HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
তাফসীরুল কুরআন বিল কুরআন
লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
বিষয়ভিত্তিক
তাফসীরুল কুরআন বিল কুরআন
কুরআনে আলোচিত বিভিন্ন বিষয়ের কুরআনিক ব্যাখ্যা
শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
আরবি প্রভাষক :
আলহাজ্জ মোহাম্মদ ইউসুফ মেমোরিয়াল দারুল হাদীস মাদরাসা
৮-৯ লুৎফর রহমান লেন, সুরিটোলা, ঢাকা- ১১০০
সম্পাদনা
মোহাম্মদ ইমাম হোসাইন কামরুল
ব্যবস্থাপনা পরিচালক
ইমাম পাবলিকেশন্স লিঃ
তাফসীরুল কুরআন বিল কুরআন
কুরআনে আলোচিত বিভিন্ন বিষয়ের কুরআনিক ব্যাখ্যা
শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
আরবি প্রভাষক :
আলহাজ্জ মোহাম্মদ ইউসুফ মেমোরিয়াল দারুল হাদীস মাদরাসা
৮-৯ লুৎফর রহমান লেন, সুরিটোলা, ঢাকা- ১১০০
সম্পাদনা
মোহাম্মদ ইমাম হোসাইন কামরুল
ব্যবস্থাপনা পরিচালক
ইমাম পাবলিকেশন্স লিঃ
১. এ গ্রন্থের মধ্যে কুরআন মাজীদে আলোচিত বিভিন্ন বিষয় সংক্রান্ত আয়াতসমূহ বিভিন্ন স্থান থেকে খুঁজে বের করে একত্রে সন্নিবেশিত করা হয়েছে।
২. আয়াতগুলো এমনভাবে সাজানো হয়েছে যেন একটি আয়াত অন্য একটি আয়াতের সম্পূরক এবং ব্যাখ্যা। এজন্য এ গ্রন্থের নাম দেয়া হয়েছে- ‘তাফসীরুল কুরআন বিল কুরআন’ অর্থাৎ কুরআন দিয়ে কুরআনের ব্যাখ্যা। কারণ, اَلْقُرْاٰنُ يُفَسِّرُ بَعْضُهٗ بَعْضًا - কুরআনের এক অংশ অন্য অংশের ব্যাখ্যা করে।
৩. এ তাফসীরটি পড়ে সকলেই এমনকি স্বল্পশিক্ষিত লোকেরাও বিভিন্ন বিষয়ে কুরআনের বক্তব্য কী তা সহজে জেনে নিতে পারবেন।
৪. কোন বিষয় সম্পর্কে বিভিন্ন আয়াত হতে যেসব মাসআলা বা পয়েন্ট বের হয় তা শিরোণাম আকারে লিখা হয়েছে এবং ঐ কথার দলীলস্বরূপ নিচে কুরআনের আয়াত উল্লেখ করা হয়েছে। এরপর আয়াতের সহজসরল বাংলা অনুবাদ দেয়া হয়েছে। সাথে সাথে এটা কোন্ সূরার কত নম্বর আয়াত তাও উল্লেখ করা হয়েছে।
৫. আয়াত উল্লেখ করার সময় অধিকাংশ ক্ষেত্রে আলোচ্য বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট অংশটুকুই উল্লেখ করা হয়েছে- যাতে মুখস্থ করা ও দলীল হিসেবে উপস্থাপন করা সহজ হয়।
৬. কুরআনের এমন অনেক আয়াত আছে যেগুলোর শানে নুযূল বা ব্যাখ্যা না জানলে আয়াতের মর্ম বুঝা যায় না। সেজন্য প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে শানে নুযূল ও ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে।
৭. অনেক ব্যাখ্যা এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, এর মাধ্যমে পাঠক কুরআনকে বাস্তবতার নিরিখে গভীরভাবে অনুধাবন করতে সক্ষম হবেন।
৮. সম্মানিত ইমাম, খতীব, বক্তা ও দাঈগণ কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করার সময় প্রথমে ঐ বিষয়ে কুরআনের বক্তব্য উপস্থাপন করে থাকেন। এ ক্ষেত্রে এ তাফসীরটি সকলের জন্য সহায়ক ভূমিকা রাখবে- ইনশা-আল্লাহ।
৯. কুরআন মাজীদ হেফ্জ করার সাথে সাথে এ তাফসীরটিও পড়লে হাফিজ হওয়ার পাশাপাশি কুরআনের বিধিবিধান সম্পর্কেও জানা যাবে।
১০. এ তাফসীরটি হাদীসের কিতাবের ন্যায় পর্ব ও অধ্যায় আকারে সাজানো হয়েছে। তাই পাঠক এ গ্রন্থের যে অধ্যায়টি পড়বেন সে অধ্যায়ের সাথে যে কোন হাদীস গ্রন্থের সংশ্লিষ্ট অধ্যায়টিও মিলিয়ে পড়লে ঐ বিষয়ে কুরআন ও হাদীসের বক্তব্য পুরোপুরি স্পষ্ট হয়ে যাবে।
২. আয়াতগুলো এমনভাবে সাজানো হয়েছে যেন একটি আয়াত অন্য একটি আয়াতের সম্পূরক এবং ব্যাখ্যা। এজন্য এ গ্রন্থের নাম দেয়া হয়েছে- ‘তাফসীরুল কুরআন বিল কুরআন’ অর্থাৎ কুরআন দিয়ে কুরআনের ব্যাখ্যা। কারণ, اَلْقُرْاٰنُ يُفَسِّرُ بَعْضُهٗ بَعْضًا - কুরআনের এক অংশ অন্য অংশের ব্যাখ্যা করে।
৩. এ তাফসীরটি পড়ে সকলেই এমনকি স্বল্পশিক্ষিত লোকেরাও বিভিন্ন বিষয়ে কুরআনের বক্তব্য কী তা সহজে জেনে নিতে পারবেন।
৪. কোন বিষয় সম্পর্কে বিভিন্ন আয়াত হতে যেসব মাসআলা বা পয়েন্ট বের হয় তা শিরোণাম আকারে লিখা হয়েছে এবং ঐ কথার দলীলস্বরূপ নিচে কুরআনের আয়াত উল্লেখ করা হয়েছে। এরপর আয়াতের সহজসরল বাংলা অনুবাদ দেয়া হয়েছে। সাথে সাথে এটা কোন্ সূরার কত নম্বর আয়াত তাও উল্লেখ করা হয়েছে।
৫. আয়াত উল্লেখ করার সময় অধিকাংশ ক্ষেত্রে আলোচ্য বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট অংশটুকুই উল্লেখ করা হয়েছে- যাতে মুখস্থ করা ও দলীল হিসেবে উপস্থাপন করা সহজ হয়।
৬. কুরআনের এমন অনেক আয়াত আছে যেগুলোর শানে নুযূল বা ব্যাখ্যা না জানলে আয়াতের মর্ম বুঝা যায় না। সেজন্য প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে শানে নুযূল ও ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে।
৭. অনেক ব্যাখ্যা এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, এর মাধ্যমে পাঠক কুরআনকে বাস্তবতার নিরিখে গভীরভাবে অনুধাবন করতে সক্ষম হবেন।
৮. সম্মানিত ইমাম, খতীব, বক্তা ও দাঈগণ কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করার সময় প্রথমে ঐ বিষয়ে কুরআনের বক্তব্য উপস্থাপন করে থাকেন। এ ক্ষেত্রে এ তাফসীরটি সকলের জন্য সহায়ক ভূমিকা রাখবে- ইনশা-আল্লাহ।
৯. কুরআন মাজীদ হেফ্জ করার সাথে সাথে এ তাফসীরটিও পড়লে হাফিজ হওয়ার পাশাপাশি কুরআনের বিধিবিধান সম্পর্কেও জানা যাবে।
১০. এ তাফসীরটি হাদীসের কিতাবের ন্যায় পর্ব ও অধ্যায় আকারে সাজানো হয়েছে। তাই পাঠক এ গ্রন্থের যে অধ্যায়টি পড়বেন সে অধ্যায়ের সাথে যে কোন হাদীস গ্রন্থের সংশ্লিষ্ট অধ্যায়টিও মিলিয়ে পড়লে ঐ বিষয়ে কুরআন ও হাদীসের বক্তব্য পুরোপুরি স্পষ্ট হয়ে যাবে।
কুরআন মাজীদের তাফসীর করার পাঁচটি মূলনীতি রয়েছে। আর তা হলো :
(১) تَفْسِيْرُ الْقُرْاٰنِ بِالْقُرْاٰنِ - কুরআন দিয়ে কুরআনের তাফসীর করা :
কুরআনের এক অংশ অপর অংশের তাফসীর করে। কেননা কুরআনের একটি আয়াত অপর আয়াতের ব্যাখ্যাস্বরূপ। যে বিষয়টি কোন জায়গায় সংক্ষেপে বলা হয়েছে অন্য জায়গায় তা বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
اَللهُ نَزَّلَ اَحْسَنَ الْحَدِيْثِ كِتَابًا مُّتَشَابِهًا
‘‘আল্লাহ সবচেয়ে সুন্দর বাণী কিতাব আকারে নাযিল করেছেন, যা পরস্পর সাদৃশ্যপূর্ণ।’’
(সূরা যুমার- ২৩)
(২) تَفْسِيْرُ الْقُرْاٰنِ بِالسُّنَّةِ - নবী ﷺ এর হাদীসের মাধ্যমে কুরআনের তাফসীর করা :
রাসূল ﷺ ছিলেন কুরআনের ব্যাখ্যাদাতা। কেননা তাঁর উপর কুরআন নাযিল হয়েছে এবং কোন্ আয়াত দ্বারা কী বুঝানো হয়েছে তা আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে জানিয়ে দিয়েছেন। নবী ﷺ তাঁর জীবদ্দশায় কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের ব্যাখ্যা বুঝিয়ে দিতেন। বর্তমানে এর ব্যাখ্যা হলো হাদীস গ্রন্থসমূহ। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
وَاَنْزَلْنَاۤ اِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ اِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُوْنَ
‘‘আমি তোমার প্রতি এ উপদেশবাণী নাযিল করেছি, যাতে মানুষের প্রতি যা নাযিল হয়েছে তুমি তা সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিতে পার এবং তারাও যেন চিমত্মাভাবনা করে।’’ (সূরা নাহল- ৪৪)
(৩) تَفْسِيْرُ الْقُرْاٰنِ بِاَقْوَالِ الصَّحَابَةِ - সাহাবীগণের উক্তির মাধ্যমে কুরআনের তাফসীর করা :
কেননা তারা রাসূল ﷺ এর ছাত্র ছিলেন এবং রাসূল ﷺ এর ব্যাখ্যার আলোকেই তারা কুরআনের ব্যাখ্যা করেছেন।
(৪) تَفْسِيْرُ الْقُرْاٰنِ بِاَقْوَالِ التَّابِعِيْنَ - তাবেঈগণের উক্তির মাধ্যমে কুরআনের তাফসীর করা :
কারণ তারা সাহাবীগণের নিকট থেকে কুরআনের ব্যাখ্যা শিখেছেন। নবী ﷺ বলেছেন,
خَيْرُ النَّاسِ قَرْنِيْ ثُمَّ الَّذِيْنَ يَلُوْنَهُمْ ثُمَّ الَّذِيْنَ يَلُوْنَهُمْ
‘‘মানুষের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম লোক হলো আমার যুগের লোক; অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরাম (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম)। তারপর যারা তাদের পরে আসবে, তারপর তাদের পরে যারা আসবে।’’ অর্থাৎ যথাক্রমে তাবেঈন এবং তাবে তাবেঈনগণ (রাহিমাহুমুল্লাহ)।
(সহীহ বুখারী, হা/২৬৫২; সহীহ মুসলিম, হা/৬৬৩২)
(৫) تَفْسِيْرُ الْقُرْاٰنِ بِمَا تَقْتَضِيْهِ اللُّغَةُ الْعَرَبِيَّةُ - আরবি ভাষার চাহিদার আলোকে কুরআনের তাফসীর করা :
কেননা আল্লাহ তা‘আলা আরবি ভাষায় কুরআন নাযিল করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
اِنَّا جَعَلْنَاهُ قُرْاٰنًا عَرَبِيًّا لَّعَلَّكُمْ تَعْقِلُوْنَ
আমি এটা আরবি ভাষায় কুরআনরূপে (অবতীর্ণ) করেছি, যাতে তোমরা বুঝতে পার।
(সূরা যুখরুফ- ৩)
(১) تَفْسِيْرُ الْقُرْاٰنِ بِالْقُرْاٰنِ - কুরআন দিয়ে কুরআনের তাফসীর করা :
কুরআনের এক অংশ অপর অংশের তাফসীর করে। কেননা কুরআনের একটি আয়াত অপর আয়াতের ব্যাখ্যাস্বরূপ। যে বিষয়টি কোন জায়গায় সংক্ষেপে বলা হয়েছে অন্য জায়গায় তা বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
اَللهُ نَزَّلَ اَحْسَنَ الْحَدِيْثِ كِتَابًا مُّتَشَابِهًا
‘‘আল্লাহ সবচেয়ে সুন্দর বাণী কিতাব আকারে নাযিল করেছেন, যা পরস্পর সাদৃশ্যপূর্ণ।’’
(সূরা যুমার- ২৩)
(২) تَفْسِيْرُ الْقُرْاٰنِ بِالسُّنَّةِ - নবী ﷺ এর হাদীসের মাধ্যমে কুরআনের তাফসীর করা :
রাসূল ﷺ ছিলেন কুরআনের ব্যাখ্যাদাতা। কেননা তাঁর উপর কুরআন নাযিল হয়েছে এবং কোন্ আয়াত দ্বারা কী বুঝানো হয়েছে তা আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে জানিয়ে দিয়েছেন। নবী ﷺ তাঁর জীবদ্দশায় কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের ব্যাখ্যা বুঝিয়ে দিতেন। বর্তমানে এর ব্যাখ্যা হলো হাদীস গ্রন্থসমূহ। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
وَاَنْزَلْنَاۤ اِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ اِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُوْنَ
‘‘আমি তোমার প্রতি এ উপদেশবাণী নাযিল করেছি, যাতে মানুষের প্রতি যা নাযিল হয়েছে তুমি তা সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিতে পার এবং তারাও যেন চিমত্মাভাবনা করে।’’ (সূরা নাহল- ৪৪)
(৩) تَفْسِيْرُ الْقُرْاٰنِ بِاَقْوَالِ الصَّحَابَةِ - সাহাবীগণের উক্তির মাধ্যমে কুরআনের তাফসীর করা :
কেননা তারা রাসূল ﷺ এর ছাত্র ছিলেন এবং রাসূল ﷺ এর ব্যাখ্যার আলোকেই তারা কুরআনের ব্যাখ্যা করেছেন।
(৪) تَفْسِيْرُ الْقُرْاٰنِ بِاَقْوَالِ التَّابِعِيْنَ - তাবেঈগণের উক্তির মাধ্যমে কুরআনের তাফসীর করা :
কারণ তারা সাহাবীগণের নিকট থেকে কুরআনের ব্যাখ্যা শিখেছেন। নবী ﷺ বলেছেন,
خَيْرُ النَّاسِ قَرْنِيْ ثُمَّ الَّذِيْنَ يَلُوْنَهُمْ ثُمَّ الَّذِيْنَ يَلُوْنَهُمْ
‘‘মানুষের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম লোক হলো আমার যুগের লোক; অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরাম (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম)। তারপর যারা তাদের পরে আসবে, তারপর তাদের পরে যারা আসবে।’’ অর্থাৎ যথাক্রমে তাবেঈন এবং তাবে তাবেঈনগণ (রাহিমাহুমুল্লাহ)।
(সহীহ বুখারী, হা/২৬৫২; সহীহ মুসলিম, হা/৬৬৩২)
(৫) تَفْسِيْرُ الْقُرْاٰنِ بِمَا تَقْتَضِيْهِ اللُّغَةُ الْعَرَبِيَّةُ - আরবি ভাষার চাহিদার আলোকে কুরআনের তাফসীর করা :
কেননা আল্লাহ তা‘আলা আরবি ভাষায় কুরআন নাযিল করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
اِنَّا جَعَلْنَاهُ قُرْاٰنًا عَرَبِيًّا لَّعَلَّكُمْ تَعْقِلُوْنَ
আমি এটা আরবি ভাষায় কুরআনরূপে (অবতীর্ণ) করেছি, যাতে তোমরা বুঝতে পার।
(সূরা যুখরুফ- ৩)
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ‐ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى رَسُوْلِهٖ مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِهٖ وَصَحْبِهٖ اَجْمَعِيْنَ
‘তাফসীরুল কুরআন বিল কুরআন’ গ্রন্থটি প্রকাশ করতে পেরে মহান আল্লাহর অগণিত শুকরিয়া আদায় করছি। অসংখ্য দরূদ ও সালাম পেশ করছি বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবায়ে কেরাম (রিদ্বওয়ানুল্লাহি ‘আলাইহিম আজমাঈন) এর উপর।
আল্লাহ তা‘আলা নিজ ক্ষমতায় এ বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করেছেন। তাঁর অসংখ্য সৃষ্টির মধ্যে মানবজাতিকে আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে নির্বাচিত করেছেন এবং তাদেরকে জানার, বুঝার এবং ভাল-মন্দের মধ্যে পার্থক্য করার ক্ষমতাও দিয়েছেন। মানুষকে খলিফা হিসেবে নিযুক্ত করার সময় আল্লাহ তা‘আলা আদম (আঃ) এর সকল বংশধর থেকে তাওহীদের সাক্ষ্য নিয়েছেন এবং জানিয়ে দিয়েছেন যে, একমাত্র তিনিই সকলের রব। আমাদেরকে কেবল তারই দাসত্ব করতে হবে। অন্য কারো দাসত্ব করার জন্য তিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেননি।
আদম ও হাওয়া (আঃ) কে সৃষ্টি করার পর আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে জান্নাতে বসবাস করতে দেন। পরে তাদেরকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেন। পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেয়ার সময় আল্লাহ তা‘আলা জানিয়ে দেন যে, একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তোমাদেরকে পৃথিবীতে অবস্থান করতে হবে। এখানে বসবাস করার জন্য যা কিছু লাগবে সবই তোমাদেরকে দেয়া হবে। এ পৃথিবী তোমাদের জন্য পরীক্ষাকেন্দ্র। পরীক্ষার সময় শেষ হলে তোমরা আবার আমার কাছে ফিরে আসবে। এ পৃথিবীতে আমার পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট হেদায়াতের বাণী আসবে। যারা এ হেদায়াতের অনুসরণ করবে তারা তাদের স্থায়ী ঠিকানা জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যারা আমার দেয়া হেদায়াতের অনুসরণ করবে না, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম। সেখানে তারা চিরকাল শাস্তি ভোগ করবে।
প্রাথমিক যুগের মানুষ আল্লাহপ্রদত্ত হেদায়াতের উপরই প্রতিষ্ঠিত ছিল। তাদের সকলের ধর্ম ছিল ইসলাম। তারা সবাই তাওহীদের অনুসারী ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে মানুষ এ সঠিক দ্বীন থেকে সরে গেছে। তারা বিভিন্ন সত্তাকে আল্লাহর সাথে শরীক করেছে এবং বিভিন্ন মতবাদ ও ধর্ম তৈরি করেছে। পথভোলা এই মানুষগুলোকে বাধ্য করে দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখার পদ্ধতি আল্লাহ গ্রহণ করেননি। কেননা তিনি মানুষকে ভালো-মন্দ দু’টিই করার স্বাধীনতা দিয়েছেন এবং পরীক্ষাস্বরূপ এ দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। আবার মানবজাতির কাছ থেকে সংশোধনের সুযোগ কেঁড়ে নিয়ে মুহূর্তেই তাদেরকে ধ্বংস করার নীতিও তিনি গ্রহণ করেননি। বরং তিনি মানবজাতির মধ্য থেকে কিছু মানুষকে নবী ও রাসূল হিসেবে নির্বাচিত করেছেন এবং তাদের নিকট হেদায়াতের বাণী পাঠিয়েছেন। এসব নবী-রাসূল এবং তাদের অনুসারীরা সেই মূল তাওহীদের দিকে মানবজাতিকে আহবান করেছেন। যারা নবীদের কথা মেনেছে তারা মুক্তি পেয়েছে। আর যারা মানেনি তারা পর্যায়ক্রমে ধ্বংস হয়েছে।
শেষ পর্যায়ে আল্লাহ তা‘আলা আরব দেশে মুহাম্মাদ ﷺ কে নবী হিসেবে পাঠালেন। পূর্বের নবীগণকে তিনি যে দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছিলেন, মুহাম্মাদ ﷺ এর উপরও সেই একই দায়িত্ব অর্পণ করেন। সর্বস্তরের মানুষকে তিনি আল্লাহর দ্বীনের দিকে আহবান জানান। সবাইকে তাওহীদের পথ গ্রহণের দাওয়াত দেন। সবার কাছে আল্লাহর হেদায়াত পৌঁছে দেয়া এবং এ হেদায়াত গ্রহণকারীদেরকে এমন একটি উম্মতে পরিণত করা ছিল তাঁর কাজ, যারা একদিকে আল্লাহর হেদায়াতের উপর নিজেদের জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করবে এবং অন্যদিকে সমগ্র দুনিয়ার সংশোধন ও সংস্কার সাধনের জন্য প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম চালাবে। এ দাওয়াত ও হেদায়াতের কিতাবটি হচ্ছে আল-কুরআন। মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর এ কিতাবটি অবতীর্ণ হয়েছে। কিয়ামত পর্যন্ত এ কিতাবটি মানবজাতির জন্য চূড়ান্ত সনদ হিসেবে বহাল থাকবে।
কুরআনই হেদায়াত লাভের মূল উৎস :
কুরআনের হেদায়াতই হচ্ছে আসল হেদায়াত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
تَرَكْتُ فِيْكُمْ اَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوْا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا كِتَابَ اللهِ وَسُنَّةَ نَبِيِّهٖ
‘‘আমি তোমাদের কাছে দু’টি জিনিস রেখে গেলাম। যতদিন পর্যন্ত তোমরা এ দু’টিকে আঁকড়ে ধরবে ততদিন পর্যন্ত তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। তা হলো, আল্লাহর কিতাব এবং তাঁর নবীর সুন্নাত।’’ [. মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৫৯৫; মিশকাত, হা/১৮৬; মুসনাদুল বাযযার, হা/৮৯৯৩; সুনানে দার কুতনী, হা/৪৬০৬।]
আবু শুরাইহ (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের মাঝে উপস্থিত হলেন এবং বললেন, তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ করো, তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ করো। তোমরা কি এ সাক্ষ্য দাও না যে, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল? আমরা বললাম, হ্যাঁ এরপর রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন,
اِنَّ هٰذَا الْقُرْاٰنَ سَبَبٌ طَرْفُهٗ بِيَدِ اللهِ وَطَرْفُهٗ بِاَيْدِيْكُمْ فَتَمَسَّكُوْا بِهٖ فَاِنَّكُمْ لَنْ تَضِلُّوْا وَلَنْ تُهْلِكُوْا بَعْدَهٗ اَبَدًا
‘‘এ কুরআন হলো একটি রশি। এর এক মাথা হচ্ছে আল্লাহর হাতে, আর অপর মাথা হচ্ছে তোমাদের হাতে। সুতরাং তোমরা এটাকে আঁকড়ে ধরো। তাহলে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না এবং ধ্বংসও হবে না।’’ [. সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/১২২।]
কুরআনের মধ্যে রয়েছে পূর্ববর্তীদের ইতিহাস, রয়েছে ভবিষ্যতের সংবাদ, এটা ফায়সালাদানকারী। এটাকে বাদ দিয়ে যে ব্যক্তি অন্য কোথাও হেদায়াত অনুসন্ধান করবে আল্লাহ তাকে পথভ্রষ্ট করে দেবেন। এটা আল্লাহর এক মজবুত রশি এবং জ্ঞানময় উপদেশ। আর এটাই সিরাতে মুস্তাকীম বা সোজা পথ। এর আশ্চর্যকারিতা কখনো শেষ হয় না। জ্ঞানার্জনকারীরা এর থেকে কখনো বিমুখ হয় না। এটা বার বার পাঠ করলেও বিরক্তি আসে না। জিনেরা এটা শোনার পর একথা না বলে পারেনি যে, ‘‘আমরা এমন এক আশ্চর্যজনক কুরআন শুনেছি, যা সঠিক পথের সন্ধান দেয়। ফলে আমরা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি।’’ [. সূরা জিন- ১, ২।] যে ব্যক্তি কুরআন দিয়ে কথা বলবে সে সত্য বলবে। যে কুরআনের উপর আমল করবে সে এর প্রতিদান পাবে। যে এর মাধ্যমে বিচার করবে সে ইনসাফ করবে। যে এটাকে আঁকড়ে ধরবে সে সঠিক পথের সন্ধান পাবে। [. মুসনাদুদ দারেমী, হা/৩৩৭৪; মুসনাদুল বাযযার, হা/৮৩৬; তিরমিযী, হা/২৯০৬।]
কুরআনের হেদায়াত পেতে হলে যা করণীয় :
একজন মানুষ বড় হওয়ার সাথে সাথে তার পরিবার ও সমাজের রীতিনীতি তার উপর প্রভাব বিস্তার করে। সে তার মাতাপিতা, পরিবার ও সমাজকে যে ধর্ম, দল ও মাযহাবের অনুসারী পায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে সে তারই অনুসরণ করে। যার ফলে বিশেষ কোন দল বা মতের চিন্তা-চেতনার আলোকে সে তার জীবন গড়ে তুলে। এজন্য চিন্তা ও কর্মের দিক থেকে যে মানুষ যে অবস্থানে রয়েছে সে অবস্থানে অনড় থেকেই যদি সে কুরআন পড়ে, তবে কুরআনের যেসব বিষয় তার বিশ্বাস ও কর্মের সাথে মিলে না, সেগুলো সে মেনে নিতে চায় না। পরিশেষে সে কুরআনের হেদায়াত থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়।
এ জন্য কুরআনকে প্রকৃত অর্থে বুঝতে হলে এবং এ থেকে হেদায়াত পেতে হলে যখনই কেউ কুরআন অধ্যয়ন শুরু করবে, তখন তাকে খোলা মন নিয়ে কুরআন অধ্যয়ন করতে হবে। কুরআন যে বিষয়ে যে রকম আকীদা পেশ করে সে রকম আকীদা নিজের মধ্যে গড়ে তুলতে হবে। কুরআন যে কাজের নির্দেশ দেয় তা পালন করতে হবে; আর যে কাজ করতে নিষেধ করে তা থেকে বিরত থাকতে হবে। এমনটি করতে পারলে যে কেউ কুরআন থেকে হেদায়াত পাবে এবং কুরআনের আলোকে তার জীবন গড়ে ওঠবে। কিন্তু যারা নিজেদের চিন্তা ও কর্মকে পরিবর্তন করে কুরআনের আলোকে গড়ে তুলতে চায় না; বরং কুরআনকে নিজেদের চিন্তা ও কর্মের আলোকে পরিবর্তন করতে চায়, তারা কখনো কুরআনের হেদায়াত পায় না। কুরআন পড়া সত্ত্বেও তারা গোমরাহীর দিকে এগিয়ে যায়।
কুরআনের মূল লক্ষ্য :
কুরআনের চূড়ান্ত লক্ষ্য ও বক্তব্য হচ্ছে, মানুষকে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মনীতি অবলম্বনের প্রতি আহবান জানানো। আল্লাহর হেদায়াতকে স্পষ্টভাবে মানবজাতির সামনে তুলে ধরা। কিসের মধ্যে মানুষের কল্যাণ ও সফলতা এবং কিসের মধ্যে তাদের অকল্যাণ ও ব্যর্থতা, সে বিষয়গুলো জানিয়ে দেয়াই হচ্ছে কুরআনের মূল লক্ষ্য।
কুরআনের আলোচ্য বিষয় :
কুরআনের মূল আলোচ্য বিষয় হলো মানুষ। মানুষ সৃষ্টির প্রক্রিয়া, পৃথিবী ও আকাশের গঠনাকৃতি, বিশ্বজগতের নিদর্শনসমূহ এবং অতীতের বিভিন্ন জাতির ঐতিহাসিক ঘটনাবলি কুরআনে আলোচনা করা হয়েছে। কুরআনে বিভিন্ন জাতির আকীদা-বিশ্বাস ও কর্মকান্ডের সমালোচনা করা হয়েছে। প্রকৃত সত্য সম্পর্কে মানুষের ভুল ধারণা দূর করা এবং যথার্থ সত্যটি মানুষের মনের মধ্যে গেঁথে দেয়াই এর উদ্দেশ্য। এ কারণেই এতে প্রতিটি বিষয়ের আলোচনা কেবলমাত্র ততটুকুই করা হয়েছে যতটুকু আলোচনা তার মূল লক্ষ্যের জন্য প্রয়োজন। নবীদের জীবনী বর্ণনার ক্ষেত্রে মূল শিক্ষণীয় অংশটুকুই কুরআন বর্ণনা করেছে। ইবাদাত সংক্রান্তত বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে এর মূল শিক্ষা কী এবং একেকটি ইবাদাত মানুষের মধ্যে কোন্ ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে চায়- কুরআন সেদিকে ইঙ্গিত করেছে। সেই সাথে কিছু কিছু বিধানও বর্ণনা করা হয়েছে। তবে ইবাদাতের বিস্তারিত বিধান নবী ﷺ এর বাস্তব শিক্ষার মাধ্যমে জানানো হয়েছে, যা হাদীস গ্রন্থগুলোতে মওজুদ রয়েছে।
সাধারণ বই ও কুরআনের মধ্যে পার্থক্য :
আমরা সাধারণত যেসব বই-পুস্তক পড়ে অভ্যস্ত এসব বই এক বা একাধিক বিষয় নিয়ে লেখা হয়ে থাকে। আবার ঐ বিষয়টি বিভিন্ন পর্ব ও অধ্যায়ে সাজানো থাকে এবং বইয়ের শুরুতে একটি বিষয়সূচী থাকে। ঐ সূচী দেখেই পাঠক তার কাঙ্ক্ষিত অধ্যায়টি পড়ে নিতে পারে। কিন্তু কুরআন মাজীদ এর ব্যতিক্রম। এর শুরুতে কোন বিষয়সূচী নেই। এর বক্তব্যসমূহ বিভিন্ন সূরায় বিভক্ত। এ সূরাগুলোর সূচীই কুরআনের শুরুতে রয়েছে। বিষয়কেন্দ্রিক কোন সূচী না থাকার কারণ হলো- কুরআন একসাথে কিতাব আকারে নাযিল হয়নি। এটি নাযিল হয়েছে ভাষণ আকারে। পরবর্তীতে এ ভাষণগুলো এক বা একাধিক ভাষণের সমন্বয়ে ১১৪টি সূরায় সন্নিবেশিত করা হয়েছে। যার ফলে একটি বিষয় সংক্রান্ত আলোচনা বিভিন্ন সূরায় কোথাও সংক্ষেপে কোথাও বিস্তারিত আকারে রয়েছে।
এজন্য যারা কুরআন অধ্যয়নের জন্য বেশি সময় দিতে পারেন না বা যারা আরবি ভাষা বুঝেন না তাদের জন্য বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে কুরআনের বক্তব্য জানা কষ্টকর হয়ে যায়। একটি বিষয় সম্পর্কিত সকল আয়াত একত্র করে ঐ বিষয়ে পূর্ণ ধারণা লাভ করা সম্ভব হয় না।
কেন এই তাফসীর :
আল্লাহ তা‘আলা মানবজাতির হেদায়াতের জন্য মহাগ্রন্থ আল-কুরআনুল কারীম নাযিল করেছেন। এজন্য তিনি এ কিতাবে জীবনের সকল বিভাগের প্রতিটি মৌলিক বিষয় সম্পর্কে সর্বোত্তম দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন। কুরআনের বক্তব্য বুঝার সুবিধার্থে এমন একটি গ্রন্থের অতীব প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছিলাম, যে গ্রন্থে কুরআনে বর্ণিত জ্ঞানসমূহ বিষয় আকারে সাজানো থাকবে। এতে করে সর্বস্তরের জনগণ বিভিন্ন বিষয়ে কুরআনের বিধান কী- তা সহজে জানতে পারবে। মহান আল্লাহর অশেষ মেহেরবানী যে, তিনি আমাকে এ বিষয়ে কিছু কাজ করার তাওফীক দান করেছেন। দীর্ঘদিন যাবৎ সাধনা ও গবেষণা করার পর কুরআনের উপর একটি বিষয়ভিত্তিক গ্রন্থ জনগণের হাতে তুলে দিতে পেরেছি, এজন্য মালিকের নিকট অসংখ্য শুকরিয়া আদায় করছি। আর দু‘আ করছি, তিনি যেন এ গ্রন্থের মাধ্যমে বিশ্ব-মানবতাকে উপকৃত করেন এবং কুরআনের জ্ঞান লাভ করে ইসলামী জীবন গড়ার তাওফীক দান করেন এবং এটাকে সকলের নাজাতের ওসীলা বানিয়ে দেন- আমীন
যেভাবে কাজটি করেছি :
ছাত্রজীবনে আমি নিজের জন্য একটি স্থায়ী রুটিন করে নিয়েছিলাম যে, প্রতিদিন দিনের কাজ শুরু করতাম কুরআনের তাফসীর পড়ার মাধ্যমে। নিয়মিত কুরআন পড়ার সময় একটি বিষয় আমাকে খুবই প্রভাবিত করত। আর তা হলো, যখন একটি সূরা পড়তে বসি তখন কোন বিষয় সম্পর্কে আলোচনা আসে, পরে আবার অন্য প্রসঙ্গ চলে আসে। আরেকটু সামনে বাড়লে বা অন্য সূরায় গেলে দেখা যায় পূর্বের বিষয়টির আলোচনা আবার এসেছে। তখন থেকেই একেকটি বিষয় সম্পর্কে আলোচনা যেখানে পেতাম তা নোট করতাম। তারপর যখন এ বিষয়গুলো কিতাব আকারে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিলাম, তখন একই বিষয় সংক্রান্ত আয়াতগুলো সামনে রেখে এসব আয়াত থেকে যেসব পয়েন্ট বের হয় তা লিখে পুরো বিষয়টিকে ধারাবাহিকভাবে সাজাতাম। এভাবে প্রতিটি বিষয়কে অধ্যায় আকারে সাজিয়ে গ্রন্থাকারে রূপদান করি। এ গ্রন্থটির কাজ সমাপ্ত করতে ২০০০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৫ বছর সময় লেগেছে।
যাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করলেই নয় :
সকল প্রশংসা মূলত আল্লাহরই। তিনি যাকে দিয়ে যে কাজ করানোর ইচ্ছা করেন তাকে দিয়ে সে কাজ করিয়ে নেন। আল্লাহ আমাকে দিয়ে এ কাজ করিয়েছেন, এজন্য আমি তাঁর শুকরিয়া আদায় করছি।
আল্লাহ তা‘আলার শুকরিয়া আদায়ের পর আমি যাদের কাছে কৃতজ্ঞ তাদের মধ্যে রয়েছেন-
প্রথমত আমার পিতামাতা। তারা আমাকে দ্বীনের ইলিম শিক্ষা করার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
মাতাপিতার পর আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার শ্রদ্ধেয় উস্তাজ আল্লামা ইদ্রীস আহমদ সেবনগরী সাহেবের। তিনি একজন বিখ্যাত আলেমে দ্বীন ছিলেন। শেষ বয়সে চাকরি থেকে অবসর নিয়ে নিজ বাড়িতে অবস্থান করেই ইলিম শিক্ষাদান অব্যাহত রাখেন। ১৯৯৩ সালে কানাইঘাট মনসূরিয়া কামিল মাদরাসায় ভর্তি হওয়ার পর থেকে প্রায় দশ বছর আমি তাঁর কাছে ইলমে দ্বীন শিক্ষা করার সুযোগ লাভ করি। পার্থিব কোন বিনিময় ছাড়াই অতি গুরুত্বের সাথে তিনি আমাকে পড়াতেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে এর উত্তম বিনিময় দান করুন। আমীন
এরপর আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার সহধর্মিণী মাহমুদা খাতুনের। এ গ্রন্থের পান্ডলিপি তৈরি এবং প্রুফ দেখার কাজে তিনি যথেষ্ট শ্রম দিয়েছেন। তাছাড়া এ গ্রন্থের বিভিন্ন কাজে আমার অনেক ছাত্র পরিশ্রম করেছেন। আমি তাদের সকলের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
আমি আরো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার দ্বীনি ভাই মোহাম্মদ ইমাম হোসাইন কামরুল সাহেবের। তিনি অনেক সুপরামর্শ ও উপায়-উপকরণ দিয়ে আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন। যার ফলে আমি প্রশান্ত মনে এ গ্রন্থটির কাজ সমাপ্ত করতে পেরেছি। আল্লাহ সকলকে জাযায়ে খায়ের দান করুন। আমীন
কুরআনের শিক্ষাকে সহজ ও নির্ভুলভাবে তুলে ধরার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা হয়েছে। গ্রন্থের পান্ডলিপি প্রস্তুত হয়ে যাওয়ার পরও দীর্ঘদিন যাবৎ এর পরিমার্জন ও সংশোধনীর কাজ করা হয়েছে। তারপরও কোথাও কোন সংশোধনীর প্রয়োজন মনে হলে বা কোন পরামর্শ থাকলে তা জানানোর অনুরোধ রইল।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে কুরআন বুঝার এবং কুরআন অনুযায়ী জীবন গড়ার তাওফীক দান করুন- যাতে আমরা দুনিয়াতে শান্তি এবং পরকালে জান্নাত লাভ করতে পারি। আমীন
দু‘আপ্রার্থী
শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
তারিখ, ঢাকা।
১৮ই মুহররম- ১৪৩৬ হিজরী
১২ই নভেম্বর- ২০১৪ ইং
‘তাফসীরুল কুরআন বিল কুরআন’ গ্রন্থটি প্রকাশ করতে পেরে মহান আল্লাহর অগণিত শুকরিয়া আদায় করছি। অসংখ্য দরূদ ও সালাম পেশ করছি বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবায়ে কেরাম (রিদ্বওয়ানুল্লাহি ‘আলাইহিম আজমাঈন) এর উপর।
আল্লাহ তা‘আলা নিজ ক্ষমতায় এ বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করেছেন। তাঁর অসংখ্য সৃষ্টির মধ্যে মানবজাতিকে আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে নির্বাচিত করেছেন এবং তাদেরকে জানার, বুঝার এবং ভাল-মন্দের মধ্যে পার্থক্য করার ক্ষমতাও দিয়েছেন। মানুষকে খলিফা হিসেবে নিযুক্ত করার সময় আল্লাহ তা‘আলা আদম (আঃ) এর সকল বংশধর থেকে তাওহীদের সাক্ষ্য নিয়েছেন এবং জানিয়ে দিয়েছেন যে, একমাত্র তিনিই সকলের রব। আমাদেরকে কেবল তারই দাসত্ব করতে হবে। অন্য কারো দাসত্ব করার জন্য তিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেননি।
আদম ও হাওয়া (আঃ) কে সৃষ্টি করার পর আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে জান্নাতে বসবাস করতে দেন। পরে তাদেরকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেন। পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেয়ার সময় আল্লাহ তা‘আলা জানিয়ে দেন যে, একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তোমাদেরকে পৃথিবীতে অবস্থান করতে হবে। এখানে বসবাস করার জন্য যা কিছু লাগবে সবই তোমাদেরকে দেয়া হবে। এ পৃথিবী তোমাদের জন্য পরীক্ষাকেন্দ্র। পরীক্ষার সময় শেষ হলে তোমরা আবার আমার কাছে ফিরে আসবে। এ পৃথিবীতে আমার পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট হেদায়াতের বাণী আসবে। যারা এ হেদায়াতের অনুসরণ করবে তারা তাদের স্থায়ী ঠিকানা জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যারা আমার দেয়া হেদায়াতের অনুসরণ করবে না, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম। সেখানে তারা চিরকাল শাস্তি ভোগ করবে।
প্রাথমিক যুগের মানুষ আল্লাহপ্রদত্ত হেদায়াতের উপরই প্রতিষ্ঠিত ছিল। তাদের সকলের ধর্ম ছিল ইসলাম। তারা সবাই তাওহীদের অনুসারী ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে মানুষ এ সঠিক দ্বীন থেকে সরে গেছে। তারা বিভিন্ন সত্তাকে আল্লাহর সাথে শরীক করেছে এবং বিভিন্ন মতবাদ ও ধর্ম তৈরি করেছে। পথভোলা এই মানুষগুলোকে বাধ্য করে দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখার পদ্ধতি আল্লাহ গ্রহণ করেননি। কেননা তিনি মানুষকে ভালো-মন্দ দু’টিই করার স্বাধীনতা দিয়েছেন এবং পরীক্ষাস্বরূপ এ দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। আবার মানবজাতির কাছ থেকে সংশোধনের সুযোগ কেঁড়ে নিয়ে মুহূর্তেই তাদেরকে ধ্বংস করার নীতিও তিনি গ্রহণ করেননি। বরং তিনি মানবজাতির মধ্য থেকে কিছু মানুষকে নবী ও রাসূল হিসেবে নির্বাচিত করেছেন এবং তাদের নিকট হেদায়াতের বাণী পাঠিয়েছেন। এসব নবী-রাসূল এবং তাদের অনুসারীরা সেই মূল তাওহীদের দিকে মানবজাতিকে আহবান করেছেন। যারা নবীদের কথা মেনেছে তারা মুক্তি পেয়েছে। আর যারা মানেনি তারা পর্যায়ক্রমে ধ্বংস হয়েছে।
শেষ পর্যায়ে আল্লাহ তা‘আলা আরব দেশে মুহাম্মাদ ﷺ কে নবী হিসেবে পাঠালেন। পূর্বের নবীগণকে তিনি যে দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছিলেন, মুহাম্মাদ ﷺ এর উপরও সেই একই দায়িত্ব অর্পণ করেন। সর্বস্তরের মানুষকে তিনি আল্লাহর দ্বীনের দিকে আহবান জানান। সবাইকে তাওহীদের পথ গ্রহণের দাওয়াত দেন। সবার কাছে আল্লাহর হেদায়াত পৌঁছে দেয়া এবং এ হেদায়াত গ্রহণকারীদেরকে এমন একটি উম্মতে পরিণত করা ছিল তাঁর কাজ, যারা একদিকে আল্লাহর হেদায়াতের উপর নিজেদের জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করবে এবং অন্যদিকে সমগ্র দুনিয়ার সংশোধন ও সংস্কার সাধনের জন্য প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম চালাবে। এ দাওয়াত ও হেদায়াতের কিতাবটি হচ্ছে আল-কুরআন। মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর এ কিতাবটি অবতীর্ণ হয়েছে। কিয়ামত পর্যন্ত এ কিতাবটি মানবজাতির জন্য চূড়ান্ত সনদ হিসেবে বহাল থাকবে।
কুরআনই হেদায়াত লাভের মূল উৎস :
কুরআনের হেদায়াতই হচ্ছে আসল হেদায়াত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
تَرَكْتُ فِيْكُمْ اَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوْا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا كِتَابَ اللهِ وَسُنَّةَ نَبِيِّهٖ
‘‘আমি তোমাদের কাছে দু’টি জিনিস রেখে গেলাম। যতদিন পর্যন্ত তোমরা এ দু’টিকে আঁকড়ে ধরবে ততদিন পর্যন্ত তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। তা হলো, আল্লাহর কিতাব এবং তাঁর নবীর সুন্নাত।’’ [. মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৫৯৫; মিশকাত, হা/১৮৬; মুসনাদুল বাযযার, হা/৮৯৯৩; সুনানে দার কুতনী, হা/৪৬০৬।]
আবু শুরাইহ (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের মাঝে উপস্থিত হলেন এবং বললেন, তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ করো, তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ করো। তোমরা কি এ সাক্ষ্য দাও না যে, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল? আমরা বললাম, হ্যাঁ এরপর রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন,
اِنَّ هٰذَا الْقُرْاٰنَ سَبَبٌ طَرْفُهٗ بِيَدِ اللهِ وَطَرْفُهٗ بِاَيْدِيْكُمْ فَتَمَسَّكُوْا بِهٖ فَاِنَّكُمْ لَنْ تَضِلُّوْا وَلَنْ تُهْلِكُوْا بَعْدَهٗ اَبَدًا
‘‘এ কুরআন হলো একটি রশি। এর এক মাথা হচ্ছে আল্লাহর হাতে, আর অপর মাথা হচ্ছে তোমাদের হাতে। সুতরাং তোমরা এটাকে আঁকড়ে ধরো। তাহলে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না এবং ধ্বংসও হবে না।’’ [. সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/১২২।]
কুরআনের মধ্যে রয়েছে পূর্ববর্তীদের ইতিহাস, রয়েছে ভবিষ্যতের সংবাদ, এটা ফায়সালাদানকারী। এটাকে বাদ দিয়ে যে ব্যক্তি অন্য কোথাও হেদায়াত অনুসন্ধান করবে আল্লাহ তাকে পথভ্রষ্ট করে দেবেন। এটা আল্লাহর এক মজবুত রশি এবং জ্ঞানময় উপদেশ। আর এটাই সিরাতে মুস্তাকীম বা সোজা পথ। এর আশ্চর্যকারিতা কখনো শেষ হয় না। জ্ঞানার্জনকারীরা এর থেকে কখনো বিমুখ হয় না। এটা বার বার পাঠ করলেও বিরক্তি আসে না। জিনেরা এটা শোনার পর একথা না বলে পারেনি যে, ‘‘আমরা এমন এক আশ্চর্যজনক কুরআন শুনেছি, যা সঠিক পথের সন্ধান দেয়। ফলে আমরা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি।’’ [. সূরা জিন- ১, ২।] যে ব্যক্তি কুরআন দিয়ে কথা বলবে সে সত্য বলবে। যে কুরআনের উপর আমল করবে সে এর প্রতিদান পাবে। যে এর মাধ্যমে বিচার করবে সে ইনসাফ করবে। যে এটাকে আঁকড়ে ধরবে সে সঠিক পথের সন্ধান পাবে। [. মুসনাদুদ দারেমী, হা/৩৩৭৪; মুসনাদুল বাযযার, হা/৮৩৬; তিরমিযী, হা/২৯০৬।]
কুরআনের হেদায়াত পেতে হলে যা করণীয় :
একজন মানুষ বড় হওয়ার সাথে সাথে তার পরিবার ও সমাজের রীতিনীতি তার উপর প্রভাব বিস্তার করে। সে তার মাতাপিতা, পরিবার ও সমাজকে যে ধর্ম, দল ও মাযহাবের অনুসারী পায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে সে তারই অনুসরণ করে। যার ফলে বিশেষ কোন দল বা মতের চিন্তা-চেতনার আলোকে সে তার জীবন গড়ে তুলে। এজন্য চিন্তা ও কর্মের দিক থেকে যে মানুষ যে অবস্থানে রয়েছে সে অবস্থানে অনড় থেকেই যদি সে কুরআন পড়ে, তবে কুরআনের যেসব বিষয় তার বিশ্বাস ও কর্মের সাথে মিলে না, সেগুলো সে মেনে নিতে চায় না। পরিশেষে সে কুরআনের হেদায়াত থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়।
এ জন্য কুরআনকে প্রকৃত অর্থে বুঝতে হলে এবং এ থেকে হেদায়াত পেতে হলে যখনই কেউ কুরআন অধ্যয়ন শুরু করবে, তখন তাকে খোলা মন নিয়ে কুরআন অধ্যয়ন করতে হবে। কুরআন যে বিষয়ে যে রকম আকীদা পেশ করে সে রকম আকীদা নিজের মধ্যে গড়ে তুলতে হবে। কুরআন যে কাজের নির্দেশ দেয় তা পালন করতে হবে; আর যে কাজ করতে নিষেধ করে তা থেকে বিরত থাকতে হবে। এমনটি করতে পারলে যে কেউ কুরআন থেকে হেদায়াত পাবে এবং কুরআনের আলোকে তার জীবন গড়ে ওঠবে। কিন্তু যারা নিজেদের চিন্তা ও কর্মকে পরিবর্তন করে কুরআনের আলোকে গড়ে তুলতে চায় না; বরং কুরআনকে নিজেদের চিন্তা ও কর্মের আলোকে পরিবর্তন করতে চায়, তারা কখনো কুরআনের হেদায়াত পায় না। কুরআন পড়া সত্ত্বেও তারা গোমরাহীর দিকে এগিয়ে যায়।
কুরআনের মূল লক্ষ্য :
কুরআনের চূড়ান্ত লক্ষ্য ও বক্তব্য হচ্ছে, মানুষকে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মনীতি অবলম্বনের প্রতি আহবান জানানো। আল্লাহর হেদায়াতকে স্পষ্টভাবে মানবজাতির সামনে তুলে ধরা। কিসের মধ্যে মানুষের কল্যাণ ও সফলতা এবং কিসের মধ্যে তাদের অকল্যাণ ও ব্যর্থতা, সে বিষয়গুলো জানিয়ে দেয়াই হচ্ছে কুরআনের মূল লক্ষ্য।
কুরআনের আলোচ্য বিষয় :
কুরআনের মূল আলোচ্য বিষয় হলো মানুষ। মানুষ সৃষ্টির প্রক্রিয়া, পৃথিবী ও আকাশের গঠনাকৃতি, বিশ্বজগতের নিদর্শনসমূহ এবং অতীতের বিভিন্ন জাতির ঐতিহাসিক ঘটনাবলি কুরআনে আলোচনা করা হয়েছে। কুরআনে বিভিন্ন জাতির আকীদা-বিশ্বাস ও কর্মকান্ডের সমালোচনা করা হয়েছে। প্রকৃত সত্য সম্পর্কে মানুষের ভুল ধারণা দূর করা এবং যথার্থ সত্যটি মানুষের মনের মধ্যে গেঁথে দেয়াই এর উদ্দেশ্য। এ কারণেই এতে প্রতিটি বিষয়ের আলোচনা কেবলমাত্র ততটুকুই করা হয়েছে যতটুকু আলোচনা তার মূল লক্ষ্যের জন্য প্রয়োজন। নবীদের জীবনী বর্ণনার ক্ষেত্রে মূল শিক্ষণীয় অংশটুকুই কুরআন বর্ণনা করেছে। ইবাদাত সংক্রান্তত বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে এর মূল শিক্ষা কী এবং একেকটি ইবাদাত মানুষের মধ্যে কোন্ ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে চায়- কুরআন সেদিকে ইঙ্গিত করেছে। সেই সাথে কিছু কিছু বিধানও বর্ণনা করা হয়েছে। তবে ইবাদাতের বিস্তারিত বিধান নবী ﷺ এর বাস্তব শিক্ষার মাধ্যমে জানানো হয়েছে, যা হাদীস গ্রন্থগুলোতে মওজুদ রয়েছে।
সাধারণ বই ও কুরআনের মধ্যে পার্থক্য :
আমরা সাধারণত যেসব বই-পুস্তক পড়ে অভ্যস্ত এসব বই এক বা একাধিক বিষয় নিয়ে লেখা হয়ে থাকে। আবার ঐ বিষয়টি বিভিন্ন পর্ব ও অধ্যায়ে সাজানো থাকে এবং বইয়ের শুরুতে একটি বিষয়সূচী থাকে। ঐ সূচী দেখেই পাঠক তার কাঙ্ক্ষিত অধ্যায়টি পড়ে নিতে পারে। কিন্তু কুরআন মাজীদ এর ব্যতিক্রম। এর শুরুতে কোন বিষয়সূচী নেই। এর বক্তব্যসমূহ বিভিন্ন সূরায় বিভক্ত। এ সূরাগুলোর সূচীই কুরআনের শুরুতে রয়েছে। বিষয়কেন্দ্রিক কোন সূচী না থাকার কারণ হলো- কুরআন একসাথে কিতাব আকারে নাযিল হয়নি। এটি নাযিল হয়েছে ভাষণ আকারে। পরবর্তীতে এ ভাষণগুলো এক বা একাধিক ভাষণের সমন্বয়ে ১১৪টি সূরায় সন্নিবেশিত করা হয়েছে। যার ফলে একটি বিষয় সংক্রান্ত আলোচনা বিভিন্ন সূরায় কোথাও সংক্ষেপে কোথাও বিস্তারিত আকারে রয়েছে।
এজন্য যারা কুরআন অধ্যয়নের জন্য বেশি সময় দিতে পারেন না বা যারা আরবি ভাষা বুঝেন না তাদের জন্য বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে কুরআনের বক্তব্য জানা কষ্টকর হয়ে যায়। একটি বিষয় সম্পর্কিত সকল আয়াত একত্র করে ঐ বিষয়ে পূর্ণ ধারণা লাভ করা সম্ভব হয় না।
কেন এই তাফসীর :
আল্লাহ তা‘আলা মানবজাতির হেদায়াতের জন্য মহাগ্রন্থ আল-কুরআনুল কারীম নাযিল করেছেন। এজন্য তিনি এ কিতাবে জীবনের সকল বিভাগের প্রতিটি মৌলিক বিষয় সম্পর্কে সর্বোত্তম দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন। কুরআনের বক্তব্য বুঝার সুবিধার্থে এমন একটি গ্রন্থের অতীব প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছিলাম, যে গ্রন্থে কুরআনে বর্ণিত জ্ঞানসমূহ বিষয় আকারে সাজানো থাকবে। এতে করে সর্বস্তরের জনগণ বিভিন্ন বিষয়ে কুরআনের বিধান কী- তা সহজে জানতে পারবে। মহান আল্লাহর অশেষ মেহেরবানী যে, তিনি আমাকে এ বিষয়ে কিছু কাজ করার তাওফীক দান করেছেন। দীর্ঘদিন যাবৎ সাধনা ও গবেষণা করার পর কুরআনের উপর একটি বিষয়ভিত্তিক গ্রন্থ জনগণের হাতে তুলে দিতে পেরেছি, এজন্য মালিকের নিকট অসংখ্য শুকরিয়া আদায় করছি। আর দু‘আ করছি, তিনি যেন এ গ্রন্থের মাধ্যমে বিশ্ব-মানবতাকে উপকৃত করেন এবং কুরআনের জ্ঞান লাভ করে ইসলামী জীবন গড়ার তাওফীক দান করেন এবং এটাকে সকলের নাজাতের ওসীলা বানিয়ে দেন- আমীন
যেভাবে কাজটি করেছি :
ছাত্রজীবনে আমি নিজের জন্য একটি স্থায়ী রুটিন করে নিয়েছিলাম যে, প্রতিদিন দিনের কাজ শুরু করতাম কুরআনের তাফসীর পড়ার মাধ্যমে। নিয়মিত কুরআন পড়ার সময় একটি বিষয় আমাকে খুবই প্রভাবিত করত। আর তা হলো, যখন একটি সূরা পড়তে বসি তখন কোন বিষয় সম্পর্কে আলোচনা আসে, পরে আবার অন্য প্রসঙ্গ চলে আসে। আরেকটু সামনে বাড়লে বা অন্য সূরায় গেলে দেখা যায় পূর্বের বিষয়টির আলোচনা আবার এসেছে। তখন থেকেই একেকটি বিষয় সম্পর্কে আলোচনা যেখানে পেতাম তা নোট করতাম। তারপর যখন এ বিষয়গুলো কিতাব আকারে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিলাম, তখন একই বিষয় সংক্রান্ত আয়াতগুলো সামনে রেখে এসব আয়াত থেকে যেসব পয়েন্ট বের হয় তা লিখে পুরো বিষয়টিকে ধারাবাহিকভাবে সাজাতাম। এভাবে প্রতিটি বিষয়কে অধ্যায় আকারে সাজিয়ে গ্রন্থাকারে রূপদান করি। এ গ্রন্থটির কাজ সমাপ্ত করতে ২০০০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৫ বছর সময় লেগেছে।
যাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করলেই নয় :
সকল প্রশংসা মূলত আল্লাহরই। তিনি যাকে দিয়ে যে কাজ করানোর ইচ্ছা করেন তাকে দিয়ে সে কাজ করিয়ে নেন। আল্লাহ আমাকে দিয়ে এ কাজ করিয়েছেন, এজন্য আমি তাঁর শুকরিয়া আদায় করছি।
আল্লাহ তা‘আলার শুকরিয়া আদায়ের পর আমি যাদের কাছে কৃতজ্ঞ তাদের মধ্যে রয়েছেন-
প্রথমত আমার পিতামাতা। তারা আমাকে দ্বীনের ইলিম শিক্ষা করার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
মাতাপিতার পর আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার শ্রদ্ধেয় উস্তাজ আল্লামা ইদ্রীস আহমদ সেবনগরী সাহেবের। তিনি একজন বিখ্যাত আলেমে দ্বীন ছিলেন। শেষ বয়সে চাকরি থেকে অবসর নিয়ে নিজ বাড়িতে অবস্থান করেই ইলিম শিক্ষাদান অব্যাহত রাখেন। ১৯৯৩ সালে কানাইঘাট মনসূরিয়া কামিল মাদরাসায় ভর্তি হওয়ার পর থেকে প্রায় দশ বছর আমি তাঁর কাছে ইলমে দ্বীন শিক্ষা করার সুযোগ লাভ করি। পার্থিব কোন বিনিময় ছাড়াই অতি গুরুত্বের সাথে তিনি আমাকে পড়াতেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে এর উত্তম বিনিময় দান করুন। আমীন
এরপর আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার সহধর্মিণী মাহমুদা খাতুনের। এ গ্রন্থের পান্ডলিপি তৈরি এবং প্রুফ দেখার কাজে তিনি যথেষ্ট শ্রম দিয়েছেন। তাছাড়া এ গ্রন্থের বিভিন্ন কাজে আমার অনেক ছাত্র পরিশ্রম করেছেন। আমি তাদের সকলের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
আমি আরো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার দ্বীনি ভাই মোহাম্মদ ইমাম হোসাইন কামরুল সাহেবের। তিনি অনেক সুপরামর্শ ও উপায়-উপকরণ দিয়ে আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন। যার ফলে আমি প্রশান্ত মনে এ গ্রন্থটির কাজ সমাপ্ত করতে পেরেছি। আল্লাহ সকলকে জাযায়ে খায়ের দান করুন। আমীন
কুরআনের শিক্ষাকে সহজ ও নির্ভুলভাবে তুলে ধরার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা হয়েছে। গ্রন্থের পান্ডলিপি প্রস্তুত হয়ে যাওয়ার পরও দীর্ঘদিন যাবৎ এর পরিমার্জন ও সংশোধনীর কাজ করা হয়েছে। তারপরও কোথাও কোন সংশোধনীর প্রয়োজন মনে হলে বা কোন পরামর্শ থাকলে তা জানানোর অনুরোধ রইল।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে কুরআন বুঝার এবং কুরআন অনুযায়ী জীবন গড়ার তাওফীক দান করুন- যাতে আমরা দুনিয়াতে শান্তি এবং পরকালে জান্নাত লাভ করতে পারি। আমীন
দু‘আপ্রার্থী
শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
তারিখ, ঢাকা।
১৮ই মুহররম- ১৪৩৬ হিজরী
১২ই নভেম্বর- ২০১৪ ইং
বিশ্বজগতের সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা ও মালিক হলেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘আলা। আল্লাহ শব্দটি অন্যান্য ধর্ম বা জাতির মধ্যে প্রচলিত ভগবান, ঈশ্বর ও গড ইত্যাদি শব্দের প্রতিশব্দ নয়। এটি একটি মৌলিক বিশেষ্য। এ নাম কেবল আল্লাহর জন্যই নির্ধারিত। আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। তাঁর কোন অংশীদার নেই। আল্লাহ তা‘আলার অনেক গুণবাচক নাম রয়েছে। এসব গুণবাচক নামের মধ্যেই তাঁর পরিচয় পাওয়া যায়। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর যেসব পরিচয় আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন তা নিচে আলোচনা করা হলো।
সূরা ফাতেহায় বর্ণিত আল্লাহ তা‘আলার গুণাবলি :
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ‐ اَلرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ مَالِكِ يَوْمِ الدِّيْنِ ‐ اِيَّاكَ نَعْبُدُ وَاِيَّاكَ نَسْتَعِيْنُ ‐ اِهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيْمَ ‐ صِرَاطَ الَّذِيْنَ اَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ ‐ غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّآلِّيْنَ
আল্লাহর নামে শুরু করছি, যিনি পরম করুণাময় ও অতি দয়ালু। সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহর জন্য, যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক। যিনি পরম করুণাময় ও অতিশয় দয়ালু। যিনি প্রতিফল দিবসের মালিক। আমরা কেবল আপনারই ইবাদাত করি এবং আপনার নিকটই সাহায্য প্রার্থনা করি। আপনি আমাদেরকে সরলসঠিক পথপ্রদর্শন করুন। তাদের পথ, যাদের প্রতি আপনি অনুগ্রহ করেছেন; তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি আপনার গযব অবতীর্ণ হয়েছে এবং তাদের পথও নয়, যারা পথভ্রষ্ট।
ব্যাখ্যা : সূরা ফাতেহা হলো কুরআন মাজীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সূরা। আবু সাঈদ ইবনে মু‘আলা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি যখন সালাত আদায় করছিলাম, তখন নবী ﷺ আমাকে ডাকলেন, কিন্তু আমি তাঁর ডাকে সাড়া দিলাম না। পরে আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি সালাত আদায় করছিলাম। এরপর রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আল্লাহ তা‘আলা কি বলেননি? ‘‘হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ডাকে সাড়া দাও, যখন তারা তোমাদেরকে আহবান করেন।’’ (সূরা আনফাল- ২৪)
তারপর নবী ﷺ বললেন, আমি কি তোমাকে কুরআনের সর্বোত্তম সূরা শিক্ষা দেব না? অতঃপর তিনি বললেন, তা হচ্ছে সূরা ফাতেহা- যা বার বার পঠিত সাতটি আয়াতের সমন্বয়ে গঠিত। এ সূরা এবং মহান কিতাব আল-কুরআন আমাকে প্রদান করা হয়েছে। (সহীহ বুখারী, হা/৫০০৬)
সূরা ফাতেহার প্রথম তিনটি আয়াতে আল্লাহ তা‘আলার গুণাবলি বর্ণনা করা হয়েছে। তার পরের আয়াতে আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণা দেয়া হয়েছে এবং শেষ তিনটি আয়াতে মুমিন বান্দার জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিষয় অর্থাৎ সিরাতে মুস্তাকীম বা সঠিক পথের সন্ধান পাওয়ার দু‘আ শিক্ষা দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলার প্রথম পরিচয় হচ্ছে, তিনি সারা বিশ্বের রব। রব বলতে ঐ সত্তাকে বুঝায়, যিনি কোন জিনিসকে তার মঙ্গলের দিকে দৃষ্টি রেখে পর্যায়ক্রমে উন্নতির সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে দেন। গোটা বিশ্বে যা কিছু আছে সবকিছুর রব হলেন তিনি। তিনিই সবকিছুর মালিক এবং সবকিছুর প্রতিপালক ও পরিচালনাকারী। তাঁর মালিকানা ও পরিচালনায় অন্য কারো হাত নেই। এজন্য সকল প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য একমাত্র তিনিই। আল্লাহ হলেন ‘রহমান’ ও ‘রহীম’ তথা বড়ই মেহেরবান ও অশেষ দয়াময়। আমরা আল্লাহর অসংখ্য নিয়ামতের মধ্যে ডুবে আছি। মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘তোমরা আমার নিয়ামত গণনা করতে শুরু করলে তা শেষ করতে পারবে না।’’ (সূরা নাহল- ১৮)
যে সকল নিয়ামত একান্ত প্রয়োজনীয়, তা তিনি এত ব্যাপক করে দিয়েছেন যে, এর কোন অভাব হয় না। যেমন- সূর্যের আলো, পানি, বাতাস ও আগুন ইত্যাদি। তিনি কারো কাছ থেকে এগুলোর কোন বিনিময় গ্রহণ করেন না; কেবল নিজ দয়া ও অনুগ্রহে এসব দান করেছেন। এ দুনিয়াতে তাঁর রহমত এত ব্যাপক যে, তিনি কাফির, মুশরিক ও জীবজন্তু সবাইকে রিযিক দেন এবং তাদের প্রয়োজনীয় সবকিছু সরবরাহ করেন।
আল্লাহ তা‘আলা হলেন বিচার দিনের মালিক। এ দুনিয়াতে মানুষ যা কিছু করে তার সঠিক বিচার ও পরিপূর্ণ প্রতিদান পাওয়ার জন্য আমাদের সামনে একটি দিবসের আগমন ঘটবে, যার নাম হলো কিয়ামত দিবস। আর সেদিনের বিচারক হবেন স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা। তিনি কারো প্রতি যুলুম করবেন না। দুনিয়াতে যারা ঈমান আনবে এবং সৎকর্ম করবে, তাদেরকে তিনি নিয়ামতপূর্ণ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আর যারা পাপকাজ করে অপরাধী হবে, তাদেরকে জাহান্নামের আগুনে ফেলে শাস্তি দেবেন। সে দিনের সকল ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব একমাত্র তাঁরই হাতে থাকবে।
আয়াতুল কুরসীতে বর্ণিত আল্লাহ তা‘আলার গুণাবলি :
اَللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ۚ اَلْحَيُّ الْقَيُّوْمُۚ لَا تَاْخُذُهٗ سِنَةٌ وَّلَا نَوْمٌؕ لَهٗ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَ رْضِ ؕ مَنْ ذَا الَّذِيْ يَشْفَعُ عِنْدَهٗۤ اِلَّا بِاِذْنِهٖ ؕ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْۚ وَلَا يُحِيْطُوْنَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهٖۤ اِلَّا بِمَا شَآءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضَ ۚ وَلَا يَئُوْدُهٗ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ
আল্লাহ এমন সত্তা, যিনি ব্যতীত কোন (প্রকৃত) উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব ও সবকিছুর ধারক বাহক। তন্দ্রা এবং নিদ্রা কোনকিছুই তাঁকে স্পর্শ করে না। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছু তাঁরই মালিকানাধীন। তাঁর হুকুম ব্যতীত এমন কে আছে, যে তাঁর নিকট সুপারিশ করতে পারে? তাদের সম্মুখে ও পেছনে যা কিছু আছে সবকিছু তিনি জানেন। তিনি যতটুকু ইচ্ছা করেন ততটুকু ছাড়া তাঁর জ্ঞানসমুদ্র হতে তারা কিছুই আয়ত্ত করতে পারে না। তাঁর সিংহাসন আসমান ও জমিনকে বেষ্টন করে আছে। আর সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ তাঁকে মোটেই ক্লান্ত করে না। তিনি সর্বোচ্চ ও সুমহান। (সূরা বাক্বারা- ২৫৫)
ব্যাখ্যা : সাধারণত কুরসী শব্দটি কর্তৃত্ব, ক্ষমতা ও রাষ্ট্রশক্তি অর্থে রূপক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আয়াতুল কুরসীর সারমর্ম হচ্ছে, সকল সার্বভৌম ক্ষমতা, প্রতিপত্তি ও শাসন কর্তৃত্ব নিরঙ্কুশভাবে একমাত্র সে সত্তার অধীনে, যাঁর জীবন কারো দান নয় বরং তিনি নিজস্ব জীবনী শক্তিতে স্বয়ং জীবিত। যাঁর শক্তির উপর নির্ভর করে এ বিশ্বের সমগ্র ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠেছে। নিজের এ বিশাল রাজ্যের যাবতীয় শাসন ও ক্ষমতার একচ্ছত্র মালিক তিনি একাই। তাঁর গুণাবলিতে দ্বিতীয় কোন সত্তার অংশীদারিত্ব নেই। কাজেই তাঁকে বাদ দিয়ে বা তাঁর সাথে শরীক করে পৃথিবীতে বা আকাশে কোথাও অন্য কাউকে মা‘বুদ, ইলাহ্ ও প্রভু বানানো হলে তা নিরেট মিথ্যা ছাড়া আর কিছু নয়। আল্লাহর আদালতে কোন শ্রেষ্ঠতম নবী এবং কোন নিকটতম ফেরেশতাও পৃথিবী ও আকাশের মালিকের নিকট বিনা অনুমতিতে একটি শব্দও উচ্চারণ করার সাহস রাখেন না। মানুষ, জিন, ফেরেশতা বা অন্য যেকোন সৃষ্টিই হোক না কেন সবার জ্ঞান অসম্পূর্ণ ও সীমিত। বিশ্বের সমগ্র সত্য ও রহস্য কারো আয়ত্তে নেই। বিশ্বজাহানের প্রভু ও পরিচালক মহান আল্লাহই ভালো-মন্দের পুরোপুরি জ্ঞান রাখেন। কাজেই এ ক্ষেত্রে জ্ঞানের মূল উৎস মহান আল্লাহর হেদায়াত ও পথনির্দেশনার উপর জীবন পরিচালনা করা ছাড়া মানুষের জন্য দ্বিতীয় আর কোন পথ নেই।
সূরা ইখলাসে বর্ণিত আল্লাহ তা‘আলার ৪টি গুণাবলি :
قُلْ هُوَ اللهُ اَحَدٌ ‐ اَللهُ الصَّمَدُ ‐ - لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُوْلَدْ ‐ وَلَمْ يَكُنْ لَّهٗ كُفُوًا اَحَدٌ
১. বলো, তিনি আল্লাহ একক।
২. তিনি স্বয়ংসম্পূর্ণ।
৩. তাঁর থেকে কেউ জন্ম নেয়নি এবং তিনিও কারো থেকে জন্মগ্রহণ করেননি।
৪. আর তাঁর সমতুল্য কেউ নেই। (সূরা ইখলাস)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ কোন এক ব্যক্তিকে একটি সেনাদলের অধিনায়ক করে কোন এক যুদ্ধে পাঠান। তিনি সালাতে যখন সঙ্গীদের ইমামতি করতেন, তখন সূরা ইখলাস দিয়ে সালাত শেষ করতেন। (অভিযান শেষে) ফিরে আসলে লোকজন এ বিষয়টি নবী ﷺ এর কাছে বললে তিনি তাদেরকে বললেন, সে কেন এমন করল, তাকেই জিজ্ঞেস করো। অতঃপর তারা তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, এ সূরাতে মহান আল্লাহর গুণাবলি (তাওহীদের) কথা বর্ণিত হয়েছে। তাই আমি তা পাঠ করতে বেশি ভালোবাসি। একথা শুনে নবী ﷺ বললেন, তাকে জানিয়ে দাও যে, আল্লাহও তাকে ভালোবাসেন। (সহীহ বুখারী, হা/৭৩৭৫)
তাওহীদ তথা আল্লাহর একত্ববাদের বিষয়টি এ সূরায় স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সূরা ইখলাসের সারমর্ম হচ্ছে, আল্লাহ অতুলনীয়, তাঁর উপর ঈমান আনতে হলে তাঁর গুণাবলি দেখেই ঈমান আনতে হবে। তাঁর গুণাবলিই তাঁর পরিচয় বহন করে। আল্লাহ হলেন একক সত্তা, তাঁর জাত ও সিফাতের মধ্যে কোন অংশীদারিত্ব নেই। তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন, বরং সকল সৃষ্টিই তাঁর মুখাপেক্ষী। তিনি কারো থেকে জন্মগ্রহণ করেননি। তাঁর সমকক্ষ ও সমতুল্য কিছুই নেই। এ সূরায় বর্ণিত আল্লাহর গুণাবলিসমূহ আল্লাহ এবং অন্যান্য উপাস্যের মধ্যে পার্থক্য কী তা স্পষ্ট করে দেয়। সূরা ইখলাসে বর্ণিত গুণাবলিসমূহ এক আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্য কোন সত্তার উপর প্রযোজ্য হয় না, সুতরাং আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ উপাস্য হওয়ার যোগ্য নয়। যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে নিজেদের মনগড়া উপাস্য বানিয়ে তাদের উপাসনা করছে তারা স্পষ্ট বিভ্রান্তির মধ্যে ডুবে আছে। মানুষের স্রষ্টা ও পালনকর্তা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা। তাই আন্তরিকতা ও ইখলাসের সাথে তাঁর ইবাদাত করাই মানুষের কর্তব্য।
ইবরাহীম (আঃ) এর ভাষায় আল্লাহর গুণাবলি :
فَاِنَّهُمْ عَدُوٌّ لِّۤيْ اِلَّا رَبَّ الْعَالَمِيْنَ -‐ اَ لَّذِيْ خَلَقَنِيْ فَهُوَ يَهْدِيْنِ ‐ - وَالَّذِيْ هُوَ يُطْعِمُنِيْ وَيَسْقِيْنِ ‐ - وَاِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِيْنِ ‐ - وَالَّذِيْ يُمِيْتُنِيْ ثُمَّ يُحْيِيْنِ ‐ - وَالَّذِيْۤ اَطْمَعُ اَنْ يَّغْفِرَ لِيْ خَطِيْٓئَتِيْ يَوْمَ الدِّيْنِ
নিশ্চয় (মূর্তিগুলো) সবই আমার শত্রু, জগতসমূহের প্রতিপালক ব্যতীত। যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনিই আমাকে পথপ্রদর্শন করেছেন। যিনি আমাকে খাদ্য ও পানীয় দান করেছেন। যখন আমি রোগাক্রামত্ম হই, তখন তিনিই আমাকে রোগমুক্ত করেন এবং তিনিই আমার মৃত্যু ঘটাবেন, অতঃপর পুনরায় জীবিত করবেন। আর আমি আশা করি যে, কিয়ামত দিবসে তিনিই আমার অপরাধসমূহ ক্ষমা করবেন। (সূরা শু‘আরা, ৭৭-৮২)
মূসা (আঃ) এর ভাষায় আল্লাহর পরিচয় :
قَالَ فِرْعَوْنُ وَمَا رَبُّ الْعَالَمِيْنَ ‐ - قَالَ رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا ؕ اِنْ كُنْتُمْ مُّوْقِنِيْنَ ‐ - قَالَ لِمَنْ حَوْلَهٗۤ اَلَا تَسْتَمِعُوْنَ ‐ - قَالَ رَبُّكُمْ وَرَبُّ اٰبَآئِكُمُ الْاَ وَّلِيْنَ ‐ - قَالَ اِنَّ رَسُوْلَكُمُ الَّذِيْۤ اُرْسِلَ اِلَيْكُمْ لَمَجْنُوْنٌ -‐ قَالَ رَبُّ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَمَا بَيْنَهُمَاؕ اِنْ كُنْتُمْ تَعْقِلُوْنَ
ফিরাউন বলল, জগতসমূহের প্রতিপালক আবার কে? মূসা বললেন, তিনি আসমান, জমিন এবং উভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুর প্রতিপালক, যদি তোমরা দৃঢ় বিশ্বাসী হও। ফিরাউন তার পরিষদবর্গকে লক্ষ্য করে বলল, তোমরা শুনছ তো! মূসা বললেন, তিনি তোমাদের প্রতিপালক এবং তোমাদের পূর্বপুরুষদেরও প্রতিপালক। ফিরাউন বলল, নিশ্চয় তোমাদের প্রতি প্রেরিত রাসূল (একজন) পাগল। মূসা বললেন, তিনি পূর্ব ও পশ্চিমের এবং তাদের মধ্যবর্তী সবকিছুর প্রতিপালক; যদি তোমরা বুঝতে পারতে। (সূরা শু‘আরা, ২৩-২৮)
আল্লাহর সাদৃশ্য কিছুই নেই :
لَيْسَ كَمِثْلِهٖ شَيْءٌۚ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ
কোনকিছুই তাঁর সাদৃশ্য নয়, তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। (সূরা শূরা- ১১)
ব্যাখ্যা : ‘আল্লাহর জন্য সাদৃশ্য তৈরি করো না’ অর্থাৎ আল্লাহকে দুনিয়ার রাজা-বাদশাহদের সমপর্যায়ে রেখে বিবেচনা করো না। দুনিয়ার রাজা-বাদশাহদের অনুচর, সভাসদ ও বিশেষ ব্যক্তিবর্গের মাধ্যম ছাড়া তাদের কাছে কেউ নিজের আবেদন নিবেদন পৌঁছাতে পারে না। তেমনি আল্লাহর ব্যাপারেও তোমরা এ ধারণা করো না যে, অন্যান্য মাধ্যম ছাড়া তাঁর কাছে কারো কোন কাজ পৌঁছতে পারে না।
তাঁর মতো গুণাবলিসম্পন্ন কেউ নেই :
رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا فَاعْبُدْهُ وَاصْطَبِرْ لِعِبَادَتِهٖؕ هَلْ تَعْلَمُ لَهٗ سَمِيًّا
তিনি আকাশসমূহ ও পৃথিবী এবং এদের মধ্যবর্তী যা কিছু আছে সবকিছুর প্রতিপালক। সুতরাং তোমরা তাঁরই ইবাদাত করো এবং তাঁর ইবাদাতে ধৈর্যশীল হও। তুমি কি তাঁর মতো (গুণাবলিসম্পন্ন অপর) কাউকে জান? (সূরা মারইয়াম- ৬৫)
আল্লাহর গুণাবলি লিখে শেষ করা যায় না :
وَلَوْ اَنَّمَا فِى الْاَ رْضِ مِنْ شَجَرَةٍ اَقْلَامٌ وَّالْبَحْرُ يَمُدُّهٗ مِنْ ۢبَعْدِهٖ سَبْعَةُ اَبْحُرٍ مَّا نَفِدَتْ كَلِمَاتُ اللهِؕ اِنَّ اللهَ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
সমগ্র পৃথিবীতে যত গাছ আছে তা সবই যদি কলম হয় এবং যত সমুদ্র রয়েছে তার সাথে যদি আরো সাতটি সমুদ্র একত্র হয়ে কালি হয়, তবুও আল্লাহর বাণী (লিখে) শেষ হবে না। নিশ্চয় আল্লাহ প্রতাপশালী ও মহাবিজ্ঞ। (সূরা লুক্বমান- ২৭)
قُلْ لَّوْ كَانَ الْبَحْرُ مِدَادًا لِّكَلِمَاتِ رَبِّيْ لَنَفِدَ الْبَحْرُ قَبْلَ اَنْ تَنْفَدَ كَلِمَاتُ رَبِّيْ وَلَوْ جِئْنَا بِمِثْلِهٖ مَدَدًا
বলো, আমার প্রতিপালকের কথা লিপিবদ্ধ করার জন্য (গোটা) সমুদ্র যদি কালিতে পরিণত হয়, তবুও আমার প্রতিপালকের কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই সমুদ্র নিঃশেষ হয়ে যাবে- যদিও আমরা এর (সাহায্যার্থে) অনুরূপ আরো সমুদ্র নিয়ে আসি। (সূরা কাহফ- ১০৯)
ব্যাখ্যা : ‘আল্লাহর কথা’ অর্থ তাঁর সৃষ্টিকর্ম এবং তাঁর শক্তি ও জ্ঞানের নিদর্শন। এ পৃথিবীর গাছগুলো কেটে কলম তৈরি করলে এবং পৃথিবীর সাগরের পানির সাথে আরো সাতটি সাগরের পানিকে কালিতে পরিণত করলেও তা দিয়ে আল্লাহর শক্তি, জ্ঞান ও সৃষ্টির কথা লিখে শেষ করা সম্ভব হবে না। এ বর্ণনা দ্বারা আসলে এ ধরনের একটি ধারণা দেয়াই উদ্দেশ্য যে, যে আল্লাহ এত বড় বিশ্বজাহানকে অস্তিত্ব দান করেছেন এবং আদি থেকে অনন্তকাল পর্যন্ত এর যাবতীয় ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করে চলেছেন, তাঁর সার্বভৌম কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে মানুষ যেসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সত্তাকে উপাস্যে পরিণত করেছে তাদের কোন গুরুত্ব নেই।
আল্লাহই প্রথম ও শেষ, প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য :
هُوَ الْاَ وَّلُ وَالْاٰخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُۚ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ
তিনিই শুরু, তিনিই শেষ, তিনিই প্রকাশ্য, তিনিই অপ্রকাশ্য এবং তিনি সবকিছু সম্পর্কে অধিক অবহিত। (সূরা হাদীদ- ৩)
আল্লাহ কখনো ধ্বংস হবেন না :
كُلُّ شَيْءٍ هَالِكٌ اِلَّا وَجْهَهٗؕ لَهُ الْحُكْمُ وَاِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ
আল্লাহর নিজ সত্তা ব্যতীত সবকিছুই ধ্বংসশীল। বিধান তাঁরই এবং তাঁরই নিকট তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা কবাসাস- ৮৮)
কেউ তাঁকে দেখে না কিন্তু তিনি সবাইকে দেখেন :
لَا تُدْرِكُهُ الْاَ بْصَارُ وَهُوَ يُدْرِكُ الْاَ بْصَارَ ۚ وَهُوَ اللَّطِيْفُ الْخَبِيْرُ
কোন চোখই তাঁকে আয়ত্ত করতে পারে না, কিন্তু তিনিই সকল দৃষ্টিকে আয়ত্ত করেন। আর তিনিই সূক্ষ্মদর্শী এবং সব খবর রাখেন। (সূরা আন‘আম- ১০৩)
মূসা (আঃ) আল্লাহকে দেখতে চেয়েছিলেন কিন্তু পারেননি :
وَلَمَّا جَآءَ مُوْسٰى لِمِيْقَاتِنَا وَكَلَّمَهٗ رَبُّهٗ قَالَ رَبِّ اَرِنِۤيْ اَنْظُرْ اِلَيْكَؕ قَالَ لَنْ تَرَانِيْ وَلٰكِنِ انْظُرْ اِلَى الْجَبَلِ فَاِنِ اسْتَقَرَّ مَكَانَهٗ فَسَوْفَ تَرَانِيْۚ - فَلَمَّا تَجَلّٰى رَبُّهٗ لِلْجَبَلِ جَعَلَهٗ دَكًّا وَّخَرَّ مُوْسٰى صَعِقًاۚ فَلَمَّاۤ اَفَاقَ قَالَ سُبْحَانَكَ تُبْتُ اِلَيْكَ وَاَنَاْ اَوَّلُ الْمُؤْمِنِيْنَ
মূসা বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে দেখা দাও, আমি তোমাকে দেখতে চাই। তিনি বললেন, তুমি আমাকে কখনই দেখতে পারবে না। বরং তুমি পাহাড়ের প্রতি লক্ষ্য করো, সেটা যদি স্বস্থানে স্থির থাকে তবে তুমি আমাকে দেখতে পারবে। যখন তাঁর প্রতিপালক পাহাড়ের উপর জ্যোতি প্রকাশ করলেন তখন তা পাহাড়কে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিল এবং মূসা অজ্ঞান হয়ে পড়ল। তারপর যখন সে জ্ঞান ফিরে পেল তখন বললেন, আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, আমি অনুতপ্ত হয়ে তোমার কাছেই প্রত্যাবর্তন করলাম এবং মুমিনদের মধ্যে আমিই প্রথম। (সূরা আ‘রাফ- ১৪৩)
আল্লাহ ওহীর মাধ্যম ছাড়া মানুষের সাথে কথা বলেন না :
وَمَا كَانَ لِبَشَرٍ اَنْ يُّكَلِّمَهُ اللهُ اِلَّا وَحْيًا اَوْ مِنْ وَّرَآءِ حِجَابٍ اَوْ يُرْسِلَ رَسُوْلًا فَيُوْحِيَ بِاِذْنِه مَا يَشَآءُؕ اِنَّهٗ عَلِيٌّ حَكِيْمٌ
মানুষের জন্য অসম্ভব যে, আল্লাহ তার সাথে কথা বলবেন ওহীর মাধ্যম ছাড়া, অথবা পর্দার অন্তরাল ব্যতীত অথবা এমন দূত প্রেরণ করা ছাড়া, যে তাঁর অনুমতিক্রমে তিনি যা চান তা ব্যক্ত করে। নিশ্চয় তিনি সমুন্নত ও প্রজ্ঞাবান। (সূরা শূরা- ৫১)
আল্লাহ আহার করান, তাঁকে কেউ আহার করায় না :
قُلْ اَغَيْرَ اللهِ اَتَّخِذُ وَلِيًّا فَاطِرِ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِ وَهُوَ يُطْعِمُ وَلَا يُطْعَمُ
বলো, আমি কি আসমান ও জমিনের স্রষ্টা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করব? অথচ তিনিই (আমাদেরকে) আহার করান; কিন্তু তাঁকে কেউ আহার করায় না। (সূরা আন‘আম- ১৪)
- مَاۤ اُرِيْدُ مِنْهُمْ مِّنْ رِّزْقٍ وَّمَاۤ اُرِيْدُ اَنْ يُّطْعِمُوْنِ ‐ - اِنَّ اللهَ هُوَ الرَّزَّاقُ ذُو الْقُوَّةِ الْمَتِيْنُ
আমি তাদের নিকট হতে কোন রিযিক চাই না এবং এও চাই না যে, তারা আমার আহার যোগাবে। নিশ্চয় আল্লাহ (ঐ সত্তা) যিনি রিযিকদাতা এবং সুদৃঢ় শক্তির অধিকারী। (সূরা যারিয়াত- ৫৭, ৫৮)
আল্লাহ কিছুই ভুলেন না :
قَالَ عِلْمُهَا عِنْدَ رَبِّيْ فِيْ كِتَابٍۚ لَا يَضِلُّ رَبِّيْ وَلَا يَنْسٰى
মূসা বললেন, এটার জ্ঞান আমার প্রতিপালকের নিকট এক কিতাবে রয়েছে। আমার প্রতিপালক ভুল করেন না এবং কোনকিছু ভুলেও যান না। (সূরা ত্বা-হা- ৫২)
ব্যাখ্যা : সবকিছুর রেকর্ড আল্লাহর কাছে সংরক্ষিত আছে। আল্লাহই জানেন, পৃথিবীতে কার ভূমিকা কী ছিল এবং কার পরিণাম কী হবে। আমাদেরকেও চিন্তা করা উচিত যে, আমাদের ভূমিকা কী এবং আমরা কোন ধরনের পরিণামের সম্মুখীন হব।
আল্লাহর মর্যাদা সর্বশ্রেষ্ঠ :
وَلَهُ الْمَثَلُ الْاَ عْلٰى فِى السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِؕ وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
আসমান ও জমিনে সর্বোচ্চ মর্যাদা তাঁরই। আর তিনিই প্রতাপশালী ও মহাবিজ্ঞ। (সূরা রূম- ২৭)
সকল বড়ত্ব আল্লাহর :
وَلَهُ الْكِبْرِيَآءُ فِى السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِ وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
আসমান ও জমিনে তাঁরই বড়ত্ব বিরাজমান রয়েছে এবং তিনি মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাবান। (সূরা জাসিয়া- ৩৭)
আল্লাহ আরশের মালিক :
لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَۚ رَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيْمِ
তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই; আর তিনিই সম্মানিত আরশের (একক) অধিপতি। (সূরা মু’মিনূন- ১১৬)
اَللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ
আল্লাহ তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই; আর তিনি মহান আরশের অধিপতি। (সূরা নামল- ২৬)
فَاِنْ تَوَلَّوْا فَقُلْ حَسْبِيَ اللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَؕ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ
এরপরও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে তুমি বলে দাও, আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ছাড়া কোন মা‘বুদ নেই। আর আমি তাঁরই উপর ভরসা করছি এবং তিনিই হচ্ছেন মহান আরশের অধিপতি। (সূরা তাওবা- ১২৯)
আল্লাহ আরশের উপর সমাসীন :
اَلرَّحْمٰنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوٰى
দয়াময় (আল্লাহ) আরশের উপর সমাসীন। (সূরা ত্বা-হা- ৫)
هُوَ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضَ فِيْ سِتَّةِ اَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوٰى عَلَى الْعَرْشِ
তিনি ছয় দিনে আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর আরশে সমাসীন হয়েছেন। (সূরা হাদীদ- ৪)
আল্লাহ আসমান ও জমিনের নূর :
اَللهُ نُوْرُ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِ
আল্লাহ আসমান ও জমিনের আলো। (সূরা নূর- ৩৫)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ আসমান ও জমিনের নূর- এ কথাটির অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ তা‘আলা আসমান এবং জমিনবাসীর হেদায়াত দানকারী ও পরিচালক। কেননা আল্লাহ তা‘আলা শুধু স্রষ্টাই নন, তিনি আসমান এবং জমিনে যা কিছু সৃষ্টি করেছেন সবকিছুকে তার প্রয়োজন অনুপাতে পথনির্দেশনা দিয়েছেন এবং সবকিছু পরিচালনা করছেন।
আল্লাহর নূরের উদাহরণ :
مَثَلُ نُوْرِهٖ كَمِشْكَاةٍ فِيْهَا مِصْبَاحٌ ؕ اَلْمِصْبَاحُ فِيْ زُجَاجَةٍؕ الزُّجَاجَةُ كَاَنَّهَا كَوْكَبٌ دُرِّيٌّ يُّوْقَدُ مِنْ شَجَرَةٍ مُّبَارَكَةٍ زَيْتُوْنَةٍ لَّا شَرْقِيَّةٍ وَّلَا غَرْبِيَّةٍ يَّكَادُ زَيْتُهَا يُضِيْٓءُ وَلَوْ لَمْ تَمْسَسْهُ نَارٌؕ نُوْرٌ عَلٰى نُوْرٍ ؕ يَهْدِى اللهُ لِنُوْرِهٖ مَنْ يَّشَآءُؕ وَيَضْرِبُ اللهُ الْاَ مْثَالَ لِلنَّاسِؕ وَاللهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ
তাঁর জ্যোতির উপমা যেন একটি চেরাগের মতো, যার মধ্যে রয়েছে এক প্রদীপ। আর প্রদীপটি রাখা হয়েছে একটি কাঁচের আবরণের মধ্যে, কাঁচের আবরণটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো- এটা প্রজ্বলিত করা হয় পূত-পবিত্র যায়তূন গাছের তেল দ্বারা, যা পূর্বেরও নয় এবং পশ্চিমেরও নয়। অগ্নি সেটাকে স্পর্শ না করলেও যেন তার তেল উজ্জ্বল আলো দিচ্ছে; জ্যোতির উপর জ্যোতি! আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাঁর জ্যোতির দিকে পথনির্দেশ করেন, (প্রয়োজনে) আল্লাহ মানুষের জন্য উপমা দিয়ে থাকেন; আর আল্লাহ সকল বিষয়ে সর্বজ্ঞ। (সূরা নূর- ৩৫)
আল্লাহর নূর ছাড়া অন্য কোন নূর নেই :
وَمَنْ لَّمْ يَجْعَلِ اللهُ لَهٗ نُوْرًا فَمَا لَهٗ مِنْ نُّوْرٍ
আল্লাহ যাকে জ্যোতি দান করেন না তার জন্য কোন জ্যোতিই নেই। (সূরা নূর- ৪০)
আল্লাহর নূর হাশরের মাঠকে আলোকিত করবে :
وَاَشْرَقَتِ الْاَ رْضُ بِنُوْرِ رَبِّهَا وَوُضِعَ الْكِتَابُ وَجِيْٓءَ بِالنَّبِيِّيْنَ وَالشُّهَدَآءِ وَقُضِيَ بَيْنَهُمْ بِالْحَقِّ وَهُمْ لَا يُظْلَمُوْنَ
সেদিন সমস্ত পৃথিবী তার প্রতিপালকের নূরে আলোকিত হবে, আমলনামা পেশ করা হবে এবং নবী ও সাক্ষীগণকে হাজির করা হবে। অতঃপর সকলের মধ্যে ন্যায়বিচার করা হবে; আর তাদের প্রতি কোন যুলুম করা হবে না। (সূরা যুমার- ৬৯)
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ‐ اَلرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ مَالِكِ يَوْمِ الدِّيْنِ ‐ اِيَّاكَ نَعْبُدُ وَاِيَّاكَ نَسْتَعِيْنُ ‐ اِهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيْمَ ‐ صِرَاطَ الَّذِيْنَ اَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ ‐ غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّآلِّيْنَ
আল্লাহর নামে শুরু করছি, যিনি পরম করুণাময় ও অতি দয়ালু। সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহর জন্য, যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক। যিনি পরম করুণাময় ও অতিশয় দয়ালু। যিনি প্রতিফল দিবসের মালিক। আমরা কেবল আপনারই ইবাদাত করি এবং আপনার নিকটই সাহায্য প্রার্থনা করি। আপনি আমাদেরকে সরলসঠিক পথপ্রদর্শন করুন। তাদের পথ, যাদের প্রতি আপনি অনুগ্রহ করেছেন; তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি আপনার গযব অবতীর্ণ হয়েছে এবং তাদের পথও নয়, যারা পথভ্রষ্ট।
ব্যাখ্যা : সূরা ফাতেহা হলো কুরআন মাজীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সূরা। আবু সাঈদ ইবনে মু‘আলা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি যখন সালাত আদায় করছিলাম, তখন নবী ﷺ আমাকে ডাকলেন, কিন্তু আমি তাঁর ডাকে সাড়া দিলাম না। পরে আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি সালাত আদায় করছিলাম। এরপর রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আল্লাহ তা‘আলা কি বলেননি? ‘‘হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ডাকে সাড়া দাও, যখন তারা তোমাদেরকে আহবান করেন।’’ (সূরা আনফাল- ২৪)
তারপর নবী ﷺ বললেন, আমি কি তোমাকে কুরআনের সর্বোত্তম সূরা শিক্ষা দেব না? অতঃপর তিনি বললেন, তা হচ্ছে সূরা ফাতেহা- যা বার বার পঠিত সাতটি আয়াতের সমন্বয়ে গঠিত। এ সূরা এবং মহান কিতাব আল-কুরআন আমাকে প্রদান করা হয়েছে। (সহীহ বুখারী, হা/৫০০৬)
সূরা ফাতেহার প্রথম তিনটি আয়াতে আল্লাহ তা‘আলার গুণাবলি বর্ণনা করা হয়েছে। তার পরের আয়াতে আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণা দেয়া হয়েছে এবং শেষ তিনটি আয়াতে মুমিন বান্দার জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিষয় অর্থাৎ সিরাতে মুস্তাকীম বা সঠিক পথের সন্ধান পাওয়ার দু‘আ শিক্ষা দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলার প্রথম পরিচয় হচ্ছে, তিনি সারা বিশ্বের রব। রব বলতে ঐ সত্তাকে বুঝায়, যিনি কোন জিনিসকে তার মঙ্গলের দিকে দৃষ্টি রেখে পর্যায়ক্রমে উন্নতির সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে দেন। গোটা বিশ্বে যা কিছু আছে সবকিছুর রব হলেন তিনি। তিনিই সবকিছুর মালিক এবং সবকিছুর প্রতিপালক ও পরিচালনাকারী। তাঁর মালিকানা ও পরিচালনায় অন্য কারো হাত নেই। এজন্য সকল প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য একমাত্র তিনিই। আল্লাহ হলেন ‘রহমান’ ও ‘রহীম’ তথা বড়ই মেহেরবান ও অশেষ দয়াময়। আমরা আল্লাহর অসংখ্য নিয়ামতের মধ্যে ডুবে আছি। মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘তোমরা আমার নিয়ামত গণনা করতে শুরু করলে তা শেষ করতে পারবে না।’’ (সূরা নাহল- ১৮)
যে সকল নিয়ামত একান্ত প্রয়োজনীয়, তা তিনি এত ব্যাপক করে দিয়েছেন যে, এর কোন অভাব হয় না। যেমন- সূর্যের আলো, পানি, বাতাস ও আগুন ইত্যাদি। তিনি কারো কাছ থেকে এগুলোর কোন বিনিময় গ্রহণ করেন না; কেবল নিজ দয়া ও অনুগ্রহে এসব দান করেছেন। এ দুনিয়াতে তাঁর রহমত এত ব্যাপক যে, তিনি কাফির, মুশরিক ও জীবজন্তু সবাইকে রিযিক দেন এবং তাদের প্রয়োজনীয় সবকিছু সরবরাহ করেন।
আল্লাহ তা‘আলা হলেন বিচার দিনের মালিক। এ দুনিয়াতে মানুষ যা কিছু করে তার সঠিক বিচার ও পরিপূর্ণ প্রতিদান পাওয়ার জন্য আমাদের সামনে একটি দিবসের আগমন ঘটবে, যার নাম হলো কিয়ামত দিবস। আর সেদিনের বিচারক হবেন স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা। তিনি কারো প্রতি যুলুম করবেন না। দুনিয়াতে যারা ঈমান আনবে এবং সৎকর্ম করবে, তাদেরকে তিনি নিয়ামতপূর্ণ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আর যারা পাপকাজ করে অপরাধী হবে, তাদেরকে জাহান্নামের আগুনে ফেলে শাস্তি দেবেন। সে দিনের সকল ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব একমাত্র তাঁরই হাতে থাকবে।
আয়াতুল কুরসীতে বর্ণিত আল্লাহ তা‘আলার গুণাবলি :
اَللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ۚ اَلْحَيُّ الْقَيُّوْمُۚ لَا تَاْخُذُهٗ سِنَةٌ وَّلَا نَوْمٌؕ لَهٗ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَ رْضِ ؕ مَنْ ذَا الَّذِيْ يَشْفَعُ عِنْدَهٗۤ اِلَّا بِاِذْنِهٖ ؕ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْۚ وَلَا يُحِيْطُوْنَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهٖۤ اِلَّا بِمَا شَآءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضَ ۚ وَلَا يَئُوْدُهٗ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ
আল্লাহ এমন সত্তা, যিনি ব্যতীত কোন (প্রকৃত) উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব ও সবকিছুর ধারক বাহক। তন্দ্রা এবং নিদ্রা কোনকিছুই তাঁকে স্পর্শ করে না। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছু তাঁরই মালিকানাধীন। তাঁর হুকুম ব্যতীত এমন কে আছে, যে তাঁর নিকট সুপারিশ করতে পারে? তাদের সম্মুখে ও পেছনে যা কিছু আছে সবকিছু তিনি জানেন। তিনি যতটুকু ইচ্ছা করেন ততটুকু ছাড়া তাঁর জ্ঞানসমুদ্র হতে তারা কিছুই আয়ত্ত করতে পারে না। তাঁর সিংহাসন আসমান ও জমিনকে বেষ্টন করে আছে। আর সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ তাঁকে মোটেই ক্লান্ত করে না। তিনি সর্বোচ্চ ও সুমহান। (সূরা বাক্বারা- ২৫৫)
ব্যাখ্যা : সাধারণত কুরসী শব্দটি কর্তৃত্ব, ক্ষমতা ও রাষ্ট্রশক্তি অর্থে রূপক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আয়াতুল কুরসীর সারমর্ম হচ্ছে, সকল সার্বভৌম ক্ষমতা, প্রতিপত্তি ও শাসন কর্তৃত্ব নিরঙ্কুশভাবে একমাত্র সে সত্তার অধীনে, যাঁর জীবন কারো দান নয় বরং তিনি নিজস্ব জীবনী শক্তিতে স্বয়ং জীবিত। যাঁর শক্তির উপর নির্ভর করে এ বিশ্বের সমগ্র ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠেছে। নিজের এ বিশাল রাজ্যের যাবতীয় শাসন ও ক্ষমতার একচ্ছত্র মালিক তিনি একাই। তাঁর গুণাবলিতে দ্বিতীয় কোন সত্তার অংশীদারিত্ব নেই। কাজেই তাঁকে বাদ দিয়ে বা তাঁর সাথে শরীক করে পৃথিবীতে বা আকাশে কোথাও অন্য কাউকে মা‘বুদ, ইলাহ্ ও প্রভু বানানো হলে তা নিরেট মিথ্যা ছাড়া আর কিছু নয়। আল্লাহর আদালতে কোন শ্রেষ্ঠতম নবী এবং কোন নিকটতম ফেরেশতাও পৃথিবী ও আকাশের মালিকের নিকট বিনা অনুমতিতে একটি শব্দও উচ্চারণ করার সাহস রাখেন না। মানুষ, জিন, ফেরেশতা বা অন্য যেকোন সৃষ্টিই হোক না কেন সবার জ্ঞান অসম্পূর্ণ ও সীমিত। বিশ্বের সমগ্র সত্য ও রহস্য কারো আয়ত্তে নেই। বিশ্বজাহানের প্রভু ও পরিচালক মহান আল্লাহই ভালো-মন্দের পুরোপুরি জ্ঞান রাখেন। কাজেই এ ক্ষেত্রে জ্ঞানের মূল উৎস মহান আল্লাহর হেদায়াত ও পথনির্দেশনার উপর জীবন পরিচালনা করা ছাড়া মানুষের জন্য দ্বিতীয় আর কোন পথ নেই।
সূরা ইখলাসে বর্ণিত আল্লাহ তা‘আলার ৪টি গুণাবলি :
قُلْ هُوَ اللهُ اَحَدٌ ‐ اَللهُ الصَّمَدُ ‐ - لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُوْلَدْ ‐ وَلَمْ يَكُنْ لَّهٗ كُفُوًا اَحَدٌ
১. বলো, তিনি আল্লাহ একক।
২. তিনি স্বয়ংসম্পূর্ণ।
৩. তাঁর থেকে কেউ জন্ম নেয়নি এবং তিনিও কারো থেকে জন্মগ্রহণ করেননি।
৪. আর তাঁর সমতুল্য কেউ নেই। (সূরা ইখলাস)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ কোন এক ব্যক্তিকে একটি সেনাদলের অধিনায়ক করে কোন এক যুদ্ধে পাঠান। তিনি সালাতে যখন সঙ্গীদের ইমামতি করতেন, তখন সূরা ইখলাস দিয়ে সালাত শেষ করতেন। (অভিযান শেষে) ফিরে আসলে লোকজন এ বিষয়টি নবী ﷺ এর কাছে বললে তিনি তাদেরকে বললেন, সে কেন এমন করল, তাকেই জিজ্ঞেস করো। অতঃপর তারা তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, এ সূরাতে মহান আল্লাহর গুণাবলি (তাওহীদের) কথা বর্ণিত হয়েছে। তাই আমি তা পাঠ করতে বেশি ভালোবাসি। একথা শুনে নবী ﷺ বললেন, তাকে জানিয়ে দাও যে, আল্লাহও তাকে ভালোবাসেন। (সহীহ বুখারী, হা/৭৩৭৫)
তাওহীদ তথা আল্লাহর একত্ববাদের বিষয়টি এ সূরায় স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সূরা ইখলাসের সারমর্ম হচ্ছে, আল্লাহ অতুলনীয়, তাঁর উপর ঈমান আনতে হলে তাঁর গুণাবলি দেখেই ঈমান আনতে হবে। তাঁর গুণাবলিই তাঁর পরিচয় বহন করে। আল্লাহ হলেন একক সত্তা, তাঁর জাত ও সিফাতের মধ্যে কোন অংশীদারিত্ব নেই। তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন, বরং সকল সৃষ্টিই তাঁর মুখাপেক্ষী। তিনি কারো থেকে জন্মগ্রহণ করেননি। তাঁর সমকক্ষ ও সমতুল্য কিছুই নেই। এ সূরায় বর্ণিত আল্লাহর গুণাবলিসমূহ আল্লাহ এবং অন্যান্য উপাস্যের মধ্যে পার্থক্য কী তা স্পষ্ট করে দেয়। সূরা ইখলাসে বর্ণিত গুণাবলিসমূহ এক আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্য কোন সত্তার উপর প্রযোজ্য হয় না, সুতরাং আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ উপাস্য হওয়ার যোগ্য নয়। যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে নিজেদের মনগড়া উপাস্য বানিয়ে তাদের উপাসনা করছে তারা স্পষ্ট বিভ্রান্তির মধ্যে ডুবে আছে। মানুষের স্রষ্টা ও পালনকর্তা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা। তাই আন্তরিকতা ও ইখলাসের সাথে তাঁর ইবাদাত করাই মানুষের কর্তব্য।
ইবরাহীম (আঃ) এর ভাষায় আল্লাহর গুণাবলি :
فَاِنَّهُمْ عَدُوٌّ لِّۤيْ اِلَّا رَبَّ الْعَالَمِيْنَ -‐ اَ لَّذِيْ خَلَقَنِيْ فَهُوَ يَهْدِيْنِ ‐ - وَالَّذِيْ هُوَ يُطْعِمُنِيْ وَيَسْقِيْنِ ‐ - وَاِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِيْنِ ‐ - وَالَّذِيْ يُمِيْتُنِيْ ثُمَّ يُحْيِيْنِ ‐ - وَالَّذِيْۤ اَطْمَعُ اَنْ يَّغْفِرَ لِيْ خَطِيْٓئَتِيْ يَوْمَ الدِّيْنِ
নিশ্চয় (মূর্তিগুলো) সবই আমার শত্রু, জগতসমূহের প্রতিপালক ব্যতীত। যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনিই আমাকে পথপ্রদর্শন করেছেন। যিনি আমাকে খাদ্য ও পানীয় দান করেছেন। যখন আমি রোগাক্রামত্ম হই, তখন তিনিই আমাকে রোগমুক্ত করেন এবং তিনিই আমার মৃত্যু ঘটাবেন, অতঃপর পুনরায় জীবিত করবেন। আর আমি আশা করি যে, কিয়ামত দিবসে তিনিই আমার অপরাধসমূহ ক্ষমা করবেন। (সূরা শু‘আরা, ৭৭-৮২)
মূসা (আঃ) এর ভাষায় আল্লাহর পরিচয় :
قَالَ فِرْعَوْنُ وَمَا رَبُّ الْعَالَمِيْنَ ‐ - قَالَ رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا ؕ اِنْ كُنْتُمْ مُّوْقِنِيْنَ ‐ - قَالَ لِمَنْ حَوْلَهٗۤ اَلَا تَسْتَمِعُوْنَ ‐ - قَالَ رَبُّكُمْ وَرَبُّ اٰبَآئِكُمُ الْاَ وَّلِيْنَ ‐ - قَالَ اِنَّ رَسُوْلَكُمُ الَّذِيْۤ اُرْسِلَ اِلَيْكُمْ لَمَجْنُوْنٌ -‐ قَالَ رَبُّ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَمَا بَيْنَهُمَاؕ اِنْ كُنْتُمْ تَعْقِلُوْنَ
ফিরাউন বলল, জগতসমূহের প্রতিপালক আবার কে? মূসা বললেন, তিনি আসমান, জমিন এবং উভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুর প্রতিপালক, যদি তোমরা দৃঢ় বিশ্বাসী হও। ফিরাউন তার পরিষদবর্গকে লক্ষ্য করে বলল, তোমরা শুনছ তো! মূসা বললেন, তিনি তোমাদের প্রতিপালক এবং তোমাদের পূর্বপুরুষদেরও প্রতিপালক। ফিরাউন বলল, নিশ্চয় তোমাদের প্রতি প্রেরিত রাসূল (একজন) পাগল। মূসা বললেন, তিনি পূর্ব ও পশ্চিমের এবং তাদের মধ্যবর্তী সবকিছুর প্রতিপালক; যদি তোমরা বুঝতে পারতে। (সূরা শু‘আরা, ২৩-২৮)
আল্লাহর সাদৃশ্য কিছুই নেই :
لَيْسَ كَمِثْلِهٖ شَيْءٌۚ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ
কোনকিছুই তাঁর সাদৃশ্য নয়, তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। (সূরা শূরা- ১১)
ব্যাখ্যা : ‘আল্লাহর জন্য সাদৃশ্য তৈরি করো না’ অর্থাৎ আল্লাহকে দুনিয়ার রাজা-বাদশাহদের সমপর্যায়ে রেখে বিবেচনা করো না। দুনিয়ার রাজা-বাদশাহদের অনুচর, সভাসদ ও বিশেষ ব্যক্তিবর্গের মাধ্যম ছাড়া তাদের কাছে কেউ নিজের আবেদন নিবেদন পৌঁছাতে পারে না। তেমনি আল্লাহর ব্যাপারেও তোমরা এ ধারণা করো না যে, অন্যান্য মাধ্যম ছাড়া তাঁর কাছে কারো কোন কাজ পৌঁছতে পারে না।
তাঁর মতো গুণাবলিসম্পন্ন কেউ নেই :
رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا فَاعْبُدْهُ وَاصْطَبِرْ لِعِبَادَتِهٖؕ هَلْ تَعْلَمُ لَهٗ سَمِيًّا
তিনি আকাশসমূহ ও পৃথিবী এবং এদের মধ্যবর্তী যা কিছু আছে সবকিছুর প্রতিপালক। সুতরাং তোমরা তাঁরই ইবাদাত করো এবং তাঁর ইবাদাতে ধৈর্যশীল হও। তুমি কি তাঁর মতো (গুণাবলিসম্পন্ন অপর) কাউকে জান? (সূরা মারইয়াম- ৬৫)
আল্লাহর গুণাবলি লিখে শেষ করা যায় না :
وَلَوْ اَنَّمَا فِى الْاَ رْضِ مِنْ شَجَرَةٍ اَقْلَامٌ وَّالْبَحْرُ يَمُدُّهٗ مِنْ ۢبَعْدِهٖ سَبْعَةُ اَبْحُرٍ مَّا نَفِدَتْ كَلِمَاتُ اللهِؕ اِنَّ اللهَ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
সমগ্র পৃথিবীতে যত গাছ আছে তা সবই যদি কলম হয় এবং যত সমুদ্র রয়েছে তার সাথে যদি আরো সাতটি সমুদ্র একত্র হয়ে কালি হয়, তবুও আল্লাহর বাণী (লিখে) শেষ হবে না। নিশ্চয় আল্লাহ প্রতাপশালী ও মহাবিজ্ঞ। (সূরা লুক্বমান- ২৭)
قُلْ لَّوْ كَانَ الْبَحْرُ مِدَادًا لِّكَلِمَاتِ رَبِّيْ لَنَفِدَ الْبَحْرُ قَبْلَ اَنْ تَنْفَدَ كَلِمَاتُ رَبِّيْ وَلَوْ جِئْنَا بِمِثْلِهٖ مَدَدًا
বলো, আমার প্রতিপালকের কথা লিপিবদ্ধ করার জন্য (গোটা) সমুদ্র যদি কালিতে পরিণত হয়, তবুও আমার প্রতিপালকের কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই সমুদ্র নিঃশেষ হয়ে যাবে- যদিও আমরা এর (সাহায্যার্থে) অনুরূপ আরো সমুদ্র নিয়ে আসি। (সূরা কাহফ- ১০৯)
ব্যাখ্যা : ‘আল্লাহর কথা’ অর্থ তাঁর সৃষ্টিকর্ম এবং তাঁর শক্তি ও জ্ঞানের নিদর্শন। এ পৃথিবীর গাছগুলো কেটে কলম তৈরি করলে এবং পৃথিবীর সাগরের পানির সাথে আরো সাতটি সাগরের পানিকে কালিতে পরিণত করলেও তা দিয়ে আল্লাহর শক্তি, জ্ঞান ও সৃষ্টির কথা লিখে শেষ করা সম্ভব হবে না। এ বর্ণনা দ্বারা আসলে এ ধরনের একটি ধারণা দেয়াই উদ্দেশ্য যে, যে আল্লাহ এত বড় বিশ্বজাহানকে অস্তিত্ব দান করেছেন এবং আদি থেকে অনন্তকাল পর্যন্ত এর যাবতীয় ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করে চলেছেন, তাঁর সার্বভৌম কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে মানুষ যেসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সত্তাকে উপাস্যে পরিণত করেছে তাদের কোন গুরুত্ব নেই।
আল্লাহই প্রথম ও শেষ, প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য :
هُوَ الْاَ وَّلُ وَالْاٰخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُۚ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ
তিনিই শুরু, তিনিই শেষ, তিনিই প্রকাশ্য, তিনিই অপ্রকাশ্য এবং তিনি সবকিছু সম্পর্কে অধিক অবহিত। (সূরা হাদীদ- ৩)
আল্লাহ কখনো ধ্বংস হবেন না :
كُلُّ شَيْءٍ هَالِكٌ اِلَّا وَجْهَهٗؕ لَهُ الْحُكْمُ وَاِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ
আল্লাহর নিজ সত্তা ব্যতীত সবকিছুই ধ্বংসশীল। বিধান তাঁরই এবং তাঁরই নিকট তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা কবাসাস- ৮৮)
কেউ তাঁকে দেখে না কিন্তু তিনি সবাইকে দেখেন :
لَا تُدْرِكُهُ الْاَ بْصَارُ وَهُوَ يُدْرِكُ الْاَ بْصَارَ ۚ وَهُوَ اللَّطِيْفُ الْخَبِيْرُ
কোন চোখই তাঁকে আয়ত্ত করতে পারে না, কিন্তু তিনিই সকল দৃষ্টিকে আয়ত্ত করেন। আর তিনিই সূক্ষ্মদর্শী এবং সব খবর রাখেন। (সূরা আন‘আম- ১০৩)
মূসা (আঃ) আল্লাহকে দেখতে চেয়েছিলেন কিন্তু পারেননি :
وَلَمَّا جَآءَ مُوْسٰى لِمِيْقَاتِنَا وَكَلَّمَهٗ رَبُّهٗ قَالَ رَبِّ اَرِنِۤيْ اَنْظُرْ اِلَيْكَؕ قَالَ لَنْ تَرَانِيْ وَلٰكِنِ انْظُرْ اِلَى الْجَبَلِ فَاِنِ اسْتَقَرَّ مَكَانَهٗ فَسَوْفَ تَرَانِيْۚ - فَلَمَّا تَجَلّٰى رَبُّهٗ لِلْجَبَلِ جَعَلَهٗ دَكًّا وَّخَرَّ مُوْسٰى صَعِقًاۚ فَلَمَّاۤ اَفَاقَ قَالَ سُبْحَانَكَ تُبْتُ اِلَيْكَ وَاَنَاْ اَوَّلُ الْمُؤْمِنِيْنَ
মূসা বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে দেখা দাও, আমি তোমাকে দেখতে চাই। তিনি বললেন, তুমি আমাকে কখনই দেখতে পারবে না। বরং তুমি পাহাড়ের প্রতি লক্ষ্য করো, সেটা যদি স্বস্থানে স্থির থাকে তবে তুমি আমাকে দেখতে পারবে। যখন তাঁর প্রতিপালক পাহাড়ের উপর জ্যোতি প্রকাশ করলেন তখন তা পাহাড়কে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিল এবং মূসা অজ্ঞান হয়ে পড়ল। তারপর যখন সে জ্ঞান ফিরে পেল তখন বললেন, আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, আমি অনুতপ্ত হয়ে তোমার কাছেই প্রত্যাবর্তন করলাম এবং মুমিনদের মধ্যে আমিই প্রথম। (সূরা আ‘রাফ- ১৪৩)
আল্লাহ ওহীর মাধ্যম ছাড়া মানুষের সাথে কথা বলেন না :
وَمَا كَانَ لِبَشَرٍ اَنْ يُّكَلِّمَهُ اللهُ اِلَّا وَحْيًا اَوْ مِنْ وَّرَآءِ حِجَابٍ اَوْ يُرْسِلَ رَسُوْلًا فَيُوْحِيَ بِاِذْنِه مَا يَشَآءُؕ اِنَّهٗ عَلِيٌّ حَكِيْمٌ
মানুষের জন্য অসম্ভব যে, আল্লাহ তার সাথে কথা বলবেন ওহীর মাধ্যম ছাড়া, অথবা পর্দার অন্তরাল ব্যতীত অথবা এমন দূত প্রেরণ করা ছাড়া, যে তাঁর অনুমতিক্রমে তিনি যা চান তা ব্যক্ত করে। নিশ্চয় তিনি সমুন্নত ও প্রজ্ঞাবান। (সূরা শূরা- ৫১)
আল্লাহ আহার করান, তাঁকে কেউ আহার করায় না :
قُلْ اَغَيْرَ اللهِ اَتَّخِذُ وَلِيًّا فَاطِرِ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِ وَهُوَ يُطْعِمُ وَلَا يُطْعَمُ
বলো, আমি কি আসমান ও জমিনের স্রষ্টা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করব? অথচ তিনিই (আমাদেরকে) আহার করান; কিন্তু তাঁকে কেউ আহার করায় না। (সূরা আন‘আম- ১৪)
- مَاۤ اُرِيْدُ مِنْهُمْ مِّنْ رِّزْقٍ وَّمَاۤ اُرِيْدُ اَنْ يُّطْعِمُوْنِ ‐ - اِنَّ اللهَ هُوَ الرَّزَّاقُ ذُو الْقُوَّةِ الْمَتِيْنُ
আমি তাদের নিকট হতে কোন রিযিক চাই না এবং এও চাই না যে, তারা আমার আহার যোগাবে। নিশ্চয় আল্লাহ (ঐ সত্তা) যিনি রিযিকদাতা এবং সুদৃঢ় শক্তির অধিকারী। (সূরা যারিয়াত- ৫৭, ৫৮)
আল্লাহ কিছুই ভুলেন না :
قَالَ عِلْمُهَا عِنْدَ رَبِّيْ فِيْ كِتَابٍۚ لَا يَضِلُّ رَبِّيْ وَلَا يَنْسٰى
মূসা বললেন, এটার জ্ঞান আমার প্রতিপালকের নিকট এক কিতাবে রয়েছে। আমার প্রতিপালক ভুল করেন না এবং কোনকিছু ভুলেও যান না। (সূরা ত্বা-হা- ৫২)
ব্যাখ্যা : সবকিছুর রেকর্ড আল্লাহর কাছে সংরক্ষিত আছে। আল্লাহই জানেন, পৃথিবীতে কার ভূমিকা কী ছিল এবং কার পরিণাম কী হবে। আমাদেরকেও চিন্তা করা উচিত যে, আমাদের ভূমিকা কী এবং আমরা কোন ধরনের পরিণামের সম্মুখীন হব।
আল্লাহর মর্যাদা সর্বশ্রেষ্ঠ :
وَلَهُ الْمَثَلُ الْاَ عْلٰى فِى السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِؕ وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
আসমান ও জমিনে সর্বোচ্চ মর্যাদা তাঁরই। আর তিনিই প্রতাপশালী ও মহাবিজ্ঞ। (সূরা রূম- ২৭)
সকল বড়ত্ব আল্লাহর :
وَلَهُ الْكِبْرِيَآءُ فِى السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِ وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
আসমান ও জমিনে তাঁরই বড়ত্ব বিরাজমান রয়েছে এবং তিনি মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাবান। (সূরা জাসিয়া- ৩৭)
আল্লাহ আরশের মালিক :
لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَۚ رَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيْمِ
তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই; আর তিনিই সম্মানিত আরশের (একক) অধিপতি। (সূরা মু’মিনূন- ১১৬)
اَللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ
আল্লাহ তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই; আর তিনি মহান আরশের অধিপতি। (সূরা নামল- ২৬)
فَاِنْ تَوَلَّوْا فَقُلْ حَسْبِيَ اللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَؕ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ
এরপরও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে তুমি বলে দাও, আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ছাড়া কোন মা‘বুদ নেই। আর আমি তাঁরই উপর ভরসা করছি এবং তিনিই হচ্ছেন মহান আরশের অধিপতি। (সূরা তাওবা- ১২৯)
আল্লাহ আরশের উপর সমাসীন :
اَلرَّحْمٰنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوٰى
দয়াময় (আল্লাহ) আরশের উপর সমাসীন। (সূরা ত্বা-হা- ৫)
هُوَ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضَ فِيْ سِتَّةِ اَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوٰى عَلَى الْعَرْشِ
তিনি ছয় দিনে আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর আরশে সমাসীন হয়েছেন। (সূরা হাদীদ- ৪)
আল্লাহ আসমান ও জমিনের নূর :
اَللهُ نُوْرُ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِ
আল্লাহ আসমান ও জমিনের আলো। (সূরা নূর- ৩৫)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ আসমান ও জমিনের নূর- এ কথাটির অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ তা‘আলা আসমান এবং জমিনবাসীর হেদায়াত দানকারী ও পরিচালক। কেননা আল্লাহ তা‘আলা শুধু স্রষ্টাই নন, তিনি আসমান এবং জমিনে যা কিছু সৃষ্টি করেছেন সবকিছুকে তার প্রয়োজন অনুপাতে পথনির্দেশনা দিয়েছেন এবং সবকিছু পরিচালনা করছেন।
আল্লাহর নূরের উদাহরণ :
مَثَلُ نُوْرِهٖ كَمِشْكَاةٍ فِيْهَا مِصْبَاحٌ ؕ اَلْمِصْبَاحُ فِيْ زُجَاجَةٍؕ الزُّجَاجَةُ كَاَنَّهَا كَوْكَبٌ دُرِّيٌّ يُّوْقَدُ مِنْ شَجَرَةٍ مُّبَارَكَةٍ زَيْتُوْنَةٍ لَّا شَرْقِيَّةٍ وَّلَا غَرْبِيَّةٍ يَّكَادُ زَيْتُهَا يُضِيْٓءُ وَلَوْ لَمْ تَمْسَسْهُ نَارٌؕ نُوْرٌ عَلٰى نُوْرٍ ؕ يَهْدِى اللهُ لِنُوْرِهٖ مَنْ يَّشَآءُؕ وَيَضْرِبُ اللهُ الْاَ مْثَالَ لِلنَّاسِؕ وَاللهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ
তাঁর জ্যোতির উপমা যেন একটি চেরাগের মতো, যার মধ্যে রয়েছে এক প্রদীপ। আর প্রদীপটি রাখা হয়েছে একটি কাঁচের আবরণের মধ্যে, কাঁচের আবরণটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো- এটা প্রজ্বলিত করা হয় পূত-পবিত্র যায়তূন গাছের তেল দ্বারা, যা পূর্বেরও নয় এবং পশ্চিমেরও নয়। অগ্নি সেটাকে স্পর্শ না করলেও যেন তার তেল উজ্জ্বল আলো দিচ্ছে; জ্যোতির উপর জ্যোতি! আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাঁর জ্যোতির দিকে পথনির্দেশ করেন, (প্রয়োজনে) আল্লাহ মানুষের জন্য উপমা দিয়ে থাকেন; আর আল্লাহ সকল বিষয়ে সর্বজ্ঞ। (সূরা নূর- ৩৫)
আল্লাহর নূর ছাড়া অন্য কোন নূর নেই :
وَمَنْ لَّمْ يَجْعَلِ اللهُ لَهٗ نُوْرًا فَمَا لَهٗ مِنْ نُّوْرٍ
আল্লাহ যাকে জ্যোতি দান করেন না তার জন্য কোন জ্যোতিই নেই। (সূরা নূর- ৪০)
আল্লাহর নূর হাশরের মাঠকে আলোকিত করবে :
وَاَشْرَقَتِ الْاَ رْضُ بِنُوْرِ رَبِّهَا وَوُضِعَ الْكِتَابُ وَجِيْٓءَ بِالنَّبِيِّيْنَ وَالشُّهَدَآءِ وَقُضِيَ بَيْنَهُمْ بِالْحَقِّ وَهُمْ لَا يُظْلَمُوْنَ
সেদিন সমস্ত পৃথিবী তার প্রতিপালকের নূরে আলোকিত হবে, আমলনামা পেশ করা হবে এবং নবী ও সাক্ষীগণকে হাজির করা হবে। অতঃপর সকলের মধ্যে ন্যায়বিচার করা হবে; আর তাদের প্রতি কোন যুলুম করা হবে না। (সূরা যুমার- ৬৯)
আল্লাহ একজন :
وَاِلٰهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ ؕ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الرَّحْمٰنُ الرَّحِيْمُ
তোমাদের ইলাহ্ কেবল একজন। তিনি ব্যতীত অন্য কোন (প্রকৃত) ইলাহ্ নেই। তিনি করুণাময় ও অতি দয়ালু। (সূরা বাক্বারা- ১৬৩)
قُلْ اِنَّمَاۤ اَنَاْ بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوْحٰۤى اِلَيَّ اَنَّمَاۤ اِلٰهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ
বলো, আমি তো তোমাদের মতোই একজন মানুষ। আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়েছে যে, তোমাদের মা‘বুদ হচ্ছেন একজন। (সূরা কাহফ- ১১০)
আল্লাহ দু’জন নন :
وَقَالَ اللهُ لَا تَتَّخِذُوْاۤ اِلٰهَيْنِ اثْنَيْنِۚ اِنَّمَا هُوَ اِلٰهٌ وَّاحِدٌۚ فَاِيَّايَ فَارْهَبُوْنِ
আল্লাহ বলেন, তোমরা দুই ইলাহ্ গ্রহণ করো না; তিনিই তো একমাত্র ইলাহ্। সুতরাং আমাকেই ভয় করো। (সূরা নাহল- ৫১)
আল্লাহ তিনজনও নন :
وَلَا تَقُوْلُوْا ثَلَاثَةٌؕ اِنْتَهُوْا خَيْرًا لَّكُمْؕ اِنَّمَا اللهُ اِلٰهٌ وَّاحِدٌؕ سُبْحَانَهٗۤ اَنْ يَّكُوْنَ لَهٗ وَلَدٌۘ - لَهٗ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَ رْضِؕ وَكَفٰى بِاللهِ وَكِيْلًا
এ কথা বলো না যে, (মা‘বুদের সংখ্যা) তিন। তোমরা এ থেকে বেঁচে থাকো, এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর। (কেননা) নিশ্চয় আল্লাহ একমাত্র ইলাহ্; তাঁর সন্তান হবে- এটা হতে তিনি পবিত্র। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবই তাঁর; আর অভিভাবক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। (সূরা নিসা- ১৭১)
আল্লাহর কোন সমত্মান নেই :
مَا كَانَ لِلّٰهِ اَنْ يَّتَّخِذَ مِنْ وَّلَدٍ سُبْحَانَهٗ
সমত্মান গ্রহণ করা আল্লাহর কাজ নয়, তিনি (এ থেকে) পবিত্র। (সূরা মারইয়াম- ৩৫)
وَمَا يَنْۢبَغِيْ لِلرَّحْمٰنِ اَنْ يَّتَّخِذَ وَلَدًا
সমত্মান গ্রহণ করা দয়াময়ের জন্য শোভনীয় নয়। (সূরা মারইয়াম- ৯২)
مَا اتَّخَذَ اللهُ مِنْ وَّلَدٍ وَّمَا كَانَ مَعَهٗ مِنْ اِلٰهٍ اِذًا لَّذَهَبَ كُلُّ اِلٰهٍ ۢبِمَا خَلَقَ وَلَعَلَا بَعْضُهُمْ عَلٰى بَعْضٍؕ سُبْحَانَ اللهِ عَمَّا يَصِفُوْنَ
আল্লাহ কোন সমত্মান গ্রহণ করেননি এবং তাঁর সাথে অপর কোন ইলাহ্ নেই। যদি থাকত তবে প্রত্যেক ইলাহ্ স্বীয় সৃষ্টি নিয়ে পৃথক হয়ে যেত এবং একে অপরের উপর প্রাধান্য বিসত্মার করত। (জেনে রেখো) তারা যেভাবে গুণান্বিত করে আল্লাহ তা হতে অনেক পবিত্র! (সূরা মু’মিনূন- ৯১)
আল্লাহর কোন মেয়ে নেই :
اَفَاَصْفَاكُمْ رَبُّكُمْ بِالْبَنِيْنَ وَاتَّخَذَ مِنَ الْمَلَآئِكَةِ اِنَاثًاؕ اِنَّكُمْ لَتَقُوْلُوْنَ قَوْلًا عَظِيْمًا
তোমাদের প্রতিপালক কি তোমাদেরকে পুত্র সমত্মানের জন্য নির্বাচিত করেছেন এবং তিনি নিজে ফেরেশতাদেরকে কন্যা হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছেন? নিশ্চয় তোমরা ভয়ানক কথা বলে থাক। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৪০)
اَصْطَفَى الْبَنَاتِ عَلَى الْبَنِيْنَ ‐ مَا لَكُمْ كَيْفَ تَحْكُمُوْن
তিনি কি পুত্রসন্তানের পরিবর্তে কন্যাসন্তানকে বেছে নিয়েছেন? তোমাদের কী হলো, তোমরা এ কেমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছ। (সূরা সাফ্ফাত- ১৫৩, ১৫৪)
আল্লাহর কোন স্ত্রীও নেই :
اَنّٰى يَكُوْنُ لَهٗ وَلَدٌ وَّلَمْ تَكُنْ لَّهٗ صَاحِبَةٌ
তাঁর সন্তান হবে কীভাবে? তাঁর তো কোন স্ত্রী-ই নেই। (সূরা আন‘আম- ১০১)
وَاَنَّهٗ تَعَالٰى جَدُّ رَبِّنَا مَا اتَّخَذَ صَاحِبَةً وَّلَا وَلَدًا
নিশ্চয় আমাদের প্রতিপালকের মর্যাদা সবকিছু থেকে ঊর্ধেব; তিনি কখনো কোন স্ত্রী গ্রহণ করেননি এবং কোন সন্তানও গ্রহণ করেননি। (সূরা জিন- ৩)
আল্লাহর কোন শরীক নেই :
قُلِ الْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ لَمْ يَتَّخِذْ وَلَدًا وَّلَمْ يَكُنْ لَّهٗ شَرِيْكٌ فِى الْمُلْكِ وَلَمْ يَكُنْ لَّهٗ وَلِيٌّ مِّنَ الذُّلِّ وَكَبِّرْهُ تَكْبِيْرًا
বলো, সমস্ত প্রশংসা কেবল আল্লাহরই। যিনি কোন সমত্মান গ্রহণ করেননি, (যার কারণে) তাঁর সার্বভৌমত্বে কোন অংশীদারও নেই। তিনি কখনো দুর্দশাগ্রসত্ম হন না, যে কারণে তাঁর অভিভাবকের প্রয়োজন হয়। সুতরাং তোমরা তাঁর মহত্ত্ব ঘোষণা করো। (সূরা বনী ইসরাঈল- ১১১)
لَا شَرِيْكَ لَهٗۚ وَبِذٰلِكَ اُمِرْتُ وَاَنَاْ اَوَّلُ الْمُسْلِمِيْنَ
তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি এরই জন্য আদিষ্ট হয়েছি; আর আমিই প্রথম মুসলিম। (সূরা আন‘আম- ১৬৩)
ব্যাখ্যা : মহান আল্লাহই এ বিশ্বজাহানের সর্বময় কর্তৃত্বের মালিক এবং তাঁর শাসন ক্ষমতায় কারো সামান্যতমও অংশ নেই। এখন যদি একথা জানা যায় যে, মহান আল্লাহ ছাড়া এ বিশ্বজাহানে অন্য কারো কর্তৃত্ব নেই এবং তিনিই সবচেয়ে বড় ক্ষমতাবান, তিনি ইচ্ছা করলে মুহূর্তেই সকল অস্তিত্ব ধ্বংস করে দিতে পারেন, তিনিই সবকিছু পরিচালনা করেন, তিনিই রিযিক প্রদান করেন, তাহলে কোন মাথা বিনয় প্রকাশ করার জন্য তাঁকে ছাড়া আর কারো সামনে নত হবে না, কোন হাতও অন্য কারো সামনে নজরানা পেশ করার জন্য এগিয়ে যাবে না, কোন কণ্ঠও অন্য কারো প্রশংসাগীতি গাবে না এবং কোনকিছু প্রার্থনাও করবে না। আর এ কাজগুলো দুনিয়ার কোন নিরেট মূর্খ ও অজ্ঞ ব্যক্তির পক্ষেও সম্ভব হবে না।
وَاِلٰهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ ؕ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الرَّحْمٰنُ الرَّحِيْمُ
তোমাদের ইলাহ্ কেবল একজন। তিনি ব্যতীত অন্য কোন (প্রকৃত) ইলাহ্ নেই। তিনি করুণাময় ও অতি দয়ালু। (সূরা বাক্বারা- ১৬৩)
قُلْ اِنَّمَاۤ اَنَاْ بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوْحٰۤى اِلَيَّ اَنَّمَاۤ اِلٰهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ
বলো, আমি তো তোমাদের মতোই একজন মানুষ। আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়েছে যে, তোমাদের মা‘বুদ হচ্ছেন একজন। (সূরা কাহফ- ১১০)
আল্লাহ দু’জন নন :
وَقَالَ اللهُ لَا تَتَّخِذُوْاۤ اِلٰهَيْنِ اثْنَيْنِۚ اِنَّمَا هُوَ اِلٰهٌ وَّاحِدٌۚ فَاِيَّايَ فَارْهَبُوْنِ
আল্লাহ বলেন, তোমরা দুই ইলাহ্ গ্রহণ করো না; তিনিই তো একমাত্র ইলাহ্। সুতরাং আমাকেই ভয় করো। (সূরা নাহল- ৫১)
আল্লাহ তিনজনও নন :
وَلَا تَقُوْلُوْا ثَلَاثَةٌؕ اِنْتَهُوْا خَيْرًا لَّكُمْؕ اِنَّمَا اللهُ اِلٰهٌ وَّاحِدٌؕ سُبْحَانَهٗۤ اَنْ يَّكُوْنَ لَهٗ وَلَدٌۘ - لَهٗ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَ رْضِؕ وَكَفٰى بِاللهِ وَكِيْلًا
এ কথা বলো না যে, (মা‘বুদের সংখ্যা) তিন। তোমরা এ থেকে বেঁচে থাকো, এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর। (কেননা) নিশ্চয় আল্লাহ একমাত্র ইলাহ্; তাঁর সন্তান হবে- এটা হতে তিনি পবিত্র। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবই তাঁর; আর অভিভাবক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। (সূরা নিসা- ১৭১)
আল্লাহর কোন সমত্মান নেই :
مَا كَانَ لِلّٰهِ اَنْ يَّتَّخِذَ مِنْ وَّلَدٍ سُبْحَانَهٗ
সমত্মান গ্রহণ করা আল্লাহর কাজ নয়, তিনি (এ থেকে) পবিত্র। (সূরা মারইয়াম- ৩৫)
وَمَا يَنْۢبَغِيْ لِلرَّحْمٰنِ اَنْ يَّتَّخِذَ وَلَدًا
সমত্মান গ্রহণ করা দয়াময়ের জন্য শোভনীয় নয়। (সূরা মারইয়াম- ৯২)
مَا اتَّخَذَ اللهُ مِنْ وَّلَدٍ وَّمَا كَانَ مَعَهٗ مِنْ اِلٰهٍ اِذًا لَّذَهَبَ كُلُّ اِلٰهٍ ۢبِمَا خَلَقَ وَلَعَلَا بَعْضُهُمْ عَلٰى بَعْضٍؕ سُبْحَانَ اللهِ عَمَّا يَصِفُوْنَ
আল্লাহ কোন সমত্মান গ্রহণ করেননি এবং তাঁর সাথে অপর কোন ইলাহ্ নেই। যদি থাকত তবে প্রত্যেক ইলাহ্ স্বীয় সৃষ্টি নিয়ে পৃথক হয়ে যেত এবং একে অপরের উপর প্রাধান্য বিসত্মার করত। (জেনে রেখো) তারা যেভাবে গুণান্বিত করে আল্লাহ তা হতে অনেক পবিত্র! (সূরা মু’মিনূন- ৯১)
আল্লাহর কোন মেয়ে নেই :
اَفَاَصْفَاكُمْ رَبُّكُمْ بِالْبَنِيْنَ وَاتَّخَذَ مِنَ الْمَلَآئِكَةِ اِنَاثًاؕ اِنَّكُمْ لَتَقُوْلُوْنَ قَوْلًا عَظِيْمًا
তোমাদের প্রতিপালক কি তোমাদেরকে পুত্র সমত্মানের জন্য নির্বাচিত করেছেন এবং তিনি নিজে ফেরেশতাদেরকে কন্যা হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছেন? নিশ্চয় তোমরা ভয়ানক কথা বলে থাক। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৪০)
اَصْطَفَى الْبَنَاتِ عَلَى الْبَنِيْنَ ‐ مَا لَكُمْ كَيْفَ تَحْكُمُوْن
তিনি কি পুত্রসন্তানের পরিবর্তে কন্যাসন্তানকে বেছে নিয়েছেন? তোমাদের কী হলো, তোমরা এ কেমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছ। (সূরা সাফ্ফাত- ১৫৩, ১৫৪)
আল্লাহর কোন স্ত্রীও নেই :
اَنّٰى يَكُوْنُ لَهٗ وَلَدٌ وَّلَمْ تَكُنْ لَّهٗ صَاحِبَةٌ
তাঁর সন্তান হবে কীভাবে? তাঁর তো কোন স্ত্রী-ই নেই। (সূরা আন‘আম- ১০১)
وَاَنَّهٗ تَعَالٰى جَدُّ رَبِّنَا مَا اتَّخَذَ صَاحِبَةً وَّلَا وَلَدًا
নিশ্চয় আমাদের প্রতিপালকের মর্যাদা সবকিছু থেকে ঊর্ধেব; তিনি কখনো কোন স্ত্রী গ্রহণ করেননি এবং কোন সন্তানও গ্রহণ করেননি। (সূরা জিন- ৩)
আল্লাহর কোন শরীক নেই :
قُلِ الْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ لَمْ يَتَّخِذْ وَلَدًا وَّلَمْ يَكُنْ لَّهٗ شَرِيْكٌ فِى الْمُلْكِ وَلَمْ يَكُنْ لَّهٗ وَلِيٌّ مِّنَ الذُّلِّ وَكَبِّرْهُ تَكْبِيْرًا
বলো, সমস্ত প্রশংসা কেবল আল্লাহরই। যিনি কোন সমত্মান গ্রহণ করেননি, (যার কারণে) তাঁর সার্বভৌমত্বে কোন অংশীদারও নেই। তিনি কখনো দুর্দশাগ্রসত্ম হন না, যে কারণে তাঁর অভিভাবকের প্রয়োজন হয়। সুতরাং তোমরা তাঁর মহত্ত্ব ঘোষণা করো। (সূরা বনী ইসরাঈল- ১১১)
لَا شَرِيْكَ لَهٗۚ وَبِذٰلِكَ اُمِرْتُ وَاَنَاْ اَوَّلُ الْمُسْلِمِيْنَ
তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি এরই জন্য আদিষ্ট হয়েছি; আর আমিই প্রথম মুসলিম। (সূরা আন‘আম- ১৬৩)
ব্যাখ্যা : মহান আল্লাহই এ বিশ্বজাহানের সর্বময় কর্তৃত্বের মালিক এবং তাঁর শাসন ক্ষমতায় কারো সামান্যতমও অংশ নেই। এখন যদি একথা জানা যায় যে, মহান আল্লাহ ছাড়া এ বিশ্বজাহানে অন্য কারো কর্তৃত্ব নেই এবং তিনিই সবচেয়ে বড় ক্ষমতাবান, তিনি ইচ্ছা করলে মুহূর্তেই সকল অস্তিত্ব ধ্বংস করে দিতে পারেন, তিনিই সবকিছু পরিচালনা করেন, তিনিই রিযিক প্রদান করেন, তাহলে কোন মাথা বিনয় প্রকাশ করার জন্য তাঁকে ছাড়া আর কারো সামনে নত হবে না, কোন হাতও অন্য কারো সামনে নজরানা পেশ করার জন্য এগিয়ে যাবে না, কোন কণ্ঠও অন্য কারো প্রশংসাগীতি গাবে না এবং কোনকিছু প্রার্থনাও করবে না। আর এ কাজগুলো দুনিয়ার কোন নিরেট মূর্খ ও অজ্ঞ ব্যক্তির পক্ষেও সম্ভব হবে না।
আল্লাহর রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম :
قُلِ ادْعُوا اللهَ اَوِ ادْعُوا الرَّحْمٰنَؕ اَيًّا مَّا تَدْعُوْا فَلَهُ الْاَ سْمَآءُ الْحُسْنٰى
বলো, তোমরা ‘আল্লাহ’ নামে আহবান করো অথবা ‘রাহ্মান’ নামে আহবান করো, তোমরা যে নামেই আহবান করো না কেন সকল সুন্দর নাম তো তাঁরই। (সূরা বনী ইসরাঈল- ১১০)
هُوَ اللهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْاَ سْمَآءُ الْحُسْنٰى
তিনিই আল্লাহ, সৃষ্টিকর্তা, উদ্ভাবনকর্তা ও রূপদাতা। আর সকল উত্তম নাম তাঁরই। (সূরা হাশর- ২৪)
আল্লাহকে এসব নাম দিয়েই ডাকতে হবে :
وَلِلّٰهِ الْاَ سْمَآءُ الْحُسْنٰى فَادْعُوْهُ بِهَا
আল্লাহর জন্য রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম। অতএব তোমরা তাঁকে সেসব নামেই ডাকো। (সূরা আ‘রাফ- ১৮০)
আল্লাহর নাম কত মহান :
تَبَارَكَ اسْمُ رَبِّكَ ذِى الْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ
কত মহান তোমার প্রতিপালকের নাম, যিনি মহাপ্রতাপশালী ও পরম অনুগ্রহশীল! (সূরা আর রহমান- ৭৮)
আল্লাহর নামের অমর্যাদা করা পাপ :
وَذَرُوا الَّذِيْنَ يُلْحِدُوْنَ فِۤي اَسْمَآئِهٖؕ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
যারা তাঁর নাম বিকৃত করে তাদেরকে বর্জন করো; অচিরেই তাদের কৃতকর্মের ফল তাদেরকে দিয়ে দেয়া হবে। (সূরা আ‘রাফ- ১৮০)
ব্যাখ্যা : ‘ইলহাদ’ হচ্ছে, এমনভাবে আল্লাহর নামকরণ করা, যাতে তাঁর মর্যাদাহানি হয়। যার মাধ্যমে তাঁর প্রতি দোষ-ত্রুটি আরোপ করা হয় অথবা যার সাহায্যে তাঁর উন্নত ও পবিত্র সত্তা সম্পর্কে কোন ভুল আকীদা-বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটে থাকে। যে নাম একমাত্র আল্লাহর জন্য উপযোগী, সৃষ্টিজগতের কাউকে সে নামে ডাকাও ইলহাদের অন্তর্ভুক্ত। আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহর নামের ব্যাপারে যারা সত্য থেকে বিচ্যুত হয়ে যায় তাদেরকে বর্জন করো অর্থাৎ সহজভাবে বুঝানোর পরও যদি তারা না বুঝে, তাহলে তাদের সাথে অনর্থক বিতর্কে জড়িত হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। নিজেদের গোমরাহীর ফল তারা নিজেরাই ভোগ করবে।
আল্লাহর কতিপয় নাম :
هُوَ اللهُ الَّذِيْ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَؕ اَلْمَلِكُ الْقُدُّوْسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيْزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُؕ سُبْحَانَ اللهِ عَمَّا يُشْرِكُوْنَ ‐ - هُوَ اللهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْاَسْمَآءُ الْحُسْنٰىؕ يُسَبِّحُ لَهٗ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِۚ وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত (সত্য) কোন মা‘বুদ নেই। তিনিই অধিপতি, অতীব পবিত্র, পরিপূর্ণ শান্তিদাতা, নিরাপত্তা দানকারী, রক্ষক, পরাক্রমশালী, প্রবল, অতীব মহিমান্বিত; আর তারা (মুশরিকরা) তাঁর সাথে যা শরীক স্থাপন করেছে তিনি তা থেকে অনেক পবিত্র। তিনিই আল্লাহ সৃজনকর্তা, উদ্ভাবনকর্তা ও রূপদাতা, সকল উত্তম নাম তাঁরই। আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সবকিছুই তাঁর মহিমা ঘোষণা করে। তিনি অতি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাবান। (সূরা হাশর- ২৩, ২৪)
আল্লাহ চিরস্থায়ী :
هُوَ الْحَيُّ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ فَادْعُوْهُ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ ؕ اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
তিনি চিরঞ্জীব, তিনি ব্যতীত (প্রকৃত) কোন ইলাহ্ নেই; সুতরাং তাঁর ইবাদাতে একনিষ্ঠ হয়ে তোমরা তাঁকেই আহবান করো। যাবতীয় প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য। (সূরা মু’মিন- ৬৫)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ তাঁর জীবনই বাস্তব ও প্রকৃত জীবন। একমাত্র তিনিই আপন ক্ষমতায় জীবিত। তাঁর জীবন ছাড়া আর কারো জীবনই চিরস্থায়ী নয়।
اَللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّوْمُ
আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী। (সূরা আলে ইমরান- ২)
كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ ‐ وَيَبْقٰى وَجْهُ رَبِّكَ ذُو الْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ
ভূপৃষ্ঠে যা কিছু আছে সবই ধ্বংসশীল। আর অবশিষ্ট থাকবে শুধু তোমার মহিমাময় ও মহানুভব প্রতিপালকের চেহারা (সত্তা)। (সূরা আর রহমান- ২৬, ২৭)
ব্যাখ্যা : এখানে জিন ও মানুষকে এক মহাসত্য সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। আর তা হলো, তোমরা নিজেরাও অবিনশ্বর নও এবং সেসব সাজ-সরঞ্জামও চিরস্থায়ী নয়, যা তোমরা এ পৃথিবীতে ভোগ করছ। অবিনশ্বর ও চিরস্থায়ী শুধুমাত্র সুমহান আল্লাহ। কোন নির্বোধ যদি তার ক্ষমতার ক্ষুদ্র গন্ডীর মধ্যে নিজের শ্রেষ্ঠত্বের ঢঙ্কা বাজায়, কিংবা কতিপয় মানুষকে তার কর্তৃত্ব স্বীকার করায় তাহলে তার এ মিথ্যা বেশি দিন চলতে পারে না। মহাবিশ্বের বিশাল বিস্তৃতির মধ্যে পৃথিবীর অনুপাত যেখানে মটরশুটির দানার মতোও নয়, তার এক নিভৃত কোণে দশ বিশ কিংবা পঞ্চাশ ষাট বছর যে কর্তৃত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব চলে এবং তারপরই অতীত কাহিনীতে রূপান্তরিত হতে হয়- তা এমন কোন কর্তৃত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব নয়, যার জন্য কেউ গর্ব করতে পারে।
আল্লাহ প্রশংসিত :
وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ غَنِيٌّ حَمِيْدٌ
জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ সম্পদশালী ও প্রশংসিত। (সূরা বাক্বারা- ২৬৭)
اِنَّهٗ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ
নিশ্চয় তিনি প্রচুর প্রশংসা ও বিপুল সম্মানের অধিকারী। (সূরা হুদ- ৭৩)
আল্লাহ সম্মানিত :
فَاِنَّ الْعِزَّةَ لِلّٰهِ جَمِيْعًا
নিশ্চয় সকল সম্মান আল্লাহরই জন্য। (সূরা নিসা- ১৩৯)
আল্লাহ হেকমতওয়ালা :
اِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ
নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা- ২৮; সূরা আন‘আম- ৮৩)
وَاللهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ
আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা নূর- ৫৮)
আল্লাহ গুণগ্রাহী :
وَاللهُ شَكُوْرٌ حَلِيْمٌ
আল্লাহ গুণগ্রাহী ও সহনশীল। (সূরা তাগাবুন- ১৭)
ব্যাখ্যা : যখন شُكْرٌ (শুকর) শব্দটি আল্লাহর পক্ষ হতে বান্দার প্রতি শুকরিয়া আদায় করার জন্য ব্যবহৃত হয় তখন তার অর্থ হয়, কাজের স্বীকৃতি দেয়া, মূল্যায়ন করা ইত্যাদি। আর যখন বান্দার পক্ষ থেকে আল্লাহর প্রতি শুকর করার কথা বলা হয় তখন এর অর্থ হয়, নিয়ামতের স্বীকৃতি দান করা। আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার শুকরিয়া আদায় করার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ বান্দার কাজের যথার্থ মূল্যায়ন করার ব্যাপারে কুণ্ঠিত নন। বান্দা তাঁর পথে যে ধরনের যতটুকু কাজ করে আল্লাহ তার যথার্থ মূল্যায়ন করেন। বান্দার কোন কাজ পারিশ্রমিক ও পুরস্কার লাভ থেকে বঞ্চিত থাকে না। বরং তিনি মুক্তহস্তে তার প্রত্যেকটি কাজের বিনিময় তার প্রাপ্যের চেয়ে অনেক বেশি দিয়ে থাকেন।
আল্লাহ ধৈর্যশীল :
وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ غَفُوْرٌ حَلِيْمٌ
জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও ধৈর্যশীল। (সূরা বাক্বারা- ২৩৫)
আল্লাহ সর্বশ্রোতা :
وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা বাক্বারা- ২৪৪)
وَلَه مَا سَكَنَ فِى اللَّيْلِ وَالنَّهَارِؕ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
রাত ও দিনে যা কিছু থাকে তা তাঁরই, আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা আন‘আম- ১৩)
وَاِمَّا يَنْزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللهِؕ اِنَّهٗ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে তবে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাও, নিশ্চয় তিনি সবকিছু শুনেন ও জানেন। (সূরা আ‘রাফ- ২০০)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ একই সময়ে সমগ্র বিশ্বজাহানের আওয়াজ আলাদা আলাদাভাবে শুনছেন এবং কোন আওয়াজ তাঁর শ্রবণে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না, যার ফলে একটি শুনলে অন্যটি শুনেন না। অনুরূপভাবে তিনি একই সময়ে সমগ্র বিশ্বজাহানের প্রতিটি জিনিস ও ঘটনা বিস্তারিত আকারে দেখছেন।
আল্লাহ সবই দেখেন :
اِعْمَلُوْا مَا شِئْتُمْ اِنَّهٗ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
তোমরা যা ইচ্ছা তা আমল কর; নিশ্চয় তোমরা যা কর তিনি তা দেখেন। (সূরা হামীম সাজদা- ৪০)
اِنَّ رَبَّكَ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيَقْدِرُؕ اِنَّهٗ كَانَ بِعِبَادِهٖ خَبِيْرًا ۢبَصِيْرًا
তোমার প্রতিপালক যাকে চান তার রিযিক বাড়িয়ে দেন, আবার যাকে চান কমিয়ে দেন। তিনি তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে ভালোভাবেই জানেন এবং তাদেরকে পর্যবেক্ষণ করেন। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩০)
وَاتَّقُوا اللهَ وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
আর আল্লাহকে ভয় করো এবং জেনে রেখো, তোমরা যা কর আল্লাহ তা অবশ্যই দেখেন। (সূরা বাক্বারা- ২৩৩)
আল্লাহ সবকিছু রক্ষণাবেক্ষণ করেন :
اِنَّ رَبِّيْ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ حَفِيْظٌ
নিশ্চয় আমার প্রতিপালক সমসত্ম কিছুর রক্ষণাবেক্ষণকারী। (সূরা হুদ- ৫৭)
فَاللهُ خَيْرٌ حَافِظًا وَّهُوَ اَرْحَمُ الرَّاحِمِيْنَ
আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ রক্ষণাবেক্ষণকারী এবং তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু। (সূরা ইউসুফ- ৬৪)
وَرَبُّكَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ حَفِيْظٌ
আপনার প্রতিপালক সর্ববিষয়ের রক্ষণাবেক্ষণকারী। (সূরা সাবা- ২১)
আল্লাহ বরকতময় :
تَبَارَكَ الَّذِيْ بِيَدِهِ الْمُلْكُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
বরকতময় সেই সত্তা, যাঁর হাতে সার্বভৌমত্ব; তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। (সূরা মুলক- ১)
ব্যাখ্যা : تَبَارَكَ (তাবারাকা) শব্দটি বহু অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন-
(১) মহা অনুগ্রহকারী ও সর্বজ্ঞ।
(২) বড়ই মর্যাদাশীল ও সম্মানী। কারণ পৃথিবী ও আকাশের সকল রাজত্ব তাঁরই।
(৩) বড়ই পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন। কারণ তাঁর সত্তা সকল প্রকার শিরকের গন্ধমুক্ত। তাঁর সমজাতীয় কেউ নেই, ফলে তাঁর সত্তার সার্বভৌমত্বে স্থলাভিষিক্তের জন্য কোন পুত্রের প্রয়োজন নেই।
(৪) শক্তির পূর্ণতার দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠ। কারণ তিনি বিশ্বজাহানের প্রত্যেকটি জিনিসের সৃষ্টিকর্তা।
সকল বাদশাহী আল্লাহর হাতে :
اَلَمْ تَعْلَمْ اَنَّ اللهَ لَهٗ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِؕ وَمَا لَكُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ مِنْ وَّلِيٍّ وَّلَا نَصِيْرٍ
তুমি কি জান না যে, আকাশ ও পৃথিবীর আধিপত্য আল্লাহরই। আর আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন বন্ধু নেই এবং কোন সাহায্যকারীও নেই। (সূরা বাক্বারা- ১০৭)
আল্লাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা দেন এবং যার থেকে চান ক্ষমতা কেঁড়ে নেন :
قُلِ اللّٰهُمَّ مَالِكَ الْمُلْكِ تُؤْتِى الْمُلْكَ مَنْ تَشَآءُ وَتَنْزِعُ الْمُلْكَ مِمَّنْ تَشَآءُ وَتُعِزُّ مَنْ تَشَآءُ وَتُذِلُّ مَنْ تَشَآءُؕ بِيَدِكَ الْخَيْرُ ؕ اِنَّكَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
বলো, হে আল্লাহ! আপনিই রাজত্বের মালিক। আপনি যাকে চান তাকে রাজত্ব দান করেন, আবার যার থেকে চান রাজত্ব কেঁড়ে নেন। আর যাকে চান সম্মানিত করেন, আবার যাকে চান অপদস্থ করেন। আপনার হাতেই কল্যাণ; নিশ্চয় আপনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। (সূরা আলে ইমরান- ২৬)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ কোন একটি গোত্র বা জাতিকে স্থায়ী কর্তৃত্ব দান করেন না, এটা তাঁর বিরাট অনুগ্রহ। তিনি পৃথিবীতে বিভিন্ন সময় একটি দলকে দিয়ে অন্য একটি দলকে প্রতিহত করেন। অন্যথায় যদি কোন একটি নির্দিষ্ট দলকে কোথাও স্থায়ী কর্তৃত্ব দান করতেন, তাহলে তাদের প্রভাব ও ক্ষমতার বড়াইয়ের ফলে যে ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড শুরু হতো তাতে শুধু প্রাসাদ, রাজনীতি এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানই ধ্বংস হতো না, বরং ইবাদাতগৃহগুলোও বিধ্বস্ত হয়ে যেত।
কিয়ামত দিবসের বাদশাও একমাত্র আল্লাহ :
وَلَهُ الْمُلْكُ يَوْمَ يُنْفَخُ فِى الصُّوْرِؕ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِؕ وَهُوَ الْحَكِيْمُ الْخَبِيْرُ
যেদিন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে, সেদিন কর্তৃত্ব তাঁরই থাকবে। তিনি অদৃশ্য ও দৃশ্য সবকিছু সম্বন্ধে অবগত রয়েছেন। আর তিনিই প্রজ্ঞাময় ও সম্যক অবগত। (সূরা আন‘আম- ৭৩)
يَوْمَ هُمْ بَارِزُوْنَۚ لَا يَخْفٰى عَلَى اللهِ مِنْهُمْ شَيْءٌؕ لِمَنِ الْمُلْكُ الْيَوْمَ ؕ لِلّٰهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ
যেদিন তারা (কবর হতে) বের হয়ে পড়বে, সেদিন আল্লাহর নিকট তাদের কোনকিছুই গোপন থাকবে না। (আললাহ জিজ্ঞেস করবেন) আজ কর্তৃত্ব কার? (বলা হবে) প্রবল পরাক্রমশালী এক আল্লাহরই। (সূরা মু’মিন- ১৬)
ব্যাখ্যা : পৃথিবীতে বহু অহংকারী ও ভ্রান্ত লোক নিজেদের বাদশাহী ও শক্তিমত্তার অহংকার করে থাকে এবং বহু সংখ্যক লোকও তাদের বাদশাহী ও শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে নেয়, তাদের হুকুম পালন করে; এমনকি অনেকে তাদেরকেই নিজেদের প্রভু মনে করতে থাকে। কিন্তু পরকালে তাদের কাছে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে যাবে। তখন আল্লাহ বলবেন, এখন বলো! প্রকৃতপক্ষে বাদশাহী কার? ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের প্রকৃত মালিক কে? আর কার হুকুমে সবকিছু পরিচালিত হয়? এটা এমন একটা বিষয় যে, কোন ব্যক্তি যদি তা বুঝার চেষ্টা করে তাহলে সে যত বড় বাদশাহ কিংবা মহানায়কই হয়ে থাকুক না কেন সে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে এবং তার মন-মগজ থেকে শক্তিমত্তার সমস্ত অহংকার বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
সকল মালিকানা আল্লাহর :
وَلِلّٰهِ مِيْرَاثُ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِ
আসমান ও জমিনের মালিকানা আল্লাহরই। (সূরা হাদীদ- ১০)
আসমান ও জমিনের সকল বাহিনী আল্লাহর :
وَلِلّٰهِ جُنُوْدُ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِؕ وَكَانَ اللهُ عَزِيْزًا حَكِيْمًا
আসমান ও জমিনের সকল সেনাবাহিনী আল্লাহর হাতেই রয়েছে। তিনি মহাশক্তিশালী ও সুকৌশলী। (সূরা ফাতহ- ৭)
আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী :
وَاِنَّ اللهَ لَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা আলে ইমরান- ৬২)
اِنَّ رَبَّكَ لَهُوَ الْعَزِيْزُ الرَّحِيْمُ
নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক মহাপরাক্রমশালী ও পরম দয়ালু। (সূরা শু‘আরা- ৬৮)
আল্লাহ মহাকৌশলী :
وَاُمْلِيْ لَهُمْ اِنَّ كَيْدِيْ مَتِيْنٌ
আমি তাদেরকে সুযোগ দিয়ে থাকি, নিশ্চয় আমার কৌশল অত্যন্ত বলিষ্ঠ। (সূরা আ‘রাফ- ১৮৩)
وَمَكَرُوْا وَمَكَرَ اللهُؕ وَاللهُ خَيْرُ الْمَاكِرِيْنَ
আর তারা কৌশল করেছিল ফলে আল্লাহও কৌশল গ্রহণ করলেন। মূলত আল্লাহই উত্তম কৌশলী।
(সূরা আলে ইমরান- ৫৪)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর কৌশলের অর্থ হচ্ছে, যদি কেউ সত্যকে না মানে এবং সে অনুযায়ী নিজেদের মনোভাব পরিবর্তন না করে, তাহলে তিনি তাদেরকে বিদ্রোহাত্মক নীতি অবলম্বন করে চলার সুযোগ দেবেন। যতদিন তারা বেঁচে থাকবে ততদিন তিনি তাদেরকে নিজের পক্ষ থেকে রিযিক ও অনুগ্রহ দান করতে থাকবেন। ফলে তাদের জীবনসামগ্রী তাদেরকে অমনোযোগী করে রাখবে। আর তারা যা কিছু করবে আল্লাহর ফেরেশতারা নীরবে তা লিখতে থাকবেন। এভাবে হঠাৎ মৃত্যুর সময় এসে যাবে। তখন নিজেদের কৃতকর্মের হিসাব দেয়ার জন্য তাদেরকে ধরে নিয়ে যাওয়া হবে। এভাবে আল্লাহ এমন কৌশল অবলম্বন করেন- যার ফলে মানুষ সূচনায় কখনো তার পরিণামের কল্পনাও করতে পারে না। আল্লাহর পরিকল্পনা এমন সূক্ষ্ম ও অজ্ঞাত পদ্ধতিতে বাস্তবায়িত হয় যে, যতক্ষণ পর্যন্ত তা চূড়ান্ত পর্যায়ে না পৌঁছে ততক্ষণ পর্যন্ত মানুষ বিষয়টি সম্পর্কে বিন্দুমাত্রও অবগত হতে পারে না।
আল্লাহ হিসাব গ্রহণকারী :
اِنَّ اللهَ كَانَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ حَسِيْبًا
নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ের হিসাব গ্রহণকারী। (সূরা নিসা- ৮৬)
হিসাবের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট :
فَاِنَّمَا عَلَيْكَ الْبَلَاغُ وَعَلَيْنَا الْحِسَابُ
তোমার কর্তব্য তো কেবল প্রচার করা; আর হিসাব-নিকাশ তো আমার কাজ। (সূরা রা‘দ- ৪০)
اِنَّ اِلَيْنَاۤ اِيَابَهُمْ ‐ ثُمَّ اِنَّ عَلَيْنَا حِسَابَهُمْ
নিশ্চয় আমার দিকেই তাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর আমার উপরই তাদের হিসাব-নিকাশ (গ্রহণের ভার)। (সূরা গাশিয়া- ২৫, ২৬)
আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী :
وَهُوَ سَرِيْعُ الْحِسَابِ
তিনি দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী। (সূরা রা‘দ- ৪১)
اَلْيَوْمَ تُجْزٰى كُلُّ نَفْسٍ ۢبِمَا كَسَبَتْؕ لَا ظُلْمَ الْيَوْمَؕ اِنَّ اللهَ سَرِيْعُ الْحِسَابِ
আজ প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার কৃতকর্মের বিনিময় দেয়া হবে; আজ কারো প্রতি যুলুম করা হবে না। নিশ্চয় আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী। (সূরা মু’মিন- ১৭)
وَاللهُ سَرِيْعُ الْحِسَابِ
নিশ্চয় আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী। (সূরা নূর- ৩৯)
وَمَنْ يَّكْفُرْ بِاٰيَاتِ اللهِ فَاِنَّ اللهَ سَرِيْعُ الْحِسَابِ
আর যে আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করবে, (তার জেনে রাখা উচিত) আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।
(সূরা আলে ইমরান- ১৯)
ব্যাখ্যা : মানবজাতির হিসাব গ্রহণ করতে আল্লাহর কোন বিলম্ব হবে না। যেভাবে তিনি গোটা বিশ্বের সমস্ত সৃষ্টিকে একসাথে রিযিক দান করছেন এবং কাউকে রিযিক পৌঁছানোর ব্যবস্থাপনায় এমন ব্যস্ত নন যে, অন্যদের রিযিক দেয়ার অবকাশই তিনি পান না, যেভাবে তিনি গোটা বিশ্বের প্রতিটি ব্যক্তি বা বস্তুকে দেখছেন, সমস্ত শব্দ শুনছেন, প্রতিটি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর এবং বৃহৎ থেকে বৃহত্তর ব্যাপারের ব্যবস্থাপনাও করছেন, তেমনি তিনি প্রত্যেক ব্যক্তির হিসাব গ্রহণ করবেন। একটি বিচারের শুনানিতে তিনি এতটা ব্যস্ত হয়ে পড়বেন না যে, সে সময়ে অন্যান্য মামলার শুনানি করতে পারবেন না। তাছাড়া তাঁর আদালতে এ কারণেও কোন বিলম্ব হবে না যে, মামলার পটভূমি ও ঘটনাবলির বিচার-বিশ্লেষণ এবং তার সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহ করা কঠিন হবে। কেননা আদালতের বিচারক নিজেই সরাসরি বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে অবগত থাকবেন। মামলার বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষের সবকিছুই তাঁর জানা থাকবে। সমস্ত ঘটনার খুঁটি-নাটি অনস্বীকার্য সাক্ষ্য প্রমাণসহ সবিস্তারে পেশ করা হবে। আর এতে তাঁর একটুও বিলম্ব হবে না। ফলে সমস্ত মামলার ফায়সালা তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে।
আল্লাহ প্রতিশোধ গ্রহণকারী :
وَاللهُ عَزِيْزٌ ذُو انْتِقَامٍ
আর আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রতিশোধ গ্রহণকারী। (সূরা আলে ইমরান- ৪)
وَمَنْ عَادَ فَيَنْتَقِمُ اللهُ مِنْهُؕ وَاللهُ عَزِيْزٌ ذُو انْتِقَامٍ
কেউ তা (পাপ) পুনরায় করলে আল্লাহ তার কাছ থেকে প্রতিশোধ নেবেন; আর আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রতিশোধ গ্রহণে প্রবল শক্তিমান। (সূরা মায়েদা- ৯৫)
اِنَّا مِنَ الْمُجْرِمِيْنَ مُنْتَقِمُوْنَ
অবশ্যই আমি পাপীদের থেকে প্রতিশোধ নেব। (সূরা সাজদা- ২২)
اَلَيْسَ اللهُ بِعَزِيْزٍ ذِى انْتِقَامٍ
আল্লাহ কি মহাপরাক্রমশালী ও প্রতিশোধ গ্রহণকারী নন? (সূরা যুমার- ৩৭)
আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা :
وَاِنَّ رَبَّكَ لَشَدِيْدُ الْعِقَابِ
নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক কঠোর শাসিত্মদানকারী। (সূরা রা‘দ- ৬)
وَاعْلَمُوْا ۤاَنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে খুবই কঠোর। (সূরা আনফাল- ২৫)
وَاللهُ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
আর আল্লাহ কঠোর শাস্তিদানকারী। (সূরা আলে ইমরান- ১১)
فَاِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা। (সূরা বাক্বারা- ২১১)
আল্লাহ দ্রুত শাস্তিদানকারী :
اِنَّ رَبَّكَ سَرِيْعُ الْعِقَابِ وَاِنَّهٗ لَغَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক শাস্তিদানে খুবই দ্রুততর, নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল ও দয়াময়। (সূরা আন‘আম- ১৬৫)
আল্লাহ বিশ্বের সবকিছু লালন-পালন করেন :
قُلْ اَغَيْرَ اللهِ اَبْغِيْ رَبًّا وَّهُوَ رَبُّ كُلِّ شَيْءٍ
বলো, আমি কি আল্লাহকে ছেড়ে অন্য কোন প্রতিপালককে খুঁজব? অথচ তিনিই সবকিছুর প্রতিপালক।
(সূরা আন‘আম- ১৬৪)
رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا وَرَبُّ الْمَشَارِقِ
তিনি আসমান ও জমিন এবং উভয়ের মাঝে অবস্থিত সবকিছুর প্রতিপালক এবং তিনি সকল উদয়স্থলের প্রতিপালক। (সূরা সাফফাত- ৫)
জীবন ও মৃত্যু আল্লাহর হাতে :
هُوَ الَّذِيْ يُحْيِيْ وَيُمِيْتُۚ فَاِذَا قَضٰۤى اَمْرًا فَاِنَّمَا يَقُوْلُ لَهٗ كُنْ فَيَكُوْنُ
তিনিই জীবিত করেন ও মৃত্যু ঘটান। যখন তিনি কোনকিছু করার সিদ্ধান্ত নেন তখন তিনি বলেন, হও অতঃপর তা হয়ে যায়। (সূরা মু’মিন- ৬৮)
لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ يُحْيِيْ وَيُمِيْتُ
তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই, তিনিই জীবিত করেন এবং মৃত্যু ঘটান। (সূরা আ‘রাফ- ১৫৮)
وَاللهُ يُحْيِيْ وَيُمِيْتُؕ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
আল্লাহই জীবিত করেন ও মৃত্যু ঘটান; আর তোমরা যা কর আল্লাহ তা পর্যবেক্ষণ করেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৬)
قُلِ ادْعُوا اللهَ اَوِ ادْعُوا الرَّحْمٰنَؕ اَيًّا مَّا تَدْعُوْا فَلَهُ الْاَ سْمَآءُ الْحُسْنٰى
বলো, তোমরা ‘আল্লাহ’ নামে আহবান করো অথবা ‘রাহ্মান’ নামে আহবান করো, তোমরা যে নামেই আহবান করো না কেন সকল সুন্দর নাম তো তাঁরই। (সূরা বনী ইসরাঈল- ১১০)
هُوَ اللهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْاَ سْمَآءُ الْحُسْنٰى
তিনিই আল্লাহ, সৃষ্টিকর্তা, উদ্ভাবনকর্তা ও রূপদাতা। আর সকল উত্তম নাম তাঁরই। (সূরা হাশর- ২৪)
আল্লাহকে এসব নাম দিয়েই ডাকতে হবে :
وَلِلّٰهِ الْاَ سْمَآءُ الْحُسْنٰى فَادْعُوْهُ بِهَا
আল্লাহর জন্য রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম। অতএব তোমরা তাঁকে সেসব নামেই ডাকো। (সূরা আ‘রাফ- ১৮০)
আল্লাহর নাম কত মহান :
تَبَارَكَ اسْمُ رَبِّكَ ذِى الْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ
কত মহান তোমার প্রতিপালকের নাম, যিনি মহাপ্রতাপশালী ও পরম অনুগ্রহশীল! (সূরা আর রহমান- ৭৮)
আল্লাহর নামের অমর্যাদা করা পাপ :
وَذَرُوا الَّذِيْنَ يُلْحِدُوْنَ فِۤي اَسْمَآئِهٖؕ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
যারা তাঁর নাম বিকৃত করে তাদেরকে বর্জন করো; অচিরেই তাদের কৃতকর্মের ফল তাদেরকে দিয়ে দেয়া হবে। (সূরা আ‘রাফ- ১৮০)
ব্যাখ্যা : ‘ইলহাদ’ হচ্ছে, এমনভাবে আল্লাহর নামকরণ করা, যাতে তাঁর মর্যাদাহানি হয়। যার মাধ্যমে তাঁর প্রতি দোষ-ত্রুটি আরোপ করা হয় অথবা যার সাহায্যে তাঁর উন্নত ও পবিত্র সত্তা সম্পর্কে কোন ভুল আকীদা-বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটে থাকে। যে নাম একমাত্র আল্লাহর জন্য উপযোগী, সৃষ্টিজগতের কাউকে সে নামে ডাকাও ইলহাদের অন্তর্ভুক্ত। আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহর নামের ব্যাপারে যারা সত্য থেকে বিচ্যুত হয়ে যায় তাদেরকে বর্জন করো অর্থাৎ সহজভাবে বুঝানোর পরও যদি তারা না বুঝে, তাহলে তাদের সাথে অনর্থক বিতর্কে জড়িত হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। নিজেদের গোমরাহীর ফল তারা নিজেরাই ভোগ করবে।
আল্লাহর কতিপয় নাম :
هُوَ اللهُ الَّذِيْ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَؕ اَلْمَلِكُ الْقُدُّوْسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيْزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُؕ سُبْحَانَ اللهِ عَمَّا يُشْرِكُوْنَ ‐ - هُوَ اللهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْاَسْمَآءُ الْحُسْنٰىؕ يُسَبِّحُ لَهٗ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِۚ وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত (সত্য) কোন মা‘বুদ নেই। তিনিই অধিপতি, অতীব পবিত্র, পরিপূর্ণ শান্তিদাতা, নিরাপত্তা দানকারী, রক্ষক, পরাক্রমশালী, প্রবল, অতীব মহিমান্বিত; আর তারা (মুশরিকরা) তাঁর সাথে যা শরীক স্থাপন করেছে তিনি তা থেকে অনেক পবিত্র। তিনিই আল্লাহ সৃজনকর্তা, উদ্ভাবনকর্তা ও রূপদাতা, সকল উত্তম নাম তাঁরই। আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সবকিছুই তাঁর মহিমা ঘোষণা করে। তিনি অতি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাবান। (সূরা হাশর- ২৩, ২৪)
আল্লাহ চিরস্থায়ী :
هُوَ الْحَيُّ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ فَادْعُوْهُ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ ؕ اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
তিনি চিরঞ্জীব, তিনি ব্যতীত (প্রকৃত) কোন ইলাহ্ নেই; সুতরাং তাঁর ইবাদাতে একনিষ্ঠ হয়ে তোমরা তাঁকেই আহবান করো। যাবতীয় প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য। (সূরা মু’মিন- ৬৫)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ তাঁর জীবনই বাস্তব ও প্রকৃত জীবন। একমাত্র তিনিই আপন ক্ষমতায় জীবিত। তাঁর জীবন ছাড়া আর কারো জীবনই চিরস্থায়ী নয়।
اَللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّوْمُ
আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী। (সূরা আলে ইমরান- ২)
كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ ‐ وَيَبْقٰى وَجْهُ رَبِّكَ ذُو الْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ
ভূপৃষ্ঠে যা কিছু আছে সবই ধ্বংসশীল। আর অবশিষ্ট থাকবে শুধু তোমার মহিমাময় ও মহানুভব প্রতিপালকের চেহারা (সত্তা)। (সূরা আর রহমান- ২৬, ২৭)
ব্যাখ্যা : এখানে জিন ও মানুষকে এক মহাসত্য সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। আর তা হলো, তোমরা নিজেরাও অবিনশ্বর নও এবং সেসব সাজ-সরঞ্জামও চিরস্থায়ী নয়, যা তোমরা এ পৃথিবীতে ভোগ করছ। অবিনশ্বর ও চিরস্থায়ী শুধুমাত্র সুমহান আল্লাহ। কোন নির্বোধ যদি তার ক্ষমতার ক্ষুদ্র গন্ডীর মধ্যে নিজের শ্রেষ্ঠত্বের ঢঙ্কা বাজায়, কিংবা কতিপয় মানুষকে তার কর্তৃত্ব স্বীকার করায় তাহলে তার এ মিথ্যা বেশি দিন চলতে পারে না। মহাবিশ্বের বিশাল বিস্তৃতির মধ্যে পৃথিবীর অনুপাত যেখানে মটরশুটির দানার মতোও নয়, তার এক নিভৃত কোণে দশ বিশ কিংবা পঞ্চাশ ষাট বছর যে কর্তৃত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব চলে এবং তারপরই অতীত কাহিনীতে রূপান্তরিত হতে হয়- তা এমন কোন কর্তৃত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব নয়, যার জন্য কেউ গর্ব করতে পারে।
আল্লাহ প্রশংসিত :
وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ غَنِيٌّ حَمِيْدٌ
জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ সম্পদশালী ও প্রশংসিত। (সূরা বাক্বারা- ২৬৭)
اِنَّهٗ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ
নিশ্চয় তিনি প্রচুর প্রশংসা ও বিপুল সম্মানের অধিকারী। (সূরা হুদ- ৭৩)
আল্লাহ সম্মানিত :
فَاِنَّ الْعِزَّةَ لِلّٰهِ جَمِيْعًا
নিশ্চয় সকল সম্মান আল্লাহরই জন্য। (সূরা নিসা- ১৩৯)
আল্লাহ হেকমতওয়ালা :
اِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ
নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা- ২৮; সূরা আন‘আম- ৮৩)
وَاللهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ
আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা নূর- ৫৮)
আল্লাহ গুণগ্রাহী :
وَاللهُ شَكُوْرٌ حَلِيْمٌ
আল্লাহ গুণগ্রাহী ও সহনশীল। (সূরা তাগাবুন- ১৭)
ব্যাখ্যা : যখন شُكْرٌ (শুকর) শব্দটি আল্লাহর পক্ষ হতে বান্দার প্রতি শুকরিয়া আদায় করার জন্য ব্যবহৃত হয় তখন তার অর্থ হয়, কাজের স্বীকৃতি দেয়া, মূল্যায়ন করা ইত্যাদি। আর যখন বান্দার পক্ষ থেকে আল্লাহর প্রতি শুকর করার কথা বলা হয় তখন এর অর্থ হয়, নিয়ামতের স্বীকৃতি দান করা। আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার শুকরিয়া আদায় করার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ বান্দার কাজের যথার্থ মূল্যায়ন করার ব্যাপারে কুণ্ঠিত নন। বান্দা তাঁর পথে যে ধরনের যতটুকু কাজ করে আল্লাহ তার যথার্থ মূল্যায়ন করেন। বান্দার কোন কাজ পারিশ্রমিক ও পুরস্কার লাভ থেকে বঞ্চিত থাকে না। বরং তিনি মুক্তহস্তে তার প্রত্যেকটি কাজের বিনিময় তার প্রাপ্যের চেয়ে অনেক বেশি দিয়ে থাকেন।
আল্লাহ ধৈর্যশীল :
وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ غَفُوْرٌ حَلِيْمٌ
জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও ধৈর্যশীল। (সূরা বাক্বারা- ২৩৫)
আল্লাহ সর্বশ্রোতা :
وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা বাক্বারা- ২৪৪)
وَلَه مَا سَكَنَ فِى اللَّيْلِ وَالنَّهَارِؕ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
রাত ও দিনে যা কিছু থাকে তা তাঁরই, আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা আন‘আম- ১৩)
وَاِمَّا يَنْزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللهِؕ اِنَّهٗ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে তবে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাও, নিশ্চয় তিনি সবকিছু শুনেন ও জানেন। (সূরা আ‘রাফ- ২০০)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ একই সময়ে সমগ্র বিশ্বজাহানের আওয়াজ আলাদা আলাদাভাবে শুনছেন এবং কোন আওয়াজ তাঁর শ্রবণে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না, যার ফলে একটি শুনলে অন্যটি শুনেন না। অনুরূপভাবে তিনি একই সময়ে সমগ্র বিশ্বজাহানের প্রতিটি জিনিস ও ঘটনা বিস্তারিত আকারে দেখছেন।
আল্লাহ সবই দেখেন :
اِعْمَلُوْا مَا شِئْتُمْ اِنَّهٗ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
তোমরা যা ইচ্ছা তা আমল কর; নিশ্চয় তোমরা যা কর তিনি তা দেখেন। (সূরা হামীম সাজদা- ৪০)
اِنَّ رَبَّكَ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيَقْدِرُؕ اِنَّهٗ كَانَ بِعِبَادِهٖ خَبِيْرًا ۢبَصِيْرًا
তোমার প্রতিপালক যাকে চান তার রিযিক বাড়িয়ে দেন, আবার যাকে চান কমিয়ে দেন। তিনি তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে ভালোভাবেই জানেন এবং তাদেরকে পর্যবেক্ষণ করেন। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩০)
وَاتَّقُوا اللهَ وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
আর আল্লাহকে ভয় করো এবং জেনে রেখো, তোমরা যা কর আল্লাহ তা অবশ্যই দেখেন। (সূরা বাক্বারা- ২৩৩)
আল্লাহ সবকিছু রক্ষণাবেক্ষণ করেন :
اِنَّ رَبِّيْ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ حَفِيْظٌ
নিশ্চয় আমার প্রতিপালক সমসত্ম কিছুর রক্ষণাবেক্ষণকারী। (সূরা হুদ- ৫৭)
فَاللهُ خَيْرٌ حَافِظًا وَّهُوَ اَرْحَمُ الرَّاحِمِيْنَ
আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ রক্ষণাবেক্ষণকারী এবং তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু। (সূরা ইউসুফ- ৬৪)
وَرَبُّكَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ حَفِيْظٌ
আপনার প্রতিপালক সর্ববিষয়ের রক্ষণাবেক্ষণকারী। (সূরা সাবা- ২১)
আল্লাহ বরকতময় :
تَبَارَكَ الَّذِيْ بِيَدِهِ الْمُلْكُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
বরকতময় সেই সত্তা, যাঁর হাতে সার্বভৌমত্ব; তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। (সূরা মুলক- ১)
ব্যাখ্যা : تَبَارَكَ (তাবারাকা) শব্দটি বহু অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন-
(১) মহা অনুগ্রহকারী ও সর্বজ্ঞ।
(২) বড়ই মর্যাদাশীল ও সম্মানী। কারণ পৃথিবী ও আকাশের সকল রাজত্ব তাঁরই।
(৩) বড়ই পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন। কারণ তাঁর সত্তা সকল প্রকার শিরকের গন্ধমুক্ত। তাঁর সমজাতীয় কেউ নেই, ফলে তাঁর সত্তার সার্বভৌমত্বে স্থলাভিষিক্তের জন্য কোন পুত্রের প্রয়োজন নেই।
(৪) শক্তির পূর্ণতার দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠ। কারণ তিনি বিশ্বজাহানের প্রত্যেকটি জিনিসের সৃষ্টিকর্তা।
সকল বাদশাহী আল্লাহর হাতে :
اَلَمْ تَعْلَمْ اَنَّ اللهَ لَهٗ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِؕ وَمَا لَكُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ مِنْ وَّلِيٍّ وَّلَا نَصِيْرٍ
তুমি কি জান না যে, আকাশ ও পৃথিবীর আধিপত্য আল্লাহরই। আর আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন বন্ধু নেই এবং কোন সাহায্যকারীও নেই। (সূরা বাক্বারা- ১০৭)
আল্লাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা দেন এবং যার থেকে চান ক্ষমতা কেঁড়ে নেন :
قُلِ اللّٰهُمَّ مَالِكَ الْمُلْكِ تُؤْتِى الْمُلْكَ مَنْ تَشَآءُ وَتَنْزِعُ الْمُلْكَ مِمَّنْ تَشَآءُ وَتُعِزُّ مَنْ تَشَآءُ وَتُذِلُّ مَنْ تَشَآءُؕ بِيَدِكَ الْخَيْرُ ؕ اِنَّكَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
বলো, হে আল্লাহ! আপনিই রাজত্বের মালিক। আপনি যাকে চান তাকে রাজত্ব দান করেন, আবার যার থেকে চান রাজত্ব কেঁড়ে নেন। আর যাকে চান সম্মানিত করেন, আবার যাকে চান অপদস্থ করেন। আপনার হাতেই কল্যাণ; নিশ্চয় আপনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। (সূরা আলে ইমরান- ২৬)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ কোন একটি গোত্র বা জাতিকে স্থায়ী কর্তৃত্ব দান করেন না, এটা তাঁর বিরাট অনুগ্রহ। তিনি পৃথিবীতে বিভিন্ন সময় একটি দলকে দিয়ে অন্য একটি দলকে প্রতিহত করেন। অন্যথায় যদি কোন একটি নির্দিষ্ট দলকে কোথাও স্থায়ী কর্তৃত্ব দান করতেন, তাহলে তাদের প্রভাব ও ক্ষমতার বড়াইয়ের ফলে যে ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড শুরু হতো তাতে শুধু প্রাসাদ, রাজনীতি এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানই ধ্বংস হতো না, বরং ইবাদাতগৃহগুলোও বিধ্বস্ত হয়ে যেত।
কিয়ামত দিবসের বাদশাও একমাত্র আল্লাহ :
وَلَهُ الْمُلْكُ يَوْمَ يُنْفَخُ فِى الصُّوْرِؕ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِؕ وَهُوَ الْحَكِيْمُ الْخَبِيْرُ
যেদিন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে, সেদিন কর্তৃত্ব তাঁরই থাকবে। তিনি অদৃশ্য ও দৃশ্য সবকিছু সম্বন্ধে অবগত রয়েছেন। আর তিনিই প্রজ্ঞাময় ও সম্যক অবগত। (সূরা আন‘আম- ৭৩)
يَوْمَ هُمْ بَارِزُوْنَۚ لَا يَخْفٰى عَلَى اللهِ مِنْهُمْ شَيْءٌؕ لِمَنِ الْمُلْكُ الْيَوْمَ ؕ لِلّٰهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ
যেদিন তারা (কবর হতে) বের হয়ে পড়বে, সেদিন আল্লাহর নিকট তাদের কোনকিছুই গোপন থাকবে না। (আললাহ জিজ্ঞেস করবেন) আজ কর্তৃত্ব কার? (বলা হবে) প্রবল পরাক্রমশালী এক আল্লাহরই। (সূরা মু’মিন- ১৬)
ব্যাখ্যা : পৃথিবীতে বহু অহংকারী ও ভ্রান্ত লোক নিজেদের বাদশাহী ও শক্তিমত্তার অহংকার করে থাকে এবং বহু সংখ্যক লোকও তাদের বাদশাহী ও শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে নেয়, তাদের হুকুম পালন করে; এমনকি অনেকে তাদেরকেই নিজেদের প্রভু মনে করতে থাকে। কিন্তু পরকালে তাদের কাছে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে যাবে। তখন আল্লাহ বলবেন, এখন বলো! প্রকৃতপক্ষে বাদশাহী কার? ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের প্রকৃত মালিক কে? আর কার হুকুমে সবকিছু পরিচালিত হয়? এটা এমন একটা বিষয় যে, কোন ব্যক্তি যদি তা বুঝার চেষ্টা করে তাহলে সে যত বড় বাদশাহ কিংবা মহানায়কই হয়ে থাকুক না কেন সে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে এবং তার মন-মগজ থেকে শক্তিমত্তার সমস্ত অহংকার বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
সকল মালিকানা আল্লাহর :
وَلِلّٰهِ مِيْرَاثُ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِ
আসমান ও জমিনের মালিকানা আল্লাহরই। (সূরা হাদীদ- ১০)
আসমান ও জমিনের সকল বাহিনী আল্লাহর :
وَلِلّٰهِ جُنُوْدُ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِؕ وَكَانَ اللهُ عَزِيْزًا حَكِيْمًا
আসমান ও জমিনের সকল সেনাবাহিনী আল্লাহর হাতেই রয়েছে। তিনি মহাশক্তিশালী ও সুকৌশলী। (সূরা ফাতহ- ৭)
আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী :
وَاِنَّ اللهَ لَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা আলে ইমরান- ৬২)
اِنَّ رَبَّكَ لَهُوَ الْعَزِيْزُ الرَّحِيْمُ
নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক মহাপরাক্রমশালী ও পরম দয়ালু। (সূরা শু‘আরা- ৬৮)
আল্লাহ মহাকৌশলী :
وَاُمْلِيْ لَهُمْ اِنَّ كَيْدِيْ مَتِيْنٌ
আমি তাদেরকে সুযোগ দিয়ে থাকি, নিশ্চয় আমার কৌশল অত্যন্ত বলিষ্ঠ। (সূরা আ‘রাফ- ১৮৩)
وَمَكَرُوْا وَمَكَرَ اللهُؕ وَاللهُ خَيْرُ الْمَاكِرِيْنَ
আর তারা কৌশল করেছিল ফলে আল্লাহও কৌশল গ্রহণ করলেন। মূলত আল্লাহই উত্তম কৌশলী।
(সূরা আলে ইমরান- ৫৪)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর কৌশলের অর্থ হচ্ছে, যদি কেউ সত্যকে না মানে এবং সে অনুযায়ী নিজেদের মনোভাব পরিবর্তন না করে, তাহলে তিনি তাদেরকে বিদ্রোহাত্মক নীতি অবলম্বন করে চলার সুযোগ দেবেন। যতদিন তারা বেঁচে থাকবে ততদিন তিনি তাদেরকে নিজের পক্ষ থেকে রিযিক ও অনুগ্রহ দান করতে থাকবেন। ফলে তাদের জীবনসামগ্রী তাদেরকে অমনোযোগী করে রাখবে। আর তারা যা কিছু করবে আল্লাহর ফেরেশতারা নীরবে তা লিখতে থাকবেন। এভাবে হঠাৎ মৃত্যুর সময় এসে যাবে। তখন নিজেদের কৃতকর্মের হিসাব দেয়ার জন্য তাদেরকে ধরে নিয়ে যাওয়া হবে। এভাবে আল্লাহ এমন কৌশল অবলম্বন করেন- যার ফলে মানুষ সূচনায় কখনো তার পরিণামের কল্পনাও করতে পারে না। আল্লাহর পরিকল্পনা এমন সূক্ষ্ম ও অজ্ঞাত পদ্ধতিতে বাস্তবায়িত হয় যে, যতক্ষণ পর্যন্ত তা চূড়ান্ত পর্যায়ে না পৌঁছে ততক্ষণ পর্যন্ত মানুষ বিষয়টি সম্পর্কে বিন্দুমাত্রও অবগত হতে পারে না।
আল্লাহ হিসাব গ্রহণকারী :
اِنَّ اللهَ كَانَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ حَسِيْبًا
নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ের হিসাব গ্রহণকারী। (সূরা নিসা- ৮৬)
হিসাবের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট :
فَاِنَّمَا عَلَيْكَ الْبَلَاغُ وَعَلَيْنَا الْحِسَابُ
তোমার কর্তব্য তো কেবল প্রচার করা; আর হিসাব-নিকাশ তো আমার কাজ। (সূরা রা‘দ- ৪০)
اِنَّ اِلَيْنَاۤ اِيَابَهُمْ ‐ ثُمَّ اِنَّ عَلَيْنَا حِسَابَهُمْ
নিশ্চয় আমার দিকেই তাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর আমার উপরই তাদের হিসাব-নিকাশ (গ্রহণের ভার)। (সূরা গাশিয়া- ২৫, ২৬)
আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী :
وَهُوَ سَرِيْعُ الْحِسَابِ
তিনি দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী। (সূরা রা‘দ- ৪১)
اَلْيَوْمَ تُجْزٰى كُلُّ نَفْسٍ ۢبِمَا كَسَبَتْؕ لَا ظُلْمَ الْيَوْمَؕ اِنَّ اللهَ سَرِيْعُ الْحِسَابِ
আজ প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার কৃতকর্মের বিনিময় দেয়া হবে; আজ কারো প্রতি যুলুম করা হবে না। নিশ্চয় আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী। (সূরা মু’মিন- ১৭)
وَاللهُ سَرِيْعُ الْحِسَابِ
নিশ্চয় আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী। (সূরা নূর- ৩৯)
وَمَنْ يَّكْفُرْ بِاٰيَاتِ اللهِ فَاِنَّ اللهَ سَرِيْعُ الْحِسَابِ
আর যে আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করবে, (তার জেনে রাখা উচিত) আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।
(সূরা আলে ইমরান- ১৯)
ব্যাখ্যা : মানবজাতির হিসাব গ্রহণ করতে আল্লাহর কোন বিলম্ব হবে না। যেভাবে তিনি গোটা বিশ্বের সমস্ত সৃষ্টিকে একসাথে রিযিক দান করছেন এবং কাউকে রিযিক পৌঁছানোর ব্যবস্থাপনায় এমন ব্যস্ত নন যে, অন্যদের রিযিক দেয়ার অবকাশই তিনি পান না, যেভাবে তিনি গোটা বিশ্বের প্রতিটি ব্যক্তি বা বস্তুকে দেখছেন, সমস্ত শব্দ শুনছেন, প্রতিটি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর এবং বৃহৎ থেকে বৃহত্তর ব্যাপারের ব্যবস্থাপনাও করছেন, তেমনি তিনি প্রত্যেক ব্যক্তির হিসাব গ্রহণ করবেন। একটি বিচারের শুনানিতে তিনি এতটা ব্যস্ত হয়ে পড়বেন না যে, সে সময়ে অন্যান্য মামলার শুনানি করতে পারবেন না। তাছাড়া তাঁর আদালতে এ কারণেও কোন বিলম্ব হবে না যে, মামলার পটভূমি ও ঘটনাবলির বিচার-বিশ্লেষণ এবং তার সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহ করা কঠিন হবে। কেননা আদালতের বিচারক নিজেই সরাসরি বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে অবগত থাকবেন। মামলার বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষের সবকিছুই তাঁর জানা থাকবে। সমস্ত ঘটনার খুঁটি-নাটি অনস্বীকার্য সাক্ষ্য প্রমাণসহ সবিস্তারে পেশ করা হবে। আর এতে তাঁর একটুও বিলম্ব হবে না। ফলে সমস্ত মামলার ফায়সালা তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে।
আল্লাহ প্রতিশোধ গ্রহণকারী :
وَاللهُ عَزِيْزٌ ذُو انْتِقَامٍ
আর আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রতিশোধ গ্রহণকারী। (সূরা আলে ইমরান- ৪)
وَمَنْ عَادَ فَيَنْتَقِمُ اللهُ مِنْهُؕ وَاللهُ عَزِيْزٌ ذُو انْتِقَامٍ
কেউ তা (পাপ) পুনরায় করলে আল্লাহ তার কাছ থেকে প্রতিশোধ নেবেন; আর আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রতিশোধ গ্রহণে প্রবল শক্তিমান। (সূরা মায়েদা- ৯৫)
اِنَّا مِنَ الْمُجْرِمِيْنَ مُنْتَقِمُوْنَ
অবশ্যই আমি পাপীদের থেকে প্রতিশোধ নেব। (সূরা সাজদা- ২২)
اَلَيْسَ اللهُ بِعَزِيْزٍ ذِى انْتِقَامٍ
আল্লাহ কি মহাপরাক্রমশালী ও প্রতিশোধ গ্রহণকারী নন? (সূরা যুমার- ৩৭)
আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা :
وَاِنَّ رَبَّكَ لَشَدِيْدُ الْعِقَابِ
নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক কঠোর শাসিত্মদানকারী। (সূরা রা‘দ- ৬)
وَاعْلَمُوْا ۤاَنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে খুবই কঠোর। (সূরা আনফাল- ২৫)
وَاللهُ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
আর আল্লাহ কঠোর শাস্তিদানকারী। (সূরা আলে ইমরান- ১১)
فَاِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা। (সূরা বাক্বারা- ২১১)
আল্লাহ দ্রুত শাস্তিদানকারী :
اِنَّ رَبَّكَ سَرِيْعُ الْعِقَابِ وَاِنَّهٗ لَغَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক শাস্তিদানে খুবই দ্রুততর, নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল ও দয়াময়। (সূরা আন‘আম- ১৬৫)
আল্লাহ বিশ্বের সবকিছু লালন-পালন করেন :
قُلْ اَغَيْرَ اللهِ اَبْغِيْ رَبًّا وَّهُوَ رَبُّ كُلِّ شَيْءٍ
বলো, আমি কি আল্লাহকে ছেড়ে অন্য কোন প্রতিপালককে খুঁজব? অথচ তিনিই সবকিছুর প্রতিপালক।
(সূরা আন‘আম- ১৬৪)
رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا وَرَبُّ الْمَشَارِقِ
তিনি আসমান ও জমিন এবং উভয়ের মাঝে অবস্থিত সবকিছুর প্রতিপালক এবং তিনি সকল উদয়স্থলের প্রতিপালক। (সূরা সাফফাত- ৫)
জীবন ও মৃত্যু আল্লাহর হাতে :
هُوَ الَّذِيْ يُحْيِيْ وَيُمِيْتُۚ فَاِذَا قَضٰۤى اَمْرًا فَاِنَّمَا يَقُوْلُ لَهٗ كُنْ فَيَكُوْنُ
তিনিই জীবিত করেন ও মৃত্যু ঘটান। যখন তিনি কোনকিছু করার সিদ্ধান্ত নেন তখন তিনি বলেন, হও অতঃপর তা হয়ে যায়। (সূরা মু’মিন- ৬৮)
لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ يُحْيِيْ وَيُمِيْتُ
তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই, তিনিই জীবিত করেন এবং মৃত্যু ঘটান। (সূরা আ‘রাফ- ১৫৮)
وَاللهُ يُحْيِيْ وَيُمِيْتُؕ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
আল্লাহই জীবিত করেন ও মৃত্যু ঘটান; আর তোমরা যা কর আল্লাহ তা পর্যবেক্ষণ করেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৬)
আল্লাহ সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা :
اَللهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ وَّهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ وَّكِيْلٌ
আল্লাহ সবকিছুর স্রষ্টা এবং তিনিই সবকিছুর ব্যবস্থাপক। (সূরা যুমার- ৬২)
ذٰلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمْۚ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَۚ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ فَاعْبُدُوْهُۚ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ وَّكِيْلٌ
তিনিই আল্লাহ, যিনি তোমাদের প্রতিপালক; তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই। তিনিই সবকিছুর স্রষ্টা; সুতরাং তোমরা তাঁরই ইবাদাত করো; তিনি সবকিছুর তত্ত্বাবধায়ক। (সূরা আন‘আম- ১০২)
আল্লাহ হলেন বিজ্ঞ স্রষ্টা :
فَتَبَارَكَ اللهُ اَحْسَنُ الْخَالِقِيْنَ
সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ কতই না মহান! (সূরা মু’মিনূন- ১৪)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ বিশ্বজাহানের প্রত্যেকটি জিনিসের কেবল অস্তিত্বই দান করেননি; বরং তিনি প্রত্যেকটি জিনিসকে তার সত্তার সাথে সম্পর্কিত আকার-আকৃতি, শক্তি, যোগ্যতা, গুণাগুণ, বৈশিষ্ট্য, কাজ ও কাজের পদ্ধতি, স্থায়িত্বের সময়কাল, উত্থান ও ক্রমবিকাশের সীমা এবং অন্যান্য বিষয়াবলি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তারপর সেসব কার্যর্কলাপ, উপায়-উপকরণ ও সুযোগসুবিধার বদৌলতে প্রত্যেকটি সত্তা নিজ নিজ কর্মসীমার মধ্যে তথা নিজ নিজ সামর্থ্যানুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে।
اِنَّ رَبَّكَ هُوَ الْخَلَّاقُ الْعَلِيْمُ
নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক মহাস্রষ্টা ও মহাজ্ঞানী। (সূরা হিজর- ৮৬)
আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন :
وَرَبُّكَ يَخْلُقُ مَا يَشَآءُ وَيَخْتَارُؕ مَا كَانَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ ؕ سُبْحَانَ اللهِ وَتَعَالٰى عَمَّا يُشْرِكُوْنَ
তোমার প্রতিপালক যা ইচছা সৃষ্টি করেন এবং যাকে ইচ্ছা মনোনীত করেন, তাতে তাদের কোন হাত নেই। আল্লাহ পবিত্র এবং মহান; আর তারা যাকে শরীক করে তা হতে তিনি অনেক পবিত্র ও মহান। (সূরা ক্বাসাস- ৬৮)
আল্লাহর সকল সৃষ্টিই সুন্দর :
اَلَّذِيْۤ اَحْسَنَ كُلَّ شَيْءٍ خَلَقَهٗ
যিনি সবকিছুকে অতি সুন্দররূপে সৃজন করেছেন। (সূরা সাজদা- ৭)
ব্যাখ্যা : দুনিয়ার প্রতিটি জিনিস তাঁরই নির্মাণ কৌশলে নির্মিত হয়েছে। প্রতিটি জিনিসকে তিনিই আকার-আকৃতি, শক্তি, যোগ্যতা, গুণ ও বিশেষত্ব দান করেছেন। দুনিয়ায় কাজ করার জন্য হাতের যে গঠনাকৃতির প্রয়োজন ছিল, তা তিনি দিয়েছেন। পায়ের জন্য যে সর্বাধিক উপযুক্ত গঠনাকৃতির প্রয়োজন, তাও দিয়েছেন। মানুষ, পশু, উদ্ভিদ, বাতাস, পানি, আলো, প্রত্যেককে তিনি এমন বিশেষ আকৃতি দান করেছেন- যা এ বিশ্বজাহানে তার নিজের কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজন ছিল। তারপর তিনি প্রতিটি জিনিসকে কেবল তার বিশেষ আকৃতি দান করেই ছেড়ে দেননি; বরং তিনি সবাইকে পথও দেখিয়েছেন। দুনিয়ায় এমন কোন জিনিস নেই, যাকে তিনি নিজের গঠনাকৃতিকে কাজে লাগানোর এবং নিজের সৃষ্টির উদ্দেশ্য পূর্ণ করার পদ্ধতি শেখাননি। কানকে শোনা ও চোখকে দেখা তিনিই শিখিয়েছেন। মাছকে সাঁতার কাটার এবং পাখিকে উড়ার শিক্ষা তিনিই দিয়েছেন। গাছকে ফুল ও ফল দেয়ার ও মাটিকে উদ্ভিদ উৎপাদন করার নির্দেশ তিনিই দিয়েছেন। মোটকথা তিনি কেবল সারা বিশ্বজাহান এবং তাঁর সমস্ত সৃষ্টিকুলের স্রষ্টাই নন; বরং তাদের শিক্ষক ও পথপ্রদর্শকও।
আল্লাহ সুন্দরভাবে আকৃতি গঠন করেন :
هُوَ الَّذِيْ يُصَوِّرُكُمْ فِى الْاَ رْحَامِ كَيْفَ يَشَآءُؕ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
তিনি ঐ সত্তা, যিনি মাতৃগর্ভে নিজ ইচ্ছানুযায়ী তোমাদের আকৃতি গঠন করেছেন। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তিনি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা আলে ইমরান- ৬)
خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضَ بِالْحَقِّ وَصَوَّرَكُمْ فَاَحْسَنَ صُوَرَكُمْۚ وَاِلَيْهِ الْمَصِيْرُ
তিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে এবং তোমাদেরকে অতি সুন্দর আকৃতি দান করেছেন; আর তোমাদের প্রত্যাবর্তন তো তাঁরই দিকে। (সূরা তাগাবুন- ৩)
আল্লাহ সবকিছু পরিমাণ অনুযায়ী সৃষ্টি করেন :
اِنَّا كُلَّ شَيْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ
আমি সবকিছু সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত পরিমাণে। (সূরা ক্বামার- ৪৯)
আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে কোন খুঁত নেই :
مَا تَرٰى فِيْ خَلْقِ الرَّحْمٰنِ مِنْ تَفَاوُتٍؕ فَارْجِعِ الْبَصَرَ هَلْ تَرٰى مِنْ فُطُوْرٍ
দয়াময় আল্লাহর সৃষ্টিতে তুমি কোন খুঁত দেখতে পাবে না। অতএব তুমি চক্ষু ফিরিয়ে দেখো, (তাঁর সৃষ্টিতে) কোন ত্রুটি দেখতে পাও কি? (সূরা মুলক- ৩)
ثُمَّ ارْجِعِ الْبَصَرَ كَرَّتَيْنِ يَنْقَلِبْ اِلَيْكَ الْبَصَرُ خَاسِئًا وَّهُوَ حَسِيْرٌ
অতঃপর তুমি (প্রতিটি সৃষ্টির দিকে) দু’বার করে দৃষ্টি ফিরাও, সেই দৃষ্টি ব্যর্থ ও ক্লান্ত হয়ে তোমার দিকেই ফিরে আসবে। (সূরা মুলক- ৪)
আল্লাহ প্রতিটি জিনিস জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন :
وَمِنْ كُلِّ شَيْءٍ خَلَقْنَا زَوْجَيْنِ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ
আমি প্রত্যেক বস্তু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করতে পার। (সূরা যারিয়াত- ৪৯)
سُبْحَانَ الَّذِيْ خَلَقَ الْاَزْوَاجَ كُلَّهَا مِمَّا تُنْۢبِتُ الْاَ رْضُ وَمِنْ اَنْفُسِهِمْ وَمِمَّا لَا يَعْلَمُوْنَ
তিনি পবিত্র, যিনি উদ্ভিদ, মানুষ এবং তারা যা জানে না তাদের প্রত্যেককেই জোড়া জোড়া করে সৃষ্টি করেছেন। (সূরা ইয়াসীন- ৩৬)
আল্লাহ সৃষ্টির মধ্যে যা ইচ্ছা বৃদ্ধি করেন :
يَزِيْدُ فِى الْخَلْقِ مَا يَشَآءُؕ اِنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
তিনি সৃষ্টির মধ্যে যা ইচ্ছা বাড়িয়ে দেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা ফাতির- ১)
তিনি পৃথিবীর কোনকিছুই অনর্থক সৃষ্টি করেননি :
وَمَا خَلَقْنَا السَّمَآءَ وَالْاَ رْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا بَاطِلًاؕ ذٰلِكَ ظَنُّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاۚ فَوَيْلٌ لِّلَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنَ النَّارِ
আর আমি আসমান, জমিন ও এ উভয়ের মধ্যে অবস্থিত কোনকিছুই অনর্থক সৃষ্টি করিনি। (আমি এসব অনর্থক সৃষ্টি করেছি) এরূপ ধারণা তো তাদের যারা কাফির। সুতরাং কাফিরদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের দুর্ভোগ। (সূরা সোয়াদ- ২৭)
সকল সৃষ্টিই একেকটি নিয়মে চলছে :
خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضَ بِالْحَقِّۚ يُكَوِّرُ اللَّيْلَ عَلَى النَّهَارِ وَيُكَوِّرُ النَّهَارَ عَلَى اللَّيْلِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَؕ كُلٌّ يَّجْرِيْ لِاَجَلٍ مُّسَمًّىؕ اَ لَا هُوَ الْعَزِيْزُ الْغَفَّارُ
তিনি যথাযথভাবে আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। তিনি রাত দিয়ে দিনকে আচ্ছাদিত করেন এবং দিন দিয়ে রাতকে আচ্ছাদিত করেন। তিনি নিয়মাধীন করেছেন সূর্য ও চন্দ্রকে। প্রত্যেকেই নির্ধারিত সময় পর্যন্ত চলতে থাকবে। জেনে রেখো, তিনি মহাপরাক্রমশালী ও পরম ক্ষমাশীল। (সূরা যুমার- ৫)
আল্লাহ তাঁর সৃষ্টিকে দেখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন :
قُلْ سِيْرُوْا فِى الْاَ رْضِ فَانْظُرُوْا كَيْفَ بَدَاَ الْخَلْقَ ثُمَّ اللهُ يُنْشِئُ النَّشْاَةَ الْاٰخِرَةَؕ اِنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
বলো, তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ করো এবং অনুধাবন করো যে, কীভাবে তিনি সৃষ্টি আরম্ভ করেছেন? অতঃপর আল্লাহ সৃষ্টি করবেন পরবর্তী সৃষ্টিকে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। (সূরা আনকাবূত- ২০)
اَوَلَمْ يَنْظُرُوْا فِيْ مَلَكُوْتِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِ وَمَا خَلَقَ اللهُ مِنْ شَيْءٍ
তারা কি লক্ষ্য করে না, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌম কর্তৃত্ব সম্পর্কে এবং আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন সে সম্পর্কে। (সূরা আ‘রাফ- ১৮৫)
আল্লাহর অনেক সৃষ্টি সম্পর্কে মানুষ জানে না :
وَالْخَيْلَ وَالْبِغَالَ وَالْحَمِيْرَ لِتَرْكَبُوْهَا وَزِيْنَةًؕ وَيَخْلُقُ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ
তিনি তোমাদের আরোহণ ও শোভার জন্য সৃষ্টি করেছেন ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা। আর তিনি সৃষ্টি করেছেন এমন অনেক কিছু, যা তোমরা অবগত নও। (সূরা নাহল- ৮)
এ বিশাল আকাশ ও পৃথিবী আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন :
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضَ وَجَعَلَ الظُّلُمَاتِ وَالنُّوْرَؕ ثُمَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِرَبِّهِمْ يَعْدِلُوْنَ
সকল প্রশংসা আল্লাহরই যিনি আসমানসমূহ ও জমিন সৃষ্টি করেছেন, আর সৃষ্টি করেছেন অন্ধকার ও আলো। এরপরও কাফিররা তাদের প্রতিপালকের সমকক্ষ দাঁড় করায়। (সূরা আন‘আম- ১)
তিনি আকাশ ও জমিনকে স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন :
اَلَّذِيْ خَلَقَ سَبْعَ سَمٰوَاتٍ طِبَاقًا
তিনি সৃষ্টি করেছেন সাতটি আকাশ স্তরে স্তরে। (সূরা মুলক- ৩)
اَللهُ الَّذِيْ خَلَقَ سَبْعَ سَمٰوَاتٍ وَّمِنَ الْاَ رْضِ مِثْلَهُنَّؕ يَتَنَزَّلُ الْاَمْرُ بَيْنَهُنَّ لِتَعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌؕ وَاَنَّ اللهَ قَدْ اَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا
আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন সপ্তাকাশ এবং অনুরূপভাবে পৃথিবীও। এগুলোর মধ্যে নেমে আসে তাঁর নির্দেশ; যেন তোমরা বুঝতে পার যে, আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান এবং আল্লাহ জ্ঞান দিয়ে সবকিছুই পরিবেষ্টন করে রেখেছেন। (সূরা তালাক্ব- ১২)
আল্লাহ আকাশকে সুসজ্জিত করেছেন :
اِنَّا زَيَّنَّا السَّمَآءَ الدُّنْيَا بِزِيْنَةِنِ الْكَوَاكِبِ
নিশ্চয় আমি পৃথিবীর আকাশকে সুসজ্জিত করেছি নক্ষত্রমালার সৌন্দর্য দিয়ে। (সূরা সাফ্ফাত- ৬)
وَلَقَدْ جَعَلْنَا فِى السَّمَآءِ بُرُوْجًا وَّزَيَّنَّاهَا لِلنَّاظِرِيْنَ
আমি আকাশে গ্রহ-নক্ষত্র সৃষ্টি করেছি এবং সেটাকে সুশোভিত করেছি দর্শকদের জন্য। (সূরা হিজর- ১৬)
ব্যাখ্যা : দুনিয়ার আকাশ বলতে বুঝানো হয়েছে দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশকে, যা আমরা কোন দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্য ছাড়াই খালি চোখে দেখতে পাই। এছাড়াও আমরা বিভিন্ন প্রকার শক্তিশালী পর্যবেক্ষণ যন্ত্রপাতির সাহায্যে যে বিশ্বকে দেখি এবং যেসব বিশ্ব এখনো আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়নি, সেগুলো সবই দূরবর্তী আকাশ।
আল্লাহ এ আকাশ ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন :
وَهُوَ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضَ فِيْ سِتَّةِ اَيَّامٍ
আর তিনিই আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। (সূরা হুদ- ৭)
اَلَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِيْ سِتَّةِ اَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوٰى عَلَى الْعَرْشِۚ اَلرَّحْمٰنُ فَاسْاَلْ بِهٖ خَبِيْرًا
তিনি আকাশ-জমিন ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন; অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হয়েছেন। তিনিই ‘রহমান’, তাঁর সম্বন্ধে যে অবগত আছে তাকে জিজ্ঞেস করে দেখো। (সূরা ফুরক্বান- ৫৯)
আল্লাহ সৃষ্টির কাজে ক্লান্ত হন না :
وَلَقَدْ خَلَقْنَا السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِيْ سِتَّةِ اَيَّامٍ وَّمَا مَسَّنَا مِنْ لُّغُوْبٍ
আমি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী এবং এগুলোর মধ্যস্থিত সবকিছু সৃষ্টি করেছি ছয় দিনে। আর (এসব সৃষ্টিতে) কোন ক্লান্তি আমাকে স্পর্শ করেনি। (সূরা ক্বাফ- ৩৮)
তিনি রাত-দিন ও চন্দ্র-সূর্য সৃষ্টি করেছেন :
وَهُوَ الَّذِيْ خَلَقَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَؕ كُلٌّ فِيْ فَلَكٍ يَّسْبَحُوْنَ
আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিবস এবং সূর্য ও চন্দ্র; প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণ করে। (সূরা আম্বিয়া- ৩৩)
আল্লাহ বিভিন্ন আকৃতির প্রাণী সৃষ্টি করেছেন :
وَاللهُ خَلَقَ كُلَّ دَآبَّةٍ مِّنْ مَّآءٍۚ فَمِنْهُمْ مَّنْ يَّمْشِيْ عَلٰى بَطْنِهٖۚ وَمِنْهُمْ مَّنْ يَّمْشِيْ عَلٰى رِجْلَيْنِۚ وَمِنْهُمْ مَّنْ يَّمْشِيْ عَلٰۤى اَرْبَعٍؕ يَخْلُقُ اللهُ مَا يَشَآءُؕ اِنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
আল্লাহ সমসত্ম জীব সৃষ্টি করেছেন পানি হতে, তাদের কতক পেটে ভর দিয়ে চলে, কতক দু’পায়ে চলে এবং কতক চলে চার পায়ে। আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন, নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা নূর- ৪৫)
আল্লাহ জিন জাতিকে আগুন দিয়ে সৃষ্টি করেছেন :
وَخَلَقَ الْجَآنَّ مِنْ مَّارِجٍ مِّنْ نَّارٍ
আর তিনি জিন (জাতি) কে সৃষ্টি করেছেন অগ্নিশিখা হতে। (সূরা আর রহমান- ১৫)
আল্লাহ মানুষকে সুন্দরভাবে সৃষ্টি করেছেন :
لَقَدْ خَلَقْنَا الْاِنْسَانَ فِۤيْ اَحْسَنِ تَقْوِيْمٍ
আমি মানুষকে সুন্দরতম আকৃতিতে সৃষ্টি করেছি। (সূরা তীন- ৪)
ব্যাখ্যা : কয়েকটি নিষ্প্রাণ উপাদানের সমাহার এবং রাসায়নিক সংযোগের মাধ্যমে মানুষ নামক একটি বিস্ময়কর সত্তা সৃষ্টি করা হয়েছে, তার মধ্যে সংযুক্ত করা হয়েছে আবেগ, অনুভূতি, চেতনা, বুদ্ধিবৃত্তি ও চিন্তা-কল্পনার এমনসব অদ্ভুত শক্তি যাদের কোন একটির উৎসও তার মৌলিক উপাদানগুলোর মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় না। তারপর শুধু এতটুকুই নয় তার মধ্যে এমনসব অদ্ভুত প্রজনন শক্তিও সৃষ্টি করে দেয়া হয়েছে, যার ফলে কোটি কোটি মানুষ সেই একই কাঠামো এবং ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যের ধারক হিসেবে বের হয়ে আসছে। মানুষ সৃষ্টির এ মহৎ পরিকল্পনা, তাকে বাস্তব কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগ করা আল্লাহর অসীম কুদরতের প্রমাণ। মানুষ যদি শুধুমাত্র নিজের জন্মের উপরই চিন্তা-ভাবনা করে তাহলে জানতে পারবে যে, এক একটি মানুষের অস্তিত্বের মধ্যে আল্লাহর বাস্তব ব্যবস্থাপনা ও কলা-কৌশল সর্বক্ষণ সক্রিয় রয়েছে। প্রত্যেকের অস্তিত্ব, বৃদ্ধি ও বিকাশের প্রতিটি পর্যায়ই তাঁর ইচ্ছার ভিত্তিতে স্থির হয়। তাকে সৃষ্টি করা, সুন্দর আকৃতি প্রদান করা, মাতৃগর্ভে ধারণ করা, জন্মদান করা, লালন-পালন করা এবং জীবিকা নির্বাহে প্রতিদিনের চলাফেরা সবকিছুই আল্লাহর ইচ্ছাতে সংঘঠিত হয়।
মানুষের মেয়াদ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন :
هُوَ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ طِيْنٍ ثُمَّ قَضٰۤى اَجَلًاؕ وَاَجَلٌ مُّسَمًّى عِنْدَهٗ ثُمَّ اَنْتُمْ تَمْتَرُوْنَ
তিনিই তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর একটি কাল নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন এবং আরো একটি নির্ধারিত কাল আছে যা তিনিই জ্ঞাত, তারপরও তোমরা সন্দেহ কর। (সূরা আন‘আম- ২)
মানুষের মধ্যে আত্মীয়তা সৃষ্টি করেছেন :
وَهُوَ الَّذِيْ خَلَقَ مِنَ الْمَآءِ بَشَرًا فَجَعَلَهٗ نَسَبًا وَّصِهْرًاؕ وَكَانَ رَبُّكَ قَدِيْرًا
তিনিই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পানি হতে; অতঃপর তাকে বংশগত ও বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ করেছেন। আর তোমার প্রতিপালক (এসব বিষয়ে) সর্বশক্তিমান। (সূরা ফুরক্বান- ৫৪)
ব্যাখ্যা : তিনি মানুষের একটি নয় বরং দু’টি আলাদা আলাদা নমুনা (নর ও নারী) তৈরি করেছেন। তারপর এ জোড়াগুলো মিলিয়ে দুনিয়াতে তাদের মাঝে ভারসাম্য তৈরি করে দিয়েছেন। একদিকে তাদের থেকে পুত্র ও নাতিদের একটি ধারা চলছে, যারা অন্যের ঘর থেকে বিয়ে করে স্ত্রী নিয়ে আসছে। আবার অন্যদিকে কন্যা ও নাতনীদের একটি ধারা চলছে, যারা স্ত্রী হয়ে অন্যের ঘরে চলে যাচ্ছে। এভাবে এক পরিবারের সাথে অন্য পরিবার মিশে বংশ ও সভ্যতার বিকাশ ঘটছে।
প্রশান্তির জন্য জোড়া সৃষ্টি করেছেন :
هُوَ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ وَّجَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا لِيَسْكُنَ اِلَيْهَا
তিনিই তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তা হতে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন, যাতে সে তার নিকট প্রশান্তি লাভ করতে পারে। (সূরা আ‘রাফ- ১৮৯)
ব্যাখ্যা : স্রষ্টার প্রজ্ঞার পূর্ণতা হচ্ছে, তিনি মানুষকে দু’টি জাতির আকারে সৃষ্টি করেছেন। তারা প্রত্যেকে একে অন্যের জোড়ায় পরিণত হয়েছে। প্রত্যেকের শরীর, প্রবৃত্তি এবং উদ্যোগসমূহ অন্যের শারীরিক ও প্রবৃত্তির দাবীসমূহের পরিপূর্ণ জবাব। সেই স্রষ্টা এ উভয় জাতির লোকদেরকে সৃষ্টির সূচনা থেকেই আনুপাতিক হারে সৃষ্টি করে আসছেন। কোন এলাকায় কেবল পুত্রসন্তানই অথবা কেবল কন্যাসন্তানই জন্মলাভ করছে এমন কথা শোনা যায় না। এটা এমন জিনিস, যার মধ্যে কোন মানুষের সামান্যতম হস্তÿÿপের অবকাশও নেই। হাজার হাজার বছর থেকে কোটি কোটি মানুষের জন্মলাভে এ ব্যবস্থা সুসামঞ্জস্য পদ্ধতিতে কার্যকর থাকা কখনো নিছক আকস্মিক ঘটনা হতে পারে না। আবার বহু ইলাহের সম্মিলিত ব্যবস্থাপনার ফলও হতে পারে না।
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি করেছেন :
وَمِنْ اٰيَاتِهٖۤ اَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِّنْ اَنْفُسِكُمْ اَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوْاۤ اِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَّوَدَّةً وَّرَحْمَةًؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ
আর তাঁর দৃষ্টান্তগুলোর মধ্যে একটি এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের নিজেদের মধ্য থেকে স্ত্রীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি লাভ করতে পার। অতঃপর তিনি তোমাদের মাঝে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করে দিয়েছেন। নিশ্চয় এতে ঐসব লোকদের জন্য রয়েছে নিদর্শন, যারা গভীরভাবে চিন্তা করে। (সূরা রূম- ২১)
ব্যাখ্যা : স্রষ্টা নিজেই পরিকল্পিতভাবে এ ব্যবস্থা করেছেন, যার ফলে পুরুষ তার প্রাকৃতিক দাবী নারীর কাছে এবং নারী তার প্রাকৃতিক চাহিদা পুরুষের কাছে লাভ করবে এবং তারা উভয়ে পরস্পরের সাথে সম্পর্কিত থেকেই প্রশান্তি ও সুখ লাভ করবে। এ বিজ্ঞানময় ব্যবস্থাপনাকে স্রষ্টা একদিকে মানব বংশধারা অব্যাহত থাকার এবং অন্যদিকে মানবিক সভ্যতার মাধ্যম হিসেবে পরিণত করেছেন। স্রষ্টা নিজের জ্ঞান ও প্রজ্ঞার দ্বারা পুরুষ ও নারীর মধ্যে পরস্পরের এমন চাহিদা সৃষ্টি করেছেন, যার ফলে তারা উভয়ে মিলে একসাথে না থাকলে শান্তি ও সুখ লাভ করতে পারে না। শান্তির আশায় তাদেরকে একত্রে ঘর বাঁধতে বাধ্য করে। এরই বদৌলতে পরিবার ও গোত্র অস্তিত্ব লাভ করে। হাজার হাজার বছর থেকে অনবরত অসংখ্য পুরুষ ও নারীকে এ বিশেষ অস্থিরতা সহকারে সৃষ্টি করা এটা কেবল একজন জ্ঞানীর প্রজ্ঞার সুস্পষ্ট নিদর্শন। ভালোবাসা নারী ও পুরুষের মধ্যে এমন একটি আকর্ষণ, যা তাদেরকে পরস্পরের সাথে সংলগ্ন করে রাখে। আর রহমত অর্থ হচ্ছে এমন আত্মিক সম্পর্ক, যা স্বামী-স্ত্রীর জীবনে পর্যায়ক্রমে বিকাশ লাভ করে। এর বদৌলতে তারা দু’জনে একে অপরের কল্যাণকামী ও সুখ-দুঃখে সহানুভূতিশীল হয়ে যায়। কোটি কোটি মানুষ তাদের জীবনে যে ভালোবাসা লাভ করেছে এগুলো কোন সাধারণ বস্তু নয়। এগুলোকে পরিমাপ করা অসম্ভব। মানুষের শারীরিক গঠনে যেসব উপাদানের সমাবেশ ঘটানো হয়েছে, তার মধ্যে কোথাও এদের উৎস চিহ্নিত করা যেতে পারে না। একজন প্রজ্ঞাবান স্রষ্টা স্বেচ্ছায় একটি উদ্দেশ্য সামনে রেখে পূর্ণ সামঞ্জস্য সহকারে মানুষের মধ্যে তা সংস্থাপন করে দিয়েছেন।
আল্লাহ বিশ্বজগৎ পরিচালনা করেন :
يُدَبِّرُ الْاَمْرَ مِنَ السَّمَآءِ اِلَى الْاَ رْضِ ثُمَّ يَعْرُجُ اِلَيْهِ فِيْ يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهٗۤ اَلْفَ سَنَةٍ مِّمَّا تَعُدُّوْنَ
তিনি আসমান থেকে জমিন পর্যন্ত যাবতীয় বিষয় নিয়ন্ত্রণ করেন। অবশেষে তা তাঁর নিকট পৌঁছাবে এমন একদিনে, যার পরিমাণ হবে তোমাদের গণনায় হাজার বছরের সমান। (সূরা সাজদা- ৫)
আল্লাহ রাত ও দিনের আবর্তন ঘটান :
يُوْلِجُ اللَّيْلَ فِى النَّهَارِ وَيُوْلِجُ النَّهَارَ فِى اللَّيْلِ
তিনি রাতকে দিনে প্রবেশ করান এবং দিনকে রাতে প্রবেশ করান। (সূরা ফাতির- ১৩)
قُلْ اَرَاَيْتُمْ اِنْ جَعَلَ اللهُ عَلَيْكُمُ اللَّيْلَ سَرْمَدًا اِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَنْ اِلٰهٌ غَيْرُ اللهِ يَاْتِيْكُمْ بِضِيَآءٍؕ اَفَلَا تَسْمَعُوْنَ ‐ قُلْ اَرَاَيْتُمْ اِنْ جَعَلَ اللهُ عَلَيْكُمُ النَّهَارَ سَرْمَدًا اِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَنْ اِلٰهٌ غَيْرُ اللهِ يَاْتِيْكُمْ بِلَيْلٍ تَسْكُنُوْنَ فِيْهِؕ اَفَلَا تُبْصِرُوْنَ
বলো, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, আল্লাহ যদি রাতকে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করে দেন তবে আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন ইলাহ্ আছে কি, যে তোমাদেরকে আলো এনে দিতে পারে? তবুও কি তোমরা কর্ণপাত করবে না? বলো, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, আল্লাহ যদি দিনকে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করেন তবে আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন ইলাহ্ আছে কি, যে তোমাদের জন্য রাতের আবির্ভাব ঘটাবে যেন তোমরা বিশ্রাম করতে পার? তবুও কি তোমরা ভেবে দেখবে না? (সূরা ক্বাসাস- ৭১, ৭২)
ব্যাখ্যা : সূর্য ও পৃথিবীর মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের সুশৃঙ্খল পরিবর্তনের কারণে রাত-দিনের পরিবর্তন সাধিত হয়। এটি একজন বিশ্বজনীন ব্যবস্থাপক ও সমগ্র বিশ্বের উপর নিরঙ্কুশ কর্তৃত্বশালী শাসকের অস্তিত্বের সুস্পষ্ট আলামত। এর মধ্যে সুস্পষ্ট নৈপূণ্য, বিজ্ঞতা ও উদ্দেশ্যমূলক তৎপরতাও দেখা যায়। কারণ দুনিয়ার সমস্ত প্রয়োজন ও অভাব পূরণ এ দিন-রাতের আবর্তনের সাথে যুক্ত রয়েছে। এ থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, যিনি পৃথিবীর বুকে এসব বস্তু সৃষ্টি করেছেন তিনি নিজেই তাদের স্থিতি ও স্থায়িত্বের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই সরবরাহ করেন। এ বিশ্বজনীন ব্যবস্থাপক মাত্র একজন। তিনি খেলাচ্ছলে এ বিশ্বের কোনকিছুই সৃষ্টি করেননি বরং উদ্দেশ্যমূলকভাবে তিনি কাজ করছেন। অনুগ্রহকারী ও পালনকারী হিসেবে তিনিই ইবাদাত লাভের হকদার এবং দিন-রাতের আবর্তনের অধীন কোন সত্তাই রব ও প্রভু নয় বরং রবের অধীনস্থ দাস মাত্র।
আল্লাহ জীবিত থেকে মৃত ও মৃত থেকে জীবিতকে বের করেন :
يُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَيُخْرِجُ الْمَيِّتَ مِنَ الْحَيِّ وَيُحْيِى الْاَ رْضَ بَعْدَ مَوْتِهَاؕ وَكَذٰلِكَ تُخْرَجُوْنَ
তিনি জীবিতকে মৃত থেকে এবং মৃতকে জীবিত থেকে বের করে আনেন। তিনিই জমিনকে তার মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত করেন। আর এভাবেই তোমাদেরকে (মৃত্যুর পর পুনরায়) বের করে আনা হবে। (সূরা রূম- ১৯)
আল্লাহ দুর্বলকে সবল করেন, সবলকে দুর্বল করেন :
اَللهُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ ضُعْفٍ ثُمَّ جَعَلَ مِنْ ۢبَعْدِ ضُعْفٍ قُوَّةً ثُمَّ جَعَلَ مِنْ ۢبَعْدِ قُوَّةٍ ضُعْفًا وَّشَيْبَةًؕ يَخْلُقُ مَا يَشَآءُۚ وَهُوَ الْعَلِيْمُ الْقَدِيْرُ
আল্লাহ ঐ সত্তা, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেন দুর্বল অবস্থায়। অতঃপর তিনি দুর্বলতার পর শক্তি দান করেন, তারপর শক্তির পর পুনরায় দুর্বলতা ও বার্ধক্য দান করেন। তিনি যা ইচ্ছা তা-ই সৃষ্টি করেন এবং তিনিই সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান। (সূরা রূম- ৫৪)
আল্লাহ হাসান এবং কাঁদান :
وَاَنَّهٗ هُوَ اَضْحَكَ وَاَبْكٰى
আর তিনিই হাসান এবং তিনিই কাঁদান। (সূরা নাজম- ৪৩)
আল্লাহই মারেন এবং বাঁচান :
وَاَنَّهٗ هُوَ اَمَاتَ وَاَحْيَا
আর তিনিই মারেন ও তিনিই বাঁচান। (সূরা নাজম- ৪৪)
তিনিই সম্পদ দান করেন :
وَاَنَّهٗ هُوَ اَغْنٰى وَاَقْنٰى
আর তিনিই অভাবমুক্ত ও পরিতুষ্ট করেন। (সূরা নাজম- ৪৮)
আল্লাহ মানুষের অন্তর পরিবর্তন করেন :
وَنُقَلِّبُ اَفْئِدَتَهُمْ وَاَبْصَارَهُمْ كَمَا لَمْ يُؤْمِنُوْا بِهٖۤ اَوَّلَ مَرَّةٍ وَّنَذَرُهُمْ فِيْ طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُوْنَ
তারা যেমন প্রথমবার তাতে ঈমান আনেনি, তাই আমিও তাদের মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে দেব এবং তাদেরকে তাদের অবাধ্যতার আবর্তে ঘুরপাক খাওয়ার জন্য ছেড়ে দেব। (সূরা আন‘আম- ১১০)
আল্লাহ ঘুম দেন ও জাগ্রত করেন :
وَهُوَ الَّذِيْ يَتَوَفَّاكُمْ بِاللَّيْلِ وَيَعْلَمُ مَا جَرَحْتُمْ بِالنَّهَارِ ثُمَّ يَبْعَثُكُمْ فِيْهِ لِيُقْضٰۤى اَجَلٌ مُّسَمًّىۚ ثُمَّ اِلَيْهِ مَرْجِعُكُمْ ثُمَّ يُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
তিনিই রাতে তোমাদের মৃত্যু ঘটান এবং দিবসে তোমরা যা কর, তা তিনি জানেন। অতঃপর দিবসে তোমাদেরকে পুনর্জাগরণ করেন, যেন নির্ধারিত কাল পূর্ণ হয়। অতঃপর তাঁর দিকেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর তোমরা (দুনিয়াতে) যা করেছিলে, সে সম্বন্ধে তোমাদেরকে অবহিত করবেন। (সূরা আন‘আম- ৬০)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ নিজের সৃষ্টির প্রতি বড়ই করুণাশীল। মানুষ দুনিয়ায় অনবরত পরিশ্রম করতে পারে না। প্রত্যেকবার কয়েক ঘণ্টা পরিশ্রমের পর তাকে কয়েক ঘণ্টা বিশ্রাম নিতে হয়, যাতে সে আবার কয়েক ঘণ্টা কাজ করার শক্তি পায়। প্রজ্ঞাময় আল্লাহ তা‘আলা এ উদ্দেশ্যে মানুষের মধ্যে নিদ্রার এমন চাহিদা ঢেলে দিয়েছেন, যার ফলে কোন ব্যক্তির ইচ্ছা ছাড়াই কয়েক ঘণ্টা জাগরণের পর কয়েক ঘণ্টা বিশ্রাম নিতে বাধ্য করে এবং প্রয়োজন শেষ হয়ে গেলে স্বাভাবিকভাবেই বিশ্রাম ত্যাগ করে। এটি জন্মগতভাবে মানুষের প্রকৃতিতে রেখে দেয়া হয়েছে।
আল্লাহ বিদ্যুৎ চমকান :
هُوَ الَّذِيْ يُرِيْكُمُ الْبَرْقَ خَوْفًا وَّطَمَعًا وَّيُنْشِئُ السَّحَابَ الثِّقَالَ
তিনিই তোমাদেরকে পর্যবেক্ষণ করান বিজলী। (অতঃপর এর মাধ্যমে) ভয় ও ভরসা সঞ্চার করান এবং তিনিই সৃষ্টি করেন ভারী মেঘ। (সূরা রা‘দ- ১২)
আল্লাহ আকাশ থেকে বজ্রপাত করেন :
وَيُرْسِلُ الصَّوَاعِقَ فَيُصِيْبُ بِهَا مَنْ يَّشَآءُ وَهُمْ يُجَادِلُوْنَ فِى اللهِۚ وَهُوَ شَدِيْدُ الْمِحَالِ
তিনি বজ্রপাত করেন এবং যাকে ইচ্ছা তা দ্বারা আঘাত করেন। আর তারা আল্লাহ সম্বন্ধে ঝগড়া করে, অথচ তিনি মহাশক্তিশালী। (সূরা রা‘দ ১৩)
আল্লাহ বৃষ্টি তৈরি করেন :
اَللهُ الَّذِيْ يُرْسِلُ الرِّيَاحَ فَتُثِيْرُ سَحَابًا فَيَبْسُطُهٗ فِى السَّمَآءِ كَيْفَ يَشَآءُ وَيَجْعَلُهٗ كِسَفًا فَتَرَى الْوَدْقَ يَخْرُجُ مِنْ خِلَالِه ۚ فَاِذَاۤ اَصَابَ بِهٖ مَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِه ۤ اِذَا هُمْ يَسْتَبْشِرُوْنَ
