেসব যালিম এর পথনির্দেশনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে নিজেদের উপর যুলুম করে, এ কুরআন তাদেরকে আরো বেশি ক্ষতির মধ্যে ঠেলে দেয়। এর কারণ যতদিন কুরআন আসেনি, ততদিন তাদের ক্ষতি ছিল নিছক অজ্ঞতার ক্ষতি। কিন্তু যখন কুরআন তাদের সামনে এসে গেল এবং তা হক ও বাতিলের পার্থক্য সুস্পষ্ট করে দেখিয়ে দিল, তখন তাদের উপর আল্লাহর দাবী অকাট্যভাবে সঠিক প্রমাণিত হয়ে গেল। এখন যদি তারা একে প্রত্যাখ্যান করে গোমরাহীর উপর অবিচল থাকার জন্য জোর দেয়, তাহলে এর অর্থ হয়- তারা অজ্ঞ নয় বরং যালিম ও বাতিলপন্থী। এখন তাদের অবস্থা হবে এমন ব্যক্তির মতো, যে বিষ ও বিষের প্রতিষেধক উভয়টি দেখে বিষকে বেছে নেয়।
وَاِذَا مَاۤ اُنْزِلَتْ سُوْرَةٌ فَمِنْهُمْ مَّنْ يَّقُوْلُ اَيُّكُمْ زَادَتْهُ هٰذِهٖۤ اِيْمَانًاۚ فَاَمَّا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا فَزَادَتْهُمْ اِيْمَانًا وَّهُمْ يَسْتَبْشِرُوْنَ – وَاَمَّا الَّذِيْنَ فِيْ قُلُوْبِهِمْ مَّرَضٌ فَزَادَتْهُمْ رِجْسًا اِلٰى رِجْسِهِمْ وَمَاتُوْا وَهُمْ كَافِرُوْنَ
যখনই কোন সূরা অবতীর্ণ হয় তখন তাদের কেউ কেউ বলে, এটা তোমাদের মধ্যে কার ঈমান বৃদ্ধি করল? (প্রকৃতপক্ষে) যারা মুমিন এটা তাদেরই ঈমান বৃদ্ধি করে এবং তারাই আনন্দিত হয়। আর যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে, এটা তাদের অপবিত্রতার সাথে আরো অপবিত্রতা যুক্ত করে এবং তাদের মৃত্যু ঘটে কাফির অবস্থায়। (সূরা তাওবা- ১২৪, ১২৫)
ব্যাখ্যা : একই কথা যা হেদায়াতপ্রাপ্ত লোকদের জন্য আরো হেদায়াতের কারণ হতো। অথচ তা শুনে কাফির ও মুনাফিকরা জিজ্ঞেস করত যে, একটু আগে তিনি কী বলেছেন? যে মজলিস থেকে এ দুর্ভাগারা অযথা সময় নষ্ট করে উঠে যেত, সৌভাগ্যবানরা সে মজলিস থেকেই জ্ঞানের এক নতুন ভান্ডার ভরে নিয়ে যেত। তারা নিজেদের মধ্যে যে তাক্বওয়ার যোগ্যতা সৃষ্টি করে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে সে তাওফীকই দান করেন।
هُوَ الَّذِيْۤ اَنْزَلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ مِنْهُ اٰيَاتٌ مُّحْكَمَاتٌ هُنَّ اُمُّ الْكِتَابِ وَاُخَرُ مُتَشَابِهَاتٌؕ فَاَمَّا الَّذِيْنَ فِيْ قُلُوْبِهِمْ زَيْغٌ فَيَتَّبِعُوْنَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ ابْتِغَآءَ الْفِتْنَةِ وَابْتِغَآءَ تَاْوِيْلِهٖۚ وَمَا يَعْلَمُ تَاْوِيْلَهٗۤ اِلَّا اللهُ وَالرَّاسِخُوْنَ فِى الْعِلْمِ يَقُوْلُوْنَ اٰمَنَّا بِهٖ كُلٌّ مِّنْ عِنْدِ رَبِّنَاۚ وَمَا يَذَّكَّرُ اِلَّاۤ اُولُو الْاَ لْبَابِ
তিনিই আপনার উপর কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। এর মধ্যে কতক আয়াত রয়েছে মুহকামাত (স্পষ্ট), এগুলোই কিতাবের মূল; আর অন্যগুলো মুতাশাবিহাত (অস্পষ্ট)। সুতরাং যাদের অন্তরে বক্রতা রয়েছে তারা ফেতনা এবং ব্যাখ্যা তালাশের উদ্দেশ্যে মুতাশাবিহাতের অনুসরণ করে। অথচ এগুলোর ব্যাখ্যা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। আর যারা গভীর জ্ঞানের অধিকারী তারা বলে, আমরা এগুলোতে ঈমান এনেছি, সবই আমাদের রবের পক্ষ থেকে। আর বুদ্ধিমান ব্যক্তি ছাড়া কেউ (এ থেকে) উপদেশ গ্রহণ করে না। (সূরা আলে ইমরান- ৭)
ব্যাখ্যা : ঈমানদারদের মধ্যে এ বাণী হৃদয়ের শীতলতা ও আত্মার খাদ্য হয়ে প্রবেশ করে। কিন্তু অপরাধীদের অন্তরে তা বারুদের মতো আঘাত করে এবং তা শুনে তাদের মনে আগুন জ্বলে উঠে। যারা সত্য ও দ্বীনের কথা বুঝতে চায় না, সত্যের মর্ম অনুসন্ধান করে না, তাদের দৃষ্টি কেবল শব্দের বাইরের কাঠামোর উপর নিবদ্ধ থাকে। তারা ঐ জিনিসগুলো থেকে বিপরীত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সত্য থেকে আরো দূরে চলে যায়। অপর দিকে যারা নিজেরাই সত্যসন্ধানী এবং সঠিক দৃষ্টিশক্তির অধিকারী তারা ঐসব কথার মধ্যে সূক্ষ্ম জ্ঞানের আলো দেখতে পায়।
কুরআন অস্বীকারকারীরা অন্ধকারে ডুবে থাকে :
وَالَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَا صُمٌّ وَّبُكْمٌ فِى الظُّلُمَاتِؕ مَنْ يَّشَاِ اللهُ يُضْلِلْهُؕ وَمَنْ يَّشَاْ يَجْعَلْهُ عَلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে তারা বধির ও বোবা, তারা অন্ধকারে নিমজ্জিত রয়েছে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিপথগামী করেন এবং যাকে ইচ্ছা সরল পথে পরিচালিত করেন। (সূরা আন‘আম- ৩৯)
অর্থাৎ যারা সত্য কথা শোনে না, সত্য কথা বলেও না, তাদের কান ও মুখ সত্যের ব্যাপারে বধির ও বোবা।
তারা কখনো হেদায়াত পাবে না :
قُلْ اَرَاَيْتُمْ اِنْ كَانَ مِنْ عِنْدِ اللهِ ثُمَّ كَفَرْتُمْ بِهٖ مَنْ اَضَلُّ مِمَّنْ هُوَ فِيْ شِقَاقٍ ۢبَعِيْدٍ
বলো, তোমাদের অভিমত কী, যদি (এই কুরআন) আল্লাহর নিকট হতে অবতীর্ণ হয়ে থাকে এবং তোমরা এটা প্রত্যাখ্যান কর তবে যে ব্যক্তি ঘোর বিরোধিতায় লিপ্ত আছে, তার চেয়ে কে অধিক পথভ্রষ্ট? (সূরা হা-মীম সাজদা- ৫২)
قُلْ اَرَاَيْتُمْ اِنْ كَانَ مِنْ عِنْدِ اللهِ وَكَفَرْتُمْ بِهٖ وَشَهِدَ شَاهِدٌ مِّنْ ۢبَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ عَلٰى مِثْلِهٖ فَاٰمَنَ وَاسْتَكْبَرْتُمْؕ اِنَّ اللهَ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
(হে রাসূল) বলুন, তোমরা কি ভেবে দেখেছ যে, যদি এ কালাম আল্লাহর পক্ষ থেকেই এসে থাকে এবং তোমরা তা মানতে অস্বীকার কর (তাহলে তোমাদের অবস্থা কী হবে?) আর এ ধরনের কালামের পক্ষে তো বনী ইসরাঈলের একজন সাক্ষী দিয়েছে। অতঃপর সে ঈমান এনেছে, আর তোমরা অহংকারে ডুবে রয়েছ। নিশ্চয় আল্লাহ এমন যালিমদেরকে হেদায়াত করেন না। (সূরা আহকাফ- ১০)
তাদের কুরআন বুঝার তাওফীক হয় না :
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ ذُكِّرَ بِاٰيَاتِ رَبِّهٖ فَاَعْرَضَ عَنْهَا وَنَسِيَ مَا قَدَّمَتْ يَدَاهُؕ اِنَّا جَعَلْنَا عَلٰى قُلُوْبِهِمْ اَ كِنَّةً اَنْ يَّفْقَهُوْهُ وَفِۤيْ اٰذَانِهِمْ وَقْرًاؕ وَاِنْ تَدْعُهُمْ اِلَى الْهُدٰى فَلَنْ يَّهْتَدُوْاۤ اِذًا اَبَدًا
কোন ব্যক্তিকে তার প্রতিপালকের নিদর্শনাবলি স্মরণ করিয়ে দেয়ার পর সে যদি সেটা হতে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তার কৃতকর্মসমূহ ভুলে যায়, তবে তার চেয়ে অধিক যালিম আর কে হতে পারে? আমি তাদের অমত্মরের উপর আবরণ সৃষ্টি করে দিয়েছি, যেন তারা তা (কুরআন) বুঝতে না পারে; আর তাদের কানে রয়েছে বধিরতা। (সুতরাং) তুমি তাদেরকে সৎপথে আহবান করলেও তারা কখনো সৎপথে আসবে না। (সূরা কাহফ- ৫৭)
তারা কুরআন বুঝতে সমর্থ হয় না :
وَاِذَا قَرَاْتَ الْقُرْاٰنَ جَعَلْنَا بَيْنَكَ وَبَيْنَ الَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ بِالْاٰخِرَةِ حِجَابًا مَّسْتُوْرًا – وَجَعَلْنَا عَلٰى قُلُوْبِهِمْ اَكِنَّةً اَنْ يَّفْقَهُوْهُ وَفِۤيْ اٰذَانِهِمْ وَقْرًاؕ وَاِذَا ذَكَرْتَ رَبَّكَ فِى الْقُرْاٰنِ وَحْدَهٗ وَلَّوْا عَلٰۤى اَدْبَارِهِمْ نُفُوْرًا
যখন তুমি কুরআন পাঠ কর, তখন তোমার মাঝে ও যারা আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না তাদের মাঝে এক প্রচ্ছন্ন পর্দা রেখে দেই। আমি তাদের অমত্মরের উপর আবরণ ফেলে দিয়েছি, যেন তারা তা উপলব্ধি করতে না পারে এবং তাদের কানের মধ্যে ছিপি এঁটে দিয়েছি। ফলে যখন তুমি কুরআন হতে তোমার প্রতিপালকের একত্ববাদ বিষয়ক আয়াত তিলাওয়াত করো, তখন তারা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে সরে পড়ে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৪৫, ৪৬)
ব্যাখ্যা : কুরআনের দাওয়াত হচ্ছে, অসীম ক্ষমতাসম্পন্ন রবের সামনে জবাবদিহি করতে হবে- সেদিকে নজর রাখা। এখন যে ব্যক্তি আদৌ আখিরাতকেই মেনে নিতে প্রস্তুত নয় এবং এ দুনিয়ার অভিজ্ঞতালব্ধ যাবতীয় বিষয়ের মধ্যেই যার সমস্ত আস্থা ও বিশ্বাস সীমাবদ্ধ, সে কখনো কুরআনের এ দাওয়াতকে গ্রহণ করতে রাজি হবে না। এ আওয়াজ সর্বদা তার কানের পর্দায় আসতে থাকবে, কিন্তু কখনো তার মনোরাজ্যে প্রবেশ করার পথ খুঁজে পাবে না। এটি একটি মনস্তাত্ত্বিক সত্য ব্যাপার। সর্বশক্তিমান আল্লাহ এ সত্যকে এভাবে বর্ণনা করেছেন যে, যে ব্যক্তি আখিরাত মানে না, আমি তার অন্তর ও কান কুরআনের দাওয়াতের জন্য বন্ধ করে দেই। অর্থাৎ এটি আমার প্রাকৃতিক আইন। আখিরাত অস্বীকারকারীদের উপর এ আইনটি এভাবে প্রবর্তিত হয়।
তারা সবচেয়ে বড় যালিম :
فَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ كَذَبَ عَلَى اللهِ وَكَذَّبَ بِالصِّدْقِ اِذْ جَآءَهٗؕ اَلَيْسَ فِيْ جَهَنَّمَ مَثْوًى لِّلْكَافِرِيْنَ
যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করে এবং যখন তার নিকট সত্য আসে তখন তা প্রত্যাখ্যান করে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? কাফিরদের ঠিকানা কি জাহান্নাম নয়? (সূরা যুমার- ৩২)
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرٰى عَلَى اللهِ كَذِبًا اَوْ كَذَّبَ بِاٰيَاتِهٖؕ اِنَّهٗ لَا يُفْلِحُ الظَّالِمُوْنَ
যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে অথবা তাঁর আয়াতসমূহকে প্রত্যাখ্যান করে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? নিশ্চয় যালিমরা কখনো সফলকাম হবে না। (সূরা আন‘আম- ২১)
তাদের সকল আমল নষ্ট হয়ে যাবে :
وَالَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَا وَلِقَآءِ الْاٰخِرَةِ حَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْؕ هَلْ يُجْزَوْنَ اِلَّا مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
যারা আমার আয়াতসমূহ ও আখিরাতের সাক্ষাতকে অস্বীকার করে তাদের আমলসমূহ নষ্ট হয়ে যাবে। তারা যা করে তাদেরকে সে অনুযায়ী প্রতিফল দেয়া হবে। (সূরা আ‘রাফ- ১৪৭)
তারা পর্যায়ক্রমে ধ্বংসের সম্মুখীন হবে :
وَالَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَا سَنَسْتَدْرِجُهُمْ مِّنْ حَيْثُ لَا يَعْلَمُوْنَ
যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যারোপ করে আমি তাদেরকে এমনভাবে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাই যে, তারা জানতেও পারে না। (সূরা আ‘রাফ- ১৮২)
فَذَرْنِيْ وَمَنْ يُّكَذِّبُ بِهٰذَا الْحَدِيْثِؕ سَنَسْتَدْرِجُهُمْ مِّنْ حَيْثُ لَا يَعْلَمُوْنَ ‐ وَاُمْلِيْ لَهُمْؕ اِنَّ كَيْدِيْ مَتِيْنٌ
যারা আমাকে এবং এ বাণীকে মিথ্যারোপ করেছে তাদের ব্যাপারটি ছেড়ে দাও, আমি তাদেরকে এমনভাবে ক্রমে ক্রমে ধরব যে, তারা বুঝতেও পারবে না। আর আমি তাদেরকে অবকাশ দিয়ে থাকি, নিশ্চয় আমার কৌশল সুদৃঢ়। (সূরা ক্বালাম- ৪৪, ৪৫)
তারা জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে :
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِاٰيَاتِنَا سَوْفَ نُصْلِيْهِمْ نَارًاؕ كُلَّمَا نَضِجَتْ جُلُوْدُهُمْ بَدَّلْنَاهُمْ جُلُوْدًا غَيْرَهَا لِيَذُوْقُوا الْعَذَابَؕ اِنَّ اللهَ كَانَ عَزِيْزًا حَكِيْمًا
যারা আমার আয়াতসমূহকে প্রত্যাখ্যান করে, তাদেরকে আগুনে পোড়াব। যখনই তাদের চামড়া জ্বলে যাবে, তখনই তার স্থলে নতুন চামড়া সৃষ্টি করব- যেন তারা (পরিপূর্ণভাবে) শাস্তি ভোগ করে। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা- ৫৬)
وَالَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَا صُمٌّ وَّبُكْمٌ فِى الظُّلُمَاتِؕ مَنْ يَّشَاِ اللهُ يُضْلِلْهُؕ وَمَنْ يَّشَاْ يَجْعَلْهُ عَلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে তারা বধির ও বোবা, তারা অন্ধকারে নিমজ্জিত রয়েছে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিপথগামী করেন এবং যাকে ইচ্ছা সরল পথে পরিচালিত করেন। (সূরা আন‘আম- ৩৯)
অর্থাৎ যারা সত্য কথা শোনে না, সত্য কথা বলেও না, তাদের কান ও মুখ সত্যের ব্যাপারে বধির ও বোবা।
তারা কখনো হেদায়াত পাবে না :
قُلْ اَرَاَيْتُمْ اِنْ كَانَ مِنْ عِنْدِ اللهِ ثُمَّ كَفَرْتُمْ بِهٖ مَنْ اَضَلُّ مِمَّنْ هُوَ فِيْ شِقَاقٍ ۢبَعِيْدٍ
বলো, তোমাদের অভিমত কী, যদি (এই কুরআন) আল্লাহর নিকট হতে অবতীর্ণ হয়ে থাকে এবং তোমরা এটা প্রত্যাখ্যান কর তবে যে ব্যক্তি ঘোর বিরোধিতায় লিপ্ত আছে, তার চেয়ে কে অধিক পথভ্রষ্ট? (সূরা হা-মীম সাজদা- ৫২)
قُلْ اَرَاَيْتُمْ اِنْ كَانَ مِنْ عِنْدِ اللهِ وَكَفَرْتُمْ بِهٖ وَشَهِدَ شَاهِدٌ مِّنْ ۢبَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ عَلٰى مِثْلِهٖ فَاٰمَنَ وَاسْتَكْبَرْتُمْؕ اِنَّ اللهَ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
(হে রাসূল) বলুন, তোমরা কি ভেবে দেখেছ যে, যদি এ কালাম আল্লাহর পক্ষ থেকেই এসে থাকে এবং তোমরা তা মানতে অস্বীকার কর (তাহলে তোমাদের অবস্থা কী হবে?) আর এ ধরনের কালামের পক্ষে তো বনী ইসরাঈলের একজন সাক্ষী দিয়েছে। অতঃপর সে ঈমান এনেছে, আর তোমরা অহংকারে ডুবে রয়েছ। নিশ্চয় আল্লাহ এমন যালিমদেরকে হেদায়াত করেন না। (সূরা আহকাফ- ১০)
তাদের কুরআন বুঝার তাওফীক হয় না :
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ ذُكِّرَ بِاٰيَاتِ رَبِّهٖ فَاَعْرَضَ عَنْهَا وَنَسِيَ مَا قَدَّمَتْ يَدَاهُؕ اِنَّا جَعَلْنَا عَلٰى قُلُوْبِهِمْ اَ كِنَّةً اَنْ يَّفْقَهُوْهُ وَفِۤيْ اٰذَانِهِمْ وَقْرًاؕ وَاِنْ تَدْعُهُمْ اِلَى الْهُدٰى فَلَنْ يَّهْتَدُوْاۤ اِذًا اَبَدًا
কোন ব্যক্তিকে তার প্রতিপালকের নিদর্শনাবলি স্মরণ করিয়ে দেয়ার পর সে যদি সেটা হতে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তার কৃতকর্মসমূহ ভুলে যায়, তবে তার চেয়ে অধিক যালিম আর কে হতে পারে? আমি তাদের অমত্মরের উপর আবরণ সৃষ্টি করে দিয়েছি, যেন তারা তা (কুরআন) বুঝতে না পারে; আর তাদের কানে রয়েছে বধিরতা। (সুতরাং) তুমি তাদেরকে সৎপথে আহবান করলেও তারা কখনো সৎপথে আসবে না। (সূরা কাহফ- ৫৭)
তারা কুরআন বুঝতে সমর্থ হয় না :
وَاِذَا قَرَاْتَ الْقُرْاٰنَ جَعَلْنَا بَيْنَكَ وَبَيْنَ الَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ بِالْاٰخِرَةِ حِجَابًا مَّسْتُوْرًا – وَجَعَلْنَا عَلٰى قُلُوْبِهِمْ اَكِنَّةً اَنْ يَّفْقَهُوْهُ وَفِۤيْ اٰذَانِهِمْ وَقْرًاؕ وَاِذَا ذَكَرْتَ رَبَّكَ فِى الْقُرْاٰنِ وَحْدَهٗ وَلَّوْا عَلٰۤى اَدْبَارِهِمْ نُفُوْرًا
যখন তুমি কুরআন পাঠ কর, তখন তোমার মাঝে ও যারা আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না তাদের মাঝে এক প্রচ্ছন্ন পর্দা রেখে দেই। আমি তাদের অমত্মরের উপর আবরণ ফেলে দিয়েছি, যেন তারা তা উপলব্ধি করতে না পারে এবং তাদের কানের মধ্যে ছিপি এঁটে দিয়েছি। ফলে যখন তুমি কুরআন হতে তোমার প্রতিপালকের একত্ববাদ বিষয়ক আয়াত তিলাওয়াত করো, তখন তারা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে সরে পড়ে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৪৫, ৪৬)
ব্যাখ্যা : কুরআনের দাওয়াত হচ্ছে, অসীম ক্ষমতাসম্পন্ন রবের সামনে জবাবদিহি করতে হবে- সেদিকে নজর রাখা। এখন যে ব্যক্তি আদৌ আখিরাতকেই মেনে নিতে প্রস্তুত নয় এবং এ দুনিয়ার অভিজ্ঞতালব্ধ যাবতীয় বিষয়ের মধ্যেই যার সমস্ত আস্থা ও বিশ্বাস সীমাবদ্ধ, সে কখনো কুরআনের এ দাওয়াতকে গ্রহণ করতে রাজি হবে না। এ আওয়াজ সর্বদা তার কানের পর্দায় আসতে থাকবে, কিন্তু কখনো তার মনোরাজ্যে প্রবেশ করার পথ খুঁজে পাবে না। এটি একটি মনস্তাত্ত্বিক সত্য ব্যাপার। সর্বশক্তিমান আল্লাহ এ সত্যকে এভাবে বর্ণনা করেছেন যে, যে ব্যক্তি আখিরাত মানে না, আমি তার অন্তর ও কান কুরআনের দাওয়াতের জন্য বন্ধ করে দেই। অর্থাৎ এটি আমার প্রাকৃতিক আইন। আখিরাত অস্বীকারকারীদের উপর এ আইনটি এভাবে প্রবর্তিত হয়।
তারা সবচেয়ে বড় যালিম :
فَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ كَذَبَ عَلَى اللهِ وَكَذَّبَ بِالصِّدْقِ اِذْ جَآءَهٗؕ اَلَيْسَ فِيْ جَهَنَّمَ مَثْوًى لِّلْكَافِرِيْنَ
যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করে এবং যখন তার নিকট সত্য আসে তখন তা প্রত্যাখ্যান করে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? কাফিরদের ঠিকানা কি জাহান্নাম নয়? (সূরা যুমার- ৩২)
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرٰى عَلَى اللهِ كَذِبًا اَوْ كَذَّبَ بِاٰيَاتِهٖؕ اِنَّهٗ لَا يُفْلِحُ الظَّالِمُوْنَ
যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে অথবা তাঁর আয়াতসমূহকে প্রত্যাখ্যান করে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? নিশ্চয় যালিমরা কখনো সফলকাম হবে না। (সূরা আন‘আম- ২১)
তাদের সকল আমল নষ্ট হয়ে যাবে :
وَالَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَا وَلِقَآءِ الْاٰخِرَةِ حَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْؕ هَلْ يُجْزَوْنَ اِلَّا مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
যারা আমার আয়াতসমূহ ও আখিরাতের সাক্ষাতকে অস্বীকার করে তাদের আমলসমূহ নষ্ট হয়ে যাবে। তারা যা করে তাদেরকে সে অনুযায়ী প্রতিফল দেয়া হবে। (সূরা আ‘রাফ- ১৪৭)
তারা পর্যায়ক্রমে ধ্বংসের সম্মুখীন হবে :
وَالَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَا سَنَسْتَدْرِجُهُمْ مِّنْ حَيْثُ لَا يَعْلَمُوْنَ
যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যারোপ করে আমি তাদেরকে এমনভাবে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাই যে, তারা জানতেও পারে না। (সূরা আ‘রাফ- ১৮২)
فَذَرْنِيْ وَمَنْ يُّكَذِّبُ بِهٰذَا الْحَدِيْثِؕ سَنَسْتَدْرِجُهُمْ مِّنْ حَيْثُ لَا يَعْلَمُوْنَ ‐ وَاُمْلِيْ لَهُمْؕ اِنَّ كَيْدِيْ مَتِيْنٌ
যারা আমাকে এবং এ বাণীকে মিথ্যারোপ করেছে তাদের ব্যাপারটি ছেড়ে দাও, আমি তাদেরকে এমনভাবে ক্রমে ক্রমে ধরব যে, তারা বুঝতেও পারবে না। আর আমি তাদেরকে অবকাশ দিয়ে থাকি, নিশ্চয় আমার কৌশল সুদৃঢ়। (সূরা ক্বালাম- ৪৪, ৪৫)
তারা জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে :
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِاٰيَاتِنَا سَوْفَ نُصْلِيْهِمْ نَارًاؕ كُلَّمَا نَضِجَتْ جُلُوْدُهُمْ بَدَّلْنَاهُمْ جُلُوْدًا غَيْرَهَا لِيَذُوْقُوا الْعَذَابَؕ اِنَّ اللهَ كَانَ عَزِيْزًا حَكِيْمًا
যারা আমার আয়াতসমূহকে প্রত্যাখ্যান করে, তাদেরকে আগুনে পোড়াব। যখনই তাদের চামড়া জ্বলে যাবে, তখনই তার স্থলে নতুন চামড়া সৃষ্টি করব- যেন তারা (পরিপূর্ণভাবে) শাস্তি ভোগ করে। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা- ৫৬)
কুরআনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার নির্দেশ :
وَاٰمِنُوْا بِمَاۤ اَنْزَلْتُ مُصَدِّقًا لِّمَا مَعَكُمْ وَلَا تَكُوْنُوْاۤ اَوَّلَ كَافِرٍ ۢبِهٖ۪ وَلَا تَشْتَرُوْا بِاٰيَاتِيْ ثَمَنًا قَلِيْلًاؗ وَاِيَّايَ فَاتَّقُوْنِ
আর আমি যা অবতীর্ণ করেছি তোমরা তার প্রতি ঈমান আনয়ন করো, তোমাদের সাথে যা আছে (অর্থাৎ তাওরাত ও ইঞ্জিল) তা তারই সত্যতা প্রমাণকারী। আর তোমরা এ ব্যাপারে প্রথম অস্বীকারকারী হয়ো না এবং আমার আয়াতসমূহকে সামান্য মূল্যে বিক্রি করে দিয়ো না। আর তোমরা আমাকেই ভয় করো। (সূরা বাক্বারা- ৪১)
প্রকৃত জ্ঞানীরা কুরআনকে বিশ্বাস করে :
لٰكِنِ الرَّاسِخُوْنَ فِى الْعِلْمِ مِنْهُمْ وَالْمُؤْمِنُوْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكَ وَمَاۤ اُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ وَالْمُقِيْمِيْنَ الصَّلَاةَ وَالْمُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَالْمُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِؕ اُولٰٓئِكَ سَنُؤْتِيْهِمْ اَجْرًا عَظِيْمًا
কিন্তু তাদের মধ্যে যারা জ্ঞানে সুগভীর, তারা ও মুমিনগণ তোমার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তার প্রতি ঈমান আনয়ন করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, আমি তাদেরকে মহাপুরস্কারে ভূষিত করব। (সূরা নিসা- ১৬২)
আখিরাত বিশ্বাসকারীরা কুরআনের প্রতি ঈমান আনে :
وَالَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِالْاٰخِرَةِ يُؤْمِنُوْنَ بِهٖ وَهُمْ عَلٰى صَلَاتِهِمْ يُحَافِظُوْنَ
যারা আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, তারা তার (কুরআনের) প্রতিও বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তারা তাদের সালাতের হেফাজত করে। (সূরা আন‘আম- ৯২)
যারা নিষ্ঠার সাথে পাঠ করে তারা কুরআনকে বিশ্বাস করে :
اَلَّذِيْنَ اٰتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَتْلُوْنَهٗ حَقَّ تِلَاوَتِهٖؕ اُولٰٓئِكَ يُؤْمِنُوْنَ بِهٖ وَمَنْ يَّكْفُرْ بِهٖ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْخَاسِرُوْن
আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছি; তাদের মধ্য হতে যারা তা সঠিকভাবে পাঠ করে, তারাই এর প্রতি ঈমান আনয়ন করে। আর যে এটা অবিশ্বাস করবে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (সূরা বাক্বারা- ১২১)
কুরআন শুনলে মুমিনদের চোখ দিয়ে পানি আসে :
وَاِذَا سَمِعُوْا مَاۤ اُنْزِلَ اِلَى الرَّسُوْلِ تَرٰۤى اَعْيُنَهُمْ تَفِيْضُ مِنَ الدَّمْعِ مِمَّا عَرَفُوْا مِنَ الْحَقِّۚ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَاۤ اٰمَنَّا فَاكْتُبْنَا مَعَ الشَّاهِدِيْنَ
রাসূলের প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে যখন তারা তা শ্রবণ করে, তখন তারা যে সত্য উপলব্ধি করে তার জন্য তুমি তাদের চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে দেখবে। তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ঈমান এনেছি; সুতরাং তুমি আমাদেরকে সাক্ষ্যদানকারীদের অন্তর্ভুক্ত করে দাও। (সূরা মায়েদা- ৮৩)
তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ে :
قُلْ اٰمِنُوْا بِهٖۤ اَوْ لَا تُؤْمِنُوْاؕ اِنَّ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْعِلْمَ مِنْ قَبْلِهٖۤ اِذَا يُتْلٰى عَلَيْهِمْ يَخِرُّوْنَ لِلْاَذْقَانِ سُجَّدًا – - وَيَقُوْلُوْنَ سُبْحَانَ رَبِّنَاۤ اِنْ كَانَ وَعْدُ رَبِّنَا لَمَفْعُوْلًا ‐ - وَيَخِرُّوْنَ لِلْاَذْقَانِ يَبْكُوْنَ وَيَزِيْدُهُمْ خُشُوْعًا
বলো, তোমরা কুরআনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর বা না কর, নিশ্চয় ইতোপূর্বে যাদেরকে এর জ্ঞান দেয়া হয়েছে তাদের নিকট যখনই এটা পাঠ করা হয়, তখন তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ে। তারা বলে, আমাদের প্রতিপালক পবিত্র ও সুমহান। আমাদের প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হবেই। আর তারা কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে। (সূরা বনী ইসরাঈল, ১০৭-১০৯)
وَاٰمِنُوْا بِمَاۤ اَنْزَلْتُ مُصَدِّقًا لِّمَا مَعَكُمْ وَلَا تَكُوْنُوْاۤ اَوَّلَ كَافِرٍ ۢبِهٖ۪ وَلَا تَشْتَرُوْا بِاٰيَاتِيْ ثَمَنًا قَلِيْلًاؗ وَاِيَّايَ فَاتَّقُوْنِ
আর আমি যা অবতীর্ণ করেছি তোমরা তার প্রতি ঈমান আনয়ন করো, তোমাদের সাথে যা আছে (অর্থাৎ তাওরাত ও ইঞ্জিল) তা তারই সত্যতা প্রমাণকারী। আর তোমরা এ ব্যাপারে প্রথম অস্বীকারকারী হয়ো না এবং আমার আয়াতসমূহকে সামান্য মূল্যে বিক্রি করে দিয়ো না। আর তোমরা আমাকেই ভয় করো। (সূরা বাক্বারা- ৪১)
প্রকৃত জ্ঞানীরা কুরআনকে বিশ্বাস করে :
لٰكِنِ الرَّاسِخُوْنَ فِى الْعِلْمِ مِنْهُمْ وَالْمُؤْمِنُوْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكَ وَمَاۤ اُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ وَالْمُقِيْمِيْنَ الصَّلَاةَ وَالْمُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَالْمُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِؕ اُولٰٓئِكَ سَنُؤْتِيْهِمْ اَجْرًا عَظِيْمًا
কিন্তু তাদের মধ্যে যারা জ্ঞানে সুগভীর, তারা ও মুমিনগণ তোমার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তার প্রতি ঈমান আনয়ন করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, আমি তাদেরকে মহাপুরস্কারে ভূষিত করব। (সূরা নিসা- ১৬২)
আখিরাত বিশ্বাসকারীরা কুরআনের প্রতি ঈমান আনে :
وَالَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِالْاٰخِرَةِ يُؤْمِنُوْنَ بِهٖ وَهُمْ عَلٰى صَلَاتِهِمْ يُحَافِظُوْنَ
যারা আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, তারা তার (কুরআনের) প্রতিও বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তারা তাদের সালাতের হেফাজত করে। (সূরা আন‘আম- ৯২)
যারা নিষ্ঠার সাথে পাঠ করে তারা কুরআনকে বিশ্বাস করে :
اَلَّذِيْنَ اٰتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَتْلُوْنَهٗ حَقَّ تِلَاوَتِهٖؕ اُولٰٓئِكَ يُؤْمِنُوْنَ بِهٖ وَمَنْ يَّكْفُرْ بِهٖ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْخَاسِرُوْن
আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছি; তাদের মধ্য হতে যারা তা সঠিকভাবে পাঠ করে, তারাই এর প্রতি ঈমান আনয়ন করে। আর যে এটা অবিশ্বাস করবে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (সূরা বাক্বারা- ১২১)
কুরআন শুনলে মুমিনদের চোখ দিয়ে পানি আসে :
وَاِذَا سَمِعُوْا مَاۤ اُنْزِلَ اِلَى الرَّسُوْلِ تَرٰۤى اَعْيُنَهُمْ تَفِيْضُ مِنَ الدَّمْعِ مِمَّا عَرَفُوْا مِنَ الْحَقِّۚ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَاۤ اٰمَنَّا فَاكْتُبْنَا مَعَ الشَّاهِدِيْنَ
রাসূলের প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে যখন তারা তা শ্রবণ করে, তখন তারা যে সত্য উপলব্ধি করে তার জন্য তুমি তাদের চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে দেখবে। তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ঈমান এনেছি; সুতরাং তুমি আমাদেরকে সাক্ষ্যদানকারীদের অন্তর্ভুক্ত করে দাও। (সূরা মায়েদা- ৮৩)
তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ে :
قُلْ اٰمِنُوْا بِهٖۤ اَوْ لَا تُؤْمِنُوْاؕ اِنَّ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْعِلْمَ مِنْ قَبْلِهٖۤ اِذَا يُتْلٰى عَلَيْهِمْ يَخِرُّوْنَ لِلْاَذْقَانِ سُجَّدًا – - وَيَقُوْلُوْنَ سُبْحَانَ رَبِّنَاۤ اِنْ كَانَ وَعْدُ رَبِّنَا لَمَفْعُوْلًا ‐ - وَيَخِرُّوْنَ لِلْاَذْقَانِ يَبْكُوْنَ وَيَزِيْدُهُمْ خُشُوْعًا
বলো, তোমরা কুরআনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর বা না কর, নিশ্চয় ইতোপূর্বে যাদেরকে এর জ্ঞান দেয়া হয়েছে তাদের নিকট যখনই এটা পাঠ করা হয়, তখন তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ে। তারা বলে, আমাদের প্রতিপালক পবিত্র ও সুমহান। আমাদের প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হবেই। আর তারা কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে। (সূরা বনী ইসরাঈল, ১০৭-১০৯)
জিনেরা কুরআন শুনে প্রভাবিত হয়েছিল :
قُلْ اُوْحِيَ اِلَيَّ اَنَّهُ اسْتَمَعَ نَفَرٌ مِّنَ الْجِنِّ فَقَالُوْاۤ اِنَّا سَمِعْنَا قُرْاٰنًا عَجَبًا ---– يَهْدِيْۤ اِلَى الرُّشْدِ فَاٰمَنَّا بِهٖ وَلَنْ نُّشْرِكَ بِرَبِّنَاۤ اَحَدًا
বলো, আমার প্রতি ওহী করা হয়েছে যে, জিনদের একটি দল মনোযোগ সহকারে (কুরআন তিলাওয়াত) শ্রবণ করেছে এবং বলেছে, আমরা তো এক বিস্ময়কর কুরআন শ্রবণ করেছি। যা সঠিক পথের সন্ধান দেয়; অতঃপর আমরা এতে ঈমান আনয়ন করেছি। (সুতরাং) আমরা কখনো আমাদের প্রতিপালকের সাথে কাউকে শরীক স্থাপন করব না। (সূরা জিন- ১, ২)
তারা কুরআন প্রচারের কাজে লেগে যায় :
وَاِذْ صَرَفْنَاۤ اِلَيْكَ نَفَرًا مِّنَ الْجِنِّ يَسْتَمِعُوْنَ الْقُرْاٰنَۚ فَلَمَّا حَضَرُوْهُ قَالُوْاۤ اَنْصِتُوْاۚ فَلَمَّا قُضِيَ وَلَّوْا اِلٰى قَوْمِهِمْ مُّنْذِرِيْنَ
যখন আমি একদল জিনকে আপনার দিকে নিয়ে এসেছিলাম, যাতে তারা কুরআন শুনে। যখন তারা ঐ জায়গায় পৌঁছল (যেখানে আপনি কুরআন পাঠ করছিলেন) তখন একে অপরকে বলছিল, তোমরা চুপ থাকো। তারপর যখন কুরআন পড়া হয়ে গেল, তখন তারা নিজ সম্প্রদায়ের নিকট সতর্ককারী হয়ে ফিরে গেল। (সূরা আহকাফ- ২৯)
ব্যাখ্যা : ঐতিহাসিকদের বর্ণনানুসারে এটা তখনকার ঘটনা যখন নবী ﷺ তায়েফ থেকে নিরাশ হয়ে মক্কায় ফেরার পথে নাখলা প্রান্তরে অবস্থান করছিলেন। সেখানে এশা, ফজর কিংবা তাহাজ্জুদের নামাযে তিনি কুরআন তিলাওয়াত করছিলেন। সে সময় জিনদের একটি দল সে স্থান অতিক্রম করছিল। তারা নবী ﷺ এর ক্বিরাত শোনার জন্য থেমে গেল। এ সময় জিনেরা নবী ﷺ এর সামনে আসেনি, কিংবা তিনিও তাদের আগমন অনুভব করেননি। পরে আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে তাদের আগমনের এবং কুরআন তিলাওয়াত শোনা ও এর দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার বিষয়টি অবহিত করেন।
তারা কুরআনের গুনাগুণ বর্ণনা করল :
قَالُوْا يَا قَوْمَنَاۤ اِنَّا سَمِعْنَا كِتَابًا اُنْزِلَ مِنْ ۢبَعْدِ مُوْسٰى مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ يَهْدِيْۤ اِلَى الْحَقِّ وَاِلٰى طَرِيْقٍ مُّسْتَقِيْمٍ
তারা বলল, হে আমাদের সম্প্রদায়! আমরা এমন এক কিতাব শুনলাম, যা মূসার পর নাযিল করা হয়েছে, যা এর আগের কিতাবগুলোর সত্যায়ন করে এবং সত্য ও সঠিক পথের সন্ধান দেয়। (সূরা আহকাফ- ৩০)
ব্যাখ্যা : এ থেকে জানা যায় যে, এসব জিন পূর্ব থেকে মূসা (আঃ) ও আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান রাখত। তারা কুরআন শোনার পর বুঝতে পারল যে, পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণ যে শিক্ষা দিয়ে আসছেন এটাও সেই শিক্ষা। তাই তারা এ কিতাব এবং এর বাহক রাসূল ﷺ এর উপর ঈমান আনল।
তারা কুরআনকে মুক্তির উপায় মনে করল :
يَا قَوْمَنَاۤ اَجِيْبُوْا دَاعِيَ اللهِ وَاٰمِنُوْا بِهٖ يَغْفِرْ لَكُمْ مِّنْ ذُنُوْبِكُمْ وَيُجِرْكُمْ مِّنْ عَذَابٍ اَلِيْمٍ – وَمَنْ لَّا يُجِبْ دَاعِيَ اللهِ فَلَيْسَ بِمُعْجِزٍ فِى الْاَ رْضِ وَلَيْسَ لَهٗ مِنْ دُوْنِهٖۤ اَوْلِيَآءُؕ اُولٰٓئِكَ فِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ
হে আমাদের সম্প্রদায়! যে আল্লাহর দিকে ডাকে তার ডাকে সাড়া দাও এবং তার প্রতি ঈমান আনয়ন করো। আল্লাহ তোমাদের গোনাহ মাফ করবেন এবং কষ্টদায়ক আযাব থেকে বাঁচাবেন। আর যে আল্লাহর দিকে আহবানকারীর ডাকে সাড়া দেবে না তার জন্য দুনিয়ায় এমন কোন শক্তি নেই, যে আল্লাহকে পরাজিত করতে পারে। আর তার এমন কোন সহায়কও নেই (যে তাকে আল্লাহর থেকে বাঁচাতে পারে)। এসব লোক স্পষ্ট পথভ্রষ্টতায় রয়েছে। (সূরা আহকাফ- ৩১, ৩২)
ব্যাখ্যা : ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ কোন এক সময় তাঁর সাহাবীদেরকে সাথে নিয়ে উকায নামক বাজারের উদ্দেশে রওয়ানা হন। ইতোমধ্যে জিনদের আকাশের খবরাদি সংগ্রহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তাদের বিরুদ্ধে অগ্নিশিখা ছুঁড়ে মারা শুরু হয়েছে। তাই জিনরা ফিরে আসলে অন্য জিনরা তাদেরকে বলল, কী ব্যাপার? তারা বলল, আকাশের খবরাদি সংগ্রহে আমাদের জন্য বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে এবং আগুনের স্ফুলিঙ্গ ছুঁড়ে মারা হচ্ছে। তখন শয়তান বলল, আসমানের খবরাদি সংগ্রহে তোমাদের বিরুদ্ধে যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে, তা নিশ্চয় কোন নতুন ঘটনা সংঘটিত হওয়ার কারণেই হয়েছে। তাই তোমরা পৃথিবীর পূর্ব-পশ্চিম সব জায়গা ঘুরে ঘুরে দেখো, ব্যাপার কী? অতঃপর তার কারণ অনুসন্ধান করার জন্য সবাই পৃথিবীর চতুর্দিকে বেরিয়ে পড়ল। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, যারা তিহামার উদ্দেশে বেরিয়েছিল, তারা নাখলা নামক স্থানে এসে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে উপস্থিত হয়। তিনি এদিক দিয়ে উকায বাজারের উদ্দেশে গমন করছিলেন। এ সময় তিনি সাহাবীদেরকে সঙ্গে নিয়ে ফজরের নামায আদায় করছিলেন। তখন জিনদের দলটি পবিত্র কুরআনের আয়াত শুনতে পেয়ে অধিক মনোযোগ সহকারে তা শুনে বলে উঠল, আকাশের খবরাদি ও তোমাদের মাঝে এটাই বাধা সৃষ্টি করেছে। তাই তারা ফিরে গিয়ে তাদের সম্প্রদায়কে বলল, হে আমাদের সম্প্রদায়! আমরা এমন এক বিষ্ময়কর কুরআন শুনেছি, যা আমাদেরকে হেদায়াতের পথ দেখায়। আমরা এ বাণীর প্রতি ঈমান এনেছি। আমরা আর কখনো আমাদের প্রতিপালকের সাথে কাউকে শরীক করব না। এরপরই মহান আল্লাহ উপরোক্ত আয়াত নাযিল করেন এবং ওহীর মাধ্যমে নবী ﷺ কে জিনদের কথোপকথন সম্পর্কে অবহিত করেন। (সহীহ বুখারী, হা/৪৯২১)
قُلْ اُوْحِيَ اِلَيَّ اَنَّهُ اسْتَمَعَ نَفَرٌ مِّنَ الْجِنِّ فَقَالُوْاۤ اِنَّا سَمِعْنَا قُرْاٰنًا عَجَبًا ---– يَهْدِيْۤ اِلَى الرُّشْدِ فَاٰمَنَّا بِهٖ وَلَنْ نُّشْرِكَ بِرَبِّنَاۤ اَحَدًا
বলো, আমার প্রতি ওহী করা হয়েছে যে, জিনদের একটি দল মনোযোগ সহকারে (কুরআন তিলাওয়াত) শ্রবণ করেছে এবং বলেছে, আমরা তো এক বিস্ময়কর কুরআন শ্রবণ করেছি। যা সঠিক পথের সন্ধান দেয়; অতঃপর আমরা এতে ঈমান আনয়ন করেছি। (সুতরাং) আমরা কখনো আমাদের প্রতিপালকের সাথে কাউকে শরীক স্থাপন করব না। (সূরা জিন- ১, ২)
তারা কুরআন প্রচারের কাজে লেগে যায় :
وَاِذْ صَرَفْنَاۤ اِلَيْكَ نَفَرًا مِّنَ الْجِنِّ يَسْتَمِعُوْنَ الْقُرْاٰنَۚ فَلَمَّا حَضَرُوْهُ قَالُوْاۤ اَنْصِتُوْاۚ فَلَمَّا قُضِيَ وَلَّوْا اِلٰى قَوْمِهِمْ مُّنْذِرِيْنَ
যখন আমি একদল জিনকে আপনার দিকে নিয়ে এসেছিলাম, যাতে তারা কুরআন শুনে। যখন তারা ঐ জায়গায় পৌঁছল (যেখানে আপনি কুরআন পাঠ করছিলেন) তখন একে অপরকে বলছিল, তোমরা চুপ থাকো। তারপর যখন কুরআন পড়া হয়ে গেল, তখন তারা নিজ সম্প্রদায়ের নিকট সতর্ককারী হয়ে ফিরে গেল। (সূরা আহকাফ- ২৯)
ব্যাখ্যা : ঐতিহাসিকদের বর্ণনানুসারে এটা তখনকার ঘটনা যখন নবী ﷺ তায়েফ থেকে নিরাশ হয়ে মক্কায় ফেরার পথে নাখলা প্রান্তরে অবস্থান করছিলেন। সেখানে এশা, ফজর কিংবা তাহাজ্জুদের নামাযে তিনি কুরআন তিলাওয়াত করছিলেন। সে সময় জিনদের একটি দল সে স্থান অতিক্রম করছিল। তারা নবী ﷺ এর ক্বিরাত শোনার জন্য থেমে গেল। এ সময় জিনেরা নবী ﷺ এর সামনে আসেনি, কিংবা তিনিও তাদের আগমন অনুভব করেননি। পরে আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে তাদের আগমনের এবং কুরআন তিলাওয়াত শোনা ও এর দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার বিষয়টি অবহিত করেন।
তারা কুরআনের গুনাগুণ বর্ণনা করল :
قَالُوْا يَا قَوْمَنَاۤ اِنَّا سَمِعْنَا كِتَابًا اُنْزِلَ مِنْ ۢبَعْدِ مُوْسٰى مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ يَهْدِيْۤ اِلَى الْحَقِّ وَاِلٰى طَرِيْقٍ مُّسْتَقِيْمٍ
তারা বলল, হে আমাদের সম্প্রদায়! আমরা এমন এক কিতাব শুনলাম, যা মূসার পর নাযিল করা হয়েছে, যা এর আগের কিতাবগুলোর সত্যায়ন করে এবং সত্য ও সঠিক পথের সন্ধান দেয়। (সূরা আহকাফ- ৩০)
ব্যাখ্যা : এ থেকে জানা যায় যে, এসব জিন পূর্ব থেকে মূসা (আঃ) ও আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান রাখত। তারা কুরআন শোনার পর বুঝতে পারল যে, পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণ যে শিক্ষা দিয়ে আসছেন এটাও সেই শিক্ষা। তাই তারা এ কিতাব এবং এর বাহক রাসূল ﷺ এর উপর ঈমান আনল।
তারা কুরআনকে মুক্তির উপায় মনে করল :
يَا قَوْمَنَاۤ اَجِيْبُوْا دَاعِيَ اللهِ وَاٰمِنُوْا بِهٖ يَغْفِرْ لَكُمْ مِّنْ ذُنُوْبِكُمْ وَيُجِرْكُمْ مِّنْ عَذَابٍ اَلِيْمٍ – وَمَنْ لَّا يُجِبْ دَاعِيَ اللهِ فَلَيْسَ بِمُعْجِزٍ فِى الْاَ رْضِ وَلَيْسَ لَهٗ مِنْ دُوْنِهٖۤ اَوْلِيَآءُؕ اُولٰٓئِكَ فِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ
হে আমাদের সম্প্রদায়! যে আল্লাহর দিকে ডাকে তার ডাকে সাড়া দাও এবং তার প্রতি ঈমান আনয়ন করো। আল্লাহ তোমাদের গোনাহ মাফ করবেন এবং কষ্টদায়ক আযাব থেকে বাঁচাবেন। আর যে আল্লাহর দিকে আহবানকারীর ডাকে সাড়া দেবে না তার জন্য দুনিয়ায় এমন কোন শক্তি নেই, যে আল্লাহকে পরাজিত করতে পারে। আর তার এমন কোন সহায়কও নেই (যে তাকে আল্লাহর থেকে বাঁচাতে পারে)। এসব লোক স্পষ্ট পথভ্রষ্টতায় রয়েছে। (সূরা আহকাফ- ৩১, ৩২)
ব্যাখ্যা : ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ কোন এক সময় তাঁর সাহাবীদেরকে সাথে নিয়ে উকায নামক বাজারের উদ্দেশে রওয়ানা হন। ইতোমধ্যে জিনদের আকাশের খবরাদি সংগ্রহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তাদের বিরুদ্ধে অগ্নিশিখা ছুঁড়ে মারা শুরু হয়েছে। তাই জিনরা ফিরে আসলে অন্য জিনরা তাদেরকে বলল, কী ব্যাপার? তারা বলল, আকাশের খবরাদি সংগ্রহে আমাদের জন্য বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে এবং আগুনের স্ফুলিঙ্গ ছুঁড়ে মারা হচ্ছে। তখন শয়তান বলল, আসমানের খবরাদি সংগ্রহে তোমাদের বিরুদ্ধে যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে, তা নিশ্চয় কোন নতুন ঘটনা সংঘটিত হওয়ার কারণেই হয়েছে। তাই তোমরা পৃথিবীর পূর্ব-পশ্চিম সব জায়গা ঘুরে ঘুরে দেখো, ব্যাপার কী? অতঃপর তার কারণ অনুসন্ধান করার জন্য সবাই পৃথিবীর চতুর্দিকে বেরিয়ে পড়ল। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, যারা তিহামার উদ্দেশে বেরিয়েছিল, তারা নাখলা নামক স্থানে এসে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে উপস্থিত হয়। তিনি এদিক দিয়ে উকায বাজারের উদ্দেশে গমন করছিলেন। এ সময় তিনি সাহাবীদেরকে সঙ্গে নিয়ে ফজরের নামায আদায় করছিলেন। তখন জিনদের দলটি পবিত্র কুরআনের আয়াত শুনতে পেয়ে অধিক মনোযোগ সহকারে তা শুনে বলে উঠল, আকাশের খবরাদি ও তোমাদের মাঝে এটাই বাধা সৃষ্টি করেছে। তাই তারা ফিরে গিয়ে তাদের সম্প্রদায়কে বলল, হে আমাদের সম্প্রদায়! আমরা এমন এক বিষ্ময়কর কুরআন শুনেছি, যা আমাদেরকে হেদায়াতের পথ দেখায়। আমরা এ বাণীর প্রতি ঈমান এনেছি। আমরা আর কখনো আমাদের প্রতিপালকের সাথে কাউকে শরীক করব না। এরপরই মহান আল্লাহ উপরোক্ত আয়াত নাযিল করেন এবং ওহীর মাধ্যমে নবী ﷺ কে জিনদের কথোপকথন সম্পর্কে অবহিত করেন। (সহীহ বুখারী, হা/৪৯২১)
কুরআন সকল মানুষের জন্য এসেছে :
اِنَّاۤ اَنْزَلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ لِلنَّاسِ بِالْحَقِّۚ فَمَنِ اهْتَدٰى فَلِنَفْسِهٖۚ وَمَنْ ضَلَّ فَاِنَّمَا يَضِلُّ عَلَيْهَاۚ وَمَاۤ اَنْتَ عَلَيْهِمْ بِوَكِيْلٍ
আমি তোমার প্রতি মানুষের জন্য সত্য সহকারে কিতাব অবতীর্ণ করেছি। অতএব যে হেদায়াতপ্রাপ্ত হয় সে নিজের জন্যই (হেদায়াতপ্রাপ্ত) হয়, আর যে পথভ্রষ্ট হয় সে নিজের (ধ্বংসের) জন্যই পথভ্রষ্ট হয়। আর তুমি তাদের জিম্মাদার নও। (সূরা যুমার- ৪১)
কুরআন সারা বিশ্বের জন্য সতর্কবাণী :
تَبَارَكَ الَّذِيْ نَزَّلَ الْفُرْقَانَ عَلٰى عَبْدِهٖ لِيَكُوْنَ لِلْعَالَمِيْنَ نَذِيْرًا
বরকতময় সেই সত্তা, যিনি তাঁর বান্দার প্রতি ফুরক্বান অবতীর্ণ করেছেন- যাতে করে তিনি বিশ্বজগতের জন্য সতর্ককারী হতে পারেন। (সূরা ফুরক্বান- ১)
ব্যাখ্যা : فُرْقَانٌ (ফুরক্বান) এর অর্থ হচ্ছে, দু’টি জিনিসকে আলাদা করা। এর প্রকৃত অর্থ হবে- মানদন্ড, সিদ্ধান্তকর জিনিস ও নির্ণায়ক। এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ফুরক্বান বলতে কুরআনকে উদ্দেশ্য নিয়েছেন, যার অর্থ হবে- পার্থক্যকারী অর্থাৎ সত্য ও মিথ্যার মাঝে পার্থক্যকারী। কেননা কুরআন হচ্ছে এমন একটি গ্রন্থ, যা সত্য-মিথ্যা তথা হক ও বাতিলের মাঝে পার্থক্য নির্ণয় করে দেয়। আর পার্থক্য করার দিক থেকে এটি এতই পারদর্শী যে, এটি নিজেই পৃথিবীর অন্যান্য সকল গ্রন্থ থেকে পৃথক বৈশিষ্ট্য মন্ডিত, যা কোন সৃষ্টির পক্ষে তৈরি করা সম্ভব নয়।
কুরআন বিশ্ববাসীর জন্য উপদেশবাণী :
هٰذَا بَيَانٌ لِّلنَّاسِ وَهُدًى وَّمَوْعِظَةٌ لِّلْمُتَّقِيْنَ
এটা মানবজাতির জন্য স্পষ্ট বিবরণ এবং আল্লাহভীরুদের জন্য পথ-প্রদর্শক ও উপদেশ। (সূরা আলে ইমরান- ১৩৮)
وَمَا هُوَ اِلَّا ذِكْرٌ لِّلْعَالَمِيْنَ
এ কুরআন বিশ্ববাসীর জন্য উপদেশবাণী ছাড়া আর কিছুই নয়। (সূরা ক্বালাম- ৫২)
কুরআনের দৃষ্টান্তসমূহ সকলের জন্য পেশ করা হয়েছে :
وَلَقَدْ ضَرَبْنَا لِلنَّاسِ فِيْ هٰذَا الْقُرْاٰنِ مِنْ كُلِّ مَثَلٍ لَّعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُوْنَ
আর আমি এ কুরআনে মানুষের জন্য সকল প্রকার দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছি, যেন তারা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে। (সূরা যুমার- ২৭)
وَتِلْكَ الْاَ مْثَالُ نَضْرِبُهَا لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُوْنَ
আমি এসব দৃষ্টান্ত বর্ণনা করি মানুষের জন্য, যেন তারা চিন্তা করে। (সূরা হাশর- ২১)
اِنَّاۤ اَنْزَلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ لِلنَّاسِ بِالْحَقِّۚ فَمَنِ اهْتَدٰى فَلِنَفْسِهٖۚ وَمَنْ ضَلَّ فَاِنَّمَا يَضِلُّ عَلَيْهَاۚ وَمَاۤ اَنْتَ عَلَيْهِمْ بِوَكِيْلٍ
আমি তোমার প্রতি মানুষের জন্য সত্য সহকারে কিতাব অবতীর্ণ করেছি। অতএব যে হেদায়াতপ্রাপ্ত হয় সে নিজের জন্যই (হেদায়াতপ্রাপ্ত) হয়, আর যে পথভ্রষ্ট হয় সে নিজের (ধ্বংসের) জন্যই পথভ্রষ্ট হয়। আর তুমি তাদের জিম্মাদার নও। (সূরা যুমার- ৪১)
কুরআন সারা বিশ্বের জন্য সতর্কবাণী :
تَبَارَكَ الَّذِيْ نَزَّلَ الْفُرْقَانَ عَلٰى عَبْدِهٖ لِيَكُوْنَ لِلْعَالَمِيْنَ نَذِيْرًا
বরকতময় সেই সত্তা, যিনি তাঁর বান্দার প্রতি ফুরক্বান অবতীর্ণ করেছেন- যাতে করে তিনি বিশ্বজগতের জন্য সতর্ককারী হতে পারেন। (সূরা ফুরক্বান- ১)
ব্যাখ্যা : فُرْقَانٌ (ফুরক্বান) এর অর্থ হচ্ছে, দু’টি জিনিসকে আলাদা করা। এর প্রকৃত অর্থ হবে- মানদন্ড, সিদ্ধান্তকর জিনিস ও নির্ণায়ক। এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ফুরক্বান বলতে কুরআনকে উদ্দেশ্য নিয়েছেন, যার অর্থ হবে- পার্থক্যকারী অর্থাৎ সত্য ও মিথ্যার মাঝে পার্থক্যকারী। কেননা কুরআন হচ্ছে এমন একটি গ্রন্থ, যা সত্য-মিথ্যা তথা হক ও বাতিলের মাঝে পার্থক্য নির্ণয় করে দেয়। আর পার্থক্য করার দিক থেকে এটি এতই পারদর্শী যে, এটি নিজেই পৃথিবীর অন্যান্য সকল গ্রন্থ থেকে পৃথক বৈশিষ্ট্য মন্ডিত, যা কোন সৃষ্টির পক্ষে তৈরি করা সম্ভব নয়।
কুরআন বিশ্ববাসীর জন্য উপদেশবাণী :
هٰذَا بَيَانٌ لِّلنَّاسِ وَهُدًى وَّمَوْعِظَةٌ لِّلْمُتَّقِيْنَ
এটা মানবজাতির জন্য স্পষ্ট বিবরণ এবং আল্লাহভীরুদের জন্য পথ-প্রদর্শক ও উপদেশ। (সূরা আলে ইমরান- ১৩৮)
وَمَا هُوَ اِلَّا ذِكْرٌ لِّلْعَالَمِيْنَ
এ কুরআন বিশ্ববাসীর জন্য উপদেশবাণী ছাড়া আর কিছুই নয়। (সূরা ক্বালাম- ৫২)
কুরআনের দৃষ্টান্তসমূহ সকলের জন্য পেশ করা হয়েছে :
وَلَقَدْ ضَرَبْنَا لِلنَّاسِ فِيْ هٰذَا الْقُرْاٰنِ مِنْ كُلِّ مَثَلٍ لَّعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُوْنَ
আর আমি এ কুরআনে মানুষের জন্য সকল প্রকার দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছি, যেন তারা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে। (সূরা যুমার- ২৭)
وَتِلْكَ الْاَ مْثَالُ نَضْرِبُهَا لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُوْنَ
আমি এসব দৃষ্টান্ত বর্ণনা করি মানুষের জন্য, যেন তারা চিন্তা করে। (সূরা হাশর- ২১)
কুরআন খুবই ভারী কালাম :
اِنَّا سَنُلْقِيْ عَلَيْكَ قَوْلًا ثَقِيْلًا
আমি অচিরেই তোমার প্রতি অবতীর্ণ করব ভারত্বপূর্ণ বাণী। (সূরা মুয্যাম্মিল- ৫)
لَوْ اَنْزَلْنَا هٰذَا الْقُرْاٰنَ عَلٰى جَبَلٍ لَّرَاَيْتَهٗ خَاشِعًا مُّتَصَدِّعًا مِّنْ خَشْيَةِ اللهِ
আমি যদি এ কুরআন পর্বতের উপর অবতীর্ণ করতাম তবে তুমি দেখতে যে, ওটা আল্লাহর ভয়ে বিনীত ও বিদীর্ণ হয়ে গেছে। (সূরা হাশর- ২১)
ব্যাখ্যা : কুরআন নবী ﷺ এর শ্রেষ্ঠ মু‘জিযা। কুরআন ভাষা ও সাহিত্যিক মূল্যবোধের বিচারেও মু‘জিযা আবার শিক্ষা ও জানার বিচারেও তা মু‘জিযা। কুরআন যে সময় নাযিল হয়েছিল সে সময় মানুষ কুরআনের বাণীর মতো বাণী বানিয়ে পেশ করতে অক্ষম ছিল এবং আজও অক্ষম। এর কোন কথা কখনো কোন যুগে ভুল প্রমাণ করা যায়নি এবং যাবেও না। বাতিল না পারে সামনে থেকে এর মুকাবিলা করতে, না পারে পেছন দিক থেকে আক্রমণ করে পরাজিত করতে। মানুষ কুরআন থেকে যতবেশি পথনির্দেশনা পাওয়ার চেষ্টা করে, এটা তাকে ততটাই পথনির্দেশনা দান করে। সুতরাং যে যতবেশি এর অনুসরণ করবে, দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ সে ততবেশি লাভ করবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, এমন কোন নবী ছিলেন না, যাকে কোন মু‘জিযা দেয়া হয়নি, যা দেখে লোকেরা ঈমান এনেছে। কিন্তু আমাকে যা দেয়া হয়েছে, তা হচ্ছে ওহী; যা আল্লাহ তা‘আলা আমার কাছে নাযিল করেছেন। সুতরাং আমি আশা করি, কিয়ামতের দিন তাঁদের অনুসারীদের তুলনায় আমার উম্মতের সংখ্যাই হবে সর্বাধিক। (সহীহ বুখারী, হা/৪৯৮১)
কুরআন বিজ্ঞানময় কিতাব :
تِلْكَ اٰيَاتُ الْكِتَابِ الْحَكِيْمِ
এগুলো বিজ্ঞানময় কিতাবের আয়াত। (সূরা লুক্বমান- ২)
يٰسٓ -– وَالْقُرْاٰنِ الْحَكِيْمِ
ইয়া-সীন। কসম বিজ্ঞানময় কুরআনের। (সূরা ইয়াসীন- ১, ২)
ব্যাখ্যা : এ কুরআনে যেসব কথা বলা হচ্ছে এগুলো কোন হালকা কথা নয়। এগুলো কোন মানুষের অনুমান ও মতামত ভিত্তিকও নয়, বরং এক জ্ঞানবান সত্তা এগুলো নাযিল করেছেন। তিনি নিজের সৃষ্টির প্রয়োজন ও কল্যাণ এবং এর অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে পুরোপুরিভাবে অবগত আছেন। বান্দাদের সংশোধন ও পথনির্দেশনার জন্য তিনি তাঁর জ্ঞান দ্বারা সর্বোত্তম কৌশল ও ব্যবস্থা অবলম্বন করেন।
এর আয়াতসমূহ স্পষ্ট ও সুবিন্যাস্ত :
الٓرٰ كِتَابٌ اُحْكِمَتْ اٰيَاتُهٗ ثُمَّ فُصِّلَتْ مِنْ لَّدُنْ حَكِيْمٍ خَبِيْرٍ
আলিফ-লাম-রা। এটা এমন কিতাব যার আয়াতসমূহকে সুস্পষ্ট করা হয়েছে, অতঃপর বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এ কিতাব প্রজ্ঞাময় ও সর্বজ্ঞ (আল্লাহর) নিকট হতে এসেছে। (সূরা হুদ- ১)
কুরআনের কথা সত্য :
وَمَنْ اَصْدَقُ مِنَ اللهِ قِيْلًا
কথার ক্ষেত্রে আল্লাহর চেয়ে অধিক সত্যবাদী আর কে আছে? (সূরা নিসা- ১২২)
কুরআনের আয়াতসমূহ সাদৃশ্যপূর্ণ :
اَللهُ نَزَّلَ اَحْسَنَ الْحَدِيْثِ كِتَابًا مُّتَشَابِهًا مَّثَانِيَ تَقْشَعِرُّ مِنْهُ جُلُوْدُ الَّذِيْنَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْۚ ثُمَّ تَلِيْنُ جُلُوْدُهُمْ وَقُلُوْبُهُمْ اِلٰى ذِكْرِ اللهِ ذٰلِكَ هُدَى اللهِ يَهْدِيْ بِهٖ مَنْ يَّشَآءُ وَمَنْ يُّضْلِلِ اللهُ فَمَا لَهٗ مِنْ هَادٍ
আল্লাহ সর্বোত্তম বাণী অবতীর্ণ করেছেন- এটা এমন কিতাব যা সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং যার বিষয়াবলি পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে, এতে তাদের দেহ শিহ্রে উঠে। তারপর তাদের দেহ ও অন্তর (প্রশান্ত হয়ে) আল্লাহর স্মরণের দিকে ঝুঁকে পড়ে। এটাই আল্লাহর হেদায়াত, এর দ্বারা তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে হেদায়াত দান করেন। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তার কোন পথপ্রদর্শক নেই। (সূরা যুমার- ২৩)
ব্যাখ্যা : কুরআনের কথার মধ্যে কোন বৈপরীত্য ও বিরোধ নেই। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত গোটা কিতাব একই দাবী, একই আকীদা-বিশ্বাস এবং একই আদর্শ পেশ করে। এর প্রতিটি অংশ অন্যসব অংশের এবং প্রতিটি বিষয় অন্যসব বিষয়ের সত্যায়ন, সমর্থন ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে। অর্থ ও বর্ণনা উভয় দিক দিয়েই এ গ্রন্থের পূর্ণ মিল ও সামঞ্জস্য বিদ্যমান।
কুরআনের মধ্যে কোন জটিলতা নেই :
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْۤ اَنْزَلَ عَلٰى عَبْدِهِ الْكِتَابَ وَلَمْ يَجْعَلْ لَّهٗ عِوَجًا
সমসত্ম প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি তাঁর বান্দার প্রতি এ কিতাব অবতীর্ণ করেছেন এবং তাতে (কোন) বক্রতা রাখেননি। (সূরা কাহফ- ১)
قُرْاٰنًا عَرَبِيًّا غَيْرَ ذِيْ عِوَجٍ لَّعَلَّهُمْ يَتَّقُوْنَ
এ কুরআন আরবি ভাষায় (অবতীর্ণ হয়েছে), এতে বিন্দুমাত্রও বক্রতা নেই। হয়তো তারা তাক্বওয়া অর্জন করতে পারবে। (সূরা যুমার- ২৮)
ব্যাখ্যা : কুরআনের মধ্যে এমন কোন বক্র বা জটিল কথা নেই যে, তা বুঝা সাধারণ মানুষের জন্য কঠিন হবে। বরং এর মধ্যে পরিষ্কারভাবে সহজসরল কথা বলা হয়েছে। ফলে প্রত্যেক ব্যক্তি খুব সহজে জেনে নিতে পারে যে, এ গ্রন্থ কোন জিনিসকে ভ্রান্ত বলে এবং কেন বলে, কোন জিনিসকে সঠিক বলে এবং কিসের ভিত্তিতে বলে, কী স্বীকার করাতে চায় এবং কোন জিনিস অস্বীকার করাতে চায়, কোন কোন কাজের নির্দেশ দেয় এবং কোন কোন কাজ হতে নিষেধ করে। এ কিতাবের আয়াতসমূহ অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এর কোন কথাই অস্পষ্ট ও জটিল নয়, এ কিতাবের বিষয়বস্তু যে কারো বোধগম্য হতে পারে। হক ও বাতিল, সঠিক আকীদা ও ভ্রান্ত আকীদা, ভালো চরিত্র ও মন্দ চরিত্র, সৎকাজ ও অসৎকাজ, কোন পথে মানুষের কল্যাণ এবং কোন পথে মানুষের ক্ষতি- এ সবকিছু এ গ্রন্থে পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করে দেয়া হয়েছে। এখন কেউ যদি এরূপ সুস্পষ্ট হেদায়াত প্রত্যাখ্যান করে কিংবা সেদিকে মনোযোগ না দেয়, তাহলে সে কোন অজুহাত পেশ করতে পারবে না। এ কিতাব তাদের জন্য যারা জ্ঞানের অধিকারী। অর্থাৎ কেবল জ্ঞানী লোকেরাই এর দ্বারা উপকৃত হতে পারে। অজ্ঞ লোকদের কাছে তা ঠিক তেমনি মূল্যহীন যেমন একটি মূল্যবান হীরকখন্ড এমন ব্যক্তির কাছে মূল্যহীন, যে সাধারণ পাথর ও হীরকখন্ডের মধ্যে পার্থক্য করতে জানে না।
কুরআন অন্তরের রোগের শিফা :
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَآءَتْكُمْ مَّوْعِظَةٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَشِفَآءٌ لِّمَا فِى الصُّدُوْرِ وَهُدًى وَّرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ
হে মানুষ! তোমাদের প্রতি তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে এসেছে উপদেশ ও তোমাদের অন্তরে যা আছে তার আরোগ্য এবং মুমিনদের জন্য হেদায়াত ও রহমত। (সূরা ইউনুস- ৫৭)
قُلْ هُوَ لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا هُدًى وَّشِفَآءٌ
বলো, মুমিনদের জন্য এটা পথনির্দেশক ও ব্যাধির প্রতিকার। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৪৪)
এটি বরকতময় ও জ্ঞানসমৃদ্ধ কিতাব :
وَهٰذَا كِتَابٌ اَنْزَلْنَاهُ مُبَارَكٌ فَاتَّبِعُوْهُ وَاتَّقُوْا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ
এ কিতাব আমি নাযিল করেছি, যা বরকতময়। সুতরাং তার অনুসরণ করো এবং সাবধান হও, হয়তো তোমাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা হবে। (সূরা আন‘আম- ১৫৫)
ব্যাখ্যা : بَرَكَةٌ (বারাকাত) এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে, কল্যাণ ও সৌভাগ্য বৃদ্ধি। কুরআন মাজীদকে বরকতময় কিতাব বলার অর্থ হচ্ছে, এটি মানুষের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি কিতাব। এ কিতাবটি মানুষের জীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য সর্বোত্তম বিধান দান করে। এর বিধান মেনে চলায় মানুষের শুধু লাভই হয়, এতে কোন প্রকার ক্ষতির আশঙ্কা নেই। যখনই ওহী ও রিসালাতের জীবনধারা এ পৃথিবীতে পৌঁছেছে, তখনই জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎকর্ষতা মূর্খতা ও জাহেলিয়াতের স্থানগুলো দখল করে নিয়েছে। যুলুম ও নিপীড়ণের জায়গায় ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ফাসিকী ও অশ্লীলতার জায়গায় নৈতিক ও চারিত্রিক মাহাত্মের ফুল ফুটেছে। এর ফলাফল যেদিকে যতটুকু পৌঁছেছে সেদিকেই অন্যায়-অত্যাচার কমে গেছে এবং সদাচার বৃদ্ধি পেয়েছে। নবীদের আগমন সবসময় একটি শুভ ও কল্যাণকর চিন্তা ও নৈতিক বিপ্লবের সূচনা করেছে। পক্ষান্তরে নবীদের বিধান ও নির্দেশাবলি প্রত্যাখ্যান করে বা তা থেকে বঞ্চিত হয়ে মানবজাতি সবসময় ক্ষতিগ্রস্তই হয়েছে। ইতিহাস এ দৃশ্য বার বার দেখিয়েছে এবং কুরআনও বার বার এদিকে ইশারা করেছে। কিন্তু এরপরও লোকেরা শিক্ষা নেয় না।
وَلَقَدْ جِئْنَاهُمْ بِكِتَابٍ فَصَّلْنَاهُ عَلٰى عِلْمٍ هُدًى وَّرَحْمَةً لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ
অবশ্যই আমি তাদের নিকট পৌঁছে দিয়েছিলাম এমন এক কিতাব, যা আমি পূর্ণ জ্ঞান দ্বারা বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছিলাম; আর তা ছিল মুমিনদের জন্য হেদায়াত ও রহমতস্বরূপ। (সূরা আ‘রাফ- ৫২)
ব্যাখ্যা : পরিপূর্ণ বিবরণসহ মানুষের জন্য দুনিয়ার জীবনের সঠিক জীবনপদ্ধতির মূল নীতিগুলো কী কী, তা বর্ণনা করা হয়েছে। আবার এ বিবরণগুলো নিছক অনুমান বা কল্পনার ভিত্তিতে দেয়া হয়নি; বরং নির্ভেজাল ও নির্ভুল জ্ঞানের ভিত্তিতে দেয়া হয়েছে। এ কিতাবের বিষয়বস্তু এত স্পষ্ট যে, এ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করলে যে কোন মানুষের সামনে সত্য পথ পরিষ্কারভাবে ভেসে উঠতে পারে। এর প্রভাব গ্রহণ করার সাথে সাথেই মানুষের মন-মানসিকতা ও আচরণে বৈপ্লবিক পরিবর্তন শুরু হয়ে যায়।
কুরআন দলীল-প্রমাণের কিতাব :
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَآءَكُمْ بُرْهَانٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَاَنْزَلْنَاۤ اِلَيْكُمْ نُوْرًا مُّبِيْنًا
হে মানবমন্ডলী! তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে তোমাদের নিকট প্রমাণ এসেছে এবং আমি তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ করেছি স্পষ্ট নূর। (সূরা নিসা- ১৭৪)
দ্বীনের মৌলিক সকল মূলনীতির বর্ণনা এর মধ্যে রয়েছে :
وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَانًا لِّكُلِّ شَيْءٍ وَّهُدًى وَّرَحْمَةً وَّبُشْرٰى لِلْمُسْلِمِيْنَ
আমি তোমার প্রতি এ কিতাব নাযিল করেছি, যা প্রত্যেকটি বিষয়ের বর্ণনাস্বরূপ। আর তা হেদায়াত, রহমত এবং মুসলিমদের জন্য সুসংবাদস্বরূপ। (সূরা নাহল- ৮৯)
مَا كَانَ حَدِيْثًا يُّفْتَرٰى وَلٰكِنْ تَصْدِيْقَ الَّذِيْ بَيْنَ يَدَيْهِ وَتَفْصِيْلَ كُلِّ شَيْءٍ وَّهُدًى وَّرَحْمَةً لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ
এটা এমন বাণী, যা মিথ্যা রচনা নয়। বরং এটা পূর্ববর্তী কিতাবে যা আছে তার সমর্থক এবং মুমিনদের জন্য সবকিছুর বিশদ বিবরণ, হেদায়াত ও রহমত। (সূরা ইউসুফ- ১১১)
ব্যাখ্যা : ‘প্রত্যেকটি জিনিসের বিস্তারিত বিবরণ’ শব্দাবলি থেকে কেউ কেউ দুনিয়ার সমস্ত জিনিসের বিস্তারিত বিবরণ অর্থ করেন। কিন্তু আয়াতের প্রকৃত অর্থ হচ্ছে, মানুষের হেদায়াত পাওয়া ও পথ দেখার জন্য যেসব জিনিসের প্রয়োজন তার প্রত্যেকটির বিস্তারিত বিবরণ। এতে এমন প্রত্যেকটি বিষয় পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা হয়েছে, যার উপর হেদায়াত ও গোমরাহী এবং লাভ ও ক্ষতি নির্ভর করে। সঠিক পথে চলার জন্য যা জানা একান্ত প্রয়োজন এবং যার মাধ্যমে হক ও বাতিলের পার্থক্য সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে, তাও এতে বর্ণনা করে দেয়া হয়েছে।
কুরআন সকলের জন্য উপদেশস্বরূপ :
لَقَدْ اَنْزَلْنَاۤ اِلَيْكُمْ كِتَابًا فِيْهِ ذِكْرُكُمْؕ اَفَلَا تَعْقِلُوْنَ
আমি তোমাদের প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যাতে আছে তোমাদের জন্য উপদেশ; তবুও কি তোমরা বুঝবে না? (সূরা আম্বিয়া- ১০)
ব্যাখ্যা : কুরআনের মধ্যে মানুষের নিজেদের কথাই বলা হয়েছে। তাদেরই ব্যবহারিক জীবনের কথা আলোচনা করা হয়েছে। তাদের স্বভাব, গঠনাকৃতি এবং সূচনা ও পরিণামের কথা বলা হয়েছে। তাদেরই পরিবেশ থেকে এমনসব নিদর্শন বাছাই করে এতে পেশ করা হয়েছে, যা প্রকৃত সত্যের ইঙ্গিত প্রদান করে। এর মধ্যে এমন কোন জটিলতা নেই, যা মানুষ বুঝতে অক্ষম।
কুরআনের শিক্ষক স্বয়ং আল্লাহ :
اَلرَّحْمٰنُ – - عَلَّمَ الْقُرْاٰنَ
পরম দয়াময় (আল্লাহ), তিনিই শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন। (সূরা আর রহমান- ১, ২)
ব্যাখ্যা : এখানে আল্লাহ কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন বলার পরিবর্তে রহমান কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন বলা হয়েছে। কারণ বান্দাদের হেদায়াতের জন্য কুরআন মাজীদ নাযিল করা সরাসরি আল্লাহর রহমত। যেহেতু তিনি তাঁর সৃষ্টির প্রতি অতীব দয়াবান; তাই তিনি তোমাদেরকে অন্ধকারে ছেড়ে দেয়া পছন্দ করেননি। তিনি তাঁর রহমতের দাবী অনুসারে এ কুরআন পাঠিয়ে তোমাদেরকে এমন জ্ঞান দান করেছেন- যার উপর পার্থিব জীবনে তোমাদের সত্যানুসরণ এবং পরকালীন জীবনের সফলতাও নির্ভরশীল। এ বাণী নাযিলকারী মহান আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির প্রতি অত্যন্ত দয়ালু ও মেহেরবান। তাঁর অন্যান্য গুণাবলির মধ্যে ‘রহমত’ গুণটি এ সত্যের প্রতি ইঙ্গিত করে যে, তিনি তাঁর দয়ার দাবী অনুসারে এ বাণী নাযিল করেছেন। এর দ্বারা শ্রোতাদেরকে এ মর্মে সাবধান করা হয়েছে যে, কেউ যদি এ বাণী প্রত্যাখ্যান করে তাহলে প্রকৃতপক্ষে সে নিজের সাথেই শত্রুতা করে। এটি একটি বিরাট নিয়ামত, যা আল্লাহ মানুষকে পথপ্রদর্শন এবং তার সাফল্যের জন্য সরাসরি নাযিল করেছেন। আল্লাহ যদি মানুষদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতেন, তাহলে তারা অন্ধকারে হাতড়িয়ে মরতো। কিন্তু সৃষ্টি করা ও খাদ্য সরবরাহ করার সাথে সাথে তার জীবনকে সুন্দর করে গোছানোর জন্য জ্ঞানের আলো দান করাও তিনি তাঁর কর্তব্য হিসেবে মনে করেন। আর সে কারণেই তাঁর এক বান্দার কাছে এ বাণী নাযিল করেছেন, যা ছিল বান্দাদের প্রতি তাঁর দয়া ও অনুগ্রহ। সুতরাং যে ব্যক্তি এ রহমত দ্বারা উপকৃত হওয়ার পরিবর্তে তাঁর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অগ্রসর হয়, তার চেয়ে বড় অকৃতজ্ঞ আর কে হতে পারে? যেহেতু আল্লাহ তা‘আলা মানুষের স্রষ্টা, তাই স্রষ্টার দায়িত্ব হচ্ছে নিজের সৃষ্টিকে পথপ্রদর্শন করা এবং যে পথের মাধ্যমে সে তার সৃষ্টির উদ্দেশ্য পূরণ করতে সক্ষম হবে সে পথ দেখানো। সুতরাং আল্লাহর পক্ষ থেকে কুরআনের এ শিক্ষা নাযিল হওয়া শুধু তাঁর অনুগ্রহ-পরায়ণতার দাবীই নয়, বরং তাঁর স্রষ্টা হওয়ার দাবীও বটে। স্রষ্টা যদি সৃষ্টিকে পথপ্রদর্শন না করেন, তাহলে আর কে তা করবে?
কুরআন আনন্দ ও গর্বের জিনিস :
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَآءَتْكُمْ مَّوْعِظَةٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَشِفَآءٌ لِّمَا فِى الصُّدُوْرِ وَهُدًى وَّرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ – قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْمَتِهٖ فَبِذٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوْاؕ هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُوْنَ
হে মানুষ! তোমাদের প্রতি তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে এসেছে উপদেশ ও তোমাদের অন্তরে যা আছে তার আরোগ্য এবং মুমিনদের জন্য হেদায়াত ও রহমত। বলো, তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ ও তার রহমতের মাধ্যমে আনন্দ লাভ করো। (কারণ) তারা যা কিছু (সম্পদ) জমা করে- এটা তার চেয়ে উত্তম। (সূরা ইউনুস- ৫৭, ৫৮)
দুনিয়ার প্রাচুর্যের চেয়ে কুরআনের জ্ঞান লাভের মূল্য অনেক বেশি :
وَلَقَدْ اٰتَيْنَاكَ سَبْعًا مِّنَ الْمَثَانِيْ وَالْقُرْاٰنَ الْعَظِيْمَ – - لَا تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ اِلٰى مَا مَتَّعْنَا بِهٖۤ اَزْوَاجًا مِّنْهُمْ وَلَا تَحْزَنْ عَلَيْهِمْ وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِلْمُؤْمِنِيْنَ
আমি তোমাকে বার বার পঠিত সাতটি আয়াত (সূরা ফাতেহা) এবং মহাগ্রন্থ কুরআন দিয়েছি। (সুতরাং) আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণিকে ভোগবিলাসের যে উপকরণ দিয়েছি, তার প্রতি তুমি কখনো তোমার চক্ষুদ্বয় প্রসারিত করো না এবং তাদের জন্য দুঃখও করো না। আর তুমি মুমিনদের জন্য তোমার বাহু অবনমিত করো। (সূরা হিজর- ৮৭, ৮৮)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ কুরআনের জ্ঞানকে মোহরানা হিসেবে নির্ধারণ করেছিলেন। সাহ্ল ইবনে সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক মহিলা নবী ﷺ এর কাছে উপস্থিত হয়ে বলল যে, সে নিজেকে আল্লাহ এবং রাসূলের জন্য উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। (এ কথা শুনে) নবী ﷺ বললেন, আমার কোন মহিলার প্রয়োজন নেই। তখন এক সাহাবী নবী ﷺ কে বললেন, তাকে আমার সাথে বিবাহ দিয়ে দিন। নবী ﷺ বললেন, তুমি তাকে (মোহরানাস্বরূপ) একটি কাপড় দাও। তিনি বললেন, তা আমার কাছে নেই। নবী ﷺ বললেন, তাহলে তাকে অন্তত একটি লোহার আংটি দাও। এবারও তিনি পূর্বের ন্যায় অপারগতা প্রকাশ করলেন। অতঃপর নবী ﷺ তাকে প্রশ্ন করলেন, তোমার কি কুরআনের কোন অংশ মুখস্থ আছে? তিনি বললেন, কুরআনের অমুক অমুক অংশ আমার মুখস্থ আছে। তখন নবী ﷺ বললেন, যে পরিমাণ কুরআন তোমার মুখস্থ আছে এর বিনিময়ে তোমার সাথে এ মহিলার বিয়ে দিলাম। (সহীহ বুখারী, হা/৫০২৯)
يُؤْتِى الْحِكْمَةَ مَنْ يَّشَآءُۚ وَمَنْ يُّؤْتَ الْحِكْمَةَ فَقَدْ اُوْتِيَ خَيْرًا كَثِيْرًاؕ وَمَا يَذَّكَّرُ اِلَّاۤ اُولُو الْاَلْبَابِ
আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে হেকমত দান করেন। আর যাকে হেকমত দান করা হয় সে প্রচুর কল্যাণ লাভ করে। (কিন্তু) জ্ঞানী লোকেরা ব্যতীত অন্য কেউই উপদেশ গ্রহণ করে না। (সূরা বাক্বারা- ২৬৯)
ব্যাখ্যা : حِكْمَةٌ (হিকমাত) অর্থ হচ্ছে, গভীর অন্তর্দৃষ্টি ও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার শক্তি। এখানে এ কথা বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে, হেকমতের সম্পদ যার কাছে থাকবে সে কখনো শয়তানের দেখানো পথে চলতে পারবে না। বরং সে আল্লাহর দেখানো প্রশস্ত পথ অবলম্বন করবে। শয়তানের সংকীর্ণমনা অনুসারীদের দৃষ্টিতে নিজের ধনসম্পদ আঁকড়ে ধরে রাখা এবং সবসময় সম্পদ আহরণের নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করাই বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক। কিন্তু যারা আল্লাহর কাছ থেকে অন্তর্দৃষ্টি লাভ করেছে, তাদের মতে এটা বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক নয়। তাদের মতে, মানুষ যা কিছু উপার্জন করবে নিজের মাঝারি পর্যায়ের প্রয়োজন পূর্ণ করার পর সেগুলো প্রাণ খুলে সৎকাজে ব্যয় করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। যে ব্যক্তি দুনিয়ার ক্ষুদ্রতম অংশের সমৃদ্ধি ও সচ্ছলতার বিনিময়ে বৃহত্তম ও সীমাহীন জীবনের অসচ্ছলতা ও দারিদ্র্যতা কিনে নেয়, সে আসলে বোকা ছাড়া আর কিছুই নয়। যে ব্যক্তি এ সংক্ষিপ্ত জীবনকালের সুযোগ গ্রহণ করে সামান্য পুঁজির সহায়তায় নিজের ঐ চিরন্তন জীবনের সমৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে সক্ষম হয়েছে সে-ই প্রকৃত বুদ্ধিমান।
اِنَّا سَنُلْقِيْ عَلَيْكَ قَوْلًا ثَقِيْلًا
আমি অচিরেই তোমার প্রতি অবতীর্ণ করব ভারত্বপূর্ণ বাণী। (সূরা মুয্যাম্মিল- ৫)
لَوْ اَنْزَلْنَا هٰذَا الْقُرْاٰنَ عَلٰى جَبَلٍ لَّرَاَيْتَهٗ خَاشِعًا مُّتَصَدِّعًا مِّنْ خَشْيَةِ اللهِ
আমি যদি এ কুরআন পর্বতের উপর অবতীর্ণ করতাম তবে তুমি দেখতে যে, ওটা আল্লাহর ভয়ে বিনীত ও বিদীর্ণ হয়ে গেছে। (সূরা হাশর- ২১)
ব্যাখ্যা : কুরআন নবী ﷺ এর শ্রেষ্ঠ মু‘জিযা। কুরআন ভাষা ও সাহিত্যিক মূল্যবোধের বিচারেও মু‘জিযা আবার শিক্ষা ও জানার বিচারেও তা মু‘জিযা। কুরআন যে সময় নাযিল হয়েছিল সে সময় মানুষ কুরআনের বাণীর মতো বাণী বানিয়ে পেশ করতে অক্ষম ছিল এবং আজও অক্ষম। এর কোন কথা কখনো কোন যুগে ভুল প্রমাণ করা যায়নি এবং যাবেও না। বাতিল না পারে সামনে থেকে এর মুকাবিলা করতে, না পারে পেছন দিক থেকে আক্রমণ করে পরাজিত করতে। মানুষ কুরআন থেকে যতবেশি পথনির্দেশনা পাওয়ার চেষ্টা করে, এটা তাকে ততটাই পথনির্দেশনা দান করে। সুতরাং যে যতবেশি এর অনুসরণ করবে, দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ সে ততবেশি লাভ করবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, এমন কোন নবী ছিলেন না, যাকে কোন মু‘জিযা দেয়া হয়নি, যা দেখে লোকেরা ঈমান এনেছে। কিন্তু আমাকে যা দেয়া হয়েছে, তা হচ্ছে ওহী; যা আল্লাহ তা‘আলা আমার কাছে নাযিল করেছেন। সুতরাং আমি আশা করি, কিয়ামতের দিন তাঁদের অনুসারীদের তুলনায় আমার উম্মতের সংখ্যাই হবে সর্বাধিক। (সহীহ বুখারী, হা/৪৯৮১)
কুরআন বিজ্ঞানময় কিতাব :
تِلْكَ اٰيَاتُ الْكِتَابِ الْحَكِيْمِ
এগুলো বিজ্ঞানময় কিতাবের আয়াত। (সূরা লুক্বমান- ২)
يٰسٓ -– وَالْقُرْاٰنِ الْحَكِيْمِ
ইয়া-সীন। কসম বিজ্ঞানময় কুরআনের। (সূরা ইয়াসীন- ১, ২)
ব্যাখ্যা : এ কুরআনে যেসব কথা বলা হচ্ছে এগুলো কোন হালকা কথা নয়। এগুলো কোন মানুষের অনুমান ও মতামত ভিত্তিকও নয়, বরং এক জ্ঞানবান সত্তা এগুলো নাযিল করেছেন। তিনি নিজের সৃষ্টির প্রয়োজন ও কল্যাণ এবং এর অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে পুরোপুরিভাবে অবগত আছেন। বান্দাদের সংশোধন ও পথনির্দেশনার জন্য তিনি তাঁর জ্ঞান দ্বারা সর্বোত্তম কৌশল ও ব্যবস্থা অবলম্বন করেন।
এর আয়াতসমূহ স্পষ্ট ও সুবিন্যাস্ত :
الٓرٰ كِتَابٌ اُحْكِمَتْ اٰيَاتُهٗ ثُمَّ فُصِّلَتْ مِنْ لَّدُنْ حَكِيْمٍ خَبِيْرٍ
আলিফ-লাম-রা। এটা এমন কিতাব যার আয়াতসমূহকে সুস্পষ্ট করা হয়েছে, অতঃপর বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এ কিতাব প্রজ্ঞাময় ও সর্বজ্ঞ (আল্লাহর) নিকট হতে এসেছে। (সূরা হুদ- ১)
কুরআনের কথা সত্য :
وَمَنْ اَصْدَقُ مِنَ اللهِ قِيْلًا
কথার ক্ষেত্রে আল্লাহর চেয়ে অধিক সত্যবাদী আর কে আছে? (সূরা নিসা- ১২২)
কুরআনের আয়াতসমূহ সাদৃশ্যপূর্ণ :
اَللهُ نَزَّلَ اَحْسَنَ الْحَدِيْثِ كِتَابًا مُّتَشَابِهًا مَّثَانِيَ تَقْشَعِرُّ مِنْهُ جُلُوْدُ الَّذِيْنَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْۚ ثُمَّ تَلِيْنُ جُلُوْدُهُمْ وَقُلُوْبُهُمْ اِلٰى ذِكْرِ اللهِ ذٰلِكَ هُدَى اللهِ يَهْدِيْ بِهٖ مَنْ يَّشَآءُ وَمَنْ يُّضْلِلِ اللهُ فَمَا لَهٗ مِنْ هَادٍ
আল্লাহ সর্বোত্তম বাণী অবতীর্ণ করেছেন- এটা এমন কিতাব যা সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং যার বিষয়াবলি পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে, এতে তাদের দেহ শিহ্রে উঠে। তারপর তাদের দেহ ও অন্তর (প্রশান্ত হয়ে) আল্লাহর স্মরণের দিকে ঝুঁকে পড়ে। এটাই আল্লাহর হেদায়াত, এর দ্বারা তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে হেদায়াত দান করেন। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তার কোন পথপ্রদর্শক নেই। (সূরা যুমার- ২৩)
ব্যাখ্যা : কুরআনের কথার মধ্যে কোন বৈপরীত্য ও বিরোধ নেই। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত গোটা কিতাব একই দাবী, একই আকীদা-বিশ্বাস এবং একই আদর্শ পেশ করে। এর প্রতিটি অংশ অন্যসব অংশের এবং প্রতিটি বিষয় অন্যসব বিষয়ের সত্যায়ন, সমর্থন ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে। অর্থ ও বর্ণনা উভয় দিক দিয়েই এ গ্রন্থের পূর্ণ মিল ও সামঞ্জস্য বিদ্যমান।
কুরআনের মধ্যে কোন জটিলতা নেই :
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْۤ اَنْزَلَ عَلٰى عَبْدِهِ الْكِتَابَ وَلَمْ يَجْعَلْ لَّهٗ عِوَجًا
সমসত্ম প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি তাঁর বান্দার প্রতি এ কিতাব অবতীর্ণ করেছেন এবং তাতে (কোন) বক্রতা রাখেননি। (সূরা কাহফ- ১)
قُرْاٰنًا عَرَبِيًّا غَيْرَ ذِيْ عِوَجٍ لَّعَلَّهُمْ يَتَّقُوْنَ
এ কুরআন আরবি ভাষায় (অবতীর্ণ হয়েছে), এতে বিন্দুমাত্রও বক্রতা নেই। হয়তো তারা তাক্বওয়া অর্জন করতে পারবে। (সূরা যুমার- ২৮)
ব্যাখ্যা : কুরআনের মধ্যে এমন কোন বক্র বা জটিল কথা নেই যে, তা বুঝা সাধারণ মানুষের জন্য কঠিন হবে। বরং এর মধ্যে পরিষ্কারভাবে সহজসরল কথা বলা হয়েছে। ফলে প্রত্যেক ব্যক্তি খুব সহজে জেনে নিতে পারে যে, এ গ্রন্থ কোন জিনিসকে ভ্রান্ত বলে এবং কেন বলে, কোন জিনিসকে সঠিক বলে এবং কিসের ভিত্তিতে বলে, কী স্বীকার করাতে চায় এবং কোন জিনিস অস্বীকার করাতে চায়, কোন কোন কাজের নির্দেশ দেয় এবং কোন কোন কাজ হতে নিষেধ করে। এ কিতাবের আয়াতসমূহ অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এর কোন কথাই অস্পষ্ট ও জটিল নয়, এ কিতাবের বিষয়বস্তু যে কারো বোধগম্য হতে পারে। হক ও বাতিল, সঠিক আকীদা ও ভ্রান্ত আকীদা, ভালো চরিত্র ও মন্দ চরিত্র, সৎকাজ ও অসৎকাজ, কোন পথে মানুষের কল্যাণ এবং কোন পথে মানুষের ক্ষতি- এ সবকিছু এ গ্রন্থে পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করে দেয়া হয়েছে। এখন কেউ যদি এরূপ সুস্পষ্ট হেদায়াত প্রত্যাখ্যান করে কিংবা সেদিকে মনোযোগ না দেয়, তাহলে সে কোন অজুহাত পেশ করতে পারবে না। এ কিতাব তাদের জন্য যারা জ্ঞানের অধিকারী। অর্থাৎ কেবল জ্ঞানী লোকেরাই এর দ্বারা উপকৃত হতে পারে। অজ্ঞ লোকদের কাছে তা ঠিক তেমনি মূল্যহীন যেমন একটি মূল্যবান হীরকখন্ড এমন ব্যক্তির কাছে মূল্যহীন, যে সাধারণ পাথর ও হীরকখন্ডের মধ্যে পার্থক্য করতে জানে না।
কুরআন অন্তরের রোগের শিফা :
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَآءَتْكُمْ مَّوْعِظَةٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَشِفَآءٌ لِّمَا فِى الصُّدُوْرِ وَهُدًى وَّرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ
হে মানুষ! তোমাদের প্রতি তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে এসেছে উপদেশ ও তোমাদের অন্তরে যা আছে তার আরোগ্য এবং মুমিনদের জন্য হেদায়াত ও রহমত। (সূরা ইউনুস- ৫৭)
قُلْ هُوَ لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا هُدًى وَّشِفَآءٌ
বলো, মুমিনদের জন্য এটা পথনির্দেশক ও ব্যাধির প্রতিকার। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৪৪)
এটি বরকতময় ও জ্ঞানসমৃদ্ধ কিতাব :
وَهٰذَا كِتَابٌ اَنْزَلْنَاهُ مُبَارَكٌ فَاتَّبِعُوْهُ وَاتَّقُوْا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ
এ কিতাব আমি নাযিল করেছি, যা বরকতময়। সুতরাং তার অনুসরণ করো এবং সাবধান হও, হয়তো তোমাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা হবে। (সূরা আন‘আম- ১৫৫)
ব্যাখ্যা : بَرَكَةٌ (বারাকাত) এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে, কল্যাণ ও সৌভাগ্য বৃদ্ধি। কুরআন মাজীদকে বরকতময় কিতাব বলার অর্থ হচ্ছে, এটি মানুষের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি কিতাব। এ কিতাবটি মানুষের জীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য সর্বোত্তম বিধান দান করে। এর বিধান মেনে চলায় মানুষের শুধু লাভই হয়, এতে কোন প্রকার ক্ষতির আশঙ্কা নেই। যখনই ওহী ও রিসালাতের জীবনধারা এ পৃথিবীতে পৌঁছেছে, তখনই জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎকর্ষতা মূর্খতা ও জাহেলিয়াতের স্থানগুলো দখল করে নিয়েছে। যুলুম ও নিপীড়ণের জায়গায় ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ফাসিকী ও অশ্লীলতার জায়গায় নৈতিক ও চারিত্রিক মাহাত্মের ফুল ফুটেছে। এর ফলাফল যেদিকে যতটুকু পৌঁছেছে সেদিকেই অন্যায়-অত্যাচার কমে গেছে এবং সদাচার বৃদ্ধি পেয়েছে। নবীদের আগমন সবসময় একটি শুভ ও কল্যাণকর চিন্তা ও নৈতিক বিপ্লবের সূচনা করেছে। পক্ষান্তরে নবীদের বিধান ও নির্দেশাবলি প্রত্যাখ্যান করে বা তা থেকে বঞ্চিত হয়ে মানবজাতি সবসময় ক্ষতিগ্রস্তই হয়েছে। ইতিহাস এ দৃশ্য বার বার দেখিয়েছে এবং কুরআনও বার বার এদিকে ইশারা করেছে। কিন্তু এরপরও লোকেরা শিক্ষা নেয় না।
وَلَقَدْ جِئْنَاهُمْ بِكِتَابٍ فَصَّلْنَاهُ عَلٰى عِلْمٍ هُدًى وَّرَحْمَةً لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ
অবশ্যই আমি তাদের নিকট পৌঁছে দিয়েছিলাম এমন এক কিতাব, যা আমি পূর্ণ জ্ঞান দ্বারা বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছিলাম; আর তা ছিল মুমিনদের জন্য হেদায়াত ও রহমতস্বরূপ। (সূরা আ‘রাফ- ৫২)
ব্যাখ্যা : পরিপূর্ণ বিবরণসহ মানুষের জন্য দুনিয়ার জীবনের সঠিক জীবনপদ্ধতির মূল নীতিগুলো কী কী, তা বর্ণনা করা হয়েছে। আবার এ বিবরণগুলো নিছক অনুমান বা কল্পনার ভিত্তিতে দেয়া হয়নি; বরং নির্ভেজাল ও নির্ভুল জ্ঞানের ভিত্তিতে দেয়া হয়েছে। এ কিতাবের বিষয়বস্তু এত স্পষ্ট যে, এ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করলে যে কোন মানুষের সামনে সত্য পথ পরিষ্কারভাবে ভেসে উঠতে পারে। এর প্রভাব গ্রহণ করার সাথে সাথেই মানুষের মন-মানসিকতা ও আচরণে বৈপ্লবিক পরিবর্তন শুরু হয়ে যায়।
কুরআন দলীল-প্রমাণের কিতাব :
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَآءَكُمْ بُرْهَانٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَاَنْزَلْنَاۤ اِلَيْكُمْ نُوْرًا مُّبِيْنًا
হে মানবমন্ডলী! তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে তোমাদের নিকট প্রমাণ এসেছে এবং আমি তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ করেছি স্পষ্ট নূর। (সূরা নিসা- ১৭৪)
দ্বীনের মৌলিক সকল মূলনীতির বর্ণনা এর মধ্যে রয়েছে :
وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَانًا لِّكُلِّ شَيْءٍ وَّهُدًى وَّرَحْمَةً وَّبُشْرٰى لِلْمُسْلِمِيْنَ
আমি তোমার প্রতি এ কিতাব নাযিল করেছি, যা প্রত্যেকটি বিষয়ের বর্ণনাস্বরূপ। আর তা হেদায়াত, রহমত এবং মুসলিমদের জন্য সুসংবাদস্বরূপ। (সূরা নাহল- ৮৯)
مَا كَانَ حَدِيْثًا يُّفْتَرٰى وَلٰكِنْ تَصْدِيْقَ الَّذِيْ بَيْنَ يَدَيْهِ وَتَفْصِيْلَ كُلِّ شَيْءٍ وَّهُدًى وَّرَحْمَةً لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ
এটা এমন বাণী, যা মিথ্যা রচনা নয়। বরং এটা পূর্ববর্তী কিতাবে যা আছে তার সমর্থক এবং মুমিনদের জন্য সবকিছুর বিশদ বিবরণ, হেদায়াত ও রহমত। (সূরা ইউসুফ- ১১১)
ব্যাখ্যা : ‘প্রত্যেকটি জিনিসের বিস্তারিত বিবরণ’ শব্দাবলি থেকে কেউ কেউ দুনিয়ার সমস্ত জিনিসের বিস্তারিত বিবরণ অর্থ করেন। কিন্তু আয়াতের প্রকৃত অর্থ হচ্ছে, মানুষের হেদায়াত পাওয়া ও পথ দেখার জন্য যেসব জিনিসের প্রয়োজন তার প্রত্যেকটির বিস্তারিত বিবরণ। এতে এমন প্রত্যেকটি বিষয় পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা হয়েছে, যার উপর হেদায়াত ও গোমরাহী এবং লাভ ও ক্ষতি নির্ভর করে। সঠিক পথে চলার জন্য যা জানা একান্ত প্রয়োজন এবং যার মাধ্যমে হক ও বাতিলের পার্থক্য সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে, তাও এতে বর্ণনা করে দেয়া হয়েছে।
কুরআন সকলের জন্য উপদেশস্বরূপ :
لَقَدْ اَنْزَلْنَاۤ اِلَيْكُمْ كِتَابًا فِيْهِ ذِكْرُكُمْؕ اَفَلَا تَعْقِلُوْنَ
আমি তোমাদের প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যাতে আছে তোমাদের জন্য উপদেশ; তবুও কি তোমরা বুঝবে না? (সূরা আম্বিয়া- ১০)
ব্যাখ্যা : কুরআনের মধ্যে মানুষের নিজেদের কথাই বলা হয়েছে। তাদেরই ব্যবহারিক জীবনের কথা আলোচনা করা হয়েছে। তাদের স্বভাব, গঠনাকৃতি এবং সূচনা ও পরিণামের কথা বলা হয়েছে। তাদেরই পরিবেশ থেকে এমনসব নিদর্শন বাছাই করে এতে পেশ করা হয়েছে, যা প্রকৃত সত্যের ইঙ্গিত প্রদান করে। এর মধ্যে এমন কোন জটিলতা নেই, যা মানুষ বুঝতে অক্ষম।
কুরআনের শিক্ষক স্বয়ং আল্লাহ :
اَلرَّحْمٰنُ – - عَلَّمَ الْقُرْاٰنَ
পরম দয়াময় (আল্লাহ), তিনিই শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন। (সূরা আর রহমান- ১, ২)
ব্যাখ্যা : এখানে আল্লাহ কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন বলার পরিবর্তে রহমান কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন বলা হয়েছে। কারণ বান্দাদের হেদায়াতের জন্য কুরআন মাজীদ নাযিল করা সরাসরি আল্লাহর রহমত। যেহেতু তিনি তাঁর সৃষ্টির প্রতি অতীব দয়াবান; তাই তিনি তোমাদেরকে অন্ধকারে ছেড়ে দেয়া পছন্দ করেননি। তিনি তাঁর রহমতের দাবী অনুসারে এ কুরআন পাঠিয়ে তোমাদেরকে এমন জ্ঞান দান করেছেন- যার উপর পার্থিব জীবনে তোমাদের সত্যানুসরণ এবং পরকালীন জীবনের সফলতাও নির্ভরশীল। এ বাণী নাযিলকারী মহান আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির প্রতি অত্যন্ত দয়ালু ও মেহেরবান। তাঁর অন্যান্য গুণাবলির মধ্যে ‘রহমত’ গুণটি এ সত্যের প্রতি ইঙ্গিত করে যে, তিনি তাঁর দয়ার দাবী অনুসারে এ বাণী নাযিল করেছেন। এর দ্বারা শ্রোতাদেরকে এ মর্মে সাবধান করা হয়েছে যে, কেউ যদি এ বাণী প্রত্যাখ্যান করে তাহলে প্রকৃতপক্ষে সে নিজের সাথেই শত্রুতা করে। এটি একটি বিরাট নিয়ামত, যা আল্লাহ মানুষকে পথপ্রদর্শন এবং তার সাফল্যের জন্য সরাসরি নাযিল করেছেন। আল্লাহ যদি মানুষদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতেন, তাহলে তারা অন্ধকারে হাতড়িয়ে মরতো। কিন্তু সৃষ্টি করা ও খাদ্য সরবরাহ করার সাথে সাথে তার জীবনকে সুন্দর করে গোছানোর জন্য জ্ঞানের আলো দান করাও তিনি তাঁর কর্তব্য হিসেবে মনে করেন। আর সে কারণেই তাঁর এক বান্দার কাছে এ বাণী নাযিল করেছেন, যা ছিল বান্দাদের প্রতি তাঁর দয়া ও অনুগ্রহ। সুতরাং যে ব্যক্তি এ রহমত দ্বারা উপকৃত হওয়ার পরিবর্তে তাঁর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অগ্রসর হয়, তার চেয়ে বড় অকৃতজ্ঞ আর কে হতে পারে? যেহেতু আল্লাহ তা‘আলা মানুষের স্রষ্টা, তাই স্রষ্টার দায়িত্ব হচ্ছে নিজের সৃষ্টিকে পথপ্রদর্শন করা এবং যে পথের মাধ্যমে সে তার সৃষ্টির উদ্দেশ্য পূরণ করতে সক্ষম হবে সে পথ দেখানো। সুতরাং আল্লাহর পক্ষ থেকে কুরআনের এ শিক্ষা নাযিল হওয়া শুধু তাঁর অনুগ্রহ-পরায়ণতার দাবীই নয়, বরং তাঁর স্রষ্টা হওয়ার দাবীও বটে। স্রষ্টা যদি সৃষ্টিকে পথপ্রদর্শন না করেন, তাহলে আর কে তা করবে?
কুরআন আনন্দ ও গর্বের জিনিস :
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَآءَتْكُمْ مَّوْعِظَةٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَشِفَآءٌ لِّمَا فِى الصُّدُوْرِ وَهُدًى وَّرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ – قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْمَتِهٖ فَبِذٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوْاؕ هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُوْنَ
হে মানুষ! তোমাদের প্রতি তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে এসেছে উপদেশ ও তোমাদের অন্তরে যা আছে তার আরোগ্য এবং মুমিনদের জন্য হেদায়াত ও রহমত। বলো, তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ ও তার রহমতের মাধ্যমে আনন্দ লাভ করো। (কারণ) তারা যা কিছু (সম্পদ) জমা করে- এটা তার চেয়ে উত্তম। (সূরা ইউনুস- ৫৭, ৫৮)
দুনিয়ার প্রাচুর্যের চেয়ে কুরআনের জ্ঞান লাভের মূল্য অনেক বেশি :
وَلَقَدْ اٰتَيْنَاكَ سَبْعًا مِّنَ الْمَثَانِيْ وَالْقُرْاٰنَ الْعَظِيْمَ – - لَا تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ اِلٰى مَا مَتَّعْنَا بِهٖۤ اَزْوَاجًا مِّنْهُمْ وَلَا تَحْزَنْ عَلَيْهِمْ وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِلْمُؤْمِنِيْنَ
আমি তোমাকে বার বার পঠিত সাতটি আয়াত (সূরা ফাতেহা) এবং মহাগ্রন্থ কুরআন দিয়েছি। (সুতরাং) আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণিকে ভোগবিলাসের যে উপকরণ দিয়েছি, তার প্রতি তুমি কখনো তোমার চক্ষুদ্বয় প্রসারিত করো না এবং তাদের জন্য দুঃখও করো না। আর তুমি মুমিনদের জন্য তোমার বাহু অবনমিত করো। (সূরা হিজর- ৮৭, ৮৮)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ কুরআনের জ্ঞানকে মোহরানা হিসেবে নির্ধারণ করেছিলেন। সাহ্ল ইবনে সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক মহিলা নবী ﷺ এর কাছে উপস্থিত হয়ে বলল যে, সে নিজেকে আল্লাহ এবং রাসূলের জন্য উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। (এ কথা শুনে) নবী ﷺ বললেন, আমার কোন মহিলার প্রয়োজন নেই। তখন এক সাহাবী নবী ﷺ কে বললেন, তাকে আমার সাথে বিবাহ দিয়ে দিন। নবী ﷺ বললেন, তুমি তাকে (মোহরানাস্বরূপ) একটি কাপড় দাও। তিনি বললেন, তা আমার কাছে নেই। নবী ﷺ বললেন, তাহলে তাকে অন্তত একটি লোহার আংটি দাও। এবারও তিনি পূর্বের ন্যায় অপারগতা প্রকাশ করলেন। অতঃপর নবী ﷺ তাকে প্রশ্ন করলেন, তোমার কি কুরআনের কোন অংশ মুখস্থ আছে? তিনি বললেন, কুরআনের অমুক অমুক অংশ আমার মুখস্থ আছে। তখন নবী ﷺ বললেন, যে পরিমাণ কুরআন তোমার মুখস্থ আছে এর বিনিময়ে তোমার সাথে এ মহিলার বিয়ে দিলাম। (সহীহ বুখারী, হা/৫০২৯)
يُؤْتِى الْحِكْمَةَ مَنْ يَّشَآءُۚ وَمَنْ يُّؤْتَ الْحِكْمَةَ فَقَدْ اُوْتِيَ خَيْرًا كَثِيْرًاؕ وَمَا يَذَّكَّرُ اِلَّاۤ اُولُو الْاَلْبَابِ
আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে হেকমত দান করেন। আর যাকে হেকমত দান করা হয় সে প্রচুর কল্যাণ লাভ করে। (কিন্তু) জ্ঞানী লোকেরা ব্যতীত অন্য কেউই উপদেশ গ্রহণ করে না। (সূরা বাক্বারা- ২৬৯)
ব্যাখ্যা : حِكْمَةٌ (হিকমাত) অর্থ হচ্ছে, গভীর অন্তর্দৃষ্টি ও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার শক্তি। এখানে এ কথা বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে, হেকমতের সম্পদ যার কাছে থাকবে সে কখনো শয়তানের দেখানো পথে চলতে পারবে না। বরং সে আল্লাহর দেখানো প্রশস্ত পথ অবলম্বন করবে। শয়তানের সংকীর্ণমনা অনুসারীদের দৃষ্টিতে নিজের ধনসম্পদ আঁকড়ে ধরে রাখা এবং সবসময় সম্পদ আহরণের নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করাই বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক। কিন্তু যারা আল্লাহর কাছ থেকে অন্তর্দৃষ্টি লাভ করেছে, তাদের মতে এটা বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক নয়। তাদের মতে, মানুষ যা কিছু উপার্জন করবে নিজের মাঝারি পর্যায়ের প্রয়োজন পূর্ণ করার পর সেগুলো প্রাণ খুলে সৎকাজে ব্যয় করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। যে ব্যক্তি দুনিয়ার ক্ষুদ্রতম অংশের সমৃদ্ধি ও সচ্ছলতার বিনিময়ে বৃহত্তম ও সীমাহীন জীবনের অসচ্ছলতা ও দারিদ্র্যতা কিনে নেয়, সে আসলে বোকা ছাড়া আর কিছুই নয়। যে ব্যক্তি এ সংক্ষিপ্ত জীবনকালের সুযোগ গ্রহণ করে সামান্য পুঁজির সহায়তায় নিজের ঐ চিরন্তন জীবনের সমৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে সক্ষম হয়েছে সে-ই প্রকৃত বুদ্ধিমান।
কুরআন সঠিক পথের সন্ধান দেয় :
اِنَّ هٰذَا الْقُرْاٰنَ يَهْدِيْ لِلَّتِيْ هِيَ اَقْوَمُ وَيُبَشِّرُ الْمُؤْمِنِيْنَ الَّذِيْنَ يَعْمَلُوْنَ الصَّالِحَاتِ اَنَّ لَهُمْ اَجْرًا كَبِيْرًا
নিশ্চয় এ কুরআন সে পথের দিকে হেদায়াত করে, যা খুবই সুদৃঢ়। আর এটি সৎকর্মপরায়ণ মুমিনদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৯)
কুরআনের হেদায়াতই প্রকৃত হেদায়াত :
قُلْ اِنَّ هُدَى اللهِ هُوَ الْهُدٰىؕ وَلَئِنِ اتَّبَعْتَ اَهْوَآءَهُمْ بَعْدَ الَّذِيْ جَآءَكَ مِنَ الْعِلْمِ مَا لَكَ مِنَ اللهِ مِنْ وَّلِيٍّ وَّلَا نَصِيْرٍ
বলো, আল্লাহর প্রদর্শিত পথই সঠিক পথ। সুতরাং তোমার নিকট জ্ঞান আসার পরও যদি তুমি তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ কর, তবে আল্লাহ হতে তোমার জন্য কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী থাকবে না। (সূরা বাক্বারা- ১২০)
ذٰلِكَ هُدَى اللهِ يَهْدِيْ بِهٖ مَنْ يَّشَآءُ وَمَنْ يُّضْلِلِ اللهُ فَمَا لَهٗ مِنْ هَادٍ
এটাই আল্লাহর হেদায়াত, এর দ্বারা তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে হেদায়াত দান করেন। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার কোন পথপ্রদর্শক নেই। (সূরা যুমার- ২৩)
কুরআন শান্তির পথ দেখায় :
قَدْ جَآءَكُمْ مِّنَ اللهِ نُوْرٌ وَّكِتَابٌ مُّبِيْنٌ – - يَهْدِيْ بِهِ اللهُ مَنِ اتَّبَعَ رِضْوَانَهٗ سُبُلَ السَّلَامِ وَيُخْرِجُهُمْ مِّنَ الظُّلُمَاتِ اِلَى النُّوْرِ بِاِذْنِهٖ وَيَهْدِيْهِمْ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
আল্লাহর নিকট হতে এক জ্যোতি ও স্পষ্ট কিতাব তোমাদের নিকট এসেছে। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে চায় এর দ্বারা তিনি তাদেরকে শান্তির পথে পরিচালিত করেন এবং তাদেরকে নিজ ইচ্ছায় অন্ধকার হতে বের করে আলোর দিকে নিয়ে আসেন। অতঃপর তাদেরকে সরল পথে পরিচালিত করেন। (সূরা মায়েদা- ১৫, ১৬)
কুরআন হেদায়াতের নূর :
وَكَذٰلِكَ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ رُوْحًا مِّنْ اَمْرِنَاؕ مَا كُنْتَ تَدْرِيْ مَا الْكِتَابُ وَلَا الْاِيْمَانُ وَلٰكِنْ جَعَلْنَاهُ نُوْرًا نَّهْدِيْ بِهٖ مَنْ نَّشَآءُ مِنْ عِبَادِنَاؕ وَاِنَّكَ لَتَهْدِيْۤ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
এভাবেই আমি আমার নির্দেশে তোমার প্রতি ওহী করেছি রূহ (কুরআন); তুমি তো জানতে না কিতাব কী এবং ঈমান কী? পক্ষান্তরে আমি একে করেছি আলো, যা দ্বারা আমি আমার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা পথপ্রদর্শন করি। নিশ্চয় তুমি সরল পথের দিকেই পথপ্রদর্শন করে থাক। (সূরা শূরা- ৫২)
اَوَمَنْ كَانَ مَيْتًا فَاَحْيَيْنَاهُ وَجَعَلْنَا لَهٗ نُوْرًا يَّمْشِيْ بِهٖ فِى النَّاسِ كَمَنْ مَّثَلُهٗ فِى الظُّلُمَاتِ لَيْسَ بِخَارِجٍ مِّنْهَاؕ كَذٰلِكَ زُيِّنَ لِلْكَافِرِيْنَ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
যে ব্যক্তি মৃত ছিল, পরে আমি তাকে জীবিত করেছি এবং মানুষের মধ্যে চলার জন্য আলো দিয়েছি, সে ব্যক্তি কি ঐ ব্যক্তির মতো, যে এমন অন্ধকারে রয়েছে যেখান থেকে সে বের হবার নয়? এভাবে কাফিরদের দৃষ্টিতে তাদের কৃতকর্ম শোভনীয় করে দেয়া হয়েছে। (সূরা আন‘আম- ১২২)
ব্যাখ্যা : এখানে মৃত্যু বলা হয়েছে অজ্ঞতা, মূর্খতা ও চেতনাবিহীন অবস্থাকে। আর জীবন বলতে বুঝানো হয়েছে জ্ঞান, উপলব্ধি ও প্রকৃত সত্যকে চিনতে পারার অবস্থাকে। যে ব্যক্তির মধ্যে ভুল ও নির্ভুলের পার্থক্যবোধ নেই এবং যার সত্য ও সরল পথের স্বরূপ জানা নেই, জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিতে সে জীবনসম্পন্ন হলেও প্রকৃত সত্যের বিচারে সে মৃত। সে অবশ্যই জীবন্ত প্রাণী কিন্তু জীবন্ত মানুষ নয়। জীবন্ত মানুষ একমাত্র তাকেই বলা যাবে যে সত্য-মিথ্যা, ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় ও ভুল-নির্ভুলের পার্থক্যের জ্ঞান রাখে। যে মানুষটি মানবিক চেতনা লাভ করেছে এবং জ্ঞানের উজ্জ্বল আলোয় বাঁকা পথগুলোর মধ্যে সোজা রাজপথটি দেখতে পাচ্ছে, তার ব্যাপারে কেমন করে আশা করা যেতে পারে যে, সে এমনসব চেতনাবিহীন লোকদের মতো দুনিয়ায় জীবন-যাপন করবে, যারা অজ্ঞতা ও মূর্খতার অন্ধকারে পথ হারা হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে?
কুরআনের পথ ছাড়া বাকী সকল পথ গোমরাহী :
اِنَّاۤ اَنْزَلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ لِلنَّاسِ بِالْحَقِّۚ فَمَنِ اهْتَدٰى فَلِنَفْسِهٖۚ وَمَنْ ضَلَّ فَاِنَّمَا يَضِلُّ عَلَيْهَاۚ وَمَاۤ اَنْتَ عَلَيْهِمْ بِوَكِيْلٍ
আমি তোমার প্রতি মানুষের জন্য সত্য সহকারে কিতাব অবতীর্ণ করেছি। সুতরাং যে হেদায়াত গ্রহণ করে, সে তার নিজের জন্যই হেদায়াত গ্রহণ করে এবং যে পথভ্রষ্ট হয়, সে নিজের (ধ্বংসের) জন্যই পথভ্রষ্ট হয়। আর তুমি তাদের জিম্মাদার নও। (সূরা যুমার- ৪১)
মুত্তাক্বীরাই কুরআন থেকে হেদায়াত পায় :
ذٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَۚ فِيْهِۚ هُدًى لِّلْمُتَّقِيْنَ – اَلَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ – وَالَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكَ وَمَاۤ اُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَۚ وَبِالْاٰخِرَةِ هُمْ يُوْقِنُوْنَ – اُولٰٓئِكَ عَلٰى هُدًى مِّنْ رَّبِّهِمْۗ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
এটা ঐ গ্রন্থ যার মধ্যে কোন সন্দেহ নেই। আর এটা মুত্তাক্বীদের জন্য হেদায়াতস্বরূপ। এরা (মুত্তাক্বীগণ) ঐ সকল লোক, যারা অদৃশ্য বিষয়গুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদেরকে যে জীবনোপকরণ দান করেছি তা হতে ব্যয় করে। আর তারা তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে ও তোমার পূর্বে যা অবতীর্ণ করা হয়েছিল তার প্রতি এবং পরকালের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করে। তারাই তাদের রবের পক্ষ হতে প্রাপ্ত হেদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে এবং তারাই সফলকাম। (সূরা বাক্বারা, ২-৫)
ব্যাখ্যা : কুরআন একটি হেদায়াত ও পথনির্দেশনার গ্রন্থ। কিন্তু এ থেকে লাভবান হতে চাইলে মানুষের মধ্যে তাক্বওয়ার গুণ থাকতে হবে। তাকে ‘মুত্তাক্বী’ বা আল্লাহভীরু হতে হবে। তার মধ্যে মন্দ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া ও ভালোকে গ্রহণ করার আকাঙ্ক্ষা এবং এ আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়ন করার ইচ্ছা থাকতে হবে।
মুত্তাক্বীর প্রথম গুণ হচ্ছে, ‘গায়েব’ বা অদৃশ্যে বিশ্বাস। নবী ﷺ অদৃশ্যের বিষয়ে যেসব সংবাদ দিয়েছেন, তা অক্ষরে অক্ষরে মেনে নেয়াই হচ্ছে অদৃশ্যের প্রতি বিশ্বাস। যে ব্যক্তি এ সত্যগুলো মেনে নিতে প্রস্তুত হবে, সে-ই কুরআনের হেদায়াত থেকে উপকৃত হতে পারবে।
দ্বিতীয় গুণ হচ্ছে, নামায কায়েম করা। যারা ঈমান আনার পর বসে থাকবে তারা কুরআন থেকে উপকৃত হতে পারবে না। এ থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য একান্ত প্রয়োজন হচ্ছে, ইসলামকে মেনে নেয়ার পর পরই আল্লাহর আনুগত্য করা ও ইসলামের বিধিবিধান বাস্তবায়ন করা।
তৃতীয় গুণ হচ্ছে, যাকাত আদায় করা। সংকীর্ণমনা না হয়ে আল্লাহ ও তাঁর বান্দার অধিকার আদায়কারী হওয়া। তার সম্পদে আল্লাহ ও তাঁর বান্দার যে অধিকার রয়েছে, তাকে তা আদায় করার জন্য প্রস্তুত থাকা। যে বিষয়ের উপর সে ঈমান এনেছে, তার জন্য অর্থনৈতিক ত্যাগ স্বীকার করার ব্যাপারে ইতস্ততবোধ না করা।
চতুর্থ গুণ হচ্ছে, যাকাত আদায় করা।
পঞ্চম গুণ হচ্ছে, আসমানী কিতাবসমূহের উপর বিশ্বাস রাখা।
ষষ্ট গুণ হচ্ছে, আখিরাতের উপর ঈমান রাখা। এ বিষয়গুলো অস্বীকার করা তো দূরের কথা এগুলো সম্পর্কে কারো মনে যদি সামান্যতম সন্দেহ থাকে, তাহলে মানুষের জীবনের জন্য কুরআন যে পথনির্দেশ দিয়েছে, সে পথে তারা চলতে পারবে না। রিসালাতের এ কল্যাণধারা থেকে কেবলমাত্র সেসব লোক লাভবান হতে পারে, যারা মূলত সৎ প্রবৃত্তির অধিকারী। অন্যদিকে দুষ্ট মনোবৃত্তির অধিকারী ও দুষ্কর্মশীল লোকেরা হচ্ছে এমন ধরনের অনুর্বর জমির মতো, যা রহমতের বারি বর্ষণে কোনক্রমেই লাভবান হয় না। অনুরূপভাবে রিসালাতের আবির্ভাবও তাদের কোন উপকারে আসে না।
اِنَّ هٰذَا الْقُرْاٰنَ يَهْدِيْ لِلَّتِيْ هِيَ اَقْوَمُ وَيُبَشِّرُ الْمُؤْمِنِيْنَ الَّذِيْنَ يَعْمَلُوْنَ الصَّالِحَاتِ اَنَّ لَهُمْ اَجْرًا كَبِيْرًا
নিশ্চয় এ কুরআন সে পথের দিকে হেদায়াত করে, যা খুবই সুদৃঢ়। আর এটি সৎকর্মপরায়ণ মুমিনদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৯)
কুরআনের হেদায়াতই প্রকৃত হেদায়াত :
قُلْ اِنَّ هُدَى اللهِ هُوَ الْهُدٰىؕ وَلَئِنِ اتَّبَعْتَ اَهْوَآءَهُمْ بَعْدَ الَّذِيْ جَآءَكَ مِنَ الْعِلْمِ مَا لَكَ مِنَ اللهِ مِنْ وَّلِيٍّ وَّلَا نَصِيْرٍ
বলো, আল্লাহর প্রদর্শিত পথই সঠিক পথ। সুতরাং তোমার নিকট জ্ঞান আসার পরও যদি তুমি তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ কর, তবে আল্লাহ হতে তোমার জন্য কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী থাকবে না। (সূরা বাক্বারা- ১২০)
ذٰلِكَ هُدَى اللهِ يَهْدِيْ بِهٖ مَنْ يَّشَآءُ وَمَنْ يُّضْلِلِ اللهُ فَمَا لَهٗ مِنْ هَادٍ
এটাই আল্লাহর হেদায়াত, এর দ্বারা তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে হেদায়াত দান করেন। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার কোন পথপ্রদর্শক নেই। (সূরা যুমার- ২৩)
কুরআন শান্তির পথ দেখায় :
قَدْ جَآءَكُمْ مِّنَ اللهِ نُوْرٌ وَّكِتَابٌ مُّبِيْنٌ – - يَهْدِيْ بِهِ اللهُ مَنِ اتَّبَعَ رِضْوَانَهٗ سُبُلَ السَّلَامِ وَيُخْرِجُهُمْ مِّنَ الظُّلُمَاتِ اِلَى النُّوْرِ بِاِذْنِهٖ وَيَهْدِيْهِمْ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
আল্লাহর নিকট হতে এক জ্যোতি ও স্পষ্ট কিতাব তোমাদের নিকট এসেছে। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে চায় এর দ্বারা তিনি তাদেরকে শান্তির পথে পরিচালিত করেন এবং তাদেরকে নিজ ইচ্ছায় অন্ধকার হতে বের করে আলোর দিকে নিয়ে আসেন। অতঃপর তাদেরকে সরল পথে পরিচালিত করেন। (সূরা মায়েদা- ১৫, ১৬)
কুরআন হেদায়াতের নূর :
وَكَذٰلِكَ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ رُوْحًا مِّنْ اَمْرِنَاؕ مَا كُنْتَ تَدْرِيْ مَا الْكِتَابُ وَلَا الْاِيْمَانُ وَلٰكِنْ جَعَلْنَاهُ نُوْرًا نَّهْدِيْ بِهٖ مَنْ نَّشَآءُ مِنْ عِبَادِنَاؕ وَاِنَّكَ لَتَهْدِيْۤ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
এভাবেই আমি আমার নির্দেশে তোমার প্রতি ওহী করেছি রূহ (কুরআন); তুমি তো জানতে না কিতাব কী এবং ঈমান কী? পক্ষান্তরে আমি একে করেছি আলো, যা দ্বারা আমি আমার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা পথপ্রদর্শন করি। নিশ্চয় তুমি সরল পথের দিকেই পথপ্রদর্শন করে থাক। (সূরা শূরা- ৫২)
اَوَمَنْ كَانَ مَيْتًا فَاَحْيَيْنَاهُ وَجَعَلْنَا لَهٗ نُوْرًا يَّمْشِيْ بِهٖ فِى النَّاسِ كَمَنْ مَّثَلُهٗ فِى الظُّلُمَاتِ لَيْسَ بِخَارِجٍ مِّنْهَاؕ كَذٰلِكَ زُيِّنَ لِلْكَافِرِيْنَ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
যে ব্যক্তি মৃত ছিল, পরে আমি তাকে জীবিত করেছি এবং মানুষের মধ্যে চলার জন্য আলো দিয়েছি, সে ব্যক্তি কি ঐ ব্যক্তির মতো, যে এমন অন্ধকারে রয়েছে যেখান থেকে সে বের হবার নয়? এভাবে কাফিরদের দৃষ্টিতে তাদের কৃতকর্ম শোভনীয় করে দেয়া হয়েছে। (সূরা আন‘আম- ১২২)
ব্যাখ্যা : এখানে মৃত্যু বলা হয়েছে অজ্ঞতা, মূর্খতা ও চেতনাবিহীন অবস্থাকে। আর জীবন বলতে বুঝানো হয়েছে জ্ঞান, উপলব্ধি ও প্রকৃত সত্যকে চিনতে পারার অবস্থাকে। যে ব্যক্তির মধ্যে ভুল ও নির্ভুলের পার্থক্যবোধ নেই এবং যার সত্য ও সরল পথের স্বরূপ জানা নেই, জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিতে সে জীবনসম্পন্ন হলেও প্রকৃত সত্যের বিচারে সে মৃত। সে অবশ্যই জীবন্ত প্রাণী কিন্তু জীবন্ত মানুষ নয়। জীবন্ত মানুষ একমাত্র তাকেই বলা যাবে যে সত্য-মিথ্যা, ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় ও ভুল-নির্ভুলের পার্থক্যের জ্ঞান রাখে। যে মানুষটি মানবিক চেতনা লাভ করেছে এবং জ্ঞানের উজ্জ্বল আলোয় বাঁকা পথগুলোর মধ্যে সোজা রাজপথটি দেখতে পাচ্ছে, তার ব্যাপারে কেমন করে আশা করা যেতে পারে যে, সে এমনসব চেতনাবিহীন লোকদের মতো দুনিয়ায় জীবন-যাপন করবে, যারা অজ্ঞতা ও মূর্খতার অন্ধকারে পথ হারা হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে?