আল্লাহ এমন সত্তা, যিনি বাতাস প্রেরণ করেন। অতঃপর বাতাস মেঘরাশিকে সঞ্চালন করে; তারপর তিনি মেঘরাশিকে যেমন ইচ্ছা আকাশে পরিব্যাপ্তি করে দেন এবং কখনো তা খন্ড-বিখন্ড করে দেন। অতঃপর তুমি দেখতে পাও যে, তার মধ্য থেকে বের হয়ে আসে বৃষ্টিধারা। তিনি যখন (সঞ্চালন করার) ইচ্ছা করেন, তখন তার বান্দাদের মধ্যে যাদেরকে ইচ্ছা তা পৌঁছে দেন। (ফলে) তারা আনন্দ করতে থাকে। (সূরা রূম- ৪৮)
আল্লাহ মৃত জমিনকে জীবিত করেন :
اِعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ يُحْيِى الْاَ رْضَ بَعْدَ مَوْتِهَاؕ قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ الْاٰيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُوْنَ
জেনে রেখো, আল্লাহই পৃথিবীকে তার মৃত্যুর পর জীবন দান করেন। আমি তো কেবল নিদর্শনগুলো তোমাদের জন্য বিশদভাবে বর্ণনা করি, যেন তোমরা বুঝতে পার। (সূরা হাদীদ- ১৭)
وَاللهُ اَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَحْيَا بِهِ الْاَ رْضَ بَعْدَ مَوْتِهَاؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّسْمَعُوْنَ
আল্লাহ আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন এবং এর দ্বারা মৃত ভূমিকে জীবিত করেন। অবশ্যই যে সম্প্রদায় কথা শুনে তাদের জন্য এতে নিদর্শন রয়েছে। (সূরা নাহল- ৬৫)
আল্লাহ বিশ্বের ভারসাম্য ঠিক রাখেন :
اِنَّ اللهَ يُمْسِكُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضَ اَنْ تَزُوْلًا ۚ وَلَئِنْ زَالَتَاۤ اِنْ اَمْسَكَهُمَا مِنْ اَحَدٍ مِّنْ ۢبَعْدِهٖؕ اِنَّهٗ كَانَ حَلِيْمًا غَفُوْرًا
নিশ্চয় আল্লাহ আসমান ও জমিনকে স্থিরভাবে ধরে রাখেন, যেন তা (স্বীয় কক্ষপথ থেকে) সরে না যায়। যদি এরা সরে যায় তবে তিনি ছাড়া কে এদেরকে ধরে রাখবে? নিশ্চয় তিনি অতিশয় সহনশীল ও পরম ক্ষমাশীল। (সূরা ফাতির- ৪১)
আল্লাহ সর্বদা কর্মতৎপর :
يَسْاَلُهٗ مَنْ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِؕ كُلَّ يَوْمٍ هُوَ فِيْ شَاْنٍ
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা আছে সবই তাঁর নিকট প্রতিদিন প্রার্থনা করে, তিনি সর্বদা মহান কার্যে রত। (সূরা আর রহমান- ২৯)
ব্যাখ্যা : মহাবিশ্বের এ কর্মক্ষেত্রে প্রতি মুহূর্তে আল্লাহ তা‘আলার কর্মতৎপরতার এক সীমাহীন ধারাবাহিকতা চলছে। কাউকে তিনি মারছেন আবার কাউকে জীবন দান করছেন। কারো উত্থান ঘটাচ্ছেন আবার কারো পতন ঘটাচ্ছেন। কাউকে আরোগ্য দান করছেন আবার কাউকে রোগাক্রান্ত করছেন। কাউকে ডুবন্ত অবস্থা থেকে রক্ষা করছেন আবার কাউকে নিমজ্জিত করছেন। সকল সৃষ্টিকে নানাভাবে রিযিক দান করছেন। অসংখ্য বস্তুকে নতুন নতুন আকার-আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি করছেন। তাঁর পৃথিবী কখনো এক অবস্থায় অপরিবর্তিত থাকে না। তাঁর পরিবেশ ও অবস্থা প্রতি মুহূর্তে পরিবর্তিত হতে থাকে।
اَللهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ وَّهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ وَّكِيْلٌ
আল্লাহ সবকিছুর স্রষ্টা এবং তিনিই সবকিছুর ব্যবস্থাপক। (সূরা যুমার- ৬২)
ذٰلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمْۚ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَۚ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ فَاعْبُدُوْهُۚ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ وَّكِيْلٌ
তিনিই আল্লাহ, যিনি তোমাদের প্রতিপালক; তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই। তিনিই সবকিছুর স্রষ্টা; সুতরাং তোমরা তাঁরই ইবাদাত করো; তিনি সবকিছুর তত্ত্বাবধায়ক। (সূরা আন‘আম- ১০২)
আল্লাহ হলেন বিজ্ঞ স্রষ্টা :
فَتَبَارَكَ اللهُ اَحْسَنُ الْخَالِقِيْنَ
সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ কতই না মহান! (সূরা মু’মিনূন- ১৪)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ বিশ্বজাহানের প্রত্যেকটি জিনিসের কেবল অস্তিত্বই দান করেননি; বরং তিনি প্রত্যেকটি জিনিসকে তার সত্তার সাথে সম্পর্কিত আকার-আকৃতি, শক্তি, যোগ্যতা, গুণাগুণ, বৈশিষ্ট্য, কাজ ও কাজের পদ্ধতি, স্থায়িত্বের সময়কাল, উত্থান ও ক্রমবিকাশের সীমা এবং অন্যান্য বিষয়াবলি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তারপর সেসব কার্যর্কলাপ, উপায়-উপকরণ ও সুযোগসুবিধার বদৌলতে প্রত্যেকটি সত্তা নিজ নিজ কর্মসীমার মধ্যে তথা নিজ নিজ সামর্থ্যানুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে।
اِنَّ رَبَّكَ هُوَ الْخَلَّاقُ الْعَلِيْمُ
নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক মহাস্রষ্টা ও মহাজ্ঞানী। (সূরা হিজর- ৮৬)
আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন :
وَرَبُّكَ يَخْلُقُ مَا يَشَآءُ وَيَخْتَارُؕ مَا كَانَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ ؕ سُبْحَانَ اللهِ وَتَعَالٰى عَمَّا يُشْرِكُوْنَ
তোমার প্রতিপালক যা ইচছা সৃষ্টি করেন এবং যাকে ইচ্ছা মনোনীত করেন, তাতে তাদের কোন হাত নেই। আল্লাহ পবিত্র এবং মহান; আর তারা যাকে শরীক করে তা হতে তিনি অনেক পবিত্র ও মহান। (সূরা ক্বাসাস- ৬৮)
আল্লাহর সকল সৃষ্টিই সুন্দর :
اَلَّذِيْۤ اَحْسَنَ كُلَّ شَيْءٍ خَلَقَهٗ
যিনি সবকিছুকে অতি সুন্দররূপে সৃজন করেছেন। (সূরা সাজদা- ৭)
ব্যাখ্যা : দুনিয়ার প্রতিটি জিনিস তাঁরই নির্মাণ কৌশলে নির্মিত হয়েছে। প্রতিটি জিনিসকে তিনিই আকার-আকৃতি, শক্তি, যোগ্যতা, গুণ ও বিশেষত্ব দান করেছেন। দুনিয়ায় কাজ করার জন্য হাতের যে গঠনাকৃতির প্রয়োজন ছিল, তা তিনি দিয়েছেন। পায়ের জন্য যে সর্বাধিক উপযুক্ত গঠনাকৃতির প্রয়োজন, তাও দিয়েছেন। মানুষ, পশু, উদ্ভিদ, বাতাস, পানি, আলো, প্রত্যেককে তিনি এমন বিশেষ আকৃতি দান করেছেন- যা এ বিশ্বজাহানে তার নিজের কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজন ছিল। তারপর তিনি প্রতিটি জিনিসকে কেবল তার বিশেষ আকৃতি দান করেই ছেড়ে দেননি; বরং তিনি সবাইকে পথও দেখিয়েছেন। দুনিয়ায় এমন কোন জিনিস নেই, যাকে তিনি নিজের গঠনাকৃতিকে কাজে লাগানোর এবং নিজের সৃষ্টির উদ্দেশ্য পূর্ণ করার পদ্ধতি শেখাননি। কানকে শোনা ও চোখকে দেখা তিনিই শিখিয়েছেন। মাছকে সাঁতার কাটার এবং পাখিকে উড়ার শিক্ষা তিনিই দিয়েছেন। গাছকে ফুল ও ফল দেয়ার ও মাটিকে উদ্ভিদ উৎপাদন করার নির্দেশ তিনিই দিয়েছেন। মোটকথা তিনি কেবল সারা বিশ্বজাহান এবং তাঁর সমস্ত সৃষ্টিকুলের স্রষ্টাই নন; বরং তাদের শিক্ষক ও পথপ্রদর্শকও।
আল্লাহ সুন্দরভাবে আকৃতি গঠন করেন :
هُوَ الَّذِيْ يُصَوِّرُكُمْ فِى الْاَ رْحَامِ كَيْفَ يَشَآءُؕ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
তিনি ঐ সত্তা, যিনি মাতৃগর্ভে নিজ ইচ্ছানুযায়ী তোমাদের আকৃতি গঠন করেছেন। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তিনি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা আলে ইমরান- ৬)
خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضَ بِالْحَقِّ وَصَوَّرَكُمْ فَاَحْسَنَ صُوَرَكُمْۚ وَاِلَيْهِ الْمَصِيْرُ
তিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে এবং তোমাদেরকে অতি সুন্দর আকৃতি দান করেছেন; আর তোমাদের প্রত্যাবর্তন তো তাঁরই দিকে। (সূরা তাগাবুন- ৩)
আল্লাহ সবকিছু পরিমাণ অনুযায়ী সৃষ্টি করেন :
اِنَّا كُلَّ شَيْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ
আমি সবকিছু সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত পরিমাণে। (সূরা ক্বামার- ৪৯)
আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে কোন খুঁত নেই :
مَا تَرٰى فِيْ خَلْقِ الرَّحْمٰنِ مِنْ تَفَاوُتٍؕ فَارْجِعِ الْبَصَرَ هَلْ تَرٰى مِنْ فُطُوْرٍ
দয়াময় আল্লাহর সৃষ্টিতে তুমি কোন খুঁত দেখতে পাবে না। অতএব তুমি চক্ষু ফিরিয়ে দেখো, (তাঁর সৃষ্টিতে) কোন ত্রুটি দেখতে পাও কি? (সূরা মুলক- ৩)
ثُمَّ ارْجِعِ الْبَصَرَ كَرَّتَيْنِ يَنْقَلِبْ اِلَيْكَ الْبَصَرُ خَاسِئًا وَّهُوَ حَسِيْرٌ
অতঃপর তুমি (প্রতিটি সৃষ্টির দিকে) দু’বার করে দৃষ্টি ফিরাও, সেই দৃষ্টি ব্যর্থ ও ক্লান্ত হয়ে তোমার দিকেই ফিরে আসবে। (সূরা মুলক- ৪)
আল্লাহ প্রতিটি জিনিস জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন :
وَمِنْ كُلِّ شَيْءٍ خَلَقْنَا زَوْجَيْنِ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ
আমি প্রত্যেক বস্তু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করতে পার। (সূরা যারিয়াত- ৪৯)
سُبْحَانَ الَّذِيْ خَلَقَ الْاَزْوَاجَ كُلَّهَا مِمَّا تُنْۢبِتُ الْاَ رْضُ وَمِنْ اَنْفُسِهِمْ وَمِمَّا لَا يَعْلَمُوْنَ
তিনি পবিত্র, যিনি উদ্ভিদ, মানুষ এবং তারা যা জানে না তাদের প্রত্যেককেই জোড়া জোড়া করে সৃষ্টি করেছেন। (সূরা ইয়াসীন- ৩৬)
আল্লাহ সৃষ্টির মধ্যে যা ইচ্ছা বৃদ্ধি করেন :
يَزِيْدُ فِى الْخَلْقِ مَا يَشَآءُؕ اِنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
তিনি সৃষ্টির মধ্যে যা ইচ্ছা বাড়িয়ে দেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা ফাতির- ১)
তিনি পৃথিবীর কোনকিছুই অনর্থক সৃষ্টি করেননি :
وَمَا خَلَقْنَا السَّمَآءَ وَالْاَ رْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا بَاطِلًاؕ ذٰلِكَ ظَنُّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاۚ فَوَيْلٌ لِّلَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنَ النَّارِ
আর আমি আসমান, জমিন ও এ উভয়ের মধ্যে অবস্থিত কোনকিছুই অনর্থক সৃষ্টি করিনি। (আমি এসব অনর্থক সৃষ্টি করেছি) এরূপ ধারণা তো তাদের যারা কাফির। সুতরাং কাফিরদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের দুর্ভোগ। (সূরা সোয়াদ- ২৭)
সকল সৃষ্টিই একেকটি নিয়মে চলছে :
خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضَ بِالْحَقِّۚ يُكَوِّرُ اللَّيْلَ عَلَى النَّهَارِ وَيُكَوِّرُ النَّهَارَ عَلَى اللَّيْلِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَؕ كُلٌّ يَّجْرِيْ لِاَجَلٍ مُّسَمًّىؕ اَ لَا هُوَ الْعَزِيْزُ الْغَفَّارُ
তিনি যথাযথভাবে আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। তিনি রাত দিয়ে দিনকে আচ্ছাদিত করেন এবং দিন দিয়ে রাতকে আচ্ছাদিত করেন। তিনি নিয়মাধীন করেছেন সূর্য ও চন্দ্রকে। প্রত্যেকেই নির্ধারিত সময় পর্যন্ত চলতে থাকবে। জেনে রেখো, তিনি মহাপরাক্রমশালী ও পরম ক্ষমাশীল। (সূরা যুমার- ৫)
আল্লাহ তাঁর সৃষ্টিকে দেখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন :
قُلْ سِيْرُوْا فِى الْاَ رْضِ فَانْظُرُوْا كَيْفَ بَدَاَ الْخَلْقَ ثُمَّ اللهُ يُنْشِئُ النَّشْاَةَ الْاٰخِرَةَؕ اِنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
বলো, তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ করো এবং অনুধাবন করো যে, কীভাবে তিনি সৃষ্টি আরম্ভ করেছেন? অতঃপর আল্লাহ সৃষ্টি করবেন পরবর্তী সৃষ্টিকে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। (সূরা আনকাবূত- ২০)
اَوَلَمْ يَنْظُرُوْا فِيْ مَلَكُوْتِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِ وَمَا خَلَقَ اللهُ مِنْ شَيْءٍ
তারা কি লক্ষ্য করে না, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌম কর্তৃত্ব সম্পর্কে এবং আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন সে সম্পর্কে। (সূরা আ‘রাফ- ১৮৫)
আল্লাহর অনেক সৃষ্টি সম্পর্কে মানুষ জানে না :
وَالْخَيْلَ وَالْبِغَالَ وَالْحَمِيْرَ لِتَرْكَبُوْهَا وَزِيْنَةًؕ وَيَخْلُقُ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ
তিনি তোমাদের আরোহণ ও শোভার জন্য সৃষ্টি করেছেন ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা। আর তিনি সৃষ্টি করেছেন এমন অনেক কিছু, যা তোমরা অবগত নও। (সূরা নাহল- ৮)
এ বিশাল আকাশ ও পৃথিবী আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন :
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضَ وَجَعَلَ الظُّلُمَاتِ وَالنُّوْرَؕ ثُمَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِرَبِّهِمْ يَعْدِلُوْنَ
সকল প্রশংসা আল্লাহরই যিনি আসমানসমূহ ও জমিন সৃষ্টি করেছেন, আর সৃষ্টি করেছেন অন্ধকার ও আলো। এরপরও কাফিররা তাদের প্রতিপালকের সমকক্ষ দাঁড় করায়। (সূরা আন‘আম- ১)
তিনি আকাশ ও জমিনকে স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন :
اَلَّذِيْ خَلَقَ سَبْعَ سَمٰوَاتٍ طِبَاقًا
তিনি সৃষ্টি করেছেন সাতটি আকাশ স্তরে স্তরে। (সূরা মুলক- ৩)
اَللهُ الَّذِيْ خَلَقَ سَبْعَ سَمٰوَاتٍ وَّمِنَ الْاَ رْضِ مِثْلَهُنَّؕ يَتَنَزَّلُ الْاَمْرُ بَيْنَهُنَّ لِتَعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌؕ وَاَنَّ اللهَ قَدْ اَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا
আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন সপ্তাকাশ এবং অনুরূপভাবে পৃথিবীও। এগুলোর মধ্যে নেমে আসে তাঁর নির্দেশ; যেন তোমরা বুঝতে পার যে, আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান এবং আল্লাহ জ্ঞান দিয়ে সবকিছুই পরিবেষ্টন করে রেখেছেন। (সূরা তালাক্ব- ১২)
আল্লাহ আকাশকে সুসজ্জিত করেছেন :
اِنَّا زَيَّنَّا السَّمَآءَ الدُّنْيَا بِزِيْنَةِنِ الْكَوَاكِبِ
নিশ্চয় আমি পৃথিবীর আকাশকে সুসজ্জিত করেছি নক্ষত্রমালার সৌন্দর্য দিয়ে। (সূরা সাফ্ফাত- ৬)
وَلَقَدْ جَعَلْنَا فِى السَّمَآءِ بُرُوْجًا وَّزَيَّنَّاهَا لِلنَّاظِرِيْنَ
আমি আকাশে গ্রহ-নক্ষত্র সৃষ্টি করেছি এবং সেটাকে সুশোভিত করেছি দর্শকদের জন্য। (সূরা হিজর- ১৬)
ব্যাখ্যা : দুনিয়ার আকাশ বলতে বুঝানো হয়েছে দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশকে, যা আমরা কোন দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্য ছাড়াই খালি চোখে দেখতে পাই। এছাড়াও আমরা বিভিন্ন প্রকার শক্তিশালী পর্যবেক্ষণ যন্ত্রপাতির সাহায্যে যে বিশ্বকে দেখি এবং যেসব বিশ্ব এখনো আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়নি, সেগুলো সবই দূরবর্তী আকাশ।
আল্লাহ এ আকাশ ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন :
وَهُوَ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضَ فِيْ سِتَّةِ اَيَّامٍ
আর তিনিই আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। (সূরা হুদ- ৭)
اَلَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِيْ سِتَّةِ اَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوٰى عَلَى الْعَرْشِۚ اَلرَّحْمٰنُ فَاسْاَلْ بِهٖ خَبِيْرًا
তিনি আকাশ-জমিন ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন; অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হয়েছেন। তিনিই ‘রহমান’, তাঁর সম্বন্ধে যে অবগত আছে তাকে জিজ্ঞেস করে দেখো। (সূরা ফুরক্বান- ৫৯)
আল্লাহ সৃষ্টির কাজে ক্লান্ত হন না :
وَلَقَدْ خَلَقْنَا السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِيْ سِتَّةِ اَيَّامٍ وَّمَا مَسَّنَا مِنْ لُّغُوْبٍ
আমি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী এবং এগুলোর মধ্যস্থিত সবকিছু সৃষ্টি করেছি ছয় দিনে। আর (এসব সৃষ্টিতে) কোন ক্লান্তি আমাকে স্পর্শ করেনি। (সূরা ক্বাফ- ৩৮)
তিনি রাত-দিন ও চন্দ্র-সূর্য সৃষ্টি করেছেন :
وَهُوَ الَّذِيْ خَلَقَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَؕ كُلٌّ فِيْ فَلَكٍ يَّسْبَحُوْنَ
আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিবস এবং সূর্য ও চন্দ্র; প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণ করে। (সূরা আম্বিয়া- ৩৩)
আল্লাহ বিভিন্ন আকৃতির প্রাণী সৃষ্টি করেছেন :
وَاللهُ خَلَقَ كُلَّ دَآبَّةٍ مِّنْ مَّآءٍۚ فَمِنْهُمْ مَّنْ يَّمْشِيْ عَلٰى بَطْنِهٖۚ وَمِنْهُمْ مَّنْ يَّمْشِيْ عَلٰى رِجْلَيْنِۚ وَمِنْهُمْ مَّنْ يَّمْشِيْ عَلٰۤى اَرْبَعٍؕ يَخْلُقُ اللهُ مَا يَشَآءُؕ اِنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
আল্লাহ সমসত্ম জীব সৃষ্টি করেছেন পানি হতে, তাদের কতক পেটে ভর দিয়ে চলে, কতক দু’পায়ে চলে এবং কতক চলে চার পায়ে। আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন, নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা নূর- ৪৫)
আল্লাহ জিন জাতিকে আগুন দিয়ে সৃষ্টি করেছেন :
وَخَلَقَ الْجَآنَّ مِنْ مَّارِجٍ مِّنْ نَّارٍ
আর তিনি জিন (জাতি) কে সৃষ্টি করেছেন অগ্নিশিখা হতে। (সূরা আর রহমান- ১৫)
আল্লাহ মানুষকে সুন্দরভাবে সৃষ্টি করেছেন :
لَقَدْ خَلَقْنَا الْاِنْسَانَ فِۤيْ اَحْسَنِ تَقْوِيْمٍ
আমি মানুষকে সুন্দরতম আকৃতিতে সৃষ্টি করেছি। (সূরা তীন- ৪)
ব্যাখ্যা : কয়েকটি নিষ্প্রাণ উপাদানের সমাহার এবং রাসায়নিক সংযোগের মাধ্যমে মানুষ নামক একটি বিস্ময়কর সত্তা সৃষ্টি করা হয়েছে, তার মধ্যে সংযুক্ত করা হয়েছে আবেগ, অনুভূতি, চেতনা, বুদ্ধিবৃত্তি ও চিন্তা-কল্পনার এমনসব অদ্ভুত শক্তি যাদের কোন একটির উৎসও তার মৌলিক উপাদানগুলোর মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় না। তারপর শুধু এতটুকুই নয় তার মধ্যে এমনসব অদ্ভুত প্রজনন শক্তিও সৃষ্টি করে দেয়া হয়েছে, যার ফলে কোটি কোটি মানুষ সেই একই কাঠামো এবং ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যের ধারক হিসেবে বের হয়ে আসছে। মানুষ সৃষ্টির এ মহৎ পরিকল্পনা, তাকে বাস্তব কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগ করা আল্লাহর অসীম কুদরতের প্রমাণ। মানুষ যদি শুধুমাত্র নিজের জন্মের উপরই চিন্তা-ভাবনা করে তাহলে জানতে পারবে যে, এক একটি মানুষের অস্তিত্বের মধ্যে আল্লাহর বাস্তব ব্যবস্থাপনা ও কলা-কৌশল সর্বক্ষণ সক্রিয় রয়েছে। প্রত্যেকের অস্তিত্ব, বৃদ্ধি ও বিকাশের প্রতিটি পর্যায়ই তাঁর ইচ্ছার ভিত্তিতে স্থির হয়। তাকে সৃষ্টি করা, সুন্দর আকৃতি প্রদান করা, মাতৃগর্ভে ধারণ করা, জন্মদান করা, লালন-পালন করা এবং জীবিকা নির্বাহে প্রতিদিনের চলাফেরা সবকিছুই আল্লাহর ইচ্ছাতে সংঘঠিত হয়।
মানুষের মেয়াদ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন :
هُوَ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ طِيْنٍ ثُمَّ قَضٰۤى اَجَلًاؕ وَاَجَلٌ مُّسَمًّى عِنْدَهٗ ثُمَّ اَنْتُمْ تَمْتَرُوْنَ
তিনিই তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর একটি কাল নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন এবং আরো একটি নির্ধারিত কাল আছে যা তিনিই জ্ঞাত, তারপরও তোমরা সন্দেহ কর। (সূরা আন‘আম- ২)
মানুষের মধ্যে আত্মীয়তা সৃষ্টি করেছেন :
وَهُوَ الَّذِيْ خَلَقَ مِنَ الْمَآءِ بَشَرًا فَجَعَلَهٗ نَسَبًا وَّصِهْرًاؕ وَكَانَ رَبُّكَ قَدِيْرًا
তিনিই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পানি হতে; অতঃপর তাকে বংশগত ও বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ করেছেন। আর তোমার প্রতিপালক (এসব বিষয়ে) সর্বশক্তিমান। (সূরা ফুরক্বান- ৫৪)
ব্যাখ্যা : তিনি মানুষের একটি নয় বরং দু’টি আলাদা আলাদা নমুনা (নর ও নারী) তৈরি করেছেন। তারপর এ জোড়াগুলো মিলিয়ে দুনিয়াতে তাদের মাঝে ভারসাম্য তৈরি করে দিয়েছেন। একদিকে তাদের থেকে পুত্র ও নাতিদের একটি ধারা চলছে, যারা অন্যের ঘর থেকে বিয়ে করে স্ত্রী নিয়ে আসছে। আবার অন্যদিকে কন্যা ও নাতনীদের একটি ধারা চলছে, যারা স্ত্রী হয়ে অন্যের ঘরে চলে যাচ্ছে। এভাবে এক পরিবারের সাথে অন্য পরিবার মিশে বংশ ও সভ্যতার বিকাশ ঘটছে।
প্রশান্তির জন্য জোড়া সৃষ্টি করেছেন :
هُوَ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ وَّجَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا لِيَسْكُنَ اِلَيْهَا
তিনিই তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তা হতে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন, যাতে সে তার নিকট প্রশান্তি লাভ করতে পারে। (সূরা আ‘রাফ- ১৮৯)
ব্যাখ্যা : স্রষ্টার প্রজ্ঞার পূর্ণতা হচ্ছে, তিনি মানুষকে দু’টি জাতির আকারে সৃষ্টি করেছেন। তারা প্রত্যেকে একে অন্যের জোড়ায় পরিণত হয়েছে। প্রত্যেকের শরীর, প্রবৃত্তি এবং উদ্যোগসমূহ অন্যের শারীরিক ও প্রবৃত্তির দাবীসমূহের পরিপূর্ণ জবাব। সেই স্রষ্টা এ উভয় জাতির লোকদেরকে সৃষ্টির সূচনা থেকেই আনুপাতিক হারে সৃষ্টি করে আসছেন। কোন এলাকায় কেবল পুত্রসন্তানই অথবা কেবল কন্যাসন্তানই জন্মলাভ করছে এমন কথা শোনা যায় না। এটা এমন জিনিস, যার মধ্যে কোন মানুষের সামান্যতম হস্তÿÿপের অবকাশও নেই। হাজার হাজার বছর থেকে কোটি কোটি মানুষের জন্মলাভে এ ব্যবস্থা সুসামঞ্জস্য পদ্ধতিতে কার্যকর থাকা কখনো নিছক আকস্মিক ঘটনা হতে পারে না। আবার বহু ইলাহের সম্মিলিত ব্যবস্থাপনার ফলও হতে পারে না।
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি করেছেন :
وَمِنْ اٰيَاتِهٖۤ اَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِّنْ اَنْفُسِكُمْ اَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوْاۤ اِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَّوَدَّةً وَّرَحْمَةًؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ
আর তাঁর দৃষ্টান্তগুলোর মধ্যে একটি এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের নিজেদের মধ্য থেকে স্ত্রীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি লাভ করতে পার। অতঃপর তিনি তোমাদের মাঝে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করে দিয়েছেন। নিশ্চয় এতে ঐসব লোকদের জন্য রয়েছে নিদর্শন, যারা গভীরভাবে চিন্তা করে। (সূরা রূম- ২১)
ব্যাখ্যা : স্রষ্টা নিজেই পরিকল্পিতভাবে এ ব্যবস্থা করেছেন, যার ফলে পুরুষ তার প্রাকৃতিক দাবী নারীর কাছে এবং নারী তার প্রাকৃতিক চাহিদা পুরুষের কাছে লাভ করবে এবং তারা উভয়ে পরস্পরের সাথে সম্পর্কিত থেকেই প্রশান্তি ও সুখ লাভ করবে। এ বিজ্ঞানময় ব্যবস্থাপনাকে স্রষ্টা একদিকে মানব বংশধারা অব্যাহত থাকার এবং অন্যদিকে মানবিক সভ্যতার মাধ্যম হিসেবে পরিণত করেছেন। স্রষ্টা নিজের জ্ঞান ও প্রজ্ঞার দ্বারা পুরুষ ও নারীর মধ্যে পরস্পরের এমন চাহিদা সৃষ্টি করেছেন, যার ফলে তারা উভয়ে মিলে একসাথে না থাকলে শান্তি ও সুখ লাভ করতে পারে না। শান্তির আশায় তাদেরকে একত্রে ঘর বাঁধতে বাধ্য করে। এরই বদৌলতে পরিবার ও গোত্র অস্তিত্ব লাভ করে। হাজার হাজার বছর থেকে অনবরত অসংখ্য পুরুষ ও নারীকে এ বিশেষ অস্থিরতা সহকারে সৃষ্টি করা এটা কেবল একজন জ্ঞানীর প্রজ্ঞার সুস্পষ্ট নিদর্শন। ভালোবাসা নারী ও পুরুষের মধ্যে এমন একটি আকর্ষণ, যা তাদেরকে পরস্পরের সাথে সংলগ্ন করে রাখে। আর রহমত অর্থ হচ্ছে এমন আত্মিক সম্পর্ক, যা স্বামী-স্ত্রীর জীবনে পর্যায়ক্রমে বিকাশ লাভ করে। এর বদৌলতে তারা দু’জনে একে অপরের কল্যাণকামী ও সুখ-দুঃখে সহানুভূতিশীল হয়ে যায়। কোটি কোটি মানুষ তাদের জীবনে যে ভালোবাসা লাভ করেছে এগুলো কোন সাধারণ বস্তু নয়। এগুলোকে পরিমাপ করা অসম্ভব। মানুষের শারীরিক গঠনে যেসব উপাদানের সমাবেশ ঘটানো হয়েছে, তার মধ্যে কোথাও এদের উৎস চিহ্নিত করা যেতে পারে না। একজন প্রজ্ঞাবান স্রষ্টা স্বেচ্ছায় একটি উদ্দেশ্য সামনে রেখে পূর্ণ সামঞ্জস্য সহকারে মানুষের মধ্যে তা সংস্থাপন করে দিয়েছেন।
আল্লাহ বিশ্বজগৎ পরিচালনা করেন :
يُدَبِّرُ الْاَمْرَ مِنَ السَّمَآءِ اِلَى الْاَ رْضِ ثُمَّ يَعْرُجُ اِلَيْهِ فِيْ يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهٗۤ اَلْفَ سَنَةٍ مِّمَّا تَعُدُّوْنَ
তিনি আসমান থেকে জমিন পর্যন্ত যাবতীয় বিষয় নিয়ন্ত্রণ করেন। অবশেষে তা তাঁর নিকট পৌঁছাবে এমন একদিনে, যার পরিমাণ হবে তোমাদের গণনায় হাজার বছরের সমান। (সূরা সাজদা- ৫)
আল্লাহ রাত ও দিনের আবর্তন ঘটান :
يُوْلِجُ اللَّيْلَ فِى النَّهَارِ وَيُوْلِجُ النَّهَارَ فِى اللَّيْلِ
তিনি রাতকে দিনে প্রবেশ করান এবং দিনকে রাতে প্রবেশ করান। (সূরা ফাতির- ১৩)
قُلْ اَرَاَيْتُمْ اِنْ جَعَلَ اللهُ عَلَيْكُمُ اللَّيْلَ سَرْمَدًا اِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَنْ اِلٰهٌ غَيْرُ اللهِ يَاْتِيْكُمْ بِضِيَآءٍؕ اَفَلَا تَسْمَعُوْنَ ‐ قُلْ اَرَاَيْتُمْ اِنْ جَعَلَ اللهُ عَلَيْكُمُ النَّهَارَ سَرْمَدًا اِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَنْ اِلٰهٌ غَيْرُ اللهِ يَاْتِيْكُمْ بِلَيْلٍ تَسْكُنُوْنَ فِيْهِؕ اَفَلَا تُبْصِرُوْنَ
বলো, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, আল্লাহ যদি রাতকে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করে দেন তবে আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন ইলাহ্ আছে কি, যে তোমাদেরকে আলো এনে দিতে পারে? তবুও কি তোমরা কর্ণপাত করবে না? বলো, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, আল্লাহ যদি দিনকে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করেন তবে আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন ইলাহ্ আছে কি, যে তোমাদের জন্য রাতের আবির্ভাব ঘটাবে যেন তোমরা বিশ্রাম করতে পার? তবুও কি তোমরা ভেবে দেখবে না? (সূরা ক্বাসাস- ৭১, ৭২)
ব্যাখ্যা : সূর্য ও পৃথিবীর মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের সুশৃঙ্খল পরিবর্তনের কারণে রাত-দিনের পরিবর্তন সাধিত হয়। এটি একজন বিশ্বজনীন ব্যবস্থাপক ও সমগ্র বিশ্বের উপর নিরঙ্কুশ কর্তৃত্বশালী শাসকের অস্তিত্বের সুস্পষ্ট আলামত। এর মধ্যে সুস্পষ্ট নৈপূণ্য, বিজ্ঞতা ও উদ্দেশ্যমূলক তৎপরতাও দেখা যায়। কারণ দুনিয়ার সমস্ত প্রয়োজন ও অভাব পূরণ এ দিন-রাতের আবর্তনের সাথে যুক্ত রয়েছে। এ থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, যিনি পৃথিবীর বুকে এসব বস্তু সৃষ্টি করেছেন তিনি নিজেই তাদের স্থিতি ও স্থায়িত্বের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই সরবরাহ করেন। এ বিশ্বজনীন ব্যবস্থাপক মাত্র একজন। তিনি খেলাচ্ছলে এ বিশ্বের কোনকিছুই সৃষ্টি করেননি বরং উদ্দেশ্যমূলকভাবে তিনি কাজ করছেন। অনুগ্রহকারী ও পালনকারী হিসেবে তিনিই ইবাদাত লাভের হকদার এবং দিন-রাতের আবর্তনের অধীন কোন সত্তাই রব ও প্রভু নয় বরং রবের অধীনস্থ দাস মাত্র।
আল্লাহ জীবিত থেকে মৃত ও মৃত থেকে জীবিতকে বের করেন :
يُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَيُخْرِجُ الْمَيِّتَ مِنَ الْحَيِّ وَيُحْيِى الْاَ رْضَ بَعْدَ مَوْتِهَاؕ وَكَذٰلِكَ تُخْرَجُوْنَ
তিনি জীবিতকে মৃত থেকে এবং মৃতকে জীবিত থেকে বের করে আনেন। তিনিই জমিনকে তার মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত করেন। আর এভাবেই তোমাদেরকে (মৃত্যুর পর পুনরায়) বের করে আনা হবে। (সূরা রূম- ১৯)
আল্লাহ দুর্বলকে সবল করেন, সবলকে দুর্বল করেন :
اَللهُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ ضُعْفٍ ثُمَّ جَعَلَ مِنْ ۢبَعْدِ ضُعْفٍ قُوَّةً ثُمَّ جَعَلَ مِنْ ۢبَعْدِ قُوَّةٍ ضُعْفًا وَّشَيْبَةًؕ يَخْلُقُ مَا يَشَآءُۚ وَهُوَ الْعَلِيْمُ الْقَدِيْرُ
আল্লাহ ঐ সত্তা, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেন দুর্বল অবস্থায়। অতঃপর তিনি দুর্বলতার পর শক্তি দান করেন, তারপর শক্তির পর পুনরায় দুর্বলতা ও বার্ধক্য দান করেন। তিনি যা ইচ্ছা তা-ই সৃষ্টি করেন এবং তিনিই সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান। (সূরা রূম- ৫৪)
আল্লাহ হাসান এবং কাঁদান :
وَاَنَّهٗ هُوَ اَضْحَكَ وَاَبْكٰى
আর তিনিই হাসান এবং তিনিই কাঁদান। (সূরা নাজম- ৪৩)
আল্লাহই মারেন এবং বাঁচান :
وَاَنَّهٗ هُوَ اَمَاتَ وَاَحْيَا
আর তিনিই মারেন ও তিনিই বাঁচান। (সূরা নাজম- ৪৪)
তিনিই সম্পদ দান করেন :
وَاَنَّهٗ هُوَ اَغْنٰى وَاَقْنٰى
আর তিনিই অভাবমুক্ত ও পরিতুষ্ট করেন। (সূরা নাজম- ৪৮)
আল্লাহ মানুষের অন্তর পরিবর্তন করেন :
وَنُقَلِّبُ اَفْئِدَتَهُمْ وَاَبْصَارَهُمْ كَمَا لَمْ يُؤْمِنُوْا بِهٖۤ اَوَّلَ مَرَّةٍ وَّنَذَرُهُمْ فِيْ طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُوْنَ
তারা যেমন প্রথমবার তাতে ঈমান আনেনি, তাই আমিও তাদের মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে দেব এবং তাদেরকে তাদের অবাধ্যতার আবর্তে ঘুরপাক খাওয়ার জন্য ছেড়ে দেব। (সূরা আন‘আম- ১১০)
আল্লাহ ঘুম দেন ও জাগ্রত করেন :
وَهُوَ الَّذِيْ يَتَوَفَّاكُمْ بِاللَّيْلِ وَيَعْلَمُ مَا جَرَحْتُمْ بِالنَّهَارِ ثُمَّ يَبْعَثُكُمْ فِيْهِ لِيُقْضٰۤى اَجَلٌ مُّسَمًّىۚ ثُمَّ اِلَيْهِ مَرْجِعُكُمْ ثُمَّ يُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
তিনিই রাতে তোমাদের মৃত্যু ঘটান এবং দিবসে তোমরা যা কর, তা তিনি জানেন। অতঃপর দিবসে তোমাদেরকে পুনর্জাগরণ করেন, যেন নির্ধারিত কাল পূর্ণ হয়। অতঃপর তাঁর দিকেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর তোমরা (দুনিয়াতে) যা করেছিলে, সে সম্বন্ধে তোমাদেরকে অবহিত করবেন। (সূরা আন‘আম- ৬০)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ নিজের সৃষ্টির প্রতি বড়ই করুণাশীল। মানুষ দুনিয়ায় অনবরত পরিশ্রম করতে পারে না। প্রত্যেকবার কয়েক ঘণ্টা পরিশ্রমের পর তাকে কয়েক ঘণ্টা বিশ্রাম নিতে হয়, যাতে সে আবার কয়েক ঘণ্টা কাজ করার শক্তি পায়। প্রজ্ঞাময় আল্লাহ তা‘আলা এ উদ্দেশ্যে মানুষের মধ্যে নিদ্রার এমন চাহিদা ঢেলে দিয়েছেন, যার ফলে কোন ব্যক্তির ইচ্ছা ছাড়াই কয়েক ঘণ্টা জাগরণের পর কয়েক ঘণ্টা বিশ্রাম নিতে বাধ্য করে এবং প্রয়োজন শেষ হয়ে গেলে স্বাভাবিকভাবেই বিশ্রাম ত্যাগ করে। এটি জন্মগতভাবে মানুষের প্রকৃতিতে রেখে দেয়া হয়েছে।
আল্লাহ বিদ্যুৎ চমকান :
هُوَ الَّذِيْ يُرِيْكُمُ الْبَرْقَ خَوْفًا وَّطَمَعًا وَّيُنْشِئُ السَّحَابَ الثِّقَالَ
তিনিই তোমাদেরকে পর্যবেক্ষণ করান বিজলী। (অতঃপর এর মাধ্যমে) ভয় ও ভরসা সঞ্চার করান এবং তিনিই সৃষ্টি করেন ভারী মেঘ। (সূরা রা‘দ- ১২)
আল্লাহ আকাশ থেকে বজ্রপাত করেন :
وَيُرْسِلُ الصَّوَاعِقَ فَيُصِيْبُ بِهَا مَنْ يَّشَآءُ وَهُمْ يُجَادِلُوْنَ فِى اللهِۚ وَهُوَ شَدِيْدُ الْمِحَالِ
তিনি বজ্রপাত করেন এবং যাকে ইচ্ছা তা দ্বারা আঘাত করেন। আর তারা আল্লাহ সম্বন্ধে ঝগড়া করে, অথচ তিনি মহাশক্তিশালী। (সূরা রা‘দ ১৩)
আল্লাহ বৃষ্টি তৈরি করেন :
اَللهُ الَّذِيْ يُرْسِلُ الرِّيَاحَ فَتُثِيْرُ سَحَابًا فَيَبْسُطُهٗ فِى السَّمَآءِ كَيْفَ يَشَآءُ وَيَجْعَلُهٗ كِسَفًا فَتَرَى الْوَدْقَ يَخْرُجُ مِنْ خِلَالِه ۚ فَاِذَاۤ اَصَابَ بِهٖ مَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِه ۤ اِذَا هُمْ يَسْتَبْشِرُوْنَ
আল্লাহ এমন সত্তা, যিনি বাতাস প্রেরণ করেন। অতঃপর বাতাস মেঘরাশিকে সঞ্চালন করে; তারপর তিনি মেঘরাশিকে যেমন ইচ্ছা আকাশে পরিব্যাপ্তি করে দেন এবং কখনো তা খন্ড-বিখন্ড করে দেন। অতঃপর তুমি দেখতে পাও যে, তার মধ্য থেকে বের হয়ে আসে বৃষ্টিধারা। তিনি যখন (সঞ্চালন করার) ইচ্ছা করেন, তখন তার বান্দাদের মধ্যে যাদেরকে ইচ্ছা তা পৌঁছে দেন। (ফলে) তারা আনন্দ করতে থাকে। (সূরা রূম- ৪৮)
আল্লাহ মৃত জমিনকে জীবিত করেন :
اِعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ يُحْيِى الْاَ رْضَ بَعْدَ مَوْتِهَاؕ قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ الْاٰيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُوْنَ
জেনে রেখো, আল্লাহই পৃথিবীকে তার মৃত্যুর পর জীবন দান করেন। আমি তো কেবল নিদর্শনগুলো তোমাদের জন্য বিশদভাবে বর্ণনা করি, যেন তোমরা বুঝতে পার। (সূরা হাদীদ- ১৭)
وَاللهُ اَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَحْيَا بِهِ الْاَ رْضَ بَعْدَ مَوْتِهَاؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّسْمَعُوْنَ
আল্লাহ আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন এবং এর দ্বারা মৃত ভূমিকে জীবিত করেন। অবশ্যই যে সম্প্রদায় কথা শুনে তাদের জন্য এতে নিদর্শন রয়েছে। (সূরা নাহল- ৬৫)
আল্লাহ বিশ্বের ভারসাম্য ঠিক রাখেন :
اِنَّ اللهَ يُمْسِكُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضَ اَنْ تَزُوْلًا ۚ وَلَئِنْ زَالَتَاۤ اِنْ اَمْسَكَهُمَا مِنْ اَحَدٍ مِّنْ ۢبَعْدِهٖؕ اِنَّهٗ كَانَ حَلِيْمًا غَفُوْرًا
নিশ্চয় আল্লাহ আসমান ও জমিনকে স্থিরভাবে ধরে রাখেন, যেন তা (স্বীয় কক্ষপথ থেকে) সরে না যায়। যদি এরা সরে যায় তবে তিনি ছাড়া কে এদেরকে ধরে রাখবে? নিশ্চয় তিনি অতিশয় সহনশীল ও পরম ক্ষমাশীল। (সূরা ফাতির- ৪১)
আল্লাহ সর্বদা কর্মতৎপর :
يَسْاَلُهٗ مَنْ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِؕ كُلَّ يَوْمٍ هُوَ فِيْ شَاْنٍ
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা আছে সবই তাঁর নিকট প্রতিদিন প্রার্থনা করে, তিনি সর্বদা মহান কার্যে রত। (সূরা আর রহমান- ২৯)
ব্যাখ্যা : মহাবিশ্বের এ কর্মক্ষেত্রে প্রতি মুহূর্তে আল্লাহ তা‘আলার কর্মতৎপরতার এক সীমাহীন ধারাবাহিকতা চলছে। কাউকে তিনি মারছেন আবার কাউকে জীবন দান করছেন। কারো উত্থান ঘটাচ্ছেন আবার কারো পতন ঘটাচ্ছেন। কাউকে আরোগ্য দান করছেন আবার কাউকে রোগাক্রান্ত করছেন। কাউকে ডুবন্ত অবস্থা থেকে রক্ষা করছেন আবার কাউকে নিমজ্জিত করছেন। সকল সৃষ্টিকে নানাভাবে রিযিক দান করছেন। অসংখ্য বস্তুকে নতুন নতুন আকার-আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি করছেন। তাঁর পৃথিবী কখনো এক অবস্থায় অপরিবর্তিত থাকে না। তাঁর পরিবেশ ও অবস্থা প্রতি মুহূর্তে পরিবর্তিত হতে থাকে।
আল্লাহ সর্বোত্তম রিযিকদাতা :
قُلْ مَا عِنْدَ اللهِ خَيْرٌ مِّنَ اللَّهْوِ وَمِنَ التِّجَارَةِ ؕ وَاللهُ خَيْرُ الرَّازِقِيْنَ
(হে মুহাম্মাদ) বলো, আল্লাহর নিকট যা আছে তা খেলতামাশা ও ব্যবসা অপেক্ষা উৎকৃষ্ট। আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ রিযিকদাতা। (সূরা জুমু‘আ- ১১)
وَالَّذِيْنَ هَاجَرُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ ثُمَّ قُتِلُوْاۤ اَوْ مَاتُوْا لَيَرْزُقَنَّهُمُ اللهُ رِزْقًا حَسَنًاؕ وَاِنَّ اللهَ لَهُوَ خَيْرُ الرَّازِقِيْنَ
যারা আল্লাহর পথে হিজরত করেছে, অতঃপর নিহত হয়েছে অথবা মারা গেছে, আল্লাহ তাদেরকে অবশ্যই উৎকৃষ্ট জীবিকা দান করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বোত্তম রিযিকদাতা। (সূরা হজ্জ- ৫৮)
ব্যাখ্যা : যদি পৃথিবী ও আকাশের অগণিত শক্তিকে জীবিকার উপকরণ সৃষ্টি করার কাজে না লাগিয়ে দেয়া হতো এবং পৃথিবীতে মানুষের জন্য জীবিকার অসংখ্য উপায় সৃষ্টি না করা হতো, তাহলে মানুষ নিজেদের জীবিকার সন্ধানই খুঁজে পেত না। আল্লাহ তা‘আলা মানবজাতির জন্য এ সবকিছুর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এমনকি তাদের জীবিকার অনুসন্ধান এবং তা উপার্জনের জন্য উপযোগী অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এবং দৈহিক ও মানসিক যোগ্যতাও দান করেছেন।
আল্লাহ সকল প্রাণীকে রিযিক দান করেন :
وَمَا مِنْ دَآبَّةٍ فِى الْاَ رْضِ اِلَّا عَلَى اللهِ رِزْقُهَا وَيَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَاؕ كُلٌّ فِيْ كِتَابٍ مُّبِيْنٍ
ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী সকলের জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহরই। তিনি তাদের স্থায়ী ও অস্থায়ী সকল অবস্থান সম্পর্কে অবহিত; সবকিছুই সুস্পষ্ট কিতাবে (লিপিবদ্ধ) রয়েছে। (সূরা হুদ- ৬)
وَكَاَيِّنْ مِّنْ دَآبَّةٍ لَّا تَحْمِلُ رِزْقَهَا ؕ اَللهُ يَرْزُقُهَا وَاِيَّاكُمْ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
এমন কতক জীবজন্তু আছে যারা নিজেদের খাদ্য মওজুদ রাখে না। আল্লাহই তাদেরকে ও তোমাদেরকে রিযিক দান করেন; আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা আনকাবূত- ৬০)
আল্লাহ সবাইকে সমানভাবে রিযিক দান করেন না :
وَاللهُ فَضَّلَ بَعْضَكُمْ عَلٰى بَعْضٍ فِى الرِّزْقِ
আল্লাহ জীবিকা প্রদানে তোমাদের কাউকে কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। (সূরা নাহল- ৭১)
আল্লাহ রিযিক বৃদ্ধি করেন এবং কমান :
اَوَلَمْ يَعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيَقْدِرُؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ
তারা কি জানে না যে, আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা রিযিক বর্ধিত করেন এবং (যার জন্য ইচ্ছা) হ্রাস করেন। এতে অবশ্যই মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা যুমার- ৫২)
اِنَّ رَبَّكَ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيَقْدِرُؕ اِنَّهٗ كَانَ بِعِبَادِهٖ خَبِيْرًا ۢبَصِيْرًا
তোমার প্রতিপালক যার জন্য ইচ্ছা রিযিক বর্ধিত করেন এবং (যার জন্য ইচ্ছা) হ্রাস করেন; তিনি তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে সবকিছু জানেন এবং দেখেন। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩০)
اَللهُ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيَقْدِرُ وَفَرِحُوْا بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَاؕ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا فِى الْاٰخِرَةِ اِلَّا مَتَاعٌ
আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা তার জীবিকা বর্ধিত করেন এবং সংকুচিতও করেন। ফলে তারা পার্থিব জীবনে উল্লাসিত হয়, অথচ দুনিয়ার জীবন আখিরাতের তুলনায় ক্ষণস্থায়ী ভোগমাত্র। (সূরা রা‘দ- ২৬)
সবাইকে অঢেল রিযিক না দেয়ার কারণ :
وَلَوْ بَسَطَ اللهُ الرِّزْقَ لِعِبَادِهٖ لَبَغَوْا فِى الْاَ رْضِ وَلٰكِنْ يُّنَزِّلُ بِقَدَرٍ مَّا يَشَآءُۚ اِنَّهٗ بِعِبَادِهٖ خَبِيْرٌ ۢبَصِيْرٌ
আল্লাহ তাঁর বান্দাদের রিযিক বাড়িয়ে দিলে তারা পৃথিবীতে অবশ্যই সীমালঙ্ঘন করত; কিন্তু তিনি তাঁর ইচ্ছানুযায়ী পরিমাণ মতো দিয়ে থাকেন। তিনি তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে সবকিছু জানেন এবং দেখেন। (সূরা শূরা- ২৭)
ব্যাখ্যা : রিযিকের স্বল্পতা ও প্রাচুর্যতা আল্লাহর বিধানের উপর নির্ভরশীল। সেই বিধানের উদ্দেশ্যও সম্পূর্ণ ভিন্ন। মক্কাবাসীরা যে সচ্ছলতা ও শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেছিল তা তাদেরকে এতটাই অহংকারী করে তুলেছিল যে, তারা আল্লাহর নবীর কথা শুনতে কোনভাবেই প্রস্তুত ছিল না। এ কারণে আল্লাহ যদি সংকীর্ণমনা লোকদের জন্য রিযিকের দরজা খুলে দেন, তাহলে তারা পুরোপুরিভাবে গর্বে ফেটে পড়বে। তাই তিনি তাদেরকে পর্যবেক্ষণে রেখেছেন এবং বুঝেশুনে একটি পরিমাণ মতো রিযিক দিচ্ছেন।
তিনি যাকে চান তাকে অপরিমিত রিযিক দান করেন :
وَاللهُ يَرْزُقُ مَنْ يَّشَآءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ
আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অপরিমিত জীবিকা দান করেন। (সূরা নূর- ৩৮)
اِنَّ اللهَ يَرْزُقُ مَنْ يَّشَآءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ
নিশ্চয় আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন অপরিমিত রিযিক দান করেন। (সূরা আলে ইমরান- ৩৭)
ব্যাখ্যা : আরবি ভাষায় রিযিক এর অর্থ শুধু খাদ্যবস্তুর মধ্যে সীমিত নয়; বরং দান ও অনুগ্রহ অর্থেও তা ব্যবহৃত হয়। আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে দুনিয়ায় যা কিছু দিয়েছেন তা সবই মানুষের জন্য রিযিক। এমনকি ইলিম এবং বিভিন্ন গুণাবলিও রিযিকের অন্তর্ভুক্ত।
আল্লাহর হাত প্রশস্ত :
وَقَالَتِ الْيَهُوْدُ يَدُ اللهِ مَغْلُوْلَةٌ ؕ غُلَّتْ اَيْدِيْهِمْ وَلُعِنُوْا بِمَا قَالُوْا بَلْ يَدَاهُ مَبْسُوْطَتَانِ يُنْفِقُ كَيْفَ يَشَآءُ
ইয়াহুদিরা বলে, ‘আল্লাহর হাত রুদ্ধ’; (বরং) তারাই রুদ্ধহস্ত এবং তারা যা বলে সেজন্য তারা অভিশপ্ত। আর আল্লাহর উভয় হাতই প্রসারিত; যেভাবে ইচ্ছা তিনি দান করেন। (সূরা মায়েদা- ৬৪)
قُلْ مَا عِنْدَ اللهِ خَيْرٌ مِّنَ اللَّهْوِ وَمِنَ التِّجَارَةِ ؕ وَاللهُ خَيْرُ الرَّازِقِيْنَ
(হে মুহাম্মাদ) বলো, আল্লাহর নিকট যা আছে তা খেলতামাশা ও ব্যবসা অপেক্ষা উৎকৃষ্ট। আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ রিযিকদাতা। (সূরা জুমু‘আ- ১১)
وَالَّذِيْنَ هَاجَرُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ ثُمَّ قُتِلُوْاۤ اَوْ مَاتُوْا لَيَرْزُقَنَّهُمُ اللهُ رِزْقًا حَسَنًاؕ وَاِنَّ اللهَ لَهُوَ خَيْرُ الرَّازِقِيْنَ
যারা আল্লাহর পথে হিজরত করেছে, অতঃপর নিহত হয়েছে অথবা মারা গেছে, আল্লাহ তাদেরকে অবশ্যই উৎকৃষ্ট জীবিকা দান করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বোত্তম রিযিকদাতা। (সূরা হজ্জ- ৫৮)
ব্যাখ্যা : যদি পৃথিবী ও আকাশের অগণিত শক্তিকে জীবিকার উপকরণ সৃষ্টি করার কাজে না লাগিয়ে দেয়া হতো এবং পৃথিবীতে মানুষের জন্য জীবিকার অসংখ্য উপায় সৃষ্টি না করা হতো, তাহলে মানুষ নিজেদের জীবিকার সন্ধানই খুঁজে পেত না। আল্লাহ তা‘আলা মানবজাতির জন্য এ সবকিছুর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এমনকি তাদের জীবিকার অনুসন্ধান এবং তা উপার্জনের জন্য উপযোগী অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এবং দৈহিক ও মানসিক যোগ্যতাও দান করেছেন।
আল্লাহ সকল প্রাণীকে রিযিক দান করেন :
وَمَا مِنْ دَآبَّةٍ فِى الْاَ رْضِ اِلَّا عَلَى اللهِ رِزْقُهَا وَيَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَاؕ كُلٌّ فِيْ كِتَابٍ مُّبِيْنٍ
ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী সকলের জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহরই। তিনি তাদের স্থায়ী ও অস্থায়ী সকল অবস্থান সম্পর্কে অবহিত; সবকিছুই সুস্পষ্ট কিতাবে (লিপিবদ্ধ) রয়েছে। (সূরা হুদ- ৬)
وَكَاَيِّنْ مِّنْ دَآبَّةٍ لَّا تَحْمِلُ رِزْقَهَا ؕ اَللهُ يَرْزُقُهَا وَاِيَّاكُمْ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
এমন কতক জীবজন্তু আছে যারা নিজেদের খাদ্য মওজুদ রাখে না। আল্লাহই তাদেরকে ও তোমাদেরকে রিযিক দান করেন; আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা আনকাবূত- ৬০)
আল্লাহ সবাইকে সমানভাবে রিযিক দান করেন না :
وَاللهُ فَضَّلَ بَعْضَكُمْ عَلٰى بَعْضٍ فِى الرِّزْقِ
আল্লাহ জীবিকা প্রদানে তোমাদের কাউকে কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। (সূরা নাহল- ৭১)
আল্লাহ রিযিক বৃদ্ধি করেন এবং কমান :
اَوَلَمْ يَعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيَقْدِرُؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ
তারা কি জানে না যে, আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা রিযিক বর্ধিত করেন এবং (যার জন্য ইচ্ছা) হ্রাস করেন। এতে অবশ্যই মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা যুমার- ৫২)
اِنَّ رَبَّكَ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيَقْدِرُؕ اِنَّهٗ كَانَ بِعِبَادِهٖ خَبِيْرًا ۢبَصِيْرًا
তোমার প্রতিপালক যার জন্য ইচ্ছা রিযিক বর্ধিত করেন এবং (যার জন্য ইচ্ছা) হ্রাস করেন; তিনি তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে সবকিছু জানেন এবং দেখেন। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩০)
اَللهُ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيَقْدِرُ وَفَرِحُوْا بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَاؕ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا فِى الْاٰخِرَةِ اِلَّا مَتَاعٌ
আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা তার জীবিকা বর্ধিত করেন এবং সংকুচিতও করেন। ফলে তারা পার্থিব জীবনে উল্লাসিত হয়, অথচ দুনিয়ার জীবন আখিরাতের তুলনায় ক্ষণস্থায়ী ভোগমাত্র। (সূরা রা‘দ- ২৬)
সবাইকে অঢেল রিযিক না দেয়ার কারণ :
وَلَوْ بَسَطَ اللهُ الرِّزْقَ لِعِبَادِهٖ لَبَغَوْا فِى الْاَ رْضِ وَلٰكِنْ يُّنَزِّلُ بِقَدَرٍ مَّا يَشَآءُۚ اِنَّهٗ بِعِبَادِهٖ خَبِيْرٌ ۢبَصِيْرٌ
আল্লাহ তাঁর বান্দাদের রিযিক বাড়িয়ে দিলে তারা পৃথিবীতে অবশ্যই সীমালঙ্ঘন করত; কিন্তু তিনি তাঁর ইচ্ছানুযায়ী পরিমাণ মতো দিয়ে থাকেন। তিনি তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে সবকিছু জানেন এবং দেখেন। (সূরা শূরা- ২৭)
ব্যাখ্যা : রিযিকের স্বল্পতা ও প্রাচুর্যতা আল্লাহর বিধানের উপর নির্ভরশীল। সেই বিধানের উদ্দেশ্যও সম্পূর্ণ ভিন্ন। মক্কাবাসীরা যে সচ্ছলতা ও শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেছিল তা তাদেরকে এতটাই অহংকারী করে তুলেছিল যে, তারা আল্লাহর নবীর কথা শুনতে কোনভাবেই প্রস্তুত ছিল না। এ কারণে আল্লাহ যদি সংকীর্ণমনা লোকদের জন্য রিযিকের দরজা খুলে দেন, তাহলে তারা পুরোপুরিভাবে গর্বে ফেটে পড়বে। তাই তিনি তাদেরকে পর্যবেক্ষণে রেখেছেন এবং বুঝেশুনে একটি পরিমাণ মতো রিযিক দিচ্ছেন।
তিনি যাকে চান তাকে অপরিমিত রিযিক দান করেন :
وَاللهُ يَرْزُقُ مَنْ يَّشَآءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ
আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অপরিমিত জীবিকা দান করেন। (সূরা নূর- ৩৮)
اِنَّ اللهَ يَرْزُقُ مَنْ يَّشَآءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ
নিশ্চয় আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন অপরিমিত রিযিক দান করেন। (সূরা আলে ইমরান- ৩৭)
ব্যাখ্যা : আরবি ভাষায় রিযিক এর অর্থ শুধু খাদ্যবস্তুর মধ্যে সীমিত নয়; বরং দান ও অনুগ্রহ অর্থেও তা ব্যবহৃত হয়। আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে দুনিয়ায় যা কিছু দিয়েছেন তা সবই মানুষের জন্য রিযিক। এমনকি ইলিম এবং বিভিন্ন গুণাবলিও রিযিকের অন্তর্ভুক্ত।
আল্লাহর হাত প্রশস্ত :
وَقَالَتِ الْيَهُوْدُ يَدُ اللهِ مَغْلُوْلَةٌ ؕ غُلَّتْ اَيْدِيْهِمْ وَلُعِنُوْا بِمَا قَالُوْا بَلْ يَدَاهُ مَبْسُوْطَتَانِ يُنْفِقُ كَيْفَ يَشَآءُ
ইয়াহুদিরা বলে, ‘আল্লাহর হাত রুদ্ধ’; (বরং) তারাই রুদ্ধহস্ত এবং তারা যা বলে সেজন্য তারা অভিশপ্ত। আর আল্লাহর উভয় হাতই প্রসারিত; যেভাবে ইচ্ছা তিনি দান করেন। (সূরা মায়েদা- ৬৪)
আল্লাহ সর্ববিষয়ে জ্ঞান রাখেন :
اِنَّ اللهَ كَانَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمًا
নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ। (সূরা নিসা- ৩২)
ব্যাখ্যা : عَلِيْمٌ (‘আলীম) শব্দের অর্থ সর্বজ্ঞ, মহাজ্ঞানী। অর্থাৎ তিনি ছোট-বড়, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সবকিছু সম্পর্কে জানেন। তার জ্ঞানের বাহিরে কোন জিনিস থাকতে পারে না। তিনি কোন বিষয়ে অনুমান করেন না; বরং সবকিছু সম্পর্কে সরাসরি জানেন। সুতরাং অনুভূতি ও ইন্দ্রিয়বহির্ভূত বিষয়ে তিনি যেসব তথ্য দিচ্ছেন, তার সবগুলোই সঠিক। আর তা না মানার অর্থ হচ্ছে, অজ্ঞতার অনুসরণ করা। একইভাবে তিনি মানুষের উন্নতির পথ ও পদ্ধতি সম্পর্কেও জানেন। তাঁর প্রতিটি শিক্ষা সঠিক ও জ্ঞানভিত্তিক, যার মধ্যে ভুলভ্রান্তির কোন সম্ভাবনা নেই। অতএব তাঁর পথনির্দেশনা গ্রহণ না করার অর্থ হচ্ছে, সঠিক পথে চলতে না চাওয়া এবং ভ্রান্ত পথে চলতে থাকা। তাছাড়া মানুষের কোন গতিবিধি তাঁর নিকট গোপন থাকতে পারে না। এমনকি তিনি মানুষের অন্তর্নিহিত সকল ধরনের ইচ্ছা সম্পর্কেও জানেন, যা তাদের সমস্ত কাজকর্মের মূল চালিকাশক্তি। তাই মানুষ কোন অজুহাত দেখিয়ে তাঁর শাস্তি থেকে রক্ষা পাবে না।
لَهٗ مَقَالِيْدُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِۚ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيَقْدِرُؕ اِنَّهٗ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর চাবিসমূহ তাঁরই নিকট। তিনি যাকে ইচ্ছা তার রিযিক বর্ধিত করেন অথবা সংকুচিত করেন। তিনি সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ। (সূরা শূরা- ১২)
আল্লাহর জ্ঞান সবকিছুকে বেষ্টন করে আছে :
اَنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ وَّاَنَّ اللهَ قَدْ اَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا
আল্লাহ সর্ববিষয়ে শক্তিমান এবং আল্লাহ তাঁর জ্ঞান দ্বারা সবকিছুই পরিবেষ্টন করে রেখেছেন। (সূরা তালাক্ব- ১২)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর জ্ঞান ও তাঁর পাকড়াও হতে কেউ বাঁচতে পারে না। পাথরের মধ্যে ছোট্ট একটি কণা মানুষের দৃষ্টির অগোচরে থাকতে পারে কিন্তু তাঁর কাছে তা সুস্পষ্ট। আকাশে একটি ক্ষুদ্রতম কণিকা মানুষ থেকে বহু দূরবর্তী হতে পারে, ভূমির গভীরে অবস্থিত কোন জিনিসের প্রতি তার দৃষ্টি শেষ হয়ে যেতে পারে; কিন্তু তা আল্লাহর অতি নিকটতর। কাজেই তুমি কোথাও এমন কোন সৎ বা অসৎকাজ করতে পার না, যা আল্লাহর অগোচরে থেকে যায়। তিনি তা জানেন কেবল তা নয় বরং যখন হিসাব-নিকাশের সময় আসবে তখন তিনি তোমাদের প্রত্যেকটি কাজের রেকর্ডও তোমাদের সামনে উপস্থাপন করবেন।
অতীত-ভবিষ্যৎ সবই আল্লাহ জানেন :
يَعْلَمُ مَا بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْؕ وَاِلَى اللهِ تُرْجَعُ الْاُمُوْرُ
তাদের সম্মুখে এবং পশ্চাতে যা কিছু আছে তিনি তা জানেন। আর সমসত্ম বিষয় তো আল্লাহর দিকেই প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা হজ্জ- ৭৬)
আসমান-জমিনের সবকিছুই আল্লাহ জানেন :
قُلْ اِنْ تُخْفُوْا مَا فِيْ صُدُوْرِكُمْ اَوْ تُبْدُوْهُ يَعْلَمْهُ اللهُؕ وَيَعْلَمُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَ رْضِؕ وَاللهُ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
বলো, তোমাদের অন্তরে যা আছে তা গোপন রাখ অথবা প্রকাশ কর আল্লাহ সে সম্পর্কে অবগত আছেন। এমনকি আসমান ও জমিনে যা আছে সবকিছু সম্পর্কে তিনি অবগত আছেন। আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা আলে ইমরান- ২৯)
اَنَّ اللهَ يَعْلَمُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَ رْضِ وَاَنَّ اللهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ
আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে আল্লাহ সে সম্পর্কে জানেন; নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ। (সূরা মায়েদা- ৯৭)
সবকিছু জানা আল্লাহর জন্যই শোভা পায় :
اَلَا يَعْلَمُ مَنْ خَلَقَؕ وَهُوَ اللَّطِيْفُ الْخَبِيْرُ
যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি জানেন না? তিনি সূক্ষ্মদর্শী ও সবকিছুর খবর রাখেন। (সূরা মুলক- ১৪)
জলে-স্থলে কী আছে সবই আল্লাহর জানা আছে :
وَيَعْلَمُ مَا فِى الْبَرِّ وَالْبَحْرِ
জলে ও স্থলে যা কিছু আছে সে সম্পর্কে তিনি অবগত। (সূরা আন‘আম- ৫৯)
গাছের পাতা ঝরলে তাও জানেন :
وَمَا تَسْقُطُ مِنْ وَّرَقَةٍ اِلَّا يَعْلَمُهَا وَلَا حَبَّةٍ فِيْ ظُلُمَاتِ الْاَ رْضِ وَلَا رَطْبٍ وَّلَا يَابِسٍ اِلَّا فِيْ كِتَابٍ مُّبِيْنٍ
তাঁর অজ্ঞাতসারে একটি পাতাও পড়ে না। মাটির অন্ধকারে এমন কোন শস্যকণাও রসযুক্ত কিংবা শুষ্ক হয় না, যা সুস্পষ্ট কিতাবে নেই। (সূরা আন‘আম- ৫৯)
জমিনে যা প্রবেশ করে এবং আকাশে যা উঠে আল্লাহ তাও জানেন :
يَعْلَمُ مَا يَلِجُ فِى الْاَ رْضِ وَمَا يَخْرُجُ مِنْهَا وَمَا يَنْزِلُ مِنَ السَّمَآءِ وَمَا يَعْرُجُ فِيْهَاؕ وَهُوَ الرَّحِيْمُ الْغَفُوْرُ
তিনি জানেন যা কিছু জমিনে প্রবেশ করে এবং যা কিছু সেখান থেকে বের হয়। আর যা কিছু আসমান থেকে নাযিল হয় এবং যা কিছু সেখানে আরোহণ করে। তিনি পরম দয়ালু ও অত্যন্ত ক্ষমাশীল। (সূরা সাবা- ২)
يَعْلَمُ مَا يَلِجُ فِى الْاَ رْضِ وَمَا يَخْرُجُ مِنْهَا وَمَا يَنْزِلُ مِنَ السَّمَآءِ وَمَا يَعْرُجُ فِيْهَاؕ وَهُوَ مَعَكُمْ اَيْنَ مَا كُنْتُمْؕ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
তিনি জানেন যা কিছু ভূমিতে প্রবেশ করে ও যা কিছু তা হতে বের হয় এবং আকাশ হতে যা কিছু নামে ও আকাশে যা কিছু উঠে। তোমরা যেখানেই থাক না কেন তিনি (জানার দিক দিয়ে) তোমাদের সঙ্গেই আছেন। আর তোমরা যা কিছু কর আল্লাহ তা দেখেন। (সূরা হাদীদ- ৪)
নারীর জরায়ুতে সন্তানের কী অবস্থা তাও জানেন :
اَللهُ يَعْلَمُ مَا تَحْمِلُ كُلُّ اُنْثٰى وَمَا تَغِيْضُ الْاَ رْحَامُ وَمَا تَزْدَادُؕ وَكُلُّ شَيْءٍ عِنْدَهٗ بِمِقْدَارٍ
প্রত্যেক নারী যা গর্ভে ধারণ করে এবং জরায়ুতে যা কিছু কমে ও বাড়ে আল্লাহ তাও জানেন এবং তাঁর বিধানে প্রত্যেক বস্তুরই একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ রয়েছে। (সূরা রা‘দ- ৮)
ব্যাখ্যা : মাতৃগর্ভে ভ্রূণের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, শক্তি-সামর্থ্য, যোগ্যতা ও মানসিক ক্ষমতার মধ্যে যাবতীয় হ্রাস-বৃদ্ধি আল্লাহর সরাসরি তত্ত্বাবধানে সাধিত হয়।
গর্ভধারণ, প্রসব ও বয়স সবই তাঁর জ্ঞানের আওতায় :
وَمَا تَحْمِلُ مِنْ اُنْثٰى وَلَا تَضَعُ اِلَّا بِعِلْمِه ؕ وَمَا يُعَمَّرُ مِنْ مُّعَمَّرٍ وَّلَا يُنْقَصُ مِنْ عُمُرِه ۤ اِلَّا فِيْ كِتَابٍؕ اِنَّ ذٰلِكَ عَلَى اللهِ يَسِيْرٌ
কোন নারীই গর্ভধারণ করে না এবং সন্তানও প্রসব করে না তাঁর অজান্তে। আর কোন বয়স্ক ব্যক্তির দীর্ঘায়ু লাভ করা হয় না আবার তার আয়ু কমও করা হয় না, কিন্তু তা তো লিপিবদ্ধ রয়েছে এক কিতাবে (লাওহে মাহফুযে)। নিশ্চয় এ কাজ আল্লাহর পক্ষে অতি সহজ। (সূরা ফাতির- ১১)
পাঁচটি জিনিসের বিশেষ জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর কাছে :
اِنَّ اللهَ عِنْدَهٗ عِلْمُ السَّاعَةِۚ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَۚ وَيَعْلَمُ مَا فِى الْاَ رْحَامِؕ وَمَا تَدْرِيْ نَفْسٌ مَّاذَا تَكْسِبُ غَدًاؕ وَّمَا تَدْرِيْ نَفْسٌ ۢبِاَيِّ اَرْضٍ تَمُوْتُؕ اِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ خَبِيْرٌ
নিশ্চয় আল্লাহর কাছে রয়েছে কিয়ামত সম্পর্কে জ্ঞান। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তিনিই জানেন যা কিছু গর্ভে আছে। কেউ জানে না আগামীকাল সে কী আয় করবে এবং কেউ জানে না কোন স্থানে সে মৃত্যুবরণ করবে। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু জানেন এবং সব খবর রাখেন। (সূরা লুক্বমান- ৩৪)
ব্যাখ্যা : মানুষের সচ্ছলতা-অসচ্ছলতা নির্ভর করে বৃষ্টির উপর। কিন্তু আল্লাহর হাতে রয়েছে এর চাবিকাঠি। তিনি যখন যেখানে যতটুকু চান পানি বর্ষণ করেন এবং যখনই চান থামিয়ে দেন। কেউ এতটুকুও জানে না যে, কোথায় কখন কতটুকু বৃষ্টি হবে এবং কোন্ ভূখন্ড তা হতে বঞ্চিত হবে অথবা কেন্ ভূখন্ডে বৃষ্টি উল্টো ক্ষতিকর প্রমাণিত হবে। পুরুষের বীর্যে স্ত্রীদের গর্ভসঞ্চার হয় এবং এর সাথে মানুষের বংশধারার ভবিষ্যৎ জড়িত। কিন্তু মানুষ জানে না যে, এ গর্ভে কী লালিত হচ্ছে এবং কোন্ আকৃতিতে ও কোন্ ধরনের কল্যাণ বা অকল্যাণ নিয়ে তা বের হয়ে আসবে। আগামীকাল তাদের কী হবে, তাও তারা জানে না। একটি আকস্মিক দুর্ঘটনা মানুষের ভাগ্য বদলে দিতে পারে। কিন্তু এক মিনিট আগেও মানুষ তার খবর পায় না। মানুষ এটাও জানে না যে, তাদের এ জীবনের সমাপ্তি কোথায় এবং কী অবস্থায় ঘটবে। এ সমস্ত তথ্যজ্ঞান আল্লাহ নিজের কাছে রেখেছেন। এভাবে দুনিয়ার শেষ ক্ষণটির ব্যাপারেও আল্লাহর ফায়সালার প্রতি আস্থা রাখা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
মানুষের অবস্থা আল্লাহই ভালো জানেন :
رَبُّكُمْ اَعْلَمُ بِكُمْؕ اِنْ يَّشَاْ يَرْحَمْكُمْ اَوْ اِنْ يَّشَاْ يُعَذِّبْكُمْ
তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের ব্যাপারে ভালোভাবে জানেন। ইচ্ছা করলে তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করেন এবং ইচ্ছা করলে তোমাদেরকে শাসিত্ম দেন। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৫৪)
সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষকে জানেন :
هُوَ اَعْلَمُ بِكُمْ اِذْ اَنْشَاَكُمْ مِّنَ الْاَ رْضِ وَاِذْ اَنْتُمْ اَجِنَّةٌ فِيْ بُطُوْنِ اُمَّهَاتِكُمْۚ فَلَا تُزَكُّوْاۤ اَنْفُسَكُمْؕ هُوَ اَعْلَمُ بِمَنِ اتَّقٰى
তিনি তোমাদের সম্পর্কে সম্যক অবগত- যখন তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছিলেন মাটি হতে এবং এক সময় তোমরা মাতৃগর্ভে ভ্রুণরূপে ছিলে। অতএব তোমরা আত্মপ্রশংসা করো না, তিনিই ভালো জানেন কে মুত্তাক্বী। (সূরা নাজম- ৩২)
তিনি পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের সম্পর্কে জানেন :
وَلَقَدْ عَلِمْنَا الْمُسْتَقْدِمِيْنَ مِنْكُمْ وَلَقَدْ عَلِمْنَا الْمُسْتَاْخِرِيْنَ
তোমাদের মধ্য হতে পূর্বে যারা গত হয়েছে আমি তাদেরকে জানি এবং পরে যারা আসবে তাদেরকেও জানি। (সূরা হিজর- ২৪)
মানুষের মনের কথাও তিনি জানেন :
وَاَسِرُّوْا قَوْلَكُمْ اَوِ اجْهَرُوْا بِهٖؕ اِنَّهٗ عَلِيْمٌ ۢبِذَاتِ الصُّدُوْرِ
তোমরা তোমাদের কথা চুপে চুপে বল অথবা উচ্চৈঃস্বরে বল, তিনি তো অন্তরের গোপনীয়তা সম্পর্কে সর্বজ্ঞ। (সূরা মুলক- ১৩)
اِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ ۢبِذَاتِ الصُّدُوْرِ
নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের অন্তরের বিষয় সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত আছেন। (সূরা আলে ইমরান- ১১৯)
وَاللهُ يَعْلَمُ مَا فِيْ قُلُوْبِكُمْؕ وَكَانَ اللهُ عَلِيْمًا حَلِيْمًا
তোমাদের অন্তরে যা আছে তা আল্লাহ জানেন। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী ও সহনশীল। (সূরা আহযাব- ৫১)
وَاِنَّ رَبَّكَ لَيَعْلَمُ مَا تُكِنُّ صُدُوْرُهُمْ وَمَا يُعْلِنُوْنَ
তাদের অন্তর যা গোপন করে এবং তারা যা প্রকাশ করে অবশ্যই তোমার প্রতিপালক তা জানেন। (সূরা নামল- ৭৪)
اِنْ تُبْدُوْا شَيْئًا اَوْ تُخْفُوْهُ فَاِنَّ اللهَ كَانَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمًا
যদি তোমরা কোন বিষয় প্রকাশ কর কিংবা তা গোপন রাখ তবে আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়েই অবগত আছেন। (সূরা আহযাব- ৫৪)
কথা আস্তে বলা বা জোরে বলা উভয়ই তাঁর নিকট সমান :
سَوَآءٌ مِّنْكُمْ مَّنْ اَسَرَّ الْقَوْلَ وَمَنْ جَهَرَ بِهٖ وَمَنْ هُوَ مُسْتَخْفٍ ۢبِاللَّيْلِ وَسَارِبٌ ۢبِالنَّهَارِ
তোমাদের মধ্যে যে কথা গোপন রাখে এবং যে প্রকাশ করে, আর যে রাত্রিতে আত্মগোপন করে এবং যে দিবসে প্রকাশ্যে বিচরণ করে, তারা সমভাবে আল্লাহর জ্ঞানগোচরেই আছে। (সূরা রা‘দ- ১০)
وَاِنْ تَجْهَرْ بِالْقَوْلِ فَاِنَّهٗ يَعْلَمُ السِّرَّ وَاَخْفٰى
যদি তুমি উচ্চকণ্ঠে কথা বল, তবে তিনি তো যা গুপ্ত ও অব্যক্ত সবকিছুই জানেন। (সূরা ত্বা-হা- ৭)
اِنَّهٗ يَعْلَمُ الْجَهْرَ مِنَ الْقَوْلِ وَيَعْلَمُ مَا تَكْتُمُوْنَ
তিনি জানেন, তোমরা যে কথা ব্যক্ত কর এবং যা গোপন কর। (সূরা আম্বিয়া- ১১০)
قَالَ رَبِّيْ يَعْلَمُ الْقَوْلَ فِى السَّمَآءِ وَالْاَ رْضِ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
সে বলল, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সমসত্ম কথাই আমার প্রতিপালক অবগত আছেন এবং তিনিই সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা আম্বিয়া- ৪)
গুপ্ত বিষয়গুলো তিনি একদিন প্রকাশ করবেন :
وَاللهُ مُخْرِجٌ مَّا كُنْتُمْ تَكْتُمُوْنَ
তোমরা যা গোপন করেছিলে আল্লাহ তার প্রকাশকারী। (সূরা বাক্বারা- ৭২)
কেউ খারাপ চিন্তা করলে তাও জানেন :
وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْاِنْسَانَ وَنَعْلَمُ مَا تُوَسْوِسُ بِهٖ نَفْسُهٗۚ وَنَحْنُ اَقْرَبُ اِلَيْهِ مِنْ حَبْلِ الْوَرِيْدِ
আমিই মানুষকে সৃষ্টি করেছি এবং তার অন্তর তাকে যে কুমন্ত্রণা দেয় তা আমি জানি। আমি তার ঘাড়ের শাহরগ অপেক্ষাও নিকটতর। (সূরা ক্বাফ- ১৬)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর ক্ষমতা ও জ্ঞান এমনভাবে মানুষকে পরিবেষ্টন করে আছে যে, তাঁর ক্ষমতা মানুষের যতটা নিকটে তার ঘাড়ের শিরাও ততটা নিকটে নয়। মানুষের কথা শোনার জন্য তাঁকে কোথাও থেকে আসতে হয় না। তার মনের মধ্যে উদিত কল্পনাসমূহ পর্যন্ত আল্লাহ সরাসরি জানেন। অনুরূপভাবে তাকে যদি কোন সময় আল্লাহ পাকড়াও করতে চান, তখনও তাঁকে কোথাও থেকে এসে তাকে পাকড়াও করতে হয় না। মানুষ যেখানেই থাকুক না কেন সর্বদা সে আল্লাহর আয়ত্তাধীন রয়েছে।
মানুষের সলাপরামর্শেরও খবর রাখেন :
اَنَّ اللهَ يَعْلَمُ سِرَّهُمْ وَنَجْوَاهُمْ وَاَنَّ اللهَ عَلَّامُ الْغُيُوْبِ
(তারা কি জানে না যে) আল্লাহ তাদের অন্তরের গোপন কথা ও তাদের গোপন পরামর্শ সম্পর্কেও অবগত আছেন এবং যা অদৃশ্য তাও তিনি বিশেষভাবে জানেন। (সূরা তাওবা- ৭৮)
সলাপরামর্শে মানুষ যতজন হয় তার মধ্যে আল্লাহ একজন :
مَا يَكُوْنُ مِنْ نَّجْوٰى ثَلَاثَةٍ اِلَّا هُوَ رَابِعُهُمْ وَلَا خَمْسَةٍ اِلَّا هُوَ سَادِسُهُمْ وَلَاۤ اَدْنٰى مِنْ ذٰلِكَ وَلَاۤ اَكْثَرَ اِلَّا هُوَ مَعَهُمْ اَيْنَ مَا كَانُوْاۚ ثُمَّ يُنَبِّئُهُمْ بِمَا عَمِلُوْا يَوْمَ الْقِيَامَةِؕ اِنَّ اللهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ
তিনজনের এমন কোন পরামর্শ হয় না, যাতে তিনি তাদের চতুর্থ না হন; আর পাঁচ জনেরও এমন কোন পরামর্শ হয় না, যাতে তিনি তাদের ষষ্ঠ না হন। (এ সলাপরামর্শকারীদের সংখ্যা) তার চেয়ে কম হোক কিংবা বেশি হোক তারা যেখানেই থাকুক না কেন, তিনি তাদের সাথে আছেন। অতঃপর তারা যা করে কিয়ামতের দিন তাদেরকে তিনি জানিয়ে দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে জ্ঞানী। (সূরা মুজাদালা- ৭)
মানুষ কী উপার্জন করছে তাও আল্লাহ জানেন :
وَهُوَ اللهُ فِى السَّمَاوَاتِ وَفِى الْاَ رْضِؕ يَعْلَمُ سِرَّكُمْ وَجَهْرَكُمْ وَيَعْلَمُ مَا تَكْسِبُوْنَ
আসমান ও জমিনে তিনিই আল্লাহ, তোমাদের গোপন ও প্রকাশ্য সবকিছু তিনি জানেন এবং তোমরা যা অর্জন কর, তাও তিনি অবগত আছেন। (সূরা আন‘আম- ৩)
يَعْلَمُ مَا تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍؕ وَسَيَعْلَمُ الْكُفَّارُ لِمَنْ عُقْبَى الدَّارِ
প্রত্যেক ব্যক্তি যা করে তা তিনি জানেন। (সুতরাং) কাফিররা শীঘ্রই জানতে পারবে যে, পরকালের শুভ পরিণাম কাদের জন্য। (সূরা রা‘দ- ৪২)
আল্লাহ মানুষের কর্মকান্ডের খবর রাখেন :
وَاللهُ يَعْلَمُ اَعْمَالَكُمْ
আল্লাহ তোমাদের সব আমল সম্পর্কেই ভালো করে জানেন। (সূরা মুহাম্মাদ- ৩০)
وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
তোমরা যা করছ, আল্লাহ তার পর্যবেক্ষণকারী। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৬)
وَهُوَ الَّذِيْ يَتَوَفَّاكُمْ بِاللَّيْلِ وَيَعْلَمُ مَا جَرَحْتُمْ بِالنَّهَارِ
তিনিই রাতে তোমাদের মৃত্যু ঘটান এবং দিবসে তোমরা যা কর তা তিনি জানেন। (সূরা আন‘আম- ৬০)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ প্রত্যেক ব্যক্তিকে সব অবস্থায় নিজেই সরাসরি দেখছেন এবং তার সমস্ত গতিবিধি ও কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত রয়েছেন। আল্লাহর নিযুক্ত তত্ত্বাবধায়কও প্রত্যেক ব্যক্তির সাথে রয়েছেন এবং তারা তার জীবনের সমস্ত কার্যক্রমের রেকর্ডও সংরক্ষণ করছেন। এমন অকল্পনীয় ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্বের অধীনে থেকে যারা একথা মনে করে জীবন-যাপন করে যে, তাদেরকে লাগামহীন উটের মতো দুনিয়ায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে এবং তাদের কার্যকলাপের জন্য কারো কাছে জবাবদিহি করতে হবে না তারা আসলে নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনে।
চোখের খেয়ানত সম্পর্কেও জানেন :
يَعْلَمُ خَآئِنَةَ الْاَعْيُنِ وَمَا تُخْفِى الصُّدُوْرُ
চক্ষুর অপব্যবহার ও অন্তরে যা গোপন আছে সে সম্বন্ধে তিনি অবহিত। (সূরা মু’মিন- ১৯)
কেউ নেক আমল করলেও তিনি জানেন :
وَمَا تَفْعَلُوْا مِنْ خَيْرٍ فَاِنَّ اللهَ كَانَ بِهٖ عَلِيْمًا
আর তোমরা যেসব সৎকাজ কর, নিশ্চয় আল্লাহ সে সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত। (সূরা নিসা- ১২৭)
وَمَا تَفْعَلُوْا مِنْ خَيْرٍ يَّعْلَمْهُ اللهُ
তোমরা যে কোন সৎকর্ম কর না কেন আল্লাহ তা জানেন। (সূরা বাক্বারা- ১৯৭)
কিছু ব্যয় করলে তারও খবর রাখেন :
وَمَاۤ اَنْفَقْتُمْ مِّنْ نَّفَقَةٍ اَوْ نَذَرْتُمْ مِّنْ نَّذْرٍ فَاِنَّ اللهَ يَعْلَمُهٗ
তোমরা যে বস্তু দান কর অথবা যা কিছু মান্নত কর, আল্লাহ সে বিষয়ে অবগত আছেন। (সূরা বাক্বারা- ২৭০)
কে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে আল্লাহ তাও জানেন :
اَلَّذِيْ يَرَاكَ حِيْنَ تَقُوْمُ- وَتَقَلُّبَكَ فِى السَّاجِدِيْنَ
তিনি তোমাকে দেখেন যখন তুমি দন্ডায়মান হও এবং সিজদাকারীদের সাথে উঠাবসা কর। (সূরা শু‘আরা- ২১৮, ২১৯)
ব্যাখ্যা : এখানে উঠার কয়েকটি অর্থ হতে পারে।
(১) নামাযরত ব্যক্তি যখন জামা‘আতের সাথে নামায পড়ার সময় মুকতাদীদের সাথে উঠাবসা ও রুকু সিজদা করেন, তখন আল্লাহ তাকে দেখতে থাকেন।
(২) ব্যক্তি নিজের সাথিদের পরকাল গড়ার জন্য এবং আল্লাহর বান্দাদের সংশোধন করার জন্য যেসব প্রচেষ্টা, সংগ্রাম ও সাধনা চালিয়ে যায়, আল্লাহ সে সম্পর্কে সবকিছু অবগত আছেন।
(৩) ব্যক্তি সিজদাকারী লোকদের দলে যেসব তৎপরতা চালিয়ে যায়, আল্লাহ তা পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি জানেন উক্ত বান্দা কীভাবে তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, কীভাবে তাদেরকে পরিশুদ্ধ করছে, কীভাবে ভেজাল সোনাকে খাঁটি সোনায় পরিণত করছে।
রাতের বেলায় তাহাজ্জুদে দাঁড়ালে তাও আল্লাহ জানেন :
اِنَّ رَبَّكَ يَعْلَمُ اَنَّكَ تَقُوْمُ اَدْنٰى مِنْ ثُلُثَيِ اللَّيْلِ وَنِصْفَهٗ وَثُلُثَهٗ وَطَآئِفَةٌ مِّنَ الَّذِيْنَ مَعَكَ
তোমার প্রতিপালক তো জানেন যে, তুমি জাগরণ কর কখনো রাত্রির প্রায় দুই তৃতীয়াংশ, কখনো অর্ধাংশ এবং কখনো এক তৃতীয়াংশ এবং তোমার সাথে যারা আছে তাদের একটি দলও জাগে। (সূরা মুয্যাম্মিল- ২০)
তিনি মানুষের সকল কাজ পরিদর্শন করেন :
وَمَا تَكُوْنُ فِيْ شَاْنٍ وَّمَا تَتْلُوْ مِنْهُ مِنْ قُرْاٰنٍ وَّلَا تَعْمَلُوْنَ مِنْ عَمَلٍ اِلَّا كُنَّا عَلَيْكُمْ شُهُوْدًا اِذْ تُفِيْضُوْنَ فِيْهِؕ وَمَا يَعْزُبُ عَنْ رَّبِّكَ مِنْ مِّثْقَالِ ذَرَّةٍ فِى الْاَ رْضِ وَلَا فِى السَّمَآءِ وَلَاۤ اَصْغَرَ مِنْ ذٰلِكَ وَلَاۤ اَكْبَرَ اِلَّا فِيْ كِتَابٍ مُّبِيْنٍ
তুমি যে অবস্থায়ই থাক এবং তুমি কুরআন হতে যা কিছুই তিলাওয়াত কর কিংবা তোমরা যে কাজই কর না কেন, যখনই তোমরা তাতে প্রবৃত্ত হও তখন আমি তোমাদের পরিদর্শক হই। আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর অনুপরিমাণ বস্তুও তোমার প্রতিপালকের অগোচরে নয় এবং তা অপেক্ষা ক্ষুদ্রতর অথবা বৃহত্তর কিছুই নেই, যা সুস্পষ্ট কিতাবে নেই। (সূরা ইউনুস- ৬১)
আল্লাহ সবকিছুর উপর সাক্ষী আছেন :
اِنَّ اللهَ كَانَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ شَهِيْدًا
নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে লক্ষ্য করেন। (সূরা নিসা- ৩৩, সূরা আহযাব- ৫৫)
وَكَفٰى بِاللهِ شَهِيْدًا
সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। (সূরা নিসা- ৭৯)
আল্লাহ বান্দার উপর তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখেন :
اِنَّ اللهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيْبًا
নিশ্চয় আল্লাহই তোমাদের উপর তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখেন। (সূরা নিসা- ১)
কেউ দুর্বল থাকলে তাও জানেন :
وَعَلِمَ اَنَّ فِيْكُمْ ضَعْفًا
তিনি তো অবগত আছেন যে, তোমাদের মধ্যে দুর্বলতা আছে। (সূরা আনফাল- ৬৬)
কেউ অসুখ থাকলে তাও জানেন :
عَلِمَ اَنْ سَيَكُوْنُ مِنْكُمْ مَّرْضٰى
তিনি জানেন যে, তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়বে। (সূরা মুয্যাম্মিল- ২০)
কেউ মিথ্যা বললে তাও আল্লাহ জানতে পারেন :
وَاِنَّا لَنَعْلَمُ اَنَّ مِنْكُمْ مُّكَذِّبِيْنَ
নিশ্চয় আমি জানি যে, তোমাদের মধ্যে মিথ্যাপ্রতিপন্নকারী কিছু লোকও রয়েছে। (সূরা হাক্কাহ- ৪৯)
যালিমদের সম্পর্কেও আল্লাহ জানেন :
وَاللهُ اَعْلَمُ بِالظَّالِمِيْنَ
আর আল্লাহ যালিমদের সম্বন্ধে অধিক অবহিত। (সূরা আন‘আম- ৫৮)
ফাসাদকারীদেরকেও আল্লাহ জানেন :
فَاِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ ۢبِالْمُفْسِدِيْنَ
তবে ফাসাদকারীদের সম্পর্কে অবশ্যই আল্লাহ ভালো জানেন। (সূরা আলে ইমরান- ৬৩)
وَ رَبُّكَ اَعْلَمُ بِالْمُفْسِدِيْنَ
তোমার প্রতিপালক অশান্তি সৃষ্টিকারীদের সম্বন্ধে সম্যক অবহিত। (সূরা ইউনুস- ৪০)
আল্লাহ জানেন কারা সীমালঙ্ঘনকারী :
اِنَّ رَبَّكَ هُوَ اَعْلَمُ بِالْمُعْتَدِيْنَ
নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক সীমালঙ্ঘনকারীদের সম্বন্ধে ভালোভাবেই জানেন। (সূরা আন‘আম- ১১৯)
মুনাফিক কারা তা আল্লাহ জানেন :
وَمِمَّنْ حَوْلَكُمْ مِّنَ الْاَعْرَابِ مُنَافِقُوْنَؕ وَمِنْ اَهْلِ الْمَدِيْنَةِؕ مَرَدُوْا عَلَى النِّفَاقِؕ لَا تَعْلَمُهُمْ نَحْنُ نَعْلَمُهُمْؕ سَنُعَذِّبُهُمْ مَّرَّتَيْنِ ثُمَّ يُرَدُّوْنَ اِلٰى عَذَابٍ عَظِيْمٍ
মরুবাসীদের মধ্যে যারা তোমাদের আশেপাশে আছে তাদের কেউ কেউ মুনাফিক এবং মদিনাবাসীদের মধ্যেও কেউ কেউ কপটতায় সিদ্ধ। তুমি তাদেরকে জান না; আমি তাদেরকে জানি। অচিরেই আমি তাদেরকে দু’বার শাস্তি দেব। অতঃপর তারা প্রত্যাবর্তিত হবে মহাশাস্তির দিকে। (সূরা তাওবা- ১০১)
মুসলিমদের শত্রু কারা তাও জানেন :
وَاللهُ اَعْلَمُ بِاَعْدَآئِكُمْؕ وَكَفٰى بِاللهِ وَلِيًّا وَّكَفٰى بِاللهِ نَصِيْرًا
আল্লাহ তোমাদের শত্রুদেরকে ভালোভাবে জানেন। অভিভাবকত্বে আল্লাহই যথেষ্ট এবং সাহায্যেও আল্লাহ যথেষ্ট। (সূরা নিসা- ৪৫)
মুত্তাক্বীদের সম্পর্কেও জানেন :
وَمَا يَفْعَلُوْا مِنْ خَيْرٍ فَلَنْ يُّكْفَرُوْهُؕ وَاللهُ عَلِيْمٌ ۢبِالْمُتَّقِيْنَ
আর তারা যে ভালো কাজই করুক না কেন তা অবমূল্যায়ন করা হবে না। আর আল্লাহ মুত্তাক্বীদের সম্পর্কে জানেন। (সূরা আলে ইমরান- ১১৫)
কারা কৃতজ্ঞ আল্লাহ তা জানেন :
اَلَيْسَ اللهُ بِاَعْلَمَ بِالشَّاكِرِيْنَ
আল্লাহ কি কৃতজ্ঞ লোকদের সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত নন? (সূরা আন‘আম- ৫৩)
কে কোন পথে ঘুরছে আল্লাহ জানেন :
وَاللهُ يَعْلَمُ مُتَقَلَّبَكُمْ وَمَثْوَاكُمْ
আল্লাহ তোমাদের তৎপরতার খবরও রাখেন এবং তোমাদের (শেষ) ঠিকানা সম্পর্কেও (অবগত আছেন)। (সূরা মুহাম্মাদ- ১৯)
আল্লাহ গাফিল নন :
وَمَا اللهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ
তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আল্লাহ অমনোযোগী নন। (সূরা বাক্বারা- ৭৪)
وَلَا تَحْسَبَنَّ اللهَ غَافِلًا عَمَّا يَعْمَلُ الظَّالِمُوْنَؕ اِنَّمَا يُؤَخِّرُهُمْ لِيَوْمٍ تَشْخَصُ فِيْهِ الْاَبْصَارُ
তুমি কখনো মনে করো না যে, যালিমরা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ গাফিল, তবে তিনি তাদেরকে সেদিন পর্যমত্ম অবকাশ দেন যেদিন তাদের চক্ষু স্থির হয়ে যাবে। (সূরা ইবরাহীম- ৪২)
আল্লাহ মানুষকে দেখছেন :
اَلَمْ يَعْلَمْ بِاَنَّ اللهَ يَرٰى
সে কি জানে না যে, আল্লাহ তাকে দেখছেন? (সূরা আলাক্ব- ১৪)
আল্লাহ জানার দিক থেকে মানুষের অতি নিকটে :
وَنَحْنُ اَقْرَبُ اِلَيْهِ مِنْ حَبْلِ الْوَرِيْدِ
আমি (জ্ঞানের দিক দিয়ে) তার ঘাড়ের শাহরগ অপেক্ষাও নিকটতর । (সূরা ক্বাফ- ১৬)
وَهُوَ مَعَكُمْ اَيْنَ مَا كُنْتُمْؕ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
তোমরা যেখানেই থাক না কেন তিনি (জানার দিক দিয়ে) তোমাদের সঙ্গে আছেন, তোমরা যা কিছু কর আল্লাহ তা দেখেন। (সূরা হাদীদ- ৪)
মানুষের মৃত্যুও আল্লাহ পর্যবেক্ষণ করেন :
فَلَوْلَاۤ اِذَا بَلَغَتِ الْحُلْقُوْمَ ‐ - وَاَنْتُمْ حِيْنَئِذٍ تَنْظُرُوْنَ - ‐ وَنَحْنُ اَقْرَبُ اِلَيْهِ مِنْكُمْ وَلٰكِنْ لَّا تُبْصِرُوْنَ
প্রাণ যখন কণ্ঠনালীতে উপস্থিত হয় আর তখন তোমরা তাকিয়ে দেখ। আর আমি তোমাদের অপেক্ষা (জানার দিক দিয়ে) তার নিকটতর; কিন্তু তোমরা দেখতে পাও না। (সূরা ওয়াক্বিয়া, ৮৩-৮৫)
কার আবাস কোথায় হবে আল্লাহ জানেন :
وَمَا مِنْ دَآبَّةٍ فِى الْاَ رْضِ اِلَّا عَلَى اللهِ رِزْقُهَا وَيَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَا كُلٌّ فِيْ كِتَابٍ مُّبِيْنٍ
ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী সকলের জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহরই। তিনি তাদের স্থায়ী ও অস্থায়ী অবস্থান সম্বন্ধে অবহিত; সুস্পষ্ট কিতাবে সবকিছুই আছে। (সূরা হুদ- ৬)
গায়েবের (অদৃশ্য বিষয়ের) জ্ঞান কেবল আল্লাহরই রয়েছে :
قُلْ لَّا يَعْلَمُ مَنْ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِ الْغَيْبَ اِلَّا اللهُؕ وَمَا يَشْعُرُوْنَ اَيَّانَ يُبْعَثُوْنَ
বলো, আল্লাহ ব্যতীত আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে কেউ অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান রাখে না এবং তারা জানে না যে, কখন তারা উত্থিত হবে। (সূরা নামল- ৬৫)
وَعِنْدَهٗ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لَا يَعْلَمُهَاۤ اِلَّا هُوَ
অদৃশ্যের চাবিকাঠি তাঁরই নিকট রয়েছে, তিনি ব্যতীত তা অন্য কেউ জানে না। (সূরা আন‘আম- ৫৯)
وَلِلّٰهِ غَيْبُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِؕ وَاِلَيْهِ يُرْجَعُ الْاَمْرُ كُلُّهٗ فَاعْبُدْهُ وَتَوَكَّلْ عَلَيْهِؕ وَمَا رَبُّكَ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহরই এবং তাঁরই নিকট সমসত্ম কিছুর প্রত্যাবর্তন হবে। সুতরাং তুমি তাঁর ইবাদাত কর এবং তাঁর উপর নির্ভর করো। তোমরা যা করো সে সম্বন্ধে তোমার প্রতিপালক গাফিল নন। (সূরা হুদ- ১২৩)
عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ الْكَبِيْرُ الْمُتَعَالِ
যা অদৃশ্য ও যা দৃশ্যমান তিনি তা অবগত; তিনি মহান ও সর্বোচ্চ মর্যাদাবান। (সূরা রা‘দ- ৯)
اِنَّ اللهَ يَعْلَمُ غَيْبَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِؕ وَاللهُ بَصِيْرٌ ۢبِمَا تَعْمَلُوْنَ
নিশ্চয় আল্লাহ আসমান ও জমিনের গায়েবী বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন। আর তোমরা যা কিছু করছ তিনি তা দেখছেন। (সূরা হুজুরাত- ১৮)
اِنَّ اللهَ عَالِمُ غَيْبِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِؕ اِنَّهٗ عَلِيْمٌ ۢبِذَاتِ الصُّدُوْرِ
নিশ্চয় আল্লাহ আসমান ও জমিনের যাবতীয় গুপ্ত বিষয় সম্পর্কে পরিজ্ঞাত। নিশ্চয় তিনি অন্তরের বিষয় সম্বন্ধেও অবগত আছেন। (সূরা ফাতির- ৩৮)
ذٰلِكَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ الْعَزِيْزُ الرَّحِيْمُ
তিনি অপ্রকাশ্য ও প্রকাশ্য সকল বিষয় সম্পর্কে পরিজ্ঞাত, প্রতাপশালী ও পরম দয়ালু। (সূরা সাজদা- ৬)
ব্যাখ্যা : غَائِبٌ (গায়েব) শব্দের অর্থ লুকানো, অদৃশ্য বা আবৃত। পারিভাষিক অর্থে গায়েব হচ্ছে এমন জিনিস যা অজানা এবং যাকে উপায়-উপকরণ দ্বারা আয়ত্ত করা যায় না। এ ব্যাপারেও মহান আল্লাহ একক সত্তা। পৃথিবী ও আকাশে ফেরেশতা, জিন, নবী, আউলিয়া অথবা মানুষ যে কোন সৃষ্টিই হোক না কেন সকলের জ্ঞানই সীমাবদ্ধ। কিছু না কিছু বিষয় সবার কাছ থেকে গোপন রয়েছে। সবকিছুর জ্ঞান যদি কারো থাকে তাহলে তিনি হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ। এ বিশ্বের কোন জিনিস এবং কোন কথা তাঁর কাছে গোপন নেই। তিনি অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সবকিছু সম্পর্কে অবগত আছেন। মানুষের মন এ সত্যটি সুস্পষ্টভাবে জানে যে, ভাগ্যের ভাঙ্গা-গড়া, ফরিয়াদ শোনা, প্রয়োজন পূর্ণ করা এবং প্রত্যেক সাহায্যপ্রার্থীকে সাহায্য করা কেবলমাত্র এমন এক সত্তার কাজ হতে পারে, যিনি সবকিছু জানেন এবং যার কাছে কোনকিছুই গোপন নেই। এখন যদি এটি সত্য হয়ে থাকে যে, আল্লাহ ছাড়া আর কেউ স্রষ্টা, ফরিয়াদ শ্রবণকারী ও রিযিকদাতা নেই, তাহলে সাথে সাথে এটিও সত্য যে, আল্লাহ ছাড়া দ্বিতীয় কোন সত্তা অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারীও নয়। এটি ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে যতটুকু চান জ্ঞান দান করেন। কিন্তু অদৃশ্য জ্ঞান সামগ্রিকভাবে কেউ লাভ করতে পারে না। সুতরাং ‘আলিমুল গায়েব’ বা অদৃশ্য জ্ঞানী উপাধি একমাত্র আল্লাহ রাববুল আলামীনের জন্য নির্দিষ্ট। কোন সৃষ্টি অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী হতে পারে এ ধারণা কুরআন নাকচ করে দেয়। এমনকি অন্যান্য নবী এবং স্বয়ং মুহাম্মাদ ﷺ এর ব্যাপারেও এ বিষয়টি পরিষ্কার যে, তারা অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী নন। তাঁকে অদৃশ্যের কেবলমাত্র ততটুকু জ্ঞান আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে যতটুকু রিসালাতের দায়িত্ব পালন করার জন্য প্রয়োজন ছিল। আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী মনে করা এবং যা কিছু আছে ও যা কিছু হবে এর জ্ঞান আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো আছে একথা বিশ্বাস করা শিরক। আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি দাবী করে যে, মুহাম্মদ ﷺ আগামীকাল কী হবে তা জানেন, সে আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে। কারণ আল্লাহ বলেন, হে নবী! তুমি বলে দাও আল্লাহ ছাড়া আসমান ও জমিনের অধিবাসীদের মধ্যে আর কেউ অদৃশ্যের জ্ঞান রাখে না।’’
(সহীহ বুখারী, হা/৪৮৫৫)
আল্লাহ গায়েবের কিছু বিষয় রাসূলদের কাছে প্রকাশ করেন :
عَالِمُ الْغَيْبِ فَلَا يُظْهِرُ عَلٰى غَيْبِهٖۤ احَدًا ‐ اِلَّا مَنِ ارْتَضٰى مِنْ رَّسُوْلٍ فَاِنَّهٗ يَسْلُكُ مِنْ ۢبَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهٖ رَصَدًا
তিনি অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী, তিনি তাঁর অদৃশ্যের জ্ঞান কারো নিকট প্রকাশ করেন না। তবে তাঁর মনোনীত রাসূল ব্যতীত। নিশ্চয় তিনি তার সামনে এবং পেছনে প্রহরী নিয়োজিত করে রেখেছেন (যাতে শয়তান কোন মিশ্রণ ঘটাতে না পারে)। (সূরা জিন-২৬, ২৭)
আসমান ও জমিনের কোনকিছুই আল্লাহর কাছে গোপন নয় :
وَمَا يَخْفٰى عَلَى اللهِ مِنْ شَيْءٍ فِى الْاَ رْضِ وَلَا فِى السَّمَآءِ
পৃথিবী ও আকাশমন্ডলীর কোনকিছুই আল্লাহর নিকট গোপন থাকে না। (সূরা ইবরাহীম- ৩৮)
اِنَّ اللهَ لَا يَخْفٰى عَلَيْهِ شَيْءٌ فِى الْاَ رْضِ وَلَا فِى السَّمَآءِ
নিশ্চয় আল্লাহর কাছে পৃথিবী ও আকাশমন্ডলীর কিছুই গোপন থাকে না। (সূরা আলে ইমরান- ৫)
সরিষা পরিমাণ কোন জিনিসও আল্লাহর জ্ঞানের বাইরে নয় :
وَمَا يَعْزُبُ عَنْ رَّبِّكَ مِنْ مِّثْقَالِ ذَرَّةٍ فِى الْاَ رْضِ وَلَا فِى السَّمَآءِ وَلَاۤ اَصْغَرَ مِنْ ذٰلِكَ وَلَاۤ اَكْبَرَ اِلَّا فِيْ كِتَابٍ مُّبِيْنٍ
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর অণুপরিমাণ কোন জিনিসও তোমার প্রতিপালকের অগোচরে নয় এবং তার চেয়ে ছোট অথবা বড় কিছুই নেই, যা সুস্পষ্ট কিতাবে নেই। (সূরা ইউনুস- ৬১)
لَا يَعْزُبُ عَنْهُ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ فِى السَّمَاوَاتِ وَلَا فِى الْاَ رْضِ وَلَاۤ اَصْغَرُ مِنْ ذٰلِكَ وَلَاۤ اَكْبَرُ اِلَّا فِيْ كِتَابٍ مُّبِيْنٍ
আকাশ ও পৃথিবীতে অণুপরিমাণ জিনিসও তাঁর অজানা নয়, কিংবা তদপেক্ষা ক্ষুদ্র বা বৃহৎ (তাঁর অজানা নয়) কিন্তু এ সবই সুস্পষ্ট গ্রন্থেহ লিপিবদ্ধ আছে। (সূরা সাবা- ৩)
এতো কিছু জানা আল্লাহর পক্ষে কঠিন নয় :
اَلَمْ تَعْلَمْ اَنَّ اللهَ يَعْلَمُ مَا فِى السَّمَآءِ وَالْاَ رْضِ اِنَّ ذٰلِكَ فِيْ كِتَابٍ اِنَّ ذٰلِكَ عَلَى اللهِ يَسِيْرٌ
তুমি কি জান না যে, আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু রয়েছে আল্লাহ তা জানেন। এ সবই আছে এক কিতাবে; নিশ্চয় এটা আল্লাহর নিকট সহজ। (সূরা হজ্জ- ৭০)
اِنَّ اللهَ كَانَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمًا
নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ। (সূরা নিসা- ৩২)
ব্যাখ্যা : عَلِيْمٌ (‘আলীম) শব্দের অর্থ সর্বজ্ঞ, মহাজ্ঞানী। অর্থাৎ তিনি ছোট-বড়, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সবকিছু সম্পর্কে জানেন। তার জ্ঞানের বাহিরে কোন জিনিস থাকতে পারে না। তিনি কোন বিষয়ে অনুমান করেন না; বরং সবকিছু সম্পর্কে সরাসরি জানেন। সুতরাং অনুভূতি ও ইন্দ্রিয়বহির্ভূত বিষয়ে তিনি যেসব তথ্য দিচ্ছেন, তার সবগুলোই সঠিক। আর তা না মানার অর্থ হচ্ছে, অজ্ঞতার অনুসরণ করা। একইভাবে তিনি মানুষের উন্নতির পথ ও পদ্ধতি সম্পর্কেও জানেন। তাঁর প্রতিটি শিক্ষা সঠিক ও জ্ঞানভিত্তিক, যার মধ্যে ভুলভ্রান্তির কোন সম্ভাবনা নেই। অতএব তাঁর পথনির্দেশনা গ্রহণ না করার অর্থ হচ্ছে, সঠিক পথে চলতে না চাওয়া এবং ভ্রান্ত পথে চলতে থাকা। তাছাড়া মানুষের কোন গতিবিধি তাঁর নিকট গোপন থাকতে পারে না। এমনকি তিনি মানুষের অন্তর্নিহিত সকল ধরনের ইচ্ছা সম্পর্কেও জানেন, যা তাদের সমস্ত কাজকর্মের মূল চালিকাশক্তি। তাই মানুষ কোন অজুহাত দেখিয়ে তাঁর শাস্তি থেকে রক্ষা পাবে না।
لَهٗ مَقَالِيْدُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِۚ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيَقْدِرُؕ اِنَّهٗ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর চাবিসমূহ তাঁরই নিকট। তিনি যাকে ইচ্ছা তার রিযিক বর্ধিত করেন অথবা সংকুচিত করেন। তিনি সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ। (সূরা শূরা- ১২)
আল্লাহর জ্ঞান সবকিছুকে বেষ্টন করে আছে :
اَنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ وَّاَنَّ اللهَ قَدْ اَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا
আল্লাহ সর্ববিষয়ে শক্তিমান এবং আল্লাহ তাঁর জ্ঞান দ্বারা সবকিছুই পরিবেষ্টন করে রেখেছেন। (সূরা তালাক্ব- ১২)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর জ্ঞান ও তাঁর পাকড়াও হতে কেউ বাঁচতে পারে না। পাথরের মধ্যে ছোট্ট একটি কণা মানুষের দৃষ্টির অগোচরে থাকতে পারে কিন্তু তাঁর কাছে তা সুস্পষ্ট। আকাশে একটি ক্ষুদ্রতম কণিকা মানুষ থেকে বহু দূরবর্তী হতে পারে, ভূমির গভীরে অবস্থিত কোন জিনিসের প্রতি তার দৃষ্টি শেষ হয়ে যেতে পারে; কিন্তু তা আল্লাহর অতি নিকটতর। কাজেই তুমি কোথাও এমন কোন সৎ বা অসৎকাজ করতে পার না, যা আল্লাহর অগোচরে থেকে যায়। তিনি তা জানেন কেবল তা নয় বরং যখন হিসাব-নিকাশের সময় আসবে তখন তিনি তোমাদের প্রত্যেকটি কাজের রেকর্ডও তোমাদের সামনে উপস্থাপন করবেন।
অতীত-ভবিষ্যৎ সবই আল্লাহ জানেন :
يَعْلَمُ مَا بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْؕ وَاِلَى اللهِ تُرْجَعُ الْاُمُوْرُ
তাদের সম্মুখে এবং পশ্চাতে যা কিছু আছে তিনি তা জানেন। আর সমসত্ম বিষয় তো আল্লাহর দিকেই প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা হজ্জ- ৭৬)
আসমান-জমিনের সবকিছুই আল্লাহ জানেন :
قُلْ اِنْ تُخْفُوْا مَا فِيْ صُدُوْرِكُمْ اَوْ تُبْدُوْهُ يَعْلَمْهُ اللهُؕ وَيَعْلَمُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَ رْضِؕ وَاللهُ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
বলো, তোমাদের অন্তরে যা আছে তা গোপন রাখ অথবা প্রকাশ কর আল্লাহ সে সম্পর্কে অবগত আছেন। এমনকি আসমান ও জমিনে যা আছে সবকিছু সম্পর্কে তিনি অবগত আছেন। আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা আলে ইমরান- ২৯)
اَنَّ اللهَ يَعْلَمُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَ رْضِ وَاَنَّ اللهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ
আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে আল্লাহ সে সম্পর্কে জানেন; নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ। (সূরা মায়েদা- ৯৭)
সবকিছু জানা আল্লাহর জন্যই শোভা পায় :
اَلَا يَعْلَمُ مَنْ خَلَقَؕ وَهُوَ اللَّطِيْفُ الْخَبِيْرُ
যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি জানেন না? তিনি সূক্ষ্মদর্শী ও সবকিছুর খবর রাখেন। (সূরা মুলক- ১৪)
জলে-স্থলে কী আছে সবই আল্লাহর জানা আছে :
وَيَعْلَمُ مَا فِى الْبَرِّ وَالْبَحْرِ
জলে ও স্থলে যা কিছু আছে সে সম্পর্কে তিনি অবগত। (সূরা আন‘আম- ৫৯)
গাছের পাতা ঝরলে তাও জানেন :
وَمَا تَسْقُطُ مِنْ وَّرَقَةٍ اِلَّا يَعْلَمُهَا وَلَا حَبَّةٍ فِيْ ظُلُمَاتِ الْاَ رْضِ وَلَا رَطْبٍ وَّلَا يَابِسٍ اِلَّا فِيْ كِتَابٍ مُّبِيْنٍ
তাঁর অজ্ঞাতসারে একটি পাতাও পড়ে না। মাটির অন্ধকারে এমন কোন শস্যকণাও রসযুক্ত কিংবা শুষ্ক হয় না, যা সুস্পষ্ট কিতাবে নেই। (সূরা আন‘আম- ৫৯)
জমিনে যা প্রবেশ করে এবং আকাশে যা উঠে আল্লাহ তাও জানেন :
يَعْلَمُ مَا يَلِجُ فِى الْاَ رْضِ وَمَا يَخْرُجُ مِنْهَا وَمَا يَنْزِلُ مِنَ السَّمَآءِ وَمَا يَعْرُجُ فِيْهَاؕ وَهُوَ الرَّحِيْمُ الْغَفُوْرُ
তিনি জানেন যা কিছু জমিনে প্রবেশ করে এবং যা কিছু সেখান থেকে বের হয়। আর যা কিছু আসমান থেকে নাযিল হয় এবং যা কিছু সেখানে আরোহণ করে। তিনি পরম দয়ালু ও অত্যন্ত ক্ষমাশীল। (সূরা সাবা- ২)
يَعْلَمُ مَا يَلِجُ فِى الْاَ رْضِ وَمَا يَخْرُجُ مِنْهَا وَمَا يَنْزِلُ مِنَ السَّمَآءِ وَمَا يَعْرُجُ فِيْهَاؕ وَهُوَ مَعَكُمْ اَيْنَ مَا كُنْتُمْؕ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
তিনি জানেন যা কিছু ভূমিতে প্রবেশ করে ও যা কিছু তা হতে বের হয় এবং আকাশ হতে যা কিছু নামে ও আকাশে যা কিছু উঠে। তোমরা যেখানেই থাক না কেন তিনি (জানার দিক দিয়ে) তোমাদের সঙ্গেই আছেন। আর তোমরা যা কিছু কর আল্লাহ তা দেখেন। (সূরা হাদীদ- ৪)
নারীর জরায়ুতে সন্তানের কী অবস্থা তাও জানেন :
اَللهُ يَعْلَمُ مَا تَحْمِلُ كُلُّ اُنْثٰى وَمَا تَغِيْضُ الْاَ رْحَامُ وَمَا تَزْدَادُؕ وَكُلُّ شَيْءٍ عِنْدَهٗ بِمِقْدَارٍ
প্রত্যেক নারী যা গর্ভে ধারণ করে এবং জরায়ুতে যা কিছু কমে ও বাড়ে আল্লাহ তাও জানেন এবং তাঁর বিধানে প্রত্যেক বস্তুরই একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ রয়েছে। (সূরা রা‘দ- ৮)
ব্যাখ্যা : মাতৃগর্ভে ভ্রূণের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, শক্তি-সামর্থ্য, যোগ্যতা ও মানসিক ক্ষমতার মধ্যে যাবতীয় হ্রাস-বৃদ্ধি আল্লাহর সরাসরি তত্ত্বাবধানে সাধিত হয়।
গর্ভধারণ, প্রসব ও বয়স সবই তাঁর জ্ঞানের আওতায় :
وَمَا تَحْمِلُ مِنْ اُنْثٰى وَلَا تَضَعُ اِلَّا بِعِلْمِه ؕ وَمَا يُعَمَّرُ مِنْ مُّعَمَّرٍ وَّلَا يُنْقَصُ مِنْ عُمُرِه ۤ اِلَّا فِيْ كِتَابٍؕ اِنَّ ذٰلِكَ عَلَى اللهِ يَسِيْرٌ
কোন নারীই গর্ভধারণ করে না এবং সন্তানও প্রসব করে না তাঁর অজান্তে। আর কোন বয়স্ক ব্যক্তির দীর্ঘায়ু লাভ করা হয় না আবার তার আয়ু কমও করা হয় না, কিন্তু তা তো লিপিবদ্ধ রয়েছে এক কিতাবে (লাওহে মাহফুযে)। নিশ্চয় এ কাজ আল্লাহর পক্ষে অতি সহজ। (সূরা ফাতির- ১১)
পাঁচটি জিনিসের বিশেষ জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর কাছে :
اِنَّ اللهَ عِنْدَهٗ عِلْمُ السَّاعَةِۚ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَۚ وَيَعْلَمُ مَا فِى الْاَ رْحَامِؕ وَمَا تَدْرِيْ نَفْسٌ مَّاذَا تَكْسِبُ غَدًاؕ وَّمَا تَدْرِيْ نَفْسٌ ۢبِاَيِّ اَرْضٍ تَمُوْتُؕ اِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ خَبِيْرٌ
নিশ্চয় আল্লাহর কাছে রয়েছে কিয়ামত সম্পর্কে জ্ঞান। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তিনিই জানেন যা কিছু গর্ভে আছে। কেউ জানে না আগামীকাল সে কী আয় করবে এবং কেউ জানে না কোন স্থানে সে মৃত্যুবরণ করবে। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু জানেন এবং সব খবর রাখেন। (সূরা লুক্বমান- ৩৪)
ব্যাখ্যা : মানুষের সচ্ছলতা-অসচ্ছলতা নির্ভর করে বৃষ্টির উপর। কিন্তু আল্লাহর হাতে রয়েছে এর চাবিকাঠি। তিনি যখন যেখানে যতটুকু চান পানি বর্ষণ করেন এবং যখনই চান থামিয়ে দেন। কেউ এতটুকুও জানে না যে, কোথায় কখন কতটুকু বৃষ্টি হবে এবং কোন্ ভূখন্ড তা হতে বঞ্চিত হবে অথবা কেন্ ভূখন্ডে বৃষ্টি উল্টো ক্ষতিকর প্রমাণিত হবে। পুরুষের বীর্যে স্ত্রীদের গর্ভসঞ্চার হয় এবং এর সাথে মানুষের বংশধারার ভবিষ্যৎ জড়িত। কিন্তু মানুষ জানে না যে, এ গর্ভে কী লালিত হচ্ছে এবং কোন্ আকৃতিতে ও কোন্ ধরনের কল্যাণ বা অকল্যাণ নিয়ে তা বের হয়ে আসবে। আগামীকাল তাদের কী হবে, তাও তারা জানে না। একটি আকস্মিক দুর্ঘটনা মানুষের ভাগ্য বদলে দিতে পারে। কিন্তু এক মিনিট আগেও মানুষ তার খবর পায় না। মানুষ এটাও জানে না যে, তাদের এ জীবনের সমাপ্তি কোথায় এবং কী অবস্থায় ঘটবে। এ সমস্ত তথ্যজ্ঞান আল্লাহ নিজের কাছে রেখেছেন। এভাবে দুনিয়ার শেষ ক্ষণটির ব্যাপারেও আল্লাহর ফায়সালার প্রতি আস্থা রাখা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
মানুষের অবস্থা আল্লাহই ভালো জানেন :
رَبُّكُمْ اَعْلَمُ بِكُمْؕ اِنْ يَّشَاْ يَرْحَمْكُمْ اَوْ اِنْ يَّشَاْ يُعَذِّبْكُمْ
তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের ব্যাপারে ভালোভাবে জানেন। ইচ্ছা করলে তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করেন এবং ইচ্ছা করলে তোমাদেরকে শাসিত্ম দেন। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৫৪)
সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষকে জানেন :
هُوَ اَعْلَمُ بِكُمْ اِذْ اَنْشَاَكُمْ مِّنَ الْاَ رْضِ وَاِذْ اَنْتُمْ اَجِنَّةٌ فِيْ بُطُوْنِ اُمَّهَاتِكُمْۚ فَلَا تُزَكُّوْاۤ اَنْفُسَكُمْؕ هُوَ اَعْلَمُ بِمَنِ اتَّقٰى
তিনি তোমাদের সম্পর্কে সম্যক অবগত- যখন তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছিলেন মাটি হতে এবং এক সময় তোমরা মাতৃগর্ভে ভ্রুণরূপে ছিলে। অতএব তোমরা আত্মপ্রশংসা করো না, তিনিই ভালো জানেন কে মুত্তাক্বী। (সূরা নাজম- ৩২)
তিনি পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের সম্পর্কে জানেন :
وَلَقَدْ عَلِمْنَا الْمُسْتَقْدِمِيْنَ مِنْكُمْ وَلَقَدْ عَلِمْنَا الْمُسْتَاْخِرِيْنَ
তোমাদের মধ্য হতে পূর্বে যারা গত হয়েছে আমি তাদেরকে জানি এবং পরে যারা আসবে তাদেরকেও জানি। (সূরা হিজর- ২৪)
মানুষের মনের কথাও তিনি জানেন :
وَاَسِرُّوْا قَوْلَكُمْ اَوِ اجْهَرُوْا بِهٖؕ اِنَّهٗ عَلِيْمٌ ۢبِذَاتِ الصُّدُوْرِ
তোমরা তোমাদের কথা চুপে চুপে বল অথবা উচ্চৈঃস্বরে বল, তিনি তো অন্তরের গোপনীয়তা সম্পর্কে সর্বজ্ঞ। (সূরা মুলক- ১৩)
اِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ ۢبِذَاتِ الصُّدُوْرِ
নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের অন্তরের বিষয় সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত আছেন। (সূরা আলে ইমরান- ১১৯)
وَاللهُ يَعْلَمُ مَا فِيْ قُلُوْبِكُمْؕ وَكَانَ اللهُ عَلِيْمًا حَلِيْمًا
তোমাদের অন্তরে যা আছে তা আল্লাহ জানেন। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী ও সহনশীল। (সূরা আহযাব- ৫১)
وَاِنَّ رَبَّكَ لَيَعْلَمُ مَا تُكِنُّ صُدُوْرُهُمْ وَمَا يُعْلِنُوْنَ
তাদের অন্তর যা গোপন করে এবং তারা যা প্রকাশ করে অবশ্যই তোমার প্রতিপালক তা জানেন। (সূরা নামল- ৭৪)
اِنْ تُبْدُوْا شَيْئًا اَوْ تُخْفُوْهُ فَاِنَّ اللهَ كَانَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمًا
যদি তোমরা কোন বিষয় প্রকাশ কর কিংবা তা গোপন রাখ তবে আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়েই অবগত আছেন। (সূরা আহযাব- ৫৪)
কথা আস্তে বলা বা জোরে বলা উভয়ই তাঁর নিকট সমান :
سَوَآءٌ مِّنْكُمْ مَّنْ اَسَرَّ الْقَوْلَ وَمَنْ جَهَرَ بِهٖ وَمَنْ هُوَ مُسْتَخْفٍ ۢبِاللَّيْلِ وَسَارِبٌ ۢبِالنَّهَارِ
তোমাদের মধ্যে যে কথা গোপন রাখে এবং যে প্রকাশ করে, আর যে রাত্রিতে আত্মগোপন করে এবং যে দিবসে প্রকাশ্যে বিচরণ করে, তারা সমভাবে আল্লাহর জ্ঞানগোচরেই আছে। (সূরা রা‘দ- ১০)
وَاِنْ تَجْهَرْ بِالْقَوْلِ فَاِنَّهٗ يَعْلَمُ السِّرَّ وَاَخْفٰى
যদি তুমি উচ্চকণ্ঠে কথা বল, তবে তিনি তো যা গুপ্ত ও অব্যক্ত সবকিছুই জানেন। (সূরা ত্বা-হা- ৭)
اِنَّهٗ يَعْلَمُ الْجَهْرَ مِنَ الْقَوْلِ وَيَعْلَمُ مَا تَكْتُمُوْنَ
তিনি জানেন, তোমরা যে কথা ব্যক্ত কর এবং যা গোপন কর। (সূরা আম্বিয়া- ১১০)
قَالَ رَبِّيْ يَعْلَمُ الْقَوْلَ فِى السَّمَآءِ وَالْاَ رْضِ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
সে বলল, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সমসত্ম কথাই আমার প্রতিপালক অবগত আছেন এবং তিনিই সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা আম্বিয়া- ৪)
গুপ্ত বিষয়গুলো তিনি একদিন প্রকাশ করবেন :
وَاللهُ مُخْرِجٌ مَّا كُنْتُمْ تَكْتُمُوْنَ
তোমরা যা গোপন করেছিলে আল্লাহ তার প্রকাশকারী। (সূরা বাক্বারা- ৭২)
কেউ খারাপ চিন্তা করলে তাও জানেন :
وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْاِنْسَانَ وَنَعْلَمُ مَا تُوَسْوِسُ بِهٖ نَفْسُهٗۚ وَنَحْنُ اَقْرَبُ اِلَيْهِ مِنْ حَبْلِ الْوَرِيْدِ
আমিই মানুষকে সৃষ্টি করেছি এবং তার অন্তর তাকে যে কুমন্ত্রণা দেয় তা আমি জানি। আমি তার ঘাড়ের শাহরগ অপেক্ষাও নিকটতর। (সূরা ক্বাফ- ১৬)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর ক্ষমতা ও জ্ঞান এমনভাবে মানুষকে পরিবেষ্টন করে আছে যে, তাঁর ক্ষমতা মানুষের যতটা নিকটে তার ঘাড়ের শিরাও ততটা নিকটে নয়। মানুষের কথা শোনার জন্য তাঁকে কোথাও থেকে আসতে হয় না। তার মনের মধ্যে উদিত কল্পনাসমূহ পর্যন্ত আল্লাহ সরাসরি জানেন। অনুরূপভাবে তাকে যদি কোন সময় আল্লাহ পাকড়াও করতে চান, তখনও তাঁকে কোথাও থেকে এসে তাকে পাকড়াও করতে হয় না। মানুষ যেখানেই থাকুক না কেন সর্বদা সে আল্লাহর আয়ত্তাধীন রয়েছে।
মানুষের সলাপরামর্শেরও খবর রাখেন :
اَنَّ اللهَ يَعْلَمُ سِرَّهُمْ وَنَجْوَاهُمْ وَاَنَّ اللهَ عَلَّامُ الْغُيُوْبِ
(তারা কি জানে না যে) আল্লাহ তাদের অন্তরের গোপন কথা ও তাদের গোপন পরামর্শ সম্পর্কেও অবগত আছেন এবং যা অদৃশ্য তাও তিনি বিশেষভাবে জানেন। (সূরা তাওবা- ৭৮)
সলাপরামর্শে মানুষ যতজন হয় তার মধ্যে আল্লাহ একজন :
مَا يَكُوْنُ مِنْ نَّجْوٰى ثَلَاثَةٍ اِلَّا هُوَ رَابِعُهُمْ وَلَا خَمْسَةٍ اِلَّا هُوَ سَادِسُهُمْ وَلَاۤ اَدْنٰى مِنْ ذٰلِكَ وَلَاۤ اَكْثَرَ اِلَّا هُوَ مَعَهُمْ اَيْنَ مَا كَانُوْاۚ ثُمَّ يُنَبِّئُهُمْ بِمَا عَمِلُوْا يَوْمَ الْقِيَامَةِؕ اِنَّ اللهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ
তিনজনের এমন কোন পরামর্শ হয় না, যাতে তিনি তাদের চতুর্থ না হন; আর পাঁচ জনেরও এমন কোন পরামর্শ হয় না, যাতে তিনি তাদের ষষ্ঠ না হন। (এ সলাপরামর্শকারীদের সংখ্যা) তার চেয়ে কম হোক কিংবা বেশি হোক তারা যেখানেই থাকুক না কেন, তিনি তাদের সাথে আছেন। অতঃপর তারা যা করে কিয়ামতের দিন তাদেরকে তিনি জানিয়ে দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে জ্ঞানী। (সূরা মুজাদালা- ৭)
মানুষ কী উপার্জন করছে তাও আল্লাহ জানেন :
وَهُوَ اللهُ فِى السَّمَاوَاتِ وَفِى الْاَ رْضِؕ يَعْلَمُ سِرَّكُمْ وَجَهْرَكُمْ وَيَعْلَمُ مَا تَكْسِبُوْنَ
আসমান ও জমিনে তিনিই আল্লাহ, তোমাদের গোপন ও প্রকাশ্য সবকিছু তিনি জানেন এবং তোমরা যা অর্জন কর, তাও তিনি অবগত আছেন। (সূরা আন‘আম- ৩)
يَعْلَمُ مَا تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍؕ وَسَيَعْلَمُ الْكُفَّارُ لِمَنْ عُقْبَى الدَّارِ
প্রত্যেক ব্যক্তি যা করে তা তিনি জানেন। (সুতরাং) কাফিররা শীঘ্রই জানতে পারবে যে, পরকালের শুভ পরিণাম কাদের জন্য। (সূরা রা‘দ- ৪২)
আল্লাহ মানুষের কর্মকান্ডের খবর রাখেন :
وَاللهُ يَعْلَمُ اَعْمَالَكُمْ
আল্লাহ তোমাদের সব আমল সম্পর্কেই ভালো করে জানেন। (সূরা মুহাম্মাদ- ৩০)
وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
তোমরা যা করছ, আল্লাহ তার পর্যবেক্ষণকারী। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৬)
وَهُوَ الَّذِيْ يَتَوَفَّاكُمْ بِاللَّيْلِ وَيَعْلَمُ مَا جَرَحْتُمْ بِالنَّهَارِ
তিনিই রাতে তোমাদের মৃত্যু ঘটান এবং দিবসে তোমরা যা কর তা তিনি জানেন। (সূরা আন‘আম- ৬০)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ প্রত্যেক ব্যক্তিকে সব অবস্থায় নিজেই সরাসরি দেখছেন এবং তার সমস্ত গতিবিধি ও কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত রয়েছেন। আল্লাহর নিযুক্ত তত্ত্বাবধায়কও প্রত্যেক ব্যক্তির সাথে রয়েছেন এবং তারা তার জীবনের সমস্ত কার্যক্রমের রেকর্ডও সংরক্ষণ করছেন। এমন অকল্পনীয় ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্বের অধীনে থেকে যারা একথা মনে করে জীবন-যাপন করে যে, তাদেরকে লাগামহীন উটের মতো দুনিয়ায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে এবং তাদের কার্যকলাপের জন্য কারো কাছে জবাবদিহি করতে হবে না তারা আসলে নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনে।
চোখের খেয়ানত সম্পর্কেও জানেন :
يَعْلَمُ خَآئِنَةَ الْاَعْيُنِ وَمَا تُخْفِى الصُّدُوْرُ
চক্ষুর অপব্যবহার ও অন্তরে যা গোপন আছে সে সম্বন্ধে তিনি অবহিত। (সূরা মু’মিন- ১৯)
কেউ নেক আমল করলেও তিনি জানেন :
وَمَا تَفْعَلُوْا مِنْ خَيْرٍ فَاِنَّ اللهَ كَانَ بِهٖ عَلِيْمًا
আর তোমরা যেসব সৎকাজ কর, নিশ্চয় আল্লাহ সে সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত। (সূরা নিসা- ১২৭)
وَمَا تَفْعَلُوْا مِنْ خَيْرٍ يَّعْلَمْهُ اللهُ
তোমরা যে কোন সৎকর্ম কর না কেন আল্লাহ তা জানেন। (সূরা বাক্বারা- ১৯৭)
কিছু ব্যয় করলে তারও খবর রাখেন :
وَمَاۤ اَنْفَقْتُمْ مِّنْ نَّفَقَةٍ اَوْ نَذَرْتُمْ مِّنْ نَّذْرٍ فَاِنَّ اللهَ يَعْلَمُهٗ
তোমরা যে বস্তু দান কর অথবা যা কিছু মান্নত কর, আল্লাহ সে বিষয়ে অবগত আছেন। (সূরা বাক্বারা- ২৭০)
কে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে আল্লাহ তাও জানেন :
اَلَّذِيْ يَرَاكَ حِيْنَ تَقُوْمُ- وَتَقَلُّبَكَ فِى السَّاجِدِيْنَ
তিনি তোমাকে দেখেন যখন তুমি দন্ডায়মান হও এবং সিজদাকারীদের সাথে উঠাবসা কর। (সূরা শু‘আরা- ২১৮, ২১৯)
ব্যাখ্যা : এখানে উঠার কয়েকটি অর্থ হতে পারে।
(১) নামাযরত ব্যক্তি যখন জামা‘আতের সাথে নামায পড়ার সময় মুকতাদীদের সাথে উঠাবসা ও রুকু সিজদা করেন, তখন আল্লাহ তাকে দেখতে থাকেন।
(২) ব্যক্তি নিজের সাথিদের পরকাল গড়ার জন্য এবং আল্লাহর বান্দাদের সংশোধন করার জন্য যেসব প্রচেষ্টা, সংগ্রাম ও সাধনা চালিয়ে যায়, আল্লাহ সে সম্পর্কে সবকিছু অবগত আছেন।
(৩) ব্যক্তি সিজদাকারী লোকদের দলে যেসব তৎপরতা চালিয়ে যায়, আল্লাহ তা পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি জানেন উক্ত বান্দা কীভাবে তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, কীভাবে তাদেরকে পরিশুদ্ধ করছে, কীভাবে ভেজাল সোনাকে খাঁটি সোনায় পরিণত করছে।
রাতের বেলায় তাহাজ্জুদে দাঁড়ালে তাও আল্লাহ জানেন :
اِنَّ رَبَّكَ يَعْلَمُ اَنَّكَ تَقُوْمُ اَدْنٰى مِنْ ثُلُثَيِ اللَّيْلِ وَنِصْفَهٗ وَثُلُثَهٗ وَطَآئِفَةٌ مِّنَ الَّذِيْنَ مَعَكَ
তোমার প্রতিপালক তো জানেন যে, তুমি জাগরণ কর কখনো রাত্রির প্রায় দুই তৃতীয়াংশ, কখনো অর্ধাংশ এবং কখনো এক তৃতীয়াংশ এবং তোমার সাথে যারা আছে তাদের একটি দলও জাগে। (সূরা মুয্যাম্মিল- ২০)
তিনি মানুষের সকল কাজ পরিদর্শন করেন :
وَمَا تَكُوْنُ فِيْ شَاْنٍ وَّمَا تَتْلُوْ مِنْهُ مِنْ قُرْاٰنٍ وَّلَا تَعْمَلُوْنَ مِنْ عَمَلٍ اِلَّا كُنَّا عَلَيْكُمْ شُهُوْدًا اِذْ تُفِيْضُوْنَ فِيْهِؕ وَمَا يَعْزُبُ عَنْ رَّبِّكَ مِنْ مِّثْقَالِ ذَرَّةٍ فِى الْاَ رْضِ وَلَا فِى السَّمَآءِ وَلَاۤ اَصْغَرَ مِنْ ذٰلِكَ وَلَاۤ اَكْبَرَ اِلَّا فِيْ كِتَابٍ مُّبِيْنٍ
তুমি যে অবস্থায়ই থাক এবং তুমি কুরআন হতে যা কিছুই তিলাওয়াত কর কিংবা তোমরা যে কাজই কর না কেন, যখনই তোমরা তাতে প্রবৃত্ত হও তখন আমি তোমাদের পরিদর্শক হই। আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর অনুপরিমাণ বস্তুও তোমার প্রতিপালকের অগোচরে নয় এবং তা অপেক্ষা ক্ষুদ্রতর অথবা বৃহত্তর কিছুই নেই, যা সুস্পষ্ট কিতাবে নেই। (সূরা ইউনুস- ৬১)
আল্লাহ সবকিছুর উপর সাক্ষী আছেন :
اِنَّ اللهَ كَانَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ شَهِيْدًا
নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে লক্ষ্য করেন। (সূরা নিসা- ৩৩, সূরা আহযাব- ৫৫)
وَكَفٰى بِاللهِ شَهِيْدًا
সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। (সূরা নিসা- ৭৯)
আল্লাহ বান্দার উপর তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখেন :
اِنَّ اللهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيْبًا
নিশ্চয় আল্লাহই তোমাদের উপর তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখেন। (সূরা নিসা- ১)
কেউ দুর্বল থাকলে তাও জানেন :
وَعَلِمَ اَنَّ فِيْكُمْ ضَعْفًا
তিনি তো অবগত আছেন যে, তোমাদের মধ্যে দুর্বলতা আছে। (সূরা আনফাল- ৬৬)
কেউ অসুখ থাকলে তাও জানেন :
عَلِمَ اَنْ سَيَكُوْنُ مِنْكُمْ مَّرْضٰى
তিনি জানেন যে, তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়বে। (সূরা মুয্যাম্মিল- ২০)
কেউ মিথ্যা বললে তাও আল্লাহ জানতে পারেন :
وَاِنَّا لَنَعْلَمُ اَنَّ مِنْكُمْ مُّكَذِّبِيْنَ
নিশ্চয় আমি জানি যে, তোমাদের মধ্যে মিথ্যাপ্রতিপন্নকারী কিছু লোকও রয়েছে। (সূরা হাক্কাহ- ৪৯)
যালিমদের সম্পর্কেও আল্লাহ জানেন :
وَاللهُ اَعْلَمُ بِالظَّالِمِيْنَ
আর আল্লাহ যালিমদের সম্বন্ধে অধিক অবহিত। (সূরা আন‘আম- ৫৮)
ফাসাদকারীদেরকেও আল্লাহ জানেন :
فَاِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ ۢبِالْمُفْسِدِيْنَ
তবে ফাসাদকারীদের সম্পর্কে অবশ্যই আল্লাহ ভালো জানেন। (সূরা আলে ইমরান- ৬৩)
وَ رَبُّكَ اَعْلَمُ بِالْمُفْسِدِيْنَ
তোমার প্রতিপালক অশান্তি সৃষ্টিকারীদের সম্বন্ধে সম্যক অবহিত। (সূরা ইউনুস- ৪০)
আল্লাহ জানেন কারা সীমালঙ্ঘনকারী :
اِنَّ رَبَّكَ هُوَ اَعْلَمُ بِالْمُعْتَدِيْنَ
নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক সীমালঙ্ঘনকারীদের সম্বন্ধে ভালোভাবেই জানেন। (সূরা আন‘আম- ১১৯)
মুনাফিক কারা তা আল্লাহ জানেন :
وَمِمَّنْ حَوْلَكُمْ مِّنَ الْاَعْرَابِ مُنَافِقُوْنَؕ وَمِنْ اَهْلِ الْمَدِيْنَةِؕ مَرَدُوْا عَلَى النِّفَاقِؕ لَا تَعْلَمُهُمْ نَحْنُ نَعْلَمُهُمْؕ سَنُعَذِّبُهُمْ مَّرَّتَيْنِ ثُمَّ يُرَدُّوْنَ اِلٰى عَذَابٍ عَظِيْمٍ
মরুবাসীদের মধ্যে যারা তোমাদের আশেপাশে আছে তাদের কেউ কেউ মুনাফিক এবং মদিনাবাসীদের মধ্যেও কেউ কেউ কপটতায় সিদ্ধ। তুমি তাদেরকে জান না; আমি তাদেরকে জানি। অচিরেই আমি তাদেরকে দু’বার শাস্তি দেব। অতঃপর তারা প্রত্যাবর্তিত হবে মহাশাস্তির দিকে। (সূরা তাওবা- ১০১)
মুসলিমদের শত্রু কারা তাও জানেন :
وَاللهُ اَعْلَمُ بِاَعْدَآئِكُمْؕ وَكَفٰى بِاللهِ وَلِيًّا وَّكَفٰى بِاللهِ نَصِيْرًا
আল্লাহ তোমাদের শত্রুদেরকে ভালোভাবে জানেন। অভিভাবকত্বে আল্লাহই যথেষ্ট এবং সাহায্যেও আল্লাহ যথেষ্ট। (সূরা নিসা- ৪৫)
মুত্তাক্বীদের সম্পর্কেও জানেন :
وَمَا يَفْعَلُوْا مِنْ خَيْرٍ فَلَنْ يُّكْفَرُوْهُؕ وَاللهُ عَلِيْمٌ ۢبِالْمُتَّقِيْنَ
আর তারা যে ভালো কাজই করুক না কেন তা অবমূল্যায়ন করা হবে না। আর আল্লাহ মুত্তাক্বীদের সম্পর্কে জানেন। (সূরা আলে ইমরান- ১১৫)
কারা কৃতজ্ঞ আল্লাহ তা জানেন :
اَلَيْسَ اللهُ بِاَعْلَمَ بِالشَّاكِرِيْنَ
আল্লাহ কি কৃতজ্ঞ লোকদের সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত নন? (সূরা আন‘আম- ৫৩)
কে কোন পথে ঘুরছে আল্লাহ জানেন :
وَاللهُ يَعْلَمُ مُتَقَلَّبَكُمْ وَمَثْوَاكُمْ
আল্লাহ তোমাদের তৎপরতার খবরও রাখেন এবং তোমাদের (শেষ) ঠিকানা সম্পর্কেও (অবগত আছেন)। (সূরা মুহাম্মাদ- ১৯)
আল্লাহ গাফিল নন :
وَمَا اللهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ
তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আল্লাহ অমনোযোগী নন। (সূরা বাক্বারা- ৭৪)
وَلَا تَحْسَبَنَّ اللهَ غَافِلًا عَمَّا يَعْمَلُ الظَّالِمُوْنَؕ اِنَّمَا يُؤَخِّرُهُمْ لِيَوْمٍ تَشْخَصُ فِيْهِ الْاَبْصَارُ
তুমি কখনো মনে করো না যে, যালিমরা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ গাফিল, তবে তিনি তাদেরকে সেদিন পর্যমত্ম অবকাশ দেন যেদিন তাদের চক্ষু স্থির হয়ে যাবে। (সূরা ইবরাহীম- ৪২)
আল্লাহ মানুষকে দেখছেন :
اَلَمْ يَعْلَمْ بِاَنَّ اللهَ يَرٰى
সে কি জানে না যে, আল্লাহ তাকে দেখছেন? (সূরা আলাক্ব- ১৪)
আল্লাহ জানার দিক থেকে মানুষের অতি নিকটে :
وَنَحْنُ اَقْرَبُ اِلَيْهِ مِنْ حَبْلِ الْوَرِيْدِ
আমি (জ্ঞানের দিক দিয়ে) তার ঘাড়ের শাহরগ অপেক্ষাও নিকটতর । (সূরা ক্বাফ- ১৬)
وَهُوَ مَعَكُمْ اَيْنَ مَا كُنْتُمْؕ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
তোমরা যেখানেই থাক না কেন তিনি (জানার দিক দিয়ে) তোমাদের সঙ্গে আছেন, তোমরা যা কিছু কর আল্লাহ তা দেখেন। (সূরা হাদীদ- ৪)
মানুষের মৃত্যুও আল্লাহ পর্যবেক্ষণ করেন :
فَلَوْلَاۤ اِذَا بَلَغَتِ الْحُلْقُوْمَ ‐ - وَاَنْتُمْ حِيْنَئِذٍ تَنْظُرُوْنَ - ‐ وَنَحْنُ اَقْرَبُ اِلَيْهِ مِنْكُمْ وَلٰكِنْ لَّا تُبْصِرُوْنَ
প্রাণ যখন কণ্ঠনালীতে উপস্থিত হয় আর তখন তোমরা তাকিয়ে দেখ। আর আমি তোমাদের অপেক্ষা (জানার দিক দিয়ে) তার নিকটতর; কিন্তু তোমরা দেখতে পাও না। (সূরা ওয়াক্বিয়া, ৮৩-৮৫)
কার আবাস কোথায় হবে আল্লাহ জানেন :
وَمَا مِنْ دَآبَّةٍ فِى الْاَ رْضِ اِلَّا عَلَى اللهِ رِزْقُهَا وَيَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَا كُلٌّ فِيْ كِتَابٍ مُّبِيْنٍ
ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী সকলের জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহরই। তিনি তাদের স্থায়ী ও অস্থায়ী অবস্থান সম্বন্ধে অবহিত; সুস্পষ্ট কিতাবে সবকিছুই আছে। (সূরা হুদ- ৬)
গায়েবের (অদৃশ্য বিষয়ের) জ্ঞান কেবল আল্লাহরই রয়েছে :
قُلْ لَّا يَعْلَمُ مَنْ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِ الْغَيْبَ اِلَّا اللهُؕ وَمَا يَشْعُرُوْنَ اَيَّانَ يُبْعَثُوْنَ
বলো, আল্লাহ ব্যতীত আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে কেউ অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান রাখে না এবং তারা জানে না যে, কখন তারা উত্থিত হবে। (সূরা নামল- ৬৫)
وَعِنْدَهٗ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لَا يَعْلَمُهَاۤ اِلَّا هُوَ
অদৃশ্যের চাবিকাঠি তাঁরই নিকট রয়েছে, তিনি ব্যতীত তা অন্য কেউ জানে না। (সূরা আন‘আম- ৫৯)
وَلِلّٰهِ غَيْبُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِؕ وَاِلَيْهِ يُرْجَعُ الْاَمْرُ كُلُّهٗ فَاعْبُدْهُ وَتَوَكَّلْ عَلَيْهِؕ وَمَا رَبُّكَ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহরই এবং তাঁরই নিকট সমসত্ম কিছুর প্রত্যাবর্তন হবে। সুতরাং তুমি তাঁর ইবাদাত কর এবং তাঁর উপর নির্ভর করো। তোমরা যা করো সে সম্বন্ধে তোমার প্রতিপালক গাফিল নন। (সূরা হুদ- ১২৩)
عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ الْكَبِيْرُ الْمُتَعَالِ
যা অদৃশ্য ও যা দৃশ্যমান তিনি তা অবগত; তিনি মহান ও সর্বোচ্চ মর্যাদাবান। (সূরা রা‘দ- ৯)
اِنَّ اللهَ يَعْلَمُ غَيْبَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِؕ وَاللهُ بَصِيْرٌ ۢبِمَا تَعْمَلُوْنَ
নিশ্চয় আল্লাহ আসমান ও জমিনের গায়েবী বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন। আর তোমরা যা কিছু করছ তিনি তা দেখছেন। (সূরা হুজুরাত- ১৮)
اِنَّ اللهَ عَالِمُ غَيْبِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِؕ اِنَّهٗ عَلِيْمٌ ۢبِذَاتِ الصُّدُوْرِ
নিশ্চয় আল্লাহ আসমান ও জমিনের যাবতীয় গুপ্ত বিষয় সম্পর্কে পরিজ্ঞাত। নিশ্চয় তিনি অন্তরের বিষয় সম্বন্ধেও অবগত আছেন। (সূরা ফাতির- ৩৮)
ذٰلِكَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ الْعَزِيْزُ الرَّحِيْمُ
তিনি অপ্রকাশ্য ও প্রকাশ্য সকল বিষয় সম্পর্কে পরিজ্ঞাত, প্রতাপশালী ও পরম দয়ালু। (সূরা সাজদা- ৬)
ব্যাখ্যা : غَائِبٌ (গায়েব) শব্দের অর্থ লুকানো, অদৃশ্য বা আবৃত। পারিভাষিক অর্থে গায়েব হচ্ছে এমন জিনিস যা অজানা এবং যাকে উপায়-উপকরণ দ্বারা আয়ত্ত করা যায় না। এ ব্যাপারেও মহান আল্লাহ একক সত্তা। পৃথিবী ও আকাশে ফেরেশতা, জিন, নবী, আউলিয়া অথবা মানুষ যে কোন সৃষ্টিই হোক না কেন সকলের জ্ঞানই সীমাবদ্ধ। কিছু না কিছু বিষয় সবার কাছ থেকে গোপন রয়েছে। সবকিছুর জ্ঞান যদি কারো থাকে তাহলে তিনি হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ। এ বিশ্বের কোন জিনিস এবং কোন কথা তাঁর কাছে গোপন নেই। তিনি অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সবকিছু সম্পর্কে অবগত আছেন। মানুষের মন এ সত্যটি সুস্পষ্টভাবে জানে যে, ভাগ্যের ভাঙ্গা-গড়া, ফরিয়াদ শোনা, প্রয়োজন পূর্ণ করা এবং প্রত্যেক সাহায্যপ্রার্থীকে সাহায্য করা কেবলমাত্র এমন এক সত্তার কাজ হতে পারে, যিনি সবকিছু জানেন এবং যার কাছে কোনকিছুই গোপন নেই। এখন যদি এটি সত্য হয়ে থাকে যে, আল্লাহ ছাড়া আর কেউ স্রষ্টা, ফরিয়াদ শ্রবণকারী ও রিযিকদাতা নেই, তাহলে সাথে সাথে এটিও সত্য যে, আল্লাহ ছাড়া দ্বিতীয় কোন সত্তা অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারীও নয়। এটি ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে যতটুকু চান জ্ঞান দান করেন। কিন্তু অদৃশ্য জ্ঞান সামগ্রিকভাবে কেউ লাভ করতে পারে না। সুতরাং ‘আলিমুল গায়েব’ বা অদৃশ্য জ্ঞানী উপাধি একমাত্র আল্লাহ রাববুল আলামীনের জন্য নির্দিষ্ট। কোন সৃষ্টি অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী হতে পারে এ ধারণা কুরআন নাকচ করে দেয়। এমনকি অন্যান্য নবী এবং স্বয়ং মুহাম্মাদ ﷺ এর ব্যাপারেও এ বিষয়টি পরিষ্কার যে, তারা অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী নন। তাঁকে অদৃশ্যের কেবলমাত্র ততটুকু জ্ঞান আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে যতটুকু রিসালাতের দায়িত্ব পালন করার জন্য প্রয়োজন ছিল। আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী মনে করা এবং যা কিছু আছে ও যা কিছু হবে এর জ্ঞান আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো আছে একথা বিশ্বাস করা শিরক। আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি দাবী করে যে, মুহাম্মদ ﷺ আগামীকাল কী হবে তা জানেন, সে আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে। কারণ আল্লাহ বলেন, হে নবী! তুমি বলে দাও আল্লাহ ছাড়া আসমান ও জমিনের অধিবাসীদের মধ্যে আর কেউ অদৃশ্যের জ্ঞান রাখে না।’’
(সহীহ বুখারী, হা/৪৮৫৫)
আল্লাহ গায়েবের কিছু বিষয় রাসূলদের কাছে প্রকাশ করেন :
عَالِمُ الْغَيْبِ فَلَا يُظْهِرُ عَلٰى غَيْبِهٖۤ احَدًا ‐ اِلَّا مَنِ ارْتَضٰى مِنْ رَّسُوْلٍ فَاِنَّهٗ يَسْلُكُ مِنْ ۢبَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهٖ رَصَدًا
তিনি অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী, তিনি তাঁর অদৃশ্যের জ্ঞান কারো নিকট প্রকাশ করেন না। তবে তাঁর মনোনীত রাসূল ব্যতীত। নিশ্চয় তিনি তার সামনে এবং পেছনে প্রহরী নিয়োজিত করে রেখেছেন (যাতে শয়তান কোন মিশ্রণ ঘটাতে না পারে)। (সূরা জিন-২৬, ২৭)
আসমান ও জমিনের কোনকিছুই আল্লাহর কাছে গোপন নয় :
وَمَا يَخْفٰى عَلَى اللهِ مِنْ شَيْءٍ فِى الْاَ رْضِ وَلَا فِى السَّمَآءِ
পৃথিবী ও আকাশমন্ডলীর কোনকিছুই আল্লাহর নিকট গোপন থাকে না। (সূরা ইবরাহীম- ৩৮)
اِنَّ اللهَ لَا يَخْفٰى عَلَيْهِ شَيْءٌ فِى الْاَ رْضِ وَلَا فِى السَّمَآءِ
নিশ্চয় আল্লাহর কাছে পৃথিবী ও আকাশমন্ডলীর কিছুই গোপন থাকে না। (সূরা আলে ইমরান- ৫)
সরিষা পরিমাণ কোন জিনিসও আল্লাহর জ্ঞানের বাইরে নয় :
وَمَا يَعْزُبُ عَنْ رَّبِّكَ مِنْ مِّثْقَالِ ذَرَّةٍ فِى الْاَ رْضِ وَلَا فِى السَّمَآءِ وَلَاۤ اَصْغَرَ مِنْ ذٰلِكَ وَلَاۤ اَكْبَرَ اِلَّا فِيْ كِتَابٍ مُّبِيْنٍ
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর অণুপরিমাণ কোন জিনিসও তোমার প্রতিপালকের অগোচরে নয় এবং তার চেয়ে ছোট অথবা বড় কিছুই নেই, যা সুস্পষ্ট কিতাবে নেই। (সূরা ইউনুস- ৬১)
لَا يَعْزُبُ عَنْهُ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ فِى السَّمَاوَاتِ وَلَا فِى الْاَ رْضِ وَلَاۤ اَصْغَرُ مِنْ ذٰلِكَ وَلَاۤ اَكْبَرُ اِلَّا فِيْ كِتَابٍ مُّبِيْنٍ
আকাশ ও পৃথিবীতে অণুপরিমাণ জিনিসও তাঁর অজানা নয়, কিংবা তদপেক্ষা ক্ষুদ্র বা বৃহৎ (তাঁর অজানা নয়) কিন্তু এ সবই সুস্পষ্ট গ্রন্থেহ লিপিবদ্ধ আছে। (সূরা সাবা- ৩)
এতো কিছু জানা আল্লাহর পক্ষে কঠিন নয় :
اَلَمْ تَعْلَمْ اَنَّ اللهَ يَعْلَمُ مَا فِى السَّمَآءِ وَالْاَ رْضِ اِنَّ ذٰلِكَ فِيْ كِتَابٍ اِنَّ ذٰلِكَ عَلَى اللهِ يَسِيْرٌ
তুমি কি জান না যে, আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু রয়েছে আল্লাহ তা জানেন। এ সবই আছে এক কিতাবে; নিশ্চয় এটা আল্লাহর নিকট সহজ। (সূরা হজ্জ- ৭০)
আল্লাহ উত্তম বিচারক :
اَلَيْسَ اللهُ بِاَحْكَمِ الْحَاكِمِيْنَ
আল্লাহ কি বিচারকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিচারক নন? (সূরা তীন- ৮)
وَاتَّبِعْ مَا يُوْحٰۤى اِلَيْكَ وَاصْبِرْ حَتّٰى يَحْكُمَ اللهُۚ وَهُوَ خَيْرُ الْحَاكِمِيْنَ
তোমার প্রতি যে ওহী অবতীর্ণ হয়েছে তুমি তার অনুসরণ করো এবং ধৈর্যধারণ করো, যে পর্যন্ত না আল্লাহ ফায়সালা করেন; আর তিনিই সর্বোত্তম ফায়সালাকারী। (সূরা ইউনুস- ১০৯)
فَاصْبِرُوْا حَتّٰى يَحْكُمَ اللهُ بَيْنَنَاۚ وَهُوَ خَيْرُ الْحَاكِمِيْنَ
অতএব ধৈর্যধারণ করো, যতক্ষণ না আল্লাহ আমাদের মধ্যে চূড়ান্ত ফায়সালা করে দেন; আর তিনিই উত্তম ফায়সালাকারী। (সূরা আ‘রাফ- ৮৭)
আল্লাহই সঠিক বিচারক :
وَاللهُ يَقْضِيْ بِالْحَقِّؕ وَالَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖ لَا يَقْضُوْنَ بِشَيْءٍؕ اِنَّ اللهَ هُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ
আল্লাহ ইনসাফের সাথে ফায়সালা করেন; আর তাঁর পরিবর্তে তারা যাদেরকে ডাকে তারা বিচার করতে অক্ষম। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। (সূরা মু’মিন- ২০)
আল্লাহ কারো হক নষ্ট করেন না :
اِنَّا لَا نُضِيْعُ اَجْرَ الْمُصْلِحِيْنَ
নিশ্চয় আমি সৎকর্মপরায়ণদের প্রতিদান নষ্ট করি না। (সূরা আ‘রাফ- ১৭০)
আল্লাহ পাপের চেয়ে বেশি শাস্তি দেন না :
وَالَّذِيْنَ كَسَبُوا السَّيِّئَاتِ جَزَآءُ سَيِّئَة ٍ ۢبِمِثْلِهَا
যারা মন্দকাজ করে তাদের প্রতিফল অনুরূপ মন্দই হবে। (সূরা ইউনুস- ২৭)
وَمَنْ جَآءَ بِالسَّيِّئَةِ فَلَا يُجْزَى الَّذِيْنَ عَمِلُوا السَّيِّئَاتِ اِلَّا مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
আর যে ব্যক্তি মন্দকর্ম নিয়ে উপস্থিত হবে, তার জন্য কেবল মন্দকর্মের অনুরূপই প্রতিদান দেয়া হবে। (সূরা ক্বাসাস- ৮৪)
আল্লাহ কারো প্রতি যুলুম করেন না :
وَمَا اللهُ يُرِيْدُ ظُلْمًا لِّلْعِبَادِ
আর আল্লাহ বান্দাদের প্রতি কোন যুলুম করতে চান না। (সূরা মু’মিন- ৩১)
اِنَّ اللهَ لَا يَظْلِمُ النَّاسَ شَيْئًا وَّلٰكِنَّ النَّاسَ اَنْفُسَهُمْ يَظْلِمُوْنَ
নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি কোন যুলুম করেন না, বরং মানুষ নিজেরাই নিজেদের প্রতি যুলুম করে থাকে। (সূরা ইউনুস- ৪৪)
مَنْ عَمِلَ صَالِحًا فَلِنَفْسِهٖ وَمَنْ اَسَآءَ فَعَلَيْهَاؕ وَمَا رَبُّكَ بِظَلَّامٍ لِّلْعَبِيْدِ
যে ব্যক্তি সৎকাজ করে সে নিজের কল্যাণের জন্যই করে; আর কেউ যদি মন্দকাজ করে তবে তার প্রতিফল সে-ই ভোগ করবে। তোমার প্রতিপালক তাঁর বান্দাদের প্রতি কোন যুলুম করেন না। (সূরা হামীম সাজদা- ৪৬)
আল্লাহ একটুও অবিচার করেন না :
اِنَّ اللهَ لَا يَظْلِمُ مِثْقَالَ ذَرَّةٍۚ وَاِنْ تَكُ حَسَنَةً يُّضَاعِفْهَا وَيُؤْتِ مِنْ لَّدُنْهُ اَجْرًا عَظِيْمًا
নিশ্চয় আল্লাহ বিন্দু পরিমাণও যুলুম করেন না; যদি সৎকর্মের পরিমাণ একটি হয় তবে তা দ্বিগুণ করে দেন এবং তার নিজের পক্ষ থেকে বড় কিছু পুরস্কার যোগ করে দেন। (সূরা নিসা- ৪০)
আল্লাহ ওয়াদা ভঙ্গ করেন না :
اِنَّ اللهَ لَا يُخْلِفُ الْمِيْعَادَ
নিশ্চয় আল্লাহ অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন না। (সূরা আলে ইমরান- ৯)
لَا يُخْلِفُ اللهُ وَعْدَهٗ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ
আল্লাহ তাঁর ওয়াদা ভঙ্গ করেন না; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। (সূরা রূম- ৬)
لَا يُخْلِفُ اللهُ الْمِيْعَادَ
আল্লাহ কখনো ওয়াদা ভঙ্গ করেন না। (সূরা যুমার- ২০)
আল্লাহর ওয়াদা সত্য :
فَاصْبِرْ اِنَّ وَعْدَ اللهِ حَقٌّ
সুতরাং তুমি ধৈর্যধারণ করো; নিশ্চয় আল্লাহর অঙ্গীকার সত্য। (সূরা মু’মিন- ৭৭)
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اِنَّ وَعْدَ اللهِ حَقٌّ فَلَا تَغُرَّنَّكُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَاؕ وَلَا يَغُرَّنَّكُمْ بِاللهِ الْغَرُوْرُ
হে মানুষ! নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য। সুতরাং পার্থিব জীবন যেন কিছুতেই তোমাদেরকে প্রতারিত না করে এবং প্রতারক (শয়তানও) যেন কিছুতেই তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারিত না করে। (সূরা ফাতির- ৫)
আল্লাহর কথা সত্য :
وَمَنْ اَصْدَقُ مِنَ اللهِ حَدِيْثًا
বর্ণনায় আল্লাহর চেয়ে অধিক সত্যবাদী আর কে আছে? (সূরা নিসা- ৮৭)
وَمَنْ اَصْدَقُ مِنَ اللهِ قِيْلًا
কথায় আল্লাহর চেয়ে অধিক সত্যবাদী আর কে? (সূরা নিসা- ১২২)
اَلَيْسَ اللهُ بِاَحْكَمِ الْحَاكِمِيْنَ
আল্লাহ কি বিচারকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিচারক নন? (সূরা তীন- ৮)
وَاتَّبِعْ مَا يُوْحٰۤى اِلَيْكَ وَاصْبِرْ حَتّٰى يَحْكُمَ اللهُۚ وَهُوَ خَيْرُ الْحَاكِمِيْنَ
তোমার প্রতি যে ওহী অবতীর্ণ হয়েছে তুমি তার অনুসরণ করো এবং ধৈর্যধারণ করো, যে পর্যন্ত না আল্লাহ ফায়সালা করেন; আর তিনিই সর্বোত্তম ফায়সালাকারী। (সূরা ইউনুস- ১০৯)
فَاصْبِرُوْا حَتّٰى يَحْكُمَ اللهُ بَيْنَنَاۚ وَهُوَ خَيْرُ الْحَاكِمِيْنَ
অতএব ধৈর্যধারণ করো, যতক্ষণ না আল্লাহ আমাদের মধ্যে চূড়ান্ত ফায়সালা করে দেন; আর তিনিই উত্তম ফায়সালাকারী। (সূরা আ‘রাফ- ৮৭)
আল্লাহই সঠিক বিচারক :
وَاللهُ يَقْضِيْ بِالْحَقِّؕ وَالَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖ لَا يَقْضُوْنَ بِشَيْءٍؕ اِنَّ اللهَ هُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ
আল্লাহ ইনসাফের সাথে ফায়সালা করেন; আর তাঁর পরিবর্তে তারা যাদেরকে ডাকে তারা বিচার করতে অক্ষম। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। (সূরা মু’মিন- ২০)
আল্লাহ কারো হক নষ্ট করেন না :
اِنَّا لَا نُضِيْعُ اَجْرَ الْمُصْلِحِيْنَ
নিশ্চয় আমি সৎকর্মপরায়ণদের প্রতিদান নষ্ট করি না। (সূরা আ‘রাফ- ১৭০)
আল্লাহ পাপের চেয়ে বেশি শাস্তি দেন না :
وَالَّذِيْنَ كَسَبُوا السَّيِّئَاتِ جَزَآءُ سَيِّئَة ٍ ۢبِمِثْلِهَا
যারা মন্দকাজ করে তাদের প্রতিফল অনুরূপ মন্দই হবে। (সূরা ইউনুস- ২৭)
وَمَنْ جَآءَ بِالسَّيِّئَةِ فَلَا يُجْزَى الَّذِيْنَ عَمِلُوا السَّيِّئَاتِ اِلَّا مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
আর যে ব্যক্তি মন্দকর্ম নিয়ে উপস্থিত হবে, তার জন্য কেবল মন্দকর্মের অনুরূপই প্রতিদান দেয়া হবে। (সূরা ক্বাসাস- ৮৪)
আল্লাহ কারো প্রতি যুলুম করেন না :
وَمَا اللهُ يُرِيْدُ ظُلْمًا لِّلْعِبَادِ
আর আল্লাহ বান্দাদের প্রতি কোন যুলুম করতে চান না। (সূরা মু’মিন- ৩১)
اِنَّ اللهَ لَا يَظْلِمُ النَّاسَ شَيْئًا وَّلٰكِنَّ النَّاسَ اَنْفُسَهُمْ يَظْلِمُوْنَ
নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি কোন যুলুম করেন না, বরং মানুষ নিজেরাই নিজেদের প্রতি যুলুম করে থাকে। (সূরা ইউনুস- ৪৪)
مَنْ عَمِلَ صَالِحًا فَلِنَفْسِهٖ وَمَنْ اَسَآءَ فَعَلَيْهَاؕ وَمَا رَبُّكَ بِظَلَّامٍ لِّلْعَبِيْدِ
যে ব্যক্তি সৎকাজ করে সে নিজের কল্যাণের জন্যই করে; আর কেউ যদি মন্দকাজ করে তবে তার প্রতিফল সে-ই ভোগ করবে। তোমার প্রতিপালক তাঁর বান্দাদের প্রতি কোন যুলুম করেন না। (সূরা হামীম সাজদা- ৪৬)
আল্লাহ একটুও অবিচার করেন না :
اِنَّ اللهَ لَا يَظْلِمُ مِثْقَالَ ذَرَّةٍۚ وَاِنْ تَكُ حَسَنَةً يُّضَاعِفْهَا وَيُؤْتِ مِنْ لَّدُنْهُ اَجْرًا عَظِيْمًا
নিশ্চয় আল্লাহ বিন্দু পরিমাণও যুলুম করেন না; যদি সৎকর্মের পরিমাণ একটি হয় তবে তা দ্বিগুণ করে দেন এবং তার নিজের পক্ষ থেকে বড় কিছু পুরস্কার যোগ করে দেন। (সূরা নিসা- ৪০)
আল্লাহ ওয়াদা ভঙ্গ করেন না :
اِنَّ اللهَ لَا يُخْلِفُ الْمِيْعَادَ
নিশ্চয় আল্লাহ অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন না। (সূরা আলে ইমরান- ৯)
لَا يُخْلِفُ اللهُ وَعْدَهٗ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ
আল্লাহ তাঁর ওয়াদা ভঙ্গ করেন না; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। (সূরা রূম- ৬)
لَا يُخْلِفُ اللهُ الْمِيْعَادَ
আল্লাহ কখনো ওয়াদা ভঙ্গ করেন না। (সূরা যুমার- ২০)
আল্লাহর ওয়াদা সত্য :
فَاصْبِرْ اِنَّ وَعْدَ اللهِ حَقٌّ
সুতরাং তুমি ধৈর্যধারণ করো; নিশ্চয় আল্লাহর অঙ্গীকার সত্য। (সূরা মু’মিন- ৭৭)
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اِنَّ وَعْدَ اللهِ حَقٌّ فَلَا تَغُرَّنَّكُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَاؕ وَلَا يَغُرَّنَّكُمْ بِاللهِ الْغَرُوْرُ
হে মানুষ! নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য। সুতরাং পার্থিব জীবন যেন কিছুতেই তোমাদেরকে প্রতারিত না করে এবং প্রতারক (শয়তানও) যেন কিছুতেই তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারিত না করে। (সূরা ফাতির- ৫)
আল্লাহর কথা সত্য :
وَمَنْ اَصْدَقُ مِنَ اللهِ حَدِيْثًا
বর্ণনায় আল্লাহর চেয়ে অধিক সত্যবাদী আর কে আছে? (সূরা নিসা- ৮৭)
وَمَنْ اَصْدَقُ مِنَ اللهِ قِيْلًا
কথায় আল্লাহর চেয়ে অধিক সত্যবাদী আর কে? (সূরা নিসা- ১২২)
আল্লাহ দানশীল :
رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوْبَنَا بَعْدَ اِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِنْ لَّدُنْكَ رَحْمَةًۚ اِنَّكَ اَنْتَ الْوَهَّابُ
হে আমাদের রব! হেদায়াত দানের পর আমাদের অন্তরকে বক্র করে দেবেন না। আর আপনার পক্ষ থেকে আমাদেরকে রহমত দান করুন; নিশ্চয় আপনি মহান দাতা। (সূরা আলে ইমরান- ৮)
তিনি অসীম অনুগ্রহের মালিক :
وَاللهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيْمِ
আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল। (সূরা আলে ইমরান- ৭৪)
وَرَبُّكَ الْغَفُوْرُ ذُو الرَّحْمَةِ
আর তোমার প্রতিপালক পরম ক্ষমাশীল ও দয়াবান। (সূরা কাহফ- ৫৮)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর রহমতের শেষ নেই। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল ﷺ এর নিকট থেকে শুনেছি যে, আল্লাহ যেদিন রহমত সৃষ্টি করেছেন সেদিন রহমতকে একশত ভাগে ভাগ করে একভাগ সমস্ত সৃষ্টিকে দিয়েছেন, আর বাকী নিরানববই ভাগ নিজের কাছে রেখেছেন। যদি কোন কাফির আল্লাহর নিকট যে রহমত আছে তার পরিমাণ সম্পর্কে জানত, তাহলে সে জান্নাতের ব্যাপারে নিরাশ হতো না। (অপরপক্ষে) কোন মুমিন যদি আল্লাহর কাছে যে শাস্তি রয়েছে তার পরিমাণ সম্পর্কে জানত, তবে (জাহান্নামের) আগুন থেকে নিজেকে নিরাপদ মনে করত না। (সহীহ বুখারী, হা/৬৪৬৯)
সকল অনুগ্রহই আল্লাহর হাতে :
قُلْ اِنَّ الْفَضْلَ بِيَدِ اللهِۚ يُؤْتِيْهِ مَنْ يَّشَآءُؕ وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ
বলো, সকল অনুগ্রহ আল্লাহর হাতে; তিনি যাকে চান তাকে অনুগ্রহ করেন। আর আল্লাহ প্রশস্ত ও মহাজ্ঞানী। (সূরা আলে ইমরান- ৭৩)
মুমিনদের ব্যাপারে আল্লাহ খুবই অনুগ্রহশীল:
وَاللهُ ذُوْ فَضْلٍ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ
নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্বাসীদের প্রতি অনুগ্রহশীল। (সূরা আলে ইমরান- ১৫২)
আল্লাহ মুমিনদের অভিভাবক :
وَاللهُ وَلِيُّ الْمُؤْمِنِيْنَ
আর আল্লাহ মুমিনদের অভিভাবক। (সূরা আলে ইমরান- ৬৮)
আল্লাহ মুত্তাক্বীদের অভিভাবক :
وَاللهُ وَلِيُّ الْمُتَّقِيْنَ
আর আল্লাহ মুত্তাক্বীদের অভিভাবক । (সূরা জাসিয়া- ১৯)
আল্লাহর রহমত সবকিছুর উপর বিস্তৃত :
وَرَحْمَتِيْ وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍؕ فَسَاَكْتُبُهَا لِلَّذِيْنَ يَتَّقُوْنَ وَيُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَالَّذِيْنَ هُمْ بِاٰيَاتِنَا يُؤْمِنُوْنَ
আমার অনুগ্রহ প্রত্যেক বস্তুর উপর বিস্তৃত। সুতরাং আমি সেটা তাদের জন্য নির্ধারণ করব যারা তাক্বওয়া অবলম্বন করে, যাকাত দেয় এবং আমার নিদর্শনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে। (সূরা আ‘রাফ- ১৫৬)
আল্লাহ অনুগ্রহ করাকে নিজ কর্তব্য করে নিয়েছেন :
قُلْ لِّمَنْ مَّا فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِؕ قُلْ لِّلّٰهِؕ كَتَبَ عَلٰى نَفْسِهِ الرَّحْمَةَ
বলো, আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে তা কার? বলো, ‘আল্লাহরই’। (জেনে রেখো) দয়া করা তিনি তাঁর কর্তব্য হিসেবে স্থির করে নিয়েছেন। (সূরা আন‘আম- ১২)
তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে নিজ অনুগ্রহে আপন করে নেন :
يَخْتَصُّ بِرَحْمَتِهٖ مَنْ يَّشَآءُؕ وَاللهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيْمِ
তিনি যাকে ইচ্ছা নিজ অনুগ্রহে বিশেষিত করেন; আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল। (সূরা আলে ইমরান- ৭৪)
আল্লাহর রহমত সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী থাকে :
اِنَّ رَحْمَةَ اللهِ قَرِيْبٌ مِّنَ الْمُحْسِنِيْنَ
নিশ্চয় আল্লাহর অনুগ্রহ সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী। (সূরা আ‘রাফ- ৫৬)
ব্যাখ্যা : আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা যখন সকল মাখলুককে সৃষ্টি করেন, তখন তাঁর কাছে আরশে রক্ষিত কিতাবে লিখলেন, ‘‘আমার রহমত আমার গযবের উপর সর্বদা বিজয়ী।’’ (সহীহ বুখারী, হা/৭৪০৪)
আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি মেহেরবান :
وَاللهُ رَءُوْفٌ ۢبِالْعِبَادِ
আর আল্লাহ বান্দাদের প্রতি খুবই স্নেহপরায়ণ। (সূরা বাক্বারা- ২০৭)
اِنَّ اللهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيْمًا
নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। (সূরা নিসা- ২৯)
আল্লাহ বান্দাদের প্রতি অনুগ্রহ বর্ষণ করেন :
هُوَ الَّذِيْ يُصَلِّيْ عَلَيْكُمْ وَمَلَآئِكَتُهٗ لِيُخْرِجَكُمْ مِّنَ الظُّلُمَاتِ اِلَى النُّوْرِؕ وَكَانَ بِالْمُؤْمِنِيْنَ رَحِيْمًا
তিনিই তোমাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন এবং তাঁর ফেরেশতারাও তোমাদের জন্য রহমত প্রার্থনা করে। যেন আল্লাহ তোমাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে বের করে আনেন। আর তিনি মুমিনদের প্রতি অত্যন্ত অনুগ্রহশীল। (সূরা আহযাব- ৪৩)
আল্লাহ পৃথিবীকে মানুষের জন্য বসবাসের উপযোগী করে দিয়েছেন :
اَللهُ الَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ الْاَ رْضَ قَرَارًا وَّالسَّمَآءَ بِنَآءً وَّصَوَّرَكُمْ فَاَحْسَنَ صُوَرَكُمْ وَرَزَقَكُمْ مِّنَ الطَّيِّبَاتِؕ ذٰلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمْۚ فَتَبَارَكَ اللهُ رَبُّ الْعَالَمِيْنَ
আল্লাহই তোমাদের জন্য পৃথিবীকে করেছেন বসবাসের উপযোগী, আকাশকে করেছেন ছাদ, তোমাদের আকৃতিকে করেছেন উৎকৃষ্ট এবং তোমাদেরকে দান করেছেন পবিত্র রিযিক। তিনিই আল্লাহ, তোমাদের প্রতিপালক। আল্লাহ কতই না মহান, যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক। (সূরা মু’মিন- ৬৪)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে সৃষ্টি করার পূর্বেই একটি সুরক্ষিত ও নিরাপদ আবাসস্থল প্রস্তুত করেছেন। তারপর তাদেরকে এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন যে, একটি সর্বোত্তম দেহ কাঠামো, উপযুক্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এবং উন্নত দেহ ও চিন্তাশক্তি দিয়েছেন। এ দেহ কাঠামো, হাত, পা, চোখ, নাক, কান, বাকশক্তিসম্পন্ন এ জিহবা এবং সর্বোত্তম যোগ্যতার ভান্ডার এ মস্তিষ্ক কেউ নিজে তৈরি করেনি, কারো বাবা-মাও তৈরি করেনি, কোন দেবতার মধ্যেও তা তৈরি করার ক্ষমতা নেই। এসব যোগ্যতা ও ক্ষমতার সৃষ্টিকারী হলেন সে মহাজ্ঞানী, দয়ালু ও সর্বশক্তিমান সত্তা, যিনি মানুষকে সৃষ্টি করার সময় পৃথিবীতে কাজ করার জন্য তাকে এ নজীরবিহীন দেহ দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর জন্মলাভ করার সাথে সাথে তাঁর দয়ায় তোমরা প্রচুর পবিত্র খাদ্য পেয়েছ এবং পানাহারের এমনসব পবিত্র উপকরণ লাভ করেছ- যা নোংরা বা বিস্বাদ নয় বরং সুস্বাদু, আবার পঁচা-গলা ও দুর্গন্ধময়ও নয় বরং সুবাসিত। পানি, খাদ্য, শস্য, তরকারী, ফলমূল, দুধ, মধু, গোশত, লবণ, মরিচ ও মসলা মানুষের পুষ্টি সাধন এবং জীবনের পরিপূর্ণ আস্বাদন লাভের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। ভূমি থেকে এ অগণিত খাদ্যভান্ডার উৎপাদনের এ ব্যবস্থা কে করেছে যে তার যোগান বন্ধ হয় না? চিন্তা করে দেখো, রিযিকের এ ব্যবস্থা না করেই যদি তোমাদেরকে সৃষ্টি করা হতো তাহলে তোমাদের জীবনের পরিস্থিতি কী দাঁড়াত? সুতরাং এটা কি এ বিষয়ের সুস্পষ্ট প্রমাণ নয় যে, তোমাদের স্রষ্টা শুধু স্রষ্টাই নন, বরং মহাজ্ঞানী স্রষ্টা এবং অত্যন্ত দয়ালু প্রভু।
আল্লাহ বিশ্রামের জন্য রাতকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করেছেন :
اَللهُ الَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ اللَّيْلَ لِتَسْكُنُوْا فِيْهِ وَالنَّهَارَ مُبْصِرًاؕ اِنَّ اللهَ لَذُوْ فَضْلٍ عَلَى النَّاسِ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَشْكُرُوْنَ
আল্লাহই তোমাদের বিশ্রামের জন্য সৃষ্টি করেছেন রাত্রি এবং আলোকিত করেছেন দিবসকে। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি অনুগ্রহশীল; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। (সূরা মু’মিন- ৬১)
আল্লাহ বৃষ্টি দিয়ে বান্দার প্রতি রহমত বর্ষণ করেন :
وَهُوَ الَّذِيْ يُنَزِّلُ الْغَيْثَ مِنْ ۢبَعْدِ مَا قَنَطُوْا وَيَنْشُرُ رَحْمَتَهٗؕ وَهُوَ الْوَلِيُّ الْحَمِيْدُ
তারা যখন নিরাশ হয়ে পড়ে তখনই তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তাঁর করুণা বিস্তার করেন। আর তিনিই তো প্রশংসিত অভিভাবক। (সূরা শূরা- ২৮)
আল্লাহ আসমানকে স্থির রেখেছেন :
وَيُمْسِكُ السَّمَآءَ اَنْ تَقَعَ عَلَى الْاَ رْضِ اِلَّا بِاِذْنِهٖؕ اِنَّ اللهَ بِالنَّاسِ لَرَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ
আর তিনিই আকাশকে স্থির রাখেন, যাতে সেটা তাঁর অনুমতি ব্যতীত পৃথিবীর উপর পতিত না হয়। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। (সূরা হজ্জ- ৬৫)
আল্লাহ তাঁর বিধানকে সহজ করেছেন :
مَا يُرِيْدُ اللهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُمْ مِّنْ حَرَجٍ وَّلٰكِنْ يُّرِيْدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهٗ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
আল্লাহ তোমাদেরকে কষ্ট দিতে চান না; বরং তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান ও তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ পূর্ণ করতে চান; যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর। (সূরা মায়েদা- ৬)
আল্লাহ মানুষকে ক্ষমা করতে চান :
يُرِيْدُ اللهُ لِيُبَيِّنَ لَكُمْ وَيَهْدِيَكُمْ سُنَنَ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَيَتُوْبَ عَلَيْكُمْؕ وَاللهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ
আল্লাহ ইচ্ছা করেন তোমাদের নিকট বিশদভাবে বর্ণনা করতে আর তোমাদের পূর্ববর্তীদের রীতিনীতি তোমাদেরকে অবহিত করতে এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করতে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা- ২৬)
আল্লাহ উত্তম উপদেশ প্রদানকারী :
اِنَّ اللهَ نِعِمَّا يَعِظُكُمْ بِهٖؕ اِنَّ اللهَ كَانَ سَمِيْعًا ۢبَصِيْراً
আল্লাহ তোমাদেরকে যে উপদেশ দেন তা কতই না উৎকৃষ্ট! নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। (সূরা নিসা- ৫৮)
আল্লাহ বান্দাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে ডাকেন :
هُوَ الَّذِيْ يُنَزِّلُ عَلٰى عَبْدِهٖۤ اٰيَاتٍ ۢبَيِّنَاتٍ لِّيُخْرِجَكُمْ مِّنَ الظُّلُمَاتِ اِلَى النُّوْرِؕ وَاِنَّ اللهَ بِكُمْ لَرَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ
তিনিই তাঁর বানদাদের প্রতি সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ অবতীর্ণ করেন, যাতে করে তিনি তোমাদেরকে সকল প্রকার অন্ধকার হতে আলোর দিকে বের করে নিয়ে আসতে পারেন; নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি করুণাময় ও পরম দয়ালু। (সূরা হাদীদ- ৯)
আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে জান্নাতের দিকে আহবান করেন :
وَاللهُ يَدْعُوْاۤ اِلٰى دَارِ السَّلَامِ ؕ وَيَهْدِيْ مَنْ يَّشَآءُ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
আল্লাহ শান্তির আবাসের দিকে আহবান করেন এবং যাকে ইচ্ছা সরল পথে পরিচালিত করেন। (সূরা ইউনুস- ২৫)
আল্লাহ মুমিনের আমল নষ্ট করেন না :
اِنَّهٗ مَنْ يَّتَّقِ وَيَصْبِرْ فَاِنَّ اللهَ لَا يُضِيْعُ اَجْرَ الْمُحْسِنِيْنَ
নিশ্চয় যে ব্যক্তি মুত্তাক্বী এবং ধৈর্যশীল, আর আল্লাহ সেরূপ সৎকর্মশীলদের শ্রমফল নষ্ট করেন না। (সূরা ইউসুফ- ৯০)
وَاَنَّ اللهَ لَا يُضِيْعُ اَجْرَ الْمُؤْمِنِيْنَ
নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের প্রতিদান বিনষ্ট করেন না। (সূরা আলে ইমরান- ১৭১)
আল্লাহ আমলের চেয়েও বেশি সওয়াব দেন :
مَنْ جَآءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهٗ عَشْرُ اَمْثَالِهَاۚ وَمَنْ جَآءَ بِالسَّيِّئَةِ فَلَا يُجْزٰۤى اِلَّا مِثْلَهَا وَهُمْ لَا يُظْلَمُوْنَ
কেউ কোন সৎকাজ করলে সে তার দশ গুণ পাবে এবং কেউ কোন অসৎকাজ করলে তাকে শুধু তারই প্রতিফল দেয়া হবে; আর তাদের প্রতি কোন যুলুম করা হবে না। (সূরা আন‘আম- ১৬০)
ব্যাখ্যা : বান্দা আল্লাহ সম্পর্কে যেরকম ধারণা করবে তাঁকে সেরকমই পাবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘আমার বান্দা আমার সম্পর্কে যেরকম ধারণা পোষণ করে, আমি তার জন্য সেরকমই। যখন সে আমাকে স্মরণ করে আমিও তাকে স্মরণ করি। যদি সে মনে মনে আমাকে স্মরণ করে আমিও মনে মনে তাকে স্মরণ করি। যদি সে লোকজনের মধ্যে আমাকে স্মরণ করে, তবে আমিও এমন জামা‘আতে তাকে স্মরণ করে থাকি, যা তার জামা‘আত থেকে উত্তম। আর যে আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয় আমি তার দিকে এক গজ অগ্রসর হই। আর যে আমার দিকে এক গজ অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে দু’গজ অগ্রসর হই। আর যে আমার দিকে হেঁটে অগ্রসর হয় আমি তার দিকে দৌড়ে অগ্রসর হই। (সহীহ বুখারী, হা/৭৪০৫)
আল্লাহ বান্দাদের পাপ ক্ষমা করেন :
وَاِنَّ رَبَّكَ لَذُوْ مَغْفِرَةٍ لِّلنَّاسِ عَلٰى ظُلْمِهِمْۚ وَاِنَّ رَبَّكَ لَشَدِيْدُ الْعِقَابِ
মানুষের সীমালঙ্ঘন সত্ত্বেও তোমার প্রতিপালক মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল এবং তোমার প্রতিপালক শাসিত্ম দানে খুবই কঠোর। (সূরা রা‘দ- ৬)
اِنْ تَجْتَنِبُوْا كَبَآئِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَنُدْخِلْكُمْ مُّدْخَلًا كَرِيْمًا
তোমাদেরকে যা নিষেধ করা হয়েছে তার মধ্যে যা গুরুতর তা হতে বিরত থাকলে তোমাদের ছোট গোনাহসমূহ ক্ষমা করব এবং তোমাদেরকে সম্মানজনক স্থানে প্রবেশ করাব। (সূরা নিসা- ৩১)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ সংকীর্ণমনা নন। ছোটখাটো ভুল-ভ্রান্তি ধরে তিনি তাঁর বান্দাদেরকে শাস্তি দেন না। আমাদের আমলনামায় যদি বড় বড় অপরাধ না থাকে তাহলে ছোটখাটো অপরাধগুলোকে তিনি উপেক্ষা করেন। তবে যদি আমরা বড় বড় অপরাধ করে থাকি, তাহলে তিনি আমাদের ছোটখাটো অপরাধগুলোও হিসাবের মধ্যে গণ্য করবেন এবং সেজন্য পাকড়াও করবেন।
আল্লাহ বান্দাদেরকে অযথা শাস্তি দিতে চান না :
مَا يَفْعَلُ اللهُ بِعَذَابِكُمْ اِنْ شَكَرْتُمْ وَاٰمَنْتُمْؕ وَكَانَ اللهُ شَاكِرًا عَلِيْمًا
তোমরা যদি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর ও ঈমান আনয়ন কর, তবে তোমাদেরকে শাস্তি দিয়ে আল্লাহর কী লাভ? আর আল্লাহ তো পুরস্কারদাতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা নিসা- ১৪৭)
আল্লাহ বান্দাদেরকে সংশোধনের সুযোগ দেন :
قَالَتْ رُسُلُهُمْ اَفِى اللهِ شَكٌّ فَاطِرِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِؕ يَدْعُوْكُمْ لِيَغْفِرَ لَكُمْ مِّنْ ذُنُوْبِكُمْ وَيُؤَخِّرَكُمْ اِلٰۤى اَجَلٍ مُّسَمًّى
তাদের রাসূলগণ বলেছিলেন, আল্লাহ সম্বন্ধে কি কোন সন্দেহ আছে, যিনি আসমান ও জমিনের সৃষ্টিকর্তা? তিনি তোমাদেরকে আহবান করেন তোমাদের পাপ মার্জনা করার জন্য এবং নির্দিষ্টকাল পর্যমত্ম তোমাদেরকে অবকাশ দেয়ার জন্য। (সূরা ইবরাহীম- ১০)
আল্লাহ বান্দাদের পরকালীন মঙ্গল চান :
تُرِيْدُوْنَ عَرَضَ الدُّنْيَا ۚ وَاللهُ يُرِيْدُ الْاٰخِرَةَؕ وَاللهُ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
তোমরা পার্থিব সম্পদ কামনা কর এবং আল্লাহ চান আখিরাতের কল্যাণ; আর আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা আনফাল- ৬৭)
আল্লাহ তাওবা কবুল করেন :
اَلَمْ يَعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ هُوَ يَقْبَلُ التَّوْبَةَ عَنْ عِبَادِهٖ وَيَاْخُذُ الصَّدَقَاتِ وَاَنَّ اللهَ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ
তারা কি জানে না যে, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের তাওবা কবুল করেন এবং ‘সাদাকা’ গ্রহণ করেন; নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা তাওবা- ১০৪)
وَهُوَ الَّذِيْ يَقْبَلُ التَّوْبَةَ عَنْ عِبَادِهٖ وَيَعْفُوْا عَنِ السَّيِّئَاتِ وَيَعْلَمُ مَا تَفْعَلُوْنَ
তিনিই তাঁর বান্দাদের তাওবা কবুল করেন এবং পাপসমূহ মোচন করেন; আর তোমরা যা কর তিনি তা জানেন। (সূরা শূরা- ২৫)
ব্যাখ্যা : কোন কোন ক্ষেত্রে উন্নত পর্যায়ের ঈমানদাররাও ভুল করতে পারে এবং তাদেরও ভুল হয়েছে। যতদিন মানুষ দুনিয়ায় মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকবে, ততদিন তার আমলনামায় শুধুমাত্র উৎকৃষ্ট মানের কার্যাবলি থাকবে এবং দোষ-ত্রুটি ও ভুল-ভ্রান্তি থাকবে না- এমনটি হতে পারে না। কিন্তু মহান আল্লাহর একটি বড় রহমত হচ্ছে, যতদিন মানুষ দাসত্বের অনিবার্য শর্তসমূহ পূর্ণ করবে, ততদিন আল্লাহ তার ভুল-ত্রুটি উপেক্ষা করতে থাকেন এবং তার কার্যাবলি যে ধরনের প্রতিদান লাভের যোগ্যতাসম্পন্ন হয়, নিজ অনুগ্রহে তার চেয়ে বেশি প্রতিদান দান করেন। অন্যথায় যদি প্রত্যেকটি ভুলের শাস্তি ও প্রত্যেকটি ভালো কাজের পুরস্কার আলাদাভাবে দেয়ার নিয়ম করা হতো, তাহলে কোন উন্নত পর্যায়ের সৎলোকও শাস্তি থেকে রেহাই পেত না। ক্ষমার দরজা আল্লাহ তা‘আলা সবসময় খোলা রাখেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমি নবী ﷺ কে বলতে শুনেছি, আল্লাহর এক বান্দা গোনাহ করল। তারপর দু‘আ করল, হে রব! আমি গোনাহ করে ফেলেছি। অতঃপর বলল, আমার গোনাহ মাফ করে দাও। তখন তার প্রতিপালক বলেন, আমার বান্দা কি জানে যে তার এমন একজন প্রতিপালক আছেন, যিনি গোনাহ মাফ করে থাকেন আর উক্ত গোনাহের কারণে পাকড়াও ও করে থাকেন। আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম। এরপর যতদিন আল্লাহর ইচ্ছা ততদিন সে এ অবস্থায় থাকল এবং আবার গোনাহ করল, এবারও সে বলল, হে প্রতিপালক! আমি গোনাহ করে ফেলেছি, আমার এ গোনাহ তুমি মাফ করে দাও। তখন আল্লাহ বললেন, আমার বান্দা কি জানে যে, তার এমন একজন রব আছেন, যিনি গোনাহ মাফ করেন আবার গোনাহের কারণে শাস্তিও দেন। আমি আমার বান্দাকে মাফ করে দিলাম। এরপর সে আল্লাহর ইচ্ছামত কিছুদিন এ অবস্থায় থাকল এবং পুনরায় গোনাহে লিপ্ত হলো। এবার সে বলল, হে রব! আমি আরেকটি গোনাহ করে ফেলেছি আমার এ গোনাহ মাফ করে দাও। তখন আল্লাহ বললেন, আমার বান্দা কি জানে যে, তার এমন একজন রব আছেন, যিনি গোনাহ মাফ করেন আবার গোনাহের কারণে শাস্তিও দেন। আচ্ছা আমি আমার বান্দাকে মাফ করে দিলাম। তিনবার এভাবে বললেন। (সহীহ বুখারী, হা/৭৫০৭)
غَافِرِ الذَّۢ نْبِ وَقَابِلِ التَّوْبِ شَدِيْدِ الْعِقَابِ ذِى الطَّوْلِ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ اِلَيْهِ الْمَصِيْرُ
যিনি পাপ ক্ষমাকারী, তাওবা কবুলকারী, যিনি শাস্তিদানে কঠোর ও শক্তিশালী। তিনি ব্যতীত (সত্য) কোন মা‘বূদ নেই। তাঁর নিকটই প্রত্যাবর্তন। (সূরা মু’মিন- ৩)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ গোনাহ মাফকারী ও তাওবা কবুলকারী। এটা তাঁর আশা ও উৎসাহ দানকারী গুণ। এ গুণটি বর্ণনা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, যারা এখন পর্যন্ত বিদ্রোহ করে চলেছে, তারা যেন নিরাশ না হয়ে নিজেদের আচরণ পুনর্বিবেচনা করে। এখনো যদি তারা এ আচরণ থেকে বিরত হয়, তাহলে তারা আল্লাহর রহমত লাভ করতে পারবে। তিনি কঠিন শাস্তিদাতা। এ গুণটি উল্লেখ করে মানুষকে এ মর্মে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, ইবাদাত ও দাসত্বের পথ অনুসরণকারীদের জন্য আল্লাহ তা‘আলা যতটা দয়াবান, বিদ্রোহ ও অবাধ্য আচরণকারীদের জন্য তিনি ঠিক ততটাই কঠোর। যে সীমা পর্যন্ত তিনি ভুল-ত্রুটি ক্ষমা ও উপেক্ষা করেন, যখন কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠি সে সীমা লঙ্ঘন করে তখন তারা তাঁর শাস্তির যোগ্য হয়ে যায়। আর তাঁর শাস্তি এমন ভয়াবহ যে, তা সহ্য করার ক্ষমতা কারো নেই। তিনি অত্যন্ত দয়ালু অর্থাৎ দানশীল, অভাবশূন্য এবং উদার। সমস্ত সৃষ্টিকূলের উপর প্রতি মুহূর্তে তাঁর নিয়ামত ও অনুগ্রহরাজি ব্যাপকভাবে বর্ষিত হচ্ছে। বান্দা যা কিছু লাভ করছে তা তাঁর দয়া ও অনুগ্রহেই লাভ করছে।
আল্লাহ বান্দার দু‘আ শুনেন এবং কবুল করেন :
اِنَّ رَبِّيْ لَسَمِيْعُ الدُّعَآءِ
আমার প্রতিপালক অবশ্যই প্রার্থনা শুনে থাকেন। (সূরা ইবরাহীম- ৩৯
আল্লাহ মুমিনদেরকে সাহায্য করেন :
وَكَانَ حَقًّا عَلَيْنَا نَصْرُ الْمُؤْمِنِيْنَ
আর মুমিনদের সাহায্য করা তো আমারই কর্তব্য। (সূরা রূম- ৪৭)
اَلَاۤ اِنَّ نَصْرَ اللهِ قَرِيْبٌ
শুনে নাও, নিশ্চয় আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটবর্তী। (সূরা বাক্বারা- ২১৪)
সাহায্যের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট :
وَكَفٰى بِاللهِ وَلِيًّا وَّكَفٰى بِاللهِ نَصِيْرًا
অভিভাবক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট এবং সাহায্যকারী হিসেবেও আল্লাহ যথেষ্ট। (সূরা নিসা- ৪৫)
তিনি যাকে ইচ্ছা সাহায্য করেন :
وَاللهُ يُؤَيِّدُ بِنَصْرِهٖ مَنْ يَّشَآءُؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَعِبْرَةً لِّاُولِى الْاَبْصَارِ
আল্লাহ যাকে চান তাকে নিজ সাহায্যের দ্বারা সাহায্য করেন। নিশ্চয় এর মধ্যে জ্ঞানীদের জন্য রয়েছে শিক্ষা। (সূরা আলে ইমরান- ১৩)
আল্লাহ সৎপথ দেখান :
لَيْسَ عَلَيْكَ هُدَاهُمْ وَلٰكِنَّ اللهَ يَهْدِيْ مَنْ يَّشَآءُ
তাদের হেদায়াতের দায়িত্ব তোমার উপর নয়। বরং আল্লাহ যাকে চান তাকেই হেদায়াত দান করেন। (সূরা বাক্বারা- ২৭২)
وَاللهُ يَهْدِيْ مَنْ يَّشَآءُ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
আল্লাহ যাকে চান তাকে সরল পথে পরিচালিত করেন। (সূরা নূর- ৪৬)
وَاَنَّ اللهَ يَهْدِيْ مَنْ يُّرِيْدُ
আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে পথপ্রদর্শন করেন। (সূরা হজ্জ- ১৬)
وَاِنَّ اللهَ لَهَادِ الَّذِيْنَ اٰمَنُواۤ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
যারা ঈমান এনেছে অবশ্যই আল্লাহ তাদেরকে সরল পথে পরিচালিত করেন। (সূরা হজ্জ- ৫৪)
আল্লাহকে আঁকড়ে ধরলেই হেদায়াত আসে :
وَمَنْ يَّعْتَصِمْ بِاللهِ فَقَدْ هُدِيَ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
আর যে ব্যক্তি শক্তভাবে আল্লাহকে ধারণ করবে, সে সৎপথে পরিচালিত হবে। (সূরা আলে ইমরান- ১০১)
আল্লাহর হেদায়াতই আসল হেদায়াত :
قُلْ اِنَّ الْهُدٰى هُدَى اللهِ
বলো, আল্লাহর হেদায়াতই হচ্ছে প্রকৃত হেদায়াত। (সূরা আলে ইমরান- ৭৩)
ব্যাখ্যা : মানুষের এক ধরনের প্রয়োজন হচ্ছে যে, তার একজন প্রতিপালক, আশ্রয়দাতা, প্রার্থনা শ্রবণকারী ও অভাব পূরণকারী থাকবে। বস্তুত আল্লাহই এসব গুণের অধিকারী। আরো এক ধরনের প্রয়োজন হচ্ছে যে, তার এমন একজন পথপ্রদর্শক থাকতে হবে, যিনি তাকে দুনিয়ায় বসবাস করার সঠিক নীতি নির্ধারণ করে দেবেন এবং পরিপূর্ণ আস্থার সাথে যার দেয়া জীবনবিধানের আনুগত্য করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রেও একমাত্র আল্লাহই হলেন পথপ্রদর্শক। দুনিয়ায় মানুষের প্রয়োজন খাদ্য, পানীয়, পোশাক ও জীবন-যাপনের জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি লাভ করা এবং বিপদাপদ ও ক্ষতি থেকে নিরাপদ থাকা। জীবন-যাপনের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে জানাও মানুষের একটি বড় প্রয়োজনীয় বিষয়। সাথে সাথে তাকে আরো জানতে হবে যে, নিজের ব্যক্তিসত্তার সাথে, নিজের শক্তি, সামর্থ্য, যোগ্যতা ও কর্মক্ষমতার সাথে, পৃথিবীতে যে উপায়-উপকরণ আছে তার সাথে, যে অসংখ্য মানুষের সাথে বিভিন্নভাবে তাকে জড়িত হতে হয় তাদের সাথে এবং সামগ্রিকভাবে যে বিশ্বব্যবস্থার অধীনে তাকে কাজ করতে হয় তার সাথে কী ব্যবহার করতে হবে। এটাও জানা এজন্য প্রয়োজন যে, তার জীবন যেন সামগ্রিকভাবে সফলকাম হয় এবং তার প্রচেষ্টা ও পরিশ্রম ভুল পথে নিয়োজিত হয়ে ধ্বংস হয়ে না যায়। যে পথনির্দেশনা মানুষকে এ পদ্ধতির দিকে নিয়ে যায় সেটিই ‘হকের হেদায়াত’ বা সত্যের পথনির্দেশনা। সত্যের পথনির্দেশনা লাভ করতে মানুষ আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদের কাছে যায় তারা মানুষের জীবন-যাপনের সঠিক মূলনীতি রচনা করার পুরোপুরি জ্ঞান রাখে না। মানুষের জীবনের সাথে সম্পর্কিত সমস্যাগুলো যে বিস্তীর্ণ পরিসরে ছড়িয়ে আছে তার সবকিছুর উপর একমাত্র আল্লাহর দৃষ্টিই পড়ে থাকে। অন্য কেউ সত্য পথনির্দেশনার উৎস হতে পারে না।
আল্লাহ তাঁর সৃষ্টিকে ভালোবাসেন :
وَهُوَ الْغَفُوْرُ الْوَدُوْدُ
আর তিনি ক্ষমাশীল ও প্রেমময়। (সূরা বুরুজ- ১৪)
اِنَّ رَبِّيْ رَحِيْمٌ وَّدُوْدٌ
নিশ্চয় আমার প্রতিপালক পরম দয়ালু ও প্রেমময়। (সূরা হুদ- ৯০)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ বান্দাকে কতই না ভালোবাসেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ফেরেশতাদেরকে বলেন, আমার বান্দা কোন গোনাহের কাজ করার ইচ্ছা করলে তা না করা পর্যন্ত তার জন্য কোন গোনাহ লিপিবদ্ধ করো না। তবে সে যদি উক্ত গোনাহের কাজটি করে ফেলে, তাহলে কাজটির অনুপাতে তার গোনাহ লিখ। আর যদি আমার কারণে তা পরিত্যাগ করে, তাহলে তার জন্য একটি নেকী লিপিবদ্ধ করো। আর সে যদি কোন নেকীর কাজ করতে ইচ্ছা করে কিন্তু এখনো তা করেনি, তাহলেও তার জন্য একটি নেকী লিপিবদ্ধ করো। আর যদি তা করে তাহলে কাজটির অনুপাতে তার জন্য দশগুণ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত নেকী (সওয়াব) লিপিবদ্ধ করো। (সহীহ বুখারী, হা/৭৫০১)
رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوْبَنَا بَعْدَ اِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِنْ لَّدُنْكَ رَحْمَةًۚ اِنَّكَ اَنْتَ الْوَهَّابُ
হে আমাদের রব! হেদায়াত দানের পর আমাদের অন্তরকে বক্র করে দেবেন না। আর আপনার পক্ষ থেকে আমাদেরকে রহমত দান করুন; নিশ্চয় আপনি মহান দাতা। (সূরা আলে ইমরান- ৮)
তিনি অসীম অনুগ্রহের মালিক :
وَاللهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيْمِ
আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল। (সূরা আলে ইমরান- ৭৪)
وَرَبُّكَ الْغَفُوْرُ ذُو الرَّحْمَةِ
আর তোমার প্রতিপালক পরম ক্ষমাশীল ও দয়াবান। (সূরা কাহফ- ৫৮)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর রহমতের শেষ নেই। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল ﷺ এর নিকট থেকে শুনেছি যে, আল্লাহ যেদিন রহমত সৃষ্টি করেছেন সেদিন রহমতকে একশত ভাগে ভাগ করে একভাগ সমস্ত সৃষ্টিকে দিয়েছেন, আর বাকী নিরানববই ভাগ নিজের কাছে রেখেছেন। যদি কোন কাফির আল্লাহর নিকট যে রহমত আছে তার পরিমাণ সম্পর্কে জানত, তাহলে সে জান্নাতের ব্যাপারে নিরাশ হতো না। (অপরপক্ষে) কোন মুমিন যদি আল্লাহর কাছে যে শাস্তি রয়েছে তার পরিমাণ সম্পর্কে জানত, তবে (জাহান্নামের) আগুন থেকে নিজেকে নিরাপদ মনে করত না। (সহীহ বুখারী, হা/৬৪৬৯)
সকল অনুগ্রহই আল্লাহর হাতে :
قُلْ اِنَّ الْفَضْلَ بِيَدِ اللهِۚ يُؤْتِيْهِ مَنْ يَّشَآءُؕ وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ
বলো, সকল অনুগ্রহ আল্লাহর হাতে; তিনি যাকে চান তাকে অনুগ্রহ করেন। আর আল্লাহ প্রশস্ত ও মহাজ্ঞানী। (সূরা আলে ইমরান- ৭৩)
মুমিনদের ব্যাপারে আল্লাহ খুবই অনুগ্রহশীল:
وَاللهُ ذُوْ فَضْلٍ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ
নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্বাসীদের প্রতি অনুগ্রহশীল। (সূরা আলে ইমরান- ১৫২)
আল্লাহ মুমিনদের অভিভাবক :
وَاللهُ وَلِيُّ الْمُؤْمِنِيْنَ
আর আল্লাহ মুমিনদের অভিভাবক। (সূরা আলে ইমরান- ৬৮)
আল্লাহ মুত্তাক্বীদের অভিভাবক :
وَاللهُ وَلِيُّ الْمُتَّقِيْنَ
আর আল্লাহ মুত্তাক্বীদের অভিভাবক । (সূরা জাসিয়া- ১৯)
আল্লাহর রহমত সবকিছুর উপর বিস্তৃত :
وَرَحْمَتِيْ وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍؕ فَسَاَكْتُبُهَا لِلَّذِيْنَ يَتَّقُوْنَ وَيُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَالَّذِيْنَ هُمْ بِاٰيَاتِنَا يُؤْمِنُوْنَ
আমার অনুগ্রহ প্রত্যেক বস্তুর উপর বিস্তৃত। সুতরাং আমি সেটা তাদের জন্য নির্ধারণ করব যারা তাক্বওয়া অবলম্বন করে, যাকাত দেয় এবং আমার নিদর্শনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে। (সূরা আ‘রাফ- ১৫৬)
আল্লাহ অনুগ্রহ করাকে নিজ কর্তব্য করে নিয়েছেন :
قُلْ لِّمَنْ مَّا فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِؕ قُلْ لِّلّٰهِؕ كَتَبَ عَلٰى نَفْسِهِ الرَّحْمَةَ
বলো, আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে তা কার? বলো, ‘আল্লাহরই’। (জেনে রেখো) দয়া করা তিনি তাঁর কর্তব্য হিসেবে স্থির করে নিয়েছেন। (সূরা আন‘আম- ১২)
তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে নিজ অনুগ্রহে আপন করে নেন :
يَخْتَصُّ بِرَحْمَتِهٖ مَنْ يَّشَآءُؕ وَاللهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيْمِ
তিনি যাকে ইচ্ছা নিজ অনুগ্রহে বিশেষিত করেন; আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল। (সূরা আলে ইমরান- ৭৪)
আল্লাহর রহমত সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী থাকে :
اِنَّ رَحْمَةَ اللهِ قَرِيْبٌ مِّنَ الْمُحْسِنِيْنَ
নিশ্চয় আল্লাহর অনুগ্রহ সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী। (সূরা আ‘রাফ- ৫৬)
ব্যাখ্যা : আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা যখন সকল মাখলুককে সৃষ্টি করেন, তখন তাঁর কাছে আরশে রক্ষিত কিতাবে লিখলেন, ‘‘আমার রহমত আমার গযবের উপর সর্বদা বিজয়ী।’’ (সহীহ বুখারী, হা/৭৪০৪)
আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি মেহেরবান :
وَاللهُ رَءُوْفٌ ۢبِالْعِبَادِ
আর আল্লাহ বান্দাদের প্রতি খুবই স্নেহপরায়ণ। (সূরা বাক্বারা- ২০৭)
اِنَّ اللهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيْمًا
নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। (সূরা নিসা- ২৯)
আল্লাহ বান্দাদের প্রতি অনুগ্রহ বর্ষণ করেন :
هُوَ الَّذِيْ يُصَلِّيْ عَلَيْكُمْ وَمَلَآئِكَتُهٗ لِيُخْرِجَكُمْ مِّنَ الظُّلُمَاتِ اِلَى النُّوْرِؕ وَكَانَ بِالْمُؤْمِنِيْنَ رَحِيْمًا
তিনিই তোমাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন এবং তাঁর ফেরেশতারাও তোমাদের জন্য রহমত প্রার্থনা করে। যেন আল্লাহ তোমাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে বের করে আনেন। আর তিনি মুমিনদের প্রতি অত্যন্ত অনুগ্রহশীল। (সূরা আহযাব- ৪৩)
আল্লাহ পৃথিবীকে মানুষের জন্য বসবাসের উপযোগী করে দিয়েছেন :
اَللهُ الَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ الْاَ رْضَ قَرَارًا وَّالسَّمَآءَ بِنَآءً وَّصَوَّرَكُمْ فَاَحْسَنَ صُوَرَكُمْ وَرَزَقَكُمْ مِّنَ الطَّيِّبَاتِؕ ذٰلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمْۚ فَتَبَارَكَ اللهُ رَبُّ الْعَالَمِيْنَ
আল্লাহই তোমাদের জন্য পৃথিবীকে করেছেন বসবাসের উপযোগী, আকাশকে করেছেন ছাদ, তোমাদের আকৃতিকে করেছেন উৎকৃষ্ট এবং তোমাদেরকে দান করেছেন পবিত্র রিযিক। তিনিই আল্লাহ, তোমাদের প্রতিপালক। আল্লাহ কতই না মহান, যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক। (সূরা মু’মিন- ৬৪)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে সৃষ্টি করার পূর্বেই একটি সুরক্ষিত ও নিরাপদ আবাসস্থল প্রস্তুত করেছেন। তারপর তাদেরকে এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন যে, একটি সর্বোত্তম দেহ কাঠামো, উপযুক্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এবং উন্নত দেহ ও চিন্তাশক্তি দিয়েছেন। এ দেহ কাঠামো, হাত, পা, চোখ, নাক, কান, বাকশক্তিসম্পন্ন এ জিহবা এবং সর্বোত্তম যোগ্যতার ভান্ডার এ মস্তিষ্ক কেউ নিজে তৈরি করেনি, কারো বাবা-মাও তৈরি করেনি, কোন দেবতার মধ্যেও তা তৈরি করার ক্ষমতা নেই। এসব যোগ্যতা ও ক্ষমতার সৃষ্টিকারী হলেন সে মহাজ্ঞানী, দয়ালু ও সর্বশক্তিমান সত্তা, যিনি মানুষকে সৃষ্টি করার সময় পৃথিবীতে কাজ করার জন্য তাকে এ নজীরবিহীন দেহ দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর জন্মলাভ করার সাথে সাথে তাঁর দয়ায় তোমরা প্রচুর পবিত্র খাদ্য পেয়েছ এবং পানাহারের এমনসব পবিত্র উপকরণ লাভ করেছ- যা নোংরা বা বিস্বাদ নয় বরং সুস্বাদু, আবার পঁচা-গলা ও দুর্গন্ধময়ও নয় বরং সুবাসিত। পানি, খাদ্য, শস্য, তরকারী, ফলমূল, দুধ, মধু, গোশত, লবণ, মরিচ ও মসলা মানুষের পুষ্টি সাধন এবং জীবনের পরিপূর্ণ আস্বাদন লাভের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। ভূমি থেকে এ অগণিত খাদ্যভান্ডার উৎপাদনের এ ব্যবস্থা কে করেছে যে তার যোগান বন্ধ হয় না? চিন্তা করে দেখো, রিযিকের এ ব্যবস্থা না করেই যদি তোমাদেরকে সৃষ্টি করা হতো তাহলে তোমাদের জীবনের পরিস্থিতি কী দাঁড়াত? সুতরাং এটা কি এ বিষয়ের সুস্পষ্ট প্রমাণ নয় যে, তোমাদের স্রষ্টা শুধু স্রষ্টাই নন, বরং মহাজ্ঞানী স্রষ্টা এবং অত্যন্ত দয়ালু প্রভু।
আল্লাহ বিশ্রামের জন্য রাতকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করেছেন :
اَللهُ الَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ اللَّيْلَ لِتَسْكُنُوْا فِيْهِ وَالنَّهَارَ مُبْصِرًاؕ اِنَّ اللهَ لَذُوْ فَضْلٍ عَلَى النَّاسِ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَشْكُرُوْنَ
আল্লাহই তোমাদের বিশ্রামের জন্য সৃষ্টি করেছেন রাত্রি এবং আলোকিত করেছেন দিবসকে। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি অনুগ্রহশীল; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। (সূরা মু’মিন- ৬১)
আল্লাহ বৃষ্টি দিয়ে বান্দার প্রতি রহমত বর্ষণ করেন :
وَهُوَ الَّذِيْ يُنَزِّلُ الْغَيْثَ مِنْ ۢبَعْدِ مَا قَنَطُوْا وَيَنْشُرُ رَحْمَتَهٗؕ وَهُوَ الْوَلِيُّ الْحَمِيْدُ
তারা যখন নিরাশ হয়ে পড়ে তখনই তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তাঁর করুণা বিস্তার করেন। আর তিনিই তো প্রশংসিত অভিভাবক। (সূরা শূরা- ২৮)
আল্লাহ আসমানকে স্থির রেখেছেন :
وَيُمْسِكُ السَّمَآءَ اَنْ تَقَعَ عَلَى الْاَ رْضِ اِلَّا بِاِذْنِهٖؕ اِنَّ اللهَ بِالنَّاسِ لَرَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ
আর তিনিই আকাশকে স্থির রাখেন, যাতে সেটা তাঁর অনুমতি ব্যতীত পৃথিবীর উপর পতিত না হয়। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। (সূরা হজ্জ- ৬৫)
আল্লাহ তাঁর বিধানকে সহজ করেছেন :
مَا يُرِيْدُ اللهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُمْ مِّنْ حَرَجٍ وَّلٰكِنْ يُّرِيْدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهٗ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
আল্লাহ তোমাদেরকে কষ্ট দিতে চান না; বরং তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান ও তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ পূর্ণ করতে চান; যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর। (সূরা মায়েদা- ৬)
আল্লাহ মানুষকে ক্ষমা করতে চান :
يُرِيْدُ اللهُ لِيُبَيِّنَ لَكُمْ وَيَهْدِيَكُمْ سُنَنَ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَيَتُوْبَ عَلَيْكُمْؕ وَاللهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ
আল্লাহ ইচ্ছা করেন তোমাদের নিকট বিশদভাবে বর্ণনা করতে আর তোমাদের পূর্ববর্তীদের রীতিনীতি তোমাদেরকে অবহিত করতে এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করতে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা- ২৬)
আল্লাহ উত্তম উপদেশ প্রদানকারী :
اِنَّ اللهَ نِعِمَّا يَعِظُكُمْ بِهٖؕ اِنَّ اللهَ كَانَ سَمِيْعًا ۢبَصِيْراً
আল্লাহ তোমাদেরকে যে উপদেশ দেন তা কতই না উৎকৃষ্ট! নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। (সূরা নিসা- ৫৮)
আল্লাহ বান্দাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে ডাকেন :
هُوَ الَّذِيْ يُنَزِّلُ عَلٰى عَبْدِهٖۤ اٰيَاتٍ ۢبَيِّنَاتٍ لِّيُخْرِجَكُمْ مِّنَ الظُّلُمَاتِ اِلَى النُّوْرِؕ وَاِنَّ اللهَ بِكُمْ لَرَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ
তিনিই তাঁর বানদাদের প্রতি সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ অবতীর্ণ করেন, যাতে করে তিনি তোমাদেরকে সকল প্রকার অন্ধকার হতে আলোর দিকে বের করে নিয়ে আসতে পারেন; নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি করুণাময় ও পরম দয়ালু। (সূরা হাদীদ- ৯)
আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে জান্নাতের দিকে আহবান করেন :
وَاللهُ يَدْعُوْاۤ اِلٰى دَارِ السَّلَامِ ؕ وَيَهْدِيْ مَنْ يَّشَآءُ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
আল্লাহ শান্তির আবাসের দিকে আহবান করেন এবং যাকে ইচ্ছা সরল পথে পরিচালিত করেন। (সূরা ইউনুস- ২৫)
আল্লাহ মুমিনের আমল নষ্ট করেন না :
اِنَّهٗ مَنْ يَّتَّقِ وَيَصْبِرْ فَاِنَّ اللهَ لَا يُضِيْعُ اَجْرَ الْمُحْسِنِيْنَ
নিশ্চয় যে ব্যক্তি মুত্তাক্বী এবং ধৈর্যশীল, আর আল্লাহ সেরূপ সৎকর্মশীলদের শ্রমফল নষ্ট করেন না। (সূরা ইউসুফ- ৯০)
وَاَنَّ اللهَ لَا يُضِيْعُ اَجْرَ الْمُؤْمِنِيْنَ
নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের প্রতিদান বিনষ্ট করেন না। (সূরা আলে ইমরান- ১৭১)
আল্লাহ আমলের চেয়েও বেশি সওয়াব দেন :
مَنْ جَآءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهٗ عَشْرُ اَمْثَالِهَاۚ وَمَنْ جَآءَ بِالسَّيِّئَةِ فَلَا يُجْزٰۤى اِلَّا مِثْلَهَا وَهُمْ لَا يُظْلَمُوْنَ
কেউ কোন সৎকাজ করলে সে তার দশ গুণ পাবে এবং কেউ কোন অসৎকাজ করলে তাকে শুধু তারই প্রতিফল দেয়া হবে; আর তাদের প্রতি কোন যুলুম করা হবে না। (সূরা আন‘আম- ১৬০)
ব্যাখ্যা : বান্দা আল্লাহ সম্পর্কে যেরকম ধারণা করবে তাঁকে সেরকমই পাবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘আমার বান্দা আমার সম্পর্কে যেরকম ধারণা পোষণ করে, আমি তার জন্য সেরকমই। যখন সে আমাকে স্মরণ করে আমিও তাকে স্মরণ করি। যদি সে মনে মনে আমাকে স্মরণ করে আমিও মনে মনে তাকে স্মরণ করি। যদি সে লোকজনের মধ্যে আমাকে স্মরণ করে, তবে আমিও এমন জামা‘আতে তাকে স্মরণ করে থাকি, যা তার জামা‘আত থেকে উত্তম। আর যে আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয় আমি তার দিকে এক গজ অগ্রসর হই। আর যে আমার দিকে এক গজ অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে দু’গজ অগ্রসর হই। আর যে আমার দিকে হেঁটে অগ্রসর হয় আমি তার দিকে দৌড়ে অগ্রসর হই। (সহীহ বুখারী, হা/৭৪০৫)
আল্লাহ বান্দাদের পাপ ক্ষমা করেন :
وَاِنَّ رَبَّكَ لَذُوْ مَغْفِرَةٍ لِّلنَّاسِ عَلٰى ظُلْمِهِمْۚ وَاِنَّ رَبَّكَ لَشَدِيْدُ الْعِقَابِ
মানুষের সীমালঙ্ঘন সত্ত্বেও তোমার প্রতিপালক মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল এবং তোমার প্রতিপালক শাসিত্ম দানে খুবই কঠোর। (সূরা রা‘দ- ৬)
اِنْ تَجْتَنِبُوْا كَبَآئِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَنُدْخِلْكُمْ مُّدْخَلًا كَرِيْمًا
তোমাদেরকে যা নিষেধ করা হয়েছে তার মধ্যে যা গুরুতর তা হতে বিরত থাকলে তোমাদের ছোট গোনাহসমূহ ক্ষমা করব এবং তোমাদেরকে সম্মানজনক স্থানে প্রবেশ করাব। (সূরা নিসা- ৩১)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ সংকীর্ণমনা নন। ছোটখাটো ভুল-ভ্রান্তি ধরে তিনি তাঁর বান্দাদেরকে শাস্তি দেন না। আমাদের আমলনামায় যদি বড় বড় অপরাধ না থাকে তাহলে ছোটখাটো অপরাধগুলোকে তিনি উপেক্ষা করেন। তবে যদি আমরা বড় বড় অপরাধ করে থাকি, তাহলে তিনি আমাদের ছোটখাটো অপরাধগুলোও হিসাবের মধ্যে গণ্য করবেন এবং সেজন্য পাকড়াও করবেন।
আল্লাহ বান্দাদেরকে অযথা শাস্তি দিতে চান না :
مَا يَفْعَلُ اللهُ بِعَذَابِكُمْ اِنْ شَكَرْتُمْ وَاٰمَنْتُمْؕ وَكَانَ اللهُ شَاكِرًا عَلِيْمًا
তোমরা যদি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর ও ঈমান আনয়ন কর, তবে তোমাদেরকে শাস্তি দিয়ে আল্লাহর কী লাভ? আর আল্লাহ তো পুরস্কারদাতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা নিসা- ১৪৭)
আল্লাহ বান্দাদেরকে সংশোধনের সুযোগ দেন :
قَالَتْ رُسُلُهُمْ اَفِى اللهِ شَكٌّ فَاطِرِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِؕ يَدْعُوْكُمْ لِيَغْفِرَ لَكُمْ مِّنْ ذُنُوْبِكُمْ وَيُؤَخِّرَكُمْ اِلٰۤى اَجَلٍ مُّسَمًّى
তাদের রাসূলগণ বলেছিলেন, আল্লাহ সম্বন্ধে কি কোন সন্দেহ আছে, যিনি আসমান ও জমিনের সৃষ্টিকর্তা? তিনি তোমাদেরকে আহবান করেন তোমাদের পাপ মার্জনা করার জন্য এবং নির্দিষ্টকাল পর্যমত্ম তোমাদেরকে অবকাশ দেয়ার জন্য। (সূরা ইবরাহীম- ১০)
আল্লাহ বান্দাদের পরকালীন মঙ্গল চান :
تُرِيْدُوْنَ عَرَضَ الدُّنْيَا ۚ وَاللهُ يُرِيْدُ الْاٰخِرَةَؕ وَاللهُ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
তোমরা পার্থিব সম্পদ কামনা কর এবং আল্লাহ চান আখিরাতের কল্যাণ; আর আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা আনফাল- ৬৭)
আল্লাহ তাওবা কবুল করেন :
اَلَمْ يَعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ هُوَ يَقْبَلُ التَّوْبَةَ عَنْ عِبَادِهٖ وَيَاْخُذُ الصَّدَقَاتِ وَاَنَّ اللهَ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ
তারা কি জানে না যে, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের তাওবা কবুল করেন এবং ‘সাদাকা’ গ্রহণ করেন; নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা তাওবা- ১০৪)
وَهُوَ الَّذِيْ يَقْبَلُ التَّوْبَةَ عَنْ عِبَادِهٖ وَيَعْفُوْا عَنِ السَّيِّئَاتِ وَيَعْلَمُ مَا تَفْعَلُوْنَ
তিনিই তাঁর বান্দাদের তাওবা কবুল করেন এবং পাপসমূহ মোচন করেন; আর তোমরা যা কর তিনি তা জানেন। (সূরা শূরা- ২৫)
ব্যাখ্যা : কোন কোন ক্ষেত্রে উন্নত পর্যায়ের ঈমানদাররাও ভুল করতে পারে এবং তাদেরও ভুল হয়েছে। যতদিন মানুষ দুনিয়ায় মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকবে, ততদিন তার আমলনামায় শুধুমাত্র উৎকৃষ্ট মানের কার্যাবলি থাকবে এবং দোষ-ত্রুটি ও ভুল-ভ্রান্তি থাকবে না- এমনটি হতে পারে না। কিন্তু মহান আল্লাহর একটি বড় রহমত হচ্ছে, যতদিন মানুষ দাসত্বের অনিবার্য শর্তসমূহ পূর্ণ করবে, ততদিন আল্লাহ তার ভুল-ত্রুটি উপেক্ষা করতে থাকেন এবং তার কার্যাবলি যে ধরনের প্রতিদান লাভের যোগ্যতাসম্পন্ন হয়, নিজ অনুগ্রহে তার চেয়ে বেশি প্রতিদান দান করেন। অন্যথায় যদি প্রত্যেকটি ভুলের শাস্তি ও প্রত্যেকটি ভালো কাজের পুরস্কার আলাদাভাবে দেয়ার নিয়ম করা হতো, তাহলে কোন উন্নত পর্যায়ের সৎলোকও শাস্তি থেকে রেহাই পেত না। ক্ষমার দরজা আল্লাহ তা‘আলা সবসময় খোলা রাখেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমি নবী ﷺ কে বলতে শুনেছি, আল্লাহর এক বান্দা গোনাহ করল। তারপর দু‘আ করল, হে রব! আমি গোনাহ করে ফেলেছি। অতঃপর বলল, আমার গোনাহ মাফ করে দাও। তখন তার প্রতিপালক বলেন, আমার বান্দা কি জানে যে তার এমন একজন প্রতিপালক আছেন, যিনি গোনাহ মাফ করে থাকেন আর উক্ত গোনাহের কারণে পাকড়াও ও করে থাকেন। আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম। এরপর যতদিন আল্লাহর ইচ্ছা ততদিন সে এ অবস্থায় থাকল এবং আবার গোনাহ করল, এবারও সে বলল, হে প্রতিপালক! আমি গোনাহ করে ফেলেছি, আমার এ গোনাহ তুমি মাফ করে দাও। তখন আল্লাহ বললেন, আমার বান্দা কি জানে যে, তার এমন একজন রব আছেন, যিনি গোনাহ মাফ করেন আবার গোনাহের কারণে শাস্তিও দেন। আমি আমার বান্দাকে মাফ করে দিলাম। এরপর সে আল্লাহর ইচ্ছামত কিছুদিন এ অবস্থায় থাকল এবং পুনরায় গোনাহে লিপ্ত হলো। এবার সে বলল, হে রব! আমি আরেকটি গোনাহ করে ফেলেছি আমার এ গোনাহ মাফ করে দাও। তখন আল্লাহ বললেন, আমার বান্দা কি জানে যে, তার এমন একজন রব আছেন, যিনি গোনাহ মাফ করেন আবার গোনাহের কারণে শাস্তিও দেন। আচ্ছা আমি আমার বান্দাকে মাফ করে দিলাম। তিনবার এভাবে বললেন। (সহীহ বুখারী, হা/৭৫০৭)
غَافِرِ الذَّۢ نْبِ وَقَابِلِ التَّوْبِ شَدِيْدِ الْعِقَابِ ذِى الطَّوْلِ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ اِلَيْهِ الْمَصِيْرُ
যিনি পাপ ক্ষমাকারী, তাওবা কবুলকারী, যিনি শাস্তিদানে কঠোর ও শক্তিশালী। তিনি ব্যতীত (সত্য) কোন মা‘বূদ নেই। তাঁর নিকটই প্রত্যাবর্তন। (সূরা মু’মিন- ৩)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ গোনাহ মাফকারী ও তাওবা কবুলকারী। এটা তাঁর আশা ও উৎসাহ দানকারী গুণ। এ গুণটি বর্ণনা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, যারা এখন পর্যন্ত বিদ্রোহ করে চলেছে, তারা যেন নিরাশ না হয়ে নিজেদের আচরণ পুনর্বিবেচনা করে। এখনো যদি তারা এ আচরণ থেকে বিরত হয়, তাহলে তারা আল্লাহর রহমত লাভ করতে পারবে। তিনি কঠিন শাস্তিদাতা। এ গুণটি উল্লেখ করে মানুষকে এ মর্মে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, ইবাদাত ও দাসত্বের পথ অনুসরণকারীদের জন্য আল্লাহ তা‘আলা যতটা দয়াবান, বিদ্রোহ ও অবাধ্য আচরণকারীদের জন্য তিনি ঠিক ততটাই কঠোর। যে সীমা পর্যন্ত তিনি ভুল-ত্রুটি ক্ষমা ও উপেক্ষা করেন, যখন কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠি সে সীমা লঙ্ঘন করে তখন তারা তাঁর শাস্তির যোগ্য হয়ে যায়। আর তাঁর শাস্তি এমন ভয়াবহ যে, তা সহ্য করার ক্ষমতা কারো নেই। তিনি অত্যন্ত দয়ালু অর্থাৎ দানশীল, অভাবশূন্য এবং উদার। সমস্ত সৃষ্টিকূলের উপর প্রতি মুহূর্তে তাঁর নিয়ামত ও অনুগ্রহরাজি ব্যাপকভাবে বর্ষিত হচ্ছে। বান্দা যা কিছু লাভ করছে তা তাঁর দয়া ও অনুগ্রহেই লাভ করছে।
আল্লাহ বান্দার দু‘আ শুনেন এবং কবুল করেন :
اِنَّ رَبِّيْ لَسَمِيْعُ الدُّعَآءِ
আমার প্রতিপালক অবশ্যই প্রার্থনা শুনে থাকেন। (সূরা ইবরাহীম- ৩৯
আল্লাহ মুমিনদেরকে সাহায্য করেন :
وَكَانَ حَقًّا عَلَيْنَا نَصْرُ الْمُؤْمِنِيْنَ
আর মুমিনদের সাহায্য করা তো আমারই কর্তব্য। (সূরা রূম- ৪৭)
اَلَاۤ اِنَّ نَصْرَ اللهِ قَرِيْبٌ
শুনে নাও, নিশ্চয় আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটবর্তী। (সূরা বাক্বারা- ২১৪)
সাহায্যের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট :
وَكَفٰى بِاللهِ وَلِيًّا وَّكَفٰى بِاللهِ نَصِيْرًا
অভিভাবক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট এবং সাহায্যকারী হিসেবেও আল্লাহ যথেষ্ট। (সূরা নিসা- ৪৫)
তিনি যাকে ইচ্ছা সাহায্য করেন :
وَاللهُ يُؤَيِّدُ بِنَصْرِهٖ مَنْ يَّشَآءُؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَعِبْرَةً لِّاُولِى الْاَبْصَارِ
আল্লাহ যাকে চান তাকে নিজ সাহায্যের দ্বারা সাহায্য করেন। নিশ্চয় এর মধ্যে জ্ঞানীদের জন্য রয়েছে শিক্ষা। (সূরা আলে ইমরান- ১৩)
আল্লাহ সৎপথ দেখান :
لَيْسَ عَلَيْكَ هُدَاهُمْ وَلٰكِنَّ اللهَ يَهْدِيْ مَنْ يَّشَآءُ
তাদের হেদায়াতের দায়িত্ব তোমার উপর নয়। বরং আল্লাহ যাকে চান তাকেই হেদায়াত দান করেন। (সূরা বাক্বারা- ২৭২)
وَاللهُ يَهْدِيْ مَنْ يَّشَآءُ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
আল্লাহ যাকে চান তাকে সরল পথে পরিচালিত করেন। (সূরা নূর- ৪৬)
وَاَنَّ اللهَ يَهْدِيْ مَنْ يُّرِيْدُ
আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে পথপ্রদর্শন করেন। (সূরা হজ্জ- ১৬)
وَاِنَّ اللهَ لَهَادِ الَّذِيْنَ اٰمَنُواۤ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
যারা ঈমান এনেছে অবশ্যই আল্লাহ তাদেরকে সরল পথে পরিচালিত করেন। (সূরা হজ্জ- ৫৪)
আল্লাহকে আঁকড়ে ধরলেই হেদায়াত আসে :
وَمَنْ يَّعْتَصِمْ بِاللهِ فَقَدْ هُدِيَ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
আর যে ব্যক্তি শক্তভাবে আল্লাহকে ধারণ করবে, সে সৎপথে পরিচালিত হবে। (সূরা আলে ইমরান- ১০১)
আল্লাহর হেদায়াতই আসল হেদায়াত :
قُلْ اِنَّ الْهُدٰى هُدَى اللهِ
বলো, আল্লাহর হেদায়াতই হচ্ছে প্রকৃত হেদায়াত। (সূরা আলে ইমরান- ৭৩)
ব্যাখ্যা : মানুষের এক ধরনের প্রয়োজন হচ্ছে যে, তার একজন প্রতিপালক, আশ্রয়দাতা, প্রার্থনা শ্রবণকারী ও অভাব পূরণকারী থাকবে। বস্তুত আল্লাহই এসব গুণের অধিকারী। আরো এক ধরনের প্রয়োজন হচ্ছে যে, তার এমন একজন পথপ্রদর্শক থাকতে হবে, যিনি তাকে দুনিয়ায় বসবাস করার সঠিক নীতি নির্ধারণ করে দেবেন এবং পরিপূর্ণ আস্থার সাথে যার দেয়া জীবনবিধানের আনুগত্য করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রেও একমাত্র আল্লাহই হলেন পথপ্রদর্শক। দুনিয়ায় মানুষের প্রয়োজন খাদ্য, পানীয়, পোশাক ও জীবন-যাপনের জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি লাভ করা এবং বিপদাপদ ও ক্ষতি থেকে নিরাপদ থাকা। জীবন-যাপনের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে জানাও মানুষের একটি বড় প্রয়োজনীয় বিষয়। সাথে সাথে তাকে আরো জানতে হবে যে, নিজের ব্যক্তিসত্তার সাথে, নিজের শক্তি, সামর্থ্য, যোগ্যতা ও কর্মক্ষমতার সাথে, পৃথিবীতে যে উপায়-উপকরণ আছে তার সাথে, যে অসংখ্য মানুষের সাথে বিভিন্নভাবে তাকে জড়িত হতে হয় তাদের সাথে এবং সামগ্রিকভাবে যে বিশ্বব্যবস্থার অধীনে তাকে কাজ করতে হয় তার সাথে কী ব্যবহার করতে হবে। এটাও জানা এজন্য প্রয়োজন যে, তার জীবন যেন সামগ্রিকভাবে সফলকাম হয় এবং তার প্রচেষ্টা ও পরিশ্রম ভুল পথে নিয়োজিত হয়ে ধ্বংস হয়ে না যায়। যে পথনির্দেশনা মানুষকে এ পদ্ধতির দিকে নিয়ে যায় সেটিই ‘হকের হেদায়াত’ বা সত্যের পথনির্দেশনা। সত্যের পথনির্দেশনা লাভ করতে মানুষ আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদের কাছে যায় তারা মানুষের জীবন-যাপনের সঠিক মূলনীতি রচনা করার পুরোপুরি জ্ঞান রাখে না। মানুষের জীবনের সাথে সম্পর্কিত সমস্যাগুলো যে বিস্তীর্ণ পরিসরে ছড়িয়ে আছে তার সবকিছুর উপর একমাত্র আল্লাহর দৃষ্টিই পড়ে থাকে। অন্য কেউ সত্য পথনির্দেশনার উৎস হতে পারে না।
আল্লাহ তাঁর সৃষ্টিকে ভালোবাসেন :
وَهُوَ الْغَفُوْرُ الْوَدُوْدُ
আর তিনি ক্ষমাশীল ও প্রেমময়। (সূরা বুরুজ- ১৪)
اِنَّ رَبِّيْ رَحِيْمٌ وَّدُوْدٌ
নিশ্চয় আমার প্রতিপালক পরম দয়ালু ও প্রেমময়। (সূরা হুদ- ৯০)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ বান্দাকে কতই না ভালোবাসেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ফেরেশতাদেরকে বলেন, আমার বান্দা কোন গোনাহের কাজ করার ইচ্ছা করলে তা না করা পর্যন্ত তার জন্য কোন গোনাহ লিপিবদ্ধ করো না। তবে সে যদি উক্ত গোনাহের কাজটি করে ফেলে, তাহলে কাজটির অনুপাতে তার গোনাহ লিখ। আর যদি আমার কারণে তা পরিত্যাগ করে, তাহলে তার জন্য একটি নেকী লিপিবদ্ধ করো। আর সে যদি কোন নেকীর কাজ করতে ইচ্ছা করে কিন্তু এখনো তা করেনি, তাহলেও তার জন্য একটি নেকী লিপিবদ্ধ করো। আর যদি তা করে তাহলে কাজটির অনুপাতে তার জন্য দশগুণ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত নেকী (সওয়াব) লিপিবদ্ধ করো। (সহীহ বুখারী, হা/৭৫০১)
যারা ইহসানকারী :
وَاَحْسِنُوْاۤ اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِيْنَ
আর তোমরা ইহসান করো; নিশ্চয় আল্লাহ ইহসানকারীদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা বাক্বারা- ১৯৫)
যারা তাওবাকারী :
اِنَّ اللهَ يُحِبُّ التَّوَّابِيْنَ
নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা বাক্বারা- ২২২)
যারা ধৈর্যশীল :
وَاللهُ يُحِبُّ الصَّابِرِيْنَ
আর আল্লাহ ধৈর্যশীলদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৪৬)
যারা আল্লাহর উপর ভরসাকারী :
فَتَوَكَّلْ عَلَى اللهِؕ اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِيْنَ
আল্লাহর প্রতি ভরসা করো; নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর উপর ভরসাকারীদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৯)
যারা ন্যায়বিচারক :
فَاحْكُمْ بَيْنَهُمْ بِالْقِسْطِؕ اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِيْنَ
তুমি তাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করো; নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়বিচারকদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা মায়েদা- ৪২)
যারা মুত্তাক্বী :
اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُتَّقِيْنَ
নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাক্বীদেরকে পছন্দ করেন। (সূরা তাওবা- ৪)
যারা পবিত্রতা অবলম্বনকারী :
وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِيْنَ
আর তিনি পবিত্রতা অবলম্বনকারীদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা বাক্বারা- ২২২)
যারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে :
اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الَّذِيْنَ يُقَاتِلُوْنَ فِيْ سَبِيْلِهٖ صَفًّا كَاَنَّهُمْ بُنْيَانٌ مَّرْصُوْصٌ
নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন, যারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে সারিবদ্ধভাবে শীশাঢালা প্রাচীরের মতো। (সূরা সাফ- ৪)
ব্যাখ্যা : নফল ইবাদাত দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয়। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল ﷺ বলেছেন, আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোন ওলীর সাথে শত্রুতা পোষণ করবে, আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করব। আমি যা কিছু আমার বান্দার উপর ফরয করে দিয়েছি তা দ্বারা সে আমার নৈকট্য লাভ করতে পারবে। আর বান্দা সর্বদা নফল ইবাদাত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করে, অবশেষে আমি (নফল ইবাদাতের কারণে) তাকে ভালোবাসতে থাকি। এমনকি আমি তার কান হয়ে যাই, যা দ্বারা সে শুনতে পায়। আমি তার হাত হয়ে যাই, যা দ্বারা সে স্পর্শ করে। আমি তার চোখ হয়ে যাই, যা দ্বারা সে দেখতে পায়। আমি তার পা হয়ে যাই, যা দ্বারা সে চলাফেরা করে। আর সে যদি আমার নিকট কোন কিছু প্রার্থনা করে তবে আমি তাকে অবশ্যই তা দান করি। আর সে যদি আমার নিকট কোন কিছু থেকে আশ্রয় চায় তবে আমি তাকে আশ্রয় দান করি। (সহীহ বুখারী, হা/৬৫০২)