কুরআনের পথ ছাড়া বাকী সকল পথ গোমরাহী :
اِنَّاۤ اَنْزَلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ لِلنَّاسِ بِالْحَقِّۚ فَمَنِ اهْتَدٰى فَلِنَفْسِهٖۚ وَمَنْ ضَلَّ فَاِنَّمَا يَضِلُّ عَلَيْهَاۚ وَمَاۤ اَنْتَ عَلَيْهِمْ بِوَكِيْلٍ
আমি তোমার প্রতি মানুষের জন্য সত্য সহকারে কিতাব অবতীর্ণ করেছি। সুতরাং যে হেদায়াত গ্রহণ করে, সে তার নিজের জন্যই হেদায়াত গ্রহণ করে এবং যে পথভ্রষ্ট হয়, সে নিজের (ধ্বংসের) জন্যই পথভ্রষ্ট হয়। আর তুমি তাদের জিম্মাদার নও। (সূরা যুমার- ৪১)
মুত্তাক্বীরাই কুরআন থেকে হেদায়াত পায় :
ذٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَۚ فِيْهِۚ هُدًى لِّلْمُتَّقِيْنَ – اَلَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ – وَالَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكَ وَمَاۤ اُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَۚ وَبِالْاٰخِرَةِ هُمْ يُوْقِنُوْنَ – اُولٰٓئِكَ عَلٰى هُدًى مِّنْ رَّبِّهِمْۗ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
এটা ঐ গ্রন্থ যার মধ্যে কোন সন্দেহ নেই। আর এটা মুত্তাক্বীদের জন্য হেদায়াতস্বরূপ। এরা (মুত্তাক্বীগণ) ঐ সকল লোক, যারা অদৃশ্য বিষয়গুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদেরকে যে জীবনোপকরণ দান করেছি তা হতে ব্যয় করে। আর তারা তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে ও তোমার পূর্বে যা অবতীর্ণ করা হয়েছিল তার প্রতি এবং পরকালের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করে। তারাই তাদের রবের পক্ষ হতে প্রাপ্ত হেদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে এবং তারাই সফলকাম। (সূরা বাক্বারা, ২-৫)
ব্যাখ্যা : কুরআন একটি হেদায়াত ও পথনির্দেশনার গ্রন্থ। কিন্তু এ থেকে লাভবান হতে চাইলে মানুষের মধ্যে তাক্বওয়ার গুণ থাকতে হবে। তাকে ‘মুত্তাক্বী’ বা আল্লাহভীরু হতে হবে। তার মধ্যে মন্দ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া ও ভালোকে গ্রহণ করার আকাঙ্ক্ষা এবং এ আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়ন করার ইচ্ছা থাকতে হবে।
মুত্তাক্বীর প্রথম গুণ হচ্ছে, ‘গায়েব’ বা অদৃশ্যে বিশ্বাস। নবী ﷺ অদৃশ্যের বিষয়ে যেসব সংবাদ দিয়েছেন, তা অক্ষরে অক্ষরে মেনে নেয়াই হচ্ছে অদৃশ্যের প্রতি বিশ্বাস। যে ব্যক্তি এ সত্যগুলো মেনে নিতে প্রস্তুত হবে, সে-ই কুরআনের হেদায়াত থেকে উপকৃত হতে পারবে।
দ্বিতীয় গুণ হচ্ছে, নামায কায়েম করা। যারা ঈমান আনার পর বসে থাকবে তারা কুরআন থেকে উপকৃত হতে পারবে না। এ থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য একান্ত প্রয়োজন হচ্ছে, ইসলামকে মেনে নেয়ার পর পরই আল্লাহর আনুগত্য করা ও ইসলামের বিধিবিধান বাস্তবায়ন করা।
তৃতীয় গুণ হচ্ছে, যাকাত আদায় করা। সংকীর্ণমনা না হয়ে আল্লাহ ও তাঁর বান্দার অধিকার আদায়কারী হওয়া। তার সম্পদে আল্লাহ ও তাঁর বান্দার যে অধিকার রয়েছে, তাকে তা আদায় করার জন্য প্রস্তুত থাকা। যে বিষয়ের উপর সে ঈমান এনেছে, তার জন্য অর্থনৈতিক ত্যাগ স্বীকার করার ব্যাপারে ইতস্ততবোধ না করা।
চতুর্থ গুণ হচ্ছে, যাকাত আদায় করা।
পঞ্চম গুণ হচ্ছে, আসমানী কিতাবসমূহের উপর বিশ্বাস রাখা।
ষষ্ট গুণ হচ্ছে, আখিরাতের উপর ঈমান রাখা। এ বিষয়গুলো অস্বীকার করা তো দূরের কথা এগুলো সম্পর্কে কারো মনে যদি সামান্যতম সন্দেহ থাকে, তাহলে মানুষের জীবনের জন্য কুরআন যে পথনির্দেশ দিয়েছে, সে পথে তারা চলতে পারবে না। রিসালাতের এ কল্যাণধারা থেকে কেবলমাত্র সেসব লোক লাভবান হতে পারে, যারা মূলত সৎ প্রবৃত্তির অধিকারী। অন্যদিকে দুষ্ট মনোবৃত্তির অধিকারী ও দুষ্কর্মশীল লোকেরা হচ্ছে এমন ধরনের অনুর্বর জমির মতো, যা রহমতের বারি বর্ষণে কোনক্রমেই লাভবান হয় না। অনুরূপভাবে রিসালাতের আবির্ভাবও তাদের কোন উপকারে আসে না।
আল্লাহ কুরআনের বিধানকে সহজ করে দিয়েছেন :
يُرِيْدُ اللهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيْدُ بِكُمُ الْعُسْرَ
আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান এবং তোমাদের জন্য কঠিন করতে চান না। (সূরা বাক্বারা- ১৮৫)
مَا يُرِيْدُ اللهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُمْ مِّنْ حَرَجٍ وَّلٰكِنْ يُّرِيْدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهٗ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
আল্লাহ তোমাদেরকে কষ্ট দিতে চান না; বরং তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান ও তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করতে চান; যাতে করে তোমরা শুকরিয়া জ্ঞাপন কর। (সূরা মায়েদা- ৬)
وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِى الدِّيْنِ مِنْ حَرَجٍ
তিনি দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন কষ্ট রাখেননি। (সূরা হজ্জ- ৭৮)
ব্যাখ্যা : আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, দ্বীন খুব সহজ, কেউ দ্বীনের ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করলে সে অবশ্যই পরাজিত হবে। সর্বদা মধ্যমপন্থা অবলম্বন করো, তার নৈকট্য লাভ করো এবং সুসংবাদ গ্রহণ করো। আর সকাল-সন্ধ্যা ও শেষ রাতের আমল দ্বারা স্বীয় কাজে সাহায্য চাও। (সহীহ বুখারী, হা/৩৯)
সামর্থ্যের বাইরে আল্লাহ কাউকে কষ্ট দেন না :
لَا يُكَلِّفُ اللهُ نَفْسًا اِلَّا وُسْعَهَا
আল্লাহ কাউকে তার সামর্থ্যের বাইরে কিছু চাপিয়ে দেন না। (সূরা বাক্বারা- ২৮৬)
لَا يُكَلِّفُ اللهُ نَفْسًا اِلَّا مَاۤ اٰتَاهَا
আল্লাহ যাকে যে সামর্থ্য দিয়েছেন, তার অতিরিক্ত বোঝা তিনি তার উপর চাপিয়ে দেন না। (সূরা তালাক্ব- ৭)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর কাছে মানুষের সামর্থ্যানুযায়ী তার দায়িত্ব বিবেচিত হয়। মানুষ যে কাজ করার ক্ষমতা রাখে না অথচ আল্লাহ তাকে সে কাজটি না করার জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করবেন এমনটি কখনো হবে না। অথবা প্রকৃতপক্ষে যা থেকে দূরে থাকার সামর্থ্যই মানুষের ছিল না, সে ক্ষেত্রে তাতে জড়িত হয়ে পড়ার জন্য আল্লাহর কাছে তাকে জবাবদিহি করতে হবে না। প্রকৃতপক্ষে কোন্ কাজে মানুষের সামর্থ্য আছে এবং কোন্ কাজে মানুষের সামর্থ্য নেই তা আল্লাহ নির্ধারণ করবেন। অতঃপর তিনিই শাস্তি নির্ধারণ করবেন অথবা তাকে পুরস্কৃত করবেন।
يُرِيْدُ اللهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيْدُ بِكُمُ الْعُسْرَ
আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান এবং তোমাদের জন্য কঠিন করতে চান না। (সূরা বাক্বারা- ১৮৫)
مَا يُرِيْدُ اللهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُمْ مِّنْ حَرَجٍ وَّلٰكِنْ يُّرِيْدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهٗ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
আল্লাহ তোমাদেরকে কষ্ট দিতে চান না; বরং তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান ও তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করতে চান; যাতে করে তোমরা শুকরিয়া জ্ঞাপন কর। (সূরা মায়েদা- ৬)
وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِى الدِّيْنِ مِنْ حَرَجٍ
তিনি দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন কষ্ট রাখেননি। (সূরা হজ্জ- ৭৮)
ব্যাখ্যা : আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, দ্বীন খুব সহজ, কেউ দ্বীনের ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করলে সে অবশ্যই পরাজিত হবে। সর্বদা মধ্যমপন্থা অবলম্বন করো, তার নৈকট্য লাভ করো এবং সুসংবাদ গ্রহণ করো। আর সকাল-সন্ধ্যা ও শেষ রাতের আমল দ্বারা স্বীয় কাজে সাহায্য চাও। (সহীহ বুখারী, হা/৩৯)
সামর্থ্যের বাইরে আল্লাহ কাউকে কষ্ট দেন না :
لَا يُكَلِّفُ اللهُ نَفْسًا اِلَّا وُسْعَهَا
আল্লাহ কাউকে তার সামর্থ্যের বাইরে কিছু চাপিয়ে দেন না। (সূরা বাক্বারা- ২৮৬)
لَا يُكَلِّفُ اللهُ نَفْسًا اِلَّا مَاۤ اٰتَاهَا
আল্লাহ যাকে যে সামর্থ্য দিয়েছেন, তার অতিরিক্ত বোঝা তিনি তার উপর চাপিয়ে দেন না। (সূরা তালাক্ব- ৭)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর কাছে মানুষের সামর্থ্যানুযায়ী তার দায়িত্ব বিবেচিত হয়। মানুষ যে কাজ করার ক্ষমতা রাখে না অথচ আল্লাহ তাকে সে কাজটি না করার জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করবেন এমনটি কখনো হবে না। অথবা প্রকৃতপক্ষে যা থেকে দূরে থাকার সামর্থ্যই মানুষের ছিল না, সে ক্ষেত্রে তাতে জড়িত হয়ে পড়ার জন্য আল্লাহর কাছে তাকে জবাবদিহি করতে হবে না। প্রকৃতপক্ষে কোন্ কাজে মানুষের সামর্থ্য আছে এবং কোন্ কাজে মানুষের সামর্থ্য নেই তা আল্লাহ নির্ধারণ করবেন। অতঃপর তিনিই শাস্তি নির্ধারণ করবেন অথবা তাকে পুরস্কৃত করবেন।
কুরআনের বিধান পরিপূর্ণভাবে মানতে হবে :
اَفَتُؤْمِنُوْنَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُوْنَ بِبَعْضٍۚ فَمَا جَزَآءُ مَنْ يَّفْعَلُ ذٰلِكَ مِنْكُمْ اِلَّا خِزْيٌ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَاۚ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّوْنَ اِلٰۤى اَشَدِّ الْعَذَابِؕ وَمَا اللهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ
তোমরা কি গ্রন্থের কিছু অংশ বিশ্বাস কর আর কিছু অংশ অস্বীকার কর? তোমাদের মধ্যে যারা এরূপ করে তাদের পার্থিব জীবনে লাঞ্ছনা ব্যতীত কিছুই নেই এবং কিয়ামত দিবসে তারা কঠোর শাস্তির দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে। আর তোমরা যা করছ আল্লাহ সে বিষয়ে উদাসীন নন। (সূরা বাক্বারা- ৮৫)
ব্যাখ্যা : কুরআনের বিধান মানার জন্য নবী ﷺ এর অসীয়ত করে গেছেন। তালহা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে আবি আওফ (রাঃ) কে প্রশ্ন করলাম, নবী ﷺ কি কোন অসীয়ত করে গেছেন? তিনি জবাব দিলেন, না। তখন আমি বললাম, ‘‘যখন নবী ﷺ কোন অসীয়ত করে যাননি, তখন তিনি মানুষের জন্য কী করে অসীয়ত করা বাধ্যতামূলক করে গেছেন এবং তাদেরকে এজন্য আদেশ দিয়েছেন।’’ তখন তিনি উত্তর দিলেন, নবী ﷺ আল্লাহর কিতাবের অনুসরণ করার জন্য অসীয়ত করে গেছেন।’ (যেহেতু নবীগণ কোন ধনসম্পদ রেখে যান না সেজন্য কোন অসীয়তও করে যান না, তাঁরা শুধুমাত্র হেদায়াত রেখে যান এবং সে বিষয়ে অসীয়ত করে যান, সে হিসেবে শেষ নবীও আল্লাহর কিতাব কুরআন রেখে গেছেন এবং এর অনুসরণের জন্য অসীয়ত করে গেছেন)। (সহীহ বুখারী, হা/৫০২২)
যারা কুরআনের বিধান মানবে তারা পথভ্রষ্ট হবে না :
قُلْنَا اهْبِطُوْا مِنْهَا جَمِيْعًاۚ فَاِمَّا يَاْتِيَنَّكُمْ مِّنِّيْ هُدًى فَمَنْ تَبِعَ هُدَايَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ
আমি বললাম, তোমরা সবাই এখান থেকে (জান্নাত থেকে) নিচে নেমে যাও। পরে আমার পক্ষ হতে তোমাদের নিকট হেদায়াত আসবে; অতঃপর যারা আমার সেই হেদায়াতের অনুসরণ করবে তাদের কোন ভয় থাকবে না এবং তারা চিন্তিতও হবে না। (সূরা বাক্বারা- ৩৮)
فَاِمَّا يَاْتِيَنَّكُمْ مِّنِّيْ هُدًى فَمَنِ اتَّبَعَ هُدَايَ فَلَا يَضِلُّ وَلَا يَشْقٰى
পরে আমার পক্ষ হতে তোমাদের নিকট সৎপথের নির্দেশ আসলে যে আমার পথ অনুসরণ করবে, সে বিপথগামী হবে না এবং দুঃখ-কষ্টও পাবে না। (সূরা ত্বা-হা- ১২৩)
তাদের কোন ভয় থাকবে না :
يَا بَنِيْۤ اٰدَمَ اِمَّا يَاْتِيَنَّكُمْ رُسُلٌ مِّنْكُمْ يَقُصُّوْنَ عَلَيْكُمْ اٰيَاتِيْ فَمَنِ اتَّقٰى وَاَصْلَحَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ
হে বনী আদম! যদি তোমাদের মধ্য হতে কোন রাসূল তোমাদের নিকট এসে আমার আয়াতসমূহ বর্ণনা করেন তখন যারা সাবধান হবে এবং নিজেদেরকে সংশোধন করে নেবে, তাদের কোন ভয় থাকবে না এবং তারা দুঃখিতও হবে না। (সূরা আ‘রাফ- ৩৫)
اَفَتُؤْمِنُوْنَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُوْنَ بِبَعْضٍۚ فَمَا جَزَآءُ مَنْ يَّفْعَلُ ذٰلِكَ مِنْكُمْ اِلَّا خِزْيٌ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَاۚ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّوْنَ اِلٰۤى اَشَدِّ الْعَذَابِؕ وَمَا اللهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ
তোমরা কি গ্রন্থের কিছু অংশ বিশ্বাস কর আর কিছু অংশ অস্বীকার কর? তোমাদের মধ্যে যারা এরূপ করে তাদের পার্থিব জীবনে লাঞ্ছনা ব্যতীত কিছুই নেই এবং কিয়ামত দিবসে তারা কঠোর শাস্তির দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে। আর তোমরা যা করছ আল্লাহ সে বিষয়ে উদাসীন নন। (সূরা বাক্বারা- ৮৫)
ব্যাখ্যা : কুরআনের বিধান মানার জন্য নবী ﷺ এর অসীয়ত করে গেছেন। তালহা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে আবি আওফ (রাঃ) কে প্রশ্ন করলাম, নবী ﷺ কি কোন অসীয়ত করে গেছেন? তিনি জবাব দিলেন, না। তখন আমি বললাম, ‘‘যখন নবী ﷺ কোন অসীয়ত করে যাননি, তখন তিনি মানুষের জন্য কী করে অসীয়ত করা বাধ্যতামূলক করে গেছেন এবং তাদেরকে এজন্য আদেশ দিয়েছেন।’’ তখন তিনি উত্তর দিলেন, নবী ﷺ আল্লাহর কিতাবের অনুসরণ করার জন্য অসীয়ত করে গেছেন।’ (যেহেতু নবীগণ কোন ধনসম্পদ রেখে যান না সেজন্য কোন অসীয়তও করে যান না, তাঁরা শুধুমাত্র হেদায়াত রেখে যান এবং সে বিষয়ে অসীয়ত করে যান, সে হিসেবে শেষ নবীও আল্লাহর কিতাব কুরআন রেখে গেছেন এবং এর অনুসরণের জন্য অসীয়ত করে গেছেন)। (সহীহ বুখারী, হা/৫০২২)
যারা কুরআনের বিধান মানবে তারা পথভ্রষ্ট হবে না :
قُلْنَا اهْبِطُوْا مِنْهَا جَمِيْعًاۚ فَاِمَّا يَاْتِيَنَّكُمْ مِّنِّيْ هُدًى فَمَنْ تَبِعَ هُدَايَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ
আমি বললাম, তোমরা সবাই এখান থেকে (জান্নাত থেকে) নিচে নেমে যাও। পরে আমার পক্ষ হতে তোমাদের নিকট হেদায়াত আসবে; অতঃপর যারা আমার সেই হেদায়াতের অনুসরণ করবে তাদের কোন ভয় থাকবে না এবং তারা চিন্তিতও হবে না। (সূরা বাক্বারা- ৩৮)
فَاِمَّا يَاْتِيَنَّكُمْ مِّنِّيْ هُدًى فَمَنِ اتَّبَعَ هُدَايَ فَلَا يَضِلُّ وَلَا يَشْقٰى
পরে আমার পক্ষ হতে তোমাদের নিকট সৎপথের নির্দেশ আসলে যে আমার পথ অনুসরণ করবে, সে বিপথগামী হবে না এবং দুঃখ-কষ্টও পাবে না। (সূরা ত্বা-হা- ১২৩)
তাদের কোন ভয় থাকবে না :
يَا بَنِيْۤ اٰدَمَ اِمَّا يَاْتِيَنَّكُمْ رُسُلٌ مِّنْكُمْ يَقُصُّوْنَ عَلَيْكُمْ اٰيَاتِيْ فَمَنِ اتَّقٰى وَاَصْلَحَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ
হে বনী আদম! যদি তোমাদের মধ্য হতে কোন রাসূল তোমাদের নিকট এসে আমার আয়াতসমূহ বর্ণনা করেন তখন যারা সাবধান হবে এবং নিজেদেরকে সংশোধন করে নেবে, তাদের কোন ভয় থাকবে না এবং তারা দুঃখিতও হবে না। (সূরা আ‘রাফ- ৩৫)
অনেক মানুষ কুরআনকে ছেড়ে দিয়েছে :
وَقَالَ الرَّسُوْلُ يَا رَبِّ اِنَّ قَوْمِى اتَّخَذُوْا هٰذَا الْقُرْاٰنَ مَهْجُوْرًا
রাসূল বললেন, হে আমার প্রতিপালক! নিশ্চয় আমার সম্প্রদায় এ কুরআনকে পরিত্যাজ্য মনে করে। (সূরা ফুরক্বান- ৩০)
ব্যাখ্যা : مَهْجُوْرٌ (মাহজুর) এর অর্থ হয় পরিত্যক্ত। অর্থাৎ তারা কুরআনের প্রতি দৃষ্টি দেয়া যেতে পারে বলে মনেই করে না। তাকে গ্রহণ করে না এবং তার থেকে কোনভাবে প্রভাবিতও হয় না। তারা একে প্রলাপ ও অর্থহীন বাক্য মনে করে। কুরআন মানুষের পক্ষে বা বিপক্ষে প্রমাণস্বরূপ। যদি কুরআনকে যথাযথভাবে অনুসরণ করে চলা হয়, তাহলে তা তার পক্ষে সাক্ষী হয়ে দাঁড়াবে। দুনিয়া থেকে আখিরাত পর্যন্ত যেখানেই সে প্রশ্নের সম্মুখীন হোক না কেন সেখানেই কুরআন সুপারিশকারী হবে, যদি তার কাজ যথার্থই কুরআন অনুযায়ী হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে যদি এ কিতাবের সুস্পষ্ট বাণী তার কাছে পৌঁছা সত্ত্বেও তার বিপরীত কর্মকান্ড করে থাকে, তাহলে এ কিতাব তার বিরুদ্ধে সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে। আল্লাহর আদালতে এ কিতাব তার বিরুদ্ধে বাদী হয়ে যাবে। এরপর না জানার ওজর পেশ করে শাস্তি থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া আদৌ সম্ভব হবে না।
তারা কুরআন থেকে বিমুখ হয়ে আছে :
هٰذَا ذِكْرُ مَنْ مَّعِيَ وَذِكْرُ مَنْ قَبْلِيْؕ بَلْ اَ كْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ الْحَقَّ فَهُمْ مُّعْرِضُوْنَ
আমার সঙ্গে যারা আছে তাদের জন্য এবং আমার পূর্ববর্তীদের জন্য এটা উপদেশ। কিন্তু তাদের অধিকাংশই প্রকৃত সত্য সম্পর্কে জানে না, ফলে তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়। (সূরা আম্বিয়া- ২৪)
وَمَا يَاْتِيْهِمْ مِّنْ ذِكْرٍ مِّنَ الرَّحْمٰنِ مُحْدَثٍ اِلَّا كَانُوْا عَنْهُ مُعْرِضِيْنَ
দয়াময়ের নিকট হতে যখনই তাদের নিকট কোন নতুন উপদেশ আসে, তখনই তারা সেটা হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়। (সূরা শু‘আরা- ৫)
তারা একে গুরুত্ব দেয় না :
اِقْتَرَبَ لِلنَّاسِ حِسَابُهُمْ وَهُمْ فِيْ غَفْلَةٍ مُّعْرِضُوْنَ – - مَا يَاْتِيْهِمْ مِّنْ ذِكْرٍ مِّنْ رَّبِّهِمْ مُّحْدَثٍ اِلَّا اسْتَمَعُوْهُ وَهُمْ يَلْعَبُوْنَ -– لَاهِيَةً قُلُوْبُهُمْ
মানুষের হিসাব-নিকাশের সময় আসন্ন, কিন্তু তারা উদাসীনতার দরুন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। যখনই তাদের নিকট তাদের প্রতিপালকের কোন নতুন উপদেশ আসে, তখন তারা সেটা কৌতুকচ্ছলে শ্রবণ করে; আর তাদের অমত্মর থাকে অমনোযোগী। (সূরা আম্বিয়া– ১, ৩)
وَقَالَ الرَّسُوْلُ يَا رَبِّ اِنَّ قَوْمِى اتَّخَذُوْا هٰذَا الْقُرْاٰنَ مَهْجُوْرًا
রাসূল বললেন, হে আমার প্রতিপালক! নিশ্চয় আমার সম্প্রদায় এ কুরআনকে পরিত্যাজ্য মনে করে। (সূরা ফুরক্বান- ৩০)
ব্যাখ্যা : مَهْجُوْرٌ (মাহজুর) এর অর্থ হয় পরিত্যক্ত। অর্থাৎ তারা কুরআনের প্রতি দৃষ্টি দেয়া যেতে পারে বলে মনেই করে না। তাকে গ্রহণ করে না এবং তার থেকে কোনভাবে প্রভাবিতও হয় না। তারা একে প্রলাপ ও অর্থহীন বাক্য মনে করে। কুরআন মানুষের পক্ষে বা বিপক্ষে প্রমাণস্বরূপ। যদি কুরআনকে যথাযথভাবে অনুসরণ করে চলা হয়, তাহলে তা তার পক্ষে সাক্ষী হয়ে দাঁড়াবে। দুনিয়া থেকে আখিরাত পর্যন্ত যেখানেই সে প্রশ্নের সম্মুখীন হোক না কেন সেখানেই কুরআন সুপারিশকারী হবে, যদি তার কাজ যথার্থই কুরআন অনুযায়ী হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে যদি এ কিতাবের সুস্পষ্ট বাণী তার কাছে পৌঁছা সত্ত্বেও তার বিপরীত কর্মকান্ড করে থাকে, তাহলে এ কিতাব তার বিরুদ্ধে সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে। আল্লাহর আদালতে এ কিতাব তার বিরুদ্ধে বাদী হয়ে যাবে। এরপর না জানার ওজর পেশ করে শাস্তি থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া আদৌ সম্ভব হবে না।
তারা কুরআন থেকে বিমুখ হয়ে আছে :
هٰذَا ذِكْرُ مَنْ مَّعِيَ وَذِكْرُ مَنْ قَبْلِيْؕ بَلْ اَ كْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ الْحَقَّ فَهُمْ مُّعْرِضُوْنَ
আমার সঙ্গে যারা আছে তাদের জন্য এবং আমার পূর্ববর্তীদের জন্য এটা উপদেশ। কিন্তু তাদের অধিকাংশই প্রকৃত সত্য সম্পর্কে জানে না, ফলে তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়। (সূরা আম্বিয়া- ২৪)
وَمَا يَاْتِيْهِمْ مِّنْ ذِكْرٍ مِّنَ الرَّحْمٰنِ مُحْدَثٍ اِلَّا كَانُوْا عَنْهُ مُعْرِضِيْنَ
দয়াময়ের নিকট হতে যখনই তাদের নিকট কোন নতুন উপদেশ আসে, তখনই তারা সেটা হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়। (সূরা শু‘আরা- ৫)
তারা একে গুরুত্ব দেয় না :
اِقْتَرَبَ لِلنَّاسِ حِسَابُهُمْ وَهُمْ فِيْ غَفْلَةٍ مُّعْرِضُوْنَ – - مَا يَاْتِيْهِمْ مِّنْ ذِكْرٍ مِّنْ رَّبِّهِمْ مُّحْدَثٍ اِلَّا اسْتَمَعُوْهُ وَهُمْ يَلْعَبُوْنَ -– لَاهِيَةً قُلُوْبُهُمْ
মানুষের হিসাব-নিকাশের সময় আসন্ন, কিন্তু তারা উদাসীনতার দরুন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। যখনই তাদের নিকট তাদের প্রতিপালকের কোন নতুন উপদেশ আসে, তখন তারা সেটা কৌতুকচ্ছলে শ্রবণ করে; আর তাদের অমত্মর থাকে অমনোযোগী। (সূরা আম্বিয়া– ১, ৩)
শয়তান এসব লোকের সঙ্গী হয়ে যায় :
وَمَنْ يَّعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْمٰنِ نُقَيِّضْ لَهٗ شَيْطَانًا فَهُوَ لَهٗ قَرِيْنٌ
যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ হতে বিমুখ হয়ে যায়, আমি তার জন্য এক শয়তান নিয়োজিত করি; অতঃপর সে-ই হয় তার সহচর। (সূরা যুখরুফ- ৩৬)
তাদের তুলনা গাধার সাথে :
فَمَا لَهُمْ عَنِ التَّذْكِرَةِ مُعْرِضِيْنَ ‐ - كَاَنَّهُمْ حُمُرٌ مُّسْتَنْفِرَةٌ ‐ - فَرَّتْ مِنْ قَسْوَرَةٍ
তাদের কী হলো যে, তারা উপদেশবাণী (কুরআন) হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়? তারা যেন পলায়নপর গাধা, যা সিংহের সম্মুখ হতে পলায়ন করে। (সূরা মুদ্দাসসির, ৪৯-৫১)
তারা কিয়ামতের দিন বিপদে পড়বে :
وَقَدْ اٰتَيْنَاكَ مِنْ لَّدُنَّا ذِكْرًا – - مَنْ اَعْرَضَ عَنْهُ فَاِنَّهٗ يَحْمِلُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وِزْرًا
আমার নিকট হতে আমি তোমাকে উপদেশ দান করেছি। যে এটা হতে বিমুখ হবে, সে কিয়ামতের দিন পাপের বোঝা বহন করবে। (সূরা ত্বা-হা , ৯৯, ১০০)
তাদের হাশর হবে অন্ধ অবস্থায় :
وَمَنْ اَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِيْ فَاِنَّ لَهٗ مَعِيْشَةً ضَنْكًا وَّنَحْشُرُهٗ يَوْمَ الْقِيَامَةِ اَعْمٰى ‐ قَالَ رَبِّ لِمَ حَشَرْتَنِۤيْ اَعْمٰى وَقَدْ كُنْتُ بَصِيْرًا ‐ قَالَ كَذٰلِكَ اَتَتْكَ اٰيَاتُنَا فَنَسِيْتَهَاۚ وَكَذٰلِكَ الْيَوْمَ تُنْسٰى ‐ وَكَذٰلِكَ نَجْزِيْ مَنْ اَسْرَفَ وَلَمْ يُؤْمِنْ ۢبِاٰيَاتِ رَبِّهٖؕ وَلَعَذَابُ الْاٰخِرَةِ اَشَدُّ وَاَبْقٰى
যে আমার স্মরণ (কুরআন) হতে বিমুখ হবে, অবশ্যই তার জীবন-যাপন সংকুচিত হয়ে যাবে। আর আমি তাকে কিয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উঠাব। অতঃপর সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! কেন আমাকে অন্ধ অবস্থায় উঠালে? আমি তো চক্ষুষ্মান ছিলাম। তিনি বলবেন, এভাবেই আমার আয়াতসমূহ তোমার নিকট এসেছিল, কিন্তু তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে; সুতরাং আজ তোমাকেও ভুলে যাওয়া হলো। আর এভাবেই আমি তাকে প্রতিফল দেই, যে বাড়াবাড়ি করে ও তার প্রতিপালকের নিদর্শনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না। আর পরকালের শাসিত্ম আরো কঠিন ও অধিক স্থায়ী। (সূরা ত্বা-হা, ১২৪-১২৭)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর অসীম ক্ষমতা বলে তারা আখিরাতের ভয়াবহ দৃশ্য এবং নিজেদের দুষ্কৃতির ফলাফল দেখতে পাবে; কিন্তু অন্যান্য দিক থেকে তাদের অবস্থা হবে এমন অন্ধের মতো, যে নিজের চলার পথ দেখতে পায় না, যার হাতে লাঠিও নেই এবং হাতড়ে চলার ক্ষমতাও নেই। ফলে সে প্রতি পদে পদে হোঁচট খাচ্ছে, কিন্তু বুঝতে পারছে না যে, সে কোন দিকে যাবে এবং নিজের প্রয়োজন কীভাবে পূর্ণ করবে। তখন আল্লাহ বলবেন, ‘‘যেভাবে তুমি আমার আয়াতগুলো ভুলে গিয়েছিলে ঠিক তেমনিভাবে আজ তোমাকে ভুলে যাওয়া হয়েছে।’’ অর্থাৎ তুমি কোথায় কোথায় হোঁচট খাচ্ছ অথবা আঘাত পাচ্ছ আজ তার কোন পরোয়াই করা হবে না। কেউ তোমার হাত ধরবে না, তোমার কোন প্রয়োজনও পূর্ণ করবে না। ফলে তুমি চরম উপেক্ষা ও অবজ্ঞা অতল তলে নিক্ষিপ্ত হবে। আর এসব লোক দুনিয়াতেও মানসিক স্থিরতা লাভ করতে পারবে না। কোটিপতি হলে মানসিক অস্থিরতায় ভুগবে। সম্রাট হলেও সে মানসিক অতৃপ্তিতে আবদ্ধ থাকবে। কখনো তারা এসব মানসিক রোগ থেকে মুক্ত হতে পারবে না। তাদের পার্থিব সাফল্যগুলো হবে হাজারো ধরনের অবৈধ কলাকৌশল অবলম্বনের ফল। এগুলোর কারণে নিজের বিবেকসহ প্রত্যেকটি জিনিসের সাথে তার লাগাতার দ্বন্দ্ব চলতে থাকবে। যার ফলে সে কখনো প্রকৃত সুখ লাভ করতে পারবে না।
এখানে প্রথমত বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি এ উপদেশবাণী অর্থাৎ কুরআন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে এবং তার বিধান ও পথনির্দেশনা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানাবে, সে নিজের ক্ষতি সাধন করবে। এর ফলে মুহাম্মাদ ﷺ এবং তাঁকে প্রেরণকারী আল্লাহর কোন ক্ষতি হবে না। তার এ নির্বুদ্ধিতা হবে তার নিজের সাথে শত্রুতার নামান্তর। দ্বিতীয়ত বলা হয়েছে, যে ব্যক্তির কাছে কুরআনের এ নসীহত পৌঁছার পরও এটাকে গ্রহণ করতে ছলনার আশ্রয় নিয়েছে, সে আখিরাতে শাস্তির হাত থেকে বাঁচতে পারবে না। অত্র আয়াতের শব্দাবলি ব্যাপক অর্থ প্রকাশক। এটা কোন দেশ, জাতি বা সময়ের সাথে বিশেষভাবে সম্পর্কিত নয়। যতদিন দুনিয়ায় এ কুরআন থাকবে এবং যেখানে যার কাছেই এটা পৌঁছে যাবে সেখানে তার জন্য দু’টি পথই খোলা থাকবে। তৃতীয় কোন পথ সেখানে থাকবে না। হয় একে মেনে নিয়ে এর আনুগত্য করতে হবে। অন্যথায় একে অস্বীকার করে এর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে হবে। প্রথম পথ অবলম্বনকারীদের পরিণতি হবে জান্নাত এবং দ্বিতীয় পথ অবলম্বনকারীদের পরিণতি হবে জাহান্নাম।
তারা কোন মুক্তির পথ খুঁজে পাবে না :
وَمَنْ كَانَ فِيْ هٰذِهٖۤ اَعْمٰى فَهُوَ فِى الْاٰخِرَةِ اَعْمٰى وَاَضَلُّ سَبِيْلًا
আর যে ব্যক্তি এখানে অন্ধ, সে আখিরাতেও অন্ধ এবং অধিকতর পথভ্রষ্ট। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৭২)
কুরআনবিমুখ লোকদের প্রতি আল্লাহর প্রশ্ন :
وَهٰذَا ذِكْرٌ مُّبَارَكٌ اَنْزَلْنَاهُ اَفَاَنْتُمْ لَهٗ مُنْكِرُوْنَ
এটা কল্যাণময় উপদেশ; আমি এটা অবতীর্ণ করেছি। তবুও কি তোমরা এটাকে অস্বীকার করবে? (সূরা আম্বিয়া- ৫০)
فَمَا لَهُمْ عَنِ التَّذْكِرَةِ مُعْرِضِيْنَ
তাদের কী হলো যে, তারা উপদেশবাণী (কুরআন) হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়? (সূরা মুদ্দাসসির- ৪৯)
اَفَبِهٰذَا الْحَدِيْثِ اَنْتُمْ مُّدْهِنُوْنَ
তারপরও কি তোমরা এ হাদীসকে (কুরআনকে) সাধারণ মনে করবে? (সূরা ওয়াক্বিয়া- ৮১)
اَفَمِنْ هٰذَا الْحَدِيْثِ تَعْجَبُوْنَ – - وَتَضْحَكُوْنَ وَلَا تَبْكُوْنَ – - وَاَنْتُمْ سَامِدُوْنَ
তোমরা কি এর (কুরআনের) কথায় বিস্ময়বোধ করছ? হাসছ অথচ কাঁদছ না? তোমরা তো বড়ই উদাসীন। (সূরা নাজম, ৫৯-৬১)
فَبِاَيِّ حَدِيْثٍ ۢبَعْدَهٗ يُؤْمِنُوْنَ
এরপর তারা আর কোন কথায় বিশ্বাস করবে? (সূরা মুরসালাত- ৫০)
وَاِذَا قُرِئَ عَلَيْهِمُ الْقُرْاٰنُ لَا يَسْجُدُوْنَ – فَمَا لَهُمْ لَا يُؤْمِنُوْنَ
সুতরাং তাদের কী হলো যে, তারা ঈমান আনয়ন করে না এবং তাদের নিকট কুরআন পাঠ করা হলে, তারা সিজদা করে না? (সূরা ইনশিক্বাক- ২০, ২১)
فَاَيْنَ تَذْهَبُوْنَ ‐ وَمَا هُوَ بِقَوْلِ شَيْطَانٍ رَّجِيْمٍ
এটা (কুরআন) কোন অভিশপ্ত শয়তানের কথা নয়। সুতরাং তোমরা কোথায় চলেছ? (সূরা তাকভীর- ২৫, ২৬)
ব্যাখ্যা : তাদের এ মনোভাবের কারণ কী? তারা কি এ বাণী বুঝেনি, তাই একে মানছে না? না, মূলত কারণ এটা নয়। কুরআন কোন দুর্বোধ্য ভাষায় লেখা হয়নি। কিতাবটিতে এমনসব বিষয়বস্তুর সমাবেশ ঘটানো হয়নি, যা মানুষের বোধগম্য নয়। তারা এর প্রত্যেকটি কথা বুঝেও না বুঝার অভিনয় করে। কারণ তারা একে মানতে চায় না।
وَمَنْ يَّعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْمٰنِ نُقَيِّضْ لَهٗ شَيْطَانًا فَهُوَ لَهٗ قَرِيْنٌ
যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ হতে বিমুখ হয়ে যায়, আমি তার জন্য এক শয়তান নিয়োজিত করি; অতঃপর সে-ই হয় তার সহচর। (সূরা যুখরুফ- ৩৬)
তাদের তুলনা গাধার সাথে :
فَمَا لَهُمْ عَنِ التَّذْكِرَةِ مُعْرِضِيْنَ ‐ - كَاَنَّهُمْ حُمُرٌ مُّسْتَنْفِرَةٌ ‐ - فَرَّتْ مِنْ قَسْوَرَةٍ
তাদের কী হলো যে, তারা উপদেশবাণী (কুরআন) হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়? তারা যেন পলায়নপর গাধা, যা সিংহের সম্মুখ হতে পলায়ন করে। (সূরা মুদ্দাসসির, ৪৯-৫১)
তারা কিয়ামতের দিন বিপদে পড়বে :
وَقَدْ اٰتَيْنَاكَ مِنْ لَّدُنَّا ذِكْرًا – - مَنْ اَعْرَضَ عَنْهُ فَاِنَّهٗ يَحْمِلُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وِزْرًا
আমার নিকট হতে আমি তোমাকে উপদেশ দান করেছি। যে এটা হতে বিমুখ হবে, সে কিয়ামতের দিন পাপের বোঝা বহন করবে। (সূরা ত্বা-হা , ৯৯, ১০০)
তাদের হাশর হবে অন্ধ অবস্থায় :
وَمَنْ اَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِيْ فَاِنَّ لَهٗ مَعِيْشَةً ضَنْكًا وَّنَحْشُرُهٗ يَوْمَ الْقِيَامَةِ اَعْمٰى ‐ قَالَ رَبِّ لِمَ حَشَرْتَنِۤيْ اَعْمٰى وَقَدْ كُنْتُ بَصِيْرًا ‐ قَالَ كَذٰلِكَ اَتَتْكَ اٰيَاتُنَا فَنَسِيْتَهَاۚ وَكَذٰلِكَ الْيَوْمَ تُنْسٰى ‐ وَكَذٰلِكَ نَجْزِيْ مَنْ اَسْرَفَ وَلَمْ يُؤْمِنْ ۢبِاٰيَاتِ رَبِّهٖؕ وَلَعَذَابُ الْاٰخِرَةِ اَشَدُّ وَاَبْقٰى
যে আমার স্মরণ (কুরআন) হতে বিমুখ হবে, অবশ্যই তার জীবন-যাপন সংকুচিত হয়ে যাবে। আর আমি তাকে কিয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উঠাব। অতঃপর সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! কেন আমাকে অন্ধ অবস্থায় উঠালে? আমি তো চক্ষুষ্মান ছিলাম। তিনি বলবেন, এভাবেই আমার আয়াতসমূহ তোমার নিকট এসেছিল, কিন্তু তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে; সুতরাং আজ তোমাকেও ভুলে যাওয়া হলো। আর এভাবেই আমি তাকে প্রতিফল দেই, যে বাড়াবাড়ি করে ও তার প্রতিপালকের নিদর্শনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না। আর পরকালের শাসিত্ম আরো কঠিন ও অধিক স্থায়ী। (সূরা ত্বা-হা, ১২৪-১২৭)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর অসীম ক্ষমতা বলে তারা আখিরাতের ভয়াবহ দৃশ্য এবং নিজেদের দুষ্কৃতির ফলাফল দেখতে পাবে; কিন্তু অন্যান্য দিক থেকে তাদের অবস্থা হবে এমন অন্ধের মতো, যে নিজের চলার পথ দেখতে পায় না, যার হাতে লাঠিও নেই এবং হাতড়ে চলার ক্ষমতাও নেই। ফলে সে প্রতি পদে পদে হোঁচট খাচ্ছে, কিন্তু বুঝতে পারছে না যে, সে কোন দিকে যাবে এবং নিজের প্রয়োজন কীভাবে পূর্ণ করবে। তখন আল্লাহ বলবেন, ‘‘যেভাবে তুমি আমার আয়াতগুলো ভুলে গিয়েছিলে ঠিক তেমনিভাবে আজ তোমাকে ভুলে যাওয়া হয়েছে।’’ অর্থাৎ তুমি কোথায় কোথায় হোঁচট খাচ্ছ অথবা আঘাত পাচ্ছ আজ তার কোন পরোয়াই করা হবে না। কেউ তোমার হাত ধরবে না, তোমার কোন প্রয়োজনও পূর্ণ করবে না। ফলে তুমি চরম উপেক্ষা ও অবজ্ঞা অতল তলে নিক্ষিপ্ত হবে। আর এসব লোক দুনিয়াতেও মানসিক স্থিরতা লাভ করতে পারবে না। কোটিপতি হলে মানসিক অস্থিরতায় ভুগবে। সম্রাট হলেও সে মানসিক অতৃপ্তিতে আবদ্ধ থাকবে। কখনো তারা এসব মানসিক রোগ থেকে মুক্ত হতে পারবে না। তাদের পার্থিব সাফল্যগুলো হবে হাজারো ধরনের অবৈধ কলাকৌশল অবলম্বনের ফল। এগুলোর কারণে নিজের বিবেকসহ প্রত্যেকটি জিনিসের সাথে তার লাগাতার দ্বন্দ্ব চলতে থাকবে। যার ফলে সে কখনো প্রকৃত সুখ লাভ করতে পারবে না।
এখানে প্রথমত বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি এ উপদেশবাণী অর্থাৎ কুরআন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে এবং তার বিধান ও পথনির্দেশনা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানাবে, সে নিজের ক্ষতি সাধন করবে। এর ফলে মুহাম্মাদ ﷺ এবং তাঁকে প্রেরণকারী আল্লাহর কোন ক্ষতি হবে না। তার এ নির্বুদ্ধিতা হবে তার নিজের সাথে শত্রুতার নামান্তর। দ্বিতীয়ত বলা হয়েছে, যে ব্যক্তির কাছে কুরআনের এ নসীহত পৌঁছার পরও এটাকে গ্রহণ করতে ছলনার আশ্রয় নিয়েছে, সে আখিরাতে শাস্তির হাত থেকে বাঁচতে পারবে না। অত্র আয়াতের শব্দাবলি ব্যাপক অর্থ প্রকাশক। এটা কোন দেশ, জাতি বা সময়ের সাথে বিশেষভাবে সম্পর্কিত নয়। যতদিন দুনিয়ায় এ কুরআন থাকবে এবং যেখানে যার কাছেই এটা পৌঁছে যাবে সেখানে তার জন্য দু’টি পথই খোলা থাকবে। তৃতীয় কোন পথ সেখানে থাকবে না। হয় একে মেনে নিয়ে এর আনুগত্য করতে হবে। অন্যথায় একে অস্বীকার করে এর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে হবে। প্রথম পথ অবলম্বনকারীদের পরিণতি হবে জান্নাত এবং দ্বিতীয় পথ অবলম্বনকারীদের পরিণতি হবে জাহান্নাম।
তারা কোন মুক্তির পথ খুঁজে পাবে না :
وَمَنْ كَانَ فِيْ هٰذِهٖۤ اَعْمٰى فَهُوَ فِى الْاٰخِرَةِ اَعْمٰى وَاَضَلُّ سَبِيْلًا
আর যে ব্যক্তি এখানে অন্ধ, সে আখিরাতেও অন্ধ এবং অধিকতর পথভ্রষ্ট। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৭২)
কুরআনবিমুখ লোকদের প্রতি আল্লাহর প্রশ্ন :
وَهٰذَا ذِكْرٌ مُّبَارَكٌ اَنْزَلْنَاهُ اَفَاَنْتُمْ لَهٗ مُنْكِرُوْنَ
এটা কল্যাণময় উপদেশ; আমি এটা অবতীর্ণ করেছি। তবুও কি তোমরা এটাকে অস্বীকার করবে? (সূরা আম্বিয়া- ৫০)
فَمَا لَهُمْ عَنِ التَّذْكِرَةِ مُعْرِضِيْنَ
তাদের কী হলো যে, তারা উপদেশবাণী (কুরআন) হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়? (সূরা মুদ্দাসসির- ৪৯)
اَفَبِهٰذَا الْحَدِيْثِ اَنْتُمْ مُّدْهِنُوْنَ
তারপরও কি তোমরা এ হাদীসকে (কুরআনকে) সাধারণ মনে করবে? (সূরা ওয়াক্বিয়া- ৮১)
اَفَمِنْ هٰذَا الْحَدِيْثِ تَعْجَبُوْنَ – - وَتَضْحَكُوْنَ وَلَا تَبْكُوْنَ – - وَاَنْتُمْ سَامِدُوْنَ
তোমরা কি এর (কুরআনের) কথায় বিস্ময়বোধ করছ? হাসছ অথচ কাঁদছ না? তোমরা তো বড়ই উদাসীন। (সূরা নাজম, ৫৯-৬১)
فَبِاَيِّ حَدِيْثٍ ۢبَعْدَهٗ يُؤْمِنُوْنَ
এরপর তারা আর কোন কথায় বিশ্বাস করবে? (সূরা মুরসালাত- ৫০)
وَاِذَا قُرِئَ عَلَيْهِمُ الْقُرْاٰنُ لَا يَسْجُدُوْنَ – فَمَا لَهُمْ لَا يُؤْمِنُوْنَ
সুতরাং তাদের কী হলো যে, তারা ঈমান আনয়ন করে না এবং তাদের নিকট কুরআন পাঠ করা হলে, তারা সিজদা করে না? (সূরা ইনশিক্বাক- ২০, ২১)
فَاَيْنَ تَذْهَبُوْنَ ‐ وَمَا هُوَ بِقَوْلِ شَيْطَانٍ رَّجِيْمٍ
এটা (কুরআন) কোন অভিশপ্ত শয়তানের কথা নয়। সুতরাং তোমরা কোথায় চলেছ? (সূরা তাকভীর- ২৫, ২৬)
ব্যাখ্যা : তাদের এ মনোভাবের কারণ কী? তারা কি এ বাণী বুঝেনি, তাই একে মানছে না? না, মূলত কারণ এটা নয়। কুরআন কোন দুর্বোধ্য ভাষায় লেখা হয়নি। কিতাবটিতে এমনসব বিষয়বস্তুর সমাবেশ ঘটানো হয়নি, যা মানুষের বোধগম্য নয়। তারা এর প্রত্যেকটি কথা বুঝেও না বুঝার অভিনয় করে। কারণ তারা একে মানতে চায় না।
কুরআন পড়ার নির্দেশ :
وَاتْلُ مَاۤ اُوْحِيَ اِلَيْكَ مِنْ كِتَابِ رَبِّكَ لَا مُبَدِّلَ لِكَلِمَاتِهٖ
তোমার প্রতিপালকের কিতাব হতে যা তোমার প্রতি ওহী করা হয়েছে তা পাঠ করো। (জেনে রেখো) তাঁর বাক্য পরিবর্তন করার ক্ষমতা কারো নেই। (সূরা কাহফ- ২৭)
ব্যাখ্যা : কুরআন জানার জন্য সাহাবীদের আগ্রহ ছিল অত্যধিক। মাসরূক (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ! যিনি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই, আল্লাহর কিতাবে এমন কোন সূরা নেই যার সম্পর্কে আমি জানি না যে, তা কখন এবং কোথায় নাযিল হয়েছে। আর আল্লাহর কিতাবে এমন কোন আয়াতও নেই যা আমি জানি না যে, তা কার সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। তারপরও আমি যদি জানতাম যে, এমন কোন ব্যক্তি রয়েছে, যে আমার চেয়ে কুরআন ভালো জানে এবং সেখানে উট পৌঁছতে পারে, তবে আমি উটে আরোহণ করে হলেও সেখানে গিয়ে পৌঁছতাম। (সহীহ বুখারী, হা/৫০০২)
কুরআনের সাথে লেগে থাকতে হবে। ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি কুরআন মুখস্থ করে হৃদয়ে রাখে, তার দৃষ্টান্ত ঐ উট মালিকের ন্যায়, যে উট বেঁধে রাখে। যদি সে উট বেঁধে রাখে তবে তার নিয়ন্ত্রণে থাকে, কিন্তু যদি বন্ধন খুলে দেয় তবে তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। (সহীহ বুখারী, হা/৫০৩১)
কুরআন পাঠকারীর মর্যাদা অনেক। আয়েশা (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, কুরআন পাঠকারী হাফেয উচ্চমর্যাদার অধিকারী ফেরেশতাদের সাথে থাকবে। আর যে কুরআন পাঠ করে আর তা হিফয করা তার জন্য অতীব কষ্টকর হলেও তা হিফয করতে চেষ্টা করে, সে দ্বিগুণ পুরস্কার লাভ করবে। (সহীহ বুখারী, হা/৪৯৩৭)
কুরআন পাঠ করলে বা শুনলে ঈমান বৃদ্ধি পায় :
اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ اِذَا ذُكِرَ اللهُ وَجِلَتْ قُلُوْبُهُمْ وَاِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ اٰيَاتُهٗ زَادَتْهُمْ اِيْمَانًا وَّعَلٰى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ
মুমিন তো তারাই, যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয় তখন তাদের হৃদয় কম্পিত হয়। আর যখন তাঁর আয়াতসমূহ তাদের নিকট পাঠ করা হয়, তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং তারা তাদের প্রতিপালকের উপরই ভরসা করে। (সূরা আনফাল- ২)
ব্যাখ্যা : যখনই মানুষের সামনে আল্লাহর কোন হুকুম আসে এবং সে তার সত্যতা মেনে নিয়ে আনুগত্যের শির নত করে দেয়, তখনই তার ঈমান বৃদ্ধি পেয়ে যায়। এ ধরনের প্রত্যেকটি অবস্থায় এমনটিই হয়ে থাকে। যখনই আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূলের হেদায়াতের মধ্যে মানুষ এমন কোন জিনিস দেখে, যা তার ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা ও চিন্তা-ভাবনার বিরোধী হয় এবং সে তা মেনে নিয়ে আল্লাহ ও রাসূলের বিধান পরিবর্তন করার পরিবর্তে নিজেকে পরিবর্তিত করে ফেলে এবং তা গ্রহণ করতে গিয়ে প্রয়োজনে কষ্ট স্বীকার করতেও প্রস্তুত হয়ে যায়, তখন মানুষের ঈমান তরতাজা হয়। পক্ষান্তরে এমনটি করতে অস্বীকৃতি জানালে মানুষের ঈমানের প্রাণশক্তি নিস্তেজ হতে থাকে।
কুরআন পড়া একটি লাভজনক ব্যবসা :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَتْلُوْنَ كِتَابَ اللهِ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاَنْفَقُوْا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَّعَلَانِيَةً يَّرْجُوْنَ تِجَارَةً لَّنْ تَبُوْرَ
যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যা কিছু রিযিক হিসেবে দান করেছি তা থেকে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করে, যাতে কখনো ক্ষতি হবে না। (সূরা ফাতির- ২৯)
ব্যাখ্যা : ঈমানদারদের এ কাজকে ব্যবসার সাথে তুলনা করা হয়েছে। কারণ মানুষ ব্যবসায় নিজের অর্থ, শ্রম ও মেধা নিয়োগ করে কেবলমাত্র মূলধন ফেরত পাওয়ার এবং শ্রমের পারিশ্রমিক লাভ করার জন্য নয়; বরং বাড়তি কিছু মুনাফা অর্জন করার জন্য। অনুরূপভাবে একজন মুমিনও আল্লাহর হুকুম পালন, তাঁর ইবাদাত-বন্দেগী এবং তাঁর দ্বীনের জন্য সংগ্রাম-সাধনায় নিজের ধনসম্পদ, সময়, শ্রম ও যোগ্যতা নিয়োগ করে শুধুমাত্র এসবের পুরোপুরি প্রতিদান লাভ করার জন্য নয়; বরং এই সংগে আল্লাহ তাঁর নিজ অনুগ্রহে বাড়তি অনেক কিছু দান করবেন- এ আশায়। কিন্তু উভয় ব্যবসার মধ্যে অনেক বড় পার্থক্য রয়েছে। পার্থিব ব্যবসায়ে নিছক মুনাফা লাভেরই আশা থাকে না, লোকসান এবং দেউলিয়া হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা থাকে। কিন্তু একজন একনিষ্ঠ বান্দা আল্লাহর সাথে যে ব্যবসা করে তাতে লোকসানের কোন আশঙ্কাই নেই।
কুরআন পড়ার শুরুতে শয়তান থেকে আশ্রয় চাইতে হবে :
فَاِذَا قَرَاْتَ الْقُرْاٰنَ فَاسْتَعِذْ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ
যখন কুরআন পাঠ করবে তখন অভিশপ্ত শয়তান হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে। (সূরা নাহল- ৯৮)
ব্যাখ্যা : শুধুমাত্র মুখে اَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (আউযু বিল্লা-হি মিনাশ শাইত্বা-নির রাজীম) উচ্চারণ করলেই হয় না। বরং কুরআন পাঠের সময় যথার্থই শয়তানের বিভ্রান্তিকর প্ররোচনা থেকে মুক্ত থাকার বাসনা পোষণ করতে হবে এবং তার প্ররোচনা থেকে নিষ্কৃতি লাভের প্রচেষ্টা চালাতে হবে। অনর্থক সন্দেহ-সংশয়ে লিপ্ত হওয়া যাবে না। কুরআনের প্রত্যেকটি কথাকে তার সঠিক অর্থের আলোকে দেখতে হবে এবং নিজের মনগড়া মতবাদ বা চিন্তার মিশ্রণে কুরআনের শব্দাবলির এমন অর্থ করা হতে বিরত থাকতে হবে, যা আল্লাহর ইচ্ছা ও উদ্দেশ্যের পরিপন্থী। সেই সঙ্গে এ চেতনাও জাগ্রত থাকতে হবে যে, মানুষ যাতে কুরআন থেকে কোন পথনির্দেশনা লাভ করতে না পারে সে জন্যই শয়তান সবচেয়ে বেশি তৎপর থাকে। এ কারণে মানুষ যখনই এ কিতাবটির দিকে ফিরে যায় তখনই শয়তান তাকে বিভ্রান্ত করার এবং ভুল পথে পরিচালিত করার জন্য উঠে পড়ে লাগে। তাই এ কিতাবটি অধ্যয়ন করার সময় মানুষকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে, যাতে শয়তানের প্ররোচনার কারণে সে এ হেদায়াতের উৎসটির কল্যাণ থেকে বঞ্চিত না হয়ে যায়। কারণ যে ব্যক্তি এখান থেকে সঠিক পথের সন্ধান লাভ করতে পারে না, সে অন্য কোথাও থেকে সৎপথের সন্ধান পাবে না। আর যে ব্যক্তি এ কিতাব পড়েও ভ্রষ্টতা ও বিভ্রান্তির শিকার হয়, দুনিয়ায় অন্য কোনকিছুই তাকে ভ্রষ্টতার হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে না। কুরআনকে যথার্থ অর্থে একমাত্র সে ব্যক্তিই দেখতে পারে, যে শয়তানের প্ররোচনা থেকে সতর্ক থাকে এবং তা থেকে নিজেকে সংরক্ষিত রাখার জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় চায়। অন্যথায় শয়তান সাধারণত কুরআনের বক্তব্যসমূহ অনুধাবন করার সুযোগ মানুষকে দেয় না।
আল্লাহর নামে শুরু করতে হবে :
اِقْرَاْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِيْ خَلَقَ
পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তার নামে যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন। (সূরা আলাক্ব- ১)
সুন্দর করে ধীরস্থিরভাবে পড়তে হবে :
وَرَتِّلِ الْقُرْاٰنَ تَرْتِيْلًا
আর তুমি কুরআন পাঠ করো ধীরে ধীরে (থেমে থেমে সুন্দরভাবে)। (সূরা মুয্যাম্মিল- ৪)
ব্যাখ্যা : কাতাদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) কে নবী ﷺ এর কিরাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, নবী ﷺ কোন কোন ক্ষেত্রে দীর্ঘায়িত করে (টেনে টেনে) পাঠ করতেন। (সহীহ বুখারী, হা/৫০৪৬, ৫০৪৫)
সামর্থ্যানুযায়ী পড়তে হবে :
فَاقْرَءُوْا مَا تَيَسَّرَ مِنْهُ
কুরআন হতে যতটুকু সহজসাধ্য হয়, তা-ই পাঠ করো। (সূরা মুয্যাম্মিল- ২০)
মধ্যম আওয়াজে পড়তে হবে :
وَلَا تَجْهَرْ بِصَلَاتِكَ وَلَا تُخَافِتْ بِهَا وَابْتَغِ بَيْنَ ذٰلِكَ سَبِيْلًا
তোমরা সালাতে স্বর উঁচুও করো না এবং অতিশয় ক্ষীণও করো না; বরং মধ্যমপন্থা অবলম্বন করো।
(সূরা বনী ইসরাঈল- ১১০)
কুরআন পড়ার উপযুক্ত সময় রাতের বেলা ও ফজরের সময় :
لَيْسُوْا سَوَآءًؕ مِنْ اَهْلِ الْكِتَابِ اُمَّةٌ قَآئِمَةٌ يَّتْلُوْنَ اٰيَاتِ اللهِ اٰنَآءَ اللَّيْلِ وَهُمْ يَسْجُدُوْنَ
তারা সবাই সমান নয়। আহলে কিতাবদের মধ্যে একটি দল রয়েছে অটল। তারা রাতের বেলা আল্লাহর আয়াতসমূহ পাঠ করে এবং সিজদা করে। (সূরা আলে ইমরান- ১১৩)
অর্থ বুঝে কুরআন পড়তে হবে :
كِتَابٌ اَنْزَلْنَاهُ اِلَيْكَ مُبَارَكٌ لِّيَدَّبَّرُوْاۤ اٰيَاتِهٖ وَلِيَتَذَكَّرَ اُولُو الْاَ لْبَابِ
(এ কুরআন) একটি বরকতময় কিতাব, আমি তা আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি যেন মানুষ এর আয়াতসমূহ অনুধাবন করে এবং জ্ঞানবান লোকেরা উপদেশ গ্রহণ করে। (সূরা সোয়াদ- ২৯)
ব্যাখ্যা : ঈমানের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার জন্য যেসব কঠিন সমস্যা ও সংকটের মুখোমুখি হতে হয় সেসব কিছুর মুকাবিলা করার জন্য বাস্তব ব্যবস্থা হিসেবে কুরআন তিলাওয়াত করার কথা বলা হচ্ছে। এ জিনিসই মুমিনকে এমন সুসংগঠিত চরিত্র ও উন্নত যোগ্যতার অধিকারী করে তুলে, যার সাহায্যে সে বাতিলের প্রবল বন্যার মুকাবিলায় শুধু টিকে থাকতেই নয় বরং তার গতি ফিরিয়ে দিতেও সক্ষম হয়। কিন্তু এ শক্তি মানুষ তখনই অর্জন করতে পারে, যখন সে শুধুমাত্র কুরআনের শব্দগুলো পাঠ করেই ক্ষান্ত হয় না বরং তার শিক্ষাগুলোও সঠিকভাবে অনুধাবন করে। কুরআন তিলাওয়াতের ব্যাপারে এতটুকু জানা উচিত যে, যে তিলাওয়াত কণ্ঠনালী অতিক্রম করে অন্তরে আঘাত হানতে পারে না, তা তাকে কুফরীর বন্যার মুকাবিলায় শক্তি যোগানো তো দূরের কথা, তার ঈমানের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার সাহসও যোগাতে পারে না। যে তিলাওয়াতের পর মানুষের চিন্তা, চরিত্র ও কর্মনীতিতে কোন পরিবর্তন আসে না তা কোন মুমিনের কুরআন তিলাওয়াত হতে পারে না। কেননা কুরআনের উপর আমল করা প্রতিটি মুমিনের উপর ওয়াজিব। কুরআন যা হালাল বলেছে তা হালাল হিসেবে সাব্যস্ত করা, যা হারাম বলেছে তা হারাম হিসেবে মেনে নেয়া, যা আদেশ করেছে তা পালন করা এবং যা নিষেধ করেছে তা থেকে বিরত থাকা একজন ঈমানদার ব্যক্তির অন্যতম দায়িত্ব। এ কারণে নবী ﷺ স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন, ‘‘কুরআনের হারামকৃত জিনিসকে যে হালাল করে নিয়েছে সে কুরআনের প্রতি ঈমান আনেনি’’ (তিরমিযী, হা/২৯১৮)। এ ধরনের তিলাওয়াত মানুষের আত্মিক সংশোধন এবং তার আত্মায় শক্তি সঞ্চার করতে পারে না। কারণ যে ব্যক্তি কুরআনকে আল্লাহর কিতাব হিসেবে মেনে নেয়, তারপর তাঁর নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে চলে, তার ব্যাপারটা তার চেয়েও ঘৃণিত যে আইন না জানার কারণে নয় বরং জেনে শুনে আইন ভঙ্গ করার কারণে দন্ডপ্রাপ্ত হয়।
কুরআন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে :
كَذٰلِكَ يُبَيِّنُ اللهُ لَكُمُ الْاٰيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَتَفَكَّرُوْنَ
অনুরূপভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তার আয়াতসমূহ বর্ণনা করে থাকেন, যেন তোমরা চিন্তা-ভাবনা করতে পার। (সূরা বাক্বারা- ২৬৬)
اَفَلَا يَتَدَبَّرُوْنَ الْقُرْاٰنَ اَمْ عَلٰى قُلُوْبٍ اَقْفَالُهَا
তবে কি তারা কুরআন সম্বন্ধে চিন্তা-ভাবনা করে না? নাকি তাদের অন্তরে তালা লেগে গেছে? (সূরা মুহাম্মাদ- ২৪)
ব্যাখ্যা : হয় এসব লোক কুরআন সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে না, কিংবা চিন্তা-ভাবনা করার চেষ্টা করে কিন্তু তার শিক্ষা ও তাৎপর্য তাদের মনের গভীরে প্রবেশ করে না। কারণ তাদের হৃদয়-মনে তালা লাগানো আছে। এ কথার অর্থ হচ্ছে, তাদের মনে এমন তালা লাগানো আছে, যা ন্যায় ও সত্যকে চিনে না এমন লোকদের জন্যই নির্দিষ্ট। নাফে (রাঃ) বলেছেন, আমি একদিন আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) এর নিকট গেলাম। তিনি তখন সূরা বাক্বারা পাঠ করছিলেন। পাঠ করতে করতে তিনি এক জায়গায় থেমে গেলেন। অতঃপর আমাকে প্রশ্ন করলেন, কী বিষয়ে আয়াতটি নাযিল হয়েছে জান? আমি বললাম, না। তখন তিনি বললেন, অমুক অমুক বিষয়ে নাযিল হয়েছে। তারপর তিনি আবার পাঠ করতে শুরু করলেন। (সহীহ বুখারী, হা/৪৫২৬)
উপদেশ গ্রহণের জন্য কুরআনকে সহজ করা হয়েছে :
وَلَقَدْ يَسَّرْنَا الْقُرْاٰنَ لِلذَّكْرِ فَهَلْ مِنْ مُّدَّكِرٍ
আমি কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য; অতএব উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছে কি? (সূরা ক্বামার- ৩২)
কুরআন পড়া হলে নীরবে শুনতে হবে :
وَاِذَا قُرِئَ الْقُرْاٰنُ فَاسْتَمِعُوْا لَهٗ وَاَنْصِتُوْا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ
যখন কুরআন পাঠ করা হয় তখন তোমরা মনোযোগের সাথে শ্রবণ করবে এবং নিরব হয়ে থাকবে, যেন তোমাদের প্রতি দয়া করা হয়। (সূরা আ‘রাফ- ২০৪)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ অন্যের নিকট থেকে কুরআন শুনতেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ আমাকে বললেন, আমার সম্মুখে কুরআন পাঠ করো। আমি বললাম, আমি আপনার নিকট কুরআন পাঠ করব, অথচ তা আপনার উপর অবতীর্ণ হয়েছে? তিনি বললেন, আমি অন্যের পাঠ শুনতে পছন্দ করি। (সহীহ বুখারী, হা/৫০৫৬)
কুরআন শুনে নবী ﷺ এর কান্না করতেন। আমর ইবনে মুর্রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ আমাকে বললেন, তুমি আমাকে কুরআন পাঠ করে শুনাও। আমি বললাম, আমি আপনাকে কুরআন পাঠ করে শুনাব? অথচ কুরআন তো আপনার উপরই নাযিল হয়েছে। তখন নবী ﷺ বললেন, আমি অন্যের কাছ থেকে কুরআন শুনতে পছন্দ করি। বর্ণনাকারী বলেন, আমি তখন তাঁকে সূরা নিসা পাঠ করে শুনাতে আরম্ভ করলাম। যখন এ আয়াতে পৌঁছলাম - فَكَيْفَ اِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ اُمَّةٍ ۢبِشَهِيْدٍ وَّجِئْنَا بِكَ عَلٰى هٰۤؤُلَآءِ شَهِيْدًا ‘‘তখন কেমন হবে, যখন আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্য থেকে একজন করে সাক্ষী উপস্থিত করব। (হে নবী!) তাদের ব্যাপারে আপনাকেই সাক্ষী হিসাবে হাজির করব?’’ এ সময় নবী ﷺ বললেন, থামো। তখন আমি দেখতে পেলাম, তাঁর দু’চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। (সহীহ বুখারী, হা/৪৫৮২)
وَاتْلُ مَاۤ اُوْحِيَ اِلَيْكَ مِنْ كِتَابِ رَبِّكَ لَا مُبَدِّلَ لِكَلِمَاتِهٖ
তোমার প্রতিপালকের কিতাব হতে যা তোমার প্রতি ওহী করা হয়েছে তা পাঠ করো। (জেনে রেখো) তাঁর বাক্য পরিবর্তন করার ক্ষমতা কারো নেই। (সূরা কাহফ- ২৭)
ব্যাখ্যা : কুরআন জানার জন্য সাহাবীদের আগ্রহ ছিল অত্যধিক। মাসরূক (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ! যিনি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই, আল্লাহর কিতাবে এমন কোন সূরা নেই যার সম্পর্কে আমি জানি না যে, তা কখন এবং কোথায় নাযিল হয়েছে। আর আল্লাহর কিতাবে এমন কোন আয়াতও নেই যা আমি জানি না যে, তা কার সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। তারপরও আমি যদি জানতাম যে, এমন কোন ব্যক্তি রয়েছে, যে আমার চেয়ে কুরআন ভালো জানে এবং সেখানে উট পৌঁছতে পারে, তবে আমি উটে আরোহণ করে হলেও সেখানে গিয়ে পৌঁছতাম। (সহীহ বুখারী, হা/৫০০২)
কুরআনের সাথে লেগে থাকতে হবে। ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি কুরআন মুখস্থ করে হৃদয়ে রাখে, তার দৃষ্টান্ত ঐ উট মালিকের ন্যায়, যে উট বেঁধে রাখে। যদি সে উট বেঁধে রাখে তবে তার নিয়ন্ত্রণে থাকে, কিন্তু যদি বন্ধন খুলে দেয় তবে তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। (সহীহ বুখারী, হা/৫০৩১)
কুরআন পাঠকারীর মর্যাদা অনেক। আয়েশা (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, কুরআন পাঠকারী হাফেয উচ্চমর্যাদার অধিকারী ফেরেশতাদের সাথে থাকবে। আর যে কুরআন পাঠ করে আর তা হিফয করা তার জন্য অতীব কষ্টকর হলেও তা হিফয করতে চেষ্টা করে, সে দ্বিগুণ পুরস্কার লাভ করবে। (সহীহ বুখারী, হা/৪৯৩৭)
কুরআন পাঠ করলে বা শুনলে ঈমান বৃদ্ধি পায় :
اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ اِذَا ذُكِرَ اللهُ وَجِلَتْ قُلُوْبُهُمْ وَاِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ اٰيَاتُهٗ زَادَتْهُمْ اِيْمَانًا وَّعَلٰى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ
মুমিন তো তারাই, যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয় তখন তাদের হৃদয় কম্পিত হয়। আর যখন তাঁর আয়াতসমূহ তাদের নিকট পাঠ করা হয়, তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং তারা তাদের প্রতিপালকের উপরই ভরসা করে। (সূরা আনফাল- ২)
ব্যাখ্যা : যখনই মানুষের সামনে আল্লাহর কোন হুকুম আসে এবং সে তার সত্যতা মেনে নিয়ে আনুগত্যের শির নত করে দেয়, তখনই তার ঈমান বৃদ্ধি পেয়ে যায়। এ ধরনের প্রত্যেকটি অবস্থায় এমনটিই হয়ে থাকে। যখনই আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূলের হেদায়াতের মধ্যে মানুষ এমন কোন জিনিস দেখে, যা তার ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা ও চিন্তা-ভাবনার বিরোধী হয় এবং সে তা মেনে নিয়ে আল্লাহ ও রাসূলের বিধান পরিবর্তন করার পরিবর্তে নিজেকে পরিবর্তিত করে ফেলে এবং তা গ্রহণ করতে গিয়ে প্রয়োজনে কষ্ট স্বীকার করতেও প্রস্তুত হয়ে যায়, তখন মানুষের ঈমান তরতাজা হয়। পক্ষান্তরে এমনটি করতে অস্বীকৃতি জানালে মানুষের ঈমানের প্রাণশক্তি নিস্তেজ হতে থাকে।
কুরআন পড়া একটি লাভজনক ব্যবসা :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَتْلُوْنَ كِتَابَ اللهِ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاَنْفَقُوْا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَّعَلَانِيَةً يَّرْجُوْنَ تِجَارَةً لَّنْ تَبُوْرَ
যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যা কিছু রিযিক হিসেবে দান করেছি তা থেকে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করে, যাতে কখনো ক্ষতি হবে না। (সূরা ফাতির- ২৯)
ব্যাখ্যা : ঈমানদারদের এ কাজকে ব্যবসার সাথে তুলনা করা হয়েছে। কারণ মানুষ ব্যবসায় নিজের অর্থ, শ্রম ও মেধা নিয়োগ করে কেবলমাত্র মূলধন ফেরত পাওয়ার এবং শ্রমের পারিশ্রমিক লাভ করার জন্য নয়; বরং বাড়তি কিছু মুনাফা অর্জন করার জন্য। অনুরূপভাবে একজন মুমিনও আল্লাহর হুকুম পালন, তাঁর ইবাদাত-বন্দেগী এবং তাঁর দ্বীনের জন্য সংগ্রাম-সাধনায় নিজের ধনসম্পদ, সময়, শ্রম ও যোগ্যতা নিয়োগ করে শুধুমাত্র এসবের পুরোপুরি প্রতিদান লাভ করার জন্য নয়; বরং এই সংগে আল্লাহ তাঁর নিজ অনুগ্রহে বাড়তি অনেক কিছু দান করবেন- এ আশায়। কিন্তু উভয় ব্যবসার মধ্যে অনেক বড় পার্থক্য রয়েছে। পার্থিব ব্যবসায়ে নিছক মুনাফা লাভেরই আশা থাকে না, লোকসান এবং দেউলিয়া হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা থাকে। কিন্তু একজন একনিষ্ঠ বান্দা আল্লাহর সাথে যে ব্যবসা করে তাতে লোকসানের কোন আশঙ্কাই নেই।
কুরআন পড়ার শুরুতে শয়তান থেকে আশ্রয় চাইতে হবে :
فَاِذَا قَرَاْتَ الْقُرْاٰنَ فَاسْتَعِذْ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ
যখন কুরআন পাঠ করবে তখন অভিশপ্ত শয়তান হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে। (সূরা নাহল- ৯৮)
ব্যাখ্যা : শুধুমাত্র মুখে اَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (আউযু বিল্লা-হি মিনাশ শাইত্বা-নির রাজীম) উচ্চারণ করলেই হয় না। বরং কুরআন পাঠের সময় যথার্থই শয়তানের বিভ্রান্তিকর প্ররোচনা থেকে মুক্ত থাকার বাসনা পোষণ করতে হবে এবং তার প্ররোচনা থেকে নিষ্কৃতি লাভের প্রচেষ্টা চালাতে হবে। অনর্থক সন্দেহ-সংশয়ে লিপ্ত হওয়া যাবে না। কুরআনের প্রত্যেকটি কথাকে তার সঠিক অর্থের আলোকে দেখতে হবে এবং নিজের মনগড়া মতবাদ বা চিন্তার মিশ্রণে কুরআনের শব্দাবলির এমন অর্থ করা হতে বিরত থাকতে হবে, যা আল্লাহর ইচ্ছা ও উদ্দেশ্যের পরিপন্থী। সেই সঙ্গে এ চেতনাও জাগ্রত থাকতে হবে যে, মানুষ যাতে কুরআন থেকে কোন পথনির্দেশনা লাভ করতে না পারে সে জন্যই শয়তান সবচেয়ে বেশি তৎপর থাকে। এ কারণে মানুষ যখনই এ কিতাবটির দিকে ফিরে যায় তখনই শয়তান তাকে বিভ্রান্ত করার এবং ভুল পথে পরিচালিত করার জন্য উঠে পড়ে লাগে। তাই এ কিতাবটি অধ্যয়ন করার সময় মানুষকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে, যাতে শয়তানের প্ররোচনার কারণে সে এ হেদায়াতের উৎসটির কল্যাণ থেকে বঞ্চিত না হয়ে যায়। কারণ যে ব্যক্তি এখান থেকে সঠিক পথের সন্ধান লাভ করতে পারে না, সে অন্য কোথাও থেকে সৎপথের সন্ধান পাবে না। আর যে ব্যক্তি এ কিতাব পড়েও ভ্রষ্টতা ও বিভ্রান্তির শিকার হয়, দুনিয়ায় অন্য কোনকিছুই তাকে ভ্রষ্টতার হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে না। কুরআনকে যথার্থ অর্থে একমাত্র সে ব্যক্তিই দেখতে পারে, যে শয়তানের প্ররোচনা থেকে সতর্ক থাকে এবং তা থেকে নিজেকে সংরক্ষিত রাখার জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় চায়। অন্যথায় শয়তান সাধারণত কুরআনের বক্তব্যসমূহ অনুধাবন করার সুযোগ মানুষকে দেয় না।
আল্লাহর নামে শুরু করতে হবে :
اِقْرَاْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِيْ خَلَقَ
পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তার নামে যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন। (সূরা আলাক্ব- ১)
সুন্দর করে ধীরস্থিরভাবে পড়তে হবে :
وَرَتِّلِ الْقُرْاٰنَ تَرْتِيْلًا
আর তুমি কুরআন পাঠ করো ধীরে ধীরে (থেমে থেমে সুন্দরভাবে)। (সূরা মুয্যাম্মিল- ৪)
ব্যাখ্যা : কাতাদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) কে নবী ﷺ এর কিরাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, নবী ﷺ কোন কোন ক্ষেত্রে দীর্ঘায়িত করে (টেনে টেনে) পাঠ করতেন। (সহীহ বুখারী, হা/৫০৪৬, ৫০৪৫)
সামর্থ্যানুযায়ী পড়তে হবে :
فَاقْرَءُوْا مَا تَيَسَّرَ مِنْهُ
কুরআন হতে যতটুকু সহজসাধ্য হয়, তা-ই পাঠ করো। (সূরা মুয্যাম্মিল- ২০)
মধ্যম আওয়াজে পড়তে হবে :
وَلَا تَجْهَرْ بِصَلَاتِكَ وَلَا تُخَافِتْ بِهَا وَابْتَغِ بَيْنَ ذٰلِكَ سَبِيْلًا
তোমরা সালাতে স্বর উঁচুও করো না এবং অতিশয় ক্ষীণও করো না; বরং মধ্যমপন্থা অবলম্বন করো।
(সূরা বনী ইসরাঈল- ১১০)
কুরআন পড়ার উপযুক্ত সময় রাতের বেলা ও ফজরের সময় :
لَيْسُوْا سَوَآءًؕ مِنْ اَهْلِ الْكِتَابِ اُمَّةٌ قَآئِمَةٌ يَّتْلُوْنَ اٰيَاتِ اللهِ اٰنَآءَ اللَّيْلِ وَهُمْ يَسْجُدُوْنَ
তারা সবাই সমান নয়। আহলে কিতাবদের মধ্যে একটি দল রয়েছে অটল। তারা রাতের বেলা আল্লাহর আয়াতসমূহ পাঠ করে এবং সিজদা করে। (সূরা আলে ইমরান- ১১৩)
অর্থ বুঝে কুরআন পড়তে হবে :
كِتَابٌ اَنْزَلْنَاهُ اِلَيْكَ مُبَارَكٌ لِّيَدَّبَّرُوْاۤ اٰيَاتِهٖ وَلِيَتَذَكَّرَ اُولُو الْاَ لْبَابِ
(এ কুরআন) একটি বরকতময় কিতাব, আমি তা আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি যেন মানুষ এর আয়াতসমূহ অনুধাবন করে এবং জ্ঞানবান লোকেরা উপদেশ গ্রহণ করে। (সূরা সোয়াদ- ২৯)
ব্যাখ্যা : ঈমানের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার জন্য যেসব কঠিন সমস্যা ও সংকটের মুখোমুখি হতে হয় সেসব কিছুর মুকাবিলা করার জন্য বাস্তব ব্যবস্থা হিসেবে কুরআন তিলাওয়াত করার কথা বলা হচ্ছে। এ জিনিসই মুমিনকে এমন সুসংগঠিত চরিত্র ও উন্নত যোগ্যতার অধিকারী করে তুলে, যার সাহায্যে সে বাতিলের প্রবল বন্যার মুকাবিলায় শুধু টিকে থাকতেই নয় বরং তার গতি ফিরিয়ে দিতেও সক্ষম হয়। কিন্তু এ শক্তি মানুষ তখনই অর্জন করতে পারে, যখন সে শুধুমাত্র কুরআনের শব্দগুলো পাঠ করেই ক্ষান্ত হয় না বরং তার শিক্ষাগুলোও সঠিকভাবে অনুধাবন করে। কুরআন তিলাওয়াতের ব্যাপারে এতটুকু জানা উচিত যে, যে তিলাওয়াত কণ্ঠনালী অতিক্রম করে অন্তরে আঘাত হানতে পারে না, তা তাকে কুফরীর বন্যার মুকাবিলায় শক্তি যোগানো তো দূরের কথা, তার ঈমানের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার সাহসও যোগাতে পারে না। যে তিলাওয়াতের পর মানুষের চিন্তা, চরিত্র ও কর্মনীতিতে কোন পরিবর্তন আসে না তা কোন মুমিনের কুরআন তিলাওয়াত হতে পারে না। কেননা কুরআনের উপর আমল করা প্রতিটি মুমিনের উপর ওয়াজিব। কুরআন যা হালাল বলেছে তা হালাল হিসেবে সাব্যস্ত করা, যা হারাম বলেছে তা হারাম হিসেবে মেনে নেয়া, যা আদেশ করেছে তা পালন করা এবং যা নিষেধ করেছে তা থেকে বিরত থাকা একজন ঈমানদার ব্যক্তির অন্যতম দায়িত্ব। এ কারণে নবী ﷺ স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন, ‘‘কুরআনের হারামকৃত জিনিসকে যে হালাল করে নিয়েছে সে কুরআনের প্রতি ঈমান আনেনি’’ (তিরমিযী, হা/২৯১৮)। এ ধরনের তিলাওয়াত মানুষের আত্মিক সংশোধন এবং তার আত্মায় শক্তি সঞ্চার করতে পারে না। কারণ যে ব্যক্তি কুরআনকে আল্লাহর কিতাব হিসেবে মেনে নেয়, তারপর তাঁর নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে চলে, তার ব্যাপারটা তার চেয়েও ঘৃণিত যে আইন না জানার কারণে নয় বরং জেনে শুনে আইন ভঙ্গ করার কারণে দন্ডপ্রাপ্ত হয়।
কুরআন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে :
كَذٰلِكَ يُبَيِّنُ اللهُ لَكُمُ الْاٰيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَتَفَكَّرُوْنَ
অনুরূপভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তার আয়াতসমূহ বর্ণনা করে থাকেন, যেন তোমরা চিন্তা-ভাবনা করতে পার। (সূরা বাক্বারা- ২৬৬)
اَفَلَا يَتَدَبَّرُوْنَ الْقُرْاٰنَ اَمْ عَلٰى قُلُوْبٍ اَقْفَالُهَا
তবে কি তারা কুরআন সম্বন্ধে চিন্তা-ভাবনা করে না? নাকি তাদের অন্তরে তালা লেগে গেছে? (সূরা মুহাম্মাদ- ২৪)
ব্যাখ্যা : হয় এসব লোক কুরআন সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে না, কিংবা চিন্তা-ভাবনা করার চেষ্টা করে কিন্তু তার শিক্ষা ও তাৎপর্য তাদের মনের গভীরে প্রবেশ করে না। কারণ তাদের হৃদয়-মনে তালা লাগানো আছে। এ কথার অর্থ হচ্ছে, তাদের মনে এমন তালা লাগানো আছে, যা ন্যায় ও সত্যকে চিনে না এমন লোকদের জন্যই নির্দিষ্ট। নাফে (রাঃ) বলেছেন, আমি একদিন আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) এর নিকট গেলাম। তিনি তখন সূরা বাক্বারা পাঠ করছিলেন। পাঠ করতে করতে তিনি এক জায়গায় থেমে গেলেন। অতঃপর আমাকে প্রশ্ন করলেন, কী বিষয়ে আয়াতটি নাযিল হয়েছে জান? আমি বললাম, না। তখন তিনি বললেন, অমুক অমুক বিষয়ে নাযিল হয়েছে। তারপর তিনি আবার পাঠ করতে শুরু করলেন। (সহীহ বুখারী, হা/৪৫২৬)
উপদেশ গ্রহণের জন্য কুরআনকে সহজ করা হয়েছে :
وَلَقَدْ يَسَّرْنَا الْقُرْاٰنَ لِلذَّكْرِ فَهَلْ مِنْ مُّدَّكِرٍ
আমি কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য; অতএব উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছে কি? (সূরা ক্বামার- ৩২)
কুরআন পড়া হলে নীরবে শুনতে হবে :
وَاِذَا قُرِئَ الْقُرْاٰنُ فَاسْتَمِعُوْا لَهٗ وَاَنْصِتُوْا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ
যখন কুরআন পাঠ করা হয় তখন তোমরা মনোযোগের সাথে শ্রবণ করবে এবং নিরব হয়ে থাকবে, যেন তোমাদের প্রতি দয়া করা হয়। (সূরা আ‘রাফ- ২০৪)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ অন্যের নিকট থেকে কুরআন শুনতেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ আমাকে বললেন, আমার সম্মুখে কুরআন পাঠ করো। আমি বললাম, আমি আপনার নিকট কুরআন পাঠ করব, অথচ তা আপনার উপর অবতীর্ণ হয়েছে? তিনি বললেন, আমি অন্যের পাঠ শুনতে পছন্দ করি। (সহীহ বুখারী, হা/৫০৫৬)
কুরআন শুনে নবী ﷺ এর কান্না করতেন। আমর ইবনে মুর্রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ আমাকে বললেন, তুমি আমাকে কুরআন পাঠ করে শুনাও। আমি বললাম, আমি আপনাকে কুরআন পাঠ করে শুনাব? অথচ কুরআন তো আপনার উপরই নাযিল হয়েছে। তখন নবী ﷺ বললেন, আমি অন্যের কাছ থেকে কুরআন শুনতে পছন্দ করি। বর্ণনাকারী বলেন, আমি তখন তাঁকে সূরা নিসা পাঠ করে শুনাতে আরম্ভ করলাম। যখন এ আয়াতে পৌঁছলাম - فَكَيْفَ اِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ اُمَّةٍ ۢبِشَهِيْدٍ وَّجِئْنَا بِكَ عَلٰى هٰۤؤُلَآءِ شَهِيْدًا ‘‘তখন কেমন হবে, যখন আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্য থেকে একজন করে সাক্ষী উপস্থিত করব। (হে নবী!) তাদের ব্যাপারে আপনাকেই সাক্ষী হিসাবে হাজির করব?’’ এ সময় নবী ﷺ বললেন, থামো। তখন আমি দেখতে পেলাম, তাঁর দু’চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। (সহীহ বুখারী, হা/৪৫৮২)
কুরআন প্রচারের নির্দেশ :
يَاۤ اَيُّهَا الرَّسُوْلُ بَلِّغْ مَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكَ مِنْ رَّبِّكَؕ وَاِنْ لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهٗؕ وَاللهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِؕ اِنَّ اللهَ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الْكَافِرِيْنَ
হে রাসূল! তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা প্রচার করো; যদি তা না কর, তবে তুমি তাঁর বার্তা (সঠিকভাবে) প্রচার করলে না। আল্লাহ তোমাকে মানুষ হতে রক্ষা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (সূরা মায়েদা- ৬৭)
কুরআনের জ্ঞান গোপন রাখার ভয়াবহ পরিণাম :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَكْتُمُوْنَ مَاۤ اَنْزَلْنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدٰى مِنْ ۢبَعْدِ مَا بَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِى الْكِتَابِ اُولٰٓئِكَ يَلْعَنُهُمُ اللهُ وَيَلْعَنُهُمُ اللَّاعِنُوْنَ
আমি যেসব উজ্জ্বল নিদর্শন ও হেদায়াত অবতীর্ণ করেছি ঐগুলোকে সব মানুষের নিকট প্রকাশ করার পরও যারা ঐসব বিষয়কে গোপন করে, আল্লাহ তাদেরকে লানত করেন এবং (অন্যান্য) লানতকারীরাও তাদেরকে লানত করে থাকে। (সূরা বাক্বারা- ১৫৯)
اِنَّ الَّذِيْنَ يَكْتُمُوْنَ مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ مِنَ الْكِتَابِ وَيَشْتَرُوْنَ بِهٖ ثَمَنًا قَلِيْلًا اُولٰٓئِكَ مَا يَاْكُلُوْنَ فِيْ بُطُوْنِهِمْ اِلَّا النَّارَ وَلَا يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يُزَكِّيْهِمْۚ وَلَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
নিশ্চয় আল্লাহ কিতাব থেকে যা নাযিল করেছেন, যারা তা গোপন করে এবং অল্প মূল্যে বিক্রি করে। ঐ সমস্ত লোকেরা নিজেদের পেট আগুন দ্বারা পরিপূর্ণ করে। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না এবং তাদেরকে পবিত্রও করবেন না। (সুতরাং) তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরা বাক্বারা- ১৭৪)
নিঃস্বার্থভাবে প্রচার করতে হবে :
وَمَاۤ اَسْاَ لُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ اَجْرٍۚ اِنْ اَجْرِيَ اِلَّا عَلٰى رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
আমি এটার জন্য তোমাদের নিকট কোন প্রতিদান চাই না, আমার পুরস্কার তো জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকটই (সংরক্ষিত) আছে। (সূরা শু‘আরা- ১৬৪)
আল্লাহর কালামের অপব্যাখ্যা করা যাবে না :
وَلَا تَلْبِسُوا الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ وَتَكْتُمُوا الْحَقَّ وَاَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
আর তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনে বুঝে সত্যকে গোপন করো না। (সূরা বাক্বারা- ৪২)
اِنَّ الَّذِيْنَ يُلْحِدُوْنَ فِۤيْ اٰيَاتِنَا لَا يَخْفَوْنَ عَلَيْنَاؕ اَفَمَنْ يُّلْقٰى فِى النَّارِ خَيْرٌ اَمْ مَّنْ يَّاْتِۤيْ اٰمِنًا يَّوْمَ الْقِيَامَةِؕ اِعْمَلُوْا مَا شِئْتُمْ اِنَّهٗ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
যারা আমার আয়াতসমূহকে বিকৃত করে তারা আমার অগোচরে নয়। শ্রেষ্ঠ কে, যে ব্যক্তি জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে সে নাকি যে কিয়ামতের দিন নিরাপদে থাকবে সে? সুতরাং তোমরা যা ইচ্ছা তা আমল করে যাও। (জেনে রেখো) তোমরা যা কর, তিনি তার দ্রষ্টা। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৪০)
ব্যাখ্যা : اِلْحَادٌ (ইলহাদ) অর্থ ফিরে যাওয়া, সোজা পথ ছেড়ে বাঁকা পথের দিকে যাওয়া, বক্রতা অবলম্বন করা ইত্যাদি। আল্লাহর আয়াতসমূহের মধ্যে ইলহাদের অর্থ হচ্ছে, কোন সোজা কথার বাঁকা অর্থ করার চেষ্টা করা। অতএব কুরআনের ক্ষেত্রে এর অর্থ হবে, আল্লাহর আয়াতসমূহের সঠিক অর্থ গ্রহণ না করে ভুল অর্থ গ্রহণ করা। মক্কার কাফিররা কুরআন মাজীদের আয়াত ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য যে চক্রান্ত করেছিল তার মধ্যে ছিল, তারা কুরআনের আয়াত শুনে কোন আয়াতকে পূর্বাপর প্রসঙ্গ থেকে বিচ্ছিন্ন করে অথবা কোন আয়াতের শাব্দিক বিকৃতি ঘটিয়ে ভুল অর্থ গ্রহণ করে নানা রকমের প্রশ্ন উত্থাপন করত।
কুরআন প্রচারে কোন দুর্বলতা বা সংকীর্ণতা দেখানো যাবে না :
كِتَابٌ اُنْزِلَ اِلَيْكَ فَلَا يَكُنْ فِيْ صَدْرِكَ حَرَجٌ مِّنْهُ لِتُنْذِرَ بِهٖ وَذِكْرٰى لِلْمُؤْمِنِيْنَ
তোমার নিকট কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে, যাতে করে এর দ্বারা সতর্কীকরণের ব্যাপারে তোমার মনে এ সম্পর্কে কোন সংকোচ না থাকে। (মনে রেখো) মুমিনদের জন্য এটা উপদেশস্বরূপ। (সূরা আ‘রাফ- ২)
যারা কুরআনের কথা শুনে ও আমল করে তারাই উপদেশ গ্রহণ করে :
اَ لَّذِيْنَ يَسْتَمِعُوْنَ الْقَوْلَ فَيَتَّبِعُوْنَ اَحْسَنَهٗؕ اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ هَدَاهُمُ اللهُ وَاُولٰٓئِكَ هُمْ اُولُو الْاَ لْبَابِ
যারা মনোযোগ সহকারে কথা শুনে, অতঃপর তার মধ্যে যা উত্তম তার অনুসরণ করে। এরাই ঐসব লোক যাদেরকে আল্লাহ সৎপথে পরিচালিত করেছেন; আর তারাই জ্ঞানের অধিকারী। (সূরা যুমার- ১৮)
ব্যাখ্যা : এর একটি অর্থ হচ্ছে, তারা যে কোন কথা শুনলেই তার অনুসরণ করে না। তারা প্রত্যেকের কথা শুনার পর তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে এবং যেটি ন্যায় ও সত্য কথা তা গ্রহণ করে। আরেকটি অর্থ হচ্ছে, তারা কোন কথা শুনে তার ভুল অর্থ করার চেষ্টা করে না; বরং তার ভালো অর্থ গ্রহণ করে।
يَاۤ اَيُّهَا الرَّسُوْلُ بَلِّغْ مَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكَ مِنْ رَّبِّكَؕ وَاِنْ لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهٗؕ وَاللهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِؕ اِنَّ اللهَ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الْكَافِرِيْنَ
হে রাসূল! তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা প্রচার করো; যদি তা না কর, তবে তুমি তাঁর বার্তা (সঠিকভাবে) প্রচার করলে না। আল্লাহ তোমাকে মানুষ হতে রক্ষা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (সূরা মায়েদা- ৬৭)
কুরআনের জ্ঞান গোপন রাখার ভয়াবহ পরিণাম :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَكْتُمُوْنَ مَاۤ اَنْزَلْنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدٰى مِنْ ۢبَعْدِ مَا بَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِى الْكِتَابِ اُولٰٓئِكَ يَلْعَنُهُمُ اللهُ وَيَلْعَنُهُمُ اللَّاعِنُوْنَ
আমি যেসব উজ্জ্বল নিদর্শন ও হেদায়াত অবতীর্ণ করেছি ঐগুলোকে সব মানুষের নিকট প্রকাশ করার পরও যারা ঐসব বিষয়কে গোপন করে, আল্লাহ তাদেরকে লানত করেন এবং (অন্যান্য) লানতকারীরাও তাদেরকে লানত করে থাকে। (সূরা বাক্বারা- ১৫৯)
اِنَّ الَّذِيْنَ يَكْتُمُوْنَ مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ مِنَ الْكِتَابِ وَيَشْتَرُوْنَ بِهٖ ثَمَنًا قَلِيْلًا اُولٰٓئِكَ مَا يَاْكُلُوْنَ فِيْ بُطُوْنِهِمْ اِلَّا النَّارَ وَلَا يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يُزَكِّيْهِمْۚ وَلَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
নিশ্চয় আল্লাহ কিতাব থেকে যা নাযিল করেছেন, যারা তা গোপন করে এবং অল্প মূল্যে বিক্রি করে। ঐ সমস্ত লোকেরা নিজেদের পেট আগুন দ্বারা পরিপূর্ণ করে। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না এবং তাদেরকে পবিত্রও করবেন না। (সুতরাং) তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরা বাক্বারা- ১৭৪)
নিঃস্বার্থভাবে প্রচার করতে হবে :
وَمَاۤ اَسْاَ لُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ اَجْرٍۚ اِنْ اَجْرِيَ اِلَّا عَلٰى رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
আমি এটার জন্য তোমাদের নিকট কোন প্রতিদান চাই না, আমার পুরস্কার তো জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকটই (সংরক্ষিত) আছে। (সূরা শু‘আরা- ১৬৪)
আল্লাহর কালামের অপব্যাখ্যা করা যাবে না :
وَلَا تَلْبِسُوا الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ وَتَكْتُمُوا الْحَقَّ وَاَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
আর তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনে বুঝে সত্যকে গোপন করো না। (সূরা বাক্বারা- ৪২)
اِنَّ الَّذِيْنَ يُلْحِدُوْنَ فِۤيْ اٰيَاتِنَا لَا يَخْفَوْنَ عَلَيْنَاؕ اَفَمَنْ يُّلْقٰى فِى النَّارِ خَيْرٌ اَمْ مَّنْ يَّاْتِۤيْ اٰمِنًا يَّوْمَ الْقِيَامَةِؕ اِعْمَلُوْا مَا شِئْتُمْ اِنَّهٗ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
যারা আমার আয়াতসমূহকে বিকৃত করে তারা আমার অগোচরে নয়। শ্রেষ্ঠ কে, যে ব্যক্তি জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে সে নাকি যে কিয়ামতের দিন নিরাপদে থাকবে সে? সুতরাং তোমরা যা ইচ্ছা তা আমল করে যাও। (জেনে রেখো) তোমরা যা কর, তিনি তার দ্রষ্টা। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৪০)
ব্যাখ্যা : اِلْحَادٌ (ইলহাদ) অর্থ ফিরে যাওয়া, সোজা পথ ছেড়ে বাঁকা পথের দিকে যাওয়া, বক্রতা অবলম্বন করা ইত্যাদি। আল্লাহর আয়াতসমূহের মধ্যে ইলহাদের অর্থ হচ্ছে, কোন সোজা কথার বাঁকা অর্থ করার চেষ্টা করা। অতএব কুরআনের ক্ষেত্রে এর অর্থ হবে, আল্লাহর আয়াতসমূহের সঠিক অর্থ গ্রহণ না করে ভুল অর্থ গ্রহণ করা। মক্কার কাফিররা কুরআন মাজীদের আয়াত ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য যে চক্রান্ত করেছিল তার মধ্যে ছিল, তারা কুরআনের আয়াত শুনে কোন আয়াতকে পূর্বাপর প্রসঙ্গ থেকে বিচ্ছিন্ন করে অথবা কোন আয়াতের শাব্দিক বিকৃতি ঘটিয়ে ভুল অর্থ গ্রহণ করে নানা রকমের প্রশ্ন উত্থাপন করত।
কুরআন প্রচারে কোন দুর্বলতা বা সংকীর্ণতা দেখানো যাবে না :
كِتَابٌ اُنْزِلَ اِلَيْكَ فَلَا يَكُنْ فِيْ صَدْرِكَ حَرَجٌ مِّنْهُ لِتُنْذِرَ بِهٖ وَذِكْرٰى لِلْمُؤْمِنِيْنَ
তোমার নিকট কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে, যাতে করে এর দ্বারা সতর্কীকরণের ব্যাপারে তোমার মনে এ সম্পর্কে কোন সংকোচ না থাকে। (মনে রেখো) মুমিনদের জন্য এটা উপদেশস্বরূপ। (সূরা আ‘রাফ- ২)
যারা কুরআনের কথা শুনে ও আমল করে তারাই উপদেশ গ্রহণ করে :
اَ لَّذِيْنَ يَسْتَمِعُوْنَ الْقَوْلَ فَيَتَّبِعُوْنَ اَحْسَنَهٗؕ اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ هَدَاهُمُ اللهُ وَاُولٰٓئِكَ هُمْ اُولُو الْاَ لْبَابِ
যারা মনোযোগ সহকারে কথা শুনে, অতঃপর তার মধ্যে যা উত্তম তার অনুসরণ করে। এরাই ঐসব লোক যাদেরকে আল্লাহ সৎপথে পরিচালিত করেছেন; আর তারাই জ্ঞানের অধিকারী। (সূরা যুমার- ১৮)
ব্যাখ্যা : এর একটি অর্থ হচ্ছে, তারা যে কোন কথা শুনলেই তার অনুসরণ করে না। তারা প্রত্যেকের কথা শুনার পর তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে এবং যেটি ন্যায় ও সত্য কথা তা গ্রহণ করে। আরেকটি অর্থ হচ্ছে, তারা কোন কথা শুনে তার ভুল অর্থ করার চেষ্টা করে না; বরং তার ভালো অর্থ গ্রহণ করে।
কিছু লোক কুরআনের কথা শুনতে চায় না :
وَاِذَا تُتْلٰى عَلَيْهِ اٰيَاتُنَا وَلّٰى مُسْتَكْبِرًا كَاَنْ لَّمْ يَسْمَعْهَا كَاَنَّ فِۤيْ اُذُنَيْهِ وَقْرًاۚ فَبَشِّرْهُ بِعَذَابٍ اَلِيْمٍ
যখন তার কাছে আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হয়, তখন সে দম্ভভরে মুখ ফিরিয়ে নেয়; যেন সে শুনতেই পায়নি, যেন তার কর্ণদ্বয়ের মধ্যে ছিপি রয়েছে। অতএব তাকে বেদনাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও। (সূরা লুক্বমান- ৭)
তারা প্রচারকের বিরোধিতা করে :
وَاِذَا تُتْلٰى عَلَيْهِمْ اٰيَاتُنَا بَيِّنَاتٍ تَعْرِفُ فِيْ وُجُوْهِ الَّذِيْنَ كَفَرُوا الْمُنْكَرَؕ يَكَادُوْنَ يَسْطُوْنَ بِالَّذِيْنَ يَتْلُوْنَ عَلَيْهِمْ اٰيَاتِنَا
তাদের নিকট আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ পাঠ করা হলে তুমি কাফিরদের মুখমন্ডলে অসমেত্মাষ ভাব লক্ষ্য করবে। যারা তাদের নিকট আমার আয়াতসমূহ পাঠ করে, তারা তাদেরকে আক্রমণ করতে উদ্যত হয়। (সূরা হজ্জ- ৭২)
তারা কঠিন শাস্তি ভোগ করবে :
وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَا تَسْمَعُوْا لِهٰذَا الْقُرْاٰنِ وَالْغَوْا فِيْهِ لَعَلَّكُمْ تَغْلِبُوْنَ – - فَلَنُذِيْقَنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا عَذَابًا شَدِيْدًا وَّلَنَجْزِيَنَّهُمْ اَسْوَاَ الَّذِيْ كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ – ذٰلِكَ جَزَآءُ اَعْدَآءِ اللهِ النَّارُۚ لَهُمْ فِيْهَا دَارُ الْخُلْدِؕ جَزَآءً ۢبِمَا كَانُوْا بِاٰيَاتِنَا يَجْحَدُوْنَ
কাফিররা বলে, তোমরা এ কুরআন শ্রবণ করো না এবং তা পাঠকালে শোরগোল সৃষ্টি করো, যাতে তোমরা জয়ী হতে পার। অবশ্যই আমি কাফিরদেরকে কঠিন শাস্তি আস্বাদন করাব এবং তাদেরকে নিকৃষ্ট কার্যকলাপের বিনিময় প্রদান করব। (তাদের বিনিময় হচ্ছে) জাহান্নাম, আর এটাই আল্লাহর শত্রুদের (যথার্থ) পরিণাম। সেখানে তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী আবাসস্থল, যেহেতু তারা আমার নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করত। (সূরা হা-মীম সাজদা, ২৬-২৮)
ব্যাখ্যা : মক্কার কাফিররা যেসব পরিকল্পনার মাধ্যমে নবী ﷺ এর প্রচারকে ব্যর্থ করে দিতে চাচ্ছিল, এটি ছিল তারই একটি। তারা মনে করত, এরকম উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তির মুখ থেকে এমন হৃদয়গ্রাহী ভঙ্গিতে এই নজিরবিহীন বাণী যে-ই শুনবে সে-ই ঘায়েল হয়ে যাবে। অতএব তারা পরিকল্পনা করল যে, তারা এ বাণী নিজেরাও শুনবে না এবং অন্য কাউকেও শুনতে দেবে না। ফলে মুহাম্মাদ ﷺ যখনই তা শুনাতে আরম্ভ করবেন, তখনই তারা হৈ চৈ শুরু করে দেবে। তালি বাজাবে, বিদ্রূপ করবে, আপত্তি ও সমালোচনার ঝড় তুলবে এবং চিৎকার জুড়ে দেবে। তারা আশা করত, এ কৌশল অবলম্বন করে তারা আল্লাহর নবীকে ব্যর্থ করে দিতে সক্ষম হবে।
وَاِذَا تُتْلٰى عَلَيْهِ اٰيَاتُنَا وَلّٰى مُسْتَكْبِرًا كَاَنْ لَّمْ يَسْمَعْهَا كَاَنَّ فِۤيْ اُذُنَيْهِ وَقْرًاۚ فَبَشِّرْهُ بِعَذَابٍ اَلِيْمٍ
যখন তার কাছে আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হয়, তখন সে দম্ভভরে মুখ ফিরিয়ে নেয়; যেন সে শুনতেই পায়নি, যেন তার কর্ণদ্বয়ের মধ্যে ছিপি রয়েছে। অতএব তাকে বেদনাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও। (সূরা লুক্বমান- ৭)
তারা প্রচারকের বিরোধিতা করে :
وَاِذَا تُتْلٰى عَلَيْهِمْ اٰيَاتُنَا بَيِّنَاتٍ تَعْرِفُ فِيْ وُجُوْهِ الَّذِيْنَ كَفَرُوا الْمُنْكَرَؕ يَكَادُوْنَ يَسْطُوْنَ بِالَّذِيْنَ يَتْلُوْنَ عَلَيْهِمْ اٰيَاتِنَا
তাদের নিকট আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ পাঠ করা হলে তুমি কাফিরদের মুখমন্ডলে অসমেত্মাষ ভাব লক্ষ্য করবে। যারা তাদের নিকট আমার আয়াতসমূহ পাঠ করে, তারা তাদেরকে আক্রমণ করতে উদ্যত হয়। (সূরা হজ্জ- ৭২)
তারা কঠিন শাস্তি ভোগ করবে :
وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَا تَسْمَعُوْا لِهٰذَا الْقُرْاٰنِ وَالْغَوْا فِيْهِ لَعَلَّكُمْ تَغْلِبُوْنَ – - فَلَنُذِيْقَنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا عَذَابًا شَدِيْدًا وَّلَنَجْزِيَنَّهُمْ اَسْوَاَ الَّذِيْ كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ – ذٰلِكَ جَزَآءُ اَعْدَآءِ اللهِ النَّارُۚ لَهُمْ فِيْهَا دَارُ الْخُلْدِؕ جَزَآءً ۢبِمَا كَانُوْا بِاٰيَاتِنَا يَجْحَدُوْنَ
কাফিররা বলে, তোমরা এ কুরআন শ্রবণ করো না এবং তা পাঠকালে শোরগোল সৃষ্টি করো, যাতে তোমরা জয়ী হতে পার। অবশ্যই আমি কাফিরদেরকে কঠিন শাস্তি আস্বাদন করাব এবং তাদেরকে নিকৃষ্ট কার্যকলাপের বিনিময় প্রদান করব। (তাদের বিনিময় হচ্ছে) জাহান্নাম, আর এটাই আল্লাহর শত্রুদের (যথার্থ) পরিণাম। সেখানে তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী আবাসস্থল, যেহেতু তারা আমার নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করত। (সূরা হা-মীম সাজদা, ২৬-২৮)
ব্যাখ্যা : মক্কার কাফিররা যেসব পরিকল্পনার মাধ্যমে নবী ﷺ এর প্রচারকে ব্যর্থ করে দিতে চাচ্ছিল, এটি ছিল তারই একটি। তারা মনে করত, এরকম উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তির মুখ থেকে এমন হৃদয়গ্রাহী ভঙ্গিতে এই নজিরবিহীন বাণী যে-ই শুনবে সে-ই ঘায়েল হয়ে যাবে। অতএব তারা পরিকল্পনা করল যে, তারা এ বাণী নিজেরাও শুনবে না এবং অন্য কাউকেও শুনতে দেবে না। ফলে মুহাম্মাদ ﷺ যখনই তা শুনাতে আরম্ভ করবেন, তখনই তারা হৈ চৈ শুরু করে দেবে। তালি বাজাবে, বিদ্রূপ করবে, আপত্তি ও সমালোচনার ঝড় তুলবে এবং চিৎকার জুড়ে দেবে। তারা আশা করত, এ কৌশল অবলম্বন করে তারা আল্লাহর নবীকে ব্যর্থ করে দিতে সক্ষম হবে।
যারা কুরআনের বিধান মানে না তারা সবচেয়ে বড় যালিম :
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ ذُكِّرَ بِاٰيَاتِ رَبِّهٖ فَاَعْرَضَ عَنْهَا وَنَسِيَ مَا قَدَّمَتْ يَدَاهُ
কোন ব্যক্তিকে তার প্রতিপালকের নিদর্শনাবলি স্মরণ করিয়ে দেয়ার পর সে যদি সেটা হতে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তার কৃতকর্মসমূহ ভুলে যায়, তবে তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? (সূরা কাহফ- ৫৭)
তারা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ভোগ করবে :
وَيْلٌ لِّكُلِّ اَفَّاكٍ اَثِيْمٍ – - يَسْمَعُ اٰيَاتِ اللهِ تُتْلٰى عَلَيْهِ ثُمَّ يُصِرُّ مُسْتَكْبِرًا كَاَنْ لَّمْ يَسْمَعْهَاۚ فَبَشِّرْهُ بِعَذَابٍ اَلِيْمٍ
দুর্ভোগ প্রত্যেক ঘোর মিথ্যাবাদী পাপীর। যে আল্লাহর আয়াতসমূহের তিলাওয়াত শুনে অথচ অহংকারের সাথে (পূর্বাবস্থাতেই) অটল থাকে, যেন সে তা শোনতেই পায়নি। (সুতরাং) তাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও। (সূরা জাসিয়া- ৭, ৮)
কিয়ামতের দিন তাদেরকে আফসোস করতে হবে :
وَاتَّبِعُوْاۤ اَحْسَنَ مَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكُمْ مِّنْ رَّبِّكُمْ مِّنْ قَبْلِ اَنْ يَّاْتِيَكُمُ الْعَذَابُ بَغْتَةً وَّاَنْتُمْ لَا تَشْعُرُوْنَ --– اَنْ تَقُوْلَ نَفْسٌ يَّا حَسْرَتَا عَلٰى مَا فَرَّطْتُّ فِيْ جَنْۢبِ اللهِ وَاِنْ كُنْتُ لَمِنَ السَّاخِرِيْنَ -– اَوْ تَقُوْلَ لَوْ اَنَّ اللهَ هَدَانِيْ لَكُنْتُ مِنَ الْمُتَّقِيْنَ – اَوْ تَقُوْلَ حِيْنَ تَرَى الْعَذَابَ لَوْ اَنَّ لِيْ كَرَّةً فَاَكُوْنَ مِنَ الْمُحْسِنِيْنَ
তোমাদের অজান্তে তোমাদের উপর হঠাৎ কোন রকম আযাব আসার আগেই তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে উত্তম যা নাযিল হয়েছে তার অনুসরণ করো। (তোমাদের অবস্থা যেন এমন না হয় যে) কেউ বলবে, হায় আফসোস! আমি তো আল্লাহর প্রতি আমার কর্তব্য পালনে শৈথিল্য প্রদর্শন করেছি, আমি তো ঠাট্টা বিদ্রূপকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। অথবা এ কথা যেন না বলে যে, যদি আল্লাহ আমাকে হেদায়াত দান করতেন তাহলে অবশ্যই আমি মুত্তাক্বীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। অথবা আযাব সামনে দেখে বলবে, হায়! যদি আমাকে (আবার) দুনিয়াতে পাঠিয়ে দেয়া হতো, তাহলে আমি সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। (সূরা যুমার, ৫৫-৫৮)
এসব লোক জাহান্নামের অধিবাসী হবে :
وَسِيْقَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اِلٰى جَهَنَّمَ زُمَرًاؕ حَتّٰۤى اِذَا جَآءُوْهَا فُتِحَتْ اَبْوَابُهَا وَقَالَ لَهُمْ خَزَنَتُهَاۤ اَلَمْ يَاْتِكُمْ رُسُلٌ مِّنْكُمْ يَتْلُوْنَ عَلَيْكُمْ اٰيَاتِ رَبِّكُمْ وَيُنْذِرُوْنَكُمْ لِقَآءَ يَوْمِكُمْ هٰذَاؕ قَالُوْا بَلٰى وَلٰكِنْ حَقَّتْ كَلِمَةُ الْعَذَابِ عَلَى الْكَافِرِيْنَ – - قِيْلَ ادْخُلُوْاۤ اَبْوَابَ جَهَنَّمَ خَالِدِيْنَ فِيْهَاؕ فَبِئْسَ مَثْوَى الْمُتَكَبِّرِيْنَ
কাফিরদেরকে জাহান্নামের দিকে দলে দলে হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। অতঃপর যখন তারা জাহান্নামের নিকটবর্তী হবে, তখন তার দরজাগুলো খুলে দেয়া হবে। এ সময় জাহান্নামের দারোয়ানরা তাদেরকে বলবে, তোমাদের নিকট কি তোমাদের মধ্য হতে রাসূলগণ আসেননি; যারা তোমাদের নিকট তোমাদের প্রতিপালকের আয়াতসমূহ পাঠ করতেন এবং তোমাদেরকে এ দিনের সাক্ষাৎ সম্বন্ধে সতর্ক করতেন? তারা বলবে, অবশ্যই এসেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে কাফিরদের প্রতি শাস্তির হুকুম বাস্তবায়িত হয়েছে। অতঃপর তাদেরকে বলা হবে স্থায়ীভাবে অবস্থানের জন্য জাহান্নামের দ্বারসমূহে প্রবেশ করো। (লক্ষ্য করো) অহংকারীদের আবাসস্থল কতই না নিকৃষ্ট! (সূরা যুমার- ৭১, ৭২)
তাদের কোন আবেদন গ্রহণ করা হবে না :
اَلَمْ تَكُنْ اٰيَاتِيْ تُتْلٰى عَلَيْكُمْ فَكُنْتُمْ بِهَا تُكَذِّبُوْنَ – قَالُوْا رَبَّنَا غَلَبَتْ عَلَيْنَا شِقْوَتُنَا وَكُنَّا قَوْمًا ضَآلِّيْنَ – رَبَّنَاۤ اَخْرِجْنَا مِنْهَا فَاِنْ عُدْنَا فَاِنَّا ظَالِمُوْنَ – قَالَ اخْسَئُوْا فِيْهَا وَلَا تُكَلِّمُوْنِ
তোমাদের নিকট কি আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হতো না? অথচ তোমরা সেসব অস্বীকার করতে। তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! দুর্ভাগ্য আমাদেরকে পেয়ে বসেছিল এবং আমরা ছিলাম এক বিভ্রামত্ম সম্প্রদায়। হে আমাদের প্রতিপালক! এ (অগ্নি) হতে আমাদেরকে উদ্ধার করুন। আমরা যদি পুনরায় কুফরী করি, তবে তো অবশ্যই আমরা যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হব। আল্লাহ বলবেন, তোমরা হীন অবস্থায় এখানেই থাকো; আর আমার সাথে কোন কথা বলো না। (সূরা মু’মিনূন, ১০৫-১০৮)
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ ذُكِّرَ بِاٰيَاتِ رَبِّهٖ فَاَعْرَضَ عَنْهَا وَنَسِيَ مَا قَدَّمَتْ يَدَاهُ
কোন ব্যক্তিকে তার প্রতিপালকের নিদর্শনাবলি স্মরণ করিয়ে দেয়ার পর সে যদি সেটা হতে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তার কৃতকর্মসমূহ ভুলে যায়, তবে তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? (সূরা কাহফ- ৫৭)
তারা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ভোগ করবে :
وَيْلٌ لِّكُلِّ اَفَّاكٍ اَثِيْمٍ – - يَسْمَعُ اٰيَاتِ اللهِ تُتْلٰى عَلَيْهِ ثُمَّ يُصِرُّ مُسْتَكْبِرًا كَاَنْ لَّمْ يَسْمَعْهَاۚ فَبَشِّرْهُ بِعَذَابٍ اَلِيْمٍ
দুর্ভোগ প্রত্যেক ঘোর মিথ্যাবাদী পাপীর। যে আল্লাহর আয়াতসমূহের তিলাওয়াত শুনে অথচ অহংকারের সাথে (পূর্বাবস্থাতেই) অটল থাকে, যেন সে তা শোনতেই পায়নি। (সুতরাং) তাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও। (সূরা জাসিয়া- ৭, ৮)
কিয়ামতের দিন তাদেরকে আফসোস করতে হবে :
وَاتَّبِعُوْاۤ اَحْسَنَ مَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكُمْ مِّنْ رَّبِّكُمْ مِّنْ قَبْلِ اَنْ يَّاْتِيَكُمُ الْعَذَابُ بَغْتَةً وَّاَنْتُمْ لَا تَشْعُرُوْنَ --– اَنْ تَقُوْلَ نَفْسٌ يَّا حَسْرَتَا عَلٰى مَا فَرَّطْتُّ فِيْ جَنْۢبِ اللهِ وَاِنْ كُنْتُ لَمِنَ السَّاخِرِيْنَ -– اَوْ تَقُوْلَ لَوْ اَنَّ اللهَ هَدَانِيْ لَكُنْتُ مِنَ الْمُتَّقِيْنَ – اَوْ تَقُوْلَ حِيْنَ تَرَى الْعَذَابَ لَوْ اَنَّ لِيْ كَرَّةً فَاَكُوْنَ مِنَ الْمُحْسِنِيْنَ
তোমাদের অজান্তে তোমাদের উপর হঠাৎ কোন রকম আযাব আসার আগেই তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে উত্তম যা নাযিল হয়েছে তার অনুসরণ করো। (তোমাদের অবস্থা যেন এমন না হয় যে) কেউ বলবে, হায় আফসোস! আমি তো আল্লাহর প্রতি আমার কর্তব্য পালনে শৈথিল্য প্রদর্শন করেছি, আমি তো ঠাট্টা বিদ্রূপকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। অথবা এ কথা যেন না বলে যে, যদি আল্লাহ আমাকে হেদায়াত দান করতেন তাহলে অবশ্যই আমি মুত্তাক্বীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। অথবা আযাব সামনে দেখে বলবে, হায়! যদি আমাকে (আবার) দুনিয়াতে পাঠিয়ে দেয়া হতো, তাহলে আমি সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। (সূরা যুমার, ৫৫-৫৮)
এসব লোক জাহান্নামের অধিবাসী হবে :
وَسِيْقَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اِلٰى جَهَنَّمَ زُمَرًاؕ حَتّٰۤى اِذَا جَآءُوْهَا فُتِحَتْ اَبْوَابُهَا وَقَالَ لَهُمْ خَزَنَتُهَاۤ اَلَمْ يَاْتِكُمْ رُسُلٌ مِّنْكُمْ يَتْلُوْنَ عَلَيْكُمْ اٰيَاتِ رَبِّكُمْ وَيُنْذِرُوْنَكُمْ لِقَآءَ يَوْمِكُمْ هٰذَاؕ قَالُوْا بَلٰى وَلٰكِنْ حَقَّتْ كَلِمَةُ الْعَذَابِ عَلَى الْكَافِرِيْنَ – - قِيْلَ ادْخُلُوْاۤ اَبْوَابَ جَهَنَّمَ خَالِدِيْنَ فِيْهَاؕ فَبِئْسَ مَثْوَى الْمُتَكَبِّرِيْنَ
কাফিরদেরকে জাহান্নামের দিকে দলে দলে হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। অতঃপর যখন তারা জাহান্নামের নিকটবর্তী হবে, তখন তার দরজাগুলো খুলে দেয়া হবে। এ সময় জাহান্নামের দারোয়ানরা তাদেরকে বলবে, তোমাদের নিকট কি তোমাদের মধ্য হতে রাসূলগণ আসেননি; যারা তোমাদের নিকট তোমাদের প্রতিপালকের আয়াতসমূহ পাঠ করতেন এবং তোমাদেরকে এ দিনের সাক্ষাৎ সম্বন্ধে সতর্ক করতেন? তারা বলবে, অবশ্যই এসেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে কাফিরদের প্রতি শাস্তির হুকুম বাস্তবায়িত হয়েছে। অতঃপর তাদেরকে বলা হবে স্থায়ীভাবে অবস্থানের জন্য জাহান্নামের দ্বারসমূহে প্রবেশ করো। (লক্ষ্য করো) অহংকারীদের আবাসস্থল কতই না নিকৃষ্ট! (সূরা যুমার- ৭১, ৭২)
তাদের কোন আবেদন গ্রহণ করা হবে না :
اَلَمْ تَكُنْ اٰيَاتِيْ تُتْلٰى عَلَيْكُمْ فَكُنْتُمْ بِهَا تُكَذِّبُوْنَ – قَالُوْا رَبَّنَا غَلَبَتْ عَلَيْنَا شِقْوَتُنَا وَكُنَّا قَوْمًا ضَآلِّيْنَ – رَبَّنَاۤ اَخْرِجْنَا مِنْهَا فَاِنْ عُدْنَا فَاِنَّا ظَالِمُوْنَ – قَالَ اخْسَئُوْا فِيْهَا وَلَا تُكَلِّمُوْنِ
তোমাদের নিকট কি আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হতো না? অথচ তোমরা সেসব অস্বীকার করতে। তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! দুর্ভাগ্য আমাদেরকে পেয়ে বসেছিল এবং আমরা ছিলাম এক বিভ্রামত্ম সম্প্রদায়। হে আমাদের প্রতিপালক! এ (অগ্নি) হতে আমাদেরকে উদ্ধার করুন। আমরা যদি পুনরায় কুফরী করি, তবে তো অবশ্যই আমরা যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হব। আল্লাহ বলবেন, তোমরা হীন অবস্থায় এখানেই থাকো; আর আমার সাথে কোন কথা বলো না। (সূরা মু’মিনূন, ১০৫-১০৮)
যারা কুরআন অনুযায়ী বিচার করে না তারা কাফির :
وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْكَافِرُوْنَ
আল্লাহ যে বিধান অবতীর্ণ করেছেন যারা সে অনুযায়ী বিচার-মীমাংসা করে না তারা কাফির। (সূরা মায়েদা- ৪৪)
তারা যালিম :
وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ
আল্লাহ যে বিধান অবতীর্ণ করেছেন যারা সে অনুযায়ী বিচার-মীমাংসা করে না তারা যালিম। (সূরা মায়েদা- ৪৫)
তারা ফাসিক :
وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ
যারা আল্লাহর অবতীর্ণ করা বিধান অনুযায়ী বিচার-ফায়াসালা করে না তারা ফাসিক। (সূরা মায়েদা- ৪৭)
ব্যাখ্যা : যারা আল্লাহর নাযিল করা আইন অনুযায়ী ফায়সালা করে না, আল্লাহ এখানে তাদের পরিণাম সম্পর্কে তিনটি বিধান বর্ণনা করেছেন। (এক) তারা কাফির। (দুই) তারা যালিম। (তিন) তারা ফাসিক। এর পরিষ্কার অর্থ হচ্ছে, যে ব্যক্তি আল্লাহর হুকুম ও তাঁর নাযিল করা আইন ত্যাগ করে নিজের বা অন্য মানুষের গড়া আইনের ভিত্তিতে ফায়সালা করে, সে আসলে বড় ধরনের অপরাধ করে।
প্রথমত, তার এ কাজটি আল্লাহর হুকুম অস্বীকার করার শামিল। কাজেই এটি কুফরী।
দ্বিতীয়ত, তার এ কাজটি ইনসাফ ও ভারসাম্যনীতির বিরোধী। কারণ আল্লাহ যথার্থ ইনসাফ ও ভারসাম্যনীতি অনুযায়ীই হুকুম দিয়েছিলেন। কাজেই আল্লাহর হুকুম থেকে সরে এসে যখন সে ফায়সালা করল তখন সে আসলে যুলুম করল।
তৃতীয়ত, বান্দা হওয়া সত্ত্বেও যখন সে নিজের প্রভুর আইন অমান্য করে নিজের বা অন্যের মনগড়া আইন প্রবর্তন করল, তখনই সে দাসত্ব ও আনুগত্যের গন্ডীর বাইরে চলে গেল। আর এটিই হলো অবাধ্যতা বা ফাসিকী। এ কুফরী, যুলুম ও ফাসিকী তার নিজের ধরন ও প্রকৃতির দিক দিয়ে অনিবার্যভাবে আল্লাহর হুকুম অমান্যেরই বাস্তব রূপ। সুতরাং যেখানেই আল্লাহর হুকুম অমান্য করা হবে, সেখানেই এ তিনটি অপরাধ থাকবে।
وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْكَافِرُوْنَ
আল্লাহ যে বিধান অবতীর্ণ করেছেন যারা সে অনুযায়ী বিচার-মীমাংসা করে না তারা কাফির। (সূরা মায়েদা- ৪৪)
তারা যালিম :
وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ
আল্লাহ যে বিধান অবতীর্ণ করেছেন যারা সে অনুযায়ী বিচার-মীমাংসা করে না তারা যালিম। (সূরা মায়েদা- ৪৫)
তারা ফাসিক :
وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ
যারা আল্লাহর অবতীর্ণ করা বিধান অনুযায়ী বিচার-ফায়াসালা করে না তারা ফাসিক। (সূরা মায়েদা- ৪৭)
ব্যাখ্যা : যারা আল্লাহর নাযিল করা আইন অনুযায়ী ফায়সালা করে না, আল্লাহ এখানে তাদের পরিণাম সম্পর্কে তিনটি বিধান বর্ণনা করেছেন। (এক) তারা কাফির। (দুই) তারা যালিম। (তিন) তারা ফাসিক। এর পরিষ্কার অর্থ হচ্ছে, যে ব্যক্তি আল্লাহর হুকুম ও তাঁর নাযিল করা আইন ত্যাগ করে নিজের বা অন্য মানুষের গড়া আইনের ভিত্তিতে ফায়সালা করে, সে আসলে বড় ধরনের অপরাধ করে।
প্রথমত, তার এ কাজটি আল্লাহর হুকুম অস্বীকার করার শামিল। কাজেই এটি কুফরী।
দ্বিতীয়ত, তার এ কাজটি ইনসাফ ও ভারসাম্যনীতির বিরোধী। কারণ আল্লাহ যথার্থ ইনসাফ ও ভারসাম্যনীতি অনুযায়ীই হুকুম দিয়েছিলেন। কাজেই আল্লাহর হুকুম থেকে সরে এসে যখন সে ফায়সালা করল তখন সে আসলে যুলুম করল।
তৃতীয়ত, বান্দা হওয়া সত্ত্বেও যখন সে নিজের প্রভুর আইন অমান্য করে নিজের বা অন্যের মনগড়া আইন প্রবর্তন করল, তখনই সে দাসত্ব ও আনুগত্যের গন্ডীর বাইরে চলে গেল। আর এটিই হলো অবাধ্যতা বা ফাসিকী। এ কুফরী, যুলুম ও ফাসিকী তার নিজের ধরন ও প্রকৃতির দিক দিয়ে অনিবার্যভাবে আল্লাহর হুকুম অমান্যেরই বাস্তব রূপ। সুতরাং যেখানেই আল্লাহর হুকুম অমান্য করা হবে, সেখানেই এ তিনটি অপরাধ থাকবে।
ইসলামের মূল স্তম্ভ হল ঈমান। ঈমান না থাকলে কোন কাজেই সওয়াব হয় না। মুখে কালিমা পড়ে এর বিষয়বস্তু অন্তরে বিশ্বাস করে বাস্তবে আমল করার মাধ্যমে ঈমান পূর্ণতা লাভ করে। কালিমা গ্রহণযোগ্য হওয়ার শর্ত হলো :
১. ইখলাসের সাথে কালিমা উচ্চারণ করা।
২. কালিমার অর্থ জানা এবং তা সত্যায়ন করা ।
৩. অন্তরে নিশ্চিত বিশ্বাস রাখা।
৪. কালিমার অনুসারীদের প্রতি ভালবাসা রাখা।
৫. কালিমার দাবীসমূহ পরিপূর্ণ আনুগত্য ও নিষ্ঠার সাথে পালন করা।
৬. কালিমার দাবীর বিপরীত বিষয়কে বর্জন করা।
১. ইখলাসের সাথে কালিমা উচ্চারণ করা।
২. কালিমার অর্থ জানা এবং তা সত্যায়ন করা ।
৩. অন্তরে নিশ্চিত বিশ্বাস রাখা।
৪. কালিমার অনুসারীদের প্রতি ভালবাসা রাখা।
৫. কালিমার দাবীসমূহ পরিপূর্ণ আনুগত্য ও নিষ্ঠার সাথে পালন করা।
৬. কালিমার দাবীর বিপরীত বিষয়কে বর্জন করা।
ঈমান মজবুত অবলম্বন :
فَمَنْ يَّكْفُرْ بِالطَّاغُوْتِ وَيُؤْمِنْ ۢبِاللهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقٰى لَا انْفِصَامَ لَهَا
সুতরাং যে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে, সে যেন এমন এক মজবুত রশি আঁকড়ে ধরল, যা কখনো ছিড়বে না। (সূরা বাক্বারা- ২৫৬)
يُثَبِّتُ اللهُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِى الْاٰخِرَةِؕ وَيُضِلُّ اللهُ الظَّالِمِيْنَۚ وَيَفْعَلُ اللهُ مَا يَشَآءُ
যারা শাশ্বত বাণীর প্রতি ঈমান আনয়ন করেছে আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়ার জীবনে ও আখিরাতে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবেন এবং যালিমদেরকে বিভ্রান্তিতে রাখবেন। আর আল্লাহ যা ইচ্ছা তা-ই করেন। (সূরা ইবরাহীম- ২৭)
ঈমান পরকালের ব্যবসার মূল পুঁজি :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا هَلْ اَدُلُّكُمْ عَلٰى تِجَارَةٍ تُنْجِيْكُمْ مِّنْ عَذَابٍ اَلِيْمٍ ‐ تُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ وَرَسُولِهٖ وَتُجَاهِدُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ بِاَمْوَالِكُمْ وَاَنْفُسِكُمْ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
হে মুমিনগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন বাণিজ্যের সন্ধান দেব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হতে রক্ষা করবে? (তা এই যে) তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং তোমাদের ধনসম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে! (সূরা সাফ- ১০, ১১)
ঈমান কল্যাণ ও সমৃদ্ধির চাবিকাঠি :
وَلَوْ اَنَّ اَهْلَ الْقُرٰۤى اٰمَنُوْا وَاتَّقُوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَرَكَاتٍ مِّنَ السَّمَآءِ وَالْاَرْضِۚ وَلٰكِنْ كَذَّبُوْا فَاَخَذْنَاهُمْ بِمَا كَانُوْا يَكْسِبُوْنَ
যদি জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত ও তাক্বওয়া অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের জন্য আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর কল্যাণ উন্মুক্ত করে দিতাম, কিন্তু তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছিল। ফলে তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের জন্য পাকড়াও করেছি। (সূরা আ‘রাফ- ৯৬)
ঈমান শাস্তি থেকে বাঁচার উপায় :
مَا يَفْعَلُ اللهُ بِعَذَابِكُمْ اِنْ شَكَرْتُمْ وَاٰمَنْتُمْؕ وَكَانَ اللهُ شَاكِرًا عَلِيْمًا
তোমরা যদি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর এবং ঈমান আনয়ন কর, তবে তোমাদেরকে শাস্তি দেয়াতে আল্লাহর কী লাভ? আর আল্লাহ তো পুরস্কারদাতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা নিসা - ১৪৭)
কুরআন ঈমানের পরিচয় দেয় :
وَكَذٰلِكَ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ رُوْحًا مِّنْ اَمْرِنَاؕ مَا كُنْتَ تَدْرِيْ مَا الْكِتَابُ وَلَا الْاِيْمَانُ وَلٰكِنْ جَعَلْنَاهُ نُوْرًا نَّهْدِيْ بِه مَنْ نَّشَآءُ مِنْ عِبَادِنَاؕ وَاِنَّكَ لَتَهْدِيْۤ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
আর এভাবেই আমি আমার নির্দেশে তোমার প্রতি ওহী করেছি রূহ তথা আল কুরআন। তুমি তো জানতে না যে, কিতাব কী এবং ঈমান কোন জিনিস। পক্ষান্তরে আমি একে করেছি আলো, যা দ্বারা আমি আমার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা পথনির্দেশ করি। নিশ্চয় তুমি সরল পথের দিকেই পথপ্রদর্শন করে থাক। (সূরা শূরা - ৫২)
কুরআন পড়লে ঈমান বৃদ্ধি পায় :
اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ اِذَا ذُكِرَ اللهُ وَجِلَتْ قُلُوْبُهُمْ وَاِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ اٰيَاتُهٗ زَادَتْهُمْ اِيْمَانًا وَّعَلٰى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ
নিশ্চয় মুমিন তো তারাই যাদের হৃদয় আল্লাহর স্মরণে কম্পিত হয় এবং তাদের সামনে তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হলে তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি হয়। আর তারা তাদের প্রতিপালকের উপরই নির্ভর করে থাকে। (সূরা আনফাল- ২)
وَاِذَا مَاۤ اُنْزِلَتْ سُوْرَةٌ فَمِنْهُمْ مَّنْ يَّقُوْلُ اَيُّكُمْ زَادَتْهُ هٰذِه ۤ اِيْمَانًاۚ فَاَمَّا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا فَزَادَتْهُمْ اِيْمَانًا وَّهُمْ يَسْتَبْشِرُوْنَ
যখনই কোন সূরা অবতীর্ণ হয় তখন তাদের কেউ কেউ বলে, এটা তোমাদের মধ্যে কারো ঈমান বৃদ্ধি করল কি? অতঃপর যারা ঈমান আনয়ন করেছে এতে তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পায় এবং তারাই আনন্দিত হয়। (সূরা তাওবা - ১২৪)
ব্যাখ্যা : ঈমান বৃদ্ধির অর্থ প্রতিটি পরীক্ষার সময় আল্লাহ তাদেরকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার এবং সঠিক পথে চলার সুযোগ দান করেন। তাদেরকে অসৎকাজ ও ভ্রান্তপথ থেকে রক্ষা করেন। ফলে তারা তাঁর পথনির্দেশনার মাধ্যমে সত্য ও সঠিক পথে এগিয়ে চলতে সক্ষম হয়।
কালিমায়ে তায়্যিবার উদাহরণ :
اَلَمْ تَرَ كَيْفَ ضَرَبَ اللهُ مَثَلًا كَلِمَةً طَيِّبَةً كَشَجَرَةٍ طَيِّبَةٍ اَصْلُهَا ثَابِتٌ وَّفَرْعُهَا فِى السَّمَآءِ ‐ تُؤْتِۤيْ اُكُلَهَا كُلَّ حِيْنٍ ۢبِاِذْنِ رَبِّهَاۚ وَيَضْرِبُ اللهُ الْاَمْثَالَ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُوْنَ
তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, আল্লাহ কীভাবে উপমা দিয়ে থাকেন? পবিত্র বাক্যের তুলনা উৎকৃষ্ট বৃক্ষের সাথে, যার মূল সুদৃঢ় ও যার শাখা-প্রশাখা ঊর্ধ্বে বিস্তৃত, যা প্রত্যেক মওসুমে তার প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে ফল দান করে। আর আল্লাহ মানুষের জন্য এসব উপমা দিয়ে থাকেন, যাতে তারা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। (সূরা ইবরাহীম - ২৪, ২৫)
ব্যাখ্যা : ‘কালিমায়ে তায়্যিবা’ এর শাব্দিক অর্থ পবিত্র কথা। কিন্তু এ শব্দের মাধ্যমে যে তাৎপর্য গ্রহণ করা হয়েছে তা হচ্ছে, এমন সত্য কথা এবং এমন পরিচ্ছন্ন বিশ্বাস, যা পুরোপুরি সত্য ও সরলতার উপর প্রতিষ্ঠিত। এ উক্তি ও আকীদা কুরআন মাজীদের দৃষ্টিতে অপরিহার্যভাবে এমন একটি কথা ও বিশ্বাস হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে তাওহীদের স্বীকৃতি, নবীগণ ও আসমানী কিতাবসমূহের স্বীকৃতি এবং আখিরাতের স্বীকৃতি। কারণ কুরআন এ বিষয়গুলোকেই মৌলিক ও সত্য হিসেবে পেশ করে। এটি একটি ফলপ্রসূ কালিমা। কোন ব্যক্তি বা জাতি এর ভিত্তিতে জীবনব্যবস্থা গড়ে তুললে প্রতি মুহূর্তে সে তার সুফল লাভ করতে থাকে। এ কালিমা চিন্তাধারায় পরিপক্কতা, স্বভাবে প্রশান্তি, মেজাজে ভারসাম্য, চরিত্রে পবিত্রতা, আত্মায় প্রফুল্লতা, শরীরে পরিচ্ছন্নতা, আচার-ব্যবহারে মাধুর্যতা, লেনদেনে সততা, কথাবার্তায় সত্যবাদিতা, অঙ্গীকারে দৃঢ়তা, সামাজিক জীবন-যাপনে স্বচ্ছতা, কৃষ্টি-কালচারে ঔদার্য ও মহত্ব, সভ্যতায় ভারসাম্য, অর্থনীতিতে ন্যায়পরায়ণতা, রাজনীতিতে বিশ্বস্ততা, যুদ্ধে সৌজন্যতা, সন্ধিতে আন্তরিকতা এবং চুক্তিতে বিশ্বস্ততা সৃষ্টি করে। এটি এমন একটি পরশপাথর, যার প্রভাব কেউ যথাযথভাবে গ্রহণ করলে খাঁটি সোনায় পরিণত হয়। এ কালিমার বদৌলতে তারা দুনিয়ায় একটি স্থায়ী দৃষ্টিভঙ্গী, শক্তিশালী চিন্তাধারা এবং একটি ব্যাপক জীবনদর্শন লাভ করে। জীবনের সকল সমস্যার সামাধানে তা এমন এক চাবির ন্যায় কাজ করে, যা দিয়ে সকল তালা খোলা যায়। এর সাহায্যে জীবন-যাপনের এমন কতগুলো মূলনীতি পাওয়া যায়, যা একদিকে হৃদয়ে ও মস্তিষ্কে প্রশান্তি এনে দেয় এবং অন্যদিকে প্রচেষ্টা ও কর্মের পথে দিশেহারা হয়ে ঘুরে বেড়ানোর এবং অস্থিরতার শিকার হওয়ার হাত থেকে বাঁচায়। তারপর যখন তারা মৃত্যুর সীমানা অতিক্রম করে পরলোকের সীমান্তে পা রাখে, তখন সেখানে তারা চিন্তিত হয় না। কারণ সেখানে তাদের প্রত্যাশানুযায়ী সবকিছু পেয়ে থাকে।
فَمَنْ يَّكْفُرْ بِالطَّاغُوْتِ وَيُؤْمِنْ ۢبِاللهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقٰى لَا انْفِصَامَ لَهَا
সুতরাং যে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে, সে যেন এমন এক মজবুত রশি আঁকড়ে ধরল, যা কখনো ছিড়বে না। (সূরা বাক্বারা- ২৫৬)
يُثَبِّتُ اللهُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِى الْاٰخِرَةِؕ وَيُضِلُّ اللهُ الظَّالِمِيْنَۚ وَيَفْعَلُ اللهُ مَا يَشَآءُ
যারা শাশ্বত বাণীর প্রতি ঈমান আনয়ন করেছে আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়ার জীবনে ও আখিরাতে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবেন এবং যালিমদেরকে বিভ্রান্তিতে রাখবেন। আর আল্লাহ যা ইচ্ছা তা-ই করেন। (সূরা ইবরাহীম- ২৭)
ঈমান পরকালের ব্যবসার মূল পুঁজি :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا هَلْ اَدُلُّكُمْ عَلٰى تِجَارَةٍ تُنْجِيْكُمْ مِّنْ عَذَابٍ اَلِيْمٍ ‐ تُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ وَرَسُولِهٖ وَتُجَاهِدُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ بِاَمْوَالِكُمْ وَاَنْفُسِكُمْ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
হে মুমিনগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন বাণিজ্যের সন্ধান দেব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হতে রক্ষা করবে? (তা এই যে) তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং তোমাদের ধনসম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে! (সূরা সাফ- ১০, ১১)
ঈমান কল্যাণ ও সমৃদ্ধির চাবিকাঠি :
وَلَوْ اَنَّ اَهْلَ الْقُرٰۤى اٰمَنُوْا وَاتَّقُوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَرَكَاتٍ مِّنَ السَّمَآءِ وَالْاَرْضِۚ وَلٰكِنْ كَذَّبُوْا فَاَخَذْنَاهُمْ بِمَا كَانُوْا يَكْسِبُوْنَ
যদি জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত ও তাক্বওয়া অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের জন্য আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর কল্যাণ উন্মুক্ত করে দিতাম, কিন্তু তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছিল। ফলে তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের জন্য পাকড়াও করেছি। (সূরা আ‘রাফ- ৯৬)
ঈমান শাস্তি থেকে বাঁচার উপায় :
مَا يَفْعَلُ اللهُ بِعَذَابِكُمْ اِنْ شَكَرْتُمْ وَاٰمَنْتُمْؕ وَكَانَ اللهُ شَاكِرًا عَلِيْمًا
তোমরা যদি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর এবং ঈমান আনয়ন কর, তবে তোমাদেরকে শাস্তি দেয়াতে আল্লাহর কী লাভ? আর আল্লাহ তো পুরস্কারদাতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা নিসা - ১৪৭)
কুরআন ঈমানের পরিচয় দেয় :
وَكَذٰلِكَ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ رُوْحًا مِّنْ اَمْرِنَاؕ مَا كُنْتَ تَدْرِيْ مَا الْكِتَابُ وَلَا الْاِيْمَانُ وَلٰكِنْ جَعَلْنَاهُ نُوْرًا نَّهْدِيْ بِه مَنْ نَّشَآءُ مِنْ عِبَادِنَاؕ وَاِنَّكَ لَتَهْدِيْۤ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
আর এভাবেই আমি আমার নির্দেশে তোমার প্রতি ওহী করেছি রূহ তথা আল কুরআন। তুমি তো জানতে না যে, কিতাব কী এবং ঈমান কোন জিনিস। পক্ষান্তরে আমি একে করেছি আলো, যা দ্বারা আমি আমার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা পথনির্দেশ করি। নিশ্চয় তুমি সরল পথের দিকেই পথপ্রদর্শন করে থাক। (সূরা শূরা - ৫২)
কুরআন পড়লে ঈমান বৃদ্ধি পায় :
اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ اِذَا ذُكِرَ اللهُ وَجِلَتْ قُلُوْبُهُمْ وَاِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ اٰيَاتُهٗ زَادَتْهُمْ اِيْمَانًا وَّعَلٰى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ
নিশ্চয় মুমিন তো তারাই যাদের হৃদয় আল্লাহর স্মরণে কম্পিত হয় এবং তাদের সামনে তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হলে তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি হয়। আর তারা তাদের প্রতিপালকের উপরই নির্ভর করে থাকে। (সূরা আনফাল- ২)
وَاِذَا مَاۤ اُنْزِلَتْ سُوْرَةٌ فَمِنْهُمْ مَّنْ يَّقُوْلُ اَيُّكُمْ زَادَتْهُ هٰذِه ۤ اِيْمَانًاۚ فَاَمَّا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا فَزَادَتْهُمْ اِيْمَانًا وَّهُمْ يَسْتَبْشِرُوْنَ
যখনই কোন সূরা অবতীর্ণ হয় তখন তাদের কেউ কেউ বলে, এটা তোমাদের মধ্যে কারো ঈমান বৃদ্ধি করল কি? অতঃপর যারা ঈমান আনয়ন করেছে এতে তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পায় এবং তারাই আনন্দিত হয়। (সূরা তাওবা - ১২৪)
ব্যাখ্যা : ঈমান বৃদ্ধির অর্থ প্রতিটি পরীক্ষার সময় আল্লাহ তাদেরকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার এবং সঠিক পথে চলার সুযোগ দান করেন। তাদেরকে অসৎকাজ ও ভ্রান্তপথ থেকে রক্ষা করেন। ফলে তারা তাঁর পথনির্দেশনার মাধ্যমে সত্য ও সঠিক পথে এগিয়ে চলতে সক্ষম হয়।
কালিমায়ে তায়্যিবার উদাহরণ :
اَلَمْ تَرَ كَيْفَ ضَرَبَ اللهُ مَثَلًا كَلِمَةً طَيِّبَةً كَشَجَرَةٍ طَيِّبَةٍ اَصْلُهَا ثَابِتٌ وَّفَرْعُهَا فِى السَّمَآءِ ‐ تُؤْتِۤيْ اُكُلَهَا كُلَّ حِيْنٍ ۢبِاِذْنِ رَبِّهَاۚ وَيَضْرِبُ اللهُ الْاَمْثَالَ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُوْنَ
তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, আল্লাহ কীভাবে উপমা দিয়ে থাকেন? পবিত্র বাক্যের তুলনা উৎকৃষ্ট বৃক্ষের সাথে, যার মূল সুদৃঢ় ও যার শাখা-প্রশাখা ঊর্ধ্বে বিস্তৃত, যা প্রত্যেক মওসুমে তার প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে ফল দান করে। আর আল্লাহ মানুষের জন্য এসব উপমা দিয়ে থাকেন, যাতে তারা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। (সূরা ইবরাহীম - ২৪, ২৫)
ব্যাখ্যা : ‘কালিমায়ে তায়্যিবা’ এর শাব্দিক অর্থ পবিত্র কথা। কিন্তু এ শব্দের মাধ্যমে যে তাৎপর্য গ্রহণ করা হয়েছে তা হচ্ছে, এমন সত্য কথা এবং এমন পরিচ্ছন্ন বিশ্বাস, যা পুরোপুরি সত্য ও সরলতার উপর প্রতিষ্ঠিত। এ উক্তি ও আকীদা কুরআন মাজীদের দৃষ্টিতে অপরিহার্যভাবে এমন একটি কথা ও বিশ্বাস হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে তাওহীদের স্বীকৃতি, নবীগণ ও আসমানী কিতাবসমূহের স্বীকৃতি এবং আখিরাতের স্বীকৃতি। কারণ কুরআন এ বিষয়গুলোকেই মৌলিক ও সত্য হিসেবে পেশ করে। এটি একটি ফলপ্রসূ কালিমা। কোন ব্যক্তি বা জাতি এর ভিত্তিতে জীবনব্যবস্থা গড়ে তুললে প্রতি মুহূর্তে সে তার সুফল লাভ করতে থাকে। এ কালিমা চিন্তাধারায় পরিপক্কতা, স্বভাবে প্রশান্তি, মেজাজে ভারসাম্য, চরিত্রে পবিত্রতা, আত্মায় প্রফুল্লতা, শরীরে পরিচ্ছন্নতা, আচার-ব্যবহারে মাধুর্যতা, লেনদেনে সততা, কথাবার্তায় সত্যবাদিতা, অঙ্গীকারে দৃঢ়তা, সামাজিক জীবন-যাপনে স্বচ্ছতা, কৃষ্টি-কালচারে ঔদার্য ও মহত্ব, সভ্যতায় ভারসাম্য, অর্থনীতিতে ন্যায়পরায়ণতা, রাজনীতিতে বিশ্বস্ততা, যুদ্ধে সৌজন্যতা, সন্ধিতে আন্তরিকতা এবং চুক্তিতে বিশ্বস্ততা সৃষ্টি করে। এটি এমন একটি পরশপাথর, যার প্রভাব কেউ যথাযথভাবে গ্রহণ করলে খাঁটি সোনায় পরিণত হয়। এ কালিমার বদৌলতে তারা দুনিয়ায় একটি স্থায়ী দৃষ্টিভঙ্গী, শক্তিশালী চিন্তাধারা এবং একটি ব্যাপক জীবনদর্শন লাভ করে। জীবনের সকল সমস্যার সামাধানে তা এমন এক চাবির ন্যায় কাজ করে, যা দিয়ে সকল তালা খোলা যায়। এর সাহায্যে জীবন-যাপনের এমন কতগুলো মূলনীতি পাওয়া যায়, যা একদিকে হৃদয়ে ও মস্তিষ্কে প্রশান্তি এনে দেয় এবং অন্যদিকে প্রচেষ্টা ও কর্মের পথে দিশেহারা হয়ে ঘুরে বেড়ানোর এবং অস্থিরতার শিকার হওয়ার হাত থেকে বাঁচায়। তারপর যখন তারা মৃত্যুর সীমানা অতিক্রম করে পরলোকের সীমান্তে পা রাখে, তখন সেখানে তারা চিন্তিত হয় না। কারণ সেখানে তাদের প্রত্যাশানুযায়ী সবকিছু পেয়ে থাকে।
ঈমান আনার আহবান :
اٰمِنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِه وَاَنْفِقُوْا مِمَّا جَعَلَكُمْ مُّسْتَخْلَفِيْنَ فِيْهِؕ فَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مِنْكُمْ وَاَنْفَقُوْا لَهُمْ اَجْرٌ كَبِيْرٌ ‐ وَمَا لَكُمْ لَا تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِۚ وَالرَّسُوْلُ يَدْعُوْكُمْ لِتُؤْمِنُوْا بِرَبِّكُمْ وَقَدْ اَخَذَ مِيْثَاقَكُمْ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন করো এবং তিনি তোমাদেরকে যা কিছুর উত্তরাধিকারী করেছেন, তা হতে ব্যয় করো। অতএব তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও ব্যয় করে, তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার। তোমাদের কী হলো যে, তোমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনছ না? অথচ রাসূল তোমাদেরকে তোমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনতে আহবান করছেন এবং তিনি তোমাদের নিকট হতে অঙ্গীকারও গ্রহণ করেছেন। (আফসোস!) যদি তোমরা ঈমান আনয়ন করতে, (তবে কতই না ভালো হতো)। (সূরা হাদীদ- ৭, ৮)
فَاٰمِنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِه وَالنُّوْرِ الَّذِيْۤ اَنْزَلْنَاؕ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِيْرٌ
অতএব তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এবং যে নূর আমি অবতীর্ণ করেছি, তাতে বিশ্বাস স্থাপন করো। (জেনে রেখো) আল্লাহ তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত। (সূরা তাগাবুন- ৮)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اٰمِنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِهٖ وَالْكِتَابِ الَّذِيْ نَزَّلَ عَلٰى رَسُوْلِهٖ وَالْكِتَابِ الَّذِيْۤ اَنْزَلَ مِنْ قَبْلُؕ وَمَنْ يَّكْفُرْ بِاللهِ وَمَلَآئِكَتِهٖ وَكُتُبِهٖ وَرُسُلِهٖ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا ۢبَعِيْدًا
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর উপর, তাঁর রাসূলের উপর, তিনি তাঁর রাসূলের প্রতি যে কিতাব নাযিল করেছেন তার উপর এবং যে কিতাব তিনি পূর্বে নাযিল করেছেন তার উপর ঈমান আনয়ন করো। (জেনে রেখো) যে ব্যক্তি আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ এবং আখিরাতকে অস্বীকার করবে, সে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। (সূরা নিসা- ১৩৬)
ব্যাখ্যা : যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে আবার ঈমান আনতে বলা হয়েছে। কারণ এখানে ‘ঈমান’ শব্দটি দু’টি আলাদা আলাদা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। ঈমান আনার একটি অর্থ হচ্ছে- অস্বীকৃতির পরিবর্তে স্বীকৃতির পথ অবলম্বন করা। অস্বীকারকারীদের থেকে আলাদা হয়ে স্বীকৃতিদানকারীদের দলে শামিল হয়ে যাওয়া। এর দ্বিতীয় অর্থ হলো, সচেতনতার সাথে স্বীকৃতি দান করা। নিজের চিন্তা, রুচি, পছন্দ, দৃষ্টিভঙ্গী, মনোভাব, চালচলন এবং নিজের বন্ধুত্ব, শত্রুতা, প্রচেষ্টা ও সংগ্রামের সকল ক্ষেত্রকে সে যে আকীদার উপর ঈমান এনেছে সে অনুযায়ী পুরোপুরি ঢেলে সাজানো। প্রথম অর্থের দিক দিয়ে যেসব মুসলিম স্বীকারকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয় এ আয়াতে তাদেরকেই সম্বোধন করা হয়েছে। দ্বিতীয় অর্থের প্রেক্ষিতে তাদের কাছে দাবী করা হয়েছে যে, তোমরা প্রকৃত মুমিনে পরিণত হও।
ঈমানের বিস্তারিত রূপরেখা :
لَيْسَ الْبِرَّ اَنْ تُوَلُّوْا وُجُوْهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلٰكِنَّ الْبِرَّ مَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَالْمَلَآئِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّيْنَۚ وَاٰتَى الْمَالَ عَلٰى حُبِّه ذَوِى الْقُرْبٰى وَالْيَتَامٰى وَالْمَسَاكِيْنَ وَابْنَ السَّبِيْلِ وَالسَّآئِلِيْنَ وَفِى الرِّقَابِۚ وَاَقَامَ الصَّلَاةَ وَاٰتَى الزَّكَاةَۚ وَالْمُوْفُوْنَ بِعَهْدِهِمْ اِذَا عَاهَدُوْاۚ وَالصَّابِرِيْنَ فِى الْبَاْسَآءِ وَالضَّرَّآءِ وَحِيْنَ الْبَاْسِؕ اُوْلٰٓئِكَ الَّذِيْنَ صَدَقُوْاؕ وَاُوْلٰٓئِكَ هُمُ الْمُتَّقُوْنَ
তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল পূর্ব অথবা পশ্চিম দিকে ঘুরাও তাতে কোন পুণ্য নেই; বরং পুণ্য তো সে ব্যক্তির জন্য, যে ব্যক্তি আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতাগণ, কিতাব ও নবীগণের প্রতি ঈমান আনয়ন করে এবং তাঁরই ভালোবাসা অর্জনের জন্য আত্মীয়স্বজন, ইয়াতীম, দরিদ্র, পথিক, ভিক্ষুক ও দাসত্ব মোচনের জন্য দান করে এবং যারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত প্রদান করে ও অঙ্গীকার করলে তা পূর্ণ করে। আর যারা অভাবে, কষ্টে এবং যুদ্ধকালে ধৈর্যশীল, তারাই সত্যপরায়ণ এবং তারাই মুত্তাক্বী। (সূরা বাক্বারা - ১৭৭)
যেসব বিষয়ের উপর ঈমান আনতে হবে :
اٰمَنَ الرَّسُوْلُ بِمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْهِ مِنْ رَّبِّه وَالْمُؤْمِنُوْنَؕ كُلٌّ اٰمَنَ بِاللهِ وَمَلَآئِكَتِه وَكُتُبِه وَرُسُلِه ؕ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ اَحَدٍ مِّنْ رُّسُلِه ؕ وَقَالُوْا سَمِعْنَا وَاَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَاِلَيْكَ الْمَصِيْرُ
রাসূল ঐ বিষয়ের প্রতি ঈমান এনেছেন, যা তার রবের পক্ষ থেকে নাযিল করা হয়েছে এবং ঈমানদাররাও (সেসব বিষয়ের উপর ঈমান আনয়ন করেছে)। তাঁরা প্রত্যেকেই আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা, তাঁর কিতাবসমূহ এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনয়ন করেছে। (তারা বলে) আমরা তাঁর রাসূলদের মধ্যে কোন পার্থক্য করি না এবং তারা আরো বলে যে, আমরা শুনলাম এবং মেনে নিলাম। হে আমাদের রব! আমরা আপনার নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করছি। আর আপনার দিকেই আমাদের প্রত্যাবর্তনস্থল। (সূরা বাক্বারা- ২৮৫)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতে ইসলামী আকীদা-বিশ্বাস ও কর্মপদ্ধতির সারসংক্ষেপ বর্ণনা করা হয়েছে। আর তা হচ্ছে- আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা ও তাঁর কিতাবসমূহকে মেনে নেয়া, তাঁর রাসূলদের মধ্যে কোন প্রকার পার্থক্য না করে তাঁদেরকে স্বীকার করে নেয়া এবং সবশেষে তাঁর সামনে আমাদেরকে উপস্থিত হতে হবে- এ বিষয়টি স্বীকার করে নেয়া। এ পাঁচটি বিষয় ইসলামের বুনিয়াদী আকীদার অন্তর্ভুক্ত। এ আকীদাগুলো মেনে নিলে একজন মুসলিমের উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে যে নির্দেশগুলো আসবে সেগুলোকে মাথা পেতে গ্রহণ করে নেবে, সেগুলোর আনুগত্য করবে এবং নিজের ভালো কাজের জন্য অহংকার করে বেড়াবে না বরং আল্লাহর কাছে অবনত হয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে থাকবে।
ঈমানের জন্য কতিপয় আহলে কিতাবের প্রেরণা :
وَاِذَا سَمِعُوْا مَاۤ اُنْزِلَ اِلَى الرَّسُوْلِ تَرٰۤى اَعْيُنَهُمْ تَفِيْضُ مِنَ الدَّمْعِ مِمَّا عَرَفُوْا مِنَ الْحَقِّۚ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَاۤ اٰمَنَّا فَاكْتُبْنَا مَعَ الشَّاهِدِيْنَ ‐ وَمَا لَنَا لَا نُؤْمِنُ بِاللهِ وَمَا جَآءَنَا مِنَ الْحَقِّ وَنَطْمَعُ اَنْ يُّدْخِلَنَا رَبُّنَا مَعَ الْقَوْمِ الصَّالِحِيْنَ
রাসূলের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে যখন তারা তা শ্রবণ করে, তখন তারা যে সত্য উপলব্ধি করে তার জন্য তুমি তাদের চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে দেখবে। তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ঈমান এনেছি, সুতরাং তুমি আমাদেরকে সাক্ষ্যদানকারীদের তালিকাভুক্ত করো। আর আমাদের জন্য এমন কী কারণ থাকতে পারে যে, আমরা আল্লাহর প্রতি এবং আমাদের নিকট যে সত্য এসেছে তার প্রতি ঈমান আনয়ন করব না? হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা প্রত্যাশা করি যে, আপনি আমাদেরকে সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত করবেন। (সূরা মায়েদা- ৮৩, ৮৪)
اٰمِنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِه وَاَنْفِقُوْا مِمَّا جَعَلَكُمْ مُّسْتَخْلَفِيْنَ فِيْهِؕ فَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مِنْكُمْ وَاَنْفَقُوْا لَهُمْ اَجْرٌ كَبِيْرٌ ‐ وَمَا لَكُمْ لَا تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِۚ وَالرَّسُوْلُ يَدْعُوْكُمْ لِتُؤْمِنُوْا بِرَبِّكُمْ وَقَدْ اَخَذَ مِيْثَاقَكُمْ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন করো এবং তিনি তোমাদেরকে যা কিছুর উত্তরাধিকারী করেছেন, তা হতে ব্যয় করো। অতএব তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও ব্যয় করে, তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার। তোমাদের কী হলো যে, তোমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনছ না? অথচ রাসূল তোমাদেরকে তোমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনতে আহবান করছেন এবং তিনি তোমাদের নিকট হতে অঙ্গীকারও গ্রহণ করেছেন। (আফসোস!) যদি তোমরা ঈমান আনয়ন করতে, (তবে কতই না ভালো হতো)। (সূরা হাদীদ- ৭, ৮)
فَاٰمِنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِه وَالنُّوْرِ الَّذِيْۤ اَنْزَلْنَاؕ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِيْرٌ
অতএব তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এবং যে নূর আমি অবতীর্ণ করেছি, তাতে বিশ্বাস স্থাপন করো। (জেনে রেখো) আল্লাহ তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত। (সূরা তাগাবুন- ৮)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اٰمِنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِهٖ وَالْكِتَابِ الَّذِيْ نَزَّلَ عَلٰى رَسُوْلِهٖ وَالْكِتَابِ الَّذِيْۤ اَنْزَلَ مِنْ قَبْلُؕ وَمَنْ يَّكْفُرْ بِاللهِ وَمَلَآئِكَتِهٖ وَكُتُبِهٖ وَرُسُلِهٖ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا ۢبَعِيْدًا
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর উপর, তাঁর রাসূলের উপর, তিনি তাঁর রাসূলের প্রতি যে কিতাব নাযিল করেছেন তার উপর এবং যে কিতাব তিনি পূর্বে নাযিল করেছেন তার উপর ঈমান আনয়ন করো। (জেনে রেখো) যে ব্যক্তি আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ এবং আখিরাতকে অস্বীকার করবে, সে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। (সূরা নিসা- ১৩৬)
ব্যাখ্যা : যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে আবার ঈমান আনতে বলা হয়েছে। কারণ এখানে ‘ঈমান’ শব্দটি দু’টি আলাদা আলাদা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। ঈমান আনার একটি অর্থ হচ্ছে- অস্বীকৃতির পরিবর্তে স্বীকৃতির পথ অবলম্বন করা। অস্বীকারকারীদের থেকে আলাদা হয়ে স্বীকৃতিদানকারীদের দলে শামিল হয়ে যাওয়া। এর দ্বিতীয় অর্থ হলো, সচেতনতার সাথে স্বীকৃতি দান করা। নিজের চিন্তা, রুচি, পছন্দ, দৃষ্টিভঙ্গী, মনোভাব, চালচলন এবং নিজের বন্ধুত্ব, শত্রুতা, প্রচেষ্টা ও সংগ্রামের সকল ক্ষেত্রকে সে যে আকীদার উপর ঈমান এনেছে সে অনুযায়ী পুরোপুরি ঢেলে সাজানো। প্রথম অর্থের দিক দিয়ে যেসব মুসলিম স্বীকারকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয় এ আয়াতে তাদেরকেই সম্বোধন করা হয়েছে। দ্বিতীয় অর্থের প্রেক্ষিতে তাদের কাছে দাবী করা হয়েছে যে, তোমরা প্রকৃত মুমিনে পরিণত হও।
ঈমানের বিস্তারিত রূপরেখা :
لَيْسَ الْبِرَّ اَنْ تُوَلُّوْا وُجُوْهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلٰكِنَّ الْبِرَّ مَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَالْمَلَآئِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّيْنَۚ وَاٰتَى الْمَالَ عَلٰى حُبِّه ذَوِى الْقُرْبٰى وَالْيَتَامٰى وَالْمَسَاكِيْنَ وَابْنَ السَّبِيْلِ وَالسَّآئِلِيْنَ وَفِى الرِّقَابِۚ وَاَقَامَ الصَّلَاةَ وَاٰتَى الزَّكَاةَۚ وَالْمُوْفُوْنَ بِعَهْدِهِمْ اِذَا عَاهَدُوْاۚ وَالصَّابِرِيْنَ فِى الْبَاْسَآءِ وَالضَّرَّآءِ وَحِيْنَ الْبَاْسِؕ اُوْلٰٓئِكَ الَّذِيْنَ صَدَقُوْاؕ وَاُوْلٰٓئِكَ هُمُ الْمُتَّقُوْنَ
তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল পূর্ব অথবা পশ্চিম দিকে ঘুরাও তাতে কোন পুণ্য নেই; বরং পুণ্য তো সে ব্যক্তির জন্য, যে ব্যক্তি আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতাগণ, কিতাব ও নবীগণের প্রতি ঈমান আনয়ন করে এবং তাঁরই ভালোবাসা অর্জনের জন্য আত্মীয়স্বজন, ইয়াতীম, দরিদ্র, পথিক, ভিক্ষুক ও দাসত্ব মোচনের জন্য দান করে এবং যারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত প্রদান করে ও অঙ্গীকার করলে তা পূর্ণ করে। আর যারা অভাবে, কষ্টে এবং যুদ্ধকালে ধৈর্যশীল, তারাই সত্যপরায়ণ এবং তারাই মুত্তাক্বী। (সূরা বাক্বারা - ১৭৭)
যেসব বিষয়ের উপর ঈমান আনতে হবে :
اٰمَنَ الرَّسُوْلُ بِمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْهِ مِنْ رَّبِّه وَالْمُؤْمِنُوْنَؕ كُلٌّ اٰمَنَ بِاللهِ وَمَلَآئِكَتِه وَكُتُبِه وَرُسُلِه ؕ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ اَحَدٍ مِّنْ رُّسُلِه ؕ وَقَالُوْا سَمِعْنَا وَاَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَاِلَيْكَ الْمَصِيْرُ
রাসূল ঐ বিষয়ের প্রতি ঈমান এনেছেন, যা তার রবের পক্ষ থেকে নাযিল করা হয়েছে এবং ঈমানদাররাও (সেসব বিষয়ের উপর ঈমান আনয়ন করেছে)। তাঁরা প্রত্যেকেই আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা, তাঁর কিতাবসমূহ এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনয়ন করেছে। (তারা বলে) আমরা তাঁর রাসূলদের মধ্যে কোন পার্থক্য করি না এবং তারা আরো বলে যে, আমরা শুনলাম এবং মেনে নিলাম। হে আমাদের রব! আমরা আপনার নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করছি। আর আপনার দিকেই আমাদের প্রত্যাবর্তনস্থল। (সূরা বাক্বারা- ২৮৫)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতে ইসলামী আকীদা-বিশ্বাস ও কর্মপদ্ধতির সারসংক্ষেপ বর্ণনা করা হয়েছে। আর তা হচ্ছে- আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা ও তাঁর কিতাবসমূহকে মেনে নেয়া, তাঁর রাসূলদের মধ্যে কোন প্রকার পার্থক্য না করে তাঁদেরকে স্বীকার করে নেয়া এবং সবশেষে তাঁর সামনে আমাদেরকে উপস্থিত হতে হবে- এ বিষয়টি স্বীকার করে নেয়া। এ পাঁচটি বিষয় ইসলামের বুনিয়াদী আকীদার অন্তর্ভুক্ত। এ আকীদাগুলো মেনে নিলে একজন মুসলিমের উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে যে নির্দেশগুলো আসবে সেগুলোকে মাথা পেতে গ্রহণ করে নেবে, সেগুলোর আনুগত্য করবে এবং নিজের ভালো কাজের জন্য অহংকার করে বেড়াবে না বরং আল্লাহর কাছে অবনত হয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে থাকবে।
ঈমানের জন্য কতিপয় আহলে কিতাবের প্রেরণা :
وَاِذَا سَمِعُوْا مَاۤ اُنْزِلَ اِلَى الرَّسُوْلِ تَرٰۤى اَعْيُنَهُمْ تَفِيْضُ مِنَ الدَّمْعِ مِمَّا عَرَفُوْا مِنَ الْحَقِّۚ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَاۤ اٰمَنَّا فَاكْتُبْنَا مَعَ الشَّاهِدِيْنَ ‐ وَمَا لَنَا لَا نُؤْمِنُ بِاللهِ وَمَا جَآءَنَا مِنَ الْحَقِّ وَنَطْمَعُ اَنْ يُّدْخِلَنَا رَبُّنَا مَعَ الْقَوْمِ الصَّالِحِيْنَ
রাসূলের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে যখন তারা তা শ্রবণ করে, তখন তারা যে সত্য উপলব্ধি করে তার জন্য তুমি তাদের চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে দেখবে। তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ঈমান এনেছি, সুতরাং তুমি আমাদেরকে সাক্ষ্যদানকারীদের তালিকাভুক্ত করো। আর আমাদের জন্য এমন কী কারণ থাকতে পারে যে, আমরা আল্লাহর প্রতি এবং আমাদের নিকট যে সত্য এসেছে তার প্রতি ঈমান আনয়ন করব না? হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা প্রত্যাশা করি যে, আপনি আমাদেরকে সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত করবেন। (সূরা মায়েদা- ৮৩, ৮৪)
ঈমানের ঘোষণা দিতে হবে :
قُلْ اٰمَنَّا بِاللهِ وَمَاۤ اُنْزِلَ عَلَيْنَا وَمَاۤ اُنْزِلَ عَلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ وَاِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَ وَالْاَسْبَاطِ وَمَاۤ اُوْتِيَ مُوْسٰى وَعِيْسٰى وَالنَّبِيُّوْنَ مِنْ رَّبِّهِمْ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ اَحَدٍ مِّنْهُمْ وَنَحْنُ لَهٗ مُسْلِمُوْنَ
বলো, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং আমাদের উপর যা নাযিল হয়েছে তার প্রতি। (আমরা আরো ঈমান এনেছি) ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব এবং তাদের বংশধরদের উপর যা নাযিল হয়েছে তার প্রতি। (আমরা আরো ঈমান এনেছি) মূসা, ঈসা এবং অন্যান্য নবীদেরকে তাদের রবের পক্ষ থেকে যা কিছু দেয়া হয়েছিল তার প্রতি। আমরা তাদের কারো মধ্যে পার্থক্য করি না। আর আমরা তাঁর কাছেই আত্মসমর্পণকারী। (সূরা আলে ইমরান- ৮৪)
وَاِذْ اَوْحَيْتُ اِلَى الْحَوَارِيِّيْنَ اَنْ اٰمِنُوْا بِيْ وَبِرَسُوْلِيْۚ قَالُوْاۤ اٰمَنَّا وَاشْهَدْ بِاَنَّنَا مُسْلِمُوْنَ
স্মরণ করো, যখন আমি হাওয়ারীদেরকে এ আদেশ দিয়েছিলাম যে, তোমরা আমার প্রতি ও আমার রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন করো; তখন তারা বলেছিল, আমরা ঈমান আনয়ন করলাম এবং তুমি সাক্ষী থাকো যে, আমরা মুসলিম। (সূরা মায়েদা- ১১১)
ঈমান আনতে হবে নিজ উদ্যোগে :
هُوَ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ فَمِنْكُمْ كَافِرٌ وَّمِنْكُمْ مُّؤْمِنٌ
তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন; অতঃপর তোমাদের মধ্যে কেউ কাফির এবং কেউ মুমিনে রূপান্তরিত হয়। (সূরা তাগাবুন - ২)
وَقُلِ الْحَقُّ مِنْ رَّبِّكُمْؕ فَمَنْ شَآءَ فَلْيُؤْمِنْ وَّمَنْ شَآءَ فَلْيَكْفُرْ
বলো, সত্য তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে (আগমন করে), সুতরাং যার ইচ্ছা ঈমান আনয়ন করুক এবং যার ইচ্ছা তা প্রত্যাখ্যান করুক। (সূরা কাহফ- ২৯)
اِنَّا خَلَقْنَا الْاِنْسَانَ مِنْ نُّطْفَةٍ اَمْشَاجٍ نَّبْتَلِيْهِ فَجَعَلْنَاهُ سَمِيْعًا ۢبَصِيْرًا ‐ اِنَّا هَدَيْنَاهُ السَّبِيْلَ اِمَّا شَاكِرًا وَّاِمَّا كَفُوْرًا
আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি সংমিশ্রিত শুক্রবিন্দু হতে, যেন আমি তাকে পরীক্ষা করতে পারি। অতঃপর আমি তাকে শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি দান করেছি। আমি তাকে পথপ্রদর্শন করেছি; এরপর সে চাইলে আল্লাহর কৃতজ্ঞ হবে, নতুবা কুফরী করবে। (সূরা ইনসান- ২, ৩)
বল প্রয়োগ করে কাউকে মুমিন বানানো যায় না :
وَلَوْ شَآءَ رَبُّكَ لَاٰمَنَ مَنْ فِى الْاَرْضِ كُلُّهُمْ جَمِيْعًاؕ اَفَاَنْتَ تُكْرِهُ النَّاسَ حَتّٰى يَكُوْنُوْا مُؤْمِنِيْنَ
যদি তোমার প্রতিপালক চাইতেন, তবে পৃথিবীতে যারা আছে তারা সকলেই ঈমান আনয়ন করত। এরপরও কি তুমি মুমিন বানানোর জন্য মানুষদের উপর জবরদস্তি করবে? (সূরা ইউনুস - ৯৯)
আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউ ঈমান আনতে পারে না :
وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ اَنْ تُؤْمِنَ اِلَّا بِاِذْنِ اللهِؕ وَيَجْعَلُ الرِّجْسَ عَلَى الَّذِيْنَ لَا يَعْقِلُوْنَ
আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত ঈমান আনার সাধ্য কারো নেই, কিন্তু যারা অনুধাবন করে না আল্লাহ তাদের উপর অপবিত্রতা চাপিয়ে দেন। (সূরা ইউনুস- ১০০)
ঈমানদার হওয়া আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ :
يَمُنُّوْنَ عَلَيْكَ اَنْ اَسْلَمُوْاؕ قُلْ لَّا تَمُنُّوْا عَلَيَّ اِسْلَامَكُمْۚ بَلِ اللهُ يَمُنُّ عَلَيْكُمْ اَنْ هَدَاكُمْ لِلْاِيْمَانِ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ
(হে রাসূল!) এরা (কি মনে করে যে) ইসলাম কবুল করে তারা আপনার উপর দয়া করেছে। তাদেরকে বলে দিন, তোমরা তোমাদের ইসলাম (গ্রহণ করার) দ্বারা আমাকে অনুগ্রহ করনি। বরং তোমরা যদি ঈমানের দাবিতে সত্যবাদী হয়ে থাক, তাহলে (তোমাদের বুঝা উচিত যে) আল্লাহই তোমাদেরকে ঈমানের দিকে হেদায়াত করে অনুগ্রহ করেছেন। (সূরা হুজুরাত - ১৭)
قُلْ اٰمَنَّا بِاللهِ وَمَاۤ اُنْزِلَ عَلَيْنَا وَمَاۤ اُنْزِلَ عَلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ وَاِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَ وَالْاَسْبَاطِ وَمَاۤ اُوْتِيَ مُوْسٰى وَعِيْسٰى وَالنَّبِيُّوْنَ مِنْ رَّبِّهِمْ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ اَحَدٍ مِّنْهُمْ وَنَحْنُ لَهٗ مُسْلِمُوْنَ
বলো, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং আমাদের উপর যা নাযিল হয়েছে তার প্রতি। (আমরা আরো ঈমান এনেছি) ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব এবং তাদের বংশধরদের উপর যা নাযিল হয়েছে তার প্রতি। (আমরা আরো ঈমান এনেছি) মূসা, ঈসা এবং অন্যান্য নবীদেরকে তাদের রবের পক্ষ থেকে যা কিছু দেয়া হয়েছিল তার প্রতি। আমরা তাদের কারো মধ্যে পার্থক্য করি না। আর আমরা তাঁর কাছেই আত্মসমর্পণকারী। (সূরা আলে ইমরান- ৮৪)
وَاِذْ اَوْحَيْتُ اِلَى الْحَوَارِيِّيْنَ اَنْ اٰمِنُوْا بِيْ وَبِرَسُوْلِيْۚ قَالُوْاۤ اٰمَنَّا وَاشْهَدْ بِاَنَّنَا مُسْلِمُوْنَ
স্মরণ করো, যখন আমি হাওয়ারীদেরকে এ আদেশ দিয়েছিলাম যে, তোমরা আমার প্রতি ও আমার রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন করো; তখন তারা বলেছিল, আমরা ঈমান আনয়ন করলাম এবং তুমি সাক্ষী থাকো যে, আমরা মুসলিম। (সূরা মায়েদা- ১১১)
ঈমান আনতে হবে নিজ উদ্যোগে :
هُوَ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ فَمِنْكُمْ كَافِرٌ وَّمِنْكُمْ مُّؤْمِنٌ
তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন; অতঃপর তোমাদের মধ্যে কেউ কাফির এবং কেউ মুমিনে রূপান্তরিত হয়। (সূরা তাগাবুন - ২)
وَقُلِ الْحَقُّ مِنْ رَّبِّكُمْؕ فَمَنْ شَآءَ فَلْيُؤْمِنْ وَّمَنْ شَآءَ فَلْيَكْفُرْ
বলো, সত্য তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে (আগমন করে), সুতরাং যার ইচ্ছা ঈমান আনয়ন করুক এবং যার ইচ্ছা তা প্রত্যাখ্যান করুক। (সূরা কাহফ- ২৯)
اِنَّا خَلَقْنَا الْاِنْسَانَ مِنْ نُّطْفَةٍ اَمْشَاجٍ نَّبْتَلِيْهِ فَجَعَلْنَاهُ سَمِيْعًا ۢبَصِيْرًا ‐ اِنَّا هَدَيْنَاهُ السَّبِيْلَ اِمَّا شَاكِرًا وَّاِمَّا كَفُوْرًا
আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি সংমিশ্রিত শুক্রবিন্দু হতে, যেন আমি তাকে পরীক্ষা করতে পারি। অতঃপর আমি তাকে শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি দান করেছি। আমি তাকে পথপ্রদর্শন করেছি; এরপর সে চাইলে আল্লাহর কৃতজ্ঞ হবে, নতুবা কুফরী করবে। (সূরা ইনসান- ২, ৩)
বল প্রয়োগ করে কাউকে মুমিন বানানো যায় না :
وَلَوْ شَآءَ رَبُّكَ لَاٰمَنَ مَنْ فِى الْاَرْضِ كُلُّهُمْ جَمِيْعًاؕ اَفَاَنْتَ تُكْرِهُ النَّاسَ حَتّٰى يَكُوْنُوْا مُؤْمِنِيْنَ
যদি তোমার প্রতিপালক চাইতেন, তবে পৃথিবীতে যারা আছে তারা সকলেই ঈমান আনয়ন করত। এরপরও কি তুমি মুমিন বানানোর জন্য মানুষদের উপর জবরদস্তি করবে? (সূরা ইউনুস - ৯৯)
আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউ ঈমান আনতে পারে না :
وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ اَنْ تُؤْمِنَ اِلَّا بِاِذْنِ اللهِؕ وَيَجْعَلُ الرِّجْسَ عَلَى الَّذِيْنَ لَا يَعْقِلُوْنَ
আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত ঈমান আনার সাধ্য কারো নেই, কিন্তু যারা অনুধাবন করে না আল্লাহ তাদের উপর অপবিত্রতা চাপিয়ে দেন। (সূরা ইউনুস- ১০০)
ঈমানদার হওয়া আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ :
يَمُنُّوْنَ عَلَيْكَ اَنْ اَسْلَمُوْاؕ قُلْ لَّا تَمُنُّوْا عَلَيَّ اِسْلَامَكُمْۚ بَلِ اللهُ يَمُنُّ عَلَيْكُمْ اَنْ هَدَاكُمْ لِلْاِيْمَانِ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ
(হে রাসূল!) এরা (কি মনে করে যে) ইসলাম কবুল করে তারা আপনার উপর দয়া করেছে। তাদেরকে বলে দিন, তোমরা তোমাদের ইসলাম (গ্রহণ করার) দ্বারা আমাকে অনুগ্রহ করনি। বরং তোমরা যদি ঈমানের দাবিতে সত্যবাদী হয়ে থাক, তাহলে (তোমাদের বুঝা উচিত যে) আল্লাহই তোমাদেরকে ঈমানের দিকে হেদায়াত করে অনুগ্রহ করেছেন। (সূরা হুজুরাত - ১৭)
আল্লাহর আযাব দেখে ঈমান আনলে কাজ হবে না :
هَلْ يَنْظُرُوْنَ اِلَّاۤ اَنْ تَاْتِيَهُمُ الْمَلَآئِكَةُ اَوْ يَاْتِيَ رَبُّكَ اَوْ يَاْتِيَ بَعْضُ اٰيَاتِ رَبِّكَؕ يَوْمَ يَاْتِيْ بَعْضُ اٰيَاتِ رَبِّكَ لَا يَنْفَعُ نَفْسًا اِيْمَانُهَا لَمْ تَكُنْ اٰمَنَتْ مِنْ قَبْلُ اَوْ كَسَبَتْ فِۤيْ اِيْمَانِهَا خَيْرًاؕ قُلِ انْتَظِرُوْاۤ اِنَّا مُنْتَظِرُوْنَ
তারা কি শুধু এটাই প্রতীক্ষা করে যে, তাদের নিকট কোন ফেরেশতা আগমন করবে অথবা স্বয়ং তোমার প্রতিপালকই আগমন করবেন, কিংবা তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে কোন নিদর্শন আসবে। (জেনে রেখো) যেদিন তোমার প্রতিপালকের কোন নিদর্শন আসবে সেদিন তাদের ঈমান কোন কাজে আসবে না, যারা ইতোপূর্বে ঈমান আনেনি অথবা যারা তাদের ঈমান দ্বারা কোন কল্যাণ অর্জন করতে পারেনি। সুতরাং তুমি তাদেরকে বলে দাও যে, তোমরা প্রতীক্ষা করো এবং আমরাও প্রতীক্ষায় রইলাম। (সূরা আন‘আম- ১৫৮)
فَلَمَّا رَاَوْا بَاْسَنَا قَالُوْاۤ اٰمَنَّا بِاللهِ وَحْدَهٗ وَكَفَرْنَا بِمَا كُنَّا بِه مُشْرِكِيْنَ ‐ فَلَمْ يَكُ يَنْفَعُهُمْ اِيْمَانُهُمْ لَمَّا رَاَوْا بَاْسَنَا
অতঃপর যখন তারা আমার শাস্তি প্রত্যক্ষ করল তখন বলল, আমরা এক আল্লাহর প্রতিই ঈমান আনলাম এবং আমরা তাঁর সাথে যাদেরকে শরীক করতাম তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করলাম। কিন্তু যখন তারা আমার শাস্তি প্রত্যক্ষ করল, তখন তাদের ঈমান তাদের কোন উপকারে আসল না। (সূরা মু’মিন- ৮৪, ৮৫)
মৃত্যুর সময় ঈমান কবুল হয় না :
وَجَاوَزْنَا بِبَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ الْبَحْرَ فَاَتْبَعَهُمْ فِرْعَوْنُ وَجُنُوْدُهٗ بَغْيًا وَّعَدْوًاؕ حَتّٰۤى اِذَاۤ اَدْرَكَهُ الْغَرَقُ قَالَ اٰمَنْتُ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا الَّذِيۤ اٰمَنَتْ بِه بَنُوْاۤ اِسْرَآئِيْلَ وَاَنَا مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ ₋ آٰلْاٰنَ وَقَدْ عَصَيْتَ قَبْلُ وَكُنْتَ مِنَ الْمُفْسِدِيْنَ
আমি বনী ইসরাঈলকে সমুদ্র পার করালাম, অতঃপর ফিরাউন ও তার সৈন্যবাহিনী বিদ্বেষপরায়ণতা ও সীমালঙ্ঘন করে তাদের পিছু নিল। পরিশেষে যখন সে নিমজ্জিত হলো তখন বলল, বনী ইসরাঈলরা যার প্রতি ঈমান আনয়ন করেছে, আমিও তাঁর প্রতিই ঈমান আনয়ন করলাম। নিশ্চয় তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই এবং আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত। তখন আমি বললাম, এখন! অথচ ইতোপূর্বে তো তুমি অমান্য করেছ এবং অশান্তি সৃষ্টিকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে। (সূরা ইউনুস - ৯০, ৯১)
দুনিয়াতে ঈমান না আনলে পরকালে পরিতাপ করতে হবে :
وَلَوْ تَرٰۤى اِذْ وُقِفُوْا عَلَى النَّارِ فَقَالُوْا يَا لَيْتَنَا نُرَدُّ وَلَا نُكَذِّبَ بِاٰيَاتِ رَبِّنَا وَنَكُوْنَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ
তুমি যদি দেখতে পেতে যখন তাদেরকে অগ্নির পার্শ্বে দাঁড় করানো হবে এবং তারা বলবে, হায়! যদি আমাদের প্রত্যাবর্তন ঘটত, তবে আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিদর্শনকে অস্বীকার করতাম না এবং আমরা মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। (সূরা আন‘আম- ২৭)
هَلْ يَنْظُرُوْنَ اِلَّاۤ اَنْ تَاْتِيَهُمُ الْمَلَآئِكَةُ اَوْ يَاْتِيَ رَبُّكَ اَوْ يَاْتِيَ بَعْضُ اٰيَاتِ رَبِّكَؕ يَوْمَ يَاْتِيْ بَعْضُ اٰيَاتِ رَبِّكَ لَا يَنْفَعُ نَفْسًا اِيْمَانُهَا لَمْ تَكُنْ اٰمَنَتْ مِنْ قَبْلُ اَوْ كَسَبَتْ فِۤيْ اِيْمَانِهَا خَيْرًاؕ قُلِ انْتَظِرُوْاۤ اِنَّا مُنْتَظِرُوْنَ
তারা কি শুধু এটাই প্রতীক্ষা করে যে, তাদের নিকট কোন ফেরেশতা আগমন করবে অথবা স্বয়ং তোমার প্রতিপালকই আগমন করবেন, কিংবা তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে কোন নিদর্শন আসবে। (জেনে রেখো) যেদিন তোমার প্রতিপালকের কোন নিদর্শন আসবে সেদিন তাদের ঈমান কোন কাজে আসবে না, যারা ইতোপূর্বে ঈমান আনেনি অথবা যারা তাদের ঈমান দ্বারা কোন কল্যাণ অর্জন করতে পারেনি। সুতরাং তুমি তাদেরকে বলে দাও যে, তোমরা প্রতীক্ষা করো এবং আমরাও প্রতীক্ষায় রইলাম। (সূরা আন‘আম- ১৫৮)
فَلَمَّا رَاَوْا بَاْسَنَا قَالُوْاۤ اٰمَنَّا بِاللهِ وَحْدَهٗ وَكَفَرْنَا بِمَا كُنَّا بِه مُشْرِكِيْنَ ‐ فَلَمْ يَكُ يَنْفَعُهُمْ اِيْمَانُهُمْ لَمَّا رَاَوْا بَاْسَنَا
অতঃপর যখন তারা আমার শাস্তি প্রত্যক্ষ করল তখন বলল, আমরা এক আল্লাহর প্রতিই ঈমান আনলাম এবং আমরা তাঁর সাথে যাদেরকে শরীক করতাম তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করলাম। কিন্তু যখন তারা আমার শাস্তি প্রত্যক্ষ করল, তখন তাদের ঈমান তাদের কোন উপকারে আসল না। (সূরা মু’মিন- ৮৪, ৮৫)
মৃত্যুর সময় ঈমান কবুল হয় না :
وَجَاوَزْنَا بِبَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ الْبَحْرَ فَاَتْبَعَهُمْ فِرْعَوْنُ وَجُنُوْدُهٗ بَغْيًا وَّعَدْوًاؕ حَتّٰۤى اِذَاۤ اَدْرَكَهُ الْغَرَقُ قَالَ اٰمَنْتُ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا الَّذِيۤ اٰمَنَتْ بِه بَنُوْاۤ اِسْرَآئِيْلَ وَاَنَا مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ ₋ آٰلْاٰنَ وَقَدْ عَصَيْتَ قَبْلُ وَكُنْتَ مِنَ الْمُفْسِدِيْنَ
আমি বনী ইসরাঈলকে সমুদ্র পার করালাম, অতঃপর ফিরাউন ও তার সৈন্যবাহিনী বিদ্বেষপরায়ণতা ও সীমালঙ্ঘন করে তাদের পিছু নিল। পরিশেষে যখন সে নিমজ্জিত হলো তখন বলল, বনী ইসরাঈলরা যার প্রতি ঈমান আনয়ন করেছে, আমিও তাঁর প্রতিই ঈমান আনয়ন করলাম। নিশ্চয় তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই এবং আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত। তখন আমি বললাম, এখন! অথচ ইতোপূর্বে তো তুমি অমান্য করেছ এবং অশান্তি সৃষ্টিকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে। (সূরা ইউনুস - ৯০, ৯১)
দুনিয়াতে ঈমান না আনলে পরকালে পরিতাপ করতে হবে :
وَلَوْ تَرٰۤى اِذْ وُقِفُوْا عَلَى النَّارِ فَقَالُوْا يَا لَيْتَنَا نُرَدُّ وَلَا نُكَذِّبَ بِاٰيَاتِ رَبِّنَا وَنَكُوْنَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ
তুমি যদি দেখতে পেতে যখন তাদেরকে অগ্নির পার্শ্বে দাঁড় করানো হবে এবং তারা বলবে, হায়! যদি আমাদের প্রত্যাবর্তন ঘটত, তবে আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিদর্শনকে অস্বীকার করতাম না এবং আমরা মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। (সূরা আন‘আম- ২৭)
যারা ঈমান আনে না তারা পথহারা হয়ে যায় :
وَمَنْ يَّكْفُرْ بِاللهِ وَمَلَآئِكَتِه وَكُتُبِه وَرُسُلِه وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا ۢبَعِيْدًا
যে ব্যক্তি আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ এবং আখিরাতকে প্রত্যাখ্যান করল, সে তো ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট হয়ে গেল। (সূরা নিসা- ১৩৬)
শয়তান তাদের বন্ধু হয়ে যায় :
اِنَّا جَعَلْنَا الشَّيَاطِيْنَ اَوْلِيَآءَ لِلَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ
যারা ঈমান আনয়ন করে না, শয়তানদেরকে আমি তাদের অভিভাবক বানিয়ে দিয়েছি। (সূরা আ‘রাফ- ২৭)
তারা হেদায়াত পায় না :
اِنَّ الَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِ لَا يَهْدِيْهِمُ اللهُ وَلَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
যারা আল্লাহর নিদর্শনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না, আল্লাহ তাদেরকে হেদায়াত দান করেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে মর্মান্তিক শাস্তি। (সূরা নাহল - ১০৪)
কোন উপদেশ তাদের কাজে আসে না :
قُلِ انْظُرُوْا مَاذَا فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِؕ وَمَا تُغْنِى الْاٰيَاتُ وَالنُّذُرُ عَنْ قَوْمٍ لَّا يُؤْمِنُوْنَ
তাদেরকে বলে দাও, তোমরা লক্ষ্য করো যে, আসমানসমূহ ও জমিনে কী কী জিনিস রয়েছে? কিন্তু যারা ঈমানই আনবে না, তাদের জন্য আল্লাহর এসব নিদর্শন ও পরকালের সতর্কবাণী কোনই উপকারে আসে না। (সূরা ইউনুস- ১০১)
তারা পৃথিবীর নিকৃষ্ট প্রাণী :
اِنَّ شَرَّ الدَّوَآبِّ عِنْدَ اللهِ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا فَهُمْ لَا يُؤْمِنُوْنَ
আল্লাহর নিকট নিকৃষ্ট জীব তারাই, যারা কুফরী করে এবং ঈমান আনে না। (সূরা আনফাল - ৫৫)
তাদের আমল নষ্ট হয়ে যায় :
وَمَنْ يَّكْفُرْ بِالْاِيْمَانِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهٗ وَهُوَ فِى الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
যে ব্যক্তি ঈমান প্রত্যাখ্যান করবে তার আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা মায়েদা - ৫)
ঈমান ছাড়া কোন আমলই কাজে আসে না :
اَجَعَلْتُمْ سِقَايَةَ الْحَآجِّ وَعِمَارَةَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ كَمَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَجَاهَدَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِؕ لَا يَسْتَوُوْنَ عِنْدَ اللهِ ؕ وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
হাজীদের জন্য পানি সরবরাহ এবং মাসজিদুল হারামের রক্ষণাবেক্ষণ করাকে তোমরা কি সেসব ব্যক্তির কাজের সমপরিমাণ মনে কর, যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান আনয়ন করে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করে? (মূলত) তারা আল্লাহর নিকট সমান নয়। আর আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথ প্রদর্শন করেন না। (সূরা তাওবা- ১৯)
قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُمْ بِالْاَخْسَرِيْنَ اَعْمَالًا ‐ اَلَّذِيْنَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُوْنَ اَنَّهُمْ يُحْسِنُوْنَ صُنْعًا ‐ - اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِاٰيَاتِ رَبِّهِمْ وَلِقَآئِه فَحَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْ فَلَا نُقِيْمُ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَزْنًا
(হে নবী!) তুমি তাদেরকে বলে দাও, আমি কি তোমাদেরকে এমন লোকদের ব্যাপারে সংবাদ দেব, যারা আমলের দিক থেকে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে? এরা হচ্ছে সেসব লোক, পার্থিব জীবনে যাদের সকল প্রচেষ্টা বিনষ্ট হয়ে গেছে; অথচ তারা ভাবছে যে, তারা সৎকর্মই করে যাচ্ছে। এরাই হচ্ছে সেসব লোক, যারা তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করে ও তাঁর সাথে তাদের সাক্ষাতের বিষয়টিকেও অস্বীকার করে। ফলে তাদের কর্ম নিষ্ফল হয়ে যায়; সুতরাং কিয়ামতের দিন তাদের জন্য ওজনের কোন ব্যবস্থাই রাখব না। (সূরা কাহফ, ১০৩-১০৫)
তারা জাহান্নামে যাবে :
وَمَنْ لَّمْ يُؤْمِنْ ۢبِاللهِ وَرَسُوْلِه فَاِنَّاۤ اَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِيْنَ سَعِيْرًا
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনয়ন করে না, এমন কাফিরদের জন্য আমি জ্বলন্ত আগুন প্রস্তুত করে রেখেছি। (সূরা ফাতহ - ১৩)
وَمَنْ يَّكْفُرْ بِاللهِ وَمَلَآئِكَتِه وَكُتُبِه وَرُسُلِه وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا ۢبَعِيْدًا
যে ব্যক্তি আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ এবং আখিরাতকে প্রত্যাখ্যান করল, সে তো ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট হয়ে গেল। (সূরা নিসা- ১৩৬)
শয়তান তাদের বন্ধু হয়ে যায় :
اِنَّا جَعَلْنَا الشَّيَاطِيْنَ اَوْلِيَآءَ لِلَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ
যারা ঈমান আনয়ন করে না, শয়তানদেরকে আমি তাদের অভিভাবক বানিয়ে দিয়েছি। (সূরা আ‘রাফ- ২৭)
তারা হেদায়াত পায় না :
اِنَّ الَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِ لَا يَهْدِيْهِمُ اللهُ وَلَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
যারা আল্লাহর নিদর্শনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না, আল্লাহ তাদেরকে হেদায়াত দান করেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে মর্মান্তিক শাস্তি। (সূরা নাহল - ১০৪)
কোন উপদেশ তাদের কাজে আসে না :
قُلِ انْظُرُوْا مَاذَا فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِؕ وَمَا تُغْنِى الْاٰيَاتُ وَالنُّذُرُ عَنْ قَوْمٍ لَّا يُؤْمِنُوْنَ
তাদেরকে বলে দাও, তোমরা লক্ষ্য করো যে, আসমানসমূহ ও জমিনে কী কী জিনিস রয়েছে? কিন্তু যারা ঈমানই আনবে না, তাদের জন্য আল্লাহর এসব নিদর্শন ও পরকালের সতর্কবাণী কোনই উপকারে আসে না। (সূরা ইউনুস- ১০১)
তারা পৃথিবীর নিকৃষ্ট প্রাণী :
اِنَّ شَرَّ الدَّوَآبِّ عِنْدَ اللهِ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا فَهُمْ لَا يُؤْمِنُوْنَ
আল্লাহর নিকট নিকৃষ্ট জীব তারাই, যারা কুফরী করে এবং ঈমান আনে না। (সূরা আনফাল - ৫৫)
তাদের আমল নষ্ট হয়ে যায় :
وَمَنْ يَّكْفُرْ بِالْاِيْمَانِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهٗ وَهُوَ فِى الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
যে ব্যক্তি ঈমান প্রত্যাখ্যান করবে তার আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা মায়েদা - ৫)
ঈমান ছাড়া কোন আমলই কাজে আসে না :
اَجَعَلْتُمْ سِقَايَةَ الْحَآجِّ وَعِمَارَةَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ كَمَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَجَاهَدَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِؕ لَا يَسْتَوُوْنَ عِنْدَ اللهِ ؕ وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
হাজীদের জন্য পানি সরবরাহ এবং মাসজিদুল হারামের রক্ষণাবেক্ষণ করাকে তোমরা কি সেসব ব্যক্তির কাজের সমপরিমাণ মনে কর, যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান আনয়ন করে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করে? (মূলত) তারা আল্লাহর নিকট সমান নয়। আর আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথ প্রদর্শন করেন না। (সূরা তাওবা- ১৯)
قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُمْ بِالْاَخْسَرِيْنَ اَعْمَالًا ‐ اَلَّذِيْنَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُوْنَ اَنَّهُمْ يُحْسِنُوْنَ صُنْعًا ‐ - اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِاٰيَاتِ رَبِّهِمْ وَلِقَآئِه فَحَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْ فَلَا نُقِيْمُ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَزْنًا
(হে নবী!) তুমি তাদেরকে বলে দাও, আমি কি তোমাদেরকে এমন লোকদের ব্যাপারে সংবাদ দেব, যারা আমলের দিক থেকে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে? এরা হচ্ছে সেসব লোক, পার্থিব জীবনে যাদের সকল প্রচেষ্টা বিনষ্ট হয়ে গেছে; অথচ তারা ভাবছে যে, তারা সৎকর্মই করে যাচ্ছে। এরাই হচ্ছে সেসব লোক, যারা তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করে ও তাঁর সাথে তাদের সাক্ষাতের বিষয়টিকেও অস্বীকার করে। ফলে তাদের কর্ম নিষ্ফল হয়ে যায়; সুতরাং কিয়ামতের দিন তাদের জন্য ওজনের কোন ব্যবস্থাই রাখব না। (সূরা কাহফ, ১০৩-১০৫)
তারা জাহান্নামে যাবে :
وَمَنْ لَّمْ يُؤْمِنْ ۢبِاللهِ وَرَسُوْلِه فَاِنَّاۤ اَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِيْنَ سَعِيْرًا
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনয়ন করে না, এমন কাফিরদের জন্য আমি জ্বলন্ত আগুন প্রস্তুত করে রেখেছি। (সূরা ফাতহ - ১৩)
ঈমানদাররা সর্বোত্তম সৃষ্টি :
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ اُولٰٓئِكَ هُمْ خَيْرُ الْبَرِيَّةِ
যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তারাই হচ্ছে সৃষ্টিকুলের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট। (সূরা বায়্যিনাহ- ৭)
তাদের জন্য রয়েছে সুমহান মর্যাদা :
وَمَنْ يَّاْتِه مُؤْمِنًا قَدْ عَمِلَ الصَّالِحَاتِ فَاُولٰٓئِكَ لَهُمُ الدَّرَجَاتُ الْعُلَا
যে ব্যক্তি মুমিন অবস্থায় সৎকর্ম নিয়ে উপস্থিত হবে, তাদের জন্য রয়েছে সুউচ্চমর্যাদা। (ত্বা-হা- ৭৫)
তাদের পুরস্কার হবে জান্নাত :
يَا عِبَادِ لَا خَوْفٌ عَلَيْكُمُ الْيَوْمَ وَلَاۤ اَنْتُمْ تَحْزَنُوْنَ ‐ اَلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا بِاٰيَاتِنَا وَكَانُوْا مُسْلِمِيْنَ ‐ اُدْخُلُوا الْجَنَّةَ اَنْتُمْ وَاَزْوَاجُكُمْ تُحْبَرُوْنَ
হে আমার বান্দাগণ! যারা আমার আয়াতসমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিলে এবং আত্মসমর্পণ করেছিলে, আজ তোমাদের কোন ভয় নেই এবং কোন চিন্তাও নেই। তোমরা এবং তোমাদের সহধর্মিনীরা জান্নাতে প্রবেশ করো, আজ তোমাদেরকে সন্তুষ্ট করা হবে। (সূরা যুখরুফ- ৬৯, ৭০)
جَزَآؤُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ جَنَّاتُ عَدْنٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَاۤ اَبَدًا
তাদের প্রতিদান তাদের প্রতিপালকের নিকট। আর তা হচ্ছে, জান্নাত; যা এমন এক আবাসস্থল যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়ে গেছে। সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে। (সূরা বায়্যিনাহ- ৮)
আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট :
رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ وَرَضُوْا عَنْهُؕ ذٰلِكَ لِمَنْ خَشِيَ رَبَّهٗ
আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। আর এটা তার জন্য, যে তার পালনকর্তাকে ভয় করে। (সূরা বায়্যিনাহ- ৮)
হাশরের ময়দানে তাদেরকে নূর দেয়া হবে :
يَوْمَ تَرَى الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ يَسْعٰى نُوْرُهُمْ بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَبِاَيْمَانِهِمْ بُشْرَاكُمُ الْيَوْمَ جَنَّاتٌ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَاؕ ذٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ
সেদিন (কিয়ামতের দিন) মুমিন নর-নারীদেরকে দেখবে যে, তাদের অগ্রভাগে ও ডান পার্শ্বে তাদের নূর প্রবাহিত হচ্ছে। (সেদিন তাদেরকে বলা হবে) আজ তোমাদের জন্য এমন জান্নাতের সুসংবাদ রয়েছে, যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত হবে, সেখানে তোমরা স্থায়ী হবে; আর এটাই হচ্ছে মহাসাফল্য। (সূরা হাদীদ - ১২)
তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতের সুসংবাদ :
وَبَشِّرِ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَنَّ لَهُمْ قَدَمَ صِدْقٍ عِنْدَ رَبِّهِمْ
যারা ঈমান আনয়ন করেছে তাদেরকে এ সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট প্রস্তুত রয়েছে উচ্চমর্যাদা! (সূরা ইউনুস - ২)
ঈমানদাররা নিয়ামতের প্রকৃত হকদার :
قُلْ مَنْ حَرَّمَ زِيْنَةَ اللهِ الَّتِيْۤ اَخْرَجَ لِعِبَادِه وَالطَّيِّبَاتِ مِنَ الرِّزْقِۚ قُلْ هِيَ لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا خَالِصَةً يَّوْمَ الْقِيَامَةِۚ كَذٰلِكَ نُفَصِّلُ الْاٰيَاتِ لِقَوْمٍ يَّعْلَمُوْنَ
(হে নবী!) বলো, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য যেসব সৌন্দর্য এবং পবিত্র রিযিকসমূহ দান করেছেন তা কে হারাম করেছে? বলো, যারা ঈমান এনেছে তাদের জন্য এগুলো হচেছ পার্থিব জীবনের জন্য সাধারণ পাওনা, কিন্তু কিয়ামতের দিন এগুলো এককভাবে তাদের জন্যই নির্ধারিত থাকবে। এভাবেই আমি জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শনসমূহকে বিশদভাবে বর্ণনা করে থাকি। (সূরা আ‘রাফ- ৩২)
ঈমানদাররা প্রকৃত সম্মানের অধিকারী :
وَلِلّٰهِ الْعِزَّةُ وَلِرَسُوْلِه وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ وَلٰكِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ
(সকল) মান-সম্মান কেবলমাত্র আল্লাহর, তাঁর রাসূল ও মুমিনদের জন্যই নির্দিষ্ট; কিন্তু মুনাফিকরা তা জানে না। (সূরা মুনাফিকূন- ৮)
আল্লাহ ঈমানদারদের অভিভাবক :
اَللهُ وَلِيُّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا يُخْرِجُهُمْ مِّنَ الظُّلُمَاتِ اِلَى النُّوْرِؕ وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اَوْلِيَآؤُهُمُ الطَّاغُوْتُ يُخْرِجُوْنَهُمْ مِّنَ النُّوْرِ اِلَى الظُّلُمَاتِ ؕ اُولٰٓئِكَ اَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ তাদের অভিভাবক; তিনি তাদেরকে অন্ধকারসমূহ হতে আলোর দিকে নিয়ে আসেন। আর যারা কাফির তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত; তারা তাদেরকে আলো থেকে অন্ধকারসমূহের দিকে নিয়ে যায়। আর তারাই হচ্ছে জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে। (সূরা বাক্বারা- ২৫৭)
ব্যাখ্যা : এখানে অন্ধকার বলতে মূর্খতা ও অজ্ঞতা বুঝানো হয়েছে। যে অন্ধকারে পথ হারিয়ে মানুষ নিজের কল্যাণ ও সাফল্যের পথ থেকে দূরে সরে যায় এবং নিজের শক্তি ও প্রচেষ্টাকে ভুল পথে পরিচালিত করে।
اِنَّ وَلِيِّيَ اللهُ الَّذِيْ نَزَّلَ الْكِتَابَ وَهُوَ يَتَوَلَّى الصَّالِحِيْنَ
আমার অভিভাবক তো আল্লাহ, যিনি কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। আর তিনিই সৎকর্মপরায়ণদের অভিভাবকত্ব করে থাকেন। (সূরা আ‘রাফ- ১৯৬)
ذٰلِكَ بِاَنَّ اللهَ مَوْلَى الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَاَنَّ الْكَافِرِيْنَ لَا مَوْلٰى لَهُمْ
এটা এজন্য যে, যারা ঈমান এনেছে আল্লাহই তাদের অভিভাবক; নিশ্চয় কাফিরদের কোন অভিভাবক নেই। (সূরা মুহাম্মাদ - ১১)
আল্লাহ ঈমানদারদেরকে সাহায্য করেন :
وَكَانَ حَقًّا عَلَيْنَا نَصْرُ الْمُؤْمِنِيْنَ
আমার কর্তব্য হচ্ছে মুমিনদেরকে সাহায্য করা। (সূরা রূম - ৪৭)
আল্লাহ ঈমানদারদেরকে বিপদ থেকে রক্ষা করেন :
ثُمَّ نُنَجِّيْ رُسُلَنَا وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كَذٰلِكَ حَقًّا عَلَيْنَا نُنْجِ الْمُؤْمِنِيْنَ
পরিশেষে আমি আমার রাসূলদেরকে এবং মুমিনদেরকে উদ্ধার করি। আর আমার দায়িত্ব হচ্ছে এভাবে মুমিনদেরকে উদ্ধার করা। (সূরা ইউনুস - ১০৩)
ঈমানদারদের উপর শয়তানের আধিপত্য চলে না :
اِنَّهٗ لَيْسَ لَهٗ سُلْطَانٌ عَلَى الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَلٰى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ
নিশ্চয় তার (শয়তানের) কোন আধিপত্য নেই তাদের উপর, যারা ঈমান আনে ও তাদের প্রতিপালকের উপরই নির্ভর করে। (সূরা নাহল- ৯৮)
ঈমানদার দাস-দাসীদেরও অনেক মর্যাদা রয়েছে :
وَلَاَمَةٌ مُّؤْمِنَةٌ خَيْرٌ مِّنْ مُّشْرِكَةٍ وَّلَوْ اَعْجَبَتْكُمْ
একজন ঈমানদার দাসী একজন স্বাধীন মুশরিক মহিলার চেয়ে উত্তম, যদিও ঐ মুশরিক মহিলা (রূপ-যৌবন দেখিয়ে) তোমাদেরকে আশ্চর্যান্বিত করে। (সূরা বাক্বারা- ২২১)
وَلَعَبْدٌ مُّؤْمِنٌ خَيْرٌ مِّنْ مُّشْرِكٍ وَّلَوْ اَعْجَبَكُمْ
একজন ঈমানদার দাসও একজন স্বাধীন মুশরিকের চেয়ে উত্তম, যদিও সে তোমাদেরকে আশ্চর্যান্বিত করে। (সূরা বাক্বারা- ২২১)
ঈমানদারদের পুরস্কার নষ্ট করা হয় না :
وَاَنَّ اللهَ لَا يُضِيْعُ اَجْرَ الْمُؤْمِنِيْنَ
নিশ্চয় আল্লাহ ঈমানদারদের প্রতিদান বিনষ্ট করেন না। (সূরা আলে ইমরান - ১৭১)
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ اِنَّا لَا نُضِيْعُ اَجْرَ مَنْ اَحْسَنَ عَمَلًا
যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম সম্পাদন করে আমি এমন উত্তম আমলকারীদের আমল নষ্ট করি না। (সূরা কাহফ- ৩০)
ঈমানের মর্যাদা ও পুরস্কারে নারী-পুরুষ সমান :
مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهٗ حَيَاةً طَيِّبَةًۚ وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ اَجْرَهُمْ بِاَحْسَنِ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
পুরুষ ও নারীদের মধ্যে মুমিন অবস্থায় যে-ই সৎকর্ম করবে অবশ্যই তাকে আমি পবিত্র জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব। (সূরা নাহল- ৯৭)
وَمَنْ يَّعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ مِنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَاُولٰٓئِكَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ وَلَا يُظْلَمُوْنَ نَقِيْرًا
পুরুষ ও নারীদের মধ্যে মুমিন অবস্থায় যে-ই সৎকর্ম করবে তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি বিন্দুপরিমাণও যুলুম করা হবে না। (সূরা নিসা- ১২৪)
مَنْ عَمِلَ سَيِّئَةً فَلَا يُجْزٰۤى اِلَّا مِثْلَهَاۚ وَمَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَاُولٰٓئِكَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ يُرْزَقُوْنَ فِيْهَا بِغَيْرِ حِسَابٍ
যে ব্যক্তি মন্দ আমল করবে সে শুধু তার আমলের সমপরিমানই শাস্তি পাবে এবং পুরুষ ও নারীর মধ্যে মুমিন অবস্থায় যে ব্যক্তিই সৎকর্ম করবে তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে, সেখানে তারা অসংখ্য রিযিকপ্রাপ্ত হবে। (সূরা মু’মিন- ৪০)
মুমিন নারী-পুরুষ সবার জন্য জান্নাতের প্রতিশ্রুতি :
وَعَدَ اللهُ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِيْ جَنَّاتِ عَدْنٍؕ وَرِضْوَانٌ مِّنَ اللهِ اَكْبَرُؕ ذٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ
আল্লাহ মুমিন নর ও মুমিন নারীকে এমন এক জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে, সেখানে তারা চিরদিন অবস্থান করবে। আর চিরস্থায়ী জান্নাতে তাদের জন্য সুন্দর সুন্দর বাসস্থানের ব্যবস্থা থাকবে। সেদিন বান্দার প্রতি আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত হবে তাদের উপর আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর এটাই হবে সবচেয়ে বড় সাফল্য। (সূরা তাওবা- ৭২)
ঈমানদারদের জন্য ফেরেশতাগণ দু‘আ করে :
اَلَّذِيْنَ يَحْمِلُوْنَ الْعَرْشَ وَمَنْ حَوْلَهٗ يُسَبِّحُوْنَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَيُؤْمِنُوْنَ بِهٖ وَيَسْتَغْفِرُوْنَ لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۚ رَبَّنَا وَسِعْتَ كُلَّ شَيْءٍ رَّحْمَةً وَّعِلْمًا فَاغْفِرْ لِلَّذِيْنَ تَابُوْا وَاتَّبَعُوْا سَبِيْلَكَ وَقِهِمْ عَذَابَ الْجَحِيْمِ
যারা আরশ বহন করে আছে এবং যারা এর চারপাশে রয়েছে, তারা প্রশংসার সাথে তাদের প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে, তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং মুমিনদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে। (তারা বলে) হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি সকল কিছুকেই (আপনার) জ্ঞান ও রহমত দ্বারা পরিবেষ্টন করে আছেন। অতএব যারা আপনার পথের অনুসরণ করে, আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা করুন। (সূরা মু’মিন- ৭)
ব্যাখ্যা : এখানে মুমিনদেরকে সান্ত্বনা দিয়ে বলা হয়েছে, তোমরা এমন মর্যাদার অধিকারী যে, আল্লাহর আরশের ধারক এবং আরশের চারপাশে অবস্থানরত ফেরেশতারা পর্যন্ত তোমাদের সহযোগী। তারা তোমাদের জন্য মহান আল্লাহর কাছে সুপারিশ করছে। এখানে সাধারণ ফেরেশতাদের কথা না বলে আল্লাহর আরশের ধারক ও তাঁর চারপাশে অবস্থানকারী ফেরেশতাদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এ ধারণা দেয়ার জন্য যে, মহান আল্লাহর বিশাল সাম্রাজ্যের কর্মচারীরা তো বটেই, এমনকি তাঁর সান্নিধ্যে অবস্থানরত নৈকট্য লাভকারী ফেরেশতারা পর্যন্ত তোমাদের প্রতি সমবেদনা পোষণ করে এবং ঈমানদারদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে। এ থেকে বুঝা যায় যে, ঈমানের বন্ধনই প্রকৃত বন্ধন, যা আসমান ও জমিনবাসীদেরকে পরস্পর একই সূত্রে গেঁথে দিয়েছে।
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ اُولٰٓئِكَ هُمْ خَيْرُ الْبَرِيَّةِ
যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তারাই হচ্ছে সৃষ্টিকুলের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট। (সূরা বায়্যিনাহ- ৭)
তাদের জন্য রয়েছে সুমহান মর্যাদা :
وَمَنْ يَّاْتِه مُؤْمِنًا قَدْ عَمِلَ الصَّالِحَاتِ فَاُولٰٓئِكَ لَهُمُ الدَّرَجَاتُ الْعُلَا
যে ব্যক্তি মুমিন অবস্থায় সৎকর্ম নিয়ে উপস্থিত হবে, তাদের জন্য রয়েছে সুউচ্চমর্যাদা। (ত্বা-হা- ৭৫)
তাদের পুরস্কার হবে জান্নাত :
يَا عِبَادِ لَا خَوْفٌ عَلَيْكُمُ الْيَوْمَ وَلَاۤ اَنْتُمْ تَحْزَنُوْنَ ‐ اَلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا بِاٰيَاتِنَا وَكَانُوْا مُسْلِمِيْنَ ‐ اُدْخُلُوا الْجَنَّةَ اَنْتُمْ وَاَزْوَاجُكُمْ تُحْبَرُوْنَ
হে আমার বান্দাগণ! যারা আমার আয়াতসমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিলে এবং আত্মসমর্পণ করেছিলে, আজ তোমাদের কোন ভয় নেই এবং কোন চিন্তাও নেই। তোমরা এবং তোমাদের সহধর্মিনীরা জান্নাতে প্রবেশ করো, আজ তোমাদেরকে সন্তুষ্ট করা হবে। (সূরা যুখরুফ- ৬৯, ৭০)
جَزَآؤُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ جَنَّاتُ عَدْنٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَاۤ اَبَدًا
তাদের প্রতিদান তাদের প্রতিপালকের নিকট। আর তা হচ্ছে, জান্নাত; যা এমন এক আবাসস্থল যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়ে গেছে। সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে। (সূরা বায়্যিনাহ- ৮)
আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট :
رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ وَرَضُوْا عَنْهُؕ ذٰلِكَ لِمَنْ خَشِيَ رَبَّهٗ
আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। আর এটা তার জন্য, যে তার পালনকর্তাকে ভয় করে। (সূরা বায়্যিনাহ- ৮)
হাশরের ময়দানে তাদেরকে নূর দেয়া হবে :
يَوْمَ تَرَى الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ يَسْعٰى نُوْرُهُمْ بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَبِاَيْمَانِهِمْ بُشْرَاكُمُ الْيَوْمَ جَنَّاتٌ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَاؕ ذٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ
সেদিন (কিয়ামতের দিন) মুমিন নর-নারীদেরকে দেখবে যে, তাদের অগ্রভাগে ও ডান পার্শ্বে তাদের নূর প্রবাহিত হচ্ছে। (সেদিন তাদেরকে বলা হবে) আজ তোমাদের জন্য এমন জান্নাতের সুসংবাদ রয়েছে, যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত হবে, সেখানে তোমরা স্থায়ী হবে; আর এটাই হচ্ছে মহাসাফল্য। (সূরা হাদীদ - ১২)
তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতের সুসংবাদ :
وَبَشِّرِ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَنَّ لَهُمْ قَدَمَ صِدْقٍ عِنْدَ رَبِّهِمْ
যারা ঈমান আনয়ন করেছে তাদেরকে এ সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট প্রস্তুত রয়েছে উচ্চমর্যাদা! (সূরা ইউনুস - ২)
ঈমানদাররা নিয়ামতের প্রকৃত হকদার :
قُلْ مَنْ حَرَّمَ زِيْنَةَ اللهِ الَّتِيْۤ اَخْرَجَ لِعِبَادِه وَالطَّيِّبَاتِ مِنَ الرِّزْقِۚ قُلْ هِيَ لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا خَالِصَةً يَّوْمَ الْقِيَامَةِۚ كَذٰلِكَ نُفَصِّلُ الْاٰيَاتِ لِقَوْمٍ يَّعْلَمُوْنَ
(হে নবী!) বলো, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য যেসব সৌন্দর্য এবং পবিত্র রিযিকসমূহ দান করেছেন তা কে হারাম করেছে? বলো, যারা ঈমান এনেছে তাদের জন্য এগুলো হচেছ পার্থিব জীবনের জন্য সাধারণ পাওনা, কিন্তু কিয়ামতের দিন এগুলো এককভাবে তাদের জন্যই নির্ধারিত থাকবে। এভাবেই আমি জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শনসমূহকে বিশদভাবে বর্ণনা করে থাকি। (সূরা আ‘রাফ- ৩২)
ঈমানদাররা প্রকৃত সম্মানের অধিকারী :
وَلِلّٰهِ الْعِزَّةُ وَلِرَسُوْلِه وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ وَلٰكِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ
(সকল) মান-সম্মান কেবলমাত্র আল্লাহর, তাঁর রাসূল ও মুমিনদের জন্যই নির্দিষ্ট; কিন্তু মুনাফিকরা তা জানে না। (সূরা মুনাফিকূন- ৮)
আল্লাহ ঈমানদারদের অভিভাবক :
اَللهُ وَلِيُّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا يُخْرِجُهُمْ مِّنَ الظُّلُمَاتِ اِلَى النُّوْرِؕ وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اَوْلِيَآؤُهُمُ الطَّاغُوْتُ يُخْرِجُوْنَهُمْ مِّنَ النُّوْرِ اِلَى الظُّلُمَاتِ ؕ اُولٰٓئِكَ اَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ তাদের অভিভাবক; তিনি তাদেরকে অন্ধকারসমূহ হতে আলোর দিকে নিয়ে আসেন। আর যারা কাফির তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত; তারা তাদেরকে আলো থেকে অন্ধকারসমূহের দিকে নিয়ে যায়। আর তারাই হচ্ছে জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে। (সূরা বাক্বারা- ২৫৭)
ব্যাখ্যা : এখানে অন্ধকার বলতে মূর্খতা ও অজ্ঞতা বুঝানো হয়েছে। যে অন্ধকারে পথ হারিয়ে মানুষ নিজের কল্যাণ ও সাফল্যের পথ থেকে দূরে সরে যায় এবং নিজের শক্তি ও প্রচেষ্টাকে ভুল পথে পরিচালিত করে।
اِنَّ وَلِيِّيَ اللهُ الَّذِيْ نَزَّلَ الْكِتَابَ وَهُوَ يَتَوَلَّى الصَّالِحِيْنَ
আমার অভিভাবক তো আল্লাহ, যিনি কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। আর তিনিই সৎকর্মপরায়ণদের অভিভাবকত্ব করে থাকেন। (সূরা আ‘রাফ- ১৯৬)
ذٰلِكَ بِاَنَّ اللهَ مَوْلَى الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَاَنَّ الْكَافِرِيْنَ لَا مَوْلٰى لَهُمْ
এটা এজন্য যে, যারা ঈমান এনেছে আল্লাহই তাদের অভিভাবক; নিশ্চয় কাফিরদের কোন অভিভাবক নেই। (সূরা মুহাম্মাদ - ১১)
আল্লাহ ঈমানদারদেরকে সাহায্য করেন :
وَكَانَ حَقًّا عَلَيْنَا نَصْرُ الْمُؤْمِنِيْنَ
আমার কর্তব্য হচ্ছে মুমিনদেরকে সাহায্য করা। (সূরা রূম - ৪৭)
আল্লাহ ঈমানদারদেরকে বিপদ থেকে রক্ষা করেন :
ثُمَّ نُنَجِّيْ رُسُلَنَا وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كَذٰلِكَ حَقًّا عَلَيْنَا نُنْجِ الْمُؤْمِنِيْنَ
পরিশেষে আমি আমার রাসূলদেরকে এবং মুমিনদেরকে উদ্ধার করি। আর আমার দায়িত্ব হচ্ছে এভাবে মুমিনদেরকে উদ্ধার করা। (সূরা ইউনুস - ১০৩)
ঈমানদারদের উপর শয়তানের আধিপত্য চলে না :
اِنَّهٗ لَيْسَ لَهٗ سُلْطَانٌ عَلَى الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَلٰى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ
নিশ্চয় তার (শয়তানের) কোন আধিপত্য নেই তাদের উপর, যারা ঈমান আনে ও তাদের প্রতিপালকের উপরই নির্ভর করে। (সূরা নাহল- ৯৮)
ঈমানদার দাস-দাসীদেরও অনেক মর্যাদা রয়েছে :
وَلَاَمَةٌ مُّؤْمِنَةٌ خَيْرٌ مِّنْ مُّشْرِكَةٍ وَّلَوْ اَعْجَبَتْكُمْ
একজন ঈমানদার দাসী একজন স্বাধীন মুশরিক মহিলার চেয়ে উত্তম, যদিও ঐ মুশরিক মহিলা (রূপ-যৌবন দেখিয়ে) তোমাদেরকে আশ্চর্যান্বিত করে। (সূরা বাক্বারা- ২২১)
وَلَعَبْدٌ مُّؤْمِنٌ خَيْرٌ مِّنْ مُّشْرِكٍ وَّلَوْ اَعْجَبَكُمْ
একজন ঈমানদার দাসও একজন স্বাধীন মুশরিকের চেয়ে উত্তম, যদিও সে তোমাদেরকে আশ্চর্যান্বিত করে। (সূরা বাক্বারা- ২২১)
ঈমানদারদের পুরস্কার নষ্ট করা হয় না :
وَاَنَّ اللهَ لَا يُضِيْعُ اَجْرَ الْمُؤْمِنِيْنَ
নিশ্চয় আল্লাহ ঈমানদারদের প্রতিদান বিনষ্ট করেন না। (সূরা আলে ইমরান - ১৭১)
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ اِنَّا لَا نُضِيْعُ اَجْرَ مَنْ اَحْسَنَ عَمَلًا
যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম সম্পাদন করে আমি এমন উত্তম আমলকারীদের আমল নষ্ট করি না। (সূরা কাহফ- ৩০)
ঈমানের মর্যাদা ও পুরস্কারে নারী-পুরুষ সমান :
مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهٗ حَيَاةً طَيِّبَةًۚ وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ اَجْرَهُمْ بِاَحْسَنِ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
পুরুষ ও নারীদের মধ্যে মুমিন অবস্থায় যে-ই সৎকর্ম করবে অবশ্যই তাকে আমি পবিত্র জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব। (সূরা নাহল- ৯৭)
وَمَنْ يَّعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ مِنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَاُولٰٓئِكَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ وَلَا يُظْلَمُوْنَ نَقِيْرًا
পুরুষ ও নারীদের মধ্যে মুমিন অবস্থায় যে-ই সৎকর্ম করবে তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি বিন্দুপরিমাণও যুলুম করা হবে না। (সূরা নিসা- ১২৪)
مَنْ عَمِلَ سَيِّئَةً فَلَا يُجْزٰۤى اِلَّا مِثْلَهَاۚ وَمَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَاُولٰٓئِكَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ يُرْزَقُوْنَ فِيْهَا بِغَيْرِ حِسَابٍ
যে ব্যক্তি মন্দ আমল করবে সে শুধু তার আমলের সমপরিমানই শাস্তি পাবে এবং পুরুষ ও নারীর মধ্যে মুমিন অবস্থায় যে ব্যক্তিই সৎকর্ম করবে তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে, সেখানে তারা অসংখ্য রিযিকপ্রাপ্ত হবে। (সূরা মু’মিন- ৪০)
মুমিন নারী-পুরুষ সবার জন্য জান্নাতের প্রতিশ্রুতি :
وَعَدَ اللهُ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِيْ جَنَّاتِ عَدْنٍؕ وَرِضْوَانٌ مِّنَ اللهِ اَكْبَرُؕ ذٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ
আল্লাহ মুমিন নর ও মুমিন নারীকে এমন এক জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে, সেখানে তারা চিরদিন অবস্থান করবে। আর চিরস্থায়ী জান্নাতে তাদের জন্য সুন্দর সুন্দর বাসস্থানের ব্যবস্থা থাকবে। সেদিন বান্দার প্রতি আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত হবে তাদের উপর আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর এটাই হবে সবচেয়ে বড় সাফল্য। (সূরা তাওবা- ৭২)
ঈমানদারদের জন্য ফেরেশতাগণ দু‘আ করে :
اَلَّذِيْنَ يَحْمِلُوْنَ الْعَرْشَ وَمَنْ حَوْلَهٗ يُسَبِّحُوْنَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَيُؤْمِنُوْنَ بِهٖ وَيَسْتَغْفِرُوْنَ لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۚ رَبَّنَا وَسِعْتَ كُلَّ شَيْءٍ رَّحْمَةً وَّعِلْمًا فَاغْفِرْ لِلَّذِيْنَ تَابُوْا وَاتَّبَعُوْا سَبِيْلَكَ وَقِهِمْ عَذَابَ الْجَحِيْمِ
যারা আরশ বহন করে আছে এবং যারা এর চারপাশে রয়েছে, তারা প্রশংসার সাথে তাদের প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে, তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং মুমিনদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে। (তারা বলে) হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি সকল কিছুকেই (আপনার) জ্ঞান ও রহমত দ্বারা পরিবেষ্টন করে আছেন। অতএব যারা আপনার পথের অনুসরণ করে, আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা করুন। (সূরা মু’মিন- ৭)
ব্যাখ্যা : এখানে মুমিনদেরকে সান্ত্বনা দিয়ে বলা হয়েছে, তোমরা এমন মর্যাদার অধিকারী যে, আল্লাহর আরশের ধারক এবং আরশের চারপাশে অবস্থানরত ফেরেশতারা পর্যন্ত তোমাদের সহযোগী। তারা তোমাদের জন্য মহান আল্লাহর কাছে সুপারিশ করছে। এখানে সাধারণ ফেরেশতাদের কথা না বলে আল্লাহর আরশের ধারক ও তাঁর চারপাশে অবস্থানকারী ফেরেশতাদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এ ধারণা দেয়ার জন্য যে, মহান আল্লাহর বিশাল সাম্রাজ্যের কর্মচারীরা তো বটেই, এমনকি তাঁর সান্নিধ্যে অবস্থানরত নৈকট্য লাভকারী ফেরেশতারা পর্যন্ত তোমাদের প্রতি সমবেদনা পোষণ করে এবং ঈমানদারদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে। এ থেকে বুঝা যায় যে, ঈমানের বন্ধনই প্রকৃত বন্ধন, যা আসমান ও জমিনবাসীদেরকে পরস্পর একই সূত্রে গেঁথে দিয়েছে।
আল্লাহ মুমিনদেরকে পরীক্ষা করে থাকেন :
اَحَسِبَ النَّاسُ اَنْ يُّتْرَكُوْاۤ اَنْ يَّقُوْلُوْاۤ اٰمَنَّا وَهُمْ لَا يُفْتَنُوْنَ ‐ -وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَلَيَعْلَمَنَّ اللهُ الَّذِيْنَ صَدَقُوْا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِيْنَ
মানুষ কি মনে করে যে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ এ কথা বললেই তাদেরকে পরীক্ষা না করে ছেড়ে দেয়া হবে? আমি তো তাদের পূর্ববর্তীদেরকেও পরীক্ষা করেছিলাম। আল্লাহ অবশ্যই প্রকাশ করে দেবেন যে, কারা সত্যবাদী এবং কারা মিথ্যাবাদী। (সূরা আনকাবূত- ২, ৩)
ব্যাখ্যা : মহান আল্লাহ মুমিনদেরকে বুঝাতে চান যে, ইহকালীন ও পরকালীন সাফল্য অর্জনের জন্য আমার যে সমস্ত প্রতিশ্রুতি রয়েছে কোন ব্যক্তি নিছক মৌখিক ঈমানের দাবীর মাধ্যমে এসবের অধিকারী হতে পারবে না। প্রত্যেক দাবীদারকে অনিবার্যভাবে পরীক্ষার বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করতেই হবে। এভাবে তাকে নিজের দাবীর সত্যতার প্রমাণ পেশ করতে হবে। আমার জান্নাত এত সস্তা নয় এবং দুনিয়াতেও আমার বিশেষ অনুগ্রহ এত অনায়াসলব্ধ নয় যে, তোমরা কেবল মুখে আমার প্রতি ঈমান আনার কথা উচ্চারণ করবে আর অমনিই আমি তোমাদেরকে সেসব দান করে দেব। এসব পেতে হলে বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করতে হবে, বিপদাপদ ও সংকটের মুকাবিলা করতে হবে। ভয় ও আশঙ্কা দিয়েও পরীক্ষা করা হবে। যেসব জিনিস পছন্দ কর, তা আমার সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করতে হবে। আমার জন্য প্রত্যেকটি কষ্ট সহ্য করতে হবে। তারপরেই তোমরা আমাকে মানার যে দাবী করেছিলে তার সত্যতা যাচাই হবে। এ আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদের মনে এ সত্যটি গেঁথে দিয়েছেন যে, পরীক্ষাই হচ্ছে এমন একটি মানদন্ড যার মাধ্যমে ভেজাল ও নির্ভেজাল যাচাই করা যায়। ভেজাল নিজে নিজেই আল্লাহর পথ থেকে সরে যায়। অতঃপর নির্ভেজালকে বাছাই করে নিয়ে এমনসব পুরস্কার লাভের যোগ্য করা হয়, যেগুলো কেবল সত্য ঈমানদারদের জন্যই নির্ধারিত।
অতীতের মুমিনরাও পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিলেন :
اَمْ حَسِبْتُمْ اَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَاْتِكُمْ مَّثَلُ الَّذِيْنَ خَلَوْا مِنْ قَبْلِكُمْؕ مَسَّتْهُمُ الْبَاْسَآءُ وَالضَّرَّآءُ وَزُلْزِلُوْا حَتّٰى يَقُوْلَ الرَّسُوْلُ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَعَهٗ مَتٰى نَصْرُ اللهِؕ اَ لَاۤ اِنَّ نَصْرَ اللهِ قَرِيْبٌ
তোমরা কি ধারণা করেছ যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করে ফেলবে? অথচ তোমাদের পূর্ববর্তীদের মতো (সংকটময় অবস্থা) এখনো তোমাদের উপর আসেনি। তাদেরকে বিপদ ও দুঃখ স্পর্শ করেছিল এমনকি তাদেরকে কাঁপিয়ে তুলা হয়েছিল। অবশেষে রাসূল ও তার সাথে ঈমান আনয়নকারীরা বলে ফেলেছিল যে, কখন আল্লাহর সাহায্য আসবে? শুনে নাও, নিশ্চয় আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটবর্তী। (সূরা বাক্বারা- ২১৪)
ব্যাখ্যা : ঈমানদারদের পরীক্ষা করা কোন নতুন ব্যাপার নয়। ইতিহাসে সবসময় এমনটিই হয়ে এসেছে। যে ব্যক্তিই ঈমানের দাবী করেছে তাকে অবশ্যই পরীক্ষার অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করে দগ্ধ করা হয়েছে। দুনিয়ার যে কোন দেশে যখনই নবীদের আবির্ভাব ঘটেছে তখনই তাঁরা ও তাঁদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারী মুসলিমরা আল্লাহদ্রোহী মানবসমাজের কঠোর বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছেন। তাঁরা কোন অবস্থায়ই নিজেদের প্রাণের পরোয়া করেননি। বাতিল পদ্ধতির বিরুদ্ধে কঠোর সংগ্রাম করে তাওহীদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। এ দ্বীন প্রতিষ্ঠার পথ কখনো ফুলশয্যা ছিল না। ইসলামকে নিজের জীবনবিধান হিসেবে মেনে নেয়ার পর কেউ নিশ্চিন্তে আরামে বসে থাকতে পারেনি। প্রতি যুগে মুসলিমদেরকে ইসলামী জীবনবিধান প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম চালাতে হয়েছে। যেসব শয়তানী ও বিদ্রোহী শক্তি সে সংগ্রামের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে তার শক্তির দর্প চূর্ণ করার জন্য ঈমানদারদেরকে পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করতে হয়েছে।
খাববাব ইবনে আরাত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা নবী ﷺ এর নিকট (আমাদের দুঃখ-দুর্দশা সম্পর্কে) অভিযোগ করলাম। তখন তিনি নিজের চাদরটাকে বালিশ বানিয়ে কা‘বাঘরের ছায়ায় বিশ্রাম করছিলেন। আমরা তাঁকে বললাম, আপনি কি আমাদের জন্য আল্লাহর নিকট সাহায্য কামনা করবেন না? আপনি কি আমাদের জন্য আল্লাহর নিকট দু‘আ করবেন না? নবী ﷺ বললেন, তোমাদের আর এমন কী দুর্দশা হয়েছে? তোমাদের পূর্বে যারা ঈমানদার ছিল, তাদের কারো জন্য মাটিতে গর্ত খোঁড়া হতো, তারপর তাকে সে গর্তের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রাখা হতো; তারপর করাত আনা হতো এবং তা তার মাথার উপর স্থাপন করে তাকে দ্বিখন্ডিত করা হতো। তবুও এ অমানুষিক নির্যাতন তাকে তার দ্বীন থেকে ফেরাতে পারত না। আবার কারো শরীরে লোহার চিরুণী দ্বারা আঁচড়ে হাড় পর্যন্ত যাবতীয় মাংস তুলে ফেলা হতো। তবুও এটা তাকে তার দ্বীন থেকে ফেরাতে পারত না। আল্লাহর কসম! নিশ্চয় এ দ্বীন পূর্ণতা লাভ করবে। (তখন সর্বত্র এতটা নিরাপত্তা বিরাজ করবে যে) কোন উষ্ট্রারোহী সান‘আ থেকে হাযরামাওত পর্যন্ত দীর্ঘ পথ নির্বিঘ্নে অতিক্রম করবে। তখন সে নিজের নিরাপত্তার ব্যাপারে আল্লাহ ছাড়া অপর কারো এবং নিজের মেষপালের ব্যাপারে নেকড়ে ছাড়া অন্য কিছুরই ভয় করবে না। কিন্তু তোমরা (এ সময়টার আগমনের ব্যাপারে) তাড়াহুড়া করছ। (সহীহ বুখারী, হা/৩৬১২)
পরীক্ষার মাধ্যমেই আল্লাহ মুমিনদেরকে বাছাই করেন :
اَمْ حَسِبْتُمْ اَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ اللهُ الَّذِيْنَ جَاهَدُوْا مِنْكُمْ وَيَعْلَمَ الصَّابِرِيْنَ
তোমরা কি ধারণা করছ যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ তোমাদের মধ্য হতে কারা জিহাদ করে তাদের ব্যাপারে আল্লাহ অবগত হবেন না এবং ধৈর্যশীলদের সম্পর্কেও জেনে নেবেন না? (সূরা আলে ইমরান- ১৪২)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ হক ও বাতিল এবং সত্য ও মিথ্যার সংঘাতের যে বিধান তৈরি করে দিয়েছেন, তা পাল্টে দেয়ার ক্ষমতা কারো নেই। সত্যপন্থীদের অবশ্যই দীর্ঘকাল পরীক্ষার আগুনে ঝালাই হতে হবে। তাদেরকে নিজেদের ধৈর্য, সহিষ্ণুতা, সততা, সত্যবাদিতা, ত্যাগ, ঈমানী দৃঢ়তা ও আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীলতার পরীক্ষা দিতে হবে। বিপদ, মুসীবত, সমস্যা ও সংকটের কঠিন পথ অতিক্রম করার গুণাবলি তাদের মধ্যে সৃষ্টি করতে হবে। তাদেরকে নির্ভেজাল উন্নত নৈতিক গুণাবলি ও সচ্চরিত্রের অস্ত্র ব্যবহার করে জাহেলিয়াতের উপর বিজয় লাভ করতে হবে। এভাবে নিজেদেরকে সংস্কারক হিসেবে প্রমাণ করতে পারলেই আল্লাহর সাহায্য তাদের জন্য এগিয়ে আসবে।
আল্লাহ বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করেন :
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوْفِ وَالْجُوْعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الْاَمْوَالِ وَالْاَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِؕ وَبَشِّرِ الصَّابِرِيْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ اِذَاۤ اَصَابَتْهُمْ مُّصِيْبَةٌ قَالُوْاۤ اِنَّا لِلّٰهِ وَاِنَّاۤ اِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ
নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করব ভয়, ক্ষুধা, ধন, প্রাণ ও ফসলের অভাবের দ্বারা। সুতরাং আপনি ধৈর্যশীলদেরকে সুসংবাদ প্রদান করুন। (কেননা) যখন তাদের উপর কোন বিপদ আসে তখন তারা বলে, নিশ্চয় আমরা আল্লাহরই জন্য এবং আমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। (সূরা বাক্বারা- ১৫৫, ১৫৬)
لَتُبْلَوُنَّ فِۤيْ اَمْوَالِكُمْ وَاَنْفُسِكُمْؕ وَلَتَسْمَعُنَّ مِنَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَمِنَ الَّذِيْنَ اَشْرَكُوْاۤ اَذًى كَثِيْرًاؕ وَاِنْ تَصْبِرُوْا وَتَتَّقُوْا فَاِنَّ ذٰلِكَ مِنْ عَزْمِ الْاُمُوْرِ
অবশ্যই তোমরা তোমাদের ধনসম্পদ ও তোমাদের জীবন দ্বারা পরীক্ষিত হবে। তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে ও যারা শিরক করেছে, তাদের নিকট হতে তোমাদেরকে বহু দুঃখজনক বাক্য শুনতে হবে। আর যদি তোমরা ধৈর্যধারণ কর ও সংযমী হও, তবে অবশ্যই এটা সুদৃঢ় কার্যাবলির অন্তর্গত। (সূরা আলে ইমরান- ১৮৬)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ তাদের গালাগাল, মিথ্যা দোষারোপ, বেহুদা কথাবার্তা ও অপপ্রচারের মুকাবিলায় অধৈর্য হয়ে তোমরা এমন কোন কথা বলতে শুরু করো না, যা সত্য, ন্যায় ও শিষ্টাচার বিরোধী। বরং সর্বক্ষেত্রে তোমাদেরকে ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে।
اَحَسِبَ النَّاسُ اَنْ يُّتْرَكُوْاۤ اَنْ يَّقُوْلُوْاۤ اٰمَنَّا وَهُمْ لَا يُفْتَنُوْنَ ‐ -وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَلَيَعْلَمَنَّ اللهُ الَّذِيْنَ صَدَقُوْا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِيْنَ
মানুষ কি মনে করে যে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ এ কথা বললেই তাদেরকে পরীক্ষা না করে ছেড়ে দেয়া হবে? আমি তো তাদের পূর্ববর্তীদেরকেও পরীক্ষা করেছিলাম। আল্লাহ অবশ্যই প্রকাশ করে দেবেন যে, কারা সত্যবাদী এবং কারা মিথ্যাবাদী। (সূরা আনকাবূত- ২, ৩)
ব্যাখ্যা : মহান আল্লাহ মুমিনদেরকে বুঝাতে চান যে, ইহকালীন ও পরকালীন সাফল্য অর্জনের জন্য আমার যে সমস্ত প্রতিশ্রুতি রয়েছে কোন ব্যক্তি নিছক মৌখিক ঈমানের দাবীর মাধ্যমে এসবের অধিকারী হতে পারবে না। প্রত্যেক দাবীদারকে অনিবার্যভাবে পরীক্ষার বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করতেই হবে। এভাবে তাকে নিজের দাবীর সত্যতার প্রমাণ পেশ করতে হবে। আমার জান্নাত এত সস্তা নয় এবং দুনিয়াতেও আমার বিশেষ অনুগ্রহ এত অনায়াসলব্ধ নয় যে, তোমরা কেবল মুখে আমার প্রতি ঈমান আনার কথা উচ্চারণ করবে আর অমনিই আমি তোমাদেরকে সেসব দান করে দেব। এসব পেতে হলে বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করতে হবে, বিপদাপদ ও সংকটের মুকাবিলা করতে হবে। ভয় ও আশঙ্কা দিয়েও পরীক্ষা করা হবে। যেসব জিনিস পছন্দ কর, তা আমার সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করতে হবে। আমার জন্য প্রত্যেকটি কষ্ট সহ্য করতে হবে। তারপরেই তোমরা আমাকে মানার যে দাবী করেছিলে তার সত্যতা যাচাই হবে। এ আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদের মনে এ সত্যটি গেঁথে দিয়েছেন যে, পরীক্ষাই হচ্ছে এমন একটি মানদন্ড যার মাধ্যমে ভেজাল ও নির্ভেজাল যাচাই করা যায়। ভেজাল নিজে নিজেই আল্লাহর পথ থেকে সরে যায়। অতঃপর নির্ভেজালকে বাছাই করে নিয়ে এমনসব পুরস্কার লাভের যোগ্য করা হয়, যেগুলো কেবল সত্য ঈমানদারদের জন্যই নির্ধারিত।
অতীতের মুমিনরাও পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিলেন :
اَمْ حَسِبْتُمْ اَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَاْتِكُمْ مَّثَلُ الَّذِيْنَ خَلَوْا مِنْ قَبْلِكُمْؕ مَسَّتْهُمُ الْبَاْسَآءُ وَالضَّرَّآءُ وَزُلْزِلُوْا حَتّٰى يَقُوْلَ الرَّسُوْلُ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَعَهٗ مَتٰى نَصْرُ اللهِؕ اَ لَاۤ اِنَّ نَصْرَ اللهِ قَرِيْبٌ
তোমরা কি ধারণা করেছ যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করে ফেলবে? অথচ তোমাদের পূর্ববর্তীদের মতো (সংকটময় অবস্থা) এখনো তোমাদের উপর আসেনি। তাদেরকে বিপদ ও দুঃখ স্পর্শ করেছিল এমনকি তাদেরকে কাঁপিয়ে তুলা হয়েছিল। অবশেষে রাসূল ও তার সাথে ঈমান আনয়নকারীরা বলে ফেলেছিল যে, কখন আল্লাহর সাহায্য আসবে? শুনে নাও, নিশ্চয় আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটবর্তী। (সূরা বাক্বারা- ২১৪)
ব্যাখ্যা : ঈমানদারদের পরীক্ষা করা কোন নতুন ব্যাপার নয়। ইতিহাসে সবসময় এমনটিই হয়ে এসেছে। যে ব্যক্তিই ঈমানের দাবী করেছে তাকে অবশ্যই পরীক্ষার অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করে দগ্ধ করা হয়েছে। দুনিয়ার যে কোন দেশে যখনই নবীদের আবির্ভাব ঘটেছে তখনই তাঁরা ও তাঁদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারী মুসলিমরা আল্লাহদ্রোহী মানবসমাজের কঠোর বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছেন। তাঁরা কোন অবস্থায়ই নিজেদের প্রাণের পরোয়া করেননি। বাতিল পদ্ধতির বিরুদ্ধে কঠোর সংগ্রাম করে তাওহীদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। এ দ্বীন প্রতিষ্ঠার পথ কখনো ফুলশয্যা ছিল না। ইসলামকে নিজের জীবনবিধান হিসেবে মেনে নেয়ার পর কেউ নিশ্চিন্তে আরামে বসে থাকতে পারেনি। প্রতি যুগে মুসলিমদেরকে ইসলামী জীবনবিধান প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম চালাতে হয়েছে। যেসব শয়তানী ও বিদ্রোহী শক্তি সে সংগ্রামের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে তার শক্তির দর্প চূর্ণ করার জন্য ঈমানদারদেরকে পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করতে হয়েছে।
খাববাব ইবনে আরাত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা নবী ﷺ এর নিকট (আমাদের দুঃখ-দুর্দশা সম্পর্কে) অভিযোগ করলাম। তখন তিনি নিজের চাদরটাকে বালিশ বানিয়ে কা‘বাঘরের ছায়ায় বিশ্রাম করছিলেন। আমরা তাঁকে বললাম, আপনি কি আমাদের জন্য আল্লাহর নিকট সাহায্য কামনা করবেন না? আপনি কি আমাদের জন্য আল্লাহর নিকট দু‘আ করবেন না? নবী ﷺ বললেন, তোমাদের আর এমন কী দুর্দশা হয়েছে? তোমাদের পূর্বে যারা ঈমানদার ছিল, তাদের কারো জন্য মাটিতে গর্ত খোঁড়া হতো, তারপর তাকে সে গর্তের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রাখা হতো; তারপর করাত আনা হতো এবং তা তার মাথার উপর স্থাপন করে তাকে দ্বিখন্ডিত করা হতো। তবুও এ অমানুষিক নির্যাতন তাকে তার দ্বীন থেকে ফেরাতে পারত না। আবার কারো শরীরে লোহার চিরুণী দ্বারা আঁচড়ে হাড় পর্যন্ত যাবতীয় মাংস তুলে ফেলা হতো। তবুও এটা তাকে তার দ্বীন থেকে ফেরাতে পারত না। আল্লাহর কসম! নিশ্চয় এ দ্বীন পূর্ণতা লাভ করবে। (তখন সর্বত্র এতটা নিরাপত্তা বিরাজ করবে যে) কোন উষ্ট্রারোহী সান‘আ থেকে হাযরামাওত পর্যন্ত দীর্ঘ পথ নির্বিঘ্নে অতিক্রম করবে। তখন সে নিজের নিরাপত্তার ব্যাপারে আল্লাহ ছাড়া অপর কারো এবং নিজের মেষপালের ব্যাপারে নেকড়ে ছাড়া অন্য কিছুরই ভয় করবে না। কিন্তু তোমরা (এ সময়টার আগমনের ব্যাপারে) তাড়াহুড়া করছ। (সহীহ বুখারী, হা/৩৬১২)
পরীক্ষার মাধ্যমেই আল্লাহ মুমিনদেরকে বাছাই করেন :
اَمْ حَسِبْتُمْ اَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ اللهُ الَّذِيْنَ جَاهَدُوْا مِنْكُمْ وَيَعْلَمَ الصَّابِرِيْنَ
তোমরা কি ধারণা করছ যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ তোমাদের মধ্য হতে কারা জিহাদ করে তাদের ব্যাপারে আল্লাহ অবগত হবেন না এবং ধৈর্যশীলদের সম্পর্কেও জেনে নেবেন না? (সূরা আলে ইমরান- ১৪২)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ হক ও বাতিল এবং সত্য ও মিথ্যার সংঘাতের যে বিধান তৈরি করে দিয়েছেন, তা পাল্টে দেয়ার ক্ষমতা কারো নেই। সত্যপন্থীদের অবশ্যই দীর্ঘকাল পরীক্ষার আগুনে ঝালাই হতে হবে। তাদেরকে নিজেদের ধৈর্য, সহিষ্ণুতা, সততা, সত্যবাদিতা, ত্যাগ, ঈমানী দৃঢ়তা ও আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীলতার পরীক্ষা দিতে হবে। বিপদ, মুসীবত, সমস্যা ও সংকটের কঠিন পথ অতিক্রম করার গুণাবলি তাদের মধ্যে সৃষ্টি করতে হবে। তাদেরকে নির্ভেজাল উন্নত নৈতিক গুণাবলি ও সচ্চরিত্রের অস্ত্র ব্যবহার করে জাহেলিয়াতের উপর বিজয় লাভ করতে হবে। এভাবে নিজেদেরকে সংস্কারক হিসেবে প্রমাণ করতে পারলেই আল্লাহর সাহায্য তাদের জন্য এগিয়ে আসবে।
আল্লাহ বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করেন :
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوْفِ وَالْجُوْعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الْاَمْوَالِ وَالْاَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِؕ وَبَشِّرِ الصَّابِرِيْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ اِذَاۤ اَصَابَتْهُمْ مُّصِيْبَةٌ قَالُوْاۤ اِنَّا لِلّٰهِ وَاِنَّاۤ اِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ
নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করব ভয়, ক্ষুধা, ধন, প্রাণ ও ফসলের অভাবের দ্বারা। সুতরাং আপনি ধৈর্যশীলদেরকে সুসংবাদ প্রদান করুন। (কেননা) যখন তাদের উপর কোন বিপদ আসে তখন তারা বলে, নিশ্চয় আমরা আল্লাহরই জন্য এবং আমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। (সূরা বাক্বারা- ১৫৫, ১৫৬)
لَتُبْلَوُنَّ فِۤيْ اَمْوَالِكُمْ وَاَنْفُسِكُمْؕ وَلَتَسْمَعُنَّ مِنَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَمِنَ الَّذِيْنَ اَشْرَكُوْاۤ اَذًى كَثِيْرًاؕ وَاِنْ تَصْبِرُوْا وَتَتَّقُوْا فَاِنَّ ذٰلِكَ مِنْ عَزْمِ الْاُمُوْرِ
অবশ্যই তোমরা তোমাদের ধনসম্পদ ও তোমাদের জীবন দ্বারা পরীক্ষিত হবে। তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে ও যারা শিরক করেছে, তাদের নিকট হতে তোমাদেরকে বহু দুঃখজনক বাক্য শুনতে হবে। আর যদি তোমরা ধৈর্যধারণ কর ও সংযমী হও, তবে অবশ্যই এটা সুদৃঢ় কার্যাবলির অন্তর্গত। (সূরা আলে ইমরান- ১৮৬)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ তাদের গালাগাল, মিথ্যা দোষারোপ, বেহুদা কথাবার্তা ও অপপ্রচারের মুকাবিলায় অধৈর্য হয়ে তোমরা এমন কোন কথা বলতে শুরু করো না, যা সত্য, ন্যায় ও শিষ্টাচার বিরোধী। বরং সর্বক্ষেত্রে তোমাদেরকে ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে।
আল্লাহর প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা স্থাপন করা :
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّتَّخِذُ مِنْ دُوْنِ اللهِ اَنْدَادًا يُّحِبُّوْنَهُمْ كَحُبِّ اللهِؕ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا اَشَدُّ حُبًّا لِّلّٰهِ
মানুষের মধ্যে কিছু লোক এমনও রয়েছে, যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্য কিছুকে তাঁর সমকক্ষ হিসেবে গ্রহণ করে। তারা তাদেরকে তেমনি ভালোবাসে যেমনটি কেবল আল্লাহকেই ভালোবাসা উচিত। আর যারা (সত্যিকার অর্থে) আল্লাহর উপর ঈমান আনয়ন করে, তারা তো তাঁকেই সর্বাধিক ভালোবাসবে। (সূরা বাক্বারা- ১৬৫)
ব্যাখ্যা : এটা ঈমানের দাবী। একজন ঈমানদারের কাছে আল্লাহর সন্তুষ্টি অন্যসব সন্তুষ্টির উপর অগ্রাধিকার লাভ করবে। তার মধ্যে কোনকিছুর প্রতি ভালোবাসা আল্লাহর ভালোবাসার চেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করবে না।
দৃঢ় মনোবলের অধিকারী হওয়া :
وَلَا تَهِنُوْا وَلَا تَحْزَنُوْا وَاَنْتُمُ الْاَعْلَوْنَ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
আর তোমরা দুর্বল হয়ো না এবং চিন্তিতও হয়ো না; যদি তোমরা মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত হও, তবে তোমরাই বিজয়ী হবে। (সূরা আলে ইমরান- ১৩৯)
وَكَاَيِّنْ مِّنْ نَّبِيٍّ قَاتَلَ مَعَهٗ رِبِّيُّوْنَ كَثِيْرٌۚ فَمَا وَهَنُوْا لِمَاۤ اَصَابَهُمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَمَا ضَعُفُوْا وَمَا اسْتَكَانُوْاؕ وَاللهُ يُحِبُّ الصَّابِرِيْنَ
এমন অনেক নবী ছিলেন, যাদের সহযোগে আল্লাহভক্ত লোকেরা যুদ্ধ করেছিল। অতঃপর আল্লাহর পথে যা সংঘটিত হয়েছিল তাতে তারা নিরুৎসাহিত হয়নি, শক্তিহীন হয়নি এবং বিচলিতও হয়নি। আর আল্লাহ ধৈর্যশীলদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৪৬)
বাতিলের হুমকিকে ভয় না করা :
اَ لَّذِيْنَ قَالَ لَهُمُ النَّاسُ اِنَّ النَّاسَ قَدْ جَمَعُوْا لَكُمْ فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ اِيْمَانًا وَّقَالُوْا حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الْوَكِيْلُ
লোকেরা যাদেরকে বলেছিল, নিশ্চয় তোমাদের বিরুদ্ধে লোকজন সমবেত হয়েছে; অতএব তোমরা তাদেরকে ভয় করো। কিন্তু এতে তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং তারা বলেছিল, আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট। আর তিনি কতই না মঙ্গলময় কর্মবিধায়ক। (সূরা আলে ইমরান- ১৭৩)
আল্লাহর উপর দৃঢ় আস্থা রাখা :
فَلَمَّا تَرَآءَ الْجَمْعَانِ قَالَ اَصْحَابُ مُوْسٰۤى اِنَّا لَمُدْرَكُوْنَ ‐ قَالَ كَلَّاۚ اِنَّ مَعِيَ رَبِّيْ سَيَهْدِيْنِ
অতঃপর যখন দু’টি দল পরস্পরকে দেখল তখন মূসার সঙ্গীরা বলল, আমরা তো ধরা পড়ে গেলাম! মূসা বলল, কখনই নয়! নিশ্চয় আমার প্রতিপালক আমার সঙ্গেই রয়েছেন; অচিরেই তিনি আমাকে পথনির্দেশ করবেন। (সূরা শু‘আরা- ৬১, ৬২)
اِلَّا تَنْصُرُوْهُ فَقَدْ نَصَرَهُ اللهُ اِذْ اَخْرَجَهُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا ثَانِيَ اثْنَيْنِ اِذْ هُمَا فِى الْغَارِ اِذْ يَقُوْلُ لِصَاحِبِه لَا تَحْزَنْ اِنَّ اللهَ مَعَنَا
যদি তোমরা তাঁকে (নবীকে) সাহায্য না কর, তবে আল্লাহ তো তাকে সাহায্য করেছিলেন যখন কাফিররা তাকে বহিষ্কার করেছিল। আর তিনি ছিলেন দু’জনের দ্বিতীয়জন- যখন তারা উভয়ে (একটি) গুহার মধ্যে অবস্থান করছিল তখন তিনি তার সঙ্গীকে বলেছিলেন, চিন্তিত হয়ো না; নিশ্চয় আল্লাহ আমাদের সঙ্গেই রয়েছেন। (সূরা তাওবা- ৪০)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ যখন জানতে পারলেন যে, মক্কার কাফিররা তাঁকে হত্যা করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে, তখন শুধুমাত্র আবু বকর (রাঃ) কে সাথে নিয়ে তিনি মক্কা থেকে বের হয়ে পড়লেন। শত্রুরা তাঁকে চারদিকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল, এমনকি যে গুহায় তিনি লুকিয়েছিলেন তাদের কয়েকজন সেখানেও পৌঁছে যায়। ফলে আবু বকর (রাঃ) ভীষণ ভয় পেয়ে গেলেন। কিন্তু নবী ﷺ একটুও বিচলিত না হয়ে আবু বকর (রাঃ) কে এ বলে সান্ত্বনা দিলেন যে, ‘‘চিন্তিত হয়ো না, মন খারাপ করো না; কেননা আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন।’’ এটা ছিল আল্লাহর প্রতি দৃঢ় আস্থার বহিঃপ্রকাশ।
ঈমান রক্ষার জন্য যে কোন কষ্ট স্বীকার করা :
قَالَتْ فَذٰلِكُنَّ الَّذِيْ لُمْتُنَّنِيْ فِيْهِؕ وَلَقَدْ رَاوَدْتُّهٗ عَنْ نَّفْسِه فَاسْتَعْصَمَؕ وَلَئِنْ لَّمْ يَفْعَلْ مَاۤ اٰمُرُه لَيُسْجَنَنَّ وَلَيَكُوْنًا مِّنَ الصَّاغِرِيْنَ ‐ قَالَ رَبِّ السِّجْنُ اَحَبُّ اِلَيَّ مِمَّا يَدْعُونَنِيْۤ اِلَيْهِۚ وَاِلَّا تَصْرِفْ عَنِّيْ كَيْدَهُنَّ اَصْبُ اِلَيْهِنَّ وَاَكُنْ مِّنَ الْجَاهِلِيْنَ
সে (বাদশাহর স্ত্রী) বলল, এ-ই সে যার সম্বন্ধে তোমরা আমার নিন্দা করেছ। আমি তো তার থেকে অসৎকর্ম কামনা করেছি। কিন্তু সে নিজেকে পবিত্র রেখেছে; আমি তাকে যা আদেশ করেছি সে যদি তা না করে, তবে সে কারারুদ্ধ হবে এবং হীনদের অন্তর্ভুক্ত হবে। তখন ইউসুফ বলল, হে আমার প্রতিপালক! এরা আমাকে যার প্রতি আহবান করছে তা অপেক্ষা কারাগার আমার নিকট অধিক প্রিয়। আপনি যদি তাদের ছলনা হতে আমাকে রক্ষা না করেন, তবে আমি তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ব এবং অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব। (সূরা ইউসুফ- ৩২, ৩৩)
অসীম সাহসী হওয়া :
فَاُلْقِيَ السَّحَرَةُ سُجَّدًا قَالُوْاۤ اٰمَنَّا بِرَبِّ هَارُوْنَ وَمُوْسٰى ‐ قَالَ اٰمَنْتُمْ لَهٗ قَبْلَ اَنْ اٰذَنَ لَكُمْؕ اِنَّهٗ لَكَبِيْرُكُمُ الَّذِيْ عَلَّمَكُمُ السِّحْرَۚ فَلَاُقَطِّعَنَّ اَيْدِيَكُمْ وَاَرْجُلَكُمْ مِّنْ خِلَافٍ وَّلَاُصَلِّبَنَّكُمْ فِيْ جُذُوْعِ النَّخْلِ وَلَتَعْلَمُنَّ اَيُّنَاۤ اَشَدُّ عَذَابًا وَّاَبْقٰى ‐ قَالُوْا لَنْ نُّؤْثِرَكَ عَلٰى مَا جَآءَنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالَّذِيْ فَطَرَنَا فَاقْضِ مَاۤ اَنْتَ قَاضٍؕ اِنَّمَا تَقْضِيْ هٰذِهِ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا ‐ اِنَّاۤ اٰمَنَّا بِرَبِّنَا لِيَغْفِرَ لَنَا خَطَايَانَا وَمَاۤ اَكْرَهْتَنَا عَلَيْهِ مِنَ السِّحْرِؕ وَاللهُ خَيْرٌ وَّاَبْقٰى
অতঃপর যাদুকররা সিজদায় লুটিয়ে পড়ল এবং বলল, আমরা হারূন ও মূসার প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনয়ন করলাম। তখন ফিরাউন বলল, ‘কী ব্যাপার, আমি তোমাদেরকে অনুমতি দেয়ার পূর্বেই তোমরা তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলে? (আমি দেখতে পাচ্ছি যে) আসলে সে-ই হচ্ছে তোমাদের প্রধান গুরু, যে তোমাদেরকে যাদু শিক্ষা দিয়েছে। সুতরাং আমি তোমাদের হাত-পা বিপরীত দিক হতে কর্তন করবই এবং তোমাদেরকে খেজুর বৃক্ষের কান্ডে শূলবিদ্ধ করবই। ফলে অবশ্যই তোমরা জানতে পারবে যে, আমাদের মধ্যে কার শাস্তি কঠোরতর ও অধিক স্থায়ী। অতঃপর তারা বলল, আমাদের নিকট যে স্পষ্ট নিদর্শন এসেছে তার উপর এবং যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর উপর তোমাকে আমরা কিছুতেই প্রাধান্য দেব না। সুতরাং তুমি যা ইচ্ছা করতে পার। তুমি তো কেবল এ পার্থিব জীবনের উপর কর্তৃত্ব করতে পার। নিশ্চয় আমরা আমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান এনেছি, যাতে তিনি আমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দেন এবং তুমি আমাদেরকে যে যাদু করতে বাধ্য করেছ তা হতেও ক্ষমা করে দেন। আর আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ ও স্থায়ী। (সূরা ত্বা-হা, ৭০-৭৩)
পরস্পর ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ থাকা :
اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ اِخْوَةٌ فَاَصْلِحُوْا بَيْنَ اَخَوَيْكُمْ وَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ
নিশ্চয় মুমিনরা একে অপরের ভাইস্বরূপ। তাই তোমাদের ভাইদের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপন করে দাও। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো; আশা করা যায়, তোমাদের উপর দয়া করা হবে। (সূরা হুজুরাত- ১০)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতটি দুনিয়ার সকল মুসলিমকে এক বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে। দুনিয়ার অন্য কোন আদর্শ বা মত ও পথের অনুসারীদের মধ্যে এমন কোন ভ্রাতৃত্ববন্ধন পাওয়া যায় না, যা মুসলিমদের মধ্যে পাওয়া যায়। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) ও আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার উপর যুলুম করবে না, তাকে সহযোগিতা করা পরিত্যাগ করবে না এবং তাকে লাঞ্ছিত ও হেয় করবে না। কোন ব্যক্তির জন্য তার কোন মুসলিম ভাইকে হেয় ও তুচ্ছ জ্ঞান করার মতো অপকর্ম আর নেই। (সহীহ মুসলিম, হা/৬৭০৬) সাহল ইবনে সা’দ সায়েদী (রাঃ) নবী ﷺ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ঈমানদারদের সাথে একজন ঈমানদারের সম্পর্ক ঠিক তেমন, যেমন দেহের সাথে মাথার সম্পর্ক। সে ঈমানদারদের প্রতিটি দুঃখ-কষ্ট ঠিক তেমন অনুভব করে যেমন মাথা দেহের প্রতিটি অংশের ব্যথা অনুভব করে। (সহীহ বুখারী, হা/৬০১১) নবী ﷺ আরো বলেন, ‘‘মুমিনগণ পরস্পরের জন্য একই প্রাচীরের ইটের মতো একে অপরের থেকে শক্তিলাভ করে থাকে।’’ (সহীহ বুখারী, হা/৪৮১; সহীহ মুসলিম, হা/৬৭৫০)
ঈমানের দাবী অনুযায়ী কাজ করা :
وَالْمُؤْمِنُوْنَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍ يَّاْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَيُطِيْعُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗؕ اُولٰٓئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللهُؕ اِنَّ اللهَ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
মুমিন নর ও মুমিন নারী একে অপরের বন্ধু, এরা সৎকার্যের নির্দেশ দেয় এবং অসৎকার্য হতে নিষেধ করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে; অচিরেই আল্লাহ এদেরকে দয়া প্রদর্শন করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা- ৭১)
ব্যাখ্যা : পরকালীন জীবনে তাদের জান্নাত লাভ করাটা এমন ঈমানের ফল নয়, যার অর্থ নিছক বিশ্বাস করা। বরং এটি এমন ঈমানের ফল, যা চরিত্র ও কর্মকান্ডের পরিচালক শক্তিতে শক্তিশালী সৎকাজে উদ্বুদ্ধ করে। যে ব্যক্তি ঈমান এনেও বেঈমানের মতো জীবন-যাপন করে সে আল্লাহর উপর ঈমান আনয়নের পর সৎকর্মশীল হয়ে জীবন-যাপনকারীর মতো পুরস্কার পাওয়ার আশা করতে পারে না।
ঈমানকে শিরক থেকে পবিত্র রাখা :
اَلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَلَمْ يَلْبِسُوْاۤ اِيْمَانَهُمْ بِظُلْمٍ اُولٰٓئِكَ لَهُمُ الْاَ مْنُ وَهُمْ مُّهْتَدُوْنَ
যারা ঈমান এনেছে এবং নিজেদের ঈমানকে যুলুম দ্বারা কলুষিত করেনি, তাদের জন্য রয়েছে নিরাপত্তা। আর তারাই হচ্ছে প্রকৃত হেদায়াতপ্রাপ্ত। (সূরা আন‘আম- ৮২)
ব্যাখ্যা : এখানে যুলুম বলতে শিরককে বুঝানো হয়েছে। সুতরাং এ আয়াতের মর্মার্থ হলো, যারা আল্লাহকে মেনে নেবে এবং কোন প্রকার শিরকী বিশ্বাস ও কর্মের অনুপ্রবেশ ঘটাবে না। নিরাপত্তা ও প্রশান্তি একমাত্র তারাই লাভ করবে এবং একমাত্র তারাই সরল পথে প্রতিষ্ঠিত থাকবে।
ঈমানকে সন্দেহমুক্ত রাখা :
اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِه ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوْا وَجَاهَدُوْا بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِؕ اُولٰٓئِكَ هُمُ الصَّادِقُوْنَ
তারাই সত্যিকার মুমিন, যারা আল্লাহ ও রাসূলের উপর ঈমান আনয়ন করেছে, এরপর এতে কোন সন্দেহ পোষণ করেনি এবং আল্লাহর পথে তাদের জান ও মাল দ্বারা জিহাদ করেছে। প্রকৃতপক্ষে এরাই সত্যবাদী। (সূরা হুজুরাত- ১৫)
মুনাফিকী থেকে দূরে থাকা :
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّقُوْلُ اٰمَنَّا بِاللهِ وَبِالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَمَا هُمْ بِمُؤْمِنِيْنَ
মানুষের মধ্যে এমন লোকও আছে যারা বলে- আমরা আল্লাহর উপর এবং বিচার দিনের উপর ঈমান আনয়ন করেছি; অথচ তারা মোটেই ঈমানদার নয়। (সূরা বাক্বারা- ৮)
পাকাপোক্ত ঈমানদার হওয়া :
قَالَتِ الْاَعْرَابُ اٰمَنَّاؕ قُلْ لَّمْ تُؤْمِنُوْا وَلٰكِنْ قُوْلُوْاۤ اَسْلَمْنَا وَلَمَّا يَدْخُلِ الْاِيْمَانُ فِيْ قُلُوْبِكُمْ
মরুবাসীরা বলে, আমরা ঈমান আনয়ন করেছি। বলো, (প্রকৃতপক্ষে) তোমরা ঈমান আনয়ন করনি; বরং তোমরা বলো, আমরা অনুগত হয়েছি। (কেননা) এখনো তোমাদের অন্তরে ঈমান প্রবেশ করেনি। (সূরা হুজুরাত- ১৪)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার অর্থ শুধুমাত্র ‘আল্লাহ আছেন’ এ কথা মেনে নেয়া নয়। বরং এর অর্থ হচ্ছে, আল্লাহকে একমাত্র ইলাহ্ ও রব হিসেবে মেনে নেয়া এবং তাঁর সত্তা, গুণাবলি, অধিকার ও ক্ষমতায় কাউকে শরীক না করা। আর আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার অর্থ হচ্ছে, মরে যাওয়ার পর আমাদেরকে আবারও উঠানো হবে- এ কথার স্বীকৃতি দেয়া এবং এ কথাও মেনে নেয়া যে, সেখানে কোন তাদবীর কাজে আসবে না, কেউ কারো পাপের কাফ্ফারা হবে না। আল্লাহর আদালতে ইনসাফ হবে সম্পূর্ণ পক্ষপাতহীন এবং মানুষের ঈমান ও আমল ছাড়া সেখানে আর কোন জিনিসেরই মূল্য থাকবে না।
মসজিদ আবাদ করা :
اِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللهِ مَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَاَقَامَ الصَّلَاةَ وَاٰتَى الزَّكَاةَ وَلَمْ يَخْشَ اِلَّا اللهَ ؕ فَعَسٰۤى اُولٰٓئِكَ اَنْ يَّكُوْنُوْا مِنَ الْمُهْتَدِيْنَ
তারাই তো আল্লাহর মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করবে, যারা আল্লাহর প্রতি ও আখিরাতের প্রতি ঈমান আনয়ন করবে। আর তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় করবে না। অতএব আশা করা যায়, তারা সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা তাওবা- ১৮)
ঈমানের উপর অটল থাকা :
اِنَّ الَّذِيْنَ قَالُوْا رَبُّنَا اللهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوْا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَآئِكَةُ اَلَّا تَخَافُوْا وَلَا تَحْزَنُوْا وَاَبْشِرُوْا بِالْجَنَّةِ الَّتِيْ كُنْتُمْ تُوْعَدُوْنَ – نَحْنُ اَوْلِيَآؤُكُمْ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِى الْاٰخِرَةِۚ وَلَكُمْ فِيْهَا مَا تَشْتَهِيْۤ اَنْفُسُكُمْ وَلَكُمْ فِيْهَا مَا تَدَّعُوْنَ – نُزُلًا مِّنْ غَفُوْرٍ رَّحِيْمٍ
নিশ্চয় যারা বলে, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, অতঃপর অবিচল থাকে, তাদের নিকট ফেরেশতারা অবতীর্ণ হয়ে বলে- তোমরা ভীত হয়ো না এবং চিন্তিতও হয়ো না; বরং তোমাদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল তার সুসংবাদ পেয়ে আনন্দিত হও। দুনিয়ার জীবনে ও আখিরাতে আমরাই তোমাদের বন্ধু। সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে যা কিছু তোমাদের মন চায় এবং সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে যা তোমাদেরকে ওয়াদা দেয়া হয়েছে। এটা হলো ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ হতে আপ্যায়ন। (সূরা হা-মীম সাজদা, ৩০-৩২)
ব্যাখ্যা : যারা এ সুসংবাদ পেয়েছে তারা আল্লাহকে কেবল রব বলে ঘোষণা করে থেমে যায়নি এবং তার সাথে অন্য কাউকে রব হিসেবেও গ্রহণ করেনি, আর এর সাথে কোন ভ্রান্ত আকীদার সংমিশ্রণও ঘটায়নি। বরং এ আকীদা পোষণ করার পর সারা জীবন তার উপর প্রতিষ্ঠিত থেকেছে, তার পরিপন্থী অন্য সকল আকীদা প্রত্যাখান করেছে এবং নিজের কর্মজীবনে তাওহীদের দাবীসমূহও পূরণ করেছে।
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّتَّخِذُ مِنْ دُوْنِ اللهِ اَنْدَادًا يُّحِبُّوْنَهُمْ كَحُبِّ اللهِؕ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا اَشَدُّ حُبًّا لِّلّٰهِ
মানুষের মধ্যে কিছু লোক এমনও রয়েছে, যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্য কিছুকে তাঁর সমকক্ষ হিসেবে গ্রহণ করে। তারা তাদেরকে তেমনি ভালোবাসে যেমনটি কেবল আল্লাহকেই ভালোবাসা উচিত। আর যারা (সত্যিকার অর্থে) আল্লাহর উপর ঈমান আনয়ন করে, তারা তো তাঁকেই সর্বাধিক ভালোবাসবে। (সূরা বাক্বারা- ১৬৫)
ব্যাখ্যা : এটা ঈমানের দাবী। একজন ঈমানদারের কাছে আল্লাহর সন্তুষ্টি অন্যসব সন্তুষ্টির উপর অগ্রাধিকার লাভ করবে। তার মধ্যে কোনকিছুর প্রতি ভালোবাসা আল্লাহর ভালোবাসার চেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করবে না।
দৃঢ় মনোবলের অধিকারী হওয়া :
وَلَا تَهِنُوْا وَلَا تَحْزَنُوْا وَاَنْتُمُ الْاَعْلَوْنَ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
আর তোমরা দুর্বল হয়ো না এবং চিন্তিতও হয়ো না; যদি তোমরা মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত হও, তবে তোমরাই বিজয়ী হবে। (সূরা আলে ইমরান- ১৩৯)
وَكَاَيِّنْ مِّنْ نَّبِيٍّ قَاتَلَ مَعَهٗ رِبِّيُّوْنَ كَثِيْرٌۚ فَمَا وَهَنُوْا لِمَاۤ اَصَابَهُمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَمَا ضَعُفُوْا وَمَا اسْتَكَانُوْاؕ وَاللهُ يُحِبُّ الصَّابِرِيْنَ
এমন অনেক নবী ছিলেন, যাদের সহযোগে আল্লাহভক্ত লোকেরা যুদ্ধ করেছিল। অতঃপর আল্লাহর পথে যা সংঘটিত হয়েছিল তাতে তারা নিরুৎসাহিত হয়নি, শক্তিহীন হয়নি এবং বিচলিতও হয়নি। আর আল্লাহ ধৈর্যশীলদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৪৬)
বাতিলের হুমকিকে ভয় না করা :
اَ لَّذِيْنَ قَالَ لَهُمُ النَّاسُ اِنَّ النَّاسَ قَدْ جَمَعُوْا لَكُمْ فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ اِيْمَانًا وَّقَالُوْا حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الْوَكِيْلُ
লোকেরা যাদেরকে বলেছিল, নিশ্চয় তোমাদের বিরুদ্ধে লোকজন সমবেত হয়েছে; অতএব তোমরা তাদেরকে ভয় করো। কিন্তু এতে তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং তারা বলেছিল, আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট। আর তিনি কতই না মঙ্গলময় কর্মবিধায়ক। (সূরা আলে ইমরান- ১৭৩)
আল্লাহর উপর দৃঢ় আস্থা রাখা :
فَلَمَّا تَرَآءَ الْجَمْعَانِ قَالَ اَصْحَابُ مُوْسٰۤى اِنَّا لَمُدْرَكُوْنَ ‐ قَالَ كَلَّاۚ اِنَّ مَعِيَ رَبِّيْ سَيَهْدِيْنِ
অতঃপর যখন দু’টি দল পরস্পরকে দেখল তখন মূসার সঙ্গীরা বলল, আমরা তো ধরা পড়ে গেলাম! মূসা বলল, কখনই নয়! নিশ্চয় আমার প্রতিপালক আমার সঙ্গেই রয়েছেন; অচিরেই তিনি আমাকে পথনির্দেশ করবেন। (সূরা শু‘আরা- ৬১, ৬২)
اِلَّا تَنْصُرُوْهُ فَقَدْ نَصَرَهُ اللهُ اِذْ اَخْرَجَهُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا ثَانِيَ اثْنَيْنِ اِذْ هُمَا فِى الْغَارِ اِذْ يَقُوْلُ لِصَاحِبِه لَا تَحْزَنْ اِنَّ اللهَ مَعَنَا
যদি তোমরা তাঁকে (নবীকে) সাহায্য না কর, তবে আল্লাহ তো তাকে সাহায্য করেছিলেন যখন কাফিররা তাকে বহিষ্কার করেছিল। আর তিনি ছিলেন দু’জনের দ্বিতীয়জন- যখন তারা উভয়ে (একটি) গুহার মধ্যে অবস্থান করছিল তখন তিনি তার সঙ্গীকে বলেছিলেন, চিন্তিত হয়ো না; নিশ্চয় আল্লাহ আমাদের সঙ্গেই রয়েছেন। (সূরা তাওবা- ৪০)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ যখন জানতে পারলেন যে, মক্কার কাফিররা তাঁকে হত্যা করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে, তখন শুধুমাত্র আবু বকর (রাঃ) কে সাথে নিয়ে তিনি মক্কা থেকে বের হয়ে পড়লেন। শত্রুরা তাঁকে চারদিকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল, এমনকি যে গুহায় তিনি লুকিয়েছিলেন তাদের কয়েকজন সেখানেও পৌঁছে যায়। ফলে আবু বকর (রাঃ) ভীষণ ভয় পেয়ে গেলেন। কিন্তু নবী ﷺ একটুও বিচলিত না হয়ে আবু বকর (রাঃ) কে এ বলে সান্ত্বনা দিলেন যে, ‘‘চিন্তিত হয়ো না, মন খারাপ করো না; কেননা আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন।’’ এটা ছিল আল্লাহর প্রতি দৃঢ় আস্থার বহিঃপ্রকাশ।
ঈমান রক্ষার জন্য যে কোন কষ্ট স্বীকার করা :
قَالَتْ فَذٰلِكُنَّ الَّذِيْ لُمْتُنَّنِيْ فِيْهِؕ وَلَقَدْ رَاوَدْتُّهٗ عَنْ نَّفْسِه فَاسْتَعْصَمَؕ وَلَئِنْ لَّمْ يَفْعَلْ مَاۤ اٰمُرُه لَيُسْجَنَنَّ وَلَيَكُوْنًا مِّنَ الصَّاغِرِيْنَ ‐ قَالَ رَبِّ السِّجْنُ اَحَبُّ اِلَيَّ مِمَّا يَدْعُونَنِيْۤ اِلَيْهِۚ وَاِلَّا تَصْرِفْ عَنِّيْ كَيْدَهُنَّ اَصْبُ اِلَيْهِنَّ وَاَكُنْ مِّنَ الْجَاهِلِيْنَ
সে (বাদশাহর স্ত্রী) বলল, এ-ই সে যার সম্বন্ধে তোমরা আমার নিন্দা করেছ। আমি তো তার থেকে অসৎকর্ম কামনা করেছি। কিন্তু সে নিজেকে পবিত্র রেখেছে; আমি তাকে যা আদেশ করেছি সে যদি তা না করে, তবে সে কারারুদ্ধ হবে এবং হীনদের অন্তর্ভুক্ত হবে। তখন ইউসুফ বলল, হে আমার প্রতিপালক! এরা আমাকে যার প্রতি আহবান করছে তা অপেক্ষা কারাগার আমার নিকট অধিক প্রিয়। আপনি যদি তাদের ছলনা হতে আমাকে রক্ষা না করেন, তবে আমি তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ব এবং অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব। (সূরা ইউসুফ- ৩২, ৩৩)
অসীম সাহসী হওয়া :
فَاُلْقِيَ السَّحَرَةُ سُجَّدًا قَالُوْاۤ اٰمَنَّا بِرَبِّ هَارُوْنَ وَمُوْسٰى ‐ قَالَ اٰمَنْتُمْ لَهٗ قَبْلَ اَنْ اٰذَنَ لَكُمْؕ اِنَّهٗ لَكَبِيْرُكُمُ الَّذِيْ عَلَّمَكُمُ السِّحْرَۚ فَلَاُقَطِّعَنَّ اَيْدِيَكُمْ وَاَرْجُلَكُمْ مِّنْ خِلَافٍ وَّلَاُصَلِّبَنَّكُمْ فِيْ جُذُوْعِ النَّخْلِ وَلَتَعْلَمُنَّ اَيُّنَاۤ اَشَدُّ عَذَابًا وَّاَبْقٰى ‐ قَالُوْا لَنْ نُّؤْثِرَكَ عَلٰى مَا جَآءَنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالَّذِيْ فَطَرَنَا فَاقْضِ مَاۤ اَنْتَ قَاضٍؕ اِنَّمَا تَقْضِيْ هٰذِهِ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا ‐ اِنَّاۤ اٰمَنَّا بِرَبِّنَا لِيَغْفِرَ لَنَا خَطَايَانَا وَمَاۤ اَكْرَهْتَنَا عَلَيْهِ مِنَ السِّحْرِؕ وَاللهُ خَيْرٌ وَّاَبْقٰى
অতঃপর যাদুকররা সিজদায় লুটিয়ে পড়ল এবং বলল, আমরা হারূন ও মূসার প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনয়ন করলাম। তখন ফিরাউন বলল, ‘কী ব্যাপার, আমি তোমাদেরকে অনুমতি দেয়ার পূর্বেই তোমরা তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলে? (আমি দেখতে পাচ্ছি যে) আসলে সে-ই হচ্ছে তোমাদের প্রধান গুরু, যে তোমাদেরকে যাদু শিক্ষা দিয়েছে। সুতরাং আমি তোমাদের হাত-পা বিপরীত দিক হতে কর্তন করবই এবং তোমাদেরকে খেজুর বৃক্ষের কান্ডে শূলবিদ্ধ করবই। ফলে অবশ্যই তোমরা জানতে পারবে যে, আমাদের মধ্যে কার শাস্তি কঠোরতর ও অধিক স্থায়ী। অতঃপর তারা বলল, আমাদের নিকট যে স্পষ্ট নিদর্শন এসেছে তার উপর এবং যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর উপর তোমাকে আমরা কিছুতেই প্রাধান্য দেব না। সুতরাং তুমি যা ইচ্ছা করতে পার। তুমি তো কেবল এ পার্থিব জীবনের উপর কর্তৃত্ব করতে পার। নিশ্চয় আমরা আমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান এনেছি, যাতে তিনি আমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দেন এবং তুমি আমাদেরকে যে যাদু করতে বাধ্য করেছ তা হতেও ক্ষমা করে দেন। আর আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ ও স্থায়ী। (সূরা ত্বা-হা, ৭০-৭৩)
পরস্পর ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ থাকা :
اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ اِخْوَةٌ فَاَصْلِحُوْا بَيْنَ اَخَوَيْكُمْ وَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ
নিশ্চয় মুমিনরা একে অপরের ভাইস্বরূপ। তাই তোমাদের ভাইদের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপন করে দাও। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো; আশা করা যায়, তোমাদের উপর দয়া করা হবে। (সূরা হুজুরাত- ১০)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতটি দুনিয়ার সকল মুসলিমকে এক বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে। দুনিয়ার অন্য কোন আদর্শ বা মত ও পথের অনুসারীদের মধ্যে এমন কোন ভ্রাতৃত্ববন্ধন পাওয়া যায় না, যা মুসলিমদের মধ্যে পাওয়া যায়। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) ও আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার উপর যুলুম করবে না, তাকে সহযোগিতা করা পরিত্যাগ করবে না এবং তাকে লাঞ্ছিত ও হেয় করবে না। কোন ব্যক্তির জন্য তার কোন মুসলিম ভাইকে হেয় ও তুচ্ছ জ্ঞান করার মতো অপকর্ম আর নেই। (সহীহ মুসলিম, হা/৬৭০৬) সাহল ইবনে সা’দ সায়েদী (রাঃ) নবী ﷺ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ঈমানদারদের সাথে একজন ঈমানদারের সম্পর্ক ঠিক তেমন, যেমন দেহের সাথে মাথার সম্পর্ক। সে ঈমানদারদের প্রতিটি দুঃখ-কষ্ট ঠিক তেমন অনুভব করে যেমন মাথা দেহের প্রতিটি অংশের ব্যথা অনুভব করে। (সহীহ বুখারী, হা/৬০১১) নবী ﷺ আরো বলেন, ‘‘মুমিনগণ পরস্পরের জন্য একই প্রাচীরের ইটের মতো একে অপরের থেকে শক্তিলাভ করে থাকে।’’ (সহীহ বুখারী, হা/৪৮১; সহীহ মুসলিম, হা/৬৭৫০)
ঈমানের দাবী অনুযায়ী কাজ করা :
وَالْمُؤْمِنُوْنَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍ يَّاْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَيُطِيْعُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗؕ اُولٰٓئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللهُؕ اِنَّ اللهَ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
মুমিন নর ও মুমিন নারী একে অপরের বন্ধু, এরা সৎকার্যের নির্দেশ দেয় এবং অসৎকার্য হতে নিষেধ করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে; অচিরেই আল্লাহ এদেরকে দয়া প্রদর্শন করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা- ৭১)
ব্যাখ্যা : পরকালীন জীবনে তাদের জান্নাত লাভ করাটা এমন ঈমানের ফল নয়, যার অর্থ নিছক বিশ্বাস করা। বরং এটি এমন ঈমানের ফল, যা চরিত্র ও কর্মকান্ডের পরিচালক শক্তিতে শক্তিশালী সৎকাজে উদ্বুদ্ধ করে। যে ব্যক্তি ঈমান এনেও বেঈমানের মতো জীবন-যাপন করে সে আল্লাহর উপর ঈমান আনয়নের পর সৎকর্মশীল হয়ে জীবন-যাপনকারীর মতো পুরস্কার পাওয়ার আশা করতে পারে না।
ঈমানকে শিরক থেকে পবিত্র রাখা :
اَلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَلَمْ يَلْبِسُوْاۤ اِيْمَانَهُمْ بِظُلْمٍ اُولٰٓئِكَ لَهُمُ الْاَ مْنُ وَهُمْ مُّهْتَدُوْنَ
যারা ঈমান এনেছে এবং নিজেদের ঈমানকে যুলুম দ্বারা কলুষিত করেনি, তাদের জন্য রয়েছে নিরাপত্তা। আর তারাই হচ্ছে প্রকৃত হেদায়াতপ্রাপ্ত। (সূরা আন‘আম- ৮২)
ব্যাখ্যা : এখানে যুলুম বলতে শিরককে বুঝানো হয়েছে। সুতরাং এ আয়াতের মর্মার্থ হলো, যারা আল্লাহকে মেনে নেবে এবং কোন প্রকার শিরকী বিশ্বাস ও কর্মের অনুপ্রবেশ ঘটাবে না। নিরাপত্তা ও প্রশান্তি একমাত্র তারাই লাভ করবে এবং একমাত্র তারাই সরল পথে প্রতিষ্ঠিত থাকবে।
ঈমানকে সন্দেহমুক্ত রাখা :
اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِه ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوْا وَجَاهَدُوْا بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِؕ اُولٰٓئِكَ هُمُ الصَّادِقُوْنَ
তারাই সত্যিকার মুমিন, যারা আল্লাহ ও রাসূলের উপর ঈমান আনয়ন করেছে, এরপর এতে কোন সন্দেহ পোষণ করেনি এবং আল্লাহর পথে তাদের জান ও মাল দ্বারা জিহাদ করেছে। প্রকৃতপক্ষে এরাই সত্যবাদী। (সূরা হুজুরাত- ১৫)
মুনাফিকী থেকে দূরে থাকা :
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّقُوْلُ اٰمَنَّا بِاللهِ وَبِالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَمَا هُمْ بِمُؤْمِنِيْنَ
মানুষের মধ্যে এমন লোকও আছে যারা বলে- আমরা আল্লাহর উপর এবং বিচার দিনের উপর ঈমান আনয়ন করেছি; অথচ তারা মোটেই ঈমানদার নয়। (সূরা বাক্বারা- ৮)
পাকাপোক্ত ঈমানদার হওয়া :
قَالَتِ الْاَعْرَابُ اٰمَنَّاؕ قُلْ لَّمْ تُؤْمِنُوْا وَلٰكِنْ قُوْلُوْاۤ اَسْلَمْنَا وَلَمَّا يَدْخُلِ الْاِيْمَانُ فِيْ قُلُوْبِكُمْ
মরুবাসীরা বলে, আমরা ঈমান আনয়ন করেছি। বলো, (প্রকৃতপক্ষে) তোমরা ঈমান আনয়ন করনি; বরং তোমরা বলো, আমরা অনুগত হয়েছি। (কেননা) এখনো তোমাদের অন্তরে ঈমান প্রবেশ করেনি। (সূরা হুজুরাত- ১৪)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার অর্থ শুধুমাত্র ‘আল্লাহ আছেন’ এ কথা মেনে নেয়া নয়। বরং এর অর্থ হচ্ছে, আল্লাহকে একমাত্র ইলাহ্ ও রব হিসেবে মেনে নেয়া এবং তাঁর সত্তা, গুণাবলি, অধিকার ও ক্ষমতায় কাউকে শরীক না করা। আর আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার অর্থ হচ্ছে, মরে যাওয়ার পর আমাদেরকে আবারও উঠানো হবে- এ কথার স্বীকৃতি দেয়া এবং এ কথাও মেনে নেয়া যে, সেখানে কোন তাদবীর কাজে আসবে না, কেউ কারো পাপের কাফ্ফারা হবে না। আল্লাহর আদালতে ইনসাফ হবে সম্পূর্ণ পক্ষপাতহীন এবং মানুষের ঈমান ও আমল ছাড়া সেখানে আর কোন জিনিসেরই মূল্য থাকবে না।
মসজিদ আবাদ করা :
اِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللهِ مَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَاَقَامَ الصَّلَاةَ وَاٰتَى الزَّكَاةَ وَلَمْ يَخْشَ اِلَّا اللهَ ؕ فَعَسٰۤى اُولٰٓئِكَ اَنْ يَّكُوْنُوْا مِنَ الْمُهْتَدِيْنَ
তারাই তো আল্লাহর মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করবে, যারা আল্লাহর প্রতি ও আখিরাতের প্রতি ঈমান আনয়ন করবে। আর তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় করবে না। অতএব আশা করা যায়, তারা সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা তাওবা- ১৮)
ঈমানের উপর অটল থাকা :
اِنَّ الَّذِيْنَ قَالُوْا رَبُّنَا اللهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوْا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَآئِكَةُ اَلَّا تَخَافُوْا وَلَا تَحْزَنُوْا وَاَبْشِرُوْا بِالْجَنَّةِ الَّتِيْ كُنْتُمْ تُوْعَدُوْنَ – نَحْنُ اَوْلِيَآؤُكُمْ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِى الْاٰخِرَةِۚ وَلَكُمْ فِيْهَا مَا تَشْتَهِيْۤ اَنْفُسُكُمْ وَلَكُمْ فِيْهَا مَا تَدَّعُوْنَ – نُزُلًا مِّنْ غَفُوْرٍ رَّحِيْمٍ
নিশ্চয় যারা বলে, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, অতঃপর অবিচল থাকে, তাদের নিকট ফেরেশতারা অবতীর্ণ হয়ে বলে- তোমরা ভীত হয়ো না এবং চিন্তিতও হয়ো না; বরং তোমাদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল তার সুসংবাদ পেয়ে আনন্দিত হও। দুনিয়ার জীবনে ও আখিরাতে আমরাই তোমাদের বন্ধু। সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে যা কিছু তোমাদের মন চায় এবং সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে যা তোমাদেরকে ওয়াদা দেয়া হয়েছে। এটা হলো ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ হতে আপ্যায়ন। (সূরা হা-মীম সাজদা, ৩০-৩২)
ব্যাখ্যা : যারা এ সুসংবাদ পেয়েছে তারা আল্লাহকে কেবল রব বলে ঘোষণা করে থেমে যায়নি এবং তার সাথে অন্য কাউকে রব হিসেবেও গ্রহণ করেনি, আর এর সাথে কোন ভ্রান্ত আকীদার সংমিশ্রণও ঘটায়নি। বরং এ আকীদা পোষণ করার পর সারা জীবন তার উপর প্রতিষ্ঠিত থেকেছে, তার পরিপন্থী অন্য সকল আকীদা প্রত্যাখান করেছে এবং নিজের কর্মজীবনে তাওহীদের দাবীসমূহও পূরণ করেছে।
সত্যিকার মুমিনের পরিচয় :
اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ اِذَا ذُكِرَ اللهُ وَجِلَتْ قُلُوْبُهُمْ وَاِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ اٰيَاتُهٗ زَادَتْهُمْ اِيْمَانًا وَّعَلٰى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ ‐ اَلَّذِيْنَ يُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ ‐ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُوْنَ حَقًّاؕ لَهُمْ دَرَجَاتٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَمَغْفِرَةٌ وَّرِزْقٌ كَرِيْمٌ
নিশ্চয় মুমিন তো তারাই যাদের হৃদয় আল্লাহর স্মরণে কম্পিত হয় এবং তাদের সামনে তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হলে তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পায়। আর তারা তাদের প্রতিপালকের উপরই নির্ভর করে থাকে। যারা সালাত কায়েম করে এবং আমি যা দিয়েছি তা হতে ব্যয় করে; তারাই প্রকৃত মুমিন। তাদের প্রতিপালকের নিকট তাদেরই জন্য রয়েছে মর্যাদা, ক্ষমা এবং সম্মানজনক জীবিকা। (সূরা আনফাল, ২-৪)
মুমিনের কয়েকটি গুণাবলি :
اِنَّ الْمُسْلِمِيْنَ وَالْمُسْلِمَاتِ وَالْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْقَانِتِيْنَ وَالْقَانِتَاتِ وَالصَّادِقِيْنَ وَالصَّادِقَاتِ وَالصَّابِرِيْنَ وَالصَّابِرَاتِ وَالْخَاشِعِيْنَ وَالْخَاشِعَاتِ وَالْمُتَصَدِّقِيْنَ وَالْمُتَصَدِّقَاتِ وَالصَّآئِمِيْنَ وَالصَّآئِمَاتِ وَالْحَافِظِيْنَ فُرُوْجَهُمْ وَالْحَافِظَاتِ وَالذَّاكِرِيْنَ اللهَ كَثِيْرًا وَّالذَّاكِرَاتِ اَعَدَّ اللهُ لَهُمْ مَّغْفِرَةً وَاَجْرًا عَظِيْمًا
নিশ্চয় মুসলিম পুরুষ ও মুসলিম নারী, মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী, বিনয়ী পুরুষ ও বিনয়ী নারী, দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, রোযাদার পুরুষ ও রোযাদার নারী, স্বীয় লজ্জাস্থান হেফাজতকারী পুরুষ ও স্বীয় লজ্জাস্থান হেফাজতকারী নারী এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও অধিক স্মরণকারী নারী- এদের জন্য আল্লাহ ক্ষমা ও বিরাট প্রতিদান প্রস্তুত করে রেখেছেন। (সূরা আহযাব- ৩৫)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর নিকট কোন্ কোন্ গুণাবলিকে আসল মূল্য ও মর্যাদা দেয়া হয় এ আয়াতে তা বলে দেয়া হয়েছে। এগুলো ইসলামের মৌলিক মূল্যবোধ। একটি বাক্যে এগুলোকে একত্রে সংযোজিত করে দেয়া হয়েছে। এ মূল্যবোধগুলোর ক্ষেত্রে পুরুষ ও নারীর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। উভয় দলের কর্মক্ষেত্র আলাদা; কিন্তু এসব গুণাবলি যদি উভয়ের মধ্যে সমান থাকে তাহলে আল্লাহর কাছে উভয়ের মর্যাদা সমান এবং উভয়ের প্রতিদানও সমান হবে।
মুমিন : যারা নিজেদের জন্য ইসলামকে জীবনবিধান হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে এবং জীবন-যাপনের ক্ষেত্রে এ বিধানের অনুসারী হওয়ার ব্যাপারে স্থির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। অন্য কথায়, যাদের মধ্যে ইসলাম প্রদত্ত জীবনধারার বিরুদ্ধে কোন রকমের বিরোধিতা নেই। বরং তারা তার পরিপূর্ণ আনুগত্য ও অনুসরণের পথ অবলম্বন করেছে। যাদের এ আনুগত্য বাহ্যিক নয় বরং মন থেকেই তারা ইসলামের নেতৃত্বকে সত্য বলে মেনে নিয়েছে। চিন্তা ও কর্মের যে পথ কুরআন ও মুহাম্মাদ ﷺ দেখিয়েছেন, সেটিই সোজা ও সঠিক পথ এবং তারই অনুসরণের মধ্যে প্রকৃত সাফল্য নিহিত, এটিই তাদের ঈমান। যে জিনিসকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভুল বলে দিয়েছেন তারা সেটাকে ভুল মনে করে। আর যাকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ সত্য বলে দিয়েছেন তাদের নিজেদের মন-মস্তিষ্কও তাকে সত্য বলে নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করে।
মুসলিম : যারা আল্লাহকে মেনে নিয়ে বসে থাকার লোক নয়, বরং তারা কার্যত আনুগত্যকারী। তাদের অবস্থা এমন নয় যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যে কাজের হুকুম দিয়েছেন তাকে সত্য বলে মেনে নেবে কিন্তু কার্যত তার বিরুদ্ধাচরণ করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যেসব কাজ করতে নিষেধ করেছেন সেগুলোকে খারাপ মনে করবে কিন্তু নিজেরা সেগুলোই করে যেতে থাকবে।
সত্যবাদী : যারা নিজেদের কথায় যেমন সত্য তেমনি ব্যবহারিক কার্যকলাপেও সত্য। মিথ্যা, প্রতারণা, অসৎ উদ্দেশ্য ও ছলনা তাদের জীবনে পাওয়া যায় না। তাদের বিবেক যা সত্য বলে জানে মুখে তারা তাই উচ্চারণ করে। যে কাজ সত্য ও সততা অনুযায়ী হয়, সেই কাজই তারা করে থাকে। যার সাথেই তারা কোন কাজ করে বিশ্বস্ততা ও ঈমানদারীর সাথেই করে।
ধৈর্যশীল : আল্লাহ ও তাঁর রাসূল নির্দেশিত সোজা সত্য পথে চলার এবং আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করার পথে যেসব বাধা ও বিপদ আসে এবং যে সমস্ত ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়, দৃঢ়ভাবে তারা তার মুকাবিলা করে। কোন খারাপ লোক বা প্রবৃত্তির কামনা তাদেরকে সোজা পথ থেকে সরিয়ে দিতে পারে না।
দানশীল : তারা আল্লাহর পথে উন্মুক্ত হৃদয়ে নিজেদের অর্থ ব্যয় করে। আল্লাহর বান্দাদের সাহায্য করার ব্যাপারে নিজেদের সামর্থ্যানুযায়ী প্রচেষ্টা চালাতে তারা ত্রুটি করে না। কোন ইয়াতীম, রুগ্ন, বিপদাপন্ন, দুর্বল, অক্ষম ও অভাবী ব্যক্তি সাহায্যের সম্মুখীন হলে তারা বঞ্চিত করে না। আর তারা আল্লাহর দ্বীনকে সুউচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য অর্থ-সম্পদ ব্যয় করতে কখনো কার্পণ্য করে না।
লজ্জাস্থান হেফাজতকারী : এর দু’টি অর্থ হয়। একটি হচ্ছে, তারা যিনা থেকে দূরে থাকে এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে, তারা উলঙ্গপনাকে এড়িয়ে চলে। এর সাথে এটাও বুঝে নিতে হবে যে, শুধুমাত্র পোশাক না পরে উলঙ্গ হয়ে থাকাকে উলঙ্গপনা বলে না; বরং এমন ধরনের পোশাক পরাও উলঙ্গপনার অন্তর্ভুক্ত, যা এতটা সূক্ষ্ম হয় যে, তার মধ্য দিয়ে শরীর দেখা যায় অথবা এমন আঁটসাঁট হয়, যার ফলে দেহের উঁচু-নীচু অঙ্গ স্পষ্ট হয়ে উঠে।
আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী : আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করার অর্থ হচ্ছে, জীবনের সকল কাজকর্মে এমনকি সকল ব্যাপারেই সবসময় যেন মানুষের মুখে আল্লাহর নাম এসে যায়। মানুষের মনে আল্লাহর চিন্তা পুরোপুরি ও সর্বব্যাপী আসন গেঁড়ে না বসা পর্যন্ত এ ধরনের অবস্থা তার মধ্যে সৃষ্টি হয় না। মানুষের মনের গভীরে আল্লাহর চিন্তা ঢুকে যায় তখন তার অবস্থা এমন হয় যে, সে কোন কথা বললে বা কোন কাজ করলে তার মধ্যে আল্লাহর নাম অবশ্যই এসে যাবে। আল্লাহকে স্মরণ করে ঘুমাবে এবং ঘুম থেকে উঠেও আল্লাহর নাম নেবে। কথাবার্তায় তার মুখে বার বার بِسْمِ اللهِ (বিসমিল্লাহ), اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ (আলহামদুলিল্লাহ), إِنْشَاءَ اللهُ (ইনশাআল্লাহ), مَاشَاءَ اللهُ (মাশাআল্লাহ) এ ধরনের শব্দ ও বাক্য বার বার উচ্চারিত হতে থাকবে। প্রত্যেক কাজে বার বার আল্লাহর সাহায্য চাইবে। প্রত্যেকটি নিয়ামত লাভ করার পর আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। প্রত্যেকটি বিপদ আসার পর তাঁর রহমতের প্রত্যাশী হবে। কোন খারাপ কাজের সুযোগ এলে তাঁকে ভয় করবে। কোন ভুল বা অপরাধ করলে তাঁর কাছে ক্ষমা চাইবে। প্রত্যেকটি প্রয়োজন ও অভাবের মুহূর্তে তাঁর কাছে প্রার্থনা করবে। মোটকথা উঠতে-বসতে এবং দুনিয়ার সমস্ত কাজকর্মে সে আল্লাহকে স্মরণ করবে। এ জিনিসটি আসলে ইসলামী জীবনের প্রাণ। অন্য যে কোন ইবাদাতের জন্য কোন না কোন সময় নির্ধারিত থাকে এবং তখনই তা পালন করা হয়। আর তা পালন করার পর পরই মানুষ তা থেকে আলাদা হয়ে যায়। কিন্তু এ ইবাদাত তথা আল্লাহর যিকির সর্বক্ষণ জারী থাকে এবং এটিই আল্লাহর সাথে মানুষের জীবনের স্থায়ী সম্পর্ক জুড়ে রাখে।
মুমিনের বিশেষ কয়েকটি গুণ :
اَلتَّآئِبُوْنَ الْعَابِدُوْنَ الْحَامِدُوْنَ السَّآئِحُوْنَ الرَّاكِعُوْنَ السَّاجِدُوْنَ الْاٰمِرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَالنَّاهُوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَالْحَافِظُوْنَ لِحُدُوْدِ اللهِ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِيْنَ
তারা তাওবাকারী, ইবাদাতকারী, আল্লাহর প্রশংসাকারী, সিয়াম পালনকারী, রুকূকারী, সিজদাকারী, সৎকাজের নির্দেশদাতা, অসৎকাজ থেকে নিষেধকারী এবং আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা সংরক্ষণকারী; এসব মুমিনদেরকে তুমি সুসংবাদ দাও। (সূরা তাওবা- ১১২)
ব্যাখ্যা : اَلسَّآئِحُوْنَ (আসসা-ইহূন) : এর শাব্দিক অর্থ বিচরণকারী। রূপক অর্থে এর দ্বারা রোযা পালনকারীকে বুঝানো হয়। তবে এর প্রকৃত অর্থ হচ্ছে, এমন উদ্দেশ্যে জমিনে চলাফেরা করা, যা পবিত্র ও উন্নত এবং যার মধ্যে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্য নিহিত থাকে। যেমন দ্বীন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে জিহাদ করা, কুফর শাসিত এলাকা থেকে হিজরত করা, দ্বীনের দাওয়াত দেয়া, মানুষের চরিত্র সংশোধন করা, কল্যাণকর জ্ঞান অর্জন করা, আল্লাহর নিদর্শনসমূহ পর্যবেক্ষণ করা এবং হালাল জীবিকা উপার্জন করা। সত্যিকার মুমিন ঈমানের দাবী করার পর নিজের জায়গায় আরামে বসে থাকতে পারে না। সে আল্লাহর দ্বীন গ্রহণ করার পর তার উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য অবিচলভাবে দাঁড়িয়ে যায় এবং তার দাবী পূরণ করার জন্য সারা পৃথিবীব্যাপী অবিরাম প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম চালাতে থাকে।
اَلْحَافِظُوْنَ لِحُدُوْدِ اللهِ (আল হাফিযুনা লি হুদূদিল্লাহ) : আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা সংরক্ষণ করা; অর্থাৎ আকীদা-বিশ্বাস, ইবাদাত-বন্দেগী, নৈতিক চরিত্র, সমাজ-সংস্কৃতি, আইন-আদালত, অর্থনীতি, রাজনীতি এবং যুদ্ধ ও শান্তির ব্যাপারে যেসব সীমারেখা আল্লাহ নির্ধারণ করে দিয়েছেন, তারা তা পুরোপুরিভাবে মেনে চলে। আল্লাহর আইনের পরিবর্তে মনগড়া আইনের বা মানুষের তৈরি ভিন্নতর আইনকে জীবনবিধান হিসেবে গ্রহণ করে না। কাজেই প্রকৃত ঈমানদারদের গুণাবলি হচ্ছে, তারা দুনিয়ায় আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে, সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ করে এবং সেগুলো অটুট রাখার জন্য নিজেদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে।
আল্লাহ, নবী ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা : আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেছেন, এ তিনটি গুণ যার মধ্যে বিদ্যমান সে ঈমানের স্বাদ পেয়েছে- (১) যার কাছে সকল জিনিস হতে স্বয়ং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক প্রিয়, (২) যে কাউকে ভালোবাসে সে কেবল আল্লাহর জন্যই ভালোবাসে, (৩) ঈমান গ্রহণের পর আবার কুফরীর দিকে ফিরে যাওয়া এমনভাবে অপছন্দ করে, যেমন সে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়া অপছন্দ করে। (সহীহ বুখারী, হা/১৬)
রাসূল ﷺ কে ভালোবাসা : আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ প্রকৃত ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার নিকট তার বাবা-মা, সন্তান-সন্ততি এবং সব মানুষের চেয়ে অধিক প্রিয় না হই। (সহীহ বুখারী, হা/১৫)
নিজের জন্য যা পছন্দ অন্য ভাইয়ের জন্যও তা পছন্দ করা : আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল ﷺ বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ পূর্ণাঙ্গ ঈমানদার হবে না যতক্ষণ না সে নিজের জন্য যা পছন্দ করে, অপর মুসলিম ভাইয়ের জন্যও তা পছন্দ করে। (সহীহ বুখারী, হা/১৩)
হাত ও মুখ দ্বারা অপর মুসলিম ভাইকে কষ্ট না দেয়া : আবদুলস্নাহ ইবনে উমর (রাঃ) নবী ﷺ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, প্রকৃত মুসলিম সে ব্যক্তি, যার জিহবা এবং হাত হতে অপর মুসলিম নিরাপদ থাকে। প্রকৃত মুহাজির ঐ ব্যক্তি, যে আল্লাহর নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ ত্যাগ করে। (সহীহ বুখারী, হা/১০, ১১)
اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ اِذَا ذُكِرَ اللهُ وَجِلَتْ قُلُوْبُهُمْ وَاِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ اٰيَاتُهٗ زَادَتْهُمْ اِيْمَانًا وَّعَلٰى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ ‐ اَلَّذِيْنَ يُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ ‐ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُوْنَ حَقًّاؕ لَهُمْ دَرَجَاتٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَمَغْفِرَةٌ وَّرِزْقٌ كَرِيْمٌ
নিশ্চয় মুমিন তো তারাই যাদের হৃদয় আল্লাহর স্মরণে কম্পিত হয় এবং তাদের সামনে তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হলে তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পায়। আর তারা তাদের প্রতিপালকের উপরই নির্ভর করে থাকে। যারা সালাত কায়েম করে এবং আমি যা দিয়েছি তা হতে ব্যয় করে; তারাই প্রকৃত মুমিন। তাদের প্রতিপালকের নিকট তাদেরই জন্য রয়েছে মর্যাদা, ক্ষমা এবং সম্মানজনক জীবিকা। (সূরা আনফাল, ২-৪)
মুমিনের কয়েকটি গুণাবলি :
اِنَّ الْمُسْلِمِيْنَ وَالْمُسْلِمَاتِ وَالْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْقَانِتِيْنَ وَالْقَانِتَاتِ وَالصَّادِقِيْنَ وَالصَّادِقَاتِ وَالصَّابِرِيْنَ وَالصَّابِرَاتِ وَالْخَاشِعِيْنَ وَالْخَاشِعَاتِ وَالْمُتَصَدِّقِيْنَ وَالْمُتَصَدِّقَاتِ وَالصَّآئِمِيْنَ وَالصَّآئِمَاتِ وَالْحَافِظِيْنَ فُرُوْجَهُمْ وَالْحَافِظَاتِ وَالذَّاكِرِيْنَ اللهَ كَثِيْرًا وَّالذَّاكِرَاتِ اَعَدَّ اللهُ لَهُمْ مَّغْفِرَةً وَاَجْرًا عَظِيْمًا
নিশ্চয় মুসলিম পুরুষ ও মুসলিম নারী, মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী, বিনয়ী পুরুষ ও বিনয়ী নারী, দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, রোযাদার পুরুষ ও রোযাদার নারী, স্বীয় লজ্জাস্থান হেফাজতকারী পুরুষ ও স্বীয় লজ্জাস্থান হেফাজতকারী নারী এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও অধিক স্মরণকারী নারী- এদের জন্য আল্লাহ ক্ষমা ও বিরাট প্রতিদান প্রস্তুত করে রেখেছেন। (সূরা আহযাব- ৩৫)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর নিকট কোন্ কোন্ গুণাবলিকে আসল মূল্য ও মর্যাদা দেয়া হয় এ আয়াতে তা বলে দেয়া হয়েছে। এগুলো ইসলামের মৌলিক মূল্যবোধ। একটি বাক্যে এগুলোকে একত্রে সংযোজিত করে দেয়া হয়েছে। এ মূল্যবোধগুলোর ক্ষেত্রে পুরুষ ও নারীর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। উভয় দলের কর্মক্ষেত্র আলাদা; কিন্তু এসব গুণাবলি যদি উভয়ের মধ্যে সমান থাকে তাহলে আল্লাহর কাছে উভয়ের মর্যাদা সমান এবং উভয়ের প্রতিদানও সমান হবে।
মুমিন : যারা নিজেদের জন্য ইসলামকে জীবনবিধান হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে এবং জীবন-যাপনের ক্ষেত্রে এ বিধানের অনুসারী হওয়ার ব্যাপারে স্থির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। অন্য কথায়, যাদের মধ্যে ইসলাম প্রদত্ত জীবনধারার বিরুদ্ধে কোন রকমের বিরোধিতা নেই। বরং তারা তার পরিপূর্ণ আনুগত্য ও অনুসরণের পথ অবলম্বন করেছে। যাদের এ আনুগত্য বাহ্যিক নয় বরং মন থেকেই তারা ইসলামের নেতৃত্বকে সত্য বলে মেনে নিয়েছে। চিন্তা ও কর্মের যে পথ কুরআন ও মুহাম্মাদ ﷺ দেখিয়েছেন, সেটিই সোজা ও সঠিক পথ এবং তারই অনুসরণের মধ্যে প্রকৃত সাফল্য নিহিত, এটিই তাদের ঈমান। যে জিনিসকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভুল বলে দিয়েছেন তারা সেটাকে ভুল মনে করে। আর যাকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ সত্য বলে দিয়েছেন তাদের নিজেদের মন-মস্তিষ্কও তাকে সত্য বলে নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করে।
মুসলিম : যারা আল্লাহকে মেনে নিয়ে বসে থাকার লোক নয়, বরং তারা কার্যত আনুগত্যকারী। তাদের অবস্থা এমন নয় যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যে কাজের হুকুম দিয়েছেন তাকে সত্য বলে মেনে নেবে কিন্তু কার্যত তার বিরুদ্ধাচরণ করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যেসব কাজ করতে নিষেধ করেছেন সেগুলোকে খারাপ মনে করবে কিন্তু নিজেরা সেগুলোই করে যেতে থাকবে।
সত্যবাদী : যারা নিজেদের কথায় যেমন সত্য তেমনি ব্যবহারিক কার্যকলাপেও সত্য। মিথ্যা, প্রতারণা, অসৎ উদ্দেশ্য ও ছলনা তাদের জীবনে পাওয়া যায় না। তাদের বিবেক যা সত্য বলে জানে মুখে তারা তাই উচ্চারণ করে। যে কাজ সত্য ও সততা অনুযায়ী হয়, সেই কাজই তারা করে থাকে। যার সাথেই তারা কোন কাজ করে বিশ্বস্ততা ও ঈমানদারীর সাথেই করে।
ধৈর্যশীল : আল্লাহ ও তাঁর রাসূল নির্দেশিত সোজা সত্য পথে চলার এবং আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করার পথে যেসব বাধা ও বিপদ আসে এবং যে সমস্ত ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়, দৃঢ়ভাবে তারা তার মুকাবিলা করে। কোন খারাপ লোক বা প্রবৃত্তির কামনা তাদেরকে সোজা পথ থেকে সরিয়ে দিতে পারে না।
দানশীল : তারা আল্লাহর পথে উন্মুক্ত হৃদয়ে নিজেদের অর্থ ব্যয় করে। আল্লাহর বান্দাদের সাহায্য করার ব্যাপারে নিজেদের সামর্থ্যানুযায়ী প্রচেষ্টা চালাতে তারা ত্রুটি করে না। কোন ইয়াতীম, রুগ্ন, বিপদাপন্ন, দুর্বল, অক্ষম ও অভাবী ব্যক্তি সাহায্যের সম্মুখীন হলে তারা বঞ্চিত করে না। আর তারা আল্লাহর দ্বীনকে সুউচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য অর্থ-সম্পদ ব্যয় করতে কখনো কার্পণ্য করে না।
লজ্জাস্থান হেফাজতকারী : এর দু’টি অর্থ হয়। একটি হচ্ছে, তারা যিনা থেকে দূরে থাকে এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে, তারা উলঙ্গপনাকে এড়িয়ে চলে। এর সাথে এটাও বুঝে নিতে হবে যে, শুধুমাত্র পোশাক না পরে উলঙ্গ হয়ে থাকাকে উলঙ্গপনা বলে না; বরং এমন ধরনের পোশাক পরাও উলঙ্গপনার অন্তর্ভুক্ত, যা এতটা সূক্ষ্ম হয় যে, তার মধ্য দিয়ে শরীর দেখা যায় অথবা এমন আঁটসাঁট হয়, যার ফলে দেহের উঁচু-নীচু অঙ্গ স্পষ্ট হয়ে উঠে।
আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী : আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করার অর্থ হচ্ছে, জীবনের সকল কাজকর্মে এমনকি সকল ব্যাপারেই সবসময় যেন মানুষের মুখে আল্লাহর নাম এসে যায়। মানুষের মনে আল্লাহর চিন্তা পুরোপুরি ও সর্বব্যাপী আসন গেঁড়ে না বসা পর্যন্ত এ ধরনের অবস্থা তার মধ্যে সৃষ্টি হয় না। মানুষের মনের গভীরে আল্লাহর চিন্তা ঢুকে যায় তখন তার অবস্থা এমন হয় যে, সে কোন কথা বললে বা কোন কাজ করলে তার মধ্যে আল্লাহর নাম অবশ্যই এসে যাবে। আল্লাহকে স্মরণ করে ঘুমাবে এবং ঘুম থেকে উঠেও আল্লাহর নাম নেবে। কথাবার্তায় তার মুখে বার বার بِسْمِ اللهِ (বিসমিল্লাহ), اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ (আলহামদুলিল্লাহ), إِنْشَاءَ اللهُ (ইনশাআল্লাহ), مَاشَاءَ اللهُ (মাশাআল্লাহ) এ ধরনের শব্দ ও বাক্য বার বার উচ্চারিত হতে থাকবে। প্রত্যেক কাজে বার বার আল্লাহর সাহায্য চাইবে। প্রত্যেকটি নিয়ামত লাভ করার পর আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। প্রত্যেকটি বিপদ আসার পর তাঁর রহমতের প্রত্যাশী হবে। কোন খারাপ কাজের সুযোগ এলে তাঁকে ভয় করবে। কোন ভুল বা অপরাধ করলে তাঁর কাছে ক্ষমা চাইবে। প্রত্যেকটি প্রয়োজন ও অভাবের মুহূর্তে তাঁর কাছে প্রার্থনা করবে। মোটকথা উঠতে-বসতে এবং দুনিয়ার সমস্ত কাজকর্মে সে আল্লাহকে স্মরণ করবে। এ জিনিসটি আসলে ইসলামী জীবনের প্রাণ। অন্য যে কোন ইবাদাতের জন্য কোন না কোন সময় নির্ধারিত থাকে এবং তখনই তা পালন করা হয়। আর তা পালন করার পর পরই মানুষ তা থেকে আলাদা হয়ে যায়। কিন্তু এ ইবাদাত তথা আল্লাহর যিকির সর্বক্ষণ জারী থাকে এবং এটিই আল্লাহর সাথে মানুষের জীবনের স্থায়ী সম্পর্ক জুড়ে রাখে।
মুমিনের বিশেষ কয়েকটি গুণ :
اَلتَّآئِبُوْنَ الْعَابِدُوْنَ الْحَامِدُوْنَ السَّآئِحُوْنَ الرَّاكِعُوْنَ السَّاجِدُوْنَ الْاٰمِرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَالنَّاهُوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَالْحَافِظُوْنَ لِحُدُوْدِ اللهِ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِيْنَ
তারা তাওবাকারী, ইবাদাতকারী, আল্লাহর প্রশংসাকারী, সিয়াম পালনকারী, রুকূকারী, সিজদাকারী, সৎকাজের নির্দেশদাতা, অসৎকাজ থেকে নিষেধকারী এবং আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা সংরক্ষণকারী; এসব মুমিনদেরকে তুমি সুসংবাদ দাও। (সূরা তাওবা- ১১২)
ব্যাখ্যা : اَلسَّآئِحُوْنَ (আসসা-ইহূন) : এর শাব্দিক অর্থ বিচরণকারী। রূপক অর্থে এর দ্বারা রোযা পালনকারীকে বুঝানো হয়। তবে এর প্রকৃত অর্থ হচ্ছে, এমন উদ্দেশ্যে জমিনে চলাফেরা করা, যা পবিত্র ও উন্নত এবং যার মধ্যে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্য নিহিত থাকে। যেমন দ্বীন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে জিহাদ করা, কুফর শাসিত এলাকা থেকে হিজরত করা, দ্বীনের দাওয়াত দেয়া, মানুষের চরিত্র সংশোধন করা, কল্যাণকর জ্ঞান অর্জন করা, আল্লাহর নিদর্শনসমূহ পর্যবেক্ষণ করা এবং হালাল জীবিকা উপার্জন করা। সত্যিকার মুমিন ঈমানের দাবী করার পর নিজের জায়গায় আরামে বসে থাকতে পারে না। সে আল্লাহর দ্বীন গ্রহণ করার পর তার উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য অবিচলভাবে দাঁড়িয়ে যায় এবং তার দাবী পূরণ করার জন্য সারা পৃথিবীব্যাপী অবিরাম প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম চালাতে থাকে।
اَلْحَافِظُوْنَ لِحُدُوْدِ اللهِ (আল হাফিযুনা লি হুদূদিল্লাহ) : আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা সংরক্ষণ করা; অর্থাৎ আকীদা-বিশ্বাস, ইবাদাত-বন্দেগী, নৈতিক চরিত্র, সমাজ-সংস্কৃতি, আইন-আদালত, অর্থনীতি, রাজনীতি এবং যুদ্ধ ও শান্তির ব্যাপারে যেসব সীমারেখা আল্লাহ নির্ধারণ করে দিয়েছেন, তারা তা পুরোপুরিভাবে মেনে চলে। আল্লাহর আইনের পরিবর্তে মনগড়া আইনের বা মানুষের তৈরি ভিন্নতর আইনকে জীবনবিধান হিসেবে গ্রহণ করে না। কাজেই প্রকৃত ঈমানদারদের গুণাবলি হচ্ছে, তারা দুনিয়ায় আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে, সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ করে এবং সেগুলো অটুট রাখার জন্য নিজেদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে।
আল্লাহ, নবী ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা : আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেছেন, এ তিনটি গুণ যার মধ্যে বিদ্যমান সে ঈমানের স্বাদ পেয়েছে- (১) যার কাছে সকল জিনিস হতে স্বয়ং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক প্রিয়, (২) যে কাউকে ভালোবাসে সে কেবল আল্লাহর জন্যই ভালোবাসে, (৩) ঈমান গ্রহণের পর আবার কুফরীর দিকে ফিরে যাওয়া এমনভাবে অপছন্দ করে, যেমন সে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়া অপছন্দ করে। (সহীহ বুখারী, হা/১৬)
রাসূল ﷺ কে ভালোবাসা : আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ প্রকৃত ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার নিকট তার বাবা-মা, সন্তান-সন্ততি এবং সব মানুষের চেয়ে অধিক প্রিয় না হই। (সহীহ বুখারী, হা/১৫)
নিজের জন্য যা পছন্দ অন্য ভাইয়ের জন্যও তা পছন্দ করা : আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল ﷺ বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ পূর্ণাঙ্গ ঈমানদার হবে না যতক্ষণ না সে নিজের জন্য যা পছন্দ করে, অপর মুসলিম ভাইয়ের জন্যও তা পছন্দ করে। (সহীহ বুখারী, হা/১৩)
হাত ও মুখ দ্বারা অপর মুসলিম ভাইকে কষ্ট না দেয়া : আবদুলস্নাহ ইবনে উমর (রাঃ) নবী ﷺ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, প্রকৃত মুসলিম সে ব্যক্তি, যার জিহবা এবং হাত হতে অপর মুসলিম নিরাপদ থাকে। প্রকৃত মুহাজির ঐ ব্যক্তি, যে আল্লাহর নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ ত্যাগ করে। (সহীহ বুখারী, হা/১০, ১১)
আল্লাহর কাছে মানুষের জন্য একটিমাত্র জীবনব্যবস্থা সঠিক বলে গৃহীত। সেটি হচ্ছে, মানুষ আল্লাহকে নিজের মালিক ও উপাস্য হিসেবে স্বীকার করে নেবে এবং তাঁর সামনে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সোপর্দ করে দেবে। আর তাঁর ইবাদাত করার পদ্ধতি নিজেরা আবিস্কার করবে না বরং তিনি নবীর মাধ্যমে যে হেদায়াত পাঠিয়েছেন হুবহু তার অনুসরণ করবে। এ চিন্তা ও কর্মপদ্ধতির নামই হচ্ছে ইসলাম। বিশ্বজাহানের স্রষ্টা মানবজাতির জন্য ইসলাম ছাড়া অন্য কোন জীবনব্যবস্থার স্বীকৃতি দেননি। মানুষ তার নির্বুদ্ধিতার কারণে নাস্তিক্যবাদ থেকে নিয়ে শিরক ও মূর্তিপূজা পর্যন্ত যে কোন মতবাদের অনুসরণ করা নিজের জন্য বৈধ মনে করতে পারে, কিন্তু বিশ্বজাহানের প্রভুর দৃষ্টিতে এগুলো নিছক বিদ্রোহ ছাড়া আর কিছুই নয়।
সকল নবীদের দ্বীন হলো ইসলাম :
مِلَّةَ اَبِيْكُمْ اِبْرَاهِيْمَؕ هُوَ سَمَّاكُمُ الْمُسْلِمِيْنَ مِنْ قَبْلُ وَفِيْ هٰذَا لِيَكُوْنَ الرَّسُوْلُ شَهِيْدًا عَلَيْكُمْ وَتَكُوْنُوْا شُهَدَآءَ عَلَى النَّاسِ
এটা তোমাদের পিতা ইবরাহীমের মিল্লাত। তিনি ইতোপূর্বে তোমাদের নামকরণ করেছিলেন ‘মুসলিম’ এবং এ কিতাবেও (অর্থাৎ কুরআনের মধ্যেও তোমাদেরকে এ নামেই সম্বোধন করা হয়েছে); যাতে রাসূল তোমাদের জন্য এবং সমস্ত মানুষের জন্য আল্লাহর দ্বীনের উপর সাক্ষী হতে পারে। (সূরা হজ্জ- ৭৮)
নূহ (আঃ) এর দ্বীন ছিল ইসলাম :
وَاُمِرْتُ اَنْ اَكُوْنَ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ
(নূহ আঃ বলেছিলেন) আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্যই আদিষ্ট হয়েছি। (সূরা ইউনুস- ৭২)
ইবরাহীম (আঃ) এর দ্বীন ছিল ইসলাম :
مَا كَانَ اِبْرَاهِيْمُ يَهُوْدِيًّا وَّلَا نَصْرَانِيًّا وَّلٰكِنْ كَانَ حَنِيْفًا مُّسْلِمًاؕ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
ইবরাহীম ইয়াহুদি বা নাসারা কিছুই ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ মুসলিম। আর তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্তও ছিলেন না। (সূরা আলে ইমরান - ৬৭)
ইবরাহীম ও ইসমাঈল (আঃ) মুসলিম হওয়ার দু‘আ করেছিলেন :
رَبَّنَا وَاجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِنَاۤ اُمَّةً مُّسْلِمَةً لَّكْ وَاَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبْ عَلَيْنَاۚ اِنَّكَ اَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ
হে আমাদের রব! আমাদের উভয়কে মুসলিম বানিয়ে দিন এবং আমাদের বংশধরদের মধ্য হতেও আপনার অনুগত একদল লোক সৃষ্টি করে দিন। আর আমাদেরকে ইবাদাতের আহকাম বলে দিন এবং আমাদের প্রতি ক্ষমাশীল হোন, নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল ও করুণাময়। (সূরা বাক্বারা- ১২৮)
ইয়াকূব (আঃ) এর দ্বীন ছিল ইসলাম :
وَوَصّٰى بِهَاۤ اِبْرَاهِيْمُ بَنِيْهِ وَيَعْقُوْبُؕ يَا بَنِيَّ اِنَّ اللهَ اصْطَفٰى لَكُمُ الدِّيْنَ فَلَا تَمُوْتُنَّ اِلَّا وَاَنْتُمْ مُّسْلِمُوْنَ
ইবরাহীম ও ইয়াকূব স্বীয় সন্তানদেরকে এ সদুপদেশ প্রদান করেছিল যে, হে আমার বংশধর! নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের জন্য এই দ্বীনকে (জীবনব্যবস্থা হিসেবে) মনোনীত করেছেন। অতএব তোমরা মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। (সূরা বাক্বারা- ১৩২)
ইউসুফ (আঃ) মুসলিম হয়ে মৃত্যুবরণ করার জন্য দু‘আ করেছিলেন :
فَاطِرَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِؕ اَنْتَ وَلِيِّيْ فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِۚ تَوَفَّنِيْ مُسْلِمًا وَّاَلْحِقْنِيْ بِالصَّالِحِيْنَ
হে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর স্রষ্টা! তুমিই ইহকাল ও পরকালে আমার অভিভাবক। তুমি আমাকে মুসলিম হিসেবে মৃত্যু দাও এবং আমাকে সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত করো। (সূরা ইউসুফ- ১০১)
লূত (আঃ) এর পরিবারও মুসলিম ছিলেন :
فَاَخْرَجْنَا مَنْ كَانَ فِيْهَا مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ ‐ فَمَا وَجَدْنَا فِيْهَا غَيْرَ بَيْتٍ مِّنَ الْمُسْلِمِيْنَ
সেখানে যেসব মুমিন ছিল আমি তাদেরকে বের করে নিলাম। কিন্তু সেখানে আমি একটি পরিবার (লূত আঃ এর পরিবার) ব্যতীত অন্য কোন মুসলিম পাইনি। (সূরা যারিয়াত- ৩৫, ৩৬)
মূসা (আঃ) এর দ্বীনও ছিল ইসলাম :
وَقَالَ مُوْسٰى يَا قَوْمِ اِنْ كُنْتُمْ اٰمَنْتُمْ بِاللهِ فَعَلَيْهِ تَوَكَّلُوْاۤ اِنْ كُنْتُمْ مُّسْلِمِيْنَ
মূসা বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনে থাক এবং যদি তোমরা মুসলিম হও, তবে তোমরা তাঁর উপরই নির্ভর করো। (সূরা ইউনুস- ৮৪)
সুলায়মান (আঃ) এর দ্বীন ছিল ইসলাম :
قَالَتْ رَبِّ اِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ وَاَسْلَمْتُ مَعَ سُلَيْمَانَ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
সে (সাবার রাণী) বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমি তো নিজের প্রতি যুলুম করেছি, এখন আমি সুলায়মানের সাথে জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করলাম। (সূরা নামল- ৪৪)
ঈসা (আঃ) এর দ্বীন ছিল ইসলাম :
وَاِذْ اَوْحَيْتُ اِلَى الْحَوَارِيِّيْنَ اَنْ اٰمِنُوْا بِيْ وَبِرَسُوْلِيْۚ قَالُوْاۤ اٰمَنَّا وَاشْهَدْ بِاَنَّنَا مُسْلِمُوْنَ
স্মরণ করো, যখন আমি হাওয়ারীদেরকে এ আদেশ দিয়েছিলাম যে, তোমরা আমার প্রতি ও আমার রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন করো। তখন তারা বলেছিল, আমরা ঈমান আনলাম এবং তুমি সাক্ষী থাক যে, আমরা মুসলিম। (সূরা মায়েদা- ১১১)
মুহাম্মাদ ﷺ এরও দ্বীন হলো ইসলাম :
اِنَّمَاۤ اُمِرْتُ اَنْ اَعْبُدَ رَبَّ هٰذِهِ الْبَلْدَةِ الَّذِيْ حَرَّمَهَا وَلَهٗ كُلُّ شَيْءٍ وَّاُمِرْتُ اَنْ اَكُوْنَ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ
নিশ্চয় আমি আদিষ্ট হয়েছি এ নগরীর প্রতিপালকের ইবাদাত করার জন্য, যিনি তাকে সম্মানিত করেছেন এবং সমস্ত কিছু তাঁরই জন্য। আর আমি আরো আদিষ্ট হয়েছি, যেন আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত হই। (সূরা নামল- ৯১)
ব্যাখ্যা : মানবজাতির ইতিহাসের সূচনালগ্ন থেকেই যারা তাওহীদ, আখিরাত ও রিসালাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে আসছেন, তারা সকলেই মুসলিম ছিলেন। এ সত্য মিল্লাতের অনুসারীদেরকে কোন দিন ‘নূহী’ ‘ইবরাহিমী’ বা ‘মাসীহী’ ইত্যাদি বলা হয়নি; বরং তাদের নাম ছিল ‘মুসলিম’ এবং আজও সবাই মুসলিম। তবে অতি দুঃখের বিষয় যে, আজকের মুসলিমরা তাদের এ প্রকৃত পরিচিতিমূলক নামটি ব্যবহার না করে এমনসব নামে পরিচয় দিচ্ছে, ফলে গোটা মুসলিম উম্মাহ বিভক্ত হয়ে গেছে এবং ভিন্ন ভিন্ন নামে তাদের পরিচয় প্রকাশ করছে। যার ফলে তাদের মধ্যে হিংসা-বিবাদ ও হানা-হানি লেগেই আছে।
مِلَّةَ اَبِيْكُمْ اِبْرَاهِيْمَؕ هُوَ سَمَّاكُمُ الْمُسْلِمِيْنَ مِنْ قَبْلُ وَفِيْ هٰذَا لِيَكُوْنَ الرَّسُوْلُ شَهِيْدًا عَلَيْكُمْ وَتَكُوْنُوْا شُهَدَآءَ عَلَى النَّاسِ
এটা তোমাদের পিতা ইবরাহীমের মিল্লাত। তিনি ইতোপূর্বে তোমাদের নামকরণ করেছিলেন ‘মুসলিম’ এবং এ কিতাবেও (অর্থাৎ কুরআনের মধ্যেও তোমাদেরকে এ নামেই সম্বোধন করা হয়েছে); যাতে রাসূল তোমাদের জন্য এবং সমস্ত মানুষের জন্য আল্লাহর দ্বীনের উপর সাক্ষী হতে পারে। (সূরা হজ্জ- ৭৮)
নূহ (আঃ) এর দ্বীন ছিল ইসলাম :
وَاُمِرْتُ اَنْ اَكُوْنَ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ
(নূহ আঃ বলেছিলেন) আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্যই আদিষ্ট হয়েছি। (সূরা ইউনুস- ৭২)
ইবরাহীম (আঃ) এর দ্বীন ছিল ইসলাম :
مَا كَانَ اِبْرَاهِيْمُ يَهُوْدِيًّا وَّلَا نَصْرَانِيًّا وَّلٰكِنْ كَانَ حَنِيْفًا مُّسْلِمًاؕ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
ইবরাহীম ইয়াহুদি বা নাসারা কিছুই ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ মুসলিম। আর তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্তও ছিলেন না। (সূরা আলে ইমরান - ৬৭)
ইবরাহীম ও ইসমাঈল (আঃ) মুসলিম হওয়ার দু‘আ করেছিলেন :
رَبَّنَا وَاجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِنَاۤ اُمَّةً مُّسْلِمَةً لَّكْ وَاَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبْ عَلَيْنَاۚ اِنَّكَ اَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ
হে আমাদের রব! আমাদের উভয়কে মুসলিম বানিয়ে দিন এবং আমাদের বংশধরদের মধ্য হতেও আপনার অনুগত একদল লোক সৃষ্টি করে দিন। আর আমাদেরকে ইবাদাতের আহকাম বলে দিন এবং আমাদের প্রতি ক্ষমাশীল হোন, নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল ও করুণাময়। (সূরা বাক্বারা- ১২৮)
ইয়াকূব (আঃ) এর দ্বীন ছিল ইসলাম :
وَوَصّٰى بِهَاۤ اِبْرَاهِيْمُ بَنِيْهِ وَيَعْقُوْبُؕ يَا بَنِيَّ اِنَّ اللهَ اصْطَفٰى لَكُمُ الدِّيْنَ فَلَا تَمُوْتُنَّ اِلَّا وَاَنْتُمْ مُّسْلِمُوْنَ
ইবরাহীম ও ইয়াকূব স্বীয় সন্তানদেরকে এ সদুপদেশ প্রদান করেছিল যে, হে আমার বংশধর! নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের জন্য এই দ্বীনকে (জীবনব্যবস্থা হিসেবে) মনোনীত করেছেন। অতএব তোমরা মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। (সূরা বাক্বারা- ১৩২)
ইউসুফ (আঃ) মুসলিম হয়ে মৃত্যুবরণ করার জন্য দু‘আ করেছিলেন :
فَاطِرَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِؕ اَنْتَ وَلِيِّيْ فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِۚ تَوَفَّنِيْ مُسْلِمًا وَّاَلْحِقْنِيْ بِالصَّالِحِيْنَ
হে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর স্রষ্টা! তুমিই ইহকাল ও পরকালে আমার অভিভাবক। তুমি আমাকে মুসলিম হিসেবে মৃত্যু দাও এবং আমাকে সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত করো। (সূরা ইউসুফ- ১০১)
লূত (আঃ) এর পরিবারও মুসলিম ছিলেন :
فَاَخْرَجْنَا مَنْ كَانَ فِيْهَا مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ ‐ فَمَا وَجَدْنَا فِيْهَا غَيْرَ بَيْتٍ مِّنَ الْمُسْلِمِيْنَ
সেখানে যেসব মুমিন ছিল আমি তাদেরকে বের করে নিলাম। কিন্তু সেখানে আমি একটি পরিবার (লূত আঃ এর পরিবার) ব্যতীত অন্য কোন মুসলিম পাইনি। (সূরা যারিয়াত- ৩৫, ৩৬)
মূসা (আঃ) এর দ্বীনও ছিল ইসলাম :
وَقَالَ مُوْسٰى يَا قَوْمِ اِنْ كُنْتُمْ اٰمَنْتُمْ بِاللهِ فَعَلَيْهِ تَوَكَّلُوْاۤ اِنْ كُنْتُمْ مُّسْلِمِيْنَ
মূসা বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনে থাক এবং যদি তোমরা মুসলিম হও, তবে তোমরা তাঁর উপরই নির্ভর করো। (সূরা ইউনুস- ৮৪)
সুলায়মান (আঃ) এর দ্বীন ছিল ইসলাম :
قَالَتْ رَبِّ اِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ وَاَسْلَمْتُ مَعَ سُلَيْمَانَ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
সে (সাবার রাণী) বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমি তো নিজের প্রতি যুলুম করেছি, এখন আমি সুলায়মানের সাথে জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করলাম। (সূরা নামল- ৪৪)
ঈসা (আঃ) এর দ্বীন ছিল ইসলাম :
وَاِذْ اَوْحَيْتُ اِلَى الْحَوَارِيِّيْنَ اَنْ اٰمِنُوْا بِيْ وَبِرَسُوْلِيْۚ قَالُوْاۤ اٰمَنَّا وَاشْهَدْ بِاَنَّنَا مُسْلِمُوْنَ
স্মরণ করো, যখন আমি হাওয়ারীদেরকে এ আদেশ দিয়েছিলাম যে, তোমরা আমার প্রতি ও আমার রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন করো। তখন তারা বলেছিল, আমরা ঈমান আনলাম এবং তুমি সাক্ষী থাক যে, আমরা মুসলিম। (সূরা মায়েদা- ১১১)
মুহাম্মাদ ﷺ এরও দ্বীন হলো ইসলাম :
اِنَّمَاۤ اُمِرْتُ اَنْ اَعْبُدَ رَبَّ هٰذِهِ الْبَلْدَةِ الَّذِيْ حَرَّمَهَا وَلَهٗ كُلُّ شَيْءٍ وَّاُمِرْتُ اَنْ اَكُوْنَ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ
নিশ্চয় আমি আদিষ্ট হয়েছি এ নগরীর প্রতিপালকের ইবাদাত করার জন্য, যিনি তাকে সম্মানিত করেছেন এবং সমস্ত কিছু তাঁরই জন্য। আর আমি আরো আদিষ্ট হয়েছি, যেন আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত হই। (সূরা নামল- ৯১)
ব্যাখ্যা : মানবজাতির ইতিহাসের সূচনালগ্ন থেকেই যারা তাওহীদ, আখিরাত ও রিসালাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে আসছেন, তারা সকলেই মুসলিম ছিলেন। এ সত্য মিল্লাতের অনুসারীদেরকে কোন দিন ‘নূহী’ ‘ইবরাহিমী’ বা ‘মাসীহী’ ইত্যাদি বলা হয়নি; বরং তাদের নাম ছিল ‘মুসলিম’ এবং আজও সবাই মুসলিম। তবে অতি দুঃখের বিষয় যে, আজকের মুসলিমরা তাদের এ প্রকৃত পরিচিতিমূলক নামটি ব্যবহার না করে এমনসব নামে পরিচয় দিচ্ছে, ফলে গোটা মুসলিম উম্মাহ বিভক্ত হয়ে গেছে এবং ভিন্ন ভিন্ন নামে তাদের পরিচয় প্রকাশ করছে। যার ফলে তাদের মধ্যে হিংসা-বিবাদ ও হানা-হানি লেগেই আছে।
আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য একমাত্র জীবনবিধান হলো ইসলাম :
اِنَّ الدِّيْنَ عِنْدَ اللهِ الْاِسْلَامُ
নিশ্চয় আল্লাহর কাছে মনোনীত জীবনবিধান হচ্ছে ইসলাম। (সূরা আলে ইমরান- ১৯)
ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয় :
وَمَنْ يَّبْتَغِ غَيْرَ الْاِسْلَامِ دِيْنًا فَلَنْ يُّقْبَلَ مِنْهُۚ وَ هُوَ فِى الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
যে ব্যক্তি ইসলামকে বাদ দিয়ে অন্য কোন জীবনব্যবস্থার অনুসরণ করবে তার কাছ থেকে কিছুই কবুল করা হবে না; আর সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা আলে ইমরান- ৮৫)
ব্যাখ্যা : দুনিয়ায় যতগুলো ধর্ম পাওয়া যায় সবগুলোর উৎপত্তি হয়েছে আল্লাহর মনোনীত ইসলাম ধর্মের বিকৃতি ঘটানোর মাধ্যমে। এ বিকৃতি আসার কারণ হলো, বিভিন্ন ব্যক্তি প্রাকৃতিক সত্যের উপর নিজেদের নতুন নতুন কথা যোগ করে নিজেদের জন্য এক একটি আলাদা ধর্ম বানিয়ে নিয়েছে। তাদের প্রত্যেকেই সত্যের পরিবর্তে এ বর্ধিত জিনিসেরই ভক্ত হয়ে গেছে। যার ফলে তারা অন্যদের থেকে আলাদা হয়ে গিয়ে একটি স্বতন্ত্র ফেরকায় পরিণত হয়েছে। এখন সঠিক পথনির্দেশনা লাভ করতে চাইলে প্রত্যেক ব্যক্তিকেই প্রকৃত সত্য দ্বীনের দিকে ফিরে যেতে হবে। পরবর্তীকালের যাবতীয় বর্ধিত অংশ থেকে এবং তাদের অনুসারীদের দল থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে সম্পূর্ণভাবে আলাদা হয়ে যেতে হবে।
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা :
اَلْيَوْمَ اَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَاَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الْاِسْلَامَ دِيْنًا
আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম। (সূরা মায়েদা- ৩)
ব্যাখ্যা : দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দেয়ার অর্থ হচ্ছে, তাকে একটি স্বতন্ত্র জীবনব্যবস্থা এবং একটি পূর্ণাঙ্গ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থায় পরিণত করা। তার মধ্যে জীবনের সকল প্রশ্নের নীতিগত বা বিস্তারিত জবাব পাওয়া যায়। হেদায়াত ও পথনির্দেশ লাভ করার জন্য এর বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
ইসলাম সকল দ্বীনের উপর বিজয়ী দ্বীন :
هُوَ الَّذِيْۤ اَرْسَلَ رَسُوْلَهٗ بِالْهُدٰى وَدِيْنِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهٗ عَلَى الدِّيْنِ كُلِّه ؕ وَكَفٰى بِاللهِ شَهِيْدًا
তিনিই ঐ সত্তা, যিনি তাঁর রাসূলকে হেদায়াত ও সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন, যাতে (রাসূল) ঐ দ্বীনকে অন্যসব দ্বীনের উপর বিজয়ী করেন। আর এ বিষয়ে সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। (সূরা ফাতহ- ২৮)
ইসলাম যথার্থ সত্য ও সঠিক দ্বীন :
وَمَاۤ اُمِرُوْاۤ اِلَّا لِيَعْبُدُوا اللهَ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ حُنَفَآءَ وَيُقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذٰلِكَ دِيْنُ الْقَيِّمَةِ
তাদেরকে এছাড়া অন্য কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদাত করবে, সালাত কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। আর এটাই হচ্ছে সঠিক ধর্ম। (সূরা বায়্যিনাহ- ৫)
ইসলামের চেয়ে সুন্দর জীবনবিধান আর নেই :
وَمَنْ اَحْسَنُ دِيْنًا مِّمَّنْ اَسْلَمَ وَجْهَهٗ لِلّٰهِ وَ هُوَ مُحْسِنٌ
দ্বীন পালনের ক্ষেত্রে তার চেয়ে উত্তম আর কে, যে সৎকর্মপরায়ণ হয়ে আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করে? (সূরা নিসা- ১২৫)
ব্যাখ্যা : ‘দ্বীন’ অর্থ জীবন পদ্ধতি বা জীবনবিধান। মানুষ দুনিয়ায় যে আইন ও নীতিমালার ভিত্তিতে নিজেদের কর্মনীতি গড়ে তুলে তাকেই বলা হয় ‘দ্বীন’। যে ব্যক্তি আল্লাহকে নিজের মালিক ও মা‘বুদ হিসেবে মেনে নিয়ে নিজেকে পুরোপুরি আল্লাহর হাতে সোপর্দ করে দেয় এবং দুনিয়াতে আল্লাহর দেয়া জীবনবিধান অনুযায়ী জীবন-যাপন করে সে-ই প্রকৃত মুসলিম। এ আকীদা-বিশ্বাস ও কর্মপদ্ধতির নামই ‘ইসলাম’। মানবজাতির সৃষ্টিলগ্ন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে ও বিভিন্ন জাতির মধ্যে যেসব নবী এসেছেন, এটিই ছিল তাঁদের সবার দ্বীন ও জীবনবিধান।
اِنَّ الدِّيْنَ عِنْدَ اللهِ الْاِسْلَامُ
নিশ্চয় আল্লাহর কাছে মনোনীত জীবনবিধান হচ্ছে ইসলাম। (সূরা আলে ইমরান- ১৯)
ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয় :
وَمَنْ يَّبْتَغِ غَيْرَ الْاِسْلَامِ دِيْنًا فَلَنْ يُّقْبَلَ مِنْهُۚ وَ هُوَ فِى الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
যে ব্যক্তি ইসলামকে বাদ দিয়ে অন্য কোন জীবনব্যবস্থার অনুসরণ করবে তার কাছ থেকে কিছুই কবুল করা হবে না; আর সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা আলে ইমরান- ৮৫)
ব্যাখ্যা : দুনিয়ায় যতগুলো ধর্ম পাওয়া যায় সবগুলোর উৎপত্তি হয়েছে আল্লাহর মনোনীত ইসলাম ধর্মের বিকৃতি ঘটানোর মাধ্যমে। এ বিকৃতি আসার কারণ হলো, বিভিন্ন ব্যক্তি প্রাকৃতিক সত্যের উপর নিজেদের নতুন নতুন কথা যোগ করে নিজেদের জন্য এক একটি আলাদা ধর্ম বানিয়ে নিয়েছে। তাদের প্রত্যেকেই সত্যের পরিবর্তে এ বর্ধিত জিনিসেরই ভক্ত হয়ে গেছে। যার ফলে তারা অন্যদের থেকে আলাদা হয়ে গিয়ে একটি স্বতন্ত্র ফেরকায় পরিণত হয়েছে। এখন সঠিক পথনির্দেশনা লাভ করতে চাইলে প্রত্যেক ব্যক্তিকেই প্রকৃত সত্য দ্বীনের দিকে ফিরে যেতে হবে। পরবর্তীকালের যাবতীয় বর্ধিত অংশ থেকে এবং তাদের অনুসারীদের দল থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে সম্পূর্ণভাবে আলাদা হয়ে যেতে হবে।
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা :
اَلْيَوْمَ اَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَاَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الْاِسْلَامَ دِيْنًا
আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম। (সূরা মায়েদা- ৩)
ব্যাখ্যা : দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দেয়ার অর্থ হচ্ছে, তাকে একটি স্বতন্ত্র জীবনব্যবস্থা এবং একটি পূর্ণাঙ্গ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থায় পরিণত করা। তার মধ্যে জীবনের সকল প্রশ্নের নীতিগত বা বিস্তারিত জবাব পাওয়া যায়। হেদায়াত ও পথনির্দেশ লাভ করার জন্য এর বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
ইসলাম সকল দ্বীনের উপর বিজয়ী দ্বীন :
هُوَ الَّذِيْۤ اَرْسَلَ رَسُوْلَهٗ بِالْهُدٰى وَدِيْنِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهٗ عَلَى الدِّيْنِ كُلِّه ؕ وَكَفٰى بِاللهِ شَهِيْدًا
তিনিই ঐ সত্তা, যিনি তাঁর রাসূলকে হেদায়াত ও সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন, যাতে (রাসূল) ঐ দ্বীনকে অন্যসব দ্বীনের উপর বিজয়ী করেন। আর এ বিষয়ে সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। (সূরা ফাতহ- ২৮)
ইসলাম যথার্থ সত্য ও সঠিক দ্বীন :
وَمَاۤ اُمِرُوْاۤ اِلَّا لِيَعْبُدُوا اللهَ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ حُنَفَآءَ وَيُقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذٰلِكَ دِيْنُ الْقَيِّمَةِ
তাদেরকে এছাড়া অন্য কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদাত করবে, সালাত কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। আর এটাই হচ্ছে সঠিক ধর্ম। (সূরা বায়্যিনাহ- ৫)
ইসলামের চেয়ে সুন্দর জীবনবিধান আর নেই :
وَمَنْ اَحْسَنُ دِيْنًا مِّمَّنْ اَسْلَمَ وَجْهَهٗ لِلّٰهِ وَ هُوَ مُحْسِنٌ
দ্বীন পালনের ক্ষেত্রে তার চেয়ে উত্তম আর কে, যে সৎকর্মপরায়ণ হয়ে আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করে? (সূরা নিসা- ১২৫)
ব্যাখ্যা : ‘দ্বীন’ অর্থ জীবন পদ্ধতি বা জীবনবিধান। মানুষ দুনিয়ায় যে আইন ও নীতিমালার ভিত্তিতে নিজেদের কর্মনীতি গড়ে তুলে তাকেই বলা হয় ‘দ্বীন’। যে ব্যক্তি আল্লাহকে নিজের মালিক ও মা‘বুদ হিসেবে মেনে নিয়ে নিজেকে পুরোপুরি আল্লাহর হাতে সোপর্দ করে দেয় এবং দুনিয়াতে আল্লাহর দেয়া জীবনবিধান অনুযায়ী জীবন-যাপন করে সে-ই প্রকৃত মুসলিম। এ আকীদা-বিশ্বাস ও কর্মপদ্ধতির নামই ‘ইসলাম’। মানবজাতির সৃষ্টিলগ্ন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে ও বিভিন্ন জাতির মধ্যে যেসব নবী এসেছেন, এটিই ছিল তাঁদের সবার দ্বীন ও জীবনবিধান।
ইসলামই হচ্ছে সোজা পথ :
وَهٰذَا صِرَاطُ رَبِّكَ مُسْتَقِيْمًاؕ قَدْ فَصَّلْنَا الْاٰيَاتِ لِقَوْمٍ يَّذَّكَّرُوْنَ
এটা তোমার প্রতিপালকের নির্দেশিত সরল পথ। যারা উপদেশ গ্রহণ করে আমি এতে তাদের জন্য নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করে দিয়েছি। (সূরা আন‘আম- ১২৬)
ব্যাখ্যা : যেহেতু আল্লাহ দুনিয়াবাসীর প্রতি কোন যুলুম করতে চান না, তাই তিনি তাদেরকে সোজা পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। শেষ বিচারের দিন কোন্ কোন্ বিষয়ে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে সে কথাও আগেই জানিয়ে দিয়েছেন। এরপরও যারা বাঁকা পথ ধরবে এবং নিজেদের ভ্রান্ত কর্মপদ্ধতি পরিহার করবে না, তারা আসলে নিজেরাই নিজেদের উপর যুলুম করবে।
وَاِنَّ اللهَ رَبِّيْ وَرَبُّكُمْ فَاعْبُدُوْهُؕ هٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيْمٌ
আল্লাহই আমার ও তোমাদের প্রতিপালক; সুতরাং তোমরা তাঁর ইবাদাত করো; আর এটাই সরল পথ।
(সূরা মারইয়াম- ৩৬)
সোজা পথ দেখানো আল্লাহর দায়িত্ব :
وَعَلَى اللهِ قَصْدُ السَّبِيْلِ وَمِنْهَا جَآئِرٌ
(মানুষকে) সরলসঠিক পথ দেখিয়ে দেয়া আল্লাহর দায়িত্ব। আর পথসমূহের মধ্যে অনেক বাঁকা পথও রয়েছে। (সূরা নাহল- ৯)
وَاَنَّ هٰذَا صِرَاطِيْ مُسْتَقِيْمًا فَاتَّبِعُوْهُۚ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيْلِه ؕ ذٰلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِه لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ
এ পথই আমার সরল পথ। সুতরাং তোমরা এরই অনুসরণ করো এবং অন্য কোন পথ অনুসরণ করো না, নতুবা তোমরা তাঁর পথ হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিলেন, যেন তোমরা সাবধান হও। (সূরা আন‘আম- ১৫৩)
ব্যাখ্যা : মানুষ জীবন পরিচালনা করার জন্য যতগুলো পথ তৈরি করেছে সবই বক্ররেখার মতো। একটি ভুল দিক থেকে যাত্রা শুরু করে আরেকটি ভুল প্রান্তে গিয়ে তা শেষ হয়। এ অসংখ্য বক্র ও ভুল পথের মধ্য দিয়ে এমন একটি পথ চলে গেছে, যার অবস্থান ঠিক মধ্যভাগে। এ পথে কোন প্রকার বক্রতার লেশ মাত্র নেই। কোন দিকের প্রতি অযথা পক্ষপাতিত্ব অথবা বেইনসাফী করার প্রশ্নই এখানে নেই। মানুষের জীবনের সঠিক উন্নয়ন এবং তার সাফল্য ও অগ্রগতির জন্য এ ধরনের একটি পথ একান্ত অপরিহার্য। মানুষের মূল প্রকৃতি এ পথের সন্ধানেই ফিরছে। কিন্তু নিজের চেষ্টায় এ রাজপথের সন্ধান লাভ করার ক্ষমতা মানুষের নেই। একমাত্র আল্লাহই তাকে এ পথের সন্ধান দিতে পারেন। মানুষকে এ পথের সন্ধান দেয়ার জন্যই আল্লাহ রাসূল পাঠিয়েছেন। কুরআনে এ পথকেই ‘সাওয়া-উস-সাবীল’ ও ‘সিরাতুম মুস্তাকীম’ তথা সরল পথ বলা হয়েছে।
কুরআন ইসলামের পথ দেখায় :
قَالُوْا يَا قَوْمَنَاۤ اِنَّا سَمِعْنَا كِتَابًا اُنْزِلَ مِنْ ۢبَعْدِ مُوْسٰى مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ يَهْدِيْۤ اِلَى الْحَقِّ وَاِلٰى طَرِيْقٍ مُّسْتَقِيْمٍ
তারা বলল, হে আমাদের সম্প্রদায়! আমরা এমন এক কিতাব শুনলাম, যা মূসার উপর নাযিল করা হয়েছে। যা এর আগের কিতাবগুলোকে সত্য বলে স্বীকার করে এবং সত্য ও সঠিক পথের দিকে হেদায়াত করে । (সূরা আহকাফ- ৩০)
وَيَرَى الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْعِلْمَ الَّذِيْۤ اُنْزِلَ اِلَيْكَ مِنْ رَّبِّكَ هُوَ الْحَقَّ وَيَهْدِيْۤ اِلٰى صِرَاطِ الْعَزِيْزِ الْحَمِيْدِ
আর যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে তারা জানে যে, আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা সত্য। আর তা প্রবল প্রতাপশালী ও সর্বগুণে গুণান্বিত আল্লাহর দিকে পথপ্রদর্শন করে। (সূরা সাবা- ৬)
মুহাম্মাদ ﷺ এ পথেই মানুষকে ডাকতেন :
وَاِنَّكَ لَتَهْدِيْۤ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
নিশ্চয় তুমি সরল পথপ্রদর্শন করে থাক। (সূরা শূরা- ৫২)
قُلْ هٰذِهٖ سَبِيْلِيْۤ اَدْعُوْاۤ اِلَى اللهِ عَلٰى بَصِيْرَةٍ اَنَاْ وَمَنِ اتَّبَعَنِيْؕ وَسُبْحَانَ اللهِ وَمَاۤ اَنَاْ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
বলো, এটাই আমার পথ। আমি এবং আমার অনুসারীরা দূরদর্শীতার মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি মানুষকে আহবান করি। আল্লাহ কতই না পবিত্র; আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। (সূরা ইউসুফ- ১০৮)
وَهٰذَا صِرَاطُ رَبِّكَ مُسْتَقِيْمًاؕ قَدْ فَصَّلْنَا الْاٰيَاتِ لِقَوْمٍ يَّذَّكَّرُوْنَ
এটা তোমার প্রতিপালকের নির্দেশিত সরল পথ। যারা উপদেশ গ্রহণ করে আমি এতে তাদের জন্য নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করে দিয়েছি। (সূরা আন‘আম- ১২৬)
ব্যাখ্যা : যেহেতু আল্লাহ দুনিয়াবাসীর প্রতি কোন যুলুম করতে চান না, তাই তিনি তাদেরকে সোজা পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। শেষ বিচারের দিন কোন্ কোন্ বিষয়ে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে সে কথাও আগেই জানিয়ে দিয়েছেন। এরপরও যারা বাঁকা পথ ধরবে এবং নিজেদের ভ্রান্ত কর্মপদ্ধতি পরিহার করবে না, তারা আসলে নিজেরাই নিজেদের উপর যুলুম করবে।
وَاِنَّ اللهَ رَبِّيْ وَرَبُّكُمْ فَاعْبُدُوْهُؕ هٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيْمٌ
আল্লাহই আমার ও তোমাদের প্রতিপালক; সুতরাং তোমরা তাঁর ইবাদাত করো; আর এটাই সরল পথ।
(সূরা মারইয়াম- ৩৬)
সোজা পথ দেখানো আল্লাহর দায়িত্ব :
وَعَلَى اللهِ قَصْدُ السَّبِيْلِ وَمِنْهَا جَآئِرٌ
(মানুষকে) সরলসঠিক পথ দেখিয়ে দেয়া আল্লাহর দায়িত্ব। আর পথসমূহের মধ্যে অনেক বাঁকা পথও রয়েছে। (সূরা নাহল- ৯)
وَاَنَّ هٰذَا صِرَاطِيْ مُسْتَقِيْمًا فَاتَّبِعُوْهُۚ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيْلِه ؕ ذٰلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِه لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ
এ পথই আমার সরল পথ। সুতরাং তোমরা এরই অনুসরণ করো এবং অন্য কোন পথ অনুসরণ করো না, নতুবা তোমরা তাঁর পথ হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিলেন, যেন তোমরা সাবধান হও। (সূরা আন‘আম- ১৫৩)
ব্যাখ্যা : মানুষ জীবন পরিচালনা করার জন্য যতগুলো পথ তৈরি করেছে সবই বক্ররেখার মতো। একটি ভুল দিক থেকে যাত্রা শুরু করে আরেকটি ভুল প্রান্তে গিয়ে তা শেষ হয়। এ অসংখ্য বক্র ও ভুল পথের মধ্য দিয়ে এমন একটি পথ চলে গেছে, যার অবস্থান ঠিক মধ্যভাগে। এ পথে কোন প্রকার বক্রতার লেশ মাত্র নেই। কোন দিকের প্রতি অযথা পক্ষপাতিত্ব অথবা বেইনসাফী করার প্রশ্নই এখানে নেই। মানুষের জীবনের সঠিক উন্নয়ন এবং তার সাফল্য ও অগ্রগতির জন্য এ ধরনের একটি পথ একান্ত অপরিহার্য। মানুষের মূল প্রকৃতি এ পথের সন্ধানেই ফিরছে। কিন্তু নিজের চেষ্টায় এ রাজপথের সন্ধান লাভ করার ক্ষমতা মানুষের নেই। একমাত্র আল্লাহই তাকে এ পথের সন্ধান দিতে পারেন। মানুষকে এ পথের সন্ধান দেয়ার জন্যই আল্লাহ রাসূল পাঠিয়েছেন। কুরআনে এ পথকেই ‘সাওয়া-উস-সাবীল’ ও ‘সিরাতুম মুস্তাকীম’ তথা সরল পথ বলা হয়েছে।
কুরআন ইসলামের পথ দেখায় :
قَالُوْا يَا قَوْمَنَاۤ اِنَّا سَمِعْنَا كِتَابًا اُنْزِلَ مِنْ ۢبَعْدِ مُوْسٰى مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ يَهْدِيْۤ اِلَى الْحَقِّ وَاِلٰى طَرِيْقٍ مُّسْتَقِيْمٍ
তারা বলল, হে আমাদের সম্প্রদায়! আমরা এমন এক কিতাব শুনলাম, যা মূসার উপর নাযিল করা হয়েছে। যা এর আগের কিতাবগুলোকে সত্য বলে স্বীকার করে এবং সত্য ও সঠিক পথের দিকে হেদায়াত করে । (সূরা আহকাফ- ৩০)
وَيَرَى الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْعِلْمَ الَّذِيْۤ اُنْزِلَ اِلَيْكَ مِنْ رَّبِّكَ هُوَ الْحَقَّ وَيَهْدِيْۤ اِلٰى صِرَاطِ الْعَزِيْزِ الْحَمِيْدِ
আর যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে তারা জানে যে, আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা সত্য। আর তা প্রবল প্রতাপশালী ও সর্বগুণে গুণান্বিত আল্লাহর দিকে পথপ্রদর্শন করে। (সূরা সাবা- ৬)
মুহাম্মাদ ﷺ এ পথেই মানুষকে ডাকতেন :
وَاِنَّكَ لَتَهْدِيْۤ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
নিশ্চয় তুমি সরল পথপ্রদর্শন করে থাক। (সূরা শূরা- ৫২)
قُلْ هٰذِهٖ سَبِيْلِيْۤ اَدْعُوْاۤ اِلَى اللهِ عَلٰى بَصِيْرَةٍ اَنَاْ وَمَنِ اتَّبَعَنِيْؕ وَسُبْحَانَ اللهِ وَمَاۤ اَنَاْ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
বলো, এটাই আমার পথ। আমি এবং আমার অনুসারীরা দূরদর্শীতার মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি মানুষকে আহবান করি। আল্লাহ কতই না পবিত্র; আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। (সূরা ইউসুফ- ১০৮)
ইসলাম হলো চলার পথের আলো :
اَفَمَنْ شَرَحَ اللهُ صَدْرَه لِلْاِسْلَامِ فَهُوَ عَلٰى نُوْرٍ مِّنْ رَّبِّه ؕ فَوَيْلٌ لِّلْقَاسِيَةِ قُلُوْبُهُمْ مِّنْ ذِكْرِ اللهِؕ اُولٰٓئِكَ فِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ
আল্লাহ যার বক্ষকে ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন, সে তো তার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আগত নূরের উপর রয়েছে। সুতরাং দুর্ভোগ সেসব লোকদের জন্য, যাদের অন্তর আল্লাহর স্মরণ থেকে কঠোর হয়ে গেছে। মূলত এরাই সুস্পষ্ট গোমরাহীতে নিমজ্জিত রয়েছে। (সূরা যুমার - ২২)
ব্যাখ্যা : কোন ব্যাপারে মানুষের বক্ষ উন্মুক্ত হয়ে যাওয়া মূলত এমন একটি মানসিক অবস্থার নাম, যখন তার মনে উক্ত বিষয় সম্পর্কে কোন দুশ্চিন্তা কিংবা সন্দেহ-সংশয় থাকে না এবং কোন বিপদের আশঙ্কাও তাকে ঐ বিষয়টি গ্রহণ করতে বাধা দিতে পারে না। বরং সে পূর্ণ মানসিক তৃপ্তির সাথে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, যে জিনিসটি ন্যায় ও সত্য সে তাই গ্রহণ করবে। এতে ভালো-মন্দ যাই ঘটুক না কেন তাকে তার উপরই চলতে হবে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোন ব্যক্তি যখন ইসলামের পথ অবলম্বন করে, তখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যে নির্দেশই আসে তা সে অনিচ্ছায় নয় বরং আগ্রহের সাথে মেনে নেয়। জ্ঞানের আলো হিসেবে সে আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাত লাভ করেছে, যার উজ্জ্বল আলোতে সে জীবনে চলার অসংখ্য ছোট ছোট পথের মধ্যে কোনটি ন্যায় ও সত্যের পথ তা প্রতি পদক্ষেপে স্পষ্ট দেখতে পায়।
যে ইসলামকে আঁকড়ে ধরল সে মজবুত রশি ধরল :
وَمَنْ يُّسْلِمْ وَجْهَهٗۤ اِلَى اللهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقٰىۚ وَاِلَى اللهِ عَاقِبَةُ الْاُمُوْرِ
যে ব্যক্তি সৎকর্মপরায়ণ হয়ে নিজেকে নিষ্ঠার সাথে আল্লাহমুখী করে, সে তো দৃঢ়ভাবে এক মজবুত রশিকেই ধারণ করে। আর সকল কাজের পরিণাম আল্লাহরই নিকট পৌঁছাবে। (সূরা লুক্বমান- ২২)
فَمَنْ يَّكْفُرْ بِالطَّاغُوْتِ وَيُؤْمِنْ ۢبِاللهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقٰى لَا انْفِصَامَ لَهَاؕ وَاللهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
আর যে তাগুতকে অস্বীকার করবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে, সে এমন এক মজবুত রশি ধারণ করল যা কখনো ছিড়বে না। আর আল্লাহ শ্রবণকারী ও মহাজ্ঞানী। (সূরা বাক্বারা- ২৫৬)
মুসলিমের পুরস্কার আল্লাহর কাছে রয়েছে :
بَلٰى مَنْ اَسْلَمَ وَجْهَهٗ لِلّٰهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ فَلَهٗۤ اَجْرُه عِنْدَ رَبِّه وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ
অবশ্য যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ করেছে এবং সৎকর্মশীল হয়েছে, তার জন্য তার প্রতিপালকের নিকট রয়েছে প্রতিদান। আর তাদের জন্য কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না। (সূরা বাক্বারা-১১২)
اَفَمَنْ شَرَحَ اللهُ صَدْرَه لِلْاِسْلَامِ فَهُوَ عَلٰى نُوْرٍ مِّنْ رَّبِّه ؕ فَوَيْلٌ لِّلْقَاسِيَةِ قُلُوْبُهُمْ مِّنْ ذِكْرِ اللهِؕ اُولٰٓئِكَ فِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ
আল্লাহ যার বক্ষকে ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন, সে তো তার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আগত নূরের উপর রয়েছে। সুতরাং দুর্ভোগ সেসব লোকদের জন্য, যাদের অন্তর আল্লাহর স্মরণ থেকে কঠোর হয়ে গেছে। মূলত এরাই সুস্পষ্ট গোমরাহীতে নিমজ্জিত রয়েছে। (সূরা যুমার - ২২)
ব্যাখ্যা : কোন ব্যাপারে মানুষের বক্ষ উন্মুক্ত হয়ে যাওয়া মূলত এমন একটি মানসিক অবস্থার নাম, যখন তার মনে উক্ত বিষয় সম্পর্কে কোন দুশ্চিন্তা কিংবা সন্দেহ-সংশয় থাকে না এবং কোন বিপদের আশঙ্কাও তাকে ঐ বিষয়টি গ্রহণ করতে বাধা দিতে পারে না। বরং সে পূর্ণ মানসিক তৃপ্তির সাথে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, যে জিনিসটি ন্যায় ও সত্য সে তাই গ্রহণ করবে। এতে ভালো-মন্দ যাই ঘটুক না কেন তাকে তার উপরই চলতে হবে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোন ব্যক্তি যখন ইসলামের পথ অবলম্বন করে, তখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যে নির্দেশই আসে তা সে অনিচ্ছায় নয় বরং আগ্রহের সাথে মেনে নেয়। জ্ঞানের আলো হিসেবে সে আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাত লাভ করেছে, যার উজ্জ্বল আলোতে সে জীবনে চলার অসংখ্য ছোট ছোট পথের মধ্যে কোনটি ন্যায় ও সত্যের পথ তা প্রতি পদক্ষেপে স্পষ্ট দেখতে পায়।
যে ইসলামকে আঁকড়ে ধরল সে মজবুত রশি ধরল :
وَمَنْ يُّسْلِمْ وَجْهَهٗۤ اِلَى اللهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقٰىۚ وَاِلَى اللهِ عَاقِبَةُ الْاُمُوْرِ
যে ব্যক্তি সৎকর্মপরায়ণ হয়ে নিজেকে নিষ্ঠার সাথে আল্লাহমুখী করে, সে তো দৃঢ়ভাবে এক মজবুত রশিকেই ধারণ করে। আর সকল কাজের পরিণাম আল্লাহরই নিকট পৌঁছাবে। (সূরা লুক্বমান- ২২)
فَمَنْ يَّكْفُرْ بِالطَّاغُوْتِ وَيُؤْمِنْ ۢبِاللهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقٰى لَا انْفِصَامَ لَهَاؕ وَاللهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
আর যে তাগুতকে অস্বীকার করবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে, সে এমন এক মজবুত রশি ধারণ করল যা কখনো ছিড়বে না। আর আল্লাহ শ্রবণকারী ও মহাজ্ঞানী। (সূরা বাক্বারা- ২৫৬)
মুসলিমের পুরস্কার আল্লাহর কাছে রয়েছে :
بَلٰى مَنْ اَسْلَمَ وَجْهَهٗ لِلّٰهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ فَلَهٗۤ اَجْرُه عِنْدَ رَبِّه وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ
অবশ্য যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ করেছে এবং সৎকর্মশীল হয়েছে, তার জন্য তার প্রতিপালকের নিকট রয়েছে প্রতিদান। আর তাদের জন্য কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না। (সূরা বাক্বারা-১১২)
ইসলামকে মানতে হবে পরিপূর্ণভাবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا ادْخُلُوْا فِى السِّلْمِ كَافَّةً وَّلَا تَتَّبِعُوْا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِۚ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করো এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা বাক্বারা- ২০৮)
ব্যাখ্যা : কোন রকম ব্যতিক্রম ও কিছু অংশকে বাদ না দিয়ে জীবনের সকল দিক ও বিভাগকে ইসলামের আওতাধীন করতে হবে। চিন্তা-ভাবনা, আদর্শ, মতবাদ, জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা, আচরণ, ব্যবহারিক জীবন, লেনদেন, রাষ্ট্র পরিচালনা এবং সমগ্র প্রচেষ্টা ও কর্মের পরিসরকে পুরোপুরি ইসলামের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। জীবনের কিছু অংশে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলা এবং কিছু অংশকে ইসলামী অনুশাসনের বাইরে রাখা, এমনটি করা যাবে না।
আংশিক ইসলাম গ্রহণযোগ্য নয় :
وَاَنِ احْكُمْ بَيْنَهُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ وَلَا تَتَّبِعْ اَهْوَآءَهُمْ وَاحْذَرْهُمْ اَنْ يَّفْتِنُوْكَ عَنْ ۢبَعْضِ مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ اِلَيْكَؕ فَاِنْ تَوَلَّوْا فَاعْلَمْ اَنَّمَا يُرِيْدُ اللهُ اَنْ يُّصِيْبَهُمْ بِبَعْضِ ذُنُوْبِهِمْؕ وَاِنَّ كَثِيْرًا مِّنَ النَّاسِ لَفَاسِقُوْنَ
আপনি তাদের মধ্যে আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন সে অনুযায়ী মীমাংসা করুন এবং তাদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করবেন না। আর তাদের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করবেন, যেন তারা আপনাকে আপনার উপর যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তার কোনকিছুর ব্যাপারে বিভ্রান্ত করতে না পারে। এরপরও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে জেনে রাখুন, আল্লাহ তাদেরকে তাদের কোন কোন গোনাহের জন্য শাস্তি প্রদান করতে চান। নিশ্চয় মানুষের মধ্যে অনেকেই ফাসিক। (সূরা মায়েদা- ৪৯)
যারা কিছু মানে এবং কিছু মানে না, তারা কঠিন শাস্তি ভোগ করবে :
اَفَتُؤْمِنُوْنَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُوْنَ بِبَعْضٍۚ فَمَا جَزَآءُ مَنْ يَّفْعَلُ ذٰلِكَ مِنْكُمْ اِلَّا خِزْيٌ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَاۚ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّوْنَ اِلٰۤى اَشَدِّ الْعَذَابِؕ وَمَا اللهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ
তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশ বিশ্বাস কর ও কিছু অংশ অস্বীকার কর? অতএব তোমাদের মধ্যে যারা এরূপ করে তাদের পার্থিব জীবনে দুর্গতি ব্যতীত কিছুই নেই। আর কিয়ামত দিবসে তারা কঠোর শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হবে। আর তোমরা যা করছ আল্লাহ সে সম্পর্কে অমনোযোগী নন। (সূরা বাক্বারা- ৮৫)
একমুখী হয়েই ইসলামের উপর চলতে হবে :
فَاَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّيْنِ حَنِيْفًاؕ فِطْرَةَ اللهِ الَّتِيْ فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَاؕ لَا تَبْدِيْلَ لِخَلْقِ اللهِؕ ذٰلِكَ الدِّيْنُ الْقَيِّمُ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ
তুমি নিজেকে একনিষ্ঠভাবে দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখ এবং আল্লাহর প্রকৃতি অনুসরণ করো, যার উপর তিনি মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরলসঠিক দ্বীন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। (সূরা রূম- ৩০)
ইসলামী শরীয়াতের সাথে অন্য মতবাদের সংমিশ্রণ ঘটানো যাবে না :
ثُمَّ جَعَلْنَاكَ عَلٰى شَرِيْعَةٍ مِّنَ الْاَمْرِ فَاتَّبِعْهَا وَلَا تَتَّبِعْ اَهْوَآءَ الَّذِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ
এরপর আমি তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করেছি দ্বীনের বিশেষ শরীয়াতের উপর; সুতরাং তুমি তার অনুসরণ করো এবং অজ্ঞদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। (সূরা জাসিয়া-১৮)
জাহেলী প্রথার সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই :
اَفَحُكْمَ الْجَاهِلِيَّةِ يَبْغُوْنَؕ وَمَنْ اَحْسَنُ مِنَ اللهِ حُكْمًا لِّقَوْمٍ يُّوْقِنُوْنَ
তবে কি তারা মূর্খতার যুগের বিচারব্যবস্থার আশা করে? দৃঢ় বিশ্বাসী লোকদের জন্য বিচারব্যবস্থায় আল্লাহর চেয়ে উত্তম আর কে হতে পারে? (সূরা মায়েদা- ৫০)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا ادْخُلُوْا فِى السِّلْمِ كَافَّةً وَّلَا تَتَّبِعُوْا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِۚ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করো এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা বাক্বারা- ২০৮)
ব্যাখ্যা : কোন রকম ব্যতিক্রম ও কিছু অংশকে বাদ না দিয়ে জীবনের সকল দিক ও বিভাগকে ইসলামের আওতাধীন করতে হবে। চিন্তা-ভাবনা, আদর্শ, মতবাদ, জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা, আচরণ, ব্যবহারিক জীবন, লেনদেন, রাষ্ট্র পরিচালনা এবং সমগ্র প্রচেষ্টা ও কর্মের পরিসরকে পুরোপুরি ইসলামের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। জীবনের কিছু অংশে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলা এবং কিছু অংশকে ইসলামী অনুশাসনের বাইরে রাখা, এমনটি করা যাবে না।
আংশিক ইসলাম গ্রহণযোগ্য নয় :
وَاَنِ احْكُمْ بَيْنَهُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ وَلَا تَتَّبِعْ اَهْوَآءَهُمْ وَاحْذَرْهُمْ اَنْ يَّفْتِنُوْكَ عَنْ ۢبَعْضِ مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ اِلَيْكَؕ فَاِنْ تَوَلَّوْا فَاعْلَمْ اَنَّمَا يُرِيْدُ اللهُ اَنْ يُّصِيْبَهُمْ بِبَعْضِ ذُنُوْبِهِمْؕ وَاِنَّ كَثِيْرًا مِّنَ النَّاسِ لَفَاسِقُوْنَ
আপনি তাদের মধ্যে আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন সে অনুযায়ী মীমাংসা করুন এবং তাদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করবেন না। আর তাদের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করবেন, যেন তারা আপনাকে আপনার উপর যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তার কোনকিছুর ব্যাপারে বিভ্রান্ত করতে না পারে। এরপরও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে জেনে রাখুন, আল্লাহ তাদেরকে তাদের কোন কোন গোনাহের জন্য শাস্তি প্রদান করতে চান। নিশ্চয় মানুষের মধ্যে অনেকেই ফাসিক। (সূরা মায়েদা- ৪৯)
যারা কিছু মানে এবং কিছু মানে না, তারা কঠিন শাস্তি ভোগ করবে :
اَفَتُؤْمِنُوْنَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُوْنَ بِبَعْضٍۚ فَمَا جَزَآءُ مَنْ يَّفْعَلُ ذٰلِكَ مِنْكُمْ اِلَّا خِزْيٌ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَاۚ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّوْنَ اِلٰۤى اَشَدِّ الْعَذَابِؕ وَمَا اللهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ
তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশ বিশ্বাস কর ও কিছু অংশ অস্বীকার কর? অতএব তোমাদের মধ্যে যারা এরূপ করে তাদের পার্থিব জীবনে দুর্গতি ব্যতীত কিছুই নেই। আর কিয়ামত দিবসে তারা কঠোর শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হবে। আর তোমরা যা করছ আল্লাহ সে সম্পর্কে অমনোযোগী নন। (সূরা বাক্বারা- ৮৫)
একমুখী হয়েই ইসলামের উপর চলতে হবে :
فَاَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّيْنِ حَنِيْفًاؕ فِطْرَةَ اللهِ الَّتِيْ فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَاؕ لَا تَبْدِيْلَ لِخَلْقِ اللهِؕ ذٰلِكَ الدِّيْنُ الْقَيِّمُ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ
তুমি নিজেকে একনিষ্ঠভাবে দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখ এবং আল্লাহর প্রকৃতি অনুসরণ করো, যার উপর তিনি মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরলসঠিক দ্বীন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। (সূরা রূম- ৩০)
ইসলামী শরীয়াতের সাথে অন্য মতবাদের সংমিশ্রণ ঘটানো যাবে না :
ثُمَّ جَعَلْنَاكَ عَلٰى شَرِيْعَةٍ مِّنَ الْاَمْرِ فَاتَّبِعْهَا وَلَا تَتَّبِعْ اَهْوَآءَ الَّذِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ
এরপর আমি তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করেছি দ্বীনের বিশেষ শরীয়াতের উপর; সুতরাং তুমি তার অনুসরণ করো এবং অজ্ঞদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। (সূরা জাসিয়া-১৮)
জাহেলী প্রথার সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই :
اَفَحُكْمَ الْجَاهِلِيَّةِ يَبْغُوْنَؕ وَمَنْ اَحْسَنُ مِنَ اللهِ حُكْمًا لِّقَوْمٍ يُّوْقِنُوْنَ
তবে কি তারা মূর্খতার যুগের বিচারব্যবস্থার আশা করে? দৃঢ় বিশ্বাসী লোকদের জন্য বিচারব্যবস্থায় আল্লাহর চেয়ে উত্তম আর কে হতে পারে? (সূরা মায়েদা- ৫০)
অধিকাংশ লোকই ইসলামের পথে চলে না :
وَاِنْ يَّرَوْا كُلَّ اٰيَةٍ لَّا يُؤْمِنُوْا بِهَاۚ وَاِنْ يَّرَوْا سَبِيْلَ الرُّشْدِ لَا يَتَّخِذُوْهُ سَبِيْلًاۚ وَاِنْ يَّرَوْا سَبِيْلَ الْغَيِّ يَتَّخِذُوْهُ سَبِيْلًاؕ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَا وَكَانُوْا عَنْهَا غَافِلِيْنَ
তারা আমার প্রত্যেকটি নিদর্শন দেখলেও তাতে ঈমান আনয়ন করবে না, সৎপথ দেখলেও তাকে গ্রহণ করবে না;, কিন্তু তারা ভ্রান্ত পথ দেখলে তা গ্রহণ করে নেবে। এটা এজন্য যে, তারা আমার নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করেছে এবং সে সম্বন্ধে তারা ছিল গাফিল। (সূরা আ‘রাফ- ১৪৬)
যারা ইসলামের দিকে আসে না তারা যালিম :
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرٰى عَلَى اللهِ الْكَذِبَ وَهُوَ يُدْعٰۤى اِلَى الْاِسْلَامِؕ وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
তার চেয়ে বড় যালিম আর কে আছে যে আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করে, অথচ তাকে ইসলামের দিকে আহবান করা হয়? আর আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (সূরা সাফ- ৭)
যারা অন্য পথে চলে তারা জাহান্নামী হবে :
وَمَنْ يُّشَاقِقِ الرَّسُوْلَ مِنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدٰى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيْلِ الْمُؤْمِنِيْنَ نُوَلِّه مَا تَوَلّٰى وَنُصْلِه جَهَنَّمَؕ وَسَآءَتْ مَصِيْرًا
কারো নিকট সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ব্যতীত অন্য পথ অনুসরণ করে, তবে যেদিকে সে ফিরে যায় সেদিকেই তাকে ফিরিয়ে দেব; অবশেষে তাকে জাহান্নামে দগ্ধ করব। আর তা কতই না মন্দ আবাস! (সূরা নিসা- ১১৫)
তাদের কোন আমলই কবুল হবে না :
وَمَنْ يَّبْتَغِ غَيْرَ الْاِسْلَامِ دِيْنًا فَلَنْ يُّقْبَلَ مِنْهُۚ وَهُوَ فِى الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
যে ব্যক্তি ইসলামকে বাদ দিয়ে অন্য কোন জীবনব্যবস্থার অনুসরণ করবে, তার কাছ থেকে কিছুই কবুল করা হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা আলে ইমরান- ৮৫)
ইসলামকে মানার সময় এখনই :
وَاَنِيْبُوْاۤ اِلٰى رَبِّكُمْ وَاَسْلِمُوْا لَهٗ مِنْ قَبْلِ اَنْ يَّاْتِيَكُمُ الْعَذَابُ ثُمَّ لَا تُنْصَرُوْنَ
তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের অভিমুখী হও এবং তোমাদের নিকট শাস্তি আসার পূর্বে তাঁর নিকট আত্মসমর্পণ করো; (নতুবা শাস্তি এসে গেলে) তোমাদেরকে আর কোন সাহায্য করা হবে না। (সূরা যুমার- ৫৪)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ حَقَّ تُقَاتِه وَلَا تَمُوْتُنَّ اِلَّا وَاَنْتُمْ مُّسْلِمُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যথাযথভাবে আল্লাহকে ভয় করো এবং মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।
(সূরা আলে ইমরান- ১০২)
وَاِنْ يَّرَوْا كُلَّ اٰيَةٍ لَّا يُؤْمِنُوْا بِهَاۚ وَاِنْ يَّرَوْا سَبِيْلَ الرُّشْدِ لَا يَتَّخِذُوْهُ سَبِيْلًاۚ وَاِنْ يَّرَوْا سَبِيْلَ الْغَيِّ يَتَّخِذُوْهُ سَبِيْلًاؕ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَا وَكَانُوْا عَنْهَا غَافِلِيْنَ
তারা আমার প্রত্যেকটি নিদর্শন দেখলেও তাতে ঈমান আনয়ন করবে না, সৎপথ দেখলেও তাকে গ্রহণ করবে না;, কিন্তু তারা ভ্রান্ত পথ দেখলে তা গ্রহণ করে নেবে। এটা এজন্য যে, তারা আমার নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করেছে এবং সে সম্বন্ধে তারা ছিল গাফিল। (সূরা আ‘রাফ- ১৪৬)
যারা ইসলামের দিকে আসে না তারা যালিম :
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرٰى عَلَى اللهِ الْكَذِبَ وَهُوَ يُدْعٰۤى اِلَى الْاِسْلَامِؕ وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
তার চেয়ে বড় যালিম আর কে আছে যে আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করে, অথচ তাকে ইসলামের দিকে আহবান করা হয়? আর আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (সূরা সাফ- ৭)
যারা অন্য পথে চলে তারা জাহান্নামী হবে :
وَمَنْ يُّشَاقِقِ الرَّسُوْلَ مِنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدٰى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيْلِ الْمُؤْمِنِيْنَ نُوَلِّه مَا تَوَلّٰى وَنُصْلِه جَهَنَّمَؕ وَسَآءَتْ مَصِيْرًا
কারো নিকট সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ব্যতীত অন্য পথ অনুসরণ করে, তবে যেদিকে সে ফিরে যায় সেদিকেই তাকে ফিরিয়ে দেব; অবশেষে তাকে জাহান্নামে দগ্ধ করব। আর তা কতই না মন্দ আবাস! (সূরা নিসা- ১১৫)
তাদের কোন আমলই কবুল হবে না :
وَمَنْ يَّبْتَغِ غَيْرَ الْاِسْلَامِ دِيْنًا فَلَنْ يُّقْبَلَ مِنْهُۚ وَهُوَ فِى الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
যে ব্যক্তি ইসলামকে বাদ দিয়ে অন্য কোন জীবনব্যবস্থার অনুসরণ করবে, তার কাছ থেকে কিছুই কবুল করা হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা আলে ইমরান- ৮৫)
ইসলামকে মানার সময় এখনই :
وَاَنِيْبُوْاۤ اِلٰى رَبِّكُمْ وَاَسْلِمُوْا لَهٗ مِنْ قَبْلِ اَنْ يَّاْتِيَكُمُ الْعَذَابُ ثُمَّ لَا تُنْصَرُوْنَ
তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের অভিমুখী হও এবং তোমাদের নিকট শাস্তি আসার পূর্বে তাঁর নিকট আত্মসমর্পণ করো; (নতুবা শাস্তি এসে গেলে) তোমাদেরকে আর কোন সাহায্য করা হবে না। (সূরা যুমার- ৫৪)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ حَقَّ تُقَاتِه وَلَا تَمُوْتُنَّ اِلَّا وَاَنْتُمْ مُّسْلِمُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যথাযথভাবে আল্লাহকে ভয় করো এবং মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।
(সূরা আলে ইমরান- ১০২)
তাওহীদ হচ্ছে, আল্লাহ তা‘আলাকে সিফাতে কামাল বা পূর্ণাঙ্গ গুণাবলিতে একক বলে জানা এবং মানা। শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্বের গুণে তিনি যে একক, দৃঢ়তার সাথে এ ঘোষণা দেয়া এবং ইবাদাতের মাধ্যমে তাঁর একত্বের প্রমাণ দেয়া।
তাওহীদ তিন প্রকার :
১। আল-আসমা ওয়াসসিফাত অর্থাৎ আল্লাহর নাম ও গুণাবলির তাওহীদ :
আল্লাহ তা‘আলার শ্রেষ্ঠত্ব, মহত্ব ও সৌন্দর্যের যাবতীয় নাম ও গুণাবলিতে তিনি একক এবং নিরঙ্কুশভাবে পূর্ণতার অধিকারী। এক্ষেত্রে কোনক্রমেই তাঁর অংশীদার কেউ হতে পারে না। এ আক্বীদা পোষণ করাই হচ্ছে আল-আসমা ওয়াসসিফাতের তাওহীদ। সাথে সাথে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আল্লাহর কামালিয়াতের ক্ষেত্রে যেসব দোষ-ত্রুটিকে নেতিবাচক হিসেবে ঘোষণা করেছেন, সেগুলোকে নেতিবাচক হিসেবেই গ্রহণ করা।
২. রুবুবিয়্যাতের তাওহীদ :
সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা এবং সমগ্র সৃষ্টিজগৎ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলাই হচ্ছেন একক রব বা প্রতিপালক। তিনি অফুরন্ত নিয়ামতের মাধ্যমে গোটা সৃষ্টিকে প্রতিপালন করছেন। বান্দার এ আক্বীদা পোষণের নামই হচ্ছে রুবুবিয়্যাতের তাওহীদ।
৩. তাওহীদে উলুহিয়্যাহ :
একমাত্র আল্লাহকেই তাঁর সমস্ত সৃষ্টির উপর উলুহিয়্যাতের এবং উবুদিয়্যাতের অধিকারী হিসেবে জানা এবং স্বীকার করা, আর যাবতীয় ইবাদাতের মাধ্যমে তাঁর একত্বের প্রমাণ দেয়া। সাথে সাথে একমাত্র আল্লাহর জন্যই ইবাদাতকে নিরংঙ্কুশ করা- এর নাম হচ্ছে তাওহীদে উলুহিয়্যাহ।
তাওহীদ তিন প্রকার :
১। আল-আসমা ওয়াসসিফাত অর্থাৎ আল্লাহর নাম ও গুণাবলির তাওহীদ :
আল্লাহ তা‘আলার শ্রেষ্ঠত্ব, মহত্ব ও সৌন্দর্যের যাবতীয় নাম ও গুণাবলিতে তিনি একক এবং নিরঙ্কুশভাবে পূর্ণতার অধিকারী। এক্ষেত্রে কোনক্রমেই তাঁর অংশীদার কেউ হতে পারে না। এ আক্বীদা পোষণ করাই হচ্ছে আল-আসমা ওয়াসসিফাতের তাওহীদ। সাথে সাথে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আল্লাহর কামালিয়াতের ক্ষেত্রে যেসব দোষ-ত্রুটিকে নেতিবাচক হিসেবে ঘোষণা করেছেন, সেগুলোকে নেতিবাচক হিসেবেই গ্রহণ করা।
২. রুবুবিয়্যাতের তাওহীদ :
সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা এবং সমগ্র সৃষ্টিজগৎ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলাই হচ্ছেন একক রব বা প্রতিপালক। তিনি অফুরন্ত নিয়ামতের মাধ্যমে গোটা সৃষ্টিকে প্রতিপালন করছেন। বান্দার এ আক্বীদা পোষণের নামই হচ্ছে রুবুবিয়্যাতের তাওহীদ।
৩. তাওহীদে উলুহিয়্যাহ :
একমাত্র আল্লাহকেই তাঁর সমস্ত সৃষ্টির উপর উলুহিয়্যাতের এবং উবুদিয়্যাতের অধিকারী হিসেবে জানা এবং স্বীকার করা, আর যাবতীয় ইবাদাতের মাধ্যমে তাঁর একত্বের প্রমাণ দেয়া। সাথে সাথে একমাত্র আল্লাহর জন্যই ইবাদাতকে নিরংঙ্কুশ করা- এর নাম হচ্ছে তাওহীদে উলুহিয়্যাহ।
আল্লাহ একক সত্তা :
وَاِلٰهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌۚ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ
তোমাদের উপাস্য একমাত্র আল্লাহ। তিনি ব্যতীত অন্য কোন সত্য উপাস্য নেই। (সূরা বাক্বারা- ১৬৩)
তাঁর কোন শরীক নেই :
لَا شَرِيْكَ لَهٗ وَبِذٰلِكَ اُمِرْتُ وَاَنَاْ اَوَّلُ الْمُسْلِمِيْنَ
তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি এরই জন্য আদিষ্ট হয়েছি; আর আমিই মুসলিমদের মধ্যে প্রথম। (সূরা আন‘আম- ১৬৩)
তিনি শরীক থেকে অনেক ঊর্ধ্বে :
خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ بِالْحَقِّ تَعَالٰى عَمَّا يُشْرِكُوْنَ
তিনি যথাযথভাবে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, তারা যা শরীক করে তিনি তা হতে অনেক ঊর্ধ্বে। (সূরা নাহল- ৩)
عَالِمِ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ فَتَعَالٰى عَمَّا يُشْرِكُوْنَ
তিনি প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য জ্ঞানের অধিকারী, তারা যাকে শরীক করে তিনি তার থেকে অনেক ঊর্ধ্বে।
(সূরা মু’মিনূন- ৯২)
তাঁর শরীক থাকলে সেও আরশে যেতে চাইত :
قُلْ لَّوْ كَانَ مَعَهٗۤ اٰلِهَةٌ كَمَا يَقُوْلُوْنَ اِذًا لَّابْتَغَوْا اِلٰى ذِى الْعَرْشِ سَبِيْلًا
বলো, তাদের কথা অনুযায়ী যদি তাঁর সাথে অন্য কোন ইলাহ্ থাকত, তবে তারা আরশের অধিপতির প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার উপায় অমেবষণ করত। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৪২)
একাধিক ইলাহ্ থাকলে বিশ্বব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যেত :
لَوْ كَانَ فِيْهِمَاۤ اٰلِهَةٌ اِلَّا اللهُ لَفَسَدَتَاؕ فَسُبْحَانَ اللهِ رَبِّ الْعَرْشِ عَمَّا يَصِفُوْنَ
যদি আকাশ ও পৃথিবীতে আল্লাহ ব্যতীত বহু ইলাহ্ থাকত, তবে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেত। অতএব তারা যা দ্বারা গুণান্বিত করে তা হতে আরশের অধিপতি আল্লাহ অনেক পবিত্র ও মহান। (সূরা আম্বিয়া- ২২)
ব্যাখ্যা : একটি ছোট্ট গৃহে যদি দু’জন গৃহকর্তা হয়, তাহলে সে গৃহের পরিচালনা দু’দিনও ভালোভাবে চলবে না। বিশ্বজাহানের সমগ্র ব্যবস্থা পৃথিবীর ভূগর্ভ থেকে দূরবর্তী গ্রহ নক্ষত্র পর্যন্ত সবকিছুই একটি বিশ্বজনীন নিয়মের অধীনে পরিচালিত। এখন এটা কীভাবে ধারণা করা যেতে পারে যে, বহু স্বতন্ত্র ও স্বাধীন শাসকের রাজ্যে একই আইন ও একই নিয়ম চলতে পারে? এখানে যে নিয়ম ও শৃঙ্খলা বজায় আছে এটাই এ কথার সাক্ষ্য দেয় যে, ক্ষমতা একই সার্বভৌম কর্তৃত্বে কেন্দ্রীভূত রয়েছে এবং এ সার্বভৌম কর্তৃত্ব বিভিন্ন শাসকদের মধ্যে বিভক্ত নয়।
বহু ইলাহ্ থাকলে একজন অপরজন থেকে পৃথক হয়ে যেত :
مَا اتَّخَذَ اللهُ مِنْ وَّلَدٍ وَّمَا كَانَ مَعَهٗ مِنْ اِلٰهٍ اِذًا لَّذَهَبَ كُلُّ اِلٰهٍ ۢبِمَا خَلَقَ وَلَعَلَا بَعْضُهُمْ عَلٰى بَعْضٍ سُبْحَانَ اللهِ عَمَّا يَصِفُوْنَ
আল্লাহ কোন সন্তান গ্রহণ করেননি এবং তাঁর সাথে অপর কোন ইলাহও নেই। যদি থাকত তবে প্রত্যেক ইলাহ্ স্বীয় সৃষ্টি নিয়ে পৃথক হয়ে যেত এবং একে অপরের উপর প্রাধান্য বিস্তার করত। (সুতরাং) তারা যা দ্বারা তাঁকে গুণান্বিত করে আল্লাহ তা হতে পবিত্র! (সূরা মু’মিনূন- ৯১)
ব্যাখ্যা : বিশ্বের নিয়ম-শৃঙ্খলা ও তার বিভিন্ন অংশের পারস্পরিক একাত্মতা স্পষ্টভাবেই প্রমাণ করছে যে, এর ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব একমাত্র আল্লাহর হাতে কেন্দ্রীভূত। যদি কর্তৃত্ব বিভক্ত হতো তাহলে কর্তৃত্বশীলদের মধ্যে অনিবার্যভাবে মতবিরোধ সৃষ্টি হতো এবং এক সময় তা তাদের উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত করত।
وَاِلٰهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌۚ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ
তোমাদের উপাস্য একমাত্র আল্লাহ। তিনি ব্যতীত অন্য কোন সত্য উপাস্য নেই। (সূরা বাক্বারা- ১৬৩)
তাঁর কোন শরীক নেই :
لَا شَرِيْكَ لَهٗ وَبِذٰلِكَ اُمِرْتُ وَاَنَاْ اَوَّلُ الْمُسْلِمِيْنَ
তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি এরই জন্য আদিষ্ট হয়েছি; আর আমিই মুসলিমদের মধ্যে প্রথম। (সূরা আন‘আম- ১৬৩)
তিনি শরীক থেকে অনেক ঊর্ধ্বে :
خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ بِالْحَقِّ تَعَالٰى عَمَّا يُشْرِكُوْنَ
তিনি যথাযথভাবে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, তারা যা শরীক করে তিনি তা হতে অনেক ঊর্ধ্বে। (সূরা নাহল- ৩)
عَالِمِ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ فَتَعَالٰى عَمَّا يُشْرِكُوْنَ
তিনি প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য জ্ঞানের অধিকারী, তারা যাকে শরীক করে তিনি তার থেকে অনেক ঊর্ধ্বে।
(সূরা মু’মিনূন- ৯২)
তাঁর শরীক থাকলে সেও আরশে যেতে চাইত :
قُلْ لَّوْ كَانَ مَعَهٗۤ اٰلِهَةٌ كَمَا يَقُوْلُوْنَ اِذًا لَّابْتَغَوْا اِلٰى ذِى الْعَرْشِ سَبِيْلًا
বলো, তাদের কথা অনুযায়ী যদি তাঁর সাথে অন্য কোন ইলাহ্ থাকত, তবে তারা আরশের অধিপতির প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার উপায় অমেবষণ করত। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৪২)
একাধিক ইলাহ্ থাকলে বিশ্বব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যেত :
لَوْ كَانَ فِيْهِمَاۤ اٰلِهَةٌ اِلَّا اللهُ لَفَسَدَتَاؕ فَسُبْحَانَ اللهِ رَبِّ الْعَرْشِ عَمَّا يَصِفُوْنَ
যদি আকাশ ও পৃথিবীতে আল্লাহ ব্যতীত বহু ইলাহ্ থাকত, তবে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেত। অতএব তারা যা দ্বারা গুণান্বিত করে তা হতে আরশের অধিপতি আল্লাহ অনেক পবিত্র ও মহান। (সূরা আম্বিয়া- ২২)
ব্যাখ্যা : একটি ছোট্ট গৃহে যদি দু’জন গৃহকর্তা হয়, তাহলে সে গৃহের পরিচালনা দু’দিনও ভালোভাবে চলবে না। বিশ্বজাহানের সমগ্র ব্যবস্থা পৃথিবীর ভূগর্ভ থেকে দূরবর্তী গ্রহ নক্ষত্র পর্যন্ত সবকিছুই একটি বিশ্বজনীন নিয়মের অধীনে পরিচালিত। এখন এটা কীভাবে ধারণা করা যেতে পারে যে, বহু স্বতন্ত্র ও স্বাধীন শাসকের রাজ্যে একই আইন ও একই নিয়ম চলতে পারে? এখানে যে নিয়ম ও শৃঙ্খলা বজায় আছে এটাই এ কথার সাক্ষ্য দেয় যে, ক্ষমতা একই সার্বভৌম কর্তৃত্বে কেন্দ্রীভূত রয়েছে এবং এ সার্বভৌম কর্তৃত্ব বিভিন্ন শাসকদের মধ্যে বিভক্ত নয়।
বহু ইলাহ্ থাকলে একজন অপরজন থেকে পৃথক হয়ে যেত :
مَا اتَّخَذَ اللهُ مِنْ وَّلَدٍ وَّمَا كَانَ مَعَهٗ مِنْ اِلٰهٍ اِذًا لَّذَهَبَ كُلُّ اِلٰهٍ ۢبِمَا خَلَقَ وَلَعَلَا بَعْضُهُمْ عَلٰى بَعْضٍ سُبْحَانَ اللهِ عَمَّا يَصِفُوْنَ
আল্লাহ কোন সন্তান গ্রহণ করেননি এবং তাঁর সাথে অপর কোন ইলাহও নেই। যদি থাকত তবে প্রত্যেক ইলাহ্ স্বীয় সৃষ্টি নিয়ে পৃথক হয়ে যেত এবং একে অপরের উপর প্রাধান্য বিস্তার করত। (সুতরাং) তারা যা দ্বারা তাঁকে গুণান্বিত করে আল্লাহ তা হতে পবিত্র! (সূরা মু’মিনূন- ৯১)
ব্যাখ্যা : বিশ্বের নিয়ম-শৃঙ্খলা ও তার বিভিন্ন অংশের পারস্পরিক একাত্মতা স্পষ্টভাবেই প্রমাণ করছে যে, এর ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব একমাত্র আল্লাহর হাতে কেন্দ্রীভূত। যদি কর্তৃত্ব বিভক্ত হতো তাহলে কর্তৃত্বশীলদের মধ্যে অনিবার্যভাবে মতবিরোধ সৃষ্টি হতো এবং এক সময় তা তাদের উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত করত।
আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই :
وَمَا مِنْ اِلٰهٍ اِلَّا اللهُ
আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। (সূরা আলে ইমরান- ৬২)
ذٰلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمْؕ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ فَاعْبُدُوْهُ
তিনিই তো আল্লাহ, তোমাদের প্রতিপালক; তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই। তিনিই সবকিছুর স্রষ্টা; সুতরাং তোমরা তাঁরই ইবাদাত করো। (সূরা আন‘আম- ১০২)
اِنَّمَاۤ اِلٰهُكُمُ اللهُ الَّذِيْ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ
তোমাদের ইলাহ্ তো কেবল আল্লাহই, যিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই। (সূরা ত্বা-হা- ৯৮)
وَهُوَ اللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَؕ لَهُ الْحَمْدُ فِى الْاُوْلٰى وَالْاٰخِرَةِ وَلَهُ الْحُكْمُ وَاِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ
তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই, দুনিয়া ও আখিরাতে সমস্ত প্রশংসা তাঁরই; বিধান তাঁরই, তোমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা ক্বাসাস- ৭০)
আসমান ও জমিনে একই উপাস্য :
وَهُوَ الَّذِيْ فِى السَّمَآءِ اِلٰهٌ وَّ فِى الْاَرْضِ اِلٰهٌ وَّهُوَ الْحَكِيْمُ الْعَلِيْمُ
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে তিনিই মা‘বুদ; তিনিই প্রজ্ঞাবান এবং সর্বজ্ঞ। (সূরা যুখরুফ- ৮৪)
আল্লাহ ছাড়া অন্য সব উপাস্যই মিথ্যা :
ذٰلِكَ بِاَنَّ اللهَ هُوَ الْحَقُّ وَاَنَّ مَا يَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِه هُوَ الْبَاطِلُ
এটা এজন্য যে, নিশ্চয় আল্লাহই সত্য এবং তারা তাঁর পরিবর্তে যাকে ডাকে, তা অসত্য। (সূরা হজ্জ- ৬২)
তাওহীদের ব্যাপারে আল্লাহর শপথ :
وَالصَّآفَّاتِ صَفًّا ‐ فَالزَّاجِرَاتِ زَجْرًا ‐ فَالتَّالِيَاتِ ذِكْرًا ‐ اِنَّ اِلٰهَكُمْ لَوَاحِدٌ
শপথ (সেসব ফেরেশতাদের) যারা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। শপথ (সেসব ফেরেশতার) যারা সজোরে ধমক দেয়। শপথ (সেসব ফেরেশতার) যারা সদা আল্লাহর যিকির করে। অবশ্যই তোমাদের উপাস্য হচ্ছেন একজন। (সূরা সাফ্ফাত, ১-৪)
তাওহীদের ব্যাপারে আল্লাহর সাক্ষ্য হচ্ছে সবচেয়ে বড় :
قُلْ اَيُّ شَيْءٍ اَكْبَرُ شَهَادَةًؕ قُلِ اللهُ شَهِيْدٌ ۢبَيْنِيْ وَبَيْنَكُمْؕ وَ اُوْحِيَ اِلَيَّ هٰذَا الْقُرْاٰنُ لِاُنْذِرَكُمْ بِهٖ وَ مَنْ ۢبَلَغَؕ اَئِنَّكُمْ لَتَشْهَدُوْنَ اَنَّ مَعَ اللهِ اٰلِهَةً اُخْرٰى ۚ قُلْ لَّاۤ اَشْهَدُۚ قُلْ اِنَّمَا هُوَ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ وَّاِنَّنِيْ بَرِيْٓءٌ مِّمَّا تُشْرِكُوْنَ
বলো, কোন্ সাক্ষ্য সবচেয়ে বড়? বলো, আল্লাহর (সাক্ষ্যই সবচেয়ে বড়); যিনি আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী। এ কুরআন আমার নিকট ওহী করা হয়েছে, যেন আমি এর দ্বারা তোমাদেরকে এবং যার নিকট তা পৌঁছবে তাদেরকে ভয় দেখাতে পারি। তোমরা কি এ সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহ্ আছে? বলো, আমি সে সাক্ষ্য দেই না। বলো, নিশ্চয় তিনিই একমাত্র ইলাহ্ এবং তোমরা যা শরীক কর তা হতে অবশ্যই আমি মুক্ত। (সূরা আন‘আম- ১৯)
ফেরেশতা ও জ্ঞানীদের সাক্ষ্য :
شَهِدَ اللهُ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ وَالْمَلَآئِكَةُ وَاُولُو الْعِلْمِ قَآئِمًا ۢبِالْقِسْطِؕ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, তিনি ছাড়া কোন মা‘বুদ নেই। (এ বিষয়ে আরো সাক্ষ্যদানকারী হচ্ছেন) ফেরেশতারা এবং জ্ঞানীরা। তিনি ন্যায়নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। তিনি ছাড়া কোন মা‘বুদ নেই; তিনি মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা আলে ইমরান- ১৮)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর পর সবচেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য সাক্ষ্য হচ্ছে ফেরেশতাদের সাক্ষ্য। কারণ তারা হচ্ছেন বিশ্বের ব্যবস্থাপনার কার্যনির্বাহী ও কর্মচারী। তারা সরাসরি নিজেদের জ্ঞানের ভিত্তিতে সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, এ বিশ্বে আল্লাহ ছাড়া আর কারো হুকুম চলে না। পৃথিবী ও আকাশের ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে তিনি ছাড়া এমন কোন সত্তা নেই, যার কাছ থেকে তারা নির্দেশ গ্রহণ করতে পারে। ফেরেশতাদের পর এ সৃষ্টিজগতের যারাই প্রকৃত সত্য সম্পর্কে জ্ঞান রাখে, তাদের সর্বসম্মত সাক্ষ্য হচ্ছে, আল্লাহ একাই এ সমগ্র বিশ্বের নিয়ন্ত্রক, মালিক, পরিচালক ও প্রভু।
তাওহীদের পক্ষে ওহীর বাণী :
قُلْ اِنَّمَا يُوْحٰۤى اِلَيَّ اَنَّمَاۤ اِلٰهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ فَهَلْ اَنْتُمْ مُّسْلِمُوْنَ
বলো, আমার প্রতি ওহী হয় যে, তোমাদের ইলাহ্ একই ইলাহ। তবুও কি তোমরা আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে না? (সূরা আন্বিয়া- ১০৮)
قُلْ اِنَّمَاۤ اَنَاْ بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوْحٰۤى اِلَيَّ اَنَّمَاۤ اِلٰهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ
বলো, আমি তো তোমাদের মতোই একজন মানুষ। আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহ্ মাত্র একজনই। (সূরা কাহফ- ১১০)
কুরআন পাঠানোর একটি উদ্দেশ্য হচ্ছে তাওহীদের জ্ঞান দেয়া :
الٓرٰ ‐ كِتَابٌ اُحْكِمَتْ اٰيَاتُهٗ ثُمَّ فُصِّلَتْ مِنْ لَّدُنْ حَكِيْمٍ خَبِيْرٍ ‐ اَلَّا تَعْبُدُوْاۤ اِلَّا اللهَ
আলিফ-লাম-রা। এ কুরআন হচ্ছে এমন একটি কিতাব, যার আয়াতসমূহকে অত্যন্ত সুস্পষ্ট ও সুবিন্যস্ত করে রাখা হয়েছে। অতঃপর এর বর্ণনাসমূহও বিশদভাবে বলে দেয়া হয়েছে। এ কিতাব এক প্রজ্ঞাময় সর্বজ্ঞ সত্তার কাছ থেকেই (তোমাদের কাছে এসেছে)। এর বক্তব্য হচ্ছে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করো না। (সূরা হুদ- ১, ২)
আল্লাহ আদমসন্তান থেকে তাওহীদের সাক্ষ্য নিয়েছেন :
وَاِذْ اَخَذَ رَبُّكَ مِنْ ۢبَنِيْۤ اٰدَمَ مِنْ ظُهُوْرِهِمْ ذُرِِّيَّتَهُمْ وَاَشْهَدَهُمْۚ عَلٰۤى اَنْفُسِهِمْ اَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ قَالُوْا بَلٰىۚ شَهِدْنَاۚ اَنْ تَقُوْلُوْا يَوْمَ الْقِيَامَةِ اِنَّا كُنَّا عَنْ هٰذَا غَافِلِيْنَ
স্মরণ করো, যখন তোমার প্রতিপালক আদম সন্তানের পৃষ্ঠদেশ হতে তার বংশধরকে বের করেছিলেন। অতঃপর তাদের নিজেদের সম্বন্ধে স্বীকারোক্তি গ্রহণ করে বলেছিলেন, আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই? তারা বলেছিল, হ্যাঁ- অবশ্যই আমরা সাক্ষী রইলাম। এটা এজন্য যে, তোমরা যেন কিয়ামতের দিন বলতে না পার যে, আমরা তো এ বিষয়ে গাফিল ছিলাম। (সূরা আ‘রাফ- ১৭২)
ব্যাখ্যা : আদম (আঃ) থেকে কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ জন্মগ্রহণ করবে তাদের সবাইকে আল্লাহ তা‘আলা একই সঙ্গে সচেতন সত্তায় আবির্ভূত করে নিজের সামনে উপস্থিত করেছিলেন এবং তাদের কাছ থেকে তাঁর রব হওয়ার ব্যাপারে সাক্ষ্য গ্রহণ করেছিলেন। তাদেরকে নিজেদের উপর সাক্ষী বানিয়ে জিজ্ঞেস করেন, আমি কি তোমাদের রব নই? তখন তারা সবাই বলেছে, অবশ্যই আপনি আমাদের রব। তখন আল্লাহ বললেন, কিয়ামতের দিন যাতে তোমরা না বলতে পার যে, আমরা তো এ বিষয়টি জানতাম না। এজন্যই আমি তোমাদের থেকে এ সাÿ্য নিয়েছি। ভালোভাবে জেনে রেখো, আমি ছাড়া ইবাদাত লাভের যোগ্য আর কেউ নেই এবং আমি ছাড়া আর কোন রবও নেই। তোমরা আমার সাথে আর কাউকে শরীক করো না। আমি তোমাদের কাছে আমার নবী পাঠাব। তোমরা আমার সাথে যেসব অঙ্গীকার করেছ, নবীগণ তোমাদেরকে সেসব স্মরণ করিয়ে দেবেন। আর তোমাদের প্রতি কিতাবও নাযিল করব। তখন সকল মানুষ বলে ওঠে- ‘‘আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি, তুমিই আমাদের রব, তুমিই আমাদের মা‘বুদ, তুমি ছাড়া আমাদের আর কোন রব কিংবা মা‘বুদ নেই।’’
অনাদিকালের এ অঙ্গীকারটিকে কিয়ামতের দিন মানুষের বিরুদ্ধে একটি প্রমাণ হিসেবে পেশ করা হবে। মানবজাতির মধ্য থেকে যারা আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহাত্মক আচরণ করবে তারা যেন নিজেরাই নিজেদের এ অপরাধের জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী হয়। নিজেদের অজুহাত পেশ করার কোন সুযোগ যেন তাদের না থাকে। সেই অঙ্গীকারের কথা এখন মানুষের স্মরণ নেই। যদি মানুষের চেতনা ও স্মৃতিপটে তা জাগ্রত রাখা হতো, তাহলে মানুষকে দুনিয়ার বর্তমান পরীক্ষাগারে পাঠানোর ব্যাপারটা একেবারে অর্থহীন হয়ে যেত। কারণ তখন পরীক্ষার আর কোন অর্থই থাকত না। তাই এ অঙ্গীকারের কথা স্মৃতিপটে জাগ্রত রাখা হয়নি, কিন্তু অবচেতন মনে তাকে অবশ্যই সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। যেদিন হিসাব-নিকাশ ও বিচারের আদালত প্রতিষ্ঠিত হবে, সেদিন মহান স্রষ্টা তাদের স্মৃতিতে সৃষ্টির প্রথম দিনের সেই স্মৃতিগুলো জাগিয়ে তুলবেন।
তাওহীদ গ্রহণের জন্য বনী ইসরাঈল থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ :
وَاِذْ اَخَذْنَا مِيْثَاقَ بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ لَا تَعْبُدُوْنَ اِلَّا اللهَ
স্মরণ করো, যখন আমি বনী ইসরাঈল হতে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো ইবাদাত করবে না। (সূরা বাক্বারা- ৮৩)
এক আল্লাহর ইবাদাত করাই জিন ও মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য :
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْاِنْسَ اِلَّا لِيَعْبُدُوْنِ
আমি জিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি এজন্য যে, তারা কেবল আমারই ইবাদাত করবে। (সূরা যারিয়াত- ৫৬)
তাওহীদের ঘোষণা দেয়ার নির্দেশ :
وَقُلِ الْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ لَمْ يَتَّخِذْ وَلَدًا وَّلَمْ يَكُنْ لَّهٗ شَرِيْكٌ فِى الْمُلْكِ وَلَمْ يَكُنْ لَّهٗ وَلِيٌّ مِّنَ الذُّلِّ وَكَبِّرْهُ تَكْبِيْرًا
বলো, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি কোন সন্তান গ্রহণ করেননি। তার সার্বভৌমত্বে কোন অংশীদার নেই এবং তিনি দুর্দশাগ্রস্ত হন না, যে কারণে তাঁর অভিভাবকের প্রয়োজন হতে পারে। সুতরাং যথাযথ মর্যাদায় তাঁর মাহাত্ম্য ঘোষণা করো। (সূরা বনী ইসরাঈল- ১১১)
وَمَا مِنْ اِلٰهٍ اِلَّا اللهُ
আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। (সূরা আলে ইমরান- ৬২)
ذٰلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمْؕ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ فَاعْبُدُوْهُ
তিনিই তো আল্লাহ, তোমাদের প্রতিপালক; তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই। তিনিই সবকিছুর স্রষ্টা; সুতরাং তোমরা তাঁরই ইবাদাত করো। (সূরা আন‘আম- ১০২)
اِنَّمَاۤ اِلٰهُكُمُ اللهُ الَّذِيْ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ
তোমাদের ইলাহ্ তো কেবল আল্লাহই, যিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই। (সূরা ত্বা-হা- ৯৮)
وَهُوَ اللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَؕ لَهُ الْحَمْدُ فِى الْاُوْلٰى وَالْاٰخِرَةِ وَلَهُ الْحُكْمُ وَاِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ
তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই, দুনিয়া ও আখিরাতে সমস্ত প্রশংসা তাঁরই; বিধান তাঁরই, তোমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা ক্বাসাস- ৭০)
আসমান ও জমিনে একই উপাস্য :
وَهُوَ الَّذِيْ فِى السَّمَآءِ اِلٰهٌ وَّ فِى الْاَرْضِ اِلٰهٌ وَّهُوَ الْحَكِيْمُ الْعَلِيْمُ
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে তিনিই মা‘বুদ; তিনিই প্রজ্ঞাবান এবং সর্বজ্ঞ। (সূরা যুখরুফ- ৮৪)
আল্লাহ ছাড়া অন্য সব উপাস্যই মিথ্যা :
ذٰلِكَ بِاَنَّ اللهَ هُوَ الْحَقُّ وَاَنَّ مَا يَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِه هُوَ الْبَاطِلُ
এটা এজন্য যে, নিশ্চয় আল্লাহই সত্য এবং তারা তাঁর পরিবর্তে যাকে ডাকে, তা অসত্য। (সূরা হজ্জ- ৬২)
তাওহীদের ব্যাপারে আল্লাহর শপথ :
وَالصَّآفَّاتِ صَفًّا ‐ فَالزَّاجِرَاتِ زَجْرًا ‐ فَالتَّالِيَاتِ ذِكْرًا ‐ اِنَّ اِلٰهَكُمْ لَوَاحِدٌ
শপথ (সেসব ফেরেশতাদের) যারা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। শপথ (সেসব ফেরেশতার) যারা সজোরে ধমক দেয়। শপথ (সেসব ফেরেশতার) যারা সদা আল্লাহর যিকির করে। অবশ্যই তোমাদের উপাস্য হচ্ছেন একজন। (সূরা সাফ্ফাত, ১-৪)
তাওহীদের ব্যাপারে আল্লাহর সাক্ষ্য হচ্ছে সবচেয়ে বড় :
قُلْ اَيُّ شَيْءٍ اَكْبَرُ شَهَادَةًؕ قُلِ اللهُ شَهِيْدٌ ۢبَيْنِيْ وَبَيْنَكُمْؕ وَ اُوْحِيَ اِلَيَّ هٰذَا الْقُرْاٰنُ لِاُنْذِرَكُمْ بِهٖ وَ مَنْ ۢبَلَغَؕ اَئِنَّكُمْ لَتَشْهَدُوْنَ اَنَّ مَعَ اللهِ اٰلِهَةً اُخْرٰى ۚ قُلْ لَّاۤ اَشْهَدُۚ قُلْ اِنَّمَا هُوَ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ وَّاِنَّنِيْ بَرِيْٓءٌ مِّمَّا تُشْرِكُوْنَ
বলো, কোন্ সাক্ষ্য সবচেয়ে বড়? বলো, আল্লাহর (সাক্ষ্যই সবচেয়ে বড়); যিনি আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী। এ কুরআন আমার নিকট ওহী করা হয়েছে, যেন আমি এর দ্বারা তোমাদেরকে এবং যার নিকট তা পৌঁছবে তাদেরকে ভয় দেখাতে পারি। তোমরা কি এ সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহ্ আছে? বলো, আমি সে সাক্ষ্য দেই না। বলো, নিশ্চয় তিনিই একমাত্র ইলাহ্ এবং তোমরা যা শরীক কর তা হতে অবশ্যই আমি মুক্ত। (সূরা আন‘আম- ১৯)
ফেরেশতা ও জ্ঞানীদের সাক্ষ্য :
شَهِدَ اللهُ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ وَالْمَلَآئِكَةُ وَاُولُو الْعِلْمِ قَآئِمًا ۢبِالْقِسْطِؕ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, তিনি ছাড়া কোন মা‘বুদ নেই। (এ বিষয়ে আরো সাক্ষ্যদানকারী হচ্ছেন) ফেরেশতারা এবং জ্ঞানীরা। তিনি ন্যায়নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। তিনি ছাড়া কোন মা‘বুদ নেই; তিনি মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা আলে ইমরান- ১৮)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর পর সবচেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য সাক্ষ্য হচ্ছে ফেরেশতাদের সাক্ষ্য। কারণ তারা হচ্ছেন বিশ্বের ব্যবস্থাপনার কার্যনির্বাহী ও কর্মচারী। তারা সরাসরি নিজেদের জ্ঞানের ভিত্তিতে সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, এ বিশ্বে আল্লাহ ছাড়া আর কারো হুকুম চলে না। পৃথিবী ও আকাশের ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে তিনি ছাড়া এমন কোন সত্তা নেই, যার কাছ থেকে তারা নির্দেশ গ্রহণ করতে পারে। ফেরেশতাদের পর এ সৃষ্টিজগতের যারাই প্রকৃত সত্য সম্পর্কে জ্ঞান রাখে, তাদের সর্বসম্মত সাক্ষ্য হচ্ছে, আল্লাহ একাই এ সমগ্র বিশ্বের নিয়ন্ত্রক, মালিক, পরিচালক ও প্রভু।
তাওহীদের পক্ষে ওহীর বাণী :
قُلْ اِنَّمَا يُوْحٰۤى اِلَيَّ اَنَّمَاۤ اِلٰهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ فَهَلْ اَنْتُمْ مُّسْلِمُوْنَ
বলো, আমার প্রতি ওহী হয় যে, তোমাদের ইলাহ্ একই ইলাহ। তবুও কি তোমরা আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে না? (সূরা আন্বিয়া- ১০৮)
قُلْ اِنَّمَاۤ اَنَاْ بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوْحٰۤى اِلَيَّ اَنَّمَاۤ اِلٰهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ
বলো, আমি তো তোমাদের মতোই একজন মানুষ। আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহ্ মাত্র একজনই। (সূরা কাহফ- ১১০)
কুরআন পাঠানোর একটি উদ্দেশ্য হচ্ছে তাওহীদের জ্ঞান দেয়া :
الٓرٰ ‐ كِتَابٌ اُحْكِمَتْ اٰيَاتُهٗ ثُمَّ فُصِّلَتْ مِنْ لَّدُنْ حَكِيْمٍ خَبِيْرٍ ‐ اَلَّا تَعْبُدُوْاۤ اِلَّا اللهَ
আলিফ-লাম-রা। এ কুরআন হচ্ছে এমন একটি কিতাব, যার আয়াতসমূহকে অত্যন্ত সুস্পষ্ট ও সুবিন্যস্ত করে রাখা হয়েছে। অতঃপর এর বর্ণনাসমূহও বিশদভাবে বলে দেয়া হয়েছে। এ কিতাব এক প্রজ্ঞাময় সর্বজ্ঞ সত্তার কাছ থেকেই (তোমাদের কাছে এসেছে)। এর বক্তব্য হচ্ছে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করো না। (সূরা হুদ- ১, ২)
আল্লাহ আদমসন্তান থেকে তাওহীদের সাক্ষ্য নিয়েছেন :
وَاِذْ اَخَذَ رَبُّكَ مِنْ ۢبَنِيْۤ اٰدَمَ مِنْ ظُهُوْرِهِمْ ذُرِِّيَّتَهُمْ وَاَشْهَدَهُمْۚ عَلٰۤى اَنْفُسِهِمْ اَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ قَالُوْا بَلٰىۚ شَهِدْنَاۚ اَنْ تَقُوْلُوْا يَوْمَ الْقِيَامَةِ اِنَّا كُنَّا عَنْ هٰذَا غَافِلِيْنَ
স্মরণ করো, যখন তোমার প্রতিপালক আদম সন্তানের পৃষ্ঠদেশ হতে তার বংশধরকে বের করেছিলেন। অতঃপর তাদের নিজেদের সম্বন্ধে স্বীকারোক্তি গ্রহণ করে বলেছিলেন, আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই? তারা বলেছিল, হ্যাঁ- অবশ্যই আমরা সাক্ষী রইলাম। এটা এজন্য যে, তোমরা যেন কিয়ামতের দিন বলতে না পার যে, আমরা তো এ বিষয়ে গাফিল ছিলাম। (সূরা আ‘রাফ- ১৭২)
ব্যাখ্যা : আদম (আঃ) থেকে কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ জন্মগ্রহণ করবে তাদের সবাইকে আল্লাহ তা‘আলা একই সঙ্গে সচেতন সত্তায় আবির্ভূত করে নিজের সামনে উপস্থিত করেছিলেন এবং তাদের কাছ থেকে তাঁর রব হওয়ার ব্যাপারে সাক্ষ্য গ্রহণ করেছিলেন। তাদেরকে নিজেদের উপর সাক্ষী বানিয়ে জিজ্ঞেস করেন, আমি কি তোমাদের রব নই? তখন তারা সবাই বলেছে, অবশ্যই আপনি আমাদের রব। তখন আল্লাহ বললেন, কিয়ামতের দিন যাতে তোমরা না বলতে পার যে, আমরা তো এ বিষয়টি জানতাম না। এজন্যই আমি তোমাদের থেকে এ সাÿ্য নিয়েছি। ভালোভাবে জেনে রেখো, আমি ছাড়া ইবাদাত লাভের যোগ্য আর কেউ নেই এবং আমি ছাড়া আর কোন রবও নেই। তোমরা আমার সাথে আর কাউকে শরীক করো না। আমি তোমাদের কাছে আমার নবী পাঠাব। তোমরা আমার সাথে যেসব অঙ্গীকার করেছ, নবীগণ তোমাদেরকে সেসব স্মরণ করিয়ে দেবেন। আর তোমাদের প্রতি কিতাবও নাযিল করব। তখন সকল মানুষ বলে ওঠে- ‘‘আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি, তুমিই আমাদের রব, তুমিই আমাদের মা‘বুদ, তুমি ছাড়া আমাদের আর কোন রব কিংবা মা‘বুদ নেই।’’
অনাদিকালের এ অঙ্গীকারটিকে কিয়ামতের দিন মানুষের বিরুদ্ধে একটি প্রমাণ হিসেবে পেশ করা হবে। মানবজাতির মধ্য থেকে যারা আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহাত্মক আচরণ করবে তারা যেন নিজেরাই নিজেদের এ অপরাধের জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী হয়। নিজেদের অজুহাত পেশ করার কোন সুযোগ যেন তাদের না থাকে। সেই অঙ্গীকারের কথা এখন মানুষের স্মরণ নেই। যদি মানুষের চেতনা ও স্মৃতিপটে তা জাগ্রত রাখা হতো, তাহলে মানুষকে দুনিয়ার বর্তমান পরীক্ষাগারে পাঠানোর ব্যাপারটা একেবারে অর্থহীন হয়ে যেত। কারণ তখন পরীক্ষার আর কোন অর্থই থাকত না। তাই এ অঙ্গীকারের কথা স্মৃতিপটে জাগ্রত রাখা হয়নি, কিন্তু অবচেতন মনে তাকে অবশ্যই সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। যেদিন হিসাব-নিকাশ ও বিচারের আদালত প্রতিষ্ঠিত হবে, সেদিন মহান স্রষ্টা তাদের স্মৃতিতে সৃষ্টির প্রথম দিনের সেই স্মৃতিগুলো জাগিয়ে তুলবেন।
তাওহীদ গ্রহণের জন্য বনী ইসরাঈল থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ :
وَاِذْ اَخَذْنَا مِيْثَاقَ بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ لَا تَعْبُدُوْنَ اِلَّا اللهَ
স্মরণ করো, যখন আমি বনী ইসরাঈল হতে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো ইবাদাত করবে না। (সূরা বাক্বারা- ৮৩)
এক আল্লাহর ইবাদাত করাই জিন ও মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য :
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْاِنْسَ اِلَّا لِيَعْبُدُوْنِ
আমি জিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি এজন্য যে, তারা কেবল আমারই ইবাদাত করবে। (সূরা যারিয়াত- ৫৬)
তাওহীদের ঘোষণা দেয়ার নির্দেশ :
وَقُلِ الْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ لَمْ يَتَّخِذْ وَلَدًا وَّلَمْ يَكُنْ لَّهٗ شَرِيْكٌ فِى الْمُلْكِ وَلَمْ يَكُنْ لَّهٗ وَلِيٌّ مِّنَ الذُّلِّ وَكَبِّرْهُ تَكْبِيْرًا
বলো, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি কোন সন্তান গ্রহণ করেননি। তার সার্বভৌমত্বে কোন অংশীদার নেই এবং তিনি দুর্দশাগ্রস্ত হন না, যে কারণে তাঁর অভিভাবকের প্রয়োজন হতে পারে। সুতরাং যথাযথ মর্যাদায় তাঁর মাহাত্ম্য ঘোষণা করো। (সূরা বনী ইসরাঈল- ১১১)
নবীদেরকে পাঠানোর মূল উদ্দেশ্য ছিল তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করা :
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِيْ كُلِّ اُمَّةٍ رَّسُوْلًا اَنِ اعْبُدُوا اللهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوْتَ
আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যে রাসূল প্রেরণ করেছি (এ নির্দেশ দিয়ে যে) তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো এবং তাগুতকে বর্জন করো। (সূরা নাহল- ৩৬)
وَمَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا نُوْحِيْۤ اِلَيْهِ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَاْ فَاعْبُدُوْنِ
আমি তোমার পূর্বে এমন কোন রাসূল প্রেরণ করিনি, যার প্রতি এ ওহী করিনি যে, আমি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই; সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদাত করো। (সূরা আম্বিয়া- ২৫)
নূহ (আঃ) এর দাওয়াত :
لَقَدْ اَرْسَلْنَا نُوْحًا اِلٰى قَوْمِه فَقَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرُه
আমি তো নূহকে তার সম্প্রদায়ের নিকট পাঠিয়েছিলাম। অতঃপর সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহর ইবাদাত করো, তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ্ নেই। (সূরা আ‘রাফ- ৫৯)
হুদ (আঃ) এর দাওয়াত :
وَاِلٰى عَادٍ اَخَاهُمْ هُوْدًاؕ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرُهٗؕ اَفَلَا تَتَّقُوْنَ
আমি আদ জাতির নিকট তাদের ভাই হুদকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো, তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই। তবুও কি তোমরা তাঁকে ভয় করবে না? (সূরা আ‘রাফ- ৬৫)
সালেহ (আঃ) এর দাওয়াত :
وَاِلٰى ثَمُوْدَ اَخَاهُمْ صَالِحًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرُه
সামূদ জাতির নিকট তাদের ভাই সালেহকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো। তিনি ব্যতীত তোমাদের জন্য অন্য কোন ইলাহ্ নেই। (সূরা আ‘রাফ- ৭৩)
শুয়াইব (আঃ) এর দাওয়াত :
وَاِلٰى مَدْيَنَ اَخَاهُمْ شُعَيْبًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرُهٗ
আমি মাদইয়ানবাসীর নিকট তাদেরই ভাই শুয়াইবকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের জন্য অন্য কোন সত্য মা‘বুদ নেই। (সূরা আ‘রাফ- ৮৫)
ইবরাহীম (আঃ) এর দাওয়াত :
وَلَقَدْ اٰتَيْنَاۤ اِبْرَاهِيْمَ رُشْدَهٗ مِنْ قَبْلُ وَكُنَّا بِه عَالِمِيْنَ ‐ اِذْ قَالَ لِاَبِيْهِ وَقَوْمِه مَا هٰذِهِ التَّمَاثِيْلُ الَّتِيْۤ اَنْتُمْ لَهَا عَاكِفُوْنَ ‐ قَالُوْا وَجَدْنَاۤ اٰبَآءَنَا لَهَا عَابِدِيْنَ ‐ قَالَ لَقَدْ كُنْتُمْ اَنْتُمْ وَاٰبَآؤُكُمْ فِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ
ইতোপূর্বে আমি ইবরাহীমকে সৎপথে চলার জ্ঞান দান করেছিলাম এবং আমি তার সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত ছিলাম। যখন সে তার পিতা ও তার সম্প্রদায়কে বলল, এ মূর্তিগুলো কী, যাদের সাথে তোমরা নিজেদেরকে (ভক্তির বাঁধনে) বেঁধে রেখেছ? তারা বলল, আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে এদের উপাসনা করতে দেখেছি। সে বলল, তোমরা নিজেরা এবং তোমাদের পিতৃপুরুষরা উভয়ই স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে রয়েছ। (সূরা আম্বিয়া, ৫১-৫৪)
ইয়াকূব (আঃ) এর সন্তানদের ঘোষণা :
اَمْ كُنْتُمْ شُهَدَآءَ اِذْ حَضَرَ يَعْقُوْبَ الْمَوْتُ اِذْ قَالَ لِبَنِيْهِ مَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ ۢبَعْدِيْؕ قَالُوْا نَعْبُدُ اِلٰهَكَ وَاِلٰهَ اٰبَآئِكَ اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ وَاِسْحَاقَ اِلٰهًا وَّاحِدًاۚ وَنَحْنُ لَهٗ مُسْلِمُوْنَ
তোমরা কি ঐ সময় উপস্থিত ছিলে, যখন ইয়াকূবের মৃত্যু উপস্থিত হয় এবং তিনি নিজ পুত্রদেরকে বলেছিলেন, আমার (মৃত্যুর) পরে তোমরা কোন জিনিসের ইবাদাত করবে? তারা বলেছিল, আমরা আপনার ইলাহ্ এবং আপনার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাকের মা‘বুদের ইবাদাত করব। তিনি একক উপাস্য এবং আমরা তাঁরই অনুগত থাকব। (সূরা বাক্বারা- ১৩৩)
ইউসুফ (আঃ) এর দাওয়াত :
يَا صَاحِبَيِ السِّجْنِ اَاَرْبَابٌ مُّتَفَرِّقُوْنَ خَيْرٌ اَمِ اللهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ ‐ مَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِه ۤ اِلَّاۤ اَسْمَآءً سَمَّيْتُمُوْهَاۤ اَنْتُمْ وَاٰبَآؤُكُمْ مَّاۤ اَنْزَلَ اللهُ بِهَا مِنْ سُلْطَانٍؕ اِنِ الْحُكْمُ اِلَّا لِلّٰهِؕ اَمَرَ اَلَّا تَعْبُدُوْاۤ اِلَّاۤ اِيَّاهُؕ ذٰلِكَ الدِّيْنُ الْقَيِّمُ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ
হে কারাসঙ্গীদ্বয়! ভিন্ন ভিন্ন বহু প্রতিপালক শ্রেয়, না পরাক্রমশালী এক আল্লাহ? তাঁকে ছেড়ে তোমরা কেবল কতগুলো নামের ইবাদাত করছ, যে নামগুলো তোমাদের পিতৃপুরুষ ও তোমরাই রেখেছ। এগুলোর কোন প্রমাণ আল্লাহ পাঠাননি। বিধান দেয়ার অধিকার কেবল আল্লাহরই। তিনি আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁরই ইবাদাত করবে, আর এটাই শাশ্বত দ্বীন; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। (সূরা ইউসুফ- ৩৯, ৪০)
মূসা (আঃ) এর দাওয়াত :
قَالَ اَغَيْرَ اللهِ اَبْغِيْكُمْ اِلٰهًا وَّهُوَ فَضَّلَكُمْ عَلَى الْعَالَمِيْنَ
সে আরো বলল, আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের জন্য আমি কি অন্য কোন ইলাহ্ তালাশ করব? অথচ তিনিই তোমাদেরকে বিশ্বজগতের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন? (সূরা আ‘রাফ- ১৪০)
ঈসা (আঃ) এর দাওয়াত :
اِنَّ اللهَ رَبِّيْ وَرَبُّكُمْ فَاعْبُدُوْهُؕ هٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيْمٌ
নিশ্চয় আল্লাহ আমার এবং তোমাদের প্রতিপালক। অতএব তোমরা তাঁরই ইবাদাত করো; এটাই সঠিক পথ। (সূরা আলে ইমরান- ৫১)
মুহাম্মাদ ﷺ এর দাওয়াত :
قُلْ يَاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْا اِلٰى كَلِمَةٍ سَوَآءٍ ۢبَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ اَلَّا نَعْبُدَ اِلَّا اللهَ وَلَا نُشْرِكَ بِه شَيْئًا وَّلَا يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا اَرْبَابًا مِّنْ دُوْنِ اللهِؕ فَاِنْ تَوَلَّوْا فَقُوْلُوا اشْهَدُوْا بِاَنَّا مُسْلِمُوْنَ
বলো, হে আহলে কিতাব! তোমরা এমন একটি কালিমার দিকে এসো, যা তোমাদের এবং আমাদের মধ্যে সমান। আর তা হলো, আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করব না এবং তার সাথে কোনকিছুকে শরীক স্থাপন করব না; আর আমাদের কেউ অপর কাউকে রব হিসেবে গ্রহণ করবে না। এরপরও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে বলে দাও, তোমরা সাক্ষী থাকো যে, আমরা মুসলিম। (সূরা আলে ইমরান- ৬৪)
তাওহীদের পক্ষে আসহাবে কাহাফের ঘোষণা :
نَحْنُ نَقُصُّ عَلَيْكَ نَبَاَهُمْ بِالْحَقِّؕ اِنَّهُمْ فِتْيَةٌ اٰمَنُوْا بِرَبِّهِمْ وَزِدْنَاهُمْ هُدًى - وَرَبَطْنَا عَلٰى قُلُوْبِهِمْ اِذْ قَامُوْا فَقَالُوْا رَبُّنَا رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ لَنْ نَّدْعُوَا مِنْ دُوْنِهۤ اِلٰهًا لَقَدْ قُلْنَاۤ اِذًا شَطَطًا ‐ هٰۤؤُلَآءِ قَوْمُنَا اتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِه ۤ اٰلِهَةًؕ لَوْلَا يَاْتُوْنَ عَلَيْهِمْ بِسُلْطَانٍ ۢبَيِّنٍؕ فَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرٰى عَلَى اللهِ كَذِبًا
আমি তোমার নিকট তাদের বৃত্তান্ত সঠিকভাবে বর্ণনা করছি- তারা ছিল কয়েকজন যুবক, তারা তাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান এনেছিল এবং আমি তাদেরকে সৎপথে চলার শক্তি বৃদ্ধি করে দিয়েছিলাম। অতঃপর আমি তাদের চিত্ত দৃঢ় করে দিলাম, ফলে তারা (মুশরিক রাজা ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে) দাঁড়িয়ে গেল এবং বলল, আমাদের প্রতিপালক আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর প্রতিপালক। আমরা কখনই তাঁর পরিবর্তে অন্য কোন ইলাহকে আহবান করব না, যদি করি তবে সেটা হবে অতিশয় গর্হিত কাজ। আমাদের এ জাতি তাঁর পরিবর্তে অনেক ইলাহ্ গ্রহণ করে নিয়েছে, তারা এ সমস্ত ইলাহ্ সম্বন্ধে স্পষ্ট প্রমাণ উপস্থিত করে না কেন? আর যে আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন করে তার চেয়ে অধিক যালিম আর কে হতে পারে? (সূরা কাহফ, ১৩-১৫)
সূরা ইয়াসীনে উল্লেখিত মুমিন ব্যক্তির দাওয়াত :
وَجَآءَ مِنْ اَقْصَى الْمَدِيْنَةِ رَجُلٌ يَّسْعٰى قَالَ يَا قَوْمِ اتَّبِعُوا الْمُرْسَلِيْنَ ‐ اِتَّبِعُوْا مَنْ لَّا يَسْاَلُكُمْ اَجْرًا وَّهُمْ مُّهْتَدُوْنَ ‐ وَمَا لِيَ لَاۤ اَعْبُدُ الَّذِيْ فَطَرَنِيْ وَاِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ ‐ اَاَتَّخِذُ مِنْ دُوْنِه ۤ اٰلِهَةً اِنْ يُّرِدْنِ الرَّحْمٰنُ بِضُرٍّ لَّا تُغْنِ عَنِّيْ شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا وَّلَا يُنْقِذُوْنِ ‐ اِنِّۤيْ اِذًا لَّفِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ
শহরের দূরপ্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি দৌড়ে এসে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা রাসূলদের অনুসরণ করো। তোমরা অনুসরণ করো তাদের, যারা তোমাদের কাছে বিনিময় চায় না এবং তারা নিজেরাও সৎপথের উপর প্রতিষ্ঠিত। আর আমার কী হয়েছে যে, আমি তাঁর ইবাদাত করব না, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁর কাছেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে? আমি কি আল্লাহকে ছেড়ে অন্য কোন ইলাহকে গ্রহণ করব? যদি দয়াময় আল্লাহ আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চান, তবে তাদের সুপারিশ আমার কোন উপকারে আসবে না এবং তারা আমাকে মুক্তও করতে পারবে না? যদি আমি এরূপ করি তবে তো আমি প্রকাশ্য বিভ্রান্তিতে পতিত হব। (সূরা ইয়াসীন, ২০-২৪)
সূরা মুমিনে উল্লেখিত মুমিন ব্যক্তির দাওয়াত :
وَيَا قَوْمِ مَا لِۤيْ اَدْعُوْكُمْ اِلَى النَّجَاةِ وَتَدْعُوْنَنِيْۤ اِلَى النَّارِ ‐ تَدْعُوْنَنِيْ لِاَ كْفُرَ بِاللهِ وَاُشْرِكَ بِه مَا لَيْسَ لِيْ بِه عِلْمٌ وَّاَنَاْ اَدْعُوْكُمْ اِلَى الْعَزِيْزِ الْغَفَّارِ ‐ لَاجَرَمَ اَنَّمَا تَدْعُوْنَنِيْۤ اِلَيْهِ لَيْسَ لَهٗ دَعْوَةٌ فِى الدُّنْيَا وَلَا فِى الْاٰخِرَةِ وَاَنَّ مَرَدَّنَاۤ اِلَى اللهِ وَاَنَّ الْمُسْرِفِيْنَ هُمْ اَصْحَابُ النَّارِ -فَسَتَذْكُرُوْنَ مَاۤ اَقُوْلُ لَكُمْؕ وَاُفَوِّضُ اَمْرِيْۤ اِلَى اللهِؕ اِنَّ اللهَ بَصِيْرٌ ۢۢبِالْعِبَادِ
হে আমার সম্প্রদায়! এ কেমন কথা! আমি তোমাদেরকে আহবান করছি মুক্তির দিকে, আর তোমরা আমাকে আহবান করছ জাহান্নামের দিকে। তোমরা আল্লাহকে অস্বীকার করা এবং তাঁর সাথে শরীক স্থাপন করার জন্য আমাকে ডাকছ, যে সম্পর্কে আমার কোন জ্ঞান নেই; পক্ষান্তরে আমি তোমাদেরকে আহবান করছি মহাপরাক্রমশালী ও ক্ষমাশীল আল্লাহর দিকে। নিশ্চয় তোমরা আমাকে ডাকছ এমন একজনের দিকে, যে দুনিয়া ও আখিরাতে কোথাও আহবানযোগ্য নয়। বস্তুত আমাদের প্রত্যাবর্তন তো আল্লাহর নিকট এবং সীমালঙ্ঘনকারীরাই জাহান্নামের অধিবাসী। সুতরাং আমি তোমাদেরকে যা বলছি, অচিরেই তোমরা তা স্মরণ করবে এবং আমি আমার ব্যাপারটি আল্লাহর নিকট সমর্পন করছি। নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখেন। (সূরা মু’মিন, ৪১-৪৪)
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِيْ كُلِّ اُمَّةٍ رَّسُوْلًا اَنِ اعْبُدُوا اللهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوْتَ
আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যে রাসূল প্রেরণ করেছি (এ নির্দেশ দিয়ে যে) তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো এবং তাগুতকে বর্জন করো। (সূরা নাহল- ৩৬)
وَمَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا نُوْحِيْۤ اِلَيْهِ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَاْ فَاعْبُدُوْنِ
আমি তোমার পূর্বে এমন কোন রাসূল প্রেরণ করিনি, যার প্রতি এ ওহী করিনি যে, আমি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই; সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদাত করো। (সূরা আম্বিয়া- ২৫)
নূহ (আঃ) এর দাওয়াত :
لَقَدْ اَرْسَلْنَا نُوْحًا اِلٰى قَوْمِه فَقَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرُه
আমি তো নূহকে তার সম্প্রদায়ের নিকট পাঠিয়েছিলাম। অতঃপর সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহর ইবাদাত করো, তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ্ নেই। (সূরা আ‘রাফ- ৫৯)
হুদ (আঃ) এর দাওয়াত :
وَاِلٰى عَادٍ اَخَاهُمْ هُوْدًاؕ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرُهٗؕ اَفَلَا تَتَّقُوْنَ
আমি আদ জাতির নিকট তাদের ভাই হুদকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো, তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই। তবুও কি তোমরা তাঁকে ভয় করবে না? (সূরা আ‘রাফ- ৬৫)
সালেহ (আঃ) এর দাওয়াত :
وَاِلٰى ثَمُوْدَ اَخَاهُمْ صَالِحًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرُه
সামূদ জাতির নিকট তাদের ভাই সালেহকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো। তিনি ব্যতীত তোমাদের জন্য অন্য কোন ইলাহ্ নেই। (সূরা আ‘রাফ- ৭৩)
শুয়াইব (আঃ) এর দাওয়াত :
وَاِلٰى مَدْيَنَ اَخَاهُمْ شُعَيْبًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرُهٗ
আমি মাদইয়ানবাসীর নিকট তাদেরই ভাই শুয়াইবকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের জন্য অন্য কোন সত্য মা‘বুদ নেই। (সূরা আ‘রাফ- ৮৫)
ইবরাহীম (আঃ) এর দাওয়াত :
وَلَقَدْ اٰتَيْنَاۤ اِبْرَاهِيْمَ رُشْدَهٗ مِنْ قَبْلُ وَكُنَّا بِه عَالِمِيْنَ ‐ اِذْ قَالَ لِاَبِيْهِ وَقَوْمِه مَا هٰذِهِ التَّمَاثِيْلُ الَّتِيْۤ اَنْتُمْ لَهَا عَاكِفُوْنَ ‐ قَالُوْا وَجَدْنَاۤ اٰبَآءَنَا لَهَا عَابِدِيْنَ ‐ قَالَ لَقَدْ كُنْتُمْ اَنْتُمْ وَاٰبَآؤُكُمْ فِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ
ইতোপূর্বে আমি ইবরাহীমকে সৎপথে চলার জ্ঞান দান করেছিলাম এবং আমি তার সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত ছিলাম। যখন সে তার পিতা ও তার সম্প্রদায়কে বলল, এ মূর্তিগুলো কী, যাদের সাথে তোমরা নিজেদেরকে (ভক্তির বাঁধনে) বেঁধে রেখেছ? তারা বলল, আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে এদের উপাসনা করতে দেখেছি। সে বলল, তোমরা নিজেরা এবং তোমাদের পিতৃপুরুষরা উভয়ই স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে রয়েছ। (সূরা আম্বিয়া, ৫১-৫৪)
ইয়াকূব (আঃ) এর সন্তানদের ঘোষণা :
اَمْ كُنْتُمْ شُهَدَآءَ اِذْ حَضَرَ يَعْقُوْبَ الْمَوْتُ اِذْ قَالَ لِبَنِيْهِ مَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ ۢبَعْدِيْؕ قَالُوْا نَعْبُدُ اِلٰهَكَ وَاِلٰهَ اٰبَآئِكَ اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ وَاِسْحَاقَ اِلٰهًا وَّاحِدًاۚ وَنَحْنُ لَهٗ مُسْلِمُوْنَ
তোমরা কি ঐ সময় উপস্থিত ছিলে, যখন ইয়াকূবের মৃত্যু উপস্থিত হয় এবং তিনি নিজ পুত্রদেরকে বলেছিলেন, আমার (মৃত্যুর) পরে তোমরা কোন জিনিসের ইবাদাত করবে? তারা বলেছিল, আমরা আপনার ইলাহ্ এবং আপনার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাকের মা‘বুদের ইবাদাত করব। তিনি একক উপাস্য এবং আমরা তাঁরই অনুগত থাকব। (সূরা বাক্বারা- ১৩৩)
ইউসুফ (আঃ) এর দাওয়াত :
يَا صَاحِبَيِ السِّجْنِ اَاَرْبَابٌ مُّتَفَرِّقُوْنَ خَيْرٌ اَمِ اللهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ ‐ مَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِه ۤ اِلَّاۤ اَسْمَآءً سَمَّيْتُمُوْهَاۤ اَنْتُمْ وَاٰبَآؤُكُمْ مَّاۤ اَنْزَلَ اللهُ بِهَا مِنْ سُلْطَانٍؕ اِنِ الْحُكْمُ اِلَّا لِلّٰهِؕ اَمَرَ اَلَّا تَعْبُدُوْاۤ اِلَّاۤ اِيَّاهُؕ ذٰلِكَ الدِّيْنُ الْقَيِّمُ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ
হে কারাসঙ্গীদ্বয়! ভিন্ন ভিন্ন বহু প্রতিপালক শ্রেয়, না পরাক্রমশালী এক আল্লাহ? তাঁকে ছেড়ে তোমরা কেবল কতগুলো নামের ইবাদাত করছ, যে নামগুলো তোমাদের পিতৃপুরুষ ও তোমরাই রেখেছ। এগুলোর কোন প্রমাণ আল্লাহ পাঠাননি। বিধান দেয়ার অধিকার কেবল আল্লাহরই। তিনি আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁরই ইবাদাত করবে, আর এটাই শাশ্বত দ্বীন; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। (সূরা ইউসুফ- ৩৯, ৪০)
মূসা (আঃ) এর দাওয়াত :
قَالَ اَغَيْرَ اللهِ اَبْغِيْكُمْ اِلٰهًا وَّهُوَ فَضَّلَكُمْ عَلَى الْعَالَمِيْنَ
সে আরো বলল, আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের জন্য আমি কি অন্য কোন ইলাহ্ তালাশ করব? অথচ তিনিই তোমাদেরকে বিশ্বজগতের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন? (সূরা আ‘রাফ- ১৪০)
ঈসা (আঃ) এর দাওয়াত :
اِنَّ اللهَ رَبِّيْ وَرَبُّكُمْ فَاعْبُدُوْهُؕ هٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيْمٌ
নিশ্চয় আল্লাহ আমার এবং তোমাদের প্রতিপালক। অতএব তোমরা তাঁরই ইবাদাত করো; এটাই সঠিক পথ। (সূরা আলে ইমরান- ৫১)
মুহাম্মাদ ﷺ এর দাওয়াত :
قُلْ يَاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْا اِلٰى كَلِمَةٍ سَوَآءٍ ۢبَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ اَلَّا نَعْبُدَ اِلَّا اللهَ وَلَا نُشْرِكَ بِه شَيْئًا وَّلَا يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا اَرْبَابًا مِّنْ دُوْنِ اللهِؕ فَاِنْ تَوَلَّوْا فَقُوْلُوا اشْهَدُوْا بِاَنَّا مُسْلِمُوْنَ
বলো, হে আহলে কিতাব! তোমরা এমন একটি কালিমার দিকে এসো, যা তোমাদের এবং আমাদের মধ্যে সমান। আর তা হলো, আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করব না এবং তার সাথে কোনকিছুকে শরীক স্থাপন করব না; আর আমাদের কেউ অপর কাউকে রব হিসেবে গ্রহণ করবে না। এরপরও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে বলে দাও, তোমরা সাক্ষী থাকো যে, আমরা মুসলিম। (সূরা আলে ইমরান- ৬৪)
তাওহীদের পক্ষে আসহাবে কাহাফের ঘোষণা :
نَحْنُ نَقُصُّ عَلَيْكَ نَبَاَهُمْ بِالْحَقِّؕ اِنَّهُمْ فِتْيَةٌ اٰمَنُوْا بِرَبِّهِمْ وَزِدْنَاهُمْ هُدًى - وَرَبَطْنَا عَلٰى قُلُوْبِهِمْ اِذْ قَامُوْا فَقَالُوْا رَبُّنَا رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ لَنْ نَّدْعُوَا مِنْ دُوْنِهۤ اِلٰهًا لَقَدْ قُلْنَاۤ اِذًا شَطَطًا ‐ هٰۤؤُلَآءِ قَوْمُنَا اتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِه ۤ اٰلِهَةًؕ لَوْلَا يَاْتُوْنَ عَلَيْهِمْ بِسُلْطَانٍ ۢبَيِّنٍؕ فَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرٰى عَلَى اللهِ كَذِبًا
আমি তোমার নিকট তাদের বৃত্তান্ত সঠিকভাবে বর্ণনা করছি- তারা ছিল কয়েকজন যুবক, তারা তাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান এনেছিল এবং আমি তাদেরকে সৎপথে চলার শক্তি বৃদ্ধি করে দিয়েছিলাম। অতঃপর আমি তাদের চিত্ত দৃঢ় করে দিলাম, ফলে তারা (মুশরিক রাজা ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে) দাঁড়িয়ে গেল এবং বলল, আমাদের প্রতিপালক আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর প্রতিপালক। আমরা কখনই তাঁর পরিবর্তে অন্য কোন ইলাহকে আহবান করব না, যদি করি তবে সেটা হবে অতিশয় গর্হিত কাজ। আমাদের এ জাতি তাঁর পরিবর্তে অনেক ইলাহ্ গ্রহণ করে নিয়েছে, তারা এ সমস্ত ইলাহ্ সম্বন্ধে স্পষ্ট প্রমাণ উপস্থিত করে না কেন? আর যে আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন করে তার চেয়ে অধিক যালিম আর কে হতে পারে? (সূরা কাহফ, ১৩-১৫)
সূরা ইয়াসীনে উল্লেখিত মুমিন ব্যক্তির দাওয়াত :
وَجَآءَ مِنْ اَقْصَى الْمَدِيْنَةِ رَجُلٌ يَّسْعٰى قَالَ يَا قَوْمِ اتَّبِعُوا الْمُرْسَلِيْنَ ‐ اِتَّبِعُوْا مَنْ لَّا يَسْاَلُكُمْ اَجْرًا وَّهُمْ مُّهْتَدُوْنَ ‐ وَمَا لِيَ لَاۤ اَعْبُدُ الَّذِيْ فَطَرَنِيْ وَاِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ ‐ اَاَتَّخِذُ مِنْ دُوْنِه ۤ اٰلِهَةً اِنْ يُّرِدْنِ الرَّحْمٰنُ بِضُرٍّ لَّا تُغْنِ عَنِّيْ شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا وَّلَا يُنْقِذُوْنِ ‐ اِنِّۤيْ اِذًا لَّفِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ
শহরের দূরপ্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি দৌড়ে এসে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা রাসূলদের অনুসরণ করো। তোমরা অনুসরণ করো তাদের, যারা তোমাদের কাছে বিনিময় চায় না এবং তারা নিজেরাও সৎপথের উপর প্রতিষ্ঠিত। আর আমার কী হয়েছে যে, আমি তাঁর ইবাদাত করব না, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁর কাছেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে? আমি কি আল্লাহকে ছেড়ে অন্য কোন ইলাহকে গ্রহণ করব? যদি দয়াময় আল্লাহ আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চান, তবে তাদের সুপারিশ আমার কোন উপকারে আসবে না এবং তারা আমাকে মুক্তও করতে পারবে না? যদি আমি এরূপ করি তবে তো আমি প্রকাশ্য বিভ্রান্তিতে পতিত হব। (সূরা ইয়াসীন, ২০-২৪)
সূরা মুমিনে উল্লেখিত মুমিন ব্যক্তির দাওয়াত :
وَيَا قَوْمِ مَا لِۤيْ اَدْعُوْكُمْ اِلَى النَّجَاةِ وَتَدْعُوْنَنِيْۤ اِلَى النَّارِ ‐ تَدْعُوْنَنِيْ لِاَ كْفُرَ بِاللهِ وَاُشْرِكَ بِه مَا لَيْسَ لِيْ بِه عِلْمٌ وَّاَنَاْ اَدْعُوْكُمْ اِلَى الْعَزِيْزِ الْغَفَّارِ ‐ لَاجَرَمَ اَنَّمَا تَدْعُوْنَنِيْۤ اِلَيْهِ لَيْسَ لَهٗ دَعْوَةٌ فِى الدُّنْيَا وَلَا فِى الْاٰخِرَةِ وَاَنَّ مَرَدَّنَاۤ اِلَى اللهِ وَاَنَّ الْمُسْرِفِيْنَ هُمْ اَصْحَابُ النَّارِ -فَسَتَذْكُرُوْنَ مَاۤ اَقُوْلُ لَكُمْؕ وَاُفَوِّضُ اَمْرِيْۤ اِلَى اللهِؕ اِنَّ اللهَ بَصِيْرٌ ۢۢبِالْعِبَادِ
হে আমার সম্প্রদায়! এ কেমন কথা! আমি তোমাদেরকে আহবান করছি মুক্তির দিকে, আর তোমরা আমাকে আহবান করছ জাহান্নামের দিকে। তোমরা আল্লাহকে অস্বীকার করা এবং তাঁর সাথে শরীক স্থাপন করার জন্য আমাকে ডাকছ, যে সম্পর্কে আমার কোন জ্ঞান নেই; পক্ষান্তরে আমি তোমাদেরকে আহবান করছি মহাপরাক্রমশালী ও ক্ষমাশীল আল্লাহর দিকে। নিশ্চয় তোমরা আমাকে ডাকছ এমন একজনের দিকে, যে দুনিয়া ও আখিরাতে কোথাও আহবানযোগ্য নয়। বস্তুত আমাদের প্রত্যাবর্তন তো আল্লাহর নিকট এবং সীমালঙ্ঘনকারীরাই জাহান্নামের অধিবাসী। সুতরাং আমি তোমাদেরকে যা বলছি, অচিরেই তোমরা তা স্মরণ করবে এবং আমি আমার ব্যাপারটি আল্লাহর নিকট সমর্পন করছি। নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখেন। (সূরা মু’মিন, ৪১-৪৪)
বিশ্ব জগতের সবকিছুই তাওহীদের প্রমাণ দিচ্ছে :
اَتٰۤى اَمْرُ اللهِ فَلَا تَسْتَعْجِلُوْهُؕ سُبْحَانَهٗ وَتَعَالٰى عَمَّا يُشْرِكُوْنَ ‐ يُنَزِّلُ الْمَلَآئِكَةَ بِالرُّوْحِ مِنْ اَمْرِه عَلٰى مَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهۤ اَنْ اَنْذِرُوْاۤ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَاْ فَاتَّقُوْنِ ‐ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ بِالْحَقِّؕ تَعَالٰى عَمَّا يُشْرِكُوْنَ ‐ خَلَقَ الْاِنْسَانَ مِنْ نُّطْفَةٍ فَاِذَا هُوَ خَصِيْمٌ مُّبِيْنٌ ‐ وَالْاَنْعَامَ خَلَقَهَاۚ لَكُمْ فِيْهَا دِفْءٌ وَّمَنَافِعُ وَمِنْهَا تَاْكُلُوْنَ ‐ وَلَكُمْ فِيْهَا جَمَالٌ حِيْنَ تُرِيْحُوْنَ وَحِيْنَ تَسْرَحُوْنَ ‐ وَتَحْمِلُ اَثْقَالَكُمْ اِلٰى بَلَدٍ لَّمْ تَكُوْنُوْا بَالِغِيْهِ اِلَّا بِشِقِّ الْاَنْفُسِؕ اِنَّ رَبَّكُمْ لَرَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ ‐ وَالْخَيْلَ وَالْبِغَالَ وَالْحَمِيْرَ لِتَرْكَبُوْهَا وَزِيْنَةًؕ وَيَخْلُقُ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ ‐ وَعَلَى اللهِ قَصْدُ السَّبِيْلِ وَمِنْهَا جَآئِرٌؕ وَلَوْ شَآءَ لَهَدَاكُمْ اَجْمَعِيْنَ ‐ هُوَ الَّذِيْۤ اَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً لَّكُمْ مِّنْهُ شَرَابٌ وَّمِنْهُ شَجَرٌ فِيْهِ تُسِيْمُوْنَ ‐ يُنْۢبِتُ لَكُمْ بِهِ الزَّرْعَ وَالزَّيْتُوْنَ وَالنَّخِيْلَ وَالْاَعْنَابَ وَمِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ ‐ وَسَخَّرَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَؕ وَالنُّجُوْمُ مُسَخَّرَاتٌ ۢبِاَمْرِه ؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَّعْقِلُوْنَ ‐ وَمَا ذَرَاَ لَكُمْ فِى الْاَرْضِ مُخْتَلِفًا اَلْوَانُهٗؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّذَّكَّرُوْنَ ‐ وَهُوَ الَّذِيْ سَخَّرَ الْبَحْرَ لِتَاْكُلُوْا مِنْهُ لَحْمًا طَرِيَّا وَّتَسْتَخْرِجُوْا مِنْهُ حِلْيَةً تَلْبَسُوْنَهَاۚ وَتَرَى الْفُلْكَ مَوَاخِرَ فِيْهِ وَلِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِه وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ ‐ وَاَلْقٰى فِى الْاَرْضِ رَوَاسِيَ اَنْ تَمِيْدَ بِكُمْ وَاَنْهَارًا وَّسُبُلًا لَّعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ ‐ وَعَلَامَاتٍؕ وَبِالنَّجْمِ هُمْ يَهْتَدُوْنَ ‐ اَفَمَنْ يَّخْلُقُ كَمَنْ لَّا يَخْلُقُؕ اَفَلَا تَذَكَّرُوْنَ ‐ وَاِنْ تَعُدُّوْا نِعْمَةَ اللهِ لَا تُحْصُوْهَاؕ اِنَّ اللهَ لَغَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ ‐ وَاللهُ يَعْلَمُ مَا تُسِرُّوْنَ وَمَا تُعْلِنُوْنَ ‐ وَالَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ لَا يَخْلُقُوْنَ شَيْئًا وَّهُمْ يُخْلَقُوْنَ ‐ اَمْوَاتٌ غَيْرُ اَحْيَآءٍۚ وَمَا يَشْعُرُوْنَ اَيَّانَ يُبْعَثُوْنَ
আল্লাহর আদেশ আসবেই, সুতরাং তা ত্বরান্বিত করতে চেয়ো না। তিনি মহিমান্বিত এবং তারা যাকে শরীক করে তিনি তা হতে অনেক ঊর্ধ্বে। তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা স্বীয় নির্দেশে ওহীসহ ফেরেশতা প্রেরণ করেন এ বলে যে, তোমরা সতর্ক করো, নিশ্চয় আমি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই, সুতরাং তোমরা আমাকেই ভয় করো। তিনি যথাযথভাবে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, তারা যা শরীক করে তিনি তা হতে অনেক ঊর্ধ্বে। তিনি বীর্য হতে মানুষ সৃষ্টি করেছেন; অথচ সে প্রকাশ্য বিতর্ককারী। তিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন চতুষ্পদ জন্তু, তাতে রয়েছে শীত নিবারণের জন্য উপকরণ ও বহু উপকার। আর তা হতে তোমরা আহার করে থাক। তোমরা যখন দিনের শেষ প্রান্তে তাদেরকে চারণভূমি হতে গৃহে নিয়ে আস এবং প্রভাতে যখন তাদেরকে চারণভূমিতে নিয়ে যাও, তখন তোমরা তার সৌন্দর্য উপভোগ কর। তারা তোমাদের ভার বহন করে নিয়ে যায় এমন দেশে, যেথায় প্রাণান্ত ক্লেশ ব্যতীত তোমরা পৌঁছতে পারতে না। তোমাদের প্রতিপালক দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। তিনি তোমাদের আরোহণ ও শোভার জন্য সৃষ্টি করেছেন ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা এবং তিনি সৃষ্টি করেন এমন অনেক কিছু, যা সম্পর্কে তোমরা অবগত নও। সরল পথ আল্লাহর কাছে পৌঁছায়, কিন্তু পথগুলোর মধ্যে বক্র পথও রয়েছে। তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদের সকলকেই সৎপথে পরিচালিত করতেন। তিনিই আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন। তাতে তোমাদের জন্য রয়েছে পানীয় এবং তা হতে জন্মায় উদ্ভিদ, যাতে তোমরা পশুচারণ করে থাক। তিনি তাদের জন্য তার দ্বারা জন্মান শস্য, যায়তুন, খেজুর, আঙ্গুর এবং সর্বপ্রকার ফল। অবশ্যই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। তিনিই তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন রজনী, দিবস, সূর্য এবং চন্দ্রকে। আর নক্ষত্ররাজিও অধীন হয়েছে তাঁরই নির্দেশে। অবশ্যই এতে বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিশ্চিত নিদর্শন। আর তিনি নানা রঙ্গের বস্তু তোমাদের জন্য পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছেন। এতে রয়েছে নিশ্চিত নিদর্শন সে সম্প্রদায়ের জন্য, যারা উপদেশ গ্রহণ করে। তিনিই সমুদ্রকে অধীন করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা তা হতে তাজা মৎস্য আহার করতে পার এবং তা হতে আহরণ করতে পার রত্নাবলি, যা তোমরা ভূষণরূপে পরিধান কর। তোমরা দেখতে পাও যে, তার বুক চিরে নৌযান চলাচল করে। আর এটা এজন্য যে, যেন তোমরা তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার এবং যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বত স্থাপন করেছেন, যাতে পৃথিবী তোমাদেরকে নিয়ে আন্দোলিত না হয় এবং স্থাপন করেছেন নদ-নদী ও পথ, যাতে তোমরা তোমাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পার এবং পথ নির্ণায়ক চিহ্নসমূহও। আর তারা নক্ষত্রের সাহায্যেও পথের নির্দেশ পায়। সুতরাং যিনি সৃষ্টি করেন, তিনি কি তার মতো হবেন যে সৃষ্টি করে না? তবুও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না? তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করলে সেটার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না। আল্লাহ অবশ্যই ক্ষমাপরায়ণ ও পরম দয়ালু। তোমরা যা গোপন রাখ এবং যা প্রকাশ কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে অবহিত। তারা আল্লাহ ব্যতীত অপর যাদেরকে আহবান করে তারা কিছুই সৃষ্টি করে না, বরং তাদেরকেই সৃষ্টি করা হয়। তারা নিষ্প্রাণ, নির্জীব এবং কখন তাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে সে বিষয়েও তাদের কোন চেতনা নেই। (সূরা নাহল, ১-২১)
ব্যাখ্যা : বিশ্বজাহান ও প্রাণী জগতের নিদর্শন বর্ণনা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, মানুষ তার নিজের সত্তা থেকে নিয়ে আসমান ও জমিনের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত সর্বত্র যেদিকেই তাকাবে সেদিকের সবকিছুতে তাওহীদের সত্যতার প্রমাণ পাবে। কোন জায়গায় শিরক ও নাস্তিক্যবাদের সমর্থনে একটি সাক্ষ্য-প্রমাণও খুঁজে পাবে না। নগণ্য একটি ফোঁটা থেকে বাকশক্তি ও বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ তৈরি করা হয়েছে। আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করা এবং ভূপৃষ্ঠে নানা জাতের ফুল, ফল, শস্য ও উদ্ভিদ উৎপাদনের ব্যবস্থা করা, যার অসংখ্য শ্রেণি পরস্পরের সাথে মিলেমিশে অবস্থান করে এবং সেগুলো মানুষের প্রয়োজনও পূর্ণ করে। রাত ও দিনের নিয়মিত আসা যাওয়া এবং চন্দ্র, সূর্য ও তারকারাজির সুশৃঙ্খল আবর্তন, পৃথিবীর উৎপন্ন ফসল যার সাথে মানুষের জীবন ও জীবিকার গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। পৃথিবীতে সমুদ্রের অস্তিত্ব এবং তার মধ্যে মানুষের বহু প্রাকৃতিক চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা করা, সমুদ্রের বুক চিরে জাহাজ চালিয়ে দেশ থেকে দেশান্তরে সফর ও বাণিজ্যের ব্যবস্থা করা, পৃথিবীর বুকে উঁচু উঁচু পাহাড়ের সারি এবং মানুষের অস্তিত্বের জন্য এগুলোর অপরিহার্যতা- এসব বিষয় পরিষ্কার সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, একজন সত্তা একাই নিজের পরিকল্পনা অনুযায়ী এসবের ডিজাইন তৈরি করেছেন। তিনিই এ ডিজাইন অনুযায়ী তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। তিনিই প্রতি মুহূর্তে এ দুনিয়ায় নিত্য নতুন জিনিস তৈরি করে মানবজাতির সামনে নিয়ে আসছেন।
আল্লাহ ছাড়া যেসব সত্তাকে বিপদাপদে রক্ষাকারী, অভাব মোচনকারী অথবা উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়, তারা ফেরেশতা, নবী-রাসূল, অলী-দরবেশ কিংবা চন্দ্র-সূর্য বা অন্য কোন সৃষ্টি যাই হোক না কেন তাদের কেউই মানুষের কোন প্রয়োজন পূরণ করতে সক্ষম নয়। অভাব মোচন ও প্রয়োজন পূরণের জন্য ওরা নিজেরাই তো মহান আল্লাহর মুখাপেক্ষী। তাদের নিজেদের হাতই তার সামনে প্রসারিত। তারা নিজেদের ক্ষমতায় নিজেদের বিপদই যেখানে দূর করতে পারে না সেখানে অন্য মানুষের বিপদ কীভাবে দূর করবে? পৃথিবী থেকে আকাশমন্ডলী পর্যন্ত বিশাল বিস্তৃত এই মহাবিশ্বে যা কিছু হচ্ছে তা শুধু এক আল্লাহর নির্দেশেই হচ্ছে। তাঁর এ কর্মকান্ডে আর কারো কোন কর্তৃত্ব নেই।
اَتٰۤى اَمْرُ اللهِ فَلَا تَسْتَعْجِلُوْهُؕ سُبْحَانَهٗ وَتَعَالٰى عَمَّا يُشْرِكُوْنَ ‐ يُنَزِّلُ الْمَلَآئِكَةَ بِالرُّوْحِ مِنْ اَمْرِه عَلٰى مَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهۤ اَنْ اَنْذِرُوْاۤ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَاْ فَاتَّقُوْنِ ‐ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ بِالْحَقِّؕ تَعَالٰى عَمَّا يُشْرِكُوْنَ ‐ خَلَقَ الْاِنْسَانَ مِنْ نُّطْفَةٍ فَاِذَا هُوَ خَصِيْمٌ مُّبِيْنٌ ‐ وَالْاَنْعَامَ خَلَقَهَاۚ لَكُمْ فِيْهَا دِفْءٌ وَّمَنَافِعُ وَمِنْهَا تَاْكُلُوْنَ ‐ وَلَكُمْ فِيْهَا جَمَالٌ حِيْنَ تُرِيْحُوْنَ وَحِيْنَ تَسْرَحُوْنَ ‐ وَتَحْمِلُ اَثْقَالَكُمْ اِلٰى بَلَدٍ لَّمْ تَكُوْنُوْا بَالِغِيْهِ اِلَّا بِشِقِّ الْاَنْفُسِؕ اِنَّ رَبَّكُمْ لَرَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ ‐ وَالْخَيْلَ وَالْبِغَالَ وَالْحَمِيْرَ لِتَرْكَبُوْهَا وَزِيْنَةًؕ وَيَخْلُقُ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ ‐ وَعَلَى اللهِ قَصْدُ السَّبِيْلِ وَمِنْهَا جَآئِرٌؕ وَلَوْ شَآءَ لَهَدَاكُمْ اَجْمَعِيْنَ ‐ هُوَ الَّذِيْۤ اَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً لَّكُمْ مِّنْهُ شَرَابٌ وَّمِنْهُ شَجَرٌ فِيْهِ تُسِيْمُوْنَ ‐ يُنْۢبِتُ لَكُمْ بِهِ الزَّرْعَ وَالزَّيْتُوْنَ وَالنَّخِيْلَ وَالْاَعْنَابَ وَمِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ ‐ وَسَخَّرَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَؕ وَالنُّجُوْمُ مُسَخَّرَاتٌ ۢبِاَمْرِه ؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَّعْقِلُوْنَ ‐ وَمَا ذَرَاَ لَكُمْ فِى الْاَرْضِ مُخْتَلِفًا اَلْوَانُهٗؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّذَّكَّرُوْنَ ‐ وَهُوَ الَّذِيْ سَخَّرَ الْبَحْرَ لِتَاْكُلُوْا مِنْهُ لَحْمًا طَرِيَّا وَّتَسْتَخْرِجُوْا مِنْهُ حِلْيَةً تَلْبَسُوْنَهَاۚ وَتَرَى الْفُلْكَ مَوَاخِرَ فِيْهِ وَلِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِه وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ ‐ وَاَلْقٰى فِى الْاَرْضِ رَوَاسِيَ اَنْ تَمِيْدَ بِكُمْ وَاَنْهَارًا وَّسُبُلًا لَّعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ ‐ وَعَلَامَاتٍؕ وَبِالنَّجْمِ هُمْ يَهْتَدُوْنَ ‐ اَفَمَنْ يَّخْلُقُ كَمَنْ لَّا يَخْلُقُؕ اَفَلَا تَذَكَّرُوْنَ ‐ وَاِنْ تَعُدُّوْا نِعْمَةَ اللهِ لَا تُحْصُوْهَاؕ اِنَّ اللهَ لَغَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ ‐ وَاللهُ يَعْلَمُ مَا تُسِرُّوْنَ وَمَا تُعْلِنُوْنَ ‐ وَالَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ لَا يَخْلُقُوْنَ شَيْئًا وَّهُمْ يُخْلَقُوْنَ ‐ اَمْوَاتٌ غَيْرُ اَحْيَآءٍۚ وَمَا يَشْعُرُوْنَ اَيَّانَ يُبْعَثُوْنَ
আল্লাহর আদেশ আসবেই, সুতরাং তা ত্বরান্বিত করতে চেয়ো না। তিনি মহিমান্বিত এবং তারা যাকে শরীক করে তিনি তা হতে অনেক ঊর্ধ্বে। তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা স্বীয় নির্দেশে ওহীসহ ফেরেশতা প্রেরণ করেন এ বলে যে, তোমরা সতর্ক করো, নিশ্চয় আমি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই, সুতরাং তোমরা আমাকেই ভয় করো। তিনি যথাযথভাবে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, তারা যা শরীক করে তিনি তা হতে অনেক ঊর্ধ্বে। তিনি বীর্য হতে মানুষ সৃষ্টি করেছেন; অথচ সে প্রকাশ্য বিতর্ককারী। তিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন চতুষ্পদ জন্তু, তাতে রয়েছে শীত নিবারণের জন্য উপকরণ ও বহু উপকার। আর তা হতে তোমরা আহার করে থাক। তোমরা যখন দিনের শেষ প্রান্তে তাদেরকে চারণভূমি হতে গৃহে নিয়ে আস এবং প্রভাতে যখন তাদেরকে চারণভূমিতে নিয়ে যাও, তখন তোমরা তার সৌন্দর্য উপভোগ কর। তারা তোমাদের ভার বহন করে নিয়ে যায় এমন দেশে, যেথায় প্রাণান্ত ক্লেশ ব্যতীত তোমরা পৌঁছতে পারতে না। তোমাদের প্রতিপালক দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। তিনি তোমাদের আরোহণ ও শোভার জন্য সৃষ্টি করেছেন ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা এবং তিনি সৃষ্টি করেন এমন অনেক কিছু, যা সম্পর্কে তোমরা অবগত নও। সরল পথ আল্লাহর কাছে পৌঁছায়, কিন্তু পথগুলোর মধ্যে বক্র পথও রয়েছে। তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদের সকলকেই সৎপথে পরিচালিত করতেন। তিনিই আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন। তাতে তোমাদের জন্য রয়েছে পানীয় এবং তা হতে জন্মায় উদ্ভিদ, যাতে তোমরা পশুচারণ করে থাক। তিনি তাদের জন্য তার দ্বারা জন্মান শস্য, যায়তুন, খেজুর, আঙ্গুর এবং সর্বপ্রকার ফল। অবশ্যই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। তিনিই তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন রজনী, দিবস, সূর্য এবং চন্দ্রকে। আর নক্ষত্ররাজিও অধীন হয়েছে তাঁরই নির্দেশে। অবশ্যই এতে বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিশ্চিত নিদর্শন। আর তিনি নানা রঙ্গের বস্তু তোমাদের জন্য পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছেন। এতে রয়েছে নিশ্চিত নিদর্শন সে সম্প্রদায়ের জন্য, যারা উপদেশ গ্রহণ করে। তিনিই সমুদ্রকে অধীন করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা তা হতে তাজা মৎস্য আহার করতে পার এবং তা হতে আহরণ করতে পার রত্নাবলি, যা তোমরা ভূষণরূপে পরিধান কর। তোমরা দেখতে পাও যে, তার বুক চিরে নৌযান চলাচল করে। আর এটা এজন্য যে, যেন তোমরা তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার এবং যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বত স্থাপন করেছেন, যাতে পৃথিবী তোমাদেরকে নিয়ে আন্দোলিত না হয় এবং স্থাপন করেছেন নদ-নদী ও পথ, যাতে তোমরা তোমাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পার এবং পথ নির্ণায়ক চিহ্নসমূহও। আর তারা নক্ষত্রের সাহায্যেও পথের নির্দেশ পায়। সুতরাং যিনি সৃষ্টি করেন, তিনি কি তার মতো হবেন যে সৃষ্টি করে না? তবুও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না? তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করলে সেটার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না। আল্লাহ অবশ্যই ক্ষমাপরায়ণ ও পরম দয়ালু। তোমরা যা গোপন রাখ এবং যা প্রকাশ কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে অবহিত। তারা আল্লাহ ব্যতীত অপর যাদেরকে আহবান করে তারা কিছুই সৃষ্টি করে না, বরং তাদেরকেই সৃষ্টি করা হয়। তারা নিষ্প্রাণ, নির্জীব এবং কখন তাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে সে বিষয়েও তাদের কোন চেতনা নেই। (সূরা নাহল, ১-২১)
ব্যাখ্যা : বিশ্বজাহান ও প্রাণী জগতের নিদর্শন বর্ণনা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, মানুষ তার নিজের সত্তা থেকে নিয়ে আসমান ও জমিনের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত সর্বত্র যেদিকেই তাকাবে সেদিকের সবকিছুতে তাওহীদের সত্যতার প্রমাণ পাবে। কোন জায়গায় শিরক ও নাস্তিক্যবাদের সমর্থনে একটি সাক্ষ্য-প্রমাণও খুঁজে পাবে না। নগণ্য একটি ফোঁটা থেকে বাকশক্তি ও বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ তৈরি করা হয়েছে। আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করা এবং ভূপৃষ্ঠে নানা জাতের ফুল, ফল, শস্য ও উদ্ভিদ উৎপাদনের ব্যবস্থা করা, যার অসংখ্য শ্রেণি পরস্পরের সাথে মিলেমিশে অবস্থান করে এবং সেগুলো মানুষের প্রয়োজনও পূর্ণ করে। রাত ও দিনের নিয়মিত আসা যাওয়া এবং চন্দ্র, সূর্য ও তারকারাজির সুশৃঙ্খল আবর্তন, পৃথিবীর উৎপন্ন ফসল যার সাথে মানুষের জীবন ও জীবিকার গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। পৃথিবীতে সমুদ্রের অস্তিত্ব এবং তার মধ্যে মানুষের বহু প্রাকৃতিক চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা করা, সমুদ্রের বুক চিরে জাহাজ চালিয়ে দেশ থেকে দেশান্তরে সফর ও বাণিজ্যের ব্যবস্থা করা, পৃথিবীর বুকে উঁচু উঁচু পাহাড়ের সারি এবং মানুষের অস্তিত্বের জন্য এগুলোর অপরিহার্যতা- এসব বিষয় পরিষ্কার সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, একজন সত্তা একাই নিজের পরিকল্পনা অনুযায়ী এসবের ডিজাইন তৈরি করেছেন। তিনিই এ ডিজাইন অনুযায়ী তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। তিনিই প্রতি মুহূর্তে এ দুনিয়ায় নিত্য নতুন জিনিস তৈরি করে মানবজাতির সামনে নিয়ে আসছেন।
আল্লাহ ছাড়া যেসব সত্তাকে বিপদাপদে রক্ষাকারী, অভাব মোচনকারী অথবা উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়, তারা ফেরেশতা, নবী-রাসূল, অলী-দরবেশ কিংবা চন্দ্র-সূর্য বা অন্য কোন সৃষ্টি যাই হোক না কেন তাদের কেউই মানুষের কোন প্রয়োজন পূরণ করতে সক্ষম নয়। অভাব মোচন ও প্রয়োজন পূরণের জন্য ওরা নিজেরাই তো মহান আল্লাহর মুখাপেক্ষী। তাদের নিজেদের হাতই তার সামনে প্রসারিত। তারা নিজেদের ক্ষমতায় নিজেদের বিপদই যেখানে দূর করতে পারে না সেখানে অন্য মানুষের বিপদ কীভাবে দূর করবে? পৃথিবী থেকে আকাশমন্ডলী পর্যন্ত বিশাল বিস্তৃত এই মহাবিশ্বে যা কিছু হচ্ছে তা শুধু এক আল্লাহর নির্দেশেই হচ্ছে। তাঁর এ কর্মকান্ডে আর কারো কোন কর্তৃত্ব নেই।
ইবাদাতকে আল্লাহর জন্য খাস করতে হবে :
فَاَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّيْنِ حَنِيْفًاؕ فِطْرَتَ اللهِ الَّتِيْ فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَاؕ لَا تَبْدِيْلَ لِخَلْقِ اللهِؕ ذٰلِكَ الدِّيْنُ الْقَيِّمُ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ ‐ مُنِيْبِيْنَ اِلَيْهِ وَاتَّقُوْهُ وَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَلَا تَكُوْنُوْا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
অতএব তুমি একনিষ্ঠভাবে নিজেকে দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখো; এটাই আল্লাহর প্রকৃতি, যার উপর তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরলসঠিক দ্বীন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। অতএব তোমরা তাঁর অভিমুখী হও এবং তাঁকে ভয় করো, সালাত কয়েম করো এবং তোমরা মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সূরা রূম- ৩০, ৩১)
هُوَ الْحَيُّ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ فَادْعُوْهُ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَؕ اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
তিনি চিরঞ্জীব, তিনি ব্যতীত (সত্য) কোন মা‘বুদ নেই; সুতরাং তোমরা তাঁর ইবাদাতে একনিষ্ঠ হয়ে তাঁকেই আহবান করো। যাবতীয় প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই প্রাপ্য। (সূরা মু’মিন- ৬৫)
اِنَّاۤ اَنْزَلْنَاۤ اِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ فَاعْبُدِ اللهَ مُخْلِصًا لَّهُ الدِّيْنَ
নিশ্চয় আমি এ কিতাব তোমার কাছে যথাযথভাবেই নাযিল করেছি। অতএব নিষ্ঠার সাথে তুমি আল্লাহরই ইবাদাত করো। (সূরা যুমার- ২)
কেবল আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইতে হবে :
اِيَّاكَ نَعْبُدُ وَاِيَّاكَ نَسْتَعِيْنُ
আমরা শুধুমাত্র আপনারই ইবাদাত করি এবং আপনারই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি। (সূরা ফাতেহা- ৫)
কেবল আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে :
اِنْ يَّنْصُرْكُمُ اللهُ فَلَا غَالِبَ لَكُمْۚ وَاِنْ يَّخْذُلْكُمْ فَمَنْ ذَا الَّذِيْ يَنْصُرُكُمْ مِّنْ ۢبَعْدِهٖؕ وَعَلَى اللهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُوْنَ
যদি আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করেন তাহলে কোন ব্যক্তিই তোমাদেরকে পরাজিত করতে পারবে না। আর তিনিই যদি তোমাদেরকে পরিত্যাগ করেন, তাহলে এমন কোন শক্তি আছে কি, যে তোমাদেরকে সাহায্য করতে পারবে? কাজেই মুমিনদের উচিত আল্লাহর উপরই ভরসা করা। (আলে ইমরান- ১৬০)
فَاِنْ تَوَلَّوْا فَقُلْ حَسْبِيَ اللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَؕ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ
অতঃপর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে তুমি বলে দাও যে, আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই। আমি তাঁরই উপর নির্ভর করি এবং তিনি মহান আরশের অধিপতি। (সূরা তাওবা- ১২৯)
আল্লাহকে ভালোবাসতে হবে :
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّتَّخِذُ مِنْ دُوْنِ اللهِ اَنْدَادًا يُّحِبُّوْنَهُمْ كَحُبِّ اللهِؕ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَشَدُّ حُبًّا لِّلّٰهِ
আর মানুষের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে, যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্যকে সমকক্ষ হিসেবে গ্রহণ করে। তারা তাদেরকে আল্লাহকে ভালোবাসার ন্যায় ভালোবাসে। অপরদিকে যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহর প্রতি তাদের ভালোবাসা এর চেয়ে দৃঢ়তর। (সূরা বাক্বারা- ১৬৫)
আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُلُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ وَاشْكُرُوْا لِلّٰهِ اِنْ كُنْتُمْ اِيَّاهُ تَعْبُدُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে রিযিকস্বরূপ যা দান করেছি সেই পবিত্র বস্তুসমূহ হতে খাও এবং আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো, যদি তোমরা তাঁরই ইবাদাত করে থাক। (সূরা বাক্বারা- ১৭২)
কেবল আল্লাহকেই সিজদা করতে হবে :
وَمِنْ اٰيَاتِهِ اللَّيْلُ وَالنَّهَارُ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُؕ لَا تَسْجُدُوْا لِلشَّمْسِ وَلَا لِلْقَمَرِ وَاسْجُدُوْا لِلّٰهِ الَّذِيْ خَلَقَهُنَّ اِنْ كُنْتُمْ اِيَّاهُ تَعْبُدُوْنَ
তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে রাত ও দিন, সূর্য ও চন্দ্র। তোমরা সূর্যকে সিজদা করো না এবং চন্দ্রকেও (সিজদা করো) না; বরং সিজদা করো সেই আল্লাহকে, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন; যদি তোমরা তাঁরই ইবাদাত করে থাক। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৩৭)
আল্লাহর জন্যই সালাত আদায় করতে হবে :
اِنَّنِيْۤ اَنَا اللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَاْ فَاعْبُدْنِيْ وَاَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِيْ
আমিই আল্লাহ, আমি ছাড়া দ্বিতীয় কোন ইলাহ্ নেই। সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদাত করো এবং আমার স্মরণে সালাত প্রতিষ্ঠা করো। (সূরা ত্বা-হা- ১৪)
আল্লাহকেই ভয় করতে হবে :
وَقَالَ اللهُ لَا تَتَّخِذُوْاۤ اِلٰهَيْنِ اثْنَيْنِؕ اِنَّمَا هُوَ اِلٰهٌ وَّاحِدٌۚ فَاِيَّايَ فَارْهَبُوْنِ
আল্লাহ বলেন, তোমরা দুই ইলাহ্ গ্রহণ করো না, তিনিই তো একমাত্র ইলাহ। সুতরাং তোমরা আমাকেই ভয় করো। (সূরা নাহল- ৫১)
তাঁকে ছাড়া অন্যকে ভয় করা যাবে না :
وَلَهٗ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَلَهُ الدِّيْنُ وَاصِبًاۚ اَفَغَيْرَ اللهِ تَتَّقُوْنَ
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা তাঁরই এবং নিরবচ্ছিন্ন আনুগত্য তাঁরই প্রাপ্য। এরপরও কি তোমরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় করবে? (সূরা নাহল- ৫২)
আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে :
فَاِلٰهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ فَلَهٗۤ اَسْلِمُوْاؕ وَبَشِّرِ الْمُخْبِتِيْنَ
তোমাদের ইলাহ্ একজনই, সুতরাং তাঁরই নিকট আত্মসমর্পণ করো এবং বিনীতদেরকে সুসংবাদ প্রদান করো। (সূরা হজ্জ- ৩৪)
ব্যাখ্যা : এর অর্থ হচ্ছে, অহংকার ও দাম্ভিকতা পরিহার করে আল্লাহর সামনে অক্ষমতা ও বিনয় প্রকাশ করা। তাঁর দাসত্বে একনিষ্ঠ হয়ে যাওয়া এবং তাঁর ফায়সালায় তথা বিপদাপদ ও সুখ-শান্তি ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই তাঁর উপর সন্তুষ্ট থাকা।
আল্লাহর বিধান মেনে চলতে হবে :
اِتَّبِعُوْا مَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكُمْ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَلَا تَتَّبِعُوْا مِنْ دُوْنِه ۤ اَوْلِيَآءَؕ قَلِيْلًا مَّا تَذَكَّرُوْنَ
তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে তোমাদের নিকট যা অবতীর্ণ হয়েছে তোমরা তার অনুসরণ করো এবং তাঁকে ছাড়া অন্য কোন অভিভাবকের অনুসরণ করো না। তোমরা খুব অল্পই উপদেশ গ্রহণ করে থাক। (সূরা আ‘রাফ- ৩)
গোটা জীবনকে আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করতে হবে :
قُلْ اِنَّ صَلَاتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ‐ لَا شَرِيْكَ لَهٗۚ وَبِذٰلِكَ اُمِرْتُ وَاَنَاْ اَوَّلُ الْمُسْلِمِيْنَ
বলো, আমার সালাত, আমার ইবাদাত, আমার জীবন ও আমার মরণ সবই জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে (নিবেদিত)। তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি এজন্যই আদিষ্ট হয়েছি; আর আমিই প্রথম মুসলিম। (সূরা আন‘আম- ১৬২, ১৬৩)
ব্যাখ্যা : মানুষ যেসব পদ্ধতিতে আল্লাহ ছাড়া অন্যের দাসত্ব করে সেগুলোকে একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত করে দেয়াই হচ্ছে ইবাদাতের ক্ষেত্রে একত্ববাদের অন্যতম মৌলিক দাবী। যেমন, রুকূ করা, সিজদা করা, আর্থিক নযরানা পেশ করা, রোযা রাখা, কুরবানী করা, কেবল তাকেই ভয় করা, তারই আনুগত্য করা, নির্দ্বিধায় তার আইন ও বিধান মেনে চলা ইত্যাদি কাজকর্মসমূহকে শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট করা। অতঃপর তার সাথে এসব বিষয়ে অন্য কাউকে শরীক না করা। কেননা এগুলো একমাত্র আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট; এতে অন্য কেউ অংশীদার হতে পারে না। তাছাড়া সকল নবী ও রাসূল মানবজাতিকে এ পথেই আহবান করে গেছেন। যদিও তাদের মধ্যে আমলের পদ্ধতিগত পার্থক্য ছিল, কিন্তু সকলের মূল উদ্দেশ্য ছিল একই।
فَاَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّيْنِ حَنِيْفًاؕ فِطْرَتَ اللهِ الَّتِيْ فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَاؕ لَا تَبْدِيْلَ لِخَلْقِ اللهِؕ ذٰلِكَ الدِّيْنُ الْقَيِّمُ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ ‐ مُنِيْبِيْنَ اِلَيْهِ وَاتَّقُوْهُ وَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَلَا تَكُوْنُوْا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
অতএব তুমি একনিষ্ঠভাবে নিজেকে দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখো; এটাই আল্লাহর প্রকৃতি, যার উপর তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরলসঠিক দ্বীন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। অতএব তোমরা তাঁর অভিমুখী হও এবং তাঁকে ভয় করো, সালাত কয়েম করো এবং তোমরা মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সূরা রূম- ৩০, ৩১)
هُوَ الْحَيُّ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ فَادْعُوْهُ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَؕ اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
তিনি চিরঞ্জীব, তিনি ব্যতীত (সত্য) কোন মা‘বুদ নেই; সুতরাং তোমরা তাঁর ইবাদাতে একনিষ্ঠ হয়ে তাঁকেই আহবান করো। যাবতীয় প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই প্রাপ্য। (সূরা মু’মিন- ৬৫)
اِنَّاۤ اَنْزَلْنَاۤ اِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ فَاعْبُدِ اللهَ مُخْلِصًا لَّهُ الدِّيْنَ
নিশ্চয় আমি এ কিতাব তোমার কাছে যথাযথভাবেই নাযিল করেছি। অতএব নিষ্ঠার সাথে তুমি আল্লাহরই ইবাদাত করো। (সূরা যুমার- ২)
কেবল আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইতে হবে :
اِيَّاكَ نَعْبُدُ وَاِيَّاكَ نَسْتَعِيْنُ
আমরা শুধুমাত্র আপনারই ইবাদাত করি এবং আপনারই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি। (সূরা ফাতেহা- ৫)
কেবল আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে :
اِنْ يَّنْصُرْكُمُ اللهُ فَلَا غَالِبَ لَكُمْۚ وَاِنْ يَّخْذُلْكُمْ فَمَنْ ذَا الَّذِيْ يَنْصُرُكُمْ مِّنْ ۢبَعْدِهٖؕ وَعَلَى اللهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُوْنَ
যদি আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করেন তাহলে কোন ব্যক্তিই তোমাদেরকে পরাজিত করতে পারবে না। আর তিনিই যদি তোমাদেরকে পরিত্যাগ করেন, তাহলে এমন কোন শক্তি আছে কি, যে তোমাদেরকে সাহায্য করতে পারবে? কাজেই মুমিনদের উচিত আল্লাহর উপরই ভরসা করা। (আলে ইমরান- ১৬০)
فَاِنْ تَوَلَّوْا فَقُلْ حَسْبِيَ اللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَؕ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ
অতঃপর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে তুমি বলে দাও যে, আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই। আমি তাঁরই উপর নির্ভর করি এবং তিনি মহান আরশের অধিপতি। (সূরা তাওবা- ১২৯)
আল্লাহকে ভালোবাসতে হবে :
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّتَّخِذُ مِنْ دُوْنِ اللهِ اَنْدَادًا يُّحِبُّوْنَهُمْ كَحُبِّ اللهِؕ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَشَدُّ حُبًّا لِّلّٰهِ
আর মানুষের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে, যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্যকে সমকক্ষ হিসেবে গ্রহণ করে। তারা তাদেরকে আল্লাহকে ভালোবাসার ন্যায় ভালোবাসে। অপরদিকে যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহর প্রতি তাদের ভালোবাসা এর চেয়ে দৃঢ়তর। (সূরা বাক্বারা- ১৬৫)
আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُلُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ وَاشْكُرُوْا لِلّٰهِ اِنْ كُنْتُمْ اِيَّاهُ تَعْبُدُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে রিযিকস্বরূপ যা দান করেছি সেই পবিত্র বস্তুসমূহ হতে খাও এবং আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো, যদি তোমরা তাঁরই ইবাদাত করে থাক। (সূরা বাক্বারা- ১৭২)
কেবল আল্লাহকেই সিজদা করতে হবে :
وَمِنْ اٰيَاتِهِ اللَّيْلُ وَالنَّهَارُ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُؕ لَا تَسْجُدُوْا لِلشَّمْسِ وَلَا لِلْقَمَرِ وَاسْجُدُوْا لِلّٰهِ الَّذِيْ خَلَقَهُنَّ اِنْ كُنْتُمْ اِيَّاهُ تَعْبُدُوْنَ
তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে রাত ও দিন, সূর্য ও চন্দ্র। তোমরা সূর্যকে সিজদা করো না এবং চন্দ্রকেও (সিজদা করো) না; বরং সিজদা করো সেই আল্লাহকে, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন; যদি তোমরা তাঁরই ইবাদাত করে থাক। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৩৭)
আল্লাহর জন্যই সালাত আদায় করতে হবে :
اِنَّنِيْۤ اَنَا اللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَاْ فَاعْبُدْنِيْ وَاَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِيْ
আমিই আল্লাহ, আমি ছাড়া দ্বিতীয় কোন ইলাহ্ নেই। সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদাত করো এবং আমার স্মরণে সালাত প্রতিষ্ঠা করো। (সূরা ত্বা-হা- ১৪)
আল্লাহকেই ভয় করতে হবে :
وَقَالَ اللهُ لَا تَتَّخِذُوْاۤ اِلٰهَيْنِ اثْنَيْنِؕ اِنَّمَا هُوَ اِلٰهٌ وَّاحِدٌۚ فَاِيَّايَ فَارْهَبُوْنِ
আল্লাহ বলেন, তোমরা দুই ইলাহ্ গ্রহণ করো না, তিনিই তো একমাত্র ইলাহ। সুতরাং তোমরা আমাকেই ভয় করো। (সূরা নাহল- ৫১)
তাঁকে ছাড়া অন্যকে ভয় করা যাবে না :
وَلَهٗ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَلَهُ الدِّيْنُ وَاصِبًاۚ اَفَغَيْرَ اللهِ تَتَّقُوْنَ
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা তাঁরই এবং নিরবচ্ছিন্ন আনুগত্য তাঁরই প্রাপ্য। এরপরও কি তোমরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় করবে? (সূরা নাহল- ৫২)
আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে :
فَاِلٰهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ فَلَهٗۤ اَسْلِمُوْاؕ وَبَشِّرِ الْمُخْبِتِيْنَ
তোমাদের ইলাহ্ একজনই, সুতরাং তাঁরই নিকট আত্মসমর্পণ করো এবং বিনীতদেরকে সুসংবাদ প্রদান করো। (সূরা হজ্জ- ৩৪)
ব্যাখ্যা : এর অর্থ হচ্ছে, অহংকার ও দাম্ভিকতা পরিহার করে আল্লাহর সামনে অক্ষমতা ও বিনয় প্রকাশ করা। তাঁর দাসত্বে একনিষ্ঠ হয়ে যাওয়া এবং তাঁর ফায়সালায় তথা বিপদাপদ ও সুখ-শান্তি ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই তাঁর উপর সন্তুষ্ট থাকা।
আল্লাহর বিধান মেনে চলতে হবে :
اِتَّبِعُوْا مَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكُمْ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَلَا تَتَّبِعُوْا مِنْ دُوْنِه ۤ اَوْلِيَآءَؕ قَلِيْلًا مَّا تَذَكَّرُوْنَ
তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে তোমাদের নিকট যা অবতীর্ণ হয়েছে তোমরা তার অনুসরণ করো এবং তাঁকে ছাড়া অন্য কোন অভিভাবকের অনুসরণ করো না। তোমরা খুব অল্পই উপদেশ গ্রহণ করে থাক। (সূরা আ‘রাফ- ৩)
গোটা জীবনকে আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করতে হবে :
قُلْ اِنَّ صَلَاتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ‐ لَا شَرِيْكَ لَهٗۚ وَبِذٰلِكَ اُمِرْتُ وَاَنَاْ اَوَّلُ الْمُسْلِمِيْنَ
বলো, আমার সালাত, আমার ইবাদাত, আমার জীবন ও আমার মরণ সবই জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে (নিবেদিত)। তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি এজন্যই আদিষ্ট হয়েছি; আর আমিই প্রথম মুসলিম। (সূরা আন‘আম- ১৬২, ১৬৩)
ব্যাখ্যা : মানুষ যেসব পদ্ধতিতে আল্লাহ ছাড়া অন্যের দাসত্ব করে সেগুলোকে একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত করে দেয়াই হচ্ছে ইবাদাতের ক্ষেত্রে একত্ববাদের অন্যতম মৌলিক দাবী। যেমন, রুকূ করা, সিজদা করা, আর্থিক নযরানা পেশ করা, রোযা রাখা, কুরবানী করা, কেবল তাকেই ভয় করা, তারই আনুগত্য করা, নির্দ্বিধায় তার আইন ও বিধান মেনে চলা ইত্যাদি কাজকর্মসমূহকে শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট করা। অতঃপর তার সাথে এসব বিষয়ে অন্য কাউকে শরীক না করা। কেননা এগুলো একমাত্র আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট; এতে অন্য কেউ অংশীদার হতে পারে না। তাছাড়া সকল নবী ও রাসূল মানবজাতিকে এ পথেই আহবান করে গেছেন। যদিও তাদের মধ্যে আমলের পদ্ধতিগত পার্থক্য ছিল, কিন্তু সকলের মূল উদ্দেশ্য ছিল একই।
‘ইবাদাত’ হলো : মানুষ আল্লাহর বান্দা ও দাস হয়ে থাকবে। তাঁর মুকাবিলায় স্বেচ্ছাচারী নীতি অবলম্বন করবে না এবং তাঁকে ছাড়া আর কারো দাসত্ব করবে না। মানুষ তাঁর হুকুমের আনুগত্য করবে ও তাঁর আইন মেনে চলবে। মানুষ নিজেই নিজের শাসক হবে না এবং আল্লাহ ছাড়া আর কারো কর্তৃত্ব স্বীকার করবে না। ‘ইবাদাত’ শব্দটিকে শুধু নামায, রোযা এবং এ ধরনের অন্যান্য ইবাদাত অর্থে ব্যবহার করা হয়নি; বরং বিনাবাক্যে তাঁর আদেশ-নিষেধ পালন, তাঁর শরয়ী আইনকানুন সন্তুষ্টচিত্তে মেনে চলার দাবীকেও বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ মানুষকে অন্য কারো দাসত্বের জন্য নয় বরং তাঁর নিজের দাসত্বের জন্য সৃষ্টি করেছেন। যেহেতু তিনি তাদের স্রষ্টা সেহেতু অন্যদের দাসত্ব করার অধিকার আল্লাহ মানুষকে দেননি।
ইবাদাতের উদ্দেশ্যেই আল্লাহ মানুষ ও জিন জাতিকে সৃষ্টি করেছেন :
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْاِنْسَ اِلَّا لِيَعْبُدُوْنِ
আমি সৃষ্টি করেছি জিন ও মানুষকে এজন্য যে, তারা আমারই ইবাদাত করবে। (সূরা যারিয়াত- ৫৬)
ইবাদাত করতে হবে একমাত্র আল্লাহর জন্য :
بَلِ اللهَ فَاعْبُدْ وَكُنْ مِّنَ الشَّاكِرِيْنَ
অতএব তুমি আল্লাহরই ইবাদাত করো ও কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হও। (সূরা যুমার- ৬৬)
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوْا رَبَّكُمُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ وَالَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ
হে মানবজাতি! তোমরা তোমাদের রবের ইবাদাত করো, যিনি তোমাদেরকে ও তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমরা তাক্বওয়া অর্জন করতে পার। (সূরা বাক্বারা- ২১)
আল্লাহর ইবাদাতের জন্য আমরা আদিষ্ট :
وَمَاۤ اُمِرُوْاۤ اِلَّا لِيَعْبُدُوا اللهَ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ ۚ حُنَفَآءَ وَيُقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَۚ وَذٰلِكَ دِيْنُ الْقَيِّمَةِ
তাদেরকে কেবল এ নির্দেশই করা হয়েছে যে, তারা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদাত করবে, সালাত কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। আর এটাই সঠিক ধর্ম। (সূরা বায়্যিনাহ- ৫)
সকল নবীই আল্লাহর ইবাদাতের দাওয়াত নিয়ে এসেছিলেন :
وَمَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا نُوْحِيْۤ اِلَيْهِ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَاْ فَاعْبُدُوْنِ
আমি তোমার পূর্বে এমন কোন রাসূল প্রেরণ করিনি, যার প্রতি এ ওহী করিনি যে, আমি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই; সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদাত করো। (সূরা আম্বিয়া- ২৫)
ইবাদাত করতে হবে মৃত্যু পর্যন্ত :
وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتّٰى يَاْتِيَكَ الْيَقِيْنُ
হে নবী! যতক্ষণ পর্যন্ত তোমার কাছে নিশ্চিত বিষয় (মৃত্যু) না আসবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি তোমার রবের ইবাদাত করতে থাক। (সূরা হিজর- ৯৯)
ইবাদাতের সুযোগ খুঁজে বের করতে হবে :
يَا عِبَادِيَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنَّ اَرْضِيْ وَاسِعَةٌ فَاِيَّايَ فَاعْبُدُوْنِ
হে আমার মুমিন বান্দাগণ! নিশ্চয় আমার পৃথিবী প্রশস্ত; সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদাত করো।
(সূরা আনকাবূত- ৫৬)
ইবাদাত করতে হবে ইখলাস সহকারে :
اِنَّاۤ اَنْزَلْنَاۤ اِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ فَاعْبُدِ اللهَ مُخْلِصًا لَّهُ الدِّيْنَ
আমি আপনার প্রতি এ কিতাব সত্যসহ নাযিল করেছি। অতএব আপনি নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর ইবাদাত করুন। (সূরা যুমার- ২)
قُلْ اِنِّۤيْ اُمِرْتُ اَنْ اَعْبُدَ اللهَ مُخْلِصًا لَّهُ الدِّيْنَ
বলো, অবশ্যই আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছে যে, আমি যেন একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদাত করি।
(সূরা যুমার- ১১)
اَلَا لِلّٰهِ الدِّيْنُ الْخَالِصُ
জেনে রেখো, একনিষ্ঠ ইবাদাত আল্লাহর জন্যই নিবেদিত হওয়া উচিত। (সূরা যুমার- ৩)
ইবাদাত করতে হবে দৃঢ়তা ও ধৈর্যের সাথে :
رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا فَاعْبُدْهُ وَاصْطَبِرْ لِعِبَادَتِهٖؕ هَلْ تَعْلَمُ لَهٗ سَمِيًّا
তিনি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী ও তাদের অন্তর্বর্তী যা কিছু আছে সবকিছুর প্রতিপালক। সুতরাং তাঁরই ইবাদাত করো এবং তাঁর ইবাদাতে ধৈর্যশীল হও। তুমি কি তাঁর সমগুণসম্পন্ন কাউকে জান? (সূরা মারইয়াম- ৬৫)
ইবাদাতের মধ্যে শিরক করা যাবে না :
فَمَنْ كَانَ يَرْجُوْا لِقَآءَ رَبِّهٖ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَّلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهٖۤ اَحَدًا
যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে ও তার প্রতিপালকের ইবাদাতে কাউকেও শরীক না করে। (সূরা কাহফ- ১১০)
قُلْ اِنَّمَاۤ اُمِرْتُ اَنْ اَعْبُدَ اللهَ وَلَاۤ اُشْرِكَ بِهٖ
বলো, নিশ্চয় আমাকে আদেশ করা হয়েছে যেন আমি আল্লাহর ইবাদাত করি এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করি। (সূরা রা‘দ- ৩৬)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর দাসত্বের সাথে অন্য কাউকে শরীক করা যাবে না। শুধু তাঁরই বিধিবিধান ও আদেশ-নিষেধ পালন করতে হবে। কারণ নির্ভেজাল আনুগত্য পাওয়ার অধিকার কেবল আল্লাহর। কেউ যদি আল্লাহ ছাড়া একনিষ্ঠভাবে অন্য কারো দাসত্ব করে, তাহলে সে ভ্রান্ত কাজ করে। অনুরূপভাবে সে যদি আল্লাহর দাসত্বের সাথে সাথে অন্য কারো দাসত্বের সংমিশ্রণ ঘটায়, তাহলে সেটাও সরাসরি ন্যায় ও সত্যের পরিপন্থী হিসেবে গণ্য হবে।
ইবাদাতের উদ্দেশ্যেই আল্লাহ মানুষ ও জিন জাতিকে সৃষ্টি করেছেন :
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْاِنْسَ اِلَّا لِيَعْبُدُوْنِ
আমি সৃষ্টি করেছি জিন ও মানুষকে এজন্য যে, তারা আমারই ইবাদাত করবে। (সূরা যারিয়াত- ৫৬)
ইবাদাত করতে হবে একমাত্র আল্লাহর জন্য :
بَلِ اللهَ فَاعْبُدْ وَكُنْ مِّنَ الشَّاكِرِيْنَ
অতএব তুমি আল্লাহরই ইবাদাত করো ও কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হও। (সূরা যুমার- ৬৬)
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوْا رَبَّكُمُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ وَالَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ
হে মানবজাতি! তোমরা তোমাদের রবের ইবাদাত করো, যিনি তোমাদেরকে ও তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমরা তাক্বওয়া অর্জন করতে পার। (সূরা বাক্বারা- ২১)
আল্লাহর ইবাদাতের জন্য আমরা আদিষ্ট :
وَمَاۤ اُمِرُوْاۤ اِلَّا لِيَعْبُدُوا اللهَ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ ۚ حُنَفَآءَ وَيُقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَۚ وَذٰلِكَ دِيْنُ الْقَيِّمَةِ
তাদেরকে কেবল এ নির্দেশই করা হয়েছে যে, তারা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদাত করবে, সালাত কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। আর এটাই সঠিক ধর্ম। (সূরা বায়্যিনাহ- ৫)
সকল নবীই আল্লাহর ইবাদাতের দাওয়াত নিয়ে এসেছিলেন :
وَمَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا نُوْحِيْۤ اِلَيْهِ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَاْ فَاعْبُدُوْنِ
আমি তোমার পূর্বে এমন কোন রাসূল প্রেরণ করিনি, যার প্রতি এ ওহী করিনি যে, আমি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই; সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদাত করো। (সূরা আম্বিয়া- ২৫)
ইবাদাত করতে হবে মৃত্যু পর্যন্ত :
وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتّٰى يَاْتِيَكَ الْيَقِيْنُ
হে নবী! যতক্ষণ পর্যন্ত তোমার কাছে নিশ্চিত বিষয় (মৃত্যু) না আসবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি তোমার রবের ইবাদাত করতে থাক। (সূরা হিজর- ৯৯)
ইবাদাতের সুযোগ খুঁজে বের করতে হবে :
يَا عِبَادِيَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنَّ اَرْضِيْ وَاسِعَةٌ فَاِيَّايَ فَاعْبُدُوْنِ
হে আমার মুমিন বান্দাগণ! নিশ্চয় আমার পৃথিবী প্রশস্ত; সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদাত করো।
(সূরা আনকাবূত- ৫৬)
ইবাদাত করতে হবে ইখলাস সহকারে :
اِنَّاۤ اَنْزَلْنَاۤ اِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ فَاعْبُدِ اللهَ مُخْلِصًا لَّهُ الدِّيْنَ
আমি আপনার প্রতি এ কিতাব সত্যসহ নাযিল করেছি। অতএব আপনি নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর ইবাদাত করুন। (সূরা যুমার- ২)
قُلْ اِنِّۤيْ اُمِرْتُ اَنْ اَعْبُدَ اللهَ مُخْلِصًا لَّهُ الدِّيْنَ
বলো, অবশ্যই আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছে যে, আমি যেন একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদাত করি।
(সূরা যুমার- ১১)
اَلَا لِلّٰهِ الدِّيْنُ الْخَالِصُ
জেনে রেখো, একনিষ্ঠ ইবাদাত আল্লাহর জন্যই নিবেদিত হওয়া উচিত। (সূরা যুমার- ৩)
ইবাদাত করতে হবে দৃঢ়তা ও ধৈর্যের সাথে :
رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا فَاعْبُدْهُ وَاصْطَبِرْ لِعِبَادَتِهٖؕ هَلْ تَعْلَمُ لَهٗ سَمِيًّا
তিনি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী ও তাদের অন্তর্বর্তী যা কিছু আছে সবকিছুর প্রতিপালক। সুতরাং তাঁরই ইবাদাত করো এবং তাঁর ইবাদাতে ধৈর্যশীল হও। তুমি কি তাঁর সমগুণসম্পন্ন কাউকে জান? (সূরা মারইয়াম- ৬৫)
ইবাদাতের মধ্যে শিরক করা যাবে না :
فَمَنْ كَانَ يَرْجُوْا لِقَآءَ رَبِّهٖ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَّلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهٖۤ اَحَدًا
যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে ও তার প্রতিপালকের ইবাদাতে কাউকেও শরীক না করে। (সূরা কাহফ- ১১০)
قُلْ اِنَّمَاۤ اُمِرْتُ اَنْ اَعْبُدَ اللهَ وَلَاۤ اُشْرِكَ بِهٖ
বলো, নিশ্চয় আমাকে আদেশ করা হয়েছে যেন আমি আল্লাহর ইবাদাত করি এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করি। (সূরা রা‘দ- ৩৬)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর দাসত্বের সাথে অন্য কাউকে শরীক করা যাবে না। শুধু তাঁরই বিধিবিধান ও আদেশ-নিষেধ পালন করতে হবে। কারণ নির্ভেজাল আনুগত্য পাওয়ার অধিকার কেবল আল্লাহর। কেউ যদি আল্লাহ ছাড়া একনিষ্ঠভাবে অন্য কারো দাসত্ব করে, তাহলে সে ভ্রান্ত কাজ করে। অনুরূপভাবে সে যদি আল্লাহর দাসত্বের সাথে সাথে অন্য কারো দাসত্বের সংমিশ্রণ ঘটায়, তাহলে সেটাও সরাসরি ন্যায় ও সত্যের পরিপন্থী হিসেবে গণ্য হবে।
সালাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। ঈমানের পরেই সালাতের স্থান। তাই ঈমান আনার পর মুমিনদের প্রথম কাজই হলো সালাত প্রতিষ্ঠা করা। সালাত মুমিন ও কাফিরের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করে। আল্লাহর প্রতি বান্দার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হলো সালাত। এ কারণেই পবিত্র কুরআন ও হাদীসে সালাতের প্রতি বারংবার তাকীদ দেয়া হয়েছে। উম্মতের প্রতি নবী ﷺ এর শেষ উপদেশও ছিল সালাত। সালাত সকল প্রকার অশ্লীলতা ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে। এ কারণে সামাজিকভাবেও সালাতের গুরুত্ব অপরিসীম।
সকল নবীর যুগে সালাতের বিধান ছিল :
وَجَعَلْنَاهُمْ اَئِمَّةً يَّهْدُوْنَ بِاَمْرِنَا وَاَوْحَيْنَاۤ اِلَيْهِمْ فِعْلَ الْخَيْرَاتِ وَاِقَامَ الصَّلَاةِ وَاِيْتَآءَ الزَّكَاةِ ۚ وَكَانُوْا لَنَا عَابِدِيْنَ
আমি তাদেরকে নেতা বানিয়েছিলাম; যাতে করে তারা আমার নির্দেশ অনুযায়ী মানুষকে পথপ্রদর্শন করে। আর আমি তাদের প্রতি ওহী প্রেরণ করে এ আদেশ দিয়েছিলাম যে, তারা যেন ভালো কাজ করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত আদায় করে। আর তারা আমারই ইবাদাত করত। (সূরা আম্বিয়া- ৭৩)
ইসমাঈল (আঃ) সালাতের দাওয়াত দিতেন :
وَاذْكُرْ فِى الْكِتَابِ اِسْمَاعِيْلَ اِنَّهٗ كَانَ صَادِقَ الْوَعْدِ وَكَانَ رَسُوْلًا نَّبِيًّا -‐ وَكَانَ يَاْمُرُ اَهْلَهٗ بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ وَكَانَ عِنْدَ رَبِّهٖ مَرْضِيًّا
স্মরণ করো, এ কিতাবে ইসমাঈলের কথা! তিনি ছিলেন প্রতিশ্রুতি পালনে সত্যবাদী এবং তিনি ছিলেন রাসূল ও নবী। তিনি তার পরিবার-পরিজনকে সালাত ও যাকাতের নির্দেশ দিতেন; আর তিনি ছিলেন তার প্রতিপালকের প্রতি সন্তুষ্ট। (সূরা মারইয়াম- ৫৪, ৫৫)
মূসা (আঃ) কে সালাতের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল :
وَاَنَا اخْتَرْتُكَ فَاسْتَمِعْ لِمَا يُوْحىٰ ‐ اِنَّنِيْۤ اَنَا اللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَاْ فَاعْبُدْنِيْ وَاَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِيْ
আমি তোমাকে মনোনীত করেছি; অতএব যে ওহী তোমার নিকট প্রেরণ করা হচ্ছে তুমি তা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করো। আমিই আল্লাহ, আমি ব্যতীত কোন সত্যিকার ইলাহ্ নেই। অতএব আমারই ইবাদাত করো এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম করো। (সূরা ত্বা-হা- ১৩, ১৪)
وَاَوْحَيْنَاۤ اِلٰى مُوْسٰى وَاَخِيْهِ اَنْ تَبَوَّاٰلِقَوْمِكُمَا بِمِصْرَ بُيُوْتًا وَّاجْعَلُوْا بُيُوْتَكُمْ قِبْلَةً وَّاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ ؕ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِيْنَ
আমি মূসা ও তার ভাইকে প্রত্যাদেশ করলাম যে, মিসরে তোমাদের সম্প্রদায়ের জন্য গৃহ স্থাপন করো এবং তোমাদের গৃহগুলোকে ইবাদাতগৃহ হিসেবে বানিয়ে নাও। আর সালাত কায়েম করো এবং মুমিনদেরকে সুসংবাদ দাও। (সূরা ইউনুস- ৮৭)
লুক্বমান (আঃ) তার ছেলেকে সালাতের অসিয়ত করেছিলেন :
يَا بُنَيَّ اَقِمِ الصَّلَاةَ وَاْمُرْ بِالْمَعْرُوْفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَاصْبِرْ عَلٰى مَاۤ اَصَابَكَؕ اِنَّ ذٰلِكَ مِنْ عَزْمِ الْاُمُوْرِ
হে আমার ছেলে! সালাত কায়েম করো, সৎকাজের আদেশ দাও, মন্দকাজ থেকে নিষেধ করো এবং তোমার উপর যে বিপদ আসে তাতে ধৈর্যধারণ করো। নিশ্চয় এটা দৃঢ় সংকল্পের কাজ। (সূরা লুক্বমান- ১৭)
মারইয়াম (আঃ) কেও সালাতের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল :
يَا مَرْيَمُ اقْنُتِيْ لِرَبِّكِ وَاسْجُدِيْ وَارْكَعِيْ مَعَ الرَّاكِعِيْنَ
হে মারইয়াম! তুমি তোমার রবের অনুগত হও, আমাকে সিজদা করো এবং রুকূকারীদের সাথে রুকূ করো। (সূরা আলে ইমরান- ৪৩)
ঈসা (আঃ) এর যুগেও সালাতের বিধান ছিল :
قَالَ اِنِّيْ عَبْدُ اللهِؕ اٰتَانِيَ الْكِتَابَ وَجَعَلَنِيْ نَبِيًّا ‐ وَجَعَلَنِيْ مُبَارَكًا اَيْنَ مَا كُنْتُ وَاَوْصَانِيْ بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ مَا دُمْتُ حَيًّا
ঈসা বললেন, আমি আল্লাহর বান্দা। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে নবী বানিয়েছেন, আমি যেখানেই থাকি না কেন তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন। আর যতদিন আমি বেঁচে থাকব, ততদিন তিনি আমাকে সালাত ও যাকাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। (সূরা মারইয়াম- ৩০, ৩১)
আহলে কিতাবের প্রতিও সালাতের নির্দেশ ছিল :
وَمَا تَفَرَّقَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ اِلَّا مِنْ ۢبَعْدِ مَا جَآءَتْهُمُ الْبَيِّنَةُ ‐ وَمَاۤ اُمِرُوْاۤ اِلَّا لِيَعْبُدُوا اللهَ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ حُنَفَآءَ وَيُقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذٰلِكَ دِيْنُ الْقَيِّمَةِ
যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল তাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পরও তাদের মাঝে বিচ্ছিন্নতা দেখা দিয়েছিল। তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ দেয়া হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদাত করবে, সালাত কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। এটাই সঠিক ধর্ম। (সূরা বায়্যিনাহ- ৪, ৫)
বনী ইসরাঈলদের থেকেও সালাতের অঙ্গীকার নেয়া হয়েছিল :
وَاِذْ اَخَذْنَا مِيْثَاقَ بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ لَا تَعْبُدُوْنَ اِلَّا اللهَؕ وَبِالْوَالِدَيْنِ اِحْسَانًا وَّذِى الْقُرْبٰى وَالْيَتَامٰى وَالْمَسَاكِيْنِ وَقُوْلُوْا لِلنَّاسِ حُسْنًا وَّاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَؕ ثُمَّ تَوَلَّيْتُمْ اِلَّا قَلِيْلًا مِّنْكُمْ وَاَنْتُمْ مُّعْرِضُوْنَ
আর যখন আমি বনী ইসরাঈল হতে এ অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত কারো ইবাদাত করবে না। পিতামাতা ও আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে, ইয়াতীম ও মিসকীনদের সঙ্গেও (সদ্ব্যবহার করবে)। আর তোমরা মানুষের সাথে উত্তমভাবে কথা বলবে এবং সালাত কায়েম করবে ও যাকাত প্রদান করবে। তারপরও তোমাদের মধ্য হতে অল্প সংখ্যক ব্যতীত তোমরা সকলেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলে; আর তোমরা ছিলে বিমুখী সম্প্রদায়। (সূরা বাক্বারা- ৮৩)
উম্মতে মুহাম্মাদীর প্রতি সালাতের বিধান রয়েছে :
وَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَ وَاَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ
তোমরা সালাত কায়েম করো, যাকাত দাও এবং রাসূলের আনুগত্য করো, যাতে তোমরা অনুগ্রহভাজন হতে পার। (সূরা নূর- ৫৬)
وَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَ وَاَقْرِضُوا اللهَ قَرْضًا حَسَنًا
তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো, যাকাত প্রদান করো এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও। (সূরা মুয্যাম্মিল- ২০)
এ উম্মতের মহিলাদের প্রতিও সালাত আদায়ের বিশেষ নির্দেশ :
وَقَرْنَ فِيْ بُيُوْتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْاُوْلٰى وَاَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَاٰتِيْنَ الزَّكَاةَ وَاَطِعْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ
(হে নারীরা) তোমরা নিজেদের ঘরে অবস্থান করবে এবং প্রথম যুগের মূর্খদের ন্যায় নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না। তোমরা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ পালন করবে। (সূরা আহযাব- ৩৩)
وَجَعَلْنَاهُمْ اَئِمَّةً يَّهْدُوْنَ بِاَمْرِنَا وَاَوْحَيْنَاۤ اِلَيْهِمْ فِعْلَ الْخَيْرَاتِ وَاِقَامَ الصَّلَاةِ وَاِيْتَآءَ الزَّكَاةِ ۚ وَكَانُوْا لَنَا عَابِدِيْنَ
আমি তাদেরকে নেতা বানিয়েছিলাম; যাতে করে তারা আমার নির্দেশ অনুযায়ী মানুষকে পথপ্রদর্শন করে। আর আমি তাদের প্রতি ওহী প্রেরণ করে এ আদেশ দিয়েছিলাম যে, তারা যেন ভালো কাজ করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত আদায় করে। আর তারা আমারই ইবাদাত করত। (সূরা আম্বিয়া- ৭৩)
ইসমাঈল (আঃ) সালাতের দাওয়াত দিতেন :
وَاذْكُرْ فِى الْكِتَابِ اِسْمَاعِيْلَ اِنَّهٗ كَانَ صَادِقَ الْوَعْدِ وَكَانَ رَسُوْلًا نَّبِيًّا -‐ وَكَانَ يَاْمُرُ اَهْلَهٗ بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ وَكَانَ عِنْدَ رَبِّهٖ مَرْضِيًّا
স্মরণ করো, এ কিতাবে ইসমাঈলের কথা! তিনি ছিলেন প্রতিশ্রুতি পালনে সত্যবাদী এবং তিনি ছিলেন রাসূল ও নবী। তিনি তার পরিবার-পরিজনকে সালাত ও যাকাতের নির্দেশ দিতেন; আর তিনি ছিলেন তার প্রতিপালকের প্রতি সন্তুষ্ট। (সূরা মারইয়াম- ৫৪, ৫৫)
মূসা (আঃ) কে সালাতের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল :
وَاَنَا اخْتَرْتُكَ فَاسْتَمِعْ لِمَا يُوْحىٰ ‐ اِنَّنِيْۤ اَنَا اللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَاْ فَاعْبُدْنِيْ وَاَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِيْ
আমি তোমাকে মনোনীত করেছি; অতএব যে ওহী তোমার নিকট প্রেরণ করা হচ্ছে তুমি তা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করো। আমিই আল্লাহ, আমি ব্যতীত কোন সত্যিকার ইলাহ্ নেই। অতএব আমারই ইবাদাত করো এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম করো। (সূরা ত্বা-হা- ১৩, ১৪)
وَاَوْحَيْنَاۤ اِلٰى مُوْسٰى وَاَخِيْهِ اَنْ تَبَوَّاٰلِقَوْمِكُمَا بِمِصْرَ بُيُوْتًا وَّاجْعَلُوْا بُيُوْتَكُمْ قِبْلَةً وَّاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ ؕ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِيْنَ
আমি মূসা ও তার ভাইকে প্রত্যাদেশ করলাম যে, মিসরে তোমাদের সম্প্রদায়ের জন্য গৃহ স্থাপন করো এবং তোমাদের গৃহগুলোকে ইবাদাতগৃহ হিসেবে বানিয়ে নাও। আর সালাত কায়েম করো এবং মুমিনদেরকে সুসংবাদ দাও। (সূরা ইউনুস- ৮৭)
লুক্বমান (আঃ) তার ছেলেকে সালাতের অসিয়ত করেছিলেন :
يَا بُنَيَّ اَقِمِ الصَّلَاةَ وَاْمُرْ بِالْمَعْرُوْفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَاصْبِرْ عَلٰى مَاۤ اَصَابَكَؕ اِنَّ ذٰلِكَ مِنْ عَزْمِ الْاُمُوْرِ
হে আমার ছেলে! সালাত কায়েম করো, সৎকাজের আদেশ দাও, মন্দকাজ থেকে নিষেধ করো এবং তোমার উপর যে বিপদ আসে তাতে ধৈর্যধারণ করো। নিশ্চয় এটা দৃঢ় সংকল্পের কাজ। (সূরা লুক্বমান- ১৭)
মারইয়াম (আঃ) কেও সালাতের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল :
يَا مَرْيَمُ اقْنُتِيْ لِرَبِّكِ وَاسْجُدِيْ وَارْكَعِيْ مَعَ الرَّاكِعِيْنَ
হে মারইয়াম! তুমি তোমার রবের অনুগত হও, আমাকে সিজদা করো এবং রুকূকারীদের সাথে রুকূ করো। (সূরা আলে ইমরান- ৪৩)
ঈসা (আঃ) এর যুগেও সালাতের বিধান ছিল :
قَالَ اِنِّيْ عَبْدُ اللهِؕ اٰتَانِيَ الْكِتَابَ وَجَعَلَنِيْ نَبِيًّا ‐ وَجَعَلَنِيْ مُبَارَكًا اَيْنَ مَا كُنْتُ وَاَوْصَانِيْ بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ مَا دُمْتُ حَيًّا
ঈসা বললেন, আমি আল্লাহর বান্দা। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে নবী বানিয়েছেন, আমি যেখানেই থাকি না কেন তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন। আর যতদিন আমি বেঁচে থাকব, ততদিন তিনি আমাকে সালাত ও যাকাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। (সূরা মারইয়াম- ৩০, ৩১)
আহলে কিতাবের প্রতিও সালাতের নির্দেশ ছিল :
وَمَا تَفَرَّقَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ اِلَّا مِنْ ۢبَعْدِ مَا جَآءَتْهُمُ الْبَيِّنَةُ ‐ وَمَاۤ اُمِرُوْاۤ اِلَّا لِيَعْبُدُوا اللهَ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ حُنَفَآءَ وَيُقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذٰلِكَ دِيْنُ الْقَيِّمَةِ
যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল তাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পরও তাদের মাঝে বিচ্ছিন্নতা দেখা দিয়েছিল। তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ দেয়া হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদাত করবে, সালাত কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। এটাই সঠিক ধর্ম। (সূরা বায়্যিনাহ- ৪, ৫)
বনী ইসরাঈলদের থেকেও সালাতের অঙ্গীকার নেয়া হয়েছিল :
وَاِذْ اَخَذْنَا مِيْثَاقَ بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ لَا تَعْبُدُوْنَ اِلَّا اللهَؕ وَبِالْوَالِدَيْنِ اِحْسَانًا وَّذِى الْقُرْبٰى وَالْيَتَامٰى وَالْمَسَاكِيْنِ وَقُوْلُوْا لِلنَّاسِ حُسْنًا وَّاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَؕ ثُمَّ تَوَلَّيْتُمْ اِلَّا قَلِيْلًا مِّنْكُمْ وَاَنْتُمْ مُّعْرِضُوْنَ
আর যখন আমি বনী ইসরাঈল হতে এ অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত কারো ইবাদাত করবে না। পিতামাতা ও আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে, ইয়াতীম ও মিসকীনদের সঙ্গেও (সদ্ব্যবহার করবে)। আর তোমরা মানুষের সাথে উত্তমভাবে কথা বলবে এবং সালাত কায়েম করবে ও যাকাত প্রদান করবে। তারপরও তোমাদের মধ্য হতে অল্প সংখ্যক ব্যতীত তোমরা সকলেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলে; আর তোমরা ছিলে বিমুখী সম্প্রদায়। (সূরা বাক্বারা- ৮৩)
উম্মতে মুহাম্মাদীর প্রতি সালাতের বিধান রয়েছে :
وَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَ وَاَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ
তোমরা সালাত কায়েম করো, যাকাত দাও এবং রাসূলের আনুগত্য করো, যাতে তোমরা অনুগ্রহভাজন হতে পার। (সূরা নূর- ৫৬)
وَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَ وَاَقْرِضُوا اللهَ قَرْضًا حَسَنًا
তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো, যাকাত প্রদান করো এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও। (সূরা মুয্যাম্মিল- ২০)
এ উম্মতের মহিলাদের প্রতিও সালাত আদায়ের বিশেষ নির্দেশ :
وَقَرْنَ فِيْ بُيُوْتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْاُوْلٰى وَاَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَاٰتِيْنَ الزَّكَاةَ وَاَطِعْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ
(হে নারীরা) তোমরা নিজেদের ঘরে অবস্থান করবে এবং প্রথম যুগের মূর্খদের ন্যায় নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না। তোমরা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ পালন করবে। (সূরা আহযাব- ৩৩)
সালাত আদায় করা মুত্তাক্বীদের বৈশিষ্ট্য :
الٓمّٓ ‐ ذٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ فِيْهِ هُدًى لِّلْمُتَّقِيْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ
এটা ঐ গ্রন্থ যার মধ্যে কোনরূপ সন্দেহ নেই; আর মুত্তাক্বীদের জন্য এটা হেদায়াত। যারা অদৃশ্য বিষয়গুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে জীবনোপকরণ দান করেছি তা হতে ব্যয় করে। (সূরা বাক্বারা- ২, ৩)
সালাত ঈমানদারীর পরিচয় :
اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ اِذَا ذُكِرَ اللهُ وَجِلَتْ قُلُوْبُهُمْ وَاِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ اٰيَاتُهٗ زَادَتْهُمْ اِيْمَانًا وَّعَلٰى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ يُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ ‐ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُوْنَ حَقًّاؕ لَهُمْ دَرَجَاتٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَمَغْفِرَةٌ وَّرِزْقٌ كَرِيْمٌ
নিশ্চয় মুমিন তো তারাই যাদের হৃদয় আল্লাহর স্মরণে কম্পিত হয় এবং তাদের সামনে তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হলে তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পায়। আর তারা তাদের প্রতিপালকের উপরই নির্ভর করে থাকে। যারা সালাত কায়েম করে এবং আমি যা দিয়েছি তা হতে ব্যয় করে; তারাই প্রকৃত মুমিন। তাদের প্রতিপালকের নিকট তাদেরই জন্য রয়েছে মর্যাদা, ক্ষমা এবং সম্মানজনক জীবিকা। (সূরা আনফাল, ২-৪)
ব্যাখ্যা : যে ব্যক্তি আল্লাহর অনুগত নয় এবং আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না, তার জন্য নিয়মিত সালাত আদায় করা খুবই কষ্টকর ও বিরাট মুসিবতের ব্যাপার। কিন্তু যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় ও সানন্দে নিজেকে আল্লাহর আনুগত্যে সোপর্দ করেছে এবং যে ব্যক্তি মৃত্যুর পর তার মহান প্রভুর সামনে উপস্থিত হওয়ার কথা চিন্তা করে, তার জন্য সালাত আদায় করা নয় বরং তা ত্যাগ করাই কঠিন।
সালাত মুমিন ও কাফির-মুশরিকের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করে :