وَاَحْسِنُوْاۤ اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِيْنَ
আর তোমরা ইহসান করো; নিশ্চয় আল্লাহ ইহসানকারীদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা বাক্বারা- ১৯৫)
যারা তাওবাকারী :
اِنَّ اللهَ يُحِبُّ التَّوَّابِيْنَ
নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা বাক্বারা- ২২২)
যারা ধৈর্যশীল :
وَاللهُ يُحِبُّ الصَّابِرِيْنَ
আর আল্লাহ ধৈর্যশীলদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৪৬)
যারা আল্লাহর উপর ভরসাকারী :
فَتَوَكَّلْ عَلَى اللهِؕ اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِيْنَ
আল্লাহর প্রতি ভরসা করো; নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর উপর ভরসাকারীদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৯)
যারা ন্যায়বিচারক :
فَاحْكُمْ بَيْنَهُمْ بِالْقِسْطِؕ اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِيْنَ
তুমি তাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করো; নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়বিচারকদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা মায়েদা- ৪২)
যারা মুত্তাক্বী :
اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُتَّقِيْنَ
নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাক্বীদেরকে পছন্দ করেন। (সূরা তাওবা- ৪)
যারা পবিত্রতা অবলম্বনকারী :
وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِيْنَ
আর তিনি পবিত্রতা অবলম্বনকারীদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা বাক্বারা- ২২২)
যারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে :
اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الَّذِيْنَ يُقَاتِلُوْنَ فِيْ سَبِيْلِهٖ صَفًّا كَاَنَّهُمْ بُنْيَانٌ مَّرْصُوْصٌ
নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন, যারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে সারিবদ্ধভাবে শীশাঢালা প্রাচীরের মতো। (সূরা সাফ- ৪)
ব্যাখ্যা : নফল ইবাদাত দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয়। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল ﷺ বলেছেন, আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোন ওলীর সাথে শত্রুতা পোষণ করবে, আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করব। আমি যা কিছু আমার বান্দার উপর ফরয করে দিয়েছি তা দ্বারা সে আমার নৈকট্য লাভ করতে পারবে। আর বান্দা সর্বদা নফল ইবাদাত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করে, অবশেষে আমি (নফল ইবাদাতের কারণে) তাকে ভালোবাসতে থাকি। এমনকি আমি তার কান হয়ে যাই, যা দ্বারা সে শুনতে পায়। আমি তার হাত হয়ে যাই, যা দ্বারা সে স্পর্শ করে। আমি তার চোখ হয়ে যাই, যা দ্বারা সে দেখতে পায়। আমি তার পা হয়ে যাই, যা দ্বারা সে চলাফেরা করে। আর সে যদি আমার নিকট কোন কিছু প্রার্থনা করে তবে আমি তাকে অবশ্যই তা দান করি। আর সে যদি আমার নিকট কোন কিছু থেকে আশ্রয় চায় তবে আমি তাকে আশ্রয় দান করি। (সহীহ বুখারী, হা/৬৫০২)
সকল নিয়ামত আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে :
وَمَا بِكُمْ مِّنْ نِّعْمَةٍ فَمِنَ اللهِ ثُمَّ اِذَا مَسَّكُمُ الضُّرُّ فَاِلَيْهِ تَجْاَرُوْنَ
তোমাদের নিকট যে সমসত্ম নিয়ামত রয়েছে তা তো আল্লাহর নিকট হতেই (আসে); আবার যখন তোমাদেরকে দুঃখ-কষ্ট স্পর্শ করে তখন তোমরা তাঁকেই ব্যাকুলভাবে আহবান কর। (সূরা নাহল- ৫৩)
আল্লাহর নিয়ামত গুণে শেষ করা যাবে না :
وَاِنْ تَعُدُّوْا نِعْمَةَ اللهِ لَا تُحْصُوْهَا
তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করলে এর সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না। (সূরা নাহল- ১৮)
وَاِنْ تَعُدُّوْا نِعْمَةَ اللهِ لَا تُحْصُوْهَاۤ اِنَّ الْاِنْسَانَ لَظَلُوْمٌ كَفَّارٌ
আর যদি তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা কর, তবে তার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না। নিশ্চয় মানুষ অতি মাত্রায় যালিম ও অকৃতজ্ঞ। (সূরা ইবরাহীম- ৩৪)
মানুষের প্রয়োজনীয় সবই তিনি দিয়েছেন :
وَاٰتَاكُمْ مِّنْ كُلِّ مَا سَاَلْتُمُوْهُ
আর তোমরা তাঁর নিকট যা কিছু চেয়েছ তা হতে তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন। (সূরা ইবরাহীম- ৩৪)
মানুষের জন্য নিয়ামত পূর্ণ করে দিয়েছেন :
اَلَمْ تَرَوْا اَنَّ اللهَ سَخَّرَ لَكُمْ مَّا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَ رْضِ وَاَسْبَغَ عَلَيْكُمْ نِعَمَهٗ ظَاهِرَةً وَّبَاطِنَةً
তোমরা কি দেখ না যে, আল্লাহই তোমাদের কাজে নিয়োজিত রেখেছেন যা কিছু আছে আসমানে ও যা কিছু জমিনে (সবকিছুকে) এবং তিনিই তোমাদের প্রতি তাঁর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নিয়ামত পূর্ণ করে দিয়েছেন। (সূরা লুক্বমান- ২০)
ব্যাখ্যা : মানুষ যেসব নিয়ামত অনুভব করে, সেগুলো প্রকাশ্য নিয়ামত। আর তারা যেসব নিয়ামত সম্পর্কে জানে না এবং অনুভবও করে না, সেগুলো গোপন নিয়ামত। মানুষের শরীরে ও বাইরে এমন অগণিত জিনিস রয়েছে, যা দুনিয়ায় তার জন্য উপকারী। কিন্তু মানুষ অনুভবও করে না যে, স্রষ্টা তাদের জন্য তা সংরক্ষণ করে রেখেছেন। তার দ্বারা তাদের জীবিকা দান করেন, তার বিকাশ ঘটান এবং তার কল্যাণার্থে কত রকমের সাজ-সরঞ্জাম যোগাড় করেন। মহান আল্লাহ জীবনের প্রতিটি বিভাগে মানুষের যাবতীয় প্রয়োজন বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করেন, তারপর এক একটি প্রয়োজন পূর্ণ করার ব্যবস্থা করেন। তিনি কোন কোন দিক থেকে কোন ধরনের কী পরিমাণ উপকরণ তৈরি করে দিয়েছেন তার বিস্তারিত বিবরণ যদি কেউ লিখতে বসে, তাহলে একটি বই তৈরি হয়ে যাবে। যেমন পোশাক ও বাসস্থানের দিক দিয়ে আল্লাহর নিয়ামতের পূর্ণতা, খাদ্যোপকরণের দিক দিয়ে আল্লাহর নিয়ামতের পূর্ণতা ইত্যাদি। মোটকথা তিনি মানবজাতির ছোট-বড় সবধরনের প্রয়োজনের প্রতি দৃষ্টি রেখে অসংখ্য উপকরণ সৃষ্টি করেছেন এবং সকল ক্ষেত্রে তাদের উপর তাঁর নিয়ামতকে পূর্ণভাবে প্রদান করেছেন।
আল্লাহ আকাশকে বানিয়েছেন ছাদস্বরূপ :
وَجَعَلْنَا السَّمَآءَ سَقْفًا مَّحْفُوْظًاۚ وَهُمْ عَنْ اٰيَاتِهَا مُعْرِضُوْنَ
আর আকাশকে করেছি সুরক্ষিত ছাদ; কিন্তু তারা আকাশে অবস্থিত নিদর্শনাবলি হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়। (সূরা আম্বিয়া- ৩২)
তিনি আকাশকে আটকিয়ে রাখেন :
وَيُمْسِكُ السَّمَآءَ اَنْ تَقَعَ عَلَى الْاَ رْضِ اِلَّا بِاِذْنِهٖؕ اِنَّ اللهَ بِالنَّاسِ لَرَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ
আর তিনিই আকাশকে স্থির রাখেন, যাতে সেটা তাঁর অনুমতি ব্যতীত পৃথিবীর উপর পতিত না হয়। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। (সূরা হজ্জ- ৬৫)
চন্দ্র ও সূর্যকে বানিয়েছেন সময় গণনার মাধ্যম :
فَالِقُ الْاِصْبَاحِۚ وَجَعَلَ اللَّيْلَ سَكَنًا وَّالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ حُسْبَانًاؕ ذٰلِكَ تَقْدِيْرُ الْعَزِيْزِ الْعَلِيْمِ
তিনিই সকালকে প্রকাশ করেন, তিনিই বিশ্রামের জন্য এবং গণনার জন্য সূর্য ও চন্দ্র সৃষ্টি করেছেন; এসবই মহাপরাক্রমশালী ও মহাজ্ঞানীর (আল্লাহর) নির্ধারিত নিয়ম। (সূরা আন‘আম- ৯৬)
পৃথিবীকে বানিয়েছেন বিছানাস্বরূপ :
اَلَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ الْاَ رْضَ مَهْدًا
যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে করেছেন বিছানাস্বরূপ। (সূরা যুখরুফ- ১০)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ তা‘আলা এখানে পৃথিবীকে দোলনার সাথে এবং অন্য আয়াতে বিছানার সাথে তুলনা করেছেন। অর্থাৎ একটি শিশু যেভাবে তার দোলনার মধ্যে আরামে শুয়ে থাকে, মহাশূন্যে ভাসমান এই বিশাল গ্রহকে আল্লাহ তেমনি আরামের জায়গা বানিয়ে দিয়েছেন। এর অভ্যন্তরে রয়েছে এমন আগুন, যা পাথরকেও গলিয়ে দেয়। কিন্তু এ সত্ত্বেও স্রষ্টা তাকে এতটা শান্ত বানিয়ে দিয়েছেন যে, মানুষ এর উপর বসবাস করে কিন্তু অনুভব পর্যন্ত করতে পারে না যে, এটি মহাশূন্যে ঝুলন্ত গ্রহ। মানুষ এর পিঠের উপর নিরাপদে চলাফেরা করছে অথচ তাদের এ ধারণাও নেই যে, বন্দুকের গুলীর চেয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন গাড়িতে তারা অবস্থান করছে। বিনা দ্বিধায় তাকে খনন করছে এবং তার পেট থেকে রিযিক বের করছে; অথচ কখনো কখনো ভূমিকম্পের অতি সাধারণ কম্পনও জানিয়ে দেয় যে, এটা কত ভয়ঙ্কর স্থান।
মানুষের বসবাসের জায়গা করে দিয়েছেন :
وَهُوَ الَّذِيْۤ اَنْشَاَكُمْ مِّنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ فَمُسْتَقَرٌّ وَّمُسْتَوْدَعٌ ؕ قَدْ فَصَّلْنَا الْاٰيَاتِ لِقَوْمٍ يَّفْقَهُوْنَ
তিনিই তোমাদেরকে একই ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের জন্য দীর্ঘ ও স্বল্পকালীন বাসস্থান তৈরি করে দিয়েছেন। আর আমি অনুধাবনকারী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করে দিয়েছি। (সূরা আন‘আম- ৯৮)
পৃথিবীকে স্থির রাখতে পাহাড় স্থাপন করেছেন :
وَجَعَلْنَا فِى الْاَ رْضِ رَوَاسِيَ اَنْ تَمِيْدَ بِهِمْ وَجَعَلْنَا فِيْهَا فِجَاجًا سُبُلًا لَّعَلَّهُمْ يَهْتَدُوْنَ
আর আমি পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছি সুদৃঢ় পর্বত, যাতে পৃথিবী তাদেরকে নিয়ে এদিক-ওদিক ঢলে না যায়। আর আমি তাতে করে দিয়েছি প্রশসত্ম পথ, যাতে তারা গমত্মব্যস্থলে পৌঁছতে পারে। (সূরা আম্বিয়া- ৩১)
পৃথিবীতে রাস্তা তৈরি করেছেন :
وَاَلْقٰى فِى الْاَ رْضِ رَوَاسِيَ اَنْ تَمِيْدَ بِكُمْ وَاَنْهَارًا وَّسُبُلًا لَّعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ
আর তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বত স্থাপন করেছেন, যাতে পৃথিবী তোমাদেরকে নিয়ে আন্দোলিত না হয়। আর এতে স্থাপন করেছেন নদ-নদী ও পথ, যাতে তোমরা তোমাদের গমত্মব্যস্থলে পৌঁছতে পার। (সূরা নাহল- ১৫)
وَاللهُ جَعَلَ لَكُمُ الْاَ رْضَ بِسَاطًا ‐ - لِتَسْلُكُوْا مِنْهَا سُبُلًا فِجَاجًا
আর আল্লাহ তোমাদের জন্য ভূমিকে করেছেন বিস্তৃত, যাতে তোমরা এর প্রশস্ত পথে চলাফেরা করতে পার। (সূরা নূহ- ১৯, ২০)
وَجَعَلَ لَكُمْ فِيْهَا سُبُلًا لَّعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ
তিনি পৃথিবীতে তোমাদের জন্য চলার পথ তৈরি করেছেন, যাতে তোমরা সঠিক পথ পেতে পার। (সূরা যুখরুফ- ১০)
ব্যাখ্যা : পাহাড়ের মাঝে গিরিপথ এবং পাহাড়ী ও সমতল ভূমির অঞ্চলে নদী হচ্ছে সেই প্রাকৃতিক পথ, যা আল্লাহ তৈরি করেছেন। এসব পথ ধরেই মানুষ পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে। পর্বত শ্রেণিকে যদি কোন ফাঁক ছাড়া প্রাচীরের মতো করে দাঁড় করানো হতো এবং ভূপৃষ্ঠের কোথাও কোন সমুদ্র, নদী-নালা না থাকত তাহলে মানুষ যেখানে জন্মগ্রহণ করেছিল সেখানেই আবদ্ধ হয়ে পড়ত। আল্লাহ আরো অনুগ্রহ করেছেন এই যে, তিনি গোটা ভূপৃষ্ঠকে একই রকম করে সৃষ্টি করেননি, বরং তাতে নানা ধরনের এমনসব পার্থক্যসূচক চিহ্ন রেখে দিয়েছেন, যার সাহায্যে মানুষ বিভিন্ন এলাকা চিনতে পারে এবং এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলের পার্থক্য উপলব্ধি করতে পারে। এটা আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়, যার সাহায্যে পৃথিবীতে মানুষের চলাচল সহজ হয়েছে। মানুষ যখন বিশাল কোন মরুভূমিতে যায়, যেখানে মাইলের পর মাইল কোন পার্থক্যসূচক চিহ্ন থাকে না এবং সে কোথা থেকে কোথায় এসে পৌঁছেছে তা বুঝতে পারে না, তখন সে এই নিয়ামতের মর্যাদা বুঝতে পারে। এসব প্রাকৃতিক রাস্তা ও রাস্তার চিহ্নসমূহের সাহায্যে তোমরা তোমাদের পথ চিনে নিতে পার এবং যেখানে যেতে চাও সেখানে যেতে পার। বহু সংখ্যক স্রষ্টা মিলে এ ব্যবস্থা করেনি, বরং এক মহাজ্ঞানী পালনকর্তা আছেন, যিনি তাঁর বান্দাদের প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ্য রেখে পাহাড় ও সমতল ভূমিতে এসব রাস্তা বানিয়েছেন এবং পৃথিবীর একেকটি অঞ্চলকে ভিন্ন ভিন্ন আকৃতি দান করেছেন, যার সাহায্যে মানুষ এক অঞ্চলকে অন্য অঞ্চল থেকে আলাদা করে চিনতে পারে।
জমিনে মানুষের চলাফেরা করার ব্যবস্থা করেছেন :
هُوَ الَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ الْاَ رْضَ ذَلُوْلًا فَامْشُوْا فِيْ مَنَاكِبِهَا وَكُلُوْا مِنْ رِّزْقِهٖؕ وَاِلَيْهِ النُّشُوْرُ
তিনিই তো তোমাদের জন্য জমিনকে চলাচলের উপযোগী করে দিয়েছেন। অতএব তোমরা তার দিক-দিগন্তে ও রাস্তাসমূহে বিচরণ করো এবং তাঁর দেয়া রিযিক হতে আহার করো, (জেনে রেখো) তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। (সূরা মুলক- ১৫)
هُوَ الَّذِيْ يُسَيِّرُكُمْ فِى الْبَرِّ وَالْبَحْرِ
তিনিই তোমাদেরকে জলে-স্থলে ভ্রমণ করান। (সূরা ইউনুস- ২২)
পথ চেনার জন্য চিহ্ন ও তারকা বানিয়েছেন :
وَعَلَامَاتٍ ؕ وَبِالنَّجْمِ هُمْ يَهْتَدُوْنَ
আর (তিনি সৃষ্টি করেছেন) পথ নির্ণায়ক চিহুসমূহও। (তাছাড়া) তারা (মানুষ) নক্ষত্রের সাহায্যেও পথের নির্দেশনা পায়। (সূরা নাহল- ১৬)
সর্বত্র মানুষকে ছড়িয়ে দিয়েছেন :
هُوَ الَّذِيْ ذَرَاَكُمْ فِى الْاَ رْضِ وَاِلَيْهِ تُحْشَرُوْنَ
তিনিই তোমাদেরকে পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং তোমাদেরকে তাঁরই কাছে একত্রিত করা হবে।
(সূরা মুলক- ২৪)
মানুষের সফরের জন্য সওয়ারীর ব্যবস্থা করেছেন :
وَالْخَيْلَ وَالْبِغَالَ وَالْحَمِيْرَ لِتَرْكَبُوْهَا وَزِيْنَةًؕ وَيَخْلُقُ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ
তিনি তোমাদের আরোহণের জন্য ও শোভার জন্য সৃষ্টি করেছেন অশ্ব, অশ্বতর ও গর্দভ এবং তিনি সৃষ্টি করেছেন এমন অনেক কিছু, যা তোমরা অবগত নও। (সূরা নাহল- ৮)
وَجَعَلَ لَكُمْ مِّنَ الْفُلْكِ وَالْاَنْعَامِ مَا تَرْكَبُوْنَ ‐ - لِتَسْتَوُوْا عَلٰى ظُهُوْرِهٖ ثُمَّ تَذْكُرُوْا نِعْمَةَ رَبِّكُمْ اِذَا اسْتَوَيْتُمْ عَلَيْهِ وَتَقُوْلُوْا سُبْحَانَ الَّذِيْ سَخَّرَ لَنَا هٰذَا وَمَا كُنَّا لَهٗ مُقْرِنِيْنَ
যিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন এমন নৌযান ও চতুষ্পদ জন্তু, যাতে তোমরা আরোহণ কর। যাতে তোমরা ওদের পৃষ্ঠে স্থির হয়ে বসতে পার, তারপর তোমাদের প্রতিপালকের নিয়ামত স্মরণ কর যখন তোমরা ওর উপর স্থির হয়ে বস এবং বল, তিনি পবিত্র ও মহান, যিনি এদেরকে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন, যদিও আমরা এদেরকে বশীভূত করতে সক্ষম ছিলাম না। (সূরা যুখরুফ- ১২, ১৩)
মানুষের ঘরবাড়ি তৈরির ব্যবস্থা করেছেন :
وَاللهُ جَعَلَ لَكُمْ مِّنْ ۢبُيُوْتِكُمْ سَكَنًا وَّجَعَلَ لَكُمْ مِّنْ جُلُوْدِ الْاَنْعَامِ بُيُوْتًا تَسْتَخِفُّوْنَهَا يَوْمَ ظَعْنِكُمْ وَيَوْمَ اِقَامَتِكُمْ وَمِنْ اَصْوَافِهَا وَاَوْبَارِهَا وَاَشْعَارِهَاۤ اَثَاثًا وَّمَتَاعًا اِلٰى حِيْنٍ
আল্লাহ তোমাদের গৃহকে করেন আবাসস্থল এবং তিনি তোমাদের জন্য পশুচর্মের তাঁবুর ব্যবস্থা করেন, তোমরা এটাকে সহজ মনে কর ভ্রমণকালে এবং অবস্থানকালে। আর তিনি তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেন তাদের পশম, লোম ও কেশ হতে কিছু কালের গৃহসামগ্রী ও ব্যবহার-উপকরণ। (সূরা নাহল- ৮০)
পোশাক দিয়েছেন :
وَجَعَلَ لَكُمْ سَرَابِيْلَ تَقِيْكُمُ الْحَرَّ وَسَرَابِيْلَ تَقِيْكُمْ بَاْسَكُمْؕ كَذٰلِكَ يُتِمُّ نِعْمَتَهٗ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تُسْلِمُوْنَ
তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেন পরিধেয় বস্ত্রের, সেটা তোমাদেরকে তাপ হতে রক্ষা করে এবং তিনি তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেন বর্মের, সেটা তোমাদেরকে যুদ্ধক্ষেত্রে রক্ষা করে। এভাবে তিনি তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ পূর্ণ করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আত্মসমর্পণ কর। (সূরা নাহল- ৮১)
পাহাড়েও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছেন :
وَاللهُ جَعَلَ لَكُمْ مِّمَّا خَلَقَ ظِلَالًا وَّجَعَلَ لَكُمْ مِّنَ الْجِبَالِ اَكْنَانًا
আর আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তা হতে তিনি তোমাদের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করেন এবং তোমাদের জন্য পাহাড়ে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেন। (সূরা নাহল- ৮১)
মানুষকে বিভিন্নভাবে রোজগারের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন :
نَحْنُ قَسَمْنَا بَيْنَهُمْ مَّعِيْشَتَهُمْ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَرَفَعْنَا بَعْضَهُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِّيَتَّخِذَ بَعْضُهُمْ بَعْضًا سُخْرِيًّاؕ وَرَحْمَةُ رَبِّكَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُوْنَ
আমিই তাদের মধ্যে তাদের পার্থিব জীবনে জীবিকা বণ্টন করি এবং একজনকে অপর জনের উপর মর্যাদায় উন্নত করি, যেন একে অপরের দ্বারা খেদমত করিয়ে নিতে পারে। (জেনে রেখো) তারা যা জমা করে তোমার প্রতিপালকের রহমত তা হতে অনেক উৎকৃষ্টতর। (সূরা যুখরুফ- ৩২)
ব্যাখ্যা : একজনকেই সবকিছু অথবা সবাইকে সবকিছু না দেয়া আল্লাহর চিরস্থায়ী একটি নিয়ম। সাধারণভাবে লক্ষ্য করলেই আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে সর্বক্ষেত্রেই এ পার্থক্য নজরে পড়বে। আল্লাহ কাউকে কোন জিনিস দিয়ে থাকলে আরেকটি জিনিস থেকে তাকে বঞ্চিত করেছেন এবং সেটি অন্য কাউকে দিয়েছেন। এমনটি করার কারণ হলো, কোন মানুষই যেন অন্য মানুষদের মুখাপেক্ষিতা থেকে মুক্ত না হয়। আল্লাহ একজনের মধ্যেই জ্ঞান, বুদ্ধি, সম্পদ, সৌন্দর্য, ক্ষমতা, কর্তৃত্ব এবং অন্যসব পূর্ণতার সমাবেশ ঘটাননি এবং কাউকে সবকিছু থেকে বঞ্চিতও করেননি। পৃথিবীতে জীবন-যাপন করার যে সাধারণ উপায়-উপকরণ আছে তার বণ্টনব্যবস্থাও আল্লাহ নিজের হাতেই রেখেছেন, অন্য কারো হাতে তুলে দেননি। আল্লাহ কাউকে সুশ্রী, কাউকে কুশ্রী, কাউকে শক্তিশালী এবং কাউকে দুর্বল, কাউকে মেধাবী এবং কাউকে মেধাহীন, কাউকে সুস্থ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অধিকারী, কাউকে বিকলাঙ্গ, অন্ধ অথবা বোবা, কাউকে আমীরের পুত্র এবং কাউকে গরীবের পুত্র, কাউকে উন্নতজাতির সদস্য এবং কাউকে পরাধীন হিসেবে সৃষ্টি করে থাকেন। জন্মগত এই ভাগ্যের ব্যাপারে কেউ সামান্যতম কর্তৃত্বও খাটাতে পারে না। আল্লাহ যাকে যা বানিয়েছেন সে তা-ই হতে বাধ্য; কারো তাকদীরের উপর জন্মগত অবস্থার যে প্রভাবই পড়ে তা পাল্টে দেয়ার সাধ্য কারো নেই। তাছাড়া আল্লাহই মানুষের মধ্যে রিযিক, ক্ষমতা, মর্যাদা, খ্যাতি, সম্পদ ও শাসন কর্তৃত্ব ইতাদি বণ্টন করেছেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে যে সম্মান লাভ করে কেউ তার মর্যাদাহানি করতে পারে না। আর আল্লাহর পক্ষ থেকে যার জন্য দুর্ভাগ্য ও অধঃপতন এসে যায় কেউ তাকে পতন থেকে রক্ষা করতে পারে না। আল্লাহর সিদ্ধান্তের মুকাবিলায় মানুষের সমস্ত চেষ্টা ও কৌশল কোন কাজেই আসে না।
মালামাল পরিবহনের ব্যবস্থা করেছেন :
وَتَحْمِلُ اَثْقَالَكُمْ اِلٰى بَلَدٍ لَّمْ تَكُوْنُوْا بَالِغِيْهِ اِلَّا بِشِقِّ الْاَنْفُسِؕ اِنَّ رَبَّكُمْ لَرَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ
আর পশুরা তোমাদের ভার বহন করে নিয়ে যায় এমন দেশে, যেথায় প্রাণামত্ম ক্লেশ ব্যতীত তোমরা পৌঁছতে পারতে না। নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক খুবই দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। (সূরা নাহল- ৭)
সমুদ্রে নৌকা চলার ব্যবস্থা করেছেন :
سَخَّرَ لَكُمُ الْفُلْكَ لِتَجْرِيَ فِى الْبَحْرِ بِاَمْرِهٖؕ وَسَخَّرَ لَكُمُ الْاَنْهَارَ
তিনি নৌযানকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, যেন তাঁর নির্দেশে সেটা সমুদ্রে বিচরণ করে এবং তিনি নদীসমূহকে তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন। (সূরা ইবরাহীম- ৩২)
আল্লাহ রিযিক তালাশের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন :
رَبُّكُمُ الَّذِيْ يُزْجِيْ لَكُمُ الْفُلْكَ فِى الْبَحْرِ لِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِهٖؕ اِنَّهٗ كَانَ بِكُمْ رَحِيْمًا
তিনিই তোমাদের প্রতিপালক, যিনি তোমাদের জন্য সমুদ্রে নৌযান পরিচালিত করেন, যেন তোমরা তাঁর অনুগ্রহ (রিযিক) সন্ধান করতে পার। নিশ্চয় তিনি তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৬৬)
রাতে বিশ্রাম ও দিনে রিযিক তালাশের সুযোগ করে দিয়েছেন :
وَمِنْ رَّحْمَتِهٖ جَعَلَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ لِتَسْكُنُوْا فِيْهِ وَلِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِهٖ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
তিনিই তাঁর দয়ায় তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন রাত ও দিন, যেন তোমরা তাতে বিশ্রাম করতে পার এবং তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার। হয়তো তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। (সূরা ক্বাসাস- ৭৩)
উত্তম রিযিক দান করেছেন :
وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِيْۤ اٰدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِى الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُمْ مِّنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلٰى كَثِيْرٍ مِّمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيْلًا
আমি তো আদম সমত্মানকে মর্যাদা দান করেছি, স্থলে ও সমুদ্রে তাদের চলাচলের বাহন দিয়েছি, তাদেরকে উত্তম রিযিক দান করেছি এবং আমি যাদেরকে সৃষ্টি করেছি তাদের অনেকের উপর তাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৭০)
আগুন জ্বালানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন :
اَلَّذِيْ جَعَلَ لَكُمْ مِّنَ الشَّجَرِ الْاَخْضَرِ نَارًا فَاِذَاۤ اَنْتُمْ مِّنْهُ تُوْقِدُوْنَ
যিনি সবুজ গাছ থেকে তোমাদের জন্য আগুন উৎপন্ন করেন, অতঃপর তোমরা তা থেকে (আগুন) জ্বালাও। (সূরা ইয়াসীন- ৮০)
পৃথিবীর সবকিছু মানুষের অধীন করে দিয়েছেন :
اَنَّ اللهَ سَخَّرَ لَكُمْ مَّا فِى الْاَ رْضِ وَالْفُلْكَ تَجْرِيْ فِى الْبَحْرِ بِاَمْرِهٖ
তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবকিছুকে আল্লাহ তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন এবং তাঁরই নির্দেশে সমুদ্রে বিচরণশীল নৌযানসমূহকেও (তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন)? (সূরা হজ্জ- ৬৫)
وَسَخَّرَ لَكُمُ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ دَآئِبَيْنِۚ وَسَخَّرَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ
তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, যারা অবিরাম একই নিয়মের অনুগামী। আর তিনি রাত ও দিনকেও তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন। (সূরা ইবরাহীম- ৩৩)
اَلَمْ تَرَوْا اَنَّ اللهَ سَخَّرَ لَكُمْ مَّا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَ رْضِ
তোমরা কি লক্ষ্য কর না যে, আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে, সবকিছুই আল্লাহ তোমাদের জন্য নিয়োজিত রেখেছেন। (সূরা লুক্বমান- ২০)
وَسَخَّرَ لَكُمْ مَّا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَ رْضِ جَمِيْعًا مِّنْهُؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ
তিনি তোমাদের জন্য নিয়োজিত করে দিয়েছেন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মধ্যে যা কিছু রয়েছে সবকিছু। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা জাসিয়া- ১৩)
ব্যাখ্যা : কোন জিনিসকে কারো জন্য অনুগত করে দেয়ার অর্থ হচ্ছে, ঐ জিনিসকে তার অধীন করে দেয়া। ঐ জিনিসকে নিজের অধীনে নিয়ে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে ব্যবহার ও ক্ষমতা প্রয়োগ করা। যেমন পৃথিবী ও আকাশের সমস্ত জিনিসকে অর্থাৎ আগুন, পানি, মাটি, উদ্ভিদ, খনিজ পদার্থ, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র ইত্যাদিকে আল্লাহ তা‘আলা মানুষের অনুগত করে দিয়েছেন।
তিনি মানুষের জীবিকা উৎপন্ন করেন :
يُنْۢبِتُ لَكُمْ بِهِ الزَّرْعَ وَالزَّيْتُوْنَ وَالنَّخِيْلَ وَالْاَعْنَابَ وَمِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ
তিনি তাদের জন্য তা দ্বারা উৎপন্ন করেন শস্য, যায়তুন, খেজুর বৃক্ষ, আঙ্গুর এবং সর্বপ্রকার ফল। অবশ্যই এতে চিমত্মাশীল সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা নাহল- ১১)
اَخْرَجَ مِنْهَا مَآءَهَا وَمَرْعَاهَا
তিনি তা থেকে বের করেছেন পানি ও চারণভূমি। (সূরা নাযি‘আত- ৩১)
পশু পালনের মধ্যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দিয়েছেন :
وَلَكُمْ فِيْهَا جَمَالٌ حِيْنَ تُرِيْحُوْنَ وَحِيْنَ تَسْرَحُوْنَ
আর যখন তোমরা তাদেরকে গোধূলি লগ্নে চারণভূমি হতে গৃহে নিয়ে আস এবং প্রভাতে তাদেরকে চারণভূমিতে নিয়ে যাও তখন তোমরা তার সৌন্দর্য উপভোগ কর। (সূরা নাহল- ৬)
চামড়ার উপকরণ ও গোশত দিয়েছেন :
وَالْاَنْعَامَ خَلَقَهَا لَكُمْ فِيْهَا دِفْءٌ وَّمَنَافِعُ وَمِنْهَا تَاْكُلُوْنَ
তিনি চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন; তাতে তোমাদের জন্য রয়েছে শীত নিবারক উপকরণ ও বহু উপকার। আর তা হতে তোমরা আহার করে থাক। (সূরা নাহল- ৫)
পশুর পশমকেও উপকারী করেছেন :
وَمِنْ اَصْوَافِهَا وَاَوْبَارِهَا وَاَشْعَارِهَاۤ اَثَاثًا وَّمَتَاعًا اِلٰى حِيْنٍ
তিনি তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেন তাদের পশম, লোম ও কেশ হতে কিছু কালের গৃহসামগ্রী ও ব্যবহার-উপকরণ। (সূরা নাহল- ৮০)
মেঘ বহনকারী বাতাস প্রেরণ করেন :
وَاللهُ الَّذِيْۤ اَرْسَلَ الرِّيَاحَ فَتُثِيْرُ سَحَابًا فَسُقْنَاهُ اِلٰى بَلَدٍ مَّيِّتٍ فَاَحْيَيْنَا بِهِ الْاَ رْضَ بَعْدَ مَوْتِهَاؕ كَذَالِكَ النُّشُوْرُ
আর তিনিই আল্লাহ যিনি বাতাস প্রেরণ করেন, তারপর তা মেঘমালাকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। অতঃপর আমি তা পরিচালিত করি মৃত ভূখন্ডের দিকে, তারপর আমি তা দিয়ে জমিনকে তার মৃত্যুর পর জীবিত করে দেই। ঠিক এভাবেই (একদিন মানুষেরও) পুনরুত্থান (হবে)। (সূরা ফাতির- ৯)
আল্লাহ আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করেন :
وَاَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَخْرَجَ بِهٖ مِنَ الثَّمَرَاتِ رِزْقًا لَّكُمْۚ فَلَا تَجْعَلُوْا لِلّٰهِ اَنْدَادًا وَّاَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
যিনি আকাশ হতে পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর তার দ্বারা তোমাদের জন্য জীবিকাস্বরূপ ফলসমূহ উৎপাদন করেন। অতএব তোমরা জেনে শুনে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করো না। (সূরা বাক্বারা- ২২)
وَهُوَ الَّذِيْۤ اَرْسَلَ الرِّيَاحَ بُشْرًا ۢبَيْنَ يَدَيْ رَحْمَتِهٖۚ وَاَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَآءِ مَآءً طَهُوْرًا
আর তিনি নিজ অনুগ্রহের প্রাক্কালে সুসংবাদবাহী বায়ু প্রেরণ করেন এবং আকাশ হতে বিশুদ্ধ পানি বর্ষণ করেন। (সূরা ফুরক্বান- ৪৮)
প্রাণীকুলের পিপাসা নিবারণ করেন :
لِنُحْيِيَ بِهٖ بَلْدَةً مَّيْتًا وَّنُسْقِيَهٗ مِمَّا خَلَقْنَاۤ اَنْعَامًا وَّاَنَاسِيَّ كَثِيْرًا
যার দ্বারা আমি মৃত ভূখন্ডকে সঞ্জীবিত করি এবং আমার সৃষ্টির মধ্যে বহু জীবজন্তু ও মানুষকে তা পান করাই। (সূরা ফুরক্বান- ৪৯)
وَاَرْسَلْنَا الرِّيَاحَ لَوَاقِحَ فَاَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَسْقَيْنَاكُمُوْهُۚ وَمَاۤ اَنْتُمْ لَهٗ بِخَازِنِيْنَ
আমি বৃষ্টি বহনকারী বায়ু প্রেরণ করি, তারপর আমিই আকাশ হতে পানি বর্ষণ করি। অতঃপর তোমাদেরকে তা পান করাই; তোমরা নিজেরা তো এর কোন ভান্ডার জমা করে রাখনি (যে, সেখান থেকে এসব আসছে)। (সূরা হিজর- ২২)
পানি দ্বারা ফসল উৎপাদন করেন :
فَاَنْشَاْنَا لَكُمْ بِهٖ جَنَّاتٍ مِّنْ نَّخِيْلٍ وَّاَعْنَابٍ لَّكُمْ فِيْهَا فَوَاكِهُ كَثِيْرَةٌ وَّمِنْهَا تَاْكُلُوْنَ
অতঃপর আমি এর দ্বারা তোমাদের জন্য খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান উৎপাদন করি। তোমাদের জন্য এতে আছে প্রচুর ফল; আর তোমরা তা হতে আহার করে থাক। (সূরা মু’মিনূন- ১৯)
পৃথিবীর পানিকে সংরক্ষণ করেন :
وَاَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَآءِ مَآءً ۢبِقَدَرٍ فَاَسْكَنَّاهُ فِى الْاَ رْضِ وَاِنَّا عَلٰى ذَهَابٍ ۢبِهٖ لَقَادِرُوْنَ
আর আমিই আকাশ হতে পানি বর্ষণ করি পরিমিত হারে। অতঃপর আমি তা মাটিতে সংরক্ষণ করি; আর আমি তাকে অপসারণ করতেও সক্ষম। (সূরা মু’মিনূন- ১৮)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ প্রত্যেক অঞ্চলের জন্য বৃষ্টির একটা গড় পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন, যা দীর্ঘকাল যাবৎ প্রতি বছর একইভাবে চলতে থাকে। তাছাড়া তিনি বিভিন্ন মওসুমের বিভিন্ন সময়ে বৃষ্টিকে বিক্ষিপ্ত করে বর্ষণ করেন, যা ভূমির উৎপাদন ক্ষমতার জন্য উপকারী। এ ব্যবস্থা আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী চলছে। একটি দেশের বৃষ্টিপাতের গড় পরিবর্তন কিংবা পৃথিবীর ব্যাপক এলাকায় তার বণ্টন হারে কোন পার্থক্য সৃষ্টি করা, অথবা কোন তুফানকে রোধ করা বা বৃষ্টিকে নিজ দেশে বর্ষণ করার জন্য বাধ্য করার সাধ্য কারো নেই।
দুই সাগরের মধ্যখানে পর্দা সৃষ্টি করেছেন :
هُوَ الَّذِيْ مَرَجَ الْبَحْرَيْنِ هٰذَا عَذْبٌ فُرَاتٌ وَّهٰذَا مِلْحٌ اُجَاجٌۚ وَجَعَلَ بَيْنَهُمَا بَرْزَخًا وَّحِجْرًا مَّحْجُوْرًا
তিনিই দু’টি দরিয়াকে মিলিতভাবে প্রবাহিত করেছেন, একটি মিষ্ট ও সুপেয় এবং অপরটি লোনা ও ক্ষার। আর উভয়ের মধ্যে রেখেছেন এক অমত্মরায় ও অনতিক্রম্য ব্যবধান। (সূরা ফুরক্বান- ৫৩)
ব্যাখ্যা : যেখানে কোন বড় নদী এসে সাগরে পড়ে এমন প্রত্যেক জায়গায় এ অবস্থা হয়। এছাড়া সমুদ্রের মধ্যেও বিভিন্ন জায়গায় মিঠা পানির স্রোত পাওয়া যায়। সমুদ্রের ভীষণ লবণাক্ত পানির মধ্যেও সে তার মিষ্টতা পুরোপুরি বজায় রাখে। এ হচ্ছে আয়াতের বাহ্যিক বিষয়বস্তু, যা আল্লাহ তা‘আলার একক ইলাহ্ ও একক রব হওয়ার প্রমাণ বহন করে। কিন্তু এসব শব্দাবলির অভ্যন্তর থেকে একটি সূক্ষ্ম ইশারা অন্য একটি বিষয়বস্তুর সন্ধান দেয়। সেটি হচ্ছে, মানবসমাজের সমুদ্র যতই লোনা হয়ে থাক না কেন, আল্লাহ যখনই চান তার তলদেশ থেকে একটি সৎকর্মশীল দলের মিঠা স্রোত বের করে আনতে পারেন। ফলে তাগুতের লোনা পানির তরঙ্গ যতই শক্তি প্রয়োগ করুক না কেন, তারা এই স্রোত গ্রাস করতে সক্ষম হবে না।
مَرَجَ الْبَحْرَيْنِ يَلْتَقِيَانِ ‐ - بَيْنَهُمَا بَرْزَخٌ لَّا يَبْغِيَانِ
তিনি দু’টি সমুদ্রকে প্রবাহিত করেন, যারা পরস্পর মিলিত হয়। আর এ দু’য়ের মধ্যে রয়েছে এক অন্তরাল, যা তারা অতিক্রম করতে পারে না। (সূরা আর রহমান- ১৯, ২০)
সমুদ্রে মাছ ও অলঙ্কার দিয়েছেন :
هُوَ الَّذِيْ سَخَّرَ الْبَحْرَ لِتَاْكُلُوْا مِنْهُ لَحْمًا طَرِيًّا وَّتَسْتَخْرِجُوْا مِنْهُ حِلْيَةً تَلْبَسُوْنَهَاۚ وَتَرَى الْفُلْكَ مَوَاخِرَ فِيْهِ وَلِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِهٖ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
তিনিই সমুদ্রকে তোমাদের অধীনস্থ করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা তা হতে তাজা গোশত (মাছ) ভক্ষণ করতে পার এবং তা হতে গহনা আহরণ করতে পার, যা তোমরা ভূষণরূপে পরিধান কর। আর তোমরা দেখতে পাও যে, এর বুক চিরে নৌযান চলাচল করে। এটা এজন্য যে, তোমরা যেন তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা নাহল- ১৪)
وَمَا يَسْتَوِى الْبَحْرَانِ هٰذَا عَذْبٌ فُرَاتٌ سَآئِغٌ شَرَابُهٗ وَهٰذَا مِلْحٌ اُجَاجٌؕ وَّمِنْ كُلٍّ تَاْكُلُوْنَ لَحْمًا طَرِيًّا وَّتَسْتَخْرِجُوْنَ حِلْيَةً تَلْبَسُوْنَهَاۚ وَتَرَى الْفُلْكَ فِيْهِ مَوَاخِرَ لِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِهٖ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
আর দু’টি সমুদ্র সমান নয়- একটি মিঠা পানিবিশিষ্ট, যা পিপাসা দূর করে এবং এর পানি পান করা সহজ। আর অপরটির পানি লবণাক্ত ও বিস্বাদ। তোমরা প্রত্যেকটি থেকেই টাটকা গোশত (মাছ) ভক্ষণ কর এবং মণি-মুক্তার অলঙ্কার আহরণ কর, যা তোমরা পরিধান কর। আর তুমি দেখতে পাও যে, তার বুক চিরে জাহাজ চলাচল করে। এটা এজন্য যে, যেন তোমরা তাঁর অনুগ্রহ তালাশ করতে পার এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা ফাতির- ১২)
يَخْرُجُ مِنْهُمَا اللُّؤْلُؤُ وَالْمَرْجَانُ
উভয় সমুদ্র হতে উৎপন্ন হয় মুক্তা ও প্রবাল। (সূরা আর রহমান- ২২)
তিনি বৃষ্টি দ্বারা মৃত জমিনকে ফসলের উপযোগী করেন :
اَلَمْ تَرَ اَنَّ اللهَ اَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَتُصْبِحُ الْاَ رْضُ مُخْضَرَّةً ؕ اِنَّ اللهَ لَطِيْفٌ خَبِيْرٌ
তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, আল্লাহ বারি বর্ষণ করেন আকাশ হতে যেন পৃথিবী সবুজ শ্যামল হয়ে উঠে? নিশ্চয় আল্লাহ সূক্ষ্মদর্শী ও পরিজ্ঞাত। (সূরা হজ্জ- ৬৩)
ব্যাখ্যা : لَطِيْفٌ (লাত্বিফ) শব্দের দু’টি অর্থ আছে। একটি অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি অত্যন্ত স্নেহ, মায়া ও বদান্যতাপ্রবণ। দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, তিনি অত্যন্ত সূক্ষ্মদর্শিতার সাথে তার এমন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রয়োজনের প্রতিও লক্ষ্য রাখেন, যেখানে কারো দৃষ্টি যায় না। সে প্রয়োজনগুলো তিনি এমনভাবে পূরণ করেন যে, বান্দা নিজেও উপলব্ধি করতে পারে না, কে কখন তার কোন্ প্রয়োজন পূরণ করছে।
وَهُوَ الَّذِيْ يُرْسِلُ الرِّيَاحَ بُشْرًا ۢبَيْنَ يَدَيْ رَحْمَتِهٖؕ حَتّٰۤى اِذَاۤ اَقَلَّتْ سَحَابًا ثِقَالًا سُقْنَاهُ لِبَلَدٍ مَّيِّتٍ فَاَنْزَلْنَا بِهِ الْمَآءَ فَاَخْرَجْنَا بِهٖ مِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِؕ كَذٰلِكَ نُخْرِجُ الْمَوْتٰى لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ
তিনিই স্বীয় অনুগ্রহে বায়ুকে সুসংবাদবাহীরূপে প্রেরণ করেন। যখন তা ঘন মেঘ বহন করে তখন আমি তা নির্জীব ভূখন্ডের দিকে চালনা করি, পরে তা হতে বৃষ্টি বর্ষণ করি, তারপর তার দ্বারা সর্বপ্রকার ফল উৎপাদন করি। (জেনে রেখো) এভাবেই আমি (কিয়ামতের দিন) মৃতকে (কবর থেকে) বের করে আনব, যেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। (সূরা আ‘রাফ- ৫৭)
তেল উৎপাদনের জন্য গাছ সৃষ্টি করেছেন :
وَشَجَرَةً تَخْرُجُ مِنْ طُوْرِ سَيْنَآءَ تَنْۢبُتُ بِالدُّهْنِ وَصِبْغٍ لِّلْاٰكِلِيْنَ
(আর আমি সৃষ্টি করি) এক বৃক্ষ, যা জন্মায় সিনাই পর্বতে। এতে উৎপন্ন হয় তৈল এবং আহারকারীদের জন্য ব্যঞ্জন। (সূরা মু’মিনূন- ২০)
বীজ থেকে গাছ বের করেন :
اِنَّ اللهَ فَالِقُ الْحَبِّ وَالنَّوٰىؕ يُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَمُخْرِجُ الْمَيِّتِ مِنَ الْحَيِّؕ ذٰلِكُمُ اللهُ فَاَنّٰى تُؤْفَكُوْنَ
আল্লাহই শস্য-বীজ ও আঁটি অঙ্কুরিত করেন, তিনিই প্রাণহীন হতে জীবন্তকে বের করেন এবং জীবন্ত হতে প্রাণহীনকে বের করেন। তিনিই তো আল্লাহ, সুতরাং তোমরা কোথায় ফিরে যাবে? (সূরা আন‘আম- ৯৫)
বিভিন্ন স্বাদবিশিষ্ট ফল ও বাগান বানিয়েছেন :ٰ
وَهُوَ الَّذِيْۤ اَنْشَاَ جَنَّاتٍ مَّعْرُوْشَاتٍ وَّغَيْرَ مَعْرُوْشَاتٍ وَّالنَّخْلَ وَالزَّرْعَ مُخْتَلِفًا اُكُلُهٗ - وَالزَّيْتُوْنَ وَالرُّمَّانَ مُتَشَابِهًا وَّغَيْرَ مُتَشَابِهٍؕ كُلُوْا مِنْ ثَمَرِهٖۤ اِذَاۤ اَثْمَرَ وَاٰتُوْا حَقَّهٗ يَوْمَ حَصَادِهٖ وَلَا تُسْرِفُوْاؕ اِنَّهٗ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِيْنَ
তিনিই লতা ও বৃক্ষ-উদ্যানসমূহ, খেজুর বৃক্ষ, বিভিন্ন স্বাদ বিশিষ্ট খাদ্যশস্য, যায়তুন ও ডালিম সৃষ্টি করেছেন- এগুলো একে অন্যের সাদৃশ্য এবং বৈসাদৃশ্য। সুতরাং যখন তা ফলবান হয় তখন তার ফল ভক্ষণ করো এবং ফসল তুলার দিন তার হক (ওশর) প্রদান করো। আর তোমরা অপচয় করো না; নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা আন‘আম- ১৪১)
সবকিছুই পরিমাণ মতো উৎপাদন করেন :
وَالْاَ رْضَ مَدَدْنَاهَا وَاَلْقَيْنَا فِيْهَا رَوَاسِيَ وَاَنْۢبَتْنَا فِيْهَا مِنْ كُلِّ شَيْءٍ مَّوْزُوْنٍ
আমি পৃথিবীকে বিস্তৃত করে দিয়েছি এবং তাতে পর্বতমালা স্থাপন করেছি। আর আমি তাতে প্রত্যেক বস্তু উৎপাদন করেছি সুপরিমিতভাবে। (সূরা হিজর- ১৯)
ব্যাখ্যা : এখানে আল্লাহর কুদরত, শক্তি ও জ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। উদ্ভিদের প্রতিটি প্রজাতির মধ্যে বংশবৃদ্ধির ক্ষমতা এত বেশি যে, যদি তার একটিমাত্র চারাকে দুনিয়ায় বংশ বৃদ্ধির সুযোগ দেয়া হয় তাহলে কয়েক বছরের মধ্যে পৃথিবীর চারদিকে শুধু তারই চারা দেখা যাবে, অন্য কোন উদ্ভিদের জন্য আর কোন জায়গা খালি থাকবে না। কিন্তু একজন মহাজ্ঞানী ও অসীম শক্তিধরের সুচিন্তিত পরিকল্পনা অনুযায়ী অসংখ্য প্রজাতির উদ্ভিদ এ বিশ্বচরাচরে উৎপন্ন হচ্ছে। প্রত্যেক প্রজাতির উৎপাদন একটি বিশেষ সীমায় পৌঁছে যাওয়ার পর থেমে যায়। এ প্রক্রিয়ার আরো একটি দিক হচ্ছে, প্রত্যেক প্রজাতির উদ্ভিদের আয়তন, বিস্তৃতি, উচ্চতা ও বিকাশের একটি সীমা নির্ধারিত আছে। কোন উদ্ভিদ এ সীমা অতিক্রম করতে পারে না। এর মাধ্যমে স্পষ্টভাবে জানা যায় যে, আল্লাহ প্রতিটি বৃক্ষ, এর চারা ও লতাপাতার জন্য উচ্চতা, আকৃতি, ফুল, ফল ও উৎপাদনের একটি পরিমাণ হিসাব করে নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
আল্লাহ পরিমাণের মধ্যে কমবেশি করেন না :
وَاِنْ مِّنْ شَيْءٍ اِلَّا عِنْدَنَا خَزَآئِنُهٗ وَمَا نُنَزِّلُهٗۤ اِلَّا بِقَدَرٍ مَّعْلُوْمٍ
আমারই নিকট আছে প্রত্যেক বস্তুর ভান্ডার এবং আমি তা পরিজ্ঞাত পরিমাণেই সরবরাহ করে থাকি। (সূরা হিজর- ২১)
ব্যাখ্যা : এখানে এ সত্যটি সম্পর্কে সজাগ করে দেয়া হয়েছে যে, সীমিত ও পরিকল্পিত প্রবৃদ্ধির এ নিয়ম কেবল উদ্ভিদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়; বরং যাবতীয় সৃষ্টির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। বাতাস, পানি, আলো, শীত, গ্রীষ্ম, জীব, জড়, উদ্ভিদ তথা প্রত্যেকটি জিনিস, প্রত্যেকটি প্রজাতি, প্রত্যেকটি শ্রেণি ও প্রত্যেকটি শক্তির জন্য আলাদা আলাদা সীমা নির্ধারিত রয়েছে। সবকিছুই নিজ নিজ সীমার মধ্যে অবস্থান করছে। তাদের জন্য যে পরিমাণ নির্ধারিত রয়েছে তার চেয়ে তারা কখনো বাড়েও না আবার কমেও না। একমাত্র আল্লাহর নির্ধারিত অবস্থার ফলে পৃথিবী থেকে আকাশ পর্যন্ত সমগ্র বিশ্বব্যবস্থায় ভারসাম্য ও সমন্বয় সাধিত হচ্ছে।
সকল প্রাণীর জীবিকার ব্যবস্থা করেন :
وَجَعَلْنَا لَكُمْ فِيْهَا مَعَايِشَ وَمَنْ لَّسْتُمْ لَهٗ بِرَازِقِيْنَ
আর তাতে জীবিকার ব্যবস্থা করেছি তোমাদের জন্য এবং তোমরা যাদের রিযিকদাতা নও, তাদের জন্যও। (সূরা হিজর- ২০)
প্রতিটি জিনিসকে পথনির্দেশ করেছেন :
رَبُّنَا الَّذِيْۤ اَعْطٰى كُلَّ شَيْءٍ خَلْقَهٗ ثُمَّ هَدٰى
আমাদের প্রতিপালক তিনিই, যিনি প্রত্যেক বস্তুকে তার আকৃতি দান করেছেন, অতঃপর পথনির্দেশ করেছেন। (সূরা ত্বা-হা- ৫০)
মানুষকে কান, চোখ ও বোধশক্তি দিয়েছেন :
وَاللهُ اَخْرَجَكُمْ مِّنْ ۢبُطُوْنِ اُمَّهَاتِكُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ شَيْئًا وَّجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْاَبْصَارَ وَالْاَفْئِدَةَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
আর আল্লাহ তোমাদেরকে নির্গত করেছেন তোমাদের মাতৃগর্ভ হতে এমন অবস্থায় যে, তোমরা কিছুই জানতে না। তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি এবং হৃদয়, যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা নাহল- ৭৮)
وَهُوَ الَّذِيْۤ اَنْشَاَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْاَبْصَارَ وَالْاَفْئِدَةَ قَلِيْلًا مَّا تَشْكُرُوْنَ
তিনিই তোমাদের জন্য কান, চোখ ও অমত্মর সৃষ্টি করেছেন; কিন্তু তোমরা খুব কমই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাক। (সূরা মু’মিনূন- ৭৮)
قُلْ هُوَ الَّذِيْۤ اَنْشَاَكُمْ وَجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْاَبْصَارَ وَالْاَفْئِدَةَ قَلِيْلًا مَّا تَشْكُرُوْنَ
বলো, তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদেরকে দিয়েছেন শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি ও অন্তর। তোমরা তো খুব কমই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাক। (সূরা মুলক- ২৩)
স্ত্রী ও সন্তান দান করেছেন :
وَاللهُ جَعَلَ لَكُمْ مِّنْ اَنْفُسِكُمْ اَزْوَاجًا وَّجَعَلَ لَكُمْ مِّنْ اَزْوَاجِكُمْ بَنِيْنَ وَحَفَدَةً وَّرَزَقَكُمْ مِّنَ الطَّيِّبَاتِ اَفَبِالْبَاطِلِ يُؤْمِنُوْنَ وَبِنِعْمَةِ اللهِ هُمْ يَكْفُرُوْنَ
আর আল্লাহ তোমাদের হতেই তোমাদের জোড়া সৃষ্টি করেছেন, তোমাদের যুগল হতে তোমাদের জন্য পুত্র-পৌত্রাদি সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ দান করেছেন। তবুও কি তারা মিথ্যার উপর বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং তারা কি আল্লাহর অনুগ্রহকে অস্বীকার করবে? (সূরা নাহল- ৭২)
মানুষকে জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন :
اَلَّذِيْ عَلَّمَ بِالْقَلَمِ ‐ عَلَّمَ الْاِنْسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ
যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না। (সূরা আলাক্ব- ৪, ৫)
কথা বলা শিখিয়েছেন :
خَلَقَ الْاِنْسَانَ ‐ - عَلَّمَهُ الْبَيَانَ
তিনিই সৃষ্টি করেছেন মানুষ, তিনি তাকে ভাব প্রকাশ করতে শিখিয়েছেন। (সূরা আর রহমান- ৩, ৪)
আল্লাহ কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন :
اَلرَّحْمٰنُ -‐ عَلَّمَ الْقُرْاٰنَ
পরম দয়াময় আল্লাহই শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন। (সূরা আর রহমান- ১, ২)
ব্যাখ্যা : এখানে আল্লাহ কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন বলার পরিবর্তে ‘রহমান’ শিক্ষা দিয়েছেন বলা হয়েছে। কারণ বান্দাদের হেদায়াতের জন্য কুরআন মাজীদ নাযিল করা সরাসরি আল্লাহর রহমত। যেহেতু তিনি তাঁর সৃষ্টির প্রতি অতীব দয়াবান; তাই তিনি তোমাদেরকে অন্ধকারে ছেড়ে দেয়া পছন্দ করেননি। তিনি তাঁর রহমতের দাবী অনুসারে এ কুরআন পাঠিয়ে তোমাদেরকে এমন জ্ঞান দান করেছেন, যার উপর পার্থিব জীবনে তোমাদের সত্যানুসরণ এবং পরকালীন জীবনের সফলতা নির্ভরশীল।
وَمَا بِكُمْ مِّنْ نِّعْمَةٍ فَمِنَ اللهِ ثُمَّ اِذَا مَسَّكُمُ الضُّرُّ فَاِلَيْهِ تَجْاَرُوْنَ
তোমাদের নিকট যে সমসত্ম নিয়ামত রয়েছে তা তো আল্লাহর নিকট হতেই (আসে); আবার যখন তোমাদেরকে দুঃখ-কষ্ট স্পর্শ করে তখন তোমরা তাঁকেই ব্যাকুলভাবে আহবান কর। (সূরা নাহল- ৫৩)
আল্লাহর নিয়ামত গুণে শেষ করা যাবে না :
وَاِنْ تَعُدُّوْا نِعْمَةَ اللهِ لَا تُحْصُوْهَا
তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করলে এর সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না। (সূরা নাহল- ১৮)
وَاِنْ تَعُدُّوْا نِعْمَةَ اللهِ لَا تُحْصُوْهَاۤ اِنَّ الْاِنْسَانَ لَظَلُوْمٌ كَفَّارٌ
আর যদি তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা কর, তবে তার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না। নিশ্চয় মানুষ অতি মাত্রায় যালিম ও অকৃতজ্ঞ। (সূরা ইবরাহীম- ৩৪)
মানুষের প্রয়োজনীয় সবই তিনি দিয়েছেন :
وَاٰتَاكُمْ مِّنْ كُلِّ مَا سَاَلْتُمُوْهُ
আর তোমরা তাঁর নিকট যা কিছু চেয়েছ তা হতে তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন। (সূরা ইবরাহীম- ৩৪)
মানুষের জন্য নিয়ামত পূর্ণ করে দিয়েছেন :
اَلَمْ تَرَوْا اَنَّ اللهَ سَخَّرَ لَكُمْ مَّا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَ رْضِ وَاَسْبَغَ عَلَيْكُمْ نِعَمَهٗ ظَاهِرَةً وَّبَاطِنَةً
তোমরা কি দেখ না যে, আল্লাহই তোমাদের কাজে নিয়োজিত রেখেছেন যা কিছু আছে আসমানে ও যা কিছু জমিনে (সবকিছুকে) এবং তিনিই তোমাদের প্রতি তাঁর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নিয়ামত পূর্ণ করে দিয়েছেন। (সূরা লুক্বমান- ২০)
ব্যাখ্যা : মানুষ যেসব নিয়ামত অনুভব করে, সেগুলো প্রকাশ্য নিয়ামত। আর তারা যেসব নিয়ামত সম্পর্কে জানে না এবং অনুভবও করে না, সেগুলো গোপন নিয়ামত। মানুষের শরীরে ও বাইরে এমন অগণিত জিনিস রয়েছে, যা দুনিয়ায় তার জন্য উপকারী। কিন্তু মানুষ অনুভবও করে না যে, স্রষ্টা তাদের জন্য তা সংরক্ষণ করে রেখেছেন। তার দ্বারা তাদের জীবিকা দান করেন, তার বিকাশ ঘটান এবং তার কল্যাণার্থে কত রকমের সাজ-সরঞ্জাম যোগাড় করেন। মহান আল্লাহ জীবনের প্রতিটি বিভাগে মানুষের যাবতীয় প্রয়োজন বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করেন, তারপর এক একটি প্রয়োজন পূর্ণ করার ব্যবস্থা করেন। তিনি কোন কোন দিক থেকে কোন ধরনের কী পরিমাণ উপকরণ তৈরি করে দিয়েছেন তার বিস্তারিত বিবরণ যদি কেউ লিখতে বসে, তাহলে একটি বই তৈরি হয়ে যাবে। যেমন পোশাক ও বাসস্থানের দিক দিয়ে আল্লাহর নিয়ামতের পূর্ণতা, খাদ্যোপকরণের দিক দিয়ে আল্লাহর নিয়ামতের পূর্ণতা ইত্যাদি। মোটকথা তিনি মানবজাতির ছোট-বড় সবধরনের প্রয়োজনের প্রতি দৃষ্টি রেখে অসংখ্য উপকরণ সৃষ্টি করেছেন এবং সকল ক্ষেত্রে তাদের উপর তাঁর নিয়ামতকে পূর্ণভাবে প্রদান করেছেন।
আল্লাহ আকাশকে বানিয়েছেন ছাদস্বরূপ :
وَجَعَلْنَا السَّمَآءَ سَقْفًا مَّحْفُوْظًاۚ وَهُمْ عَنْ اٰيَاتِهَا مُعْرِضُوْنَ
আর আকাশকে করেছি সুরক্ষিত ছাদ; কিন্তু তারা আকাশে অবস্থিত নিদর্শনাবলি হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়। (সূরা আম্বিয়া- ৩২)
তিনি আকাশকে আটকিয়ে রাখেন :
وَيُمْسِكُ السَّمَآءَ اَنْ تَقَعَ عَلَى الْاَ رْضِ اِلَّا بِاِذْنِهٖؕ اِنَّ اللهَ بِالنَّاسِ لَرَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ
আর তিনিই আকাশকে স্থির রাখেন, যাতে সেটা তাঁর অনুমতি ব্যতীত পৃথিবীর উপর পতিত না হয়। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। (সূরা হজ্জ- ৬৫)
চন্দ্র ও সূর্যকে বানিয়েছেন সময় গণনার মাধ্যম :
فَالِقُ الْاِصْبَاحِۚ وَجَعَلَ اللَّيْلَ سَكَنًا وَّالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ حُسْبَانًاؕ ذٰلِكَ تَقْدِيْرُ الْعَزِيْزِ الْعَلِيْمِ
তিনিই সকালকে প্রকাশ করেন, তিনিই বিশ্রামের জন্য এবং গণনার জন্য সূর্য ও চন্দ্র সৃষ্টি করেছেন; এসবই মহাপরাক্রমশালী ও মহাজ্ঞানীর (আল্লাহর) নির্ধারিত নিয়ম। (সূরা আন‘আম- ৯৬)
পৃথিবীকে বানিয়েছেন বিছানাস্বরূপ :
اَلَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ الْاَ رْضَ مَهْدًا
যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে করেছেন বিছানাস্বরূপ। (সূরা যুখরুফ- ১০)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ তা‘আলা এখানে পৃথিবীকে দোলনার সাথে এবং অন্য আয়াতে বিছানার সাথে তুলনা করেছেন। অর্থাৎ একটি শিশু যেভাবে তার দোলনার মধ্যে আরামে শুয়ে থাকে, মহাশূন্যে ভাসমান এই বিশাল গ্রহকে আল্লাহ তেমনি আরামের জায়গা বানিয়ে দিয়েছেন। এর অভ্যন্তরে রয়েছে এমন আগুন, যা পাথরকেও গলিয়ে দেয়। কিন্তু এ সত্ত্বেও স্রষ্টা তাকে এতটা শান্ত বানিয়ে দিয়েছেন যে, মানুষ এর উপর বসবাস করে কিন্তু অনুভব পর্যন্ত করতে পারে না যে, এটি মহাশূন্যে ঝুলন্ত গ্রহ। মানুষ এর পিঠের উপর নিরাপদে চলাফেরা করছে অথচ তাদের এ ধারণাও নেই যে, বন্দুকের গুলীর চেয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন গাড়িতে তারা অবস্থান করছে। বিনা দ্বিধায় তাকে খনন করছে এবং তার পেট থেকে রিযিক বের করছে; অথচ কখনো কখনো ভূমিকম্পের অতি সাধারণ কম্পনও জানিয়ে দেয় যে, এটা কত ভয়ঙ্কর স্থান।
মানুষের বসবাসের জায়গা করে দিয়েছেন :
وَهُوَ الَّذِيْۤ اَنْشَاَكُمْ مِّنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ فَمُسْتَقَرٌّ وَّمُسْتَوْدَعٌ ؕ قَدْ فَصَّلْنَا الْاٰيَاتِ لِقَوْمٍ يَّفْقَهُوْنَ
তিনিই তোমাদেরকে একই ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের জন্য দীর্ঘ ও স্বল্পকালীন বাসস্থান তৈরি করে দিয়েছেন। আর আমি অনুধাবনকারী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করে দিয়েছি। (সূরা আন‘আম- ৯৮)
পৃথিবীকে স্থির রাখতে পাহাড় স্থাপন করেছেন :
وَجَعَلْنَا فِى الْاَ رْضِ رَوَاسِيَ اَنْ تَمِيْدَ بِهِمْ وَجَعَلْنَا فِيْهَا فِجَاجًا سُبُلًا لَّعَلَّهُمْ يَهْتَدُوْنَ
আর আমি পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছি সুদৃঢ় পর্বত, যাতে পৃথিবী তাদেরকে নিয়ে এদিক-ওদিক ঢলে না যায়। আর আমি তাতে করে দিয়েছি প্রশসত্ম পথ, যাতে তারা গমত্মব্যস্থলে পৌঁছতে পারে। (সূরা আম্বিয়া- ৩১)
পৃথিবীতে রাস্তা তৈরি করেছেন :
وَاَلْقٰى فِى الْاَ رْضِ رَوَاسِيَ اَنْ تَمِيْدَ بِكُمْ وَاَنْهَارًا وَّسُبُلًا لَّعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ
আর তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বত স্থাপন করেছেন, যাতে পৃথিবী তোমাদেরকে নিয়ে আন্দোলিত না হয়। আর এতে স্থাপন করেছেন নদ-নদী ও পথ, যাতে তোমরা তোমাদের গমত্মব্যস্থলে পৌঁছতে পার। (সূরা নাহল- ১৫)
وَاللهُ جَعَلَ لَكُمُ الْاَ رْضَ بِسَاطًا ‐ - لِتَسْلُكُوْا مِنْهَا سُبُلًا فِجَاجًا
আর আল্লাহ তোমাদের জন্য ভূমিকে করেছেন বিস্তৃত, যাতে তোমরা এর প্রশস্ত পথে চলাফেরা করতে পার। (সূরা নূহ- ১৯, ২০)
وَجَعَلَ لَكُمْ فِيْهَا سُبُلًا لَّعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ
তিনি পৃথিবীতে তোমাদের জন্য চলার পথ তৈরি করেছেন, যাতে তোমরা সঠিক পথ পেতে পার। (সূরা যুখরুফ- ১০)
ব্যাখ্যা : পাহাড়ের মাঝে গিরিপথ এবং পাহাড়ী ও সমতল ভূমির অঞ্চলে নদী হচ্ছে সেই প্রাকৃতিক পথ, যা আল্লাহ তৈরি করেছেন। এসব পথ ধরেই মানুষ পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে। পর্বত শ্রেণিকে যদি কোন ফাঁক ছাড়া প্রাচীরের মতো করে দাঁড় করানো হতো এবং ভূপৃষ্ঠের কোথাও কোন সমুদ্র, নদী-নালা না থাকত তাহলে মানুষ যেখানে জন্মগ্রহণ করেছিল সেখানেই আবদ্ধ হয়ে পড়ত। আল্লাহ আরো অনুগ্রহ করেছেন এই যে, তিনি গোটা ভূপৃষ্ঠকে একই রকম করে সৃষ্টি করেননি, বরং তাতে নানা ধরনের এমনসব পার্থক্যসূচক চিহ্ন রেখে দিয়েছেন, যার সাহায্যে মানুষ বিভিন্ন এলাকা চিনতে পারে এবং এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলের পার্থক্য উপলব্ধি করতে পারে। এটা আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়, যার সাহায্যে পৃথিবীতে মানুষের চলাচল সহজ হয়েছে। মানুষ যখন বিশাল কোন মরুভূমিতে যায়, যেখানে মাইলের পর মাইল কোন পার্থক্যসূচক চিহ্ন থাকে না এবং সে কোথা থেকে কোথায় এসে পৌঁছেছে তা বুঝতে পারে না, তখন সে এই নিয়ামতের মর্যাদা বুঝতে পারে। এসব প্রাকৃতিক রাস্তা ও রাস্তার চিহ্নসমূহের সাহায্যে তোমরা তোমাদের পথ চিনে নিতে পার এবং যেখানে যেতে চাও সেখানে যেতে পার। বহু সংখ্যক স্রষ্টা মিলে এ ব্যবস্থা করেনি, বরং এক মহাজ্ঞানী পালনকর্তা আছেন, যিনি তাঁর বান্দাদের প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ্য রেখে পাহাড় ও সমতল ভূমিতে এসব রাস্তা বানিয়েছেন এবং পৃথিবীর একেকটি অঞ্চলকে ভিন্ন ভিন্ন আকৃতি দান করেছেন, যার সাহায্যে মানুষ এক অঞ্চলকে অন্য অঞ্চল থেকে আলাদা করে চিনতে পারে।
জমিনে মানুষের চলাফেরা করার ব্যবস্থা করেছেন :
هُوَ الَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ الْاَ رْضَ ذَلُوْلًا فَامْشُوْا فِيْ مَنَاكِبِهَا وَكُلُوْا مِنْ رِّزْقِهٖؕ وَاِلَيْهِ النُّشُوْرُ
তিনিই তো তোমাদের জন্য জমিনকে চলাচলের উপযোগী করে দিয়েছেন। অতএব তোমরা তার দিক-দিগন্তে ও রাস্তাসমূহে বিচরণ করো এবং তাঁর দেয়া রিযিক হতে আহার করো, (জেনে রেখো) তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। (সূরা মুলক- ১৫)
هُوَ الَّذِيْ يُسَيِّرُكُمْ فِى الْبَرِّ وَالْبَحْرِ
তিনিই তোমাদেরকে জলে-স্থলে ভ্রমণ করান। (সূরা ইউনুস- ২২)
পথ চেনার জন্য চিহ্ন ও তারকা বানিয়েছেন :
وَعَلَامَاتٍ ؕ وَبِالنَّجْمِ هُمْ يَهْتَدُوْنَ
আর (তিনি সৃষ্টি করেছেন) পথ নির্ণায়ক চিহুসমূহও। (তাছাড়া) তারা (মানুষ) নক্ষত্রের সাহায্যেও পথের নির্দেশনা পায়। (সূরা নাহল- ১৬)
সর্বত্র মানুষকে ছড়িয়ে দিয়েছেন :
هُوَ الَّذِيْ ذَرَاَكُمْ فِى الْاَ رْضِ وَاِلَيْهِ تُحْشَرُوْنَ
তিনিই তোমাদেরকে পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং তোমাদেরকে তাঁরই কাছে একত্রিত করা হবে।
(সূরা মুলক- ২৪)
মানুষের সফরের জন্য সওয়ারীর ব্যবস্থা করেছেন :
وَالْخَيْلَ وَالْبِغَالَ وَالْحَمِيْرَ لِتَرْكَبُوْهَا وَزِيْنَةًؕ وَيَخْلُقُ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ
তিনি তোমাদের আরোহণের জন্য ও শোভার জন্য সৃষ্টি করেছেন অশ্ব, অশ্বতর ও গর্দভ এবং তিনি সৃষ্টি করেছেন এমন অনেক কিছু, যা তোমরা অবগত নও। (সূরা নাহল- ৮)
وَجَعَلَ لَكُمْ مِّنَ الْفُلْكِ وَالْاَنْعَامِ مَا تَرْكَبُوْنَ ‐ - لِتَسْتَوُوْا عَلٰى ظُهُوْرِهٖ ثُمَّ تَذْكُرُوْا نِعْمَةَ رَبِّكُمْ اِذَا اسْتَوَيْتُمْ عَلَيْهِ وَتَقُوْلُوْا سُبْحَانَ الَّذِيْ سَخَّرَ لَنَا هٰذَا وَمَا كُنَّا لَهٗ مُقْرِنِيْنَ
যিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন এমন নৌযান ও চতুষ্পদ জন্তু, যাতে তোমরা আরোহণ কর। যাতে তোমরা ওদের পৃষ্ঠে স্থির হয়ে বসতে পার, তারপর তোমাদের প্রতিপালকের নিয়ামত স্মরণ কর যখন তোমরা ওর উপর স্থির হয়ে বস এবং বল, তিনি পবিত্র ও মহান, যিনি এদেরকে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন, যদিও আমরা এদেরকে বশীভূত করতে সক্ষম ছিলাম না। (সূরা যুখরুফ- ১২, ১৩)
মানুষের ঘরবাড়ি তৈরির ব্যবস্থা করেছেন :
وَاللهُ جَعَلَ لَكُمْ مِّنْ ۢبُيُوْتِكُمْ سَكَنًا وَّجَعَلَ لَكُمْ مِّنْ جُلُوْدِ الْاَنْعَامِ بُيُوْتًا تَسْتَخِفُّوْنَهَا يَوْمَ ظَعْنِكُمْ وَيَوْمَ اِقَامَتِكُمْ وَمِنْ اَصْوَافِهَا وَاَوْبَارِهَا وَاَشْعَارِهَاۤ اَثَاثًا وَّمَتَاعًا اِلٰى حِيْنٍ
আল্লাহ তোমাদের গৃহকে করেন আবাসস্থল এবং তিনি তোমাদের জন্য পশুচর্মের তাঁবুর ব্যবস্থা করেন, তোমরা এটাকে সহজ মনে কর ভ্রমণকালে এবং অবস্থানকালে। আর তিনি তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেন তাদের পশম, লোম ও কেশ হতে কিছু কালের গৃহসামগ্রী ও ব্যবহার-উপকরণ। (সূরা নাহল- ৮০)
পোশাক দিয়েছেন :
وَجَعَلَ لَكُمْ سَرَابِيْلَ تَقِيْكُمُ الْحَرَّ وَسَرَابِيْلَ تَقِيْكُمْ بَاْسَكُمْؕ كَذٰلِكَ يُتِمُّ نِعْمَتَهٗ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تُسْلِمُوْنَ
তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেন পরিধেয় বস্ত্রের, সেটা তোমাদেরকে তাপ হতে রক্ষা করে এবং তিনি তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেন বর্মের, সেটা তোমাদেরকে যুদ্ধক্ষেত্রে রক্ষা করে। এভাবে তিনি তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ পূর্ণ করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আত্মসমর্পণ কর। (সূরা নাহল- ৮১)
পাহাড়েও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছেন :
وَاللهُ جَعَلَ لَكُمْ مِّمَّا خَلَقَ ظِلَالًا وَّجَعَلَ لَكُمْ مِّنَ الْجِبَالِ اَكْنَانًا
আর আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তা হতে তিনি তোমাদের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করেন এবং তোমাদের জন্য পাহাড়ে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেন। (সূরা নাহল- ৮১)
মানুষকে বিভিন্নভাবে রোজগারের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন :
نَحْنُ قَسَمْنَا بَيْنَهُمْ مَّعِيْشَتَهُمْ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَرَفَعْنَا بَعْضَهُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِّيَتَّخِذَ بَعْضُهُمْ بَعْضًا سُخْرِيًّاؕ وَرَحْمَةُ رَبِّكَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُوْنَ
আমিই তাদের মধ্যে তাদের পার্থিব জীবনে জীবিকা বণ্টন করি এবং একজনকে অপর জনের উপর মর্যাদায় উন্নত করি, যেন একে অপরের দ্বারা খেদমত করিয়ে নিতে পারে। (জেনে রেখো) তারা যা জমা করে তোমার প্রতিপালকের রহমত তা হতে অনেক উৎকৃষ্টতর। (সূরা যুখরুফ- ৩২)
ব্যাখ্যা : একজনকেই সবকিছু অথবা সবাইকে সবকিছু না দেয়া আল্লাহর চিরস্থায়ী একটি নিয়ম। সাধারণভাবে লক্ষ্য করলেই আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে সর্বক্ষেত্রেই এ পার্থক্য নজরে পড়বে। আল্লাহ কাউকে কোন জিনিস দিয়ে থাকলে আরেকটি জিনিস থেকে তাকে বঞ্চিত করেছেন এবং সেটি অন্য কাউকে দিয়েছেন। এমনটি করার কারণ হলো, কোন মানুষই যেন অন্য মানুষদের মুখাপেক্ষিতা থেকে মুক্ত না হয়। আল্লাহ একজনের মধ্যেই জ্ঞান, বুদ্ধি, সম্পদ, সৌন্দর্য, ক্ষমতা, কর্তৃত্ব এবং অন্যসব পূর্ণতার সমাবেশ ঘটাননি এবং কাউকে সবকিছু থেকে বঞ্চিতও করেননি। পৃথিবীতে জীবন-যাপন করার যে সাধারণ উপায়-উপকরণ আছে তার বণ্টনব্যবস্থাও আল্লাহ নিজের হাতেই রেখেছেন, অন্য কারো হাতে তুলে দেননি। আল্লাহ কাউকে সুশ্রী, কাউকে কুশ্রী, কাউকে শক্তিশালী এবং কাউকে দুর্বল, কাউকে মেধাবী এবং কাউকে মেধাহীন, কাউকে সুস্থ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অধিকারী, কাউকে বিকলাঙ্গ, অন্ধ অথবা বোবা, কাউকে আমীরের পুত্র এবং কাউকে গরীবের পুত্র, কাউকে উন্নতজাতির সদস্য এবং কাউকে পরাধীন হিসেবে সৃষ্টি করে থাকেন। জন্মগত এই ভাগ্যের ব্যাপারে কেউ সামান্যতম কর্তৃত্বও খাটাতে পারে না। আল্লাহ যাকে যা বানিয়েছেন সে তা-ই হতে বাধ্য; কারো তাকদীরের উপর জন্মগত অবস্থার যে প্রভাবই পড়ে তা পাল্টে দেয়ার সাধ্য কারো নেই। তাছাড়া আল্লাহই মানুষের মধ্যে রিযিক, ক্ষমতা, মর্যাদা, খ্যাতি, সম্পদ ও শাসন কর্তৃত্ব ইতাদি বণ্টন করেছেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে যে সম্মান লাভ করে কেউ তার মর্যাদাহানি করতে পারে না। আর আল্লাহর পক্ষ থেকে যার জন্য দুর্ভাগ্য ও অধঃপতন এসে যায় কেউ তাকে পতন থেকে রক্ষা করতে পারে না। আল্লাহর সিদ্ধান্তের মুকাবিলায় মানুষের সমস্ত চেষ্টা ও কৌশল কোন কাজেই আসে না।
মালামাল পরিবহনের ব্যবস্থা করেছেন :
وَتَحْمِلُ اَثْقَالَكُمْ اِلٰى بَلَدٍ لَّمْ تَكُوْنُوْا بَالِغِيْهِ اِلَّا بِشِقِّ الْاَنْفُسِؕ اِنَّ رَبَّكُمْ لَرَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ
আর পশুরা তোমাদের ভার বহন করে নিয়ে যায় এমন দেশে, যেথায় প্রাণামত্ম ক্লেশ ব্যতীত তোমরা পৌঁছতে পারতে না। নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক খুবই দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। (সূরা নাহল- ৭)
সমুদ্রে নৌকা চলার ব্যবস্থা করেছেন :
سَخَّرَ لَكُمُ الْفُلْكَ لِتَجْرِيَ فِى الْبَحْرِ بِاَمْرِهٖؕ وَسَخَّرَ لَكُمُ الْاَنْهَارَ
তিনি নৌযানকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, যেন তাঁর নির্দেশে সেটা সমুদ্রে বিচরণ করে এবং তিনি নদীসমূহকে তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন। (সূরা ইবরাহীম- ৩২)
আল্লাহ রিযিক তালাশের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন :
رَبُّكُمُ الَّذِيْ يُزْجِيْ لَكُمُ الْفُلْكَ فِى الْبَحْرِ لِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِهٖؕ اِنَّهٗ كَانَ بِكُمْ رَحِيْمًا
তিনিই তোমাদের প্রতিপালক, যিনি তোমাদের জন্য সমুদ্রে নৌযান পরিচালিত করেন, যেন তোমরা তাঁর অনুগ্রহ (রিযিক) সন্ধান করতে পার। নিশ্চয় তিনি তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৬৬)
রাতে বিশ্রাম ও দিনে রিযিক তালাশের সুযোগ করে দিয়েছেন :
وَمِنْ رَّحْمَتِهٖ جَعَلَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ لِتَسْكُنُوْا فِيْهِ وَلِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِهٖ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
তিনিই তাঁর দয়ায় তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন রাত ও দিন, যেন তোমরা তাতে বিশ্রাম করতে পার এবং তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার। হয়তো তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। (সূরা ক্বাসাস- ৭৩)
উত্তম রিযিক দান করেছেন :
وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِيْۤ اٰدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِى الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُمْ مِّنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلٰى كَثِيْرٍ مِّمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيْلًا
আমি তো আদম সমত্মানকে মর্যাদা দান করেছি, স্থলে ও সমুদ্রে তাদের চলাচলের বাহন দিয়েছি, তাদেরকে উত্তম রিযিক দান করেছি এবং আমি যাদেরকে সৃষ্টি করেছি তাদের অনেকের উপর তাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৭০)
আগুন জ্বালানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন :
اَلَّذِيْ جَعَلَ لَكُمْ مِّنَ الشَّجَرِ الْاَخْضَرِ نَارًا فَاِذَاۤ اَنْتُمْ مِّنْهُ تُوْقِدُوْنَ
যিনি সবুজ গাছ থেকে তোমাদের জন্য আগুন উৎপন্ন করেন, অতঃপর তোমরা তা থেকে (আগুন) জ্বালাও। (সূরা ইয়াসীন- ৮০)
পৃথিবীর সবকিছু মানুষের অধীন করে দিয়েছেন :
اَنَّ اللهَ سَخَّرَ لَكُمْ مَّا فِى الْاَ رْضِ وَالْفُلْكَ تَجْرِيْ فِى الْبَحْرِ بِاَمْرِهٖ
তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবকিছুকে আল্লাহ তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন এবং তাঁরই নির্দেশে সমুদ্রে বিচরণশীল নৌযানসমূহকেও (তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন)? (সূরা হজ্জ- ৬৫)
وَسَخَّرَ لَكُمُ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ دَآئِبَيْنِۚ وَسَخَّرَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ
তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, যারা অবিরাম একই নিয়মের অনুগামী। আর তিনি রাত ও দিনকেও তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন। (সূরা ইবরাহীম- ৩৩)
اَلَمْ تَرَوْا اَنَّ اللهَ سَخَّرَ لَكُمْ مَّا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَ رْضِ
তোমরা কি লক্ষ্য কর না যে, আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে, সবকিছুই আল্লাহ তোমাদের জন্য নিয়োজিত রেখেছেন। (সূরা লুক্বমান- ২০)
وَسَخَّرَ لَكُمْ مَّا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَ رْضِ جَمِيْعًا مِّنْهُؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ
তিনি তোমাদের জন্য নিয়োজিত করে দিয়েছেন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মধ্যে যা কিছু রয়েছে সবকিছু। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা জাসিয়া- ১৩)
ব্যাখ্যা : কোন জিনিসকে কারো জন্য অনুগত করে দেয়ার অর্থ হচ্ছে, ঐ জিনিসকে তার অধীন করে দেয়া। ঐ জিনিসকে নিজের অধীনে নিয়ে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে ব্যবহার ও ক্ষমতা প্রয়োগ করা। যেমন পৃথিবী ও আকাশের সমস্ত জিনিসকে অর্থাৎ আগুন, পানি, মাটি, উদ্ভিদ, খনিজ পদার্থ, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র ইত্যাদিকে আল্লাহ তা‘আলা মানুষের অনুগত করে দিয়েছেন।
তিনি মানুষের জীবিকা উৎপন্ন করেন :
يُنْۢبِتُ لَكُمْ بِهِ الزَّرْعَ وَالزَّيْتُوْنَ وَالنَّخِيْلَ وَالْاَعْنَابَ وَمِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ
তিনি তাদের জন্য তা দ্বারা উৎপন্ন করেন শস্য, যায়তুন, খেজুর বৃক্ষ, আঙ্গুর এবং সর্বপ্রকার ফল। অবশ্যই এতে চিমত্মাশীল সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা নাহল- ১১)
اَخْرَجَ مِنْهَا مَآءَهَا وَمَرْعَاهَا
তিনি তা থেকে বের করেছেন পানি ও চারণভূমি। (সূরা নাযি‘আত- ৩১)
পশু পালনের মধ্যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দিয়েছেন :
وَلَكُمْ فِيْهَا جَمَالٌ حِيْنَ تُرِيْحُوْنَ وَحِيْنَ تَسْرَحُوْنَ
আর যখন তোমরা তাদেরকে গোধূলি লগ্নে চারণভূমি হতে গৃহে নিয়ে আস এবং প্রভাতে তাদেরকে চারণভূমিতে নিয়ে যাও তখন তোমরা তার সৌন্দর্য উপভোগ কর। (সূরা নাহল- ৬)
চামড়ার উপকরণ ও গোশত দিয়েছেন :
وَالْاَنْعَامَ خَلَقَهَا لَكُمْ فِيْهَا دِفْءٌ وَّمَنَافِعُ وَمِنْهَا تَاْكُلُوْنَ
তিনি চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন; তাতে তোমাদের জন্য রয়েছে শীত নিবারক উপকরণ ও বহু উপকার। আর তা হতে তোমরা আহার করে থাক। (সূরা নাহল- ৫)
পশুর পশমকেও উপকারী করেছেন :
وَمِنْ اَصْوَافِهَا وَاَوْبَارِهَا وَاَشْعَارِهَاۤ اَثَاثًا وَّمَتَاعًا اِلٰى حِيْنٍ
তিনি তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেন তাদের পশম, লোম ও কেশ হতে কিছু কালের গৃহসামগ্রী ও ব্যবহার-উপকরণ। (সূরা নাহল- ৮০)
মেঘ বহনকারী বাতাস প্রেরণ করেন :
وَاللهُ الَّذِيْۤ اَرْسَلَ الرِّيَاحَ فَتُثِيْرُ سَحَابًا فَسُقْنَاهُ اِلٰى بَلَدٍ مَّيِّتٍ فَاَحْيَيْنَا بِهِ الْاَ رْضَ بَعْدَ مَوْتِهَاؕ كَذَالِكَ النُّشُوْرُ
আর তিনিই আল্লাহ যিনি বাতাস প্রেরণ করেন, তারপর তা মেঘমালাকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। অতঃপর আমি তা পরিচালিত করি মৃত ভূখন্ডের দিকে, তারপর আমি তা দিয়ে জমিনকে তার মৃত্যুর পর জীবিত করে দেই। ঠিক এভাবেই (একদিন মানুষেরও) পুনরুত্থান (হবে)। (সূরা ফাতির- ৯)
আল্লাহ আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করেন :
وَاَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَخْرَجَ بِهٖ مِنَ الثَّمَرَاتِ رِزْقًا لَّكُمْۚ فَلَا تَجْعَلُوْا لِلّٰهِ اَنْدَادًا وَّاَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
যিনি আকাশ হতে পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর তার দ্বারা তোমাদের জন্য জীবিকাস্বরূপ ফলসমূহ উৎপাদন করেন। অতএব তোমরা জেনে শুনে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করো না। (সূরা বাক্বারা- ২২)
وَهُوَ الَّذِيْۤ اَرْسَلَ الرِّيَاحَ بُشْرًا ۢبَيْنَ يَدَيْ رَحْمَتِهٖۚ وَاَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَآءِ مَآءً طَهُوْرًا
আর তিনি নিজ অনুগ্রহের প্রাক্কালে সুসংবাদবাহী বায়ু প্রেরণ করেন এবং আকাশ হতে বিশুদ্ধ পানি বর্ষণ করেন। (সূরা ফুরক্বান- ৪৮)
প্রাণীকুলের পিপাসা নিবারণ করেন :
لِنُحْيِيَ بِهٖ بَلْدَةً مَّيْتًا وَّنُسْقِيَهٗ مِمَّا خَلَقْنَاۤ اَنْعَامًا وَّاَنَاسِيَّ كَثِيْرًا
যার দ্বারা আমি মৃত ভূখন্ডকে সঞ্জীবিত করি এবং আমার সৃষ্টির মধ্যে বহু জীবজন্তু ও মানুষকে তা পান করাই। (সূরা ফুরক্বান- ৪৯)
وَاَرْسَلْنَا الرِّيَاحَ لَوَاقِحَ فَاَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَسْقَيْنَاكُمُوْهُۚ وَمَاۤ اَنْتُمْ لَهٗ بِخَازِنِيْنَ
আমি বৃষ্টি বহনকারী বায়ু প্রেরণ করি, তারপর আমিই আকাশ হতে পানি বর্ষণ করি। অতঃপর তোমাদেরকে তা পান করাই; তোমরা নিজেরা তো এর কোন ভান্ডার জমা করে রাখনি (যে, সেখান থেকে এসব আসছে)। (সূরা হিজর- ২২)
পানি দ্বারা ফসল উৎপাদন করেন :
فَاَنْشَاْنَا لَكُمْ بِهٖ جَنَّاتٍ مِّنْ نَّخِيْلٍ وَّاَعْنَابٍ لَّكُمْ فِيْهَا فَوَاكِهُ كَثِيْرَةٌ وَّمِنْهَا تَاْكُلُوْنَ
অতঃপর আমি এর দ্বারা তোমাদের জন্য খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান উৎপাদন করি। তোমাদের জন্য এতে আছে প্রচুর ফল; আর তোমরা তা হতে আহার করে থাক। (সূরা মু’মিনূন- ১৯)
পৃথিবীর পানিকে সংরক্ষণ করেন :
وَاَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَآءِ مَآءً ۢبِقَدَرٍ فَاَسْكَنَّاهُ فِى الْاَ رْضِ وَاِنَّا عَلٰى ذَهَابٍ ۢبِهٖ لَقَادِرُوْنَ
আর আমিই আকাশ হতে পানি বর্ষণ করি পরিমিত হারে। অতঃপর আমি তা মাটিতে সংরক্ষণ করি; আর আমি তাকে অপসারণ করতেও সক্ষম। (সূরা মু’মিনূন- ১৮)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ প্রত্যেক অঞ্চলের জন্য বৃষ্টির একটা গড় পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন, যা দীর্ঘকাল যাবৎ প্রতি বছর একইভাবে চলতে থাকে। তাছাড়া তিনি বিভিন্ন মওসুমের বিভিন্ন সময়ে বৃষ্টিকে বিক্ষিপ্ত করে বর্ষণ করেন, যা ভূমির উৎপাদন ক্ষমতার জন্য উপকারী। এ ব্যবস্থা আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী চলছে। একটি দেশের বৃষ্টিপাতের গড় পরিবর্তন কিংবা পৃথিবীর ব্যাপক এলাকায় তার বণ্টন হারে কোন পার্থক্য সৃষ্টি করা, অথবা কোন তুফানকে রোধ করা বা বৃষ্টিকে নিজ দেশে বর্ষণ করার জন্য বাধ্য করার সাধ্য কারো নেই।
দুই সাগরের মধ্যখানে পর্দা সৃষ্টি করেছেন :
هُوَ الَّذِيْ مَرَجَ الْبَحْرَيْنِ هٰذَا عَذْبٌ فُرَاتٌ وَّهٰذَا مِلْحٌ اُجَاجٌۚ وَجَعَلَ بَيْنَهُمَا بَرْزَخًا وَّحِجْرًا مَّحْجُوْرًا
তিনিই দু’টি দরিয়াকে মিলিতভাবে প্রবাহিত করেছেন, একটি মিষ্ট ও সুপেয় এবং অপরটি লোনা ও ক্ষার। আর উভয়ের মধ্যে রেখেছেন এক অমত্মরায় ও অনতিক্রম্য ব্যবধান। (সূরা ফুরক্বান- ৫৩)
ব্যাখ্যা : যেখানে কোন বড় নদী এসে সাগরে পড়ে এমন প্রত্যেক জায়গায় এ অবস্থা হয়। এছাড়া সমুদ্রের মধ্যেও বিভিন্ন জায়গায় মিঠা পানির স্রোত পাওয়া যায়। সমুদ্রের ভীষণ লবণাক্ত পানির মধ্যেও সে তার মিষ্টতা পুরোপুরি বজায় রাখে। এ হচ্ছে আয়াতের বাহ্যিক বিষয়বস্তু, যা আল্লাহ তা‘আলার একক ইলাহ্ ও একক রব হওয়ার প্রমাণ বহন করে। কিন্তু এসব শব্দাবলির অভ্যন্তর থেকে একটি সূক্ষ্ম ইশারা অন্য একটি বিষয়বস্তুর সন্ধান দেয়। সেটি হচ্ছে, মানবসমাজের সমুদ্র যতই লোনা হয়ে থাক না কেন, আল্লাহ যখনই চান তার তলদেশ থেকে একটি সৎকর্মশীল দলের মিঠা স্রোত বের করে আনতে পারেন। ফলে তাগুতের লোনা পানির তরঙ্গ যতই শক্তি প্রয়োগ করুক না কেন, তারা এই স্রোত গ্রাস করতে সক্ষম হবে না।
مَرَجَ الْبَحْرَيْنِ يَلْتَقِيَانِ ‐ - بَيْنَهُمَا بَرْزَخٌ لَّا يَبْغِيَانِ
তিনি দু’টি সমুদ্রকে প্রবাহিত করেন, যারা পরস্পর মিলিত হয়। আর এ দু’য়ের মধ্যে রয়েছে এক অন্তরাল, যা তারা অতিক্রম করতে পারে না। (সূরা আর রহমান- ১৯, ২০)
সমুদ্রে মাছ ও অলঙ্কার দিয়েছেন :
هُوَ الَّذِيْ سَخَّرَ الْبَحْرَ لِتَاْكُلُوْا مِنْهُ لَحْمًا طَرِيًّا وَّتَسْتَخْرِجُوْا مِنْهُ حِلْيَةً تَلْبَسُوْنَهَاۚ وَتَرَى الْفُلْكَ مَوَاخِرَ فِيْهِ وَلِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِهٖ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
তিনিই সমুদ্রকে তোমাদের অধীনস্থ করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা তা হতে তাজা গোশত (মাছ) ভক্ষণ করতে পার এবং তা হতে গহনা আহরণ করতে পার, যা তোমরা ভূষণরূপে পরিধান কর। আর তোমরা দেখতে পাও যে, এর বুক চিরে নৌযান চলাচল করে। এটা এজন্য যে, তোমরা যেন তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা নাহল- ১৪)
وَمَا يَسْتَوِى الْبَحْرَانِ هٰذَا عَذْبٌ فُرَاتٌ سَآئِغٌ شَرَابُهٗ وَهٰذَا مِلْحٌ اُجَاجٌؕ وَّمِنْ كُلٍّ تَاْكُلُوْنَ لَحْمًا طَرِيًّا وَّتَسْتَخْرِجُوْنَ حِلْيَةً تَلْبَسُوْنَهَاۚ وَتَرَى الْفُلْكَ فِيْهِ مَوَاخِرَ لِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِهٖ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
আর দু’টি সমুদ্র সমান নয়- একটি মিঠা পানিবিশিষ্ট, যা পিপাসা দূর করে এবং এর পানি পান করা সহজ। আর অপরটির পানি লবণাক্ত ও বিস্বাদ। তোমরা প্রত্যেকটি থেকেই টাটকা গোশত (মাছ) ভক্ষণ কর এবং মণি-মুক্তার অলঙ্কার আহরণ কর, যা তোমরা পরিধান কর। আর তুমি দেখতে পাও যে, তার বুক চিরে জাহাজ চলাচল করে। এটা এজন্য যে, যেন তোমরা তাঁর অনুগ্রহ তালাশ করতে পার এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা ফাতির- ১২)
يَخْرُجُ مِنْهُمَا اللُّؤْلُؤُ وَالْمَرْجَانُ
উভয় সমুদ্র হতে উৎপন্ন হয় মুক্তা ও প্রবাল। (সূরা আর রহমান- ২২)
তিনি বৃষ্টি দ্বারা মৃত জমিনকে ফসলের উপযোগী করেন :
اَلَمْ تَرَ اَنَّ اللهَ اَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَتُصْبِحُ الْاَ رْضُ مُخْضَرَّةً ؕ اِنَّ اللهَ لَطِيْفٌ خَبِيْرٌ
তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, আল্লাহ বারি বর্ষণ করেন আকাশ হতে যেন পৃথিবী সবুজ শ্যামল হয়ে উঠে? নিশ্চয় আল্লাহ সূক্ষ্মদর্শী ও পরিজ্ঞাত। (সূরা হজ্জ- ৬৩)
ব্যাখ্যা : لَطِيْفٌ (লাত্বিফ) শব্দের দু’টি অর্থ আছে। একটি অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি অত্যন্ত স্নেহ, মায়া ও বদান্যতাপ্রবণ। দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, তিনি অত্যন্ত সূক্ষ্মদর্শিতার সাথে তার এমন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রয়োজনের প্রতিও লক্ষ্য রাখেন, যেখানে কারো দৃষ্টি যায় না। সে প্রয়োজনগুলো তিনি এমনভাবে পূরণ করেন যে, বান্দা নিজেও উপলব্ধি করতে পারে না, কে কখন তার কোন্ প্রয়োজন পূরণ করছে।
وَهُوَ الَّذِيْ يُرْسِلُ الرِّيَاحَ بُشْرًا ۢبَيْنَ يَدَيْ رَحْمَتِهٖؕ حَتّٰۤى اِذَاۤ اَقَلَّتْ سَحَابًا ثِقَالًا سُقْنَاهُ لِبَلَدٍ مَّيِّتٍ فَاَنْزَلْنَا بِهِ الْمَآءَ فَاَخْرَجْنَا بِهٖ مِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِؕ كَذٰلِكَ نُخْرِجُ الْمَوْتٰى لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ
তিনিই স্বীয় অনুগ্রহে বায়ুকে সুসংবাদবাহীরূপে প্রেরণ করেন। যখন তা ঘন মেঘ বহন করে তখন আমি তা নির্জীব ভূখন্ডের দিকে চালনা করি, পরে তা হতে বৃষ্টি বর্ষণ করি, তারপর তার দ্বারা সর্বপ্রকার ফল উৎপাদন করি। (জেনে রেখো) এভাবেই আমি (কিয়ামতের দিন) মৃতকে (কবর থেকে) বের করে আনব, যেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। (সূরা আ‘রাফ- ৫৭)
তেল উৎপাদনের জন্য গাছ সৃষ্টি করেছেন :
وَشَجَرَةً تَخْرُجُ مِنْ طُوْرِ سَيْنَآءَ تَنْۢبُتُ بِالدُّهْنِ وَصِبْغٍ لِّلْاٰكِلِيْنَ
(আর আমি সৃষ্টি করি) এক বৃক্ষ, যা জন্মায় সিনাই পর্বতে। এতে উৎপন্ন হয় তৈল এবং আহারকারীদের জন্য ব্যঞ্জন। (সূরা মু’মিনূন- ২০)
বীজ থেকে গাছ বের করেন :
اِنَّ اللهَ فَالِقُ الْحَبِّ وَالنَّوٰىؕ يُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَمُخْرِجُ الْمَيِّتِ مِنَ الْحَيِّؕ ذٰلِكُمُ اللهُ فَاَنّٰى تُؤْفَكُوْنَ
আল্লাহই শস্য-বীজ ও আঁটি অঙ্কুরিত করেন, তিনিই প্রাণহীন হতে জীবন্তকে বের করেন এবং জীবন্ত হতে প্রাণহীনকে বের করেন। তিনিই তো আল্লাহ, সুতরাং তোমরা কোথায় ফিরে যাবে? (সূরা আন‘আম- ৯৫)
বিভিন্ন স্বাদবিশিষ্ট ফল ও বাগান বানিয়েছেন :ٰ
وَهُوَ الَّذِيْۤ اَنْشَاَ جَنَّاتٍ مَّعْرُوْشَاتٍ وَّغَيْرَ مَعْرُوْشَاتٍ وَّالنَّخْلَ وَالزَّرْعَ مُخْتَلِفًا اُكُلُهٗ - وَالزَّيْتُوْنَ وَالرُّمَّانَ مُتَشَابِهًا وَّغَيْرَ مُتَشَابِهٍؕ كُلُوْا مِنْ ثَمَرِهٖۤ اِذَاۤ اَثْمَرَ وَاٰتُوْا حَقَّهٗ يَوْمَ حَصَادِهٖ وَلَا تُسْرِفُوْاؕ اِنَّهٗ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِيْنَ
তিনিই লতা ও বৃক্ষ-উদ্যানসমূহ, খেজুর বৃক্ষ, বিভিন্ন স্বাদ বিশিষ্ট খাদ্যশস্য, যায়তুন ও ডালিম সৃষ্টি করেছেন- এগুলো একে অন্যের সাদৃশ্য এবং বৈসাদৃশ্য। সুতরাং যখন তা ফলবান হয় তখন তার ফল ভক্ষণ করো এবং ফসল তুলার দিন তার হক (ওশর) প্রদান করো। আর তোমরা অপচয় করো না; নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা আন‘আম- ১৪১)
সবকিছুই পরিমাণ মতো উৎপাদন করেন :
وَالْاَ رْضَ مَدَدْنَاهَا وَاَلْقَيْنَا فِيْهَا رَوَاسِيَ وَاَنْۢبَتْنَا فِيْهَا مِنْ كُلِّ شَيْءٍ مَّوْزُوْنٍ
আমি পৃথিবীকে বিস্তৃত করে দিয়েছি এবং তাতে পর্বতমালা স্থাপন করেছি। আর আমি তাতে প্রত্যেক বস্তু উৎপাদন করেছি সুপরিমিতভাবে। (সূরা হিজর- ১৯)
ব্যাখ্যা : এখানে আল্লাহর কুদরত, শক্তি ও জ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। উদ্ভিদের প্রতিটি প্রজাতির মধ্যে বংশবৃদ্ধির ক্ষমতা এত বেশি যে, যদি তার একটিমাত্র চারাকে দুনিয়ায় বংশ বৃদ্ধির সুযোগ দেয়া হয় তাহলে কয়েক বছরের মধ্যে পৃথিবীর চারদিকে শুধু তারই চারা দেখা যাবে, অন্য কোন উদ্ভিদের জন্য আর কোন জায়গা খালি থাকবে না। কিন্তু একজন মহাজ্ঞানী ও অসীম শক্তিধরের সুচিন্তিত পরিকল্পনা অনুযায়ী অসংখ্য প্রজাতির উদ্ভিদ এ বিশ্বচরাচরে উৎপন্ন হচ্ছে। প্রত্যেক প্রজাতির উৎপাদন একটি বিশেষ সীমায় পৌঁছে যাওয়ার পর থেমে যায়। এ প্রক্রিয়ার আরো একটি দিক হচ্ছে, প্রত্যেক প্রজাতির উদ্ভিদের আয়তন, বিস্তৃতি, উচ্চতা ও বিকাশের একটি সীমা নির্ধারিত আছে। কোন উদ্ভিদ এ সীমা অতিক্রম করতে পারে না। এর মাধ্যমে স্পষ্টভাবে জানা যায় যে, আল্লাহ প্রতিটি বৃক্ষ, এর চারা ও লতাপাতার জন্য উচ্চতা, আকৃতি, ফুল, ফল ও উৎপাদনের একটি পরিমাণ হিসাব করে নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
আল্লাহ পরিমাণের মধ্যে কমবেশি করেন না :
وَاِنْ مِّنْ شَيْءٍ اِلَّا عِنْدَنَا خَزَآئِنُهٗ وَمَا نُنَزِّلُهٗۤ اِلَّا بِقَدَرٍ مَّعْلُوْمٍ
আমারই নিকট আছে প্রত্যেক বস্তুর ভান্ডার এবং আমি তা পরিজ্ঞাত পরিমাণেই সরবরাহ করে থাকি। (সূরা হিজর- ২১)
ব্যাখ্যা : এখানে এ সত্যটি সম্পর্কে সজাগ করে দেয়া হয়েছে যে, সীমিত ও পরিকল্পিত প্রবৃদ্ধির এ নিয়ম কেবল উদ্ভিদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়; বরং যাবতীয় সৃষ্টির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। বাতাস, পানি, আলো, শীত, গ্রীষ্ম, জীব, জড়, উদ্ভিদ তথা প্রত্যেকটি জিনিস, প্রত্যেকটি প্রজাতি, প্রত্যেকটি শ্রেণি ও প্রত্যেকটি শক্তির জন্য আলাদা আলাদা সীমা নির্ধারিত রয়েছে। সবকিছুই নিজ নিজ সীমার মধ্যে অবস্থান করছে। তাদের জন্য যে পরিমাণ নির্ধারিত রয়েছে তার চেয়ে তারা কখনো বাড়েও না আবার কমেও না। একমাত্র আল্লাহর নির্ধারিত অবস্থার ফলে পৃথিবী থেকে আকাশ পর্যন্ত সমগ্র বিশ্বব্যবস্থায় ভারসাম্য ও সমন্বয় সাধিত হচ্ছে।
সকল প্রাণীর জীবিকার ব্যবস্থা করেন :
وَجَعَلْنَا لَكُمْ فِيْهَا مَعَايِشَ وَمَنْ لَّسْتُمْ لَهٗ بِرَازِقِيْنَ
আর তাতে জীবিকার ব্যবস্থা করেছি তোমাদের জন্য এবং তোমরা যাদের রিযিকদাতা নও, তাদের জন্যও। (সূরা হিজর- ২০)
প্রতিটি জিনিসকে পথনির্দেশ করেছেন :
رَبُّنَا الَّذِيْۤ اَعْطٰى كُلَّ شَيْءٍ خَلْقَهٗ ثُمَّ هَدٰى
আমাদের প্রতিপালক তিনিই, যিনি প্রত্যেক বস্তুকে তার আকৃতি দান করেছেন, অতঃপর পথনির্দেশ করেছেন। (সূরা ত্বা-হা- ৫০)
মানুষকে কান, চোখ ও বোধশক্তি দিয়েছেন :
وَاللهُ اَخْرَجَكُمْ مِّنْ ۢبُطُوْنِ اُمَّهَاتِكُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ شَيْئًا وَّجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْاَبْصَارَ وَالْاَفْئِدَةَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
আর আল্লাহ তোমাদেরকে নির্গত করেছেন তোমাদের মাতৃগর্ভ হতে এমন অবস্থায় যে, তোমরা কিছুই জানতে না। তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি এবং হৃদয়, যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা নাহল- ৭৮)
وَهُوَ الَّذِيْۤ اَنْشَاَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْاَبْصَارَ وَالْاَفْئِدَةَ قَلِيْلًا مَّا تَشْكُرُوْنَ
তিনিই তোমাদের জন্য কান, চোখ ও অমত্মর সৃষ্টি করেছেন; কিন্তু তোমরা খুব কমই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাক। (সূরা মু’মিনূন- ৭৮)
قُلْ هُوَ الَّذِيْۤ اَنْشَاَكُمْ وَجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْاَبْصَارَ وَالْاَفْئِدَةَ قَلِيْلًا مَّا تَشْكُرُوْنَ
বলো, তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদেরকে দিয়েছেন শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি ও অন্তর। তোমরা তো খুব কমই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাক। (সূরা মুলক- ২৩)
স্ত্রী ও সন্তান দান করেছেন :
وَاللهُ جَعَلَ لَكُمْ مِّنْ اَنْفُسِكُمْ اَزْوَاجًا وَّجَعَلَ لَكُمْ مِّنْ اَزْوَاجِكُمْ بَنِيْنَ وَحَفَدَةً وَّرَزَقَكُمْ مِّنَ الطَّيِّبَاتِ اَفَبِالْبَاطِلِ يُؤْمِنُوْنَ وَبِنِعْمَةِ اللهِ هُمْ يَكْفُرُوْنَ
আর আল্লাহ তোমাদের হতেই তোমাদের জোড়া সৃষ্টি করেছেন, তোমাদের যুগল হতে তোমাদের জন্য পুত্র-পৌত্রাদি সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ দান করেছেন। তবুও কি তারা মিথ্যার উপর বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং তারা কি আল্লাহর অনুগ্রহকে অস্বীকার করবে? (সূরা নাহল- ৭২)
মানুষকে জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন :
اَلَّذِيْ عَلَّمَ بِالْقَلَمِ ‐ عَلَّمَ الْاِنْسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ
যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না। (সূরা আলাক্ব- ৪, ৫)
কথা বলা শিখিয়েছেন :
خَلَقَ الْاِنْسَانَ ‐ - عَلَّمَهُ الْبَيَانَ
তিনিই সৃষ্টি করেছেন মানুষ, তিনি তাকে ভাব প্রকাশ করতে শিখিয়েছেন। (সূরা আর রহমান- ৩, ৪)
আল্লাহ কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন :
اَلرَّحْمٰنُ -‐ عَلَّمَ الْقُرْاٰنَ
পরম দয়াময় আল্লাহই শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন। (সূরা আর রহমান- ১, ২)
ব্যাখ্যা : এখানে আল্লাহ কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন বলার পরিবর্তে ‘রহমান’ শিক্ষা দিয়েছেন বলা হয়েছে। কারণ বান্দাদের হেদায়াতের জন্য কুরআন মাজীদ নাযিল করা সরাসরি আল্লাহর রহমত। যেহেতু তিনি তাঁর সৃষ্টির প্রতি অতীব দয়াবান; তাই তিনি তোমাদেরকে অন্ধকারে ছেড়ে দেয়া পছন্দ করেননি। তিনি তাঁর রহমতের দাবী অনুসারে এ কুরআন পাঠিয়ে তোমাদেরকে এমন জ্ঞান দান করেছেন, যার উপর পার্থিব জীবনে তোমাদের সত্যানুসরণ এবং পরকালীন জীবনের সফলতা নির্ভরশীল।
আল্লাহ যা চান তাই করতে পারেন :
فَعَّالٌ لِّمَا يُرِيْدُ
তিনি যা চান তাই করেন। (সূরা বুরুজ- ১৬)
আল্লাহর কোন কাজ করার ইচ্ছা করলে ‘হও’ বললেই হয়ে যায় :
اِنَّمَاۤ اَمْرُهٗۤ اِذَاۤ اَرَادَ شَيْئًا اَنْ يَّقُوْلَ لَهٗ كُنْ فَيَكُوْنُ
বস্তুত তাঁর বিষয়টি এমন যে, যখন তিনি কোনকিছু করতে ইচ্ছা করেন তখন তিনি তাকে বলেন, ‘হও’ অমনি তা হয়ে যায়। (সূরা ইয়াসীন- ৮২)
اِذَا قَضٰۤى اَمْرًا فَاِنَّمَا يَقُوْلُ لَهٗ كُنْ فَيَكُوْنُ
যখন তিনি কোনকিছু করার সিন্ধান্ত নেন তখন বলেন, ‘হও’ তখন তা হয়ে যায়। (সূরা মারইয়াম- ৩৫)
তিনি জিজ্ঞাসাবাদ করেন, তাঁকে কেউ জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে না :
لَا يُسْاَلُ عَمَّا يَفْعَلُ وَهُمْ يُسْاَلُوْنَ
তিনি যা করেন সে বিষয়ে তিনি জিজ্ঞেসিত হবেন না; বরং তাদেরকেই প্রশ্ন করা হবে। (সূরা আম্বিয়া- ২৩)
আল্লাহ সর্ববিষয়ে শক্তিমান :
لِلّٰهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِ وَمَا فِيْهِنَّ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
আসমান ও জমিন এবং তাদের মধ্যে যা কিছু আছে তার সার্বভৌমত্ব আল্লাহরই এবং তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা মায়েদা- ১২০)
জমিনের নিচে যা আছে তাও তাঁরই :
لَهٗ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَ رْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا وَمَا تَحْتَ الثَّرٰى
আকাশমন্ডলী, পৃথিবী এবং উভয়ের মধ্যবর্তী স্থানে ও ভূগর্ভে যা আছে তা তাঁরই। (সূরা ত্বা-হা- ৬)
আসমান ও জমিনের উত্তরাধিকারী আল্লাহ :
اِنَّا نَحْنُ نَرِثُ الْاَ رْضَ وَمَنْ عَلَيْهَا وَاِلَيْنَا يُرْجَعُوْنَ
নিশ্চয় পৃথিবী ও তার উপর যারা আছে তাদের চূড়ামত্ম মালিকানা আমারই এবং তারা আমারই নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা মারইয়াম- ৪০)
তিনিই একদিন এ পৃথিবীকে উদ্ভিদশূন্য ময়দানে পরিণত করবেন :
اِنَّا جَعَلْنَا مَا عَلَى الْاَ رْضِ زِيْنَةً لَّهَا لِنَبْلُوَهُمْ اَيُّهُمْ اَحْسَنُ عَمَلًا ‐ - وَاِنَّا لَجَاعِلُوْنَ مَا عَلَيْهَا صَعِيْدًا جُرُزًا
পৃথিবীর উপর যা কিছু আছে আমি সেগুলোকে তার জন্য সুশোভিত করে দিয়েছি। যাতে করে মানুষকে এ পরীক্ষা করে নেয়া যায় যে, তাদের মধ্যে কর্মে কে শ্রেষ্ঠ। অতঃপর (একদিন) তার উপর যা কিছু আছে তা অবশ্যই আমি উদ্ভিদশূন্য ময়দানে পরিণত করব। (সূরা কাহফ- ৭, ৮)
আল্লাহ সবকিছুর উপর একক ক্ষমতাবান :
لِلّٰهِ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَ رْضِ
আকাশ এবং পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর। (সূরা বাক্বারা- ২৮৪)
তিনি খুঁটি ছাড়া আকাশকে উপরে স্থীর করে রেখেছেন :
خَلَقَ السَّمَاوَاتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا
তিনি আসমান সৃষ্টি করেছেন স্তম্ভ ব্যতীত, যা তোমরা দেখতেই পাচ্ছ। (সূরা লুক্বমান- ১০)
اَللهُ الَّذِيْ رَفَعَ السَّمَاوَاتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا
আল্লাহ ঐ সত্তা, যিনি আকাশমন্ডলীকে ঊর্ধ্বদেশে স্থাপন করেছেন সত্মম্ভ ব্যতীত; আর তোমরা তো তা দেখতেই পাচ্ছ। (সূরা রা‘দ- ২)
আল্লাহই সকল প্রাণীকে নিয়ন্ত্রণ করেন :
مَا مِنْ دَآبَّةٍ اِلَّا هُوَ اٰخِذٌ ۢبِنَاصِيَتِهَا
এমন কোন জীবজন্তু নেই, যে তাঁর পূর্ণ আয়ত্তাধীন নয়। (সূরা হুদ- ৫৬)
আল্লাহ সবকিছু পরিবেষ্টন করে আছেন :
وَلِلّٰهِ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَ رْضِؕ وَكَانَ اللهُ بِكُلِّ شَيْءٍ مُّحِيْطًا
আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর এবং সবকিছুকে আল্লাহ পরিবেষ্টন করে রেখেছেন। (সূরা নিসা- ১২৬)
সবকিছুর অবস্থা তিনি দেখেন ও শুনেন :
وَلَهٗ مَا سَكَنَ فِى اللَّيْلِ وَالنَّهَارِؕ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
রাত ও দিনে যা কিছু থাকে তা তাঁরই এবং তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী। (সূরা আন‘আম- ১৩)
কাউকে অনুগ্রহ করা বা না করা তাঁর ইচ্ছাধীন :
مَا يَفْتَحِ اللهُ لِلنَّاسِ مِنْ رَّحْمَةٍ فَلَا مُمْسِكَ لَهَاۚ وَمَا يُمْسِكْ فَلَا مُرْسِلَ لَهٗ مِنْ ۢبَعْدِهٖؕ وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
আল্লাহ মানুষের জন্য যে রহমত উন্মুক্ত করে দেন, তা কেউ প্রতিরোধ করতে পারে না এবং যা তিনি বন্ধ করে দেন, তা বন্ধ করার পরে কেউ উন্মুক্ত করতে পারে না। তিনিই মহাপ্রতাপশালী ও পরম কৌশলী। (সূরা ফাতির- ২)
ব্যাখ্যা : মুশরিকরা মনে করে, আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কেউ তাদের রিযিকদাতা, কেউ সন্তানদাতা এবং কেউ রোগ নিরাময়কারী। এ আয়াতে তাদের এ ভুল ধারণা দূর করা হয়েছে। শিরকের এ সমস্ত ধারণা একেবারেই ভিত্তিহীন। নির্ভেজাল সত্য এতটুকু যে, বান্দাদের কাছে যে ধরনের রহমতই আসে তা মহান আল্লাহর অনুগ্রহেই আসে। অন্য কারো এ রহমত দান করার ক্ষমতা নেই এবং একে রোধ করার শক্তিও কারো নেই। এ বিষয়টি কুরআন মাজীদ ও হাদীসের বহু স্থানে বিভিন্নভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে এ বিষয়টিও ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে যে, মানুষের ভাগ্যের ভাঙা-গড়ায় এক আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইখতিয়ার নেই।
আল্লাহই সুখ-দুঃখ দেয়ার অধিকার রাখেন :
وَاِنْ يَّمْسَسْكَ اللهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهٗۤ اِلَّا هُوَؕ وَاِنْ يَّمْسَسْكَ بِخَيْرٍ فَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
আল্লাহ তোমাকে কষ্ট দিলে তিনি ব্যতীত তা মোচনকারী আর কেউ নেই। আর তিনি যদি তোমার কল্যাণ করেন, তবে তিনিই তো সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। (সূরা আন‘আম- ১৭)
وَاِنْ يَّمْسَسْكَ اللهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهٗۤ اِلَّا هُوَؕ وَاِنْ يُّرِدْكَ بِخَيْرٍ فَلَا رَادَّ لِفَضْلِهٖؕ يُصِيْبُ بِهٖ مَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهٖ ؕ وَهُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ
আল্লাহ যদি তোমাকে কষ্ট দেন, তবে তিনি ব্যতীত তা মোচনকারী আর কেউ নেই। আর তিনি যদি তোমার মঙ্গল চান, তবে তাঁর অনুগ্রহ বন্ধ করারও কেউ নেই। তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তিনি মঙ্গল দান করেন; নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা ইউনুস- ১০৭)
আল্লাহ আকাশ থেকে খাবার পাঠাতে সক্ষম :
اِذْ قَالَ الْحَوَارِيُّوْنَ يَا عِيْسَى ابْنَ مَرْيَمَ هَلْ يَسْتَطِيْعُ رَبُّكَ اَنْ يُّنَزِّلَ عَلَيْنَا مَآئِدَةً مِّنَ السَّمَآءِؕ قَالَ اتَّقُوا اللهَ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
(স্মরণ করো) যখন হাওয়ারীরা বলেছিল, হে মারইয়ামের ছেলে ঈসা! তোমার প্রতিপালক কি আমাদের জন্য আসমান হতে খাদ্যভর্তি খাঞ্চা প্রেরণ করতে সক্ষম? সে বলেছিল, আল্লাহকে ভয় করো, যদি তোমরা মুমিন হও। (সূরা মায়েদা- ১১২)
قَالَ اللهُ اِنِّيْ مُنَزِّلُهَا عَلَيْكُمْ
আল্লাহ বললেন, আমি তোমাদের নিকট তা প্রেরণ করব। (সূরা মায়েদা- ১১৫)
আল্লাহ বৃদ্ধ বয়সেও সন্তান দিতে পারেন :
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ وَهَبَ لِيْ عَلَى الْكِبَرِ اِسْمَاعِيْلَ وَاِسْحَاقَ اِنَّ رَبِّيْ لَسَمِيْعُ الدُّعَآءِ
সমসত্ম প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি আমাকে আমার বার্ধক্যে ইসমাঈল ও ইসহাককে দান করেছেন। নিশ্চয় আমার প্রতিপালক প্রার্থনা শ্রবণ করে থাকেন। (সূরা ইবরাহীম- ৩৯)
قَالَ رَبِّ اَنّٰى يَكُوْنُ لِيْ غُلَامٌ وَّكَانَتِ امْرَاَتِيْ عَاقِرًا وَّقَدْ بَلَغْتُ مِنَ الْكِبَرِ عِتِيًّا ‐ قَالَ كَذٰلِكَۚ قَالَ رَبُّكَ هُوَ عَلَيَّ هَيِّنٌ وَّقَدْ خَلَقْتُكَ مِنْ قَبْلُ وَلَمْ تَكُ شَيْئًا
তিনি (যাকারিয়া) বললেন, হে আমার প্রতিপালক! কেমন করে আমার পুত্র হবে অথচ আমার স্ত্রী বন্ধ্যা আর আমিও বার্ধক্যের শেষ সীমায় উপনীত হয়েছি। আল্লাহ বললেন, এভাবেই হবে। তোমার প্রতিপালক বলেন, এটা আমার জন্য খুবই সহজ (বিষয়)। (তাছাড়া) আমি তো ইতোপূর্বে তোমাকেও সৃষ্টি করেছি যখন তুমি কিছুই ছিলে না। (সূরা মারইয়াম- ৮, ৯)
আল্লাহ বন্ধ্যার ঘরেও সন্তান দিতে পারেন :
قَالَ رَبِّ اَنّٰى يَكُوْنُ لِيْ غُلَامٌ وَّقَدْ بَلَغَنِيَ الْكِبَرُ وَامْرَاَتِيْ عَاقِرٌؕ قَالَ كَذٰلِكَ اللهُ يَفْعَلُ مَا يَشَآءُ
তিনি বললেন, হে আমার রব! কীভাবে আমার সন্তান হবে অথচ আমি বার্ধক্যে উপনীত হয়েছি এবং আমার স্ত্রীও বন্ধ্যা। আল্লাহ বললেন, এভাবেই হবে। আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। (সূরা আলে ইমরান- ৪০)
পিতা ছাড়াও মানুষ সৃষ্টি করতে পারেন :
قَالَتْ رَبِّ اَنّٰى يَكُوْنُ لِيْ وَلَدٌ وَّلَمْ يَمْسَسْنِيْ بَشَرٌؕ قَالَ كَذٰلِكِ اللهُ يَخْلُقُ مَا يَشَآءُؕ اِذَا قَضٰۤى اَمْرًا فَاِنَّمَا يَقُوْلُ لَهٗ كُنْ فَيَكُوْنُ
মারইয়াম বললেন, হে আমার রব! কেমন করে আমার সন্তান হবে? আমাকে তো কোন মানুষ স্পর্শ করেনি। আল্লাহ বললেন, এভাবেই। আল্লাহ যা চান তাই সৃষ্টি করেন। তিনি যখন কোন কাজের ফায়সালা করেন তখন বলেন, ‘হও’ ফলে তা হয়ে যায়। (সূরা আলে ইমরান- ৪৭)
আগুনের মাঝেও মানুষকে বাঁচাতে পারেন :
قُلْنَا يَا نَارُ كُوْنِيْ بَرْدًا وَّسَلَامًا عَلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ
আমি বললাম, হে অগ্নি! ইবরাহীমের জন্য শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও। (সূরা আম্বিয়া- ৬৯)
আল্লাহ মি‘রাজ সংঘটিত করাতে পারেন :
سُبْحَانَ الَّذِيْۤ اَسْرٰى بِعَبْدِهٖ لَيْلًا مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ اِلَى الْمَسْجِدِ الْاَقْصَى الَّذِيْ بَارَكْنَا حَوْلَهٗ لِنُرِيَهٗ مِنْ اٰيَاتِنَاؕ اِنَّهٗ هُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ
পবিত্র ও মহিমাময় তিনি, যিনি তাঁর বান্দাকে রজনীতে ভ্রমণ করিয়েছিলেন মাসজিদুল হারাম হতে মাসজিদুল আকসা পর্যমত্ম, যার পরিবেশকে করে দিয়েছিলাম বরকতময়। যাতে করে তাকে আমার নিদর্শনসমূহ দেখাতে পারি; নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। (সূরা বনী ইসরাঈল- ১)
তিনি ইচ্ছা করলে সবাইকে একই দলভুক্ত করতে পারেন :
وَلَوْ شَآءَ اللهُ لَجَعَلَكُمْ اُمَّةً وَّاحِدَةً وَّلٰكِنْ لِّيَبْلُوَكُمْ فِيْ مَاۤ اٰتَاكُمْ فَاسْتَبِقُوا الْخَيْرَاتِ
আল্লাহ যদি চাইতেন, তবে অবশ্যই তিনি তোমাদের সবাইকে এক সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত করে দিতেন। কিন্তু তিনি তোমাদেরকে যাচাই করতে চান, যা তিনি তোমাদের দিয়েছেন তার মাধ্যমে। অতএব তোমরা সৎকাজের প্রতি ধাবিত হও। (সূরা মায়েদা- ৪৮)
তিনি ইচ্ছা করলে সবাইকে হেদায়াত দিতে পারেন :
وَلَوْ شَآءَ اللهُ لَجَمَعَهُمْ عَلَى الْهُدٰى فَلَا تَكُوْنَنَّ مِنَ الْجَاهِلِيْنَ
আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদের সবাইকে অবশ্যই সৎপথে একত্র করতে পারতেন। সুতরাং তুমি মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সূরা আন‘আম- ৩৫)
فَلَوْ شَآءَ لَهَدَاكُمْ اَجْمَعِيْنَ
যদি তিনি ইচ্ছা করতেন তবে তোমাদের সবাইকে অবশ্যই সৎপথে পরিচালিত করতেন। (সূরা আন‘আম- ১৪৯)
ইচ্ছা করলে তিনি সবাইকে ঈমানদার বানাতে পারেন :
وَلَوْ شَآءَ رَبُّكَ لَاٰمَنَ مَنْ فِى الْاَ رْضِ كُلُّهُمْ جَمِيْعًاؕ اَفَاَنْتَ تُكْرِهُ النَّاسَ حَتّٰى يَكُوْنُوْا مُؤْمِنِيْنَ
তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করলে পৃথিবীতে যারা আছে তারা সকলে অবশ্যই ঈমান আনত; তবুও কি তুমি মুমিন হওয়ার জন্য মানুষের উপর জবরদস্তি করবে? (সূরা ইউনুস- ৯৯)
তিনি যাকে ইচ্ছা হেদায়াত দান করেন :
وَمَنْ يَّشَاْ يَجْعَلْهُ عَلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
আর তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে সরল পথে পরিচালিত করেন। (সূরা আন‘আম- ৩৯)
যাকে চান পবিত্র করেন :
اَلَمْ تَرَ اِلَى الَّذِيْنَ يُزَكُّوْنَ اَنْفُسَهُمْ بَلِ اللهُ يُزَكِّيْ مَنْ يَّشَآءُ
তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা নিজেদেরকে পবিত্র মনে করে? বরং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে পবিত্র করেন। (সূরা নিসা- ৪৯)
যাকে ইচ্ছা সন্তান-সন্ততি দিয়ে থাকেন :
يَخْلُقُ مَا يَشَآءُؕ يَهَبُ لِمَنْ يَّشَآءُ اِنَاثًا وَّيَهَبُ لِمَنْ يَّشَآءُ الذُّكُوْرَ ‐ اَوْ يُزَوِّجُهُمْ ذُكْرَانًا وَّاِنَاثًاۚ وَّيَجْعَلُ مَنْ يَّشَآءُ عَقِيْمًاؕ اِنَّهٗ عَلِيْمٌ قَدِيْرٌ
আল্লাহ যা ইচ্ছা তা-ই সৃষ্টি করেন। তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যাসন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্রসন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা তাকে বন্ধ্যা করে রাখেন। নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান। (সূরা শূরা- ৪৯, ৫০)
ব্যাখ্যা : এটা আল্লাহর নিরঙ্কুশ ক্ষমতার একটি সুস্পষ্ট প্রমাণ। কোন মানুষ, সে পার্থিব ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের যত বড় কর্তাই হোক না কেন, কিংবা তাকে আধ্যাত্মিক ক্ষমতার যত বড় মালিকই মনে করা হোক না কেন, অন্যদের সন্তান দেয়া তো দূরের কথা নিজের জন্য নিজের ইচ্ছানুসারে সন্তান জন্ম দানেও সে কখনো সক্ষম হয়নি। আল্লাহ যাকে বন্ধ্যা করে দিয়েছেন সে সন্তানওয়ালা হতে পারেনি। আল্লাহ যাকে শুধু কন্যাসন্তান দান করেছেন সে পুত্রসন্তানলাভ করতে পারেনি এবং আল্লাহ যাকে শুধু পুত্রসন্তানই দিয়েছেন সে কন্যাসন্তান লাভ করতে পারেনি, এ ক্ষেত্রে সবাই অসহায়। এসব দেখে শুনেও যদি কেউ আল্লাহর বাদশাহীতে সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী দাবী করে, কিংবা অন্য কাউকে তাঁর অংশীদার মনে করে, তাহলে সেটা তার নিজের অদূরদর্শিতা- যার পরিণাম সে নিজেই ভোগ করবে। কেউ নিজে নিজেই কোনকিছু বিশ্বাস করলে, তার কারণে প্রকৃত সত্যে কোন পরিবর্তন সাধিত হয় না।
আল্লাহ একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী :
وَهُوَ الْقَاهِرُ فَوْقَ عِبَادِهٖؕ وَهُوَ الْحَكِيْمُ الْخَبِيْرُ
তিনি তাঁর বান্দাদের উপর একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী, তিনি মহাজ্ঞানী ও সকল বিষয়ের খবর রাখেন। (সূরা আন‘আম- ১৮)
আল্লাহ চাইলে আরো উত্তম মানুষ আনতে পারেন :
اِنْ يَّشَاْ يُذْهِبْكُمْ اَيُّهَا النَّاسُ وَيَاْتِ بِاٰخَرِيْنَؕ وَكَانَ اللهُ عَلٰى ذٰلِكَ قَدِيْرًا
হে মানুষ! তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদেরকে অপসারণ করতে এবং (তোমাদের স্থলে) অপর কাউকে নিয়ে আসতে পারেন; আর আল্লাহ এটা করতে সম্পূর্ণ সক্ষম। (সূরা নিসা- ১৩৩)
اِنْ يَّشَاْ يُذْهِبْكُمْ وَيَاْتِ بِخَلْقٍ جَدِيْدٍ ‐ وَمَا ذٰلِكَ عَلَى اللهِ بِعَزِيْزٍ
যদি তিনি ইচ্ছা করেন তবে তোমাদেরকে অপসারণ করে দেবেন এবং তদস্থলে নতুন এক জাতি সৃষ্টি করবেন। আর এরূপ করা আল্লাহর পক্ষে মোটেই কঠিন নয়। (সূরা ফাতির- ১৬, ১৭)
اَلَمْ تَرَ اَنَّ اللهَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضَ بِالْحَقِّؕ اِنْ يَّشَاْ يُذْهِبْكُمْ وَيَاْتِ بِخَلْقٍ جَدِيْدٍ ‐ - وَمَا ذٰلِكَ عَلَى اللهِ بِعَزِيْزٍ
তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, আল্লাহ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছেন? তিনি ইচ্ছা করলেই তোমাদের অসিত্মত্ব বিলুপ্ত করতে পারেন এবং এক নতুন সৃষ্টি অসিত্মত্বে আনতে পারেন। আর এটা আল্লাহর জন্য আদৌ কঠিন নয়। (সূরা ইবরাহীম- ১৯, ২০)
আল্লাহ ইচ্ছা করলে পানি শুকিয়ে দিতে পারেন :
وَاَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَآءِ مَآءً ۢبِقَدَرٍ فَاَسْكَنَّاهُ فِى الْاَ رْضِ وَاِنَّا عَلٰى ذَهَابٍ ۢبِهٖ لَقَادِرُوْنَ
আমি আকাশ হতে বারি বর্ষণ করি পরিমিতভাবে; অতঃপর আমি সেটা মৃত্তিকায় সংরক্ষণ করি। আর আমি তাকে অপসারণ করতেও সক্ষম। (সূরা মু’মিনূন- ১৮)
قُلْ اَرَاَيْتُمْ اِنْ اَصْبَحَ مَآؤُكُمْ غَوْرًا فَمَنْ يَّاْتِيْكُمْ بِمَآءٍ مَّعِيْنٍ
বলো, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, যদি তোমাদের পানি ভূগর্ভের তলদেশে চলে যায় তবে কে তোমাদেরকে সে প্রবাহমান পানি এনে দেবে? (সূরা মুলক- ৩০)
আল্লাহ ইচ্ছা করলে ওহীর জ্ঞান ছিনিয়ে নিতে পারেন :
وَلَئِنْ شِئْنَا لَنَذْهَبَنَّ بِالَّذِيْۤ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ ثُمَّ لَا تَجِدُ لَكَ بِه عَلَيْنَا وَكِيْلًا
আমি ইচ্ছা করলে তোমার প্রতি যা ওহী করেছি তা অবশ্যই প্রত্যাহার করতে পারতাম; আর এ বিষয়ে তুমি আমার বিরুদ্ধে কোন সাহায্যকারী পেতে না। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৮৬)
আল্লাহ যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেন এবং যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন :
يَغْفِرُ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيُعَذِّبُ مَنْ يَّشَآءُؕ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন এবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি প্রদান করেন। আর আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল ও পরম করুণাময়। (সূরা আলে ইমরান- ১২৯)
اَلَمْ تَعْلَمْ اَنَّ اللهَ لَهٗ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِؕ يُعَذِّبُ مَنْ يَّشَآءُ وَيَغْفِرُ لِمَنْ يَّشَآءُؕ وَاللهُ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
তুমি কি জান না যে, আসমান ও জমিনের আধিপত্য আল্লাহরই। তিনি যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেন এবং যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। আল্লাহ সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান (সূরা মায়েদা- ৪০)
আল্লাহর শাস্তি কেউ প্রতিহত করতে পারে না :
وَلَا يُرَدُّ بَاْسُهٗ عَنِ الْقَوْمِ الْمُجْرِمِيْنَ
অপরাধী সম্প্রদায়ের উপর হতে তাঁর শাস্তি প্রতিহত করা হয় না। (সূরা আন‘আম- ১৪৭)
আল্লাহর পাকড়াও খুবই কঠোর :
وَكَذٰلِكَ اَخْذُ رَبِّكَ اِذَاۤ اَخَذَ الْقُرٰى وَهِيَ ظَالِمَةٌؕ اِنَّ اَخْذَهٗۤ اَلِيْمٌ شَدِيْدٌ
তোমার প্রতিপালকের শাসিত্ম এমনই! তিনি শাসিত্ম দান করেন জনপদবাসীকে, যখন তারা যুলুম করে থাকে। নিশ্চয় তাঁর শাসিত্ম মর্মান্তিক ও কঠিন। (সূরা হুদ- ১০২)
আল্লাহ বিভিন্নভাবে শাস্তি দিতে পারেন :
قُلْ هُوَ الْقَادِرُ عَلٰۤى اَنْ يَّبْعَثَ عَلَيْكُمْ عَذَابًا مِّنْ فَوْقِكُمْ اَوْ مِنْ تَحْتِ اَرْجُلِكُمْ اَوْ يَلْبِسَكُمْ شِيَعًا وَّيُذِيْقَ بَعْضَكُمْ بَاْسَ بَعْضٍؕ اُنْظُرْ كَيْفَ نُصَرِّفُ الْاٰيَاتِ لَعَلَّهُمْ يَفْقَهُوْنَ
বলো, তিনি তোমাদের ঊর্ধ্বদেশ অথবা পাদদেশ হতে শাস্তি প্রেরণ করতে অথবা তোমাদেরকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে অথবা একদলকে অপর দলের দ্বারা শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করাতে সক্ষম। দেখো, আমি কীভাবে বিভিন্ন প্রকার আয়াত বার বার বর্ণনা করি, যেন তারা অনুধাবন করে। (সূরা আন‘আম- ৬৫)
আল্লাহর আযাব খুবই দ্রুত আসতে পারে :
وَرَبُّكَ الْغَفُوْرُ ذُو الرَّحْمَةِؕ لَوْ يُؤَاخِذُهُمْ بِمَا كَسَبُوْا لَعَجَّلَ لَهُمُ الْعَذَابَؕ بَلْ لَّهُمْ مَّوْعِدٌ لَّنْ يَّجِدُوْا مِنْ دُوْنِه مَوْئِلًا
তোমার প্রতিপালক পরম ক্ষমাশীল ও দয়াবান। তাদের কৃতকর্মের জন্য যদি তিনি তাদেরকে পাকড়াও করতে চাইতেন তবে তিনি অবশ্যই তাদের শাসিত্ম ত্বরান্বিত করতেন। কিন্তু তাদের জন্য রয়েছে এক প্রতিশ্রুত মুহূর্ত, যা হতে তারা কখনই কোন আশ্রয়স্থল পাবে না। (সূরা কাহফ- ৫৮)
আল্লাহ জমিনকে ধসিয়ে দিতে সক্ষম :
اَاَمِنْتُمْ مَّنْ فِى السَّمَآءِ اَنْ يَّخْسِفَ بِكُمُ الْاَ رْضَ فَاِذَا هِيَ تَمُوْرُ
তোমরা কি নিরাপদ হয়ে গেছ যে, আকাশে যিনি রয়েছেন তিনি তোমাদেরকেসহ ভূমিকে ধসিয়ে দেবেন না? তখন ওটা আকস্মিকভাবে থরথর করে কাঁপতে থাকবে। (সূরা মুলক- ১৬)
শিলা দিয়েও ধ্বংস করতে পারেন :
اَفَاَمِنْتُمْ اَنْ يَّخْسِفَ بِكُمْ جَانِبَ الْبَرِّ اَوْ يُرْسِلَ عَلَيْكُمْ حَاصِبًا ثُمَّ لَا تَجِدُوْا لَكُمْ وَكِيْلًا
তোমরা কি নিরাপত্তা পেয়েছ যে, তিনি তোমাদেরকেসহ কোন অঞ্চল ধসিয়ে দেবেন না অথবা তোমাদের উপর শিলা বর্ষণ করবেন না? (যদি এমনটি ঘটতে শুরু করে) তখন তোমরা তোমাদের কোন অভিভাবক (খুঁজে) পাবে না। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৬৮)
সমুদ্রের মধ্যেও ডুবিয়ে দিতে পারেন :
اَمْ اَمِنْتُمْ اَنْ يُّعِيْدَكُمْ فِيْهِ تَارَةً اُخْرٰى فَيُرْسِلَ عَلَيْكُمْ قَاصِفًا مِّنَ الرِّيْحِ فَيُغْرِقَكُمْ بِمَا كَفَرْتُمْ ثُمَّ لَا تَجِدُوْا لَكُمْ عَلَيْنَا بِه تَبِيْعًا
অথবা তোমরা কি নিরাপত্তা পেয়েছ যে, তিনি তোমাদেরকে সমুদ্রে নিয়ে যাবেন না এবং তোমাদের উপর প্রচন্ড ঝড়ো হাওয়া পাঠাবেন না। অতঃপর তোমাদের কুফরীর জন্য তোমাদেরকে নিমজ্জিত করবেন না? তখন তোমরা এ বিষয়ে আমার বিরুদ্ধে কোন সাহায্যকারী পাবে না। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৬৯)
আল্লাহকে ব্যর্থ করার কেউ নেই :
وَمَا كَانَ اللهُ لِيُعْجِزَهٗ مِنْ شَيْءٍ فِى السَّمَاوَاتِ وَلَا فِى الْاَ رْضِؕ اِنَّهٗ كَانَ عَلِيْمًا قَدِيْرًا
আল্লাহ এমন নন যে, আসমান ও জমিনের কোনকিছু তাঁকে অক্ষম করতে পারে। তিনিই সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান। (সূরা ফাতির- ৪৪)
وَمَاۤ اَنْتُمْ بِمُعْجِزِيْنَ فِى الْاَ رْضِ وَمَا لَكُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ مِنْ وَّلِيٍّ وَّلَا نَصِيْرٍ
তোমরা পৃথিবীতে (আল্লাহকে) ব্যর্থ করতে পারবে না। আর আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন অভিভাবক নেই এবং কোন সাহায্যকারীও নেই। (সূরা শূরা- ৩১)
আল্লাহর কথার কোন পরিবর্তন হয় না :
مَا يُبَدَّلُ الْقَوْلُ لَدَيَّ وَمَاۤ اَنَاْ بِظَلَّامٍ لِّلْعَبِيْدِ
আমার কথার রদ-বদল হয় না এবং আমি আমার বান্দাদের প্রতি অত্যাচারীও নই। (সূরা ক্বাফ- ২৯)
আল্লাহ সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেন :
وَيُحِقُّ اللهُ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهٖ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُوْنَ
আল্লাহ তাঁর বাণী অনুযায়ী সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করবেন, যদিও অপরাধীরা এটা অপছন্দ করে। (সূরা ইউনুস- ৮২)
আল্লাহ সত্য প্রকাশে লজ্জাবোধ করেন না :
وَاللهُ لَا يَسْتَحْيِيْ مِنَ الْحَقِّ
আর আল্লাহ সত্য প্রকাশ করতে লজ্জা করেন না। (সূরা আহযাব- ৫৩)
আসমান ও জমিনের চাবিকাঠি আল্লাহর হাতে :
لَهٗ مَقَالِيْدُ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِ
আসমান ও জমিনের চাবিকাঠি তাঁরই অধিকারে। (সূরা যুমার- ৬৩)
لَهٗ مَقَالِيْدُ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِۚ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيَقْدِرُؕ اِنَّهٗ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ
আসমান ও জমিনের চাবিসমূহ তাঁরই অধিকারে। তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে রিযিক বৃদ্ধি করে দেন অথবা সংকুচিত করে দেন। নিশ্চয় তিনি সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ। (সূরা শূরা- ১২)
সবকিছুর ভান্ডার আল্লাহর হাতে :
وَلِلّٰهِ خَزَآئِنُ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِ وَلٰكِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ لَا يَفْقَهُوْنَ
আসমান ও জমিনের ধনভান্ডার তো আল্লাহরই; কিন্তু মুনাফিকরা তা বুঝে না। (সূরা মুনাফিকূন- ৭)
আল্লাহই সবকিছুর মধ্যে সমন্বয় সাধন করেন :
وَاِنْ مِّنْ شَيْءٍ اِلَّا عِنْدَنَا خَزَآئِنُهٗ وَمَا نُنَزِّلُهٗۤ اِلَّا بِقَدَرٍ مَّعْلُوْمٍ
আমারই নিকট আছে প্রত্যেক বস্তুর ধনভান্ডার এবং আমি তা পরিজ্ঞাত পরিমাণেই সরবরাহ করে থাকি।
(সূরা হিজর- ২১)
ব্যাখ্যা : এখানে এ সত্যটি সম্পর্কে সজাগ করে দেয়া হয়েছে যে, সীমিত ও পরিকল্পিত প্রবৃদ্ধির এ নিয়ম কেবল উদ্ভিদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়; বরং যাবতীয় সৃষ্টির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। বাতাস, পানি, আলো, শীত, গ্রীষ্ম, জীব, জড়, উদ্ভিদ তথা প্রত্যেকটি জিনিস, প্রত্যেকটি প্রজাতি, প্রত্যেকটি শ্রেণি ও প্রত্যেকটি শক্তির জন্য আলাদা আলাদা সীমা নির্ধারিত রয়েছে। সবকিছুই নিজ নিজ সীমার মধ্যে অবস্থান করছে। তাদের জন্য যে পরিমাণ নির্ধারিত রয়েছে তার চেয়ে তারা কখনো বাড়েও না আবার কমেও না। এ প্রজ্ঞামূলক নির্ধারিত অবস্থার ফলে পৃথিবী থেকে আকাশ পর্যন্ত সমগ্র বিশ্বব্যবস্থায় ভারসাম্য ও সমন্বয় সাধিত হচ্ছে। এ পৃথিবী যদি একটি আকস্মিক ঘটনার ফল হতো অথবা বহু উপাস্যের কর্মের ফল হতো, তাহলে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের অসংখ্য বস্তু ও শক্তির মধ্যে এ পর্যায়ের পূর্ণ ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া ও অব্যাহতভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকা সম্ভব হতো না।
فَعَّالٌ لِّمَا يُرِيْدُ
তিনি যা চান তাই করেন। (সূরা বুরুজ- ১৬)
আল্লাহর কোন কাজ করার ইচ্ছা করলে ‘হও’ বললেই হয়ে যায় :
اِنَّمَاۤ اَمْرُهٗۤ اِذَاۤ اَرَادَ شَيْئًا اَنْ يَّقُوْلَ لَهٗ كُنْ فَيَكُوْنُ
বস্তুত তাঁর বিষয়টি এমন যে, যখন তিনি কোনকিছু করতে ইচ্ছা করেন তখন তিনি তাকে বলেন, ‘হও’ অমনি তা হয়ে যায়। (সূরা ইয়াসীন- ৮২)
اِذَا قَضٰۤى اَمْرًا فَاِنَّمَا يَقُوْلُ لَهٗ كُنْ فَيَكُوْنُ
যখন তিনি কোনকিছু করার সিন্ধান্ত নেন তখন বলেন, ‘হও’ তখন তা হয়ে যায়। (সূরা মারইয়াম- ৩৫)
তিনি জিজ্ঞাসাবাদ করেন, তাঁকে কেউ জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে না :
لَا يُسْاَلُ عَمَّا يَفْعَلُ وَهُمْ يُسْاَلُوْنَ
তিনি যা করেন সে বিষয়ে তিনি জিজ্ঞেসিত হবেন না; বরং তাদেরকেই প্রশ্ন করা হবে। (সূরা আম্বিয়া- ২৩)
আল্লাহ সর্ববিষয়ে শক্তিমান :
لِلّٰهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِ وَمَا فِيْهِنَّ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
আসমান ও জমিন এবং তাদের মধ্যে যা কিছু আছে তার সার্বভৌমত্ব আল্লাহরই এবং তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা মায়েদা- ১২০)
জমিনের নিচে যা আছে তাও তাঁরই :
لَهٗ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَ رْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا وَمَا تَحْتَ الثَّرٰى
আকাশমন্ডলী, পৃথিবী এবং উভয়ের মধ্যবর্তী স্থানে ও ভূগর্ভে যা আছে তা তাঁরই। (সূরা ত্বা-হা- ৬)
আসমান ও জমিনের উত্তরাধিকারী আল্লাহ :
اِنَّا نَحْنُ نَرِثُ الْاَ رْضَ وَمَنْ عَلَيْهَا وَاِلَيْنَا يُرْجَعُوْنَ
নিশ্চয় পৃথিবী ও তার উপর যারা আছে তাদের চূড়ামত্ম মালিকানা আমারই এবং তারা আমারই নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা মারইয়াম- ৪০)
তিনিই একদিন এ পৃথিবীকে উদ্ভিদশূন্য ময়দানে পরিণত করবেন :
اِنَّا جَعَلْنَا مَا عَلَى الْاَ رْضِ زِيْنَةً لَّهَا لِنَبْلُوَهُمْ اَيُّهُمْ اَحْسَنُ عَمَلًا ‐ - وَاِنَّا لَجَاعِلُوْنَ مَا عَلَيْهَا صَعِيْدًا جُرُزًا
পৃথিবীর উপর যা কিছু আছে আমি সেগুলোকে তার জন্য সুশোভিত করে দিয়েছি। যাতে করে মানুষকে এ পরীক্ষা করে নেয়া যায় যে, তাদের মধ্যে কর্মে কে শ্রেষ্ঠ। অতঃপর (একদিন) তার উপর যা কিছু আছে তা অবশ্যই আমি উদ্ভিদশূন্য ময়দানে পরিণত করব। (সূরা কাহফ- ৭, ৮)
আল্লাহ সবকিছুর উপর একক ক্ষমতাবান :
لِلّٰهِ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَ رْضِ
আকাশ এবং পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর। (সূরা বাক্বারা- ২৮৪)
তিনি খুঁটি ছাড়া আকাশকে উপরে স্থীর করে রেখেছেন :
خَلَقَ السَّمَاوَاتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا
তিনি আসমান সৃষ্টি করেছেন স্তম্ভ ব্যতীত, যা তোমরা দেখতেই পাচ্ছ। (সূরা লুক্বমান- ১০)
اَللهُ الَّذِيْ رَفَعَ السَّمَاوَاتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا
আল্লাহ ঐ সত্তা, যিনি আকাশমন্ডলীকে ঊর্ধ্বদেশে স্থাপন করেছেন সত্মম্ভ ব্যতীত; আর তোমরা তো তা দেখতেই পাচ্ছ। (সূরা রা‘দ- ২)
আল্লাহই সকল প্রাণীকে নিয়ন্ত্রণ করেন :
مَا مِنْ دَآبَّةٍ اِلَّا هُوَ اٰخِذٌ ۢبِنَاصِيَتِهَا
এমন কোন জীবজন্তু নেই, যে তাঁর পূর্ণ আয়ত্তাধীন নয়। (সূরা হুদ- ৫৬)
আল্লাহ সবকিছু পরিবেষ্টন করে আছেন :
وَلِلّٰهِ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَ رْضِؕ وَكَانَ اللهُ بِكُلِّ شَيْءٍ مُّحِيْطًا
আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর এবং সবকিছুকে আল্লাহ পরিবেষ্টন করে রেখেছেন। (সূরা নিসা- ১২৬)
সবকিছুর অবস্থা তিনি দেখেন ও শুনেন :
وَلَهٗ مَا سَكَنَ فِى اللَّيْلِ وَالنَّهَارِؕ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
রাত ও দিনে যা কিছু থাকে তা তাঁরই এবং তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী। (সূরা আন‘আম- ১৩)
কাউকে অনুগ্রহ করা বা না করা তাঁর ইচ্ছাধীন :
مَا يَفْتَحِ اللهُ لِلنَّاسِ مِنْ رَّحْمَةٍ فَلَا مُمْسِكَ لَهَاۚ وَمَا يُمْسِكْ فَلَا مُرْسِلَ لَهٗ مِنْ ۢبَعْدِهٖؕ وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
আল্লাহ মানুষের জন্য যে রহমত উন্মুক্ত করে দেন, তা কেউ প্রতিরোধ করতে পারে না এবং যা তিনি বন্ধ করে দেন, তা বন্ধ করার পরে কেউ উন্মুক্ত করতে পারে না। তিনিই মহাপ্রতাপশালী ও পরম কৌশলী। (সূরা ফাতির- ২)
ব্যাখ্যা : মুশরিকরা মনে করে, আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কেউ তাদের রিযিকদাতা, কেউ সন্তানদাতা এবং কেউ রোগ নিরাময়কারী। এ আয়াতে তাদের এ ভুল ধারণা দূর করা হয়েছে। শিরকের এ সমস্ত ধারণা একেবারেই ভিত্তিহীন। নির্ভেজাল সত্য এতটুকু যে, বান্দাদের কাছে যে ধরনের রহমতই আসে তা মহান আল্লাহর অনুগ্রহেই আসে। অন্য কারো এ রহমত দান করার ক্ষমতা নেই এবং একে রোধ করার শক্তিও কারো নেই। এ বিষয়টি কুরআন মাজীদ ও হাদীসের বহু স্থানে বিভিন্নভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে এ বিষয়টিও ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে যে, মানুষের ভাগ্যের ভাঙা-গড়ায় এক আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইখতিয়ার নেই।
আল্লাহই সুখ-দুঃখ দেয়ার অধিকার রাখেন :
وَاِنْ يَّمْسَسْكَ اللهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهٗۤ اِلَّا هُوَؕ وَاِنْ يَّمْسَسْكَ بِخَيْرٍ فَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
আল্লাহ তোমাকে কষ্ট দিলে তিনি ব্যতীত তা মোচনকারী আর কেউ নেই। আর তিনি যদি তোমার কল্যাণ করেন, তবে তিনিই তো সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। (সূরা আন‘আম- ১৭)
وَاِنْ يَّمْسَسْكَ اللهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهٗۤ اِلَّا هُوَؕ وَاِنْ يُّرِدْكَ بِخَيْرٍ فَلَا رَادَّ لِفَضْلِهٖؕ يُصِيْبُ بِهٖ مَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهٖ ؕ وَهُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ
আল্লাহ যদি তোমাকে কষ্ট দেন, তবে তিনি ব্যতীত তা মোচনকারী আর কেউ নেই। আর তিনি যদি তোমার মঙ্গল চান, তবে তাঁর অনুগ্রহ বন্ধ করারও কেউ নেই। তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তিনি মঙ্গল দান করেন; নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা ইউনুস- ১০৭)
আল্লাহ আকাশ থেকে খাবার পাঠাতে সক্ষম :
اِذْ قَالَ الْحَوَارِيُّوْنَ يَا عِيْسَى ابْنَ مَرْيَمَ هَلْ يَسْتَطِيْعُ رَبُّكَ اَنْ يُّنَزِّلَ عَلَيْنَا مَآئِدَةً مِّنَ السَّمَآءِؕ قَالَ اتَّقُوا اللهَ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
(স্মরণ করো) যখন হাওয়ারীরা বলেছিল, হে মারইয়ামের ছেলে ঈসা! তোমার প্রতিপালক কি আমাদের জন্য আসমান হতে খাদ্যভর্তি খাঞ্চা প্রেরণ করতে সক্ষম? সে বলেছিল, আল্লাহকে ভয় করো, যদি তোমরা মুমিন হও। (সূরা মায়েদা- ১১২)
قَالَ اللهُ اِنِّيْ مُنَزِّلُهَا عَلَيْكُمْ
আল্লাহ বললেন, আমি তোমাদের নিকট তা প্রেরণ করব। (সূরা মায়েদা- ১১৫)
আল্লাহ বৃদ্ধ বয়সেও সন্তান দিতে পারেন :
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ وَهَبَ لِيْ عَلَى الْكِبَرِ اِسْمَاعِيْلَ وَاِسْحَاقَ اِنَّ رَبِّيْ لَسَمِيْعُ الدُّعَآءِ
সমসত্ম প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি আমাকে আমার বার্ধক্যে ইসমাঈল ও ইসহাককে দান করেছেন। নিশ্চয় আমার প্রতিপালক প্রার্থনা শ্রবণ করে থাকেন। (সূরা ইবরাহীম- ৩৯)
قَالَ رَبِّ اَنّٰى يَكُوْنُ لِيْ غُلَامٌ وَّكَانَتِ امْرَاَتِيْ عَاقِرًا وَّقَدْ بَلَغْتُ مِنَ الْكِبَرِ عِتِيًّا ‐ قَالَ كَذٰلِكَۚ قَالَ رَبُّكَ هُوَ عَلَيَّ هَيِّنٌ وَّقَدْ خَلَقْتُكَ مِنْ قَبْلُ وَلَمْ تَكُ شَيْئًا
তিনি (যাকারিয়া) বললেন, হে আমার প্রতিপালক! কেমন করে আমার পুত্র হবে অথচ আমার স্ত্রী বন্ধ্যা আর আমিও বার্ধক্যের শেষ সীমায় উপনীত হয়েছি। আল্লাহ বললেন, এভাবেই হবে। তোমার প্রতিপালক বলেন, এটা আমার জন্য খুবই সহজ (বিষয়)। (তাছাড়া) আমি তো ইতোপূর্বে তোমাকেও সৃষ্টি করেছি যখন তুমি কিছুই ছিলে না। (সূরা মারইয়াম- ৮, ৯)
আল্লাহ বন্ধ্যার ঘরেও সন্তান দিতে পারেন :
قَالَ رَبِّ اَنّٰى يَكُوْنُ لِيْ غُلَامٌ وَّقَدْ بَلَغَنِيَ الْكِبَرُ وَامْرَاَتِيْ عَاقِرٌؕ قَالَ كَذٰلِكَ اللهُ يَفْعَلُ مَا يَشَآءُ
তিনি বললেন, হে আমার রব! কীভাবে আমার সন্তান হবে অথচ আমি বার্ধক্যে উপনীত হয়েছি এবং আমার স্ত্রীও বন্ধ্যা। আল্লাহ বললেন, এভাবেই হবে। আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। (সূরা আলে ইমরান- ৪০)
পিতা ছাড়াও মানুষ সৃষ্টি করতে পারেন :
قَالَتْ رَبِّ اَنّٰى يَكُوْنُ لِيْ وَلَدٌ وَّلَمْ يَمْسَسْنِيْ بَشَرٌؕ قَالَ كَذٰلِكِ اللهُ يَخْلُقُ مَا يَشَآءُؕ اِذَا قَضٰۤى اَمْرًا فَاِنَّمَا يَقُوْلُ لَهٗ كُنْ فَيَكُوْنُ
মারইয়াম বললেন, হে আমার রব! কেমন করে আমার সন্তান হবে? আমাকে তো কোন মানুষ স্পর্শ করেনি। আল্লাহ বললেন, এভাবেই। আল্লাহ যা চান তাই সৃষ্টি করেন। তিনি যখন কোন কাজের ফায়সালা করেন তখন বলেন, ‘হও’ ফলে তা হয়ে যায়। (সূরা আলে ইমরান- ৪৭)
আগুনের মাঝেও মানুষকে বাঁচাতে পারেন :
قُلْنَا يَا نَارُ كُوْنِيْ بَرْدًا وَّسَلَامًا عَلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ
আমি বললাম, হে অগ্নি! ইবরাহীমের জন্য শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও। (সূরা আম্বিয়া- ৬৯)
আল্লাহ মি‘রাজ সংঘটিত করাতে পারেন :
سُبْحَانَ الَّذِيْۤ اَسْرٰى بِعَبْدِهٖ لَيْلًا مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ اِلَى الْمَسْجِدِ الْاَقْصَى الَّذِيْ بَارَكْنَا حَوْلَهٗ لِنُرِيَهٗ مِنْ اٰيَاتِنَاؕ اِنَّهٗ هُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ
পবিত্র ও মহিমাময় তিনি, যিনি তাঁর বান্দাকে রজনীতে ভ্রমণ করিয়েছিলেন মাসজিদুল হারাম হতে মাসজিদুল আকসা পর্যমত্ম, যার পরিবেশকে করে দিয়েছিলাম বরকতময়। যাতে করে তাকে আমার নিদর্শনসমূহ দেখাতে পারি; নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। (সূরা বনী ইসরাঈল- ১)
তিনি ইচ্ছা করলে সবাইকে একই দলভুক্ত করতে পারেন :
وَلَوْ شَآءَ اللهُ لَجَعَلَكُمْ اُمَّةً وَّاحِدَةً وَّلٰكِنْ لِّيَبْلُوَكُمْ فِيْ مَاۤ اٰتَاكُمْ فَاسْتَبِقُوا الْخَيْرَاتِ
আল্লাহ যদি চাইতেন, তবে অবশ্যই তিনি তোমাদের সবাইকে এক সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত করে দিতেন। কিন্তু তিনি তোমাদেরকে যাচাই করতে চান, যা তিনি তোমাদের দিয়েছেন তার মাধ্যমে। অতএব তোমরা সৎকাজের প্রতি ধাবিত হও। (সূরা মায়েদা- ৪৮)
তিনি ইচ্ছা করলে সবাইকে হেদায়াত দিতে পারেন :
وَلَوْ شَآءَ اللهُ لَجَمَعَهُمْ عَلَى الْهُدٰى فَلَا تَكُوْنَنَّ مِنَ الْجَاهِلِيْنَ
আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদের সবাইকে অবশ্যই সৎপথে একত্র করতে পারতেন। সুতরাং তুমি মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সূরা আন‘আম- ৩৫)
فَلَوْ شَآءَ لَهَدَاكُمْ اَجْمَعِيْنَ
যদি তিনি ইচ্ছা করতেন তবে তোমাদের সবাইকে অবশ্যই সৎপথে পরিচালিত করতেন। (সূরা আন‘আম- ১৪৯)
ইচ্ছা করলে তিনি সবাইকে ঈমানদার বানাতে পারেন :
وَلَوْ شَآءَ رَبُّكَ لَاٰمَنَ مَنْ فِى الْاَ رْضِ كُلُّهُمْ جَمِيْعًاؕ اَفَاَنْتَ تُكْرِهُ النَّاسَ حَتّٰى يَكُوْنُوْا مُؤْمِنِيْنَ
তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করলে পৃথিবীতে যারা আছে তারা সকলে অবশ্যই ঈমান আনত; তবুও কি তুমি মুমিন হওয়ার জন্য মানুষের উপর জবরদস্তি করবে? (সূরা ইউনুস- ৯৯)
তিনি যাকে ইচ্ছা হেদায়াত দান করেন :
وَمَنْ يَّشَاْ يَجْعَلْهُ عَلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
আর তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে সরল পথে পরিচালিত করেন। (সূরা আন‘আম- ৩৯)
যাকে চান পবিত্র করেন :
اَلَمْ تَرَ اِلَى الَّذِيْنَ يُزَكُّوْنَ اَنْفُسَهُمْ بَلِ اللهُ يُزَكِّيْ مَنْ يَّشَآءُ
তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা নিজেদেরকে পবিত্র মনে করে? বরং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে পবিত্র করেন। (সূরা নিসা- ৪৯)
যাকে ইচ্ছা সন্তান-সন্ততি দিয়ে থাকেন :
يَخْلُقُ مَا يَشَآءُؕ يَهَبُ لِمَنْ يَّشَآءُ اِنَاثًا وَّيَهَبُ لِمَنْ يَّشَآءُ الذُّكُوْرَ ‐ اَوْ يُزَوِّجُهُمْ ذُكْرَانًا وَّاِنَاثًاۚ وَّيَجْعَلُ مَنْ يَّشَآءُ عَقِيْمًاؕ اِنَّهٗ عَلِيْمٌ قَدِيْرٌ
আল্লাহ যা ইচ্ছা তা-ই সৃষ্টি করেন। তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যাসন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্রসন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা তাকে বন্ধ্যা করে রাখেন। নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান। (সূরা শূরা- ৪৯, ৫০)
ব্যাখ্যা : এটা আল্লাহর নিরঙ্কুশ ক্ষমতার একটি সুস্পষ্ট প্রমাণ। কোন মানুষ, সে পার্থিব ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের যত বড় কর্তাই হোক না কেন, কিংবা তাকে আধ্যাত্মিক ক্ষমতার যত বড় মালিকই মনে করা হোক না কেন, অন্যদের সন্তান দেয়া তো দূরের কথা নিজের জন্য নিজের ইচ্ছানুসারে সন্তান জন্ম দানেও সে কখনো সক্ষম হয়নি। আল্লাহ যাকে বন্ধ্যা করে দিয়েছেন সে সন্তানওয়ালা হতে পারেনি। আল্লাহ যাকে শুধু কন্যাসন্তান দান করেছেন সে পুত্রসন্তানলাভ করতে পারেনি এবং আল্লাহ যাকে শুধু পুত্রসন্তানই দিয়েছেন সে কন্যাসন্তান লাভ করতে পারেনি, এ ক্ষেত্রে সবাই অসহায়। এসব দেখে শুনেও যদি কেউ আল্লাহর বাদশাহীতে সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী দাবী করে, কিংবা অন্য কাউকে তাঁর অংশীদার মনে করে, তাহলে সেটা তার নিজের অদূরদর্শিতা- যার পরিণাম সে নিজেই ভোগ করবে। কেউ নিজে নিজেই কোনকিছু বিশ্বাস করলে, তার কারণে প্রকৃত সত্যে কোন পরিবর্তন সাধিত হয় না।
আল্লাহ একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী :
وَهُوَ الْقَاهِرُ فَوْقَ عِبَادِهٖؕ وَهُوَ الْحَكِيْمُ الْخَبِيْرُ
তিনি তাঁর বান্দাদের উপর একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী, তিনি মহাজ্ঞানী ও সকল বিষয়ের খবর রাখেন। (সূরা আন‘আম- ১৮)
আল্লাহ চাইলে আরো উত্তম মানুষ আনতে পারেন :
اِنْ يَّشَاْ يُذْهِبْكُمْ اَيُّهَا النَّاسُ وَيَاْتِ بِاٰخَرِيْنَؕ وَكَانَ اللهُ عَلٰى ذٰلِكَ قَدِيْرًا
হে মানুষ! তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদেরকে অপসারণ করতে এবং (তোমাদের স্থলে) অপর কাউকে নিয়ে আসতে পারেন; আর আল্লাহ এটা করতে সম্পূর্ণ সক্ষম। (সূরা নিসা- ১৩৩)
اِنْ يَّشَاْ يُذْهِبْكُمْ وَيَاْتِ بِخَلْقٍ جَدِيْدٍ ‐ وَمَا ذٰلِكَ عَلَى اللهِ بِعَزِيْزٍ
যদি তিনি ইচ্ছা করেন তবে তোমাদেরকে অপসারণ করে দেবেন এবং তদস্থলে নতুন এক জাতি সৃষ্টি করবেন। আর এরূপ করা আল্লাহর পক্ষে মোটেই কঠিন নয়। (সূরা ফাতির- ১৬, ১৭)
اَلَمْ تَرَ اَنَّ اللهَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضَ بِالْحَقِّؕ اِنْ يَّشَاْ يُذْهِبْكُمْ وَيَاْتِ بِخَلْقٍ جَدِيْدٍ ‐ - وَمَا ذٰلِكَ عَلَى اللهِ بِعَزِيْزٍ
তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, আল্লাহ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছেন? তিনি ইচ্ছা করলেই তোমাদের অসিত্মত্ব বিলুপ্ত করতে পারেন এবং এক নতুন সৃষ্টি অসিত্মত্বে আনতে পারেন। আর এটা আল্লাহর জন্য আদৌ কঠিন নয়। (সূরা ইবরাহীম- ১৯, ২০)
আল্লাহ ইচ্ছা করলে পানি শুকিয়ে দিতে পারেন :
وَاَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَآءِ مَآءً ۢبِقَدَرٍ فَاَسْكَنَّاهُ فِى الْاَ رْضِ وَاِنَّا عَلٰى ذَهَابٍ ۢبِهٖ لَقَادِرُوْنَ
আমি আকাশ হতে বারি বর্ষণ করি পরিমিতভাবে; অতঃপর আমি সেটা মৃত্তিকায় সংরক্ষণ করি। আর আমি তাকে অপসারণ করতেও সক্ষম। (সূরা মু’মিনূন- ১৮)
قُلْ اَرَاَيْتُمْ اِنْ اَصْبَحَ مَآؤُكُمْ غَوْرًا فَمَنْ يَّاْتِيْكُمْ بِمَآءٍ مَّعِيْنٍ
বলো, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, যদি তোমাদের পানি ভূগর্ভের তলদেশে চলে যায় তবে কে তোমাদেরকে সে প্রবাহমান পানি এনে দেবে? (সূরা মুলক- ৩০)
আল্লাহ ইচ্ছা করলে ওহীর জ্ঞান ছিনিয়ে নিতে পারেন :
وَلَئِنْ شِئْنَا لَنَذْهَبَنَّ بِالَّذِيْۤ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ ثُمَّ لَا تَجِدُ لَكَ بِه عَلَيْنَا وَكِيْلًا
আমি ইচ্ছা করলে তোমার প্রতি যা ওহী করেছি তা অবশ্যই প্রত্যাহার করতে পারতাম; আর এ বিষয়ে তুমি আমার বিরুদ্ধে কোন সাহায্যকারী পেতে না। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৮৬)
আল্লাহ যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেন এবং যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন :
يَغْفِرُ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيُعَذِّبُ مَنْ يَّشَآءُؕ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন এবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি প্রদান করেন। আর আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল ও পরম করুণাময়। (সূরা আলে ইমরান- ১২৯)
اَلَمْ تَعْلَمْ اَنَّ اللهَ لَهٗ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِؕ يُعَذِّبُ مَنْ يَّشَآءُ وَيَغْفِرُ لِمَنْ يَّشَآءُؕ وَاللهُ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
তুমি কি জান না যে, আসমান ও জমিনের আধিপত্য আল্লাহরই। তিনি যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেন এবং যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। আল্লাহ সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান (সূরা মায়েদা- ৪০)
আল্লাহর শাস্তি কেউ প্রতিহত করতে পারে না :
وَلَا يُرَدُّ بَاْسُهٗ عَنِ الْقَوْمِ الْمُجْرِمِيْنَ
অপরাধী সম্প্রদায়ের উপর হতে তাঁর শাস্তি প্রতিহত করা হয় না। (সূরা আন‘আম- ১৪৭)
আল্লাহর পাকড়াও খুবই কঠোর :
وَكَذٰلِكَ اَخْذُ رَبِّكَ اِذَاۤ اَخَذَ الْقُرٰى وَهِيَ ظَالِمَةٌؕ اِنَّ اَخْذَهٗۤ اَلِيْمٌ شَدِيْدٌ
তোমার প্রতিপালকের শাসিত্ম এমনই! তিনি শাসিত্ম দান করেন জনপদবাসীকে, যখন তারা যুলুম করে থাকে। নিশ্চয় তাঁর শাসিত্ম মর্মান্তিক ও কঠিন। (সূরা হুদ- ১০২)
আল্লাহ বিভিন্নভাবে শাস্তি দিতে পারেন :
قُلْ هُوَ الْقَادِرُ عَلٰۤى اَنْ يَّبْعَثَ عَلَيْكُمْ عَذَابًا مِّنْ فَوْقِكُمْ اَوْ مِنْ تَحْتِ اَرْجُلِكُمْ اَوْ يَلْبِسَكُمْ شِيَعًا وَّيُذِيْقَ بَعْضَكُمْ بَاْسَ بَعْضٍؕ اُنْظُرْ كَيْفَ نُصَرِّفُ الْاٰيَاتِ لَعَلَّهُمْ يَفْقَهُوْنَ
বলো, তিনি তোমাদের ঊর্ধ্বদেশ অথবা পাদদেশ হতে শাস্তি প্রেরণ করতে অথবা তোমাদেরকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে অথবা একদলকে অপর দলের দ্বারা শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করাতে সক্ষম। দেখো, আমি কীভাবে বিভিন্ন প্রকার আয়াত বার বার বর্ণনা করি, যেন তারা অনুধাবন করে। (সূরা আন‘আম- ৬৫)
আল্লাহর আযাব খুবই দ্রুত আসতে পারে :
وَرَبُّكَ الْغَفُوْرُ ذُو الرَّحْمَةِؕ لَوْ يُؤَاخِذُهُمْ بِمَا كَسَبُوْا لَعَجَّلَ لَهُمُ الْعَذَابَؕ بَلْ لَّهُمْ مَّوْعِدٌ لَّنْ يَّجِدُوْا مِنْ دُوْنِه مَوْئِلًا
তোমার প্রতিপালক পরম ক্ষমাশীল ও দয়াবান। তাদের কৃতকর্মের জন্য যদি তিনি তাদেরকে পাকড়াও করতে চাইতেন তবে তিনি অবশ্যই তাদের শাসিত্ম ত্বরান্বিত করতেন। কিন্তু তাদের জন্য রয়েছে এক প্রতিশ্রুত মুহূর্ত, যা হতে তারা কখনই কোন আশ্রয়স্থল পাবে না। (সূরা কাহফ- ৫৮)
আল্লাহ জমিনকে ধসিয়ে দিতে সক্ষম :
اَاَمِنْتُمْ مَّنْ فِى السَّمَآءِ اَنْ يَّخْسِفَ بِكُمُ الْاَ رْضَ فَاِذَا هِيَ تَمُوْرُ
তোমরা কি নিরাপদ হয়ে গেছ যে, আকাশে যিনি রয়েছেন তিনি তোমাদেরকেসহ ভূমিকে ধসিয়ে দেবেন না? তখন ওটা আকস্মিকভাবে থরথর করে কাঁপতে থাকবে। (সূরা মুলক- ১৬)
শিলা দিয়েও ধ্বংস করতে পারেন :
اَفَاَمِنْتُمْ اَنْ يَّخْسِفَ بِكُمْ جَانِبَ الْبَرِّ اَوْ يُرْسِلَ عَلَيْكُمْ حَاصِبًا ثُمَّ لَا تَجِدُوْا لَكُمْ وَكِيْلًا
তোমরা কি নিরাপত্তা পেয়েছ যে, তিনি তোমাদেরকেসহ কোন অঞ্চল ধসিয়ে দেবেন না অথবা তোমাদের উপর শিলা বর্ষণ করবেন না? (যদি এমনটি ঘটতে শুরু করে) তখন তোমরা তোমাদের কোন অভিভাবক (খুঁজে) পাবে না। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৬৮)
সমুদ্রের মধ্যেও ডুবিয়ে দিতে পারেন :
اَمْ اَمِنْتُمْ اَنْ يُّعِيْدَكُمْ فِيْهِ تَارَةً اُخْرٰى فَيُرْسِلَ عَلَيْكُمْ قَاصِفًا مِّنَ الرِّيْحِ فَيُغْرِقَكُمْ بِمَا كَفَرْتُمْ ثُمَّ لَا تَجِدُوْا لَكُمْ عَلَيْنَا بِه تَبِيْعًا
অথবা তোমরা কি নিরাপত্তা পেয়েছ যে, তিনি তোমাদেরকে সমুদ্রে নিয়ে যাবেন না এবং তোমাদের উপর প্রচন্ড ঝড়ো হাওয়া পাঠাবেন না। অতঃপর তোমাদের কুফরীর জন্য তোমাদেরকে নিমজ্জিত করবেন না? তখন তোমরা এ বিষয়ে আমার বিরুদ্ধে কোন সাহায্যকারী পাবে না। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৬৯)
আল্লাহকে ব্যর্থ করার কেউ নেই :
وَمَا كَانَ اللهُ لِيُعْجِزَهٗ مِنْ شَيْءٍ فِى السَّمَاوَاتِ وَلَا فِى الْاَ رْضِؕ اِنَّهٗ كَانَ عَلِيْمًا قَدِيْرًا
আল্লাহ এমন নন যে, আসমান ও জমিনের কোনকিছু তাঁকে অক্ষম করতে পারে। তিনিই সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান। (সূরা ফাতির- ৪৪)
وَمَاۤ اَنْتُمْ بِمُعْجِزِيْنَ فِى الْاَ رْضِ وَمَا لَكُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ مِنْ وَّلِيٍّ وَّلَا نَصِيْرٍ
তোমরা পৃথিবীতে (আল্লাহকে) ব্যর্থ করতে পারবে না। আর আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন অভিভাবক নেই এবং কোন সাহায্যকারীও নেই। (সূরা শূরা- ৩১)
আল্লাহর কথার কোন পরিবর্তন হয় না :
مَا يُبَدَّلُ الْقَوْلُ لَدَيَّ وَمَاۤ اَنَاْ بِظَلَّامٍ لِّلْعَبِيْدِ
আমার কথার রদ-বদল হয় না এবং আমি আমার বান্দাদের প্রতি অত্যাচারীও নই। (সূরা ক্বাফ- ২৯)
আল্লাহ সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেন :
وَيُحِقُّ اللهُ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهٖ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُوْنَ
আল্লাহ তাঁর বাণী অনুযায়ী সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করবেন, যদিও অপরাধীরা এটা অপছন্দ করে। (সূরা ইউনুস- ৮২)
আল্লাহ সত্য প্রকাশে লজ্জাবোধ করেন না :
وَاللهُ لَا يَسْتَحْيِيْ مِنَ الْحَقِّ
আর আল্লাহ সত্য প্রকাশ করতে লজ্জা করেন না। (সূরা আহযাব- ৫৩)
আসমান ও জমিনের চাবিকাঠি আল্লাহর হাতে :
لَهٗ مَقَالِيْدُ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِ
আসমান ও জমিনের চাবিকাঠি তাঁরই অধিকারে। (সূরা যুমার- ৬৩)
لَهٗ مَقَالِيْدُ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِۚ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيَقْدِرُؕ اِنَّهٗ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ
আসমান ও জমিনের চাবিসমূহ তাঁরই অধিকারে। তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে রিযিক বৃদ্ধি করে দেন অথবা সংকুচিত করে দেন। নিশ্চয় তিনি সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ। (সূরা শূরা- ১২)
সবকিছুর ভান্ডার আল্লাহর হাতে :
وَلِلّٰهِ خَزَآئِنُ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِ وَلٰكِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ لَا يَفْقَهُوْنَ
আসমান ও জমিনের ধনভান্ডার তো আল্লাহরই; কিন্তু মুনাফিকরা তা বুঝে না। (সূরা মুনাফিকূন- ৭)
আল্লাহই সবকিছুর মধ্যে সমন্বয় সাধন করেন :
وَاِنْ مِّنْ شَيْءٍ اِلَّا عِنْدَنَا خَزَآئِنُهٗ وَمَا نُنَزِّلُهٗۤ اِلَّا بِقَدَرٍ مَّعْلُوْمٍ
আমারই নিকট আছে প্রত্যেক বস্তুর ধনভান্ডার এবং আমি তা পরিজ্ঞাত পরিমাণেই সরবরাহ করে থাকি।
(সূরা হিজর- ২১)
ব্যাখ্যা : এখানে এ সত্যটি সম্পর্কে সজাগ করে দেয়া হয়েছে যে, সীমিত ও পরিকল্পিত প্রবৃদ্ধির এ নিয়ম কেবল উদ্ভিদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়; বরং যাবতীয় সৃষ্টির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। বাতাস, পানি, আলো, শীত, গ্রীষ্ম, জীব, জড়, উদ্ভিদ তথা প্রত্যেকটি জিনিস, প্রত্যেকটি প্রজাতি, প্রত্যেকটি শ্রেণি ও প্রত্যেকটি শক্তির জন্য আলাদা আলাদা সীমা নির্ধারিত রয়েছে। সবকিছুই নিজ নিজ সীমার মধ্যে অবস্থান করছে। তাদের জন্য যে পরিমাণ নির্ধারিত রয়েছে তার চেয়ে তারা কখনো বাড়েও না আবার কমেও না। এ প্রজ্ঞামূলক নির্ধারিত অবস্থার ফলে পৃথিবী থেকে আকাশ পর্যন্ত সমগ্র বিশ্বব্যবস্থায় ভারসাম্য ও সমন্বয় সাধিত হচ্ছে। এ পৃথিবী যদি একটি আকস্মিক ঘটনার ফল হতো অথবা বহু উপাস্যের কর্মের ফল হতো, তাহলে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের অসংখ্য বস্তু ও শক্তির মধ্যে এ পর্যায়ের পূর্ণ ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া ও অব্যাহতভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকা সম্ভব হতো না।
কা‘বাঘর আল্লাহর একটি নিদর্শন :
اِنَّ اَوَّلَ بَيْتٍ وُّضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِيْ بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَّهُدًى لِّلْعَالَمِيْنَ ‐ - فِيْهِ اٰيَاتٌ ۢبَيِّنَاتٌ مَّقَامُ اِبْرَاهِيْمَۚ وَمَنْ دَخَلَهٗ كَانَ اٰمِنًا
নিশ্চয় মানুষের জন্য সর্বপ্রথম নির্মিত ঘর মক্কায় অবস্থিত, যা বরকতময় এবং বিশ্ববাসীর জন্য পথপ্রদর্শক। সেখানে রয়েছে স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ (এর মধ্যে একটি হচ্ছে) মাকামে ইবরাহীম। আর যে ব্যক্তি এ ঘরে প্রবেশ করে, সে নিরাপদ হয়ে যায়। (সূরা আলে ইমরান- ৯৬, ৯৭)
রাত ও দিন আল্লাহর নিদর্শন :
اَلَمْ يَرَوْا اَنَّا جَعَلْنَا اللَّيْلَ لِيَسْكُنُوْا فِيْهِ وَالنَّهَارَ مُبْصِرًاؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ
তারা কি অনুধাবন করে না যে, আমি রাতকে সৃষ্টি করেছি তাদের বিশ্রামের জন্য এবং দিবসকে করেছি আলোকপ্রদ। তাতে মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে। (সূরা নামল- ৮৬)
দিন ও রাতের আবর্তন আল্লাহর নিদর্শন :
اِنَّ فِيْ خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَاٰيَاتٍ لِّاُولِى الْاَلْبَابِ
নিশ্চয় আসমান ও জমিনের সৃষ্টির মধ্যে এবং দিবস ও রাত্রির পরিবর্তনে জ্ঞানবানদের জন্য স্পষ্ট নিদর্শনাবলি রয়েছে। (সূরা আলে ইমরান- ১৯০)
ব্যাখ্যা : রাত ও দিনের এ ভিন্নতার মধ্যেও এ নিদর্শন রয়েছে যে, দু’টিই পূর্ণ নিয়মতান্ত্রিকভাবে একটার পর একটা আগমন করে। আবার এদিক দিয়েও নিদর্শন যে, একটি আলো অপরটি অন্ধকার। তাছাড়া এর নিদর্শন হওয়ার আরো একটি কারণ হচ্ছে, একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দিন ক্রমান্বয়ে ছোট এবং রাত বড় হতে থাকে এবং এক সময় দু’টিই এক সমান হয়ে যায়। তারপর আবার ক্রমান্বয়ে দিন বড় এবং রাত ছোট হতে থাকে। তারপর এক সময় দিন ও রাত আবার সমান হয়ে যায়। রাত ও দিনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের যে ভিন্নতা দেখা যায়, তাতে বিরাট উদ্দেশ্য জড়িত রয়েছে। এ উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে এ কথাই প্রমাণ করে যে, সূর্য, পৃথিবী এবং পৃথিবীর সবকিছুর স্রষ্টা একমাত্র আল্লাহ। তিনিই সবকিছুকে নিজ নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। আবু যোহা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন وَاِلٰهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ لَّاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الرَّحْمٰنُ الرَّحِيْمُ এ আয়াতটি নাযিল হয়, তখন মুশরিকরা আশ্চর্য হয়ে বলতে লাগল, আল্লাহ কি কেবল একজন? যদি তোমার কথা সত্য হয়ে থাকে তবে এর পক্ষে প্রমাণ পেশ করো। তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতটি নাযিল করেন। (সুনানে সা‘দ ইবনে মানসূর, হা/১৩৮)
চাঁদের পরিভ্রমণ ও হ্রাস-বৃদ্ধি আল্লাহর নিদর্শন :
وَالْقَمَرَ قَدَّرْنَاهُ مَنَازِلَ حَتّٰى عَادَ كَالْعُرْجُوْنِ الْقَدِيْمِ ‐ - لَا الشَّمْسُ يَنْۢبَغِيْ لَهَاۤ اَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلَا اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ ؕ وَكُلٌّ فِيْ فَلَكٍ يَّسْبَحُوْنَ
আমি চন্দ্রের জন্য নির্ধারণ করেছি বিভিন্ন স্তর, এমনকি তা ভ্রমণ শেষে ক্ষীণ হয়ে খেজুরের পুরাতন ডালের মতো হয়ে যায়। সূর্যের সাধ্য নেই যে, সে চন্দ্রকে ধরে ফেলে এবং রাত্রিও দিনের পূর্বে আসতে পারে না। প্রত্যেকেই নির্ধারিত কক্ষে বিচরণ করে। (সূরা ইয়াসীন, ৩৯-৪০)
ব্যাখ্যা : চাঁদের পরিবর্তন মাসের মধ্যে প্রতিদিন হতে থাকে। প্রথম দিন সে ছোট আকারে উদিত হয়, যাকে আরবি ভাষায় هِلَالٌ (হিলাল) বা নতুন চাঁদ বলা হয়। তারপর ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত চৌদ্দ দিনের রাতে তা পূর্ণতা লাভ করে। তারপর প্রতিদিন তার দেহ হ্রাস পেতে থাকে। এমনকি শেষ পর্যন্ত আবার হিলাল আকারে ফিরে আসে। হাজার হাজার বছর থেকে এ প্রক্রিয়া চলে আসছে এবং কখনো এর ব্যতিক্রম দেখা যায়নি।
আকাশে বিচরণকারী পাখি আল্লাহর নিদর্শন :
اَلَمْ يَرَوْا اِلَى الطَّيْرِ مُسَخَّرَاتٍ فِيْ جَوِّ السَّمَآءِؕ مَا يُمْسِكُهُنَّ اِلَّا اللهُؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ
তারা কি আকাশের শূন্য গর্ভে নিয়ন্ত্রণাধীন পাখির প্রতি লক্ষ্য করে না? সেগুলোকে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউই স্থির রাখেন না। অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য। (সূরা নাহল- ৭৯)
বিস্তৃত জমিন, পাহাড় ও নদ-নদী আল্লাহর নিদর্শন :
وَهُوَ الَّذِيْ مَدَّ الْاَ رْضَ وَجَعَلَ فِيْهَا رَوَاسِيَ وَاَنْهَارًاؕ وَمِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ جَعَلَ فِيْهَا زَوْجَيْنِ اثْنَيْنِ يُغْشِى اللَّيْلَ النَّهَارَؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ
তিনিই পৃথিবীকে করেছেন বিস্তৃত এবং এতে পর্বতমালা ও নদীসমূহও সৃষ্টি করেছেন। আর (এতে) প্রত্যেক প্রকারের ফল সৃষ্টি করেছেন জোড়ায় জোড়ায়। তিনি দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন। নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে চিমত্মাশীল সম্প্রদায়ের জন্য। (সূরা রা‘দ- ৩)
বাতাসের গতির পরিবর্তন আল্লাহর নিদর্শন :
وَمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ مِنَ السَّمَآءِ مِنْ رِّزْقٍ فَاَحْيَا بِهِ الْاَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا وَتَصْرِيْفِ الرِّيَاحِ اٰيَاتٌ لِّقَوْمٍ يَّعْقِلُوْنَ
আল্লাহ আকাশ হতে যে পানি বর্ষণ করার দ্বারা পৃথিবীকে তার মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন তাতে এবং বায়ুর পরিবর্তনে নিদর্শন রয়েছে জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য। (সূরা জাসিয়া- ৫)
ব্যাখ্যা : বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন উচ্চতায় বাতাস প্রবাহিত হয়, যার কারণে ঋতুর পরিবর্তন সংঘটিত হয়। পৃথিবীর পৃষ্ঠের উপরিভাগে একটি বিশাল বায়ু স্তর আছে। তাতে এমনসব উপাদান বিদ্যমান রয়েছে, যা প্রাণীকুলের শ্বাস গ্রহণের জন্য প্রয়োজন এবং নানা প্রকার আসমানী বিপদাপদ থেকে বাঁচার কারণ। এর সাথে এটাও দেখার বিষয় যে, এ বাতাস শুধু বায়ুমন্ডলে বিদ্যমান নয়, মাঝে মধ্যে তা বিভিন্নভাবে প্রবাহিত হতে থাকে। কখনো মৃদুভাবে, কখনো শুষ্কভাবে, কখনো আর্দ্রভাবে, কখনো বৃষ্টিবাহী হিসেবে এবং কখনো ঝড়ো হাওয়ার আকারে প্রবাহিত হয়। এসব বাতাস নিজ থেকেই প্রবাহিত হয় না এবং এলোমেলোভাবেও প্রবাহিত হয় না। এরও একটা শৃঙ্খলা আছে, যা সাক্ষ্য দেয় যে, এ ব্যবস্থা পূর্ণমাত্রায় যুক্তিনির্ভর এবং এর দ্বারা অতীব গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যাবলি পূরণ হচ্ছে। তাছাড়া পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যে প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল অবস্থা অনুসারে শীত ও গ্রীষ্মের যে হ্রাস বৃদ্ধি হয়, তার সাথেও এর অত্যন্ত গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। ঋতু পরিবর্তন ও বৃষ্টি বণ্টনের সাথেও এর অত্যন্ত গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এর সবগুলো জিনিসই ডেকে ডেকে বলছে, কোন অন্ধ প্রকৃতি আকষ্মিকভাবে এর ব্যবস্থা করে দেয়নি। কিংবা সূর্য ও পৃথিবী, বাতাস ও পানি এবং উদ্ভিদ ও প্রাণীকুলের জন্য আলাদা আলাদা কোন ব্যবস্থাপক নেই। বরং নিশ্চিতভাবে একমাত্র আল্লাহই এসবের স্রষ্টা এবং এক বিরাট উদ্দেশ্য সাধনের জন্য তাঁর জ্ঞান ও কৌশল এ ব্যবস্থা করেছে। তাঁর অসীম ক্ষমতাবলেই এ ব্যবস্থা পূর্ণ নিয়মতান্ত্রিকতার সাথে একটি নির্দিষ্ট নিয়মে চলছে।
সমুদ্রে জাহাজ চলাচল আল্লাহর নিদর্শন :
وَمِنْ اٰيَاتِهٖۤ اَنْ يُّرْسِلَ الرِّيَاحَ مُبَشِّرَاتٍ وَّلِيُذِيْقَكُمْ مِّنْ رَّحْمَتِهٖ وَلِتَجْرِيَ الْفُلْكُ بِاَمْرِهٖ وَلِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِهٖ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
আর তাঁর দৃষ্টান্তগুলোর মধ্যে একটি এই যে, তিনি বাতাস পাঠান সুখবর দানকারীরূপে। যাতে তিনি তোমাদেরকে তাঁর অনুগ্রহের স্বাদ ভোগ করান। আর যেন নৌযানসমূহ তাঁর নির্দেশে চলাচল করে, যেন তোমরা তাঁর অনুগ্রহ অন্বেষণ করতে পার এবং যেন তোমরা তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা রূম- ৪৬)
নৌকা ও অন্যান্য যানবাহন আল্লাহর নিদর্শন :
وَاٰيَةٌ لَّهُمْ اَنَّا حَمَلْنَا ذُرِّيَّتَهُمْ فِى الْفُلْكِ الْمَشْحُوْنِ ‐ - وَخَلَقْنَا لَهُمْ مِّنْ مِّثْلِهٖ مَا يَرْكَبُوْنَ
আর তাদের জন্য একটি নিদর্শন এই যে, আমি তাদের বংশধরদেরকে (এক সময় একটি) ভরা নৌকায় আরোহণ করিয়েছিলাম। আর আমি তাদের জন্য এরূপ (নৌযান) সৃষ্টি করেছি, যেন তারা আরোহণ করে। (সূরা ইয়াসীন- ৪১, ৪২)
সমুদ্রে চলমান জাহাজ আল্লাহর নিদর্শন :
وَمِنْ اٰيَاتِهِ الْجَوَارِ فِى الْبَحْرِ كَالْاَعْلَامِ
তাঁর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত হলো সমুদ্রে চলমান পর্বত সদৃশ নৌযানসমূহ। (সূরা শূরা- ৩২)
ব্যাখ্যা : পৃথিবীর তিনচতুর্থাংশ পানি এবং একচতুর্থাংশ স্থলভাগ। স্থলভাগেরও বহু সংখ্যক ছোট বড় অঞ্চলের মধ্যে জলভাগ অবস্থিত। পৃথিবীর এসব স্থলভাগে মানব বসতি বিস্তার এবং তাদের মাঝে পর্যটন ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হওয়া আদৌ সম্ভব হতো না, যদি পানি ও বাতাসকে এমন নিয়মের অধীন না করা হতো, যার কারণে নৌ-পরিবহন সম্ভব হয়েছে এবং মানুষ জাহাজ নির্মাণে সক্ষম হয়েছে। এটা কি এ বিষয়ের সুস্পষ্ট প্রমাণ নয় যে, এক সর্বশক্তিমান, দয়ালু ও মহাজ্ঞানী প্রভু আছেন, যিনি মানুষ, পৃথিবী, পানি, সমুদ্র, বাতাস এবং ভূপৃষ্ঠের সমস্ত জিনিসকে তাঁর নিজের বিশেষ পরিকল্পনানুসারে সৃষ্টি করেছেন?
বৃষ্টি তৈরি করা আল্লাহর নিদর্শন :
اَلَمْ تَرَ اَنَّ اللهَ يُزْجِيْ سَحَابًا ثُمَّ يُؤَلِّفُ بَيْنَهٗ ثُمَّ يَجْعَلُهٗ رُكَامًا فَتَرَى الْوَدْقَ يَخْرُجُ مِنْ خِلَالِهٖۚ وَيُنَزِّلُ مِنَ السَّمَآءِ مِنْ جِبَالٍ فِيْهَا مِنْ ۢبَرَدٍ فَيُصِيْبُ بِهٖ مَنْ يَّشَآءُ وَيَصْرِفُهٗ عَنْ مَّنْ يَّشَآءُؕ يَكَادُ سَنَا بَرْقِهٖ يَذْهَبُ بِالْاَبْصَارِ
তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ মেঘমালাকে সঞ্চালন করেন, তারপর তাদেরকে একত্র করেন এবং পরে পুঞ্জীভূত করেন। অতঃপর তুমি দেখতে পাও যে, তা হতে নির্গত হয় বারিধারা। (আরো দেখতে পাও যে) তিনি আকাশের শিলাস্তর হতে শিলা বর্ষণ করেন এবং এটা দ্বারা তিনি যাকে ইচ্ছা আঘাত করেন; আবার যার থেকে ইচ্ছা অন্যদিকে ফিরিয়ে দেন। মেঘের বিদ্যুৎ ঝলক (চোখে ধাঁধা লাগিয়ে দেয়া) মনে হয় তা যেন দৃষ্টিশক্তি কেঁড়ে নেবে। (সূরা নূর- ৪৩)
মৃত জমিনকে জীবিতকরণ আল্লাহর নিদর্শন : গুলো
وَاللهُ اَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَحْيَا بِهِ الْاَ رْضَ بَعْدَ مَوْتِهَاؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّسْمَعُوْنَ
আল্লাহ আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন এবং তা দ্বারা মৃত ভূমিকে পুনর্জীবিত করেন। অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে যে সম্প্রদায় কথা শুনে তাদের জন্য। (সূরা নাহল- ৬৫)
উদ্ভিদ ও বাগান আল্লাহর নিদর্শন :
اَوَلَمْ يَرَوْا اِلَى الْاَ رْضِ كَمْ اَنْۢبَتْنَا فِيْهَا مِنْ كُلِّ زَوْجٍ كَرِيْمٍ ‐ - اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةًؕ وَمَا كَانَ اَكْثَرُهُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
তারা কি জমিনের দিকে লক্ষ্য করে না? আমি তাতে প্রত্যেক প্রকারের কত উৎকৃষ্ট উদ্ভিদ উদগত করেছি! নিশ্চয় এতে রয়েছে নিদর্শন, কিন্তু তাদের অধিকাংশই মুমিন নয়। (সূরা শু‘আরা- ৭, ৮)
وَاٰيَةٌ لَّهُمُ الْاَ رْضُ الْمَيْتَةُۚ اَحْيَيْنَاهَا وَاَخْرَجْنَا مِنْهَا حَبًّا فَمِنْهُ يَاْكُلُوْنَ ‐ وَجَعَلْنَا فِيْهَا جَنَّاتٍ مِّنْ نَّخِيْلٍ وَّاَعْنَابٍ وَّفَجَّرْنَا فِيْهَا مِنَ الْعُيُوْنِ ‐ - لِيَاْكُلُوْا مِنْ ثَمَرِهٖ وَمَا عَمِلَتْهُ اَيْدِيْهِمْؕ اَفَلَا يَشْكُرُوْنَ
আর তাদের জন্য একটি নিদর্শন হলো মৃত জমিন। আমি তাকে সজীব করি এবং তা থেকে উৎপন্ন করি শস্য, ফলে তা থেকে তারা খেয়ে থাকে। আমি তাতে সৃষ্টি করি খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান এবং তাতে প্রবাহিত করি ঝর্ণাসমূহ। যেন তারা এর ফলমূল থেকে খাদ্য গ্রহণ করতে পারে। তাদের হাত এটা সৃষ্টি করেনি; তবুও কি তারা কৃতজ্ঞ হবে না? (সূরা ইয়াসীন, ৩৩-৩৫)
ব্যাখ্যা : মানুষ দিন-রাত ভূমি থেকে উৎপাদিত শস্য ও ফলমূল আহার করছে। তারা গাফলতির পর্দা ছিন্ন করে গভীরভাবে চিন্তা করলে জানতে পারবে যে, এ ভূমির আবরণ ভেদ করে সবুজ শ্যামল বন-বনানী সৃষ্টি এবং নদ-নদীর স্রোত প্রবাহিত হওয়া এমন কোন খেলা নয়, যা নিজে নিজেই চলছে। পৃথিবীর প্রকৃত রূপ সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করলে দেখা যাবে যে, এদের মধ্যে জীবনের নামমাত্রও নেই। এ নিষ্প্রাণ জমিনের বুক চিরে উদ্ভিদগুলোর জীবন লাভ করা সম্ভব হলো কেমন করে? কয়েকটি বড় বড় উপকরণ সংগৃহীত না হলে এ জীবনধারা আদৌ অস্তিত্ব লাভ করতে পারত না। আর তা হলো :
১. পৃথিবীর উপরিভাগে এমন উপাদানের পর্দা বিছানো আছে, যাতে উদ্ভিদের শিকড় তার মধ্যে বিস্তার লাভ করে খাদ্য গ্রহণ করতে পারে।
২. জমিনের উপর বিভিন্ন পদ্ধতিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে উদ্ভিদের শিকড়সমূহ তা চুষে নিতে সক্ষম হয়।
৩. শূন্য আকাশে বায়ু সৃষ্টি করা হয়েছে, যা বৃষ্টি বহনের কাজ করে। এর মধ্যে এমনসব গ্যাসের সমাবেশ ঘটে, যা উদ্ভিদের জীবন ও তাদের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন।
৪. সূর্য ও পৃথিবীর মধ্যে এমন সম্পর্ক স্থাপন করা হয়েছে, যার ফলে উদ্ভিদের জীবন গঠনে প্রয়োজনানুসারে উষ্ণতা এবং অনুকূল পরিবেশ লাভ করতে পারে।
এ চারটি বড় বড় উপকরণ সৃষ্টি করার পর উদ্ভিদের অস্তিত্ব লাভ করা সম্ভব হয়। এদের মধ্য থেকে প্রত্যেকের বীজ এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যার ফলে যখনই তা উপযোগী জমি, পানি ও বাতাস পায় তখনই তার মধ্যে উদ্ভিদ জন্ম নেয়া শুরু হয়ে যায়। এছাড়াও এ বীজের মধ্যে এমন ব্যবস্থাও করে দেয়া হয়েছে, যার ফলে প্রত্যেক উদ্ভিদ তার নিজ প্রজাতির চারা জন্ম দেয়। এসব উদ্ভিদ অসংখ্য শ্রেণির পশু ও মানবকুলের খাদ্য, ঔষধ, পোষাক ও অন্যান্য অগণিত প্রয়োজন পূরণ করে। এ বিস্ময়কর ব্যবস্থা সম্পর্কে যে ব্যক্তিই চিন্তা করবে, সে যদি হঠকারী ও সংকীর্ণ না হয় তাহলে তার অন্তর সাক্ষ্য দেবে যে, এ সবকিছু আপনা-আপনি হতে পারে না; মহান আল্লাহই এসব পরিচালনা করছেন।
বিভিন্ন স্বাদের ফলমূল আল্লাহর নিদর্শন :
وَفِى الْاَرْضِ قِطَعٌ مُّتَجَاوِرَاتٌ وَّجَنَّاتٌ مِّنْ اَعْنَابٍ وَّزَرْعٌ وَّنَخِيْلٌ صِنْوَانٌ وَّغَيْرُ صِنْوَانٍ يُّسْقٰى بِمَآءٍ وَّاحِدٍؕ وَنُفَضِّلُ بَعْضَهَا عَلٰى بَعْضٍ فِى الْاُكُلِؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَّعْقِلُوْنَ
পৃথিবীতে রয়েছে পরস্পর সংলগ্ন ভূখন্ড, এতে আছে আঙ্গুরের বাগান, শস্যক্ষেত্র, একাধিক শীষবিশিষ্ট অথবা এক শীষবিশিষ্ট খেজুর বৃক্ষ, এসব একই পানিতে সিঞ্চিত। আর আমি খাদ্য হিসেবে তাদের কতককে কতকের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ে থাকি। অবশ্যই এতে বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা রা‘দ- ৪)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ তা‘আলা সারা পৃথিবীতে একই ধরনের ভূখন্ড বানিয়ে রেখে দেননি। পরস্পর সংলগ্ন থাকা সত্ত্বেও আকার-আকৃতি, রং, গঠন, উপাদান, বৈশিষ্ট্য, শক্তি, যোগ্যতা এবং উৎপাদন ও খনিজ সম্পদ এসব দিক থেকে বিভিন্ন ভূখন্ড পরস্পর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। বিভিন্ন ভূখন্ডের সৃষ্টি এবং এদের মধ্যে নানা প্রকার ভিন্নতার অস্তিত্ব এত বিপুল পরিমাণ কল্যাণে পরিপূর্ণ যে, তা গণনা করে শেষ করা যাবে না। অন্যান্য সৃষ্টির কথা বাদ দিয়ে কেবল মানুষের স্বার্থকে সামনে রেখে যদি দেখা যায় তাহলে অনুমান করা যেতে পারে যে, মানুষের বিভিন্ন স্বার্থ ও চাহিদা এবং পৃথিবীর এসব ভূখন্ডের বৈচিত্র্যের মধ্যে যে সম্পর্ক ও সামঞ্জস্য পাওয়া যায় এবং এসবের বদৌলতে মানবসমাজ সম্প্রসারিত হওয়ার যে সুযোগ লাভ করে তা নিশ্চিতভাবেই কোন জ্ঞানী ও বিজ্ঞানময় সত্তার সুচিন্তিত পরিকল্পনা এবং বিজ্ঞতাপূর্ণ সংকল্পের ফলশ্রুতি। আল্লাহ তা‘আলা এ বিশ্বজাহানের সব স্থান একই অবস্থায় রাখেননি। পৃথিবী একই, কিন্তু এর ভূখন্ডের প্রত্যেকটির বর্ণ, আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য আলাদা। একই জমি ও একই পানি, কিন্তু তা থেকে বিভিন্ন প্রকার ফল ও ফসল উৎপন্ন হচ্ছে। কিছু কিছু খেজুর গাছের মূল থেকে একটি খেজুর গাছ বের হয়। আবার কিছু কিছুর মূল থেকে একাধিক খেজুর গাছ বের হয়। একই গাছ কিন্তু তার প্রত্যেকটি ফল একই জাতের হওয়া সত্ত্বেও তাদের আকৃতি, আয়তন ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য আলাদা। একই মূল থেকে দু’টি ভিন্ন গাছ বের হচ্ছে এবং তাদের প্রত্যেকটিই একক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। যে ব্যক্তি এসব বিষয় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে সে কখনো মানুষের স্বভাব, প্রকৃতি, প্রবণতা ও মেজাজের মধ্যে এত বেশি পার্থক্য দেখে অস্থির হবে না। বরং সে বলতে বাধ্য যে, এসব আল্লাহ তা‘আলারই নিদর্শন।
জমিনে ছড়িয়ে থাকা প্রাণীকুল আল্লাহর নিদর্শন :
وَمِنْ اٰيَاتِه خَلْقُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِ وَمَا بَثَّ فِيْهِمَا مِنْ دَآبَّةٍ ؕ وَهُوَ عَلٰى جَمْعِهِمْ اِذَا يَشَآءُ قَدِيْرٌ
তাঁর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত হলো আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং এতোদুভয়ের মধ্যে তিনি যেসব জীবজন্তু ছড়িয়ে দিয়েছেন সেগুলো; তিনি যখন ইচ্ছা তখনই তাদেরকে সমবেত করতে সক্ষম। (সূরা শূরা- ২৯)
ব্যাখ্যা : আমাদের চারদিকে অসংখ্য নিদর্শন ছড়িয়ে আছে। পৃথিবীর বুকে বিচরণশীল প্রাণীকুল এবং শূন্যে উড়ে চলা পাখিদের কোন একটি শ্রেণির জীবন সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করলে দেখা যায়, কীভাবে তাদেরকে অবস্থা ও পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তাদের আকৃতি নির্মাণ করা হয়েছে। কীভাবে তাদের সৃষ্টিগত স্বাভাবিক প্রবণতার মধ্যে তাদের প্রাকৃতিক প্রয়োজন অনুযায়ী শক্তি ও সামর্থ্যের সঞ্চার করা হয়েছে। কীভাবে তাদের জীবিকা দানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কীভাবে তাদের জন্য ভাগ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তারা তার সীমানা পেরিয়ে এগিয়েও যেতে পারে না, পিছিয়েও আসতে পারে না। কীভাবে তাদের এক একটি প্রাণীকে এবং এক একটি ছোট ছোট কীটপতঙ্গকেও তার নিজের স্থানে রক্ষণাবেক্ষণ ও পথপ্রদর্শন করা হচ্ছে। কীভাবে একটি নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের থেকে কাজ আদায় করে নেয়া হচ্ছে। কীভাবে তাদেরকে একটি নিয়ম-শৃঙ্খলার আওতাধীন করে রাখা হয়েছে। কীভাবে তাদের জন্ম, মৃত্যু ও বংশ বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা যথানিয়মে চলছে। আল্লাহর অসংখ্য নিদর্শনের মধ্য থেকে যদি কেবল একটি নিদর্শন সম্পর্কে মানুষ চিন্তা-ভাবনা করে তাহলে সে জানতে পারবে যে, আল্লাহর একত্ব এবং তাঁর গুণাবলির যে ধারণা কুরআন আমাদের সামনে পেশ করেছে তা যথার্থ ও প্রকৃত সত্য। কিন্তু আমরা নিজেদের চোখ মেলে এগুলো দেখি না এবং বুঝারও চেষ্টা করি না।
পশুর ভেতরে সুস্বাদু দুধ তৈরি করা আল্লাহর নিদর্শন :
وَاِنَّ لَكُمْ فِى الْاَنْعَامِ لَعِبْرَةً ؕ نُسْقِيْكُمْ مِّمَّا فِيْ بُطُوْنِهٖ مِنْ ۢبَيْنِ فَرْثٍ وَّدَمٍ لَّبَنًا خَالِصًا سَآئِغًا لِّلشَّارِبِيْنَ
অবশ্যই গবাদি পশুর মধ্যে তোমাদের জন্য শিক্ষা রয়েছে। তাদের উদরস্থিত গোবর ও রক্তের মধ্য হতে তোমাদেরকে পান করাই বিশুদ্ধ দুধ, যা পানকারীদের জন্য খুবই সুস্বাদু। (সূরা নাহল- ৬৬)
ব্যাখ্যা : পশু যে খাদ্য খায় তা থেকে একদিকে রক্ত তৈরি হয় এবং অন্যদিকে তৈরি হয় মলমূত্র। কিন্তু এ পশুদের স্ত্রীজাতির মধ্যে আবার একই খাদ্য থেকে তৃতীয় একটি জিনিস তৈরি হয়, যাকে আমরা দুধ বলি। বর্ণ, গন্ধ, গুণ, উপকারিতা ও উদ্দেশ্যের দিক দিয়ে আগের দু’টি থেকে এটি সম্পূর্ণ আলাদা। তারপর বিশেষ করে গবাদি পশুর মধ্যে এর উৎপাদন এত বেশি হয় যে, তারা নিজেদের সন্তানদের প্রয়োজন পূর্ণ করার পর মানুষের জন্যও এ উৎকৃষ্টতম খাদ্য বিপুল পরিমাণে সরবরাহ করতে পারে। এটা আল্লাহর কুদরতের এক নিদর্শন মাত্র।
চতুষ্পদ জন্তুর বিভিন্ন উপকারিতা আল্লাহর নিদর্শন :
وَاِنَّ لَكُمْ فِى الْاَنْعَامِ لَعِبْرَةًؕ نُسْقِيْكُمْ مِّمَّا فِيْ بُطُوْنِهَا وَلَكُمْ فِيْهَا مَنَافِعُ كَثِيْرَةٌ وَّمِنْهَا تَاْكُلُوْنَ ‐ - وَعَلَيْهَا وَعَلَى الْفُلْكِ تُحْمَلُوْنَ
তোমাদের জন্য অবশ্যই শিক্ষণীয় বিষয় আছে চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যে। তোমাদেরকে আমি পান করাই তাদের উদরে যা আছে তা হতে এবং তাতে তোমাদের জন্য রয়েছে প্রচুর উপকারিতা। তোমরা তা হতে আহার কর এবং তোমরা তাতে ও নৌযানে আরোহণও করে থাক। (সূরা মু’মিনূন- ২১, ২২)
ব্যাখ্যা : পৃথিবীতে যেসব জন্তু মানুষের সেবায় নিয়োজিত আছে তার মধ্যে বিশেষ করে আছে গরু, মেষ, ভেড়া, বকরী, উট ও ঘোড়া। এসব জন্তুর সৃষ্টিকর্তা এদেরকে এমন নকশা অনুসারে সৃষ্টি করেছেন যে, এগুলো অতি সহজেই মানুষের পোষ মানা সেবকে পরিণত হয়ে যায় এবং তাদের সাহায্যে মানুষের অসংখ্য প্রয়োজন পূরণ হয়। মানুষ এসবের উপর আরোহণ করে, এসবকে ভার বহন করার কাজে লাগায়, ক্ষেত, কৃষি ও ফসল উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করে এবং এদের দুধ দোহন করে পান করে। আবার তা দিয়ে মাখন, ঘি, দধি, পনির এবং নানা রকমের মিষ্টিও তৈরি করে। এদের গোশত খায় এবং চর্বি ব্যবহার করে। এদের লোম, চামড়া, নাড়িভুঁড়ি, হাড্ডি, রক্ত, গোবর তথা প্রতিটি জিনিস তার কাজে লাগে। এটা কি সুস্পষ্ট প্রমাণ নয় যে, মানুষের সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীতে তাকে সৃষ্টি করার পূর্বেই তার এ অসংখ্য প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ্য রেখে একটি বিশেষ পরিকল্পনা অনুযায়ী এসব জন্তুগুলোকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে সে তা দ্বারা উপকৃত হতে পারে।
মৌমাছি কর্তৃক মধু তৈরি করা আল্লাহর নিদর্শন :
وَاَوْحٰى رَبُّكَ اِلَى النَّحْلِ اَنِ اتَّخِذِيْ مِنَ الْجِبَالِ بُيُوْتًا وَّمِنَ الشَّجَرِ وَمِمَّا يَعْرِشُوْنَ ‐ ثُمَّ كُلِيْ مِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ فَاسْلُكِيْ سُبُلَ رَبِّكِ ذُلُلًاؕ يَّخْرُجُ مِنْ ۢبُطُوْنِهَا شَرَابٌ مُّخْتَلِفٌ اَلْوَانُهٗ فِيْهِ شِفَآءٌ لِّلنَّاسِؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ
তোমার প্রতিপালক মৌমাছিকে এ নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা গৃহ নির্মাণ করো পাহাড়ে, বৃক্ষে ও মানুষ যে গৃহ নির্মাণ করে তাতে। তারপর প্রত্যেক ফল হতে কিছু কিছু আহার করো, অতঃপর তোমার প্রতিপালকের সহজ পথ অনুসরণ করো। তার উদর হতে নির্গত হয় বিভিন্ন বর্ণের পানীয়, যাতে মানুষের জন্য রয়েছে আরোগ্য। অবশ্যই এতে রয়েছে নিদর্শন চিমত্মাশীল সম্প্রদায়ের জন্য। (সূরা নাহল- ৬৮, ৬৯)
ব্যাখ্যা : মধু একটি উপকারী ও সুস্বাদু খাদ্য। তাছাড়া এর মধ্যে রোগ নিরাময় শক্তিও রয়েছে। কারণ এর মধ্যে রয়েছে ফুল ও ফলের রস এবং উন্নত পর্যায়ের গ্লুকোজ। তাছাড়া মধুর একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তা নিজে কখনো পঁচে না এবং অন্য জিনিসকেও দীর্ঘদিন পর্যন্ত পঁচন থেকে সংরক্ষণ রাখে। এজন্য ঔষধ নির্মাণ শিল্পে এলকোহলের পরিবর্তে মধুর ব্যবহার হাজার বছর থেকে চলে আসছে। ‘রবের তৈরি করা পথ’ বলতে মৌমাছির দল যে ব্যবস্থা ও কর্মপদ্ধতির আওতাধীনে কাজ করে সেই ব্যবস্থা ও কর্মপদ্ধতিকে বুঝানো হয়েছে। মৌচাকের আকৃতি ও কাঠামো, তাদের দলগঠন প্রক্রিয়া, শ্রমবণ্টন প্রক্রিয়া, শ্রমনীতি এবং সংগ্রহনীতি- এসব হচ্ছে সেই পথ, যা তাদের রব তাদেরকে শিখিয়েছেন। এ ব্যাপারে তাদের নিজেদের চিন্তা-ভাবনা করার প্রয়োজন হয় না। এটা একটি নির্ধারিত ব্যবস্থা। এরই ভিত্তিতে একটি নির্ধারিত নিয়মে এ অগণিত মৌমাছিগুলো হাজার হাজার বছর ধরে কাজ করে চলছে। এটা আল্লাহর একত্ববাদের বিশেষ নিদর্শন।
বান্দাদের মধ্যে রিযিকের তারতম্য আল্লাহর নিদর্শন :
اَوَلَمْ يَرَوْا اَنَّ اللهَ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيَقْدِرُؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ
তারা কি দেখে না যে, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা প্রচুর রিযিক দেন এবং তা হ্রাস করেন। নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে ঐসব লোকদের জন্য, যারা বিশ্বাস করে। (সূরা রূম- ৩৭)
অতীত জাতির ধ্বংসের কাহিনীতে আল্লাহর নিদর্শন রয়েছে :
وَكَمْ اَهْلَكْنَا قَبْلَهُمْ مِّنْ قَرْنٍ هُمْ اَشَدُّ مِنْهُمْ بَطْشًا فَنَقَّبُوْا فِى الْبِلَادِ هَلْ مِنْ مَّحِيْصٍ ‐ - اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَذِكْرٰى لِمَنْ كَانَ لَهٗ قَلْبٌ اَوْ اَلْقَى السَّمْعَ وَهُوَ شَهِيْدٌ
আমি তাদের পূর্বে আরো বহু জাতি ধ্বংস করেছি, যারা ছিল তাদের অপেক্ষা শক্তিতে অনেক প্রবল। তারা দেশে-বিদেশে ভ্রমণ করে বেড়াত; কিন্তু তবুও (আল্লাহর আযাব থেকে তাদের) কোন পলায়নের জায়গা ছিল কি? নিশ্চয় এতে উপদেশ রয়েছে তার জন্যে, যার অন্তঃকরণ আছে অথবা যে একাগ্রচিত্তে শ্রবণ করে। (সূরা ক্বাফ- ৩৬, ৩৭)
মানুষের ভাষা ও বর্ণের ভিন্নতা আল্লাহর নিদর্শন :
وَمِنْ اٰيَاتِه خَلْقُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِ وَاخْتِلَافُ اَلْسِنَتِكُمْ وَاَلْوَانِكُمْؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّلْعَالِمِيْنَ
আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে আসমান ও জমিনের সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের ভিন্নতা। নিশ্চয় এতে জ্ঞানীদের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা রূম- ২২)
ব্যাখ্যা : যদিও প্রতিটি মানুষের মুখ ও জিহবার গঠন এবং মস্তিষ্কের গঠনাকৃতি একই ধরনের, তবুও পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে তোমাদের ভাষা বিভিন্ন রকম। তারপর একই ভাষায় যারা কথা বলে, তাদের বিভিন্ন শহর ও জনপদের ভাষাও আলাদা। আবার প্রত্যেক ব্যক্তির বলার রীতি, শব্দের উচ্চারণ এবং আলাপ-আলোচনার পদ্ধতিও আলাদা। অনুরূপভাবে তোমাদের সৃষ্টির উপাদান এবং গঠনসূত্র এক হওয়া সত্ত্বেও তোমাদের বর্ণ এত বেশি বিভিন্ন যে, একই বাপ-মায়ের দু’টি সন্তানের বর্ণও সম্পূর্ণ আলাদা। এছাড়াও দুনিয়ায় সকল দিকেই এত বেশি বৈচিত্র দেখা যায় যে, কোন ব্যক্তি বা বস্তুর যে কোন একটি শ্রেণিকে নেয়া হোক, দেখা যাবে তাদের প্রতিটির মধ্যে মৌলিক একাত্মতা সত্ত্বেও অসংখ্য ভিন্নতা বিরাজ করছে। এমনকি একটি গাছের দু’টি পাতার মধ্যেও পূর্ণ সাদৃশ্য পাওয়া যায় না। এ বিষয়টি পরিষ্কার জানিয়ে দিচ্ছে যে, এখানে এমন একজন দক্ষ কারিগর কাজ করছেন, যিনি প্রত্যেকটি জিনিসকে কোন নমুনা ছাড়াই তৈরি করেন। তাঁর উদ্ভাবন ক্ষমতা সর্বদা একটি নতুন মডেল বের করে চলেছে। যে ব্যক্তিই এ বিস্ময়কর দৃশ্য চোখ মেলে দেখবে সে নিশ্চিত বুঝতে পারবে যে, প্রতি মুহূর্তে আল্লাহ নতুন নতুন জিনিস সৃষ্টি করে যাচ্ছেন এবং নিজের সৃষ্ট প্রত্যেকটি জিনিসের উপর তিনি দৃষ্টিবান।
গোটা পৃথিবী আল্লাহর নিদর্শন :
وَفِى الْاَ رْضِ اٰيَاتٌ لِّلْمُوْقِنِيْنَ
পৃথিবীতে বিশ্বাসীদের জন্য রয়েছে অনেক নিদর্শন। (সূরা যারিয়াত- ২০)
ব্যাখ্যা : পৃথিবীর অস্তিত্ব, তার গঠন ও আকার-আকৃতি, সূর্য থেকে তার নির্দিষ্ট দূরত্ব, তার উপর উষ্ণতা ও আলোর ব্যবস্থা, সেখানে বিভিন্ন ঋতুর আগমন ও প্রস্থান, তার উপর বাতাস ও পানি সরবরাহ, তার অভ্যন্তরে অগণিত সম্পদের ভান্ডার সরবরাহ, তার উপরিভাগ একটি উর্বর আবরণ দিয়ে মুড়ে দেয়া এবং তার পৃষ্ঠদেশে ভিন্ন রকমের অগণিত উদ্ভিদ উৎপন্ন করে দেয়া, তাতে স্থল, জল ও বায়ুতে বিচরণকারী জীবজন্তু ও কীটপতঙ্গের অসংখ্য প্রজাতির বংশধারা চালু করা, প্রত্যেক প্রজাতির জীবন ধারণের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ ও উপযুক্ত খাদ্যের ব্যবস্থা করা, সেখানে মানুষকে অস্তিত্বদানের পূর্বে সব উপায়-উপকরণের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি আরো অগণিত নিদর্শনাদি আছে, যা দেখে যে কোন বিবেকবান ব্যক্তির মনে এ দৃঢ় বিশ্বাস জন্মাবে যে, এ চরম উন্নতমানের বৈজ্ঞানিক কীর্তি মহাশক্তিমান ও মহাজ্ঞানী এক আল্লাহরই সৃষ্টি।
মানুষের গোটা দেহ আল্লাহর নিদর্শন :
فَلْيَنْظُرِ الْاِنْسَانُ مِمَّ خُلِقَ ‐ - خُلِقَ مِنْ مَّآءٍ دَافِقٍ ‐ - يَخْرُجُ مِنْ ۢبَيْنِ الصُّلْبِ وَالتَّرَآئِبِ
সুতরাং মানুষের লক্ষ্য করা উচিত যে, তাকে কিসের দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে প্রবল বেগে নির্গত পানি হতে, যা বের হয় পিঠ ও বুকের হাঁড়ের মধ্য হতে। (সূরা তারেক, ৫-৭)
وَفِۤيْ اَنْفُسِكُمْ اَفَلَا تُبْصِرُوْنَ
আর নিদর্শন রয়েছে তোমাদের মধ্যেও! তোমরা কি অনুধাবন করবে না? (সূরা যারিয়াত- ২১)
ব্যাখ্যা : বাইরে দেখার প্রয়োজন নেই। শুধু নিজের মধ্যে দেখলেই মানুষ অসংখ্য নিদর্শন দেখতে পাবে। কীভাবে মাতৃদেহের একটি নিভৃত কোণে তাদের সৃষ্টির সূচনা করা হয়েছিল। অন্ধকারে সেই নিভৃত কোণে কীভাবে লালন-পালন করে ক্রমান্বয়ে তা বড় করা হয়েছে। কীভাবে তাদেরকে অনুপম আকৃতি ও দেহ এবং কর্মশক্তিসম্পন্ন শক্তি দেয়া হয়েছে। কীভাবে তাদের দেহাবয়বের পূর্ণতা প্রাপ্তি মাত্রই মাতৃগর্ভের অন্ধকার জগৎ থেকে বের করে এ বিশাল জগতে আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে অত্যন্ত শক্তিশালী একটি স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র স্থাপিত হয়েছে। এ যন্ত্র মানুষের জন্ম থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত শ্বাস গ্রহণ করা, খাদ্য হজম করা, রক্ত তৈরি করে শিরা উপশিরায় প্রবাহিত করা, মল নির্গমন করা, দেহের ধ্বংসপ্রাপ্ত অংশসমূহ আবার নির্মাণ করা এবং ক্লান্ত হওয়ার পর আরামের জন্য শুইয়ে দেয়ার কাজ পর্যন্ত নিজ থেকেই সম্পন্ন করে যাচ্ছে। জীবনের এ মৌলিক প্রয়োজনসমূহ পূরণের জন্য মানুষের চেষ্টা ও সাধনার সামান্যতম অংশও ব্যয় হয় না। তাদের মাথার খুলির মধ্যে একটি বিস্ময়কর মস্তিষ্ক বসিয়ে দেয়া হয়েছে- যার জটিল ভাঁজে ভাঁজে জ্ঞানবুদ্ধি, চিন্তা-ভাবনা, কল্পনা, উপলব্ধি, ন্যায়-অন্যায় বোধ, ইচ্ছা, স্মৃতিশক্তি, আকাঙ্খা, অনুভূতি, আবেগ, প্রবণতা এবং আরো অনেক শক্তির এক বিশাল ভান্ডার কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে আছে। তাদেরকে জ্ঞান অর্জন করার অনেক মাধ্যম দেয়া হয়েছে, যা চোখ, নাক, কান এবং গোটা দেহের স্নায়ুতন্ত্রীর সাহায্যে তাদেরকে সবরকমের সংবাদ পৌঁছিয়ে থাকে। তাদেরকে ভাষা এবং বাকশক্তি দেয়া হয়েছে, যার সাহায্যে তোমরা নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে পার। সর্বোপরি তাদের সত্তার এ গোটা সাম্রাজ্যের উপর তাদেরকে নেতা বানিয়ে বসিয়ে দেয়া হয়েছে, যাতে সবগুলো শক্তি কাজে লাগিয়ে মতামত গঠন ও এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে যে, কোন পথে তাদের সময় ও শ্রম ব্যয় করতে হবে, কোনটি বর্জন করতে হবে এবং কোনটি গ্রহণ করতে হবে, কোন বস্তুকে নিজের জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বানাতে হবে এবং কোনটিকে নয়।
মানুষকে একটি সত্তা বানিয়ে যখন পৃথিবীতে আনা হলো তখনই সে তার লালন-পালন, প্রবৃত্তি, উন্নতি ও পূর্ণতা সাধনের জন্য সবরকম সাজ-সরঞ্জাম এখানে প্রস্তুত পেয়েছে। এসব সাজ-সরঞ্জামের বদৌলতে জীবনের একটি পর্যায়ে পৌঁছে সে নিজের ক্ষমতা কাজে লাগানোর উপযুক্ত হয়েছে। প্রত্যেকের নিজের পছন্দ অনুসারে তার ইচ্ছাকে বাস্তবায়িত করার যে সুযোগ সে লাভ করেছে, তা কাজে লাগিয়ে কেউ সৎকর্মশীল হয়েছে এবং কেউ দুষ্কর্মশীল হয়েছে। কেউ পৃথিবীতে মৃত্যু পর্যন্ত কল্যাণের কাজ করেছে আবার কেউ জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কুকর্ম করেছে। কেউ ন্যায়কে সমুন্নত করার জন্য জীবনপাত করেছে। আবার কেউ বাতিলকে সমুন্নত করার জন্য ন্যায়ের অনুসারীদের উপর যুলুম চালিয়েছে। মানুষকে যেভাবে যেসব ক্ষমতা ও যোগ্যতা দিয়ে পৃথিবীতে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং যে মর্যাদা তাকে দেয়া হয়েছে তা নিশ্চিতভাবেই একটি অত্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত পরিকল্পনা। যে আল্লাহ এমন পরিকল্পনা করতে পারেন, তাঁর বিচক্ষণতা অনিবার্যরূপে দাবী করে যে, মানুষকে তার কাজকর্মের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। আর সেই আল্লাহর শক্তি-সামর্থ্য সম্পর্কে এ ধারণা পোষণ করা মোটেই উচিত নয় যে, তিনি যে মানুষকে অণুবীক্ষণ যন্ত্রে দেখার মতো একটি কোষ থেকে সৃষ্টি করে এ পর্যায়ে পৌঁছিয়েছেন তাকে তিনি পুনরায় অস্তিত্ব দান করতে পারবেন না।
اِنَّ اَوَّلَ بَيْتٍ وُّضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِيْ بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَّهُدًى لِّلْعَالَمِيْنَ ‐ - فِيْهِ اٰيَاتٌ ۢبَيِّنَاتٌ مَّقَامُ اِبْرَاهِيْمَۚ وَمَنْ دَخَلَهٗ كَانَ اٰمِنًا
নিশ্চয় মানুষের জন্য সর্বপ্রথম নির্মিত ঘর মক্কায় অবস্থিত, যা বরকতময় এবং বিশ্ববাসীর জন্য পথপ্রদর্শক। সেখানে রয়েছে স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ (এর মধ্যে একটি হচ্ছে) মাকামে ইবরাহীম। আর যে ব্যক্তি এ ঘরে প্রবেশ করে, সে নিরাপদ হয়ে যায়। (সূরা আলে ইমরান- ৯৬, ৯৭)
রাত ও দিন আল্লাহর নিদর্শন :
اَلَمْ يَرَوْا اَنَّا جَعَلْنَا اللَّيْلَ لِيَسْكُنُوْا فِيْهِ وَالنَّهَارَ مُبْصِرًاؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ
তারা কি অনুধাবন করে না যে, আমি রাতকে সৃষ্টি করেছি তাদের বিশ্রামের জন্য এবং দিবসকে করেছি আলোকপ্রদ। তাতে মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে। (সূরা নামল- ৮৬)
দিন ও রাতের আবর্তন আল্লাহর নিদর্শন :
اِنَّ فِيْ خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَاٰيَاتٍ لِّاُولِى الْاَلْبَابِ
নিশ্চয় আসমান ও জমিনের সৃষ্টির মধ্যে এবং দিবস ও রাত্রির পরিবর্তনে জ্ঞানবানদের জন্য স্পষ্ট নিদর্শনাবলি রয়েছে। (সূরা আলে ইমরান- ১৯০)
ব্যাখ্যা : রাত ও দিনের এ ভিন্নতার মধ্যেও এ নিদর্শন রয়েছে যে, দু’টিই পূর্ণ নিয়মতান্ত্রিকভাবে একটার পর একটা আগমন করে। আবার এদিক দিয়েও নিদর্শন যে, একটি আলো অপরটি অন্ধকার। তাছাড়া এর নিদর্শন হওয়ার আরো একটি কারণ হচ্ছে, একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দিন ক্রমান্বয়ে ছোট এবং রাত বড় হতে থাকে এবং এক সময় দু’টিই এক সমান হয়ে যায়। তারপর আবার ক্রমান্বয়ে দিন বড় এবং রাত ছোট হতে থাকে। তারপর এক সময় দিন ও রাত আবার সমান হয়ে যায়। রাত ও দিনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের যে ভিন্নতা দেখা যায়, তাতে বিরাট উদ্দেশ্য জড়িত রয়েছে। এ উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে এ কথাই প্রমাণ করে যে, সূর্য, পৃথিবী এবং পৃথিবীর সবকিছুর স্রষ্টা একমাত্র আল্লাহ। তিনিই সবকিছুকে নিজ নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। আবু যোহা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন وَاِلٰهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ لَّاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الرَّحْمٰنُ الرَّحِيْمُ এ আয়াতটি নাযিল হয়, তখন মুশরিকরা আশ্চর্য হয়ে বলতে লাগল, আল্লাহ কি কেবল একজন? যদি তোমার কথা সত্য হয়ে থাকে তবে এর পক্ষে প্রমাণ পেশ করো। তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতটি নাযিল করেন। (সুনানে সা‘দ ইবনে মানসূর, হা/১৩৮)
চাঁদের পরিভ্রমণ ও হ্রাস-বৃদ্ধি আল্লাহর নিদর্শন :
وَالْقَمَرَ قَدَّرْنَاهُ مَنَازِلَ حَتّٰى عَادَ كَالْعُرْجُوْنِ الْقَدِيْمِ ‐ - لَا الشَّمْسُ يَنْۢبَغِيْ لَهَاۤ اَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلَا اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ ؕ وَكُلٌّ فِيْ فَلَكٍ يَّسْبَحُوْنَ
আমি চন্দ্রের জন্য নির্ধারণ করেছি বিভিন্ন স্তর, এমনকি তা ভ্রমণ শেষে ক্ষীণ হয়ে খেজুরের পুরাতন ডালের মতো হয়ে যায়। সূর্যের সাধ্য নেই যে, সে চন্দ্রকে ধরে ফেলে এবং রাত্রিও দিনের পূর্বে আসতে পারে না। প্রত্যেকেই নির্ধারিত কক্ষে বিচরণ করে। (সূরা ইয়াসীন, ৩৯-৪০)
ব্যাখ্যা : চাঁদের পরিবর্তন মাসের মধ্যে প্রতিদিন হতে থাকে। প্রথম দিন সে ছোট আকারে উদিত হয়, যাকে আরবি ভাষায় هِلَالٌ (হিলাল) বা নতুন চাঁদ বলা হয়। তারপর ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত চৌদ্দ দিনের রাতে তা পূর্ণতা লাভ করে। তারপর প্রতিদিন তার দেহ হ্রাস পেতে থাকে। এমনকি শেষ পর্যন্ত আবার হিলাল আকারে ফিরে আসে। হাজার হাজার বছর থেকে এ প্রক্রিয়া চলে আসছে এবং কখনো এর ব্যতিক্রম দেখা যায়নি।
আকাশে বিচরণকারী পাখি আল্লাহর নিদর্শন :
اَلَمْ يَرَوْا اِلَى الطَّيْرِ مُسَخَّرَاتٍ فِيْ جَوِّ السَّمَآءِؕ مَا يُمْسِكُهُنَّ اِلَّا اللهُؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ
তারা কি আকাশের শূন্য গর্ভে নিয়ন্ত্রণাধীন পাখির প্রতি লক্ষ্য করে না? সেগুলোকে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউই স্থির রাখেন না। অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য। (সূরা নাহল- ৭৯)
বিস্তৃত জমিন, পাহাড় ও নদ-নদী আল্লাহর নিদর্শন :
وَهُوَ الَّذِيْ مَدَّ الْاَ رْضَ وَجَعَلَ فِيْهَا رَوَاسِيَ وَاَنْهَارًاؕ وَمِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ جَعَلَ فِيْهَا زَوْجَيْنِ اثْنَيْنِ يُغْشِى اللَّيْلَ النَّهَارَؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ
তিনিই পৃথিবীকে করেছেন বিস্তৃত এবং এতে পর্বতমালা ও নদীসমূহও সৃষ্টি করেছেন। আর (এতে) প্রত্যেক প্রকারের ফল সৃষ্টি করেছেন জোড়ায় জোড়ায়। তিনি দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন। নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে চিমত্মাশীল সম্প্রদায়ের জন্য। (সূরা রা‘দ- ৩)
বাতাসের গতির পরিবর্তন আল্লাহর নিদর্শন :
وَمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ مِنَ السَّمَآءِ مِنْ رِّزْقٍ فَاَحْيَا بِهِ الْاَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا وَتَصْرِيْفِ الرِّيَاحِ اٰيَاتٌ لِّقَوْمٍ يَّعْقِلُوْنَ
আল্লাহ আকাশ হতে যে পানি বর্ষণ করার দ্বারা পৃথিবীকে তার মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন তাতে এবং বায়ুর পরিবর্তনে নিদর্শন রয়েছে জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য। (সূরা জাসিয়া- ৫)
ব্যাখ্যা : বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন উচ্চতায় বাতাস প্রবাহিত হয়, যার কারণে ঋতুর পরিবর্তন সংঘটিত হয়। পৃথিবীর পৃষ্ঠের উপরিভাগে একটি বিশাল বায়ু স্তর আছে। তাতে এমনসব উপাদান বিদ্যমান রয়েছে, যা প্রাণীকুলের শ্বাস গ্রহণের জন্য প্রয়োজন এবং নানা প্রকার আসমানী বিপদাপদ থেকে বাঁচার কারণ। এর সাথে এটাও দেখার বিষয় যে, এ বাতাস শুধু বায়ুমন্ডলে বিদ্যমান নয়, মাঝে মধ্যে তা বিভিন্নভাবে প্রবাহিত হতে থাকে। কখনো মৃদুভাবে, কখনো শুষ্কভাবে, কখনো আর্দ্রভাবে, কখনো বৃষ্টিবাহী হিসেবে এবং কখনো ঝড়ো হাওয়ার আকারে প্রবাহিত হয়। এসব বাতাস নিজ থেকেই প্রবাহিত হয় না এবং এলোমেলোভাবেও প্রবাহিত হয় না। এরও একটা শৃঙ্খলা আছে, যা সাক্ষ্য দেয় যে, এ ব্যবস্থা পূর্ণমাত্রায় যুক্তিনির্ভর এবং এর দ্বারা অতীব গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যাবলি পূরণ হচ্ছে। তাছাড়া পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যে প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল অবস্থা অনুসারে শীত ও গ্রীষ্মের যে হ্রাস বৃদ্ধি হয়, তার সাথেও এর অত্যন্ত গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। ঋতু পরিবর্তন ও বৃষ্টি বণ্টনের সাথেও এর অত্যন্ত গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এর সবগুলো জিনিসই ডেকে ডেকে বলছে, কোন অন্ধ প্রকৃতি আকষ্মিকভাবে এর ব্যবস্থা করে দেয়নি। কিংবা সূর্য ও পৃথিবী, বাতাস ও পানি এবং উদ্ভিদ ও প্রাণীকুলের জন্য আলাদা আলাদা কোন ব্যবস্থাপক নেই। বরং নিশ্চিতভাবে একমাত্র আল্লাহই এসবের স্রষ্টা এবং এক বিরাট উদ্দেশ্য সাধনের জন্য তাঁর জ্ঞান ও কৌশল এ ব্যবস্থা করেছে। তাঁর অসীম ক্ষমতাবলেই এ ব্যবস্থা পূর্ণ নিয়মতান্ত্রিকতার সাথে একটি নির্দিষ্ট নিয়মে চলছে।
সমুদ্রে জাহাজ চলাচল আল্লাহর নিদর্শন :
وَمِنْ اٰيَاتِهٖۤ اَنْ يُّرْسِلَ الرِّيَاحَ مُبَشِّرَاتٍ وَّلِيُذِيْقَكُمْ مِّنْ رَّحْمَتِهٖ وَلِتَجْرِيَ الْفُلْكُ بِاَمْرِهٖ وَلِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِهٖ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
আর তাঁর দৃষ্টান্তগুলোর মধ্যে একটি এই যে, তিনি বাতাস পাঠান সুখবর দানকারীরূপে। যাতে তিনি তোমাদেরকে তাঁর অনুগ্রহের স্বাদ ভোগ করান। আর যেন নৌযানসমূহ তাঁর নির্দেশে চলাচল করে, যেন তোমরা তাঁর অনুগ্রহ অন্বেষণ করতে পার এবং যেন তোমরা তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা রূম- ৪৬)
নৌকা ও অন্যান্য যানবাহন আল্লাহর নিদর্শন :
وَاٰيَةٌ لَّهُمْ اَنَّا حَمَلْنَا ذُرِّيَّتَهُمْ فِى الْفُلْكِ الْمَشْحُوْنِ ‐ - وَخَلَقْنَا لَهُمْ مِّنْ مِّثْلِهٖ مَا يَرْكَبُوْنَ
আর তাদের জন্য একটি নিদর্শন এই যে, আমি তাদের বংশধরদেরকে (এক সময় একটি) ভরা নৌকায় আরোহণ করিয়েছিলাম। আর আমি তাদের জন্য এরূপ (নৌযান) সৃষ্টি করেছি, যেন তারা আরোহণ করে। (সূরা ইয়াসীন- ৪১, ৪২)
সমুদ্রে চলমান জাহাজ আল্লাহর নিদর্শন :
وَمِنْ اٰيَاتِهِ الْجَوَارِ فِى الْبَحْرِ كَالْاَعْلَامِ
তাঁর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত হলো সমুদ্রে চলমান পর্বত সদৃশ নৌযানসমূহ। (সূরা শূরা- ৩২)
ব্যাখ্যা : পৃথিবীর তিনচতুর্থাংশ পানি এবং একচতুর্থাংশ স্থলভাগ। স্থলভাগেরও বহু সংখ্যক ছোট বড় অঞ্চলের মধ্যে জলভাগ অবস্থিত। পৃথিবীর এসব স্থলভাগে মানব বসতি বিস্তার এবং তাদের মাঝে পর্যটন ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হওয়া আদৌ সম্ভব হতো না, যদি পানি ও বাতাসকে এমন নিয়মের অধীন না করা হতো, যার কারণে নৌ-পরিবহন সম্ভব হয়েছে এবং মানুষ জাহাজ নির্মাণে সক্ষম হয়েছে। এটা কি এ বিষয়ের সুস্পষ্ট প্রমাণ নয় যে, এক সর্বশক্তিমান, দয়ালু ও মহাজ্ঞানী প্রভু আছেন, যিনি মানুষ, পৃথিবী, পানি, সমুদ্র, বাতাস এবং ভূপৃষ্ঠের সমস্ত জিনিসকে তাঁর নিজের বিশেষ পরিকল্পনানুসারে সৃষ্টি করেছেন?
বৃষ্টি তৈরি করা আল্লাহর নিদর্শন :
اَلَمْ تَرَ اَنَّ اللهَ يُزْجِيْ سَحَابًا ثُمَّ يُؤَلِّفُ بَيْنَهٗ ثُمَّ يَجْعَلُهٗ رُكَامًا فَتَرَى الْوَدْقَ يَخْرُجُ مِنْ خِلَالِهٖۚ وَيُنَزِّلُ مِنَ السَّمَآءِ مِنْ جِبَالٍ فِيْهَا مِنْ ۢبَرَدٍ فَيُصِيْبُ بِهٖ مَنْ يَّشَآءُ وَيَصْرِفُهٗ عَنْ مَّنْ يَّشَآءُؕ يَكَادُ سَنَا بَرْقِهٖ يَذْهَبُ بِالْاَبْصَارِ
তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ মেঘমালাকে সঞ্চালন করেন, তারপর তাদেরকে একত্র করেন এবং পরে পুঞ্জীভূত করেন। অতঃপর তুমি দেখতে পাও যে, তা হতে নির্গত হয় বারিধারা। (আরো দেখতে পাও যে) তিনি আকাশের শিলাস্তর হতে শিলা বর্ষণ করেন এবং এটা দ্বারা তিনি যাকে ইচ্ছা আঘাত করেন; আবার যার থেকে ইচ্ছা অন্যদিকে ফিরিয়ে দেন। মেঘের বিদ্যুৎ ঝলক (চোখে ধাঁধা লাগিয়ে দেয়া) মনে হয় তা যেন দৃষ্টিশক্তি কেঁড়ে নেবে। (সূরা নূর- ৪৩)
মৃত জমিনকে জীবিতকরণ আল্লাহর নিদর্শন : গুলো
وَاللهُ اَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَحْيَا بِهِ الْاَ رْضَ بَعْدَ مَوْتِهَاؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّسْمَعُوْنَ
আল্লাহ আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন এবং তা দ্বারা মৃত ভূমিকে পুনর্জীবিত করেন। অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে যে সম্প্রদায় কথা শুনে তাদের জন্য। (সূরা নাহল- ৬৫)
উদ্ভিদ ও বাগান আল্লাহর নিদর্শন :
اَوَلَمْ يَرَوْا اِلَى الْاَ رْضِ كَمْ اَنْۢبَتْنَا فِيْهَا مِنْ كُلِّ زَوْجٍ كَرِيْمٍ ‐ - اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةًؕ وَمَا كَانَ اَكْثَرُهُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
তারা কি জমিনের দিকে লক্ষ্য করে না? আমি তাতে প্রত্যেক প্রকারের কত উৎকৃষ্ট উদ্ভিদ উদগত করেছি! নিশ্চয় এতে রয়েছে নিদর্শন, কিন্তু তাদের অধিকাংশই মুমিন নয়। (সূরা শু‘আরা- ৭, ৮)
وَاٰيَةٌ لَّهُمُ الْاَ رْضُ الْمَيْتَةُۚ اَحْيَيْنَاهَا وَاَخْرَجْنَا مِنْهَا حَبًّا فَمِنْهُ يَاْكُلُوْنَ ‐ وَجَعَلْنَا فِيْهَا جَنَّاتٍ مِّنْ نَّخِيْلٍ وَّاَعْنَابٍ وَّفَجَّرْنَا فِيْهَا مِنَ الْعُيُوْنِ ‐ - لِيَاْكُلُوْا مِنْ ثَمَرِهٖ وَمَا عَمِلَتْهُ اَيْدِيْهِمْؕ اَفَلَا يَشْكُرُوْنَ
আর তাদের জন্য একটি নিদর্শন হলো মৃত জমিন। আমি তাকে সজীব করি এবং তা থেকে উৎপন্ন করি শস্য, ফলে তা থেকে তারা খেয়ে থাকে। আমি তাতে সৃষ্টি করি খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান এবং তাতে প্রবাহিত করি ঝর্ণাসমূহ। যেন তারা এর ফলমূল থেকে খাদ্য গ্রহণ করতে পারে। তাদের হাত এটা সৃষ্টি করেনি; তবুও কি তারা কৃতজ্ঞ হবে না? (সূরা ইয়াসীন, ৩৩-৩৫)
ব্যাখ্যা : মানুষ দিন-রাত ভূমি থেকে উৎপাদিত শস্য ও ফলমূল আহার করছে। তারা গাফলতির পর্দা ছিন্ন করে গভীরভাবে চিন্তা করলে জানতে পারবে যে, এ ভূমির আবরণ ভেদ করে সবুজ শ্যামল বন-বনানী সৃষ্টি এবং নদ-নদীর স্রোত প্রবাহিত হওয়া এমন কোন খেলা নয়, যা নিজে নিজেই চলছে। পৃথিবীর প্রকৃত রূপ সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করলে দেখা যাবে যে, এদের মধ্যে জীবনের নামমাত্রও নেই। এ নিষ্প্রাণ জমিনের বুক চিরে উদ্ভিদগুলোর জীবন লাভ করা সম্ভব হলো কেমন করে? কয়েকটি বড় বড় উপকরণ সংগৃহীত না হলে এ জীবনধারা আদৌ অস্তিত্ব লাভ করতে পারত না। আর তা হলো :
১. পৃথিবীর উপরিভাগে এমন উপাদানের পর্দা বিছানো আছে, যাতে উদ্ভিদের শিকড় তার মধ্যে বিস্তার লাভ করে খাদ্য গ্রহণ করতে পারে।
২. জমিনের উপর বিভিন্ন পদ্ধতিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে উদ্ভিদের শিকড়সমূহ তা চুষে নিতে সক্ষম হয়।
৩. শূন্য আকাশে বায়ু সৃষ্টি করা হয়েছে, যা বৃষ্টি বহনের কাজ করে। এর মধ্যে এমনসব গ্যাসের সমাবেশ ঘটে, যা উদ্ভিদের জীবন ও তাদের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন।
৪. সূর্য ও পৃথিবীর মধ্যে এমন সম্পর্ক স্থাপন করা হয়েছে, যার ফলে উদ্ভিদের জীবন গঠনে প্রয়োজনানুসারে উষ্ণতা এবং অনুকূল পরিবেশ লাভ করতে পারে।
এ চারটি বড় বড় উপকরণ সৃষ্টি করার পর উদ্ভিদের অস্তিত্ব লাভ করা সম্ভব হয়। এদের মধ্য থেকে প্রত্যেকের বীজ এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যার ফলে যখনই তা উপযোগী জমি, পানি ও বাতাস পায় তখনই তার মধ্যে উদ্ভিদ জন্ম নেয়া শুরু হয়ে যায়। এছাড়াও এ বীজের মধ্যে এমন ব্যবস্থাও করে দেয়া হয়েছে, যার ফলে প্রত্যেক উদ্ভিদ তার নিজ প্রজাতির চারা জন্ম দেয়। এসব উদ্ভিদ অসংখ্য শ্রেণির পশু ও মানবকুলের খাদ্য, ঔষধ, পোষাক ও অন্যান্য অগণিত প্রয়োজন পূরণ করে। এ বিস্ময়কর ব্যবস্থা সম্পর্কে যে ব্যক্তিই চিন্তা করবে, সে যদি হঠকারী ও সংকীর্ণ না হয় তাহলে তার অন্তর সাক্ষ্য দেবে যে, এ সবকিছু আপনা-আপনি হতে পারে না; মহান আল্লাহই এসব পরিচালনা করছেন।
বিভিন্ন স্বাদের ফলমূল আল্লাহর নিদর্শন :
وَفِى الْاَرْضِ قِطَعٌ مُّتَجَاوِرَاتٌ وَّجَنَّاتٌ مِّنْ اَعْنَابٍ وَّزَرْعٌ وَّنَخِيْلٌ صِنْوَانٌ وَّغَيْرُ صِنْوَانٍ يُّسْقٰى بِمَآءٍ وَّاحِدٍؕ وَنُفَضِّلُ بَعْضَهَا عَلٰى بَعْضٍ فِى الْاُكُلِؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَّعْقِلُوْنَ
পৃথিবীতে রয়েছে পরস্পর সংলগ্ন ভূখন্ড, এতে আছে আঙ্গুরের বাগান, শস্যক্ষেত্র, একাধিক শীষবিশিষ্ট অথবা এক শীষবিশিষ্ট খেজুর বৃক্ষ, এসব একই পানিতে সিঞ্চিত। আর আমি খাদ্য হিসেবে তাদের কতককে কতকের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ে থাকি। অবশ্যই এতে বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা রা‘দ- ৪)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ তা‘আলা সারা পৃথিবীতে একই ধরনের ভূখন্ড বানিয়ে রেখে দেননি। পরস্পর সংলগ্ন থাকা সত্ত্বেও আকার-আকৃতি, রং, গঠন, উপাদান, বৈশিষ্ট্য, শক্তি, যোগ্যতা এবং উৎপাদন ও খনিজ সম্পদ এসব দিক থেকে বিভিন্ন ভূখন্ড পরস্পর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। বিভিন্ন ভূখন্ডের সৃষ্টি এবং এদের মধ্যে নানা প্রকার ভিন্নতার অস্তিত্ব এত বিপুল পরিমাণ কল্যাণে পরিপূর্ণ যে, তা গণনা করে শেষ করা যাবে না। অন্যান্য সৃষ্টির কথা বাদ দিয়ে কেবল মানুষের স্বার্থকে সামনে রেখে যদি দেখা যায় তাহলে অনুমান করা যেতে পারে যে, মানুষের বিভিন্ন স্বার্থ ও চাহিদা এবং পৃথিবীর এসব ভূখন্ডের বৈচিত্র্যের মধ্যে যে সম্পর্ক ও সামঞ্জস্য পাওয়া যায় এবং এসবের বদৌলতে মানবসমাজ সম্প্রসারিত হওয়ার যে সুযোগ লাভ করে তা নিশ্চিতভাবেই কোন জ্ঞানী ও বিজ্ঞানময় সত্তার সুচিন্তিত পরিকল্পনা এবং বিজ্ঞতাপূর্ণ সংকল্পের ফলশ্রুতি। আল্লাহ তা‘আলা এ বিশ্বজাহানের সব স্থান একই অবস্থায় রাখেননি। পৃথিবী একই, কিন্তু এর ভূখন্ডের প্রত্যেকটির বর্ণ, আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য আলাদা। একই জমি ও একই পানি, কিন্তু তা থেকে বিভিন্ন প্রকার ফল ও ফসল উৎপন্ন হচ্ছে। কিছু কিছু খেজুর গাছের মূল থেকে একটি খেজুর গাছ বের হয়। আবার কিছু কিছুর মূল থেকে একাধিক খেজুর গাছ বের হয়। একই গাছ কিন্তু তার প্রত্যেকটি ফল একই জাতের হওয়া সত্ত্বেও তাদের আকৃতি, আয়তন ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য আলাদা। একই মূল থেকে দু’টি ভিন্ন গাছ বের হচ্ছে এবং তাদের প্রত্যেকটিই একক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। যে ব্যক্তি এসব বিষয় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে সে কখনো মানুষের স্বভাব, প্রকৃতি, প্রবণতা ও মেজাজের মধ্যে এত বেশি পার্থক্য দেখে অস্থির হবে না। বরং সে বলতে বাধ্য যে, এসব আল্লাহ তা‘আলারই নিদর্শন।
জমিনে ছড়িয়ে থাকা প্রাণীকুল আল্লাহর নিদর্শন :
وَمِنْ اٰيَاتِه خَلْقُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِ وَمَا بَثَّ فِيْهِمَا مِنْ دَآبَّةٍ ؕ وَهُوَ عَلٰى جَمْعِهِمْ اِذَا يَشَآءُ قَدِيْرٌ
তাঁর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত হলো আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং এতোদুভয়ের মধ্যে তিনি যেসব জীবজন্তু ছড়িয়ে দিয়েছেন সেগুলো; তিনি যখন ইচ্ছা তখনই তাদেরকে সমবেত করতে সক্ষম। (সূরা শূরা- ২৯)
ব্যাখ্যা : আমাদের চারদিকে অসংখ্য নিদর্শন ছড়িয়ে আছে। পৃথিবীর বুকে বিচরণশীল প্রাণীকুল এবং শূন্যে উড়ে চলা পাখিদের কোন একটি শ্রেণির জীবন সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করলে দেখা যায়, কীভাবে তাদেরকে অবস্থা ও পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তাদের আকৃতি নির্মাণ করা হয়েছে। কীভাবে তাদের সৃষ্টিগত স্বাভাবিক প্রবণতার মধ্যে তাদের প্রাকৃতিক প্রয়োজন অনুযায়ী শক্তি ও সামর্থ্যের সঞ্চার করা হয়েছে। কীভাবে তাদের জীবিকা দানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কীভাবে তাদের জন্য ভাগ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তারা তার সীমানা পেরিয়ে এগিয়েও যেতে পারে না, পিছিয়েও আসতে পারে না। কীভাবে তাদের এক একটি প্রাণীকে এবং এক একটি ছোট ছোট কীটপতঙ্গকেও তার নিজের স্থানে রক্ষণাবেক্ষণ ও পথপ্রদর্শন করা হচ্ছে। কীভাবে একটি নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের থেকে কাজ আদায় করে নেয়া হচ্ছে। কীভাবে তাদেরকে একটি নিয়ম-শৃঙ্খলার আওতাধীন করে রাখা হয়েছে। কীভাবে তাদের জন্ম, মৃত্যু ও বংশ বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা যথানিয়মে চলছে। আল্লাহর অসংখ্য নিদর্শনের মধ্য থেকে যদি কেবল একটি নিদর্শন সম্পর্কে মানুষ চিন্তা-ভাবনা করে তাহলে সে জানতে পারবে যে, আল্লাহর একত্ব এবং তাঁর গুণাবলির যে ধারণা কুরআন আমাদের সামনে পেশ করেছে তা যথার্থ ও প্রকৃত সত্য। কিন্তু আমরা নিজেদের চোখ মেলে এগুলো দেখি না এবং বুঝারও চেষ্টা করি না।
পশুর ভেতরে সুস্বাদু দুধ তৈরি করা আল্লাহর নিদর্শন :
وَاِنَّ لَكُمْ فِى الْاَنْعَامِ لَعِبْرَةً ؕ نُسْقِيْكُمْ مِّمَّا فِيْ بُطُوْنِهٖ مِنْ ۢبَيْنِ فَرْثٍ وَّدَمٍ لَّبَنًا خَالِصًا سَآئِغًا لِّلشَّارِبِيْنَ
অবশ্যই গবাদি পশুর মধ্যে তোমাদের জন্য শিক্ষা রয়েছে। তাদের উদরস্থিত গোবর ও রক্তের মধ্য হতে তোমাদেরকে পান করাই বিশুদ্ধ দুধ, যা পানকারীদের জন্য খুবই সুস্বাদু। (সূরা নাহল- ৬৬)
ব্যাখ্যা : পশু যে খাদ্য খায় তা থেকে একদিকে রক্ত তৈরি হয় এবং অন্যদিকে তৈরি হয় মলমূত্র। কিন্তু এ পশুদের স্ত্রীজাতির মধ্যে আবার একই খাদ্য থেকে তৃতীয় একটি জিনিস তৈরি হয়, যাকে আমরা দুধ বলি। বর্ণ, গন্ধ, গুণ, উপকারিতা ও উদ্দেশ্যের দিক দিয়ে আগের দু’টি থেকে এটি সম্পূর্ণ আলাদা। তারপর বিশেষ করে গবাদি পশুর মধ্যে এর উৎপাদন এত বেশি হয় যে, তারা নিজেদের সন্তানদের প্রয়োজন পূর্ণ করার পর মানুষের জন্যও এ উৎকৃষ্টতম খাদ্য বিপুল পরিমাণে সরবরাহ করতে পারে। এটা আল্লাহর কুদরতের এক নিদর্শন মাত্র।
চতুষ্পদ জন্তুর বিভিন্ন উপকারিতা আল্লাহর নিদর্শন :
وَاِنَّ لَكُمْ فِى الْاَنْعَامِ لَعِبْرَةًؕ نُسْقِيْكُمْ مِّمَّا فِيْ بُطُوْنِهَا وَلَكُمْ فِيْهَا مَنَافِعُ كَثِيْرَةٌ وَّمِنْهَا تَاْكُلُوْنَ ‐ - وَعَلَيْهَا وَعَلَى الْفُلْكِ تُحْمَلُوْنَ
তোমাদের জন্য অবশ্যই শিক্ষণীয় বিষয় আছে চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যে। তোমাদেরকে আমি পান করাই তাদের উদরে যা আছে তা হতে এবং তাতে তোমাদের জন্য রয়েছে প্রচুর উপকারিতা। তোমরা তা হতে আহার কর এবং তোমরা তাতে ও নৌযানে আরোহণও করে থাক। (সূরা মু’মিনূন- ২১, ২২)
ব্যাখ্যা : পৃথিবীতে যেসব জন্তু মানুষের সেবায় নিয়োজিত আছে তার মধ্যে বিশেষ করে আছে গরু, মেষ, ভেড়া, বকরী, উট ও ঘোড়া। এসব জন্তুর সৃষ্টিকর্তা এদেরকে এমন নকশা অনুসারে সৃষ্টি করেছেন যে, এগুলো অতি সহজেই মানুষের পোষ মানা সেবকে পরিণত হয়ে যায় এবং তাদের সাহায্যে মানুষের অসংখ্য প্রয়োজন পূরণ হয়। মানুষ এসবের উপর আরোহণ করে, এসবকে ভার বহন করার কাজে লাগায়, ক্ষেত, কৃষি ও ফসল উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করে এবং এদের দুধ দোহন করে পান করে। আবার তা দিয়ে মাখন, ঘি, দধি, পনির এবং নানা রকমের মিষ্টিও তৈরি করে। এদের গোশত খায় এবং চর্বি ব্যবহার করে। এদের লোম, চামড়া, নাড়িভুঁড়ি, হাড্ডি, রক্ত, গোবর তথা প্রতিটি জিনিস তার কাজে লাগে। এটা কি সুস্পষ্ট প্রমাণ নয় যে, মানুষের সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীতে তাকে সৃষ্টি করার পূর্বেই তার এ অসংখ্য প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ্য রেখে একটি বিশেষ পরিকল্পনা অনুযায়ী এসব জন্তুগুলোকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে সে তা দ্বারা উপকৃত হতে পারে।
মৌমাছি কর্তৃক মধু তৈরি করা আল্লাহর নিদর্শন :
وَاَوْحٰى رَبُّكَ اِلَى النَّحْلِ اَنِ اتَّخِذِيْ مِنَ الْجِبَالِ بُيُوْتًا وَّمِنَ الشَّجَرِ وَمِمَّا يَعْرِشُوْنَ ‐ ثُمَّ كُلِيْ مِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ فَاسْلُكِيْ سُبُلَ رَبِّكِ ذُلُلًاؕ يَّخْرُجُ مِنْ ۢبُطُوْنِهَا شَرَابٌ مُّخْتَلِفٌ اَلْوَانُهٗ فِيْهِ شِفَآءٌ لِّلنَّاسِؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ
তোমার প্রতিপালক মৌমাছিকে এ নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা গৃহ নির্মাণ করো পাহাড়ে, বৃক্ষে ও মানুষ যে গৃহ নির্মাণ করে তাতে। তারপর প্রত্যেক ফল হতে কিছু কিছু আহার করো, অতঃপর তোমার প্রতিপালকের সহজ পথ অনুসরণ করো। তার উদর হতে নির্গত হয় বিভিন্ন বর্ণের পানীয়, যাতে মানুষের জন্য রয়েছে আরোগ্য। অবশ্যই এতে রয়েছে নিদর্শন চিমত্মাশীল সম্প্রদায়ের জন্য। (সূরা নাহল- ৬৮, ৬৯)
ব্যাখ্যা : মধু একটি উপকারী ও সুস্বাদু খাদ্য। তাছাড়া এর মধ্যে রোগ নিরাময় শক্তিও রয়েছে। কারণ এর মধ্যে রয়েছে ফুল ও ফলের রস এবং উন্নত পর্যায়ের গ্লুকোজ। তাছাড়া মধুর একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তা নিজে কখনো পঁচে না এবং অন্য জিনিসকেও দীর্ঘদিন পর্যন্ত পঁচন থেকে সংরক্ষণ রাখে। এজন্য ঔষধ নির্মাণ শিল্পে এলকোহলের পরিবর্তে মধুর ব্যবহার হাজার বছর থেকে চলে আসছে। ‘রবের তৈরি করা পথ’ বলতে মৌমাছির দল যে ব্যবস্থা ও কর্মপদ্ধতির আওতাধীনে কাজ করে সেই ব্যবস্থা ও কর্মপদ্ধতিকে বুঝানো হয়েছে। মৌচাকের আকৃতি ও কাঠামো, তাদের দলগঠন প্রক্রিয়া, শ্রমবণ্টন প্রক্রিয়া, শ্রমনীতি এবং সংগ্রহনীতি- এসব হচ্ছে সেই পথ, যা তাদের রব তাদেরকে শিখিয়েছেন। এ ব্যাপারে তাদের নিজেদের চিন্তা-ভাবনা করার প্রয়োজন হয় না। এটা একটি নির্ধারিত ব্যবস্থা। এরই ভিত্তিতে একটি নির্ধারিত নিয়মে এ অগণিত মৌমাছিগুলো হাজার হাজার বছর ধরে কাজ করে চলছে। এটা আল্লাহর একত্ববাদের বিশেষ নিদর্শন।
বান্দাদের মধ্যে রিযিকের তারতম্য আল্লাহর নিদর্শন :
اَوَلَمْ يَرَوْا اَنَّ اللهَ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيَقْدِرُؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ
তারা কি দেখে না যে, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা প্রচুর রিযিক দেন এবং তা হ্রাস করেন। নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে ঐসব লোকদের জন্য, যারা বিশ্বাস করে। (সূরা রূম- ৩৭)
অতীত জাতির ধ্বংসের কাহিনীতে আল্লাহর নিদর্শন রয়েছে :
وَكَمْ اَهْلَكْنَا قَبْلَهُمْ مِّنْ قَرْنٍ هُمْ اَشَدُّ مِنْهُمْ بَطْشًا فَنَقَّبُوْا فِى الْبِلَادِ هَلْ مِنْ مَّحِيْصٍ ‐ - اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَذِكْرٰى لِمَنْ كَانَ لَهٗ قَلْبٌ اَوْ اَلْقَى السَّمْعَ وَهُوَ شَهِيْدٌ
আমি তাদের পূর্বে আরো বহু জাতি ধ্বংস করেছি, যারা ছিল তাদের অপেক্ষা শক্তিতে অনেক প্রবল। তারা দেশে-বিদেশে ভ্রমণ করে বেড়াত; কিন্তু তবুও (আল্লাহর আযাব থেকে তাদের) কোন পলায়নের জায়গা ছিল কি? নিশ্চয় এতে উপদেশ রয়েছে তার জন্যে, যার অন্তঃকরণ আছে অথবা যে একাগ্রচিত্তে শ্রবণ করে। (সূরা ক্বাফ- ৩৬, ৩৭)
মানুষের ভাষা ও বর্ণের ভিন্নতা আল্লাহর নিদর্শন :
وَمِنْ اٰيَاتِه خَلْقُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِ وَاخْتِلَافُ اَلْسِنَتِكُمْ وَاَلْوَانِكُمْؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّلْعَالِمِيْنَ
আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে আসমান ও জমিনের সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের ভিন্নতা। নিশ্চয় এতে জ্ঞানীদের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা রূম- ২২)
ব্যাখ্যা : যদিও প্রতিটি মানুষের মুখ ও জিহবার গঠন এবং মস্তিষ্কের গঠনাকৃতি একই ধরনের, তবুও পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে তোমাদের ভাষা বিভিন্ন রকম। তারপর একই ভাষায় যারা কথা বলে, তাদের বিভিন্ন শহর ও জনপদের ভাষাও আলাদা। আবার প্রত্যেক ব্যক্তির বলার রীতি, শব্দের উচ্চারণ এবং আলাপ-আলোচনার পদ্ধতিও আলাদা। অনুরূপভাবে তোমাদের সৃষ্টির উপাদান এবং গঠনসূত্র এক হওয়া সত্ত্বেও তোমাদের বর্ণ এত বেশি বিভিন্ন যে, একই বাপ-মায়ের দু’টি সন্তানের বর্ণও সম্পূর্ণ আলাদা। এছাড়াও দুনিয়ায় সকল দিকেই এত বেশি বৈচিত্র দেখা যায় যে, কোন ব্যক্তি বা বস্তুর যে কোন একটি শ্রেণিকে নেয়া হোক, দেখা যাবে তাদের প্রতিটির মধ্যে মৌলিক একাত্মতা সত্ত্বেও অসংখ্য ভিন্নতা বিরাজ করছে। এমনকি একটি গাছের দু’টি পাতার মধ্যেও পূর্ণ সাদৃশ্য পাওয়া যায় না। এ বিষয়টি পরিষ্কার জানিয়ে দিচ্ছে যে, এখানে এমন একজন দক্ষ কারিগর কাজ করছেন, যিনি প্রত্যেকটি জিনিসকে কোন নমুনা ছাড়াই তৈরি করেন। তাঁর উদ্ভাবন ক্ষমতা সর্বদা একটি নতুন মডেল বের করে চলেছে। যে ব্যক্তিই এ বিস্ময়কর দৃশ্য চোখ মেলে দেখবে সে নিশ্চিত বুঝতে পারবে যে, প্রতি মুহূর্তে আল্লাহ নতুন নতুন জিনিস সৃষ্টি করে যাচ্ছেন এবং নিজের সৃষ্ট প্রত্যেকটি জিনিসের উপর তিনি দৃষ্টিবান।
গোটা পৃথিবী আল্লাহর নিদর্শন :
وَفِى الْاَ رْضِ اٰيَاتٌ لِّلْمُوْقِنِيْنَ
পৃথিবীতে বিশ্বাসীদের জন্য রয়েছে অনেক নিদর্শন। (সূরা যারিয়াত- ২০)
ব্যাখ্যা : পৃথিবীর অস্তিত্ব, তার গঠন ও আকার-আকৃতি, সূর্য থেকে তার নির্দিষ্ট দূরত্ব, তার উপর উষ্ণতা ও আলোর ব্যবস্থা, সেখানে বিভিন্ন ঋতুর আগমন ও প্রস্থান, তার উপর বাতাস ও পানি সরবরাহ, তার অভ্যন্তরে অগণিত সম্পদের ভান্ডার সরবরাহ, তার উপরিভাগ একটি উর্বর আবরণ দিয়ে মুড়ে দেয়া এবং তার পৃষ্ঠদেশে ভিন্ন রকমের অগণিত উদ্ভিদ উৎপন্ন করে দেয়া, তাতে স্থল, জল ও বায়ুতে বিচরণকারী জীবজন্তু ও কীটপতঙ্গের অসংখ্য প্রজাতির বংশধারা চালু করা, প্রত্যেক প্রজাতির জীবন ধারণের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ ও উপযুক্ত খাদ্যের ব্যবস্থা করা, সেখানে মানুষকে অস্তিত্বদানের পূর্বে সব উপায়-উপকরণের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি আরো অগণিত নিদর্শনাদি আছে, যা দেখে যে কোন বিবেকবান ব্যক্তির মনে এ দৃঢ় বিশ্বাস জন্মাবে যে, এ চরম উন্নতমানের বৈজ্ঞানিক কীর্তি মহাশক্তিমান ও মহাজ্ঞানী এক আল্লাহরই সৃষ্টি।
মানুষের গোটা দেহ আল্লাহর নিদর্শন :
فَلْيَنْظُرِ الْاِنْسَانُ مِمَّ خُلِقَ ‐ - خُلِقَ مِنْ مَّآءٍ دَافِقٍ ‐ - يَخْرُجُ مِنْ ۢبَيْنِ الصُّلْبِ وَالتَّرَآئِبِ
সুতরাং মানুষের লক্ষ্য করা উচিত যে, তাকে কিসের দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে প্রবল বেগে নির্গত পানি হতে, যা বের হয় পিঠ ও বুকের হাঁড়ের মধ্য হতে। (সূরা তারেক, ৫-৭)
وَفِۤيْ اَنْفُسِكُمْ اَفَلَا تُبْصِرُوْنَ
আর নিদর্শন রয়েছে তোমাদের মধ্যেও! তোমরা কি অনুধাবন করবে না? (সূরা যারিয়াত- ২১)
ব্যাখ্যা : বাইরে দেখার প্রয়োজন নেই। শুধু নিজের মধ্যে দেখলেই মানুষ অসংখ্য নিদর্শন দেখতে পাবে। কীভাবে মাতৃদেহের একটি নিভৃত কোণে তাদের সৃষ্টির সূচনা করা হয়েছিল। অন্ধকারে সেই নিভৃত কোণে কীভাবে লালন-পালন করে ক্রমান্বয়ে তা বড় করা হয়েছে। কীভাবে তাদেরকে অনুপম আকৃতি ও দেহ এবং কর্মশক্তিসম্পন্ন শক্তি দেয়া হয়েছে। কীভাবে তাদের দেহাবয়বের পূর্ণতা প্রাপ্তি মাত্রই মাতৃগর্ভের অন্ধকার জগৎ থেকে বের করে এ বিশাল জগতে আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে অত্যন্ত শক্তিশালী একটি স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র স্থাপিত হয়েছে। এ যন্ত্র মানুষের জন্ম থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত শ্বাস গ্রহণ করা, খাদ্য হজম করা, রক্ত তৈরি করে শিরা উপশিরায় প্রবাহিত করা, মল নির্গমন করা, দেহের ধ্বংসপ্রাপ্ত অংশসমূহ আবার নির্মাণ করা এবং ক্লান্ত হওয়ার পর আরামের জন্য শুইয়ে দেয়ার কাজ পর্যন্ত নিজ থেকেই সম্পন্ন করে যাচ্ছে। জীবনের এ মৌলিক প্রয়োজনসমূহ পূরণের জন্য মানুষের চেষ্টা ও সাধনার সামান্যতম অংশও ব্যয় হয় না। তাদের মাথার খুলির মধ্যে একটি বিস্ময়কর মস্তিষ্ক বসিয়ে দেয়া হয়েছে- যার জটিল ভাঁজে ভাঁজে জ্ঞানবুদ্ধি, চিন্তা-ভাবনা, কল্পনা, উপলব্ধি, ন্যায়-অন্যায় বোধ, ইচ্ছা, স্মৃতিশক্তি, আকাঙ্খা, অনুভূতি, আবেগ, প্রবণতা এবং আরো অনেক শক্তির এক বিশাল ভান্ডার কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে আছে। তাদেরকে জ্ঞান অর্জন করার অনেক মাধ্যম দেয়া হয়েছে, যা চোখ, নাক, কান এবং গোটা দেহের স্নায়ুতন্ত্রীর সাহায্যে তাদেরকে সবরকমের সংবাদ পৌঁছিয়ে থাকে। তাদেরকে ভাষা এবং বাকশক্তি দেয়া হয়েছে, যার সাহায্যে তোমরা নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে পার। সর্বোপরি তাদের সত্তার এ গোটা সাম্রাজ্যের উপর তাদেরকে নেতা বানিয়ে বসিয়ে দেয়া হয়েছে, যাতে সবগুলো শক্তি কাজে লাগিয়ে মতামত গঠন ও এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে যে, কোন পথে তাদের সময় ও শ্রম ব্যয় করতে হবে, কোনটি বর্জন করতে হবে এবং কোনটি গ্রহণ করতে হবে, কোন বস্তুকে নিজের জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বানাতে হবে এবং কোনটিকে নয়।
মানুষকে একটি সত্তা বানিয়ে যখন পৃথিবীতে আনা হলো তখনই সে তার লালন-পালন, প্রবৃত্তি, উন্নতি ও পূর্ণতা সাধনের জন্য সবরকম সাজ-সরঞ্জাম এখানে প্রস্তুত পেয়েছে। এসব সাজ-সরঞ্জামের বদৌলতে জীবনের একটি পর্যায়ে পৌঁছে সে নিজের ক্ষমতা কাজে লাগানোর উপযুক্ত হয়েছে। প্রত্যেকের নিজের পছন্দ অনুসারে তার ইচ্ছাকে বাস্তবায়িত করার যে সুযোগ সে লাভ করেছে, তা কাজে লাগিয়ে কেউ সৎকর্মশীল হয়েছে এবং কেউ দুষ্কর্মশীল হয়েছে। কেউ পৃথিবীতে মৃত্যু পর্যন্ত কল্যাণের কাজ করেছে আবার কেউ জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কুকর্ম করেছে। কেউ ন্যায়কে সমুন্নত করার জন্য জীবনপাত করেছে। আবার কেউ বাতিলকে সমুন্নত করার জন্য ন্যায়ের অনুসারীদের উপর যুলুম চালিয়েছে। মানুষকে যেভাবে যেসব ক্ষমতা ও যোগ্যতা দিয়ে পৃথিবীতে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং যে মর্যাদা তাকে দেয়া হয়েছে তা নিশ্চিতভাবেই একটি অত্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত পরিকল্পনা। যে আল্লাহ এমন পরিকল্পনা করতে পারেন, তাঁর বিচক্ষণতা অনিবার্যরূপে দাবী করে যে, মানুষকে তার কাজকর্মের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। আর সেই আল্লাহর শক্তি-সামর্থ্য সম্পর্কে এ ধারণা পোষণ করা মোটেই উচিত নয় যে, তিনি যে মানুষকে অণুবীক্ষণ যন্ত্রে দেখার মতো একটি কোষ থেকে সৃষ্টি করে এ পর্যায়ে পৌঁছিয়েছেন তাকে তিনি পুনরায় অস্তিত্ব দান করতে পারবেন না।
আল্লাহর কুদরতের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ :
اَلَمْ نَجْعَلِ الْاَ رْضَ مِهَادًا ‐ - وَّالْجِبَالَ اَوْتَادًا ‐ - وَّخَلَقْنَاكُمْ اَزْوَاجًا ‐ - وَّجَعَلْنَا نَوْمَكُمْ سُبَاتًا ‐ وَّجَعَلْنَا اللَّيْلَ لِبَاسًا ‐ وَّجَعَلْنَا النَّهَارَ مَعَاشًا ‐ وَّبَنَيْنَا فَوْقَكُمْ سَبْعًا شِدَادًا ‐ - وَّجَعَلْنَا سِرَاجًا وَّهَّاجًا ‐ - وَّاَنْزَلْنَا مِنَ الْمُعْصِرَاتِ مَآءً ثَجَّاجًا ‐ - لِّنُخْرِجَ بِهٖ حَبًّا وَّنَبَاتًا ‐ - وَّجَنَّاتٍ اَلْفَافًا
আমি কি জমিনকে বিছানাস্বরূপ বানাইনি? এবং পাহাড়সমূহকে পেরেকস্বরূপ (করিনি)? আর আমিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি জোড়ায় জোড়ায়। আমিই তোমাদের নিদ্রাকে করেছি আরামদায়ক এবং রাত্রিকে করেছি আবরণস্বরূপ। আর আমিই দিবসকে জীবিকা অর্জনের সময় করে দিয়েছি। আর আমিই নির্মাণ করেছি তোমাদের উপর সাতটি মজবুত আসমান এবং আমিই সৃষ্টি করেছি একটি দীপ্তমান প্রদীপ। আর আমিই মেঘমালা থেকে প্রচুর পানি বর্ষণ করি। যেন আমি তা দিয়ে উৎপন্ন করি শস্য ও উদ্ভিদ এবং বৃক্ষরাজিতে পরিপূর্ণ বাগানসমূহ। (সূরা নাবা, ৬-১৬)
اَلَمْ نَخْلُقْكُّمْ مِّنْ مَّآءٍ مَّهِيْنٍ ‐ - فَجَعَلْنَاهُ فِيْ قَرَارٍ مَّكِيْنٍ ‐ اِلٰى قَدَرٍ مَّعْلُوْمٍ ‐ فَقَدَرْنَا فَنِعْمَ الْقَادِرُوْنَ ‐ - وَيْلٌ يَّوْمَئِذٍ لِّلْمُكَذِّبِيْنَ ‐ - اَلَمْ نَجْعَلِ الْاَ رْضَ كِفَاتًا ‐ - اَحْيَآءً وَّاَمْوَاتًا ‐ - وَجَعَلْنَا فِيْهَا رَوَاسِيَ شَامِخَاتٍ وَّاَسْقَيْنَاكُمْ مَّآءً فُرَاتًا
আমি কি তোমাদেরকে তুচ্ছ পানি থেকে সৃষ্টি করিনি? অতঃপর আমি ওটাকে স্থাপন করেছি নিরাপদ স্থানে এক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। আমি একে গঠন করেছি সুবিন্যাস্তভাবে, অতএব আমি কতই না নিপুণ নিরূপণকারী! সেদিন মিথ্যারোপকারীদের জন্য দুর্ভোগ। আমি কি ভূমিকে জীবিত ও মৃতের জন্য বহনকারী রূপে সৃষ্টি করিনি? আমি তাতে স্থাপন করেছি সুদৃঢ় উচ্চ পর্বতমালা এবং তোমাদেরকে পান করিয়েছি সুপেয় পানি। (সূরা মুরসালাত, ২০-২৭)
বিশেষ চারটি জিনিসের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ :
اَفَلَا يَنْظُرُوْنَ اِلَى الْاِبِلِ كَيْفَ خُلِقَتْ ‐ - وَاِلَى السَّمَآءِ كَيْفَ رُفِعَتْ ‐ - وَاِلَى الْجِبَالِ كَيْفَ نُصِبَتْ ‐ - وَاِلَى الْاَ رْضِ كَيْفَ سُطِحَتْ
তারা কি উষ্ট্রপালের দিকে লক্ষ্য করে না যে, কীভাবে এগুলোকে সৃষ্টি করা হয়েছে? আকাশের দিকে (লক্ষ্য করে না যে) কীভাবে ওটাকে সমুচ্চ করা হয়েছে? পর্বতমালার দিকে (লক্ষ্য করে না যে) কীভাবে ওটাকে বসানো হয়েছে? আর পৃথিবীর দিকে (লক্ষ্য করে না যে) কীভাবে ওটাকে সমতল করা হয়েছে? (সূরা গাশিয়া, ১৭-২০)
সুন্দর আকাশের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ :
اَفَلَمْ يَنْظُرُوْاۤ اِلَى السَّمَآءِ فَوْقَهُمْ كَيْفَ بَنَيْنَاهَا وَزَيَّنَّاهَا وَمَا لَهَا مِنْ فُرُوْجٍ
এরা কি কখনো তাদের উপর অবস্থিত আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে না যে, কীভাবে আমি তা তৈরি করেছি ও তাকে সুশোভীত করেছি? আর তাতে কোন (সূক্ষ্মতম) ফাটলও নেই। (সূরা ক্বাফ- ৬)
ব্যাখ্যা : এখানে আসমান বলতে পুরো ঊর্ধবজগতকে বুঝানো হয়েছে। যা মানুষ রাত-দিন তার মাথার উপর ছেয়ে থাকতে দেখে। যেখানে দিনের বেলা সূর্য দীপ্তি ছড়ায়, রাতের বেলা চাঁদ এবং অসংখ্য তারকারাজি উজ্জল হয়ে দেখা দেয়। মানুষ যদি এগুলোকে খালি চোখেই দেখে তাহলেও সে বিস্মিত হয়ে পড়ে। আর দুরবিন লাগিয়ে দেখলে এমন একটি বিশাল সুবিস্তৃত সৃষ্টিজগৎ তার সামনে ভেসে ওঠে, যার কোন সীমা নেই। কোথায় শুরু এবং কোথায় শেষ হয়েছে বুঝা যাবে না। আমাদের পৃথিবীর চেয়ে লক্ষ লক্ষ গুণ বড় গ্রহসমূহ এর মধ্যে বলের মতো ঘুরপাক খাচ্ছে। আমাদের সূর্যের চেয়ে হাজার হাজার গুণ উজ্জল তারকা তার মধ্যে জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। আমাদের এ সৌরজগৎ তার একটিমাত্র ছায়াপথের এক কোণে পড়ে আছে। আল্লাহর কর্তৃত্ব কত ব্যাপক ও বিস্তৃত আমরা তার কোন অনুমানই করতে পারি না। আল্লাহ তা‘আলা এ বিশাল সৃষ্টিজগতকে অস্তিত্বদান করেছেন।
মানুষ ও পশুর খাবারের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ :
اَوَلَمْ يَرَوْا اَنَّا نَسُوْقُ الْمَآءَ اِلَى الْاَ رْضِ الْجُرُزِ فَنُخْرِجُ بِهٖ زَرْعًا تَاْكُلُ مِنْهُ اَنْعَامُهُمْ وَاَنْفُسُهُمْؕ اَفَلَا يُبْصِرُوْنَ
তারা কি লক্ষ্য করে না যে, আমি শুষ্ক ও পতিত জমিনে পানি প্রবাহিত করি; তারপর তার সাহায্যে শস্য উৎপাদন করি। অতঃপর তা থেকে ভক্ষণ করে তাদের চতুষ্পদ (চার পা বিশিষ্ট) জন্তুরা এবং তারা নিজেরাও? তবে কি তারা দেখে না? (সূরা সাজদা- ২৭)
فَلْيَنْظُرِ الْاِنْسَانُ اِلٰى طَعَامِهٖ ‐ - اَنَّا صَبَبْنَا الْمَآءَ صَبًّا ‐ - ثُمَّ شَقَقْنَا الْاَ رْضَ شَقًّا ‐ - فَاَنْۢبَتْنَا فِيْهَا حَبًّا ‐ - وَّعِنَبًا وَّقَضْبًا ‐ - وَّزَيْتُوْنًا وَّنَخْلًا ‐ - وَّحَدَآئِقَ غُلْبًا ‐ - وَّفَاكِهَةً وَّاَبًّا ‐ - مَّتَاعًا لَّكُمْ وَلِاَنْعَامِكُمْ
মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ্য করুক। আমিই প্রচুর পানি বর্ষণ করি, অতঃপর আমি ভূমিকে অদ্ভুতভাবে বিদীর্ণ করি এবং তাতে উৎপন্ন করি শস্য, আঙ্গুর, শাক-সবজি, যায়তুন, খেজুর, বহু নিবিড়-ঘন বাগান, ফল এবং গবাদি পশুর খাদ্য (ঘাস); তোমাদের ও তোমাদের পশুগুলোর ভোগের সামগ্রী হিসেবে। (সূরা আবাসা, ২৪-৩২)
মানুষের আয়ত্তাধীন পশুর দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ :
اَوَلَمْ يَرَوْا اَنَّا خَلَقْنَا لَهُمْ مِّمَّا عَمِلَتْ اَيْدِيْنَاۤ اَنْعَامًا فَهُمْ لَهَا مَالِكُوْنَ ‐ - وَذَلَّلْنَاهَا لَهُمْ فَمِنْهَا رَكُوْبُهُمْ وَمِنْهَا يَاْكُلُوْنَ ‐ - وَلَهُمْ فِيْهَا مَنَافِعُ وَمَشَارِبُ اَفَلَا يَشْكُرُوْنَ
তারা কি লক্ষ্য করেনি যে, আমি তাদের জন্য সৃষ্ট বস্তুসমূহের মধ্য থেকে চতুষ্পদ জন্তুগুলোকে সৃষ্টি করেছি? অতঃপর তারা এগুলোর মালিক হয়। আর আমি এগুলোকে তাদের অনুগত করে দিয়েছি, ফলে তারা এদের কতগুলোকে তাদের বাহনে পরিণত করে এবং কতগুলোকে ভক্ষণ করে। তাদের জন্য এগুলোর মধ্যে রয়েছে আরো অনেক উপকারিতা এবং বিভিন্ন ধরনের পানীয়। তবুও কি তারা শুকরিয়া আদায় করবে না? (সূরা ইয়াসীন, ৭১-৭৩)
নানা রঙ্গের পাহাড়, মানুষ ও পশুপাখির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ :
اَلَمْ تَرَ اَنَّ اللهَ اَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَخْرَجْنَا بِهٖ ثَمَرَاتٍ مُّخْتَلِفًا اَلْوَانُهَاؕ وَمِنَ الْجِبَالِ جُدَدٌ ۢبِيْضٌ وَّحُمْرٌ مُّخْتَلِفٌ اَلْوَانُهَا وَغَرَابِيْبُ سُوْدٌ -‐ وَمِنَ النَّاسِ وَالدَّوَآبِّ وَالْاَنْعَامِ مُخْتَلِفٌ اَلْوَانُهٗ كَذٰلِكَؕ اِنَّمَا يَخْشَى اللهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَآءُؕ اِنَّ اللهَ عَزِيْزٌ غَفُوْرٌ
তুমি কি লক্ষ্য করনি? আল্লাহ আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন। তারপর আমি তা দিয়ে নানা বর্ণের ফলমূল উৎপন্ন করি। আর পর্বতমালারও রয়েছে বিভিন্ন বর্ণের গিরিপথ- সাদা, লাল ও ঘোর কাল। আর এভাবে মানুষ, বিভিন্ন প্রাণী ও চতুষ্পদ জন্তুও বিভিন্ন বর্ণের হয়ে থাকে। আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই তাঁকে ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপ্রতাপশালী ও পরম ক্ষমাশীল। (সূরা ফাতির- ২৭, ২৮)
ফসল উৎপাদনের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ :
اَفَرَاَيْتُمْ مَّا تَحْرُثُوْنَ ‐ - اَاَنْتُمْ تَزْرَعُوْنَهٗۤ اَمْ نَحْنُ الزَّارِعُوْنَ ‐ - لَوْ نَشَآءُ لَجَعَلْنَاهُ حُطَامًا فَظَلْتُمْ تَفَكَّهُوْنَ ‐ - اِنَّا لَمُغْرَمُوْنَ ‐ - بَلْ نَحْنُ مَحْرُوْمُوْنَ
তোমরা যে বীজ বপন কর সে বিষয়ে চিন্তা করেছ কি? তোমরা কি তা অংকুরিত কর, না আমি অংকুরিত করি? আমি ইচ্ছা করলে একে খড়কুটায় পরিণত করতে পারি। তখন তোমরা হতবুদ্ধি হয়ে পড়বে, (বলবে) আমরা তো বরবাদ হয়ে গেছি! বরং আমরা বঞ্চিত। (সূরা ওয়াক্বিয়া, ৬৩-৬৭)
সুপেয় পানির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ :
اَفَرَاَيْتُمُ الْمَآءَ الَّذِيْ تَشْرَبُوْنَ ‐ اَاَنْتُمْ اَنْزَلْتُمُوْهُ مِنَ الْمُزْنِ اَمْ نَحْنُ الْمُنْزِلُوْنَ ‐ - لَوْ نَشَآءُ جَعَلْنَاهُ اُجَاجًا فَلَوْلَا تَشْكُرُوْنَ
তোমরা যে পানি পান কর সে বিষয়ে চিন্তা করেছ কি? তোমরা কি তা মেঘ হতে বর্ষাও, না আমিই বর্ষাই। আমি ইচ্ছা করলে ওটাকে লবণাক্ত বানাতে পারি। তবুও কি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে না? (সূরা ওয়াক্বিয়া, ৬৮-৭০)
আগুনের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ :
اَفَرَاَيْتُمُ النَّارَ الَّتِيْ تُوْرُوْنَ ‐ - اَاَنْتُمْ اَنْشَاْتُمْ شَجَرَتَهَاۤ اَمْ نَحْنُ الْمُنْشِئُوْنَ
তোমরা যে আগুন জ্বালাও তা লক্ষ্য করে দেখেছ কি? তোমরাই কি তার বৃক্ষ সৃষ্টি কর, না আমি সৃষ্টি করি? (সূরা ওয়াক্বিয়া- ৭১,৭২)
ব্যাখ্যা : কুরআন মাজীদ মোট ছয় প্রকার নিদর্শনাবলির দিকে ইঙ্গিত করেছে। আর তা হলো :
১. যে নিদর্শনগুলো পৃথিবী থেকে নিয়ে আকাশ পর্যন্ত প্রত্যেকটি জিনিসের এবং বিশ্বজাহানের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার মধ্যে পাওয়া যায়।
২. যে নিদর্শনগুলো মানুষের নিজের জন্ম এবং তার গঠনাকৃতি ও অস্তিত্বের মধ্যে পাওয়া যায়।
৩. যে নিদর্শনগুলো মানুষের অনুভূতিতে এবং তার নৈতিক চিন্তাধারায় পাওয়া যায়।
৪. যে নিদর্শনগুলো মানুষের ইতিহাসের ধারাবাহিকতার অভিজ্ঞতায় পাওয়া যায়।
৫. যে নিদর্শনাবলি মানুষের প্রতি অবতীর্ণ পার্থিব বিপদাপদ ও আসমানী বালা-মুসিবতের মধ্যে পাওয়া যায়।
৬. আল্লাহ তাঁর নবীগণের মাধ্যমে যেসব নিদর্শনাবলি প্রেরণ করেছেন সেগুলো।
মানুষকে বিভিন্নভাবে বুঝানোর জন্য এসব নিদর্শনাবলি উল্লেখ করা হয়েছে। অতঃপর সেসব নিদর্শনসমূহকে দেখার জন্য চোখ, শোনার জন্য কান এবং চিন্তার জন্য অন্তরও দান করা হয়েছে। এ সমস্ত নিদর্শন মানুষকে এ কথা বলে যাচ্ছে যে, তোমার উপাস্য মাত্র একজন। তাঁর ইবাদাত ও আনুগত্য ছাড়া তোমার দ্বিতীয় কোন পথ নেই। তোমাকে এ জগতে স্বাধীন, স্বেচ্ছাচারী ও দায়িত্বহীন করে পাঠানো হয়নি। জীবনের সমস্ত কাজ শেষ করে তোমাকে আল্লাহর সামনে হাজির হয়ে জবাবদিহি করতে হবে এবং সে কাজের প্রেক্ষিতে পুরস্কার বা শাস্তি পেতে হবে। কাজেই আল্লাহ তোমাকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য নবী ও কিতাবসমূহ পাঠিয়ে যে পথনির্দেশনা দিয়েছেন তা মেনে চলো এবং স্বেচ্ছাচারিতা থেকে বিরত থাকো। এরপরও সে যদি সমস্ত নিদর্শনের দিক থেকে চোখ ও কান বন্ধ করে নেয় এবং মন-মস্তিষ্ক দিয়েও উল্টা বুঝে, তাহলে তার চেয়ে বড় যালিম আর কেউ হতে পারে না। দুনিয়ায় পরীক্ষার মেয়াদ শেষ করে যখন সে আল্লাহর সামনে গিয়ে দাঁড়াবে, তখন সে পুরস্কার লাভের সকল ধরনের যোগ্যতাই হারিয়ে ফেলবে। ফলে সে জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি ভোগ করবে।
اَلَمْ نَجْعَلِ الْاَ رْضَ مِهَادًا ‐ - وَّالْجِبَالَ اَوْتَادًا ‐ - وَّخَلَقْنَاكُمْ اَزْوَاجًا ‐ - وَّجَعَلْنَا نَوْمَكُمْ سُبَاتًا ‐ وَّجَعَلْنَا اللَّيْلَ لِبَاسًا ‐ وَّجَعَلْنَا النَّهَارَ مَعَاشًا ‐ وَّبَنَيْنَا فَوْقَكُمْ سَبْعًا شِدَادًا ‐ - وَّجَعَلْنَا سِرَاجًا وَّهَّاجًا ‐ - وَّاَنْزَلْنَا مِنَ الْمُعْصِرَاتِ مَآءً ثَجَّاجًا ‐ - لِّنُخْرِجَ بِهٖ حَبًّا وَّنَبَاتًا ‐ - وَّجَنَّاتٍ اَلْفَافًا
আমি কি জমিনকে বিছানাস্বরূপ বানাইনি? এবং পাহাড়সমূহকে পেরেকস্বরূপ (করিনি)? আর আমিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি জোড়ায় জোড়ায়। আমিই তোমাদের নিদ্রাকে করেছি আরামদায়ক এবং রাত্রিকে করেছি আবরণস্বরূপ। আর আমিই দিবসকে জীবিকা অর্জনের সময় করে দিয়েছি। আর আমিই নির্মাণ করেছি তোমাদের উপর সাতটি মজবুত আসমান এবং আমিই সৃষ্টি করেছি একটি দীপ্তমান প্রদীপ। আর আমিই মেঘমালা থেকে প্রচুর পানি বর্ষণ করি। যেন আমি তা দিয়ে উৎপন্ন করি শস্য ও উদ্ভিদ এবং বৃক্ষরাজিতে পরিপূর্ণ বাগানসমূহ। (সূরা নাবা, ৬-১৬)
اَلَمْ نَخْلُقْكُّمْ مِّنْ مَّآءٍ مَّهِيْنٍ ‐ - فَجَعَلْنَاهُ فِيْ قَرَارٍ مَّكِيْنٍ ‐ اِلٰى قَدَرٍ مَّعْلُوْمٍ ‐ فَقَدَرْنَا فَنِعْمَ الْقَادِرُوْنَ ‐ - وَيْلٌ يَّوْمَئِذٍ لِّلْمُكَذِّبِيْنَ ‐ - اَلَمْ نَجْعَلِ الْاَ رْضَ كِفَاتًا ‐ - اَحْيَآءً وَّاَمْوَاتًا ‐ - وَجَعَلْنَا فِيْهَا رَوَاسِيَ شَامِخَاتٍ وَّاَسْقَيْنَاكُمْ مَّآءً فُرَاتًا
আমি কি তোমাদেরকে তুচ্ছ পানি থেকে সৃষ্টি করিনি? অতঃপর আমি ওটাকে স্থাপন করেছি নিরাপদ স্থানে এক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। আমি একে গঠন করেছি সুবিন্যাস্তভাবে, অতএব আমি কতই না নিপুণ নিরূপণকারী! সেদিন মিথ্যারোপকারীদের জন্য দুর্ভোগ। আমি কি ভূমিকে জীবিত ও মৃতের জন্য বহনকারী রূপে সৃষ্টি করিনি? আমি তাতে স্থাপন করেছি সুদৃঢ় উচ্চ পর্বতমালা এবং তোমাদেরকে পান করিয়েছি সুপেয় পানি। (সূরা মুরসালাত, ২০-২৭)
বিশেষ চারটি জিনিসের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ :
اَفَلَا يَنْظُرُوْنَ اِلَى الْاِبِلِ كَيْفَ خُلِقَتْ ‐ - وَاِلَى السَّمَآءِ كَيْفَ رُفِعَتْ ‐ - وَاِلَى الْجِبَالِ كَيْفَ نُصِبَتْ ‐ - وَاِلَى الْاَ رْضِ كَيْفَ سُطِحَتْ
তারা কি উষ্ট্রপালের দিকে লক্ষ্য করে না যে, কীভাবে এগুলোকে সৃষ্টি করা হয়েছে? আকাশের দিকে (লক্ষ্য করে না যে) কীভাবে ওটাকে সমুচ্চ করা হয়েছে? পর্বতমালার দিকে (লক্ষ্য করে না যে) কীভাবে ওটাকে বসানো হয়েছে? আর পৃথিবীর দিকে (লক্ষ্য করে না যে) কীভাবে ওটাকে সমতল করা হয়েছে? (সূরা গাশিয়া, ১৭-২০)
সুন্দর আকাশের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ :
اَفَلَمْ يَنْظُرُوْاۤ اِلَى السَّمَآءِ فَوْقَهُمْ كَيْفَ بَنَيْنَاهَا وَزَيَّنَّاهَا وَمَا لَهَا مِنْ فُرُوْجٍ
এরা কি কখনো তাদের উপর অবস্থিত আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে না যে, কীভাবে আমি তা তৈরি করেছি ও তাকে সুশোভীত করেছি? আর তাতে কোন (সূক্ষ্মতম) ফাটলও নেই। (সূরা ক্বাফ- ৬)
ব্যাখ্যা : এখানে আসমান বলতে পুরো ঊর্ধবজগতকে বুঝানো হয়েছে। যা মানুষ রাত-দিন তার মাথার উপর ছেয়ে থাকতে দেখে। যেখানে দিনের বেলা সূর্য দীপ্তি ছড়ায়, রাতের বেলা চাঁদ এবং অসংখ্য তারকারাজি উজ্জল হয়ে দেখা দেয়। মানুষ যদি এগুলোকে খালি চোখেই দেখে তাহলেও সে বিস্মিত হয়ে পড়ে। আর দুরবিন লাগিয়ে দেখলে এমন একটি বিশাল সুবিস্তৃত সৃষ্টিজগৎ তার সামনে ভেসে ওঠে, যার কোন সীমা নেই। কোথায় শুরু এবং কোথায় শেষ হয়েছে বুঝা যাবে না। আমাদের পৃথিবীর চেয়ে লক্ষ লক্ষ গুণ বড় গ্রহসমূহ এর মধ্যে বলের মতো ঘুরপাক খাচ্ছে। আমাদের সূর্যের চেয়ে হাজার হাজার গুণ উজ্জল তারকা তার মধ্যে জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। আমাদের এ সৌরজগৎ তার একটিমাত্র ছায়াপথের এক কোণে পড়ে আছে। আল্লাহর কর্তৃত্ব কত ব্যাপক ও বিস্তৃত আমরা তার কোন অনুমানই করতে পারি না। আল্লাহ তা‘আলা এ বিশাল সৃষ্টিজগতকে অস্তিত্বদান করেছেন।
মানুষ ও পশুর খাবারের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ :
اَوَلَمْ يَرَوْا اَنَّا نَسُوْقُ الْمَآءَ اِلَى الْاَ رْضِ الْجُرُزِ فَنُخْرِجُ بِهٖ زَرْعًا تَاْكُلُ مِنْهُ اَنْعَامُهُمْ وَاَنْفُسُهُمْؕ اَفَلَا يُبْصِرُوْنَ
তারা কি লক্ষ্য করে না যে, আমি শুষ্ক ও পতিত জমিনে পানি প্রবাহিত করি; তারপর তার সাহায্যে শস্য উৎপাদন করি। অতঃপর তা থেকে ভক্ষণ করে তাদের চতুষ্পদ (চার পা বিশিষ্ট) জন্তুরা এবং তারা নিজেরাও? তবে কি তারা দেখে না? (সূরা সাজদা- ২৭)
فَلْيَنْظُرِ الْاِنْسَانُ اِلٰى طَعَامِهٖ ‐ - اَنَّا صَبَبْنَا الْمَآءَ صَبًّا ‐ - ثُمَّ شَقَقْنَا الْاَ رْضَ شَقًّا ‐ - فَاَنْۢبَتْنَا فِيْهَا حَبًّا ‐ - وَّعِنَبًا وَّقَضْبًا ‐ - وَّزَيْتُوْنًا وَّنَخْلًا ‐ - وَّحَدَآئِقَ غُلْبًا ‐ - وَّفَاكِهَةً وَّاَبًّا ‐ - مَّتَاعًا لَّكُمْ وَلِاَنْعَامِكُمْ
মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ্য করুক। আমিই প্রচুর পানি বর্ষণ করি, অতঃপর আমি ভূমিকে অদ্ভুতভাবে বিদীর্ণ করি এবং তাতে উৎপন্ন করি শস্য, আঙ্গুর, শাক-সবজি, যায়তুন, খেজুর, বহু নিবিড়-ঘন বাগান, ফল এবং গবাদি পশুর খাদ্য (ঘাস); তোমাদের ও তোমাদের পশুগুলোর ভোগের সামগ্রী হিসেবে। (সূরা আবাসা, ২৪-৩২)
মানুষের আয়ত্তাধীন পশুর দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ :
اَوَلَمْ يَرَوْا اَنَّا خَلَقْنَا لَهُمْ مِّمَّا عَمِلَتْ اَيْدِيْنَاۤ اَنْعَامًا فَهُمْ لَهَا مَالِكُوْنَ ‐ - وَذَلَّلْنَاهَا لَهُمْ فَمِنْهَا رَكُوْبُهُمْ وَمِنْهَا يَاْكُلُوْنَ ‐ - وَلَهُمْ فِيْهَا مَنَافِعُ وَمَشَارِبُ اَفَلَا يَشْكُرُوْنَ
তারা কি লক্ষ্য করেনি যে, আমি তাদের জন্য সৃষ্ট বস্তুসমূহের মধ্য থেকে চতুষ্পদ জন্তুগুলোকে সৃষ্টি করেছি? অতঃপর তারা এগুলোর মালিক হয়। আর আমি এগুলোকে তাদের অনুগত করে দিয়েছি, ফলে তারা এদের কতগুলোকে তাদের বাহনে পরিণত করে এবং কতগুলোকে ভক্ষণ করে। তাদের জন্য এগুলোর মধ্যে রয়েছে আরো অনেক উপকারিতা এবং বিভিন্ন ধরনের পানীয়। তবুও কি তারা শুকরিয়া আদায় করবে না? (সূরা ইয়াসীন, ৭১-৭৩)
নানা রঙ্গের পাহাড়, মানুষ ও পশুপাখির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ :
اَلَمْ تَرَ اَنَّ اللهَ اَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَخْرَجْنَا بِهٖ ثَمَرَاتٍ مُّخْتَلِفًا اَلْوَانُهَاؕ وَمِنَ الْجِبَالِ جُدَدٌ ۢبِيْضٌ وَّحُمْرٌ مُّخْتَلِفٌ اَلْوَانُهَا وَغَرَابِيْبُ سُوْدٌ -‐ وَمِنَ النَّاسِ وَالدَّوَآبِّ وَالْاَنْعَامِ مُخْتَلِفٌ اَلْوَانُهٗ كَذٰلِكَؕ اِنَّمَا يَخْشَى اللهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَآءُؕ اِنَّ اللهَ عَزِيْزٌ غَفُوْرٌ
তুমি কি লক্ষ্য করনি? আল্লাহ আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন। তারপর আমি তা দিয়ে নানা বর্ণের ফলমূল উৎপন্ন করি। আর পর্বতমালারও রয়েছে বিভিন্ন বর্ণের গিরিপথ- সাদা, লাল ও ঘোর কাল। আর এভাবে মানুষ, বিভিন্ন প্রাণী ও চতুষ্পদ জন্তুও বিভিন্ন বর্ণের হয়ে থাকে। আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই তাঁকে ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপ্রতাপশালী ও পরম ক্ষমাশীল। (সূরা ফাতির- ২৭, ২৮)
ফসল উৎপাদনের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ :
اَفَرَاَيْتُمْ مَّا تَحْرُثُوْنَ ‐ - اَاَنْتُمْ تَزْرَعُوْنَهٗۤ اَمْ نَحْنُ الزَّارِعُوْنَ ‐ - لَوْ نَشَآءُ لَجَعَلْنَاهُ حُطَامًا فَظَلْتُمْ تَفَكَّهُوْنَ ‐ - اِنَّا لَمُغْرَمُوْنَ ‐ - بَلْ نَحْنُ مَحْرُوْمُوْنَ
তোমরা যে বীজ বপন কর সে বিষয়ে চিন্তা করেছ কি? তোমরা কি তা অংকুরিত কর, না আমি অংকুরিত করি? আমি ইচ্ছা করলে একে খড়কুটায় পরিণত করতে পারি। তখন তোমরা হতবুদ্ধি হয়ে পড়বে, (বলবে) আমরা তো বরবাদ হয়ে গেছি! বরং আমরা বঞ্চিত। (সূরা ওয়াক্বিয়া, ৬৩-৬৭)
সুপেয় পানির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ :
اَفَرَاَيْتُمُ الْمَآءَ الَّذِيْ تَشْرَبُوْنَ ‐ اَاَنْتُمْ اَنْزَلْتُمُوْهُ مِنَ الْمُزْنِ اَمْ نَحْنُ الْمُنْزِلُوْنَ ‐ - لَوْ نَشَآءُ جَعَلْنَاهُ اُجَاجًا فَلَوْلَا تَشْكُرُوْنَ
তোমরা যে পানি পান কর সে বিষয়ে চিন্তা করেছ কি? তোমরা কি তা মেঘ হতে বর্ষাও, না আমিই বর্ষাই। আমি ইচ্ছা করলে ওটাকে লবণাক্ত বানাতে পারি। তবুও কি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে না? (সূরা ওয়াক্বিয়া, ৬৮-৭০)
আগুনের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ :
اَفَرَاَيْتُمُ النَّارَ الَّتِيْ تُوْرُوْنَ ‐ - اَاَنْتُمْ اَنْشَاْتُمْ شَجَرَتَهَاۤ اَمْ نَحْنُ الْمُنْشِئُوْنَ
তোমরা যে আগুন জ্বালাও তা লক্ষ্য করে দেখেছ কি? তোমরাই কি তার বৃক্ষ সৃষ্টি কর, না আমি সৃষ্টি করি? (সূরা ওয়াক্বিয়া- ৭১,৭২)
ব্যাখ্যা : কুরআন মাজীদ মোট ছয় প্রকার নিদর্শনাবলির দিকে ইঙ্গিত করেছে। আর তা হলো :
১. যে নিদর্শনগুলো পৃথিবী থেকে নিয়ে আকাশ পর্যন্ত প্রত্যেকটি জিনিসের এবং বিশ্বজাহানের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার মধ্যে পাওয়া যায়।
২. যে নিদর্শনগুলো মানুষের নিজের জন্ম এবং তার গঠনাকৃতি ও অস্তিত্বের মধ্যে পাওয়া যায়।
৩. যে নিদর্শনগুলো মানুষের অনুভূতিতে এবং তার নৈতিক চিন্তাধারায় পাওয়া যায়।
৪. যে নিদর্শনগুলো মানুষের ইতিহাসের ধারাবাহিকতার অভিজ্ঞতায় পাওয়া যায়।
৫. যে নিদর্শনাবলি মানুষের প্রতি অবতীর্ণ পার্থিব বিপদাপদ ও আসমানী বালা-মুসিবতের মধ্যে পাওয়া যায়।
৬. আল্লাহ তাঁর নবীগণের মাধ্যমে যেসব নিদর্শনাবলি প্রেরণ করেছেন সেগুলো।
মানুষকে বিভিন্নভাবে বুঝানোর জন্য এসব নিদর্শনাবলি উল্লেখ করা হয়েছে। অতঃপর সেসব নিদর্শনসমূহকে দেখার জন্য চোখ, শোনার জন্য কান এবং চিন্তার জন্য অন্তরও দান করা হয়েছে। এ সমস্ত নিদর্শন মানুষকে এ কথা বলে যাচ্ছে যে, তোমার উপাস্য মাত্র একজন। তাঁর ইবাদাত ও আনুগত্য ছাড়া তোমার দ্বিতীয় কোন পথ নেই। তোমাকে এ জগতে স্বাধীন, স্বেচ্ছাচারী ও দায়িত্বহীন করে পাঠানো হয়নি। জীবনের সমস্ত কাজ শেষ করে তোমাকে আল্লাহর সামনে হাজির হয়ে জবাবদিহি করতে হবে এবং সে কাজের প্রেক্ষিতে পুরস্কার বা শাস্তি পেতে হবে। কাজেই আল্লাহ তোমাকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য নবী ও কিতাবসমূহ পাঠিয়ে যে পথনির্দেশনা দিয়েছেন তা মেনে চলো এবং স্বেচ্ছাচারিতা থেকে বিরত থাকো। এরপরও সে যদি সমস্ত নিদর্শনের দিক থেকে চোখ ও কান বন্ধ করে নেয় এবং মন-মস্তিষ্ক দিয়েও উল্টা বুঝে, তাহলে তার চেয়ে বড় যালিম আর কেউ হতে পারে না। দুনিয়ায় পরীক্ষার মেয়াদ শেষ করে যখন সে আল্লাহর সামনে গিয়ে দাঁড়াবে, তখন সে পুরস্কার লাভের সকল ধরনের যোগ্যতাই হারিয়ে ফেলবে। ফলে সে জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি ভোগ করবে।
মানুষ যেন এগুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে :
كَذٰلِكَ يُبَيِّنُ اللهُ لَكُمُ الْاٰيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَتَفَكَّرُوْنَ
এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য নিদর্শনসমূহ বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা চিন্তা-ভাবনা করতে পার। (সূরা বাক্বারা- ২১৯)
লোকেরা যেন সোজা পথে ফিরে আসে :
وَكَذٰلِكَ نُفَصِّلُ الْاٰيَاتِ وَلَعَلَّهُمْ يَرْجِعُوْنَ
এভাবেই আমি নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করি, যাতে তারা প্রত্যাবর্তন করে। (সূরা আ‘রাফ- ১৭৪)
মানুষ যেন হেদায়াত লাভ করে :
كَذٰلِكَ يُبَيِّنُ اللهُ لَكُمْ اٰيَاتِه لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ
এভাবে আল্লাহ তোমাদের সামনে তাঁর নিদর্শনসমূহ বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা হেদায়াত লাভ করতে পার। (সূরা আলে ইমরান- ১০৩)
তারপরও মানুষ নিদর্শনের ব্যাপারে উদাসীন :
وَكَاَيِّنْ مِّنْ اٰيَةٍ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِ يَمُرُّوْنَ عَلَيْهَا وَهُمْ عَنْهَا مُعْرِضُوْنَ
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে অনেক নিদর্শন রয়েছে। তারা এগুলোর উপর দিয়ে পথ অতিক্রম করে, কিন্তু তারা এসবের প্রতি উদাসীন। (সূরা ইউসুফ- ১০৫)
وَمَا تَاْتِيْهِمْ مِّنْ اٰيَةٍ مِّنْ اٰيَاتِ رَبِّهِمْ اِلَّا كَانُوْا عَنْهَا مُعْرِضِيْنَ
আর তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলির যে কোন নিদর্শনই তাদের কাছে আসে, তা থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়। (সূরা ইয়াসীন- ৪৬)
كَذٰلِكَ يُبَيِّنُ اللهُ لَكُمُ الْاٰيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَتَفَكَّرُوْنَ
এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য নিদর্শনসমূহ বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা চিন্তা-ভাবনা করতে পার। (সূরা বাক্বারা- ২১৯)
লোকেরা যেন সোজা পথে ফিরে আসে :
وَكَذٰلِكَ نُفَصِّلُ الْاٰيَاتِ وَلَعَلَّهُمْ يَرْجِعُوْنَ
এভাবেই আমি নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করি, যাতে তারা প্রত্যাবর্তন করে। (সূরা আ‘রাফ- ১৭৪)
মানুষ যেন হেদায়াত লাভ করে :
كَذٰلِكَ يُبَيِّنُ اللهُ لَكُمْ اٰيَاتِه لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ
এভাবে আল্লাহ তোমাদের সামনে তাঁর নিদর্শনসমূহ বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা হেদায়াত লাভ করতে পার। (সূরা আলে ইমরান- ১০৩)
তারপরও মানুষ নিদর্শনের ব্যাপারে উদাসীন :
وَكَاَيِّنْ مِّنْ اٰيَةٍ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِ يَمُرُّوْنَ عَلَيْهَا وَهُمْ عَنْهَا مُعْرِضُوْنَ
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে অনেক নিদর্শন রয়েছে। তারা এগুলোর উপর দিয়ে পথ অতিক্রম করে, কিন্তু তারা এসবের প্রতি উদাসীন। (সূরা ইউসুফ- ১০৫)
وَمَا تَاْتِيْهِمْ مِّنْ اٰيَةٍ مِّنْ اٰيَاتِ رَبِّهِمْ اِلَّا كَانُوْا عَنْهَا مُعْرِضِيْنَ
আর তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলির যে কোন নিদর্শনই তাদের কাছে আসে, তা থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়। (সূরা ইয়াসীন- ৪৬)
যারা মুমিন :
اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّلْمُؤْمِنِيْنَ
অবশ্যই এতে মুমিনদের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা হিজর- ৭৭)
যারা চিমত্মাশীল :
اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ
অবশ্যই এতে চিমত্মাশীল সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা নাহল- ১১)
যারা উপদেশ গ্রহণ করে :
اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّذَّكَّرُوْنَ
এতে রয়েছে নিশ্চিত নিদর্শন সে সম্প্রদায়ের জন্য, যারা উপদেশ গ্রহণ করে। (সূরা নাহল- ১৩)
যারা বোধশক্তিসম্পন্ন :
اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّعْقِلُوْنَ
এতে অবশ্যই বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা নাহল- ৬৫)
যারা অতি ধৈর্যশীল ও পরম কৃতজ্ঞ :
اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّكُلِّ صَبَّارٍ شَكُوْرٍ
নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে প্রত্যেক পরম ধৈর্যশীল ও কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য। (সূরা ইবরাহীম- ৫)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর নিদর্শন থেকে শুধু তারাই প্রকৃত সত্যে পৌঁছতে পারে, যাদের মধ্যে এসব গুণাবলি রয়েছে। তারা জাহেলী মনোভাব ত্যাগ করে ইলিম অর্জন করবে। ভুল থেকে মুক্ত হয়ে সঠিক পথে চলার ইচ্ছা তাদের মধ্যে থাকবে। তাদেরকে ধৈর্যশীল হতে হবে এবং তাদের পদক্ষেপে দৃঢ়তা থাকতে হবে। সহনীয়-অসহনীয় এবং ভালো-মন্দ সকল অবস্থায় তারা একটি সৎ ও সুস্থ বিশ্বাসের উপর অটল থাকবে। তাদের মধ্যে এ ধরনের কোন দুর্বলতা থাকবে না যে, দুঃসময়ের মুখোমুখি হলে আল্লাহর সামনে নতজানু হয়ে কান্নাকাটি করবে আর সুসময় আসার সাথে সাথেই সবকিছু ভুলে যাবে। অথবা এর বিপরীতে ভালো অবস্থায় আল্লাহকে মেনে চলবে এবং বিপদের একটি আঘাতেই আল্লাহকে গালি দিতে শুরু করবে। তাদেরকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী হতে হবে। তারা বিশ্বাসঘাতক হবে না, উপকারীর উপকার ভুলে যাবে না। বরং অনুগ্রহের কদর করবে এবং অনুগ্রহকারীর জন্য কৃতজ্ঞতার অনুভূতি নিজের মধ্যে জাগ্রত রাখবে। মানুষ কোন বড় রকমের বিপদের সম্মুখীন হলে অথবা মৃত্যু তার ভয়াবহ চেহারা নিয়ে সামনে এসে দাঁড়ালে তখন এক আল্লাহর আশ্রয় ছাড়া আর কোন আশ্রয়স্থল তার চোখে পড়ে না। বড় বড় মুশরিকরা এ সময় নিজেদের উপাস্য ও দেবতাদের কথা ভুলে এক আল্লাহকে ডাকতে থাকে। কট্টর আল্লাহদ্রোহী নাস্তিকও এ সময় আল্লাহর কাছে দু‘আ করে। কারণ আল্লাহভক্তি ও তাওহীদের সাক্ষ্য প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই বিদ্যমান। এর উপর গাফলতি ও অজ্ঞতার যতই আবরণ পড়ুক না কেন তবুও তা কখনো না কখনো দৃষ্টি সমক্ষে জেগে ওঠে। তারা যখন এ নিদর্শনগুলোর মাধ্যমে সত্যকে চিনতে পারবে তখন তারা চিরকালের জন্য তাওহীদের শিক্ষাকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরবে।
অহংকারীরা নিদর্শন থেকে ফায়দা পায় না :
سَاَصْرِفُ عَنْ اٰيَاتِيَ الَّذِيْنَ يَتَكَبَّرُوْنَ فِى الْاَ رْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّؕ وَاِنْ يَّرَوْا كُلَّ اٰيَةٍ لَّا يُؤْمِنُوْا بِهَاۚ وَاِنْ يَّرَوْا سَبِيْلَ الرُّشْدِ لَا يَتَّخِذُوْهُ سَبِيْلًاۚ وَّاِنْ يَّرَوْا سَبِيْلَ الْغَيِّ يَتَّخِذُوْهُ سَبِيْلًاؕ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَا وَكَانُوْا عَنْهَا غَافِلِيْنَ
পৃথিবীতে যারা অন্যায়ভাবে দম্ভ করে বেড়ায় তাদের দৃষ্টি আমার নিদর্শন হতে ফিরিয়ে দেব, তারা আমার প্রত্যেকটি নিদর্শন দেখলেও তাতে বিশ্বাস স্থাপন করবে না, তারা সৎপথ দেখলেও তাকে পথ বলে গ্রহণ করবে না, কিন্তু তারা ভ্রান্ত পথ দেখলে তাকে (সঠিক) পথ হিসেবে গ্রহণ করবে। কারণ তারা আমার নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করেছে; আর সে সম্বন্ধে তারা ছিল গাফিল। (সূরা আ‘রাফ- ১৪৬)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ যারা আল্লাহ থেকে বিমুখ, তারা কখনো কোন নিদর্শন দেখেও শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে না। কেননা তাদের জ্ঞানবুদ্ধির উপর গাফলতি ও গোঁড়ামির পর্দা পড়ে আছে। তার চক্ষু এ দৃশ্য অবশ্যই দেখে যে, বাতাস বয়ে গেল, মেঘরাশি উড়ে আসল, বিদ্যুৎ চমকাল ও বজ্র ধ্বনি হলো এবং বৃষ্টিপাত হলো; কিন্তু তার মস্তিষ্ক এটা ভেবে দেখে না যে, এসব কেন হচ্ছে, কে করছে এবং এ ব্যাপারে তার কী কী দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। যিনি এগুলো তাকে দিচ্ছেন, তিনি তার কাছে কী চাচ্ছেন।
আল্লাহর নিদর্শনাবলি মানুষের চোখ খুলে দেয় :
تَبْصِرَةً وَّذِكْرٰى لِكُلِّ عَبْدٍ مُّنِيْبٍ
এসব প্রত্যেক বিনীত ব্যক্তির জন্য জ্ঞান ও উপদেশস্বরূপ। (সূরা ক্বাফ- ৮)
ব্যাখ্যা : প্রত্যেক ব্যক্তি যদি আল্লাহ থেকে গাফিল না হয় এবং বিশ্বজাহানের নিদর্শনগুলোকে বিবেকবুদ্ধিহীন জন্তু-জানোয়ারের দৃষ্টিতে না দেখে গভীর পর্যবেক্ষণের দৃষ্টিতে দেখে; অতঃপর সে সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে, তাহলে সে প্রতিটি নিদর্শনের সাহায্যে খুব সহজে যথার্থ ও চূড়ান্ত সত্যের দ্বারে পৌঁছতে পারে। যার সামনে বিশ্বজগতের চারদিকে আল্লাহর একত্বের প্রমাণ ছড়িয়ে আছে তারপরও যে তার মধ্য হতে কোনকিছুই দেখতে পায় না, সে অন্ধ। আর চক্ষুষ্মান হচ্ছে এমন ব্যক্তি, যার দৃষ্টি সারা বিশ্বের প্রতিটি জিনিসের মধ্যে একজন অসাধারণ কারিগরের অতুলনীয় কৃতিত্ব দেখতে পায়। যে ব্যক্তি সত্যকে স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছে, সে কখনো দৃষ্টিহীন লোকদের মতো আচরণ করবে না এবং ভ্রান্ত পথে ঘুরে বেড়াবে না।
তারপরও মানুষ আল্লাহকে যথাযথ মূল্যায়ন করে না :
مَا قَدَرُوا اللهَ حَقَّ قَدْرِهٖؕ اِنَّ اللهَ لَقَوِيٌّ عَزِيْزٌ
তারা আল্লাহকে যথাযথ মর্যাদা দিতে পারেনি, নিশ্চয় আল্লাহ অসীম ক্ষমতাবান ও মহাপরাক্রমশালী। (সূরা হজ্জ- ৭৪)
اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّلْمُؤْمِنِيْنَ
অবশ্যই এতে মুমিনদের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা হিজর- ৭৭)
যারা চিমত্মাশীল :
اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ
অবশ্যই এতে চিমত্মাশীল সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা নাহল- ১১)
যারা উপদেশ গ্রহণ করে :
اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّذَّكَّرُوْنَ
এতে রয়েছে নিশ্চিত নিদর্শন সে সম্প্রদায়ের জন্য, যারা উপদেশ গ্রহণ করে। (সূরা নাহল- ১৩)
যারা বোধশক্তিসম্পন্ন :
اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّعْقِلُوْنَ
এতে অবশ্যই বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা নাহল- ৬৫)
যারা অতি ধৈর্যশীল ও পরম কৃতজ্ঞ :
اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّكُلِّ صَبَّارٍ شَكُوْرٍ
নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে প্রত্যেক পরম ধৈর্যশীল ও কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য। (সূরা ইবরাহীম- ৫)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর নিদর্শন থেকে শুধু তারাই প্রকৃত সত্যে পৌঁছতে পারে, যাদের মধ্যে এসব গুণাবলি রয়েছে। তারা জাহেলী মনোভাব ত্যাগ করে ইলিম অর্জন করবে। ভুল থেকে মুক্ত হয়ে সঠিক পথে চলার ইচ্ছা তাদের মধ্যে থাকবে। তাদেরকে ধৈর্যশীল হতে হবে এবং তাদের পদক্ষেপে দৃঢ়তা থাকতে হবে। সহনীয়-অসহনীয় এবং ভালো-মন্দ সকল অবস্থায় তারা একটি সৎ ও সুস্থ বিশ্বাসের উপর অটল থাকবে। তাদের মধ্যে এ ধরনের কোন দুর্বলতা থাকবে না যে, দুঃসময়ের মুখোমুখি হলে আল্লাহর সামনে নতজানু হয়ে কান্নাকাটি করবে আর সুসময় আসার সাথে সাথেই সবকিছু ভুলে যাবে। অথবা এর বিপরীতে ভালো অবস্থায় আল্লাহকে মেনে চলবে এবং বিপদের একটি আঘাতেই আল্লাহকে গালি দিতে শুরু করবে। তাদেরকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী হতে হবে। তারা বিশ্বাসঘাতক হবে না, উপকারীর উপকার ভুলে যাবে না। বরং অনুগ্রহের কদর করবে এবং অনুগ্রহকারীর জন্য কৃতজ্ঞতার অনুভূতি নিজের মধ্যে জাগ্রত রাখবে। মানুষ কোন বড় রকমের বিপদের সম্মুখীন হলে অথবা মৃত্যু তার ভয়াবহ চেহারা নিয়ে সামনে এসে দাঁড়ালে তখন এক আল্লাহর আশ্রয় ছাড়া আর কোন আশ্রয়স্থল তার চোখে পড়ে না। বড় বড় মুশরিকরা এ সময় নিজেদের উপাস্য ও দেবতাদের কথা ভুলে এক আল্লাহকে ডাকতে থাকে। কট্টর আল্লাহদ্রোহী নাস্তিকও এ সময় আল্লাহর কাছে দু‘আ করে। কারণ আল্লাহভক্তি ও তাওহীদের সাক্ষ্য প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই বিদ্যমান। এর উপর গাফলতি ও অজ্ঞতার যতই আবরণ পড়ুক না কেন তবুও তা কখনো না কখনো দৃষ্টি সমক্ষে জেগে ওঠে। তারা যখন এ নিদর্শনগুলোর মাধ্যমে সত্যকে চিনতে পারবে তখন তারা চিরকালের জন্য তাওহীদের শিক্ষাকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরবে।
অহংকারীরা নিদর্শন থেকে ফায়দা পায় না :
سَاَصْرِفُ عَنْ اٰيَاتِيَ الَّذِيْنَ يَتَكَبَّرُوْنَ فِى الْاَ رْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّؕ وَاِنْ يَّرَوْا كُلَّ اٰيَةٍ لَّا يُؤْمِنُوْا بِهَاۚ وَاِنْ يَّرَوْا سَبِيْلَ الرُّشْدِ لَا يَتَّخِذُوْهُ سَبِيْلًاۚ وَّاِنْ يَّرَوْا سَبِيْلَ الْغَيِّ يَتَّخِذُوْهُ سَبِيْلًاؕ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَا وَكَانُوْا عَنْهَا غَافِلِيْنَ
পৃথিবীতে যারা অন্যায়ভাবে দম্ভ করে বেড়ায় তাদের দৃষ্টি আমার নিদর্শন হতে ফিরিয়ে দেব, তারা আমার প্রত্যেকটি নিদর্শন দেখলেও তাতে বিশ্বাস স্থাপন করবে না, তারা সৎপথ দেখলেও তাকে পথ বলে গ্রহণ করবে না, কিন্তু তারা ভ্রান্ত পথ দেখলে তাকে (সঠিক) পথ হিসেবে গ্রহণ করবে। কারণ তারা আমার নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করেছে; আর সে সম্বন্ধে তারা ছিল গাফিল। (সূরা আ‘রাফ- ১৪৬)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ যারা আল্লাহ থেকে বিমুখ, তারা কখনো কোন নিদর্শন দেখেও শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে না। কেননা তাদের জ্ঞানবুদ্ধির উপর গাফলতি ও গোঁড়ামির পর্দা পড়ে আছে। তার চক্ষু এ দৃশ্য অবশ্যই দেখে যে, বাতাস বয়ে গেল, মেঘরাশি উড়ে আসল, বিদ্যুৎ চমকাল ও বজ্র ধ্বনি হলো এবং বৃষ্টিপাত হলো; কিন্তু তার মস্তিষ্ক এটা ভেবে দেখে না যে, এসব কেন হচ্ছে, কে করছে এবং এ ব্যাপারে তার কী কী দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। যিনি এগুলো তাকে দিচ্ছেন, তিনি তার কাছে কী চাচ্ছেন।
আল্লাহর নিদর্শনাবলি মানুষের চোখ খুলে দেয় :
تَبْصِرَةً وَّذِكْرٰى لِكُلِّ عَبْدٍ مُّنِيْبٍ
এসব প্রত্যেক বিনীত ব্যক্তির জন্য জ্ঞান ও উপদেশস্বরূপ। (সূরা ক্বাফ- ৮)
ব্যাখ্যা : প্রত্যেক ব্যক্তি যদি আল্লাহ থেকে গাফিল না হয় এবং বিশ্বজাহানের নিদর্শনগুলোকে বিবেকবুদ্ধিহীন জন্তু-জানোয়ারের দৃষ্টিতে না দেখে গভীর পর্যবেক্ষণের দৃষ্টিতে দেখে; অতঃপর সে সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে, তাহলে সে প্রতিটি নিদর্শনের সাহায্যে খুব সহজে যথার্থ ও চূড়ান্ত সত্যের দ্বারে পৌঁছতে পারে। যার সামনে বিশ্বজগতের চারদিকে আল্লাহর একত্বের প্রমাণ ছড়িয়ে আছে তারপরও যে তার মধ্য হতে কোনকিছুই দেখতে পায় না, সে অন্ধ। আর চক্ষুষ্মান হচ্ছে এমন ব্যক্তি, যার দৃষ্টি সারা বিশ্বের প্রতিটি জিনিসের মধ্যে একজন অসাধারণ কারিগরের অতুলনীয় কৃতিত্ব দেখতে পায়। যে ব্যক্তি সত্যকে স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছে, সে কখনো দৃষ্টিহীন লোকদের মতো আচরণ করবে না এবং ভ্রান্ত পথে ঘুরে বেড়াবে না।
তারপরও মানুষ আল্লাহকে যথাযথ মূল্যায়ন করে না :
مَا قَدَرُوا اللهَ حَقَّ قَدْرِهٖؕ اِنَّ اللهَ لَقَوِيٌّ عَزِيْزٌ
তারা আল্লাহকে যথাযথ মর্যাদা দিতে পারেনি, নিশ্চয় আল্লাহ অসীম ক্ষমতাবান ও মহাপরাক্রমশালী। (সূরা হজ্জ- ৭৪)
আল্লাহ পরম সত্য :
ذٰلِكَ بِاَنَّ اللهَ هُوَ الْحَقُّ وَاَنَّ مَا يَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖ هُوَ الْبَاطِلُ وَاَنَّ اللهَ هُوَ الْعَلِيُّ الْكَبِيْرُ
সেটা এজন্য যে, নিশ্চয় আল্লাহ, তিনিই সত্য এবং তারা তাঁর পরিবর্তে যাকে ডাকে তা মিথ্যা; নিশ্চয় আল্লাহ সুউচ্চ ও সুমহান। (সূরা হজ্জ- ৬২)
فَذٰلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمُ الْحَقُّۚ فَمَاذَا بَعْدَ الْحَقِّ اِلَّا الضَّلَالُۚ فَاَنّٰى تُصْرَفُوْنَ
তিনিই আল্লাহ, তোমাদের প্রকৃত প্রতিপালক। সত্য ত্যাগ করার পর বিভ্রান্তি ব্যতীত আর কী বাকি থাকে? সুতরাং তোমরা কোন দিকে ধাবিত হচ্ছ? (সূরা ইউনুস- ৩২)
ব্যাখ্যা : তিনিই সত্যিকার ক্ষমতার অধিকারী ও যথার্থ রব। তাঁর ইবাদাতকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে না। আর অন্যান্য সকল মা‘বুদই অসত্য ও মিথ্যা। তাদেরকে যেসব গুণাবলি ও ক্ষমতার মালিক মনে করা হয়েছে সেগুলোর কোন ভিত্তি নেই। সুতরাং আল্লাহর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে তাদের ভরসায় যারা বেঁচে থাকে তারা কখনো সফলতা লাভ করতে পারে না।
আল্লাহ সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত হওয়া যাবে না :
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يُّجَادِلُ فِى اللهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ
মানুষের মধ্যে কতক লোক এমনও রয়েছে, যারা অজ্ঞতাবশত আল্লাহ সম্বন্ধে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হয়। (সূরা হজ্জ- ৩)
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يُّجَادِلُ فِى اللهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَّلَا هُدًى وَّلَا كِتَابٍ مُّنِيْرٍ
মানুষের মধ্যে কিছু লোক আছে, যারা আল্লাহ সম্পর্কে কোন জ্ঞান অথবা পথনির্দেশ অথবা কোন উজ্জল গ্রন্থ ছাড়াই তর্কে লিপ্ত হয়। (সূরা লুক্বমান- ২০)
ব্যাখ্যা : মানুষের মধ্যে এমন কিছু লোক রয়েছে, যারা কোন ধরনের পর্যবেক্ষণ, অভিজ্ঞতা, পথনির্দেশনা কিংবা সঠিক কোন জ্ঞান ছাড়াই আল্লাহর ব্যাপারে বিতর্কে লিপ্ত হয়। যাতে করে তারা মানুষদেরকে আল্লাহর পথ থেকে দূরে রাখতে পারে। যেমন, আল্লাহ আছেন কি না? আল্লাহ কি একা না আরো আছেন? তাঁর গুণাবলি কী এবং তিনি কেমন? নিজের সৃষ্টিকুলের সাথে তাঁর সম্পর্ক কোন পর্যায়ের? এ ধরনের বিষয়াদি নিয়ে বিতর্ক করে। এরা এমন লোক, যাদেরকে দ্বীনের ব্যাপারে দাওয়াত দেয়া হলে কিংবা কোন সদুপদেশ দান করা হলে তাতে কর্ণপাত না করে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ফলে তারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হয় এবং অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করে।
আল্লাহকে কষ্ট দেয়া যাবে না :
اِنَّ الَّذِيْنَ يُؤْذُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ لَعَنَهُمُ اللهُ فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ وَاَعَدَّ لَهُمْ عَذَابًا مُّهِيْنًا
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ অবশ্যই তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে অভিসম্পাত করেন এবং তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন অবমাননাকর শাস্তি। (সূরা আহযাব- ৫৭)
ব্যাখ্যা : আল্লাহকে কষ্ট দেয়ার অর্থ দু’টি। (এক) আল্লাহর নাফরমানি করা। তাঁর মুকাবিলায় কুফরী, শিরক ও নাস্তিক্যবাদের পথ অবলম্বন করা। তিনি যা হারাম করেছেন তাকে হালাল করা। (দুই) তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়া। কারণ রাসূলের আনুগত্য যেমন আল্লাহর আনুগত্য, ঠিক তেমনি রাসূলের অবাধ্যতা আল্লাহর অবাধ্যতার সমান।
আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করা মহাপাপ :
اُنْظُرْ كَيْفَ يَفْتَرُوْنَ عَلَى اللهِ الْكَذِبَ ؕ وَكَفٰى بِهٖۤ اِثْمًا مُّبِيْنًا
লক্ষ্য করো, তারা আল্লাহ সম্পর্কে কীভাবে মিথ্যারোপ করে যাচ্ছে। আর প্রকাশ্য পাপ হিসেবে এটাই যথেষ্ট। (সূরা নিসা- ৫০)
যারা আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করে তারা সবচেয়ে বড় যালিম :
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرٰى عَلَى اللهِ كَذِبًا اَوْ كَذَّبَ بِاٰيَاتِهٖ ؕ اِنَّهٗ لَا يُفْلِحُ الظَّالِمُوْنَ
যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর মিথ্যা রচনা করে অথবা তাঁর নিদর্শনসমূহকে প্রত্যাখ্যান করে, তার চেয়ে অধিক যালিম আর কে হতে পারে? নিশ্চয় যালিমরা কখনো সফলকাম হয় না। (সূরা আন‘আম- ২১)
فَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرٰى عَلَى اللهِ كَذِبًا لِّيُضِلَّ النَّاسَ بِغَيْرِ عِلْمٍؕ اِنَّ اللهَ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
যে ব্যক্তি অজ্ঞতাবশত মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? নিশ্চয় আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (সূরা আন‘আম- ১৪৪)
আল্লাহর উপর মিথ্যারোপকারীরা কখনো সফল হবে না :
قُلْ اِنَّ الَّذِيْنَ يَفْتَرُوْنَ عَلَى اللهِ الْكَذِبَ لَا يُفْلِحُوْنَ
বলো, যারা আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করে তারা কখনই সফলকাম হবে না। (সূরা ইউনুস- ৬৯)
কাফিররাই আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করে :
وَلٰكِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا يَفْتَرُوْنَ عَلَى اللهِ الْكَذِبَؕ وَاَكْثَرُهُمْ لَا يَعْقِلُوْنَ
কিন্তু কাফিররা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে এবং তাদের অধিকাংশই তা উপলব্ধি করতে পারে না। (সূরা মায়েদা- ১০৩)
আল্লাহকে অস্বীকার করার কোন কারণ নেই :
كَيْفَ تَكْفُرُوْنَ بِاللهِ وَكُنْتُمْ اَمْوَاتًا فَاَحْيَاكُمْ ثُمَّ يُمِيْتُكُمْ ثُمَّ يُحْيِيْكُمْ ثُمَّ اِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ
তোমরা কীভাবে আল্লাহকে অস্বীকার করছ, অথচ তোমরা ছিলে মৃত? অতঃপর তিনিই তোমাদেরকে জীবন দান করেছেন। তারপর তিনিই তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন, পরে আবার জীবিত করবেন; অবশেষে তোমাদেরকে তাঁর দিকেই ফিরে যেতে হবে। (সূরা বাক্বারা- ২৮)
ذٰلِكَ بِاَنَّ اللهَ هُوَ الْحَقُّ وَاَنَّ مَا يَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖ هُوَ الْبَاطِلُ وَاَنَّ اللهَ هُوَ الْعَلِيُّ الْكَبِيْرُ
সেটা এজন্য যে, নিশ্চয় আল্লাহ, তিনিই সত্য এবং তারা তাঁর পরিবর্তে যাকে ডাকে তা মিথ্যা; নিশ্চয় আল্লাহ সুউচ্চ ও সুমহান। (সূরা হজ্জ- ৬২)
فَذٰلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمُ الْحَقُّۚ فَمَاذَا بَعْدَ الْحَقِّ اِلَّا الضَّلَالُۚ فَاَنّٰى تُصْرَفُوْنَ
তিনিই আল্লাহ, তোমাদের প্রকৃত প্রতিপালক। সত্য ত্যাগ করার পর বিভ্রান্তি ব্যতীত আর কী বাকি থাকে? সুতরাং তোমরা কোন দিকে ধাবিত হচ্ছ? (সূরা ইউনুস- ৩২)
ব্যাখ্যা : তিনিই সত্যিকার ক্ষমতার অধিকারী ও যথার্থ রব। তাঁর ইবাদাতকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে না। আর অন্যান্য সকল মা‘বুদই অসত্য ও মিথ্যা। তাদেরকে যেসব গুণাবলি ও ক্ষমতার মালিক মনে করা হয়েছে সেগুলোর কোন ভিত্তি নেই। সুতরাং আল্লাহর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে তাদের ভরসায় যারা বেঁচে থাকে তারা কখনো সফলতা লাভ করতে পারে না।
আল্লাহ সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত হওয়া যাবে না :
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يُّجَادِلُ فِى اللهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ
মানুষের মধ্যে কতক লোক এমনও রয়েছে, যারা অজ্ঞতাবশত আল্লাহ সম্বন্ধে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হয়। (সূরা হজ্জ- ৩)
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يُّجَادِلُ فِى اللهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَّلَا هُدًى وَّلَا كِتَابٍ مُّنِيْرٍ
মানুষের মধ্যে কিছু লোক আছে, যারা আল্লাহ সম্পর্কে কোন জ্ঞান অথবা পথনির্দেশ অথবা কোন উজ্জল গ্রন্থ ছাড়াই তর্কে লিপ্ত হয়। (সূরা লুক্বমান- ২০)
ব্যাখ্যা : মানুষের মধ্যে এমন কিছু লোক রয়েছে, যারা কোন ধরনের পর্যবেক্ষণ, অভিজ্ঞতা, পথনির্দেশনা কিংবা সঠিক কোন জ্ঞান ছাড়াই আল্লাহর ব্যাপারে বিতর্কে লিপ্ত হয়। যাতে করে তারা মানুষদেরকে আল্লাহর পথ থেকে দূরে রাখতে পারে। যেমন, আল্লাহ আছেন কি না? আল্লাহ কি একা না আরো আছেন? তাঁর গুণাবলি কী এবং তিনি কেমন? নিজের সৃষ্টিকুলের সাথে তাঁর সম্পর্ক কোন পর্যায়ের? এ ধরনের বিষয়াদি নিয়ে বিতর্ক করে। এরা এমন লোক, যাদেরকে দ্বীনের ব্যাপারে দাওয়াত দেয়া হলে কিংবা কোন সদুপদেশ দান করা হলে তাতে কর্ণপাত না করে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ফলে তারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হয় এবং অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করে।
আল্লাহকে কষ্ট দেয়া যাবে না :
اِنَّ الَّذِيْنَ يُؤْذُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ لَعَنَهُمُ اللهُ فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ وَاَعَدَّ لَهُمْ عَذَابًا مُّهِيْنًا
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ অবশ্যই তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে অভিসম্পাত করেন এবং তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন অবমাননাকর শাস্তি। (সূরা আহযাব- ৫৭)
ব্যাখ্যা : আল্লাহকে কষ্ট দেয়ার অর্থ দু’টি। (এক) আল্লাহর নাফরমানি করা। তাঁর মুকাবিলায় কুফরী, শিরক ও নাস্তিক্যবাদের পথ অবলম্বন করা। তিনি যা হারাম করেছেন তাকে হালাল করা। (দুই) তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়া। কারণ রাসূলের আনুগত্য যেমন আল্লাহর আনুগত্য, ঠিক তেমনি রাসূলের অবাধ্যতা আল্লাহর অবাধ্যতার সমান।
আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করা মহাপাপ :
اُنْظُرْ كَيْفَ يَفْتَرُوْنَ عَلَى اللهِ الْكَذِبَ ؕ وَكَفٰى بِهٖۤ اِثْمًا مُّبِيْنًا
লক্ষ্য করো, তারা আল্লাহ সম্পর্কে কীভাবে মিথ্যারোপ করে যাচ্ছে। আর প্রকাশ্য পাপ হিসেবে এটাই যথেষ্ট। (সূরা নিসা- ৫০)
যারা আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করে তারা সবচেয়ে বড় যালিম :
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرٰى عَلَى اللهِ كَذِبًا اَوْ كَذَّبَ بِاٰيَاتِهٖ ؕ اِنَّهٗ لَا يُفْلِحُ الظَّالِمُوْنَ
যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর মিথ্যা রচনা করে অথবা তাঁর নিদর্শনসমূহকে প্রত্যাখ্যান করে, তার চেয়ে অধিক যালিম আর কে হতে পারে? নিশ্চয় যালিমরা কখনো সফলকাম হয় না। (সূরা আন‘আম- ২১)
فَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرٰى عَلَى اللهِ كَذِبًا لِّيُضِلَّ النَّاسَ بِغَيْرِ عِلْمٍؕ اِنَّ اللهَ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
যে ব্যক্তি অজ্ঞতাবশত মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? নিশ্চয় আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (সূরা আন‘আম- ১৪৪)
আল্লাহর উপর মিথ্যারোপকারীরা কখনো সফল হবে না :
قُلْ اِنَّ الَّذِيْنَ يَفْتَرُوْنَ عَلَى اللهِ الْكَذِبَ لَا يُفْلِحُوْنَ
বলো, যারা আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করে তারা কখনই সফলকাম হবে না। (সূরা ইউনুস- ৬৯)
কাফিররাই আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করে :
وَلٰكِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا يَفْتَرُوْنَ عَلَى اللهِ الْكَذِبَؕ وَاَكْثَرُهُمْ لَا يَعْقِلُوْنَ
কিন্তু কাফিররা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে এবং তাদের অধিকাংশই তা উপলব্ধি করতে পারে না। (সূরা মায়েদা- ১০৩)
আল্লাহকে অস্বীকার করার কোন কারণ নেই :
كَيْفَ تَكْفُرُوْنَ بِاللهِ وَكُنْتُمْ اَمْوَاتًا فَاَحْيَاكُمْ ثُمَّ يُمِيْتُكُمْ ثُمَّ يُحْيِيْكُمْ ثُمَّ اِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ
তোমরা কীভাবে আল্লাহকে অস্বীকার করছ, অথচ তোমরা ছিলে মৃত? অতঃপর তিনিই তোমাদেরকে জীবন দান করেছেন। তারপর তিনিই তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন, পরে আবার জীবিত করবেন; অবশেষে তোমাদেরকে তাঁর দিকেই ফিরে যেতে হবে। (সূরা বাক্বারা- ২৮)
আল্লাহই একমাত্র বিধানদাতা :
وَهُوَ اللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَؕ لَهُ الْحَمْدُ فِى الْاُوْلٰى وَالْاٰخِرَةِ ؗ وَلَهُ الْحُكْمُ وَاِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ
তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই। দুনিয়া ও আখিরাতে সমস্ত প্রশংসা তাঁরই, বিধান তাঁরই; আর তোমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা ক্বাসাস- ৭০)
اِنِ الْحُكْمُ اِلَّا لِلّٰهِؕ يَقُصُّ الْحَقَّ وَهُوَ خَيْرُ الْفَاصِلِيْنَ
কর্তৃত্ব কেবল আল্লাহরই। তিনি সত্য বিবৃত করেন; আর ফায়সালাকারীদের মধ্যে তিনিই সর্বর্র্র্শ্রেষ্ঠ। (সূরা আন‘আম- ৫৭)
যিনি স্রষ্টা তিনিই হবেন আইনদাতা :
اَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَ الْاَ مْرُؕ تَبَارَكَ اللهُ رَبُّ الْعَالَمِيْنَ
জেনে রেখো, সৃজন ও আদেশ তাঁরই; যিনি মহিমাময় বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহ। (সূরা আ‘রাফ- ৫৪)
ব্যাখ্যা : যখন কোন ব্যক্তি এ কথা মেনে নেয় যে, একমাত্র আল্লাহই পৃথিবী ও আকাশের স্রষ্টা, তখন অনিবার্যভাবে তাকে এ কথাও মেনে নিতে হবে যে, ইলাহ্ ও রবও একমাত্র আল্লাহই। ইবাদাত ও আনুগত্যের হকদারও একমাত্র তিনিই। একমাত্র তাঁরই পবিত্রতা ও প্রশংসাবাণী উচ্চারণ করতে হবে। তিনি ছাড়া আর কারো কাছে প্রার্থনা করা যাবে না। নিজের সৃষ্টির জন্য আইন প্রণেতা ও শাসক তিনি ছাড়া আর কেউ হতে পারে না। একজন হবেন স্রষ্টা, অন্যজন হবে মা‘বুদ, তৃতীয়জন হবে সংকট নিরসনকারী, চতুর্থজন ক্ষমতাসীন ও আনুগত্যের অধিকারী- এটা সম্পূর্ণ বুদ্ধিবিরোধী কথা। এ কথা সে-ই বলতে পারে, যে মূর্খতার সাগরে ডুবে আছে। কোন জ্ঞানী ব্যক্তি এসব কথা মেনে নিতে পারে না। হালাল ও হারাম নির্ধারণ করার অধিকারও একমাত্র আললাহ ছাড়া অন্য কারো নেই। কেননা সকল প্রকার আইন প্রণয়ন করার অধিকার একমাত্র তাঁরই। সুতরাং অন্য যে ব্যক্তিই বৈধতা ও অবৈধতার ফায়সালা করার সাহস দেখাবে, সে-ই সীমালঙ্ঘন করবে।
বান্দার কল্যাণ কিসের মধ্যে নিহিত তা আল্লাহই ভালো জানেন :
وَالَّذِيْ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ مِنَ الْكِتَابِ هُوَ الْحَقُّ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِؕ اِنَّ اللهَ بِعِبَادِهٖ لَخَبِيْرٌۢ بَصِيْرٌ
আর যে কিতাব আমি ওহীরূপে আপনার প্রতি নাযিল করেছি তা সম্পূর্ণ সত্য, তা পূর্ববর্তী কিতাবের সমর্থক। নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ব্যাপারে সবকিছু জানেন ও দেখেন। (সূরা ফাতির- ৩১)
ব্যাখ্যা : বান্দার কল্যাণ কিসের মধ্যে রয়েছে এবং তার পথপ্রদর্শনের উপযোগী নীতি কোনটি- এখানে এ সত্যগুলো সম্পর্কে সতর্ক করে দেয়াই হচ্ছে আল্লাহর এ গুণাবলি বর্ণনা করার উদ্দেশ্য। এ বিষয়গুলো আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানতে পারে না। কারণ বান্দার প্রকৃতি ও চাহিদা একমাত্র তিনিই জানেন এবং তার প্রকৃত প্রয়োজন ও কল্যাণের প্রতি একমাত্র তিনিই দৃষ্টি রাখেন। বান্দা নিজেকে ততবেশি জানে না, যতবেশি তার স্রষ্টা তাকে জানেন। তাই সত্য একমাত্র সেটিই হতে পারে, যা তিনি ওহীর মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন।
আল্লাহ নিজ ইচ্ছায় আইন জারি করেন :
اِنَّ اللهَ يَحْكُمُ مَا يُرِيْدُ
নিশ্চয় আল্লাহ যা ইচ্ছা আদেশ করেন। (সূরা মায়েদা- ১)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ সার্বভৌম কর্তৃত্বের অধিকারী একচ্ছত্র শাসক। তিনি নিজের ইচ্ছানুযায়ী যে কোন হুকুম দেয়ার পূর্ণ ইখতিয়ার রাখেন। তাঁর বিধানের ব্যাপারে আপত্তি জানানোর অধিকার কোন মানুষের নেই। তাঁর সমস্ত বিধান জ্ঞান, প্রজ্ঞা, যুক্তি, ন্যায়নীতি ও কল্যাণের ভিত্তিতেই প্রতিষ্ঠিত।
اِنِ الْحُكْمُ اِلَّا لِلّٰهِؕ اَمَرَ اَلَّا تَعْبُدُوْاۤ اِلَّاۤ اِيَّاهُؕ ذٰلِكَ الدِّيْنُ الْقَيِّمُ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ
বিধান দেয়ার অধিকার কেবল আল্লাহরই। তিনি আদেশ দিয়েছেন তাঁকে ব্যতীত অন্য কারো ইবাদাত না করতে। এটাই শাশ্বত দ্বীন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এটা অবগত নয়। (সূরা ইউসুফ- ৪০)
সবকিছুর উপরই আল্লাহর আদেশ জারি হয় :
اَللهُ الَّذِيْ خَلَقَ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ وَّمِنَ الْاَ رْضِ مِثْلَهُنَّؕ يَتَنَزَّلُ الْاَ مْرُ بَيْنَهُنَّ لِتَعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ وَّاَنَّ اللهَ قَدْ اَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا
আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন সপ্তাকাশ এবং তাদের অনুরূপ অসংখ্য জমিন। উভয়ের মাঝখানে তার নির্দেশ জারি হয়; যাতে তোমরা বুঝতে পার যে, আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান এবং তাঁর জ্ঞান সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে রেখেছে। (সূরা তালাক্ব- ১২)
সবকিছুই আল্লাহর আদেশের অনুগত :
وَلَهٗ مَنْ فِى السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِ كُلٌّ لَّهٗ قَانِتُوْنَ
আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবই তাঁর; আর সকলেই তাঁর অনুগত। (সূরা রূম- ২৬)
আল্লাহর বিধান পরিবর্তন করার কেউ নেই :
وَاللهُ يَحْكُمُ لَا مُعَقِّبَ لِحُكْمِهٖؕ وَهُوَ سَرِيْعُ الْحِسَابِ
আল্লাহ আদেশ করেন, তাঁর আদেশ উল্টে দেয়ার কেউ নেই। আর তিনি হিসাব গ্রহণে খুবই তৎপর। (সূরা রা‘দ- ৪১)
আল্লাহই সকল ক্ষমতার উৎস :
اَنَّ الْقُوَّةَ لِلّٰهِ جَمِيْعًا
সমুদয় শক্তি আল্লাহরই। (সূরা বাক্বারা- ১৬৫)
اِنَّ رَبَّكَ هُوَ الْقَوِيُّ الْعَزِيْزُ
নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক সর্বশক্তিমান ও পরাক্রমশালী। (সূরা হুদ- ৬৬)
مَا قَدَرُوا اللهَ حَقَّ قَدْرِهٖؕ اِنَّ اللهَ لَقَوِيٌّ عَزِيْزٌ
তারা আল্লাহকে যথার্থ মর্যাদা দিতে পারেনি, নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমতাবান ও মহাপরাক্রমশালী। (সূরা হজ্জ- ৭৪)
ব্যাখ্যা : عَزِيْزٌ (‘আযীয) শব্দের অর্থ পরাক্রমশালী বা সবার উপর বিজয়ী। কারো ব্যাপারে তিনি যে সিদ্ধান্তই গ্রহণ করেন তা নিশ্চিতভাবেই কার্যকর হয়। তাঁর বিরুদ্ধে লড়াই করে কেউ বিজয়ী হতে পারে না। কিংবা কেউ তাঁর পাকড়াও থেকে বাঁচতেও পারে না। তাই তাঁর নির্দেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে কেউ যদি সফলতার আশা করে, তাহলে তা তার নিজের বোকামী ছাড়া আর কিছুই নয়।
আল্লাহর বিধান কেউ না মানলে সে নিজেরই ক্ষতি করবে :
وَمَنْ يَّتَوَلَّ فَاِنَّ اللهَ هُوَ الْغَنِيُّ الْحَمِيْدُ
আর যে মুখ ফিরিয়ে নেয় (সে জেনে রাখুক যে) নিশ্চয় আল্লাহ অভাবমুক্ত ও প্রশংসিত। (সূরা হাদীদ- ২৪)
وَلِلّٰهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِ وَاللهُ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
আসমান ও জমিনের রাজত্ব আল্লাহর জন্যই। আর আল্লাহ সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। (সূরা আলে ইমরান- ১৮৯)
اِنْ تَكْفُرُوْا فَاِنَّ اللهَ غَنِيٌّ عَنْكُمْؕ وَلَا يَرْضٰى لِعِبَادِهِ الْكُفْرَۚ وَاِنْ تَشْكُرُوْا يَرْضَهُ لَكُمْ
যদি তোমরা কুফরী কর, তবে (জেনে রেখো) আল্লাহ তোমাদের মুখাপেক্ষী নন। আর তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য কুফরী পছন্দ করেন না। (পক্ষান্তরে) যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও, তবে (জেনে রেখো) তিনি তোমাদের জন্য এটাই পছন্দ করেন। (সূরা যুমার- ৭)
ব্যাখ্যা : মানুষের কুফরীর কারণে আল্লাহর প্রভুত্বের সামান্যতম ক্ষতিও হতে পারে না। মানুষ তাকে মানলেও তিনি আল্লাহ, না মানলেও তিনি আল্লাহ; তিনি সর্বদা আছেন এবং থাকবেন। নিজের ক্ষমতায় তাঁর কর্তৃত্ব চলছে। মানুষের মানা বা না মানাতে তাঁর কিছু যায় আসে না। আর তিনি কারো প্রতি মুখাপেক্ষীও নন। তিনি নিজের কোন স্বার্থের জন্য নয়, বরং বান্দার স্বার্থের জন্যই কুফরী করা পছন্দ করেন না। কেননা কুফরী তাদের নিজেদের জন্যই ক্ষতিকর। এখানে আল্লাহ তা‘আলা এ কথাটিই বলছেন যে, তোমরা কুফরী করতে চাইলে করো। আমি জোর করে তাতে বাধা দিয়ে তোমাদেরকে মুমিন বানাব না। তবে তোমরা বান্দা হয়ে স্রষ্টার সাথে কুফরী করবে- তা আমার পছন্দ নয়। কারণ তা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর।
আল্লাহর দাসত্ব করাই মানুষের মূল কাজ :
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْاِنْسَ اِلَّا لِيَعْبُدُوْنِ
আমি জিন ও মানুষকে এজন্য সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমারই ইবাদাত করবে। (সূরা যারিয়াত- ৫৬)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ জিন ও মানুষের দাসত্বের মুখাপেক্ষী নন যে, তারা দাসত্ব করলে তাঁর প্রভুত্ব চলবে আর মুখ ফিরিয়ে নিলে তিনি আর আল্লাহ থাকতে পারবেন না। বরং তাঁর দাসত্ব করা মানুষের প্রকৃতির দাবি। এ উদ্দেশ্যেই তিনি তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরতে হবে :
وَاعْتَصِمُوْا بِاللهِؕ هُوَ مَوْلَاكُمْۚ فَنِعْمَ الْمَوْلٰى وَنِعْمَ النَّصِيْرُ
আল্লাহকে অবলম্বন করো, তিনিই তোমাদের অভিভাবক। অভিভাবক হিসেবে তিনি কতই না উত্তম এবং তিনি কতই না উত্তম সাহায্যকারী! (সূরা হজ্জ- ৭৮)
ব্যাখ্যা : আল্লাহকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরতে হবে অর্থাৎ সকল প্রকার পথনির্দেশনা ও জীবন-যাপনের বিধান তাঁর কাছ থেকেই নিতে হবে, তাঁরই আনুগত্য করতে হবে, তাঁকেই ভয় করতে হবে, আশা-আকাঙ্ক্ষার সকল বিষয় তাঁর সাথেই জড়িত করতে হবে, সাহায্যের জন্য তাঁর কাছেই হাত পাততে হবে এবং তাঁর উপরই নির্ভরশীল হয়ে জীবনের ভিত্তি গড়ে তুলতে হবে ।
وَهُوَ اللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَؕ لَهُ الْحَمْدُ فِى الْاُوْلٰى وَالْاٰخِرَةِ ؗ وَلَهُ الْحُكْمُ وَاِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ
তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই। দুনিয়া ও আখিরাতে সমস্ত প্রশংসা তাঁরই, বিধান তাঁরই; আর তোমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা ক্বাসাস- ৭০)
اِنِ الْحُكْمُ اِلَّا لِلّٰهِؕ يَقُصُّ الْحَقَّ وَهُوَ خَيْرُ الْفَاصِلِيْنَ
কর্তৃত্ব কেবল আল্লাহরই। তিনি সত্য বিবৃত করেন; আর ফায়সালাকারীদের মধ্যে তিনিই সর্বর্র্র্শ্রেষ্ঠ। (সূরা আন‘আম- ৫৭)
যিনি স্রষ্টা তিনিই হবেন আইনদাতা :
اَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَ الْاَ مْرُؕ تَبَارَكَ اللهُ رَبُّ الْعَالَمِيْنَ
জেনে রেখো, সৃজন ও আদেশ তাঁরই; যিনি মহিমাময় বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহ। (সূরা আ‘রাফ- ৫৪)
ব্যাখ্যা : যখন কোন ব্যক্তি এ কথা মেনে নেয় যে, একমাত্র আল্লাহই পৃথিবী ও আকাশের স্রষ্টা, তখন অনিবার্যভাবে তাকে এ কথাও মেনে নিতে হবে যে, ইলাহ্ ও রবও একমাত্র আল্লাহই। ইবাদাত ও আনুগত্যের হকদারও একমাত্র তিনিই। একমাত্র তাঁরই পবিত্রতা ও প্রশংসাবাণী উচ্চারণ করতে হবে। তিনি ছাড়া আর কারো কাছে প্রার্থনা করা যাবে না। নিজের সৃষ্টির জন্য আইন প্রণেতা ও শাসক তিনি ছাড়া আর কেউ হতে পারে না। একজন হবেন স্রষ্টা, অন্যজন হবে মা‘বুদ, তৃতীয়জন হবে সংকট নিরসনকারী, চতুর্থজন ক্ষমতাসীন ও আনুগত্যের অধিকারী- এটা সম্পূর্ণ বুদ্ধিবিরোধী কথা। এ কথা সে-ই বলতে পারে, যে মূর্খতার সাগরে ডুবে আছে। কোন জ্ঞানী ব্যক্তি এসব কথা মেনে নিতে পারে না। হালাল ও হারাম নির্ধারণ করার অধিকারও একমাত্র আললাহ ছাড়া অন্য কারো নেই। কেননা সকল প্রকার আইন প্রণয়ন করার অধিকার একমাত্র তাঁরই। সুতরাং অন্য যে ব্যক্তিই বৈধতা ও অবৈধতার ফায়সালা করার সাহস দেখাবে, সে-ই সীমালঙ্ঘন করবে।
বান্দার কল্যাণ কিসের মধ্যে নিহিত তা আল্লাহই ভালো জানেন :
وَالَّذِيْ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ مِنَ الْكِتَابِ هُوَ الْحَقُّ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِؕ اِنَّ اللهَ بِعِبَادِهٖ لَخَبِيْرٌۢ بَصِيْرٌ
আর যে কিতাব আমি ওহীরূপে আপনার প্রতি নাযিল করেছি তা সম্পূর্ণ সত্য, তা পূর্ববর্তী কিতাবের সমর্থক। নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ব্যাপারে সবকিছু জানেন ও দেখেন। (সূরা ফাতির- ৩১)
ব্যাখ্যা : বান্দার কল্যাণ কিসের মধ্যে রয়েছে এবং তার পথপ্রদর্শনের উপযোগী নীতি কোনটি- এখানে এ সত্যগুলো সম্পর্কে সতর্ক করে দেয়াই হচ্ছে আল্লাহর এ গুণাবলি বর্ণনা করার উদ্দেশ্য। এ বিষয়গুলো আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানতে পারে না। কারণ বান্দার প্রকৃতি ও চাহিদা একমাত্র তিনিই জানেন এবং তার প্রকৃত প্রয়োজন ও কল্যাণের প্রতি একমাত্র তিনিই দৃষ্টি রাখেন। বান্দা নিজেকে ততবেশি জানে না, যতবেশি তার স্রষ্টা তাকে জানেন। তাই সত্য একমাত্র সেটিই হতে পারে, যা তিনি ওহীর মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন।
আল্লাহ নিজ ইচ্ছায় আইন জারি করেন :
اِنَّ اللهَ يَحْكُمُ مَا يُرِيْدُ
নিশ্চয় আল্লাহ যা ইচ্ছা আদেশ করেন। (সূরা মায়েদা- ১)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ সার্বভৌম কর্তৃত্বের অধিকারী একচ্ছত্র শাসক। তিনি নিজের ইচ্ছানুযায়ী যে কোন হুকুম দেয়ার পূর্ণ ইখতিয়ার রাখেন। তাঁর বিধানের ব্যাপারে আপত্তি জানানোর অধিকার কোন মানুষের নেই। তাঁর সমস্ত বিধান জ্ঞান, প্রজ্ঞা, যুক্তি, ন্যায়নীতি ও কল্যাণের ভিত্তিতেই প্রতিষ্ঠিত।
اِنِ الْحُكْمُ اِلَّا لِلّٰهِؕ اَمَرَ اَلَّا تَعْبُدُوْاۤ اِلَّاۤ اِيَّاهُؕ ذٰلِكَ الدِّيْنُ الْقَيِّمُ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ
বিধান দেয়ার অধিকার কেবল আল্লাহরই। তিনি আদেশ দিয়েছেন তাঁকে ব্যতীত অন্য কারো ইবাদাত না করতে। এটাই শাশ্বত দ্বীন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এটা অবগত নয়। (সূরা ইউসুফ- ৪০)
সবকিছুর উপরই আল্লাহর আদেশ জারি হয় :
اَللهُ الَّذِيْ خَلَقَ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ وَّمِنَ الْاَ رْضِ مِثْلَهُنَّؕ يَتَنَزَّلُ الْاَ مْرُ بَيْنَهُنَّ لِتَعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ وَّاَنَّ اللهَ قَدْ اَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا
আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন সপ্তাকাশ এবং তাদের অনুরূপ অসংখ্য জমিন। উভয়ের মাঝখানে তার নির্দেশ জারি হয়; যাতে তোমরা বুঝতে পার যে, আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান এবং তাঁর জ্ঞান সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে রেখেছে। (সূরা তালাক্ব- ১২)
সবকিছুই আল্লাহর আদেশের অনুগত :
وَلَهٗ مَنْ فِى السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِ كُلٌّ لَّهٗ قَانِتُوْنَ
আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবই তাঁর; আর সকলেই তাঁর অনুগত। (সূরা রূম- ২৬)
আল্লাহর বিধান পরিবর্তন করার কেউ নেই :
وَاللهُ يَحْكُمُ لَا مُعَقِّبَ لِحُكْمِهٖؕ وَهُوَ سَرِيْعُ الْحِسَابِ
আল্লাহ আদেশ করেন, তাঁর আদেশ উল্টে দেয়ার কেউ নেই। আর তিনি হিসাব গ্রহণে খুবই তৎপর। (সূরা রা‘দ- ৪১)
আল্লাহই সকল ক্ষমতার উৎস :
اَنَّ الْقُوَّةَ لِلّٰهِ جَمِيْعًا
সমুদয় শক্তি আল্লাহরই। (সূরা বাক্বারা- ১৬৫)
اِنَّ رَبَّكَ هُوَ الْقَوِيُّ الْعَزِيْزُ
নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক সর্বশক্তিমান ও পরাক্রমশালী। (সূরা হুদ- ৬৬)
مَا قَدَرُوا اللهَ حَقَّ قَدْرِهٖؕ اِنَّ اللهَ لَقَوِيٌّ عَزِيْزٌ
তারা আল্লাহকে যথার্থ মর্যাদা দিতে পারেনি, নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমতাবান ও মহাপরাক্রমশালী। (সূরা হজ্জ- ৭৪)
ব্যাখ্যা : عَزِيْزٌ (‘আযীয) শব্দের অর্থ পরাক্রমশালী বা সবার উপর বিজয়ী। কারো ব্যাপারে তিনি যে সিদ্ধান্তই গ্রহণ করেন তা নিশ্চিতভাবেই কার্যকর হয়। তাঁর বিরুদ্ধে লড়াই করে কেউ বিজয়ী হতে পারে না। কিংবা কেউ তাঁর পাকড়াও থেকে বাঁচতেও পারে না। তাই তাঁর নির্দেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে কেউ যদি সফলতার আশা করে, তাহলে তা তার নিজের বোকামী ছাড়া আর কিছুই নয়।
আল্লাহর বিধান কেউ না মানলে সে নিজেরই ক্ষতি করবে :
وَمَنْ يَّتَوَلَّ فَاِنَّ اللهَ هُوَ الْغَنِيُّ الْحَمِيْدُ
আর যে মুখ ফিরিয়ে নেয় (সে জেনে রাখুক যে) নিশ্চয় আল্লাহ অভাবমুক্ত ও প্রশংসিত। (সূরা হাদীদ- ২৪)
وَلِلّٰهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِ وَاللهُ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
আসমান ও জমিনের রাজত্ব আল্লাহর জন্যই। আর আল্লাহ সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। (সূরা আলে ইমরান- ১৮৯)
اِنْ تَكْفُرُوْا فَاِنَّ اللهَ غَنِيٌّ عَنْكُمْؕ وَلَا يَرْضٰى لِعِبَادِهِ الْكُفْرَۚ وَاِنْ تَشْكُرُوْا يَرْضَهُ لَكُمْ
যদি তোমরা কুফরী কর, তবে (জেনে রেখো) আল্লাহ তোমাদের মুখাপেক্ষী নন। আর তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য কুফরী পছন্দ করেন না। (পক্ষান্তরে) যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও, তবে (জেনে রেখো) তিনি তোমাদের জন্য এটাই পছন্দ করেন। (সূরা যুমার- ৭)
ব্যাখ্যা : মানুষের কুফরীর কারণে আল্লাহর প্রভুত্বের সামান্যতম ক্ষতিও হতে পারে না। মানুষ তাকে মানলেও তিনি আল্লাহ, না মানলেও তিনি আল্লাহ; তিনি সর্বদা আছেন এবং থাকবেন। নিজের ক্ষমতায় তাঁর কর্তৃত্ব চলছে। মানুষের মানা বা না মানাতে তাঁর কিছু যায় আসে না। আর তিনি কারো প্রতি মুখাপেক্ষীও নন। তিনি নিজের কোন স্বার্থের জন্য নয়, বরং বান্দার স্বার্থের জন্যই কুফরী করা পছন্দ করেন না। কেননা কুফরী তাদের নিজেদের জন্যই ক্ষতিকর। এখানে আল্লাহ তা‘আলা এ কথাটিই বলছেন যে, তোমরা কুফরী করতে চাইলে করো। আমি জোর করে তাতে বাধা দিয়ে তোমাদেরকে মুমিন বানাব না। তবে তোমরা বান্দা হয়ে স্রষ্টার সাথে কুফরী করবে- তা আমার পছন্দ নয়। কারণ তা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর।
আল্লাহর দাসত্ব করাই মানুষের মূল কাজ :
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْاِنْسَ اِلَّا لِيَعْبُدُوْنِ
আমি জিন ও মানুষকে এজন্য সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমারই ইবাদাত করবে। (সূরা যারিয়াত- ৫৬)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ জিন ও মানুষের দাসত্বের মুখাপেক্ষী নন যে, তারা দাসত্ব করলে তাঁর প্রভুত্ব চলবে আর মুখ ফিরিয়ে নিলে তিনি আর আল্লাহ থাকতে পারবেন না। বরং তাঁর দাসত্ব করা মানুষের প্রকৃতির দাবি। এ উদ্দেশ্যেই তিনি তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরতে হবে :
وَاعْتَصِمُوْا بِاللهِؕ هُوَ مَوْلَاكُمْۚ فَنِعْمَ الْمَوْلٰى وَنِعْمَ النَّصِيْرُ
আল্লাহকে অবলম্বন করো, তিনিই তোমাদের অভিভাবক। অভিভাবক হিসেবে তিনি কতই না উত্তম এবং তিনি কতই না উত্তম সাহায্যকারী! (সূরা হজ্জ- ৭৮)
ব্যাখ্যা : আল্লাহকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরতে হবে অর্থাৎ সকল প্রকার পথনির্দেশনা ও জীবন-যাপনের বিধান তাঁর কাছ থেকেই নিতে হবে, তাঁরই আনুগত্য করতে হবে, তাঁকেই ভয় করতে হবে, আশা-আকাঙ্ক্ষার সকল বিষয় তাঁর সাথেই জড়িত করতে হবে, সাহায্যের জন্য তাঁর কাছেই হাত পাততে হবে এবং তাঁর উপরই নির্ভরশীল হয়ে জীবনের ভিত্তি গড়ে তুলতে হবে ।
ওহীর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, প্রত্যাদেশ, বার্তা, আদেশ, ইশারা ইত্যাদি। আর পারিভাষিক অর্থ হচ্ছে, এমন সূক্ষ্ম ও গোপন ইশারা, যা ইশারাকারী ও ইশারা গ্রহণকারী ছাড়া তৃতীয় কেউ বুঝতে পারে না। এ সম্পর্কের ভিত্তিতে এ শব্দটি اِلْقَاءُ (ইলকা) তথা মনের মধ্যে কোন কথা নিক্ষেপ করা ও اِلْهَامُ (ইলহাম) তথা গোপনে শিক্ষা ও উপদেশ দান করা অর্থে ব্যবহৃত হয়। মহান আল্লাহ তাঁর সৃষ্টিকে যে শিক্ষা দান করেন তা যেহেতু কোন মকতব, স্কুল বা বিদ্যালয়ে দেয়া হয় না বরং এমন সূক্ষ্ম পদ্ধতিতে দেয়া হয়, যা বাহ্যত কাউকে শিক্ষা দিতে এবং কাউকে শিক্ষা নিতে দেখা যায় না, তাই একে কুরআনে ওহী, ইলকা বা ইলহাম শব্দের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। কুরআনে আকাশ, পৃথিবী, মৌমাছি, মূসা (আঃ) এর মাতা- এদের প্রতিও ওহী হওয়ার কথা বলা হয়েছে। এসব মূলত শাব্দিক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। আর নবীদেরকে যে ওহী করা হতো, তা ছিল এক বিশেষ ধরনের ওহী। এ ওহীর বৈশিষ্ট্য অন্যান্য ওহী থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এতে যাকে ওহী করা হয় তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে এ ওহী আসার ব্যাপারে সম্পূর্ণ সচেতন ও নিশ্চিত থাকেন। এ ওহী হয় আকীদা-বিশ্বাস, বিধিবিধান, আইনকানুন ও নির্দেশনাবলি সংক্রান্ত। নবীগণ এ ওহীর মাধ্যমে তাদের জাতিকে পথনির্দেশ দিয়ে থাকেন।
আল্লাহ সকল নবীর কাছে ওহী পাঠিয়েছেন :
اِنَّاۤ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ كَمَاۤ اَوْحَيْنَاۤ اِلٰى نُوْحٍ وَّالنَّبِيِّيْنَ مِنْ ۢبَعْدِهٖۚ وَاَوْحَيْنَاۤ اِلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ وَاِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَ وَالْاَسْبَاطِ وَعِيْسٰى وَاَيُّوْبَ وَيُوْنُسَ وَهَارُوْنَ وَسُلَيْمَانَۚ وَاٰتَيْنَا دَاوُوْدَ زَبُوْرًا -
আমি তোমার নিকট ওহী প্রেরণ করেছি যেমনিভাবে নূহ ও তাঁর পরবর্তী নবীদের নিকট ওহী প্রেরণ করেছিলাম। আর ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব ও তাঁর বংশধর এবং ঈসা, আইয়ূব, ইউনুস, হারূন ও সুলায়মানের নিকটও ওহী প্রেরণ করেছিলাম; আর দাউদকে যাবূর (কিতাব) দান করেছিলাম। (সূরা নিসা- ১৬৩)
ওহীর জ্ঞানই সত্য এবং সঠিক :
وَالَّذِيْۤ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ مِنَ الْكِتَابِ هُوَ الْحَقُّ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِؕ اِنَّ اللهَ بِعِبَادِهٖ لَخَبِيْرٌ ۢبَصِيْرٌ
আর আমি যে কিতাব তোমার প্রতি ওহীরূপে নাযিল করেছি, তা সম্পূর্ণ সত্য; তা পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়নকারী। নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে ভালো করেই জানেন ও দেখেন। (সূরা ফাতির- ৩১)
কেবল ওহীর জ্ঞান দ্বারাই হেদায়াত লাভ করা যায় :
قُلْ اِنْ ضَلَلْتُ فَاِنَّمَاۤ اَضِلُّ عَلٰى نَفْسِيْۚ وَاِنِ اهْتَدَيْتُ فَبِمَا يُوْحِيْۤ اِلَيَّ رَبِّيْؕ اِنَّهٗ سَمِيْعٌ قَرِيْبٌ
বলো, যদি আমি পথভ্রষ্ট হই, তবে তো নিজেরই ক্ষতি করব; আর যদি আমি সরলসঠিক পথের উপর থাকি, তবে তা এজন্য সম্ভব হচ্ছে যে, আমার প্রতিপালক আমার প্রতি ওহী অবতীর্ণ করেন। নিশ্চয় তিনি সবকিছু শুনেন এবং তিনি অতি নিকটবর্তী। (সূরা সাবা- ৫০)
ওহীর মাধ্যমেই গায়েব সম্পর্কে জানা যায় :
ذٰلِكَ مِنْ اَنْۢبَآءِ الْغَيْبِ نُوْحِيْهِ اِلَيْكَ
এসব গায়েবের সংবাদ ওহীর মাধ্যমে আমি তোমাকে জানিয়ে দিয়েছি। (সূরা আলে ইমরান- ৪৪)
تِلْكَ مِنْ اَنْۢبَآءِ الْغَيْبِ نُوْحِيْهَاۤ اِلَيْكَۚ مَا كُنْتَ تَعْلَمُهَاۤ اَنْتَ وَلَا قَوْمُكَ مِنْ قَبْلِ هٰذَاؕ فَاصْبِرْ اِنَّ الْعَاقِبَةَ لِلْمُتَّقِيْنَ
এ সমসত্ম অদৃশ্যের সংবাদ আমি তোমাকে ওহীর মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছি, যা এর পূর্বে তুমি জানতে না এবং তোমার সম্প্রদায়েরও কেউ জানত না। সুতরাং ধৈর্যধারণ করো, নিশ্চয় শুভ পরিণাম মুত্তাক্বীদের জন্য। (সূরা হুদ- ৪৯)
ওহী নাযিলের পদ্ধতি :
وَمَا كَانَ لِبَشَرٍ اَنْ يُّكَلِّمَهُ اللهُ اِلَّا وَحْيًا اَوْ مِنْ وَّرَآءِ حِجَابٍ اَوْ يُرْسِلَ رَسُوْلًا فَيُوْحِيَ بِاِذْنِهٖ مَا يَشَآءُؕ اِنَّهٗ عَلِيٌّ حَكِيْمٌ ‐ وَكَذٰلِكَ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ رُوْحًا مِّنْ اَمْرِنَاؕ مَا كُنْتَ تَدْرِيْ مَا الْكِتَابُ وَلَا الْاِيْمَانُ وَلٰكِنْ جَعَلْنَاهُ نُوْرًا نَّهْدِيْ بِهٖ مَنْ نَّشَآءُ مِنْ عِبَادِنَاؕ وَاِنَّكَ لَتَهْدِيْۤ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
মানুষের জন্য অসম্ভব যে, আল্লাহ তার সাথে কথা বলবেন ওহীর মাধ্যম ছাড়া, অথবা পর্দার অন্তরাল ব্যতিরেকে অথবা এমন দূত প্রেরণ ছাড়া, যে দূত তাঁর অনুমতিক্রমে তিনি যা চান তা ব্যক্ত করে; নিশ্চয় তিনি সমুন্নত ও প্রজ্ঞাবান। এভাবেই আমি তোমার প্রতি ওহী করেছি রূহ (কুরআন) আমার নির্দেশে। তুমি তো জানতে না কিতাব কী ও ঈমান কী। আমি একে করেছি আলোকস্বরূপ, যা দ্বারা আমি আমার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা সঠিক পথ দেখাই; নিশ্চয় তুমি সরল পথের দিকেই পথপ্রদর্শন করে থাক। (সূরা শূরা- ৫১, ৫২)
ব্যাখ্যা : যেসব পদ্ধতিতে নবী ﷺ এর কাছে ওহী নাযিল হয়েছে তাহলো :
(১) আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী ﷺ এর কাছে ওহী আসার সূচনা হয়েছিল সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে- (সহীহ বুখারী, হা/৩)। এ ধারা পরবর্তী সময় পর্যন্ত জারি ছিল। হাদীসে তাঁর বহু সংখ্যক স্বপ্নের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যার মাধ্যমে হয় তাঁকে কোন শিক্ষা দেয়া হয়েছে কিংবা কোন বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। তাছাড়া কুরআন মাজীদেও নবী ﷺ এর একটি স্বপ্নের বিষয় সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। (ফাতহ- ২৭)
(২) মে‘রাজের রাত্রিতে নবী ﷺ কে দ্বিতীয় প্রকার ওহী দ্বারা সম্মানিত করা হয়ছে। কতিপয় হাদীসে নবী ﷺ কে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের নির্দেশ দেয়া এবং তা নিয়ে বার বার দরখাস্ত পেশ করার কথা যেভাবে উল্লেখিত হয়েছে তা থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, সে সময় আল্লাহ এবং তাঁর বান্দা মুহাম্মাদ ﷺ এর মধ্যে ঠিক তেমনি কথাবার্তা হয়েছিল যেমনটি তূর পাহাড়ের পাদদেশে মূসা (আঃ) ও আল্লাহর মধ্যে হয়েছিল।
(৩) ওহীর তৃতীয় প্রকারের ব্যাপারে কুরআন নিজেই সাক্ষ্য দেয় যে, কুরআনকে জিবরাঈল (আঃ) এর মাধ্যমে রাসূল ﷺ এর কাছে পৌঁছানো হয়েছে।
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা হারিস ইবনে হিশাম (রাঃ) রাসূল ﷺ কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার নিকট কীভাবে ওহী আসে? উত্তরে রাসূল ﷺ বললেন, কোন কোন সময় আমার নিকট তা ঘণ্টার ধ্বনির ন্যায় আসে। এ প্রকারের ওহী আমার নিকট খুবই কষ্টদায়ক মনে হয়। উক্ত কষ্টজনিত ক্লান্তি এভাবে সমাপ্ত হয় যে, সে যা বলে তা আমার মুখস্ত হয়ে যায়। আবার কোন কোন সময় ফেরেশতা মানুষের আকৃতিতে আমার সাথে কথা বলেন, আর আমি তা সাথে সাথে মুখস্থ করতে সক্ষম হই যা সে বলে। আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘‘অতি প্রচন্ড শীতের সময়ও ওহী নাযিলকালে আমি রাসূল ﷺ কে দেখেছি যে, ওহী নাযিলের পরপরই তাঁর ললাট থেকে ঘাম ঝরে পড়ত।’’ (সহীহ বুখারী, হা/২)
আল্লাহ সকল নবীর কাছে ওহী পাঠিয়েছেন :
اِنَّاۤ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ كَمَاۤ اَوْحَيْنَاۤ اِلٰى نُوْحٍ وَّالنَّبِيِّيْنَ مِنْ ۢبَعْدِهٖۚ وَاَوْحَيْنَاۤ اِلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ وَاِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَ وَالْاَسْبَاطِ وَعِيْسٰى وَاَيُّوْبَ وَيُوْنُسَ وَهَارُوْنَ وَسُلَيْمَانَۚ وَاٰتَيْنَا دَاوُوْدَ زَبُوْرًا -
আমি তোমার নিকট ওহী প্রেরণ করেছি যেমনিভাবে নূহ ও তাঁর পরবর্তী নবীদের নিকট ওহী প্রেরণ করেছিলাম। আর ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব ও তাঁর বংশধর এবং ঈসা, আইয়ূব, ইউনুস, হারূন ও সুলায়মানের নিকটও ওহী প্রেরণ করেছিলাম; আর দাউদকে যাবূর (কিতাব) দান করেছিলাম। (সূরা নিসা- ১৬৩)
ওহীর জ্ঞানই সত্য এবং সঠিক :
وَالَّذِيْۤ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ مِنَ الْكِتَابِ هُوَ الْحَقُّ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِؕ اِنَّ اللهَ بِعِبَادِهٖ لَخَبِيْرٌ ۢبَصِيْرٌ
আর আমি যে কিতাব তোমার প্রতি ওহীরূপে নাযিল করেছি, তা সম্পূর্ণ সত্য; তা পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়নকারী। নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে ভালো করেই জানেন ও দেখেন। (সূরা ফাতির- ৩১)
কেবল ওহীর জ্ঞান দ্বারাই হেদায়াত লাভ করা যায় :
قُلْ اِنْ ضَلَلْتُ فَاِنَّمَاۤ اَضِلُّ عَلٰى نَفْسِيْۚ وَاِنِ اهْتَدَيْتُ فَبِمَا يُوْحِيْۤ اِلَيَّ رَبِّيْؕ اِنَّهٗ سَمِيْعٌ قَرِيْبٌ
বলো, যদি আমি পথভ্রষ্ট হই, তবে তো নিজেরই ক্ষতি করব; আর যদি আমি সরলসঠিক পথের উপর থাকি, তবে তা এজন্য সম্ভব হচ্ছে যে, আমার প্রতিপালক আমার প্রতি ওহী অবতীর্ণ করেন। নিশ্চয় তিনি সবকিছু শুনেন এবং তিনি অতি নিকটবর্তী। (সূরা সাবা- ৫০)
ওহীর মাধ্যমেই গায়েব সম্পর্কে জানা যায় :
ذٰلِكَ مِنْ اَنْۢبَآءِ الْغَيْبِ نُوْحِيْهِ اِلَيْكَ
এসব গায়েবের সংবাদ ওহীর মাধ্যমে আমি তোমাকে জানিয়ে দিয়েছি। (সূরা আলে ইমরান- ৪৪)
تِلْكَ مِنْ اَنْۢبَآءِ الْغَيْبِ نُوْحِيْهَاۤ اِلَيْكَۚ مَا كُنْتَ تَعْلَمُهَاۤ اَنْتَ وَلَا قَوْمُكَ مِنْ قَبْلِ هٰذَاؕ فَاصْبِرْ اِنَّ الْعَاقِبَةَ لِلْمُتَّقِيْنَ
এ সমসত্ম অদৃশ্যের সংবাদ আমি তোমাকে ওহীর মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছি, যা এর পূর্বে তুমি জানতে না এবং তোমার সম্প্রদায়েরও কেউ জানত না। সুতরাং ধৈর্যধারণ করো, নিশ্চয় শুভ পরিণাম মুত্তাক্বীদের জন্য। (সূরা হুদ- ৪৯)
ওহী নাযিলের পদ্ধতি :
وَمَا كَانَ لِبَشَرٍ اَنْ يُّكَلِّمَهُ اللهُ اِلَّا وَحْيًا اَوْ مِنْ وَّرَآءِ حِجَابٍ اَوْ يُرْسِلَ رَسُوْلًا فَيُوْحِيَ بِاِذْنِهٖ مَا يَشَآءُؕ اِنَّهٗ عَلِيٌّ حَكِيْمٌ ‐ وَكَذٰلِكَ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ رُوْحًا مِّنْ اَمْرِنَاؕ مَا كُنْتَ تَدْرِيْ مَا الْكِتَابُ وَلَا الْاِيْمَانُ وَلٰكِنْ جَعَلْنَاهُ نُوْرًا نَّهْدِيْ بِهٖ مَنْ نَّشَآءُ مِنْ عِبَادِنَاؕ وَاِنَّكَ لَتَهْدِيْۤ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
মানুষের জন্য অসম্ভব যে, আল্লাহ তার সাথে কথা বলবেন ওহীর মাধ্যম ছাড়া, অথবা পর্দার অন্তরাল ব্যতিরেকে অথবা এমন দূত প্রেরণ ছাড়া, যে দূত তাঁর অনুমতিক্রমে তিনি যা চান তা ব্যক্ত করে; নিশ্চয় তিনি সমুন্নত ও প্রজ্ঞাবান। এভাবেই আমি তোমার প্রতি ওহী করেছি রূহ (কুরআন) আমার নির্দেশে। তুমি তো জানতে না কিতাব কী ও ঈমান কী। আমি একে করেছি আলোকস্বরূপ, যা দ্বারা আমি আমার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা সঠিক পথ দেখাই; নিশ্চয় তুমি সরল পথের দিকেই পথপ্রদর্শন করে থাক। (সূরা শূরা- ৫১, ৫২)
ব্যাখ্যা : যেসব পদ্ধতিতে নবী ﷺ এর কাছে ওহী নাযিল হয়েছে তাহলো :
(১) আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী ﷺ এর কাছে ওহী আসার সূচনা হয়েছিল সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে- (সহীহ বুখারী, হা/৩)। এ ধারা পরবর্তী সময় পর্যন্ত জারি ছিল। হাদীসে তাঁর বহু সংখ্যক স্বপ্নের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যার মাধ্যমে হয় তাঁকে কোন শিক্ষা দেয়া হয়েছে কিংবা কোন বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। তাছাড়া কুরআন মাজীদেও নবী ﷺ এর একটি স্বপ্নের বিষয় সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। (ফাতহ- ২৭)
(২) মে‘রাজের রাত্রিতে নবী ﷺ কে দ্বিতীয় প্রকার ওহী দ্বারা সম্মানিত করা হয়ছে। কতিপয় হাদীসে নবী ﷺ কে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের নির্দেশ দেয়া এবং তা নিয়ে বার বার দরখাস্ত পেশ করার কথা যেভাবে উল্লেখিত হয়েছে তা থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, সে সময় আল্লাহ এবং তাঁর বান্দা মুহাম্মাদ ﷺ এর মধ্যে ঠিক তেমনি কথাবার্তা হয়েছিল যেমনটি তূর পাহাড়ের পাদদেশে মূসা (আঃ) ও আল্লাহর মধ্যে হয়েছিল।
(৩) ওহীর তৃতীয় প্রকারের ব্যাপারে কুরআন নিজেই সাক্ষ্য দেয় যে, কুরআনকে জিবরাঈল (আঃ) এর মাধ্যমে রাসূল ﷺ এর কাছে পৌঁছানো হয়েছে।
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা হারিস ইবনে হিশাম (রাঃ) রাসূল ﷺ কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার নিকট কীভাবে ওহী আসে? উত্তরে রাসূল ﷺ বললেন, কোন কোন সময় আমার নিকট তা ঘণ্টার ধ্বনির ন্যায় আসে। এ প্রকারের ওহী আমার নিকট খুবই কষ্টদায়ক মনে হয়। উক্ত কষ্টজনিত ক্লান্তি এভাবে সমাপ্ত হয় যে, সে যা বলে তা আমার মুখস্ত হয়ে যায়। আবার কোন কোন সময় ফেরেশতা মানুষের আকৃতিতে আমার সাথে কথা বলেন, আর আমি তা সাথে সাথে মুখস্থ করতে সক্ষম হই যা সে বলে। আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘‘অতি প্রচন্ড শীতের সময়ও ওহী নাযিলকালে আমি রাসূল ﷺ কে দেখেছি যে, ওহী নাযিলের পরপরই তাঁর ললাট থেকে ঘাম ঝরে পড়ত।’’ (সহীহ বুখারী, হা/২)
মানবজাতির হেদায়াতের জন্য আল্লাহ কিতাব নাযিল করেছেন :
نَزَّلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ وَاَنْزَلَ التَّوْرَاةَ وَالْاِنْجِيْلَ -– مِنْ قَبْلُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَاَنْزَلَ الْفُرْقَانَ
তিনি সত্যসহকারে আপনার উপর কিতাব নাযিল করেছেন, যা পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়নকারী। তিনি ইতোপূর্বে আরো নাযিল করেছেন তাওরাত এবং ইঞ্জিল। (এগুলো ছিল) মানুষের জন্য পথপ্রদর্শনকারী, আর তিনি ফুরক্বান (কুরআন) নাযিল করেছেন। (সূরা আলে ইমরান- ৩, ৪)
আল্লাহর নাযিলকৃত সকল কিতাবের উপর ঈমান আনা আবশ্যক :
قُوْلُوْاۤ اٰمَنَّا بِاللهِ وَمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْنَا وَمَاۤ اُنْزِلَ اِلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ وَاِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَ وَالْاَسْبَاطِ وَمَاۤ اُوْتِيَ مُوْسٰى وَعِيْسٰى وَمَاۤ اُوْتِيَ النَّبِيُّوْنَ مِنْ رَّبِّهِمْۚ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ اَحَدٍ مِّنْهُمْؗ وَنَحْنُ لَهٗ مُسْلِمُوْنَ
তোমরা বলো, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং যা আমাদের প্রতি নাযিল হয়েছে, আর যা ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব ও তাদের বংশধরের প্রতি নাযিল হয়েছিল। আর মূসা ও ঈসাকে যা প্রদান করা হয়েছিল এবং অন্যান্য নবীগণ তাদের রবের পক্ষ হতে যা প্রদত্ত হয়েছিলেন তার প্রতিও ঈমান এনেছি। আমরা নবীদের কারো মধ্যে পার্থক্য করি না এবং আমরা তাঁরই প্রতি আত্মসমর্পণকারী। (সূরা বাক্বারা- ১৩৬)
মূসা (আঃ) কে তাওরাত দেয়া হয়েছিল :
وَلَقَدْ اٰتَيْنَا مُوْسَى الْكِتَابَ لَعَلَّهُمْ يَهْتَدُوْنَ
আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম, যাতে তারা হেদায়াত পায়। (সূরা মু’মিনূন- ৪৯)
اِنَّاۤ اَنْزَلْنَا التَّوْرَاةَ فِيْهَا هُدًى وَّنُوْرٌ
আমি তো অবতীর্ণ করেছিলাম তাওরাত, যাতে ছিল হেদায়াত ও নূর। (সূরা মায়েদা- ৪৪)
দাউদ (আঃ) কে যাবূর দেয়া হয়েছিল :
وَاٰتَيْنَا دَاوُوْدَ زَبُوْرًا
আমি দাউদকে যাবূর (কিতাব) প্রদান করেছি। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৫৫)
ঈসা (আঃ) কে ইঞ্জিল দেয়া হয়েছিল :
وَقَفَّيْنَا عَلٰۤى اٰثَارِهِمْ بِعِيْسَى ابْنِ مَرْيَمَ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ التَّوْرَاةِ۪ وَاٰتَيْنَاهُ الْاِنْجِيْلَ
আর আমি তাদের পরে পাঠিয়েছি ঈসা ইবনে মারইয়ামকে, তিনি ছিলেন পূর্বে প্রেরিত তাওরাতের সত্যতা প্রমাণকারী। আর আমি তাকে দিয়েছিলাম ইঞ্জিল। (সূরা মায়েদা- ৪৬)
মুহাম্মাদ ﷺ কে দেয়া হয়েছে মহাগ্রন্থ আল কুরআন :
وَكَذٰلِكَ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ قُرْاٰنًا عَرَبِيًّا
এভাবে আমি তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করেছি আরবি ভাষায়। (সূরা শূরা- ৭)
نَزَّلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ وَاَنْزَلَ التَّوْرَاةَ وَالْاِنْجِيْلَ -– مِنْ قَبْلُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَاَنْزَلَ الْفُرْقَانَ
তিনি সত্যসহকারে আপনার উপর কিতাব নাযিল করেছেন, যা পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়নকারী। তিনি ইতোপূর্বে আরো নাযিল করেছেন তাওরাত এবং ইঞ্জিল। (এগুলো ছিল) মানুষের জন্য পথপ্রদর্শনকারী, আর তিনি ফুরক্বান (কুরআন) নাযিল করেছেন। (সূরা আলে ইমরান- ৩, ৪)
আল্লাহর নাযিলকৃত সকল কিতাবের উপর ঈমান আনা আবশ্যক :
قُوْلُوْاۤ اٰمَنَّا بِاللهِ وَمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْنَا وَمَاۤ اُنْزِلَ اِلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ وَاِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَ وَالْاَسْبَاطِ وَمَاۤ اُوْتِيَ مُوْسٰى وَعِيْسٰى وَمَاۤ اُوْتِيَ النَّبِيُّوْنَ مِنْ رَّبِّهِمْۚ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ اَحَدٍ مِّنْهُمْؗ وَنَحْنُ لَهٗ مُسْلِمُوْنَ
তোমরা বলো, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং যা আমাদের প্রতি নাযিল হয়েছে, আর যা ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব ও তাদের বংশধরের প্রতি নাযিল হয়েছিল। আর মূসা ও ঈসাকে যা প্রদান করা হয়েছিল এবং অন্যান্য নবীগণ তাদের রবের পক্ষ হতে যা প্রদত্ত হয়েছিলেন তার প্রতিও ঈমান এনেছি। আমরা নবীদের কারো মধ্যে পার্থক্য করি না এবং আমরা তাঁরই প্রতি আত্মসমর্পণকারী। (সূরা বাক্বারা- ১৩৬)
মূসা (আঃ) কে তাওরাত দেয়া হয়েছিল :
وَلَقَدْ اٰتَيْنَا مُوْسَى الْكِتَابَ لَعَلَّهُمْ يَهْتَدُوْنَ
আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম, যাতে তারা হেদায়াত পায়। (সূরা মু’মিনূন- ৪৯)
اِنَّاۤ اَنْزَلْنَا التَّوْرَاةَ فِيْهَا هُدًى وَّنُوْرٌ
আমি তো অবতীর্ণ করেছিলাম তাওরাত, যাতে ছিল হেদায়াত ও নূর। (সূরা মায়েদা- ৪৪)
দাউদ (আঃ) কে যাবূর দেয়া হয়েছিল :
وَاٰتَيْنَا دَاوُوْدَ زَبُوْرًا
আমি দাউদকে যাবূর (কিতাব) প্রদান করেছি। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৫৫)
ঈসা (আঃ) কে ইঞ্জিল দেয়া হয়েছিল :
وَقَفَّيْنَا عَلٰۤى اٰثَارِهِمْ بِعِيْسَى ابْنِ مَرْيَمَ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ التَّوْرَاةِ۪ وَاٰتَيْنَاهُ الْاِنْجِيْلَ
আর আমি তাদের পরে পাঠিয়েছি ঈসা ইবনে মারইয়ামকে, তিনি ছিলেন পূর্বে প্রেরিত তাওরাতের সত্যতা প্রমাণকারী। আর আমি তাকে দিয়েছিলাম ইঞ্জিল। (সূরা মায়েদা- ৪৬)
মুহাম্মাদ ﷺ কে দেয়া হয়েছে মহাগ্রন্থ আল কুরআন :
وَكَذٰلِكَ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ قُرْاٰنًا عَرَبِيًّا
এভাবে আমি তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করেছি আরবি ভাষায়। (সূরা শূরা- ৭)
قُرْاٰنٌ (কুরআন) শব্দটি قَرَءَ ক্রিয়াপদের শব্দমূল। এর আসল অর্থ হচ্ছে- পড়া, অধ্যয়ন করা ইত্যাদি। শব্দমূলকে যখন কোন নাম হিসেবে ব্যবহার করা হয় তখন সংশ্লিষ্ট জিনিসটির মধ্যে শব্দমূলের অর্থ পুরোপুরি পাওয়া যায়। কাজেই এ কিতাবের নাম ‘কুরআন’ রাখার অর্থ হচ্ছে, এ কিতাব সকলের পড়ার জন্য এবং এটা বেশি বেশি করে পঠিত হওয়ার জিনিস। পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবগুলোতে যেসব সত্য শিক্ষা ছিল কুরআন তার সবগুলোই নিজের মধ্যে সংরক্ষিত করে নিয়েছে। কুরআন সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণকারী এ হিসেবে যে, এখন তাদের এ সত্য শিক্ষাগুলোর কোন অংশ নষ্ট হওয়ার আর সম্ভাবনা নেই। কুরআন সেগুলোর সমর্থক এ অর্থে যে, ঐ কিতাবগুলোতে যেসব বিষয় রয়েছে কুরআন তার সত্যতা প্রমাণ করে। কুরআন সেগুলোর উপর সাক্ষ্যদানকারী এ অর্থে যে, ঐ কিতাবগুলোতে আল্লাহর কালাম ও মানুষের বাণীর মধ্যে যে মিশ্রণ ঘটে গেছে কুরআনের সাক্ষ্যের মাধ্যমে তাকে আবার ছেঁটে আলাদা করা যেতে পারে। সেগুলোর মধ্যে যেগুলো কুরআনের সাথে সামঞ্জস্যশীল বুঝতে হবে তা আল্লাহর কালাম। আর যেগুলো কুরআন বিরোধী সেগুলো মানুষের কথা।
কুরআনের মূল উৎস হচ্ছে ‘লাওহে মাহফুজ’ :
بَلْ هُوَ قُرْاٰنٌ مَّجِيْدٌ – فِيْ لَوْحٍ مَّحْفُوْظٍ
এটা অতি উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন কুরআন, যা লাওহে মাহফুজে (সংরক্ষিত ফলকে) লিপিবদ্ধ আছে। (সূরা বুরুজ- ২১, ২২)
সূরা যুখরুফে এটাকে ‘উম্মুল কিতাব’ বলা হয়েছে :
- وَاِنَّهٗ فِۤيْ اُمِّ الْكِتَابِ لَدَيْنَا لَعَلِيٌّ حَكِيْمٌ
আর এটা রয়েছে আমার নিকট উম্মুল কিতাবে (লাওহে মাহফুজে) যা উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা যুখরুফ- ৪)
সূরা ওয়াক্বিয়ায় একে ‘কিতাবুম মাকনূন’ বলা হয়েছে :
اِنَّهٗ لَقُرْاٰنٌ كَرِيْمٌ – فِيْ كِتَابٍ مَّكْنُوْنٍ -
নিশ্চয় এটা সম্মানিত কুরআন, যা রয়েছে সুরক্ষিত কিতাবে। (সূরা ওয়াক্বিয়া- ৭৭, ৭৮)
ফেরেশতা ছাড়া কেউ এর সংস্পর্শে যেতে পারে না :
لَا يَمَسُّهٗۤ اِلَّا الْمُطَهَّرُوْنَ
পুতঃপবিত্র আত্মা (ফেরেশতা) ব্যতীত অন্য কেউ তা স্পর্শ করে না। (সূরা ওয়াক্বিয়া- ৭৯)
ফেরেশতারা এর লেখা-লেখির কাজ করে থাকে :
كَلَّاۤ اِنَّهَا تَذْكِرَةٌ – فَمَنْ شَآءَ ذَكَرَهٗ -– فِيْ صُحُفٍ مُّكَرَّمَةٍ -– مَرْفُوْعَةٍ مُّطَهَّرَةٍ – بِاَيْدِيْ سَفَرَةٍ - – كِرَامٍ ۢبَرَرَةٍ
কখনও নয়, এটা তো উপদেশবাণী; যে ইচ্ছা করে সে এটা স্মরণ রাখবে, এটা সম্মানিত কিতাবে (লাওহ মাহফুজে) লিপিবদ্ধ আছে, যা উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন ও পবিত্র। এটা এমন লেখকদের হাতে থাকে যারা সম্মানিত ও সৎ। (সূরা আবাসা, ১১-১৬)
কুরআনের মূল উৎস হচ্ছে ‘লাওহে মাহফুজ’ :
بَلْ هُوَ قُرْاٰنٌ مَّجِيْدٌ – فِيْ لَوْحٍ مَّحْفُوْظٍ
এটা অতি উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন কুরআন, যা লাওহে মাহফুজে (সংরক্ষিত ফলকে) লিপিবদ্ধ আছে। (সূরা বুরুজ- ২১, ২২)
সূরা যুখরুফে এটাকে ‘উম্মুল কিতাব’ বলা হয়েছে :
- وَاِنَّهٗ فِۤيْ اُمِّ الْكِتَابِ لَدَيْنَا لَعَلِيٌّ حَكِيْمٌ
আর এটা রয়েছে আমার নিকট উম্মুল কিতাবে (লাওহে মাহফুজে) যা উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা যুখরুফ- ৪)
সূরা ওয়াক্বিয়ায় একে ‘কিতাবুম মাকনূন’ বলা হয়েছে :
اِنَّهٗ لَقُرْاٰنٌ كَرِيْمٌ – فِيْ كِتَابٍ مَّكْنُوْنٍ -
নিশ্চয় এটা সম্মানিত কুরআন, যা রয়েছে সুরক্ষিত কিতাবে। (সূরা ওয়াক্বিয়া- ৭৭, ৭৮)
ফেরেশতা ছাড়া কেউ এর সংস্পর্শে যেতে পারে না :
لَا يَمَسُّهٗۤ اِلَّا الْمُطَهَّرُوْنَ
পুতঃপবিত্র আত্মা (ফেরেশতা) ব্যতীত অন্য কেউ তা স্পর্শ করে না। (সূরা ওয়াক্বিয়া- ৭৯)
ফেরেশতারা এর লেখা-লেখির কাজ করে থাকে :
كَلَّاۤ اِنَّهَا تَذْكِرَةٌ – فَمَنْ شَآءَ ذَكَرَهٗ -– فِيْ صُحُفٍ مُّكَرَّمَةٍ -– مَرْفُوْعَةٍ مُّطَهَّرَةٍ – بِاَيْدِيْ سَفَرَةٍ - – كِرَامٍ ۢبَرَرَةٍ
কখনও নয়, এটা তো উপদেশবাণী; যে ইচ্ছা করে সে এটা স্মরণ রাখবে, এটা সম্মানিত কিতাবে (লাওহ মাহফুজে) লিপিবদ্ধ আছে, যা উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন ও পবিত্র। এটা এমন লেখকদের হাতে থাকে যারা সম্মানিত ও সৎ। (সূরা আবাসা, ১১-১৬)
কুরআন নাযিল হয়েছে এক বরকতময় রাত্রিতে :
حٰمٓ – وَالْكِتَابِ الْمُبِيْنِ – اِنَّاۤ اَنْزَلْنَاهُ فِيْ لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ اِنَّا كُنَّا مُنْذِرِيْنَ
হা-মীম। শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের, আমি এটা অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় রাত্রিতে; নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। (সূরা দুখান, ১-৩)
এ রাতটি হচ্ছে লাইলাতুল ক্বদর :
اِنَّاۤ اَنْزَلْنَاهُ فِيْ لَيْلَةِ الْقَدْرِ – - وَمَاۤ اَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ -– لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ اَلْفِ شَهْرٍ
আমি একে নাযিল করেছি লাইলাতুল ক্বদরে। আর আপনি কি জানেন লাইলাতুল ক্বদর কী? লাইলাতুল ক্বদর হলো, হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। (সূরা ক্বদর, ১-৩)
এ রাতটি রমাযান মাসে রয়েছে :
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيْۤ اُنْزِلَ فِيْهِ الْقُرْاٰنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدٰى وَالْفُرْقَانِ
রমাযান তো সেই মাস যে মাসে কুরআন নাযিল করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য পথপ্রদর্শক এবং হেদায়াতের স্পষ্ট নিদর্শন ও ফুরক্বান (সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী)। (সূরা বাক্বারা- ১৮৫)
কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল হয়েছে :
تَنْزِيْلُ الْكِتَابِ مِنَ اللهِ الْعَزِيْزِ الْحَكِيْمِ
এ কিতাব মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাবান আল্লাহর পক্ষ হতে অবতীর্ণ। (সূরা জাসিয়া- ২)
تَنْزِيْلَ الْعَزِيْزِ الرَّحِيْمِ
এ কিতাব মহাপরাক্রমশালী ও দয়াময় আল্লাহর পক্ষ হতে অবতীর্ণ। (সূরা ইয়াসীন- ৫)
ব্যাখ্যা : এখানে কুরআন নাযিলকারীর দু’টি গুণের কথা বলা হয়েছে।
(এক) তিনি প্রবল ও পরাক্রমশালী। (দুই) তিনি করুণাময়।
প্রথম গুণটি বর্ণর্না করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, এ সত্য সম্পর্কে সতর্ক করা যে, এ কুরআন কোন অক্ষম উপদেষ্টার উপদেশ নয়; বরং এটি এমন এক সত্তার বাণী যিনি সবকিছুর উপর প্রবল, যাঁর ফায়সালাসমূহ প্রয়োগ করার পথে কোন শক্তি বাধা সৃষ্টি করতে পারে না এবং যাঁর পাকড়াও থেকে বাঁচার ক্ষমতা কারো নেই। আর দ্বিতীয় গুণটি বর্ণনা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, এ অনুভূতি সৃষ্টি করা যে, তিনি তোমাদের উপর দয়াবান হয়ে এ মহান কিতাবটি তাঁর রাসূলের উপর নাযিল করেছেন। যাতে তোমরা এর দ্বারা গোমরাহীমুক্ত হয়ে এমন সরলসঠিক পথে হেদায়াতপ্রাপ্ত হতে পার, যে পথে চললে দুনিয়া ও আখিরাতের সাফল্য লাভ করতে পারবে।
حٰمٓ – وَالْكِتَابِ الْمُبِيْنِ – اِنَّاۤ اَنْزَلْنَاهُ فِيْ لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ اِنَّا كُنَّا مُنْذِرِيْنَ
হা-মীম। শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের, আমি এটা অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় রাত্রিতে; নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। (সূরা দুখান, ১-৩)
এ রাতটি হচ্ছে লাইলাতুল ক্বদর :
اِنَّاۤ اَنْزَلْنَاهُ فِيْ لَيْلَةِ الْقَدْرِ – - وَمَاۤ اَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ -– لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ اَلْفِ شَهْرٍ
আমি একে নাযিল করেছি লাইলাতুল ক্বদরে। আর আপনি কি জানেন লাইলাতুল ক্বদর কী? লাইলাতুল ক্বদর হলো, হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। (সূরা ক্বদর, ১-৩)
এ রাতটি রমাযান মাসে রয়েছে :
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيْۤ اُنْزِلَ فِيْهِ الْقُرْاٰنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدٰى وَالْفُرْقَانِ
রমাযান তো সেই মাস যে মাসে কুরআন নাযিল করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য পথপ্রদর্শক এবং হেদায়াতের স্পষ্ট নিদর্শন ও ফুরক্বান (সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী)। (সূরা বাক্বারা- ১৮৫)
কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল হয়েছে :
تَنْزِيْلُ الْكِتَابِ مِنَ اللهِ الْعَزِيْزِ الْحَكِيْمِ
এ কিতাব মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাবান আল্লাহর পক্ষ হতে অবতীর্ণ। (সূরা জাসিয়া- ২)
تَنْزِيْلَ الْعَزِيْزِ الرَّحِيْمِ
এ কিতাব মহাপরাক্রমশালী ও দয়াময় আল্লাহর পক্ষ হতে অবতীর্ণ। (সূরা ইয়াসীন- ৫)
ব্যাখ্যা : এখানে কুরআন নাযিলকারীর দু’টি গুণের কথা বলা হয়েছে।
(এক) তিনি প্রবল ও পরাক্রমশালী। (দুই) তিনি করুণাময়।
প্রথম গুণটি বর্ণর্না করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, এ সত্য সম্পর্কে সতর্ক করা যে, এ কুরআন কোন অক্ষম উপদেষ্টার উপদেশ নয়; বরং এটি এমন এক সত্তার বাণী যিনি সবকিছুর উপর প্রবল, যাঁর ফায়সালাসমূহ প্রয়োগ করার পথে কোন শক্তি বাধা সৃষ্টি করতে পারে না এবং যাঁর পাকড়াও থেকে বাঁচার ক্ষমতা কারো নেই। আর দ্বিতীয় গুণটি বর্ণনা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, এ অনুভূতি সৃষ্টি করা যে, তিনি তোমাদের উপর দয়াবান হয়ে এ মহান কিতাবটি তাঁর রাসূলের উপর নাযিল করেছেন। যাতে তোমরা এর দ্বারা গোমরাহীমুক্ত হয়ে এমন সরলসঠিক পথে হেদায়াতপ্রাপ্ত হতে পার, যে পথে চললে দুনিয়া ও আখিরাতের সাফল্য লাভ করতে পারবে।
ফেরেশতাদের মধ্যে জিবরাঈল (আঃ) ওহী নিয়ে আসতেন :
قُلْ مَنْ كَانَ عَدُوًّا لِّجِبْرِيْلَ فَاِنَّهٗ نَزَّلَهٗ عَلٰى قَلْبِكَ بِاِذْنِ اللهِ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ وَهُدًى وَّبُشْرٰى لِلْمُؤْمِنِيْنَ
(হে নবী) আপনি বলুন, কে সে ব্যক্তি যে জিবরাঈলের সাথে শত্রুতা রাখে? সে তো কুরআনকে আল্লাহর হুকুমে তোমার অন্তরে নাযিল করে, যা তাদের নিকট থাকা বিষয়সমূহের সত্যতা স্বীকার করে। আর তা মুমিনদের জন্য হেদায়াত ও সুসংবাদস্বরূপ। (সূরা বাক্বারা- ৯৭)
তার উপাধি হলো রূহুল আমীন :
وَاِنَّهٗ لَتَنْزِيْلُ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ – - نَزَلَ بِهِ الرُّوْحُ الْاَمِيْنُ – - عَلٰى قَلْبِكَ لِتَكُوْنَ مِنَ الْمُنْذِرِيْنَ
নিশ্চয় কুরআন জগতসমূহের প্রতিপালকের পক্ষ হতে অবতীর্ণ। রুহুল আমীন (জিবরাঈল) এটা নিয়ে অবতরণ করেছে তোমার হৃদয়ে, যাতে তুমি সতর্ককারীদের অন্তর্ভুক্ত হতে পার। (সূরা শু‘আরা, ১৯২-১৯৪)
তিনি অনেক শক্তিশালী :
عَلَّمَهٗ شَدِيْدُ الْقُوٰى – - ذُوْ مِرَّةٍ فَاسْتَوٰى
তাকে শিক্ষা দান করেন শক্তিশালী ও মহাশক্তিধর (ফেরেশতা) যিনি প্রজ্ঞাসম্পন্ন; অতঃপর (তিনি একদিন) নিজ আকৃতিতে (তার সামনে এসে) স্থির হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। (সূরা নাজম- ৫, ৬)
তিনি সম্মানিত ও আমানতদার :
اِنَّهٗ لَقَوْلُ رَسُوْلٍ كَرِيْمٍ – -ذِيْ قُوَّةٍ عِنْدَ ذِى الْعَرْشِ مَكِيْنٍ – مُطَاعٍ ثَمَّ اَمِيْنٍ
নিশ্চয় এ কুরআন সম্মানিত বার্তাবাহকের আনীত বাণী। তিনি শক্তিশালী, আরশের মালিকের নিকট মর্যাদাসম্পন্ন, সেখানে তাকে মান্য করা হয় এবং সে বিশ্বাসভাজন। (সূরা তাকভীর, ১৯-২১)
জিবরাঈল (আঃ) আল্লাহর অনুমতি ছাড়া ওহী নিয়ে আসতেন না :
وَمَا نَتَنَزَّلُ اِلَّا بِاَمْرِ رَبِّكَۚ لَهٗ مَا بَيْنَ اَيْدِيْنَا وَمَا خَلْفَنَا وَمَا بَيْنَ ذٰلِكَۚ وَمَا كَانَ رَبُّكَ نَسِيًّا
আমরা আপনার প্রতিপালকের আদেশ ব্যতীত অবতরণ করি না; যা আমাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে আছে এবং যা উভয়ের মধ্যবর্তী স্থলে আছে তা তাঁরই এবং আপনার প্রতিপালক ভুলে যাওয়ার মতো নন। (সূরা মারইয়াম- ৬৪)
kv‡b byh~j : রাসূলুল্লাহ ﷺ জিবরাঈল (আঃ) কে বলেন, তুমি আমার নিকট যতবার আসো তার চেয়ে অধিকবার আসাতে তোমাকে কিসে বাধা দিচ্ছে? তখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (সহীহ বুখারী, হা/৪৭৩১)
ব্যাখ্যা : জিবরাঈল (আঃ) সাহাবী দিহয়াতুল কালবী (রাঃ) এর রূপ ধারণ করে আসতেন। আবু ওসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জানতে পেরেছি, কোন এক সময় জিবরাঈল (আঃ) নবী ﷺ এর কাছে আগমন করেন। তখন উম্মে সালামা (রাঃ) তাঁর কাছে ছিলেন। জিবরাঈল (আঃ) কথা বলা আরম্ভ করলে, নবী ﷺ উম্মে সালামা (রাঃ) কে প্রশ্ন করলেন, বল তো ইনি কে? তিনি বললেন, ইনি দিহয়াতুল কালবী। তারপর জিবরাঈল (আঃ) উঠে দাঁড়ালে (উম্মে সালামা) বললেন, (আল্লাহর কসম!) যতক্ষণ পর্যন্ত না নবী ﷺ এর ভাষণে জিবরাঈল (আঃ) সম্পর্কে শুনেছি, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি তাঁকে দিহয়াতুল কালবী ছাড়া অন্য কেউ মনে করিনি। (সহীহ বুখারী, হা/৪৯৮০)
قُلْ مَنْ كَانَ عَدُوًّا لِّجِبْرِيْلَ فَاِنَّهٗ نَزَّلَهٗ عَلٰى قَلْبِكَ بِاِذْنِ اللهِ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ وَهُدًى وَّبُشْرٰى لِلْمُؤْمِنِيْنَ
(হে নবী) আপনি বলুন, কে সে ব্যক্তি যে জিবরাঈলের সাথে শত্রুতা রাখে? সে তো কুরআনকে আল্লাহর হুকুমে তোমার অন্তরে নাযিল করে, যা তাদের নিকট থাকা বিষয়সমূহের সত্যতা স্বীকার করে। আর তা মুমিনদের জন্য হেদায়াত ও সুসংবাদস্বরূপ। (সূরা বাক্বারা- ৯৭)
তার উপাধি হলো রূহুল আমীন :
وَاِنَّهٗ لَتَنْزِيْلُ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ – - نَزَلَ بِهِ الرُّوْحُ الْاَمِيْنُ – - عَلٰى قَلْبِكَ لِتَكُوْنَ مِنَ الْمُنْذِرِيْنَ
নিশ্চয় কুরআন জগতসমূহের প্রতিপালকের পক্ষ হতে অবতীর্ণ। রুহুল আমীন (জিবরাঈল) এটা নিয়ে অবতরণ করেছে তোমার হৃদয়ে, যাতে তুমি সতর্ককারীদের অন্তর্ভুক্ত হতে পার। (সূরা শু‘আরা, ১৯২-১৯৪)
তিনি অনেক শক্তিশালী :
عَلَّمَهٗ شَدِيْدُ الْقُوٰى – - ذُوْ مِرَّةٍ فَاسْتَوٰى
তাকে শিক্ষা দান করেন শক্তিশালী ও মহাশক্তিধর (ফেরেশতা) যিনি প্রজ্ঞাসম্পন্ন; অতঃপর (তিনি একদিন) নিজ আকৃতিতে (তার সামনে এসে) স্থির হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। (সূরা নাজম- ৫, ৬)
তিনি সম্মানিত ও আমানতদার :
اِنَّهٗ لَقَوْلُ رَسُوْلٍ كَرِيْمٍ – -ذِيْ قُوَّةٍ عِنْدَ ذِى الْعَرْشِ مَكِيْنٍ – مُطَاعٍ ثَمَّ اَمِيْنٍ
নিশ্চয় এ কুরআন সম্মানিত বার্তাবাহকের আনীত বাণী। তিনি শক্তিশালী, আরশের মালিকের নিকট মর্যাদাসম্পন্ন, সেখানে তাকে মান্য করা হয় এবং সে বিশ্বাসভাজন। (সূরা তাকভীর, ১৯-২১)
জিবরাঈল (আঃ) আল্লাহর অনুমতি ছাড়া ওহী নিয়ে আসতেন না :
وَمَا نَتَنَزَّلُ اِلَّا بِاَمْرِ رَبِّكَۚ لَهٗ مَا بَيْنَ اَيْدِيْنَا وَمَا خَلْفَنَا وَمَا بَيْنَ ذٰلِكَۚ وَمَا كَانَ رَبُّكَ نَسِيًّا
আমরা আপনার প্রতিপালকের আদেশ ব্যতীত অবতরণ করি না; যা আমাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে আছে এবং যা উভয়ের মধ্যবর্তী স্থলে আছে তা তাঁরই এবং আপনার প্রতিপালক ভুলে যাওয়ার মতো নন। (সূরা মারইয়াম- ৬৪)
kv‡b byh~j : রাসূলুল্লাহ ﷺ জিবরাঈল (আঃ) কে বলেন, তুমি আমার নিকট যতবার আসো তার চেয়ে অধিকবার আসাতে তোমাকে কিসে বাধা দিচ্ছে? তখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (সহীহ বুখারী, হা/৪৭৩১)
ব্যাখ্যা : জিবরাঈল (আঃ) সাহাবী দিহয়াতুল কালবী (রাঃ) এর রূপ ধারণ করে আসতেন। আবু ওসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জানতে পেরেছি, কোন এক সময় জিবরাঈল (আঃ) নবী ﷺ এর কাছে আগমন করেন। তখন উম্মে সালামা (রাঃ) তাঁর কাছে ছিলেন। জিবরাঈল (আঃ) কথা বলা আরম্ভ করলে, নবী ﷺ উম্মে সালামা (রাঃ) কে প্রশ্ন করলেন, বল তো ইনি কে? তিনি বললেন, ইনি দিহয়াতুল কালবী। তারপর জিবরাঈল (আঃ) উঠে দাঁড়ালে (উম্মে সালামা) বললেন, (আল্লাহর কসম!) যতক্ষণ পর্যন্ত না নবী ﷺ এর ভাষণে জিবরাঈল (আঃ) সম্পর্কে শুনেছি, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি তাঁকে দিহয়াতুল কালবী ছাড়া অন্য কেউ মনে করিনি। (সহীহ বুখারী, হা/৪৯৮০)
নবী ﷺ এর উপর নাযিল হওয়া সর্বপ্রথম ওহী :
اِقْرَاْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِيْ خَلَقَ - – خَلَقَ الْاِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍ – - اِقْرَاْ وَرَبُّكَ الْاَكْرَمُ – - اَلَّذِيْ عَلَّمَ بِالْقَلَمِ – - عَلَّمَ الْاِنْسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ
পড়ুন, আপনার পালনকর্তার নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ঝুলন্ত রক্তপিন্ড হতে। পড়ুন, আপনার পালনকর্তা অতি সম্মানিত। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে, যা সে জানত না। (সূরা আলাক্ব, ১-৫)
ব্যাখ্যা : সর্বপ্রথম কুরআন নাযিলের ঘটনা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে : আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট ওহী আগমনের সূচনা হয় ঘুমের মধ্যে সত্য স্বপ্নরূপে। স্বপ্নে তিনি যা দেখতেন তা-ই প্রভাতের আলোর ন্যায় বাস্তবে প্রতিফলিত হতো। এ অবস্থায় কিছুকাল চলার পর নিজ থেকেই তাঁর অন্তরে নির্জনে থাকার প্রেরণা জাগ্রত হয়। ফলে তিনি (মক্কা নগরী হতে তিন মাইল দূরে) হেরা গুহায় নির্জনে (ইবাদাতের উদ্দেশ্যে) অবস্থান করতে লাগলেন। তিনি তাঁর পরিবারের নিকট না গিয়ে সেথায় কয়েক রাত পর্যন্ত ইবাদাতে মগ্ন থাকতেন। এজন্য তিনি সঙ্গে কিছু খাবার নিয়ে আসতেন। তারপর খাদীজা (রাঃ) এর নিকট ফিরে যেতেন। পুনরায় কিছু খাবার নিয়ে (একাধারে ইবাদাতে রত হওয়ার জন্য) হেরা গুহায় চলে যেতেন। এমনিভাবে হেরা গুহায় থাকাকালীন হঠাৎ তাঁর নিকট হক্ব (ওহী) এলো। অর্থাৎ ফেরেশতা জিবরাঈল (আঃ) আসলেন। অতঃপর বললেন, اِقْرَاْ (ইক্বরা) (হে নবী) ‘‘আপনি পড়ুন।’’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘‘আমি তো পড়তে জানি না।’’ রাসূল ﷺ বলেন, (এ কথা শুনে জিবরাঈল) আমাকে ধরে এমন জোরে চাপ দিলেন, যাতে আমার খুব কষ্ট অনুভব হলো। তারপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, ‘আপনি পড়ুন!’ জবাবে আমি বললাম, আমি তো পড়তে জানি না। এটা শুনে আবার (তিনি) আমাকে ধরে এমন জোরে চাপ দিলেন, এতে আমার আরো বেশি কষ্ট অনুভব হতে লাগল। তারপর আমাকে ছেড়ে দিয়ে পুনরায় বললেন, ‘‘আপনি পড়ুন’’। জবাবে আমি আগের ন্যায় বললাম, ‘‘আমি তো পড়তে জানি না।’’ এটা শুনে জিবরাঈল (আঃ) তৃতীয় বার আমাকে জোরে চাপ দিলেন, তারপর ছেড়ে দিয়ে সূরা আলাক্ব এর প্রথম পাঁচটি আয়াত পাঠ করতে বললেন। তারপর রাসূল ﷺ উক্ত আয়াতসমূহ নিয়ে বাড়ি ফিরলেন। তখন ভয়ে তাঁর অন্তর কাঁপতেছিল। তিনি তাঁর স্ত্রী খাদীজা বিনতে খুয়াইলিদ (রাঃ) এর কাছে এসে বললেন, আমাকে চাদর জড়িয়ে দাও! আমাকে চাদর জড়িয়ে দাও। অতঃপর খাদীজা (রাঃ) তাঁকে চাদর জড়িয়ে দিলেন। কিছুক্ষণ পর তাঁর থেকে ভয় কেটে গেলে তিনি স্ত্রী খাদীজাকে সব ঘটনা খুলে বললেন। অতঃপর বললেন, আমি আমার জীবন নিয়ে ভয় করছি। তখন খাদীজা (রাঃ) রাসূল ﷺ কে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, আল্লাহর কসম! মহান আল্লাহ আপনাকে কখনো চিন্তায় ফেলবেন না। কেননা আপনি আত্মীয়স্বজনের সাথে ভালো ব্যবহার করেন। ইয়াতীম, বিধবা, অন্ধ ও অক্ষমদের খাওয়া-পরা ও থাকার ব্যবস্থা করেন। বেকারদের কর্মসংস্থান করেন। মেহমানের সমাদর করেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে দুর্দশাগ্রস্ত জনগণকে সাহায্য করেন। (অতএব এ অবস্থায় আপনার ভয়ের কোন কারণ নেই)।
এরূপ সান্ত্বনা দেয়ার পর খাদীজা (রাঃ) রাসূল ﷺ কে সাথে নিয়ে স্বীয় চাচাত ভাই ওয়ারাকা ইবনে নাওফেল এর নিকট গেলেন। যিনি জাহেলী যুগে ঈসায়ী ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি হিব্রু ভাষায় কিতাব লিখতেন। আল্লাহ যতটুকু চাইতেন তিনি ইঞ্জিল হতে ততটুকু হিব্রু ভাষায় লিখতেন। তিনি সেসময় খুব বৃদ্ধ হওয়ায় অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। খাদীজা (রাঃ) তাঁকে বললেন, হে চাচাত ভাই! আপনি আপনার ভাতিজার কথা শুনুন। তখন ওয়ারাকা ইবনে নাওফেল রাসূল ﷺ কে লক্ষ্য করে বললেন, হে ভাতিজা! তুমি কী দেখেছ? তখন রাসূল ﷺ তাঁকে সব কাহিনী খুলে বললেন। কাহিনী শুনার পর ওয়ারাকা ইবনে নাওফেল রাসূল ﷺ কে বললেন, ইনি তো সেই জিবরাঈল, যাকে আল্লাহ মূসা (আঃ) এর নিকট পাঠিয়েছিলেন। আফসোস! (তোমার নবুওয়াতের প্রচারকালে) যদি আমি ক্ষমতাশালী যুবক হতাম, আর যদি আমি সেদিন জীবিত থাকতাম, যেদিন তোমার জাতি তোমাকে দেশান্তরিত করে ছাড়বে! এ কথা শুনে রাসূল ﷺ আশ্চর্যান্বিত হয়ে বললেন, আমার দেশবাসী কি আমাকে বিতাড়িত করবে? উত্তরে তিনি বললেন, হ্যাঁ! তুমি সত্য দ্বীন নিয়ে প্রেরিত হয়েছ। তোমার ন্যায় যাঁরা পূর্বে এরূপ সত্য দ্বীন নিয়ে এসেছিলেন, তাঁদের সকলের সাথেই শত্রুতা করা হয়েছে। (আমি তোমাকে কথা দিলাম) যদি আমি সেদিন জীবিত থাকি, তাহলে অবশ্যই প্রবলভাবে তোমাকে সাহায্য করব। এ কাহিনীর অল্পদিন পরই ওয়ারাকা ইন্তেকাল করেন। এরপর (কিছু দিন) ওহী নাযিল হওয়া বন্ধ ছিল। (সহীহ বুখারী, হা/৩)
কিছু দিন পর আবার ধারাবাহিকভাবে কুরআন নাযিল শুরু হয় :
وَالضُّحٰى ‐ - وَاللَّيْلِ اِذَا سَجٰى ‐ - مَا وَدَّعَكَ رَبُّكَ وَمَا قَلٰى
কসম পূর্বাহ্নের এবং রাতের, যখন তা নিঝুম হয়। আপনার প্রতিপালক আপনাকে পরিত্যাগ করেননি এবং আপনার প্রতি বিরূপও হননি। (সূরা যোহা, ১-৩)
kv‡b byh~j : জুনদুব ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার সাময়িকভাবে জিবরাঈল (আঃ) নবী ﷺ এর কাছে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থাকেন। এতে জনৈকা কুরাইশ মহিলা বলল, তার শয়তানটি তাঁর কাছে আসতে বিলম্ব করছে। তখন সূরা যোহা নাযিল হয়। (সহীহ বুখারী, হা/১১২৫)
يَاۤ اَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ – قُمْ فَاَنْذِرْ – وَرَبَّكَ فَكَبِّرْ – وَثِيَابَكَ فَطَهِّرْ – وَالرُّجْزَ فَاهْجُرْ
‘‘হে বস্ত্রাচ্ছাদিত! উঠুন, আপনি লোকদেরকে সতর্ক করুন। আপনার প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন, আপনার পোষাক পবিত্র করুন এবং অপবিত্রতা দূর করুন।’’ (সূরা মুদ্দাস্সির, ১-৫)।
শানে নুযূল : জাবির ইবনে আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) ওহী বন্ধ থাকাকালীন অবস্থা প্রসঙ্গে বর্ণনা করেন, রাসূল ﷺ বলেন, ‘‘একদিন আমি পথ চলার সময় আকাশের দিক থেকে বিকট আওয়াজ শুনতে পেয়ে উপর দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলাম, যে ফেরেশতা হেরা গুহায় আমার নিকট এসেছিলেন সেই ফেরেশতা আসমান ও জমিনের মাঝখানে একটি চেয়ারে বসে আছেন। তাঁর এ অবস্থা দেখে আমি খুবই ভয় পেলাম। অতঃপর আমি ভয়ার্ত অবস্থায় বাড়ি ফিরে এসে বললাম, তোমরা আমাকে চাদর দ্বারা আবৃত করো, আমাকে চাদর দ্বারা আবৃত করো। তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতগুলো নাযিল করেন। এরপর থেকে পুরোদমে পর পর ওহী নাযিল হতে লাগল। (সহীহ বুখারী, হা/৪)
কুরআন নাযিল হয়েছে আরবি ভাষায় :
وَهٰذَا كِتَابٌ مُّصَدِّقٌ لِّسَانًا عَرَبِيًّا
এ কিতাব (পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের) সত্যতা প্রকাশকারী। এটা আরবি ভাষায় অবতীর্ণ করা হয়েছে। (সূরা আহকাফ- ১২)
وَكَذٰلِكَ اَنْزَلْنَاهُ حُكْمًا عَرَبِيًّا
এভাবেই আমি একে বিধানরূপে আরবি ভাষায় অবতীর্ণ করেছি। (সূরা রা‘দ- ৩৭)
اِقْرَاْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِيْ خَلَقَ - – خَلَقَ الْاِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍ – - اِقْرَاْ وَرَبُّكَ الْاَكْرَمُ – - اَلَّذِيْ عَلَّمَ بِالْقَلَمِ – - عَلَّمَ الْاِنْسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ
পড়ুন, আপনার পালনকর্তার নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ঝুলন্ত রক্তপিন্ড হতে। পড়ুন, আপনার পালনকর্তা অতি সম্মানিত। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে, যা সে জানত না। (সূরা আলাক্ব, ১-৫)
ব্যাখ্যা : সর্বপ্রথম কুরআন নাযিলের ঘটনা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে : আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট ওহী আগমনের সূচনা হয় ঘুমের মধ্যে সত্য স্বপ্নরূপে। স্বপ্নে তিনি যা দেখতেন তা-ই প্রভাতের আলোর ন্যায় বাস্তবে প্রতিফলিত হতো। এ অবস্থায় কিছুকাল চলার পর নিজ থেকেই তাঁর অন্তরে নির্জনে থাকার প্রেরণা জাগ্রত হয়। ফলে তিনি (মক্কা নগরী হতে তিন মাইল দূরে) হেরা গুহায় নির্জনে (ইবাদাতের উদ্দেশ্যে) অবস্থান করতে লাগলেন। তিনি তাঁর পরিবারের নিকট না গিয়ে সেথায় কয়েক রাত পর্যন্ত ইবাদাতে মগ্ন থাকতেন। এজন্য তিনি সঙ্গে কিছু খাবার নিয়ে আসতেন। তারপর খাদীজা (রাঃ) এর নিকট ফিরে যেতেন। পুনরায় কিছু খাবার নিয়ে (একাধারে ইবাদাতে রত হওয়ার জন্য) হেরা গুহায় চলে যেতেন। এমনিভাবে হেরা গুহায় থাকাকালীন হঠাৎ তাঁর নিকট হক্ব (ওহী) এলো। অর্থাৎ ফেরেশতা জিবরাঈল (আঃ) আসলেন। অতঃপর বললেন, اِقْرَاْ (ইক্বরা) (হে নবী) ‘‘আপনি পড়ুন।’’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘‘আমি তো পড়তে জানি না।’’ রাসূল ﷺ বলেন, (এ কথা শুনে জিবরাঈল) আমাকে ধরে এমন জোরে চাপ দিলেন, যাতে আমার খুব কষ্ট অনুভব হলো। তারপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, ‘আপনি পড়ুন!’ জবাবে আমি বললাম, আমি তো পড়তে জানি না। এটা শুনে আবার (তিনি) আমাকে ধরে এমন জোরে চাপ দিলেন, এতে আমার আরো বেশি কষ্ট অনুভব হতে লাগল। তারপর আমাকে ছেড়ে দিয়ে পুনরায় বললেন, ‘‘আপনি পড়ুন’’। জবাবে আমি আগের ন্যায় বললাম, ‘‘আমি তো পড়তে জানি না।’’ এটা শুনে জিবরাঈল (আঃ) তৃতীয় বার আমাকে জোরে চাপ দিলেন, তারপর ছেড়ে দিয়ে সূরা আলাক্ব এর প্রথম পাঁচটি আয়াত পাঠ করতে বললেন। তারপর রাসূল ﷺ উক্ত আয়াতসমূহ নিয়ে বাড়ি ফিরলেন। তখন ভয়ে তাঁর অন্তর কাঁপতেছিল। তিনি তাঁর স্ত্রী খাদীজা বিনতে খুয়াইলিদ (রাঃ) এর কাছে এসে বললেন, আমাকে চাদর জড়িয়ে দাও! আমাকে চাদর জড়িয়ে দাও। অতঃপর খাদীজা (রাঃ) তাঁকে চাদর জড়িয়ে দিলেন। কিছুক্ষণ পর তাঁর থেকে ভয় কেটে গেলে তিনি স্ত্রী খাদীজাকে সব ঘটনা খুলে বললেন। অতঃপর বললেন, আমি আমার জীবন নিয়ে ভয় করছি। তখন খাদীজা (রাঃ) রাসূল ﷺ কে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, আল্লাহর কসম! মহান আল্লাহ আপনাকে কখনো চিন্তায় ফেলবেন না। কেননা আপনি আত্মীয়স্বজনের সাথে ভালো ব্যবহার করেন। ইয়াতীম, বিধবা, অন্ধ ও অক্ষমদের খাওয়া-পরা ও থাকার ব্যবস্থা করেন। বেকারদের কর্মসংস্থান করেন। মেহমানের সমাদর করেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে দুর্দশাগ্রস্ত জনগণকে সাহায্য করেন। (অতএব এ অবস্থায় আপনার ভয়ের কোন কারণ নেই)।
এরূপ সান্ত্বনা দেয়ার পর খাদীজা (রাঃ) রাসূল ﷺ কে সাথে নিয়ে স্বীয় চাচাত ভাই ওয়ারাকা ইবনে নাওফেল এর নিকট গেলেন। যিনি জাহেলী যুগে ঈসায়ী ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি হিব্রু ভাষায় কিতাব লিখতেন। আল্লাহ যতটুকু চাইতেন তিনি ইঞ্জিল হতে ততটুকু হিব্রু ভাষায় লিখতেন। তিনি সেসময় খুব বৃদ্ধ হওয়ায় অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। খাদীজা (রাঃ) তাঁকে বললেন, হে চাচাত ভাই! আপনি আপনার ভাতিজার কথা শুনুন। তখন ওয়ারাকা ইবনে নাওফেল রাসূল ﷺ কে লক্ষ্য করে বললেন, হে ভাতিজা! তুমি কী দেখেছ? তখন রাসূল ﷺ তাঁকে সব কাহিনী খুলে বললেন। কাহিনী শুনার পর ওয়ারাকা ইবনে নাওফেল রাসূল ﷺ কে বললেন, ইনি তো সেই জিবরাঈল, যাকে আল্লাহ মূসা (আঃ) এর নিকট পাঠিয়েছিলেন। আফসোস! (তোমার নবুওয়াতের প্রচারকালে) যদি আমি ক্ষমতাশালী যুবক হতাম, আর যদি আমি সেদিন জীবিত থাকতাম, যেদিন তোমার জাতি তোমাকে দেশান্তরিত করে ছাড়বে! এ কথা শুনে রাসূল ﷺ আশ্চর্যান্বিত হয়ে বললেন, আমার দেশবাসী কি আমাকে বিতাড়িত করবে? উত্তরে তিনি বললেন, হ্যাঁ! তুমি সত্য দ্বীন নিয়ে প্রেরিত হয়েছ। তোমার ন্যায় যাঁরা পূর্বে এরূপ সত্য দ্বীন নিয়ে এসেছিলেন, তাঁদের সকলের সাথেই শত্রুতা করা হয়েছে। (আমি তোমাকে কথা দিলাম) যদি আমি সেদিন জীবিত থাকি, তাহলে অবশ্যই প্রবলভাবে তোমাকে সাহায্য করব। এ কাহিনীর অল্পদিন পরই ওয়ারাকা ইন্তেকাল করেন। এরপর (কিছু দিন) ওহী নাযিল হওয়া বন্ধ ছিল। (সহীহ বুখারী, হা/৩)
কিছু দিন পর আবার ধারাবাহিকভাবে কুরআন নাযিল শুরু হয় :
وَالضُّحٰى ‐ - وَاللَّيْلِ اِذَا سَجٰى ‐ - مَا وَدَّعَكَ رَبُّكَ وَمَا قَلٰى
কসম পূর্বাহ্নের এবং রাতের, যখন তা নিঝুম হয়। আপনার প্রতিপালক আপনাকে পরিত্যাগ করেননি এবং আপনার প্রতি বিরূপও হননি। (সূরা যোহা, ১-৩)
kv‡b byh~j : জুনদুব ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার সাময়িকভাবে জিবরাঈল (আঃ) নবী ﷺ এর কাছে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থাকেন। এতে জনৈকা কুরাইশ মহিলা বলল, তার শয়তানটি তাঁর কাছে আসতে বিলম্ব করছে। তখন সূরা যোহা নাযিল হয়। (সহীহ বুখারী, হা/১১২৫)
يَاۤ اَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ – قُمْ فَاَنْذِرْ – وَرَبَّكَ فَكَبِّرْ – وَثِيَابَكَ فَطَهِّرْ – وَالرُّجْزَ فَاهْجُرْ
‘‘হে বস্ত্রাচ্ছাদিত! উঠুন, আপনি লোকদেরকে সতর্ক করুন। আপনার প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন, আপনার পোষাক পবিত্র করুন এবং অপবিত্রতা দূর করুন।’’ (সূরা মুদ্দাস্সির, ১-৫)।
শানে নুযূল : জাবির ইবনে আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) ওহী বন্ধ থাকাকালীন অবস্থা প্রসঙ্গে বর্ণনা করেন, রাসূল ﷺ বলেন, ‘‘একদিন আমি পথ চলার সময় আকাশের দিক থেকে বিকট আওয়াজ শুনতে পেয়ে উপর দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলাম, যে ফেরেশতা হেরা গুহায় আমার নিকট এসেছিলেন সেই ফেরেশতা আসমান ও জমিনের মাঝখানে একটি চেয়ারে বসে আছেন। তাঁর এ অবস্থা দেখে আমি খুবই ভয় পেলাম। অতঃপর আমি ভয়ার্ত অবস্থায় বাড়ি ফিরে এসে বললাম, তোমরা আমাকে চাদর দ্বারা আবৃত করো, আমাকে চাদর দ্বারা আবৃত করো। তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতগুলো নাযিল করেন। এরপর থেকে পুরোদমে পর পর ওহী নাযিল হতে লাগল। (সহীহ বুখারী, হা/৪)
কুরআন নাযিল হয়েছে আরবি ভাষায় :
وَهٰذَا كِتَابٌ مُّصَدِّقٌ لِّسَانًا عَرَبِيًّا
এ কিতাব (পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের) সত্যতা প্রকাশকারী। এটা আরবি ভাষায় অবতীর্ণ করা হয়েছে। (সূরা আহকাফ- ১২)
وَكَذٰلِكَ اَنْزَلْنَاهُ حُكْمًا عَرَبِيًّا
এভাবেই আমি একে বিধানরূপে আরবি ভাষায় অবতীর্ণ করেছি। (সূরা রা‘দ- ৩৭)
প্রত্যেক নবীকে তাঁর জাতির ভাষায় পাঠানো হয় :
وَمَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ رَّسُولٍ اِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهٖ لِيُبَيِّنَ لَهُمْؕ فَيُضِلُّ اللهُ مَنْ يَّشَآءُ وَيَهْدِيْ مَنْ يَّشَآءُؕ وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
আমি প্রত্যেক রাসূলকেই তার স্বজাতির ভাষায় পাঠিয়েছি। তাদের নিকট পরিষ্কারভাবে এ ব্যাখ্যা দান করার জন্য যে, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিভ্রামত্ম করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন এবং তিনি মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা ইবরাহীম- ৪)
ব্যাখ্যা : আরবি ভাষায় কুরআন নাযিল করার অর্থ এ নয় যে, এটা শুধু আরবরাই বুঝবে। অন্যরা বুঝতে পারবে না। মানবজাতির ব্যাপক ও সার্বজনীন হেদায়াতের জন্য যাই পেশ করা হবে তা অবশ্যই মানবসমাজে প্রচলিত ভাষাগুলোর যে কোন একটিতেই পেশ করা হবে। অতঃপর এর হেদায়াত পেশকারী এটিকে যে জাতির ভাষায় নাযিল করছেন প্রথমে সে জাতিকে এর শিক্ষা দ্বারা পুরোপুরি প্রভাবিত করার চেষ্টা করবেন। তারপর এ জাতিই অন্যান্য জাতির কাছে এর শিক্ষা পৌঁছানোর মাধ্যম হিসেবে পরিণত হবে। কোন দাওয়াতকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সম্প্রসারিত করার জন্য এটি একটি বাস্তব ও স্বাভাবিক পদ্ধতি।
মুহাম্মাদ ﷺ ও তাঁর জাতির ভাষা ছিল আরবি :
فَاِنَّمَا يَسَّرْنَاهُ بِلِسَانِكَ لِتُبَشِّرَ بِهِ الْمُتَّقِيْنَ وَتُنْذِرَ بِهٖ قَوْمًا لُّدًّا
আমি কুরআনকে তোমার ভাষায় সহজ করে দিয়েছি, যাতে তুমি এর দ্বারা মুত্তাক্বীদেরকে সুসংবাদ দিতে পার এবং ঝগড়াটে সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে পার। (সূরা মারইয়াম- ৯৭)
বুঝার সুবিধার্থে আরবি ভাষায় অবতীর্ণ করা হয়েছে :
اِنَّا جَعَلْنَاهُ قُرْاٰنًا عَرَبِيًّا لَّعَلَّكُمْ تَعْقِلُوْنَ
আমি এটা আরবি ভাষায় কুরআনরূপে (অবতীর্ণ) করেছি, যাতে তোমরা বুঝতে পার। (সূরা যুখরুফ- ৩)
মানুষ যাতে উপদেশ গ্রহণ করতে পারে :
وَكَذٰلِكَ اَنْزَلْنَاهُ قُرْاٰنًا عَرَبِيًّا وَّصَرَّفْنَا فِيْهِ مِنَ الْوَعِيْدِ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُوْنَ اَوْ يُحْدِثُ لَهُمْ ذِكْرًا
এভাবেই আমি কুরআনকে আরবি ভাষায় অবতীর্ণ করেছি এবং তাতে বিশদভাবে বিবৃত করে দিয়েছি সতর্কবাণী, যাতে তারা ভয় করে অথবা তাদের জন্য এটা উপদেশবাণীতে পরিণত হয়। (সূরা ত্বা-হা- ১১৩)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ এরা নিজেদের গাফলতি থেকে সজাগ হবে, ভুলে যাওয়া শিক্ষাকে স্মরণ করবে এবং পথ ভুলে কোন পথে যাচ্ছে আর এর পরিণাম কী হবে- সে সম্পর্কে অনুভূতি জাগবে।
বিরোধীরা যাতে কোন অভিযোগ তুলতে না পারে :
وَلَوْ جَعَلْنَاهُ قُرْاٰنًا اَعْجَمِيًّا لَّقَالُوْا لَوْلَا فُصِّلَتْ اٰيَاتُهٗؕ اَ اَعْجَمِيٌّ وَّعَرَبِيٌّ ؕ قُلْ هُوَ لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا هُدًى وَّشِفَآءٌ
আমি যদি কুরআন অনারবি ভাষায় অবতীর্ণ করতাম তবে তারা অবশ্যই বলত, এর আয়াতগুলো কেন বিশদভাবে বর্ণনা করা হলো না? কী আশ্চর্য যে, এর ভাষা অনারবি অথচ রাসূল আরবি। বলো, মুমিনদের জন্য এটা পথপ্রদর্শক ও ব্যাধির প্রতিকার। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৪৪)
وَمَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ رَّسُولٍ اِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهٖ لِيُبَيِّنَ لَهُمْؕ فَيُضِلُّ اللهُ مَنْ يَّشَآءُ وَيَهْدِيْ مَنْ يَّشَآءُؕ وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
আমি প্রত্যেক রাসূলকেই তার স্বজাতির ভাষায় পাঠিয়েছি। তাদের নিকট পরিষ্কারভাবে এ ব্যাখ্যা দান করার জন্য যে, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিভ্রামত্ম করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন এবং তিনি মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা ইবরাহীম- ৪)
ব্যাখ্যা : আরবি ভাষায় কুরআন নাযিল করার অর্থ এ নয় যে, এটা শুধু আরবরাই বুঝবে। অন্যরা বুঝতে পারবে না। মানবজাতির ব্যাপক ও সার্বজনীন হেদায়াতের জন্য যাই পেশ করা হবে তা অবশ্যই মানবসমাজে প্রচলিত ভাষাগুলোর যে কোন একটিতেই পেশ করা হবে। অতঃপর এর হেদায়াত পেশকারী এটিকে যে জাতির ভাষায় নাযিল করছেন প্রথমে সে জাতিকে এর শিক্ষা দ্বারা পুরোপুরি প্রভাবিত করার চেষ্টা করবেন। তারপর এ জাতিই অন্যান্য জাতির কাছে এর শিক্ষা পৌঁছানোর মাধ্যম হিসেবে পরিণত হবে। কোন দাওয়াতকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সম্প্রসারিত করার জন্য এটি একটি বাস্তব ও স্বাভাবিক পদ্ধতি।
মুহাম্মাদ ﷺ ও তাঁর জাতির ভাষা ছিল আরবি :
فَاِنَّمَا يَسَّرْنَاهُ بِلِسَانِكَ لِتُبَشِّرَ بِهِ الْمُتَّقِيْنَ وَتُنْذِرَ بِهٖ قَوْمًا لُّدًّا
আমি কুরআনকে তোমার ভাষায় সহজ করে দিয়েছি, যাতে তুমি এর দ্বারা মুত্তাক্বীদেরকে সুসংবাদ দিতে পার এবং ঝগড়াটে সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে পার। (সূরা মারইয়াম- ৯৭)
বুঝার সুবিধার্থে আরবি ভাষায় অবতীর্ণ করা হয়েছে :
اِنَّا جَعَلْنَاهُ قُرْاٰنًا عَرَبِيًّا لَّعَلَّكُمْ تَعْقِلُوْنَ
আমি এটা আরবি ভাষায় কুরআনরূপে (অবতীর্ণ) করেছি, যাতে তোমরা বুঝতে পার। (সূরা যুখরুফ- ৩)
মানুষ যাতে উপদেশ গ্রহণ করতে পারে :
وَكَذٰلِكَ اَنْزَلْنَاهُ قُرْاٰنًا عَرَبِيًّا وَّصَرَّفْنَا فِيْهِ مِنَ الْوَعِيْدِ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُوْنَ اَوْ يُحْدِثُ لَهُمْ ذِكْرًا
এভাবেই আমি কুরআনকে আরবি ভাষায় অবতীর্ণ করেছি এবং তাতে বিশদভাবে বিবৃত করে দিয়েছি সতর্কবাণী, যাতে তারা ভয় করে অথবা তাদের জন্য এটা উপদেশবাণীতে পরিণত হয়। (সূরা ত্বা-হা- ১১৩)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ এরা নিজেদের গাফলতি থেকে সজাগ হবে, ভুলে যাওয়া শিক্ষাকে স্মরণ করবে এবং পথ ভুলে কোন পথে যাচ্ছে আর এর পরিণাম কী হবে- সে সম্পর্কে অনুভূতি জাগবে।
বিরোধীরা যাতে কোন অভিযোগ তুলতে না পারে :
وَلَوْ جَعَلْنَاهُ قُرْاٰنًا اَعْجَمِيًّا لَّقَالُوْا لَوْلَا فُصِّلَتْ اٰيَاتُهٗؕ اَ اَعْجَمِيٌّ وَّعَرَبِيٌّ ؕ قُلْ هُوَ لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا هُدًى وَّشِفَآءٌ
আমি যদি কুরআন অনারবি ভাষায় অবতীর্ণ করতাম তবে তারা অবশ্যই বলত, এর আয়াতগুলো কেন বিশদভাবে বর্ণনা করা হলো না? কী আশ্চর্য যে, এর ভাষা অনারবি অথচ রাসূল আরবি। বলো, মুমিনদের জন্য এটা পথপ্রদর্শক ও ব্যাধির প্রতিকার। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৪৪)
কুরআনের মধ্যে পরিবর্তন করার ক্ষমতা কারো নেই :
وَاتْلُ مَاۤ اُوْحِيَ اِلَيْكَ مِنْ كِتَابِ رَبِّكَؕ لَا مُبَدِّلَ لِكَلِمَاتِهٖ وَلَنْ تَجِدَ مِنْ دُوْنِهٖ مُلْتَحَدًا
তোমার প্রতিপালকের কিতাব থেকে যা তোমার প্রতি ওহী করা হয়েছে তা পাঠ করে শুনাও। তাঁর বাক্য পরিবর্তন করার ক্ষমতা কারো নেই। আর তুমি কখনই তাঁকে ব্যতীত অন্য কোন আশ্রয় খুঁজে পাবে না। (সূরা কাহফ- ২৭)
নবী ﷺ কুরআনের মধ্যে কোন পরিবর্তন করেননি :
قُلْ مَا يَكُوْنُ لِۤيْ اَنْ اُبَدِّلَهٗ مِنْ تِلْقَآءِ نَفْسِيْۚ اِنْ اَتَّبِعُ اِلَّا مَا يُوْحٰۤى اِلَيَّ اِنِّۤيْ اَخَافُ اِنْ عَصَيْتُ رَبِّيْ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيْمٍ
(হে নবী) আপনি বলুন, ‘নিজ হতে এটা বদলানো আমার কাজ নয়। আমি কেবল তারই অনুসরণ করি যা আমার প্রতি ওহী করা হয়। আমি আমার প্রতিপালকের অবাধ্যতা করলে অবশ্যই আমি মহাদিবসের শাস্তির আশঙ্কা করি। (সূরা ইউনুস- ১৫)
যা ওহী করা হতো তিনি ঠিক তা-ই প্রচার করতেন :
وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوٰى – - اِنْ هُوَ اِلَّا وَحْيٌ يُّوْحٰى
তিনি প্রবৃত্তি হতে কথা বলেন না। এটা তো এক ওহী, যা তাঁর প্রতি প্রত্যাদেশ করা হয়। (সূরা নাজম- ৩, ৪)
নবী ﷺ পরিবর্তন করলে আল্লাহ তাকেও শাস্তি দিতেন :
وَلَوْ تَقَوَّلَ عَلَيْنَا بَعْضَ الْاَقَاوِيْلِ – - لَاَخَذْنَا مِنْهُ بِالْيَمِيْنِ – - ثُمَّ لَقَطَعْنَا مِنْهُ الْوَتِيْنَ
যদি রাসূল নিজে কোন কথা বানিয়ে আমার কথা বলে চালিয়ে দিতেন, তবে অবশ্যই আমি তাঁর ডান হাত ধরে ফেলতাম অতঃপর তাঁর শাহরগ (শ্বাসনালী) কেটে দিতাম। (সূরা হাক্কাহ, ৪৪-৪৬)
কুরআনের সাথে বাতিলের সংমিশ্রণ সম্ভব নয় :
وَاِنَّهٗ لَكِتَابٌ عَزِيْزٌ – - لَا يَاْتِيْهِ الْبَاطِلُ مِنْ ۢبَيْنِ يَدَيْهِ وَلَا مِنْ خَلْفِهٖؕ تَنْزِيْلٌ مِّنْ حَكِيْمٍ حَمِيْدٍ
এটা অবশ্যই এক মহিমাময় গ্রন্থ। এর মধ্যে অগ্র ও পশ্চাৎ কোন দিক হতে মিথ্যা প্রবেশ করবে না। এটা প্রজ্ঞাবান ও প্রশংসিত আল্লাহর নিকট হতে অবতীর্ণ। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৪১, ৪২)
ব্যাখ্যা : বাতিলের অনুসারীরা এর বিরুদ্ধে যেসব চক্রান্ত করছে তার দ্বারা একে পরাভূত করা সম্ভব নয়। কেননা এর মধ্যে আছে সততার শক্তি, সত্য জ্ঞানের শক্তি, যুক্তি-প্রমাণের শক্তি, প্রেরণাকারী আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্বের শক্তি এবং উপস্থাপনকারী রাসূলের ব্যক্তিত্বের শক্তি। কেউ যদি মিথ্যা প্রচারের হাতিয়ার দিয়ে একে ব্যর্থ করে দিতে চায়, তাহলে তা সম্ভব হবে না। সামনের দিক থেকে বাতিল না আসতে পারার অর্থ হচ্ছে, কেউ যদি কুরআনের উপর সরাসরি আক্রমণ করে তার কোন কথা ভুল বা বাতিল প্রমাণ করতে চায়, তাহলে সে সফলকাম হতে পারবে না। আর পেছন দিক থেকে না আসতে পারার অর্থ হচ্ছে, কখনো এমন কোন সত্য প্রকাশ পাবে না, যা কুরআনে পেশকৃত সত্যের পরিপন্থী। এমন কোন জ্ঞান-বিজ্ঞান উদ্ভাবিত হতে পারে না, যা কুরআনে বর্ণিত জ্ঞান-বিজ্ঞানকে অস্বীকার করে। যে জিনিসকে এ গ্রন্থ ন্যায় ও সত্য বলে ঘোষণা করেছে তা কখনো বাতিল প্রমাণিত হবে না। আবার এর অর্থ এও হতে পারে যে, বাতিল সম্মুখ দিক থেকে এসে হামলা করুক বা প্রতারণামূলক পথে এসে আকস্মিকভাবে হামলা করুক, কুরআন যে দাওয়াত পেশ করছে, তাকে সে কোনভাবেই পরাজিত করতে পারবে না। বিরোধীদের সবরকম গোপন ও প্রকাশ্য চক্রান্ত থাকা সত্ত্বেও এর দাওয়াত প্রসার লাভ করবে এবং কেউ একে ব্যর্থ করতে পারবে না।
কুরআনের হেফাজতকারী স্বয়ং আল্লাহ :
اِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَاِنَّا لَهٗ لَحَافِظُوْنَ
আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই এর সংরক্ষক। (সূরা হিজর- ৯)
ব্যাখ্যা : পারিভাষিক অর্থে ‘যিকির’ বা বাণী শব্দটি কুরআন মাজীদে আল্লাহর বাণীর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। আর এ বাণী হচ্ছে উপদেশমালায় পরিপূর্ণ। পূর্ববর্তী নবীদের উপর যতগুলো কিতাব নাযিল হয়েছিল সেগুলো সবই ‘যিকির’ ছিল এবং এ কুরআন মাজীদও যিকির। যিকিরের অর্থ হচ্ছে- স্মরণ করিয়ে দেয়া, সতর্ক করা এবং উপদেশ দেয়া। আল্লাহ কুরআনের বিরোধীদেরকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, তোমরা এ বাণীর কোন ক্ষতি করতে পারবে- তা মনে করো না। কেননা এটি সরাসরি আমার হেফাজতে রয়েছে। ফলে তোমাদের চেষ্টায় একে বিলুপ্ত করা যাবে না। তোমরা একে ধামাচাপা দিতে চাইলেও দিতে পারবে না। তোমাদের আপত্তির ফলে এর মর্যাদাও কমে যাবে না। তোমরা ঠেকাতে চাইলেও এর দাওয়াতকে ঠেকাতে পারবে না। একে বিকৃত করা বা এর মধ্যে পরিবর্তন সাধন করার সুযোগও তোমরা কোন দিন পাবে না।
وَاتْلُ مَاۤ اُوْحِيَ اِلَيْكَ مِنْ كِتَابِ رَبِّكَؕ لَا مُبَدِّلَ لِكَلِمَاتِهٖ وَلَنْ تَجِدَ مِنْ دُوْنِهٖ مُلْتَحَدًا
তোমার প্রতিপালকের কিতাব থেকে যা তোমার প্রতি ওহী করা হয়েছে তা পাঠ করে শুনাও। তাঁর বাক্য পরিবর্তন করার ক্ষমতা কারো নেই। আর তুমি কখনই তাঁকে ব্যতীত অন্য কোন আশ্রয় খুঁজে পাবে না। (সূরা কাহফ- ২৭)
নবী ﷺ কুরআনের মধ্যে কোন পরিবর্তন করেননি :
قُلْ مَا يَكُوْنُ لِۤيْ اَنْ اُبَدِّلَهٗ مِنْ تِلْقَآءِ نَفْسِيْۚ اِنْ اَتَّبِعُ اِلَّا مَا يُوْحٰۤى اِلَيَّ اِنِّۤيْ اَخَافُ اِنْ عَصَيْتُ رَبِّيْ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيْمٍ
(হে নবী) আপনি বলুন, ‘নিজ হতে এটা বদলানো আমার কাজ নয়। আমি কেবল তারই অনুসরণ করি যা আমার প্রতি ওহী করা হয়। আমি আমার প্রতিপালকের অবাধ্যতা করলে অবশ্যই আমি মহাদিবসের শাস্তির আশঙ্কা করি। (সূরা ইউনুস- ১৫)
যা ওহী করা হতো তিনি ঠিক তা-ই প্রচার করতেন :
وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوٰى – - اِنْ هُوَ اِلَّا وَحْيٌ يُّوْحٰى
তিনি প্রবৃত্তি হতে কথা বলেন না। এটা তো এক ওহী, যা তাঁর প্রতি প্রত্যাদেশ করা হয়। (সূরা নাজম- ৩, ৪)
নবী ﷺ পরিবর্তন করলে আল্লাহ তাকেও শাস্তি দিতেন :
وَلَوْ تَقَوَّلَ عَلَيْنَا بَعْضَ الْاَقَاوِيْلِ – - لَاَخَذْنَا مِنْهُ بِالْيَمِيْنِ – - ثُمَّ لَقَطَعْنَا مِنْهُ الْوَتِيْنَ
যদি রাসূল নিজে কোন কথা বানিয়ে আমার কথা বলে চালিয়ে দিতেন, তবে অবশ্যই আমি তাঁর ডান হাত ধরে ফেলতাম অতঃপর তাঁর শাহরগ (শ্বাসনালী) কেটে দিতাম। (সূরা হাক্কাহ, ৪৪-৪৬)
কুরআনের সাথে বাতিলের সংমিশ্রণ সম্ভব নয় :
وَاِنَّهٗ لَكِتَابٌ عَزِيْزٌ – - لَا يَاْتِيْهِ الْبَاطِلُ مِنْ ۢبَيْنِ يَدَيْهِ وَلَا مِنْ خَلْفِهٖؕ تَنْزِيْلٌ مِّنْ حَكِيْمٍ حَمِيْدٍ
এটা অবশ্যই এক মহিমাময় গ্রন্থ। এর মধ্যে অগ্র ও পশ্চাৎ কোন দিক হতে মিথ্যা প্রবেশ করবে না। এটা প্রজ্ঞাবান ও প্রশংসিত আল্লাহর নিকট হতে অবতীর্ণ। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৪১, ৪২)
ব্যাখ্যা : বাতিলের অনুসারীরা এর বিরুদ্ধে যেসব চক্রান্ত করছে তার দ্বারা একে পরাভূত করা সম্ভব নয়। কেননা এর মধ্যে আছে সততার শক্তি, সত্য জ্ঞানের শক্তি, যুক্তি-প্রমাণের শক্তি, প্রেরণাকারী আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্বের শক্তি এবং উপস্থাপনকারী রাসূলের ব্যক্তিত্বের শক্তি। কেউ যদি মিথ্যা প্রচারের হাতিয়ার দিয়ে একে ব্যর্থ করে দিতে চায়, তাহলে তা সম্ভব হবে না। সামনের দিক থেকে বাতিল না আসতে পারার অর্থ হচ্ছে, কেউ যদি কুরআনের উপর সরাসরি আক্রমণ করে তার কোন কথা ভুল বা বাতিল প্রমাণ করতে চায়, তাহলে সে সফলকাম হতে পারবে না। আর পেছন দিক থেকে না আসতে পারার অর্থ হচ্ছে, কখনো এমন কোন সত্য প্রকাশ পাবে না, যা কুরআনে পেশকৃত সত্যের পরিপন্থী। এমন কোন জ্ঞান-বিজ্ঞান উদ্ভাবিত হতে পারে না, যা কুরআনে বর্ণিত জ্ঞান-বিজ্ঞানকে অস্বীকার করে। যে জিনিসকে এ গ্রন্থ ন্যায় ও সত্য বলে ঘোষণা করেছে তা কখনো বাতিল প্রমাণিত হবে না। আবার এর অর্থ এও হতে পারে যে, বাতিল সম্মুখ দিক থেকে এসে হামলা করুক বা প্রতারণামূলক পথে এসে আকস্মিকভাবে হামলা করুক, কুরআন যে দাওয়াত পেশ করছে, তাকে সে কোনভাবেই পরাজিত করতে পারবে না। বিরোধীদের সবরকম গোপন ও প্রকাশ্য চক্রান্ত থাকা সত্ত্বেও এর দাওয়াত প্রসার লাভ করবে এবং কেউ একে ব্যর্থ করতে পারবে না।
কুরআনের হেফাজতকারী স্বয়ং আল্লাহ :
اِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَاِنَّا لَهٗ لَحَافِظُوْنَ
আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই এর সংরক্ষক। (সূরা হিজর- ৯)
ব্যাখ্যা : পারিভাষিক অর্থে ‘যিকির’ বা বাণী শব্দটি কুরআন মাজীদে আল্লাহর বাণীর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। আর এ বাণী হচ্ছে উপদেশমালায় পরিপূর্ণ। পূর্ববর্তী নবীদের উপর যতগুলো কিতাব নাযিল হয়েছিল সেগুলো সবই ‘যিকির’ ছিল এবং এ কুরআন মাজীদও যিকির। যিকিরের অর্থ হচ্ছে- স্মরণ করিয়ে দেয়া, সতর্ক করা এবং উপদেশ দেয়া। আল্লাহ কুরআনের বিরোধীদেরকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, তোমরা এ বাণীর কোন ক্ষতি করতে পারবে- তা মনে করো না। কেননা এটি সরাসরি আমার হেফাজতে রয়েছে। ফলে তোমাদের চেষ্টায় একে বিলুপ্ত করা যাবে না। তোমরা একে ধামাচাপা দিতে চাইলেও দিতে পারবে না। তোমাদের আপত্তির ফলে এর মর্যাদাও কমে যাবে না। তোমরা ঠেকাতে চাইলেও এর দাওয়াতকে ঠেকাতে পারবে না। একে বিকৃত করা বা এর মধ্যে পরিবর্তন সাধন করার সুযোগও তোমরা কোন দিন পাবে না।
মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসার জন্য :
كِتَابٌ اَنْزَلْنَاهُ اِلَيْكَ لِتُخْرِجَ النَّاسَ مِنَ الظُّلُمَاتِ اِلَى النُّوْرِ بِاِذْنِ رَبِّهِمْ اِلٰى صِرَاطِ الْعَزِيْزِ الْحَمِيْدِ
এ কিতাব তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি যেন তুমি মানবজাতিকে তাদের প্রতিপালকের নির্দেশক্রমে অন্ধকার হতে আলোর দিকে বের করে আনতে পার; মহাপরাক্রমশালী ও প্রশংসিত আল্লাহর পথে। (সূরা ইবরাহীম- ১)
هُوَ الَّذِيْ يُنَزِّلُ عَلٰى عَبْدِهٖۤ اٰيَاتٍ ۢبَيِّنَاتٍ لِّيُخْرِجَكُمْ مِّنَ الظُّلُمَاتِ اِلَى النُّوْرِؕ وَاِنَّ اللهَ بِكُمْ لَرَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ
তিনিই তাঁর বান্দার প্রতি সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ অবতীর্ণ করেছেন, যাতে তিনি তোমাদেরকে অন্ধকার হতে আলোর দিকে বের করে আনতে পারেন। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি করুণাময় ও পরম দয়ালু। (সূরা হাদীদ- ৯)
ব্যাখ্যা : কুরআনের মধ্যে আছে অন্তর্দৃষ্টির আলো। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, যারা একে মেনে নেয় তারা সঠিক পথ পেয়ে যায়। অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে আনার অর্থ হচ্ছে, শয়তানের পথ থেকে সরিয়ে আল্লাহর পথে নিয়ে আসা। অন্য কথায়, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে নেই সে আসলে অজ্ঞতা ও মূর্খতার অন্ধকারে বিভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে। সে নিজেকে যতই উন্নত চিন্তার অধিকারী এবং জ্ঞানী মনে করুক না কেন তাতে আসল অবস্থার কোন পরিবর্তন হয় না। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আল্লাহর পথের সন্ধান পেয়েছে, একজন অশিক্ষিত লোক হলেও সে আসলে জ্ঞানের আলোর রাজ্যে পৌঁছে গেছে।
মানুষকে সঠিক পথের সন্ধান দেয়ার জন্য :
كَذٰلِكَ يُبَيِّنُ اللهُ لَكُمْ اٰيَاتِهٖ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ
এভাবে আল্লাহ তাঁর নিদর্শনসমূহ তোমাদের সামনে বর্ণনা করেন, যাতে করে তোমরা হেদায়াত লাভ করতে পার। (সূরা আলে ইমরান- ১০৩)
মানুষকে পথভ্রষ্টতার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য :
يُبَيِّنُ اللهُ لَكُمْ اَنْ تَضِلُّوْاؕ وَاللهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ
তোমরা পথভ্রষ্ট হবে- (এ আশঙ্কায়) আল্লাহ তোমাদেরকে স্পষ্টভাবে (সবকিছু) জানিয়ে দিয়েছেন; আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে অবহিত। (সূরা নিসা- ১৭৬)
يٰسٓ ‐ وَالْقُرْاٰنِ الْحَكِيْمِ – - اِنَّكَ لَمِنَ الْمُرْسَلِيْنَ -‐ عَلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ – -تَنْزِيْلَ الْعَزِيْزِ الرَّحِيْمِ – - لِتُنْذِرَ قَوْمًا مَّاۤ اُنْذِرَ اٰبَآؤُهُمْ فَهُمْ غَافِلُوْنَ
ইয়া-সীন। বিজ্ঞানময় কুরআনের শপথ। নিশ্চয় আপনি প্রেরিত রাসূলদের অন্তর্ভুক্ত। আপনি সরলসঠিক পথের উপর আছেন। এ কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে প্রবল প্রতাপশালী ও পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে। যেন আপনি এমন লোকদেরকে সতর্ক করেন, যাদের পূর্বপুরুষদেরকে সতর্ক করা হয়নি, ফলে তারা গাফিল রয়ে গেছে। (সূরা ইয়াসীন, ১-৬)
মানুষের মাঝে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার জন্য :
اِنَّاۤ اَنْزَلْنَاۤ اِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ لِتَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ بِمَاۤ اَرَاكَ اللهُ
আমি তো তোমার প্রতি সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যাতে করে আল্লাহ তোমাকে যা জানিয়েছেন সে অনুসারে মানুষের মধ্যে মীমাংসা করে দিতে পার। (সূরা নিসা- ১০৫)
বিভিন্ন মতভেদের মধ্যে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছার জন্য :
وَمَاۤ اَنْزَلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ اِلَّا لِتُبَيِّنَ لَهُمُ الَّذِى اخْتَلَفُوْا فِيْهِ وَهُدًى وَّرَحْمَةً لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ
আমি তোমার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছি- যারা এ বিষয়ে মতভেদ করে তাদেরকে সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য; আর এটা মুমিনদের জন্য পথনির্দেশ ও রহমত। (সূরা নাহল- ৬৪)
পাপের পথ কোনটি তা পরিষ্কার করে দেয়ার জন্য :
وَكَذٰلِكَ نُفَصِّلُ الْاٰيَاتِ وَلِتَسْتَبِيْنَ سَبِيْلُ الْمُجْرِمِيْنَ
এভাবে আমি আয়াতসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করি; যাতে করে অপরাধীদের পথ স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়ে যায়। (সূরা আন‘আম- ৫৫)
মানুষকে আখিরাতের ব্যাপারে সতর্ক করার জন্য :
وَكَذٰلِكَ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ قُرْاٰنًا عَرَبِيًّا لِّتُنْذِرَ اُمَّ الْقُرٰى وَمَنْ حَوْلَهَا وَتُنْذِرَ يَوْمَ الْجَمْعِ لَا رَيْبَ فِيْهِ
এভাবে আমি তোমার প্রতি আরবি ভাষায় কুরআন অবতীর্ণ করেছি, যেন তুমি সতর্ক করতে পার মক্কা ও তার আশপাশের জনগণকে এবং সতর্ক করতে পার কিয়ামত দিবস সম্পর্কে, যে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। (সূরা শূরা- ৭)
يُلْقِى الرُّوْحَ مِنْ اَمْرِهٖ عَلٰى مَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهٖ لِيُنْذِرَ يَوْمَ التَّلَاقِ
তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তার প্রতি স্বীয় আদেশসহ রূহ (ওহী) প্রেরণ করেন, যেন সে (মানুষদেরকে) সাক্ষাৎ দিবস (কিয়ামত) সম্পর্কে সতর্ক করতে পারে। (সূরা মু’মিন- ১৫)
ব্যাখ্যা : নবুওয়াতের এ রূহ বা প্রাণসত্তায় উজ্জীবিত হয়েই নবীগণ দাওয়াতী কাজ করেন ও কথা বলেন। স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক জীবনে প্রাণের যে মর্যাদা এ ওহী ও নবুওয়াতী প্রাণসত্তা নৈতিক জীবনে একই মর্যাদার অধিকারী। তাই কুরআনের বিভিন্ন স্থানে তার জন্য ‘রূহ’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর মাধ্যমে নবী ﷺ সেসব লোককে খারাপ পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করে দেন, যারা আল্লাহর সাথে কুফরী করেছে এবং আল্লাহ ছাড়া অন্যদের দাসত্ব করে নিজের প্রতি যুলুম করেছে।
সৎকর্মশীলদেরকে সুসংবাদ দেয়া ও পাপীদেরকে ভয় দেখানোর জন্য :
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْۤ اَنْزَلَ عَلٰى عَبْدِهِ الْكِتَابَ وَلَمْ يَجْعَلْ لَّهٗ عِوَجًا – - قَيِّمًا لِّيُنْذِرَ بَاْسًا شَدِيْدًا مِّنْ لَّدُنْهُ وَيُبَشِّرَ الْمُؤْمِنِيْنَ الَّذِيْنَ يَعْمَلُوْنَ الصَّالِحَاتِ اَنَّ لَهُمْ اَجْرًا حَسَنًا
সমসত্ম প্রশংসা আল্লাহর, যিনি এ কিতাব তাঁর বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছেন এবং তাতে কোন বক্রতা রাখেননি। তিনি একে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন তাঁর কঠিন শাসিত্ম সম্পর্কে সতর্ক করার জন্য এবং সৎকর্মশীল মুমিনদেরকে এ সুসংবাদ দেয়ার জন্য যে, তাদের জন্য রয়েছে উত্তম পুরস্কার। (সূরা কাহফ- ১, ২)
ব্যাখ্যা : এ কিতাব সুসংবাদ দানকারী ও ভীতিপ্রদর্শনকারী। একে মেনে চলার ফলাফল অত্যন্ত শুভ এবং না মানার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ ও ধ্বংসের কারণ। এ ধরনের গ্রন্থকে কেবল কোন নির্বোধই উপেক্ষা করতে পারে।
পরকালে মানুষের অভিযোগ তুলার পথ বন্ধ করে দেয়ার জন্য :
وَهٰذَا كِتَابٌ اَنْزَلْنَاهُ مُبَارَكٌ فَاتَّبِعُوْهُ وَاتَّقُوْا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ – - اَنْ تَقُوْلُوْاۤ اِنَّمَاۤ اُنْزِلَ الْكِتَابُ عَلٰى طَآئِفَتَيْنِ مِنْ قَبْلِنَا وَاِنْ كُنَّا عَنْ دِرَاسَتِهِمْ لَغَافِلِيْنَ – - اَوْ تَقُوْلُوْا لَوْ اَنَّاۤ اُنْزِلَ عَلَيْنَا الْكِتَابُ لَكُنَّاۤ اَهْدٰى مِنْهُمْ ۚ فَقَدْ جَآءَكُمْ بَيِّنَةٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَهُدًى وَّرَحْمَةٌۚ فَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ كَذَّبَ بِاٰيَاتِ اللهِ وَصَدَفَ عَنْهَاؕ سَنَجْزِى الَّذِيْنَ يَصْدِفُوْنَ عَنْ اٰيَاتِنَا سُوْٓءَ الْعَذَابِ بِمَا كَانُوْا يَصْدِفُوْنَ
আমি এ কিতাব নাযিল করেছি যা কল্যাণময়। সুতরাং তার অনুসরণ করো এবং সাবধান হও, হয়তো তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করা হবে। যাতে করে পরবর্তীতে এ কথা বলতে না পার যে, ‘কিতাব তো শুধু আমাদের পূর্বের দু’সম্প্রদায়ের প্রতিই অবতীর্ণ হয়েছিল; আর আমরা তাদের পাঠ সম্বন্ধে গাফিল ছিলাম’। কিংবা তোমরা এ কথাও বলতে না পার যে, ‘যদি আমাদের প্রতি কিতাব অবতীর্ণ হতো, তাহলে আমরা তাদের চেয়ে অধিক হেদায়াতপ্রাপ্ত হতাম। সুতরাং এখন তোমাদের নিকট তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে স্পষ্ট প্রমাণ, হেদায়াত ও রহমত এসেছে। অতঃপর যে ব্যক্তি আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে প্রত্যাখ্যান করবে এবং তা হতে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? আর যারা আমার নিদর্শনসমূহ হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়, অচিরেই আমি তাদেরকে তাদের এ জঘন্য আচরণের জন্য নিকৃষ্ট শাস্তি দেব। (সূরা আন‘আম, ১৫৫-১৫৭)
يُلْقِى الرُّوْحَ مِنْ اَمْرِهٖ عَلٰى مَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهٖ لِيُنْذِرَ يَوْمَ التَّلَاقِ
তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তার প্রতি স্বীয় আদেশসহ রূহ (ওহী) প্রেরণ করেন, যেন সে (মানুষদেরকে) সাক্ষাৎ দিবস (কিয়ামত) সম্পর্কে সতর্ক করতে পারে। (সূরা মু’মিন- ১৫)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে তাঁর মুকাবিলায় এ মর্মে প্রতিবাদ জানানোর সুযোগ দিতে চান না যে, আপনি প্রকৃত সত্য সম্পর্কে আমাদেরকে অবগত করেননি এবং আমাদেরকে সঠিক পথ সম্পর্কে জানানোর কোন ব্যবস্থাও করেননি। ফলে অজ্ঞতাবশত আমরা যখন ভুল পথে চলতে শুরু করেছি অমনি আমাদেরকে পাকড়াও করতে শুরু করেছেন। এ যুক্তি প্রদর্শনের পথ রোধ করার জন্য আল্লাহ নবী পাঠিয়েছেন এবং কিতাব নাযিল করেছেন। এভাবে জিন ও মানবজাতিকে সত্যপথ সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে অবগত করেছেন। এরপরও লোকেরা ভুল পথে চললে এবং আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দিলে- এর যাবতীয় দায়-দায়িত্ব তাদের উপর বর্তায়, আল্লাহর উপর নয়।
كِتَابٌ اَنْزَلْنَاهُ اِلَيْكَ لِتُخْرِجَ النَّاسَ مِنَ الظُّلُمَاتِ اِلَى النُّوْرِ بِاِذْنِ رَبِّهِمْ اِلٰى صِرَاطِ الْعَزِيْزِ الْحَمِيْدِ
এ কিতাব তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি যেন তুমি মানবজাতিকে তাদের প্রতিপালকের নির্দেশক্রমে অন্ধকার হতে আলোর দিকে বের করে আনতে পার; মহাপরাক্রমশালী ও প্রশংসিত আল্লাহর পথে। (সূরা ইবরাহীম- ১)
هُوَ الَّذِيْ يُنَزِّلُ عَلٰى عَبْدِهٖۤ اٰيَاتٍ ۢبَيِّنَاتٍ لِّيُخْرِجَكُمْ مِّنَ الظُّلُمَاتِ اِلَى النُّوْرِؕ وَاِنَّ اللهَ بِكُمْ لَرَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ
তিনিই তাঁর বান্দার প্রতি সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ অবতীর্ণ করেছেন, যাতে তিনি তোমাদেরকে অন্ধকার হতে আলোর দিকে বের করে আনতে পারেন। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি করুণাময় ও পরম দয়ালু। (সূরা হাদীদ- ৯)
ব্যাখ্যা : কুরআনের মধ্যে আছে অন্তর্দৃষ্টির আলো। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, যারা একে মেনে নেয় তারা সঠিক পথ পেয়ে যায়। অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে আনার অর্থ হচ্ছে, শয়তানের পথ থেকে সরিয়ে আল্লাহর পথে নিয়ে আসা। অন্য কথায়, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে নেই সে আসলে অজ্ঞতা ও মূর্খতার অন্ধকারে বিভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে। সে নিজেকে যতই উন্নত চিন্তার অধিকারী এবং জ্ঞানী মনে করুক না কেন তাতে আসল অবস্থার কোন পরিবর্তন হয় না। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আল্লাহর পথের সন্ধান পেয়েছে, একজন অশিক্ষিত লোক হলেও সে আসলে জ্ঞানের আলোর রাজ্যে পৌঁছে গেছে।
মানুষকে সঠিক পথের সন্ধান দেয়ার জন্য :
كَذٰلِكَ يُبَيِّنُ اللهُ لَكُمْ اٰيَاتِهٖ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ
এভাবে আল্লাহ তাঁর নিদর্শনসমূহ তোমাদের সামনে বর্ণনা করেন, যাতে করে তোমরা হেদায়াত লাভ করতে পার। (সূরা আলে ইমরান- ১০৩)
মানুষকে পথভ্রষ্টতার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য :
يُبَيِّنُ اللهُ لَكُمْ اَنْ تَضِلُّوْاؕ وَاللهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ
তোমরা পথভ্রষ্ট হবে- (এ আশঙ্কায়) আল্লাহ তোমাদেরকে স্পষ্টভাবে (সবকিছু) জানিয়ে দিয়েছেন; আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে অবহিত। (সূরা নিসা- ১৭৬)
يٰسٓ ‐ وَالْقُرْاٰنِ الْحَكِيْمِ – - اِنَّكَ لَمِنَ الْمُرْسَلِيْنَ -‐ عَلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ – -تَنْزِيْلَ الْعَزِيْزِ الرَّحِيْمِ – - لِتُنْذِرَ قَوْمًا مَّاۤ اُنْذِرَ اٰبَآؤُهُمْ فَهُمْ غَافِلُوْنَ
ইয়া-সীন। বিজ্ঞানময় কুরআনের শপথ। নিশ্চয় আপনি প্রেরিত রাসূলদের অন্তর্ভুক্ত। আপনি সরলসঠিক পথের উপর আছেন। এ কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে প্রবল প্রতাপশালী ও পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে। যেন আপনি এমন লোকদেরকে সতর্ক করেন, যাদের পূর্বপুরুষদেরকে সতর্ক করা হয়নি, ফলে তারা গাফিল রয়ে গেছে। (সূরা ইয়াসীন, ১-৬)
মানুষের মাঝে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার জন্য :
اِنَّاۤ اَنْزَلْنَاۤ اِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ لِتَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ بِمَاۤ اَرَاكَ اللهُ
আমি তো তোমার প্রতি সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যাতে করে আল্লাহ তোমাকে যা জানিয়েছেন সে অনুসারে মানুষের মধ্যে মীমাংসা করে দিতে পার। (সূরা নিসা- ১০৫)
বিভিন্ন মতভেদের মধ্যে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছার জন্য :
وَمَاۤ اَنْزَلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ اِلَّا لِتُبَيِّنَ لَهُمُ الَّذِى اخْتَلَفُوْا فِيْهِ وَهُدًى وَّرَحْمَةً لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ
আমি তোমার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছি- যারা এ বিষয়ে মতভেদ করে তাদেরকে সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য; আর এটা মুমিনদের জন্য পথনির্দেশ ও রহমত। (সূরা নাহল- ৬৪)
পাপের পথ কোনটি তা পরিষ্কার করে দেয়ার জন্য :
وَكَذٰلِكَ نُفَصِّلُ الْاٰيَاتِ وَلِتَسْتَبِيْنَ سَبِيْلُ الْمُجْرِمِيْنَ
এভাবে আমি আয়াতসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করি; যাতে করে অপরাধীদের পথ স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়ে যায়। (সূরা আন‘আম- ৫৫)
মানুষকে আখিরাতের ব্যাপারে সতর্ক করার জন্য :
وَكَذٰلِكَ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ قُرْاٰنًا عَرَبِيًّا لِّتُنْذِرَ اُمَّ الْقُرٰى وَمَنْ حَوْلَهَا وَتُنْذِرَ يَوْمَ الْجَمْعِ لَا رَيْبَ فِيْهِ
এভাবে আমি তোমার প্রতি আরবি ভাষায় কুরআন অবতীর্ণ করেছি, যেন তুমি সতর্ক করতে পার মক্কা ও তার আশপাশের জনগণকে এবং সতর্ক করতে পার কিয়ামত দিবস সম্পর্কে, যে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। (সূরা শূরা- ৭)
يُلْقِى الرُّوْحَ مِنْ اَمْرِهٖ عَلٰى مَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهٖ لِيُنْذِرَ يَوْمَ التَّلَاقِ
তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তার প্রতি স্বীয় আদেশসহ রূহ (ওহী) প্রেরণ করেন, যেন সে (মানুষদেরকে) সাক্ষাৎ দিবস (কিয়ামত) সম্পর্কে সতর্ক করতে পারে। (সূরা মু’মিন- ১৫)
ব্যাখ্যা : নবুওয়াতের এ রূহ বা প্রাণসত্তায় উজ্জীবিত হয়েই নবীগণ দাওয়াতী কাজ করেন ও কথা বলেন। স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক জীবনে প্রাণের যে মর্যাদা এ ওহী ও নবুওয়াতী প্রাণসত্তা নৈতিক জীবনে একই মর্যাদার অধিকারী। তাই কুরআনের বিভিন্ন স্থানে তার জন্য ‘রূহ’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর মাধ্যমে নবী ﷺ সেসব লোককে খারাপ পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করে দেন, যারা আল্লাহর সাথে কুফরী করেছে এবং আল্লাহ ছাড়া অন্যদের দাসত্ব করে নিজের প্রতি যুলুম করেছে।
সৎকর্মশীলদেরকে সুসংবাদ দেয়া ও পাপীদেরকে ভয় দেখানোর জন্য :
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْۤ اَنْزَلَ عَلٰى عَبْدِهِ الْكِتَابَ وَلَمْ يَجْعَلْ لَّهٗ عِوَجًا – - قَيِّمًا لِّيُنْذِرَ بَاْسًا شَدِيْدًا مِّنْ لَّدُنْهُ وَيُبَشِّرَ الْمُؤْمِنِيْنَ الَّذِيْنَ يَعْمَلُوْنَ الصَّالِحَاتِ اَنَّ لَهُمْ اَجْرًا حَسَنًا
সমসত্ম প্রশংসা আল্লাহর, যিনি এ কিতাব তাঁর বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছেন এবং তাতে কোন বক্রতা রাখেননি। তিনি একে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন তাঁর কঠিন শাসিত্ম সম্পর্কে সতর্ক করার জন্য এবং সৎকর্মশীল মুমিনদেরকে এ সুসংবাদ দেয়ার জন্য যে, তাদের জন্য রয়েছে উত্তম পুরস্কার। (সূরা কাহফ- ১, ২)
ব্যাখ্যা : এ কিতাব সুসংবাদ দানকারী ও ভীতিপ্রদর্শনকারী। একে মেনে চলার ফলাফল অত্যন্ত শুভ এবং না মানার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ ও ধ্বংসের কারণ। এ ধরনের গ্রন্থকে কেবল কোন নির্বোধই উপেক্ষা করতে পারে।
পরকালে মানুষের অভিযোগ তুলার পথ বন্ধ করে দেয়ার জন্য :
وَهٰذَا كِتَابٌ اَنْزَلْنَاهُ مُبَارَكٌ فَاتَّبِعُوْهُ وَاتَّقُوْا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ – - اَنْ تَقُوْلُوْاۤ اِنَّمَاۤ اُنْزِلَ الْكِتَابُ عَلٰى طَآئِفَتَيْنِ مِنْ قَبْلِنَا وَاِنْ كُنَّا عَنْ دِرَاسَتِهِمْ لَغَافِلِيْنَ – - اَوْ تَقُوْلُوْا لَوْ اَنَّاۤ اُنْزِلَ عَلَيْنَا الْكِتَابُ لَكُنَّاۤ اَهْدٰى مِنْهُمْ ۚ فَقَدْ جَآءَكُمْ بَيِّنَةٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَهُدًى وَّرَحْمَةٌۚ فَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ كَذَّبَ بِاٰيَاتِ اللهِ وَصَدَفَ عَنْهَاؕ سَنَجْزِى الَّذِيْنَ يَصْدِفُوْنَ عَنْ اٰيَاتِنَا سُوْٓءَ الْعَذَابِ بِمَا كَانُوْا يَصْدِفُوْنَ
আমি এ কিতাব নাযিল করেছি যা কল্যাণময়। সুতরাং তার অনুসরণ করো এবং সাবধান হও, হয়তো তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করা হবে। যাতে করে পরবর্তীতে এ কথা বলতে না পার যে, ‘কিতাব তো শুধু আমাদের পূর্বের দু’সম্প্রদায়ের প্রতিই অবতীর্ণ হয়েছিল; আর আমরা তাদের পাঠ সম্বন্ধে গাফিল ছিলাম’। কিংবা তোমরা এ কথাও বলতে না পার যে, ‘যদি আমাদের প্রতি কিতাব অবতীর্ণ হতো, তাহলে আমরা তাদের চেয়ে অধিক হেদায়াতপ্রাপ্ত হতাম। সুতরাং এখন তোমাদের নিকট তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে স্পষ্ট প্রমাণ, হেদায়াত ও রহমত এসেছে। অতঃপর যে ব্যক্তি আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে প্রত্যাখ্যান করবে এবং তা হতে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? আর যারা আমার নিদর্শনসমূহ হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়, অচিরেই আমি তাদেরকে তাদের এ জঘন্য আচরণের জন্য নিকৃষ্ট শাস্তি দেব। (সূরা আন‘আম, ১৫৫-১৫৭)
يُلْقِى الرُّوْحَ مِنْ اَمْرِهٖ عَلٰى مَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهٖ لِيُنْذِرَ يَوْمَ التَّلَاقِ
তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তার প্রতি স্বীয় আদেশসহ রূহ (ওহী) প্রেরণ করেন, যেন সে (মানুষদেরকে) সাক্ষাৎ দিবস (কিয়ামত) সম্পর্কে সতর্ক করতে পারে। (সূরা মু’মিন- ১৫)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে তাঁর মুকাবিলায় এ মর্মে প্রতিবাদ জানানোর সুযোগ দিতে চান না যে, আপনি প্রকৃত সত্য সম্পর্কে আমাদেরকে অবগত করেননি এবং আমাদেরকে সঠিক পথ সম্পর্কে জানানোর কোন ব্যবস্থাও করেননি। ফলে অজ্ঞতাবশত আমরা যখন ভুল পথে চলতে শুরু করেছি অমনি আমাদেরকে পাকড়াও করতে শুরু করেছেন। এ যুক্তি প্রদর্শনের পথ রোধ করার জন্য আল্লাহ নবী পাঠিয়েছেন এবং কিতাব নাযিল করেছেন। এভাবে জিন ও মানবজাতিকে সত্যপথ সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে অবগত করেছেন। এরপরও লোকেরা ভুল পথে চললে এবং আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দিলে- এর যাবতীয় দায়-দায়িত্ব তাদের উপর বর্তায়, আল্লাহর উপর নয়।
কুরআনের সত্যতার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই :
ذٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ فِيْهِ هُدًى لِّلْمُتَّقِيْنَ
এটা ঐ গ্রন্থ, যার মধ্যে কোন সন্দেহ নেই; আর এটা মুত্তাক্বীদের জন্য হেদায়াতস্বরূপ। (সূরা বাক্বারা- ২)
يُلْقِى الرُّوْحَ مِنْ اَمْرِهٖ عَلٰى مَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهٖ لِيُنْذِرَ يَوْمَ التَّلَاقِ
তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তার প্রতি স্বীয় আদেশসহ রূহ (ওহী) প্রেরণ করেন, যেন সে (মানুষদেরকে) সাক্ষাৎ দিবস (কিয়ামত) সম্পর্কে সতর্ক করতে পারে। (সূরা মু’মিন- ১৫)
ব্যাখ্যা : এ কুরআন এমন একটি গ্রন্থ, যা সম্পূর্ণটাই নির্ভুল ও সত্য জ্ঞানে সমৃদ্ধ। এর রচয়িতা হচ্ছেন এমন এক মহান সত্তা, যিনি সমস্ত তত্ত্ব ও সত্যের জ্ঞান রাখেন। কাজেই এর মধ্যে সন্দেহের কোন অবকাশই নেই।
وَمَا كَانَ هٰذَا الْقُرْاٰنُ اَنْ يُّفْتَرٰى مِنْ دُوْنِ اللهِ وَلٰكِنْ تَصْدِيْقَ الَّذِيْ بَيْنَ يَدَيْهِ وَتَفْصِيْلَ الْكِتَابِ لَا رَيْبَ فِيْهِ مِنْ رَّبِّ الْعَالَمِيْنَ
এ কুরআন আল্লাহ ব্যতীত অপর কারো রচনা নয়। পক্ষান্তরে এর পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে এটা তার সমর্থন করে এবং তা বিধানসমূহের বিশদ ব্যাখ্যা। এটা জগতসমূহের প্রতিপালকের পক্ষ হতে (অবতীর্ণ হয়েছে), এতে কোন সন্দেহ নেই। (সূরা ইউনুস- ৩৭)
আল্লাহ সন্দেহ করতে নিষেধ করেছেন :
اَفَغَيْرَ اللهِ اَبْتَغِيْ حَكَمًا وَّهُوَ الَّذِيْۤ اَنْزَلَ اِلَيْكُمُ الْكِتَابَ مُفَصَّلًاؕ وَالَّذِيْنَ اٰتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَعْلَمُوْنَ اَنَّهٗ مُنَزَّلٌ مِّنْ رَّبِّكَ بِالْحَقِّ فَلَا تَكُوْنَنَّ مِنَ الْمُمْتَرِيْنَ
বলো, ‘তবে কি আমি আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে বিচারক মানব, যদিও তিনি তোমাদের প্রতি সুস্পষ্ট কিতাব অবতীর্ণ করেছেন!’ আর আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছি তারা জানে যে, তা তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে সত্যসহ অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তুমি সন্দেহকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সূরা আন‘আম- ১১৪)
কুরআন যে সত্য তা জ্ঞানীরা ভালোভাবে জানে :
وَيَرَى الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْعِلْمَ الَّذِۤيْ اُنْزِلَ اِلَيْكَ مِنْ رَّبِّكَ هُوَ الْحَقَّ وَيَهْدِيْۤ اِلٰى صِرَاطِ الْعَزِيْزِ الْحَمِيْدِ
যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে তারা জানে যে, আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা সত্য। আর এটি মহাপরাক্রমশালী ও প্রশংসিত আল্লাহর (দিকেই) পথপ্রদর্শন করে। (সূরা সাবা- ৬)
اَفَمَنْ يَّعْلَمُ اَنَّمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكَ مِنْ رَّبِّكَ الْحَقُّ كَمَنْ هُوَ اَعْمٰىؕ اِنَّمَا يَتَذَكَّرُ اُولُو الْاَ لْبَابِ
তোমার প্রতিপালক হতে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, যে ব্যক্তি তা সত্য বলে জানে- সে আর অন্ধ কি সমান? নিশ্চয় কেবল বিবেকবান ব্যক্তিগণই উপদেশ গ্রহণ করে। (সূরা রা’দ- ১৯)
কুরআন সম্পর্কে আল্লাহ ও ফেরেশতাদের সাক্ষ্য প্রদান :
لٰكِنِ اللهُ يَشْهَدُ بِمَاۤ اَنْزَلَ اِلَيْكَ اَنْزَلَهٗ بِعِلْمِهٖۚ وَالْمَلَآئِكَةُ يَشْهَدُوْنَ وَكَفٰى بِاللهِ شَهِيْدًا
আল্লাহ সাক্ষ্য দেন যে, তিনি তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছেন তা তাঁর নিজ জ্ঞানেই অবতীর্ণ করেছেন এবং ফেরেশতাগণও এর সাক্ষ্য দেয়। আর সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। (সূরা নিসা- ১৬৬)
ذٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ فِيْهِ هُدًى لِّلْمُتَّقِيْنَ
এটা ঐ গ্রন্থ, যার মধ্যে কোন সন্দেহ নেই; আর এটা মুত্তাক্বীদের জন্য হেদায়াতস্বরূপ। (সূরা বাক্বারা- ২)
يُلْقِى الرُّوْحَ مِنْ اَمْرِهٖ عَلٰى مَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهٖ لِيُنْذِرَ يَوْمَ التَّلَاقِ
তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তার প্রতি স্বীয় আদেশসহ রূহ (ওহী) প্রেরণ করেন, যেন সে (মানুষদেরকে) সাক্ষাৎ দিবস (কিয়ামত) সম্পর্কে সতর্ক করতে পারে। (সূরা মু’মিন- ১৫)
ব্যাখ্যা : এ কুরআন এমন একটি গ্রন্থ, যা সম্পূর্ণটাই নির্ভুল ও সত্য জ্ঞানে সমৃদ্ধ। এর রচয়িতা হচ্ছেন এমন এক মহান সত্তা, যিনি সমস্ত তত্ত্ব ও সত্যের জ্ঞান রাখেন। কাজেই এর মধ্যে সন্দেহের কোন অবকাশই নেই।
وَمَا كَانَ هٰذَا الْقُرْاٰنُ اَنْ يُّفْتَرٰى مِنْ دُوْنِ اللهِ وَلٰكِنْ تَصْدِيْقَ الَّذِيْ بَيْنَ يَدَيْهِ وَتَفْصِيْلَ الْكِتَابِ لَا رَيْبَ فِيْهِ مِنْ رَّبِّ الْعَالَمِيْنَ
এ কুরআন আল্লাহ ব্যতীত অপর কারো রচনা নয়। পক্ষান্তরে এর পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে এটা তার সমর্থন করে এবং তা বিধানসমূহের বিশদ ব্যাখ্যা। এটা জগতসমূহের প্রতিপালকের পক্ষ হতে (অবতীর্ণ হয়েছে), এতে কোন সন্দেহ নেই। (সূরা ইউনুস- ৩৭)
আল্লাহ সন্দেহ করতে নিষেধ করেছেন :
اَفَغَيْرَ اللهِ اَبْتَغِيْ حَكَمًا وَّهُوَ الَّذِيْۤ اَنْزَلَ اِلَيْكُمُ الْكِتَابَ مُفَصَّلًاؕ وَالَّذِيْنَ اٰتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَعْلَمُوْنَ اَنَّهٗ مُنَزَّلٌ مِّنْ رَّبِّكَ بِالْحَقِّ فَلَا تَكُوْنَنَّ مِنَ الْمُمْتَرِيْنَ
বলো, ‘তবে কি আমি আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে বিচারক মানব, যদিও তিনি তোমাদের প্রতি সুস্পষ্ট কিতাব অবতীর্ণ করেছেন!’ আর আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছি তারা জানে যে, তা তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে সত্যসহ অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তুমি সন্দেহকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সূরা আন‘আম- ১১৪)
কুরআন যে সত্য তা জ্ঞানীরা ভালোভাবে জানে :
وَيَرَى الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْعِلْمَ الَّذِۤيْ اُنْزِلَ اِلَيْكَ مِنْ رَّبِّكَ هُوَ الْحَقَّ وَيَهْدِيْۤ اِلٰى صِرَاطِ الْعَزِيْزِ الْحَمِيْدِ
যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে তারা জানে যে, আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা সত্য। আর এটি মহাপরাক্রমশালী ও প্রশংসিত আল্লাহর (দিকেই) পথপ্রদর্শন করে। (সূরা সাবা- ৬)
اَفَمَنْ يَّعْلَمُ اَنَّمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكَ مِنْ رَّبِّكَ الْحَقُّ كَمَنْ هُوَ اَعْمٰىؕ اِنَّمَا يَتَذَكَّرُ اُولُو الْاَ لْبَابِ
তোমার প্রতিপালক হতে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, যে ব্যক্তি তা সত্য বলে জানে- সে আর অন্ধ কি সমান? নিশ্চয় কেবল বিবেকবান ব্যক্তিগণই উপদেশ গ্রহণ করে। (সূরা রা’দ- ১৯)
কুরআন সম্পর্কে আল্লাহ ও ফেরেশতাদের সাক্ষ্য প্রদান :
لٰكِنِ اللهُ يَشْهَدُ بِمَاۤ اَنْزَلَ اِلَيْكَ اَنْزَلَهٗ بِعِلْمِهٖۚ وَالْمَلَآئِكَةُ يَشْهَدُوْنَ وَكَفٰى بِاللهِ شَهِيْدًا
আল্লাহ সাক্ষ্য দেন যে, তিনি তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছেন তা তাঁর নিজ জ্ঞানেই অবতীর্ণ করেছেন এবং ফেরেশতাগণও এর সাক্ষ্য দেয়। আর সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। (সূরা নিসা- ১৬৬)
প্রথম পর্যায়ে পূর্ণ কুরআন বানানোর চ্যালেঞ্জ :
اَمْ يَقُوْلُوْنَ تَقَوَّلَهٗۚ بَلْ لَّا يُؤْمِنُوْنَ – - فَلْيَاْتُوْا بِحَدِيْثٍ مِّثْلِهٖۤ اِنْ كَانُوْا صَادِقِيْنَ
তারা কি বলে যে, (এ কুরআন) তাঁর {মুহাম্মাদ ﷺ এর} নিজের বানানো? আসলে তারা বিশ্বাস করতে চায় না। তারা যদি সত্যবাদী হয়, তবে তারাও কুরআনের ন্যায় কোন গ্রন্থ নিয়ে আসুক। (সূরা তূর- ৩৩, ৩৪)
দ্বিতীয় পর্যায়ে দশটি সূরা বানানোর চ্যালেঞ্জ :
اَمْ يَقُوْلُوْنَ افْتَرَاهُؕ قُلْ فَاْتُوْا بِعَشْرِ سُوَرٍ مِّثْلِهٖ مُفْتَرَيَاتٍ وَّادْعُوْا مَنِ اسْتَطَعْتُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ
তারা কি বলে, (মুহাম্মাদ) এটা নিজে রচনা করেছে? বলো, তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে তোমরা এর অনুরূপ দশটি স্বরচিত সূরা আনয়ন করো এবং আল্লাহ ব্যতীত যাকে পার (তাকে সাহায্যের জন্য) ডেকে নাও। (সূরা হুদ- ১৩)
শেষ পর্যায়ে ছোট একটি সূরা বানানোর চ্যালেঞ্জ :
اَمْ يَقُوْلُوْنَ افْتَرَاهُؕ قُلْ فَاْتُوْا بِسُوْرَةٍ مِّثْلِهٖ وَادْعُوْا مَنِ اسْتَطَعْتُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ
তারা কি বলে, সে (মুহাম্মাদ) এটা রচনা করেছে? বলো, তবে তোমরা এটার অনুরূপ একটি সূরা আনয়ন করো এবং আল্লাহ ব্যতীত অপর যাকে পার আহবান করো, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’ (সূরা ইউনুস- ৩৮)
وَاِنْ كُنْتُمْ فِيْ رَيْبٍ مِّمَّا نَزَّلْناَ عَلٰى عَبْدِنَا فَاْتُوْا بِسُوْرَةٍ مِّنْ مِّثْلِهٖ۪ وَادْعُوْا شُهَدَآءَكُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ
আমি আমার বান্দার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছি তাতে তোমরা যদি সন্দেহ কর, তবে এর সমতুল্য একটি সূরা তৈরি করে নিয়ে এসো এবং আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের অন্যান্য সাহায্যকারীদেরকেও ডেকে নাও; যদি তোমরা সত্যবাদী হও। (সূরা বাক্বারা- ২৩)
এ চ্যালেঞ্জের মুকাবিলা কেউ করতে পারেনি আর পারবেও না :
قُلْ لَّئِنِ اجْتَمَعَتِ الْاِنْسُ وَالْجِنُّ عَلٰۤى اَنْ يَّاْتُوْا بِمِثْلِ هٰذَا الْقُرْاٰنِ لَا يَاْتُوْنَ بِمِثْلِهٖ وَلَوْ كَانَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ ظَهِيْرًا
বলো, যদি কুরআনের অনুরূপ কুরআন আনয়নের জন্য মানুষ ও জিন উভয়ই সমবেত হয় এবং তারা পরস্পরকে সাহায্য করে তবুও তারা এটার অনুরূপ কোন গ্রন্থ আনয়ন করতে পারবে না। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৮৮)
اَمْ يَقُوْلُوْنَ تَقَوَّلَهٗۚ بَلْ لَّا يُؤْمِنُوْنَ – - فَلْيَاْتُوْا بِحَدِيْثٍ مِّثْلِهٖۤ اِنْ كَانُوْا صَادِقِيْنَ
তারা কি বলে যে, (এ কুরআন) তাঁর {মুহাম্মাদ ﷺ এর} নিজের বানানো? আসলে তারা বিশ্বাস করতে চায় না। তারা যদি সত্যবাদী হয়, তবে তারাও কুরআনের ন্যায় কোন গ্রন্থ নিয়ে আসুক। (সূরা তূর- ৩৩, ৩৪)
দ্বিতীয় পর্যায়ে দশটি সূরা বানানোর চ্যালেঞ্জ :
اَمْ يَقُوْلُوْنَ افْتَرَاهُؕ قُلْ فَاْتُوْا بِعَشْرِ سُوَرٍ مِّثْلِهٖ مُفْتَرَيَاتٍ وَّادْعُوْا مَنِ اسْتَطَعْتُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ
তারা কি বলে, (মুহাম্মাদ) এটা নিজে রচনা করেছে? বলো, তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে তোমরা এর অনুরূপ দশটি স্বরচিত সূরা আনয়ন করো এবং আল্লাহ ব্যতীত যাকে পার (তাকে সাহায্যের জন্য) ডেকে নাও। (সূরা হুদ- ১৩)
শেষ পর্যায়ে ছোট একটি সূরা বানানোর চ্যালেঞ্জ :
اَمْ يَقُوْلُوْنَ افْتَرَاهُؕ قُلْ فَاْتُوْا بِسُوْرَةٍ مِّثْلِهٖ وَادْعُوْا مَنِ اسْتَطَعْتُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ
তারা কি বলে, সে (মুহাম্মাদ) এটা রচনা করেছে? বলো, তবে তোমরা এটার অনুরূপ একটি সূরা আনয়ন করো এবং আল্লাহ ব্যতীত অপর যাকে পার আহবান করো, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’ (সূরা ইউনুস- ৩৮)
وَاِنْ كُنْتُمْ فِيْ رَيْبٍ مِّمَّا نَزَّلْناَ عَلٰى عَبْدِنَا فَاْتُوْا بِسُوْرَةٍ مِّنْ مِّثْلِهٖ۪ وَادْعُوْا شُهَدَآءَكُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ
আমি আমার বান্দার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছি তাতে তোমরা যদি সন্দেহ কর, তবে এর সমতুল্য একটি সূরা তৈরি করে নিয়ে এসো এবং আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের অন্যান্য সাহায্যকারীদেরকেও ডেকে নাও; যদি তোমরা সত্যবাদী হও। (সূরা বাক্বারা- ২৩)
এ চ্যালেঞ্জের মুকাবিলা কেউ করতে পারেনি আর পারবেও না :
قُلْ لَّئِنِ اجْتَمَعَتِ الْاِنْسُ وَالْجِنُّ عَلٰۤى اَنْ يَّاْتُوْا بِمِثْلِ هٰذَا الْقُرْاٰنِ لَا يَاْتُوْنَ بِمِثْلِهٖ وَلَوْ كَانَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ ظَهِيْرًا
বলো, যদি কুরআনের অনুরূপ কুরআন আনয়নের জন্য মানুষ ও জিন উভয়ই সমবেত হয় এবং তারা পরস্পরকে সাহায্য করে তবুও তারা এটার অনুরূপ কোন গ্রন্থ আনয়ন করতে পারবে না। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৮৮)
তারা বলে, এ কুরআন পুরানো দিনের গল্প :
اِذَا تُتْلٰى عَلَيْهِ اٰيَاتُنَا قَالَ اَسَاطِيْرُ الْاَ وَّلِيْنَ
যখন তার নিকট আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন সে বলে, এটা তো পূর্ববর্তীদের কাহিনী!
(সূরা মুতাফফিফীন- ১৩)
وَقَالُوْاۤ اَسَاطِيْرُ الْاَ وَّلِيْنَ اكْتَتَبَهَا فَهِيَ تُمْلٰى عَلَيْهِ بُكْرَةً وَّاَصِيْلًا
তারা বলে, এগুলো তো পূর্ববর্তীদের কাহিনী, যা সে লিখিয়ে নিয়েছে; এগুলো সকাল-সন্ধ্যায় তার নিকট পাঠ করা হয়। (সূরা ফুরক্বান- ৫)
وَمِنْهُمْ مَّنْ يَّسْتَمِعُ اِلَيْكَۚ وَجَعَلْنَا عَلٰى قُلُوْبِهِمْ اَكِنَّةً اَنْ يَّفْقَهُوْهُ وَفِۤيْ اٰذَانِهِمْ وَقْرًاؕ وَاِنْ يَّرَوْا كُلَّ اٰيَةٍ لَّا يُؤْمِنُوْا بِهَاؕ حَتّٰۤى اِذَا جَآءُوْكَ يُجَادِلُوْنَكَ يَقُوْلُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اِنْ هٰذَاۤ اِلَّاۤ اَسَاطِيْرُ الْاَوَّلِيْنَ
তাদের মধ্যে কতক তোমার দিকে কান পেতে রাখে, কিন্তু আমি তাদের অন্তরের উপর আবরণ দিয়ে রেখেছি, যেন তারা তা উপলদ্ধি করতে না পারে এবং তাদেরকে বধির করে রেখেছি। সুতরাং তারা সমস্ত নিদর্শন প্রত্যক্ষ করলেও তাতে (কুরআনের প্রতি) ঈমান আনবে না; এমনকি তারা যখন তোমার নিকট উপস্থিত হয়ে বিতর্কে লিপ্ত হয় তখন কাফিররা বলে, ‘এটা তো পূর্ববর্তীদের রূপকথা ব্যতীত আর কিছুই নয়।’ (সূরা আন‘আম- ২৫)
এগুলো পুরাতন মিথ্যা কথা :
وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَوْ كَانَ خَيْرًا مَّا سَبَقُوْنَاۤ اِلَيْهِؕ وَاِذْ لَمْ يَهْتَدُوْا بِهٖ فَسَيَقُوْلُوْنَ هٰذَاۤ اِفْكٌ قَدِيْمٌ
কাফিররা ঈমানদারদের সম্পর্কে বলে, যদি (এ কিতাবকে মেনে নেয়া সত্যিই) কোন ভালো কাজ হতো, তাহলে তারা এ বিষয়ে আমাদেরকে ছাড়িয়ে যেতে পারত না। যেহেতু তারা এ থেকে হেদায়াত পেল না, সেহেতু তারা বলবে যে, এটা তো পুরাতন মিথ্যা (কাহিনী) মাত্র। (সূরা আহকাফ- ১১)
وَقَالُوْا مَا هٰذَاۤ اِلَّاۤ اِفْكٌ مُّفْتَرًى
তারা আরো বলে যে, এটা তো মিথ্যা রচনা ছাড়া আর কিছু নয়। (সূরা সাবা- ৪৩)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ এর ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করার জন্য কুরাইশ নেতারা বলত, ‘এ কুরআন যদি সত্য হতো এবং মুহাম্মাদ যদি সঠিক দ্বীনের দাওয়াত দিতেন, তাহলে তার সম্প্রদায়ের নেতা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অগ্রসর হয়ে তা গ্রহণ করে নিত। এটা কী করে হতে পারে যে, কতিপয় অনভিজ্ঞ বালক এবং কিছু সংখ্যক নীচু পর্যায়ের ক্রীতদাস একটি যুক্তিসঙ্গত কথা মেনে নেবে; কিন্তু জাতির গণ্যমান্য ব্যক্তিরা তা প্রত্যাখ্যান করবে? নতুন এই দাওয়াতে অবশ্যই মন্দ কিছু আছে। তাই কওমের গণ্যমান্য ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ তা মানছে না। অতএব তোমরাও তা থেকে দূরে সরে যাও। এভাবে তারা প্রতারণামূলক যুক্তি পেশ করে সাধারণ মানুষকে এ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করত।
এগুলো এলোমেলো স্বপ্ন :
بَلْ قَالُوْاۤ اَضْغَاثُ اَحْلَامٍ ۢبَلِ افْتَرَاهُ بَلْ هُوَ شَاعِرٌۚ فَلْيَاْتِنَا بِاٰيَةٍ كَمَاۤ اُرْسِلَ الْاَ وَّلُوْنَ
তারা এটাও বলে যে, এগুলো অলীক কল্পনা- হয় সে এটা উদ্ভাবন করেছে, নতুবা সে একজন কবি। অতএব সে আমাদের নিকট একটি নিদর্শন আনয়ন করুক, যেরূপ নিদর্শনসহ পূর্ববর্তীগণ প্রেরিত হয়েছিলেন। (সূরা আম্বিয়া- ৫)
এগুলো পাগলের শেখানো বুলি :
ثُمَّ تَوَلَّوْا عَنْهُ وَقَالُوْا مُعَلَّمٌ مَّجْنُوْنٌ
অতঃপর তারা তাকে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে বলে, সে তো শেখানো (বুলি বলছে), সে তো এক পাগল। (সূরা দুখান- ১৪)
এগুলো মনগড়া উক্তি :
مَا سَمِعْنَا بِهٰذَا فِى الْمِلَّةِ الْاٰخِرَةِۚ اِنْ هٰذَاۤ اِلَّا اخْتِلَاقٌ
এরূপ কথা তো আমরা পূর্ববর্তী ধর্মে শুনিনি। এটা তো মনগড়া উক্তি ছাড়া আর কিছু নয়। (সূরা সোয়াদ- ৭, ৮)
মানুষের সহযোগিতায় এটা বানানো হয়েছে :
وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اِنْ هٰذَاۤ اِلَّاۤ اِفْكُ نِ افْتَرَاهُ وَاَعَانَهٗ عَلَيْهِ قَوْمٌ اٰخَرُوْنَۚ فَقَدْ جَآءُوْا ظُلْمًا وَّزُوْرًاۚ وَقَالُوْاۤ اَسَاطِيْرُ الْاَ وَّلِيْنَ اكْتَتَبَهَا فَهِيَ تُمْلٰى عَلَيْهِ بُكْرَةً وَّاَصِيْلًا
কাফিররা বলে, ‘এটা মিথ্যা ব্যতীত কিছুই নয়, সে এটা উদ্ভাবন করেছে এবং ভিন্ন সম্প্রদায়ের লোক তাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করেছে।’ এভাবে তারা অবশ্যই যুলুম ও মিথ্যায় উপনীত হয়েছে। তারা বলে, ‘এগুলো তো পূর্বকালের উপকথা, যা সে লিখিয়ে নিয়েছে; এগুলো সকাল-সন্ধ্যায় তার নিকট পাঠ করা হয়।’ (সূরা ফুরক্বান- ৪, ৫)
ব্যাখ্যা : তারা বলত, এ ব্যক্তি তো নিরক্ষর, সে নিজে পড়শুনা করে কোন নতুন জ্ঞান আহরণ করতে পারে না এবং ইতোপূর্বেও সে কোনদিন কারো কাছে কোন শিক্ষা অর্জন করেনি। আজ তার মুখ থেকে যেসব কথা বের হচ্ছে বিগত চল্লিশ বছর বয়সেও তো সে তা জানতো না। তাহলে এখন হঠাৎ এসব জ্ঞান আসছে কোথা থেকে? তাহলে এগুলোর উৎস নিশ্চয় আগের যুগের লোকদের কিছু কিতাব। রাতের বেলা চুপিসারে সেগুলো থেকে কিছু কিছু অংশ কারো কাছ থেকে অনুবাদ করিয়ে নেয়। অতঃপর তা দিনের বেলায় পাঠ করে আমাদেরকে শুনিয়ে দেয়। এর জবাবে বলা হয়েছে, তোমরা সত্যের প্রতি যুলুম করছ এবং পরিষ্কার বেইনসাফী ও অযৌক্তিক অভিযোগ আরোপ করছ। তোমরা তার ব্যাপারে যেসব কথা বলছ, তা কখনো বাস্তব হতে পারে না। কেননা তোমাদের কথা অনুযায়ী যদি তাই হতো, তবে তার পক্ষে তোমাদের দৃষ্টি ফাঁকি দেয়া সম্ভবপর ছিল না। তাছাড়া এটা হচ্ছে ঐ সত্তার কালাম, যিনি আকাশ ও পৃথিবীর সকল গোপন রহস্য সম্পর্কে অবগত আছেন। সুতরাং এ কালামকে নিয়ে মিথ্যা রটনা করলে, তিনিই তার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। যার কারণে প্রত্যেক শ্রোতার কাছে তাদের এ অভিযোগ এমনিতেই ছিল অর্থহীন ও অযৌক্তিক। তাই শুধুমাত্র এ অভিযোগের জবাব দেয়ার জন্য কুরআনে একে উদ্ধৃত করা হয়নি, বরং এ কথা বলার জন্য উল্লেখ করা হয়েছে যে, দেখো! সত্যের বিরুদ্ধাচরণ করার ক্ষেত্রে এরা কেমন অন্ধ হয়ে গেছে এবং কত মারাত্মক মিথ্যা ও জগন্য পথ বেছে নিয়েছে।
কুরআনের মতো এরকম কথা আমরাও বানাতে পারি :
وَاِذَا تُتْلٰى عَلَيْهِمْ اٰيَاتُنَا قَالُوْا قَدْ سَمِعْنَا لَوْ نَشَآءُ لَقُلْنَا مِثْلَ هٰذَاۤ اِنْ هٰذَاۤ اِلَّاۤ اَسَاطِيْرُ الْاَ وَّلِيْنَ
যখন তাদের নিকট আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন তারা বলে, আমরা শ্রবণ করলাম; ইচ্ছা করলে আমরাও এর অনুরূপ বলতে পারি, এটা তো শুধু পূর্ববর্তীদের কাহিনী মাত্র। (সূরা আনফাল- ৩১)
এটা সুস্পষ্ট যাদু :
وَاِذَا تُتْلٰى عَلَيْهِمْ اٰيَاتُنَا بَيِّنَاتٍ قَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِلْحَقِّ لَمَّا جَآءَهُمْ هٰذَاۤ اِلَّا سِحْرٌ مُّبِيْنٌ
যখন এদেরকে আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ পড়ে শুনানো হয়, তখন কাফিররা সে সত্য সম্পর্কে বলে, যা তাদের সামনে এসে গেছে- এটা তো স্পষ্ট যাদু ছাড়া কিছু নয়। (সূরা আহকাফ- ৭)
وَلَمَّا جَآءَهُمُ الْحَقُّ قَالُوْا هٰذَا سِحْرٌ وَّ اِنَّا بِهٖ كَافِرُوْنَ
যখন তাদের নিকট সত্য এসে গেল তখন তারা বলল, এটা তো যাদু। অবশ্যই আমরা এটাকে অস্বীকার করি। (সূরা যুখরুফ- ৩০)
اِذَا تُتْلٰى عَلَيْهِ اٰيَاتُنَا قَالَ اَسَاطِيْرُ الْاَ وَّلِيْنَ
যখন তার নিকট আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন সে বলে, এটা তো পূর্ববর্তীদের কাহিনী!