مُنِيْبِيْنَ اِلَيْهِ وَاتَّقُوْهُ وَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَلَا تَكُوْنُوْا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
তোমরা একনিষ্ঠভাবে তাঁর অভিমুখী হও এবং শুধু তাঁকেই ভয় করো। আর তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো এবং কখনো মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সূরা রূম- ৩১)
ব্যাখ্যা : মানবজাতির মধ্য থেকে যারা বিদ্রোহের নীতি পরিহার করে রবের প্রতি আনুগত্যের নীতি অবলম্বন করেছে, তা কাফির ও মুমিন উভয় সমাজের সামনে প্রকাশিত হওয়া প্রয়োজন। মুমিনদের কাছে এজন্য প্রকাশ হওয়া প্রয়োজন যে, এর ফলে তাদের একটি সমাজ গঠিত হতে পারে এবং তারা আল্লাহর পথে পরস্পরের সাথে সহযোগিতা করতে পারে। আর কাফিরদের কাছে এর প্রকাশ হওয়া এজন্য প্রয়োজন যে, এর ফলে মানুষদেরকে আসল ইলাহ্ রাববুল আলামীনের দিকে বার বার ফিরে আসতে দেখে তাদের হৃদয়ের অভ্যন্তরে ঘুমিয়ে থাকা প্রকৃতি জেগে উঠবে এবং আল্লাহর অনুগতদের কর্মতৎপরতা দেখে তাদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি হতে থাকবে। এ দু’টি উদ্দেশ্যের জন্যও সালাত কায়েম করাই সবচেয়ে বেশি উপযোগী মাধ্যম। জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূল ﷺ বলেছেন, মুসলিম ও কাফিরের মধ্যে পার্থক্যের মাপকাঠি হলো নামায। অর্থাৎ নামায ত্যাগ করলে তার কুফরীতে লিপ্ত হওয়ার আর বিলম্ব থাকে না। নামায হলো তার ঈমানের জন্য প্রাচীর স্বরূপ। (সহীহ মুসলিম, হা/২৫৬)
আল্লাহর দিকে ফিরা এবং তাঁর গযবের ভয় করা- এ দু’টিই অন্তরের কাজ। অন্তরে এ অবস্থাটির দৃঢ়তা প্রতিষ্ঠার জন্য এমন কোন দৈহিক কর্মের প্রয়োজন, যার মাধ্যমে বাইরেও প্রত্যেক ব্যক্তি জানবে যে, অমুক ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে এক আল্লাহর দিকে ফিরে এসেছে। তাই আল্লাহ তা‘আলা এই মানসিক পরিবর্তনের হুকুম দেয়ার পর পরই এ দৈহিক কর্ম অর্থাৎ সালাত কায়েম করার হুকুম দিয়েছেন। মানুষের মনে যতক্ষণ পর্যন্ত কোন চিন্তা নিছক চিন্তার পর্যায়েই থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত তার মধ্যে দৃঢ়তা ও স্থায়িত্ব সৃষ্টি হয় না। এ চিন্তায় ভাটা পড়ে এবং পরিবর্তন আসারও সম্ভাবনা থাকে। তাই সে অনুযায়ী যতই সে কাজ করতে থাকে, ততই তার চিন্তা শিকড় গেড়ে বসে। এ দৃষ্টিতে বিচার করলে আল্লাহর অভিমুখী হওয়া এবং আল্লাহভীতিকে শক্তিশালী করার জন্য প্রতিদিন নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করার চেয়ে বেশি কার্যকর আর কোন কাজ নেই। সালাত এমন একটি কাজ, যা নিয়মিতভাবে কয়েক ঘণ্টা পর পর ফিরে আসে, যাতে মানুষ আল্লাহকে ভুলে না যায়। এজন্য বার বার মানুষকে সালাতের পুনরাবৃত্তি করতে হয়।
সালাত ও ঈমানের সম্পর্ক একেবারে কাছাকাছি :
فَلَا صَدَّقَ وَلَا صَلّٰى ‐ - وَلٰكِنْ كَذَّبَ وَتَوَلّٰى
অতঃপর সে (জাহান্নামী) লোকটি বিশ্বাস করেনি এবং সালাতও আদায় করেনি; বরং সে অস্বীকার করেছে এবং মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। (সূরা ক্বিয়ামাহ- ৩১, ৩২)
ব্যাখ্যা : মহান আল্লাহর এ বাণীর মধ্যে ‘‘সে বিশ্বাস করেনি এবং সালাতও আদায় করেনি’’ কথাটি বিশেষভাবে লক্ষণীয়। এ থেকে স্পষ্টভাবে জানা যাচ্ছে যে, কোন ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনার পর তার প্রাথমিক জরুরি কাজ হলো- সালাত আদায় করা। ইসলামের অন্যান্য ফরয কাজ যেমন- যাকাত, হজ্জ ও রোযা ইত্যাদি বছরে একবার পালন করতে হয়; কিন্তু সালাত প্রতিদিন পাঁচ বার আদায় করতে হয়। ঈমান আনার পর কিছু সময় যেতে না যেতেই সালাতের সময় এসে যায়। তখনই যাচাই হয়ে যায়- ব্যক্তির ঈমান আনাটা সত্য কি না? যদি সে সালাত আদায় করে, তাহলে বুঝা যাবে সত্যিই সে ঈমান এনেছে। আর যদি সালাত আদায় না করে, তাহলে প্রমাণিত হবে সে কেবল মুখে কালিমা পড়েছে, মনে-প্রাণে পড়েনি এবং পূর্ণরূপে ইসলামে প্রবেশ করেনি। সুতরাং মুমিনকে অবশ্যই সালাত আদায়কারী হতে হবে।
আল্লাহ সালাত আদায়কারীদের সঙ্গে থাকেন :
وَقَالَ اللهُ اِنِّيْ مَعَكُمْؕ لَئِنْ اَقَمْتُمُ الصَّلَاةَ وَاٰتَيْتُمُ الزَّكَاةَ وَاٰمَنْتُمْ بِرُسُلِيْ وَعَزَّرْتُمُوْهُمْ وَاَقْرَضْتُمُ اللهَ قَرْضًا حَسَنًا
আল্লাহ বলেছিলেন, আমি তোমাদের সাথেই আছি, যদি তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও, আমার রাসূলদের প্রতি ঈমান আন ও তাদেরকে সম্মান কর এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ প্রদান কর। (সূরা মায়েদা- ১২)
সালাতের প্রতি যত্নবান হওয়ার নির্দেশ :
حَافِظُوْا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطٰى وَقُوْمُوْا لِلّٰهِ قَانِتِيْنَ
তোমরা সালাতের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষ করে মধ্যবর্তী সালাতের প্রতি এবং আল্লাহর সামনে বিনীতভাবে দন্ডায়মান হও। (সূরা বাক্বারা- ২৩৮)
ব্যাখ্যা : وُسْطٰى (উসতা) এর অর্থ মধ্যবর্তী জিনিস। আবার এ শব্দটি এমন জিনিস সম্পর্কেও ব্যবহৃত হয়, যা উন্নত ও উৎকৃষ্ট। صَلَاةُ الْوُسْطٰى (সালাতুল উসতা) এর অর্থ মধ্যবর্তী সালাত তথা আসরের সালাত হতে পারে আবার এমন সালাতও হতে পারে, যা সঠিক সময়ে পূর্ণ একাগ্রতার সাথে আল্লাহর প্রতি গভীর মনোযোগ সহকারে আদায় করা হয় এবং যার মধ্যে সালাতের যাবতীয় গুণের সমাবেশ ঘটে।
নিয়মিত সালাত আদায়ের তাকিদ :
وَالَّذِيْنَ هُمْ عَلٰى صَلَاتِهِمْ دَآئِمُوْنَ
যারা তাদের সালাতে সদা নিয়মানুবর্তিতা অবলম্বনকারী। (সূরা মা‘আরিজ- ২৩ )
وَالَّذِيْنَ هُمْ عَلٰى صَلَاتِهِمْ يُحَافِظُوْنَ
যারা নিজেদের সালাতে যত্নবান। (সূরা মা‘আরিজ- ৩৪)
পরিবারের সবাইকে সালাতে অভ্যস্ত করা পরিবার প্রধানের দায়িত্ব :
وَاْمُرْ اَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَاؕ لَا نَسْاَلُكَ رِزْقًاؕ نَحْنُ نَرْزُقُكَؕ وَالْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوٰى
তোমার পরিবারবর্গকে সালাতের আদেশ দাও এবং তার উপর অবিচল থাকো। আমি তোমার নিকট কোন রিযিক চাই না; বরং আমিই তোমাকে রিযিক দেই এবং শুভ পরিণাম তো মুত্তাক্বীদের জন্যই। (সূরা ত্বা-হা- ১৩২)
ব্যাখ্যা : সন্তানদেরকে সালাত আদায় করার আদেশ দিতে হবে। এ বিষয়টি তাদের দৃষ্টিভঙ্গীতে পরিবর্তন ঘটাবে এবং তাদের মূল্যবোধ বদলে দেবে। তাদের আগ্রহ ও আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু পরিবর্তন করে দেবে। তারা পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন রিযিকের উপর ধৈর্যধারণ করবে এবং তাতে সন্তুষ্ট হবে। ঈমান ও তাক্বওয়ার মাধ্যমে যে কল্যাণ অর্জিত হয় তাকে তারা এমন ভোগের উপর অগ্রাধিকার দিতে থাকবে, যা ফাসিকী, দুশ্চরিত্রতা ও পার্থিব লোভ-লালসা থেকে অর্জিত হয়। আল্লাহ নিজের কোন লাভের জন্য আমাদেরকে সালাত আদায় করতে বলছেন না। বরং এতে আমাদের নিজেদেরই লাভ। আর তা হচ্ছে, এর ফলে আমাদের মধ্যে তাক্বওয়া সৃষ্টি হবে। আর এটিই দুনিয়া ও আখিরাতে স্থায়ী ও শেষ সাফল্যের মাধ্যম। উক্ত আয়াতের মাধ্যমে পরিবার প্রধানকে পরিবারের সবাইকে সালাতে অভ্যস্ত করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ দায়িত্ব পালন না করলে পরিবারের দায়িত্বশীলরা অবশ্যই গোনাহগার হবেন। মুক্তির জন্য কেবল নিজের আমলই যথেষ্ট নয়। তাই এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে সমাজের সর্বস্তরে সালাত কায়েমের ব্যবস্থা করা :
اَلَّذِيْنَ اِنْ مَّكَّنَّاهُمْ فِى الْاَرْضِ اَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ وَاَمَرُوْا بِالْمَعْرُوْفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنْكَرِؕ وَلِلّٰهِ عَاقِبَةُ الْاُمُوْرِ
আমি এদেরকে (মুমিনদেরকে) পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দান করি, যাতে করে তারা সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং সৎকাজের নির্দেশ দেয় ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করে। আর সকল কর্মের পরিণাম তো আল্লাহর ইচ্ছাধীন। (সূরা হজ্জ- ৪১)
الٓمّٓ ‐ ذٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ فِيْهِ هُدًى لِّلْمُتَّقِيْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ
এটা ঐ গ্রন্থ যার মধ্যে কোনরূপ সন্দেহ নেই; আর মুত্তাক্বীদের জন্য এটা হেদায়াত। যারা অদৃশ্য বিষয়গুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে জীবনোপকরণ দান করেছি তা হতে ব্যয় করে। (সূরা বাক্বারা- ২, ৩)
সালাত ঈমানদারীর পরিচয় :
اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ اِذَا ذُكِرَ اللهُ وَجِلَتْ قُلُوْبُهُمْ وَاِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ اٰيَاتُهٗ زَادَتْهُمْ اِيْمَانًا وَّعَلٰى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ يُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ ‐ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُوْنَ حَقًّاؕ لَهُمْ دَرَجَاتٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَمَغْفِرَةٌ وَّرِزْقٌ كَرِيْمٌ
নিশ্চয় মুমিন তো তারাই যাদের হৃদয় আল্লাহর স্মরণে কম্পিত হয় এবং তাদের সামনে তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হলে তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পায়। আর তারা তাদের প্রতিপালকের উপরই নির্ভর করে থাকে। যারা সালাত কায়েম করে এবং আমি যা দিয়েছি তা হতে ব্যয় করে; তারাই প্রকৃত মুমিন। তাদের প্রতিপালকের নিকট তাদেরই জন্য রয়েছে মর্যাদা, ক্ষমা এবং সম্মানজনক জীবিকা। (সূরা আনফাল, ২-৪)
ব্যাখ্যা : যে ব্যক্তি আল্লাহর অনুগত নয় এবং আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না, তার জন্য নিয়মিত সালাত আদায় করা খুবই কষ্টকর ও বিরাট মুসিবতের ব্যাপার। কিন্তু যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় ও সানন্দে নিজেকে আল্লাহর আনুগত্যে সোপর্দ করেছে এবং যে ব্যক্তি মৃত্যুর পর তার মহান প্রভুর সামনে উপস্থিত হওয়ার কথা চিন্তা করে, তার জন্য সালাত আদায় করা নয় বরং তা ত্যাগ করাই কঠিন।
সালাত মুমিন ও কাফির-মুশরিকের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করে :
مُنِيْبِيْنَ اِلَيْهِ وَاتَّقُوْهُ وَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَلَا تَكُوْنُوْا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
তোমরা একনিষ্ঠভাবে তাঁর অভিমুখী হও এবং শুধু তাঁকেই ভয় করো। আর তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো এবং কখনো মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সূরা রূম- ৩১)
ব্যাখ্যা : মানবজাতির মধ্য থেকে যারা বিদ্রোহের নীতি পরিহার করে রবের প্রতি আনুগত্যের নীতি অবলম্বন করেছে, তা কাফির ও মুমিন উভয় সমাজের সামনে প্রকাশিত হওয়া প্রয়োজন। মুমিনদের কাছে এজন্য প্রকাশ হওয়া প্রয়োজন যে, এর ফলে তাদের একটি সমাজ গঠিত হতে পারে এবং তারা আল্লাহর পথে পরস্পরের সাথে সহযোগিতা করতে পারে। আর কাফিরদের কাছে এর প্রকাশ হওয়া এজন্য প্রয়োজন যে, এর ফলে মানুষদেরকে আসল ইলাহ্ রাববুল আলামীনের দিকে বার বার ফিরে আসতে দেখে তাদের হৃদয়ের অভ্যন্তরে ঘুমিয়ে থাকা প্রকৃতি জেগে উঠবে এবং আল্লাহর অনুগতদের কর্মতৎপরতা দেখে তাদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি হতে থাকবে। এ দু’টি উদ্দেশ্যের জন্যও সালাত কায়েম করাই সবচেয়ে বেশি উপযোগী মাধ্যম। জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূল ﷺ বলেছেন, মুসলিম ও কাফিরের মধ্যে পার্থক্যের মাপকাঠি হলো নামায। অর্থাৎ নামায ত্যাগ করলে তার কুফরীতে লিপ্ত হওয়ার আর বিলম্ব থাকে না। নামায হলো তার ঈমানের জন্য প্রাচীর স্বরূপ। (সহীহ মুসলিম, হা/২৫৬)
আল্লাহর দিকে ফিরা এবং তাঁর গযবের ভয় করা- এ দু’টিই অন্তরের কাজ। অন্তরে এ অবস্থাটির দৃঢ়তা প্রতিষ্ঠার জন্য এমন কোন দৈহিক কর্মের প্রয়োজন, যার মাধ্যমে বাইরেও প্রত্যেক ব্যক্তি জানবে যে, অমুক ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে এক আল্লাহর দিকে ফিরে এসেছে। তাই আল্লাহ তা‘আলা এই মানসিক পরিবর্তনের হুকুম দেয়ার পর পরই এ দৈহিক কর্ম অর্থাৎ সালাত কায়েম করার হুকুম দিয়েছেন। মানুষের মনে যতক্ষণ পর্যন্ত কোন চিন্তা নিছক চিন্তার পর্যায়েই থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত তার মধ্যে দৃঢ়তা ও স্থায়িত্ব সৃষ্টি হয় না। এ চিন্তায় ভাটা পড়ে এবং পরিবর্তন আসারও সম্ভাবনা থাকে। তাই সে অনুযায়ী যতই সে কাজ করতে থাকে, ততই তার চিন্তা শিকড় গেড়ে বসে। এ দৃষ্টিতে বিচার করলে আল্লাহর অভিমুখী হওয়া এবং আল্লাহভীতিকে শক্তিশালী করার জন্য প্রতিদিন নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করার চেয়ে বেশি কার্যকর আর কোন কাজ নেই। সালাত এমন একটি কাজ, যা নিয়মিতভাবে কয়েক ঘণ্টা পর পর ফিরে আসে, যাতে মানুষ আল্লাহকে ভুলে না যায়। এজন্য বার বার মানুষকে সালাতের পুনরাবৃত্তি করতে হয়।
সালাত ও ঈমানের সম্পর্ক একেবারে কাছাকাছি :
فَلَا صَدَّقَ وَلَا صَلّٰى ‐ - وَلٰكِنْ كَذَّبَ وَتَوَلّٰى
অতঃপর সে (জাহান্নামী) লোকটি বিশ্বাস করেনি এবং সালাতও আদায় করেনি; বরং সে অস্বীকার করেছে এবং মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। (সূরা ক্বিয়ামাহ- ৩১, ৩২)
ব্যাখ্যা : মহান আল্লাহর এ বাণীর মধ্যে ‘‘সে বিশ্বাস করেনি এবং সালাতও আদায় করেনি’’ কথাটি বিশেষভাবে লক্ষণীয়। এ থেকে স্পষ্টভাবে জানা যাচ্ছে যে, কোন ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনার পর তার প্রাথমিক জরুরি কাজ হলো- সালাত আদায় করা। ইসলামের অন্যান্য ফরয কাজ যেমন- যাকাত, হজ্জ ও রোযা ইত্যাদি বছরে একবার পালন করতে হয়; কিন্তু সালাত প্রতিদিন পাঁচ বার আদায় করতে হয়। ঈমান আনার পর কিছু সময় যেতে না যেতেই সালাতের সময় এসে যায়। তখনই যাচাই হয়ে যায়- ব্যক্তির ঈমান আনাটা সত্য কি না? যদি সে সালাত আদায় করে, তাহলে বুঝা যাবে সত্যিই সে ঈমান এনেছে। আর যদি সালাত আদায় না করে, তাহলে প্রমাণিত হবে সে কেবল মুখে কালিমা পড়েছে, মনে-প্রাণে পড়েনি এবং পূর্ণরূপে ইসলামে প্রবেশ করেনি। সুতরাং মুমিনকে অবশ্যই সালাত আদায়কারী হতে হবে।
আল্লাহ সালাত আদায়কারীদের সঙ্গে থাকেন :
وَقَالَ اللهُ اِنِّيْ مَعَكُمْؕ لَئِنْ اَقَمْتُمُ الصَّلَاةَ وَاٰتَيْتُمُ الزَّكَاةَ وَاٰمَنْتُمْ بِرُسُلِيْ وَعَزَّرْتُمُوْهُمْ وَاَقْرَضْتُمُ اللهَ قَرْضًا حَسَنًا
আল্লাহ বলেছিলেন, আমি তোমাদের সাথেই আছি, যদি তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও, আমার রাসূলদের প্রতি ঈমান আন ও তাদেরকে সম্মান কর এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ প্রদান কর। (সূরা মায়েদা- ১২)
সালাতের প্রতি যত্নবান হওয়ার নির্দেশ :
حَافِظُوْا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطٰى وَقُوْمُوْا لِلّٰهِ قَانِتِيْنَ
তোমরা সালাতের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষ করে মধ্যবর্তী সালাতের প্রতি এবং আল্লাহর সামনে বিনীতভাবে দন্ডায়মান হও। (সূরা বাক্বারা- ২৩৮)
ব্যাখ্যা : وُسْطٰى (উসতা) এর অর্থ মধ্যবর্তী জিনিস। আবার এ শব্দটি এমন জিনিস সম্পর্কেও ব্যবহৃত হয়, যা উন্নত ও উৎকৃষ্ট। صَلَاةُ الْوُسْطٰى (সালাতুল উসতা) এর অর্থ মধ্যবর্তী সালাত তথা আসরের সালাত হতে পারে আবার এমন সালাতও হতে পারে, যা সঠিক সময়ে পূর্ণ একাগ্রতার সাথে আল্লাহর প্রতি গভীর মনোযোগ সহকারে আদায় করা হয় এবং যার মধ্যে সালাতের যাবতীয় গুণের সমাবেশ ঘটে।
নিয়মিত সালাত আদায়ের তাকিদ :
وَالَّذِيْنَ هُمْ عَلٰى صَلَاتِهِمْ دَآئِمُوْنَ
যারা তাদের সালাতে সদা নিয়মানুবর্তিতা অবলম্বনকারী। (সূরা মা‘আরিজ- ২৩ )
وَالَّذِيْنَ هُمْ عَلٰى صَلَاتِهِمْ يُحَافِظُوْنَ
যারা নিজেদের সালাতে যত্নবান। (সূরা মা‘আরিজ- ৩৪)
পরিবারের সবাইকে সালাতে অভ্যস্ত করা পরিবার প্রধানের দায়িত্ব :
وَاْمُرْ اَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَاؕ لَا نَسْاَلُكَ رِزْقًاؕ نَحْنُ نَرْزُقُكَؕ وَالْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوٰى
তোমার পরিবারবর্গকে সালাতের আদেশ দাও এবং তার উপর অবিচল থাকো। আমি তোমার নিকট কোন রিযিক চাই না; বরং আমিই তোমাকে রিযিক দেই এবং শুভ পরিণাম তো মুত্তাক্বীদের জন্যই। (সূরা ত্বা-হা- ১৩২)
ব্যাখ্যা : সন্তানদেরকে সালাত আদায় করার আদেশ দিতে হবে। এ বিষয়টি তাদের দৃষ্টিভঙ্গীতে পরিবর্তন ঘটাবে এবং তাদের মূল্যবোধ বদলে দেবে। তাদের আগ্রহ ও আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু পরিবর্তন করে দেবে। তারা পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন রিযিকের উপর ধৈর্যধারণ করবে এবং তাতে সন্তুষ্ট হবে। ঈমান ও তাক্বওয়ার মাধ্যমে যে কল্যাণ অর্জিত হয় তাকে তারা এমন ভোগের উপর অগ্রাধিকার দিতে থাকবে, যা ফাসিকী, দুশ্চরিত্রতা ও পার্থিব লোভ-লালসা থেকে অর্জিত হয়। আল্লাহ নিজের কোন লাভের জন্য আমাদেরকে সালাত আদায় করতে বলছেন না। বরং এতে আমাদের নিজেদেরই লাভ। আর তা হচ্ছে, এর ফলে আমাদের মধ্যে তাক্বওয়া সৃষ্টি হবে। আর এটিই দুনিয়া ও আখিরাতে স্থায়ী ও শেষ সাফল্যের মাধ্যম। উক্ত আয়াতের মাধ্যমে পরিবার প্রধানকে পরিবারের সবাইকে সালাতে অভ্যস্ত করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ দায়িত্ব পালন না করলে পরিবারের দায়িত্বশীলরা অবশ্যই গোনাহগার হবেন। মুক্তির জন্য কেবল নিজের আমলই যথেষ্ট নয়। তাই এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে সমাজের সর্বস্তরে সালাত কায়েমের ব্যবস্থা করা :
اَلَّذِيْنَ اِنْ مَّكَّنَّاهُمْ فِى الْاَرْضِ اَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ وَاَمَرُوْا بِالْمَعْرُوْفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنْكَرِؕ وَلِلّٰهِ عَاقِبَةُ الْاُمُوْرِ
আমি এদেরকে (মুমিনদেরকে) পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দান করি, যাতে করে তারা সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং সৎকাজের নির্দেশ দেয় ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করে। আর সকল কর্মের পরিণাম তো আল্লাহর ইচ্ছাধীন। (সূরা হজ্জ- ৪১)
সালাত আল্লাহর স্মরণ লাভের মাধ্যম :
اِنَّنِيْۤ اَنَا اللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَاْ فَاعْبُدْنِيْ وَاَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِيْ
আমিই আল্লাহ, আমি ছাড়া আর কোন মা‘বুদ নেই। অতএব তুমি শুধু আমারই ইবাদাত করো এবং আমার স্মরণের জন্য সালাত প্রতিষ্ঠা করো। (সূরা ত্বা-হা- ১৪)
ব্যাখ্যা : এখানে সালাতের মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। মানুষ যেন আল্লাহ থেকে গাফিল না হয়ে যায় এবং দুনিয়ার দৃশ্যাবলি যেন তাকে এ সত্য বিমুখ না করে দেয় যে, সে কারো বান্দা নয়- এ চিন্তাকে জীবন্ত রাখার এবং আল্লাহর সাথে মানুষের সম্পর্ক জড়ানোর সবচেয়ে বড় মাধ্যম হচ্ছে সালাত। সালাত প্রতিদিন কয়েকবার মানুষকে দুনিয়ার কাজকর্ম থেকে সরিয়ে আল্লাহর দিকে নিয়ে যায়। কেউ কেউ এ অর্থও নিয়েছেন যে, সালাত কায়েম করো যাতে আমি তোমাকে স্মরণ করতে পারি। যেমন অন্যত্র বলা হয়েছে : فَذْكُرُوْنِىْ اَذْكُرْكُمْ অর্থাৎ ‘‘তোমরা আমাকে স্মরণ করো, তাহলে আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব।’’ (সূরা বাক্বারা- ১৫২)
সালাত আল্লাহর সাহায্য লাভের মাধ্যম :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اسْتَعِيْنُوْا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِؕ اِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِيْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন। (সূরা বাক্বারা- ১৫৩)
ব্যাখ্যা : দ্বীনের কঠিন দায়িত্বের বোঝা বহন করার জন্য দু’টি আভ্যন্তরীণ শক্তির প্রয়োজন। একটি হচ্ছে, নিজের মধ্যে ধৈর্য ও সহিঞ্চুতার শক্তি লালন করতে হবে। দ্বিতীয়ত, সালাত আদায়ের মাধ্যমে নিজেকে নৈতিক দিক থেকে শক্তিশালী করতে হবে।
সালাত আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয় :
كَلَّاؕ لَا تُطِعْهُ وَاسْجُدْ وَاقْتَرِبْ
কখনো নয়! তুমি তার (কাফিরের) অনুসরণ করো না। বরং তুমি সিজদা করো এবং (আল্লাহর) নৈকট্য অর্জন করো। (সূরা আলাক্ব- ১৯)
সালাত উপদেশ গ্রহণের জন্য সহায়ক হয় :
اِنَّمَا تُنْذِرُ الَّذِيْنَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَيْبِ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَؕ وَمَنْ تَزَكّٰى فَاِنَّمَا يَتَزَكّٰى لِنَفْسِه ؕ وَاِلَى اللهِ الْمَصِيْرُ
আপনি তো কেবল তাদেরকে সতর্ক করতে পারেন, যারা তাদের প্রতিপালককে না দেখে ভয় করে এবং সালাত কায়েম করে। আর যে কেউ নিজেকে পরিশুদ্ধ করে, সে তো পরিশুদ্ধ করে নিজেরই কল্যাণের জন্য; (অবশেষে) সবাইকে আল্লাহরই কাছে ফিরে যেতে হবে। (সূরা ফাতির- ১৮)
সালাত আদায়কারীরাই কুরআনের হেদায়াত লাভ করে :
ذٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ فِيْهِۚ هُدًى لِّلْمُتَّقِيْنَ -‐ اَ لَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ
এটা ঐ গ্রন্থ যার মধ্যে কোন সন্দেহ নেই; আর মুত্তাক্বীদের জন্য এটা হেদায়াতস্বরূপ। (আর এটা তাদের জন্যও হেদায়াতস্বরূপ) যারা অদৃষ্ট বিষয়গুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদেরকে যে জীবনোপকরণ দান করেছি তা হতে ব্যয় করে। (সূরা বাক্বারা- ২, ৩)
সালাতের মাধ্যমে রুজিতে বরকত হয় :
وَاْمُرْ اَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَاؕ لَا نَسْاَلُكَ رِزْقًاؕ نَحْنُ نَرْزُقُكَؕ وَالْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوٰى
তুমি তোমার পরিবার-পরিজনকে সালাতের নির্দেশ দাও এবং তুমি নিজেও এর উপর অবিচল থাকো। আমি তোমার কাছে রিযিক চাই না, বরং আমিই তোমাকে রিযিক দেব। আর শুভ পরিণাম মুত্তাক্বীদের জন্য। (সূরা ত্বা-হা- ১৩২)
সালাতের মাধ্যমে মানসিক প্রশান্তি লাভ হয় :
وَلَقَدْ نَعْلَمُ اَنَّكَ يَضِيْقُ صَدْرُكَ بِمَا يَقُوْلُوْنَ ‐ - فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَكُنْ مِّنَ السَّاجِدِيْنَ
(হে নবী!) আমি অবশ্যই জানি যে, তারা (তোমার বিরোধীরা) যা বলছে, তাতে তোমার মন সংকীর্ণ হয়ে যায়। অতএব, তুমি প্রশংসার সাথে তোমার রবের তাসবীহ পাঠ করো এবং সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও। (সূরা হিজর- ৯৭, ৯৮)
ব্যাখ্যা : আমাদের নবী মুহাম্মাদ ﷺ যখন ইসলামের দাওয়াত দিতেন, তখন বিরোধীরা নবী ﷺ কে নানা ধরনের কষ্ট দিত। নবী ﷺ কে নিয়ে নানা ধরনের বিদ্রূপ করত, আজে-বাজে কথা বলত; এতে নবী ﷺ মানসিক অশান্তিতে ভোগতেন। এমতাবস্থায় আল্লাহ তা‘আলা নবী ﷺ কে প্রশান্তি লাভের উপায় হিসেবে তাসবীহ পাঠ করার ও সালাতে মশগুল হওয়ার নির্দেশ দিলেন। সত্যের বাণী প্রচার এবং প্রসারের প্রচেষ্টা চালানোর ক্ষেত্রে অশেষ কষ্ট ও বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। এগুলো মুকাবিলা করার শক্তি সালাত ও আল্লাহর ইবাদাত করার মাধ্যমেই অর্জন করতে হবে। এগুলো মনকে প্রশান্তিময় করে তুলবে, ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার জন্ম দেবে, সাহস বাড়িয়ে দেবে এবং এমন যোগ্যতাসম্পন্ন করে গড়ে তুলবে, যার ফলে দুনিয়ার সমস্ত মানুষের নিন্দাবাদ ও প্রতিরোধের মুখেও দৃঢ়ভাবে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হবে।
وَمِنْ اٰنَآءِاللَّيْلِ فَسَبِّحْ وَاَطْرَافَ النَّهَارِ لَعَلَّكَ تَرْضٰى
রাত্রিকালে পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো এবং দিবসের প্রান্তসমূহেও (তাসবীহ পাঠ করো); হয়তো তুমি সন্তুষ্ট লাভ করতে পারবে। (সূরা ত্বা-হা- ১৩০)
ব্যাখ্যা : ইসলামের দুশমনদের অবকাশের শেষ সময় পর্যন্ত তারা যে ধরনের আচরণই করুক না কেন, অবশ্যই তা সহ্য করতে হবে এবং ধৈর্যের সাথে তাদের যাবতীয় তিক্ত কথা শুনেও সত্যবাণী প্রচারের দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে। সালাত থেকে সহিষ্ণুতা ও সংযমের শক্তি লাভ করতে হবে। আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তন সহকারে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করার অর্থ হচ্ছে সালাত আদায় করা। যারা অন্যায়ভাবে বাড়াবাড়ি ও যুলুম করছে তাদেরকে এখনই শাস্তি দেয়া হবে না। ফলে তারা সত্যের আহবায়ককে কষ্ট দিতে থাকবে এবং পৃথিবীতে বুক ফুলিয়েও চলাফেরা করবে। তারা আল্লাহর পক্ষ হতে কোন বাধার সম্মুখীন হবে না। আল্লাহর এ ফায়সালায় সন্তুষ্ট হয়ে কাজ করে যেতে হবে। তাহলে এর এমন ফলাফল সামনে আসবে, যাতে হৃদয় উৎফুল্ল হয়ে উঠবে।
সালাত একটি লাভজনক ব্যবসা :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَتْلُوْنَ كِتَابَ اللهِ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاَنْفَقُوْا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَّعَلَانِيَةً يَّرْجُوْنَ تِجَارَةً لَّنْ تَبُوْرَ
যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, সালাত কায়েম করে এবং যা কিছু আমি তাদেরকে রিযিক হিসেবে দান করেছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে। (এগুলোর দ্বারা) তারা এমন ব্যবসার আশা করে, যাতে কখনো লোকসান হবে না। (সূরা ফাতির- ২৯)
সালাতের প্রতিদান আল্লাহর নিকট পাওয়া যাবে :
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ لَهُمْ اَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْۚ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ
নিশ্চয় যারা ঈমান আনে, সৎকাজ করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত আদায় করে তাদের প্রতিদান তাদের রবের কাছে প্রস্তুত রয়েছে। আর তাদের কোন ভয় নেই এবং কোন চিন্তাও নেই। (সূরা বাক্বারা- ২৭৭)
আল্লাহ সালাত আদায়কারীদের সওয়াব নষ্ট করবেন না :
وَالَّذِيْنَ يُمَسِّكُوْنَ بِالْكِتَابِ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَؕ اِنَّا لَا نُضِيْعُ اَجْرَ الْمُصْلِحِيْنَ
যারা কিতাবকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে এবং সালাত কায়েম করে, নিশ্চয় আমি এরূপ সৎকর্মপরায়ণদের প্রতিদান নষ্ট করি না। (সূরা আ‘রাফ- ১৭০)
সালাত আদায়কারীদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ :
وَبَشِّرِ الْمُخْبِتِيْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ اِذَا ذُكِرَ اللهُ وَجِلَتْ قُلُوْبُهُمْ وَالصَّابِرِيْنَ عَلٰى مَاۤ اَصَابَهُمْ وَالْمُقِيْمِى الصَّلَاةِ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ
সুসংবাদ দাও বিনীতদেরকে, আল্লাহর নাম স্মরণ করা হলে যাদের হৃদয় কম্পিত হয়, যারা বিপদাপদে ধৈর্যধারণ করে, সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যা কিছু রিযিক হিসেবে দিয়েছি তা হতে ব্যয় করে। (সূরা হজ্জ- ৩৪, ৩৫)
শুভ পরিণাম সালাত আদায়কারীদের জন্য :
وَالَّذِيْنَ صَبَرُوا ابْتِغَآءَ وَجْهِ رَبِّهِمْ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاَنْفَقُوْا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَّعَلَانِيَةً وَّيَدْرَءُوْنَ بِالْحَسَنَةِ السَّيِّئَةَ اُولٰٓئِكَ لَهُمْ عُقْبَى الدَّارِ
যারা তাদের প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য ধৈর্যধারণ করে, সালাত কায়েম করে, আমি তাদেরকে যে জীবনোপকরণ দিয়েছি তা হতে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে এবং যারা ভালো দ্বারা মন্দকে দূরীভূত করে, এদের জন্য রয়েছে শুভ পরিণাম। (সূরা রা‘দ- ২২)
সালাত জান্নাত লাভের মাধ্যম :
وَالَّذِيْنَ هُمْ عَلٰى صَلَاتِهِمْ يُحَافِظُوْنَ ‐ اُولٰٓئِكَ فِيْ جَنَّاتٍ مُّكْرَمُوْنَ
যারা নিজেদের সালাতে যত্নবান, তারা জান্নাতে সম্মানিতদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা মা‘আরিজ- ৩৪, ৩৫)
সালাত আদায়কারীরা জান্নাতুল ফিরদাউস লাভ করবে :
وَالَّذِيْنَ هُمْ عَلٰى صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُوْنَ ‐ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْوَارِثُوْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ يَرِثُوْنَ الْفِرْدَوْسَؕ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
যারা নিজেদের সালাতে যত্নবান থাকে, তারাই হবে উত্তরাধিকারী। যারা হবে ফিরদাউসের উত্তরাধিকারী, তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। (সূরা মু’মিনূন, ৯-১১)
সালাত আদায়কারীরা ইসলামী রাষ্ট্রে বসবাসের অধিকার পায় :
فَاِنْ تَابُوْا وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ فَخَلُّوْا سَبِيْلَهُمْؕ اِنَّ اللّٰهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
যদি তারা তাওবা করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয়, তবে তাদের পথ ছেড়ে দেবে; নিশ্চয় আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা তাওবা- ৫)
সালাত মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি করে :
فَاِنْ تَابُوْا وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ فَاِخْوَانُكُمْ فِى الدِّيْنِ
অতঃপর তারা যদি তাওবা করে, সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয়, তবে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই।
(সূরা তাওবা- ১১)
সালাত আদায়কারীরা একে অপরের বন্ধু :
اِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللهُ وَرَسُوْلُهٗ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوا الَّذِيْنَ يُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُوْنَ
তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুমিনগণ; যারা বিনীত হয়ে সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয়। (সূরা মায়েদা- ৫৫)
সালাত আদায়কারী মুমিনরাই আল্লাহর রহমত লাভ করে :
وَالْمُؤْمِنُوْنَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍ يَّاْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَيُطِيْعُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗؕ اُولٰٓئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللهُؕ اِنَّ اللهَ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
মুমিন নারী-পুরুষ একে অপরের বন্ধু, এরা সৎকাজের নির্দেশ দেয় এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে; অচিরেই আল্লাহ তাদের প্রতি দয়া করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা- ৭১)
সালাত আদায়কারীরাই সফলতা লাভ করবে :
قَدْ اَفْلَحَ مَنْ تَزَكّٰى ‐ - وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهٖ فَصَلّٰى
নিশ্চয় সফলতা লাভ করেছে সে, যে নিজেকে পবিত্র করে নিয়েছে এবং তার মালিকের নাম স্মরণ করেছে, অতঃপর সালাত আদায় করেছে। (সূরা আ‘লা- ১৪, ১৫)
قَدْ اَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ ‐ - الَّذِيْنَ هُمْ فِيْ صَلَاتِهِمْ خَاشِعُوْنَ
নিশ্চয় ঐ সকল মুমিনরা সফলকাম হয়েছে, যারা বিনয়ের সাথে সালাত আদায় করে। (সূরা মু’মিনূন- ১, ২)
সালাত পাপকে মুছে দেয় :
وَاَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِّنَ اللَّيْلِؕ اِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِؕ ذٰلِكَ ذِكْرٰى لِلذَّاكِرِيْنَ
তুমি সালাত কায়েম করো দিবসের দু’প্রান্তভাগে ও রজনীর প্রথমাংশে। সৎকর্ম অবশ্যই অসৎকর্মকে মিটিয়ে দেয়। যারা উপদেশ গ্রহণ করে, এটা তাদের জন্য এক উপদেশ। (সূরা হুদ- ১১৪)
ব্যাখ্যা : যেসব অসৎকাজ দুনিয়ায় ছড়িয়ে আছে এবং সত্যের দাওয়াতের বিরোধিতায় ব্যবহৃত হচ্ছে- এসব দূর করার আসল পদ্ধতি হচ্ছে, নিজেদের সৎকাজের সাহায্যে অসৎকাজকে প্রতিহত করা। আর মানুষের সৎ হওয়ার সর্বোত্তম মাধ্যম হচ্ছে সালাত। সালাত আল্লাহর স্মরণকে তাজা করতে থাকে। এর শক্তির সাহায্যে হকপন্থিরা কেবল অসৎকাজের মুকাবিলা করতে পারবে তা নয় বরং দুনিয়ায় কার্যত সৎকাজ ও কল্যাণের ব্যবস্থাও কায়েম করতে পারবে। সালাত এমন একটি ইবাদাত, যা মানুষের মধ্যে আল্লাহর ভয়, সততা, সৎকর্মশীলতা ও পবিত্রতার আবেগ এবং আল্লাহর বিধানের আনুগত্যের ভাবধারা সৃষ্টি করে। সেই সাথে তাকে ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখে। মানুষের মধ্যে এ বিষয়গুলো না থাকলে সে কখনো আল্লাহর বিধানের আনুগত্য করার ক্ষেত্রে অবিচল নিষ্ঠার পরিচয় দিতে পারে না।
সালাত নৈতিক শক্তি অর্জনে সহায়ক হয় :
اُتْلُ مَاۤ اُوْحِيَ اِلَيْكَ مِنَ الْكِتَابِ وَاَقِمِ الصَّلَاةَ
তোমার কাছে ওহীর মাধ্যমে যে কিতাব পাঠানো হয়েছে তা পাঠ করো এবং সালাত কায়েম করো। (সূরা আনকাবূত- ৪৫)
ব্যাখ্যা : প্রচন্ড বাধা মুকাবিলা করার জন্য বস্তুগত শক্তির চেয়েও বেশি প্রয়োজন নৈতিক শক্তির। এ নৈতিক শক্তির বিকাশ সাধনের জন্য প্রথমত দু’টি ব্যবস্থা। একটি হচ্ছে, কুরআন তিলাওয়াত করা এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে, সালাত প্রতিষ্ঠা করা। সালাত প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে এমন একটি ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে দুষ্কৃতি থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। বিকৃত কোন সমাজের মধ্যে যদি এমন কোন আন্দোলন সৃষ্টি হয়, যার সাথে জড়িত হওয়ার সাথে সাথেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ নৈতিক দিক দিয়ে পরিবর্তিত হয়ে যায় এবং তাদের চরিত্র সংশোধিত হয়ে যায়, তখন অবশ্যই তা প্রভাব বিস্তার করবে। জাহেলিয়াতের যেসব দুষ্কৃতি শত শত বছর থেকে চলে আসছিল, তাকে প্রতিষ্ঠিত রাখার জন্য যারা সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের মুকাবিলা করার জন্য কুরআন মুসলিমদের বস্তুগত শক্তি সংগ্রহ করার পরিবর্তে সালাত কায়েম করার নির্দেশ দিয়েছে। এর ফলে তারা এমন চারিত্রিক শক্তির অধিকারী হবে, যার ফলে মানুষের মন জয় করা সম্ভব হবে এবং আল্লাহর সাহায্যে শত্রুকে পরাজিত করা যাবে।
সালাত মানুষকে পাপকাজ থেকে বিরত রাখে :
اِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهٰى عَنِ الْفَحْشَآءِ وَالْمُنْكَرِ
নিশ্চয় সালাত মানুষকে অশ্লীল ও গর্হিত কাজ থেকে দূরে রাখে। (সূরা আনকাবূত- ৪৫)
ব্যাখ্যা : সালাতের একটি অনিবার্য গুণ হলো, তা মানুষকে অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে। যে ব্যক্তিই সালাতের ব্যাপারে সামান্য চিন্তা করবে সে-ই স্বীকার করবে যে, মানুষকে খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য সালাত যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। যখন মানুষ শরীর ও পোশাকের পবিত্রতা অর্জন করে সালাতের আরকান-আহকামসহ দিনে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত প্রতিষ্ঠা করে, তখন তার অন্তরে প্রশান্তি সঞ্চারিত হয় এবং তার মধ্যে নিজ দায়িত্বের প্রতি অনুভূতি সৃষ্টি হয়। আর তার ঈমান প্রজ্জ্বলিত হয়, যার মাধ্যমে সে বুঝতে পারে যে তার সাথে কেউ থাক বা না থাক, গোপনে ও প্রকাশ্যে সকল অবস্থায় তাকে এক আল্লাহর আইন মেনে চলতেই হবে। নিয়মিত সুন্দরভাবে সালাত আদায় করলে শরীর ও মন পবিত্র থাকে, তখন ভালো কাজের দিকে মন আকৃষ্ট হয় এবং খারাপ কাজের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হয়। আর সালাতের দাবিও এটাই। দুনিয়ায় দ্বিতীয় এমন কোন অনুশীলন পদ্ধতি নেই, যা মানুষকে দুষ্কৃতি থেকে বিরত রাখার ক্ষেত্রে সালাতের চেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে।
তবে প্রশ্ন থেকে যায়, অনেক মানুষ নিয়মিত সালাত আদায় করার পরও খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকতে পারে না কেন? জবাবে বলা যায়, এটা নির্ভর করে তার আন্তরিকতা ও প্রচেষ্টার উপর। সে যদি এ থেকে উপকৃত হওয়ার সংকল্প করে এবং এজন্য প্রচেষ্টা চালায়, তাহলে সালাতের সংশোধনমূলক প্রভাব তার উপর পড়বেই। দুনিয়ার কোন সংশোধন ঐ ব্যক্তির উপর কার্যকর হতে পারে না, যে তার প্রভাব গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয় অথবা জেনে বুঝে তার প্রভাবকে দূরে সরিয়ে দেয়। যার সালাত তাকে অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে না, তার সালাতই ফলপ্রসূ হয় না।
সালাত মানুষের গোটা জীবনকে ইসলামের দিকে ঘুরিয়ে দেয় :
قَالُوْا يَا شُعَيْبُ اَصَلَاتُكَ تَاْمُرُكَ اَنْ نَّتْرُكَ مَا يَعْبُدُ اٰبَآؤُنَاۤ اَوْ اَنْ نَّفْعَلَ فِۤيْ اَمْوَالِنَا مَا نَشَآءُۚ اِنَّكَ لَاَنْتَ الْحَلِيْمُ الرَّشِيْدُ
তারা বলল, হে শুয়াইব! তোমার সালাত কি তোমাকে এ নির্দেশ দেয় যে, আমাদের পিতৃপুরুষরা যার ইবাদাত করত আমাদেরকে তা বর্জন করতে হবে, অথবা আমরা আমাদের ধনসম্পদ সম্পর্কে যা করি তাও (বর্জন করতে হবে)? তুমি তো অবশ্যই সহিষ্ণু ও ভালো মানুষ। (সূরা হুদ- ৮৭)
ব্যাখ্যা : সালাতের বৈশিষ্ট্য হলো, সালাত মানুষের গোটা জীবনকে ইসলামের দিকে ঘুরিয়ে দেয় এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুম পালনে অভ্যস্ত করে। এটি যার মধ্যে সৃষ্টি হয় সে কেবল নিজের সৎ ও পরিচ্ছন্ন কর্মধারার উপরই সন্তুষ্ট থাকে না বরং অন্যদেরকেও সংশোধন করতে চেষ্টা করে। ফলে সে শরীয়াত বিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সমালোচনা না করে স্থির থাকতে পারে না। আল্লাহর আনুগত্য শুধুমাত্র ইসলামের একটি অংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা উচিত নয় বরং সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক তথা জীবনের সকল বিভাগেই হওয়া উচিত। কারণ দুনিয়ায় মানুষের কাছে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর মালিকানাধীন। আল্লাহর ইচ্ছার সীমা ভেদ করে স্বাধীনভাবে কোন একটি জিনিসও ব্যবহার করার অধিকার মানুষের নেই। যে সমাজ আল্লাহকে ভুলে গেছে এবং ফাসিকী কার্যকলাপের মধ্যে ডুবে আছে, তারা সালাত নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। যেহেতু সালাত দ্বীনদারীর সবচেয়ে সুস্পষ্ট চিহ্ন, তাই এ ধরনের লোকদের সমাজে সালাত ইবাদাতের পরিবর্তে রোগ হিসেবে গণ্য হয়। নিজেদের মধ্যে কাউকে সালাত আদায় করতে দেখলে সাথে সাথেই তাদের মনে এ অনুভূতি জাগে যে, এ ব্যক্তির উপর দ্বীনদারীর আক্রমণ ঘটেছে।
সালাত শরীয়াতের অন্যান্য হুকুম পালনে সাহায্য করে :
قَدْ اَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ ‐ اَلَّذِيْنَ هُمْ فِيْ صَلَاتِهِمْ خَاشِعُوْنَ ‐ وَالَّذِيْنَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُوْنَ ‐ وَالَّذِيْنَ هُمْ لِلزَّكَاةِ فَاعِلُوْنَ ‐ وَالَّذِيْنَ هُمْ لِفُرُوْجِهِمْ حَافِظُوْنَ ‐ اِلَّا عَلٰۤى اَزْوَاجِهِمْ اَوْ مَا مَلَكَتْ اَيْمَانُهُمْ فَاِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُوْمِيْنَ ‐ فَمَنِ ابْتَغٰى وَرَآءَ ذٰلِكَ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْعَادُوْنَ ‐ وَالَّذِيْنَ هُمْ لِاَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُوْنَ ‐ وَالَّذِيْنَ هُمْ عَلٰى صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُوْنَ
অবশ্যই মুমিনগণ সফলকাম হয়েছে, যারা নিজেদের সালাতে বিনয়ী, যারা অনর্থক কাজকর্ম হতে বিরত থাকে, যারা যাকাত দানে সক্রিয়, যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে, তবে নিজ স্ত্রী অথবা অধিকারভুক্ত দাসী ব্যতীত; এতে তারা নিন্দনীয় হবে না। তবে কেউ তাদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তারা সীমালঙ্ঘনকারী হিসেবে গণ্য হবে। আর যারা নিজেদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে এবং যারা নিজেদের সালাতে যত্নবান থাকে। (সূরা মু’মিনূন, ১-৯)
ব্যাখ্যা : এখানে আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের বেশ কয়েকটি গুণাবলি উল্লেখ করেছেন। এতে শুরুতেই এসেছে সালাতের কথা আবার শেষেও বলা হয়েছে সালাতের কথা। অনুরূপভাবে সূরা মা‘আরিজ এর ১৯ থেকে ৩৫ আয়াতেও একই ধারা লক্ষ্য করা যায়। এ থেকে অতি সহজেই এটা বুঝা যাচ্ছে যে, বান্দা যদি সঠিকভাবে সালাত কায়েম করতে পারে, তাহলে ইসলামের অন্যান্য বিধান পালন করা তার জন্য সহজ হয়ে যাবে।
اِنَّنِيْۤ اَنَا اللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَاْ فَاعْبُدْنِيْ وَاَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِيْ
আমিই আল্লাহ, আমি ছাড়া আর কোন মা‘বুদ নেই। অতএব তুমি শুধু আমারই ইবাদাত করো এবং আমার স্মরণের জন্য সালাত প্রতিষ্ঠা করো। (সূরা ত্বা-হা- ১৪)
ব্যাখ্যা : এখানে সালাতের মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। মানুষ যেন আল্লাহ থেকে গাফিল না হয়ে যায় এবং দুনিয়ার দৃশ্যাবলি যেন তাকে এ সত্য বিমুখ না করে দেয় যে, সে কারো বান্দা নয়- এ চিন্তাকে জীবন্ত রাখার এবং আল্লাহর সাথে মানুষের সম্পর্ক জড়ানোর সবচেয়ে বড় মাধ্যম হচ্ছে সালাত। সালাত প্রতিদিন কয়েকবার মানুষকে দুনিয়ার কাজকর্ম থেকে সরিয়ে আল্লাহর দিকে নিয়ে যায়। কেউ কেউ এ অর্থও নিয়েছেন যে, সালাত কায়েম করো যাতে আমি তোমাকে স্মরণ করতে পারি। যেমন অন্যত্র বলা হয়েছে : فَذْكُرُوْنِىْ اَذْكُرْكُمْ অর্থাৎ ‘‘তোমরা আমাকে স্মরণ করো, তাহলে আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব।’’ (সূরা বাক্বারা- ১৫২)
সালাত আল্লাহর সাহায্য লাভের মাধ্যম :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اسْتَعِيْنُوْا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِؕ اِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِيْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন। (সূরা বাক্বারা- ১৫৩)
ব্যাখ্যা : দ্বীনের কঠিন দায়িত্বের বোঝা বহন করার জন্য দু’টি আভ্যন্তরীণ শক্তির প্রয়োজন। একটি হচ্ছে, নিজের মধ্যে ধৈর্য ও সহিঞ্চুতার শক্তি লালন করতে হবে। দ্বিতীয়ত, সালাত আদায়ের মাধ্যমে নিজেকে নৈতিক দিক থেকে শক্তিশালী করতে হবে।
সালাত আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয় :
كَلَّاؕ لَا تُطِعْهُ وَاسْجُدْ وَاقْتَرِبْ
কখনো নয়! তুমি তার (কাফিরের) অনুসরণ করো না। বরং তুমি সিজদা করো এবং (আল্লাহর) নৈকট্য অর্জন করো। (সূরা আলাক্ব- ১৯)
সালাত উপদেশ গ্রহণের জন্য সহায়ক হয় :
اِنَّمَا تُنْذِرُ الَّذِيْنَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَيْبِ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَؕ وَمَنْ تَزَكّٰى فَاِنَّمَا يَتَزَكّٰى لِنَفْسِه ؕ وَاِلَى اللهِ الْمَصِيْرُ
আপনি তো কেবল তাদেরকে সতর্ক করতে পারেন, যারা তাদের প্রতিপালককে না দেখে ভয় করে এবং সালাত কায়েম করে। আর যে কেউ নিজেকে পরিশুদ্ধ করে, সে তো পরিশুদ্ধ করে নিজেরই কল্যাণের জন্য; (অবশেষে) সবাইকে আল্লাহরই কাছে ফিরে যেতে হবে। (সূরা ফাতির- ১৮)
সালাত আদায়কারীরাই কুরআনের হেদায়াত লাভ করে :
ذٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ فِيْهِۚ هُدًى لِّلْمُتَّقِيْنَ -‐ اَ لَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ
এটা ঐ গ্রন্থ যার মধ্যে কোন সন্দেহ নেই; আর মুত্তাক্বীদের জন্য এটা হেদায়াতস্বরূপ। (আর এটা তাদের জন্যও হেদায়াতস্বরূপ) যারা অদৃষ্ট বিষয়গুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদেরকে যে জীবনোপকরণ দান করেছি তা হতে ব্যয় করে। (সূরা বাক্বারা- ২, ৩)
সালাতের মাধ্যমে রুজিতে বরকত হয় :
وَاْمُرْ اَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَاؕ لَا نَسْاَلُكَ رِزْقًاؕ نَحْنُ نَرْزُقُكَؕ وَالْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوٰى
তুমি তোমার পরিবার-পরিজনকে সালাতের নির্দেশ দাও এবং তুমি নিজেও এর উপর অবিচল থাকো। আমি তোমার কাছে রিযিক চাই না, বরং আমিই তোমাকে রিযিক দেব। আর শুভ পরিণাম মুত্তাক্বীদের জন্য। (সূরা ত্বা-হা- ১৩২)
সালাতের মাধ্যমে মানসিক প্রশান্তি লাভ হয় :
وَلَقَدْ نَعْلَمُ اَنَّكَ يَضِيْقُ صَدْرُكَ بِمَا يَقُوْلُوْنَ ‐ - فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَكُنْ مِّنَ السَّاجِدِيْنَ
(হে নবী!) আমি অবশ্যই জানি যে, তারা (তোমার বিরোধীরা) যা বলছে, তাতে তোমার মন সংকীর্ণ হয়ে যায়। অতএব, তুমি প্রশংসার সাথে তোমার রবের তাসবীহ পাঠ করো এবং সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও। (সূরা হিজর- ৯৭, ৯৮)
ব্যাখ্যা : আমাদের নবী মুহাম্মাদ ﷺ যখন ইসলামের দাওয়াত দিতেন, তখন বিরোধীরা নবী ﷺ কে নানা ধরনের কষ্ট দিত। নবী ﷺ কে নিয়ে নানা ধরনের বিদ্রূপ করত, আজে-বাজে কথা বলত; এতে নবী ﷺ মানসিক অশান্তিতে ভোগতেন। এমতাবস্থায় আল্লাহ তা‘আলা নবী ﷺ কে প্রশান্তি লাভের উপায় হিসেবে তাসবীহ পাঠ করার ও সালাতে মশগুল হওয়ার নির্দেশ দিলেন। সত্যের বাণী প্রচার এবং প্রসারের প্রচেষ্টা চালানোর ক্ষেত্রে অশেষ কষ্ট ও বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। এগুলো মুকাবিলা করার শক্তি সালাত ও আল্লাহর ইবাদাত করার মাধ্যমেই অর্জন করতে হবে। এগুলো মনকে প্রশান্তিময় করে তুলবে, ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার জন্ম দেবে, সাহস বাড়িয়ে দেবে এবং এমন যোগ্যতাসম্পন্ন করে গড়ে তুলবে, যার ফলে দুনিয়ার সমস্ত মানুষের নিন্দাবাদ ও প্রতিরোধের মুখেও দৃঢ়ভাবে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হবে।
وَمِنْ اٰنَآءِاللَّيْلِ فَسَبِّحْ وَاَطْرَافَ النَّهَارِ لَعَلَّكَ تَرْضٰى
রাত্রিকালে পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো এবং দিবসের প্রান্তসমূহেও (তাসবীহ পাঠ করো); হয়তো তুমি সন্তুষ্ট লাভ করতে পারবে। (সূরা ত্বা-হা- ১৩০)
ব্যাখ্যা : ইসলামের দুশমনদের অবকাশের শেষ সময় পর্যন্ত তারা যে ধরনের আচরণই করুক না কেন, অবশ্যই তা সহ্য করতে হবে এবং ধৈর্যের সাথে তাদের যাবতীয় তিক্ত কথা শুনেও সত্যবাণী প্রচারের দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে। সালাত থেকে সহিষ্ণুতা ও সংযমের শক্তি লাভ করতে হবে। আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তন সহকারে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করার অর্থ হচ্ছে সালাত আদায় করা। যারা অন্যায়ভাবে বাড়াবাড়ি ও যুলুম করছে তাদেরকে এখনই শাস্তি দেয়া হবে না। ফলে তারা সত্যের আহবায়ককে কষ্ট দিতে থাকবে এবং পৃথিবীতে বুক ফুলিয়েও চলাফেরা করবে। তারা আল্লাহর পক্ষ হতে কোন বাধার সম্মুখীন হবে না। আল্লাহর এ ফায়সালায় সন্তুষ্ট হয়ে কাজ করে যেতে হবে। তাহলে এর এমন ফলাফল সামনে আসবে, যাতে হৃদয় উৎফুল্ল হয়ে উঠবে।
সালাত একটি লাভজনক ব্যবসা :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَتْلُوْنَ كِتَابَ اللهِ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاَنْفَقُوْا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَّعَلَانِيَةً يَّرْجُوْنَ تِجَارَةً لَّنْ تَبُوْرَ
যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, সালাত কায়েম করে এবং যা কিছু আমি তাদেরকে রিযিক হিসেবে দান করেছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে। (এগুলোর দ্বারা) তারা এমন ব্যবসার আশা করে, যাতে কখনো লোকসান হবে না। (সূরা ফাতির- ২৯)
সালাতের প্রতিদান আল্লাহর নিকট পাওয়া যাবে :
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ لَهُمْ اَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْۚ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ
নিশ্চয় যারা ঈমান আনে, সৎকাজ করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত আদায় করে তাদের প্রতিদান তাদের রবের কাছে প্রস্তুত রয়েছে। আর তাদের কোন ভয় নেই এবং কোন চিন্তাও নেই। (সূরা বাক্বারা- ২৭৭)
আল্লাহ সালাত আদায়কারীদের সওয়াব নষ্ট করবেন না :
وَالَّذِيْنَ يُمَسِّكُوْنَ بِالْكِتَابِ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَؕ اِنَّا لَا نُضِيْعُ اَجْرَ الْمُصْلِحِيْنَ
যারা কিতাবকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে এবং সালাত কায়েম করে, নিশ্চয় আমি এরূপ সৎকর্মপরায়ণদের প্রতিদান নষ্ট করি না। (সূরা আ‘রাফ- ১৭০)
সালাত আদায়কারীদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ :
وَبَشِّرِ الْمُخْبِتِيْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ اِذَا ذُكِرَ اللهُ وَجِلَتْ قُلُوْبُهُمْ وَالصَّابِرِيْنَ عَلٰى مَاۤ اَصَابَهُمْ وَالْمُقِيْمِى الصَّلَاةِ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ
সুসংবাদ দাও বিনীতদেরকে, আল্লাহর নাম স্মরণ করা হলে যাদের হৃদয় কম্পিত হয়, যারা বিপদাপদে ধৈর্যধারণ করে, সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যা কিছু রিযিক হিসেবে দিয়েছি তা হতে ব্যয় করে। (সূরা হজ্জ- ৩৪, ৩৫)
শুভ পরিণাম সালাত আদায়কারীদের জন্য :
وَالَّذِيْنَ صَبَرُوا ابْتِغَآءَ وَجْهِ رَبِّهِمْ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاَنْفَقُوْا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَّعَلَانِيَةً وَّيَدْرَءُوْنَ بِالْحَسَنَةِ السَّيِّئَةَ اُولٰٓئِكَ لَهُمْ عُقْبَى الدَّارِ
যারা তাদের প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য ধৈর্যধারণ করে, সালাত কায়েম করে, আমি তাদেরকে যে জীবনোপকরণ দিয়েছি তা হতে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে এবং যারা ভালো দ্বারা মন্দকে দূরীভূত করে, এদের জন্য রয়েছে শুভ পরিণাম। (সূরা রা‘দ- ২২)
সালাত জান্নাত লাভের মাধ্যম :
وَالَّذِيْنَ هُمْ عَلٰى صَلَاتِهِمْ يُحَافِظُوْنَ ‐ اُولٰٓئِكَ فِيْ جَنَّاتٍ مُّكْرَمُوْنَ
যারা নিজেদের সালাতে যত্নবান, তারা জান্নাতে সম্মানিতদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা মা‘আরিজ- ৩৪, ৩৫)
সালাত আদায়কারীরা জান্নাতুল ফিরদাউস লাভ করবে :
وَالَّذِيْنَ هُمْ عَلٰى صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُوْنَ ‐ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْوَارِثُوْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ يَرِثُوْنَ الْفِرْدَوْسَؕ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
যারা নিজেদের সালাতে যত্নবান থাকে, তারাই হবে উত্তরাধিকারী। যারা হবে ফিরদাউসের উত্তরাধিকারী, তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। (সূরা মু’মিনূন, ৯-১১)
সালাত আদায়কারীরা ইসলামী রাষ্ট্রে বসবাসের অধিকার পায় :
فَاِنْ تَابُوْا وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ فَخَلُّوْا سَبِيْلَهُمْؕ اِنَّ اللّٰهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
যদি তারা তাওবা করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয়, তবে তাদের পথ ছেড়ে দেবে; নিশ্চয় আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা তাওবা- ৫)
সালাত মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি করে :
فَاِنْ تَابُوْا وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ فَاِخْوَانُكُمْ فِى الدِّيْنِ
অতঃপর তারা যদি তাওবা করে, সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয়, তবে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই।
(সূরা তাওবা- ১১)
সালাত আদায়কারীরা একে অপরের বন্ধু :
اِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللهُ وَرَسُوْلُهٗ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوا الَّذِيْنَ يُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُوْنَ
তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুমিনগণ; যারা বিনীত হয়ে সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয়। (সূরা মায়েদা- ৫৫)
সালাত আদায়কারী মুমিনরাই আল্লাহর রহমত লাভ করে :
وَالْمُؤْمِنُوْنَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍ يَّاْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَيُطِيْعُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗؕ اُولٰٓئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللهُؕ اِنَّ اللهَ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
মুমিন নারী-পুরুষ একে অপরের বন্ধু, এরা সৎকাজের নির্দেশ দেয় এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে; অচিরেই আল্লাহ তাদের প্রতি দয়া করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা- ৭১)
সালাত আদায়কারীরাই সফলতা লাভ করবে :
قَدْ اَفْلَحَ مَنْ تَزَكّٰى ‐ - وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهٖ فَصَلّٰى
নিশ্চয় সফলতা লাভ করেছে সে, যে নিজেকে পবিত্র করে নিয়েছে এবং তার মালিকের নাম স্মরণ করেছে, অতঃপর সালাত আদায় করেছে। (সূরা আ‘লা- ১৪, ১৫)
قَدْ اَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ ‐ - الَّذِيْنَ هُمْ فِيْ صَلَاتِهِمْ خَاشِعُوْنَ
নিশ্চয় ঐ সকল মুমিনরা সফলকাম হয়েছে, যারা বিনয়ের সাথে সালাত আদায় করে। (সূরা মু’মিনূন- ১, ২)
সালাত পাপকে মুছে দেয় :
وَاَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِّنَ اللَّيْلِؕ اِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِؕ ذٰلِكَ ذِكْرٰى لِلذَّاكِرِيْنَ
তুমি সালাত কায়েম করো দিবসের দু’প্রান্তভাগে ও রজনীর প্রথমাংশে। সৎকর্ম অবশ্যই অসৎকর্মকে মিটিয়ে দেয়। যারা উপদেশ গ্রহণ করে, এটা তাদের জন্য এক উপদেশ। (সূরা হুদ- ১১৪)
ব্যাখ্যা : যেসব অসৎকাজ দুনিয়ায় ছড়িয়ে আছে এবং সত্যের দাওয়াতের বিরোধিতায় ব্যবহৃত হচ্ছে- এসব দূর করার আসল পদ্ধতি হচ্ছে, নিজেদের সৎকাজের সাহায্যে অসৎকাজকে প্রতিহত করা। আর মানুষের সৎ হওয়ার সর্বোত্তম মাধ্যম হচ্ছে সালাত। সালাত আল্লাহর স্মরণকে তাজা করতে থাকে। এর শক্তির সাহায্যে হকপন্থিরা কেবল অসৎকাজের মুকাবিলা করতে পারবে তা নয় বরং দুনিয়ায় কার্যত সৎকাজ ও কল্যাণের ব্যবস্থাও কায়েম করতে পারবে। সালাত এমন একটি ইবাদাত, যা মানুষের মধ্যে আল্লাহর ভয়, সততা, সৎকর্মশীলতা ও পবিত্রতার আবেগ এবং আল্লাহর বিধানের আনুগত্যের ভাবধারা সৃষ্টি করে। সেই সাথে তাকে ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখে। মানুষের মধ্যে এ বিষয়গুলো না থাকলে সে কখনো আল্লাহর বিধানের আনুগত্য করার ক্ষেত্রে অবিচল নিষ্ঠার পরিচয় দিতে পারে না।
সালাত নৈতিক শক্তি অর্জনে সহায়ক হয় :
اُتْلُ مَاۤ اُوْحِيَ اِلَيْكَ مِنَ الْكِتَابِ وَاَقِمِ الصَّلَاةَ
তোমার কাছে ওহীর মাধ্যমে যে কিতাব পাঠানো হয়েছে তা পাঠ করো এবং সালাত কায়েম করো। (সূরা আনকাবূত- ৪৫)
ব্যাখ্যা : প্রচন্ড বাধা মুকাবিলা করার জন্য বস্তুগত শক্তির চেয়েও বেশি প্রয়োজন নৈতিক শক্তির। এ নৈতিক শক্তির বিকাশ সাধনের জন্য প্রথমত দু’টি ব্যবস্থা। একটি হচ্ছে, কুরআন তিলাওয়াত করা এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে, সালাত প্রতিষ্ঠা করা। সালাত প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে এমন একটি ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে দুষ্কৃতি থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। বিকৃত কোন সমাজের মধ্যে যদি এমন কোন আন্দোলন সৃষ্টি হয়, যার সাথে জড়িত হওয়ার সাথে সাথেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ নৈতিক দিক দিয়ে পরিবর্তিত হয়ে যায় এবং তাদের চরিত্র সংশোধিত হয়ে যায়, তখন অবশ্যই তা প্রভাব বিস্তার করবে। জাহেলিয়াতের যেসব দুষ্কৃতি শত শত বছর থেকে চলে আসছিল, তাকে প্রতিষ্ঠিত রাখার জন্য যারা সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের মুকাবিলা করার জন্য কুরআন মুসলিমদের বস্তুগত শক্তি সংগ্রহ করার পরিবর্তে সালাত কায়েম করার নির্দেশ দিয়েছে। এর ফলে তারা এমন চারিত্রিক শক্তির অধিকারী হবে, যার ফলে মানুষের মন জয় করা সম্ভব হবে এবং আল্লাহর সাহায্যে শত্রুকে পরাজিত করা যাবে।
সালাত মানুষকে পাপকাজ থেকে বিরত রাখে :
اِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهٰى عَنِ الْفَحْشَآءِ وَالْمُنْكَرِ
নিশ্চয় সালাত মানুষকে অশ্লীল ও গর্হিত কাজ থেকে দূরে রাখে। (সূরা আনকাবূত- ৪৫)
ব্যাখ্যা : সালাতের একটি অনিবার্য গুণ হলো, তা মানুষকে অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে। যে ব্যক্তিই সালাতের ব্যাপারে সামান্য চিন্তা করবে সে-ই স্বীকার করবে যে, মানুষকে খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য সালাত যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। যখন মানুষ শরীর ও পোশাকের পবিত্রতা অর্জন করে সালাতের আরকান-আহকামসহ দিনে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত প্রতিষ্ঠা করে, তখন তার অন্তরে প্রশান্তি সঞ্চারিত হয় এবং তার মধ্যে নিজ দায়িত্বের প্রতি অনুভূতি সৃষ্টি হয়। আর তার ঈমান প্রজ্জ্বলিত হয়, যার মাধ্যমে সে বুঝতে পারে যে তার সাথে কেউ থাক বা না থাক, গোপনে ও প্রকাশ্যে সকল অবস্থায় তাকে এক আল্লাহর আইন মেনে চলতেই হবে। নিয়মিত সুন্দরভাবে সালাত আদায় করলে শরীর ও মন পবিত্র থাকে, তখন ভালো কাজের দিকে মন আকৃষ্ট হয় এবং খারাপ কাজের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হয়। আর সালাতের দাবিও এটাই। দুনিয়ায় দ্বিতীয় এমন কোন অনুশীলন পদ্ধতি নেই, যা মানুষকে দুষ্কৃতি থেকে বিরত রাখার ক্ষেত্রে সালাতের চেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে।
তবে প্রশ্ন থেকে যায়, অনেক মানুষ নিয়মিত সালাত আদায় করার পরও খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকতে পারে না কেন? জবাবে বলা যায়, এটা নির্ভর করে তার আন্তরিকতা ও প্রচেষ্টার উপর। সে যদি এ থেকে উপকৃত হওয়ার সংকল্প করে এবং এজন্য প্রচেষ্টা চালায়, তাহলে সালাতের সংশোধনমূলক প্রভাব তার উপর পড়বেই। দুনিয়ার কোন সংশোধন ঐ ব্যক্তির উপর কার্যকর হতে পারে না, যে তার প্রভাব গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয় অথবা জেনে বুঝে তার প্রভাবকে দূরে সরিয়ে দেয়। যার সালাত তাকে অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে না, তার সালাতই ফলপ্রসূ হয় না।
সালাত মানুষের গোটা জীবনকে ইসলামের দিকে ঘুরিয়ে দেয় :
قَالُوْا يَا شُعَيْبُ اَصَلَاتُكَ تَاْمُرُكَ اَنْ نَّتْرُكَ مَا يَعْبُدُ اٰبَآؤُنَاۤ اَوْ اَنْ نَّفْعَلَ فِۤيْ اَمْوَالِنَا مَا نَشَآءُۚ اِنَّكَ لَاَنْتَ الْحَلِيْمُ الرَّشِيْدُ
তারা বলল, হে শুয়াইব! তোমার সালাত কি তোমাকে এ নির্দেশ দেয় যে, আমাদের পিতৃপুরুষরা যার ইবাদাত করত আমাদেরকে তা বর্জন করতে হবে, অথবা আমরা আমাদের ধনসম্পদ সম্পর্কে যা করি তাও (বর্জন করতে হবে)? তুমি তো অবশ্যই সহিষ্ণু ও ভালো মানুষ। (সূরা হুদ- ৮৭)
ব্যাখ্যা : সালাতের বৈশিষ্ট্য হলো, সালাত মানুষের গোটা জীবনকে ইসলামের দিকে ঘুরিয়ে দেয় এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুম পালনে অভ্যস্ত করে। এটি যার মধ্যে সৃষ্টি হয় সে কেবল নিজের সৎ ও পরিচ্ছন্ন কর্মধারার উপরই সন্তুষ্ট থাকে না বরং অন্যদেরকেও সংশোধন করতে চেষ্টা করে। ফলে সে শরীয়াত বিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সমালোচনা না করে স্থির থাকতে পারে না। আল্লাহর আনুগত্য শুধুমাত্র ইসলামের একটি অংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা উচিত নয় বরং সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক তথা জীবনের সকল বিভাগেই হওয়া উচিত। কারণ দুনিয়ায় মানুষের কাছে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর মালিকানাধীন। আল্লাহর ইচ্ছার সীমা ভেদ করে স্বাধীনভাবে কোন একটি জিনিসও ব্যবহার করার অধিকার মানুষের নেই। যে সমাজ আল্লাহকে ভুলে গেছে এবং ফাসিকী কার্যকলাপের মধ্যে ডুবে আছে, তারা সালাত নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। যেহেতু সালাত দ্বীনদারীর সবচেয়ে সুস্পষ্ট চিহ্ন, তাই এ ধরনের লোকদের সমাজে সালাত ইবাদাতের পরিবর্তে রোগ হিসেবে গণ্য হয়। নিজেদের মধ্যে কাউকে সালাত আদায় করতে দেখলে সাথে সাথেই তাদের মনে এ অনুভূতি জাগে যে, এ ব্যক্তির উপর দ্বীনদারীর আক্রমণ ঘটেছে।
সালাত শরীয়াতের অন্যান্য হুকুম পালনে সাহায্য করে :
قَدْ اَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ ‐ اَلَّذِيْنَ هُمْ فِيْ صَلَاتِهِمْ خَاشِعُوْنَ ‐ وَالَّذِيْنَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُوْنَ ‐ وَالَّذِيْنَ هُمْ لِلزَّكَاةِ فَاعِلُوْنَ ‐ وَالَّذِيْنَ هُمْ لِفُرُوْجِهِمْ حَافِظُوْنَ ‐ اِلَّا عَلٰۤى اَزْوَاجِهِمْ اَوْ مَا مَلَكَتْ اَيْمَانُهُمْ فَاِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُوْمِيْنَ ‐ فَمَنِ ابْتَغٰى وَرَآءَ ذٰلِكَ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْعَادُوْنَ ‐ وَالَّذِيْنَ هُمْ لِاَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُوْنَ ‐ وَالَّذِيْنَ هُمْ عَلٰى صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُوْنَ
অবশ্যই মুমিনগণ সফলকাম হয়েছে, যারা নিজেদের সালাতে বিনয়ী, যারা অনর্থক কাজকর্ম হতে বিরত থাকে, যারা যাকাত দানে সক্রিয়, যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে, তবে নিজ স্ত্রী অথবা অধিকারভুক্ত দাসী ব্যতীত; এতে তারা নিন্দনীয় হবে না। তবে কেউ তাদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তারা সীমালঙ্ঘনকারী হিসেবে গণ্য হবে। আর যারা নিজেদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে এবং যারা নিজেদের সালাতে যত্নবান থাকে। (সূরা মু’মিনূন, ১-৯)
ব্যাখ্যা : এখানে আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের বেশ কয়েকটি গুণাবলি উল্লেখ করেছেন। এতে শুরুতেই এসেছে সালাতের কথা আবার শেষেও বলা হয়েছে সালাতের কথা। অনুরূপভাবে সূরা মা‘আরিজ এর ১৯ থেকে ৩৫ আয়াতেও একই ধারা লক্ষ্য করা যায়। এ থেকে অতি সহজেই এটা বুঝা যাচ্ছে যে, বান্দা যদি সঠিকভাবে সালাত কায়েম করতে পারে, তাহলে ইসলামের অন্যান্য বিধান পালন করা তার জন্য সহজ হয়ে যাবে।
পবিত্রতা অর্জন করতে হবে :
لَمَسْجِدٌ اُسِّسَ عَلَى التَّقْوٰى مِنْ اَوَّلِ يَوْمٍ اَحَقُّ اَنْ تَقُوْمَ فِيْهِ ؕ فِيهِ رِجَالٌ يُّحِبُّوْنَ اَنْ يَّتَطَهَّرُوْاؕ وَاللهُ يُحِبُّ الْمُطَّهِّرِيْنَ
যে মসজিদের ভিত্তি প্রথম দিন হতেই তাক্বওয়ার উপর স্থাপিত হয়েছে, সেটাই তোমার সালাতের জন্য অধিক উপযুক্ত। তথায় এমন লোক আছে, যারা পবিত্রতা অর্জন করতে ভালোবাসে; আর আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে পছন্দ করেন। (সূরা তাওবা- ১০৮)
সালাতের পূর্বে ওযু করতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا قُمْتُمْ اِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوْا وُجُوْهَكُمْ وَاَيْدِيَكُمْ اِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوْا بِرُءُوْسِكُمْ وَاَرْجُلَكُمْ اِلَى الْكَعْبَيْنِ
হে মুমিনগণ! যখন তোমরা সালাতের জন্য প্রস্তুত হবে তখন তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল ও হস্তদ্বয় কনুইসহ ধুয়ে নেবে। তারপর তোমাদের মাথা মাসাহ করবে এবং পা টাখনু পর্যন্ত ধুয়ে নেবে। (সূরা মায়েদা- ৬)
শরীর নাপাক থাকলে গোসল করতে হবে :
وَاِنْ كُنْتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوْا
যদি তোমরা অপবিত্র থাক, তবে বিশেষভাবে পবিত্র হবে (গোসল করবে)। (সূরা মায়েদা- ৬)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَقْرَبُوا الصَّلَاةَ وَاَنْتُمْ سُكَارٰى حَتّٰى تَعْلَمُوْا مَا تَقُوْلُوْنَ وَلَا جُنُبًا اِلَّا عَابِرِيْ سَبِيْلٍ حَتّٰى تَغْتَسِلُوْا
হে মুমিনগণ! তোমরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সালাতের নিকটবর্তী হয়ো না, যতক্ষণ না তোমরা যা বল তা বুঝতে পার এবং অপবিত্র অবস্থাতেও সালাতের নিকটবর্তী হয়ো না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা গোসল করে নেবে; তবে পথচারী (সফরকালীন) অবস্থা ব্যতীত। (সূরা নিসা- ৪৩)
ব্যাখ্যা : جُنُبٌ (জুনুব) এর অর্থ হচ্ছে, দূর হয়ে যাওয়া, দূরত্ব ও সম্পর্কহীনতা। এ থেকে ‘আজনবী’ (অপরিচিত) শব্দটি বের হয়েছে। আর শরীয়াতের পরিভাষায় জুনুব বা জানাবাত অর্থ হচ্ছে, যৌন চাহিদা পূর্ণ করার এবং স্বপ্নের মধ্যে বীর্যপাত হওয়ার ফলে নাপাকী সৃষ্টি হওয়া। আর এর ফলে মানুষ পবিত্রতা থেকে দূরে তথা অপবিত্র হয়ে পড়ে।
পানি ব্যবহারে অক্ষম হলে তায়াম্মুম করতে হবে :
وَاِنْ كُنْتُمْ مَّرْضٰۤى اَوْ عَلٰى سَفَرٍ اَوْ جَآءَ اَحَدٌ مِّنْكُمْ مِّنَ الْغَآئِطِ اَوْ لَامَسْتُمُ النِّسَآءَ فَلَمْ تَجِدُوْا مَآءً فَتَيَمَّمُوْا صَعِيْدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوْا بِوُجُوْهِكُمْ وَاَيْدِيْكُمْؕ اِنَّ اللهَ كَانَ عَفُوًّا غَفُوْرًا
যদি তোমরা অসুস্থ হয়ে যাও অথবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ শৌচগার হতে আসো অথবা তোমরা নারী-সম্ভোগ কর এবং পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটির দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও এবং মুখমন্ডল ও হাত মাসাহ করো, নিশ্চয় আল্লাহ পাপ মোচনকারী এবং ক্ষমাশীল। (সূরা নিসা- ৪৩)
وَاِنْ كُنْتُمْ مَّرْضٰۤى اَوْ عَلٰى سَفَرٍ اَوْ جَآءَ اَحَدٌ مِّنْكُمْ مِّنَ الْغَآئِطِ اَوْ لَامَسْتُمُ النِّسَآءَ فَلَمْ تَجِدُوْا مَآءً فَتَيَمَّمُوْا صَعِيْدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوْا بِوُجُوْهِكُمْ وَاَيْدِيْكُمْ مِّنْهُؕ مَا يُرِيْدُ اللهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُمْ مِّنْ حَرَجٍ وَّلٰكِنْ يُّرِيْدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهٗ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
যদি তোমরা অসুস্থ হয়ে যাও অথবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ শৌচগার হতে আসো অথবা তোমরা স্ত্রীর সাথে মিলিত হও এবং পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও এবং তা দ্বারা তোমাদের মুখমন্ডল ও হস্তদ্বয় মাসাহ করে নাও। আল্লাহ তোমাদেরকে কষ্ট দিতে চান না; বরং তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান ও তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করতে চান; যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর। (সূরা মায়েদা- ৬)
ব্যাখ্যা : এ নির্দেশটির বিস্তারিত অবস্থা হচ্ছে, যদি কোন ব্যক্তি অযুবিহীন অবস্থায় থাকে অথবা তার গোসলের প্রয়োজন হয় আর এ অবস্থায় সে পানি না পায়, তাহলে সে তায়াম্মুম করে সালাত আদায় করতে পারবে। যদি সে অসুস্থ হয় এবং গোসল বা অযু করলে তার জন্য ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তাহলে পানি থাকা সত্ত্বেও সে তায়াম্মুমের অনুমতির সুযোগ গ্রহণ করতে পারে। তায়াম্মুম অর্থ হচ্ছে, ইচ্ছা বা সংকল্প করা। অর্থাৎ যদি পানি না পাওয়া যায় অথবা পাওয়া গেলেও তা ব্যবহার করা সম্ভব না হয়, তাহলে পবিত্র মাটি ব্যবহার করার সংকল্প করা।
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আসমা (রাঃ) থেকে একটি গলার হার ধার নিয়েছিলেন। অতঃপর তা হারিয়ে গেল। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর সাহাবাদের মধ্যে কিছু লোককে খোঁজতে পাঠালেন। এমতাবস্থায় তাদের সালাতের সময় হয়ে গেল। তখন তারা ওযূ ছাড়াই সালাত আদায় করলেন। এরপর তারা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে এসে এ ঘটনা জানালেন। তখন তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল হয়। এ সময় উসাইদ ইবনে হুযাইর (রাঃ) বললেন, আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে (আয়েশা) উত্তম প্রতিদান দান করুন। আল্লাহর কসম! আপনার উপর যখনই কোন সমস্যা এসেছে তখনই আল্লাহ তা‘আলা এর সমাধানের পথ বের করে দিয়েছেন এবং মুসলিমদের জন্য তাতে বরকত রেখেছেন। (সহীহ মুসলিম, হা/৭০৩)
সালাতের সময় উত্তম পোশাক পরিধান করার নির্দেশ :
يَا بَنِيْۤ اٰدَمَ خُذُوْا زِيْنَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ وَّكُلُوْا وَاشْرَبُوْا وَلَا تُسْرِفُوْاۚ اِنَّهٗ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِيْنَ
হে বনী আদম! তোমরা প্রত্যেক সালাতের সময় সুন্দর পোশাক পরিধান করো; আর তোমরা আহার করো এবং পান করো, তবে অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না। (সূরা আ‘রাফ- ৩১)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর ইবাদাত করার জন্য দাঁড়ানোর সময় কেবল লজ্জাস্থান ঢাকাই যথেষ্ট হবে না বরং সামর্থ্য অনুযায়ী নিজের পূর্ণ পোশাক পরে নিতে হবে, যার মাধ্যমে লজ্জাস্থান আবৃত হওয়ার সাথে সাথে সৌন্দর্যের প্রকাশও ঘটবে এবং তাকে অন্তত এতটুকু উন্নত মানে পৌঁছতে হবে, যার ফলে তার পোশাক তাক্বওয়ার পোশাকে পরিণত হয়। অর্থাৎ তার পোশাক দিয়ে সে লজ্জাস্থান ঢেকে ফেলবে। সাজসজ্জার মাধ্যমে শরীরের শোভা বর্ধন করার ক্ষেত্রে সীমা অতিক্রম করবে না; আবার ব্যক্তির মর্যাদার চেয়ে নিম্নমানেরও হবে না। তার মধ্যে গর্ব ও অহংকারের কোন প্রদর্শনী থাকবে না; আবার এমন কোন মানসিক রোগের প্রতিফলনও থাকবে না, যার আক্রমণের ফলে পুরুষ নারীসুলভ আচরণ করতে থাকে এবং নারী পুরুষসুলভ আচরণ করতে থাকে। যেসকল লোক নিজেদেরকে পুরোপুরি আল্লাহর পথনির্দেশনার আওতাধীন করে দেয়নি, তাদের পক্ষে পোশাকের ব্যাপারে এ কাঙ্ক্ষিত মানে উপনীত হওয়া সম্ভব হয় না।
নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করতে হবে :
فَاِذَا اطْمَاْنَنْتُمْ فَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَؕ اِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ كِتَابًا مَّوْقُوْتًا
যখন তোমরা পুরোপুরিভাবে স্বস্তিবোধ করবে, তখনই সালাত আদায় করে নেবে। নিশ্চয় সালাত মুমিনদের উপর সুনির্দিষ্ট সময়ের সাথেই ফরয করা হয়েছে। (সূরা নিসা- ১০৩)
কা‘বার দিকে মুখ করে সালাত আদায় করতে হবে :
وَمِنْ حَيْثُ خَرَجْتَ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِؕ وَاِنَّهٗ لَلْحَقُّ مِنْ رَّبِّكَؕ وَمَا اللهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ
তুমি যেখান থেকেই বের হও না কেন, তোমার মুখ মসজিদে হারামের দিকে ফিরিয়ে নাও। নিশ্চয় এটাই তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে সত্য, আর তোমরা যা করছ সে বিষয়ে আল্লাহ অমনোযোগী নন। (সূরা বাক্বারা- ১৪৯)
বিনয়ের সাথে আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে :
حَافِظُوْا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطٰى وَقُوْمُوْا لِلّٰهِ قَانِتِيْنَ
তোমরা সালাতসমূহের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষ করে (যত্নবান হও) মধ্যবর্তী সালাতের প্রতি। আর তোমরা আল্লাহর সামনে বিনীতভাবে দন্ডায়মান হও। (সূরা বাক্বারা- ২৩৮)
ব্যাখ্যা : আবু আমর শায়বানী (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যায়েদ ইবনে আরক্বাম (রাঃ) আমাকে বলেছেন, নবী ﷺ এর যুগে আমরা সালাতের মধ্যে কথা বলাবলি করতাম। এমনকি আমাদের যে কেউ অপরের সাথে তার প্রয়োজন সম্পর্কেও কথাবার্তা বলতো। অবশেষে যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলো, ‘‘তোমরা তোমাদের সালাতসমূহের হেফাজত করো’’ তখন আমরা নীরবে সালাত আদায় করতে আদেশপ্রাপ্ত হলাম। (সহীহ বুখারী, হা/১২০০, সহীহ মুসলিম হা/১০৯০)
قَدْ اَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ هُمْ فِيْ صَلَاتِهِمْ خَاشِعُوْنَ
অবশ্যই সফলকাম হয়েছে মুমিনগণ, যারা নিজেদের সালাতে বিনয়-নম্রতা অবলম্বন করে। (সূরা মু’মিনূন- ১, ২)
ব্যাখ্যা : خُشُوْعٌ (খুশূ) এর আসল অর্থ হচ্ছে, কারো সামনে ঝুঁকে পড়া, বিনয় ও নম্রতা প্রকাশ করা। এ অবস্থাটা মনের সাথে এবং দেহের বাহ্যিক অবস্থার সাথেও সম্পর্ক রাখে। মনের খূশূ হচ্ছে, মানুষ কারো ভীতি, শ্রেষ্ঠত্ব, প্রতাপ ও পরাক্রমের দরুন সন্ত্রস্ত থাকবে। আর দেহের খূশূ হচ্ছে, যখন সে তাঁর সামনে যাবে তখন মাথা নত হয়ে যাবে, দৃষ্টি নত হবে, কণ্ঠস্বর নিম্নগামী হবে এবং কোন জবরদস্ত প্রতাপশালী ব্যক্তির সামনে উপস্থিত হলে মানুষের মধ্যে যে স্বাভাবিক ভীতির সঞ্চার হয় তার চিহ্ন তার মধ্যে ফুটে উঠবে। এটাই সালাতের আসল প্রাণ।
আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে সালাত শুরু করতে হবে :
قَدْ اَفْلَحَ مَنْ تَزَكّٰى ‐ - وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهٖ فَصَلّٰى
নিশ্চয় সে সাফল্য লাভ করে, যে পবিত্রতা অবলম্বন করে এবং তাঁর প্রতিপালকের নাম স্মরণ করে ও সালাত কায়েম করে। (সূরা আ‘লা- ১৪, ১৫)
সালাতের মধ্যে কুরআন তিলাওয়াত করা অপরিহার্য :
اَقِمِ الصَّلَاةَ لِدُلُوْكِ الشَّمْسِ اِلٰى غَسَقِ اللَّيْلِ وَقُرْاٰنَ الْفَجْرِ ؕ اِنَّ قُرْاٰنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُوْدًا
সূর্য হেলে পড়ার পর হতে রাত্রির ঘন অন্ধকার হওয়া পর্যন্ত সালাত কায়েম করো এবং ফজরের (সালাতে) কুরআন পাঠ করো; নিশ্চয় ফজরের (সালাতের) কুরআন পাঠের সময় (ফেরেশতাগণ) উপস্থিত হয়। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৭৮)
ব্যাখ্যা : এখানে ফজরের কুরআন পাঠ দ্বারা ফজরের সালাত বুঝানো হয়েছে। ফজরের কুরআন পরিলক্ষিত হওয়ার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর ফেরেশতারা এর সাক্ষী হয়। যদিও ফেরেশতারা প্রত্যেক সালাত ও প্রত্যেক সৎকাজের সাক্ষী, তবুও যখন ফজরের সালাতের কুরআন পাঠে তাদের সাক্ষ্যের কথা বলা হয়েছে তখন এ থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, এ কাজটি বিশেষ গুরুত্বের অধিকারী। এ কারণেই নবী ﷺ ফজরের সালাতে দীর্ঘ সূরা পড়ার পদ্ধতি অবলম্বন করেন।
স্বাভাবিক আওয়াজে কুরআন পড়তে হবে :
وَلَا تَجْهَرْ بِصَلَاتِكَ وَلَا تُخَافِتْ بِهَا وَابْتَغِ بَيْنَ ذٰلِكَ سَبِيْلًا
(হে নবী) সালাতে তোমার স্বর উচ্চ করো না এবং অতিশয় ক্ষীণও করো না; বরং এ দু’য়ের মধ্যবর্তী পন্থা অবলম্বন করো। (সূরা বনী ইসরাঈল- ১১০)
ব্যাখ্যা : আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, মক্কায় যখন নবী ﷺ অথবা সাহাবীগণ সালাত আদায় করার সময় উচ্চকণ্ঠে কুরআন পাঠ করতেন, তখন কাফিররা শোরগোল শুরু করে দিত; অনেক সময় এক নাগাড়ে গালাগাল করতে থাকত। এজন্য আল্লাহর পক্ষ হতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, তোমরা কুরআনকে এমন উচ্চৈঃস্বরে পাঠ করো না, যাতে কাফিররা শুনে হৈচৈ করতে পারে। আবার এমন নীচু স্বরেও পাঠ করো না, যাতে তোমাদের নিজেদের সাথিরা শুনতে না পায়। কেবলমাত্র সংশ্লিষ্ট অবস্থার সাথে এ হুকুম সম্পৃক্ত ছিল। এরপর নবী ﷺ যখন মদিনায় হিজরত করলেন এবং মক্কার পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হয়ে একটি অনুকূল পরিবেশ পেলেন, তখন আর এ হুকুম কার্যকর থাকেনি। তবে হ্যাঁ, পরবর্তীতে মুসলিমরা যখনই মক্কার মতো অবস্থার সম্মুখীন হবে, তখনই তাদেরকে এ নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করা উচিত।
সালাতে যা পড়া হয় তা বুঝার চেষ্টা করতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَقْرَبُوا الصَّلَاةَ وَاَنْتُمْ سُكَارٰى حَتّٰى تَعْلَمُوْا مَا تَقُوْلُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সালাতের নিকটবর্তী হয়ো না, যতক্ষণ না তোমরা যা বল তা বুঝতে পার। (সূরা নিসা- ৪৩)
জামা‘আতের সাথে সালাত আদায় করতে হবে :
وَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَ وَارْكَعُوْا مَعَ الرَّاكِعِيْنَ
তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো, যাকাত প্রদান করো এবং রুকূকারীদের সাথে রুকূ করো। (সূরা বাক্বারা- ৪৩)
মসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করা ঈমানের পরিচয় :
اِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللهِ مَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَاَقَامَ الصَّلَاةَ وَاٰتَى الزَّكَاةَ وَلَمْ يَخْشَ اِلَّا اللهَ ؕ فَعَسٰۤى اُولٰٓئِكَ اَنْ يَّكُوْنُوْا مِنَ الْمُهْتَدِيْنَ
তারাই তো আল্লাহর মসজিদ আবাদ করবে, যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান আনয়ন করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় করে না। অতএব আশা করা যায় যে, তারা সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা তাওবা- ১৮)
কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই সালাত আদায় করতে হবে :
قُلْ اِنَّ صَلَاتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ‐ - لَا شَرِيْكَ لَهۚٗ وَبِذٰلِكَ اُمِرْتُ وَاَنَاْ اَوَّلُ الْمُسْلِمِيْنَ
বলো, আমার সালাত, আমার ইবাদাত, আমার জীবন ও আমার মরণ জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি এজন্যই আদিষ্ট হয়েছি; আর আমিই প্রথম মুসলিম। (সূরা আন‘আম- ১৬২, ১৬৩)
لَمَسْجِدٌ اُسِّسَ عَلَى التَّقْوٰى مِنْ اَوَّلِ يَوْمٍ اَحَقُّ اَنْ تَقُوْمَ فِيْهِ ؕ فِيهِ رِجَالٌ يُّحِبُّوْنَ اَنْ يَّتَطَهَّرُوْاؕ وَاللهُ يُحِبُّ الْمُطَّهِّرِيْنَ
যে মসজিদের ভিত্তি প্রথম দিন হতেই তাক্বওয়ার উপর স্থাপিত হয়েছে, সেটাই তোমার সালাতের জন্য অধিক উপযুক্ত। তথায় এমন লোক আছে, যারা পবিত্রতা অর্জন করতে ভালোবাসে; আর আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে পছন্দ করেন। (সূরা তাওবা- ১০৮)
সালাতের পূর্বে ওযু করতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا قُمْتُمْ اِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوْا وُجُوْهَكُمْ وَاَيْدِيَكُمْ اِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوْا بِرُءُوْسِكُمْ وَاَرْجُلَكُمْ اِلَى الْكَعْبَيْنِ
হে মুমিনগণ! যখন তোমরা সালাতের জন্য প্রস্তুত হবে তখন তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল ও হস্তদ্বয় কনুইসহ ধুয়ে নেবে। তারপর তোমাদের মাথা মাসাহ করবে এবং পা টাখনু পর্যন্ত ধুয়ে নেবে। (সূরা মায়েদা- ৬)
শরীর নাপাক থাকলে গোসল করতে হবে :
وَاِنْ كُنْتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوْا
যদি তোমরা অপবিত্র থাক, তবে বিশেষভাবে পবিত্র হবে (গোসল করবে)। (সূরা মায়েদা- ৬)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَقْرَبُوا الصَّلَاةَ وَاَنْتُمْ سُكَارٰى حَتّٰى تَعْلَمُوْا مَا تَقُوْلُوْنَ وَلَا جُنُبًا اِلَّا عَابِرِيْ سَبِيْلٍ حَتّٰى تَغْتَسِلُوْا
হে মুমিনগণ! তোমরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সালাতের নিকটবর্তী হয়ো না, যতক্ষণ না তোমরা যা বল তা বুঝতে পার এবং অপবিত্র অবস্থাতেও সালাতের নিকটবর্তী হয়ো না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা গোসল করে নেবে; তবে পথচারী (সফরকালীন) অবস্থা ব্যতীত। (সূরা নিসা- ৪৩)
ব্যাখ্যা : جُنُبٌ (জুনুব) এর অর্থ হচ্ছে, দূর হয়ে যাওয়া, দূরত্ব ও সম্পর্কহীনতা। এ থেকে ‘আজনবী’ (অপরিচিত) শব্দটি বের হয়েছে। আর শরীয়াতের পরিভাষায় জুনুব বা জানাবাত অর্থ হচ্ছে, যৌন চাহিদা পূর্ণ করার এবং স্বপ্নের মধ্যে বীর্যপাত হওয়ার ফলে নাপাকী সৃষ্টি হওয়া। আর এর ফলে মানুষ পবিত্রতা থেকে দূরে তথা অপবিত্র হয়ে পড়ে।
পানি ব্যবহারে অক্ষম হলে তায়াম্মুম করতে হবে :
وَاِنْ كُنْتُمْ مَّرْضٰۤى اَوْ عَلٰى سَفَرٍ اَوْ جَآءَ اَحَدٌ مِّنْكُمْ مِّنَ الْغَآئِطِ اَوْ لَامَسْتُمُ النِّسَآءَ فَلَمْ تَجِدُوْا مَآءً فَتَيَمَّمُوْا صَعِيْدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوْا بِوُجُوْهِكُمْ وَاَيْدِيْكُمْؕ اِنَّ اللهَ كَانَ عَفُوًّا غَفُوْرًا
যদি তোমরা অসুস্থ হয়ে যাও অথবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ শৌচগার হতে আসো অথবা তোমরা নারী-সম্ভোগ কর এবং পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটির দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও এবং মুখমন্ডল ও হাত মাসাহ করো, নিশ্চয় আল্লাহ পাপ মোচনকারী এবং ক্ষমাশীল। (সূরা নিসা- ৪৩)
وَاِنْ كُنْتُمْ مَّرْضٰۤى اَوْ عَلٰى سَفَرٍ اَوْ جَآءَ اَحَدٌ مِّنْكُمْ مِّنَ الْغَآئِطِ اَوْ لَامَسْتُمُ النِّسَآءَ فَلَمْ تَجِدُوْا مَآءً فَتَيَمَّمُوْا صَعِيْدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوْا بِوُجُوْهِكُمْ وَاَيْدِيْكُمْ مِّنْهُؕ مَا يُرِيْدُ اللهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُمْ مِّنْ حَرَجٍ وَّلٰكِنْ يُّرِيْدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهٗ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
যদি তোমরা অসুস্থ হয়ে যাও অথবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ শৌচগার হতে আসো অথবা তোমরা স্ত্রীর সাথে মিলিত হও এবং পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও এবং তা দ্বারা তোমাদের মুখমন্ডল ও হস্তদ্বয় মাসাহ করে নাও। আল্লাহ তোমাদেরকে কষ্ট দিতে চান না; বরং তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান ও তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করতে চান; যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর। (সূরা মায়েদা- ৬)
ব্যাখ্যা : এ নির্দেশটির বিস্তারিত অবস্থা হচ্ছে, যদি কোন ব্যক্তি অযুবিহীন অবস্থায় থাকে অথবা তার গোসলের প্রয়োজন হয় আর এ অবস্থায় সে পানি না পায়, তাহলে সে তায়াম্মুম করে সালাত আদায় করতে পারবে। যদি সে অসুস্থ হয় এবং গোসল বা অযু করলে তার জন্য ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তাহলে পানি থাকা সত্ত্বেও সে তায়াম্মুমের অনুমতির সুযোগ গ্রহণ করতে পারে। তায়াম্মুম অর্থ হচ্ছে, ইচ্ছা বা সংকল্প করা। অর্থাৎ যদি পানি না পাওয়া যায় অথবা পাওয়া গেলেও তা ব্যবহার করা সম্ভব না হয়, তাহলে পবিত্র মাটি ব্যবহার করার সংকল্প করা।
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আসমা (রাঃ) থেকে একটি গলার হার ধার নিয়েছিলেন। অতঃপর তা হারিয়ে গেল। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর সাহাবাদের মধ্যে কিছু লোককে খোঁজতে পাঠালেন। এমতাবস্থায় তাদের সালাতের সময় হয়ে গেল। তখন তারা ওযূ ছাড়াই সালাত আদায় করলেন। এরপর তারা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে এসে এ ঘটনা জানালেন। তখন তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল হয়। এ সময় উসাইদ ইবনে হুযাইর (রাঃ) বললেন, আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে (আয়েশা) উত্তম প্রতিদান দান করুন। আল্লাহর কসম! আপনার উপর যখনই কোন সমস্যা এসেছে তখনই আল্লাহ তা‘আলা এর সমাধানের পথ বের করে দিয়েছেন এবং মুসলিমদের জন্য তাতে বরকত রেখেছেন। (সহীহ মুসলিম, হা/৭০৩)
সালাতের সময় উত্তম পোশাক পরিধান করার নির্দেশ :
يَا بَنِيْۤ اٰدَمَ خُذُوْا زِيْنَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ وَّكُلُوْا وَاشْرَبُوْا وَلَا تُسْرِفُوْاۚ اِنَّهٗ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِيْنَ
হে বনী আদম! তোমরা প্রত্যেক সালাতের সময় সুন্দর পোশাক পরিধান করো; আর তোমরা আহার করো এবং পান করো, তবে অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না। (সূরা আ‘রাফ- ৩১)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর ইবাদাত করার জন্য দাঁড়ানোর সময় কেবল লজ্জাস্থান ঢাকাই যথেষ্ট হবে না বরং সামর্থ্য অনুযায়ী নিজের পূর্ণ পোশাক পরে নিতে হবে, যার মাধ্যমে লজ্জাস্থান আবৃত হওয়ার সাথে সাথে সৌন্দর্যের প্রকাশও ঘটবে এবং তাকে অন্তত এতটুকু উন্নত মানে পৌঁছতে হবে, যার ফলে তার পোশাক তাক্বওয়ার পোশাকে পরিণত হয়। অর্থাৎ তার পোশাক দিয়ে সে লজ্জাস্থান ঢেকে ফেলবে। সাজসজ্জার মাধ্যমে শরীরের শোভা বর্ধন করার ক্ষেত্রে সীমা অতিক্রম করবে না; আবার ব্যক্তির মর্যাদার চেয়ে নিম্নমানেরও হবে না। তার মধ্যে গর্ব ও অহংকারের কোন প্রদর্শনী থাকবে না; আবার এমন কোন মানসিক রোগের প্রতিফলনও থাকবে না, যার আক্রমণের ফলে পুরুষ নারীসুলভ আচরণ করতে থাকে এবং নারী পুরুষসুলভ আচরণ করতে থাকে। যেসকল লোক নিজেদেরকে পুরোপুরি আল্লাহর পথনির্দেশনার আওতাধীন করে দেয়নি, তাদের পক্ষে পোশাকের ব্যাপারে এ কাঙ্ক্ষিত মানে উপনীত হওয়া সম্ভব হয় না।
নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করতে হবে :
فَاِذَا اطْمَاْنَنْتُمْ فَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَؕ اِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ كِتَابًا مَّوْقُوْتًا
যখন তোমরা পুরোপুরিভাবে স্বস্তিবোধ করবে, তখনই সালাত আদায় করে নেবে। নিশ্চয় সালাত মুমিনদের উপর সুনির্দিষ্ট সময়ের সাথেই ফরয করা হয়েছে। (সূরা নিসা- ১০৩)
কা‘বার দিকে মুখ করে সালাত আদায় করতে হবে :
وَمِنْ حَيْثُ خَرَجْتَ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِؕ وَاِنَّهٗ لَلْحَقُّ مِنْ رَّبِّكَؕ وَمَا اللهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ
তুমি যেখান থেকেই বের হও না কেন, তোমার মুখ মসজিদে হারামের দিকে ফিরিয়ে নাও। নিশ্চয় এটাই তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে সত্য, আর তোমরা যা করছ সে বিষয়ে আল্লাহ অমনোযোগী নন। (সূরা বাক্বারা- ১৪৯)
বিনয়ের সাথে আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে :
حَافِظُوْا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطٰى وَقُوْمُوْا لِلّٰهِ قَانِتِيْنَ
তোমরা সালাতসমূহের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষ করে (যত্নবান হও) মধ্যবর্তী সালাতের প্রতি। আর তোমরা আল্লাহর সামনে বিনীতভাবে দন্ডায়মান হও। (সূরা বাক্বারা- ২৩৮)
ব্যাখ্যা : আবু আমর শায়বানী (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যায়েদ ইবনে আরক্বাম (রাঃ) আমাকে বলেছেন, নবী ﷺ এর যুগে আমরা সালাতের মধ্যে কথা বলাবলি করতাম। এমনকি আমাদের যে কেউ অপরের সাথে তার প্রয়োজন সম্পর্কেও কথাবার্তা বলতো। অবশেষে যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলো, ‘‘তোমরা তোমাদের সালাতসমূহের হেফাজত করো’’ তখন আমরা নীরবে সালাত আদায় করতে আদেশপ্রাপ্ত হলাম। (সহীহ বুখারী, হা/১২০০, সহীহ মুসলিম হা/১০৯০)
قَدْ اَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ هُمْ فِيْ صَلَاتِهِمْ خَاشِعُوْنَ
অবশ্যই সফলকাম হয়েছে মুমিনগণ, যারা নিজেদের সালাতে বিনয়-নম্রতা অবলম্বন করে। (সূরা মু’মিনূন- ১, ২)
ব্যাখ্যা : خُشُوْعٌ (খুশূ) এর আসল অর্থ হচ্ছে, কারো সামনে ঝুঁকে পড়া, বিনয় ও নম্রতা প্রকাশ করা। এ অবস্থাটা মনের সাথে এবং দেহের বাহ্যিক অবস্থার সাথেও সম্পর্ক রাখে। মনের খূশূ হচ্ছে, মানুষ কারো ভীতি, শ্রেষ্ঠত্ব, প্রতাপ ও পরাক্রমের দরুন সন্ত্রস্ত থাকবে। আর দেহের খূশূ হচ্ছে, যখন সে তাঁর সামনে যাবে তখন মাথা নত হয়ে যাবে, দৃষ্টি নত হবে, কণ্ঠস্বর নিম্নগামী হবে এবং কোন জবরদস্ত প্রতাপশালী ব্যক্তির সামনে উপস্থিত হলে মানুষের মধ্যে যে স্বাভাবিক ভীতির সঞ্চার হয় তার চিহ্ন তার মধ্যে ফুটে উঠবে। এটাই সালাতের আসল প্রাণ।
আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে সালাত শুরু করতে হবে :
قَدْ اَفْلَحَ مَنْ تَزَكّٰى ‐ - وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهٖ فَصَلّٰى
নিশ্চয় সে সাফল্য লাভ করে, যে পবিত্রতা অবলম্বন করে এবং তাঁর প্রতিপালকের নাম স্মরণ করে ও সালাত কায়েম করে। (সূরা আ‘লা- ১৪, ১৫)
সালাতের মধ্যে কুরআন তিলাওয়াত করা অপরিহার্য :
اَقِمِ الصَّلَاةَ لِدُلُوْكِ الشَّمْسِ اِلٰى غَسَقِ اللَّيْلِ وَقُرْاٰنَ الْفَجْرِ ؕ اِنَّ قُرْاٰنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُوْدًا
সূর্য হেলে পড়ার পর হতে রাত্রির ঘন অন্ধকার হওয়া পর্যন্ত সালাত কায়েম করো এবং ফজরের (সালাতে) কুরআন পাঠ করো; নিশ্চয় ফজরের (সালাতের) কুরআন পাঠের সময় (ফেরেশতাগণ) উপস্থিত হয়। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৭৮)
ব্যাখ্যা : এখানে ফজরের কুরআন পাঠ দ্বারা ফজরের সালাত বুঝানো হয়েছে। ফজরের কুরআন পরিলক্ষিত হওয়ার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর ফেরেশতারা এর সাক্ষী হয়। যদিও ফেরেশতারা প্রত্যেক সালাত ও প্রত্যেক সৎকাজের সাক্ষী, তবুও যখন ফজরের সালাতের কুরআন পাঠে তাদের সাক্ষ্যের কথা বলা হয়েছে তখন এ থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, এ কাজটি বিশেষ গুরুত্বের অধিকারী। এ কারণেই নবী ﷺ ফজরের সালাতে দীর্ঘ সূরা পড়ার পদ্ধতি অবলম্বন করেন।
স্বাভাবিক আওয়াজে কুরআন পড়তে হবে :
وَلَا تَجْهَرْ بِصَلَاتِكَ وَلَا تُخَافِتْ بِهَا وَابْتَغِ بَيْنَ ذٰلِكَ سَبِيْلًا
(হে নবী) সালাতে তোমার স্বর উচ্চ করো না এবং অতিশয় ক্ষীণও করো না; বরং এ দু’য়ের মধ্যবর্তী পন্থা অবলম্বন করো। (সূরা বনী ইসরাঈল- ১১০)
ব্যাখ্যা : আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, মক্কায় যখন নবী ﷺ অথবা সাহাবীগণ সালাত আদায় করার সময় উচ্চকণ্ঠে কুরআন পাঠ করতেন, তখন কাফিররা শোরগোল শুরু করে দিত; অনেক সময় এক নাগাড়ে গালাগাল করতে থাকত। এজন্য আল্লাহর পক্ষ হতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, তোমরা কুরআনকে এমন উচ্চৈঃস্বরে পাঠ করো না, যাতে কাফিররা শুনে হৈচৈ করতে পারে। আবার এমন নীচু স্বরেও পাঠ করো না, যাতে তোমাদের নিজেদের সাথিরা শুনতে না পায়। কেবলমাত্র সংশ্লিষ্ট অবস্থার সাথে এ হুকুম সম্পৃক্ত ছিল। এরপর নবী ﷺ যখন মদিনায় হিজরত করলেন এবং মক্কার পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হয়ে একটি অনুকূল পরিবেশ পেলেন, তখন আর এ হুকুম কার্যকর থাকেনি। তবে হ্যাঁ, পরবর্তীতে মুসলিমরা যখনই মক্কার মতো অবস্থার সম্মুখীন হবে, তখনই তাদেরকে এ নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করা উচিত।
সালাতে যা পড়া হয় তা বুঝার চেষ্টা করতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَقْرَبُوا الصَّلَاةَ وَاَنْتُمْ سُكَارٰى حَتّٰى تَعْلَمُوْا مَا تَقُوْلُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সালাতের নিকটবর্তী হয়ো না, যতক্ষণ না তোমরা যা বল তা বুঝতে পার। (সূরা নিসা- ৪৩)
জামা‘আতের সাথে সালাত আদায় করতে হবে :
وَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَ وَارْكَعُوْا مَعَ الرَّاكِعِيْنَ
তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো, যাকাত প্রদান করো এবং রুকূকারীদের সাথে রুকূ করো। (সূরা বাক্বারা- ৪৩)
মসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করা ঈমানের পরিচয় :
اِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللهِ مَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَاَقَامَ الصَّلَاةَ وَاٰتَى الزَّكَاةَ وَلَمْ يَخْشَ اِلَّا اللهَ ؕ فَعَسٰۤى اُولٰٓئِكَ اَنْ يَّكُوْنُوْا مِنَ الْمُهْتَدِيْنَ
তারাই তো আল্লাহর মসজিদ আবাদ করবে, যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান আনয়ন করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় করে না। অতএব আশা করা যায় যে, তারা সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা তাওবা- ১৮)
কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই সালাত আদায় করতে হবে :
قُلْ اِنَّ صَلَاتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ‐ - لَا شَرِيْكَ لَهۚٗ وَبِذٰلِكَ اُمِرْتُ وَاَنَاْ اَوَّلُ الْمُسْلِمِيْنَ
বলো, আমার সালাত, আমার ইবাদাত, আমার জীবন ও আমার মরণ জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি এজন্যই আদিষ্ট হয়েছি; আর আমিই প্রথম মুসলিম। (সূরা আন‘আম- ১৬২, ১৬৩)
সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে পড়ার পর যুহরের সালাতের সময় হয় :
اَقِمِ الصَّلَاةَ لِدُلُوْكِ الشَّمْسِ اِلٰى غَسَقِ اللَّيْلِ
সূর্য হেলে পড়ার পর হতে রাত্রির ঘন অন্ধকার পর্যন্ত সালাত কায়েম করবে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৭৮)
পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময় সম্পর্কে কুরআনের বর্ণনা :
فَاصْبِرْ عَلٰى مَا يَقُوْلُوْنَ وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوْعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوْبِهَاۚ وَمِنْ اٰنَآءِ اللَّيْلِ فَسَبِّحْ وَاَطْرَافَ النَّهَارِ لَعَلَّكَ تَرْضٰى
হে নবী! তারা যা বলুক না কেন, সে বিষয়ে ধৈর্যধারণ করো এবং সূর্যোদয়ের পূর্বে, সূর্যাস্তের পূর্বে ও রাত্রিকালে প্রশংসার সাথে তোমার প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো। অতঃপর তোমরা পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো দিবসের প্রান্তসমূহেও, যাতে তুমি সন্তুষ্ট হতে পার। (সূরা ত্বা-হা- ১৩০)
فَسُبْحَانَ اللهِ حِيْنَ تُمْسُوْنَ وَحِيْنَ تُصْبِحُوْنَ ‐ وَلَهُ الْحَمْدُ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَعَشِيًّا وَّحِيْنَ تُظْهِرُوْنَ
অতঃপর তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা ও গুণগান ঘোষণা করো- সন্ধ্যায় ও প্রত্যুষে এবং অপরাহ্নে ও যোহরের সময়েও; আর আসমানে ও জমিনে সকল প্রশংসা তো তাঁরই। (সূরা রূম- ১৭, ১৮)
وَاَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِّنَ اللَّيْلِ
তুমি সালাত কায়েম করো দিবসের দু’প্রান্তভাগে ও রজনীর প্রথমাংশে। (সূরা হুদ- ১১৪)
اَقِمِ الصَّلَاةَ لِدُلُوْكِ الشَّمْسِ اِلٰى غَسَقِ اللَّيْلِ
সূর্য হেলে পড়ার পর হতে রাত্রির ঘন অন্ধকার পর্যন্ত সালাত কায়েম করবে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৭৮)
পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময় সম্পর্কে কুরআনের বর্ণনা :
فَاصْبِرْ عَلٰى مَا يَقُوْلُوْنَ وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوْعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوْبِهَاۚ وَمِنْ اٰنَآءِ اللَّيْلِ فَسَبِّحْ وَاَطْرَافَ النَّهَارِ لَعَلَّكَ تَرْضٰى
হে নবী! তারা যা বলুক না কেন, সে বিষয়ে ধৈর্যধারণ করো এবং সূর্যোদয়ের পূর্বে, সূর্যাস্তের পূর্বে ও রাত্রিকালে প্রশংসার সাথে তোমার প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো। অতঃপর তোমরা পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো দিবসের প্রান্তসমূহেও, যাতে তুমি সন্তুষ্ট হতে পার। (সূরা ত্বা-হা- ১৩০)
فَسُبْحَانَ اللهِ حِيْنَ تُمْسُوْنَ وَحِيْنَ تُصْبِحُوْنَ ‐ وَلَهُ الْحَمْدُ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَعَشِيًّا وَّحِيْنَ تُظْهِرُوْنَ
অতঃপর তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা ও গুণগান ঘোষণা করো- সন্ধ্যায় ও প্রত্যুষে এবং অপরাহ্নে ও যোহরের সময়েও; আর আসমানে ও জমিনে সকল প্রশংসা তো তাঁরই। (সূরা রূম- ১৭, ১৮)
وَاَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِّنَ اللَّيْلِ
তুমি সালাত কায়েম করো দিবসের দু’প্রান্তভাগে ও রজনীর প্রথমাংশে। (সূরা হুদ- ১১৪)
মসজিদ আল্লাহর ঘর :
وَاَنَّ الْمَسَاجِدَ لِلّٰهِ ۚ فَلَا تَدْعُوْا مَعَ اللهِ اَحَدًا
নিশ্চয় মসজিদসমূহ আল্লাহর (উদ্দেশ্যে নির্মিত)। সুতরাং তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে আহবান করো না। (সূরা জিন- ১৮)
প্রথম মসজিদ হলো কা‘বাঘর :
اِنَّ اَوَّلَ بَيْتٍ وُّضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِيْ بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَّهُدًى لِّلْعَالَمِيْنَ
নিশ্চয় মানুষের জন্য সর্বপ্রথম নির্মিত ঘর মক্কায় অবস্থিত, যা বরকতময় এবং বিশ্ববাসীর জন্য পথপ্রদর্শকস্বরূপ। (সূরা আলে ইমরান- ৯৬)
হিজরতের পর প্রথম মসজিদ হলো কুবা :
لَا تَقُمْ فِيْهِ اَبَدًاؕ لَمَسْجِدٌ اُسِّسَ عَلَى التَّقْوٰى مِنْ اَوَّلِ يَوْمٍ اَحَقُّ اَنْ تَقُوْمَ فِيْهِ
তুমি কখনো (ইবাদাতের উদ্দেশ্যে) সেখানে দাঁড়াবে না। তোমার তো দাঁড়ানো উচিত সেখানে (ঐ মসজিদে) যা প্রথম দিন থেকেই তাক্বওয়ার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। (সূরা তাওবা- ১০৮)
কা‘বাঘর ধ্বংসের ষড়যন্ত্রকারীদেরকে আল্লাহ ধ্বংস করেছেন :
اَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِاَصْحَابِ الْفِيْلِ ‐ اَلَمْ يَجْعَلْ كَيْدَهُمْ فِيْ تَضْلِيْلٍ ‐ وَاَرْسَلَ عَلَيْهِمْ طَيْرًا اَبَابِيْلَ ‐ تَرْمِيْهِمْ بِحِجَارَةٍ مِّنْ سِجِّيْلٍ ‐ فَجَعَلَهُمْ كَعَصْفٍ مَّاْكُوْلٍ
তুমি কি দেখনি, তোমার প্রতিপালক (কা‘বা ধ্বংসের জন্য আগত) হাতিওয়ালাদের সাথে কেমন ব্যবহার করেছেন? তিনি কি (সে সময়) তাদের যাবতীয় ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেননি? তিনি তাদের উপর ঝাঁকে-ঝাঁকে পাখী পাঠিয়েছিলেন। এ পাখীগুলো এ সুসজ্জিত বাহিনীর উপর পাথরের টুকরো নিক্ষেপ করেছিল। অতঃপর তিনি তাদেরকে জন্তু-জানোয়ারের চর্বিত ঘাস-পাতার মতো করে দিয়েছিলেন। (সূরা ফীল)
মসজিদ ইবাদাতের স্থান :
فِيْ بُيُوْتٍ اَذِنَ اللهُ اَنْ تُرْفَعَ وَيُذْكَرَ فِيْهَا اسْمُهٗ يُسَبِّحُ لَهٗ فِيْهَا بِالْغُدُوِّ وَالْاٰصَالِ
(এসব ব্যক্তিদেরকে পাওয়া যাবে) সেসব ঘরসমূহে, যার মধ্যে আল্লাহর সম্মান ও মর্যাদা সমুন্নত করতে এবং তাতে তাঁর নাম স্মরণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আর যাতে সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করা হয়। (সূরা নূর- ৩৬)
মসজিদে ই‘তিকাফের বিধান :
وَلَا تُبَاشِرُوْهُنَّ وَاَنْتُمْ عَاكِفُوْنَ فِى الْمَسَاجِدِ
আর তোমরা মসজিদে ই‘তিকাফ করা অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে মিলন করো না। (সূরা বাক্বারা- ১৮৭)
মসজিদে যাওয়ার সময় উত্তম পোশাক পরিধান করার নির্দেশ :
يَا بَنِيْۤ اٰدَمَ خُذُوْا زِيْنَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ
হে আদম সন্তান! তোমরা প্রতিটি ইবাদাতের সময়ই নিজেদের জন্য সৌন্দর্যমন্ডিত পোশাক গ্রহণ করো। (সূরা আ‘রাফ- ৩১)
মুশরিকদের জন্য মসজিদে প্রবেশের অধিকার নেই :
مَا كَانَ لِلْمُشْرِكِيْنَ اَنْ يَّعْمُرُوْا مَسَاجِدَ اللهِ شَاهِدِيْنَ عَلٰۤى اَنْفُسِهِمْ بِالْكُفْرِؕ اُولٰٓئِكَ حَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْۚ وَفِى النَّارِ هُمْ خَالِدُوْنَ
মুশরিকরা যখন নিজেরাই নিজেদের কুফরীকে স্বীকার করে নিয়েছে, তারপরও তারা আল্লাহর মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করবে- এমনটা হতে পারে না। তারা এমন লোক যাদের সমস্ত কর্ম ব্যর্থ হয়ে গেছে এবং তারা অগ্নিতেই স্থায়ীভাবে অবস্থান করবে। (সূরা তাওবা- ১৭)
ব্যাখ্যা : এক আল্লাহর ইবাদাত করার জন্য যেসব মসজিদ তৈরি করা হয়েছে সেগুলোর মুতাওয়াল্লী, রক্ষণাবেক্ষণকারী ও সেবক কখনো এমন ধরনের লোক হতে পারে না, যারা আল্লাহর গুণাবলি, অধিকার ও ক্ষমতার ক্ষেত্রে অন্যদেরকে শরীক করে।
মসজিদের মুতাওয়াল্লি হওয়ার যোগ্যতা :
اِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللهِ مَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَاَقَامَ الصَّلَاةَ وَاَتَى الزَّكَاةَ وَلَمْ يَخْشَ اِلَّا اللهَؕ فَعَسٰۤى اُولٰٓئِكَ اَنْ يَّكُوْنُوْا مِنَ الْمُهْتَدِيْنَ
তারাই তো আল্লাহর মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করবে, যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান আনয়ন করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় করে না। অতএব আশা করা যায়, তারা সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা তাওবা- ১৮)
মসজিদে প্রবেশে বাধা দেয়া মহাপাপ :
وَصَدٌّ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ وَكُفْرٌ ۢبِهٖ وَالْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَاِخْرَاجُ اَهْلِهٖ مِنْهُ اَكْبَرُ عِنْدَ اللهِ
আল্লাহর পথে বাধা দেয়া, তার সাথে কুফরী করা, মসজিদে হারামে প্রবেশে বাধা দেয়া এবং এর অধিবাসীদেরকে সেখান থেকে বের করে দেয়া আল্লাহর কাছে আরো বড় গোনাহ। (সূরা বাক্বারা- ২১৭)
মসজিদের ক্ষতি সাধন করা বড় ধরনের অন্যায় :
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ مَّنَعَ مَسَاجِدَ اللهِ اَنْ يُّذْكَرَ فِيْهَا اسْمُهٗ وَسَعٰى فِيْ خَرَابِهَاؕ اُولٰٓئِكَ مَا كَانَ لَهُمْ اَنْ يَّدْخُلُوْهَاۤ اِلَّا خَآئِفِيْنَؕ لَهُمْ فِى الدُّنْيَا خِزْيٌ وَّلَهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ
তার চেয়ে বড় যালিম আর কে আছে, যে আল্লাহর মসজিদসমূহের মধ্যে তাঁর নাম উচ্চারণ করতে নিষেধ করে এবং তা ধ্বংস করতে প্রয়াস চালায়? অথচ ভয়ে ভীত না হওয়া পর্যন্ত তাদের জন্য মসজিদে প্রবেশ করাটাই সঙ্গত ছিল না, দুনিয়ায় তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনা এবং আখিরাতে রয়েছে কঠিন শাস্তি। (সূরা বাক্বারা- ১১৪)
মসজিদ পবিত্র রাখার নির্দেশ :
وَعَهِدْنَاۤ اِلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ اَنْ طَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّآئِفِيْنَ وَالْعَاكِفِيْنَ وَالرُّكَّعِ السُّجُوْدِ
আমি ইবরাহীম ও ইসমাঈলের নিকট এ অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, তোমরা আমার ঘরকে তাওয়াফকারী, ই‘তিকাফকারী, রুকূকারী এবং সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রেখো। (সূরা বাক্বারা- ১২৫)
وَاِذْ بَوَّاْنَا لِاِبْرَاهِيْمَ مَكَانَ الْبَيْتِ اَنْ لَّا تُشْرِكْ بِيْ شَيْئًا وَّطَهِّرْ بَيْتِيَ لِلطَّآئِفِيْنَ وَالْقَآئِمِيْنَ وَالرُّكَّعِ السُّجُوْدِ
স্মরণ করো, যখন আমি ইবরাহীমের জন্য সে গৃহের স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম এবং বলেছিলাম, আমার সাথে কোন শরীক স্থির করবে না এবং আমার গৃহকে তাদের জন্য পবিত্র রাখবে, যারা তাওয়াফ করে, সালাতে দন্ডায়মান হয়, রুকূ করে ও সিজদা করে। (সূরা হজ্জ- ২৬)
প্রত্যেক ধর্মেরই উপাসনালয় রয়েছে :
وَلَوْلَا دَفْعُ اللهِ النَّاسَ بَعْضَهُمْ بِبَعْضٍ لَّهُدِّمَتْ صَوَامِعُ وَّبِيَعٌ وَّصَلَوَاتٌ وَّمَسَاجِدُ يُذْكَرُ فِيْهَا اسْمُ اللهِ كَثِيْرًاؕ وَلَيَنْصُرَنَّ اللهُ مَنْ يَّنْصُرُهٗؕ اِنَّ اللهَ لَقَوِيٌّ عَزِيْزٌ
আল্লাহ যদি মানবজাতির একদলকে অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে বিধ্বস্ত হয়ে যেত খ্রিস্টানদের উপাসনালয়, গির্জা, ইয়াহুদিদের উপাসনালয় এবং মসজিদসমূহ- যাতে আল্লাহর নাম অধিক হারে স্মরণ করা হয়। নিশ্চয় আল্লাহ তাকেই সাহায্য করেন, যে তাঁকে সাহায্য করে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশক্তিমান ও পরাক্রমশালী। (সূরা হজ্জ- ৪০)
ব্যাখ্যা : صَوْمَعَةٌ (সাওমা‘আতুন) এমন স্থানকে বলে যেখানে খ্রিস্টান রাহেব, যোগী ও সন্ন্যাসীরা অবস্থান করে।
بِيْعَةٌ (বী‘আতুন) হলো খ্রিস্টানদের ইবাদাতগৃহ।
صَلَوَاتٌ (সালাওয়াতুন) হচ্ছে ইয়াহুদিদের উপাসনালয়সমূহ।
مَسَاجِدٌ (মাসাজিদ) বলা হয় মুসলিমদের ইবাদাতগৃহসমূহকে।
وَاَنَّ الْمَسَاجِدَ لِلّٰهِ ۚ فَلَا تَدْعُوْا مَعَ اللهِ اَحَدًا
নিশ্চয় মসজিদসমূহ আল্লাহর (উদ্দেশ্যে নির্মিত)। সুতরাং তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে আহবান করো না। (সূরা জিন- ১৮)
প্রথম মসজিদ হলো কা‘বাঘর :
اِنَّ اَوَّلَ بَيْتٍ وُّضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِيْ بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَّهُدًى لِّلْعَالَمِيْنَ
নিশ্চয় মানুষের জন্য সর্বপ্রথম নির্মিত ঘর মক্কায় অবস্থিত, যা বরকতময় এবং বিশ্ববাসীর জন্য পথপ্রদর্শকস্বরূপ। (সূরা আলে ইমরান- ৯৬)
হিজরতের পর প্রথম মসজিদ হলো কুবা :
لَا تَقُمْ فِيْهِ اَبَدًاؕ لَمَسْجِدٌ اُسِّسَ عَلَى التَّقْوٰى مِنْ اَوَّلِ يَوْمٍ اَحَقُّ اَنْ تَقُوْمَ فِيْهِ
তুমি কখনো (ইবাদাতের উদ্দেশ্যে) সেখানে দাঁড়াবে না। তোমার তো দাঁড়ানো উচিত সেখানে (ঐ মসজিদে) যা প্রথম দিন থেকেই তাক্বওয়ার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। (সূরা তাওবা- ১০৮)
কা‘বাঘর ধ্বংসের ষড়যন্ত্রকারীদেরকে আল্লাহ ধ্বংস করেছেন :
اَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِاَصْحَابِ الْفِيْلِ ‐ اَلَمْ يَجْعَلْ كَيْدَهُمْ فِيْ تَضْلِيْلٍ ‐ وَاَرْسَلَ عَلَيْهِمْ طَيْرًا اَبَابِيْلَ ‐ تَرْمِيْهِمْ بِحِجَارَةٍ مِّنْ سِجِّيْلٍ ‐ فَجَعَلَهُمْ كَعَصْفٍ مَّاْكُوْلٍ
তুমি কি দেখনি, তোমার প্রতিপালক (কা‘বা ধ্বংসের জন্য আগত) হাতিওয়ালাদের সাথে কেমন ব্যবহার করেছেন? তিনি কি (সে সময়) তাদের যাবতীয় ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেননি? তিনি তাদের উপর ঝাঁকে-ঝাঁকে পাখী পাঠিয়েছিলেন। এ পাখীগুলো এ সুসজ্জিত বাহিনীর উপর পাথরের টুকরো নিক্ষেপ করেছিল। অতঃপর তিনি তাদেরকে জন্তু-জানোয়ারের চর্বিত ঘাস-পাতার মতো করে দিয়েছিলেন। (সূরা ফীল)
মসজিদ ইবাদাতের স্থান :
فِيْ بُيُوْتٍ اَذِنَ اللهُ اَنْ تُرْفَعَ وَيُذْكَرَ فِيْهَا اسْمُهٗ يُسَبِّحُ لَهٗ فِيْهَا بِالْغُدُوِّ وَالْاٰصَالِ
(এসব ব্যক্তিদেরকে পাওয়া যাবে) সেসব ঘরসমূহে, যার মধ্যে আল্লাহর সম্মান ও মর্যাদা সমুন্নত করতে এবং তাতে তাঁর নাম স্মরণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আর যাতে সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করা হয়। (সূরা নূর- ৩৬)
মসজিদে ই‘তিকাফের বিধান :
وَلَا تُبَاشِرُوْهُنَّ وَاَنْتُمْ عَاكِفُوْنَ فِى الْمَسَاجِدِ
আর তোমরা মসজিদে ই‘তিকাফ করা অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে মিলন করো না। (সূরা বাক্বারা- ১৮৭)
মসজিদে যাওয়ার সময় উত্তম পোশাক পরিধান করার নির্দেশ :
يَا بَنِيْۤ اٰدَمَ خُذُوْا زِيْنَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ
হে আদম সন্তান! তোমরা প্রতিটি ইবাদাতের সময়ই নিজেদের জন্য সৌন্দর্যমন্ডিত পোশাক গ্রহণ করো। (সূরা আ‘রাফ- ৩১)
মুশরিকদের জন্য মসজিদে প্রবেশের অধিকার নেই :
مَا كَانَ لِلْمُشْرِكِيْنَ اَنْ يَّعْمُرُوْا مَسَاجِدَ اللهِ شَاهِدِيْنَ عَلٰۤى اَنْفُسِهِمْ بِالْكُفْرِؕ اُولٰٓئِكَ حَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْۚ وَفِى النَّارِ هُمْ خَالِدُوْنَ
মুশরিকরা যখন নিজেরাই নিজেদের কুফরীকে স্বীকার করে নিয়েছে, তারপরও তারা আল্লাহর মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করবে- এমনটা হতে পারে না। তারা এমন লোক যাদের সমস্ত কর্ম ব্যর্থ হয়ে গেছে এবং তারা অগ্নিতেই স্থায়ীভাবে অবস্থান করবে। (সূরা তাওবা- ১৭)
ব্যাখ্যা : এক আল্লাহর ইবাদাত করার জন্য যেসব মসজিদ তৈরি করা হয়েছে সেগুলোর মুতাওয়াল্লী, রক্ষণাবেক্ষণকারী ও সেবক কখনো এমন ধরনের লোক হতে পারে না, যারা আল্লাহর গুণাবলি, অধিকার ও ক্ষমতার ক্ষেত্রে অন্যদেরকে শরীক করে।
মসজিদের মুতাওয়াল্লি হওয়ার যোগ্যতা :
اِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللهِ مَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَاَقَامَ الصَّلَاةَ وَاَتَى الزَّكَاةَ وَلَمْ يَخْشَ اِلَّا اللهَؕ فَعَسٰۤى اُولٰٓئِكَ اَنْ يَّكُوْنُوْا مِنَ الْمُهْتَدِيْنَ
তারাই তো আল্লাহর মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করবে, যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান আনয়ন করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় করে না। অতএব আশা করা যায়, তারা সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা তাওবা- ১৮)
মসজিদে প্রবেশে বাধা দেয়া মহাপাপ :
وَصَدٌّ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ وَكُفْرٌ ۢبِهٖ وَالْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَاِخْرَاجُ اَهْلِهٖ مِنْهُ اَكْبَرُ عِنْدَ اللهِ
আল্লাহর পথে বাধা দেয়া, তার সাথে কুফরী করা, মসজিদে হারামে প্রবেশে বাধা দেয়া এবং এর অধিবাসীদেরকে সেখান থেকে বের করে দেয়া আল্লাহর কাছে আরো বড় গোনাহ। (সূরা বাক্বারা- ২১৭)
মসজিদের ক্ষতি সাধন করা বড় ধরনের অন্যায় :
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ مَّنَعَ مَسَاجِدَ اللهِ اَنْ يُّذْكَرَ فِيْهَا اسْمُهٗ وَسَعٰى فِيْ خَرَابِهَاؕ اُولٰٓئِكَ مَا كَانَ لَهُمْ اَنْ يَّدْخُلُوْهَاۤ اِلَّا خَآئِفِيْنَؕ لَهُمْ فِى الدُّنْيَا خِزْيٌ وَّلَهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ
তার চেয়ে বড় যালিম আর কে আছে, যে আল্লাহর মসজিদসমূহের মধ্যে তাঁর নাম উচ্চারণ করতে নিষেধ করে এবং তা ধ্বংস করতে প্রয়াস চালায়? অথচ ভয়ে ভীত না হওয়া পর্যন্ত তাদের জন্য মসজিদে প্রবেশ করাটাই সঙ্গত ছিল না, দুনিয়ায় তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনা এবং আখিরাতে রয়েছে কঠিন শাস্তি। (সূরা বাক্বারা- ১১৪)
মসজিদ পবিত্র রাখার নির্দেশ :
وَعَهِدْنَاۤ اِلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ اَنْ طَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّآئِفِيْنَ وَالْعَاكِفِيْنَ وَالرُّكَّعِ السُّجُوْدِ
আমি ইবরাহীম ও ইসমাঈলের নিকট এ অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, তোমরা আমার ঘরকে তাওয়াফকারী, ই‘তিকাফকারী, রুকূকারী এবং সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রেখো। (সূরা বাক্বারা- ১২৫)
وَاِذْ بَوَّاْنَا لِاِبْرَاهِيْمَ مَكَانَ الْبَيْتِ اَنْ لَّا تُشْرِكْ بِيْ شَيْئًا وَّطَهِّرْ بَيْتِيَ لِلطَّآئِفِيْنَ وَالْقَآئِمِيْنَ وَالرُّكَّعِ السُّجُوْدِ
স্মরণ করো, যখন আমি ইবরাহীমের জন্য সে গৃহের স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম এবং বলেছিলাম, আমার সাথে কোন শরীক স্থির করবে না এবং আমার গৃহকে তাদের জন্য পবিত্র রাখবে, যারা তাওয়াফ করে, সালাতে দন্ডায়মান হয়, রুকূ করে ও সিজদা করে। (সূরা হজ্জ- ২৬)
প্রত্যেক ধর্মেরই উপাসনালয় রয়েছে :
وَلَوْلَا دَفْعُ اللهِ النَّاسَ بَعْضَهُمْ بِبَعْضٍ لَّهُدِّمَتْ صَوَامِعُ وَّبِيَعٌ وَّصَلَوَاتٌ وَّمَسَاجِدُ يُذْكَرُ فِيْهَا اسْمُ اللهِ كَثِيْرًاؕ وَلَيَنْصُرَنَّ اللهُ مَنْ يَّنْصُرُهٗؕ اِنَّ اللهَ لَقَوِيٌّ عَزِيْزٌ
আল্লাহ যদি মানবজাতির একদলকে অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে বিধ্বস্ত হয়ে যেত খ্রিস্টানদের উপাসনালয়, গির্জা, ইয়াহুদিদের উপাসনালয় এবং মসজিদসমূহ- যাতে আল্লাহর নাম অধিক হারে স্মরণ করা হয়। নিশ্চয় আল্লাহ তাকেই সাহায্য করেন, যে তাঁকে সাহায্য করে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশক্তিমান ও পরাক্রমশালী। (সূরা হজ্জ- ৪০)
ব্যাখ্যা : صَوْمَعَةٌ (সাওমা‘আতুন) এমন স্থানকে বলে যেখানে খ্রিস্টান রাহেব, যোগী ও সন্ন্যাসীরা অবস্থান করে।
بِيْعَةٌ (বী‘আতুন) হলো খ্রিস্টানদের ইবাদাতগৃহ।
صَلَوَاتٌ (সালাওয়াতুন) হচ্ছে ইয়াহুদিদের উপাসনালয়সমূহ।
مَسَاجِدٌ (মাসাজিদ) বলা হয় মুসলিমদের ইবাদাতগৃহসমূহকে।
আল্লাহকে সিজদা করার আদেশ :
فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَكُنْ مِّنَ السَّاجِدِيْنَ
অতএব প্রশংসার সাথে তোমার প্রতিপালকের পবিত্রতা বর্ণনা করো এবং সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও। (সূরা হিজর- ৯৮)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا ارْكَعُوْا وَاسْجُدُوْا وَاعْبُدُوْا رَبَّكُمْ وَافْعَلُوا الْخَيْرَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা রুকূ করো ও সিজদা করো। আর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের ইবাদাত করো এবং সৎকাজ করো, যাতে তোমরা সফলতা লাভ করতে পার। (সূরা হজ্জ- ৭৭)
ব্যাখ্যা : সিজদা বলতে বুঝায় আনুগত্য প্রকাশ করার জন্য ঝুঁকে পড়া, আদেশ পালন করা এবং মাথা নত করা। পৃথিবী ও আকাশের প্রত্যেকটি সৃষ্টি আল্লাহর আইনের অনুগত। তারা তাঁর ইচ্ছার একটুও বিরোধিতা করতে পারে না। এ অর্থে তারা প্রত্যেকেই আল্লাহকে সিজদা করছে। মুমিন স্বেচ্ছায় আল্লাহর সামনে নত হয়, কিন্তু কাফিরকে বাধ্য হয়ে নত হতে হয়। কারণ আল্লাহর প্রাকৃতিক আইনের বাইরে চলে যাওয়ার ক্ষমতা কারো নেই।
সিজদা আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায় :
كَلَّاؕ لَا تُطِعْهُ وَاسْجُدْ وَاقْتَرِبْ
কখনো নয়, তুমি কিছুতেই তার অনুসরণ করো না; বরং তুমি তোমার মালিকের সামনে সিজদাবনত হও এবং তাঁর নৈকট্য লাভ করো। (সূরা আলাক্ব- ১৯)
পৃথিবীর সবকিছু আল্লাহকে সিজদা করে :
اَلَمْ تَرَ اَنَّ اللهَ يَسْجُدُ لَهٗ مَنْ فِى السَّمَاوَاتِ وَمَنْ فِى الْاَرْضِ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُ وَالنُّجُوْمُ وَالْجِبَالُ وَالشَّجَرُ وَالدَّوَآبُّ وَكَثِيْرٌ مِّنَ النَّاسِ
তুমি কি দেখ না যে, আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবকিছু আল্লাহকে সিজদা করে। (সিজদা করে) চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্রসমূহ, পর্বতরাজি, বৃক্ষলতা, জীবজন্তু এবং মানুষের মধ্যে অনেকে। (সূরা হজ্জ- ১৮)
وَلِلّٰهِ يَسْجُدُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَرْضِ مِنْ دَآبَّةٍ وَّالْمَلَآئِكَةُ وَهُمْ لَا يَسْتَكْبِرُوْنَ
আসমানসমূহ ও জমিনে বিচরণশীল যা কিছু আছে সবকিছু এবং ফেরেশতারা আল্লাহকে সিজদা করে। আর তারা কেউই অহংকার করে না। (সূরা নাহল- ৪৯)
ফেরেশতারা আল্লাহকে সিজদা করে :
اِنَّ الَّذِيْنَ عِنْدَ رَبِّكَ لَا يَسْتَكْبِرُوْنَ عَنْ عِبَادَتِهٖ وَيُسَبِّحُوْنَهٗ وَلَهٗ يَسْجُدُوْنَ
যারা তোমার প্রতিপালকের সান্নিধ্যে রয়েছে তারা তাঁর ইবাদাতের ক্ষেত্রে অহংকার প্রকাশ করে না। তারা তাঁর মহিমা ঘোষণা করে এবং তাঁরই নিকট সিজদাবনত হয়। (সূরা আ‘রাফ- ২০৬)
গাছপালা আল্লাহকে সিজদা করে :
وَالنَّجْمُ وَالشَّجَرُ يَسْجُدَانِ
তারকা ও বৃক্ষরাজী (আল্লাহকে) সিজদা করে। (সূরা আর রহমান- ৬)
সবকিছুর ছায়া আল্লাহকে সিজদা করে :
اَوَلَمْ يَرَوْا اِلٰى مَا خَلَقَ اللهُ مِنْ شَيْءٍ يَّتَفَيَّاُ ظِلَالُهٗ عَنِ الْيَمِيْنِ وَالشَّمَآئِلِ سُجَّدًا لِّلّٰهِ وَهُمْ دَاخِرُوْنَ
আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তারা কি সেগুলোর প্রতি লক্ষ্য করে না যে, তার ছায়া ডানে ও বামে আল্লাহর প্রতি সিজদাবনত হয়ে ঢলে পড়ে। (সূরা নাহল- ৪৮)
وَلِلّٰهِ يَسْجُدُ مَنْ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ طَوْعًا وَّكَرْهًا وَّظِلَالُهُمْ بِالْغُدُوِّ وَالْاٰصَالِ
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবকিছু ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় সর্বাবস্থায় আল্লাহকে সিজদা করে। এমনকি সকাল-সন্ধ্যায় তাদের ছায়াগুলোও (সিজদা করে)। (সূরা রা‘দ- ১৫)
সাহাবীদের চেহারায় সিজদার চিহ্ন ফুটে উঠত :
تَرَاهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا يَّبْتَغُوْنَ فَضْلًا مِّنَ اللّٰهِ وَرِضْوَانًاؕ سِيْمَاهُمْ فِيْ وُجُوْهِهِمْ مِّنْ اَثَرِ السُّجُوْدِ
তুমি তাদেরকে দেখবে রুকূ ও সিজদা অবস্থায়, তারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি অনুসন্ধানে নিয়োজিত। তাদের চেহারায় সিজদার প্রভাব পরিস্ফুটিত হয়। (সূরা ফাতহ- ২৯)
কতক মানুষ আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাঁর সৃষ্টিকে সিজদা করে :
وَجَدْتُّهَا وَقَوْمَهَا يَسْجُدُوْنَ لِلشَّمْسِ مِنْ دُوْنِ اللهِ وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ اَعْمَالَهُمْ فَصَدَّهُمْ عَنِ السَّبِيْلِ فَهُمْ لَا يَهْتَدُوْنَ
আমি তাকে ও তার সম্প্রদায়কে দেখলাম তারা আল্লাহর পরিবর্তে সূর্যকে সিজদা করছে। শয়তান তাদের কার্যাবলি তাদের নিকট সুন্দর করে দিয়েছে এবং তাদেরকে সৎপথ হতে বিরত রেখেছে, ফলে তারা হেদায়াতপ্রাপ্ত হয় না। (সূরা নামল- ২৪)
এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুকে সিজদা করা যাবে না :
لَا تَسْجُدُوْا لِلشَّمْسِ وَلَا لِلْقَمَرِ وَاسْجُدُوْا لِلّٰهِ الَّذِيْ خَلَقَهُنَّ اِنْ كُنْتُمْ اِيَّاهُ تَعْبُدُوْنَ
তোমরা সূর্য ও চন্দ্রকে সিজদা করো না; বরং আল্লাহকে সিজদা করো, যিনি এগুলোকে সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা তাঁরই ইবাদাত করে থাক। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৩৭)
অনেকেই আল্লাহকে সিজদা করে না :
وَاِذَا قِيْلَ لَهُمُ اسْجُدُوْا لِلرَّحْمٰنِ قَالُوْا وَمَا الرَّحْمٰنُ اَنَسْجُدُ لِمَا تَاْمُرُنَا وَزَادَهُمْ نُفُوْرًا
যখন তাদেরকে বলা হলো, তোমরা দয়াময় আল্লাহর প্রতি সিজদাবনত হও তখন তারা বলল, দয়াময় আল্লাহ আবার কে? যাকেই তোমরা আমাদেরকে সিজদা করতে বলবে তাকেই কি আমরা সিজদা করব? বস্তুত এটা তাদের বিদ্বেষ আরো বাড়িয়ে দেয়। (সূরা ফুরক্বান- ৬০)
وَاِذَا قُرِئَ عَلَيْهِمُ الْقُرْاٰنُ لَا يَسْجُدُوْنَ
আর যখন তাদের সামনে কুরআন তিলাওয়াত করা হয়, তখন তারা সিজদাবনত হয় না। (সূরা ইনশিক্বাক- ২১)
যারা দুনিয়াতে সিজদা করে না, তারা পরকালে অপমানিত হবে :
خَاشِعَةً اَبْصَارُهُمْ تَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌؕ وَقَدْ كَانُوْا يُدْعَوْنَ اِلَى السُّجُوْدِ وَهُمْ سَالِمُوْنَ
তাদের দৃষ্টি হবে অবনত, অপমান ও লাঞ্ছনা তাদের উপর চেপে বসবে। (দুনিয়াতে) তারা যখন সুস্থ ও নিরাপদ ছিল তখনও তাদেরকে সিজদা করার জন্য ডাকা হতো (কিন্তু তারা সিজদা করত না)। (সূরা ক্বালাম- ৪৩)
فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَكُنْ مِّنَ السَّاجِدِيْنَ
অতএব প্রশংসার সাথে তোমার প্রতিপালকের পবিত্রতা বর্ণনা করো এবং সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও। (সূরা হিজর- ৯৮)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا ارْكَعُوْا وَاسْجُدُوْا وَاعْبُدُوْا رَبَّكُمْ وَافْعَلُوا الْخَيْرَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা রুকূ করো ও সিজদা করো। আর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের ইবাদাত করো এবং সৎকাজ করো, যাতে তোমরা সফলতা লাভ করতে পার। (সূরা হজ্জ- ৭৭)
ব্যাখ্যা : সিজদা বলতে বুঝায় আনুগত্য প্রকাশ করার জন্য ঝুঁকে পড়া, আদেশ পালন করা এবং মাথা নত করা। পৃথিবী ও আকাশের প্রত্যেকটি সৃষ্টি আল্লাহর আইনের অনুগত। তারা তাঁর ইচ্ছার একটুও বিরোধিতা করতে পারে না। এ অর্থে তারা প্রত্যেকেই আল্লাহকে সিজদা করছে। মুমিন স্বেচ্ছায় আল্লাহর সামনে নত হয়, কিন্তু কাফিরকে বাধ্য হয়ে নত হতে হয়। কারণ আল্লাহর প্রাকৃতিক আইনের বাইরে চলে যাওয়ার ক্ষমতা কারো নেই।
সিজদা আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায় :
كَلَّاؕ لَا تُطِعْهُ وَاسْجُدْ وَاقْتَرِبْ
কখনো নয়, তুমি কিছুতেই তার অনুসরণ করো না; বরং তুমি তোমার মালিকের সামনে সিজদাবনত হও এবং তাঁর নৈকট্য লাভ করো। (সূরা আলাক্ব- ১৯)
পৃথিবীর সবকিছু আল্লাহকে সিজদা করে :
اَلَمْ تَرَ اَنَّ اللهَ يَسْجُدُ لَهٗ مَنْ فِى السَّمَاوَاتِ وَمَنْ فِى الْاَرْضِ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُ وَالنُّجُوْمُ وَالْجِبَالُ وَالشَّجَرُ وَالدَّوَآبُّ وَكَثِيْرٌ مِّنَ النَّاسِ
তুমি কি দেখ না যে, আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবকিছু আল্লাহকে সিজদা করে। (সিজদা করে) চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্রসমূহ, পর্বতরাজি, বৃক্ষলতা, জীবজন্তু এবং মানুষের মধ্যে অনেকে। (সূরা হজ্জ- ১৮)
وَلِلّٰهِ يَسْجُدُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَرْضِ مِنْ دَآبَّةٍ وَّالْمَلَآئِكَةُ وَهُمْ لَا يَسْتَكْبِرُوْنَ
আসমানসমূহ ও জমিনে বিচরণশীল যা কিছু আছে সবকিছু এবং ফেরেশতারা আল্লাহকে সিজদা করে। আর তারা কেউই অহংকার করে না। (সূরা নাহল- ৪৯)
ফেরেশতারা আল্লাহকে সিজদা করে :
اِنَّ الَّذِيْنَ عِنْدَ رَبِّكَ لَا يَسْتَكْبِرُوْنَ عَنْ عِبَادَتِهٖ وَيُسَبِّحُوْنَهٗ وَلَهٗ يَسْجُدُوْنَ
যারা তোমার প্রতিপালকের সান্নিধ্যে রয়েছে তারা তাঁর ইবাদাতের ক্ষেত্রে অহংকার প্রকাশ করে না। তারা তাঁর মহিমা ঘোষণা করে এবং তাঁরই নিকট সিজদাবনত হয়। (সূরা আ‘রাফ- ২০৬)
গাছপালা আল্লাহকে সিজদা করে :
وَالنَّجْمُ وَالشَّجَرُ يَسْجُدَانِ
তারকা ও বৃক্ষরাজী (আল্লাহকে) সিজদা করে। (সূরা আর রহমান- ৬)
সবকিছুর ছায়া আল্লাহকে সিজদা করে :
اَوَلَمْ يَرَوْا اِلٰى مَا خَلَقَ اللهُ مِنْ شَيْءٍ يَّتَفَيَّاُ ظِلَالُهٗ عَنِ الْيَمِيْنِ وَالشَّمَآئِلِ سُجَّدًا لِّلّٰهِ وَهُمْ دَاخِرُوْنَ
আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তারা কি সেগুলোর প্রতি লক্ষ্য করে না যে, তার ছায়া ডানে ও বামে আল্লাহর প্রতি সিজদাবনত হয়ে ঢলে পড়ে। (সূরা নাহল- ৪৮)
وَلِلّٰهِ يَسْجُدُ مَنْ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ طَوْعًا وَّكَرْهًا وَّظِلَالُهُمْ بِالْغُدُوِّ وَالْاٰصَالِ
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবকিছু ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় সর্বাবস্থায় আল্লাহকে সিজদা করে। এমনকি সকাল-সন্ধ্যায় তাদের ছায়াগুলোও (সিজদা করে)। (সূরা রা‘দ- ১৫)
সাহাবীদের চেহারায় সিজদার চিহ্ন ফুটে উঠত :
تَرَاهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا يَّبْتَغُوْنَ فَضْلًا مِّنَ اللّٰهِ وَرِضْوَانًاؕ سِيْمَاهُمْ فِيْ وُجُوْهِهِمْ مِّنْ اَثَرِ السُّجُوْدِ
তুমি তাদেরকে দেখবে রুকূ ও সিজদা অবস্থায়, তারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি অনুসন্ধানে নিয়োজিত। তাদের চেহারায় সিজদার প্রভাব পরিস্ফুটিত হয়। (সূরা ফাতহ- ২৯)
কতক মানুষ আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাঁর সৃষ্টিকে সিজদা করে :
وَجَدْتُّهَا وَقَوْمَهَا يَسْجُدُوْنَ لِلشَّمْسِ مِنْ دُوْنِ اللهِ وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ اَعْمَالَهُمْ فَصَدَّهُمْ عَنِ السَّبِيْلِ فَهُمْ لَا يَهْتَدُوْنَ
আমি তাকে ও তার সম্প্রদায়কে দেখলাম তারা আল্লাহর পরিবর্তে সূর্যকে সিজদা করছে। শয়তান তাদের কার্যাবলি তাদের নিকট সুন্দর করে দিয়েছে এবং তাদেরকে সৎপথ হতে বিরত রেখেছে, ফলে তারা হেদায়াতপ্রাপ্ত হয় না। (সূরা নামল- ২৪)
এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুকে সিজদা করা যাবে না :
لَا تَسْجُدُوْا لِلشَّمْسِ وَلَا لِلْقَمَرِ وَاسْجُدُوْا لِلّٰهِ الَّذِيْ خَلَقَهُنَّ اِنْ كُنْتُمْ اِيَّاهُ تَعْبُدُوْنَ
তোমরা সূর্য ও চন্দ্রকে সিজদা করো না; বরং আল্লাহকে সিজদা করো, যিনি এগুলোকে সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা তাঁরই ইবাদাত করে থাক। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৩৭)
অনেকেই আল্লাহকে সিজদা করে না :
وَاِذَا قِيْلَ لَهُمُ اسْجُدُوْا لِلرَّحْمٰنِ قَالُوْا وَمَا الرَّحْمٰنُ اَنَسْجُدُ لِمَا تَاْمُرُنَا وَزَادَهُمْ نُفُوْرًا
যখন তাদেরকে বলা হলো, তোমরা দয়াময় আল্লাহর প্রতি সিজদাবনত হও তখন তারা বলল, দয়াময় আল্লাহ আবার কে? যাকেই তোমরা আমাদেরকে সিজদা করতে বলবে তাকেই কি আমরা সিজদা করব? বস্তুত এটা তাদের বিদ্বেষ আরো বাড়িয়ে দেয়। (সূরা ফুরক্বান- ৬০)
وَاِذَا قُرِئَ عَلَيْهِمُ الْقُرْاٰنُ لَا يَسْجُدُوْنَ
আর যখন তাদের সামনে কুরআন তিলাওয়াত করা হয়, তখন তারা সিজদাবনত হয় না। (সূরা ইনশিক্বাক- ২১)
যারা দুনিয়াতে সিজদা করে না, তারা পরকালে অপমানিত হবে :
خَاشِعَةً اَبْصَارُهُمْ تَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌؕ وَقَدْ كَانُوْا يُدْعَوْنَ اِلَى السُّجُوْدِ وَهُمْ سَالِمُوْنَ
তাদের দৃষ্টি হবে অবনত, অপমান ও লাঞ্ছনা তাদের উপর চেপে বসবে। (দুনিয়াতে) তারা যখন সুস্থ ও নিরাপদ ছিল তখনও তাদেরকে সিজদা করার জন্য ডাকা হতো (কিন্তু তারা সিজদা করত না)। (সূরা ক্বালাম- ৪৩)
জুমুআর সালাত আদায় করা ফরয :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا نُوْدِيَ لِلصَّلَاةِ مِنْ يَّوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا اِلٰى ذِكْرِ اللهِ وَذَرُوا الْبَيْعَؕ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
হে মুমিনগণ! জুমু‘আর দিন যখন নামাজের জন্য আহবান করা হবে, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ করো, এটাই তোমাদের জন্য উত্তম- যদি তোমরা উপলব্ধি কর। (সূরা জুমু‘আ- ৯)
খুতবার সময় অনুপস্থিত থাকা ঠিক নয় :
وَاِذَا رَاَوْا تِجَارَةً اَوْ لَهْوَانِ انْفَضُّوْاۤ اِلَيْهَا وَتَرَكُوْكَ قَآئِمًاؕ قُلْ مَا عِنْدَ اللهِ خَيْرٌ مِّنَ اللَّهْوِ وَمِنَ التِّجَارَةِؕ وَاللهُ خَيْرُ الرَّازِقِيْنَ
যখন তারা কোন ক্রয়-বিক্রয় বা খেলতামাশা দেখে, তখন তারা তোমাকে দাঁড়ানো অবস্থায় রেখে সেদিকে ছুটে যায়। (হে নবী! তাদেরকে) বলে দাও, আল্লাহর নিকট যা আছে তা খেলতামাশা ও ক্রয়-বিক্রয় থেকে উত্তম; আর আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ রিযিকদাতা। (সূরা জুমু‘আ- ১১)
ব্যাখ্যা : জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক জুমু‘আর দিন নবী ﷺ দাঁড়ানো অবস্থায় ছিলেন (জুমু‘আর খুতবা দিচ্ছিলেন)। এমতাবস্থায় একটি বণিক দল মদিনায় এসে পৌঁছল। তখন ﷺ এর সাহাবীগণ সেদিকে ছুটে গেলেন। এমনকি বারোজন ব্যতীত আর কেউ অবশিষ্ট ছিলেন না। আবু বকর ও ওমর (রাঃ) ও এদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। (সহীহ মুসলিম, হা/১৮৮৫)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا نُوْدِيَ لِلصَّلَاةِ مِنْ يَّوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا اِلٰى ذِكْرِ اللهِ وَذَرُوا الْبَيْعَؕ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
হে মুমিনগণ! জুমু‘আর দিন যখন নামাজের জন্য আহবান করা হবে, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ করো, এটাই তোমাদের জন্য উত্তম- যদি তোমরা উপলব্ধি কর। (সূরা জুমু‘আ- ৯)
খুতবার সময় অনুপস্থিত থাকা ঠিক নয় :
وَاِذَا رَاَوْا تِجَارَةً اَوْ لَهْوَانِ انْفَضُّوْاۤ اِلَيْهَا وَتَرَكُوْكَ قَآئِمًاؕ قُلْ مَا عِنْدَ اللهِ خَيْرٌ مِّنَ اللَّهْوِ وَمِنَ التِّجَارَةِؕ وَاللهُ خَيْرُ الرَّازِقِيْنَ
যখন তারা কোন ক্রয়-বিক্রয় বা খেলতামাশা দেখে, তখন তারা তোমাকে দাঁড়ানো অবস্থায় রেখে সেদিকে ছুটে যায়। (হে নবী! তাদেরকে) বলে দাও, আল্লাহর নিকট যা আছে তা খেলতামাশা ও ক্রয়-বিক্রয় থেকে উত্তম; আর আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ রিযিকদাতা। (সূরা জুমু‘আ- ১১)
ব্যাখ্যা : জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক জুমু‘আর দিন নবী ﷺ দাঁড়ানো অবস্থায় ছিলেন (জুমু‘আর খুতবা দিচ্ছিলেন)। এমতাবস্থায় একটি বণিক দল মদিনায় এসে পৌঁছল। তখন ﷺ এর সাহাবীগণ সেদিকে ছুটে গেলেন। এমনকি বারোজন ব্যতীত আর কেউ অবশিষ্ট ছিলেন না। আবু বকর ও ওমর (রাঃ) ও এদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। (সহীহ মুসলিম, হা/১৮৮৫)
তাহাজ্জুদের সালাত আদায়ের নির্দেশ :
يَاۤ اَيُّهَا الْمُزَّمِّلُ ‐ قُمِ اللَّيْلَ اِلَّا قَلِيْلًا ‐ نِصْفَهٗۤ اَوِ انْقُصْ مِنْهُ قَلِيْلًا ‐ اَوْ زِدْ عَلَيْهِ وَرَتِّلِ الْقُرْاٰنَ تَرْتِيْلًا
হে বস্ত্রাবৃত! রাত্রি জাগরণ (সালাত আদায়) করো, তবে কিছু অংশ বাদে। তার অর্ধেক কিংবা তদপেক্ষা কিছু কম অথবা তদপেক্ষা বেশি। আর কুরআন পাঠ করো ধীরে ধীরে (থেমে থেমে সুন্দরভাবে)। (সূরা মুয্যাম্মিল- ১-৪)
وَمِنَ اللَّيْلِ فَاسْجُدْ لَهٗ وَسَبِّحْهُ لَيْلًا طَوِيْلًا
রাতে তাঁর জন্য সিজদায় নত হও এবং রাতে দীর্ঘ সময় তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করো। (সূরা দাহর- ২৬)
নবী ও সাহাবীরা এ সালাত আদায় করতেন :
اِنَّ رَبَّكَ يَعْلَمُ اَنَّكَ تَقُوْمُ اَدْنٰى مِنْ ثُلُثَيِ اللَّيْلِ وَنِصْفَهٗ وَثُلُثَهٗ وَطَآئِفَةٌ مِّنَ الَّذِيْنَ مَعَكَ
তোমার প্রতিপালক তো জানেন যে, তুমি জাগরণ কর- কখনো রাত্রির প্রায় দুই তৃতীয়াংশ, কখনো অর্ধাংশ এবং কখনো এক তৃতীয়াংশ এবং তোমার সাথে যারা আছে তাদের একটি দলও জাগরণ করে। (সূরা মুয্যাম্মিল- ২০)
প্রথমে এ সালাত ফরয ছিল, পরে তা নফল করে দেয়া হয় :
وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهٖ نَافِلَةً لَّكَ ۗ عَسٰى اَنْ يَّبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُوْدًا
রাত্রির কিছু অংশে তাহাজ্জুদ কায়েম করবে, এটা তোমার জন্য একটি অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়, তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৭৯)
আল্লাহর নেক বান্দারা সিজদারত অবস্থায় রাত কাটায় :
وَالَّذِيْنَ يَبِيْتُوْنَ لِرَبِّهِمْ سُجَّدًا وَّقِيَامًا
তারা তাদের প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সিজদাবনত হয়ে ও দন্ডায়মান অবস্থায় রাত্রি অতিবাহিত করে। (সূরা ফুরক্বান- ৬৪)
ব্যাখ্যা : এটা হচ্ছে মুমিনগণের রাতের জীবন। তাদের রাত আরাম-আয়েশে, নাচ-গানে, খেলতামাশায়, আড্ডাবাজী ও চুরি-চামারিতে অতিবাহিত হয় না। তারা জাহেলিয়াতের এসব পরিচিত খারাপ কাজগুলোর পরিবর্তে সমাজে এমনসব লোকদের মতো সৎকর্ম সম্পাদন করত- যাদের রাত কাটত আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে এবং দু‘আ ও ইবাদাত করার মধ্য দিয়ে।
আহলে কিতাবের কিছু লোকও ইবাদাতে রাত কাটায় :
لَيْسُوْا سَوَآءًؕ مِنْ اَهْلِ الْكِتَابِ اُمَّةٌ قَآئِمَةٌ يَّتْلُوْنَ اٰيَاتِ اللهِ اٰنَآءَ اللَّيْلِ وَهُمْ يَسْجُدُوْنَ
তারা সবাই সমান নয়। আহলে কিতাবদের মধ্যে একটি দল রয়েছে অটল, তারা রাতের বেলা আল্লাহর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে এবং সিজদা করে। (সূরা আলে ইমরান- ১১৩)
শেষ রাতে ইবাদাত করা জান্নাতী লোকদের বিশেষ গুণ :
تَتَجَافٰى جُنُوْبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَّطَمَعًا وَّمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ ‐ فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَّاۤ اُخْفِيَ لَهُمْ مِّنْ قُرَّةِ اَعْيُنٍۚ جَزَآءً ۢبِمَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
তাদের দেহ বিছানা থেকে এমনভাবে আলাদা হয়ে যায় যে, তারা তাদের প্রতিপালককে আহবান করতে থাকে ভয়ে ও আশায় এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে তারা ব্যয় করে। কেউই জানে না যে, তাদের কৃতকর্মের প্রতিদানস্বরূপ তাদের জন্য নয়ন জুড়ানো কী কী সামগ্রী লুকিয়ে রাখা হয়েছে? (সূরা সাজদা, ১৫-১৭)
اِنَّ الْمُتَّقِيْنَ فِيْ جَنَّاتٍ وَّعُيُوْنٍ ‐ اٰخِذِيْنَ مَاۤ اٰتَاهُمْ رَبُّهُمْؕ اِنَّهُمْ كَانُوْا قَبْلَ ذٰلِكَ مُحْسِنِيْنَ ‐ كَانُوْا قَلِيْلًا مِّنَ اللَّيْلِ مَا يَهْجَعُوْنَ ‐ وَبِالْاَسْحَارِ هُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ
সেদিন মুত্তাক্বীরা জান্নাত ও ঝর্ণার মধ্যে থাকবে, যা তাদের প্রতিপালক তাদেরকে প্রদান করবেন; তা তারা গ্রহণ করবে। নিশ্চয় তারা ইতোপূর্বে সৎকর্মপরায়ণ ছিল। তারা রাত্রির সামান্য অংশই নিদ্রাবস্থায় অতিবাহিত করত এবং রাত্রির শেষ প্রহরে ক্ষমাপ্রার্থনা করত। (সূরা যারিয়াত, ১৫-১৮)
তাহাজ্জুদ আদায়কারী ব্যক্তিই প্রকৃত জ্ঞানী :
اَمَّنْ هُوَ قَانِتٌ اٰنَآءَ اللَّيْلِ سَاجِدًا وَّقَآئِمًا يَّحْذَرُ الْاٰخِرَةَ وَيَرْجُوْا رَحْمَةَ رَبِّهٖؕ قُلْ هَلْ يَسْتَوِى الَّذِيْنَ يَعْلَمُوْنَ وَالَّذِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَؕ اِنَّمَا يَتَذَكَّرُ اُولُو الْاَلْبَابِ
কাফিররা কি ঐ ব্যক্তির সমান যে ব্যক্তি রাতে সিজদারত অবস্থায় অথবা দাঁড়িয়ে ইবাদাত করে, আখিরাতকে ভয় করে এবং তার প্রতিপালকের রহমত প্রত্যাশা করে? বলো, যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান হতে পারে? নিশ্চয় জ্ঞানবান ব্যক্তিরাই উপদেশ গ্রহণ করে থাকে। (সূরা যুমার- ৯)
ব্যাখ্যা : এখানে দু’শ্রে্র্র্র্র্র্রণির মানুষের মধ্যে তুলনা করা হয়েছে। এক শ্রেণির মানুষ দুঃসময় আসলে আল্লাহর দিকে ফিরে যায়। কিন্তু স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে গায়রুল্লাহর দাসত্ব করে। আরেক শ্রেণির মানুষ আল্লাহর আনুগত্য এবং তাঁর দাসত্বকে তাদের স্থায়ী নীতি বানিয়ে নিয়েছে। রাতের অন্ধকারে আল্লাহর ইবাদাত করা তাদের একনিষ্ঠ হওয়ার প্রমাণ। এর মধ্যে প্রথম দলের অন্তর্ভুক্ত লোকদেরকে আল্লাহ তা‘আলা জ্ঞানহীন বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ ক্ষেত্রে তারা বড় বড় গ্রন্থাগার পড়ে থাকলেও কিছু আসে যায় না। আর দ্বিতীয় দলের অন্তর্ভুক্ত লোকদেরকে জ্ঞানী বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ ক্ষেত্রে একেবারে নিরক্ষর হলেও কিছু আসে যায় না। কারণ প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে সত্য সম্পর্কে জ্ঞান ও তদানুযায়ী কাজ। এর উপরই মানুষের সাফল্য নির্ভরশীল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, এ দু’শ্রেণির মানুষ কীভাবে সমান হতে পারে এবং আখিরাতেও একই পরিণামের সম্মুখীন হবে?
প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ ও কুরআনের মর্ম বুঝার উপযুক্ত সময় এটাই :
اِنَّ نَاشِئَةَ اللَّيْلِ هِيَ اَشَدُّ وَطْئًا وَّاَقْوَمُ قِيْلًا
রাতে বিছানা ত্যাগ করা আত্মসংযমের জন্য অধিক কার্যকর পন্থা এবং স্পষ্ট উচ্চারণের (কুরআন পাঠের) অনুকূল (সময়)। (সূরা মুয্যাম্মিল- ৬)
يَاۤ اَيُّهَا الْمُزَّمِّلُ ‐ قُمِ اللَّيْلَ اِلَّا قَلِيْلًا ‐ نِصْفَهٗۤ اَوِ انْقُصْ مِنْهُ قَلِيْلًا ‐ اَوْ زِدْ عَلَيْهِ وَرَتِّلِ الْقُرْاٰنَ تَرْتِيْلًا
হে বস্ত্রাবৃত! রাত্রি জাগরণ (সালাত আদায়) করো, তবে কিছু অংশ বাদে। তার অর্ধেক কিংবা তদপেক্ষা কিছু কম অথবা তদপেক্ষা বেশি। আর কুরআন পাঠ করো ধীরে ধীরে (থেমে থেমে সুন্দরভাবে)। (সূরা মুয্যাম্মিল- ১-৪)
وَمِنَ اللَّيْلِ فَاسْجُدْ لَهٗ وَسَبِّحْهُ لَيْلًا طَوِيْلًا
রাতে তাঁর জন্য সিজদায় নত হও এবং রাতে দীর্ঘ সময় তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করো। (সূরা দাহর- ২৬)
নবী ও সাহাবীরা এ সালাত আদায় করতেন :
اِنَّ رَبَّكَ يَعْلَمُ اَنَّكَ تَقُوْمُ اَدْنٰى مِنْ ثُلُثَيِ اللَّيْلِ وَنِصْفَهٗ وَثُلُثَهٗ وَطَآئِفَةٌ مِّنَ الَّذِيْنَ مَعَكَ
তোমার প্রতিপালক তো জানেন যে, তুমি জাগরণ কর- কখনো রাত্রির প্রায় দুই তৃতীয়াংশ, কখনো অর্ধাংশ এবং কখনো এক তৃতীয়াংশ এবং তোমার সাথে যারা আছে তাদের একটি দলও জাগরণ করে। (সূরা মুয্যাম্মিল- ২০)
প্রথমে এ সালাত ফরয ছিল, পরে তা নফল করে দেয়া হয় :
وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهٖ نَافِلَةً لَّكَ ۗ عَسٰى اَنْ يَّبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُوْدًا
রাত্রির কিছু অংশে তাহাজ্জুদ কায়েম করবে, এটা তোমার জন্য একটি অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়, তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৭৯)
আল্লাহর নেক বান্দারা সিজদারত অবস্থায় রাত কাটায় :
وَالَّذِيْنَ يَبِيْتُوْنَ لِرَبِّهِمْ سُجَّدًا وَّقِيَامًا
তারা তাদের প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সিজদাবনত হয়ে ও দন্ডায়মান অবস্থায় রাত্রি অতিবাহিত করে। (সূরা ফুরক্বান- ৬৪)
ব্যাখ্যা : এটা হচ্ছে মুমিনগণের রাতের জীবন। তাদের রাত আরাম-আয়েশে, নাচ-গানে, খেলতামাশায়, আড্ডাবাজী ও চুরি-চামারিতে অতিবাহিত হয় না। তারা জাহেলিয়াতের এসব পরিচিত খারাপ কাজগুলোর পরিবর্তে সমাজে এমনসব লোকদের মতো সৎকর্ম সম্পাদন করত- যাদের রাত কাটত আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে এবং দু‘আ ও ইবাদাত করার মধ্য দিয়ে।
আহলে কিতাবের কিছু লোকও ইবাদাতে রাত কাটায় :
لَيْسُوْا سَوَآءًؕ مِنْ اَهْلِ الْكِتَابِ اُمَّةٌ قَآئِمَةٌ يَّتْلُوْنَ اٰيَاتِ اللهِ اٰنَآءَ اللَّيْلِ وَهُمْ يَسْجُدُوْنَ
তারা সবাই সমান নয়। আহলে কিতাবদের মধ্যে একটি দল রয়েছে অটল, তারা রাতের বেলা আল্লাহর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে এবং সিজদা করে। (সূরা আলে ইমরান- ১১৩)
শেষ রাতে ইবাদাত করা জান্নাতী লোকদের বিশেষ গুণ :
تَتَجَافٰى جُنُوْبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَّطَمَعًا وَّمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ ‐ فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَّاۤ اُخْفِيَ لَهُمْ مِّنْ قُرَّةِ اَعْيُنٍۚ جَزَآءً ۢبِمَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
তাদের দেহ বিছানা থেকে এমনভাবে আলাদা হয়ে যায় যে, তারা তাদের প্রতিপালককে আহবান করতে থাকে ভয়ে ও আশায় এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে তারা ব্যয় করে। কেউই জানে না যে, তাদের কৃতকর্মের প্রতিদানস্বরূপ তাদের জন্য নয়ন জুড়ানো কী কী সামগ্রী লুকিয়ে রাখা হয়েছে? (সূরা সাজদা, ১৫-১৭)
اِنَّ الْمُتَّقِيْنَ فِيْ جَنَّاتٍ وَّعُيُوْنٍ ‐ اٰخِذِيْنَ مَاۤ اٰتَاهُمْ رَبُّهُمْؕ اِنَّهُمْ كَانُوْا قَبْلَ ذٰلِكَ مُحْسِنِيْنَ ‐ كَانُوْا قَلِيْلًا مِّنَ اللَّيْلِ مَا يَهْجَعُوْنَ ‐ وَبِالْاَسْحَارِ هُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ
সেদিন মুত্তাক্বীরা জান্নাত ও ঝর্ণার মধ্যে থাকবে, যা তাদের প্রতিপালক তাদেরকে প্রদান করবেন; তা তারা গ্রহণ করবে। নিশ্চয় তারা ইতোপূর্বে সৎকর্মপরায়ণ ছিল। তারা রাত্রির সামান্য অংশই নিদ্রাবস্থায় অতিবাহিত করত এবং রাত্রির শেষ প্রহরে ক্ষমাপ্রার্থনা করত। (সূরা যারিয়াত, ১৫-১৮)
তাহাজ্জুদ আদায়কারী ব্যক্তিই প্রকৃত জ্ঞানী :
اَمَّنْ هُوَ قَانِتٌ اٰنَآءَ اللَّيْلِ سَاجِدًا وَّقَآئِمًا يَّحْذَرُ الْاٰخِرَةَ وَيَرْجُوْا رَحْمَةَ رَبِّهٖؕ قُلْ هَلْ يَسْتَوِى الَّذِيْنَ يَعْلَمُوْنَ وَالَّذِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَؕ اِنَّمَا يَتَذَكَّرُ اُولُو الْاَلْبَابِ
কাফিররা কি ঐ ব্যক্তির সমান যে ব্যক্তি রাতে সিজদারত অবস্থায় অথবা দাঁড়িয়ে ইবাদাত করে, আখিরাতকে ভয় করে এবং তার প্রতিপালকের রহমত প্রত্যাশা করে? বলো, যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান হতে পারে? নিশ্চয় জ্ঞানবান ব্যক্তিরাই উপদেশ গ্রহণ করে থাকে। (সূরা যুমার- ৯)
ব্যাখ্যা : এখানে দু’শ্রে্র্র্র্র্র্রণির মানুষের মধ্যে তুলনা করা হয়েছে। এক শ্রেণির মানুষ দুঃসময় আসলে আল্লাহর দিকে ফিরে যায়। কিন্তু স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে গায়রুল্লাহর দাসত্ব করে। আরেক শ্রেণির মানুষ আল্লাহর আনুগত্য এবং তাঁর দাসত্বকে তাদের স্থায়ী নীতি বানিয়ে নিয়েছে। রাতের অন্ধকারে আল্লাহর ইবাদাত করা তাদের একনিষ্ঠ হওয়ার প্রমাণ। এর মধ্যে প্রথম দলের অন্তর্ভুক্ত লোকদেরকে আল্লাহ তা‘আলা জ্ঞানহীন বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ ক্ষেত্রে তারা বড় বড় গ্রন্থাগার পড়ে থাকলেও কিছু আসে যায় না। আর দ্বিতীয় দলের অন্তর্ভুক্ত লোকদেরকে জ্ঞানী বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ ক্ষেত্রে একেবারে নিরক্ষর হলেও কিছু আসে যায় না। কারণ প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে সত্য সম্পর্কে জ্ঞান ও তদানুযায়ী কাজ। এর উপরই মানুষের সাফল্য নির্ভরশীল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, এ দু’শ্রেণির মানুষ কীভাবে সমান হতে পারে এবং আখিরাতেও একই পরিণামের সম্মুখীন হবে?