(সূরা মুতাফফিফীন- ১৩)
وَقَالُوْاۤ اَسَاطِيْرُ الْاَ وَّلِيْنَ اكْتَتَبَهَا فَهِيَ تُمْلٰى عَلَيْهِ بُكْرَةً وَّاَصِيْلًا
তারা বলে, এগুলো তো পূর্ববর্তীদের কাহিনী, যা সে লিখিয়ে নিয়েছে; এগুলো সকাল-সন্ধ্যায় তার নিকট পাঠ করা হয়। (সূরা ফুরক্বান- ৫)
وَمِنْهُمْ مَّنْ يَّسْتَمِعُ اِلَيْكَۚ وَجَعَلْنَا عَلٰى قُلُوْبِهِمْ اَكِنَّةً اَنْ يَّفْقَهُوْهُ وَفِۤيْ اٰذَانِهِمْ وَقْرًاؕ وَاِنْ يَّرَوْا كُلَّ اٰيَةٍ لَّا يُؤْمِنُوْا بِهَاؕ حَتّٰۤى اِذَا جَآءُوْكَ يُجَادِلُوْنَكَ يَقُوْلُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اِنْ هٰذَاۤ اِلَّاۤ اَسَاطِيْرُ الْاَوَّلِيْنَ
তাদের মধ্যে কতক তোমার দিকে কান পেতে রাখে, কিন্তু আমি তাদের অন্তরের উপর আবরণ দিয়ে রেখেছি, যেন তারা তা উপলদ্ধি করতে না পারে এবং তাদেরকে বধির করে রেখেছি। সুতরাং তারা সমস্ত নিদর্শন প্রত্যক্ষ করলেও তাতে (কুরআনের প্রতি) ঈমান আনবে না; এমনকি তারা যখন তোমার নিকট উপস্থিত হয়ে বিতর্কে লিপ্ত হয় তখন কাফিররা বলে, ‘এটা তো পূর্ববর্তীদের রূপকথা ব্যতীত আর কিছুই নয়।’ (সূরা আন‘আম- ২৫)
এগুলো পুরাতন মিথ্যা কথা :
وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَوْ كَانَ خَيْرًا مَّا سَبَقُوْنَاۤ اِلَيْهِؕ وَاِذْ لَمْ يَهْتَدُوْا بِهٖ فَسَيَقُوْلُوْنَ هٰذَاۤ اِفْكٌ قَدِيْمٌ
কাফিররা ঈমানদারদের সম্পর্কে বলে, যদি (এ কিতাবকে মেনে নেয়া সত্যিই) কোন ভালো কাজ হতো, তাহলে তারা এ বিষয়ে আমাদেরকে ছাড়িয়ে যেতে পারত না। যেহেতু তারা এ থেকে হেদায়াত পেল না, সেহেতু তারা বলবে যে, এটা তো পুরাতন মিথ্যা (কাহিনী) মাত্র। (সূরা আহকাফ- ১১)
وَقَالُوْا مَا هٰذَاۤ اِلَّاۤ اِفْكٌ مُّفْتَرًى
তারা আরো বলে যে, এটা তো মিথ্যা রচনা ছাড়া আর কিছু নয়। (সূরা সাবা- ৪৩)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ এর ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করার জন্য কুরাইশ নেতারা বলত, ‘এ কুরআন যদি সত্য হতো এবং মুহাম্মাদ যদি সঠিক দ্বীনের দাওয়াত দিতেন, তাহলে তার সম্প্রদায়ের নেতা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অগ্রসর হয়ে তা গ্রহণ করে নিত। এটা কী করে হতে পারে যে, কতিপয় অনভিজ্ঞ বালক এবং কিছু সংখ্যক নীচু পর্যায়ের ক্রীতদাস একটি যুক্তিসঙ্গত কথা মেনে নেবে; কিন্তু জাতির গণ্যমান্য ব্যক্তিরা তা প্রত্যাখ্যান করবে? নতুন এই দাওয়াতে অবশ্যই মন্দ কিছু আছে। তাই কওমের গণ্যমান্য ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ তা মানছে না। অতএব তোমরাও তা থেকে দূরে সরে যাও। এভাবে তারা প্রতারণামূলক যুক্তি পেশ করে সাধারণ মানুষকে এ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করত।
এগুলো এলোমেলো স্বপ্ন :
بَلْ قَالُوْاۤ اَضْغَاثُ اَحْلَامٍ ۢبَلِ افْتَرَاهُ بَلْ هُوَ شَاعِرٌۚ فَلْيَاْتِنَا بِاٰيَةٍ كَمَاۤ اُرْسِلَ الْاَ وَّلُوْنَ
তারা এটাও বলে যে, এগুলো অলীক কল্পনা- হয় সে এটা উদ্ভাবন করেছে, নতুবা সে একজন কবি। অতএব সে আমাদের নিকট একটি নিদর্শন আনয়ন করুক, যেরূপ নিদর্শনসহ পূর্ববর্তীগণ প্রেরিত হয়েছিলেন। (সূরা আম্বিয়া- ৫)
এগুলো পাগলের শেখানো বুলি :
ثُمَّ تَوَلَّوْا عَنْهُ وَقَالُوْا مُعَلَّمٌ مَّجْنُوْنٌ
অতঃপর তারা তাকে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে বলে, সে তো শেখানো (বুলি বলছে), সে তো এক পাগল। (সূরা দুখান- ১৪)
এগুলো মনগড়া উক্তি :
مَا سَمِعْنَا بِهٰذَا فِى الْمِلَّةِ الْاٰخِرَةِۚ اِنْ هٰذَاۤ اِلَّا اخْتِلَاقٌ
এরূপ কথা তো আমরা পূর্ববর্তী ধর্মে শুনিনি। এটা তো মনগড়া উক্তি ছাড়া আর কিছু নয়। (সূরা সোয়াদ- ৭, ৮)
মানুষের সহযোগিতায় এটা বানানো হয়েছে :
وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اِنْ هٰذَاۤ اِلَّاۤ اِفْكُ نِ افْتَرَاهُ وَاَعَانَهٗ عَلَيْهِ قَوْمٌ اٰخَرُوْنَۚ فَقَدْ جَآءُوْا ظُلْمًا وَّزُوْرًاۚ وَقَالُوْاۤ اَسَاطِيْرُ الْاَ وَّلِيْنَ اكْتَتَبَهَا فَهِيَ تُمْلٰى عَلَيْهِ بُكْرَةً وَّاَصِيْلًا
কাফিররা বলে, ‘এটা মিথ্যা ব্যতীত কিছুই নয়, সে এটা উদ্ভাবন করেছে এবং ভিন্ন সম্প্রদায়ের লোক তাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করেছে।’ এভাবে তারা অবশ্যই যুলুম ও মিথ্যায় উপনীত হয়েছে। তারা বলে, ‘এগুলো তো পূর্বকালের উপকথা, যা সে লিখিয়ে নিয়েছে; এগুলো সকাল-সন্ধ্যায় তার নিকট পাঠ করা হয়।’ (সূরা ফুরক্বান- ৪, ৫)
ব্যাখ্যা : তারা বলত, এ ব্যক্তি তো নিরক্ষর, সে নিজে পড়শুনা করে কোন নতুন জ্ঞান আহরণ করতে পারে না এবং ইতোপূর্বেও সে কোনদিন কারো কাছে কোন শিক্ষা অর্জন করেনি। আজ তার মুখ থেকে যেসব কথা বের হচ্ছে বিগত চল্লিশ বছর বয়সেও তো সে তা জানতো না। তাহলে এখন হঠাৎ এসব জ্ঞান আসছে কোথা থেকে? তাহলে এগুলোর উৎস নিশ্চয় আগের যুগের লোকদের কিছু কিতাব। রাতের বেলা চুপিসারে সেগুলো থেকে কিছু কিছু অংশ কারো কাছ থেকে অনুবাদ করিয়ে নেয়। অতঃপর তা দিনের বেলায় পাঠ করে আমাদেরকে শুনিয়ে দেয়। এর জবাবে বলা হয়েছে, তোমরা সত্যের প্রতি যুলুম করছ এবং পরিষ্কার বেইনসাফী ও অযৌক্তিক অভিযোগ আরোপ করছ। তোমরা তার ব্যাপারে যেসব কথা বলছ, তা কখনো বাস্তব হতে পারে না। কেননা তোমাদের কথা অনুযায়ী যদি তাই হতো, তবে তার পক্ষে তোমাদের দৃষ্টি ফাঁকি দেয়া সম্ভবপর ছিল না। তাছাড়া এটা হচ্ছে ঐ সত্তার কালাম, যিনি আকাশ ও পৃথিবীর সকল গোপন রহস্য সম্পর্কে অবগত আছেন। সুতরাং এ কালামকে নিয়ে মিথ্যা রটনা করলে, তিনিই তার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। যার কারণে প্রত্যেক শ্রোতার কাছে তাদের এ অভিযোগ এমনিতেই ছিল অর্থহীন ও অযৌক্তিক। তাই শুধুমাত্র এ অভিযোগের জবাব দেয়ার জন্য কুরআনে একে উদ্ধৃত করা হয়নি, বরং এ কথা বলার জন্য উল্লেখ করা হয়েছে যে, দেখো! সত্যের বিরুদ্ধাচরণ করার ক্ষেত্রে এরা কেমন অন্ধ হয়ে গেছে এবং কত মারাত্মক মিথ্যা ও জগন্য পথ বেছে নিয়েছে।
কুরআনের মতো এরকম কথা আমরাও বানাতে পারি :
وَاِذَا تُتْلٰى عَلَيْهِمْ اٰيَاتُنَا قَالُوْا قَدْ سَمِعْنَا لَوْ نَشَآءُ لَقُلْنَا مِثْلَ هٰذَاۤ اِنْ هٰذَاۤ اِلَّاۤ اَسَاطِيْرُ الْاَ وَّلِيْنَ
যখন তাদের নিকট আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন তারা বলে, আমরা শ্রবণ করলাম; ইচ্ছা করলে আমরাও এর অনুরূপ বলতে পারি, এটা তো শুধু পূর্ববর্তীদের কাহিনী মাত্র। (সূরা আনফাল- ৩১)
এটা সুস্পষ্ট যাদু :
وَاِذَا تُتْلٰى عَلَيْهِمْ اٰيَاتُنَا بَيِّنَاتٍ قَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِلْحَقِّ لَمَّا جَآءَهُمْ هٰذَاۤ اِلَّا سِحْرٌ مُّبِيْنٌ
যখন এদেরকে আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ পড়ে শুনানো হয়, তখন কাফিররা সে সত্য সম্পর্কে বলে, যা তাদের সামনে এসে গেছে- এটা তো স্পষ্ট যাদু ছাড়া কিছু নয়। (সূরা আহকাফ- ৭)
وَلَمَّا جَآءَهُمُ الْحَقُّ قَالُوْا هٰذَا سِحْرٌ وَّ اِنَّا بِهٖ كَافِرُوْنَ
যখন তাদের নিকট সত্য এসে গেল তখন তারা বলল, এটা তো যাদু। অবশ্যই আমরা এটাকে অস্বীকার করি। (সূরা যুখরুফ- ৩০)
এ কুরআন রাসূল ﷺ এর বানানো- এ কথার জবাব :
اَمْ يَقُوْلُوْنَ افْتَرَاهُؕ قُلْ اِنِ افْتَرَيْتُهٗ فَلَا تَمْلِكُوْنَ لِيْ مِنَ اللهِ شَيْئًاؕ هُوَ اَعْلَمُ بِمَا تُفِيْضُوْنَ فِيْهِ ؕ كَفٰى بِهٖ شَهِيْدًا ۢبَيْنِيْ وَبَيْنَكُمْؕ وَهُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ
তবে কি তারা বলতে চায় যে, রাসূল নিজেই তা রচনা করে নিয়েছে? (হে রাসূল!) আপনি বলুন, আমি যদি নিজেই রচনা করে থাকি তাহলে তোমরা আমাকে আল্লাহর পাকড়াও থেকে মোটেই বাঁচাতে পারবে না। তোমরা যেসব কথা বানাচ্ছ তা আল্লাহ ভালো করেই জানেন। আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী হিসেবে তিনিই যথেষ্ট; তিনি বড়ই ক্ষমাশীল ও দয়াবান। (সূরা আহকাফ- ৮)
اَمْ يَقُوْلُوْنَ افْتَرٰى عَلَى اللهِ كَذِبًاۚ فَاِنْ يَّشَاِ اللهُ يَخْتِمْ عَلٰى قَلْبِكَؕ وَيَمْحُ اللهُ الْبَاطِلَ وَيُحِقُّ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهٖؕ اِنَّهٗ عَلِيْمٌ ۢبِذَاتِ الصُّدُوْرِ
তারা কি বলে যে, সে (রাসূল) আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা বানিয়েছে। সুতরাং যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন, তবে তোমার হৃদয়ে মোহর মেরে দেবেন। আল্লাহ মিথ্যাকে মুছে দেন এবং নিজ বাণী দ্বারা সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেন। নিশ্চয় তিনি অন্তরে যা আছে সে বিষয়ে অবহিত। (সূরা শূরা- ২৪)
اَمْ يَقُوْلُوْنَ افْتَرَاهُؕ قُلْ اِنِ افْتَرَيْتُهٗ فَعَلَيَّ اِجْرَامِيْ وَاَنَاْ بَرِيْٓءٌ مِّمَّا تُجْرِمُوْنَ
তারা কি বলে যে, সে এটা রচনা করেছে? বলো, যদি আমি এটা রচনা করে থাকি, তবে আমিই আমার অপরাধের জন্য দায়ী হব। (কিন্তু এখন) তোমরা যে অপরাধ করছ তা হতে আমি দায়মুক্ত। (সূরা হুদ- ৩৫)
নবী ﷺ কে কেউ এটা শিখিয়ে দেয়- এ কথার জবাব :
وَلَقَدْ نَعْلَمُ اَنَّهُمْ يَقُوْلُوْنَ اِنَّمَا يُعَلِّمُهٗ بَشَرٌؕ لِسَانُ الَّذِيْ يُلْحِدُوْنَ اِلَيْهِ اَعْجَمِيٌّ وَّهٰذَا لِسَانٌ عَرَبِيٌّ مُّبِيْنٌ – - اِنَّ الَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِ لَا يَهْدِيْهِمُ اللهُ وَلَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
আমি তো জানি, তারা বলবে যে, তাকে শিক্ষা দেয় এক মানুষ। তারা যার প্রতি এটা আরোপ করে তার ভাষা তো আরবি নয়; কিন্তু কুরআনের ভাষা স্পষ্ট আরবি। যারা আল্লাহর নিদর্শনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না আল্লাহ তাদেরকে হেদায়াত করেন না; আর তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাসিত্ম। (সূরা নাহল- ১০৩, ১০৪)
কুরআন কবির কাব্য- এ কথার জবাব :
فَلَاۤ اُقْسِمُ بِمَا تُبْصِرُوْنَ ‐ - وَمَا لَا تُبْصِرُوْنَ ‐ - اِنَّهٗ لَقَوْلُ رَسُوْلٍ كَرِيْمٍ ‐ - وَمَا هُوَ بِقَوْلِ شَاعِرٍؕ قَلِيْلًا مَّا تُؤْمِنُوْنَ
আমি ঐ জিনিসের শপথ করি, যা তোমরা দেখতে পাও এবং যা তোমরা দেখতে পাও না। নিশ্চয় এটা (কুরআন) এক সম্মানিত রাসূলের আনীত বাণী, এটা কোন কবির কথা নয়; তোমরা তো খুব অল্পই বিশ্বাস স্থাপন করে থাক। (সূরা হাক্কাহ, ৩৮-৪১)
وَمَا عَلَّمْنَاهُ الشِّعْرَ وَمَا يَنْۢبَغِيْ لَهٗۤ اِنْ هُوَ اِلَّا ذِكْرٌ وَّقُرْاٰنٌ مُّبِيْنٌ
আমি তাঁকে (রাসূলকে) কবিতা শিক্ষা দেইনি, আর তাঁর জন্য তা শোভনীয়ও নয়। এটা তো কেবল এক উপদেশ এবং সুস্পষ্ট কুরআন। (সূরা ইয়াসীন- ৬৯)
ব্যাখ্যা : কবিদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, সেখানে কোথাও প্রেমচর্চা ও শরাব পানের বিষয় আলোচিত হয়, কোথাও অশ্লীল কাহিনী বর্ণনা করা হয়, কোথাও মিথ্যা আসর বসে, কোথাও কারো নিন্দাবাদ করা হয়, কোথাও কারো অযথা প্রশংসা করা হয়, কোথাও প্রতিশোধের আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়। তাদের নিজস্ব চিন্তা ও বাকশক্তি ব্যবহার করার কোন একটি নির্ধারিত পথ নেই। তাদের কণ্ঠ থেকে যা বের হয় তা সত্য ও ন্যায় কি না সেদিকে দৃষ্টি রাখার কোন প্রয়োজনই অনুভব করা হয় না। সুতরাং যারা কবিদের এ পরিচিত বৈশিষ্ট্যাবলি সম্পর্কে জ্ঞান রাখে, তারা কেমন করে এ কুরআনের বাহককে কবিত্বের অভিযোগে অভিযুক্ত করতে পারে? কারণ তাঁর বক্তব্য দ্ব্যর্থহীন, তাঁর পথ একেবারে সুস্পষ্ট ও নির্ধারিত এবং সত্য ও ন্যায়ের দিকে আহবান করা ছাড়া তাঁর অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই।
কুরআন গণকের কথা- এ কথার জবাব :
وَلَا بِقَوْلِ كَاهِنٍؕ قَلِيْلًا مَّا تَذَكَّرُوْنَ – تَنْزِيْلٌ مِّنْ رَّبِّ الْعَالَمِيْنَ
এটা কোন গণকের কথা নয়, তোমরা খুব অল্পই উপদেশ গ্রহণ করে থাক। এটা জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট হতে অবতীর্ণ। (সূরা হাক্কাহ- ৪২, ৪৩)
কুরআন পাগলের কথা- এ কথার জবাব :
اِنَّهٗ لَقَوْلُ رَسُوْلٍ كَرِيْمٍ – - ذِيْ قُوَّةٍ عِنْدَ ذِى الْعَرْشِ مَكِيْنٍ – - مُطَاعٍ ثَمَّ اَمِيْنٍ – - وَمَا صَاحِبُكُمْ بِمَجْنُوْنٍ
নিশ্চয় এ কুরআন সম্মানিত বার্তাবাহকের আনীত বাণী। সে শক্তিশালী আরশের মালিকের নিকট মর্যাদাবান, সেখানে তাকে মান্য করা হয় এবং সে বিশ্বাসভাজন। আর তোমাদের সাথি (মুহাম্মাদ) পাগল নয়। (সূরা তাকভীর, ১৯-২২)
কুরআন শয়তানের শেখানো কথা- এ কথার জবাব :
وَمَا هُوَ بِقَوْلِ شَيْطَانٍ رَّجِيْمٍ
এটা (কুরআন) কোন অভিশপ্ত শয়তানের কথা নয়। (সূরা তাকভীর- ২৫)
وَمَا تَنَزَّلَتْ بِهِ الشَّيَاطِيْنُ ‐ - وَمَا يَنْۢبَغِيْ لَهُمْ وَمَا يَسْتَطِيْعُوْنَ ‐ - اِنَّهُمْ عَنِ السَّمْعِ لَمَعْزُوْلُوْنَ
শয়তানরা তা (কুরআন) সহ অবতীর্ণ হয়নি। তারা এ কাজের যোগ্য নয় এবং তারা এর সামর্থ্যও রাখে না। তাদেরকে তো শ্রবণের সুযোগ হতে দূরে রাখা হয়েছে। (সূরা শু‘আরা, ২১০-২১২)
আল্লাহ কিছুই নাযিল করেননি- এ কথার জবাব :
وَمَا قَدَرُوا اللهَ حَقَّ قَدْرِهٖۤ اِذْ قَالُوْا مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ عَلٰى بَشَرٍ مِّنْ شَيْءٍؕ قُلْ مَنْ اَنْزَلَ الْكِتَابَ الَّذِيْ جَآءَ بِهٖ مُوْسٰى نُوْرًا وَّهُدًى لِّلنَّاسِ تَجْعَلُوْنَهٗ قَرَاطِيْسَ تُبْدُوْنَهَا وَتُخْفُوْنَ كَثِيْرًاۚ وَعُلِّمْتُمْ مَّا لَمْ تَعْلَمُوْاۤ اَنْتُمْ وَلَاۤ اٰبَآؤُكُمْؕ قُلِ اللهُ ثُمَّ ذَرْهُمْ فِيْ خَوْضِهِمْ يَلْعَبُوْنَ
তারা আল্লাহর যথার্থ মর্যাদা উপলব্ধি করেনি। যখন তারা বলে, আল্লাহ মানুষের নিকট কিছুই নাযিল করেননি। (তখন তাদেরকে) বলো, কে নাযিল করেছেন মূসার আনীত কিতাব, যা ছিল মানুষের জন্য আলো ও পথনির্দেশ? তা তোমরা বিভিন্ন পৃষ্ঠায় লিপিবদ্ধ করে কিছু প্রকাশ কর আর এর অধিকাংশই গোপন রাখ। (এটা ছিল এমন কিতাব, যাতে) তোমরা যা জানতে না এবং তোমাদের পিতৃপুরুষরা যা জানত না তাও শিক্ষা দেয়া হয়েছিল? বলো, ‘আল্লাহই’ (এটা নাযিল করেছেন) অতএব তুমি তাদেরকে নিরর্থক আলোচনায় মত্ত থাকতে দাও। (সূরা আন‘আম- ৯১)
এটা ধনী লোকের উপর অবতীর্ণ হলো না কেন- এ কথার জবাব :
وَقَالُوْا لَوْلَا نُزِّلَ هٰذَا الْقُرْاٰنُ عَلٰى رَجُلٍ مِّنَ الْقَرْيَتَيْنِ عَظِيْمٍ – - اَهُمْ يَقْسِمُوْنَ رَحْمَةَ رَبِّكَؕ نَحْنُ قَسَمْنَا بَيْنَهُمْ مَّعِيْشَتَهُمْ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَرَفَعْنَا بَعْضَهُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِّيَتَّخِذَ بَعْضُهُمْ بَعْضًا سُخْرِيًّاؕ وَرَحْمَةُ رَبِّكَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُوْنَ
তারা বলে, এ কুরআন দু’টি জনপদের কোন প্রতাপশালী ব্যক্তির উপর অবতীর্ণ করা হলো না কেন? তারা কি তোমার প্রতিপালকের রহমত বণ্টন করে? আমিই তাদেরকে তাদের পার্থিব জীবনে জীবিকা বণ্টন করি এবং একজনকে অপরজনের উপর মর্যাদায় উন্নীত করি, যাতে একে অপর থেকে সেবা নিতে পারে। আর তারা যা জমা করে তা হতে তোমার প্রতিপালকের রহমত খুবই উৎকৃষ্ট। (সূরা যুখরুফ- ৩১, ৩২)
কুরআন অন্য কোন ভাষায় নাযিল হলো না কেন- এ কথার জবাব :
وَلَوْ جَعَلْنَاهُ قُرْاٰنًا اَعْجَمِيًّا لَّقَالُوْا لَوْلَا فُصِّلَتْ اٰيَاتُهٗؕ اَ اَعْجَمِيٌّ وَّعَرَبِيٌّؕ قُلْ هُوَ لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا هُدًى وَّشِفَآءٌؕ وَالَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ فِۤيْ اٰذَانِهِمْ وَقْرٌ وَّهُوَ عَلَيْهِمْ عَمًىؕ اُولٰٓئِكَ يُنَادَوْنَ مِنْ مَّكَانٍ ۢبَعِيْدٍ
যদি আমি অনারবি ভাষায় কুরআন অবতীর্ণ করতাম তবে অবশ্যই তারা বলত, এর আয়াতগুলো বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়নি কেন? কী আশ্চর্য যে, এর ভাষা অনারবি, অথচ রাসূল আরবি ভাষী। বলো, মুমিনদের জন্য এটা পথনির্দেশক ও (মানুষের যাবতীয় রোগের) প্রতিকার; কিন্তু যারা অবিশ্বাসী তাদের কর্ণে রয়েছে বধিরতা এবং কুরআন হবে তাদের জন্য অন্ধত্ব। তারা এমন, যেন তাদেরকে বহু দূর হতে আহবান করা হয়। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৪৪)
কুরআন এক সাথে নাযিল হলো না কেন- এর প্রশ্নের জবাব :
وَقُرْاٰنًا فَرَقْنَاهُ لِتَقْرَاَهٗ عَلَى النَّاسِ عَلٰى مُكْثٍ وَّنَزَّلْنَاهُ تَنْزِيْلًا
আমি কুরআনকে (খন্ডাকারে) বিভক্ত করে দিয়েছি, যাতে করে তুমিও ক্রমে ক্রমে তা মানুষদের সামনে পড়তে পার। আর আমি তা ধারাবাহিকভাবে অবতীর্ণ করেছি। (সূরা বনী ইসরাঈল- ১০৬)
ব্যাখ্যা : স্মৃতির ভান্ডারে একে হুবহু ও অক্ষরে অক্ষরে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। লেখার আকারে নয়, বরং একজন নিরক্ষর নবীর মাধ্যমে নিরক্ষর মানব গোষ্ঠীর মধ্যে মৌখিক ভাষণের আকারে এর প্রচার ও প্রসার হচ্ছে। এর শিক্ষাগুলো ভালোভাবে হৃদয়ঙ্গম করা যেতে পারে। এজন্য থেমে থেমে, ছোট ছোট বাক্যাকারে কথা বলা বেশি উপযোগী। এ কিতাব যে জীবনপদ্ধতি শেখায় তা পর্যায়ক্রমে নাযিল হওয়াটাই বেশি যুক্তিসঙ্গত। হক ও বাতিলের লাগাতার সংঘাতের সময় নবী ও তাঁর অনুসারীদের মনে সাহস সঞ্চার করে যেতে হবে। এজন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে যাবতীয় বাধা-বিপত্তির মুকাবিলা করার জন্য বার বার বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তাদের কাছে পয়গাম আসা বেশি কার্যকর হয়ে থাকে। মানুষের বুদ্ধিমত্তা, বোধশক্তি ও গ্রহণশক্তির মধ্যে ত্রুটি রয়েছে, যেজন্য একই সঙ্গে সকল কথা বুঝাতে পারে না এবং বুঝানো সমস্ত কথা তার মনে দৃঢ়ভাবে বদ্ধমূলও হতে পারে না। তাই মহান আল্লাহ নিজ প্রজ্ঞার বলে এ ব্যবস্থা করেন যে, জিবরাঈল (আঃ) এ কালামকে অল্প অল্প করে নিয়ে আসবেন। একই কথাকে বার বার বিভিন্ন পদ্ধতিতে হৃদয়ঙ্গম করার চেষ্টা করবেন, যাতে বিভিন্ন যোগ্যতাসম্পন্ন সত্যানুসন্ধানীরা ঈমান আনতে পারে এবং ঈমান আনার পর তাদের জ্ঞান, বিশ্বাস, প্রত্যয়, বোধ ও দৃষ্টি শক্তিশালী হতে পারে।
اَمْ يَقُوْلُوْنَ افْتَرَاهُؕ قُلْ اِنِ افْتَرَيْتُهٗ فَلَا تَمْلِكُوْنَ لِيْ مِنَ اللهِ شَيْئًاؕ هُوَ اَعْلَمُ بِمَا تُفِيْضُوْنَ فِيْهِ ؕ كَفٰى بِهٖ شَهِيْدًا ۢبَيْنِيْ وَبَيْنَكُمْؕ وَهُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ
তবে কি তারা বলতে চায় যে, রাসূল নিজেই তা রচনা করে নিয়েছে? (হে রাসূল!) আপনি বলুন, আমি যদি নিজেই রচনা করে থাকি তাহলে তোমরা আমাকে আল্লাহর পাকড়াও থেকে মোটেই বাঁচাতে পারবে না। তোমরা যেসব কথা বানাচ্ছ তা আল্লাহ ভালো করেই জানেন। আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী হিসেবে তিনিই যথেষ্ট; তিনি বড়ই ক্ষমাশীল ও দয়াবান। (সূরা আহকাফ- ৮)
اَمْ يَقُوْلُوْنَ افْتَرٰى عَلَى اللهِ كَذِبًاۚ فَاِنْ يَّشَاِ اللهُ يَخْتِمْ عَلٰى قَلْبِكَؕ وَيَمْحُ اللهُ الْبَاطِلَ وَيُحِقُّ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهٖؕ اِنَّهٗ عَلِيْمٌ ۢبِذَاتِ الصُّدُوْرِ
তারা কি বলে যে, সে (রাসূল) আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা বানিয়েছে। সুতরাং যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন, তবে তোমার হৃদয়ে মোহর মেরে দেবেন। আল্লাহ মিথ্যাকে মুছে দেন এবং নিজ বাণী দ্বারা সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেন। নিশ্চয় তিনি অন্তরে যা আছে সে বিষয়ে অবহিত। (সূরা শূরা- ২৪)
اَمْ يَقُوْلُوْنَ افْتَرَاهُؕ قُلْ اِنِ افْتَرَيْتُهٗ فَعَلَيَّ اِجْرَامِيْ وَاَنَاْ بَرِيْٓءٌ مِّمَّا تُجْرِمُوْنَ
তারা কি বলে যে, সে এটা রচনা করেছে? বলো, যদি আমি এটা রচনা করে থাকি, তবে আমিই আমার অপরাধের জন্য দায়ী হব। (কিন্তু এখন) তোমরা যে অপরাধ করছ তা হতে আমি দায়মুক্ত। (সূরা হুদ- ৩৫)
নবী ﷺ কে কেউ এটা শিখিয়ে দেয়- এ কথার জবাব :
وَلَقَدْ نَعْلَمُ اَنَّهُمْ يَقُوْلُوْنَ اِنَّمَا يُعَلِّمُهٗ بَشَرٌؕ لِسَانُ الَّذِيْ يُلْحِدُوْنَ اِلَيْهِ اَعْجَمِيٌّ وَّهٰذَا لِسَانٌ عَرَبِيٌّ مُّبِيْنٌ – - اِنَّ الَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِ لَا يَهْدِيْهِمُ اللهُ وَلَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
আমি তো জানি, তারা বলবে যে, তাকে শিক্ষা দেয় এক মানুষ। তারা যার প্রতি এটা আরোপ করে তার ভাষা তো আরবি নয়; কিন্তু কুরআনের ভাষা স্পষ্ট আরবি। যারা আল্লাহর নিদর্শনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না আল্লাহ তাদেরকে হেদায়াত করেন না; আর তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাসিত্ম। (সূরা নাহল- ১০৩, ১০৪)
কুরআন কবির কাব্য- এ কথার জবাব :
فَلَاۤ اُقْسِمُ بِمَا تُبْصِرُوْنَ ‐ - وَمَا لَا تُبْصِرُوْنَ ‐ - اِنَّهٗ لَقَوْلُ رَسُوْلٍ كَرِيْمٍ ‐ - وَمَا هُوَ بِقَوْلِ شَاعِرٍؕ قَلِيْلًا مَّا تُؤْمِنُوْنَ
আমি ঐ জিনিসের শপথ করি, যা তোমরা দেখতে পাও এবং যা তোমরা দেখতে পাও না। নিশ্চয় এটা (কুরআন) এক সম্মানিত রাসূলের আনীত বাণী, এটা কোন কবির কথা নয়; তোমরা তো খুব অল্পই বিশ্বাস স্থাপন করে থাক। (সূরা হাক্কাহ, ৩৮-৪১)
وَمَا عَلَّمْنَاهُ الشِّعْرَ وَمَا يَنْۢبَغِيْ لَهٗۤ اِنْ هُوَ اِلَّا ذِكْرٌ وَّقُرْاٰنٌ مُّبِيْنٌ
আমি তাঁকে (রাসূলকে) কবিতা শিক্ষা দেইনি, আর তাঁর জন্য তা শোভনীয়ও নয়। এটা তো কেবল এক উপদেশ এবং সুস্পষ্ট কুরআন। (সূরা ইয়াসীন- ৬৯)
ব্যাখ্যা : কবিদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, সেখানে কোথাও প্রেমচর্চা ও শরাব পানের বিষয় আলোচিত হয়, কোথাও অশ্লীল কাহিনী বর্ণনা করা হয়, কোথাও মিথ্যা আসর বসে, কোথাও কারো নিন্দাবাদ করা হয়, কোথাও কারো অযথা প্রশংসা করা হয়, কোথাও প্রতিশোধের আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়। তাদের নিজস্ব চিন্তা ও বাকশক্তি ব্যবহার করার কোন একটি নির্ধারিত পথ নেই। তাদের কণ্ঠ থেকে যা বের হয় তা সত্য ও ন্যায় কি না সেদিকে দৃষ্টি রাখার কোন প্রয়োজনই অনুভব করা হয় না। সুতরাং যারা কবিদের এ পরিচিত বৈশিষ্ট্যাবলি সম্পর্কে জ্ঞান রাখে, তারা কেমন করে এ কুরআনের বাহককে কবিত্বের অভিযোগে অভিযুক্ত করতে পারে? কারণ তাঁর বক্তব্য দ্ব্যর্থহীন, তাঁর পথ একেবারে সুস্পষ্ট ও নির্ধারিত এবং সত্য ও ন্যায়ের দিকে আহবান করা ছাড়া তাঁর অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই।
কুরআন গণকের কথা- এ কথার জবাব :
وَلَا بِقَوْلِ كَاهِنٍؕ قَلِيْلًا مَّا تَذَكَّرُوْنَ – تَنْزِيْلٌ مِّنْ رَّبِّ الْعَالَمِيْنَ
এটা কোন গণকের কথা নয়, তোমরা খুব অল্পই উপদেশ গ্রহণ করে থাক। এটা জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট হতে অবতীর্ণ। (সূরা হাক্কাহ- ৪২, ৪৩)
কুরআন পাগলের কথা- এ কথার জবাব :
اِنَّهٗ لَقَوْلُ رَسُوْلٍ كَرِيْمٍ – - ذِيْ قُوَّةٍ عِنْدَ ذِى الْعَرْشِ مَكِيْنٍ – - مُطَاعٍ ثَمَّ اَمِيْنٍ – - وَمَا صَاحِبُكُمْ بِمَجْنُوْنٍ
নিশ্চয় এ কুরআন সম্মানিত বার্তাবাহকের আনীত বাণী। সে শক্তিশালী আরশের মালিকের নিকট মর্যাদাবান, সেখানে তাকে মান্য করা হয় এবং সে বিশ্বাসভাজন। আর তোমাদের সাথি (মুহাম্মাদ) পাগল নয়। (সূরা তাকভীর, ১৯-২২)
কুরআন শয়তানের শেখানো কথা- এ কথার জবাব :
وَمَا هُوَ بِقَوْلِ شَيْطَانٍ رَّجِيْمٍ
এটা (কুরআন) কোন অভিশপ্ত শয়তানের কথা নয়। (সূরা তাকভীর- ২৫)
وَمَا تَنَزَّلَتْ بِهِ الشَّيَاطِيْنُ ‐ - وَمَا يَنْۢبَغِيْ لَهُمْ وَمَا يَسْتَطِيْعُوْنَ ‐ - اِنَّهُمْ عَنِ السَّمْعِ لَمَعْزُوْلُوْنَ
শয়তানরা তা (কুরআন) সহ অবতীর্ণ হয়নি। তারা এ কাজের যোগ্য নয় এবং তারা এর সামর্থ্যও রাখে না। তাদেরকে তো শ্রবণের সুযোগ হতে দূরে রাখা হয়েছে। (সূরা শু‘আরা, ২১০-২১২)
আল্লাহ কিছুই নাযিল করেননি- এ কথার জবাব :
وَمَا قَدَرُوا اللهَ حَقَّ قَدْرِهٖۤ اِذْ قَالُوْا مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ عَلٰى بَشَرٍ مِّنْ شَيْءٍؕ قُلْ مَنْ اَنْزَلَ الْكِتَابَ الَّذِيْ جَآءَ بِهٖ مُوْسٰى نُوْرًا وَّهُدًى لِّلنَّاسِ تَجْعَلُوْنَهٗ قَرَاطِيْسَ تُبْدُوْنَهَا وَتُخْفُوْنَ كَثِيْرًاۚ وَعُلِّمْتُمْ مَّا لَمْ تَعْلَمُوْاۤ اَنْتُمْ وَلَاۤ اٰبَآؤُكُمْؕ قُلِ اللهُ ثُمَّ ذَرْهُمْ فِيْ خَوْضِهِمْ يَلْعَبُوْنَ
তারা আল্লাহর যথার্থ মর্যাদা উপলব্ধি করেনি। যখন তারা বলে, আল্লাহ মানুষের নিকট কিছুই নাযিল করেননি। (তখন তাদেরকে) বলো, কে নাযিল করেছেন মূসার আনীত কিতাব, যা ছিল মানুষের জন্য আলো ও পথনির্দেশ? তা তোমরা বিভিন্ন পৃষ্ঠায় লিপিবদ্ধ করে কিছু প্রকাশ কর আর এর অধিকাংশই গোপন রাখ। (এটা ছিল এমন কিতাব, যাতে) তোমরা যা জানতে না এবং তোমাদের পিতৃপুরুষরা যা জানত না তাও শিক্ষা দেয়া হয়েছিল? বলো, ‘আল্লাহই’ (এটা নাযিল করেছেন) অতএব তুমি তাদেরকে নিরর্থক আলোচনায় মত্ত থাকতে দাও। (সূরা আন‘আম- ৯১)
এটা ধনী লোকের উপর অবতীর্ণ হলো না কেন- এ কথার জবাব :
وَقَالُوْا لَوْلَا نُزِّلَ هٰذَا الْقُرْاٰنُ عَلٰى رَجُلٍ مِّنَ الْقَرْيَتَيْنِ عَظِيْمٍ – - اَهُمْ يَقْسِمُوْنَ رَحْمَةَ رَبِّكَؕ نَحْنُ قَسَمْنَا بَيْنَهُمْ مَّعِيْشَتَهُمْ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَرَفَعْنَا بَعْضَهُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِّيَتَّخِذَ بَعْضُهُمْ بَعْضًا سُخْرِيًّاؕ وَرَحْمَةُ رَبِّكَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُوْنَ
তারা বলে, এ কুরআন দু’টি জনপদের কোন প্রতাপশালী ব্যক্তির উপর অবতীর্ণ করা হলো না কেন? তারা কি তোমার প্রতিপালকের রহমত বণ্টন করে? আমিই তাদেরকে তাদের পার্থিব জীবনে জীবিকা বণ্টন করি এবং একজনকে অপরজনের উপর মর্যাদায় উন্নীত করি, যাতে একে অপর থেকে সেবা নিতে পারে। আর তারা যা জমা করে তা হতে তোমার প্রতিপালকের রহমত খুবই উৎকৃষ্ট। (সূরা যুখরুফ- ৩১, ৩২)
কুরআন অন্য কোন ভাষায় নাযিল হলো না কেন- এ কথার জবাব :
وَلَوْ جَعَلْنَاهُ قُرْاٰنًا اَعْجَمِيًّا لَّقَالُوْا لَوْلَا فُصِّلَتْ اٰيَاتُهٗؕ اَ اَعْجَمِيٌّ وَّعَرَبِيٌّؕ قُلْ هُوَ لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا هُدًى وَّشِفَآءٌؕ وَالَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ فِۤيْ اٰذَانِهِمْ وَقْرٌ وَّهُوَ عَلَيْهِمْ عَمًىؕ اُولٰٓئِكَ يُنَادَوْنَ مِنْ مَّكَانٍ ۢبَعِيْدٍ
যদি আমি অনারবি ভাষায় কুরআন অবতীর্ণ করতাম তবে অবশ্যই তারা বলত, এর আয়াতগুলো বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়নি কেন? কী আশ্চর্য যে, এর ভাষা অনারবি, অথচ রাসূল আরবি ভাষী। বলো, মুমিনদের জন্য এটা পথনির্দেশক ও (মানুষের যাবতীয় রোগের) প্রতিকার; কিন্তু যারা অবিশ্বাসী তাদের কর্ণে রয়েছে বধিরতা এবং কুরআন হবে তাদের জন্য অন্ধত্ব। তারা এমন, যেন তাদেরকে বহু দূর হতে আহবান করা হয়। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৪৪)
কুরআন এক সাথে নাযিল হলো না কেন- এর প্রশ্নের জবাব :
وَقُرْاٰنًا فَرَقْنَاهُ لِتَقْرَاَهٗ عَلَى النَّاسِ عَلٰى مُكْثٍ وَّنَزَّلْنَاهُ تَنْزِيْلًا
আমি কুরআনকে (খন্ডাকারে) বিভক্ত করে দিয়েছি, যাতে করে তুমিও ক্রমে ক্রমে তা মানুষদের সামনে পড়তে পার। আর আমি তা ধারাবাহিকভাবে অবতীর্ণ করেছি। (সূরা বনী ইসরাঈল- ১০৬)
ব্যাখ্যা : স্মৃতির ভান্ডারে একে হুবহু ও অক্ষরে অক্ষরে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। লেখার আকারে নয়, বরং একজন নিরক্ষর নবীর মাধ্যমে নিরক্ষর মানব গোষ্ঠীর মধ্যে মৌখিক ভাষণের আকারে এর প্রচার ও প্রসার হচ্ছে। এর শিক্ষাগুলো ভালোভাবে হৃদয়ঙ্গম করা যেতে পারে। এজন্য থেমে থেমে, ছোট ছোট বাক্যাকারে কথা বলা বেশি উপযোগী। এ কিতাব যে জীবনপদ্ধতি শেখায় তা পর্যায়ক্রমে নাযিল হওয়াটাই বেশি যুক্তিসঙ্গত। হক ও বাতিলের লাগাতার সংঘাতের সময় নবী ও তাঁর অনুসারীদের মনে সাহস সঞ্চার করে যেতে হবে। এজন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে যাবতীয় বাধা-বিপত্তির মুকাবিলা করার জন্য বার বার বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তাদের কাছে পয়গাম আসা বেশি কার্যকর হয়ে থাকে। মানুষের বুদ্ধিমত্তা, বোধশক্তি ও গ্রহণশক্তির মধ্যে ত্রুটি রয়েছে, যেজন্য একই সঙ্গে সকল কথা বুঝাতে পারে না এবং বুঝানো সমস্ত কথা তার মনে দৃঢ়ভাবে বদ্ধমূলও হতে পারে না। তাই মহান আল্লাহ নিজ প্রজ্ঞার বলে এ ব্যবস্থা করেন যে, জিবরাঈল (আঃ) এ কালামকে অল্প অল্প করে নিয়ে আসবেন। একই কথাকে বার বার বিভিন্ন পদ্ধতিতে হৃদয়ঙ্গম করার চেষ্টা করবেন, যাতে বিভিন্ন যোগ্যতাসম্পন্ন সত্যানুসন্ধানীরা ঈমান আনতে পারে এবং ঈমান আনার পর তাদের জ্ঞান, বিশ্বাস, প্রত্যয়, বোধ ও দৃষ্টি শক্তিশালী হতে পারে।
মুমিন কুরআন দ্বারা হেদায়াত পায়, আর অন্যরা পথভ্রষ্ট হয় :
وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْاٰنِ مَا هُوَ شِفَآءٌ وَّرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ وَلَا يَزِيْدُ الظَّالِمِيْنَ اِلَّا خَسَارًا
আমি কুরআন অবতীর্ণ করি, যা মুমিনদের জন্য আরোগ্য ও রহমতস্বরূপ, কিন্তু সেটা যালিমদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৮২)
ব্যাখ্যা : যারা এ কুরআনকে নিজেদের পথপ্রদর্শক এবং নিজেদের জন্য আইনের কিতাব বলে মেনে নেয়, তাদের জন্য এটি আল্লাহর রহমত এবং যাবতীয় মানসিক ও নৈতিক রোগের চিকিৎসা। কিন্তু যেসব যালিম এর পথনির্দেশনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে নিজেদের উপর যুলুম করে, এ কুরআন তাদেরকে আরো বেশি ক্ষতির মধ্যে ঠেলে দেয়। এর কারণ যতদিন কুরআন আসেনি, ততদিন তাদের ক্ষতি ছিল নিছক অজ্ঞতার ক্ষতি। কিন্তু যখন কুরআন তাদের সামনে এসে গেল এবং তা হক ও বাতিলের পার্থক্য সুস্পষ্ট করে দেখিয়ে দিল, তখন তাদের উপর আল্লাহর দাবী অকাট্যভাবে সঠিক প্রমাণিত হয়ে গেল। এখন যদি তারা একে প্রত্যাখ্যান করে গোমরাহীর উপর অবিচল থাকার জন্য জোর দেয়, তাহলে এর অর্থ হয়- তারা অজ্ঞ নয় বরং যালিম ও বাতিলপন্থী। এখন তাদের অবস্থা হবে এমন ব্যক্তির মতো, যে বিষ ও বিষের প্রতিষেধক উভয়টি দেখে বিষকে বেছে নেয়।
وَاِذَا مَاۤ اُنْزِلَتْ سُوْرَةٌ فَمِنْهُمْ مَّنْ يَّقُوْلُ اَيُّكُمْ زَادَتْهُ هٰذِهٖۤ اِيْمَانًاۚ فَاَمَّا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا فَزَادَتْهُمْ اِيْمَانًا وَّهُمْ يَسْتَبْشِرُوْنَ – وَاَمَّا الَّذِيْنَ فِيْ قُلُوْبِهِمْ مَّرَضٌ فَزَادَتْهُمْ رِجْسًا اِلٰى رِجْسِهِمْ وَمَاتُوْا وَهُمْ كَافِرُوْنَ
যখনই কোন সূরা অবতীর্ণ হয় তখন তাদের কেউ কেউ বলে, এটা তোমাদের মধ্যে কার ঈমান বৃদ্ধি করল? (প্রকৃতপক্ষে) যারা মুমিন এটা তাদেরই ঈমান বৃদ্ধি করে এবং তারাই আনন্দিত হয়। আর যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে, এটা তাদের অপবিত্রতার সাথে আরো অপবিত্রতা যুক্ত করে এবং তাদের মৃত্যু ঘটে কাফির অবস্থায়। (সূরা তাওবা- ১২৪, ১২৫)
ব্যাখ্যা : একই কথা যা হেদায়াতপ্রাপ্ত লোকদের জন্য আরো হেদায়াতের কারণ হতো। অথচ তা শুনে কাফির ও মুনাফিকরা জিজ্ঞেস করত যে, একটু আগে তিনি কী বলেছেন? যে মজলিস থেকে এ দুর্ভাগারা অযথা সময় নষ্ট করে উঠে যেত, সৌভাগ্যবানরা সে মজলিস থেকেই জ্ঞানের এক নতুন ভান্ডার ভরে নিয়ে যেত। তারা নিজেদের মধ্যে যে তাক্বওয়ার যোগ্যতা সৃষ্টি করে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে সে তাওফীকই দান করেন।
هُوَ الَّذِيْۤ اَنْزَلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ مِنْهُ اٰيَاتٌ مُّحْكَمَاتٌ هُنَّ اُمُّ الْكِتَابِ وَاُخَرُ مُتَشَابِهَاتٌؕ فَاَمَّا الَّذِيْنَ فِيْ قُلُوْبِهِمْ زَيْغٌ فَيَتَّبِعُوْنَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ ابْتِغَآءَ الْفِتْنَةِ وَابْتِغَآءَ تَاْوِيْلِهٖۚ وَمَا يَعْلَمُ تَاْوِيْلَهٗۤ اِلَّا اللهُ وَالرَّاسِخُوْنَ فِى الْعِلْمِ يَقُوْلُوْنَ اٰمَنَّا بِهٖ كُلٌّ مِّنْ عِنْدِ رَبِّنَاۚ وَمَا يَذَّكَّرُ اِلَّاۤ اُولُو الْاَ لْبَابِ
তিনিই আপনার উপর কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। এর মধ্যে কতক আয়াত রয়েছে মুহকামাত (স্পষ্ট), এগুলোই কিতাবের মূল; আর অন্যগুলো মুতাশাবিহাত (অস্পষ্ট)। সুতরাং যাদের অন্তরে বক্রতা রয়েছে তারা ফেতনা এবং ব্যাখ্যা তালাশের উদ্দেশ্যে মুতাশাবিহাতের অনুসরণ করে। অথচ এগুলোর ব্যাখ্যা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। আর যারা গভীর জ্ঞানের অধিকারী তারা বলে, আমরা এগুলোতে ঈমান এনেছি, সবই আমাদের রবের পক্ষ থেকে। আর বুদ্ধিমান ব্যক্তি ছাড়া কেউ (এ থেকে) উপদেশ গ্রহণ করে না। (সূরা আলে ইমরান- ৭)
ব্যাখ্যা : ঈমানদারদের মধ্যে এ বাণী হৃদয়ের শীতলতা ও আত্মার খাদ্য হয়ে প্রবেশ করে। কিন্তু অপরাধীদের অন্তরে তা বারুদের মতো আঘাত করে এবং তা শুনে তাদের মনে আগুন জ্বলে উঠে। যারা সত্য ও দ্বীনের কথা বুঝতে চায় না, সত্যের মর্ম অনুসন্ধান করে না, তাদের দৃষ্টি কেবল শব্দের বাইরের কাঠামোর উপর নিবদ্ধ থাকে। তারা ঐ জিনিসগুলো থেকে বিপরীত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সত্য থেকে আরো দূরে চলে যায়। অপর দিকে যারা নিজেরাই সত্যসন্ধানী এবং সঠিক দৃষ্টিশক্তির অধিকারী তারা ঐসব কথার মধ্যে সূক্ষ্ম জ্ঞানের আলো দেখতে পায়।
وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْاٰنِ مَا هُوَ شِفَآءٌ وَّرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ وَلَا يَزِيْدُ الظَّالِمِيْنَ اِلَّا خَسَارًا
আমি কুরআন অবতীর্ণ করি, যা মুমিনদের জন্য আরোগ্য ও রহমতস্বরূপ, কিন্তু সেটা যালিমদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৮২)
ব্যাখ্যা : যারা এ কুরআনকে নিজেদের পথপ্রদর্শক এবং নিজেদের জন্য আইনের কিতাব বলে মেনে নেয়, তাদের জন্য এটি আল্লাহর রহমত এবং যাবতীয় মানসিক ও নৈতিক রোগের চিকিৎসা। কিন্তু যেসব যালিম এর পথনির্দেশনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে নিজেদের উপর যুলুম করে, এ কুরআন তাদেরকে আরো বেশি ক্ষতির মধ্যে ঠেলে দেয়। এর কারণ যতদিন কুরআন আসেনি, ততদিন তাদের ক্ষতি ছিল নিছক অজ্ঞতার ক্ষতি। কিন্তু যখন কুরআন তাদের সামনে এসে গেল এবং তা হক ও বাতিলের পার্থক্য সুস্পষ্ট করে দেখিয়ে দিল, তখন তাদের উপর আল্লাহর দাবী অকাট্যভাবে সঠিক প্রমাণিত হয়ে গেল। এখন যদি তারা একে প্রত্যাখ্যান করে গোমরাহীর উপর অবিচল থাকার জন্য জোর দেয়, তাহলে এর অর্থ হয়- তারা অজ্ঞ নয় বরং যালিম ও বাতিলপন্থী। এখন তাদের অবস্থা হবে এমন ব্যক্তির মতো, যে বিষ ও বিষের প্রতিষেধক উভয়টি দেখে বিষকে বেছে নেয়।
وَاِذَا مَاۤ اُنْزِلَتْ سُوْرَةٌ فَمِنْهُمْ مَّنْ يَّقُوْلُ اَيُّكُمْ زَادَتْهُ هٰذِهٖۤ اِيْمَانًاۚ فَاَمَّا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا فَزَادَتْهُمْ اِيْمَانًا وَّهُمْ يَسْتَبْشِرُوْنَ – وَاَمَّا الَّذِيْنَ فِيْ قُلُوْبِهِمْ مَّرَضٌ فَزَادَتْهُمْ رِجْسًا اِلٰى رِجْسِهِمْ وَمَاتُوْا وَهُمْ كَافِرُوْنَ
যখনই কোন সূরা অবতীর্ণ হয় তখন তাদের কেউ কেউ বলে, এটা তোমাদের মধ্যে কার ঈমান বৃদ্ধি করল? (প্রকৃতপক্ষে) যারা মুমিন এটা তাদেরই ঈমান বৃদ্ধি করে এবং তারাই আনন্দিত হয়। আর যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে, এটা তাদের অপবিত্রতার সাথে আরো অপবিত্রতা যুক্ত করে এবং তাদের মৃত্যু ঘটে কাফির অবস্থায়। (সূরা তাওবা- ১২৪, ১২৫)
ব্যাখ্যা : একই কথা যা হেদায়াতপ্রাপ্ত লোকদের জন্য আরো হেদায়াতের কারণ হতো। অথচ তা শুনে কাফির ও মুনাফিকরা জিজ্ঞেস করত যে, একটু আগে তিনি কী বলেছেন? যে মজলিস থেকে এ দুর্ভাগারা অযথা সময় নষ্ট করে উঠে যেত, সৌভাগ্যবানরা সে মজলিস থেকেই জ্ঞানের এক নতুন ভান্ডার ভরে নিয়ে যেত। তারা নিজেদের মধ্যে যে তাক্বওয়ার যোগ্যতা সৃষ্টি করে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে সে তাওফীকই দান করেন।
هُوَ الَّذِيْۤ اَنْزَلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ مِنْهُ اٰيَاتٌ مُّحْكَمَاتٌ هُنَّ اُمُّ الْكِتَابِ وَاُخَرُ مُتَشَابِهَاتٌؕ فَاَمَّا الَّذِيْنَ فِيْ قُلُوْبِهِمْ زَيْغٌ فَيَتَّبِعُوْنَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ ابْتِغَآءَ الْفِتْنَةِ وَابْتِغَآءَ تَاْوِيْلِهٖۚ وَمَا يَعْلَمُ تَاْوِيْلَهٗۤ اِلَّا اللهُ وَالرَّاسِخُوْنَ فِى الْعِلْمِ يَقُوْلُوْنَ اٰمَنَّا بِهٖ كُلٌّ مِّنْ عِنْدِ رَبِّنَاۚ وَمَا يَذَّكَّرُ اِلَّاۤ اُولُو الْاَ لْبَابِ
তিনিই আপনার উপর কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। এর মধ্যে কতক আয়াত রয়েছে মুহকামাত (স্পষ্ট), এগুলোই কিতাবের মূল; আর অন্যগুলো মুতাশাবিহাত (অস্পষ্ট)। সুতরাং যাদের অন্তরে বক্রতা রয়েছে তারা ফেতনা এবং ব্যাখ্যা তালাশের উদ্দেশ্যে মুতাশাবিহাতের অনুসরণ করে। অথচ এগুলোর ব্যাখ্যা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। আর যারা গভীর জ্ঞানের অধিকারী তারা বলে, আমরা এগুলোতে ঈমান এনেছি, সবই আমাদের রবের পক্ষ থেকে। আর বুদ্ধিমান ব্যক্তি ছাড়া কেউ (এ থেকে) উপদেশ গ্রহণ করে না। (সূরা আলে ইমরান- ৭)
ব্যাখ্যা : ঈমানদারদের মধ্যে এ বাণী হৃদয়ের শীতলতা ও আত্মার খাদ্য হয়ে প্রবেশ করে। কিন্তু অপরাধীদের অন্তরে তা বারুদের মতো আঘাত করে এবং তা শুনে তাদের মনে আগুন জ্বলে উঠে। যারা সত্য ও দ্বীনের কথা বুঝতে চায় না, সত্যের মর্ম অনুসন্ধান করে না, তাদের দৃষ্টি কেবল শব্দের বাইরের কাঠামোর উপর নিবদ্ধ থাকে। তারা ঐ জিনিসগুলো থেকে বিপরীত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সত্য থেকে আরো দূরে চলে যায়। অপর দিকে যারা নিজেরাই সত্যসন্ধানী এবং সঠিক দৃষ্টিশক্তির অধিকারী তারা ঐসব কথার মধ্যে সূক্ষ্ম জ্ঞানের আলো দেখতে পায়।
কুরআন অস্বীকারকারীরা অন্ধকারে ডুবে থাকে :
وَالَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَا صُمٌّ وَّبُكْمٌ فِى الظُّلُمَاتِؕ مَنْ يَّشَاِ اللهُ يُضْلِلْهُؕ وَمَنْ يَّشَاْ يَجْعَلْهُ عَلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে তারা বধির ও বোবা, তারা অন্ধকারে নিমজ্জিত রয়েছে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিপথগামী করেন এবং যাকে ইচ্ছা সরল পথে পরিচালিত করেন। (সূরা আন‘আম- ৩৯)
অর্থাৎ যারা সত্য কথা শোনে না, সত্য কথা বলেও না, তাদের কান ও মুখ সত্যের ব্যাপারে বধির ও বোবা।
তারা কখনো হেদায়াত পাবে না :
قُلْ اَرَاَيْتُمْ اِنْ كَانَ مِنْ عِنْدِ اللهِ ثُمَّ كَفَرْتُمْ بِهٖ مَنْ اَضَلُّ مِمَّنْ هُوَ فِيْ شِقَاقٍ ۢبَعِيْدٍ
বলো, তোমাদের অভিমত কী, যদি (এই কুরআন) আল্লাহর নিকট হতে অবতীর্ণ হয়ে থাকে এবং তোমরা এটা প্রত্যাখ্যান কর তবে যে ব্যক্তি ঘোর বিরোধিতায় লিপ্ত আছে, তার চেয়ে কে অধিক পথভ্রষ্ট? (সূরা হা-মীম সাজদা- ৫২)
قُلْ اَرَاَيْتُمْ اِنْ كَانَ مِنْ عِنْدِ اللهِ وَكَفَرْتُمْ بِهٖ وَشَهِدَ شَاهِدٌ مِّنْ ۢبَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ عَلٰى مِثْلِهٖ فَاٰمَنَ وَاسْتَكْبَرْتُمْؕ اِنَّ اللهَ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
(হে রাসূল) বলুন, তোমরা কি ভেবে দেখেছ যে, যদি এ কালাম আল্লাহর পক্ষ থেকেই এসে থাকে এবং তোমরা তা মানতে অস্বীকার কর (তাহলে তোমাদের অবস্থা কী হবে?) আর এ ধরনের কালামের পক্ষে তো বনী ইসরাঈলের একজন সাক্ষী দিয়েছে। অতঃপর সে ঈমান এনেছে, আর তোমরা অহংকারে ডুবে রয়েছ। নিশ্চয় আল্লাহ এমন যালিমদেরকে হেদায়াত করেন না। (সূরা আহকাফ- ১০)
তাদের কুরআন বুঝার তাওফীক হয় না :
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ ذُكِّرَ بِاٰيَاتِ رَبِّهٖ فَاَعْرَضَ عَنْهَا وَنَسِيَ مَا قَدَّمَتْ يَدَاهُؕ اِنَّا جَعَلْنَا عَلٰى قُلُوْبِهِمْ اَ كِنَّةً اَنْ يَّفْقَهُوْهُ وَفِۤيْ اٰذَانِهِمْ وَقْرًاؕ وَاِنْ تَدْعُهُمْ اِلَى الْهُدٰى فَلَنْ يَّهْتَدُوْاۤ اِذًا اَبَدًا
কোন ব্যক্তিকে তার প্রতিপালকের নিদর্শনাবলি স্মরণ করিয়ে দেয়ার পর সে যদি সেটা হতে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তার কৃতকর্মসমূহ ভুলে যায়, তবে তার চেয়ে অধিক যালিম আর কে হতে পারে? আমি তাদের অমত্মরের উপর আবরণ সৃষ্টি করে দিয়েছি, যেন তারা তা (কুরআন) বুঝতে না পারে; আর তাদের কানে রয়েছে বধিরতা। (সুতরাং) তুমি তাদেরকে সৎপথে আহবান করলেও তারা কখনো সৎপথে আসবে না। (সূরা কাহফ- ৫৭)
তারা কুরআন বুঝতে সমর্থ হয় না :
وَاِذَا قَرَاْتَ الْقُرْاٰنَ جَعَلْنَا بَيْنَكَ وَبَيْنَ الَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ بِالْاٰخِرَةِ حِجَابًا مَّسْتُوْرًا – وَجَعَلْنَا عَلٰى قُلُوْبِهِمْ اَكِنَّةً اَنْ يَّفْقَهُوْهُ وَفِۤيْ اٰذَانِهِمْ وَقْرًاؕ وَاِذَا ذَكَرْتَ رَبَّكَ فِى الْقُرْاٰنِ وَحْدَهٗ وَلَّوْا عَلٰۤى اَدْبَارِهِمْ نُفُوْرًا
যখন তুমি কুরআন পাঠ কর, তখন তোমার মাঝে ও যারা আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না তাদের মাঝে এক প্রচ্ছন্ন পর্দা রেখে দেই। আমি তাদের অমত্মরের উপর আবরণ ফেলে দিয়েছি, যেন তারা তা উপলব্ধি করতে না পারে এবং তাদের কানের মধ্যে ছিপি এঁটে দিয়েছি। ফলে যখন তুমি কুরআন হতে তোমার প্রতিপালকের একত্ববাদ বিষয়ক আয়াত তিলাওয়াত করো, তখন তারা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে সরে পড়ে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৪৫, ৪৬)
ব্যাখ্যা : কুরআনের দাওয়াত হচ্ছে, অসীম ক্ষমতাসম্পন্ন রবের সামনে জবাবদিহি করতে হবে- সেদিকে নজর রাখা। এখন যে ব্যক্তি আদৌ আখিরাতকেই মেনে নিতে প্রস্তুত নয় এবং এ দুনিয়ার অভিজ্ঞতালব্ধ যাবতীয় বিষয়ের মধ্যেই যার সমস্ত আস্থা ও বিশ্বাস সীমাবদ্ধ, সে কখনো কুরআনের এ দাওয়াতকে গ্রহণ করতে রাজি হবে না। এ আওয়াজ সর্বদা তার কানের পর্দায় আসতে থাকবে, কিন্তু কখনো তার মনোরাজ্যে প্রবেশ করার পথ খুঁজে পাবে না। এটি একটি মনস্তাত্ত্বিক সত্য ব্যাপার। সর্বশক্তিমান আল্লাহ এ সত্যকে এভাবে বর্ণনা করেছেন যে, যে ব্যক্তি আখিরাত মানে না, আমি তার অন্তর ও কান কুরআনের দাওয়াতের জন্য বন্ধ করে দেই। অর্থাৎ এটি আমার প্রাকৃতিক আইন। আখিরাত অস্বীকারকারীদের উপর এ আইনটি এভাবে প্রবর্তিত হয়।
তারা সবচেয়ে বড় যালিম :
فَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ كَذَبَ عَلَى اللهِ وَكَذَّبَ بِالصِّدْقِ اِذْ جَآءَهٗؕ اَلَيْسَ فِيْ جَهَنَّمَ مَثْوًى لِّلْكَافِرِيْنَ
যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করে এবং যখন তার নিকট সত্য আসে তখন তা প্রত্যাখ্যান করে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? কাফিরদের ঠিকানা কি জাহান্নাম নয়? (সূরা যুমার- ৩২)
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرٰى عَلَى اللهِ كَذِبًا اَوْ كَذَّبَ بِاٰيَاتِهٖؕ اِنَّهٗ لَا يُفْلِحُ الظَّالِمُوْنَ
যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে অথবা তাঁর আয়াতসমূহকে প্রত্যাখ্যান করে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? নিশ্চয় যালিমরা কখনো সফলকাম হবে না। (সূরা আন‘আম- ২১)
তাদের সকল আমল নষ্ট হয়ে যাবে :
وَالَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَا وَلِقَآءِ الْاٰخِرَةِ حَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْؕ هَلْ يُجْزَوْنَ اِلَّا مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
যারা আমার আয়াতসমূহ ও আখিরাতের সাক্ষাতকে অস্বীকার করে তাদের আমলসমূহ নষ্ট হয়ে যাবে। তারা যা করে তাদেরকে সে অনুযায়ী প্রতিফল দেয়া হবে। (সূরা আ‘রাফ- ১৪৭)
তারা পর্যায়ক্রমে ধ্বংসের সম্মুখীন হবে :
وَالَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَا سَنَسْتَدْرِجُهُمْ مِّنْ حَيْثُ لَا يَعْلَمُوْنَ
যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যারোপ করে আমি তাদেরকে এমনভাবে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাই যে, তারা জানতেও পারে না। (সূরা আ‘রাফ- ১৮২)
فَذَرْنِيْ وَمَنْ يُّكَذِّبُ بِهٰذَا الْحَدِيْثِؕ سَنَسْتَدْرِجُهُمْ مِّنْ حَيْثُ لَا يَعْلَمُوْنَ ‐ وَاُمْلِيْ لَهُمْؕ اِنَّ كَيْدِيْ مَتِيْنٌ
যারা আমাকে এবং এ বাণীকে মিথ্যারোপ করেছে তাদের ব্যাপারটি ছেড়ে দাও, আমি তাদেরকে এমনভাবে ক্রমে ক্রমে ধরব যে, তারা বুঝতেও পারবে না। আর আমি তাদেরকে অবকাশ দিয়ে থাকি, নিশ্চয় আমার কৌশল সুদৃঢ়। (সূরা ক্বালাম- ৪৪, ৪৫)
তারা জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে :
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِاٰيَاتِنَا سَوْفَ نُصْلِيْهِمْ نَارًاؕ كُلَّمَا نَضِجَتْ جُلُوْدُهُمْ بَدَّلْنَاهُمْ جُلُوْدًا غَيْرَهَا لِيَذُوْقُوا الْعَذَابَؕ اِنَّ اللهَ كَانَ عَزِيْزًا حَكِيْمًا
যারা আমার আয়াতসমূহকে প্রত্যাখ্যান করে, তাদেরকে আগুনে পোড়াব। যখনই তাদের চামড়া জ্বলে যাবে, তখনই তার স্থলে নতুন চামড়া সৃষ্টি করব- যেন তারা (পরিপূর্ণভাবে) শাস্তি ভোগ করে। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা- ৫৬)
وَالَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَا صُمٌّ وَّبُكْمٌ فِى الظُّلُمَاتِؕ مَنْ يَّشَاِ اللهُ يُضْلِلْهُؕ وَمَنْ يَّشَاْ يَجْعَلْهُ عَلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে তারা বধির ও বোবা, তারা অন্ধকারে নিমজ্জিত রয়েছে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিপথগামী করেন এবং যাকে ইচ্ছা সরল পথে পরিচালিত করেন। (সূরা আন‘আম- ৩৯)
অর্থাৎ যারা সত্য কথা শোনে না, সত্য কথা বলেও না, তাদের কান ও মুখ সত্যের ব্যাপারে বধির ও বোবা।
তারা কখনো হেদায়াত পাবে না :
قُلْ اَرَاَيْتُمْ اِنْ كَانَ مِنْ عِنْدِ اللهِ ثُمَّ كَفَرْتُمْ بِهٖ مَنْ اَضَلُّ مِمَّنْ هُوَ فِيْ شِقَاقٍ ۢبَعِيْدٍ
বলো, তোমাদের অভিমত কী, যদি (এই কুরআন) আল্লাহর নিকট হতে অবতীর্ণ হয়ে থাকে এবং তোমরা এটা প্রত্যাখ্যান কর তবে যে ব্যক্তি ঘোর বিরোধিতায় লিপ্ত আছে, তার চেয়ে কে অধিক পথভ্রষ্ট? (সূরা হা-মীম সাজদা- ৫২)
قُلْ اَرَاَيْتُمْ اِنْ كَانَ مِنْ عِنْدِ اللهِ وَكَفَرْتُمْ بِهٖ وَشَهِدَ شَاهِدٌ مِّنْ ۢبَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ عَلٰى مِثْلِهٖ فَاٰمَنَ وَاسْتَكْبَرْتُمْؕ اِنَّ اللهَ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
(হে রাসূল) বলুন, তোমরা কি ভেবে দেখেছ যে, যদি এ কালাম আল্লাহর পক্ষ থেকেই এসে থাকে এবং তোমরা তা মানতে অস্বীকার কর (তাহলে তোমাদের অবস্থা কী হবে?) আর এ ধরনের কালামের পক্ষে তো বনী ইসরাঈলের একজন সাক্ষী দিয়েছে। অতঃপর সে ঈমান এনেছে, আর তোমরা অহংকারে ডুবে রয়েছ। নিশ্চয় আল্লাহ এমন যালিমদেরকে হেদায়াত করেন না। (সূরা আহকাফ- ১০)
তাদের কুরআন বুঝার তাওফীক হয় না :
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ ذُكِّرَ بِاٰيَاتِ رَبِّهٖ فَاَعْرَضَ عَنْهَا وَنَسِيَ مَا قَدَّمَتْ يَدَاهُؕ اِنَّا جَعَلْنَا عَلٰى قُلُوْبِهِمْ اَ كِنَّةً اَنْ يَّفْقَهُوْهُ وَفِۤيْ اٰذَانِهِمْ وَقْرًاؕ وَاِنْ تَدْعُهُمْ اِلَى الْهُدٰى فَلَنْ يَّهْتَدُوْاۤ اِذًا اَبَدًا
কোন ব্যক্তিকে তার প্রতিপালকের নিদর্শনাবলি স্মরণ করিয়ে দেয়ার পর সে যদি সেটা হতে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তার কৃতকর্মসমূহ ভুলে যায়, তবে তার চেয়ে অধিক যালিম আর কে হতে পারে? আমি তাদের অমত্মরের উপর আবরণ সৃষ্টি করে দিয়েছি, যেন তারা তা (কুরআন) বুঝতে না পারে; আর তাদের কানে রয়েছে বধিরতা। (সুতরাং) তুমি তাদেরকে সৎপথে আহবান করলেও তারা কখনো সৎপথে আসবে না। (সূরা কাহফ- ৫৭)
তারা কুরআন বুঝতে সমর্থ হয় না :
وَاِذَا قَرَاْتَ الْقُرْاٰنَ جَعَلْنَا بَيْنَكَ وَبَيْنَ الَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ بِالْاٰخِرَةِ حِجَابًا مَّسْتُوْرًا – وَجَعَلْنَا عَلٰى قُلُوْبِهِمْ اَكِنَّةً اَنْ يَّفْقَهُوْهُ وَفِۤيْ اٰذَانِهِمْ وَقْرًاؕ وَاِذَا ذَكَرْتَ رَبَّكَ فِى الْقُرْاٰنِ وَحْدَهٗ وَلَّوْا عَلٰۤى اَدْبَارِهِمْ نُفُوْرًا
যখন তুমি কুরআন পাঠ কর, তখন তোমার মাঝে ও যারা আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না তাদের মাঝে এক প্রচ্ছন্ন পর্দা রেখে দেই। আমি তাদের অমত্মরের উপর আবরণ ফেলে দিয়েছি, যেন তারা তা উপলব্ধি করতে না পারে এবং তাদের কানের মধ্যে ছিপি এঁটে দিয়েছি। ফলে যখন তুমি কুরআন হতে তোমার প্রতিপালকের একত্ববাদ বিষয়ক আয়াত তিলাওয়াত করো, তখন তারা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে সরে পড়ে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৪৫, ৪৬)
ব্যাখ্যা : কুরআনের দাওয়াত হচ্ছে, অসীম ক্ষমতাসম্পন্ন রবের সামনে জবাবদিহি করতে হবে- সেদিকে নজর রাখা। এখন যে ব্যক্তি আদৌ আখিরাতকেই মেনে নিতে প্রস্তুত নয় এবং এ দুনিয়ার অভিজ্ঞতালব্ধ যাবতীয় বিষয়ের মধ্যেই যার সমস্ত আস্থা ও বিশ্বাস সীমাবদ্ধ, সে কখনো কুরআনের এ দাওয়াতকে গ্রহণ করতে রাজি হবে না। এ আওয়াজ সর্বদা তার কানের পর্দায় আসতে থাকবে, কিন্তু কখনো তার মনোরাজ্যে প্রবেশ করার পথ খুঁজে পাবে না। এটি একটি মনস্তাত্ত্বিক সত্য ব্যাপার। সর্বশক্তিমান আল্লাহ এ সত্যকে এভাবে বর্ণনা করেছেন যে, যে ব্যক্তি আখিরাত মানে না, আমি তার অন্তর ও কান কুরআনের দাওয়াতের জন্য বন্ধ করে দেই। অর্থাৎ এটি আমার প্রাকৃতিক আইন। আখিরাত অস্বীকারকারীদের উপর এ আইনটি এভাবে প্রবর্তিত হয়।
তারা সবচেয়ে বড় যালিম :
فَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ كَذَبَ عَلَى اللهِ وَكَذَّبَ بِالصِّدْقِ اِذْ جَآءَهٗؕ اَلَيْسَ فِيْ جَهَنَّمَ مَثْوًى لِّلْكَافِرِيْنَ
যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করে এবং যখন তার নিকট সত্য আসে তখন তা প্রত্যাখ্যান করে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? কাফিরদের ঠিকানা কি জাহান্নাম নয়? (সূরা যুমার- ৩২)
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرٰى عَلَى اللهِ كَذِبًا اَوْ كَذَّبَ بِاٰيَاتِهٖؕ اِنَّهٗ لَا يُفْلِحُ الظَّالِمُوْنَ
যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে অথবা তাঁর আয়াতসমূহকে প্রত্যাখ্যান করে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? নিশ্চয় যালিমরা কখনো সফলকাম হবে না। (সূরা আন‘আম- ২১)
তাদের সকল আমল নষ্ট হয়ে যাবে :
وَالَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَا وَلِقَآءِ الْاٰخِرَةِ حَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْؕ هَلْ يُجْزَوْنَ اِلَّا مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
যারা আমার আয়াতসমূহ ও আখিরাতের সাক্ষাতকে অস্বীকার করে তাদের আমলসমূহ নষ্ট হয়ে যাবে। তারা যা করে তাদেরকে সে অনুযায়ী প্রতিফল দেয়া হবে। (সূরা আ‘রাফ- ১৪৭)
তারা পর্যায়ক্রমে ধ্বংসের সম্মুখীন হবে :
وَالَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَا سَنَسْتَدْرِجُهُمْ مِّنْ حَيْثُ لَا يَعْلَمُوْنَ
যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যারোপ করে আমি তাদেরকে এমনভাবে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাই যে, তারা জানতেও পারে না। (সূরা আ‘রাফ- ১৮২)
فَذَرْنِيْ وَمَنْ يُّكَذِّبُ بِهٰذَا الْحَدِيْثِؕ سَنَسْتَدْرِجُهُمْ مِّنْ حَيْثُ لَا يَعْلَمُوْنَ ‐ وَاُمْلِيْ لَهُمْؕ اِنَّ كَيْدِيْ مَتِيْنٌ
যারা আমাকে এবং এ বাণীকে মিথ্যারোপ করেছে তাদের ব্যাপারটি ছেড়ে দাও, আমি তাদেরকে এমনভাবে ক্রমে ক্রমে ধরব যে, তারা বুঝতেও পারবে না। আর আমি তাদেরকে অবকাশ দিয়ে থাকি, নিশ্চয় আমার কৌশল সুদৃঢ়। (সূরা ক্বালাম- ৪৪, ৪৫)
তারা জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে :
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِاٰيَاتِنَا سَوْفَ نُصْلِيْهِمْ نَارًاؕ كُلَّمَا نَضِجَتْ جُلُوْدُهُمْ بَدَّلْنَاهُمْ جُلُوْدًا غَيْرَهَا لِيَذُوْقُوا الْعَذَابَؕ اِنَّ اللهَ كَانَ عَزِيْزًا حَكِيْمًا
যারা আমার আয়াতসমূহকে প্রত্যাখ্যান করে, তাদেরকে আগুনে পোড়াব। যখনই তাদের চামড়া জ্বলে যাবে, তখনই তার স্থলে নতুন চামড়া সৃষ্টি করব- যেন তারা (পরিপূর্ণভাবে) শাস্তি ভোগ করে। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা- ৫৬)
কুরআনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার নির্দেশ :
وَاٰمِنُوْا بِمَاۤ اَنْزَلْتُ مُصَدِّقًا لِّمَا مَعَكُمْ وَلَا تَكُوْنُوْاۤ اَوَّلَ كَافِرٍ ۢبِهٖ۪ وَلَا تَشْتَرُوْا بِاٰيَاتِيْ ثَمَنًا قَلِيْلًاؗ وَاِيَّايَ فَاتَّقُوْنِ
আর আমি যা অবতীর্ণ করেছি তোমরা তার প্রতি ঈমান আনয়ন করো, তোমাদের সাথে যা আছে (অর্থাৎ তাওরাত ও ইঞ্জিল) তা তারই সত্যতা প্রমাণকারী। আর তোমরা এ ব্যাপারে প্রথম অস্বীকারকারী হয়ো না এবং আমার আয়াতসমূহকে সামান্য মূল্যে বিক্রি করে দিয়ো না। আর তোমরা আমাকেই ভয় করো। (সূরা বাক্বারা- ৪১)
প্রকৃত জ্ঞানীরা কুরআনকে বিশ্বাস করে :
لٰكِنِ الرَّاسِخُوْنَ فِى الْعِلْمِ مِنْهُمْ وَالْمُؤْمِنُوْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكَ وَمَاۤ اُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ وَالْمُقِيْمِيْنَ الصَّلَاةَ وَالْمُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَالْمُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِؕ اُولٰٓئِكَ سَنُؤْتِيْهِمْ اَجْرًا عَظِيْمًا
কিন্তু তাদের মধ্যে যারা জ্ঞানে সুগভীর, তারা ও মুমিনগণ তোমার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তার প্রতি ঈমান আনয়ন করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, আমি তাদেরকে মহাপুরস্কারে ভূষিত করব। (সূরা নিসা- ১৬২)
আখিরাত বিশ্বাসকারীরা কুরআনের প্রতি ঈমান আনে :
وَالَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِالْاٰخِرَةِ يُؤْمِنُوْنَ بِهٖ وَهُمْ عَلٰى صَلَاتِهِمْ يُحَافِظُوْنَ
যারা আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, তারা তার (কুরআনের) প্রতিও বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তারা তাদের সালাতের হেফাজত করে। (সূরা আন‘আম- ৯২)
যারা নিষ্ঠার সাথে পাঠ করে তারা কুরআনকে বিশ্বাস করে :
اَلَّذِيْنَ اٰتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَتْلُوْنَهٗ حَقَّ تِلَاوَتِهٖؕ اُولٰٓئِكَ يُؤْمِنُوْنَ بِهٖ وَمَنْ يَّكْفُرْ بِهٖ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْخَاسِرُوْن
আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছি; তাদের মধ্য হতে যারা তা সঠিকভাবে পাঠ করে, তারাই এর প্রতি ঈমান আনয়ন করে। আর যে এটা অবিশ্বাস করবে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (সূরা বাক্বারা- ১২১)
কুরআন শুনলে মুমিনদের চোখ দিয়ে পানি আসে :
وَاِذَا سَمِعُوْا مَاۤ اُنْزِلَ اِلَى الرَّسُوْلِ تَرٰۤى اَعْيُنَهُمْ تَفِيْضُ مِنَ الدَّمْعِ مِمَّا عَرَفُوْا مِنَ الْحَقِّۚ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَاۤ اٰمَنَّا فَاكْتُبْنَا مَعَ الشَّاهِدِيْنَ
রাসূলের প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে যখন তারা তা শ্রবণ করে, তখন তারা যে সত্য উপলব্ধি করে তার জন্য তুমি তাদের চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে দেখবে। তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ঈমান এনেছি; সুতরাং তুমি আমাদেরকে সাক্ষ্যদানকারীদের অন্তর্ভুক্ত করে দাও। (সূরা মায়েদা- ৮৩)
তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ে :
قُلْ اٰمِنُوْا بِهٖۤ اَوْ لَا تُؤْمِنُوْاؕ اِنَّ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْعِلْمَ مِنْ قَبْلِهٖۤ اِذَا يُتْلٰى عَلَيْهِمْ يَخِرُّوْنَ لِلْاَذْقَانِ سُجَّدًا – - وَيَقُوْلُوْنَ سُبْحَانَ رَبِّنَاۤ اِنْ كَانَ وَعْدُ رَبِّنَا لَمَفْعُوْلًا ‐ - وَيَخِرُّوْنَ لِلْاَذْقَانِ يَبْكُوْنَ وَيَزِيْدُهُمْ خُشُوْعًا
বলো, তোমরা কুরআনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর বা না কর, নিশ্চয় ইতোপূর্বে যাদেরকে এর জ্ঞান দেয়া হয়েছে তাদের নিকট যখনই এটা পাঠ করা হয়, তখন তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ে। তারা বলে, আমাদের প্রতিপালক পবিত্র ও সুমহান। আমাদের প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হবেই। আর তারা কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে। (সূরা বনী ইসরাঈল, ১০৭-১০৯)
وَاٰمِنُوْا بِمَاۤ اَنْزَلْتُ مُصَدِّقًا لِّمَا مَعَكُمْ وَلَا تَكُوْنُوْاۤ اَوَّلَ كَافِرٍ ۢبِهٖ۪ وَلَا تَشْتَرُوْا بِاٰيَاتِيْ ثَمَنًا قَلِيْلًاؗ وَاِيَّايَ فَاتَّقُوْنِ
আর আমি যা অবতীর্ণ করেছি তোমরা তার প্রতি ঈমান আনয়ন করো, তোমাদের সাথে যা আছে (অর্থাৎ তাওরাত ও ইঞ্জিল) তা তারই সত্যতা প্রমাণকারী। আর তোমরা এ ব্যাপারে প্রথম অস্বীকারকারী হয়ো না এবং আমার আয়াতসমূহকে সামান্য মূল্যে বিক্রি করে দিয়ো না। আর তোমরা আমাকেই ভয় করো। (সূরা বাক্বারা- ৪১)
প্রকৃত জ্ঞানীরা কুরআনকে বিশ্বাস করে :
لٰكِنِ الرَّاسِخُوْنَ فِى الْعِلْمِ مِنْهُمْ وَالْمُؤْمِنُوْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكَ وَمَاۤ اُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ وَالْمُقِيْمِيْنَ الصَّلَاةَ وَالْمُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَالْمُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِؕ اُولٰٓئِكَ سَنُؤْتِيْهِمْ اَجْرًا عَظِيْمًا
কিন্তু তাদের মধ্যে যারা জ্ঞানে সুগভীর, তারা ও মুমিনগণ তোমার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তার প্রতি ঈমান আনয়ন করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, আমি তাদেরকে মহাপুরস্কারে ভূষিত করব। (সূরা নিসা- ১৬২)
আখিরাত বিশ্বাসকারীরা কুরআনের প্রতি ঈমান আনে :
وَالَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِالْاٰخِرَةِ يُؤْمِنُوْنَ بِهٖ وَهُمْ عَلٰى صَلَاتِهِمْ يُحَافِظُوْنَ
যারা আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, তারা তার (কুরআনের) প্রতিও বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তারা তাদের সালাতের হেফাজত করে। (সূরা আন‘আম- ৯২)
যারা নিষ্ঠার সাথে পাঠ করে তারা কুরআনকে বিশ্বাস করে :
اَلَّذِيْنَ اٰتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَتْلُوْنَهٗ حَقَّ تِلَاوَتِهٖؕ اُولٰٓئِكَ يُؤْمِنُوْنَ بِهٖ وَمَنْ يَّكْفُرْ بِهٖ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْخَاسِرُوْن
আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছি; তাদের মধ্য হতে যারা তা সঠিকভাবে পাঠ করে, তারাই এর প্রতি ঈমান আনয়ন করে। আর যে এটা অবিশ্বাস করবে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (সূরা বাক্বারা- ১২১)
কুরআন শুনলে মুমিনদের চোখ দিয়ে পানি আসে :
وَاِذَا سَمِعُوْا مَاۤ اُنْزِلَ اِلَى الرَّسُوْلِ تَرٰۤى اَعْيُنَهُمْ تَفِيْضُ مِنَ الدَّمْعِ مِمَّا عَرَفُوْا مِنَ الْحَقِّۚ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَاۤ اٰمَنَّا فَاكْتُبْنَا مَعَ الشَّاهِدِيْنَ
রাসূলের প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে যখন তারা তা শ্রবণ করে, তখন তারা যে সত্য উপলব্ধি করে তার জন্য তুমি তাদের চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে দেখবে। তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ঈমান এনেছি; সুতরাং তুমি আমাদেরকে সাক্ষ্যদানকারীদের অন্তর্ভুক্ত করে দাও। (সূরা মায়েদা- ৮৩)
তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ে :
قُلْ اٰمِنُوْا بِهٖۤ اَوْ لَا تُؤْمِنُوْاؕ اِنَّ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْعِلْمَ مِنْ قَبْلِهٖۤ اِذَا يُتْلٰى عَلَيْهِمْ يَخِرُّوْنَ لِلْاَذْقَانِ سُجَّدًا – - وَيَقُوْلُوْنَ سُبْحَانَ رَبِّنَاۤ اِنْ كَانَ وَعْدُ رَبِّنَا لَمَفْعُوْلًا ‐ - وَيَخِرُّوْنَ لِلْاَذْقَانِ يَبْكُوْنَ وَيَزِيْدُهُمْ خُشُوْعًا
বলো, তোমরা কুরআনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর বা না কর, নিশ্চয় ইতোপূর্বে যাদেরকে এর জ্ঞান দেয়া হয়েছে তাদের নিকট যখনই এটা পাঠ করা হয়, তখন তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ে। তারা বলে, আমাদের প্রতিপালক পবিত্র ও সুমহান। আমাদের প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হবেই। আর তারা কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে। (সূরা বনী ইসরাঈল, ১০৭-১০৯)
জিনেরা কুরআন শুনে প্রভাবিত হয়েছিল :
قُلْ اُوْحِيَ اِلَيَّ اَنَّهُ اسْتَمَعَ نَفَرٌ مِّنَ الْجِنِّ فَقَالُوْاۤ اِنَّا سَمِعْنَا قُرْاٰنًا عَجَبًا ---– يَهْدِيْۤ اِلَى الرُّشْدِ فَاٰمَنَّا بِهٖ وَلَنْ نُّشْرِكَ بِرَبِّنَاۤ اَحَدًا
বলো, আমার প্রতি ওহী করা হয়েছে যে, জিনদের একটি দল মনোযোগ সহকারে (কুরআন তিলাওয়াত) শ্রবণ করেছে এবং বলেছে, আমরা তো এক বিস্ময়কর কুরআন শ্রবণ করেছি। যা সঠিক পথের সন্ধান দেয়; অতঃপর আমরা এতে ঈমান আনয়ন করেছি। (সুতরাং) আমরা কখনো আমাদের প্রতিপালকের সাথে কাউকে শরীক স্থাপন করব না। (সূরা জিন- ১, ২)
তারা কুরআন প্রচারের কাজে লেগে যায় :
وَاِذْ صَرَفْنَاۤ اِلَيْكَ نَفَرًا مِّنَ الْجِنِّ يَسْتَمِعُوْنَ الْقُرْاٰنَۚ فَلَمَّا حَضَرُوْهُ قَالُوْاۤ اَنْصِتُوْاۚ فَلَمَّا قُضِيَ وَلَّوْا اِلٰى قَوْمِهِمْ مُّنْذِرِيْنَ
যখন আমি একদল জিনকে আপনার দিকে নিয়ে এসেছিলাম, যাতে তারা কুরআন শুনে। যখন তারা ঐ জায়গায় পৌঁছল (যেখানে আপনি কুরআন পাঠ করছিলেন) তখন একে অপরকে বলছিল, তোমরা চুপ থাকো। তারপর যখন কুরআন পড়া হয়ে গেল, তখন তারা নিজ সম্প্রদায়ের নিকট সতর্ককারী হয়ে ফিরে গেল। (সূরা আহকাফ- ২৯)
ব্যাখ্যা : ঐতিহাসিকদের বর্ণনানুসারে এটা তখনকার ঘটনা যখন নবী ﷺ তায়েফ থেকে নিরাশ হয়ে মক্কায় ফেরার পথে নাখলা প্রান্তরে অবস্থান করছিলেন। সেখানে এশা, ফজর কিংবা তাহাজ্জুদের নামাযে তিনি কুরআন তিলাওয়াত করছিলেন। সে সময় জিনদের একটি দল সে স্থান অতিক্রম করছিল। তারা নবী ﷺ এর ক্বিরাত শোনার জন্য থেমে গেল। এ সময় জিনেরা নবী ﷺ এর সামনে আসেনি, কিংবা তিনিও তাদের আগমন অনুভব করেননি। পরে আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে তাদের আগমনের এবং কুরআন তিলাওয়াত শোনা ও এর দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার বিষয়টি অবহিত করেন।
তারা কুরআনের গুনাগুণ বর্ণনা করল :
قَالُوْا يَا قَوْمَنَاۤ اِنَّا سَمِعْنَا كِتَابًا اُنْزِلَ مِنْ ۢبَعْدِ مُوْسٰى مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ يَهْدِيْۤ اِلَى الْحَقِّ وَاِلٰى طَرِيْقٍ مُّسْتَقِيْمٍ
তারা বলল, হে আমাদের সম্প্রদায়! আমরা এমন এক কিতাব শুনলাম, যা মূসার পর নাযিল করা হয়েছে, যা এর আগের কিতাবগুলোর সত্যায়ন করে এবং সত্য ও সঠিক পথের সন্ধান দেয়। (সূরা আহকাফ- ৩০)
ব্যাখ্যা : এ থেকে জানা যায় যে, এসব জিন পূর্ব থেকে মূসা (আঃ) ও আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান রাখত। তারা কুরআন শোনার পর বুঝতে পারল যে, পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণ যে শিক্ষা দিয়ে আসছেন এটাও সেই শিক্ষা। তাই তারা এ কিতাব এবং এর বাহক রাসূল ﷺ এর উপর ঈমান আনল।
তারা কুরআনকে মুক্তির উপায় মনে করল :
يَا قَوْمَنَاۤ اَجِيْبُوْا دَاعِيَ اللهِ وَاٰمِنُوْا بِهٖ يَغْفِرْ لَكُمْ مِّنْ ذُنُوْبِكُمْ وَيُجِرْكُمْ مِّنْ عَذَابٍ اَلِيْمٍ – وَمَنْ لَّا يُجِبْ دَاعِيَ اللهِ فَلَيْسَ بِمُعْجِزٍ فِى الْاَ رْضِ وَلَيْسَ لَهٗ مِنْ دُوْنِهٖۤ اَوْلِيَآءُؕ اُولٰٓئِكَ فِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ
হে আমাদের সম্প্রদায়! যে আল্লাহর দিকে ডাকে তার ডাকে সাড়া দাও এবং তার প্রতি ঈমান আনয়ন করো। আল্লাহ তোমাদের গোনাহ মাফ করবেন এবং কষ্টদায়ক আযাব থেকে বাঁচাবেন। আর যে আল্লাহর দিকে আহবানকারীর ডাকে সাড়া দেবে না তার জন্য দুনিয়ায় এমন কোন শক্তি নেই, যে আল্লাহকে পরাজিত করতে পারে। আর তার এমন কোন সহায়কও নেই (যে তাকে আল্লাহর থেকে বাঁচাতে পারে)। এসব লোক স্পষ্ট পথভ্রষ্টতায় রয়েছে। (সূরা আহকাফ- ৩১, ৩২)
ব্যাখ্যা : ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ কোন এক সময় তাঁর সাহাবীদেরকে সাথে নিয়ে উকায নামক বাজারের উদ্দেশে রওয়ানা হন। ইতোমধ্যে জিনদের আকাশের খবরাদি সংগ্রহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তাদের বিরুদ্ধে অগ্নিশিখা ছুঁড়ে মারা শুরু হয়েছে। তাই জিনরা ফিরে আসলে অন্য জিনরা তাদেরকে বলল, কী ব্যাপার? তারা বলল, আকাশের খবরাদি সংগ্রহে আমাদের জন্য বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে এবং আগুনের স্ফুলিঙ্গ ছুঁড়ে মারা হচ্ছে। তখন শয়তান বলল, আসমানের খবরাদি সংগ্রহে তোমাদের বিরুদ্ধে যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে, তা নিশ্চয় কোন নতুন ঘটনা সংঘটিত হওয়ার কারণেই হয়েছে। তাই তোমরা পৃথিবীর পূর্ব-পশ্চিম সব জায়গা ঘুরে ঘুরে দেখো, ব্যাপার কী? অতঃপর তার কারণ অনুসন্ধান করার জন্য সবাই পৃথিবীর চতুর্দিকে বেরিয়ে পড়ল। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, যারা তিহামার উদ্দেশে বেরিয়েছিল, তারা নাখলা নামক স্থানে এসে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে উপস্থিত হয়। তিনি এদিক দিয়ে উকায বাজারের উদ্দেশে গমন করছিলেন। এ সময় তিনি সাহাবীদেরকে সঙ্গে নিয়ে ফজরের নামায আদায় করছিলেন। তখন জিনদের দলটি পবিত্র কুরআনের আয়াত শুনতে পেয়ে অধিক মনোযোগ সহকারে তা শুনে বলে উঠল, আকাশের খবরাদি ও তোমাদের মাঝে এটাই বাধা সৃষ্টি করেছে। তাই তারা ফিরে গিয়ে তাদের সম্প্রদায়কে বলল, হে আমাদের সম্প্রদায়! আমরা এমন এক বিষ্ময়কর কুরআন শুনেছি, যা আমাদেরকে হেদায়াতের পথ দেখায়। আমরা এ বাণীর প্রতি ঈমান এনেছি। আমরা আর কখনো আমাদের প্রতিপালকের সাথে কাউকে শরীক করব না। এরপরই মহান আল্লাহ উপরোক্ত আয়াত নাযিল করেন এবং ওহীর মাধ্যমে নবী ﷺ কে জিনদের কথোপকথন সম্পর্কে অবহিত করেন। (সহীহ বুখারী, হা/৪৯২১)
قُلْ اُوْحِيَ اِلَيَّ اَنَّهُ اسْتَمَعَ نَفَرٌ مِّنَ الْجِنِّ فَقَالُوْاۤ اِنَّا سَمِعْنَا قُرْاٰنًا عَجَبًا ---– يَهْدِيْۤ اِلَى الرُّشْدِ فَاٰمَنَّا بِهٖ وَلَنْ نُّشْرِكَ بِرَبِّنَاۤ اَحَدًا
বলো, আমার প্রতি ওহী করা হয়েছে যে, জিনদের একটি দল মনোযোগ সহকারে (কুরআন তিলাওয়াত) শ্রবণ করেছে এবং বলেছে, আমরা তো এক বিস্ময়কর কুরআন শ্রবণ করেছি। যা সঠিক পথের সন্ধান দেয়; অতঃপর আমরা এতে ঈমান আনয়ন করেছি। (সুতরাং) আমরা কখনো আমাদের প্রতিপালকের সাথে কাউকে শরীক স্থাপন করব না। (সূরা জিন- ১, ২)
তারা কুরআন প্রচারের কাজে লেগে যায় :
وَاِذْ صَرَفْنَاۤ اِلَيْكَ نَفَرًا مِّنَ الْجِنِّ يَسْتَمِعُوْنَ الْقُرْاٰنَۚ فَلَمَّا حَضَرُوْهُ قَالُوْاۤ اَنْصِتُوْاۚ فَلَمَّا قُضِيَ وَلَّوْا اِلٰى قَوْمِهِمْ مُّنْذِرِيْنَ
যখন আমি একদল জিনকে আপনার দিকে নিয়ে এসেছিলাম, যাতে তারা কুরআন শুনে। যখন তারা ঐ জায়গায় পৌঁছল (যেখানে আপনি কুরআন পাঠ করছিলেন) তখন একে অপরকে বলছিল, তোমরা চুপ থাকো। তারপর যখন কুরআন পড়া হয়ে গেল, তখন তারা নিজ সম্প্রদায়ের নিকট সতর্ককারী হয়ে ফিরে গেল। (সূরা আহকাফ- ২৯)
ব্যাখ্যা : ঐতিহাসিকদের বর্ণনানুসারে এটা তখনকার ঘটনা যখন নবী ﷺ তায়েফ থেকে নিরাশ হয়ে মক্কায় ফেরার পথে নাখলা প্রান্তরে অবস্থান করছিলেন। সেখানে এশা, ফজর কিংবা তাহাজ্জুদের নামাযে তিনি কুরআন তিলাওয়াত করছিলেন। সে সময় জিনদের একটি দল সে স্থান অতিক্রম করছিল। তারা নবী ﷺ এর ক্বিরাত শোনার জন্য থেমে গেল। এ সময় জিনেরা নবী ﷺ এর সামনে আসেনি, কিংবা তিনিও তাদের আগমন অনুভব করেননি। পরে আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে তাদের আগমনের এবং কুরআন তিলাওয়াত শোনা ও এর দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার বিষয়টি অবহিত করেন।
তারা কুরআনের গুনাগুণ বর্ণনা করল :
قَالُوْا يَا قَوْمَنَاۤ اِنَّا سَمِعْنَا كِتَابًا اُنْزِلَ مِنْ ۢبَعْدِ مُوْسٰى مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ يَهْدِيْۤ اِلَى الْحَقِّ وَاِلٰى طَرِيْقٍ مُّسْتَقِيْمٍ
তারা বলল, হে আমাদের সম্প্রদায়! আমরা এমন এক কিতাব শুনলাম, যা মূসার পর নাযিল করা হয়েছে, যা এর আগের কিতাবগুলোর সত্যায়ন করে এবং সত্য ও সঠিক পথের সন্ধান দেয়। (সূরা আহকাফ- ৩০)
ব্যাখ্যা : এ থেকে জানা যায় যে, এসব জিন পূর্ব থেকে মূসা (আঃ) ও আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান রাখত। তারা কুরআন শোনার পর বুঝতে পারল যে, পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণ যে শিক্ষা দিয়ে আসছেন এটাও সেই শিক্ষা। তাই তারা এ কিতাব এবং এর বাহক রাসূল ﷺ এর উপর ঈমান আনল।
তারা কুরআনকে মুক্তির উপায় মনে করল :
يَا قَوْمَنَاۤ اَجِيْبُوْا دَاعِيَ اللهِ وَاٰمِنُوْا بِهٖ يَغْفِرْ لَكُمْ مِّنْ ذُنُوْبِكُمْ وَيُجِرْكُمْ مِّنْ عَذَابٍ اَلِيْمٍ – وَمَنْ لَّا يُجِبْ دَاعِيَ اللهِ فَلَيْسَ بِمُعْجِزٍ فِى الْاَ رْضِ وَلَيْسَ لَهٗ مِنْ دُوْنِهٖۤ اَوْلِيَآءُؕ اُولٰٓئِكَ فِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ
হে আমাদের সম্প্রদায়! যে আল্লাহর দিকে ডাকে তার ডাকে সাড়া দাও এবং তার প্রতি ঈমান আনয়ন করো। আল্লাহ তোমাদের গোনাহ মাফ করবেন এবং কষ্টদায়ক আযাব থেকে বাঁচাবেন। আর যে আল্লাহর দিকে আহবানকারীর ডাকে সাড়া দেবে না তার জন্য দুনিয়ায় এমন কোন শক্তি নেই, যে আল্লাহকে পরাজিত করতে পারে। আর তার এমন কোন সহায়কও নেই (যে তাকে আল্লাহর থেকে বাঁচাতে পারে)। এসব লোক স্পষ্ট পথভ্রষ্টতায় রয়েছে। (সূরা আহকাফ- ৩১, ৩২)
ব্যাখ্যা : ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ কোন এক সময় তাঁর সাহাবীদেরকে সাথে নিয়ে উকায নামক বাজারের উদ্দেশে রওয়ানা হন। ইতোমধ্যে জিনদের আকাশের খবরাদি সংগ্রহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তাদের বিরুদ্ধে অগ্নিশিখা ছুঁড়ে মারা শুরু হয়েছে। তাই জিনরা ফিরে আসলে অন্য জিনরা তাদেরকে বলল, কী ব্যাপার? তারা বলল, আকাশের খবরাদি সংগ্রহে আমাদের জন্য বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে এবং আগুনের স্ফুলিঙ্গ ছুঁড়ে মারা হচ্ছে। তখন শয়তান বলল, আসমানের খবরাদি সংগ্রহে তোমাদের বিরুদ্ধে যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে, তা নিশ্চয় কোন নতুন ঘটনা সংঘটিত হওয়ার কারণেই হয়েছে। তাই তোমরা পৃথিবীর পূর্ব-পশ্চিম সব জায়গা ঘুরে ঘুরে দেখো, ব্যাপার কী? অতঃপর তার কারণ অনুসন্ধান করার জন্য সবাই পৃথিবীর চতুর্দিকে বেরিয়ে পড়ল। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, যারা তিহামার উদ্দেশে বেরিয়েছিল, তারা নাখলা নামক স্থানে এসে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে উপস্থিত হয়। তিনি এদিক দিয়ে উকায বাজারের উদ্দেশে গমন করছিলেন। এ সময় তিনি সাহাবীদেরকে সঙ্গে নিয়ে ফজরের নামায আদায় করছিলেন। তখন জিনদের দলটি পবিত্র কুরআনের আয়াত শুনতে পেয়ে অধিক মনোযোগ সহকারে তা শুনে বলে উঠল, আকাশের খবরাদি ও তোমাদের মাঝে এটাই বাধা সৃষ্টি করেছে। তাই তারা ফিরে গিয়ে তাদের সম্প্রদায়কে বলল, হে আমাদের সম্প্রদায়! আমরা এমন এক বিষ্ময়কর কুরআন শুনেছি, যা আমাদেরকে হেদায়াতের পথ দেখায়। আমরা এ বাণীর প্রতি ঈমান এনেছি। আমরা আর কখনো আমাদের প্রতিপালকের সাথে কাউকে শরীক করব না। এরপরই মহান আল্লাহ উপরোক্ত আয়াত নাযিল করেন এবং ওহীর মাধ্যমে নবী ﷺ কে জিনদের কথোপকথন সম্পর্কে অবহিত করেন। (সহীহ বুখারী, হা/৪৯২১)
কুরআন সকল মানুষের জন্য এসেছে :
اِنَّاۤ اَنْزَلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ لِلنَّاسِ بِالْحَقِّۚ فَمَنِ اهْتَدٰى فَلِنَفْسِهٖۚ وَمَنْ ضَلَّ فَاِنَّمَا يَضِلُّ عَلَيْهَاۚ وَمَاۤ اَنْتَ عَلَيْهِمْ بِوَكِيْلٍ
আমি তোমার প্রতি মানুষের জন্য সত্য সহকারে কিতাব অবতীর্ণ করেছি। অতএব যে হেদায়াতপ্রাপ্ত হয় সে নিজের জন্যই (হেদায়াতপ্রাপ্ত) হয়, আর যে পথভ্রষ্ট হয় সে নিজের (ধ্বংসের) জন্যই পথভ্রষ্ট হয়। আর তুমি তাদের জিম্মাদার নও। (সূরা যুমার- ৪১)
কুরআন সারা বিশ্বের জন্য সতর্কবাণী :
تَبَارَكَ الَّذِيْ نَزَّلَ الْفُرْقَانَ عَلٰى عَبْدِهٖ لِيَكُوْنَ لِلْعَالَمِيْنَ نَذِيْرًا
বরকতময় সেই সত্তা, যিনি তাঁর বান্দার প্রতি ফুরক্বান অবতীর্ণ করেছেন- যাতে করে তিনি বিশ্বজগতের জন্য সতর্ককারী হতে পারেন। (সূরা ফুরক্বান- ১)
ব্যাখ্যা : فُرْقَانٌ (ফুরক্বান) এর অর্থ হচ্ছে, দু’টি জিনিসকে আলাদা করা। এর প্রকৃত অর্থ হবে- মানদন্ড, সিদ্ধান্তকর জিনিস ও নির্ণায়ক। এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ফুরক্বান বলতে কুরআনকে উদ্দেশ্য নিয়েছেন, যার অর্থ হবে- পার্থক্যকারী অর্থাৎ সত্য ও মিথ্যার মাঝে পার্থক্যকারী। কেননা কুরআন হচ্ছে এমন একটি গ্রন্থ, যা সত্য-মিথ্যা তথা হক ও বাতিলের মাঝে পার্থক্য নির্ণয় করে দেয়। আর পার্থক্য করার দিক থেকে এটি এতই পারদর্শী যে, এটি নিজেই পৃথিবীর অন্যান্য সকল গ্রন্থ থেকে পৃথক বৈশিষ্ট্য মন্ডিত, যা কোন সৃষ্টির পক্ষে তৈরি করা সম্ভব নয়।
কুরআন বিশ্ববাসীর জন্য উপদেশবাণী :
هٰذَا بَيَانٌ لِّلنَّاسِ وَهُدًى وَّمَوْعِظَةٌ لِّلْمُتَّقِيْنَ
এটা মানবজাতির জন্য স্পষ্ট বিবরণ এবং আল্লাহভীরুদের জন্য পথ-প্রদর্শক ও উপদেশ। (সূরা আলে ইমরান- ১৩৮)
وَمَا هُوَ اِلَّا ذِكْرٌ لِّلْعَالَمِيْنَ
এ কুরআন বিশ্ববাসীর জন্য উপদেশবাণী ছাড়া আর কিছুই নয়। (সূরা ক্বালাম- ৫২)
কুরআনের দৃষ্টান্তসমূহ সকলের জন্য পেশ করা হয়েছে :
وَلَقَدْ ضَرَبْنَا لِلنَّاسِ فِيْ هٰذَا الْقُرْاٰنِ مِنْ كُلِّ مَثَلٍ لَّعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُوْنَ
আর আমি এ কুরআনে মানুষের জন্য সকল প্রকার দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছি, যেন তারা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে। (সূরা যুমার- ২৭)
وَتِلْكَ الْاَ مْثَالُ نَضْرِبُهَا لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُوْنَ
আমি এসব দৃষ্টান্ত বর্ণনা করি মানুষের জন্য, যেন তারা চিন্তা করে। (সূরা হাশর- ২১)
اِنَّاۤ اَنْزَلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ لِلنَّاسِ بِالْحَقِّۚ فَمَنِ اهْتَدٰى فَلِنَفْسِهٖۚ وَمَنْ ضَلَّ فَاِنَّمَا يَضِلُّ عَلَيْهَاۚ وَمَاۤ اَنْتَ عَلَيْهِمْ بِوَكِيْلٍ
আমি তোমার প্রতি মানুষের জন্য সত্য সহকারে কিতাব অবতীর্ণ করেছি। অতএব যে হেদায়াতপ্রাপ্ত হয় সে নিজের জন্যই (হেদায়াতপ্রাপ্ত) হয়, আর যে পথভ্রষ্ট হয় সে নিজের (ধ্বংসের) জন্যই পথভ্রষ্ট হয়। আর তুমি তাদের জিম্মাদার নও। (সূরা যুমার- ৪১)
কুরআন সারা বিশ্বের জন্য সতর্কবাণী :
تَبَارَكَ الَّذِيْ نَزَّلَ الْفُرْقَانَ عَلٰى عَبْدِهٖ لِيَكُوْنَ لِلْعَالَمِيْنَ نَذِيْرًا
বরকতময় সেই সত্তা, যিনি তাঁর বান্দার প্রতি ফুরক্বান অবতীর্ণ করেছেন- যাতে করে তিনি বিশ্বজগতের জন্য সতর্ককারী হতে পারেন। (সূরা ফুরক্বান- ১)
ব্যাখ্যা : فُرْقَانٌ (ফুরক্বান) এর অর্থ হচ্ছে, দু’টি জিনিসকে আলাদা করা। এর প্রকৃত অর্থ হবে- মানদন্ড, সিদ্ধান্তকর জিনিস ও নির্ণায়ক। এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ফুরক্বান বলতে কুরআনকে উদ্দেশ্য নিয়েছেন, যার অর্থ হবে- পার্থক্যকারী অর্থাৎ সত্য ও মিথ্যার মাঝে পার্থক্যকারী। কেননা কুরআন হচ্ছে এমন একটি গ্রন্থ, যা সত্য-মিথ্যা তথা হক ও বাতিলের মাঝে পার্থক্য নির্ণয় করে দেয়। আর পার্থক্য করার দিক থেকে এটি এতই পারদর্শী যে, এটি নিজেই পৃথিবীর অন্যান্য সকল গ্রন্থ থেকে পৃথক বৈশিষ্ট্য মন্ডিত, যা কোন সৃষ্টির পক্ষে তৈরি করা সম্ভব নয়।
কুরআন বিশ্ববাসীর জন্য উপদেশবাণী :
هٰذَا بَيَانٌ لِّلنَّاسِ وَهُدًى وَّمَوْعِظَةٌ لِّلْمُتَّقِيْنَ
এটা মানবজাতির জন্য স্পষ্ট বিবরণ এবং আল্লাহভীরুদের জন্য পথ-প্রদর্শক ও উপদেশ। (সূরা আলে ইমরান- ১৩৮)
وَمَا هُوَ اِلَّا ذِكْرٌ لِّلْعَالَمِيْنَ
এ কুরআন বিশ্ববাসীর জন্য উপদেশবাণী ছাড়া আর কিছুই নয়। (সূরা ক্বালাম- ৫২)
কুরআনের দৃষ্টান্তসমূহ সকলের জন্য পেশ করা হয়েছে :
وَلَقَدْ ضَرَبْنَا لِلنَّاسِ فِيْ هٰذَا الْقُرْاٰنِ مِنْ كُلِّ مَثَلٍ لَّعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُوْنَ
আর আমি এ কুরআনে মানুষের জন্য সকল প্রকার দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছি, যেন তারা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে। (সূরা যুমার- ২৭)
وَتِلْكَ الْاَ مْثَالُ نَضْرِبُهَا لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُوْنَ
আমি এসব দৃষ্টান্ত বর্ণনা করি মানুষের জন্য, যেন তারা চিন্তা করে। (সূরা হাশর- ২১)
কুরআন খুবই ভারী কালাম :
اِنَّا سَنُلْقِيْ عَلَيْكَ قَوْلًا ثَقِيْلًا
আমি অচিরেই তোমার প্রতি অবতীর্ণ করব ভারত্বপূর্ণ বাণী। (সূরা মুয্যাম্মিল- ৫)
لَوْ اَنْزَلْنَا هٰذَا الْقُرْاٰنَ عَلٰى جَبَلٍ لَّرَاَيْتَهٗ خَاشِعًا مُّتَصَدِّعًا مِّنْ خَشْيَةِ اللهِ
আমি যদি এ কুরআন পর্বতের উপর অবতীর্ণ করতাম তবে তুমি দেখতে যে, ওটা আল্লাহর ভয়ে বিনীত ও বিদীর্ণ হয়ে গেছে। (সূরা হাশর- ২১)
ব্যাখ্যা : কুরআন নবী ﷺ এর শ্রেষ্ঠ মু‘জিযা। কুরআন ভাষা ও সাহিত্যিক মূল্যবোধের বিচারেও মু‘জিযা আবার শিক্ষা ও জানার বিচারেও তা মু‘জিযা। কুরআন যে সময় নাযিল হয়েছিল সে সময় মানুষ কুরআনের বাণীর মতো বাণী বানিয়ে পেশ করতে অক্ষম ছিল এবং আজও অক্ষম। এর কোন কথা কখনো কোন যুগে ভুল প্রমাণ করা যায়নি এবং যাবেও না। বাতিল না পারে সামনে থেকে এর মুকাবিলা করতে, না পারে পেছন দিক থেকে আক্রমণ করে পরাজিত করতে। মানুষ কুরআন থেকে যতবেশি পথনির্দেশনা পাওয়ার চেষ্টা করে, এটা তাকে ততটাই পথনির্দেশনা দান করে। সুতরাং যে যতবেশি এর অনুসরণ করবে, দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ সে ততবেশি লাভ করবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, এমন কোন নবী ছিলেন না, যাকে কোন মু‘জিযা দেয়া হয়নি, যা দেখে লোকেরা ঈমান এনেছে। কিন্তু আমাকে যা দেয়া হয়েছে, তা হচ্ছে ওহী; যা আল্লাহ তা‘আলা আমার কাছে নাযিল করেছেন। সুতরাং আমি আশা করি, কিয়ামতের দিন তাঁদের অনুসারীদের তুলনায় আমার উম্মতের সংখ্যাই হবে সর্বাধিক। (সহীহ বুখারী, হা/৪৯৮১)
কুরআন বিজ্ঞানময় কিতাব :
تِلْكَ اٰيَاتُ الْكِتَابِ الْحَكِيْمِ
এগুলো বিজ্ঞানময় কিতাবের আয়াত। (সূরা লুক্বমান- ২)
يٰسٓ -– وَالْقُرْاٰنِ الْحَكِيْمِ
ইয়া-সীন। কসম বিজ্ঞানময় কুরআনের। (সূরা ইয়াসীন- ১, ২)
ব্যাখ্যা : এ কুরআনে যেসব কথা বলা হচ্ছে এগুলো কোন হালকা কথা নয়। এগুলো কোন মানুষের অনুমান ও মতামত ভিত্তিকও নয়, বরং এক জ্ঞানবান সত্তা এগুলো নাযিল করেছেন। তিনি নিজের সৃষ্টির প্রয়োজন ও কল্যাণ এবং এর অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে পুরোপুরিভাবে অবগত আছেন। বান্দাদের সংশোধন ও পথনির্দেশনার জন্য তিনি তাঁর জ্ঞান দ্বারা সর্বোত্তম কৌশল ও ব্যবস্থা অবলম্বন করেন।
এর আয়াতসমূহ স্পষ্ট ও সুবিন্যাস্ত :
الٓرٰ كِتَابٌ اُحْكِمَتْ اٰيَاتُهٗ ثُمَّ فُصِّلَتْ مِنْ لَّدُنْ حَكِيْمٍ خَبِيْرٍ
আলিফ-লাম-রা। এটা এমন কিতাব যার আয়াতসমূহকে সুস্পষ্ট করা হয়েছে, অতঃপর বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এ কিতাব প্রজ্ঞাময় ও সর্বজ্ঞ (আল্লাহর) নিকট হতে এসেছে। (সূরা হুদ- ১)
কুরআনের কথা সত্য :
وَمَنْ اَصْدَقُ مِنَ اللهِ قِيْلًا
কথার ক্ষেত্রে আল্লাহর চেয়ে অধিক সত্যবাদী আর কে আছে? (সূরা নিসা- ১২২)
কুরআনের আয়াতসমূহ সাদৃশ্যপূর্ণ :
اَللهُ نَزَّلَ اَحْسَنَ الْحَدِيْثِ كِتَابًا مُّتَشَابِهًا مَّثَانِيَ تَقْشَعِرُّ مِنْهُ جُلُوْدُ الَّذِيْنَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْۚ ثُمَّ تَلِيْنُ جُلُوْدُهُمْ وَقُلُوْبُهُمْ اِلٰى ذِكْرِ اللهِ ذٰلِكَ هُدَى اللهِ يَهْدِيْ بِهٖ مَنْ يَّشَآءُ وَمَنْ يُّضْلِلِ اللهُ فَمَا لَهٗ مِنْ هَادٍ
আল্লাহ সর্বোত্তম বাণী অবতীর্ণ করেছেন- এটা এমন কিতাব যা সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং যার বিষয়াবলি পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে, এতে তাদের দেহ শিহ্রে উঠে। তারপর তাদের দেহ ও অন্তর (প্রশান্ত হয়ে) আল্লাহর স্মরণের দিকে ঝুঁকে পড়ে। এটাই আল্লাহর হেদায়াত, এর দ্বারা তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে হেদায়াত দান করেন। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তার কোন পথপ্রদর্শক নেই। (সূরা যুমার- ২৩)
ব্যাখ্যা : কুরআনের কথার মধ্যে কোন বৈপরীত্য ও বিরোধ নেই। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত গোটা কিতাব একই দাবী, একই আকীদা-বিশ্বাস এবং একই আদর্শ পেশ করে। এর প্রতিটি অংশ অন্যসব অংশের এবং প্রতিটি বিষয় অন্যসব বিষয়ের সত্যায়ন, সমর্থন ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে। অর্থ ও বর্ণনা উভয় দিক দিয়েই এ গ্রন্থের পূর্ণ মিল ও সামঞ্জস্য বিদ্যমান।
কুরআনের মধ্যে কোন জটিলতা নেই :
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْۤ اَنْزَلَ عَلٰى عَبْدِهِ الْكِتَابَ وَلَمْ يَجْعَلْ لَّهٗ عِوَجًا
সমসত্ম প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি তাঁর বান্দার প্রতি এ কিতাব অবতীর্ণ করেছেন এবং তাতে (কোন) বক্রতা রাখেননি। (সূরা কাহফ- ১)
قُرْاٰنًا عَرَبِيًّا غَيْرَ ذِيْ عِوَجٍ لَّعَلَّهُمْ يَتَّقُوْنَ
এ কুরআন আরবি ভাষায় (অবতীর্ণ হয়েছে), এতে বিন্দুমাত্রও বক্রতা নেই। হয়তো তারা তাক্বওয়া অর্জন করতে পারবে। (সূরা যুমার- ২৮)
ব্যাখ্যা : কুরআনের মধ্যে এমন কোন বক্র বা জটিল কথা নেই যে, তা বুঝা সাধারণ মানুষের জন্য কঠিন হবে। বরং এর মধ্যে পরিষ্কারভাবে সহজসরল কথা বলা হয়েছে। ফলে প্রত্যেক ব্যক্তি খুব সহজে জেনে নিতে পারে যে, এ গ্রন্থ কোন জিনিসকে ভ্রান্ত বলে এবং কেন বলে, কোন জিনিসকে সঠিক বলে এবং কিসের ভিত্তিতে বলে, কী স্বীকার করাতে চায় এবং কোন জিনিস অস্বীকার করাতে চায়, কোন কোন কাজের নির্দেশ দেয় এবং কোন কোন কাজ হতে নিষেধ করে। এ কিতাবের আয়াতসমূহ অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এর কোন কথাই অস্পষ্ট ও জটিল নয়, এ কিতাবের বিষয়বস্তু যে কারো বোধগম্য হতে পারে। হক ও বাতিল, সঠিক আকীদা ও ভ্রান্ত আকীদা, ভালো চরিত্র ও মন্দ চরিত্র, সৎকাজ ও অসৎকাজ, কোন পথে মানুষের কল্যাণ এবং কোন পথে মানুষের ক্ষতি- এ সবকিছু এ গ্রন্থে পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করে দেয়া হয়েছে। এখন কেউ যদি এরূপ সুস্পষ্ট হেদায়াত প্রত্যাখ্যান করে কিংবা সেদিকে মনোযোগ না দেয়, তাহলে সে কোন অজুহাত পেশ করতে পারবে না। এ কিতাব তাদের জন্য যারা জ্ঞানের অধিকারী। অর্থাৎ কেবল জ্ঞানী লোকেরাই এর দ্বারা উপকৃত হতে পারে। অজ্ঞ লোকদের কাছে তা ঠিক তেমনি মূল্যহীন যেমন একটি মূল্যবান হীরকখন্ড এমন ব্যক্তির কাছে মূল্যহীন, যে সাধারণ পাথর ও হীরকখন্ডের মধ্যে পার্থক্য করতে জানে না।
কুরআন অন্তরের রোগের শিফা :
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَآءَتْكُمْ مَّوْعِظَةٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَشِفَآءٌ لِّمَا فِى الصُّدُوْرِ وَهُدًى وَّرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ
হে মানুষ! তোমাদের প্রতি তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে এসেছে উপদেশ ও তোমাদের অন্তরে যা আছে তার আরোগ্য এবং মুমিনদের জন্য হেদায়াত ও রহমত। (সূরা ইউনুস- ৫৭)
قُلْ هُوَ لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا هُدًى وَّشِفَآءٌ
বলো, মুমিনদের জন্য এটা পথনির্দেশক ও ব্যাধির প্রতিকার। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৪৪)
এটি বরকতময় ও জ্ঞানসমৃদ্ধ কিতাব :
وَهٰذَا كِتَابٌ اَنْزَلْنَاهُ مُبَارَكٌ فَاتَّبِعُوْهُ وَاتَّقُوْا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ
এ কিতাব আমি নাযিল করেছি, যা বরকতময়। সুতরাং তার অনুসরণ করো এবং সাবধান হও, হয়তো তোমাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা হবে। (সূরা আন‘আম- ১৫৫)
ব্যাখ্যা : بَرَكَةٌ (বারাকাত) এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে, কল্যাণ ও সৌভাগ্য বৃদ্ধি। কুরআন মাজীদকে বরকতময় কিতাব বলার অর্থ হচ্ছে, এটি মানুষের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি কিতাব। এ কিতাবটি মানুষের জীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য সর্বোত্তম বিধান দান করে। এর বিধান মেনে চলায় মানুষের শুধু লাভই হয়, এতে কোন প্রকার ক্ষতির আশঙ্কা নেই। যখনই ওহী ও রিসালাতের জীবনধারা এ পৃথিবীতে পৌঁছেছে, তখনই জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎকর্ষতা মূর্খতা ও জাহেলিয়াতের স্থানগুলো দখল করে নিয়েছে। যুলুম ও নিপীড়ণের জায়গায় ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ফাসিকী ও অশ্লীলতার জায়গায় নৈতিক ও চারিত্রিক মাহাত্মের ফুল ফুটেছে। এর ফলাফল যেদিকে যতটুকু পৌঁছেছে সেদিকেই অন্যায়-অত্যাচার কমে গেছে এবং সদাচার বৃদ্ধি পেয়েছে। নবীদের আগমন সবসময় একটি শুভ ও কল্যাণকর চিন্তা ও নৈতিক বিপ্লবের সূচনা করেছে। পক্ষান্তরে নবীদের বিধান ও নির্দেশাবলি প্রত্যাখ্যান করে বা তা থেকে বঞ্চিত হয়ে মানবজাতি সবসময় ক্ষতিগ্রস্তই হয়েছে। ইতিহাস এ দৃশ্য বার বার দেখিয়েছে এবং কুরআনও বার বার এদিকে ইশারা করেছে। কিন্তু এরপরও লোকেরা শিক্ষা নেয় না।
وَلَقَدْ جِئْنَاهُمْ بِكِتَابٍ فَصَّلْنَاهُ عَلٰى عِلْمٍ هُدًى وَّرَحْمَةً لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ
অবশ্যই আমি তাদের নিকট পৌঁছে দিয়েছিলাম এমন এক কিতাব, যা আমি পূর্ণ জ্ঞান দ্বারা বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছিলাম; আর তা ছিল মুমিনদের জন্য হেদায়াত ও রহমতস্বরূপ। (সূরা আ‘রাফ- ৫২)
ব্যাখ্যা : পরিপূর্ণ বিবরণসহ মানুষের জন্য দুনিয়ার জীবনের সঠিক জীবনপদ্ধতির মূল নীতিগুলো কী কী, তা বর্ণনা করা হয়েছে। আবার এ বিবরণগুলো নিছক অনুমান বা কল্পনার ভিত্তিতে দেয়া হয়নি; বরং নির্ভেজাল ও নির্ভুল জ্ঞানের ভিত্তিতে দেয়া হয়েছে। এ কিতাবের বিষয়বস্তু এত স্পষ্ট যে, এ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করলে যে কোন মানুষের সামনে সত্য পথ পরিষ্কারভাবে ভেসে উঠতে পারে। এর প্রভাব গ্রহণ করার সাথে সাথেই মানুষের মন-মানসিকতা ও আচরণে বৈপ্লবিক পরিবর্তন শুরু হয়ে যায়।
কুরআন দলীল-প্রমাণের কিতাব :
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَآءَكُمْ بُرْهَانٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَاَنْزَلْنَاۤ اِلَيْكُمْ نُوْرًا مُّبِيْنًا
হে মানবমন্ডলী! তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে তোমাদের নিকট প্রমাণ এসেছে এবং আমি তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ করেছি স্পষ্ট নূর। (সূরা নিসা- ১৭৪)
দ্বীনের মৌলিক সকল মূলনীতির বর্ণনা এর মধ্যে রয়েছে :
وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَانًا لِّكُلِّ شَيْءٍ وَّهُدًى وَّرَحْمَةً وَّبُشْرٰى لِلْمُسْلِمِيْنَ
আমি তোমার প্রতি এ কিতাব নাযিল করেছি, যা প্রত্যেকটি বিষয়ের বর্ণনাস্বরূপ। আর তা হেদায়াত, রহমত এবং মুসলিমদের জন্য সুসংবাদস্বরূপ। (সূরা নাহল- ৮৯)
مَا كَانَ حَدِيْثًا يُّفْتَرٰى وَلٰكِنْ تَصْدِيْقَ الَّذِيْ بَيْنَ يَدَيْهِ وَتَفْصِيْلَ كُلِّ شَيْءٍ وَّهُدًى وَّرَحْمَةً لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ
এটা এমন বাণী, যা মিথ্যা রচনা নয়। বরং এটা পূর্ববর্তী কিতাবে যা আছে তার সমর্থক এবং মুমিনদের জন্য সবকিছুর বিশদ বিবরণ, হেদায়াত ও রহমত। (সূরা ইউসুফ- ১১১)
ব্যাখ্যা : ‘প্রত্যেকটি জিনিসের বিস্তারিত বিবরণ’ শব্দাবলি থেকে কেউ কেউ দুনিয়ার সমস্ত জিনিসের বিস্তারিত বিবরণ অর্থ করেন। কিন্তু আয়াতের প্রকৃত অর্থ হচ্ছে, মানুষের হেদায়াত পাওয়া ও পথ দেখার জন্য যেসব জিনিসের প্রয়োজন তার প্রত্যেকটির বিস্তারিত বিবরণ। এতে এমন প্রত্যেকটি বিষয় পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা হয়েছে, যার উপর হেদায়াত ও গোমরাহী এবং লাভ ও ক্ষতি নির্ভর করে। সঠিক পথে চলার জন্য যা জানা একান্ত প্রয়োজন এবং যার মাধ্যমে হক ও বাতিলের পার্থক্য সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে, তাও এতে বর্ণনা করে দেয়া হয়েছে।
কুরআন সকলের জন্য উপদেশস্বরূপ :
لَقَدْ اَنْزَلْنَاۤ اِلَيْكُمْ كِتَابًا فِيْهِ ذِكْرُكُمْؕ اَفَلَا تَعْقِلُوْنَ
আমি তোমাদের প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যাতে আছে তোমাদের জন্য উপদেশ; তবুও কি তোমরা বুঝবে না? (সূরা আম্বিয়া- ১০)
ব্যাখ্যা : কুরআনের মধ্যে মানুষের নিজেদের কথাই বলা হয়েছে। তাদেরই ব্যবহারিক জীবনের কথা আলোচনা করা হয়েছে। তাদের স্বভাব, গঠনাকৃতি এবং সূচনা ও পরিণামের কথা বলা হয়েছে। তাদেরই পরিবেশ থেকে এমনসব নিদর্শন বাছাই করে এতে পেশ করা হয়েছে, যা প্রকৃত সত্যের ইঙ্গিত প্রদান করে। এর মধ্যে এমন কোন জটিলতা নেই, যা মানুষ বুঝতে অক্ষম।
কুরআনের শিক্ষক স্বয়ং আল্লাহ :
اَلرَّحْمٰنُ – - عَلَّمَ الْقُرْاٰنَ
পরম দয়াময় (আল্লাহ), তিনিই শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন। (সূরা আর রহমান- ১, ২)
ব্যাখ্যা : এখানে আল্লাহ কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন বলার পরিবর্তে রহমান কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন বলা হয়েছে। কারণ বান্দাদের হেদায়াতের জন্য কুরআন মাজীদ নাযিল করা সরাসরি আল্লাহর রহমত। যেহেতু তিনি তাঁর সৃষ্টির প্রতি অতীব দয়াবান; তাই তিনি তোমাদেরকে অন্ধকারে ছেড়ে দেয়া পছন্দ করেননি। তিনি তাঁর রহমতের দাবী অনুসারে এ কুরআন পাঠিয়ে তোমাদেরকে এমন জ্ঞান দান করেছেন- যার উপর পার্থিব জীবনে তোমাদের সত্যানুসরণ এবং পরকালীন জীবনের সফলতাও নির্ভরশীল। এ বাণী নাযিলকারী মহান আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির প্রতি অত্যন্ত দয়ালু ও মেহেরবান। তাঁর অন্যান্য গুণাবলির মধ্যে ‘রহমত’ গুণটি এ সত্যের প্রতি ইঙ্গিত করে যে, তিনি তাঁর দয়ার দাবী অনুসারে এ বাণী নাযিল করেছেন। এর দ্বারা শ্রোতাদেরকে এ মর্মে সাবধান করা হয়েছে যে, কেউ যদি এ বাণী প্রত্যাখ্যান করে তাহলে প্রকৃতপক্ষে সে নিজের সাথেই শত্রুতা করে। এটি একটি বিরাট নিয়ামত, যা আল্লাহ মানুষকে পথপ্রদর্শন এবং তার সাফল্যের জন্য সরাসরি নাযিল করেছেন। আল্লাহ যদি মানুষদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতেন, তাহলে তারা অন্ধকারে হাতড়িয়ে মরতো। কিন্তু সৃষ্টি করা ও খাদ্য সরবরাহ করার সাথে সাথে তার জীবনকে সুন্দর করে গোছানোর জন্য জ্ঞানের আলো দান করাও তিনি তাঁর কর্তব্য হিসেবে মনে করেন। আর সে কারণেই তাঁর এক বান্দার কাছে এ বাণী নাযিল করেছেন, যা ছিল বান্দাদের প্রতি তাঁর দয়া ও অনুগ্রহ। সুতরাং যে ব্যক্তি এ রহমত দ্বারা উপকৃত হওয়ার পরিবর্তে তাঁর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অগ্রসর হয়, তার চেয়ে বড় অকৃতজ্ঞ আর কে হতে পারে? যেহেতু আল্লাহ তা‘আলা মানুষের স্রষ্টা, তাই স্রষ্টার দায়িত্ব হচ্ছে নিজের সৃষ্টিকে পথপ্রদর্শন করা এবং যে পথের মাধ্যমে সে তার সৃষ্টির উদ্দেশ্য পূরণ করতে সক্ষম হবে সে পথ দেখানো। সুতরাং আল্লাহর পক্ষ থেকে কুরআনের এ শিক্ষা নাযিল হওয়া শুধু তাঁর অনুগ্রহ-পরায়ণতার দাবীই নয়, বরং তাঁর স্রষ্টা হওয়ার দাবীও বটে। স্রষ্টা যদি সৃষ্টিকে পথপ্রদর্শন না করেন, তাহলে আর কে তা করবে?
কুরআন আনন্দ ও গর্বের জিনিস :
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَآءَتْكُمْ مَّوْعِظَةٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَشِفَآءٌ لِّمَا فِى الصُّدُوْرِ وَهُدًى وَّرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ – قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْمَتِهٖ فَبِذٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوْاؕ هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُوْنَ
হে মানুষ! তোমাদের প্রতি তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে এসেছে উপদেশ ও তোমাদের অন্তরে যা আছে তার আরোগ্য এবং মুমিনদের জন্য হেদায়াত ও রহমত। বলো, তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ ও তার রহমতের মাধ্যমে আনন্দ লাভ করো। (কারণ) তারা যা কিছু (সম্পদ) জমা করে- এটা তার চেয়ে উত্তম। (সূরা ইউনুস- ৫৭, ৫৮)
দুনিয়ার প্রাচুর্যের চেয়ে কুরআনের জ্ঞান লাভের মূল্য অনেক বেশি :
وَلَقَدْ اٰتَيْنَاكَ سَبْعًا مِّنَ الْمَثَانِيْ وَالْقُرْاٰنَ الْعَظِيْمَ – - لَا تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ اِلٰى مَا مَتَّعْنَا بِهٖۤ اَزْوَاجًا مِّنْهُمْ وَلَا تَحْزَنْ عَلَيْهِمْ وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِلْمُؤْمِنِيْنَ
আমি তোমাকে বার বার পঠিত সাতটি আয়াত (সূরা ফাতেহা) এবং মহাগ্রন্থ কুরআন দিয়েছি। (সুতরাং) আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণিকে ভোগবিলাসের যে উপকরণ দিয়েছি, তার প্রতি তুমি কখনো তোমার চক্ষুদ্বয় প্রসারিত করো না এবং তাদের জন্য দুঃখও করো না। আর তুমি মুমিনদের জন্য তোমার বাহু অবনমিত করো। (সূরা হিজর- ৮৭, ৮৮)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ কুরআনের জ্ঞানকে মোহরানা হিসেবে নির্ধারণ করেছিলেন। সাহ্ল ইবনে সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক মহিলা নবী ﷺ এর কাছে উপস্থিত হয়ে বলল যে, সে নিজেকে আল্লাহ এবং রাসূলের জন্য উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। (এ কথা শুনে) নবী ﷺ বললেন, আমার কোন মহিলার প্রয়োজন নেই। তখন এক সাহাবী নবী ﷺ কে বললেন, তাকে আমার সাথে বিবাহ দিয়ে দিন। নবী ﷺ বললেন, তুমি তাকে (মোহরানাস্বরূপ) একটি কাপড় দাও। তিনি বললেন, তা আমার কাছে নেই। নবী ﷺ বললেন, তাহলে তাকে অন্তত একটি লোহার আংটি দাও। এবারও তিনি পূর্বের ন্যায় অপারগতা প্রকাশ করলেন। অতঃপর নবী ﷺ তাকে প্রশ্ন করলেন, তোমার কি কুরআনের কোন অংশ মুখস্থ আছে? তিনি বললেন, কুরআনের অমুক অমুক অংশ আমার মুখস্থ আছে। তখন নবী ﷺ বললেন, যে পরিমাণ কুরআন তোমার মুখস্থ আছে এর বিনিময়ে তোমার সাথে এ মহিলার বিয়ে দিলাম। (সহীহ বুখারী, হা/৫০২৯)
يُؤْتِى الْحِكْمَةَ مَنْ يَّشَآءُۚ وَمَنْ يُّؤْتَ الْحِكْمَةَ فَقَدْ اُوْتِيَ خَيْرًا كَثِيْرًاؕ وَمَا يَذَّكَّرُ اِلَّاۤ اُولُو الْاَلْبَابِ
আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে হেকমত দান করেন। আর যাকে হেকমত দান করা হয় সে প্রচুর কল্যাণ লাভ করে। (কিন্তু) জ্ঞানী লোকেরা ব্যতীত অন্য কেউই উপদেশ গ্রহণ করে না। (সূরা বাক্বারা- ২৬৯)
ব্যাখ্যা : حِكْمَةٌ (হিকমাত) অর্থ হচ্ছে, গভীর অন্তর্দৃষ্টি ও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার শক্তি। এখানে এ কথা বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে, হেকমতের সম্পদ যার কাছে থাকবে সে কখনো শয়তানের দেখানো পথে চলতে পারবে না। বরং সে আল্লাহর দেখানো প্রশস্ত পথ অবলম্বন করবে। শয়তানের সংকীর্ণমনা অনুসারীদের দৃষ্টিতে নিজের ধনসম্পদ আঁকড়ে ধরে রাখা এবং সবসময় সম্পদ আহরণের নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করাই বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক। কিন্তু যারা আল্লাহর কাছ থেকে অন্তর্দৃষ্টি লাভ করেছে, তাদের মতে এটা বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক নয়। তাদের মতে, মানুষ যা কিছু উপার্জন করবে নিজের মাঝারি পর্যায়ের প্রয়োজন পূর্ণ করার পর সেগুলো প্রাণ খুলে সৎকাজে ব্যয় করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। যে ব্যক্তি দুনিয়ার ক্ষুদ্রতম অংশের সমৃদ্ধি ও সচ্ছলতার বিনিময়ে বৃহত্তম ও সীমাহীন জীবনের অসচ্ছলতা ও দারিদ্র্যতা কিনে নেয়, সে আসলে বোকা ছাড়া আর কিছুই নয়। যে ব্যক্তি এ সংক্ষিপ্ত জীবনকালের সুযোগ গ্রহণ করে সামান্য পুঁজির সহায়তায় নিজের ঐ চিরন্তন জীবনের সমৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে সক্ষম হয়েছে সে-ই প্রকৃত বুদ্ধিমান।
اِنَّا سَنُلْقِيْ عَلَيْكَ قَوْلًا ثَقِيْلًا
আমি অচিরেই তোমার প্রতি অবতীর্ণ করব ভারত্বপূর্ণ বাণী। (সূরা মুয্যাম্মিল- ৫)
لَوْ اَنْزَلْنَا هٰذَا الْقُرْاٰنَ عَلٰى جَبَلٍ لَّرَاَيْتَهٗ خَاشِعًا مُّتَصَدِّعًا مِّنْ خَشْيَةِ اللهِ
আমি যদি এ কুরআন পর্বতের উপর অবতীর্ণ করতাম তবে তুমি দেখতে যে, ওটা আল্লাহর ভয়ে বিনীত ও বিদীর্ণ হয়ে গেছে। (সূরা হাশর- ২১)
ব্যাখ্যা : কুরআন নবী ﷺ এর শ্রেষ্ঠ মু‘জিযা। কুরআন ভাষা ও সাহিত্যিক মূল্যবোধের বিচারেও মু‘জিযা আবার শিক্ষা ও জানার বিচারেও তা মু‘জিযা। কুরআন যে সময় নাযিল হয়েছিল সে সময় মানুষ কুরআনের বাণীর মতো বাণী বানিয়ে পেশ করতে অক্ষম ছিল এবং আজও অক্ষম। এর কোন কথা কখনো কোন যুগে ভুল প্রমাণ করা যায়নি এবং যাবেও না। বাতিল না পারে সামনে থেকে এর মুকাবিলা করতে, না পারে পেছন দিক থেকে আক্রমণ করে পরাজিত করতে। মানুষ কুরআন থেকে যতবেশি পথনির্দেশনা পাওয়ার চেষ্টা করে, এটা তাকে ততটাই পথনির্দেশনা দান করে। সুতরাং যে যতবেশি এর অনুসরণ করবে, দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ সে ততবেশি লাভ করবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, এমন কোন নবী ছিলেন না, যাকে কোন মু‘জিযা দেয়া হয়নি, যা দেখে লোকেরা ঈমান এনেছে। কিন্তু আমাকে যা দেয়া হয়েছে, তা হচ্ছে ওহী; যা আল্লাহ তা‘আলা আমার কাছে নাযিল করেছেন। সুতরাং আমি আশা করি, কিয়ামতের দিন তাঁদের অনুসারীদের তুলনায় আমার উম্মতের সংখ্যাই হবে সর্বাধিক। (সহীহ বুখারী, হা/৪৯৮১)
কুরআন বিজ্ঞানময় কিতাব :
تِلْكَ اٰيَاتُ الْكِتَابِ الْحَكِيْمِ
এগুলো বিজ্ঞানময় কিতাবের আয়াত। (সূরা লুক্বমান- ২)
يٰسٓ -– وَالْقُرْاٰنِ الْحَكِيْمِ
ইয়া-সীন। কসম বিজ্ঞানময় কুরআনের। (সূরা ইয়াসীন- ১, ২)
ব্যাখ্যা : এ কুরআনে যেসব কথা বলা হচ্ছে এগুলো কোন হালকা কথা নয়। এগুলো কোন মানুষের অনুমান ও মতামত ভিত্তিকও নয়, বরং এক জ্ঞানবান সত্তা এগুলো নাযিল করেছেন। তিনি নিজের সৃষ্টির প্রয়োজন ও কল্যাণ এবং এর অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে পুরোপুরিভাবে অবগত আছেন। বান্দাদের সংশোধন ও পথনির্দেশনার জন্য তিনি তাঁর জ্ঞান দ্বারা সর্বোত্তম কৌশল ও ব্যবস্থা অবলম্বন করেন।
এর আয়াতসমূহ স্পষ্ট ও সুবিন্যাস্ত :
الٓرٰ كِتَابٌ اُحْكِمَتْ اٰيَاتُهٗ ثُمَّ فُصِّلَتْ مِنْ لَّدُنْ حَكِيْمٍ خَبِيْرٍ
আলিফ-লাম-রা। এটা এমন কিতাব যার আয়াতসমূহকে সুস্পষ্ট করা হয়েছে, অতঃপর বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এ কিতাব প্রজ্ঞাময় ও সর্বজ্ঞ (আল্লাহর) নিকট হতে এসেছে। (সূরা হুদ- ১)
কুরআনের কথা সত্য :
وَمَنْ اَصْدَقُ مِنَ اللهِ قِيْلًا
কথার ক্ষেত্রে আল্লাহর চেয়ে অধিক সত্যবাদী আর কে আছে? (সূরা নিসা- ১২২)
কুরআনের আয়াতসমূহ সাদৃশ্যপূর্ণ :
اَللهُ نَزَّلَ اَحْسَنَ الْحَدِيْثِ كِتَابًا مُّتَشَابِهًا مَّثَانِيَ تَقْشَعِرُّ مِنْهُ جُلُوْدُ الَّذِيْنَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْۚ ثُمَّ تَلِيْنُ جُلُوْدُهُمْ وَقُلُوْبُهُمْ اِلٰى ذِكْرِ اللهِ ذٰلِكَ هُدَى اللهِ يَهْدِيْ بِهٖ مَنْ يَّشَآءُ وَمَنْ يُّضْلِلِ اللهُ فَمَا لَهٗ مِنْ هَادٍ
আল্লাহ সর্বোত্তম বাণী অবতীর্ণ করেছেন- এটা এমন কিতাব যা সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং যার বিষয়াবলি পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে, এতে তাদের দেহ শিহ্রে উঠে। তারপর তাদের দেহ ও অন্তর (প্রশান্ত হয়ে) আল্লাহর স্মরণের দিকে ঝুঁকে পড়ে। এটাই আল্লাহর হেদায়াত, এর দ্বারা তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে হেদায়াত দান করেন। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তার কোন পথপ্রদর্শক নেই। (সূরা যুমার- ২৩)
ব্যাখ্যা : কুরআনের কথার মধ্যে কোন বৈপরীত্য ও বিরোধ নেই। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত গোটা কিতাব একই দাবী, একই আকীদা-বিশ্বাস এবং একই আদর্শ পেশ করে। এর প্রতিটি অংশ অন্যসব অংশের এবং প্রতিটি বিষয় অন্যসব বিষয়ের সত্যায়ন, সমর্থন ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে। অর্থ ও বর্ণনা উভয় দিক দিয়েই এ গ্রন্থের পূর্ণ মিল ও সামঞ্জস্য বিদ্যমান।
কুরআনের মধ্যে কোন জটিলতা নেই :
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْۤ اَنْزَلَ عَلٰى عَبْدِهِ الْكِتَابَ وَلَمْ يَجْعَلْ لَّهٗ عِوَجًا
সমসত্ম প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি তাঁর বান্দার প্রতি এ কিতাব অবতীর্ণ করেছেন এবং তাতে (কোন) বক্রতা রাখেননি। (সূরা কাহফ- ১)
قُرْاٰنًا عَرَبِيًّا غَيْرَ ذِيْ عِوَجٍ لَّعَلَّهُمْ يَتَّقُوْنَ
এ কুরআন আরবি ভাষায় (অবতীর্ণ হয়েছে), এতে বিন্দুমাত্রও বক্রতা নেই। হয়তো তারা তাক্বওয়া অর্জন করতে পারবে। (সূরা যুমার- ২৮)
ব্যাখ্যা : কুরআনের মধ্যে এমন কোন বক্র বা জটিল কথা নেই যে, তা বুঝা সাধারণ মানুষের জন্য কঠিন হবে। বরং এর মধ্যে পরিষ্কারভাবে সহজসরল কথা বলা হয়েছে। ফলে প্রত্যেক ব্যক্তি খুব সহজে জেনে নিতে পারে যে, এ গ্রন্থ কোন জিনিসকে ভ্রান্ত বলে এবং কেন বলে, কোন জিনিসকে সঠিক বলে এবং কিসের ভিত্তিতে বলে, কী স্বীকার করাতে চায় এবং কোন জিনিস অস্বীকার করাতে চায়, কোন কোন কাজের নির্দেশ দেয় এবং কোন কোন কাজ হতে নিষেধ করে। এ কিতাবের আয়াতসমূহ অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এর কোন কথাই অস্পষ্ট ও জটিল নয়, এ কিতাবের বিষয়বস্তু যে কারো বোধগম্য হতে পারে। হক ও বাতিল, সঠিক আকীদা ও ভ্রান্ত আকীদা, ভালো চরিত্র ও মন্দ চরিত্র, সৎকাজ ও অসৎকাজ, কোন পথে মানুষের কল্যাণ এবং কোন পথে মানুষের ক্ষতি- এ সবকিছু এ গ্রন্থে পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করে দেয়া হয়েছে। এখন কেউ যদি এরূপ সুস্পষ্ট হেদায়াত প্রত্যাখ্যান করে কিংবা সেদিকে মনোযোগ না দেয়, তাহলে সে কোন অজুহাত পেশ করতে পারবে না। এ কিতাব তাদের জন্য যারা জ্ঞানের অধিকারী। অর্থাৎ কেবল জ্ঞানী লোকেরাই এর দ্বারা উপকৃত হতে পারে। অজ্ঞ লোকদের কাছে তা ঠিক তেমনি মূল্যহীন যেমন একটি মূল্যবান হীরকখন্ড এমন ব্যক্তির কাছে মূল্যহীন, যে সাধারণ পাথর ও হীরকখন্ডের মধ্যে পার্থক্য করতে জানে না।
কুরআন অন্তরের রোগের শিফা :
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَآءَتْكُمْ مَّوْعِظَةٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَشِفَآءٌ لِّمَا فِى الصُّدُوْرِ وَهُدًى وَّرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ
হে মানুষ! তোমাদের প্রতি তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে এসেছে উপদেশ ও তোমাদের অন্তরে যা আছে তার আরোগ্য এবং মুমিনদের জন্য হেদায়াত ও রহমত। (সূরা ইউনুস- ৫৭)
قُلْ هُوَ لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا هُدًى وَّشِفَآءٌ
বলো, মুমিনদের জন্য এটা পথনির্দেশক ও ব্যাধির প্রতিকার। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৪৪)
এটি বরকতময় ও জ্ঞানসমৃদ্ধ কিতাব :
وَهٰذَا كِتَابٌ اَنْزَلْنَاهُ مُبَارَكٌ فَاتَّبِعُوْهُ وَاتَّقُوْا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ
এ কিতাব আমি নাযিল করেছি, যা বরকতময়। সুতরাং তার অনুসরণ করো এবং সাবধান হও, হয়তো তোমাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা হবে। (সূরা আন‘আম- ১৫৫)
ব্যাখ্যা : بَرَكَةٌ (বারাকাত) এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে, কল্যাণ ও সৌভাগ্য বৃদ্ধি। কুরআন মাজীদকে বরকতময় কিতাব বলার অর্থ হচ্ছে, এটি মানুষের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি কিতাব। এ কিতাবটি মানুষের জীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য সর্বোত্তম বিধান দান করে। এর বিধান মেনে চলায় মানুষের শুধু লাভই হয়, এতে কোন প্রকার ক্ষতির আশঙ্কা নেই। যখনই ওহী ও রিসালাতের জীবনধারা এ পৃথিবীতে পৌঁছেছে, তখনই জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎকর্ষতা মূর্খতা ও জাহেলিয়াতের স্থানগুলো দখল করে নিয়েছে। যুলুম ও নিপীড়ণের জায়গায় ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ফাসিকী ও অশ্লীলতার জায়গায় নৈতিক ও চারিত্রিক মাহাত্মের ফুল ফুটেছে। এর ফলাফল যেদিকে যতটুকু পৌঁছেছে সেদিকেই অন্যায়-অত্যাচার কমে গেছে এবং সদাচার বৃদ্ধি পেয়েছে। নবীদের আগমন সবসময় একটি শুভ ও কল্যাণকর চিন্তা ও নৈতিক বিপ্লবের সূচনা করেছে। পক্ষান্তরে নবীদের বিধান ও নির্দেশাবলি প্রত্যাখ্যান করে বা তা থেকে বঞ্চিত হয়ে মানবজাতি সবসময় ক্ষতিগ্রস্তই হয়েছে। ইতিহাস এ দৃশ্য বার বার দেখিয়েছে এবং কুরআনও বার বার এদিকে ইশারা করেছে। কিন্তু এরপরও লোকেরা শিক্ষা নেয় না।
وَلَقَدْ جِئْنَاهُمْ بِكِتَابٍ فَصَّلْنَاهُ عَلٰى عِلْمٍ هُدًى وَّرَحْمَةً لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ
অবশ্যই আমি তাদের নিকট পৌঁছে দিয়েছিলাম এমন এক কিতাব, যা আমি পূর্ণ জ্ঞান দ্বারা বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছিলাম; আর তা ছিল মুমিনদের জন্য হেদায়াত ও রহমতস্বরূপ। (সূরা আ‘রাফ- ৫২)
ব্যাখ্যা : পরিপূর্ণ বিবরণসহ মানুষের জন্য দুনিয়ার জীবনের সঠিক জীবনপদ্ধতির মূল নীতিগুলো কী কী, তা বর্ণনা করা হয়েছে। আবার এ বিবরণগুলো নিছক অনুমান বা কল্পনার ভিত্তিতে দেয়া হয়নি; বরং নির্ভেজাল ও নির্ভুল জ্ঞানের ভিত্তিতে দেয়া হয়েছে। এ কিতাবের বিষয়বস্তু এত স্পষ্ট যে, এ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করলে যে কোন মানুষের সামনে সত্য পথ পরিষ্কারভাবে ভেসে উঠতে পারে। এর প্রভাব গ্রহণ করার সাথে সাথেই মানুষের মন-মানসিকতা ও আচরণে বৈপ্লবিক পরিবর্তন শুরু হয়ে যায়।
কুরআন দলীল-প্রমাণের কিতাব :
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَآءَكُمْ بُرْهَانٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَاَنْزَلْنَاۤ اِلَيْكُمْ نُوْرًا مُّبِيْنًا
হে মানবমন্ডলী! তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে তোমাদের নিকট প্রমাণ এসেছে এবং আমি তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ করেছি স্পষ্ট নূর। (সূরা নিসা- ১৭৪)
দ্বীনের মৌলিক সকল মূলনীতির বর্ণনা এর মধ্যে রয়েছে :
وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَانًا لِّكُلِّ شَيْءٍ وَّهُدًى وَّرَحْمَةً وَّبُشْرٰى لِلْمُسْلِمِيْنَ
আমি তোমার প্রতি এ কিতাব নাযিল করেছি, যা প্রত্যেকটি বিষয়ের বর্ণনাস্বরূপ। আর তা হেদায়াত, রহমত এবং মুসলিমদের জন্য সুসংবাদস্বরূপ। (সূরা নাহল- ৮৯)
مَا كَانَ حَدِيْثًا يُّفْتَرٰى وَلٰكِنْ تَصْدِيْقَ الَّذِيْ بَيْنَ يَدَيْهِ وَتَفْصِيْلَ كُلِّ شَيْءٍ وَّهُدًى وَّرَحْمَةً لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ
এটা এমন বাণী, যা মিথ্যা রচনা নয়। বরং এটা পূর্ববর্তী কিতাবে যা আছে তার সমর্থক এবং মুমিনদের জন্য সবকিছুর বিশদ বিবরণ, হেদায়াত ও রহমত। (সূরা ইউসুফ- ১১১)
ব্যাখ্যা : ‘প্রত্যেকটি জিনিসের বিস্তারিত বিবরণ’ শব্দাবলি থেকে কেউ কেউ দুনিয়ার সমস্ত জিনিসের বিস্তারিত বিবরণ অর্থ করেন। কিন্তু আয়াতের প্রকৃত অর্থ হচ্ছে, মানুষের হেদায়াত পাওয়া ও পথ দেখার জন্য যেসব জিনিসের প্রয়োজন তার প্রত্যেকটির বিস্তারিত বিবরণ। এতে এমন প্রত্যেকটি বিষয় পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা হয়েছে, যার উপর হেদায়াত ও গোমরাহী এবং লাভ ও ক্ষতি নির্ভর করে। সঠিক পথে চলার জন্য যা জানা একান্ত প্রয়োজন এবং যার মাধ্যমে হক ও বাতিলের পার্থক্য সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে, তাও এতে বর্ণনা করে দেয়া হয়েছে।
কুরআন সকলের জন্য উপদেশস্বরূপ :
لَقَدْ اَنْزَلْنَاۤ اِلَيْكُمْ كِتَابًا فِيْهِ ذِكْرُكُمْؕ اَفَلَا تَعْقِلُوْنَ
আমি তোমাদের প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যাতে আছে তোমাদের জন্য উপদেশ; তবুও কি তোমরা বুঝবে না? (সূরা আম্বিয়া- ১০)
ব্যাখ্যা : কুরআনের মধ্যে মানুষের নিজেদের কথাই বলা হয়েছে। তাদেরই ব্যবহারিক জীবনের কথা আলোচনা করা হয়েছে। তাদের স্বভাব, গঠনাকৃতি এবং সূচনা ও পরিণামের কথা বলা হয়েছে। তাদেরই পরিবেশ থেকে এমনসব নিদর্শন বাছাই করে এতে পেশ করা হয়েছে, যা প্রকৃত সত্যের ইঙ্গিত প্রদান করে। এর মধ্যে এমন কোন জটিলতা নেই, যা মানুষ বুঝতে অক্ষম।
কুরআনের শিক্ষক স্বয়ং আল্লাহ :
اَلرَّحْمٰنُ – - عَلَّمَ الْقُرْاٰنَ
পরম দয়াময় (আল্লাহ), তিনিই শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন। (সূরা আর রহমান- ১, ২)
ব্যাখ্যা : এখানে আল্লাহ কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন বলার পরিবর্তে রহমান কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন বলা হয়েছে। কারণ বান্দাদের হেদায়াতের জন্য কুরআন মাজীদ নাযিল করা সরাসরি আল্লাহর রহমত। যেহেতু তিনি তাঁর সৃষ্টির প্রতি অতীব দয়াবান; তাই তিনি তোমাদেরকে অন্ধকারে ছেড়ে দেয়া পছন্দ করেননি। তিনি তাঁর রহমতের দাবী অনুসারে এ কুরআন পাঠিয়ে তোমাদেরকে এমন জ্ঞান দান করেছেন- যার উপর পার্থিব জীবনে তোমাদের সত্যানুসরণ এবং পরকালীন জীবনের সফলতাও নির্ভরশীল। এ বাণী নাযিলকারী মহান আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির প্রতি অত্যন্ত দয়ালু ও মেহেরবান। তাঁর অন্যান্য গুণাবলির মধ্যে ‘রহমত’ গুণটি এ সত্যের প্রতি ইঙ্গিত করে যে, তিনি তাঁর দয়ার দাবী অনুসারে এ বাণী নাযিল করেছেন। এর দ্বারা শ্রোতাদেরকে এ মর্মে সাবধান করা হয়েছে যে, কেউ যদি এ বাণী প্রত্যাখ্যান করে তাহলে প্রকৃতপক্ষে সে নিজের সাথেই শত্রুতা করে। এটি একটি বিরাট নিয়ামত, যা আল্লাহ মানুষকে পথপ্রদর্শন এবং তার সাফল্যের জন্য সরাসরি নাযিল করেছেন। আল্লাহ যদি মানুষদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতেন, তাহলে তারা অন্ধকারে হাতড়িয়ে মরতো। কিন্তু সৃষ্টি করা ও খাদ্য সরবরাহ করার সাথে সাথে তার জীবনকে সুন্দর করে গোছানোর জন্য জ্ঞানের আলো দান করাও তিনি তাঁর কর্তব্য হিসেবে মনে করেন। আর সে কারণেই তাঁর এক বান্দার কাছে এ বাণী নাযিল করেছেন, যা ছিল বান্দাদের প্রতি তাঁর দয়া ও অনুগ্রহ। সুতরাং যে ব্যক্তি এ রহমত দ্বারা উপকৃত হওয়ার পরিবর্তে তাঁর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অগ্রসর হয়, তার চেয়ে বড় অকৃতজ্ঞ আর কে হতে পারে? যেহেতু আল্লাহ তা‘আলা মানুষের স্রষ্টা, তাই স্রষ্টার দায়িত্ব হচ্ছে নিজের সৃষ্টিকে পথপ্রদর্শন করা এবং যে পথের মাধ্যমে সে তার সৃষ্টির উদ্দেশ্য পূরণ করতে সক্ষম হবে সে পথ দেখানো। সুতরাং আল্লাহর পক্ষ থেকে কুরআনের এ শিক্ষা নাযিল হওয়া শুধু তাঁর অনুগ্রহ-পরায়ণতার দাবীই নয়, বরং তাঁর স্রষ্টা হওয়ার দাবীও বটে। স্রষ্টা যদি সৃষ্টিকে পথপ্রদর্শন না করেন, তাহলে আর কে তা করবে?
কুরআন আনন্দ ও গর্বের জিনিস :
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَآءَتْكُمْ مَّوْعِظَةٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَشِفَآءٌ لِّمَا فِى الصُّدُوْرِ وَهُدًى وَّرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ – قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْمَتِهٖ فَبِذٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوْاؕ هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُوْنَ
হে মানুষ! তোমাদের প্রতি তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে এসেছে উপদেশ ও তোমাদের অন্তরে যা আছে তার আরোগ্য এবং মুমিনদের জন্য হেদায়াত ও রহমত। বলো, তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ ও তার রহমতের মাধ্যমে আনন্দ লাভ করো। (কারণ) তারা যা কিছু (সম্পদ) জমা করে- এটা তার চেয়ে উত্তম। (সূরা ইউনুস- ৫৭, ৫৮)
দুনিয়ার প্রাচুর্যের চেয়ে কুরআনের জ্ঞান লাভের মূল্য অনেক বেশি :
وَلَقَدْ اٰتَيْنَاكَ سَبْعًا مِّنَ الْمَثَانِيْ وَالْقُرْاٰنَ الْعَظِيْمَ – - لَا تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ اِلٰى مَا مَتَّعْنَا بِهٖۤ اَزْوَاجًا مِّنْهُمْ وَلَا تَحْزَنْ عَلَيْهِمْ وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِلْمُؤْمِنِيْنَ
আমি তোমাকে বার বার পঠিত সাতটি আয়াত (সূরা ফাতেহা) এবং মহাগ্রন্থ কুরআন দিয়েছি। (সুতরাং) আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণিকে ভোগবিলাসের যে উপকরণ দিয়েছি, তার প্রতি তুমি কখনো তোমার চক্ষুদ্বয় প্রসারিত করো না এবং তাদের জন্য দুঃখও করো না। আর তুমি মুমিনদের জন্য তোমার বাহু অবনমিত করো। (সূরা হিজর- ৮৭, ৮৮)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ কুরআনের জ্ঞানকে মোহরানা হিসেবে নির্ধারণ করেছিলেন। সাহ্ল ইবনে সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক মহিলা নবী ﷺ এর কাছে উপস্থিত হয়ে বলল যে, সে নিজেকে আল্লাহ এবং রাসূলের জন্য উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। (এ কথা শুনে) নবী ﷺ বললেন, আমার কোন মহিলার প্রয়োজন নেই। তখন এক সাহাবী নবী ﷺ কে বললেন, তাকে আমার সাথে বিবাহ দিয়ে দিন। নবী ﷺ বললেন, তুমি তাকে (মোহরানাস্বরূপ) একটি কাপড় দাও। তিনি বললেন, তা আমার কাছে নেই। নবী ﷺ বললেন, তাহলে তাকে অন্তত একটি লোহার আংটি দাও। এবারও তিনি পূর্বের ন্যায় অপারগতা প্রকাশ করলেন। অতঃপর নবী ﷺ তাকে প্রশ্ন করলেন, তোমার কি কুরআনের কোন অংশ মুখস্থ আছে? তিনি বললেন, কুরআনের অমুক অমুক অংশ আমার মুখস্থ আছে। তখন নবী ﷺ বললেন, যে পরিমাণ কুরআন তোমার মুখস্থ আছে এর বিনিময়ে তোমার সাথে এ মহিলার বিয়ে দিলাম। (সহীহ বুখারী, হা/৫০২৯)
يُؤْتِى الْحِكْمَةَ مَنْ يَّشَآءُۚ وَمَنْ يُّؤْتَ الْحِكْمَةَ فَقَدْ اُوْتِيَ خَيْرًا كَثِيْرًاؕ وَمَا يَذَّكَّرُ اِلَّاۤ اُولُو الْاَلْبَابِ
আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে হেকমত দান করেন। আর যাকে হেকমত দান করা হয় সে প্রচুর কল্যাণ লাভ করে। (কিন্তু) জ্ঞানী লোকেরা ব্যতীত অন্য কেউই উপদেশ গ্রহণ করে না। (সূরা বাক্বারা- ২৬৯)
ব্যাখ্যা : حِكْمَةٌ (হিকমাত) অর্থ হচ্ছে, গভীর অন্তর্দৃষ্টি ও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার শক্তি। এখানে এ কথা বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে, হেকমতের সম্পদ যার কাছে থাকবে সে কখনো শয়তানের দেখানো পথে চলতে পারবে না। বরং সে আল্লাহর দেখানো প্রশস্ত পথ অবলম্বন করবে। শয়তানের সংকীর্ণমনা অনুসারীদের দৃষ্টিতে নিজের ধনসম্পদ আঁকড়ে ধরে রাখা এবং সবসময় সম্পদ আহরণের নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করাই বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক। কিন্তু যারা আল্লাহর কাছ থেকে অন্তর্দৃষ্টি লাভ করেছে, তাদের মতে এটা বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক নয়। তাদের মতে, মানুষ যা কিছু উপার্জন করবে নিজের মাঝারি পর্যায়ের প্রয়োজন পূর্ণ করার পর সেগুলো প্রাণ খুলে সৎকাজে ব্যয় করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। যে ব্যক্তি দুনিয়ার ক্ষুদ্রতম অংশের সমৃদ্ধি ও সচ্ছলতার বিনিময়ে বৃহত্তম ও সীমাহীন জীবনের অসচ্ছলতা ও দারিদ্র্যতা কিনে নেয়, সে আসলে বোকা ছাড়া আর কিছুই নয়। যে ব্যক্তি এ সংক্ষিপ্ত জীবনকালের সুযোগ গ্রহণ করে সামান্য পুঁজির সহায়তায় নিজের ঐ চিরন্তন জীবনের সমৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে সক্ষম হয়েছে সে-ই প্রকৃত বুদ্ধিমান।
কুরআন সঠিক পথের সন্ধান দেয় :
اِنَّ هٰذَا الْقُرْاٰنَ يَهْدِيْ لِلَّتِيْ هِيَ اَقْوَمُ وَيُبَشِّرُ الْمُؤْمِنِيْنَ الَّذِيْنَ يَعْمَلُوْنَ الصَّالِحَاتِ اَنَّ لَهُمْ اَجْرًا كَبِيْرًا
নিশ্চয় এ কুরআন সে পথের দিকে হেদায়াত করে, যা খুবই সুদৃঢ়। আর এটি সৎকর্মপরায়ণ মুমিনদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৯)
কুরআনের হেদায়াতই প্রকৃত হেদায়াত :
قُلْ اِنَّ هُدَى اللهِ هُوَ الْهُدٰىؕ وَلَئِنِ اتَّبَعْتَ اَهْوَآءَهُمْ بَعْدَ الَّذِيْ جَآءَكَ مِنَ الْعِلْمِ مَا لَكَ مِنَ اللهِ مِنْ وَّلِيٍّ وَّلَا نَصِيْرٍ
বলো, আল্লাহর প্রদর্শিত পথই সঠিক পথ। সুতরাং তোমার নিকট জ্ঞান আসার পরও যদি তুমি তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ কর, তবে আল্লাহ হতে তোমার জন্য কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী থাকবে না। (সূরা বাক্বারা- ১২০)
ذٰلِكَ هُدَى اللهِ يَهْدِيْ بِهٖ مَنْ يَّشَآءُ وَمَنْ يُّضْلِلِ اللهُ فَمَا لَهٗ مِنْ هَادٍ
এটাই আল্লাহর হেদায়াত, এর দ্বারা তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে হেদায়াত দান করেন। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার কোন পথপ্রদর্শক নেই। (সূরা যুমার- ২৩)
কুরআন শান্তির পথ দেখায় :
قَدْ جَآءَكُمْ مِّنَ اللهِ نُوْرٌ وَّكِتَابٌ مُّبِيْنٌ – - يَهْدِيْ بِهِ اللهُ مَنِ اتَّبَعَ رِضْوَانَهٗ سُبُلَ السَّلَامِ وَيُخْرِجُهُمْ مِّنَ الظُّلُمَاتِ اِلَى النُّوْرِ بِاِذْنِهٖ وَيَهْدِيْهِمْ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
আল্লাহর নিকট হতে এক জ্যোতি ও স্পষ্ট কিতাব তোমাদের নিকট এসেছে। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে চায় এর দ্বারা তিনি তাদেরকে শান্তির পথে পরিচালিত করেন এবং তাদেরকে নিজ ইচ্ছায় অন্ধকার হতে বের করে আলোর দিকে নিয়ে আসেন। অতঃপর তাদেরকে সরল পথে পরিচালিত করেন। (সূরা মায়েদা- ১৫, ১৬)
কুরআন হেদায়াতের নূর :
وَكَذٰلِكَ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ رُوْحًا مِّنْ اَمْرِنَاؕ مَا كُنْتَ تَدْرِيْ مَا الْكِتَابُ وَلَا الْاِيْمَانُ وَلٰكِنْ جَعَلْنَاهُ نُوْرًا نَّهْدِيْ بِهٖ مَنْ نَّشَآءُ مِنْ عِبَادِنَاؕ وَاِنَّكَ لَتَهْدِيْۤ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
এভাবেই আমি আমার নির্দেশে তোমার প্রতি ওহী করেছি রূহ (কুরআন); তুমি তো জানতে না কিতাব কী এবং ঈমান কী? পক্ষান্তরে আমি একে করেছি আলো, যা দ্বারা আমি আমার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা পথপ্রদর্শন করি। নিশ্চয় তুমি সরল পথের দিকেই পথপ্রদর্শন করে থাক। (সূরা শূরা- ৫২)
اَوَمَنْ كَانَ مَيْتًا فَاَحْيَيْنَاهُ وَجَعَلْنَا لَهٗ نُوْرًا يَّمْشِيْ بِهٖ فِى النَّاسِ كَمَنْ مَّثَلُهٗ فِى الظُّلُمَاتِ لَيْسَ بِخَارِجٍ مِّنْهَاؕ كَذٰلِكَ زُيِّنَ لِلْكَافِرِيْنَ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
যে ব্যক্তি মৃত ছিল, পরে আমি তাকে জীবিত করেছি এবং মানুষের মধ্যে চলার জন্য আলো দিয়েছি, সে ব্যক্তি কি ঐ ব্যক্তির মতো, যে এমন অন্ধকারে রয়েছে যেখান থেকে সে বের হবার নয়? এভাবে কাফিরদের দৃষ্টিতে তাদের কৃতকর্ম শোভনীয় করে দেয়া হয়েছে। (সূরা আন‘আম- ১২২)
ব্যাখ্যা : এখানে মৃত্যু বলা হয়েছে অজ্ঞতা, মূর্খতা ও চেতনাবিহীন অবস্থাকে। আর জীবন বলতে বুঝানো হয়েছে জ্ঞান, উপলব্ধি ও প্রকৃত সত্যকে চিনতে পারার অবস্থাকে। যে ব্যক্তির মধ্যে ভুল ও নির্ভুলের পার্থক্যবোধ নেই এবং যার সত্য ও সরল পথের স্বরূপ জানা নেই, জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিতে সে জীবনসম্পন্ন হলেও প্রকৃত সত্যের বিচারে সে মৃত। সে অবশ্যই জীবন্ত প্রাণী কিন্তু জীবন্ত মানুষ নয়। জীবন্ত মানুষ একমাত্র তাকেই বলা যাবে যে সত্য-মিথ্যা, ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় ও ভুল-নির্ভুলের পার্থক্যের জ্ঞান রাখে। যে মানুষটি মানবিক চেতনা লাভ করেছে এবং জ্ঞানের উজ্জ্বল আলোয় বাঁকা পথগুলোর মধ্যে সোজা রাজপথটি দেখতে পাচ্ছে, তার ব্যাপারে কেমন করে আশা করা যেতে পারে যে, সে এমনসব চেতনাবিহীন লোকদের মতো দুনিয়ায় জীবন-যাপন করবে, যারা অজ্ঞতা ও মূর্খতার অন্ধকারে পথ হারা হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে?
কুরআনের পথ ছাড়া বাকী সকল পথ গোমরাহী :
اِنَّاۤ اَنْزَلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ لِلنَّاسِ بِالْحَقِّۚ فَمَنِ اهْتَدٰى فَلِنَفْسِهٖۚ وَمَنْ ضَلَّ فَاِنَّمَا يَضِلُّ عَلَيْهَاۚ وَمَاۤ اَنْتَ عَلَيْهِمْ بِوَكِيْلٍ
আমি তোমার প্রতি মানুষের জন্য সত্য সহকারে কিতাব অবতীর্ণ করেছি। সুতরাং যে হেদায়াত গ্রহণ করে, সে তার নিজের জন্যই হেদায়াত গ্রহণ করে এবং যে পথভ্রষ্ট হয়, সে নিজের (ধ্বংসের) জন্যই পথভ্রষ্ট হয়। আর তুমি তাদের জিম্মাদার নও। (সূরা যুমার- ৪১)
মুত্তাক্বীরাই কুরআন থেকে হেদায়াত পায় :
ذٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَۚ فِيْهِۚ هُدًى لِّلْمُتَّقِيْنَ – اَلَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ – وَالَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكَ وَمَاۤ اُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَۚ وَبِالْاٰخِرَةِ هُمْ يُوْقِنُوْنَ – اُولٰٓئِكَ عَلٰى هُدًى مِّنْ رَّبِّهِمْۗ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
এটা ঐ গ্রন্থ যার মধ্যে কোন সন্দেহ নেই। আর এটা মুত্তাক্বীদের জন্য হেদায়াতস্বরূপ। এরা (মুত্তাক্বীগণ) ঐ সকল লোক, যারা অদৃশ্য বিষয়গুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদেরকে যে জীবনোপকরণ দান করেছি তা হতে ব্যয় করে। আর তারা তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে ও তোমার পূর্বে যা অবতীর্ণ করা হয়েছিল তার প্রতি এবং পরকালের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করে। তারাই তাদের রবের পক্ষ হতে প্রাপ্ত হেদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে এবং তারাই সফলকাম। (সূরা বাক্বারা, ২-৫)
ব্যাখ্যা : কুরআন একটি হেদায়াত ও পথনির্দেশনার গ্রন্থ। কিন্তু এ থেকে লাভবান হতে চাইলে মানুষের মধ্যে তাক্বওয়ার গুণ থাকতে হবে। তাকে ‘মুত্তাক্বী’ বা আল্লাহভীরু হতে হবে। তার মধ্যে মন্দ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া ও ভালোকে গ্রহণ করার আকাঙ্ক্ষা এবং এ আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়ন করার ইচ্ছা থাকতে হবে।
মুত্তাক্বীর প্রথম গুণ হচ্ছে, ‘গায়েব’ বা অদৃশ্যে বিশ্বাস। নবী ﷺ অদৃশ্যের বিষয়ে যেসব সংবাদ দিয়েছেন, তা অক্ষরে অক্ষরে মেনে নেয়াই হচ্ছে অদৃশ্যের প্রতি বিশ্বাস। যে ব্যক্তি এ সত্যগুলো মেনে নিতে প্রস্তুত হবে, সে-ই কুরআনের হেদায়াত থেকে উপকৃত হতে পারবে।
দ্বিতীয় গুণ হচ্ছে, নামায কায়েম করা। যারা ঈমান আনার পর বসে থাকবে তারা কুরআন থেকে উপকৃত হতে পারবে না। এ থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য একান্ত প্রয়োজন হচ্ছে, ইসলামকে মেনে নেয়ার পর পরই আল্লাহর আনুগত্য করা ও ইসলামের বিধিবিধান বাস্তবায়ন করা।
তৃতীয় গুণ হচ্ছে, যাকাত আদায় করা। সংকীর্ণমনা না হয়ে আল্লাহ ও তাঁর বান্দার অধিকার আদায়কারী হওয়া। তার সম্পদে আল্লাহ ও তাঁর বান্দার যে অধিকার রয়েছে, তাকে তা আদায় করার জন্য প্রস্তুত থাকা। যে বিষয়ের উপর সে ঈমান এনেছে, তার জন্য অর্থনৈতিক ত্যাগ স্বীকার করার ব্যাপারে ইতস্ততবোধ না করা।
চতুর্থ গুণ হচ্ছে, যাকাত আদায় করা।
পঞ্চম গুণ হচ্ছে, আসমানী কিতাবসমূহের উপর বিশ্বাস রাখা।
ষষ্ট গুণ হচ্ছে, আখিরাতের উপর ঈমান রাখা। এ বিষয়গুলো অস্বীকার করা তো দূরের কথা এগুলো সম্পর্কে কারো মনে যদি সামান্যতম সন্দেহ থাকে, তাহলে মানুষের জীবনের জন্য কুরআন যে পথনির্দেশ দিয়েছে, সে পথে তারা চলতে পারবে না। রিসালাতের এ কল্যাণধারা থেকে কেবলমাত্র সেসব লোক লাভবান হতে পারে, যারা মূলত সৎ প্রবৃত্তির অধিকারী। অন্যদিকে দুষ্ট মনোবৃত্তির অধিকারী ও দুষ্কর্মশীল লোকেরা হচ্ছে এমন ধরনের অনুর্বর জমির মতো, যা রহমতের বারি বর্ষণে কোনক্রমেই লাভবান হয় না। অনুরূপভাবে রিসালাতের আবির্ভাবও তাদের কোন উপকারে আসে না।
اِنَّ هٰذَا الْقُرْاٰنَ يَهْدِيْ لِلَّتِيْ هِيَ اَقْوَمُ وَيُبَشِّرُ الْمُؤْمِنِيْنَ الَّذِيْنَ يَعْمَلُوْنَ الصَّالِحَاتِ اَنَّ لَهُمْ اَجْرًا كَبِيْرًا
নিশ্চয় এ কুরআন সে পথের দিকে হেদায়াত করে, যা খুবই সুদৃঢ়। আর এটি সৎকর্মপরায়ণ মুমিনদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৯)
কুরআনের হেদায়াতই প্রকৃত হেদায়াত :
قُلْ اِنَّ هُدَى اللهِ هُوَ الْهُدٰىؕ وَلَئِنِ اتَّبَعْتَ اَهْوَآءَهُمْ بَعْدَ الَّذِيْ جَآءَكَ مِنَ الْعِلْمِ مَا لَكَ مِنَ اللهِ مِنْ وَّلِيٍّ وَّلَا نَصِيْرٍ
বলো, আল্লাহর প্রদর্শিত পথই সঠিক পথ। সুতরাং তোমার নিকট জ্ঞান আসার পরও যদি তুমি তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ কর, তবে আল্লাহ হতে তোমার জন্য কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী থাকবে না। (সূরা বাক্বারা- ১২০)
ذٰلِكَ هُدَى اللهِ يَهْدِيْ بِهٖ مَنْ يَّشَآءُ وَمَنْ يُّضْلِلِ اللهُ فَمَا لَهٗ مِنْ هَادٍ
এটাই আল্লাহর হেদায়াত, এর দ্বারা তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে হেদায়াত দান করেন। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার কোন পথপ্রদর্শক নেই। (সূরা যুমার- ২৩)
কুরআন শান্তির পথ দেখায় :
قَدْ جَآءَكُمْ مِّنَ اللهِ نُوْرٌ وَّكِتَابٌ مُّبِيْنٌ – - يَهْدِيْ بِهِ اللهُ مَنِ اتَّبَعَ رِضْوَانَهٗ سُبُلَ السَّلَامِ وَيُخْرِجُهُمْ مِّنَ الظُّلُمَاتِ اِلَى النُّوْرِ بِاِذْنِهٖ وَيَهْدِيْهِمْ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
আল্লাহর নিকট হতে এক জ্যোতি ও স্পষ্ট কিতাব তোমাদের নিকট এসেছে। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে চায় এর দ্বারা তিনি তাদেরকে শান্তির পথে পরিচালিত করেন এবং তাদেরকে নিজ ইচ্ছায় অন্ধকার হতে বের করে আলোর দিকে নিয়ে আসেন। অতঃপর তাদেরকে সরল পথে পরিচালিত করেন। (সূরা মায়েদা- ১৫, ১৬)
কুরআন হেদায়াতের নূর :
وَكَذٰلِكَ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ رُوْحًا مِّنْ اَمْرِنَاؕ مَا كُنْتَ تَدْرِيْ مَا الْكِتَابُ وَلَا الْاِيْمَانُ وَلٰكِنْ جَعَلْنَاهُ نُوْرًا نَّهْدِيْ بِهٖ مَنْ نَّشَآءُ مِنْ عِبَادِنَاؕ وَاِنَّكَ لَتَهْدِيْۤ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
এভাবেই আমি আমার নির্দেশে তোমার প্রতি ওহী করেছি রূহ (কুরআন); তুমি তো জানতে না কিতাব কী এবং ঈমান কী? পক্ষান্তরে আমি একে করেছি আলো, যা দ্বারা আমি আমার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা পথপ্রদর্শন করি। নিশ্চয় তুমি সরল পথের দিকেই পথপ্রদর্শন করে থাক। (সূরা শূরা- ৫২)
اَوَمَنْ كَانَ مَيْتًا فَاَحْيَيْنَاهُ وَجَعَلْنَا لَهٗ نُوْرًا يَّمْشِيْ بِهٖ فِى النَّاسِ كَمَنْ مَّثَلُهٗ فِى الظُّلُمَاتِ لَيْسَ بِخَارِجٍ مِّنْهَاؕ كَذٰلِكَ زُيِّنَ لِلْكَافِرِيْنَ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
যে ব্যক্তি মৃত ছিল, পরে আমি তাকে জীবিত করেছি এবং মানুষের মধ্যে চলার জন্য আলো দিয়েছি, সে ব্যক্তি কি ঐ ব্যক্তির মতো, যে এমন অন্ধকারে রয়েছে যেখান থেকে সে বের হবার নয়? এভাবে কাফিরদের দৃষ্টিতে তাদের কৃতকর্ম শোভনীয় করে দেয়া হয়েছে। (সূরা আন‘আম- ১২২)
ব্যাখ্যা : এখানে মৃত্যু বলা হয়েছে অজ্ঞতা, মূর্খতা ও চেতনাবিহীন অবস্থাকে। আর জীবন বলতে বুঝানো হয়েছে জ্ঞান, উপলব্ধি ও প্রকৃত সত্যকে চিনতে পারার অবস্থাকে। যে ব্যক্তির মধ্যে ভুল ও নির্ভুলের পার্থক্যবোধ নেই এবং যার সত্য ও সরল পথের স্বরূপ জানা নেই, জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিতে সে জীবনসম্পন্ন হলেও প্রকৃত সত্যের বিচারে সে মৃত। সে অবশ্যই জীবন্ত প্রাণী কিন্তু জীবন্ত মানুষ নয়। জীবন্ত মানুষ একমাত্র তাকেই বলা যাবে যে সত্য-মিথ্যা, ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় ও ভুল-নির্ভুলের পার্থক্যের জ্ঞান রাখে। যে মানুষটি মানবিক চেতনা লাভ করেছে এবং জ্ঞানের উজ্জ্বল আলোয় বাঁকা পথগুলোর মধ্যে সোজা রাজপথটি দেখতে পাচ্ছে, তার ব্যাপারে কেমন করে আশা করা যেতে পারে যে, সে এমনসব চেতনাবিহীন লোকদের মতো দুনিয়ায় জীবন-যাপন করবে, যারা অজ্ঞতা ও মূর্খতার অন্ধকারে পথ হারা হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে?
কুরআনের পথ ছাড়া বাকী সকল পথ গোমরাহী :
اِنَّاۤ اَنْزَلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ لِلنَّاسِ بِالْحَقِّۚ فَمَنِ اهْتَدٰى فَلِنَفْسِهٖۚ وَمَنْ ضَلَّ فَاِنَّمَا يَضِلُّ عَلَيْهَاۚ وَمَاۤ اَنْتَ عَلَيْهِمْ بِوَكِيْلٍ
আমি তোমার প্রতি মানুষের জন্য সত্য সহকারে কিতাব অবতীর্ণ করেছি। সুতরাং যে হেদায়াত গ্রহণ করে, সে তার নিজের জন্যই হেদায়াত গ্রহণ করে এবং যে পথভ্রষ্ট হয়, সে নিজের (ধ্বংসের) জন্যই পথভ্রষ্ট হয়। আর তুমি তাদের জিম্মাদার নও। (সূরা যুমার- ৪১)
মুত্তাক্বীরাই কুরআন থেকে হেদায়াত পায় :
ذٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَۚ فِيْهِۚ هُدًى لِّلْمُتَّقِيْنَ – اَلَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ – وَالَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكَ وَمَاۤ اُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَۚ وَبِالْاٰخِرَةِ هُمْ يُوْقِنُوْنَ – اُولٰٓئِكَ عَلٰى هُدًى مِّنْ رَّبِّهِمْۗ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
এটা ঐ গ্রন্থ যার মধ্যে কোন সন্দেহ নেই। আর এটা মুত্তাক্বীদের জন্য হেদায়াতস্বরূপ। এরা (মুত্তাক্বীগণ) ঐ সকল লোক, যারা অদৃশ্য বিষয়গুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদেরকে যে জীবনোপকরণ দান করেছি তা হতে ব্যয় করে। আর তারা তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে ও তোমার পূর্বে যা অবতীর্ণ করা হয়েছিল তার প্রতি এবং পরকালের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করে। তারাই তাদের রবের পক্ষ হতে প্রাপ্ত হেদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে এবং তারাই সফলকাম। (সূরা বাক্বারা, ২-৫)
ব্যাখ্যা : কুরআন একটি হেদায়াত ও পথনির্দেশনার গ্রন্থ। কিন্তু এ থেকে লাভবান হতে চাইলে মানুষের মধ্যে তাক্বওয়ার গুণ থাকতে হবে। তাকে ‘মুত্তাক্বী’ বা আল্লাহভীরু হতে হবে। তার মধ্যে মন্দ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া ও ভালোকে গ্রহণ করার আকাঙ্ক্ষা এবং এ আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়ন করার ইচ্ছা থাকতে হবে।
মুত্তাক্বীর প্রথম গুণ হচ্ছে, ‘গায়েব’ বা অদৃশ্যে বিশ্বাস। নবী ﷺ অদৃশ্যের বিষয়ে যেসব সংবাদ দিয়েছেন, তা অক্ষরে অক্ষরে মেনে নেয়াই হচ্ছে অদৃশ্যের প্রতি বিশ্বাস। যে ব্যক্তি এ সত্যগুলো মেনে নিতে প্রস্তুত হবে, সে-ই কুরআনের হেদায়াত থেকে উপকৃত হতে পারবে।
দ্বিতীয় গুণ হচ্ছে, নামায কায়েম করা। যারা ঈমান আনার পর বসে থাকবে তারা কুরআন থেকে উপকৃত হতে পারবে না। এ থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য একান্ত প্রয়োজন হচ্ছে, ইসলামকে মেনে নেয়ার পর পরই আল্লাহর আনুগত্য করা ও ইসলামের বিধিবিধান বাস্তবায়ন করা।
তৃতীয় গুণ হচ্ছে, যাকাত আদায় করা। সংকীর্ণমনা না হয়ে আল্লাহ ও তাঁর বান্দার অধিকার আদায়কারী হওয়া। তার সম্পদে আল্লাহ ও তাঁর বান্দার যে অধিকার রয়েছে, তাকে তা আদায় করার জন্য প্রস্তুত থাকা। যে বিষয়ের উপর সে ঈমান এনেছে, তার জন্য অর্থনৈতিক ত্যাগ স্বীকার করার ব্যাপারে ইতস্ততবোধ না করা।
চতুর্থ গুণ হচ্ছে, যাকাত আদায় করা।
পঞ্চম গুণ হচ্ছে, আসমানী কিতাবসমূহের উপর বিশ্বাস রাখা।
ষষ্ট গুণ হচ্ছে, আখিরাতের উপর ঈমান রাখা। এ বিষয়গুলো অস্বীকার করা তো দূরের কথা এগুলো সম্পর্কে কারো মনে যদি সামান্যতম সন্দেহ থাকে, তাহলে মানুষের জীবনের জন্য কুরআন যে পথনির্দেশ দিয়েছে, সে পথে তারা চলতে পারবে না। রিসালাতের এ কল্যাণধারা থেকে কেবলমাত্র সেসব লোক লাভবান হতে পারে, যারা মূলত সৎ প্রবৃত্তির অধিকারী। অন্যদিকে দুষ্ট মনোবৃত্তির অধিকারী ও দুষ্কর্মশীল লোকেরা হচ্ছে এমন ধরনের অনুর্বর জমির মতো, যা রহমতের বারি বর্ষণে কোনক্রমেই লাভবান হয় না। অনুরূপভাবে রিসালাতের আবির্ভাবও তাদের কোন উপকারে আসে না।
আল্লাহ কুরআনের বিধানকে সহজ করে দিয়েছেন :
يُرِيْدُ اللهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيْدُ بِكُمُ الْعُسْرَ
আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান এবং তোমাদের জন্য কঠিন করতে চান না। (সূরা বাক্বারা- ১৮৫)
مَا يُرِيْدُ اللهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُمْ مِّنْ حَرَجٍ وَّلٰكِنْ يُّرِيْدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهٗ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
আল্লাহ তোমাদেরকে কষ্ট দিতে চান না; বরং তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান ও তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করতে চান; যাতে করে তোমরা শুকরিয়া জ্ঞাপন কর। (সূরা মায়েদা- ৬)
وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِى الدِّيْنِ مِنْ حَرَجٍ
তিনি দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন কষ্ট রাখেননি। (সূরা হজ্জ- ৭৮)
ব্যাখ্যা : আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, দ্বীন খুব সহজ, কেউ দ্বীনের ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করলে সে অবশ্যই পরাজিত হবে। সর্বদা মধ্যমপন্থা অবলম্বন করো, তার নৈকট্য লাভ করো এবং সুসংবাদ গ্রহণ করো। আর সকাল-সন্ধ্যা ও শেষ রাতের আমল দ্বারা স্বীয় কাজে সাহায্য চাও। (সহীহ বুখারী, হা/৩৯)
সামর্থ্যের বাইরে আল্লাহ কাউকে কষ্ট দেন না :
لَا يُكَلِّفُ اللهُ نَفْسًا اِلَّا وُسْعَهَا
আল্লাহ কাউকে তার সামর্থ্যের বাইরে কিছু চাপিয়ে দেন না। (সূরা বাক্বারা- ২৮৬)
لَا يُكَلِّفُ اللهُ نَفْسًا اِلَّا مَاۤ اٰتَاهَا
আল্লাহ যাকে যে সামর্থ্য দিয়েছেন, তার অতিরিক্ত বোঝা তিনি তার উপর চাপিয়ে দেন না। (সূরা তালাক্ব- ৭)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর কাছে মানুষের সামর্থ্যানুযায়ী তার দায়িত্ব বিবেচিত হয়। মানুষ যে কাজ করার ক্ষমতা রাখে না অথচ আল্লাহ তাকে সে কাজটি না করার জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করবেন এমনটি কখনো হবে না। অথবা প্রকৃতপক্ষে যা থেকে দূরে থাকার সামর্থ্যই মানুষের ছিল না, সে ক্ষেত্রে তাতে জড়িত হয়ে পড়ার জন্য আল্লাহর কাছে তাকে জবাবদিহি করতে হবে না। প্রকৃতপক্ষে কোন্ কাজে মানুষের সামর্থ্য আছে এবং কোন্ কাজে মানুষের সামর্থ্য নেই তা আল্লাহ নির্ধারণ করবেন। অতঃপর তিনিই শাস্তি নির্ধারণ করবেন অথবা তাকে পুরস্কৃত করবেন।
يُرِيْدُ اللهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيْدُ بِكُمُ الْعُسْرَ
আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান এবং তোমাদের জন্য কঠিন করতে চান না। (সূরা বাক্বারা- ১৮৫)
مَا يُرِيْدُ اللهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُمْ مِّنْ حَرَجٍ وَّلٰكِنْ يُّرِيْدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهٗ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
আল্লাহ তোমাদেরকে কষ্ট দিতে চান না; বরং তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান ও তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করতে চান; যাতে করে তোমরা শুকরিয়া জ্ঞাপন কর। (সূরা মায়েদা- ৬)
وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِى الدِّيْنِ مِنْ حَرَجٍ
তিনি দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন কষ্ট রাখেননি। (সূরা হজ্জ- ৭৮)
ব্যাখ্যা : আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, দ্বীন খুব সহজ, কেউ দ্বীনের ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করলে সে অবশ্যই পরাজিত হবে। সর্বদা মধ্যমপন্থা অবলম্বন করো, তার নৈকট্য লাভ করো এবং সুসংবাদ গ্রহণ করো। আর সকাল-সন্ধ্যা ও শেষ রাতের আমল দ্বারা স্বীয় কাজে সাহায্য চাও। (সহীহ বুখারী, হা/৩৯)
সামর্থ্যের বাইরে আল্লাহ কাউকে কষ্ট দেন না :
لَا يُكَلِّفُ اللهُ نَفْسًا اِلَّا وُسْعَهَا
আল্লাহ কাউকে তার সামর্থ্যের বাইরে কিছু চাপিয়ে দেন না। (সূরা বাক্বারা- ২৮৬)
لَا يُكَلِّفُ اللهُ نَفْسًا اِلَّا مَاۤ اٰتَاهَا
আল্লাহ যাকে যে সামর্থ্য দিয়েছেন, তার অতিরিক্ত বোঝা তিনি তার উপর চাপিয়ে দেন না। (সূরা তালাক্ব- ৭)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর কাছে মানুষের সামর্থ্যানুযায়ী তার দায়িত্ব বিবেচিত হয়। মানুষ যে কাজ করার ক্ষমতা রাখে না অথচ আল্লাহ তাকে সে কাজটি না করার জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করবেন এমনটি কখনো হবে না। অথবা প্রকৃতপক্ষে যা থেকে দূরে থাকার সামর্থ্যই মানুষের ছিল না, সে ক্ষেত্রে তাতে জড়িত হয়ে পড়ার জন্য আল্লাহর কাছে তাকে জবাবদিহি করতে হবে না। প্রকৃতপক্ষে কোন্ কাজে মানুষের সামর্থ্য আছে এবং কোন্ কাজে মানুষের সামর্থ্য নেই তা আল্লাহ নির্ধারণ করবেন। অতঃপর তিনিই শাস্তি নির্ধারণ করবেন অথবা তাকে পুরস্কৃত করবেন।
কুরআনের বিধান পরিপূর্ণভাবে মানতে হবে :
اَفَتُؤْمِنُوْنَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُوْنَ بِبَعْضٍۚ فَمَا جَزَآءُ مَنْ يَّفْعَلُ ذٰلِكَ مِنْكُمْ اِلَّا خِزْيٌ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَاۚ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّوْنَ اِلٰۤى اَشَدِّ الْعَذَابِؕ وَمَا اللهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ
তোমরা কি গ্রন্থের কিছু অংশ বিশ্বাস কর আর কিছু অংশ অস্বীকার কর? তোমাদের মধ্যে যারা এরূপ করে তাদের পার্থিব জীবনে লাঞ্ছনা ব্যতীত কিছুই নেই এবং কিয়ামত দিবসে তারা কঠোর শাস্তির দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে। আর তোমরা যা করছ আল্লাহ সে বিষয়ে উদাসীন নন। (সূরা বাক্বারা- ৮৫)
ব্যাখ্যা : কুরআনের বিধান মানার জন্য নবী ﷺ এর অসীয়ত করে গেছেন। তালহা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে আবি আওফ (রাঃ) কে প্রশ্ন করলাম, নবী ﷺ কি কোন অসীয়ত করে গেছেন? তিনি জবাব দিলেন, না। তখন আমি বললাম, ‘‘যখন নবী ﷺ কোন অসীয়ত করে যাননি, তখন তিনি মানুষের জন্য কী করে অসীয়ত করা বাধ্যতামূলক করে গেছেন এবং তাদেরকে এজন্য আদেশ দিয়েছেন।’’ তখন তিনি উত্তর দিলেন, নবী ﷺ আল্লাহর কিতাবের অনুসরণ করার জন্য অসীয়ত করে গেছেন।’ (যেহেতু নবীগণ কোন ধনসম্পদ রেখে যান না সেজন্য কোন অসীয়তও করে যান না, তাঁরা শুধুমাত্র হেদায়াত রেখে যান এবং সে বিষয়ে অসীয়ত করে যান, সে হিসেবে শেষ নবীও আল্লাহর কিতাব কুরআন রেখে গেছেন এবং এর অনুসরণের জন্য অসীয়ত করে গেছেন)। (সহীহ বুখারী, হা/৫০২২)
যারা কুরআনের বিধান মানবে তারা পথভ্রষ্ট হবে না :
قُلْنَا اهْبِطُوْا مِنْهَا جَمِيْعًاۚ فَاِمَّا يَاْتِيَنَّكُمْ مِّنِّيْ هُدًى فَمَنْ تَبِعَ هُدَايَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ
আমি বললাম, তোমরা সবাই এখান থেকে (জান্নাত থেকে) নিচে নেমে যাও। পরে আমার পক্ষ হতে তোমাদের নিকট হেদায়াত আসবে; অতঃপর যারা আমার সেই হেদায়াতের অনুসরণ করবে তাদের কোন ভয় থাকবে না এবং তারা চিন্তিতও হবে না। (সূরা বাক্বারা- ৩৮)
فَاِمَّا يَاْتِيَنَّكُمْ مِّنِّيْ هُدًى فَمَنِ اتَّبَعَ هُدَايَ فَلَا يَضِلُّ وَلَا يَشْقٰى
পরে আমার পক্ষ হতে তোমাদের নিকট সৎপথের নির্দেশ আসলে যে আমার পথ অনুসরণ করবে, সে বিপথগামী হবে না এবং দুঃখ-কষ্টও পাবে না। (সূরা ত্বা-হা- ১২৩)
তাদের কোন ভয় থাকবে না :
يَا بَنِيْۤ اٰدَمَ اِمَّا يَاْتِيَنَّكُمْ رُسُلٌ مِّنْكُمْ يَقُصُّوْنَ عَلَيْكُمْ اٰيَاتِيْ فَمَنِ اتَّقٰى وَاَصْلَحَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ
হে বনী আদম! যদি তোমাদের মধ্য হতে কোন রাসূল তোমাদের নিকট এসে আমার আয়াতসমূহ বর্ণনা করেন তখন যারা সাবধান হবে এবং নিজেদেরকে সংশোধন করে নেবে, তাদের কোন ভয় থাকবে না এবং তারা দুঃখিতও হবে না। (সূরা আ‘রাফ- ৩৫)
اَفَتُؤْمِنُوْنَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُوْنَ بِبَعْضٍۚ فَمَا جَزَآءُ مَنْ يَّفْعَلُ ذٰلِكَ مِنْكُمْ اِلَّا خِزْيٌ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَاۚ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّوْنَ اِلٰۤى اَشَدِّ الْعَذَابِؕ وَمَا اللهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ
তোমরা কি গ্রন্থের কিছু অংশ বিশ্বাস কর আর কিছু অংশ অস্বীকার কর? তোমাদের মধ্যে যারা এরূপ করে তাদের পার্থিব জীবনে লাঞ্ছনা ব্যতীত কিছুই নেই এবং কিয়ামত দিবসে তারা কঠোর শাস্তির দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে। আর তোমরা যা করছ আল্লাহ সে বিষয়ে উদাসীন নন। (সূরা বাক্বারা- ৮৫)
ব্যাখ্যা : কুরআনের বিধান মানার জন্য নবী ﷺ এর অসীয়ত করে গেছেন। তালহা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে আবি আওফ (রাঃ) কে প্রশ্ন করলাম, নবী ﷺ কি কোন অসীয়ত করে গেছেন? তিনি জবাব দিলেন, না। তখন আমি বললাম, ‘‘যখন নবী ﷺ কোন অসীয়ত করে যাননি, তখন তিনি মানুষের জন্য কী করে অসীয়ত করা বাধ্যতামূলক করে গেছেন এবং তাদেরকে এজন্য আদেশ দিয়েছেন।’’ তখন তিনি উত্তর দিলেন, নবী ﷺ আল্লাহর কিতাবের অনুসরণ করার জন্য অসীয়ত করে গেছেন।’ (যেহেতু নবীগণ কোন ধনসম্পদ রেখে যান না সেজন্য কোন অসীয়তও করে যান না, তাঁরা শুধুমাত্র হেদায়াত রেখে যান এবং সে বিষয়ে অসীয়ত করে যান, সে হিসেবে শেষ নবীও আল্লাহর কিতাব কুরআন রেখে গেছেন এবং এর অনুসরণের জন্য অসীয়ত করে গেছেন)। (সহীহ বুখারী, হা/৫০২২)
যারা কুরআনের বিধান মানবে তারা পথভ্রষ্ট হবে না :
قُلْنَا اهْبِطُوْا مِنْهَا جَمِيْعًاۚ فَاِمَّا يَاْتِيَنَّكُمْ مِّنِّيْ هُدًى فَمَنْ تَبِعَ هُدَايَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ
আমি বললাম, তোমরা সবাই এখান থেকে (জান্নাত থেকে) নিচে নেমে যাও। পরে আমার পক্ষ হতে তোমাদের নিকট হেদায়াত আসবে; অতঃপর যারা আমার সেই হেদায়াতের অনুসরণ করবে তাদের কোন ভয় থাকবে না এবং তারা চিন্তিতও হবে না। (সূরা বাক্বারা- ৩৮)
فَاِمَّا يَاْتِيَنَّكُمْ مِّنِّيْ هُدًى فَمَنِ اتَّبَعَ هُدَايَ فَلَا يَضِلُّ وَلَا يَشْقٰى
পরে আমার পক্ষ হতে তোমাদের নিকট সৎপথের নির্দেশ আসলে যে আমার পথ অনুসরণ করবে, সে বিপথগামী হবে না এবং দুঃখ-কষ্টও পাবে না। (সূরা ত্বা-হা- ১২৩)
তাদের কোন ভয় থাকবে না :
يَا بَنِيْۤ اٰدَمَ اِمَّا يَاْتِيَنَّكُمْ رُسُلٌ مِّنْكُمْ يَقُصُّوْنَ عَلَيْكُمْ اٰيَاتِيْ فَمَنِ اتَّقٰى وَاَصْلَحَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ
হে বনী আদম! যদি তোমাদের মধ্য হতে কোন রাসূল তোমাদের নিকট এসে আমার আয়াতসমূহ বর্ণনা করেন তখন যারা সাবধান হবে এবং নিজেদেরকে সংশোধন করে নেবে, তাদের কোন ভয় থাকবে না এবং তারা দুঃখিতও হবে না। (সূরা আ‘রাফ- ৩৫)
অনেক মানুষ কুরআনকে ছেড়ে দিয়েছে :
وَقَالَ الرَّسُوْلُ يَا رَبِّ اِنَّ قَوْمِى اتَّخَذُوْا هٰذَا الْقُرْاٰنَ مَهْجُوْرًا
রাসূল বললেন, হে আমার প্রতিপালক! নিশ্চয় আমার সম্প্রদায় এ কুরআনকে পরিত্যাজ্য মনে করে। (সূরা ফুরক্বান- ৩০)
ব্যাখ্যা : مَهْجُوْرٌ (মাহজুর) এর অর্থ হয় পরিত্যক্ত। অর্থাৎ তারা কুরআনের প্রতি দৃষ্টি দেয়া যেতে পারে বলে মনেই করে না। তাকে গ্রহণ করে না এবং তার থেকে কোনভাবে প্রভাবিতও হয় না। তারা একে প্রলাপ ও অর্থহীন বাক্য মনে করে। কুরআন মানুষের পক্ষে বা বিপক্ষে প্রমাণস্বরূপ। যদি কুরআনকে যথাযথভাবে অনুসরণ করে চলা হয়, তাহলে তা তার পক্ষে সাক্ষী হয়ে দাঁড়াবে। দুনিয়া থেকে আখিরাত পর্যন্ত যেখানেই সে প্রশ্নের সম্মুখীন হোক না কেন সেখানেই কুরআন সুপারিশকারী হবে, যদি তার কাজ যথার্থই কুরআন অনুযায়ী হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে যদি এ কিতাবের সুস্পষ্ট বাণী তার কাছে পৌঁছা সত্ত্বেও তার বিপরীত কর্মকান্ড করে থাকে, তাহলে এ কিতাব তার বিরুদ্ধে সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে। আল্লাহর আদালতে এ কিতাব তার বিরুদ্ধে বাদী হয়ে যাবে। এরপর না জানার ওজর পেশ করে শাস্তি থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া আদৌ সম্ভব হবে না।
তারা কুরআন থেকে বিমুখ হয়ে আছে :
هٰذَا ذِكْرُ مَنْ مَّعِيَ وَذِكْرُ مَنْ قَبْلِيْؕ بَلْ اَ كْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ الْحَقَّ فَهُمْ مُّعْرِضُوْنَ
আমার সঙ্গে যারা আছে তাদের জন্য এবং আমার পূর্ববর্তীদের জন্য এটা উপদেশ। কিন্তু তাদের অধিকাংশই প্রকৃত সত্য সম্পর্কে জানে না, ফলে তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়। (সূরা আম্বিয়া- ২৪)
وَمَا يَاْتِيْهِمْ مِّنْ ذِكْرٍ مِّنَ الرَّحْمٰنِ مُحْدَثٍ اِلَّا كَانُوْا عَنْهُ مُعْرِضِيْنَ
দয়াময়ের নিকট হতে যখনই তাদের নিকট কোন নতুন উপদেশ আসে, তখনই তারা সেটা হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়। (সূরা শু‘আরা- ৫)
তারা একে গুরুত্ব দেয় না :
اِقْتَرَبَ لِلنَّاسِ حِسَابُهُمْ وَهُمْ فِيْ غَفْلَةٍ مُّعْرِضُوْنَ – - مَا يَاْتِيْهِمْ مِّنْ ذِكْرٍ مِّنْ رَّبِّهِمْ مُّحْدَثٍ اِلَّا اسْتَمَعُوْهُ وَهُمْ يَلْعَبُوْنَ -– لَاهِيَةً قُلُوْبُهُمْ
মানুষের হিসাব-নিকাশের সময় আসন্ন, কিন্তু তারা উদাসীনতার দরুন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। যখনই তাদের নিকট তাদের প্রতিপালকের কোন নতুন উপদেশ আসে, তখন তারা সেটা কৌতুকচ্ছলে শ্রবণ করে; আর তাদের অমত্মর থাকে অমনোযোগী। (সূরা আম্বিয়া– ১, ৩)
وَقَالَ الرَّسُوْلُ يَا رَبِّ اِنَّ قَوْمِى اتَّخَذُوْا هٰذَا الْقُرْاٰنَ مَهْجُوْرًا
রাসূল বললেন, হে আমার প্রতিপালক! নিশ্চয় আমার সম্প্রদায় এ কুরআনকে পরিত্যাজ্য মনে করে। (সূরা ফুরক্বান- ৩০)
ব্যাখ্যা : مَهْجُوْرٌ (মাহজুর) এর অর্থ হয় পরিত্যক্ত। অর্থাৎ তারা কুরআনের প্রতি দৃষ্টি দেয়া যেতে পারে বলে মনেই করে না। তাকে গ্রহণ করে না এবং তার থেকে কোনভাবে প্রভাবিতও হয় না। তারা একে প্রলাপ ও অর্থহীন বাক্য মনে করে। কুরআন মানুষের পক্ষে বা বিপক্ষে প্রমাণস্বরূপ। যদি কুরআনকে যথাযথভাবে অনুসরণ করে চলা হয়, তাহলে তা তার পক্ষে সাক্ষী হয়ে দাঁড়াবে। দুনিয়া থেকে আখিরাত পর্যন্ত যেখানেই সে প্রশ্নের সম্মুখীন হোক না কেন সেখানেই কুরআন সুপারিশকারী হবে, যদি তার কাজ যথার্থই কুরআন অনুযায়ী হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে যদি এ কিতাবের সুস্পষ্ট বাণী তার কাছে পৌঁছা সত্ত্বেও তার বিপরীত কর্মকান্ড করে থাকে, তাহলে এ কিতাব তার বিরুদ্ধে সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে। আল্লাহর আদালতে এ কিতাব তার বিরুদ্ধে বাদী হয়ে যাবে। এরপর না জানার ওজর পেশ করে শাস্তি থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া আদৌ সম্ভব হবে না।
তারা কুরআন থেকে বিমুখ হয়ে আছে :
هٰذَا ذِكْرُ مَنْ مَّعِيَ وَذِكْرُ مَنْ قَبْلِيْؕ بَلْ اَ كْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ الْحَقَّ فَهُمْ مُّعْرِضُوْنَ
আমার সঙ্গে যারা আছে তাদের জন্য এবং আমার পূর্ববর্তীদের জন্য এটা উপদেশ। কিন্তু তাদের অধিকাংশই প্রকৃত সত্য সম্পর্কে জানে না, ফলে তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়। (সূরা আম্বিয়া- ২৪)
وَمَا يَاْتِيْهِمْ مِّنْ ذِكْرٍ مِّنَ الرَّحْمٰنِ مُحْدَثٍ اِلَّا كَانُوْا عَنْهُ مُعْرِضِيْنَ
দয়াময়ের নিকট হতে যখনই তাদের নিকট কোন নতুন উপদেশ আসে, তখনই তারা সেটা হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়। (সূরা শু‘আরা- ৫)
তারা একে গুরুত্ব দেয় না :
اِقْتَرَبَ لِلنَّاسِ حِسَابُهُمْ وَهُمْ فِيْ غَفْلَةٍ مُّعْرِضُوْنَ – - مَا يَاْتِيْهِمْ مِّنْ ذِكْرٍ مِّنْ رَّبِّهِمْ مُّحْدَثٍ اِلَّا اسْتَمَعُوْهُ وَهُمْ يَلْعَبُوْنَ -– لَاهِيَةً قُلُوْبُهُمْ
মানুষের হিসাব-নিকাশের সময় আসন্ন, কিন্তু তারা উদাসীনতার দরুন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। যখনই তাদের নিকট তাদের প্রতিপালকের কোন নতুন উপদেশ আসে, তখন তারা সেটা কৌতুকচ্ছলে শ্রবণ করে; আর তাদের অমত্মর থাকে অমনোযোগী। (সূরা আম্বিয়া– ১, ৩)
শয়তান এসব লোকের সঙ্গী হয়ে যায় :
وَمَنْ يَّعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْمٰنِ نُقَيِّضْ لَهٗ شَيْطَانًا فَهُوَ لَهٗ قَرِيْنٌ
যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ হতে বিমুখ হয়ে যায়, আমি তার জন্য এক শয়তান নিয়োজিত করি; অতঃপর সে-ই হয় তার সহচর। (সূরা যুখরুফ- ৩৬)
তাদের তুলনা গাধার সাথে :
فَمَا لَهُمْ عَنِ التَّذْكِرَةِ مُعْرِضِيْنَ ‐ - كَاَنَّهُمْ حُمُرٌ مُّسْتَنْفِرَةٌ ‐ - فَرَّتْ مِنْ قَسْوَرَةٍ
তাদের কী হলো যে, তারা উপদেশবাণী (কুরআন) হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়? তারা যেন পলায়নপর গাধা, যা সিংহের সম্মুখ হতে পলায়ন করে। (সূরা মুদ্দাসসির, ৪৯-৫১)
তারা কিয়ামতের দিন বিপদে পড়বে :
وَقَدْ اٰتَيْنَاكَ مِنْ لَّدُنَّا ذِكْرًا – - مَنْ اَعْرَضَ عَنْهُ فَاِنَّهٗ يَحْمِلُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وِزْرًا
আমার নিকট হতে আমি তোমাকে উপদেশ দান করেছি। যে এটা হতে বিমুখ হবে, সে কিয়ামতের দিন পাপের বোঝা বহন করবে। (সূরা ত্বা-হা , ৯৯, ১০০)
তাদের হাশর হবে অন্ধ অবস্থায় :
وَمَنْ اَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِيْ فَاِنَّ لَهٗ مَعِيْشَةً ضَنْكًا وَّنَحْشُرُهٗ يَوْمَ الْقِيَامَةِ اَعْمٰى ‐ قَالَ رَبِّ لِمَ حَشَرْتَنِۤيْ اَعْمٰى وَقَدْ كُنْتُ بَصِيْرًا ‐ قَالَ كَذٰلِكَ اَتَتْكَ اٰيَاتُنَا فَنَسِيْتَهَاۚ وَكَذٰلِكَ الْيَوْمَ تُنْسٰى ‐ وَكَذٰلِكَ نَجْزِيْ مَنْ اَسْرَفَ وَلَمْ يُؤْمِنْ ۢبِاٰيَاتِ رَبِّهٖؕ وَلَعَذَابُ الْاٰخِرَةِ اَشَدُّ وَاَبْقٰى
যে আমার স্মরণ (কুরআন) হতে বিমুখ হবে, অবশ্যই তার জীবন-যাপন সংকুচিত হয়ে যাবে। আর আমি তাকে কিয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উঠাব। অতঃপর সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! কেন আমাকে অন্ধ অবস্থায় উঠালে? আমি তো চক্ষুষ্মান ছিলাম। তিনি বলবেন, এভাবেই আমার আয়াতসমূহ তোমার নিকট এসেছিল, কিন্তু তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে; সুতরাং আজ তোমাকেও ভুলে যাওয়া হলো। আর এভাবেই আমি তাকে প্রতিফল দেই, যে বাড়াবাড়ি করে ও তার প্রতিপালকের নিদর্শনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না। আর পরকালের শাসিত্ম আরো কঠিন ও অধিক স্থায়ী। (সূরা ত্বা-হা, ১২৪-১২৭)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর অসীম ক্ষমতা বলে তারা আখিরাতের ভয়াবহ দৃশ্য এবং নিজেদের দুষ্কৃতির ফলাফল দেখতে পাবে; কিন্তু অন্যান্য দিক থেকে তাদের অবস্থা হবে এমন অন্ধের মতো, যে নিজের চলার পথ দেখতে পায় না, যার হাতে লাঠিও নেই এবং হাতড়ে চলার ক্ষমতাও নেই। ফলে সে প্রতি পদে পদে হোঁচট খাচ্ছে, কিন্তু বুঝতে পারছে না যে, সে কোন দিকে যাবে এবং নিজের প্রয়োজন কীভাবে পূর্ণ করবে। তখন আল্লাহ বলবেন, ‘‘যেভাবে তুমি আমার আয়াতগুলো ভুলে গিয়েছিলে ঠিক তেমনিভাবে আজ তোমাকে ভুলে যাওয়া হয়েছে।’’ অর্থাৎ তুমি কোথায় কোথায় হোঁচট খাচ্ছ অথবা আঘাত পাচ্ছ আজ তার কোন পরোয়াই করা হবে না। কেউ তোমার হাত ধরবে না, তোমার কোন প্রয়োজনও পূর্ণ করবে না। ফলে তুমি চরম উপেক্ষা ও অবজ্ঞা অতল তলে নিক্ষিপ্ত হবে। আর এসব লোক দুনিয়াতেও মানসিক স্থিরতা লাভ করতে পারবে না। কোটিপতি হলে মানসিক অস্থিরতায় ভুগবে। সম্রাট হলেও সে মানসিক অতৃপ্তিতে আবদ্ধ থাকবে। কখনো তারা এসব মানসিক রোগ থেকে মুক্ত হতে পারবে না। তাদের পার্থিব সাফল্যগুলো হবে হাজারো ধরনের অবৈধ কলাকৌশল অবলম্বনের ফল। এগুলোর কারণে নিজের বিবেকসহ প্রত্যেকটি জিনিসের সাথে তার লাগাতার দ্বন্দ্ব চলতে থাকবে। যার ফলে সে কখনো প্রকৃত সুখ লাভ করতে পারবে না।
এখানে প্রথমত বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি এ উপদেশবাণী অর্থাৎ কুরআন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে এবং তার বিধান ও পথনির্দেশনা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানাবে, সে নিজের ক্ষতি সাধন করবে। এর ফলে মুহাম্মাদ ﷺ এবং তাঁকে প্রেরণকারী আল্লাহর কোন ক্ষতি হবে না। তার এ নির্বুদ্ধিতা হবে তার নিজের সাথে শত্রুতার নামান্তর। দ্বিতীয়ত বলা হয়েছে, যে ব্যক্তির কাছে কুরআনের এ নসীহত পৌঁছার পরও এটাকে গ্রহণ করতে ছলনার আশ্রয় নিয়েছে, সে আখিরাতে শাস্তির হাত থেকে বাঁচতে পারবে না। অত্র আয়াতের শব্দাবলি ব্যাপক অর্থ প্রকাশক। এটা কোন দেশ, জাতি বা সময়ের সাথে বিশেষভাবে সম্পর্কিত নয়। যতদিন দুনিয়ায় এ কুরআন থাকবে এবং যেখানে যার কাছেই এটা পৌঁছে যাবে সেখানে তার জন্য দু’টি পথই খোলা থাকবে। তৃতীয় কোন পথ সেখানে থাকবে না। হয় একে মেনে নিয়ে এর আনুগত্য করতে হবে। অন্যথায় একে অস্বীকার করে এর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে হবে। প্রথম পথ অবলম্বনকারীদের পরিণতি হবে জান্নাত এবং দ্বিতীয় পথ অবলম্বনকারীদের পরিণতি হবে জাহান্নাম।
তারা কোন মুক্তির পথ খুঁজে পাবে না :
وَمَنْ كَانَ فِيْ هٰذِهٖۤ اَعْمٰى فَهُوَ فِى الْاٰخِرَةِ اَعْمٰى وَاَضَلُّ سَبِيْلًا
আর যে ব্যক্তি এখানে অন্ধ, সে আখিরাতেও অন্ধ এবং অধিকতর পথভ্রষ্ট। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৭২)
কুরআনবিমুখ লোকদের প্রতি আল্লাহর প্রশ্ন :
وَهٰذَا ذِكْرٌ مُّبَارَكٌ اَنْزَلْنَاهُ اَفَاَنْتُمْ لَهٗ مُنْكِرُوْنَ
এটা কল্যাণময় উপদেশ; আমি এটা অবতীর্ণ করেছি। তবুও কি তোমরা এটাকে অস্বীকার করবে? (সূরা আম্বিয়া- ৫০)
فَمَا لَهُمْ عَنِ التَّذْكِرَةِ مُعْرِضِيْنَ
তাদের কী হলো যে, তারা উপদেশবাণী (কুরআন) হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়? (সূরা মুদ্দাসসির- ৪৯)
اَفَبِهٰذَا الْحَدِيْثِ اَنْتُمْ مُّدْهِنُوْنَ
তারপরও কি তোমরা এ হাদীসকে (কুরআনকে) সাধারণ মনে করবে? (সূরা ওয়াক্বিয়া- ৮১)
اَفَمِنْ هٰذَا الْحَدِيْثِ تَعْجَبُوْنَ – - وَتَضْحَكُوْنَ وَلَا تَبْكُوْنَ – - وَاَنْتُمْ سَامِدُوْنَ
তোমরা কি এর (কুরআনের) কথায় বিস্ময়বোধ করছ? হাসছ অথচ কাঁদছ না? তোমরা তো বড়ই উদাসীন। (সূরা নাজম, ৫৯-৬১)
فَبِاَيِّ حَدِيْثٍ ۢبَعْدَهٗ يُؤْمِنُوْنَ
এরপর তারা আর কোন কথায় বিশ্বাস করবে? (সূরা মুরসালাত- ৫০)
وَاِذَا قُرِئَ عَلَيْهِمُ الْقُرْاٰنُ لَا يَسْجُدُوْنَ – فَمَا لَهُمْ لَا يُؤْمِنُوْنَ
সুতরাং তাদের কী হলো যে, তারা ঈমান আনয়ন করে না এবং তাদের নিকট কুরআন পাঠ করা হলে, তারা সিজদা করে না? (সূরা ইনশিক্বাক- ২০, ২১)
فَاَيْنَ تَذْهَبُوْنَ ‐ وَمَا هُوَ بِقَوْلِ شَيْطَانٍ رَّجِيْمٍ
এটা (কুরআন) কোন অভিশপ্ত শয়তানের কথা নয়। সুতরাং তোমরা কোথায় চলেছ? (সূরা তাকভীর- ২৫, ২৬)
ব্যাখ্যা : তাদের এ মনোভাবের কারণ কী? তারা কি এ বাণী বুঝেনি, তাই একে মানছে না? না, মূলত কারণ এটা নয়। কুরআন কোন দুর্বোধ্য ভাষায় লেখা হয়নি। কিতাবটিতে এমনসব বিষয়বস্তুর সমাবেশ ঘটানো হয়নি, যা মানুষের বোধগম্য নয়। তারা এর প্রত্যেকটি কথা বুঝেও না বুঝার অভিনয় করে। কারণ তারা একে মানতে চায় না।
وَمَنْ يَّعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْمٰنِ نُقَيِّضْ لَهٗ شَيْطَانًا فَهُوَ لَهٗ قَرِيْنٌ
যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ হতে বিমুখ হয়ে যায়, আমি তার জন্য এক শয়তান নিয়োজিত করি; অতঃপর সে-ই হয় তার সহচর। (সূরা যুখরুফ- ৩৬)
তাদের তুলনা গাধার সাথে :
فَمَا لَهُمْ عَنِ التَّذْكِرَةِ مُعْرِضِيْنَ ‐ - كَاَنَّهُمْ حُمُرٌ مُّسْتَنْفِرَةٌ ‐ - فَرَّتْ مِنْ قَسْوَرَةٍ
তাদের কী হলো যে, তারা উপদেশবাণী (কুরআন) হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়? তারা যেন পলায়নপর গাধা, যা সিংহের সম্মুখ হতে পলায়ন করে। (সূরা মুদ্দাসসির, ৪৯-৫১)
তারা কিয়ামতের দিন বিপদে পড়বে :
وَقَدْ اٰتَيْنَاكَ مِنْ لَّدُنَّا ذِكْرًا – - مَنْ اَعْرَضَ عَنْهُ فَاِنَّهٗ يَحْمِلُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وِزْرًا
আমার নিকট হতে আমি তোমাকে উপদেশ দান করেছি। যে এটা হতে বিমুখ হবে, সে কিয়ামতের দিন পাপের বোঝা বহন করবে। (সূরা ত্বা-হা , ৯৯, ১০০)
তাদের হাশর হবে অন্ধ অবস্থায় :
وَمَنْ اَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِيْ فَاِنَّ لَهٗ مَعِيْشَةً ضَنْكًا وَّنَحْشُرُهٗ يَوْمَ الْقِيَامَةِ اَعْمٰى ‐ قَالَ رَبِّ لِمَ حَشَرْتَنِۤيْ اَعْمٰى وَقَدْ كُنْتُ بَصِيْرًا ‐ قَالَ كَذٰلِكَ اَتَتْكَ اٰيَاتُنَا فَنَسِيْتَهَاۚ وَكَذٰلِكَ الْيَوْمَ تُنْسٰى ‐ وَكَذٰلِكَ نَجْزِيْ مَنْ اَسْرَفَ وَلَمْ يُؤْمِنْ ۢبِاٰيَاتِ رَبِّهٖؕ وَلَعَذَابُ الْاٰخِرَةِ اَشَدُّ وَاَبْقٰى
যে আমার স্মরণ (কুরআন) হতে বিমুখ হবে, অবশ্যই তার জীবন-যাপন সংকুচিত হয়ে যাবে। আর আমি তাকে কিয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উঠাব। অতঃপর সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! কেন আমাকে অন্ধ অবস্থায় উঠালে? আমি তো চক্ষুষ্মান ছিলাম। তিনি বলবেন, এভাবেই আমার আয়াতসমূহ তোমার নিকট এসেছিল, কিন্তু তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে; সুতরাং আজ তোমাকেও ভুলে যাওয়া হলো। আর এভাবেই আমি তাকে প্রতিফল দেই, যে বাড়াবাড়ি করে ও তার প্রতিপালকের নিদর্শনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না। আর পরকালের শাসিত্ম আরো কঠিন ও অধিক স্থায়ী। (সূরা ত্বা-হা, ১২৪-১২৭)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর অসীম ক্ষমতা বলে তারা আখিরাতের ভয়াবহ দৃশ্য এবং নিজেদের দুষ্কৃতির ফলাফল দেখতে পাবে; কিন্তু অন্যান্য দিক থেকে তাদের অবস্থা হবে এমন অন্ধের মতো, যে নিজের চলার পথ দেখতে পায় না, যার হাতে লাঠিও নেই এবং হাতড়ে চলার ক্ষমতাও নেই। ফলে সে প্রতি পদে পদে হোঁচট খাচ্ছে, কিন্তু বুঝতে পারছে না যে, সে কোন দিকে যাবে এবং নিজের প্রয়োজন কীভাবে পূর্ণ করবে। তখন আল্লাহ বলবেন, ‘‘যেভাবে তুমি আমার আয়াতগুলো ভুলে গিয়েছিলে ঠিক তেমনিভাবে আজ তোমাকে ভুলে যাওয়া হয়েছে।’’ অর্থাৎ তুমি কোথায় কোথায় হোঁচট খাচ্ছ অথবা আঘাত পাচ্ছ আজ তার কোন পরোয়াই করা হবে না। কেউ তোমার হাত ধরবে না, তোমার কোন প্রয়োজনও পূর্ণ করবে না। ফলে তুমি চরম উপেক্ষা ও অবজ্ঞা অতল তলে নিক্ষিপ্ত হবে। আর এসব লোক দুনিয়াতেও মানসিক স্থিরতা লাভ করতে পারবে না। কোটিপতি হলে মানসিক অস্থিরতায় ভুগবে। সম্রাট হলেও সে মানসিক অতৃপ্তিতে আবদ্ধ থাকবে। কখনো তারা এসব মানসিক রোগ থেকে মুক্ত হতে পারবে না। তাদের পার্থিব সাফল্যগুলো হবে হাজারো ধরনের অবৈধ কলাকৌশল অবলম্বনের ফল। এগুলোর কারণে নিজের বিবেকসহ প্রত্যেকটি জিনিসের সাথে তার লাগাতার দ্বন্দ্ব চলতে থাকবে। যার ফলে সে কখনো প্রকৃত সুখ লাভ করতে পারবে না।
এখানে প্রথমত বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি এ উপদেশবাণী অর্থাৎ কুরআন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে এবং তার বিধান ও পথনির্দেশনা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানাবে, সে নিজের ক্ষতি সাধন করবে। এর ফলে মুহাম্মাদ ﷺ এবং তাঁকে প্রেরণকারী আল্লাহর কোন ক্ষতি হবে না। তার এ নির্বুদ্ধিতা হবে তার নিজের সাথে শত্রুতার নামান্তর। দ্বিতীয়ত বলা হয়েছে, যে ব্যক্তির কাছে কুরআনের এ নসীহত পৌঁছার পরও এটাকে গ্রহণ করতে ছলনার আশ্রয় নিয়েছে, সে আখিরাতে শাস্তির হাত থেকে বাঁচতে পারবে না। অত্র আয়াতের শব্দাবলি ব্যাপক অর্থ প্রকাশক। এটা কোন দেশ, জাতি বা সময়ের সাথে বিশেষভাবে সম্পর্কিত নয়। যতদিন দুনিয়ায় এ কুরআন থাকবে এবং যেখানে যার কাছেই এটা পৌঁছে যাবে সেখানে তার জন্য দু’টি পথই খোলা থাকবে। তৃতীয় কোন পথ সেখানে থাকবে না। হয় একে মেনে নিয়ে এর আনুগত্য করতে হবে। অন্যথায় একে অস্বীকার করে এর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে হবে। প্রথম পথ অবলম্বনকারীদের পরিণতি হবে জান্নাত এবং দ্বিতীয় পথ অবলম্বনকারীদের পরিণতি হবে জাহান্নাম।
তারা কোন মুক্তির পথ খুঁজে পাবে না :
وَمَنْ كَانَ فِيْ هٰذِهٖۤ اَعْمٰى فَهُوَ فِى الْاٰخِرَةِ اَعْمٰى وَاَضَلُّ سَبِيْلًا
আর যে ব্যক্তি এখানে অন্ধ, সে আখিরাতেও অন্ধ এবং অধিকতর পথভ্রষ্ট। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৭২)
কুরআনবিমুখ লোকদের প্রতি আল্লাহর প্রশ্ন :
وَهٰذَا ذِكْرٌ مُّبَارَكٌ اَنْزَلْنَاهُ اَفَاَنْتُمْ لَهٗ مُنْكِرُوْنَ
এটা কল্যাণময় উপদেশ; আমি এটা অবতীর্ণ করেছি। তবুও কি তোমরা এটাকে অস্বীকার করবে? (সূরা আম্বিয়া- ৫০)
فَمَا لَهُمْ عَنِ التَّذْكِرَةِ مُعْرِضِيْنَ
তাদের কী হলো যে, তারা উপদেশবাণী (কুরআন) হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়? (সূরা মুদ্দাসসির- ৪৯)
اَفَبِهٰذَا الْحَدِيْثِ اَنْتُمْ مُّدْهِنُوْنَ
তারপরও কি তোমরা এ হাদীসকে (কুরআনকে) সাধারণ মনে করবে? (সূরা ওয়াক্বিয়া- ৮১)
اَفَمِنْ هٰذَا الْحَدِيْثِ تَعْجَبُوْنَ – - وَتَضْحَكُوْنَ وَلَا تَبْكُوْنَ – - وَاَنْتُمْ سَامِدُوْنَ
তোমরা কি এর (কুরআনের) কথায় বিস্ময়বোধ করছ? হাসছ অথচ কাঁদছ না? তোমরা তো বড়ই উদাসীন। (সূরা নাজম, ৫৯-৬১)
فَبِاَيِّ حَدِيْثٍ ۢبَعْدَهٗ يُؤْمِنُوْنَ
এরপর তারা আর কোন কথায় বিশ্বাস করবে? (সূরা মুরসালাত- ৫০)
وَاِذَا قُرِئَ عَلَيْهِمُ الْقُرْاٰنُ لَا يَسْجُدُوْنَ – فَمَا لَهُمْ لَا يُؤْمِنُوْنَ
সুতরাং তাদের কী হলো যে, তারা ঈমান আনয়ন করে না এবং তাদের নিকট কুরআন পাঠ করা হলে, তারা সিজদা করে না? (সূরা ইনশিক্বাক- ২০, ২১)
فَاَيْنَ تَذْهَبُوْنَ ‐ وَمَا هُوَ بِقَوْلِ شَيْطَانٍ رَّجِيْمٍ
এটা (কুরআন) কোন অভিশপ্ত শয়তানের কথা নয়। সুতরাং তোমরা কোথায় চলেছ? (সূরা তাকভীর- ২৫, ২৬)
ব্যাখ্যা : তাদের এ মনোভাবের কারণ কী? তারা কি এ বাণী বুঝেনি, তাই একে মানছে না? না, মূলত কারণ এটা নয়। কুরআন কোন দুর্বোধ্য ভাষায় লেখা হয়নি। কিতাবটিতে এমনসব বিষয়বস্তুর সমাবেশ ঘটানো হয়নি, যা মানুষের বোধগম্য নয়। তারা এর প্রত্যেকটি কথা বুঝেও না বুঝার অভিনয় করে। কারণ তারা একে মানতে চায় না।
কুরআন পড়ার নির্দেশ :
وَاتْلُ مَاۤ اُوْحِيَ اِلَيْكَ مِنْ كِتَابِ رَبِّكَ لَا مُبَدِّلَ لِكَلِمَاتِهٖ
তোমার প্রতিপালকের কিতাব হতে যা তোমার প্রতি ওহী করা হয়েছে তা পাঠ করো। (জেনে রেখো) তাঁর বাক্য পরিবর্তন করার ক্ষমতা কারো নেই। (সূরা কাহফ- ২৭)
ব্যাখ্যা : কুরআন জানার জন্য সাহাবীদের আগ্রহ ছিল অত্যধিক। মাসরূক (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ! যিনি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই, আল্লাহর কিতাবে এমন কোন সূরা নেই যার সম্পর্কে আমি জানি না যে, তা কখন এবং কোথায় নাযিল হয়েছে। আর আল্লাহর কিতাবে এমন কোন আয়াতও নেই যা আমি জানি না যে, তা কার সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। তারপরও আমি যদি জানতাম যে, এমন কোন ব্যক্তি রয়েছে, যে আমার চেয়ে কুরআন ভালো জানে এবং সেখানে উট পৌঁছতে পারে, তবে আমি উটে আরোহণ করে হলেও সেখানে গিয়ে পৌঁছতাম। (সহীহ বুখারী, হা/৫০০২)
কুরআনের সাথে লেগে থাকতে হবে। ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি কুরআন মুখস্থ করে হৃদয়ে রাখে, তার দৃষ্টান্ত ঐ উট মালিকের ন্যায়, যে উট বেঁধে রাখে। যদি সে উট বেঁধে রাখে তবে তার নিয়ন্ত্রণে থাকে, কিন্তু যদি বন্ধন খুলে দেয় তবে তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। (সহীহ বুখারী, হা/৫০৩১)
কুরআন পাঠকারীর মর্যাদা অনেক। আয়েশা (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, কুরআন পাঠকারী হাফেয উচ্চমর্যাদার অধিকারী ফেরেশতাদের সাথে থাকবে। আর যে কুরআন পাঠ করে আর তা হিফয করা তার জন্য অতীব কষ্টকর হলেও তা হিফয করতে চেষ্টা করে, সে দ্বিগুণ পুরস্কার লাভ করবে। (সহীহ বুখারী, হা/৪৯৩৭)
কুরআন পাঠ করলে বা শুনলে ঈমান বৃদ্ধি পায় :
اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ اِذَا ذُكِرَ اللهُ وَجِلَتْ قُلُوْبُهُمْ وَاِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ اٰيَاتُهٗ زَادَتْهُمْ اِيْمَانًا وَّعَلٰى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ
মুমিন তো তারাই, যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয় তখন তাদের হৃদয় কম্পিত হয়। আর যখন তাঁর আয়াতসমূহ তাদের নিকট পাঠ করা হয়, তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং তারা তাদের প্রতিপালকের উপরই ভরসা করে। (সূরা আনফাল- ২)
ব্যাখ্যা : যখনই মানুষের সামনে আল্লাহর কোন হুকুম আসে এবং সে তার সত্যতা মেনে নিয়ে আনুগত্যের শির নত করে দেয়, তখনই তার ঈমান বৃদ্ধি পেয়ে যায়। এ ধরনের প্রত্যেকটি অবস্থায় এমনটিই হয়ে থাকে। যখনই আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূলের হেদায়াতের মধ্যে মানুষ এমন কোন জিনিস দেখে, যা তার ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা ও চিন্তা-ভাবনার বিরোধী হয় এবং সে তা মেনে নিয়ে আল্লাহ ও রাসূলের বিধান পরিবর্তন করার পরিবর্তে নিজেকে পরিবর্তিত করে ফেলে এবং তা গ্রহণ করতে গিয়ে প্রয়োজনে কষ্ট স্বীকার করতেও প্রস্তুত হয়ে যায়, তখন মানুষের ঈমান তরতাজা হয়। পক্ষান্তরে এমনটি করতে অস্বীকৃতি জানালে মানুষের ঈমানের প্রাণশক্তি নিস্তেজ হতে থাকে।
কুরআন পড়া একটি লাভজনক ব্যবসা :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَتْلُوْنَ كِتَابَ اللهِ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاَنْفَقُوْا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَّعَلَانِيَةً يَّرْجُوْنَ تِجَارَةً لَّنْ تَبُوْرَ
যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যা কিছু রিযিক হিসেবে দান করেছি তা থেকে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করে, যাতে কখনো ক্ষতি হবে না। (সূরা ফাতির- ২৯)
ব্যাখ্যা : ঈমানদারদের এ কাজকে ব্যবসার সাথে তুলনা করা হয়েছে। কারণ মানুষ ব্যবসায় নিজের অর্থ, শ্রম ও মেধা নিয়োগ করে কেবলমাত্র মূলধন ফেরত পাওয়ার এবং শ্রমের পারিশ্রমিক লাভ করার জন্য নয়; বরং বাড়তি কিছু মুনাফা অর্জন করার জন্য। অনুরূপভাবে একজন মুমিনও আল্লাহর হুকুম পালন, তাঁর ইবাদাত-বন্দেগী এবং তাঁর দ্বীনের জন্য সংগ্রাম-সাধনায় নিজের ধনসম্পদ, সময়, শ্রম ও যোগ্যতা নিয়োগ করে শুধুমাত্র এসবের পুরোপুরি প্রতিদান লাভ করার জন্য নয়; বরং এই সংগে আল্লাহ তাঁর নিজ অনুগ্রহে বাড়তি অনেক কিছু দান করবেন- এ আশায়। কিন্তু উভয় ব্যবসার মধ্যে অনেক বড় পার্থক্য রয়েছে। পার্থিব ব্যবসায়ে নিছক মুনাফা লাভেরই আশা থাকে না, লোকসান এবং দেউলিয়া হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা থাকে। কিন্তু একজন একনিষ্ঠ বান্দা আল্লাহর সাথে যে ব্যবসা করে তাতে লোকসানের কোন আশঙ্কাই নেই।
কুরআন পড়ার শুরুতে শয়তান থেকে আশ্রয় চাইতে হবে :
فَاِذَا قَرَاْتَ الْقُرْاٰنَ فَاسْتَعِذْ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ
যখন কুরআন পাঠ করবে তখন অভিশপ্ত শয়তান হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে। (সূরা নাহল- ৯৮)
ব্যাখ্যা : শুধুমাত্র মুখে اَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (আউযু বিল্লা-হি মিনাশ শাইত্বা-নির রাজীম) উচ্চারণ করলেই হয় না। বরং কুরআন পাঠের সময় যথার্থই শয়তানের বিভ্রান্তিকর প্ররোচনা থেকে মুক্ত থাকার বাসনা পোষণ করতে হবে এবং তার প্ররোচনা থেকে নিষ্কৃতি লাভের প্রচেষ্টা চালাতে হবে। অনর্থক সন্দেহ-সংশয়ে লিপ্ত হওয়া যাবে না। কুরআনের প্রত্যেকটি কথাকে তার সঠিক অর্থের আলোকে দেখতে হবে এবং নিজের মনগড়া মতবাদ বা চিন্তার মিশ্রণে কুরআনের শব্দাবলির এমন অর্থ করা হতে বিরত থাকতে হবে, যা আল্লাহর ইচ্ছা ও উদ্দেশ্যের পরিপন্থী। সেই সঙ্গে এ চেতনাও জাগ্রত থাকতে হবে যে, মানুষ যাতে কুরআন থেকে কোন পথনির্দেশনা লাভ করতে না পারে সে জন্যই শয়তান সবচেয়ে বেশি তৎপর থাকে। এ কারণে মানুষ যখনই এ কিতাবটির দিকে ফিরে যায় তখনই শয়তান তাকে বিভ্রান্ত করার এবং ভুল পথে পরিচালিত করার জন্য উঠে পড়ে লাগে। তাই এ কিতাবটি অধ্যয়ন করার সময় মানুষকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে, যাতে শয়তানের প্ররোচনার কারণে সে এ হেদায়াতের উৎসটির কল্যাণ থেকে বঞ্চিত না হয়ে যায়। কারণ যে ব্যক্তি এখান থেকে সঠিক পথের সন্ধান লাভ করতে পারে না, সে অন্য কোথাও থেকে সৎপথের সন্ধান পাবে না। আর যে ব্যক্তি এ কিতাব পড়েও ভ্রষ্টতা ও বিভ্রান্তির শিকার হয়, দুনিয়ায় অন্য কোনকিছুই তাকে ভ্রষ্টতার হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে না। কুরআনকে যথার্থ অর্থে একমাত্র সে ব্যক্তিই দেখতে পারে, যে শয়তানের প্ররোচনা থেকে সতর্ক থাকে এবং তা থেকে নিজেকে সংরক্ষিত রাখার জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় চায়। অন্যথায় শয়তান সাধারণত কুরআনের বক্তব্যসমূহ অনুধাবন করার সুযোগ মানুষকে দেয় না।
আল্লাহর নামে শুরু করতে হবে :
اِقْرَاْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِيْ خَلَقَ
পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তার নামে যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন। (সূরা আলাক্ব- ১)
সুন্দর করে ধীরস্থিরভাবে পড়তে হবে :
وَرَتِّلِ الْقُرْاٰنَ تَرْتِيْلًا
আর তুমি কুরআন পাঠ করো ধীরে ধীরে (থেমে থেমে সুন্দরভাবে)। (সূরা মুয্যাম্মিল- ৪)
ব্যাখ্যা : কাতাদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) কে নবী ﷺ এর কিরাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, নবী ﷺ কোন কোন ক্ষেত্রে দীর্ঘায়িত করে (টেনে টেনে) পাঠ করতেন। (সহীহ বুখারী, হা/৫০৪৬, ৫০৪৫)
সামর্থ্যানুযায়ী পড়তে হবে :
فَاقْرَءُوْا مَا تَيَسَّرَ مِنْهُ
কুরআন হতে যতটুকু সহজসাধ্য হয়, তা-ই পাঠ করো। (সূরা মুয্যাম্মিল- ২০)
মধ্যম আওয়াজে পড়তে হবে :
وَلَا تَجْهَرْ بِصَلَاتِكَ وَلَا تُخَافِتْ بِهَا وَابْتَغِ بَيْنَ ذٰلِكَ سَبِيْلًا
তোমরা সালাতে স্বর উঁচুও করো না এবং অতিশয় ক্ষীণও করো না; বরং মধ্যমপন্থা অবলম্বন করো।
(সূরা বনী ইসরাঈল- ১১০)
কুরআন পড়ার উপযুক্ত সময় রাতের বেলা ও ফজরের সময় :
لَيْسُوْا سَوَآءًؕ مِنْ اَهْلِ الْكِتَابِ اُمَّةٌ قَآئِمَةٌ يَّتْلُوْنَ اٰيَاتِ اللهِ اٰنَآءَ اللَّيْلِ وَهُمْ يَسْجُدُوْنَ
তারা সবাই সমান নয়। আহলে কিতাবদের মধ্যে একটি দল রয়েছে অটল। তারা রাতের বেলা আল্লাহর আয়াতসমূহ পাঠ করে এবং সিজদা করে। (সূরা আলে ইমরান- ১১৩)
অর্থ বুঝে কুরআন পড়তে হবে :
كِتَابٌ اَنْزَلْنَاهُ اِلَيْكَ مُبَارَكٌ لِّيَدَّبَّرُوْاۤ اٰيَاتِهٖ وَلِيَتَذَكَّرَ اُولُو الْاَ لْبَابِ
(এ কুরআন) একটি বরকতময় কিতাব, আমি তা আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি যেন মানুষ এর আয়াতসমূহ অনুধাবন করে এবং জ্ঞানবান লোকেরা উপদেশ গ্রহণ করে। (সূরা সোয়াদ- ২৯)
ব্যাখ্যা : ঈমানের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার জন্য যেসব কঠিন সমস্যা ও সংকটের মুখোমুখি হতে হয় সেসব কিছুর মুকাবিলা করার জন্য বাস্তব ব্যবস্থা হিসেবে কুরআন তিলাওয়াত করার কথা বলা হচ্ছে। এ জিনিসই মুমিনকে এমন সুসংগঠিত চরিত্র ও উন্নত যোগ্যতার অধিকারী করে তুলে, যার সাহায্যে সে বাতিলের প্রবল বন্যার মুকাবিলায় শুধু টিকে থাকতেই নয় বরং তার গতি ফিরিয়ে দিতেও সক্ষম হয়। কিন্তু এ শক্তি মানুষ তখনই অর্জন করতে পারে, যখন সে শুধুমাত্র কুরআনের শব্দগুলো পাঠ করেই ক্ষান্ত হয় না বরং তার শিক্ষাগুলোও সঠিকভাবে অনুধাবন করে। কুরআন তিলাওয়াতের ব্যাপারে এতটুকু জানা উচিত যে, যে তিলাওয়াত কণ্ঠনালী অতিক্রম করে অন্তরে আঘাত হানতে পারে না, তা তাকে কুফরীর বন্যার মুকাবিলায় শক্তি যোগানো তো দূরের কথা, তার ঈমানের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার সাহসও যোগাতে পারে না। যে তিলাওয়াতের পর মানুষের চিন্তা, চরিত্র ও কর্মনীতিতে কোন পরিবর্তন আসে না তা কোন মুমিনের কুরআন তিলাওয়াত হতে পারে না। কেননা কুরআনের উপর আমল করা প্রতিটি মুমিনের উপর ওয়াজিব। কুরআন যা হালাল বলেছে তা হালাল হিসেবে সাব্যস্ত করা, যা হারাম বলেছে তা হারাম হিসেবে মেনে নেয়া, যা আদেশ করেছে তা পালন করা এবং যা নিষেধ করেছে তা থেকে বিরত থাকা একজন ঈমানদার ব্যক্তির অন্যতম দায়িত্ব। এ কারণে নবী ﷺ স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন, ‘‘কুরআনের হারামকৃত জিনিসকে যে হালাল করে নিয়েছে সে কুরআনের প্রতি ঈমান আনেনি’’ (তিরমিযী, হা/২৯১৮)। এ ধরনের তিলাওয়াত মানুষের আত্মিক সংশোধন এবং তার আত্মায় শক্তি সঞ্চার করতে পারে না। কারণ যে ব্যক্তি কুরআনকে আল্লাহর কিতাব হিসেবে মেনে নেয়, তারপর তাঁর নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে চলে, তার ব্যাপারটা তার চেয়েও ঘৃণিত যে আইন না জানার কারণে নয় বরং জেনে শুনে আইন ভঙ্গ করার কারণে দন্ডপ্রাপ্ত হয়।
কুরআন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে :
كَذٰلِكَ يُبَيِّنُ اللهُ لَكُمُ الْاٰيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَتَفَكَّرُوْنَ
অনুরূপভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তার আয়াতসমূহ বর্ণনা করে থাকেন, যেন তোমরা চিন্তা-ভাবনা করতে পার। (সূরা বাক্বারা- ২৬৬)
اَفَلَا يَتَدَبَّرُوْنَ الْقُرْاٰنَ اَمْ عَلٰى قُلُوْبٍ اَقْفَالُهَا
তবে কি তারা কুরআন সম্বন্ধে চিন্তা-ভাবনা করে না? নাকি তাদের অন্তরে তালা লেগে গেছে? (সূরা মুহাম্মাদ- ২৪)
ব্যাখ্যা : হয় এসব লোক কুরআন সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে না, কিংবা চিন্তা-ভাবনা করার চেষ্টা করে কিন্তু তার শিক্ষা ও তাৎপর্য তাদের মনের গভীরে প্রবেশ করে না। কারণ তাদের হৃদয়-মনে তালা লাগানো আছে। এ কথার অর্থ হচ্ছে, তাদের মনে এমন তালা লাগানো আছে, যা ন্যায় ও সত্যকে চিনে না এমন লোকদের জন্যই নির্দিষ্ট। নাফে (রাঃ) বলেছেন, আমি একদিন আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) এর নিকট গেলাম। তিনি তখন সূরা বাক্বারা পাঠ করছিলেন। পাঠ করতে করতে তিনি এক জায়গায় থেমে গেলেন। অতঃপর আমাকে প্রশ্ন করলেন, কী বিষয়ে আয়াতটি নাযিল হয়েছে জান? আমি বললাম, না। তখন তিনি বললেন, অমুক অমুক বিষয়ে নাযিল হয়েছে। তারপর তিনি আবার পাঠ করতে শুরু করলেন। (সহীহ বুখারী, হা/৪৫২৬)
উপদেশ গ্রহণের জন্য কুরআনকে সহজ করা হয়েছে :
وَلَقَدْ يَسَّرْنَا الْقُرْاٰنَ لِلذَّكْرِ فَهَلْ مِنْ مُّدَّكِرٍ
আমি কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য; অতএব উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছে কি? (সূরা ক্বামার- ৩২)
কুরআন পড়া হলে নীরবে শুনতে হবে :
وَاِذَا قُرِئَ الْقُرْاٰنُ فَاسْتَمِعُوْا لَهٗ وَاَنْصِتُوْا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ
যখন কুরআন পাঠ করা হয় তখন তোমরা মনোযোগের সাথে শ্রবণ করবে এবং নিরব হয়ে থাকবে, যেন তোমাদের প্রতি দয়া করা হয়। (সূরা আ‘রাফ- ২০৪)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ অন্যের নিকট থেকে কুরআন শুনতেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ আমাকে বললেন, আমার সম্মুখে কুরআন পাঠ করো। আমি বললাম, আমি আপনার নিকট কুরআন পাঠ করব, অথচ তা আপনার উপর অবতীর্ণ হয়েছে? তিনি বললেন, আমি অন্যের পাঠ শুনতে পছন্দ করি। (সহীহ বুখারী, হা/৫০৫৬)
কুরআন শুনে নবী ﷺ এর কান্না করতেন। আমর ইবনে মুর্রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ আমাকে বললেন, তুমি আমাকে কুরআন পাঠ করে শুনাও। আমি বললাম, আমি আপনাকে কুরআন পাঠ করে শুনাব? অথচ কুরআন তো আপনার উপরই নাযিল হয়েছে। তখন নবী ﷺ বললেন, আমি অন্যের কাছ থেকে কুরআন শুনতে পছন্দ করি। বর্ণনাকারী বলেন, আমি তখন তাঁকে সূরা নিসা পাঠ করে শুনাতে আরম্ভ করলাম। যখন এ আয়াতে পৌঁছলাম - فَكَيْفَ اِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ اُمَّةٍ ۢبِشَهِيْدٍ وَّجِئْنَا بِكَ عَلٰى هٰۤؤُلَآءِ شَهِيْدًا ‘‘তখন কেমন হবে, যখন আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্য থেকে একজন করে সাক্ষী উপস্থিত করব। (হে নবী!) তাদের ব্যাপারে আপনাকেই সাক্ষী হিসাবে হাজির করব?’’ এ সময় নবী ﷺ বললেন, থামো। তখন আমি দেখতে পেলাম, তাঁর দু’চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। (সহীহ বুখারী, হা/৪৫৮২)
وَاتْلُ مَاۤ اُوْحِيَ اِلَيْكَ مِنْ كِتَابِ رَبِّكَ لَا مُبَدِّلَ لِكَلِمَاتِهٖ
তোমার প্রতিপালকের কিতাব হতে যা তোমার প্রতি ওহী করা হয়েছে তা পাঠ করো। (জেনে রেখো) তাঁর বাক্য পরিবর্তন করার ক্ষমতা কারো নেই। (সূরা কাহফ- ২৭)
ব্যাখ্যা : কুরআন জানার জন্য সাহাবীদের আগ্রহ ছিল অত্যধিক। মাসরূক (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ! যিনি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই, আল্লাহর কিতাবে এমন কোন সূরা নেই যার সম্পর্কে আমি জানি না যে, তা কখন এবং কোথায় নাযিল হয়েছে। আর আল্লাহর কিতাবে এমন কোন আয়াতও নেই যা আমি জানি না যে, তা কার সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। তারপরও আমি যদি জানতাম যে, এমন কোন ব্যক্তি রয়েছে, যে আমার চেয়ে কুরআন ভালো জানে এবং সেখানে উট পৌঁছতে পারে, তবে আমি উটে আরোহণ করে হলেও সেখানে গিয়ে পৌঁছতাম। (সহীহ বুখারী, হা/৫০০২)
কুরআনের সাথে লেগে থাকতে হবে। ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি কুরআন মুখস্থ করে হৃদয়ে রাখে, তার দৃষ্টান্ত ঐ উট মালিকের ন্যায়, যে উট বেঁধে রাখে। যদি সে উট বেঁধে রাখে তবে তার নিয়ন্ত্রণে থাকে, কিন্তু যদি বন্ধন খুলে দেয় তবে তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। (সহীহ বুখারী, হা/৫০৩১)
কুরআন পাঠকারীর মর্যাদা অনেক। আয়েশা (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, কুরআন পাঠকারী হাফেয উচ্চমর্যাদার অধিকারী ফেরেশতাদের সাথে থাকবে। আর যে কুরআন পাঠ করে আর তা হিফয করা তার জন্য অতীব কষ্টকর হলেও তা হিফয করতে চেষ্টা করে, সে দ্বিগুণ পুরস্কার লাভ করবে। (সহীহ বুখারী, হা/৪৯৩৭)
কুরআন পাঠ করলে বা শুনলে ঈমান বৃদ্ধি পায় :
اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ اِذَا ذُكِرَ اللهُ وَجِلَتْ قُلُوْبُهُمْ وَاِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ اٰيَاتُهٗ زَادَتْهُمْ اِيْمَانًا وَّعَلٰى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ
মুমিন তো তারাই, যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয় তখন তাদের হৃদয় কম্পিত হয়। আর যখন তাঁর আয়াতসমূহ তাদের নিকট পাঠ করা হয়, তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং তারা তাদের প্রতিপালকের উপরই ভরসা করে। (সূরা আনফাল- ২)
ব্যাখ্যা : যখনই মানুষের সামনে আল্লাহর কোন হুকুম আসে এবং সে তার সত্যতা মেনে নিয়ে আনুগত্যের শির নত করে দেয়, তখনই তার ঈমান বৃদ্ধি পেয়ে যায়। এ ধরনের প্রত্যেকটি অবস্থায় এমনটিই হয়ে থাকে। যখনই আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূলের হেদায়াতের মধ্যে মানুষ এমন কোন জিনিস দেখে, যা তার ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা ও চিন্তা-ভাবনার বিরোধী হয় এবং সে তা মেনে নিয়ে আল্লাহ ও রাসূলের বিধান পরিবর্তন করার পরিবর্তে নিজেকে পরিবর্তিত করে ফেলে এবং তা গ্রহণ করতে গিয়ে প্রয়োজনে কষ্ট স্বীকার করতেও প্রস্তুত হয়ে যায়, তখন মানুষের ঈমান তরতাজা হয়। পক্ষান্তরে এমনটি করতে অস্বীকৃতি জানালে মানুষের ঈমানের প্রাণশক্তি নিস্তেজ হতে থাকে।
কুরআন পড়া একটি লাভজনক ব্যবসা :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَتْلُوْنَ كِتَابَ اللهِ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاَنْفَقُوْا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَّعَلَانِيَةً يَّرْجُوْنَ تِجَارَةً لَّنْ تَبُوْرَ
যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যা কিছু রিযিক হিসেবে দান করেছি তা থেকে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করে, যাতে কখনো ক্ষতি হবে না। (সূরা ফাতির- ২৯)
ব্যাখ্যা : ঈমানদারদের এ কাজকে ব্যবসার সাথে তুলনা করা হয়েছে। কারণ মানুষ ব্যবসায় নিজের অর্থ, শ্রম ও মেধা নিয়োগ করে কেবলমাত্র মূলধন ফেরত পাওয়ার এবং শ্রমের পারিশ্রমিক লাভ করার জন্য নয়; বরং বাড়তি কিছু মুনাফা অর্জন করার জন্য। অনুরূপভাবে একজন মুমিনও আল্লাহর হুকুম পালন, তাঁর ইবাদাত-বন্দেগী এবং তাঁর দ্বীনের জন্য সংগ্রাম-সাধনায় নিজের ধনসম্পদ, সময়, শ্রম ও যোগ্যতা নিয়োগ করে শুধুমাত্র এসবের পুরোপুরি প্রতিদান লাভ করার জন্য নয়; বরং এই সংগে আল্লাহ তাঁর নিজ অনুগ্রহে বাড়তি অনেক কিছু দান করবেন- এ আশায়। কিন্তু উভয় ব্যবসার মধ্যে অনেক বড় পার্থক্য রয়েছে। পার্থিব ব্যবসায়ে নিছক মুনাফা লাভেরই আশা থাকে না, লোকসান এবং দেউলিয়া হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা থাকে। কিন্তু একজন একনিষ্ঠ বান্দা আল্লাহর সাথে যে ব্যবসা করে তাতে লোকসানের কোন আশঙ্কাই নেই।
কুরআন পড়ার শুরুতে শয়তান থেকে আশ্রয় চাইতে হবে :
فَاِذَا قَرَاْتَ الْقُرْاٰنَ فَاسْتَعِذْ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ
যখন কুরআন পাঠ করবে তখন অভিশপ্ত শয়তান হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে। (সূরা নাহল- ৯৮)
ব্যাখ্যা : শুধুমাত্র মুখে اَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (আউযু বিল্লা-হি মিনাশ শাইত্বা-নির রাজীম) উচ্চারণ করলেই হয় না। বরং কুরআন পাঠের সময় যথার্থই শয়তানের বিভ্রান্তিকর প্ররোচনা থেকে মুক্ত থাকার বাসনা পোষণ করতে হবে এবং তার প্ররোচনা থেকে নিষ্কৃতি লাভের প্রচেষ্টা চালাতে হবে। অনর্থক সন্দেহ-সংশয়ে লিপ্ত হওয়া যাবে না। কুরআনের প্রত্যেকটি কথাকে তার সঠিক অর্থের আলোকে দেখতে হবে এবং নিজের মনগড়া মতবাদ বা চিন্তার মিশ্রণে কুরআনের শব্দাবলির এমন অর্থ করা হতে বিরত থাকতে হবে, যা আল্লাহর ইচ্ছা ও উদ্দেশ্যের পরিপন্থী। সেই সঙ্গে এ চেতনাও জাগ্রত থাকতে হবে যে, মানুষ যাতে কুরআন থেকে কোন পথনির্দেশনা লাভ করতে না পারে সে জন্যই শয়তান সবচেয়ে বেশি তৎপর থাকে। এ কারণে মানুষ যখনই এ কিতাবটির দিকে ফিরে যায় তখনই শয়তান তাকে বিভ্রান্ত করার এবং ভুল পথে পরিচালিত করার জন্য উঠে পড়ে লাগে। তাই এ কিতাবটি অধ্যয়ন করার সময় মানুষকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে, যাতে শয়তানের প্ররোচনার কারণে সে এ হেদায়াতের উৎসটির কল্যাণ থেকে বঞ্চিত না হয়ে যায়। কারণ যে ব্যক্তি এখান থেকে সঠিক পথের সন্ধান লাভ করতে পারে না, সে অন্য কোথাও থেকে সৎপথের সন্ধান পাবে না। আর যে ব্যক্তি এ কিতাব পড়েও ভ্রষ্টতা ও বিভ্রান্তির শিকার হয়, দুনিয়ায় অন্য কোনকিছুই তাকে ভ্রষ্টতার হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে না। কুরআনকে যথার্থ অর্থে একমাত্র সে ব্যক্তিই দেখতে পারে, যে শয়তানের প্ররোচনা থেকে সতর্ক থাকে এবং তা থেকে নিজেকে সংরক্ষিত রাখার জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় চায়। অন্যথায় শয়তান সাধারণত কুরআনের বক্তব্যসমূহ অনুধাবন করার সুযোগ মানুষকে দেয় না।
আল্লাহর নামে শুরু করতে হবে :
اِقْرَاْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِيْ خَلَقَ
পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তার নামে যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন। (সূরা আলাক্ব- ১)
সুন্দর করে ধীরস্থিরভাবে পড়তে হবে :
وَرَتِّلِ الْقُرْاٰنَ تَرْتِيْلًا
আর তুমি কুরআন পাঠ করো ধীরে ধীরে (থেমে থেমে সুন্দরভাবে)। (সূরা মুয্যাম্মিল- ৪)
ব্যাখ্যা : কাতাদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) কে নবী ﷺ এর কিরাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, নবী ﷺ কোন কোন ক্ষেত্রে দীর্ঘায়িত করে (টেনে টেনে) পাঠ করতেন। (সহীহ বুখারী, হা/৫০৪৬, ৫০৪৫)
সামর্থ্যানুযায়ী পড়তে হবে :
فَاقْرَءُوْا مَا تَيَسَّرَ مِنْهُ
কুরআন হতে যতটুকু সহজসাধ্য হয়, তা-ই পাঠ করো। (সূরা মুয্যাম্মিল- ২০)
মধ্যম আওয়াজে পড়তে হবে :
وَلَا تَجْهَرْ بِصَلَاتِكَ وَلَا تُخَافِتْ بِهَا وَابْتَغِ بَيْنَ ذٰلِكَ سَبِيْلًا
তোমরা সালাতে স্বর উঁচুও করো না এবং অতিশয় ক্ষীণও করো না; বরং মধ্যমপন্থা অবলম্বন করো।
(সূরা বনী ইসরাঈল- ১১০)
কুরআন পড়ার উপযুক্ত সময় রাতের বেলা ও ফজরের সময় :
لَيْسُوْا سَوَآءًؕ مِنْ اَهْلِ الْكِتَابِ اُمَّةٌ قَآئِمَةٌ يَّتْلُوْنَ اٰيَاتِ اللهِ اٰنَآءَ اللَّيْلِ وَهُمْ يَسْجُدُوْنَ
তারা সবাই সমান নয়। আহলে কিতাবদের মধ্যে একটি দল রয়েছে অটল। তারা রাতের বেলা আল্লাহর আয়াতসমূহ পাঠ করে এবং সিজদা করে। (সূরা আলে ইমরান- ১১৩)
অর্থ বুঝে কুরআন পড়তে হবে :
كِتَابٌ اَنْزَلْنَاهُ اِلَيْكَ مُبَارَكٌ لِّيَدَّبَّرُوْاۤ اٰيَاتِهٖ وَلِيَتَذَكَّرَ اُولُو الْاَ لْبَابِ
(এ কুরআন) একটি বরকতময় কিতাব, আমি তা আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি যেন মানুষ এর আয়াতসমূহ অনুধাবন করে এবং জ্ঞানবান লোকেরা উপদেশ গ্রহণ করে। (সূরা সোয়াদ- ২৯)
ব্যাখ্যা : ঈমানের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার জন্য যেসব কঠিন সমস্যা ও সংকটের মুখোমুখি হতে হয় সেসব কিছুর মুকাবিলা করার জন্য বাস্তব ব্যবস্থা হিসেবে কুরআন তিলাওয়াত করার কথা বলা হচ্ছে। এ জিনিসই মুমিনকে এমন সুসংগঠিত চরিত্র ও উন্নত যোগ্যতার অধিকারী করে তুলে, যার সাহায্যে সে বাতিলের প্রবল বন্যার মুকাবিলায় শুধু টিকে থাকতেই নয় বরং তার গতি ফিরিয়ে দিতেও সক্ষম হয়। কিন্তু এ শক্তি মানুষ তখনই অর্জন করতে পারে, যখন সে শুধুমাত্র কুরআনের শব্দগুলো পাঠ করেই ক্ষান্ত হয় না বরং তার শিক্ষাগুলোও সঠিকভাবে অনুধাবন করে। কুরআন তিলাওয়াতের ব্যাপারে এতটুকু জানা উচিত যে, যে তিলাওয়াত কণ্ঠনালী অতিক্রম করে অন্তরে আঘাত হানতে পারে না, তা তাকে কুফরীর বন্যার মুকাবিলায় শক্তি যোগানো তো দূরের কথা, তার ঈমানের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার সাহসও যোগাতে পারে না। যে তিলাওয়াতের পর মানুষের চিন্তা, চরিত্র ও কর্মনীতিতে কোন পরিবর্তন আসে না তা কোন মুমিনের কুরআন তিলাওয়াত হতে পারে না। কেননা কুরআনের উপর আমল করা প্রতিটি মুমিনের উপর ওয়াজিব। কুরআন যা হালাল বলেছে তা হালাল হিসেবে সাব্যস্ত করা, যা হারাম বলেছে তা হারাম হিসেবে মেনে নেয়া, যা আদেশ করেছে তা পালন করা এবং যা নিষেধ করেছে তা থেকে বিরত থাকা একজন ঈমানদার ব্যক্তির অন্যতম দায়িত্ব। এ কারণে নবী ﷺ স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন, ‘‘কুরআনের হারামকৃত জিনিসকে যে হালাল করে নিয়েছে সে কুরআনের প্রতি ঈমান আনেনি’’ (তিরমিযী, হা/২৯১৮)। এ ধরনের তিলাওয়াত মানুষের আত্মিক সংশোধন এবং তার আত্মায় শক্তি সঞ্চার করতে পারে না। কারণ যে ব্যক্তি কুরআনকে আল্লাহর কিতাব হিসেবে মেনে নেয়, তারপর তাঁর নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে চলে, তার ব্যাপারটা তার চেয়েও ঘৃণিত যে আইন না জানার কারণে নয় বরং জেনে শুনে আইন ভঙ্গ করার কারণে দন্ডপ্রাপ্ত হয়।
কুরআন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে :
كَذٰلِكَ يُبَيِّنُ اللهُ لَكُمُ الْاٰيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَتَفَكَّرُوْنَ
অনুরূপভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তার আয়াতসমূহ বর্ণনা করে থাকেন, যেন তোমরা চিন্তা-ভাবনা করতে পার। (সূরা বাক্বারা- ২৬৬)
اَفَلَا يَتَدَبَّرُوْنَ الْقُرْاٰنَ اَمْ عَلٰى قُلُوْبٍ اَقْفَالُهَا
তবে কি তারা কুরআন সম্বন্ধে চিন্তা-ভাবনা করে না? নাকি তাদের অন্তরে তালা লেগে গেছে? (সূরা মুহাম্মাদ- ২৪)
ব্যাখ্যা : হয় এসব লোক কুরআন সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে না, কিংবা চিন্তা-ভাবনা করার চেষ্টা করে কিন্তু তার শিক্ষা ও তাৎপর্য তাদের মনের গভীরে প্রবেশ করে না। কারণ তাদের হৃদয়-মনে তালা লাগানো আছে। এ কথার অর্থ হচ্ছে, তাদের মনে এমন তালা লাগানো আছে, যা ন্যায় ও সত্যকে চিনে না এমন লোকদের জন্যই নির্দিষ্ট। নাফে (রাঃ) বলেছেন, আমি একদিন আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) এর নিকট গেলাম। তিনি তখন সূরা বাক্বারা পাঠ করছিলেন। পাঠ করতে করতে তিনি এক জায়গায় থেমে গেলেন। অতঃপর আমাকে প্রশ্ন করলেন, কী বিষয়ে আয়াতটি নাযিল হয়েছে জান? আমি বললাম, না। তখন তিনি বললেন, অমুক অমুক বিষয়ে নাযিল হয়েছে। তারপর তিনি আবার পাঠ করতে শুরু করলেন। (সহীহ বুখারী, হা/৪৫২৬)
উপদেশ গ্রহণের জন্য কুরআনকে সহজ করা হয়েছে :
وَلَقَدْ يَسَّرْنَا الْقُرْاٰنَ لِلذَّكْرِ فَهَلْ مِنْ مُّدَّكِرٍ
আমি কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য; অতএব উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছে কি? (সূরা ক্বামার- ৩২)
কুরআন পড়া হলে নীরবে শুনতে হবে :
وَاِذَا قُرِئَ الْقُرْاٰنُ فَاسْتَمِعُوْا لَهٗ وَاَنْصِتُوْا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ
যখন কুরআন পাঠ করা হয় তখন তোমরা মনোযোগের সাথে শ্রবণ করবে এবং নিরব হয়ে থাকবে, যেন তোমাদের প্রতি দয়া করা হয়। (সূরা আ‘রাফ- ২০৪)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ অন্যের নিকট থেকে কুরআন শুনতেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ আমাকে বললেন, আমার সম্মুখে কুরআন পাঠ করো। আমি বললাম, আমি আপনার নিকট কুরআন পাঠ করব, অথচ তা আপনার উপর অবতীর্ণ হয়েছে? তিনি বললেন, আমি অন্যের পাঠ শুনতে পছন্দ করি। (সহীহ বুখারী, হা/৫০৫৬)
কুরআন শুনে নবী ﷺ এর কান্না করতেন। আমর ইবনে মুর্রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ আমাকে বললেন, তুমি আমাকে কুরআন পাঠ করে শুনাও। আমি বললাম, আমি আপনাকে কুরআন পাঠ করে শুনাব? অথচ কুরআন তো আপনার উপরই নাযিল হয়েছে। তখন নবী ﷺ বললেন, আমি অন্যের কাছ থেকে কুরআন শুনতে পছন্দ করি। বর্ণনাকারী বলেন, আমি তখন তাঁকে সূরা নিসা পাঠ করে শুনাতে আরম্ভ করলাম। যখন এ আয়াতে পৌঁছলাম - فَكَيْفَ اِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ اُمَّةٍ ۢبِشَهِيْدٍ وَّجِئْنَا بِكَ عَلٰى هٰۤؤُلَآءِ شَهِيْدًا ‘‘তখন কেমন হবে, যখন আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্য থেকে একজন করে সাক্ষী উপস্থিত করব। (হে নবী!) তাদের ব্যাপারে আপনাকেই সাক্ষী হিসাবে হাজির করব?’’ এ সময় নবী ﷺ বললেন, থামো। তখন আমি দেখতে পেলাম, তাঁর দু’চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। (সহীহ বুখারী, হা/৪৫৮২)
কুরআন প্রচারের নির্দেশ :
يَاۤ اَيُّهَا الرَّسُوْلُ بَلِّغْ مَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكَ مِنْ رَّبِّكَؕ وَاِنْ لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهٗؕ وَاللهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِؕ اِنَّ اللهَ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الْكَافِرِيْنَ
হে রাসূল! তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা প্রচার করো; যদি তা না কর, তবে তুমি তাঁর বার্তা (সঠিকভাবে) প্রচার করলে না। আল্লাহ তোমাকে মানুষ হতে রক্ষা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (সূরা মায়েদা- ৬৭)
কুরআনের জ্ঞান গোপন রাখার ভয়াবহ পরিণাম :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَكْتُمُوْنَ مَاۤ اَنْزَلْنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدٰى مِنْ ۢبَعْدِ مَا بَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِى الْكِتَابِ اُولٰٓئِكَ يَلْعَنُهُمُ اللهُ وَيَلْعَنُهُمُ اللَّاعِنُوْنَ
আমি যেসব উজ্জ্বল নিদর্শন ও হেদায়াত অবতীর্ণ করেছি ঐগুলোকে সব মানুষের নিকট প্রকাশ করার পরও যারা ঐসব বিষয়কে গোপন করে, আল্লাহ তাদেরকে লানত করেন এবং (অন্যান্য) লানতকারীরাও তাদেরকে লানত করে থাকে। (সূরা বাক্বারা- ১৫৯)
اِنَّ الَّذِيْنَ يَكْتُمُوْنَ مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ مِنَ الْكِتَابِ وَيَشْتَرُوْنَ بِهٖ ثَمَنًا قَلِيْلًا اُولٰٓئِكَ مَا يَاْكُلُوْنَ فِيْ بُطُوْنِهِمْ اِلَّا النَّارَ وَلَا يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يُزَكِّيْهِمْۚ وَلَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
নিশ্চয় আল্লাহ কিতাব থেকে যা নাযিল করেছেন, যারা তা গোপন করে এবং অল্প মূল্যে বিক্রি করে। ঐ সমস্ত লোকেরা নিজেদের পেট আগুন দ্বারা পরিপূর্ণ করে। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না এবং তাদেরকে পবিত্রও করবেন না। (সুতরাং) তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরা বাক্বারা- ১৭৪)
নিঃস্বার্থভাবে প্রচার করতে হবে :
وَمَاۤ اَسْاَ لُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ اَجْرٍۚ اِنْ اَجْرِيَ اِلَّا عَلٰى رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
আমি এটার জন্য তোমাদের নিকট কোন প্রতিদান চাই না, আমার পুরস্কার তো জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকটই (সংরক্ষিত) আছে। (সূরা শু‘আরা- ১৬৪)
আল্লাহর কালামের অপব্যাখ্যা করা যাবে না :
وَلَا تَلْبِسُوا الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ وَتَكْتُمُوا الْحَقَّ وَاَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
আর তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনে বুঝে সত্যকে গোপন করো না। (সূরা বাক্বারা- ৪২)
اِنَّ الَّذِيْنَ يُلْحِدُوْنَ فِۤيْ اٰيَاتِنَا لَا يَخْفَوْنَ عَلَيْنَاؕ اَفَمَنْ يُّلْقٰى فِى النَّارِ خَيْرٌ اَمْ مَّنْ يَّاْتِۤيْ اٰمِنًا يَّوْمَ الْقِيَامَةِؕ اِعْمَلُوْا مَا شِئْتُمْ اِنَّهٗ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
যারা আমার আয়াতসমূহকে বিকৃত করে তারা আমার অগোচরে নয়। শ্রেষ্ঠ কে, যে ব্যক্তি জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে সে নাকি যে কিয়ামতের দিন নিরাপদে থাকবে সে? সুতরাং তোমরা যা ইচ্ছা তা আমল করে যাও। (জেনে রেখো) তোমরা যা কর, তিনি তার দ্রষ্টা। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৪০)
ব্যাখ্যা : اِلْحَادٌ (ইলহাদ) অর্থ ফিরে যাওয়া, সোজা পথ ছেড়ে বাঁকা পথের দিকে যাওয়া, বক্রতা অবলম্বন করা ইত্যাদি। আল্লাহর আয়াতসমূহের মধ্যে ইলহাদের অর্থ হচ্ছে, কোন সোজা কথার বাঁকা অর্থ করার চেষ্টা করা। অতএব কুরআনের ক্ষেত্রে এর অর্থ হবে, আল্লাহর আয়াতসমূহের সঠিক অর্থ গ্রহণ না করে ভুল অর্থ গ্রহণ করা। মক্কার কাফিররা কুরআন মাজীদের আয়াত ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য যে চক্রান্ত করেছিল তার মধ্যে ছিল, তারা কুরআনের আয়াত শুনে কোন আয়াতকে পূর্বাপর প্রসঙ্গ থেকে বিচ্ছিন্ন করে অথবা কোন আয়াতের শাব্দিক বিকৃতি ঘটিয়ে ভুল অর্থ গ্রহণ করে নানা রকমের প্রশ্ন উত্থাপন করত।
কুরআন প্রচারে কোন দুর্বলতা বা সংকীর্ণতা দেখানো যাবে না :
كِتَابٌ اُنْزِلَ اِلَيْكَ فَلَا يَكُنْ فِيْ صَدْرِكَ حَرَجٌ مِّنْهُ لِتُنْذِرَ بِهٖ وَذِكْرٰى لِلْمُؤْمِنِيْنَ
তোমার নিকট কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে, যাতে করে এর দ্বারা সতর্কীকরণের ব্যাপারে তোমার মনে এ সম্পর্কে কোন সংকোচ না থাকে। (মনে রেখো) মুমিনদের জন্য এটা উপদেশস্বরূপ। (সূরা আ‘রাফ- ২)
যারা কুরআনের কথা শুনে ও আমল করে তারাই উপদেশ গ্রহণ করে :
اَ لَّذِيْنَ يَسْتَمِعُوْنَ الْقَوْلَ فَيَتَّبِعُوْنَ اَحْسَنَهٗؕ اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ هَدَاهُمُ اللهُ وَاُولٰٓئِكَ هُمْ اُولُو الْاَ لْبَابِ
যারা মনোযোগ সহকারে কথা শুনে, অতঃপর তার মধ্যে যা উত্তম তার অনুসরণ করে। এরাই ঐসব লোক যাদেরকে আল্লাহ সৎপথে পরিচালিত করেছেন; আর তারাই জ্ঞানের অধিকারী। (সূরা যুমার- ১৮)
ব্যাখ্যা : এর একটি অর্থ হচ্ছে, তারা যে কোন কথা শুনলেই তার অনুসরণ করে না। তারা প্রত্যেকের কথা শুনার পর তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে এবং যেটি ন্যায় ও সত্য কথা তা গ্রহণ করে। আরেকটি অর্থ হচ্ছে, তারা কোন কথা শুনে তার ভুল অর্থ করার চেষ্টা করে না; বরং তার ভালো অর্থ গ্রহণ করে।
يَاۤ اَيُّهَا الرَّسُوْلُ بَلِّغْ مَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكَ مِنْ رَّبِّكَؕ وَاِنْ لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهٗؕ وَاللهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِؕ اِنَّ اللهَ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الْكَافِرِيْنَ
হে রাসূল! তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা প্রচার করো; যদি তা না কর, তবে তুমি তাঁর বার্তা (সঠিকভাবে) প্রচার করলে না। আল্লাহ তোমাকে মানুষ হতে রক্ষা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (সূরা মায়েদা- ৬৭)
কুরআনের জ্ঞান গোপন রাখার ভয়াবহ পরিণাম :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَكْتُمُوْنَ مَاۤ اَنْزَلْنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدٰى مِنْ ۢبَعْدِ مَا بَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِى الْكِتَابِ اُولٰٓئِكَ يَلْعَنُهُمُ اللهُ وَيَلْعَنُهُمُ اللَّاعِنُوْنَ
আমি যেসব উজ্জ্বল নিদর্শন ও হেদায়াত অবতীর্ণ করেছি ঐগুলোকে সব মানুষের নিকট প্রকাশ করার পরও যারা ঐসব বিষয়কে গোপন করে, আল্লাহ তাদেরকে লানত করেন এবং (অন্যান্য) লানতকারীরাও তাদেরকে লানত করে থাকে। (সূরা বাক্বারা- ১৫৯)
اِنَّ الَّذِيْنَ يَكْتُمُوْنَ مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ مِنَ الْكِتَابِ وَيَشْتَرُوْنَ بِهٖ ثَمَنًا قَلِيْلًا اُولٰٓئِكَ مَا يَاْكُلُوْنَ فِيْ بُطُوْنِهِمْ اِلَّا النَّارَ وَلَا يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يُزَكِّيْهِمْۚ وَلَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
নিশ্চয় আল্লাহ কিতাব থেকে যা নাযিল করেছেন, যারা তা গোপন করে এবং অল্প মূল্যে বিক্রি করে। ঐ সমস্ত লোকেরা নিজেদের পেট আগুন দ্বারা পরিপূর্ণ করে। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না এবং তাদেরকে পবিত্রও করবেন না। (সুতরাং) তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরা বাক্বারা- ১৭৪)
নিঃস্বার্থভাবে প্রচার করতে হবে :
وَمَاۤ اَسْاَ لُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ اَجْرٍۚ اِنْ اَجْرِيَ اِلَّا عَلٰى رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
আমি এটার জন্য তোমাদের নিকট কোন প্রতিদান চাই না, আমার পুরস্কার তো জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকটই (সংরক্ষিত) আছে। (সূরা শু‘আরা- ১৬৪)
আল্লাহর কালামের অপব্যাখ্যা করা যাবে না :
وَلَا تَلْبِسُوا الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ وَتَكْتُمُوا الْحَقَّ وَاَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
আর তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনে বুঝে সত্যকে গোপন করো না। (সূরা বাক্বারা- ৪২)
اِنَّ الَّذِيْنَ يُلْحِدُوْنَ فِۤيْ اٰيَاتِنَا لَا يَخْفَوْنَ عَلَيْنَاؕ اَفَمَنْ يُّلْقٰى فِى النَّارِ خَيْرٌ اَمْ مَّنْ يَّاْتِۤيْ اٰمِنًا يَّوْمَ الْقِيَامَةِؕ اِعْمَلُوْا مَا شِئْتُمْ اِنَّهٗ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
যারা আমার আয়াতসমূহকে বিকৃত করে তারা আমার অগোচরে নয়। শ্রেষ্ঠ কে, যে ব্যক্তি জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে সে নাকি যে কিয়ামতের দিন নিরাপদে থাকবে সে? সুতরাং তোমরা যা ইচ্ছা তা আমল করে যাও। (জেনে রেখো) তোমরা যা কর, তিনি তার দ্রষ্টা। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৪০)
ব্যাখ্যা : اِلْحَادٌ (ইলহাদ) অর্থ ফিরে যাওয়া, সোজা পথ ছেড়ে বাঁকা পথের দিকে যাওয়া, বক্রতা অবলম্বন করা ইত্যাদি। আল্লাহর আয়াতসমূহের মধ্যে ইলহাদের অর্থ হচ্ছে, কোন সোজা কথার বাঁকা অর্থ করার চেষ্টা করা। অতএব কুরআনের ক্ষেত্রে এর অর্থ হবে, আল্লাহর আয়াতসমূহের সঠিক অর্থ গ্রহণ না করে ভুল অর্থ গ্রহণ করা। মক্কার কাফিররা কুরআন মাজীদের আয়াত ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য যে চক্রান্ত করেছিল তার মধ্যে ছিল, তারা কুরআনের আয়াত শুনে কোন আয়াতকে পূর্বাপর প্রসঙ্গ থেকে বিচ্ছিন্ন করে অথবা কোন আয়াতের শাব্দিক বিকৃতি ঘটিয়ে ভুল অর্থ গ্রহণ করে নানা রকমের প্রশ্ন উত্থাপন করত।
কুরআন প্রচারে কোন দুর্বলতা বা সংকীর্ণতা দেখানো যাবে না :
كِتَابٌ اُنْزِلَ اِلَيْكَ فَلَا يَكُنْ فِيْ صَدْرِكَ حَرَجٌ مِّنْهُ لِتُنْذِرَ بِهٖ وَذِكْرٰى لِلْمُؤْمِنِيْنَ
তোমার নিকট কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে, যাতে করে এর দ্বারা সতর্কীকরণের ব্যাপারে তোমার মনে এ সম্পর্কে কোন সংকোচ না থাকে। (মনে রেখো) মুমিনদের জন্য এটা উপদেশস্বরূপ। (সূরা আ‘রাফ- ২)
যারা কুরআনের কথা শুনে ও আমল করে তারাই উপদেশ গ্রহণ করে :
اَ لَّذِيْنَ يَسْتَمِعُوْنَ الْقَوْلَ فَيَتَّبِعُوْنَ اَحْسَنَهٗؕ اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ هَدَاهُمُ اللهُ وَاُولٰٓئِكَ هُمْ اُولُو الْاَ لْبَابِ
যারা মনোযোগ সহকারে কথা শুনে, অতঃপর তার মধ্যে যা উত্তম তার অনুসরণ করে। এরাই ঐসব লোক যাদেরকে আল্লাহ সৎপথে পরিচালিত করেছেন; আর তারাই জ্ঞানের অধিকারী। (সূরা যুমার- ১৮)
ব্যাখ্যা : এর একটি অর্থ হচ্ছে, তারা যে কোন কথা শুনলেই তার অনুসরণ করে না। তারা প্রত্যেকের কথা শুনার পর তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে এবং যেটি ন্যায় ও সত্য কথা তা গ্রহণ করে। আরেকটি অর্থ হচ্ছে, তারা কোন কথা শুনে তার ভুল অর্থ করার চেষ্টা করে না; বরং তার ভালো অর্থ গ্রহণ করে।
কিছু লোক কুরআনের কথা শুনতে চায় না :
وَاِذَا تُتْلٰى عَلَيْهِ اٰيَاتُنَا وَلّٰى مُسْتَكْبِرًا كَاَنْ لَّمْ يَسْمَعْهَا كَاَنَّ فِۤيْ اُذُنَيْهِ وَقْرًاۚ فَبَشِّرْهُ بِعَذَابٍ اَلِيْمٍ
যখন তার কাছে আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হয়, তখন সে দম্ভভরে মুখ ফিরিয়ে নেয়; যেন সে শুনতেই পায়নি, যেন তার কর্ণদ্বয়ের মধ্যে ছিপি রয়েছে। অতএব তাকে বেদনাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও। (সূরা লুক্বমান- ৭)
তারা প্রচারকের বিরোধিতা করে :
وَاِذَا تُتْلٰى عَلَيْهِمْ اٰيَاتُنَا بَيِّنَاتٍ تَعْرِفُ فِيْ وُجُوْهِ الَّذِيْنَ كَفَرُوا الْمُنْكَرَؕ يَكَادُوْنَ يَسْطُوْنَ بِالَّذِيْنَ يَتْلُوْنَ عَلَيْهِمْ اٰيَاتِنَا
তাদের নিকট আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ পাঠ করা হলে তুমি কাফিরদের মুখমন্ডলে অসমেত্মাষ ভাব লক্ষ্য করবে। যারা তাদের নিকট আমার আয়াতসমূহ পাঠ করে, তারা তাদেরকে আক্রমণ করতে উদ্যত হয়। (সূরা হজ্জ- ৭২)
তারা কঠিন শাস্তি ভোগ করবে :
وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَا تَسْمَعُوْا لِهٰذَا الْقُرْاٰنِ وَالْغَوْا فِيْهِ لَعَلَّكُمْ تَغْلِبُوْنَ – - فَلَنُذِيْقَنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا عَذَابًا شَدِيْدًا وَّلَنَجْزِيَنَّهُمْ اَسْوَاَ الَّذِيْ كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ – ذٰلِكَ جَزَآءُ اَعْدَآءِ اللهِ النَّارُۚ لَهُمْ فِيْهَا دَارُ الْخُلْدِؕ جَزَآءً ۢبِمَا كَانُوْا بِاٰيَاتِنَا يَجْحَدُوْنَ
কাফিররা বলে, তোমরা এ কুরআন শ্রবণ করো না এবং তা পাঠকালে শোরগোল সৃষ্টি করো, যাতে তোমরা জয়ী হতে পার। অবশ্যই আমি কাফিরদেরকে কঠিন শাস্তি আস্বাদন করাব এবং তাদেরকে নিকৃষ্ট কার্যকলাপের বিনিময় প্রদান করব। (তাদের বিনিময় হচ্ছে) জাহান্নাম, আর এটাই আল্লাহর শত্রুদের (যথার্থ) পরিণাম। সেখানে তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী আবাসস্থল, যেহেতু তারা আমার নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করত। (সূরা হা-মীম সাজদা, ২৬-২৮)
ব্যাখ্যা : মক্কার কাফিররা যেসব পরিকল্পনার মাধ্যমে নবী ﷺ এর প্রচারকে ব্যর্থ করে দিতে চাচ্ছিল, এটি ছিল তারই একটি। তারা মনে করত, এরকম উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তির মুখ থেকে এমন হৃদয়গ্রাহী ভঙ্গিতে এই নজিরবিহীন বাণী যে-ই শুনবে সে-ই ঘায়েল হয়ে যাবে। অতএব তারা পরিকল্পনা করল যে, তারা এ বাণী নিজেরাও শুনবে না এবং অন্য কাউকেও শুনতে দেবে না। ফলে মুহাম্মাদ ﷺ যখনই তা শুনাতে আরম্ভ করবেন, তখনই তারা হৈ চৈ শুরু করে দেবে। তালি বাজাবে, বিদ্রূপ করবে, আপত্তি ও সমালোচনার ঝড় তুলবে এবং চিৎকার জুড়ে দেবে। তারা আশা করত, এ কৌশল অবলম্বন করে তারা আল্লাহর নবীকে ব্যর্থ করে দিতে সক্ষম হবে।
وَاِذَا تُتْلٰى عَلَيْهِ اٰيَاتُنَا وَلّٰى مُسْتَكْبِرًا كَاَنْ لَّمْ يَسْمَعْهَا كَاَنَّ فِۤيْ اُذُنَيْهِ وَقْرًاۚ فَبَشِّرْهُ بِعَذَابٍ اَلِيْمٍ
যখন তার কাছে আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হয়, তখন সে দম্ভভরে মুখ ফিরিয়ে নেয়; যেন সে শুনতেই পায়নি, যেন তার কর্ণদ্বয়ের মধ্যে ছিপি রয়েছে। অতএব তাকে বেদনাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও। (সূরা লুক্বমান- ৭)
তারা প্রচারকের বিরোধিতা করে :
وَاِذَا تُتْلٰى عَلَيْهِمْ اٰيَاتُنَا بَيِّنَاتٍ تَعْرِفُ فِيْ وُجُوْهِ الَّذِيْنَ كَفَرُوا الْمُنْكَرَؕ يَكَادُوْنَ يَسْطُوْنَ بِالَّذِيْنَ يَتْلُوْنَ عَلَيْهِمْ اٰيَاتِنَا
তাদের নিকট আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ পাঠ করা হলে তুমি কাফিরদের মুখমন্ডলে অসমেত্মাষ ভাব লক্ষ্য করবে। যারা তাদের নিকট আমার আয়াতসমূহ পাঠ করে, তারা তাদেরকে আক্রমণ করতে উদ্যত হয়। (সূরা হজ্জ- ৭২)
তারা কঠিন শাস্তি ভোগ করবে :
وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَا تَسْمَعُوْا لِهٰذَا الْقُرْاٰنِ وَالْغَوْا فِيْهِ لَعَلَّكُمْ تَغْلِبُوْنَ – - فَلَنُذِيْقَنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا عَذَابًا شَدِيْدًا وَّلَنَجْزِيَنَّهُمْ اَسْوَاَ الَّذِيْ كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ – ذٰلِكَ جَزَآءُ اَعْدَآءِ اللهِ النَّارُۚ لَهُمْ فِيْهَا دَارُ الْخُلْدِؕ جَزَآءً ۢبِمَا كَانُوْا بِاٰيَاتِنَا يَجْحَدُوْنَ
কাফিররা বলে, তোমরা এ কুরআন শ্রবণ করো না এবং তা পাঠকালে শোরগোল সৃষ্টি করো, যাতে তোমরা জয়ী হতে পার। অবশ্যই আমি কাফিরদেরকে কঠিন শাস্তি আস্বাদন করাব এবং তাদেরকে নিকৃষ্ট কার্যকলাপের বিনিময় প্রদান করব। (তাদের বিনিময় হচ্ছে) জাহান্নাম, আর এটাই আল্লাহর শত্রুদের (যথার্থ) পরিণাম। সেখানে তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী আবাসস্থল, যেহেতু তারা আমার নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করত। (সূরা হা-মীম সাজদা, ২৬-২৮)
ব্যাখ্যা : মক্কার কাফিররা যেসব পরিকল্পনার মাধ্যমে নবী ﷺ এর প্রচারকে ব্যর্থ করে দিতে চাচ্ছিল, এটি ছিল তারই একটি। তারা মনে করত, এরকম উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তির মুখ থেকে এমন হৃদয়গ্রাহী ভঙ্গিতে এই নজিরবিহীন বাণী যে-ই শুনবে সে-ই ঘায়েল হয়ে যাবে। অতএব তারা পরিকল্পনা করল যে, তারা এ বাণী নিজেরাও শুনবে না এবং অন্য কাউকেও শুনতে দেবে না। ফলে মুহাম্মাদ ﷺ যখনই তা শুনাতে আরম্ভ করবেন, তখনই তারা হৈ চৈ শুরু করে দেবে। তালি বাজাবে, বিদ্রূপ করবে, আপত্তি ও সমালোচনার ঝড় তুলবে এবং চিৎকার জুড়ে দেবে। তারা আশা করত, এ কৌশল অবলম্বন করে তারা আল্লাহর নবীকে ব্যর্থ করে দিতে সক্ষম হবে।
যারা কুরআনের বিধান মানে না তারা সবচেয়ে বড় যালিম :
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ ذُكِّرَ بِاٰيَاتِ رَبِّهٖ فَاَعْرَضَ عَنْهَا وَنَسِيَ مَا قَدَّمَتْ يَدَاهُ
কোন ব্যক্তিকে তার প্রতিপালকের নিদর্শনাবলি স্মরণ করিয়ে দেয়ার পর সে যদি সেটা হতে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তার কৃতকর্মসমূহ ভুলে যায়, তবে তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? (সূরা কাহফ- ৫৭)
তারা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ভোগ করবে :
وَيْلٌ لِّكُلِّ اَفَّاكٍ اَثِيْمٍ – - يَسْمَعُ اٰيَاتِ اللهِ تُتْلٰى عَلَيْهِ ثُمَّ يُصِرُّ مُسْتَكْبِرًا كَاَنْ لَّمْ يَسْمَعْهَاۚ فَبَشِّرْهُ بِعَذَابٍ اَلِيْمٍ
দুর্ভোগ প্রত্যেক ঘোর মিথ্যাবাদী পাপীর। যে আল্লাহর আয়াতসমূহের তিলাওয়াত শুনে অথচ অহংকারের সাথে (পূর্বাবস্থাতেই) অটল থাকে, যেন সে তা শোনতেই পায়নি। (সুতরাং) তাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও। (সূরা জাসিয়া- ৭, ৮)
কিয়ামতের দিন তাদেরকে আফসোস করতে হবে :
وَاتَّبِعُوْاۤ اَحْسَنَ مَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكُمْ مِّنْ رَّبِّكُمْ مِّنْ قَبْلِ اَنْ يَّاْتِيَكُمُ الْعَذَابُ بَغْتَةً وَّاَنْتُمْ لَا تَشْعُرُوْنَ --– اَنْ تَقُوْلَ نَفْسٌ يَّا حَسْرَتَا عَلٰى مَا فَرَّطْتُّ فِيْ جَنْۢبِ اللهِ وَاِنْ كُنْتُ لَمِنَ السَّاخِرِيْنَ -– اَوْ تَقُوْلَ لَوْ اَنَّ اللهَ هَدَانِيْ لَكُنْتُ مِنَ الْمُتَّقِيْنَ – اَوْ تَقُوْلَ حِيْنَ تَرَى الْعَذَابَ لَوْ اَنَّ لِيْ كَرَّةً فَاَكُوْنَ مِنَ الْمُحْسِنِيْنَ
তোমাদের অজান্তে তোমাদের উপর হঠাৎ কোন রকম আযাব আসার আগেই তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে উত্তম যা নাযিল হয়েছে তার অনুসরণ করো। (তোমাদের অবস্থা যেন এমন না হয় যে) কেউ বলবে, হায় আফসোস! আমি তো আল্লাহর প্রতি আমার কর্তব্য পালনে শৈথিল্য প্রদর্শন করেছি, আমি তো ঠাট্টা বিদ্রূপকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। অথবা এ কথা যেন না বলে যে, যদি আল্লাহ আমাকে হেদায়াত দান করতেন তাহলে অবশ্যই আমি মুত্তাক্বীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। অথবা আযাব সামনে দেখে বলবে, হায়! যদি আমাকে (আবার) দুনিয়াতে পাঠিয়ে দেয়া হতো, তাহলে আমি সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। (সূরা যুমার, ৫৫-৫৮)
এসব লোক জাহান্নামের অধিবাসী হবে :
وَسِيْقَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اِلٰى جَهَنَّمَ زُمَرًاؕ حَتّٰۤى اِذَا جَآءُوْهَا فُتِحَتْ اَبْوَابُهَا وَقَالَ لَهُمْ خَزَنَتُهَاۤ اَلَمْ يَاْتِكُمْ رُسُلٌ مِّنْكُمْ يَتْلُوْنَ عَلَيْكُمْ اٰيَاتِ رَبِّكُمْ وَيُنْذِرُوْنَكُمْ لِقَآءَ يَوْمِكُمْ هٰذَاؕ قَالُوْا بَلٰى وَلٰكِنْ حَقَّتْ كَلِمَةُ الْعَذَابِ عَلَى الْكَافِرِيْنَ – - قِيْلَ ادْخُلُوْاۤ اَبْوَابَ جَهَنَّمَ خَالِدِيْنَ فِيْهَاؕ فَبِئْسَ مَثْوَى الْمُتَكَبِّرِيْنَ
কাফিরদেরকে জাহান্নামের দিকে দলে দলে হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। অতঃপর যখন তারা জাহান্নামের নিকটবর্তী হবে, তখন তার দরজাগুলো খুলে দেয়া হবে। এ সময় জাহান্নামের দারোয়ানরা তাদেরকে বলবে, তোমাদের নিকট কি তোমাদের মধ্য হতে রাসূলগণ আসেননি; যারা তোমাদের নিকট তোমাদের প্রতিপালকের আয়াতসমূহ পাঠ করতেন এবং তোমাদেরকে এ দিনের সাক্ষাৎ সম্বন্ধে সতর্ক করতেন? তারা বলবে, অবশ্যই এসেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে কাফিরদের প্রতি শাস্তির হুকুম বাস্তবায়িত হয়েছে। অতঃপর তাদেরকে বলা হবে স্থায়ীভাবে অবস্থানের জন্য জাহান্নামের দ্বারসমূহে প্রবেশ করো। (লক্ষ্য করো) অহংকারীদের আবাসস্থল কতই না নিকৃষ্ট! (সূরা যুমার- ৭১, ৭২)
তাদের কোন আবেদন গ্রহণ করা হবে না :
اَلَمْ تَكُنْ اٰيَاتِيْ تُتْلٰى عَلَيْكُمْ فَكُنْتُمْ بِهَا تُكَذِّبُوْنَ – قَالُوْا رَبَّنَا غَلَبَتْ عَلَيْنَا شِقْوَتُنَا وَكُنَّا قَوْمًا ضَآلِّيْنَ – رَبَّنَاۤ اَخْرِجْنَا مِنْهَا فَاِنْ عُدْنَا فَاِنَّا ظَالِمُوْنَ – قَالَ اخْسَئُوْا فِيْهَا وَلَا تُكَلِّمُوْنِ
তোমাদের নিকট কি আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হতো না? অথচ তোমরা সেসব অস্বীকার করতে। তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! দুর্ভাগ্য আমাদেরকে পেয়ে বসেছিল এবং আমরা ছিলাম এক বিভ্রামত্ম সম্প্রদায়। হে আমাদের প্রতিপালক! এ (অগ্নি) হতে আমাদেরকে উদ্ধার করুন। আমরা যদি পুনরায় কুফরী করি, তবে তো অবশ্যই আমরা যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হব। আল্লাহ বলবেন, তোমরা হীন অবস্থায় এখানেই থাকো; আর আমার সাথে কোন কথা বলো না। (সূরা মু’মিনূন, ১০৫-১০৮)
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ ذُكِّرَ بِاٰيَاتِ رَبِّهٖ فَاَعْرَضَ عَنْهَا وَنَسِيَ مَا قَدَّمَتْ يَدَاهُ
কোন ব্যক্তিকে তার প্রতিপালকের নিদর্শনাবলি স্মরণ করিয়ে দেয়ার পর সে যদি সেটা হতে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তার কৃতকর্মসমূহ ভুলে যায়, তবে তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? (সূরা কাহফ- ৫৭)
তারা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ভোগ করবে :
وَيْلٌ لِّكُلِّ اَفَّاكٍ اَثِيْمٍ – - يَسْمَعُ اٰيَاتِ اللهِ تُتْلٰى عَلَيْهِ ثُمَّ يُصِرُّ مُسْتَكْبِرًا كَاَنْ لَّمْ يَسْمَعْهَاۚ فَبَشِّرْهُ بِعَذَابٍ اَلِيْمٍ
দুর্ভোগ প্রত্যেক ঘোর মিথ্যাবাদী পাপীর। যে আল্লাহর আয়াতসমূহের তিলাওয়াত শুনে অথচ অহংকারের সাথে (পূর্বাবস্থাতেই) অটল থাকে, যেন সে তা শোনতেই পায়নি। (সুতরাং) তাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও। (সূরা জাসিয়া- ৭, ৮)
কিয়ামতের দিন তাদেরকে আফসোস করতে হবে :
وَاتَّبِعُوْاۤ اَحْسَنَ مَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكُمْ مِّنْ رَّبِّكُمْ مِّنْ قَبْلِ اَنْ يَّاْتِيَكُمُ الْعَذَابُ بَغْتَةً وَّاَنْتُمْ لَا تَشْعُرُوْنَ --– اَنْ تَقُوْلَ نَفْسٌ يَّا حَسْرَتَا عَلٰى مَا فَرَّطْتُّ فِيْ جَنْۢبِ اللهِ وَاِنْ كُنْتُ لَمِنَ السَّاخِرِيْنَ -– اَوْ تَقُوْلَ لَوْ اَنَّ اللهَ هَدَانِيْ لَكُنْتُ مِنَ الْمُتَّقِيْنَ – اَوْ تَقُوْلَ حِيْنَ تَرَى الْعَذَابَ لَوْ اَنَّ لِيْ كَرَّةً فَاَكُوْنَ مِنَ الْمُحْسِنِيْنَ
তোমাদের অজান্তে তোমাদের উপর হঠাৎ কোন রকম আযাব আসার আগেই তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে উত্তম যা নাযিল হয়েছে তার অনুসরণ করো। (তোমাদের অবস্থা যেন এমন না হয় যে) কেউ বলবে, হায় আফসোস! আমি তো আল্লাহর প্রতি আমার কর্তব্য পালনে শৈথিল্য প্রদর্শন করেছি, আমি তো ঠাট্টা বিদ্রূপকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। অথবা এ কথা যেন না বলে যে, যদি আল্লাহ আমাকে হেদায়াত দান করতেন তাহলে অবশ্যই আমি মুত্তাক্বীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। অথবা আযাব সামনে দেখে বলবে, হায়! যদি আমাকে (আবার) দুনিয়াতে পাঠিয়ে দেয়া হতো, তাহলে আমি সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। (সূরা যুমার, ৫৫-৫৮)
এসব লোক জাহান্নামের অধিবাসী হবে :
وَسِيْقَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اِلٰى جَهَنَّمَ زُمَرًاؕ حَتّٰۤى اِذَا جَآءُوْهَا فُتِحَتْ اَبْوَابُهَا وَقَالَ لَهُمْ خَزَنَتُهَاۤ اَلَمْ يَاْتِكُمْ رُسُلٌ مِّنْكُمْ يَتْلُوْنَ عَلَيْكُمْ اٰيَاتِ رَبِّكُمْ وَيُنْذِرُوْنَكُمْ لِقَآءَ يَوْمِكُمْ هٰذَاؕ قَالُوْا بَلٰى وَلٰكِنْ حَقَّتْ كَلِمَةُ الْعَذَابِ عَلَى الْكَافِرِيْنَ – - قِيْلَ ادْخُلُوْاۤ اَبْوَابَ جَهَنَّمَ خَالِدِيْنَ فِيْهَاؕ فَبِئْسَ مَثْوَى الْمُتَكَبِّرِيْنَ
কাফিরদেরকে জাহান্নামের দিকে দলে দলে হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। অতঃপর যখন তারা জাহান্নামের নিকটবর্তী হবে, তখন তার দরজাগুলো খুলে দেয়া হবে। এ সময় জাহান্নামের দারোয়ানরা তাদেরকে বলবে, তোমাদের নিকট কি তোমাদের মধ্য হতে রাসূলগণ আসেননি; যারা তোমাদের নিকট তোমাদের প্রতিপালকের আয়াতসমূহ পাঠ করতেন এবং তোমাদেরকে এ দিনের সাক্ষাৎ সম্বন্ধে সতর্ক করতেন? তারা বলবে, অবশ্যই এসেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে কাফিরদের প্রতি শাস্তির হুকুম বাস্তবায়িত হয়েছে। অতঃপর তাদেরকে বলা হবে স্থায়ীভাবে অবস্থানের জন্য জাহান্নামের দ্বারসমূহে প্রবেশ করো। (লক্ষ্য করো) অহংকারীদের আবাসস্থল কতই না নিকৃষ্ট! (সূরা যুমার- ৭১, ৭২)
তাদের কোন আবেদন গ্রহণ করা হবে না :
اَلَمْ تَكُنْ اٰيَاتِيْ تُتْلٰى عَلَيْكُمْ فَكُنْتُمْ بِهَا تُكَذِّبُوْنَ – قَالُوْا رَبَّنَا غَلَبَتْ عَلَيْنَا شِقْوَتُنَا وَكُنَّا قَوْمًا ضَآلِّيْنَ – رَبَّنَاۤ اَخْرِجْنَا مِنْهَا فَاِنْ عُدْنَا فَاِنَّا ظَالِمُوْنَ – قَالَ اخْسَئُوْا فِيْهَا وَلَا تُكَلِّمُوْنِ
তোমাদের নিকট কি আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হতো না? অথচ তোমরা সেসব অস্বীকার করতে। তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! দুর্ভাগ্য আমাদেরকে পেয়ে বসেছিল এবং আমরা ছিলাম এক বিভ্রামত্ম সম্প্রদায়। হে আমাদের প্রতিপালক! এ (অগ্নি) হতে আমাদেরকে উদ্ধার করুন। আমরা যদি পুনরায় কুফরী করি, তবে তো অবশ্যই আমরা যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হব। আল্লাহ বলবেন, তোমরা হীন অবস্থায় এখানেই থাকো; আর আমার সাথে কোন কথা বলো না। (সূরা মু’মিনূন, ১০৫-১০৮)
যারা কুরআন অনুযায়ী বিচার করে না তারা কাফির :
وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْكَافِرُوْنَ
আল্লাহ যে বিধান অবতীর্ণ করেছেন যারা সে অনুযায়ী বিচার-মীমাংসা করে না তারা কাফির। (সূরা মায়েদা- ৪৪)
তারা যালিম :
وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ
আল্লাহ যে বিধান অবতীর্ণ করেছেন যারা সে অনুযায়ী বিচার-মীমাংসা করে না তারা যালিম। (সূরা মায়েদা- ৪৫)
তারা ফাসিক :
وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ
যারা আল্লাহর অবতীর্ণ করা বিধান অনুযায়ী বিচার-ফায়াসালা করে না তারা ফাসিক। (সূরা মায়েদা- ৪৭)
ব্যাখ্যা : যারা আল্লাহর নাযিল করা আইন অনুযায়ী ফায়সালা করে না, আল্লাহ এখানে তাদের পরিণাম সম্পর্কে তিনটি বিধান বর্ণনা করেছেন। (এক) তারা কাফির। (দুই) তারা যালিম। (তিন) তারা ফাসিক। এর পরিষ্কার অর্থ হচ্ছে, যে ব্যক্তি আল্লাহর হুকুম ও তাঁর নাযিল করা আইন ত্যাগ করে নিজের বা অন্য মানুষের গড়া আইনের ভিত্তিতে ফায়সালা করে, সে আসলে বড় ধরনের অপরাধ করে।
প্রথমত, তার এ কাজটি আল্লাহর হুকুম অস্বীকার করার শামিল। কাজেই এটি কুফরী।
দ্বিতীয়ত, তার এ কাজটি ইনসাফ ও ভারসাম্যনীতির বিরোধী। কারণ আল্লাহ যথার্থ ইনসাফ ও ভারসাম্যনীতি অনুযায়ীই হুকুম দিয়েছিলেন। কাজেই আল্লাহর হুকুম থেকে সরে এসে যখন সে ফায়সালা করল তখন সে আসলে যুলুম করল।
তৃতীয়ত, বান্দা হওয়া সত্ত্বেও যখন সে নিজের প্রভুর আইন অমান্য করে নিজের বা অন্যের মনগড়া আইন প্রবর্তন করল, তখনই সে দাসত্ব ও আনুগত্যের গন্ডীর বাইরে চলে গেল। আর এটিই হলো অবাধ্যতা বা ফাসিকী। এ কুফরী, যুলুম ও ফাসিকী তার নিজের ধরন ও প্রকৃতির দিক দিয়ে অনিবার্যভাবে আল্লাহর হুকুম অমান্যেরই বাস্তব রূপ। সুতরাং যেখানেই আল্লাহর হুকুম অমান্য করা হবে, সেখানেই এ তিনটি অপরাধ থাকবে।
وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْكَافِرُوْنَ
আল্লাহ যে বিধান অবতীর্ণ করেছেন যারা সে অনুযায়ী বিচার-মীমাংসা করে না তারা কাফির। (সূরা মায়েদা- ৪৪)
তারা যালিম :
وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ
আল্লাহ যে বিধান অবতীর্ণ করেছেন যারা সে অনুযায়ী বিচার-মীমাংসা করে না তারা যালিম। (সূরা মায়েদা- ৪৫)
তারা ফাসিক :
وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ
যারা আল্লাহর অবতীর্ণ করা বিধান অনুযায়ী বিচার-ফায়াসালা করে না তারা ফাসিক। (সূরা মায়েদা- ৪৭)
ব্যাখ্যা : যারা আল্লাহর নাযিল করা আইন অনুযায়ী ফায়সালা করে না, আল্লাহ এখানে তাদের পরিণাম সম্পর্কে তিনটি বিধান বর্ণনা করেছেন। (এক) তারা কাফির। (দুই) তারা যালিম। (তিন) তারা ফাসিক। এর পরিষ্কার অর্থ হচ্ছে, যে ব্যক্তি আল্লাহর হুকুম ও তাঁর নাযিল করা আইন ত্যাগ করে নিজের বা অন্য মানুষের গড়া আইনের ভিত্তিতে ফায়সালা করে, সে আসলে বড় ধরনের অপরাধ করে।
প্রথমত, তার এ কাজটি আল্লাহর হুকুম অস্বীকার করার শামিল। কাজেই এটি কুফরী।
দ্বিতীয়ত, তার এ কাজটি ইনসাফ ও ভারসাম্যনীতির বিরোধী। কারণ আল্লাহ যথার্থ ইনসাফ ও ভারসাম্যনীতি অনুযায়ীই হুকুম দিয়েছিলেন। কাজেই আল্লাহর হুকুম থেকে সরে এসে যখন সে ফায়সালা করল তখন সে আসলে যুলুম করল।
তৃতীয়ত, বান্দা হওয়া সত্ত্বেও যখন সে নিজের প্রভুর আইন অমান্য করে নিজের বা অন্যের মনগড়া আইন প্রবর্তন করল, তখনই সে দাসত্ব ও আনুগত্যের গন্ডীর বাইরে চলে গেল। আর এটিই হলো অবাধ্যতা বা ফাসিকী। এ কুফরী, যুলুম ও ফাসিকী তার নিজের ধরন ও প্রকৃতির দিক দিয়ে অনিবার্যভাবে আল্লাহর হুকুম অমান্যেরই বাস্তব রূপ। সুতরাং যেখানেই আল্লাহর হুকুম অমান্য করা হবে, সেখানেই এ তিনটি অপরাধ থাকবে।
ইসলামের মূল স্তম্ভ হল ঈমান। ঈমান না থাকলে কোন কাজেই সওয়াব হয় না। মুখে কালিমা পড়ে এর বিষয়বস্তু অন্তরে বিশ্বাস করে বাস্তবে আমল করার মাধ্যমে ঈমান পূর্ণতা লাভ করে। কালিমা গ্রহণযোগ্য হওয়ার শর্ত হলো :
১. ইখলাসের সাথে কালিমা উচ্চারণ করা।
২. কালিমার অর্থ জানা এবং তা সত্যায়ন করা ।
৩. অন্তরে নিশ্চিত বিশ্বাস রাখা।
৪. কালিমার অনুসারীদের প্রতি ভালবাসা রাখা।
৫. কালিমার দাবীসমূহ পরিপূর্ণ আনুগত্য ও নিষ্ঠার সাথে পালন করা।
৬. কালিমার দাবীর বিপরীত বিষয়কে বর্জন করা।
১. ইখলাসের সাথে কালিমা উচ্চারণ করা।
২. কালিমার অর্থ জানা এবং তা সত্যায়ন করা ।
৩. অন্তরে নিশ্চিত বিশ্বাস রাখা।
৪. কালিমার অনুসারীদের প্রতি ভালবাসা রাখা।
৫. কালিমার দাবীসমূহ পরিপূর্ণ আনুগত্য ও নিষ্ঠার সাথে পালন করা।
৬. কালিমার দাবীর বিপরীত বিষয়কে বর্জন করা।
ঈমান মজবুত অবলম্বন :
فَمَنْ يَّكْفُرْ بِالطَّاغُوْتِ وَيُؤْمِنْ ۢبِاللهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقٰى لَا انْفِصَامَ لَهَا
সুতরাং যে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে, সে যেন এমন এক মজবুত রশি আঁকড়ে ধরল, যা কখনো ছিড়বে না। (সূরা বাক্বারা- ২৫৬)
يُثَبِّتُ اللهُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِى الْاٰخِرَةِؕ وَيُضِلُّ اللهُ الظَّالِمِيْنَۚ وَيَفْعَلُ اللهُ مَا يَشَآءُ
যারা শাশ্বত বাণীর প্রতি ঈমান আনয়ন করেছে আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়ার জীবনে ও আখিরাতে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবেন এবং যালিমদেরকে বিভ্রান্তিতে রাখবেন। আর আল্লাহ যা ইচ্ছা তা-ই করেন। (সূরা ইবরাহীম- ২৭)
ঈমান পরকালের ব্যবসার মূল পুঁজি :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا هَلْ اَدُلُّكُمْ عَلٰى تِجَارَةٍ تُنْجِيْكُمْ مِّنْ عَذَابٍ اَلِيْمٍ ‐ تُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ وَرَسُولِهٖ وَتُجَاهِدُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ بِاَمْوَالِكُمْ وَاَنْفُسِكُمْ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
হে মুমিনগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন বাণিজ্যের সন্ধান দেব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হতে রক্ষা করবে? (তা এই যে) তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং তোমাদের ধনসম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে! (সূরা সাফ- ১০, ১১)
ঈমান কল্যাণ ও সমৃদ্ধির চাবিকাঠি :
وَلَوْ اَنَّ اَهْلَ الْقُرٰۤى اٰمَنُوْا وَاتَّقُوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَرَكَاتٍ مِّنَ السَّمَآءِ وَالْاَرْضِۚ وَلٰكِنْ كَذَّبُوْا فَاَخَذْنَاهُمْ بِمَا كَانُوْا يَكْسِبُوْنَ
যদি জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত ও তাক্বওয়া অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের জন্য আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর কল্যাণ উন্মুক্ত করে দিতাম, কিন্তু তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছিল। ফলে তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের জন্য পাকড়াও করেছি। (সূরা আ‘রাফ- ৯৬)
ঈমান শাস্তি থেকে বাঁচার উপায় :
مَا يَفْعَلُ اللهُ بِعَذَابِكُمْ اِنْ شَكَرْتُمْ وَاٰمَنْتُمْؕ وَكَانَ اللهُ شَاكِرًا عَلِيْمًا
তোমরা যদি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর এবং ঈমান আনয়ন কর, তবে তোমাদেরকে শাস্তি দেয়াতে আল্লাহর কী লাভ? আর আল্লাহ তো পুরস্কারদাতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা নিসা - ১৪৭)
কুরআন ঈমানের পরিচয় দেয় :
وَكَذٰلِكَ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ رُوْحًا مِّنْ اَمْرِنَاؕ مَا كُنْتَ تَدْرِيْ مَا الْكِتَابُ وَلَا الْاِيْمَانُ وَلٰكِنْ جَعَلْنَاهُ نُوْرًا نَّهْدِيْ بِه مَنْ نَّشَآءُ مِنْ عِبَادِنَاؕ وَاِنَّكَ لَتَهْدِيْۤ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
আর এভাবেই আমি আমার নির্দেশে তোমার প্রতি ওহী করেছি রূহ তথা আল কুরআন। তুমি তো জানতে না যে, কিতাব কী এবং ঈমান কোন জিনিস। পক্ষান্তরে আমি একে করেছি আলো, যা দ্বারা আমি আমার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা পথনির্দেশ করি। নিশ্চয় তুমি সরল পথের দিকেই পথপ্রদর্শন করে থাক। (সূরা শূরা - ৫২)
কুরআন পড়লে ঈমান বৃদ্ধি পায় :
اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ اِذَا ذُكِرَ اللهُ وَجِلَتْ قُلُوْبُهُمْ وَاِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ اٰيَاتُهٗ زَادَتْهُمْ اِيْمَانًا وَّعَلٰى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ
নিশ্চয় মুমিন তো তারাই যাদের হৃদয় আল্লাহর স্মরণে কম্পিত হয় এবং তাদের সামনে তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হলে তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি হয়। আর তারা তাদের প্রতিপালকের উপরই নির্ভর করে থাকে। (সূরা আনফাল- ২)
وَاِذَا مَاۤ اُنْزِلَتْ سُوْرَةٌ فَمِنْهُمْ مَّنْ يَّقُوْلُ اَيُّكُمْ زَادَتْهُ هٰذِه ۤ اِيْمَانًاۚ فَاَمَّا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا فَزَادَتْهُمْ اِيْمَانًا وَّهُمْ يَسْتَبْشِرُوْنَ
যখনই কোন সূরা অবতীর্ণ হয় তখন তাদের কেউ কেউ বলে, এটা তোমাদের মধ্যে কারো ঈমান বৃদ্ধি করল কি? অতঃপর যারা ঈমান আনয়ন করেছে এতে তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পায় এবং তারাই আনন্দিত হয়। (সূরা তাওবা - ১২৪)
ব্যাখ্যা : ঈমান বৃদ্ধির অর্থ প্রতিটি পরীক্ষার সময় আল্লাহ তাদেরকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার এবং সঠিক পথে চলার সুযোগ দান করেন। তাদেরকে অসৎকাজ ও ভ্রান্তপথ থেকে রক্ষা করেন। ফলে তারা তাঁর পথনির্দেশনার মাধ্যমে সত্য ও সঠিক পথে এগিয়ে চলতে সক্ষম হয়।
কালিমায়ে তায়্যিবার উদাহরণ :
اَلَمْ تَرَ كَيْفَ ضَرَبَ اللهُ مَثَلًا كَلِمَةً طَيِّبَةً كَشَجَرَةٍ طَيِّبَةٍ اَصْلُهَا ثَابِتٌ وَّفَرْعُهَا فِى السَّمَآءِ ‐ تُؤْتِۤيْ اُكُلَهَا كُلَّ حِيْنٍ ۢبِاِذْنِ رَبِّهَاۚ وَيَضْرِبُ اللهُ الْاَمْثَالَ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُوْنَ
তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, আল্লাহ কীভাবে উপমা দিয়ে থাকেন? পবিত্র বাক্যের তুলনা উৎকৃষ্ট বৃক্ষের সাথে, যার মূল সুদৃঢ় ও যার শাখা-প্রশাখা ঊর্ধ্বে বিস্তৃত, যা প্রত্যেক মওসুমে তার প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে ফল দান করে। আর আল্লাহ মানুষের জন্য এসব উপমা দিয়ে থাকেন, যাতে তারা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। (সূরা ইবরাহীম - ২৪, ২৫)
ব্যাখ্যা : ‘কালিমায়ে তায়্যিবা’ এর শাব্দিক অর্থ পবিত্র কথা। কিন্তু এ শব্দের মাধ্যমে যে তাৎপর্য গ্রহণ করা হয়েছে তা হচ্ছে, এমন সত্য কথা এবং এমন পরিচ্ছন্ন বিশ্বাস, যা পুরোপুরি সত্য ও সরলতার উপর প্রতিষ্ঠিত। এ উক্তি ও আকীদা কুরআন মাজীদের দৃষ্টিতে অপরিহার্যভাবে এমন একটি কথা ও বিশ্বাস হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে তাওহীদের স্বীকৃতি, নবীগণ ও আসমানী কিতাবসমূহের স্বীকৃতি এবং আখিরাতের স্বীকৃতি। কারণ কুরআন এ বিষয়গুলোকেই মৌলিক ও সত্য হিসেবে পেশ করে। এটি একটি ফলপ্রসূ কালিমা। কোন ব্যক্তি বা জাতি এর ভিত্তিতে জীবনব্যবস্থা গড়ে তুললে প্রতি মুহূর্তে সে তার সুফল লাভ করতে থাকে। এ কালিমা চিন্তাধারায় পরিপক্কতা, স্বভাবে প্রশান্তি, মেজাজে ভারসাম্য, চরিত্রে পবিত্রতা, আত্মায় প্রফুল্লতা, শরীরে পরিচ্ছন্নতা, আচার-ব্যবহারে মাধুর্যতা, লেনদেনে সততা, কথাবার্তায় সত্যবাদিতা, অঙ্গীকারে দৃঢ়তা, সামাজিক জীবন-যাপনে স্বচ্ছতা, কৃষ্টি-কালচারে ঔদার্য ও মহত্ব, সভ্যতায় ভারসাম্য, অর্থনীতিতে ন্যায়পরায়ণতা, রাজনীতিতে বিশ্বস্ততা, যুদ্ধে সৌজন্যতা, সন্ধিতে আন্তরিকতা এবং চুক্তিতে বিশ্বস্ততা সৃষ্টি করে। এটি এমন একটি পরশপাথর, যার প্রভাব কেউ যথাযথভাবে গ্রহণ করলে খাঁটি সোনায় পরিণত হয়। এ কালিমার বদৌলতে তারা দুনিয়ায় একটি স্থায়ী দৃষ্টিভঙ্গী, শক্তিশালী চিন্তাধারা এবং একটি ব্যাপক জীবনদর্শন লাভ করে। জীবনের সকল সমস্যার সামাধানে তা এমন এক চাবির ন্যায় কাজ করে, যা দিয়ে সকল তালা খোলা যায়। এর সাহায্যে জীবন-যাপনের এমন কতগুলো মূলনীতি পাওয়া যায়, যা একদিকে হৃদয়ে ও মস্তিষ্কে প্রশান্তি এনে দেয় এবং অন্যদিকে প্রচেষ্টা ও কর্মের পথে দিশেহারা হয়ে ঘুরে বেড়ানোর এবং অস্থিরতার শিকার হওয়ার হাত থেকে বাঁচায়। তারপর যখন তারা মৃত্যুর সীমানা অতিক্রম করে পরলোকের সীমান্তে পা রাখে, তখন সেখানে তারা চিন্তিত হয় না। কারণ সেখানে তাদের প্রত্যাশানুযায়ী সবকিছু পেয়ে থাকে।
فَمَنْ يَّكْفُرْ بِالطَّاغُوْتِ وَيُؤْمِنْ ۢبِاللهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقٰى لَا انْفِصَامَ لَهَا
সুতরাং যে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে, সে যেন এমন এক মজবুত রশি আঁকড়ে ধরল, যা কখনো ছিড়বে না। (সূরা বাক্বারা- ২৫৬)
يُثَبِّتُ اللهُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِى الْاٰخِرَةِؕ وَيُضِلُّ اللهُ الظَّالِمِيْنَۚ وَيَفْعَلُ اللهُ مَا يَشَآءُ
যারা শাশ্বত বাণীর প্রতি ঈমান আনয়ন করেছে আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়ার জীবনে ও আখিরাতে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবেন এবং যালিমদেরকে বিভ্রান্তিতে রাখবেন। আর আল্লাহ যা ইচ্ছা তা-ই করেন। (সূরা ইবরাহীম- ২৭)
ঈমান পরকালের ব্যবসার মূল পুঁজি :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا هَلْ اَدُلُّكُمْ عَلٰى تِجَارَةٍ تُنْجِيْكُمْ مِّنْ عَذَابٍ اَلِيْمٍ ‐ تُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ وَرَسُولِهٖ وَتُجَاهِدُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ بِاَمْوَالِكُمْ وَاَنْفُسِكُمْ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
হে মুমিনগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন বাণিজ্যের সন্ধান দেব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হতে রক্ষা করবে? (তা এই যে) তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং তোমাদের ধনসম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে! (সূরা সাফ- ১০, ১১)
ঈমান কল্যাণ ও সমৃদ্ধির চাবিকাঠি :
وَلَوْ اَنَّ اَهْلَ الْقُرٰۤى اٰمَنُوْا وَاتَّقُوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَرَكَاتٍ مِّنَ السَّمَآءِ وَالْاَرْضِۚ وَلٰكِنْ كَذَّبُوْا فَاَخَذْنَاهُمْ بِمَا كَانُوْا يَكْسِبُوْنَ
যদি জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত ও তাক্বওয়া অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের জন্য আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর কল্যাণ উন্মুক্ত করে দিতাম, কিন্তু তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছিল। ফলে তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের জন্য পাকড়াও করেছি। (সূরা আ‘রাফ- ৯৬)
ঈমান শাস্তি থেকে বাঁচার উপায় :
مَا يَفْعَلُ اللهُ بِعَذَابِكُمْ اِنْ شَكَرْتُمْ وَاٰمَنْتُمْؕ وَكَانَ اللهُ شَاكِرًا عَلِيْمًا
তোমরা যদি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর এবং ঈমান আনয়ন কর, তবে তোমাদেরকে শাস্তি দেয়াতে আল্লাহর কী লাভ? আর আল্লাহ তো পুরস্কারদাতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা নিসা - ১৪৭)
কুরআন ঈমানের পরিচয় দেয় :
وَكَذٰلِكَ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ رُوْحًا مِّنْ اَمْرِنَاؕ مَا كُنْتَ تَدْرِيْ مَا الْكِتَابُ وَلَا الْاِيْمَانُ وَلٰكِنْ جَعَلْنَاهُ نُوْرًا نَّهْدِيْ بِه مَنْ نَّشَآءُ مِنْ عِبَادِنَاؕ وَاِنَّكَ لَتَهْدِيْۤ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
আর এভাবেই আমি আমার নির্দেশে তোমার প্রতি ওহী করেছি রূহ তথা আল কুরআন। তুমি তো জানতে না যে, কিতাব কী এবং ঈমান কোন জিনিস। পক্ষান্তরে আমি একে করেছি আলো, যা দ্বারা আমি আমার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা পথনির্দেশ করি। নিশ্চয় তুমি সরল পথের দিকেই পথপ্রদর্শন করে থাক। (সূরা শূরা - ৫২)
কুরআন পড়লে ঈমান বৃদ্ধি পায় :
اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ اِذَا ذُكِرَ اللهُ وَجِلَتْ قُلُوْبُهُمْ وَاِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ اٰيَاتُهٗ زَادَتْهُمْ اِيْمَانًا وَّعَلٰى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ
নিশ্চয় মুমিন তো তারাই যাদের হৃদয় আল্লাহর স্মরণে কম্পিত হয় এবং তাদের সামনে তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হলে তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি হয়। আর তারা তাদের প্রতিপালকের উপরই নির্ভর করে থাকে। (সূরা আনফাল- ২)
وَاِذَا مَاۤ اُنْزِلَتْ سُوْرَةٌ فَمِنْهُمْ مَّنْ يَّقُوْلُ اَيُّكُمْ زَادَتْهُ هٰذِه ۤ اِيْمَانًاۚ فَاَمَّا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا فَزَادَتْهُمْ اِيْمَانًا وَّهُمْ يَسْتَبْشِرُوْنَ
যখনই কোন সূরা অবতীর্ণ হয় তখন তাদের কেউ কেউ বলে, এটা তোমাদের মধ্যে কারো ঈমান বৃদ্ধি করল কি? অতঃপর যারা ঈমান আনয়ন করেছে এতে তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পায় এবং তারাই আনন্দিত হয়। (সূরা তাওবা - ১২৪)
ব্যাখ্যা : ঈমান বৃদ্ধির অর্থ প্রতিটি পরীক্ষার সময় আল্লাহ তাদেরকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার এবং সঠিক পথে চলার সুযোগ দান করেন। তাদেরকে অসৎকাজ ও ভ্রান্তপথ থেকে রক্ষা করেন। ফলে তারা তাঁর পথনির্দেশনার মাধ্যমে সত্য ও সঠিক পথে এগিয়ে চলতে সক্ষম হয়।
কালিমায়ে তায়্যিবার উদাহরণ :
اَلَمْ تَرَ كَيْفَ ضَرَبَ اللهُ مَثَلًا كَلِمَةً طَيِّبَةً كَشَجَرَةٍ طَيِّبَةٍ اَصْلُهَا ثَابِتٌ وَّفَرْعُهَا فِى السَّمَآءِ ‐ تُؤْتِۤيْ اُكُلَهَا كُلَّ حِيْنٍ ۢبِاِذْنِ رَبِّهَاۚ وَيَضْرِبُ اللهُ الْاَمْثَالَ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُوْنَ
তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, আল্লাহ কীভাবে উপমা দিয়ে থাকেন? পবিত্র বাক্যের তুলনা উৎকৃষ্ট বৃক্ষের সাথে, যার মূল সুদৃঢ় ও যার শাখা-প্রশাখা ঊর্ধ্বে বিস্তৃত, যা প্রত্যেক মওসুমে তার প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে ফল দান করে। আর আল্লাহ মানুষের জন্য এসব উপমা দিয়ে থাকেন, যাতে তারা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। (সূরা ইবরাহীম - ২৪, ২৫)
ব্যাখ্যা : ‘কালিমায়ে তায়্যিবা’ এর শাব্দিক অর্থ পবিত্র কথা। কিন্তু এ শব্দের মাধ্যমে যে তাৎপর্য গ্রহণ করা হয়েছে তা হচ্ছে, এমন সত্য কথা এবং এমন পরিচ্ছন্ন বিশ্বাস, যা পুরোপুরি সত্য ও সরলতার উপর প্রতিষ্ঠিত। এ উক্তি ও আকীদা কুরআন মাজীদের দৃষ্টিতে অপরিহার্যভাবে এমন একটি কথা ও বিশ্বাস হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে তাওহীদের স্বীকৃতি, নবীগণ ও আসমানী কিতাবসমূহের স্বীকৃতি এবং আখিরাতের স্বীকৃতি। কারণ কুরআন এ বিষয়গুলোকেই মৌলিক ও সত্য হিসেবে পেশ করে। এটি একটি ফলপ্রসূ কালিমা। কোন ব্যক্তি বা জাতি এর ভিত্তিতে জীবনব্যবস্থা গড়ে তুললে প্রতি মুহূর্তে সে তার সুফল লাভ করতে থাকে। এ কালিমা চিন্তাধারায় পরিপক্কতা, স্বভাবে প্রশান্তি, মেজাজে ভারসাম্য, চরিত্রে পবিত্রতা, আত্মায় প্রফুল্লতা, শরীরে পরিচ্ছন্নতা, আচার-ব্যবহারে মাধুর্যতা, লেনদেনে সততা, কথাবার্তায় সত্যবাদিতা, অঙ্গীকারে দৃঢ়তা, সামাজিক জীবন-যাপনে স্বচ্ছতা, কৃষ্টি-কালচারে ঔদার্য ও মহত্ব, সভ্যতায় ভারসাম্য, অর্থনীতিতে ন্যায়পরায়ণতা, রাজনীতিতে বিশ্বস্ততা, যুদ্ধে সৌজন্যতা, সন্ধিতে আন্তরিকতা এবং চুক্তিতে বিশ্বস্ততা সৃষ্টি করে। এটি এমন একটি পরশপাথর, যার প্রভাব কেউ যথাযথভাবে গ্রহণ করলে খাঁটি সোনায় পরিণত হয়। এ কালিমার বদৌলতে তারা দুনিয়ায় একটি স্থায়ী দৃষ্টিভঙ্গী, শক্তিশালী চিন্তাধারা এবং একটি ব্যাপক জীবনদর্শন লাভ করে। জীবনের সকল সমস্যার সামাধানে তা এমন এক চাবির ন্যায় কাজ করে, যা দিয়ে সকল তালা খোলা যায়। এর সাহায্যে জীবন-যাপনের এমন কতগুলো মূলনীতি পাওয়া যায়, যা একদিকে হৃদয়ে ও মস্তিষ্কে প্রশান্তি এনে দেয় এবং অন্যদিকে প্রচেষ্টা ও কর্মের পথে দিশেহারা হয়ে ঘুরে বেড়ানোর এবং অস্থিরতার শিকার হওয়ার হাত থেকে বাঁচায়। তারপর যখন তারা মৃত্যুর সীমানা অতিক্রম করে পরলোকের সীমান্তে পা রাখে, তখন সেখানে তারা চিন্তিত হয় না। কারণ সেখানে তাদের প্রত্যাশানুযায়ী সবকিছু পেয়ে থাকে।
ঈমান আনার আহবান :
اٰمِنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِه وَاَنْفِقُوْا مِمَّا جَعَلَكُمْ مُّسْتَخْلَفِيْنَ فِيْهِؕ فَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مِنْكُمْ وَاَنْفَقُوْا لَهُمْ اَجْرٌ كَبِيْرٌ ‐ وَمَا لَكُمْ لَا تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِۚ وَالرَّسُوْلُ يَدْعُوْكُمْ لِتُؤْمِنُوْا بِرَبِّكُمْ وَقَدْ اَخَذَ مِيْثَاقَكُمْ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন করো এবং তিনি তোমাদেরকে যা কিছুর উত্তরাধিকারী করেছেন, তা হতে ব্যয় করো। অতএব তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও ব্যয় করে, তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার। তোমাদের কী হলো যে, তোমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনছ না? অথচ রাসূল তোমাদেরকে তোমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনতে আহবান করছেন এবং তিনি তোমাদের নিকট হতে অঙ্গীকারও গ্রহণ করেছেন। (আফসোস!) যদি তোমরা ঈমান আনয়ন করতে, (তবে কতই না ভালো হতো)। (সূরা হাদীদ- ৭, ৮)
فَاٰمِنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِه وَالنُّوْرِ الَّذِيْۤ اَنْزَلْنَاؕ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِيْرٌ
অতএব তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এবং যে নূর আমি অবতীর্ণ করেছি, তাতে বিশ্বাস স্থাপন করো। (জেনে রেখো) আল্লাহ তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত। (সূরা তাগাবুন- ৮)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اٰمِنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِهٖ وَالْكِتَابِ الَّذِيْ نَزَّلَ عَلٰى رَسُوْلِهٖ وَالْكِتَابِ الَّذِيْۤ اَنْزَلَ مِنْ قَبْلُؕ وَمَنْ يَّكْفُرْ بِاللهِ وَمَلَآئِكَتِهٖ وَكُتُبِهٖ وَرُسُلِهٖ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا ۢبَعِيْدًا
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর উপর, তাঁর রাসূলের উপর, তিনি তাঁর রাসূলের প্রতি যে কিতাব নাযিল করেছেন তার উপর এবং যে কিতাব তিনি পূর্বে নাযিল করেছেন তার উপর ঈমান আনয়ন করো। (জেনে রেখো) যে ব্যক্তি আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ এবং আখিরাতকে অস্বীকার করবে, সে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। (সূরা নিসা- ১৩৬)
ব্যাখ্যা : যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে আবার ঈমান আনতে বলা হয়েছে। কারণ এখানে ‘ঈমান’ শব্দটি দু’টি আলাদা আলাদা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। ঈমান আনার একটি অর্থ হচ্ছে- অস্বীকৃতির পরিবর্তে স্বীকৃতির পথ অবলম্বন করা। অস্বীকারকারীদের থেকে আলাদা হয়ে স্বীকৃতিদানকারীদের দলে শামিল হয়ে যাওয়া। এর দ্বিতীয় অর্থ হলো, সচেতনতার সাথে স্বীকৃতি দান করা। নিজের চিন্তা, রুচি, পছন্দ, দৃষ্টিভঙ্গী, মনোভাব, চালচলন এবং নিজের বন্ধুত্ব, শত্রুতা, প্রচেষ্টা ও সংগ্রামের সকল ক্ষেত্রকে সে যে আকীদার উপর ঈমান এনেছে সে অনুযায়ী পুরোপুরি ঢেলে সাজানো। প্রথম অর্থের দিক দিয়ে যেসব মুসলিম স্বীকারকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয় এ আয়াতে তাদেরকেই সম্বোধন করা হয়েছে। দ্বিতীয় অর্থের প্রেক্ষিতে তাদের কাছে দাবী করা হয়েছে যে, তোমরা প্রকৃত মুমিনে পরিণত হও।
ঈমানের বিস্তারিত রূপরেখা :
لَيْسَ الْبِرَّ اَنْ تُوَلُّوْا وُجُوْهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلٰكِنَّ الْبِرَّ مَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَالْمَلَآئِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّيْنَۚ وَاٰتَى الْمَالَ عَلٰى حُبِّه ذَوِى الْقُرْبٰى وَالْيَتَامٰى وَالْمَسَاكِيْنَ وَابْنَ السَّبِيْلِ وَالسَّآئِلِيْنَ وَفِى الرِّقَابِۚ وَاَقَامَ الصَّلَاةَ وَاٰتَى الزَّكَاةَۚ وَالْمُوْفُوْنَ بِعَهْدِهِمْ اِذَا عَاهَدُوْاۚ وَالصَّابِرِيْنَ فِى الْبَاْسَآءِ وَالضَّرَّآءِ وَحِيْنَ الْبَاْسِؕ اُوْلٰٓئِكَ الَّذِيْنَ صَدَقُوْاؕ وَاُوْلٰٓئِكَ هُمُ الْمُتَّقُوْنَ
তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল পূর্ব অথবা পশ্চিম দিকে ঘুরাও তাতে কোন পুণ্য নেই; বরং পুণ্য তো সে ব্যক্তির জন্য, যে ব্যক্তি আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতাগণ, কিতাব ও নবীগণের প্রতি ঈমান আনয়ন করে এবং তাঁরই ভালোবাসা অর্জনের জন্য আত্মীয়স্বজন, ইয়াতীম, দরিদ্র, পথিক, ভিক্ষুক ও দাসত্ব মোচনের জন্য দান করে এবং যারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত প্রদান করে ও অঙ্গীকার করলে তা পূর্ণ করে। আর যারা অভাবে, কষ্টে এবং যুদ্ধকালে ধৈর্যশীল, তারাই সত্যপরায়ণ এবং তারাই মুত্তাক্বী। (সূরা বাক্বারা - ১৭৭)
যেসব বিষয়ের উপর ঈমান আনতে হবে :
اٰمَنَ الرَّسُوْلُ بِمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْهِ مِنْ رَّبِّه وَالْمُؤْمِنُوْنَؕ كُلٌّ اٰمَنَ بِاللهِ وَمَلَآئِكَتِه وَكُتُبِه وَرُسُلِه ؕ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ اَحَدٍ مِّنْ رُّسُلِه ؕ وَقَالُوْا سَمِعْنَا وَاَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَاِلَيْكَ الْمَصِيْرُ
রাসূল ঐ বিষয়ের প্রতি ঈমান এনেছেন, যা তার রবের পক্ষ থেকে নাযিল করা হয়েছে এবং ঈমানদাররাও (সেসব বিষয়ের উপর ঈমান আনয়ন করেছে)। তাঁরা প্রত্যেকেই আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা, তাঁর কিতাবসমূহ এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনয়ন করেছে। (তারা বলে) আমরা তাঁর রাসূলদের মধ্যে কোন পার্থক্য করি না এবং তারা আরো বলে যে, আমরা শুনলাম এবং মেনে নিলাম। হে আমাদের রব! আমরা আপনার নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করছি। আর আপনার দিকেই আমাদের প্রত্যাবর্তনস্থল। (সূরা বাক্বারা- ২৮৫)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতে ইসলামী আকীদা-বিশ্বাস ও কর্মপদ্ধতির সারসংক্ষেপ বর্ণনা করা হয়েছে। আর তা হচ্ছে- আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা ও তাঁর কিতাবসমূহকে মেনে নেয়া, তাঁর রাসূলদের মধ্যে কোন প্রকার পার্থক্য না করে তাঁদেরকে স্বীকার করে নেয়া এবং সবশেষে তাঁর সামনে আমাদেরকে উপস্থিত হতে হবে- এ বিষয়টি স্বীকার করে নেয়া। এ পাঁচটি বিষয় ইসলামের বুনিয়াদী আকীদার অন্তর্ভুক্ত। এ আকীদাগুলো মেনে নিলে একজন মুসলিমের উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে যে নির্দেশগুলো আসবে সেগুলোকে মাথা পেতে গ্রহণ করে নেবে, সেগুলোর আনুগত্য করবে এবং নিজের ভালো কাজের জন্য অহংকার করে বেড়াবে না বরং আল্লাহর কাছে অবনত হয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে থাকবে।
ঈমানের জন্য কতিপয় আহলে কিতাবের প্রেরণা :
وَاِذَا سَمِعُوْا مَاۤ اُنْزِلَ اِلَى الرَّسُوْلِ تَرٰۤى اَعْيُنَهُمْ تَفِيْضُ مِنَ الدَّمْعِ مِمَّا عَرَفُوْا مِنَ الْحَقِّۚ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَاۤ اٰمَنَّا فَاكْتُبْنَا مَعَ الشَّاهِدِيْنَ ‐ وَمَا لَنَا لَا نُؤْمِنُ بِاللهِ وَمَا جَآءَنَا مِنَ الْحَقِّ وَنَطْمَعُ اَنْ يُّدْخِلَنَا رَبُّنَا مَعَ الْقَوْمِ الصَّالِحِيْنَ
রাসূলের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে যখন তারা তা শ্রবণ করে, তখন তারা যে সত্য উপলব্ধি করে তার জন্য তুমি তাদের চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে দেখবে। তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ঈমান এনেছি, সুতরাং তুমি আমাদেরকে সাক্ষ্যদানকারীদের তালিকাভুক্ত করো। আর আমাদের জন্য এমন কী কারণ থাকতে পারে যে, আমরা আল্লাহর প্রতি এবং আমাদের নিকট যে সত্য এসেছে তার প্রতি ঈমান আনয়ন করব না? হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা প্রত্যাশা করি যে, আপনি আমাদেরকে সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত করবেন। (সূরা মায়েদা- ৮৩, ৮৪)
اٰمِنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِه وَاَنْفِقُوْا مِمَّا جَعَلَكُمْ مُّسْتَخْلَفِيْنَ فِيْهِؕ فَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مِنْكُمْ وَاَنْفَقُوْا لَهُمْ اَجْرٌ كَبِيْرٌ ‐ وَمَا لَكُمْ لَا تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِۚ وَالرَّسُوْلُ يَدْعُوْكُمْ لِتُؤْمِنُوْا بِرَبِّكُمْ وَقَدْ اَخَذَ مِيْثَاقَكُمْ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন করো এবং তিনি তোমাদেরকে যা কিছুর উত্তরাধিকারী করেছেন, তা হতে ব্যয় করো। অতএব তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও ব্যয় করে, তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার। তোমাদের কী হলো যে, তোমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনছ না? অথচ রাসূল তোমাদেরকে তোমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনতে আহবান করছেন এবং তিনি তোমাদের নিকট হতে অঙ্গীকারও গ্রহণ করেছেন। (আফসোস!) যদি তোমরা ঈমান আনয়ন করতে, (তবে কতই না ভালো হতো)। (সূরা হাদীদ- ৭, ৮)
فَاٰمِنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِه وَالنُّوْرِ الَّذِيْۤ اَنْزَلْنَاؕ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِيْرٌ
অতএব তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এবং যে নূর আমি অবতীর্ণ করেছি, তাতে বিশ্বাস স্থাপন করো। (জেনে রেখো) আল্লাহ তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত। (সূরা তাগাবুন- ৮)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اٰمِنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِهٖ وَالْكِتَابِ الَّذِيْ نَزَّلَ عَلٰى رَسُوْلِهٖ وَالْكِتَابِ الَّذِيْۤ اَنْزَلَ مِنْ قَبْلُؕ وَمَنْ يَّكْفُرْ بِاللهِ وَمَلَآئِكَتِهٖ وَكُتُبِهٖ وَرُسُلِهٖ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا ۢبَعِيْدًا
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর উপর, তাঁর রাসূলের উপর, তিনি তাঁর রাসূলের প্রতি যে কিতাব নাযিল করেছেন তার উপর এবং যে কিতাব তিনি পূর্বে নাযিল করেছেন তার উপর ঈমান আনয়ন করো। (জেনে রেখো) যে ব্যক্তি আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ এবং আখিরাতকে অস্বীকার করবে, সে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। (সূরা নিসা- ১৩৬)
ব্যাখ্যা : যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে আবার ঈমান আনতে বলা হয়েছে। কারণ এখানে ‘ঈমান’ শব্দটি দু’টি আলাদা আলাদা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। ঈমান আনার একটি অর্থ হচ্ছে- অস্বীকৃতির পরিবর্তে স্বীকৃতির পথ অবলম্বন করা। অস্বীকারকারীদের থেকে আলাদা হয়ে স্বীকৃতিদানকারীদের দলে শামিল হয়ে যাওয়া। এর দ্বিতীয় অর্থ হলো, সচেতনতার সাথে স্বীকৃতি দান করা। নিজের চিন্তা, রুচি, পছন্দ, দৃষ্টিভঙ্গী, মনোভাব, চালচলন এবং নিজের বন্ধুত্ব, শত্রুতা, প্রচেষ্টা ও সংগ্রামের সকল ক্ষেত্রকে সে যে আকীদার উপর ঈমান এনেছে সে অনুযায়ী পুরোপুরি ঢেলে সাজানো। প্রথম অর্থের দিক দিয়ে যেসব মুসলিম স্বীকারকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয় এ আয়াতে তাদেরকেই সম্বোধন করা হয়েছে। দ্বিতীয় অর্থের প্রেক্ষিতে তাদের কাছে দাবী করা হয়েছে যে, তোমরা প্রকৃত মুমিনে পরিণত হও।
ঈমানের বিস্তারিত রূপরেখা :
لَيْسَ الْبِرَّ اَنْ تُوَلُّوْا وُجُوْهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلٰكِنَّ الْبِرَّ مَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَالْمَلَآئِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّيْنَۚ وَاٰتَى الْمَالَ عَلٰى حُبِّه ذَوِى الْقُرْبٰى وَالْيَتَامٰى وَالْمَسَاكِيْنَ وَابْنَ السَّبِيْلِ وَالسَّآئِلِيْنَ وَفِى الرِّقَابِۚ وَاَقَامَ الصَّلَاةَ وَاٰتَى الزَّكَاةَۚ وَالْمُوْفُوْنَ بِعَهْدِهِمْ اِذَا عَاهَدُوْاۚ وَالصَّابِرِيْنَ فِى الْبَاْسَآءِ وَالضَّرَّآءِ وَحِيْنَ الْبَاْسِؕ اُوْلٰٓئِكَ الَّذِيْنَ صَدَقُوْاؕ وَاُوْلٰٓئِكَ هُمُ الْمُتَّقُوْنَ
তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল পূর্ব অথবা পশ্চিম দিকে ঘুরাও তাতে কোন পুণ্য নেই; বরং পুণ্য তো সে ব্যক্তির জন্য, যে ব্যক্তি আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতাগণ, কিতাব ও নবীগণের প্রতি ঈমান আনয়ন করে এবং তাঁরই ভালোবাসা অর্জনের জন্য আত্মীয়স্বজন, ইয়াতীম, দরিদ্র, পথিক, ভিক্ষুক ও দাসত্ব মোচনের জন্য দান করে এবং যারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত প্রদান করে ও অঙ্গীকার করলে তা পূর্ণ করে। আর যারা অভাবে, কষ্টে এবং যুদ্ধকালে ধৈর্যশীল, তারাই সত্যপরায়ণ এবং তারাই মুত্তাক্বী। (সূরা বাক্বারা - ১৭৭)
যেসব বিষয়ের উপর ঈমান আনতে হবে :
اٰمَنَ الرَّسُوْلُ بِمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْهِ مِنْ رَّبِّه وَالْمُؤْمِنُوْنَؕ كُلٌّ اٰمَنَ بِاللهِ وَمَلَآئِكَتِه وَكُتُبِه وَرُسُلِه ؕ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ اَحَدٍ مِّنْ رُّسُلِه ؕ وَقَالُوْا سَمِعْنَا وَاَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَاِلَيْكَ الْمَصِيْرُ
রাসূল ঐ বিষয়ের প্রতি ঈমান এনেছেন, যা তার রবের পক্ষ থেকে নাযিল করা হয়েছে এবং ঈমানদাররাও (সেসব বিষয়ের উপর ঈমান আনয়ন করেছে)। তাঁরা প্রত্যেকেই আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা, তাঁর কিতাবসমূহ এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনয়ন করেছে। (তারা বলে) আমরা তাঁর রাসূলদের মধ্যে কোন পার্থক্য করি না এবং তারা আরো বলে যে, আমরা শুনলাম এবং মেনে নিলাম। হে আমাদের রব! আমরা আপনার নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করছি। আর আপনার দিকেই আমাদের প্রত্যাবর্তনস্থল। (সূরা বাক্বারা- ২৮৫)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতে ইসলামী আকীদা-বিশ্বাস ও কর্মপদ্ধতির সারসংক্ষেপ বর্ণনা করা হয়েছে। আর তা হচ্ছে- আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা ও তাঁর কিতাবসমূহকে মেনে নেয়া, তাঁর রাসূলদের মধ্যে কোন প্রকার পার্থক্য না করে তাঁদেরকে স্বীকার করে নেয়া এবং সবশেষে তাঁর সামনে আমাদেরকে উপস্থিত হতে হবে- এ বিষয়টি স্বীকার করে নেয়া। এ পাঁচটি বিষয় ইসলামের বুনিয়াদী আকীদার অন্তর্ভুক্ত। এ আকীদাগুলো মেনে নিলে একজন মুসলিমের উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে যে নির্দেশগুলো আসবে সেগুলোকে মাথা পেতে গ্রহণ করে নেবে, সেগুলোর আনুগত্য করবে এবং নিজের ভালো কাজের জন্য অহংকার করে বেড়াবে না বরং আল্লাহর কাছে অবনত হয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে থাকবে।
ঈমানের জন্য কতিপয় আহলে কিতাবের প্রেরণা :
وَاِذَا سَمِعُوْا مَاۤ اُنْزِلَ اِلَى الرَّسُوْلِ تَرٰۤى اَعْيُنَهُمْ تَفِيْضُ مِنَ الدَّمْعِ مِمَّا عَرَفُوْا مِنَ الْحَقِّۚ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَاۤ اٰمَنَّا فَاكْتُبْنَا مَعَ الشَّاهِدِيْنَ ‐ وَمَا لَنَا لَا نُؤْمِنُ بِاللهِ وَمَا جَآءَنَا مِنَ الْحَقِّ وَنَطْمَعُ اَنْ يُّدْخِلَنَا رَبُّنَا مَعَ الْقَوْمِ الصَّالِحِيْنَ
রাসূলের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে যখন তারা তা শ্রবণ করে, তখন তারা যে সত্য উপলব্ধি করে তার জন্য তুমি তাদের চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে দেখবে। তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ঈমান এনেছি, সুতরাং তুমি আমাদেরকে সাক্ষ্যদানকারীদের তালিকাভুক্ত করো। আর আমাদের জন্য এমন কী কারণ থাকতে পারে যে, আমরা আল্লাহর প্রতি এবং আমাদের নিকট যে সত্য এসেছে তার প্রতি ঈমান আনয়ন করব না? হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা প্রত্যাশা করি যে, আপনি আমাদেরকে সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত করবেন। (সূরা মায়েদা- ৮৩, ৮৪)
ঈমানের ঘোষণা দিতে হবে :
قُلْ اٰمَنَّا بِاللهِ وَمَاۤ اُنْزِلَ عَلَيْنَا وَمَاۤ اُنْزِلَ عَلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ وَاِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَ وَالْاَسْبَاطِ وَمَاۤ اُوْتِيَ مُوْسٰى وَعِيْسٰى وَالنَّبِيُّوْنَ مِنْ رَّبِّهِمْ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ اَحَدٍ مِّنْهُمْ وَنَحْنُ لَهٗ مُسْلِمُوْنَ
বলো, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং আমাদের উপর যা নাযিল হয়েছে তার প্রতি। (আমরা আরো ঈমান এনেছি) ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব এবং তাদের বংশধরদের উপর যা নাযিল হয়েছে তার প্রতি। (আমরা আরো ঈমান এনেছি) মূসা, ঈসা এবং অন্যান্য নবীদেরকে তাদের রবের পক্ষ থেকে যা কিছু দেয়া হয়েছিল তার প্রতি। আমরা তাদের কারো মধ্যে পার্থক্য করি না। আর আমরা তাঁর কাছেই আত্মসমর্পণকারী। (সূরা আলে ইমরান- ৮৪)
وَاِذْ اَوْحَيْتُ اِلَى الْحَوَارِيِّيْنَ اَنْ اٰمِنُوْا بِيْ وَبِرَسُوْلِيْۚ قَالُوْاۤ اٰمَنَّا وَاشْهَدْ بِاَنَّنَا مُسْلِمُوْنَ
স্মরণ করো, যখন আমি হাওয়ারীদেরকে এ আদেশ দিয়েছিলাম যে, তোমরা আমার প্রতি ও আমার রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন করো; তখন তারা বলেছিল, আমরা ঈমান আনয়ন করলাম এবং তুমি সাক্ষী থাকো যে, আমরা মুসলিম। (সূরা মায়েদা- ১১১)
ঈমান আনতে হবে নিজ উদ্যোগে :
هُوَ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ فَمِنْكُمْ كَافِرٌ وَّمِنْكُمْ مُّؤْمِنٌ
তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন; অতঃপর তোমাদের মধ্যে কেউ কাফির এবং কেউ মুমিনে রূপান্তরিত হয়। (সূরা তাগাবুন - ২)
وَقُلِ الْحَقُّ مِنْ رَّبِّكُمْؕ فَمَنْ شَآءَ فَلْيُؤْمِنْ وَّمَنْ شَآءَ فَلْيَكْفُرْ
বলো, সত্য তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে (আগমন করে), সুতরাং যার ইচ্ছা ঈমান আনয়ন করুক এবং যার ইচ্ছা তা প্রত্যাখ্যান করুক। (সূরা কাহফ- ২৯)
اِنَّا خَلَقْنَا الْاِنْسَانَ مِنْ نُّطْفَةٍ اَمْشَاجٍ نَّبْتَلِيْهِ فَجَعَلْنَاهُ سَمِيْعًا ۢبَصِيْرًا ‐ اِنَّا هَدَيْنَاهُ السَّبِيْلَ اِمَّا شَاكِرًا وَّاِمَّا كَفُوْرًا
আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি সংমিশ্রিত শুক্রবিন্দু হতে, যেন আমি তাকে পরীক্ষা করতে পারি। অতঃপর আমি তাকে শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি দান করেছি। আমি তাকে পথপ্রদর্শন করেছি; এরপর সে চাইলে আল্লাহর কৃতজ্ঞ হবে, নতুবা কুফরী করবে। (সূরা ইনসান- ২, ৩)
বল প্রয়োগ করে কাউকে মুমিন বানানো যায় না :
وَلَوْ شَآءَ رَبُّكَ لَاٰمَنَ مَنْ فِى الْاَرْضِ كُلُّهُمْ جَمِيْعًاؕ اَفَاَنْتَ تُكْرِهُ النَّاسَ حَتّٰى يَكُوْنُوْا مُؤْمِنِيْنَ
যদি তোমার প্রতিপালক চাইতেন, তবে পৃথিবীতে যারা আছে তারা সকলেই ঈমান আনয়ন করত। এরপরও কি তুমি মুমিন বানানোর জন্য মানুষদের উপর জবরদস্তি করবে? (সূরা ইউনুস - ৯৯)
আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউ ঈমান আনতে পারে না :
وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ اَنْ تُؤْمِنَ اِلَّا بِاِذْنِ اللهِؕ وَيَجْعَلُ الرِّجْسَ عَلَى الَّذِيْنَ لَا يَعْقِلُوْنَ
আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত ঈমান আনার সাধ্য কারো নেই, কিন্তু যারা অনুধাবন করে না আল্লাহ তাদের উপর অপবিত্রতা চাপিয়ে দেন। (সূরা ইউনুস- ১০০)
ঈমানদার হওয়া আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ :
يَمُنُّوْنَ عَلَيْكَ اَنْ اَسْلَمُوْاؕ قُلْ لَّا تَمُنُّوْا عَلَيَّ اِسْلَامَكُمْۚ بَلِ اللهُ يَمُنُّ عَلَيْكُمْ اَنْ هَدَاكُمْ لِلْاِيْمَانِ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ
(হে রাসূল!) এরা (কি মনে করে যে) ইসলাম কবুল করে তারা আপনার উপর দয়া করেছে। তাদেরকে বলে দিন, তোমরা তোমাদের ইসলাম (গ্রহণ করার) দ্বারা আমাকে অনুগ্রহ করনি। বরং তোমরা যদি ঈমানের দাবিতে সত্যবাদী হয়ে থাক, তাহলে (তোমাদের বুঝা উচিত যে) আল্লাহই তোমাদেরকে ঈমানের দিকে হেদায়াত করে অনুগ্রহ করেছেন। (সূরা হুজুরাত - ১৭)
قُلْ اٰمَنَّا بِاللهِ وَمَاۤ اُنْزِلَ عَلَيْنَا وَمَاۤ اُنْزِلَ عَلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ وَاِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَ وَالْاَسْبَاطِ وَمَاۤ اُوْتِيَ مُوْسٰى وَعِيْسٰى وَالنَّبِيُّوْنَ مِنْ رَّبِّهِمْ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ اَحَدٍ مِّنْهُمْ وَنَحْنُ لَهٗ مُسْلِمُوْنَ
বলো, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং আমাদের উপর যা নাযিল হয়েছে তার প্রতি। (আমরা আরো ঈমান এনেছি) ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব এবং তাদের বংশধরদের উপর যা নাযিল হয়েছে তার প্রতি। (আমরা আরো ঈমান এনেছি) মূসা, ঈসা এবং অন্যান্য নবীদেরকে তাদের রবের পক্ষ থেকে যা কিছু দেয়া হয়েছিল তার প্রতি। আমরা তাদের কারো মধ্যে পার্থক্য করি না। আর আমরা তাঁর কাছেই আত্মসমর্পণকারী। (সূরা আলে ইমরান- ৮৪)
وَاِذْ اَوْحَيْتُ اِلَى الْحَوَارِيِّيْنَ اَنْ اٰمِنُوْا بِيْ وَبِرَسُوْلِيْۚ قَالُوْاۤ اٰمَنَّا وَاشْهَدْ بِاَنَّنَا مُسْلِمُوْنَ
স্মরণ করো, যখন আমি হাওয়ারীদেরকে এ আদেশ দিয়েছিলাম যে, তোমরা আমার প্রতি ও আমার রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন করো; তখন তারা বলেছিল, আমরা ঈমান আনয়ন করলাম এবং তুমি সাক্ষী থাকো যে, আমরা মুসলিম। (সূরা মায়েদা- ১১১)
ঈমান আনতে হবে নিজ উদ্যোগে :
هُوَ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ فَمِنْكُمْ كَافِرٌ وَّمِنْكُمْ مُّؤْمِنٌ
তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন; অতঃপর তোমাদের মধ্যে কেউ কাফির এবং কেউ মুমিনে রূপান্তরিত হয়। (সূরা তাগাবুন - ২)
وَقُلِ الْحَقُّ مِنْ رَّبِّكُمْؕ فَمَنْ شَآءَ فَلْيُؤْمِنْ وَّمَنْ شَآءَ فَلْيَكْفُرْ
বলো, সত্য তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে (আগমন করে), সুতরাং যার ইচ্ছা ঈমান আনয়ন করুক এবং যার ইচ্ছা তা প্রত্যাখ্যান করুক। (সূরা কাহফ- ২৯)
اِنَّا خَلَقْنَا الْاِنْسَانَ مِنْ نُّطْفَةٍ اَمْشَاجٍ نَّبْتَلِيْهِ فَجَعَلْنَاهُ سَمِيْعًا ۢبَصِيْرًا ‐ اِنَّا هَدَيْنَاهُ السَّبِيْلَ اِمَّا شَاكِرًا وَّاِمَّا كَفُوْرًا
আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি সংমিশ্রিত শুক্রবিন্দু হতে, যেন আমি তাকে পরীক্ষা করতে পারি। অতঃপর আমি তাকে শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি দান করেছি। আমি তাকে পথপ্রদর্শন করেছি; এরপর সে চাইলে আল্লাহর কৃতজ্ঞ হবে, নতুবা কুফরী করবে। (সূরা ইনসান- ২, ৩)
বল প্রয়োগ করে কাউকে মুমিন বানানো যায় না :
وَلَوْ شَآءَ رَبُّكَ لَاٰمَنَ مَنْ فِى الْاَرْضِ كُلُّهُمْ جَمِيْعًاؕ اَفَاَنْتَ تُكْرِهُ النَّاسَ حَتّٰى يَكُوْنُوْا مُؤْمِنِيْنَ
যদি তোমার প্রতিপালক চাইতেন, তবে পৃথিবীতে যারা আছে তারা সকলেই ঈমান আনয়ন করত। এরপরও কি তুমি মুমিন বানানোর জন্য মানুষদের উপর জবরদস্তি করবে? (সূরা ইউনুস - ৯৯)
আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউ ঈমান আনতে পারে না :
وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ اَنْ تُؤْمِنَ اِلَّا بِاِذْنِ اللهِؕ وَيَجْعَلُ الرِّجْسَ عَلَى الَّذِيْنَ لَا يَعْقِلُوْنَ
আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত ঈমান আনার সাধ্য কারো নেই, কিন্তু যারা অনুধাবন করে না আল্লাহ তাদের উপর অপবিত্রতা চাপিয়ে দেন। (সূরা ইউনুস- ১০০)
ঈমানদার হওয়া আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ :
يَمُنُّوْنَ عَلَيْكَ اَنْ اَسْلَمُوْاؕ قُلْ لَّا تَمُنُّوْا عَلَيَّ اِسْلَامَكُمْۚ بَلِ اللهُ يَمُنُّ عَلَيْكُمْ اَنْ هَدَاكُمْ لِلْاِيْمَانِ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ
(হে রাসূল!) এরা (কি মনে করে যে) ইসলাম কবুল করে তারা আপনার উপর দয়া করেছে। তাদেরকে বলে দিন, তোমরা তোমাদের ইসলাম (গ্রহণ করার) দ্বারা আমাকে অনুগ্রহ করনি। বরং তোমরা যদি ঈমানের দাবিতে সত্যবাদী হয়ে থাক, তাহলে (তোমাদের বুঝা উচিত যে) আল্লাহই তোমাদেরকে ঈমানের দিকে হেদায়াত করে অনুগ্রহ করেছেন। (সূরা হুজুরাত - ১৭)
আল্লাহর আযাব দেখে ঈমান আনলে কাজ হবে না :
هَلْ يَنْظُرُوْنَ اِلَّاۤ اَنْ تَاْتِيَهُمُ الْمَلَآئِكَةُ اَوْ يَاْتِيَ رَبُّكَ اَوْ يَاْتِيَ بَعْضُ اٰيَاتِ رَبِّكَؕ يَوْمَ يَاْتِيْ بَعْضُ اٰيَاتِ رَبِّكَ لَا يَنْفَعُ نَفْسًا اِيْمَانُهَا لَمْ تَكُنْ اٰمَنَتْ مِنْ قَبْلُ اَوْ كَسَبَتْ فِۤيْ اِيْمَانِهَا خَيْرًاؕ قُلِ انْتَظِرُوْاۤ اِنَّا مُنْتَظِرُوْنَ
তারা কি শুধু এটাই প্রতীক্ষা করে যে, তাদের নিকট কোন ফেরেশতা আগমন করবে অথবা স্বয়ং তোমার প্রতিপালকই আগমন করবেন, কিংবা তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে কোন নিদর্শন আসবে। (জেনে রেখো) যেদিন তোমার প্রতিপালকের কোন নিদর্শন আসবে সেদিন তাদের ঈমান কোন কাজে আসবে না, যারা ইতোপূর্বে ঈমান আনেনি অথবা যারা তাদের ঈমান দ্বারা কোন কল্যাণ অর্জন করতে পারেনি। সুতরাং তুমি তাদেরকে বলে দাও যে, তোমরা প্রতীক্ষা করো এবং আমরাও প্রতীক্ষায় রইলাম। (সূরা আন‘আম- ১৫৮)
فَلَمَّا رَاَوْا بَاْسَنَا قَالُوْاۤ اٰمَنَّا بِاللهِ وَحْدَهٗ وَكَفَرْنَا بِمَا كُنَّا بِه مُشْرِكِيْنَ ‐ فَلَمْ يَكُ يَنْفَعُهُمْ اِيْمَانُهُمْ لَمَّا رَاَوْا بَاْسَنَا
অতঃপর যখন তারা আমার শাস্তি প্রত্যক্ষ করল তখন বলল, আমরা এক আল্লাহর প্রতিই ঈমান আনলাম এবং আমরা তাঁর সাথে যাদেরকে শরীক করতাম তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করলাম। কিন্তু যখন তারা আমার শাস্তি প্রত্যক্ষ করল, তখন তাদের ঈমান তাদের কোন উপকারে আসল না। (সূরা মু’মিন- ৮৪, ৮৫)
মৃত্যুর সময় ঈমান কবুল হয় না :
وَجَاوَزْنَا بِبَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ الْبَحْرَ فَاَتْبَعَهُمْ فِرْعَوْنُ وَجُنُوْدُهٗ بَغْيًا وَّعَدْوًاؕ حَتّٰۤى اِذَاۤ اَدْرَكَهُ الْغَرَقُ قَالَ اٰمَنْتُ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا الَّذِيۤ اٰمَنَتْ بِه بَنُوْاۤ اِسْرَآئِيْلَ وَاَنَا مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ ₋ آٰلْاٰنَ وَقَدْ عَصَيْتَ قَبْلُ وَكُنْتَ مِنَ الْمُفْسِدِيْنَ
আমি বনী ইসরাঈলকে সমুদ্র পার করালাম, অতঃপর ফিরাউন ও তার সৈন্যবাহিনী বিদ্বেষপরায়ণতা ও সীমালঙ্ঘন করে তাদের পিছু নিল। পরিশেষে যখন সে নিমজ্জিত হলো তখন বলল, বনী ইসরাঈলরা যার প্রতি ঈমান আনয়ন করেছে, আমিও তাঁর প্রতিই ঈমান আনয়ন করলাম। নিশ্চয় তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই এবং আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত। তখন আমি বললাম, এখন! অথচ ইতোপূর্বে তো তুমি অমান্য করেছ এবং অশান্তি সৃষ্টিকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে। (সূরা ইউনুস - ৯০, ৯১)
দুনিয়াতে ঈমান না আনলে পরকালে পরিতাপ করতে হবে :
وَلَوْ تَرٰۤى اِذْ وُقِفُوْا عَلَى النَّارِ فَقَالُوْا يَا لَيْتَنَا نُرَدُّ وَلَا نُكَذِّبَ بِاٰيَاتِ رَبِّنَا وَنَكُوْنَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ
তুমি যদি দেখতে পেতে যখন তাদেরকে অগ্নির পার্শ্বে দাঁড় করানো হবে এবং তারা বলবে, হায়! যদি আমাদের প্রত্যাবর্তন ঘটত, তবে আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিদর্শনকে অস্বীকার করতাম না এবং আমরা মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। (সূরা আন‘আম- ২৭)
هَلْ يَنْظُرُوْنَ اِلَّاۤ اَنْ تَاْتِيَهُمُ الْمَلَآئِكَةُ اَوْ يَاْتِيَ رَبُّكَ اَوْ يَاْتِيَ بَعْضُ اٰيَاتِ رَبِّكَؕ يَوْمَ يَاْتِيْ بَعْضُ اٰيَاتِ رَبِّكَ لَا يَنْفَعُ نَفْسًا اِيْمَانُهَا لَمْ تَكُنْ اٰمَنَتْ مِنْ قَبْلُ اَوْ كَسَبَتْ فِۤيْ اِيْمَانِهَا خَيْرًاؕ قُلِ انْتَظِرُوْاۤ اِنَّا مُنْتَظِرُوْنَ
তারা কি শুধু এটাই প্রতীক্ষা করে যে, তাদের নিকট কোন ফেরেশতা আগমন করবে অথবা স্বয়ং তোমার প্রতিপালকই আগমন করবেন, কিংবা তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে কোন নিদর্শন আসবে। (জেনে রেখো) যেদিন তোমার প্রতিপালকের কোন নিদর্শন আসবে সেদিন তাদের ঈমান কোন কাজে আসবে না, যারা ইতোপূর্বে ঈমান আনেনি অথবা যারা তাদের ঈমান দ্বারা কোন কল্যাণ অর্জন করতে পারেনি। সুতরাং তুমি তাদেরকে বলে দাও যে, তোমরা প্রতীক্ষা করো এবং আমরাও প্রতীক্ষায় রইলাম। (সূরা আন‘আম- ১৫৮)
فَلَمَّا رَاَوْا بَاْسَنَا قَالُوْاۤ اٰمَنَّا بِاللهِ وَحْدَهٗ وَكَفَرْنَا بِمَا كُنَّا بِه مُشْرِكِيْنَ ‐ فَلَمْ يَكُ يَنْفَعُهُمْ اِيْمَانُهُمْ لَمَّا رَاَوْا بَاْسَنَا
অতঃপর যখন তারা আমার শাস্তি প্রত্যক্ষ করল তখন বলল, আমরা এক আল্লাহর প্রতিই ঈমান আনলাম এবং আমরা তাঁর সাথে যাদেরকে শরীক করতাম তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করলাম। কিন্তু যখন তারা আমার শাস্তি প্রত্যক্ষ করল, তখন তাদের ঈমান তাদের কোন উপকারে আসল না। (সূরা মু’মিন- ৮৪, ৮৫)
মৃত্যুর সময় ঈমান কবুল হয় না :
وَجَاوَزْنَا بِبَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ الْبَحْرَ فَاَتْبَعَهُمْ فِرْعَوْنُ وَجُنُوْدُهٗ بَغْيًا وَّعَدْوًاؕ حَتّٰۤى اِذَاۤ اَدْرَكَهُ الْغَرَقُ قَالَ اٰمَنْتُ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا الَّذِيۤ اٰمَنَتْ بِه بَنُوْاۤ اِسْرَآئِيْلَ وَاَنَا مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ ₋ آٰلْاٰنَ وَقَدْ عَصَيْتَ قَبْلُ وَكُنْتَ مِنَ الْمُفْسِدِيْنَ
আমি বনী ইসরাঈলকে সমুদ্র পার করালাম, অতঃপর ফিরাউন ও তার সৈন্যবাহিনী বিদ্বেষপরায়ণতা ও সীমালঙ্ঘন করে তাদের পিছু নিল। পরিশেষে যখন সে নিমজ্জিত হলো তখন বলল, বনী ইসরাঈলরা যার প্রতি ঈমান আনয়ন করেছে, আমিও তাঁর প্রতিই ঈমান আনয়ন করলাম। নিশ্চয় তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই এবং আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত। তখন আমি বললাম, এখন! অথচ ইতোপূর্বে তো তুমি অমান্য করেছ এবং অশান্তি সৃষ্টিকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে। (সূরা ইউনুস - ৯০, ৯১)
দুনিয়াতে ঈমান না আনলে পরকালে পরিতাপ করতে হবে :
وَلَوْ تَرٰۤى اِذْ وُقِفُوْا عَلَى النَّارِ فَقَالُوْا يَا لَيْتَنَا نُرَدُّ وَلَا نُكَذِّبَ بِاٰيَاتِ رَبِّنَا وَنَكُوْنَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ
তুমি যদি দেখতে পেতে যখন তাদেরকে অগ্নির পার্শ্বে দাঁড় করানো হবে এবং তারা বলবে, হায়! যদি আমাদের প্রত্যাবর্তন ঘটত, তবে আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিদর্শনকে অস্বীকার করতাম না এবং আমরা মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। (সূরা আন‘আম- ২৭)
যারা ঈমান আনে না তারা পথহারা হয়ে যায় :
وَمَنْ يَّكْفُرْ بِاللهِ وَمَلَآئِكَتِه وَكُتُبِه وَرُسُلِه وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا ۢبَعِيْدًا
যে ব্যক্তি আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ এবং আখিরাতকে প্রত্যাখ্যান করল, সে তো ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট হয়ে গেল। (সূরা নিসা- ১৩৬)
শয়তান তাদের বন্ধু হয়ে যায় :
اِنَّا جَعَلْنَا الشَّيَاطِيْنَ اَوْلِيَآءَ لِلَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ
যারা ঈমান আনয়ন করে না, শয়তানদেরকে আমি তাদের অভিভাবক বানিয়ে দিয়েছি। (সূরা আ‘রাফ- ২৭)
তারা হেদায়াত পায় না :
اِنَّ الَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِ لَا يَهْدِيْهِمُ اللهُ وَلَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
যারা আল্লাহর নিদর্শনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না, আল্লাহ তাদেরকে হেদায়াত দান করেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে মর্মান্তিক শাস্তি। (সূরা নাহল - ১০৪)
কোন উপদেশ তাদের কাজে আসে না :
قُلِ انْظُرُوْا مَاذَا فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِؕ وَمَا تُغْنِى الْاٰيَاتُ وَالنُّذُرُ عَنْ قَوْمٍ لَّا يُؤْمِنُوْنَ
তাদেরকে বলে দাও, তোমরা লক্ষ্য করো যে, আসমানসমূহ ও জমিনে কী কী জিনিস রয়েছে? কিন্তু যারা ঈমানই আনবে না, তাদের জন্য আল্লাহর এসব নিদর্শন ও পরকালের সতর্কবাণী কোনই উপকারে আসে না। (সূরা ইউনুস- ১০১)
তারা পৃথিবীর নিকৃষ্ট প্রাণী :
اِنَّ شَرَّ الدَّوَآبِّ عِنْدَ اللهِ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا فَهُمْ لَا يُؤْمِنُوْنَ
আল্লাহর নিকট নিকৃষ্ট জীব তারাই, যারা কুফরী করে এবং ঈমান আনে না। (সূরা আনফাল - ৫৫)
তাদের আমল নষ্ট হয়ে যায় :
وَمَنْ يَّكْفُرْ بِالْاِيْمَانِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهٗ وَهُوَ فِى الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
যে ব্যক্তি ঈমান প্রত্যাখ্যান করবে তার আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা মায়েদা - ৫)
ঈমান ছাড়া কোন আমলই কাজে আসে না :
اَجَعَلْتُمْ سِقَايَةَ الْحَآجِّ وَعِمَارَةَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ كَمَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَجَاهَدَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِؕ لَا يَسْتَوُوْنَ عِنْدَ اللهِ ؕ وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
হাজীদের জন্য পানি সরবরাহ এবং মাসজিদুল হারামের রক্ষণাবেক্ষণ করাকে তোমরা কি সেসব ব্যক্তির কাজের সমপরিমাণ মনে কর, যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান আনয়ন করে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করে? (মূলত) তারা আল্লাহর নিকট সমান নয়। আর আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথ প্রদর্শন করেন না। (সূরা তাওবা- ১৯)
قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُمْ بِالْاَخْسَرِيْنَ اَعْمَالًا ‐ اَلَّذِيْنَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُوْنَ اَنَّهُمْ يُحْسِنُوْنَ صُنْعًا ‐ - اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِاٰيَاتِ رَبِّهِمْ وَلِقَآئِه فَحَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْ فَلَا نُقِيْمُ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَزْنًا
(হে নবী!) তুমি তাদেরকে বলে দাও, আমি কি তোমাদেরকে এমন লোকদের ব্যাপারে সংবাদ দেব, যারা আমলের দিক থেকে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে? এরা হচ্ছে সেসব লোক, পার্থিব জীবনে যাদের সকল প্রচেষ্টা বিনষ্ট হয়ে গেছে; অথচ তারা ভাবছে যে, তারা সৎকর্মই করে যাচ্ছে। এরাই হচ্ছে সেসব লোক, যারা তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করে ও তাঁর সাথে তাদের সাক্ষাতের বিষয়টিকেও অস্বীকার করে। ফলে তাদের কর্ম নিষ্ফল হয়ে যায়; সুতরাং কিয়ামতের দিন তাদের জন্য ওজনের কোন ব্যবস্থাই রাখব না। (সূরা কাহফ, ১০৩-১০৫)
তারা জাহান্নামে যাবে :
وَمَنْ لَّمْ يُؤْمِنْ ۢبِاللهِ وَرَسُوْلِه فَاِنَّاۤ اَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِيْنَ سَعِيْرًا
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনয়ন করে না, এমন কাফিরদের জন্য আমি জ্বলন্ত আগুন প্রস্তুত করে রেখেছি। (সূরা ফাতহ - ১৩)
وَمَنْ يَّكْفُرْ بِاللهِ وَمَلَآئِكَتِه وَكُتُبِه وَرُسُلِه وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا ۢبَعِيْدًا
যে ব্যক্তি আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ এবং আখিরাতকে প্রত্যাখ্যান করল, সে তো ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট হয়ে গেল। (সূরা নিসা- ১৩৬)
শয়তান তাদের বন্ধু হয়ে যায় :
اِنَّا جَعَلْنَا الشَّيَاطِيْنَ اَوْلِيَآءَ لِلَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ
যারা ঈমান আনয়ন করে না, শয়তানদেরকে আমি তাদের অভিভাবক বানিয়ে দিয়েছি। (সূরা আ‘রাফ- ২৭)
তারা হেদায়াত পায় না :
اِنَّ الَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِ لَا يَهْدِيْهِمُ اللهُ وَلَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
যারা আল্লাহর নিদর্শনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না, আল্লাহ তাদেরকে হেদায়াত দান করেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে মর্মান্তিক শাস্তি। (সূরা নাহল - ১০৪)
কোন উপদেশ তাদের কাজে আসে না :
قُلِ انْظُرُوْا مَاذَا فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِؕ وَمَا تُغْنِى الْاٰيَاتُ وَالنُّذُرُ عَنْ قَوْمٍ لَّا يُؤْمِنُوْنَ
তাদেরকে বলে দাও, তোমরা লক্ষ্য করো যে, আসমানসমূহ ও জমিনে কী কী জিনিস রয়েছে? কিন্তু যারা ঈমানই আনবে না, তাদের জন্য আল্লাহর এসব নিদর্শন ও পরকালের সতর্কবাণী কোনই উপকারে আসে না। (সূরা ইউনুস- ১০১)
তারা পৃথিবীর নিকৃষ্ট প্রাণী :
اِنَّ شَرَّ الدَّوَآبِّ عِنْدَ اللهِ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا فَهُمْ لَا يُؤْمِنُوْنَ
আল্লাহর নিকট নিকৃষ্ট জীব তারাই, যারা কুফরী করে এবং ঈমান আনে না। (সূরা আনফাল - ৫৫)
তাদের আমল নষ্ট হয়ে যায় :
وَمَنْ يَّكْفُرْ بِالْاِيْمَانِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهٗ وَهُوَ فِى الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
যে ব্যক্তি ঈমান প্রত্যাখ্যান করবে তার আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা মায়েদা - ৫)
ঈমান ছাড়া কোন আমলই কাজে আসে না :
اَجَعَلْتُمْ سِقَايَةَ الْحَآجِّ وَعِمَارَةَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ كَمَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَجَاهَدَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِؕ لَا يَسْتَوُوْنَ عِنْدَ اللهِ ؕ وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
হাজীদের জন্য পানি সরবরাহ এবং মাসজিদুল হারামের রক্ষণাবেক্ষণ করাকে তোমরা কি সেসব ব্যক্তির কাজের সমপরিমাণ মনে কর, যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান আনয়ন করে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করে? (মূলত) তারা আল্লাহর নিকট সমান নয়। আর আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথ প্রদর্শন করেন না। (সূরা তাওবা- ১৯)
قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُمْ بِالْاَخْسَرِيْنَ اَعْمَالًا ‐ اَلَّذِيْنَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُوْنَ اَنَّهُمْ يُحْسِنُوْنَ صُنْعًا ‐ - اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِاٰيَاتِ رَبِّهِمْ وَلِقَآئِه فَحَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْ فَلَا نُقِيْمُ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَزْنًا
(হে নবী!) তুমি তাদেরকে বলে দাও, আমি কি তোমাদেরকে এমন লোকদের ব্যাপারে সংবাদ দেব, যারা আমলের দিক থেকে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে? এরা হচ্ছে সেসব লোক, পার্থিব জীবনে যাদের সকল প্রচেষ্টা বিনষ্ট হয়ে গেছে; অথচ তারা ভাবছে যে, তারা সৎকর্মই করে যাচ্ছে। এরাই হচ্ছে সেসব লোক, যারা তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করে ও তাঁর সাথে তাদের সাক্ষাতের বিষয়টিকেও অস্বীকার করে। ফলে তাদের কর্ম নিষ্ফল হয়ে যায়; সুতরাং কিয়ামতের দিন তাদের জন্য ওজনের কোন ব্যবস্থাই রাখব না। (সূরা কাহফ, ১০৩-১০৫)
তারা জাহান্নামে যাবে :
وَمَنْ لَّمْ يُؤْمِنْ ۢبِاللهِ وَرَسُوْلِه فَاِنَّاۤ اَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِيْنَ سَعِيْرًا
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনয়ন করে না, এমন কাফিরদের জন্য আমি জ্বলন্ত আগুন প্রস্তুত করে রেখেছি। (সূরা ফাতহ - ১৩)
ঈমানদাররা সর্বোত্তম সৃষ্টি :
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ اُولٰٓئِكَ هُمْ خَيْرُ الْبَرِيَّةِ
যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তারাই হচ্ছে সৃষ্টিকুলের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট। (সূরা বায়্যিনাহ- ৭)
তাদের জন্য রয়েছে সুমহান মর্যাদা :
وَمَنْ يَّاْتِه مُؤْمِنًا قَدْ عَمِلَ الصَّالِحَاتِ فَاُولٰٓئِكَ لَهُمُ الدَّرَجَاتُ الْعُلَا
যে ব্যক্তি মুমিন অবস্থায় সৎকর্ম নিয়ে উপস্থিত হবে, তাদের জন্য রয়েছে সুউচ্চমর্যাদা। (ত্বা-হা- ৭৫)
তাদের পুরস্কার হবে জান্নাত :
يَا عِبَادِ لَا خَوْفٌ عَلَيْكُمُ الْيَوْمَ وَلَاۤ اَنْتُمْ تَحْزَنُوْنَ ‐ اَلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا بِاٰيَاتِنَا وَكَانُوْا مُسْلِمِيْنَ ‐ اُدْخُلُوا الْجَنَّةَ اَنْتُمْ وَاَزْوَاجُكُمْ تُحْبَرُوْنَ
হে আমার বান্দাগণ! যারা আমার আয়াতসমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিলে এবং আত্মসমর্পণ করেছিলে, আজ তোমাদের কোন ভয় নেই এবং কোন চিন্তাও নেই। তোমরা এবং তোমাদের সহধর্মিনীরা জান্নাতে প্রবেশ করো, আজ তোমাদেরকে সন্তুষ্ট করা হবে। (সূরা যুখরুফ- ৬৯, ৭০)
جَزَآؤُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ جَنَّاتُ عَدْنٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَاۤ اَبَدًا
তাদের প্রতিদান তাদের প্রতিপালকের নিকট। আর তা হচ্ছে, জান্নাত; যা এমন এক আবাসস্থল যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়ে গেছে। সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে। (সূরা বায়্যিনাহ- ৮)
আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট :
رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ وَرَضُوْا عَنْهُؕ ذٰلِكَ لِمَنْ خَشِيَ رَبَّهٗ
আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। আর এটা তার জন্য, যে তার পালনকর্তাকে ভয় করে। (সূরা বায়্যিনাহ- ৮)
হাশরের ময়দানে তাদেরকে নূর দেয়া হবে :
يَوْمَ تَرَى الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ يَسْعٰى نُوْرُهُمْ بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَبِاَيْمَانِهِمْ بُشْرَاكُمُ الْيَوْمَ جَنَّاتٌ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَاؕ ذٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ
সেদিন (কিয়ামতের দিন) মুমিন নর-নারীদেরকে দেখবে যে, তাদের অগ্রভাগে ও ডান পার্শ্বে তাদের নূর প্রবাহিত হচ্ছে। (সেদিন তাদেরকে বলা হবে) আজ তোমাদের জন্য এমন জান্নাতের সুসংবাদ রয়েছে, যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত হবে, সেখানে তোমরা স্থায়ী হবে; আর এটাই হচ্ছে মহাসাফল্য। (সূরা হাদীদ - ১২)
তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতের সুসংবাদ :
وَبَشِّرِ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَنَّ لَهُمْ قَدَمَ صِدْقٍ عِنْدَ رَبِّهِمْ
যারা ঈমান আনয়ন করেছে তাদেরকে এ সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট প্রস্তুত রয়েছে উচ্চমর্যাদা! (সূরা ইউনুস - ২)
ঈমানদাররা নিয়ামতের প্রকৃত হকদার :
قُلْ مَنْ حَرَّمَ زِيْنَةَ اللهِ الَّتِيْۤ اَخْرَجَ لِعِبَادِه وَالطَّيِّبَاتِ مِنَ الرِّزْقِۚ قُلْ هِيَ لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا خَالِصَةً يَّوْمَ الْقِيَامَةِۚ كَذٰلِكَ نُفَصِّلُ الْاٰيَاتِ لِقَوْمٍ يَّعْلَمُوْنَ
(হে নবী!) বলো, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য যেসব সৌন্দর্য এবং পবিত্র রিযিকসমূহ দান করেছেন তা কে হারাম করেছে? বলো, যারা ঈমান এনেছে তাদের জন্য এগুলো হচেছ পার্থিব জীবনের জন্য সাধারণ পাওনা, কিন্তু কিয়ামতের দিন এগুলো এককভাবে তাদের জন্যই নির্ধারিত থাকবে। এভাবেই আমি জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শনসমূহকে বিশদভাবে বর্ণনা করে থাকি। (সূরা আ‘রাফ- ৩২)
ঈমানদাররা প্রকৃত সম্মানের অধিকারী :
وَلِلّٰهِ الْعِزَّةُ وَلِرَسُوْلِه وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ وَلٰكِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ
(সকল) মান-সম্মান কেবলমাত্র আল্লাহর, তাঁর রাসূল ও মুমিনদের জন্যই নির্দিষ্ট; কিন্তু মুনাফিকরা তা জানে না। (সূরা মুনাফিকূন- ৮)
আল্লাহ ঈমানদারদের অভিভাবক :
اَللهُ وَلِيُّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا يُخْرِجُهُمْ مِّنَ الظُّلُمَاتِ اِلَى النُّوْرِؕ وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اَوْلِيَآؤُهُمُ الطَّاغُوْتُ يُخْرِجُوْنَهُمْ مِّنَ النُّوْرِ اِلَى الظُّلُمَاتِ ؕ اُولٰٓئِكَ اَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ তাদের অভিভাবক; তিনি তাদেরকে অন্ধকারসমূহ হতে আলোর দিকে নিয়ে আসেন। আর যারা কাফির তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত; তারা তাদেরকে আলো থেকে অন্ধকারসমূহের দিকে নিয়ে যায়। আর তারাই হচ্ছে জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে। (সূরা বাক্বারা- ২৫৭)
ব্যাখ্যা : এখানে অন্ধকার বলতে মূর্খতা ও অজ্ঞতা বুঝানো হয়েছে। যে অন্ধকারে পথ হারিয়ে মানুষ নিজের কল্যাণ ও সাফল্যের পথ থেকে দূরে সরে যায় এবং নিজের শক্তি ও প্রচেষ্টাকে ভুল পথে পরিচালিত করে।
اِنَّ وَلِيِّيَ اللهُ الَّذِيْ نَزَّلَ الْكِتَابَ وَهُوَ يَتَوَلَّى الصَّالِحِيْنَ
আমার অভিভাবক তো আল্লাহ, যিনি কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। আর তিনিই সৎকর্মপরায়ণদের অভিভাবকত্ব করে থাকেন। (সূরা আ‘রাফ- ১৯৬)
ذٰلِكَ بِاَنَّ اللهَ مَوْلَى الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَاَنَّ الْكَافِرِيْنَ لَا مَوْلٰى لَهُمْ
এটা এজন্য যে, যারা ঈমান এনেছে আল্লাহই তাদের অভিভাবক; নিশ্চয় কাফিরদের কোন অভিভাবক নেই। (সূরা মুহাম্মাদ - ১১)
আল্লাহ ঈমানদারদেরকে সাহায্য করেন :
وَكَانَ حَقًّا عَلَيْنَا نَصْرُ الْمُؤْمِنِيْنَ
আমার কর্তব্য হচ্ছে মুমিনদেরকে সাহায্য করা। (সূরা রূম - ৪৭)
আল্লাহ ঈমানদারদেরকে বিপদ থেকে রক্ষা করেন :
ثُمَّ نُنَجِّيْ رُسُلَنَا وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كَذٰلِكَ حَقًّا عَلَيْنَا نُنْجِ الْمُؤْمِنِيْنَ
পরিশেষে আমি আমার রাসূলদেরকে এবং মুমিনদেরকে উদ্ধার করি। আর আমার দায়িত্ব হচ্ছে এভাবে মুমিনদেরকে উদ্ধার করা। (সূরা ইউনুস - ১০৩)
ঈমানদারদের উপর শয়তানের আধিপত্য চলে না :
اِنَّهٗ لَيْسَ لَهٗ سُلْطَانٌ عَلَى الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَلٰى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ
নিশ্চয় তার (শয়তানের) কোন আধিপত্য নেই তাদের উপর, যারা ঈমান আনে ও তাদের প্রতিপালকের উপরই নির্ভর করে। (সূরা নাহল- ৯৮)
ঈমানদার দাস-দাসীদেরও অনেক মর্যাদা রয়েছে :
وَلَاَمَةٌ مُّؤْمِنَةٌ خَيْرٌ مِّنْ مُّشْرِكَةٍ وَّلَوْ اَعْجَبَتْكُمْ
একজন ঈমানদার দাসী একজন স্বাধীন মুশরিক মহিলার চেয়ে উত্তম, যদিও ঐ মুশরিক মহিলা (রূপ-যৌবন দেখিয়ে) তোমাদেরকে আশ্চর্যান্বিত করে। (সূরা বাক্বারা- ২২১)
وَلَعَبْدٌ مُّؤْمِنٌ خَيْرٌ مِّنْ مُّشْرِكٍ وَّلَوْ اَعْجَبَكُمْ
একজন ঈমানদার দাসও একজন স্বাধীন মুশরিকের চেয়ে উত্তম, যদিও সে তোমাদেরকে আশ্চর্যান্বিত করে। (সূরা বাক্বারা- ২২১)
ঈমানদারদের পুরস্কার নষ্ট করা হয় না :
وَاَنَّ اللهَ لَا يُضِيْعُ اَجْرَ الْمُؤْمِنِيْنَ
নিশ্চয় আল্লাহ ঈমানদারদের প্রতিদান বিনষ্ট করেন না। (সূরা আলে ইমরান - ১৭১)
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ اِنَّا لَا نُضِيْعُ اَجْرَ مَنْ اَحْسَنَ عَمَلًا
যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম সম্পাদন করে আমি এমন উত্তম আমলকারীদের আমল নষ্ট করি না। (সূরা কাহফ- ৩০)
ঈমানের মর্যাদা ও পুরস্কারে নারী-পুরুষ সমান :
مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهٗ حَيَاةً طَيِّبَةًۚ وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ اَجْرَهُمْ بِاَحْسَنِ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
পুরুষ ও নারীদের মধ্যে মুমিন অবস্থায় যে-ই সৎকর্ম করবে অবশ্যই তাকে আমি পবিত্র জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব। (সূরা নাহল- ৯৭)
وَمَنْ يَّعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ مِنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَاُولٰٓئِكَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ وَلَا يُظْلَمُوْنَ نَقِيْرًا
পুরুষ ও নারীদের মধ্যে মুমিন অবস্থায় যে-ই সৎকর্ম করবে তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি বিন্দুপরিমাণও যুলুম করা হবে না। (সূরা নিসা- ১২৪)
مَنْ عَمِلَ سَيِّئَةً فَلَا يُجْزٰۤى اِلَّا مِثْلَهَاۚ وَمَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَاُولٰٓئِكَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ يُرْزَقُوْنَ فِيْهَا بِغَيْرِ حِسَابٍ
যে ব্যক্তি মন্দ আমল করবে সে শুধু তার আমলের সমপরিমানই শাস্তি পাবে এবং পুরুষ ও নারীর মধ্যে মুমিন অবস্থায় যে ব্যক্তিই সৎকর্ম করবে তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে, সেখানে তারা অসংখ্য রিযিকপ্রাপ্ত হবে। (সূরা মু’মিন- ৪০)
মুমিন নারী-পুরুষ সবার জন্য জান্নাতের প্রতিশ্রুতি :
وَعَدَ اللهُ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِيْ جَنَّاتِ عَدْنٍؕ وَرِضْوَانٌ مِّنَ اللهِ اَكْبَرُؕ ذٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ
আল্লাহ মুমিন নর ও মুমিন নারীকে এমন এক জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে, সেখানে তারা চিরদিন অবস্থান করবে। আর চিরস্থায়ী জান্নাতে তাদের জন্য সুন্দর সুন্দর বাসস্থানের ব্যবস্থা থাকবে। সেদিন বান্দার প্রতি আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত হবে তাদের উপর আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর এটাই হবে সবচেয়ে বড় সাফল্য। (সূরা তাওবা- ৭২)
ঈমানদারদের জন্য ফেরেশতাগণ দু‘আ করে :
اَلَّذِيْنَ يَحْمِلُوْنَ الْعَرْشَ وَمَنْ حَوْلَهٗ يُسَبِّحُوْنَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَيُؤْمِنُوْنَ بِهٖ وَيَسْتَغْفِرُوْنَ لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۚ رَبَّنَا وَسِعْتَ كُلَّ شَيْءٍ رَّحْمَةً وَّعِلْمًا فَاغْفِرْ لِلَّذِيْنَ تَابُوْا وَاتَّبَعُوْا سَبِيْلَكَ وَقِهِمْ عَذَابَ الْجَحِيْمِ
যারা আরশ বহন করে আছে এবং যারা এর চারপাশে রয়েছে, তারা প্রশংসার সাথে তাদের প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে, তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং মুমিনদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে। (তারা বলে) হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি সকল কিছুকেই (আপনার) জ্ঞান ও রহমত দ্বারা পরিবেষ্টন করে আছেন। অতএব যারা আপনার পথের অনুসরণ করে, আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা করুন। (সূরা মু’মিন- ৭)
ব্যাখ্যা : এখানে মুমিনদেরকে সান্ত্বনা দিয়ে বলা হয়েছে, তোমরা এমন মর্যাদার অধিকারী যে, আল্লাহর আরশের ধারক এবং আরশের চারপাশে অবস্থানরত ফেরেশতারা পর্যন্ত তোমাদের সহযোগী। তারা তোমাদের জন্য মহান আল্লাহর কাছে সুপারিশ করছে। এখানে সাধারণ ফেরেশতাদের কথা না বলে আল্লাহর আরশের ধারক ও তাঁর চারপাশে অবস্থানকারী ফেরেশতাদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এ ধারণা দেয়ার জন্য যে, মহান আল্লাহর বিশাল সাম্রাজ্যের কর্মচারীরা তো বটেই, এমনকি তাঁর সান্নিধ্যে অবস্থানরত নৈকট্য লাভকারী ফেরেশতারা পর্যন্ত তোমাদের প্রতি সমবেদনা পোষণ করে এবং ঈমানদারদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে। এ থেকে বুঝা যায় যে, ঈমানের বন্ধনই প্রকৃত বন্ধন, যা আসমান ও জমিনবাসীদেরকে পরস্পর একই সূত্রে গেঁথে দিয়েছে।
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ اُولٰٓئِكَ هُمْ خَيْرُ الْبَرِيَّةِ
যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তারাই হচ্ছে সৃষ্টিকুলের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট। (সূরা বায়্যিনাহ- ৭)
তাদের জন্য রয়েছে সুমহান মর্যাদা :
وَمَنْ يَّاْتِه مُؤْمِنًا قَدْ عَمِلَ الصَّالِحَاتِ فَاُولٰٓئِكَ لَهُمُ الدَّرَجَاتُ الْعُلَا
যে ব্যক্তি মুমিন অবস্থায় সৎকর্ম নিয়ে উপস্থিত হবে, তাদের জন্য রয়েছে সুউচ্চমর্যাদা। (ত্বা-হা- ৭৫)
তাদের পুরস্কার হবে জান্নাত :
يَا عِبَادِ لَا خَوْفٌ عَلَيْكُمُ الْيَوْمَ وَلَاۤ اَنْتُمْ تَحْزَنُوْنَ ‐ اَلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا بِاٰيَاتِنَا وَكَانُوْا مُسْلِمِيْنَ ‐ اُدْخُلُوا الْجَنَّةَ اَنْتُمْ وَاَزْوَاجُكُمْ تُحْبَرُوْنَ
হে আমার বান্দাগণ! যারা আমার আয়াতসমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিলে এবং আত্মসমর্পণ করেছিলে, আজ তোমাদের কোন ভয় নেই এবং কোন চিন্তাও নেই। তোমরা এবং তোমাদের সহধর্মিনীরা জান্নাতে প্রবেশ করো, আজ তোমাদেরকে সন্তুষ্ট করা হবে। (সূরা যুখরুফ- ৬৯, ৭০)
جَزَآؤُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ جَنَّاتُ عَدْنٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَاۤ اَبَدًا
তাদের প্রতিদান তাদের প্রতিপালকের নিকট। আর তা হচ্ছে, জান্নাত; যা এমন এক আবাসস্থল যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়ে গেছে। সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে। (সূরা বায়্যিনাহ- ৮)
আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট :
رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ وَرَضُوْا عَنْهُؕ ذٰلِكَ لِمَنْ خَشِيَ رَبَّهٗ
আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। আর এটা তার জন্য, যে তার পালনকর্তাকে ভয় করে। (সূরা বায়্যিনাহ- ৮)
হাশরের ময়দানে তাদেরকে নূর দেয়া হবে :
يَوْمَ تَرَى الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ يَسْعٰى نُوْرُهُمْ بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَبِاَيْمَانِهِمْ بُشْرَاكُمُ الْيَوْمَ جَنَّاتٌ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَاؕ ذٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ
সেদিন (কিয়ামতের দিন) মুমিন নর-নারীদেরকে দেখবে যে, তাদের অগ্রভাগে ও ডান পার্শ্বে তাদের নূর প্রবাহিত হচ্ছে। (সেদিন তাদেরকে বলা হবে) আজ তোমাদের জন্য এমন জান্নাতের সুসংবাদ রয়েছে, যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত হবে, সেখানে তোমরা স্থায়ী হবে; আর এটাই হচ্ছে মহাসাফল্য। (সূরা হাদীদ - ১২)
তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতের সুসংবাদ :
وَبَشِّرِ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَنَّ لَهُمْ قَدَمَ صِدْقٍ عِنْدَ رَبِّهِمْ
যারা ঈমান আনয়ন করেছে তাদেরকে এ সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট প্রস্তুত রয়েছে উচ্চমর্যাদা! (সূরা ইউনুস - ২)
ঈমানদাররা নিয়ামতের প্রকৃত হকদার :
قُلْ مَنْ حَرَّمَ زِيْنَةَ اللهِ الَّتِيْۤ اَخْرَجَ لِعِبَادِه وَالطَّيِّبَاتِ مِنَ الرِّزْقِۚ قُلْ هِيَ لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا خَالِصَةً يَّوْمَ الْقِيَامَةِۚ كَذٰلِكَ نُفَصِّلُ الْاٰيَاتِ لِقَوْمٍ يَّعْلَمُوْنَ
(হে নবী!) বলো, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য যেসব সৌন্দর্য এবং পবিত্র রিযিকসমূহ দান করেছেন তা কে হারাম করেছে? বলো, যারা ঈমান এনেছে তাদের জন্য এগুলো হচেছ পার্থিব জীবনের জন্য সাধারণ পাওনা, কিন্তু কিয়ামতের দিন এগুলো এককভাবে তাদের জন্যই নির্ধারিত থাকবে। এভাবেই আমি জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শনসমূহকে বিশদভাবে বর্ণনা করে থাকি। (সূরা আ‘রাফ- ৩২)
ঈমানদাররা প্রকৃত সম্মানের অধিকারী :
وَلِلّٰهِ الْعِزَّةُ وَلِرَسُوْلِه وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ وَلٰكِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ
(সকল) মান-সম্মান কেবলমাত্র আল্লাহর, তাঁর রাসূল ও মুমিনদের জন্যই নির্দিষ্ট; কিন্তু মুনাফিকরা তা জানে না। (সূরা মুনাফিকূন- ৮)
আল্লাহ ঈমানদারদের অভিভাবক :
اَللهُ وَلِيُّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا يُخْرِجُهُمْ مِّنَ الظُّلُمَاتِ اِلَى النُّوْرِؕ وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اَوْلِيَآؤُهُمُ الطَّاغُوْتُ يُخْرِجُوْنَهُمْ مِّنَ النُّوْرِ اِلَى الظُّلُمَاتِ ؕ اُولٰٓئِكَ اَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ তাদের অভিভাবক; তিনি তাদেরকে অন্ধকারসমূহ হতে আলোর দিকে নিয়ে আসেন। আর যারা কাফির তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত; তারা তাদেরকে আলো থেকে অন্ধকারসমূহের দিকে নিয়ে যায়। আর তারাই হচ্ছে জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে। (সূরা বাক্বারা- ২৫৭)
ব্যাখ্যা : এখানে অন্ধকার বলতে মূর্খতা ও অজ্ঞতা বুঝানো হয়েছে। যে অন্ধকারে পথ হারিয়ে মানুষ নিজের কল্যাণ ও সাফল্যের পথ থেকে দূরে সরে যায় এবং নিজের শক্তি ও প্রচেষ্টাকে ভুল পথে পরিচালিত করে।
اِنَّ وَلِيِّيَ اللهُ الَّذِيْ نَزَّلَ الْكِتَابَ وَهُوَ يَتَوَلَّى الصَّالِحِيْنَ
আমার অভিভাবক তো আল্লাহ, যিনি কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। আর তিনিই সৎকর্মপরায়ণদের অভিভাবকত্ব করে থাকেন। (সূরা আ‘রাফ- ১৯৬)
ذٰلِكَ بِاَنَّ اللهَ مَوْلَى الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَاَنَّ الْكَافِرِيْنَ لَا مَوْلٰى لَهُمْ
এটা এজন্য যে, যারা ঈমান এনেছে আল্লাহই তাদের অভিভাবক; নিশ্চয় কাফিরদের কোন অভিভাবক নেই। (সূরা মুহাম্মাদ - ১১)
আল্লাহ ঈমানদারদেরকে সাহায্য করেন :
وَكَانَ حَقًّا عَلَيْنَا نَصْرُ الْمُؤْمِنِيْنَ
আমার কর্তব্য হচ্ছে মুমিনদেরকে সাহায্য করা। (সূরা রূম - ৪৭)
আল্লাহ ঈমানদারদেরকে বিপদ থেকে রক্ষা করেন :
ثُمَّ نُنَجِّيْ رُسُلَنَا وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كَذٰلِكَ حَقًّا عَلَيْنَا نُنْجِ الْمُؤْمِنِيْنَ
পরিশেষে আমি আমার রাসূলদেরকে এবং মুমিনদেরকে উদ্ধার করি। আর আমার দায়িত্ব হচ্ছে এভাবে মুমিনদেরকে উদ্ধার করা। (সূরা ইউনুস - ১০৩)
ঈমানদারদের উপর শয়তানের আধিপত্য চলে না :
اِنَّهٗ لَيْسَ لَهٗ سُلْطَانٌ عَلَى الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَلٰى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ
নিশ্চয় তার (শয়তানের) কোন আধিপত্য নেই তাদের উপর, যারা ঈমান আনে ও তাদের প্রতিপালকের উপরই নির্ভর করে। (সূরা নাহল- ৯৮)
ঈমানদার দাস-দাসীদেরও অনেক মর্যাদা রয়েছে :
وَلَاَمَةٌ مُّؤْمِنَةٌ خَيْرٌ مِّنْ مُّشْرِكَةٍ وَّلَوْ اَعْجَبَتْكُمْ
একজন ঈমানদার দাসী একজন স্বাধীন মুশরিক মহিলার চেয়ে উত্তম, যদিও ঐ মুশরিক মহিলা (রূপ-যৌবন দেখিয়ে) তোমাদেরকে আশ্চর্যান্বিত করে। (সূরা বাক্বারা- ২২১)
وَلَعَبْدٌ مُّؤْمِنٌ خَيْرٌ مِّنْ مُّشْرِكٍ وَّلَوْ اَعْجَبَكُمْ
একজন ঈমানদার দাসও একজন স্বাধীন মুশরিকের চেয়ে উত্তম, যদিও সে তোমাদেরকে আশ্চর্যান্বিত করে। (সূরা বাক্বারা- ২২১)
ঈমানদারদের পুরস্কার নষ্ট করা হয় না :
وَاَنَّ اللهَ لَا يُضِيْعُ اَجْرَ الْمُؤْمِنِيْنَ
নিশ্চয় আল্লাহ ঈমানদারদের প্রতিদান বিনষ্ট করেন না। (সূরা আলে ইমরান - ১৭১)
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ اِنَّا لَا نُضِيْعُ اَجْرَ مَنْ اَحْسَنَ عَمَلًا
যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম সম্পাদন করে আমি এমন উত্তম আমলকারীদের আমল নষ্ট করি না। (সূরা কাহফ- ৩০)
ঈমানের মর্যাদা ও পুরস্কারে নারী-পুরুষ সমান :
مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهٗ حَيَاةً طَيِّبَةًۚ وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ اَجْرَهُمْ بِاَحْسَنِ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
পুরুষ ও নারীদের মধ্যে মুমিন অবস্থায় যে-ই সৎকর্ম করবে অবশ্যই তাকে আমি পবিত্র জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব। (সূরা নাহল- ৯৭)
وَمَنْ يَّعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ مِنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَاُولٰٓئِكَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ وَلَا يُظْلَمُوْنَ نَقِيْرًا
পুরুষ ও নারীদের মধ্যে মুমিন অবস্থায় যে-ই সৎকর্ম করবে তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি বিন্দুপরিমাণও যুলুম করা হবে না। (সূরা নিসা- ১২৪)
مَنْ عَمِلَ سَيِّئَةً فَلَا يُجْزٰۤى اِلَّا مِثْلَهَاۚ وَمَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَاُولٰٓئِكَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ يُرْزَقُوْنَ فِيْهَا بِغَيْرِ حِسَابٍ
যে ব্যক্তি মন্দ আমল করবে সে শুধু তার আমলের সমপরিমানই শাস্তি পাবে এবং পুরুষ ও নারীর মধ্যে মুমিন অবস্থায় যে ব্যক্তিই সৎকর্ম করবে তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে, সেখানে তারা অসংখ্য রিযিকপ্রাপ্ত হবে। (সূরা মু’মিন- ৪০)
মুমিন নারী-পুরুষ সবার জন্য জান্নাতের প্রতিশ্রুতি :
وَعَدَ اللهُ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِيْ جَنَّاتِ عَدْنٍؕ وَرِضْوَانٌ مِّنَ اللهِ اَكْبَرُؕ ذٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ
আল্লাহ মুমিন নর ও মুমিন নারীকে এমন এক জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে, সেখানে তারা চিরদিন অবস্থান করবে। আর চিরস্থায়ী জান্নাতে তাদের জন্য সুন্দর সুন্দর বাসস্থানের ব্যবস্থা থাকবে। সেদিন বান্দার প্রতি আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত হবে তাদের উপর আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর এটাই হবে সবচেয়ে বড় সাফল্য। (সূরা তাওবা- ৭২)
ঈমানদারদের জন্য ফেরেশতাগণ দু‘আ করে :
اَلَّذِيْنَ يَحْمِلُوْنَ الْعَرْشَ وَمَنْ حَوْلَهٗ يُسَبِّحُوْنَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَيُؤْمِنُوْنَ بِهٖ وَيَسْتَغْفِرُوْنَ لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۚ رَبَّنَا وَسِعْتَ كُلَّ شَيْءٍ رَّحْمَةً وَّعِلْمًا فَاغْفِرْ لِلَّذِيْنَ تَابُوْا وَاتَّبَعُوْا سَبِيْلَكَ وَقِهِمْ عَذَابَ الْجَحِيْمِ
যারা আরশ বহন করে আছে এবং যারা এর চারপাশে রয়েছে, তারা প্রশংসার সাথে তাদের প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে, তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং মুমিনদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে। (তারা বলে) হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি সকল কিছুকেই (আপনার) জ্ঞান ও রহমত দ্বারা পরিবেষ্টন করে আছেন। অতএব যারা আপনার পথের অনুসরণ করে, আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা করুন। (সূরা মু’মিন- ৭)
ব্যাখ্যা : এখানে মুমিনদেরকে সান্ত্বনা দিয়ে বলা হয়েছে, তোমরা এমন মর্যাদার অধিকারী যে, আল্লাহর আরশের ধারক এবং আরশের চারপাশে অবস্থানরত ফেরেশতারা পর্যন্ত তোমাদের সহযোগী। তারা তোমাদের জন্য মহান আল্লাহর কাছে সুপারিশ করছে। এখানে সাধারণ ফেরেশতাদের কথা না বলে আল্লাহর আরশের ধারক ও তাঁর চারপাশে অবস্থানকারী ফেরেশতাদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এ ধারণা দেয়ার জন্য যে, মহান আল্লাহর বিশাল সাম্রাজ্যের কর্মচারীরা তো বটেই, এমনকি তাঁর সান্নিধ্যে অবস্থানরত নৈকট্য লাভকারী ফেরেশতারা পর্যন্ত তোমাদের প্রতি সমবেদনা পোষণ করে এবং ঈমানদারদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে। এ থেকে বুঝা যায় যে, ঈমানের বন্ধনই প্রকৃত বন্ধন, যা আসমান ও জমিনবাসীদেরকে পরস্পর একই সূত্রে গেঁথে দিয়েছে।
আল্লাহ মুমিনদেরকে পরীক্ষা করে থাকেন :
اَحَسِبَ النَّاسُ اَنْ يُّتْرَكُوْاۤ اَنْ يَّقُوْلُوْاۤ اٰمَنَّا وَهُمْ لَا يُفْتَنُوْنَ ‐ -وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَلَيَعْلَمَنَّ اللهُ الَّذِيْنَ صَدَقُوْا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِيْنَ
মানুষ কি মনে করে যে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ এ কথা বললেই তাদেরকে পরীক্ষা না করে ছেড়ে দেয়া হবে? আমি তো তাদের পূর্ববর্তীদেরকেও পরীক্ষা করেছিলাম। আল্লাহ অবশ্যই প্রকাশ করে দেবেন যে, কারা সত্যবাদী এবং কারা মিথ্যাবাদী। (সূরা আনকাবূত- ২, ৩)
ব্যাখ্যা : মহান আল্লাহ মুমিনদেরকে বুঝাতে চান যে, ইহকালীন ও পরকালীন সাফল্য অর্জনের জন্য আমার যে সমস্ত প্রতিশ্রুতি রয়েছে কোন ব্যক্তি নিছক মৌখিক ঈমানের দাবীর মাধ্যমে এসবের অধিকারী হতে পারবে না। প্রত্যেক দাবীদারকে অনিবার্যভাবে পরীক্ষার বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করতেই হবে। এভাবে তাকে নিজের দাবীর সত্যতার প্রমাণ পেশ করতে হবে। আমার জান্নাত এত সস্তা নয় এবং দুনিয়াতেও আমার বিশেষ অনুগ্রহ এত অনায়াসলব্ধ নয় যে, তোমরা কেবল মুখে আমার প্রতি ঈমান আনার কথা উচ্চারণ করবে আর অমনিই আমি তোমাদেরকে সেসব দান করে দেব। এসব পেতে হলে বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করতে হবে, বিপদাপদ ও সংকটের মুকাবিলা করতে হবে। ভয় ও আশঙ্কা দিয়েও পরীক্ষা করা হবে। যেসব জিনিস পছন্দ কর, তা আমার সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করতে হবে। আমার জন্য প্রত্যেকটি কষ্ট সহ্য করতে হবে। তারপরেই তোমরা আমাকে মানার যে দাবী করেছিলে তার সত্যতা যাচাই হবে। এ আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদের মনে এ সত্যটি গেঁথে দিয়েছেন যে, পরীক্ষাই হচ্ছে এমন একটি মানদন্ড যার মাধ্যমে ভেজাল ও নির্ভেজাল যাচাই করা যায়। ভেজাল নিজে নিজেই আল্লাহর পথ থেকে সরে যায়। অতঃপর নির্ভেজালকে বাছাই করে নিয়ে এমনসব পুরস্কার লাভের যোগ্য করা হয়, যেগুলো কেবল সত্য ঈমানদারদের জন্যই নির্ধারিত।
অতীতের মুমিনরাও পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিলেন :
اَمْ حَسِبْتُمْ اَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَاْتِكُمْ مَّثَلُ الَّذِيْنَ خَلَوْا مِنْ قَبْلِكُمْؕ مَسَّتْهُمُ الْبَاْسَآءُ وَالضَّرَّآءُ وَزُلْزِلُوْا حَتّٰى يَقُوْلَ الرَّسُوْلُ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَعَهٗ مَتٰى نَصْرُ اللهِؕ اَ لَاۤ اِنَّ نَصْرَ اللهِ قَرِيْبٌ
তোমরা কি ধারণা করেছ যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করে ফেলবে? অথচ তোমাদের পূর্ববর্তীদের মতো (সংকটময় অবস্থা) এখনো তোমাদের উপর আসেনি। তাদেরকে বিপদ ও দুঃখ স্পর্শ করেছিল এমনকি তাদেরকে কাঁপিয়ে তুলা হয়েছিল। অবশেষে রাসূল ও তার সাথে ঈমান আনয়নকারীরা বলে ফেলেছিল যে, কখন আল্লাহর সাহায্য আসবে? শুনে নাও, নিশ্চয় আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটবর্তী। (সূরা বাক্বারা- ২১৪)
ব্যাখ্যা : ঈমানদারদের পরীক্ষা করা কোন নতুন ব্যাপার নয়। ইতিহাসে সবসময় এমনটিই হয়ে এসেছে। যে ব্যক্তিই ঈমানের দাবী করেছে তাকে অবশ্যই পরীক্ষার অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করে দগ্ধ করা হয়েছে। দুনিয়ার যে কোন দেশে যখনই নবীদের আবির্ভাব ঘটেছে তখনই তাঁরা ও তাঁদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারী মুসলিমরা আল্লাহদ্রোহী মানবসমাজের কঠোর বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছেন। তাঁরা কোন অবস্থায়ই নিজেদের প্রাণের পরোয়া করেননি। বাতিল পদ্ধতির বিরুদ্ধে কঠোর সংগ্রাম করে তাওহীদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। এ দ্বীন প্রতিষ্ঠার পথ কখনো ফুলশয্যা ছিল না। ইসলামকে নিজের জীবনবিধান হিসেবে মেনে নেয়ার পর কেউ নিশ্চিন্তে আরামে বসে থাকতে পারেনি। প্রতি যুগে মুসলিমদেরকে ইসলামী জীবনবিধান প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম চালাতে হয়েছে। যেসব শয়তানী ও বিদ্রোহী শক্তি সে সংগ্রামের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে তার শক্তির দর্প চূর্ণ করার জন্য ঈমানদারদেরকে পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করতে হয়েছে।
খাববাব ইবনে আরাত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা নবী ﷺ এর নিকট (আমাদের দুঃখ-দুর্দশা সম্পর্কে) অভিযোগ করলাম। তখন তিনি নিজের চাদরটাকে বালিশ বানিয়ে কা‘বাঘরের ছায়ায় বিশ্রাম করছিলেন। আমরা তাঁকে বললাম, আপনি কি আমাদের জন্য আল্লাহর নিকট সাহায্য কামনা করবেন না? আপনি কি আমাদের জন্য আল্লাহর নিকট দু‘আ করবেন না? নবী ﷺ বললেন, তোমাদের আর এমন কী দুর্দশা হয়েছে? তোমাদের পূর্বে যারা ঈমানদার ছিল, তাদের কারো জন্য মাটিতে গর্ত খোঁড়া হতো, তারপর তাকে সে গর্তের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রাখা হতো; তারপর করাত আনা হতো এবং তা তার মাথার উপর স্থাপন করে তাকে দ্বিখন্ডিত করা হতো। তবুও এ অমানুষিক নির্যাতন তাকে তার দ্বীন থেকে ফেরাতে পারত না। আবার কারো শরীরে লোহার চিরুণী দ্বারা আঁচড়ে হাড় পর্যন্ত যাবতীয় মাংস তুলে ফেলা হতো। তবুও এটা তাকে তার দ্বীন থেকে ফেরাতে পারত না। আল্লাহর কসম! নিশ্চয় এ দ্বীন পূর্ণতা লাভ করবে। (তখন সর্বত্র এতটা নিরাপত্তা বিরাজ করবে যে) কোন উষ্ট্রারোহী সান‘আ থেকে হাযরামাওত পর্যন্ত দীর্ঘ পথ নির্বিঘ্নে অতিক্রম করবে। তখন সে নিজের নিরাপত্তার ব্যাপারে আল্লাহ ছাড়া অপর কারো এবং নিজের মেষপালের ব্যাপারে নেকড়ে ছাড়া অন্য কিছুরই ভয় করবে না। কিন্তু তোমরা (এ সময়টার আগমনের ব্যাপারে) তাড়াহুড়া করছ। (সহীহ বুখারী, হা/৩৬১২)
পরীক্ষার মাধ্যমেই আল্লাহ মুমিনদেরকে বাছাই করেন :
اَمْ حَسِبْتُمْ اَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ اللهُ الَّذِيْنَ جَاهَدُوْا مِنْكُمْ وَيَعْلَمَ الصَّابِرِيْنَ
তোমরা কি ধারণা করছ যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ তোমাদের মধ্য হতে কারা জিহাদ করে তাদের ব্যাপারে আল্লাহ অবগত হবেন না এবং ধৈর্যশীলদের সম্পর্কেও জেনে নেবেন না? (সূরা আলে ইমরান- ১৪২)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ হক ও বাতিল এবং সত্য ও মিথ্যার সংঘাতের যে বিধান তৈরি করে দিয়েছেন, তা পাল্টে দেয়ার ক্ষমতা কারো নেই। সত্যপন্থীদের অবশ্যই দীর্ঘকাল পরীক্ষার আগুনে ঝালাই হতে হবে। তাদেরকে নিজেদের ধৈর্য, সহিষ্ণুতা, সততা, সত্যবাদিতা, ত্যাগ, ঈমানী দৃঢ়তা ও আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীলতার পরীক্ষা দিতে হবে। বিপদ, মুসীবত, সমস্যা ও সংকটের কঠিন পথ অতিক্রম করার গুণাবলি তাদের মধ্যে সৃষ্টি করতে হবে। তাদেরকে নির্ভেজাল উন্নত নৈতিক গুণাবলি ও সচ্চরিত্রের অস্ত্র ব্যবহার করে জাহেলিয়াতের উপর বিজয় লাভ করতে হবে। এভাবে নিজেদেরকে সংস্কারক হিসেবে প্রমাণ করতে পারলেই আল্লাহর সাহায্য তাদের জন্য এগিয়ে আসবে।
আল্লাহ বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করেন :
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوْفِ وَالْجُوْعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الْاَمْوَالِ وَالْاَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِؕ وَبَشِّرِ الصَّابِرِيْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ اِذَاۤ اَصَابَتْهُمْ مُّصِيْبَةٌ قَالُوْاۤ اِنَّا لِلّٰهِ وَاِنَّاۤ اِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ
নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করব ভয়, ক্ষুধা, ধন, প্রাণ ও ফসলের অভাবের দ্বারা। সুতরাং আপনি ধৈর্যশীলদেরকে সুসংবাদ প্রদান করুন। (কেননা) যখন তাদের উপর কোন বিপদ আসে তখন তারা বলে, নিশ্চয় আমরা আল্লাহরই জন্য এবং আমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। (সূরা বাক্বারা- ১৫৫, ১৫৬)
لَتُبْلَوُنَّ فِۤيْ اَمْوَالِكُمْ وَاَنْفُسِكُمْؕ وَلَتَسْمَعُنَّ مِنَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَمِنَ الَّذِيْنَ اَشْرَكُوْاۤ اَذًى كَثِيْرًاؕ وَاِنْ تَصْبِرُوْا وَتَتَّقُوْا فَاِنَّ ذٰلِكَ مِنْ عَزْمِ الْاُمُوْرِ
অবশ্যই তোমরা তোমাদের ধনসম্পদ ও তোমাদের জীবন দ্বারা পরীক্ষিত হবে। তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে ও যারা শিরক করেছে, তাদের নিকট হতে তোমাদেরকে বহু দুঃখজনক বাক্য শুনতে হবে। আর যদি তোমরা ধৈর্যধারণ কর ও সংযমী হও, তবে অবশ্যই এটা সুদৃঢ় কার্যাবলির অন্তর্গত। (সূরা আলে ইমরান- ১৮৬)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ তাদের গালাগাল, মিথ্যা দোষারোপ, বেহুদা কথাবার্তা ও অপপ্রচারের মুকাবিলায় অধৈর্য হয়ে তোমরা এমন কোন কথা বলতে শুরু করো না, যা সত্য, ন্যায় ও শিষ্টাচার বিরোধী। বরং সর্বক্ষেত্রে তোমাদেরকে ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে।
اَحَسِبَ النَّاسُ اَنْ يُّتْرَكُوْاۤ اَنْ يَّقُوْلُوْاۤ اٰمَنَّا وَهُمْ لَا يُفْتَنُوْنَ ‐ -وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَلَيَعْلَمَنَّ اللهُ الَّذِيْنَ صَدَقُوْا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِيْنَ
মানুষ কি মনে করে যে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ এ কথা বললেই তাদেরকে পরীক্ষা না করে ছেড়ে দেয়া হবে? আমি তো তাদের পূর্ববর্তীদেরকেও পরীক্ষা করেছিলাম। আল্লাহ অবশ্যই প্রকাশ করে দেবেন যে, কারা সত্যবাদী এবং কারা মিথ্যাবাদী। (সূরা আনকাবূত- ২, ৩)
ব্যাখ্যা : মহান আল্লাহ মুমিনদেরকে বুঝাতে চান যে, ইহকালীন ও পরকালীন সাফল্য অর্জনের জন্য আমার যে সমস্ত প্রতিশ্রুতি রয়েছে কোন ব্যক্তি নিছক মৌখিক ঈমানের দাবীর মাধ্যমে এসবের অধিকারী হতে পারবে না। প্রত্যেক দাবীদারকে অনিবার্যভাবে পরীক্ষার বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করতেই হবে। এভাবে তাকে নিজের দাবীর সত্যতার প্রমাণ পেশ করতে হবে। আমার জান্নাত এত সস্তা নয় এবং দুনিয়াতেও আমার বিশেষ অনুগ্রহ এত অনায়াসলব্ধ নয় যে, তোমরা কেবল মুখে আমার প্রতি ঈমান আনার কথা উচ্চারণ করবে আর অমনিই আমি তোমাদেরকে সেসব দান করে দেব। এসব পেতে হলে বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করতে হবে, বিপদাপদ ও সংকটের মুকাবিলা করতে হবে। ভয় ও আশঙ্কা দিয়েও পরীক্ষা করা হবে। যেসব জিনিস পছন্দ কর, তা আমার সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করতে হবে। আমার জন্য প্রত্যেকটি কষ্ট সহ্য করতে হবে। তারপরেই তোমরা আমাকে মানার যে দাবী করেছিলে তার সত্যতা যাচাই হবে। এ আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদের মনে এ সত্যটি গেঁথে দিয়েছেন যে, পরীক্ষাই হচ্ছে এমন একটি মানদন্ড যার মাধ্যমে ভেজাল ও নির্ভেজাল যাচাই করা যায়। ভেজাল নিজে নিজেই আল্লাহর পথ থেকে সরে যায়। অতঃপর নির্ভেজালকে বাছাই করে নিয়ে এমনসব পুরস্কার লাভের যোগ্য করা হয়, যেগুলো কেবল সত্য ঈমানদারদের জন্যই নির্ধারিত।
অতীতের মুমিনরাও পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিলেন :
اَمْ حَسِبْتُمْ اَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَاْتِكُمْ مَّثَلُ الَّذِيْنَ خَلَوْا مِنْ قَبْلِكُمْؕ مَسَّتْهُمُ الْبَاْسَآءُ وَالضَّرَّآءُ وَزُلْزِلُوْا حَتّٰى يَقُوْلَ الرَّسُوْلُ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَعَهٗ مَتٰى نَصْرُ اللهِؕ اَ لَاۤ اِنَّ نَصْرَ اللهِ قَرِيْبٌ
তোমরা কি ধারণা করেছ যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করে ফেলবে? অথচ তোমাদের পূর্ববর্তীদের মতো (সংকটময় অবস্থা) এখনো তোমাদের উপর আসেনি। তাদেরকে বিপদ ও দুঃখ স্পর্শ করেছিল এমনকি তাদেরকে কাঁপিয়ে তুলা হয়েছিল। অবশেষে রাসূল ও তার সাথে ঈমান আনয়নকারীরা বলে ফেলেছিল যে, কখন আল্লাহর সাহায্য আসবে? শুনে নাও, নিশ্চয় আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটবর্তী। (সূরা বাক্বারা- ২১৪)
ব্যাখ্যা : ঈমানদারদের পরীক্ষা করা কোন নতুন ব্যাপার নয়। ইতিহাসে সবসময় এমনটিই হয়ে এসেছে। যে ব্যক্তিই ঈমানের দাবী করেছে তাকে অবশ্যই পরীক্ষার অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করে দগ্ধ করা হয়েছে। দুনিয়ার যে কোন দেশে যখনই নবীদের আবির্ভাব ঘটেছে তখনই তাঁরা ও তাঁদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারী মুসলিমরা আল্লাহদ্রোহী মানবসমাজের কঠোর বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছেন। তাঁরা কোন অবস্থায়ই নিজেদের প্রাণের পরোয়া করেননি। বাতিল পদ্ধতির বিরুদ্ধে কঠোর সংগ্রাম করে তাওহীদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। এ দ্বীন প্রতিষ্ঠার পথ কখনো ফুলশয্যা ছিল না। ইসলামকে নিজের জীবনবিধান হিসেবে মেনে নেয়ার পর কেউ নিশ্চিন্তে আরামে বসে থাকতে পারেনি। প্রতি যুগে মুসলিমদেরকে ইসলামী জীবনবিধান প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম চালাতে হয়েছে। যেসব শয়তানী ও বিদ্রোহী শক্তি সে সংগ্রামের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে তার শক্তির দর্প চূর্ণ করার জন্য ঈমানদারদেরকে পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করতে হয়েছে।
খাববাব ইবনে আরাত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা নবী ﷺ এর নিকট (আমাদের দুঃখ-দুর্দশা সম্পর্কে) অভিযোগ করলাম। তখন তিনি নিজের চাদরটাকে বালিশ বানিয়ে কা‘বাঘরের ছায়ায় বিশ্রাম করছিলেন। আমরা তাঁকে বললাম, আপনি কি আমাদের জন্য আল্লাহর নিকট সাহায্য কামনা করবেন না? আপনি কি আমাদের জন্য আল্লাহর নিকট দু‘আ করবেন না? নবী ﷺ বললেন, তোমাদের আর এমন কী দুর্দশা হয়েছে? তোমাদের পূর্বে যারা ঈমানদার ছিল, তাদের কারো জন্য মাটিতে গর্ত খোঁড়া হতো, তারপর তাকে সে গর্তের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রাখা হতো; তারপর করাত আনা হতো এবং তা তার মাথার উপর স্থাপন করে তাকে দ্বিখন্ডিত করা হতো। তবুও এ অমানুষিক নির্যাতন তাকে তার দ্বীন থেকে ফেরাতে পারত না। আবার কারো শরীরে লোহার চিরুণী দ্বারা আঁচড়ে হাড় পর্যন্ত যাবতীয় মাংস তুলে ফেলা হতো। তবুও এটা তাকে তার দ্বীন থেকে ফেরাতে পারত না। আল্লাহর কসম! নিশ্চয় এ দ্বীন পূর্ণতা লাভ করবে। (তখন সর্বত্র এতটা নিরাপত্তা বিরাজ করবে যে) কোন উষ্ট্রারোহী সান‘আ থেকে হাযরামাওত পর্যন্ত দীর্ঘ পথ নির্বিঘ্নে অতিক্রম করবে। তখন সে নিজের নিরাপত্তার ব্যাপারে আল্লাহ ছাড়া অপর কারো এবং নিজের মেষপালের ব্যাপারে নেকড়ে ছাড়া অন্য কিছুরই ভয় করবে না। কিন্তু তোমরা (এ সময়টার আগমনের ব্যাপারে) তাড়াহুড়া করছ। (সহীহ বুখারী, হা/৩৬১২)
পরীক্ষার মাধ্যমেই আল্লাহ মুমিনদেরকে বাছাই করেন :
اَمْ حَسِبْتُمْ اَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ اللهُ الَّذِيْنَ جَاهَدُوْا مِنْكُمْ وَيَعْلَمَ الصَّابِرِيْنَ
তোমরা কি ধারণা করছ যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ তোমাদের মধ্য হতে কারা জিহাদ করে তাদের ব্যাপারে আল্লাহ অবগত হবেন না এবং ধৈর্যশীলদের সম্পর্কেও জেনে নেবেন না? (সূরা আলে ইমরান- ১৪২)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ হক ও বাতিল এবং সত্য ও মিথ্যার সংঘাতের যে বিধান তৈরি করে দিয়েছেন, তা পাল্টে দেয়ার ক্ষমতা কারো নেই। সত্যপন্থীদের অবশ্যই দীর্ঘকাল পরীক্ষার আগুনে ঝালাই হতে হবে। তাদেরকে নিজেদের ধৈর্য, সহিষ্ণুতা, সততা, সত্যবাদিতা, ত্যাগ, ঈমানী দৃঢ়তা ও আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীলতার পরীক্ষা দিতে হবে। বিপদ, মুসীবত, সমস্যা ও সংকটের কঠিন পথ অতিক্রম করার গুণাবলি তাদের মধ্যে সৃষ্টি করতে হবে। তাদেরকে নির্ভেজাল উন্নত নৈতিক গুণাবলি ও সচ্চরিত্রের অস্ত্র ব্যবহার করে জাহেলিয়াতের উপর বিজয় লাভ করতে হবে। এভাবে নিজেদেরকে সংস্কারক হিসেবে প্রমাণ করতে পারলেই আল্লাহর সাহায্য তাদের জন্য এগিয়ে আসবে।
আল্লাহ বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করেন :
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوْفِ وَالْجُوْعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الْاَمْوَالِ وَالْاَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِؕ وَبَشِّرِ الصَّابِرِيْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ اِذَاۤ اَصَابَتْهُمْ مُّصِيْبَةٌ قَالُوْاۤ اِنَّا لِلّٰهِ وَاِنَّاۤ اِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ
নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করব ভয়, ক্ষুধা, ধন, প্রাণ ও ফসলের অভাবের দ্বারা। সুতরাং আপনি ধৈর্যশীলদেরকে সুসংবাদ প্রদান করুন। (কেননা) যখন তাদের উপর কোন বিপদ আসে তখন তারা বলে, নিশ্চয় আমরা আল্লাহরই জন্য এবং আমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। (সূরা বাক্বারা- ১৫৫, ১৫৬)
لَتُبْلَوُنَّ فِۤيْ اَمْوَالِكُمْ وَاَنْفُسِكُمْؕ وَلَتَسْمَعُنَّ مِنَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَمِنَ الَّذِيْنَ اَشْرَكُوْاۤ اَذًى كَثِيْرًاؕ وَاِنْ تَصْبِرُوْا وَتَتَّقُوْا فَاِنَّ ذٰلِكَ مِنْ عَزْمِ الْاُمُوْرِ
অবশ্যই তোমরা তোমাদের ধনসম্পদ ও তোমাদের জীবন দ্বারা পরীক্ষিত হবে। তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে ও যারা শিরক করেছে, তাদের নিকট হতে তোমাদেরকে বহু দুঃখজনক বাক্য শুনতে হবে। আর যদি তোমরা ধৈর্যধারণ কর ও সংযমী হও, তবে অবশ্যই এটা সুদৃঢ় কার্যাবলির অন্তর্গত। (সূরা আলে ইমরান- ১৮৬)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ তাদের গালাগাল, মিথ্যা দোষারোপ, বেহুদা কথাবার্তা ও অপপ্রচারের মুকাবিলায় অধৈর্য হয়ে তোমরা এমন কোন কথা বলতে শুরু করো না, যা সত্য, ন্যায় ও শিষ্টাচার বিরোধী। বরং সর্বক্ষেত্রে তোমাদেরকে ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে।
আল্লাহর প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা স্থাপন করা :
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّتَّخِذُ مِنْ دُوْنِ اللهِ اَنْدَادًا يُّحِبُّوْنَهُمْ كَحُبِّ اللهِؕ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا اَشَدُّ حُبًّا لِّلّٰهِ
মানুষের মধ্যে কিছু লোক এমনও রয়েছে, যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্য কিছুকে তাঁর সমকক্ষ হিসেবে গ্রহণ করে। তারা তাদেরকে তেমনি ভালোবাসে যেমনটি কেবল আল্লাহকেই ভালোবাসা উচিত। আর যারা (সত্যিকার অর্থে) আল্লাহর উপর ঈমান আনয়ন করে, তারা তো তাঁকেই সর্বাধিক ভালোবাসবে। (সূরা বাক্বারা- ১৬৫)
ব্যাখ্যা : এটা ঈমানের দাবী। একজন ঈমানদারের কাছে আল্লাহর সন্তুষ্টি অন্যসব সন্তুষ্টির উপর অগ্রাধিকার লাভ করবে। তার মধ্যে কোনকিছুর প্রতি ভালোবাসা আল্লাহর ভালোবাসার চেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করবে না।
দৃঢ় মনোবলের অধিকারী হওয়া :
وَلَا تَهِنُوْا وَلَا تَحْزَنُوْا وَاَنْتُمُ الْاَعْلَوْنَ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
আর তোমরা দুর্বল হয়ো না এবং চিন্তিতও হয়ো না; যদি তোমরা মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত হও, তবে তোমরাই বিজয়ী হবে। (সূরা আলে ইমরান- ১৩৯)
وَكَاَيِّنْ مِّنْ نَّبِيٍّ قَاتَلَ مَعَهٗ رِبِّيُّوْنَ كَثِيْرٌۚ فَمَا وَهَنُوْا لِمَاۤ اَصَابَهُمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَمَا ضَعُفُوْا وَمَا اسْتَكَانُوْاؕ وَاللهُ يُحِبُّ الصَّابِرِيْنَ
এমন অনেক নবী ছিলেন, যাদের সহযোগে আল্লাহভক্ত লোকেরা যুদ্ধ করেছিল। অতঃপর আল্লাহর পথে যা সংঘটিত হয়েছিল তাতে তারা নিরুৎসাহিত হয়নি, শক্তিহীন হয়নি এবং বিচলিতও হয়নি। আর আল্লাহ ধৈর্যশীলদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৪৬)
বাতিলের হুমকিকে ভয় না করা :
اَ لَّذِيْنَ قَالَ لَهُمُ النَّاسُ اِنَّ النَّاسَ قَدْ جَمَعُوْا لَكُمْ فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ اِيْمَانًا وَّقَالُوْا حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الْوَكِيْلُ
লোকেরা যাদেরকে বলেছিল, নিশ্চয় তোমাদের বিরুদ্ধে লোকজন সমবেত হয়েছে; অতএব তোমরা তাদেরকে ভয় করো। কিন্তু এতে তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং তারা বলেছিল, আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট। আর তিনি কতই না মঙ্গলময় কর্মবিধায়ক। (সূরা আলে ইমরান- ১৭৩)
আল্লাহর উপর দৃঢ় আস্থা রাখা :
فَلَمَّا تَرَآءَ الْجَمْعَانِ قَالَ اَصْحَابُ مُوْسٰۤى اِنَّا لَمُدْرَكُوْنَ ‐ قَالَ كَلَّاۚ اِنَّ مَعِيَ رَبِّيْ سَيَهْدِيْنِ
অতঃপর যখন দু’টি দল পরস্পরকে দেখল তখন মূসার সঙ্গীরা বলল, আমরা তো ধরা পড়ে গেলাম! মূসা বলল, কখনই নয়! নিশ্চয় আমার প্রতিপালক আমার সঙ্গেই রয়েছেন; অচিরেই তিনি আমাকে পথনির্দেশ করবেন। (সূরা শু‘আরা- ৬১, ৬২)
اِلَّا تَنْصُرُوْهُ فَقَدْ نَصَرَهُ اللهُ اِذْ اَخْرَجَهُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا ثَانِيَ اثْنَيْنِ اِذْ هُمَا فِى الْغَارِ اِذْ يَقُوْلُ لِصَاحِبِه لَا تَحْزَنْ اِنَّ اللهَ مَعَنَا
যদি তোমরা তাঁকে (নবীকে) সাহায্য না কর, তবে আল্লাহ তো তাকে সাহায্য করেছিলেন যখন কাফিররা তাকে বহিষ্কার করেছিল। আর তিনি ছিলেন দু’জনের দ্বিতীয়জন- যখন তারা উভয়ে (একটি) গুহার মধ্যে অবস্থান করছিল তখন তিনি তার সঙ্গীকে বলেছিলেন, চিন্তিত হয়ো না; নিশ্চয় আল্লাহ আমাদের সঙ্গেই রয়েছেন। (সূরা তাওবা- ৪০)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ যখন জানতে পারলেন যে, মক্কার কাফিররা তাঁকে হত্যা করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে, তখন শুধুমাত্র আবু বকর (রাঃ) কে সাথে নিয়ে তিনি মক্কা থেকে বের হয়ে পড়লেন। শত্রুরা তাঁকে চারদিকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল, এমনকি যে গুহায় তিনি লুকিয়েছিলেন তাদের কয়েকজন সেখানেও পৌঁছে যায়। ফলে আবু বকর (রাঃ) ভীষণ ভয় পেয়ে গেলেন। কিন্তু নবী ﷺ একটুও বিচলিত না হয়ে আবু বকর (রাঃ) কে এ বলে সান্ত্বনা দিলেন যে, ‘‘চিন্তিত হয়ো না, মন খারাপ করো না; কেননা আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন।’’ এটা ছিল আল্লাহর প্রতি দৃঢ় আস্থার বহিঃপ্রকাশ।
ঈমান রক্ষার জন্য যে কোন কষ্ট স্বীকার করা :
قَالَتْ فَذٰلِكُنَّ الَّذِيْ لُمْتُنَّنِيْ فِيْهِؕ وَلَقَدْ رَاوَدْتُّهٗ عَنْ نَّفْسِه فَاسْتَعْصَمَؕ وَلَئِنْ لَّمْ يَفْعَلْ مَاۤ اٰمُرُه لَيُسْجَنَنَّ وَلَيَكُوْنًا مِّنَ الصَّاغِرِيْنَ ‐ قَالَ رَبِّ السِّجْنُ اَحَبُّ اِلَيَّ مِمَّا يَدْعُونَنِيْۤ اِلَيْهِۚ وَاِلَّا تَصْرِفْ عَنِّيْ كَيْدَهُنَّ اَصْبُ اِلَيْهِنَّ وَاَكُنْ مِّنَ الْجَاهِلِيْنَ
সে (বাদশাহর স্ত্রী) বলল, এ-ই সে যার সম্বন্ধে তোমরা আমার নিন্দা করেছ। আমি তো তার থেকে অসৎকর্ম কামনা করেছি। কিন্তু সে নিজেকে পবিত্র রেখেছে; আমি তাকে যা আদেশ করেছি সে যদি তা না করে, তবে সে কারারুদ্ধ হবে এবং হীনদের অন্তর্ভুক্ত হবে। তখন ইউসুফ বলল, হে আমার প্রতিপালক! এরা আমাকে যার প্রতি আহবান করছে তা অপেক্ষা কারাগার আমার নিকট অধিক প্রিয়। আপনি যদি তাদের ছলনা হতে আমাকে রক্ষা না করেন, তবে আমি তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ব এবং অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব। (সূরা ইউসুফ- ৩২, ৩৩)
অসীম সাহসী হওয়া :
فَاُلْقِيَ السَّحَرَةُ سُجَّدًا قَالُوْاۤ اٰمَنَّا بِرَبِّ هَارُوْنَ وَمُوْسٰى ‐ قَالَ اٰمَنْتُمْ لَهٗ قَبْلَ اَنْ اٰذَنَ لَكُمْؕ اِنَّهٗ لَكَبِيْرُكُمُ الَّذِيْ عَلَّمَكُمُ السِّحْرَۚ فَلَاُقَطِّعَنَّ اَيْدِيَكُمْ وَاَرْجُلَكُمْ مِّنْ خِلَافٍ وَّلَاُصَلِّبَنَّكُمْ فِيْ جُذُوْعِ النَّخْلِ وَلَتَعْلَمُنَّ اَيُّنَاۤ اَشَدُّ عَذَابًا وَّاَبْقٰى ‐ قَالُوْا لَنْ نُّؤْثِرَكَ عَلٰى مَا جَآءَنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالَّذِيْ فَطَرَنَا فَاقْضِ مَاۤ اَنْتَ قَاضٍؕ اِنَّمَا تَقْضِيْ هٰذِهِ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا ‐ اِنَّاۤ اٰمَنَّا بِرَبِّنَا لِيَغْفِرَ لَنَا خَطَايَانَا وَمَاۤ اَكْرَهْتَنَا عَلَيْهِ مِنَ السِّحْرِؕ وَاللهُ خَيْرٌ وَّاَبْقٰى
অতঃপর যাদুকররা সিজদায় লুটিয়ে পড়ল এবং বলল, আমরা হারূন ও মূসার প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনয়ন করলাম। তখন ফিরাউন বলল, ‘কী ব্যাপার, আমি তোমাদেরকে অনুমতি দেয়ার পূর্বেই তোমরা তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলে? (আমি দেখতে পাচ্ছি যে) আসলে সে-ই হচ্ছে তোমাদের প্রধান গুরু, যে তোমাদেরকে যাদু শিক্ষা দিয়েছে। সুতরাং আমি তোমাদের হাত-পা বিপরীত দিক হতে কর্তন করবই এবং তোমাদেরকে খেজুর বৃক্ষের কান্ডে শূলবিদ্ধ করবই। ফলে অবশ্যই তোমরা জানতে পারবে যে, আমাদের মধ্যে কার শাস্তি কঠোরতর ও অধিক স্থায়ী। অতঃপর তারা বলল, আমাদের নিকট যে স্পষ্ট নিদর্শন এসেছে তার উপর এবং যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর উপর তোমাকে আমরা কিছুতেই প্রাধান্য দেব না। সুতরাং তুমি যা ইচ্ছা করতে পার। তুমি তো কেবল এ পার্থিব জীবনের উপর কর্তৃত্ব করতে পার। নিশ্চয় আমরা আমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান এনেছি, যাতে তিনি আমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দেন এবং তুমি আমাদেরকে যে যাদু করতে বাধ্য করেছ তা হতেও ক্ষমা করে দেন। আর আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ ও স্থায়ী। (সূরা ত্বা-হা, ৭০-৭৩)
পরস্পর ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ থাকা :
اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ اِخْوَةٌ فَاَصْلِحُوْا بَيْنَ اَخَوَيْكُمْ وَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ
নিশ্চয় মুমিনরা একে অপরের ভাইস্বরূপ। তাই তোমাদের ভাইদের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপন করে দাও। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো; আশা করা যায়, তোমাদের উপর দয়া করা হবে। (সূরা হুজুরাত- ১০)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতটি দুনিয়ার সকল মুসলিমকে এক বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে। দুনিয়ার অন্য কোন আদর্শ বা মত ও পথের অনুসারীদের মধ্যে এমন কোন ভ্রাতৃত্ববন্ধন পাওয়া যায় না, যা মুসলিমদের মধ্যে পাওয়া যায়। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) ও আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার উপর যুলুম করবে না, তাকে সহযোগিতা করা পরিত্যাগ করবে না এবং তাকে লাঞ্ছিত ও হেয় করবে না। কোন ব্যক্তির জন্য তার কোন মুসলিম ভাইকে হেয় ও তুচ্ছ জ্ঞান করার মতো অপকর্ম আর নেই। (সহীহ মুসলিম, হা/৬৭০৬) সাহল ইবনে সা’দ সায়েদী (রাঃ) নবী ﷺ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ঈমানদারদের সাথে একজন ঈমানদারের সম্পর্ক ঠিক তেমন, যেমন দেহের সাথে মাথার সম্পর্ক। সে ঈমানদারদের প্রতিটি দুঃখ-কষ্ট ঠিক তেমন অনুভব করে যেমন মাথা দেহের প্রতিটি অংশের ব্যথা অনুভব করে। (সহীহ বুখারী, হা/৬০১১) নবী ﷺ আরো বলেন, ‘‘মুমিনগণ পরস্পরের জন্য একই প্রাচীরের ইটের মতো একে অপরের থেকে শক্তিলাভ করে থাকে।’’ (সহীহ বুখারী, হা/৪৮১; সহীহ মুসলিম, হা/৬৭৫০)
ঈমানের দাবী অনুযায়ী কাজ করা :
وَالْمُؤْمِنُوْنَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍ يَّاْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَيُطِيْعُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗؕ اُولٰٓئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللهُؕ اِنَّ اللهَ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
মুমিন নর ও মুমিন নারী একে অপরের বন্ধু, এরা সৎকার্যের নির্দেশ দেয় এবং অসৎকার্য হতে নিষেধ করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে; অচিরেই আল্লাহ এদেরকে দয়া প্রদর্শন করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা- ৭১)
ব্যাখ্যা : পরকালীন জীবনে তাদের জান্নাত লাভ করাটা এমন ঈমানের ফল নয়, যার অর্থ নিছক বিশ্বাস করা। বরং এটি এমন ঈমানের ফল, যা চরিত্র ও কর্মকান্ডের পরিচালক শক্তিতে শক্তিশালী সৎকাজে উদ্বুদ্ধ করে। যে ব্যক্তি ঈমান এনেও বেঈমানের মতো জীবন-যাপন করে সে আল্লাহর উপর ঈমান আনয়নের পর সৎকর্মশীল হয়ে জীবন-যাপনকারীর মতো পুরস্কার পাওয়ার আশা করতে পারে না।
ঈমানকে শিরক থেকে পবিত্র রাখা :
اَلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَلَمْ يَلْبِسُوْاۤ اِيْمَانَهُمْ بِظُلْمٍ اُولٰٓئِكَ لَهُمُ الْاَ مْنُ وَهُمْ مُّهْتَدُوْنَ
যারা ঈমান এনেছে এবং নিজেদের ঈমানকে যুলুম দ্বারা কলুষিত করেনি, তাদের জন্য রয়েছে নিরাপত্তা। আর তারাই হচ্ছে প্রকৃত হেদায়াতপ্রাপ্ত। (সূরা আন‘আম- ৮২)
ব্যাখ্যা : এখানে যুলুম বলতে শিরককে বুঝানো হয়েছে। সুতরাং এ আয়াতের মর্মার্থ হলো, যারা আল্লাহকে মেনে নেবে এবং কোন প্রকার শিরকী বিশ্বাস ও কর্মের অনুপ্রবেশ ঘটাবে না। নিরাপত্তা ও প্রশান্তি একমাত্র তারাই লাভ করবে এবং একমাত্র তারাই সরল পথে প্রতিষ্ঠিত থাকবে।
ঈমানকে সন্দেহমুক্ত রাখা :
اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِه ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوْا وَجَاهَدُوْا بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِؕ اُولٰٓئِكَ هُمُ الصَّادِقُوْنَ
তারাই সত্যিকার মুমিন, যারা আল্লাহ ও রাসূলের উপর ঈমান আনয়ন করেছে, এরপর এতে কোন সন্দেহ পোষণ করেনি এবং আল্লাহর পথে তাদের জান ও মাল দ্বারা জিহাদ করেছে। প্রকৃতপক্ষে এরাই সত্যবাদী। (সূরা হুজুরাত- ১৫)
মুনাফিকী থেকে দূরে থাকা :
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّقُوْلُ اٰمَنَّا بِاللهِ وَبِالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَمَا هُمْ بِمُؤْمِنِيْنَ
মানুষের মধ্যে এমন লোকও আছে যারা বলে- আমরা আল্লাহর উপর এবং বিচার দিনের উপর ঈমান আনয়ন করেছি; অথচ তারা মোটেই ঈমানদার নয়। (সূরা বাক্বারা- ৮)
পাকাপোক্ত ঈমানদার হওয়া :
قَالَتِ الْاَعْرَابُ اٰمَنَّاؕ قُلْ لَّمْ تُؤْمِنُوْا وَلٰكِنْ قُوْلُوْاۤ اَسْلَمْنَا وَلَمَّا يَدْخُلِ الْاِيْمَانُ فِيْ قُلُوْبِكُمْ
মরুবাসীরা বলে, আমরা ঈমান আনয়ন করেছি। বলো, (প্রকৃতপক্ষে) তোমরা ঈমান আনয়ন করনি; বরং তোমরা বলো, আমরা অনুগত হয়েছি। (কেননা) এখনো তোমাদের অন্তরে ঈমান প্রবেশ করেনি। (সূরা হুজুরাত- ১৪)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার অর্থ শুধুমাত্র ‘আল্লাহ আছেন’ এ কথা মেনে নেয়া নয়। বরং এর অর্থ হচ্ছে, আল্লাহকে একমাত্র ইলাহ্ ও রব হিসেবে মেনে নেয়া এবং তাঁর সত্তা, গুণাবলি, অধিকার ও ক্ষমতায় কাউকে শরীক না করা। আর আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার অর্থ হচ্ছে, মরে যাওয়ার পর আমাদেরকে আবারও উঠানো হবে- এ কথার স্বীকৃতি দেয়া এবং এ কথাও মেনে নেয়া যে, সেখানে কোন তাদবীর কাজে আসবে না, কেউ কারো পাপের কাফ্ফারা হবে না। আল্লাহর আদালতে ইনসাফ হবে সম্পূর্ণ পক্ষপাতহীন এবং মানুষের ঈমান ও আমল ছাড়া সেখানে আর কোন জিনিসেরই মূল্য থাকবে না।
মসজিদ আবাদ করা :
اِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللهِ مَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَاَقَامَ الصَّلَاةَ وَاٰتَى الزَّكَاةَ وَلَمْ يَخْشَ اِلَّا اللهَ ؕ فَعَسٰۤى اُولٰٓئِكَ اَنْ يَّكُوْنُوْا مِنَ الْمُهْتَدِيْنَ
তারাই তো আল্লাহর মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করবে, যারা আল্লাহর প্রতি ও আখিরাতের প্রতি ঈমান আনয়ন করবে। আর তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় করবে না। অতএব আশা করা যায়, তারা সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা তাওবা- ১৮)
ঈমানের উপর অটল থাকা :
اِنَّ الَّذِيْنَ قَالُوْا رَبُّنَا اللهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوْا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَآئِكَةُ اَلَّا تَخَافُوْا وَلَا تَحْزَنُوْا وَاَبْشِرُوْا بِالْجَنَّةِ الَّتِيْ كُنْتُمْ تُوْعَدُوْنَ – نَحْنُ اَوْلِيَآؤُكُمْ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِى الْاٰخِرَةِۚ وَلَكُمْ فِيْهَا مَا تَشْتَهِيْۤ اَنْفُسُكُمْ وَلَكُمْ فِيْهَا مَا تَدَّعُوْنَ – نُزُلًا مِّنْ غَفُوْرٍ رَّحِيْمٍ
নিশ্চয় যারা বলে, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, অতঃপর অবিচল থাকে, তাদের নিকট ফেরেশতারা অবতীর্ণ হয়ে বলে- তোমরা ভীত হয়ো না এবং চিন্তিতও হয়ো না; বরং তোমাদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল তার সুসংবাদ পেয়ে আনন্দিত হও। দুনিয়ার জীবনে ও আখিরাতে আমরাই তোমাদের বন্ধু। সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে যা কিছু তোমাদের মন চায় এবং সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে যা তোমাদেরকে ওয়াদা দেয়া হয়েছে। এটা হলো ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ হতে আপ্যায়ন। (সূরা হা-মীম সাজদা, ৩০-৩২)
ব্যাখ্যা : যারা এ সুসংবাদ পেয়েছে তারা আল্লাহকে কেবল রব বলে ঘোষণা করে থেমে যায়নি এবং তার সাথে অন্য কাউকে রব হিসেবেও গ্রহণ করেনি, আর এর সাথে কোন ভ্রান্ত আকীদার সংমিশ্রণও ঘটায়নি। বরং এ আকীদা পোষণ করার পর সারা জীবন তার উপর প্রতিষ্ঠিত থেকেছে, তার পরিপন্থী অন্য সকল আকীদা প্রত্যাখান করেছে এবং নিজের কর্মজীবনে তাওহীদের দাবীসমূহও পূরণ করেছে।
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّتَّخِذُ مِنْ دُوْنِ اللهِ اَنْدَادًا يُّحِبُّوْنَهُمْ كَحُبِّ اللهِؕ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا اَشَدُّ حُبًّا لِّلّٰهِ
মানুষের মধ্যে কিছু লোক এমনও রয়েছে, যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্য কিছুকে তাঁর সমকক্ষ হিসেবে গ্রহণ করে। তারা তাদেরকে তেমনি ভালোবাসে যেমনটি কেবল আল্লাহকেই ভালোবাসা উচিত। আর যারা (সত্যিকার অর্থে) আল্লাহর উপর ঈমান আনয়ন করে, তারা তো তাঁকেই সর্বাধিক ভালোবাসবে। (সূরা বাক্বারা- ১৬৫)
ব্যাখ্যা : এটা ঈমানের দাবী। একজন ঈমানদারের কাছে আল্লাহর সন্তুষ্টি অন্যসব সন্তুষ্টির উপর অগ্রাধিকার লাভ করবে। তার মধ্যে কোনকিছুর প্রতি ভালোবাসা আল্লাহর ভালোবাসার চেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করবে না।
দৃঢ় মনোবলের অধিকারী হওয়া :
وَلَا تَهِنُوْا وَلَا تَحْزَنُوْا وَاَنْتُمُ الْاَعْلَوْنَ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
আর তোমরা দুর্বল হয়ো না এবং চিন্তিতও হয়ো না; যদি তোমরা মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত হও, তবে তোমরাই বিজয়ী হবে। (সূরা আলে ইমরান- ১৩৯)
وَكَاَيِّنْ مِّنْ نَّبِيٍّ قَاتَلَ مَعَهٗ رِبِّيُّوْنَ كَثِيْرٌۚ فَمَا وَهَنُوْا لِمَاۤ اَصَابَهُمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَمَا ضَعُفُوْا وَمَا اسْتَكَانُوْاؕ وَاللهُ يُحِبُّ الصَّابِرِيْنَ
এমন অনেক নবী ছিলেন, যাদের সহযোগে আল্লাহভক্ত লোকেরা যুদ্ধ করেছিল। অতঃপর আল্লাহর পথে যা সংঘটিত হয়েছিল তাতে তারা নিরুৎসাহিত হয়নি, শক্তিহীন হয়নি এবং বিচলিতও হয়নি। আর আল্লাহ ধৈর্যশীলদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৪৬)
বাতিলের হুমকিকে ভয় না করা :
اَ لَّذِيْنَ قَالَ لَهُمُ النَّاسُ اِنَّ النَّاسَ قَدْ جَمَعُوْا لَكُمْ فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ اِيْمَانًا وَّقَالُوْا حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الْوَكِيْلُ
লোকেরা যাদেরকে বলেছিল, নিশ্চয় তোমাদের বিরুদ্ধে লোকজন সমবেত হয়েছে; অতএব তোমরা তাদেরকে ভয় করো। কিন্তু এতে তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং তারা বলেছিল, আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট। আর তিনি কতই না মঙ্গলময় কর্মবিধায়ক। (সূরা আলে ইমরান- ১৭৩)
আল্লাহর উপর দৃঢ় আস্থা রাখা :
فَلَمَّا تَرَآءَ الْجَمْعَانِ قَالَ اَصْحَابُ مُوْسٰۤى اِنَّا لَمُدْرَكُوْنَ ‐ قَالَ كَلَّاۚ اِنَّ مَعِيَ رَبِّيْ سَيَهْدِيْنِ
অতঃপর যখন দু’টি দল পরস্পরকে দেখল তখন মূসার সঙ্গীরা বলল, আমরা তো ধরা পড়ে গেলাম! মূসা বলল, কখনই নয়! নিশ্চয় আমার প্রতিপালক আমার সঙ্গেই রয়েছেন; অচিরেই তিনি আমাকে পথনির্দেশ করবেন। (সূরা শু‘আরা- ৬১, ৬২)
اِلَّا تَنْصُرُوْهُ فَقَدْ نَصَرَهُ اللهُ اِذْ اَخْرَجَهُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا ثَانِيَ اثْنَيْنِ اِذْ هُمَا فِى الْغَارِ اِذْ يَقُوْلُ لِصَاحِبِه لَا تَحْزَنْ اِنَّ اللهَ مَعَنَا
যদি তোমরা তাঁকে (নবীকে) সাহায্য না কর, তবে আল্লাহ তো তাকে সাহায্য করেছিলেন যখন কাফিররা তাকে বহিষ্কার করেছিল। আর তিনি ছিলেন দু’জনের দ্বিতীয়জন- যখন তারা উভয়ে (একটি) গুহার মধ্যে অবস্থান করছিল তখন তিনি তার সঙ্গীকে বলেছিলেন, চিন্তিত হয়ো না; নিশ্চয় আল্লাহ আমাদের সঙ্গেই রয়েছেন। (সূরা তাওবা- ৪০)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ যখন জানতে পারলেন যে, মক্কার কাফিররা তাঁকে হত্যা করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে, তখন শুধুমাত্র আবু বকর (রাঃ) কে সাথে নিয়ে তিনি মক্কা থেকে বের হয়ে পড়লেন। শত্রুরা তাঁকে চারদিকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল, এমনকি যে গুহায় তিনি লুকিয়েছিলেন তাদের কয়েকজন সেখানেও পৌঁছে যায়। ফলে আবু বকর (রাঃ) ভীষণ ভয় পেয়ে গেলেন। কিন্তু নবী ﷺ একটুও বিচলিত না হয়ে আবু বকর (রাঃ) কে এ বলে সান্ত্বনা দিলেন যে, ‘‘চিন্তিত হয়ো না, মন খারাপ করো না; কেননা আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন।’’ এটা ছিল আল্লাহর প্রতি দৃঢ় আস্থার বহিঃপ্রকাশ।
ঈমান রক্ষার জন্য যে কোন কষ্ট স্বীকার করা :
قَالَتْ فَذٰلِكُنَّ الَّذِيْ لُمْتُنَّنِيْ فِيْهِؕ وَلَقَدْ رَاوَدْتُّهٗ عَنْ نَّفْسِه فَاسْتَعْصَمَؕ وَلَئِنْ لَّمْ يَفْعَلْ مَاۤ اٰمُرُه لَيُسْجَنَنَّ وَلَيَكُوْنًا مِّنَ الصَّاغِرِيْنَ ‐ قَالَ رَبِّ السِّجْنُ اَحَبُّ اِلَيَّ مِمَّا يَدْعُونَنِيْۤ اِلَيْهِۚ وَاِلَّا تَصْرِفْ عَنِّيْ كَيْدَهُنَّ اَصْبُ اِلَيْهِنَّ وَاَكُنْ مِّنَ الْجَاهِلِيْنَ
সে (বাদশাহর স্ত্রী) বলল, এ-ই সে যার সম্বন্ধে তোমরা আমার নিন্দা করেছ। আমি তো তার থেকে অসৎকর্ম কামনা করেছি। কিন্তু সে নিজেকে পবিত্র রেখেছে; আমি তাকে যা আদেশ করেছি সে যদি তা না করে, তবে সে কারারুদ্ধ হবে এবং হীনদের অন্তর্ভুক্ত হবে। তখন ইউসুফ বলল, হে আমার প্রতিপালক! এরা আমাকে যার প্রতি আহবান করছে তা অপেক্ষা কারাগার আমার নিকট অধিক প্রিয়। আপনি যদি তাদের ছলনা হতে আমাকে রক্ষা না করেন, তবে আমি তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ব এবং অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব। (সূরা ইউসুফ- ৩২, ৩৩)
অসীম সাহসী হওয়া :
فَاُلْقِيَ السَّحَرَةُ سُجَّدًا قَالُوْاۤ اٰمَنَّا بِرَبِّ هَارُوْنَ وَمُوْسٰى ‐ قَالَ اٰمَنْتُمْ لَهٗ قَبْلَ اَنْ اٰذَنَ لَكُمْؕ اِنَّهٗ لَكَبِيْرُكُمُ الَّذِيْ عَلَّمَكُمُ السِّحْرَۚ فَلَاُقَطِّعَنَّ اَيْدِيَكُمْ وَاَرْجُلَكُمْ مِّنْ خِلَافٍ وَّلَاُصَلِّبَنَّكُمْ فِيْ جُذُوْعِ النَّخْلِ وَلَتَعْلَمُنَّ اَيُّنَاۤ اَشَدُّ عَذَابًا وَّاَبْقٰى ‐ قَالُوْا لَنْ نُّؤْثِرَكَ عَلٰى مَا جَآءَنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالَّذِيْ فَطَرَنَا فَاقْضِ مَاۤ اَنْتَ قَاضٍؕ اِنَّمَا تَقْضِيْ هٰذِهِ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا ‐ اِنَّاۤ اٰمَنَّا بِرَبِّنَا لِيَغْفِرَ لَنَا خَطَايَانَا وَمَاۤ اَكْرَهْتَنَا عَلَيْهِ مِنَ السِّحْرِؕ وَاللهُ خَيْرٌ وَّاَبْقٰى
অতঃপর যাদুকররা সিজদায় লুটিয়ে পড়ল এবং বলল, আমরা হারূন ও মূসার প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনয়ন করলাম। তখন ফিরাউন বলল, ‘কী ব্যাপার, আমি তোমাদেরকে অনুমতি দেয়ার পূর্বেই তোমরা তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলে? (আমি দেখতে পাচ্ছি যে) আসলে সে-ই হচ্ছে তোমাদের প্রধান গুরু, যে তোমাদেরকে যাদু শিক্ষা দিয়েছে। সুতরাং আমি তোমাদের হাত-পা বিপরীত দিক হতে কর্তন করবই এবং তোমাদেরকে খেজুর বৃক্ষের কান্ডে শূলবিদ্ধ করবই। ফলে অবশ্যই তোমরা জানতে পারবে যে, আমাদের মধ্যে কার শাস্তি কঠোরতর ও অধিক স্থায়ী। অতঃপর তারা বলল, আমাদের নিকট যে স্পষ্ট নিদর্শন এসেছে তার উপর এবং যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর উপর তোমাকে আমরা কিছুতেই প্রাধান্য দেব না। সুতরাং তুমি যা ইচ্ছা করতে পার। তুমি তো কেবল এ পার্থিব জীবনের উপর কর্তৃত্ব করতে পার। নিশ্চয় আমরা আমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান এনেছি, যাতে তিনি আমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দেন এবং তুমি আমাদেরকে যে যাদু করতে বাধ্য করেছ তা হতেও ক্ষমা করে দেন। আর আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ ও স্থায়ী। (সূরা ত্বা-হা, ৭০-৭৩)
পরস্পর ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ থাকা :
اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ اِخْوَةٌ فَاَصْلِحُوْا بَيْنَ اَخَوَيْكُمْ وَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ
নিশ্চয় মুমিনরা একে অপরের ভাইস্বরূপ। তাই তোমাদের ভাইদের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপন করে দাও। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো; আশা করা যায়, তোমাদের উপর দয়া করা হবে। (সূরা হুজুরাত- ১০)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতটি দুনিয়ার সকল মুসলিমকে এক বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে। দুনিয়ার অন্য কোন আদর্শ বা মত ও পথের অনুসারীদের মধ্যে এমন কোন ভ্রাতৃত্ববন্ধন পাওয়া যায় না, যা মুসলিমদের মধ্যে পাওয়া যায়। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) ও আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার উপর যুলুম করবে না, তাকে সহযোগিতা করা পরিত্যাগ করবে না এবং তাকে লাঞ্ছিত ও হেয় করবে না। কোন ব্যক্তির জন্য তার কোন মুসলিম ভাইকে হেয় ও তুচ্ছ জ্ঞান করার মতো অপকর্ম আর নেই। (সহীহ মুসলিম, হা/৬৭০৬) সাহল ইবনে সা’দ সায়েদী (রাঃ) নবী ﷺ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ঈমানদারদের সাথে একজন ঈমানদারের সম্পর্ক ঠিক তেমন, যেমন দেহের সাথে মাথার সম্পর্ক। সে ঈমানদারদের প্রতিটি দুঃখ-কষ্ট ঠিক তেমন অনুভব করে যেমন মাথা দেহের প্রতিটি অংশের ব্যথা অনুভব করে। (সহীহ বুখারী, হা/৬০১১) নবী ﷺ আরো বলেন, ‘‘মুমিনগণ পরস্পরের জন্য একই প্রাচীরের ইটের মতো একে অপরের থেকে শক্তিলাভ করে থাকে।’’ (সহীহ বুখারী, হা/৪৮১; সহীহ মুসলিম, হা/৬৭৫০)
ঈমানের দাবী অনুযায়ী কাজ করা :
وَالْمُؤْمِنُوْنَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍ يَّاْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَيُطِيْعُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗؕ اُولٰٓئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللهُؕ اِنَّ اللهَ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
মুমিন নর ও মুমিন নারী একে অপরের বন্ধু, এরা সৎকার্যের নির্দেশ দেয় এবং অসৎকার্য হতে নিষেধ করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে; অচিরেই আল্লাহ এদেরকে দয়া প্রদর্শন করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা- ৭১)
ব্যাখ্যা : পরকালীন জীবনে তাদের জান্নাত লাভ করাটা এমন ঈমানের ফল নয়, যার অর্থ নিছক বিশ্বাস করা। বরং এটি এমন ঈমানের ফল, যা চরিত্র ও কর্মকান্ডের পরিচালক শক্তিতে শক্তিশালী সৎকাজে উদ্বুদ্ধ করে। যে ব্যক্তি ঈমান এনেও বেঈমানের মতো জীবন-যাপন করে সে আল্লাহর উপর ঈমান আনয়নের পর সৎকর্মশীল হয়ে জীবন-যাপনকারীর মতো পুরস্কার পাওয়ার আশা করতে পারে না।
ঈমানকে শিরক থেকে পবিত্র রাখা :
اَلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَلَمْ يَلْبِسُوْاۤ اِيْمَانَهُمْ بِظُلْمٍ اُولٰٓئِكَ لَهُمُ الْاَ مْنُ وَهُمْ مُّهْتَدُوْنَ
যারা ঈমান এনেছে এবং নিজেদের ঈমানকে যুলুম দ্বারা কলুষিত করেনি, তাদের জন্য রয়েছে নিরাপত্তা। আর তারাই হচ্ছে প্রকৃত হেদায়াতপ্রাপ্ত। (সূরা আন‘আম- ৮২)
ব্যাখ্যা : এখানে যুলুম বলতে শিরককে বুঝানো হয়েছে। সুতরাং এ আয়াতের মর্মার্থ হলো, যারা আল্লাহকে মেনে নেবে এবং কোন প্রকার শিরকী বিশ্বাস ও কর্মের অনুপ্রবেশ ঘটাবে না। নিরাপত্তা ও প্রশান্তি একমাত্র তারাই লাভ করবে এবং একমাত্র তারাই সরল পথে প্রতিষ্ঠিত থাকবে।
ঈমানকে সন্দেহমুক্ত রাখা :
اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِه ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوْا وَجَاهَدُوْا بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِؕ اُولٰٓئِكَ هُمُ الصَّادِقُوْنَ
তারাই সত্যিকার মুমিন, যারা আল্লাহ ও রাসূলের উপর ঈমান আনয়ন করেছে, এরপর এতে কোন সন্দেহ পোষণ করেনি এবং আল্লাহর পথে তাদের জান ও মাল দ্বারা জিহাদ করেছে। প্রকৃতপক্ষে এরাই সত্যবাদী। (সূরা হুজুরাত- ১৫)
মুনাফিকী থেকে দূরে থাকা :
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّقُوْلُ اٰمَنَّا بِاللهِ وَبِالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَمَا هُمْ بِمُؤْمِنِيْنَ
মানুষের মধ্যে এমন লোকও আছে যারা বলে- আমরা আল্লাহর উপর এবং বিচার দিনের উপর ঈমান আনয়ন করেছি; অথচ তারা মোটেই ঈমানদার নয়। (সূরা বাক্বারা- ৮)
পাকাপোক্ত ঈমানদার হওয়া :
قَالَتِ الْاَعْرَابُ اٰمَنَّاؕ قُلْ لَّمْ تُؤْمِنُوْا وَلٰكِنْ قُوْلُوْاۤ اَسْلَمْنَا وَلَمَّا يَدْخُلِ الْاِيْمَانُ فِيْ قُلُوْبِكُمْ
মরুবাসীরা বলে, আমরা ঈমান আনয়ন করেছি। বলো, (প্রকৃতপক্ষে) তোমরা ঈমান আনয়ন করনি; বরং তোমরা বলো, আমরা অনুগত হয়েছি। (কেননা) এখনো তোমাদের অন্তরে ঈমান প্রবেশ করেনি। (সূরা হুজুরাত- ১৪)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার অর্থ শুধুমাত্র ‘আল্লাহ আছেন’ এ কথা মেনে নেয়া নয়। বরং এর অর্থ হচ্ছে, আল্লাহকে একমাত্র ইলাহ্ ও রব হিসেবে মেনে নেয়া এবং তাঁর সত্তা, গুণাবলি, অধিকার ও ক্ষমতায় কাউকে শরীক না করা। আর আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার অর্থ হচ্ছে, মরে যাওয়ার পর আমাদেরকে আবারও উঠানো হবে- এ কথার স্বীকৃতি দেয়া এবং এ কথাও মেনে নেয়া যে, সেখানে কোন তাদবীর কাজে আসবে না, কেউ কারো পাপের কাফ্ফারা হবে না। আল্লাহর আদালতে ইনসাফ হবে সম্পূর্ণ পক্ষপাতহীন এবং মানুষের ঈমান ও আমল ছাড়া সেখানে আর কোন জিনিসেরই মূল্য থাকবে না।
মসজিদ আবাদ করা :
اِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللهِ مَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَاَقَامَ الصَّلَاةَ وَاٰتَى الزَّكَاةَ وَلَمْ يَخْشَ اِلَّا اللهَ ؕ فَعَسٰۤى اُولٰٓئِكَ اَنْ يَّكُوْنُوْا مِنَ الْمُهْتَدِيْنَ
তারাই তো আল্লাহর মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করবে, যারা আল্লাহর প্রতি ও আখিরাতের প্রতি ঈমান আনয়ন করবে। আর তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় করবে না। অতএব আশা করা যায়, তারা সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা তাওবা- ১৮)
ঈমানের উপর অটল থাকা :
اِنَّ الَّذِيْنَ قَالُوْا رَبُّنَا اللهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوْا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَآئِكَةُ اَلَّا تَخَافُوْا وَلَا تَحْزَنُوْا وَاَبْشِرُوْا بِالْجَنَّةِ الَّتِيْ كُنْتُمْ تُوْعَدُوْنَ – نَحْنُ اَوْلِيَآؤُكُمْ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِى الْاٰخِرَةِۚ وَلَكُمْ فِيْهَا مَا تَشْتَهِيْۤ اَنْفُسُكُمْ وَلَكُمْ فِيْهَا مَا تَدَّعُوْنَ – نُزُلًا مِّنْ غَفُوْرٍ رَّحِيْمٍ
নিশ্চয় যারা বলে, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, অতঃপর অবিচল থাকে, তাদের নিকট ফেরেশতারা অবতীর্ণ হয়ে বলে- তোমরা ভীত হয়ো না এবং চিন্তিতও হয়ো না; বরং তোমাদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল তার সুসংবাদ পেয়ে আনন্দিত হও। দুনিয়ার জীবনে ও আখিরাতে আমরাই তোমাদের বন্ধু। সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে যা কিছু তোমাদের মন চায় এবং সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে যা তোমাদেরকে ওয়াদা দেয়া হয়েছে। এটা হলো ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ হতে আপ্যায়ন। (সূরা হা-মীম সাজদা, ৩০-৩২)
ব্যাখ্যা : যারা এ সুসংবাদ পেয়েছে তারা আল্লাহকে কেবল রব বলে ঘোষণা করে থেমে যায়নি এবং তার সাথে অন্য কাউকে রব হিসেবেও গ্রহণ করেনি, আর এর সাথে কোন ভ্রান্ত আকীদার সংমিশ্রণও ঘটায়নি। বরং এ আকীদা পোষণ করার পর সারা জীবন তার উপর প্রতিষ্ঠিত থেকেছে, তার পরিপন্থী অন্য সকল আকীদা প্রত্যাখান করেছে এবং নিজের কর্মজীবনে তাওহীদের দাবীসমূহও পূরণ করেছে।
সত্যিকার মুমিনের পরিচয় :
اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ اِذَا ذُكِرَ اللهُ وَجِلَتْ قُلُوْبُهُمْ وَاِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ اٰيَاتُهٗ زَادَتْهُمْ اِيْمَانًا وَّعَلٰى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ ‐ اَلَّذِيْنَ يُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ ‐ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُوْنَ حَقًّاؕ لَهُمْ دَرَجَاتٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَمَغْفِرَةٌ وَّرِزْقٌ كَرِيْمٌ
নিশ্চয় মুমিন তো তারাই যাদের হৃদয় আল্লাহর স্মরণে কম্পিত হয় এবং তাদের সামনে তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হলে তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পায়। আর তারা তাদের প্রতিপালকের উপরই নির্ভর করে থাকে। যারা সালাত কায়েম করে এবং আমি যা দিয়েছি তা হতে ব্যয় করে; তারাই প্রকৃত মুমিন। তাদের প্রতিপালকের নিকট তাদেরই জন্য রয়েছে মর্যাদা, ক্ষমা এবং সম্মানজনক জীবিকা। (সূরা আনফাল, ২-৪)
মুমিনের কয়েকটি গুণাবলি :
اِنَّ الْمُسْلِمِيْنَ وَالْمُسْلِمَاتِ وَالْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْقَانِتِيْنَ وَالْقَانِتَاتِ وَالصَّادِقِيْنَ وَالصَّادِقَاتِ وَالصَّابِرِيْنَ وَالصَّابِرَاتِ وَالْخَاشِعِيْنَ وَالْخَاشِعَاتِ وَالْمُتَصَدِّقِيْنَ وَالْمُتَصَدِّقَاتِ وَالصَّآئِمِيْنَ وَالصَّآئِمَاتِ وَالْحَافِظِيْنَ فُرُوْجَهُمْ وَالْحَافِظَاتِ وَالذَّاكِرِيْنَ اللهَ كَثِيْرًا وَّالذَّاكِرَاتِ اَعَدَّ اللهُ لَهُمْ مَّغْفِرَةً وَاَجْرًا عَظِيْمًا
নিশ্চয় মুসলিম পুরুষ ও মুসলিম নারী, মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী, বিনয়ী পুরুষ ও বিনয়ী নারী, দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, রোযাদার পুরুষ ও রোযাদার নারী, স্বীয় লজ্জাস্থান হেফাজতকারী পুরুষ ও স্বীয় লজ্জাস্থান হেফাজতকারী নারী এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও অধিক স্মরণকারী নারী- এদের জন্য আল্লাহ ক্ষমা ও বিরাট প্রতিদান প্রস্তুত করে রেখেছেন। (সূরা আহযাব- ৩৫)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর নিকট কোন্ কোন্ গুণাবলিকে আসল মূল্য ও মর্যাদা দেয়া হয় এ আয়াতে তা বলে দেয়া হয়েছে। এগুলো ইসলামের মৌলিক মূল্যবোধ। একটি বাক্যে এগুলোকে একত্রে সংযোজিত করে দেয়া হয়েছে। এ মূল্যবোধগুলোর ক্ষেত্রে পুরুষ ও নারীর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। উভয় দলের কর্মক্ষেত্র আলাদা; কিন্তু এসব গুণাবলি যদি উভয়ের মধ্যে সমান থাকে তাহলে আল্লাহর কাছে উভয়ের মর্যাদা সমান এবং উভয়ের প্রতিদানও সমান হবে।
মুমিন : যারা নিজেদের জন্য ইসলামকে জীবনবিধান হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে এবং জীবন-যাপনের ক্ষেত্রে এ বিধানের অনুসারী হওয়ার ব্যাপারে স্থির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। অন্য কথায়, যাদের মধ্যে ইসলাম প্রদত্ত জীবনধারার বিরুদ্ধে কোন রকমের বিরোধিতা নেই। বরং তারা তার পরিপূর্ণ আনুগত্য ও অনুসরণের পথ অবলম্বন করেছে। যাদের এ আনুগত্য বাহ্যিক নয় বরং মন থেকেই তারা ইসলামের নেতৃত্বকে সত্য বলে মেনে নিয়েছে। চিন্তা ও কর্মের যে পথ কুরআন ও মুহাম্মাদ ﷺ দেখিয়েছেন, সেটিই সোজা ও সঠিক পথ এবং তারই অনুসরণের মধ্যে প্রকৃত সাফল্য নিহিত, এটিই তাদের ঈমান। যে জিনিসকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভুল বলে দিয়েছেন তারা সেটাকে ভুল মনে করে। আর যাকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ সত্য বলে দিয়েছেন তাদের নিজেদের মন-মস্তিষ্কও তাকে সত্য বলে নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করে।
মুসলিম : যারা আল্লাহকে মেনে নিয়ে বসে থাকার লোক নয়, বরং তারা কার্যত আনুগত্যকারী। তাদের অবস্থা এমন নয় যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যে কাজের হুকুম দিয়েছেন তাকে সত্য বলে মেনে নেবে কিন্তু কার্যত তার বিরুদ্ধাচরণ করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যেসব কাজ করতে নিষেধ করেছেন সেগুলোকে খারাপ মনে করবে কিন্তু নিজেরা সেগুলোই করে যেতে থাকবে।
সত্যবাদী : যারা নিজেদের কথায় যেমন সত্য তেমনি ব্যবহারিক কার্যকলাপেও সত্য। মিথ্যা, প্রতারণা, অসৎ উদ্দেশ্য ও ছলনা তাদের জীবনে পাওয়া যায় না। তাদের বিবেক যা সত্য বলে জানে মুখে তারা তাই উচ্চারণ করে। যে কাজ সত্য ও সততা অনুযায়ী হয়, সেই কাজই তারা করে থাকে। যার সাথেই তারা কোন কাজ করে বিশ্বস্ততা ও ঈমানদারীর সাথেই করে।
ধৈর্যশীল : আল্লাহ ও তাঁর রাসূল নির্দেশিত সোজা সত্য পথে চলার এবং আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করার পথে যেসব বাধা ও বিপদ আসে এবং যে সমস্ত ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়, দৃঢ়ভাবে তারা তার মুকাবিলা করে। কোন খারাপ লোক বা প্রবৃত্তির কামনা তাদেরকে সোজা পথ থেকে সরিয়ে দিতে পারে না।
দানশীল : তারা আল্লাহর পথে উন্মুক্ত হৃদয়ে নিজেদের অর্থ ব্যয় করে। আল্লাহর বান্দাদের সাহায্য করার ব্যাপারে নিজেদের সামর্থ্যানুযায়ী প্রচেষ্টা চালাতে তারা ত্রুটি করে না। কোন ইয়াতীম, রুগ্ন, বিপদাপন্ন, দুর্বল, অক্ষম ও অভাবী ব্যক্তি সাহায্যের সম্মুখীন হলে তারা বঞ্চিত করে না। আর তারা আল্লাহর দ্বীনকে সুউচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য অর্থ-সম্পদ ব্যয় করতে কখনো কার্পণ্য করে না।
লজ্জাস্থান হেফাজতকারী : এর দু’টি অর্থ হয়। একটি হচ্ছে, তারা যিনা থেকে দূরে থাকে এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে, তারা উলঙ্গপনাকে এড়িয়ে চলে। এর সাথে এটাও বুঝে নিতে হবে যে, শুধুমাত্র পোশাক না পরে উলঙ্গ হয়ে থাকাকে উলঙ্গপনা বলে না; বরং এমন ধরনের পোশাক পরাও উলঙ্গপনার অন্তর্ভুক্ত, যা এতটা সূক্ষ্ম হয় যে, তার মধ্য দিয়ে শরীর দেখা যায় অথবা এমন আঁটসাঁট হয়, যার ফলে দেহের উঁচু-নীচু অঙ্গ স্পষ্ট হয়ে উঠে।
আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী : আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করার অর্থ হচ্ছে, জীবনের সকল কাজকর্মে এমনকি সকল ব্যাপারেই সবসময় যেন মানুষের মুখে আল্লাহর নাম এসে যায়। মানুষের মনে আল্লাহর চিন্তা পুরোপুরি ও সর্বব্যাপী আসন গেঁড়ে না বসা পর্যন্ত এ ধরনের অবস্থা তার মধ্যে সৃষ্টি হয় না। মানুষের মনের গভীরে আল্লাহর চিন্তা ঢুকে যায় তখন তার অবস্থা এমন হয় যে, সে কোন কথা বললে বা কোন কাজ করলে তার মধ্যে আল্লাহর নাম অবশ্যই এসে যাবে। আল্লাহকে স্মরণ করে ঘুমাবে এবং ঘুম থেকে উঠেও আল্লাহর নাম নেবে। কথাবার্তায় তার মুখে বার বার بِسْمِ اللهِ (বিসমিল্লাহ), اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ (আলহামদুলিল্লাহ), إِنْشَاءَ اللهُ (ইনশাআল্লাহ), مَاشَاءَ اللهُ (মাশাআল্লাহ) এ ধরনের শব্দ ও বাক্য বার বার উচ্চারিত হতে থাকবে। প্রত্যেক কাজে বার বার আল্লাহর সাহায্য চাইবে। প্রত্যেকটি নিয়ামত লাভ করার পর আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। প্রত্যেকটি বিপদ আসার পর তাঁর রহমতের প্রত্যাশী হবে। কোন খারাপ কাজের সুযোগ এলে তাঁকে ভয় করবে। কোন ভুল বা অপরাধ করলে তাঁর কাছে ক্ষমা চাইবে। প্রত্যেকটি প্রয়োজন ও অভাবের মুহূর্তে তাঁর কাছে প্রার্থনা করবে। মোটকথা উঠতে-বসতে এবং দুনিয়ার সমস্ত কাজকর্মে সে আল্লাহকে স্মরণ করবে। এ জিনিসটি আসলে ইসলামী জীবনের প্রাণ। অন্য যে কোন ইবাদাতের জন্য কোন না কোন সময় নির্ধারিত থাকে এবং তখনই তা পালন করা হয়। আর তা পালন করার পর পরই মানুষ তা থেকে আলাদা হয়ে যায়। কিন্তু এ ইবাদাত তথা আল্লাহর যিকির সর্বক্ষণ জারী থাকে এবং এটিই আল্লাহর সাথে মানুষের জীবনের স্থায়ী সম্পর্ক জুড়ে রাখে।
মুমিনের বিশেষ কয়েকটি গুণ :
اَلتَّآئِبُوْنَ الْعَابِدُوْنَ الْحَامِدُوْنَ السَّآئِحُوْنَ الرَّاكِعُوْنَ السَّاجِدُوْنَ الْاٰمِرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَالنَّاهُوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَالْحَافِظُوْنَ لِحُدُوْدِ اللهِ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِيْنَ
তারা তাওবাকারী, ইবাদাতকারী, আল্লাহর প্রশংসাকারী, সিয়াম পালনকারী, রুকূকারী, সিজদাকারী, সৎকাজের নির্দেশদাতা, অসৎকাজ থেকে নিষেধকারী এবং আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা সংরক্ষণকারী; এসব মুমিনদেরকে তুমি সুসংবাদ দাও। (সূরা তাওবা- ১১২)
ব্যাখ্যা : اَلسَّآئِحُوْنَ (আসসা-ইহূন) : এর শাব্দিক অর্থ বিচরণকারী। রূপক অর্থে এর দ্বারা রোযা পালনকারীকে বুঝানো হয়। তবে এর প্রকৃত অর্থ হচ্ছে, এমন উদ্দেশ্যে জমিনে চলাফেরা করা, যা পবিত্র ও উন্নত এবং যার মধ্যে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্য নিহিত থাকে। যেমন দ্বীন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে জিহাদ করা, কুফর শাসিত এলাকা থেকে হিজরত করা, দ্বীনের দাওয়াত দেয়া, মানুষের চরিত্র সংশোধন করা, কল্যাণকর জ্ঞান অর্জন করা, আল্লাহর নিদর্শনসমূহ পর্যবেক্ষণ করা এবং হালাল জীবিকা উপার্জন করা। সত্যিকার মুমিন ঈমানের দাবী করার পর নিজের জায়গায় আরামে বসে থাকতে পারে না। সে আল্লাহর দ্বীন গ্রহণ করার পর তার উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য অবিচলভাবে দাঁড়িয়ে যায় এবং তার দাবী পূরণ করার জন্য সারা পৃথিবীব্যাপী অবিরাম প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম চালাতে থাকে।
اَلْحَافِظُوْنَ لِحُدُوْدِ اللهِ (আল হাফিযুনা লি হুদূদিল্লাহ) : আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা সংরক্ষণ করা; অর্থাৎ আকীদা-বিশ্বাস, ইবাদাত-বন্দেগী, নৈতিক চরিত্র, সমাজ-সংস্কৃতি, আইন-আদালত, অর্থনীতি, রাজনীতি এবং যুদ্ধ ও শান্তির ব্যাপারে যেসব সীমারেখা আল্লাহ নির্ধারণ করে দিয়েছেন, তারা তা পুরোপুরিভাবে মেনে চলে। আল্লাহর আইনের পরিবর্তে মনগড়া আইনের বা মানুষের তৈরি ভিন্নতর আইনকে জীবনবিধান হিসেবে গ্রহণ করে না। কাজেই প্রকৃত ঈমানদারদের গুণাবলি হচ্ছে, তারা দুনিয়ায় আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে, সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ করে এবং সেগুলো অটুট রাখার জন্য নিজেদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে।
আল্লাহ, নবী ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা : আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেছেন, এ তিনটি গুণ যার মধ্যে বিদ্যমান সে ঈমানের স্বাদ পেয়েছে- (১) যার কাছে সকল জিনিস হতে স্বয়ং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক প্রিয়, (২) যে কাউকে ভালোবাসে সে কেবল আল্লাহর জন্যই ভালোবাসে, (৩) ঈমান গ্রহণের পর আবার কুফরীর দিকে ফিরে যাওয়া এমনভাবে অপছন্দ করে, যেমন সে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়া অপছন্দ করে। (সহীহ বুখারী, হা/১৬)
রাসূল ﷺ কে ভালোবাসা : আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ প্রকৃত ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার নিকট তার বাবা-মা, সন্তান-সন্ততি এবং সব মানুষের চেয়ে অধিক প্রিয় না হই। (সহীহ বুখারী, হা/১৫)
নিজের জন্য যা পছন্দ অন্য ভাইয়ের জন্যও তা পছন্দ করা : আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল ﷺ বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ পূর্ণাঙ্গ ঈমানদার হবে না যতক্ষণ না সে নিজের জন্য যা পছন্দ করে, অপর মুসলিম ভাইয়ের জন্যও তা পছন্দ করে। (সহীহ বুখারী, হা/১৩)
হাত ও মুখ দ্বারা অপর মুসলিম ভাইকে কষ্ট না দেয়া : আবদুলস্নাহ ইবনে উমর (রাঃ) নবী ﷺ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, প্রকৃত মুসলিম সে ব্যক্তি, যার জিহবা এবং হাত হতে অপর মুসলিম নিরাপদ থাকে। প্রকৃত মুহাজির ঐ ব্যক্তি, যে আল্লাহর নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ ত্যাগ করে। (সহীহ বুখারী, হা/১০, ১১)
اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ اِذَا ذُكِرَ اللهُ وَجِلَتْ قُلُوْبُهُمْ وَاِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ اٰيَاتُهٗ زَادَتْهُمْ اِيْمَانًا وَّعَلٰى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ ‐ اَلَّذِيْنَ يُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ ‐ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُوْنَ حَقًّاؕ لَهُمْ دَرَجَاتٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَمَغْفِرَةٌ وَّرِزْقٌ كَرِيْمٌ
নিশ্চয় মুমিন তো তারাই যাদের হৃদয় আল্লাহর স্মরণে কম্পিত হয় এবং তাদের সামনে তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হলে তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পায়। আর তারা তাদের প্রতিপালকের উপরই নির্ভর করে থাকে। যারা সালাত কায়েম করে এবং আমি যা দিয়েছি তা হতে ব্যয় করে; তারাই প্রকৃত মুমিন। তাদের প্রতিপালকের নিকট তাদেরই জন্য রয়েছে মর্যাদা, ক্ষমা এবং সম্মানজনক জীবিকা। (সূরা আনফাল, ২-৪)
মুমিনের কয়েকটি গুণাবলি :
اِنَّ الْمُسْلِمِيْنَ وَالْمُسْلِمَاتِ وَالْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْقَانِتِيْنَ وَالْقَانِتَاتِ وَالصَّادِقِيْنَ وَالصَّادِقَاتِ وَالصَّابِرِيْنَ وَالصَّابِرَاتِ وَالْخَاشِعِيْنَ وَالْخَاشِعَاتِ وَالْمُتَصَدِّقِيْنَ وَالْمُتَصَدِّقَاتِ وَالصَّآئِمِيْنَ وَالصَّآئِمَاتِ وَالْحَافِظِيْنَ فُرُوْجَهُمْ وَالْحَافِظَاتِ وَالذَّاكِرِيْنَ اللهَ كَثِيْرًا وَّالذَّاكِرَاتِ اَعَدَّ اللهُ لَهُمْ مَّغْفِرَةً وَاَجْرًا عَظِيْمًا
নিশ্চয় মুসলিম পুরুষ ও মুসলিম নারী, মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী, বিনয়ী পুরুষ ও বিনয়ী নারী, দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, রোযাদার পুরুষ ও রোযাদার নারী, স্বীয় লজ্জাস্থান হেফাজতকারী পুরুষ ও স্বীয় লজ্জাস্থান হেফাজতকারী নারী এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও অধিক স্মরণকারী নারী- এদের জন্য আল্লাহ ক্ষমা ও বিরাট প্রতিদান প্রস্তুত করে রেখেছেন। (সূরা আহযাব- ৩৫)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর নিকট কোন্ কোন্ গুণাবলিকে আসল মূল্য ও মর্যাদা দেয়া হয় এ আয়াতে তা বলে দেয়া হয়েছে। এগুলো ইসলামের মৌলিক মূল্যবোধ। একটি বাক্যে এগুলোকে একত্রে সংযোজিত করে দেয়া হয়েছে। এ মূল্যবোধগুলোর ক্ষেত্রে পুরুষ ও নারীর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। উভয় দলের কর্মক্ষেত্র আলাদা; কিন্তু এসব গুণাবলি যদি উভয়ের মধ্যে সমান থাকে তাহলে আল্লাহর কাছে উভয়ের মর্যাদা সমান এবং উভয়ের প্রতিদানও সমান হবে।
মুমিন : যারা নিজেদের জন্য ইসলামকে জীবনবিধান হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে এবং জীবন-যাপনের ক্ষেত্রে এ বিধানের অনুসারী হওয়ার ব্যাপারে স্থির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। অন্য কথায়, যাদের মধ্যে ইসলাম প্রদত্ত জীবনধারার বিরুদ্ধে কোন রকমের বিরোধিতা নেই। বরং তারা তার পরিপূর্ণ আনুগত্য ও অনুসরণের পথ অবলম্বন করেছে। যাদের এ আনুগত্য বাহ্যিক নয় বরং মন থেকেই তারা ইসলামের নেতৃত্বকে সত্য বলে মেনে নিয়েছে। চিন্তা ও কর্মের যে পথ কুরআন ও মুহাম্মাদ ﷺ দেখিয়েছেন, সেটিই সোজা ও সঠিক পথ এবং তারই অনুসরণের মধ্যে প্রকৃত সাফল্য নিহিত, এটিই তাদের ঈমান। যে জিনিসকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভুল বলে দিয়েছেন তারা সেটাকে ভুল মনে করে। আর যাকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ সত্য বলে দিয়েছেন তাদের নিজেদের মন-মস্তিষ্কও তাকে সত্য বলে নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করে।
মুসলিম : যারা আল্লাহকে মেনে নিয়ে বসে থাকার লোক নয়, বরং তারা কার্যত আনুগত্যকারী। তাদের অবস্থা এমন নয় যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যে কাজের হুকুম দিয়েছেন তাকে সত্য বলে মেনে নেবে কিন্তু কার্যত তার বিরুদ্ধাচরণ করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যেসব কাজ করতে নিষেধ করেছেন সেগুলোকে খারাপ মনে করবে কিন্তু নিজেরা সেগুলোই করে যেতে থাকবে।
সত্যবাদী : যারা নিজেদের কথায় যেমন সত্য তেমনি ব্যবহারিক কার্যকলাপেও সত্য। মিথ্যা, প্রতারণা, অসৎ উদ্দেশ্য ও ছলনা তাদের জীবনে পাওয়া যায় না। তাদের বিবেক যা সত্য বলে জানে মুখে তারা তাই উচ্চারণ করে। যে কাজ সত্য ও সততা অনুযায়ী হয়, সেই কাজই তারা করে থাকে। যার সাথেই তারা কোন কাজ করে বিশ্বস্ততা ও ঈমানদারীর সাথেই করে।
ধৈর্যশীল : আল্লাহ ও তাঁর রাসূল নির্দেশিত সোজা সত্য পথে চলার এবং আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করার পথে যেসব বাধা ও বিপদ আসে এবং যে সমস্ত ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়, দৃঢ়ভাবে তারা তার মুকাবিলা করে। কোন খারাপ লোক বা প্রবৃত্তির কামনা তাদেরকে সোজা পথ থেকে সরিয়ে দিতে পারে না।
দানশীল : তারা আল্লাহর পথে উন্মুক্ত হৃদয়ে নিজেদের অর্থ ব্যয় করে। আল্লাহর বান্দাদের সাহায্য করার ব্যাপারে নিজেদের সামর্থ্যানুযায়ী প্রচেষ্টা চালাতে তারা ত্রুটি করে না। কোন ইয়াতীম, রুগ্ন, বিপদাপন্ন, দুর্বল, অক্ষম ও অভাবী ব্যক্তি সাহায্যের সম্মুখীন হলে তারা বঞ্চিত করে না। আর তারা আল্লাহর দ্বীনকে সুউচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য অর্থ-সম্পদ ব্যয় করতে কখনো কার্পণ্য করে না।
লজ্জাস্থান হেফাজতকারী : এর দু’টি অর্থ হয়। একটি হচ্ছে, তারা যিনা থেকে দূরে থাকে এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে, তারা উলঙ্গপনাকে এড়িয়ে চলে। এর সাথে এটাও বুঝে নিতে হবে যে, শুধুমাত্র পোশাক না পরে উলঙ্গ হয়ে থাকাকে উলঙ্গপনা বলে না; বরং এমন ধরনের পোশাক পরাও উলঙ্গপনার অন্তর্ভুক্ত, যা এতটা সূক্ষ্ম হয় যে, তার মধ্য দিয়ে শরীর দেখা যায় অথবা এমন আঁটসাঁট হয়, যার ফলে দেহের উঁচু-নীচু অঙ্গ স্পষ্ট হয়ে উঠে।
আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী : আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করার অর্থ হচ্ছে, জীবনের সকল কাজকর্মে এমনকি সকল ব্যাপারেই সবসময় যেন মানুষের মুখে আল্লাহর নাম এসে যায়। মানুষের মনে আল্লাহর চিন্তা পুরোপুরি ও সর্বব্যাপী আসন গেঁড়ে না বসা পর্যন্ত এ ধরনের অবস্থা তার মধ্যে সৃষ্টি হয় না। মানুষের মনের গভীরে আল্লাহর চিন্তা ঢুকে যায় তখন তার অবস্থা এমন হয় যে, সে কোন কথা বললে বা কোন কাজ করলে তার মধ্যে আল্লাহর নাম অবশ্যই এসে যাবে। আল্লাহকে স্মরণ করে ঘুমাবে এবং ঘুম থেকে উঠেও আল্লাহর নাম নেবে। কথাবার্তায় তার মুখে বার বার بِسْمِ اللهِ (বিসমিল্লাহ), اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ (আলহামদুলিল্লাহ), إِنْشَاءَ اللهُ (ইনশাআল্লাহ), مَاشَاءَ اللهُ (মাশাআল্লাহ) এ ধরনের শব্দ ও বাক্য বার বার উচ্চারিত হতে থাকবে। প্রত্যেক কাজে বার বার আল্লাহর সাহায্য চাইবে। প্রত্যেকটি নিয়ামত লাভ করার পর আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। প্রত্যেকটি বিপদ আসার পর তাঁর রহমতের প্রত্যাশী হবে। কোন খারাপ কাজের সুযোগ এলে তাঁকে ভয় করবে। কোন ভুল বা অপরাধ করলে তাঁর কাছে ক্ষমা চাইবে। প্রত্যেকটি প্রয়োজন ও অভাবের মুহূর্তে তাঁর কাছে প্রার্থনা করবে। মোটকথা উঠতে-বসতে এবং দুনিয়ার সমস্ত কাজকর্মে সে আল্লাহকে স্মরণ করবে। এ জিনিসটি আসলে ইসলামী জীবনের প্রাণ। অন্য যে কোন ইবাদাতের জন্য কোন না কোন সময় নির্ধারিত থাকে এবং তখনই তা পালন করা হয়। আর তা পালন করার পর পরই মানুষ তা থেকে আলাদা হয়ে যায়। কিন্তু এ ইবাদাত তথা আল্লাহর যিকির সর্বক্ষণ জারী থাকে এবং এটিই আল্লাহর সাথে মানুষের জীবনের স্থায়ী সম্পর্ক জুড়ে রাখে।
মুমিনের বিশেষ কয়েকটি গুণ :
اَلتَّآئِبُوْنَ الْعَابِدُوْنَ الْحَامِدُوْنَ السَّآئِحُوْنَ الرَّاكِعُوْنَ السَّاجِدُوْنَ الْاٰمِرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَالنَّاهُوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَالْحَافِظُوْنَ لِحُدُوْدِ اللهِ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِيْنَ
তারা তাওবাকারী, ইবাদাতকারী, আল্লাহর প্রশংসাকারী, সিয়াম পালনকারী, রুকূকারী, সিজদাকারী, সৎকাজের নির্দেশদাতা, অসৎকাজ থেকে নিষেধকারী এবং আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা সংরক্ষণকারী; এসব মুমিনদেরকে তুমি সুসংবাদ দাও। (সূরা তাওবা- ১১২)
ব্যাখ্যা : اَلسَّآئِحُوْنَ (আসসা-ইহূন) : এর শাব্দিক অর্থ বিচরণকারী। রূপক অর্থে এর দ্বারা রোযা পালনকারীকে বুঝানো হয়। তবে এর প্রকৃত অর্থ হচ্ছে, এমন উদ্দেশ্যে জমিনে চলাফেরা করা, যা পবিত্র ও উন্নত এবং যার মধ্যে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্য নিহিত থাকে। যেমন দ্বীন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে জিহাদ করা, কুফর শাসিত এলাকা থেকে হিজরত করা, দ্বীনের দাওয়াত দেয়া, মানুষের চরিত্র সংশোধন করা, কল্যাণকর জ্ঞান অর্জন করা, আল্লাহর নিদর্শনসমূহ পর্যবেক্ষণ করা এবং হালাল জীবিকা উপার্জন করা। সত্যিকার মুমিন ঈমানের দাবী করার পর নিজের জায়গায় আরামে বসে থাকতে পারে না। সে আল্লাহর দ্বীন গ্রহণ করার পর তার উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য অবিচলভাবে দাঁড়িয়ে যায় এবং তার দাবী পূরণ করার জন্য সারা পৃথিবীব্যাপী অবিরাম প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম চালাতে থাকে।
اَلْحَافِظُوْنَ لِحُدُوْدِ اللهِ (আল হাফিযুনা লি হুদূদিল্লাহ) : আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা সংরক্ষণ করা; অর্থাৎ আকীদা-বিশ্বাস, ইবাদাত-বন্দেগী, নৈতিক চরিত্র, সমাজ-সংস্কৃতি, আইন-আদালত, অর্থনীতি, রাজনীতি এবং যুদ্ধ ও শান্তির ব্যাপারে যেসব সীমারেখা আল্লাহ নির্ধারণ করে দিয়েছেন, তারা তা পুরোপুরিভাবে মেনে চলে। আল্লাহর আইনের পরিবর্তে মনগড়া আইনের বা মানুষের তৈরি ভিন্নতর আইনকে জীবনবিধান হিসেবে গ্রহণ করে না। কাজেই প্রকৃত ঈমানদারদের গুণাবলি হচ্ছে, তারা দুনিয়ায় আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে, সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ করে এবং সেগুলো অটুট রাখার জন্য নিজেদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে।
আল্লাহ, নবী ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা : আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেছেন, এ তিনটি গুণ যার মধ্যে বিদ্যমান সে ঈমানের স্বাদ পেয়েছে- (১) যার কাছে সকল জিনিস হতে স্বয়ং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক প্রিয়, (২) যে কাউকে ভালোবাসে সে কেবল আল্লাহর জন্যই ভালোবাসে, (৩) ঈমান গ্রহণের পর আবার কুফরীর দিকে ফিরে যাওয়া এমনভাবে অপছন্দ করে, যেমন সে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়া অপছন্দ করে। (সহীহ বুখারী, হা/১৬)
রাসূল ﷺ কে ভালোবাসা : আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ প্রকৃত ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার নিকট তার বাবা-মা, সন্তান-সন্ততি এবং সব মানুষের চেয়ে অধিক প্রিয় না হই। (সহীহ বুখারী, হা/১৫)
নিজের জন্য যা পছন্দ অন্য ভাইয়ের জন্যও তা পছন্দ করা : আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল ﷺ বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ পূর্ণাঙ্গ ঈমানদার হবে না যতক্ষণ না সে নিজের জন্য যা পছন্দ করে, অপর মুসলিম ভাইয়ের জন্যও তা পছন্দ করে। (সহীহ বুখারী, হা/১৩)
হাত ও মুখ দ্বারা অপর মুসলিম ভাইকে কষ্ট না দেয়া : আবদুলস্নাহ ইবনে উমর (রাঃ) নবী ﷺ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, প্রকৃত মুসলিম সে ব্যক্তি, যার জিহবা এবং হাত হতে অপর মুসলিম নিরাপদ থাকে। প্রকৃত মুহাজির ঐ ব্যক্তি, যে আল্লাহর নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ ত্যাগ করে। (সহীহ বুখারী, হা/১০, ১১)
আল্লাহর কাছে মানুষের জন্য একটিমাত্র জীবনব্যবস্থা সঠিক বলে গৃহীত। সেটি হচ্ছে, মানুষ আল্লাহকে নিজের মালিক ও উপাস্য হিসেবে স্বীকার করে নেবে এবং তাঁর সামনে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সোপর্দ করে দেবে। আর তাঁর ইবাদাত করার পদ্ধতি নিজেরা আবিস্কার করবে না বরং তিনি নবীর মাধ্যমে যে হেদায়াত পাঠিয়েছেন হুবহু তার অনুসরণ করবে। এ চিন্তা ও কর্মপদ্ধতির নামই হচ্ছে ইসলাম। বিশ্বজাহানের স্রষ্টা মানবজাতির জন্য ইসলাম ছাড়া অন্য কোন জীবনব্যবস্থার স্বীকৃতি দেননি। মানুষ তার নির্বুদ্ধিতার কারণে নাস্তিক্যবাদ থেকে নিয়ে শিরক ও মূর্তিপূজা পর্যন্ত যে কোন মতবাদের অনুসরণ করা নিজের জন্য বৈধ মনে করতে পারে, কিন্তু বিশ্বজাহানের প্রভুর দৃষ্টিতে এগুলো নিছক বিদ্রোহ ছাড়া আর কিছুই নয়।
সকল নবীদের দ্বীন হলো ইসলাম :
مِلَّةَ اَبِيْكُمْ اِبْرَاهِيْمَؕ هُوَ سَمَّاكُمُ الْمُسْلِمِيْنَ مِنْ قَبْلُ وَفِيْ هٰذَا لِيَكُوْنَ الرَّسُوْلُ شَهِيْدًا عَلَيْكُمْ وَتَكُوْنُوْا شُهَدَآءَ عَلَى النَّاسِ
এটা তোমাদের পিতা ইবরাহীমের মিল্লাত। তিনি ইতোপূর্বে তোমাদের নামকরণ করেছিলেন ‘মুসলিম’ এবং এ কিতাবেও (অর্থাৎ কুরআনের মধ্যেও তোমাদেরকে এ নামেই সম্বোধন করা হয়েছে); যাতে রাসূল তোমাদের জন্য এবং সমস্ত মানুষের জন্য আল্লাহর দ্বীনের উপর সাক্ষী হতে পারে। (সূরা হজ্জ- ৭৮)
নূহ (আঃ) এর দ্বীন ছিল ইসলাম :
وَاُمِرْتُ اَنْ اَكُوْنَ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ
(নূহ আঃ বলেছিলেন) আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্যই আদিষ্ট হয়েছি। (সূরা ইউনুস- ৭২)
ইবরাহীম (আঃ) এর দ্বীন ছিল ইসলাম :
مَا كَانَ اِبْرَاهِيْمُ يَهُوْدِيًّا وَّلَا نَصْرَانِيًّا وَّلٰكِنْ كَانَ حَنِيْفًا مُّسْلِمًاؕ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
ইবরাহীম ইয়াহুদি বা নাসারা কিছুই ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ মুসলিম। আর তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্তও ছিলেন না। (সূরা আলে ইমরান - ৬৭)
ইবরাহীম ও ইসমাঈল (আঃ) মুসলিম হওয়ার দু‘আ করেছিলেন :
رَبَّنَا وَاجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِنَاۤ اُمَّةً مُّسْلِمَةً لَّكْ وَاَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبْ عَلَيْنَاۚ اِنَّكَ اَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ
হে আমাদের রব! আমাদের উভয়কে মুসলিম বানিয়ে দিন এবং আমাদের বংশধরদের মধ্য হতেও আপনার অনুগত একদল লোক সৃষ্টি করে দিন। আর আমাদেরকে ইবাদাতের আহকাম বলে দিন এবং আমাদের প্রতি ক্ষমাশীল হোন, নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল ও করুণাময়। (সূরা বাক্বারা- ১২৮)
ইয়াকূব (আঃ) এর দ্বীন ছিল ইসলাম :
وَوَصّٰى بِهَاۤ اِبْرَاهِيْمُ بَنِيْهِ وَيَعْقُوْبُؕ يَا بَنِيَّ اِنَّ اللهَ اصْطَفٰى لَكُمُ الدِّيْنَ فَلَا تَمُوْتُنَّ اِلَّا وَاَنْتُمْ مُّسْلِمُوْنَ
ইবরাহীম ও ইয়াকূব স্বীয় সন্তানদেরকে এ সদুপদেশ প্রদান করেছিল যে, হে আমার বংশধর! নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের জন্য এই দ্বীনকে (জীবনব্যবস্থা হিসেবে) মনোনীত করেছেন। অতএব তোমরা মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। (সূরা বাক্বারা- ১৩২)
ইউসুফ (আঃ) মুসলিম হয়ে মৃত্যুবরণ করার জন্য দু‘আ করেছিলেন :
فَاطِرَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِؕ اَنْتَ وَلِيِّيْ فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِۚ تَوَفَّنِيْ مُسْلِمًا وَّاَلْحِقْنِيْ بِالصَّالِحِيْنَ
হে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর স্রষ্টা! তুমিই ইহকাল ও পরকালে আমার অভিভাবক। তুমি আমাকে মুসলিম হিসেবে মৃত্যু দাও এবং আমাকে সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত করো। (সূরা ইউসুফ- ১০১)
লূত (আঃ) এর পরিবারও মুসলিম ছিলেন :
فَاَخْرَجْنَا مَنْ كَانَ فِيْهَا مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ ‐ فَمَا وَجَدْنَا فِيْهَا غَيْرَ بَيْتٍ مِّنَ الْمُسْلِمِيْنَ
সেখানে যেসব মুমিন ছিল আমি তাদেরকে বের করে নিলাম। কিন্তু সেখানে আমি একটি পরিবার (লূত আঃ এর পরিবার) ব্যতীত অন্য কোন মুসলিম পাইনি। (সূরা যারিয়াত- ৩৫, ৩৬)
মূসা (আঃ) এর দ্বীনও ছিল ইসলাম :
وَقَالَ مُوْسٰى يَا قَوْمِ اِنْ كُنْتُمْ اٰمَنْتُمْ بِاللهِ فَعَلَيْهِ تَوَكَّلُوْاۤ اِنْ كُنْتُمْ مُّسْلِمِيْنَ
মূসা বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনে থাক এবং যদি তোমরা মুসলিম হও, তবে তোমরা তাঁর উপরই নির্ভর করো। (সূরা ইউনুস- ৮৪)
সুলায়মান (আঃ) এর দ্বীন ছিল ইসলাম :
قَالَتْ رَبِّ اِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ وَاَسْلَمْتُ مَعَ سُلَيْمَانَ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
সে (সাবার রাণী) বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমি তো নিজের প্রতি যুলুম করেছি, এখন আমি সুলায়মানের সাথে জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করলাম। (সূরা নামল- ৪৪)
ঈসা (আঃ) এর দ্বীন ছিল ইসলাম :
وَاِذْ اَوْحَيْتُ اِلَى الْحَوَارِيِّيْنَ اَنْ اٰمِنُوْا بِيْ وَبِرَسُوْلِيْۚ قَالُوْاۤ اٰمَنَّا وَاشْهَدْ بِاَنَّنَا مُسْلِمُوْنَ
স্মরণ করো, যখন আমি হাওয়ারীদেরকে এ আদেশ দিয়েছিলাম যে, তোমরা আমার প্রতি ও আমার রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন করো। তখন তারা বলেছিল, আমরা ঈমান আনলাম এবং তুমি সাক্ষী থাক যে, আমরা মুসলিম। (সূরা মায়েদা- ১১১)
মুহাম্মাদ ﷺ এরও দ্বীন হলো ইসলাম :
اِنَّمَاۤ اُمِرْتُ اَنْ اَعْبُدَ رَبَّ هٰذِهِ الْبَلْدَةِ الَّذِيْ حَرَّمَهَا وَلَهٗ كُلُّ شَيْءٍ وَّاُمِرْتُ اَنْ اَكُوْنَ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ
নিশ্চয় আমি আদিষ্ট হয়েছি এ নগরীর প্রতিপালকের ইবাদাত করার জন্য, যিনি তাকে সম্মানিত করেছেন এবং সমস্ত কিছু তাঁরই জন্য। আর আমি আরো আদিষ্ট হয়েছি, যেন আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত হই। (সূরা নামল- ৯১)
ব্যাখ্যা : মানবজাতির ইতিহাসের সূচনালগ্ন থেকেই যারা তাওহীদ, আখিরাত ও রিসালাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে আসছেন, তারা সকলেই মুসলিম ছিলেন। এ সত্য মিল্লাতের অনুসারীদেরকে কোন দিন ‘নূহী’ ‘ইবরাহিমী’ বা ‘মাসীহী’ ইত্যাদি বলা হয়নি; বরং তাদের নাম ছিল ‘মুসলিম’ এবং আজও সবাই মুসলিম। তবে অতি দুঃখের বিষয় যে, আজকের মুসলিমরা তাদের এ প্রকৃত পরিচিতিমূলক নামটি ব্যবহার না করে এমনসব নামে পরিচয় দিচ্ছে, ফলে গোটা মুসলিম উম্মাহ বিভক্ত হয়ে গেছে এবং ভিন্ন ভিন্ন নামে তাদের পরিচয় প্রকাশ করছে। যার ফলে তাদের মধ্যে হিংসা-বিবাদ ও হানা-হানি লেগেই আছে।
مِلَّةَ اَبِيْكُمْ اِبْرَاهِيْمَؕ هُوَ سَمَّاكُمُ الْمُسْلِمِيْنَ مِنْ قَبْلُ وَفِيْ هٰذَا لِيَكُوْنَ الرَّسُوْلُ شَهِيْدًا عَلَيْكُمْ وَتَكُوْنُوْا شُهَدَآءَ عَلَى النَّاسِ
এটা তোমাদের পিতা ইবরাহীমের মিল্লাত। তিনি ইতোপূর্বে তোমাদের নামকরণ করেছিলেন ‘মুসলিম’ এবং এ কিতাবেও (অর্থাৎ কুরআনের মধ্যেও তোমাদেরকে এ নামেই সম্বোধন করা হয়েছে); যাতে রাসূল তোমাদের জন্য এবং সমস্ত মানুষের জন্য আল্লাহর দ্বীনের উপর সাক্ষী হতে পারে। (সূরা হজ্জ- ৭৮)
নূহ (আঃ) এর দ্বীন ছিল ইসলাম :
وَاُمِرْتُ اَنْ اَكُوْنَ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ
(নূহ আঃ বলেছিলেন) আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্যই আদিষ্ট হয়েছি। (সূরা ইউনুস- ৭২)
ইবরাহীম (আঃ) এর দ্বীন ছিল ইসলাম :
مَا كَانَ اِبْرَاهِيْمُ يَهُوْدِيًّا وَّلَا نَصْرَانِيًّا وَّلٰكِنْ كَانَ حَنِيْفًا مُّسْلِمًاؕ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
ইবরাহীম ইয়াহুদি বা নাসারা কিছুই ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ মুসলিম। আর তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্তও ছিলেন না। (সূরা আলে ইমরান - ৬৭)
ইবরাহীম ও ইসমাঈল (আঃ) মুসলিম হওয়ার দু‘আ করেছিলেন :
رَبَّنَا وَاجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِنَاۤ اُمَّةً مُّسْلِمَةً لَّكْ وَاَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبْ عَلَيْنَاۚ اِنَّكَ اَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ
হে আমাদের রব! আমাদের উভয়কে মুসলিম বানিয়ে দিন এবং আমাদের বংশধরদের মধ্য হতেও আপনার অনুগত একদল লোক সৃষ্টি করে দিন। আর আমাদেরকে ইবাদাতের আহকাম বলে দিন এবং আমাদের প্রতি ক্ষমাশীল হোন, নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল ও করুণাময়। (সূরা বাক্বারা- ১২৮)
ইয়াকূব (আঃ) এর দ্বীন ছিল ইসলাম :
وَوَصّٰى بِهَاۤ اِبْرَاهِيْمُ بَنِيْهِ وَيَعْقُوْبُؕ يَا بَنِيَّ اِنَّ اللهَ اصْطَفٰى لَكُمُ الدِّيْنَ فَلَا تَمُوْتُنَّ اِلَّا وَاَنْتُمْ مُّسْلِمُوْنَ
ইবরাহীম ও ইয়াকূব স্বীয় সন্তানদেরকে এ সদুপদেশ প্রদান করেছিল যে, হে আমার বংশধর! নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের জন্য এই দ্বীনকে (জীবনব্যবস্থা হিসেবে) মনোনীত করেছেন। অতএব তোমরা মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। (সূরা বাক্বারা- ১৩২)
ইউসুফ (আঃ) মুসলিম হয়ে মৃত্যুবরণ করার জন্য দু‘আ করেছিলেন :
فَاطِرَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِؕ اَنْتَ وَلِيِّيْ فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِۚ تَوَفَّنِيْ مُسْلِمًا وَّاَلْحِقْنِيْ بِالصَّالِحِيْنَ
হে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর স্রষ্টা! তুমিই ইহকাল ও পরকালে আমার অভিভাবক। তুমি আমাকে মুসলিম হিসেবে মৃত্যু দাও এবং আমাকে সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত করো। (সূরা ইউসুফ- ১০১)
লূত (আঃ) এর পরিবারও মুসলিম ছিলেন :
فَاَخْرَجْنَا مَنْ كَانَ فِيْهَا مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ ‐ فَمَا وَجَدْنَا فِيْهَا غَيْرَ بَيْتٍ مِّنَ الْمُسْلِمِيْنَ
সেখানে যেসব মুমিন ছিল আমি তাদেরকে বের করে নিলাম। কিন্তু সেখানে আমি একটি পরিবার (লূত আঃ এর পরিবার) ব্যতীত অন্য কোন মুসলিম পাইনি। (সূরা যারিয়াত- ৩৫, ৩৬)
মূসা (আঃ) এর দ্বীনও ছিল ইসলাম :
وَقَالَ مُوْسٰى يَا قَوْمِ اِنْ كُنْتُمْ اٰمَنْتُمْ بِاللهِ فَعَلَيْهِ تَوَكَّلُوْاۤ اِنْ كُنْتُمْ مُّسْلِمِيْنَ
মূসা বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনে থাক এবং যদি তোমরা মুসলিম হও, তবে তোমরা তাঁর উপরই নির্ভর করো। (সূরা ইউনুস- ৮৪)
সুলায়মান (আঃ) এর দ্বীন ছিল ইসলাম :
قَالَتْ رَبِّ اِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ وَاَسْلَمْتُ مَعَ سُلَيْمَانَ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
সে (সাবার রাণী) বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমি তো নিজের প্রতি যুলুম করেছি, এখন আমি সুলায়মানের সাথে জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করলাম। (সূরা নামল- ৪৪)
ঈসা (আঃ) এর দ্বীন ছিল ইসলাম :
وَاِذْ اَوْحَيْتُ اِلَى الْحَوَارِيِّيْنَ اَنْ اٰمِنُوْا بِيْ وَبِرَسُوْلِيْۚ قَالُوْاۤ اٰمَنَّا وَاشْهَدْ بِاَنَّنَا مُسْلِمُوْنَ
স্মরণ করো, যখন আমি হাওয়ারীদেরকে এ আদেশ দিয়েছিলাম যে, তোমরা আমার প্রতি ও আমার রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন করো। তখন তারা বলেছিল, আমরা ঈমান আনলাম এবং তুমি সাক্ষী থাক যে, আমরা মুসলিম। (সূরা মায়েদা- ১১১)
মুহাম্মাদ ﷺ এরও দ্বীন হলো ইসলাম :
اِنَّمَاۤ اُمِرْتُ اَنْ اَعْبُدَ رَبَّ هٰذِهِ الْبَلْدَةِ الَّذِيْ حَرَّمَهَا وَلَهٗ كُلُّ شَيْءٍ وَّاُمِرْتُ اَنْ اَكُوْنَ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ
নিশ্চয় আমি আদিষ্ট হয়েছি এ নগরীর প্রতিপালকের ইবাদাত করার জন্য, যিনি তাকে সম্মানিত করেছেন এবং সমস্ত কিছু তাঁরই জন্য। আর আমি আরো আদিষ্ট হয়েছি, যেন আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত হই। (সূরা নামল- ৯১)
ব্যাখ্যা : মানবজাতির ইতিহাসের সূচনালগ্ন থেকেই যারা তাওহীদ, আখিরাত ও রিসালাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে আসছেন, তারা সকলেই মুসলিম ছিলেন। এ সত্য মিল্লাতের অনুসারীদেরকে কোন দিন ‘নূহী’ ‘ইবরাহিমী’ বা ‘মাসীহী’ ইত্যাদি বলা হয়নি; বরং তাদের নাম ছিল ‘মুসলিম’ এবং আজও সবাই মুসলিম। তবে অতি দুঃখের বিষয় যে, আজকের মুসলিমরা তাদের এ প্রকৃত পরিচিতিমূলক নামটি ব্যবহার না করে এমনসব নামে পরিচয় দিচ্ছে, ফলে গোটা মুসলিম উম্মাহ বিভক্ত হয়ে গেছে এবং ভিন্ন ভিন্ন নামে তাদের পরিচয় প্রকাশ করছে। যার ফলে তাদের মধ্যে হিংসা-বিবাদ ও হানা-হানি লেগেই আছে।
আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য একমাত্র জীবনবিধান হলো ইসলাম :
اِنَّ الدِّيْنَ عِنْدَ اللهِ الْاِسْلَامُ
নিশ্চয় আল্লাহর কাছে মনোনীত জীবনবিধান হচ্ছে ইসলাম। (সূরা আলে ইমরান- ১৯)
ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয় :
وَمَنْ يَّبْتَغِ غَيْرَ الْاِسْلَامِ دِيْنًا فَلَنْ يُّقْبَلَ مِنْهُۚ وَ هُوَ فِى الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
যে ব্যক্তি ইসলামকে বাদ দিয়ে অন্য কোন জীবনব্যবস্থার অনুসরণ করবে তার কাছ থেকে কিছুই কবুল করা হবে না; আর সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা আলে ইমরান- ৮৫)
ব্যাখ্যা : দুনিয়ায় যতগুলো ধর্ম পাওয়া যায় সবগুলোর উৎপত্তি হয়েছে আল্লাহর মনোনীত ইসলাম ধর্মের বিকৃতি ঘটানোর মাধ্যমে। এ বিকৃতি আসার কারণ হলো, বিভিন্ন ব্যক্তি প্রাকৃতিক সত্যের উপর নিজেদের নতুন নতুন কথা যোগ করে নিজেদের জন্য এক একটি আলাদা ধর্ম বানিয়ে নিয়েছে। তাদের প্রত্যেকেই সত্যের পরিবর্তে এ বর্ধিত জিনিসেরই ভক্ত হয়ে গেছে। যার ফলে তারা অন্যদের থেকে আলাদা হয়ে গিয়ে একটি স্বতন্ত্র ফেরকায় পরিণত হয়েছে। এখন সঠিক পথনির্দেশনা লাভ করতে চাইলে প্রত্যেক ব্যক্তিকেই প্রকৃত সত্য দ্বীনের দিকে ফিরে যেতে হবে। পরবর্তীকালের যাবতীয় বর্ধিত অংশ থেকে এবং তাদের অনুসারীদের দল থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে সম্পূর্ণভাবে আলাদা হয়ে যেতে হবে।
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা :
اَلْيَوْمَ اَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَاَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الْاِسْلَامَ دِيْنًا
আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম। (সূরা মায়েদা- ৩)
ব্যাখ্যা : দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দেয়ার অর্থ হচ্ছে, তাকে একটি স্বতন্ত্র জীবনব্যবস্থা এবং একটি পূর্ণাঙ্গ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থায় পরিণত করা। তার মধ্যে জীবনের সকল প্রশ্নের নীতিগত বা বিস্তারিত জবাব পাওয়া যায়। হেদায়াত ও পথনির্দেশ লাভ করার জন্য এর বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
ইসলাম সকল দ্বীনের উপর বিজয়ী দ্বীন :
هُوَ الَّذِيْۤ اَرْسَلَ رَسُوْلَهٗ بِالْهُدٰى وَدِيْنِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهٗ عَلَى الدِّيْنِ كُلِّه ؕ وَكَفٰى بِاللهِ شَهِيْدًا
তিনিই ঐ সত্তা, যিনি তাঁর রাসূলকে হেদায়াত ও সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন, যাতে (রাসূল) ঐ দ্বীনকে অন্যসব দ্বীনের উপর বিজয়ী করেন। আর এ বিষয়ে সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। (সূরা ফাতহ- ২৮)
ইসলাম যথার্থ সত্য ও সঠিক দ্বীন :
وَمَاۤ اُمِرُوْاۤ اِلَّا لِيَعْبُدُوا اللهَ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ حُنَفَآءَ وَيُقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذٰلِكَ دِيْنُ الْقَيِّمَةِ
তাদেরকে এছাড়া অন্য কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদাত করবে, সালাত কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। আর এটাই হচ্ছে সঠিক ধর্ম। (সূরা বায়্যিনাহ- ৫)
ইসলামের চেয়ে সুন্দর জীবনবিধান আর নেই :
وَمَنْ اَحْسَنُ دِيْنًا مِّمَّنْ اَسْلَمَ وَجْهَهٗ لِلّٰهِ وَ هُوَ مُحْسِنٌ
দ্বীন পালনের ক্ষেত্রে তার চেয়ে উত্তম আর কে, যে সৎকর্মপরায়ণ হয়ে আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করে? (সূরা নিসা- ১২৫)
ব্যাখ্যা : ‘দ্বীন’ অর্থ জীবন পদ্ধতি বা জীবনবিধান। মানুষ দুনিয়ায় যে আইন ও নীতিমালার ভিত্তিতে নিজেদের কর্মনীতি গড়ে তুলে তাকেই বলা হয় ‘দ্বীন’। যে ব্যক্তি আল্লাহকে নিজের মালিক ও মা‘বুদ হিসেবে মেনে নিয়ে নিজেকে পুরোপুরি আল্লাহর হাতে সোপর্দ করে দেয় এবং দুনিয়াতে আল্লাহর দেয়া জীবনবিধান অনুযায়ী জীবন-যাপন করে সে-ই প্রকৃত মুসলিম। এ আকীদা-বিশ্বাস ও কর্মপদ্ধতির নামই ‘ইসলাম’। মানবজাতির সৃষ্টিলগ্ন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে ও বিভিন্ন জাতির মধ্যে যেসব নবী এসেছেন, এটিই ছিল তাঁদের সবার দ্বীন ও জীবনবিধান।
اِنَّ الدِّيْنَ عِنْدَ اللهِ الْاِسْلَامُ
নিশ্চয় আল্লাহর কাছে মনোনীত জীবনবিধান হচ্ছে ইসলাম। (সূরা আলে ইমরান- ১৯)
ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয় :
وَمَنْ يَّبْتَغِ غَيْرَ الْاِسْلَامِ دِيْنًا فَلَنْ يُّقْبَلَ مِنْهُۚ وَ هُوَ فِى الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
যে ব্যক্তি ইসলামকে বাদ দিয়ে অন্য কোন জীবনব্যবস্থার অনুসরণ করবে তার কাছ থেকে কিছুই কবুল করা হবে না; আর সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা আলে ইমরান- ৮৫)
ব্যাখ্যা : দুনিয়ায় যতগুলো ধর্ম পাওয়া যায় সবগুলোর উৎপত্তি হয়েছে আল্লাহর মনোনীত ইসলাম ধর্মের বিকৃতি ঘটানোর মাধ্যমে। এ বিকৃতি আসার কারণ হলো, বিভিন্ন ব্যক্তি প্রাকৃতিক সত্যের উপর নিজেদের নতুন নতুন কথা যোগ করে নিজেদের জন্য এক একটি আলাদা ধর্ম বানিয়ে নিয়েছে। তাদের প্রত্যেকেই সত্যের পরিবর্তে এ বর্ধিত জিনিসেরই ভক্ত হয়ে গেছে। যার ফলে তারা অন্যদের থেকে আলাদা হয়ে গিয়ে একটি স্বতন্ত্র ফেরকায় পরিণত হয়েছে। এখন সঠিক পথনির্দেশনা লাভ করতে চাইলে প্রত্যেক ব্যক্তিকেই প্রকৃত সত্য দ্বীনের দিকে ফিরে যেতে হবে। পরবর্তীকালের যাবতীয় বর্ধিত অংশ থেকে এবং তাদের অনুসারীদের দল থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে সম্পূর্ণভাবে আলাদা হয়ে যেতে হবে।
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা :
اَلْيَوْمَ اَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَاَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الْاِسْلَامَ دِيْنًا
আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম। (সূরা মায়েদা- ৩)
ব্যাখ্যা : দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দেয়ার অর্থ হচ্ছে, তাকে একটি স্বতন্ত্র জীবনব্যবস্থা এবং একটি পূর্ণাঙ্গ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থায় পরিণত করা। তার মধ্যে জীবনের সকল প্রশ্নের নীতিগত বা বিস্তারিত জবাব পাওয়া যায়। হেদায়াত ও পথনির্দেশ লাভ করার জন্য এর বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
ইসলাম সকল দ্বীনের উপর বিজয়ী দ্বীন :
هُوَ الَّذِيْۤ اَرْسَلَ رَسُوْلَهٗ بِالْهُدٰى وَدِيْنِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهٗ عَلَى الدِّيْنِ كُلِّه ؕ وَكَفٰى بِاللهِ شَهِيْدًا
তিনিই ঐ সত্তা, যিনি তাঁর রাসূলকে হেদায়াত ও সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন, যাতে (রাসূল) ঐ দ্বীনকে অন্যসব দ্বীনের উপর বিজয়ী করেন। আর এ বিষয়ে সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। (সূরা ফাতহ- ২৮)
ইসলাম যথার্থ সত্য ও সঠিক দ্বীন :
وَمَاۤ اُمِرُوْاۤ اِلَّا لِيَعْبُدُوا اللهَ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ حُنَفَآءَ وَيُقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذٰلِكَ دِيْنُ الْقَيِّمَةِ
তাদেরকে এছাড়া অন্য কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদাত করবে, সালাত কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। আর এটাই হচ্ছে সঠিক ধর্ম। (সূরা বায়্যিনাহ- ৫)
ইসলামের চেয়ে সুন্দর জীবনবিধান আর নেই :
وَمَنْ اَحْسَنُ دِيْنًا مِّمَّنْ اَسْلَمَ وَجْهَهٗ لِلّٰهِ وَ هُوَ مُحْسِنٌ
দ্বীন পালনের ক্ষেত্রে তার চেয়ে উত্তম আর কে, যে সৎকর্মপরায়ণ হয়ে আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করে? (সূরা নিসা- ১২৫)
ব্যাখ্যা : ‘দ্বীন’ অর্থ জীবন পদ্ধতি বা জীবনবিধান। মানুষ দুনিয়ায় যে আইন ও নীতিমালার ভিত্তিতে নিজেদের কর্মনীতি গড়ে তুলে তাকেই বলা হয় ‘দ্বীন’। যে ব্যক্তি আল্লাহকে নিজের মালিক ও মা‘বুদ হিসেবে মেনে নিয়ে নিজেকে পুরোপুরি আল্লাহর হাতে সোপর্দ করে দেয় এবং দুনিয়াতে আল্লাহর দেয়া জীবনবিধান অনুযায়ী জীবন-যাপন করে সে-ই প্রকৃত মুসলিম। এ আকীদা-বিশ্বাস ও কর্মপদ্ধতির নামই ‘ইসলাম’। মানবজাতির সৃষ্টিলগ্ন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে ও বিভিন্ন জাতির মধ্যে যেসব নবী এসেছেন, এটিই ছিল তাঁদের সবার দ্বীন ও জীবনবিধান।
ইসলামই হচ্ছে সোজা পথ :
وَهٰذَا صِرَاطُ رَبِّكَ مُسْتَقِيْمًاؕ قَدْ فَصَّلْنَا الْاٰيَاتِ لِقَوْمٍ يَّذَّكَّرُوْنَ
এটা তোমার প্রতিপালকের নির্দেশিত সরল পথ। যারা উপদেশ গ্রহণ করে আমি এতে তাদের জন্য নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করে দিয়েছি। (সূরা আন‘আম- ১২৬)
ব্যাখ্যা : যেহেতু আল্লাহ দুনিয়াবাসীর প্রতি কোন যুলুম করতে চান না, তাই তিনি তাদেরকে সোজা পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। শেষ বিচারের দিন কোন্ কোন্ বিষয়ে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে সে কথাও আগেই জানিয়ে দিয়েছেন। এরপরও যারা বাঁকা পথ ধরবে এবং নিজেদের ভ্রান্ত কর্মপদ্ধতি পরিহার করবে না, তারা আসলে নিজেরাই নিজেদের উপর যুলুম করবে।
وَاِنَّ اللهَ رَبِّيْ وَرَبُّكُمْ فَاعْبُدُوْهُؕ هٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيْمٌ
আল্লাহই আমার ও তোমাদের প্রতিপালক; সুতরাং তোমরা তাঁর ইবাদাত করো; আর এটাই সরল পথ।
(সূরা মারইয়াম- ৩৬)
সোজা পথ দেখানো আল্লাহর দায়িত্ব :
وَعَلَى اللهِ قَصْدُ السَّبِيْلِ وَمِنْهَا جَآئِرٌ
(মানুষকে) সরলসঠিক পথ দেখিয়ে দেয়া আল্লাহর দায়িত্ব। আর পথসমূহের মধ্যে অনেক বাঁকা পথও রয়েছে। (সূরা নাহল- ৯)
وَاَنَّ هٰذَا صِرَاطِيْ مُسْتَقِيْمًا فَاتَّبِعُوْهُۚ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيْلِه ؕ ذٰلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِه لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ
এ পথই আমার সরল পথ। সুতরাং তোমরা এরই অনুসরণ করো এবং অন্য কোন পথ অনুসরণ করো না, নতুবা তোমরা তাঁর পথ হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিলেন, যেন তোমরা সাবধান হও। (সূরা আন‘আম- ১৫৩)
ব্যাখ্যা : মানুষ জীবন পরিচালনা করার জন্য যতগুলো পথ তৈরি করেছে সবই বক্ররেখার মতো। একটি ভুল দিক থেকে যাত্রা শুরু করে আরেকটি ভুল প্রান্তে গিয়ে তা শেষ হয়। এ অসংখ্য বক্র ও ভুল পথের মধ্য দিয়ে এমন একটি পথ চলে গেছে, যার অবস্থান ঠিক মধ্যভাগে। এ পথে কোন প্রকার বক্রতার লেশ মাত্র নেই। কোন দিকের প্রতি অযথা পক্ষপাতিত্ব অথবা বেইনসাফী করার প্রশ্নই এখানে নেই। মানুষের জীবনের সঠিক উন্নয়ন এবং তার সাফল্য ও অগ্রগতির জন্য এ ধরনের একটি পথ একান্ত অপরিহার্য। মানুষের মূল প্রকৃতি এ পথের সন্ধানেই ফিরছে। কিন্তু নিজের চেষ্টায় এ রাজপথের সন্ধান লাভ করার ক্ষমতা মানুষের নেই। একমাত্র আল্লাহই তাকে এ পথের সন্ধান দিতে পারেন। মানুষকে এ পথের সন্ধান দেয়ার জন্যই আল্লাহ রাসূল পাঠিয়েছেন। কুরআনে এ পথকেই ‘সাওয়া-উস-সাবীল’ ও ‘সিরাতুম মুস্তাকীম’ তথা সরল পথ বলা হয়েছে।
কুরআন ইসলামের পথ দেখায় :
قَالُوْا يَا قَوْمَنَاۤ اِنَّا سَمِعْنَا كِتَابًا اُنْزِلَ مِنْ ۢبَعْدِ مُوْسٰى مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ يَهْدِيْۤ اِلَى الْحَقِّ وَاِلٰى طَرِيْقٍ مُّسْتَقِيْمٍ
তারা বলল, হে আমাদের সম্প্রদায়! আমরা এমন এক কিতাব শুনলাম, যা মূসার উপর নাযিল করা হয়েছে। যা এর আগের কিতাবগুলোকে সত্য বলে স্বীকার করে এবং সত্য ও সঠিক পথের দিকে হেদায়াত করে । (সূরা আহকাফ- ৩০)
وَيَرَى الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْعِلْمَ الَّذِيْۤ اُنْزِلَ اِلَيْكَ مِنْ رَّبِّكَ هُوَ الْحَقَّ وَيَهْدِيْۤ اِلٰى صِرَاطِ الْعَزِيْزِ الْحَمِيْدِ
আর যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে তারা জানে যে, আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা সত্য। আর তা প্রবল প্রতাপশালী ও সর্বগুণে গুণান্বিত আল্লাহর দিকে পথপ্রদর্শন করে। (সূরা সাবা- ৬)
মুহাম্মাদ ﷺ এ পথেই মানুষকে ডাকতেন :
وَاِنَّكَ لَتَهْدِيْۤ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
নিশ্চয় তুমি সরল পথপ্রদর্শন করে থাক। (সূরা শূরা- ৫২)
قُلْ هٰذِهٖ سَبِيْلِيْۤ اَدْعُوْاۤ اِلَى اللهِ عَلٰى بَصِيْرَةٍ اَنَاْ وَمَنِ اتَّبَعَنِيْؕ وَسُبْحَانَ اللهِ وَمَاۤ اَنَاْ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
বলো, এটাই আমার পথ। আমি এবং আমার অনুসারীরা দূরদর্শীতার মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি মানুষকে আহবান করি। আল্লাহ কতই না পবিত্র; আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। (সূরা ইউসুফ- ১০৮)
وَهٰذَا صِرَاطُ رَبِّكَ مُسْتَقِيْمًاؕ قَدْ فَصَّلْنَا الْاٰيَاتِ لِقَوْمٍ يَّذَّكَّرُوْنَ
এটা তোমার প্রতিপালকের নির্দেশিত সরল পথ। যারা উপদেশ গ্রহণ করে আমি এতে তাদের জন্য নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করে দিয়েছি। (সূরা আন‘আম- ১২৬)
ব্যাখ্যা : যেহেতু আল্লাহ দুনিয়াবাসীর প্রতি কোন যুলুম করতে চান না, তাই তিনি তাদেরকে সোজা পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। শেষ বিচারের দিন কোন্ কোন্ বিষয়ে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে সে কথাও আগেই জানিয়ে দিয়েছেন। এরপরও যারা বাঁকা পথ ধরবে এবং নিজেদের ভ্রান্ত কর্মপদ্ধতি পরিহার করবে না, তারা আসলে নিজেরাই নিজেদের উপর যুলুম করবে।
وَاِنَّ اللهَ رَبِّيْ وَرَبُّكُمْ فَاعْبُدُوْهُؕ هٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيْمٌ
আল্লাহই আমার ও তোমাদের প্রতিপালক; সুতরাং তোমরা তাঁর ইবাদাত করো; আর এটাই সরল পথ।
(সূরা মারইয়াম- ৩৬)
সোজা পথ দেখানো আল্লাহর দায়িত্ব :
وَعَلَى اللهِ قَصْدُ السَّبِيْلِ وَمِنْهَا جَآئِرٌ
(মানুষকে) সরলসঠিক পথ দেখিয়ে দেয়া আল্লাহর দায়িত্ব। আর পথসমূহের মধ্যে অনেক বাঁকা পথও রয়েছে। (সূরা নাহল- ৯)
وَاَنَّ هٰذَا صِرَاطِيْ مُسْتَقِيْمًا فَاتَّبِعُوْهُۚ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيْلِه ؕ ذٰلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِه لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ
এ পথই আমার সরল পথ। সুতরাং তোমরা এরই অনুসরণ করো এবং অন্য কোন পথ অনুসরণ করো না, নতুবা তোমরা তাঁর পথ হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিলেন, যেন তোমরা সাবধান হও। (সূরা আন‘আম- ১৫৩)
ব্যাখ্যা : মানুষ জীবন পরিচালনা করার জন্য যতগুলো পথ তৈরি করেছে সবই বক্ররেখার মতো। একটি ভুল দিক থেকে যাত্রা শুরু করে আরেকটি ভুল প্রান্তে গিয়ে তা শেষ হয়। এ অসংখ্য বক্র ও ভুল পথের মধ্য দিয়ে এমন একটি পথ চলে গেছে, যার অবস্থান ঠিক মধ্যভাগে। এ পথে কোন প্রকার বক্রতার লেশ মাত্র নেই। কোন দিকের প্রতি অযথা পক্ষপাতিত্ব অথবা বেইনসাফী করার প্রশ্নই এখানে নেই। মানুষের জীবনের সঠিক উন্নয়ন এবং তার সাফল্য ও অগ্রগতির জন্য এ ধরনের একটি পথ একান্ত অপরিহার্য। মানুষের মূল প্রকৃতি এ পথের সন্ধানেই ফিরছে। কিন্তু নিজের চেষ্টায় এ রাজপথের সন্ধান লাভ করার ক্ষমতা মানুষের নেই। একমাত্র আল্লাহই তাকে এ পথের সন্ধান দিতে পারেন। মানুষকে এ পথের সন্ধান দেয়ার জন্যই আল্লাহ রাসূল পাঠিয়েছেন। কুরআনে এ পথকেই ‘সাওয়া-উস-সাবীল’ ও ‘সিরাতুম মুস্তাকীম’ তথা সরল পথ বলা হয়েছে।
কুরআন ইসলামের পথ দেখায় :
قَالُوْا يَا قَوْمَنَاۤ اِنَّا سَمِعْنَا كِتَابًا اُنْزِلَ مِنْ ۢبَعْدِ مُوْسٰى مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ يَهْدِيْۤ اِلَى الْحَقِّ وَاِلٰى طَرِيْقٍ مُّسْتَقِيْمٍ
তারা বলল, হে আমাদের সম্প্রদায়! আমরা এমন এক কিতাব শুনলাম, যা মূসার উপর নাযিল করা হয়েছে। যা এর আগের কিতাবগুলোকে সত্য বলে স্বীকার করে এবং সত্য ও সঠিক পথের দিকে হেদায়াত করে । (সূরা আহকাফ- ৩০)
وَيَرَى الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْعِلْمَ الَّذِيْۤ اُنْزِلَ اِلَيْكَ مِنْ رَّبِّكَ هُوَ الْحَقَّ وَيَهْدِيْۤ اِلٰى صِرَاطِ الْعَزِيْزِ الْحَمِيْدِ
আর যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে তারা জানে যে, আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা সত্য। আর তা প্রবল প্রতাপশালী ও সর্বগুণে গুণান্বিত আল্লাহর দিকে পথপ্রদর্শন করে। (সূরা সাবা- ৬)
মুহাম্মাদ ﷺ এ পথেই মানুষকে ডাকতেন :
وَاِنَّكَ لَتَهْدِيْۤ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
নিশ্চয় তুমি সরল পথপ্রদর্শন করে থাক। (সূরা শূরা- ৫২)
قُلْ هٰذِهٖ سَبِيْلِيْۤ اَدْعُوْاۤ اِلَى اللهِ عَلٰى بَصِيْرَةٍ اَنَاْ وَمَنِ اتَّبَعَنِيْؕ وَسُبْحَانَ اللهِ وَمَاۤ اَنَاْ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
বলো, এটাই আমার পথ। আমি এবং আমার অনুসারীরা দূরদর্শীতার মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি মানুষকে আহবান করি। আল্লাহ কতই না পবিত্র; আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। (সূরা ইউসুফ- ১০৮)
ইসলাম হলো চলার পথের আলো :
اَفَمَنْ شَرَحَ اللهُ صَدْرَه لِلْاِسْلَامِ فَهُوَ عَلٰى نُوْرٍ مِّنْ رَّبِّه ؕ فَوَيْلٌ لِّلْقَاسِيَةِ قُلُوْبُهُمْ مِّنْ ذِكْرِ اللهِؕ اُولٰٓئِكَ فِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ
আল্লাহ যার বক্ষকে ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন, সে তো তার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আগত নূরের উপর রয়েছে। সুতরাং দুর্ভোগ সেসব লোকদের জন্য, যাদের অন্তর আল্লাহর স্মরণ থেকে কঠোর হয়ে গেছে। মূলত এরাই সুস্পষ্ট গোমরাহীতে নিমজ্জিত রয়েছে। (সূরা যুমার - ২২)
ব্যাখ্যা : কোন ব্যাপারে মানুষের বক্ষ উন্মুক্ত হয়ে যাওয়া মূলত এমন একটি মানসিক অবস্থার নাম, যখন তার মনে উক্ত বিষয় সম্পর্কে কোন দুশ্চিন্তা কিংবা সন্দেহ-সংশয় থাকে না এবং কোন বিপদের আশঙ্কাও তাকে ঐ বিষয়টি গ্রহণ করতে বাধা দিতে পারে না। বরং সে পূর্ণ মানসিক তৃপ্তির সাথে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, যে জিনিসটি ন্যায় ও সত্য সে তাই গ্রহণ করবে। এতে ভালো-মন্দ যাই ঘটুক না কেন তাকে তার উপরই চলতে হবে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোন ব্যক্তি যখন ইসলামের পথ অবলম্বন করে, তখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যে নির্দেশই আসে তা সে অনিচ্ছায় নয় বরং আগ্রহের সাথে মেনে নেয়। জ্ঞানের আলো হিসেবে সে আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাত লাভ করেছে, যার উজ্জ্বল আলোতে সে জীবনে চলার অসংখ্য ছোট ছোট পথের মধ্যে কোনটি ন্যায় ও সত্যের পথ তা প্রতি পদক্ষেপে স্পষ্ট দেখতে পায়।
যে ইসলামকে আঁকড়ে ধরল সে মজবুত রশি ধরল :
وَمَنْ يُّسْلِمْ وَجْهَهٗۤ اِلَى اللهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقٰىۚ وَاِلَى اللهِ عَاقِبَةُ الْاُمُوْرِ
যে ব্যক্তি সৎকর্মপরায়ণ হয়ে নিজেকে নিষ্ঠার সাথে আল্লাহমুখী করে, সে তো দৃঢ়ভাবে এক মজবুত রশিকেই ধারণ করে। আর সকল কাজের পরিণাম আল্লাহরই নিকট পৌঁছাবে। (সূরা লুক্বমান- ২২)
فَمَنْ يَّكْفُرْ بِالطَّاغُوْتِ وَيُؤْمِنْ ۢبِاللهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقٰى لَا انْفِصَامَ لَهَاؕ وَاللهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
আর যে তাগুতকে অস্বীকার করবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে, সে এমন এক মজবুত রশি ধারণ করল যা কখনো ছিড়বে না। আর আল্লাহ শ্রবণকারী ও মহাজ্ঞানী। (সূরা বাক্বারা- ২৫৬)
মুসলিমের পুরস্কার আল্লাহর কাছে রয়েছে :
بَلٰى مَنْ اَسْلَمَ وَجْهَهٗ لِلّٰهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ فَلَهٗۤ اَجْرُه عِنْدَ رَبِّه وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ
অবশ্য যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ করেছে এবং সৎকর্মশীল হয়েছে, তার জন্য তার প্রতিপালকের নিকট রয়েছে প্রতিদান। আর তাদের জন্য কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না। (সূরা বাক্বারা-১১২)
اَفَمَنْ شَرَحَ اللهُ صَدْرَه لِلْاِسْلَامِ فَهُوَ عَلٰى نُوْرٍ مِّنْ رَّبِّه ؕ فَوَيْلٌ لِّلْقَاسِيَةِ قُلُوْبُهُمْ مِّنْ ذِكْرِ اللهِؕ اُولٰٓئِكَ فِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ
আল্লাহ যার বক্ষকে ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন, সে তো তার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আগত নূরের উপর রয়েছে। সুতরাং দুর্ভোগ সেসব লোকদের জন্য, যাদের অন্তর আল্লাহর স্মরণ থেকে কঠোর হয়ে গেছে। মূলত এরাই সুস্পষ্ট গোমরাহীতে নিমজ্জিত রয়েছে। (সূরা যুমার - ২২)
ব্যাখ্যা : কোন ব্যাপারে মানুষের বক্ষ উন্মুক্ত হয়ে যাওয়া মূলত এমন একটি মানসিক অবস্থার নাম, যখন তার মনে উক্ত বিষয় সম্পর্কে কোন দুশ্চিন্তা কিংবা সন্দেহ-সংশয় থাকে না এবং কোন বিপদের আশঙ্কাও তাকে ঐ বিষয়টি গ্রহণ করতে বাধা দিতে পারে না। বরং সে পূর্ণ মানসিক তৃপ্তির সাথে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, যে জিনিসটি ন্যায় ও সত্য সে তাই গ্রহণ করবে। এতে ভালো-মন্দ যাই ঘটুক না কেন তাকে তার উপরই চলতে হবে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোন ব্যক্তি যখন ইসলামের পথ অবলম্বন করে, তখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যে নির্দেশই আসে তা সে অনিচ্ছায় নয় বরং আগ্রহের সাথে মেনে নেয়। জ্ঞানের আলো হিসেবে সে আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাত লাভ করেছে, যার উজ্জ্বল আলোতে সে জীবনে চলার অসংখ্য ছোট ছোট পথের মধ্যে কোনটি ন্যায় ও সত্যের পথ তা প্রতি পদক্ষেপে স্পষ্ট দেখতে পায়।
যে ইসলামকে আঁকড়ে ধরল সে মজবুত রশি ধরল :
وَمَنْ يُّسْلِمْ وَجْهَهٗۤ اِلَى اللهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقٰىۚ وَاِلَى اللهِ عَاقِبَةُ الْاُمُوْرِ
যে ব্যক্তি সৎকর্মপরায়ণ হয়ে নিজেকে নিষ্ঠার সাথে আল্লাহমুখী করে, সে তো দৃঢ়ভাবে এক মজবুত রশিকেই ধারণ করে। আর সকল কাজের পরিণাম আল্লাহরই নিকট পৌঁছাবে। (সূরা লুক্বমান- ২২)
فَمَنْ يَّكْفُرْ بِالطَّاغُوْتِ وَيُؤْمِنْ ۢبِاللهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقٰى لَا انْفِصَامَ لَهَاؕ وَاللهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
আর যে তাগুতকে অস্বীকার করবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে, সে এমন এক মজবুত রশি ধারণ করল যা কখনো ছিড়বে না। আর আল্লাহ শ্রবণকারী ও মহাজ্ঞানী। (সূরা বাক্বারা- ২৫৬)
মুসলিমের পুরস্কার আল্লাহর কাছে রয়েছে :
بَلٰى مَنْ اَسْلَمَ وَجْهَهٗ لِلّٰهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ فَلَهٗۤ اَجْرُه عِنْدَ رَبِّه وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ
অবশ্য যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ করেছে এবং সৎকর্মশীল হয়েছে, তার জন্য তার প্রতিপালকের নিকট রয়েছে প্রতিদান। আর তাদের জন্য কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না। (সূরা বাক্বারা-১১২)
ইসলামকে মানতে হবে পরিপূর্ণভাবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا ادْخُلُوْا فِى السِّلْمِ كَافَّةً وَّلَا تَتَّبِعُوْا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِۚ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করো এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা বাক্বারা- ২০৮)
ব্যাখ্যা : কোন রকম ব্যতিক্রম ও কিছু অংশকে বাদ না দিয়ে জীবনের সকল দিক ও বিভাগকে ইসলামের আওতাধীন করতে হবে। চিন্তা-ভাবনা, আদর্শ, মতবাদ, জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা, আচরণ, ব্যবহারিক জীবন, লেনদেন, রাষ্ট্র পরিচালনা এবং সমগ্র প্রচেষ্টা ও কর্মের পরিসরকে পুরোপুরি ইসলামের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। জীবনের কিছু অংশে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলা এবং কিছু অংশকে ইসলামী অনুশাসনের বাইরে রাখা, এমনটি করা যাবে না।
আংশিক ইসলাম গ্রহণযোগ্য নয় :
وَاَنِ احْكُمْ بَيْنَهُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ وَلَا تَتَّبِعْ اَهْوَآءَهُمْ وَاحْذَرْهُمْ اَنْ يَّفْتِنُوْكَ عَنْ ۢبَعْضِ مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ اِلَيْكَؕ فَاِنْ تَوَلَّوْا فَاعْلَمْ اَنَّمَا يُرِيْدُ اللهُ اَنْ يُّصِيْبَهُمْ بِبَعْضِ ذُنُوْبِهِمْؕ وَاِنَّ كَثِيْرًا مِّنَ النَّاسِ لَفَاسِقُوْنَ
আপনি তাদের মধ্যে আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন সে অনুযায়ী মীমাংসা করুন এবং তাদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করবেন না। আর তাদের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করবেন, যেন তারা আপনাকে আপনার উপর যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তার কোনকিছুর ব্যাপারে বিভ্রান্ত করতে না পারে। এরপরও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে জেনে রাখুন, আল্লাহ তাদেরকে তাদের কোন কোন গোনাহের জন্য শাস্তি প্রদান করতে চান। নিশ্চয় মানুষের মধ্যে অনেকেই ফাসিক। (সূরা মায়েদা- ৪৯)
যারা কিছু মানে এবং কিছু মানে না, তারা কঠিন শাস্তি ভোগ করবে :
اَفَتُؤْمِنُوْنَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُوْنَ بِبَعْضٍۚ فَمَا جَزَآءُ مَنْ يَّفْعَلُ ذٰلِكَ مِنْكُمْ اِلَّا خِزْيٌ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَاۚ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّوْنَ اِلٰۤى اَشَدِّ الْعَذَابِؕ وَمَا اللهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ
তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশ বিশ্বাস কর ও কিছু অংশ অস্বীকার কর? অতএব তোমাদের মধ্যে যারা এরূপ করে তাদের পার্থিব জীবনে দুর্গতি ব্যতীত কিছুই নেই। আর কিয়ামত দিবসে তারা কঠোর শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হবে। আর তোমরা যা করছ আল্লাহ সে সম্পর্কে অমনোযোগী নন। (সূরা বাক্বারা- ৮৫)
একমুখী হয়েই ইসলামের উপর চলতে হবে :
فَاَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّيْنِ حَنِيْفًاؕ فِطْرَةَ اللهِ الَّتِيْ فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَاؕ لَا تَبْدِيْلَ لِخَلْقِ اللهِؕ ذٰلِكَ الدِّيْنُ الْقَيِّمُ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ
তুমি নিজেকে একনিষ্ঠভাবে দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখ এবং আল্লাহর প্রকৃতি অনুসরণ করো, যার উপর তিনি মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরলসঠিক দ্বীন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। (সূরা রূম- ৩০)
ইসলামী শরীয়াতের সাথে অন্য মতবাদের সংমিশ্রণ ঘটানো যাবে না :
ثُمَّ جَعَلْنَاكَ عَلٰى شَرِيْعَةٍ مِّنَ الْاَمْرِ فَاتَّبِعْهَا وَلَا تَتَّبِعْ اَهْوَآءَ الَّذِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ
এরপর আমি তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করেছি দ্বীনের বিশেষ শরীয়াতের উপর; সুতরাং তুমি তার অনুসরণ করো এবং অজ্ঞদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। (সূরা জাসিয়া-১৮)
জাহেলী প্রথার সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই :
اَفَحُكْمَ الْجَاهِلِيَّةِ يَبْغُوْنَؕ وَمَنْ اَحْسَنُ مِنَ اللهِ حُكْمًا لِّقَوْمٍ يُّوْقِنُوْنَ
তবে কি তারা মূর্খতার যুগের বিচারব্যবস্থার আশা করে? দৃঢ় বিশ্বাসী লোকদের জন্য বিচারব্যবস্থায় আল্লাহর চেয়ে উত্তম আর কে হতে পারে? (সূরা মায়েদা- ৫০)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا ادْخُلُوْا فِى السِّلْمِ كَافَّةً وَّلَا تَتَّبِعُوْا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِۚ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করো এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা বাক্বারা- ২০৮)
ব্যাখ্যা : কোন রকম ব্যতিক্রম ও কিছু অংশকে বাদ না দিয়ে জীবনের সকল দিক ও বিভাগকে ইসলামের আওতাধীন করতে হবে। চিন্তা-ভাবনা, আদর্শ, মতবাদ, জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা, আচরণ, ব্যবহারিক জীবন, লেনদেন, রাষ্ট্র পরিচালনা এবং সমগ্র প্রচেষ্টা ও কর্মের পরিসরকে পুরোপুরি ইসলামের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। জীবনের কিছু অংশে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলা এবং কিছু অংশকে ইসলামী অনুশাসনের বাইরে রাখা, এমনটি করা যাবে না।
আংশিক ইসলাম গ্রহণযোগ্য নয় :
وَاَنِ احْكُمْ بَيْنَهُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ وَلَا تَتَّبِعْ اَهْوَآءَهُمْ وَاحْذَرْهُمْ اَنْ يَّفْتِنُوْكَ عَنْ ۢبَعْضِ مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ اِلَيْكَؕ فَاِنْ تَوَلَّوْا فَاعْلَمْ اَنَّمَا يُرِيْدُ اللهُ اَنْ يُّصِيْبَهُمْ بِبَعْضِ ذُنُوْبِهِمْؕ وَاِنَّ كَثِيْرًا مِّنَ النَّاسِ لَفَاسِقُوْنَ
আপনি তাদের মধ্যে আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন সে অনুযায়ী মীমাংসা করুন এবং তাদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করবেন না। আর তাদের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করবেন, যেন তারা আপনাকে আপনার উপর যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তার কোনকিছুর ব্যাপারে বিভ্রান্ত করতে না পারে। এরপরও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে জেনে রাখুন, আল্লাহ তাদেরকে তাদের কোন কোন গোনাহের জন্য শাস্তি প্রদান করতে চান। নিশ্চয় মানুষের মধ্যে অনেকেই ফাসিক। (সূরা মায়েদা- ৪৯)
যারা কিছু মানে এবং কিছু মানে না, তারা কঠিন শাস্তি ভোগ করবে :
اَفَتُؤْمِنُوْنَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُوْنَ بِبَعْضٍۚ فَمَا جَزَآءُ مَنْ يَّفْعَلُ ذٰلِكَ مِنْكُمْ اِلَّا خِزْيٌ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَاۚ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّوْنَ اِلٰۤى اَشَدِّ الْعَذَابِؕ وَمَا اللهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ
তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশ বিশ্বাস কর ও কিছু অংশ অস্বীকার কর? অতএব তোমাদের মধ্যে যারা এরূপ করে তাদের পার্থিব জীবনে দুর্গতি ব্যতীত কিছুই নেই। আর কিয়ামত দিবসে তারা কঠোর শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হবে। আর তোমরা যা করছ আল্লাহ সে সম্পর্কে অমনোযোগী নন। (সূরা বাক্বারা- ৮৫)
একমুখী হয়েই ইসলামের উপর চলতে হবে :
فَاَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّيْنِ حَنِيْفًاؕ فِطْرَةَ اللهِ الَّتِيْ فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَاؕ لَا تَبْدِيْلَ لِخَلْقِ اللهِؕ ذٰلِكَ الدِّيْنُ الْقَيِّمُ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ
তুমি নিজেকে একনিষ্ঠভাবে দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখ এবং আল্লাহর প্রকৃতি অনুসরণ করো, যার উপর তিনি মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরলসঠিক দ্বীন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। (সূরা রূম- ৩০)
ইসলামী শরীয়াতের সাথে অন্য মতবাদের সংমিশ্রণ ঘটানো যাবে না :
ثُمَّ جَعَلْنَاكَ عَلٰى شَرِيْعَةٍ مِّنَ الْاَمْرِ فَاتَّبِعْهَا وَلَا تَتَّبِعْ اَهْوَآءَ الَّذِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ
এরপর আমি তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করেছি দ্বীনের বিশেষ শরীয়াতের উপর; সুতরাং তুমি তার অনুসরণ করো এবং অজ্ঞদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। (সূরা জাসিয়া-১৮)
জাহেলী প্রথার সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই :
اَفَحُكْمَ الْجَاهِلِيَّةِ يَبْغُوْنَؕ وَمَنْ اَحْسَنُ مِنَ اللهِ حُكْمًا لِّقَوْمٍ يُّوْقِنُوْنَ
তবে কি তারা মূর্খতার যুগের বিচারব্যবস্থার আশা করে? দৃঢ় বিশ্বাসী লোকদের জন্য বিচারব্যবস্থায় আল্লাহর চেয়ে উত্তম আর কে হতে পারে? (সূরা মায়েদা- ৫০)
অধিকাংশ লোকই ইসলামের পথে চলে না :
وَاِنْ يَّرَوْا كُلَّ اٰيَةٍ لَّا يُؤْمِنُوْا بِهَاۚ وَاِنْ يَّرَوْا سَبِيْلَ الرُّشْدِ لَا يَتَّخِذُوْهُ سَبِيْلًاۚ وَاِنْ يَّرَوْا سَبِيْلَ الْغَيِّ يَتَّخِذُوْهُ سَبِيْلًاؕ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَا وَكَانُوْا عَنْهَا غَافِلِيْنَ
তারা আমার প্রত্যেকটি নিদর্শন দেখলেও তাতে ঈমান আনয়ন করবে না, সৎপথ দেখলেও তাকে গ্রহণ করবে না;, কিন্তু তারা ভ্রান্ত পথ দেখলে তা গ্রহণ করে নেবে। এটা এজন্য যে, তারা আমার নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করেছে এবং সে সম্বন্ধে তারা ছিল গাফিল। (সূরা আ‘রাফ- ১৪৬)
যারা ইসলামের দিকে আসে না তারা যালিম :
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرٰى عَلَى اللهِ الْكَذِبَ وَهُوَ يُدْعٰۤى اِلَى الْاِسْلَامِؕ وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
তার চেয়ে বড় যালিম আর কে আছে যে আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করে, অথচ তাকে ইসলামের দিকে আহবান করা হয়? আর আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (সূরা সাফ- ৭)
যারা অন্য পথে চলে তারা জাহান্নামী হবে :
وَمَنْ يُّشَاقِقِ الرَّسُوْلَ مِنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدٰى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيْلِ الْمُؤْمِنِيْنَ نُوَلِّه مَا تَوَلّٰى وَنُصْلِه جَهَنَّمَؕ وَسَآءَتْ مَصِيْرًا
কারো নিকট সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ব্যতীত অন্য পথ অনুসরণ করে, তবে যেদিকে সে ফিরে যায় সেদিকেই তাকে ফিরিয়ে দেব; অবশেষে তাকে জাহান্নামে দগ্ধ করব। আর তা কতই না মন্দ আবাস! (সূরা নিসা- ১১৫)
তাদের কোন আমলই কবুল হবে না :
وَمَنْ يَّبْتَغِ غَيْرَ الْاِسْلَامِ دِيْنًا فَلَنْ يُّقْبَلَ مِنْهُۚ وَهُوَ فِى الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
যে ব্যক্তি ইসলামকে বাদ দিয়ে অন্য কোন জীবনব্যবস্থার অনুসরণ করবে, তার কাছ থেকে কিছুই কবুল করা হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা আলে ইমরান- ৮৫)
ইসলামকে মানার সময় এখনই :
وَاَنِيْبُوْاۤ اِلٰى رَبِّكُمْ وَاَسْلِمُوْا لَهٗ مِنْ قَبْلِ اَنْ يَّاْتِيَكُمُ الْعَذَابُ ثُمَّ لَا تُنْصَرُوْنَ
তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের অভিমুখী হও এবং তোমাদের নিকট শাস্তি আসার পূর্বে তাঁর নিকট আত্মসমর্পণ করো; (নতুবা শাস্তি এসে গেলে) তোমাদেরকে আর কোন সাহায্য করা হবে না। (সূরা যুমার- ৫৪)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ حَقَّ تُقَاتِه وَلَا تَمُوْتُنَّ اِلَّا وَاَنْتُمْ مُّسْلِمُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যথাযথভাবে আল্লাহকে ভয় করো এবং মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।
(সূরা আলে ইমরান- ১০২)
وَاِنْ يَّرَوْا كُلَّ اٰيَةٍ لَّا يُؤْمِنُوْا بِهَاۚ وَاِنْ يَّرَوْا سَبِيْلَ الرُّشْدِ لَا يَتَّخِذُوْهُ سَبِيْلًاۚ وَاِنْ يَّرَوْا سَبِيْلَ الْغَيِّ يَتَّخِذُوْهُ سَبِيْلًاؕ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَا وَكَانُوْا عَنْهَا غَافِلِيْنَ
তারা আমার প্রত্যেকটি নিদর্শন দেখলেও তাতে ঈমান আনয়ন করবে না, সৎপথ দেখলেও তাকে গ্রহণ করবে না;, কিন্তু তারা ভ্রান্ত পথ দেখলে তা গ্রহণ করে নেবে। এটা এজন্য যে, তারা আমার নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করেছে এবং সে সম্বন্ধে তারা ছিল গাফিল। (সূরা আ‘রাফ- ১৪৬)
যারা ইসলামের দিকে আসে না তারা যালিম :
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرٰى عَلَى اللهِ الْكَذِبَ وَهُوَ يُدْعٰۤى اِلَى الْاِسْلَامِؕ وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
তার চেয়ে বড় যালিম আর কে আছে যে আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করে, অথচ তাকে ইসলামের দিকে আহবান করা হয়? আর আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (সূরা সাফ- ৭)
যারা অন্য পথে চলে তারা জাহান্নামী হবে :
وَمَنْ يُّشَاقِقِ الرَّسُوْلَ مِنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدٰى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيْلِ الْمُؤْمِنِيْنَ نُوَلِّه مَا تَوَلّٰى وَنُصْلِه جَهَنَّمَؕ وَسَآءَتْ مَصِيْرًا
কারো নিকট সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ব্যতীত অন্য পথ অনুসরণ করে, তবে যেদিকে সে ফিরে যায় সেদিকেই তাকে ফিরিয়ে দেব; অবশেষে তাকে জাহান্নামে দগ্ধ করব। আর তা কতই না মন্দ আবাস! (সূরা নিসা- ১১৫)
তাদের কোন আমলই কবুল হবে না :
وَمَنْ يَّبْتَغِ غَيْرَ الْاِسْلَامِ دِيْنًا فَلَنْ يُّقْبَلَ مِنْهُۚ وَهُوَ فِى الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
যে ব্যক্তি ইসলামকে বাদ দিয়ে অন্য কোন জীবনব্যবস্থার অনুসরণ করবে, তার কাছ থেকে কিছুই কবুল করা হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা আলে ইমরান- ৮৫)
ইসলামকে মানার সময় এখনই :
وَاَنِيْبُوْاۤ اِلٰى رَبِّكُمْ وَاَسْلِمُوْا لَهٗ مِنْ قَبْلِ اَنْ يَّاْتِيَكُمُ الْعَذَابُ ثُمَّ لَا تُنْصَرُوْنَ
তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের অভিমুখী হও এবং তোমাদের নিকট শাস্তি আসার পূর্বে তাঁর নিকট আত্মসমর্পণ করো; (নতুবা শাস্তি এসে গেলে) তোমাদেরকে আর কোন সাহায্য করা হবে না। (সূরা যুমার- ৫৪)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ حَقَّ تُقَاتِه وَلَا تَمُوْتُنَّ اِلَّا وَاَنْتُمْ مُّسْلِمُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যথাযথভাবে আল্লাহকে ভয় করো এবং মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।
(সূরা আলে ইমরান- ১০২)
তাওহীদ হচ্ছে, আল্লাহ তা‘আলাকে সিফাতে কামাল বা পূর্ণাঙ্গ গুণাবলিতে একক বলে জানা এবং মানা। শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্বের গুণে তিনি যে একক, দৃঢ়তার সাথে এ ঘোষণা দেয়া এবং ইবাদাতের মাধ্যমে তাঁর একত্বের প্রমাণ দেয়া।
তাওহীদ তিন প্রকার :
১। আল-আসমা ওয়াসসিফাত অর্থাৎ আল্লাহর নাম ও গুণাবলির তাওহীদ :
আল্লাহ তা‘আলার শ্রেষ্ঠত্ব, মহত্ব ও সৌন্দর্যের যাবতীয় নাম ও গুণাবলিতে তিনি একক এবং নিরঙ্কুশভাবে পূর্ণতার অধিকারী। এক্ষেত্রে কোনক্রমেই তাঁর অংশীদার কেউ হতে পারে না। এ আক্বীদা পোষণ করাই হচ্ছে আল-আসমা ওয়াসসিফাতের তাওহীদ। সাথে সাথে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আল্লাহর কামালিয়াতের ক্ষেত্রে যেসব দোষ-ত্রুটিকে নেতিবাচক হিসেবে ঘোষণা করেছেন, সেগুলোকে নেতিবাচক হিসেবেই গ্রহণ করা।
২. রুবুবিয়্যাতের তাওহীদ :
সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা এবং সমগ্র সৃষ্টিজগৎ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলাই হচ্ছেন একক রব বা প্রতিপালক। তিনি অফুরন্ত নিয়ামতের মাধ্যমে গোটা সৃষ্টিকে প্রতিপালন করছেন। বান্দার এ আক্বীদা পোষণের নামই হচ্ছে রুবুবিয়্যাতের তাওহীদ।
৩. তাওহীদে উলুহিয়্যাহ :
একমাত্র আল্লাহকেই তাঁর সমস্ত সৃষ্টির উপর উলুহিয়্যাতের এবং উবুদিয়্যাতের অধিকারী হিসেবে জানা এবং স্বীকার করা, আর যাবতীয় ইবাদাতের মাধ্যমে তাঁর একত্বের প্রমাণ দেয়া। সাথে সাথে একমাত্র আল্লাহর জন্যই ইবাদাতকে নিরংঙ্কুশ করা- এর নাম হচ্ছে তাওহীদে উলুহিয়্যাহ।
তাওহীদ তিন প্রকার :
১। আল-আসমা ওয়াসসিফাত অর্থাৎ আল্লাহর নাম ও গুণাবলির তাওহীদ :
আল্লাহ তা‘আলার শ্রেষ্ঠত্ব, মহত্ব ও সৌন্দর্যের যাবতীয় নাম ও গুণাবলিতে তিনি একক এবং নিরঙ্কুশভাবে পূর্ণতার অধিকারী। এক্ষেত্রে কোনক্রমেই তাঁর অংশীদার কেউ হতে পারে না। এ আক্বীদা পোষণ করাই হচ্ছে আল-আসমা ওয়াসসিফাতের তাওহীদ। সাথে সাথে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আল্লাহর কামালিয়াতের ক্ষেত্রে যেসব দোষ-ত্রুটিকে নেতিবাচক হিসেবে ঘোষণা করেছেন, সেগুলোকে নেতিবাচক হিসেবেই গ্রহণ করা।
২. রুবুবিয়্যাতের তাওহীদ :
সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা এবং সমগ্র সৃষ্টিজগৎ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলাই হচ্ছেন একক রব বা প্রতিপালক। তিনি অফুরন্ত নিয়ামতের মাধ্যমে গোটা সৃষ্টিকে প্রতিপালন করছেন। বান্দার এ আক্বীদা পোষণের নামই হচ্ছে রুবুবিয়্যাতের তাওহীদ।
৩. তাওহীদে উলুহিয়্যাহ :
একমাত্র আল্লাহকেই তাঁর সমস্ত সৃষ্টির উপর উলুহিয়্যাতের এবং উবুদিয়্যাতের অধিকারী হিসেবে জানা এবং স্বীকার করা, আর যাবতীয় ইবাদাতের মাধ্যমে তাঁর একত্বের প্রমাণ দেয়া। সাথে সাথে একমাত্র আল্লাহর জন্যই ইবাদাতকে নিরংঙ্কুশ করা- এর নাম হচ্ছে তাওহীদে উলুহিয়্যাহ।
আল্লাহ একক সত্তা :
وَاِلٰهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌۚ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ
তোমাদের উপাস্য একমাত্র আল্লাহ। তিনি ব্যতীত অন্য কোন সত্য উপাস্য নেই। (সূরা বাক্বারা- ১৬৩)
তাঁর কোন শরীক নেই :
لَا شَرِيْكَ لَهٗ وَبِذٰلِكَ اُمِرْتُ وَاَنَاْ اَوَّلُ الْمُسْلِمِيْنَ
তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি এরই জন্য আদিষ্ট হয়েছি; আর আমিই মুসলিমদের মধ্যে প্রথম। (সূরা আন‘আম- ১৬৩)
তিনি শরীক থেকে অনেক ঊর্ধ্বে :
خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ بِالْحَقِّ تَعَالٰى عَمَّا يُشْرِكُوْنَ
তিনি যথাযথভাবে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, তারা যা শরীক করে তিনি তা হতে অনেক ঊর্ধ্বে। (সূরা নাহল- ৩)
عَالِمِ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ فَتَعَالٰى عَمَّا يُشْرِكُوْنَ
তিনি প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য জ্ঞানের অধিকারী, তারা যাকে শরীক করে তিনি তার থেকে অনেক ঊর্ধ্বে।
(সূরা মু’মিনূন- ৯২)
তাঁর শরীক থাকলে সেও আরশে যেতে চাইত :
قُلْ لَّوْ كَانَ مَعَهٗۤ اٰلِهَةٌ كَمَا يَقُوْلُوْنَ اِذًا لَّابْتَغَوْا اِلٰى ذِى الْعَرْشِ سَبِيْلًا
বলো, তাদের কথা অনুযায়ী যদি তাঁর সাথে অন্য কোন ইলাহ্ থাকত, তবে তারা আরশের অধিপতির প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার উপায় অমেবষণ করত। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৪২)
একাধিক ইলাহ্ থাকলে বিশ্বব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যেত :
لَوْ كَانَ فِيْهِمَاۤ اٰلِهَةٌ اِلَّا اللهُ لَفَسَدَتَاؕ فَسُبْحَانَ اللهِ رَبِّ الْعَرْشِ عَمَّا يَصِفُوْنَ
যদি আকাশ ও পৃথিবীতে আল্লাহ ব্যতীত বহু ইলাহ্ থাকত, তবে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেত। অতএব তারা যা দ্বারা গুণান্বিত করে তা হতে আরশের অধিপতি আল্লাহ অনেক পবিত্র ও মহান। (সূরা আম্বিয়া- ২২)
ব্যাখ্যা : একটি ছোট্ট গৃহে যদি দু’জন গৃহকর্তা হয়, তাহলে সে গৃহের পরিচালনা দু’দিনও ভালোভাবে চলবে না। বিশ্বজাহানের সমগ্র ব্যবস্থা পৃথিবীর ভূগর্ভ থেকে দূরবর্তী গ্রহ নক্ষত্র পর্যন্ত সবকিছুই একটি বিশ্বজনীন নিয়মের অধীনে পরিচালিত। এখন এটা কীভাবে ধারণা করা যেতে পারে যে, বহু স্বতন্ত্র ও স্বাধীন শাসকের রাজ্যে একই আইন ও একই নিয়ম চলতে পারে? এখানে যে নিয়ম ও শৃঙ্খলা বজায় আছে এটাই এ কথার সাক্ষ্য দেয় যে, ক্ষমতা একই সার্বভৌম কর্তৃত্বে কেন্দ্রীভূত রয়েছে এবং এ সার্বভৌম কর্তৃত্ব বিভিন্ন শাসকদের মধ্যে বিভক্ত নয়।
বহু ইলাহ্ থাকলে একজন অপরজন থেকে পৃথক হয়ে যেত :
مَا اتَّخَذَ اللهُ مِنْ وَّلَدٍ وَّمَا كَانَ مَعَهٗ مِنْ اِلٰهٍ اِذًا لَّذَهَبَ كُلُّ اِلٰهٍ ۢبِمَا خَلَقَ وَلَعَلَا بَعْضُهُمْ عَلٰى بَعْضٍ سُبْحَانَ اللهِ عَمَّا يَصِفُوْنَ
আল্লাহ কোন সন্তান গ্রহণ করেননি এবং তাঁর সাথে অপর কোন ইলাহও নেই। যদি থাকত তবে প্রত্যেক ইলাহ্ স্বীয় সৃষ্টি নিয়ে পৃথক হয়ে যেত এবং একে অপরের উপর প্রাধান্য বিস্তার করত। (সুতরাং) তারা যা দ্বারা তাঁকে গুণান্বিত করে আল্লাহ তা হতে পবিত্র! (সূরা মু’মিনূন- ৯১)
ব্যাখ্যা : বিশ্বের নিয়ম-শৃঙ্খলা ও তার বিভিন্ন অংশের পারস্পরিক একাত্মতা স্পষ্টভাবেই প্রমাণ করছে যে, এর ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব একমাত্র আল্লাহর হাতে কেন্দ্রীভূত। যদি কর্তৃত্ব বিভক্ত হতো তাহলে কর্তৃত্বশীলদের মধ্যে অনিবার্যভাবে মতবিরোধ সৃষ্টি হতো এবং এক সময় তা তাদের উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত করত।
وَاِلٰهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌۚ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ
তোমাদের উপাস্য একমাত্র আল্লাহ। তিনি ব্যতীত অন্য কোন সত্য উপাস্য নেই। (সূরা বাক্বারা- ১৬৩)
তাঁর কোন শরীক নেই :
لَا شَرِيْكَ لَهٗ وَبِذٰلِكَ اُمِرْتُ وَاَنَاْ اَوَّلُ الْمُسْلِمِيْنَ
তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি এরই জন্য আদিষ্ট হয়েছি; আর আমিই মুসলিমদের মধ্যে প্রথম। (সূরা আন‘আম- ১৬৩)
তিনি শরীক থেকে অনেক ঊর্ধ্বে :
خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ بِالْحَقِّ تَعَالٰى عَمَّا يُشْرِكُوْنَ
তিনি যথাযথভাবে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, তারা যা শরীক করে তিনি তা হতে অনেক ঊর্ধ্বে। (সূরা নাহল- ৩)
عَالِمِ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ فَتَعَالٰى عَمَّا يُشْرِكُوْنَ
তিনি প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য জ্ঞানের অধিকারী, তারা যাকে শরীক করে তিনি তার থেকে অনেক ঊর্ধ্বে।
(সূরা মু’মিনূন- ৯২)
তাঁর শরীক থাকলে সেও আরশে যেতে চাইত :
قُلْ لَّوْ كَانَ مَعَهٗۤ اٰلِهَةٌ كَمَا يَقُوْلُوْنَ اِذًا لَّابْتَغَوْا اِلٰى ذِى الْعَرْشِ سَبِيْلًا
বলো, তাদের কথা অনুযায়ী যদি তাঁর সাথে অন্য কোন ইলাহ্ থাকত, তবে তারা আরশের অধিপতির প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার উপায় অমেবষণ করত। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৪২)
একাধিক ইলাহ্ থাকলে বিশ্বব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যেত :
لَوْ كَانَ فِيْهِمَاۤ اٰلِهَةٌ اِلَّا اللهُ لَفَسَدَتَاؕ فَسُبْحَانَ اللهِ رَبِّ الْعَرْشِ عَمَّا يَصِفُوْنَ
যদি আকাশ ও পৃথিবীতে আল্লাহ ব্যতীত বহু ইলাহ্ থাকত, তবে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেত। অতএব তারা যা দ্বারা গুণান্বিত করে তা হতে আরশের অধিপতি আল্লাহ অনেক পবিত্র ও মহান। (সূরা আম্বিয়া- ২২)
ব্যাখ্যা : একটি ছোট্ট গৃহে যদি দু’জন গৃহকর্তা হয়, তাহলে সে গৃহের পরিচালনা দু’দিনও ভালোভাবে চলবে না। বিশ্বজাহানের সমগ্র ব্যবস্থা পৃথিবীর ভূগর্ভ থেকে দূরবর্তী গ্রহ নক্ষত্র পর্যন্ত সবকিছুই একটি বিশ্বজনীন নিয়মের অধীনে পরিচালিত। এখন এটা কীভাবে ধারণা করা যেতে পারে যে, বহু স্বতন্ত্র ও স্বাধীন শাসকের রাজ্যে একই আইন ও একই নিয়ম চলতে পারে? এখানে যে নিয়ম ও শৃঙ্খলা বজায় আছে এটাই এ কথার সাক্ষ্য দেয় যে, ক্ষমতা একই সার্বভৌম কর্তৃত্বে কেন্দ্রীভূত রয়েছে এবং এ সার্বভৌম কর্তৃত্ব বিভিন্ন শাসকদের মধ্যে বিভক্ত নয়।
বহু ইলাহ্ থাকলে একজন অপরজন থেকে পৃথক হয়ে যেত :
مَا اتَّخَذَ اللهُ مِنْ وَّلَدٍ وَّمَا كَانَ مَعَهٗ مِنْ اِلٰهٍ اِذًا لَّذَهَبَ كُلُّ اِلٰهٍ ۢبِمَا خَلَقَ وَلَعَلَا بَعْضُهُمْ عَلٰى بَعْضٍ سُبْحَانَ اللهِ عَمَّا يَصِفُوْنَ
আল্লাহ কোন সন্তান গ্রহণ করেননি এবং তাঁর সাথে অপর কোন ইলাহও নেই। যদি থাকত তবে প্রত্যেক ইলাহ্ স্বীয় সৃষ্টি নিয়ে পৃথক হয়ে যেত এবং একে অপরের উপর প্রাধান্য বিস্তার করত। (সুতরাং) তারা যা দ্বারা তাঁকে গুণান্বিত করে আল্লাহ তা হতে পবিত্র! (সূরা মু’মিনূন- ৯১)
ব্যাখ্যা : বিশ্বের নিয়ম-শৃঙ্খলা ও তার বিভিন্ন অংশের পারস্পরিক একাত্মতা স্পষ্টভাবেই প্রমাণ করছে যে, এর ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব একমাত্র আল্লাহর হাতে কেন্দ্রীভূত। যদি কর্তৃত্ব বিভক্ত হতো তাহলে কর্তৃত্বশীলদের মধ্যে অনিবার্যভাবে মতবিরোধ সৃষ্টি হতো এবং এক সময় তা তাদের উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত করত।
আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই :
وَمَا مِنْ اِلٰهٍ اِلَّا اللهُ
আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। (সূরা আলে ইমরান- ৬২)
ذٰلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمْؕ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ فَاعْبُدُوْهُ
তিনিই তো আল্লাহ, তোমাদের প্রতিপালক; তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই। তিনিই সবকিছুর স্রষ্টা; সুতরাং তোমরা তাঁরই ইবাদাত করো। (সূরা আন‘আম- ১০২)
اِنَّمَاۤ اِلٰهُكُمُ اللهُ الَّذِيْ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ
তোমাদের ইলাহ্ তো কেবল আল্লাহই, যিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই। (সূরা ত্বা-হা- ৯৮)
وَهُوَ اللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَؕ لَهُ الْحَمْدُ فِى الْاُوْلٰى وَالْاٰخِرَةِ وَلَهُ الْحُكْمُ وَاِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ
তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই, দুনিয়া ও আখিরাতে সমস্ত প্রশংসা তাঁরই; বিধান তাঁরই, তোমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা ক্বাসাস- ৭০)
আসমান ও জমিনে একই উপাস্য :
وَهُوَ الَّذِيْ فِى السَّمَآءِ اِلٰهٌ وَّ فِى الْاَرْضِ اِلٰهٌ وَّهُوَ الْحَكِيْمُ الْعَلِيْمُ
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে তিনিই মা‘বুদ; তিনিই প্রজ্ঞাবান এবং সর্বজ্ঞ। (সূরা যুখরুফ- ৮৪)
আল্লাহ ছাড়া অন্য সব উপাস্যই মিথ্যা :
ذٰلِكَ بِاَنَّ اللهَ هُوَ الْحَقُّ وَاَنَّ مَا يَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِه هُوَ الْبَاطِلُ
এটা এজন্য যে, নিশ্চয় আল্লাহই সত্য এবং তারা তাঁর পরিবর্তে যাকে ডাকে, তা অসত্য। (সূরা হজ্জ- ৬২)
তাওহীদের ব্যাপারে আল্লাহর শপথ :
وَالصَّآفَّاتِ صَفًّا ‐ فَالزَّاجِرَاتِ زَجْرًا ‐ فَالتَّالِيَاتِ ذِكْرًا ‐ اِنَّ اِلٰهَكُمْ لَوَاحِدٌ
শপথ (সেসব ফেরেশতাদের) যারা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। শপথ (সেসব ফেরেশতার) যারা সজোরে ধমক দেয়। শপথ (সেসব ফেরেশতার) যারা সদা আল্লাহর যিকির করে। অবশ্যই তোমাদের উপাস্য হচ্ছেন একজন। (সূরা সাফ্ফাত, ১-৪)
তাওহীদের ব্যাপারে আল্লাহর সাক্ষ্য হচ্ছে সবচেয়ে বড় :
قُلْ اَيُّ شَيْءٍ اَكْبَرُ شَهَادَةًؕ قُلِ اللهُ شَهِيْدٌ ۢبَيْنِيْ وَبَيْنَكُمْؕ وَ اُوْحِيَ اِلَيَّ هٰذَا الْقُرْاٰنُ لِاُنْذِرَكُمْ بِهٖ وَ مَنْ ۢبَلَغَؕ اَئِنَّكُمْ لَتَشْهَدُوْنَ اَنَّ مَعَ اللهِ اٰلِهَةً اُخْرٰى ۚ قُلْ لَّاۤ اَشْهَدُۚ قُلْ اِنَّمَا هُوَ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ وَّاِنَّنِيْ بَرِيْٓءٌ مِّمَّا تُشْرِكُوْنَ
বলো, কোন্ সাক্ষ্য সবচেয়ে বড়? বলো, আল্লাহর (সাক্ষ্যই সবচেয়ে বড়); যিনি আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী। এ কুরআন আমার নিকট ওহী করা হয়েছে, যেন আমি এর দ্বারা তোমাদেরকে এবং যার নিকট তা পৌঁছবে তাদেরকে ভয় দেখাতে পারি। তোমরা কি এ সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহ্ আছে? বলো, আমি সে সাক্ষ্য দেই না। বলো, নিশ্চয় তিনিই একমাত্র ইলাহ্ এবং তোমরা যা শরীক কর তা হতে অবশ্যই আমি মুক্ত। (সূরা আন‘আম- ১৯)
ফেরেশতা ও জ্ঞানীদের সাক্ষ্য :
شَهِدَ اللهُ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ وَالْمَلَآئِكَةُ وَاُولُو الْعِلْمِ قَآئِمًا ۢبِالْقِسْطِؕ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, তিনি ছাড়া কোন মা‘বুদ নেই। (এ বিষয়ে আরো সাক্ষ্যদানকারী হচ্ছেন) ফেরেশতারা এবং জ্ঞানীরা। তিনি ন্যায়নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। তিনি ছাড়া কোন মা‘বুদ নেই; তিনি মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা আলে ইমরান- ১৮)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর পর সবচেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য সাক্ষ্য হচ্ছে ফেরেশতাদের সাক্ষ্য। কারণ তারা হচ্ছেন বিশ্বের ব্যবস্থাপনার কার্যনির্বাহী ও কর্মচারী। তারা সরাসরি নিজেদের জ্ঞানের ভিত্তিতে সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, এ বিশ্বে আল্লাহ ছাড়া আর কারো হুকুম চলে না। পৃথিবী ও আকাশের ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে তিনি ছাড়া এমন কোন সত্তা নেই, যার কাছ থেকে তারা নির্দেশ গ্রহণ করতে পারে। ফেরেশতাদের পর এ সৃষ্টিজগতের যারাই প্রকৃত সত্য সম্পর্কে জ্ঞান রাখে, তাদের সর্বসম্মত সাক্ষ্য হচ্ছে, আল্লাহ একাই এ সমগ্র বিশ্বের নিয়ন্ত্রক, মালিক, পরিচালক ও প্রভু।
তাওহীদের পক্ষে ওহীর বাণী :
قُلْ اِنَّمَا يُوْحٰۤى اِلَيَّ اَنَّمَاۤ اِلٰهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ فَهَلْ اَنْتُمْ مُّسْلِمُوْنَ
বলো, আমার প্রতি ওহী হয় যে, তোমাদের ইলাহ্ একই ইলাহ। তবুও কি তোমরা আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে না? (সূরা আন্বিয়া- ১০৮)
قُلْ اِنَّمَاۤ اَنَاْ بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوْحٰۤى اِلَيَّ اَنَّمَاۤ اِلٰهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ
বলো, আমি তো তোমাদের মতোই একজন মানুষ। আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহ্ মাত্র একজনই। (সূরা কাহফ- ১১০)
কুরআন পাঠানোর একটি উদ্দেশ্য হচ্ছে তাওহীদের জ্ঞান দেয়া :
الٓرٰ ‐ كِتَابٌ اُحْكِمَتْ اٰيَاتُهٗ ثُمَّ فُصِّلَتْ مِنْ لَّدُنْ حَكِيْمٍ خَبِيْرٍ ‐ اَلَّا تَعْبُدُوْاۤ اِلَّا اللهَ
আলিফ-লাম-রা। এ কুরআন হচ্ছে এমন একটি কিতাব, যার আয়াতসমূহকে অত্যন্ত সুস্পষ্ট ও সুবিন্যস্ত করে রাখা হয়েছে। অতঃপর এর বর্ণনাসমূহও বিশদভাবে বলে দেয়া হয়েছে। এ কিতাব এক প্রজ্ঞাময় সর্বজ্ঞ সত্তার কাছ থেকেই (তোমাদের কাছে এসেছে)। এর বক্তব্য হচ্ছে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করো না। (সূরা হুদ- ১, ২)
আল্লাহ আদমসন্তান থেকে তাওহীদের সাক্ষ্য নিয়েছেন :
وَاِذْ اَخَذَ رَبُّكَ مِنْ ۢبَنِيْۤ اٰدَمَ مِنْ ظُهُوْرِهِمْ ذُرِِّيَّتَهُمْ وَاَشْهَدَهُمْۚ عَلٰۤى اَنْفُسِهِمْ اَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ قَالُوْا بَلٰىۚ شَهِدْنَاۚ اَنْ تَقُوْلُوْا يَوْمَ الْقِيَامَةِ اِنَّا كُنَّا عَنْ هٰذَا غَافِلِيْنَ
স্মরণ করো, যখন তোমার প্রতিপালক আদম সন্তানের পৃষ্ঠদেশ হতে তার বংশধরকে বের করেছিলেন। অতঃপর তাদের নিজেদের সম্বন্ধে স্বীকারোক্তি গ্রহণ করে বলেছিলেন, আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই? তারা বলেছিল, হ্যাঁ- অবশ্যই আমরা সাক্ষী রইলাম। এটা এজন্য যে, তোমরা যেন কিয়ামতের দিন বলতে না পার যে, আমরা তো এ বিষয়ে গাফিল ছিলাম। (সূরা আ‘রাফ- ১৭২)
ব্যাখ্যা : আদম (আঃ) থেকে কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ জন্মগ্রহণ করবে তাদের সবাইকে আল্লাহ তা‘আলা একই সঙ্গে সচেতন সত্তায় আবির্ভূত করে নিজের সামনে উপস্থিত করেছিলেন এবং তাদের কাছ থেকে তাঁর রব হওয়ার ব্যাপারে সাক্ষ্য গ্রহণ করেছিলেন। তাদেরকে নিজেদের উপর সাক্ষী বানিয়ে জিজ্ঞেস করেন, আমি কি তোমাদের রব নই? তখন তারা সবাই বলেছে, অবশ্যই আপনি আমাদের রব। তখন আল্লাহ বললেন, কিয়ামতের দিন যাতে তোমরা না বলতে পার যে, আমরা তো এ বিষয়টি জানতাম না। এজন্যই আমি তোমাদের থেকে এ সাÿ্য নিয়েছি। ভালোভাবে জেনে রেখো, আমি ছাড়া ইবাদাত লাভের যোগ্য আর কেউ নেই এবং আমি ছাড়া আর কোন রবও নেই। তোমরা আমার সাথে আর কাউকে শরীক করো না। আমি তোমাদের কাছে আমার নবী পাঠাব। তোমরা আমার সাথে যেসব অঙ্গীকার করেছ, নবীগণ তোমাদেরকে সেসব স্মরণ করিয়ে দেবেন। আর তোমাদের প্রতি কিতাবও নাযিল করব। তখন সকল মানুষ বলে ওঠে- ‘‘আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি, তুমিই আমাদের রব, তুমিই আমাদের মা‘বুদ, তুমি ছাড়া আমাদের আর কোন রব কিংবা মা‘বুদ নেই।’’
অনাদিকালের এ অঙ্গীকারটিকে কিয়ামতের দিন মানুষের বিরুদ্ধে একটি প্রমাণ হিসেবে পেশ করা হবে। মানবজাতির মধ্য থেকে যারা আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহাত্মক আচরণ করবে তারা যেন নিজেরাই নিজেদের এ অপরাধের জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী হয়। নিজেদের অজুহাত পেশ করার কোন সুযোগ যেন তাদের না থাকে। সেই অঙ্গীকারের কথা এখন মানুষের স্মরণ নেই। যদি মানুষের চেতনা ও স্মৃতিপটে তা জাগ্রত রাখা হতো, তাহলে মানুষকে দুনিয়ার বর্তমান পরীক্ষাগারে পাঠানোর ব্যাপারটা একেবারে অর্থহীন হয়ে যেত। কারণ তখন পরীক্ষার আর কোন অর্থই থাকত না। তাই এ অঙ্গীকারের কথা স্মৃতিপটে জাগ্রত রাখা হয়নি, কিন্তু অবচেতন মনে তাকে অবশ্যই সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। যেদিন হিসাব-নিকাশ ও বিচারের আদালত প্রতিষ্ঠিত হবে, সেদিন মহান স্রষ্টা তাদের স্মৃতিতে সৃষ্টির প্রথম দিনের সেই স্মৃতিগুলো জাগিয়ে তুলবেন।
তাওহীদ গ্রহণের জন্য বনী ইসরাঈল থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ :
وَاِذْ اَخَذْنَا مِيْثَاقَ بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ لَا تَعْبُدُوْنَ اِلَّا اللهَ
স্মরণ করো, যখন আমি বনী ইসরাঈল হতে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো ইবাদাত করবে না। (সূরা বাক্বারা- ৮৩)
এক আল্লাহর ইবাদাত করাই জিন ও মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য :
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْاِنْسَ اِلَّا لِيَعْبُدُوْنِ
আমি জিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি এজন্য যে, তারা কেবল আমারই ইবাদাত করবে। (সূরা যারিয়াত- ৫৬)
তাওহীদের ঘোষণা দেয়ার নির্দেশ :
وَقُلِ الْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ لَمْ يَتَّخِذْ وَلَدًا وَّلَمْ يَكُنْ لَّهٗ شَرِيْكٌ فِى الْمُلْكِ وَلَمْ يَكُنْ لَّهٗ وَلِيٌّ مِّنَ الذُّلِّ وَكَبِّرْهُ تَكْبِيْرًا
বলো, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি কোন সন্তান গ্রহণ করেননি। তার সার্বভৌমত্বে কোন অংশীদার নেই এবং তিনি দুর্দশাগ্রস্ত হন না, যে কারণে তাঁর অভিভাবকের প্রয়োজন হতে পারে। সুতরাং যথাযথ মর্যাদায় তাঁর মাহাত্ম্য ঘোষণা করো। (সূরা বনী ইসরাঈল- ১১১)
وَمَا مِنْ اِلٰهٍ اِلَّا اللهُ
আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। (সূরা আলে ইমরান- ৬২)
ذٰلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمْؕ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ فَاعْبُدُوْهُ
তিনিই তো আল্লাহ, তোমাদের প্রতিপালক; তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই। তিনিই সবকিছুর স্রষ্টা; সুতরাং তোমরা তাঁরই ইবাদাত করো। (সূরা আন‘আম- ১০২)
اِنَّمَاۤ اِلٰهُكُمُ اللهُ الَّذِيْ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ
তোমাদের ইলাহ্ তো কেবল আল্লাহই, যিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই। (সূরা ত্বা-হা- ৯৮)
وَهُوَ اللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَؕ لَهُ الْحَمْدُ فِى الْاُوْلٰى وَالْاٰخِرَةِ وَلَهُ الْحُكْمُ وَاِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ
তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই, দুনিয়া ও আখিরাতে সমস্ত প্রশংসা তাঁরই; বিধান তাঁরই, তোমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা ক্বাসাস- ৭০)
আসমান ও জমিনে একই উপাস্য :
وَهُوَ الَّذِيْ فِى السَّمَآءِ اِلٰهٌ وَّ فِى الْاَرْضِ اِلٰهٌ وَّهُوَ الْحَكِيْمُ الْعَلِيْمُ
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে তিনিই মা‘বুদ; তিনিই প্রজ্ঞাবান এবং সর্বজ্ঞ। (সূরা যুখরুফ- ৮৪)
আল্লাহ ছাড়া অন্য সব উপাস্যই মিথ্যা :
ذٰلِكَ بِاَنَّ اللهَ هُوَ الْحَقُّ وَاَنَّ مَا يَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِه هُوَ الْبَاطِلُ
এটা এজন্য যে, নিশ্চয় আল্লাহই সত্য এবং তারা তাঁর পরিবর্তে যাকে ডাকে, তা অসত্য। (সূরা হজ্জ- ৬২)
তাওহীদের ব্যাপারে আল্লাহর শপথ :
وَالصَّآفَّاتِ صَفًّا ‐ فَالزَّاجِرَاتِ زَجْرًا ‐ فَالتَّالِيَاتِ ذِكْرًا ‐ اِنَّ اِلٰهَكُمْ لَوَاحِدٌ
শপথ (সেসব ফেরেশতাদের) যারা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। শপথ (সেসব ফেরেশতার) যারা সজোরে ধমক দেয়। শপথ (সেসব ফেরেশতার) যারা সদা আল্লাহর যিকির করে। অবশ্যই তোমাদের উপাস্য হচ্ছেন একজন। (সূরা সাফ্ফাত, ১-৪)
তাওহীদের ব্যাপারে আল্লাহর সাক্ষ্য হচ্ছে সবচেয়ে বড় :
قُلْ اَيُّ شَيْءٍ اَكْبَرُ شَهَادَةًؕ قُلِ اللهُ شَهِيْدٌ ۢبَيْنِيْ وَبَيْنَكُمْؕ وَ اُوْحِيَ اِلَيَّ هٰذَا الْقُرْاٰنُ لِاُنْذِرَكُمْ بِهٖ وَ مَنْ ۢبَلَغَؕ اَئِنَّكُمْ لَتَشْهَدُوْنَ اَنَّ مَعَ اللهِ اٰلِهَةً اُخْرٰى ۚ قُلْ لَّاۤ اَشْهَدُۚ قُلْ اِنَّمَا هُوَ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ وَّاِنَّنِيْ بَرِيْٓءٌ مِّمَّا تُشْرِكُوْنَ
বলো, কোন্ সাক্ষ্য সবচেয়ে বড়? বলো, আল্লাহর (সাক্ষ্যই সবচেয়ে বড়); যিনি আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী। এ কুরআন আমার নিকট ওহী করা হয়েছে, যেন আমি এর দ্বারা তোমাদেরকে এবং যার নিকট তা পৌঁছবে তাদেরকে ভয় দেখাতে পারি। তোমরা কি এ সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহ্ আছে? বলো, আমি সে সাক্ষ্য দেই না। বলো, নিশ্চয় তিনিই একমাত্র ইলাহ্ এবং তোমরা যা শরীক কর তা হতে অবশ্যই আমি মুক্ত। (সূরা আন‘আম- ১৯)
ফেরেশতা ও জ্ঞানীদের সাক্ষ্য :
شَهِدَ اللهُ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ وَالْمَلَآئِكَةُ وَاُولُو الْعِلْمِ قَآئِمًا ۢبِالْقِسْطِؕ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, তিনি ছাড়া কোন মা‘বুদ নেই। (এ বিষয়ে আরো সাক্ষ্যদানকারী হচ্ছেন) ফেরেশতারা এবং জ্ঞানীরা। তিনি ন্যায়নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। তিনি ছাড়া কোন মা‘বুদ নেই; তিনি মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা আলে ইমরান- ১৮)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর পর সবচেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য সাক্ষ্য হচ্ছে ফেরেশতাদের সাক্ষ্য। কারণ তারা হচ্ছেন বিশ্বের ব্যবস্থাপনার কার্যনির্বাহী ও কর্মচারী। তারা সরাসরি নিজেদের জ্ঞানের ভিত্তিতে সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, এ বিশ্বে আল্লাহ ছাড়া আর কারো হুকুম চলে না। পৃথিবী ও আকাশের ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে তিনি ছাড়া এমন কোন সত্তা নেই, যার কাছ থেকে তারা নির্দেশ গ্রহণ করতে পারে। ফেরেশতাদের পর এ সৃষ্টিজগতের যারাই প্রকৃত সত্য সম্পর্কে জ্ঞান রাখে, তাদের সর্বসম্মত সাক্ষ্য হচ্ছে, আল্লাহ একাই এ সমগ্র বিশ্বের নিয়ন্ত্রক, মালিক, পরিচালক ও প্রভু।