প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ ও কুরআনের মর্ম বুঝার উপযুক্ত সময় এটাই :
اِنَّ نَاشِئَةَ اللَّيْلِ هِيَ اَشَدُّ وَطْئًا وَّاَقْوَمُ قِيْلًا
রাতে বিছানা ত্যাগ করা আত্মসংযমের জন্য অধিক কার্যকর পন্থা এবং স্পষ্ট উচ্চারণের (কুরআন পাঠের) অনুকূল (সময়)। (সূরা মুয্যাম্মিল- ৬)
সফরের সময় কসর সালাত আদায় করা যায় :
وَاِذَا ضَرَبْتُمْ فِى الْاَرْضِ فَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ اَنْ تَقْصُرُوْا مِنَ الصَّلَاةِ اِنْ خِفْتُمْ اَنْ يَّفْتِنَكُمُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اِنَّ الْكَافِرِيْنَ كَانُوْا لَكُمْ عَدُوًّا مُّبِيْنًا
যখন তোমরা জমিনে সফর করবে তখন যদি তোমাদের আশঙ্কা হয় যে, কাফিররা তোমাদের জন্য ফিতনা সৃষ্টি করবে, তখন যদি তোমরা সালাত সংক্ষিপ্ত করে দাও তাহলে তাতে কোন দোষ নেই। নিশ্চয় কাফিররা তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা নিসা- ১০১)
ব্যাখ্যা : যেসব ওয়াক্তে চার রাকআত সালাত ফরয, সেসব ওয়াক্তে ফরয সালাত দু’রাকআত আদায় করাই হচ্ছে কসর। নবী ﷺ সফরে ফজরের সুন্নাত ও বেতর সালাত নিয়মিত পড়তেন; কিন্তু অন্যান্য ওয়াক্তে কেবল ফরয পড়তেন। নিয়মিত সুন্নাত পড়া তাঁর থেকে প্রমাণিত হয়নি। তবে যখনই নফল সালাতের সুযোগ পেতেন তখন তা পড়ে নিতেন। এমনকি সাওয়ারীর পিঠে বসেও নফল সালাত আদায় করতেন। মুসাফির যখন পথে চলমান অবস্থায় থাকে তখন তার সুন্নাত না পড়াই উত্তম। আর যখন কোন নিরাপদ স্থানে অবস্থান করতে থাকে তখন সুন্নাত পড়াই উত্তম।
খাউফ বা ভয়ের সময় সালাত আদায় করার নিয়ম :
وَاِذَا كُنْتَ فِيْهِمْ فَاَقَمْتَ لَهُمُ الصَّلَاةَ فَلْتَقُمْ طَآئِفَةٌ مِّنْهُمْ مَّعَكَ وَلْيَاْخُذُوْاۤ اَسْلِحَتَهُمْؕ فَاِذَا سَجَدُوْا فَلْيَكُوْنُوْا مِنْ وَّرَآئِكُمْ وَلْتَاْتِ طَآئِفَةٌ اُخْرٰى لَمْ يُصَلُّوْا فَلْيُصَلُّوْا مَعَكَ وَلْيَاْخُذُوْا حِذْرَهُمْ وَاَسْلِحَتَهُمْۚ وَدَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَوْ تَغْفُلُوْنَ عَنْ اَسْلِحَتِكُمْ وَاَمْتِعَتِكُمْ فَيَمِيْلُوْنَ عَلَيْكُمْ مَّيْلَةً وَّاحِدَةًؕ وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ اِنْ كَانَ بِكُمْ اَذًى مِّنْ مَّطَرٍ اَوْ كُنْتُمْ مَّرْضٰۤى اَنْ تَضَعُوْاۤ اَسْلِحَتَكُمْۚ وَخُذُوْا حِذْرَكُمْؕ اِنَّ اللهَ اَعَدَّ لِلْكَافِرِيْنَ عَذَابًا مُّهِيْنًا
আর যখন তুমি তাদের মধ্যে অবস্থান করবে, তখন তাদের সাথে সালাত কায়েম করবে। অতঃপর তাদের একদল যেন তোমার সঙ্গে দাঁড়ায় এবং তারা যেন সশস্ত্র থাকে। তারা সিজদায় গেলে তারা যেন তোমাদের পেছনে অবস্থান করে; আর অপর একদল যারা সালাতে শরীক হয়নি তারা যেন তোমার সঙ্গে সালাতে শরীক হয় এবং তারা যেন সতর্ক ও সশস্ত্র থাকে। কাফিররা কামনা করে যেন তোমরা তোমাদের অস্ত্রশস্ত্র ও আসবাবপত্র সম্বন্ধে অসতর্ক হও, যাতে তারা তোমাদের উপর একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। আর যদি তোমরা বৃষ্টির জন্য কষ্ট পাও অথবা পীড়িত থাক, তবে তোমরা অস্ত্র রেখে দিলে তোমাদের কোন দোষ নেই; কিন্তু তোমরা সতর্কতা অবলম্বন করবে। নিশ্চয় আল্লাহ কাফিরদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি। (সূরা নিসা- ১০২)
ব্যাখ্যা : যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যেভাবে সম্ভব সালাত আদায় করে নিতে হবে। জামা‘আতে আদায় করার সুযোগ থাকলে জামা‘আতের সাথে আদায় করে নিতে হবে। অন্যথায় একা একা আদায় করে নিতে হবে। কিবলার দিকে মুখ করে আদায় করা সম্ভব না হলে যে দিকে মুখ করে আদায় করা সম্ভব সেদিকেই মুখ করে আদায় করতে হবে। সাওয়ারীর পিঠে বসে চলন্ত অবস্থায়ও আদায় করা যেতে পারে। রুকূ ও সিজদা করা সম্ভব না হলে ইশারায় করতে হবে। কাপড়ে রক্ত লেগে থাকলেও কোন ক্ষতি নেই। এসব সহজ ব্যবস্থার পরও যদি অবস্থা এতই বিপজ্জনক হয়, যার ফলে সালাত আদায় করা সম্ভব না হয়, তাহলে বাধ্য হয়ে সালাত পিছিয়ে দিতে হবে। যেমন খন্দকের যুদ্ধের সময় হয়েছিল।
যুদ্ধের অবস্থার উপর ‘সালাতুল খাওফ’ আদায়ের পদ্ধতি নির্ভর করে। নবী ﷺ বিভিন্ন অবস্থায় বিভিন্ন পদ্ধতিতে এ সালাত আদায় করেছেন। কাজেই যুদ্ধের পরিস্থিতির আলোকে মুসলিম দলের প্রধান যেটির অনুমতি দেবে সে পদ্ধতিতেই সালাত আদায় করে নেবে।
وَاِذَا ضَرَبْتُمْ فِى الْاَرْضِ فَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ اَنْ تَقْصُرُوْا مِنَ الصَّلَاةِ اِنْ خِفْتُمْ اَنْ يَّفْتِنَكُمُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اِنَّ الْكَافِرِيْنَ كَانُوْا لَكُمْ عَدُوًّا مُّبِيْنًا
যখন তোমরা জমিনে সফর করবে তখন যদি তোমাদের আশঙ্কা হয় যে, কাফিররা তোমাদের জন্য ফিতনা সৃষ্টি করবে, তখন যদি তোমরা সালাত সংক্ষিপ্ত করে দাও তাহলে তাতে কোন দোষ নেই। নিশ্চয় কাফিররা তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা নিসা- ১০১)
ব্যাখ্যা : যেসব ওয়াক্তে চার রাকআত সালাত ফরয, সেসব ওয়াক্তে ফরয সালাত দু’রাকআত আদায় করাই হচ্ছে কসর। নবী ﷺ সফরে ফজরের সুন্নাত ও বেতর সালাত নিয়মিত পড়তেন; কিন্তু অন্যান্য ওয়াক্তে কেবল ফরয পড়তেন। নিয়মিত সুন্নাত পড়া তাঁর থেকে প্রমাণিত হয়নি। তবে যখনই নফল সালাতের সুযোগ পেতেন তখন তা পড়ে নিতেন। এমনকি সাওয়ারীর পিঠে বসেও নফল সালাত আদায় করতেন। মুসাফির যখন পথে চলমান অবস্থায় থাকে তখন তার সুন্নাত না পড়াই উত্তম। আর যখন কোন নিরাপদ স্থানে অবস্থান করতে থাকে তখন সুন্নাত পড়াই উত্তম।
খাউফ বা ভয়ের সময় সালাত আদায় করার নিয়ম :
وَاِذَا كُنْتَ فِيْهِمْ فَاَقَمْتَ لَهُمُ الصَّلَاةَ فَلْتَقُمْ طَآئِفَةٌ مِّنْهُمْ مَّعَكَ وَلْيَاْخُذُوْاۤ اَسْلِحَتَهُمْؕ فَاِذَا سَجَدُوْا فَلْيَكُوْنُوْا مِنْ وَّرَآئِكُمْ وَلْتَاْتِ طَآئِفَةٌ اُخْرٰى لَمْ يُصَلُّوْا فَلْيُصَلُّوْا مَعَكَ وَلْيَاْخُذُوْا حِذْرَهُمْ وَاَسْلِحَتَهُمْۚ وَدَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَوْ تَغْفُلُوْنَ عَنْ اَسْلِحَتِكُمْ وَاَمْتِعَتِكُمْ فَيَمِيْلُوْنَ عَلَيْكُمْ مَّيْلَةً وَّاحِدَةًؕ وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ اِنْ كَانَ بِكُمْ اَذًى مِّنْ مَّطَرٍ اَوْ كُنْتُمْ مَّرْضٰۤى اَنْ تَضَعُوْاۤ اَسْلِحَتَكُمْۚ وَخُذُوْا حِذْرَكُمْؕ اِنَّ اللهَ اَعَدَّ لِلْكَافِرِيْنَ عَذَابًا مُّهِيْنًا
আর যখন তুমি তাদের মধ্যে অবস্থান করবে, তখন তাদের সাথে সালাত কায়েম করবে। অতঃপর তাদের একদল যেন তোমার সঙ্গে দাঁড়ায় এবং তারা যেন সশস্ত্র থাকে। তারা সিজদায় গেলে তারা যেন তোমাদের পেছনে অবস্থান করে; আর অপর একদল যারা সালাতে শরীক হয়নি তারা যেন তোমার সঙ্গে সালাতে শরীক হয় এবং তারা যেন সতর্ক ও সশস্ত্র থাকে। কাফিররা কামনা করে যেন তোমরা তোমাদের অস্ত্রশস্ত্র ও আসবাবপত্র সম্বন্ধে অসতর্ক হও, যাতে তারা তোমাদের উপর একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। আর যদি তোমরা বৃষ্টির জন্য কষ্ট পাও অথবা পীড়িত থাক, তবে তোমরা অস্ত্র রেখে দিলে তোমাদের কোন দোষ নেই; কিন্তু তোমরা সতর্কতা অবলম্বন করবে। নিশ্চয় আল্লাহ কাফিরদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি। (সূরা নিসা- ১০২)
ব্যাখ্যা : যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যেভাবে সম্ভব সালাত আদায় করে নিতে হবে। জামা‘আতে আদায় করার সুযোগ থাকলে জামা‘আতের সাথে আদায় করে নিতে হবে। অন্যথায় একা একা আদায় করে নিতে হবে। কিবলার দিকে মুখ করে আদায় করা সম্ভব না হলে যে দিকে মুখ করে আদায় করা সম্ভব সেদিকেই মুখ করে আদায় করতে হবে। সাওয়ারীর পিঠে বসে চলন্ত অবস্থায়ও আদায় করা যেতে পারে। রুকূ ও সিজদা করা সম্ভব না হলে ইশারায় করতে হবে। কাপড়ে রক্ত লেগে থাকলেও কোন ক্ষতি নেই। এসব সহজ ব্যবস্থার পরও যদি অবস্থা এতই বিপজ্জনক হয়, যার ফলে সালাত আদায় করা সম্ভব না হয়, তাহলে বাধ্য হয়ে সালাত পিছিয়ে দিতে হবে। যেমন খন্দকের যুদ্ধের সময় হয়েছিল।
যুদ্ধের অবস্থার উপর ‘সালাতুল খাওফ’ আদায়ের পদ্ধতি নির্ভর করে। নবী ﷺ বিভিন্ন অবস্থায় বিভিন্ন পদ্ধতিতে এ সালাত আদায় করেছেন। কাজেই যুদ্ধের পরিস্থিতির আলোকে মুসলিম দলের প্রধান যেটির অনুমতি দেবে সে পদ্ধতিতেই সালাত আদায় করে নেবে।
মুনাফিকদের সালাত ধ্বংস ডেকে আনে :
فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّيْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُوْنَ
দুর্ভোগ সেসব সালাত আদায়কারীদের জন্য, যারা তাদের সালাতের ব্যাপারে গাফিল। (সূরা মাউন- ৪)
তারা লোক দেখানোর জন্য সালাত আদায় করে :
اَ لَّذِيْنَ هُمْ يُرَآءُوْنَ
যারা লোক দেখানোর জন্য আমল করে। (সূরা মাউন- ৬)
তারা অলস অবস্থায় সালাতে দাঁড়ায় :
اِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ يُخَادِعُوْنَ اللهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْۚ وَاِذَا قَامُوْاۤ اِلَى الصَّلَاةِ قَامُوْا كُسَالٰى يُرَآءُوْنَ النَّاسَ وَلَا يَذْكُرُوْنَ اللهَ اِلَّا قَلِيْلًا
নিশ্চয় মুনাফিকরা আল্লাহর সাথে প্রতারণা করছে; মূলত আল্লাহই তাদেরকে প্রতারণায় ফেলে দিচ্ছেন। যখন তারা সালাতে দাঁড়ায়, তখন অলসভাবে দাঁড়ায়। তারা মানুষকে দেখাতে চায়; বস্তুত তারা আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে। (সূরা নিসা- ১৪২)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ এর জীবদ্দশায় কোন ব্যক্তি নিয়মিত সালাত আদায় না করে মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারত না। ইসলামী দলের কোন সদস্যের জামা‘আতের সাথে সালাতে হাজির না থাকাকে সে সময় ঐ ব্যক্তির ইসলামের প্রতি অনাগ্রহের সুস্পষ্ট প্রমাণ মনে করা হতো। আর যদি সে অনবরত কয়েক ওয়াক্ত জামা‘আতে হাজির না থাকত, তাহলে ধরে নেয়া হতো সে মুসলিম নয়। তাই বড় বড় কট্টর মুনাফিকদেরকেও পাঁচ ওয়াক্ত মসজিদে উপস্থিত হতে হতো। কারণ এ ছাড়া তাদের পক্ষে মুসলিমদের দলের অন্তর্ভুক্ত থাকার জন্য দ্বিতীয় কোন পথ ছিল না। আযানের আওয়াজ কানে আসতেই মুনাফিকদের যেন প্রাণ বেরিয়ে যেত। মন চাইতো না তবুও দায়ে ঠেকে তারা ওঠতো। তাদের মসজিদের দিকে আসার ধরন দেখে পরিষ্কার বুঝা যেত যে, তারা স্বতষ্ফূর্তভাবে আসছে না বরং অনিচ্ছায় নিজেদেরকে টেনে টেনে আনছে। তারা জামা‘আত শেষ হওয়ার পর এমনভাবে মসজিদ থেকে পালাত, যেন মনে হতো কয়েদীরা জেলখানা থেকে মুক্তি পেয়েছে। তাদের ওঠাবসা, চলাফেরা তথা প্রতিটি পদক্ষেপ সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিত যে, আল্লাহর যিকিরের প্রতি তাদের বিন্দুমাত্র মানসিক টান ও আগ্রহ নেই।
উল্লেখিত আয়াতসমূহে মুনাফিকদের সালাতের যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে তা হচ্ছে :
১. তারা যখন সালাতে দাঁড়ায় তখন অলসভাবে দাঁড়ায়, তাদের ঈমান, নিয়ত কিছুই সঠিক নয় এবং তারা আল্লাহকে ভয় করে না।
২. তারা সালাতের মধ্যে আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে। সালাতের মধ্যে কী পড়েছে তা কিছুই বুঝে না। তাদের সালাতে মনোযোগ থাকে না।
৩. তারা সালাতের আরকান-আহকাম, রুকূ-সিজদা সঠিকভাবে আদায় করে না; বরং কাকের মতো কয়েকটা ঠোকর মেরে সালাতের দায় থেকে মুক্ত হতে চায়।
৪. তাদের সালাতে ইখলাস থাকে না, তারা লোক দেখানো সালাত আদায় করে। মানুষের সামনে নিজেদেরকে সালাত আদায়কারী হিসেবে তুলে ধরাই হলো তাদের সালাতের উদ্দেশ্য। এজন্য যে সালাতে মানুষ কম থাকে সে সালাতে তারা অনুপস্থিত থাকে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, মুনাফিকদের নিকট সবচেয়ে কঠিন সালাত হলো ফজর ও ইশার সালাত। আর তারা যদি জানত এ দু’সালাতে কী কল্যাণ রয়েছে, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও উপস্থিত হতো। (সহীহ বুখারী, হা/৬৭৫; সহীহ মুসলিম, হা/১৫১৪)
৫. তারা নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করে না, সালাতকে তার নির্ধারিত সময় থেকে পিছিয়ে দেয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, সেটা মুনাফিকের সালাত! সেটা মুনাফিকের সালাত! সেটা মুনাফিকের সালাত! যে বসে বসে সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকে। অতঃপর সূর্য যখন শয়তানের দু’শিঙ্গের মধ্যখানে চলে যায় অর্থাৎ সূর্য ডুবে যাওয়ার সময় ঘনিয়ে আসে তখন সে উঠে দাঁড়ায় এবং চারটি ঠোকর মারে, এর মধ্যে আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে। (সহীহ মুসলিম, হা/১৪৪৩)
৬. তারা নিয়মিত সালাত আদায় করে না, মাঝে মধ্যে আদায় করে। এতটুকু সালাত দ্বারা আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না। তাই নিয়মিত সালাতের অভ্যাস গড়ে তুলা সকল মুসলিমের উপর ফরয।
فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّيْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُوْنَ
দুর্ভোগ সেসব সালাত আদায়কারীদের জন্য, যারা তাদের সালাতের ব্যাপারে গাফিল। (সূরা মাউন- ৪)
তারা লোক দেখানোর জন্য সালাত আদায় করে :
اَ لَّذِيْنَ هُمْ يُرَآءُوْنَ
যারা লোক দেখানোর জন্য আমল করে। (সূরা মাউন- ৬)
তারা অলস অবস্থায় সালাতে দাঁড়ায় :
اِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ يُخَادِعُوْنَ اللهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْۚ وَاِذَا قَامُوْاۤ اِلَى الصَّلَاةِ قَامُوْا كُسَالٰى يُرَآءُوْنَ النَّاسَ وَلَا يَذْكُرُوْنَ اللهَ اِلَّا قَلِيْلًا
নিশ্চয় মুনাফিকরা আল্লাহর সাথে প্রতারণা করছে; মূলত আল্লাহই তাদেরকে প্রতারণায় ফেলে দিচ্ছেন। যখন তারা সালাতে দাঁড়ায়, তখন অলসভাবে দাঁড়ায়। তারা মানুষকে দেখাতে চায়; বস্তুত তারা আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে। (সূরা নিসা- ১৪২)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ এর জীবদ্দশায় কোন ব্যক্তি নিয়মিত সালাত আদায় না করে মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারত না। ইসলামী দলের কোন সদস্যের জামা‘আতের সাথে সালাতে হাজির না থাকাকে সে সময় ঐ ব্যক্তির ইসলামের প্রতি অনাগ্রহের সুস্পষ্ট প্রমাণ মনে করা হতো। আর যদি সে অনবরত কয়েক ওয়াক্ত জামা‘আতে হাজির না থাকত, তাহলে ধরে নেয়া হতো সে মুসলিম নয়। তাই বড় বড় কট্টর মুনাফিকদেরকেও পাঁচ ওয়াক্ত মসজিদে উপস্থিত হতে হতো। কারণ এ ছাড়া তাদের পক্ষে মুসলিমদের দলের অন্তর্ভুক্ত থাকার জন্য দ্বিতীয় কোন পথ ছিল না। আযানের আওয়াজ কানে আসতেই মুনাফিকদের যেন প্রাণ বেরিয়ে যেত। মন চাইতো না তবুও দায়ে ঠেকে তারা ওঠতো। তাদের মসজিদের দিকে আসার ধরন দেখে পরিষ্কার বুঝা যেত যে, তারা স্বতষ্ফূর্তভাবে আসছে না বরং অনিচ্ছায় নিজেদেরকে টেনে টেনে আনছে। তারা জামা‘আত শেষ হওয়ার পর এমনভাবে মসজিদ থেকে পালাত, যেন মনে হতো কয়েদীরা জেলখানা থেকে মুক্তি পেয়েছে। তাদের ওঠাবসা, চলাফেরা তথা প্রতিটি পদক্ষেপ সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিত যে, আল্লাহর যিকিরের প্রতি তাদের বিন্দুমাত্র মানসিক টান ও আগ্রহ নেই।
উল্লেখিত আয়াতসমূহে মুনাফিকদের সালাতের যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে তা হচ্ছে :
১. তারা যখন সালাতে দাঁড়ায় তখন অলসভাবে দাঁড়ায়, তাদের ঈমান, নিয়ত কিছুই সঠিক নয় এবং তারা আল্লাহকে ভয় করে না।
২. তারা সালাতের মধ্যে আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে। সালাতের মধ্যে কী পড়েছে তা কিছুই বুঝে না। তাদের সালাতে মনোযোগ থাকে না।
৩. তারা সালাতের আরকান-আহকাম, রুকূ-সিজদা সঠিকভাবে আদায় করে না; বরং কাকের মতো কয়েকটা ঠোকর মেরে সালাতের দায় থেকে মুক্ত হতে চায়।
৪. তাদের সালাতে ইখলাস থাকে না, তারা লোক দেখানো সালাত আদায় করে। মানুষের সামনে নিজেদেরকে সালাত আদায়কারী হিসেবে তুলে ধরাই হলো তাদের সালাতের উদ্দেশ্য। এজন্য যে সালাতে মানুষ কম থাকে সে সালাতে তারা অনুপস্থিত থাকে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, মুনাফিকদের নিকট সবচেয়ে কঠিন সালাত হলো ফজর ও ইশার সালাত। আর তারা যদি জানত এ দু’সালাতে কী কল্যাণ রয়েছে, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও উপস্থিত হতো। (সহীহ বুখারী, হা/৬৭৫; সহীহ মুসলিম, হা/১৫১৪)
৫. তারা নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করে না, সালাতকে তার নির্ধারিত সময় থেকে পিছিয়ে দেয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, সেটা মুনাফিকের সালাত! সেটা মুনাফিকের সালাত! সেটা মুনাফিকের সালাত! যে বসে বসে সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকে। অতঃপর সূর্য যখন শয়তানের দু’শিঙ্গের মধ্যখানে চলে যায় অর্থাৎ সূর্য ডুবে যাওয়ার সময় ঘনিয়ে আসে তখন সে উঠে দাঁড়ায় এবং চারটি ঠোকর মারে, এর মধ্যে আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে। (সহীহ মুসলিম, হা/১৪৪৩)
৬. তারা নিয়মিত সালাত আদায় করে না, মাঝে মধ্যে আদায় করে। এতটুকু সালাত দ্বারা আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না। তাই নিয়মিত সালাতের অভ্যাস গড়ে তুলা সকল মুসলিমের উপর ফরয।
অধিকাংশ লোকই সালাত ছেড়ে দিয়েছে :
فَخَلَفَ مِنْ ۢبَعْدِهِمْ خَلْفٌ اَضَاعُوا الصَّلَاةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا
তাদের পরে এমন লোক স্থলাভিষিক্ত হলো, যারা তাদের সালাতকে নষ্ট করেছে এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে। সুতরাং তারা অচিরেই শাস্তির সম্মুখীন হবে। (সূরা মারইয়াম- ৫৯)
ব্যাখ্যা : সালাত পরিত্যাগ করা বা সালাত থেকে গাফিল হওয়া প্রত্যেক উম্মতের ধ্বংসের প্রথম কারণ। সালাত মূলত আল্লাহর সাথে মুমিনের কার্যকর সম্পর্ক বজায় রাখে। এ সম্পর্ক তাকে আল্লাহর আনুগত্যের কেন্দ্র থেকে বিচ্যুত হতে দেয় না। এ বাঁধন ছিন্ন হলেই মানুষ আল্লাহ থেকে বহুদূরে চলে যায়। তাই আল্লাহ একটি সাধারণ নিয়ম হিসেবে এখানে এ কথাটি বর্ণনা করেছেন যে, পূর্ববর্তী সকল উম্মতের বিকৃতি শুরু হয়েছে সালাত পরিত্যাগ করার কারণে। আল্লাহর সাথে সম্পর্কের অভাব ও শূন্যতা সৃষ্টি হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে, সালাত ত্যাগ করা। সালাত ত্যাগ করার ফলে ব্যক্তির মন ধীরে ধীরে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফিল হয়ে যায়। অতঃপর ঐ ব্যক্তির মাঝে যতই এ গাফলতি বৃদ্ধি পেতে থাকে ততই প্রবৃত্তি পূজার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। অবশেষে এক সময় সে নৈতিক চরিত্র ও ব্যবহারিক জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুমের পরিবর্তে নিজের মনগড়া পদ্ধতি তথা তাগুতের অনুসারী হয়ে পড়ে।
শয়তানের ধোঁকায় পড়ে মানুষ সালাত ভুলে গেছে :
اِنَّمَا يُرِيْدُ الشَّيْطَانُ اَنْ يُّوْقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَآءَ فِى الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَعَنِ الصَّلَاةِ فَهَلْ اَنْتُمْ مُّنْتَهُوْنَ
নিশ্চয় শয়তান মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে ও সালাত আদায় করা থেকে বাধা দিতে চায়। তবুও কি তোমরা (এসব অন্যায় হতে) বিরত থাকবে না? (সূরা মায়েদা- ৯১)
আল্লাহকে সিজদা করতে অস্বীকার করা ইবলিসের কাজ :
وَاِذْ قُلْنَا لِلْمَلَآئِكَةِ اسْجُدُوْا لِاٰدَمَ فَسَجَدُوْاۤ اِلَّاۤ اِبْلِيْسَؕ اَبٰى وَاسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِيْنَ
যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বলেছিলাম, তোমরা আদমকে সিজদা করো তখন ইবলিস ব্যতীত সকলেই সিজদা করেছিল। সে অস্বীকার করল ও অহংকার করল এবং কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল। (সূরা বাক্বারা- ৩৪)
কিয়ামতের দিন সালাত পরিত্যাগকারীকে কঠিন দুর্ভোগ পোহাতে হবে :
وَاِذَا قِيْلَ لَهُمُ ارْكَعُوْا لَا يَرْكَعُوْنَ ‐ - وَيْلٌ يَّوْمَئِذٍ لِّلْمُكَذِّبِيْنَ
যখন তাদেরকে বলা হয়, তোমরা আল্লাহর সামনে নত হও; তখন তারা মাথা নত করে না। সুতরাং দুর্ভোগ এসব মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদের জন্য। (সূরা মুরসালাত- ৪৮, ৪৯)
সালাত ত্যাগকারীরা জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে :
كُلُّ نَفْسٍ ۢبِمَا كَسَبَتْ رَهِيْنَةٌ ‐ اِلَّاۤ اَصْحَابَ الْيَمِيْنِ ‐ فِيْ جَنَّاتٍؕ يَتَسَآءَلُوْنَ ‐ عَنِ الْمُجْرِمِيْنَ ‐ مَا سَلَكَكُمْ فِيْ سَقَرَ ‐ قَالُوْا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّيْنَ ‐ وَلَمْ نَكُ نُطْعِمُ الْمِسْكِيْنَ ‐ وَكُنَّا نَخُوْضُ مَعَ الْخَآئِضِيْنَ ‐ وَكُنَّا نُكَذِّبُ بِيَوْمِ الدِّيْنِ ‐ حَتّٰۤى اَتَانَا الْيَقِيْنُ
প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের কাছে দায়বদ্ধ, তবে দক্ষিণপার্শ্বস্থ ব্যক্তিরা (ডান হাতে আমলনামা প্রাপ্তগণ) ব্যতীত। তারা জান্নাতে থাকবে এবং তারা পরস্পর পরস্পরকে অপরাধীদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে, তোমাদেরকে কিসে সাক্বার (জাহান্নাম) এ নিক্ষেপ করেছে? তারা বলবে, আমরা সালাত আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না এবং অভাবগ্রস্তদের খাবার দিতাম না। আর আমরা সমালোচনাকারীদের সাথে সমালোচনায় মগ্ন থাকতাম এবং আমাদের নিকট মৃত্যু আসার পূর্ব পর্যন্ত আমরা কর্মফল দিবসকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতাম। (সূরা মুদ্দাস্সির, ৩৮-৪৭)
ব্যাখ্যা : سَقَرٌ (সাক্বার) হচ্ছে, জাহান্নামের একটি স্তরের নাম। এ আয়াতে সালাত আদায় না করাকে জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করে স্পষ্ট বলে দেয়া হয়েছে যে, সালাত পরিত্যাগ করার কারণে মানুষকে জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে।
কিয়ামতের দিন সালাত পরিত্যাগকারীরা আল্লাহকে সিজদা করতে পারবে না :
يَوْمَ يُكْشَفُ عَنْ سَاقٍ وَّيُدْعَوْنَ اِلَى السُّجُوْدِ فَلَا يَسْتَطِيْعُوْنَ
স্মরণ করো, সেদিন যাবতীয় রহস্য উদঘটিত হয়ে পড়বে এবং তাদেরকে সিজদা করতে আহবান করা হবে। কিন্তু সেদিন তারা সিজদা করতে পারবে না। (সূরা ক্বালাম- ৪২)
সেদিন তারা লাঞ্ছিত ও অপমানিত হবে :
خَاشِعَةً اَبْصَارُهُمْ تَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌؕ وَقَدْ كَانُوْا يُدْعَوْنَ اِلَى السُّجُوْدِ وَهُمْ سَالِمُوْنَ
তাদের দৃষ্টি হবে অবনত; অপমান ও লাঞ্ছনা তাদের উপর চেপে বসবে। (দুনিয়াতে) তারা যখন সুস্থ ও নিরাপদ ছিল তখন তাদেরকে সিজদা করার জন্য ডাকা হতো (কিন্তু তারা সিজদা করত না)। (সূরা ক্বালাম- ৪৩)
فَخَلَفَ مِنْ ۢبَعْدِهِمْ خَلْفٌ اَضَاعُوا الصَّلَاةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا
তাদের পরে এমন লোক স্থলাভিষিক্ত হলো, যারা তাদের সালাতকে নষ্ট করেছে এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে। সুতরাং তারা অচিরেই শাস্তির সম্মুখীন হবে। (সূরা মারইয়াম- ৫৯)
ব্যাখ্যা : সালাত পরিত্যাগ করা বা সালাত থেকে গাফিল হওয়া প্রত্যেক উম্মতের ধ্বংসের প্রথম কারণ। সালাত মূলত আল্লাহর সাথে মুমিনের কার্যকর সম্পর্ক বজায় রাখে। এ সম্পর্ক তাকে আল্লাহর আনুগত্যের কেন্দ্র থেকে বিচ্যুত হতে দেয় না। এ বাঁধন ছিন্ন হলেই মানুষ আল্লাহ থেকে বহুদূরে চলে যায়। তাই আল্লাহ একটি সাধারণ নিয়ম হিসেবে এখানে এ কথাটি বর্ণনা করেছেন যে, পূর্ববর্তী সকল উম্মতের বিকৃতি শুরু হয়েছে সালাত পরিত্যাগ করার কারণে। আল্লাহর সাথে সম্পর্কের অভাব ও শূন্যতা সৃষ্টি হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে, সালাত ত্যাগ করা। সালাত ত্যাগ করার ফলে ব্যক্তির মন ধীরে ধীরে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফিল হয়ে যায়। অতঃপর ঐ ব্যক্তির মাঝে যতই এ গাফলতি বৃদ্ধি পেতে থাকে ততই প্রবৃত্তি পূজার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। অবশেষে এক সময় সে নৈতিক চরিত্র ও ব্যবহারিক জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুমের পরিবর্তে নিজের মনগড়া পদ্ধতি তথা তাগুতের অনুসারী হয়ে পড়ে।
শয়তানের ধোঁকায় পড়ে মানুষ সালাত ভুলে গেছে :
اِنَّمَا يُرِيْدُ الشَّيْطَانُ اَنْ يُّوْقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَآءَ فِى الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَعَنِ الصَّلَاةِ فَهَلْ اَنْتُمْ مُّنْتَهُوْنَ
নিশ্চয় শয়তান মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে ও সালাত আদায় করা থেকে বাধা দিতে চায়। তবুও কি তোমরা (এসব অন্যায় হতে) বিরত থাকবে না? (সূরা মায়েদা- ৯১)
আল্লাহকে সিজদা করতে অস্বীকার করা ইবলিসের কাজ :
وَاِذْ قُلْنَا لِلْمَلَآئِكَةِ اسْجُدُوْا لِاٰدَمَ فَسَجَدُوْاۤ اِلَّاۤ اِبْلِيْسَؕ اَبٰى وَاسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِيْنَ
যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বলেছিলাম, তোমরা আদমকে সিজদা করো তখন ইবলিস ব্যতীত সকলেই সিজদা করেছিল। সে অস্বীকার করল ও অহংকার করল এবং কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল। (সূরা বাক্বারা- ৩৪)
কিয়ামতের দিন সালাত পরিত্যাগকারীকে কঠিন দুর্ভোগ পোহাতে হবে :
وَاِذَا قِيْلَ لَهُمُ ارْكَعُوْا لَا يَرْكَعُوْنَ ‐ - وَيْلٌ يَّوْمَئِذٍ لِّلْمُكَذِّبِيْنَ
যখন তাদেরকে বলা হয়, তোমরা আল্লাহর সামনে নত হও; তখন তারা মাথা নত করে না। সুতরাং দুর্ভোগ এসব মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদের জন্য। (সূরা মুরসালাত- ৪৮, ৪৯)
সালাত ত্যাগকারীরা জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে :
كُلُّ نَفْسٍ ۢبِمَا كَسَبَتْ رَهِيْنَةٌ ‐ اِلَّاۤ اَصْحَابَ الْيَمِيْنِ ‐ فِيْ جَنَّاتٍؕ يَتَسَآءَلُوْنَ ‐ عَنِ الْمُجْرِمِيْنَ ‐ مَا سَلَكَكُمْ فِيْ سَقَرَ ‐ قَالُوْا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّيْنَ ‐ وَلَمْ نَكُ نُطْعِمُ الْمِسْكِيْنَ ‐ وَكُنَّا نَخُوْضُ مَعَ الْخَآئِضِيْنَ ‐ وَكُنَّا نُكَذِّبُ بِيَوْمِ الدِّيْنِ ‐ حَتّٰۤى اَتَانَا الْيَقِيْنُ
প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের কাছে দায়বদ্ধ, তবে দক্ষিণপার্শ্বস্থ ব্যক্তিরা (ডান হাতে আমলনামা প্রাপ্তগণ) ব্যতীত। তারা জান্নাতে থাকবে এবং তারা পরস্পর পরস্পরকে অপরাধীদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে, তোমাদেরকে কিসে সাক্বার (জাহান্নাম) এ নিক্ষেপ করেছে? তারা বলবে, আমরা সালাত আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না এবং অভাবগ্রস্তদের খাবার দিতাম না। আর আমরা সমালোচনাকারীদের সাথে সমালোচনায় মগ্ন থাকতাম এবং আমাদের নিকট মৃত্যু আসার পূর্ব পর্যন্ত আমরা কর্মফল দিবসকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতাম। (সূরা মুদ্দাস্সির, ৩৮-৪৭)
ব্যাখ্যা : سَقَرٌ (সাক্বার) হচ্ছে, জাহান্নামের একটি স্তরের নাম। এ আয়াতে সালাত আদায় না করাকে জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করে স্পষ্ট বলে দেয়া হয়েছে যে, সালাত পরিত্যাগ করার কারণে মানুষকে জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে।
কিয়ামতের দিন সালাত পরিত্যাগকারীরা আল্লাহকে সিজদা করতে পারবে না :
يَوْمَ يُكْشَفُ عَنْ سَاقٍ وَّيُدْعَوْنَ اِلَى السُّجُوْدِ فَلَا يَسْتَطِيْعُوْنَ
স্মরণ করো, সেদিন যাবতীয় রহস্য উদঘটিত হয়ে পড়বে এবং তাদেরকে সিজদা করতে আহবান করা হবে। কিন্তু সেদিন তারা সিজদা করতে পারবে না। (সূরা ক্বালাম- ৪২)
সেদিন তারা লাঞ্ছিত ও অপমানিত হবে :
خَاشِعَةً اَبْصَارُهُمْ تَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌؕ وَقَدْ كَانُوْا يُدْعَوْنَ اِلَى السُّجُوْدِ وَهُمْ سَالِمُوْنَ
তাদের দৃষ্টি হবে অবনত; অপমান ও লাঞ্ছনা তাদের উপর চেপে বসবে। (দুনিয়াতে) তারা যখন সুস্থ ও নিরাপদ ছিল তখন তাদেরকে সিজদা করার জন্য ডাকা হতো (কিন্তু তারা সিজদা করত না)। (সূরা ক্বালাম- ৪৩)
اَلزَّكٰوةُ (আয যাকাত) এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে- বৃদ্ধি পাওয়া, বর্ধিত হওয়া, পবিত্র হওয়া, কোন বস্তুকে পরিশুদ্ধ করা ইত্যাদি। আর পারিভাষিক অর্থে যাকাত হলো- নিসাব পরিমান সম্পদের মালিকের ধনসম্পদের নির্ধারিত ফরয অংশ নির্ধারিত খাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষে বন্টন করা।
ইসলামের স্তম্ভসমূহের মধ্যে তৃতীয় ও সালাতের পরবর্তী স্থান অধিকরী ইবাদাত হচ্ছে যাকাত। মানবসভ্যতার সূচনালগ্ন হতেই সমাজে যাকাত ব্যবস্থার প্রচলন ছিল বলে কুরআনে সুস্পষ্ট বক্তব্য বিদ্যমান। উম্মাতে মুহাম্মাদীর উপর যাকাতের বিধান উক্ত ধারাবাহিকতারই অংশ।
মোট ৫ প্রকার সম্পদের যাকাত দিতে হয়।
১. স্বর্ণ, রৌপ্য,
২. নগদ টাকা ও বিক্রয়ের জন্য নির্ধারিত দ্রব্য বা ব্যবসায়ের পণ্য,
৩. পালিত পশু (উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা।)
৪. ফল-ফসল (সকল প্রকার ভূমিজ উৎপাদন।)
৫. খনিজ সম্পদ ( مَعْدَنٌ ) ও মাটির নিচে সঞ্চিত সম্পদ ( رِكَازٌ ) বা গুপ্তধন।
ইসলামের স্তম্ভসমূহের মধ্যে তৃতীয় ও সালাতের পরবর্তী স্থান অধিকরী ইবাদাত হচ্ছে যাকাত। মানবসভ্যতার সূচনালগ্ন হতেই সমাজে যাকাত ব্যবস্থার প্রচলন ছিল বলে কুরআনে সুস্পষ্ট বক্তব্য বিদ্যমান। উম্মাতে মুহাম্মাদীর উপর যাকাতের বিধান উক্ত ধারাবাহিকতারই অংশ।
মোট ৫ প্রকার সম্পদের যাকাত দিতে হয়।
১. স্বর্ণ, রৌপ্য,
২. নগদ টাকা ও বিক্রয়ের জন্য নির্ধারিত দ্রব্য বা ব্যবসায়ের পণ্য,
৩. পালিত পশু (উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা।)
৪. ফল-ফসল (সকল প্রকার ভূমিজ উৎপাদন।)
৫. খনিজ সম্পদ ( مَعْدَنٌ ) ও মাটির নিচে সঞ্চিত সম্পদ ( رِكَازٌ ) বা গুপ্তধন।
সকল নবীর যুগে যাকাতের বিধান ছিল :
وَجَعَلْنَاهُمْ اَئِمَّةً يَّهْدُوْنَ بِاَمْرِنَا وَاَوْحَيْنَاۤ اِلَيْهِمْ فِعْلَ الْخَيْرَاتِ وَاِقَامَ الصَّلَاةِ وَاِيْتَآءَ الزَّكَاةِۚ وَكَانُوْا لَنَا عَابِدِيْنَ
তাদেরকে (নবীদেরকে) আমি নেতা বানিয়েছিলাম, যেন তারা আমার নির্দেশানুসারে মানুষকে পথপ্রদর্শন করতে পারে। আর তাদের নিকট ওহী প্রেরণ করেছিলাম, যেন তারা সৎকর্ম করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত প্রদান করে; আর তারা ছিল আমারই ইবাদাতকারী। (সূরা আম্বিয়া- ৭৩)
যাকাত আদায়ের জন্য আল্লাহর নির্দেশ :
وَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَ وَارْكَعُوْا مَعَ الرَّاكِعِيْنَ
আর তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো ও যাকাত প্রদান করো এবং রুকূকারীদের সাথে রুকূ করো। (সূরা বাক্বারা- ৪৩)
وَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَ وَاَقْرِضُوا اللهَ قَرْضًا حَسَنًا
সালাত প্রতিষ্ঠা করো, যাকাত প্রদান করো এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও। (সূরা মুয্যাম্মিল- ২০)
মহিলাদের প্রতিও যাকাত আদায়ের নির্দেশ এসেছে :
وَاَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَاٰتِيْنَ الزَّكَاةَ وَاَطِعْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ
তোমরা (মহিলারা) সালাত আদায় করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ পালন করবে। (সূরা আহযাব- ৩৩)
যাকাত আদায় করা মুমিনের একটি মৌলিক গুণ :
وَالْمُؤْمِنُوْنَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍؕ يَاْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَيُطِيْعُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗؕ اُولٰٓئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللهُؕ اِنَّ اللهَ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
মুমিন নর ও মুমিন নারী একে অপরের বন্ধু, তারা সৎকাজের নির্দেশ দেয় এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। অচিরেই আল্লাহ তাদের উপর অনুগ্রহ করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা- ৭১)
সাহাবীরা যাকাত আদায় করতেন :
رِجَالٌ لَّا تُلْهِيْهِمْ تِجَارَةٌ وَّلَا بَيْعٌ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَاِقَامِ الصَّلَاةِ وَاِيْتَآءِ الزَّكَاةِۚ يَخَافُوْنَ يَوْمًا تَتَقَلَّبُ فِيْهِ الْقُلُوْبُ وَالْاَبْصَارُ
তারা এমন লোক, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ হতে এবং সালাত কায়েম ও যাকাত প্রদান করা হতে বিরত রাখে না। তারা সেদিনকে ভয় করে, যেদিন অন্তর ও দৃষ্টিসমূহ বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। (সূরা নূর- ৩৭)
যাকাতের মাল গরীবের হক :
وَفِۤيْ اَمْوَالِهِمْ حَقٌّ لِّلسَّآئِلِ وَالْمَحْرُوْمِ
তাদের ধনসম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের হক। (সূরা যারিয়াত- ১৯)
وَالَّذِيْنَ فِۤيْ اَمْوَالِهِمْ حَقٌّ مَّعْلُوْمٌ ‐ لِلسَّآئِلِ وَالْمَحْرُوْمِ
আর (যারা মনে করে) তাদের সম্পদে ভিক্ষুক ও বঞ্চিতদের জন্য নির্ধারিত হক রয়েছে। (সূরা মা‘আরিজ- ২৪, ২৫)
উৎপাদিত ফসলেরও যাকাত দিতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَنْفِقُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا كَسَبْتُمْ وَمِمَّاۤ اَخْرَجْنَا لَكُمْ مِّنَ الْاَرْضِ وَلَا تَيَمَّمُوا الْخَبِيْثَ مِنْهُ تُنْفِقُوْنَ وَلَسْتُمْ بِاٰخِذِيْهِ اِلَّاۤ اَنْ تُغْمِضُوْا فِيْهِؕ وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ غَنِيٌّ حَمِيْدٌ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যা উপার্জন করেছ এবং আমি জমিন থেকে তোমাদের জন্য যা বের করেছি তার মধ্য হতে পবিত্র জিনিসসমূহ দান করো। আর তোমরা খারাপ জিনিস দান করার ইচ্ছা করো না। কেননা অন্ধ না হলে তোমরা নিজেরাই তো সেটা গ্রহণ করতে চাও না। জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ সম্পদশালী ও প্রশংসিত। (সূরা বাক্বারা- ২৬৭)
ফসল কাটার দিনই এর যাকাত আদায় করা আল্লাহর নির্দেশ :
وَهُوَ الَّذِيْۤ اَنْشَاَ جَنَّاتٍ مَّعْرُوْشَاتٍ وَّغَيْرَ مَعْرُوْشَاتٍ وَّالنَّخْلَ وَالزَّرْعَ مُخْتَلِفًا اُكُلُهٗ وَالزَّيْتُوْنَ وَالرُّمَّانَ مُتَشَابِهًا وَّغَيْرَ مُتَشَابِهٍ ؕ كُلُوْا مِنْ ثَمَرِهٖۤ اِذَاۤ اَثْمَرَ وَاٰتُوْا حَقَّهٗ يَوْمَ حَصَادِهٖ وَلَا تُسْرِفُوْاؕ اِنَّهٗ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِيْنَ
আল্লাহ ঐ সত্তা, যিনি নানা প্রকারের উদ্যান বানিয়েছেন, কিছু লতা-গুল্ম, যা কোন কান্ড ছাড়াই মাচানের উপর তুলে রাখা হয়েছে, (আবার কিছু গাছ), যা মাচানের উপর তুলে রাখা হয়নি (স্বীয় কান্ডের উপর তা এমনিই দাঁড়িয়ে আছে। তিনি আরো সৃষ্টি করেছেন), খেজুর গাছ এবং বিভিন্ন (স্বাদ ও) প্রকারবিশিষ্ট খাদ্যশস্য ও আনার। এগুলো (স্বাদে-গন্ধে) এক রকমও হতে পারে, আবার ভিন্ন ধরনেরও হতে পারে, যখন তা ফলবান হয় তোমরা তার ফল খাও, আর তোমরা ফসল তুলার দিন তার হক আদায় করো। আর কখনো অপচয় করো না; নিঃসন্দেহে, আল্লাহ অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা আন‘আম- ১৪১)
وَجَعَلْنَاهُمْ اَئِمَّةً يَّهْدُوْنَ بِاَمْرِنَا وَاَوْحَيْنَاۤ اِلَيْهِمْ فِعْلَ الْخَيْرَاتِ وَاِقَامَ الصَّلَاةِ وَاِيْتَآءَ الزَّكَاةِۚ وَكَانُوْا لَنَا عَابِدِيْنَ
তাদেরকে (নবীদেরকে) আমি নেতা বানিয়েছিলাম, যেন তারা আমার নির্দেশানুসারে মানুষকে পথপ্রদর্শন করতে পারে। আর তাদের নিকট ওহী প্রেরণ করেছিলাম, যেন তারা সৎকর্ম করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত প্রদান করে; আর তারা ছিল আমারই ইবাদাতকারী। (সূরা আম্বিয়া- ৭৩)
যাকাত আদায়ের জন্য আল্লাহর নির্দেশ :
وَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَ وَارْكَعُوْا مَعَ الرَّاكِعِيْنَ
আর তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো ও যাকাত প্রদান করো এবং রুকূকারীদের সাথে রুকূ করো। (সূরা বাক্বারা- ৪৩)
وَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَ وَاَقْرِضُوا اللهَ قَرْضًا حَسَنًا
সালাত প্রতিষ্ঠা করো, যাকাত প্রদান করো এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও। (সূরা মুয্যাম্মিল- ২০)
মহিলাদের প্রতিও যাকাত আদায়ের নির্দেশ এসেছে :
وَاَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَاٰتِيْنَ الزَّكَاةَ وَاَطِعْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ
তোমরা (মহিলারা) সালাত আদায় করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ পালন করবে। (সূরা আহযাব- ৩৩)
যাকাত আদায় করা মুমিনের একটি মৌলিক গুণ :
وَالْمُؤْمِنُوْنَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍؕ يَاْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَيُطِيْعُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗؕ اُولٰٓئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللهُؕ اِنَّ اللهَ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
মুমিন নর ও মুমিন নারী একে অপরের বন্ধু, তারা সৎকাজের নির্দেশ দেয় এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। অচিরেই আল্লাহ তাদের উপর অনুগ্রহ করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা- ৭১)
সাহাবীরা যাকাত আদায় করতেন :
رِجَالٌ لَّا تُلْهِيْهِمْ تِجَارَةٌ وَّلَا بَيْعٌ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَاِقَامِ الصَّلَاةِ وَاِيْتَآءِ الزَّكَاةِۚ يَخَافُوْنَ يَوْمًا تَتَقَلَّبُ فِيْهِ الْقُلُوْبُ وَالْاَبْصَارُ
তারা এমন লোক, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ হতে এবং সালাত কায়েম ও যাকাত প্রদান করা হতে বিরত রাখে না। তারা সেদিনকে ভয় করে, যেদিন অন্তর ও দৃষ্টিসমূহ বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। (সূরা নূর- ৩৭)
যাকাতের মাল গরীবের হক :
وَفِۤيْ اَمْوَالِهِمْ حَقٌّ لِّلسَّآئِلِ وَالْمَحْرُوْمِ
তাদের ধনসম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের হক। (সূরা যারিয়াত- ১৯)
وَالَّذِيْنَ فِۤيْ اَمْوَالِهِمْ حَقٌّ مَّعْلُوْمٌ ‐ لِلسَّآئِلِ وَالْمَحْرُوْمِ
আর (যারা মনে করে) তাদের সম্পদে ভিক্ষুক ও বঞ্চিতদের জন্য নির্ধারিত হক রয়েছে। (সূরা মা‘আরিজ- ২৪, ২৫)
উৎপাদিত ফসলেরও যাকাত দিতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَنْفِقُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا كَسَبْتُمْ وَمِمَّاۤ اَخْرَجْنَا لَكُمْ مِّنَ الْاَرْضِ وَلَا تَيَمَّمُوا الْخَبِيْثَ مِنْهُ تُنْفِقُوْنَ وَلَسْتُمْ بِاٰخِذِيْهِ اِلَّاۤ اَنْ تُغْمِضُوْا فِيْهِؕ وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ غَنِيٌّ حَمِيْدٌ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যা উপার্জন করেছ এবং আমি জমিন থেকে তোমাদের জন্য যা বের করেছি তার মধ্য হতে পবিত্র জিনিসসমূহ দান করো। আর তোমরা খারাপ জিনিস দান করার ইচ্ছা করো না। কেননা অন্ধ না হলে তোমরা নিজেরাই তো সেটা গ্রহণ করতে চাও না। জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ সম্পদশালী ও প্রশংসিত। (সূরা বাক্বারা- ২৬৭)
ফসল কাটার দিনই এর যাকাত আদায় করা আল্লাহর নির্দেশ :
وَهُوَ الَّذِيْۤ اَنْشَاَ جَنَّاتٍ مَّعْرُوْشَاتٍ وَّغَيْرَ مَعْرُوْشَاتٍ وَّالنَّخْلَ وَالزَّرْعَ مُخْتَلِفًا اُكُلُهٗ وَالزَّيْتُوْنَ وَالرُّمَّانَ مُتَشَابِهًا وَّغَيْرَ مُتَشَابِهٍ ؕ كُلُوْا مِنْ ثَمَرِهٖۤ اِذَاۤ اَثْمَرَ وَاٰتُوْا حَقَّهٗ يَوْمَ حَصَادِهٖ وَلَا تُسْرِفُوْاؕ اِنَّهٗ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِيْنَ
আল্লাহ ঐ সত্তা, যিনি নানা প্রকারের উদ্যান বানিয়েছেন, কিছু লতা-গুল্ম, যা কোন কান্ড ছাড়াই মাচানের উপর তুলে রাখা হয়েছে, (আবার কিছু গাছ), যা মাচানের উপর তুলে রাখা হয়নি (স্বীয় কান্ডের উপর তা এমনিই দাঁড়িয়ে আছে। তিনি আরো সৃষ্টি করেছেন), খেজুর গাছ এবং বিভিন্ন (স্বাদ ও) প্রকারবিশিষ্ট খাদ্যশস্য ও আনার। এগুলো (স্বাদে-গন্ধে) এক রকমও হতে পারে, আবার ভিন্ন ধরনেরও হতে পারে, যখন তা ফলবান হয় তোমরা তার ফল খাও, আর তোমরা ফসল তুলার দিন তার হক আদায় করো। আর কখনো অপচয় করো না; নিঃসন্দেহে, আল্লাহ অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা আন‘আম- ১৪১)
যাকাত একটি লাভজনক ব্যবসা :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَتْلُوْنَ كِتَابَ اللهِ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاَنْفَقُوْا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَّعَلَانِيَةً يَّرْجُوْنَ تِجَارَةً لَّنْ تَبُوْرَ
যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, সালাত কায়েম করে এবং তাদেরকে যা কিছু রিযিক হিসেবে দান করেছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে; তারা এমন ব্যবসার আশা করে, যাতে কখনো লোকসান হবে না। (সূরা ফাতির- ২৯)
যাকাত দিলে মাল কমে না, বরং বৃদ্ধি পায় :
وَمَاۤ اٰتَيْتُمْ مِّنْ رِّبًا لِّيَرْبُوَاْ فِۤيْ اَمْوَالِ النَّاسِ فَلَا يَرْبُوْا عِنْدَ اللهِ وَمَاۤ اٰتَيْتُمْ مِّنْ زَكَاةٍ تُرِيْدُوْنَ وَجْهَ اللهِ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُضْعِفُوْنَ
মানুষের ধনসম্পদে তোমাদের সম্পদ বৃদ্ধি পাবে- এ আশায় তোমরা যা কিছু সুদে (ঋণ) দিয়ে থাক, আল্লাহর কাছে তা বৃদ্ধি পায় না। পক্ষান্তরে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য যা কিছু যাকাত হিসেবে দিয়ে থাক, তবে এরূপ লোকের (প্রদত্ত বস্তু) আল্লাহর নিকট বৃদ্ধি পেতে থাকবে। (সূরা রূম- ৩৯)
যাকাত দিলে আত্মা পবিত্র হয় :
خُذْ مِنْ اَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيْهِمْ بِهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْؕ اِنَّ صَلَاتَكَ سَكَنٌ لَّهُمْؕ وَاللهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
তাদের সম্পদ হতে ‘সাদাকা’ গ্রহণ করবে। এটার দ্বারা তুমি তাদেরকে পবিত্র করবে এবং পরিশুদ্ধ করবে। তুমি তাদেরকে দু‘আ করবে। তোমার দু‘আ তো তাদের জন্য প্রশান্তি যোগায়। আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা তাওবা- ১০৩)
যাকাত আদায় করলে আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয় :
وَمِنَ الْاَعْرَابِ مَنْ يُّؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَيَتَّخِذُ مَا يُنْفِقُ قُرُبَاتٍ عِنْدَ اللهِ وَصَلَوَاتِ الرَّسُوْلِؕ اَلَاۤ اِنَّهَا قُرْبَةٌ لَّهُمْؕ سَيُدْخِلُهُمُ اللهُ فِيْ رَحْمَتِهٖؕ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
মরুবাসীদের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে যাদের কেউ কেউ আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে এবং যা ব্যয় করে তাকে আল্লাহর সান্নিধ্য ও রাসূলের দু‘আ লাভের উপায় মনে করে। বাস্তবিকই তা তাদের জন্য আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়, (কেননা এর মাধ্যমেই) আল্লাহ তাদেরকে নিজ রহমতে প্রবেশ করাবেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা তাওবা- ৯৯)
যাকাত আদায়কারীরা আল্লাহর সাহায্য লাভ করে :
وَقَالَ اللهُ اِنِّيْ مَعَكُمْؕ لَئِنْ اَقَمْتُمُ الصَّلَاةَ وَاٰتَيْتُمُ الزَّكَاةَ
আল্লাহ বলেছিলেন, তোমরা যদি সালাত কায়েম কর এবং যাকাত দাও, তবে নিশ্চয় আমি তোমাদের সাথেই আছি। (সূরা মায়েদা- ১২)
যাকাত আদায়ে আল্লাহর রহমত লাভ হয় :
وَرَحْمَتِيْ وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍؕ فَسَاَكْتُبُهَا لِلَّذِيْنَ يَتَّقُوْنَ وَيُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَالَّذِيْنَ هُمْ بِاٰيَاتِنَا يُؤْمِنُوْنَ
আমার দয়া প্রত্যেক বস্তুর উপর প্রশস্ত। সুতরাং আমি তা তাদের জন্য নির্ধারণ করব, যারা তাক্বওয়া অবলম্বন করে, যাকাত দেয় এবং আমার নিদর্শনসমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে। (সূরা আ‘রাফ- ১৫৬)
যাকাতের প্রতিদান আল্লাহর কাছে পাওয়া যাবে :
وَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَؕ وَمَا تُقَدِّمُوْا لِاَنْفُسِكُمْ مِّنْ خَيْرٍ تَجِدُوْهُ عِنْدَ اللهِؕ اِنَّ اللهَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো, যাকাত প্রদান করো। আর তোমরা নিজেদের জন্য যে সৎকর্ম আগে প্রেরণ করেছ তা আল্লাহর নিকট পাবে। তোমরা যা করছ নিশ্চয় আল্লাহ তা দেখছেন। (সূরা বাক্বারা- ১১০)
যাকাত আদায়কারীরা সফলতা লাভ করে :
قَدْ اَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ هُمْ فِيْ صَلَاتِهِمْ خَاشِعُوْنَ ‐ وَالَّذِيْنَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُوْنَ ‐ وَالَّذِيْنَ هُمْ لِلزَّكَاةِ فَاعِلُوْنَ
অবশ্যই সফলকাম হয়েছে ঐসব মুমিনগণ, যারা নিজেদের সালাতে বিনয় ও নম্র, যারা অনর্থক ক্রিয়াকলাপ হতে বিরত থাকে, যারা যাকাত দানে সক্রিয়। (সূরা মু’মিনূন, ১-৪)
যাকাত আদায় করা জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায় :
وَسَيُجَنَّبُهَا الْاَتْقٰى ‐ اَ لَّذِيْ يُؤْتِيْ مَالَهٗ يَتَزَكّٰى
অচিরেই সে ব্যক্তিকে তা (জাহান্নাম) থেকে দূরে রাখা হবে, যে আল্লাহকে ভয় করে এবং যে পবিত্রতা অর্জনের উদ্দেশ্যে নিজের ধনসম্পদ হতে ব্যয় করে। (সূরা লাইল- ১৭, ১৮)
যাকাত আদায়কারীরা মুমিনদের দ্বীনী ভাই :
فَاِنْ تَابُوْا وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ فَاِخْوَانُكُمْ فِى الدِّيْنِؕ وَنُفَصِّلُ الْاٰيَاتِ لِقَوْمٍ يَّعْلَمُوْنَ
অতএব যদি তারা সালাত আদায় করে ও যাকাত দেয়, তবে তারা তো তোমাদেরই দ্বীনি ভাই। আর আমি আমার নিদর্শনসমূহ জ্ঞানবুদ্ধিসম্পন্ন লোকদের জন্য স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে থাকি। (সূরা তাওবা- ১১)
যাকাত আদায়কারীরা ইসলামী রাষ্ট্রে নিরাপত্তা লাভ করে থাকে :
فَاِذَا انْسَلَخَ الْاَشْهُرُ الْحُرُمُ فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِيْنَ حَيْثُ وَجَدْتُّمُوْهُمْ وَخُذُوْهُمْ وَاحْصُرُوْهُمْ وَاقْعُدُوْا لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍۚ فَاِنْ تَابُوْا وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ فَخَلُّوْا سَبِيْلَهُمْؕ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে মুশরিকদেরকে যেখানে পাবে হত্যা করবে। তাদেরকে বন্দী করবে, অবরোধ করবে এবং প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের জন্য ওঁৎ পেতে (বসে) থাকবে। কিন্তু যদি তারা তাওবা করে, সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয়, তবে তাদের পথ ছেড়ে দেবে। নিশ্চয় আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা তাওবা- ৫)
যাকাতব্যবস্থা চালু করা সরকারের দায়িত্ব :
اَ لَّذِيْنَ اِنْ مَّكَّنَّاهُمْ فِى الْاَرْضِ اَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ وَاَمَرُوْا بِالْمَعْرُوْفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنْكَرِؕ وَلِلّٰهِ عَاقِبَةُ الْاُمُوْرِ
আমি এদেরকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দান করলে এরা সালাত কায়েম করবে, যাকাত আদায়ের ব্যবস্থা করবে এবং সৎকাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে; (জেনে রেখো) সকল কর্মের পরিণাম আল্লাহর ইখতিয়ারে। (সূরা হজ্জ- ৪১)
সরকারিভাবে যাকাত উত্তোলনের জন্য নবী ﷺ এর প্রতি নির্দেশ :
خُذْ مِنْ اَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيْهِمْ بِهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْؕ اِنَّ صَلَاتَكَ سَكَنٌ لَّهُمْؕ وَاللهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
তাদের সম্পদ হতে যাকাত গ্রহণ করবে। এর দ্বারা তুমি তাদেরকে পবিত্র করবে এবং পরিশুদ্ধ করবে। আর তুমি তাদেরকে দু‘আ করবে। নিশ্চয় তোমার দু‘আ তাদের জন্য প্রশান্তিদায়ক; আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা তাওবা- ১০৩)
যাকাত বণ্টনের খাতসমূহ :
اِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَآءِ وَالْمَسَاكِيْنِ وَالْعَامِلِيْنَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوْبُهُمْ وَفِى الرِّقَابِ وَالْغَارِمِيْنَ وَفِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَابْنِ السَّبِيْلِؕ فَرِيْضَةً مِّنَ اللهِ ؕ وَاللهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ
যাকাত তো কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত ও তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জন্য, (অমুসলিমদের মধ্যে) যাদের মন জয় করা উদ্দেশ্য হয় তাদের জন্য, দাসমুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে ব্যয় করার জন্য এবং মুসাফিরদের জন্য। এটা আল্লাহর নির্ধারিত বিধান; আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা- ৬০)
اِنَّ الَّذِيْنَ يَتْلُوْنَ كِتَابَ اللهِ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاَنْفَقُوْا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَّعَلَانِيَةً يَّرْجُوْنَ تِجَارَةً لَّنْ تَبُوْرَ
যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, সালাত কায়েম করে এবং তাদেরকে যা কিছু রিযিক হিসেবে দান করেছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে; তারা এমন ব্যবসার আশা করে, যাতে কখনো লোকসান হবে না। (সূরা ফাতির- ২৯)
যাকাত দিলে মাল কমে না, বরং বৃদ্ধি পায় :
وَمَاۤ اٰتَيْتُمْ مِّنْ رِّبًا لِّيَرْبُوَاْ فِۤيْ اَمْوَالِ النَّاسِ فَلَا يَرْبُوْا عِنْدَ اللهِ وَمَاۤ اٰتَيْتُمْ مِّنْ زَكَاةٍ تُرِيْدُوْنَ وَجْهَ اللهِ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُضْعِفُوْنَ
মানুষের ধনসম্পদে তোমাদের সম্পদ বৃদ্ধি পাবে- এ আশায় তোমরা যা কিছু সুদে (ঋণ) দিয়ে থাক, আল্লাহর কাছে তা বৃদ্ধি পায় না। পক্ষান্তরে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য যা কিছু যাকাত হিসেবে দিয়ে থাক, তবে এরূপ লোকের (প্রদত্ত বস্তু) আল্লাহর নিকট বৃদ্ধি পেতে থাকবে। (সূরা রূম- ৩৯)
যাকাত দিলে আত্মা পবিত্র হয় :
خُذْ مِنْ اَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيْهِمْ بِهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْؕ اِنَّ صَلَاتَكَ سَكَنٌ لَّهُمْؕ وَاللهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
তাদের সম্পদ হতে ‘সাদাকা’ গ্রহণ করবে। এটার দ্বারা তুমি তাদেরকে পবিত্র করবে এবং পরিশুদ্ধ করবে। তুমি তাদেরকে দু‘আ করবে। তোমার দু‘আ তো তাদের জন্য প্রশান্তি যোগায়। আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা তাওবা- ১০৩)
যাকাত আদায় করলে আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয় :
وَمِنَ الْاَعْرَابِ مَنْ يُّؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَيَتَّخِذُ مَا يُنْفِقُ قُرُبَاتٍ عِنْدَ اللهِ وَصَلَوَاتِ الرَّسُوْلِؕ اَلَاۤ اِنَّهَا قُرْبَةٌ لَّهُمْؕ سَيُدْخِلُهُمُ اللهُ فِيْ رَحْمَتِهٖؕ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
মরুবাসীদের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে যাদের কেউ কেউ আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে এবং যা ব্যয় করে তাকে আল্লাহর সান্নিধ্য ও রাসূলের দু‘আ লাভের উপায় মনে করে। বাস্তবিকই তা তাদের জন্য আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়, (কেননা এর মাধ্যমেই) আল্লাহ তাদেরকে নিজ রহমতে প্রবেশ করাবেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা তাওবা- ৯৯)
যাকাত আদায়কারীরা আল্লাহর সাহায্য লাভ করে :
وَقَالَ اللهُ اِنِّيْ مَعَكُمْؕ لَئِنْ اَقَمْتُمُ الصَّلَاةَ وَاٰتَيْتُمُ الزَّكَاةَ
আল্লাহ বলেছিলেন, তোমরা যদি সালাত কায়েম কর এবং যাকাত দাও, তবে নিশ্চয় আমি তোমাদের সাথেই আছি। (সূরা মায়েদা- ১২)
যাকাত আদায়ে আল্লাহর রহমত লাভ হয় :
وَرَحْمَتِيْ وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍؕ فَسَاَكْتُبُهَا لِلَّذِيْنَ يَتَّقُوْنَ وَيُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَالَّذِيْنَ هُمْ بِاٰيَاتِنَا يُؤْمِنُوْنَ
আমার দয়া প্রত্যেক বস্তুর উপর প্রশস্ত। সুতরাং আমি তা তাদের জন্য নির্ধারণ করব, যারা তাক্বওয়া অবলম্বন করে, যাকাত দেয় এবং আমার নিদর্শনসমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে। (সূরা আ‘রাফ- ১৫৬)
যাকাতের প্রতিদান আল্লাহর কাছে পাওয়া যাবে :
وَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَؕ وَمَا تُقَدِّمُوْا لِاَنْفُسِكُمْ مِّنْ خَيْرٍ تَجِدُوْهُ عِنْدَ اللهِؕ اِنَّ اللهَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো, যাকাত প্রদান করো। আর তোমরা নিজেদের জন্য যে সৎকর্ম আগে প্রেরণ করেছ তা আল্লাহর নিকট পাবে। তোমরা যা করছ নিশ্চয় আল্লাহ তা দেখছেন। (সূরা বাক্বারা- ১১০)
যাকাত আদায়কারীরা সফলতা লাভ করে :
قَدْ اَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ هُمْ فِيْ صَلَاتِهِمْ خَاشِعُوْنَ ‐ وَالَّذِيْنَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُوْنَ ‐ وَالَّذِيْنَ هُمْ لِلزَّكَاةِ فَاعِلُوْنَ
অবশ্যই সফলকাম হয়েছে ঐসব মুমিনগণ, যারা নিজেদের সালাতে বিনয় ও নম্র, যারা অনর্থক ক্রিয়াকলাপ হতে বিরত থাকে, যারা যাকাত দানে সক্রিয়। (সূরা মু’মিনূন, ১-৪)
যাকাত আদায় করা জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায় :
وَسَيُجَنَّبُهَا الْاَتْقٰى ‐ اَ لَّذِيْ يُؤْتِيْ مَالَهٗ يَتَزَكّٰى
অচিরেই সে ব্যক্তিকে তা (জাহান্নাম) থেকে দূরে রাখা হবে, যে আল্লাহকে ভয় করে এবং যে পবিত্রতা অর্জনের উদ্দেশ্যে নিজের ধনসম্পদ হতে ব্যয় করে। (সূরা লাইল- ১৭, ১৮)
যাকাত আদায়কারীরা মুমিনদের দ্বীনী ভাই :
فَاِنْ تَابُوْا وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ فَاِخْوَانُكُمْ فِى الدِّيْنِؕ وَنُفَصِّلُ الْاٰيَاتِ لِقَوْمٍ يَّعْلَمُوْنَ
অতএব যদি তারা সালাত আদায় করে ও যাকাত দেয়, তবে তারা তো তোমাদেরই দ্বীনি ভাই। আর আমি আমার নিদর্শনসমূহ জ্ঞানবুদ্ধিসম্পন্ন লোকদের জন্য স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে থাকি। (সূরা তাওবা- ১১)
যাকাত আদায়কারীরা ইসলামী রাষ্ট্রে নিরাপত্তা লাভ করে থাকে :
فَاِذَا انْسَلَخَ الْاَشْهُرُ الْحُرُمُ فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِيْنَ حَيْثُ وَجَدْتُّمُوْهُمْ وَخُذُوْهُمْ وَاحْصُرُوْهُمْ وَاقْعُدُوْا لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍۚ فَاِنْ تَابُوْا وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ فَخَلُّوْا سَبِيْلَهُمْؕ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে মুশরিকদেরকে যেখানে পাবে হত্যা করবে। তাদেরকে বন্দী করবে, অবরোধ করবে এবং প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের জন্য ওঁৎ পেতে (বসে) থাকবে। কিন্তু যদি তারা তাওবা করে, সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয়, তবে তাদের পথ ছেড়ে দেবে। নিশ্চয় আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা তাওবা- ৫)
যাকাতব্যবস্থা চালু করা সরকারের দায়িত্ব :
اَ لَّذِيْنَ اِنْ مَّكَّنَّاهُمْ فِى الْاَرْضِ اَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ وَاَمَرُوْا بِالْمَعْرُوْفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنْكَرِؕ وَلِلّٰهِ عَاقِبَةُ الْاُمُوْرِ
আমি এদেরকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দান করলে এরা সালাত কায়েম করবে, যাকাত আদায়ের ব্যবস্থা করবে এবং সৎকাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে; (জেনে রেখো) সকল কর্মের পরিণাম আল্লাহর ইখতিয়ারে। (সূরা হজ্জ- ৪১)
সরকারিভাবে যাকাত উত্তোলনের জন্য নবী ﷺ এর প্রতি নির্দেশ :
خُذْ مِنْ اَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيْهِمْ بِهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْؕ اِنَّ صَلَاتَكَ سَكَنٌ لَّهُمْؕ وَاللهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
তাদের সম্পদ হতে যাকাত গ্রহণ করবে। এর দ্বারা তুমি তাদেরকে পবিত্র করবে এবং পরিশুদ্ধ করবে। আর তুমি তাদেরকে দু‘আ করবে। নিশ্চয় তোমার দু‘আ তাদের জন্য প্রশান্তিদায়ক; আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা তাওবা- ১০৩)
যাকাত বণ্টনের খাতসমূহ :
اِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَآءِ وَالْمَسَاكِيْنِ وَالْعَامِلِيْنَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوْبُهُمْ وَفِى الرِّقَابِ وَالْغَارِمِيْنَ وَفِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَابْنِ السَّبِيْلِؕ فَرِيْضَةً مِّنَ اللهِ ؕ وَاللهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ
যাকাত তো কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত ও তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জন্য, (অমুসলিমদের মধ্যে) যাদের মন জয় করা উদ্দেশ্য হয় তাদের জন্য, দাসমুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে ব্যয় করার জন্য এবং মুসাফিরদের জন্য। এটা আল্লাহর নির্ধারিত বিধান; আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা- ৬০)
যারা যাকাত দেবে না তাদের ধ্বংস অনিবার্য :
وَوَيْلٌ لِّلْمُشْرِكِيْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ لَا يُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَهُمْ بِالْاٰخِرَةِ هُمْ كَافِرُوْنَ
দুর্ভোগ মুশরিকদের জন্য, যারা যাকাত প্রদান করে না এবং আখিরাতের প্রতিও বিশ্বাস স্থাপন করে না।
(সূরা হা-মীম সিজদা- ৬)
তাদের জন্য কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে :
وَالَّذِيْنَ يَكْنِزُوْنَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنْفِقُوْنَهَا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ اَلِيْمٍ
যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পুঞ্জীভূত করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদেরকে মর্মান্তিক শাস্তির সুসংবাদ দাও। (সূরা তাওবা- ৩৪)
কিয়ামতের দিন তাদের অবস্থা হবে অত্যন্ত কঠিন :
يَوْمَ يُحْمٰى عَلَيْهَا فِيْ نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوٰى بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوْبُهُمْ وَظُهُوْرُهُمْؕ هٰذَا مَا كَنَزْتُمْ لِاَنْفُسِكُمْ فَذُوْقُوْا مَا كُنْتُمْ تَكْنِزُوْنَ
যেদিন তা (যাকাতের মাল) জাহান্নামের অগ্নিতে উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্বদেশ ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেয়া হবে। সেদিন বলা হবে, এটাই তো সেটা যা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জীভূত করতে। সুতরাং তোমরা যা পুঞ্জীভূত করেছিলে তার স্বাদ আস্বাদন করো। (সূরা তাওবা- ৩৫)
তাদের সম্পদ তাদের গলার বেড়ি হবে :
وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِيْنَ يَبْخَلُوْنَ بِمَاۤ اٰتَاهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٖ هُوَ خَيْرًا لَّهُمْؕ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَّهُمْ ؕ سَيُطَوَّقُوْنَ مَا بَخِلُوْا بِهٖ يَوْمَ الْقِيَامَةِؕ وَلِلّٰهِ مِيْرَاثُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِؕ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِيْرٌ
আল্লাহ যাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহ হতে কিছু দান করেছেন, অথচ তারা সে বিষয়ে কার্পণ্য করে, তারা যেন এরূপ ধারণা না করে যে, ওটা তাদের জন্য কল্যাণকর; বরং ওটা তাদের জন্য আরো ক্ষতিকর। তারা যে বিষয়ে কৃপণতা করেছে, কিয়ামতের দিন ওটাই তাদের গলার বেড়িতে পরিণত হবে। (জেনে রেখো) আল্লাহ নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের স্বত্বাধিকারী; আর তোমরা যা করছ আল্লাহ সে বিষয়ে পূর্ণ খবর রাখেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৮০)
গরীবদের হক আদায় না করাতে বাগানওয়ালাদের পরিণতি :
اِنَّا بَلَوْنَاهُمْ كَمَا بَلَوْنَاۤ اَصْحَابَ الْجَنَّةِۚ اِذْ اَقْسَمُوْا لَيَصْرِمُنَّهَا مُصْبِحِيْنَ ‐ وَلَا يَسْتَثْنُوْنَ ‐ فَطَافَ عَلَيْهَا طَآئِفٌ مِّنْ رَّبِّكَ وَهُمْ نَآئِمُوْنَ ‐ فَاَصْبَحَتْ كَالصَّرِيْمِ ‐ فَتَنَادَوْا مُصْبِحِيْنَ ‐ اَنِ اغْدُوْا عَلٰى حَرْثِكُمْ اِنْ كُنْتُمْ صَارِمِيْنَ ‐ فَانْطَلَقُوْا وَهُمْ يَتَخَافَتُوْنَ ‐ اَنْ لَّا يَدْخُلَنَّهَا الْيَوْمَ عَلَيْكُمْ مِّسْكِيْنٌ ‐ وَغَدَوْا عَلٰى حَرْدٍ قَادِرِيْنَ ‐ فَلَمَّا رَاَوْهَا قَالُوْاۤ اِنَّا لَضَآلُّوْنَ ‐ بَلْ نَحْنُ مَحْرُوْمُوْنَ ‐ قَالَ اَوْسَطُهُمْ اَلَمْ اَقُلْ لَّكُمْ لَوْلَا تُسَبِّحُوْنَ ‐ قَالُوْا سُبْحَانَ رَبِّنَاۤ اِنَّا كُنَّا ظَالِمِيْنَ ‐ فَاَقْبَلَ بَعْضُهُمْ عَلٰى بَعْضٍ يَّتَلَاوَمُوْنَ ‐ قَالُوْا يَا وَيْلَنَاۤ اِنَّا كُنَّا طَاغِيْنَ ‐ عَسٰى رَبُّنَاۤ اَنْ يُّبْدِلَنَا خَيْرًا مِّنْهَاۤ اِنَّاۤ اِلٰى رَبِّنَا رَاغِبُوْنَ ‐ كَذٰلِكَ الْعَذَابُ وَلَعَذَابُ الْاٰخِرَةِ اَكْبَرُۘ لَوْ كَانُوْا يَعْلَمُوْنَ
আমি তাদেরকে (বাগানওয়ালাদেরকে) পরীক্ষা করেছি, যেভাবে পরীক্ষা করেছিলাম বাগানের মালিকদেরকে। যখন তারা এ শপথ করেছিল যে, তারা বাগান হতে প্রত্যুষেই ফল কেটে নেবে; কিন্তু তারা ‘ইন্শাআল্লাহ’ বলেনি। অতঃপর সেই বাগানে তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে এক আযাব পতিত হলো, তখন তারা ঘুমন্ত অবস্থায় ছিল। ফলে তা পুড়ে ছাই বর্ণ ধারণ করল। এরপর সকালে তারা একে অপরকে ডেকে বলল, তোমরা যদি ফসল কাটতে চাও তবে সকাল সকাল বাগানে চলো। অতঃপর তারা ফিস ফিস করে এ কথা বলতে বলতে চলল- আজ বাগানে যেন তোমাদের নিকট কোন অভাবগ্রস্ত ব্যক্তি প্রবেশ করতে না পারে। অতঃপর তারা (অভাবীদেরকে) প্রতিহত করতে সক্ষম- এই বিশ্বাস নিয়ে সকালে রওয়ানা হলো। কিন্তু তারা যখন ঐ বাগান প্রত্যক্ষ করল তখন তারা বলল, আমরা তো পথ ভুলে গেছি। (না) বরং আমরা বঞ্চিত হয়েছি! অতঃপর তাদের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি বলল, আমি কি তোমাদেরকে বলিনি, যদি তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করতে! তখন তারা বলল, আমরা আমাদের প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি; নিশ্চয় আমরা ছিলাম অত্যাচারী। এভাবে তারা একে অপরকে দোষারোপ করতে লাগল। তারা বলল, হায় দুর্ভোগ! আমরা তো সীমালঙ্ঘনকারী ছিলাম। আমরা আশা রাখি যে, আমাদের রব এর পরিবর্তে আমাদেরকে উত্তম বাগান দান করবেন; আমরা আমাদের রবের দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী। শাস্তি এভাবেই এসে থাকে; আর পরকালের শাস্তি তো আরো কঠিন, যদি তারা জানত। (সূরা ক্বালাম, ১৭-৩৩)
আল্লাহর পথে ব্যয় না করার কারণে কারূনের করুণ পরিণতি :
اِنَّ قَارُوْنَ كَانَ مِنْ قَوْمِ مُوْسٰى فَبَغٰى عَلَيْهِمْ ۪ وَاٰتَيْنَاهُ مِنَ الْكُنُوْزِ مَاۤ اِنَّ مَفَاتِحَهٗ لَتَنُوْٓءُ بِالْعُصْبَةِ اُولِى الْقُوَّةِۗ اِذْ قَالَ لَهٗ قَوْمُهٗ لَا تَفْرَحْ اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْفَرِحِيْنَ ‐ وَابْتَغِ فِيْمَاۤ اٰتَاكَ اللهُ الدَّارَ الْاٰخِرَةَ وَلَا تَنْسَ نَصِيْبَكَ مِنَ الدُّنْيَا وَاَحْسِنْ كَمَاۤ اَحْسَنَ اللهُ اِلَيْكَ وَلَا تَبْغِ الْفَسَادَ فِى الْاَرْضِؕ اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْمُفْسِدِيْنَ ‐ قَالَ اِنَّمَاۤ اُوْتِيْتُهٗ عَلٰى عِلْمٍ عِنْدِيْؕ اَوَلَمْ يَعْلَمْ اَنَّ اللهَ قَدْ اَهْلَكَ مِنْ قَبْلِهٖ مِنَ الْقُرُوْنِ مَنْ هُوَ اَشَدُّ مِنْهُ قُوَّةً وَّاَكْثَرُ جَمْعًا وَّلَا يُسْاَلُ عَنْ ذُنُوْبِهِمُ الْمُجْرِمُوْنَ ‐ فَخَرَجَ عَلٰى قَوْمِهٖ فِيْ زِيْنَتِهٖؕ قَالَ الَّذِيْنَ يُرِيْدُوْنَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا يَا لَيْتَ لَنَا مِثْلَ مَاۤ اُوْتِيَ قَارُوْنُ اِنَّهٗ لَذُوْ حَظٍّ عَظِيْمٍ ‐ وَقَالَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْعِلْمَ وَيْلَكُمْ ثَوَابُ اللهِ خَيْرٌ لِّمَنْ اٰمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًاۚ وَلَا يُلَقَّاهَاۤ اِلَّا الصَّابِرُوْنَ ‐ فَخَسَفْنَا بِهٖ وَبِدَارِهِ الْاَرْضَ فَمَا كَانَ لَهٗ مِنْ فِئَةٍ يَّنْصُرُوْنَهٗ مِنْ دُوْنِ اللهِۗ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُنْتَصِرِيْنَ ‐ وَاَصْبَحَ الَّذِيْنَ تَمَنَّوْا مَكَانَهٗ بِالْاَمْسِ يَقُوْلُوْنَ وَيْكَاَنَّ اللهَ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهٖ وَيَقْدِرُۚ لَوْلَاۤ اَنْ مَّنَّ اللهُ عَلَيْنَا لَخَسَفَ بِنَاؕ وَيْكَاَنَّهٗ لَا يُفْلِحُ الْكَافِرُوْنَ
কারূন ছিল মূসার সম্প্রদায়ভুক্ত, কিন্তু সে তাদের প্রতি বাড়াবাড়ি করেছিল। আর আমি তাকে দান করেছিলাম এমন ধনভান্ডার, যার চাবিগুলো বহন করা একদল বলবান লোকের পক্ষেও কষ্টসাধ্য ছিল। স্মরণ করো, যখন তার সম্প্রদায় তাকে বলেছিল, অহংকার করো না, নিশ্চয় আল্লাহ অহংকারীদেরকে পছন্দ করেন না। আল্লাহ তোমাকে যা দিয়েছেন তার দ্বারা আখিরাতের আবাস অনুসন্ধান করো এবং দুনিয়ার অংশ লাভ করতে ভুলে যেও না। তুমি অনুগ্রহ করো যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করার চেষ্টা করো না। (কেননা) আল্লাহ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদেরকে ভালোবাসেন না। সে বলল, এ সম্পদ আমি আমার জ্ঞানবলে প্রাপ্ত হয়েছি। সে কি জানত না- আল্লাহ তার পূর্বে বহু মানবগোষ্ঠীকে ধ্বংস করে দিয়েছেন, যারা ছিল শক্তিতে তার চেয়ে প্রবল এবং জনসংখ্যায় ছিল অধিক? অপরাধীদেরকে কি তাদের অপরাধ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে না? কারূন তার সম্প্রদায়ের সম্মুখে উপস্থিত হয়েছিল জাঁকজমক সহকারে। ফলে যারা পার্থিব জীবন কামনা করত তারা বলতে লাগল যে, হায়! কারূনকে যেরূপ দেয়া হয়েছে আমাদেরকেও যদি সেরূপ দেয়া হতো! প্রকৃতই সে মহাভাগ্যবান। কিন্তু যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছিল তারা বলল, ধিক তোমাদেরকে! যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের জন্য আল্লাহর পুরস্কারই সর্বশ্রেষ্ঠ; আর ধৈর্যশীল ব্যতীত তা কেউ লাভ করতে পারবে না। অতঃপর আমি কারূনকে তার প্রাসাদসহ ভূগর্ভে প্রোথিত করলাম। (কিন্তু) তার স্বপক্ষে এমন কোন দলও ছিল না, যে তাকে আল্লাহর শাস্তি হতে সাহায্য করতে পারত এবং সে নিজেও আত্মরক্ষায় সক্ষম ছিল না। ফলে ইতোপূর্বে যারা তার মতো হতে চেয়েছিল তারা বলতে লাগল, দেখলে তো! আল্লাহ তার বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা তার রিযিক বর্ধিত করেন এবং যার জন্য ইচ্ছা হ্রাস করেন। যদি আল্লাহ আমাদের প্রতি সদয় না হতেন তবে আমাদেরকেও ভূগর্ভে প্রোথিত করতেন। দেখলে তো! কাফিররা সফলকাম হয় না। (সূরা ক্বাসাস, ৭৬-৮২)
وَوَيْلٌ لِّلْمُشْرِكِيْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ لَا يُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَهُمْ بِالْاٰخِرَةِ هُمْ كَافِرُوْنَ
দুর্ভোগ মুশরিকদের জন্য, যারা যাকাত প্রদান করে না এবং আখিরাতের প্রতিও বিশ্বাস স্থাপন করে না।
(সূরা হা-মীম সিজদা- ৬)
তাদের জন্য কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে :
وَالَّذِيْنَ يَكْنِزُوْنَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنْفِقُوْنَهَا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ اَلِيْمٍ
যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পুঞ্জীভূত করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদেরকে মর্মান্তিক শাস্তির সুসংবাদ দাও। (সূরা তাওবা- ৩৪)
কিয়ামতের দিন তাদের অবস্থা হবে অত্যন্ত কঠিন :
يَوْمَ يُحْمٰى عَلَيْهَا فِيْ نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوٰى بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوْبُهُمْ وَظُهُوْرُهُمْؕ هٰذَا مَا كَنَزْتُمْ لِاَنْفُسِكُمْ فَذُوْقُوْا مَا كُنْتُمْ تَكْنِزُوْنَ
যেদিন তা (যাকাতের মাল) জাহান্নামের অগ্নিতে উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্বদেশ ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেয়া হবে। সেদিন বলা হবে, এটাই তো সেটা যা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জীভূত করতে। সুতরাং তোমরা যা পুঞ্জীভূত করেছিলে তার স্বাদ আস্বাদন করো। (সূরা তাওবা- ৩৫)
তাদের সম্পদ তাদের গলার বেড়ি হবে :
وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِيْنَ يَبْخَلُوْنَ بِمَاۤ اٰتَاهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٖ هُوَ خَيْرًا لَّهُمْؕ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَّهُمْ ؕ سَيُطَوَّقُوْنَ مَا بَخِلُوْا بِهٖ يَوْمَ الْقِيَامَةِؕ وَلِلّٰهِ مِيْرَاثُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِؕ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِيْرٌ
আল্লাহ যাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহ হতে কিছু দান করেছেন, অথচ তারা সে বিষয়ে কার্পণ্য করে, তারা যেন এরূপ ধারণা না করে যে, ওটা তাদের জন্য কল্যাণকর; বরং ওটা তাদের জন্য আরো ক্ষতিকর। তারা যে বিষয়ে কৃপণতা করেছে, কিয়ামতের দিন ওটাই তাদের গলার বেড়িতে পরিণত হবে। (জেনে রেখো) আল্লাহ নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের স্বত্বাধিকারী; আর তোমরা যা করছ আল্লাহ সে বিষয়ে পূর্ণ খবর রাখেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৮০)
গরীবদের হক আদায় না করাতে বাগানওয়ালাদের পরিণতি :
اِنَّا بَلَوْنَاهُمْ كَمَا بَلَوْنَاۤ اَصْحَابَ الْجَنَّةِۚ اِذْ اَقْسَمُوْا لَيَصْرِمُنَّهَا مُصْبِحِيْنَ ‐ وَلَا يَسْتَثْنُوْنَ ‐ فَطَافَ عَلَيْهَا طَآئِفٌ مِّنْ رَّبِّكَ وَهُمْ نَآئِمُوْنَ ‐ فَاَصْبَحَتْ كَالصَّرِيْمِ ‐ فَتَنَادَوْا مُصْبِحِيْنَ ‐ اَنِ اغْدُوْا عَلٰى حَرْثِكُمْ اِنْ كُنْتُمْ صَارِمِيْنَ ‐ فَانْطَلَقُوْا وَهُمْ يَتَخَافَتُوْنَ ‐ اَنْ لَّا يَدْخُلَنَّهَا الْيَوْمَ عَلَيْكُمْ مِّسْكِيْنٌ ‐ وَغَدَوْا عَلٰى حَرْدٍ قَادِرِيْنَ ‐ فَلَمَّا رَاَوْهَا قَالُوْاۤ اِنَّا لَضَآلُّوْنَ ‐ بَلْ نَحْنُ مَحْرُوْمُوْنَ ‐ قَالَ اَوْسَطُهُمْ اَلَمْ اَقُلْ لَّكُمْ لَوْلَا تُسَبِّحُوْنَ ‐ قَالُوْا سُبْحَانَ رَبِّنَاۤ اِنَّا كُنَّا ظَالِمِيْنَ ‐ فَاَقْبَلَ بَعْضُهُمْ عَلٰى بَعْضٍ يَّتَلَاوَمُوْنَ ‐ قَالُوْا يَا وَيْلَنَاۤ اِنَّا كُنَّا طَاغِيْنَ ‐ عَسٰى رَبُّنَاۤ اَنْ يُّبْدِلَنَا خَيْرًا مِّنْهَاۤ اِنَّاۤ اِلٰى رَبِّنَا رَاغِبُوْنَ ‐ كَذٰلِكَ الْعَذَابُ وَلَعَذَابُ الْاٰخِرَةِ اَكْبَرُۘ لَوْ كَانُوْا يَعْلَمُوْنَ
আমি তাদেরকে (বাগানওয়ালাদেরকে) পরীক্ষা করেছি, যেভাবে পরীক্ষা করেছিলাম বাগানের মালিকদেরকে। যখন তারা এ শপথ করেছিল যে, তারা বাগান হতে প্রত্যুষেই ফল কেটে নেবে; কিন্তু তারা ‘ইন্শাআল্লাহ’ বলেনি। অতঃপর সেই বাগানে তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে এক আযাব পতিত হলো, তখন তারা ঘুমন্ত অবস্থায় ছিল। ফলে তা পুড়ে ছাই বর্ণ ধারণ করল। এরপর সকালে তারা একে অপরকে ডেকে বলল, তোমরা যদি ফসল কাটতে চাও তবে সকাল সকাল বাগানে চলো। অতঃপর তারা ফিস ফিস করে এ কথা বলতে বলতে চলল- আজ বাগানে যেন তোমাদের নিকট কোন অভাবগ্রস্ত ব্যক্তি প্রবেশ করতে না পারে। অতঃপর তারা (অভাবীদেরকে) প্রতিহত করতে সক্ষম- এই বিশ্বাস নিয়ে সকালে রওয়ানা হলো। কিন্তু তারা যখন ঐ বাগান প্রত্যক্ষ করল তখন তারা বলল, আমরা তো পথ ভুলে গেছি। (না) বরং আমরা বঞ্চিত হয়েছি! অতঃপর তাদের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি বলল, আমি কি তোমাদেরকে বলিনি, যদি তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করতে! তখন তারা বলল, আমরা আমাদের প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি; নিশ্চয় আমরা ছিলাম অত্যাচারী। এভাবে তারা একে অপরকে দোষারোপ করতে লাগল। তারা বলল, হায় দুর্ভোগ! আমরা তো সীমালঙ্ঘনকারী ছিলাম। আমরা আশা রাখি যে, আমাদের রব এর পরিবর্তে আমাদেরকে উত্তম বাগান দান করবেন; আমরা আমাদের রবের দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী। শাস্তি এভাবেই এসে থাকে; আর পরকালের শাস্তি তো আরো কঠিন, যদি তারা জানত। (সূরা ক্বালাম, ১৭-৩৩)
আল্লাহর পথে ব্যয় না করার কারণে কারূনের করুণ পরিণতি :
اِنَّ قَارُوْنَ كَانَ مِنْ قَوْمِ مُوْسٰى فَبَغٰى عَلَيْهِمْ ۪ وَاٰتَيْنَاهُ مِنَ الْكُنُوْزِ مَاۤ اِنَّ مَفَاتِحَهٗ لَتَنُوْٓءُ بِالْعُصْبَةِ اُولِى الْقُوَّةِۗ اِذْ قَالَ لَهٗ قَوْمُهٗ لَا تَفْرَحْ اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْفَرِحِيْنَ ‐ وَابْتَغِ فِيْمَاۤ اٰتَاكَ اللهُ الدَّارَ الْاٰخِرَةَ وَلَا تَنْسَ نَصِيْبَكَ مِنَ الدُّنْيَا وَاَحْسِنْ كَمَاۤ اَحْسَنَ اللهُ اِلَيْكَ وَلَا تَبْغِ الْفَسَادَ فِى الْاَرْضِؕ اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْمُفْسِدِيْنَ ‐ قَالَ اِنَّمَاۤ اُوْتِيْتُهٗ عَلٰى عِلْمٍ عِنْدِيْؕ اَوَلَمْ يَعْلَمْ اَنَّ اللهَ قَدْ اَهْلَكَ مِنْ قَبْلِهٖ مِنَ الْقُرُوْنِ مَنْ هُوَ اَشَدُّ مِنْهُ قُوَّةً وَّاَكْثَرُ جَمْعًا وَّلَا يُسْاَلُ عَنْ ذُنُوْبِهِمُ الْمُجْرِمُوْنَ ‐ فَخَرَجَ عَلٰى قَوْمِهٖ فِيْ زِيْنَتِهٖؕ قَالَ الَّذِيْنَ يُرِيْدُوْنَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا يَا لَيْتَ لَنَا مِثْلَ مَاۤ اُوْتِيَ قَارُوْنُ اِنَّهٗ لَذُوْ حَظٍّ عَظِيْمٍ ‐ وَقَالَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْعِلْمَ وَيْلَكُمْ ثَوَابُ اللهِ خَيْرٌ لِّمَنْ اٰمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًاۚ وَلَا يُلَقَّاهَاۤ اِلَّا الصَّابِرُوْنَ ‐ فَخَسَفْنَا بِهٖ وَبِدَارِهِ الْاَرْضَ فَمَا كَانَ لَهٗ مِنْ فِئَةٍ يَّنْصُرُوْنَهٗ مِنْ دُوْنِ اللهِۗ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُنْتَصِرِيْنَ ‐ وَاَصْبَحَ الَّذِيْنَ تَمَنَّوْا مَكَانَهٗ بِالْاَمْسِ يَقُوْلُوْنَ وَيْكَاَنَّ اللهَ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهٖ وَيَقْدِرُۚ لَوْلَاۤ اَنْ مَّنَّ اللهُ عَلَيْنَا لَخَسَفَ بِنَاؕ وَيْكَاَنَّهٗ لَا يُفْلِحُ الْكَافِرُوْنَ
কারূন ছিল মূসার সম্প্রদায়ভুক্ত, কিন্তু সে তাদের প্রতি বাড়াবাড়ি করেছিল। আর আমি তাকে দান করেছিলাম এমন ধনভান্ডার, যার চাবিগুলো বহন করা একদল বলবান লোকের পক্ষেও কষ্টসাধ্য ছিল। স্মরণ করো, যখন তার সম্প্রদায় তাকে বলেছিল, অহংকার করো না, নিশ্চয় আল্লাহ অহংকারীদেরকে পছন্দ করেন না। আল্লাহ তোমাকে যা দিয়েছেন তার দ্বারা আখিরাতের আবাস অনুসন্ধান করো এবং দুনিয়ার অংশ লাভ করতে ভুলে যেও না। তুমি অনুগ্রহ করো যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করার চেষ্টা করো না। (কেননা) আল্লাহ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদেরকে ভালোবাসেন না। সে বলল, এ সম্পদ আমি আমার জ্ঞানবলে প্রাপ্ত হয়েছি। সে কি জানত না- আল্লাহ তার পূর্বে বহু মানবগোষ্ঠীকে ধ্বংস করে দিয়েছেন, যারা ছিল শক্তিতে তার চেয়ে প্রবল এবং জনসংখ্যায় ছিল অধিক? অপরাধীদেরকে কি তাদের অপরাধ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে না? কারূন তার সম্প্রদায়ের সম্মুখে উপস্থিত হয়েছিল জাঁকজমক সহকারে। ফলে যারা পার্থিব জীবন কামনা করত তারা বলতে লাগল যে, হায়! কারূনকে যেরূপ দেয়া হয়েছে আমাদেরকেও যদি সেরূপ দেয়া হতো! প্রকৃতই সে মহাভাগ্যবান। কিন্তু যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছিল তারা বলল, ধিক তোমাদেরকে! যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের জন্য আল্লাহর পুরস্কারই সর্বশ্রেষ্ঠ; আর ধৈর্যশীল ব্যতীত তা কেউ লাভ করতে পারবে না। অতঃপর আমি কারূনকে তার প্রাসাদসহ ভূগর্ভে প্রোথিত করলাম। (কিন্তু) তার স্বপক্ষে এমন কোন দলও ছিল না, যে তাকে আল্লাহর শাস্তি হতে সাহায্য করতে পারত এবং সে নিজেও আত্মরক্ষায় সক্ষম ছিল না। ফলে ইতোপূর্বে যারা তার মতো হতে চেয়েছিল তারা বলতে লাগল, দেখলে তো! আল্লাহ তার বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা তার রিযিক বর্ধিত করেন এবং যার জন্য ইচ্ছা হ্রাস করেন। যদি আল্লাহ আমাদের প্রতি সদয় না হতেন তবে আমাদেরকেও ভূগর্ভে প্রোথিত করতেন। দেখলে তো! কাফিররা সফলকাম হয় না। (সূরা ক্বাসাস, ৭৬-৮২)
صَوْمٌ (সাওম) এর অর্থ হলো, বিরত থাকা। আর ইসলামী শরীয়াতের পরিভাষায়- ‘‘আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খানা-পিনা ও যৌন সম্ভোগ হতে বিরত থাকাকে সাওম বা রোযা বলে।’’
প্রাচীন যুগ থেকে নিয়ে মুহাম্মাদ (সাঃ) পর্যন্ত সকল নবীদের শরীয়তে রোযার বিধান ছিল। অবশ্য রোযার হুকুম-আহকাম ও সংখ্যা ইত্যাদি বিভিন্ন নবীর শরীয়াতে বিভিন্ন রকম ছিল। মূসা (আঃ) ও তাঁর উম্মতরা আশুরার দিন রোযা রাখতেন। দাউদ (আঃ) অর্ধেক বছর রোযা রাখতেন। (সহীহ বুখারী, হা/৩৪২০; সহীহ মুসলিম, হা/২৭৯৬)
রমাযানের রোযা ফরয হওয়ার পূর্বে নবী (সাঃ) মুসলিমদেরকে প্রতি মাসে তিনদিন রোযা রাখার নির্দেশ দিতেন এবং আশুরার দিন রোযা রাখতে উৎসাহিত করতেন। (সহীহ মুসলিম, হা/২৭০৮)
দ্বিতীয় হিজরীর শাবান মাসে সর্বপ্রথম রমাযান মাসে রোযা রাখার বিধান নাযিল হয়। তবে এতে লোকদেরকে এতটুকু সুযোগ দেয়া হয়েছিল যে, যারা রোযা রাখতে চায় না, তারা প্রতি রোযার পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাওয়ালেও চলবে। এ বিধান নাযিল হওয়ার একবছর পর সুস্থদের ব্যাপারে যে ছাড় দেয়া হয়েছিল তা রহিত করে পুরো মাস রোযা রাখা বাধ্যতামূলক করে দেয়া হয় এবং রোগী ও মুসাফিরদের ব্যাপারে কাযার বিধান বহাল রাখা হয়।
প্রাচীন যুগ থেকে নিয়ে মুহাম্মাদ (সাঃ) পর্যন্ত সকল নবীদের শরীয়তে রোযার বিধান ছিল। অবশ্য রোযার হুকুম-আহকাম ও সংখ্যা ইত্যাদি বিভিন্ন নবীর শরীয়াতে বিভিন্ন রকম ছিল। মূসা (আঃ) ও তাঁর উম্মতরা আশুরার দিন রোযা রাখতেন। দাউদ (আঃ) অর্ধেক বছর রোযা রাখতেন। (সহীহ বুখারী, হা/৩৪২০; সহীহ মুসলিম, হা/২৭৯৬)
রমাযানের রোযা ফরয হওয়ার পূর্বে নবী (সাঃ) মুসলিমদেরকে প্রতি মাসে তিনদিন রোযা রাখার নির্দেশ দিতেন এবং আশুরার দিন রোযা রাখতে উৎসাহিত করতেন। (সহীহ মুসলিম, হা/২৭০৮)
দ্বিতীয় হিজরীর শাবান মাসে সর্বপ্রথম রমাযান মাসে রোযা রাখার বিধান নাযিল হয়। তবে এতে লোকদেরকে এতটুকু সুযোগ দেয়া হয়েছিল যে, যারা রোযা রাখতে চায় না, তারা প্রতি রোযার পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাওয়ালেও চলবে। এ বিধান নাযিল হওয়ার একবছর পর সুস্থদের ব্যাপারে যে ছাড় দেয়া হয়েছিল তা রহিত করে পুরো মাস রোযা রাখা বাধ্যতামূলক করে দেয়া হয় এবং রোগী ও মুসাফিরদের ব্যাপারে কাযার বিধান বহাল রাখা হয়।
রোযা সর্বযুগে মুসলিমদের উপর ফরয ছিল :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করে দেয়া হয়েছে, যেরকমভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরয করে দেয়া হয়েছিল। আশা করা যায়, এর মাধ্যমে তোমরা তাক্বওয়া অর্জন করতে পারবে।
(সূরা বাক্বারা- ১৮৩)
উম্মতে মুহাম্মদীর ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে কিছুটা ছাড় দেয়া হয়েছিল :
اَيَّامًا مَّعْدُوْدَاتٍؕ فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَّرِيْضًا اَوْ عَلٰى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ اَيَّامٍ اُخَرَ ؕ وَعَلَى الَّذِيْنَ يُطِيْقُوْنَهٗ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِيْنٍؕ فَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْرًا فَهُوَ خَيْرٌ لَّهٗؕ وَاَنْ تَصُوْمُوْا خَيْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
(রোযা ফরয করা হয়েছে) নির্দিষ্ট কয়েকটি দিনের জন্য, তবে কেউ যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে কিংবা সফরে থাকে, তবে সমপরিমাণ দিনের রোযা (সুস্থ হয়ে অথবা সফর থেকে ফিরে এসে) কাযা আদায় করে নেবে। আর যারা সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও রোযা রাখতে চায় না তাদের জন্য এর বিনিময়ে ফিদিয়া দেয়ার সুযোগ থাকবে- আর তা হচ্ছে একজন গরীব ব্যক্তিকে (পেট ভরে) খাবার দেয়া। অবশ্য যদি কোন ব্যক্তি (এর চেয়ে বেশি দিয়ে) ভালো কাজ করতে চায়, তাহলে এ কাজ তার জন্য একান্ত কল্যাণকর হবে। তবে (এ সময়) রোযা রাখা তোমাদের জন্য খুবই ভালো; যদি তোমরা (রোযার উপকারিতা সম্পর্কে) জানতে! (সূরা বাক্বারা- ১৮৩, ১৮৪)
পরে রমাযান মাসে রোযা রাখা বাধ্যতামূলক করা হয় :
فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ
তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাসকে পাবে, সে এতে রোযা রাখবে। (সূরা বাক্বারা- ১৮৫)
যাদের জন্য রোযা কাযা করার সুযোগ রয়েছে :
وَمَنْ كَانَ مَرِيْضًا اَوْ عَلٰى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ اَيَّامٍ اُخَرَؕ يُرِيْدُ اللهُ بِكُمُ الْيُسْرَؗ وَلَا يُرِيْدُ بِكُمُ الْعُسْرَ وَلِتُكْمِلُوا الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُوا اللهَ عَلٰى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
আর যে ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়বে অথবা সফরে থাকবে, সে পরবর্তী কোন এক সময়ে গুনে গুনে সেই পরিমাণ দিন পূরণ করে নেবে। এর দ্বারা তোমাদের প্রতিপালক (তাঁর বিধান) তোমাদের জন্য সহজ করে দিতে চান, তিনি তোমাদের উপর কষ্ট চাপিয়ে দিতে চান না। যাতে করে তোমরা রোযার সংখ্যাগুলো পূর্ণ করতে পার এবং তিনি তোমাদেরকে যে পথপ্রদর্শন করেছেন সে অনুযায়ী আল্লাহর মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে পার। হয়তো তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারবে। (সূরা বাক্বারা- ১৮৫)
রমাযানের রাতে সহবাস করা জায়েয :
اُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ اِلٰى نِسَآئِكُمْؕ هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَاَنْتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّؕ عَلِمَ اللهُ اَنَّكُمْ كُنْتُمْ تَخْتَانُوْنَ اَنْفُسَكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ وَعَفَا عَنْكُمْۚ فَالْاٰنَ بَاشِرُوْهُنَّ وَابْتَغُوْا مَا كَتَبَ اللهُ لَكُمْ
রমাযান মাসে রাতের বেলায় তোমাদের স্ত্রীদের সাথে মিলন করা তোমাদের জন্য হালাল করে দেয়া হয়েছে। তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের জন্য পোশাকস্বরূপ এবং তোমরাও তাদের জন্য পোশাক সমতুল্য। আল্লাহ এটা জানেন যে, তোমরা নিজেদের উপর খিয়ানত করে বসবে, তাই তিনি তোমাদের উপর দয়া করলেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিলেন। এখন চাইলে তোমরা তাদের সাথে সহবাস করতে পার এবং (এ ব্যাপারে) আল্লাহ তোমাদের জন্য যা লিখে রেখেছেন, তা সন্ধান করো। (সূরা বাক্বারা- ১৮৭)
ব্যাখ্যা : রমাযান মাসে রোযা রাখা বাধ্যতামূলক হয়ে যাওয়ার পর এর বিস্তারিত বিধিবিধান সম্পর্কে মুসলিমদেরকে ধারণা দেয়া হয় এবং রাতে ঘুমিয়ে পড়ার পর জেগে উঠে সহবাস করা ও খাওয়া-দাওয়া করাকে হালাল করে দেয়া হয়।
ই‘তিকাফ অবস্থায় সহবাস করা যাবে না :
وَلَا تُبَاشِرُوْهُنَّ وَاَنْتُمْ عَاكِفُوْنَ فِى الْمَسَاجِدِ
তবে যখন তোমরা মসজিদে ই‘তিকাফ অবস্থায় থাকবে, তখন নারী সম্ভোগ থেকে বিরত থাকবে। (সূরা বাক্বারা- ১৮৭)
সাহরীর সময়সীমা :
وَكُلُوْا وَاشْرَبُوْا حَتّٰى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الْاَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الْاَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ
আর তোমরা পানাহার অব্যাহত রাখতে পার যতক্ষণ পর্যন্ত রাতের অন্ধকার রেখার ভেতর থেকে ভোরের শুভ্র আলোক রেখা পরিষ্কার না হয়। (সূরা বাক্বারা- ১৮৭)
ইফতারের সময়সীমা :
ثُمَّ اَتِمُّوا الصِّيَامَ اِلَى اللَّيْلِ
অতঃপর তোমরা রাত আসা পর্যন্ত রোযা পূর্ণ করো। (সূরা বাক্বারা- ১৮৭)
সাওমের বিধিবিধান লঙ্ঘন করা যাবে না :
تِلْكَ حُدُوْدُ اللهِ فَلَا تَقْرَبُوْهَاؕ كَذٰلِكَ يُبَيِّنُ اللهُ اٰيَاتِهٖ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُوْنَ
এ হচ্ছে আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা; অতএব তোমরা কখনো এর ধারে কাছেও যেয়ো না। এভাবেই আল্লাহ তাঁর যাবতীয় নিদর্শন মানুষের জন্য বর্ণনা করে দিয়েছেন, যাতে তারা (এর আলোকে) আল্লাহকে ভয় করে। (সূরা বাক্বারা- ১৮৭)
ব্যাখ্যা : অত্র আয়াতে এসব সীমারেখা কেবল অতিক্রম করা থেকেই নিষেধ করা হয়নি; বরং এগুলোর ধারেকাছে যেতেও নিষেধ করা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, যেখান থেকে গোনাহের সীমানা শুরু হয়েছে সেখানে বরাবর ঘুরাফেরা করা বিপজ্জনক। বরং সীমান্ত থেকে দূরে থাকাই নিরাপদ। কারণ সীমান্ত বরাবর ঘুরাফেরা করলে ভুলে কখনো সীমান্তের ওপারে পা চলে যেতে পারে। শরীয়াতের মূল প্রাণসত্তা সম্পর্কে অজ্ঞ লোকেরা সবসময় অনুমতির শেষ সীমায় চলে যাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করে থাকে। তার দিকে অগ্রসর হয়েই আজ অসংখ্য লোক গোনাহ ও গোমরাহীতে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। কারণ ঐ সমস্ত সূক্ষ্ম সীমান্ত রেখার মধ্যে পার্থক্য করা এবং তাদের কিনারে পৌঁছে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ নয়। তাই এ ব্যাপারে নবী ﷺ বলেছেন, ‘‘প্রত্যেক বাদশাহর একটি সীমানা থাকে। আর আল্লাহর সীমানা হচ্ছে তাঁর নির্ধারিত হারাম বিষয়গুলো। কাজেই যে ব্যক্তি সীমানার চারদিকে ঘুরে বেড়ায় তার সীমানার মধ্যে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।’’ (সহীহ বুখারী, হা/৫২)
রোযা ফরয করার উদ্দেশ্য তাক্বওয়া অর্জন করা :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করে দেয়া হয়েছে, যেরকমভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরয করে দেয়া হয়েছিল। হয়তো তোমরা (এর মাধ্যমে) তাক্বওয়া অর্জন করতে পারবে। (সূরা বাক্বারা- ১৮৩)
রমাযান কুরআন নাযিলের মাস :
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيْۤ اُنْزِلَ فِيْهِ الْقُرْاٰنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدٰى وَالْفُرْقَانِ
রমাযান তো সেই মাস যে মাসে কুরআন নাযিল হয়েছে, যা মানুষের জন্য পথপ্রদর্শক, হেদায়াতের স্পষ্ট নিদর্শন এবং ফুরক্বান (সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী)। (সূরা বাক্বারা- ১৮৫)
ব্যাখ্যা : রমাযানের প্রতি রাত্রে নবী ﷺ জিবরাঈল (আঃ) এর সাথে কুরআন চর্চা করতেন। ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা। বিশেষত তাঁর দানশীলতা অন্যান্য সময় হতে রামাযান মাসে বেশি বেশি দেখা যেত, যখন জিবরাঈল (আঃ) তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতেন। রমাযানের প্রতি রাতেই তিনি রাসূল ﷺ এর সাক্ষাৎ করতেন এবং তাঁকে কুরআন শিক্ষা দিতেন। এজন্য আল্লাহর রাসূল ﷺ রমাযান মাসে দানশীলতায় প্রবাহিত বায়ুর চেয়েও বেশি গতিশীল হয়ে যেতেন (অর্থাৎ বেশি বেশি দান করতেন)। (সহীহ বুখারী, হা/৬)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করে দেয়া হয়েছে, যেরকমভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরয করে দেয়া হয়েছিল। আশা করা যায়, এর মাধ্যমে তোমরা তাক্বওয়া অর্জন করতে পারবে।
(সূরা বাক্বারা- ১৮৩)
উম্মতে মুহাম্মদীর ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে কিছুটা ছাড় দেয়া হয়েছিল :
اَيَّامًا مَّعْدُوْدَاتٍؕ فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَّرِيْضًا اَوْ عَلٰى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ اَيَّامٍ اُخَرَ ؕ وَعَلَى الَّذِيْنَ يُطِيْقُوْنَهٗ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِيْنٍؕ فَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْرًا فَهُوَ خَيْرٌ لَّهٗؕ وَاَنْ تَصُوْمُوْا خَيْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
(রোযা ফরয করা হয়েছে) নির্দিষ্ট কয়েকটি দিনের জন্য, তবে কেউ যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে কিংবা সফরে থাকে, তবে সমপরিমাণ দিনের রোযা (সুস্থ হয়ে অথবা সফর থেকে ফিরে এসে) কাযা আদায় করে নেবে। আর যারা সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও রোযা রাখতে চায় না তাদের জন্য এর বিনিময়ে ফিদিয়া দেয়ার সুযোগ থাকবে- আর তা হচ্ছে একজন গরীব ব্যক্তিকে (পেট ভরে) খাবার দেয়া। অবশ্য যদি কোন ব্যক্তি (এর চেয়ে বেশি দিয়ে) ভালো কাজ করতে চায়, তাহলে এ কাজ তার জন্য একান্ত কল্যাণকর হবে। তবে (এ সময়) রোযা রাখা তোমাদের জন্য খুবই ভালো; যদি তোমরা (রোযার উপকারিতা সম্পর্কে) জানতে! (সূরা বাক্বারা- ১৮৩, ১৮৪)
পরে রমাযান মাসে রোযা রাখা বাধ্যতামূলক করা হয় :
فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ
তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাসকে পাবে, সে এতে রোযা রাখবে। (সূরা বাক্বারা- ১৮৫)
যাদের জন্য রোযা কাযা করার সুযোগ রয়েছে :
وَمَنْ كَانَ مَرِيْضًا اَوْ عَلٰى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ اَيَّامٍ اُخَرَؕ يُرِيْدُ اللهُ بِكُمُ الْيُسْرَؗ وَلَا يُرِيْدُ بِكُمُ الْعُسْرَ وَلِتُكْمِلُوا الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُوا اللهَ عَلٰى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
আর যে ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়বে অথবা সফরে থাকবে, সে পরবর্তী কোন এক সময়ে গুনে গুনে সেই পরিমাণ দিন পূরণ করে নেবে। এর দ্বারা তোমাদের প্রতিপালক (তাঁর বিধান) তোমাদের জন্য সহজ করে দিতে চান, তিনি তোমাদের উপর কষ্ট চাপিয়ে দিতে চান না। যাতে করে তোমরা রোযার সংখ্যাগুলো পূর্ণ করতে পার এবং তিনি তোমাদেরকে যে পথপ্রদর্শন করেছেন সে অনুযায়ী আল্লাহর মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে পার। হয়তো তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারবে। (সূরা বাক্বারা- ১৮৫)
রমাযানের রাতে সহবাস করা জায়েয :
اُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ اِلٰى نِسَآئِكُمْؕ هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَاَنْتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّؕ عَلِمَ اللهُ اَنَّكُمْ كُنْتُمْ تَخْتَانُوْنَ اَنْفُسَكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ وَعَفَا عَنْكُمْۚ فَالْاٰنَ بَاشِرُوْهُنَّ وَابْتَغُوْا مَا كَتَبَ اللهُ لَكُمْ
রমাযান মাসে রাতের বেলায় তোমাদের স্ত্রীদের সাথে মিলন করা তোমাদের জন্য হালাল করে দেয়া হয়েছে। তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের জন্য পোশাকস্বরূপ এবং তোমরাও তাদের জন্য পোশাক সমতুল্য। আল্লাহ এটা জানেন যে, তোমরা নিজেদের উপর খিয়ানত করে বসবে, তাই তিনি তোমাদের উপর দয়া করলেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিলেন। এখন চাইলে তোমরা তাদের সাথে সহবাস করতে পার এবং (এ ব্যাপারে) আল্লাহ তোমাদের জন্য যা লিখে রেখেছেন, তা সন্ধান করো। (সূরা বাক্বারা- ১৮৭)
ব্যাখ্যা : রমাযান মাসে রোযা রাখা বাধ্যতামূলক হয়ে যাওয়ার পর এর বিস্তারিত বিধিবিধান সম্পর্কে মুসলিমদেরকে ধারণা দেয়া হয় এবং রাতে ঘুমিয়ে পড়ার পর জেগে উঠে সহবাস করা ও খাওয়া-দাওয়া করাকে হালাল করে দেয়া হয়।
ই‘তিকাফ অবস্থায় সহবাস করা যাবে না :
وَلَا تُبَاشِرُوْهُنَّ وَاَنْتُمْ عَاكِفُوْنَ فِى الْمَسَاجِدِ
তবে যখন তোমরা মসজিদে ই‘তিকাফ অবস্থায় থাকবে, তখন নারী সম্ভোগ থেকে বিরত থাকবে। (সূরা বাক্বারা- ১৮৭)
সাহরীর সময়সীমা :
وَكُلُوْا وَاشْرَبُوْا حَتّٰى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الْاَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الْاَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ
আর তোমরা পানাহার অব্যাহত রাখতে পার যতক্ষণ পর্যন্ত রাতের অন্ধকার রেখার ভেতর থেকে ভোরের শুভ্র আলোক রেখা পরিষ্কার না হয়। (সূরা বাক্বারা- ১৮৭)
ইফতারের সময়সীমা :
ثُمَّ اَتِمُّوا الصِّيَامَ اِلَى اللَّيْلِ
অতঃপর তোমরা রাত আসা পর্যন্ত রোযা পূর্ণ করো। (সূরা বাক্বারা- ১৮৭)
সাওমের বিধিবিধান লঙ্ঘন করা যাবে না :
تِلْكَ حُدُوْدُ اللهِ فَلَا تَقْرَبُوْهَاؕ كَذٰلِكَ يُبَيِّنُ اللهُ اٰيَاتِهٖ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُوْنَ
এ হচ্ছে আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা; অতএব তোমরা কখনো এর ধারে কাছেও যেয়ো না। এভাবেই আল্লাহ তাঁর যাবতীয় নিদর্শন মানুষের জন্য বর্ণনা করে দিয়েছেন, যাতে তারা (এর আলোকে) আল্লাহকে ভয় করে। (সূরা বাক্বারা- ১৮৭)
ব্যাখ্যা : অত্র আয়াতে এসব সীমারেখা কেবল অতিক্রম করা থেকেই নিষেধ করা হয়নি; বরং এগুলোর ধারেকাছে যেতেও নিষেধ করা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, যেখান থেকে গোনাহের সীমানা শুরু হয়েছে সেখানে বরাবর ঘুরাফেরা করা বিপজ্জনক। বরং সীমান্ত থেকে দূরে থাকাই নিরাপদ। কারণ সীমান্ত বরাবর ঘুরাফেরা করলে ভুলে কখনো সীমান্তের ওপারে পা চলে যেতে পারে। শরীয়াতের মূল প্রাণসত্তা সম্পর্কে অজ্ঞ লোকেরা সবসময় অনুমতির শেষ সীমায় চলে যাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করে থাকে। তার দিকে অগ্রসর হয়েই আজ অসংখ্য লোক গোনাহ ও গোমরাহীতে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। কারণ ঐ সমস্ত সূক্ষ্ম সীমান্ত রেখার মধ্যে পার্থক্য করা এবং তাদের কিনারে পৌঁছে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ নয়। তাই এ ব্যাপারে নবী ﷺ বলেছেন, ‘‘প্রত্যেক বাদশাহর একটি সীমানা থাকে। আর আল্লাহর সীমানা হচ্ছে তাঁর নির্ধারিত হারাম বিষয়গুলো। কাজেই যে ব্যক্তি সীমানার চারদিকে ঘুরে বেড়ায় তার সীমানার মধ্যে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।’’ (সহীহ বুখারী, হা/৫২)
রোযা ফরয করার উদ্দেশ্য তাক্বওয়া অর্জন করা :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করে দেয়া হয়েছে, যেরকমভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরয করে দেয়া হয়েছিল। হয়তো তোমরা (এর মাধ্যমে) তাক্বওয়া অর্জন করতে পারবে। (সূরা বাক্বারা- ১৮৩)
রমাযান কুরআন নাযিলের মাস :
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيْۤ اُنْزِلَ فِيْهِ الْقُرْاٰنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدٰى وَالْفُرْقَانِ
রমাযান তো সেই মাস যে মাসে কুরআন নাযিল হয়েছে, যা মানুষের জন্য পথপ্রদর্শক, হেদায়াতের স্পষ্ট নিদর্শন এবং ফুরক্বান (সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী)। (সূরা বাক্বারা- ১৮৫)
ব্যাখ্যা : রমাযানের প্রতি রাত্রে নবী ﷺ জিবরাঈল (আঃ) এর সাথে কুরআন চর্চা করতেন। ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা। বিশেষত তাঁর দানশীলতা অন্যান্য সময় হতে রামাযান মাসে বেশি বেশি দেখা যেত, যখন জিবরাঈল (আঃ) তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতেন। রমাযানের প্রতি রাতেই তিনি রাসূল ﷺ এর সাক্ষাৎ করতেন এবং তাঁকে কুরআন শিক্ষা দিতেন। এজন্য আল্লাহর রাসূল ﷺ রমাযান মাসে দানশীলতায় প্রবাহিত বায়ুর চেয়েও বেশি গতিশীল হয়ে যেতেন (অর্থাৎ বেশি বেশি দান করতেন)। (সহীহ বুখারী, হা/৬)
এ রাতেই কুরআন নাযিল হয়েছে :
اِنَّاۤ اَنْزَلْنَاهُ فِيْ لَيْلَةِ الْقَدْرِ
নিশ্চয় আমি এটাকে (কুরআনকে) ক্বদরের রাত্রিতে নাযিল করেছি। (সূরা ক্বদর- ১)
এ রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম :
وَمَاۤ اَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ ‐ - لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ اَلْفِ شَهْرٍ
তুমি কি জান ক্বদরের রাত কী? ক্বদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। (সূরা ক্বদর- ২, ৩)
এ রাতে অনেক ফেরেশতা অবতীর্ণ হয় :
تَنَزَّلُ الْمَلَآئِكَةُ وَالرُّوْحُ فِيْهَا بِاِذْنِ رَبِّهِمْ مِّنْ كُلِّ اَمْرٍ
এ রাতে রূহ (জিবরাঈল) ও অন্যান্য ফেরেশতারা তাদের রবের অনুমতিক্রমে প্রত্যেক বিষয়ের হুকুম নিয়ে অবতীর্ণ হয়। (সূরা ক্বদর- ৪)
এ রাত ফজর পর্যন্ত শান্তিময় থাকে :
سَلَامٌ هِيَ حَتّٰى مَطْلَعِ الْفَجْرِ
এ রাতটি ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত (পুরোপুরি) শান্তিময়। (সূরা ক্বদর- ৫)
এ রাতেই ভাগ্যের ফায়সালা হয় :
حٰمٓ ‐ وَالْكِتَابِ الْمُبِيْنِ ‐ اِنَّاۤ اَنْزَلْنَاهُ فِيْ لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ اِنَّا كُنَّا مُنْذِرِيْنَ ‐ فِيْهَا يُفْرَقُ كُلُّ اَمْرٍ حَكِيْمٍ ‐ اَمْرًا مِّنْ عِنْدِنَاؕ اِنَّا كُنَّا مُرْسِلِيْنَ
হা-মীম, শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের; আমি এটা অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় রজনীতে। আমি তো একজন সতর্ককারী মাত্র। এ রাতে আমার আদেশক্রমে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় ফায়সালা হয়। নিশ্চয় আমি রাসূল প্রেরণ করে থাকি। (সূরা দুখান, ১-৫)
اِنَّاۤ اَنْزَلْنَاهُ فِيْ لَيْلَةِ الْقَدْرِ
নিশ্চয় আমি এটাকে (কুরআনকে) ক্বদরের রাত্রিতে নাযিল করেছি। (সূরা ক্বদর- ১)
এ রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম :
وَمَاۤ اَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ ‐ - لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ اَلْفِ شَهْرٍ
তুমি কি জান ক্বদরের রাত কী? ক্বদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। (সূরা ক্বদর- ২, ৩)
এ রাতে অনেক ফেরেশতা অবতীর্ণ হয় :
تَنَزَّلُ الْمَلَآئِكَةُ وَالرُّوْحُ فِيْهَا بِاِذْنِ رَبِّهِمْ مِّنْ كُلِّ اَمْرٍ
এ রাতে রূহ (জিবরাঈল) ও অন্যান্য ফেরেশতারা তাদের রবের অনুমতিক্রমে প্রত্যেক বিষয়ের হুকুম নিয়ে অবতীর্ণ হয়। (সূরা ক্বদর- ৪)
এ রাত ফজর পর্যন্ত শান্তিময় থাকে :
سَلَامٌ هِيَ حَتّٰى مَطْلَعِ الْفَجْرِ
এ রাতটি ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত (পুরোপুরি) শান্তিময়। (সূরা ক্বদর- ৫)
এ রাতেই ভাগ্যের ফায়সালা হয় :
حٰمٓ ‐ وَالْكِتَابِ الْمُبِيْنِ ‐ اِنَّاۤ اَنْزَلْنَاهُ فِيْ لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ اِنَّا كُنَّا مُنْذِرِيْنَ ‐ فِيْهَا يُفْرَقُ كُلُّ اَمْرٍ حَكِيْمٍ ‐ اَمْرًا مِّنْ عِنْدِنَاؕ اِنَّا كُنَّا مُرْسِلِيْنَ
হা-মীম, শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের; আমি এটা অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় রজনীতে। আমি তো একজন সতর্ককারী মাত্র। এ রাতে আমার আদেশক্রমে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় ফায়সালা হয়। নিশ্চয় আমি রাসূল প্রেরণ করে থাকি। (সূরা দুখান, ১-৫)
اَلْحَجُّ (আল হাজ্জ) এর শাব্দিক অর্থ ইচ্ছা বা সংকল্প করা। শরিয়তের পরিভাষায় : আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে বাইতুল্লাহ ও তৎসংশ্লিষ্ট স্থানে ইবাদাত সম্পাদন করাকে হজ্জ বলে।
সম্পাদনের পদ্ধতি হিসেবে হজ্জ তিন প্রকার।
১. তামাত্তু হজ্জ : হজ্জের মাসে (শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনে) শুধু ওমরার ইহরাম বেঁধে ওমরার কাজ সম্পন্ন করে হালাল হয়ে পুনরায় জিলহজ্জ মাসের ৮ তারিখে মক্কা হতে ইহরাম বেঁধে হজ্জের কাজ সম্পাদন করাকে তামাত্তু হজ্জ বলে।
২. কিরান হজ্জ : একই সাথে ওমরা ও হজ্জের ইহরাম বাঁধবে এবং ওমরার কাজ শেষ করে হজ্জের কাজ শুরু করে জিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখে ইহরাম হতে হালাল হওয়াকে কিরান হজ্জ বলে। কিরান হজ্জকারীকে অবশ্যই কুরবানী করতে হবে।
৩) ইফরাদ হজ্জ : শুধুমাত্র হজ্জের ইহরাম বেঁধে হজ্জের কার্যাবলি সম্পাদন করে ১০ তারিখে হালাল হওয়াকে ইফরাদ হজ্জ বলে।
সম্পাদনের পদ্ধতি হিসেবে হজ্জ তিন প্রকার।
১. তামাত্তু হজ্জ : হজ্জের মাসে (শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনে) শুধু ওমরার ইহরাম বেঁধে ওমরার কাজ সম্পন্ন করে হালাল হয়ে পুনরায় জিলহজ্জ মাসের ৮ তারিখে মক্কা হতে ইহরাম বেঁধে হজ্জের কাজ সম্পাদন করাকে তামাত্তু হজ্জ বলে।
২. কিরান হজ্জ : একই সাথে ওমরা ও হজ্জের ইহরাম বাঁধবে এবং ওমরার কাজ শেষ করে হজ্জের কাজ শুরু করে জিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখে ইহরাম হতে হালাল হওয়াকে কিরান হজ্জ বলে। কিরান হজ্জকারীকে অবশ্যই কুরবানী করতে হবে।
৩) ইফরাদ হজ্জ : শুধুমাত্র হজ্জের ইহরাম বেঁধে হজ্জের কার্যাবলি সম্পাদন করে ১০ তারিখে হালাল হওয়াকে ইফরাদ হজ্জ বলে।
কা‘বা সর্বপ্রথম নির্মিত ইবাদাতখানা :
اِنَّ اَوَّلَ بَيْتٍ وُّضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِيْ بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَّهُدًى لِّلْعَالَمِيْنَ
নিশ্চয় মানুষের জন্য সর্বপ্রথম নির্মিত ঘর মক্কায় অবস্থিত, যা বরকতময় এবং বিশ্ববাসীর জন্য পথপ্রদর্শক। (সূরা আলে ইমরান- ৯৬)
সেখানে আছে মাকামে ইবরাহীম :
فِيْهِ اٰيَاتٌ ۢبَيِّنَاتٌ مَّقَامُ اِبْرَاهِيْمَ
সেখানে রয়েছে স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ, (এর মধ্যে একটি হচ্ছে) মাকামে ইবরাহীম। (সূরা আলে ইমরান- ৯৭)
মাকামে ইবরাহীমে সালাত আদায় করার নির্দেশ :
وَاتَّخِذُوْا مِنْ مَّقَامِ اِبْرَاهِيْمَ مُصَلًّى
তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থান হিসেবে গ্রহণ করো। (সূরা বাক্বারা- ১২৫)
আল্লাহ ইবরাহীম (আঃ) কে কা‘বার সন্ধান দিয়েছিলেন :
وَاِذْ بَوَّاْنَا لِاِبْرَاهِيْمَ مَكَانَ الْبَيْتِ
স্মরণ করো, যখন আমি ইবরাহীমের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম সে গৃহের স্থান। (সূরা হজ্জ- ২৬)
ইবরাহীম (আঃ) তাঁর ছেলেকে নিয়ে কা‘বা নির্মাণ করেন :
وَاِذْ يَرْفَعُ اِبْرَاهِيْمُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَاِسْمَاعِيْلُؕ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّاؕ اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
(স্মরণ করো) যখন ইবরাহীম ও ইসমাঈল কা‘বাঘরের ভিত্তি উঁচু করেছিলেন (তখন বলেছিলেন) হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পক্ষ হতে এটা কবুল করুন, নিশ্চয় আপনি শ্রবণকারী ও মহাজ্ঞানী। (সূরা বাক্বারা- ১২৭)
কা‘বা গোটা বিশ্বের কেবলা :
وَمِنْ حَيْثُ خَرَجْتَ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِؕ وَحَيْثُ مَا كُنْتُمْ فَوَلُّوْا وُجُوْهَكُمْ شَطْرَهٗ
আর তুমি যেখান থেকেই বের হও না কেন, তোমার মুখ মসজিদে হারামের দিকে ফিরাও। আর তোমরা যে যেখানেই থাক না কেন তোমাদের মুখমন্ডল সেদিকেই ফিরিয়ে নাও। (সূরা বাক্বারা- ১৫০)
কা‘বা মানবজাতির মিলনকেন্দ্র :
وَاِذْ جَعَلْنَا الْبَيْتَ مَثَابَةً لِّلنَّاسِ وَاَمْنًا
আমি কা‘বাগৃহকে মানবজাতির মিলনকেন্দ্র ও নিরাপদ স্থান হিসেবে মনোনীত করেছি। (সূরা বাক্বারা- ১২৫)
সেখানে সকলের অধিকার সমান :
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَيَصُدُّوْنَ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ وَالْمَسْجِدِ الْحَرَامِ الَّذِيْ جَعَلْنَاهُ لِلنَّاسِ سَوَآءَنِ الْعَاكِفُ فِيْهِ وَ الْبَادِ ؕ وَمَنْ يُّرِدْ فِيْهِ بِاِلْحَادٍ ۢبِظُلْمٍ نُّذِقْهُ مِنْ عَذَابٍ اَلِيْمٍ
অবশ্যই যারা কুফরী করে এবং (অন্যদেরকেও) আল্লাহর পথে চলতে বাধা দেয়, আর (বাধা দেয়) মানুষদেরকে মাসজিদুল হারাম (এর তাওয়াফ ও যিয়ারত) থেকে- যাকে আমি স্থানীয়-অস্থানীয় নির্বিশেষে সব মানুষের জন্য একই রকম (মর্যাদার স্থান) বানিয়েছি (এমন লোকদের মনে রাখতে হবে) যারা তাতে ইচ্ছাপূর্বক আল্লাহবিরোধী কাজ করবে, আমি তাদের (সবাইকে) কঠিন আযাব আস্বাদন করাব। (সূরা হজ্জ- ২৫)
কা‘বা নিরাপদ স্থান :
وَمَنْ دَخَلَهٗ كَانَ اٰمِنًا
আর যে ব্যক্তি সেখানে (মক্কায়) প্রবেশ করবে, সে নিরাপত্তা লাভ করবে। (সূরা আলে ইমরান- ৯৭)
সেখানে সবধরনের ফলমূল পাওয়া যায় :
اَوَلَمْ نُمَكِّنْ لَّهُمْ حَرَمًا اٰمِنًا يُّجْبٰۤى اِلَيْهِ ثَمَرَاتُ كُلِّ شَيْءٍ رِّزْقًا مِّنْ لَّدُنَّا وَلٰكِنَّ اَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ
আমি কি তাদেরকে এক নিরাপদ হারামে প্রতিষ্ঠিত করিনি, যেখানে আমার দেয়া রিযিকস্বরূপ সর্বপ্রকার ফলমূল আমদানী হয়? কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না। (সূরা ক্বাসাস- ৫৭)
এসব ইবরাহীম (আঃ) এর দু‘আর ফসল :
وَاِذْ قَالَ اِبْرَاهِيْمُ رَبِّ اجْعَلْ هٰذَا بَلَدًا اٰمِنًا وَّارْزُقْ اَهْلَهٗ مِنَ الثَّمَرَاتِ مَنْ اٰمَنَ مِنْهُمْ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِؕ قَالَ وَمَنْ كَفَرَ فَاُمَتِّعُهٗ قَلِيْلًا ثُمَّ اَضْطَرُّهٗۤ اِلٰى عَذَابِ النَّارِؕ وَبِئْسَ الْمَصِيْرُ
যখন ইবরাহীম বললেন, হে আমার রব! আপনি এ স্থানকে নিরাপদ শহরে পরিণত করুন এবং এর অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে, তাদেরকে ফলমূল থেকে জীবিকা দান করুন। আল্লাহ বলেন, যারা অবিশ্বাস করে তাদেরকেও আমি অল্প কিছু দিন ভোগ করতে দেব। পরে তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে বাধ্য করব; আর এটি কতই না নিকৃষ্টতম গন্তব্যস্থল। (সূরা বাক্বারা- ১২৬)
কা‘বাঘর পবিত্র রাখার নির্দেশ :
وَعَهِدْنَاۤ اِلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ اَنْ طَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّآئِفِيْنَ وَالْعَاكِفِيْنَ وَالرُّكَّعِ السُّجُوْدِ
আমি ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে আদেশ দিয়েছিলাম যে, যেন তারা আমার ঘরকে তাওয়াফকারী, আল্লাহর ইবাদাতে আত্মনিয়োগকারী এবং রুকূ ও সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখে। (সূরা বাক্বারা- ১২৫)
সেখানে সবধরনের অন্যায় কাজ নিষিদ্ধ :
وَمَنْ يُّرِدْ فِيْهِ بِاِلْحَادٍ ۢبِظُلْمٍ نُّذِقْهُ مِنْ عَذَابٍ اَلِيْمٍ
আর যে তাতে ইচ্ছা করে অন্যায় কাজে লিপ্ত হওয়ার মাধ্যমে সীমালঙ্ঘন করে, তাকে আমি মর্মান্তিক শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করাব। (সূরা হজ্জ- ২৫)
কা‘বায় প্রবেশে বাধা দিলে আল্লাহ শাস্তি দেবেন :
وَمَا لَهُمْ اَلَّا يُعَذِّبَهُمُ اللهُ وَهُمْ يَصُدُّوْنَ عَنِ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَمَا كَانُوْاۤ اَوْلِيَآءَهٗؕ اِنْ اَوْلِيَآؤُهٗۤ اِلَّا الْمُتَّقُوْنَ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ
আল্লাহ তাদেরকে কেনইবা শাস্তি দেবেন না, যখন তারা আল্লাহর বান্দাদেরকে মাসজিদুল হারামে আসতে বাধা দেয়, অথচ তারা তো এ ঘরের আসল অভিভাবকও নয়। এ ঘরের আসল অভিভাবক হচ্ছে তারা, যারা আল্লাহকে ভয় করে; কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না। (সূরা আনফাল- ৩৪)
অমুসলিমরা হারামে প্রবেশের অধিকার রাখে না :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنَّمَا الْمُشْرِكُوْنَ نَجَسٌ فَلَا يَقْرَبُوا الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ بَعْدَ عَامِهِمْ هٰذَا
হে মুমিনগণ! নিশ্চয় মুশরিকরা অপবিত্র, সুতরাং এ বৎসরের পর তারা যেন মাসজিদুল হারামের নিকটেও না আসে। (সূরা তাওবা- ২৮)
ব্যাখ্যা : ‘অপবিত্র’ কথাটির অর্থ হচ্ছে, তাদের আকীদা-বিশ্বাস, নৈতিক চরিত্র, কাজকর্ম এবং তাদের জাহেলী চালচলন ও সমাজব্যবস্থা অপবিত্র।
আল্লাহ কা‘বা ধ্বংসের ষড়যন্ত্রকারীদেরকে শাস্তি দিয়েছেন :
اَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِاَصْحَابِ الْفِيْلِ ‐ اَلَمْ يَجْعَلْ كَيْدَهُمْ فِيْ تَضْلِيْلٍ ‐ وَاَرْسَلَ عَلَيْهِمْ طَيْرًا اَبَابِيْلَ ‐ تَرْمِيْهِمْ بِحِجَارَةٍ مِّنْ سِجِّيْلٍ ‐ فَجَعَلَهُمْ كَعَصْفٍ مَّاْكُوْلٍ
তুমি কি দেখনি, তোমার প্রতিপালক (কা‘বা ধ্বংসের জন্য আগত) হাতিওয়ালাদের সাথে কিরূপ ব্যবহার করেছেন? তিনি কি তাদের যাবতীয় ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেননি? তিনি তাদের উপর ঝাঁকে-ঝাঁকে পাখি পাঠিয়েছিলেন। অতঃপর এ পাখিগুলো ঐ সুসজ্জিত বাহিনীর উপর পাথরের টুকরো নিক্ষেপ করছিল। অতঃপর তিনি তাদেরকে জন্তু-জানোয়ারের চর্বিত ঘাস-পাতার ন্যায় করে দিলেন। (সূরা ফীল)
اِنَّ اَوَّلَ بَيْتٍ وُّضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِيْ بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَّهُدًى لِّلْعَالَمِيْنَ
নিশ্চয় মানুষের জন্য সর্বপ্রথম নির্মিত ঘর মক্কায় অবস্থিত, যা বরকতময় এবং বিশ্ববাসীর জন্য পথপ্রদর্শক। (সূরা আলে ইমরান- ৯৬)
সেখানে আছে মাকামে ইবরাহীম :
فِيْهِ اٰيَاتٌ ۢبَيِّنَاتٌ مَّقَامُ اِبْرَاهِيْمَ
সেখানে রয়েছে স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ, (এর মধ্যে একটি হচ্ছে) মাকামে ইবরাহীম। (সূরা আলে ইমরান- ৯৭)
মাকামে ইবরাহীমে সালাত আদায় করার নির্দেশ :
وَاتَّخِذُوْا مِنْ مَّقَامِ اِبْرَاهِيْمَ مُصَلًّى
তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থান হিসেবে গ্রহণ করো। (সূরা বাক্বারা- ১২৫)
আল্লাহ ইবরাহীম (আঃ) কে কা‘বার সন্ধান দিয়েছিলেন :
وَاِذْ بَوَّاْنَا لِاِبْرَاهِيْمَ مَكَانَ الْبَيْتِ
স্মরণ করো, যখন আমি ইবরাহীমের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম সে গৃহের স্থান। (সূরা হজ্জ- ২৬)
ইবরাহীম (আঃ) তাঁর ছেলেকে নিয়ে কা‘বা নির্মাণ করেন :
وَاِذْ يَرْفَعُ اِبْرَاهِيْمُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَاِسْمَاعِيْلُؕ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّاؕ اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
(স্মরণ করো) যখন ইবরাহীম ও ইসমাঈল কা‘বাঘরের ভিত্তি উঁচু করেছিলেন (তখন বলেছিলেন) হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পক্ষ হতে এটা কবুল করুন, নিশ্চয় আপনি শ্রবণকারী ও মহাজ্ঞানী। (সূরা বাক্বারা- ১২৭)
কা‘বা গোটা বিশ্বের কেবলা :
وَمِنْ حَيْثُ خَرَجْتَ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِؕ وَحَيْثُ مَا كُنْتُمْ فَوَلُّوْا وُجُوْهَكُمْ شَطْرَهٗ
আর তুমি যেখান থেকেই বের হও না কেন, তোমার মুখ মসজিদে হারামের দিকে ফিরাও। আর তোমরা যে যেখানেই থাক না কেন তোমাদের মুখমন্ডল সেদিকেই ফিরিয়ে নাও। (সূরা বাক্বারা- ১৫০)
কা‘বা মানবজাতির মিলনকেন্দ্র :
وَاِذْ جَعَلْنَا الْبَيْتَ مَثَابَةً لِّلنَّاسِ وَاَمْنًا
আমি কা‘বাগৃহকে মানবজাতির মিলনকেন্দ্র ও নিরাপদ স্থান হিসেবে মনোনীত করেছি। (সূরা বাক্বারা- ১২৫)
সেখানে সকলের অধিকার সমান :
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَيَصُدُّوْنَ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ وَالْمَسْجِدِ الْحَرَامِ الَّذِيْ جَعَلْنَاهُ لِلنَّاسِ سَوَآءَنِ الْعَاكِفُ فِيْهِ وَ الْبَادِ ؕ وَمَنْ يُّرِدْ فِيْهِ بِاِلْحَادٍ ۢبِظُلْمٍ نُّذِقْهُ مِنْ عَذَابٍ اَلِيْمٍ
অবশ্যই যারা কুফরী করে এবং (অন্যদেরকেও) আল্লাহর পথে চলতে বাধা দেয়, আর (বাধা দেয়) মানুষদেরকে মাসজিদুল হারাম (এর তাওয়াফ ও যিয়ারত) থেকে- যাকে আমি স্থানীয়-অস্থানীয় নির্বিশেষে সব মানুষের জন্য একই রকম (মর্যাদার স্থান) বানিয়েছি (এমন লোকদের মনে রাখতে হবে) যারা তাতে ইচ্ছাপূর্বক আল্লাহবিরোধী কাজ করবে, আমি তাদের (সবাইকে) কঠিন আযাব আস্বাদন করাব। (সূরা হজ্জ- ২৫)
কা‘বা নিরাপদ স্থান :
وَمَنْ دَخَلَهٗ كَانَ اٰمِنًا
আর যে ব্যক্তি সেখানে (মক্কায়) প্রবেশ করবে, সে নিরাপত্তা লাভ করবে। (সূরা আলে ইমরান- ৯৭)
সেখানে সবধরনের ফলমূল পাওয়া যায় :
اَوَلَمْ نُمَكِّنْ لَّهُمْ حَرَمًا اٰمِنًا يُّجْبٰۤى اِلَيْهِ ثَمَرَاتُ كُلِّ شَيْءٍ رِّزْقًا مِّنْ لَّدُنَّا وَلٰكِنَّ اَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ
আমি কি তাদেরকে এক নিরাপদ হারামে প্রতিষ্ঠিত করিনি, যেখানে আমার দেয়া রিযিকস্বরূপ সর্বপ্রকার ফলমূল আমদানী হয়? কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না। (সূরা ক্বাসাস- ৫৭)
এসব ইবরাহীম (আঃ) এর দু‘আর ফসল :
وَاِذْ قَالَ اِبْرَاهِيْمُ رَبِّ اجْعَلْ هٰذَا بَلَدًا اٰمِنًا وَّارْزُقْ اَهْلَهٗ مِنَ الثَّمَرَاتِ مَنْ اٰمَنَ مِنْهُمْ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِؕ قَالَ وَمَنْ كَفَرَ فَاُمَتِّعُهٗ قَلِيْلًا ثُمَّ اَضْطَرُّهٗۤ اِلٰى عَذَابِ النَّارِؕ وَبِئْسَ الْمَصِيْرُ
যখন ইবরাহীম বললেন, হে আমার রব! আপনি এ স্থানকে নিরাপদ শহরে পরিণত করুন এবং এর অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে, তাদেরকে ফলমূল থেকে জীবিকা দান করুন। আল্লাহ বলেন, যারা অবিশ্বাস করে তাদেরকেও আমি অল্প কিছু দিন ভোগ করতে দেব। পরে তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে বাধ্য করব; আর এটি কতই না নিকৃষ্টতম গন্তব্যস্থল। (সূরা বাক্বারা- ১২৬)
কা‘বাঘর পবিত্র রাখার নির্দেশ :
وَعَهِدْنَاۤ اِلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ اَنْ طَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّآئِفِيْنَ وَالْعَاكِفِيْنَ وَالرُّكَّعِ السُّجُوْدِ
আমি ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে আদেশ দিয়েছিলাম যে, যেন তারা আমার ঘরকে তাওয়াফকারী, আল্লাহর ইবাদাতে আত্মনিয়োগকারী এবং রুকূ ও সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখে। (সূরা বাক্বারা- ১২৫)
সেখানে সবধরনের অন্যায় কাজ নিষিদ্ধ :
وَمَنْ يُّرِدْ فِيْهِ بِاِلْحَادٍ ۢبِظُلْمٍ نُّذِقْهُ مِنْ عَذَابٍ اَلِيْمٍ
আর যে তাতে ইচ্ছা করে অন্যায় কাজে লিপ্ত হওয়ার মাধ্যমে সীমালঙ্ঘন করে, তাকে আমি মর্মান্তিক শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করাব। (সূরা হজ্জ- ২৫)
কা‘বায় প্রবেশে বাধা দিলে আল্লাহ শাস্তি দেবেন :
وَمَا لَهُمْ اَلَّا يُعَذِّبَهُمُ اللهُ وَهُمْ يَصُدُّوْنَ عَنِ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَمَا كَانُوْاۤ اَوْلِيَآءَهٗؕ اِنْ اَوْلِيَآؤُهٗۤ اِلَّا الْمُتَّقُوْنَ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ
আল্লাহ তাদেরকে কেনইবা শাস্তি দেবেন না, যখন তারা আল্লাহর বান্দাদেরকে মাসজিদুল হারামে আসতে বাধা দেয়, অথচ তারা তো এ ঘরের আসল অভিভাবকও নয়। এ ঘরের আসল অভিভাবক হচ্ছে তারা, যারা আল্লাহকে ভয় করে; কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না। (সূরা আনফাল- ৩৪)
অমুসলিমরা হারামে প্রবেশের অধিকার রাখে না :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنَّمَا الْمُشْرِكُوْنَ نَجَسٌ فَلَا يَقْرَبُوا الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ بَعْدَ عَامِهِمْ هٰذَا
হে মুমিনগণ! নিশ্চয় মুশরিকরা অপবিত্র, সুতরাং এ বৎসরের পর তারা যেন মাসজিদুল হারামের নিকটেও না আসে। (সূরা তাওবা- ২৮)
ব্যাখ্যা : ‘অপবিত্র’ কথাটির অর্থ হচ্ছে, তাদের আকীদা-বিশ্বাস, নৈতিক চরিত্র, কাজকর্ম এবং তাদের জাহেলী চালচলন ও সমাজব্যবস্থা অপবিত্র।
আল্লাহ কা‘বা ধ্বংসের ষড়যন্ত্রকারীদেরকে শাস্তি দিয়েছেন :
اَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِاَصْحَابِ الْفِيْلِ ‐ اَلَمْ يَجْعَلْ كَيْدَهُمْ فِيْ تَضْلِيْلٍ ‐ وَاَرْسَلَ عَلَيْهِمْ طَيْرًا اَبَابِيْلَ ‐ تَرْمِيْهِمْ بِحِجَارَةٍ مِّنْ سِجِّيْلٍ ‐ فَجَعَلَهُمْ كَعَصْفٍ مَّاْكُوْلٍ
তুমি কি দেখনি, তোমার প্রতিপালক (কা‘বা ধ্বংসের জন্য আগত) হাতিওয়ালাদের সাথে কিরূপ ব্যবহার করেছেন? তিনি কি তাদের যাবতীয় ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেননি? তিনি তাদের উপর ঝাঁকে-ঝাঁকে পাখি পাঠিয়েছিলেন। অতঃপর এ পাখিগুলো ঐ সুসজ্জিত বাহিনীর উপর পাথরের টুকরো নিক্ষেপ করছিল। অতঃপর তিনি তাদেরকে জন্তু-জানোয়ারের চর্বিত ঘাস-পাতার ন্যায় করে দিলেন। (সূরা ফীল)
হজ্জ করা ফরয, একে অস্বীকার করা কুফরী :
وَلِلّٰهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ اِلَيْهِ سَبِيْلًاؕ وَمَنْ كَفَرَ فَاِنَّ اللهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِيْنَ
আল্লাহর উদ্দেশ্যে কা‘বা ঘরে হজ্জ করা ঐ সকল মানুষের উপর ফরয, যারা যাতায়াতের সামর্থ্য রাখে। আর যে তা অমান্য করবে তার জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহ বিশ্ববাসী থেকে অমুখাপেক্ষী। (সূরা আলে ইমরান- ৯৭)
হজ্জ করার জন্য আহবান :
وَاَذِّنْ فِى النَّاسِ بِالْحَجِّ يَاْتُوْكَ رِجَالًا وَّعَلٰى كُلِّ ضَامِرٍ يَّاْتِيْنَ مِنْ كُلِّ فَجٍّ عَمِيْقٍ
মানুষের নিকট ‘হজ্জ’-এর ঘোষণা করে দাও, তারা তোমার নিকট আসবে হেঁটে হেঁটে এবং সর্বপ্রকার দুর্বল উটের পিঠে আরোহন করে; এরা আসবে দূর-দূরান্ত পথ অতিক্রম করে। (সূরা হজ্জ- ২৭)
হজ্জের উদ্দেশ্য আল্লাহর নাম স্মরণ করা ও কল্যাণ লাভ করা :
لِيَشْهَدُوْا مَنَافِعَ لَهُمْ وَيَذْكُرُوا اسْمَ اللهِ فِۤيْ اَيَّامٍ مَّعْلُوْمَاتٍ عَلٰى مَا رَزَقَهُمْ مِّنْ ۢبَهِيْمَةِ الْاَنْعَامِ
যাতে তারা তাদের কল্যাণময় স্থানগুলোতে উপস্থিত হতে পারে এবং তিনি তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু হতে যা রিযিক হিসেবে দান করেছেন তার উপর নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে পারে। (সূরা হজ্জ- ২৮)
আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করা :
وَلْيَطَّوَّفُوْا بِالْبَيْتِ الْعَتِيْقِ
তাওয়াফ করো প্রাচীন গৃহের। (সূরা হজ্জ- ২৯)
ব্যাখ্যা : اَلْعَتِيْقُِ (আল ‘আতীক) শব্দটি আরবি ভাষায় তিনটি অর্থে ব্যবহৃত হয়। একটি অর্থ হচ্ছে, প্রাচীন তথা অনেক পুরাতন। দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, স্বাধীন তথা যার উপর কারো মালিকানা নেই। আর তৃতীয় অর্থ হচ্ছে, সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ। এ তিনটি অর্থই কা‘বার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়।
আল্লাহর নিদর্শনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা :
ذٰلِكَۗ وَمَنْ يُّعَظِّمْ حُرُمَاتِ اللهِ فَهُوَ خَيْرٌ لَّهٗ عِنْدَ رَبِّهٖ
এটাই বিধান; অতএব কেউ যদি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত পবিত্র অনুষ্ঠানগুলোর সম্মান করে, তবে তা তার জন্য তার প্রতিপালকের নিকট খুবই উত্তম। (সূরা হজ্জ- ৩০)
وَلِلّٰهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ اِلَيْهِ سَبِيْلًاؕ وَمَنْ كَفَرَ فَاِنَّ اللهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِيْنَ
আল্লাহর উদ্দেশ্যে কা‘বা ঘরে হজ্জ করা ঐ সকল মানুষের উপর ফরয, যারা যাতায়াতের সামর্থ্য রাখে। আর যে তা অমান্য করবে তার জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহ বিশ্ববাসী থেকে অমুখাপেক্ষী। (সূরা আলে ইমরান- ৯৭)
হজ্জ করার জন্য আহবান :
وَاَذِّنْ فِى النَّاسِ بِالْحَجِّ يَاْتُوْكَ رِجَالًا وَّعَلٰى كُلِّ ضَامِرٍ يَّاْتِيْنَ مِنْ كُلِّ فَجٍّ عَمِيْقٍ
মানুষের নিকট ‘হজ্জ’-এর ঘোষণা করে দাও, তারা তোমার নিকট আসবে হেঁটে হেঁটে এবং সর্বপ্রকার দুর্বল উটের পিঠে আরোহন করে; এরা আসবে দূর-দূরান্ত পথ অতিক্রম করে। (সূরা হজ্জ- ২৭)
হজ্জের উদ্দেশ্য আল্লাহর নাম স্মরণ করা ও কল্যাণ লাভ করা :
لِيَشْهَدُوْا مَنَافِعَ لَهُمْ وَيَذْكُرُوا اسْمَ اللهِ فِۤيْ اَيَّامٍ مَّعْلُوْمَاتٍ عَلٰى مَا رَزَقَهُمْ مِّنْ ۢبَهِيْمَةِ الْاَنْعَامِ
যাতে তারা তাদের কল্যাণময় স্থানগুলোতে উপস্থিত হতে পারে এবং তিনি তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু হতে যা রিযিক হিসেবে দান করেছেন তার উপর নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে পারে। (সূরা হজ্জ- ২৮)
আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করা :
وَلْيَطَّوَّفُوْا بِالْبَيْتِ الْعَتِيْقِ
তাওয়াফ করো প্রাচীন গৃহের। (সূরা হজ্জ- ২৯)
ব্যাখ্যা : اَلْعَتِيْقُِ (আল ‘আতীক) শব্দটি আরবি ভাষায় তিনটি অর্থে ব্যবহৃত হয়। একটি অর্থ হচ্ছে, প্রাচীন তথা অনেক পুরাতন। দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, স্বাধীন তথা যার উপর কারো মালিকানা নেই। আর তৃতীয় অর্থ হচ্ছে, সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ। এ তিনটি অর্থই কা‘বার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়।
আল্লাহর নিদর্শনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা :
ذٰلِكَۗ وَمَنْ يُّعَظِّمْ حُرُمَاتِ اللهِ فَهُوَ خَيْرٌ لَّهٗ عِنْدَ رَبِّهٖ
এটাই বিধান; অতএব কেউ যদি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত পবিত্র অনুষ্ঠানগুলোর সম্মান করে, তবে তা তার জন্য তার প্রতিপালকের নিকট খুবই উত্তম। (সূরা হজ্জ- ৩০)
নির্ধারিত সময়ে হজ্জ করতে হবে :
اَلْحَجُّ اَشْهُرٌمَّعْلُوْمَاتٌ
হজ্জের মাসগুলো নির্ধারিত। (সূরা বাক্বারা- ১৯৭)
চাঁদ উদয়ের মাধ্যমে হজ্জের সময় জানা যায় :
يَسْاَلُوْنَكَ عَنِ الْاَهِلَّةِؕ قُلْ هِيَ مَوَاقِيْتُ لِلنَّاسِ وَالْحَجِّ
তারা তোমাকে নতুন চাঁদসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে। বলো, এগুলো হচ্ছে- মানুষের জন্য এবং হজ্জের জন্য সময় নির্ধারক। (সূরা বাক্বারা- ১৮৯)
যাওয়ার সময় পাথেয় নিয়ে যেতে হবে :
وَتَزَوَّدُوْا فَاِنَّ خَيْرَ الزَّادِ التَّقْوٰىؗ وَاتَّقُوْنِ يَاۤ اُولِى الْاَلْبَابِ
তোমরা পাথেয় সংগ্রহ করো; বস্তুত উৎকৃষ্টতম পাথেয় হচ্ছে আল্লাহভীতি। অতএব হে জ্ঞানীগণ! তোমরা আমাকে ভয় করো। (সূরা বাক্বারা- ১৯৭)
ইহরাম বাঁধার পর সবধরনের নিষিদ্ধ কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে :
اَ لْحَجُّ اَشْهُرٌ مَّعْلُوْمَاتٌۚ فَمَنْ فَرَضَ فِيْهِنَّ الْحَجَّ فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوْقَ وَلَا جِدَالَ فِى الحَجِّؕ وَمَا تَفْعَلُوْا مِنْ خَيْرٍ يَّعْلَمْهُ اللهُ
হজ্জের মাসগুলো নির্ধারিত, অতঃএব কেউ যদি ঐ সময়গুলোর মধ্যে হজ্জের সংকল্প করে, তবে সে যেন তাতে (সে দিনগুলোতে) সহবাস, দুষ্কার্য ও ঝগড়া করা হতে বিরত থাকে। আর তোমরা যে কোন সৎকর্ম কর না কেন, আল্লাহ তা জানেন। (সূরা বাক্বারা- ১৯৭)
স্থলভাগের কোন প্রাণী শিকার করা যাবে না :
وَحُرِّمَ عَلَيْكُمْ صَيْدُ الْبَرِّ مَا دُمْتُمْ حُرُمًاؕ وَاتَّقُوا اللهَ الَّذِيْۤ اِلَيْهِ تُحْشَرُوْنَ
আর তোমরা যতক্ষণ পর্যন্ত ইহরাম অবস্থায় থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত স্থলভাগের শিকার তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যাঁর নিকট তোমাদেরকে একত্র করা হবে। (সূরা মায়েদা- ৯৬)
এটা আল্লাহর একটি পরীক্ষা :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَيَبْلُوَنَّكُمُ اللهُ بِشَيْءٍ مِّنَ الصَّيْدِ تَنَالُهٗۤ اَيْدِيْكُمْ وَرِمَاحُكُمْ لِيَعْلَمَ اللّٰهُ مَنْ يَّخَافُهٗ بِالْغَيْبِ
হে ঈমানদারগণ! ইহরাম অবস্থায় অবশ্যই আল্লাহ তোমাদেরকে এমন কিছু শিকারের বস্তু দিয়ে পরীক্ষা করবেন, যেগুলো তোমরা নিজেদের হাত ও বর্শার দ্বারা ধরতে পার। যাতে করে আল্লাহ এটা জেনে নিতে পারেন যে, কে তাঁকে না দেখে ভয় করে? (সূরা মায়েদা- ৯৪)
শিকার করলে কাফ্ফারা দিতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَقْتُلُوا الصَّيْدَ وَاَنْتُمْ حُرُمٌؕ وَمَنْ قَتَلَهٗ مِنْكُمْ مُّتَعَمِّدًا فَجَزَآءٌ مِّثْلُ مَا قَتَلَ مِنَ النَّعَمِ يَحْكُمُ بِهٖ ذَوَا عَدْلٍ مِّنْكُمْ هَدْيًا ۢبَالِغَ الْكَعْبَةِ اَوْ كَفَّارَةٌ طَعَامُ مَسَاكِيْنَ اَوْ عَدْلُ ذٰلِكَ صِيَامًا لِّيَذُوْقَ وَبَالَ اَمْرِهٖؕ عَفَا اللهُ عَمَّا سَلَفَ وَمَنْ عَادَ فَيَنْتَقِمُ اللهُ مِنْهُؕ وَاللهُ عَزِيْزٌ ذُو انْتِقَامٍ
হে মুমিনগণ! তোমরা ইহরাম অবস্থায় থাকাকালে কোন শিকারকে হত্যা করো না। এরপরও তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে তা হত্যা করবে, তার বিনিময় হচ্ছে অনুরূপ গৃহপালিত জন্তু। এ ব্যাপারে তোমাদের মধ্যে দু’জন ন্যায়পরায়ণ লোক ফায়সালা করে দেবে যে, তা কুরবানীরূপে কা‘বায় প্রেরণ করতে হবে অথবা তার কাফ্ফারাস্বরূপ দরিদ্রকে খাবার প্রদান কিংবা সমসংখ্যক সিয়াম পালন করতে হবে, যাতে করে সে আপন কৃতকর্মের ফল ভোগ করে। যা গত হয়ে গেছে আল্লাহ তা ক্ষমা করে দিয়েছেন, তবে কেউ যদি তা পুনরায় করে তাহলে আল্লাহ তাকে শাস্তি দেবেন; আর আল্লাহ মহাপরাক্রশালী ও শাস্তিদাতা। (সূরা মায়েদা- ৯৫)
আরাফার ময়দানে অবস্থান করা :
ثُمَّ اَفِيْضُوْا مِنْ حَيْثُ اَفَاضَ النَّاسُ
অতঃপর যেখান হতে অন্য সকল মানুষ প্রত্যাবর্তন করে সেখান (আরাফা) হতে তোমরাও প্রত্যাবর্তন করো। (সূরা বাক্বারা- ১৯৯)
মুযদালিফায় অবস্থান করা :
فَاِذَاۤ اَفَضْتُمْ مِّنْ عَرَفَاتٍ فَاذْكُرُوا اللهَ عِنْدَ الْمَشْعَرِ الْحَرَامِ وَاذْكُرُوْهُ كَمَا هَدَاكُمْۚ وَاِنْ كُنْتُمْ مِّنْ قَبْلِهٖ لَمِنَ الضَّآلِّيْنَ
অতঃপর যখন তোমরা আরাফাত হতে ফিরে আস, তখন মাশ‘আরে হারাম তথা পবিত্র স্মৃতিস্থানের নিকট আল্লাহকে স্মরণ করো। আর তিনি তোমাদেরকে যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন সেভাবে তাঁকে স্মরণ করো, যদিও তোমরা ইতোপূর্বে বিভ্রান্তদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে। (সূরা বাক্বারা- ১৯৮)
মিনায় অবস্থান করা :
وَاذْكُرُوا اللهَ فِۤيْ اَيَّامٍ مَّعْدُوْدَاتٍؕ فَمَنْ تَعَجَّلَ فِيْ يَوْمَيْنِ فَلَاۤ اِثْمَ عَلَيْهِۚ وَمَنْ تَاَخَّرَ فَلَاۤ اِثْمَ عَلَيْهِ لِمَنِ اتَّقٰىؕ وَاتَّقُوا اللهَ وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّكُمْ اِلَيْهِ تُحْشَرُوْنَ
আর তোমরা নির্ধারিত দিনসমূহে আল্লাহকে স্মরণ করো। সুতরাং কেউ যদি দু’দিনের মধ্যে (মক্কায় ফিরে যেতে) তাড়াতাড়ি করে, তবে তার জন্য কোন পাপ নেই। আবার কেউ যদি বিলম্ব করে, তবে তার কোন গোনাহ হবে না; এটা (এ সুযোগটা) তাক্বওয়া অবলম্বনকারীদের জন্য নির্ধারিত। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং জেনে রেখো, তোমরা সকলেই তাঁর দিকে সমবেত হবে। (সূরা বাক্বারা- ২০৩)
কা‘বাঘর তাওয়াফ করা :
وَلْيَطَّوَّفُوْا بِالْبَيْتِ الْعَتِيْقِ
তোমরা প্রাচীন গৃহের তাওয়াফ করো। (সূরা হজ্জ- ২৯)
সাফা-মারওয়ায় দৌড়ানো :
اِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَآئِرِ اللهِۚ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ اَوِ اعْتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ اَنْ يَّطَّوَّفَ بِهِمَاؕ وَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْرًا فَاِنَّ اللهَ شَاكِرٌ عَلِيْمٌ
নিশ্চয় ‘সাফা’ ও ‘মারওয়া’ আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। অতএব যে ব্যক্তি এ ঘরে হজ্জ অথবা ওমরা করার জন্য আগমন করবে, তার জন্য এ দু’টির মধ্যে দৌড়ানোতে দোষের কিছু নেই। আর যদি কেউ স্বেচ্ছায় সৎকর্ম করে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ (তাদের ব্যাপারে) কৃতজ্ঞ ও সর্বজ্ঞাত। (সূরা বাক্বারা- ১৫৮)
হজ্জের সাথে ওমরা করলে যা করতে হবে :
فَمَنْ تَمَتَّعَ بِالْعُمْرَةِ اِلَى الْحَجِّ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنَ الْهَدْيِۚ فَمَنْ لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلَاثَةِ اَيَّامٍ فِى الْحَجِّ وَسَبْعَةٍ اِذَا رَجَعْتُمْؕ تِلْكَ عَشَرَةٌ كَامِلَةٌؕ ذٰلِكَ لِمَنْ لَّمْ يَكُنْ اَهْلُهٗ حَاضِرِى الْمَسْجِدِ الْحَرَامِؕ وَاتَّقُوا اللهَ وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
অতঃপর কেউ যদি হজ্জের সাথে ওমরাও করতে চায়, তবে সে যা সহজপ্রাপ্য তাই কুরবানী করবে। কিন্তু কেউ যদি তা না পায়, তবে হজ্জের সময় তিন দিন এবং যখন তোমরা ফিরে আস তখন সাত দিন- এই পূর্ণ দশদিন রোযা রাখবে। এটা ঐ ব্যক্তির জন্য যে মাসজিদে হারামের বাসিন্দা নয়। আল্লাহকে ভয় করো ও জেনে রেখো, আল্লাহ কঠিন শাস্তিদাতা। (সূরা বাক্বারা- ১৯৬)