তাওহীদের পক্ষে ওহীর বাণী :
قُلْ اِنَّمَا يُوْحٰۤى اِلَيَّ اَنَّمَاۤ اِلٰهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ فَهَلْ اَنْتُمْ مُّسْلِمُوْنَ
বলো, আমার প্রতি ওহী হয় যে, তোমাদের ইলাহ্ একই ইলাহ। তবুও কি তোমরা আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে না? (সূরা আন্বিয়া- ১০৮)
قُلْ اِنَّمَاۤ اَنَاْ بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوْحٰۤى اِلَيَّ اَنَّمَاۤ اِلٰهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ
বলো, আমি তো তোমাদের মতোই একজন মানুষ। আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহ্ মাত্র একজনই। (সূরা কাহফ- ১১০)
কুরআন পাঠানোর একটি উদ্দেশ্য হচ্ছে তাওহীদের জ্ঞান দেয়া :
الٓرٰ ‐ كِتَابٌ اُحْكِمَتْ اٰيَاتُهٗ ثُمَّ فُصِّلَتْ مِنْ لَّدُنْ حَكِيْمٍ خَبِيْرٍ ‐ اَلَّا تَعْبُدُوْاۤ اِلَّا اللهَ
আলিফ-লাম-রা। এ কুরআন হচ্ছে এমন একটি কিতাব, যার আয়াতসমূহকে অত্যন্ত সুস্পষ্ট ও সুবিন্যস্ত করে রাখা হয়েছে। অতঃপর এর বর্ণনাসমূহও বিশদভাবে বলে দেয়া হয়েছে। এ কিতাব এক প্রজ্ঞাময় সর্বজ্ঞ সত্তার কাছ থেকেই (তোমাদের কাছে এসেছে)। এর বক্তব্য হচ্ছে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করো না। (সূরা হুদ- ১, ২)
আল্লাহ আদমসন্তান থেকে তাওহীদের সাক্ষ্য নিয়েছেন :
وَاِذْ اَخَذَ رَبُّكَ مِنْ ۢبَنِيْۤ اٰدَمَ مِنْ ظُهُوْرِهِمْ ذُرِِّيَّتَهُمْ وَاَشْهَدَهُمْۚ عَلٰۤى اَنْفُسِهِمْ اَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ قَالُوْا بَلٰىۚ شَهِدْنَاۚ اَنْ تَقُوْلُوْا يَوْمَ الْقِيَامَةِ اِنَّا كُنَّا عَنْ هٰذَا غَافِلِيْنَ
স্মরণ করো, যখন তোমার প্রতিপালক আদম সন্তানের পৃষ্ঠদেশ হতে তার বংশধরকে বের করেছিলেন। অতঃপর তাদের নিজেদের সম্বন্ধে স্বীকারোক্তি গ্রহণ করে বলেছিলেন, আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই? তারা বলেছিল, হ্যাঁ- অবশ্যই আমরা সাক্ষী রইলাম। এটা এজন্য যে, তোমরা যেন কিয়ামতের দিন বলতে না পার যে, আমরা তো এ বিষয়ে গাফিল ছিলাম। (সূরা আ‘রাফ- ১৭২)
ব্যাখ্যা : আদম (আঃ) থেকে কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ জন্মগ্রহণ করবে তাদের সবাইকে আল্লাহ তা‘আলা একই সঙ্গে সচেতন সত্তায় আবির্ভূত করে নিজের সামনে উপস্থিত করেছিলেন এবং তাদের কাছ থেকে তাঁর রব হওয়ার ব্যাপারে সাক্ষ্য গ্রহণ করেছিলেন। তাদেরকে নিজেদের উপর সাক্ষী বানিয়ে জিজ্ঞেস করেন, আমি কি তোমাদের রব নই? তখন তারা সবাই বলেছে, অবশ্যই আপনি আমাদের রব। তখন আল্লাহ বললেন, কিয়ামতের দিন যাতে তোমরা না বলতে পার যে, আমরা তো এ বিষয়টি জানতাম না। এজন্যই আমি তোমাদের থেকে এ সাÿ্য নিয়েছি। ভালোভাবে জেনে রেখো, আমি ছাড়া ইবাদাত লাভের যোগ্য আর কেউ নেই এবং আমি ছাড়া আর কোন রবও নেই। তোমরা আমার সাথে আর কাউকে শরীক করো না। আমি তোমাদের কাছে আমার নবী পাঠাব। তোমরা আমার সাথে যেসব অঙ্গীকার করেছ, নবীগণ তোমাদেরকে সেসব স্মরণ করিয়ে দেবেন। আর তোমাদের প্রতি কিতাবও নাযিল করব। তখন সকল মানুষ বলে ওঠে- ‘‘আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি, তুমিই আমাদের রব, তুমিই আমাদের মা‘বুদ, তুমি ছাড়া আমাদের আর কোন রব কিংবা মা‘বুদ নেই।’’
অনাদিকালের এ অঙ্গীকারটিকে কিয়ামতের দিন মানুষের বিরুদ্ধে একটি প্রমাণ হিসেবে পেশ করা হবে। মানবজাতির মধ্য থেকে যারা আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহাত্মক আচরণ করবে তারা যেন নিজেরাই নিজেদের এ অপরাধের জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী হয়। নিজেদের অজুহাত পেশ করার কোন সুযোগ যেন তাদের না থাকে। সেই অঙ্গীকারের কথা এখন মানুষের স্মরণ নেই। যদি মানুষের চেতনা ও স্মৃতিপটে তা জাগ্রত রাখা হতো, তাহলে মানুষকে দুনিয়ার বর্তমান পরীক্ষাগারে পাঠানোর ব্যাপারটা একেবারে অর্থহীন হয়ে যেত। কারণ তখন পরীক্ষার আর কোন অর্থই থাকত না। তাই এ অঙ্গীকারের কথা স্মৃতিপটে জাগ্রত রাখা হয়নি, কিন্তু অবচেতন মনে তাকে অবশ্যই সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। যেদিন হিসাব-নিকাশ ও বিচারের আদালত প্রতিষ্ঠিত হবে, সেদিন মহান স্রষ্টা তাদের স্মৃতিতে সৃষ্টির প্রথম দিনের সেই স্মৃতিগুলো জাগিয়ে তুলবেন।
তাওহীদ গ্রহণের জন্য বনী ইসরাঈল থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ :
وَاِذْ اَخَذْنَا مِيْثَاقَ بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ لَا تَعْبُدُوْنَ اِلَّا اللهَ
স্মরণ করো, যখন আমি বনী ইসরাঈল হতে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো ইবাদাত করবে না। (সূরা বাক্বারা- ৮৩)
এক আল্লাহর ইবাদাত করাই জিন ও মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য :
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْاِنْسَ اِلَّا لِيَعْبُدُوْنِ
আমি জিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি এজন্য যে, তারা কেবল আমারই ইবাদাত করবে। (সূরা যারিয়াত- ৫৬)
তাওহীদের ঘোষণা দেয়ার নির্দেশ :
وَقُلِ الْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ لَمْ يَتَّخِذْ وَلَدًا وَّلَمْ يَكُنْ لَّهٗ شَرِيْكٌ فِى الْمُلْكِ وَلَمْ يَكُنْ لَّهٗ وَلِيٌّ مِّنَ الذُّلِّ وَكَبِّرْهُ تَكْبِيْرًا
বলো, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি কোন সন্তান গ্রহণ করেননি। তার সার্বভৌমত্বে কোন অংশীদার নেই এবং তিনি দুর্দশাগ্রস্ত হন না, যে কারণে তাঁর অভিভাবকের প্রয়োজন হতে পারে। সুতরাং যথাযথ মর্যাদায় তাঁর মাহাত্ম্য ঘোষণা করো। (সূরা বনী ইসরাঈল- ১১১)
নবীদেরকে পাঠানোর মূল উদ্দেশ্য ছিল তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করা :
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِيْ كُلِّ اُمَّةٍ رَّسُوْلًا اَنِ اعْبُدُوا اللهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوْتَ
আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যে রাসূল প্রেরণ করেছি (এ নির্দেশ দিয়ে যে) তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো এবং তাগুতকে বর্জন করো। (সূরা নাহল- ৩৬)
وَمَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا نُوْحِيْۤ اِلَيْهِ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَاْ فَاعْبُدُوْنِ
আমি তোমার পূর্বে এমন কোন রাসূল প্রেরণ করিনি, যার প্রতি এ ওহী করিনি যে, আমি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই; সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদাত করো। (সূরা আম্বিয়া- ২৫)
নূহ (আঃ) এর দাওয়াত :
لَقَدْ اَرْسَلْنَا نُوْحًا اِلٰى قَوْمِه فَقَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرُه
আমি তো নূহকে তার সম্প্রদায়ের নিকট পাঠিয়েছিলাম। অতঃপর সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহর ইবাদাত করো, তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ্ নেই। (সূরা আ‘রাফ- ৫৯)
হুদ (আঃ) এর দাওয়াত :
وَاِلٰى عَادٍ اَخَاهُمْ هُوْدًاؕ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرُهٗؕ اَفَلَا تَتَّقُوْنَ
আমি আদ জাতির নিকট তাদের ভাই হুদকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো, তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই। তবুও কি তোমরা তাঁকে ভয় করবে না? (সূরা আ‘রাফ- ৬৫)
সালেহ (আঃ) এর দাওয়াত :
وَاِلٰى ثَمُوْدَ اَخَاهُمْ صَالِحًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرُه
সামূদ জাতির নিকট তাদের ভাই সালেহকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো। তিনি ব্যতীত তোমাদের জন্য অন্য কোন ইলাহ্ নেই। (সূরা আ‘রাফ- ৭৩)
শুয়াইব (আঃ) এর দাওয়াত :
وَاِلٰى مَدْيَنَ اَخَاهُمْ شُعَيْبًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرُهٗ
আমি মাদইয়ানবাসীর নিকট তাদেরই ভাই শুয়াইবকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের জন্য অন্য কোন সত্য মা‘বুদ নেই। (সূরা আ‘রাফ- ৮৫)
ইবরাহীম (আঃ) এর দাওয়াত :
وَلَقَدْ اٰتَيْنَاۤ اِبْرَاهِيْمَ رُشْدَهٗ مِنْ قَبْلُ وَكُنَّا بِه عَالِمِيْنَ ‐ اِذْ قَالَ لِاَبِيْهِ وَقَوْمِه مَا هٰذِهِ التَّمَاثِيْلُ الَّتِيْۤ اَنْتُمْ لَهَا عَاكِفُوْنَ ‐ قَالُوْا وَجَدْنَاۤ اٰبَآءَنَا لَهَا عَابِدِيْنَ ‐ قَالَ لَقَدْ كُنْتُمْ اَنْتُمْ وَاٰبَآؤُكُمْ فِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ
ইতোপূর্বে আমি ইবরাহীমকে সৎপথে চলার জ্ঞান দান করেছিলাম এবং আমি তার সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত ছিলাম। যখন সে তার পিতা ও তার সম্প্রদায়কে বলল, এ মূর্তিগুলো কী, যাদের সাথে তোমরা নিজেদেরকে (ভক্তির বাঁধনে) বেঁধে রেখেছ? তারা বলল, আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে এদের উপাসনা করতে দেখেছি। সে বলল, তোমরা নিজেরা এবং তোমাদের পিতৃপুরুষরা উভয়ই স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে রয়েছ। (সূরা আম্বিয়া, ৫১-৫৪)
ইয়াকূব (আঃ) এর সন্তানদের ঘোষণা :
اَمْ كُنْتُمْ شُهَدَآءَ اِذْ حَضَرَ يَعْقُوْبَ الْمَوْتُ اِذْ قَالَ لِبَنِيْهِ مَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ ۢبَعْدِيْؕ قَالُوْا نَعْبُدُ اِلٰهَكَ وَاِلٰهَ اٰبَآئِكَ اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ وَاِسْحَاقَ اِلٰهًا وَّاحِدًاۚ وَنَحْنُ لَهٗ مُسْلِمُوْنَ
তোমরা কি ঐ সময় উপস্থিত ছিলে, যখন ইয়াকূবের মৃত্যু উপস্থিত হয় এবং তিনি নিজ পুত্রদেরকে বলেছিলেন, আমার (মৃত্যুর) পরে তোমরা কোন জিনিসের ইবাদাত করবে? তারা বলেছিল, আমরা আপনার ইলাহ্ এবং আপনার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাকের মা‘বুদের ইবাদাত করব। তিনি একক উপাস্য এবং আমরা তাঁরই অনুগত থাকব। (সূরা বাক্বারা- ১৩৩)
ইউসুফ (আঃ) এর দাওয়াত :
يَا صَاحِبَيِ السِّجْنِ اَاَرْبَابٌ مُّتَفَرِّقُوْنَ خَيْرٌ اَمِ اللهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ ‐ مَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِه ۤ اِلَّاۤ اَسْمَآءً سَمَّيْتُمُوْهَاۤ اَنْتُمْ وَاٰبَآؤُكُمْ مَّاۤ اَنْزَلَ اللهُ بِهَا مِنْ سُلْطَانٍؕ اِنِ الْحُكْمُ اِلَّا لِلّٰهِؕ اَمَرَ اَلَّا تَعْبُدُوْاۤ اِلَّاۤ اِيَّاهُؕ ذٰلِكَ الدِّيْنُ الْقَيِّمُ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ
হে কারাসঙ্গীদ্বয়! ভিন্ন ভিন্ন বহু প্রতিপালক শ্রেয়, না পরাক্রমশালী এক আল্লাহ? তাঁকে ছেড়ে তোমরা কেবল কতগুলো নামের ইবাদাত করছ, যে নামগুলো তোমাদের পিতৃপুরুষ ও তোমরাই রেখেছ। এগুলোর কোন প্রমাণ আল্লাহ পাঠাননি। বিধান দেয়ার অধিকার কেবল আল্লাহরই। তিনি আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁরই ইবাদাত করবে, আর এটাই শাশ্বত দ্বীন; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। (সূরা ইউসুফ- ৩৯, ৪০)
মূসা (আঃ) এর দাওয়াত :
قَالَ اَغَيْرَ اللهِ اَبْغِيْكُمْ اِلٰهًا وَّهُوَ فَضَّلَكُمْ عَلَى الْعَالَمِيْنَ
সে আরো বলল, আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের জন্য আমি কি অন্য কোন ইলাহ্ তালাশ করব? অথচ তিনিই তোমাদেরকে বিশ্বজগতের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন? (সূরা আ‘রাফ- ১৪০)
ঈসা (আঃ) এর দাওয়াত :
اِنَّ اللهَ رَبِّيْ وَرَبُّكُمْ فَاعْبُدُوْهُؕ هٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيْمٌ
নিশ্চয় আল্লাহ আমার এবং তোমাদের প্রতিপালক। অতএব তোমরা তাঁরই ইবাদাত করো; এটাই সঠিক পথ। (সূরা আলে ইমরান- ৫১)
মুহাম্মাদ ﷺ এর দাওয়াত :
قُلْ يَاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْا اِلٰى كَلِمَةٍ سَوَآءٍ ۢبَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ اَلَّا نَعْبُدَ اِلَّا اللهَ وَلَا نُشْرِكَ بِه شَيْئًا وَّلَا يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا اَرْبَابًا مِّنْ دُوْنِ اللهِؕ فَاِنْ تَوَلَّوْا فَقُوْلُوا اشْهَدُوْا بِاَنَّا مُسْلِمُوْنَ
বলো, হে আহলে কিতাব! তোমরা এমন একটি কালিমার দিকে এসো, যা তোমাদের এবং আমাদের মধ্যে সমান। আর তা হলো, আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করব না এবং তার সাথে কোনকিছুকে শরীক স্থাপন করব না; আর আমাদের কেউ অপর কাউকে রব হিসেবে গ্রহণ করবে না। এরপরও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে বলে দাও, তোমরা সাক্ষী থাকো যে, আমরা মুসলিম। (সূরা আলে ইমরান- ৬৪)
তাওহীদের পক্ষে আসহাবে কাহাফের ঘোষণা :
نَحْنُ نَقُصُّ عَلَيْكَ نَبَاَهُمْ بِالْحَقِّؕ اِنَّهُمْ فِتْيَةٌ اٰمَنُوْا بِرَبِّهِمْ وَزِدْنَاهُمْ هُدًى - وَرَبَطْنَا عَلٰى قُلُوْبِهِمْ اِذْ قَامُوْا فَقَالُوْا رَبُّنَا رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ لَنْ نَّدْعُوَا مِنْ دُوْنِهۤ اِلٰهًا لَقَدْ قُلْنَاۤ اِذًا شَطَطًا ‐ هٰۤؤُلَآءِ قَوْمُنَا اتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِه ۤ اٰلِهَةًؕ لَوْلَا يَاْتُوْنَ عَلَيْهِمْ بِسُلْطَانٍ ۢبَيِّنٍؕ فَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرٰى عَلَى اللهِ كَذِبًا
আমি তোমার নিকট তাদের বৃত্তান্ত সঠিকভাবে বর্ণনা করছি- তারা ছিল কয়েকজন যুবক, তারা তাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান এনেছিল এবং আমি তাদেরকে সৎপথে চলার শক্তি বৃদ্ধি করে দিয়েছিলাম। অতঃপর আমি তাদের চিত্ত দৃঢ় করে দিলাম, ফলে তারা (মুশরিক রাজা ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে) দাঁড়িয়ে গেল এবং বলল, আমাদের প্রতিপালক আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর প্রতিপালক। আমরা কখনই তাঁর পরিবর্তে অন্য কোন ইলাহকে আহবান করব না, যদি করি তবে সেটা হবে অতিশয় গর্হিত কাজ। আমাদের এ জাতি তাঁর পরিবর্তে অনেক ইলাহ্ গ্রহণ করে নিয়েছে, তারা এ সমস্ত ইলাহ্ সম্বন্ধে স্পষ্ট প্রমাণ উপস্থিত করে না কেন? আর যে আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন করে তার চেয়ে অধিক যালিম আর কে হতে পারে? (সূরা কাহফ, ১৩-১৫)
সূরা ইয়াসীনে উল্লেখিত মুমিন ব্যক্তির দাওয়াত :
وَجَآءَ مِنْ اَقْصَى الْمَدِيْنَةِ رَجُلٌ يَّسْعٰى قَالَ يَا قَوْمِ اتَّبِعُوا الْمُرْسَلِيْنَ ‐ اِتَّبِعُوْا مَنْ لَّا يَسْاَلُكُمْ اَجْرًا وَّهُمْ مُّهْتَدُوْنَ ‐ وَمَا لِيَ لَاۤ اَعْبُدُ الَّذِيْ فَطَرَنِيْ وَاِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ ‐ اَاَتَّخِذُ مِنْ دُوْنِه ۤ اٰلِهَةً اِنْ يُّرِدْنِ الرَّحْمٰنُ بِضُرٍّ لَّا تُغْنِ عَنِّيْ شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا وَّلَا يُنْقِذُوْنِ ‐ اِنِّۤيْ اِذًا لَّفِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ
শহরের দূরপ্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি দৌড়ে এসে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা রাসূলদের অনুসরণ করো। তোমরা অনুসরণ করো তাদের, যারা তোমাদের কাছে বিনিময় চায় না এবং তারা নিজেরাও সৎপথের উপর প্রতিষ্ঠিত। আর আমার কী হয়েছে যে, আমি তাঁর ইবাদাত করব না, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁর কাছেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে? আমি কি আল্লাহকে ছেড়ে অন্য কোন ইলাহকে গ্রহণ করব? যদি দয়াময় আল্লাহ আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চান, তবে তাদের সুপারিশ আমার কোন উপকারে আসবে না এবং তারা আমাকে মুক্তও করতে পারবে না? যদি আমি এরূপ করি তবে তো আমি প্রকাশ্য বিভ্রান্তিতে পতিত হব। (সূরা ইয়াসীন, ২০-২৪)
সূরা মুমিনে উল্লেখিত মুমিন ব্যক্তির দাওয়াত :
وَيَا قَوْمِ مَا لِۤيْ اَدْعُوْكُمْ اِلَى النَّجَاةِ وَتَدْعُوْنَنِيْۤ اِلَى النَّارِ ‐ تَدْعُوْنَنِيْ لِاَ كْفُرَ بِاللهِ وَاُشْرِكَ بِه مَا لَيْسَ لِيْ بِه عِلْمٌ وَّاَنَاْ اَدْعُوْكُمْ اِلَى الْعَزِيْزِ الْغَفَّارِ ‐ لَاجَرَمَ اَنَّمَا تَدْعُوْنَنِيْۤ اِلَيْهِ لَيْسَ لَهٗ دَعْوَةٌ فِى الدُّنْيَا وَلَا فِى الْاٰخِرَةِ وَاَنَّ مَرَدَّنَاۤ اِلَى اللهِ وَاَنَّ الْمُسْرِفِيْنَ هُمْ اَصْحَابُ النَّارِ -فَسَتَذْكُرُوْنَ مَاۤ اَقُوْلُ لَكُمْؕ وَاُفَوِّضُ اَمْرِيْۤ اِلَى اللهِؕ اِنَّ اللهَ بَصِيْرٌ ۢۢبِالْعِبَادِ
হে আমার সম্প্রদায়! এ কেমন কথা! আমি তোমাদেরকে আহবান করছি মুক্তির দিকে, আর তোমরা আমাকে আহবান করছ জাহান্নামের দিকে। তোমরা আল্লাহকে অস্বীকার করা এবং তাঁর সাথে শরীক স্থাপন করার জন্য আমাকে ডাকছ, যে সম্পর্কে আমার কোন জ্ঞান নেই; পক্ষান্তরে আমি তোমাদেরকে আহবান করছি মহাপরাক্রমশালী ও ক্ষমাশীল আল্লাহর দিকে। নিশ্চয় তোমরা আমাকে ডাকছ এমন একজনের দিকে, যে দুনিয়া ও আখিরাতে কোথাও আহবানযোগ্য নয়। বস্তুত আমাদের প্রত্যাবর্তন তো আল্লাহর নিকট এবং সীমালঙ্ঘনকারীরাই জাহান্নামের অধিবাসী। সুতরাং আমি তোমাদেরকে যা বলছি, অচিরেই তোমরা তা স্মরণ করবে এবং আমি আমার ব্যাপারটি আল্লাহর নিকট সমর্পন করছি। নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখেন। (সূরা মু’মিন, ৪১-৪৪)
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِيْ كُلِّ اُمَّةٍ رَّسُوْلًا اَنِ اعْبُدُوا اللهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوْتَ
আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যে রাসূল প্রেরণ করেছি (এ নির্দেশ দিয়ে যে) তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো এবং তাগুতকে বর্জন করো। (সূরা নাহল- ৩৬)
وَمَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا نُوْحِيْۤ اِلَيْهِ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَاْ فَاعْبُدُوْنِ
আমি তোমার পূর্বে এমন কোন রাসূল প্রেরণ করিনি, যার প্রতি এ ওহী করিনি যে, আমি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই; সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদাত করো। (সূরা আম্বিয়া- ২৫)
নূহ (আঃ) এর দাওয়াত :
لَقَدْ اَرْسَلْنَا نُوْحًا اِلٰى قَوْمِه فَقَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرُه
আমি তো নূহকে তার সম্প্রদায়ের নিকট পাঠিয়েছিলাম। অতঃপর সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহর ইবাদাত করো, তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ্ নেই। (সূরা আ‘রাফ- ৫৯)
হুদ (আঃ) এর দাওয়াত :
وَاِلٰى عَادٍ اَخَاهُمْ هُوْدًاؕ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرُهٗؕ اَفَلَا تَتَّقُوْنَ
আমি আদ জাতির নিকট তাদের ভাই হুদকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো, তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই। তবুও কি তোমরা তাঁকে ভয় করবে না? (সূরা আ‘রাফ- ৬৫)
সালেহ (আঃ) এর দাওয়াত :
وَاِلٰى ثَمُوْدَ اَخَاهُمْ صَالِحًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرُه
সামূদ জাতির নিকট তাদের ভাই সালেহকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো। তিনি ব্যতীত তোমাদের জন্য অন্য কোন ইলাহ্ নেই। (সূরা আ‘রাফ- ৭৩)
শুয়াইব (আঃ) এর দাওয়াত :
وَاِلٰى مَدْيَنَ اَخَاهُمْ شُعَيْبًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرُهٗ
আমি মাদইয়ানবাসীর নিকট তাদেরই ভাই শুয়াইবকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের জন্য অন্য কোন সত্য মা‘বুদ নেই। (সূরা আ‘রাফ- ৮৫)
ইবরাহীম (আঃ) এর দাওয়াত :
وَلَقَدْ اٰتَيْنَاۤ اِبْرَاهِيْمَ رُشْدَهٗ مِنْ قَبْلُ وَكُنَّا بِه عَالِمِيْنَ ‐ اِذْ قَالَ لِاَبِيْهِ وَقَوْمِه مَا هٰذِهِ التَّمَاثِيْلُ الَّتِيْۤ اَنْتُمْ لَهَا عَاكِفُوْنَ ‐ قَالُوْا وَجَدْنَاۤ اٰبَآءَنَا لَهَا عَابِدِيْنَ ‐ قَالَ لَقَدْ كُنْتُمْ اَنْتُمْ وَاٰبَآؤُكُمْ فِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ
ইতোপূর্বে আমি ইবরাহীমকে সৎপথে চলার জ্ঞান দান করেছিলাম এবং আমি তার সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত ছিলাম। যখন সে তার পিতা ও তার সম্প্রদায়কে বলল, এ মূর্তিগুলো কী, যাদের সাথে তোমরা নিজেদেরকে (ভক্তির বাঁধনে) বেঁধে রেখেছ? তারা বলল, আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে এদের উপাসনা করতে দেখেছি। সে বলল, তোমরা নিজেরা এবং তোমাদের পিতৃপুরুষরা উভয়ই স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে রয়েছ। (সূরা আম্বিয়া, ৫১-৫৪)
ইয়াকূব (আঃ) এর সন্তানদের ঘোষণা :
اَمْ كُنْتُمْ شُهَدَآءَ اِذْ حَضَرَ يَعْقُوْبَ الْمَوْتُ اِذْ قَالَ لِبَنِيْهِ مَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ ۢبَعْدِيْؕ قَالُوْا نَعْبُدُ اِلٰهَكَ وَاِلٰهَ اٰبَآئِكَ اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ وَاِسْحَاقَ اِلٰهًا وَّاحِدًاۚ وَنَحْنُ لَهٗ مُسْلِمُوْنَ
তোমরা কি ঐ সময় উপস্থিত ছিলে, যখন ইয়াকূবের মৃত্যু উপস্থিত হয় এবং তিনি নিজ পুত্রদেরকে বলেছিলেন, আমার (মৃত্যুর) পরে তোমরা কোন জিনিসের ইবাদাত করবে? তারা বলেছিল, আমরা আপনার ইলাহ্ এবং আপনার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাকের মা‘বুদের ইবাদাত করব। তিনি একক উপাস্য এবং আমরা তাঁরই অনুগত থাকব। (সূরা বাক্বারা- ১৩৩)
ইউসুফ (আঃ) এর দাওয়াত :
يَا صَاحِبَيِ السِّجْنِ اَاَرْبَابٌ مُّتَفَرِّقُوْنَ خَيْرٌ اَمِ اللهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ ‐ مَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِه ۤ اِلَّاۤ اَسْمَآءً سَمَّيْتُمُوْهَاۤ اَنْتُمْ وَاٰبَآؤُكُمْ مَّاۤ اَنْزَلَ اللهُ بِهَا مِنْ سُلْطَانٍؕ اِنِ الْحُكْمُ اِلَّا لِلّٰهِؕ اَمَرَ اَلَّا تَعْبُدُوْاۤ اِلَّاۤ اِيَّاهُؕ ذٰلِكَ الدِّيْنُ الْقَيِّمُ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ
হে কারাসঙ্গীদ্বয়! ভিন্ন ভিন্ন বহু প্রতিপালক শ্রেয়, না পরাক্রমশালী এক আল্লাহ? তাঁকে ছেড়ে তোমরা কেবল কতগুলো নামের ইবাদাত করছ, যে নামগুলো তোমাদের পিতৃপুরুষ ও তোমরাই রেখেছ। এগুলোর কোন প্রমাণ আল্লাহ পাঠাননি। বিধান দেয়ার অধিকার কেবল আল্লাহরই। তিনি আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁরই ইবাদাত করবে, আর এটাই শাশ্বত দ্বীন; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। (সূরা ইউসুফ- ৩৯, ৪০)
মূসা (আঃ) এর দাওয়াত :
قَالَ اَغَيْرَ اللهِ اَبْغِيْكُمْ اِلٰهًا وَّهُوَ فَضَّلَكُمْ عَلَى الْعَالَمِيْنَ
সে আরো বলল, আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের জন্য আমি কি অন্য কোন ইলাহ্ তালাশ করব? অথচ তিনিই তোমাদেরকে বিশ্বজগতের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন? (সূরা আ‘রাফ- ১৪০)
ঈসা (আঃ) এর দাওয়াত :
اِنَّ اللهَ رَبِّيْ وَرَبُّكُمْ فَاعْبُدُوْهُؕ هٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيْمٌ
নিশ্চয় আল্লাহ আমার এবং তোমাদের প্রতিপালক। অতএব তোমরা তাঁরই ইবাদাত করো; এটাই সঠিক পথ। (সূরা আলে ইমরান- ৫১)
মুহাম্মাদ ﷺ এর দাওয়াত :
قُلْ يَاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْا اِلٰى كَلِمَةٍ سَوَآءٍ ۢبَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ اَلَّا نَعْبُدَ اِلَّا اللهَ وَلَا نُشْرِكَ بِه شَيْئًا وَّلَا يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا اَرْبَابًا مِّنْ دُوْنِ اللهِؕ فَاِنْ تَوَلَّوْا فَقُوْلُوا اشْهَدُوْا بِاَنَّا مُسْلِمُوْنَ
বলো, হে আহলে কিতাব! তোমরা এমন একটি কালিমার দিকে এসো, যা তোমাদের এবং আমাদের মধ্যে সমান। আর তা হলো, আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করব না এবং তার সাথে কোনকিছুকে শরীক স্থাপন করব না; আর আমাদের কেউ অপর কাউকে রব হিসেবে গ্রহণ করবে না। এরপরও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে বলে দাও, তোমরা সাক্ষী থাকো যে, আমরা মুসলিম। (সূরা আলে ইমরান- ৬৪)
তাওহীদের পক্ষে আসহাবে কাহাফের ঘোষণা :
نَحْنُ نَقُصُّ عَلَيْكَ نَبَاَهُمْ بِالْحَقِّؕ اِنَّهُمْ فِتْيَةٌ اٰمَنُوْا بِرَبِّهِمْ وَزِدْنَاهُمْ هُدًى - وَرَبَطْنَا عَلٰى قُلُوْبِهِمْ اِذْ قَامُوْا فَقَالُوْا رَبُّنَا رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ لَنْ نَّدْعُوَا مِنْ دُوْنِهۤ اِلٰهًا لَقَدْ قُلْنَاۤ اِذًا شَطَطًا ‐ هٰۤؤُلَآءِ قَوْمُنَا اتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِه ۤ اٰلِهَةًؕ لَوْلَا يَاْتُوْنَ عَلَيْهِمْ بِسُلْطَانٍ ۢبَيِّنٍؕ فَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرٰى عَلَى اللهِ كَذِبًا
আমি তোমার নিকট তাদের বৃত্তান্ত সঠিকভাবে বর্ণনা করছি- তারা ছিল কয়েকজন যুবক, তারা তাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান এনেছিল এবং আমি তাদেরকে সৎপথে চলার শক্তি বৃদ্ধি করে দিয়েছিলাম। অতঃপর আমি তাদের চিত্ত দৃঢ় করে দিলাম, ফলে তারা (মুশরিক রাজা ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে) দাঁড়িয়ে গেল এবং বলল, আমাদের প্রতিপালক আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর প্রতিপালক। আমরা কখনই তাঁর পরিবর্তে অন্য কোন ইলাহকে আহবান করব না, যদি করি তবে সেটা হবে অতিশয় গর্হিত কাজ। আমাদের এ জাতি তাঁর পরিবর্তে অনেক ইলাহ্ গ্রহণ করে নিয়েছে, তারা এ সমস্ত ইলাহ্ সম্বন্ধে স্পষ্ট প্রমাণ উপস্থিত করে না কেন? আর যে আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন করে তার চেয়ে অধিক যালিম আর কে হতে পারে? (সূরা কাহফ, ১৩-১৫)
সূরা ইয়াসীনে উল্লেখিত মুমিন ব্যক্তির দাওয়াত :
وَجَآءَ مِنْ اَقْصَى الْمَدِيْنَةِ رَجُلٌ يَّسْعٰى قَالَ يَا قَوْمِ اتَّبِعُوا الْمُرْسَلِيْنَ ‐ اِتَّبِعُوْا مَنْ لَّا يَسْاَلُكُمْ اَجْرًا وَّهُمْ مُّهْتَدُوْنَ ‐ وَمَا لِيَ لَاۤ اَعْبُدُ الَّذِيْ فَطَرَنِيْ وَاِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ ‐ اَاَتَّخِذُ مِنْ دُوْنِه ۤ اٰلِهَةً اِنْ يُّرِدْنِ الرَّحْمٰنُ بِضُرٍّ لَّا تُغْنِ عَنِّيْ شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا وَّلَا يُنْقِذُوْنِ ‐ اِنِّۤيْ اِذًا لَّفِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ
শহরের দূরপ্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি দৌড়ে এসে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা রাসূলদের অনুসরণ করো। তোমরা অনুসরণ করো তাদের, যারা তোমাদের কাছে বিনিময় চায় না এবং তারা নিজেরাও সৎপথের উপর প্রতিষ্ঠিত। আর আমার কী হয়েছে যে, আমি তাঁর ইবাদাত করব না, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁর কাছেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে? আমি কি আল্লাহকে ছেড়ে অন্য কোন ইলাহকে গ্রহণ করব? যদি দয়াময় আল্লাহ আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চান, তবে তাদের সুপারিশ আমার কোন উপকারে আসবে না এবং তারা আমাকে মুক্তও করতে পারবে না? যদি আমি এরূপ করি তবে তো আমি প্রকাশ্য বিভ্রান্তিতে পতিত হব। (সূরা ইয়াসীন, ২০-২৪)
সূরা মুমিনে উল্লেখিত মুমিন ব্যক্তির দাওয়াত :
وَيَا قَوْمِ مَا لِۤيْ اَدْعُوْكُمْ اِلَى النَّجَاةِ وَتَدْعُوْنَنِيْۤ اِلَى النَّارِ ‐ تَدْعُوْنَنِيْ لِاَ كْفُرَ بِاللهِ وَاُشْرِكَ بِه مَا لَيْسَ لِيْ بِه عِلْمٌ وَّاَنَاْ اَدْعُوْكُمْ اِلَى الْعَزِيْزِ الْغَفَّارِ ‐ لَاجَرَمَ اَنَّمَا تَدْعُوْنَنِيْۤ اِلَيْهِ لَيْسَ لَهٗ دَعْوَةٌ فِى الدُّنْيَا وَلَا فِى الْاٰخِرَةِ وَاَنَّ مَرَدَّنَاۤ اِلَى اللهِ وَاَنَّ الْمُسْرِفِيْنَ هُمْ اَصْحَابُ النَّارِ -فَسَتَذْكُرُوْنَ مَاۤ اَقُوْلُ لَكُمْؕ وَاُفَوِّضُ اَمْرِيْۤ اِلَى اللهِؕ اِنَّ اللهَ بَصِيْرٌ ۢۢبِالْعِبَادِ
হে আমার সম্প্রদায়! এ কেমন কথা! আমি তোমাদেরকে আহবান করছি মুক্তির দিকে, আর তোমরা আমাকে আহবান করছ জাহান্নামের দিকে। তোমরা আল্লাহকে অস্বীকার করা এবং তাঁর সাথে শরীক স্থাপন করার জন্য আমাকে ডাকছ, যে সম্পর্কে আমার কোন জ্ঞান নেই; পক্ষান্তরে আমি তোমাদেরকে আহবান করছি মহাপরাক্রমশালী ও ক্ষমাশীল আল্লাহর দিকে। নিশ্চয় তোমরা আমাকে ডাকছ এমন একজনের দিকে, যে দুনিয়া ও আখিরাতে কোথাও আহবানযোগ্য নয়। বস্তুত আমাদের প্রত্যাবর্তন তো আল্লাহর নিকট এবং সীমালঙ্ঘনকারীরাই জাহান্নামের অধিবাসী। সুতরাং আমি তোমাদেরকে যা বলছি, অচিরেই তোমরা তা স্মরণ করবে এবং আমি আমার ব্যাপারটি আল্লাহর নিকট সমর্পন করছি। নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখেন। (সূরা মু’মিন, ৪১-৪৪)
বিশ্ব জগতের সবকিছুই তাওহীদের প্রমাণ দিচ্ছে :
اَتٰۤى اَمْرُ اللهِ فَلَا تَسْتَعْجِلُوْهُؕ سُبْحَانَهٗ وَتَعَالٰى عَمَّا يُشْرِكُوْنَ ‐ يُنَزِّلُ الْمَلَآئِكَةَ بِالرُّوْحِ مِنْ اَمْرِه عَلٰى مَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهۤ اَنْ اَنْذِرُوْاۤ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَاْ فَاتَّقُوْنِ ‐ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ بِالْحَقِّؕ تَعَالٰى عَمَّا يُشْرِكُوْنَ ‐ خَلَقَ الْاِنْسَانَ مِنْ نُّطْفَةٍ فَاِذَا هُوَ خَصِيْمٌ مُّبِيْنٌ ‐ وَالْاَنْعَامَ خَلَقَهَاۚ لَكُمْ فِيْهَا دِفْءٌ وَّمَنَافِعُ وَمِنْهَا تَاْكُلُوْنَ ‐ وَلَكُمْ فِيْهَا جَمَالٌ حِيْنَ تُرِيْحُوْنَ وَحِيْنَ تَسْرَحُوْنَ ‐ وَتَحْمِلُ اَثْقَالَكُمْ اِلٰى بَلَدٍ لَّمْ تَكُوْنُوْا بَالِغِيْهِ اِلَّا بِشِقِّ الْاَنْفُسِؕ اِنَّ رَبَّكُمْ لَرَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ ‐ وَالْخَيْلَ وَالْبِغَالَ وَالْحَمِيْرَ لِتَرْكَبُوْهَا وَزِيْنَةًؕ وَيَخْلُقُ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ ‐ وَعَلَى اللهِ قَصْدُ السَّبِيْلِ وَمِنْهَا جَآئِرٌؕ وَلَوْ شَآءَ لَهَدَاكُمْ اَجْمَعِيْنَ ‐ هُوَ الَّذِيْۤ اَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً لَّكُمْ مِّنْهُ شَرَابٌ وَّمِنْهُ شَجَرٌ فِيْهِ تُسِيْمُوْنَ ‐ يُنْۢبِتُ لَكُمْ بِهِ الزَّرْعَ وَالزَّيْتُوْنَ وَالنَّخِيْلَ وَالْاَعْنَابَ وَمِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ ‐ وَسَخَّرَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَؕ وَالنُّجُوْمُ مُسَخَّرَاتٌ ۢبِاَمْرِه ؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَّعْقِلُوْنَ ‐ وَمَا ذَرَاَ لَكُمْ فِى الْاَرْضِ مُخْتَلِفًا اَلْوَانُهٗؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّذَّكَّرُوْنَ ‐ وَهُوَ الَّذِيْ سَخَّرَ الْبَحْرَ لِتَاْكُلُوْا مِنْهُ لَحْمًا طَرِيَّا وَّتَسْتَخْرِجُوْا مِنْهُ حِلْيَةً تَلْبَسُوْنَهَاۚ وَتَرَى الْفُلْكَ مَوَاخِرَ فِيْهِ وَلِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِه وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ ‐ وَاَلْقٰى فِى الْاَرْضِ رَوَاسِيَ اَنْ تَمِيْدَ بِكُمْ وَاَنْهَارًا وَّسُبُلًا لَّعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ ‐ وَعَلَامَاتٍؕ وَبِالنَّجْمِ هُمْ يَهْتَدُوْنَ ‐ اَفَمَنْ يَّخْلُقُ كَمَنْ لَّا يَخْلُقُؕ اَفَلَا تَذَكَّرُوْنَ ‐ وَاِنْ تَعُدُّوْا نِعْمَةَ اللهِ لَا تُحْصُوْهَاؕ اِنَّ اللهَ لَغَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ ‐ وَاللهُ يَعْلَمُ مَا تُسِرُّوْنَ وَمَا تُعْلِنُوْنَ ‐ وَالَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ لَا يَخْلُقُوْنَ شَيْئًا وَّهُمْ يُخْلَقُوْنَ ‐ اَمْوَاتٌ غَيْرُ اَحْيَآءٍۚ وَمَا يَشْعُرُوْنَ اَيَّانَ يُبْعَثُوْنَ
আল্লাহর আদেশ আসবেই, সুতরাং তা ত্বরান্বিত করতে চেয়ো না। তিনি মহিমান্বিত এবং তারা যাকে শরীক করে তিনি তা হতে অনেক ঊর্ধ্বে। তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা স্বীয় নির্দেশে ওহীসহ ফেরেশতা প্রেরণ করেন এ বলে যে, তোমরা সতর্ক করো, নিশ্চয় আমি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই, সুতরাং তোমরা আমাকেই ভয় করো। তিনি যথাযথভাবে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, তারা যা শরীক করে তিনি তা হতে অনেক ঊর্ধ্বে। তিনি বীর্য হতে মানুষ সৃষ্টি করেছেন; অথচ সে প্রকাশ্য বিতর্ককারী। তিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন চতুষ্পদ জন্তু, তাতে রয়েছে শীত নিবারণের জন্য উপকরণ ও বহু উপকার। আর তা হতে তোমরা আহার করে থাক। তোমরা যখন দিনের শেষ প্রান্তে তাদেরকে চারণভূমি হতে গৃহে নিয়ে আস এবং প্রভাতে যখন তাদেরকে চারণভূমিতে নিয়ে যাও, তখন তোমরা তার সৌন্দর্য উপভোগ কর। তারা তোমাদের ভার বহন করে নিয়ে যায় এমন দেশে, যেথায় প্রাণান্ত ক্লেশ ব্যতীত তোমরা পৌঁছতে পারতে না। তোমাদের প্রতিপালক দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। তিনি তোমাদের আরোহণ ও শোভার জন্য সৃষ্টি করেছেন ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা এবং তিনি সৃষ্টি করেন এমন অনেক কিছু, যা সম্পর্কে তোমরা অবগত নও। সরল পথ আল্লাহর কাছে পৌঁছায়, কিন্তু পথগুলোর মধ্যে বক্র পথও রয়েছে। তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদের সকলকেই সৎপথে পরিচালিত করতেন। তিনিই আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন। তাতে তোমাদের জন্য রয়েছে পানীয় এবং তা হতে জন্মায় উদ্ভিদ, যাতে তোমরা পশুচারণ করে থাক। তিনি তাদের জন্য তার দ্বারা জন্মান শস্য, যায়তুন, খেজুর, আঙ্গুর এবং সর্বপ্রকার ফল। অবশ্যই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। তিনিই তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন রজনী, দিবস, সূর্য এবং চন্দ্রকে। আর নক্ষত্ররাজিও অধীন হয়েছে তাঁরই নির্দেশে। অবশ্যই এতে বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিশ্চিত নিদর্শন। আর তিনি নানা রঙ্গের বস্তু তোমাদের জন্য পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছেন। এতে রয়েছে নিশ্চিত নিদর্শন সে সম্প্রদায়ের জন্য, যারা উপদেশ গ্রহণ করে। তিনিই সমুদ্রকে অধীন করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা তা হতে তাজা মৎস্য আহার করতে পার এবং তা হতে আহরণ করতে পার রত্নাবলি, যা তোমরা ভূষণরূপে পরিধান কর। তোমরা দেখতে পাও যে, তার বুক চিরে নৌযান চলাচল করে। আর এটা এজন্য যে, যেন তোমরা তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার এবং যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বত স্থাপন করেছেন, যাতে পৃথিবী তোমাদেরকে নিয়ে আন্দোলিত না হয় এবং স্থাপন করেছেন নদ-নদী ও পথ, যাতে তোমরা তোমাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পার এবং পথ নির্ণায়ক চিহ্নসমূহও। আর তারা নক্ষত্রের সাহায্যেও পথের নির্দেশ পায়। সুতরাং যিনি সৃষ্টি করেন, তিনি কি তার মতো হবেন যে সৃষ্টি করে না? তবুও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না? তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করলে সেটার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না। আল্লাহ অবশ্যই ক্ষমাপরায়ণ ও পরম দয়ালু। তোমরা যা গোপন রাখ এবং যা প্রকাশ কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে অবহিত। তারা আল্লাহ ব্যতীত অপর যাদেরকে আহবান করে তারা কিছুই সৃষ্টি করে না, বরং তাদেরকেই সৃষ্টি করা হয়। তারা নিষ্প্রাণ, নির্জীব এবং কখন তাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে সে বিষয়েও তাদের কোন চেতনা নেই। (সূরা নাহল, ১-২১)
ব্যাখ্যা : বিশ্বজাহান ও প্রাণী জগতের নিদর্শন বর্ণনা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, মানুষ তার নিজের সত্তা থেকে নিয়ে আসমান ও জমিনের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত সর্বত্র যেদিকেই তাকাবে সেদিকের সবকিছুতে তাওহীদের সত্যতার প্রমাণ পাবে। কোন জায়গায় শিরক ও নাস্তিক্যবাদের সমর্থনে একটি সাক্ষ্য-প্রমাণও খুঁজে পাবে না। নগণ্য একটি ফোঁটা থেকে বাকশক্তি ও বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ তৈরি করা হয়েছে। আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করা এবং ভূপৃষ্ঠে নানা জাতের ফুল, ফল, শস্য ও উদ্ভিদ উৎপাদনের ব্যবস্থা করা, যার অসংখ্য শ্রেণি পরস্পরের সাথে মিলেমিশে অবস্থান করে এবং সেগুলো মানুষের প্রয়োজনও পূর্ণ করে। রাত ও দিনের নিয়মিত আসা যাওয়া এবং চন্দ্র, সূর্য ও তারকারাজির সুশৃঙ্খল আবর্তন, পৃথিবীর উৎপন্ন ফসল যার সাথে মানুষের জীবন ও জীবিকার গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। পৃথিবীতে সমুদ্রের অস্তিত্ব এবং তার মধ্যে মানুষের বহু প্রাকৃতিক চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা করা, সমুদ্রের বুক চিরে জাহাজ চালিয়ে দেশ থেকে দেশান্তরে সফর ও বাণিজ্যের ব্যবস্থা করা, পৃথিবীর বুকে উঁচু উঁচু পাহাড়ের সারি এবং মানুষের অস্তিত্বের জন্য এগুলোর অপরিহার্যতা- এসব বিষয় পরিষ্কার সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, একজন সত্তা একাই নিজের পরিকল্পনা অনুযায়ী এসবের ডিজাইন তৈরি করেছেন। তিনিই এ ডিজাইন অনুযায়ী তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। তিনিই প্রতি মুহূর্তে এ দুনিয়ায় নিত্য নতুন জিনিস তৈরি করে মানবজাতির সামনে নিয়ে আসছেন।
আল্লাহ ছাড়া যেসব সত্তাকে বিপদাপদে রক্ষাকারী, অভাব মোচনকারী অথবা উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়, তারা ফেরেশতা, নবী-রাসূল, অলী-দরবেশ কিংবা চন্দ্র-সূর্য বা অন্য কোন সৃষ্টি যাই হোক না কেন তাদের কেউই মানুষের কোন প্রয়োজন পূরণ করতে সক্ষম নয়। অভাব মোচন ও প্রয়োজন পূরণের জন্য ওরা নিজেরাই তো মহান আল্লাহর মুখাপেক্ষী। তাদের নিজেদের হাতই তার সামনে প্রসারিত। তারা নিজেদের ক্ষমতায় নিজেদের বিপদই যেখানে দূর করতে পারে না সেখানে অন্য মানুষের বিপদ কীভাবে দূর করবে? পৃথিবী থেকে আকাশমন্ডলী পর্যন্ত বিশাল বিস্তৃত এই মহাবিশ্বে যা কিছু হচ্ছে তা শুধু এক আল্লাহর নির্দেশেই হচ্ছে। তাঁর এ কর্মকান্ডে আর কারো কোন কর্তৃত্ব নেই।
اَتٰۤى اَمْرُ اللهِ فَلَا تَسْتَعْجِلُوْهُؕ سُبْحَانَهٗ وَتَعَالٰى عَمَّا يُشْرِكُوْنَ ‐ يُنَزِّلُ الْمَلَآئِكَةَ بِالرُّوْحِ مِنْ اَمْرِه عَلٰى مَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهۤ اَنْ اَنْذِرُوْاۤ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَاْ فَاتَّقُوْنِ ‐ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ بِالْحَقِّؕ تَعَالٰى عَمَّا يُشْرِكُوْنَ ‐ خَلَقَ الْاِنْسَانَ مِنْ نُّطْفَةٍ فَاِذَا هُوَ خَصِيْمٌ مُّبِيْنٌ ‐ وَالْاَنْعَامَ خَلَقَهَاۚ لَكُمْ فِيْهَا دِفْءٌ وَّمَنَافِعُ وَمِنْهَا تَاْكُلُوْنَ ‐ وَلَكُمْ فِيْهَا جَمَالٌ حِيْنَ تُرِيْحُوْنَ وَحِيْنَ تَسْرَحُوْنَ ‐ وَتَحْمِلُ اَثْقَالَكُمْ اِلٰى بَلَدٍ لَّمْ تَكُوْنُوْا بَالِغِيْهِ اِلَّا بِشِقِّ الْاَنْفُسِؕ اِنَّ رَبَّكُمْ لَرَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ ‐ وَالْخَيْلَ وَالْبِغَالَ وَالْحَمِيْرَ لِتَرْكَبُوْهَا وَزِيْنَةًؕ وَيَخْلُقُ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ ‐ وَعَلَى اللهِ قَصْدُ السَّبِيْلِ وَمِنْهَا جَآئِرٌؕ وَلَوْ شَآءَ لَهَدَاكُمْ اَجْمَعِيْنَ ‐ هُوَ الَّذِيْۤ اَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً لَّكُمْ مِّنْهُ شَرَابٌ وَّمِنْهُ شَجَرٌ فِيْهِ تُسِيْمُوْنَ ‐ يُنْۢبِتُ لَكُمْ بِهِ الزَّرْعَ وَالزَّيْتُوْنَ وَالنَّخِيْلَ وَالْاَعْنَابَ وَمِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ ‐ وَسَخَّرَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَؕ وَالنُّجُوْمُ مُسَخَّرَاتٌ ۢبِاَمْرِه ؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَّعْقِلُوْنَ ‐ وَمَا ذَرَاَ لَكُمْ فِى الْاَرْضِ مُخْتَلِفًا اَلْوَانُهٗؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّذَّكَّرُوْنَ ‐ وَهُوَ الَّذِيْ سَخَّرَ الْبَحْرَ لِتَاْكُلُوْا مِنْهُ لَحْمًا طَرِيَّا وَّتَسْتَخْرِجُوْا مِنْهُ حِلْيَةً تَلْبَسُوْنَهَاۚ وَتَرَى الْفُلْكَ مَوَاخِرَ فِيْهِ وَلِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِه وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ ‐ وَاَلْقٰى فِى الْاَرْضِ رَوَاسِيَ اَنْ تَمِيْدَ بِكُمْ وَاَنْهَارًا وَّسُبُلًا لَّعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ ‐ وَعَلَامَاتٍؕ وَبِالنَّجْمِ هُمْ يَهْتَدُوْنَ ‐ اَفَمَنْ يَّخْلُقُ كَمَنْ لَّا يَخْلُقُؕ اَفَلَا تَذَكَّرُوْنَ ‐ وَاِنْ تَعُدُّوْا نِعْمَةَ اللهِ لَا تُحْصُوْهَاؕ اِنَّ اللهَ لَغَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ ‐ وَاللهُ يَعْلَمُ مَا تُسِرُّوْنَ وَمَا تُعْلِنُوْنَ ‐ وَالَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ لَا يَخْلُقُوْنَ شَيْئًا وَّهُمْ يُخْلَقُوْنَ ‐ اَمْوَاتٌ غَيْرُ اَحْيَآءٍۚ وَمَا يَشْعُرُوْنَ اَيَّانَ يُبْعَثُوْنَ
আল্লাহর আদেশ আসবেই, সুতরাং তা ত্বরান্বিত করতে চেয়ো না। তিনি মহিমান্বিত এবং তারা যাকে শরীক করে তিনি তা হতে অনেক ঊর্ধ্বে। তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা স্বীয় নির্দেশে ওহীসহ ফেরেশতা প্রেরণ করেন এ বলে যে, তোমরা সতর্ক করো, নিশ্চয় আমি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই, সুতরাং তোমরা আমাকেই ভয় করো। তিনি যথাযথভাবে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, তারা যা শরীক করে তিনি তা হতে অনেক ঊর্ধ্বে। তিনি বীর্য হতে মানুষ সৃষ্টি করেছেন; অথচ সে প্রকাশ্য বিতর্ককারী। তিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন চতুষ্পদ জন্তু, তাতে রয়েছে শীত নিবারণের জন্য উপকরণ ও বহু উপকার। আর তা হতে তোমরা আহার করে থাক। তোমরা যখন দিনের শেষ প্রান্তে তাদেরকে চারণভূমি হতে গৃহে নিয়ে আস এবং প্রভাতে যখন তাদেরকে চারণভূমিতে নিয়ে যাও, তখন তোমরা তার সৌন্দর্য উপভোগ কর। তারা তোমাদের ভার বহন করে নিয়ে যায় এমন দেশে, যেথায় প্রাণান্ত ক্লেশ ব্যতীত তোমরা পৌঁছতে পারতে না। তোমাদের প্রতিপালক দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। তিনি তোমাদের আরোহণ ও শোভার জন্য সৃষ্টি করেছেন ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা এবং তিনি সৃষ্টি করেন এমন অনেক কিছু, যা সম্পর্কে তোমরা অবগত নও। সরল পথ আল্লাহর কাছে পৌঁছায়, কিন্তু পথগুলোর মধ্যে বক্র পথও রয়েছে। তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদের সকলকেই সৎপথে পরিচালিত করতেন। তিনিই আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন। তাতে তোমাদের জন্য রয়েছে পানীয় এবং তা হতে জন্মায় উদ্ভিদ, যাতে তোমরা পশুচারণ করে থাক। তিনি তাদের জন্য তার দ্বারা জন্মান শস্য, যায়তুন, খেজুর, আঙ্গুর এবং সর্বপ্রকার ফল। অবশ্যই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। তিনিই তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন রজনী, দিবস, সূর্য এবং চন্দ্রকে। আর নক্ষত্ররাজিও অধীন হয়েছে তাঁরই নির্দেশে। অবশ্যই এতে বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিশ্চিত নিদর্শন। আর তিনি নানা রঙ্গের বস্তু তোমাদের জন্য পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছেন। এতে রয়েছে নিশ্চিত নিদর্শন সে সম্প্রদায়ের জন্য, যারা উপদেশ গ্রহণ করে। তিনিই সমুদ্রকে অধীন করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা তা হতে তাজা মৎস্য আহার করতে পার এবং তা হতে আহরণ করতে পার রত্নাবলি, যা তোমরা ভূষণরূপে পরিধান কর। তোমরা দেখতে পাও যে, তার বুক চিরে নৌযান চলাচল করে। আর এটা এজন্য যে, যেন তোমরা তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার এবং যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বত স্থাপন করেছেন, যাতে পৃথিবী তোমাদেরকে নিয়ে আন্দোলিত না হয় এবং স্থাপন করেছেন নদ-নদী ও পথ, যাতে তোমরা তোমাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পার এবং পথ নির্ণায়ক চিহ্নসমূহও। আর তারা নক্ষত্রের সাহায্যেও পথের নির্দেশ পায়। সুতরাং যিনি সৃষ্টি করেন, তিনি কি তার মতো হবেন যে সৃষ্টি করে না? তবুও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না? তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করলে সেটার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না। আল্লাহ অবশ্যই ক্ষমাপরায়ণ ও পরম দয়ালু। তোমরা যা গোপন রাখ এবং যা প্রকাশ কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে অবহিত। তারা আল্লাহ ব্যতীত অপর যাদেরকে আহবান করে তারা কিছুই সৃষ্টি করে না, বরং তাদেরকেই সৃষ্টি করা হয়। তারা নিষ্প্রাণ, নির্জীব এবং কখন তাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে সে বিষয়েও তাদের কোন চেতনা নেই। (সূরা নাহল, ১-২১)
ব্যাখ্যা : বিশ্বজাহান ও প্রাণী জগতের নিদর্শন বর্ণনা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, মানুষ তার নিজের সত্তা থেকে নিয়ে আসমান ও জমিনের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত সর্বত্র যেদিকেই তাকাবে সেদিকের সবকিছুতে তাওহীদের সত্যতার প্রমাণ পাবে। কোন জায়গায় শিরক ও নাস্তিক্যবাদের সমর্থনে একটি সাক্ষ্য-প্রমাণও খুঁজে পাবে না। নগণ্য একটি ফোঁটা থেকে বাকশক্তি ও বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ তৈরি করা হয়েছে। আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করা এবং ভূপৃষ্ঠে নানা জাতের ফুল, ফল, শস্য ও উদ্ভিদ উৎপাদনের ব্যবস্থা করা, যার অসংখ্য শ্রেণি পরস্পরের সাথে মিলেমিশে অবস্থান করে এবং সেগুলো মানুষের প্রয়োজনও পূর্ণ করে। রাত ও দিনের নিয়মিত আসা যাওয়া এবং চন্দ্র, সূর্য ও তারকারাজির সুশৃঙ্খল আবর্তন, পৃথিবীর উৎপন্ন ফসল যার সাথে মানুষের জীবন ও জীবিকার গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। পৃথিবীতে সমুদ্রের অস্তিত্ব এবং তার মধ্যে মানুষের বহু প্রাকৃতিক চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা করা, সমুদ্রের বুক চিরে জাহাজ চালিয়ে দেশ থেকে দেশান্তরে সফর ও বাণিজ্যের ব্যবস্থা করা, পৃথিবীর বুকে উঁচু উঁচু পাহাড়ের সারি এবং মানুষের অস্তিত্বের জন্য এগুলোর অপরিহার্যতা- এসব বিষয় পরিষ্কার সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, একজন সত্তা একাই নিজের পরিকল্পনা অনুযায়ী এসবের ডিজাইন তৈরি করেছেন। তিনিই এ ডিজাইন অনুযায়ী তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। তিনিই প্রতি মুহূর্তে এ দুনিয়ায় নিত্য নতুন জিনিস তৈরি করে মানবজাতির সামনে নিয়ে আসছেন।
আল্লাহ ছাড়া যেসব সত্তাকে বিপদাপদে রক্ষাকারী, অভাব মোচনকারী অথবা উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়, তারা ফেরেশতা, নবী-রাসূল, অলী-দরবেশ কিংবা চন্দ্র-সূর্য বা অন্য কোন সৃষ্টি যাই হোক না কেন তাদের কেউই মানুষের কোন প্রয়োজন পূরণ করতে সক্ষম নয়। অভাব মোচন ও প্রয়োজন পূরণের জন্য ওরা নিজেরাই তো মহান আল্লাহর মুখাপেক্ষী। তাদের নিজেদের হাতই তার সামনে প্রসারিত। তারা নিজেদের ক্ষমতায় নিজেদের বিপদই যেখানে দূর করতে পারে না সেখানে অন্য মানুষের বিপদ কীভাবে দূর করবে? পৃথিবী থেকে আকাশমন্ডলী পর্যন্ত বিশাল বিস্তৃত এই মহাবিশ্বে যা কিছু হচ্ছে তা শুধু এক আল্লাহর নির্দেশেই হচ্ছে। তাঁর এ কর্মকান্ডে আর কারো কোন কর্তৃত্ব নেই।
ইবাদাতকে আল্লাহর জন্য খাস করতে হবে :
فَاَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّيْنِ حَنِيْفًاؕ فِطْرَتَ اللهِ الَّتِيْ فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَاؕ لَا تَبْدِيْلَ لِخَلْقِ اللهِؕ ذٰلِكَ الدِّيْنُ الْقَيِّمُ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ ‐ مُنِيْبِيْنَ اِلَيْهِ وَاتَّقُوْهُ وَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَلَا تَكُوْنُوْا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
অতএব তুমি একনিষ্ঠভাবে নিজেকে দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখো; এটাই আল্লাহর প্রকৃতি, যার উপর তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরলসঠিক দ্বীন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। অতএব তোমরা তাঁর অভিমুখী হও এবং তাঁকে ভয় করো, সালাত কয়েম করো এবং তোমরা মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সূরা রূম- ৩০, ৩১)
هُوَ الْحَيُّ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ فَادْعُوْهُ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَؕ اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
তিনি চিরঞ্জীব, তিনি ব্যতীত (সত্য) কোন মা‘বুদ নেই; সুতরাং তোমরা তাঁর ইবাদাতে একনিষ্ঠ হয়ে তাঁকেই আহবান করো। যাবতীয় প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই প্রাপ্য। (সূরা মু’মিন- ৬৫)
اِنَّاۤ اَنْزَلْنَاۤ اِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ فَاعْبُدِ اللهَ مُخْلِصًا لَّهُ الدِّيْنَ
নিশ্চয় আমি এ কিতাব তোমার কাছে যথাযথভাবেই নাযিল করেছি। অতএব নিষ্ঠার সাথে তুমি আল্লাহরই ইবাদাত করো। (সূরা যুমার- ২)
কেবল আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইতে হবে :
اِيَّاكَ نَعْبُدُ وَاِيَّاكَ نَسْتَعِيْنُ
আমরা শুধুমাত্র আপনারই ইবাদাত করি এবং আপনারই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি। (সূরা ফাতেহা- ৫)
কেবল আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে :
اِنْ يَّنْصُرْكُمُ اللهُ فَلَا غَالِبَ لَكُمْۚ وَاِنْ يَّخْذُلْكُمْ فَمَنْ ذَا الَّذِيْ يَنْصُرُكُمْ مِّنْ ۢبَعْدِهٖؕ وَعَلَى اللهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُوْنَ
যদি আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করেন তাহলে কোন ব্যক্তিই তোমাদেরকে পরাজিত করতে পারবে না। আর তিনিই যদি তোমাদেরকে পরিত্যাগ করেন, তাহলে এমন কোন শক্তি আছে কি, যে তোমাদেরকে সাহায্য করতে পারবে? কাজেই মুমিনদের উচিত আল্লাহর উপরই ভরসা করা। (আলে ইমরান- ১৬০)
فَاِنْ تَوَلَّوْا فَقُلْ حَسْبِيَ اللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَؕ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ
অতঃপর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে তুমি বলে দাও যে, আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই। আমি তাঁরই উপর নির্ভর করি এবং তিনি মহান আরশের অধিপতি। (সূরা তাওবা- ১২৯)
আল্লাহকে ভালোবাসতে হবে :
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّتَّخِذُ مِنْ دُوْنِ اللهِ اَنْدَادًا يُّحِبُّوْنَهُمْ كَحُبِّ اللهِؕ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَشَدُّ حُبًّا لِّلّٰهِ
আর মানুষের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে, যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্যকে সমকক্ষ হিসেবে গ্রহণ করে। তারা তাদেরকে আল্লাহকে ভালোবাসার ন্যায় ভালোবাসে। অপরদিকে যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহর প্রতি তাদের ভালোবাসা এর চেয়ে দৃঢ়তর। (সূরা বাক্বারা- ১৬৫)
আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُلُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ وَاشْكُرُوْا لِلّٰهِ اِنْ كُنْتُمْ اِيَّاهُ تَعْبُدُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে রিযিকস্বরূপ যা দান করেছি সেই পবিত্র বস্তুসমূহ হতে খাও এবং আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো, যদি তোমরা তাঁরই ইবাদাত করে থাক। (সূরা বাক্বারা- ১৭২)
কেবল আল্লাহকেই সিজদা করতে হবে :
وَمِنْ اٰيَاتِهِ اللَّيْلُ وَالنَّهَارُ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُؕ لَا تَسْجُدُوْا لِلشَّمْسِ وَلَا لِلْقَمَرِ وَاسْجُدُوْا لِلّٰهِ الَّذِيْ خَلَقَهُنَّ اِنْ كُنْتُمْ اِيَّاهُ تَعْبُدُوْنَ
তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে রাত ও দিন, সূর্য ও চন্দ্র। তোমরা সূর্যকে সিজদা করো না এবং চন্দ্রকেও (সিজদা করো) না; বরং সিজদা করো সেই আল্লাহকে, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন; যদি তোমরা তাঁরই ইবাদাত করে থাক। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৩৭)
আল্লাহর জন্যই সালাত আদায় করতে হবে :
اِنَّنِيْۤ اَنَا اللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَاْ فَاعْبُدْنِيْ وَاَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِيْ
আমিই আল্লাহ, আমি ছাড়া দ্বিতীয় কোন ইলাহ্ নেই। সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদাত করো এবং আমার স্মরণে সালাত প্রতিষ্ঠা করো। (সূরা ত্বা-হা- ১৪)
আল্লাহকেই ভয় করতে হবে :
وَقَالَ اللهُ لَا تَتَّخِذُوْاۤ اِلٰهَيْنِ اثْنَيْنِؕ اِنَّمَا هُوَ اِلٰهٌ وَّاحِدٌۚ فَاِيَّايَ فَارْهَبُوْنِ
আল্লাহ বলেন, তোমরা দুই ইলাহ্ গ্রহণ করো না, তিনিই তো একমাত্র ইলাহ। সুতরাং তোমরা আমাকেই ভয় করো। (সূরা নাহল- ৫১)
তাঁকে ছাড়া অন্যকে ভয় করা যাবে না :
وَلَهٗ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَلَهُ الدِّيْنُ وَاصِبًاۚ اَفَغَيْرَ اللهِ تَتَّقُوْنَ
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা তাঁরই এবং নিরবচ্ছিন্ন আনুগত্য তাঁরই প্রাপ্য। এরপরও কি তোমরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় করবে? (সূরা নাহল- ৫২)
আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে :
فَاِلٰهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ فَلَهٗۤ اَسْلِمُوْاؕ وَبَشِّرِ الْمُخْبِتِيْنَ
তোমাদের ইলাহ্ একজনই, সুতরাং তাঁরই নিকট আত্মসমর্পণ করো এবং বিনীতদেরকে সুসংবাদ প্রদান করো। (সূরা হজ্জ- ৩৪)
ব্যাখ্যা : এর অর্থ হচ্ছে, অহংকার ও দাম্ভিকতা পরিহার করে আল্লাহর সামনে অক্ষমতা ও বিনয় প্রকাশ করা। তাঁর দাসত্বে একনিষ্ঠ হয়ে যাওয়া এবং তাঁর ফায়সালায় তথা বিপদাপদ ও সুখ-শান্তি ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই তাঁর উপর সন্তুষ্ট থাকা।
আল্লাহর বিধান মেনে চলতে হবে :
اِتَّبِعُوْا مَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكُمْ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَلَا تَتَّبِعُوْا مِنْ دُوْنِه ۤ اَوْلِيَآءَؕ قَلِيْلًا مَّا تَذَكَّرُوْنَ
তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে তোমাদের নিকট যা অবতীর্ণ হয়েছে তোমরা তার অনুসরণ করো এবং তাঁকে ছাড়া অন্য কোন অভিভাবকের অনুসরণ করো না। তোমরা খুব অল্পই উপদেশ গ্রহণ করে থাক। (সূরা আ‘রাফ- ৩)
গোটা জীবনকে আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করতে হবে :
قُلْ اِنَّ صَلَاتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ‐ لَا شَرِيْكَ لَهٗۚ وَبِذٰلِكَ اُمِرْتُ وَاَنَاْ اَوَّلُ الْمُسْلِمِيْنَ
বলো, আমার সালাত, আমার ইবাদাত, আমার জীবন ও আমার মরণ সবই জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে (নিবেদিত)। তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি এজন্যই আদিষ্ট হয়েছি; আর আমিই প্রথম মুসলিম। (সূরা আন‘আম- ১৬২, ১৬৩)
ব্যাখ্যা : মানুষ যেসব পদ্ধতিতে আল্লাহ ছাড়া অন্যের দাসত্ব করে সেগুলোকে একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত করে দেয়াই হচ্ছে ইবাদাতের ক্ষেত্রে একত্ববাদের অন্যতম মৌলিক দাবী। যেমন, রুকূ করা, সিজদা করা, আর্থিক নযরানা পেশ করা, রোযা রাখা, কুরবানী করা, কেবল তাকেই ভয় করা, তারই আনুগত্য করা, নির্দ্বিধায় তার আইন ও বিধান মেনে চলা ইত্যাদি কাজকর্মসমূহকে শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট করা। অতঃপর তার সাথে এসব বিষয়ে অন্য কাউকে শরীক না করা। কেননা এগুলো একমাত্র আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট; এতে অন্য কেউ অংশীদার হতে পারে না। তাছাড়া সকল নবী ও রাসূল মানবজাতিকে এ পথেই আহবান করে গেছেন। যদিও তাদের মধ্যে আমলের পদ্ধতিগত পার্থক্য ছিল, কিন্তু সকলের মূল উদ্দেশ্য ছিল একই।
فَاَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّيْنِ حَنِيْفًاؕ فِطْرَتَ اللهِ الَّتِيْ فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَاؕ لَا تَبْدِيْلَ لِخَلْقِ اللهِؕ ذٰلِكَ الدِّيْنُ الْقَيِّمُ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ ‐ مُنِيْبِيْنَ اِلَيْهِ وَاتَّقُوْهُ وَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَلَا تَكُوْنُوْا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
অতএব তুমি একনিষ্ঠভাবে নিজেকে দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখো; এটাই আল্লাহর প্রকৃতি, যার উপর তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরলসঠিক দ্বীন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। অতএব তোমরা তাঁর অভিমুখী হও এবং তাঁকে ভয় করো, সালাত কয়েম করো এবং তোমরা মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সূরা রূম- ৩০, ৩১)
هُوَ الْحَيُّ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ فَادْعُوْهُ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَؕ اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
তিনি চিরঞ্জীব, তিনি ব্যতীত (সত্য) কোন মা‘বুদ নেই; সুতরাং তোমরা তাঁর ইবাদাতে একনিষ্ঠ হয়ে তাঁকেই আহবান করো। যাবতীয় প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই প্রাপ্য। (সূরা মু’মিন- ৬৫)
اِنَّاۤ اَنْزَلْنَاۤ اِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ فَاعْبُدِ اللهَ مُخْلِصًا لَّهُ الدِّيْنَ
নিশ্চয় আমি এ কিতাব তোমার কাছে যথাযথভাবেই নাযিল করেছি। অতএব নিষ্ঠার সাথে তুমি আল্লাহরই ইবাদাত করো। (সূরা যুমার- ২)
কেবল আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইতে হবে :
اِيَّاكَ نَعْبُدُ وَاِيَّاكَ نَسْتَعِيْنُ
আমরা শুধুমাত্র আপনারই ইবাদাত করি এবং আপনারই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি। (সূরা ফাতেহা- ৫)
কেবল আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে :
اِنْ يَّنْصُرْكُمُ اللهُ فَلَا غَالِبَ لَكُمْۚ وَاِنْ يَّخْذُلْكُمْ فَمَنْ ذَا الَّذِيْ يَنْصُرُكُمْ مِّنْ ۢبَعْدِهٖؕ وَعَلَى اللهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُوْنَ
যদি আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করেন তাহলে কোন ব্যক্তিই তোমাদেরকে পরাজিত করতে পারবে না। আর তিনিই যদি তোমাদেরকে পরিত্যাগ করেন, তাহলে এমন কোন শক্তি আছে কি, যে তোমাদেরকে সাহায্য করতে পারবে? কাজেই মুমিনদের উচিত আল্লাহর উপরই ভরসা করা। (আলে ইমরান- ১৬০)
فَاِنْ تَوَلَّوْا فَقُلْ حَسْبِيَ اللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَؕ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ
অতঃপর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে তুমি বলে দাও যে, আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই। আমি তাঁরই উপর নির্ভর করি এবং তিনি মহান আরশের অধিপতি। (সূরা তাওবা- ১২৯)
আল্লাহকে ভালোবাসতে হবে :
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّتَّخِذُ مِنْ دُوْنِ اللهِ اَنْدَادًا يُّحِبُّوْنَهُمْ كَحُبِّ اللهِؕ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَشَدُّ حُبًّا لِّلّٰهِ
আর মানুষের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে, যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্যকে সমকক্ষ হিসেবে গ্রহণ করে। তারা তাদেরকে আল্লাহকে ভালোবাসার ন্যায় ভালোবাসে। অপরদিকে যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহর প্রতি তাদের ভালোবাসা এর চেয়ে দৃঢ়তর। (সূরা বাক্বারা- ১৬৫)
আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُلُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ وَاشْكُرُوْا لِلّٰهِ اِنْ كُنْتُمْ اِيَّاهُ تَعْبُدُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে রিযিকস্বরূপ যা দান করেছি সেই পবিত্র বস্তুসমূহ হতে খাও এবং আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো, যদি তোমরা তাঁরই ইবাদাত করে থাক। (সূরা বাক্বারা- ১৭২)
কেবল আল্লাহকেই সিজদা করতে হবে :
وَمِنْ اٰيَاتِهِ اللَّيْلُ وَالنَّهَارُ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُؕ لَا تَسْجُدُوْا لِلشَّمْسِ وَلَا لِلْقَمَرِ وَاسْجُدُوْا لِلّٰهِ الَّذِيْ خَلَقَهُنَّ اِنْ كُنْتُمْ اِيَّاهُ تَعْبُدُوْنَ
তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে রাত ও দিন, সূর্য ও চন্দ্র। তোমরা সূর্যকে সিজদা করো না এবং চন্দ্রকেও (সিজদা করো) না; বরং সিজদা করো সেই আল্লাহকে, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন; যদি তোমরা তাঁরই ইবাদাত করে থাক। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৩৭)
আল্লাহর জন্যই সালাত আদায় করতে হবে :
اِنَّنِيْۤ اَنَا اللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَاْ فَاعْبُدْنِيْ وَاَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِيْ
আমিই আল্লাহ, আমি ছাড়া দ্বিতীয় কোন ইলাহ্ নেই। সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদাত করো এবং আমার স্মরণে সালাত প্রতিষ্ঠা করো। (সূরা ত্বা-হা- ১৪)
আল্লাহকেই ভয় করতে হবে :
وَقَالَ اللهُ لَا تَتَّخِذُوْاۤ اِلٰهَيْنِ اثْنَيْنِؕ اِنَّمَا هُوَ اِلٰهٌ وَّاحِدٌۚ فَاِيَّايَ فَارْهَبُوْنِ
আল্লাহ বলেন, তোমরা দুই ইলাহ্ গ্রহণ করো না, তিনিই তো একমাত্র ইলাহ। সুতরাং তোমরা আমাকেই ভয় করো। (সূরা নাহল- ৫১)
তাঁকে ছাড়া অন্যকে ভয় করা যাবে না :
وَلَهٗ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَلَهُ الدِّيْنُ وَاصِبًاۚ اَفَغَيْرَ اللهِ تَتَّقُوْنَ
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা তাঁরই এবং নিরবচ্ছিন্ন আনুগত্য তাঁরই প্রাপ্য। এরপরও কি তোমরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় করবে? (সূরা নাহল- ৫২)
আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে :
فَاِلٰهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ فَلَهٗۤ اَسْلِمُوْاؕ وَبَشِّرِ الْمُخْبِتِيْنَ
তোমাদের ইলাহ্ একজনই, সুতরাং তাঁরই নিকট আত্মসমর্পণ করো এবং বিনীতদেরকে সুসংবাদ প্রদান করো। (সূরা হজ্জ- ৩৪)
ব্যাখ্যা : এর অর্থ হচ্ছে, অহংকার ও দাম্ভিকতা পরিহার করে আল্লাহর সামনে অক্ষমতা ও বিনয় প্রকাশ করা। তাঁর দাসত্বে একনিষ্ঠ হয়ে যাওয়া এবং তাঁর ফায়সালায় তথা বিপদাপদ ও সুখ-শান্তি ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই তাঁর উপর সন্তুষ্ট থাকা।
আল্লাহর বিধান মেনে চলতে হবে :
اِتَّبِعُوْا مَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكُمْ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَلَا تَتَّبِعُوْا مِنْ دُوْنِه ۤ اَوْلِيَآءَؕ قَلِيْلًا مَّا تَذَكَّرُوْنَ
তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে তোমাদের নিকট যা অবতীর্ণ হয়েছে তোমরা তার অনুসরণ করো এবং তাঁকে ছাড়া অন্য কোন অভিভাবকের অনুসরণ করো না। তোমরা খুব অল্পই উপদেশ গ্রহণ করে থাক। (সূরা আ‘রাফ- ৩)
গোটা জীবনকে আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করতে হবে :
قُلْ اِنَّ صَلَاتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ‐ لَا شَرِيْكَ لَهٗۚ وَبِذٰلِكَ اُمِرْتُ وَاَنَاْ اَوَّلُ الْمُسْلِمِيْنَ
বলো, আমার সালাত, আমার ইবাদাত, আমার জীবন ও আমার মরণ সবই জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে (নিবেদিত)। তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি এজন্যই আদিষ্ট হয়েছি; আর আমিই প্রথম মুসলিম। (সূরা আন‘আম- ১৬২, ১৬৩)
ব্যাখ্যা : মানুষ যেসব পদ্ধতিতে আল্লাহ ছাড়া অন্যের দাসত্ব করে সেগুলোকে একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত করে দেয়াই হচ্ছে ইবাদাতের ক্ষেত্রে একত্ববাদের অন্যতম মৌলিক দাবী। যেমন, রুকূ করা, সিজদা করা, আর্থিক নযরানা পেশ করা, রোযা রাখা, কুরবানী করা, কেবল তাকেই ভয় করা, তারই আনুগত্য করা, নির্দ্বিধায় তার আইন ও বিধান মেনে চলা ইত্যাদি কাজকর্মসমূহকে শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট করা। অতঃপর তার সাথে এসব বিষয়ে অন্য কাউকে শরীক না করা। কেননা এগুলো একমাত্র আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট; এতে অন্য কেউ অংশীদার হতে পারে না। তাছাড়া সকল নবী ও রাসূল মানবজাতিকে এ পথেই আহবান করে গেছেন। যদিও তাদের মধ্যে আমলের পদ্ধতিগত পার্থক্য ছিল, কিন্তু সকলের মূল উদ্দেশ্য ছিল একই।
‘ইবাদাত’ হলো : মানুষ আল্লাহর বান্দা ও দাস হয়ে থাকবে। তাঁর মুকাবিলায় স্বেচ্ছাচারী নীতি অবলম্বন করবে না এবং তাঁকে ছাড়া আর কারো দাসত্ব করবে না। মানুষ তাঁর হুকুমের আনুগত্য করবে ও তাঁর আইন মেনে চলবে। মানুষ নিজেই নিজের শাসক হবে না এবং আল্লাহ ছাড়া আর কারো কর্তৃত্ব স্বীকার করবে না। ‘ইবাদাত’ শব্দটিকে শুধু নামায, রোযা এবং এ ধরনের অন্যান্য ইবাদাত অর্থে ব্যবহার করা হয়নি; বরং বিনাবাক্যে তাঁর আদেশ-নিষেধ পালন, তাঁর শরয়ী আইনকানুন সন্তুষ্টচিত্তে মেনে চলার দাবীকেও বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ মানুষকে অন্য কারো দাসত্বের জন্য নয় বরং তাঁর নিজের দাসত্বের জন্য সৃষ্টি করেছেন। যেহেতু তিনি তাদের স্রষ্টা সেহেতু অন্যদের দাসত্ব করার অধিকার আল্লাহ মানুষকে দেননি।
ইবাদাতের উদ্দেশ্যেই আল্লাহ মানুষ ও জিন জাতিকে সৃষ্টি করেছেন :
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْاِنْسَ اِلَّا لِيَعْبُدُوْنِ
আমি সৃষ্টি করেছি জিন ও মানুষকে এজন্য যে, তারা আমারই ইবাদাত করবে। (সূরা যারিয়াত- ৫৬)
ইবাদাত করতে হবে একমাত্র আল্লাহর জন্য :
بَلِ اللهَ فَاعْبُدْ وَكُنْ مِّنَ الشَّاكِرِيْنَ
অতএব তুমি আল্লাহরই ইবাদাত করো ও কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হও। (সূরা যুমার- ৬৬)
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوْا رَبَّكُمُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ وَالَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ
হে মানবজাতি! তোমরা তোমাদের রবের ইবাদাত করো, যিনি তোমাদেরকে ও তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমরা তাক্বওয়া অর্জন করতে পার। (সূরা বাক্বারা- ২১)
আল্লাহর ইবাদাতের জন্য আমরা আদিষ্ট :
وَمَاۤ اُمِرُوْاۤ اِلَّا لِيَعْبُدُوا اللهَ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ ۚ حُنَفَآءَ وَيُقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَۚ وَذٰلِكَ دِيْنُ الْقَيِّمَةِ
তাদেরকে কেবল এ নির্দেশই করা হয়েছে যে, তারা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদাত করবে, সালাত কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। আর এটাই সঠিক ধর্ম। (সূরা বায়্যিনাহ- ৫)
সকল নবীই আল্লাহর ইবাদাতের দাওয়াত নিয়ে এসেছিলেন :
وَمَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا نُوْحِيْۤ اِلَيْهِ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَاْ فَاعْبُدُوْنِ
আমি তোমার পূর্বে এমন কোন রাসূল প্রেরণ করিনি, যার প্রতি এ ওহী করিনি যে, আমি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই; সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদাত করো। (সূরা আম্বিয়া- ২৫)
ইবাদাত করতে হবে মৃত্যু পর্যন্ত :
وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتّٰى يَاْتِيَكَ الْيَقِيْنُ
হে নবী! যতক্ষণ পর্যন্ত তোমার কাছে নিশ্চিত বিষয় (মৃত্যু) না আসবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি তোমার রবের ইবাদাত করতে থাক। (সূরা হিজর- ৯৯)
ইবাদাতের সুযোগ খুঁজে বের করতে হবে :
يَا عِبَادِيَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنَّ اَرْضِيْ وَاسِعَةٌ فَاِيَّايَ فَاعْبُدُوْنِ
হে আমার মুমিন বান্দাগণ! নিশ্চয় আমার পৃথিবী প্রশস্ত; সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদাত করো।
(সূরা আনকাবূত- ৫৬)
ইবাদাত করতে হবে ইখলাস সহকারে :
اِنَّاۤ اَنْزَلْنَاۤ اِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ فَاعْبُدِ اللهَ مُخْلِصًا لَّهُ الدِّيْنَ
আমি আপনার প্রতি এ কিতাব সত্যসহ নাযিল করেছি। অতএব আপনি নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর ইবাদাত করুন। (সূরা যুমার- ২)
قُلْ اِنِّۤيْ اُمِرْتُ اَنْ اَعْبُدَ اللهَ مُخْلِصًا لَّهُ الدِّيْنَ
বলো, অবশ্যই আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছে যে, আমি যেন একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদাত করি।
(সূরা যুমার- ১১)
اَلَا لِلّٰهِ الدِّيْنُ الْخَالِصُ
জেনে রেখো, একনিষ্ঠ ইবাদাত আল্লাহর জন্যই নিবেদিত হওয়া উচিত। (সূরা যুমার- ৩)
ইবাদাত করতে হবে দৃঢ়তা ও ধৈর্যের সাথে :
رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا فَاعْبُدْهُ وَاصْطَبِرْ لِعِبَادَتِهٖؕ هَلْ تَعْلَمُ لَهٗ سَمِيًّا
তিনি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী ও তাদের অন্তর্বর্তী যা কিছু আছে সবকিছুর প্রতিপালক। সুতরাং তাঁরই ইবাদাত করো এবং তাঁর ইবাদাতে ধৈর্যশীল হও। তুমি কি তাঁর সমগুণসম্পন্ন কাউকে জান? (সূরা মারইয়াম- ৬৫)
ইবাদাতের মধ্যে শিরক করা যাবে না :
فَمَنْ كَانَ يَرْجُوْا لِقَآءَ رَبِّهٖ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَّلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهٖۤ اَحَدًا
যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে ও তার প্রতিপালকের ইবাদাতে কাউকেও শরীক না করে। (সূরা কাহফ- ১১০)
قُلْ اِنَّمَاۤ اُمِرْتُ اَنْ اَعْبُدَ اللهَ وَلَاۤ اُشْرِكَ بِهٖ
বলো, নিশ্চয় আমাকে আদেশ করা হয়েছে যেন আমি আল্লাহর ইবাদাত করি এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করি। (সূরা রা‘দ- ৩৬)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর দাসত্বের সাথে অন্য কাউকে শরীক করা যাবে না। শুধু তাঁরই বিধিবিধান ও আদেশ-নিষেধ পালন করতে হবে। কারণ নির্ভেজাল আনুগত্য পাওয়ার অধিকার কেবল আল্লাহর। কেউ যদি আল্লাহ ছাড়া একনিষ্ঠভাবে অন্য কারো দাসত্ব করে, তাহলে সে ভ্রান্ত কাজ করে। অনুরূপভাবে সে যদি আল্লাহর দাসত্বের সাথে সাথে অন্য কারো দাসত্বের সংমিশ্রণ ঘটায়, তাহলে সেটাও সরাসরি ন্যায় ও সত্যের পরিপন্থী হিসেবে গণ্য হবে।
ইবাদাতের উদ্দেশ্যেই আল্লাহ মানুষ ও জিন জাতিকে সৃষ্টি করেছেন :
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْاِنْسَ اِلَّا لِيَعْبُدُوْنِ
আমি সৃষ্টি করেছি জিন ও মানুষকে এজন্য যে, তারা আমারই ইবাদাত করবে। (সূরা যারিয়াত- ৫৬)
ইবাদাত করতে হবে একমাত্র আল্লাহর জন্য :
بَلِ اللهَ فَاعْبُدْ وَكُنْ مِّنَ الشَّاكِرِيْنَ
অতএব তুমি আল্লাহরই ইবাদাত করো ও কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হও। (সূরা যুমার- ৬৬)
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوْا رَبَّكُمُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ وَالَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ
হে মানবজাতি! তোমরা তোমাদের রবের ইবাদাত করো, যিনি তোমাদেরকে ও তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমরা তাক্বওয়া অর্জন করতে পার। (সূরা বাক্বারা- ২১)
আল্লাহর ইবাদাতের জন্য আমরা আদিষ্ট :
وَمَاۤ اُمِرُوْاۤ اِلَّا لِيَعْبُدُوا اللهَ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ ۚ حُنَفَآءَ وَيُقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَۚ وَذٰلِكَ دِيْنُ الْقَيِّمَةِ
তাদেরকে কেবল এ নির্দেশই করা হয়েছে যে, তারা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদাত করবে, সালাত কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। আর এটাই সঠিক ধর্ম। (সূরা বায়্যিনাহ- ৫)
সকল নবীই আল্লাহর ইবাদাতের দাওয়াত নিয়ে এসেছিলেন :
وَمَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا نُوْحِيْۤ اِلَيْهِ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَاْ فَاعْبُدُوْنِ
আমি তোমার পূর্বে এমন কোন রাসূল প্রেরণ করিনি, যার প্রতি এ ওহী করিনি যে, আমি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই; সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদাত করো। (সূরা আম্বিয়া- ২৫)
ইবাদাত করতে হবে মৃত্যু পর্যন্ত :
وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتّٰى يَاْتِيَكَ الْيَقِيْنُ
হে নবী! যতক্ষণ পর্যন্ত তোমার কাছে নিশ্চিত বিষয় (মৃত্যু) না আসবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি তোমার রবের ইবাদাত করতে থাক। (সূরা হিজর- ৯৯)
ইবাদাতের সুযোগ খুঁজে বের করতে হবে :
يَا عِبَادِيَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنَّ اَرْضِيْ وَاسِعَةٌ فَاِيَّايَ فَاعْبُدُوْنِ
হে আমার মুমিন বান্দাগণ! নিশ্চয় আমার পৃথিবী প্রশস্ত; সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদাত করো।
(সূরা আনকাবূত- ৫৬)
ইবাদাত করতে হবে ইখলাস সহকারে :
اِنَّاۤ اَنْزَلْنَاۤ اِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ فَاعْبُدِ اللهَ مُخْلِصًا لَّهُ الدِّيْنَ
আমি আপনার প্রতি এ কিতাব সত্যসহ নাযিল করেছি। অতএব আপনি নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর ইবাদাত করুন। (সূরা যুমার- ২)
قُلْ اِنِّۤيْ اُمِرْتُ اَنْ اَعْبُدَ اللهَ مُخْلِصًا لَّهُ الدِّيْنَ
বলো, অবশ্যই আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছে যে, আমি যেন একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদাত করি।
(সূরা যুমার- ১১)
اَلَا لِلّٰهِ الدِّيْنُ الْخَالِصُ
জেনে রেখো, একনিষ্ঠ ইবাদাত আল্লাহর জন্যই নিবেদিত হওয়া উচিত। (সূরা যুমার- ৩)
ইবাদাত করতে হবে দৃঢ়তা ও ধৈর্যের সাথে :
رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا فَاعْبُدْهُ وَاصْطَبِرْ لِعِبَادَتِهٖؕ هَلْ تَعْلَمُ لَهٗ سَمِيًّا
তিনি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী ও তাদের অন্তর্বর্তী যা কিছু আছে সবকিছুর প্রতিপালক। সুতরাং তাঁরই ইবাদাত করো এবং তাঁর ইবাদাতে ধৈর্যশীল হও। তুমি কি তাঁর সমগুণসম্পন্ন কাউকে জান? (সূরা মারইয়াম- ৬৫)
ইবাদাতের মধ্যে শিরক করা যাবে না :
فَمَنْ كَانَ يَرْجُوْا لِقَآءَ رَبِّهٖ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَّلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهٖۤ اَحَدًا
যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে ও তার প্রতিপালকের ইবাদাতে কাউকেও শরীক না করে। (সূরা কাহফ- ১১০)
قُلْ اِنَّمَاۤ اُمِرْتُ اَنْ اَعْبُدَ اللهَ وَلَاۤ اُشْرِكَ بِهٖ
বলো, নিশ্চয় আমাকে আদেশ করা হয়েছে যেন আমি আল্লাহর ইবাদাত করি এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করি। (সূরা রা‘দ- ৩৬)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর দাসত্বের সাথে অন্য কাউকে শরীক করা যাবে না। শুধু তাঁরই বিধিবিধান ও আদেশ-নিষেধ পালন করতে হবে। কারণ নির্ভেজাল আনুগত্য পাওয়ার অধিকার কেবল আল্লাহর। কেউ যদি আল্লাহ ছাড়া একনিষ্ঠভাবে অন্য কারো দাসত্ব করে, তাহলে সে ভ্রান্ত কাজ করে। অনুরূপভাবে সে যদি আল্লাহর দাসত্বের সাথে সাথে অন্য কারো দাসত্বের সংমিশ্রণ ঘটায়, তাহলে সেটাও সরাসরি ন্যায় ও সত্যের পরিপন্থী হিসেবে গণ্য হবে।
সালাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। ঈমানের পরেই সালাতের স্থান। তাই ঈমান আনার পর মুমিনদের প্রথম কাজই হলো সালাত প্রতিষ্ঠা করা। সালাত মুমিন ও কাফিরের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করে। আল্লাহর প্রতি বান্দার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হলো সালাত। এ কারণেই পবিত্র কুরআন ও হাদীসে সালাতের প্রতি বারংবার তাকীদ দেয়া হয়েছে। উম্মতের প্রতি নবী ﷺ এর শেষ উপদেশও ছিল সালাত। সালাত সকল প্রকার অশ্লীলতা ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে। এ কারণে সামাজিকভাবেও সালাতের গুরুত্ব অপরিসীম।
সকল নবীর যুগে সালাতের বিধান ছিল :
وَجَعَلْنَاهُمْ اَئِمَّةً يَّهْدُوْنَ بِاَمْرِنَا وَاَوْحَيْنَاۤ اِلَيْهِمْ فِعْلَ الْخَيْرَاتِ وَاِقَامَ الصَّلَاةِ وَاِيْتَآءَ الزَّكَاةِ ۚ وَكَانُوْا لَنَا عَابِدِيْنَ
আমি তাদেরকে নেতা বানিয়েছিলাম; যাতে করে তারা আমার নির্দেশ অনুযায়ী মানুষকে পথপ্রদর্শন করে। আর আমি তাদের প্রতি ওহী প্রেরণ করে এ আদেশ দিয়েছিলাম যে, তারা যেন ভালো কাজ করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত আদায় করে। আর তারা আমারই ইবাদাত করত। (সূরা আম্বিয়া- ৭৩)
ইসমাঈল (আঃ) সালাতের দাওয়াত দিতেন :
وَاذْكُرْ فِى الْكِتَابِ اِسْمَاعِيْلَ اِنَّهٗ كَانَ صَادِقَ الْوَعْدِ وَكَانَ رَسُوْلًا نَّبِيًّا -‐ وَكَانَ يَاْمُرُ اَهْلَهٗ بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ وَكَانَ عِنْدَ رَبِّهٖ مَرْضِيًّا
স্মরণ করো, এ কিতাবে ইসমাঈলের কথা! তিনি ছিলেন প্রতিশ্রুতি পালনে সত্যবাদী এবং তিনি ছিলেন রাসূল ও নবী। তিনি তার পরিবার-পরিজনকে সালাত ও যাকাতের নির্দেশ দিতেন; আর তিনি ছিলেন তার প্রতিপালকের প্রতি সন্তুষ্ট। (সূরা মারইয়াম- ৫৪, ৫৫)
মূসা (আঃ) কে সালাতের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল :
وَاَنَا اخْتَرْتُكَ فَاسْتَمِعْ لِمَا يُوْحىٰ ‐ اِنَّنِيْۤ اَنَا اللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَاْ فَاعْبُدْنِيْ وَاَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِيْ
আমি তোমাকে মনোনীত করেছি; অতএব যে ওহী তোমার নিকট প্রেরণ করা হচ্ছে তুমি তা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করো। আমিই আল্লাহ, আমি ব্যতীত কোন সত্যিকার ইলাহ্ নেই। অতএব আমারই ইবাদাত করো এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম করো। (সূরা ত্বা-হা- ১৩, ১৪)
وَاَوْحَيْنَاۤ اِلٰى مُوْسٰى وَاَخِيْهِ اَنْ تَبَوَّاٰلِقَوْمِكُمَا بِمِصْرَ بُيُوْتًا وَّاجْعَلُوْا بُيُوْتَكُمْ قِبْلَةً وَّاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ ؕ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِيْنَ
আমি মূসা ও তার ভাইকে প্রত্যাদেশ করলাম যে, মিসরে তোমাদের সম্প্রদায়ের জন্য গৃহ স্থাপন করো এবং তোমাদের গৃহগুলোকে ইবাদাতগৃহ হিসেবে বানিয়ে নাও। আর সালাত কায়েম করো এবং মুমিনদেরকে সুসংবাদ দাও। (সূরা ইউনুস- ৮৭)
লুক্বমান (আঃ) তার ছেলেকে সালাতের অসিয়ত করেছিলেন :
يَا بُنَيَّ اَقِمِ الصَّلَاةَ وَاْمُرْ بِالْمَعْرُوْفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَاصْبِرْ عَلٰى مَاۤ اَصَابَكَؕ اِنَّ ذٰلِكَ مِنْ عَزْمِ الْاُمُوْرِ
হে আমার ছেলে! সালাত কায়েম করো, সৎকাজের আদেশ দাও, মন্দকাজ থেকে নিষেধ করো এবং তোমার উপর যে বিপদ আসে তাতে ধৈর্যধারণ করো। নিশ্চয় এটা দৃঢ় সংকল্পের কাজ। (সূরা লুক্বমান- ১৭)
মারইয়াম (আঃ) কেও সালাতের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল :
يَا مَرْيَمُ اقْنُتِيْ لِرَبِّكِ وَاسْجُدِيْ وَارْكَعِيْ مَعَ الرَّاكِعِيْنَ
হে মারইয়াম! তুমি তোমার রবের অনুগত হও, আমাকে সিজদা করো এবং রুকূকারীদের সাথে রুকূ করো। (সূরা আলে ইমরান- ৪৩)
ঈসা (আঃ) এর যুগেও সালাতের বিধান ছিল :
قَالَ اِنِّيْ عَبْدُ اللهِؕ اٰتَانِيَ الْكِتَابَ وَجَعَلَنِيْ نَبِيًّا ‐ وَجَعَلَنِيْ مُبَارَكًا اَيْنَ مَا كُنْتُ وَاَوْصَانِيْ بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ مَا دُمْتُ حَيًّا
ঈসা বললেন, আমি আল্লাহর বান্দা। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে নবী বানিয়েছেন, আমি যেখানেই থাকি না কেন তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন। আর যতদিন আমি বেঁচে থাকব, ততদিন তিনি আমাকে সালাত ও যাকাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। (সূরা মারইয়াম- ৩০, ৩১)
আহলে কিতাবের প্রতিও সালাতের নির্দেশ ছিল :
وَمَا تَفَرَّقَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ اِلَّا مِنْ ۢبَعْدِ مَا جَآءَتْهُمُ الْبَيِّنَةُ ‐ وَمَاۤ اُمِرُوْاۤ اِلَّا لِيَعْبُدُوا اللهَ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ حُنَفَآءَ وَيُقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذٰلِكَ دِيْنُ الْقَيِّمَةِ
যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল তাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পরও তাদের মাঝে বিচ্ছিন্নতা দেখা দিয়েছিল। তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ দেয়া হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদাত করবে, সালাত কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। এটাই সঠিক ধর্ম। (সূরা বায়্যিনাহ- ৪, ৫)
বনী ইসরাঈলদের থেকেও সালাতের অঙ্গীকার নেয়া হয়েছিল :
وَاِذْ اَخَذْنَا مِيْثَاقَ بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ لَا تَعْبُدُوْنَ اِلَّا اللهَؕ وَبِالْوَالِدَيْنِ اِحْسَانًا وَّذِى الْقُرْبٰى وَالْيَتَامٰى وَالْمَسَاكِيْنِ وَقُوْلُوْا لِلنَّاسِ حُسْنًا وَّاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَؕ ثُمَّ تَوَلَّيْتُمْ اِلَّا قَلِيْلًا مِّنْكُمْ وَاَنْتُمْ مُّعْرِضُوْنَ
আর যখন আমি বনী ইসরাঈল হতে এ অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত কারো ইবাদাত করবে না। পিতামাতা ও আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে, ইয়াতীম ও মিসকীনদের সঙ্গেও (সদ্ব্যবহার করবে)। আর তোমরা মানুষের সাথে উত্তমভাবে কথা বলবে এবং সালাত কায়েম করবে ও যাকাত প্রদান করবে। তারপরও তোমাদের মধ্য হতে অল্প সংখ্যক ব্যতীত তোমরা সকলেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলে; আর তোমরা ছিলে বিমুখী সম্প্রদায়। (সূরা বাক্বারা- ৮৩)
উম্মতে মুহাম্মাদীর প্রতি সালাতের বিধান রয়েছে :
وَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَ وَاَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ
তোমরা সালাত কায়েম করো, যাকাত দাও এবং রাসূলের আনুগত্য করো, যাতে তোমরা অনুগ্রহভাজন হতে পার। (সূরা নূর- ৫৬)
وَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَ وَاَقْرِضُوا اللهَ قَرْضًا حَسَنًا
তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো, যাকাত প্রদান করো এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও। (সূরা মুয্যাম্মিল- ২০)
এ উম্মতের মহিলাদের প্রতিও সালাত আদায়ের বিশেষ নির্দেশ :
وَقَرْنَ فِيْ بُيُوْتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْاُوْلٰى وَاَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَاٰتِيْنَ الزَّكَاةَ وَاَطِعْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ
(হে নারীরা) তোমরা নিজেদের ঘরে অবস্থান করবে এবং প্রথম যুগের মূর্খদের ন্যায় নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না। তোমরা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ পালন করবে। (সূরা আহযাব- ৩৩)
وَجَعَلْنَاهُمْ اَئِمَّةً يَّهْدُوْنَ بِاَمْرِنَا وَاَوْحَيْنَاۤ اِلَيْهِمْ فِعْلَ الْخَيْرَاتِ وَاِقَامَ الصَّلَاةِ وَاِيْتَآءَ الزَّكَاةِ ۚ وَكَانُوْا لَنَا عَابِدِيْنَ
আমি তাদেরকে নেতা বানিয়েছিলাম; যাতে করে তারা আমার নির্দেশ অনুযায়ী মানুষকে পথপ্রদর্শন করে। আর আমি তাদের প্রতি ওহী প্রেরণ করে এ আদেশ দিয়েছিলাম যে, তারা যেন ভালো কাজ করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত আদায় করে। আর তারা আমারই ইবাদাত করত। (সূরা আম্বিয়া- ৭৩)
ইসমাঈল (আঃ) সালাতের দাওয়াত দিতেন :
وَاذْكُرْ فِى الْكِتَابِ اِسْمَاعِيْلَ اِنَّهٗ كَانَ صَادِقَ الْوَعْدِ وَكَانَ رَسُوْلًا نَّبِيًّا -‐ وَكَانَ يَاْمُرُ اَهْلَهٗ بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ وَكَانَ عِنْدَ رَبِّهٖ مَرْضِيًّا
স্মরণ করো, এ কিতাবে ইসমাঈলের কথা! তিনি ছিলেন প্রতিশ্রুতি পালনে সত্যবাদী এবং তিনি ছিলেন রাসূল ও নবী। তিনি তার পরিবার-পরিজনকে সালাত ও যাকাতের নির্দেশ দিতেন; আর তিনি ছিলেন তার প্রতিপালকের প্রতি সন্তুষ্ট। (সূরা মারইয়াম- ৫৪, ৫৫)
মূসা (আঃ) কে সালাতের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল :
وَاَنَا اخْتَرْتُكَ فَاسْتَمِعْ لِمَا يُوْحىٰ ‐ اِنَّنِيْۤ اَنَا اللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَاْ فَاعْبُدْنِيْ وَاَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِيْ
আমি তোমাকে মনোনীত করেছি; অতএব যে ওহী তোমার নিকট প্রেরণ করা হচ্ছে তুমি তা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করো। আমিই আল্লাহ, আমি ব্যতীত কোন সত্যিকার ইলাহ্ নেই। অতএব আমারই ইবাদাত করো এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম করো। (সূরা ত্বা-হা- ১৩, ১৪)
وَاَوْحَيْنَاۤ اِلٰى مُوْسٰى وَاَخِيْهِ اَنْ تَبَوَّاٰلِقَوْمِكُمَا بِمِصْرَ بُيُوْتًا وَّاجْعَلُوْا بُيُوْتَكُمْ قِبْلَةً وَّاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ ؕ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِيْنَ
আমি মূসা ও তার ভাইকে প্রত্যাদেশ করলাম যে, মিসরে তোমাদের সম্প্রদায়ের জন্য গৃহ স্থাপন করো এবং তোমাদের গৃহগুলোকে ইবাদাতগৃহ হিসেবে বানিয়ে নাও। আর সালাত কায়েম করো এবং মুমিনদেরকে সুসংবাদ দাও। (সূরা ইউনুস- ৮৭)
লুক্বমান (আঃ) তার ছেলেকে সালাতের অসিয়ত করেছিলেন :
يَا بُنَيَّ اَقِمِ الصَّلَاةَ وَاْمُرْ بِالْمَعْرُوْفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَاصْبِرْ عَلٰى مَاۤ اَصَابَكَؕ اِنَّ ذٰلِكَ مِنْ عَزْمِ الْاُمُوْرِ
হে আমার ছেলে! সালাত কায়েম করো, সৎকাজের আদেশ দাও, মন্দকাজ থেকে নিষেধ করো এবং তোমার উপর যে বিপদ আসে তাতে ধৈর্যধারণ করো। নিশ্চয় এটা দৃঢ় সংকল্পের কাজ। (সূরা লুক্বমান- ১৭)
মারইয়াম (আঃ) কেও সালাতের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল :
يَا مَرْيَمُ اقْنُتِيْ لِرَبِّكِ وَاسْجُدِيْ وَارْكَعِيْ مَعَ الرَّاكِعِيْنَ
হে মারইয়াম! তুমি তোমার রবের অনুগত হও, আমাকে সিজদা করো এবং রুকূকারীদের সাথে রুকূ করো। (সূরা আলে ইমরান- ৪৩)
ঈসা (আঃ) এর যুগেও সালাতের বিধান ছিল :
قَالَ اِنِّيْ عَبْدُ اللهِؕ اٰتَانِيَ الْكِتَابَ وَجَعَلَنِيْ نَبِيًّا ‐ وَجَعَلَنِيْ مُبَارَكًا اَيْنَ مَا كُنْتُ وَاَوْصَانِيْ بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ مَا دُمْتُ حَيًّا
ঈসা বললেন, আমি আল্লাহর বান্দা। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে নবী বানিয়েছেন, আমি যেখানেই থাকি না কেন তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন। আর যতদিন আমি বেঁচে থাকব, ততদিন তিনি আমাকে সালাত ও যাকাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। (সূরা মারইয়াম- ৩০, ৩১)
আহলে কিতাবের প্রতিও সালাতের নির্দেশ ছিল :
وَمَا تَفَرَّقَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ اِلَّا مِنْ ۢبَعْدِ مَا جَآءَتْهُمُ الْبَيِّنَةُ ‐ وَمَاۤ اُمِرُوْاۤ اِلَّا لِيَعْبُدُوا اللهَ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ حُنَفَآءَ وَيُقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذٰلِكَ دِيْنُ الْقَيِّمَةِ
যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল তাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পরও তাদের মাঝে বিচ্ছিন্নতা দেখা দিয়েছিল। তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ দেয়া হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদাত করবে, সালাত কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। এটাই সঠিক ধর্ম। (সূরা বায়্যিনাহ- ৪, ৫)
বনী ইসরাঈলদের থেকেও সালাতের অঙ্গীকার নেয়া হয়েছিল :
وَاِذْ اَخَذْنَا مِيْثَاقَ بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ لَا تَعْبُدُوْنَ اِلَّا اللهَؕ وَبِالْوَالِدَيْنِ اِحْسَانًا وَّذِى الْقُرْبٰى وَالْيَتَامٰى وَالْمَسَاكِيْنِ وَقُوْلُوْا لِلنَّاسِ حُسْنًا وَّاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَؕ ثُمَّ تَوَلَّيْتُمْ اِلَّا قَلِيْلًا مِّنْكُمْ وَاَنْتُمْ مُّعْرِضُوْنَ
আর যখন আমি বনী ইসরাঈল হতে এ অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত কারো ইবাদাত করবে না। পিতামাতা ও আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে, ইয়াতীম ও মিসকীনদের সঙ্গেও (সদ্ব্যবহার করবে)। আর তোমরা মানুষের সাথে উত্তমভাবে কথা বলবে এবং সালাত কায়েম করবে ও যাকাত প্রদান করবে। তারপরও তোমাদের মধ্য হতে অল্প সংখ্যক ব্যতীত তোমরা সকলেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলে; আর তোমরা ছিলে বিমুখী সম্প্রদায়। (সূরা বাক্বারা- ৮৩)
উম্মতে মুহাম্মাদীর প্রতি সালাতের বিধান রয়েছে :
وَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَ وَاَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ
তোমরা সালাত কায়েম করো, যাকাত দাও এবং রাসূলের আনুগত্য করো, যাতে তোমরা অনুগ্রহভাজন হতে পার। (সূরা নূর- ৫৬)
وَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَ وَاَقْرِضُوا اللهَ قَرْضًا حَسَنًا
তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো, যাকাত প্রদান করো এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও। (সূরা মুয্যাম্মিল- ২০)
এ উম্মতের মহিলাদের প্রতিও সালাত আদায়ের বিশেষ নির্দেশ :
وَقَرْنَ فِيْ بُيُوْتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْاُوْلٰى وَاَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَاٰتِيْنَ الزَّكَاةَ وَاَطِعْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ
(হে নারীরা) তোমরা নিজেদের ঘরে অবস্থান করবে এবং প্রথম যুগের মূর্খদের ন্যায় নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না। তোমরা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ পালন করবে। (সূরা আহযাব- ৩৩)
সালাত আদায় করা মুত্তাক্বীদের বৈশিষ্ট্য :
الٓمّٓ ‐ ذٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ فِيْهِ هُدًى لِّلْمُتَّقِيْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ
এটা ঐ গ্রন্থ যার মধ্যে কোনরূপ সন্দেহ নেই; আর মুত্তাক্বীদের জন্য এটা হেদায়াত। যারা অদৃশ্য বিষয়গুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে জীবনোপকরণ দান করেছি তা হতে ব্যয় করে। (সূরা বাক্বারা- ২, ৩)
সালাত ঈমানদারীর পরিচয় :
اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ اِذَا ذُكِرَ اللهُ وَجِلَتْ قُلُوْبُهُمْ وَاِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ اٰيَاتُهٗ زَادَتْهُمْ اِيْمَانًا وَّعَلٰى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ يُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ ‐ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُوْنَ حَقًّاؕ لَهُمْ دَرَجَاتٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَمَغْفِرَةٌ وَّرِزْقٌ كَرِيْمٌ
নিশ্চয় মুমিন তো তারাই যাদের হৃদয় আল্লাহর স্মরণে কম্পিত হয় এবং তাদের সামনে তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হলে তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পায়। আর তারা তাদের প্রতিপালকের উপরই নির্ভর করে থাকে। যারা সালাত কায়েম করে এবং আমি যা দিয়েছি তা হতে ব্যয় করে; তারাই প্রকৃত মুমিন। তাদের প্রতিপালকের নিকট তাদেরই জন্য রয়েছে মর্যাদা, ক্ষমা এবং সম্মানজনক জীবিকা। (সূরা আনফাল, ২-৪)
ব্যাখ্যা : যে ব্যক্তি আল্লাহর অনুগত নয় এবং আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না, তার জন্য নিয়মিত সালাত আদায় করা খুবই কষ্টকর ও বিরাট মুসিবতের ব্যাপার। কিন্তু যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় ও সানন্দে নিজেকে আল্লাহর আনুগত্যে সোপর্দ করেছে এবং যে ব্যক্তি মৃত্যুর পর তার মহান প্রভুর সামনে উপস্থিত হওয়ার কথা চিন্তা করে, তার জন্য সালাত আদায় করা নয় বরং তা ত্যাগ করাই কঠিন।
সালাত মুমিন ও কাফির-মুশরিকের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করে :
مُنِيْبِيْنَ اِلَيْهِ وَاتَّقُوْهُ وَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَلَا تَكُوْنُوْا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
তোমরা একনিষ্ঠভাবে তাঁর অভিমুখী হও এবং শুধু তাঁকেই ভয় করো। আর তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো এবং কখনো মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সূরা রূম- ৩১)
ব্যাখ্যা : মানবজাতির মধ্য থেকে যারা বিদ্রোহের নীতি পরিহার করে রবের প্রতি আনুগত্যের নীতি অবলম্বন করেছে, তা কাফির ও মুমিন উভয় সমাজের সামনে প্রকাশিত হওয়া প্রয়োজন। মুমিনদের কাছে এজন্য প্রকাশ হওয়া প্রয়োজন যে, এর ফলে তাদের একটি সমাজ গঠিত হতে পারে এবং তারা আল্লাহর পথে পরস্পরের সাথে সহযোগিতা করতে পারে। আর কাফিরদের কাছে এর প্রকাশ হওয়া এজন্য প্রয়োজন যে, এর ফলে মানুষদেরকে আসল ইলাহ্ রাববুল আলামীনের দিকে বার বার ফিরে আসতে দেখে তাদের হৃদয়ের অভ্যন্তরে ঘুমিয়ে থাকা প্রকৃতি জেগে উঠবে এবং আল্লাহর অনুগতদের কর্মতৎপরতা দেখে তাদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি হতে থাকবে। এ দু’টি উদ্দেশ্যের জন্যও সালাত কায়েম করাই সবচেয়ে বেশি উপযোগী মাধ্যম। জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূল ﷺ বলেছেন, মুসলিম ও কাফিরের মধ্যে পার্থক্যের মাপকাঠি হলো নামায। অর্থাৎ নামায ত্যাগ করলে তার কুফরীতে লিপ্ত হওয়ার আর বিলম্ব থাকে না। নামায হলো তার ঈমানের জন্য প্রাচীর স্বরূপ। (সহীহ মুসলিম, হা/২৫৬)
আল্লাহর দিকে ফিরা এবং তাঁর গযবের ভয় করা- এ দু’টিই অন্তরের কাজ। অন্তরে এ অবস্থাটির দৃঢ়তা প্রতিষ্ঠার জন্য এমন কোন দৈহিক কর্মের প্রয়োজন, যার মাধ্যমে বাইরেও প্রত্যেক ব্যক্তি জানবে যে, অমুক ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে এক আল্লাহর দিকে ফিরে এসেছে। তাই আল্লাহ তা‘আলা এই মানসিক পরিবর্তনের হুকুম দেয়ার পর পরই এ দৈহিক কর্ম অর্থাৎ সালাত কায়েম করার হুকুম দিয়েছেন। মানুষের মনে যতক্ষণ পর্যন্ত কোন চিন্তা নিছক চিন্তার পর্যায়েই থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত তার মধ্যে দৃঢ়তা ও স্থায়িত্ব সৃষ্টি হয় না। এ চিন্তায় ভাটা পড়ে এবং পরিবর্তন আসারও সম্ভাবনা থাকে। তাই সে অনুযায়ী যতই সে কাজ করতে থাকে, ততই তার চিন্তা শিকড় গেড়ে বসে। এ দৃষ্টিতে বিচার করলে আল্লাহর অভিমুখী হওয়া এবং আল্লাহভীতিকে শক্তিশালী করার জন্য প্রতিদিন নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করার চেয়ে বেশি কার্যকর আর কোন কাজ নেই। সালাত এমন একটি কাজ, যা নিয়মিতভাবে কয়েক ঘণ্টা পর পর ফিরে আসে, যাতে মানুষ আল্লাহকে ভুলে না যায়। এজন্য বার বার মানুষকে সালাতের পুনরাবৃত্তি করতে হয়।
সালাত ও ঈমানের সম্পর্ক একেবারে কাছাকাছি :
فَلَا صَدَّقَ وَلَا صَلّٰى ‐ - وَلٰكِنْ كَذَّبَ وَتَوَلّٰى
অতঃপর সে (জাহান্নামী) লোকটি বিশ্বাস করেনি এবং সালাতও আদায় করেনি; বরং সে অস্বীকার করেছে এবং মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। (সূরা ক্বিয়ামাহ- ৩১, ৩২)
ব্যাখ্যা : মহান আল্লাহর এ বাণীর মধ্যে ‘‘সে বিশ্বাস করেনি এবং সালাতও আদায় করেনি’’ কথাটি বিশেষভাবে লক্ষণীয়। এ থেকে স্পষ্টভাবে জানা যাচ্ছে যে, কোন ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনার পর তার প্রাথমিক জরুরি কাজ হলো- সালাত আদায় করা। ইসলামের অন্যান্য ফরয কাজ যেমন- যাকাত, হজ্জ ও রোযা ইত্যাদি বছরে একবার পালন করতে হয়; কিন্তু সালাত প্রতিদিন পাঁচ বার আদায় করতে হয়। ঈমান আনার পর কিছু সময় যেতে না যেতেই সালাতের সময় এসে যায়। তখনই যাচাই হয়ে যায়- ব্যক্তির ঈমান আনাটা সত্য কি না? যদি সে সালাত আদায় করে, তাহলে বুঝা যাবে সত্যিই সে ঈমান এনেছে। আর যদি সালাত আদায় না করে, তাহলে প্রমাণিত হবে সে কেবল মুখে কালিমা পড়েছে, মনে-প্রাণে পড়েনি এবং পূর্ণরূপে ইসলামে প্রবেশ করেনি। সুতরাং মুমিনকে অবশ্যই সালাত আদায়কারী হতে হবে।
আল্লাহ সালাত আদায়কারীদের সঙ্গে থাকেন :
وَقَالَ اللهُ اِنِّيْ مَعَكُمْؕ لَئِنْ اَقَمْتُمُ الصَّلَاةَ وَاٰتَيْتُمُ الزَّكَاةَ وَاٰمَنْتُمْ بِرُسُلِيْ وَعَزَّرْتُمُوْهُمْ وَاَقْرَضْتُمُ اللهَ قَرْضًا حَسَنًا
আল্লাহ বলেছিলেন, আমি তোমাদের সাথেই আছি, যদি তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও, আমার রাসূলদের প্রতি ঈমান আন ও তাদেরকে সম্মান কর এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ প্রদান কর। (সূরা মায়েদা- ১২)
সালাতের প্রতি যত্নবান হওয়ার নির্দেশ :
حَافِظُوْا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطٰى وَقُوْمُوْا لِلّٰهِ قَانِتِيْنَ
তোমরা সালাতের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষ করে মধ্যবর্তী সালাতের প্রতি এবং আল্লাহর সামনে বিনীতভাবে দন্ডায়মান হও। (সূরা বাক্বারা- ২৩৮)
ব্যাখ্যা : وُسْطٰى (উসতা) এর অর্থ মধ্যবর্তী জিনিস। আবার এ শব্দটি এমন জিনিস সম্পর্কেও ব্যবহৃত হয়, যা উন্নত ও উৎকৃষ্ট। صَلَاةُ الْوُسْطٰى (সালাতুল উসতা) এর অর্থ মধ্যবর্তী সালাত তথা আসরের সালাত হতে পারে আবার এমন সালাতও হতে পারে, যা সঠিক সময়ে পূর্ণ একাগ্রতার সাথে আল্লাহর প্রতি গভীর মনোযোগ সহকারে আদায় করা হয় এবং যার মধ্যে সালাতের যাবতীয় গুণের সমাবেশ ঘটে।
নিয়মিত সালাত আদায়ের তাকিদ :
وَالَّذِيْنَ هُمْ عَلٰى صَلَاتِهِمْ دَآئِمُوْنَ
যারা তাদের সালাতে সদা নিয়মানুবর্তিতা অবলম্বনকারী। (সূরা মা‘আরিজ- ২৩ )
وَالَّذِيْنَ هُمْ عَلٰى صَلَاتِهِمْ يُحَافِظُوْنَ
যারা নিজেদের সালাতে যত্নবান। (সূরা মা‘আরিজ- ৩৪)
পরিবারের সবাইকে সালাতে অভ্যস্ত করা পরিবার প্রধানের দায়িত্ব :
وَاْمُرْ اَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَاؕ لَا نَسْاَلُكَ رِزْقًاؕ نَحْنُ نَرْزُقُكَؕ وَالْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوٰى
তোমার পরিবারবর্গকে সালাতের আদেশ দাও এবং তার উপর অবিচল থাকো। আমি তোমার নিকট কোন রিযিক চাই না; বরং আমিই তোমাকে রিযিক দেই এবং শুভ পরিণাম তো মুত্তাক্বীদের জন্যই। (সূরা ত্বা-হা- ১৩২)
ব্যাখ্যা : সন্তানদেরকে সালাত আদায় করার আদেশ দিতে হবে। এ বিষয়টি তাদের দৃষ্টিভঙ্গীতে পরিবর্তন ঘটাবে এবং তাদের মূল্যবোধ বদলে দেবে। তাদের আগ্রহ ও আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু পরিবর্তন করে দেবে। তারা পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন রিযিকের উপর ধৈর্যধারণ করবে এবং তাতে সন্তুষ্ট হবে। ঈমান ও তাক্বওয়ার মাধ্যমে যে কল্যাণ অর্জিত হয় তাকে তারা এমন ভোগের উপর অগ্রাধিকার দিতে থাকবে, যা ফাসিকী, দুশ্চরিত্রতা ও পার্থিব লোভ-লালসা থেকে অর্জিত হয়। আল্লাহ নিজের কোন লাভের জন্য আমাদেরকে সালাত আদায় করতে বলছেন না। বরং এতে আমাদের নিজেদেরই লাভ। আর তা হচ্ছে, এর ফলে আমাদের মধ্যে তাক্বওয়া সৃষ্টি হবে। আর এটিই দুনিয়া ও আখিরাতে স্থায়ী ও শেষ সাফল্যের মাধ্যম। উক্ত আয়াতের মাধ্যমে পরিবার প্রধানকে পরিবারের সবাইকে সালাতে অভ্যস্ত করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ দায়িত্ব পালন না করলে পরিবারের দায়িত্বশীলরা অবশ্যই গোনাহগার হবেন। মুক্তির জন্য কেবল নিজের আমলই যথেষ্ট নয়। তাই এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে সমাজের সর্বস্তরে সালাত কায়েমের ব্যবস্থা করা :
اَلَّذِيْنَ اِنْ مَّكَّنَّاهُمْ فِى الْاَرْضِ اَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ وَاَمَرُوْا بِالْمَعْرُوْفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنْكَرِؕ وَلِلّٰهِ عَاقِبَةُ الْاُمُوْرِ
আমি এদেরকে (মুমিনদেরকে) পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দান করি, যাতে করে তারা সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং সৎকাজের নির্দেশ দেয় ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করে। আর সকল কর্মের পরিণাম তো আল্লাহর ইচ্ছাধীন। (সূরা হজ্জ- ৪১)
الٓمّٓ ‐ ذٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ فِيْهِ هُدًى لِّلْمُتَّقِيْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ
এটা ঐ গ্রন্থ যার মধ্যে কোনরূপ সন্দেহ নেই; আর মুত্তাক্বীদের জন্য এটা হেদায়াত। যারা অদৃশ্য বিষয়গুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে জীবনোপকরণ দান করেছি তা হতে ব্যয় করে। (সূরা বাক্বারা- ২, ৩)
সালাত ঈমানদারীর পরিচয় :
اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ اِذَا ذُكِرَ اللهُ وَجِلَتْ قُلُوْبُهُمْ وَاِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ اٰيَاتُهٗ زَادَتْهُمْ اِيْمَانًا وَّعَلٰى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ يُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ ‐ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُوْنَ حَقًّاؕ لَهُمْ دَرَجَاتٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَمَغْفِرَةٌ وَّرِزْقٌ كَرِيْمٌ
নিশ্চয় মুমিন তো তারাই যাদের হৃদয় আল্লাহর স্মরণে কম্পিত হয় এবং তাদের সামনে তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হলে তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পায়। আর তারা তাদের প্রতিপালকের উপরই নির্ভর করে থাকে। যারা সালাত কায়েম করে এবং আমি যা দিয়েছি তা হতে ব্যয় করে; তারাই প্রকৃত মুমিন। তাদের প্রতিপালকের নিকট তাদেরই জন্য রয়েছে মর্যাদা, ক্ষমা এবং সম্মানজনক জীবিকা। (সূরা আনফাল, ২-৪)
ব্যাখ্যা : যে ব্যক্তি আল্লাহর অনুগত নয় এবং আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না, তার জন্য নিয়মিত সালাত আদায় করা খুবই কষ্টকর ও বিরাট মুসিবতের ব্যাপার। কিন্তু যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় ও সানন্দে নিজেকে আল্লাহর আনুগত্যে সোপর্দ করেছে এবং যে ব্যক্তি মৃত্যুর পর তার মহান প্রভুর সামনে উপস্থিত হওয়ার কথা চিন্তা করে, তার জন্য সালাত আদায় করা নয় বরং তা ত্যাগ করাই কঠিন।
সালাত মুমিন ও কাফির-মুশরিকের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করে :
مُنِيْبِيْنَ اِلَيْهِ وَاتَّقُوْهُ وَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَلَا تَكُوْنُوْا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
তোমরা একনিষ্ঠভাবে তাঁর অভিমুখী হও এবং শুধু তাঁকেই ভয় করো। আর তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো এবং কখনো মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সূরা রূম- ৩১)
ব্যাখ্যা : মানবজাতির মধ্য থেকে যারা বিদ্রোহের নীতি পরিহার করে রবের প্রতি আনুগত্যের নীতি অবলম্বন করেছে, তা কাফির ও মুমিন উভয় সমাজের সামনে প্রকাশিত হওয়া প্রয়োজন। মুমিনদের কাছে এজন্য প্রকাশ হওয়া প্রয়োজন যে, এর ফলে তাদের একটি সমাজ গঠিত হতে পারে এবং তারা আল্লাহর পথে পরস্পরের সাথে সহযোগিতা করতে পারে। আর কাফিরদের কাছে এর প্রকাশ হওয়া এজন্য প্রয়োজন যে, এর ফলে মানুষদেরকে আসল ইলাহ্ রাববুল আলামীনের দিকে বার বার ফিরে আসতে দেখে তাদের হৃদয়ের অভ্যন্তরে ঘুমিয়ে থাকা প্রকৃতি জেগে উঠবে এবং আল্লাহর অনুগতদের কর্মতৎপরতা দেখে তাদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি হতে থাকবে। এ দু’টি উদ্দেশ্যের জন্যও সালাত কায়েম করাই সবচেয়ে বেশি উপযোগী মাধ্যম। জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূল ﷺ বলেছেন, মুসলিম ও কাফিরের মধ্যে পার্থক্যের মাপকাঠি হলো নামায। অর্থাৎ নামায ত্যাগ করলে তার কুফরীতে লিপ্ত হওয়ার আর বিলম্ব থাকে না। নামায হলো তার ঈমানের জন্য প্রাচীর স্বরূপ। (সহীহ মুসলিম, হা/২৫৬)
আল্লাহর দিকে ফিরা এবং তাঁর গযবের ভয় করা- এ দু’টিই অন্তরের কাজ। অন্তরে এ অবস্থাটির দৃঢ়তা প্রতিষ্ঠার জন্য এমন কোন দৈহিক কর্মের প্রয়োজন, যার মাধ্যমে বাইরেও প্রত্যেক ব্যক্তি জানবে যে, অমুক ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে এক আল্লাহর দিকে ফিরে এসেছে। তাই আল্লাহ তা‘আলা এই মানসিক পরিবর্তনের হুকুম দেয়ার পর পরই এ দৈহিক কর্ম অর্থাৎ সালাত কায়েম করার হুকুম দিয়েছেন। মানুষের মনে যতক্ষণ পর্যন্ত কোন চিন্তা নিছক চিন্তার পর্যায়েই থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত তার মধ্যে দৃঢ়তা ও স্থায়িত্ব সৃষ্টি হয় না। এ চিন্তায় ভাটা পড়ে এবং পরিবর্তন আসারও সম্ভাবনা থাকে। তাই সে অনুযায়ী যতই সে কাজ করতে থাকে, ততই তার চিন্তা শিকড় গেড়ে বসে। এ দৃষ্টিতে বিচার করলে আল্লাহর অভিমুখী হওয়া এবং আল্লাহভীতিকে শক্তিশালী করার জন্য প্রতিদিন নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করার চেয়ে বেশি কার্যকর আর কোন কাজ নেই। সালাত এমন একটি কাজ, যা নিয়মিতভাবে কয়েক ঘণ্টা পর পর ফিরে আসে, যাতে মানুষ আল্লাহকে ভুলে না যায়। এজন্য বার বার মানুষকে সালাতের পুনরাবৃত্তি করতে হয়।
সালাত ও ঈমানের সম্পর্ক একেবারে কাছাকাছি :
فَلَا صَدَّقَ وَلَا صَلّٰى ‐ - وَلٰكِنْ كَذَّبَ وَتَوَلّٰى
অতঃপর সে (জাহান্নামী) লোকটি বিশ্বাস করেনি এবং সালাতও আদায় করেনি; বরং সে অস্বীকার করেছে এবং মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। (সূরা ক্বিয়ামাহ- ৩১, ৩২)
ব্যাখ্যা : মহান আল্লাহর এ বাণীর মধ্যে ‘‘সে বিশ্বাস করেনি এবং সালাতও আদায় করেনি’’ কথাটি বিশেষভাবে লক্ষণীয়। এ থেকে স্পষ্টভাবে জানা যাচ্ছে যে, কোন ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনার পর তার প্রাথমিক জরুরি কাজ হলো- সালাত আদায় করা। ইসলামের অন্যান্য ফরয কাজ যেমন- যাকাত, হজ্জ ও রোযা ইত্যাদি বছরে একবার পালন করতে হয়; কিন্তু সালাত প্রতিদিন পাঁচ বার আদায় করতে হয়। ঈমান আনার পর কিছু সময় যেতে না যেতেই সালাতের সময় এসে যায়। তখনই যাচাই হয়ে যায়- ব্যক্তির ঈমান আনাটা সত্য কি না? যদি সে সালাত আদায় করে, তাহলে বুঝা যাবে সত্যিই সে ঈমান এনেছে। আর যদি সালাত আদায় না করে, তাহলে প্রমাণিত হবে সে কেবল মুখে কালিমা পড়েছে, মনে-প্রাণে পড়েনি এবং পূর্ণরূপে ইসলামে প্রবেশ করেনি। সুতরাং মুমিনকে অবশ্যই সালাত আদায়কারী হতে হবে।
আল্লাহ সালাত আদায়কারীদের সঙ্গে থাকেন :
وَقَالَ اللهُ اِنِّيْ مَعَكُمْؕ لَئِنْ اَقَمْتُمُ الصَّلَاةَ وَاٰتَيْتُمُ الزَّكَاةَ وَاٰمَنْتُمْ بِرُسُلِيْ وَعَزَّرْتُمُوْهُمْ وَاَقْرَضْتُمُ اللهَ قَرْضًا حَسَنًا
আল্লাহ বলেছিলেন, আমি তোমাদের সাথেই আছি, যদি তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও, আমার রাসূলদের প্রতি ঈমান আন ও তাদেরকে সম্মান কর এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ প্রদান কর। (সূরা মায়েদা- ১২)
সালাতের প্রতি যত্নবান হওয়ার নির্দেশ :
حَافِظُوْا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطٰى وَقُوْمُوْا لِلّٰهِ قَانِتِيْنَ
তোমরা সালাতের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষ করে মধ্যবর্তী সালাতের প্রতি এবং আল্লাহর সামনে বিনীতভাবে দন্ডায়মান হও। (সূরা বাক্বারা- ২৩৮)
ব্যাখ্যা : وُسْطٰى (উসতা) এর অর্থ মধ্যবর্তী জিনিস। আবার এ শব্দটি এমন জিনিস সম্পর্কেও ব্যবহৃত হয়, যা উন্নত ও উৎকৃষ্ট। صَلَاةُ الْوُسْطٰى (সালাতুল উসতা) এর অর্থ মধ্যবর্তী সালাত তথা আসরের সালাত হতে পারে আবার এমন সালাতও হতে পারে, যা সঠিক সময়ে পূর্ণ একাগ্রতার সাথে আল্লাহর প্রতি গভীর মনোযোগ সহকারে আদায় করা হয় এবং যার মধ্যে সালাতের যাবতীয় গুণের সমাবেশ ঘটে।
নিয়মিত সালাত আদায়ের তাকিদ :
وَالَّذِيْنَ هُمْ عَلٰى صَلَاتِهِمْ دَآئِمُوْنَ
যারা তাদের সালাতে সদা নিয়মানুবর্তিতা অবলম্বনকারী। (সূরা মা‘আরিজ- ২৩ )
وَالَّذِيْنَ هُمْ عَلٰى صَلَاتِهِمْ يُحَافِظُوْنَ
যারা নিজেদের সালাতে যত্নবান। (সূরা মা‘আরিজ- ৩৪)
পরিবারের সবাইকে সালাতে অভ্যস্ত করা পরিবার প্রধানের দায়িত্ব :
وَاْمُرْ اَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَاؕ لَا نَسْاَلُكَ رِزْقًاؕ نَحْنُ نَرْزُقُكَؕ وَالْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوٰى
তোমার পরিবারবর্গকে সালাতের আদেশ দাও এবং তার উপর অবিচল থাকো। আমি তোমার নিকট কোন রিযিক চাই না; বরং আমিই তোমাকে রিযিক দেই এবং শুভ পরিণাম তো মুত্তাক্বীদের জন্যই। (সূরা ত্বা-হা- ১৩২)
ব্যাখ্যা : সন্তানদেরকে সালাত আদায় করার আদেশ দিতে হবে। এ বিষয়টি তাদের দৃষ্টিভঙ্গীতে পরিবর্তন ঘটাবে এবং তাদের মূল্যবোধ বদলে দেবে। তাদের আগ্রহ ও আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু পরিবর্তন করে দেবে। তারা পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন রিযিকের উপর ধৈর্যধারণ করবে এবং তাতে সন্তুষ্ট হবে। ঈমান ও তাক্বওয়ার মাধ্যমে যে কল্যাণ অর্জিত হয় তাকে তারা এমন ভোগের উপর অগ্রাধিকার দিতে থাকবে, যা ফাসিকী, দুশ্চরিত্রতা ও পার্থিব লোভ-লালসা থেকে অর্জিত হয়। আল্লাহ নিজের কোন লাভের জন্য আমাদেরকে সালাত আদায় করতে বলছেন না। বরং এতে আমাদের নিজেদেরই লাভ। আর তা হচ্ছে, এর ফলে আমাদের মধ্যে তাক্বওয়া সৃষ্টি হবে। আর এটিই দুনিয়া ও আখিরাতে স্থায়ী ও শেষ সাফল্যের মাধ্যম। উক্ত আয়াতের মাধ্যমে পরিবার প্রধানকে পরিবারের সবাইকে সালাতে অভ্যস্ত করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ দায়িত্ব পালন না করলে পরিবারের দায়িত্বশীলরা অবশ্যই গোনাহগার হবেন। মুক্তির জন্য কেবল নিজের আমলই যথেষ্ট নয়। তাই এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে সমাজের সর্বস্তরে সালাত কায়েমের ব্যবস্থা করা :
اَلَّذِيْنَ اِنْ مَّكَّنَّاهُمْ فِى الْاَرْضِ اَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ وَاَمَرُوْا بِالْمَعْرُوْفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنْكَرِؕ وَلِلّٰهِ عَاقِبَةُ الْاُمُوْرِ
আমি এদেরকে (মুমিনদেরকে) পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দান করি, যাতে করে তারা সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং সৎকাজের নির্দেশ দেয় ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করে। আর সকল কর্মের পরিণাম তো আল্লাহর ইচ্ছাধীন। (সূরা হজ্জ- ৪১)
সালাত আল্লাহর স্মরণ লাভের মাধ্যম :
اِنَّنِيْۤ اَنَا اللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَاْ فَاعْبُدْنِيْ وَاَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِيْ
আমিই আল্লাহ, আমি ছাড়া আর কোন মা‘বুদ নেই। অতএব তুমি শুধু আমারই ইবাদাত করো এবং আমার স্মরণের জন্য সালাত প্রতিষ্ঠা করো। (সূরা ত্বা-হা- ১৪)
ব্যাখ্যা : এখানে সালাতের মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। মানুষ যেন আল্লাহ থেকে গাফিল না হয়ে যায় এবং দুনিয়ার দৃশ্যাবলি যেন তাকে এ সত্য বিমুখ না করে দেয় যে, সে কারো বান্দা নয়- এ চিন্তাকে জীবন্ত রাখার এবং আল্লাহর সাথে মানুষের সম্পর্ক জড়ানোর সবচেয়ে বড় মাধ্যম হচ্ছে সালাত। সালাত প্রতিদিন কয়েকবার মানুষকে দুনিয়ার কাজকর্ম থেকে সরিয়ে আল্লাহর দিকে নিয়ে যায়। কেউ কেউ এ অর্থও নিয়েছেন যে, সালাত কায়েম করো যাতে আমি তোমাকে স্মরণ করতে পারি। যেমন অন্যত্র বলা হয়েছে : فَذْكُرُوْنِىْ اَذْكُرْكُمْ অর্থাৎ ‘‘তোমরা আমাকে স্মরণ করো, তাহলে আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব।’’ (সূরা বাক্বারা- ১৫২)
সালাত আল্লাহর সাহায্য লাভের মাধ্যম :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اسْتَعِيْنُوْا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِؕ اِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِيْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন। (সূরা বাক্বারা- ১৫৩)
ব্যাখ্যা : দ্বীনের কঠিন দায়িত্বের বোঝা বহন করার জন্য দু’টি আভ্যন্তরীণ শক্তির প্রয়োজন। একটি হচ্ছে, নিজের মধ্যে ধৈর্য ও সহিঞ্চুতার শক্তি লালন করতে হবে। দ্বিতীয়ত, সালাত আদায়ের মাধ্যমে নিজেকে নৈতিক দিক থেকে শক্তিশালী করতে হবে।
সালাত আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয় :
كَلَّاؕ لَا تُطِعْهُ وَاسْجُدْ وَاقْتَرِبْ
কখনো নয়! তুমি তার (কাফিরের) অনুসরণ করো না। বরং তুমি সিজদা করো এবং (আল্লাহর) নৈকট্য অর্জন করো। (সূরা আলাক্ব- ১৯)
সালাত উপদেশ গ্রহণের জন্য সহায়ক হয় :
اِنَّمَا تُنْذِرُ الَّذِيْنَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَيْبِ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَؕ وَمَنْ تَزَكّٰى فَاِنَّمَا يَتَزَكّٰى لِنَفْسِه ؕ وَاِلَى اللهِ الْمَصِيْرُ
আপনি তো কেবল তাদেরকে সতর্ক করতে পারেন, যারা তাদের প্রতিপালককে না দেখে ভয় করে এবং সালাত কায়েম করে। আর যে কেউ নিজেকে পরিশুদ্ধ করে, সে তো পরিশুদ্ধ করে নিজেরই কল্যাণের জন্য; (অবশেষে) সবাইকে আল্লাহরই কাছে ফিরে যেতে হবে। (সূরা ফাতির- ১৮)
সালাত আদায়কারীরাই কুরআনের হেদায়াত লাভ করে :
ذٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ فِيْهِۚ هُدًى لِّلْمُتَّقِيْنَ -‐ اَ لَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ
এটা ঐ গ্রন্থ যার মধ্যে কোন সন্দেহ নেই; আর মুত্তাক্বীদের জন্য এটা হেদায়াতস্বরূপ। (আর এটা তাদের জন্যও হেদায়াতস্বরূপ) যারা অদৃষ্ট বিষয়গুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদেরকে যে জীবনোপকরণ দান করেছি তা হতে ব্যয় করে। (সূরা বাক্বারা- ২, ৩)
সালাতের মাধ্যমে রুজিতে বরকত হয় :
وَاْمُرْ اَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَاؕ لَا نَسْاَلُكَ رِزْقًاؕ نَحْنُ نَرْزُقُكَؕ وَالْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوٰى
তুমি তোমার পরিবার-পরিজনকে সালাতের নির্দেশ দাও এবং তুমি নিজেও এর উপর অবিচল থাকো। আমি তোমার কাছে রিযিক চাই না, বরং আমিই তোমাকে রিযিক দেব। আর শুভ পরিণাম মুত্তাক্বীদের জন্য। (সূরা ত্বা-হা- ১৩২)
সালাতের মাধ্যমে মানসিক প্রশান্তি লাভ হয় :
وَلَقَدْ نَعْلَمُ اَنَّكَ يَضِيْقُ صَدْرُكَ بِمَا يَقُوْلُوْنَ ‐ - فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَكُنْ مِّنَ السَّاجِدِيْنَ
(হে নবী!) আমি অবশ্যই জানি যে, তারা (তোমার বিরোধীরা) যা বলছে, তাতে তোমার মন সংকীর্ণ হয়ে যায়। অতএব, তুমি প্রশংসার সাথে তোমার রবের তাসবীহ পাঠ করো এবং সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও। (সূরা হিজর- ৯৭, ৯৮)
ব্যাখ্যা : আমাদের নবী মুহাম্মাদ ﷺ যখন ইসলামের দাওয়াত দিতেন, তখন বিরোধীরা নবী ﷺ কে নানা ধরনের কষ্ট দিত। নবী ﷺ কে নিয়ে নানা ধরনের বিদ্রূপ করত, আজে-বাজে কথা বলত; এতে নবী ﷺ মানসিক অশান্তিতে ভোগতেন। এমতাবস্থায় আল্লাহ তা‘আলা নবী ﷺ কে প্রশান্তি লাভের উপায় হিসেবে তাসবীহ পাঠ করার ও সালাতে মশগুল হওয়ার নির্দেশ দিলেন। সত্যের বাণী প্রচার এবং প্রসারের প্রচেষ্টা চালানোর ক্ষেত্রে অশেষ কষ্ট ও বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। এগুলো মুকাবিলা করার শক্তি সালাত ও আল্লাহর ইবাদাত করার মাধ্যমেই অর্জন করতে হবে। এগুলো মনকে প্রশান্তিময় করে তুলবে, ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার জন্ম দেবে, সাহস বাড়িয়ে দেবে এবং এমন যোগ্যতাসম্পন্ন করে গড়ে তুলবে, যার ফলে দুনিয়ার সমস্ত মানুষের নিন্দাবাদ ও প্রতিরোধের মুখেও দৃঢ়ভাবে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হবে।
وَمِنْ اٰنَآءِاللَّيْلِ فَسَبِّحْ وَاَطْرَافَ النَّهَارِ لَعَلَّكَ تَرْضٰى
রাত্রিকালে পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো এবং দিবসের প্রান্তসমূহেও (তাসবীহ পাঠ করো); হয়তো তুমি সন্তুষ্ট লাভ করতে পারবে। (সূরা ত্বা-হা- ১৩০)
ব্যাখ্যা : ইসলামের দুশমনদের অবকাশের শেষ সময় পর্যন্ত তারা যে ধরনের আচরণই করুক না কেন, অবশ্যই তা সহ্য করতে হবে এবং ধৈর্যের সাথে তাদের যাবতীয় তিক্ত কথা শুনেও সত্যবাণী প্রচারের দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে। সালাত থেকে সহিষ্ণুতা ও সংযমের শক্তি লাভ করতে হবে। আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তন সহকারে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করার অর্থ হচ্ছে সালাত আদায় করা। যারা অন্যায়ভাবে বাড়াবাড়ি ও যুলুম করছে তাদেরকে এখনই শাস্তি দেয়া হবে না। ফলে তারা সত্যের আহবায়ককে কষ্ট দিতে থাকবে এবং পৃথিবীতে বুক ফুলিয়েও চলাফেরা করবে। তারা আল্লাহর পক্ষ হতে কোন বাধার সম্মুখীন হবে না। আল্লাহর এ ফায়সালায় সন্তুষ্ট হয়ে কাজ করে যেতে হবে। তাহলে এর এমন ফলাফল সামনে আসবে, যাতে হৃদয় উৎফুল্ল হয়ে উঠবে।
সালাত একটি লাভজনক ব্যবসা :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَتْلُوْنَ كِتَابَ اللهِ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاَنْفَقُوْا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَّعَلَانِيَةً يَّرْجُوْنَ تِجَارَةً لَّنْ تَبُوْرَ
যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, সালাত কায়েম করে এবং যা কিছু আমি তাদেরকে রিযিক হিসেবে দান করেছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে। (এগুলোর দ্বারা) তারা এমন ব্যবসার আশা করে, যাতে কখনো লোকসান হবে না। (সূরা ফাতির- ২৯)
সালাতের প্রতিদান আল্লাহর নিকট পাওয়া যাবে :
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ لَهُمْ اَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْۚ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ
নিশ্চয় যারা ঈমান আনে, সৎকাজ করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত আদায় করে তাদের প্রতিদান তাদের রবের কাছে প্রস্তুত রয়েছে। আর তাদের কোন ভয় নেই এবং কোন চিন্তাও নেই। (সূরা বাক্বারা- ২৭৭)
আল্লাহ সালাত আদায়কারীদের সওয়াব নষ্ট করবেন না :
وَالَّذِيْنَ يُمَسِّكُوْنَ بِالْكِتَابِ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَؕ اِنَّا لَا نُضِيْعُ اَجْرَ الْمُصْلِحِيْنَ
যারা কিতাবকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে এবং সালাত কায়েম করে, নিশ্চয় আমি এরূপ সৎকর্মপরায়ণদের প্রতিদান নষ্ট করি না। (সূরা আ‘রাফ- ১৭০)
সালাত আদায়কারীদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ :
وَبَشِّرِ الْمُخْبِتِيْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ اِذَا ذُكِرَ اللهُ وَجِلَتْ قُلُوْبُهُمْ وَالصَّابِرِيْنَ عَلٰى مَاۤ اَصَابَهُمْ وَالْمُقِيْمِى الصَّلَاةِ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ
সুসংবাদ দাও বিনীতদেরকে, আল্লাহর নাম স্মরণ করা হলে যাদের হৃদয় কম্পিত হয়, যারা বিপদাপদে ধৈর্যধারণ করে, সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যা কিছু রিযিক হিসেবে দিয়েছি তা হতে ব্যয় করে। (সূরা হজ্জ- ৩৪, ৩৫)
শুভ পরিণাম সালাত আদায়কারীদের জন্য :
وَالَّذِيْنَ صَبَرُوا ابْتِغَآءَ وَجْهِ رَبِّهِمْ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاَنْفَقُوْا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَّعَلَانِيَةً وَّيَدْرَءُوْنَ بِالْحَسَنَةِ السَّيِّئَةَ اُولٰٓئِكَ لَهُمْ عُقْبَى الدَّارِ
যারা তাদের প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য ধৈর্যধারণ করে, সালাত কায়েম করে, আমি তাদেরকে যে জীবনোপকরণ দিয়েছি তা হতে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে এবং যারা ভালো দ্বারা মন্দকে দূরীভূত করে, এদের জন্য রয়েছে শুভ পরিণাম। (সূরা রা‘দ- ২২)
সালাত জান্নাত লাভের মাধ্যম :
وَالَّذِيْنَ هُمْ عَلٰى صَلَاتِهِمْ يُحَافِظُوْنَ ‐ اُولٰٓئِكَ فِيْ جَنَّاتٍ مُّكْرَمُوْنَ
যারা নিজেদের সালাতে যত্নবান, তারা জান্নাতে সম্মানিতদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা মা‘আরিজ- ৩৪, ৩৫)
সালাত আদায়কারীরা জান্নাতুল ফিরদাউস লাভ করবে :
وَالَّذِيْنَ هُمْ عَلٰى صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُوْنَ ‐ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْوَارِثُوْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ يَرِثُوْنَ الْفِرْدَوْسَؕ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
যারা নিজেদের সালাতে যত্নবান থাকে, তারাই হবে উত্তরাধিকারী। যারা হবে ফিরদাউসের উত্তরাধিকারী, তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। (সূরা মু’মিনূন, ৯-১১)
সালাত আদায়কারীরা ইসলামী রাষ্ট্রে বসবাসের অধিকার পায় :
فَاِنْ تَابُوْا وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ فَخَلُّوْا سَبِيْلَهُمْؕ اِنَّ اللّٰهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
যদি তারা তাওবা করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয়, তবে তাদের পথ ছেড়ে দেবে; নিশ্চয় আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা তাওবা- ৫)
সালাত মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি করে :
فَاِنْ تَابُوْا وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ فَاِخْوَانُكُمْ فِى الدِّيْنِ
অতঃপর তারা যদি তাওবা করে, সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয়, তবে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই।
(সূরা তাওবা- ১১)
সালাত আদায়কারীরা একে অপরের বন্ধু :
اِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللهُ وَرَسُوْلُهٗ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوا الَّذِيْنَ يُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُوْنَ
তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুমিনগণ; যারা বিনীত হয়ে সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয়। (সূরা মায়েদা- ৫৫)
সালাত আদায়কারী মুমিনরাই আল্লাহর রহমত লাভ করে :
وَالْمُؤْمِنُوْنَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍ يَّاْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَيُطِيْعُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗؕ اُولٰٓئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللهُؕ اِنَّ اللهَ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
মুমিন নারী-পুরুষ একে অপরের বন্ধু, এরা সৎকাজের নির্দেশ দেয় এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে; অচিরেই আল্লাহ তাদের প্রতি দয়া করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা- ৭১)
সালাত আদায়কারীরাই সফলতা লাভ করবে :
قَدْ اَفْلَحَ مَنْ تَزَكّٰى ‐ - وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهٖ فَصَلّٰى
নিশ্চয় সফলতা লাভ করেছে সে, যে নিজেকে পবিত্র করে নিয়েছে এবং তার মালিকের নাম স্মরণ করেছে, অতঃপর সালাত আদায় করেছে। (সূরা আ‘লা- ১৪, ১৫)
قَدْ اَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ ‐ - الَّذِيْنَ هُمْ فِيْ صَلَاتِهِمْ خَاشِعُوْنَ
নিশ্চয় ঐ সকল মুমিনরা সফলকাম হয়েছে, যারা বিনয়ের সাথে সালাত আদায় করে। (সূরা মু’মিনূন- ১, ২)
সালাত পাপকে মুছে দেয় :
وَاَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِّنَ اللَّيْلِؕ اِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِؕ ذٰلِكَ ذِكْرٰى لِلذَّاكِرِيْنَ
তুমি সালাত কায়েম করো দিবসের দু’প্রান্তভাগে ও রজনীর প্রথমাংশে। সৎকর্ম অবশ্যই অসৎকর্মকে মিটিয়ে দেয়। যারা উপদেশ গ্রহণ করে, এটা তাদের জন্য এক উপদেশ। (সূরা হুদ- ১১৪)
ব্যাখ্যা : যেসব অসৎকাজ দুনিয়ায় ছড়িয়ে আছে এবং সত্যের দাওয়াতের বিরোধিতায় ব্যবহৃত হচ্ছে- এসব দূর করার আসল পদ্ধতি হচ্ছে, নিজেদের সৎকাজের সাহায্যে অসৎকাজকে প্রতিহত করা। আর মানুষের সৎ হওয়ার সর্বোত্তম মাধ্যম হচ্ছে সালাত। সালাত আল্লাহর স্মরণকে তাজা করতে থাকে। এর শক্তির সাহায্যে হকপন্থিরা কেবল অসৎকাজের মুকাবিলা করতে পারবে তা নয় বরং দুনিয়ায় কার্যত সৎকাজ ও কল্যাণের ব্যবস্থাও কায়েম করতে পারবে। সালাত এমন একটি ইবাদাত, যা মানুষের মধ্যে আল্লাহর ভয়, সততা, সৎকর্মশীলতা ও পবিত্রতার আবেগ এবং আল্লাহর বিধানের আনুগত্যের ভাবধারা সৃষ্টি করে। সেই সাথে তাকে ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখে। মানুষের মধ্যে এ বিষয়গুলো না থাকলে সে কখনো আল্লাহর বিধানের আনুগত্য করার ক্ষেত্রে অবিচল নিষ্ঠার পরিচয় দিতে পারে না।
সালাত নৈতিক শক্তি অর্জনে সহায়ক হয় :
اُتْلُ مَاۤ اُوْحِيَ اِلَيْكَ مِنَ الْكِتَابِ وَاَقِمِ الصَّلَاةَ
তোমার কাছে ওহীর মাধ্যমে যে কিতাব পাঠানো হয়েছে তা পাঠ করো এবং সালাত কায়েম করো। (সূরা আনকাবূত- ৪৫)
ব্যাখ্যা : প্রচন্ড বাধা মুকাবিলা করার জন্য বস্তুগত শক্তির চেয়েও বেশি প্রয়োজন নৈতিক শক্তির। এ নৈতিক শক্তির বিকাশ সাধনের জন্য প্রথমত দু’টি ব্যবস্থা। একটি হচ্ছে, কুরআন তিলাওয়াত করা এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে, সালাত প্রতিষ্ঠা করা। সালাত প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে এমন একটি ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে দুষ্কৃতি থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। বিকৃত কোন সমাজের মধ্যে যদি এমন কোন আন্দোলন সৃষ্টি হয়, যার সাথে জড়িত হওয়ার সাথে সাথেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ নৈতিক দিক দিয়ে পরিবর্তিত হয়ে যায় এবং তাদের চরিত্র সংশোধিত হয়ে যায়, তখন অবশ্যই তা প্রভাব বিস্তার করবে। জাহেলিয়াতের যেসব দুষ্কৃতি শত শত বছর থেকে চলে আসছিল, তাকে প্রতিষ্ঠিত রাখার জন্য যারা সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের মুকাবিলা করার জন্য কুরআন মুসলিমদের বস্তুগত শক্তি সংগ্রহ করার পরিবর্তে সালাত কায়েম করার নির্দেশ দিয়েছে। এর ফলে তারা এমন চারিত্রিক শক্তির অধিকারী হবে, যার ফলে মানুষের মন জয় করা সম্ভব হবে এবং আল্লাহর সাহায্যে শত্রুকে পরাজিত করা যাবে।
সালাত মানুষকে পাপকাজ থেকে বিরত রাখে :
اِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهٰى عَنِ الْفَحْشَآءِ وَالْمُنْكَرِ
নিশ্চয় সালাত মানুষকে অশ্লীল ও গর্হিত কাজ থেকে দূরে রাখে। (সূরা আনকাবূত- ৪৫)
ব্যাখ্যা : সালাতের একটি অনিবার্য গুণ হলো, তা মানুষকে অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে। যে ব্যক্তিই সালাতের ব্যাপারে সামান্য চিন্তা করবে সে-ই স্বীকার করবে যে, মানুষকে খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য সালাত যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। যখন মানুষ শরীর ও পোশাকের পবিত্রতা অর্জন করে সালাতের আরকান-আহকামসহ দিনে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত প্রতিষ্ঠা করে, তখন তার অন্তরে প্রশান্তি সঞ্চারিত হয় এবং তার মধ্যে নিজ দায়িত্বের প্রতি অনুভূতি সৃষ্টি হয়। আর তার ঈমান প্রজ্জ্বলিত হয়, যার মাধ্যমে সে বুঝতে পারে যে তার সাথে কেউ থাক বা না থাক, গোপনে ও প্রকাশ্যে সকল অবস্থায় তাকে এক আল্লাহর আইন মেনে চলতেই হবে। নিয়মিত সুন্দরভাবে সালাত আদায় করলে শরীর ও মন পবিত্র থাকে, তখন ভালো কাজের দিকে মন আকৃষ্ট হয় এবং খারাপ কাজের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হয়। আর সালাতের দাবিও এটাই। দুনিয়ায় দ্বিতীয় এমন কোন অনুশীলন পদ্ধতি নেই, যা মানুষকে দুষ্কৃতি থেকে বিরত রাখার ক্ষেত্রে সালাতের চেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে।
তবে প্রশ্ন থেকে যায়, অনেক মানুষ নিয়মিত সালাত আদায় করার পরও খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকতে পারে না কেন? জবাবে বলা যায়, এটা নির্ভর করে তার আন্তরিকতা ও প্রচেষ্টার উপর। সে যদি এ থেকে উপকৃত হওয়ার সংকল্প করে এবং এজন্য প্রচেষ্টা চালায়, তাহলে সালাতের সংশোধনমূলক প্রভাব তার উপর পড়বেই। দুনিয়ার কোন সংশোধন ঐ ব্যক্তির উপর কার্যকর হতে পারে না, যে তার প্রভাব গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয় অথবা জেনে বুঝে তার প্রভাবকে দূরে সরিয়ে দেয়। যার সালাত তাকে অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে না, তার সালাতই ফলপ্রসূ হয় না।
সালাত মানুষের গোটা জীবনকে ইসলামের দিকে ঘুরিয়ে দেয় :
قَالُوْا يَا شُعَيْبُ اَصَلَاتُكَ تَاْمُرُكَ اَنْ نَّتْرُكَ مَا يَعْبُدُ اٰبَآؤُنَاۤ اَوْ اَنْ نَّفْعَلَ فِۤيْ اَمْوَالِنَا مَا نَشَآءُۚ اِنَّكَ لَاَنْتَ الْحَلِيْمُ الرَّشِيْدُ
তারা বলল, হে শুয়াইব! তোমার সালাত কি তোমাকে এ নির্দেশ দেয় যে, আমাদের পিতৃপুরুষরা যার ইবাদাত করত আমাদেরকে তা বর্জন করতে হবে, অথবা আমরা আমাদের ধনসম্পদ সম্পর্কে যা করি তাও (বর্জন করতে হবে)? তুমি তো অবশ্যই সহিষ্ণু ও ভালো মানুষ। (সূরা হুদ- ৮৭)
ব্যাখ্যা : সালাতের বৈশিষ্ট্য হলো, সালাত মানুষের গোটা জীবনকে ইসলামের দিকে ঘুরিয়ে দেয় এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুম পালনে অভ্যস্ত করে। এটি যার মধ্যে সৃষ্টি হয় সে কেবল নিজের সৎ ও পরিচ্ছন্ন কর্মধারার উপরই সন্তুষ্ট থাকে না বরং অন্যদেরকেও সংশোধন করতে চেষ্টা করে। ফলে সে শরীয়াত বিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সমালোচনা না করে স্থির থাকতে পারে না। আল্লাহর আনুগত্য শুধুমাত্র ইসলামের একটি অংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা উচিত নয় বরং সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক তথা জীবনের সকল বিভাগেই হওয়া উচিত। কারণ দুনিয়ায় মানুষের কাছে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর মালিকানাধীন। আল্লাহর ইচ্ছার সীমা ভেদ করে স্বাধীনভাবে কোন একটি জিনিসও ব্যবহার করার অধিকার মানুষের নেই। যে সমাজ আল্লাহকে ভুলে গেছে এবং ফাসিকী কার্যকলাপের মধ্যে ডুবে আছে, তারা সালাত নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। যেহেতু সালাত দ্বীনদারীর সবচেয়ে সুস্পষ্ট চিহ্ন, তাই এ ধরনের লোকদের সমাজে সালাত ইবাদাতের পরিবর্তে রোগ হিসেবে গণ্য হয়। নিজেদের মধ্যে কাউকে সালাত আদায় করতে দেখলে সাথে সাথেই তাদের মনে এ অনুভূতি জাগে যে, এ ব্যক্তির উপর দ্বীনদারীর আক্রমণ ঘটেছে।
সালাত শরীয়াতের অন্যান্য হুকুম পালনে সাহায্য করে :
قَدْ اَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ ‐ اَلَّذِيْنَ هُمْ فِيْ صَلَاتِهِمْ خَاشِعُوْنَ ‐ وَالَّذِيْنَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُوْنَ ‐ وَالَّذِيْنَ هُمْ لِلزَّكَاةِ فَاعِلُوْنَ ‐ وَالَّذِيْنَ هُمْ لِفُرُوْجِهِمْ حَافِظُوْنَ ‐ اِلَّا عَلٰۤى اَزْوَاجِهِمْ اَوْ مَا مَلَكَتْ اَيْمَانُهُمْ فَاِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُوْمِيْنَ ‐ فَمَنِ ابْتَغٰى وَرَآءَ ذٰلِكَ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْعَادُوْنَ ‐ وَالَّذِيْنَ هُمْ لِاَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُوْنَ ‐ وَالَّذِيْنَ هُمْ عَلٰى صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُوْنَ
অবশ্যই মুমিনগণ সফলকাম হয়েছে, যারা নিজেদের সালাতে বিনয়ী, যারা অনর্থক কাজকর্ম হতে বিরত থাকে, যারা যাকাত দানে সক্রিয়, যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে, তবে নিজ স্ত্রী অথবা অধিকারভুক্ত দাসী ব্যতীত; এতে তারা নিন্দনীয় হবে না। তবে কেউ তাদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তারা সীমালঙ্ঘনকারী হিসেবে গণ্য হবে। আর যারা নিজেদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে এবং যারা নিজেদের সালাতে যত্নবান থাকে। (সূরা মু’মিনূন, ১-৯)
ব্যাখ্যা : এখানে আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের বেশ কয়েকটি গুণাবলি উল্লেখ করেছেন। এতে শুরুতেই এসেছে সালাতের কথা আবার শেষেও বলা হয়েছে সালাতের কথা। অনুরূপভাবে সূরা মা‘আরিজ এর ১৯ থেকে ৩৫ আয়াতেও একই ধারা লক্ষ্য করা যায়। এ থেকে অতি সহজেই এটা বুঝা যাচ্ছে যে, বান্দা যদি সঠিকভাবে সালাত কায়েম করতে পারে, তাহলে ইসলামের অন্যান্য বিধান পালন করা তার জন্য সহজ হয়ে যাবে।
اِنَّنِيْۤ اَنَا اللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَاْ فَاعْبُدْنِيْ وَاَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِيْ
আমিই আল্লাহ, আমি ছাড়া আর কোন মা‘বুদ নেই। অতএব তুমি শুধু আমারই ইবাদাত করো এবং আমার স্মরণের জন্য সালাত প্রতিষ্ঠা করো। (সূরা ত্বা-হা- ১৪)
ব্যাখ্যা : এখানে সালাতের মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। মানুষ যেন আল্লাহ থেকে গাফিল না হয়ে যায় এবং দুনিয়ার দৃশ্যাবলি যেন তাকে এ সত্য বিমুখ না করে দেয় যে, সে কারো বান্দা নয়- এ চিন্তাকে জীবন্ত রাখার এবং আল্লাহর সাথে মানুষের সম্পর্ক জড়ানোর সবচেয়ে বড় মাধ্যম হচ্ছে সালাত। সালাত প্রতিদিন কয়েকবার মানুষকে দুনিয়ার কাজকর্ম থেকে সরিয়ে আল্লাহর দিকে নিয়ে যায়। কেউ কেউ এ অর্থও নিয়েছেন যে, সালাত কায়েম করো যাতে আমি তোমাকে স্মরণ করতে পারি। যেমন অন্যত্র বলা হয়েছে : فَذْكُرُوْنِىْ اَذْكُرْكُمْ অর্থাৎ ‘‘তোমরা আমাকে স্মরণ করো, তাহলে আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব।’’ (সূরা বাক্বারা- ১৫২)
সালাত আল্লাহর সাহায্য লাভের মাধ্যম :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اسْتَعِيْنُوْا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِؕ اِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِيْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন। (সূরা বাক্বারা- ১৫৩)
ব্যাখ্যা : দ্বীনের কঠিন দায়িত্বের বোঝা বহন করার জন্য দু’টি আভ্যন্তরীণ শক্তির প্রয়োজন। একটি হচ্ছে, নিজের মধ্যে ধৈর্য ও সহিঞ্চুতার শক্তি লালন করতে হবে। দ্বিতীয়ত, সালাত আদায়ের মাধ্যমে নিজেকে নৈতিক দিক থেকে শক্তিশালী করতে হবে।
সালাত আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয় :
كَلَّاؕ لَا تُطِعْهُ وَاسْجُدْ وَاقْتَرِبْ
কখনো নয়! তুমি তার (কাফিরের) অনুসরণ করো না। বরং তুমি সিজদা করো এবং (আল্লাহর) নৈকট্য অর্জন করো। (সূরা আলাক্ব- ১৯)
সালাত উপদেশ গ্রহণের জন্য সহায়ক হয় :
اِنَّمَا تُنْذِرُ الَّذِيْنَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَيْبِ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَؕ وَمَنْ تَزَكّٰى فَاِنَّمَا يَتَزَكّٰى لِنَفْسِه ؕ وَاِلَى اللهِ الْمَصِيْرُ
আপনি তো কেবল তাদেরকে সতর্ক করতে পারেন, যারা তাদের প্রতিপালককে না দেখে ভয় করে এবং সালাত কায়েম করে। আর যে কেউ নিজেকে পরিশুদ্ধ করে, সে তো পরিশুদ্ধ করে নিজেরই কল্যাণের জন্য; (অবশেষে) সবাইকে আল্লাহরই কাছে ফিরে যেতে হবে। (সূরা ফাতির- ১৮)
সালাত আদায়কারীরাই কুরআনের হেদায়াত লাভ করে :
ذٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ فِيْهِۚ هُدًى لِّلْمُتَّقِيْنَ -‐ اَ لَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ
এটা ঐ গ্রন্থ যার মধ্যে কোন সন্দেহ নেই; আর মুত্তাক্বীদের জন্য এটা হেদায়াতস্বরূপ। (আর এটা তাদের জন্যও হেদায়াতস্বরূপ) যারা অদৃষ্ট বিষয়গুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদেরকে যে জীবনোপকরণ দান করেছি তা হতে ব্যয় করে। (সূরা বাক্বারা- ২, ৩)
সালাতের মাধ্যমে রুজিতে বরকত হয় :
وَاْمُرْ اَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَاؕ لَا نَسْاَلُكَ رِزْقًاؕ نَحْنُ نَرْزُقُكَؕ وَالْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوٰى
তুমি তোমার পরিবার-পরিজনকে সালাতের নির্দেশ দাও এবং তুমি নিজেও এর উপর অবিচল থাকো। আমি তোমার কাছে রিযিক চাই না, বরং আমিই তোমাকে রিযিক দেব। আর শুভ পরিণাম মুত্তাক্বীদের জন্য। (সূরা ত্বা-হা- ১৩২)
সালাতের মাধ্যমে মানসিক প্রশান্তি লাভ হয় :
وَلَقَدْ نَعْلَمُ اَنَّكَ يَضِيْقُ صَدْرُكَ بِمَا يَقُوْلُوْنَ ‐ - فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَكُنْ مِّنَ السَّاجِدِيْنَ
(হে নবী!) আমি অবশ্যই জানি যে, তারা (তোমার বিরোধীরা) যা বলছে, তাতে তোমার মন সংকীর্ণ হয়ে যায়। অতএব, তুমি প্রশংসার সাথে তোমার রবের তাসবীহ পাঠ করো এবং সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও। (সূরা হিজর- ৯৭, ৯৮)
ব্যাখ্যা : আমাদের নবী মুহাম্মাদ ﷺ যখন ইসলামের দাওয়াত দিতেন, তখন বিরোধীরা নবী ﷺ কে নানা ধরনের কষ্ট দিত। নবী ﷺ কে নিয়ে নানা ধরনের বিদ্রূপ করত, আজে-বাজে কথা বলত; এতে নবী ﷺ মানসিক অশান্তিতে ভোগতেন। এমতাবস্থায় আল্লাহ তা‘আলা নবী ﷺ কে প্রশান্তি লাভের উপায় হিসেবে তাসবীহ পাঠ করার ও সালাতে মশগুল হওয়ার নির্দেশ দিলেন। সত্যের বাণী প্রচার এবং প্রসারের প্রচেষ্টা চালানোর ক্ষেত্রে অশেষ কষ্ট ও বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। এগুলো মুকাবিলা করার শক্তি সালাত ও আল্লাহর ইবাদাত করার মাধ্যমেই অর্জন করতে হবে। এগুলো মনকে প্রশান্তিময় করে তুলবে, ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার জন্ম দেবে, সাহস বাড়িয়ে দেবে এবং এমন যোগ্যতাসম্পন্ন করে গড়ে তুলবে, যার ফলে দুনিয়ার সমস্ত মানুষের নিন্দাবাদ ও প্রতিরোধের মুখেও দৃঢ়ভাবে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হবে।
وَمِنْ اٰنَآءِاللَّيْلِ فَسَبِّحْ وَاَطْرَافَ النَّهَارِ لَعَلَّكَ تَرْضٰى
রাত্রিকালে পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো এবং দিবসের প্রান্তসমূহেও (তাসবীহ পাঠ করো); হয়তো তুমি সন্তুষ্ট লাভ করতে পারবে। (সূরা ত্বা-হা- ১৩০)
ব্যাখ্যা : ইসলামের দুশমনদের অবকাশের শেষ সময় পর্যন্ত তারা যে ধরনের আচরণই করুক না কেন, অবশ্যই তা সহ্য করতে হবে এবং ধৈর্যের সাথে তাদের যাবতীয় তিক্ত কথা শুনেও সত্যবাণী প্রচারের দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে। সালাত থেকে সহিষ্ণুতা ও সংযমের শক্তি লাভ করতে হবে। আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তন সহকারে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করার অর্থ হচ্ছে সালাত আদায় করা। যারা অন্যায়ভাবে বাড়াবাড়ি ও যুলুম করছে তাদেরকে এখনই শাস্তি দেয়া হবে না। ফলে তারা সত্যের আহবায়ককে কষ্ট দিতে থাকবে এবং পৃথিবীতে বুক ফুলিয়েও চলাফেরা করবে। তারা আল্লাহর পক্ষ হতে কোন বাধার সম্মুখীন হবে না। আল্লাহর এ ফায়সালায় সন্তুষ্ট হয়ে কাজ করে যেতে হবে। তাহলে এর এমন ফলাফল সামনে আসবে, যাতে হৃদয় উৎফুল্ল হয়ে উঠবে।
সালাত একটি লাভজনক ব্যবসা :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَتْلُوْنَ كِتَابَ اللهِ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاَنْفَقُوْا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَّعَلَانِيَةً يَّرْجُوْنَ تِجَارَةً لَّنْ تَبُوْرَ
যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, সালাত কায়েম করে এবং যা কিছু আমি তাদেরকে রিযিক হিসেবে দান করেছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে। (এগুলোর দ্বারা) তারা এমন ব্যবসার আশা করে, যাতে কখনো লোকসান হবে না। (সূরা ফাতির- ২৯)
সালাতের প্রতিদান আল্লাহর নিকট পাওয়া যাবে :
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ لَهُمْ اَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْۚ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ
নিশ্চয় যারা ঈমান আনে, সৎকাজ করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত আদায় করে তাদের প্রতিদান তাদের রবের কাছে প্রস্তুত রয়েছে। আর তাদের কোন ভয় নেই এবং কোন চিন্তাও নেই। (সূরা বাক্বারা- ২৭৭)
আল্লাহ সালাত আদায়কারীদের সওয়াব নষ্ট করবেন না :
وَالَّذِيْنَ يُمَسِّكُوْنَ بِالْكِتَابِ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَؕ اِنَّا لَا نُضِيْعُ اَجْرَ الْمُصْلِحِيْنَ
যারা কিতাবকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে এবং সালাত কায়েম করে, নিশ্চয় আমি এরূপ সৎকর্মপরায়ণদের প্রতিদান নষ্ট করি না। (সূরা আ‘রাফ- ১৭০)
সালাত আদায়কারীদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ :
وَبَشِّرِ الْمُخْبِتِيْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ اِذَا ذُكِرَ اللهُ وَجِلَتْ قُلُوْبُهُمْ وَالصَّابِرِيْنَ عَلٰى مَاۤ اَصَابَهُمْ وَالْمُقِيْمِى الصَّلَاةِ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ
সুসংবাদ দাও বিনীতদেরকে, আল্লাহর নাম স্মরণ করা হলে যাদের হৃদয় কম্পিত হয়, যারা বিপদাপদে ধৈর্যধারণ করে, সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যা কিছু রিযিক হিসেবে দিয়েছি তা হতে ব্যয় করে। (সূরা হজ্জ- ৩৪, ৩৫)
শুভ পরিণাম সালাত আদায়কারীদের জন্য :
وَالَّذِيْنَ صَبَرُوا ابْتِغَآءَ وَجْهِ رَبِّهِمْ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاَنْفَقُوْا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَّعَلَانِيَةً وَّيَدْرَءُوْنَ بِالْحَسَنَةِ السَّيِّئَةَ اُولٰٓئِكَ لَهُمْ عُقْبَى الدَّارِ
যারা তাদের প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য ধৈর্যধারণ করে, সালাত কায়েম করে, আমি তাদেরকে যে জীবনোপকরণ দিয়েছি তা হতে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে এবং যারা ভালো দ্বারা মন্দকে দূরীভূত করে, এদের জন্য রয়েছে শুভ পরিণাম। (সূরা রা‘দ- ২২)
সালাত জান্নাত লাভের মাধ্যম :
وَالَّذِيْنَ هُمْ عَلٰى صَلَاتِهِمْ يُحَافِظُوْنَ ‐ اُولٰٓئِكَ فِيْ جَنَّاتٍ مُّكْرَمُوْنَ
যারা নিজেদের সালাতে যত্নবান, তারা জান্নাতে সম্মানিতদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা মা‘আরিজ- ৩৪, ৩৫)
সালাত আদায়কারীরা জান্নাতুল ফিরদাউস লাভ করবে :
وَالَّذِيْنَ هُمْ عَلٰى صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُوْنَ ‐ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْوَارِثُوْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ يَرِثُوْنَ الْفِرْدَوْسَؕ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
যারা নিজেদের সালাতে যত্নবান থাকে, তারাই হবে উত্তরাধিকারী। যারা হবে ফিরদাউসের উত্তরাধিকারী, তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। (সূরা মু’মিনূন, ৯-১১)
সালাত আদায়কারীরা ইসলামী রাষ্ট্রে বসবাসের অধিকার পায় :
فَاِنْ تَابُوْا وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ فَخَلُّوْا سَبِيْلَهُمْؕ اِنَّ اللّٰهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
যদি তারা তাওবা করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয়, তবে তাদের পথ ছেড়ে দেবে; নিশ্চয় আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা তাওবা- ৫)
সালাত মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি করে :
فَاِنْ تَابُوْا وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ فَاِخْوَانُكُمْ فِى الدِّيْنِ
অতঃপর তারা যদি তাওবা করে, সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয়, তবে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই।
(সূরা তাওবা- ১১)
সালাত আদায়কারীরা একে অপরের বন্ধু :
اِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللهُ وَرَسُوْلُهٗ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوا الَّذِيْنَ يُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُوْنَ
তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুমিনগণ; যারা বিনীত হয়ে সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয়। (সূরা মায়েদা- ৫৫)
সালাত আদায়কারী মুমিনরাই আল্লাহর রহমত লাভ করে :
وَالْمُؤْمِنُوْنَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍ يَّاْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَيُطِيْعُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗؕ اُولٰٓئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللهُؕ اِنَّ اللهَ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
মুমিন নারী-পুরুষ একে অপরের বন্ধু, এরা সৎকাজের নির্দেশ দেয় এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে; অচিরেই আল্লাহ তাদের প্রতি দয়া করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা- ৭১)
সালাত আদায়কারীরাই সফলতা লাভ করবে :
قَدْ اَفْلَحَ مَنْ تَزَكّٰى ‐ - وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهٖ فَصَلّٰى
নিশ্চয় সফলতা লাভ করেছে সে, যে নিজেকে পবিত্র করে নিয়েছে এবং তার মালিকের নাম স্মরণ করেছে, অতঃপর সালাত আদায় করেছে। (সূরা আ‘লা- ১৪, ১৫)
قَدْ اَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ ‐ - الَّذِيْنَ هُمْ فِيْ صَلَاتِهِمْ خَاشِعُوْنَ
নিশ্চয় ঐ সকল মুমিনরা সফলকাম হয়েছে, যারা বিনয়ের সাথে সালাত আদায় করে। (সূরা মু’মিনূন- ১, ২)
সালাত পাপকে মুছে দেয় :
وَاَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِّنَ اللَّيْلِؕ اِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِؕ ذٰلِكَ ذِكْرٰى لِلذَّاكِرِيْنَ
তুমি সালাত কায়েম করো দিবসের দু’প্রান্তভাগে ও রজনীর প্রথমাংশে। সৎকর্ম অবশ্যই অসৎকর্মকে মিটিয়ে দেয়। যারা উপদেশ গ্রহণ করে, এটা তাদের জন্য এক উপদেশ। (সূরা হুদ- ১১৪)
ব্যাখ্যা : যেসব অসৎকাজ দুনিয়ায় ছড়িয়ে আছে এবং সত্যের দাওয়াতের বিরোধিতায় ব্যবহৃত হচ্ছে- এসব দূর করার আসল পদ্ধতি হচ্ছে, নিজেদের সৎকাজের সাহায্যে অসৎকাজকে প্রতিহত করা। আর মানুষের সৎ হওয়ার সর্বোত্তম মাধ্যম হচ্ছে সালাত। সালাত আল্লাহর স্মরণকে তাজা করতে থাকে। এর শক্তির সাহায্যে হকপন্থিরা কেবল অসৎকাজের মুকাবিলা করতে পারবে তা নয় বরং দুনিয়ায় কার্যত সৎকাজ ও কল্যাণের ব্যবস্থাও কায়েম করতে পারবে। সালাত এমন একটি ইবাদাত, যা মানুষের মধ্যে আল্লাহর ভয়, সততা, সৎকর্মশীলতা ও পবিত্রতার আবেগ এবং আল্লাহর বিধানের আনুগত্যের ভাবধারা সৃষ্টি করে। সেই সাথে তাকে ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখে। মানুষের মধ্যে এ বিষয়গুলো না থাকলে সে কখনো আল্লাহর বিধানের আনুগত্য করার ক্ষেত্রে অবিচল নিষ্ঠার পরিচয় দিতে পারে না।
সালাত নৈতিক শক্তি অর্জনে সহায়ক হয় :
اُتْلُ مَاۤ اُوْحِيَ اِلَيْكَ مِنَ الْكِتَابِ وَاَقِمِ الصَّلَاةَ
তোমার কাছে ওহীর মাধ্যমে যে কিতাব পাঠানো হয়েছে তা পাঠ করো এবং সালাত কায়েম করো। (সূরা আনকাবূত- ৪৫)
ব্যাখ্যা : প্রচন্ড বাধা মুকাবিলা করার জন্য বস্তুগত শক্তির চেয়েও বেশি প্রয়োজন নৈতিক শক্তির। এ নৈতিক শক্তির বিকাশ সাধনের জন্য প্রথমত দু’টি ব্যবস্থা। একটি হচ্ছে, কুরআন তিলাওয়াত করা এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে, সালাত প্রতিষ্ঠা করা। সালাত প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে এমন একটি ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে দুষ্কৃতি থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। বিকৃত কোন সমাজের মধ্যে যদি এমন কোন আন্দোলন সৃষ্টি হয়, যার সাথে জড়িত হওয়ার সাথে সাথেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ নৈতিক দিক দিয়ে পরিবর্তিত হয়ে যায় এবং তাদের চরিত্র সংশোধিত হয়ে যায়, তখন অবশ্যই তা প্রভাব বিস্তার করবে। জাহেলিয়াতের যেসব দুষ্কৃতি শত শত বছর থেকে চলে আসছিল, তাকে প্রতিষ্ঠিত রাখার জন্য যারা সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের মুকাবিলা করার জন্য কুরআন মুসলিমদের বস্তুগত শক্তি সংগ্রহ করার পরিবর্তে সালাত কায়েম করার নির্দেশ দিয়েছে। এর ফলে তারা এমন চারিত্রিক শক্তির অধিকারী হবে, যার ফলে মানুষের মন জয় করা সম্ভব হবে এবং আল্লাহর সাহায্যে শত্রুকে পরাজিত করা যাবে।
সালাত মানুষকে পাপকাজ থেকে বিরত রাখে :
اِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهٰى عَنِ الْفَحْشَآءِ وَالْمُنْكَرِ
নিশ্চয় সালাত মানুষকে অশ্লীল ও গর্হিত কাজ থেকে দূরে রাখে। (সূরা আনকাবূত- ৪৫)
ব্যাখ্যা : সালাতের একটি অনিবার্য গুণ হলো, তা মানুষকে অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে। যে ব্যক্তিই সালাতের ব্যাপারে সামান্য চিন্তা করবে সে-ই স্বীকার করবে যে, মানুষকে খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য সালাত যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। যখন মানুষ শরীর ও পোশাকের পবিত্রতা অর্জন করে সালাতের আরকান-আহকামসহ দিনে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত প্রতিষ্ঠা করে, তখন তার অন্তরে প্রশান্তি সঞ্চারিত হয় এবং তার মধ্যে নিজ দায়িত্বের প্রতি অনুভূতি সৃষ্টি হয়। আর তার ঈমান প্রজ্জ্বলিত হয়, যার মাধ্যমে সে বুঝতে পারে যে তার সাথে কেউ থাক বা না থাক, গোপনে ও প্রকাশ্যে সকল অবস্থায় তাকে এক আল্লাহর আইন মেনে চলতেই হবে। নিয়মিত সুন্দরভাবে সালাত আদায় করলে শরীর ও মন পবিত্র থাকে, তখন ভালো কাজের দিকে মন আকৃষ্ট হয় এবং খারাপ কাজের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হয়। আর সালাতের দাবিও এটাই। দুনিয়ায় দ্বিতীয় এমন কোন অনুশীলন পদ্ধতি নেই, যা মানুষকে দুষ্কৃতি থেকে বিরত রাখার ক্ষেত্রে সালাতের চেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে।
তবে প্রশ্ন থেকে যায়, অনেক মানুষ নিয়মিত সালাত আদায় করার পরও খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকতে পারে না কেন? জবাবে বলা যায়, এটা নির্ভর করে তার আন্তরিকতা ও প্রচেষ্টার উপর। সে যদি এ থেকে উপকৃত হওয়ার সংকল্প করে এবং এজন্য প্রচেষ্টা চালায়, তাহলে সালাতের সংশোধনমূলক প্রভাব তার উপর পড়বেই। দুনিয়ার কোন সংশোধন ঐ ব্যক্তির উপর কার্যকর হতে পারে না, যে তার প্রভাব গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয় অথবা জেনে বুঝে তার প্রভাবকে দূরে সরিয়ে দেয়। যার সালাত তাকে অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে না, তার সালাতই ফলপ্রসূ হয় না।
সালাত মানুষের গোটা জীবনকে ইসলামের দিকে ঘুরিয়ে দেয় :
قَالُوْا يَا شُعَيْبُ اَصَلَاتُكَ تَاْمُرُكَ اَنْ نَّتْرُكَ مَا يَعْبُدُ اٰبَآؤُنَاۤ اَوْ اَنْ نَّفْعَلَ فِۤيْ اَمْوَالِنَا مَا نَشَآءُۚ اِنَّكَ لَاَنْتَ الْحَلِيْمُ الرَّشِيْدُ
তারা বলল, হে শুয়াইব! তোমার সালাত কি তোমাকে এ নির্দেশ দেয় যে, আমাদের পিতৃপুরুষরা যার ইবাদাত করত আমাদেরকে তা বর্জন করতে হবে, অথবা আমরা আমাদের ধনসম্পদ সম্পর্কে যা করি তাও (বর্জন করতে হবে)? তুমি তো অবশ্যই সহিষ্ণু ও ভালো মানুষ। (সূরা হুদ- ৮৭)
ব্যাখ্যা : সালাতের বৈশিষ্ট্য হলো, সালাত মানুষের গোটা জীবনকে ইসলামের দিকে ঘুরিয়ে দেয় এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুম পালনে অভ্যস্ত করে। এটি যার মধ্যে সৃষ্টি হয় সে কেবল নিজের সৎ ও পরিচ্ছন্ন কর্মধারার উপরই সন্তুষ্ট থাকে না বরং অন্যদেরকেও সংশোধন করতে চেষ্টা করে। ফলে সে শরীয়াত বিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সমালোচনা না করে স্থির থাকতে পারে না। আল্লাহর আনুগত্য শুধুমাত্র ইসলামের একটি অংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা উচিত নয় বরং সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক তথা জীবনের সকল বিভাগেই হওয়া উচিত। কারণ দুনিয়ায় মানুষের কাছে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর মালিকানাধীন। আল্লাহর ইচ্ছার সীমা ভেদ করে স্বাধীনভাবে কোন একটি জিনিসও ব্যবহার করার অধিকার মানুষের নেই। যে সমাজ আল্লাহকে ভুলে গেছে এবং ফাসিকী কার্যকলাপের মধ্যে ডুবে আছে, তারা সালাত নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। যেহেতু সালাত দ্বীনদারীর সবচেয়ে সুস্পষ্ট চিহ্ন, তাই এ ধরনের লোকদের সমাজে সালাত ইবাদাতের পরিবর্তে রোগ হিসেবে গণ্য হয়। নিজেদের মধ্যে কাউকে সালাত আদায় করতে দেখলে সাথে সাথেই তাদের মনে এ অনুভূতি জাগে যে, এ ব্যক্তির উপর দ্বীনদারীর আক্রমণ ঘটেছে।
সালাত শরীয়াতের অন্যান্য হুকুম পালনে সাহায্য করে :
قَدْ اَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ ‐ اَلَّذِيْنَ هُمْ فِيْ صَلَاتِهِمْ خَاشِعُوْنَ ‐ وَالَّذِيْنَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُوْنَ ‐ وَالَّذِيْنَ هُمْ لِلزَّكَاةِ فَاعِلُوْنَ ‐ وَالَّذِيْنَ هُمْ لِفُرُوْجِهِمْ حَافِظُوْنَ ‐ اِلَّا عَلٰۤى اَزْوَاجِهِمْ اَوْ مَا مَلَكَتْ اَيْمَانُهُمْ فَاِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُوْمِيْنَ ‐ فَمَنِ ابْتَغٰى وَرَآءَ ذٰلِكَ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْعَادُوْنَ ‐ وَالَّذِيْنَ هُمْ لِاَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُوْنَ ‐ وَالَّذِيْنَ هُمْ عَلٰى صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُوْنَ
অবশ্যই মুমিনগণ সফলকাম হয়েছে, যারা নিজেদের সালাতে বিনয়ী, যারা অনর্থক কাজকর্ম হতে বিরত থাকে, যারা যাকাত দানে সক্রিয়, যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে, তবে নিজ স্ত্রী অথবা অধিকারভুক্ত দাসী ব্যতীত; এতে তারা নিন্দনীয় হবে না। তবে কেউ তাদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তারা সীমালঙ্ঘনকারী হিসেবে গণ্য হবে। আর যারা নিজেদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে এবং যারা নিজেদের সালাতে যত্নবান থাকে। (সূরা মু’মিনূন, ১-৯)
ব্যাখ্যা : এখানে আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের বেশ কয়েকটি গুণাবলি উল্লেখ করেছেন। এতে শুরুতেই এসেছে সালাতের কথা আবার শেষেও বলা হয়েছে সালাতের কথা। অনুরূপভাবে সূরা মা‘আরিজ এর ১৯ থেকে ৩৫ আয়াতেও একই ধারা লক্ষ্য করা যায়। এ থেকে অতি সহজেই এটা বুঝা যাচ্ছে যে, বান্দা যদি সঠিকভাবে সালাত কায়েম করতে পারে, তাহলে ইসলামের অন্যান্য বিধান পালন করা তার জন্য সহজ হয়ে যাবে।
পবিত্রতা অর্জন করতে হবে :
لَمَسْجِدٌ اُسِّسَ عَلَى التَّقْوٰى مِنْ اَوَّلِ يَوْمٍ اَحَقُّ اَنْ تَقُوْمَ فِيْهِ ؕ فِيهِ رِجَالٌ يُّحِبُّوْنَ اَنْ يَّتَطَهَّرُوْاؕ وَاللهُ يُحِبُّ الْمُطَّهِّرِيْنَ
যে মসজিদের ভিত্তি প্রথম দিন হতেই তাক্বওয়ার উপর স্থাপিত হয়েছে, সেটাই তোমার সালাতের জন্য অধিক উপযুক্ত। তথায় এমন লোক আছে, যারা পবিত্রতা অর্জন করতে ভালোবাসে; আর আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে পছন্দ করেন। (সূরা তাওবা- ১০৮)
সালাতের পূর্বে ওযু করতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا قُمْتُمْ اِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوْا وُجُوْهَكُمْ وَاَيْدِيَكُمْ اِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوْا بِرُءُوْسِكُمْ وَاَرْجُلَكُمْ اِلَى الْكَعْبَيْنِ
হে মুমিনগণ! যখন তোমরা সালাতের জন্য প্রস্তুত হবে তখন তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল ও হস্তদ্বয় কনুইসহ ধুয়ে নেবে। তারপর তোমাদের মাথা মাসাহ করবে এবং পা টাখনু পর্যন্ত ধুয়ে নেবে। (সূরা মায়েদা- ৬)
শরীর নাপাক থাকলে গোসল করতে হবে :
وَاِنْ كُنْتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوْا
যদি তোমরা অপবিত্র থাক, তবে বিশেষভাবে পবিত্র হবে (গোসল করবে)। (সূরা মায়েদা- ৬)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَقْرَبُوا الصَّلَاةَ وَاَنْتُمْ سُكَارٰى حَتّٰى تَعْلَمُوْا مَا تَقُوْلُوْنَ وَلَا جُنُبًا اِلَّا عَابِرِيْ سَبِيْلٍ حَتّٰى تَغْتَسِلُوْا
হে মুমিনগণ! তোমরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সালাতের নিকটবর্তী হয়ো না, যতক্ষণ না তোমরা যা বল তা বুঝতে পার এবং অপবিত্র অবস্থাতেও সালাতের নিকটবর্তী হয়ো না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা গোসল করে নেবে; তবে পথচারী (সফরকালীন) অবস্থা ব্যতীত। (সূরা নিসা- ৪৩)
ব্যাখ্যা : جُنُبٌ (জুনুব) এর অর্থ হচ্ছে, দূর হয়ে যাওয়া, দূরত্ব ও সম্পর্কহীনতা। এ থেকে ‘আজনবী’ (অপরিচিত) শব্দটি বের হয়েছে। আর শরীয়াতের পরিভাষায় জুনুব বা জানাবাত অর্থ হচ্ছে, যৌন চাহিদা পূর্ণ করার এবং স্বপ্নের মধ্যে বীর্যপাত হওয়ার ফলে নাপাকী সৃষ্টি হওয়া। আর এর ফলে মানুষ পবিত্রতা থেকে দূরে তথা অপবিত্র হয়ে পড়ে।
পানি ব্যবহারে অক্ষম হলে তায়াম্মুম করতে হবে :
وَاِنْ كُنْتُمْ مَّرْضٰۤى اَوْ عَلٰى سَفَرٍ اَوْ جَآءَ اَحَدٌ مِّنْكُمْ مِّنَ الْغَآئِطِ اَوْ لَامَسْتُمُ النِّسَآءَ فَلَمْ تَجِدُوْا مَآءً فَتَيَمَّمُوْا صَعِيْدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوْا بِوُجُوْهِكُمْ وَاَيْدِيْكُمْؕ اِنَّ اللهَ كَانَ عَفُوًّا غَفُوْرًا
যদি তোমরা অসুস্থ হয়ে যাও অথবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ শৌচগার হতে আসো অথবা তোমরা নারী-সম্ভোগ কর এবং পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটির দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও এবং মুখমন্ডল ও হাত মাসাহ করো, নিশ্চয় আল্লাহ পাপ মোচনকারী এবং ক্ষমাশীল। (সূরা নিসা- ৪৩)
وَاِنْ كُنْتُمْ مَّرْضٰۤى اَوْ عَلٰى سَفَرٍ اَوْ جَآءَ اَحَدٌ مِّنْكُمْ مِّنَ الْغَآئِطِ اَوْ لَامَسْتُمُ النِّسَآءَ فَلَمْ تَجِدُوْا مَآءً فَتَيَمَّمُوْا صَعِيْدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوْا بِوُجُوْهِكُمْ وَاَيْدِيْكُمْ مِّنْهُؕ مَا يُرِيْدُ اللهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُمْ مِّنْ حَرَجٍ وَّلٰكِنْ يُّرِيْدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهٗ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
যদি তোমরা অসুস্থ হয়ে যাও অথবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ শৌচগার হতে আসো অথবা তোমরা স্ত্রীর সাথে মিলিত হও এবং পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও এবং তা দ্বারা তোমাদের মুখমন্ডল ও হস্তদ্বয় মাসাহ করে নাও। আল্লাহ তোমাদেরকে কষ্ট দিতে চান না; বরং তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান ও তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করতে চান; যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর। (সূরা মায়েদা- ৬)
ব্যাখ্যা : এ নির্দেশটির বিস্তারিত অবস্থা হচ্ছে, যদি কোন ব্যক্তি অযুবিহীন অবস্থায় থাকে অথবা তার গোসলের প্রয়োজন হয় আর এ অবস্থায় সে পানি না পায়, তাহলে সে তায়াম্মুম করে সালাত আদায় করতে পারবে। যদি সে অসুস্থ হয় এবং গোসল বা অযু করলে তার জন্য ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তাহলে পানি থাকা সত্ত্বেও সে তায়াম্মুমের অনুমতির সুযোগ গ্রহণ করতে পারে। তায়াম্মুম অর্থ হচ্ছে, ইচ্ছা বা সংকল্প করা। অর্থাৎ যদি পানি না পাওয়া যায় অথবা পাওয়া গেলেও তা ব্যবহার করা সম্ভব না হয়, তাহলে পবিত্র মাটি ব্যবহার করার সংকল্প করা।
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আসমা (রাঃ) থেকে একটি গলার হার ধার নিয়েছিলেন। অতঃপর তা হারিয়ে গেল। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর সাহাবাদের মধ্যে কিছু লোককে খোঁজতে পাঠালেন। এমতাবস্থায় তাদের সালাতের সময় হয়ে গেল। তখন তারা ওযূ ছাড়াই সালাত আদায় করলেন। এরপর তারা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে এসে এ ঘটনা জানালেন। তখন তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল হয়। এ সময় উসাইদ ইবনে হুযাইর (রাঃ) বললেন, আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে (আয়েশা) উত্তম প্রতিদান দান করুন। আল্লাহর কসম! আপনার উপর যখনই কোন সমস্যা এসেছে তখনই আল্লাহ তা‘আলা এর সমাধানের পথ বের করে দিয়েছেন এবং মুসলিমদের জন্য তাতে বরকত রেখেছেন। (সহীহ মুসলিম, হা/৭০৩)
সালাতের সময় উত্তম পোশাক পরিধান করার নির্দেশ :
يَا بَنِيْۤ اٰدَمَ خُذُوْا زِيْنَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ وَّكُلُوْا وَاشْرَبُوْا وَلَا تُسْرِفُوْاۚ اِنَّهٗ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِيْنَ
হে বনী আদম! তোমরা প্রত্যেক সালাতের সময় সুন্দর পোশাক পরিধান করো; আর তোমরা আহার করো এবং পান করো, তবে অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না। (সূরা আ‘রাফ- ৩১)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর ইবাদাত করার জন্য দাঁড়ানোর সময় কেবল লজ্জাস্থান ঢাকাই যথেষ্ট হবে না বরং সামর্থ্য অনুযায়ী নিজের পূর্ণ পোশাক পরে নিতে হবে, যার মাধ্যমে লজ্জাস্থান আবৃত হওয়ার সাথে সাথে সৌন্দর্যের প্রকাশও ঘটবে এবং তাকে অন্তত এতটুকু উন্নত মানে পৌঁছতে হবে, যার ফলে তার পোশাক তাক্বওয়ার পোশাকে পরিণত হয়। অর্থাৎ তার পোশাক দিয়ে সে লজ্জাস্থান ঢেকে ফেলবে। সাজসজ্জার মাধ্যমে শরীরের শোভা বর্ধন করার ক্ষেত্রে সীমা অতিক্রম করবে না; আবার ব্যক্তির মর্যাদার চেয়ে নিম্নমানেরও হবে না। তার মধ্যে গর্ব ও অহংকারের কোন প্রদর্শনী থাকবে না; আবার এমন কোন মানসিক রোগের প্রতিফলনও থাকবে না, যার আক্রমণের ফলে পুরুষ নারীসুলভ আচরণ করতে থাকে এবং নারী পুরুষসুলভ আচরণ করতে থাকে। যেসকল লোক নিজেদেরকে পুরোপুরি আল্লাহর পথনির্দেশনার আওতাধীন করে দেয়নি, তাদের পক্ষে পোশাকের ব্যাপারে এ কাঙ্ক্ষিত মানে উপনীত হওয়া সম্ভব হয় না।
নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করতে হবে :
فَاِذَا اطْمَاْنَنْتُمْ فَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَؕ اِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ كِتَابًا مَّوْقُوْتًا
যখন তোমরা পুরোপুরিভাবে স্বস্তিবোধ করবে, তখনই সালাত আদায় করে নেবে। নিশ্চয় সালাত মুমিনদের উপর সুনির্দিষ্ট সময়ের সাথেই ফরয করা হয়েছে। (সূরা নিসা- ১০৩)
কা‘বার দিকে মুখ করে সালাত আদায় করতে হবে :
وَمِنْ حَيْثُ خَرَجْتَ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِؕ وَاِنَّهٗ لَلْحَقُّ مِنْ رَّبِّكَؕ وَمَا اللهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ
তুমি যেখান থেকেই বের হও না কেন, তোমার মুখ মসজিদে হারামের দিকে ফিরিয়ে নাও। নিশ্চয় এটাই তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে সত্য, আর তোমরা যা করছ সে বিষয়ে আল্লাহ অমনোযোগী নন। (সূরা বাক্বারা- ১৪৯)
বিনয়ের সাথে আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে :
حَافِظُوْا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطٰى وَقُوْمُوْا لِلّٰهِ قَانِتِيْنَ
তোমরা সালাতসমূহের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষ করে (যত্নবান হও) মধ্যবর্তী সালাতের প্রতি। আর তোমরা আল্লাহর সামনে বিনীতভাবে দন্ডায়মান হও। (সূরা বাক্বারা- ২৩৮)
ব্যাখ্যা : আবু আমর শায়বানী (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যায়েদ ইবনে আরক্বাম (রাঃ) আমাকে বলেছেন, নবী ﷺ এর যুগে আমরা সালাতের মধ্যে কথা বলাবলি করতাম। এমনকি আমাদের যে কেউ অপরের সাথে তার প্রয়োজন সম্পর্কেও কথাবার্তা বলতো। অবশেষে যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলো, ‘‘তোমরা তোমাদের সালাতসমূহের হেফাজত করো’’ তখন আমরা নীরবে সালাত আদায় করতে আদেশপ্রাপ্ত হলাম। (সহীহ বুখারী, হা/১২০০, সহীহ মুসলিম হা/১০৯০)
قَدْ اَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ هُمْ فِيْ صَلَاتِهِمْ خَاشِعُوْنَ
অবশ্যই সফলকাম হয়েছে মুমিনগণ, যারা নিজেদের সালাতে বিনয়-নম্রতা অবলম্বন করে। (সূরা মু’মিনূন- ১, ২)
ব্যাখ্যা : خُشُوْعٌ (খুশূ) এর আসল অর্থ হচ্ছে, কারো সামনে ঝুঁকে পড়া, বিনয় ও নম্রতা প্রকাশ করা। এ অবস্থাটা মনের সাথে এবং দেহের বাহ্যিক অবস্থার সাথেও সম্পর্ক রাখে। মনের খূশূ হচ্ছে, মানুষ কারো ভীতি, শ্রেষ্ঠত্ব, প্রতাপ ও পরাক্রমের দরুন সন্ত্রস্ত থাকবে। আর দেহের খূশূ হচ্ছে, যখন সে তাঁর সামনে যাবে তখন মাথা নত হয়ে যাবে, দৃষ্টি নত হবে, কণ্ঠস্বর নিম্নগামী হবে এবং কোন জবরদস্ত প্রতাপশালী ব্যক্তির সামনে উপস্থিত হলে মানুষের মধ্যে যে স্বাভাবিক ভীতির সঞ্চার হয় তার চিহ্ন তার মধ্যে ফুটে উঠবে। এটাই সালাতের আসল প্রাণ।
আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে সালাত শুরু করতে হবে :
قَدْ اَفْلَحَ مَنْ تَزَكّٰى ‐ - وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهٖ فَصَلّٰى
নিশ্চয় সে সাফল্য লাভ করে, যে পবিত্রতা অবলম্বন করে এবং তাঁর প্রতিপালকের নাম স্মরণ করে ও সালাত কায়েম করে। (সূরা আ‘লা- ১৪, ১৫)
সালাতের মধ্যে কুরআন তিলাওয়াত করা অপরিহার্য :
اَقِمِ الصَّلَاةَ لِدُلُوْكِ الشَّمْسِ اِلٰى غَسَقِ اللَّيْلِ وَقُرْاٰنَ الْفَجْرِ ؕ اِنَّ قُرْاٰنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُوْدًا
সূর্য হেলে পড়ার পর হতে রাত্রির ঘন অন্ধকার হওয়া পর্যন্ত সালাত কায়েম করো এবং ফজরের (সালাতে) কুরআন পাঠ করো; নিশ্চয় ফজরের (সালাতের) কুরআন পাঠের সময় (ফেরেশতাগণ) উপস্থিত হয়। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৭৮)
ব্যাখ্যা : এখানে ফজরের কুরআন পাঠ দ্বারা ফজরের সালাত বুঝানো হয়েছে। ফজরের কুরআন পরিলক্ষিত হওয়ার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর ফেরেশতারা এর সাক্ষী হয়। যদিও ফেরেশতারা প্রত্যেক সালাত ও প্রত্যেক সৎকাজের সাক্ষী, তবুও যখন ফজরের সালাতের কুরআন পাঠে তাদের সাক্ষ্যের কথা বলা হয়েছে তখন এ থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, এ কাজটি বিশেষ গুরুত্বের অধিকারী। এ কারণেই নবী ﷺ ফজরের সালাতে দীর্ঘ সূরা পড়ার পদ্ধতি অবলম্বন করেন।
স্বাভাবিক আওয়াজে কুরআন পড়তে হবে :
وَلَا تَجْهَرْ بِصَلَاتِكَ وَلَا تُخَافِتْ بِهَا وَابْتَغِ بَيْنَ ذٰلِكَ سَبِيْلًا
(হে নবী) সালাতে তোমার স্বর উচ্চ করো না এবং অতিশয় ক্ষীণও করো না; বরং এ দু’য়ের মধ্যবর্তী পন্থা অবলম্বন করো। (সূরা বনী ইসরাঈল- ১১০)
ব্যাখ্যা : আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, মক্কায় যখন নবী ﷺ অথবা সাহাবীগণ সালাত আদায় করার সময় উচ্চকণ্ঠে কুরআন পাঠ করতেন, তখন কাফিররা শোরগোল শুরু করে দিত; অনেক সময় এক নাগাড়ে গালাগাল করতে থাকত। এজন্য আল্লাহর পক্ষ হতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, তোমরা কুরআনকে এমন উচ্চৈঃস্বরে পাঠ করো না, যাতে কাফিররা শুনে হৈচৈ করতে পারে। আবার এমন নীচু স্বরেও পাঠ করো না, যাতে তোমাদের নিজেদের সাথিরা শুনতে না পায়। কেবলমাত্র সংশ্লিষ্ট অবস্থার সাথে এ হুকুম সম্পৃক্ত ছিল। এরপর নবী ﷺ যখন মদিনায় হিজরত করলেন এবং মক্কার পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হয়ে একটি অনুকূল পরিবেশ পেলেন, তখন আর এ হুকুম কার্যকর থাকেনি। তবে হ্যাঁ, পরবর্তীতে মুসলিমরা যখনই মক্কার মতো অবস্থার সম্মুখীন হবে, তখনই তাদেরকে এ নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করা উচিত।
সালাতে যা পড়া হয় তা বুঝার চেষ্টা করতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَقْرَبُوا الصَّلَاةَ وَاَنْتُمْ سُكَارٰى حَتّٰى تَعْلَمُوْا مَا تَقُوْلُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সালাতের নিকটবর্তী হয়ো না, যতক্ষণ না তোমরা যা বল তা বুঝতে পার। (সূরা নিসা- ৪৩)
জামা‘আতের সাথে সালাত আদায় করতে হবে :
وَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَ وَارْكَعُوْا مَعَ الرَّاكِعِيْنَ
তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো, যাকাত প্রদান করো এবং রুকূকারীদের সাথে রুকূ করো। (সূরা বাক্বারা- ৪৩)
মসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করা ঈমানের পরিচয় :
اِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللهِ مَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَاَقَامَ الصَّلَاةَ وَاٰتَى الزَّكَاةَ وَلَمْ يَخْشَ اِلَّا اللهَ ؕ فَعَسٰۤى اُولٰٓئِكَ اَنْ يَّكُوْنُوْا مِنَ الْمُهْتَدِيْنَ
তারাই তো আল্লাহর মসজিদ আবাদ করবে, যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান আনয়ন করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় করে না। অতএব আশা করা যায় যে, তারা সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা তাওবা- ১৮)
কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই সালাত আদায় করতে হবে :
قُلْ اِنَّ صَلَاتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ‐ - لَا شَرِيْكَ لَهۚٗ وَبِذٰلِكَ اُمِرْتُ وَاَنَاْ اَوَّلُ الْمُسْلِمِيْنَ
বলো, আমার সালাত, আমার ইবাদাত, আমার জীবন ও আমার মরণ জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি এজন্যই আদিষ্ট হয়েছি; আর আমিই প্রথম মুসলিম। (সূরা আন‘আম- ১৬২, ১৬৩)
لَمَسْجِدٌ اُسِّسَ عَلَى التَّقْوٰى مِنْ اَوَّلِ يَوْمٍ اَحَقُّ اَنْ تَقُوْمَ فِيْهِ ؕ فِيهِ رِجَالٌ يُّحِبُّوْنَ اَنْ يَّتَطَهَّرُوْاؕ وَاللهُ يُحِبُّ الْمُطَّهِّرِيْنَ
যে মসজিদের ভিত্তি প্রথম দিন হতেই তাক্বওয়ার উপর স্থাপিত হয়েছে, সেটাই তোমার সালাতের জন্য অধিক উপযুক্ত। তথায় এমন লোক আছে, যারা পবিত্রতা অর্জন করতে ভালোবাসে; আর আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে পছন্দ করেন। (সূরা তাওবা- ১০৮)
সালাতের পূর্বে ওযু করতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا قُمْتُمْ اِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوْا وُجُوْهَكُمْ وَاَيْدِيَكُمْ اِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوْا بِرُءُوْسِكُمْ وَاَرْجُلَكُمْ اِلَى الْكَعْبَيْنِ
হে মুমিনগণ! যখন তোমরা সালাতের জন্য প্রস্তুত হবে তখন তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল ও হস্তদ্বয় কনুইসহ ধুয়ে নেবে। তারপর তোমাদের মাথা মাসাহ করবে এবং পা টাখনু পর্যন্ত ধুয়ে নেবে। (সূরা মায়েদা- ৬)
শরীর নাপাক থাকলে গোসল করতে হবে :
وَاِنْ كُنْتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوْا
যদি তোমরা অপবিত্র থাক, তবে বিশেষভাবে পবিত্র হবে (গোসল করবে)। (সূরা মায়েদা- ৬)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَقْرَبُوا الصَّلَاةَ وَاَنْتُمْ سُكَارٰى حَتّٰى تَعْلَمُوْا مَا تَقُوْلُوْنَ وَلَا جُنُبًا اِلَّا عَابِرِيْ سَبِيْلٍ حَتّٰى تَغْتَسِلُوْا
হে মুমিনগণ! তোমরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সালাতের নিকটবর্তী হয়ো না, যতক্ষণ না তোমরা যা বল তা বুঝতে পার এবং অপবিত্র অবস্থাতেও সালাতের নিকটবর্তী হয়ো না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা গোসল করে নেবে; তবে পথচারী (সফরকালীন) অবস্থা ব্যতীত। (সূরা নিসা- ৪৩)
ব্যাখ্যা : جُنُبٌ (জুনুব) এর অর্থ হচ্ছে, দূর হয়ে যাওয়া, দূরত্ব ও সম্পর্কহীনতা। এ থেকে ‘আজনবী’ (অপরিচিত) শব্দটি বের হয়েছে। আর শরীয়াতের পরিভাষায় জুনুব বা জানাবাত অর্থ হচ্ছে, যৌন চাহিদা পূর্ণ করার এবং স্বপ্নের মধ্যে বীর্যপাত হওয়ার ফলে নাপাকী সৃষ্টি হওয়া। আর এর ফলে মানুষ পবিত্রতা থেকে দূরে তথা অপবিত্র হয়ে পড়ে।
পানি ব্যবহারে অক্ষম হলে তায়াম্মুম করতে হবে :
وَاِنْ كُنْتُمْ مَّرْضٰۤى اَوْ عَلٰى سَفَرٍ اَوْ جَآءَ اَحَدٌ مِّنْكُمْ مِّنَ الْغَآئِطِ اَوْ لَامَسْتُمُ النِّسَآءَ فَلَمْ تَجِدُوْا مَآءً فَتَيَمَّمُوْا صَعِيْدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوْا بِوُجُوْهِكُمْ وَاَيْدِيْكُمْؕ اِنَّ اللهَ كَانَ عَفُوًّا غَفُوْرًا
যদি তোমরা অসুস্থ হয়ে যাও অথবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ শৌচগার হতে আসো অথবা তোমরা নারী-সম্ভোগ কর এবং পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটির দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও এবং মুখমন্ডল ও হাত মাসাহ করো, নিশ্চয় আল্লাহ পাপ মোচনকারী এবং ক্ষমাশীল। (সূরা নিসা- ৪৩)
وَاِنْ كُنْتُمْ مَّرْضٰۤى اَوْ عَلٰى سَفَرٍ اَوْ جَآءَ اَحَدٌ مِّنْكُمْ مِّنَ الْغَآئِطِ اَوْ لَامَسْتُمُ النِّسَآءَ فَلَمْ تَجِدُوْا مَآءً فَتَيَمَّمُوْا صَعِيْدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوْا بِوُجُوْهِكُمْ وَاَيْدِيْكُمْ مِّنْهُؕ مَا يُرِيْدُ اللهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُمْ مِّنْ حَرَجٍ وَّلٰكِنْ يُّرِيْدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهٗ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
যদি তোমরা অসুস্থ হয়ে যাও অথবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ শৌচগার হতে আসো অথবা তোমরা স্ত্রীর সাথে মিলিত হও এবং পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও এবং তা দ্বারা তোমাদের মুখমন্ডল ও হস্তদ্বয় মাসাহ করে নাও। আল্লাহ তোমাদেরকে কষ্ট দিতে চান না; বরং তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান ও তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করতে চান; যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর। (সূরা মায়েদা- ৬)
ব্যাখ্যা : এ নির্দেশটির বিস্তারিত অবস্থা হচ্ছে, যদি কোন ব্যক্তি অযুবিহীন অবস্থায় থাকে অথবা তার গোসলের প্রয়োজন হয় আর এ অবস্থায় সে পানি না পায়, তাহলে সে তায়াম্মুম করে সালাত আদায় করতে পারবে। যদি সে অসুস্থ হয় এবং গোসল বা অযু করলে তার জন্য ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তাহলে পানি থাকা সত্ত্বেও সে তায়াম্মুমের অনুমতির সুযোগ গ্রহণ করতে পারে। তায়াম্মুম অর্থ হচ্ছে, ইচ্ছা বা সংকল্প করা। অর্থাৎ যদি পানি না পাওয়া যায় অথবা পাওয়া গেলেও তা ব্যবহার করা সম্ভব না হয়, তাহলে পবিত্র মাটি ব্যবহার করার সংকল্প করা।
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আসমা (রাঃ) থেকে একটি গলার হার ধার নিয়েছিলেন। অতঃপর তা হারিয়ে গেল। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর সাহাবাদের মধ্যে কিছু লোককে খোঁজতে পাঠালেন। এমতাবস্থায় তাদের সালাতের সময় হয়ে গেল। তখন তারা ওযূ ছাড়াই সালাত আদায় করলেন। এরপর তারা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে এসে এ ঘটনা জানালেন। তখন তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল হয়। এ সময় উসাইদ ইবনে হুযাইর (রাঃ) বললেন, আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে (আয়েশা) উত্তম প্রতিদান দান করুন। আল্লাহর কসম! আপনার উপর যখনই কোন সমস্যা এসেছে তখনই আল্লাহ তা‘আলা এর সমাধানের পথ বের করে দিয়েছেন এবং মুসলিমদের জন্য তাতে বরকত রেখেছেন। (সহীহ মুসলিম, হা/৭০৩)
সালাতের সময় উত্তম পোশাক পরিধান করার নির্দেশ :
يَا بَنِيْۤ اٰدَمَ خُذُوْا زِيْنَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ وَّكُلُوْا وَاشْرَبُوْا وَلَا تُسْرِفُوْاۚ اِنَّهٗ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِيْنَ
হে বনী আদম! তোমরা প্রত্যেক সালাতের সময় সুন্দর পোশাক পরিধান করো; আর তোমরা আহার করো এবং পান করো, তবে অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না। (সূরা আ‘রাফ- ৩১)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর ইবাদাত করার জন্য দাঁড়ানোর সময় কেবল লজ্জাস্থান ঢাকাই যথেষ্ট হবে না বরং সামর্থ্য অনুযায়ী নিজের পূর্ণ পোশাক পরে নিতে হবে, যার মাধ্যমে লজ্জাস্থান আবৃত হওয়ার সাথে সাথে সৌন্দর্যের প্রকাশও ঘটবে এবং তাকে অন্তত এতটুকু উন্নত মানে পৌঁছতে হবে, যার ফলে তার পোশাক তাক্বওয়ার পোশাকে পরিণত হয়। অর্থাৎ তার পোশাক দিয়ে সে লজ্জাস্থান ঢেকে ফেলবে। সাজসজ্জার মাধ্যমে শরীরের শোভা বর্ধন করার ক্ষেত্রে সীমা অতিক্রম করবে না; আবার ব্যক্তির মর্যাদার চেয়ে নিম্নমানেরও হবে না। তার মধ্যে গর্ব ও অহংকারের কোন প্রদর্শনী থাকবে না; আবার এমন কোন মানসিক রোগের প্রতিফলনও থাকবে না, যার আক্রমণের ফলে পুরুষ নারীসুলভ আচরণ করতে থাকে এবং নারী পুরুষসুলভ আচরণ করতে থাকে। যেসকল লোক নিজেদেরকে পুরোপুরি আল্লাহর পথনির্দেশনার আওতাধীন করে দেয়নি, তাদের পক্ষে পোশাকের ব্যাপারে এ কাঙ্ক্ষিত মানে উপনীত হওয়া সম্ভব হয় না।
নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করতে হবে :
فَاِذَا اطْمَاْنَنْتُمْ فَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَؕ اِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ كِتَابًا مَّوْقُوْتًا
যখন তোমরা পুরোপুরিভাবে স্বস্তিবোধ করবে, তখনই সালাত আদায় করে নেবে। নিশ্চয় সালাত মুমিনদের উপর সুনির্দিষ্ট সময়ের সাথেই ফরয করা হয়েছে। (সূরা নিসা- ১০৩)
কা‘বার দিকে মুখ করে সালাত আদায় করতে হবে :
وَمِنْ حَيْثُ خَرَجْتَ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِؕ وَاِنَّهٗ لَلْحَقُّ مِنْ رَّبِّكَؕ وَمَا اللهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ
তুমি যেখান থেকেই বের হও না কেন, তোমার মুখ মসজিদে হারামের দিকে ফিরিয়ে নাও। নিশ্চয় এটাই তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে সত্য, আর তোমরা যা করছ সে বিষয়ে আল্লাহ অমনোযোগী নন। (সূরা বাক্বারা- ১৪৯)
বিনয়ের সাথে আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে :
حَافِظُوْا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطٰى وَقُوْمُوْا لِلّٰهِ قَانِتِيْنَ
তোমরা সালাতসমূহের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষ করে (যত্নবান হও) মধ্যবর্তী সালাতের প্রতি। আর তোমরা আল্লাহর সামনে বিনীতভাবে দন্ডায়মান হও। (সূরা বাক্বারা- ২৩৮)
ব্যাখ্যা : আবু আমর শায়বানী (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যায়েদ ইবনে আরক্বাম (রাঃ) আমাকে বলেছেন, নবী ﷺ এর যুগে আমরা সালাতের মধ্যে কথা বলাবলি করতাম। এমনকি আমাদের যে কেউ অপরের সাথে তার প্রয়োজন সম্পর্কেও কথাবার্তা বলতো। অবশেষে যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলো, ‘‘তোমরা তোমাদের সালাতসমূহের হেফাজত করো’’ তখন আমরা নীরবে সালাত আদায় করতে আদেশপ্রাপ্ত হলাম। (সহীহ বুখারী, হা/১২০০, সহীহ মুসলিম হা/১০৯০)
قَدْ اَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ هُمْ فِيْ صَلَاتِهِمْ خَاشِعُوْنَ
অবশ্যই সফলকাম হয়েছে মুমিনগণ, যারা নিজেদের সালাতে বিনয়-নম্রতা অবলম্বন করে। (সূরা মু’মিনূন- ১, ২)
ব্যাখ্যা : خُشُوْعٌ (খুশূ) এর আসল অর্থ হচ্ছে, কারো সামনে ঝুঁকে পড়া, বিনয় ও নম্রতা প্রকাশ করা। এ অবস্থাটা মনের সাথে এবং দেহের বাহ্যিক অবস্থার সাথেও সম্পর্ক রাখে। মনের খূশূ হচ্ছে, মানুষ কারো ভীতি, শ্রেষ্ঠত্ব, প্রতাপ ও পরাক্রমের দরুন সন্ত্রস্ত থাকবে। আর দেহের খূশূ হচ্ছে, যখন সে তাঁর সামনে যাবে তখন মাথা নত হয়ে যাবে, দৃষ্টি নত হবে, কণ্ঠস্বর নিম্নগামী হবে এবং কোন জবরদস্ত প্রতাপশালী ব্যক্তির সামনে উপস্থিত হলে মানুষের মধ্যে যে স্বাভাবিক ভীতির সঞ্চার হয় তার চিহ্ন তার মধ্যে ফুটে উঠবে। এটাই সালাতের আসল প্রাণ।
আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে সালাত শুরু করতে হবে :
قَدْ اَفْلَحَ مَنْ تَزَكّٰى ‐ - وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهٖ فَصَلّٰى
নিশ্চয় সে সাফল্য লাভ করে, যে পবিত্রতা অবলম্বন করে এবং তাঁর প্রতিপালকের নাম স্মরণ করে ও সালাত কায়েম করে। (সূরা আ‘লা- ১৪, ১৫)
সালাতের মধ্যে কুরআন তিলাওয়াত করা অপরিহার্য :
اَقِمِ الصَّلَاةَ لِدُلُوْكِ الشَّمْسِ اِلٰى غَسَقِ اللَّيْلِ وَقُرْاٰنَ الْفَجْرِ ؕ اِنَّ قُرْاٰنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُوْدًا
সূর্য হেলে পড়ার পর হতে রাত্রির ঘন অন্ধকার হওয়া পর্যন্ত সালাত কায়েম করো এবং ফজরের (সালাতে) কুরআন পাঠ করো; নিশ্চয় ফজরের (সালাতের) কুরআন পাঠের সময় (ফেরেশতাগণ) উপস্থিত হয়। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৭৮)
ব্যাখ্যা : এখানে ফজরের কুরআন পাঠ দ্বারা ফজরের সালাত বুঝানো হয়েছে। ফজরের কুরআন পরিলক্ষিত হওয়ার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর ফেরেশতারা এর সাক্ষী হয়। যদিও ফেরেশতারা প্রত্যেক সালাত ও প্রত্যেক সৎকাজের সাক্ষী, তবুও যখন ফজরের সালাতের কুরআন পাঠে তাদের সাক্ষ্যের কথা বলা হয়েছে তখন এ থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, এ কাজটি বিশেষ গুরুত্বের অধিকারী। এ কারণেই নবী ﷺ ফজরের সালাতে দীর্ঘ সূরা পড়ার পদ্ধতি অবলম্বন করেন।
স্বাভাবিক আওয়াজে কুরআন পড়তে হবে :
وَلَا تَجْهَرْ بِصَلَاتِكَ وَلَا تُخَافِتْ بِهَا وَابْتَغِ بَيْنَ ذٰلِكَ سَبِيْلًا
(হে নবী) সালাতে তোমার স্বর উচ্চ করো না এবং অতিশয় ক্ষীণও করো না; বরং এ দু’য়ের মধ্যবর্তী পন্থা অবলম্বন করো। (সূরা বনী ইসরাঈল- ১১০)
ব্যাখ্যা : আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, মক্কায় যখন নবী ﷺ অথবা সাহাবীগণ সালাত আদায় করার সময় উচ্চকণ্ঠে কুরআন পাঠ করতেন, তখন কাফিররা শোরগোল শুরু করে দিত; অনেক সময় এক নাগাড়ে গালাগাল করতে থাকত। এজন্য আল্লাহর পক্ষ হতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, তোমরা কুরআনকে এমন উচ্চৈঃস্বরে পাঠ করো না, যাতে কাফিররা শুনে হৈচৈ করতে পারে। আবার এমন নীচু স্বরেও পাঠ করো না, যাতে তোমাদের নিজেদের সাথিরা শুনতে না পায়। কেবলমাত্র সংশ্লিষ্ট অবস্থার সাথে এ হুকুম সম্পৃক্ত ছিল। এরপর নবী ﷺ যখন মদিনায় হিজরত করলেন এবং মক্কার পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হয়ে একটি অনুকূল পরিবেশ পেলেন, তখন আর এ হুকুম কার্যকর থাকেনি। তবে হ্যাঁ, পরবর্তীতে মুসলিমরা যখনই মক্কার মতো অবস্থার সম্মুখীন হবে, তখনই তাদেরকে এ নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করা উচিত।
সালাতে যা পড়া হয় তা বুঝার চেষ্টা করতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَقْرَبُوا الصَّلَاةَ وَاَنْتُمْ سُكَارٰى حَتّٰى تَعْلَمُوْا مَا تَقُوْلُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সালাতের নিকটবর্তী হয়ো না, যতক্ষণ না তোমরা যা বল তা বুঝতে পার। (সূরা নিসা- ৪৩)
জামা‘আতের সাথে সালাত আদায় করতে হবে :
وَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَ وَارْكَعُوْا مَعَ الرَّاكِعِيْنَ
তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো, যাকাত প্রদান করো এবং রুকূকারীদের সাথে রুকূ করো। (সূরা বাক্বারা- ৪৩)
মসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করা ঈমানের পরিচয় :
اِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللهِ مَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَاَقَامَ الصَّلَاةَ وَاٰتَى الزَّكَاةَ وَلَمْ يَخْشَ اِلَّا اللهَ ؕ فَعَسٰۤى اُولٰٓئِكَ اَنْ يَّكُوْنُوْا مِنَ الْمُهْتَدِيْنَ
তারাই তো আল্লাহর মসজিদ আবাদ করবে, যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান আনয়ন করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় করে না। অতএব আশা করা যায় যে, তারা সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা তাওবা- ১৮)
কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই সালাত আদায় করতে হবে :
قُلْ اِنَّ صَلَاتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ‐ - لَا شَرِيْكَ لَهۚٗ وَبِذٰلِكَ اُمِرْتُ وَاَنَاْ اَوَّلُ الْمُسْلِمِيْنَ
বলো, আমার সালাত, আমার ইবাদাত, আমার জীবন ও আমার মরণ জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি এজন্যই আদিষ্ট হয়েছি; আর আমিই প্রথম মুসলিম। (সূরা আন‘আম- ১৬২, ১৬৩)
সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে পড়ার পর যুহরের সালাতের সময় হয় :
اَقِمِ الصَّلَاةَ لِدُلُوْكِ الشَّمْسِ اِلٰى غَسَقِ اللَّيْلِ
সূর্য হেলে পড়ার পর হতে রাত্রির ঘন অন্ধকার পর্যন্ত সালাত কায়েম করবে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৭৮)
পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময় সম্পর্কে কুরআনের বর্ণনা :
فَاصْبِرْ عَلٰى مَا يَقُوْلُوْنَ وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوْعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوْبِهَاۚ وَمِنْ اٰنَآءِ اللَّيْلِ فَسَبِّحْ وَاَطْرَافَ النَّهَارِ لَعَلَّكَ تَرْضٰى
হে নবী! তারা যা বলুক না কেন, সে বিষয়ে ধৈর্যধারণ করো এবং সূর্যোদয়ের পূর্বে, সূর্যাস্তের পূর্বে ও রাত্রিকালে প্রশংসার সাথে তোমার প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো। অতঃপর তোমরা পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো দিবসের প্রান্তসমূহেও, যাতে তুমি সন্তুষ্ট হতে পার। (সূরা ত্বা-হা- ১৩০)
فَسُبْحَانَ اللهِ حِيْنَ تُمْسُوْنَ وَحِيْنَ تُصْبِحُوْنَ ‐ وَلَهُ الْحَمْدُ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَعَشِيًّا وَّحِيْنَ تُظْهِرُوْنَ
অতঃপর তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা ও গুণগান ঘোষণা করো- সন্ধ্যায় ও প্রত্যুষে এবং অপরাহ্নে ও যোহরের সময়েও; আর আসমানে ও জমিনে সকল প্রশংসা তো তাঁরই। (সূরা রূম- ১৭, ১৮)
وَاَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِّنَ اللَّيْلِ
তুমি সালাত কায়েম করো দিবসের দু’প্রান্তভাগে ও রজনীর প্রথমাংশে। (সূরা হুদ- ১১৪)
اَقِمِ الصَّلَاةَ لِدُلُوْكِ الشَّمْسِ اِلٰى غَسَقِ اللَّيْلِ
সূর্য হেলে পড়ার পর হতে রাত্রির ঘন অন্ধকার পর্যন্ত সালাত কায়েম করবে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৭৮)
পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময় সম্পর্কে কুরআনের বর্ণনা :
فَاصْبِرْ عَلٰى مَا يَقُوْلُوْنَ وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوْعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوْبِهَاۚ وَمِنْ اٰنَآءِ اللَّيْلِ فَسَبِّحْ وَاَطْرَافَ النَّهَارِ لَعَلَّكَ تَرْضٰى
হে নবী! তারা যা বলুক না কেন, সে বিষয়ে ধৈর্যধারণ করো এবং সূর্যোদয়ের পূর্বে, সূর্যাস্তের পূর্বে ও রাত্রিকালে প্রশংসার সাথে তোমার প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো। অতঃপর তোমরা পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো দিবসের প্রান্তসমূহেও, যাতে তুমি সন্তুষ্ট হতে পার। (সূরা ত্বা-হা- ১৩০)
فَسُبْحَانَ اللهِ حِيْنَ تُمْسُوْنَ وَحِيْنَ تُصْبِحُوْنَ ‐ وَلَهُ الْحَمْدُ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَعَشِيًّا وَّحِيْنَ تُظْهِرُوْنَ
অতঃপর তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা ও গুণগান ঘোষণা করো- সন্ধ্যায় ও প্রত্যুষে এবং অপরাহ্নে ও যোহরের সময়েও; আর আসমানে ও জমিনে সকল প্রশংসা তো তাঁরই। (সূরা রূম- ১৭, ১৮)
وَاَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِّنَ اللَّيْلِ
তুমি সালাত কায়েম করো দিবসের দু’প্রান্তভাগে ও রজনীর প্রথমাংশে। (সূরা হুদ- ১১৪)
মসজিদ আল্লাহর ঘর :
وَاَنَّ الْمَسَاجِدَ لِلّٰهِ ۚ فَلَا تَدْعُوْا مَعَ اللهِ اَحَدًا
নিশ্চয় মসজিদসমূহ আল্লাহর (উদ্দেশ্যে নির্মিত)। সুতরাং তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে আহবান করো না। (সূরা জিন- ১৮)
প্রথম মসজিদ হলো কা‘বাঘর :
اِنَّ اَوَّلَ بَيْتٍ وُّضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِيْ بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَّهُدًى لِّلْعَالَمِيْنَ
নিশ্চয় মানুষের জন্য সর্বপ্রথম নির্মিত ঘর মক্কায় অবস্থিত, যা বরকতময় এবং বিশ্ববাসীর জন্য পথপ্রদর্শকস্বরূপ। (সূরা আলে ইমরান- ৯৬)
হিজরতের পর প্রথম মসজিদ হলো কুবা :
لَا تَقُمْ فِيْهِ اَبَدًاؕ لَمَسْجِدٌ اُسِّسَ عَلَى التَّقْوٰى مِنْ اَوَّلِ يَوْمٍ اَحَقُّ اَنْ تَقُوْمَ فِيْهِ
তুমি কখনো (ইবাদাতের উদ্দেশ্যে) সেখানে দাঁড়াবে না। তোমার তো দাঁড়ানো উচিত সেখানে (ঐ মসজিদে) যা প্রথম দিন থেকেই তাক্বওয়ার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। (সূরা তাওবা- ১০৮)
কা‘বাঘর ধ্বংসের ষড়যন্ত্রকারীদেরকে আল্লাহ ধ্বংস করেছেন :
اَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِاَصْحَابِ الْفِيْلِ ‐ اَلَمْ يَجْعَلْ كَيْدَهُمْ فِيْ تَضْلِيْلٍ ‐ وَاَرْسَلَ عَلَيْهِمْ طَيْرًا اَبَابِيْلَ ‐ تَرْمِيْهِمْ بِحِجَارَةٍ مِّنْ سِجِّيْلٍ ‐ فَجَعَلَهُمْ كَعَصْفٍ مَّاْكُوْلٍ
তুমি কি দেখনি, তোমার প্রতিপালক (কা‘বা ধ্বংসের জন্য আগত) হাতিওয়ালাদের সাথে কেমন ব্যবহার করেছেন? তিনি কি (সে সময়) তাদের যাবতীয় ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেননি? তিনি তাদের উপর ঝাঁকে-ঝাঁকে পাখী পাঠিয়েছিলেন। এ পাখীগুলো এ সুসজ্জিত বাহিনীর উপর পাথরের টুকরো নিক্ষেপ করেছিল। অতঃপর তিনি তাদেরকে জন্তু-জানোয়ারের চর্বিত ঘাস-পাতার মতো করে দিয়েছিলেন। (সূরা ফীল)
মসজিদ ইবাদাতের স্থান :
فِيْ بُيُوْتٍ اَذِنَ اللهُ اَنْ تُرْفَعَ وَيُذْكَرَ فِيْهَا اسْمُهٗ يُسَبِّحُ لَهٗ فِيْهَا بِالْغُدُوِّ وَالْاٰصَالِ
(এসব ব্যক্তিদেরকে পাওয়া যাবে) সেসব ঘরসমূহে, যার মধ্যে আল্লাহর সম্মান ও মর্যাদা সমুন্নত করতে এবং তাতে তাঁর নাম স্মরণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আর যাতে সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করা হয়। (সূরা নূর- ৩৬)
মসজিদে ই‘তিকাফের বিধান :
وَلَا تُبَاشِرُوْهُنَّ وَاَنْتُمْ عَاكِفُوْنَ فِى الْمَسَاجِدِ
আর তোমরা মসজিদে ই‘তিকাফ করা অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে মিলন করো না। (সূরা বাক্বারা- ১৮৭)
মসজিদে যাওয়ার সময় উত্তম পোশাক পরিধান করার নির্দেশ :
يَا بَنِيْۤ اٰدَمَ خُذُوْا زِيْنَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ
হে আদম সন্তান! তোমরা প্রতিটি ইবাদাতের সময়ই নিজেদের জন্য সৌন্দর্যমন্ডিত পোশাক গ্রহণ করো। (সূরা আ‘রাফ- ৩১)
মুশরিকদের জন্য মসজিদে প্রবেশের অধিকার নেই :
مَا كَانَ لِلْمُشْرِكِيْنَ اَنْ يَّعْمُرُوْا مَسَاجِدَ اللهِ شَاهِدِيْنَ عَلٰۤى اَنْفُسِهِمْ بِالْكُفْرِؕ اُولٰٓئِكَ حَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْۚ وَفِى النَّارِ هُمْ خَالِدُوْنَ
মুশরিকরা যখন নিজেরাই নিজেদের কুফরীকে স্বীকার করে নিয়েছে, তারপরও তারা আল্লাহর মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করবে- এমনটা হতে পারে না। তারা এমন লোক যাদের সমস্ত কর্ম ব্যর্থ হয়ে গেছে এবং তারা অগ্নিতেই স্থায়ীভাবে অবস্থান করবে। (সূরা তাওবা- ১৭)
ব্যাখ্যা : এক আল্লাহর ইবাদাত করার জন্য যেসব মসজিদ তৈরি করা হয়েছে সেগুলোর মুতাওয়াল্লী, রক্ষণাবেক্ষণকারী ও সেবক কখনো এমন ধরনের লোক হতে পারে না, যারা আল্লাহর গুণাবলি, অধিকার ও ক্ষমতার ক্ষেত্রে অন্যদেরকে শরীক করে।
মসজিদের মুতাওয়াল্লি হওয়ার যোগ্যতা :
اِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللهِ مَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَاَقَامَ الصَّلَاةَ وَاَتَى الزَّكَاةَ وَلَمْ يَخْشَ اِلَّا اللهَؕ فَعَسٰۤى اُولٰٓئِكَ اَنْ يَّكُوْنُوْا مِنَ الْمُهْتَدِيْنَ
তারাই তো আল্লাহর মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করবে, যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান আনয়ন করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় করে না। অতএব আশা করা যায়, তারা সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা তাওবা- ১৮)
মসজিদে প্রবেশে বাধা দেয়া মহাপাপ :
وَصَدٌّ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ وَكُفْرٌ ۢبِهٖ وَالْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَاِخْرَاجُ اَهْلِهٖ مِنْهُ اَكْبَرُ عِنْدَ اللهِ
আল্লাহর পথে বাধা দেয়া, তার সাথে কুফরী করা, মসজিদে হারামে প্রবেশে বাধা দেয়া এবং এর অধিবাসীদেরকে সেখান থেকে বের করে দেয়া আল্লাহর কাছে আরো বড় গোনাহ। (সূরা বাক্বারা- ২১৭)
মসজিদের ক্ষতি সাধন করা বড় ধরনের অন্যায় :
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ مَّنَعَ مَسَاجِدَ اللهِ اَنْ يُّذْكَرَ فِيْهَا اسْمُهٗ وَسَعٰى فِيْ خَرَابِهَاؕ اُولٰٓئِكَ مَا كَانَ لَهُمْ اَنْ يَّدْخُلُوْهَاۤ اِلَّا خَآئِفِيْنَؕ لَهُمْ فِى الدُّنْيَا خِزْيٌ وَّلَهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ
তার চেয়ে বড় যালিম আর কে আছে, যে আল্লাহর মসজিদসমূহের মধ্যে তাঁর নাম উচ্চারণ করতে নিষেধ করে এবং তা ধ্বংস করতে প্রয়াস চালায়? অথচ ভয়ে ভীত না হওয়া পর্যন্ত তাদের জন্য মসজিদে প্রবেশ করাটাই সঙ্গত ছিল না, দুনিয়ায় তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনা এবং আখিরাতে রয়েছে কঠিন শাস্তি। (সূরা বাক্বারা- ১১৪)
মসজিদ পবিত্র রাখার নির্দেশ :
وَعَهِدْنَاۤ اِلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ اَنْ طَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّآئِفِيْنَ وَالْعَاكِفِيْنَ وَالرُّكَّعِ السُّجُوْدِ
আমি ইবরাহীম ও ইসমাঈলের নিকট এ অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, তোমরা আমার ঘরকে তাওয়াফকারী, ই‘তিকাফকারী, রুকূকারী এবং সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রেখো। (সূরা বাক্বারা- ১২৫)
وَاِذْ بَوَّاْنَا لِاِبْرَاهِيْمَ مَكَانَ الْبَيْتِ اَنْ لَّا تُشْرِكْ بِيْ شَيْئًا وَّطَهِّرْ بَيْتِيَ لِلطَّآئِفِيْنَ وَالْقَآئِمِيْنَ وَالرُّكَّعِ السُّجُوْدِ
স্মরণ করো, যখন আমি ইবরাহীমের জন্য সে গৃহের স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম এবং বলেছিলাম, আমার সাথে কোন শরীক স্থির করবে না এবং আমার গৃহকে তাদের জন্য পবিত্র রাখবে, যারা তাওয়াফ করে, সালাতে দন্ডায়মান হয়, রুকূ করে ও সিজদা করে। (সূরা হজ্জ- ২৬)
প্রত্যেক ধর্মেরই উপাসনালয় রয়েছে :
وَلَوْلَا دَفْعُ اللهِ النَّاسَ بَعْضَهُمْ بِبَعْضٍ لَّهُدِّمَتْ صَوَامِعُ وَّبِيَعٌ وَّصَلَوَاتٌ وَّمَسَاجِدُ يُذْكَرُ فِيْهَا اسْمُ اللهِ كَثِيْرًاؕ وَلَيَنْصُرَنَّ اللهُ مَنْ يَّنْصُرُهٗؕ اِنَّ اللهَ لَقَوِيٌّ عَزِيْزٌ
আল্লাহ যদি মানবজাতির একদলকে অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে বিধ্বস্ত হয়ে যেত খ্রিস্টানদের উপাসনালয়, গির্জা, ইয়াহুদিদের উপাসনালয় এবং মসজিদসমূহ- যাতে আল্লাহর নাম অধিক হারে স্মরণ করা হয়। নিশ্চয় আল্লাহ তাকেই সাহায্য করেন, যে তাঁকে সাহায্য করে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশক্তিমান ও পরাক্রমশালী। (সূরা হজ্জ- ৪০)
ব্যাখ্যা : صَوْمَعَةٌ (সাওমা‘আতুন) এমন স্থানকে বলে যেখানে খ্রিস্টান রাহেব, যোগী ও সন্ন্যাসীরা অবস্থান করে।
بِيْعَةٌ (বী‘আতুন) হলো খ্রিস্টানদের ইবাদাতগৃহ।
صَلَوَاتٌ (সালাওয়াতুন) হচ্ছে ইয়াহুদিদের উপাসনালয়সমূহ।
مَسَاجِدٌ (মাসাজিদ) বলা হয় মুসলিমদের ইবাদাতগৃহসমূহকে।
وَاَنَّ الْمَسَاجِدَ لِلّٰهِ ۚ فَلَا تَدْعُوْا مَعَ اللهِ اَحَدًا
নিশ্চয় মসজিদসমূহ আল্লাহর (উদ্দেশ্যে নির্মিত)। সুতরাং তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে আহবান করো না। (সূরা জিন- ১৮)
প্রথম মসজিদ হলো কা‘বাঘর :
اِنَّ اَوَّلَ بَيْتٍ وُّضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِيْ بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَّهُدًى لِّلْعَالَمِيْنَ
নিশ্চয় মানুষের জন্য সর্বপ্রথম নির্মিত ঘর মক্কায় অবস্থিত, যা বরকতময় এবং বিশ্ববাসীর জন্য পথপ্রদর্শকস্বরূপ। (সূরা আলে ইমরান- ৯৬)
হিজরতের পর প্রথম মসজিদ হলো কুবা :
لَا تَقُمْ فِيْهِ اَبَدًاؕ لَمَسْجِدٌ اُسِّسَ عَلَى التَّقْوٰى مِنْ اَوَّلِ يَوْمٍ اَحَقُّ اَنْ تَقُوْمَ فِيْهِ
তুমি কখনো (ইবাদাতের উদ্দেশ্যে) সেখানে দাঁড়াবে না। তোমার তো দাঁড়ানো উচিত সেখানে (ঐ মসজিদে) যা প্রথম দিন থেকেই তাক্বওয়ার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। (সূরা তাওবা- ১০৮)
কা‘বাঘর ধ্বংসের ষড়যন্ত্রকারীদেরকে আল্লাহ ধ্বংস করেছেন :
اَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِاَصْحَابِ الْفِيْلِ ‐ اَلَمْ يَجْعَلْ كَيْدَهُمْ فِيْ تَضْلِيْلٍ ‐ وَاَرْسَلَ عَلَيْهِمْ طَيْرًا اَبَابِيْلَ ‐ تَرْمِيْهِمْ بِحِجَارَةٍ مِّنْ سِجِّيْلٍ ‐ فَجَعَلَهُمْ كَعَصْفٍ مَّاْكُوْلٍ
তুমি কি দেখনি, তোমার প্রতিপালক (কা‘বা ধ্বংসের জন্য আগত) হাতিওয়ালাদের সাথে কেমন ব্যবহার করেছেন? তিনি কি (সে সময়) তাদের যাবতীয় ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেননি? তিনি তাদের উপর ঝাঁকে-ঝাঁকে পাখী পাঠিয়েছিলেন। এ পাখীগুলো এ সুসজ্জিত বাহিনীর উপর পাথরের টুকরো নিক্ষেপ করেছিল। অতঃপর তিনি তাদেরকে জন্তু-জানোয়ারের চর্বিত ঘাস-পাতার মতো করে দিয়েছিলেন। (সূরা ফীল)
মসজিদ ইবাদাতের স্থান :
فِيْ بُيُوْتٍ اَذِنَ اللهُ اَنْ تُرْفَعَ وَيُذْكَرَ فِيْهَا اسْمُهٗ يُسَبِّحُ لَهٗ فِيْهَا بِالْغُدُوِّ وَالْاٰصَالِ
(এসব ব্যক্তিদেরকে পাওয়া যাবে) সেসব ঘরসমূহে, যার মধ্যে আল্লাহর সম্মান ও মর্যাদা সমুন্নত করতে এবং তাতে তাঁর নাম স্মরণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আর যাতে সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করা হয়। (সূরা নূর- ৩৬)
মসজিদে ই‘তিকাফের বিধান :
وَلَا تُبَاشِرُوْهُنَّ وَاَنْتُمْ عَاكِفُوْنَ فِى الْمَسَاجِدِ
আর তোমরা মসজিদে ই‘তিকাফ করা অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে মিলন করো না। (সূরা বাক্বারা- ১৮৭)
মসজিদে যাওয়ার সময় উত্তম পোশাক পরিধান করার নির্দেশ :
يَا بَنِيْۤ اٰدَمَ خُذُوْا زِيْنَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ
হে আদম সন্তান! তোমরা প্রতিটি ইবাদাতের সময়ই নিজেদের জন্য সৌন্দর্যমন্ডিত পোশাক গ্রহণ করো। (সূরা আ‘রাফ- ৩১)
মুশরিকদের জন্য মসজিদে প্রবেশের অধিকার নেই :
مَا كَانَ لِلْمُشْرِكِيْنَ اَنْ يَّعْمُرُوْا مَسَاجِدَ اللهِ شَاهِدِيْنَ عَلٰۤى اَنْفُسِهِمْ بِالْكُفْرِؕ اُولٰٓئِكَ حَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْۚ وَفِى النَّارِ هُمْ خَالِدُوْنَ
মুশরিকরা যখন নিজেরাই নিজেদের কুফরীকে স্বীকার করে নিয়েছে, তারপরও তারা আল্লাহর মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করবে- এমনটা হতে পারে না। তারা এমন লোক যাদের সমস্ত কর্ম ব্যর্থ হয়ে গেছে এবং তারা অগ্নিতেই স্থায়ীভাবে অবস্থান করবে। (সূরা তাওবা- ১৭)
ব্যাখ্যা : এক আল্লাহর ইবাদাত করার জন্য যেসব মসজিদ তৈরি করা হয়েছে সেগুলোর মুতাওয়াল্লী, রক্ষণাবেক্ষণকারী ও সেবক কখনো এমন ধরনের লোক হতে পারে না, যারা আল্লাহর গুণাবলি, অধিকার ও ক্ষমতার ক্ষেত্রে অন্যদেরকে শরীক করে।
মসজিদের মুতাওয়াল্লি হওয়ার যোগ্যতা :
اِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللهِ مَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَاَقَامَ الصَّلَاةَ وَاَتَى الزَّكَاةَ وَلَمْ يَخْشَ اِلَّا اللهَؕ فَعَسٰۤى اُولٰٓئِكَ اَنْ يَّكُوْنُوْا مِنَ الْمُهْتَدِيْنَ
তারাই তো আল্লাহর মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করবে, যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান আনয়ন করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় করে না। অতএব আশা করা যায়, তারা সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা তাওবা- ১৮)
মসজিদে প্রবেশে বাধা দেয়া মহাপাপ :
وَصَدٌّ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ وَكُفْرٌ ۢبِهٖ وَالْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَاِخْرَاجُ اَهْلِهٖ مِنْهُ اَكْبَرُ عِنْدَ اللهِ
আল্লাহর পথে বাধা দেয়া, তার সাথে কুফরী করা, মসজিদে হারামে প্রবেশে বাধা দেয়া এবং এর অধিবাসীদেরকে সেখান থেকে বের করে দেয়া আল্লাহর কাছে আরো বড় গোনাহ। (সূরা বাক্বারা- ২১৭)
মসজিদের ক্ষতি সাধন করা বড় ধরনের অন্যায় :
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ مَّنَعَ مَسَاجِدَ اللهِ اَنْ يُّذْكَرَ فِيْهَا اسْمُهٗ وَسَعٰى فِيْ خَرَابِهَاؕ اُولٰٓئِكَ مَا كَانَ لَهُمْ اَنْ يَّدْخُلُوْهَاۤ اِلَّا خَآئِفِيْنَؕ لَهُمْ فِى الدُّنْيَا خِزْيٌ وَّلَهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ
তার চেয়ে বড় যালিম আর কে আছে, যে আল্লাহর মসজিদসমূহের মধ্যে তাঁর নাম উচ্চারণ করতে নিষেধ করে এবং তা ধ্বংস করতে প্রয়াস চালায়? অথচ ভয়ে ভীত না হওয়া পর্যন্ত তাদের জন্য মসজিদে প্রবেশ করাটাই সঙ্গত ছিল না, দুনিয়ায় তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনা এবং আখিরাতে রয়েছে কঠিন শাস্তি। (সূরা বাক্বারা- ১১৪)
মসজিদ পবিত্র রাখার নির্দেশ :
وَعَهِدْنَاۤ اِلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ اَنْ طَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّآئِفِيْنَ وَالْعَاكِفِيْنَ وَالرُّكَّعِ السُّجُوْدِ
আমি ইবরাহীম ও ইসমাঈলের নিকট এ অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, তোমরা আমার ঘরকে তাওয়াফকারী, ই‘তিকাফকারী, রুকূকারী এবং সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রেখো। (সূরা বাক্বারা- ১২৫)
وَاِذْ بَوَّاْنَا لِاِبْرَاهِيْمَ مَكَانَ الْبَيْتِ اَنْ لَّا تُشْرِكْ بِيْ شَيْئًا وَّطَهِّرْ بَيْتِيَ لِلطَّآئِفِيْنَ وَالْقَآئِمِيْنَ وَالرُّكَّعِ السُّجُوْدِ
স্মরণ করো, যখন আমি ইবরাহীমের জন্য সে গৃহের স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম এবং বলেছিলাম, আমার সাথে কোন শরীক স্থির করবে না এবং আমার গৃহকে তাদের জন্য পবিত্র রাখবে, যারা তাওয়াফ করে, সালাতে দন্ডায়মান হয়, রুকূ করে ও সিজদা করে। (সূরা হজ্জ- ২৬)
প্রত্যেক ধর্মেরই উপাসনালয় রয়েছে :
وَلَوْلَا دَفْعُ اللهِ النَّاسَ بَعْضَهُمْ بِبَعْضٍ لَّهُدِّمَتْ صَوَامِعُ وَّبِيَعٌ وَّصَلَوَاتٌ وَّمَسَاجِدُ يُذْكَرُ فِيْهَا اسْمُ اللهِ كَثِيْرًاؕ وَلَيَنْصُرَنَّ اللهُ مَنْ يَّنْصُرُهٗؕ اِنَّ اللهَ لَقَوِيٌّ عَزِيْزٌ
আল্লাহ যদি মানবজাতির একদলকে অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে বিধ্বস্ত হয়ে যেত খ্রিস্টানদের উপাসনালয়, গির্জা, ইয়াহুদিদের উপাসনালয় এবং মসজিদসমূহ- যাতে আল্লাহর নাম অধিক হারে স্মরণ করা হয়। নিশ্চয় আল্লাহ তাকেই সাহায্য করেন, যে তাঁকে সাহায্য করে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশক্তিমান ও পরাক্রমশালী। (সূরা হজ্জ- ৪০)
ব্যাখ্যা : صَوْمَعَةٌ (সাওমা‘আতুন) এমন স্থানকে বলে যেখানে খ্রিস্টান রাহেব, যোগী ও সন্ন্যাসীরা অবস্থান করে।
بِيْعَةٌ (বী‘আতুন) হলো খ্রিস্টানদের ইবাদাতগৃহ।
صَلَوَاتٌ (সালাওয়াতুন) হচ্ছে ইয়াহুদিদের উপাসনালয়সমূহ।
مَسَاجِدٌ (মাসাজিদ) বলা হয় মুসলিমদের ইবাদাতগৃহসমূহকে।
আল্লাহকে সিজদা করার আদেশ :
فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَكُنْ مِّنَ السَّاجِدِيْنَ
অতএব প্রশংসার সাথে তোমার প্রতিপালকের পবিত্রতা বর্ণনা করো এবং সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও। (সূরা হিজর- ৯৮)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا ارْكَعُوْا وَاسْجُدُوْا وَاعْبُدُوْا رَبَّكُمْ وَافْعَلُوا الْخَيْرَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা রুকূ করো ও সিজদা করো। আর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের ইবাদাত করো এবং সৎকাজ করো, যাতে তোমরা সফলতা লাভ করতে পার। (সূরা হজ্জ- ৭৭)
ব্যাখ্যা : সিজদা বলতে বুঝায় আনুগত্য প্রকাশ করার জন্য ঝুঁকে পড়া, আদেশ পালন করা এবং মাথা নত করা। পৃথিবী ও আকাশের প্রত্যেকটি সৃষ্টি আল্লাহর আইনের অনুগত। তারা তাঁর ইচ্ছার একটুও বিরোধিতা করতে পারে না। এ অর্থে তারা প্রত্যেকেই আল্লাহকে সিজদা করছে। মুমিন স্বেচ্ছায় আল্লাহর সামনে নত হয়, কিন্তু কাফিরকে বাধ্য হয়ে নত হতে হয়। কারণ আল্লাহর প্রাকৃতিক আইনের বাইরে চলে যাওয়ার ক্ষমতা কারো নেই।
সিজদা আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায় :
كَلَّاؕ لَا تُطِعْهُ وَاسْجُدْ وَاقْتَرِبْ
কখনো নয়, তুমি কিছুতেই তার অনুসরণ করো না; বরং তুমি তোমার মালিকের সামনে সিজদাবনত হও এবং তাঁর নৈকট্য লাভ করো। (সূরা আলাক্ব- ১৯)
পৃথিবীর সবকিছু আল্লাহকে সিজদা করে :
اَلَمْ تَرَ اَنَّ اللهَ يَسْجُدُ لَهٗ مَنْ فِى السَّمَاوَاتِ وَمَنْ فِى الْاَرْضِ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُ وَالنُّجُوْمُ وَالْجِبَالُ وَالشَّجَرُ وَالدَّوَآبُّ وَكَثِيْرٌ مِّنَ النَّاسِ
তুমি কি দেখ না যে, আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবকিছু আল্লাহকে সিজদা করে। (সিজদা করে) চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্রসমূহ, পর্বতরাজি, বৃক্ষলতা, জীবজন্তু এবং মানুষের মধ্যে অনেকে। (সূরা হজ্জ- ১৮)
وَلِلّٰهِ يَسْجُدُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَرْضِ مِنْ دَآبَّةٍ وَّالْمَلَآئِكَةُ وَهُمْ لَا يَسْتَكْبِرُوْنَ
আসমানসমূহ ও জমিনে বিচরণশীল যা কিছু আছে সবকিছু এবং ফেরেশতারা আল্লাহকে সিজদা করে। আর তারা কেউই অহংকার করে না। (সূরা নাহল- ৪৯)
ফেরেশতারা আল্লাহকে সিজদা করে :
اِنَّ الَّذِيْنَ عِنْدَ رَبِّكَ لَا يَسْتَكْبِرُوْنَ عَنْ عِبَادَتِهٖ وَيُسَبِّحُوْنَهٗ وَلَهٗ يَسْجُدُوْنَ
যারা তোমার প্রতিপালকের সান্নিধ্যে রয়েছে তারা তাঁর ইবাদাতের ক্ষেত্রে অহংকার প্রকাশ করে না। তারা তাঁর মহিমা ঘোষণা করে এবং তাঁরই নিকট সিজদাবনত হয়। (সূরা আ‘রাফ- ২০৬)
গাছপালা আল্লাহকে সিজদা করে :
وَالنَّجْمُ وَالشَّجَرُ يَسْجُدَانِ
তারকা ও বৃক্ষরাজী (আল্লাহকে) সিজদা করে। (সূরা আর রহমান- ৬)
সবকিছুর ছায়া আল্লাহকে সিজদা করে :
اَوَلَمْ يَرَوْا اِلٰى مَا خَلَقَ اللهُ مِنْ شَيْءٍ يَّتَفَيَّاُ ظِلَالُهٗ عَنِ الْيَمِيْنِ وَالشَّمَآئِلِ سُجَّدًا لِّلّٰهِ وَهُمْ دَاخِرُوْنَ
আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তারা কি সেগুলোর প্রতি লক্ষ্য করে না যে, তার ছায়া ডানে ও বামে আল্লাহর প্রতি সিজদাবনত হয়ে ঢলে পড়ে। (সূরা নাহল- ৪৮)
وَلِلّٰهِ يَسْجُدُ مَنْ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ طَوْعًا وَّكَرْهًا وَّظِلَالُهُمْ بِالْغُدُوِّ وَالْاٰصَالِ
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবকিছু ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় সর্বাবস্থায় আল্লাহকে সিজদা করে। এমনকি সকাল-সন্ধ্যায় তাদের ছায়াগুলোও (সিজদা করে)। (সূরা রা‘দ- ১৫)
সাহাবীদের চেহারায় সিজদার চিহ্ন ফুটে উঠত :
تَرَاهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا يَّبْتَغُوْنَ فَضْلًا مِّنَ اللّٰهِ وَرِضْوَانًاؕ سِيْمَاهُمْ فِيْ وُجُوْهِهِمْ مِّنْ اَثَرِ السُّجُوْدِ
তুমি তাদেরকে দেখবে রুকূ ও সিজদা অবস্থায়, তারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি অনুসন্ধানে নিয়োজিত। তাদের চেহারায় সিজদার প্রভাব পরিস্ফুটিত হয়। (সূরা ফাতহ- ২৯)
কতক মানুষ আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাঁর সৃষ্টিকে সিজদা করে :
وَجَدْتُّهَا وَقَوْمَهَا يَسْجُدُوْنَ لِلشَّمْسِ مِنْ دُوْنِ اللهِ وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ اَعْمَالَهُمْ فَصَدَّهُمْ عَنِ السَّبِيْلِ فَهُمْ لَا يَهْتَدُوْنَ
আমি তাকে ও তার সম্প্রদায়কে দেখলাম তারা আল্লাহর পরিবর্তে সূর্যকে সিজদা করছে। শয়তান তাদের কার্যাবলি তাদের নিকট সুন্দর করে দিয়েছে এবং তাদেরকে সৎপথ হতে বিরত রেখেছে, ফলে তারা হেদায়াতপ্রাপ্ত হয় না। (সূরা নামল- ২৪)
এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুকে সিজদা করা যাবে না :
لَا تَسْجُدُوْا لِلشَّمْسِ وَلَا لِلْقَمَرِ وَاسْجُدُوْا لِلّٰهِ الَّذِيْ خَلَقَهُنَّ اِنْ كُنْتُمْ اِيَّاهُ تَعْبُدُوْنَ
তোমরা সূর্য ও চন্দ্রকে সিজদা করো না; বরং আল্লাহকে সিজদা করো, যিনি এগুলোকে সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা তাঁরই ইবাদাত করে থাক। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৩৭)
অনেকেই আল্লাহকে সিজদা করে না :
وَاِذَا قِيْلَ لَهُمُ اسْجُدُوْا لِلرَّحْمٰنِ قَالُوْا وَمَا الرَّحْمٰنُ اَنَسْجُدُ لِمَا تَاْمُرُنَا وَزَادَهُمْ نُفُوْرًا
যখন তাদেরকে বলা হলো, তোমরা দয়াময় আল্লাহর প্রতি সিজদাবনত হও তখন তারা বলল, দয়াময় আল্লাহ আবার কে? যাকেই তোমরা আমাদেরকে সিজদা করতে বলবে তাকেই কি আমরা সিজদা করব? বস্তুত এটা তাদের বিদ্বেষ আরো বাড়িয়ে দেয়। (সূরা ফুরক্বান- ৬০)
وَاِذَا قُرِئَ عَلَيْهِمُ الْقُرْاٰنُ لَا يَسْجُدُوْنَ
আর যখন তাদের সামনে কুরআন তিলাওয়াত করা হয়, তখন তারা সিজদাবনত হয় না। (সূরা ইনশিক্বাক- ২১)
যারা দুনিয়াতে সিজদা করে না, তারা পরকালে অপমানিত হবে :
خَاشِعَةً اَبْصَارُهُمْ تَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌؕ وَقَدْ كَانُوْا يُدْعَوْنَ اِلَى السُّجُوْدِ وَهُمْ سَالِمُوْنَ
তাদের দৃষ্টি হবে অবনত, অপমান ও লাঞ্ছনা তাদের উপর চেপে বসবে। (দুনিয়াতে) তারা যখন সুস্থ ও নিরাপদ ছিল তখনও তাদেরকে সিজদা করার জন্য ডাকা হতো (কিন্তু তারা সিজদা করত না)। (সূরা ক্বালাম- ৪৩)
فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَكُنْ مِّنَ السَّاجِدِيْنَ
অতএব প্রশংসার সাথে তোমার প্রতিপালকের পবিত্রতা বর্ণনা করো এবং সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও। (সূরা হিজর- ৯৮)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا ارْكَعُوْا وَاسْجُدُوْا وَاعْبُدُوْا رَبَّكُمْ وَافْعَلُوا الْخَيْرَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা রুকূ করো ও সিজদা করো। আর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের ইবাদাত করো এবং সৎকাজ করো, যাতে তোমরা সফলতা লাভ করতে পার। (সূরা হজ্জ- ৭৭)
ব্যাখ্যা : সিজদা বলতে বুঝায় আনুগত্য প্রকাশ করার জন্য ঝুঁকে পড়া, আদেশ পালন করা এবং মাথা নত করা। পৃথিবী ও আকাশের প্রত্যেকটি সৃষ্টি আল্লাহর আইনের অনুগত। তারা তাঁর ইচ্ছার একটুও বিরোধিতা করতে পারে না। এ অর্থে তারা প্রত্যেকেই আল্লাহকে সিজদা করছে। মুমিন স্বেচ্ছায় আল্লাহর সামনে নত হয়, কিন্তু কাফিরকে বাধ্য হয়ে নত হতে হয়। কারণ আল্লাহর প্রাকৃতিক আইনের বাইরে চলে যাওয়ার ক্ষমতা কারো নেই।
সিজদা আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায় :
كَلَّاؕ لَا تُطِعْهُ وَاسْجُدْ وَاقْتَرِبْ
কখনো নয়, তুমি কিছুতেই তার অনুসরণ করো না; বরং তুমি তোমার মালিকের সামনে সিজদাবনত হও এবং তাঁর নৈকট্য লাভ করো। (সূরা আলাক্ব- ১৯)
পৃথিবীর সবকিছু আল্লাহকে সিজদা করে :
اَلَمْ تَرَ اَنَّ اللهَ يَسْجُدُ لَهٗ مَنْ فِى السَّمَاوَاتِ وَمَنْ فِى الْاَرْضِ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُ وَالنُّجُوْمُ وَالْجِبَالُ وَالشَّجَرُ وَالدَّوَآبُّ وَكَثِيْرٌ مِّنَ النَّاسِ
তুমি কি দেখ না যে, আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবকিছু আল্লাহকে সিজদা করে। (সিজদা করে) চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্রসমূহ, পর্বতরাজি, বৃক্ষলতা, জীবজন্তু এবং মানুষের মধ্যে অনেকে। (সূরা হজ্জ- ১৮)
وَلِلّٰهِ يَسْجُدُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَرْضِ مِنْ دَآبَّةٍ وَّالْمَلَآئِكَةُ وَهُمْ لَا يَسْتَكْبِرُوْنَ
আসমানসমূহ ও জমিনে বিচরণশীল যা কিছু আছে সবকিছু এবং ফেরেশতারা আল্লাহকে সিজদা করে। আর তারা কেউই অহংকার করে না। (সূরা নাহল- ৪৯)
ফেরেশতারা আল্লাহকে সিজদা করে :
اِنَّ الَّذِيْنَ عِنْدَ رَبِّكَ لَا يَسْتَكْبِرُوْنَ عَنْ عِبَادَتِهٖ وَيُسَبِّحُوْنَهٗ وَلَهٗ يَسْجُدُوْنَ
যারা তোমার প্রতিপালকের সান্নিধ্যে রয়েছে তারা তাঁর ইবাদাতের ক্ষেত্রে অহংকার প্রকাশ করে না। তারা তাঁর মহিমা ঘোষণা করে এবং তাঁরই নিকট সিজদাবনত হয়। (সূরা আ‘রাফ- ২০৬)
গাছপালা আল্লাহকে সিজদা করে :
وَالنَّجْمُ وَالشَّجَرُ يَسْجُدَانِ
তারকা ও বৃক্ষরাজী (আল্লাহকে) সিজদা করে। (সূরা আর রহমান- ৬)
সবকিছুর ছায়া আল্লাহকে সিজদা করে :
اَوَلَمْ يَرَوْا اِلٰى مَا خَلَقَ اللهُ مِنْ شَيْءٍ يَّتَفَيَّاُ ظِلَالُهٗ عَنِ الْيَمِيْنِ وَالشَّمَآئِلِ سُجَّدًا لِّلّٰهِ وَهُمْ دَاخِرُوْنَ
আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তারা কি সেগুলোর প্রতি লক্ষ্য করে না যে, তার ছায়া ডানে ও বামে আল্লাহর প্রতি সিজদাবনত হয়ে ঢলে পড়ে। (সূরা নাহল- ৪৮)
وَلِلّٰهِ يَسْجُدُ مَنْ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ طَوْعًا وَّكَرْهًا وَّظِلَالُهُمْ بِالْغُدُوِّ وَالْاٰصَالِ
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবকিছু ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় সর্বাবস্থায় আল্লাহকে সিজদা করে। এমনকি সকাল-সন্ধ্যায় তাদের ছায়াগুলোও (সিজদা করে)। (সূরা রা‘দ- ১৫)
সাহাবীদের চেহারায় সিজদার চিহ্ন ফুটে উঠত :
تَرَاهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا يَّبْتَغُوْنَ فَضْلًا مِّنَ اللّٰهِ وَرِضْوَانًاؕ سِيْمَاهُمْ فِيْ وُجُوْهِهِمْ مِّنْ اَثَرِ السُّجُوْدِ
তুমি তাদেরকে দেখবে রুকূ ও সিজদা অবস্থায়, তারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি অনুসন্ধানে নিয়োজিত। তাদের চেহারায় সিজদার প্রভাব পরিস্ফুটিত হয়। (সূরা ফাতহ- ২৯)
কতক মানুষ আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাঁর সৃষ্টিকে সিজদা করে :
وَجَدْتُّهَا وَقَوْمَهَا يَسْجُدُوْنَ لِلشَّمْسِ مِنْ دُوْنِ اللهِ وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ اَعْمَالَهُمْ فَصَدَّهُمْ عَنِ السَّبِيْلِ فَهُمْ لَا يَهْتَدُوْنَ
আমি তাকে ও তার সম্প্রদায়কে দেখলাম তারা আল্লাহর পরিবর্তে সূর্যকে সিজদা করছে। শয়তান তাদের কার্যাবলি তাদের নিকট সুন্দর করে দিয়েছে এবং তাদেরকে সৎপথ হতে বিরত রেখেছে, ফলে তারা হেদায়াতপ্রাপ্ত হয় না। (সূরা নামল- ২৪)
এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুকে সিজদা করা যাবে না :
لَا تَسْجُدُوْا لِلشَّمْسِ وَلَا لِلْقَمَرِ وَاسْجُدُوْا لِلّٰهِ الَّذِيْ خَلَقَهُنَّ اِنْ كُنْتُمْ اِيَّاهُ تَعْبُدُوْنَ
তোমরা সূর্য ও চন্দ্রকে সিজদা করো না; বরং আল্লাহকে সিজদা করো, যিনি এগুলোকে সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা তাঁরই ইবাদাত করে থাক। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৩৭)
অনেকেই আল্লাহকে সিজদা করে না :
وَاِذَا قِيْلَ لَهُمُ اسْجُدُوْا لِلرَّحْمٰنِ قَالُوْا وَمَا الرَّحْمٰنُ اَنَسْجُدُ لِمَا تَاْمُرُنَا وَزَادَهُمْ نُفُوْرًا
যখন তাদেরকে বলা হলো, তোমরা দয়াময় আল্লাহর প্রতি সিজদাবনত হও তখন তারা বলল, দয়াময় আল্লাহ আবার কে? যাকেই তোমরা আমাদেরকে সিজদা করতে বলবে তাকেই কি আমরা সিজদা করব? বস্তুত এটা তাদের বিদ্বেষ আরো বাড়িয়ে দেয়। (সূরা ফুরক্বান- ৬০)
وَاِذَا قُرِئَ عَلَيْهِمُ الْقُرْاٰنُ لَا يَسْجُدُوْنَ
আর যখন তাদের সামনে কুরআন তিলাওয়াত করা হয়, তখন তারা সিজদাবনত হয় না। (সূরা ইনশিক্বাক- ২১)
যারা দুনিয়াতে সিজদা করে না, তারা পরকালে অপমানিত হবে :
خَاشِعَةً اَبْصَارُهُمْ تَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌؕ وَقَدْ كَانُوْا يُدْعَوْنَ اِلَى السُّجُوْدِ وَهُمْ سَالِمُوْنَ
তাদের দৃষ্টি হবে অবনত, অপমান ও লাঞ্ছনা তাদের উপর চেপে বসবে। (দুনিয়াতে) তারা যখন সুস্থ ও নিরাপদ ছিল তখনও তাদেরকে সিজদা করার জন্য ডাকা হতো (কিন্তু তারা সিজদা করত না)। (সূরা ক্বালাম- ৪৩)
জুমুআর সালাত আদায় করা ফরয :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا نُوْدِيَ لِلصَّلَاةِ مِنْ يَّوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا اِلٰى ذِكْرِ اللهِ وَذَرُوا الْبَيْعَؕ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
হে মুমিনগণ! জুমু‘আর দিন যখন নামাজের জন্য আহবান করা হবে, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ করো, এটাই তোমাদের জন্য উত্তম- যদি তোমরা উপলব্ধি কর। (সূরা জুমু‘আ- ৯)
খুতবার সময় অনুপস্থিত থাকা ঠিক নয় :
وَاِذَا رَاَوْا تِجَارَةً اَوْ لَهْوَانِ انْفَضُّوْاۤ اِلَيْهَا وَتَرَكُوْكَ قَآئِمًاؕ قُلْ مَا عِنْدَ اللهِ خَيْرٌ مِّنَ اللَّهْوِ وَمِنَ التِّجَارَةِؕ وَاللهُ خَيْرُ الرَّازِقِيْنَ
যখন তারা কোন ক্রয়-বিক্রয় বা খেলতামাশা দেখে, তখন তারা তোমাকে দাঁড়ানো অবস্থায় রেখে সেদিকে ছুটে যায়। (হে নবী! তাদেরকে) বলে দাও, আল্লাহর নিকট যা আছে তা খেলতামাশা ও ক্রয়-বিক্রয় থেকে উত্তম; আর আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ রিযিকদাতা। (সূরা জুমু‘আ- ১১)
ব্যাখ্যা : জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক জুমু‘আর দিন নবী ﷺ দাঁড়ানো অবস্থায় ছিলেন (জুমু‘আর খুতবা দিচ্ছিলেন)। এমতাবস্থায় একটি বণিক দল মদিনায় এসে পৌঁছল। তখন ﷺ এর সাহাবীগণ সেদিকে ছুটে গেলেন। এমনকি বারোজন ব্যতীত আর কেউ অবশিষ্ট ছিলেন না। আবু বকর ও ওমর (রাঃ) ও এদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। (সহীহ মুসলিম, হা/১৮৮৫)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا نُوْدِيَ لِلصَّلَاةِ مِنْ يَّوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا اِلٰى ذِكْرِ اللهِ وَذَرُوا الْبَيْعَؕ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
হে মুমিনগণ! জুমু‘আর দিন যখন নামাজের জন্য আহবান করা হবে, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ করো, এটাই তোমাদের জন্য উত্তম- যদি তোমরা উপলব্ধি কর। (সূরা জুমু‘আ- ৯)
খুতবার সময় অনুপস্থিত থাকা ঠিক নয় :
وَاِذَا رَاَوْا تِجَارَةً اَوْ لَهْوَانِ انْفَضُّوْاۤ اِلَيْهَا وَتَرَكُوْكَ قَآئِمًاؕ قُلْ مَا عِنْدَ اللهِ خَيْرٌ مِّنَ اللَّهْوِ وَمِنَ التِّجَارَةِؕ وَاللهُ خَيْرُ الرَّازِقِيْنَ
যখন তারা কোন ক্রয়-বিক্রয় বা খেলতামাশা দেখে, তখন তারা তোমাকে দাঁড়ানো অবস্থায় রেখে সেদিকে ছুটে যায়। (হে নবী! তাদেরকে) বলে দাও, আল্লাহর নিকট যা আছে তা খেলতামাশা ও ক্রয়-বিক্রয় থেকে উত্তম; আর আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ রিযিকদাতা। (সূরা জুমু‘আ- ১১)
ব্যাখ্যা : জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক জুমু‘আর দিন নবী ﷺ দাঁড়ানো অবস্থায় ছিলেন (জুমু‘আর খুতবা দিচ্ছিলেন)। এমতাবস্থায় একটি বণিক দল মদিনায় এসে পৌঁছল। তখন ﷺ এর সাহাবীগণ সেদিকে ছুটে গেলেন। এমনকি বারোজন ব্যতীত আর কেউ অবশিষ্ট ছিলেন না। আবু বকর ও ওমর (রাঃ) ও এদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। (সহীহ মুসলিম, হা/১৮৮৫)
তাহাজ্জুদের সালাত আদায়ের নির্দেশ :
يَاۤ اَيُّهَا الْمُزَّمِّلُ ‐ قُمِ اللَّيْلَ اِلَّا قَلِيْلًا ‐ نِصْفَهٗۤ اَوِ انْقُصْ مِنْهُ قَلِيْلًا ‐ اَوْ زِدْ عَلَيْهِ وَرَتِّلِ الْقُرْاٰنَ تَرْتِيْلًا
হে বস্ত্রাবৃত! রাত্রি জাগরণ (সালাত আদায়) করো, তবে কিছু অংশ বাদে। তার অর্ধেক কিংবা তদপেক্ষা কিছু কম অথবা তদপেক্ষা বেশি। আর কুরআন পাঠ করো ধীরে ধীরে (থেমে থেমে সুন্দরভাবে)। (সূরা মুয্যাম্মিল- ১-৪)
وَمِنَ اللَّيْلِ فَاسْجُدْ لَهٗ وَسَبِّحْهُ لَيْلًا طَوِيْلًا
রাতে তাঁর জন্য সিজদায় নত হও এবং রাতে দীর্ঘ সময় তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করো। (সূরা দাহর- ২৬)
নবী ও সাহাবীরা এ সালাত আদায় করতেন :
اِنَّ رَبَّكَ يَعْلَمُ اَنَّكَ تَقُوْمُ اَدْنٰى مِنْ ثُلُثَيِ اللَّيْلِ وَنِصْفَهٗ وَثُلُثَهٗ وَطَآئِفَةٌ مِّنَ الَّذِيْنَ مَعَكَ
তোমার প্রতিপালক তো জানেন যে, তুমি জাগরণ কর- কখনো রাত্রির প্রায় দুই তৃতীয়াংশ, কখনো অর্ধাংশ এবং কখনো এক তৃতীয়াংশ এবং তোমার সাথে যারা আছে তাদের একটি দলও জাগরণ করে। (সূরা মুয্যাম্মিল- ২০)
প্রথমে এ সালাত ফরয ছিল, পরে তা নফল করে দেয়া হয় :
وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهٖ نَافِلَةً لَّكَ ۗ عَسٰى اَنْ يَّبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُوْدًا
রাত্রির কিছু অংশে তাহাজ্জুদ কায়েম করবে, এটা তোমার জন্য একটি অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়, তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৭৯)
আল্লাহর নেক বান্দারা সিজদারত অবস্থায় রাত কাটায় :
وَالَّذِيْنَ يَبِيْتُوْنَ لِرَبِّهِمْ سُجَّدًا وَّقِيَامًا
তারা তাদের প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সিজদাবনত হয়ে ও দন্ডায়মান অবস্থায় রাত্রি অতিবাহিত করে। (সূরা ফুরক্বান- ৬৪)
ব্যাখ্যা : এটা হচ্ছে মুমিনগণের রাতের জীবন। তাদের রাত আরাম-আয়েশে, নাচ-গানে, খেলতামাশায়, আড্ডাবাজী ও চুরি-চামারিতে অতিবাহিত হয় না। তারা জাহেলিয়াতের এসব পরিচিত খারাপ কাজগুলোর পরিবর্তে সমাজে এমনসব লোকদের মতো সৎকর্ম সম্পাদন করত- যাদের রাত কাটত আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে এবং দু‘আ ও ইবাদাত করার মধ্য দিয়ে।
আহলে কিতাবের কিছু লোকও ইবাদাতে রাত কাটায় :
لَيْسُوْا سَوَآءًؕ مِنْ اَهْلِ الْكِتَابِ اُمَّةٌ قَآئِمَةٌ يَّتْلُوْنَ اٰيَاتِ اللهِ اٰنَآءَ اللَّيْلِ وَهُمْ يَسْجُدُوْنَ
তারা সবাই সমান নয়। আহলে কিতাবদের মধ্যে একটি দল রয়েছে অটল, তারা রাতের বেলা আল্লাহর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে এবং সিজদা করে। (সূরা আলে ইমরান- ১১৩)
শেষ রাতে ইবাদাত করা জান্নাতী লোকদের বিশেষ গুণ :
تَتَجَافٰى جُنُوْبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَّطَمَعًا وَّمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ ‐ فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَّاۤ اُخْفِيَ لَهُمْ مِّنْ قُرَّةِ اَعْيُنٍۚ جَزَآءً ۢبِمَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
তাদের দেহ বিছানা থেকে এমনভাবে আলাদা হয়ে যায় যে, তারা তাদের প্রতিপালককে আহবান করতে থাকে ভয়ে ও আশায় এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে তারা ব্যয় করে। কেউই জানে না যে, তাদের কৃতকর্মের প্রতিদানস্বরূপ তাদের জন্য নয়ন জুড়ানো কী কী সামগ্রী লুকিয়ে রাখা হয়েছে? (সূরা সাজদা, ১৫-১৭)
اِنَّ الْمُتَّقِيْنَ فِيْ جَنَّاتٍ وَّعُيُوْنٍ ‐ اٰخِذِيْنَ مَاۤ اٰتَاهُمْ رَبُّهُمْؕ اِنَّهُمْ كَانُوْا قَبْلَ ذٰلِكَ مُحْسِنِيْنَ ‐ كَانُوْا قَلِيْلًا مِّنَ اللَّيْلِ مَا يَهْجَعُوْنَ ‐ وَبِالْاَسْحَارِ هُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ
সেদিন মুত্তাক্বীরা জান্নাত ও ঝর্ণার মধ্যে থাকবে, যা তাদের প্রতিপালক তাদেরকে প্রদান করবেন; তা তারা গ্রহণ করবে। নিশ্চয় তারা ইতোপূর্বে সৎকর্মপরায়ণ ছিল। তারা রাত্রির সামান্য অংশই নিদ্রাবস্থায় অতিবাহিত করত এবং রাত্রির শেষ প্রহরে ক্ষমাপ্রার্থনা করত। (সূরা যারিয়াত, ১৫-১৮)
তাহাজ্জুদ আদায়কারী ব্যক্তিই প্রকৃত জ্ঞানী :
اَمَّنْ هُوَ قَانِتٌ اٰنَآءَ اللَّيْلِ سَاجِدًا وَّقَآئِمًا يَّحْذَرُ الْاٰخِرَةَ وَيَرْجُوْا رَحْمَةَ رَبِّهٖؕ قُلْ هَلْ يَسْتَوِى الَّذِيْنَ يَعْلَمُوْنَ وَالَّذِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَؕ اِنَّمَا يَتَذَكَّرُ اُولُو الْاَلْبَابِ
কাফিররা কি ঐ ব্যক্তির সমান যে ব্যক্তি রাতে সিজদারত অবস্থায় অথবা দাঁড়িয়ে ইবাদাত করে, আখিরাতকে ভয় করে এবং তার প্রতিপালকের রহমত প্রত্যাশা করে? বলো, যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান হতে পারে? নিশ্চয় জ্ঞানবান ব্যক্তিরাই উপদেশ গ্রহণ করে থাকে। (সূরা যুমার- ৯)
ব্যাখ্যা : এখানে দু’শ্রে্র্র্র্র্র্রণির মানুষের মধ্যে তুলনা করা হয়েছে। এক শ্রেণির মানুষ দুঃসময় আসলে আল্লাহর দিকে ফিরে যায়। কিন্তু স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে গায়রুল্লাহর দাসত্ব করে। আরেক শ্রেণির মানুষ আল্লাহর আনুগত্য এবং তাঁর দাসত্বকে তাদের স্থায়ী নীতি বানিয়ে নিয়েছে। রাতের অন্ধকারে আল্লাহর ইবাদাত করা তাদের একনিষ্ঠ হওয়ার প্রমাণ। এর মধ্যে প্রথম দলের অন্তর্ভুক্ত লোকদেরকে আল্লাহ তা‘আলা জ্ঞানহীন বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ ক্ষেত্রে তারা বড় বড় গ্রন্থাগার পড়ে থাকলেও কিছু আসে যায় না। আর দ্বিতীয় দলের অন্তর্ভুক্ত লোকদেরকে জ্ঞানী বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ ক্ষেত্রে একেবারে নিরক্ষর হলেও কিছু আসে যায় না। কারণ প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে সত্য সম্পর্কে জ্ঞান ও তদানুযায়ী কাজ। এর উপরই মানুষের সাফল্য নির্ভরশীল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, এ দু’শ্রেণির মানুষ কীভাবে সমান হতে পারে এবং আখিরাতেও একই পরিণামের সম্মুখীন হবে?