মাথামুন্ডন করা বা ছাটানো :
لَقَدْ صَدَقَ اللهُ رَسُوْلَهُ الرُّؤْيَا بِالْحَقِّۚ لَتَدْخُلُنَّ الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ اِنْ شَآءَ اللهُ اٰمِنِيْنَ مُحَلِّقِيْنَ رُءُوْسَكُمْ وَمُقَصِّرِيْنَ لَا تَخَافُوْنَ
বাস্তবিকই আল্লাহ তাঁর রাসূলকে সঠিক স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, যা ছিল সস্পূর্ণ সত্য। ইন্শাআল্লাহ তোমরা মাসজিদুল হারামে সম্পূর্ণ নিরাপদে প্রবেশ করবে- (কেউ কেউ) মাথা কামাবে, (কেউ কেউ) চুল কাঁটবে এবং তোমাদের কোন ভয় থাকবে না। (সূরা ফাতহ- ২৭)
বাধাপ্রাপ্ত হলে কুরবানী করে নেবে :
وَاَتِمُّوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلّٰهِؕ فَاِنْ اُحْصِرْتُمْ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنَ الْهَدْيِ
তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ ও ওমরা সম্পূর্ণ করো; কিন্তু তোমরা যদি বাধাপ্রাপ্ত হও, তবে যা সহজপ্রাপ্য হয় তাই কুরবানী করে নাও। (সূরা বাক্বারা- ১৯৬)
জন্তু কুরবানীর স্থানে পৌঁছার পর মাথামুন্ডন করবে:
وَلَا تَحْلِقُوْا رُءُوْسَكُمْ حَتّٰى يَبْلُغَ الْهَدْيُ مَحِلَّهٗؕ فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَّرِيْضًا اَوْ بِهٖۤ اَذًى مِّنْ رَّاْسِهٖ فَفِدْيَةٌ مِّنْ صِيَامٍ اَوْ صَدَقَةٍ اَوْ نُسُكٍ
কুরবানীর জন্তুগুলো যথাস্থানে না পৌঁছা পর্যন্ত তোমাদের মাথামুন্ডন করো না; কিন্তু তোমাদের মধ্যে কেউ যদি রোগাক্রান্ত হয় অথবা মাথায় অসুখ থাকে, তবে সে রোযা রাখবে কিংবা সাদাকা করবে অথবা (কুরবানী দ্বারা) ফিদইয়া দেবে। (সূরা বাক্বারা- ১৯৬)
اَلْحَجُّ اَشْهُرٌمَّعْلُوْمَاتٌ
হজ্জের মাসগুলো নির্ধারিত। (সূরা বাক্বারা- ১৯৭)
চাঁদ উদয়ের মাধ্যমে হজ্জের সময় জানা যায় :
يَسْاَلُوْنَكَ عَنِ الْاَهِلَّةِؕ قُلْ هِيَ مَوَاقِيْتُ لِلنَّاسِ وَالْحَجِّ
তারা তোমাকে নতুন চাঁদসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে। বলো, এগুলো হচ্ছে- মানুষের জন্য এবং হজ্জের জন্য সময় নির্ধারক। (সূরা বাক্বারা- ১৮৯)
যাওয়ার সময় পাথেয় নিয়ে যেতে হবে :
وَتَزَوَّدُوْا فَاِنَّ خَيْرَ الزَّادِ التَّقْوٰىؗ وَاتَّقُوْنِ يَاۤ اُولِى الْاَلْبَابِ
তোমরা পাথেয় সংগ্রহ করো; বস্তুত উৎকৃষ্টতম পাথেয় হচ্ছে আল্লাহভীতি। অতএব হে জ্ঞানীগণ! তোমরা আমাকে ভয় করো। (সূরা বাক্বারা- ১৯৭)
ইহরাম বাঁধার পর সবধরনের নিষিদ্ধ কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে :
اَ لْحَجُّ اَشْهُرٌ مَّعْلُوْمَاتٌۚ فَمَنْ فَرَضَ فِيْهِنَّ الْحَجَّ فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوْقَ وَلَا جِدَالَ فِى الحَجِّؕ وَمَا تَفْعَلُوْا مِنْ خَيْرٍ يَّعْلَمْهُ اللهُ
হজ্জের মাসগুলো নির্ধারিত, অতঃএব কেউ যদি ঐ সময়গুলোর মধ্যে হজ্জের সংকল্প করে, তবে সে যেন তাতে (সে দিনগুলোতে) সহবাস, দুষ্কার্য ও ঝগড়া করা হতে বিরত থাকে। আর তোমরা যে কোন সৎকর্ম কর না কেন, আল্লাহ তা জানেন। (সূরা বাক্বারা- ১৯৭)
স্থলভাগের কোন প্রাণী শিকার করা যাবে না :
وَحُرِّمَ عَلَيْكُمْ صَيْدُ الْبَرِّ مَا دُمْتُمْ حُرُمًاؕ وَاتَّقُوا اللهَ الَّذِيْۤ اِلَيْهِ تُحْشَرُوْنَ
আর তোমরা যতক্ষণ পর্যন্ত ইহরাম অবস্থায় থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত স্থলভাগের শিকার তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যাঁর নিকট তোমাদেরকে একত্র করা হবে। (সূরা মায়েদা- ৯৬)
এটা আল্লাহর একটি পরীক্ষা :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَيَبْلُوَنَّكُمُ اللهُ بِشَيْءٍ مِّنَ الصَّيْدِ تَنَالُهٗۤ اَيْدِيْكُمْ وَرِمَاحُكُمْ لِيَعْلَمَ اللّٰهُ مَنْ يَّخَافُهٗ بِالْغَيْبِ
হে ঈমানদারগণ! ইহরাম অবস্থায় অবশ্যই আল্লাহ তোমাদেরকে এমন কিছু শিকারের বস্তু দিয়ে পরীক্ষা করবেন, যেগুলো তোমরা নিজেদের হাত ও বর্শার দ্বারা ধরতে পার। যাতে করে আল্লাহ এটা জেনে নিতে পারেন যে, কে তাঁকে না দেখে ভয় করে? (সূরা মায়েদা- ৯৪)
শিকার করলে কাফ্ফারা দিতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَقْتُلُوا الصَّيْدَ وَاَنْتُمْ حُرُمٌؕ وَمَنْ قَتَلَهٗ مِنْكُمْ مُّتَعَمِّدًا فَجَزَآءٌ مِّثْلُ مَا قَتَلَ مِنَ النَّعَمِ يَحْكُمُ بِهٖ ذَوَا عَدْلٍ مِّنْكُمْ هَدْيًا ۢبَالِغَ الْكَعْبَةِ اَوْ كَفَّارَةٌ طَعَامُ مَسَاكِيْنَ اَوْ عَدْلُ ذٰلِكَ صِيَامًا لِّيَذُوْقَ وَبَالَ اَمْرِهٖؕ عَفَا اللهُ عَمَّا سَلَفَ وَمَنْ عَادَ فَيَنْتَقِمُ اللهُ مِنْهُؕ وَاللهُ عَزِيْزٌ ذُو انْتِقَامٍ
হে মুমিনগণ! তোমরা ইহরাম অবস্থায় থাকাকালে কোন শিকারকে হত্যা করো না। এরপরও তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে তা হত্যা করবে, তার বিনিময় হচ্ছে অনুরূপ গৃহপালিত জন্তু। এ ব্যাপারে তোমাদের মধ্যে দু’জন ন্যায়পরায়ণ লোক ফায়সালা করে দেবে যে, তা কুরবানীরূপে কা‘বায় প্রেরণ করতে হবে অথবা তার কাফ্ফারাস্বরূপ দরিদ্রকে খাবার প্রদান কিংবা সমসংখ্যক সিয়াম পালন করতে হবে, যাতে করে সে আপন কৃতকর্মের ফল ভোগ করে। যা গত হয়ে গেছে আল্লাহ তা ক্ষমা করে দিয়েছেন, তবে কেউ যদি তা পুনরায় করে তাহলে আল্লাহ তাকে শাস্তি দেবেন; আর আল্লাহ মহাপরাক্রশালী ও শাস্তিদাতা। (সূরা মায়েদা- ৯৫)
আরাফার ময়দানে অবস্থান করা :
ثُمَّ اَفِيْضُوْا مِنْ حَيْثُ اَفَاضَ النَّاسُ
অতঃপর যেখান হতে অন্য সকল মানুষ প্রত্যাবর্তন করে সেখান (আরাফা) হতে তোমরাও প্রত্যাবর্তন করো। (সূরা বাক্বারা- ১৯৯)
মুযদালিফায় অবস্থান করা :
فَاِذَاۤ اَفَضْتُمْ مِّنْ عَرَفَاتٍ فَاذْكُرُوا اللهَ عِنْدَ الْمَشْعَرِ الْحَرَامِ وَاذْكُرُوْهُ كَمَا هَدَاكُمْۚ وَاِنْ كُنْتُمْ مِّنْ قَبْلِهٖ لَمِنَ الضَّآلِّيْنَ
অতঃপর যখন তোমরা আরাফাত হতে ফিরে আস, তখন মাশ‘আরে হারাম তথা পবিত্র স্মৃতিস্থানের নিকট আল্লাহকে স্মরণ করো। আর তিনি তোমাদেরকে যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন সেভাবে তাঁকে স্মরণ করো, যদিও তোমরা ইতোপূর্বে বিভ্রান্তদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে। (সূরা বাক্বারা- ১৯৮)
মিনায় অবস্থান করা :
وَاذْكُرُوا اللهَ فِۤيْ اَيَّامٍ مَّعْدُوْدَاتٍؕ فَمَنْ تَعَجَّلَ فِيْ يَوْمَيْنِ فَلَاۤ اِثْمَ عَلَيْهِۚ وَمَنْ تَاَخَّرَ فَلَاۤ اِثْمَ عَلَيْهِ لِمَنِ اتَّقٰىؕ وَاتَّقُوا اللهَ وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّكُمْ اِلَيْهِ تُحْشَرُوْنَ
আর তোমরা নির্ধারিত দিনসমূহে আল্লাহকে স্মরণ করো। সুতরাং কেউ যদি দু’দিনের মধ্যে (মক্কায় ফিরে যেতে) তাড়াতাড়ি করে, তবে তার জন্য কোন পাপ নেই। আবার কেউ যদি বিলম্ব করে, তবে তার কোন গোনাহ হবে না; এটা (এ সুযোগটা) তাক্বওয়া অবলম্বনকারীদের জন্য নির্ধারিত। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং জেনে রেখো, তোমরা সকলেই তাঁর দিকে সমবেত হবে। (সূরা বাক্বারা- ২০৩)
কা‘বাঘর তাওয়াফ করা :
وَلْيَطَّوَّفُوْا بِالْبَيْتِ الْعَتِيْقِ
তোমরা প্রাচীন গৃহের তাওয়াফ করো। (সূরা হজ্জ- ২৯)
সাফা-মারওয়ায় দৌড়ানো :
اِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَآئِرِ اللهِۚ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ اَوِ اعْتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ اَنْ يَّطَّوَّفَ بِهِمَاؕ وَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْرًا فَاِنَّ اللهَ شَاكِرٌ عَلِيْمٌ
নিশ্চয় ‘সাফা’ ও ‘মারওয়া’ আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। অতএব যে ব্যক্তি এ ঘরে হজ্জ অথবা ওমরা করার জন্য আগমন করবে, তার জন্য এ দু’টির মধ্যে দৌড়ানোতে দোষের কিছু নেই। আর যদি কেউ স্বেচ্ছায় সৎকর্ম করে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ (তাদের ব্যাপারে) কৃতজ্ঞ ও সর্বজ্ঞাত। (সূরা বাক্বারা- ১৫৮)
হজ্জের সাথে ওমরা করলে যা করতে হবে :
فَمَنْ تَمَتَّعَ بِالْعُمْرَةِ اِلَى الْحَجِّ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنَ الْهَدْيِۚ فَمَنْ لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلَاثَةِ اَيَّامٍ فِى الْحَجِّ وَسَبْعَةٍ اِذَا رَجَعْتُمْؕ تِلْكَ عَشَرَةٌ كَامِلَةٌؕ ذٰلِكَ لِمَنْ لَّمْ يَكُنْ اَهْلُهٗ حَاضِرِى الْمَسْجِدِ الْحَرَامِؕ وَاتَّقُوا اللهَ وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
অতঃপর কেউ যদি হজ্জের সাথে ওমরাও করতে চায়, তবে সে যা সহজপ্রাপ্য তাই কুরবানী করবে। কিন্তু কেউ যদি তা না পায়, তবে হজ্জের সময় তিন দিন এবং যখন তোমরা ফিরে আস তখন সাত দিন- এই পূর্ণ দশদিন রোযা রাখবে। এটা ঐ ব্যক্তির জন্য যে মাসজিদে হারামের বাসিন্দা নয়। আল্লাহকে ভয় করো ও জেনে রেখো, আল্লাহ কঠিন শাস্তিদাতা। (সূরা বাক্বারা- ১৯৬)
মাথামুন্ডন করা বা ছাটানো :
لَقَدْ صَدَقَ اللهُ رَسُوْلَهُ الرُّؤْيَا بِالْحَقِّۚ لَتَدْخُلُنَّ الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ اِنْ شَآءَ اللهُ اٰمِنِيْنَ مُحَلِّقِيْنَ رُءُوْسَكُمْ وَمُقَصِّرِيْنَ لَا تَخَافُوْنَ
বাস্তবিকই আল্লাহ তাঁর রাসূলকে সঠিক স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, যা ছিল সস্পূর্ণ সত্য। ইন্শাআল্লাহ তোমরা মাসজিদুল হারামে সম্পূর্ণ নিরাপদে প্রবেশ করবে- (কেউ কেউ) মাথা কামাবে, (কেউ কেউ) চুল কাঁটবে এবং তোমাদের কোন ভয় থাকবে না। (সূরা ফাতহ- ২৭)
বাধাপ্রাপ্ত হলে কুরবানী করে নেবে :
وَاَتِمُّوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلّٰهِؕ فَاِنْ اُحْصِرْتُمْ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنَ الْهَدْيِ
তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ ও ওমরা সম্পূর্ণ করো; কিন্তু তোমরা যদি বাধাপ্রাপ্ত হও, তবে যা সহজপ্রাপ্য হয় তাই কুরবানী করে নাও। (সূরা বাক্বারা- ১৯৬)
জন্তু কুরবানীর স্থানে পৌঁছার পর মাথামুন্ডন করবে:
وَلَا تَحْلِقُوْا رُءُوْسَكُمْ حَتّٰى يَبْلُغَ الْهَدْيُ مَحِلَّهٗؕ فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَّرِيْضًا اَوْ بِهٖۤ اَذًى مِّنْ رَّاْسِهٖ فَفِدْيَةٌ مِّنْ صِيَامٍ اَوْ صَدَقَةٍ اَوْ نُسُكٍ
কুরবানীর জন্তুগুলো যথাস্থানে না পৌঁছা পর্যন্ত তোমাদের মাথামুন্ডন করো না; কিন্তু তোমাদের মধ্যে কেউ যদি রোগাক্রান্ত হয় অথবা মাথায় অসুখ থাকে, তবে সে রোযা রাখবে কিংবা সাদাকা করবে অথবা (কুরবানী দ্বারা) ফিদইয়া দেবে। (সূরা বাক্বারা- ১৯৬)
ওমরার শাব্দিক অর্থ হলো, যিয়ারত বা পরিদর্শন করা। অর্থাৎ ইবাদাত পালনের উদ্দেশ্যে বাইতুল্লাহ পরিদর্শন করা। পরিভাষায় ওমরা হলো, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর শেখানো পদ্ধতি অনুযায়ী কা‘বাঘর তাওয়াফ করা, সাফা-মারওয়ায় দৌড়ানো এবং মাথামুন্ডন করা বা ছাটানো।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী (সা:) বলেন, ‘‘একবার ওমরা করার পর আবার ওমরা করলে তা দুই ওমরার মধ্যবর্তী গুনাহসমূহের কাফ্ফারাহ হয়ে যায়। আর হজ্জে মাবরুরের বিনিময় হচ্ছে জান্নাত।’’ (সহীহ বুখারী, হা/১৬৮৩)
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ওমরা করার নির্দেশ :
وَاَتِمُّوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلّٰهِ
তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ ও ওমরা পালন করো। (সূরা বাক্বারা- ১৯৬)
ওমরার বিধান :
اِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَآئِرِ اللهِۚ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ اَوِ اعْتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ اَنْ يَّطَّوَّفَ بِهِمَاؕ وَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْرًا فَاِنَّ اللهَ شَاكِرٌ عَلِيْمٌ
নিশ্চয় ‘সাফা’ ও ‘মারওয়া’ আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। অতএব যে ব্যক্তি এই ঘরে হজ্জ অথবা ওমরা করার জন্য আগমন করবে, তার জন্য এ দু’টিকে তাওয়াফ করাতে দোষের কিছু নেই। আর যদি কেউ স্বেচ্ছায় সৎকর্ম করে, তবে আল্লাহ (তাদের ব্যাপারে) কৃতজ্ঞ ও সর্বজ্ঞ। (সূরা বাক্বারা- ১৫৮)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী (সা:) বলেন, ‘‘একবার ওমরা করার পর আবার ওমরা করলে তা দুই ওমরার মধ্যবর্তী গুনাহসমূহের কাফ্ফারাহ হয়ে যায়। আর হজ্জে মাবরুরের বিনিময় হচ্ছে জান্নাত।’’ (সহীহ বুখারী, হা/১৬৮৩)
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ওমরা করার নির্দেশ :
وَاَتِمُّوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلّٰهِ
তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ ও ওমরা পালন করো। (সূরা বাক্বারা- ১৯৬)
ওমরার বিধান :
اِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَآئِرِ اللهِۚ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ اَوِ اعْتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ اَنْ يَّطَّوَّفَ بِهِمَاؕ وَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْرًا فَاِنَّ اللهَ شَاكِرٌ عَلِيْمٌ
নিশ্চয় ‘সাফা’ ও ‘মারওয়া’ আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। অতএব যে ব্যক্তি এই ঘরে হজ্জ অথবা ওমরা করার জন্য আগমন করবে, তার জন্য এ দু’টিকে তাওয়াফ করাতে দোষের কিছু নেই। আর যদি কেউ স্বেচ্ছায় সৎকর্ম করে, তবে আল্লাহ (তাদের ব্যাপারে) কৃতজ্ঞ ও সর্বজ্ঞ। (সূরা বাক্বারা- ১৫৮)
স্বপ্নের মাধ্যমে ছেলেকে কুরবানী করার নির্দেশ পেলেন :
فَلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ السَّعْيَ قَالَ يَا بُنَيَّ اِنِّۤيْ اَرٰى فِى الْمَنَامِ اَنِّۤيْ اَذْبَحُكَ فَانْظُرْ مَاذَا تَرٰى
অতঃপর সে (ইসমাঈল আঃ) যখন তার পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হলো তখন ইবরাহীম বললেন, হে বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে যবেহ করছি; অতএব তোমার অভিমত কী? (সূরা সাফ্ফাত- ১০২)
ছেলে এতে রাজী হয়ে গেলেন :
قَالَ يَاۤ اَبَتِ افْعَلْ مَا تُؤْمَرُؗ سَتَجِدُنِۤيْ اِنْ شَآءَ اللهُ مِنَ الصَّابِرِيْنَ
সে বলল, হে আমার বাবা! আপনাকে যে আদেশ করা হয়েছে তা পূর্ণ করুন। ইন্শাআল্লাহ আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্তই পাবেন। (সূরা সাফ্ফাত- ১০২)
ইবরাহীম (আঃ) ছেলেকে কুরবানী করতে প্রস্তুত হলেন :
فَلَمَّاۤ اَسْلَمَا وَتَلَّهٗ لِلْجَبِيْنِ ‐ وَنَادَيْنَاهُ اَنْ يَّاۤ اِبْرَاهِيْمُ ‐ قَدْ صَدَّقْتَ الرُّؤْيَاۚ اِنَّا كَذٰلِكَ نَجْزِى الْمُحْسِنِيْنَ
অতঃপর যখন তারা উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করলেন এবং পিতা পুত্রকে কাঁত করে শোয়ালেন। তখন আমি তাকে ডেকে বললাম, হে ইবরাহীম! তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে প্রমাণ করে দেখালে। এভাবেই আমি খাঁটি বান্দাদেরকে পুরস্কার দিয়ে থাকি। (সূরা সাফ্ফাত, ১০৩-১০৫)
এটা ছিল ইবরাহীম (আঃ) এর উপর একটি পরীক্ষা :
اِنَّ هٰذَا لَهُوَ الْبَلَآءُ الْمُبِيْنُ
নিশ্চয় এটা ছিল একটি সুস্পষ্ট পরীক্ষা। (সূরা সাফ্ফাত- ১০৬)
ব্যাখ্যা : যখন তারা দু’জন আনুগত্যের শির নত করে দিলেন এবং ইবরাহীম (আঃ) তার পুত্রকে শুইয়ে দিলেন, তখন আল্লাহ আওয়াজ দিলেন, তুমি স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করেছ। কাজেই এখন তোমার সন্তানের প্রাণ বের করে নেয়া আমার লক্ষ্য নয়। আসল উদ্দেশ্য যা ছিল তা তোমার উদ্যোগ ও প্রস্তুতিতেই সফল হয়ে গেছে। যারা সৎকর্মের পথ অবলম্বন করে তাদেরকে আমি অযথা কষ্টের মধ্যে ফেলার এবং দুঃখের মুখোমুখি করার জন্য পরীক্ষার সম্মুখীন করি না। বরং তাদের উন্নত গুণাবলি বিকশিত করার এবং তাদেরকে উচ্চমর্যাদা দান করার জন্যই তাদেরকে পরীক্ষার মুখোমুখি করি। তারপর পরীক্ষার খাতিরে তাদেরকে যে সংকটে নিক্ষেপ করি তা থেকে নিরাপদে উদ্ধারও করি। পুত্রের কুরবানীর জন্য তোমার উদ্যোগ ও প্রস্তুতিই তোমাকে এমন মর্যাদা দানের জন্য যথেষ্ট হয়ে গেছে, যা আমার সস্তুষ্টি লাভের জন্য যথেষ্ট। এভাবে আমি তোমার পুত্রের প্রাণও রক্ষা করলাম এবং তোমাকে এ উচ্চমর্যাদাও দান করলাম।
আল্লাহ তাকে অন্য একটি প্রাণী দিলেন :
وَفَدَيْنَاهُ بِذِبْحٍ عَظِيْمٍ
আর আমি তাকে মুক্ত করলাম এক মহান যবেহের বিনিময়ে। (সূরা সাফ্ফাত- ১০৭)
পরবর্তীদের জন্য এ কুরবানীর নিয়মটি চালু থাকল :
وَتَرَكْنَا عَلَيْهِ فِى الْاٰخِرِيْنَ
আর আমি তার জন্য এ বিষয়টি ভবিষ্যৎ বংশধরদের মধ্যে কায়েম রাখলাম। (সূরা সাফ্ফাত- ১০৮)
فَلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ السَّعْيَ قَالَ يَا بُنَيَّ اِنِّۤيْ اَرٰى فِى الْمَنَامِ اَنِّۤيْ اَذْبَحُكَ فَانْظُرْ مَاذَا تَرٰى
অতঃপর সে (ইসমাঈল আঃ) যখন তার পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হলো তখন ইবরাহীম বললেন, হে বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে যবেহ করছি; অতএব তোমার অভিমত কী? (সূরা সাফ্ফাত- ১০২)
ছেলে এতে রাজী হয়ে গেলেন :
قَالَ يَاۤ اَبَتِ افْعَلْ مَا تُؤْمَرُؗ سَتَجِدُنِۤيْ اِنْ شَآءَ اللهُ مِنَ الصَّابِرِيْنَ
সে বলল, হে আমার বাবা! আপনাকে যে আদেশ করা হয়েছে তা পূর্ণ করুন। ইন্শাআল্লাহ আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্তই পাবেন। (সূরা সাফ্ফাত- ১০২)
ইবরাহীম (আঃ) ছেলেকে কুরবানী করতে প্রস্তুত হলেন :
فَلَمَّاۤ اَسْلَمَا وَتَلَّهٗ لِلْجَبِيْنِ ‐ وَنَادَيْنَاهُ اَنْ يَّاۤ اِبْرَاهِيْمُ ‐ قَدْ صَدَّقْتَ الرُّؤْيَاۚ اِنَّا كَذٰلِكَ نَجْزِى الْمُحْسِنِيْنَ
অতঃপর যখন তারা উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করলেন এবং পিতা পুত্রকে কাঁত করে শোয়ালেন। তখন আমি তাকে ডেকে বললাম, হে ইবরাহীম! তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে প্রমাণ করে দেখালে। এভাবেই আমি খাঁটি বান্দাদেরকে পুরস্কার দিয়ে থাকি। (সূরা সাফ্ফাত, ১০৩-১০৫)
এটা ছিল ইবরাহীম (আঃ) এর উপর একটি পরীক্ষা :
اِنَّ هٰذَا لَهُوَ الْبَلَآءُ الْمُبِيْنُ
নিশ্চয় এটা ছিল একটি সুস্পষ্ট পরীক্ষা। (সূরা সাফ্ফাত- ১০৬)
ব্যাখ্যা : যখন তারা দু’জন আনুগত্যের শির নত করে দিলেন এবং ইবরাহীম (আঃ) তার পুত্রকে শুইয়ে দিলেন, তখন আল্লাহ আওয়াজ দিলেন, তুমি স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করেছ। কাজেই এখন তোমার সন্তানের প্রাণ বের করে নেয়া আমার লক্ষ্য নয়। আসল উদ্দেশ্য যা ছিল তা তোমার উদ্যোগ ও প্রস্তুতিতেই সফল হয়ে গেছে। যারা সৎকর্মের পথ অবলম্বন করে তাদেরকে আমি অযথা কষ্টের মধ্যে ফেলার এবং দুঃখের মুখোমুখি করার জন্য পরীক্ষার সম্মুখীন করি না। বরং তাদের উন্নত গুণাবলি বিকশিত করার এবং তাদেরকে উচ্চমর্যাদা দান করার জন্যই তাদেরকে পরীক্ষার মুখোমুখি করি। তারপর পরীক্ষার খাতিরে তাদেরকে যে সংকটে নিক্ষেপ করি তা থেকে নিরাপদে উদ্ধারও করি। পুত্রের কুরবানীর জন্য তোমার উদ্যোগ ও প্রস্তুতিই তোমাকে এমন মর্যাদা দানের জন্য যথেষ্ট হয়ে গেছে, যা আমার সস্তুষ্টি লাভের জন্য যথেষ্ট। এভাবে আমি তোমার পুত্রের প্রাণও রক্ষা করলাম এবং তোমাকে এ উচ্চমর্যাদাও দান করলাম।
আল্লাহ তাকে অন্য একটি প্রাণী দিলেন :
وَفَدَيْنَاهُ بِذِبْحٍ عَظِيْمٍ
আর আমি তাকে মুক্ত করলাম এক মহান যবেহের বিনিময়ে। (সূরা সাফ্ফাত- ১০৭)
পরবর্তীদের জন্য এ কুরবানীর নিয়মটি চালু থাকল :
وَتَرَكْنَا عَلَيْهِ فِى الْاٰخِرِيْنَ
আর আমি তার জন্য এ বিষয়টি ভবিষ্যৎ বংশধরদের মধ্যে কায়েম রাখলাম। (সূরা সাফ্ফাত- ১০৮)
কুরবানীর উদ্দেশ্য আল্লাহর কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা :
وَالْبُدْنَ جَعَلْنَاهَا لَكُمْ مِّنْ شَعَآئِرِ اللهِ لَكُمْ فِيْهَا خَيْرٌۗ فَاذْكُرُوا اسْمَ اللهِ عَلَيْهَا صَوَآفَّۚ فَاِذَا وَجَبَتْ جُنُوْبُهَا فَكُلُوْا مِنْهَا وَاَطْعِمُوا الْقَانِعَ وَالْمُعْتَرَّ ؕ كَذٰلِكَ سَخَّرْنَاهَا لَكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
আর আমি উষ্ট্রকে করেছি আল্লাহর নিদর্শনগুলোর অন্যতম, তোমাদের জন্য তাতে মঙ্গল রয়েছে। সুতরাং তোমরা সারিবদ্ধ হয়ে দন্ডায়মান অবস্থায় তাদের উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করো। অতঃপর যখন তারা কাত হয়ে পড়ে যায়, তখন তোমরা সেটা হতে আহার করো এবং ধৈর্যশীল ও সওয়ালকারী অভাবগ্রস্তদেরকেও আহার করাও; এভাবে আমি তাদেরকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছি, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা হজ্জ- ৩৬)
ব্যাখ্যা : মানুষ আল্লাহ প্রদত্ত যেসব জিনিস থেকে লাভবান হয়, তার মধ্য থেকে প্রত্যেকটিই আল্লাহর নামে কুরবানী করা উচিত। শুধুমাত্র নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য নয় বরং আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও মালিকানার স্বীকৃতি দেয়ার জন্যও। যাতে করে মানুষ মনে মনে ও কার্যত এ কথা স্বীকার করে নেয় যে, আল্লাহ আমাকে যা কিছু দিয়েছেন সবকিছুই মূলত তাঁরই মালিকানাধীন। সুতরাং বলা যায় যে, ঈমান ও ইসলাম হচ্ছে, আত্মত্যাগের নাম। সালাত ও রোযা হচ্ছে, দেহ ও তার শক্তিসমূহের কুরবানী। যাকাত হচ্ছে, আল্লাহ আমাদেরকে যেসব সম্পদ দিয়েছেন সেগুলোর কুরবানী। জিহাদ হচ্ছে, সময় এবং মানসিক ও শারীরিক যোগ্যতাসমূহের কুরবানী। আর আল্লাহর পথে যুদ্ধ করা হচ্ছে প্রাণের কুরবানী। এসব এক একটি নিয়ামতের কুরবানী এক একটি দানের জন্য কৃতজ্ঞতা। এভাবে পশু কুরবানী করার দায়িত্বও আমাদের উপর ন্যস্ত করা হয়েছে, যাতে আমরা আল্লাহর এ বিরাট নিয়ামতের জন্য তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই এবং তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নেই। কারণ তিনি তাঁর সৃষ্ট বহু প্রাণীকে আমাদের জন্য বশীভূত করে দিয়েছেন। আমরা তাদের পিঠে চড়ে দূর-দূরান্ত পথ অতিক্রম করি, তাদের সাহায্যে চাষাবাদ ও মাল পরিবহন করি, তাদের গোশত খাই, দুধ পান করি এবং তাদের চামড়া, পশম, রক্ত, হাড় ইত্যাদি প্রত্যেকটি জিনিস নানাভাবে ব্যবহার করি। এ চতুষ্পদ জমুতগুলোকে আমাদের জন্য অনুগত করে দিয়ে আল্লাহ আমাদের প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন, এ কুরবানী হচ্ছে সে বিরাট নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ।
আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করা :
لَنْ يَّنَالَ اللهَ لُحُوْمُهَا وَلَا دِمَآؤُهَا وَلٰكِنْ يَّنَالُهُ التَّقْوٰى مِنْكُمْؕ كَذٰلِكَ سَخَّرَهَا لَكُمْ لِتُكَبِّرُوا اللهَ عَلٰى مَا هَدَاكُمْ ؕ وَبَشِّرِ الْمُحْسِنِيْنَ
আল্লাহর নিকট তাদের গোশত এবং রক্ত (কোনকিছুই) পৌঁছায় না, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাক্বওয়া। এভাবে তিনি এদেরকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর। এজন্য যে, তিনি তোমাদেরকে পথপ্রদর্শন করেছেন; সুতরাং তুমি সৎকর্মপরায়ণদেরকে সুসংবাদ দাও। (সূরা হজ্জ- ৩৭)
ব্যাখ্যা : জাহেলী যুগে লোকেরা কুরবানীর জন্তুর রক্ত কা‘বাগৃহের দেয়ালে মুছে দেয়া মর্যাদার কাজ মনে করত এবং এতে আল্লাহ খুশি হন বলে ধারণা করত। অতঃপর মানুষ যখন ইসলাম গ্রহণ করল, তখন সেসব প্রথা বজায় রাখতে চাইলে তাদেরকে তা হতে বারণ করার উদ্দেশ্যে এ আয়াতটি নাযিল হয়।
আল্লাহর নিদর্শনের প্রতি সম্মান দেখানো :
وَمَنْ يُّعَظِّمْ شَعَآئِرَ اللهِ فَاِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوْبِ
যদি কেউ আল্লাহর নিদর্শনাবলিকে সম্মান করে, তবে এটা তো তার অন্তরের তাক্বওয়া মাত্র। (সূরা হজ্জ- ৩২)
ব্যাখ্যা : شَعَائِرُ اللهِ (শা‘আইরুল্লাহ) অর্থাৎ আল্লাহর চিহ্নসমূহ তথা আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের চিহ্নসমূহ। এটি দু’ধরনের হতে পারে- একটি হচ্ছে আল্লাহর ইবাদাতমূলক কর্ম তথা সালাত, রোযা, হজ্জ ইত্যাদি। অপরটি হচ্ছে আল্লাহকে স্মরণ হয় এমন স্মৃতিচিহ্ন তথা বাইতুল্লাহ বা কা‘বাঘর, সাফা-মারওয়া, কুরবানীর জন্য চিহ্নিত জন্তু, হজ্জের স্থানসমূহ ইত্যাদি। এ সম্মান প্রদর্শন হৃদয়ের অভ্যন্তরে লুকায়িত তাক্বওয়ার ফলেই সংঘটিত হয়। সুতরাং যদি কোন ব্যক্তি জেনে বুঝে আল্লাহর নিদর্শনসমূহের প্রতি কোন অমর্যাদা পোষণ করে, তাহলে এটা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, তার মনে আল্লাহর কোন ভয় নেই।
وَالْبُدْنَ جَعَلْنَاهَا لَكُمْ مِّنْ شَعَآئِرِ اللهِ لَكُمْ فِيْهَا خَيْرٌۗ فَاذْكُرُوا اسْمَ اللهِ عَلَيْهَا صَوَآفَّۚ فَاِذَا وَجَبَتْ جُنُوْبُهَا فَكُلُوْا مِنْهَا وَاَطْعِمُوا الْقَانِعَ وَالْمُعْتَرَّ ؕ كَذٰلِكَ سَخَّرْنَاهَا لَكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
আর আমি উষ্ট্রকে করেছি আল্লাহর নিদর্শনগুলোর অন্যতম, তোমাদের জন্য তাতে মঙ্গল রয়েছে। সুতরাং তোমরা সারিবদ্ধ হয়ে দন্ডায়মান অবস্থায় তাদের উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করো। অতঃপর যখন তারা কাত হয়ে পড়ে যায়, তখন তোমরা সেটা হতে আহার করো এবং ধৈর্যশীল ও সওয়ালকারী অভাবগ্রস্তদেরকেও আহার করাও; এভাবে আমি তাদেরকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছি, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা হজ্জ- ৩৬)
ব্যাখ্যা : মানুষ আল্লাহ প্রদত্ত যেসব জিনিস থেকে লাভবান হয়, তার মধ্য থেকে প্রত্যেকটিই আল্লাহর নামে কুরবানী করা উচিত। শুধুমাত্র নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য নয় বরং আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও মালিকানার স্বীকৃতি দেয়ার জন্যও। যাতে করে মানুষ মনে মনে ও কার্যত এ কথা স্বীকার করে নেয় যে, আল্লাহ আমাকে যা কিছু দিয়েছেন সবকিছুই মূলত তাঁরই মালিকানাধীন। সুতরাং বলা যায় যে, ঈমান ও ইসলাম হচ্ছে, আত্মত্যাগের নাম। সালাত ও রোযা হচ্ছে, দেহ ও তার শক্তিসমূহের কুরবানী। যাকাত হচ্ছে, আল্লাহ আমাদেরকে যেসব সম্পদ দিয়েছেন সেগুলোর কুরবানী। জিহাদ হচ্ছে, সময় এবং মানসিক ও শারীরিক যোগ্যতাসমূহের কুরবানী। আর আল্লাহর পথে যুদ্ধ করা হচ্ছে প্রাণের কুরবানী। এসব এক একটি নিয়ামতের কুরবানী এক একটি দানের জন্য কৃতজ্ঞতা। এভাবে পশু কুরবানী করার দায়িত্বও আমাদের উপর ন্যস্ত করা হয়েছে, যাতে আমরা আল্লাহর এ বিরাট নিয়ামতের জন্য তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই এবং তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নেই। কারণ তিনি তাঁর সৃষ্ট বহু প্রাণীকে আমাদের জন্য বশীভূত করে দিয়েছেন। আমরা তাদের পিঠে চড়ে দূর-দূরান্ত পথ অতিক্রম করি, তাদের সাহায্যে চাষাবাদ ও মাল পরিবহন করি, তাদের গোশত খাই, দুধ পান করি এবং তাদের চামড়া, পশম, রক্ত, হাড় ইত্যাদি প্রত্যেকটি জিনিস নানাভাবে ব্যবহার করি। এ চতুষ্পদ জমুতগুলোকে আমাদের জন্য অনুগত করে দিয়ে আল্লাহ আমাদের প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন, এ কুরবানী হচ্ছে সে বিরাট নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ।
আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করা :
لَنْ يَّنَالَ اللهَ لُحُوْمُهَا وَلَا دِمَآؤُهَا وَلٰكِنْ يَّنَالُهُ التَّقْوٰى مِنْكُمْؕ كَذٰلِكَ سَخَّرَهَا لَكُمْ لِتُكَبِّرُوا اللهَ عَلٰى مَا هَدَاكُمْ ؕ وَبَشِّرِ الْمُحْسِنِيْنَ
আল্লাহর নিকট তাদের গোশত এবং রক্ত (কোনকিছুই) পৌঁছায় না, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাক্বওয়া। এভাবে তিনি এদেরকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর। এজন্য যে, তিনি তোমাদেরকে পথপ্রদর্শন করেছেন; সুতরাং তুমি সৎকর্মপরায়ণদেরকে সুসংবাদ দাও। (সূরা হজ্জ- ৩৭)
ব্যাখ্যা : জাহেলী যুগে লোকেরা কুরবানীর জন্তুর রক্ত কা‘বাগৃহের দেয়ালে মুছে দেয়া মর্যাদার কাজ মনে করত এবং এতে আল্লাহ খুশি হন বলে ধারণা করত। অতঃপর মানুষ যখন ইসলাম গ্রহণ করল, তখন সেসব প্রথা বজায় রাখতে চাইলে তাদেরকে তা হতে বারণ করার উদ্দেশ্যে এ আয়াতটি নাযিল হয়।
আল্লাহর নিদর্শনের প্রতি সম্মান দেখানো :
وَمَنْ يُّعَظِّمْ شَعَآئِرَ اللهِ فَاِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوْبِ
যদি কেউ আল্লাহর নিদর্শনাবলিকে সম্মান করে, তবে এটা তো তার অন্তরের তাক্বওয়া মাত্র। (সূরা হজ্জ- ৩২)
ব্যাখ্যা : شَعَائِرُ اللهِ (শা‘আইরুল্লাহ) অর্থাৎ আল্লাহর চিহ্নসমূহ তথা আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের চিহ্নসমূহ। এটি দু’ধরনের হতে পারে- একটি হচ্ছে আল্লাহর ইবাদাতমূলক কর্ম তথা সালাত, রোযা, হজ্জ ইত্যাদি। অপরটি হচ্ছে আল্লাহকে স্মরণ হয় এমন স্মৃতিচিহ্ন তথা বাইতুল্লাহ বা কা‘বাঘর, সাফা-মারওয়া, কুরবানীর জন্য চিহ্নিত জন্তু, হজ্জের স্থানসমূহ ইত্যাদি। এ সম্মান প্রদর্শন হৃদয়ের অভ্যন্তরে লুকায়িত তাক্বওয়ার ফলেই সংঘটিত হয়। সুতরাং যদি কোন ব্যক্তি জেনে বুঝে আল্লাহর নিদর্শনসমূহের প্রতি কোন অমর্যাদা পোষণ করে, তাহলে এটা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, তার মনে আল্লাহর কোন ভয় নেই।
নির্দিষ্ট দিনে কুরবানী করতে হবে :
وَيَذْكُرُوا اسْمَ اللهِ فِۤيْ اَيَّامٍ مَّعْلُوْمَاتٍ عَلٰى مَا رَزَقَهُمْ مِّنْ ۢبَهِيْمَةِ الْاَنْعَامِ
তিনি তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু হতে রিযিক হিসেবে যা দান করেছেন, তার উপর নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। (সূরা হজ্জ- ২৮)
হাজীদের জন্য কা‘বার সীমানায় কুরবানী করতে হবে :
ثُمَّ مَحِلُّهَاۤ اِلَى الْبَيْتِ الْعَتِيْقِ
অতঃপর তাদের কুরবানীর স্থান (নির্ধারণ করা হলো) প্রাচীন গৃহের নিকট। (সূরা হজ্জ- ৩৩)
যবেহ করার আগে পশু থেকে উপকার নেয়া যায় :
لَكُمْ فِيْهَا مَنَافِعُ اِلٰى اَجَلٍ مُّسَمًّى
তোমাদের জন্য তাতে নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত উপকার রয়েছে। (সূরা হজ্জ- ৩৩)
উটকে দাঁড়ানো অবস্থায় যবেহ করতে হয় :
وَالْبُدْنَ جَعَلْنَاهَا لَكُمْ مِّنْ شَعَآئِرِ اللهِ لَكُمْ فِيْهَا خَيْرٌۗ فَاذْكُرُوا اسْمَ اللهِ عَلَيْهَا صَوَآفَّ
আমি তোমাদের জন্য উটকে বানিয়েছি আল্লাহর নিদর্শন, তাতে রয়েছে তোমাদের জন্য অনেক কল্যাণ। সুতরাং তোমরা সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান অবস্থায় তাদের উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করো। (সূরা হজ্জ- ৩৬)
ব্যাখ্যা : উটকে দাঁড় করিয়ে যবেহ করা হয়। তার একটি পা বেঁধে দেয়া হয় তারপর কণ্ঠনালীতে সজোরে আঘাত করা হয়। সেখান থেকে রক্তের ধারা প্রবাহিত হতে থাকে। তারপর প্রচুর রক্তক্ষরণ হলে উট মাটিতে পড়ে যায়। صَوَافَّ (সওয়াফ) বা দাঁড় করিয়ে রাখা বলতে এটিই বুঝানো হয়েছে। তারা পড়ে গিয়ে স্থির হয়ে যায় অর্থাৎ প্রাণবায়ু পুরোপুরি বের হয়ে যায়।
আল্লাহর নাম নিয়ে পশু যবেহ করতে হয় :
فَكُلُوْا مِمَّا ذُكِرَ اسْمُ اللّٰهِ عَلَيْهِ اِنْ كُنْتُمْ بِاٰيَاتِهٖ مُؤْمِنِيْنَ
অতএব যাতে আল্লাহর নাম নেয়া হয় তা হতে আহার করো, যদি তোমরা তাঁর আয়াতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে থাক। (সূরা আন‘আম- ১১৮)
وَلَا تَاْكُلُوْا مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللهِ عَلَيْهِ وَاِنَّهٗ لَفِسْقٌ
আর যাতে আল্লাহর নাম নেয়া হয় না, তোমরা তা হতে আহার করো না। কেননা নিশ্চয় এটা ফাসিকী কাজ। (সূরা আন‘আম- ১২১)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর নাম উচ্চারণ না করে যবেহ করলে কোন পশু হালাল হয় না। ‘‘তাদের উপর আল্লাহর নাম নাও’’ বলার অর্থ হচ্ছে, যবেহ করার শুরুতে আল্লাহর নাম নাও, তারপর যবেহ করো। এ থেকে এ কথা প্রমাণিত হয় যে, ইসলামী শরীয়াতে আল্লাহর নাম না নিয়ে পশু যবেহ করার কোন অবকাশ নেই। যবেহ করার সময় بِسْمِ اللهِ اَللهُ اَكْبَرُ বলার পদ্ধতি এখান থেকেই গৃহীত হয়েছে।
কুরবানীর গোশত নিজে খাবে এবং গরীবদেরকে খাওয়াবে :
فَكُلُوْا مِنْهَا وَاَطْعِمُوا الْبَآئِسَ الْفَقِيْرَ
তোমরা তা হতে আহার করো এবং দুঃখ-দুর্দশাগ্রস্ত ও অভাবগ্রস্তকেও আহার করাও। (সূরা হজ্জ- ২৮)
আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে কুরবানী করতে হবে :
لَنْ يَّنَالَ اللهَ لُحُوْمُهَا وَلَا دِمَآؤُهَا وَلٰكِنْ يَّنَالُهُ التَّقْوٰى مِنْكُمْ
আল্লাহর নিকট তাদের গোশত ও রক্ত কিছুই পৌঁছায় না, বরং তোমাদের তাক্বওয়াটাই পৌঁছায়। (সূরা হজ্জ- ৩৭)
ব্যাখ্যা : জাহেলী যুগে আরববাসীরা দেব-দেবী ও মূর্তির জন্য যেসব পশু কুরবানী দিত সেসব পশুর গোশত কা‘বাঘরের সামনে এনে রাখত এবং এর দেয়ালে রক্ত লেপটে দিত। অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আল্লাহর সামনে যে আসল জিনিস পেশ করা হয় তা পশুর গোশত ও রক্ত নয় বরং তোমাদের তাক্বওয়া। যদি তোমরা নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের প্রবণতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে খালিস নিয়তে একমাত্র আল্লাহর জন্য কুরবানী কর, তাহলে এ নিয়ত ও আন্তরিকতা তাঁর কাছে পৌঁছে যাবে এবং এর রক্ত ও গোশত এখানেই থেকে যাবে। সুতরাং অন্তরে তাঁর বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নাও এবং কাজে তার প্রকাশ ঘটাও। এগুলো যাঁর মালিকানাধীন এবং যিনি এগুলোর উপর তোমাদের কর্তৃত্ব দান করেছেন, অন্তরে ও কাজে-কর্মেও তাঁর মালিকানার স্বীকৃতি দাও।
আল্লাহ পরহেযগারদের কুরবানী কবুল করেন :
وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَاَ ابْنَيْ اٰدَمَ بِالْحَقِّۘ اِذْ قَرَّبَا قُرْبَانًا فَتُقُبِّلَ مِنْ اَحَدِهِمَا وَلَمْ يُتَقَبَّلْ مِنَ الْاٰخَرِؕ قَالَ لَاَقْتُلَنَّكَؕ قَالَ اِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللهُ مِنَ الْمُتَّقِيْنَ
তুমি তাদেরকে আদমের দু’পুত্রের বিবরণ সঠিকভাবে বর্ণনা করো। যখন তারা কুরবানী করেছিল তখন তাদের একজনের কুরবানী কবুল করা হয়েছিল এবং অপরজনের কুরবানী কবুল করা হয়নি। সে বলল, অবশ্যই আমি তোমাকে হত্যা করব। অপরজন বলল, আল্লাহ একমাত্র পরহেযগারদের কুরবানীই কবুল করে থাকেন। (সূরা মায়েদা- ২৭)
وَيَذْكُرُوا اسْمَ اللهِ فِۤيْ اَيَّامٍ مَّعْلُوْمَاتٍ عَلٰى مَا رَزَقَهُمْ مِّنْ ۢبَهِيْمَةِ الْاَنْعَامِ
তিনি তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু হতে রিযিক হিসেবে যা দান করেছেন, তার উপর নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। (সূরা হজ্জ- ২৮)
হাজীদের জন্য কা‘বার সীমানায় কুরবানী করতে হবে :
ثُمَّ مَحِلُّهَاۤ اِلَى الْبَيْتِ الْعَتِيْقِ
অতঃপর তাদের কুরবানীর স্থান (নির্ধারণ করা হলো) প্রাচীন গৃহের নিকট। (সূরা হজ্জ- ৩৩)
যবেহ করার আগে পশু থেকে উপকার নেয়া যায় :
لَكُمْ فِيْهَا مَنَافِعُ اِلٰى اَجَلٍ مُّسَمًّى
তোমাদের জন্য তাতে নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত উপকার রয়েছে। (সূরা হজ্জ- ৩৩)
উটকে দাঁড়ানো অবস্থায় যবেহ করতে হয় :
وَالْبُدْنَ جَعَلْنَاهَا لَكُمْ مِّنْ شَعَآئِرِ اللهِ لَكُمْ فِيْهَا خَيْرٌۗ فَاذْكُرُوا اسْمَ اللهِ عَلَيْهَا صَوَآفَّ
আমি তোমাদের জন্য উটকে বানিয়েছি আল্লাহর নিদর্শন, তাতে রয়েছে তোমাদের জন্য অনেক কল্যাণ। সুতরাং তোমরা সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান অবস্থায় তাদের উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করো। (সূরা হজ্জ- ৩৬)
ব্যাখ্যা : উটকে দাঁড় করিয়ে যবেহ করা হয়। তার একটি পা বেঁধে দেয়া হয় তারপর কণ্ঠনালীতে সজোরে আঘাত করা হয়। সেখান থেকে রক্তের ধারা প্রবাহিত হতে থাকে। তারপর প্রচুর রক্তক্ষরণ হলে উট মাটিতে পড়ে যায়। صَوَافَّ (সওয়াফ) বা দাঁড় করিয়ে রাখা বলতে এটিই বুঝানো হয়েছে। তারা পড়ে গিয়ে স্থির হয়ে যায় অর্থাৎ প্রাণবায়ু পুরোপুরি বের হয়ে যায়।
আল্লাহর নাম নিয়ে পশু যবেহ করতে হয় :
فَكُلُوْا مِمَّا ذُكِرَ اسْمُ اللّٰهِ عَلَيْهِ اِنْ كُنْتُمْ بِاٰيَاتِهٖ مُؤْمِنِيْنَ
অতএব যাতে আল্লাহর নাম নেয়া হয় তা হতে আহার করো, যদি তোমরা তাঁর আয়াতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে থাক। (সূরা আন‘আম- ১১৮)
وَلَا تَاْكُلُوْا مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللهِ عَلَيْهِ وَاِنَّهٗ لَفِسْقٌ
আর যাতে আল্লাহর নাম নেয়া হয় না, তোমরা তা হতে আহার করো না। কেননা নিশ্চয় এটা ফাসিকী কাজ। (সূরা আন‘আম- ১২১)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর নাম উচ্চারণ না করে যবেহ করলে কোন পশু হালাল হয় না। ‘‘তাদের উপর আল্লাহর নাম নাও’’ বলার অর্থ হচ্ছে, যবেহ করার শুরুতে আল্লাহর নাম নাও, তারপর যবেহ করো। এ থেকে এ কথা প্রমাণিত হয় যে, ইসলামী শরীয়াতে আল্লাহর নাম না নিয়ে পশু যবেহ করার কোন অবকাশ নেই। যবেহ করার সময় بِسْمِ اللهِ اَللهُ اَكْبَرُ বলার পদ্ধতি এখান থেকেই গৃহীত হয়েছে।
কুরবানীর গোশত নিজে খাবে এবং গরীবদেরকে খাওয়াবে :
فَكُلُوْا مِنْهَا وَاَطْعِمُوا الْبَآئِسَ الْفَقِيْرَ
তোমরা তা হতে আহার করো এবং দুঃখ-দুর্দশাগ্রস্ত ও অভাবগ্রস্তকেও আহার করাও। (সূরা হজ্জ- ২৮)
আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে কুরবানী করতে হবে :
لَنْ يَّنَالَ اللهَ لُحُوْمُهَا وَلَا دِمَآؤُهَا وَلٰكِنْ يَّنَالُهُ التَّقْوٰى مِنْكُمْ
আল্লাহর নিকট তাদের গোশত ও রক্ত কিছুই পৌঁছায় না, বরং তোমাদের তাক্বওয়াটাই পৌঁছায়। (সূরা হজ্জ- ৩৭)
ব্যাখ্যা : জাহেলী যুগে আরববাসীরা দেব-দেবী ও মূর্তির জন্য যেসব পশু কুরবানী দিত সেসব পশুর গোশত কা‘বাঘরের সামনে এনে রাখত এবং এর দেয়ালে রক্ত লেপটে দিত। অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আল্লাহর সামনে যে আসল জিনিস পেশ করা হয় তা পশুর গোশত ও রক্ত নয় বরং তোমাদের তাক্বওয়া। যদি তোমরা নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের প্রবণতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে খালিস নিয়তে একমাত্র আল্লাহর জন্য কুরবানী কর, তাহলে এ নিয়ত ও আন্তরিকতা তাঁর কাছে পৌঁছে যাবে এবং এর রক্ত ও গোশত এখানেই থেকে যাবে। সুতরাং অন্তরে তাঁর বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নাও এবং কাজে তার প্রকাশ ঘটাও। এগুলো যাঁর মালিকানাধীন এবং যিনি এগুলোর উপর তোমাদের কর্তৃত্ব দান করেছেন, অন্তরে ও কাজে-কর্মেও তাঁর মালিকানার স্বীকৃতি দাও।
আল্লাহ পরহেযগারদের কুরবানী কবুল করেন :
وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَاَ ابْنَيْ اٰدَمَ بِالْحَقِّۘ اِذْ قَرَّبَا قُرْبَانًا فَتُقُبِّلَ مِنْ اَحَدِهِمَا وَلَمْ يُتَقَبَّلْ مِنَ الْاٰخَرِؕ قَالَ لَاَقْتُلَنَّكَؕ قَالَ اِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللهُ مِنَ الْمُتَّقِيْنَ
তুমি তাদেরকে আদমের দু’পুত্রের বিবরণ সঠিকভাবে বর্ণনা করো। যখন তারা কুরবানী করেছিল তখন তাদের একজনের কুরবানী কবুল করা হয়েছিল এবং অপরজনের কুরবানী কবুল করা হয়নি। সে বলল, অবশ্যই আমি তোমাকে হত্যা করব। অপরজন বলল, আল্লাহ একমাত্র পরহেযগারদের কুরবানীই কবুল করে থাকেন। (সূরা মায়েদা- ২৭)
হিজরত শব্দের শাব্দিক অর্থ ত্যাগ করা। পারিভাষিক অর্থে কোন স্থানে বসবাস করে আল্লাহর বিধান পালন করা সম্ভব না হলে ঐ স্থান ছেড়ে অনুকূল স্থানে চলে যাওয়াকে হিজরত বলে। আল্লাহর পৃথিবী সংকীর্ণ নয়। যদি কখনো জাতি ও দেশ প্রেমের দাবী এবং আল্লাহর দাসত্ব ও আনুগত্যের দাবীর মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে, তাহলে সেটিই হবে ঈমানের পরীক্ষার সময়। এমতাবস্থায় যে সত্যিকার মুমিন হবে, সে আল্লাহর ইবাদাত করবে এবং দেশ ও জাতিকে পরিত্যাগ করবে। আর যে মিথ্যা ঈমানের দাবীদার হবে, সে ঈমান পরিত্যাগ করবে এবং দেশ ও জাতিকে আঁকড়ে ধরবে। একজন সত্যিকার ঈমানদার ব্যক্তির কাছে আল্লাহর ইবাদাতই হলো সবচেয়ে প্রিয়। দুনিয়ার সবকিছুকে কুরবানী দিতে হলেও সে প্রস্তুত থাকবে; কিন্তু তার দ্বীনকে নষ্ট করবে না।
আল্লাহর জমিন অনেক প্রশস্ত :
وَاَرْضُ اللهِ وَاسِعَةٌ ‐ اِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُوْنَ اَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ
আল্লাহর জমিন প্রশস্ত; নিশ্চয় ধৈর্যশীলদেরকে অগণিত পুরস্কার দেয়া হবে। (সূরা যুমার- ১০)
يَا عِبَادِيَ الَّذِيْنَ اٰ مَنُوْاۤ اِنَّ اَرْضِيْ وَاسِعَةٌ فَاِيَّايَ فَاعْبُدُوْنِ
হে আমার মুমিন বান্দাগণ! নিশ্চয় আমার জমিন প্রশস্ত; সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদাত করো। (সূরা আনকাবূত- ৫৬)
প্রয়োজন হলে অবশ্যই হিজরত করতে হবে :
اِنَّ الَّذِيْنَ تَوَفَّاهُمُ الْمَلَآئِكَةُ ظَالِمِيْۤ اَنْفُسِهِمْ قَالُوْا فِيْمَ كُنْتُمْؕ قَالُوْا كُنَّا مُسْتَضْعَفِيْنَ فِى الْاَرْضِؕ قَالُوْاۤ اَلَمْ تَكُنْ اَرْضُ اللهِ وَاسِعَةً فَتُهَاجِرُوْا فِيْهَاؕ فَاُولٰٓئِكَ مَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ ؕ وَسَآءَتْ مَصِيْرًا
যারা নিজেদের উপর যুলুম করে ফেরেশতাগণ তাদের প্রাণ গ্রহণের সময় বলে, তোমরা কী অবস্থায় ছিলে? তারা বলে, দুনিয়াতে আমরা অসহায় অবস্থায় ছিলাম। ফেরেশতাগণ বলে, আল্লাহর জমিন কি এমন প্রশস্ত ছিল না, যেখানে তোমরা হিজরত করতে পারতে? এদের আবাসস্থল জাহান্নাম, আর তা কতই না মন্দ আবাস! (সূরা নিসা- ৯৭)
ব্যাখ্যা : এখানে এমন লোকদের কথা বলা হয়েছে, যারা ইসলাম গ্রহণ করার পরও কোন প্রকার অক্ষমতা ছাড়াই কাফির গোত্রের সাথে অবস্থান করছিল। তারা আংশিক মুসলিম ও আংশিক কাফির অবস্থায় জীবন-যাপন করেই সন্তুষ্ট ছিল। অথচ ইতোমধ্যে একটি দারুল ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছিল। সেখানে হিজরত করে নিজেদের দ্বীন ও আকীদা-বিশ্বাস অনুযায়ী ইসলামী জীবন-যাপন করা তাদের পক্ষে সম্ভবপর হয়ে উঠেছিল। আর এটিই ছিল নিজেদের উপর তাদের যুলুম। কেননা পূর্ণাঙ্গ ইসলামী জীবন-যাপনের মুকাবিলায় এই আধা কুফরী ও আধা ইসলামী জীবনে যে জিনিসটি তাদেরকে সন্তুষ্ট ও নিশ্চিন্ত করে তুলেছিল, সেটি যথার্থ কোন অক্ষমতা ছিল না। বরং সেটি ছিল নিজেদের পরিবার, সহায়-সম্পত্তি ও পার্থিব স্বার্থপ্রীতি। দ্বীনের উপর তারা এগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়েছিল।
যারা অক্ষম আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন :
اِلَّا الْمُسْتَضْعَفِيْنَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَآءِ وَالْوِلْدَانِ لَا يَسْتَطِيْعُوْنَ حِيْلَةً وَّلَا يَهْتَدُوْنَ سَبِيْلًا ‐ فَاُولٰٓئِكَ عَسَى اللهُ اَنْ يَّعْفُوَ عَنْهُمْؕ وَكَانَ اللهُ عَفُوًّا غَفُوْرًا
তবে যেসব অসহায় পুরুষ, নারী ও শিশু কোন উপায় অবলম্বন করতে পারে না এবং কোন পথও পায় না। আল্লাহ অচিরেই তাদের পাপ মোচন করবেন; আর আল্লাহ পাপ মোচনকারী ও ক্ষমাশীল। (সূরা নিসা- ৯৮, ৯৯)
নবী-রাসূলদেরকেও হিজরত করতে হয়েছে :
وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِرُسُلِهِمْ لَنُخْرِجَنَّكُمْ مِّنْ اَرْضِنَاۤ اَوْ لَتَعُوْدُنَّ فِيْ مِلَّتِنَاؕ فَاَوْحٰۤى اِلَيْهِمْ رَبُّهُمْ لَنُهْلِكَنَّ الظَّالِمِيْنَ
কাফিররা তাদের রাসূলদেরকে বলেছিল, আমরা অবশ্যই তোমাদেরকে আমাদের দেশ হতে বহিষ্কার করব অথবা তোমাদেরকে আমাদের ধর্মে ফিরে আসতে হবে। অতঃপর রাসূলদেরকে তাদের প্রতিপালক ওহী করলেন যে, যালিমদেরকে অবশ্যই আমি বিনাশ করব। (সূরা ইবরাহীম- ১৩)
নবী মুহাম্মাদ ﷺ কেও হিজরত করতে হয়েছে :
اِلَّا تَنْصُرُوْهُ فَقَدْ نَصَرَهُ اللهُ اِذْ اَخْرَجَهُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا ثَانِيَ اثْنَيْنِ اِذْ هُمَا فِى الْغَارِ اِذْ يَقُوْلُ لِصَاحِبِهٖ لَا تَحْزَنْ اِنَّ اللهَ مَعَنَا
যদি তোমরা তাঁকে সাহায্য না করো, তবে আল্লাহ তো তাকে সাহায্য করেছিলেন যখন কাফিররা তাকে বহিষ্কার করেছিল এবং সে ছিল দু’জনের দ্বিতীয়জন। যখন তারা উভয়ে গুহার মধ্যে ছিল; সে তখন তার সঙ্গীকে বলেছিল, চিন্তিত হয়ো না, নিশ্চয় আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন। (সূরা তাওবা- ৪০)
ব্যাখ্যা : হিজরতের সময় যখন নবী ﷺ আবু বকর (রাঃ) কে সাথে নিয়ে হেরা পর্বতের গোহায় আত্মগোপন করলেন এবং শত্রুরাও এক সময় খুঁজতে খুঁজতে একদম কাছে এসে গিয়েছিল, এমনকি তাদের পায়ের শব্দও শোনা যাচ্ছিল তখন আবু বকর (রাঃ) ভয় পেয়ে ছিলেন এবং বলেছিলেন, শত্রুদের একজন যদি একটু ভেতরে ঢুকে উঁকি দেয়, তাহলে দেখে ফেলবে। কিন্তু নবী ﷺ একটুও বিচলিত না হয়ে আবু বকর (রাঃ) কে এ বলে সান্ত্বনা দিলেন, ‘‘চিন্তিত হয়ো না এবং মন খারাপও করো না; কেননা আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন।’’
সাহাবীদের মধ্যে কেউ মুহাজির এবং কেউ আনসার ছিলেন :
وَالسَّابِقُوْنَ الْاَوَّلُوْنَ مِنَ الْمُهَاجِرِيْنَ وَالْاَنْصَارِ وَالَّذِيْنَ اتَّبَعُوْهُمْ بِاِحْسَانٍ رَّضِيَ اللهُ عَنْهُمْ وَرَضُوْا عَنْهُ
মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা অগ্রগামী এবং যারা নিষ্ঠার সাথে তাদের অনুসরণ করে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও তাতে সন্তুষ্ট। (সূরা তাওবা- ১০০)
আনসার সাহাবীরা মুহাজিরদেরকে খুবই সম্মান করতেন :
وَالَّذِيْنَ تَبَوَّءُوا الدَّارَ وَالْاِيْمَانَ مِنْ قَبْلِهِمْ يُحِبُّوْنَ مَنْ هَاجَرَ اِلَيْهِمْ وَلَا يَجِدُوْنَ فِيْ صُدُوْرِهِمْ حَاجَةً مِّمَّاۤ اُوْتُوْا وَيُؤْثِرُوْنَ عَلٰۤى اَنْفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ وَمَنْ يُّوْقَ شُحَّ نَفْسِهٖ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
আর মুহাজিরদের (আগমনের) পূর্বে যারা এ নগরীতে (মদিনায়) বসবাস করেছে এবং ঈমান এনেছে, তারা তাদেরকে (মুহাজিরদেরকে) ভালোবাসে এবং মুহাজিরদেরকে যা দেয়া হয়েছে তার জন্য তারা অন্তরে আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে না। তারা অভাবগ্রস্ত হলেও তাদেরকে নিজেদের উপর প্রাধান্য দেয়। আর যারা নিজেদেরকে কৃপণতা হতে মুক্ত করেছে, তারাই সফলকাম। (সূরা হাশর- ৯)
হিজরতকালে পড়ার দু‘আ :
رَبِّ اَدْخِلْنِيْ مُدْخَلَ صِدْقٍ وَّاَخْرِجْنِيْ مُخْرَجَ صِدْقٍ وَّاجْعَلْ لِّيْ مِنْ لَّدُنْكَ سُلْطَانًا نَّصِيْرًا
বলো, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে প্রবেশ করাও কল্যাণের সাথে এবং আমাকে বের করাও কল্যাণের সাথে। আর তোমার নিকট হতে আমাকে দান করো সাহায্যকারী শক্তি। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৮০)
আল্লাহ হিজরতকারীদেরকে উত্তম ব্যবস্থা দান করেন :
وَمَنْ يُّهَاجِرْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ يَجِدْ فِى الْاَرْضِ مُرَاغَمًا كَثِيْرًا وَّسَعَةً
যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে হিজরত করবে, সে পৃথিবীতে বহু আশ্রয়স্থল এবং প্রার্চুয লাভ করবে। (সূরা নিসা- ১০০)
وَالَّذِيْنَ هَاجَرُوْا فِى اللهِ مِنْ ۢبَعْدِ مَا ظُلِمُوْا لَنُبَوِّئَنَّهُمْ فِى الدُّنْيَا حَسَنَةً
আর যারা অত্যাচারিত হওয়ার পর আল্লাহর পথে হিজরত করেছে, অবশ্যই আমি তাদেরকে দুনিয়ায় উত্তম আবাস দান করব। (সূরা নাহল- ৪১)
ব্যাখ্যা : যে ব্যক্তি আল্লাহর দ্বীনের উপর ঈমান এনেছে তার জন্য কুফরী জীবনব্যবস্থার অধীনে জীবন-যাপন করা কেবল দু’টি অবস্থায় বৈধ হতে পারে।
(এক) ইসলামকে ঐ দেশে বিজয়ী করার ও কুফরী জীবনব্যবস্থাকে ইসলামী জীবনব্যবস্থায় পরিবর্তিত করার জন্য সে প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম চালাতে থাকবে যেমন আম্বিয়া (আঃ) ও তাঁর প্রাথমিক অনুসারীবৃন্দ চালিয়ে এসেছেন।
(দুই) সে সেখান থেকে বের হয়ে আসার কোন পথ পায়নি, তাই চরম ঘৃণা ও অনিচ্ছা সহকারে বাধ্য হয়ে সেখানে অবস্থান করবে। এ দু’টি অবস্থা ছাড়া অন্য যে কোন অবস্থায় দারুল কুফরে অবস্থান করলে পাপ হবে।
হিজরতের সময় প্রাণের ভয় করা উচিত নয় :
كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِ ثُمَّ اِلَيْنَا تُرْجَعُوْنَ
প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণকারী; অতঃপর তোমরা আমারই নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা আনকাবূত- ৫৭)
ব্যাখ্যা : হিজরতের সময় প্রাণের কথা ভেব না। কেননা তা কখনো না কখনো চলে যাবেই। চিরকাল থাকার জন্য কেউই দুনিয়ায় আসেনি। কাজেই এ দুনিয়ায় কীভাবে প্রাণ বাঁচিয়ে চলতে হবে- এটা তোমাদের জন্য কোন চিন্তাযোগ্য বিষয় নয়। বরং আসল চিন্তার বিষয় হচ্ছে, ঈমান কেমন করে বাঁচানো যাবে এবং আল্লাহর আনুগত্যের দাবী কীভাবে পূরণ করা যাবে। মনে রাখবে, শেষ পর্যন্ত তোমাদেরকে আমার দিকেই ফিরে আসতে হবে। সুতরাং যদি তোমরা দুনিয়ায় প্রাণ বাঁচানোর জন্য ঈমান হারিয়ে ফেল, তাহলে এর পরিণাম হবে খুবই ভয়াবহ। আর যদি ঈমান বাঁচানোর জন্য প্রাণ হারিয়ে ফেল, তাহলে এর ফল হবে অতি মঙ্গলজনক।
হিজরতের সময় রিযিকের ভয় করা যাবে না :
وَكَاَيِّنْ مِّنْ دَآبَّةٍ لَّا تَحْمِلُ رِزْقَهَاۗ اَللهُ يَرْزُقُهَا وَاِيَّاكُمْؗ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
এমন কত জীবজন্তু আছে, যারা নিজেদের খাদ্য মওজুদ রাখে না। আল্লাহই রিযিক দান করেন তাদেরকে ও তোমাদেরকে; আর তিনিই সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞা। (সূরা আনকাবূত- ৬০)
ব্যাখ্যা : হিজরত করার ব্যাপারে তোমাদের প্রাণের চিন্তা তো দূরের কথা জীবিকার চিন্তাতেও অস্থির হওয়া উচিত নয়। তোমাদের চোখের সামনে যে অসংখ্য প্রাণী জলে-স্থলে বিচরণ করে বেড়াচ্ছে, তাদের জীবিকার দায়িত্ব কে বহন করছে? আল্লাহই তো এদের সবাইকে প্রতিপালন করছেন। এরা যেখানেই যায় আল্লাহর অনুগ্রহে কোন না কোনভাবে জীবিকা লাভ করে থাকে। কাজেই তোমরা এ কথা ভেবে সাহস হারিয়ে ফেল না যে, যদি ঈমান রক্ষার জন্য বাড়িঘর ছেড়ে বের হয়ে পড়ি তাহলে খাব কী? জেনে রেখো, আল্লাহ যেখান থেকে তাঁর অসংখ্য সৃষ্টিকে রিযিক দিচ্ছেন সেখান থেকে তোমাদেরকেও দেবেন।
وَاَرْضُ اللهِ وَاسِعَةٌ ‐ اِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُوْنَ اَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ
আল্লাহর জমিন প্রশস্ত; নিশ্চয় ধৈর্যশীলদেরকে অগণিত পুরস্কার দেয়া হবে। (সূরা যুমার- ১০)
يَا عِبَادِيَ الَّذِيْنَ اٰ مَنُوْاۤ اِنَّ اَرْضِيْ وَاسِعَةٌ فَاِيَّايَ فَاعْبُدُوْنِ
হে আমার মুমিন বান্দাগণ! নিশ্চয় আমার জমিন প্রশস্ত; সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদাত করো। (সূরা আনকাবূত- ৫৬)
প্রয়োজন হলে অবশ্যই হিজরত করতে হবে :
اِنَّ الَّذِيْنَ تَوَفَّاهُمُ الْمَلَآئِكَةُ ظَالِمِيْۤ اَنْفُسِهِمْ قَالُوْا فِيْمَ كُنْتُمْؕ قَالُوْا كُنَّا مُسْتَضْعَفِيْنَ فِى الْاَرْضِؕ قَالُوْاۤ اَلَمْ تَكُنْ اَرْضُ اللهِ وَاسِعَةً فَتُهَاجِرُوْا فِيْهَاؕ فَاُولٰٓئِكَ مَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ ؕ وَسَآءَتْ مَصِيْرًا
যারা নিজেদের উপর যুলুম করে ফেরেশতাগণ তাদের প্রাণ গ্রহণের সময় বলে, তোমরা কী অবস্থায় ছিলে? তারা বলে, দুনিয়াতে আমরা অসহায় অবস্থায় ছিলাম। ফেরেশতাগণ বলে, আল্লাহর জমিন কি এমন প্রশস্ত ছিল না, যেখানে তোমরা হিজরত করতে পারতে? এদের আবাসস্থল জাহান্নাম, আর তা কতই না মন্দ আবাস! (সূরা নিসা- ৯৭)
ব্যাখ্যা : এখানে এমন লোকদের কথা বলা হয়েছে, যারা ইসলাম গ্রহণ করার পরও কোন প্রকার অক্ষমতা ছাড়াই কাফির গোত্রের সাথে অবস্থান করছিল। তারা আংশিক মুসলিম ও আংশিক কাফির অবস্থায় জীবন-যাপন করেই সন্তুষ্ট ছিল। অথচ ইতোমধ্যে একটি দারুল ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছিল। সেখানে হিজরত করে নিজেদের দ্বীন ও আকীদা-বিশ্বাস অনুযায়ী ইসলামী জীবন-যাপন করা তাদের পক্ষে সম্ভবপর হয়ে উঠেছিল। আর এটিই ছিল নিজেদের উপর তাদের যুলুম। কেননা পূর্ণাঙ্গ ইসলামী জীবন-যাপনের মুকাবিলায় এই আধা কুফরী ও আধা ইসলামী জীবনে যে জিনিসটি তাদেরকে সন্তুষ্ট ও নিশ্চিন্ত করে তুলেছিল, সেটি যথার্থ কোন অক্ষমতা ছিল না। বরং সেটি ছিল নিজেদের পরিবার, সহায়-সম্পত্তি ও পার্থিব স্বার্থপ্রীতি। দ্বীনের উপর তারা এগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়েছিল।
যারা অক্ষম আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন :
اِلَّا الْمُسْتَضْعَفِيْنَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَآءِ وَالْوِلْدَانِ لَا يَسْتَطِيْعُوْنَ حِيْلَةً وَّلَا يَهْتَدُوْنَ سَبِيْلًا ‐ فَاُولٰٓئِكَ عَسَى اللهُ اَنْ يَّعْفُوَ عَنْهُمْؕ وَكَانَ اللهُ عَفُوًّا غَفُوْرًا
তবে যেসব অসহায় পুরুষ, নারী ও শিশু কোন উপায় অবলম্বন করতে পারে না এবং কোন পথও পায় না। আল্লাহ অচিরেই তাদের পাপ মোচন করবেন; আর আল্লাহ পাপ মোচনকারী ও ক্ষমাশীল। (সূরা নিসা- ৯৮, ৯৯)
নবী-রাসূলদেরকেও হিজরত করতে হয়েছে :
وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِرُسُلِهِمْ لَنُخْرِجَنَّكُمْ مِّنْ اَرْضِنَاۤ اَوْ لَتَعُوْدُنَّ فِيْ مِلَّتِنَاؕ فَاَوْحٰۤى اِلَيْهِمْ رَبُّهُمْ لَنُهْلِكَنَّ الظَّالِمِيْنَ
কাফিররা তাদের রাসূলদেরকে বলেছিল, আমরা অবশ্যই তোমাদেরকে আমাদের দেশ হতে বহিষ্কার করব অথবা তোমাদেরকে আমাদের ধর্মে ফিরে আসতে হবে। অতঃপর রাসূলদেরকে তাদের প্রতিপালক ওহী করলেন যে, যালিমদেরকে অবশ্যই আমি বিনাশ করব। (সূরা ইবরাহীম- ১৩)
নবী মুহাম্মাদ ﷺ কেও হিজরত করতে হয়েছে :
اِلَّا تَنْصُرُوْهُ فَقَدْ نَصَرَهُ اللهُ اِذْ اَخْرَجَهُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا ثَانِيَ اثْنَيْنِ اِذْ هُمَا فِى الْغَارِ اِذْ يَقُوْلُ لِصَاحِبِهٖ لَا تَحْزَنْ اِنَّ اللهَ مَعَنَا
যদি তোমরা তাঁকে সাহায্য না করো, তবে আল্লাহ তো তাকে সাহায্য করেছিলেন যখন কাফিররা তাকে বহিষ্কার করেছিল এবং সে ছিল দু’জনের দ্বিতীয়জন। যখন তারা উভয়ে গুহার মধ্যে ছিল; সে তখন তার সঙ্গীকে বলেছিল, চিন্তিত হয়ো না, নিশ্চয় আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন। (সূরা তাওবা- ৪০)
ব্যাখ্যা : হিজরতের সময় যখন নবী ﷺ আবু বকর (রাঃ) কে সাথে নিয়ে হেরা পর্বতের গোহায় আত্মগোপন করলেন এবং শত্রুরাও এক সময় খুঁজতে খুঁজতে একদম কাছে এসে গিয়েছিল, এমনকি তাদের পায়ের শব্দও শোনা যাচ্ছিল তখন আবু বকর (রাঃ) ভয় পেয়ে ছিলেন এবং বলেছিলেন, শত্রুদের একজন যদি একটু ভেতরে ঢুকে উঁকি দেয়, তাহলে দেখে ফেলবে। কিন্তু নবী ﷺ একটুও বিচলিত না হয়ে আবু বকর (রাঃ) কে এ বলে সান্ত্বনা দিলেন, ‘‘চিন্তিত হয়ো না এবং মন খারাপও করো না; কেননা আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন।’’
সাহাবীদের মধ্যে কেউ মুহাজির এবং কেউ আনসার ছিলেন :
وَالسَّابِقُوْنَ الْاَوَّلُوْنَ مِنَ الْمُهَاجِرِيْنَ وَالْاَنْصَارِ وَالَّذِيْنَ اتَّبَعُوْهُمْ بِاِحْسَانٍ رَّضِيَ اللهُ عَنْهُمْ وَرَضُوْا عَنْهُ
মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা অগ্রগামী এবং যারা নিষ্ঠার সাথে তাদের অনুসরণ করে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও তাতে সন্তুষ্ট। (সূরা তাওবা- ১০০)
আনসার সাহাবীরা মুহাজিরদেরকে খুবই সম্মান করতেন :
وَالَّذِيْنَ تَبَوَّءُوا الدَّارَ وَالْاِيْمَانَ مِنْ قَبْلِهِمْ يُحِبُّوْنَ مَنْ هَاجَرَ اِلَيْهِمْ وَلَا يَجِدُوْنَ فِيْ صُدُوْرِهِمْ حَاجَةً مِّمَّاۤ اُوْتُوْا وَيُؤْثِرُوْنَ عَلٰۤى اَنْفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ وَمَنْ يُّوْقَ شُحَّ نَفْسِهٖ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
আর মুহাজিরদের (আগমনের) পূর্বে যারা এ নগরীতে (মদিনায়) বসবাস করেছে এবং ঈমান এনেছে, তারা তাদেরকে (মুহাজিরদেরকে) ভালোবাসে এবং মুহাজিরদেরকে যা দেয়া হয়েছে তার জন্য তারা অন্তরে আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে না। তারা অভাবগ্রস্ত হলেও তাদেরকে নিজেদের উপর প্রাধান্য দেয়। আর যারা নিজেদেরকে কৃপণতা হতে মুক্ত করেছে, তারাই সফলকাম। (সূরা হাশর- ৯)
হিজরতকালে পড়ার দু‘আ :
رَبِّ اَدْخِلْنِيْ مُدْخَلَ صِدْقٍ وَّاَخْرِجْنِيْ مُخْرَجَ صِدْقٍ وَّاجْعَلْ لِّيْ مِنْ لَّدُنْكَ سُلْطَانًا نَّصِيْرًا
বলো, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে প্রবেশ করাও কল্যাণের সাথে এবং আমাকে বের করাও কল্যাণের সাথে। আর তোমার নিকট হতে আমাকে দান করো সাহায্যকারী শক্তি। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৮০)
আল্লাহ হিজরতকারীদেরকে উত্তম ব্যবস্থা দান করেন :
وَمَنْ يُّهَاجِرْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ يَجِدْ فِى الْاَرْضِ مُرَاغَمًا كَثِيْرًا وَّسَعَةً
যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে হিজরত করবে, সে পৃথিবীতে বহু আশ্রয়স্থল এবং প্রার্চুয লাভ করবে। (সূরা নিসা- ১০০)
وَالَّذِيْنَ هَاجَرُوْا فِى اللهِ مِنْ ۢبَعْدِ مَا ظُلِمُوْا لَنُبَوِّئَنَّهُمْ فِى الدُّنْيَا حَسَنَةً
আর যারা অত্যাচারিত হওয়ার পর আল্লাহর পথে হিজরত করেছে, অবশ্যই আমি তাদেরকে দুনিয়ায় উত্তম আবাস দান করব। (সূরা নাহল- ৪১)
ব্যাখ্যা : যে ব্যক্তি আল্লাহর দ্বীনের উপর ঈমান এনেছে তার জন্য কুফরী জীবনব্যবস্থার অধীনে জীবন-যাপন করা কেবল দু’টি অবস্থায় বৈধ হতে পারে।
(এক) ইসলামকে ঐ দেশে বিজয়ী করার ও কুফরী জীবনব্যবস্থাকে ইসলামী জীবনব্যবস্থায় পরিবর্তিত করার জন্য সে প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম চালাতে থাকবে যেমন আম্বিয়া (আঃ) ও তাঁর প্রাথমিক অনুসারীবৃন্দ চালিয়ে এসেছেন।
(দুই) সে সেখান থেকে বের হয়ে আসার কোন পথ পায়নি, তাই চরম ঘৃণা ও অনিচ্ছা সহকারে বাধ্য হয়ে সেখানে অবস্থান করবে। এ দু’টি অবস্থা ছাড়া অন্য যে কোন অবস্থায় দারুল কুফরে অবস্থান করলে পাপ হবে।
হিজরতের সময় প্রাণের ভয় করা উচিত নয় :
كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِ ثُمَّ اِلَيْنَا تُرْجَعُوْنَ
প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণকারী; অতঃপর তোমরা আমারই নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা আনকাবূত- ৫৭)
ব্যাখ্যা : হিজরতের সময় প্রাণের কথা ভেব না। কেননা তা কখনো না কখনো চলে যাবেই। চিরকাল থাকার জন্য কেউই দুনিয়ায় আসেনি। কাজেই এ দুনিয়ায় কীভাবে প্রাণ বাঁচিয়ে চলতে হবে- এটা তোমাদের জন্য কোন চিন্তাযোগ্য বিষয় নয়। বরং আসল চিন্তার বিষয় হচ্ছে, ঈমান কেমন করে বাঁচানো যাবে এবং আল্লাহর আনুগত্যের দাবী কীভাবে পূরণ করা যাবে। মনে রাখবে, শেষ পর্যন্ত তোমাদেরকে আমার দিকেই ফিরে আসতে হবে। সুতরাং যদি তোমরা দুনিয়ায় প্রাণ বাঁচানোর জন্য ঈমান হারিয়ে ফেল, তাহলে এর পরিণাম হবে খুবই ভয়াবহ। আর যদি ঈমান বাঁচানোর জন্য প্রাণ হারিয়ে ফেল, তাহলে এর ফল হবে অতি মঙ্গলজনক।
হিজরতের সময় রিযিকের ভয় করা যাবে না :
وَكَاَيِّنْ مِّنْ دَآبَّةٍ لَّا تَحْمِلُ رِزْقَهَاۗ اَللهُ يَرْزُقُهَا وَاِيَّاكُمْؗ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
এমন কত জীবজন্তু আছে, যারা নিজেদের খাদ্য মওজুদ রাখে না। আল্লাহই রিযিক দান করেন তাদেরকে ও তোমাদেরকে; আর তিনিই সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞা। (সূরা আনকাবূত- ৬০)
ব্যাখ্যা : হিজরত করার ব্যাপারে তোমাদের প্রাণের চিন্তা তো দূরের কথা জীবিকার চিন্তাতেও অস্থির হওয়া উচিত নয়। তোমাদের চোখের সামনে যে অসংখ্য প্রাণী জলে-স্থলে বিচরণ করে বেড়াচ্ছে, তাদের জীবিকার দায়িত্ব কে বহন করছে? আল্লাহই তো এদের সবাইকে প্রতিপালন করছেন। এরা যেখানেই যায় আল্লাহর অনুগ্রহে কোন না কোনভাবে জীবিকা লাভ করে থাকে। কাজেই তোমরা এ কথা ভেবে সাহস হারিয়ে ফেল না যে, যদি ঈমান রক্ষার জন্য বাড়িঘর ছেড়ে বের হয়ে পড়ি তাহলে খাব কী? জেনে রেখো, আল্লাহ যেখান থেকে তাঁর অসংখ্য সৃষ্টিকে রিযিক দিচ্ছেন সেখান থেকে তোমাদেরকেও দেবেন।
হিজরতকারীরাই প্রকৃত ঈমানদার :
وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَهَاجَرُوْا وَجَاهَدُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَالَّذِيْنَ اٰوَوْا وَّنَصَرُوْاۤ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُوْنَ حَقًّاؕ لَهُمْ مَّغْفِرَةٌ وَّرِزْقٌ كَرِيْمٌ
যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে; আর যারা আশ্রয় দান করেছে এবং সাহায্য করেছে, তারাই প্রকৃত মুমিন। তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা। (সূরা আনফাল- ৭৪)
হিজরতকারীরা সফলকাম হয় :
اَلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَهَاجَرُوْا وَجَاهَدُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْ اَعْظَمُ دَرَجَةً عِنْدَ اللهِؕ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَآئِزُوْنَ
যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং নিজেদের সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে, তারা আল্লাহর নিকট মর্যাদায় শ্রেয়, আর তারাই সফলকাম। (সূরা তাওবা- ২০)
আল্লাহ হিজরতকারীদেরকে ক্ষমা করেন :
ثُمَّ اِنَّ رَبَّكَ لِلَّذِيْنَ هَاجَرُوْا مِنْ ۢبَعْدِ مَا فُتِنُوْا ثُمَّ جَاهَدُوْا وَصَبَرُوْاۤ اِنَّ رَبَّكَ مِنْ ۢبَعْدِهَا لَغَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
যারা নির্যাতিত হওয়ার পর হিজরত করে, তারপর জিহাদ করে এবং ধৈর্যধারণ করে; নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক এ সবকিছুর পর (তাদের প্রতি) ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা নাহল- ১১০)
হিজরতকালে মারা গেলেও পুরস্কার রয়েছে :
وَمَنْ يَّخْرُجْ مِنْ ۢبَيْتِهٖ مُهَاجِرًا اِلَى اللهِ وَرَسُوْلِهٖ ثُمَّ يُدْرِكْهُ الْمَوْتُ فَقَدْ وَقَعَ اَجْرُهٗ عَلَى اللهِؕ وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا
যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যে নিজ গৃহ হতে মুহাজির হয়ে বের হয়, অতঃপর মৃত্যু তাকে পেয়ে বসে; তার পুরস্কার আল্লাহর উপর বর্তাবে। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা নিসা- ১০০)
وَالَّذِيْنَ هَاجَرُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ ثُمَّ قُتِلُوْاۤ اَوْ مَاتُوْا لَيَرْزُقَنَّهُمُ اللهُ رِزْقًا حَسَنًاؕ وَاِنَّ اللهَ لَهُوَ خَيْرُ الرَّازِقِيْنَ
আর যারা আল্লাহর পথে হিজরত করেছে, অতঃপর নিহত হয়েছে অথবা মারা গিয়েছে, অবশ্যই আল্লাহ তাদেরকে উৎকৃষ্ট জীবিকা দান করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ, তিনিই তো সর্বোৎকৃষ্ট রিযিকদাতা। (সূরা হজ্জ- ৫৮)
ব্যাখ্যা : যদি ঈমান ও নেকীর পথে চলে কেউ দুনিয়ার সমস্ত নিয়ামত থেকে বঞ্চিতও হয়, তবুও কিয়ামতের দিন অবশ্যই এর ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। এমনকি এর বিনিময়ে সর্বোত্তম প্রতিদানও পাওয়া যাবে। সত্যের দাওয়াতের পথে এমন একটি পর্যায় এসে যায়, যখন একজন সত্যপ্রিয় মানুষের জন্য উপকরণের নির্ভরতা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে একমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা করে প্রাণপণ প্রচেষ্টায় লিপ্ত হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। এ অবস্থায় যারা হিসাব করে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা বিচার করে এবং পা বাড়ানোর আগে প্রাণ রক্ষা ও জীবিকা উপার্জনের নিশ্চয়তা খুঁজে বেড়ায় তারা কিছুই করতে পারে না। এ অবস্থায় সফল হয় এমনসব লোক, যারা প্রতি মুহূর্তে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং সবধরনের বিপদ উপেক্ষা করে নির্দ্বিধায় এগিয়ে যায়। তাদেরই ত্যাগ ও কুরবানীর ফলে শেষ পর্যন্ত এমন এক সময় উপস্থিত হয়, যখন ইসলাম সকল ভ্রান্ত মতবাদের উপর বিজয়ী হয়।
হিজরতের ফলাফল দুনিয়াতেও পাওয়া যায় :
فَلَمَّا اعْتَزَلَهُمْ وَمَا يَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ وَهَبْنَا لَهُۤ اِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَؕ وَكُلًّا جَعَلْنَا نَبِيًّا
অতঃপর যখন সে সত্যিই তাদের কাছ থেকে পৃথক হয়ে গেল এবং (পৃথক হয়ে গেল তাদের থেকেও) যাদেরকে তারা আল্লাহর পরিবর্তে ডাকত, তখন আমি তাকে ইসহাক ও (ইসহাক পুত্র) ইয়াকূব দান করলাম; এদের সবাইকেই আমি নবী বানিয়েছিলাম। (সূরা মারইয়াম- ৪৯)
ব্যাখ্যা : যেসব মুহাজির গৃহত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন এগুলো তাদের জন্য সান্ত্বনাবাণী। তাদেরকে বলা হচ্ছে, হিজরত করার মাধ্যমে ইবরাহীম (আঃ) যেমন তাঁর পরিবারবর্গ থেকে বিচ্ছিনণ হয়ে যাননি; বরং উল্টো সফলকাম হয়েছিলেন, ঠিক তেমনি তোমরাও ধ্বংস হয়ে যাবে না। বরং তোমরা এমন মর্যাদা লাভ করবে, জাহেলিয়াতের অন্ধকারে পড়ে থাকা কুরাইশ বংশীয় কাফিররা যার কল্পনাও করতে পারবে না।
আল্লাহ হিজরতকারীদেরকে জান্নাত দান করবেন :
فَاسْتَجَابَ لَهُمْ رَبُّهُمْ اَنِّيْ لَاۤ اُضِيْعُ عَمَلَ عَامِلٍ مِّنْكُمْ مِّنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰىۚ بَعْضُكُمْ مِّنْ ۢبَعْضٍؕ فَالَّذِيْنَ هَاجَرُوْا وَاُخْرِجُوْا مِنْ دِيَارِهِمْ وَاُوْذُوْا فِيْ سَبِيْلِيْ وَقَاتَلُوْا وَقُتِلُوْا لَاُكَفِّرَنَّ عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْ وَلَاُدْخِلَنَّهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ ثَوَابًا مِّنْ عِنْدِ اللهِؕ وَاللهُ عِنْدَهٗ حُسْنُ الثَّوَابِ
অতঃপর তাদের প্রতিপালক তাদের আহবানে সাড়া দিলেন যে, আমি তোমাদের পুরুষ অথবা নারীর মধ্য হতে কোন আমলকারীর আমল নষ্ট করব না, তোমরা পরস্পর এক। অতএব যারা হিজরত করেছে, তাদের ঘরবাড়ি হতে বিতাড়িত হয়েছে, আমার পথে নির্যাতিত হয়েছে এবং সংগ্রাম করেছে ও নিহত হয়েছে, অবশ্যই আমি তাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেব এবং তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাব, যার নিচ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত থাকবে। এটা আল্লাহর নিকট হতে (তাদের জন্য) প্রতিদান; (মূলত) আল্লাহর নিকটই রয়েছে উত্তম প্রতিদান। (সূরা আলে ইমরান- ১৯৫)
শানে নুযূল : উম্মে সালামা (রাঃ) বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ মুহাজির পুরুষদের সম্বন্ধে কুরআনের অনেক স্থানেই প্রশংসা করেছেন, কিন্তু মুহাজির নারীদের ব্যাপারে কোনকিছুই বলেননি। তবে কি আমরা হিজরতের কোন সওয়াব পাব না? তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতটি নাযিল করেন। (তিরমিযী, হা/৩০২৩)
হিজরতকারীরা আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী হয় :
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَالَّذِيْنَ هَاجَرُوْا وَجَاهَدُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ اُولٰٓئِكَ يَرْجُوْنَ رَحْمَتَ اللهِؕ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে, তারাই আল্লাহর রহমতের আশা পোষণ করে। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল ও অতি দয়ালু। (সূরা বাক্বারা- ২১৮)
মুহাজির ও আনসারগণ একে অপরের বন্ধু :
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَهَاجَرُوْا وَجَاهَدُوْا بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَالَّذِيْنَ اٰوَوْا وَّنَصَرُوْاۤ اُولٰٓئِكَ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍ
যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং জীবন ও সম্পদ দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে; আর যারা আশ্রয় দান করেছে এবং সাহায্য করেছে, তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। সূরা আনফাল- ৭২)
মুমিন মহিলারাও হিজরত করবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا جَآءَكُمُ الْمُؤْمِنَاتُ مُهَاجِرَاتٍ فَامْتَحِنُوْهُنَّؕ اَللهُ اَعْلَمُ بِاِيْمَانِهِنَّۚ فَاِنْ عَلِمْتُمُوْهُنَّ مُؤْمِنَاتٍ فَلَا تَرْجِعُوْهُنَّ اِلَى الْكُفَّارِؕ لَا هُنَّ حِلٌّ لَّهُمْ وَلَا هُمْ يَحِلُّوْنَ لَهُنَّ
হে মুমিনগণ! যখন তোমাদের নিকট মুমিন নারীরা হিজরত করে আসে, তখন তোমরা তাদেরকে (প্রথমে) পরীক্ষা করে নাও। তবে আল্লাহ তাদের ঈমান সম্বন্ধে সম্যক অবগত আছেন। অতঃপর যদি তোমরা জানতে পার যে, তারা মুমিন তবে তাদেরকে কাফিরদের নিকট ফেরত পাঠিয়ে দিয়ো না। মুমিন নারীরা কাফিরদের জন্য বৈধ নয় এবং কাফিররা মুমিন নারীদের জন্যও বৈধ নয়। (সূরা মুমতাহিনা- ১০)
মুসলিমরা তাদেরকে বিয়ে করতে পারবে :
وَاٰتُوْهُمْ مَّاۤ اَنْفَقُوْاؕ وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ اَنْ تَنْكِحُوْهُنَّ اِذَاۤ اٰتَيْتُمُوْهُنَّ اُجُوْرَهُنَّ
কাফিররা যা ব্যয় করেছে, তা তাদেরকে ফিরিয়ে দেবে। অতঃপর যদি তোমরা তাদেরকে বিয়ে কর এবং তাদেরকে তাদের মোহরানা দিয়ে দাও, তবে তোমাদের কোন অপরাধ হবে না। (সূরা মুমতাহিনা- ১০)
وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَهَاجَرُوْا وَجَاهَدُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَالَّذِيْنَ اٰوَوْا وَّنَصَرُوْاۤ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُوْنَ حَقًّاؕ لَهُمْ مَّغْفِرَةٌ وَّرِزْقٌ كَرِيْمٌ
যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে; আর যারা আশ্রয় দান করেছে এবং সাহায্য করেছে, তারাই প্রকৃত মুমিন। তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা। (সূরা আনফাল- ৭৪)
হিজরতকারীরা সফলকাম হয় :
اَلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَهَاجَرُوْا وَجَاهَدُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْ اَعْظَمُ دَرَجَةً عِنْدَ اللهِؕ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَآئِزُوْنَ
যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং নিজেদের সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে, তারা আল্লাহর নিকট মর্যাদায় শ্রেয়, আর তারাই সফলকাম। (সূরা তাওবা- ২০)
আল্লাহ হিজরতকারীদেরকে ক্ষমা করেন :
ثُمَّ اِنَّ رَبَّكَ لِلَّذِيْنَ هَاجَرُوْا مِنْ ۢبَعْدِ مَا فُتِنُوْا ثُمَّ جَاهَدُوْا وَصَبَرُوْاۤ اِنَّ رَبَّكَ مِنْ ۢبَعْدِهَا لَغَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
যারা নির্যাতিত হওয়ার পর হিজরত করে, তারপর জিহাদ করে এবং ধৈর্যধারণ করে; নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক এ সবকিছুর পর (তাদের প্রতি) ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা নাহল- ১১০)
হিজরতকালে মারা গেলেও পুরস্কার রয়েছে :
وَمَنْ يَّخْرُجْ مِنْ ۢبَيْتِهٖ مُهَاجِرًا اِلَى اللهِ وَرَسُوْلِهٖ ثُمَّ يُدْرِكْهُ الْمَوْتُ فَقَدْ وَقَعَ اَجْرُهٗ عَلَى اللهِؕ وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا
যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যে নিজ গৃহ হতে মুহাজির হয়ে বের হয়, অতঃপর মৃত্যু তাকে পেয়ে বসে; তার পুরস্কার আল্লাহর উপর বর্তাবে। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা নিসা- ১০০)
وَالَّذِيْنَ هَاجَرُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ ثُمَّ قُتِلُوْاۤ اَوْ مَاتُوْا لَيَرْزُقَنَّهُمُ اللهُ رِزْقًا حَسَنًاؕ وَاِنَّ اللهَ لَهُوَ خَيْرُ الرَّازِقِيْنَ
আর যারা আল্লাহর পথে হিজরত করেছে, অতঃপর নিহত হয়েছে অথবা মারা গিয়েছে, অবশ্যই আল্লাহ তাদেরকে উৎকৃষ্ট জীবিকা দান করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ, তিনিই তো সর্বোৎকৃষ্ট রিযিকদাতা। (সূরা হজ্জ- ৫৮)
ব্যাখ্যা : যদি ঈমান ও নেকীর পথে চলে কেউ দুনিয়ার সমস্ত নিয়ামত থেকে বঞ্চিতও হয়, তবুও কিয়ামতের দিন অবশ্যই এর ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। এমনকি এর বিনিময়ে সর্বোত্তম প্রতিদানও পাওয়া যাবে। সত্যের দাওয়াতের পথে এমন একটি পর্যায় এসে যায়, যখন একজন সত্যপ্রিয় মানুষের জন্য উপকরণের নির্ভরতা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে একমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা করে প্রাণপণ প্রচেষ্টায় লিপ্ত হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। এ অবস্থায় যারা হিসাব করে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা বিচার করে এবং পা বাড়ানোর আগে প্রাণ রক্ষা ও জীবিকা উপার্জনের নিশ্চয়তা খুঁজে বেড়ায় তারা কিছুই করতে পারে না। এ অবস্থায় সফল হয় এমনসব লোক, যারা প্রতি মুহূর্তে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং সবধরনের বিপদ উপেক্ষা করে নির্দ্বিধায় এগিয়ে যায়। তাদেরই ত্যাগ ও কুরবানীর ফলে শেষ পর্যন্ত এমন এক সময় উপস্থিত হয়, যখন ইসলাম সকল ভ্রান্ত মতবাদের উপর বিজয়ী হয়।
হিজরতের ফলাফল দুনিয়াতেও পাওয়া যায় :
فَلَمَّا اعْتَزَلَهُمْ وَمَا يَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ وَهَبْنَا لَهُۤ اِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَؕ وَكُلًّا جَعَلْنَا نَبِيًّا
অতঃপর যখন সে সত্যিই তাদের কাছ থেকে পৃথক হয়ে গেল এবং (পৃথক হয়ে গেল তাদের থেকেও) যাদেরকে তারা আল্লাহর পরিবর্তে ডাকত, তখন আমি তাকে ইসহাক ও (ইসহাক পুত্র) ইয়াকূব দান করলাম; এদের সবাইকেই আমি নবী বানিয়েছিলাম। (সূরা মারইয়াম- ৪৯)
ব্যাখ্যা : যেসব মুহাজির গৃহত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন এগুলো তাদের জন্য সান্ত্বনাবাণী। তাদেরকে বলা হচ্ছে, হিজরত করার মাধ্যমে ইবরাহীম (আঃ) যেমন তাঁর পরিবারবর্গ থেকে বিচ্ছিনণ হয়ে যাননি; বরং উল্টো সফলকাম হয়েছিলেন, ঠিক তেমনি তোমরাও ধ্বংস হয়ে যাবে না। বরং তোমরা এমন মর্যাদা লাভ করবে, জাহেলিয়াতের অন্ধকারে পড়ে থাকা কুরাইশ বংশীয় কাফিররা যার কল্পনাও করতে পারবে না।
আল্লাহ হিজরতকারীদেরকে জান্নাত দান করবেন :
فَاسْتَجَابَ لَهُمْ رَبُّهُمْ اَنِّيْ لَاۤ اُضِيْعُ عَمَلَ عَامِلٍ مِّنْكُمْ مِّنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰىۚ بَعْضُكُمْ مِّنْ ۢبَعْضٍؕ فَالَّذِيْنَ هَاجَرُوْا وَاُخْرِجُوْا مِنْ دِيَارِهِمْ وَاُوْذُوْا فِيْ سَبِيْلِيْ وَقَاتَلُوْا وَقُتِلُوْا لَاُكَفِّرَنَّ عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْ وَلَاُدْخِلَنَّهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ ثَوَابًا مِّنْ عِنْدِ اللهِؕ وَاللهُ عِنْدَهٗ حُسْنُ الثَّوَابِ
অতঃপর তাদের প্রতিপালক তাদের আহবানে সাড়া দিলেন যে, আমি তোমাদের পুরুষ অথবা নারীর মধ্য হতে কোন আমলকারীর আমল নষ্ট করব না, তোমরা পরস্পর এক। অতএব যারা হিজরত করেছে, তাদের ঘরবাড়ি হতে বিতাড়িত হয়েছে, আমার পথে নির্যাতিত হয়েছে এবং সংগ্রাম করেছে ও নিহত হয়েছে, অবশ্যই আমি তাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেব এবং তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাব, যার নিচ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত থাকবে। এটা আল্লাহর নিকট হতে (তাদের জন্য) প্রতিদান; (মূলত) আল্লাহর নিকটই রয়েছে উত্তম প্রতিদান। (সূরা আলে ইমরান- ১৯৫)
শানে নুযূল : উম্মে সালামা (রাঃ) বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ মুহাজির পুরুষদের সম্বন্ধে কুরআনের অনেক স্থানেই প্রশংসা করেছেন, কিন্তু মুহাজির নারীদের ব্যাপারে কোনকিছুই বলেননি। তবে কি আমরা হিজরতের কোন সওয়াব পাব না? তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতটি নাযিল করেন। (তিরমিযী, হা/৩০২৩)
হিজরতকারীরা আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী হয় :
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَالَّذِيْنَ هَاجَرُوْا وَجَاهَدُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ اُولٰٓئِكَ يَرْجُوْنَ رَحْمَتَ اللهِؕ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে, তারাই আল্লাহর রহমতের আশা পোষণ করে। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল ও অতি দয়ালু। (সূরা বাক্বারা- ২১৮)
মুহাজির ও আনসারগণ একে অপরের বন্ধু :
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَهَاجَرُوْا وَجَاهَدُوْا بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَالَّذِيْنَ اٰوَوْا وَّنَصَرُوْاۤ اُولٰٓئِكَ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍ
যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং জীবন ও সম্পদ দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে; আর যারা আশ্রয় দান করেছে এবং সাহায্য করেছে, তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। সূরা আনফাল- ৭২)
মুমিন মহিলারাও হিজরত করবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا جَآءَكُمُ الْمُؤْمِنَاتُ مُهَاجِرَاتٍ فَامْتَحِنُوْهُنَّؕ اَللهُ اَعْلَمُ بِاِيْمَانِهِنَّۚ فَاِنْ عَلِمْتُمُوْهُنَّ مُؤْمِنَاتٍ فَلَا تَرْجِعُوْهُنَّ اِلَى الْكُفَّارِؕ لَا هُنَّ حِلٌّ لَّهُمْ وَلَا هُمْ يَحِلُّوْنَ لَهُنَّ
হে মুমিনগণ! যখন তোমাদের নিকট মুমিন নারীরা হিজরত করে আসে, তখন তোমরা তাদেরকে (প্রথমে) পরীক্ষা করে নাও। তবে আল্লাহ তাদের ঈমান সম্বন্ধে সম্যক অবগত আছেন। অতঃপর যদি তোমরা জানতে পার যে, তারা মুমিন তবে তাদেরকে কাফিরদের নিকট ফেরত পাঠিয়ে দিয়ো না। মুমিন নারীরা কাফিরদের জন্য বৈধ নয় এবং কাফিররা মুমিন নারীদের জন্যও বৈধ নয়। (সূরা মুমতাহিনা- ১০)
মুসলিমরা তাদেরকে বিয়ে করতে পারবে :
وَاٰتُوْهُمْ مَّاۤ اَنْفَقُوْاؕ وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ اَنْ تَنْكِحُوْهُنَّ اِذَاۤ اٰتَيْتُمُوْهُنَّ اُجُوْرَهُنَّ
কাফিররা যা ব্যয় করেছে, তা তাদেরকে ফিরিয়ে দেবে। অতঃপর যদি তোমরা তাদেরকে বিয়ে কর এবং তাদেরকে তাদের মোহরানা দিয়ে দাও, তবে তোমাদের কোন অপরাধ হবে না। (সূরা মুমতাহিনা- ১০)
আল্লাহ তাদের ঘটনা বর্ণনা করেছেন :
اَمْ حَسِبْتَ اَنَّ اَصْحَابَ الْكَهْفِ وَالرَّقِيْمِ كَانُوْا مِنْ اٰيَاتِنَا عَجَبًا
তুমি কি মনে করো যে, গুহা ও রাকীমের অধিবাসীরা আমার নিদর্শনাবলির মধ্যে বিস্ময়কর? (সূরা কাহফ- ৯)
نَحْنُ نَقُصُّ عَلَيْكَ نَبَاَهُمْ بِالْحَقِّ
আমি তোমার নিকট তাদের বৃত্তামত্ম সঠিকভাবে বর্ণনা করছি। (সূরা কাহফ- ১৩)
তারা ছিলেন কয়েকজন ঈমানদার যুবক :
اِنَّهُمْ فِتْيَةٌ اٰمَنُوْا بِرَبِّهِمْ وَزِدْنَاهُمْ هُدًى
তারা ছিল কয়েকজন যুবক, তারা তাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান এনেছিল এবং আমি তাদেরকে সৎপথে চলার শক্তি বৃদ্ধি করে দিয়েছিলাম। (সূরা কাহফ- ১৩)
তাদের সংখ্যা নিয়ে লোকেরা মতভেদ করেছিল :
سَيَقُوْلُوْنَ ثَلَاثَةٌ رَّابِعُهُمْ كَلْبُهُمْۚ وَيَقُوْلُوْنَ خَمْسَةٌ سَادِسُهُمْ كَلْبُهُمْ رَجْمًا ۢبِالْغَيْبِۚ وَيَقُوْلُوْنَ سَبْعَةٌ وَّثَامِنُهُمْ كَلْبُهُمْؕ قُلْ رَّبِّيْۤ اَعْلَمُ بِعِدَّتِهِمْ مَّا يَعْلَمُهُمْ اِلَّا قَلِيْلٌ فَلَا تُمَارِ فِيْهِمْ اِلَّا مِرَآءً ظَاهِرًا وَّلَا تَسْتَفْتِ فِيْهِمْ مِّنْهُمْ اَحَدًا
অচিরেই তারা বলবে, তারা ছিল তিনজন, তাদের চতুর্থটি ছিল তাদের কুকুর। আবার কেউ কেউ বলবে, তারা ছিল পাঁচজন, তাদের ষষ্ঠটি ছিল তাদের কুকুর- (মূলত) তারা অজানা বিষয়ে অনুমানের উপর নির্ভর করে। আবার কেউ কেউ বলবে, তারা ছিল সাতজন, তাদের অষ্টমটি ছিল তাদের কুকুর। বলো, আমার প্রতিপালকই তাদের সংখ্যা ভালোভাবে জানেন; আর (প্রকৃতপক্ষে) তাদের সংখ্যা অল্প কয়েকজনই জানে। সাধারণ আলোচনা ব্যতীত তুমি তাদের বিষয়ে বিতর্ক করো না এবং এদের কাউকে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করো না। (সূরা কাহফ- ২২)
তারা ছিল আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী :
وَرَبَطْنَا عَلٰى قُلُوْبِهِمْ اِذْ قَامُوْا فَقَالُوْا رَبُّنَا رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ لَنْ نَّدْعُوَاْ مِنْ دُوْنِهٖۤ اِلٰهًا لَّقَدْ قُلْنَاۤ اِذًا شَطَطًا
আর আমি তাদের অন্তর দৃঢ় করে দিলাম। ফলে যখন তারা উঠে দাঁড়াল তখন বলল, আমাদের প্রতিপালক তিনিই যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর প্রতিপালক। আমরা কখনই তাঁর পরিবর্তে অন্য কোন ইলাহকে আহবান করব না। আর যদি আমরা এমনটি বলে থাকি, তবে তা হবে অতিশয় গর্হিত কাজ। (সূরা কাহফ- ১৪)
তাদের জাতি শিরকে লিপ্ত ছিল :
هٰۤؤُلَآءِ قَوْمُنَا اتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِهٖۤ اٰلِهَةًؕ لَوْلَا يَأْتُوْنَ عَلَيْهِمْ بِسُلْطَانٍ ۢبَيِّنٍؕ فَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرٰى عَلَى اللهِ كَذِبًا
আমাদেরই এ সম্প্রদায় আল্লাহর পরিবর্তে অনেক ইলাহ্ গ্রহণ করেছে। তারা এ সমসত্ম ইলাহ্ সম্বন্ধে স্পষ্ট প্রমাণ উপস্থিত করে না কেন? আর যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? (সূরা কাহফ- ১৫)
তারা আল্লাহর রহমত কামনা করে একটি গুহায় আশ্রয় নেয় :
اِذْ اَوَى الْفِتْيَةُ اِلَى الْكَهْفِ فَقَالُوْا رَبَّنَاۤ اٰتِنَا مِنْ لَّدُنْكَ رَحْمَةً وَّهَيِّئْ لَنَا مِنْ اَمْرِنَا رَشَدًا
যখন যুবকরা গুহায় আশ্রয় নিল তখন তারা বলেছিল, হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি নিজ হতে আমাদেরকে অনুগ্রহ দান করো এবং আমাদের জন্য আমাদের কাজকর্ম সঠিকভাবে পরিচালনার ব্যবস্থা করো। (সূরা কাহফ- ১০)
আল্লাহ তাদের প্রতি দয়া করলেন :
وَاِذِ اعْتَزَلْتُمُوْهُمْ وَمَا يَعْبُدُوْنَ اِلَّا اللهَ فَأْوُوْاۤ اِلَى الْكَهْفِ يَنْشُرْ لَكُمْ رَبُّكُمْ مِّنْ رَّحْمَتِهٖ وَيُهَيِّئْ لَكُمْ مِّنْ اَمْرِكُمْ مِّرْفَقًا
যখন তোমরা তাদের ও তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদাত করে তাদের হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে, অতঃপর তোমরা গুহায় আশ্রয় গ্রহণ করলে তখন তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্য তাঁর দয়া বিসত্মার করলেন এবং তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কাজকর্মকে ফলপ্রসূ করার ব্যবস্থা করলেন। (সূরা কাহফ- ১৬)
তারা নিদ্রাবস্থায় পার্শ্ব পরিবর্তন করত :
وَتَحْسَبُهُمْ اَيْقَاظًا وَّهُمْ رُقُوْدٌۗ وَنُقَلِّبُهُمْ ذَاتَ الْيَمِيْنِ وَذَاتَ الشِّمَالِ
তুমি মনে করতে তারা জাগ্রত, কিন্তু তারা ছিল নিদ্রিত। আমি তাদেরকে পার্শ্ব পরিবর্তন করাতাম ডান দিকে ও বাম দিকে। (সূরা কাহফ- ১৮)
সূর্যের কিরণ তাদের গর্তে প্রবেশ করত না :
وَتَرَى الشَّمْسَ اِذَا طَلَعَتْ تَّزَاوَرُ عَنْ كَهْفِهِمْ ذَاتَ الْيَمِيْنِ وَاِذَا غَرَبَتْ تَّقْرِضُهُمْ ذَاتَ الشِّمَالِ وَهُمْ فِيْ فَجْوَةٍ مِّنْهُؕ ذٰلِكَ مِنْ اٰيَاتِ اللهِؕ مَنْ يَّهْدِ اللهُ فَهُوَ الْمُهْتَدِۚ وَمَنْ يُّضْلِلْ فَلَنْ تَجِدَ لَهٗ وَلِيًّا مُّرْشِدًا
তুমি দেখতে পেতে- তারা গুহার প্রশসত্ম চত্বরে অবস্থিত, সূর্য উদয়কালে (তার কিরণ) তাদের গুহার দক্ষিণ পার্শ্বে হেলে যায় এবং অসত্মকালে (তার কিরণ) বাম পার্শ্ব দিয়ে তাদেরকে অতিক্রম করে, এগুলো আল্লাহর নিদর্শন। আল্লাহ যাকে পথপ্রদর্শন করেন, সে সৎপথপ্রাপ্ত হয় এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তুমি কখনো তার কোন পথপ্রদর্শনকারী অভিভাবক পাবে না। (সূরা কাহফ- ১৭)
একটি কুকুর তাদেরকে পাহারা দিত :
وَكَلْبُهُمْ بَاسِطٌ ذِرَاعَيْهِ بِالْوَصِيْدِ لَوِ اطَّلَعْتَ عَلَيْهِمْ لَوَلَّيْتَ مِنْهُمْ فِرَارًا وَّلَمُلِئْتَ مِنْهُمْ رُعْبًا
আর তাদের কুকুর সম্মুখের পা দু’টি গুহাদ্বারে প্রসারিত করে তাকিয়ে ছিল, তাদেরকে দেখলে তুমি পেছন ফিরে পলায়ন করতে এবং তাদের ভয়ে আতংকগ্রসত্ম হয়ে পড়তে। (সূরা কাহফ- ১৮)
পরে আল্লাহ তাদেরকে জীবিত করেছেন :
ثُمَّ بَعَثْنَاهُمْ لِنَعْلَمَ اَيُّ الْحِزْبَيْنِ اَحْصٰى لِمَا لَبِثُوْاۤ اَمَدًا
তারপর আমি তাদেরকে জাগ্রত করলাম এ কথা জানানোর জন্য যে, দু’দলের মধ্যে কারা তাদের অবস্থানকাল সঠিকভাবে নির্ণয় করতে পারে। (সূরা কাহফ- ১২)
কতদিন গর্তে ছিল তা তারা বুঝতে পারেনি :
وَكَذٰلِكَ بَعَثْنَاهُمْ لِيَتَسَآءَلُوْا بَيْنَهُمْؕ قَالَ قَآئِلٌ مِّنْهُمْ كَمْ لَبِثْتُمْؕ قَالُوْا لَبِثْنَا يَوْمًا اَوْ بَعْضَ يَوْمٍؕ قَالُوْا رَبُّكُمْ اَعْلَمُ بِمَا لَبِثْتُمْ
এভাবেই আমি তাদেরকে জাগ্রত করলাম, যাতে তারা পরস্পরের মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করে নেয়। অতঃপর তাদের একজন বলল, তোমরা এখানে কত কাল অবস্থান করেছ? কেউ কেউ বলল, আমরা অবস্থান করেছি এক দিন অথবা এক দিনের কিছু অংশ। কেউ বলল, তোমরা কত কাল অবস্থান করেছ তা তোমাদের প্রতিপালকই ভালো জানেন। (সূরা কাহফ- ১৯)
তাদের গোহায় অবস্থানকাল :
فَضَرَبْنَا عَلٰۤى اٰذَانِهِمْ فِى الْكَهْفِ سِنِيْنَ عَدَدًا
অতঃপর আমি তাদেরকে গুহায় কয়েক বৎসর ঘুমমত্ম অবস্থায় রাখলাম। (সূরা কাহফ- ১১)
قُلِ اللهُ اَعْلَمُ بِمَا لَبِثُوْاۚ لَهٗ غَيْبُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِؕ اَبْصِرْ بِهٖ وَاَسْمِعْؕ مَا لَهُمْ مِّنْ دُوْنِهٖ مِنْ وَّلِيٍّؗ وَلَا يُشْرِكُ فِيْ حُكْمِهٖۤ اَحَدًا
বলো, তারা কত কাল ছিল তা আল্লাহই ভালো জানেন, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর অজ্ঞাত বিষয়ের জ্ঞান তাঁরই। তিনি কত সুন্দর দ্রষ্টা ও শ্রোতা! তিনি ব্যতীত তাদের অন্য কোন অভিভাবক নেই। আর তিনি কাউকে নিজ কর্তৃত্বে শরীক করেন না। (সূরা কাহফ- ২৬)
وَلَبِثُوْا فِيْ كَهْفِهِمْ ثَلَاثَ مِائَةٍ سِنِيْنَ وَازْدَادُوْا تِسْعًا
তারা তাদের গুহায় ছিল তিনশ’ বৎসর এবং আরো নয় বৎসর। (সূরা কাহফ- ২৫)
আসহাবে কাহফের কাহিনীর শিক্ষা :
কুরআন যে তাওহীদের দাওয়াত দিচ্ছে আসহাবে কাহফের লোকেরা ছিলেন এরই প্রবক্তা। তাদের অবস্থা মক্কার মজলুম মুসলিমদের অবস্থা থেকে ভিন্নতর ছিল না। তাদের জাতির মনোভাব ও ভূমিকা মক্কার কুরাইশ বংশীয় কাফিরদের মতোই ছিল। এ কাহিনী থেকে ঈমানদারদেরকে এ শিক্ষা দেয়া হয়েছে যে, যদি কাফিররা সীমাহীন ক্ষমতা ও আধিপত্যের অধিকারী হয়ে থাকে এবং তাদের যুলুম-নির্যাতনের ফলে মুমিনরা সীমাহীন কষ্ট পায়, তবুও বাতিলের সামনে মাথা নত করা উচিত নয়। বরং আল্লাহর উপর ভরসা করে দেশ থেকে বের হয়ে যাওয়া উচিত। এ প্রসঙ্গে আনুসাঙ্গিকভাবে এ কথাও বলা হয়েছে যে, আসহাবে কাহাফের কাহিনী আখিরাত বিশ্বাসের নির্ভুলতার একটি প্রমাণ। যেভাবে আল্লাহ তা‘আলা আসহাবে কাহফকে সুদীর্ঘকাল মৃত্যু নিদ্রায় বিভোর করে রাখার পর আবার জীবিত করে তুললেন- ঠিক তেমনিভাবে তিনি কিয়ামতের দিন সকল মানুষকে একত্রে জীবিত করতেও সক্ষম।
اَمْ حَسِبْتَ اَنَّ اَصْحَابَ الْكَهْفِ وَالرَّقِيْمِ كَانُوْا مِنْ اٰيَاتِنَا عَجَبًا
তুমি কি মনে করো যে, গুহা ও রাকীমের অধিবাসীরা আমার নিদর্শনাবলির মধ্যে বিস্ময়কর? (সূরা কাহফ- ৯)
نَحْنُ نَقُصُّ عَلَيْكَ نَبَاَهُمْ بِالْحَقِّ
আমি তোমার নিকট তাদের বৃত্তামত্ম সঠিকভাবে বর্ণনা করছি। (সূরা কাহফ- ১৩)
তারা ছিলেন কয়েকজন ঈমানদার যুবক :
اِنَّهُمْ فِتْيَةٌ اٰمَنُوْا بِرَبِّهِمْ وَزِدْنَاهُمْ هُدًى
তারা ছিল কয়েকজন যুবক, তারা তাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান এনেছিল এবং আমি তাদেরকে সৎপথে চলার শক্তি বৃদ্ধি করে দিয়েছিলাম। (সূরা কাহফ- ১৩)
তাদের সংখ্যা নিয়ে লোকেরা মতভেদ করেছিল :
سَيَقُوْلُوْنَ ثَلَاثَةٌ رَّابِعُهُمْ كَلْبُهُمْۚ وَيَقُوْلُوْنَ خَمْسَةٌ سَادِسُهُمْ كَلْبُهُمْ رَجْمًا ۢبِالْغَيْبِۚ وَيَقُوْلُوْنَ سَبْعَةٌ وَّثَامِنُهُمْ كَلْبُهُمْؕ قُلْ رَّبِّيْۤ اَعْلَمُ بِعِدَّتِهِمْ مَّا يَعْلَمُهُمْ اِلَّا قَلِيْلٌ فَلَا تُمَارِ فِيْهِمْ اِلَّا مِرَآءً ظَاهِرًا وَّلَا تَسْتَفْتِ فِيْهِمْ مِّنْهُمْ اَحَدًا
অচিরেই তারা বলবে, তারা ছিল তিনজন, তাদের চতুর্থটি ছিল তাদের কুকুর। আবার কেউ কেউ বলবে, তারা ছিল পাঁচজন, তাদের ষষ্ঠটি ছিল তাদের কুকুর- (মূলত) তারা অজানা বিষয়ে অনুমানের উপর নির্ভর করে। আবার কেউ কেউ বলবে, তারা ছিল সাতজন, তাদের অষ্টমটি ছিল তাদের কুকুর। বলো, আমার প্রতিপালকই তাদের সংখ্যা ভালোভাবে জানেন; আর (প্রকৃতপক্ষে) তাদের সংখ্যা অল্প কয়েকজনই জানে। সাধারণ আলোচনা ব্যতীত তুমি তাদের বিষয়ে বিতর্ক করো না এবং এদের কাউকে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করো না। (সূরা কাহফ- ২২)
তারা ছিল আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী :
وَرَبَطْنَا عَلٰى قُلُوْبِهِمْ اِذْ قَامُوْا فَقَالُوْا رَبُّنَا رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ لَنْ نَّدْعُوَاْ مِنْ دُوْنِهٖۤ اِلٰهًا لَّقَدْ قُلْنَاۤ اِذًا شَطَطًا
আর আমি তাদের অন্তর দৃঢ় করে দিলাম। ফলে যখন তারা উঠে দাঁড়াল তখন বলল, আমাদের প্রতিপালক তিনিই যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর প্রতিপালক। আমরা কখনই তাঁর পরিবর্তে অন্য কোন ইলাহকে আহবান করব না। আর যদি আমরা এমনটি বলে থাকি, তবে তা হবে অতিশয় গর্হিত কাজ। (সূরা কাহফ- ১৪)
তাদের জাতি শিরকে লিপ্ত ছিল :
هٰۤؤُلَآءِ قَوْمُنَا اتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِهٖۤ اٰلِهَةًؕ لَوْلَا يَأْتُوْنَ عَلَيْهِمْ بِسُلْطَانٍ ۢبَيِّنٍؕ فَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرٰى عَلَى اللهِ كَذِبًا
আমাদেরই এ সম্প্রদায় আল্লাহর পরিবর্তে অনেক ইলাহ্ গ্রহণ করেছে। তারা এ সমসত্ম ইলাহ্ সম্বন্ধে স্পষ্ট প্রমাণ উপস্থিত করে না কেন? আর যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? (সূরা কাহফ- ১৫)
তারা আল্লাহর রহমত কামনা করে একটি গুহায় আশ্রয় নেয় :
اِذْ اَوَى الْفِتْيَةُ اِلَى الْكَهْفِ فَقَالُوْا رَبَّنَاۤ اٰتِنَا مِنْ لَّدُنْكَ رَحْمَةً وَّهَيِّئْ لَنَا مِنْ اَمْرِنَا رَشَدًا
যখন যুবকরা গুহায় আশ্রয় নিল তখন তারা বলেছিল, হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি নিজ হতে আমাদেরকে অনুগ্রহ দান করো এবং আমাদের জন্য আমাদের কাজকর্ম সঠিকভাবে পরিচালনার ব্যবস্থা করো। (সূরা কাহফ- ১০)
আল্লাহ তাদের প্রতি দয়া করলেন :
وَاِذِ اعْتَزَلْتُمُوْهُمْ وَمَا يَعْبُدُوْنَ اِلَّا اللهَ فَأْوُوْاۤ اِلَى الْكَهْفِ يَنْشُرْ لَكُمْ رَبُّكُمْ مِّنْ رَّحْمَتِهٖ وَيُهَيِّئْ لَكُمْ مِّنْ اَمْرِكُمْ مِّرْفَقًا
যখন তোমরা তাদের ও তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদাত করে তাদের হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে, অতঃপর তোমরা গুহায় আশ্রয় গ্রহণ করলে তখন তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্য তাঁর দয়া বিসত্মার করলেন এবং তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কাজকর্মকে ফলপ্রসূ করার ব্যবস্থা করলেন। (সূরা কাহফ- ১৬)
তারা নিদ্রাবস্থায় পার্শ্ব পরিবর্তন করত :
وَتَحْسَبُهُمْ اَيْقَاظًا وَّهُمْ رُقُوْدٌۗ وَنُقَلِّبُهُمْ ذَاتَ الْيَمِيْنِ وَذَاتَ الشِّمَالِ
তুমি মনে করতে তারা জাগ্রত, কিন্তু তারা ছিল নিদ্রিত। আমি তাদেরকে পার্শ্ব পরিবর্তন করাতাম ডান দিকে ও বাম দিকে। (সূরা কাহফ- ১৮)
সূর্যের কিরণ তাদের গর্তে প্রবেশ করত না :
وَتَرَى الشَّمْسَ اِذَا طَلَعَتْ تَّزَاوَرُ عَنْ كَهْفِهِمْ ذَاتَ الْيَمِيْنِ وَاِذَا غَرَبَتْ تَّقْرِضُهُمْ ذَاتَ الشِّمَالِ وَهُمْ فِيْ فَجْوَةٍ مِّنْهُؕ ذٰلِكَ مِنْ اٰيَاتِ اللهِؕ مَنْ يَّهْدِ اللهُ فَهُوَ الْمُهْتَدِۚ وَمَنْ يُّضْلِلْ فَلَنْ تَجِدَ لَهٗ وَلِيًّا مُّرْشِدًا
তুমি দেখতে পেতে- তারা গুহার প্রশসত্ম চত্বরে অবস্থিত, সূর্য উদয়কালে (তার কিরণ) তাদের গুহার দক্ষিণ পার্শ্বে হেলে যায় এবং অসত্মকালে (তার কিরণ) বাম পার্শ্ব দিয়ে তাদেরকে অতিক্রম করে, এগুলো আল্লাহর নিদর্শন। আল্লাহ যাকে পথপ্রদর্শন করেন, সে সৎপথপ্রাপ্ত হয় এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তুমি কখনো তার কোন পথপ্রদর্শনকারী অভিভাবক পাবে না। (সূরা কাহফ- ১৭)
একটি কুকুর তাদেরকে পাহারা দিত :
وَكَلْبُهُمْ بَاسِطٌ ذِرَاعَيْهِ بِالْوَصِيْدِ لَوِ اطَّلَعْتَ عَلَيْهِمْ لَوَلَّيْتَ مِنْهُمْ فِرَارًا وَّلَمُلِئْتَ مِنْهُمْ رُعْبًا
আর তাদের কুকুর সম্মুখের পা দু’টি গুহাদ্বারে প্রসারিত করে তাকিয়ে ছিল, তাদেরকে দেখলে তুমি পেছন ফিরে পলায়ন করতে এবং তাদের ভয়ে আতংকগ্রসত্ম হয়ে পড়তে। (সূরা কাহফ- ১৮)
পরে আল্লাহ তাদেরকে জীবিত করেছেন :
ثُمَّ بَعَثْنَاهُمْ لِنَعْلَمَ اَيُّ الْحِزْبَيْنِ اَحْصٰى لِمَا لَبِثُوْاۤ اَمَدًا
তারপর আমি তাদেরকে জাগ্রত করলাম এ কথা জানানোর জন্য যে, দু’দলের মধ্যে কারা তাদের অবস্থানকাল সঠিকভাবে নির্ণয় করতে পারে। (সূরা কাহফ- ১২)
কতদিন গর্তে ছিল তা তারা বুঝতে পারেনি :
وَكَذٰلِكَ بَعَثْنَاهُمْ لِيَتَسَآءَلُوْا بَيْنَهُمْؕ قَالَ قَآئِلٌ مِّنْهُمْ كَمْ لَبِثْتُمْؕ قَالُوْا لَبِثْنَا يَوْمًا اَوْ بَعْضَ يَوْمٍؕ قَالُوْا رَبُّكُمْ اَعْلَمُ بِمَا لَبِثْتُمْ
এভাবেই আমি তাদেরকে জাগ্রত করলাম, যাতে তারা পরস্পরের মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করে নেয়। অতঃপর তাদের একজন বলল, তোমরা এখানে কত কাল অবস্থান করেছ? কেউ কেউ বলল, আমরা অবস্থান করেছি এক দিন অথবা এক দিনের কিছু অংশ। কেউ বলল, তোমরা কত কাল অবস্থান করেছ তা তোমাদের প্রতিপালকই ভালো জানেন। (সূরা কাহফ- ১৯)
তাদের গোহায় অবস্থানকাল :
فَضَرَبْنَا عَلٰۤى اٰذَانِهِمْ فِى الْكَهْفِ سِنِيْنَ عَدَدًا
অতঃপর আমি তাদেরকে গুহায় কয়েক বৎসর ঘুমমত্ম অবস্থায় রাখলাম। (সূরা কাহফ- ১১)
قُلِ اللهُ اَعْلَمُ بِمَا لَبِثُوْاۚ لَهٗ غَيْبُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِؕ اَبْصِرْ بِهٖ وَاَسْمِعْؕ مَا لَهُمْ مِّنْ دُوْنِهٖ مِنْ وَّلِيٍّؗ وَلَا يُشْرِكُ فِيْ حُكْمِهٖۤ اَحَدًا
বলো, তারা কত কাল ছিল তা আল্লাহই ভালো জানেন, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর অজ্ঞাত বিষয়ের জ্ঞান তাঁরই। তিনি কত সুন্দর দ্রষ্টা ও শ্রোতা! তিনি ব্যতীত তাদের অন্য কোন অভিভাবক নেই। আর তিনি কাউকে নিজ কর্তৃত্বে শরীক করেন না। (সূরা কাহফ- ২৬)
وَلَبِثُوْا فِيْ كَهْفِهِمْ ثَلَاثَ مِائَةٍ سِنِيْنَ وَازْدَادُوْا تِسْعًا
তারা তাদের গুহায় ছিল তিনশ’ বৎসর এবং আরো নয় বৎসর। (সূরা কাহফ- ২৫)
আসহাবে কাহফের কাহিনীর শিক্ষা :
কুরআন যে তাওহীদের দাওয়াত দিচ্ছে আসহাবে কাহফের লোকেরা ছিলেন এরই প্রবক্তা। তাদের অবস্থা মক্কার মজলুম মুসলিমদের অবস্থা থেকে ভিন্নতর ছিল না। তাদের জাতির মনোভাব ও ভূমিকা মক্কার কুরাইশ বংশীয় কাফিরদের মতোই ছিল। এ কাহিনী থেকে ঈমানদারদেরকে এ শিক্ষা দেয়া হয়েছে যে, যদি কাফিররা সীমাহীন ক্ষমতা ও আধিপত্যের অধিকারী হয়ে থাকে এবং তাদের যুলুম-নির্যাতনের ফলে মুমিনরা সীমাহীন কষ্ট পায়, তবুও বাতিলের সামনে মাথা নত করা উচিত নয়। বরং আল্লাহর উপর ভরসা করে দেশ থেকে বের হয়ে যাওয়া উচিত। এ প্রসঙ্গে আনুসাঙ্গিকভাবে এ কথাও বলা হয়েছে যে, আসহাবে কাহাফের কাহিনী আখিরাত বিশ্বাসের নির্ভুলতার একটি প্রমাণ। যেভাবে আল্লাহ তা‘আলা আসহাবে কাহফকে সুদীর্ঘকাল মৃত্যু নিদ্রায় বিভোর করে রাখার পর আবার জীবিত করে তুললেন- ঠিক তেমনিভাবে তিনি কিয়ামতের দিন সকল মানুষকে একত্রে জীবিত করতেও সক্ষম।
জিহাদের সংজ্ঞা : জিহাদ অর্থ হচ্ছে, কোন লক্ষ্য অর্জনের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য সবরকমের প্রচেষ্টা ও সাধনা এর অন্তর্ভুক্ত। আর কিতাল হচ্ছে, দ্বীন ইসলামকে বিজয়ী করার জন্য চূড়ান্তভাবে শত্রুর বিরুদ্ধে সশস্ত্র মুকাবেলা করা।
মুজাহিদ এমন ব্যক্তিকে বলা হয়, যে সর্বক্ষণ জিহাদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সাধনে নিমগ্ন থাকে। মুজাহিদের হাত, পা ও শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ জিহাদের উদ্দেশ্য সম্পাদনের জন্য সারাক্ষণ প্রচেষ্টা করে চলে। তার মস্তিষ্ক সবসময় ঐ উদ্দেশ্য সম্পাদনের উপায় ও কৌশল উদ্ভাবনে ব্যস্ত থাকে। তার কণ্ঠ ও লেখনী এ উদ্দেশ্যের প্রচারণায় নিয়োজিত থাকে। জিহাদের উদ্দেশ্য পূর্ণ করার জন্য সে নিজের সম্ভাব্য সমস্ত উপায়-উপকরণ প্রয়োগ করে, পূর্ণ শক্তি দিয়ে এ পথের সমস্ত বাধার মুকাবিলা করে। এমনকি শেষ পর্যন্ত যখন প্রাণ উৎসর্গ করার প্রয়োজন দেখা দেয়, তখন নির্দ্বিধায় এগিয়ে যায়। আল্লাহর পথে জিহাদ হচ্ছে, এ সবকিছু একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করা। এ দুনিয়ায় একমাত্র আল্লাহর দ্বীন তথা আল্লাহপ্রদত্ত জীবনবিধান প্রতিষ্ঠা করা এবং তাকে অন্যান্য সকল বিধানের উপর বিজয়ী করা। মুজাহিদের সামনে এছাড়া আর দ্বিতীয় কোন উদ্দেশ্য থাকে না।
জিহাদের ক্ষেত্র : জিহাদের প্রথম অভিযান পরিচালিত হয় মানুষের নাফসে আম্মারার বিরুদ্ধে। এ নফসই মানুষকে সবসময় ঈমান ও আনুগত্যের পথ থেকে সরিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা করে। তাকে নিয়ন্ত্রণ না করা পর্যন্ত বাইরের কোন প্রচেষ্টা ও সংগ্রামের সম্ভাবনা নেই। এরপর সারা দুনিয়াই হচ্ছে জিহাদের ক্ষেত্র। যেসব শক্তি আল্লাহর পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে, যারা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী চলতে বাধা দেয়, যারা পুরোপুরি আল্লাহর বান্দা হিসেবে জীবন-যাপন করতে দেয় না এবং যারা নিজের বা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো বান্দা হওয়ার জন্য বাধ্য করে, তাদের বিরুদ্ধে নিজেদের সম্ভাব্য সমস্ত শক্তি দিয়ে সংগ্রাম চালাতে হয়। যেসব মতবাদ, রীতিনীতি, রসম-রেওয়াজ, সাংস্কৃতিক ধারা ও সামাজিক নিয়ম সত্য দ্বীনের সাথে সাংঘর্ষিক সেগুলোর সাথে মুমিনকে লড়তে হয়।
যেসব রাষ্ট্রব্যবস্থার ভিত্তি গড়ে উঠেছে আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের উপর এবং যা মানুষকে সত্যের আনুগত্য করার পরিবর্তে মিথ্যার আনুগত্য করতে বাধ্য করে, যা আল্লাহর আনুগত্যমুক্ত থেকে নিজের ফরমান জারী করে এবং সত্যের পরিবর্তে মিথ্যাকে বিকশিত করার জন্য শক্তি প্রয়োগ করে- এসব প্রতিবন্ধক ও সংঘর্ষশীল শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে নিজের লক্ষ্য অর্জন করতে হয়। এ প্রচেষ্টা বা সংগ্রাম দু’এক দিনের জন্য নয়, বরং সারাজীবনের জন্য। দিন-রাতের চবিবশ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিটি মুহূর্তের। একটি ময়দানে নয় বরং জীবনের প্রত্যেকটি ময়দানে ও প্রতিটি দিকে।
মুজাহিদ এমন ব্যক্তিকে বলা হয়, যে সর্বক্ষণ জিহাদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সাধনে নিমগ্ন থাকে। মুজাহিদের হাত, পা ও শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ জিহাদের উদ্দেশ্য সম্পাদনের জন্য সারাক্ষণ প্রচেষ্টা করে চলে। তার মস্তিষ্ক সবসময় ঐ উদ্দেশ্য সম্পাদনের উপায় ও কৌশল উদ্ভাবনে ব্যস্ত থাকে। তার কণ্ঠ ও লেখনী এ উদ্দেশ্যের প্রচারণায় নিয়োজিত থাকে। জিহাদের উদ্দেশ্য পূর্ণ করার জন্য সে নিজের সম্ভাব্য সমস্ত উপায়-উপকরণ প্রয়োগ করে, পূর্ণ শক্তি দিয়ে এ পথের সমস্ত বাধার মুকাবিলা করে। এমনকি শেষ পর্যন্ত যখন প্রাণ উৎসর্গ করার প্রয়োজন দেখা দেয়, তখন নির্দ্বিধায় এগিয়ে যায়। আল্লাহর পথে জিহাদ হচ্ছে, এ সবকিছু একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করা। এ দুনিয়ায় একমাত্র আল্লাহর দ্বীন তথা আল্লাহপ্রদত্ত জীবনবিধান প্রতিষ্ঠা করা এবং তাকে অন্যান্য সকল বিধানের উপর বিজয়ী করা। মুজাহিদের সামনে এছাড়া আর দ্বিতীয় কোন উদ্দেশ্য থাকে না।
জিহাদের ক্ষেত্র : জিহাদের প্রথম অভিযান পরিচালিত হয় মানুষের নাফসে আম্মারার বিরুদ্ধে। এ নফসই মানুষকে সবসময় ঈমান ও আনুগত্যের পথ থেকে সরিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা করে। তাকে নিয়ন্ত্রণ না করা পর্যন্ত বাইরের কোন প্রচেষ্টা ও সংগ্রামের সম্ভাবনা নেই। এরপর সারা দুনিয়াই হচ্ছে জিহাদের ক্ষেত্র। যেসব শক্তি আল্লাহর পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে, যারা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী চলতে বাধা দেয়, যারা পুরোপুরি আল্লাহর বান্দা হিসেবে জীবন-যাপন করতে দেয় না এবং যারা নিজের বা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো বান্দা হওয়ার জন্য বাধ্য করে, তাদের বিরুদ্ধে নিজেদের সম্ভাব্য সমস্ত শক্তি দিয়ে সংগ্রাম চালাতে হয়। যেসব মতবাদ, রীতিনীতি, রসম-রেওয়াজ, সাংস্কৃতিক ধারা ও সামাজিক নিয়ম সত্য দ্বীনের সাথে সাংঘর্ষিক সেগুলোর সাথে মুমিনকে লড়তে হয়।
যেসব রাষ্ট্রব্যবস্থার ভিত্তি গড়ে উঠেছে আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের উপর এবং যা মানুষকে সত্যের আনুগত্য করার পরিবর্তে মিথ্যার আনুগত্য করতে বাধ্য করে, যা আল্লাহর আনুগত্যমুক্ত থেকে নিজের ফরমান জারী করে এবং সত্যের পরিবর্তে মিথ্যাকে বিকশিত করার জন্য শক্তি প্রয়োগ করে- এসব প্রতিবন্ধক ও সংঘর্ষশীল শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে নিজের লক্ষ্য অর্জন করতে হয়। এ প্রচেষ্টা বা সংগ্রাম দু’এক দিনের জন্য নয়, বরং সারাজীবনের জন্য। দিন-রাতের চবিবশ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিটি মুহূর্তের। একটি ময়দানে নয় বরং জীবনের প্রত্যেকটি ময়দানে ও প্রতিটি দিকে।
আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের জন্য রয়েছে বিরাট পুরস্কার :
لَا يَسْتَوِى الْقَاعِدُوْنَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ غَيْرُ اُولِى الضَّرَرِ وَالْمُجَاهِدُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْؕ فَضَّلَ اللهُ الْمُجَاهِدِيْنَ بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْ عَلَى الْقَاعِدِيْنَ دَرَجَةًؕ وَكُلًّا وَّعَدَ اللهُ الْحُسْنٰىؕ وَفَضَّلَ اللهُ الْمُجَاهِدِيْنَ عَلَى الْقَاعِدِيْنَ اَجْرًا عَظِيْمًا
মুমিনদের মধ্যে যারা অক্ষম নয়, অথচ ঘরে বসে থাকে এবং যারা আল্লাহর পথে স্বীয় জান-মাল দ্বারা জিহাদ করে, তারা সমান নয়। যারা স্বীয় জান-মাল দ্বারা জিহাদ করে আল্লাহ তাদেরকে ঘরে বসে থাকা ব্যক্তিদের উপর মর্যাদা দিয়েছেন; আর আল্লাহ সকলকেই কল্যাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আল্লাহ মহাপুরস্কারের ক্ষেত্রে মুজাহিদদেরকে ঘরে বসে থাকা লোকদের তুলনায় শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। (সূরা নিসা- ৯৫)
اَجَعَلْتُمْ سِقَايَةَ الْحَآجِّ وَعِمَارَةَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ كَمَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَجَاهَدَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِؕ لَا يَسْتَوُوْنَ عِنْدَ اللهِؕ وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
হাজীদের জন্য পানি সরবরাহ করা এবং মাসজিদুল হারামের রক্ষণাবেক্ষণ করাকে তোমরা কি তাদের পুণ্যের সমান মনে কর, যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান আনে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করে? কিন্তু তারা আল্লাহর নিকট সমান নয়। আর আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথ প্রদর্শন করেন না। (সূরা তাওবা- ১৯)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর কাছে লোক দেখানো ধর্মীয় কাজ করার কোন মূল্য নেই; বরং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা এবং তাঁর পথে কুরবানী ও ত্যাগ স্বীকার করার মধ্যেই যথার্থ মর্যাদা বিদ্ধমান। যে ব্যক্তি এসবের অধিকারী হয়, সে কোন উচ্চ বংশ ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের সাথে সম্পর্কিত না হলেও সে-ই যথার্থ মর্যাদাবান। কিন্তু যারা এসব গুণের অধিকারী নয়, তারা নিছক কিছু ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে থাকলেও তারা কোন অবস্থাতেই প্রকৃত মর্যাদার অধিকারী হতে পারবে না।
জিহাদে বের হওয়ার পর প্রতিটি কাজের বিনিময়ে সওয়াব লেখা হয় :
مَا كَانَ لِاَهْلِ الْمَدِيْنَةِ وَمَنْ حَوْلَهُمْ مِّنَ الْاَعْرَابِ اَنْ يَّتَخَلَّفُوْا عَنْ رَّسُوْلِ اللهِ وَلَا يَرْغَبُوْا بِاَنْفُسِهِمْ عَنْ نَّفْسِهٖؕ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ لَا يُصِيْبُهُمْ ظَمَأٌ وَّلَا نَصَبٌ وَّلَا مَخْمَصَةٌ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَلَا يَطَئُوْنَ مَوْطِئًا يَّغِيْظُ الْكُفَّارَ وَلَا يَنَالُوْنَ مِنْ عَدُوٍّ نَّيْلًا اِلَّا كُتِبَ لَهُمْ بِهٖ عَمَلٌ صَالِحٌؕ اِنَّ اللهَ لَا يُضِيْعُ اَجْرَ الْمُحْسِنِيْنَ ‐ وَلَا يُنْفِقُوْنَ نَفَقَةً صَغِيْرَةً وَّلَا كَبِيْرَةً وَّلَا يَقْطَعُوْنَ وَادِيًا اِلَّا كُتِبَ لَهُمْ لِيَجْزِيَهُمُ اللهُ اَحْسَنَ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
মদিনাবাসী ও তাদের পার্শ্ববর্তী মরুবাসীদের জন্য সঙ্গত নয় যে, তারা আল্লাহর রাসূলের সহগামী না হয়ে পেছনে রয়ে যাবে এবং তাঁর জীবনের চেয়ে নিজেদের জীবনকে প্রিয় মনে করবে। কেননা আল্লাহর পথে তাদের তৃষ্ণা, ক্লান্তি ও ক্ষুধায় ক্লিষ্ট হওয়া, কাফিরদের ক্রোধ উপেক্ষা করে (উপযুক্ত) পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং শত্রুদের নিকট হতে কিছু প্রাপ্ত হওয়া- সবই সৎকর্ম হিসেবে গণ্য হয়। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের প্রতিদান নষ্ট করেন না। আর তারা ক্ষুদ্র অথবা বৃহৎ যাই ব্যয় করে এবং যে কোন প্রান্তরই অতিক্রম করুক না কেন- এর সওয়াব তাদের জন্যই লিখে রাখা হয়; যাতে তারা যা করে আল্লাহ তাদেরকে তার চেয়ে আরো উত্তম পুরস্কার দিতে পারেন। (সূরা তাওবা- ১২০, ১২১)
জিহাদকারীরাই সফলতা লাভ করবে :
اَ لَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَهَاجَرُوْا وَجَاهَدُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْ اَعْظَمُ دَرَجَةً عِنْدَ اللهِؕ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَآئِزُوْنَ
যারা ঈমান আনে, হিজরত করে এবং নিজেদের সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে তারা আল্লাহর নিকট মর্যাদায় শ্রেষ্ঠ; আর তারাই সফলকাম। (সূরা তাওবা- ২০)
لٰكِنِ الرَّسُوْلُ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَعَهٗ جَاهَدُوْا بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْؕ وَاُولٰٓئِكَ لَهُمُ الْخَيْرَاتُ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ ‐ اَعَدَّ اللّٰهُ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَاؕ ذٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ
কিন্তু আল্লাহর রাসূল এবং তাঁর সাথে যারা ঈমান এনেছে তারা নিজেদের জান-মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে। অতএব যাবতীয় কল্যাণ তাদের জন্যই নির্দিষ্ট এবং তারাই সফলকাম। আল্লাহ তাদের জন্য এমন এক জান্নাত প্রস্তুত করে রেখেছেন, যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত রয়েছে। সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে; বস্তুত এটাই হচ্ছে সর্বোত্তম সাফল্য। (সূরা তাওবা- ৮৮, ৮৯)
আল্লাহ জিহাদকারীদেরকে ভালোবাসেন :
اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الَّذِيْنَ يُقَاتِلُوْنَ فِيْ سَبِيْلِهٖ صَفًّا كَاَنَّهُمْ بُنْيَانٌ مَّرْصُوْصٌ
নিশ্চয় যারা সারিবদ্ধভাবে সীসাঢালা প্রাচীরের মতো আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে, আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা সাফ- ৪)
জিহাদ করলে নিজেরই কল্যাণ হয় :
وَمَنْ جَاهَدَ فَاِنَّمَا يُجَاهِدُ لِنَفْسِهٖؕ اِنَّ اللّٰهَ لَغَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِيْنَ
যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদ করে, সে তার নিজের কল্যাণের জন্যই তা করে। নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্ববাসীদের থেকে অমুখাপেক্ষী। (সূরা আনকাবূত- ৬)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ মানুষের কাছে সংগ্রামের দাবী এজন্য করছেন না যে, নিজের সার্বভৌম কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মানুষের সাহায্যের প্রয়োজন, বরং এটিই মানুষের উন্নতি ও অগ্রগতির পথ। এ পথে অগ্রসর হয়ে মুসলিমরা এমন শক্তির অধিকারী হতে পারে, যার ফলে তারা দুনিয়ায় কল্যাণের অধিকারী এবং পরকালে আল্লাহর জান্নাত লাভের সৌভাগ্য লাভ করতে পারবে। এ সংগ্রাম চালিয়ে গেলে তারা নিজেরাই উপকৃত হবে।
জিহাদ করলে দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার তাওফীক হয় :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنْ تَنْصُرُوا اللّٰهَ يَنْصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ اَقْدَامَكُمْ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি (দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে) আল্লাহকে সাহায্য কর, তবে আল্লাহও তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা সমূহ সুদৃঢ় রাখবেন। (সূরা মুহাম্মাদ- ৭)
জিহাদ জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায় :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا هَلْ اَدُلُّكُمْ عَلٰى تِجَارَةٍ تُنْجِيْكُمْ مِّنْ عَذَابٍ اَلِيْمٍ ‐ تُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ وَرَسُوْلِهٖ وَتُجَاهِدُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ بِاَمْوَالِكُمْ وَاَنْفُسِكُمْ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
হে মুমিনগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন বাণিজ্যের সন্ধান দেব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হতে রক্ষা করবে? (তা এই যে) তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং তোমাদের ধনসম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে! (সূরা সাফ- ১০, ১১)
জিহাদ জান্নাত লাভের মাধ্যম :
يَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ وَيُدْخِلْكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِيْ جَنَّاتِ عَدْنٍؕ ذٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ
(আল্লাহ) তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন এবং তোমাদেরকে এমন এক জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত রয়েছে। (তাদের জন্য আরো রয়েছে) স্থায়ী জান্নাতের উত্তম বাসগৃহ; আর এটাই মহাসাফল্য। (সূরা সাফ- ১২)
জিহাদের নির্দেশ :
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ جَاهِدِ الْكُفَّارَ وَالْمُنَافِقِيْنَ وَاغْلُظْ عَلَيْهِمْؕ وَمَاْوَاهُمْ جَهَنَّمُؕ وَبِئْسَ الْمَصِيْرُ
হে নবী! কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করো ও তাদের প্রতি কঠোর হও। তাদের আবাসস্থল হচ্ছে জাহান্নাম, আর তা কতই না নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল! (সূরা তাওবা- ৭৩)
জিহাদের জন্য উৎসাহ প্রদান :
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ حَرِّضِ الْمُؤْمِنِيْنَ عَلَى الْقِتَالِؕ اِنْ يَّكُنْ مِّنْكُمْ عِشْرُوْنَ صَابِرُوْنَ يَغْلِبُوْا مِائَتَيْنِۚ وَاِنْ يَّكُنْ مِّنْكُمْ مِّائَةٌ يَّغْلِبُوْاۤ اَلْفًا مِّنَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِاَنَّهُمْ قَوْمٌ لَّا يَفْقَهُوْنَ
হে নবী! মুমিনদেরকে যুদ্ধের জন্য উদ্বুদ্ধ করো; তোমাদের মধ্যে বিশজন ধৈর্যশীল থাকলে তাদের (শত্রুদের) দু’শ জনের উপর বিজয়ী হবে এবং তোমাদের মধ্যে একশ’ জন থাকলে এক সহস্র কাফিরের উপর বিজয়ী হবে। কারণ তারা এমন এক সম্প্রদায়, যাদের কোন বোধশক্তি নেই। (সূরা আনফাল- ৬৫)
فَقَاتِلْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِۚ لَا تُكَلَّفُ اِلَّا نَفْسَكَ وَحَرِّضِ الْمُؤْمِنِيْنَۚ عَسَى اللهُ اَنْ يَّكُفَّ بَاْسَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاؕ وَاللهُ اَشَدُّ بَاْسًا وَّاَشَدُّ تَنْكِيْلًا
সুতরাং আল্লাহর পথে যুদ্ধ করো; তোমাকে শুধু তোমার নিজের জন্য দায়ী করা হবে এবং মুমিনদেরকে উদ্বুদ্ধ করো, হয়তো আল্লাহ কাফিরদের শক্তি সংযত করবেন। আর আল্লাহ শক্তিতে প্রবল ও শাস্তিদানে খুবই কঠোর। (সূরা নিসা- ৮৪)
আল্লাহ জিহাদকে ফরয করে দিয়েছেন :
وَقَاتِلُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
তোমরা আল্লাহর পথে লড়াই করো এবং জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী। (সূরা বাক্বারা- ২৪৪)
كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ وَهُوَ كُرْهٌ لَّكُمْۚ وَعَسٰۤى اَنْ تَكْرَهُوْا شَيْئًا وَّهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْۚ وَعَسٰۤى اَنْ تُحِبُّوْا شَيْئًا وَّهُوَ شَرٌّ لَّكُمْؕ وَاللهُ يَعْلَمُ وَاَنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ
যুদ্ধ করাকে তোমাদের উপর ফরয করে দেয়া হয়েছে, যা তোমাদের নিকট খুবই অপ্রিয়। হ্যাঁ, তোমরা যা অপছন্দ করছ, হতে পারে তা-ই তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আবার তোমরা যা পছন্দ করছ, হতে পারে তা-ই তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। মূলত আল্লাহই জানেন, কিন্তু তোমরাই জান না। (সূরা বাক্বারা- ২১৬)
অনেক নবী এবং তাদের অনুসারীরা যুদ্ধ করেছেন :
وَكَاَيِّنْ مِّنْ نَّبِيٍّ قَاتَلَ مَعَهٗ رِبِّيُّوْنَ كَثِيْرٌۚ فَمَا وَهَنُوْا لِمَاۤ اَصَابَهُمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَمَا ضَعُفُوْا وَمَا اسْتَكَانُوْاؕ وَاللهُ يُحِبُّ الصَّابِرِيْنَ
এমন অনেক নবী ছিলেন, যাদের সাথে আল্লাহওয়ালা অনেক লোক যুদ্ধ করেছিল। অতঃপর আল্লাহর পথে যা সংঘটিত হয়েছিল তাতে তারা নিরুৎসাহ হয়নি, শক্তিহীন হয়নি এবং বিচলিতও হয়নি। (জেনে রেখো) আল্লাহ ধৈর্যশীলদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৪৬)
মুমিনগণ আল্লাহর পথে লড়াই করে, আর কাফিররা তাগুতের পথে লড়াই করে :
اَ لَّذِيْنَ اٰمَنُوْا يُقَاتِلُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِۚ وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا يُقَاتِلُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ الطَّاغُوْتِ فَقَاتِلُوْاۤ اَوْلِيَآءَ الشَّيْطَانِۚ اِنَّ كَيْدَ الشَّيْطَانِ كَانَ ضَعِيْفًا
যারা মুমিন তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে এবং যারা কাফির তারা তাগুতের পথে যুদ্ধ করে। সুতরাং তোমরা শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো; নিশ্চয় শয়তানের কৌশল খুবই দুর্বল। (সূরা নিসা- ৭৬)
অস্ত্র কম হোক আর বেশি হোক বেরিয়ে পড়তে হবে :
اِنْفِرُوْا خِفَافًا وَّثِقَالًا وَّجَاهِدُوْا بِاَمْوَالِكُمْ وَاَنْفُسِكُمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِؕ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
তোমরা অভিযানে বের হয়ে পড়ো, হালকা অবস্থায় হোক অথবা ভারি অবস্থায় এবং তোমাদের সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করো। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা জানতে! (সূরা তাওবা- ৪১)
ব্যাখ্যা : এখানে মুসলিমদেরকে যুদ্ধ করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে এবং দ্বীনের ব্যাপারে কোন প্রকার সম্পর্ক, আত্মীয়তা ও বৈষয়িক সুবিধার কথা একটুও বিবেচনায় না এনে বেরিয়ে পড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
لَا يَسْتَوِى الْقَاعِدُوْنَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ غَيْرُ اُولِى الضَّرَرِ وَالْمُجَاهِدُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْؕ فَضَّلَ اللهُ الْمُجَاهِدِيْنَ بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْ عَلَى الْقَاعِدِيْنَ دَرَجَةًؕ وَكُلًّا وَّعَدَ اللهُ الْحُسْنٰىؕ وَفَضَّلَ اللهُ الْمُجَاهِدِيْنَ عَلَى الْقَاعِدِيْنَ اَجْرًا عَظِيْمًا
মুমিনদের মধ্যে যারা অক্ষম নয়, অথচ ঘরে বসে থাকে এবং যারা আল্লাহর পথে স্বীয় জান-মাল দ্বারা জিহাদ করে, তারা সমান নয়। যারা স্বীয় জান-মাল দ্বারা জিহাদ করে আল্লাহ তাদেরকে ঘরে বসে থাকা ব্যক্তিদের উপর মর্যাদা দিয়েছেন; আর আল্লাহ সকলকেই কল্যাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আল্লাহ মহাপুরস্কারের ক্ষেত্রে মুজাহিদদেরকে ঘরে বসে থাকা লোকদের তুলনায় শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। (সূরা নিসা- ৯৫)
اَجَعَلْتُمْ سِقَايَةَ الْحَآجِّ وَعِمَارَةَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ كَمَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَجَاهَدَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِؕ لَا يَسْتَوُوْنَ عِنْدَ اللهِؕ وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
হাজীদের জন্য পানি সরবরাহ করা এবং মাসজিদুল হারামের রক্ষণাবেক্ষণ করাকে তোমরা কি তাদের পুণ্যের সমান মনে কর, যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান আনে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করে? কিন্তু তারা আল্লাহর নিকট সমান নয়। আর আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথ প্রদর্শন করেন না। (সূরা তাওবা- ১৯)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর কাছে লোক দেখানো ধর্মীয় কাজ করার কোন মূল্য নেই; বরং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা এবং তাঁর পথে কুরবানী ও ত্যাগ স্বীকার করার মধ্যেই যথার্থ মর্যাদা বিদ্ধমান। যে ব্যক্তি এসবের অধিকারী হয়, সে কোন উচ্চ বংশ ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের সাথে সম্পর্কিত না হলেও সে-ই যথার্থ মর্যাদাবান। কিন্তু যারা এসব গুণের অধিকারী নয়, তারা নিছক কিছু ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে থাকলেও তারা কোন অবস্থাতেই প্রকৃত মর্যাদার অধিকারী হতে পারবে না।
জিহাদে বের হওয়ার পর প্রতিটি কাজের বিনিময়ে সওয়াব লেখা হয় :
مَا كَانَ لِاَهْلِ الْمَدِيْنَةِ وَمَنْ حَوْلَهُمْ مِّنَ الْاَعْرَابِ اَنْ يَّتَخَلَّفُوْا عَنْ رَّسُوْلِ اللهِ وَلَا يَرْغَبُوْا بِاَنْفُسِهِمْ عَنْ نَّفْسِهٖؕ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ لَا يُصِيْبُهُمْ ظَمَأٌ وَّلَا نَصَبٌ وَّلَا مَخْمَصَةٌ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَلَا يَطَئُوْنَ مَوْطِئًا يَّغِيْظُ الْكُفَّارَ وَلَا يَنَالُوْنَ مِنْ عَدُوٍّ نَّيْلًا اِلَّا كُتِبَ لَهُمْ بِهٖ عَمَلٌ صَالِحٌؕ اِنَّ اللهَ لَا يُضِيْعُ اَجْرَ الْمُحْسِنِيْنَ ‐ وَلَا يُنْفِقُوْنَ نَفَقَةً صَغِيْرَةً وَّلَا كَبِيْرَةً وَّلَا يَقْطَعُوْنَ وَادِيًا اِلَّا كُتِبَ لَهُمْ لِيَجْزِيَهُمُ اللهُ اَحْسَنَ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
মদিনাবাসী ও তাদের পার্শ্ববর্তী মরুবাসীদের জন্য সঙ্গত নয় যে, তারা আল্লাহর রাসূলের সহগামী না হয়ে পেছনে রয়ে যাবে এবং তাঁর জীবনের চেয়ে নিজেদের জীবনকে প্রিয় মনে করবে। কেননা আল্লাহর পথে তাদের তৃষ্ণা, ক্লান্তি ও ক্ষুধায় ক্লিষ্ট হওয়া, কাফিরদের ক্রোধ উপেক্ষা করে (উপযুক্ত) পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং শত্রুদের নিকট হতে কিছু প্রাপ্ত হওয়া- সবই সৎকর্ম হিসেবে গণ্য হয়। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের প্রতিদান নষ্ট করেন না। আর তারা ক্ষুদ্র অথবা বৃহৎ যাই ব্যয় করে এবং যে কোন প্রান্তরই অতিক্রম করুক না কেন- এর সওয়াব তাদের জন্যই লিখে রাখা হয়; যাতে তারা যা করে আল্লাহ তাদেরকে তার চেয়ে আরো উত্তম পুরস্কার দিতে পারেন। (সূরা তাওবা- ১২০, ১২১)
জিহাদকারীরাই সফলতা লাভ করবে :
اَ لَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَهَاجَرُوْا وَجَاهَدُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْ اَعْظَمُ دَرَجَةً عِنْدَ اللهِؕ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَآئِزُوْنَ
যারা ঈমান আনে, হিজরত করে এবং নিজেদের সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে তারা আল্লাহর নিকট মর্যাদায় শ্রেষ্ঠ; আর তারাই সফলকাম। (সূরা তাওবা- ২০)
لٰكِنِ الرَّسُوْلُ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَعَهٗ جَاهَدُوْا بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْؕ وَاُولٰٓئِكَ لَهُمُ الْخَيْرَاتُ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ ‐ اَعَدَّ اللّٰهُ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَاؕ ذٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ
কিন্তু আল্লাহর রাসূল এবং তাঁর সাথে যারা ঈমান এনেছে তারা নিজেদের জান-মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে। অতএব যাবতীয় কল্যাণ তাদের জন্যই নির্দিষ্ট এবং তারাই সফলকাম। আল্লাহ তাদের জন্য এমন এক জান্নাত প্রস্তুত করে রেখেছেন, যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত রয়েছে। সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে; বস্তুত এটাই হচ্ছে সর্বোত্তম সাফল্য। (সূরা তাওবা- ৮৮, ৮৯)
আল্লাহ জিহাদকারীদেরকে ভালোবাসেন :
اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الَّذِيْنَ يُقَاتِلُوْنَ فِيْ سَبِيْلِهٖ صَفًّا كَاَنَّهُمْ بُنْيَانٌ مَّرْصُوْصٌ
নিশ্চয় যারা সারিবদ্ধভাবে সীসাঢালা প্রাচীরের মতো আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে, আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা সাফ- ৪)
জিহাদ করলে নিজেরই কল্যাণ হয় :
وَمَنْ جَاهَدَ فَاِنَّمَا يُجَاهِدُ لِنَفْسِهٖؕ اِنَّ اللّٰهَ لَغَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِيْنَ
যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদ করে, সে তার নিজের কল্যাণের জন্যই তা করে। নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্ববাসীদের থেকে অমুখাপেক্ষী। (সূরা আনকাবূত- ৬)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ মানুষের কাছে সংগ্রামের দাবী এজন্য করছেন না যে, নিজের সার্বভৌম কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মানুষের সাহায্যের প্রয়োজন, বরং এটিই মানুষের উন্নতি ও অগ্রগতির পথ। এ পথে অগ্রসর হয়ে মুসলিমরা এমন শক্তির অধিকারী হতে পারে, যার ফলে তারা দুনিয়ায় কল্যাণের অধিকারী এবং পরকালে আল্লাহর জান্নাত লাভের সৌভাগ্য লাভ করতে পারবে। এ সংগ্রাম চালিয়ে গেলে তারা নিজেরাই উপকৃত হবে।
জিহাদ করলে দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার তাওফীক হয় :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنْ تَنْصُرُوا اللّٰهَ يَنْصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ اَقْدَامَكُمْ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি (দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে) আল্লাহকে সাহায্য কর, তবে আল্লাহও তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা সমূহ সুদৃঢ় রাখবেন। (সূরা মুহাম্মাদ- ৭)
জিহাদ জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায় :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا هَلْ اَدُلُّكُمْ عَلٰى تِجَارَةٍ تُنْجِيْكُمْ مِّنْ عَذَابٍ اَلِيْمٍ ‐ تُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ وَرَسُوْلِهٖ وَتُجَاهِدُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ بِاَمْوَالِكُمْ وَاَنْفُسِكُمْ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
হে মুমিনগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন বাণিজ্যের সন্ধান দেব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হতে রক্ষা করবে? (তা এই যে) তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং তোমাদের ধনসম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে! (সূরা সাফ- ১০, ১১)
জিহাদ জান্নাত লাভের মাধ্যম :
يَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ وَيُدْخِلْكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِيْ جَنَّاتِ عَدْنٍؕ ذٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ
(আল্লাহ) তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন এবং তোমাদেরকে এমন এক জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত রয়েছে। (তাদের জন্য আরো রয়েছে) স্থায়ী জান্নাতের উত্তম বাসগৃহ; আর এটাই মহাসাফল্য। (সূরা সাফ- ১২)
জিহাদের নির্দেশ :
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ جَاهِدِ الْكُفَّارَ وَالْمُنَافِقِيْنَ وَاغْلُظْ عَلَيْهِمْؕ وَمَاْوَاهُمْ جَهَنَّمُؕ وَبِئْسَ الْمَصِيْرُ
হে নবী! কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করো ও তাদের প্রতি কঠোর হও। তাদের আবাসস্থল হচ্ছে জাহান্নাম, আর তা কতই না নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল! (সূরা তাওবা- ৭৩)
জিহাদের জন্য উৎসাহ প্রদান :
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ حَرِّضِ الْمُؤْمِنِيْنَ عَلَى الْقِتَالِؕ اِنْ يَّكُنْ مِّنْكُمْ عِشْرُوْنَ صَابِرُوْنَ يَغْلِبُوْا مِائَتَيْنِۚ وَاِنْ يَّكُنْ مِّنْكُمْ مِّائَةٌ يَّغْلِبُوْاۤ اَلْفًا مِّنَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِاَنَّهُمْ قَوْمٌ لَّا يَفْقَهُوْنَ
হে নবী! মুমিনদেরকে যুদ্ধের জন্য উদ্বুদ্ধ করো; তোমাদের মধ্যে বিশজন ধৈর্যশীল থাকলে তাদের (শত্রুদের) দু’শ জনের উপর বিজয়ী হবে এবং তোমাদের মধ্যে একশ’ জন থাকলে এক সহস্র কাফিরের উপর বিজয়ী হবে। কারণ তারা এমন এক সম্প্রদায়, যাদের কোন বোধশক্তি নেই। (সূরা আনফাল- ৬৫)
فَقَاتِلْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِۚ لَا تُكَلَّفُ اِلَّا نَفْسَكَ وَحَرِّضِ الْمُؤْمِنِيْنَۚ عَسَى اللهُ اَنْ يَّكُفَّ بَاْسَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاؕ وَاللهُ اَشَدُّ بَاْسًا وَّاَشَدُّ تَنْكِيْلًا
সুতরাং আল্লাহর পথে যুদ্ধ করো; তোমাকে শুধু তোমার নিজের জন্য দায়ী করা হবে এবং মুমিনদেরকে উদ্বুদ্ধ করো, হয়তো আল্লাহ কাফিরদের শক্তি সংযত করবেন। আর আল্লাহ শক্তিতে প্রবল ও শাস্তিদানে খুবই কঠোর। (সূরা নিসা- ৮৪)
আল্লাহ জিহাদকে ফরয করে দিয়েছেন :
وَقَاتِلُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
তোমরা আল্লাহর পথে লড়াই করো এবং জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী। (সূরা বাক্বারা- ২৪৪)
كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ وَهُوَ كُرْهٌ لَّكُمْۚ وَعَسٰۤى اَنْ تَكْرَهُوْا شَيْئًا وَّهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْۚ وَعَسٰۤى اَنْ تُحِبُّوْا شَيْئًا وَّهُوَ شَرٌّ لَّكُمْؕ وَاللهُ يَعْلَمُ وَاَنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ
যুদ্ধ করাকে তোমাদের উপর ফরয করে দেয়া হয়েছে, যা তোমাদের নিকট খুবই অপ্রিয়। হ্যাঁ, তোমরা যা অপছন্দ করছ, হতে পারে তা-ই তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আবার তোমরা যা পছন্দ করছ, হতে পারে তা-ই তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। মূলত আল্লাহই জানেন, কিন্তু তোমরাই জান না। (সূরা বাক্বারা- ২১৬)
অনেক নবী এবং তাদের অনুসারীরা যুদ্ধ করেছেন :
وَكَاَيِّنْ مِّنْ نَّبِيٍّ قَاتَلَ مَعَهٗ رِبِّيُّوْنَ كَثِيْرٌۚ فَمَا وَهَنُوْا لِمَاۤ اَصَابَهُمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَمَا ضَعُفُوْا وَمَا اسْتَكَانُوْاؕ وَاللهُ يُحِبُّ الصَّابِرِيْنَ
এমন অনেক নবী ছিলেন, যাদের সাথে আল্লাহওয়ালা অনেক লোক যুদ্ধ করেছিল। অতঃপর আল্লাহর পথে যা সংঘটিত হয়েছিল তাতে তারা নিরুৎসাহ হয়নি, শক্তিহীন হয়নি এবং বিচলিতও হয়নি। (জেনে রেখো) আল্লাহ ধৈর্যশীলদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৪৬)
মুমিনগণ আল্লাহর পথে লড়াই করে, আর কাফিররা তাগুতের পথে লড়াই করে :
اَ لَّذِيْنَ اٰمَنُوْا يُقَاتِلُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِۚ وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا يُقَاتِلُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ الطَّاغُوْتِ فَقَاتِلُوْاۤ اَوْلِيَآءَ الشَّيْطَانِۚ اِنَّ كَيْدَ الشَّيْطَانِ كَانَ ضَعِيْفًا
যারা মুমিন তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে এবং যারা কাফির তারা তাগুতের পথে যুদ্ধ করে। সুতরাং তোমরা শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো; নিশ্চয় শয়তানের কৌশল খুবই দুর্বল। (সূরা নিসা- ৭৬)
অস্ত্র কম হোক আর বেশি হোক বেরিয়ে পড়তে হবে :
اِنْفِرُوْا خِفَافًا وَّثِقَالًا وَّجَاهِدُوْا بِاَمْوَالِكُمْ وَاَنْفُسِكُمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِؕ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
তোমরা অভিযানে বের হয়ে পড়ো, হালকা অবস্থায় হোক অথবা ভারি অবস্থায় এবং তোমাদের সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করো। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা জানতে! (সূরা তাওবা- ৪১)
ব্যাখ্যা : এখানে মুসলিমদেরকে যুদ্ধ করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে এবং দ্বীনের ব্যাপারে কোন প্রকার সম্পর্ক, আত্মীয়তা ও বৈষয়িক সুবিধার কথা একটুও বিবেচনায় না এনে বেরিয়ে পড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সকল মতবাদের উপর আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করা :
هُوَ الَّذِيْۤ اَرْسَلَ رَسُوْلَهٗ بِالْهُدٰى وَدِيْنِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهٗ عَلَى الدِّيْنِ كُلِّهٖ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُوْنَ
তিনিই তাঁর রাসূলকে হেদায়াত এবং সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন, যাতে এটাকে সকল দ্বীনের উপর বিজয়ী করা হয়; যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে। (সূরা সাফ- ৯)
يُرِيْدُوْنَ اَنْ يُّطْفِئُوْا نُوْرَ اللهِ بِاَفْوَاهِهِمْ وَيَاْبَى اللهُ اِلَّاۤ اَنْ يُّتِمَّ نُوْرَهٗ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُوْنَ ‐ هُوَ الَّذِيْۤ اَرْسَلَ رَسُوْلَهٗ بِالْهُدٰى وَدِيْنِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهٗ عَلَى الدِّيْنِ كُلِّهٖ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُوْنَ
তারা তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর জ্যোতি (দ্বীনকে) নিভিয়ে দিতে চায়। (কিন্তু) কাফিররা অপ্রীতিকর মনে করলেও আল্লাহ তাঁর জ্যোতি পূর্ণ করা ব্যতীত অন্য কিছু চান না। আর মুশরিকরা অপ্রীতিকর মনে করলেও অন্যান্য সকল দ্বীনের উপর (তাঁর দ্বীনকে) বিজয়ী করার জন্যই তিনি পথনির্দেশ ও সত্য দ্বীনসহ তাঁর রাসূলকে প্রেরণ করেছেন। (সূরা তাওবা- ৩২, ৩৩)
পৃথিবীতে মানুষের মধ্যে ভারসাম্য ঠিক রাখা :
وَلَوْلَا دَفْعُ اللهِ النَّاسَ بَعْضَهُمْ بِبَعْضٍ لَّفَسَدَتِ الْاَرْضُ وَلٰكِنَّ اللهَ ذُوْ فَضْلٍ عَلَى الْعَالَمِيْنَ
যদি আল্লাহ মানুষের একদলকে অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে অবশ্যই পৃথিবী বিশৃঙ্খলাপূর্ণ হয়ে যেত। কিন্তু আল্লাহ বিশ্বজগতের উপর অনুগ্রহশীল। (সূরা বাক্বারা- ২৫১)
وَلَوْلَا دَفْعُ اللّٰهِ النَّاسَ بَعْضَهُمْ بِبَعْضٍ لَّهُدِّمَتْ صَوَامِعُ وَبِيَعٌ وَّصَلَوَاتٌ وَّمَسَاجِدُ يُذْكَرُ فِيْهَا اسْمُ اللهِ كَثِيْرًاؕ وَلَيَنْصُرَنَّ اللهُ مَنْ يَّنْصُرُهٗؕ اِنَّ اللهَ لَقَوِيٌّ عَزِيْزٌ
আল্লাহ যদি মানবজাতির একদলকে অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে বিধ্বস্ত হয়ে যেত খ্রিস্টান সংসারবিরাগীদের উপাসনালয়, গির্জা এবং ইয়াহুদিদের উপাসনালয় ও মসজিদসমূহ- যেসব স্থানে আল্লাহর নাম অধিক হারে স্মরণ করা হয়। নিশ্চয় আল্লাহ তাকেই সাহায্য করেন, যে তাঁকে সাহায্য করে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশক্তিমান ও পরাক্রমশালী। (সূরা হজ্জ- ৪০)
ঈমানদারগণকে পরিশুদ্ধ করা এবং কাফিরদেকে ধ্বংস করা :
وَلِيُمَحِّصَ اللهُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَيَمْحَقَ الْكَافِرِيْنَ
এর মাধ্যমে মূলত তিনি ঈমানদার বান্দাদেরকে পরিশুদ্ধ করতে এবং কাফিরদেরকে ধ্বংস করতে চান।
(সূরা আলে ইমরান- ১৪১)
কারা আল্লাহর জন্য জীবন উৎসর্গ করে তা পরীক্ষা করা :
اَمْ حَسِبْتُمْ اَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ اللهُ الَّذِيْنَ جَاهَدُوْا مِنْكُمْ وَيَعْلَمَ الصَّابِرِيْنَ
তোমরা কি ধারণা করছ যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ তোমাদের মধ্য হতে যারা জিহাদ করে আল্লাহ তাদের ব্যাপারে অবগত হবেন না এবং ধৈর্যশীলদের ব্যাপারেও জেনে নেবেন না। (সূরা আলে ইমরান- ১৪২)
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ حَتّٰى نَعْلَمَ الْمُجَاهِدِيْنَ مِنْكُمْ وَالصَّابِرِيْنَ
আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব, যাতে তোমাদের অবস্থা যাচাই করে নিতে পারি এবং দেখে নিতে পারি যে, তোমাদের মধ্যে কারা মুজাহিদ ও ধৈর্যশীল। (সূরা মুহাম্মাদ- ৩১)
খাঁটি মুমিন ও মুনাফিকদের মধ্যে পার্থক্য করা :
لِيَمِيْزَ اللّٰهُ الْخَبِيْثَ مِنَ الطَّيِّبِ وَيَجْعَلَ الْخَبِيْثَ بَعْضَهٗ عَلٰى بَعْضٍ فَيَرْكُمَهٗ جَمِيْعًا فَيَجْعَلَهٗ فِيْ جَهَنَّمَ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ
যাতে করে আল্লাহ অপবিত্রকে পবিত্র থেকে পৃথক করতে পারেন। অতঃপর অপবিত্রগুলো একটিকে অপরটির উপর রেখে স্তুপাকার করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন- মূলত তারাই প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরা আনফাল- ৩৭)
ব্যাখ্যা : ইসলাম ও কুফরের দ্বন্দ্ব একটি মাপকাঠিস্বরূপ। এর মাধ্যমে খাঁটি মুমিন ও নকল ঈমানের দাবীদারদের মধ্যে পার্থক্য সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। যে ব্যক্তি নিজেকে মনপ্রাণ দিয়ে ইসলামকে বিজয়ী করার সংগ্রামে নিয়োজিত করে এবং এ পথে যে কোন প্রকার ত্যাগ স্বীকার করতে কুণ্ঠিত হয় না, সে-ই প্রকৃত মুমিন। পক্ষান্তরে এ সংঘাতে যে ব্যক্তি ইসলামের বিজয়ের জন্য জান-মালের কুরবানী করতে কুণ্ঠিত হয়, তার কার্যকলাপ এ সত্যটিকে সুস্পষ্ট করে দেয় যে, তার অন্তরে ঈমান নেই।
হক ও বাতিল পন্থীদের চিহ্নিত করা :
وَلَوْ يَشَآءُ اللهُ لَانْتَصَرَ مِنْهُمْ وَلٰكِنْ لِّيَبْلُوَاْ بَعْضَكُمْ بِبَعْضٍ
আর যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন তবে তাদের থেকে প্রতিশোধ নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তো তোমাদের একজনকে অপরজনের দ্বারা পরীক্ষা করে নিতে চান। (সূরা মুহাম্মাদ- ৪)
বাতিলপন্থীদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করা :
كُلَّمَاۤ اَوْقَدُوْا نَارًا لِّلْحَرْبِ اَطْفَاَهَا اللّٰهُ وَيَسْعَوْنَ فِى الْاَرْضِ فَسَادًاؕ وَاللّٰهُ لَا يُحِبُّ الْمُفْسِدِيْنَ
যখনি তারা যুদ্ধের আগুন জ্বালিয়ে দিতে চেয়েছে, তখনি আল্লাহ তা নিভিয়ে দিয়েছেন। তারা এ জমিনে (বার বার) বিপর্যয় সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছে; আর আল্লাহ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদেরকে ভালোবাসেন না। (সূরা মায়েদা- ৬৪)
لِيُحِقَّ الْحَقَّ وَيُبْطِلَ الْبَاطِلَ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُوْنَ
তিনি সত্যকে সত্য ও অসত্যকে অসত্য প্রতিপন্ন করে থাকেন, যদিও অপরাধীরা এটাকে অপছন্দ করে।
(সূরা আনফাল- ৮)
মুমিনদের হাতে শত্রুদেরকে লাঞ্ছিত করা :
قَاتِلُوْهُمْ يُعَذِّبْهُمُ اللهُ بِاَيْدِيْكُمْ وَيُخْزِهِمْ وَيَنْصُرْكُمْ عَلَيْهِمْ وَيَشْفِ صُدُوْرَ قَوْمٍ مُّؤْمِنِيْنَ
তোমরা তাদের সাথে লড়াই করো, কেননা আল্লাহ তোমাদের হাত দ্বারাই তাদেরকে শাস্তি দেবেন এবং তাদেরকে অপমাণিত করবেন। আর তাদের উপর তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তিনি মুমিন সম্প্রদায়ের অন্তরকে প্রশান্ত করবেন। (সূরা তাওবা- ১৪)
ফিতনা দূর করে আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করা :
وَقَاتِلُوْهُمْ حَتّٰى لَا تَكُوْنَ فِتْنَةٌ وَّيَكُوْنَ الدِّيْنُ كُلُّهٗ لِلّٰهِ فَاِنِ انْتَهَوْا فَاِنَّ اللهَ بِمَا يَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
তোমরা তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে থাকো, যতক্ষণ না ফিতনা দূরীভূত হয় এবং আল্লাহর দ্বীন সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। আর যদি তারা বিরত হয়, তবে তারা যা করে আল্লাহ সে ব্যাপারে সম্যক দ্রষ্টা। (সূরা আনফাল- ৩৯)
وَقَاتِلُوْهُمْ حَتّٰى لَا تَكُوْنَ فِتْنَةٌ وَّيَكُوْنَ الدِّيْنُ لِلّٰهِ فَاِنِ انْتَهَوْا فَلَا عُدْوَانَ اِلَّا عَلَى الظَّالِمِيْنَ
ফিতনা দূরীভূত হয়ে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করে যাও। অতঃপর যদি তারা বিরত হয়, তবে অত্যাচারী ছাড়া কারো উপর বাড়াবাড়ি করা যাবে না। (সূরা বাক্বারা- ১৯৩)
ব্যাখ্যা : সমাজে যখন মানুষের উপর মানুষের প্রভুত্ব ও সার্বভৌম কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় এবং আল্লাহর বিধান অনুযায়ী জীবন-যাপন অসম্ভব হয়ে পড়ে, তখন সমাজের এ অবস্থাকে ফিতনা বলা হয়। এ ফিতনার জায়গায় এমন একটি ব্যবস্থা সৃষ্টি করা ইসলামী জিহাদের লক্ষ্য, যেখানে মানুষ একমাত্র আল্লাহর বিধানের অনুগত থাকবে।
শত্রুদের পরাজিত করা :
فَاِذَا لَقِيْتُمُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا فَضَرْبَ الرِّقَابِؕ حَتّٰۤى اِذَاۤ اَثْخَنْتُمُوْهُمْ فَشُدُّوا الْوَثَاقَۗ فَاِمَّا مَنًّا ۢبَعْدُ وَاِمَّا فِدَآءً حَتّٰى تَضَعَ الْحَرْبُ اَوْزَارَهَا
যখন তোমরা কাফিরদের মুখোমুখি হবে তখন (তাদের) গর্দানে আঘাত করবে। এমনকি যখন তোমরা তাদেরকে সম্পূর্ণ পর্যুদস্ত করে ফেলবে, তখন (বন্দীদেরকে) কষে বাঁধবে। অতঃপর হয় তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করবে, নতুবা তাদের থেকে মুক্তিপণ গ্রহণ করবে। (তোমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাবে) যে পর্যন্ত না শত্রুপক্ষ অস্ত্র সমর্পণ করে। (সূরা মুহাম্মাদ- ৪)
قَاتِلُوا الَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَلَا بِالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَلَا يُحَرِّمُوْنَ مَا حَرَّمَ اللّٰهُ وَرَسُوْلُهٗ وَلَا يَدِيْنُوْنَ دِيْنَ الْحَقِّ مِنَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ حَتّٰى يُعْطُوا الْجِزْيَةَ عَنْ يَّدٍ وَّهُمْ صَاغِرُوْنَ
ইতোপূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে যারা আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি ঈমান আনয়ন করে না, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল যা কিছু হারাম বলে ঘোষণা দিয়েছেন তা হারাম বলে স্বীকার করে না, তোমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাও; যে পর্যন্ত না তারা নত হয়ে জিয্ইয়া (কর) দিতে শুরু করে। (সূরা তাওবা- ২৯)
هُوَ الَّذِيْۤ اَرْسَلَ رَسُوْلَهٗ بِالْهُدٰى وَدِيْنِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهٗ عَلَى الدِّيْنِ كُلِّهٖ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُوْنَ
তিনিই তাঁর রাসূলকে হেদায়াত এবং সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন, যাতে এটাকে সকল দ্বীনের উপর বিজয়ী করা হয়; যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে। (সূরা সাফ- ৯)
يُرِيْدُوْنَ اَنْ يُّطْفِئُوْا نُوْرَ اللهِ بِاَفْوَاهِهِمْ وَيَاْبَى اللهُ اِلَّاۤ اَنْ يُّتِمَّ نُوْرَهٗ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُوْنَ ‐ هُوَ الَّذِيْۤ اَرْسَلَ رَسُوْلَهٗ بِالْهُدٰى وَدِيْنِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهٗ عَلَى الدِّيْنِ كُلِّهٖ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُوْنَ
তারা তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর জ্যোতি (দ্বীনকে) নিভিয়ে দিতে চায়। (কিন্তু) কাফিররা অপ্রীতিকর মনে করলেও আল্লাহ তাঁর জ্যোতি পূর্ণ করা ব্যতীত অন্য কিছু চান না। আর মুশরিকরা অপ্রীতিকর মনে করলেও অন্যান্য সকল দ্বীনের উপর (তাঁর দ্বীনকে) বিজয়ী করার জন্যই তিনি পথনির্দেশ ও সত্য দ্বীনসহ তাঁর রাসূলকে প্রেরণ করেছেন। (সূরা তাওবা- ৩২, ৩৩)
পৃথিবীতে মানুষের মধ্যে ভারসাম্য ঠিক রাখা :
وَلَوْلَا دَفْعُ اللهِ النَّاسَ بَعْضَهُمْ بِبَعْضٍ لَّفَسَدَتِ الْاَرْضُ وَلٰكِنَّ اللهَ ذُوْ فَضْلٍ عَلَى الْعَالَمِيْنَ
যদি আল্লাহ মানুষের একদলকে অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে অবশ্যই পৃথিবী বিশৃঙ্খলাপূর্ণ হয়ে যেত। কিন্তু আল্লাহ বিশ্বজগতের উপর অনুগ্রহশীল। (সূরা বাক্বারা- ২৫১)
وَلَوْلَا دَفْعُ اللّٰهِ النَّاسَ بَعْضَهُمْ بِبَعْضٍ لَّهُدِّمَتْ صَوَامِعُ وَبِيَعٌ وَّصَلَوَاتٌ وَّمَسَاجِدُ يُذْكَرُ فِيْهَا اسْمُ اللهِ كَثِيْرًاؕ وَلَيَنْصُرَنَّ اللهُ مَنْ يَّنْصُرُهٗؕ اِنَّ اللهَ لَقَوِيٌّ عَزِيْزٌ
আল্লাহ যদি মানবজাতির একদলকে অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে বিধ্বস্ত হয়ে যেত খ্রিস্টান সংসারবিরাগীদের উপাসনালয়, গির্জা এবং ইয়াহুদিদের উপাসনালয় ও মসজিদসমূহ- যেসব স্থানে আল্লাহর নাম অধিক হারে স্মরণ করা হয়। নিশ্চয় আল্লাহ তাকেই সাহায্য করেন, যে তাঁকে সাহায্য করে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশক্তিমান ও পরাক্রমশালী। (সূরা হজ্জ- ৪০)
ঈমানদারগণকে পরিশুদ্ধ করা এবং কাফিরদেকে ধ্বংস করা :
وَلِيُمَحِّصَ اللهُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَيَمْحَقَ الْكَافِرِيْنَ
এর মাধ্যমে মূলত তিনি ঈমানদার বান্দাদেরকে পরিশুদ্ধ করতে এবং কাফিরদেরকে ধ্বংস করতে চান।
(সূরা আলে ইমরান- ১৪১)
কারা আল্লাহর জন্য জীবন উৎসর্গ করে তা পরীক্ষা করা :
اَمْ حَسِبْتُمْ اَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ اللهُ الَّذِيْنَ جَاهَدُوْا مِنْكُمْ وَيَعْلَمَ الصَّابِرِيْنَ
তোমরা কি ধারণা করছ যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ তোমাদের মধ্য হতে যারা জিহাদ করে আল্লাহ তাদের ব্যাপারে অবগত হবেন না এবং ধৈর্যশীলদের ব্যাপারেও জেনে নেবেন না। (সূরা আলে ইমরান- ১৪২)
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ حَتّٰى نَعْلَمَ الْمُجَاهِدِيْنَ مِنْكُمْ وَالصَّابِرِيْنَ
আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব, যাতে তোমাদের অবস্থা যাচাই করে নিতে পারি এবং দেখে নিতে পারি যে, তোমাদের মধ্যে কারা মুজাহিদ ও ধৈর্যশীল। (সূরা মুহাম্মাদ- ৩১)
খাঁটি মুমিন ও মুনাফিকদের মধ্যে পার্থক্য করা :
لِيَمِيْزَ اللّٰهُ الْخَبِيْثَ مِنَ الطَّيِّبِ وَيَجْعَلَ الْخَبِيْثَ بَعْضَهٗ عَلٰى بَعْضٍ فَيَرْكُمَهٗ جَمِيْعًا فَيَجْعَلَهٗ فِيْ جَهَنَّمَ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ
যাতে করে আল্লাহ অপবিত্রকে পবিত্র থেকে পৃথক করতে পারেন। অতঃপর অপবিত্রগুলো একটিকে অপরটির উপর রেখে স্তুপাকার করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন- মূলত তারাই প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরা আনফাল- ৩৭)
ব্যাখ্যা : ইসলাম ও কুফরের দ্বন্দ্ব একটি মাপকাঠিস্বরূপ। এর মাধ্যমে খাঁটি মুমিন ও নকল ঈমানের দাবীদারদের মধ্যে পার্থক্য সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। যে ব্যক্তি নিজেকে মনপ্রাণ দিয়ে ইসলামকে বিজয়ী করার সংগ্রামে নিয়োজিত করে এবং এ পথে যে কোন প্রকার ত্যাগ স্বীকার করতে কুণ্ঠিত হয় না, সে-ই প্রকৃত মুমিন। পক্ষান্তরে এ সংঘাতে যে ব্যক্তি ইসলামের বিজয়ের জন্য জান-মালের কুরবানী করতে কুণ্ঠিত হয়, তার কার্যকলাপ এ সত্যটিকে সুস্পষ্ট করে দেয় যে, তার অন্তরে ঈমান নেই।
হক ও বাতিল পন্থীদের চিহ্নিত করা :
وَلَوْ يَشَآءُ اللهُ لَانْتَصَرَ مِنْهُمْ وَلٰكِنْ لِّيَبْلُوَاْ بَعْضَكُمْ بِبَعْضٍ
আর যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন তবে তাদের থেকে প্রতিশোধ নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তো তোমাদের একজনকে অপরজনের দ্বারা পরীক্ষা করে নিতে চান। (সূরা মুহাম্মাদ- ৪)
বাতিলপন্থীদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করা :
كُلَّمَاۤ اَوْقَدُوْا نَارًا لِّلْحَرْبِ اَطْفَاَهَا اللّٰهُ وَيَسْعَوْنَ فِى الْاَرْضِ فَسَادًاؕ وَاللّٰهُ لَا يُحِبُّ الْمُفْسِدِيْنَ
যখনি তারা যুদ্ধের আগুন জ্বালিয়ে দিতে চেয়েছে, তখনি আল্লাহ তা নিভিয়ে দিয়েছেন। তারা এ জমিনে (বার বার) বিপর্যয় সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছে; আর আল্লাহ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদেরকে ভালোবাসেন না। (সূরা মায়েদা- ৬৪)
لِيُحِقَّ الْحَقَّ وَيُبْطِلَ الْبَاطِلَ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُوْنَ
তিনি সত্যকে সত্য ও অসত্যকে অসত্য প্রতিপন্ন করে থাকেন, যদিও অপরাধীরা এটাকে অপছন্দ করে।
(সূরা আনফাল- ৮)
মুমিনদের হাতে শত্রুদেরকে লাঞ্ছিত করা :
قَاتِلُوْهُمْ يُعَذِّبْهُمُ اللهُ بِاَيْدِيْكُمْ وَيُخْزِهِمْ وَيَنْصُرْكُمْ عَلَيْهِمْ وَيَشْفِ صُدُوْرَ قَوْمٍ مُّؤْمِنِيْنَ
তোমরা তাদের সাথে লড়াই করো, কেননা আল্লাহ তোমাদের হাত দ্বারাই তাদেরকে শাস্তি দেবেন এবং তাদেরকে অপমাণিত করবেন। আর তাদের উপর তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তিনি মুমিন সম্প্রদায়ের অন্তরকে প্রশান্ত করবেন। (সূরা তাওবা- ১৪)
ফিতনা দূর করে আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করা :
وَقَاتِلُوْهُمْ حَتّٰى لَا تَكُوْنَ فِتْنَةٌ وَّيَكُوْنَ الدِّيْنُ كُلُّهٗ لِلّٰهِ فَاِنِ انْتَهَوْا فَاِنَّ اللهَ بِمَا يَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
তোমরা তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে থাকো, যতক্ষণ না ফিতনা দূরীভূত হয় এবং আল্লাহর দ্বীন সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। আর যদি তারা বিরত হয়, তবে তারা যা করে আল্লাহ সে ব্যাপারে সম্যক দ্রষ্টা। (সূরা আনফাল- ৩৯)
وَقَاتِلُوْهُمْ حَتّٰى لَا تَكُوْنَ فِتْنَةٌ وَّيَكُوْنَ الدِّيْنُ لِلّٰهِ فَاِنِ انْتَهَوْا فَلَا عُدْوَانَ اِلَّا عَلَى الظَّالِمِيْنَ
ফিতনা দূরীভূত হয়ে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করে যাও। অতঃপর যদি তারা বিরত হয়, তবে অত্যাচারী ছাড়া কারো উপর বাড়াবাড়ি করা যাবে না। (সূরা বাক্বারা- ১৯৩)
ব্যাখ্যা : সমাজে যখন মানুষের উপর মানুষের প্রভুত্ব ও সার্বভৌম কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় এবং আল্লাহর বিধান অনুযায়ী জীবন-যাপন অসম্ভব হয়ে পড়ে, তখন সমাজের এ অবস্থাকে ফিতনা বলা হয়। এ ফিতনার জায়গায় এমন একটি ব্যবস্থা সৃষ্টি করা ইসলামী জিহাদের লক্ষ্য, যেখানে মানুষ একমাত্র আল্লাহর বিধানের অনুগত থাকবে।
শত্রুদের পরাজিত করা :
فَاِذَا لَقِيْتُمُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا فَضَرْبَ الرِّقَابِؕ حَتّٰۤى اِذَاۤ اَثْخَنْتُمُوْهُمْ فَشُدُّوا الْوَثَاقَۗ فَاِمَّا مَنًّا ۢبَعْدُ وَاِمَّا فِدَآءً حَتّٰى تَضَعَ الْحَرْبُ اَوْزَارَهَا
যখন তোমরা কাফিরদের মুখোমুখি হবে তখন (তাদের) গর্দানে আঘাত করবে। এমনকি যখন তোমরা তাদেরকে সম্পূর্ণ পর্যুদস্ত করে ফেলবে, তখন (বন্দীদেরকে) কষে বাঁধবে। অতঃপর হয় তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করবে, নতুবা তাদের থেকে মুক্তিপণ গ্রহণ করবে। (তোমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাবে) যে পর্যন্ত না শত্রুপক্ষ অস্ত্র সমর্পণ করে। (সূরা মুহাম্মাদ- ৪)
قَاتِلُوا الَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَلَا بِالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَلَا يُحَرِّمُوْنَ مَا حَرَّمَ اللّٰهُ وَرَسُوْلُهٗ وَلَا يَدِيْنُوْنَ دِيْنَ الْحَقِّ مِنَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ حَتّٰى يُعْطُوا الْجِزْيَةَ عَنْ يَّدٍ وَّهُمْ صَاغِرُوْنَ
ইতোপূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে যারা আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি ঈমান আনয়ন করে না, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল যা কিছু হারাম বলে ঘোষণা দিয়েছেন তা হারাম বলে স্বীকার করে না, তোমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাও; যে পর্যন্ত না তারা নত হয়ে জিয্ইয়া (কর) দিতে শুরু করে। (সূরা তাওবা- ২৯)
কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে :
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ جَاهِدِ الْكُفَّارَ وَالْمُنَافِقِيْنَ وَاغْلُظْ عَلَيْهِمْؕ وَمَاْوَاهُمْ جَهَنَّمُؕ وَبِئْسَ الْمَصِيْرُ
হে নবী! কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করো এবং তাদের ব্যাপারে কঠোর হও। তাদের আশ্রয়স্থল হলো জাহান্নাম; আর তা কতই না নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল। (সূরা তাহরীম- ৯, সূরা তাওবা- ৭৩)
ব্যাখ্যা : মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার অর্থ ইসলামী সমাজে মুনাফিকীর বিষ ছড়ানোর যে সুযোগ তারা পেয়েছে তা ভবিষ্যতের জন্য সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিতে হবে। যে দল নিজের মধ্যে মুনাফিকী লালন করে, তার নৈতিক অধঃপতন এবং সবশেষে পূর্ণ ধ্বংস ছাড়া আর কোন পথ নেই।
মুশরিকদের বিরুদ্ধে :
فَاِذَا انْسَلَخَ الْاَشْهُرُ الْحُرُمُ فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِيْنَ حَيْثُ وَجَدْتُّمُوْهُمْ وَخُذُوْهُمْ وَاحْصُرُوْهُمْ وَاقْعُدُوْا لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍۚ فَاِنْ تَابُوْا وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ فَخَلُّوْا سَبِيْلَهُمْؕ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে মুশরিকদেরকে যেখানে পাবে হত্যা করবে, বন্দী করবে, অবরোধ করবে এবং প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের জন্য ওঁৎ পেতে থাকবে। কিন্তু যদি তারা তাওবা করে, সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয়, তবে তাদের পথ ছেড়ে দেবে; নিশ্চয় আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা তাওবা- ৫)
যারা আল্লাহর বিধান মানতে চায় না তাদের বিরুদ্ধে :
قَاتِلُوا الَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَلَا بِالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَلَا يُحَرِّمُوْنَ مَا حَرَّمَ اللهُ وَرَسُوْلُهٗ وَلَا يَدِيْنُوْنَ دِيْنَ الْحَقِّ مِنَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ حَتّٰى يُعْطُوا الْجِزْيَةَ عَنْ يَّدٍ وَّهُمْ صَاغِرُوْنَ
যাদের প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে তাদের মধ্যে যারা আল্লাহর প্রতি ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান আনয়ন করে না, আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা হারাম করেছেন তা হারাম হিসেবে গণ্য করে না এবং সত্য দ্বীনের অনুসরণ করে না তাদের সাথে যুদ্ধ করবে, যে পর্যন্ত না তারা নত হয়ে স্বহস্তে জিযয়া (কর) দেয়। (সূরা তাওবা- ২৯)
যারা চুক্তি ভঙ্গ করে এবং দ্বীন নিয়ে বিদ্রূপ করে তাদের বিরুদ্ধে :
وَاِنْ نَّكَثُوْاۤ اَيْمَانَهُمْ مِّنْ ۢبَعْدِ عَهْدِهِمْ وَطَعَنُوْا فِيْ دِيْنِكُمْ فَقَاتِلُوْاۤ اَئِمَّةَ الْكُفْرِ اِنَّهُمْ لَاۤ اَيْمَانَ لَهُمْ لَعَلَّهُمْ يَنْتَهُوْنَ
তাদের সাথে চুক্তির পর তারা যদি তা ভঙ্গ করে ও তোমাদের দ্বীন সম্বন্ধে বিদ্রূপ করে, তবে কাফিরদের প্রধানদের সাথে যুদ্ধ করো- এরা এমন লোক যাদের কোন প্রতিশ্রুতি আর বাকি রইল না, হয়তো তারা (এর ফলে) বিরত থাকবে। (সূরা তাওবা- ১২)
اَلَا تُقَاتِلُوْنَ قَوْمًا نَّكَثُوْاۤ اَيْمَانَهُمْ وَهَمُّوْا بِاِخْرَاجِ الرَّسُوْلِ وَهُمْ بَدَءُوْكُمْ اَوَّلَ مَرَّةٍؕ اَتَخْشَوْنَهُمْۚ فَاللهُ اَحَقُّ اَنْ تَخْشَوْهُ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
তোমরা কি সে সম্প্রদায়ের সাথে যুদ্ধ করবে না, যারা নিজেদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে ও রাসূলকে বহিষ্কার করার জন্য সংকল্প করেছে? তারাই তো প্রথম তোমাদের বিরুদ্ধাচরণ করেছে। তোমরা কি তাদেরকে ভয় কর? অথচ যদি তোমরা মুমিন হও তাহলে আল্লাহকে ভয় করাই তোমাদের জন্য অধিক সমীচীন। (সূরা তাওবা- ১৩)
যারা মুসলিমদের উপর আক্রমণ চালায় তাদের বিরুদ্ধে :
فَاِنْ قَاتَلُوْكُمْ فَاقْتُلُوْهُمْؕ كَذٰلِكَ جَزَآءُ الْكَافِرِيْنَ
যদি তারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে, তবে তোমরাও তাদের সাথে যুদ্ধ করো। আর এটাই কাফিরদের প্রতিদান। (সূরা বাক্বারা- ১৯১)
وَقَاتِلُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ الَّذِيْنَ يُقَاتِلُوْنَكُمْ وَلَا تَعْتَدُوْاؕ اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِيْنَ
আর যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তোমরাও তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করো এবং সীমালঙ্ঘন করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে ভালোবাসেন না। (সূরা বাক্বারা- ১৯০)
ব্যাখ্যা : এখানে বলা হয়েছে, যারা আল্লাহর কাজে তোমাদের পথ রোধ করে দাঁড়ায়, আল্লাহ প্রদত্ত জীবনবিধান অনুযায়ী তোমরা জীবনব্যবস্থার সংস্কার ও সংশোধন করতে চাও বলে যারা তোমাদের শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং তোমাদের সংশোধন ও সংস্কার কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার জন্য যুলুম-অত্যাচার চালাচ্ছে, তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করো। এর আগে মুসলিমরা যতদিন দুর্বল ও বিক্ষিপ্ত ছিল, ততদিন তাদেরকে কেবলমাত্র ইসলাম প্রচারের হুকুম দেয়া হয়েছিল এবং বিপক্ষের যুলুম-নির্যাতনের ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ করার তাকীদ করা হয়েছিল। এখন মদিনায় তাদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে যে, যারাই এ সংস্কারমূলক দাওয়াতের পথে সশস্ত্র প্রতিরোধ সৃষ্টি করছে অস্ত্র দিয়েই তাদের জবাব দাও। এরপরই অনুষ্ঠিত হয় বদরের যুদ্ধ। তারপর একের পর এক যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হতেই থাকে।
যারা ইসলামপন্থীদের উপর নির্যাতন চালায় তাদের বিরুদ্ধে :
وَمَا لَكُمْ لَا تُقَاتِلُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَالْمُسْتَضْعَفِيْنَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَآءِ وَالْوِلْدَانِ الَّذِيْنَ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَاۤ اَخْرِجْنَا مِنْ هٰذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ اَهْلُهَا وَاجْعَلْ لَّنَا مِنْ لَّدُنْكَ وَلِيًّاۚ وَاجْعَلْ لَّنَا مِنْ لَّدُنْكَ نَصِيْرًا
তোমাদের কী হলো যে, তোমরা আল্লাহর পথে অসহায় নর-নারী এবং শিশুদের জন্য যুদ্ধ করবে না? যারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! এ জনপদ হতে আমাদেরকে বের করে নিয়ে যাও; কেননা তার অধিবাসীরা অত্যাচারী। আর তোমার নিকট হতে কাউকে আমাদের জন্য অভিভাবক হিসেবে মনোনীত করো এবং তোমার পক্ষ হতে আমাদেরকে সাহায্য করো। (সূরা নিসা- ৭৫)
وَاقْتُلُوْهُمْ حَيْثُ ثَقِفْتُمُوْهُمْ وَاَخْرِجُوْهُمْ مِّنْ حَيْثُ اَخْرَجُوْكُمْ وَالْفِتْنَةُ اَشَدُّ مِنَ الْقَتْلِ
তোমরা তাদেরকে যেখানেই পাবে হত্যা করবে। তারা তোমাদেরকে যেসব স্থান থেকে বের করে দিয়েছে, তোমরাও তাদেরকে সেসব স্থান থেকে বের করে দেবে। জেনে রেখো, ফিতনা হত্যা থেকেও মারাত্মক অপরাধ। (সূরা বাক্বারা- ১৯১)
ব্যাখ্যা : আয়াতের মূল বক্তব্য হচ্ছে, নরহত্যা নিঃসন্দেহে একটি জঘণ্য অপরাধ; কিন্তু কোন মানবগোষ্ঠী বা দল যখন জোরপূর্বক নিজের স্বৈরতান্ত্রিক চিন্তাধারা অন্যদের উপর চাপিয়ে দেয়, সত্য গ্রহণ থেকে লোকদেরকে জোরপূর্বক বিরত রাখে এবং পাশবিক শক্তি প্রয়োগে সংশোধনের ন্যায়সঙ্গত প্রচেষ্টার মুকাবিলা করতে শুরু করে, তখন এটা নরহত্যার চেয়েও জঘণ্যতম অন্যায় কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়। কোন ব্যক্তি বা দল প্রচলিত চিন্তাধারা ও মতবাদের পরিবর্তে অন্য কোন চিন্তাধারা ও মতবাদকে সত্য হিসেবে জানার কারণে তা গ্রহণ করেছে এবং প্রচারের মাধ্যমে সমাজে প্রচলিত ব্যবস্থার সংশোধনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, এজন্য তার উপর যুলুম-নির্যাতন চালানো- এটা অমানবিক ও মারাত্মক অন্যায়। এ ধরনের দলকে অস্ত্রের সাহায্যে পথ থেকে সরিয়ে দেয়াই ন্যায়সঙ্গত।
যারা জমিনে অশান্তি সৃষ্টি করে তাদের বিরুদ্ধে :
اِنَّمَا جَزَآءُ الَّذِيْنَ يُحَارِبُوْنَ اللّٰهَ وَرَسُوْلَهٗ وَيَسْعَوْنَ فِى الْاَرْضِ فَسَادًا اَنْ يُّقَتَّلُوْاۤ اَوْ يُصَلَّبُوْاۤ اَوْ تُقَطَّعَ اَيْدِيْهِمْ وَاَرْجُلُهُمْ مِّنْ خِلَافٍ اَوْ يُنْفَوْا مِنَ الْاَرْضِؕ ذٰلِكَ لَهُمْ خِزْيٌ فِى الدُّنْيَا وَلَهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং পৃথিবীতে ফিতনা সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাদের শাস্তি হলো- তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে অথবা তাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলা হবে অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এ অপমানজনক শাস্তি তাদের দুনিয়ার জীবনের জন্য; আর পরকালে তাদের জন্য রয়েছে আরো ভয়াবহ শাস্তি। (সূরা মায়েদা- ৩৩)
ব্যাখ্যা : পৃথিবী বলতে এখানে পৃথিবীর সেই অঞ্চলকে বুঝানো হয়েছে, যেখানে ইসলামী সরকার শান্তি ও নিরাপত্তাব্যবস্থা কায়েম করার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে লড়াই করার অর্থ হচ্ছে, ইসলামী সরকার দেশে যে ইসলামী সমাজব্যবস্থার প্রচলন করেছে তার বিরুদ্ধে লড়াই করা। পৃথিবীতে একটি সত্যনিষ্ঠ রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করাই আল্লাহর ইচ্ছা, যার অধীনে পৃথিবীতে অবস্থানকারী মানুষ ও পশুপাখীসহ সমস্ত সৃষ্টি শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করবে। পৃথিবীর সমুদয় উপায়-উপকরণ এমনভাবে ব্যবহৃত হবে, যার ফলে সেগুলো মানবতার ধ্বংসে নয়; বরং তার উন্নতিতে সহায়ক হবে। এ ধরনের ব্যবস্থা কোন ভূখন্ডে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাওয়ার পর তাকে নষ্ট করার প্রচেষ্টা চালানো অথবা ক্ষুদ্র পরিসরে হত্যা, লুণ্ঠন, রাহাজানি, ডাকাতি ইত্যাদির মাধ্যমে বিপর্যয় সৃষ্টি করে এ ব্যবস্থাকে উৎখাত করে তার জায়গায় অন্য কোন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা চালানো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হিসেবেই বিবেচিত হবে। এখানে সংক্ষেপে বিভিন্ন ধরনের শাস্তির কথা বলে দেয়া হয়েছে, যাতে করে কাযী বা সমকালীন ইসলামী শাসক নিজের ইজতিহাদের মাধ্যমে প্রত্যেক অপরাধীকে তার অপরাধের ধরন ও মাত্রানুযায়ী শাস্তি দিতে পারেন। তবে আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে এ কথা প্রকাশ করা যে, ইসলামী হুকুমতের আওতায় বাস করে কোন ব্যক্তির ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থাকে পরিবর্তন করার প্রচেষ্টা চালানো নিকৃষ্ট ধরনের অপরাধ। এজন্য তাকে উল্লেখিত চরম শাস্তিগুলোর মধ্য থেকে যে কোন শাস্তি দেয়া যেতে পারে।
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ جَاهِدِ الْكُفَّارَ وَالْمُنَافِقِيْنَ وَاغْلُظْ عَلَيْهِمْؕ وَمَاْوَاهُمْ جَهَنَّمُؕ وَبِئْسَ الْمَصِيْرُ
হে নবী! কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করো এবং তাদের ব্যাপারে কঠোর হও। তাদের আশ্রয়স্থল হলো জাহান্নাম; আর তা কতই না নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল। (সূরা তাহরীম- ৯, সূরা তাওবা- ৭৩)
ব্যাখ্যা : মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার অর্থ ইসলামী সমাজে মুনাফিকীর বিষ ছড়ানোর যে সুযোগ তারা পেয়েছে তা ভবিষ্যতের জন্য সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিতে হবে। যে দল নিজের মধ্যে মুনাফিকী লালন করে, তার নৈতিক অধঃপতন এবং সবশেষে পূর্ণ ধ্বংস ছাড়া আর কোন পথ নেই।
মুশরিকদের বিরুদ্ধে :
فَاِذَا انْسَلَخَ الْاَشْهُرُ الْحُرُمُ فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِيْنَ حَيْثُ وَجَدْتُّمُوْهُمْ وَخُذُوْهُمْ وَاحْصُرُوْهُمْ وَاقْعُدُوْا لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍۚ فَاِنْ تَابُوْا وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ فَخَلُّوْا سَبِيْلَهُمْؕ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে মুশরিকদেরকে যেখানে পাবে হত্যা করবে, বন্দী করবে, অবরোধ করবে এবং প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের জন্য ওঁৎ পেতে থাকবে। কিন্তু যদি তারা তাওবা করে, সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয়, তবে তাদের পথ ছেড়ে দেবে; নিশ্চয় আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা তাওবা- ৫)
যারা আল্লাহর বিধান মানতে চায় না তাদের বিরুদ্ধে :
قَاتِلُوا الَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَلَا بِالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَلَا يُحَرِّمُوْنَ مَا حَرَّمَ اللهُ وَرَسُوْلُهٗ وَلَا يَدِيْنُوْنَ دِيْنَ الْحَقِّ مِنَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ حَتّٰى يُعْطُوا الْجِزْيَةَ عَنْ يَّدٍ وَّهُمْ صَاغِرُوْنَ
যাদের প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে তাদের মধ্যে যারা আল্লাহর প্রতি ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান আনয়ন করে না, আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা হারাম করেছেন তা হারাম হিসেবে গণ্য করে না এবং সত্য দ্বীনের অনুসরণ করে না তাদের সাথে যুদ্ধ করবে, যে পর্যন্ত না তারা নত হয়ে স্বহস্তে জিযয়া (কর) দেয়। (সূরা তাওবা- ২৯)
যারা চুক্তি ভঙ্গ করে এবং দ্বীন নিয়ে বিদ্রূপ করে তাদের বিরুদ্ধে :
وَاِنْ نَّكَثُوْاۤ اَيْمَانَهُمْ مِّنْ ۢبَعْدِ عَهْدِهِمْ وَطَعَنُوْا فِيْ دِيْنِكُمْ فَقَاتِلُوْاۤ اَئِمَّةَ الْكُفْرِ اِنَّهُمْ لَاۤ اَيْمَانَ لَهُمْ لَعَلَّهُمْ يَنْتَهُوْنَ
তাদের সাথে চুক্তির পর তারা যদি তা ভঙ্গ করে ও তোমাদের দ্বীন সম্বন্ধে বিদ্রূপ করে, তবে কাফিরদের প্রধানদের সাথে যুদ্ধ করো- এরা এমন লোক যাদের কোন প্রতিশ্রুতি আর বাকি রইল না, হয়তো তারা (এর ফলে) বিরত থাকবে। (সূরা তাওবা- ১২)
اَلَا تُقَاتِلُوْنَ قَوْمًا نَّكَثُوْاۤ اَيْمَانَهُمْ وَهَمُّوْا بِاِخْرَاجِ الرَّسُوْلِ وَهُمْ بَدَءُوْكُمْ اَوَّلَ مَرَّةٍؕ اَتَخْشَوْنَهُمْۚ فَاللهُ اَحَقُّ اَنْ تَخْشَوْهُ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
তোমরা কি সে সম্প্রদায়ের সাথে যুদ্ধ করবে না, যারা নিজেদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে ও রাসূলকে বহিষ্কার করার জন্য সংকল্প করেছে? তারাই তো প্রথম তোমাদের বিরুদ্ধাচরণ করেছে। তোমরা কি তাদেরকে ভয় কর? অথচ যদি তোমরা মুমিন হও তাহলে আল্লাহকে ভয় করাই তোমাদের জন্য অধিক সমীচীন। (সূরা তাওবা- ১৩)
যারা মুসলিমদের উপর আক্রমণ চালায় তাদের বিরুদ্ধে :
فَاِنْ قَاتَلُوْكُمْ فَاقْتُلُوْهُمْؕ كَذٰلِكَ جَزَآءُ الْكَافِرِيْنَ
যদি তারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে, তবে তোমরাও তাদের সাথে যুদ্ধ করো। আর এটাই কাফিরদের প্রতিদান। (সূরা বাক্বারা- ১৯১)
وَقَاتِلُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ الَّذِيْنَ يُقَاتِلُوْنَكُمْ وَلَا تَعْتَدُوْاؕ اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِيْنَ
আর যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তোমরাও তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করো এবং সীমালঙ্ঘন করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে ভালোবাসেন না। (সূরা বাক্বারা- ১৯০)
ব্যাখ্যা : এখানে বলা হয়েছে, যারা আল্লাহর কাজে তোমাদের পথ রোধ করে দাঁড়ায়, আল্লাহ প্রদত্ত জীবনবিধান অনুযায়ী তোমরা জীবনব্যবস্থার সংস্কার ও সংশোধন করতে চাও বলে যারা তোমাদের শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং তোমাদের সংশোধন ও সংস্কার কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার জন্য যুলুম-অত্যাচার চালাচ্ছে, তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করো। এর আগে মুসলিমরা যতদিন দুর্বল ও বিক্ষিপ্ত ছিল, ততদিন তাদেরকে কেবলমাত্র ইসলাম প্রচারের হুকুম দেয়া হয়েছিল এবং বিপক্ষের যুলুম-নির্যাতনের ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ করার তাকীদ করা হয়েছিল। এখন মদিনায় তাদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে যে, যারাই এ সংস্কারমূলক দাওয়াতের পথে সশস্ত্র প্রতিরোধ সৃষ্টি করছে অস্ত্র দিয়েই তাদের জবাব দাও। এরপরই অনুষ্ঠিত হয় বদরের যুদ্ধ। তারপর একের পর এক যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হতেই থাকে।
যারা ইসলামপন্থীদের উপর নির্যাতন চালায় তাদের বিরুদ্ধে :
وَمَا لَكُمْ لَا تُقَاتِلُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَالْمُسْتَضْعَفِيْنَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَآءِ وَالْوِلْدَانِ الَّذِيْنَ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَاۤ اَخْرِجْنَا مِنْ هٰذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ اَهْلُهَا وَاجْعَلْ لَّنَا مِنْ لَّدُنْكَ وَلِيًّاۚ وَاجْعَلْ لَّنَا مِنْ لَّدُنْكَ نَصِيْرًا
তোমাদের কী হলো যে, তোমরা আল্লাহর পথে অসহায় নর-নারী এবং শিশুদের জন্য যুদ্ধ করবে না? যারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! এ জনপদ হতে আমাদেরকে বের করে নিয়ে যাও; কেননা তার অধিবাসীরা অত্যাচারী। আর তোমার নিকট হতে কাউকে আমাদের জন্য অভিভাবক হিসেবে মনোনীত করো এবং তোমার পক্ষ হতে আমাদেরকে সাহায্য করো। (সূরা নিসা- ৭৫)
وَاقْتُلُوْهُمْ حَيْثُ ثَقِفْتُمُوْهُمْ وَاَخْرِجُوْهُمْ مِّنْ حَيْثُ اَخْرَجُوْكُمْ وَالْفِتْنَةُ اَشَدُّ مِنَ الْقَتْلِ
তোমরা তাদেরকে যেখানেই পাবে হত্যা করবে। তারা তোমাদেরকে যেসব স্থান থেকে বের করে দিয়েছে, তোমরাও তাদেরকে সেসব স্থান থেকে বের করে দেবে। জেনে রেখো, ফিতনা হত্যা থেকেও মারাত্মক অপরাধ। (সূরা বাক্বারা- ১৯১)
ব্যাখ্যা : আয়াতের মূল বক্তব্য হচ্ছে, নরহত্যা নিঃসন্দেহে একটি জঘণ্য অপরাধ; কিন্তু কোন মানবগোষ্ঠী বা দল যখন জোরপূর্বক নিজের স্বৈরতান্ত্রিক চিন্তাধারা অন্যদের উপর চাপিয়ে দেয়, সত্য গ্রহণ থেকে লোকদেরকে জোরপূর্বক বিরত রাখে এবং পাশবিক শক্তি প্রয়োগে সংশোধনের ন্যায়সঙ্গত প্রচেষ্টার মুকাবিলা করতে শুরু করে, তখন এটা নরহত্যার চেয়েও জঘণ্যতম অন্যায় কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়। কোন ব্যক্তি বা দল প্রচলিত চিন্তাধারা ও মতবাদের পরিবর্তে অন্য কোন চিন্তাধারা ও মতবাদকে সত্য হিসেবে জানার কারণে তা গ্রহণ করেছে এবং প্রচারের মাধ্যমে সমাজে প্রচলিত ব্যবস্থার সংশোধনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, এজন্য তার উপর যুলুম-নির্যাতন চালানো- এটা অমানবিক ও মারাত্মক অন্যায়। এ ধরনের দলকে অস্ত্রের সাহায্যে পথ থেকে সরিয়ে দেয়াই ন্যায়সঙ্গত।
যারা জমিনে অশান্তি সৃষ্টি করে তাদের বিরুদ্ধে :
اِنَّمَا جَزَآءُ الَّذِيْنَ يُحَارِبُوْنَ اللّٰهَ وَرَسُوْلَهٗ وَيَسْعَوْنَ فِى الْاَرْضِ فَسَادًا اَنْ يُّقَتَّلُوْاۤ اَوْ يُصَلَّبُوْاۤ اَوْ تُقَطَّعَ اَيْدِيْهِمْ وَاَرْجُلُهُمْ مِّنْ خِلَافٍ اَوْ يُنْفَوْا مِنَ الْاَرْضِؕ ذٰلِكَ لَهُمْ خِزْيٌ فِى الدُّنْيَا وَلَهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং পৃথিবীতে ফিতনা সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাদের শাস্তি হলো- তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে অথবা তাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলা হবে অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এ অপমানজনক শাস্তি তাদের দুনিয়ার জীবনের জন্য; আর পরকালে তাদের জন্য রয়েছে আরো ভয়াবহ শাস্তি। (সূরা মায়েদা- ৩৩)
ব্যাখ্যা : পৃথিবী বলতে এখানে পৃথিবীর সেই অঞ্চলকে বুঝানো হয়েছে, যেখানে ইসলামী সরকার শান্তি ও নিরাপত্তাব্যবস্থা কায়েম করার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে লড়াই করার অর্থ হচ্ছে, ইসলামী সরকার দেশে যে ইসলামী সমাজব্যবস্থার প্রচলন করেছে তার বিরুদ্ধে লড়াই করা। পৃথিবীতে একটি সত্যনিষ্ঠ রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করাই আল্লাহর ইচ্ছা, যার অধীনে পৃথিবীতে অবস্থানকারী মানুষ ও পশুপাখীসহ সমস্ত সৃষ্টি শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করবে। পৃথিবীর সমুদয় উপায়-উপকরণ এমনভাবে ব্যবহৃত হবে, যার ফলে সেগুলো মানবতার ধ্বংসে নয়; বরং তার উন্নতিতে সহায়ক হবে। এ ধরনের ব্যবস্থা কোন ভূখন্ডে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাওয়ার পর তাকে নষ্ট করার প্রচেষ্টা চালানো অথবা ক্ষুদ্র পরিসরে হত্যা, লুণ্ঠন, রাহাজানি, ডাকাতি ইত্যাদির মাধ্যমে বিপর্যয় সৃষ্টি করে এ ব্যবস্থাকে উৎখাত করে তার জায়গায় অন্য কোন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা চালানো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হিসেবেই বিবেচিত হবে। এখানে সংক্ষেপে বিভিন্ন ধরনের শাস্তির কথা বলে দেয়া হয়েছে, যাতে করে কাযী বা সমকালীন ইসলামী শাসক নিজের ইজতিহাদের মাধ্যমে প্রত্যেক অপরাধীকে তার অপরাধের ধরন ও মাত্রানুযায়ী শাস্তি দিতে পারেন। তবে আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে এ কথা প্রকাশ করা যে, ইসলামী হুকুমতের আওতায় বাস করে কোন ব্যক্তির ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থাকে পরিবর্তন করার প্রচেষ্টা চালানো নিকৃষ্ট ধরনের অপরাধ। এজন্য তাকে উল্লেখিত চরম শাস্তিগুলোর মধ্য থেকে যে কোন শাস্তি দেয়া যেতে পারে।
আল্লাহ জান্নাতের বিনিময়ে মুমিনের জান-মাল কিনে নিয়েছেন :
اِنَّ اللهَ اشْتَرٰى مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ اَنْفُسَهُمْ وَاَمْوَالَهُمْ بِاَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَؕ يُقَاتِلُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَيَقْتُلُوْنَ وَيُقْتَلُوْنَ وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا فِى التَّوْرَاةِ وَالْاِنْجِيْلِ وَالْقُرْاٰنِؕ وَمَنْ اَوْفٰى بِعَهْدِهٖ مِنَ اللهِ فَاسْتَبْشِرُوْا بِبَيْعِكُمُ الَّذِيْ بَايَعْتُمْ بِهٖؕ وَذٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ
নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের নিকট হতে তাদের জীবন ও সম্পদ ক্রয় করে নিয়েছেন; কেননা তাদের জন্য (এর বিনিময়ে) রয়েছে জান্নাত। তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে; অতঃপর তারা হত্যা করে ও নিহত হয়। তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআনে এ সম্পর্কে তাদের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি রয়েছে। আর নিজ প্রতিজ্ঞা পালনে আল্লাহর চেয়ে শ্রেষ্ঠতর আর কে আছে? (সুতরাং) তোমরা যা বিক্রয় করেছ সে বিক্রয়ের জন্য আনন্দিত হও; আর সেটাই তো মহাসাফল্য। (সূরা তাওবা- ১১১)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে ঈমান একটি চুক্তি। এ চুক্তির প্রেক্ষিতে বান্দা তার নিজের প্রাণ ও নিজের ধনসম্পদ আল্লাহর কাছে বিক্রি করে দেয়। আর এর বিনিময়ে সে আল্লাহর পক্ষ থেকে এ ওয়াদা চেয়ে নেয় যে, মৃত্যুপরবর্তী জীবনে তিনি তাকে জান্নাত দান করবেন। এ কেনা-বেচা এ অর্থে নয় যে, মানুষের একটি জিনিস আল্লাহ কিনতে চান। প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে, যে জিনিসটি আল্লাহর মালিকানাধীন, যাকে তিনি আমানত হিসেবে মানুষের হাতে সোপর্দ করেছেন সে ব্যাপারে তিনি মানুষের কাছে এ দাবী করেন যে, আমার জিনিসকে তুমি স্বেচ্ছায় ও সাগ্রহে আমার জিনিস বলে মেনে নাও এবং সারা জীবন আমানতদার হিসেবে তা ব্যবহার করার বিষয়টি গ্রহণ করে নাও। এর সঙ্গে খেয়ানত করার যে স্বাধীনতা তোমাকে দিয়েছি, তা তুমি নিজেই প্রত্যাহার করো। এভাবে যদি তুমি দুনিয়ার বর্তমান অস্থায়ী জীবনে নিজের স্বাধীনতাকে আমার হাতে বিক্রি করে দিতে পার, তাহলে আমি পরবর্তী চিরন্তন জীবনে এর মূল্য জান্নাতের আকারে তোমাকে দান করব। যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কেনা-বেচার এ চুক্তি সম্পাদন করে সে মুমিন। আর যে ব্যক্তি এটা অস্বীকার করবে সে কাফির। যে মুসলিম ব্যক্তি সঠিক অর্থে আল্লাহর উপর ঈমান এনেছে সে জীবনের সকল বিভাগে আল্লাহর ইচ্ছার অনুগত হয়ে কাজ করে। অনুরূপভাবে ঈমানদারদের সমন্বয়ে গঠিত কোন দল বা সমাজ সমষ্টিগতভাবেও আল্লাহর ইচ্ছা ও তাঁর শরয়ী আইনের বিধি-নিষেধমুক্ত হয়ে কোন পদ্ধতি, রাষ্ট্রীয় নীতি, সাংস্কৃতিক পদ্ধতি এবং কোন অর্থনৈতিক, সামাজিক ও আন্তর্জাতিক আচরণ অবলম্বন করতে পারে না। এ কেনা-বেচার মূল্য (অর্থাৎ জান্নাত) বর্তমান পার্থিব জীবনের অবসানের পর দেয়ার কথা বলা হয়েছে। সুতরাং বিক্রেতার পার্থিব জীবনকাল শেষ হওয়ার পর যখন প্রমাণিত হবে যে, কেনা-বেচার চুক্তি করার পর সে নিজের পার্থিব জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চুক্তির শর্তসমূহ পুরোপুরিভাবে মেনে চলেছে, একমাত্র তখনই এ বিক্রি সম্পন্ন হবে। এর আগ পর্যন্ত সে মূল্য পাওয়ার অধিকারী হতে পারে না।
জিহাদে মাল না দিলে নিজেরই ক্ষতি হবে :
هَاۤ اَنْتُمْ هٰۤؤُلَآءِ تُدْعَوْنَ لِتُنْفِقُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللّٰهِۚ فَمِنْكُمْ مَّنْ يَّبْخَلُۚ وَمَنْ يَّبْخَلْ فَاِنَّمَا يَبْخَلُ عَنْ نَّفْسِهٖؕ وَاللهُ الْغَنِيُّ وَاَنْتُمُ الْفُقَرَآءُۚ وَاِنْ تَتَوَلَّوْا يَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ ثُمَّ لَا يَكُوْنُوْاۤ اَمْثَالَكُمْ
তোমরা তো তারাই, যাদেরকে আল্লাহর পথে মাল খরচ করার জন্য ডাকা হলো, তখন তোমাদের মধ্য থেকে কিছু লোক কৃপণতা করেছে। আর যে কৃপণতা করেছে, সে আসলে নিজের সাথেই কৃপণতা করেছে। আল্লাহ অভাবমুক্ত, আর তোমরাই অভাবগ্রস্ত। যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে রাখ, তাহলে আল্লাহ তোমাদের বদলে অন্য এক সম্প্রদায়কে নিয়ে আসবেন। অতঃপর তারা তোমাদের মতো হবে না। (সূরা মুহাম্মাদ- ৩৮)
اِنَّ اللهَ اشْتَرٰى مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ اَنْفُسَهُمْ وَاَمْوَالَهُمْ بِاَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَؕ يُقَاتِلُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَيَقْتُلُوْنَ وَيُقْتَلُوْنَ وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا فِى التَّوْرَاةِ وَالْاِنْجِيْلِ وَالْقُرْاٰنِؕ وَمَنْ اَوْفٰى بِعَهْدِهٖ مِنَ اللهِ فَاسْتَبْشِرُوْا بِبَيْعِكُمُ الَّذِيْ بَايَعْتُمْ بِهٖؕ وَذٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ
নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের নিকট হতে তাদের জীবন ও সম্পদ ক্রয় করে নিয়েছেন; কেননা তাদের জন্য (এর বিনিময়ে) রয়েছে জান্নাত। তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে; অতঃপর তারা হত্যা করে ও নিহত হয়। তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআনে এ সম্পর্কে তাদের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি রয়েছে। আর নিজ প্রতিজ্ঞা পালনে আল্লাহর চেয়ে শ্রেষ্ঠতর আর কে আছে? (সুতরাং) তোমরা যা বিক্রয় করেছ সে বিক্রয়ের জন্য আনন্দিত হও; আর সেটাই তো মহাসাফল্য। (সূরা তাওবা- ১১১)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে ঈমান একটি চুক্তি। এ চুক্তির প্রেক্ষিতে বান্দা তার নিজের প্রাণ ও নিজের ধনসম্পদ আল্লাহর কাছে বিক্রি করে দেয়। আর এর বিনিময়ে সে আল্লাহর পক্ষ থেকে এ ওয়াদা চেয়ে নেয় যে, মৃত্যুপরবর্তী জীবনে তিনি তাকে জান্নাত দান করবেন। এ কেনা-বেচা এ অর্থে নয় যে, মানুষের একটি জিনিস আল্লাহ কিনতে চান। প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে, যে জিনিসটি আল্লাহর মালিকানাধীন, যাকে তিনি আমানত হিসেবে মানুষের হাতে সোপর্দ করেছেন সে ব্যাপারে তিনি মানুষের কাছে এ দাবী করেন যে, আমার জিনিসকে তুমি স্বেচ্ছায় ও সাগ্রহে আমার জিনিস বলে মেনে নাও এবং সারা জীবন আমানতদার হিসেবে তা ব্যবহার করার বিষয়টি গ্রহণ করে নাও। এর সঙ্গে খেয়ানত করার যে স্বাধীনতা তোমাকে দিয়েছি, তা তুমি নিজেই প্রত্যাহার করো। এভাবে যদি তুমি দুনিয়ার বর্তমান অস্থায়ী জীবনে নিজের স্বাধীনতাকে আমার হাতে বিক্রি করে দিতে পার, তাহলে আমি পরবর্তী চিরন্তন জীবনে এর মূল্য জান্নাতের আকারে তোমাকে দান করব। যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কেনা-বেচার এ চুক্তি সম্পাদন করে সে মুমিন। আর যে ব্যক্তি এটা অস্বীকার করবে সে কাফির। যে মুসলিম ব্যক্তি সঠিক অর্থে আল্লাহর উপর ঈমান এনেছে সে জীবনের সকল বিভাগে আল্লাহর ইচ্ছার অনুগত হয়ে কাজ করে। অনুরূপভাবে ঈমানদারদের সমন্বয়ে গঠিত কোন দল বা সমাজ সমষ্টিগতভাবেও আল্লাহর ইচ্ছা ও তাঁর শরয়ী আইনের বিধি-নিষেধমুক্ত হয়ে কোন পদ্ধতি, রাষ্ট্রীয় নীতি, সাংস্কৃতিক পদ্ধতি এবং কোন অর্থনৈতিক, সামাজিক ও আন্তর্জাতিক আচরণ অবলম্বন করতে পারে না। এ কেনা-বেচার মূল্য (অর্থাৎ জান্নাত) বর্তমান পার্থিব জীবনের অবসানের পর দেয়ার কথা বলা হয়েছে। সুতরাং বিক্রেতার পার্থিব জীবনকাল শেষ হওয়ার পর যখন প্রমাণিত হবে যে, কেনা-বেচার চুক্তি করার পর সে নিজের পার্থিব জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চুক্তির শর্তসমূহ পুরোপুরিভাবে মেনে চলেছে, একমাত্র তখনই এ বিক্রি সম্পন্ন হবে। এর আগ পর্যন্ত সে মূল্য পাওয়ার অধিকারী হতে পারে না।
জিহাদে মাল না দিলে নিজেরই ক্ষতি হবে :
هَاۤ اَنْتُمْ هٰۤؤُلَآءِ تُدْعَوْنَ لِتُنْفِقُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللّٰهِۚ فَمِنْكُمْ مَّنْ يَّبْخَلُۚ وَمَنْ يَّبْخَلْ فَاِنَّمَا يَبْخَلُ عَنْ نَّفْسِهٖؕ وَاللهُ الْغَنِيُّ وَاَنْتُمُ الْفُقَرَآءُۚ وَاِنْ تَتَوَلَّوْا يَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ ثُمَّ لَا يَكُوْنُوْاۤ اَمْثَالَكُمْ
তোমরা তো তারাই, যাদেরকে আল্লাহর পথে মাল খরচ করার জন্য ডাকা হলো, তখন তোমাদের মধ্য থেকে কিছু লোক কৃপণতা করেছে। আর যে কৃপণতা করেছে, সে আসলে নিজের সাথেই কৃপণতা করেছে। আল্লাহ অভাবমুক্ত, আর তোমরাই অভাবগ্রস্ত। যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে রাখ, তাহলে আল্লাহ তোমাদের বদলে অন্য এক সম্প্রদায়কে নিয়ে আসবেন। অতঃপর তারা তোমাদের মতো হবে না। (সূরা মুহাম্মাদ- ৩৮)
ইসলামের পক্ষে জিহাদ করার জন্য বায়‘আত করতে হবে :
اِنَّ الَّذِيْنَ يُبَايِعُوْنَكَ اِنَّمَا يُبَايِعُوْنَ اللهَؕ يَدُ اللهِ فَوْقَ اَيْدِيْهِمْۚ فَمَنْ نَّكَثَ فَاِنَّمَا يَنْكُثُ عَلٰى نَفْسِهٖۚ وَمَنْ اَوْفٰى بِمَا عَاهَدَ عَلَيْهُ اللهَ فَسَيُؤْتِيْهِ اَجْرًا عَظِيْمًا
(হে রাসূল!) যারা আপনার কাছে বায়‘আত গ্রহণ করেছিল তারা মূলত আল্লাহর কাছেই বায়‘আত করেছিল, তাদের হাতের উপর ছিল আল্লাহর হাত। সুতরাং এখন যে ব্যক্তি এ ওয়াদা ভঙ্গ করবে এর কুফল তার উপরই পড়বে। আর যে আল্লাহর সাথে ওয়াদা করে তা পূরণ করবে, অচিরেই তাকে মহাপুরস্কারে ভূষিত করা হবে। (সূরা ফাতহ- ১০)
لَقَدْ رَضِيَ اللهُ عَنِ الْمُؤْمِنِيْنَ اِذْ يُبَايِعُوْنَكَ تَحْتَ الشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِيْ قُلُوْبِهِمْ فَاَنْزَلَ السَّكِيْنَةَ عَلَيْهِمْ وَاَثَابَهُمْ فَتْحًا قَرِيْبًا
(হে রাসূল!) আল্লাহ মুমিনদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে গেলেন, যখন তারা গাছের নিচে আপনার কাছে বায়‘আত গ্রহণ করেছিল। তাদের অন্তরের অবস্থা তিনি জানেন। তাই তিনি তাদের উপর প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং পুরস্কার হিসেবে নিকটবর্তী বিজয় দান করলেন। (সূরা ফাতহ- ১৮)
জিহাদের জন্য অস্ত্র যোগাড় করতে হবে :
وَاَعِدُّوْا لَهُمْ مَّا اسْتَطَعْتُمْ مِّنْ قُوَّةٍ وَّمِنْ رِّبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُوْنَ بِهٖ عَدُوَّ اللهِ وَعَدُوَّكُمْ وَاٰخَرِيْنَ مِنْ دُوْنِهِمْۚ لَا تَعْلَمُوْنَهُمُۚ اَللهُ يَعْلَمُهُمْؕ وَمَا تُنْفِقُوْا مِنْ شَيْءٍ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ يُوَفَّ اِلَيْكُمْ وَاَنْتُمْ لَا تُظْلَمُوْنَ
তোমরা তাদের মুকাবিলার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ব-বাহিনী প্রস্তুত রাখবে। এর দ্বারা তোমরা ভীত-সন্ত্রস্ত করবে আল্লাহ ও তোমাদের শত্রুকে। এছাড়া এমন কিছু শত্রুকেও (ভীত-সন্ত্রস্ত করবে) যাদেরকে তোমরা জান না, কিন্তু আল্লাহ তাদেরকে জানেন। আল্লাহর পথে তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে, তোমাদেরকে তার পূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে এবং তোমাদের প্রতি কোন যুলুম করা হবে না। (সূরা আনফাল- ৬০)
সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا خُذُوْا حِذْرَكُمْ فَانْفِرُوْا ثُبَاتٍ اَوِ انْفِرُوْا جَمِيْعًا
হে মুমিনগণ! সতর্কতা অবলম্বন করো; অতঃপর হয় দলে দলে বিভক্ত হয়ে অগ্রসর হও অথবা একসঙ্গে অগ্রসর হও। (সূরা নিসা- ৭১)
সঠিক জায়গায় সৈন্য নিযুক্ত করতে হবে :
وَاِذْ غَدَوْتَ مِنْ اَهْلِكَ تُبَوِّئُ الْمُؤْمِنِيْنَ مَقَاعِدَ لِلْقِتَالِؕ وَاللهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
(স্মরণ করো) যখন তুমি তোমার পরিবার থেকে সকালে বের হয়েছিলে, তখন মুমিনদেরকে যুদ্ধের জন্য ঘাঁটিতে নিয়োজিত করেছিলে। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী। (সূরা আলে ইমরান- ১২১)
জিহাদের ডাক শুনলে মুজাহিদদের ঈমান বৃদ্ধি পায় :
اَ لَّذِيْنَ قَالَ لَهُمُ النَّاسُ اِنَّ النَّاسَ قَدْ جَمَعُوْا لَكُمْ فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ اِيْمَانًاۗ وَقَالُوْا حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الْوَكِيْلُ
লোকেরা যাদেরকে বলেছিল, নিশ্চয় তোমাদের বিরুদ্ধে লোকজন সমবেত হয়েছে। অতএব তোমরা তাদেরকে ভয় করো; কিন্তু এতে তাদের বিশ্বাস আরো বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং তারা বলেছিল, আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং মঙ্গলময় কর্মবিধায়ক। (সূরা আলে ইমরান- ১৭৩)
তারা পেছনে থাকার জন্য বাহানা খুঁজে না :
لَا يَسْتَاْذِنُكَ الَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ اَنْ يُّجَاهِدُوْا بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْؕ وَاللهُ عَلِيْمٌ ۢبِالْمُتَّقِيْنَ
যারা আল্লাহর প্রতি ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান আনে, তারা তোমার নিকট নিজ সম্পদ ও জীবন দ্বারা জিহাদ করা থেকে অব্যহতি পাওয়ার জন্য আবেদন করে না। আল্লাহ মুত্তাক্বীদের সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত। (সূরা তাওবা- ৪৪)
তারা আল্লাহর রহমত কামনা করে :
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَالَّذِيْنَ هَاجَرُوْا وَجَاهَدُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللّٰهِ اُولٰٓئِكَ يَرْجُوْنَ رَحْمَتَ اللهِ ؕ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
নিশ্চয় যারা ঈমান আনয়ন করেছে, হিজরত করেছে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে, তারাই আল্লাহর রহমত পাওয়ার আশা করতে পারে। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু। (সূরা বাক্বারা- ২১৮)
তারা আখিরাতের বিনিময়ে দুনিয়াকে বিক্রি করে দেয় :
فَلْيُقَاتِلْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ الَّذِيْنَ يَشْرُوْنَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا بِالْاٰخِرَةِؕ وَمَنْ يُّقَاتِلْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَيُقْتَلْ اَوْ يَغْلِبْ فَسَوْفَ نُؤْتِيْهِ اَجْرًا عَظِيْمًا
যারা আখিরাতের বিনিময়ে পার্থিব জীবনকে বিক্রয় করে দিয়েছে তারা যেন আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে যুদ্ধ করবে সে নিহত হোক অথবা বিজয়ী হোক- আমি তাকে মহাপুরস্কার দান করবই। (সূরা নিসা- ৭৪)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর পথে লড়াই করা দুনিয়ার স্বার্থ পূজারী লোকদের কাজ নয়। এটা এমন লোকদের কাজ, যারা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কাজ করে, যারা আল্লাহ ও আখিরাতের উপর পূর্ণ আস্থা রাখে এবং নিজেদের পার্থিব সমৃদ্ধির সমস্ত সম্ভাবনা একমাত্র আল্লাহর জন্য ত্যাগ করতে প্রস্তুত থাকে। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হয়, তাদের রব যেন তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান এবং আখিরাতে যেন তাদের শ্রম বিফলে না যায়।
তারা শত্রুকে ভয় করে না, বরং আল্লাহকেই ভয় করে :
اَلَا تُقَاتِلُوْنَ قَوْمًا نَّكَثُوْاۤ اَيْمَانَهُمْ وَهَمُّوا بِاِخْرَاجِ الرَّسُوْلِ وَهُمْ بَدَءُوْكُمْ اَوَّلَ مَرَّةٍ اَتَخْشَوْنَهُمْ فَاللهُ اَحَقُّ اَنْ تَخْشَوْهُ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
তোমরা কি এমন একটি দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে না, যারা বার বার নিজেদের অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে। যারা আল্লাহর রাসূলকে স্বদেশ থেকে বের করার পরিকল্পনা করেছে এবং তারাই তো প্রথম তোমাদের উপর হামলা শুরু করেছে। তোমরা কি তাদেরকে ভয় কর? অথচ যদি তোমরা মুমিন হও, তাহলে তোমাদের উচিত আল্লাহকেই সবচেয়ে বেশি ভয় করা। (সূরা তাওবা- ১৩)
তারা কোন নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় করে না :
يُجَاهِدُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَلَا يَخَافُوْنَ لَوْمَةَ لَآئِمٍؕ ذٰلِكَ فَضْلُ اللهِ يُؤْتِيْهِ مَنْ يَّشَآءُؕ وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ
তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে, কোন নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় করে না; এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছা তিনি তা দান করেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও সর্বজ্ঞ। (সূরা মায়েদা- ৫৪)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ তারা আল্লাহর দ্বীনের অনুসরণ করার ব্যাপারে, তাঁর বিধানসমূহ কার্যকর করার ব্যাপারে এবং এ দ্বীনের দৃষ্টিতে যা সত্য তাকে সত্য আর যা মিথ্যা তাকে মিথ্যা বলার ব্যাপারে আপোষহীন ও নির্ভীক। তারা কারো বিরোধিতা, নিন্দা, তিরস্কার ও আপত্তির পরোয়া করে না। সকল মানুষও যদি ইসলাম বিরোধী হয়, তাহলেও তারা সত্য পথেই চলতে থাকে।
তারা শাহাদাত কামনা করে :
مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ رِجَالٌ صَدَقُوْا مَا عَاهَدُوا اللهَ عَلَيْهِۚ فَمِنْهُمْ مَّنْ قَضٰى نَحْبَهٗ وَمِنْهُمْ مَّنْ يَّنْتَظِرُ وَمَا بَدَّلُوْا تَبْدِيْلًا
মুমিনদের মধ্যে কতক লোক এমনও রয়েছে, যারা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে; তাদের মধ্যে কেউ কেউ শাহাদাতবরণ করেছে এবং কেউ কেউ অপেক্ষায় রয়েছে। তারা স্বীয় সংকল্প একটুও পরিবর্তন করেনি। (সূরা আহযাব- ২৩)
তারা মুমিনদের ব্যাপারে কোমল ও শত্রুদের ব্যাপারে কঠোর :
مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللّٰهِ وَالَّذِيْنَ مَعَهٗۤ اَشِدَّآءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَآءُ بَيْنَهُمْ
মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল, আর তাঁর (মুহাম্মদের) সাথে যারা আছে তারা কাফিরদের ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর, তবে নিজেদের ব্যাপারে একান্ত সহানুভূতিশীল। (সূরা ফাতহ- ২৯)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا قَاتِلُوا الَّذِيْنَ يَلُوْنَكُمْ مِّنَ الْكُفَّارِ وَلْيَجِدُوْا فِيْكُمْ غِلْظَةً وَّاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللّٰهَ مَعَ الْمُتَّقِيْنَ
হে ঈমানদারগণ! কাফিরদের মধ্যে যারা তোমাদের সীমান্তের কাছাকাছি রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে এমনভাবে জিহাদ করো, যেন তারা তোমাদের মধ্যে কঠোরতা দেখতে পায়। জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাক্বীদের সাথেই রয়েছেন। (সূরা তাওবা- ১২৩)
ব্যাখ্যা : কাফিরদের ব্যাপারে কঠোর হওয়ার অর্থ হচ্ছে, নিজের মজবুত ঈমান, নিঃস্বার্থ ও একনিষ্ঠ দ্বীনদারী, চারিত্রিক শক্তি ও ঈমানী দূরদৃষ্টির কারণে একজন মুমিন ইসলাম বিরোধীদের মুকাবিলায় পাহাড়ের মতো অটল থাকবে। নিজের স্থান থেকে তাকে এক চুলও নড়ানো যাবে না। ইসলাম বিরোধীরা কখনো তাকে নমনীয়, দোদুল্যমান এবং সহজে গলধঃকরণ করার মতো খাদ্য মনে করতে পারবে না। যখনই তারা তার মুখোমুখি হয় তখনই টের পেয়ে যায় যে, আল্লাহর এ বান্দা মরে যেতে পারে; কিন্তু কখনো কোন মূল্যে বিক্রি হবে না এবং কোন চাপের কাছে নতি স্বীকারও করবে না।
কাফিরদের ন্যায় অহংকার করা যাবে না :
وَلَا تَكُوْنُوْا كَالَّذِيْنَ خَرَجُوْا مِنْ دِيَارِهِمْ بَطَرًا وَّرِئَآءَ النَّاسِ وَيَصُدُّوْنَ عَنْ سَبِيْلِ اللّٰهِؕ وَاللهُ بِمَا يَعْمَلُوْنَ مُحِيْطٌ
তোমরা কখনো তাদের মতো হয়ো না, যারা অহংকার করে এবং লোকদেরকে নিজেদের জাঁকজমক দেখানোর জন্য নিজেদের ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে এবং যারা সাধারণ মানুষদেরকে আল্লাহর পথ থেকে ফিরিয়ে রেখেছে। মূলত আল্লাহ তাদের সকল কার্যকলাপই পরিবেষ্টন করে আছেন। (সূরা আনফাল- ৪৭)
ব্যাখ্যা : কুরাইশ সেনাবাহিনী মক্কা থেকে বের হয়েছিল অত্যন্ত জাঁকজমকের সাথে। পথের মাঝখানে বিভিন্ন জায়গায় থেমে তারা নাচ-গান, মদ্য পান ও আনন্দ উল্লাসের আসর জমিয়ে তুলেছিল। তারা এমনভাবে বীরত্ব দেখাচ্ছিল, যেন তাদের সামনে দাঁড়ানোর মতো কেউ নেই। যে উদ্দেশ্যে তারা ঘর থেকে বের হয়েছিল, তা ছিল তাদের নৈতিক অবস্থার চেয়েও আরো বেশি নোংরা ও অপবিত্র। তারা চাচ্ছিল সত্য, সততা ও ইনসাফের ঝান্ডা যাতে বুলন্দ না হয় এবং যারা এ পথে এগিয়ে এসেছে, তাদেরকেও খতম করা যায়। এ ব্যাপারে মুসলিমদেরকে সতর্ক করে দেয়া হচ্ছে যে, তোমরা তাদের মতো হয়ো না। আল্লাহ তোমাদের ঈমান ও সত্যপ্রিয়তার যে নিয়ামত দান করেছেন তার দাবী অনুযায়ী তোমাদের চরিত্র যেমন পাক-পবিত্র হতে হবে তেমনি তোমাদের যুদ্ধের উদ্দেশ্যও হতে হবে মহৎ।
জিহাদ করতে গিয়ে সীমালঙ্ঘন করা যাবে না :
وَقَاتِلُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ الَّذِيْنَ يُقَاتِلُوْنَكُمْ وَلَا تَعْتَدُوْاۤ اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِيْنَ
যারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে তোমরাও তাদের সাথে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করো, তবে সীমলঙ্ঘন করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে ভালোবাসেন না। (সূরা বাক্বারা- ১৯০)
وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَاٰنُ قَوْمٍ اَنْ صَدُّوْكُمْ عَنِ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ اَنْ تَعْتَدُوْا
তোমাদেরকে মাসজিদুল হারামে প্রবেশে বাধা দেয়ার কারণে কোন সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ তোমাদেরকে যেন কখনই সীমালঙ্ঘনে প্ররোচিত না করে। (সূরা মায়েদা- ২)
জেনে বুঝে পদক্ষেপ নিতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا ضَرَبْتُمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَتَبَيَّنُوْا وَلَا تَقُوْلُوْا لِمَنْ اَلْقٰۤى اِلَيْكُمُ السَّلَامَ لَسْتَ مُؤْمِنًاۚ تَبْتَغُوْنَ عَرَضَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا فَعِنْدَ اللهِ مَغَانِمُ كَثِيْرَةٌؕ كَذٰلِكَ كُنْتُمْ مِّنْ قَبْلُ فَمَنَّ اللهُ عَلَيْكُمْ فَتَبَيَّنُوْاؕ اِنَّ اللهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِيْرًا
হে মুমিনগণ! যখন তোমরা আল্লাহর পথে বের হবে, তখন পরীক্ষা করে নেবে এবং কেউ তোমাদেরকে সালাম বললে ইহজীবনের সম্পদের আকাঙ্ক্ষায় তাকে বলো না যে, তুমি মুমিন নও; কারণ আল্লাহর নিকট প্রচুর গনিমতের সম্পদ রয়েছে। তোমরা তো পূর্বে এরূপই ছিলে। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন; সুতরাং তোমরা পরীক্ষা করে নেবে। নিশ্চয় তোমরা যা কর আল্লাহ সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত। (সূরা নিসা- ৯৪)
শানে নুযূল : ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক লোক একটি ছোট্ট বকরীর পাল চরাচ্ছিল। এমতাবস্থায় কতক মুসলিম তার কাছে আগমন করলে সে বলল, ‘‘আস্সালামু ‘আলাকুম’’। এতদসত্ত্বেও তারা তাকে পাকড়াও করল। অতঃপর তারা তাকে হত্যা করে তার এ ছোট্ট বকরীর পালটি নিয়ে নিল। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে অত্র আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (সহীহ বুখারী, হা/৭৪৩৫)
আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে :
وَعَلَى اللهِ فَتَوَكَّلُوْاۤ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
আল্লাহর উপরই নির্ভর করো, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক। (সূরা মায়েদা- ২৩)
আল্লাহকে স্মরণ করতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا لَقِيْتُمْ فِئَةً فَاثْبُتُوْا وَاذْكُرُوا اللهَ كَثِيْرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা যখন কোন দলের সম্মুখীন হবে তখন অবিচল থাকবে এবং আল্লাহকে অধিক হারে স্মরণ করবে, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সূরা আনফাল- ৪৫)
সৈন্যদের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখতে হবে :
وَاَطِيْعُوا اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَلَا تَنَازَعُوْا فَتَفْشَلُوْا وَتَذْهَبَ رِيْحُكُمْ وَاصْبِرُوْاؕ اِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِيْنَ
তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে ও নিজেদের মধ্যে বিবাদ করবে না, নতুবা তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলবে এবং তোমাদের শক্তি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তোমরা ধৈর্যধারণ করো; নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন। (সূরা আনফাল- ৪৬)
শত্রুদের চেয়ে বেশি দৃঢ়তা অবলম্বন করতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اصْبِرُوْا وَصَابِرُوْا وَرَابِطُوْا وَاتَّقُوا اللّٰهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্যধারণ করো, দৃঢ়তা প্রদর্শন করো, (নিজেদের প্রতিরক্ষাকল্পে) পারস্পরিক বন্ধন মজবুত করো এবং আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা আলে ইমরান- ২০০)
ব্যাখ্যা : صَابِرُوْا (সাবিরু) এর দু’টি অর্থ হয়। (এক) কাফিররা কুফরীর ব্যাপারে যে দৃঢ়তা দেখাচ্ছে এবং কুফরীর ঝান্ডা সমুন্নত রাখার জন্য যে ধরনের কষ্ট স্বীকার করছে, তোমরা তাদের মুকাবিলায় তাদের চেয়েও বেশি দৃঢ়তা দেখাও। (দুই) তাদের মুকাবিলায় দৃঢ়তা দেখানোর ব্যাপারে পরস্পরের মধ্যে প্রতিযোগিতা করো।
শত্রুদেরকে হত্যা করতে হবে :
فَاِذَا لَقِيْتُمُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا فَضَرْبَ الرِّقَابِ
যখন তোমরা কাফিরদের মুখোমুখি হবে তখন (তাদের) গর্দানে আঘাত করবে। (সূরা মুহাম্মাদ- ৪)
শত্রুদেরকে বন্দী করতে হবে :
حَتّٰۤى اِذَاۤ اَثْخَنْتُمُوْهُمْ فَشُدُّوا الْوَثَاقَ
এমনকি যখন তোমরা তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পরাজিত করে ফেলবে, তখন (বন্দীদেরকে) শক্তভাবে বাঁধবে। (সূরা মুহাম্মাদ- ৪)
فَاِمَّا تَثْقَفَنَّهُمْ فِى الْحَرْبِ فَشَرِّدْ بِهِمْ مَّنْ خَلْفَهُمْ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُوْنَ
যুদ্ধে তোমরা যদি তাদেরকে তোমাদের আয়ত্তে পাও, তবে তাদেরকে তাদের পশ্চাতে যারা আছে তাদের হতে বিচ্ছিন্ন করে এমনভাবে বিধ্বস্ত করবে, যাতে তারা শিক্ষা লাভ করতে পারে। (সূরা আনফাল- ৫৭)
শত্রুদের ধাওয়া করতে গিয়ে দুর্বর্র্র্লতা দেখানো যাবে না :
وَلَا تَهِنُوْا فِى ابْتِغَآءِ الْقَوْمِؕ اِنْ تَكُوْنُوْا تَاْلَمُوْنَ فَاِنَّهُمْ يَاْلَمُوْنَ كَمَا تَاْلَمُوْنَۚ وَتَرْجُوْنَ مِنَ اللهِ مَا لَا يَرْجُوْنَؕ وَكَانَ اللهُ عَلِيْمًا حَكِيْمًا
শত্রু সম্প্রদায়ের সন্ধানে তোমরা দুর্বল হয়ো না। যদি তোমরা যন্ত্রণা পাও, তবে তারাও তো তোমাদের মতোই যন্ত্রণা পায়। আর তোমরা আল্লাহর নিকট যা আশা কর, তারা তা আশা করে না। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা- ১০৪)
ব্যাখ্যা : কাফিররা বাতিলের জন্য যে পরিমাণ কষ্ট স্বীকার করছে ঈমানদাররা যদি হকের জন্য অন্তত এতটুকু কষ্টও সহ্য করতে না পারে, তাহলে তা হবে সত্যিই বিস্ময়কর। কেননা কাফিররা কেবল দুনিয়া ও তার ক্ষণস্থায়ী স্বার্থ ছাড়া অন্য কিছুই করে না। কিন্তু ঈমানদাররা এ ক্ষণস্থায়ী স্বার্থের দিকে না তাকিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তাঁর চিরন্তন পুরস্কার লাভের বৃহত্তম আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে। কাজেই বৃহত্তম স্বার্থে মুমিনদেরকে অবশ্যই কাফিরদের তুলনায় একটু বেশিই কষ্ট সহ্য করতে হবে।
নেতার আদেশ অমান্য করা যাবে না :
وَلَقَدْ صَدَقَكُمُ اللهُ وَعْدَهٗۤ اِذْ تَحُسُّوْنَهُمْ بِاِذْنِهٖ حَتّٰۤى اِذَا فَشِلْتُمْ وَتَنَازَعْتُمْ فِى الْاَمْرِ وَعَصَيْتُمْ مِّنْ ۢبَعْدِ مَاۤ اَرَاكُمْ مَّا تُحِبُّوْنَ
আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বীয় অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করেছেন যখন তাঁর নির্দেশে তোমরা তাদেরকে হত্যা করছিলে, কিন্তু পরে তোমরা ছত্রভঙ্গ হয়েছিলে ও কর্তব্য স্থির করার ব্যাপারে বিবাদে লিপ্ত হয়েছিলে এবং তোমরা যা ভালোবেসেছিলে, তা তিনি তোমাদেরকে দেখানোর পর তাঁর আদেশের অবাধ্য হয়েছিলে। (সূরা আলে ইমরান- ১৫২)
ব্যাখ্যা : রাসূল ﷺ ওহুদের যুদ্ধের আক্রমণ ঠেকানোর উদ্দেশ্যে আবদুল্লাহ ইবনে যুবারের (রাঃ) এর নেতৃত্বে ৫০ জন তীরন্দাজকে নিযুক্ত করেন এবং সুস্পষ্ট নির্দেশ না পাওয়া পর্যমত্ম এ স্থান ত্যাগ করতে নিষেধ করেন। অতঃপর যখন যুদ্ধ আরম্ভ হয়, তখন মুসলিম বাহিনী একের পর এক সাফল্য লাভ করতে থাকে এবং কুরাইশ বাহিনী পলায়ন করতে থাকে। যুদ্ধের প্রাথমিক সাফল্যের উল্লাসে মুসলিম সৈন্যবাহিনী শৃঙ্খলা হারিয়ে ফেলে এবং গিরিপথের রক্ষণাবেক্ষণের পরিবর্তে গনিমতের মাল সংগ্রহে নিয়োজিত হয়। এ সুযোগে কুরাইশ সেনাপতি খালিদ ইবনে ওয়ালীদ পেছন থেকে অতর্কিত হামলা করে মুসলিমদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
ময়দান ছেড়ে পলায়ন করা যাবে না :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا لَقِيْتُمُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا زَحْفًا فَلَا تُوَلُّوْهُمُ الْاَدْبَارَ
হে মুমিনগণ! যখন তোমরা কাফির বাহিনীর সম্মুখীন হবে, তখন তোমরা তাদের পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে না।
(সূরা আনফাল- ১৫)
ময়দান থেকে পলায়ন করা বড় অন্যায় :
وَمَنْ يُّوَلِّهِمْ يَوْمَئِذٍ دُبُرَهٗۤ اِلَّا مُتَحَرِّفًا لِّقِتَالٍ اَوْ مُتَحَيِّزًا اِلٰى فِئَةٍ فَقَدْ بَآءَ بِغَضَبٍ مِّنَ اللهِ وَمَاْوَاهُ جَهَنَّمُؕ وَبِئْسَ الْمَصِيْرُ
সেদিন যারা যুদ্ধ কৌশল অবলম্বন কিংবা দলে স্থান নেয়া ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে, সে আল্লাহর ক্রোধে পতিত হবে। তার আশ্রয়স্থল হবে জাহান্নাম; আর তা কতই না নিকৃষ্টতম প্রত্যাবর্তনস্থল। (সূরা আনফাল- ১৬)
সাময়িক পরাজয় হলেও দুঃখ করতে নেই :
وَلَا تَهِنُوْا وَلَا تَحْزَنُوْا وَاَنْتُمُ الْاَعْلَوْنَ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
আর তোমরা দুর্বল হয়ো না এবং চিন্তিতও হয়ো না। যদি তোমরা বিশ্বাসী হও, তবে তোমরাই বিজয়ী হবে।
(সূরা আলে ইমরান- ১৩৯)
فَلَا تَهِنُوْا وَتَدْعُوْاۤ اِلَى السَّلْمِ وَاَنْتُمُ الْاَعْلَوْنَۗ وَاللهُ مَعَكُمْ وَلَنْ يَّتِرَكُمْ اَعْمَالَكُمْ
তোমরা হীনতা স্বীকার করে সন্ধির প্রস্তাব দিয়ো না; কেননা তোমরাই তো বিজয়ী থাকবে। আল্লাহ তোমাদের সাথে আছেন এবং তিনি তোমাদের আমলের প্রতিদান মোটেই কম দেবেন না। (সূরা মুহাম্মাদ - ৩৫)
ব্যাখ্যা : ঈমানদাররা বিজয়ী হলে এটা যে তাদের জন্য ভালো- এ কথা সবার জানা। কিন্তু নিজেদের উদ্দেশ্য সাধনের পথে প্রাণ দান করে যদি তারা মাটিতে বিলীন হয়ে যায়, তাহলে দুনিয়াবাসীরা এটাকে তাদের চরম ব্যর্থ বলে মনে করলেও প্রকৃতপক্ষে এটিও এক প্রকার সাফল্য। কারণ মুমিন একটি দেশ বিজয় করল কি করল না অথবা কোন সরকার প্রতিষ্ঠিত করল কি করল না, এটা তার সাফল্য ও ব্যর্থতার মাপকাঠি নয়। বরং মুমিন আল্লাহর কালিমা উঁচু করার জন্য নিজের মন-মস্তিষ্ক, দেহ ও প্রাণের সমুদয় শক্তি নিয়োজিত করেছে কি না, এটাই তার মাপকাঠি। এ কাজ যদি সে করে থাকে, তাহলে দুনিয়ার বিচারে তার ফলাফল শূন্য হলেও প্রকৃতপক্ষে সে সফলকাম।
اِنَّ الَّذِيْنَ يُبَايِعُوْنَكَ اِنَّمَا يُبَايِعُوْنَ اللهَؕ يَدُ اللهِ فَوْقَ اَيْدِيْهِمْۚ فَمَنْ نَّكَثَ فَاِنَّمَا يَنْكُثُ عَلٰى نَفْسِهٖۚ وَمَنْ اَوْفٰى بِمَا عَاهَدَ عَلَيْهُ اللهَ فَسَيُؤْتِيْهِ اَجْرًا عَظِيْمًا
(হে রাসূল!) যারা আপনার কাছে বায়‘আত গ্রহণ করেছিল তারা মূলত আল্লাহর কাছেই বায়‘আত করেছিল, তাদের হাতের উপর ছিল আল্লাহর হাত। সুতরাং এখন যে ব্যক্তি এ ওয়াদা ভঙ্গ করবে এর কুফল তার উপরই পড়বে। আর যে আল্লাহর সাথে ওয়াদা করে তা পূরণ করবে, অচিরেই তাকে মহাপুরস্কারে ভূষিত করা হবে। (সূরা ফাতহ- ১০)
لَقَدْ رَضِيَ اللهُ عَنِ الْمُؤْمِنِيْنَ اِذْ يُبَايِعُوْنَكَ تَحْتَ الشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِيْ قُلُوْبِهِمْ فَاَنْزَلَ السَّكِيْنَةَ عَلَيْهِمْ وَاَثَابَهُمْ فَتْحًا قَرِيْبًا
(হে রাসূল!) আল্লাহ মুমিনদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে গেলেন, যখন তারা গাছের নিচে আপনার কাছে বায়‘আত গ্রহণ করেছিল। তাদের অন্তরের অবস্থা তিনি জানেন। তাই তিনি তাদের উপর প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং পুরস্কার হিসেবে নিকটবর্তী বিজয় দান করলেন। (সূরা ফাতহ- ১৮)
জিহাদের জন্য অস্ত্র যোগাড় করতে হবে :
وَاَعِدُّوْا لَهُمْ مَّا اسْتَطَعْتُمْ مِّنْ قُوَّةٍ وَّمِنْ رِّبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُوْنَ بِهٖ عَدُوَّ اللهِ وَعَدُوَّكُمْ وَاٰخَرِيْنَ مِنْ دُوْنِهِمْۚ لَا تَعْلَمُوْنَهُمُۚ اَللهُ يَعْلَمُهُمْؕ وَمَا تُنْفِقُوْا مِنْ شَيْءٍ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ يُوَفَّ اِلَيْكُمْ وَاَنْتُمْ لَا تُظْلَمُوْنَ
তোমরা তাদের মুকাবিলার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ব-বাহিনী প্রস্তুত রাখবে। এর দ্বারা তোমরা ভীত-সন্ত্রস্ত করবে আল্লাহ ও তোমাদের শত্রুকে। এছাড়া এমন কিছু শত্রুকেও (ভীত-সন্ত্রস্ত করবে) যাদেরকে তোমরা জান না, কিন্তু আল্লাহ তাদেরকে জানেন। আল্লাহর পথে তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে, তোমাদেরকে তার পূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে এবং তোমাদের প্রতি কোন যুলুম করা হবে না। (সূরা আনফাল- ৬০)
সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا خُذُوْا حِذْرَكُمْ فَانْفِرُوْا ثُبَاتٍ اَوِ انْفِرُوْا جَمِيْعًا
হে মুমিনগণ! সতর্কতা অবলম্বন করো; অতঃপর হয় দলে দলে বিভক্ত হয়ে অগ্রসর হও অথবা একসঙ্গে অগ্রসর হও। (সূরা নিসা- ৭১)
সঠিক জায়গায় সৈন্য নিযুক্ত করতে হবে :
وَاِذْ غَدَوْتَ مِنْ اَهْلِكَ تُبَوِّئُ الْمُؤْمِنِيْنَ مَقَاعِدَ لِلْقِتَالِؕ وَاللهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
(স্মরণ করো) যখন তুমি তোমার পরিবার থেকে সকালে বের হয়েছিলে, তখন মুমিনদেরকে যুদ্ধের জন্য ঘাঁটিতে নিয়োজিত করেছিলে। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী। (সূরা আলে ইমরান- ১২১)
জিহাদের ডাক শুনলে মুজাহিদদের ঈমান বৃদ্ধি পায় :
اَ لَّذِيْنَ قَالَ لَهُمُ النَّاسُ اِنَّ النَّاسَ قَدْ جَمَعُوْا لَكُمْ فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ اِيْمَانًاۗ وَقَالُوْا حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الْوَكِيْلُ
লোকেরা যাদেরকে বলেছিল, নিশ্চয় তোমাদের বিরুদ্ধে লোকজন সমবেত হয়েছে। অতএব তোমরা তাদেরকে ভয় করো; কিন্তু এতে তাদের বিশ্বাস আরো বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং তারা বলেছিল, আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং মঙ্গলময় কর্মবিধায়ক। (সূরা আলে ইমরান- ১৭৩)
তারা পেছনে থাকার জন্য বাহানা খুঁজে না :
لَا يَسْتَاْذِنُكَ الَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ اَنْ يُّجَاهِدُوْا بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْؕ وَاللهُ عَلِيْمٌ ۢبِالْمُتَّقِيْنَ
যারা আল্লাহর প্রতি ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান আনে, তারা তোমার নিকট নিজ সম্পদ ও জীবন দ্বারা জিহাদ করা থেকে অব্যহতি পাওয়ার জন্য আবেদন করে না। আল্লাহ মুত্তাক্বীদের সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত। (সূরা তাওবা- ৪৪)
তারা আল্লাহর রহমত কামনা করে :
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَالَّذِيْنَ هَاجَرُوْا وَجَاهَدُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللّٰهِ اُولٰٓئِكَ يَرْجُوْنَ رَحْمَتَ اللهِ ؕ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
নিশ্চয় যারা ঈমান আনয়ন করেছে, হিজরত করেছে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে, তারাই আল্লাহর রহমত পাওয়ার আশা করতে পারে। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু। (সূরা বাক্বারা- ২১৮)
তারা আখিরাতের বিনিময়ে দুনিয়াকে বিক্রি করে দেয় :
فَلْيُقَاتِلْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ الَّذِيْنَ يَشْرُوْنَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا بِالْاٰخِرَةِؕ وَمَنْ يُّقَاتِلْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَيُقْتَلْ اَوْ يَغْلِبْ فَسَوْفَ نُؤْتِيْهِ اَجْرًا عَظِيْمًا
যারা আখিরাতের বিনিময়ে পার্থিব জীবনকে বিক্রয় করে দিয়েছে তারা যেন আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে যুদ্ধ করবে সে নিহত হোক অথবা বিজয়ী হোক- আমি তাকে মহাপুরস্কার দান করবই। (সূরা নিসা- ৭৪)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর পথে লড়াই করা দুনিয়ার স্বার্থ পূজারী লোকদের কাজ নয়। এটা এমন লোকদের কাজ, যারা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কাজ করে, যারা আল্লাহ ও আখিরাতের উপর পূর্ণ আস্থা রাখে এবং নিজেদের পার্থিব সমৃদ্ধির সমস্ত সম্ভাবনা একমাত্র আল্লাহর জন্য ত্যাগ করতে প্রস্তুত থাকে। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হয়, তাদের রব যেন তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান এবং আখিরাতে যেন তাদের শ্রম বিফলে না যায়।
তারা শত্রুকে ভয় করে না, বরং আল্লাহকেই ভয় করে :
اَلَا تُقَاتِلُوْنَ قَوْمًا نَّكَثُوْاۤ اَيْمَانَهُمْ وَهَمُّوا بِاِخْرَاجِ الرَّسُوْلِ وَهُمْ بَدَءُوْكُمْ اَوَّلَ مَرَّةٍ اَتَخْشَوْنَهُمْ فَاللهُ اَحَقُّ اَنْ تَخْشَوْهُ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
তোমরা কি এমন একটি দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে না, যারা বার বার নিজেদের অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে। যারা আল্লাহর রাসূলকে স্বদেশ থেকে বের করার পরিকল্পনা করেছে এবং তারাই তো প্রথম তোমাদের উপর হামলা শুরু করেছে। তোমরা কি তাদেরকে ভয় কর? অথচ যদি তোমরা মুমিন হও, তাহলে তোমাদের উচিত আল্লাহকেই সবচেয়ে বেশি ভয় করা। (সূরা তাওবা- ১৩)
তারা কোন নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় করে না :
يُجَاهِدُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَلَا يَخَافُوْنَ لَوْمَةَ لَآئِمٍؕ ذٰلِكَ فَضْلُ اللهِ يُؤْتِيْهِ مَنْ يَّشَآءُؕ وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ
তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে, কোন নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় করে না; এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছা তিনি তা দান করেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও সর্বজ্ঞ। (সূরা মায়েদা- ৫৪)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ তারা আল্লাহর দ্বীনের অনুসরণ করার ব্যাপারে, তাঁর বিধানসমূহ কার্যকর করার ব্যাপারে এবং এ দ্বীনের দৃষ্টিতে যা সত্য তাকে সত্য আর যা মিথ্যা তাকে মিথ্যা বলার ব্যাপারে আপোষহীন ও নির্ভীক। তারা কারো বিরোধিতা, নিন্দা, তিরস্কার ও আপত্তির পরোয়া করে না। সকল মানুষও যদি ইসলাম বিরোধী হয়, তাহলেও তারা সত্য পথেই চলতে থাকে।
তারা শাহাদাত কামনা করে :
مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ رِجَالٌ صَدَقُوْا مَا عَاهَدُوا اللهَ عَلَيْهِۚ فَمِنْهُمْ مَّنْ قَضٰى نَحْبَهٗ وَمِنْهُمْ مَّنْ يَّنْتَظِرُ وَمَا بَدَّلُوْا تَبْدِيْلًا
মুমিনদের মধ্যে কতক লোক এমনও রয়েছে, যারা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে; তাদের মধ্যে কেউ কেউ শাহাদাতবরণ করেছে এবং কেউ কেউ অপেক্ষায় রয়েছে। তারা স্বীয় সংকল্প একটুও পরিবর্তন করেনি। (সূরা আহযাব- ২৩)
তারা মুমিনদের ব্যাপারে কোমল ও শত্রুদের ব্যাপারে কঠোর :
مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللّٰهِ وَالَّذِيْنَ مَعَهٗۤ اَشِدَّآءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَآءُ بَيْنَهُمْ
মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল, আর তাঁর (মুহাম্মদের) সাথে যারা আছে তারা কাফিরদের ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর, তবে নিজেদের ব্যাপারে একান্ত সহানুভূতিশীল। (সূরা ফাতহ- ২৯)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا قَاتِلُوا الَّذِيْنَ يَلُوْنَكُمْ مِّنَ الْكُفَّارِ وَلْيَجِدُوْا فِيْكُمْ غِلْظَةً وَّاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللّٰهَ مَعَ الْمُتَّقِيْنَ
হে ঈমানদারগণ! কাফিরদের মধ্যে যারা তোমাদের সীমান্তের কাছাকাছি রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে এমনভাবে জিহাদ করো, যেন তারা তোমাদের মধ্যে কঠোরতা দেখতে পায়। জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাক্বীদের সাথেই রয়েছেন। (সূরা তাওবা- ১২৩)
ব্যাখ্যা : কাফিরদের ব্যাপারে কঠোর হওয়ার অর্থ হচ্ছে, নিজের মজবুত ঈমান, নিঃস্বার্থ ও একনিষ্ঠ দ্বীনদারী, চারিত্রিক শক্তি ও ঈমানী দূরদৃষ্টির কারণে একজন মুমিন ইসলাম বিরোধীদের মুকাবিলায় পাহাড়ের মতো অটল থাকবে। নিজের স্থান থেকে তাকে এক চুলও নড়ানো যাবে না। ইসলাম বিরোধীরা কখনো তাকে নমনীয়, দোদুল্যমান এবং সহজে গলধঃকরণ করার মতো খাদ্য মনে করতে পারবে না। যখনই তারা তার মুখোমুখি হয় তখনই টের পেয়ে যায় যে, আল্লাহর এ বান্দা মরে যেতে পারে; কিন্তু কখনো কোন মূল্যে বিক্রি হবে না এবং কোন চাপের কাছে নতি স্বীকারও করবে না।
কাফিরদের ন্যায় অহংকার করা যাবে না :
وَلَا تَكُوْنُوْا كَالَّذِيْنَ خَرَجُوْا مِنْ دِيَارِهِمْ بَطَرًا وَّرِئَآءَ النَّاسِ وَيَصُدُّوْنَ عَنْ سَبِيْلِ اللّٰهِؕ وَاللهُ بِمَا يَعْمَلُوْنَ مُحِيْطٌ
তোমরা কখনো তাদের মতো হয়ো না, যারা অহংকার করে এবং লোকদেরকে নিজেদের জাঁকজমক দেখানোর জন্য নিজেদের ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে এবং যারা সাধারণ মানুষদেরকে আল্লাহর পথ থেকে ফিরিয়ে রেখেছে। মূলত আল্লাহ তাদের সকল কার্যকলাপই পরিবেষ্টন করে আছেন। (সূরা আনফাল- ৪৭)
ব্যাখ্যা : কুরাইশ সেনাবাহিনী মক্কা থেকে বের হয়েছিল অত্যন্ত জাঁকজমকের সাথে। পথের মাঝখানে বিভিন্ন জায়গায় থেমে তারা নাচ-গান, মদ্য পান ও আনন্দ উল্লাসের আসর জমিয়ে তুলেছিল। তারা এমনভাবে বীরত্ব দেখাচ্ছিল, যেন তাদের সামনে দাঁড়ানোর মতো কেউ নেই। যে উদ্দেশ্যে তারা ঘর থেকে বের হয়েছিল, তা ছিল তাদের নৈতিক অবস্থার চেয়েও আরো বেশি নোংরা ও অপবিত্র। তারা চাচ্ছিল সত্য, সততা ও ইনসাফের ঝান্ডা যাতে বুলন্দ না হয় এবং যারা এ পথে এগিয়ে এসেছে, তাদেরকেও খতম করা যায়। এ ব্যাপারে মুসলিমদেরকে সতর্ক করে দেয়া হচ্ছে যে, তোমরা তাদের মতো হয়ো না। আল্লাহ তোমাদের ঈমান ও সত্যপ্রিয়তার যে নিয়ামত দান করেছেন তার দাবী অনুযায়ী তোমাদের চরিত্র যেমন পাক-পবিত্র হতে হবে তেমনি তোমাদের যুদ্ধের উদ্দেশ্যও হতে হবে মহৎ।
জিহাদ করতে গিয়ে সীমালঙ্ঘন করা যাবে না :
وَقَاتِلُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ الَّذِيْنَ يُقَاتِلُوْنَكُمْ وَلَا تَعْتَدُوْاۤ اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِيْنَ
যারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে তোমরাও তাদের সাথে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করো, তবে সীমলঙ্ঘন করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে ভালোবাসেন না। (সূরা বাক্বারা- ১৯০)
وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَاٰنُ قَوْمٍ اَنْ صَدُّوْكُمْ عَنِ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ اَنْ تَعْتَدُوْا
তোমাদেরকে মাসজিদুল হারামে প্রবেশে বাধা দেয়ার কারণে কোন সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ তোমাদেরকে যেন কখনই সীমালঙ্ঘনে প্ররোচিত না করে। (সূরা মায়েদা- ২)
জেনে বুঝে পদক্ষেপ নিতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا ضَرَبْتُمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَتَبَيَّنُوْا وَلَا تَقُوْلُوْا لِمَنْ اَلْقٰۤى اِلَيْكُمُ السَّلَامَ لَسْتَ مُؤْمِنًاۚ تَبْتَغُوْنَ عَرَضَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا فَعِنْدَ اللهِ مَغَانِمُ كَثِيْرَةٌؕ كَذٰلِكَ كُنْتُمْ مِّنْ قَبْلُ فَمَنَّ اللهُ عَلَيْكُمْ فَتَبَيَّنُوْاؕ اِنَّ اللهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِيْرًا
হে মুমিনগণ! যখন তোমরা আল্লাহর পথে বের হবে, তখন পরীক্ষা করে নেবে এবং কেউ তোমাদেরকে সালাম বললে ইহজীবনের সম্পদের আকাঙ্ক্ষায় তাকে বলো না যে, তুমি মুমিন নও; কারণ আল্লাহর নিকট প্রচুর গনিমতের সম্পদ রয়েছে। তোমরা তো পূর্বে এরূপই ছিলে। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন; সুতরাং তোমরা পরীক্ষা করে নেবে। নিশ্চয় তোমরা যা কর আল্লাহ সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত। (সূরা নিসা- ৯৪)
শানে নুযূল : ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক লোক একটি ছোট্ট বকরীর পাল চরাচ্ছিল। এমতাবস্থায় কতক মুসলিম তার কাছে আগমন করলে সে বলল, ‘‘আস্সালামু ‘আলাকুম’’। এতদসত্ত্বেও তারা তাকে পাকড়াও করল। অতঃপর তারা তাকে হত্যা করে তার এ ছোট্ট বকরীর পালটি নিয়ে নিল। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে অত্র আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (সহীহ বুখারী, হা/৭৪৩৫)
আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে :
وَعَلَى اللهِ فَتَوَكَّلُوْاۤ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
আল্লাহর উপরই নির্ভর করো, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক। (সূরা মায়েদা- ২৩)
আল্লাহকে স্মরণ করতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا لَقِيْتُمْ فِئَةً فَاثْبُتُوْا وَاذْكُرُوا اللهَ كَثِيْرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা যখন কোন দলের সম্মুখীন হবে তখন অবিচল থাকবে এবং আল্লাহকে অধিক হারে স্মরণ করবে, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সূরা আনফাল- ৪৫)
সৈন্যদের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখতে হবে :
وَاَطِيْعُوا اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَلَا تَنَازَعُوْا فَتَفْشَلُوْا وَتَذْهَبَ رِيْحُكُمْ وَاصْبِرُوْاؕ اِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِيْنَ
তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে ও নিজেদের মধ্যে বিবাদ করবে না, নতুবা তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলবে এবং তোমাদের শক্তি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তোমরা ধৈর্যধারণ করো; নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন। (সূরা আনফাল- ৪৬)
শত্রুদের চেয়ে বেশি দৃঢ়তা অবলম্বন করতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اصْبِرُوْا وَصَابِرُوْا وَرَابِطُوْا وَاتَّقُوا اللّٰهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্যধারণ করো, দৃঢ়তা প্রদর্শন করো, (নিজেদের প্রতিরক্ষাকল্পে) পারস্পরিক বন্ধন মজবুত করো এবং আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা আলে ইমরান- ২০০)
ব্যাখ্যা : صَابِرُوْا (সাবিরু) এর দু’টি অর্থ হয়। (এক) কাফিররা কুফরীর ব্যাপারে যে দৃঢ়তা দেখাচ্ছে এবং কুফরীর ঝান্ডা সমুন্নত রাখার জন্য যে ধরনের কষ্ট স্বীকার করছে, তোমরা তাদের মুকাবিলায় তাদের চেয়েও বেশি দৃঢ়তা দেখাও। (দুই) তাদের মুকাবিলায় দৃঢ়তা দেখানোর ব্যাপারে পরস্পরের মধ্যে প্রতিযোগিতা করো।
শত্রুদেরকে হত্যা করতে হবে :
فَاِذَا لَقِيْتُمُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا فَضَرْبَ الرِّقَابِ
যখন তোমরা কাফিরদের মুখোমুখি হবে তখন (তাদের) গর্দানে আঘাত করবে। (সূরা মুহাম্মাদ- ৪)
শত্রুদেরকে বন্দী করতে হবে :
حَتّٰۤى اِذَاۤ اَثْخَنْتُمُوْهُمْ فَشُدُّوا الْوَثَاقَ
এমনকি যখন তোমরা তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পরাজিত করে ফেলবে, তখন (বন্দীদেরকে) শক্তভাবে বাঁধবে। (সূরা মুহাম্মাদ- ৪)
فَاِمَّا تَثْقَفَنَّهُمْ فِى الْحَرْبِ فَشَرِّدْ بِهِمْ مَّنْ خَلْفَهُمْ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُوْنَ
যুদ্ধে তোমরা যদি তাদেরকে তোমাদের আয়ত্তে পাও, তবে তাদেরকে তাদের পশ্চাতে যারা আছে তাদের হতে বিচ্ছিন্ন করে এমনভাবে বিধ্বস্ত করবে, যাতে তারা শিক্ষা লাভ করতে পারে। (সূরা আনফাল- ৫৭)
শত্রুদের ধাওয়া করতে গিয়ে দুর্বর্র্র্লতা দেখানো যাবে না :
وَلَا تَهِنُوْا فِى ابْتِغَآءِ الْقَوْمِؕ اِنْ تَكُوْنُوْا تَاْلَمُوْنَ فَاِنَّهُمْ يَاْلَمُوْنَ كَمَا تَاْلَمُوْنَۚ وَتَرْجُوْنَ مِنَ اللهِ مَا لَا يَرْجُوْنَؕ وَكَانَ اللهُ عَلِيْمًا حَكِيْمًا
শত্রু সম্প্রদায়ের সন্ধানে তোমরা দুর্বল হয়ো না। যদি তোমরা যন্ত্রণা পাও, তবে তারাও তো তোমাদের মতোই যন্ত্রণা পায়। আর তোমরা আল্লাহর নিকট যা আশা কর, তারা তা আশা করে না। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা- ১০৪)
ব্যাখ্যা : কাফিররা বাতিলের জন্য যে পরিমাণ কষ্ট স্বীকার করছে ঈমানদাররা যদি হকের জন্য অন্তত এতটুকু কষ্টও সহ্য করতে না পারে, তাহলে তা হবে সত্যিই বিস্ময়কর। কেননা কাফিররা কেবল দুনিয়া ও তার ক্ষণস্থায়ী স্বার্থ ছাড়া অন্য কিছুই করে না। কিন্তু ঈমানদাররা এ ক্ষণস্থায়ী স্বার্থের দিকে না তাকিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তাঁর চিরন্তন পুরস্কার লাভের বৃহত্তম আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে। কাজেই বৃহত্তম স্বার্থে মুমিনদেরকে অবশ্যই কাফিরদের তুলনায় একটু বেশিই কষ্ট সহ্য করতে হবে।
নেতার আদেশ অমান্য করা যাবে না :
وَلَقَدْ صَدَقَكُمُ اللهُ وَعْدَهٗۤ اِذْ تَحُسُّوْنَهُمْ بِاِذْنِهٖ حَتّٰۤى اِذَا فَشِلْتُمْ وَتَنَازَعْتُمْ فِى الْاَمْرِ وَعَصَيْتُمْ مِّنْ ۢبَعْدِ مَاۤ اَرَاكُمْ مَّا تُحِبُّوْنَ
আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বীয় অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করেছেন যখন তাঁর নির্দেশে তোমরা তাদেরকে হত্যা করছিলে, কিন্তু পরে তোমরা ছত্রভঙ্গ হয়েছিলে ও কর্তব্য স্থির করার ব্যাপারে বিবাদে লিপ্ত হয়েছিলে এবং তোমরা যা ভালোবেসেছিলে, তা তিনি তোমাদেরকে দেখানোর পর তাঁর আদেশের অবাধ্য হয়েছিলে। (সূরা আলে ইমরান- ১৫২)
ব্যাখ্যা : রাসূল ﷺ ওহুদের যুদ্ধের আক্রমণ ঠেকানোর উদ্দেশ্যে আবদুল্লাহ ইবনে যুবারের (রাঃ) এর নেতৃত্বে ৫০ জন তীরন্দাজকে নিযুক্ত করেন এবং সুস্পষ্ট নির্দেশ না পাওয়া পর্যমত্ম এ স্থান ত্যাগ করতে নিষেধ করেন। অতঃপর যখন যুদ্ধ আরম্ভ হয়, তখন মুসলিম বাহিনী একের পর এক সাফল্য লাভ করতে থাকে এবং কুরাইশ বাহিনী পলায়ন করতে থাকে। যুদ্ধের প্রাথমিক সাফল্যের উল্লাসে মুসলিম সৈন্যবাহিনী শৃঙ্খলা হারিয়ে ফেলে এবং গিরিপথের রক্ষণাবেক্ষণের পরিবর্তে গনিমতের মাল সংগ্রহে নিয়োজিত হয়। এ সুযোগে কুরাইশ সেনাপতি খালিদ ইবনে ওয়ালীদ পেছন থেকে অতর্কিত হামলা করে মুসলিমদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
ময়দান ছেড়ে পলায়ন করা যাবে না :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا لَقِيْتُمُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا زَحْفًا فَلَا تُوَلُّوْهُمُ الْاَدْبَارَ
হে মুমিনগণ! যখন তোমরা কাফির বাহিনীর সম্মুখীন হবে, তখন তোমরা তাদের পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে না।
(সূরা আনফাল- ১৫)
ময়দান থেকে পলায়ন করা বড় অন্যায় :
وَمَنْ يُّوَلِّهِمْ يَوْمَئِذٍ دُبُرَهٗۤ اِلَّا مُتَحَرِّفًا لِّقِتَالٍ اَوْ مُتَحَيِّزًا اِلٰى فِئَةٍ فَقَدْ بَآءَ بِغَضَبٍ مِّنَ اللهِ وَمَاْوَاهُ جَهَنَّمُؕ وَبِئْسَ الْمَصِيْرُ
সেদিন যারা যুদ্ধ কৌশল অবলম্বন কিংবা দলে স্থান নেয়া ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে, সে আল্লাহর ক্রোধে পতিত হবে। তার আশ্রয়স্থল হবে জাহান্নাম; আর তা কতই না নিকৃষ্টতম প্রত্যাবর্তনস্থল। (সূরা আনফাল- ১৬)
সাময়িক পরাজয় হলেও দুঃখ করতে নেই :
وَلَا تَهِنُوْا وَلَا تَحْزَنُوْا وَاَنْتُمُ الْاَعْلَوْنَ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
আর তোমরা দুর্বল হয়ো না এবং চিন্তিতও হয়ো না। যদি তোমরা বিশ্বাসী হও, তবে তোমরাই বিজয়ী হবে।
(সূরা আলে ইমরান- ১৩৯)
فَلَا تَهِنُوْا وَتَدْعُوْاۤ اِلَى السَّلْمِ وَاَنْتُمُ الْاَعْلَوْنَۗ وَاللهُ مَعَكُمْ وَلَنْ يَّتِرَكُمْ اَعْمَالَكُمْ
তোমরা হীনতা স্বীকার করে সন্ধির প্রস্তাব দিয়ো না; কেননা তোমরাই তো বিজয়ী থাকবে। আল্লাহ তোমাদের সাথে আছেন এবং তিনি তোমাদের আমলের প্রতিদান মোটেই কম দেবেন না। (সূরা মুহাম্মাদ - ৩৫)
ব্যাখ্যা : ঈমানদাররা বিজয়ী হলে এটা যে তাদের জন্য ভালো- এ কথা সবার জানা। কিন্তু নিজেদের উদ্দেশ্য সাধনের পথে প্রাণ দান করে যদি তারা মাটিতে বিলীন হয়ে যায়, তাহলে দুনিয়াবাসীরা এটাকে তাদের চরম ব্যর্থ বলে মনে করলেও প্রকৃতপক্ষে এটিও এক প্রকার সাফল্য। কারণ মুমিন একটি দেশ বিজয় করল কি করল না অথবা কোন সরকার প্রতিষ্ঠিত করল কি করল না, এটা তার সাফল্য ও ব্যর্থতার মাপকাঠি নয়। বরং মুমিন আল্লাহর কালিমা উঁচু করার জন্য নিজের মন-মস্তিষ্ক, দেহ ও প্রাণের সমুদয় শক্তি নিয়োজিত করেছে কি না, এটাই তার মাপকাঠি। এ কাজ যদি সে করে থাকে, তাহলে দুনিয়ার বিচারে তার ফলাফল শূন্য হলেও প্রকৃতপক্ষে সে সফলকাম।
মুমিনদেরকে সাহায্য করা আল্লাহর কর্তব্য :
وَكَانَ حَقًّا عَلَيْنَا نَصْرُ الْمُؤْمِنِيْنَ
মুমিনদের সাহায্য করা তো আমারই কর্তব্য। (সূরা রূম- ৪৭)
ব্যাখ্যা : যতগুলো ময়দানে হক ও বাতিলের সংঘাত হয় তার প্রত্যেকটিতে হকের সমর্থনে সাহায্য পৌঁছানো আল্লাহর কাজ। যুক্তির লড়াই হলে তিনিই সত্যপন্থীদেরকে সঠিক ও পূর্ণশক্তিশালী যুক্তি সরবরাহ করেন। নৈতিকতার লড়াই হলে তিনিই সবদিক থেকে সত্যপন্থীদের নৈতিক শ্রেষ্ঠত্ব দান করেন। সংগঠন-শৃঙ্খলার মুকাবিলা হলে তিনিই বাতিলপন্থীদের হৃদয় ছিন্নভিন্ন এবং হকপন্থীদের হৃদয় সংযুক্ত করেন। মানবিক শক্তির মুকাবিলা হলে তিনিই প্রতিটি পর্যায়ে যোগ্য ও উপযোগী ব্যক্তিবর্গ সরবরাহ করে হকপন্থীদের দলের শক্তি বৃদ্ধি করে দেন। বস্তুগত উপকরণের প্রয়োজন হলে তিনিই সত্যপন্থীদের সামান্য ধন ও উপায়-উপকরণে বরকত দান করেন। প্রাণান্তকর সংঘাতের ময়দানে নামিয়ে দিয়ে তিনি তোমাকে একাকী ছেড়ে দেন না; বরং তোমার সাহায্যার্থে তিনি নিজেই প্রস্তুত থাকেন। সুতরাং অন্তরে সামান্য পরিমাণ ঈমান থাকলে এর চেয়ে বেশি সাহস সঞ্চারকারী কথা আর কী হতে পারে যে, সারা বিশ্বজাহানের মালিক আল্লাহ নিজেই আমাদের সাহায্য দান করছেন ও পথ দেখানোর দায়িত্ব নিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে কেবলমাত্র কাপুরুষ ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ আল্লাহর রাস্তায় সামনে এগিয়ে যেতে ইতস্ততবোধ করবে না।
মুজাহিদদেরকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে আল্লাহর ওয়াদা :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنْ تَنْصُرُوا اللهَ يَنْصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ اَقْدَامَكُمْ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি আল্লাহকে সাহায্য কর, তবে তিনিও তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পাসমূহকে মজবুত করে দেবেন। (সূরা মুহাম্মাদ- ৭)
ব্যাখ্যা : ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজে অংশগ্রহণকে কুরআনে ‘‘আল্লাহকে সাহায্য করা’’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। দুনিয়াতে আল্লাহ মানুষকে ইচ্ছা ও সংকল্পের স্বাধীনতা দান করেছেন। তাদেরকে কুফর বা ঈমানের মধ্য থেকে কোন একটি পথ অবলম্বন করার জন্যও বাধ্য করেননি। এর পরিবর্তে তিনি যুক্তি ও উপদেশের মাধ্যমে মানুষের কাছ থেকে এ স্বতস্ফূর্ত স্বীকৃতি আদায় করতে চেয়েছেন যে, অস্বীকৃতি ও নাফরমানি করার স্বাধীনতা থাকা সত্ত্বেও তার জন্য স্রষ্টার আনুগত্যের পথ অবলম্বন করাই প্রকৃত সত্য এবং এটিই তার সাফল্য ও নাজাতের পথ। এভাবে প্রচার, উপদেশ ও নসীহতের সাহায্যে মানুষকে সত্য ও সঠিক পথে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করাই আল্লাহর কাজ। আর যেসব লোক এ কাজে আল্লাহকে সাহায্য করে, তাদেরকেই আল্লাহর সাহায্যকারী হিসেবে গণ্য করা হয়। আল্লাহর কাছে এটিই মানুষের সর্বোচ্চ মর্যাদা। অপরদিকে কুফর ও ঈমানের সংঘাতে মুমিনরা কখনো একা ও নিঃসঙ্গ হয় না, বরং আল্লাহ নিজেই তাদের পক্ষ হয়ে দাঁড়ান। তাদের বিরুদ্ধে শত্রুদের কৌশল ব্যর্থ করে দেন। অনিষ্টকারীদের অনিষ্টকে তাদের থেকে দূরে সরিয়ে দেন। কাজেই এ আয়াতটি হকপন্থীদের জন্য একটি বড় ধরনের সুসংবাদ। এর কারণ হচ্ছে, হকের বিরুদ্ধে সংঘর্ষে লিপ্ত দ্বিতীয় পক্ষটি বিশ্বাসঘাতক, অকৃতজ্ঞ এবং নিয়ামত অস্বীকারকারী। কাজেই আল্লাহ তাদেরকে অপছন্দ করেন এবং তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত হকপন্থীদেরকে সাহায্য করেন। যারা আল্লাহর বান্দাদেরকে তাওহীদের দিকে আহবান করে এবং সত্য দ্বীন কায়েম করা ও মন্দ জায়গায় ভালোকে বিকশিত করার জন্য প্রচেষ্টা চালায়, তারা মূলত আল্লাহরই সাহায্যকারী। কেননা এগুলো হচ্ছে আল্লাহর কাজ।
আল্লাহ মূসা ও হারূন (আঃ) কে সাহায্য করেছেন :
وَلَقَدْ مَنَنَّا عَلٰى مُوْسٰى وَهَارُوْنَ ‐ وَنَجَّيْنَاهُمَا وَقَوْمَهُمَا مِنَ الْكَرْبِ الْعَظِيْمِ ‐ وَنَصَرْنَاهُمْ فَكَانُوْا هُمُ الْغَالِبِيْنَ
আমি অনুগ্রহ করেছি মূসা ও হারূনের প্রতি। তাদেরকে এবং তাদের জাতিকে বড় কষ্ট থেকে উদ্ধার করেছি। আমি তাদেরকে সাহায্য করেছি, ফলে তারাই বিজয়ী হয়েছে। (সূরা সাফফাত, ১১৪-১১৬)
আল্লাহ ঈসা (আঃ) এর সাথিদেরকে সাহায্য করেছেন :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُوْنُوْاۤ اَنْصَارَ اللهِ كَمَا قَالَ عِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَ لِلْحَوَارِيِّيْنَ مَنْ اَنْصَارِيْۤ اِلَى اللهِؕ قَالَ الْحَوَارِيُّوْنَ نَحْنُ اَنْصَارُ اللّٰهِ فَاٰمَنَتْ طَّآئِفَةٌ مِّنْ ۢبَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ وَكَفَرَتْ طَّآئِفَةٌۚ فَاَيَّدْنَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا عَلٰى عَدُوِّهِمْ فَاَصْبَحُوْا ظَاهِرِيْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর (দ্বীনের) সাহায্যকারী হও, যেমন মারইয়ামের পুত্র ঈসা হাওয়ারীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, কে আল্লাহর পথে আমার সাহায্যকারী হবে? হাওয়ারীরা বলেছিল, আমরাই তো আল্লাহর পথে সাহায্যকারী। অতঃপর বনী ইসরাঈলের একদল ঈমান আনল এবং একদল কুফরী করল। পরে আমি মুমিনদেরকে তাদের শত্রুদের মুকাবিলায় শক্তিশালী করলাম; ফলে তারা বিজয়ী হলো। (সূরা সাফ- ১৪)
বদরের যুদ্ধে আল্লাহর সাহায্যের দৃষ্টান্ত :
وَلَقَدْ نَصَرَكُمُ اللهُ بِبَدْرٍ وَّاَنْتُمْ اَذِلَّةٌۚ فَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ ‐ اِذْ تَقُوْلُ لِلْمُؤْمِنِيْنَ اَلَنْ يَّكْفِيَكُمْ اَنْ يُّمِدَّكُمْ رَبُّكُمْ بِثَلَاثَةِ اٰلَافٍ مِّنَ الْمَلَآئِكَةِ مُنْزَلِيْنَ ‐ بَلٰۤى اِنْ تَصْبِرُوْا وَتَتَّقُوْا وَيَاْتُوْكُمْ مِّنْ فَوْرِهِمْ هٰذَا يُمْدِدْكُمْ رَبُّكُمْ بِخَمْسَةِ اٰلَافٍ مِّنَ الْمَلَآئِكَةِ مُسَوِّمِيْنَ
নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে বদরে সাহায্য করেছিলেন, যখন তোমরা দুর্বল ছিলে। অতএব আল্লাহকে ভয় করো যেন তোমরা কৃতজ্ঞ হও। (স্মরণ করো) যখন তুমি মুমিনদেরকে বলেছিলে, এটা কি তোমাদের জন্য যথেষ্ট নয় যে, তোমাদের প্রতিপালক তিন হাজার ফেরেশতা প্রেরণ করে তোমাদেরকে সাহায্য করবেন? হ্যাঁ, যদি তোমরা ধৈর্যধারণ কর ও সংযমী হও এবং তারা যদি দ্রুত তোমাদের উপর আক্রমণ চালায়, তবে তোমাদের প্রতিপালক চিহ্নিত পাঁচ হাজার ফেরেশতা দ্বারা তোমাদেরকে সাহায্য করবেন। (সূরা আলে ইমরান, ১২৩-১২৫)
আহযাবের যুদ্ধে আল্লাহর সাহায্যের দৃষ্টান্ত :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اذْكُرُوْا نِعْمَةَ اللهِ عَلَيْكُمْ اِذْ جَآءَتْكُمْ جُنُوْدٌ فَاَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ رِيْحًا وَّجُنُوْدًا لَّمْ تَرَوْهَاؕ وَكَانَ اللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرًا
হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর সেই অনুগ্রহকে স্মরণ করো- যখন শত্রু বাহিনী তোমাদের উপর আক্রমণ করেছিল, তখন আমি তাদের উপর প্রেরণ করেছিলাম এক প্রচন্ড বায়ু এবং এমন এক সৈন্যদল, যাদেরকে তোমরা দেখতে পাওনি। (জেনে রেখো) তোমরা যা কর আল্লাহ তা দেখেন। (সূরা আহযাব- ৯)
হুনাইনের যুদ্ধে আল্লাহর সাহায্যের দৃষ্টান্ত :
لَقَدْ نَصَرَكُمُ اللهُ فِيْ مَوَاطِنَ كَثِيْرَةٍ وَّيَوْمَ حُنَيْنٍ اِذْ اَعْجَبَتْكُمْ كَثْرَتُكُمْ فَلَمْ تُغْنِ عَنْكُمْ شَيْئًا وَّضَاقَتْ عَلَيْكُمُ الْاَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ ثُمَّ وَلَّيْتُمْ مُّدْبِرِيْنَ ‐ ثُمَّ اَنْزَلَ اللهُ سَكِيْنَتَهٗ عَلٰى رَسُوْلِهٖ وَعَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ وَاَنْزَلَ جُنُوْدًا لَّمْ تَرَوْهَا وَعَذَّبَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاؕ وَذٰلِكَ جَزَآءُ الْكَافِرِيْنَ
আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করেছেন বহু ক্ষেত্রে এবং হুনাইনের যুদ্ধের দিনে, যখন তোমাদের সংখ্যাধিক্য তোমাদেরকে উৎফুল্ল করেছিল; কিন্তু এটা তোমাদের কোন কাজে আসেনি। আর পৃথিবী বিস্তৃত হওয়া সত্ত্বেও তোমাদের জন্য সংকুচিত হয়ে গিয়েছিল। অবশেষে তোমরা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পলায়ন করেছিলে। অতঃপর আল্লাহ তাঁর নিকট হতে তাঁর রাসূল ও মুমিনদের উপর প্রশান্তি বর্ষণ করলেন এবং এমন এক সৈন্যবাহিনী অবতীর্ণ করলেন, যা তোমরা দেখতে পাওনি। এভাবে তিনি কাফিরদেরকে শাস্তি প্রদান করেন; আর এটাই কাফিরদের কর্মফল। (সূরা তাওবা- ২৫, ২৬)
ছোট দলও বড় দলের উপর বিজয়ী হতে পারে :
كَمْ مِّنْ فِئَةٍ قَلِيْلَةٍ غَلَبَتْ فِئَةً كَثِيْرَةً ۢبِاِذْنِ اللهِؕ وَاللهُ مَعَ الصَّابِرِيْنَ
আল্লাহর হুকুমে কত ছোট দল বড় দলকে পরাজিত করেছে। আর আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথেই রয়েছেন।
(সূরা বাক্বারা- ২৪৯)
সত্যিকার একজন মুমিন দশজন কাফিরকে পরাজিত করতে পারে :
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ حَرِّضِ الْمُؤْمِنِيْنَ عَلَى الْقِتَالِؕ اِنْ يَّكُنْ مِّنْكُمْ عِشْرُوْنَ صَابِرُوْنَ يَغْلِبُوْا مِائَتَيْنِۚ وَاِنْ يَّكُنْ مِّنْكُمْ مِّائَةٌ يَّغْلِبُوْاۤ اَلْفًا مِّنَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِاَنَّهُمْ قَوْمٌ لَّا يَفْقَهُوْنَ
হে নবী! মুমিনদেরকে যুদ্ধের জন্য উদ্বুদ্ধ করো; তোমাদের মধ্যে বিশজন ধৈর্যশীল থাকলে তারা দু’শ জনের উপর বিজয়ী হবে এবং একশ জন থাকলে এক হাজার কাফিরের উপর বিজয়ী হবে। কারণ তারা এমন এক সম্প্রদায় যাদের কোন বোধশক্তি নেই। (সূরা আনফাল- ৬৫)
ব্যাখ্যা : যদিও শারীরিক শক্তির দিক দিয়ে উভয়ের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই, তবুও যে ব্যক্তি সত্যের জ্ঞান রাখে, নিজের অস্তিত্ব, মৃত্যুর তাৎপর্য ও মৃত্যুর পরের জীবনের তাৎপর্য ভালোভাবে উপলব্ধি করে এবং হক ও বাতিলের পার্থক্য সঠিকভাবে জানে, তার শক্তির ধারে কাছেও এমনসব লোক পৌঁছতে পারবে না, যারা জাতীয়তাবাদ বা শ্রেণি সংগ্রামের চেতনা নিয়ে কর্মক্ষেত্রে নেমে আসে। এজন্যই বলা হয়েছে, একজন বোধশক্তিসম্পন্ন সজাগ মুমিন ও একজন কাফিরের মধ্যে সত্যের জ্ঞান ও সত্য সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণেই প্রকৃতিগতভাবে এক ও দশের অনুপাত সৃষ্টি হয়।
শেষ পর্যন্ত ইসলামপন্থীরাই বিজয়ী হবে :
وَلَقَدْ سَبَقَتْ كَلِمَتُنَا لِعِبَادِنَا الْمُرْسَلِيْنَ ‐ اِنَّهُمْ لَهُمُ الْمَنْصُوْرُوْنَ ‐ وَاِنَّ جُنْدَنَا لَهُمُ الْغَالِبُوْنَ
আমার রাসূলদের সম্পর্কে আমার এ কথা আগেই নির্ধারিত হয়েছে যে, অবশ্যই তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে এবং আমার বাহিনীই বিজয় লাভ করবে। (সূরা সাফ্ফাত, ১৭১-১৭৩)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর সেনাদল বলতে এমন ঈমানদারদেরকে বুঝানো হয়েছে, যারা আল্লাহর রাসূলের আনুগত্য করে এবং তার সহযোগী হয়। তাছাড়া এমন অদৃশ্য শক্তিও এর অন্তর্ভুক্ত হয়, যার মাধ্যমে মহান আল্লাহ সত্যপন্থীদেরকে সাহায্য-সহায়তা দান করে থাকেন।
كَتَبَ اللهُ لَاَغْلِبَنَّ اَنَاْ وَرُسُلِيْؕ اِنَّ اللهَ قَوِيٌّ عَزِيْزٌ
আল্লাহ লিখে রেখেছেন যে, আমি এবং আমার রাসূলগণ অবশ্যই বিজয় লাভ করব। নিশ্চয় আল্লাহ মহাশক্তিধর ও মহাপ্রতাপশালী। (সূরা মুজাদালা- ২১)
وَكَانَ حَقًّا عَلَيْنَا نَصْرُ الْمُؤْمِنِيْنَ
মুমিনদের সাহায্য করা তো আমারই কর্তব্য। (সূরা রূম- ৪৭)
ব্যাখ্যা : যতগুলো ময়দানে হক ও বাতিলের সংঘাত হয় তার প্রত্যেকটিতে হকের সমর্থনে সাহায্য পৌঁছানো আল্লাহর কাজ। যুক্তির লড়াই হলে তিনিই সত্যপন্থীদেরকে সঠিক ও পূর্ণশক্তিশালী যুক্তি সরবরাহ করেন। নৈতিকতার লড়াই হলে তিনিই সবদিক থেকে সত্যপন্থীদের নৈতিক শ্রেষ্ঠত্ব দান করেন। সংগঠন-শৃঙ্খলার মুকাবিলা হলে তিনিই বাতিলপন্থীদের হৃদয় ছিন্নভিন্ন এবং হকপন্থীদের হৃদয় সংযুক্ত করেন। মানবিক শক্তির মুকাবিলা হলে তিনিই প্রতিটি পর্যায়ে যোগ্য ও উপযোগী ব্যক্তিবর্গ সরবরাহ করে হকপন্থীদের দলের শক্তি বৃদ্ধি করে দেন। বস্তুগত উপকরণের প্রয়োজন হলে তিনিই সত্যপন্থীদের সামান্য ধন ও উপায়-উপকরণে বরকত দান করেন। প্রাণান্তকর সংঘাতের ময়দানে নামিয়ে দিয়ে তিনি তোমাকে একাকী ছেড়ে দেন না; বরং তোমার সাহায্যার্থে তিনি নিজেই প্রস্তুত থাকেন। সুতরাং অন্তরে সামান্য পরিমাণ ঈমান থাকলে এর চেয়ে বেশি সাহস সঞ্চারকারী কথা আর কী হতে পারে যে, সারা বিশ্বজাহানের মালিক আল্লাহ নিজেই আমাদের সাহায্য দান করছেন ও পথ দেখানোর দায়িত্ব নিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে কেবলমাত্র কাপুরুষ ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ আল্লাহর রাস্তায় সামনে এগিয়ে যেতে ইতস্ততবোধ করবে না।
মুজাহিদদেরকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে আল্লাহর ওয়াদা :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنْ تَنْصُرُوا اللهَ يَنْصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ اَقْدَامَكُمْ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি আল্লাহকে সাহায্য কর, তবে তিনিও তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পাসমূহকে মজবুত করে দেবেন। (সূরা মুহাম্মাদ- ৭)
ব্যাখ্যা : ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজে অংশগ্রহণকে কুরআনে ‘‘আল্লাহকে সাহায্য করা’’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। দুনিয়াতে আল্লাহ মানুষকে ইচ্ছা ও সংকল্পের স্বাধীনতা দান করেছেন। তাদেরকে কুফর বা ঈমানের মধ্য থেকে কোন একটি পথ অবলম্বন করার জন্যও বাধ্য করেননি। এর পরিবর্তে তিনি যুক্তি ও উপদেশের মাধ্যমে মানুষের কাছ থেকে এ স্বতস্ফূর্ত স্বীকৃতি আদায় করতে চেয়েছেন যে, অস্বীকৃতি ও নাফরমানি করার স্বাধীনতা থাকা সত্ত্বেও তার জন্য স্রষ্টার আনুগত্যের পথ অবলম্বন করাই প্রকৃত সত্য এবং এটিই তার সাফল্য ও নাজাতের পথ। এভাবে প্রচার, উপদেশ ও নসীহতের সাহায্যে মানুষকে সত্য ও সঠিক পথে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করাই আল্লাহর কাজ। আর যেসব লোক এ কাজে আল্লাহকে সাহায্য করে, তাদেরকেই আল্লাহর সাহায্যকারী হিসেবে গণ্য করা হয়। আল্লাহর কাছে এটিই মানুষের সর্বোচ্চ মর্যাদা। অপরদিকে কুফর ও ঈমানের সংঘাতে মুমিনরা কখনো একা ও নিঃসঙ্গ হয় না, বরং আল্লাহ নিজেই তাদের পক্ষ হয়ে দাঁড়ান। তাদের বিরুদ্ধে শত্রুদের কৌশল ব্যর্থ করে দেন। অনিষ্টকারীদের অনিষ্টকে তাদের থেকে দূরে সরিয়ে দেন। কাজেই এ আয়াতটি হকপন্থীদের জন্য একটি বড় ধরনের সুসংবাদ। এর কারণ হচ্ছে, হকের বিরুদ্ধে সংঘর্ষে লিপ্ত দ্বিতীয় পক্ষটি বিশ্বাসঘাতক, অকৃতজ্ঞ এবং নিয়ামত অস্বীকারকারী। কাজেই আল্লাহ তাদেরকে অপছন্দ করেন এবং তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত হকপন্থীদেরকে সাহায্য করেন। যারা আল্লাহর বান্দাদেরকে তাওহীদের দিকে আহবান করে এবং সত্য দ্বীন কায়েম করা ও মন্দ জায়গায় ভালোকে বিকশিত করার জন্য প্রচেষ্টা চালায়, তারা মূলত আল্লাহরই সাহায্যকারী। কেননা এগুলো হচ্ছে আল্লাহর কাজ।
আল্লাহ মূসা ও হারূন (আঃ) কে সাহায্য করেছেন :
وَلَقَدْ مَنَنَّا عَلٰى مُوْسٰى وَهَارُوْنَ ‐ وَنَجَّيْنَاهُمَا وَقَوْمَهُمَا مِنَ الْكَرْبِ الْعَظِيْمِ ‐ وَنَصَرْنَاهُمْ فَكَانُوْا هُمُ الْغَالِبِيْنَ
আমি অনুগ্রহ করেছি মূসা ও হারূনের প্রতি। তাদেরকে এবং তাদের জাতিকে বড় কষ্ট থেকে উদ্ধার করেছি। আমি তাদেরকে সাহায্য করেছি, ফলে তারাই বিজয়ী হয়েছে। (সূরা সাফফাত, ১১৪-১১৬)
আল্লাহ ঈসা (আঃ) এর সাথিদেরকে সাহায্য করেছেন :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُوْنُوْاۤ اَنْصَارَ اللهِ كَمَا قَالَ عِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَ لِلْحَوَارِيِّيْنَ مَنْ اَنْصَارِيْۤ اِلَى اللهِؕ قَالَ الْحَوَارِيُّوْنَ نَحْنُ اَنْصَارُ اللّٰهِ فَاٰمَنَتْ طَّآئِفَةٌ مِّنْ ۢبَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ وَكَفَرَتْ طَّآئِفَةٌۚ فَاَيَّدْنَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا عَلٰى عَدُوِّهِمْ فَاَصْبَحُوْا ظَاهِرِيْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর (দ্বীনের) সাহায্যকারী হও, যেমন মারইয়ামের পুত্র ঈসা হাওয়ারীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, কে আল্লাহর পথে আমার সাহায্যকারী হবে? হাওয়ারীরা বলেছিল, আমরাই তো আল্লাহর পথে সাহায্যকারী। অতঃপর বনী ইসরাঈলের একদল ঈমান আনল এবং একদল কুফরী করল। পরে আমি মুমিনদেরকে তাদের শত্রুদের মুকাবিলায় শক্তিশালী করলাম; ফলে তারা বিজয়ী হলো। (সূরা সাফ- ১৪)
বদরের যুদ্ধে আল্লাহর সাহায্যের দৃষ্টান্ত :
وَلَقَدْ نَصَرَكُمُ اللهُ بِبَدْرٍ وَّاَنْتُمْ اَذِلَّةٌۚ فَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ ‐ اِذْ تَقُوْلُ لِلْمُؤْمِنِيْنَ اَلَنْ يَّكْفِيَكُمْ اَنْ يُّمِدَّكُمْ رَبُّكُمْ بِثَلَاثَةِ اٰلَافٍ مِّنَ الْمَلَآئِكَةِ مُنْزَلِيْنَ ‐ بَلٰۤى اِنْ تَصْبِرُوْا وَتَتَّقُوْا وَيَاْتُوْكُمْ مِّنْ فَوْرِهِمْ هٰذَا يُمْدِدْكُمْ رَبُّكُمْ بِخَمْسَةِ اٰلَافٍ مِّنَ الْمَلَآئِكَةِ مُسَوِّمِيْنَ
নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে বদরে সাহায্য করেছিলেন, যখন তোমরা দুর্বল ছিলে। অতএব আল্লাহকে ভয় করো যেন তোমরা কৃতজ্ঞ হও। (স্মরণ করো) যখন তুমি মুমিনদেরকে বলেছিলে, এটা কি তোমাদের জন্য যথেষ্ট নয় যে, তোমাদের প্রতিপালক তিন হাজার ফেরেশতা প্রেরণ করে তোমাদেরকে সাহায্য করবেন? হ্যাঁ, যদি তোমরা ধৈর্যধারণ কর ও সংযমী হও এবং তারা যদি দ্রুত তোমাদের উপর আক্রমণ চালায়, তবে তোমাদের প্রতিপালক চিহ্নিত পাঁচ হাজার ফেরেশতা দ্বারা তোমাদেরকে সাহায্য করবেন। (সূরা আলে ইমরান, ১২৩-১২৫)
আহযাবের যুদ্ধে আল্লাহর সাহায্যের দৃষ্টান্ত :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اذْكُرُوْا نِعْمَةَ اللهِ عَلَيْكُمْ اِذْ جَآءَتْكُمْ جُنُوْدٌ فَاَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ رِيْحًا وَّجُنُوْدًا لَّمْ تَرَوْهَاؕ وَكَانَ اللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرًا
হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর সেই অনুগ্রহকে স্মরণ করো- যখন শত্রু বাহিনী তোমাদের উপর আক্রমণ করেছিল, তখন আমি তাদের উপর প্রেরণ করেছিলাম এক প্রচন্ড বায়ু এবং এমন এক সৈন্যদল, যাদেরকে তোমরা দেখতে পাওনি। (জেনে রেখো) তোমরা যা কর আল্লাহ তা দেখেন। (সূরা আহযাব- ৯)
হুনাইনের যুদ্ধে আল্লাহর সাহায্যের দৃষ্টান্ত :
لَقَدْ نَصَرَكُمُ اللهُ فِيْ مَوَاطِنَ كَثِيْرَةٍ وَّيَوْمَ حُنَيْنٍ اِذْ اَعْجَبَتْكُمْ كَثْرَتُكُمْ فَلَمْ تُغْنِ عَنْكُمْ شَيْئًا وَّضَاقَتْ عَلَيْكُمُ الْاَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ ثُمَّ وَلَّيْتُمْ مُّدْبِرِيْنَ ‐ ثُمَّ اَنْزَلَ اللهُ سَكِيْنَتَهٗ عَلٰى رَسُوْلِهٖ وَعَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ وَاَنْزَلَ جُنُوْدًا لَّمْ تَرَوْهَا وَعَذَّبَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاؕ وَذٰلِكَ جَزَآءُ الْكَافِرِيْنَ
আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করেছেন বহু ক্ষেত্রে এবং হুনাইনের যুদ্ধের দিনে, যখন তোমাদের সংখ্যাধিক্য তোমাদেরকে উৎফুল্ল করেছিল; কিন্তু এটা তোমাদের কোন কাজে আসেনি। আর পৃথিবী বিস্তৃত হওয়া সত্ত্বেও তোমাদের জন্য সংকুচিত হয়ে গিয়েছিল। অবশেষে তোমরা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পলায়ন করেছিলে। অতঃপর আল্লাহ তাঁর নিকট হতে তাঁর রাসূল ও মুমিনদের উপর প্রশান্তি বর্ষণ করলেন এবং এমন এক সৈন্যবাহিনী অবতীর্ণ করলেন, যা তোমরা দেখতে পাওনি। এভাবে তিনি কাফিরদেরকে শাস্তি প্রদান করেন; আর এটাই কাফিরদের কর্মফল। (সূরা তাওবা- ২৫, ২৬)
ছোট দলও বড় দলের উপর বিজয়ী হতে পারে :
كَمْ مِّنْ فِئَةٍ قَلِيْلَةٍ غَلَبَتْ فِئَةً كَثِيْرَةً ۢبِاِذْنِ اللهِؕ وَاللهُ مَعَ الصَّابِرِيْنَ
আল্লাহর হুকুমে কত ছোট দল বড় দলকে পরাজিত করেছে। আর আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথেই রয়েছেন।
(সূরা বাক্বারা- ২৪৯)
সত্যিকার একজন মুমিন দশজন কাফিরকে পরাজিত করতে পারে :
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ حَرِّضِ الْمُؤْمِنِيْنَ عَلَى الْقِتَالِؕ اِنْ يَّكُنْ مِّنْكُمْ عِشْرُوْنَ صَابِرُوْنَ يَغْلِبُوْا مِائَتَيْنِۚ وَاِنْ يَّكُنْ مِّنْكُمْ مِّائَةٌ يَّغْلِبُوْاۤ اَلْفًا مِّنَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِاَنَّهُمْ قَوْمٌ لَّا يَفْقَهُوْنَ
হে নবী! মুমিনদেরকে যুদ্ধের জন্য উদ্বুদ্ধ করো; তোমাদের মধ্যে বিশজন ধৈর্যশীল থাকলে তারা দু’শ জনের উপর বিজয়ী হবে এবং একশ জন থাকলে এক হাজার কাফিরের উপর বিজয়ী হবে। কারণ তারা এমন এক সম্প্রদায় যাদের কোন বোধশক্তি নেই। (সূরা আনফাল- ৬৫)
ব্যাখ্যা : যদিও শারীরিক শক্তির দিক দিয়ে উভয়ের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই, তবুও যে ব্যক্তি সত্যের জ্ঞান রাখে, নিজের অস্তিত্ব, মৃত্যুর তাৎপর্য ও মৃত্যুর পরের জীবনের তাৎপর্য ভালোভাবে উপলব্ধি করে এবং হক ও বাতিলের পার্থক্য সঠিকভাবে জানে, তার শক্তির ধারে কাছেও এমনসব লোক পৌঁছতে পারবে না, যারা জাতীয়তাবাদ বা শ্রেণি সংগ্রামের চেতনা নিয়ে কর্মক্ষেত্রে নেমে আসে। এজন্যই বলা হয়েছে, একজন বোধশক্তিসম্পন্ন সজাগ মুমিন ও একজন কাফিরের মধ্যে সত্যের জ্ঞান ও সত্য সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণেই প্রকৃতিগতভাবে এক ও দশের অনুপাত সৃষ্টি হয়।
শেষ পর্যন্ত ইসলামপন্থীরাই বিজয়ী হবে :
وَلَقَدْ سَبَقَتْ كَلِمَتُنَا لِعِبَادِنَا الْمُرْسَلِيْنَ ‐ اِنَّهُمْ لَهُمُ الْمَنْصُوْرُوْنَ ‐ وَاِنَّ جُنْدَنَا لَهُمُ الْغَالِبُوْنَ
আমার রাসূলদের সম্পর্কে আমার এ কথা আগেই নির্ধারিত হয়েছে যে, অবশ্যই তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে এবং আমার বাহিনীই বিজয় লাভ করবে। (সূরা সাফ্ফাত, ১৭১-১৭৩)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর সেনাদল বলতে এমন ঈমানদারদেরকে বুঝানো হয়েছে, যারা আল্লাহর রাসূলের আনুগত্য করে এবং তার সহযোগী হয়। তাছাড়া এমন অদৃশ্য শক্তিও এর অন্তর্ভুক্ত হয়, যার মাধ্যমে মহান আল্লাহ সত্যপন্থীদেরকে সাহায্য-সহায়তা দান করে থাকেন।
كَتَبَ اللهُ لَاَغْلِبَنَّ اَنَاْ وَرُسُلِيْؕ اِنَّ اللهَ قَوِيٌّ عَزِيْزٌ
আল্লাহ লিখে রেখেছেন যে, আমি এবং আমার রাসূলগণ অবশ্যই বিজয় লাভ করব। নিশ্চয় আল্লাহ মহাশক্তিধর ও মহাপ্রতাপশালী। (সূরা মুজাদালা- ২১)
শহীদরা মরেও অমর থাকে :
وَلَا تَقُوْلُوْا لِمَنْ يُّقْتَلُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ اَمْوَاتٌؕ بَلْ اَحْيَآءٌ وَّلٰكِنْ لَّا تَشْعُرُوْنَ
যারা আল্লাহর পথে শহীদ হয়েছে তোমরা তাদেরকে মৃত বলো না বরং তারা জীবিত; কিন্তু তোমরা তা অনুভব করতে পার না। (সূরা বাক্বারা- ১৫৪)
ব্যাখ্যা : মৃত্যু শব্দটি মানুষের মনে ভীতি সঞ্চার করে। মৃত্যুর কথা শুনে সে সাহস ও শক্তি হারিয়ে ফেলে। তাই আল্লাহর পথে শহীদদেরকে মৃত বলতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ তাদেরকে মৃত বললে মুসলিমদের মধ্যে জিহাদ ও প্রাণ উৎসর্গ করার প্রেরণা স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেবে। এর পরিবর্তে তাদের মনে এ চিন্তা বদ্ধমূল করতে বলা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে প্রাণ দেয় সে আসলে চিরন্তন জীবন লাভ করে। এ চিন্তাটি প্রকৃত ব্যাপারের সাথে পূর্ণ সামঞ্জস্যশীল। এ ধারণা পোষণের ফলে সাহস ও শক্তি ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে। তারা মনে মনে এ কথা স্বীকার করে নেয় যে, আমরা আল্লাহর কর্তৃত্বাধীন। তাই আল্লাহর পথে আমাদের যেসব জিনিস কুরবানী করা হয়, তা সঠিক ক্ষেত্রেই ব্যয় হয়। আর ‘আমাদেরকে আল্লাহর দিকেই ফিরে যেতে হবে’- এর অর্থ হচ্ছে, চিরকাল আমরা এ দুনিয়ায় থাকতে পারব না। অবশেষে একদিন আল্লাহর কাছেই ফিরে যেতে হবে। কাজেই তাঁর পথে লড়াই করে প্রাণ দান করে তাঁর কাছে চলে যাওয়াটাই তো ভালো। এভাবে মৃত্যুবরণ করে তাঁর কাছে চলে যাওয়াটা স্বাভাবিকভাবে অথবা কোন দুর্ঘটনার শিকার হয়ে বা রোগাক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে তাঁর কাছে যাওয়ার চেয়ে বহুগুণ শ্রেয়।
তারা আল্লাহর কাছে বিশেষভাবে রিযিক পায় :
وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِيْنَ قُتِلُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ اَمْوَاتًاؕ بَلْ اَحْيَآءٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُوْنَ
যারা আল্লাহর পথে শহীদ হয়েছে, তাদেরকে মৃত বলে ধারণা করো না; বরং তারা জীবিত, তারা তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে রিযিকপ্রাপ্ত হয়। (সূরা আলে ইমরান- ১৬৯)
তারা আল্লাহর নিয়ামত পেয়ে আনন্দ লাভ করে :
فَرِحِيْنَ بِمَاۤ اٰتَاهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٖ وَيَسْتَبْشِرُوْنَ بِالَّذِيْنَ لَمْ يَلْحَقُوْا بِهِمْ مِّنْ خَلْفِهِمْ اَلَّا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ ‐ يَسْتَبْشِرُوْنَ بِنِعْمَةٍ مِّنَ اللهِ وَفَضْلٍ وَّاَنَّ اللهَ لَا يُضِيْعُ اَجْرَ الْمُؤْمِنِيْنَ
আল্লাহ তাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহ হতে যা দান করেছেন, তাতেই তারা সন্তুষ্ট। আর যারা পেছনে রয়ে গেছে এবং এখনও তাদের সাথে মিলিত হয়নি তাদের এ অবস্থার প্রতিও তারা সন্তুষ্ট হয় যে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না। তারা আল্লাহর নিকট হতে অনুগ্রহ ও নিয়ামত লাভ করার কারণে আনন্দিত হয়। নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্বাসীদের প্রতিদান বিনষ্ট করেন না। (সূরা আলে ইমরান- ১৭০, ১৭১)
ব্যাখ্যা : মুসনাদে আহমাদে নবী ﷺ এর একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। যার বিষয়বস্তু হচ্ছে, যে ব্যক্তি ভালো কাজ করে এ দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়, সে আল্লাহর কাছে এমন আরাম-আয়েশের জীবন লাভ করে যে, তারপর এ দুনিয়ায় ফিরে আসার কোন আকাঙ্ক্ষাই সে করে না। কিন্তু শহীদরা ব্যতিক্রম। তারা আকাঙ্ক্ষা করেন যে, তাদেরকে যেন পুনরায় দুনিয়ায় পাঠানো হয় এবং তারা আল্লাহর পথে জীবন দিতে গিয়ে যে ধরনের আনন্দ ও উৎফুল্লতা অনুভব করেছিলেন, তা যেন আবার অনুভব করতে পারেন। (মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৪৭৬)
শহীদরা আল্লাহর ক্ষমা লাভ করে :
وَلَئِنْ قُتِلْتُمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ اَوْ مُتُّمْ لَمَغْفِرَةٌ مِّنَ اللهِ وَرَحْمَةٌ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُوْنَ
আর যদি তোমরা আল্লাহর পথে শহীদ হও অথবা মৃত্যুমুখে পতিত হও, তবে তারা যা সঞ্চয় করে তার চেয়ে আল্লাহর ক্ষমা ও দয়া অতি উত্তম। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৭)
তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার :
وَمَنْ يُّقَاتِلْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَيُقْتَلْ اَوْ يَغْلِبْ فَسَوْفَ نُؤْتِيْهِ اَجْرًا عَظِيْمًا
যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে যুদ
وَلَا تَقُوْلُوْا لِمَنْ يُّقْتَلُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ اَمْوَاتٌؕ بَلْ اَحْيَآءٌ وَّلٰكِنْ لَّا تَشْعُرُوْنَ
যারা আল্লাহর পথে শহীদ হয়েছে তোমরা তাদেরকে মৃত বলো না বরং তারা জীবিত; কিন্তু তোমরা তা অনুভব করতে পার না। (সূরা বাক্বারা- ১৫৪)
ব্যাখ্যা : মৃত্যু শব্দটি মানুষের মনে ভীতি সঞ্চার করে। মৃত্যুর কথা শুনে সে সাহস ও শক্তি হারিয়ে ফেলে। তাই আল্লাহর পথে শহীদদেরকে মৃত বলতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ তাদেরকে মৃত বললে মুসলিমদের মধ্যে জিহাদ ও প্রাণ উৎসর্গ করার প্রেরণা স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেবে। এর পরিবর্তে তাদের মনে এ চিন্তা বদ্ধমূল করতে বলা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে প্রাণ দেয় সে আসলে চিরন্তন জীবন লাভ করে। এ চিন্তাটি প্রকৃত ব্যাপারের সাথে পূর্ণ সামঞ্জস্যশীল। এ ধারণা পোষণের ফলে সাহস ও শক্তি ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে। তারা মনে মনে এ কথা স্বীকার করে নেয় যে, আমরা আল্লাহর কর্তৃত্বাধীন। তাই আল্লাহর পথে আমাদের যেসব জিনিস কুরবানী করা হয়, তা সঠিক ক্ষেত্রেই ব্যয় হয়। আর ‘আমাদেরকে আল্লাহর দিকেই ফিরে যেতে হবে’- এর অর্থ হচ্ছে, চিরকাল আমরা এ দুনিয়ায় থাকতে পারব না। অবশেষে একদিন আল্লাহর কাছেই ফিরে যেতে হবে। কাজেই তাঁর পথে লড়াই করে প্রাণ দান করে তাঁর কাছে চলে যাওয়াটাই তো ভালো। এভাবে মৃত্যুবরণ করে তাঁর কাছে চলে যাওয়াটা স্বাভাবিকভাবে অথবা কোন দুর্ঘটনার শিকার হয়ে বা রোগাক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে তাঁর কাছে যাওয়ার চেয়ে বহুগুণ শ্রেয়।
তারা আল্লাহর কাছে বিশেষভাবে রিযিক পায় :
وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِيْنَ قُتِلُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ اَمْوَاتًاؕ بَلْ اَحْيَآءٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُوْنَ
যারা আল্লাহর পথে শহীদ হয়েছে, তাদেরকে মৃত বলে ধারণা করো না; বরং তারা জীবিত, তারা তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে রিযিকপ্রাপ্ত হয়। (সূরা আলে ইমরান- ১৬৯)
তারা আল্লাহর নিয়ামত পেয়ে আনন্দ লাভ করে :
فَرِحِيْنَ بِمَاۤ اٰتَاهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٖ وَيَسْتَبْشِرُوْنَ بِالَّذِيْنَ لَمْ يَلْحَقُوْا بِهِمْ مِّنْ خَلْفِهِمْ اَلَّا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ ‐ يَسْتَبْشِرُوْنَ بِنِعْمَةٍ مِّنَ اللهِ وَفَضْلٍ وَّاَنَّ اللهَ لَا يُضِيْعُ اَجْرَ الْمُؤْمِنِيْنَ
আল্লাহ তাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহ হতে যা দান করেছেন, তাতেই তারা সন্তুষ্ট। আর যারা পেছনে রয়ে গেছে এবং এখনও তাদের সাথে মিলিত হয়নি তাদের এ অবস্থার প্রতিও তারা সন্তুষ্ট হয় যে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না। তারা আল্লাহর নিকট হতে অনুগ্রহ ও নিয়ামত লাভ করার কারণে আনন্দিত হয়। নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্বাসীদের প্রতিদান বিনষ্ট করেন না। (সূরা আলে ইমরান- ১৭০, ১৭১)
ব্যাখ্যা : মুসনাদে আহমাদে নবী ﷺ এর একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। যার বিষয়বস্তু হচ্ছে, যে ব্যক্তি ভালো কাজ করে এ দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়, সে আল্লাহর কাছে এমন আরাম-আয়েশের জীবন লাভ করে যে, তারপর এ দুনিয়ায় ফিরে আসার কোন আকাঙ্ক্ষাই সে করে না। কিন্তু শহীদরা ব্যতিক্রম। তারা আকাঙ্ক্ষা করেন যে, তাদেরকে যেন পুনরায় দুনিয়ায় পাঠানো হয় এবং তারা আল্লাহর পথে জীবন দিতে গিয়ে যে ধরনের আনন্দ ও উৎফুল্লতা অনুভব করেছিলেন, তা যেন আবার অনুভব করতে পারেন। (মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৪৭৬)
শহীদরা আল্লাহর ক্ষমা লাভ করে :
وَلَئِنْ قُتِلْتُمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ اَوْ مُتُّمْ لَمَغْفِرَةٌ مِّنَ اللهِ وَرَحْمَةٌ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُوْنَ
আর যদি তোমরা আল্লাহর পথে শহীদ হও অথবা মৃত্যুমুখে পতিত হও, তবে তারা যা সঞ্চয় করে তার চেয়ে আল্লাহর ক্ষমা ও দয়া অতি উত্তম। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৭)
তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার :
وَمَنْ يُّقَاتِلْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَيُقْتَلْ اَوْ يَغْلِبْ فَسَوْفَ نُؤْتِيْهِ اَجْرًا عَظِيْمًا
যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে যুদ