প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ ও কুরআনের মর্ম বুঝার উপযুক্ত সময় এটাই :
اِنَّ نَاشِئَةَ اللَّيْلِ هِيَ اَشَدُّ وَطْئًا وَّاَقْوَمُ قِيْلًا
রাতে বিছানা ত্যাগ করা আত্মসংযমের জন্য অধিক কার্যকর পন্থা এবং স্পষ্ট উচ্চারণের (কুরআন পাঠের) অনুকূল (সময়)। (সূরা মুয্যাম্মিল- ৬)
يَاۤ اَيُّهَا الْمُزَّمِّلُ ‐ قُمِ اللَّيْلَ اِلَّا قَلِيْلًا ‐ نِصْفَهٗۤ اَوِ انْقُصْ مِنْهُ قَلِيْلًا ‐ اَوْ زِدْ عَلَيْهِ وَرَتِّلِ الْقُرْاٰنَ تَرْتِيْلًا
হে বস্ত্রাবৃত! রাত্রি জাগরণ (সালাত আদায়) করো, তবে কিছু অংশ বাদে। তার অর্ধেক কিংবা তদপেক্ষা কিছু কম অথবা তদপেক্ষা বেশি। আর কুরআন পাঠ করো ধীরে ধীরে (থেমে থেমে সুন্দরভাবে)। (সূরা মুয্যাম্মিল- ১-৪)
وَمِنَ اللَّيْلِ فَاسْجُدْ لَهٗ وَسَبِّحْهُ لَيْلًا طَوِيْلًا
রাতে তাঁর জন্য সিজদায় নত হও এবং রাতে দীর্ঘ সময় তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করো। (সূরা দাহর- ২৬)
নবী ও সাহাবীরা এ সালাত আদায় করতেন :
اِنَّ رَبَّكَ يَعْلَمُ اَنَّكَ تَقُوْمُ اَدْنٰى مِنْ ثُلُثَيِ اللَّيْلِ وَنِصْفَهٗ وَثُلُثَهٗ وَطَآئِفَةٌ مِّنَ الَّذِيْنَ مَعَكَ
তোমার প্রতিপালক তো জানেন যে, তুমি জাগরণ কর- কখনো রাত্রির প্রায় দুই তৃতীয়াংশ, কখনো অর্ধাংশ এবং কখনো এক তৃতীয়াংশ এবং তোমার সাথে যারা আছে তাদের একটি দলও জাগরণ করে। (সূরা মুয্যাম্মিল- ২০)
প্রথমে এ সালাত ফরয ছিল, পরে তা নফল করে দেয়া হয় :
وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهٖ نَافِلَةً لَّكَ ۗ عَسٰى اَنْ يَّبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُوْدًا
রাত্রির কিছু অংশে তাহাজ্জুদ কায়েম করবে, এটা তোমার জন্য একটি অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়, তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৭৯)
আল্লাহর নেক বান্দারা সিজদারত অবস্থায় রাত কাটায় :
وَالَّذِيْنَ يَبِيْتُوْنَ لِرَبِّهِمْ سُجَّدًا وَّقِيَامًا
তারা তাদের প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সিজদাবনত হয়ে ও দন্ডায়মান অবস্থায় রাত্রি অতিবাহিত করে। (সূরা ফুরক্বান- ৬৪)
ব্যাখ্যা : এটা হচ্ছে মুমিনগণের রাতের জীবন। তাদের রাত আরাম-আয়েশে, নাচ-গানে, খেলতামাশায়, আড্ডাবাজী ও চুরি-চামারিতে অতিবাহিত হয় না। তারা জাহেলিয়াতের এসব পরিচিত খারাপ কাজগুলোর পরিবর্তে সমাজে এমনসব লোকদের মতো সৎকর্ম সম্পাদন করত- যাদের রাত কাটত আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে এবং দু‘আ ও ইবাদাত করার মধ্য দিয়ে।
আহলে কিতাবের কিছু লোকও ইবাদাতে রাত কাটায় :
لَيْسُوْا سَوَآءًؕ مِنْ اَهْلِ الْكِتَابِ اُمَّةٌ قَآئِمَةٌ يَّتْلُوْنَ اٰيَاتِ اللهِ اٰنَآءَ اللَّيْلِ وَهُمْ يَسْجُدُوْنَ
তারা সবাই সমান নয়। আহলে কিতাবদের মধ্যে একটি দল রয়েছে অটল, তারা রাতের বেলা আল্লাহর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে এবং সিজদা করে। (সূরা আলে ইমরান- ১১৩)
শেষ রাতে ইবাদাত করা জান্নাতী লোকদের বিশেষ গুণ :
تَتَجَافٰى جُنُوْبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَّطَمَعًا وَّمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ ‐ فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَّاۤ اُخْفِيَ لَهُمْ مِّنْ قُرَّةِ اَعْيُنٍۚ جَزَآءً ۢبِمَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
তাদের দেহ বিছানা থেকে এমনভাবে আলাদা হয়ে যায় যে, তারা তাদের প্রতিপালককে আহবান করতে থাকে ভয়ে ও আশায় এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে তারা ব্যয় করে। কেউই জানে না যে, তাদের কৃতকর্মের প্রতিদানস্বরূপ তাদের জন্য নয়ন জুড়ানো কী কী সামগ্রী লুকিয়ে রাখা হয়েছে? (সূরা সাজদা, ১৫-১৭)
اِنَّ الْمُتَّقِيْنَ فِيْ جَنَّاتٍ وَّعُيُوْنٍ ‐ اٰخِذِيْنَ مَاۤ اٰتَاهُمْ رَبُّهُمْؕ اِنَّهُمْ كَانُوْا قَبْلَ ذٰلِكَ مُحْسِنِيْنَ ‐ كَانُوْا قَلِيْلًا مِّنَ اللَّيْلِ مَا يَهْجَعُوْنَ ‐ وَبِالْاَسْحَارِ هُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ
সেদিন মুত্তাক্বীরা জান্নাত ও ঝর্ণার মধ্যে থাকবে, যা তাদের প্রতিপালক তাদেরকে প্রদান করবেন; তা তারা গ্রহণ করবে। নিশ্চয় তারা ইতোপূর্বে সৎকর্মপরায়ণ ছিল। তারা রাত্রির সামান্য অংশই নিদ্রাবস্থায় অতিবাহিত করত এবং রাত্রির শেষ প্রহরে ক্ষমাপ্রার্থনা করত। (সূরা যারিয়াত, ১৫-১৮)
তাহাজ্জুদ আদায়কারী ব্যক্তিই প্রকৃত জ্ঞানী :
اَمَّنْ هُوَ قَانِتٌ اٰنَآءَ اللَّيْلِ سَاجِدًا وَّقَآئِمًا يَّحْذَرُ الْاٰخِرَةَ وَيَرْجُوْا رَحْمَةَ رَبِّهٖؕ قُلْ هَلْ يَسْتَوِى الَّذِيْنَ يَعْلَمُوْنَ وَالَّذِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَؕ اِنَّمَا يَتَذَكَّرُ اُولُو الْاَلْبَابِ
কাফিররা কি ঐ ব্যক্তির সমান যে ব্যক্তি রাতে সিজদারত অবস্থায় অথবা দাঁড়িয়ে ইবাদাত করে, আখিরাতকে ভয় করে এবং তার প্রতিপালকের রহমত প্রত্যাশা করে? বলো, যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান হতে পারে? নিশ্চয় জ্ঞানবান ব্যক্তিরাই উপদেশ গ্রহণ করে থাকে। (সূরা যুমার- ৯)
ব্যাখ্যা : এখানে দু’শ্রে্র্র্র্র্র্রণির মানুষের মধ্যে তুলনা করা হয়েছে। এক শ্রেণির মানুষ দুঃসময় আসলে আল্লাহর দিকে ফিরে যায়। কিন্তু স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে গায়রুল্লাহর দাসত্ব করে। আরেক শ্রেণির মানুষ আল্লাহর আনুগত্য এবং তাঁর দাসত্বকে তাদের স্থায়ী নীতি বানিয়ে নিয়েছে। রাতের অন্ধকারে আল্লাহর ইবাদাত করা তাদের একনিষ্ঠ হওয়ার প্রমাণ। এর মধ্যে প্রথম দলের অন্তর্ভুক্ত লোকদেরকে আল্লাহ তা‘আলা জ্ঞানহীন বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ ক্ষেত্রে তারা বড় বড় গ্রন্থাগার পড়ে থাকলেও কিছু আসে যায় না। আর দ্বিতীয় দলের অন্তর্ভুক্ত লোকদেরকে জ্ঞানী বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ ক্ষেত্রে একেবারে নিরক্ষর হলেও কিছু আসে যায় না। কারণ প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে সত্য সম্পর্কে জ্ঞান ও তদানুযায়ী কাজ। এর উপরই মানুষের সাফল্য নির্ভরশীল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, এ দু’শ্রেণির মানুষ কীভাবে সমান হতে পারে এবং আখিরাতেও একই পরিণামের সম্মুখীন হবে?
প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ ও কুরআনের মর্ম বুঝার উপযুক্ত সময় এটাই :
اِنَّ نَاشِئَةَ اللَّيْلِ هِيَ اَشَدُّ وَطْئًا وَّاَقْوَمُ قِيْلًا
রাতে বিছানা ত্যাগ করা আত্মসংযমের জন্য অধিক কার্যকর পন্থা এবং স্পষ্ট উচ্চারণের (কুরআন পাঠের) অনুকূল (সময়)। (সূরা মুয্যাম্মিল- ৬)
সফরের সময় কসর সালাত আদায় করা যায় :
وَاِذَا ضَرَبْتُمْ فِى الْاَرْضِ فَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ اَنْ تَقْصُرُوْا مِنَ الصَّلَاةِ اِنْ خِفْتُمْ اَنْ يَّفْتِنَكُمُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اِنَّ الْكَافِرِيْنَ كَانُوْا لَكُمْ عَدُوًّا مُّبِيْنًا
যখন তোমরা জমিনে সফর করবে তখন যদি তোমাদের আশঙ্কা হয় যে, কাফিররা তোমাদের জন্য ফিতনা সৃষ্টি করবে, তখন যদি তোমরা সালাত সংক্ষিপ্ত করে দাও তাহলে তাতে কোন দোষ নেই। নিশ্চয় কাফিররা তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা নিসা- ১০১)
ব্যাখ্যা : যেসব ওয়াক্তে চার রাকআত সালাত ফরয, সেসব ওয়াক্তে ফরয সালাত দু’রাকআত আদায় করাই হচ্ছে কসর। নবী ﷺ সফরে ফজরের সুন্নাত ও বেতর সালাত নিয়মিত পড়তেন; কিন্তু অন্যান্য ওয়াক্তে কেবল ফরয পড়তেন। নিয়মিত সুন্নাত পড়া তাঁর থেকে প্রমাণিত হয়নি। তবে যখনই নফল সালাতের সুযোগ পেতেন তখন তা পড়ে নিতেন। এমনকি সাওয়ারীর পিঠে বসেও নফল সালাত আদায় করতেন। মুসাফির যখন পথে চলমান অবস্থায় থাকে তখন তার সুন্নাত না পড়াই উত্তম। আর যখন কোন নিরাপদ স্থানে অবস্থান করতে থাকে তখন সুন্নাত পড়াই উত্তম।
খাউফ বা ভয়ের সময় সালাত আদায় করার নিয়ম :
وَاِذَا كُنْتَ فِيْهِمْ فَاَقَمْتَ لَهُمُ الصَّلَاةَ فَلْتَقُمْ طَآئِفَةٌ مِّنْهُمْ مَّعَكَ وَلْيَاْخُذُوْاۤ اَسْلِحَتَهُمْؕ فَاِذَا سَجَدُوْا فَلْيَكُوْنُوْا مِنْ وَّرَآئِكُمْ وَلْتَاْتِ طَآئِفَةٌ اُخْرٰى لَمْ يُصَلُّوْا فَلْيُصَلُّوْا مَعَكَ وَلْيَاْخُذُوْا حِذْرَهُمْ وَاَسْلِحَتَهُمْۚ وَدَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَوْ تَغْفُلُوْنَ عَنْ اَسْلِحَتِكُمْ وَاَمْتِعَتِكُمْ فَيَمِيْلُوْنَ عَلَيْكُمْ مَّيْلَةً وَّاحِدَةًؕ وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ اِنْ كَانَ بِكُمْ اَذًى مِّنْ مَّطَرٍ اَوْ كُنْتُمْ مَّرْضٰۤى اَنْ تَضَعُوْاۤ اَسْلِحَتَكُمْۚ وَخُذُوْا حِذْرَكُمْؕ اِنَّ اللهَ اَعَدَّ لِلْكَافِرِيْنَ عَذَابًا مُّهِيْنًا
আর যখন তুমি তাদের মধ্যে অবস্থান করবে, তখন তাদের সাথে সালাত কায়েম করবে। অতঃপর তাদের একদল যেন তোমার সঙ্গে দাঁড়ায় এবং তারা যেন সশস্ত্র থাকে। তারা সিজদায় গেলে তারা যেন তোমাদের পেছনে অবস্থান করে; আর অপর একদল যারা সালাতে শরীক হয়নি তারা যেন তোমার সঙ্গে সালাতে শরীক হয় এবং তারা যেন সতর্ক ও সশস্ত্র থাকে। কাফিররা কামনা করে যেন তোমরা তোমাদের অস্ত্রশস্ত্র ও আসবাবপত্র সম্বন্ধে অসতর্ক হও, যাতে তারা তোমাদের উপর একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। আর যদি তোমরা বৃষ্টির জন্য কষ্ট পাও অথবা পীড়িত থাক, তবে তোমরা অস্ত্র রেখে দিলে তোমাদের কোন দোষ নেই; কিন্তু তোমরা সতর্কতা অবলম্বন করবে। নিশ্চয় আল্লাহ কাফিরদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি। (সূরা নিসা- ১০২)
ব্যাখ্যা : যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যেভাবে সম্ভব সালাত আদায় করে নিতে হবে। জামা‘আতে আদায় করার সুযোগ থাকলে জামা‘আতের সাথে আদায় করে নিতে হবে। অন্যথায় একা একা আদায় করে নিতে হবে। কিবলার দিকে মুখ করে আদায় করা সম্ভব না হলে যে দিকে মুখ করে আদায় করা সম্ভব সেদিকেই মুখ করে আদায় করতে হবে। সাওয়ারীর পিঠে বসে চলন্ত অবস্থায়ও আদায় করা যেতে পারে। রুকূ ও সিজদা করা সম্ভব না হলে ইশারায় করতে হবে। কাপড়ে রক্ত লেগে থাকলেও কোন ক্ষতি নেই। এসব সহজ ব্যবস্থার পরও যদি অবস্থা এতই বিপজ্জনক হয়, যার ফলে সালাত আদায় করা সম্ভব না হয়, তাহলে বাধ্য হয়ে সালাত পিছিয়ে দিতে হবে। যেমন খন্দকের যুদ্ধের সময় হয়েছিল।
যুদ্ধের অবস্থার উপর ‘সালাতুল খাওফ’ আদায়ের পদ্ধতি নির্ভর করে। নবী ﷺ বিভিন্ন অবস্থায় বিভিন্ন পদ্ধতিতে এ সালাত আদায় করেছেন। কাজেই যুদ্ধের পরিস্থিতির আলোকে মুসলিম দলের প্রধান যেটির অনুমতি দেবে সে পদ্ধতিতেই সালাত আদায় করে নেবে।
وَاِذَا ضَرَبْتُمْ فِى الْاَرْضِ فَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ اَنْ تَقْصُرُوْا مِنَ الصَّلَاةِ اِنْ خِفْتُمْ اَنْ يَّفْتِنَكُمُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اِنَّ الْكَافِرِيْنَ كَانُوْا لَكُمْ عَدُوًّا مُّبِيْنًا
যখন তোমরা জমিনে সফর করবে তখন যদি তোমাদের আশঙ্কা হয় যে, কাফিররা তোমাদের জন্য ফিতনা সৃষ্টি করবে, তখন যদি তোমরা সালাত সংক্ষিপ্ত করে দাও তাহলে তাতে কোন দোষ নেই। নিশ্চয় কাফিররা তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা নিসা- ১০১)
ব্যাখ্যা : যেসব ওয়াক্তে চার রাকআত সালাত ফরয, সেসব ওয়াক্তে ফরয সালাত দু’রাকআত আদায় করাই হচ্ছে কসর। নবী ﷺ সফরে ফজরের সুন্নাত ও বেতর সালাত নিয়মিত পড়তেন; কিন্তু অন্যান্য ওয়াক্তে কেবল ফরয পড়তেন। নিয়মিত সুন্নাত পড়া তাঁর থেকে প্রমাণিত হয়নি। তবে যখনই নফল সালাতের সুযোগ পেতেন তখন তা পড়ে নিতেন। এমনকি সাওয়ারীর পিঠে বসেও নফল সালাত আদায় করতেন। মুসাফির যখন পথে চলমান অবস্থায় থাকে তখন তার সুন্নাত না পড়াই উত্তম। আর যখন কোন নিরাপদ স্থানে অবস্থান করতে থাকে তখন সুন্নাত পড়াই উত্তম।
খাউফ বা ভয়ের সময় সালাত আদায় করার নিয়ম :
وَاِذَا كُنْتَ فِيْهِمْ فَاَقَمْتَ لَهُمُ الصَّلَاةَ فَلْتَقُمْ طَآئِفَةٌ مِّنْهُمْ مَّعَكَ وَلْيَاْخُذُوْاۤ اَسْلِحَتَهُمْؕ فَاِذَا سَجَدُوْا فَلْيَكُوْنُوْا مِنْ وَّرَآئِكُمْ وَلْتَاْتِ طَآئِفَةٌ اُخْرٰى لَمْ يُصَلُّوْا فَلْيُصَلُّوْا مَعَكَ وَلْيَاْخُذُوْا حِذْرَهُمْ وَاَسْلِحَتَهُمْۚ وَدَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَوْ تَغْفُلُوْنَ عَنْ اَسْلِحَتِكُمْ وَاَمْتِعَتِكُمْ فَيَمِيْلُوْنَ عَلَيْكُمْ مَّيْلَةً وَّاحِدَةًؕ وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ اِنْ كَانَ بِكُمْ اَذًى مِّنْ مَّطَرٍ اَوْ كُنْتُمْ مَّرْضٰۤى اَنْ تَضَعُوْاۤ اَسْلِحَتَكُمْۚ وَخُذُوْا حِذْرَكُمْؕ اِنَّ اللهَ اَعَدَّ لِلْكَافِرِيْنَ عَذَابًا مُّهِيْنًا
আর যখন তুমি তাদের মধ্যে অবস্থান করবে, তখন তাদের সাথে সালাত কায়েম করবে। অতঃপর তাদের একদল যেন তোমার সঙ্গে দাঁড়ায় এবং তারা যেন সশস্ত্র থাকে। তারা সিজদায় গেলে তারা যেন তোমাদের পেছনে অবস্থান করে; আর অপর একদল যারা সালাতে শরীক হয়নি তারা যেন তোমার সঙ্গে সালাতে শরীক হয় এবং তারা যেন সতর্ক ও সশস্ত্র থাকে। কাফিররা কামনা করে যেন তোমরা তোমাদের অস্ত্রশস্ত্র ও আসবাবপত্র সম্বন্ধে অসতর্ক হও, যাতে তারা তোমাদের উপর একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। আর যদি তোমরা বৃষ্টির জন্য কষ্ট পাও অথবা পীড়িত থাক, তবে তোমরা অস্ত্র রেখে দিলে তোমাদের কোন দোষ নেই; কিন্তু তোমরা সতর্কতা অবলম্বন করবে। নিশ্চয় আল্লাহ কাফিরদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি। (সূরা নিসা- ১০২)
ব্যাখ্যা : যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যেভাবে সম্ভব সালাত আদায় করে নিতে হবে। জামা‘আতে আদায় করার সুযোগ থাকলে জামা‘আতের সাথে আদায় করে নিতে হবে। অন্যথায় একা একা আদায় করে নিতে হবে। কিবলার দিকে মুখ করে আদায় করা সম্ভব না হলে যে দিকে মুখ করে আদায় করা সম্ভব সেদিকেই মুখ করে আদায় করতে হবে। সাওয়ারীর পিঠে বসে চলন্ত অবস্থায়ও আদায় করা যেতে পারে। রুকূ ও সিজদা করা সম্ভব না হলে ইশারায় করতে হবে। কাপড়ে রক্ত লেগে থাকলেও কোন ক্ষতি নেই। এসব সহজ ব্যবস্থার পরও যদি অবস্থা এতই বিপজ্জনক হয়, যার ফলে সালাত আদায় করা সম্ভব না হয়, তাহলে বাধ্য হয়ে সালাত পিছিয়ে দিতে হবে। যেমন খন্দকের যুদ্ধের সময় হয়েছিল।
যুদ্ধের অবস্থার উপর ‘সালাতুল খাওফ’ আদায়ের পদ্ধতি নির্ভর করে। নবী ﷺ বিভিন্ন অবস্থায় বিভিন্ন পদ্ধতিতে এ সালাত আদায় করেছেন। কাজেই যুদ্ধের পরিস্থিতির আলোকে মুসলিম দলের প্রধান যেটির অনুমতি দেবে সে পদ্ধতিতেই সালাত আদায় করে নেবে।
মুনাফিকদের সালাত ধ্বংস ডেকে আনে :
فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّيْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُوْنَ
দুর্ভোগ সেসব সালাত আদায়কারীদের জন্য, যারা তাদের সালাতের ব্যাপারে গাফিল। (সূরা মাউন- ৪)
তারা লোক দেখানোর জন্য সালাত আদায় করে :
اَ لَّذِيْنَ هُمْ يُرَآءُوْنَ
যারা লোক দেখানোর জন্য আমল করে। (সূরা মাউন- ৬)
তারা অলস অবস্থায় সালাতে দাঁড়ায় :
اِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ يُخَادِعُوْنَ اللهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْۚ وَاِذَا قَامُوْاۤ اِلَى الصَّلَاةِ قَامُوْا كُسَالٰى يُرَآءُوْنَ النَّاسَ وَلَا يَذْكُرُوْنَ اللهَ اِلَّا قَلِيْلًا
নিশ্চয় মুনাফিকরা আল্লাহর সাথে প্রতারণা করছে; মূলত আল্লাহই তাদেরকে প্রতারণায় ফেলে দিচ্ছেন। যখন তারা সালাতে দাঁড়ায়, তখন অলসভাবে দাঁড়ায়। তারা মানুষকে দেখাতে চায়; বস্তুত তারা আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে। (সূরা নিসা- ১৪২)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ এর জীবদ্দশায় কোন ব্যক্তি নিয়মিত সালাত আদায় না করে মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারত না। ইসলামী দলের কোন সদস্যের জামা‘আতের সাথে সালাতে হাজির না থাকাকে সে সময় ঐ ব্যক্তির ইসলামের প্রতি অনাগ্রহের সুস্পষ্ট প্রমাণ মনে করা হতো। আর যদি সে অনবরত কয়েক ওয়াক্ত জামা‘আতে হাজির না থাকত, তাহলে ধরে নেয়া হতো সে মুসলিম নয়। তাই বড় বড় কট্টর মুনাফিকদেরকেও পাঁচ ওয়াক্ত মসজিদে উপস্থিত হতে হতো। কারণ এ ছাড়া তাদের পক্ষে মুসলিমদের দলের অন্তর্ভুক্ত থাকার জন্য দ্বিতীয় কোন পথ ছিল না। আযানের আওয়াজ কানে আসতেই মুনাফিকদের যেন প্রাণ বেরিয়ে যেত। মন চাইতো না তবুও দায়ে ঠেকে তারা ওঠতো। তাদের মসজিদের দিকে আসার ধরন দেখে পরিষ্কার বুঝা যেত যে, তারা স্বতষ্ফূর্তভাবে আসছে না বরং অনিচ্ছায় নিজেদেরকে টেনে টেনে আনছে। তারা জামা‘আত শেষ হওয়ার পর এমনভাবে মসজিদ থেকে পালাত, যেন মনে হতো কয়েদীরা জেলখানা থেকে মুক্তি পেয়েছে। তাদের ওঠাবসা, চলাফেরা তথা প্রতিটি পদক্ষেপ সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিত যে, আল্লাহর যিকিরের প্রতি তাদের বিন্দুমাত্র মানসিক টান ও আগ্রহ নেই।
উল্লেখিত আয়াতসমূহে মুনাফিকদের সালাতের যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে তা হচ্ছে :
১. তারা যখন সালাতে দাঁড়ায় তখন অলসভাবে দাঁড়ায়, তাদের ঈমান, নিয়ত কিছুই সঠিক নয় এবং তারা আল্লাহকে ভয় করে না।
২. তারা সালাতের মধ্যে আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে। সালাতের মধ্যে কী পড়েছে তা কিছুই বুঝে না। তাদের সালাতে মনোযোগ থাকে না।
৩. তারা সালাতের আরকান-আহকাম, রুকূ-সিজদা সঠিকভাবে আদায় করে না; বরং কাকের মতো কয়েকটা ঠোকর মেরে সালাতের দায় থেকে মুক্ত হতে চায়।
৪. তাদের সালাতে ইখলাস থাকে না, তারা লোক দেখানো সালাত আদায় করে। মানুষের সামনে নিজেদেরকে সালাত আদায়কারী হিসেবে তুলে ধরাই হলো তাদের সালাতের উদ্দেশ্য। এজন্য যে সালাতে মানুষ কম থাকে সে সালাতে তারা অনুপস্থিত থাকে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, মুনাফিকদের নিকট সবচেয়ে কঠিন সালাত হলো ফজর ও ইশার সালাত। আর তারা যদি জানত এ দু’সালাতে কী কল্যাণ রয়েছে, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও উপস্থিত হতো। (সহীহ বুখারী, হা/৬৭৫; সহীহ মুসলিম, হা/১৫১৪)
৫. তারা নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করে না, সালাতকে তার নির্ধারিত সময় থেকে পিছিয়ে দেয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, সেটা মুনাফিকের সালাত! সেটা মুনাফিকের সালাত! সেটা মুনাফিকের সালাত! যে বসে বসে সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকে। অতঃপর সূর্য যখন শয়তানের দু’শিঙ্গের মধ্যখানে চলে যায় অর্থাৎ সূর্য ডুবে যাওয়ার সময় ঘনিয়ে আসে তখন সে উঠে দাঁড়ায় এবং চারটি ঠোকর মারে, এর মধ্যে আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে। (সহীহ মুসলিম, হা/১৪৪৩)
৬. তারা নিয়মিত সালাত আদায় করে না, মাঝে মধ্যে আদায় করে। এতটুকু সালাত দ্বারা আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না। তাই নিয়মিত সালাতের অভ্যাস গড়ে তুলা সকল মুসলিমের উপর ফরয।
فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّيْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُوْنَ
দুর্ভোগ সেসব সালাত আদায়কারীদের জন্য, যারা তাদের সালাতের ব্যাপারে গাফিল। (সূরা মাউন- ৪)
তারা লোক দেখানোর জন্য সালাত আদায় করে :
اَ لَّذِيْنَ هُمْ يُرَآءُوْنَ
যারা লোক দেখানোর জন্য আমল করে। (সূরা মাউন- ৬)
তারা অলস অবস্থায় সালাতে দাঁড়ায় :
اِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ يُخَادِعُوْنَ اللهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْۚ وَاِذَا قَامُوْاۤ اِلَى الصَّلَاةِ قَامُوْا كُسَالٰى يُرَآءُوْنَ النَّاسَ وَلَا يَذْكُرُوْنَ اللهَ اِلَّا قَلِيْلًا
নিশ্চয় মুনাফিকরা আল্লাহর সাথে প্রতারণা করছে; মূলত আল্লাহই তাদেরকে প্রতারণায় ফেলে দিচ্ছেন। যখন তারা সালাতে দাঁড়ায়, তখন অলসভাবে দাঁড়ায়। তারা মানুষকে দেখাতে চায়; বস্তুত তারা আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে। (সূরা নিসা- ১৪২)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ এর জীবদ্দশায় কোন ব্যক্তি নিয়মিত সালাত আদায় না করে মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারত না। ইসলামী দলের কোন সদস্যের জামা‘আতের সাথে সালাতে হাজির না থাকাকে সে সময় ঐ ব্যক্তির ইসলামের প্রতি অনাগ্রহের সুস্পষ্ট প্রমাণ মনে করা হতো। আর যদি সে অনবরত কয়েক ওয়াক্ত জামা‘আতে হাজির না থাকত, তাহলে ধরে নেয়া হতো সে মুসলিম নয়। তাই বড় বড় কট্টর মুনাফিকদেরকেও পাঁচ ওয়াক্ত মসজিদে উপস্থিত হতে হতো। কারণ এ ছাড়া তাদের পক্ষে মুসলিমদের দলের অন্তর্ভুক্ত থাকার জন্য দ্বিতীয় কোন পথ ছিল না। আযানের আওয়াজ কানে আসতেই মুনাফিকদের যেন প্রাণ বেরিয়ে যেত। মন চাইতো না তবুও দায়ে ঠেকে তারা ওঠতো। তাদের মসজিদের দিকে আসার ধরন দেখে পরিষ্কার বুঝা যেত যে, তারা স্বতষ্ফূর্তভাবে আসছে না বরং অনিচ্ছায় নিজেদেরকে টেনে টেনে আনছে। তারা জামা‘আত শেষ হওয়ার পর এমনভাবে মসজিদ থেকে পালাত, যেন মনে হতো কয়েদীরা জেলখানা থেকে মুক্তি পেয়েছে। তাদের ওঠাবসা, চলাফেরা তথা প্রতিটি পদক্ষেপ সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিত যে, আল্লাহর যিকিরের প্রতি তাদের বিন্দুমাত্র মানসিক টান ও আগ্রহ নেই।
উল্লেখিত আয়াতসমূহে মুনাফিকদের সালাতের যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে তা হচ্ছে :
১. তারা যখন সালাতে দাঁড়ায় তখন অলসভাবে দাঁড়ায়, তাদের ঈমান, নিয়ত কিছুই সঠিক নয় এবং তারা আল্লাহকে ভয় করে না।
২. তারা সালাতের মধ্যে আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে। সালাতের মধ্যে কী পড়েছে তা কিছুই বুঝে না। তাদের সালাতে মনোযোগ থাকে না।
৩. তারা সালাতের আরকান-আহকাম, রুকূ-সিজদা সঠিকভাবে আদায় করে না; বরং কাকের মতো কয়েকটা ঠোকর মেরে সালাতের দায় থেকে মুক্ত হতে চায়।
৪. তাদের সালাতে ইখলাস থাকে না, তারা লোক দেখানো সালাত আদায় করে। মানুষের সামনে নিজেদেরকে সালাত আদায়কারী হিসেবে তুলে ধরাই হলো তাদের সালাতের উদ্দেশ্য। এজন্য যে সালাতে মানুষ কম থাকে সে সালাতে তারা অনুপস্থিত থাকে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, মুনাফিকদের নিকট সবচেয়ে কঠিন সালাত হলো ফজর ও ইশার সালাত। আর তারা যদি জানত এ দু’সালাতে কী কল্যাণ রয়েছে, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও উপস্থিত হতো। (সহীহ বুখারী, হা/৬৭৫; সহীহ মুসলিম, হা/১৫১৪)
৫. তারা নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করে না, সালাতকে তার নির্ধারিত সময় থেকে পিছিয়ে দেয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, সেটা মুনাফিকের সালাত! সেটা মুনাফিকের সালাত! সেটা মুনাফিকের সালাত! যে বসে বসে সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকে। অতঃপর সূর্য যখন শয়তানের দু’শিঙ্গের মধ্যখানে চলে যায় অর্থাৎ সূর্য ডুবে যাওয়ার সময় ঘনিয়ে আসে তখন সে উঠে দাঁড়ায় এবং চারটি ঠোকর মারে, এর মধ্যে আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে। (সহীহ মুসলিম, হা/১৪৪৩)
৬. তারা নিয়মিত সালাত আদায় করে না, মাঝে মধ্যে আদায় করে। এতটুকু সালাত দ্বারা আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না। তাই নিয়মিত সালাতের অভ্যাস গড়ে তুলা সকল মুসলিমের উপর ফরয।
অধিকাংশ লোকই সালাত ছেড়ে দিয়েছে :
فَخَلَفَ مِنْ ۢبَعْدِهِمْ خَلْفٌ اَضَاعُوا الصَّلَاةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا
তাদের পরে এমন লোক স্থলাভিষিক্ত হলো, যারা তাদের সালাতকে নষ্ট করেছে এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে। সুতরাং তারা অচিরেই শাস্তির সম্মুখীন হবে। (সূরা মারইয়াম- ৫৯)
ব্যাখ্যা : সালাত পরিত্যাগ করা বা সালাত থেকে গাফিল হওয়া প্রত্যেক উম্মতের ধ্বংসের প্রথম কারণ। সালাত মূলত আল্লাহর সাথে মুমিনের কার্যকর সম্পর্ক বজায় রাখে। এ সম্পর্ক তাকে আল্লাহর আনুগত্যের কেন্দ্র থেকে বিচ্যুত হতে দেয় না। এ বাঁধন ছিন্ন হলেই মানুষ আল্লাহ থেকে বহুদূরে চলে যায়। তাই আল্লাহ একটি সাধারণ নিয়ম হিসেবে এখানে এ কথাটি বর্ণনা করেছেন যে, পূর্ববর্তী সকল উম্মতের বিকৃতি শুরু হয়েছে সালাত পরিত্যাগ করার কারণে। আল্লাহর সাথে সম্পর্কের অভাব ও শূন্যতা সৃষ্টি হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে, সালাত ত্যাগ করা। সালাত ত্যাগ করার ফলে ব্যক্তির মন ধীরে ধীরে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফিল হয়ে যায়। অতঃপর ঐ ব্যক্তির মাঝে যতই এ গাফলতি বৃদ্ধি পেতে থাকে ততই প্রবৃত্তি পূজার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। অবশেষে এক সময় সে নৈতিক চরিত্র ও ব্যবহারিক জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুমের পরিবর্তে নিজের মনগড়া পদ্ধতি তথা তাগুতের অনুসারী হয়ে পড়ে।
শয়তানের ধোঁকায় পড়ে মানুষ সালাত ভুলে গেছে :
اِنَّمَا يُرِيْدُ الشَّيْطَانُ اَنْ يُّوْقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَآءَ فِى الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَعَنِ الصَّلَاةِ فَهَلْ اَنْتُمْ مُّنْتَهُوْنَ
নিশ্চয় শয়তান মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে ও সালাত আদায় করা থেকে বাধা দিতে চায়। তবুও কি তোমরা (এসব অন্যায় হতে) বিরত থাকবে না? (সূরা মায়েদা- ৯১)
আল্লাহকে সিজদা করতে অস্বীকার করা ইবলিসের কাজ :
وَاِذْ قُلْنَا لِلْمَلَآئِكَةِ اسْجُدُوْا لِاٰدَمَ فَسَجَدُوْاۤ اِلَّاۤ اِبْلِيْسَؕ اَبٰى وَاسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِيْنَ
যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বলেছিলাম, তোমরা আদমকে সিজদা করো তখন ইবলিস ব্যতীত সকলেই সিজদা করেছিল। সে অস্বীকার করল ও অহংকার করল এবং কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল। (সূরা বাক্বারা- ৩৪)
কিয়ামতের দিন সালাত পরিত্যাগকারীকে কঠিন দুর্ভোগ পোহাতে হবে :
وَاِذَا قِيْلَ لَهُمُ ارْكَعُوْا لَا يَرْكَعُوْنَ ‐ - وَيْلٌ يَّوْمَئِذٍ لِّلْمُكَذِّبِيْنَ
যখন তাদেরকে বলা হয়, তোমরা আল্লাহর সামনে নত হও; তখন তারা মাথা নত করে না। সুতরাং দুর্ভোগ এসব মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদের জন্য। (সূরা মুরসালাত- ৪৮, ৪৯)
সালাত ত্যাগকারীরা জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে :
كُلُّ نَفْسٍ ۢبِمَا كَسَبَتْ رَهِيْنَةٌ ‐ اِلَّاۤ اَصْحَابَ الْيَمِيْنِ ‐ فِيْ جَنَّاتٍؕ يَتَسَآءَلُوْنَ ‐ عَنِ الْمُجْرِمِيْنَ ‐ مَا سَلَكَكُمْ فِيْ سَقَرَ ‐ قَالُوْا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّيْنَ ‐ وَلَمْ نَكُ نُطْعِمُ الْمِسْكِيْنَ ‐ وَكُنَّا نَخُوْضُ مَعَ الْخَآئِضِيْنَ ‐ وَكُنَّا نُكَذِّبُ بِيَوْمِ الدِّيْنِ ‐ حَتّٰۤى اَتَانَا الْيَقِيْنُ
প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের কাছে দায়বদ্ধ, তবে দক্ষিণপার্শ্বস্থ ব্যক্তিরা (ডান হাতে আমলনামা প্রাপ্তগণ) ব্যতীত। তারা জান্নাতে থাকবে এবং তারা পরস্পর পরস্পরকে অপরাধীদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে, তোমাদেরকে কিসে সাক্বার (জাহান্নাম) এ নিক্ষেপ করেছে? তারা বলবে, আমরা সালাত আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না এবং অভাবগ্রস্তদের খাবার দিতাম না। আর আমরা সমালোচনাকারীদের সাথে সমালোচনায় মগ্ন থাকতাম এবং আমাদের নিকট মৃত্যু আসার পূর্ব পর্যন্ত আমরা কর্মফল দিবসকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতাম। (সূরা মুদ্দাস্সির, ৩৮-৪৭)
ব্যাখ্যা : سَقَرٌ (সাক্বার) হচ্ছে, জাহান্নামের একটি স্তরের নাম। এ আয়াতে সালাত আদায় না করাকে জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করে স্পষ্ট বলে দেয়া হয়েছে যে, সালাত পরিত্যাগ করার কারণে মানুষকে জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে।
কিয়ামতের দিন সালাত পরিত্যাগকারীরা আল্লাহকে সিজদা করতে পারবে না :
يَوْمَ يُكْشَفُ عَنْ سَاقٍ وَّيُدْعَوْنَ اِلَى السُّجُوْدِ فَلَا يَسْتَطِيْعُوْنَ
স্মরণ করো, সেদিন যাবতীয় রহস্য উদঘটিত হয়ে পড়বে এবং তাদেরকে সিজদা করতে আহবান করা হবে। কিন্তু সেদিন তারা সিজদা করতে পারবে না। (সূরা ক্বালাম- ৪২)
সেদিন তারা লাঞ্ছিত ও অপমানিত হবে :
خَاشِعَةً اَبْصَارُهُمْ تَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌؕ وَقَدْ كَانُوْا يُدْعَوْنَ اِلَى السُّجُوْدِ وَهُمْ سَالِمُوْنَ
তাদের দৃষ্টি হবে অবনত; অপমান ও লাঞ্ছনা তাদের উপর চেপে বসবে। (দুনিয়াতে) তারা যখন সুস্থ ও নিরাপদ ছিল তখন তাদেরকে সিজদা করার জন্য ডাকা হতো (কিন্তু তারা সিজদা করত না)। (সূরা ক্বালাম- ৪৩)
فَخَلَفَ مِنْ ۢبَعْدِهِمْ خَلْفٌ اَضَاعُوا الصَّلَاةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا
তাদের পরে এমন লোক স্থলাভিষিক্ত হলো, যারা তাদের সালাতকে নষ্ট করেছে এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে। সুতরাং তারা অচিরেই শাস্তির সম্মুখীন হবে। (সূরা মারইয়াম- ৫৯)
ব্যাখ্যা : সালাত পরিত্যাগ করা বা সালাত থেকে গাফিল হওয়া প্রত্যেক উম্মতের ধ্বংসের প্রথম কারণ। সালাত মূলত আল্লাহর সাথে মুমিনের কার্যকর সম্পর্ক বজায় রাখে। এ সম্পর্ক তাকে আল্লাহর আনুগত্যের কেন্দ্র থেকে বিচ্যুত হতে দেয় না। এ বাঁধন ছিন্ন হলেই মানুষ আল্লাহ থেকে বহুদূরে চলে যায়। তাই আল্লাহ একটি সাধারণ নিয়ম হিসেবে এখানে এ কথাটি বর্ণনা করেছেন যে, পূর্ববর্তী সকল উম্মতের বিকৃতি শুরু হয়েছে সালাত পরিত্যাগ করার কারণে। আল্লাহর সাথে সম্পর্কের অভাব ও শূন্যতা সৃষ্টি হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে, সালাত ত্যাগ করা। সালাত ত্যাগ করার ফলে ব্যক্তির মন ধীরে ধীরে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফিল হয়ে যায়। অতঃপর ঐ ব্যক্তির মাঝে যতই এ গাফলতি বৃদ্ধি পেতে থাকে ততই প্রবৃত্তি পূজার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। অবশেষে এক সময় সে নৈতিক চরিত্র ও ব্যবহারিক জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুমের পরিবর্তে নিজের মনগড়া পদ্ধতি তথা তাগুতের অনুসারী হয়ে পড়ে।
শয়তানের ধোঁকায় পড়ে মানুষ সালাত ভুলে গেছে :
اِنَّمَا يُرِيْدُ الشَّيْطَانُ اَنْ يُّوْقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَآءَ فِى الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَعَنِ الصَّلَاةِ فَهَلْ اَنْتُمْ مُّنْتَهُوْنَ
নিশ্চয় শয়তান মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে ও সালাত আদায় করা থেকে বাধা দিতে চায়। তবুও কি তোমরা (এসব অন্যায় হতে) বিরত থাকবে না? (সূরা মায়েদা- ৯১)
আল্লাহকে সিজদা করতে অস্বীকার করা ইবলিসের কাজ :
وَاِذْ قُلْنَا لِلْمَلَآئِكَةِ اسْجُدُوْا لِاٰدَمَ فَسَجَدُوْاۤ اِلَّاۤ اِبْلِيْسَؕ اَبٰى وَاسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِيْنَ
যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বলেছিলাম, তোমরা আদমকে সিজদা করো তখন ইবলিস ব্যতীত সকলেই সিজদা করেছিল। সে অস্বীকার করল ও অহংকার করল এবং কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল। (সূরা বাক্বারা- ৩৪)
কিয়ামতের দিন সালাত পরিত্যাগকারীকে কঠিন দুর্ভোগ পোহাতে হবে :
وَاِذَا قِيْلَ لَهُمُ ارْكَعُوْا لَا يَرْكَعُوْنَ ‐ - وَيْلٌ يَّوْمَئِذٍ لِّلْمُكَذِّبِيْنَ
যখন তাদেরকে বলা হয়, তোমরা আল্লাহর সামনে নত হও; তখন তারা মাথা নত করে না। সুতরাং দুর্ভোগ এসব মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদের জন্য। (সূরা মুরসালাত- ৪৮, ৪৯)
সালাত ত্যাগকারীরা জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে :
كُلُّ نَفْسٍ ۢبِمَا كَسَبَتْ رَهِيْنَةٌ ‐ اِلَّاۤ اَصْحَابَ الْيَمِيْنِ ‐ فِيْ جَنَّاتٍؕ يَتَسَآءَلُوْنَ ‐ عَنِ الْمُجْرِمِيْنَ ‐ مَا سَلَكَكُمْ فِيْ سَقَرَ ‐ قَالُوْا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّيْنَ ‐ وَلَمْ نَكُ نُطْعِمُ الْمِسْكِيْنَ ‐ وَكُنَّا نَخُوْضُ مَعَ الْخَآئِضِيْنَ ‐ وَكُنَّا نُكَذِّبُ بِيَوْمِ الدِّيْنِ ‐ حَتّٰۤى اَتَانَا الْيَقِيْنُ
প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের কাছে দায়বদ্ধ, তবে দক্ষিণপার্শ্বস্থ ব্যক্তিরা (ডান হাতে আমলনামা প্রাপ্তগণ) ব্যতীত। তারা জান্নাতে থাকবে এবং তারা পরস্পর পরস্পরকে অপরাধীদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে, তোমাদেরকে কিসে সাক্বার (জাহান্নাম) এ নিক্ষেপ করেছে? তারা বলবে, আমরা সালাত আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না এবং অভাবগ্রস্তদের খাবার দিতাম না। আর আমরা সমালোচনাকারীদের সাথে সমালোচনায় মগ্ন থাকতাম এবং আমাদের নিকট মৃত্যু আসার পূর্ব পর্যন্ত আমরা কর্মফল দিবসকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতাম। (সূরা মুদ্দাস্সির, ৩৮-৪৭)
ব্যাখ্যা : سَقَرٌ (সাক্বার) হচ্ছে, জাহান্নামের একটি স্তরের নাম। এ আয়াতে সালাত আদায় না করাকে জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করে স্পষ্ট বলে দেয়া হয়েছে যে, সালাত পরিত্যাগ করার কারণে মানুষকে জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে।
কিয়ামতের দিন সালাত পরিত্যাগকারীরা আল্লাহকে সিজদা করতে পারবে না :
يَوْمَ يُكْشَفُ عَنْ سَاقٍ وَّيُدْعَوْنَ اِلَى السُّجُوْدِ فَلَا يَسْتَطِيْعُوْنَ
স্মরণ করো, সেদিন যাবতীয় রহস্য উদঘটিত হয়ে পড়বে এবং তাদেরকে সিজদা করতে আহবান করা হবে। কিন্তু সেদিন তারা সিজদা করতে পারবে না। (সূরা ক্বালাম- ৪২)
সেদিন তারা লাঞ্ছিত ও অপমানিত হবে :
خَاشِعَةً اَبْصَارُهُمْ تَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌؕ وَقَدْ كَانُوْا يُدْعَوْنَ اِلَى السُّجُوْدِ وَهُمْ سَالِمُوْنَ
তাদের দৃষ্টি হবে অবনত; অপমান ও লাঞ্ছনা তাদের উপর চেপে বসবে। (দুনিয়াতে) তারা যখন সুস্থ ও নিরাপদ ছিল তখন তাদেরকে সিজদা করার জন্য ডাকা হতো (কিন্তু তারা সিজদা করত না)। (সূরা ক্বালাম- ৪৩)
اَلزَّكٰوةُ (আয যাকাত) এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে- বৃদ্ধি পাওয়া, বর্ধিত হওয়া, পবিত্র হওয়া, কোন বস্তুকে পরিশুদ্ধ করা ইত্যাদি। আর পারিভাষিক অর্থে যাকাত হলো- নিসাব পরিমান সম্পদের মালিকের ধনসম্পদের নির্ধারিত ফরয অংশ নির্ধারিত খাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষে বন্টন করা।
ইসলামের স্তম্ভসমূহের মধ্যে তৃতীয় ও সালাতের পরবর্তী স্থান অধিকরী ইবাদাত হচ্ছে যাকাত। মানবসভ্যতার সূচনালগ্ন হতেই সমাজে যাকাত ব্যবস্থার প্রচলন ছিল বলে কুরআনে সুস্পষ্ট বক্তব্য বিদ্যমান। উম্মাতে মুহাম্মাদীর উপর যাকাতের বিধান উক্ত ধারাবাহিকতারই অংশ।
মোট ৫ প্রকার সম্পদের যাকাত দিতে হয়।
১. স্বর্ণ, রৌপ্য,
২. নগদ টাকা ও বিক্রয়ের জন্য নির্ধারিত দ্রব্য বা ব্যবসায়ের পণ্য,
৩. পালিত পশু (উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা।)
৪. ফল-ফসল (সকল প্রকার ভূমিজ উৎপাদন।)
৫. খনিজ সম্পদ ( مَعْدَنٌ ) ও মাটির নিচে সঞ্চিত সম্পদ ( رِكَازٌ ) বা গুপ্তধন।
ইসলামের স্তম্ভসমূহের মধ্যে তৃতীয় ও সালাতের পরবর্তী স্থান অধিকরী ইবাদাত হচ্ছে যাকাত। মানবসভ্যতার সূচনালগ্ন হতেই সমাজে যাকাত ব্যবস্থার প্রচলন ছিল বলে কুরআনে সুস্পষ্ট বক্তব্য বিদ্যমান। উম্মাতে মুহাম্মাদীর উপর যাকাতের বিধান উক্ত ধারাবাহিকতারই অংশ।
মোট ৫ প্রকার সম্পদের যাকাত দিতে হয়।
১. স্বর্ণ, রৌপ্য,
২. নগদ টাকা ও বিক্রয়ের জন্য নির্ধারিত দ্রব্য বা ব্যবসায়ের পণ্য,
৩. পালিত পশু (উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা।)
৪. ফল-ফসল (সকল প্রকার ভূমিজ উৎপাদন।)
৫. খনিজ সম্পদ ( مَعْدَنٌ ) ও মাটির নিচে সঞ্চিত সম্পদ ( رِكَازٌ ) বা গুপ্তধন।
সকল নবীর যুগে যাকাতের বিধান ছিল :
وَجَعَلْنَاهُمْ اَئِمَّةً يَّهْدُوْنَ بِاَمْرِنَا وَاَوْحَيْنَاۤ اِلَيْهِمْ فِعْلَ الْخَيْرَاتِ وَاِقَامَ الصَّلَاةِ وَاِيْتَآءَ الزَّكَاةِۚ وَكَانُوْا لَنَا عَابِدِيْنَ
তাদেরকে (নবীদেরকে) আমি নেতা বানিয়েছিলাম, যেন তারা আমার নির্দেশানুসারে মানুষকে পথপ্রদর্শন করতে পারে। আর তাদের নিকট ওহী প্রেরণ করেছিলাম, যেন তারা সৎকর্ম করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত প্রদান করে; আর তারা ছিল আমারই ইবাদাতকারী। (সূরা আম্বিয়া- ৭৩)
যাকাত আদায়ের জন্য আল্লাহর নির্দেশ :
وَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَ وَارْكَعُوْا مَعَ الرَّاكِعِيْنَ
আর তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো ও যাকাত প্রদান করো এবং রুকূকারীদের সাথে রুকূ করো। (সূরা বাক্বারা- ৪৩)
وَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَ وَاَقْرِضُوا اللهَ قَرْضًا حَسَنًا
সালাত প্রতিষ্ঠা করো, যাকাত প্রদান করো এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও। (সূরা মুয্যাম্মিল- ২০)
মহিলাদের প্রতিও যাকাত আদায়ের নির্দেশ এসেছে :
وَاَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَاٰتِيْنَ الزَّكَاةَ وَاَطِعْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ
তোমরা (মহিলারা) সালাত আদায় করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ পালন করবে। (সূরা আহযাব- ৩৩)
যাকাত আদায় করা মুমিনের একটি মৌলিক গুণ :
وَالْمُؤْمِنُوْنَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍؕ يَاْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَيُطِيْعُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗؕ اُولٰٓئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللهُؕ اِنَّ اللهَ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
মুমিন নর ও মুমিন নারী একে অপরের বন্ধু, তারা সৎকাজের নির্দেশ দেয় এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। অচিরেই আল্লাহ তাদের উপর অনুগ্রহ করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা- ৭১)
সাহাবীরা যাকাত আদায় করতেন :
رِجَالٌ لَّا تُلْهِيْهِمْ تِجَارَةٌ وَّلَا بَيْعٌ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَاِقَامِ الصَّلَاةِ وَاِيْتَآءِ الزَّكَاةِۚ يَخَافُوْنَ يَوْمًا تَتَقَلَّبُ فِيْهِ الْقُلُوْبُ وَالْاَبْصَارُ
তারা এমন লোক, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ হতে এবং সালাত কায়েম ও যাকাত প্রদান করা হতে বিরত রাখে না। তারা সেদিনকে ভয় করে, যেদিন অন্তর ও দৃষ্টিসমূহ বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। (সূরা নূর- ৩৭)
যাকাতের মাল গরীবের হক :
وَفِۤيْ اَمْوَالِهِمْ حَقٌّ لِّلسَّآئِلِ وَالْمَحْرُوْمِ
তাদের ধনসম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের হক। (সূরা যারিয়াত- ১৯)
وَالَّذِيْنَ فِۤيْ اَمْوَالِهِمْ حَقٌّ مَّعْلُوْمٌ ‐ لِلسَّآئِلِ وَالْمَحْرُوْمِ
আর (যারা মনে করে) তাদের সম্পদে ভিক্ষুক ও বঞ্চিতদের জন্য নির্ধারিত হক রয়েছে। (সূরা মা‘আরিজ- ২৪, ২৫)
উৎপাদিত ফসলেরও যাকাত দিতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَنْفِقُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا كَسَبْتُمْ وَمِمَّاۤ اَخْرَجْنَا لَكُمْ مِّنَ الْاَرْضِ وَلَا تَيَمَّمُوا الْخَبِيْثَ مِنْهُ تُنْفِقُوْنَ وَلَسْتُمْ بِاٰخِذِيْهِ اِلَّاۤ اَنْ تُغْمِضُوْا فِيْهِؕ وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ غَنِيٌّ حَمِيْدٌ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যা উপার্জন করেছ এবং আমি জমিন থেকে তোমাদের জন্য যা বের করেছি তার মধ্য হতে পবিত্র জিনিসসমূহ দান করো। আর তোমরা খারাপ জিনিস দান করার ইচ্ছা করো না। কেননা অন্ধ না হলে তোমরা নিজেরাই তো সেটা গ্রহণ করতে চাও না। জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ সম্পদশালী ও প্রশংসিত। (সূরা বাক্বারা- ২৬৭)
ফসল কাটার দিনই এর যাকাত আদায় করা আল্লাহর নির্দেশ :
وَهُوَ الَّذِيْۤ اَنْشَاَ جَنَّاتٍ مَّعْرُوْشَاتٍ وَّغَيْرَ مَعْرُوْشَاتٍ وَّالنَّخْلَ وَالزَّرْعَ مُخْتَلِفًا اُكُلُهٗ وَالزَّيْتُوْنَ وَالرُّمَّانَ مُتَشَابِهًا وَّغَيْرَ مُتَشَابِهٍ ؕ كُلُوْا مِنْ ثَمَرِهٖۤ اِذَاۤ اَثْمَرَ وَاٰتُوْا حَقَّهٗ يَوْمَ حَصَادِهٖ وَلَا تُسْرِفُوْاؕ اِنَّهٗ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِيْنَ
আল্লাহ ঐ সত্তা, যিনি নানা প্রকারের উদ্যান বানিয়েছেন, কিছু লতা-গুল্ম, যা কোন কান্ড ছাড়াই মাচানের উপর তুলে রাখা হয়েছে, (আবার কিছু গাছ), যা মাচানের উপর তুলে রাখা হয়নি (স্বীয় কান্ডের উপর তা এমনিই দাঁড়িয়ে আছে। তিনি আরো সৃষ্টি করেছেন), খেজুর গাছ এবং বিভিন্ন (স্বাদ ও) প্রকারবিশিষ্ট খাদ্যশস্য ও আনার। এগুলো (স্বাদে-গন্ধে) এক রকমও হতে পারে, আবার ভিন্ন ধরনেরও হতে পারে, যখন তা ফলবান হয় তোমরা তার ফল খাও, আর তোমরা ফসল তুলার দিন তার হক আদায় করো। আর কখনো অপচয় করো না; নিঃসন্দেহে, আল্লাহ অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা আন‘আম- ১৪১)
وَجَعَلْنَاهُمْ اَئِمَّةً يَّهْدُوْنَ بِاَمْرِنَا وَاَوْحَيْنَاۤ اِلَيْهِمْ فِعْلَ الْخَيْرَاتِ وَاِقَامَ الصَّلَاةِ وَاِيْتَآءَ الزَّكَاةِۚ وَكَانُوْا لَنَا عَابِدِيْنَ
তাদেরকে (নবীদেরকে) আমি নেতা বানিয়েছিলাম, যেন তারা আমার নির্দেশানুসারে মানুষকে পথপ্রদর্শন করতে পারে। আর তাদের নিকট ওহী প্রেরণ করেছিলাম, যেন তারা সৎকর্ম করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত প্রদান করে; আর তারা ছিল আমারই ইবাদাতকারী। (সূরা আম্বিয়া- ৭৩)
যাকাত আদায়ের জন্য আল্লাহর নির্দেশ :
وَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَ وَارْكَعُوْا مَعَ الرَّاكِعِيْنَ
আর তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো ও যাকাত প্রদান করো এবং রুকূকারীদের সাথে রুকূ করো। (সূরা বাক্বারা- ৪৩)
وَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَ وَاَقْرِضُوا اللهَ قَرْضًا حَسَنًا
সালাত প্রতিষ্ঠা করো, যাকাত প্রদান করো এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও। (সূরা মুয্যাম্মিল- ২০)
মহিলাদের প্রতিও যাকাত আদায়ের নির্দেশ এসেছে :
وَاَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَاٰتِيْنَ الزَّكَاةَ وَاَطِعْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ
তোমরা (মহিলারা) সালাত আদায় করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ পালন করবে। (সূরা আহযাব- ৩৩)
যাকাত আদায় করা মুমিনের একটি মৌলিক গুণ :
وَالْمُؤْمِنُوْنَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍؕ يَاْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَيُطِيْعُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗؕ اُولٰٓئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللهُؕ اِنَّ اللهَ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
মুমিন নর ও মুমিন নারী একে অপরের বন্ধু, তারা সৎকাজের নির্দেশ দেয় এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। অচিরেই আল্লাহ তাদের উপর অনুগ্রহ করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা- ৭১)
সাহাবীরা যাকাত আদায় করতেন :
رِجَالٌ لَّا تُلْهِيْهِمْ تِجَارَةٌ وَّلَا بَيْعٌ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَاِقَامِ الصَّلَاةِ وَاِيْتَآءِ الزَّكَاةِۚ يَخَافُوْنَ يَوْمًا تَتَقَلَّبُ فِيْهِ الْقُلُوْبُ وَالْاَبْصَارُ
তারা এমন লোক, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ হতে এবং সালাত কায়েম ও যাকাত প্রদান করা হতে বিরত রাখে না। তারা সেদিনকে ভয় করে, যেদিন অন্তর ও দৃষ্টিসমূহ বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। (সূরা নূর- ৩৭)
যাকাতের মাল গরীবের হক :
وَفِۤيْ اَمْوَالِهِمْ حَقٌّ لِّلسَّآئِلِ وَالْمَحْرُوْمِ
তাদের ধনসম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের হক। (সূরা যারিয়াত- ১৯)
وَالَّذِيْنَ فِۤيْ اَمْوَالِهِمْ حَقٌّ مَّعْلُوْمٌ ‐ لِلسَّآئِلِ وَالْمَحْرُوْمِ
আর (যারা মনে করে) তাদের সম্পদে ভিক্ষুক ও বঞ্চিতদের জন্য নির্ধারিত হক রয়েছে। (সূরা মা‘আরিজ- ২৪, ২৫)
উৎপাদিত ফসলেরও যাকাত দিতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَنْفِقُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا كَسَبْتُمْ وَمِمَّاۤ اَخْرَجْنَا لَكُمْ مِّنَ الْاَرْضِ وَلَا تَيَمَّمُوا الْخَبِيْثَ مِنْهُ تُنْفِقُوْنَ وَلَسْتُمْ بِاٰخِذِيْهِ اِلَّاۤ اَنْ تُغْمِضُوْا فِيْهِؕ وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ غَنِيٌّ حَمِيْدٌ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যা উপার্জন করেছ এবং আমি জমিন থেকে তোমাদের জন্য যা বের করেছি তার মধ্য হতে পবিত্র জিনিসসমূহ দান করো। আর তোমরা খারাপ জিনিস দান করার ইচ্ছা করো না। কেননা অন্ধ না হলে তোমরা নিজেরাই তো সেটা গ্রহণ করতে চাও না। জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ সম্পদশালী ও প্রশংসিত। (সূরা বাক্বারা- ২৬৭)
ফসল কাটার দিনই এর যাকাত আদায় করা আল্লাহর নির্দেশ :
وَهُوَ الَّذِيْۤ اَنْشَاَ جَنَّاتٍ مَّعْرُوْشَاتٍ وَّغَيْرَ مَعْرُوْشَاتٍ وَّالنَّخْلَ وَالزَّرْعَ مُخْتَلِفًا اُكُلُهٗ وَالزَّيْتُوْنَ وَالرُّمَّانَ مُتَشَابِهًا وَّغَيْرَ مُتَشَابِهٍ ؕ كُلُوْا مِنْ ثَمَرِهٖۤ اِذَاۤ اَثْمَرَ وَاٰتُوْا حَقَّهٗ يَوْمَ حَصَادِهٖ وَلَا تُسْرِفُوْاؕ اِنَّهٗ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِيْنَ
আল্লাহ ঐ সত্তা, যিনি নানা প্রকারের উদ্যান বানিয়েছেন, কিছু লতা-গুল্ম, যা কোন কান্ড ছাড়াই মাচানের উপর তুলে রাখা হয়েছে, (আবার কিছু গাছ), যা মাচানের উপর তুলে রাখা হয়নি (স্বীয় কান্ডের উপর তা এমনিই দাঁড়িয়ে আছে। তিনি আরো সৃষ্টি করেছেন), খেজুর গাছ এবং বিভিন্ন (স্বাদ ও) প্রকারবিশিষ্ট খাদ্যশস্য ও আনার। এগুলো (স্বাদে-গন্ধে) এক রকমও হতে পারে, আবার ভিন্ন ধরনেরও হতে পারে, যখন তা ফলবান হয় তোমরা তার ফল খাও, আর তোমরা ফসল তুলার দিন তার হক আদায় করো। আর কখনো অপচয় করো না; নিঃসন্দেহে, আল্লাহ অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা আন‘আম- ১৪১)
যাকাত একটি লাভজনক ব্যবসা :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَتْلُوْنَ كِتَابَ اللهِ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاَنْفَقُوْا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَّعَلَانِيَةً يَّرْجُوْنَ تِجَارَةً لَّنْ تَبُوْرَ
যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, সালাত কায়েম করে এবং তাদেরকে যা কিছু রিযিক হিসেবে দান করেছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে; তারা এমন ব্যবসার আশা করে, যাতে কখনো লোকসান হবে না। (সূরা ফাতির- ২৯)
যাকাত দিলে মাল কমে না, বরং বৃদ্ধি পায় :
وَمَاۤ اٰتَيْتُمْ مِّنْ رِّبًا لِّيَرْبُوَاْ فِۤيْ اَمْوَالِ النَّاسِ فَلَا يَرْبُوْا عِنْدَ اللهِ وَمَاۤ اٰتَيْتُمْ مِّنْ زَكَاةٍ تُرِيْدُوْنَ وَجْهَ اللهِ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُضْعِفُوْنَ
মানুষের ধনসম্পদে তোমাদের সম্পদ বৃদ্ধি পাবে- এ আশায় তোমরা যা কিছু সুদে (ঋণ) দিয়ে থাক, আল্লাহর কাছে তা বৃদ্ধি পায় না। পক্ষান্তরে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য যা কিছু যাকাত হিসেবে দিয়ে থাক, তবে এরূপ লোকের (প্রদত্ত বস্তু) আল্লাহর নিকট বৃদ্ধি পেতে থাকবে। (সূরা রূম- ৩৯)
যাকাত দিলে আত্মা পবিত্র হয় :
خُذْ مِنْ اَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيْهِمْ بِهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْؕ اِنَّ صَلَاتَكَ سَكَنٌ لَّهُمْؕ وَاللهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
তাদের সম্পদ হতে ‘সাদাকা’ গ্রহণ করবে। এটার দ্বারা তুমি তাদেরকে পবিত্র করবে এবং পরিশুদ্ধ করবে। তুমি তাদেরকে দু‘আ করবে। তোমার দু‘আ তো তাদের জন্য প্রশান্তি যোগায়। আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা তাওবা- ১০৩)
যাকাত আদায় করলে আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয় :
وَمِنَ الْاَعْرَابِ مَنْ يُّؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَيَتَّخِذُ مَا يُنْفِقُ قُرُبَاتٍ عِنْدَ اللهِ وَصَلَوَاتِ الرَّسُوْلِؕ اَلَاۤ اِنَّهَا قُرْبَةٌ لَّهُمْؕ سَيُدْخِلُهُمُ اللهُ فِيْ رَحْمَتِهٖؕ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
মরুবাসীদের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে যাদের কেউ কেউ আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে এবং যা ব্যয় করে তাকে আল্লাহর সান্নিধ্য ও রাসূলের দু‘আ লাভের উপায় মনে করে। বাস্তবিকই তা তাদের জন্য আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়, (কেননা এর মাধ্যমেই) আল্লাহ তাদেরকে নিজ রহমতে প্রবেশ করাবেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা তাওবা- ৯৯)
যাকাত আদায়কারীরা আল্লাহর সাহায্য লাভ করে :
وَقَالَ اللهُ اِنِّيْ مَعَكُمْؕ لَئِنْ اَقَمْتُمُ الصَّلَاةَ وَاٰتَيْتُمُ الزَّكَاةَ
আল্লাহ বলেছিলেন, তোমরা যদি সালাত কায়েম কর এবং যাকাত দাও, তবে নিশ্চয় আমি তোমাদের সাথেই আছি। (সূরা মায়েদা- ১২)
যাকাত আদায়ে আল্লাহর রহমত লাভ হয় :
وَرَحْمَتِيْ وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍؕ فَسَاَكْتُبُهَا لِلَّذِيْنَ يَتَّقُوْنَ وَيُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَالَّذِيْنَ هُمْ بِاٰيَاتِنَا يُؤْمِنُوْنَ
আমার দয়া প্রত্যেক বস্তুর উপর প্রশস্ত। সুতরাং আমি তা তাদের জন্য নির্ধারণ করব, যারা তাক্বওয়া অবলম্বন করে, যাকাত দেয় এবং আমার নিদর্শনসমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে। (সূরা আ‘রাফ- ১৫৬)
যাকাতের প্রতিদান আল্লাহর কাছে পাওয়া যাবে :
وَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَؕ وَمَا تُقَدِّمُوْا لِاَنْفُسِكُمْ مِّنْ خَيْرٍ تَجِدُوْهُ عِنْدَ اللهِؕ اِنَّ اللهَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো, যাকাত প্রদান করো। আর তোমরা নিজেদের জন্য যে সৎকর্ম আগে প্রেরণ করেছ তা আল্লাহর নিকট পাবে। তোমরা যা করছ নিশ্চয় আল্লাহ তা দেখছেন। (সূরা বাক্বারা- ১১০)
যাকাত আদায়কারীরা সফলতা লাভ করে :
قَدْ اَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ هُمْ فِيْ صَلَاتِهِمْ خَاشِعُوْنَ ‐ وَالَّذِيْنَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُوْنَ ‐ وَالَّذِيْنَ هُمْ لِلزَّكَاةِ فَاعِلُوْنَ
অবশ্যই সফলকাম হয়েছে ঐসব মুমিনগণ, যারা নিজেদের সালাতে বিনয় ও নম্র, যারা অনর্থক ক্রিয়াকলাপ হতে বিরত থাকে, যারা যাকাত দানে সক্রিয়। (সূরা মু’মিনূন, ১-৪)
যাকাত আদায় করা জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায় :
وَسَيُجَنَّبُهَا الْاَتْقٰى ‐ اَ لَّذِيْ يُؤْتِيْ مَالَهٗ يَتَزَكّٰى
অচিরেই সে ব্যক্তিকে তা (জাহান্নাম) থেকে দূরে রাখা হবে, যে আল্লাহকে ভয় করে এবং যে পবিত্রতা অর্জনের উদ্দেশ্যে নিজের ধনসম্পদ হতে ব্যয় করে। (সূরা লাইল- ১৭, ১৮)
যাকাত আদায়কারীরা মুমিনদের দ্বীনী ভাই :
فَاِنْ تَابُوْا وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ فَاِخْوَانُكُمْ فِى الدِّيْنِؕ وَنُفَصِّلُ الْاٰيَاتِ لِقَوْمٍ يَّعْلَمُوْنَ
অতএব যদি তারা সালাত আদায় করে ও যাকাত দেয়, তবে তারা তো তোমাদেরই দ্বীনি ভাই। আর আমি আমার নিদর্শনসমূহ জ্ঞানবুদ্ধিসম্পন্ন লোকদের জন্য স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে থাকি। (সূরা তাওবা- ১১)
যাকাত আদায়কারীরা ইসলামী রাষ্ট্রে নিরাপত্তা লাভ করে থাকে :
فَاِذَا انْسَلَخَ الْاَشْهُرُ الْحُرُمُ فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِيْنَ حَيْثُ وَجَدْتُّمُوْهُمْ وَخُذُوْهُمْ وَاحْصُرُوْهُمْ وَاقْعُدُوْا لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍۚ فَاِنْ تَابُوْا وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ فَخَلُّوْا سَبِيْلَهُمْؕ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে মুশরিকদেরকে যেখানে পাবে হত্যা করবে। তাদেরকে বন্দী করবে, অবরোধ করবে এবং প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের জন্য ওঁৎ পেতে (বসে) থাকবে। কিন্তু যদি তারা তাওবা করে, সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয়, তবে তাদের পথ ছেড়ে দেবে। নিশ্চয় আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা তাওবা- ৫)
যাকাতব্যবস্থা চালু করা সরকারের দায়িত্ব :
اَ لَّذِيْنَ اِنْ مَّكَّنَّاهُمْ فِى الْاَرْضِ اَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ وَاَمَرُوْا بِالْمَعْرُوْفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنْكَرِؕ وَلِلّٰهِ عَاقِبَةُ الْاُمُوْرِ
আমি এদেরকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দান করলে এরা সালাত কায়েম করবে, যাকাত আদায়ের ব্যবস্থা করবে এবং সৎকাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে; (জেনে রেখো) সকল কর্মের পরিণাম আল্লাহর ইখতিয়ারে। (সূরা হজ্জ- ৪১)
সরকারিভাবে যাকাত উত্তোলনের জন্য নবী ﷺ এর প্রতি নির্দেশ :
خُذْ مِنْ اَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيْهِمْ بِهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْؕ اِنَّ صَلَاتَكَ سَكَنٌ لَّهُمْؕ وَاللهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
তাদের সম্পদ হতে যাকাত গ্রহণ করবে। এর দ্বারা তুমি তাদেরকে পবিত্র করবে এবং পরিশুদ্ধ করবে। আর তুমি তাদেরকে দু‘আ করবে। নিশ্চয় তোমার দু‘আ তাদের জন্য প্রশান্তিদায়ক; আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা তাওবা- ১০৩)
যাকাত বণ্টনের খাতসমূহ :
اِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَآءِ وَالْمَسَاكِيْنِ وَالْعَامِلِيْنَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوْبُهُمْ وَفِى الرِّقَابِ وَالْغَارِمِيْنَ وَفِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَابْنِ السَّبِيْلِؕ فَرِيْضَةً مِّنَ اللهِ ؕ وَاللهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ
যাকাত তো কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত ও তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জন্য, (অমুসলিমদের মধ্যে) যাদের মন জয় করা উদ্দেশ্য হয় তাদের জন্য, দাসমুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে ব্যয় করার জন্য এবং মুসাফিরদের জন্য। এটা আল্লাহর নির্ধারিত বিধান; আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা- ৬০)
اِنَّ الَّذِيْنَ يَتْلُوْنَ كِتَابَ اللهِ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاَنْفَقُوْا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَّعَلَانِيَةً يَّرْجُوْنَ تِجَارَةً لَّنْ تَبُوْرَ
যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, সালাত কায়েম করে এবং তাদেরকে যা কিছু রিযিক হিসেবে দান করেছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে; তারা এমন ব্যবসার আশা করে, যাতে কখনো লোকসান হবে না। (সূরা ফাতির- ২৯)
যাকাত দিলে মাল কমে না, বরং বৃদ্ধি পায় :
وَمَاۤ اٰتَيْتُمْ مِّنْ رِّبًا لِّيَرْبُوَاْ فِۤيْ اَمْوَالِ النَّاسِ فَلَا يَرْبُوْا عِنْدَ اللهِ وَمَاۤ اٰتَيْتُمْ مِّنْ زَكَاةٍ تُرِيْدُوْنَ وَجْهَ اللهِ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُضْعِفُوْنَ
মানুষের ধনসম্পদে তোমাদের সম্পদ বৃদ্ধি পাবে- এ আশায় তোমরা যা কিছু সুদে (ঋণ) দিয়ে থাক, আল্লাহর কাছে তা বৃদ্ধি পায় না। পক্ষান্তরে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য যা কিছু যাকাত হিসেবে দিয়ে থাক, তবে এরূপ লোকের (প্রদত্ত বস্তু) আল্লাহর নিকট বৃদ্ধি পেতে থাকবে। (সূরা রূম- ৩৯)
যাকাত দিলে আত্মা পবিত্র হয় :
خُذْ مِنْ اَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيْهِمْ بِهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْؕ اِنَّ صَلَاتَكَ سَكَنٌ لَّهُمْؕ وَاللهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
তাদের সম্পদ হতে ‘সাদাকা’ গ্রহণ করবে। এটার দ্বারা তুমি তাদেরকে পবিত্র করবে এবং পরিশুদ্ধ করবে। তুমি তাদেরকে দু‘আ করবে। তোমার দু‘আ তো তাদের জন্য প্রশান্তি যোগায়। আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা তাওবা- ১০৩)
যাকাত আদায় করলে আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয় :
وَمِنَ الْاَعْرَابِ مَنْ يُّؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَيَتَّخِذُ مَا يُنْفِقُ قُرُبَاتٍ عِنْدَ اللهِ وَصَلَوَاتِ الرَّسُوْلِؕ اَلَاۤ اِنَّهَا قُرْبَةٌ لَّهُمْؕ سَيُدْخِلُهُمُ اللهُ فِيْ رَحْمَتِهٖؕ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
মরুবাসীদের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে যাদের কেউ কেউ আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে এবং যা ব্যয় করে তাকে আল্লাহর সান্নিধ্য ও রাসূলের দু‘আ লাভের উপায় মনে করে। বাস্তবিকই তা তাদের জন্য আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়, (কেননা এর মাধ্যমেই) আল্লাহ তাদেরকে নিজ রহমতে প্রবেশ করাবেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা তাওবা- ৯৯)
যাকাত আদায়কারীরা আল্লাহর সাহায্য লাভ করে :
وَقَالَ اللهُ اِنِّيْ مَعَكُمْؕ لَئِنْ اَقَمْتُمُ الصَّلَاةَ وَاٰتَيْتُمُ الزَّكَاةَ
আল্লাহ বলেছিলেন, তোমরা যদি সালাত কায়েম কর এবং যাকাত দাও, তবে নিশ্চয় আমি তোমাদের সাথেই আছি। (সূরা মায়েদা- ১২)
যাকাত আদায়ে আল্লাহর রহমত লাভ হয় :
وَرَحْمَتِيْ وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍؕ فَسَاَكْتُبُهَا لِلَّذِيْنَ يَتَّقُوْنَ وَيُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَالَّذِيْنَ هُمْ بِاٰيَاتِنَا يُؤْمِنُوْنَ
আমার দয়া প্রত্যেক বস্তুর উপর প্রশস্ত। সুতরাং আমি তা তাদের জন্য নির্ধারণ করব, যারা তাক্বওয়া অবলম্বন করে, যাকাত দেয় এবং আমার নিদর্শনসমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে। (সূরা আ‘রাফ- ১৫৬)
যাকাতের প্রতিদান আল্লাহর কাছে পাওয়া যাবে :
وَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَؕ وَمَا تُقَدِّمُوْا لِاَنْفُسِكُمْ مِّنْ خَيْرٍ تَجِدُوْهُ عِنْدَ اللهِؕ اِنَّ اللهَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো, যাকাত প্রদান করো। আর তোমরা নিজেদের জন্য যে সৎকর্ম আগে প্রেরণ করেছ তা আল্লাহর নিকট পাবে। তোমরা যা করছ নিশ্চয় আল্লাহ তা দেখছেন। (সূরা বাক্বারা- ১১০)
যাকাত আদায়কারীরা সফলতা লাভ করে :
قَدْ اَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ هُمْ فِيْ صَلَاتِهِمْ خَاشِعُوْنَ ‐ وَالَّذِيْنَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُوْنَ ‐ وَالَّذِيْنَ هُمْ لِلزَّكَاةِ فَاعِلُوْنَ
অবশ্যই সফলকাম হয়েছে ঐসব মুমিনগণ, যারা নিজেদের সালাতে বিনয় ও নম্র, যারা অনর্থক ক্রিয়াকলাপ হতে বিরত থাকে, যারা যাকাত দানে সক্রিয়। (সূরা মু’মিনূন, ১-৪)
যাকাত আদায় করা জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায় :
وَسَيُجَنَّبُهَا الْاَتْقٰى ‐ اَ لَّذِيْ يُؤْتِيْ مَالَهٗ يَتَزَكّٰى
অচিরেই সে ব্যক্তিকে তা (জাহান্নাম) থেকে দূরে রাখা হবে, যে আল্লাহকে ভয় করে এবং যে পবিত্রতা অর্জনের উদ্দেশ্যে নিজের ধনসম্পদ হতে ব্যয় করে। (সূরা লাইল- ১৭, ১৮)
যাকাত আদায়কারীরা মুমিনদের দ্বীনী ভাই :
فَاِنْ تَابُوْا وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ فَاِخْوَانُكُمْ فِى الدِّيْنِؕ وَنُفَصِّلُ الْاٰيَاتِ لِقَوْمٍ يَّعْلَمُوْنَ
অতএব যদি তারা সালাত আদায় করে ও যাকাত দেয়, তবে তারা তো তোমাদেরই দ্বীনি ভাই। আর আমি আমার নিদর্শনসমূহ জ্ঞানবুদ্ধিসম্পন্ন লোকদের জন্য স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে থাকি। (সূরা তাওবা- ১১)
যাকাত আদায়কারীরা ইসলামী রাষ্ট্রে নিরাপত্তা লাভ করে থাকে :
فَاِذَا انْسَلَخَ الْاَشْهُرُ الْحُرُمُ فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِيْنَ حَيْثُ وَجَدْتُّمُوْهُمْ وَخُذُوْهُمْ وَاحْصُرُوْهُمْ وَاقْعُدُوْا لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍۚ فَاِنْ تَابُوْا وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ فَخَلُّوْا سَبِيْلَهُمْؕ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে মুশরিকদেরকে যেখানে পাবে হত্যা করবে। তাদেরকে বন্দী করবে, অবরোধ করবে এবং প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের জন্য ওঁৎ পেতে (বসে) থাকবে। কিন্তু যদি তারা তাওবা করে, সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয়, তবে তাদের পথ ছেড়ে দেবে। নিশ্চয় আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা তাওবা- ৫)
যাকাতব্যবস্থা চালু করা সরকারের দায়িত্ব :
اَ لَّذِيْنَ اِنْ مَّكَّنَّاهُمْ فِى الْاَرْضِ اَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ وَاَمَرُوْا بِالْمَعْرُوْفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنْكَرِؕ وَلِلّٰهِ عَاقِبَةُ الْاُمُوْرِ
আমি এদেরকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দান করলে এরা সালাত কায়েম করবে, যাকাত আদায়ের ব্যবস্থা করবে এবং সৎকাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে; (জেনে রেখো) সকল কর্মের পরিণাম আল্লাহর ইখতিয়ারে। (সূরা হজ্জ- ৪১)
সরকারিভাবে যাকাত উত্তোলনের জন্য নবী ﷺ এর প্রতি নির্দেশ :
خُذْ مِنْ اَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيْهِمْ بِهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْؕ اِنَّ صَلَاتَكَ سَكَنٌ لَّهُمْؕ وَاللهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
তাদের সম্পদ হতে যাকাত গ্রহণ করবে। এর দ্বারা তুমি তাদেরকে পবিত্র করবে এবং পরিশুদ্ধ করবে। আর তুমি তাদেরকে দু‘আ করবে। নিশ্চয় তোমার দু‘আ তাদের জন্য প্রশান্তিদায়ক; আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা তাওবা- ১০৩)
যাকাত বণ্টনের খাতসমূহ :
اِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَآءِ وَالْمَسَاكِيْنِ وَالْعَامِلِيْنَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوْبُهُمْ وَفِى الرِّقَابِ وَالْغَارِمِيْنَ وَفِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَابْنِ السَّبِيْلِؕ فَرِيْضَةً مِّنَ اللهِ ؕ وَاللهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ
যাকাত তো কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত ও তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জন্য, (অমুসলিমদের মধ্যে) যাদের মন জয় করা উদ্দেশ্য হয় তাদের জন্য, দাসমুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে ব্যয় করার জন্য এবং মুসাফিরদের জন্য। এটা আল্লাহর নির্ধারিত বিধান; আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা- ৬০)
যারা যাকাত দেবে না তাদের ধ্বংস অনিবার্য :
وَوَيْلٌ لِّلْمُشْرِكِيْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ لَا يُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَهُمْ بِالْاٰخِرَةِ هُمْ كَافِرُوْنَ
দুর্ভোগ মুশরিকদের জন্য, যারা যাকাত প্রদান করে না এবং আখিরাতের প্রতিও বিশ্বাস স্থাপন করে না।
(সূরা হা-মীম সিজদা- ৬)
তাদের জন্য কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে :
وَالَّذِيْنَ يَكْنِزُوْنَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنْفِقُوْنَهَا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ اَلِيْمٍ
যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পুঞ্জীভূত করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদেরকে মর্মান্তিক শাস্তির সুসংবাদ দাও। (সূরা তাওবা- ৩৪)
কিয়ামতের দিন তাদের অবস্থা হবে অত্যন্ত কঠিন :
يَوْمَ يُحْمٰى عَلَيْهَا فِيْ نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوٰى بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوْبُهُمْ وَظُهُوْرُهُمْؕ هٰذَا مَا كَنَزْتُمْ لِاَنْفُسِكُمْ فَذُوْقُوْا مَا كُنْتُمْ تَكْنِزُوْنَ
যেদিন তা (যাকাতের মাল) জাহান্নামের অগ্নিতে উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্বদেশ ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেয়া হবে। সেদিন বলা হবে, এটাই তো সেটা যা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জীভূত করতে। সুতরাং তোমরা যা পুঞ্জীভূত করেছিলে তার স্বাদ আস্বাদন করো। (সূরা তাওবা- ৩৫)
তাদের সম্পদ তাদের গলার বেড়ি হবে :
وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِيْنَ يَبْخَلُوْنَ بِمَاۤ اٰتَاهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٖ هُوَ خَيْرًا لَّهُمْؕ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَّهُمْ ؕ سَيُطَوَّقُوْنَ مَا بَخِلُوْا بِهٖ يَوْمَ الْقِيَامَةِؕ وَلِلّٰهِ مِيْرَاثُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِؕ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِيْرٌ
আল্লাহ যাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহ হতে কিছু দান করেছেন, অথচ তারা সে বিষয়ে কার্পণ্য করে, তারা যেন এরূপ ধারণা না করে যে, ওটা তাদের জন্য কল্যাণকর; বরং ওটা তাদের জন্য আরো ক্ষতিকর। তারা যে বিষয়ে কৃপণতা করেছে, কিয়ামতের দিন ওটাই তাদের গলার বেড়িতে পরিণত হবে। (জেনে রেখো) আল্লাহ নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের স্বত্বাধিকারী; আর তোমরা যা করছ আল্লাহ সে বিষয়ে পূর্ণ খবর রাখেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৮০)
গরীবদের হক আদায় না করাতে বাগানওয়ালাদের পরিণতি :
اِنَّا بَلَوْنَاهُمْ كَمَا بَلَوْنَاۤ اَصْحَابَ الْجَنَّةِۚ اِذْ اَقْسَمُوْا لَيَصْرِمُنَّهَا مُصْبِحِيْنَ ‐ وَلَا يَسْتَثْنُوْنَ ‐ فَطَافَ عَلَيْهَا طَآئِفٌ مِّنْ رَّبِّكَ وَهُمْ نَآئِمُوْنَ ‐ فَاَصْبَحَتْ كَالصَّرِيْمِ ‐ فَتَنَادَوْا مُصْبِحِيْنَ ‐ اَنِ اغْدُوْا عَلٰى حَرْثِكُمْ اِنْ كُنْتُمْ صَارِمِيْنَ ‐ فَانْطَلَقُوْا وَهُمْ يَتَخَافَتُوْنَ ‐ اَنْ لَّا يَدْخُلَنَّهَا الْيَوْمَ عَلَيْكُمْ مِّسْكِيْنٌ ‐ وَغَدَوْا عَلٰى حَرْدٍ قَادِرِيْنَ ‐ فَلَمَّا رَاَوْهَا قَالُوْاۤ اِنَّا لَضَآلُّوْنَ ‐ بَلْ نَحْنُ مَحْرُوْمُوْنَ ‐ قَالَ اَوْسَطُهُمْ اَلَمْ اَقُلْ لَّكُمْ لَوْلَا تُسَبِّحُوْنَ ‐ قَالُوْا سُبْحَانَ رَبِّنَاۤ اِنَّا كُنَّا ظَالِمِيْنَ ‐ فَاَقْبَلَ بَعْضُهُمْ عَلٰى بَعْضٍ يَّتَلَاوَمُوْنَ ‐ قَالُوْا يَا وَيْلَنَاۤ اِنَّا كُنَّا طَاغِيْنَ ‐ عَسٰى رَبُّنَاۤ اَنْ يُّبْدِلَنَا خَيْرًا مِّنْهَاۤ اِنَّاۤ اِلٰى رَبِّنَا رَاغِبُوْنَ ‐ كَذٰلِكَ الْعَذَابُ وَلَعَذَابُ الْاٰخِرَةِ اَكْبَرُۘ لَوْ كَانُوْا يَعْلَمُوْنَ
আমি তাদেরকে (বাগানওয়ালাদেরকে) পরীক্ষা করেছি, যেভাবে পরীক্ষা করেছিলাম বাগানের মালিকদেরকে। যখন তারা এ শপথ করেছিল যে, তারা বাগান হতে প্রত্যুষেই ফল কেটে নেবে; কিন্তু তারা ‘ইন্শাআল্লাহ’ বলেনি। অতঃপর সেই বাগানে তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে এক আযাব পতিত হলো, তখন তারা ঘুমন্ত অবস্থায় ছিল। ফলে তা পুড়ে ছাই বর্ণ ধারণ করল। এরপর সকালে তারা একে অপরকে ডেকে বলল, তোমরা যদি ফসল কাটতে চাও তবে সকাল সকাল বাগানে চলো। অতঃপর তারা ফিস ফিস করে এ কথা বলতে বলতে চলল- আজ বাগানে যেন তোমাদের নিকট কোন অভাবগ্রস্ত ব্যক্তি প্রবেশ করতে না পারে। অতঃপর তারা (অভাবীদেরকে) প্রতিহত করতে সক্ষম- এই বিশ্বাস নিয়ে সকালে রওয়ানা হলো। কিন্তু তারা যখন ঐ বাগান প্রত্যক্ষ করল তখন তারা বলল, আমরা তো পথ ভুলে গেছি। (না) বরং আমরা বঞ্চিত হয়েছি! অতঃপর তাদের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি বলল, আমি কি তোমাদেরকে বলিনি, যদি তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করতে! তখন তারা বলল, আমরা আমাদের প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি; নিশ্চয় আমরা ছিলাম অত্যাচারী। এভাবে তারা একে অপরকে দোষারোপ করতে লাগল। তারা বলল, হায় দুর্ভোগ! আমরা তো সীমালঙ্ঘনকারী ছিলাম। আমরা আশা রাখি যে, আমাদের রব এর পরিবর্তে আমাদেরকে উত্তম বাগান দান করবেন; আমরা আমাদের রবের দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী। শাস্তি এভাবেই এসে থাকে; আর পরকালের শাস্তি তো আরো কঠিন, যদি তারা জানত। (সূরা ক্বালাম, ১৭-৩৩)
আল্লাহর পথে ব্যয় না করার কারণে কারূনের করুণ পরিণতি :
اِنَّ قَارُوْنَ كَانَ مِنْ قَوْمِ مُوْسٰى فَبَغٰى عَلَيْهِمْ ۪ وَاٰتَيْنَاهُ مِنَ الْكُنُوْزِ مَاۤ اِنَّ مَفَاتِحَهٗ لَتَنُوْٓءُ بِالْعُصْبَةِ اُولِى الْقُوَّةِۗ اِذْ قَالَ لَهٗ قَوْمُهٗ لَا تَفْرَحْ اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْفَرِحِيْنَ ‐ وَابْتَغِ فِيْمَاۤ اٰتَاكَ اللهُ الدَّارَ الْاٰخِرَةَ وَلَا تَنْسَ نَصِيْبَكَ مِنَ الدُّنْيَا وَاَحْسِنْ كَمَاۤ اَحْسَنَ اللهُ اِلَيْكَ وَلَا تَبْغِ الْفَسَادَ فِى الْاَرْضِؕ اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْمُفْسِدِيْنَ ‐ قَالَ اِنَّمَاۤ اُوْتِيْتُهٗ عَلٰى عِلْمٍ عِنْدِيْؕ اَوَلَمْ يَعْلَمْ اَنَّ اللهَ قَدْ اَهْلَكَ مِنْ قَبْلِهٖ مِنَ الْقُرُوْنِ مَنْ هُوَ اَشَدُّ مِنْهُ قُوَّةً وَّاَكْثَرُ جَمْعًا وَّلَا يُسْاَلُ عَنْ ذُنُوْبِهِمُ الْمُجْرِمُوْنَ ‐ فَخَرَجَ عَلٰى قَوْمِهٖ فِيْ زِيْنَتِهٖؕ قَالَ الَّذِيْنَ يُرِيْدُوْنَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا يَا لَيْتَ لَنَا مِثْلَ مَاۤ اُوْتِيَ قَارُوْنُ اِنَّهٗ لَذُوْ حَظٍّ عَظِيْمٍ ‐ وَقَالَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْعِلْمَ وَيْلَكُمْ ثَوَابُ اللهِ خَيْرٌ لِّمَنْ اٰمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًاۚ وَلَا يُلَقَّاهَاۤ اِلَّا الصَّابِرُوْنَ ‐ فَخَسَفْنَا بِهٖ وَبِدَارِهِ الْاَرْضَ فَمَا كَانَ لَهٗ مِنْ فِئَةٍ يَّنْصُرُوْنَهٗ مِنْ دُوْنِ اللهِۗ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُنْتَصِرِيْنَ ‐ وَاَصْبَحَ الَّذِيْنَ تَمَنَّوْا مَكَانَهٗ بِالْاَمْسِ يَقُوْلُوْنَ وَيْكَاَنَّ اللهَ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهٖ وَيَقْدِرُۚ لَوْلَاۤ اَنْ مَّنَّ اللهُ عَلَيْنَا لَخَسَفَ بِنَاؕ وَيْكَاَنَّهٗ لَا يُفْلِحُ الْكَافِرُوْنَ
কারূন ছিল মূসার সম্প্রদায়ভুক্ত, কিন্তু সে তাদের প্রতি বাড়াবাড়ি করেছিল। আর আমি তাকে দান করেছিলাম এমন ধনভান্ডার, যার চাবিগুলো বহন করা একদল বলবান লোকের পক্ষেও কষ্টসাধ্য ছিল। স্মরণ করো, যখন তার সম্প্রদায় তাকে বলেছিল, অহংকার করো না, নিশ্চয় আল্লাহ অহংকারীদেরকে পছন্দ করেন না। আল্লাহ তোমাকে যা দিয়েছেন তার দ্বারা আখিরাতের আবাস অনুসন্ধান করো এবং দুনিয়ার অংশ লাভ করতে ভুলে যেও না। তুমি অনুগ্রহ করো যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করার চেষ্টা করো না। (কেননা) আল্লাহ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদেরকে ভালোবাসেন না। সে বলল, এ সম্পদ আমি আমার জ্ঞানবলে প্রাপ্ত হয়েছি। সে কি জানত না- আল্লাহ তার পূর্বে বহু মানবগোষ্ঠীকে ধ্বংস করে দিয়েছেন, যারা ছিল শক্তিতে তার চেয়ে প্রবল এবং জনসংখ্যায় ছিল অধিক? অপরাধীদেরকে কি তাদের অপরাধ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে না? কারূন তার সম্প্রদায়ের সম্মুখে উপস্থিত হয়েছিল জাঁকজমক সহকারে। ফলে যারা পার্থিব জীবন কামনা করত তারা বলতে লাগল যে, হায়! কারূনকে যেরূপ দেয়া হয়েছে আমাদেরকেও যদি সেরূপ দেয়া হতো! প্রকৃতই সে মহাভাগ্যবান। কিন্তু যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছিল তারা বলল, ধিক তোমাদেরকে! যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের জন্য আল্লাহর পুরস্কারই সর্বশ্রেষ্ঠ; আর ধৈর্যশীল ব্যতীত তা কেউ লাভ করতে পারবে না। অতঃপর আমি কারূনকে তার প্রাসাদসহ ভূগর্ভে প্রোথিত করলাম। (কিন্তু) তার স্বপক্ষে এমন কোন দলও ছিল না, যে তাকে আল্লাহর শাস্তি হতে সাহায্য করতে পারত এবং সে নিজেও আত্মরক্ষায় সক্ষম ছিল না। ফলে ইতোপূর্বে যারা তার মতো হতে চেয়েছিল তারা বলতে লাগল, দেখলে তো! আল্লাহ তার বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা তার রিযিক বর্ধিত করেন এবং যার জন্য ইচ্ছা হ্রাস করেন। যদি আল্লাহ আমাদের প্রতি সদয় না হতেন তবে আমাদেরকেও ভূগর্ভে প্রোথিত করতেন। দেখলে তো! কাফিররা সফলকাম হয় না। (সূরা ক্বাসাস, ৭৬-৮২)
وَوَيْلٌ لِّلْمُشْرِكِيْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ لَا يُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَهُمْ بِالْاٰخِرَةِ هُمْ كَافِرُوْنَ
দুর্ভোগ মুশরিকদের জন্য, যারা যাকাত প্রদান করে না এবং আখিরাতের প্রতিও বিশ্বাস স্থাপন করে না।
(সূরা হা-মীম সিজদা- ৬)
তাদের জন্য কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে :
وَالَّذِيْنَ يَكْنِزُوْنَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنْفِقُوْنَهَا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ اَلِيْمٍ
যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পুঞ্জীভূত করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদেরকে মর্মান্তিক শাস্তির সুসংবাদ দাও। (সূরা তাওবা- ৩৪)
কিয়ামতের দিন তাদের অবস্থা হবে অত্যন্ত কঠিন :
يَوْمَ يُحْمٰى عَلَيْهَا فِيْ نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوٰى بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوْبُهُمْ وَظُهُوْرُهُمْؕ هٰذَا مَا كَنَزْتُمْ لِاَنْفُسِكُمْ فَذُوْقُوْا مَا كُنْتُمْ تَكْنِزُوْنَ
যেদিন তা (যাকাতের মাল) জাহান্নামের অগ্নিতে উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্বদেশ ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেয়া হবে। সেদিন বলা হবে, এটাই তো সেটা যা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জীভূত করতে। সুতরাং তোমরা যা পুঞ্জীভূত করেছিলে তার স্বাদ আস্বাদন করো। (সূরা তাওবা- ৩৫)
তাদের সম্পদ তাদের গলার বেড়ি হবে :
وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِيْنَ يَبْخَلُوْنَ بِمَاۤ اٰتَاهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٖ هُوَ خَيْرًا لَّهُمْؕ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَّهُمْ ؕ سَيُطَوَّقُوْنَ مَا بَخِلُوْا بِهٖ يَوْمَ الْقِيَامَةِؕ وَلِلّٰهِ مِيْرَاثُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِؕ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِيْرٌ
আল্লাহ যাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহ হতে কিছু দান করেছেন, অথচ তারা সে বিষয়ে কার্পণ্য করে, তারা যেন এরূপ ধারণা না করে যে, ওটা তাদের জন্য কল্যাণকর; বরং ওটা তাদের জন্য আরো ক্ষতিকর। তারা যে বিষয়ে কৃপণতা করেছে, কিয়ামতের দিন ওটাই তাদের গলার বেড়িতে পরিণত হবে। (জেনে রেখো) আল্লাহ নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের স্বত্বাধিকারী; আর তোমরা যা করছ আল্লাহ সে বিষয়ে পূর্ণ খবর রাখেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৮০)
গরীবদের হক আদায় না করাতে বাগানওয়ালাদের পরিণতি :
اِنَّا بَلَوْنَاهُمْ كَمَا بَلَوْنَاۤ اَصْحَابَ الْجَنَّةِۚ اِذْ اَقْسَمُوْا لَيَصْرِمُنَّهَا مُصْبِحِيْنَ ‐ وَلَا يَسْتَثْنُوْنَ ‐ فَطَافَ عَلَيْهَا طَآئِفٌ مِّنْ رَّبِّكَ وَهُمْ نَآئِمُوْنَ ‐ فَاَصْبَحَتْ كَالصَّرِيْمِ ‐ فَتَنَادَوْا مُصْبِحِيْنَ ‐ اَنِ اغْدُوْا عَلٰى حَرْثِكُمْ اِنْ كُنْتُمْ صَارِمِيْنَ ‐ فَانْطَلَقُوْا وَهُمْ يَتَخَافَتُوْنَ ‐ اَنْ لَّا يَدْخُلَنَّهَا الْيَوْمَ عَلَيْكُمْ مِّسْكِيْنٌ ‐ وَغَدَوْا عَلٰى حَرْدٍ قَادِرِيْنَ ‐ فَلَمَّا رَاَوْهَا قَالُوْاۤ اِنَّا لَضَآلُّوْنَ ‐ بَلْ نَحْنُ مَحْرُوْمُوْنَ ‐ قَالَ اَوْسَطُهُمْ اَلَمْ اَقُلْ لَّكُمْ لَوْلَا تُسَبِّحُوْنَ ‐ قَالُوْا سُبْحَانَ رَبِّنَاۤ اِنَّا كُنَّا ظَالِمِيْنَ ‐ فَاَقْبَلَ بَعْضُهُمْ عَلٰى بَعْضٍ يَّتَلَاوَمُوْنَ ‐ قَالُوْا يَا وَيْلَنَاۤ اِنَّا كُنَّا طَاغِيْنَ ‐ عَسٰى رَبُّنَاۤ اَنْ يُّبْدِلَنَا خَيْرًا مِّنْهَاۤ اِنَّاۤ اِلٰى رَبِّنَا رَاغِبُوْنَ ‐ كَذٰلِكَ الْعَذَابُ وَلَعَذَابُ الْاٰخِرَةِ اَكْبَرُۘ لَوْ كَانُوْا يَعْلَمُوْنَ
আমি তাদেরকে (বাগানওয়ালাদেরকে) পরীক্ষা করেছি, যেভাবে পরীক্ষা করেছিলাম বাগানের মালিকদেরকে। যখন তারা এ শপথ করেছিল যে, তারা বাগান হতে প্রত্যুষেই ফল কেটে নেবে; কিন্তু তারা ‘ইন্শাআল্লাহ’ বলেনি। অতঃপর সেই বাগানে তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে এক আযাব পতিত হলো, তখন তারা ঘুমন্ত অবস্থায় ছিল। ফলে তা পুড়ে ছাই বর্ণ ধারণ করল। এরপর সকালে তারা একে অপরকে ডেকে বলল, তোমরা যদি ফসল কাটতে চাও তবে সকাল সকাল বাগানে চলো। অতঃপর তারা ফিস ফিস করে এ কথা বলতে বলতে চলল- আজ বাগানে যেন তোমাদের নিকট কোন অভাবগ্রস্ত ব্যক্তি প্রবেশ করতে না পারে। অতঃপর তারা (অভাবীদেরকে) প্রতিহত করতে সক্ষম- এই বিশ্বাস নিয়ে সকালে রওয়ানা হলো। কিন্তু তারা যখন ঐ বাগান প্রত্যক্ষ করল তখন তারা বলল, আমরা তো পথ ভুলে গেছি। (না) বরং আমরা বঞ্চিত হয়েছি! অতঃপর তাদের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি বলল, আমি কি তোমাদেরকে বলিনি, যদি তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করতে! তখন তারা বলল, আমরা আমাদের প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি; নিশ্চয় আমরা ছিলাম অত্যাচারী। এভাবে তারা একে অপরকে দোষারোপ করতে লাগল। তারা বলল, হায় দুর্ভোগ! আমরা তো সীমালঙ্ঘনকারী ছিলাম। আমরা আশা রাখি যে, আমাদের রব এর পরিবর্তে আমাদেরকে উত্তম বাগান দান করবেন; আমরা আমাদের রবের দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী। শাস্তি এভাবেই এসে থাকে; আর পরকালের শাস্তি তো আরো কঠিন, যদি তারা জানত। (সূরা ক্বালাম, ১৭-৩৩)
আল্লাহর পথে ব্যয় না করার কারণে কারূনের করুণ পরিণতি :
اِنَّ قَارُوْنَ كَانَ مِنْ قَوْمِ مُوْسٰى فَبَغٰى عَلَيْهِمْ ۪ وَاٰتَيْنَاهُ مِنَ الْكُنُوْزِ مَاۤ اِنَّ مَفَاتِحَهٗ لَتَنُوْٓءُ بِالْعُصْبَةِ اُولِى الْقُوَّةِۗ اِذْ قَالَ لَهٗ قَوْمُهٗ لَا تَفْرَحْ اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْفَرِحِيْنَ ‐ وَابْتَغِ فِيْمَاۤ اٰتَاكَ اللهُ الدَّارَ الْاٰخِرَةَ وَلَا تَنْسَ نَصِيْبَكَ مِنَ الدُّنْيَا وَاَحْسِنْ كَمَاۤ اَحْسَنَ اللهُ اِلَيْكَ وَلَا تَبْغِ الْفَسَادَ فِى الْاَرْضِؕ اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْمُفْسِدِيْنَ ‐ قَالَ اِنَّمَاۤ اُوْتِيْتُهٗ عَلٰى عِلْمٍ عِنْدِيْؕ اَوَلَمْ يَعْلَمْ اَنَّ اللهَ قَدْ اَهْلَكَ مِنْ قَبْلِهٖ مِنَ الْقُرُوْنِ مَنْ هُوَ اَشَدُّ مِنْهُ قُوَّةً وَّاَكْثَرُ جَمْعًا وَّلَا يُسْاَلُ عَنْ ذُنُوْبِهِمُ الْمُجْرِمُوْنَ ‐ فَخَرَجَ عَلٰى قَوْمِهٖ فِيْ زِيْنَتِهٖؕ قَالَ الَّذِيْنَ يُرِيْدُوْنَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا يَا لَيْتَ لَنَا مِثْلَ مَاۤ اُوْتِيَ قَارُوْنُ اِنَّهٗ لَذُوْ حَظٍّ عَظِيْمٍ ‐ وَقَالَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْعِلْمَ وَيْلَكُمْ ثَوَابُ اللهِ خَيْرٌ لِّمَنْ اٰمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًاۚ وَلَا يُلَقَّاهَاۤ اِلَّا الصَّابِرُوْنَ ‐ فَخَسَفْنَا بِهٖ وَبِدَارِهِ الْاَرْضَ فَمَا كَانَ لَهٗ مِنْ فِئَةٍ يَّنْصُرُوْنَهٗ مِنْ دُوْنِ اللهِۗ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُنْتَصِرِيْنَ ‐ وَاَصْبَحَ الَّذِيْنَ تَمَنَّوْا مَكَانَهٗ بِالْاَمْسِ يَقُوْلُوْنَ وَيْكَاَنَّ اللهَ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهٖ وَيَقْدِرُۚ لَوْلَاۤ اَنْ مَّنَّ اللهُ عَلَيْنَا لَخَسَفَ بِنَاؕ وَيْكَاَنَّهٗ لَا يُفْلِحُ الْكَافِرُوْنَ
কারূন ছিল মূসার সম্প্রদায়ভুক্ত, কিন্তু সে তাদের প্রতি বাড়াবাড়ি করেছিল। আর আমি তাকে দান করেছিলাম এমন ধনভান্ডার, যার চাবিগুলো বহন করা একদল বলবান লোকের পক্ষেও কষ্টসাধ্য ছিল। স্মরণ করো, যখন তার সম্প্রদায় তাকে বলেছিল, অহংকার করো না, নিশ্চয় আল্লাহ অহংকারীদেরকে পছন্দ করেন না। আল্লাহ তোমাকে যা দিয়েছেন তার দ্বারা আখিরাতের আবাস অনুসন্ধান করো এবং দুনিয়ার অংশ লাভ করতে ভুলে যেও না। তুমি অনুগ্রহ করো যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করার চেষ্টা করো না। (কেননা) আল্লাহ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদেরকে ভালোবাসেন না। সে বলল, এ সম্পদ আমি আমার জ্ঞানবলে প্রাপ্ত হয়েছি। সে কি জানত না- আল্লাহ তার পূর্বে বহু মানবগোষ্ঠীকে ধ্বংস করে দিয়েছেন, যারা ছিল শক্তিতে তার চেয়ে প্রবল এবং জনসংখ্যায় ছিল অধিক? অপরাধীদেরকে কি তাদের অপরাধ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে না? কারূন তার সম্প্রদায়ের সম্মুখে উপস্থিত হয়েছিল জাঁকজমক সহকারে। ফলে যারা পার্থিব জীবন কামনা করত তারা বলতে লাগল যে, হায়! কারূনকে যেরূপ দেয়া হয়েছে আমাদেরকেও যদি সেরূপ দেয়া হতো! প্রকৃতই সে মহাভাগ্যবান। কিন্তু যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছিল তারা বলল, ধিক তোমাদেরকে! যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের জন্য আল্লাহর পুরস্কারই সর্বশ্রেষ্ঠ; আর ধৈর্যশীল ব্যতীত তা কেউ লাভ করতে পারবে না। অতঃপর আমি কারূনকে তার প্রাসাদসহ ভূগর্ভে প্রোথিত করলাম। (কিন্তু) তার স্বপক্ষে এমন কোন দলও ছিল না, যে তাকে আল্লাহর শাস্তি হতে সাহায্য করতে পারত এবং সে নিজেও আত্মরক্ষায় সক্ষম ছিল না। ফলে ইতোপূর্বে যারা তার মতো হতে চেয়েছিল তারা বলতে লাগল, দেখলে তো! আল্লাহ তার বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা তার রিযিক বর্ধিত করেন এবং যার জন্য ইচ্ছা হ্রাস করেন। যদি আল্লাহ আমাদের প্রতি সদয় না হতেন তবে আমাদেরকেও ভূগর্ভে প্রোথিত করতেন। দেখলে তো! কাফিররা সফলকাম হয় না। (সূরা ক্বাসাস, ৭৬-৮২)
صَوْمٌ (সাওম) এর অর্থ হলো, বিরত থাকা। আর ইসলামী শরীয়াতের পরিভাষায়- ‘‘আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খানা-পিনা ও যৌন সম্ভোগ হতে বিরত থাকাকে সাওম বা রোযা বলে।’’
প্রাচীন যুগ থেকে নিয়ে মুহাম্মাদ (সাঃ) পর্যন্ত সকল নবীদের শরীয়তে রোযার বিধান ছিল। অবশ্য রোযার হুকুম-আহকাম ও সংখ্যা ইত্যাদি বিভিন্ন নবীর শরীয়াতে বিভিন্ন রকম ছিল। মূসা (আঃ) ও তাঁর উম্মতরা আশুরার দিন রোযা রাখতেন। দাউদ (আঃ) অর্ধেক বছর রোযা রাখতেন। (সহীহ বুখারী, হা/৩৪২০; সহীহ মুসলিম, হা/২৭৯৬)
রমাযানের রোযা ফরয হওয়ার পূর্বে নবী (সাঃ) মুসলিমদেরকে প্রতি মাসে তিনদিন রোযা রাখার নির্দেশ দিতেন এবং আশুরার দিন রোযা রাখতে উৎসাহিত করতেন। (সহীহ মুসলিম, হা/২৭০৮)
দ্বিতীয় হিজরীর শাবান মাসে সর্বপ্রথম রমাযান মাসে রোযা রাখার বিধান নাযিল হয়। তবে এতে লোকদেরকে এতটুকু সুযোগ দেয়া হয়েছিল যে, যারা রোযা রাখতে চায় না, তারা প্রতি রোযার পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাওয়ালেও চলবে। এ বিধান নাযিল হওয়ার একবছর পর সুস্থদের ব্যাপারে যে ছাড় দেয়া হয়েছিল তা রহিত করে পুরো মাস রোযা রাখা বাধ্যতামূলক করে দেয়া হয় এবং রোগী ও মুসাফিরদের ব্যাপারে কাযার বিধান বহাল রাখা হয়।
প্রাচীন যুগ থেকে নিয়ে মুহাম্মাদ (সাঃ) পর্যন্ত সকল নবীদের শরীয়তে রোযার বিধান ছিল। অবশ্য রোযার হুকুম-আহকাম ও সংখ্যা ইত্যাদি বিভিন্ন নবীর শরীয়াতে বিভিন্ন রকম ছিল। মূসা (আঃ) ও তাঁর উম্মতরা আশুরার দিন রোযা রাখতেন। দাউদ (আঃ) অর্ধেক বছর রোযা রাখতেন। (সহীহ বুখারী, হা/৩৪২০; সহীহ মুসলিম, হা/২৭৯৬)
রমাযানের রোযা ফরয হওয়ার পূর্বে নবী (সাঃ) মুসলিমদেরকে প্রতি মাসে তিনদিন রোযা রাখার নির্দেশ দিতেন এবং আশুরার দিন রোযা রাখতে উৎসাহিত করতেন। (সহীহ মুসলিম, হা/২৭০৮)
দ্বিতীয় হিজরীর শাবান মাসে সর্বপ্রথম রমাযান মাসে রোযা রাখার বিধান নাযিল হয়। তবে এতে লোকদেরকে এতটুকু সুযোগ দেয়া হয়েছিল যে, যারা রোযা রাখতে চায় না, তারা প্রতি রোযার পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাওয়ালেও চলবে। এ বিধান নাযিল হওয়ার একবছর পর সুস্থদের ব্যাপারে যে ছাড় দেয়া হয়েছিল তা রহিত করে পুরো মাস রোযা রাখা বাধ্যতামূলক করে দেয়া হয় এবং রোগী ও মুসাফিরদের ব্যাপারে কাযার বিধান বহাল রাখা হয়।
রোযা সর্বযুগে মুসলিমদের উপর ফরয ছিল :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করে দেয়া হয়েছে, যেরকমভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরয করে দেয়া হয়েছিল। আশা করা যায়, এর মাধ্যমে তোমরা তাক্বওয়া অর্জন করতে পারবে।
(সূরা বাক্বারা- ১৮৩)
উম্মতে মুহাম্মদীর ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে কিছুটা ছাড় দেয়া হয়েছিল :
اَيَّامًا مَّعْدُوْدَاتٍؕ فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَّرِيْضًا اَوْ عَلٰى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ اَيَّامٍ اُخَرَ ؕ وَعَلَى الَّذِيْنَ يُطِيْقُوْنَهٗ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِيْنٍؕ فَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْرًا فَهُوَ خَيْرٌ لَّهٗؕ وَاَنْ تَصُوْمُوْا خَيْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
(রোযা ফরয করা হয়েছে) নির্দিষ্ট কয়েকটি দিনের জন্য, তবে কেউ যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে কিংবা সফরে থাকে, তবে সমপরিমাণ দিনের রোযা (সুস্থ হয়ে অথবা সফর থেকে ফিরে এসে) কাযা আদায় করে নেবে। আর যারা সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও রোযা রাখতে চায় না তাদের জন্য এর বিনিময়ে ফিদিয়া দেয়ার সুযোগ থাকবে- আর তা হচ্ছে একজন গরীব ব্যক্তিকে (পেট ভরে) খাবার দেয়া। অবশ্য যদি কোন ব্যক্তি (এর চেয়ে বেশি দিয়ে) ভালো কাজ করতে চায়, তাহলে এ কাজ তার জন্য একান্ত কল্যাণকর হবে। তবে (এ সময়) রোযা রাখা তোমাদের জন্য খুবই ভালো; যদি তোমরা (রোযার উপকারিতা সম্পর্কে) জানতে! (সূরা বাক্বারা- ১৮৩, ১৮৪)
পরে রমাযান মাসে রোযা রাখা বাধ্যতামূলক করা হয় :
فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ
তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাসকে পাবে, সে এতে রোযা রাখবে। (সূরা বাক্বারা- ১৮৫)
যাদের জন্য রোযা কাযা করার সুযোগ রয়েছে :
وَمَنْ كَانَ مَرِيْضًا اَوْ عَلٰى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ اَيَّامٍ اُخَرَؕ يُرِيْدُ اللهُ بِكُمُ الْيُسْرَؗ وَلَا يُرِيْدُ بِكُمُ الْعُسْرَ وَلِتُكْمِلُوا الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُوا اللهَ عَلٰى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
আর যে ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়বে অথবা সফরে থাকবে, সে পরবর্তী কোন এক সময়ে গুনে গুনে সেই পরিমাণ দিন পূরণ করে নেবে। এর দ্বারা তোমাদের প্রতিপালক (তাঁর বিধান) তোমাদের জন্য সহজ করে দিতে চান, তিনি তোমাদের উপর কষ্ট চাপিয়ে দিতে চান না। যাতে করে তোমরা রোযার সংখ্যাগুলো পূর্ণ করতে পার এবং তিনি তোমাদেরকে যে পথপ্রদর্শন করেছেন সে অনুযায়ী আল্লাহর মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে পার। হয়তো তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারবে। (সূরা বাক্বারা- ১৮৫)
রমাযানের রাতে সহবাস করা জায়েয :
اُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ اِلٰى نِسَآئِكُمْؕ هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَاَنْتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّؕ عَلِمَ اللهُ اَنَّكُمْ كُنْتُمْ تَخْتَانُوْنَ اَنْفُسَكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ وَعَفَا عَنْكُمْۚ فَالْاٰنَ بَاشِرُوْهُنَّ وَابْتَغُوْا مَا كَتَبَ اللهُ لَكُمْ
রমাযান মাসে রাতের বেলায় তোমাদের স্ত্রীদের সাথে মিলন করা তোমাদের জন্য হালাল করে দেয়া হয়েছে। তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের জন্য পোশাকস্বরূপ এবং তোমরাও তাদের জন্য পোশাক সমতুল্য। আল্লাহ এটা জানেন যে, তোমরা নিজেদের উপর খিয়ানত করে বসবে, তাই তিনি তোমাদের উপর দয়া করলেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিলেন। এখন চাইলে তোমরা তাদের সাথে সহবাস করতে পার এবং (এ ব্যাপারে) আল্লাহ তোমাদের জন্য যা লিখে রেখেছেন, তা সন্ধান করো। (সূরা বাক্বারা- ১৮৭)
ব্যাখ্যা : রমাযান মাসে রোযা রাখা বাধ্যতামূলক হয়ে যাওয়ার পর এর বিস্তারিত বিধিবিধান সম্পর্কে মুসলিমদেরকে ধারণা দেয়া হয় এবং রাতে ঘুমিয়ে পড়ার পর জেগে উঠে সহবাস করা ও খাওয়া-দাওয়া করাকে হালাল করে দেয়া হয়।
ই‘তিকাফ অবস্থায় সহবাস করা যাবে না :
وَلَا تُبَاشِرُوْهُنَّ وَاَنْتُمْ عَاكِفُوْنَ فِى الْمَسَاجِدِ
তবে যখন তোমরা মসজিদে ই‘তিকাফ অবস্থায় থাকবে, তখন নারী সম্ভোগ থেকে বিরত থাকবে। (সূরা বাক্বারা- ১৮৭)
সাহরীর সময়সীমা :
وَكُلُوْا وَاشْرَبُوْا حَتّٰى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الْاَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الْاَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ
আর তোমরা পানাহার অব্যাহত রাখতে পার যতক্ষণ পর্যন্ত রাতের অন্ধকার রেখার ভেতর থেকে ভোরের শুভ্র আলোক রেখা পরিষ্কার না হয়। (সূরা বাক্বারা- ১৮৭)
ইফতারের সময়সীমা :
ثُمَّ اَتِمُّوا الصِّيَامَ اِلَى اللَّيْلِ
অতঃপর তোমরা রাত আসা পর্যন্ত রোযা পূর্ণ করো। (সূরা বাক্বারা- ১৮৭)
সাওমের বিধিবিধান লঙ্ঘন করা যাবে না :
تِلْكَ حُدُوْدُ اللهِ فَلَا تَقْرَبُوْهَاؕ كَذٰلِكَ يُبَيِّنُ اللهُ اٰيَاتِهٖ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُوْنَ
এ হচ্ছে আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা; অতএব তোমরা কখনো এর ধারে কাছেও যেয়ো না। এভাবেই আল্লাহ তাঁর যাবতীয় নিদর্শন মানুষের জন্য বর্ণনা করে দিয়েছেন, যাতে তারা (এর আলোকে) আল্লাহকে ভয় করে। (সূরা বাক্বারা- ১৮৭)
ব্যাখ্যা : অত্র আয়াতে এসব সীমারেখা কেবল অতিক্রম করা থেকেই নিষেধ করা হয়নি; বরং এগুলোর ধারেকাছে যেতেও নিষেধ করা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, যেখান থেকে গোনাহের সীমানা শুরু হয়েছে সেখানে বরাবর ঘুরাফেরা করা বিপজ্জনক। বরং সীমান্ত থেকে দূরে থাকাই নিরাপদ। কারণ সীমান্ত বরাবর ঘুরাফেরা করলে ভুলে কখনো সীমান্তের ওপারে পা চলে যেতে পারে। শরীয়াতের মূল প্রাণসত্তা সম্পর্কে অজ্ঞ লোকেরা সবসময় অনুমতির শেষ সীমায় চলে যাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করে থাকে। তার দিকে অগ্রসর হয়েই আজ অসংখ্য লোক গোনাহ ও গোমরাহীতে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। কারণ ঐ সমস্ত সূক্ষ্ম সীমান্ত রেখার মধ্যে পার্থক্য করা এবং তাদের কিনারে পৌঁছে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ নয়। তাই এ ব্যাপারে নবী ﷺ বলেছেন, ‘‘প্রত্যেক বাদশাহর একটি সীমানা থাকে। আর আল্লাহর সীমানা হচ্ছে তাঁর নির্ধারিত হারাম বিষয়গুলো। কাজেই যে ব্যক্তি সীমানার চারদিকে ঘুরে বেড়ায় তার সীমানার মধ্যে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।’’ (সহীহ বুখারী, হা/৫২)
রোযা ফরয করার উদ্দেশ্য তাক্বওয়া অর্জন করা :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করে দেয়া হয়েছে, যেরকমভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরয করে দেয়া হয়েছিল। হয়তো তোমরা (এর মাধ্যমে) তাক্বওয়া অর্জন করতে পারবে। (সূরা বাক্বারা- ১৮৩)
রমাযান কুরআন নাযিলের মাস :
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيْۤ اُنْزِلَ فِيْهِ الْقُرْاٰنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدٰى وَالْفُرْقَانِ
রমাযান তো সেই মাস যে মাসে কুরআন নাযিল হয়েছে, যা মানুষের জন্য পথপ্রদর্শক, হেদায়াতের স্পষ্ট নিদর্শন এবং ফুরক্বান (সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী)। (সূরা বাক্বারা- ১৮৫)
ব্যাখ্যা : রমাযানের প্রতি রাত্রে নবী ﷺ জিবরাঈল (আঃ) এর সাথে কুরআন চর্চা করতেন। ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা। বিশেষত তাঁর দানশীলতা অন্যান্য সময় হতে রামাযান মাসে বেশি বেশি দেখা যেত, যখন জিবরাঈল (আঃ) তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতেন। রমাযানের প্রতি রাতেই তিনি রাসূল ﷺ এর সাক্ষাৎ করতেন এবং তাঁকে কুরআন শিক্ষা দিতেন। এজন্য আল্লাহর রাসূল ﷺ রমাযান মাসে দানশীলতায় প্রবাহিত বায়ুর চেয়েও বেশি গতিশীল হয়ে যেতেন (অর্থাৎ বেশি বেশি দান করতেন)। (সহীহ বুখারী, হা/৬)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করে দেয়া হয়েছে, যেরকমভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরয করে দেয়া হয়েছিল। আশা করা যায়, এর মাধ্যমে তোমরা তাক্বওয়া অর্জন করতে পারবে।
(সূরা বাক্বারা- ১৮৩)
উম্মতে মুহাম্মদীর ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে কিছুটা ছাড় দেয়া হয়েছিল :
اَيَّامًا مَّعْدُوْدَاتٍؕ فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَّرِيْضًا اَوْ عَلٰى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ اَيَّامٍ اُخَرَ ؕ وَعَلَى الَّذِيْنَ يُطِيْقُوْنَهٗ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِيْنٍؕ فَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْرًا فَهُوَ خَيْرٌ لَّهٗؕ وَاَنْ تَصُوْمُوْا خَيْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
(রোযা ফরয করা হয়েছে) নির্দিষ্ট কয়েকটি দিনের জন্য, তবে কেউ যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে কিংবা সফরে থাকে, তবে সমপরিমাণ দিনের রোযা (সুস্থ হয়ে অথবা সফর থেকে ফিরে এসে) কাযা আদায় করে নেবে। আর যারা সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও রোযা রাখতে চায় না তাদের জন্য এর বিনিময়ে ফিদিয়া দেয়ার সুযোগ থাকবে- আর তা হচ্ছে একজন গরীব ব্যক্তিকে (পেট ভরে) খাবার দেয়া। অবশ্য যদি কোন ব্যক্তি (এর চেয়ে বেশি দিয়ে) ভালো কাজ করতে চায়, তাহলে এ কাজ তার জন্য একান্ত কল্যাণকর হবে। তবে (এ সময়) রোযা রাখা তোমাদের জন্য খুবই ভালো; যদি তোমরা (রোযার উপকারিতা সম্পর্কে) জানতে! (সূরা বাক্বারা- ১৮৩, ১৮৪)
পরে রমাযান মাসে রোযা রাখা বাধ্যতামূলক করা হয় :
فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ
তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাসকে পাবে, সে এতে রোযা রাখবে। (সূরা বাক্বারা- ১৮৫)
যাদের জন্য রোযা কাযা করার সুযোগ রয়েছে :
وَمَنْ كَانَ مَرِيْضًا اَوْ عَلٰى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ اَيَّامٍ اُخَرَؕ يُرِيْدُ اللهُ بِكُمُ الْيُسْرَؗ وَلَا يُرِيْدُ بِكُمُ الْعُسْرَ وَلِتُكْمِلُوا الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُوا اللهَ عَلٰى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
আর যে ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়বে অথবা সফরে থাকবে, সে পরবর্তী কোন এক সময়ে গুনে গুনে সেই পরিমাণ দিন পূরণ করে নেবে। এর দ্বারা তোমাদের প্রতিপালক (তাঁর বিধান) তোমাদের জন্য সহজ করে দিতে চান, তিনি তোমাদের উপর কষ্ট চাপিয়ে দিতে চান না। যাতে করে তোমরা রোযার সংখ্যাগুলো পূর্ণ করতে পার এবং তিনি তোমাদেরকে যে পথপ্রদর্শন করেছেন সে অনুযায়ী আল্লাহর মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে পার। হয়তো তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারবে। (সূরা বাক্বারা- ১৮৫)
রমাযানের রাতে সহবাস করা জায়েয :
اُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ اِلٰى نِسَآئِكُمْؕ هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَاَنْتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّؕ عَلِمَ اللهُ اَنَّكُمْ كُنْتُمْ تَخْتَانُوْنَ اَنْفُسَكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ وَعَفَا عَنْكُمْۚ فَالْاٰنَ بَاشِرُوْهُنَّ وَابْتَغُوْا مَا كَتَبَ اللهُ لَكُمْ
রমাযান মাসে রাতের বেলায় তোমাদের স্ত্রীদের সাথে মিলন করা তোমাদের জন্য হালাল করে দেয়া হয়েছে। তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের জন্য পোশাকস্বরূপ এবং তোমরাও তাদের জন্য পোশাক সমতুল্য। আল্লাহ এটা জানেন যে, তোমরা নিজেদের উপর খিয়ানত করে বসবে, তাই তিনি তোমাদের উপর দয়া করলেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিলেন। এখন চাইলে তোমরা তাদের সাথে সহবাস করতে পার এবং (এ ব্যাপারে) আল্লাহ তোমাদের জন্য যা লিখে রেখেছেন, তা সন্ধান করো। (সূরা বাক্বারা- ১৮৭)
ব্যাখ্যা : রমাযান মাসে রোযা রাখা বাধ্যতামূলক হয়ে যাওয়ার পর এর বিস্তারিত বিধিবিধান সম্পর্কে মুসলিমদেরকে ধারণা দেয়া হয় এবং রাতে ঘুমিয়ে পড়ার পর জেগে উঠে সহবাস করা ও খাওয়া-দাওয়া করাকে হালাল করে দেয়া হয়।
ই‘তিকাফ অবস্থায় সহবাস করা যাবে না :
وَلَا تُبَاشِرُوْهُنَّ وَاَنْتُمْ عَاكِفُوْنَ فِى الْمَسَاجِدِ
তবে যখন তোমরা মসজিদে ই‘তিকাফ অবস্থায় থাকবে, তখন নারী সম্ভোগ থেকে বিরত থাকবে। (সূরা বাক্বারা- ১৮৭)
সাহরীর সময়সীমা :
وَكُلُوْا وَاشْرَبُوْا حَتّٰى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الْاَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الْاَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ
আর তোমরা পানাহার অব্যাহত রাখতে পার যতক্ষণ পর্যন্ত রাতের অন্ধকার রেখার ভেতর থেকে ভোরের শুভ্র আলোক রেখা পরিষ্কার না হয়। (সূরা বাক্বারা- ১৮৭)
ইফতারের সময়সীমা :
ثُمَّ اَتِمُّوا الصِّيَامَ اِلَى اللَّيْلِ
অতঃপর তোমরা রাত আসা পর্যন্ত রোযা পূর্ণ করো। (সূরা বাক্বারা- ১৮৭)
সাওমের বিধিবিধান লঙ্ঘন করা যাবে না :
تِلْكَ حُدُوْدُ اللهِ فَلَا تَقْرَبُوْهَاؕ كَذٰلِكَ يُبَيِّنُ اللهُ اٰيَاتِهٖ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُوْنَ
এ হচ্ছে আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা; অতএব তোমরা কখনো এর ধারে কাছেও যেয়ো না। এভাবেই আল্লাহ তাঁর যাবতীয় নিদর্শন মানুষের জন্য বর্ণনা করে দিয়েছেন, যাতে তারা (এর আলোকে) আল্লাহকে ভয় করে। (সূরা বাক্বারা- ১৮৭)
ব্যাখ্যা : অত্র আয়াতে এসব সীমারেখা কেবল অতিক্রম করা থেকেই নিষেধ করা হয়নি; বরং এগুলোর ধারেকাছে যেতেও নিষেধ করা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, যেখান থেকে গোনাহের সীমানা শুরু হয়েছে সেখানে বরাবর ঘুরাফেরা করা বিপজ্জনক। বরং সীমান্ত থেকে দূরে থাকাই নিরাপদ। কারণ সীমান্ত বরাবর ঘুরাফেরা করলে ভুলে কখনো সীমান্তের ওপারে পা চলে যেতে পারে। শরীয়াতের মূল প্রাণসত্তা সম্পর্কে অজ্ঞ লোকেরা সবসময় অনুমতির শেষ সীমায় চলে যাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করে থাকে। তার দিকে অগ্রসর হয়েই আজ অসংখ্য লোক গোনাহ ও গোমরাহীতে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। কারণ ঐ সমস্ত সূক্ষ্ম সীমান্ত রেখার মধ্যে পার্থক্য করা এবং তাদের কিনারে পৌঁছে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ নয়। তাই এ ব্যাপারে নবী ﷺ বলেছেন, ‘‘প্রত্যেক বাদশাহর একটি সীমানা থাকে। আর আল্লাহর সীমানা হচ্ছে তাঁর নির্ধারিত হারাম বিষয়গুলো। কাজেই যে ব্যক্তি সীমানার চারদিকে ঘুরে বেড়ায় তার সীমানার মধ্যে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।’’ (সহীহ বুখারী, হা/৫২)
রোযা ফরয করার উদ্দেশ্য তাক্বওয়া অর্জন করা :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করে দেয়া হয়েছে, যেরকমভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরয করে দেয়া হয়েছিল। হয়তো তোমরা (এর মাধ্যমে) তাক্বওয়া অর্জন করতে পারবে। (সূরা বাক্বারা- ১৮৩)
রমাযান কুরআন নাযিলের মাস :
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيْۤ اُنْزِلَ فِيْهِ الْقُرْاٰنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدٰى وَالْفُرْقَانِ
রমাযান তো সেই মাস যে মাসে কুরআন নাযিল হয়েছে, যা মানুষের জন্য পথপ্রদর্শক, হেদায়াতের স্পষ্ট নিদর্শন এবং ফুরক্বান (সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী)। (সূরা বাক্বারা- ১৮৫)
ব্যাখ্যা : রমাযানের প্রতি রাত্রে নবী ﷺ জিবরাঈল (আঃ) এর সাথে কুরআন চর্চা করতেন। ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা। বিশেষত তাঁর দানশীলতা অন্যান্য সময় হতে রামাযান মাসে বেশি বেশি দেখা যেত, যখন জিবরাঈল (আঃ) তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতেন। রমাযানের প্রতি রাতেই তিনি রাসূল ﷺ এর সাক্ষাৎ করতেন এবং তাঁকে কুরআন শিক্ষা দিতেন। এজন্য আল্লাহর রাসূল ﷺ রমাযান মাসে দানশীলতায় প্রবাহিত বায়ুর চেয়েও বেশি গতিশীল হয়ে যেতেন (অর্থাৎ বেশি বেশি দান করতেন)। (সহীহ বুখারী, হা/৬)
এ রাতেই কুরআন নাযিল হয়েছে :
اِنَّاۤ اَنْزَلْنَاهُ فِيْ لَيْلَةِ الْقَدْرِ
নিশ্চয় আমি এটাকে (কুরআনকে) ক্বদরের রাত্রিতে নাযিল করেছি। (সূরা ক্বদর- ১)
এ রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম :
وَمَاۤ اَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ ‐ - لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ اَلْفِ شَهْرٍ
তুমি কি জান ক্বদরের রাত কী? ক্বদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। (সূরা ক্বদর- ২, ৩)
এ রাতে অনেক ফেরেশতা অবতীর্ণ হয় :
تَنَزَّلُ الْمَلَآئِكَةُ وَالرُّوْحُ فِيْهَا بِاِذْنِ رَبِّهِمْ مِّنْ كُلِّ اَمْرٍ
এ রাতে রূহ (জিবরাঈল) ও অন্যান্য ফেরেশতারা তাদের রবের অনুমতিক্রমে প্রত্যেক বিষয়ের হুকুম নিয়ে অবতীর্ণ হয়। (সূরা ক্বদর- ৪)
এ রাত ফজর পর্যন্ত শান্তিময় থাকে :
سَلَامٌ هِيَ حَتّٰى مَطْلَعِ الْفَجْرِ
এ রাতটি ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত (পুরোপুরি) শান্তিময়। (সূরা ক্বদর- ৫)
এ রাতেই ভাগ্যের ফায়সালা হয় :
حٰمٓ ‐ وَالْكِتَابِ الْمُبِيْنِ ‐ اِنَّاۤ اَنْزَلْنَاهُ فِيْ لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ اِنَّا كُنَّا مُنْذِرِيْنَ ‐ فِيْهَا يُفْرَقُ كُلُّ اَمْرٍ حَكِيْمٍ ‐ اَمْرًا مِّنْ عِنْدِنَاؕ اِنَّا كُنَّا مُرْسِلِيْنَ
হা-মীম, শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের; আমি এটা অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় রজনীতে। আমি তো একজন সতর্ককারী মাত্র। এ রাতে আমার আদেশক্রমে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় ফায়সালা হয়। নিশ্চয় আমি রাসূল প্রেরণ করে থাকি। (সূরা দুখান, ১-৫)
اِنَّاۤ اَنْزَلْنَاهُ فِيْ لَيْلَةِ الْقَدْرِ
নিশ্চয় আমি এটাকে (কুরআনকে) ক্বদরের রাত্রিতে নাযিল করেছি। (সূরা ক্বদর- ১)
এ রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম :
وَمَاۤ اَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ ‐ - لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ اَلْفِ شَهْرٍ
তুমি কি জান ক্বদরের রাত কী? ক্বদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। (সূরা ক্বদর- ২, ৩)
এ রাতে অনেক ফেরেশতা অবতীর্ণ হয় :
تَنَزَّلُ الْمَلَآئِكَةُ وَالرُّوْحُ فِيْهَا بِاِذْنِ رَبِّهِمْ مِّنْ كُلِّ اَمْرٍ
এ রাতে রূহ (জিবরাঈল) ও অন্যান্য ফেরেশতারা তাদের রবের অনুমতিক্রমে প্রত্যেক বিষয়ের হুকুম নিয়ে অবতীর্ণ হয়। (সূরা ক্বদর- ৪)
এ রাত ফজর পর্যন্ত শান্তিময় থাকে :
سَلَامٌ هِيَ حَتّٰى مَطْلَعِ الْفَجْرِ
এ রাতটি ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত (পুরোপুরি) শান্তিময়। (সূরা ক্বদর- ৫)
এ রাতেই ভাগ্যের ফায়সালা হয় :
حٰمٓ ‐ وَالْكِتَابِ الْمُبِيْنِ ‐ اِنَّاۤ اَنْزَلْنَاهُ فِيْ لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ اِنَّا كُنَّا مُنْذِرِيْنَ ‐ فِيْهَا يُفْرَقُ كُلُّ اَمْرٍ حَكِيْمٍ ‐ اَمْرًا مِّنْ عِنْدِنَاؕ اِنَّا كُنَّا مُرْسِلِيْنَ
হা-মীম, শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের; আমি এটা অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় রজনীতে। আমি তো একজন সতর্ককারী মাত্র। এ রাতে আমার আদেশক্রমে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় ফায়সালা হয়। নিশ্চয় আমি রাসূল প্রেরণ করে থাকি। (সূরা দুখান, ১-৫)
اَلْحَجُّ (আল হাজ্জ) এর শাব্দিক অর্থ ইচ্ছা বা সংকল্প করা। শরিয়তের পরিভাষায় : আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে বাইতুল্লাহ ও তৎসংশ্লিষ্ট স্থানে ইবাদাত সম্পাদন করাকে হজ্জ বলে।
সম্পাদনের পদ্ধতি হিসেবে হজ্জ তিন প্রকার।
১. তামাত্তু হজ্জ : হজ্জের মাসে (শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনে) শুধু ওমরার ইহরাম বেঁধে ওমরার কাজ সম্পন্ন করে হালাল হয়ে পুনরায় জিলহজ্জ মাসের ৮ তারিখে মক্কা হতে ইহরাম বেঁধে হজ্জের কাজ সম্পাদন করাকে তামাত্তু হজ্জ বলে।
২. কিরান হজ্জ : একই সাথে ওমরা ও হজ্জের ইহরাম বাঁধবে এবং ওমরার কাজ শেষ করে হজ্জের কাজ শুরু করে জিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখে ইহরাম হতে হালাল হওয়াকে কিরান হজ্জ বলে। কিরান হজ্জকারীকে অবশ্যই কুরবানী করতে হবে।
৩) ইফরাদ হজ্জ : শুধুমাত্র হজ্জের ইহরাম বেঁধে হজ্জের কার্যাবলি সম্পাদন করে ১০ তারিখে হালাল হওয়াকে ইফরাদ হজ্জ বলে।
সম্পাদনের পদ্ধতি হিসেবে হজ্জ তিন প্রকার।
১. তামাত্তু হজ্জ : হজ্জের মাসে (শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনে) শুধু ওমরার ইহরাম বেঁধে ওমরার কাজ সম্পন্ন করে হালাল হয়ে পুনরায় জিলহজ্জ মাসের ৮ তারিখে মক্কা হতে ইহরাম বেঁধে হজ্জের কাজ সম্পাদন করাকে তামাত্তু হজ্জ বলে।
২. কিরান হজ্জ : একই সাথে ওমরা ও হজ্জের ইহরাম বাঁধবে এবং ওমরার কাজ শেষ করে হজ্জের কাজ শুরু করে জিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখে ইহরাম হতে হালাল হওয়াকে কিরান হজ্জ বলে। কিরান হজ্জকারীকে অবশ্যই কুরবানী করতে হবে।
৩) ইফরাদ হজ্জ : শুধুমাত্র হজ্জের ইহরাম বেঁধে হজ্জের কার্যাবলি সম্পাদন করে ১০ তারিখে হালাল হওয়াকে ইফরাদ হজ্জ বলে।
কা‘বা সর্বপ্রথম নির্মিত ইবাদাতখানা :
اِنَّ اَوَّلَ بَيْتٍ وُّضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِيْ بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَّهُدًى لِّلْعَالَمِيْنَ
নিশ্চয় মানুষের জন্য সর্বপ্রথম নির্মিত ঘর মক্কায় অবস্থিত, যা বরকতময় এবং বিশ্ববাসীর জন্য পথপ্রদর্শক। (সূরা আলে ইমরান- ৯৬)
সেখানে আছে মাকামে ইবরাহীম :
فِيْهِ اٰيَاتٌ ۢبَيِّنَاتٌ مَّقَامُ اِبْرَاهِيْمَ
সেখানে রয়েছে স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ, (এর মধ্যে একটি হচ্ছে) মাকামে ইবরাহীম। (সূরা আলে ইমরান- ৯৭)
মাকামে ইবরাহীমে সালাত আদায় করার নির্দেশ :
وَاتَّخِذُوْا مِنْ مَّقَامِ اِبْرَاهِيْمَ مُصَلًّى
তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থান হিসেবে গ্রহণ করো। (সূরা বাক্বারা- ১২৫)
আল্লাহ ইবরাহীম (আঃ) কে কা‘বার সন্ধান দিয়েছিলেন :
وَاِذْ بَوَّاْنَا لِاِبْرَاهِيْمَ مَكَانَ الْبَيْتِ
স্মরণ করো, যখন আমি ইবরাহীমের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম সে গৃহের স্থান। (সূরা হজ্জ- ২৬)
ইবরাহীম (আঃ) তাঁর ছেলেকে নিয়ে কা‘বা নির্মাণ করেন :
وَاِذْ يَرْفَعُ اِبْرَاهِيْمُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَاِسْمَاعِيْلُؕ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّاؕ اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
(স্মরণ করো) যখন ইবরাহীম ও ইসমাঈল কা‘বাঘরের ভিত্তি উঁচু করেছিলেন (তখন বলেছিলেন) হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পক্ষ হতে এটা কবুল করুন, নিশ্চয় আপনি শ্রবণকারী ও মহাজ্ঞানী। (সূরা বাক্বারা- ১২৭)
কা‘বা গোটা বিশ্বের কেবলা :
وَمِنْ حَيْثُ خَرَجْتَ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِؕ وَحَيْثُ مَا كُنْتُمْ فَوَلُّوْا وُجُوْهَكُمْ شَطْرَهٗ
আর তুমি যেখান থেকেই বের হও না কেন, তোমার মুখ মসজিদে হারামের দিকে ফিরাও। আর তোমরা যে যেখানেই থাক না কেন তোমাদের মুখমন্ডল সেদিকেই ফিরিয়ে নাও। (সূরা বাক্বারা- ১৫০)
কা‘বা মানবজাতির মিলনকেন্দ্র :
وَاِذْ جَعَلْنَا الْبَيْتَ مَثَابَةً لِّلنَّاسِ وَاَمْنًا
আমি কা‘বাগৃহকে মানবজাতির মিলনকেন্দ্র ও নিরাপদ স্থান হিসেবে মনোনীত করেছি। (সূরা বাক্বারা- ১২৫)
সেখানে সকলের অধিকার সমান :
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَيَصُدُّوْنَ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ وَالْمَسْجِدِ الْحَرَامِ الَّذِيْ جَعَلْنَاهُ لِلنَّاسِ سَوَآءَنِ الْعَاكِفُ فِيْهِ وَ الْبَادِ ؕ وَمَنْ يُّرِدْ فِيْهِ بِاِلْحَادٍ ۢبِظُلْمٍ نُّذِقْهُ مِنْ عَذَابٍ اَلِيْمٍ
অবশ্যই যারা কুফরী করে এবং (অন্যদেরকেও) আল্লাহর পথে চলতে বাধা দেয়, আর (বাধা দেয়) মানুষদেরকে মাসজিদুল হারাম (এর তাওয়াফ ও যিয়ারত) থেকে- যাকে আমি স্থানীয়-অস্থানীয় নির্বিশেষে সব মানুষের জন্য একই রকম (মর্যাদার স্থান) বানিয়েছি (এমন লোকদের মনে রাখতে হবে) যারা তাতে ইচ্ছাপূর্বক আল্লাহবিরোধী কাজ করবে, আমি তাদের (সবাইকে) কঠিন আযাব আস্বাদন করাব। (সূরা হজ্জ- ২৫)
কা‘বা নিরাপদ স্থান :
وَمَنْ دَخَلَهٗ كَانَ اٰمِنًا
আর যে ব্যক্তি সেখানে (মক্কায়) প্রবেশ করবে, সে নিরাপত্তা লাভ করবে। (সূরা আলে ইমরান- ৯৭)
সেখানে সবধরনের ফলমূল পাওয়া যায় :
اَوَلَمْ نُمَكِّنْ لَّهُمْ حَرَمًا اٰمِنًا يُّجْبٰۤى اِلَيْهِ ثَمَرَاتُ كُلِّ شَيْءٍ رِّزْقًا مِّنْ لَّدُنَّا وَلٰكِنَّ اَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ
আমি কি তাদেরকে এক নিরাপদ হারামে প্রতিষ্ঠিত করিনি, যেখানে আমার দেয়া রিযিকস্বরূপ সর্বপ্রকার ফলমূল আমদানী হয়? কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না। (সূরা ক্বাসাস- ৫৭)
এসব ইবরাহীম (আঃ) এর দু‘আর ফসল :
وَاِذْ قَالَ اِبْرَاهِيْمُ رَبِّ اجْعَلْ هٰذَا بَلَدًا اٰمِنًا وَّارْزُقْ اَهْلَهٗ مِنَ الثَّمَرَاتِ مَنْ اٰمَنَ مِنْهُمْ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِؕ قَالَ وَمَنْ كَفَرَ فَاُمَتِّعُهٗ قَلِيْلًا ثُمَّ اَضْطَرُّهٗۤ اِلٰى عَذَابِ النَّارِؕ وَبِئْسَ الْمَصِيْرُ
যখন ইবরাহীম বললেন, হে আমার রব! আপনি এ স্থানকে নিরাপদ শহরে পরিণত করুন এবং এর অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে, তাদেরকে ফলমূল থেকে জীবিকা দান করুন। আল্লাহ বলেন, যারা অবিশ্বাস করে তাদেরকেও আমি অল্প কিছু দিন ভোগ করতে দেব। পরে তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে বাধ্য করব; আর এটি কতই না নিকৃষ্টতম গন্তব্যস্থল। (সূরা বাক্বারা- ১২৬)
কা‘বাঘর পবিত্র রাখার নির্দেশ :
وَعَهِدْنَاۤ اِلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ اَنْ طَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّآئِفِيْنَ وَالْعَاكِفِيْنَ وَالرُّكَّعِ السُّجُوْدِ
আমি ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে আদেশ দিয়েছিলাম যে, যেন তারা আমার ঘরকে তাওয়াফকারী, আল্লাহর ইবাদাতে আত্মনিয়োগকারী এবং রুকূ ও সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখে। (সূরা বাক্বারা- ১২৫)
সেখানে সবধরনের অন্যায় কাজ নিষিদ্ধ :
وَمَنْ يُّرِدْ فِيْهِ بِاِلْحَادٍ ۢبِظُلْمٍ نُّذِقْهُ مِنْ عَذَابٍ اَلِيْمٍ
আর যে তাতে ইচ্ছা করে অন্যায় কাজে লিপ্ত হওয়ার মাধ্যমে সীমালঙ্ঘন করে, তাকে আমি মর্মান্তিক শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করাব। (সূরা হজ্জ- ২৫)
কা‘বায় প্রবেশে বাধা দিলে আল্লাহ শাস্তি দেবেন :
وَمَا لَهُمْ اَلَّا يُعَذِّبَهُمُ اللهُ وَهُمْ يَصُدُّوْنَ عَنِ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَمَا كَانُوْاۤ اَوْلِيَآءَهٗؕ اِنْ اَوْلِيَآؤُهٗۤ اِلَّا الْمُتَّقُوْنَ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ
আল্লাহ তাদেরকে কেনইবা শাস্তি দেবেন না, যখন তারা আল্লাহর বান্দাদেরকে মাসজিদুল হারামে আসতে বাধা দেয়, অথচ তারা তো এ ঘরের আসল অভিভাবকও নয়। এ ঘরের আসল অভিভাবক হচ্ছে তারা, যারা আল্লাহকে ভয় করে; কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না। (সূরা আনফাল- ৩৪)
অমুসলিমরা হারামে প্রবেশের অধিকার রাখে না :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنَّمَا الْمُشْرِكُوْنَ نَجَسٌ فَلَا يَقْرَبُوا الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ بَعْدَ عَامِهِمْ هٰذَا
হে মুমিনগণ! নিশ্চয় মুশরিকরা অপবিত্র, সুতরাং এ বৎসরের পর তারা যেন মাসজিদুল হারামের নিকটেও না আসে। (সূরা তাওবা- ২৮)
ব্যাখ্যা : ‘অপবিত্র’ কথাটির অর্থ হচ্ছে, তাদের আকীদা-বিশ্বাস, নৈতিক চরিত্র, কাজকর্ম এবং তাদের জাহেলী চালচলন ও সমাজব্যবস্থা অপবিত্র।
আল্লাহ কা‘বা ধ্বংসের ষড়যন্ত্রকারীদেরকে শাস্তি দিয়েছেন :
اَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِاَصْحَابِ الْفِيْلِ ‐ اَلَمْ يَجْعَلْ كَيْدَهُمْ فِيْ تَضْلِيْلٍ ‐ وَاَرْسَلَ عَلَيْهِمْ طَيْرًا اَبَابِيْلَ ‐ تَرْمِيْهِمْ بِحِجَارَةٍ مِّنْ سِجِّيْلٍ ‐ فَجَعَلَهُمْ كَعَصْفٍ مَّاْكُوْلٍ
তুমি কি দেখনি, তোমার প্রতিপালক (কা‘বা ধ্বংসের জন্য আগত) হাতিওয়ালাদের সাথে কিরূপ ব্যবহার করেছেন? তিনি কি তাদের যাবতীয় ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেননি? তিনি তাদের উপর ঝাঁকে-ঝাঁকে পাখি পাঠিয়েছিলেন। অতঃপর এ পাখিগুলো ঐ সুসজ্জিত বাহিনীর উপর পাথরের টুকরো নিক্ষেপ করছিল। অতঃপর তিনি তাদেরকে জন্তু-জানোয়ারের চর্বিত ঘাস-পাতার ন্যায় করে দিলেন। (সূরা ফীল)
اِنَّ اَوَّلَ بَيْتٍ وُّضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِيْ بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَّهُدًى لِّلْعَالَمِيْنَ
নিশ্চয় মানুষের জন্য সর্বপ্রথম নির্মিত ঘর মক্কায় অবস্থিত, যা বরকতময় এবং বিশ্ববাসীর জন্য পথপ্রদর্শক। (সূরা আলে ইমরান- ৯৬)
সেখানে আছে মাকামে ইবরাহীম :
فِيْهِ اٰيَاتٌ ۢبَيِّنَاتٌ مَّقَامُ اِبْرَاهِيْمَ
সেখানে রয়েছে স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ, (এর মধ্যে একটি হচ্ছে) মাকামে ইবরাহীম। (সূরা আলে ইমরান- ৯৭)
মাকামে ইবরাহীমে সালাত আদায় করার নির্দেশ :
وَاتَّخِذُوْا مِنْ مَّقَامِ اِبْرَاهِيْمَ مُصَلًّى
তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থান হিসেবে গ্রহণ করো। (সূরা বাক্বারা- ১২৫)
আল্লাহ ইবরাহীম (আঃ) কে কা‘বার সন্ধান দিয়েছিলেন :
وَاِذْ بَوَّاْنَا لِاِبْرَاهِيْمَ مَكَانَ الْبَيْتِ
স্মরণ করো, যখন আমি ইবরাহীমের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম সে গৃহের স্থান। (সূরা হজ্জ- ২৬)
ইবরাহীম (আঃ) তাঁর ছেলেকে নিয়ে কা‘বা নির্মাণ করেন :
وَاِذْ يَرْفَعُ اِبْرَاهِيْمُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَاِسْمَاعِيْلُؕ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّاؕ اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
(স্মরণ করো) যখন ইবরাহীম ও ইসমাঈল কা‘বাঘরের ভিত্তি উঁচু করেছিলেন (তখন বলেছিলেন) হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পক্ষ হতে এটা কবুল করুন, নিশ্চয় আপনি শ্রবণকারী ও মহাজ্ঞানী। (সূরা বাক্বারা- ১২৭)
কা‘বা গোটা বিশ্বের কেবলা :
وَمِنْ حَيْثُ خَرَجْتَ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِؕ وَحَيْثُ مَا كُنْتُمْ فَوَلُّوْا وُجُوْهَكُمْ شَطْرَهٗ
আর তুমি যেখান থেকেই বের হও না কেন, তোমার মুখ মসজিদে হারামের দিকে ফিরাও। আর তোমরা যে যেখানেই থাক না কেন তোমাদের মুখমন্ডল সেদিকেই ফিরিয়ে নাও। (সূরা বাক্বারা- ১৫০)
কা‘বা মানবজাতির মিলনকেন্দ্র :
وَاِذْ جَعَلْنَا الْبَيْتَ مَثَابَةً لِّلنَّاسِ وَاَمْنًا
আমি কা‘বাগৃহকে মানবজাতির মিলনকেন্দ্র ও নিরাপদ স্থান হিসেবে মনোনীত করেছি। (সূরা বাক্বারা- ১২৫)
সেখানে সকলের অধিকার সমান :
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَيَصُدُّوْنَ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ وَالْمَسْجِدِ الْحَرَامِ الَّذِيْ جَعَلْنَاهُ لِلنَّاسِ سَوَآءَنِ الْعَاكِفُ فِيْهِ وَ الْبَادِ ؕ وَمَنْ يُّرِدْ فِيْهِ بِاِلْحَادٍ ۢبِظُلْمٍ نُّذِقْهُ مِنْ عَذَابٍ اَلِيْمٍ
অবশ্যই যারা কুফরী করে এবং (অন্যদেরকেও) আল্লাহর পথে চলতে বাধা দেয়, আর (বাধা দেয়) মানুষদেরকে মাসজিদুল হারাম (এর তাওয়াফ ও যিয়ারত) থেকে- যাকে আমি স্থানীয়-অস্থানীয় নির্বিশেষে সব মানুষের জন্য একই রকম (মর্যাদার স্থান) বানিয়েছি (এমন লোকদের মনে রাখতে হবে) যারা তাতে ইচ্ছাপূর্বক আল্লাহবিরোধী কাজ করবে, আমি তাদের (সবাইকে) কঠিন আযাব আস্বাদন করাব। (সূরা হজ্জ- ২৫)
কা‘বা নিরাপদ স্থান :
وَمَنْ دَخَلَهٗ كَانَ اٰمِنًا
আর যে ব্যক্তি সেখানে (মক্কায়) প্রবেশ করবে, সে নিরাপত্তা লাভ করবে। (সূরা আলে ইমরান- ৯৭)
সেখানে সবধরনের ফলমূল পাওয়া যায় :
اَوَلَمْ نُمَكِّنْ لَّهُمْ حَرَمًا اٰمِنًا يُّجْبٰۤى اِلَيْهِ ثَمَرَاتُ كُلِّ شَيْءٍ رِّزْقًا مِّنْ لَّدُنَّا وَلٰكِنَّ اَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ
আমি কি তাদেরকে এক নিরাপদ হারামে প্রতিষ্ঠিত করিনি, যেখানে আমার দেয়া রিযিকস্বরূপ সর্বপ্রকার ফলমূল আমদানী হয়? কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না। (সূরা ক্বাসাস- ৫৭)
এসব ইবরাহীম (আঃ) এর দু‘আর ফসল :
وَاِذْ قَالَ اِبْرَاهِيْمُ رَبِّ اجْعَلْ هٰذَا بَلَدًا اٰمِنًا وَّارْزُقْ اَهْلَهٗ مِنَ الثَّمَرَاتِ مَنْ اٰمَنَ مِنْهُمْ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِؕ قَالَ وَمَنْ كَفَرَ فَاُمَتِّعُهٗ قَلِيْلًا ثُمَّ اَضْطَرُّهٗۤ اِلٰى عَذَابِ النَّارِؕ وَبِئْسَ الْمَصِيْرُ
যখন ইবরাহীম বললেন, হে আমার রব! আপনি এ স্থানকে নিরাপদ শহরে পরিণত করুন এবং এর অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে, তাদেরকে ফলমূল থেকে জীবিকা দান করুন। আল্লাহ বলেন, যারা অবিশ্বাস করে তাদেরকেও আমি অল্প কিছু দিন ভোগ করতে দেব। পরে তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে বাধ্য করব; আর এটি কতই না নিকৃষ্টতম গন্তব্যস্থল। (সূরা বাক্বারা- ১২৬)
কা‘বাঘর পবিত্র রাখার নির্দেশ :
وَعَهِدْنَاۤ اِلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ اَنْ طَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّآئِفِيْنَ وَالْعَاكِفِيْنَ وَالرُّكَّعِ السُّجُوْدِ
আমি ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে আদেশ দিয়েছিলাম যে, যেন তারা আমার ঘরকে তাওয়াফকারী, আল্লাহর ইবাদাতে আত্মনিয়োগকারী এবং রুকূ ও সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখে। (সূরা বাক্বারা- ১২৫)
সেখানে সবধরনের অন্যায় কাজ নিষিদ্ধ :
وَمَنْ يُّرِدْ فِيْهِ بِاِلْحَادٍ ۢبِظُلْمٍ نُّذِقْهُ مِنْ عَذَابٍ اَلِيْمٍ
আর যে তাতে ইচ্ছা করে অন্যায় কাজে লিপ্ত হওয়ার মাধ্যমে সীমালঙ্ঘন করে, তাকে আমি মর্মান্তিক শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করাব। (সূরা হজ্জ- ২৫)
কা‘বায় প্রবেশে বাধা দিলে আল্লাহ শাস্তি দেবেন :
وَمَا لَهُمْ اَلَّا يُعَذِّبَهُمُ اللهُ وَهُمْ يَصُدُّوْنَ عَنِ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَمَا كَانُوْاۤ اَوْلِيَآءَهٗؕ اِنْ اَوْلِيَآؤُهٗۤ اِلَّا الْمُتَّقُوْنَ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ
আল্লাহ তাদেরকে কেনইবা শাস্তি দেবেন না, যখন তারা আল্লাহর বান্দাদেরকে মাসজিদুল হারামে আসতে বাধা দেয়, অথচ তারা তো এ ঘরের আসল অভিভাবকও নয়। এ ঘরের আসল অভিভাবক হচ্ছে তারা, যারা আল্লাহকে ভয় করে; কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না। (সূরা আনফাল- ৩৪)
অমুসলিমরা হারামে প্রবেশের অধিকার রাখে না :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنَّمَا الْمُشْرِكُوْنَ نَجَسٌ فَلَا يَقْرَبُوا الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ بَعْدَ عَامِهِمْ هٰذَا
হে মুমিনগণ! নিশ্চয় মুশরিকরা অপবিত্র, সুতরাং এ বৎসরের পর তারা যেন মাসজিদুল হারামের নিকটেও না আসে। (সূরা তাওবা- ২৮)
ব্যাখ্যা : ‘অপবিত্র’ কথাটির অর্থ হচ্ছে, তাদের আকীদা-বিশ্বাস, নৈতিক চরিত্র, কাজকর্ম এবং তাদের জাহেলী চালচলন ও সমাজব্যবস্থা অপবিত্র।
আল্লাহ কা‘বা ধ্বংসের ষড়যন্ত্রকারীদেরকে শাস্তি দিয়েছেন :
اَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِاَصْحَابِ الْفِيْلِ ‐ اَلَمْ يَجْعَلْ كَيْدَهُمْ فِيْ تَضْلِيْلٍ ‐ وَاَرْسَلَ عَلَيْهِمْ طَيْرًا اَبَابِيْلَ ‐ تَرْمِيْهِمْ بِحِجَارَةٍ مِّنْ سِجِّيْلٍ ‐ فَجَعَلَهُمْ كَعَصْفٍ مَّاْكُوْلٍ
তুমি কি দেখনি, তোমার প্রতিপালক (কা‘বা ধ্বংসের জন্য আগত) হাতিওয়ালাদের সাথে কিরূপ ব্যবহার করেছেন? তিনি কি তাদের যাবতীয় ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেননি? তিনি তাদের উপর ঝাঁকে-ঝাঁকে পাখি পাঠিয়েছিলেন। অতঃপর এ পাখিগুলো ঐ সুসজ্জিত বাহিনীর উপর পাথরের টুকরো নিক্ষেপ করছিল। অতঃপর তিনি তাদেরকে জন্তু-জানোয়ারের চর্বিত ঘাস-পাতার ন্যায় করে দিলেন। (সূরা ফীল)
হজ্জ করা ফরয, একে অস্বীকার করা কুফরী :
وَلِلّٰهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ اِلَيْهِ سَبِيْلًاؕ وَمَنْ كَفَرَ فَاِنَّ اللهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِيْنَ
আল্লাহর উদ্দেশ্যে কা‘বা ঘরে হজ্জ করা ঐ সকল মানুষের উপর ফরয, যারা যাতায়াতের সামর্থ্য রাখে। আর যে তা অমান্য করবে তার জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহ বিশ্ববাসী থেকে অমুখাপেক্ষী। (সূরা আলে ইমরান- ৯৭)
হজ্জ করার জন্য আহবান :
وَاَذِّنْ فِى النَّاسِ بِالْحَجِّ يَاْتُوْكَ رِجَالًا وَّعَلٰى كُلِّ ضَامِرٍ يَّاْتِيْنَ مِنْ كُلِّ فَجٍّ عَمِيْقٍ
মানুষের নিকট ‘হজ্জ’-এর ঘোষণা করে দাও, তারা তোমার নিকট আসবে হেঁটে হেঁটে এবং সর্বপ্রকার দুর্বল উটের পিঠে আরোহন করে; এরা আসবে দূর-দূরান্ত পথ অতিক্রম করে। (সূরা হজ্জ- ২৭)
হজ্জের উদ্দেশ্য আল্লাহর নাম স্মরণ করা ও কল্যাণ লাভ করা :
لِيَشْهَدُوْا مَنَافِعَ لَهُمْ وَيَذْكُرُوا اسْمَ اللهِ فِۤيْ اَيَّامٍ مَّعْلُوْمَاتٍ عَلٰى مَا رَزَقَهُمْ مِّنْ ۢبَهِيْمَةِ الْاَنْعَامِ
যাতে তারা তাদের কল্যাণময় স্থানগুলোতে উপস্থিত হতে পারে এবং তিনি তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু হতে যা রিযিক হিসেবে দান করেছেন তার উপর নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে পারে। (সূরা হজ্জ- ২৮)
আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করা :
وَلْيَطَّوَّفُوْا بِالْبَيْتِ الْعَتِيْقِ
তাওয়াফ করো প্রাচীন গৃহের। (সূরা হজ্জ- ২৯)
ব্যাখ্যা : اَلْعَتِيْقُِ (আল ‘আতীক) শব্দটি আরবি ভাষায় তিনটি অর্থে ব্যবহৃত হয়। একটি অর্থ হচ্ছে, প্রাচীন তথা অনেক পুরাতন। দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, স্বাধীন তথা যার উপর কারো মালিকানা নেই। আর তৃতীয় অর্থ হচ্ছে, সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ। এ তিনটি অর্থই কা‘বার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়।
আল্লাহর নিদর্শনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা :
ذٰلِكَۗ وَمَنْ يُّعَظِّمْ حُرُمَاتِ اللهِ فَهُوَ خَيْرٌ لَّهٗ عِنْدَ رَبِّهٖ
এটাই বিধান; অতএব কেউ যদি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত পবিত্র অনুষ্ঠানগুলোর সম্মান করে, তবে তা তার জন্য তার প্রতিপালকের নিকট খুবই উত্তম। (সূরা হজ্জ- ৩০)
وَلِلّٰهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ اِلَيْهِ سَبِيْلًاؕ وَمَنْ كَفَرَ فَاِنَّ اللهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِيْنَ
আল্লাহর উদ্দেশ্যে কা‘বা ঘরে হজ্জ করা ঐ সকল মানুষের উপর ফরয, যারা যাতায়াতের সামর্থ্য রাখে। আর যে তা অমান্য করবে তার জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহ বিশ্ববাসী থেকে অমুখাপেক্ষী। (সূরা আলে ইমরান- ৯৭)
হজ্জ করার জন্য আহবান :
وَاَذِّنْ فِى النَّاسِ بِالْحَجِّ يَاْتُوْكَ رِجَالًا وَّعَلٰى كُلِّ ضَامِرٍ يَّاْتِيْنَ مِنْ كُلِّ فَجٍّ عَمِيْقٍ
মানুষের নিকট ‘হজ্জ’-এর ঘোষণা করে দাও, তারা তোমার নিকট আসবে হেঁটে হেঁটে এবং সর্বপ্রকার দুর্বল উটের পিঠে আরোহন করে; এরা আসবে দূর-দূরান্ত পথ অতিক্রম করে। (সূরা হজ্জ- ২৭)
হজ্জের উদ্দেশ্য আল্লাহর নাম স্মরণ করা ও কল্যাণ লাভ করা :
لِيَشْهَدُوْا مَنَافِعَ لَهُمْ وَيَذْكُرُوا اسْمَ اللهِ فِۤيْ اَيَّامٍ مَّعْلُوْمَاتٍ عَلٰى مَا رَزَقَهُمْ مِّنْ ۢبَهِيْمَةِ الْاَنْعَامِ
যাতে তারা তাদের কল্যাণময় স্থানগুলোতে উপস্থিত হতে পারে এবং তিনি তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু হতে যা রিযিক হিসেবে দান করেছেন তার উপর নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে পারে। (সূরা হজ্জ- ২৮)
আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করা :
وَلْيَطَّوَّفُوْا بِالْبَيْتِ الْعَتِيْقِ
তাওয়াফ করো প্রাচীন গৃহের। (সূরা হজ্জ- ২৯)
ব্যাখ্যা : اَلْعَتِيْقُِ (আল ‘আতীক) শব্দটি আরবি ভাষায় তিনটি অর্থে ব্যবহৃত হয়। একটি অর্থ হচ্ছে, প্রাচীন তথা অনেক পুরাতন। দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, স্বাধীন তথা যার উপর কারো মালিকানা নেই। আর তৃতীয় অর্থ হচ্ছে, সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ। এ তিনটি অর্থই কা‘বার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়।
আল্লাহর নিদর্শনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা :
ذٰلِكَۗ وَمَنْ يُّعَظِّمْ حُرُمَاتِ اللهِ فَهُوَ خَيْرٌ لَّهٗ عِنْدَ رَبِّهٖ
এটাই বিধান; অতএব কেউ যদি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত পবিত্র অনুষ্ঠানগুলোর সম্মান করে, তবে তা তার জন্য তার প্রতিপালকের নিকট খুবই উত্তম। (সূরা হজ্জ- ৩০)
নির্ধারিত সময়ে হজ্জ করতে হবে :
اَلْحَجُّ اَشْهُرٌمَّعْلُوْمَاتٌ
হজ্জের মাসগুলো নির্ধারিত। (সূরা বাক্বারা- ১৯৭)
চাঁদ উদয়ের মাধ্যমে হজ্জের সময় জানা যায় :
يَسْاَلُوْنَكَ عَنِ الْاَهِلَّةِؕ قُلْ هِيَ مَوَاقِيْتُ لِلنَّاسِ وَالْحَجِّ
তারা তোমাকে নতুন চাঁদসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে। বলো, এগুলো হচ্ছে- মানুষের জন্য এবং হজ্জের জন্য সময় নির্ধারক। (সূরা বাক্বারা- ১৮৯)
যাওয়ার সময় পাথেয় নিয়ে যেতে হবে :
وَتَزَوَّدُوْا فَاِنَّ خَيْرَ الزَّادِ التَّقْوٰىؗ وَاتَّقُوْنِ يَاۤ اُولِى الْاَلْبَابِ
তোমরা পাথেয় সংগ্রহ করো; বস্তুত উৎকৃষ্টতম পাথেয় হচ্ছে আল্লাহভীতি। অতএব হে জ্ঞানীগণ! তোমরা আমাকে ভয় করো। (সূরা বাক্বারা- ১৯৭)
ইহরাম বাঁধার পর সবধরনের নিষিদ্ধ কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে :
اَ لْحَجُّ اَشْهُرٌ مَّعْلُوْمَاتٌۚ فَمَنْ فَرَضَ فِيْهِنَّ الْحَجَّ فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوْقَ وَلَا جِدَالَ فِى الحَجِّؕ وَمَا تَفْعَلُوْا مِنْ خَيْرٍ يَّعْلَمْهُ اللهُ
হজ্জের মাসগুলো নির্ধারিত, অতঃএব কেউ যদি ঐ সময়গুলোর মধ্যে হজ্জের সংকল্প করে, তবে সে যেন তাতে (সে দিনগুলোতে) সহবাস, দুষ্কার্য ও ঝগড়া করা হতে বিরত থাকে। আর তোমরা যে কোন সৎকর্ম কর না কেন, আল্লাহ তা জানেন। (সূরা বাক্বারা- ১৯৭)
স্থলভাগের কোন প্রাণী শিকার করা যাবে না :
وَحُرِّمَ عَلَيْكُمْ صَيْدُ الْبَرِّ مَا دُمْتُمْ حُرُمًاؕ وَاتَّقُوا اللهَ الَّذِيْۤ اِلَيْهِ تُحْشَرُوْنَ
আর তোমরা যতক্ষণ পর্যন্ত ইহরাম অবস্থায় থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত স্থলভাগের শিকার তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যাঁর নিকট তোমাদেরকে একত্র করা হবে। (সূরা মায়েদা- ৯৬)
এটা আল্লাহর একটি পরীক্ষা :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَيَبْلُوَنَّكُمُ اللهُ بِشَيْءٍ مِّنَ الصَّيْدِ تَنَالُهٗۤ اَيْدِيْكُمْ وَرِمَاحُكُمْ لِيَعْلَمَ اللّٰهُ مَنْ يَّخَافُهٗ بِالْغَيْبِ
হে ঈমানদারগণ! ইহরাম অবস্থায় অবশ্যই আল্লাহ তোমাদেরকে এমন কিছু শিকারের বস্তু দিয়ে পরীক্ষা করবেন, যেগুলো তোমরা নিজেদের হাত ও বর্শার দ্বারা ধরতে পার। যাতে করে আল্লাহ এটা জেনে নিতে পারেন যে, কে তাঁকে না দেখে ভয় করে? (সূরা মায়েদা- ৯৪)
শিকার করলে কাফ্ফারা দিতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَقْتُلُوا الصَّيْدَ وَاَنْتُمْ حُرُمٌؕ وَمَنْ قَتَلَهٗ مِنْكُمْ مُّتَعَمِّدًا فَجَزَآءٌ مِّثْلُ مَا قَتَلَ مِنَ النَّعَمِ يَحْكُمُ بِهٖ ذَوَا عَدْلٍ مِّنْكُمْ هَدْيًا ۢبَالِغَ الْكَعْبَةِ اَوْ كَفَّارَةٌ طَعَامُ مَسَاكِيْنَ اَوْ عَدْلُ ذٰلِكَ صِيَامًا لِّيَذُوْقَ وَبَالَ اَمْرِهٖؕ عَفَا اللهُ عَمَّا سَلَفَ وَمَنْ عَادَ فَيَنْتَقِمُ اللهُ مِنْهُؕ وَاللهُ عَزِيْزٌ ذُو انْتِقَامٍ
হে মুমিনগণ! তোমরা ইহরাম অবস্থায় থাকাকালে কোন শিকারকে হত্যা করো না। এরপরও তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে তা হত্যা করবে, তার বিনিময় হচ্ছে অনুরূপ গৃহপালিত জন্তু। এ ব্যাপারে তোমাদের মধ্যে দু’জন ন্যায়পরায়ণ লোক ফায়সালা করে দেবে যে, তা কুরবানীরূপে কা‘বায় প্রেরণ করতে হবে অথবা তার কাফ্ফারাস্বরূপ দরিদ্রকে খাবার প্রদান কিংবা সমসংখ্যক সিয়াম পালন করতে হবে, যাতে করে সে আপন কৃতকর্মের ফল ভোগ করে। যা গত হয়ে গেছে আল্লাহ তা ক্ষমা করে দিয়েছেন, তবে কেউ যদি তা পুনরায় করে তাহলে আল্লাহ তাকে শাস্তি দেবেন; আর আল্লাহ মহাপরাক্রশালী ও শাস্তিদাতা। (সূরা মায়েদা- ৯৫)
আরাফার ময়দানে অবস্থান করা :
ثُمَّ اَفِيْضُوْا مِنْ حَيْثُ اَفَاضَ النَّاسُ
অতঃপর যেখান হতে অন্য সকল মানুষ প্রত্যাবর্তন করে সেখান (আরাফা) হতে তোমরাও প্রত্যাবর্তন করো। (সূরা বাক্বারা- ১৯৯)
মুযদালিফায় অবস্থান করা :
فَاِذَاۤ اَفَضْتُمْ مِّنْ عَرَفَاتٍ فَاذْكُرُوا اللهَ عِنْدَ الْمَشْعَرِ الْحَرَامِ وَاذْكُرُوْهُ كَمَا هَدَاكُمْۚ وَاِنْ كُنْتُمْ مِّنْ قَبْلِهٖ لَمِنَ الضَّآلِّيْنَ
অতঃপর যখন তোমরা আরাফাত হতে ফিরে আস, তখন মাশ‘আরে হারাম তথা পবিত্র স্মৃতিস্থানের নিকট আল্লাহকে স্মরণ করো। আর তিনি তোমাদেরকে যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন সেভাবে তাঁকে স্মরণ করো, যদিও তোমরা ইতোপূর্বে বিভ্রান্তদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে। (সূরা বাক্বারা- ১৯৮)
মিনায় অবস্থান করা :
وَاذْكُرُوا اللهَ فِۤيْ اَيَّامٍ مَّعْدُوْدَاتٍؕ فَمَنْ تَعَجَّلَ فِيْ يَوْمَيْنِ فَلَاۤ اِثْمَ عَلَيْهِۚ وَمَنْ تَاَخَّرَ فَلَاۤ اِثْمَ عَلَيْهِ لِمَنِ اتَّقٰىؕ وَاتَّقُوا اللهَ وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّكُمْ اِلَيْهِ تُحْشَرُوْنَ
আর তোমরা নির্ধারিত দিনসমূহে আল্লাহকে স্মরণ করো। সুতরাং কেউ যদি দু’দিনের মধ্যে (মক্কায় ফিরে যেতে) তাড়াতাড়ি করে, তবে তার জন্য কোন পাপ নেই। আবার কেউ যদি বিলম্ব করে, তবে তার কোন গোনাহ হবে না; এটা (এ সুযোগটা) তাক্বওয়া অবলম্বনকারীদের জন্য নির্ধারিত। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং জেনে রেখো, তোমরা সকলেই তাঁর দিকে সমবেত হবে। (সূরা বাক্বারা- ২০৩)
কা‘বাঘর তাওয়াফ করা :
وَلْيَطَّوَّفُوْا بِالْبَيْتِ الْعَتِيْقِ
তোমরা প্রাচীন গৃহের তাওয়াফ করো। (সূরা হজ্জ- ২৯)
সাফা-মারওয়ায় দৌড়ানো :
اِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَآئِرِ اللهِۚ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ اَوِ اعْتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ اَنْ يَّطَّوَّفَ بِهِمَاؕ وَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْرًا فَاِنَّ اللهَ شَاكِرٌ عَلِيْمٌ
নিশ্চয় ‘সাফা’ ও ‘মারওয়া’ আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। অতএব যে ব্যক্তি এ ঘরে হজ্জ অথবা ওমরা করার জন্য আগমন করবে, তার জন্য এ দু’টির মধ্যে দৌড়ানোতে দোষের কিছু নেই। আর যদি কেউ স্বেচ্ছায় সৎকর্ম করে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ (তাদের ব্যাপারে) কৃতজ্ঞ ও সর্বজ্ঞাত। (সূরা বাক্বারা- ১৫৮)
হজ্জের সাথে ওমরা করলে যা করতে হবে :
فَمَنْ تَمَتَّعَ بِالْعُمْرَةِ اِلَى الْحَجِّ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنَ الْهَدْيِۚ فَمَنْ لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلَاثَةِ اَيَّامٍ فِى الْحَجِّ وَسَبْعَةٍ اِذَا رَجَعْتُمْؕ تِلْكَ عَشَرَةٌ كَامِلَةٌؕ ذٰلِكَ لِمَنْ لَّمْ يَكُنْ اَهْلُهٗ حَاضِرِى الْمَسْجِدِ الْحَرَامِؕ وَاتَّقُوا اللهَ وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
অতঃপর কেউ যদি হজ্জের সাথে ওমরাও করতে চায়, তবে সে যা সহজপ্রাপ্য তাই কুরবানী করবে। কিন্তু কেউ যদি তা না পায়, তবে হজ্জের সময় তিন দিন এবং যখন তোমরা ফিরে আস তখন সাত দিন- এই পূর্ণ দশদিন রোযা রাখবে। এটা ঐ ব্যক্তির জন্য যে মাসজিদে হারামের বাসিন্দা নয়। আল্লাহকে ভয় করো ও জেনে রেখো, আল্লাহ কঠিন শাস্তিদাতা। (সূরা বাক্বারা- ১৯৬)
মাথামুন্ডন করা বা ছাটানো :
لَقَدْ صَدَقَ اللهُ رَسُوْلَهُ الرُّؤْيَا بِالْحَقِّۚ لَتَدْخُلُنَّ الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ اِنْ شَآءَ اللهُ اٰمِنِيْنَ مُحَلِّقِيْنَ رُءُوْسَكُمْ وَمُقَصِّرِيْنَ لَا تَخَافُوْنَ
বাস্তবিকই আল্লাহ তাঁর রাসূলকে সঠিক স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, যা ছিল সস্পূর্ণ সত্য। ইন্শাআল্লাহ তোমরা মাসজিদুল হারামে সম্পূর্ণ নিরাপদে প্রবেশ করবে- (কেউ কেউ) মাথা কামাবে, (কেউ কেউ) চুল কাঁটবে এবং তোমাদের কোন ভয় থাকবে না। (সূরা ফাতহ- ২৭)
বাধাপ্রাপ্ত হলে কুরবানী করে নেবে :
وَاَتِمُّوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلّٰهِؕ فَاِنْ اُحْصِرْتُمْ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنَ الْهَدْيِ
তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ ও ওমরা সম্পূর্ণ করো; কিন্তু তোমরা যদি বাধাপ্রাপ্ত হও, তবে যা সহজপ্রাপ্য হয় তাই কুরবানী করে নাও। (সূরা বাক্বারা- ১৯৬)
জন্তু কুরবানীর স্থানে পৌঁছার পর মাথামুন্ডন করবে:
وَلَا تَحْلِقُوْا رُءُوْسَكُمْ حَتّٰى يَبْلُغَ الْهَدْيُ مَحِلَّهٗؕ فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَّرِيْضًا اَوْ بِهٖۤ اَذًى مِّنْ رَّاْسِهٖ فَفِدْيَةٌ مِّنْ صِيَامٍ اَوْ صَدَقَةٍ اَوْ نُسُكٍ
কুরবানীর জন্তুগুলো যথাস্থানে না পৌঁছা পর্যন্ত তোমাদের মাথামুন্ডন করো না; কিন্তু তোমাদের মধ্যে কেউ যদি রোগাক্রান্ত হয় অথবা মাথায় অসুখ থাকে, তবে সে রোযা রাখবে কিংবা সাদাকা করবে অথবা (কুরবানী দ্বারা) ফিদইয়া দেবে। (সূরা বাক্বারা- ১৯৬)
اَلْحَجُّ اَشْهُرٌمَّعْلُوْمَاتٌ
হজ্জের মাসগুলো নির্ধারিত। (সূরা বাক্বারা- ১৯৭)
চাঁদ উদয়ের মাধ্যমে হজ্জের সময় জানা যায় :
يَسْاَلُوْنَكَ عَنِ الْاَهِلَّةِؕ قُلْ هِيَ مَوَاقِيْتُ لِلنَّاسِ وَالْحَجِّ
তারা তোমাকে নতুন চাঁদসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে। বলো, এগুলো হচ্ছে- মানুষের জন্য এবং হজ্জের জন্য সময় নির্ধারক। (সূরা বাক্বারা- ১৮৯)
যাওয়ার সময় পাথেয় নিয়ে যেতে হবে :
وَتَزَوَّدُوْا فَاِنَّ خَيْرَ الزَّادِ التَّقْوٰىؗ وَاتَّقُوْنِ يَاۤ اُولِى الْاَلْبَابِ
তোমরা পাথেয় সংগ্রহ করো; বস্তুত উৎকৃষ্টতম পাথেয় হচ্ছে আল্লাহভীতি। অতএব হে জ্ঞানীগণ! তোমরা আমাকে ভয় করো। (সূরা বাক্বারা- ১৯৭)
ইহরাম বাঁধার পর সবধরনের নিষিদ্ধ কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে :
اَ لْحَجُّ اَشْهُرٌ مَّعْلُوْمَاتٌۚ فَمَنْ فَرَضَ فِيْهِنَّ الْحَجَّ فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوْقَ وَلَا جِدَالَ فِى الحَجِّؕ وَمَا تَفْعَلُوْا مِنْ خَيْرٍ يَّعْلَمْهُ اللهُ
হজ্জের মাসগুলো নির্ধারিত, অতঃএব কেউ যদি ঐ সময়গুলোর মধ্যে হজ্জের সংকল্প করে, তবে সে যেন তাতে (সে দিনগুলোতে) সহবাস, দুষ্কার্য ও ঝগড়া করা হতে বিরত থাকে। আর তোমরা যে কোন সৎকর্ম কর না কেন, আল্লাহ তা জানেন। (সূরা বাক্বারা- ১৯৭)
স্থলভাগের কোন প্রাণী শিকার করা যাবে না :
وَحُرِّمَ عَلَيْكُمْ صَيْدُ الْبَرِّ مَا دُمْتُمْ حُرُمًاؕ وَاتَّقُوا اللهَ الَّذِيْۤ اِلَيْهِ تُحْشَرُوْنَ
আর তোমরা যতক্ষণ পর্যন্ত ইহরাম অবস্থায় থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত স্থলভাগের শিকার তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যাঁর নিকট তোমাদেরকে একত্র করা হবে। (সূরা মায়েদা- ৯৬)
এটা আল্লাহর একটি পরীক্ষা :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَيَبْلُوَنَّكُمُ اللهُ بِشَيْءٍ مِّنَ الصَّيْدِ تَنَالُهٗۤ اَيْدِيْكُمْ وَرِمَاحُكُمْ لِيَعْلَمَ اللّٰهُ مَنْ يَّخَافُهٗ بِالْغَيْبِ
হে ঈমানদারগণ! ইহরাম অবস্থায় অবশ্যই আল্লাহ তোমাদেরকে এমন কিছু শিকারের বস্তু দিয়ে পরীক্ষা করবেন, যেগুলো তোমরা নিজেদের হাত ও বর্শার দ্বারা ধরতে পার। যাতে করে আল্লাহ এটা জেনে নিতে পারেন যে, কে তাঁকে না দেখে ভয় করে? (সূরা মায়েদা- ৯৪)
শিকার করলে কাফ্ফারা দিতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَقْتُلُوا الصَّيْدَ وَاَنْتُمْ حُرُمٌؕ وَمَنْ قَتَلَهٗ مِنْكُمْ مُّتَعَمِّدًا فَجَزَآءٌ مِّثْلُ مَا قَتَلَ مِنَ النَّعَمِ يَحْكُمُ بِهٖ ذَوَا عَدْلٍ مِّنْكُمْ هَدْيًا ۢبَالِغَ الْكَعْبَةِ اَوْ كَفَّارَةٌ طَعَامُ مَسَاكِيْنَ اَوْ عَدْلُ ذٰلِكَ صِيَامًا لِّيَذُوْقَ وَبَالَ اَمْرِهٖؕ عَفَا اللهُ عَمَّا سَلَفَ وَمَنْ عَادَ فَيَنْتَقِمُ اللهُ مِنْهُؕ وَاللهُ عَزِيْزٌ ذُو انْتِقَامٍ
হে মুমিনগণ! তোমরা ইহরাম অবস্থায় থাকাকালে কোন শিকারকে হত্যা করো না। এরপরও তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে তা হত্যা করবে, তার বিনিময় হচ্ছে অনুরূপ গৃহপালিত জন্তু। এ ব্যাপারে তোমাদের মধ্যে দু’জন ন্যায়পরায়ণ লোক ফায়সালা করে দেবে যে, তা কুরবানীরূপে কা‘বায় প্রেরণ করতে হবে অথবা তার কাফ্ফারাস্বরূপ দরিদ্রকে খাবার প্রদান কিংবা সমসংখ্যক সিয়াম পালন করতে হবে, যাতে করে সে আপন কৃতকর্মের ফল ভোগ করে। যা গত হয়ে গেছে আল্লাহ তা ক্ষমা করে দিয়েছেন, তবে কেউ যদি তা পুনরায় করে তাহলে আল্লাহ তাকে শাস্তি দেবেন; আর আল্লাহ মহাপরাক্রশালী ও শাস্তিদাতা। (সূরা মায়েদা- ৯৫)
আরাফার ময়দানে অবস্থান করা :
ثُمَّ اَفِيْضُوْا مِنْ حَيْثُ اَفَاضَ النَّاسُ
অতঃপর যেখান হতে অন্য সকল মানুষ প্রত্যাবর্তন করে সেখান (আরাফা) হতে তোমরাও প্রত্যাবর্তন করো। (সূরা বাক্বারা- ১৯৯)
মুযদালিফায় অবস্থান করা :
فَاِذَاۤ اَفَضْتُمْ مِّنْ عَرَفَاتٍ فَاذْكُرُوا اللهَ عِنْدَ الْمَشْعَرِ الْحَرَامِ وَاذْكُرُوْهُ كَمَا هَدَاكُمْۚ وَاِنْ كُنْتُمْ مِّنْ قَبْلِهٖ لَمِنَ الضَّآلِّيْنَ
অতঃপর যখন তোমরা আরাফাত হতে ফিরে আস, তখন মাশ‘আরে হারাম তথা পবিত্র স্মৃতিস্থানের নিকট আল্লাহকে স্মরণ করো। আর তিনি তোমাদেরকে যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন সেভাবে তাঁকে স্মরণ করো, যদিও তোমরা ইতোপূর্বে বিভ্রান্তদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে। (সূরা বাক্বারা- ১৯৮)
মিনায় অবস্থান করা :
وَاذْكُرُوا اللهَ فِۤيْ اَيَّامٍ مَّعْدُوْدَاتٍؕ فَمَنْ تَعَجَّلَ فِيْ يَوْمَيْنِ فَلَاۤ اِثْمَ عَلَيْهِۚ وَمَنْ تَاَخَّرَ فَلَاۤ اِثْمَ عَلَيْهِ لِمَنِ اتَّقٰىؕ وَاتَّقُوا اللهَ وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّكُمْ اِلَيْهِ تُحْشَرُوْنَ
আর তোমরা নির্ধারিত দিনসমূহে আল্লাহকে স্মরণ করো। সুতরাং কেউ যদি দু’দিনের মধ্যে (মক্কায় ফিরে যেতে) তাড়াতাড়ি করে, তবে তার জন্য কোন পাপ নেই। আবার কেউ যদি বিলম্ব করে, তবে তার কোন গোনাহ হবে না; এটা (এ সুযোগটা) তাক্বওয়া অবলম্বনকারীদের জন্য নির্ধারিত। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং জেনে রেখো, তোমরা সকলেই তাঁর দিকে সমবেত হবে। (সূরা বাক্বারা- ২০৩)
কা‘বাঘর তাওয়াফ করা :
وَلْيَطَّوَّفُوْا بِالْبَيْتِ الْعَتِيْقِ
তোমরা প্রাচীন গৃহের তাওয়াফ করো। (সূরা হজ্জ- ২৯)
সাফা-মারওয়ায় দৌড়ানো :
اِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَآئِرِ اللهِۚ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ اَوِ اعْتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ اَنْ يَّطَّوَّفَ بِهِمَاؕ وَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْرًا فَاِنَّ اللهَ شَاكِرٌ عَلِيْمٌ
নিশ্চয় ‘সাফা’ ও ‘মারওয়া’ আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। অতএব যে ব্যক্তি এ ঘরে হজ্জ অথবা ওমরা করার জন্য আগমন করবে, তার জন্য এ দু’টির মধ্যে দৌড়ানোতে দোষের কিছু নেই। আর যদি কেউ স্বেচ্ছায় সৎকর্ম করে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ (তাদের ব্যাপারে) কৃতজ্ঞ ও সর্বজ্ঞাত। (সূরা বাক্বারা- ১৫৮)
হজ্জের সাথে ওমরা করলে যা করতে হবে :
فَمَنْ تَمَتَّعَ بِالْعُمْرَةِ اِلَى الْحَجِّ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنَ الْهَدْيِۚ فَمَنْ لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلَاثَةِ اَيَّامٍ فِى الْحَجِّ وَسَبْعَةٍ اِذَا رَجَعْتُمْؕ تِلْكَ عَشَرَةٌ كَامِلَةٌؕ ذٰلِكَ لِمَنْ لَّمْ يَكُنْ اَهْلُهٗ حَاضِرِى الْمَسْجِدِ الْحَرَامِؕ وَاتَّقُوا اللهَ وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
অতঃপর কেউ যদি হজ্জের সাথে ওমরাও করতে চায়, তবে সে যা সহজপ্রাপ্য তাই কুরবানী করবে। কিন্তু কেউ যদি তা না পায়, তবে হজ্জের সময় তিন দিন এবং যখন তোমরা ফিরে আস তখন সাত দিন- এই পূর্ণ দশদিন রোযা রাখবে। এটা ঐ ব্যক্তির জন্য যে মাসজিদে হারামের বাসিন্দা নয়। আল্লাহকে ভয় করো ও জেনে রেখো, আল্লাহ কঠিন শাস্তিদাতা। (সূরা বাক্বারা- ১৯৬)
মাথামুন্ডন করা বা ছাটানো :
لَقَدْ صَدَقَ اللهُ رَسُوْلَهُ الرُّؤْيَا بِالْحَقِّۚ لَتَدْخُلُنَّ الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ اِنْ شَآءَ اللهُ اٰمِنِيْنَ مُحَلِّقِيْنَ رُءُوْسَكُمْ وَمُقَصِّرِيْنَ لَا تَخَافُوْنَ
বাস্তবিকই আল্লাহ তাঁর রাসূলকে সঠিক স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, যা ছিল সস্পূর্ণ সত্য। ইন্শাআল্লাহ তোমরা মাসজিদুল হারামে সম্পূর্ণ নিরাপদে প্রবেশ করবে- (কেউ কেউ) মাথা কামাবে, (কেউ কেউ) চুল কাঁটবে এবং তোমাদের কোন ভয় থাকবে না। (সূরা ফাতহ- ২৭)
বাধাপ্রাপ্ত হলে কুরবানী করে নেবে :
وَاَتِمُّوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلّٰهِؕ فَاِنْ اُحْصِرْتُمْ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنَ الْهَدْيِ
তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ ও ওমরা সম্পূর্ণ করো; কিন্তু তোমরা যদি বাধাপ্রাপ্ত হও, তবে যা সহজপ্রাপ্য হয় তাই কুরবানী করে নাও। (সূরা বাক্বারা- ১৯৬)
জন্তু কুরবানীর স্থানে পৌঁছার পর মাথামুন্ডন করবে:
وَلَا تَحْلِقُوْا رُءُوْسَكُمْ حَتّٰى يَبْلُغَ الْهَدْيُ مَحِلَّهٗؕ فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَّرِيْضًا اَوْ بِهٖۤ اَذًى مِّنْ رَّاْسِهٖ فَفِدْيَةٌ مِّنْ صِيَامٍ اَوْ صَدَقَةٍ اَوْ نُسُكٍ
কুরবানীর জন্তুগুলো যথাস্থানে না পৌঁছা পর্যন্ত তোমাদের মাথামুন্ডন করো না; কিন্তু তোমাদের মধ্যে কেউ যদি রোগাক্রান্ত হয় অথবা মাথায় অসুখ থাকে, তবে সে রোযা রাখবে কিংবা সাদাকা করবে অথবা (কুরবানী দ্বারা) ফিদইয়া দেবে। (সূরা বাক্বারা- ১৯৬)
ওমরার শাব্দিক অর্থ হলো, যিয়ারত বা পরিদর্শন করা। অর্থাৎ ইবাদাত পালনের উদ্দেশ্যে বাইতুল্লাহ পরিদর্শন করা। পরিভাষায় ওমরা হলো, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর শেখানো পদ্ধতি অনুযায়ী কা‘বাঘর তাওয়াফ করা, সাফা-মারওয়ায় দৌড়ানো এবং মাথামুন্ডন করা বা ছাটানো।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী (সা:) বলেন, ‘‘একবার ওমরা করার পর আবার ওমরা করলে তা দুই ওমরার মধ্যবর্তী গুনাহসমূহের কাফ্ফারাহ হয়ে যায়। আর হজ্জে মাবরুরের বিনিময় হচ্ছে জান্নাত।’’ (সহীহ বুখারী, হা/১৬৮৩)
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ওমরা করার নির্দেশ :
وَاَتِمُّوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلّٰهِ
তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ ও ওমরা পালন করো। (সূরা বাক্বারা- ১৯৬)
ওমরার বিধান :
اِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَآئِرِ اللهِۚ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ اَوِ اعْتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ اَنْ يَّطَّوَّفَ بِهِمَاؕ وَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْرًا فَاِنَّ اللهَ شَاكِرٌ عَلِيْمٌ
নিশ্চয় ‘সাফা’ ও ‘মারওয়া’ আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। অতএব যে ব্যক্তি এই ঘরে হজ্জ অথবা ওমরা করার জন্য আগমন করবে, তার জন্য এ দু’টিকে তাওয়াফ করাতে দোষের কিছু নেই। আর যদি কেউ স্বেচ্ছায় সৎকর্ম করে, তবে আল্লাহ (তাদের ব্যাপারে) কৃতজ্ঞ ও সর্বজ্ঞ। (সূরা বাক্বারা- ১৫৮)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী (সা:) বলেন, ‘‘একবার ওমরা করার পর আবার ওমরা করলে তা দুই ওমরার মধ্যবর্তী গুনাহসমূহের কাফ্ফারাহ হয়ে যায়। আর হজ্জে মাবরুরের বিনিময় হচ্ছে জান্নাত।’’ (সহীহ বুখারী, হা/১৬৮৩)
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ওমরা করার নির্দেশ :
وَاَتِمُّوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلّٰهِ
তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ ও ওমরা পালন করো। (সূরা বাক্বারা- ১৯৬)
ওমরার বিধান :
اِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَآئِرِ اللهِۚ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ اَوِ اعْتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ اَنْ يَّطَّوَّفَ بِهِمَاؕ وَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْرًا فَاِنَّ اللهَ شَاكِرٌ عَلِيْمٌ
নিশ্চয় ‘সাফা’ ও ‘মারওয়া’ আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। অতএব যে ব্যক্তি এই ঘরে হজ্জ অথবা ওমরা করার জন্য আগমন করবে, তার জন্য এ দু’টিকে তাওয়াফ করাতে দোষের কিছু নেই। আর যদি কেউ স্বেচ্ছায় সৎকর্ম করে, তবে আল্লাহ (তাদের ব্যাপারে) কৃতজ্ঞ ও সর্বজ্ঞ। (সূরা বাক্বারা- ১৫৮)
স্বপ্নের মাধ্যমে ছেলেকে কুরবানী করার নির্দেশ পেলেন :
فَلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ السَّعْيَ قَالَ يَا بُنَيَّ اِنِّۤيْ اَرٰى فِى الْمَنَامِ اَنِّۤيْ اَذْبَحُكَ فَانْظُرْ مَاذَا تَرٰى
অতঃপর সে (ইসমাঈল আঃ) যখন তার পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হলো তখন ইবরাহীম বললেন, হে বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে যবেহ করছি; অতএব তোমার অভিমত কী? (সূরা সাফ্ফাত- ১০২)
ছেলে এতে রাজী হয়ে গেলেন :
قَالَ يَاۤ اَبَتِ افْعَلْ مَا تُؤْمَرُؗ سَتَجِدُنِۤيْ اِنْ شَآءَ اللهُ مِنَ الصَّابِرِيْنَ
সে বলল, হে আমার বাবা! আপনাকে যে আদেশ করা হয়েছে তা পূর্ণ করুন। ইন্শাআল্লাহ আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্তই পাবেন। (সূরা সাফ্ফাত- ১০২)
ইবরাহীম (আঃ) ছেলেকে কুরবানী করতে প্রস্তুত হলেন :
فَلَمَّاۤ اَسْلَمَا وَتَلَّهٗ لِلْجَبِيْنِ ‐ وَنَادَيْنَاهُ اَنْ يَّاۤ اِبْرَاهِيْمُ ‐ قَدْ صَدَّقْتَ الرُّؤْيَاۚ اِنَّا كَذٰلِكَ نَجْزِى الْمُحْسِنِيْنَ
অতঃপর যখন তারা উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করলেন এবং পিতা পুত্রকে কাঁত করে শোয়ালেন। তখন আমি তাকে ডেকে বললাম, হে ইবরাহীম! তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে প্রমাণ করে দেখালে। এভাবেই আমি খাঁটি বান্দাদেরকে পুরস্কার দিয়ে থাকি। (সূরা সাফ্ফাত, ১০৩-১০৫)
এটা ছিল ইবরাহীম (আঃ) এর উপর একটি পরীক্ষা :
اِنَّ هٰذَا لَهُوَ الْبَلَآءُ الْمُبِيْنُ
নিশ্চয় এটা ছিল একটি সুস্পষ্ট পরীক্ষা। (সূরা সাফ্ফাত- ১০৬)
ব্যাখ্যা : যখন তারা দু’জন আনুগত্যের শির নত করে দিলেন এবং ইবরাহীম (আঃ) তার পুত্রকে শুইয়ে দিলেন, তখন আল্লাহ আওয়াজ দিলেন, তুমি স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করেছ। কাজেই এখন তোমার সন্তানের প্রাণ বের করে নেয়া আমার লক্ষ্য নয়। আসল উদ্দেশ্য যা ছিল তা তোমার উদ্যোগ ও প্রস্তুতিতেই সফল হয়ে গেছে। যারা সৎকর্মের পথ অবলম্বন করে তাদেরকে আমি অযথা কষ্টের মধ্যে ফেলার এবং দুঃখের মুখোমুখি করার জন্য পরীক্ষার সম্মুখীন করি না। বরং তাদের উন্নত গুণাবলি বিকশিত করার এবং তাদেরকে উচ্চমর্যাদা দান করার জন্যই তাদেরকে পরীক্ষার মুখোমুখি করি। তারপর পরীক্ষার খাতিরে তাদেরকে যে সংকটে নিক্ষেপ করি তা থেকে নিরাপদে উদ্ধারও করি। পুত্রের কুরবানীর জন্য তোমার উদ্যোগ ও প্রস্তুতিই তোমাকে এমন মর্যাদা দানের জন্য যথেষ্ট হয়ে গেছে, যা আমার সস্তুষ্টি লাভের জন্য যথেষ্ট। এভাবে আমি তোমার পুত্রের প্রাণও রক্ষা করলাম এবং তোমাকে এ উচ্চমর্যাদাও দান করলাম।
আল্লাহ তাকে অন্য একটি প্রাণী দিলেন :
وَفَدَيْنَاهُ بِذِبْحٍ عَظِيْمٍ
আর আমি তাকে মুক্ত করলাম এক মহান যবেহের বিনিময়ে। (সূরা সাফ্ফাত- ১০৭)
পরবর্তীদের জন্য এ কুরবানীর নিয়মটি চালু থাকল :
وَتَرَكْنَا عَلَيْهِ فِى الْاٰخِرِيْنَ
আর আমি তার জন্য এ বিষয়টি ভবিষ্যৎ বংশধরদের মধ্যে কায়েম রাখলাম। (সূরা সাফ্ফাত- ১০৮)
فَلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ السَّعْيَ قَالَ يَا بُنَيَّ اِنِّۤيْ اَرٰى فِى الْمَنَامِ اَنِّۤيْ اَذْبَحُكَ فَانْظُرْ مَاذَا تَرٰى
অতঃপর সে (ইসমাঈল আঃ) যখন তার পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হলো তখন ইবরাহীম বললেন, হে বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে যবেহ করছি; অতএব তোমার অভিমত কী? (সূরা সাফ্ফাত- ১০২)
ছেলে এতে রাজী হয়ে গেলেন :
قَالَ يَاۤ اَبَتِ افْعَلْ مَا تُؤْمَرُؗ سَتَجِدُنِۤيْ اِنْ شَآءَ اللهُ مِنَ الصَّابِرِيْنَ
সে বলল, হে আমার বাবা! আপনাকে যে আদেশ করা হয়েছে তা পূর্ণ করুন। ইন্শাআল্লাহ আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্তই পাবেন। (সূরা সাফ্ফাত- ১০২)
ইবরাহীম (আঃ) ছেলেকে কুরবানী করতে প্রস্তুত হলেন :
فَلَمَّاۤ اَسْلَمَا وَتَلَّهٗ لِلْجَبِيْنِ ‐ وَنَادَيْنَاهُ اَنْ يَّاۤ اِبْرَاهِيْمُ ‐ قَدْ صَدَّقْتَ الرُّؤْيَاۚ اِنَّا كَذٰلِكَ نَجْزِى الْمُحْسِنِيْنَ
অতঃপর যখন তারা উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করলেন এবং পিতা পুত্রকে কাঁত করে শোয়ালেন। তখন আমি তাকে ডেকে বললাম, হে ইবরাহীম! তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে প্রমাণ করে দেখালে। এভাবেই আমি খাঁটি বান্দাদেরকে পুরস্কার দিয়ে থাকি। (সূরা সাফ্ফাত, ১০৩-১০৫)
এটা ছিল ইবরাহীম (আঃ) এর উপর একটি পরীক্ষা :
اِنَّ هٰذَا لَهُوَ الْبَلَآءُ الْمُبِيْنُ
নিশ্চয় এটা ছিল একটি সুস্পষ্ট পরীক্ষা। (সূরা সাফ্ফাত- ১০৬)
ব্যাখ্যা : যখন তারা দু’জন আনুগত্যের শির নত করে দিলেন এবং ইবরাহীম (আঃ) তার পুত্রকে শুইয়ে দিলেন, তখন আল্লাহ আওয়াজ দিলেন, তুমি স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করেছ। কাজেই এখন তোমার সন্তানের প্রাণ বের করে নেয়া আমার লক্ষ্য নয়। আসল উদ্দেশ্য যা ছিল তা তোমার উদ্যোগ ও প্রস্তুতিতেই সফল হয়ে গেছে। যারা সৎকর্মের পথ অবলম্বন করে তাদেরকে আমি অযথা কষ্টের মধ্যে ফেলার এবং দুঃখের মুখোমুখি করার জন্য পরীক্ষার সম্মুখীন করি না। বরং তাদের উন্নত গুণাবলি বিকশিত করার এবং তাদেরকে উচ্চমর্যাদা দান করার জন্যই তাদেরকে পরীক্ষার মুখোমুখি করি। তারপর পরীক্ষার খাতিরে তাদেরকে যে সংকটে নিক্ষেপ করি তা থেকে নিরাপদে উদ্ধারও করি। পুত্রের কুরবানীর জন্য তোমার উদ্যোগ ও প্রস্তুতিই তোমাকে এমন মর্যাদা দানের জন্য যথেষ্ট হয়ে গেছে, যা আমার সস্তুষ্টি লাভের জন্য যথেষ্ট। এভাবে আমি তোমার পুত্রের প্রাণও রক্ষা করলাম এবং তোমাকে এ উচ্চমর্যাদাও দান করলাম।
আল্লাহ তাকে অন্য একটি প্রাণী দিলেন :
وَفَدَيْنَاهُ بِذِبْحٍ عَظِيْمٍ
আর আমি তাকে মুক্ত করলাম এক মহান যবেহের বিনিময়ে। (সূরা সাফ্ফাত- ১০৭)
পরবর্তীদের জন্য এ কুরবানীর নিয়মটি চালু থাকল :
وَتَرَكْنَا عَلَيْهِ فِى الْاٰخِرِيْنَ
আর আমি তার জন্য এ বিষয়টি ভবিষ্যৎ বংশধরদের মধ্যে কায়েম রাখলাম। (সূরা সাফ্ফাত- ১০৮)
কুরবানীর উদ্দেশ্য আল্লাহর কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা :
وَالْبُدْنَ جَعَلْنَاهَا لَكُمْ مِّنْ شَعَآئِرِ اللهِ لَكُمْ فِيْهَا خَيْرٌۗ فَاذْكُرُوا اسْمَ اللهِ عَلَيْهَا صَوَآفَّۚ فَاِذَا وَجَبَتْ جُنُوْبُهَا فَكُلُوْا مِنْهَا وَاَطْعِمُوا الْقَانِعَ وَالْمُعْتَرَّ ؕ كَذٰلِكَ سَخَّرْنَاهَا لَكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
আর আমি উষ্ট্রকে করেছি আল্লাহর নিদর্শনগুলোর অন্যতম, তোমাদের জন্য তাতে মঙ্গল রয়েছে। সুতরাং তোমরা সারিবদ্ধ হয়ে দন্ডায়মান অবস্থায় তাদের উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করো। অতঃপর যখন তারা কাত হয়ে পড়ে যায়, তখন তোমরা সেটা হতে আহার করো এবং ধৈর্যশীল ও সওয়ালকারী অভাবগ্রস্তদেরকেও আহার করাও; এভাবে আমি তাদেরকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছি, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা হজ্জ- ৩৬)
ব্যাখ্যা : মানুষ আল্লাহ প্রদত্ত যেসব জিনিস থেকে লাভবান হয়, তার মধ্য থেকে প্রত্যেকটিই আল্লাহর নামে কুরবানী করা উচিত। শুধুমাত্র নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য নয় বরং আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও মালিকানার স্বীকৃতি দেয়ার জন্যও। যাতে করে মানুষ মনে মনে ও কার্যত এ কথা স্বীকার করে নেয় যে, আল্লাহ আমাকে যা কিছু দিয়েছেন সবকিছুই মূলত তাঁরই মালিকানাধীন। সুতরাং বলা যায় যে, ঈমান ও ইসলাম হচ্ছে, আত্মত্যাগের নাম। সালাত ও রোযা হচ্ছে, দেহ ও তার শক্তিসমূহের কুরবানী। যাকাত হচ্ছে, আল্লাহ আমাদেরকে যেসব সম্পদ দিয়েছেন সেগুলোর কুরবানী। জিহাদ হচ্ছে, সময় এবং মানসিক ও শারীরিক যোগ্যতাসমূহের কুরবানী। আর আল্লাহর পথে যুদ্ধ করা হচ্ছে প্রাণের কুরবানী। এসব এক একটি নিয়ামতের কুরবানী এক একটি দানের জন্য কৃতজ্ঞতা। এভাবে পশু কুরবানী করার দায়িত্বও আমাদের উপর ন্যস্ত করা হয়েছে, যাতে আমরা আল্লাহর এ বিরাট নিয়ামতের জন্য তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই এবং তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নেই। কারণ তিনি তাঁর সৃষ্ট বহু প্রাণীকে আমাদের জন্য বশীভূত করে দিয়েছেন। আমরা তাদের পিঠে চড়ে দূর-দূরান্ত পথ অতিক্রম করি, তাদের সাহায্যে চাষাবাদ ও মাল পরিবহন করি, তাদের গোশত খাই, দুধ পান করি এবং তাদের চামড়া, পশম, রক্ত, হাড় ইত্যাদি প্রত্যেকটি জিনিস নানাভাবে ব্যবহার করি। এ চতুষ্পদ জমুতগুলোকে আমাদের জন্য অনুগত করে দিয়ে আল্লাহ আমাদের প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন, এ কুরবানী হচ্ছে সে বিরাট নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ।
আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করা :
لَنْ يَّنَالَ اللهَ لُحُوْمُهَا وَلَا دِمَآؤُهَا وَلٰكِنْ يَّنَالُهُ التَّقْوٰى مِنْكُمْؕ كَذٰلِكَ سَخَّرَهَا لَكُمْ لِتُكَبِّرُوا اللهَ عَلٰى مَا هَدَاكُمْ ؕ وَبَشِّرِ الْمُحْسِنِيْنَ
আল্লাহর নিকট তাদের গোশত এবং রক্ত (কোনকিছুই) পৌঁছায় না, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাক্বওয়া। এভাবে তিনি এদেরকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর। এজন্য যে, তিনি তোমাদেরকে পথপ্রদর্শন করেছেন; সুতরাং তুমি সৎকর্মপরায়ণদেরকে সুসংবাদ দাও। (সূরা হজ্জ- ৩৭)
ব্যাখ্যা : জাহেলী যুগে লোকেরা কুরবানীর জন্তুর রক্ত কা‘বাগৃহের দেয়ালে মুছে দেয়া মর্যাদার কাজ মনে করত এবং এতে আল্লাহ খুশি হন বলে ধারণা করত। অতঃপর মানুষ যখন ইসলাম গ্রহণ করল, তখন সেসব প্রথা বজায় রাখতে চাইলে তাদেরকে তা হতে বারণ করার উদ্দেশ্যে এ আয়াতটি নাযিল হয়।
আল্লাহর নিদর্শনের প্রতি সম্মান দেখানো :
وَمَنْ يُّعَظِّمْ شَعَآئِرَ اللهِ فَاِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوْبِ
যদি কেউ আল্লাহর নিদর্শনাবলিকে সম্মান করে, তবে এটা তো তার অন্তরের তাক্বওয়া মাত্র। (সূরা হজ্জ- ৩২)
ব্যাখ্যা : شَعَائِرُ اللهِ (শা‘আইরুল্লাহ) অর্থাৎ আল্লাহর চিহ্নসমূহ তথা আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের চিহ্নসমূহ। এটি দু’ধরনের হতে পারে- একটি হচ্ছে আল্লাহর ইবাদাতমূলক কর্ম তথা সালাত, রোযা, হজ্জ ইত্যাদি। অপরটি হচ্ছে আল্লাহকে স্মরণ হয় এমন স্মৃতিচিহ্ন তথা বাইতুল্লাহ বা কা‘বাঘর, সাফা-মারওয়া, কুরবানীর জন্য চিহ্নিত জন্তু, হজ্জের স্থানসমূহ ইত্যাদি। এ সম্মান প্রদর্শন হৃদয়ের অভ্যন্তরে লুকায়িত তাক্বওয়ার ফলেই সংঘটিত হয়। সুতরাং যদি কোন ব্যক্তি জেনে বুঝে আল্লাহর নিদর্শনসমূহের প্রতি কোন অমর্যাদা পোষণ করে, তাহলে এটা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, তার মনে আল্লাহর কোন ভয় নেই।
وَالْبُدْنَ جَعَلْنَاهَا لَكُمْ مِّنْ شَعَآئِرِ اللهِ لَكُمْ فِيْهَا خَيْرٌۗ فَاذْكُرُوا اسْمَ اللهِ عَلَيْهَا صَوَآفَّۚ فَاِذَا وَجَبَتْ جُنُوْبُهَا فَكُلُوْا مِنْهَا وَاَطْعِمُوا الْقَانِعَ وَالْمُعْتَرَّ ؕ كَذٰلِكَ سَخَّرْنَاهَا لَكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
আর আমি উষ্ট্রকে করেছি আল্লাহর নিদর্শনগুলোর অন্যতম, তোমাদের জন্য তাতে মঙ্গল রয়েছে। সুতরাং তোমরা সারিবদ্ধ হয়ে দন্ডায়মান অবস্থায় তাদের উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করো। অতঃপর যখন তারা কাত হয়ে পড়ে যায়, তখন তোমরা সেটা হতে আহার করো এবং ধৈর্যশীল ও সওয়ালকারী অভাবগ্রস্তদেরকেও আহার করাও; এভাবে আমি তাদেরকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছি, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা হজ্জ- ৩৬)
ব্যাখ্যা : মানুষ আল্লাহ প্রদত্ত যেসব জিনিস থেকে লাভবান হয়, তার মধ্য থেকে প্রত্যেকটিই আল্লাহর নামে কুরবানী করা উচিত। শুধুমাত্র নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য নয় বরং আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও মালিকানার স্বীকৃতি দেয়ার জন্যও। যাতে করে মানুষ মনে মনে ও কার্যত এ কথা স্বীকার করে নেয় যে, আল্লাহ আমাকে যা কিছু দিয়েছেন সবকিছুই মূলত তাঁরই মালিকানাধীন। সুতরাং বলা যায় যে, ঈমান ও ইসলাম হচ্ছে, আত্মত্যাগের নাম। সালাত ও রোযা হচ্ছে, দেহ ও তার শক্তিসমূহের কুরবানী। যাকাত হচ্ছে, আল্লাহ আমাদেরকে যেসব সম্পদ দিয়েছেন সেগুলোর কুরবানী। জিহাদ হচ্ছে, সময় এবং মানসিক ও শারীরিক যোগ্যতাসমূহের কুরবানী। আর আল্লাহর পথে যুদ্ধ করা হচ্ছে প্রাণের কুরবানী। এসব এক একটি নিয়ামতের কুরবানী এক একটি দানের জন্য কৃতজ্ঞতা। এভাবে পশু কুরবানী করার দায়িত্বও আমাদের উপর ন্যস্ত করা হয়েছে, যাতে আমরা আল্লাহর এ বিরাট নিয়ামতের জন্য তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই এবং তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নেই। কারণ তিনি তাঁর সৃষ্ট বহু প্রাণীকে আমাদের জন্য বশীভূত করে দিয়েছেন। আমরা তাদের পিঠে চড়ে দূর-দূরান্ত পথ অতিক্রম করি, তাদের সাহায্যে চাষাবাদ ও মাল পরিবহন করি, তাদের গোশত খাই, দুধ পান করি এবং তাদের চামড়া, পশম, রক্ত, হাড় ইত্যাদি প্রত্যেকটি জিনিস নানাভাবে ব্যবহার করি। এ চতুষ্পদ জমুতগুলোকে আমাদের জন্য অনুগত করে দিয়ে আল্লাহ আমাদের প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন, এ কুরবানী হচ্ছে সে বিরাট নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ।
আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করা :
لَنْ يَّنَالَ اللهَ لُحُوْمُهَا وَلَا دِمَآؤُهَا وَلٰكِنْ يَّنَالُهُ التَّقْوٰى مِنْكُمْؕ كَذٰلِكَ سَخَّرَهَا لَكُمْ لِتُكَبِّرُوا اللهَ عَلٰى مَا هَدَاكُمْ ؕ وَبَشِّرِ الْمُحْسِنِيْنَ
আল্লাহর নিকট তাদের গোশত এবং রক্ত (কোনকিছুই) পৌঁছায় না, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাক্বওয়া। এভাবে তিনি এদেরকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর। এজন্য যে, তিনি তোমাদেরকে পথপ্রদর্শন করেছেন; সুতরাং তুমি সৎকর্মপরায়ণদেরকে সুসংবাদ দাও। (সূরা হজ্জ- ৩৭)
ব্যাখ্যা : জাহেলী যুগে লোকেরা কুরবানীর জন্তুর রক্ত কা‘বাগৃহের দেয়ালে মুছে দেয়া মর্যাদার কাজ মনে করত এবং এতে আল্লাহ খুশি হন বলে ধারণা করত। অতঃপর মানুষ যখন ইসলাম গ্রহণ করল, তখন সেসব প্রথা বজায় রাখতে চাইলে তাদেরকে তা হতে বারণ করার উদ্দেশ্যে এ আয়াতটি নাযিল হয়।
আল্লাহর নিদর্শনের প্রতি সম্মান দেখানো :
وَمَنْ يُّعَظِّمْ شَعَآئِرَ اللهِ فَاِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوْبِ
যদি কেউ আল্লাহর নিদর্শনাবলিকে সম্মান করে, তবে এটা তো তার অন্তরের তাক্বওয়া মাত্র। (সূরা হজ্জ- ৩২)
ব্যাখ্যা : شَعَائِرُ اللهِ (শা‘আইরুল্লাহ) অর্থাৎ আল্লাহর চিহ্নসমূহ তথা আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের চিহ্নসমূহ। এটি দু’ধরনের হতে পারে- একটি হচ্ছে আল্লাহর ইবাদাতমূলক কর্ম তথা সালাত, রোযা, হজ্জ ইত্যাদি। অপরটি হচ্ছে আল্লাহকে স্মরণ হয় এমন স্মৃতিচিহ্ন তথা বাইতুল্লাহ বা কা‘বাঘর, সাফা-মারওয়া, কুরবানীর জন্য চিহ্নিত জন্তু, হজ্জের স্থানসমূহ ইত্যাদি। এ সম্মান প্রদর্শন হৃদয়ের অভ্যন্তরে লুকায়িত তাক্বওয়ার ফলেই সংঘটিত হয়। সুতরাং যদি কোন ব্যক্তি জেনে বুঝে আল্লাহর নিদর্শনসমূহের প্রতি কোন অমর্যাদা পোষণ করে, তাহলে এটা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, তার মনে আল্লাহর কোন ভয় নেই।
নির্দিষ্ট দিনে কুরবানী করতে হবে :
وَيَذْكُرُوا اسْمَ اللهِ فِۤيْ اَيَّامٍ مَّعْلُوْمَاتٍ عَلٰى مَا رَزَقَهُمْ مِّنْ ۢبَهِيْمَةِ الْاَنْعَامِ
তিনি তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু হতে রিযিক হিসেবে যা দান করেছেন, তার উপর নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। (সূরা হজ্জ- ২৮)
হাজীদের জন্য কা‘বার সীমানায় কুরবানী করতে হবে :
ثُمَّ مَحِلُّهَاۤ اِلَى الْبَيْتِ الْعَتِيْقِ
অতঃপর তাদের কুরবানীর স্থান (নির্ধারণ করা হলো) প্রাচীন গৃহের নিকট। (সূরা হজ্জ- ৩৩)
যবেহ করার আগে পশু থেকে উপকার নেয়া যায় :
لَكُمْ فِيْهَا مَنَافِعُ اِلٰى اَجَلٍ مُّسَمًّى
তোমাদের জন্য তাতে নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত উপকার রয়েছে। (সূরা হজ্জ- ৩৩)
উটকে দাঁড়ানো অবস্থায় যবেহ করতে হয় :
وَالْبُدْنَ جَعَلْنَاهَا لَكُمْ مِّنْ شَعَآئِرِ اللهِ لَكُمْ فِيْهَا خَيْرٌۗ فَاذْكُرُوا اسْمَ اللهِ عَلَيْهَا صَوَآفَّ
আমি তোমাদের জন্য উটকে বানিয়েছি আল্লাহর নিদর্শন, তাতে রয়েছে তোমাদের জন্য অনেক কল্যাণ। সুতরাং তোমরা সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান অবস্থায় তাদের উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করো। (সূরা হজ্জ- ৩৬)
ব্যাখ্যা : উটকে দাঁড় করিয়ে যবেহ করা হয়। তার একটি পা বেঁধে দেয়া হয় তারপর কণ্ঠনালীতে সজোরে আঘাত করা হয়। সেখান থেকে রক্তের ধারা প্রবাহিত হতে থাকে। তারপর প্রচুর রক্তক্ষরণ হলে উট মাটিতে পড়ে যায়। صَوَافَّ (সওয়াফ) বা দাঁড় করিয়ে রাখা বলতে এটিই বুঝানো হয়েছে। তারা পড়ে গিয়ে স্থির হয়ে যায় অর্থাৎ প্রাণবায়ু পুরোপুরি বের হয়ে যায়।
আল্লাহর নাম নিয়ে পশু যবেহ করতে হয় :
فَكُلُوْا مِمَّا ذُكِرَ اسْمُ اللّٰهِ عَلَيْهِ اِنْ كُنْتُمْ بِاٰيَاتِهٖ مُؤْمِنِيْنَ
অতএব যাতে আল্লাহর নাম নেয়া হয় তা হতে আহার করো, যদি তোমরা তাঁর আয়াতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে থাক। (সূরা আন‘আম- ১১৮)
وَلَا تَاْكُلُوْا مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللهِ عَلَيْهِ وَاِنَّهٗ لَفِسْقٌ
আর যাতে আল্লাহর নাম নেয়া হয় না, তোমরা তা হতে আহার করো না। কেননা নিশ্চয় এটা ফাসিকী কাজ। (সূরা আন‘আম- ১২১)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর নাম উচ্চারণ না করে যবেহ করলে কোন পশু হালাল হয় না। ‘‘তাদের উপর আল্লাহর নাম নাও’’ বলার অর্থ হচ্ছে, যবেহ করার শুরুতে আল্লাহর নাম নাও, তারপর যবেহ করো। এ থেকে এ কথা প্রমাণিত হয় যে, ইসলামী শরীয়াতে আল্লাহর নাম না নিয়ে পশু যবেহ করার কোন অবকাশ নেই। যবেহ করার সময় بِسْمِ اللهِ اَللهُ اَكْبَرُ বলার পদ্ধতি এখান থেকেই গৃহীত হয়েছে।
কুরবানীর গোশত নিজে খাবে এবং গরীবদেরকে খাওয়াবে :
فَكُلُوْا مِنْهَا وَاَطْعِمُوا الْبَآئِسَ الْفَقِيْرَ
তোমরা তা হতে আহার করো এবং দুঃখ-দুর্দশাগ্রস্ত ও অভাবগ্রস্তকেও আহার করাও। (সূরা হজ্জ- ২৮)
আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে কুরবানী করতে হবে :
لَنْ يَّنَالَ اللهَ لُحُوْمُهَا وَلَا دِمَآؤُهَا وَلٰكِنْ يَّنَالُهُ التَّقْوٰى مِنْكُمْ
আল্লাহর নিকট তাদের গোশত ও রক্ত কিছুই পৌঁছায় না, বরং তোমাদের তাক্বওয়াটাই পৌঁছায়। (সূরা হজ্জ- ৩৭)
ব্যাখ্যা : জাহেলী যুগে আরববাসীরা দেব-দেবী ও মূর্তির জন্য যেসব পশু কুরবানী দিত সেসব পশুর গোশত কা‘বাঘরের সামনে এনে রাখত এবং এর দেয়ালে রক্ত লেপটে দিত। অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আল্লাহর সামনে যে আসল জিনিস পেশ করা হয় তা পশুর গোশত ও রক্ত নয় বরং তোমাদের তাক্বওয়া। যদি তোমরা নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের প্রবণতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে খালিস নিয়তে একমাত্র আল্লাহর জন্য কুরবানী কর, তাহলে এ নিয়ত ও আন্তরিকতা তাঁর কাছে পৌঁছে যাবে এবং এর রক্ত ও গোশত এখানেই থেকে যাবে। সুতরাং অন্তরে তাঁর বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নাও এবং কাজে তার প্রকাশ ঘটাও। এগুলো যাঁর মালিকানাধীন এবং যিনি এগুলোর উপর তোমাদের কর্তৃত্ব দান করেছেন, অন্তরে ও কাজে-কর্মেও তাঁর মালিকানার স্বীকৃতি দাও।
আল্লাহ পরহেযগারদের কুরবানী কবুল করেন :
وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَاَ ابْنَيْ اٰدَمَ بِالْحَقِّۘ اِذْ قَرَّبَا قُرْبَانًا فَتُقُبِّلَ مِنْ اَحَدِهِمَا وَلَمْ يُتَقَبَّلْ مِنَ الْاٰخَرِؕ قَالَ لَاَقْتُلَنَّكَؕ قَالَ اِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللهُ مِنَ الْمُتَّقِيْنَ
তুমি তাদেরকে আদমের দু’পুত্রের বিবরণ সঠিকভাবে বর্ণনা করো। যখন তারা কুরবানী করেছিল তখন তাদের একজনের কুরবানী কবুল করা হয়েছিল এবং অপরজনের কুরবানী কবুল করা হয়নি। সে বলল, অবশ্যই আমি তোমাকে হত্যা করব। অপরজন বলল, আল্লাহ একমাত্র পরহেযগারদের কুরবানীই কবুল করে থাকেন। (সূরা মায়েদা- ২৭)
وَيَذْكُرُوا اسْمَ اللهِ فِۤيْ اَيَّامٍ مَّعْلُوْمَاتٍ عَلٰى مَا رَزَقَهُمْ مِّنْ ۢبَهِيْمَةِ الْاَنْعَامِ
তিনি তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু হতে রিযিক হিসেবে যা দান করেছেন, তার উপর নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। (সূরা হজ্জ- ২৮)
হাজীদের জন্য কা‘বার সীমানায় কুরবানী করতে হবে :
ثُمَّ مَحِلُّهَاۤ اِلَى الْبَيْتِ الْعَتِيْقِ
অতঃপর তাদের কুরবানীর স্থান (নির্ধারণ করা হলো) প্রাচীন গৃহের নিকট। (সূরা হজ্জ- ৩৩)
যবেহ করার আগে পশু থেকে উপকার নেয়া যায় :
لَكُمْ فِيْهَا مَنَافِعُ اِلٰى اَجَلٍ مُّسَمًّى
তোমাদের জন্য তাতে নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত উপকার রয়েছে। (সূরা হজ্জ- ৩৩)
উটকে দাঁড়ানো অবস্থায় যবেহ করতে হয় :
وَالْبُدْنَ جَعَلْنَاهَا لَكُمْ مِّنْ شَعَآئِرِ اللهِ لَكُمْ فِيْهَا خَيْرٌۗ فَاذْكُرُوا اسْمَ اللهِ عَلَيْهَا صَوَآفَّ
আমি তোমাদের জন্য উটকে বানিয়েছি আল্লাহর নিদর্শন, তাতে রয়েছে তোমাদের জন্য অনেক কল্যাণ। সুতরাং তোমরা সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান অবস্থায় তাদের উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করো। (সূরা হজ্জ- ৩৬)
ব্যাখ্যা : উটকে দাঁড় করিয়ে যবেহ করা হয়। তার একটি পা বেঁধে দেয়া হয় তারপর কণ্ঠনালীতে সজোরে আঘাত করা হয়। সেখান থেকে রক্তের ধারা প্রবাহিত হতে থাকে। তারপর প্রচুর রক্তক্ষরণ হলে উট মাটিতে পড়ে যায়। صَوَافَّ (সওয়াফ) বা দাঁড় করিয়ে রাখা বলতে এটিই বুঝানো হয়েছে। তারা পড়ে গিয়ে স্থির হয়ে যায় অর্থাৎ প্রাণবায়ু পুরোপুরি বের হয়ে যায়।
আল্লাহর নাম নিয়ে পশু যবেহ করতে হয় :
فَكُلُوْا مِمَّا ذُكِرَ اسْمُ اللّٰهِ عَلَيْهِ اِنْ كُنْتُمْ بِاٰيَاتِهٖ مُؤْمِنِيْنَ
অতএব যাতে আল্লাহর নাম নেয়া হয় তা হতে আহার করো, যদি তোমরা তাঁর আয়াতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে থাক। (সূরা আন‘আম- ১১৮)
وَلَا تَاْكُلُوْا مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللهِ عَلَيْهِ وَاِنَّهٗ لَفِسْقٌ
আর যাতে আল্লাহর নাম নেয়া হয় না, তোমরা তা হতে আহার করো না। কেননা নিশ্চয় এটা ফাসিকী কাজ। (সূরা আন‘আম- ১২১)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর নাম উচ্চারণ না করে যবেহ করলে কোন পশু হালাল হয় না। ‘‘তাদের উপর আল্লাহর নাম নাও’’ বলার অর্থ হচ্ছে, যবেহ করার শুরুতে আল্লাহর নাম নাও, তারপর যবেহ করো। এ থেকে এ কথা প্রমাণিত হয় যে, ইসলামী শরীয়াতে আল্লাহর নাম না নিয়ে পশু যবেহ করার কোন অবকাশ নেই। যবেহ করার সময় بِسْمِ اللهِ اَللهُ اَكْبَرُ বলার পদ্ধতি এখান থেকেই গৃহীত হয়েছে।
কুরবানীর গোশত নিজে খাবে এবং গরীবদেরকে খাওয়াবে :
فَكُلُوْا مِنْهَا وَاَطْعِمُوا الْبَآئِسَ الْفَقِيْرَ
তোমরা তা হতে আহার করো এবং দুঃখ-দুর্দশাগ্রস্ত ও অভাবগ্রস্তকেও আহার করাও। (সূরা হজ্জ- ২৮)
আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে কুরবানী করতে হবে :
لَنْ يَّنَالَ اللهَ لُحُوْمُهَا وَلَا دِمَآؤُهَا وَلٰكِنْ يَّنَالُهُ التَّقْوٰى مِنْكُمْ
আল্লাহর নিকট তাদের গোশত ও রক্ত কিছুই পৌঁছায় না, বরং তোমাদের তাক্বওয়াটাই পৌঁছায়। (সূরা হজ্জ- ৩৭)
ব্যাখ্যা : জাহেলী যুগে আরববাসীরা দেব-দেবী ও মূর্তির জন্য যেসব পশু কুরবানী দিত সেসব পশুর গোশত কা‘বাঘরের সামনে এনে রাখত এবং এর দেয়ালে রক্ত লেপটে দিত। অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আল্লাহর সামনে যে আসল জিনিস পেশ করা হয় তা পশুর গোশত ও রক্ত নয় বরং তোমাদের তাক্বওয়া। যদি তোমরা নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের প্রবণতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে খালিস নিয়তে একমাত্র আল্লাহর জন্য কুরবানী কর, তাহলে এ নিয়ত ও আন্তরিকতা তাঁর কাছে পৌঁছে যাবে এবং এর রক্ত ও গোশত এখানেই থেকে যাবে। সুতরাং অন্তরে তাঁর বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নাও এবং কাজে তার প্রকাশ ঘটাও। এগুলো যাঁর মালিকানাধীন এবং যিনি এগুলোর উপর তোমাদের কর্তৃত্ব দান করেছেন, অন্তরে ও কাজে-কর্মেও তাঁর মালিকানার স্বীকৃতি দাও।
আল্লাহ পরহেযগারদের কুরবানী কবুল করেন :
وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَاَ ابْنَيْ اٰدَمَ بِالْحَقِّۘ اِذْ قَرَّبَا قُرْبَانًا فَتُقُبِّلَ مِنْ اَحَدِهِمَا وَلَمْ يُتَقَبَّلْ مِنَ الْاٰخَرِؕ قَالَ لَاَقْتُلَنَّكَؕ قَالَ اِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللهُ مِنَ الْمُتَّقِيْنَ
তুমি তাদেরকে আদমের দু’পুত্রের বিবরণ সঠিকভাবে বর্ণনা করো। যখন তারা কুরবানী করেছিল তখন তাদের একজনের কুরবানী কবুল করা হয়েছিল এবং অপরজনের কুরবানী কবুল করা হয়নি। সে বলল, অবশ্যই আমি তোমাকে হত্যা করব। অপরজন বলল, আল্লাহ একমাত্র পরহেযগারদের কুরবানীই কবুল করে থাকেন। (সূরা মায়েদা- ২৭)
হিজরত শব্দের শাব্দিক অর্থ ত্যাগ করা। পারিভাষিক অর্থে কোন স্থানে বসবাস করে আল্লাহর বিধান পালন করা সম্ভব না হলে ঐ স্থান ছেড়ে অনুকূল স্থানে চলে যাওয়াকে হিজরত বলে। আল্লাহর পৃথিবী সংকীর্ণ নয়। যদি কখনো জাতি ও দেশ প্রেমের দাবী এবং আল্লাহর দাসত্ব ও আনুগত্যের দাবীর মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে, তাহলে সেটিই হবে ঈমানের পরীক্ষার সময়। এমতাবস্থায় যে সত্যিকার মুমিন হবে, সে আল্লাহর ইবাদাত করবে এবং দেশ ও জাতিকে পরিত্যাগ করবে। আর যে মিথ্যা ঈমানের দাবীদার হবে, সে ঈমান পরিত্যাগ করবে এবং দেশ ও জাতিকে আঁকড়ে ধরবে। একজন সত্যিকার ঈমানদার ব্যক্তির কাছে আল্লাহর ইবাদাতই হলো সবচেয়ে প্রিয়। দুনিয়ার সবকিছুকে কুরবানী দিতে হলেও সে প্রস্তুত থাকবে; কিন্তু তার দ্বীনকে নষ্ট করবে না।
আল্লাহর জমিন অনেক প্রশস্ত :
وَاَرْضُ اللهِ وَاسِعَةٌ ‐ اِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُوْنَ اَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ
আল্লাহর জমিন প্রশস্ত; নিশ্চয় ধৈর্যশীলদেরকে অগণিত পুরস্কার দেয়া হবে। (সূরা যুমার- ১০)
يَا عِبَادِيَ الَّذِيْنَ اٰ مَنُوْاۤ اِنَّ اَرْضِيْ وَاسِعَةٌ فَاِيَّايَ فَاعْبُدُوْنِ
হে আমার মুমিন বান্দাগণ! নিশ্চয় আমার জমিন প্রশস্ত; সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদাত করো। (সূরা আনকাবূত- ৫৬)
প্রয়োজন হলে অবশ্যই হিজরত করতে হবে :
اِنَّ الَّذِيْنَ تَوَفَّاهُمُ الْمَلَآئِكَةُ ظَالِمِيْۤ اَنْفُسِهِمْ قَالُوْا فِيْمَ كُنْتُمْؕ قَالُوْا كُنَّا مُسْتَضْعَفِيْنَ فِى الْاَرْضِؕ قَالُوْاۤ اَلَمْ تَكُنْ اَرْضُ اللهِ وَاسِعَةً فَتُهَاجِرُوْا فِيْهَاؕ فَاُولٰٓئِكَ مَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ ؕ وَسَآءَتْ مَصِيْرًا
যারা নিজেদের উপর যুলুম করে ফেরেশতাগণ তাদের প্রাণ গ্রহণের সময় বলে, তোমরা কী অবস্থায় ছিলে? তারা বলে, দুনিয়াতে আমরা অসহায় অবস্থায় ছিলাম। ফেরেশতাগণ বলে, আল্লাহর জমিন কি এমন প্রশস্ত ছিল না, যেখানে তোমরা হিজরত করতে পারতে? এদের আবাসস্থল জাহান্নাম, আর তা কতই না মন্দ আবাস! (সূরা নিসা- ৯৭)
ব্যাখ্যা : এখানে এমন লোকদের কথা বলা হয়েছে, যারা ইসলাম গ্রহণ করার পরও কোন প্রকার অক্ষমতা ছাড়াই কাফির গোত্রের সাথে অবস্থান করছিল। তারা আংশিক মুসলিম ও আংশিক কাফির অবস্থায় জীবন-যাপন করেই সন্তুষ্ট ছিল। অথচ ইতোমধ্যে একটি দারুল ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছিল। সেখানে হিজরত করে নিজেদের দ্বীন ও আকীদা-বিশ্বাস অনুযায়ী ইসলামী জীবন-যাপন করা তাদের পক্ষে সম্ভবপর হয়ে উঠেছিল। আর এটিই ছিল নিজেদের উপর তাদের যুলুম। কেননা পূর্ণাঙ্গ ইসলামী জীবন-যাপনের মুকাবিলায় এই আধা কুফরী ও আধা ইসলামী জীবনে যে জিনিসটি তাদেরকে সন্তুষ্ট ও নিশ্চিন্ত করে তুলেছিল, সেটি যথার্থ কোন অক্ষমতা ছিল না। বরং সেটি ছিল নিজেদের পরিবার, সহায়-সম্পত্তি ও পার্থিব স্বার্থপ্রীতি। দ্বীনের উপর তারা এগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়েছিল।
যারা অক্ষম আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন :
اِلَّا الْمُسْتَضْعَفِيْنَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَآءِ وَالْوِلْدَانِ لَا يَسْتَطِيْعُوْنَ حِيْلَةً وَّلَا يَهْتَدُوْنَ سَبِيْلًا ‐ فَاُولٰٓئِكَ عَسَى اللهُ اَنْ يَّعْفُوَ عَنْهُمْؕ وَكَانَ اللهُ عَفُوًّا غَفُوْرًا
তবে যেসব অসহায় পুরুষ, নারী ও শিশু কোন উপায় অবলম্বন করতে পারে না এবং কোন পথও পায় না। আল্লাহ অচিরেই তাদের পাপ মোচন করবেন; আর আল্লাহ পাপ মোচনকারী ও ক্ষমাশীল। (সূরা নিসা- ৯৮, ৯৯)
নবী-রাসূলদেরকেও হিজরত করতে হয়েছে :
وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِرُسُلِهِمْ لَنُخْرِجَنَّكُمْ مِّنْ اَرْضِنَاۤ اَوْ لَتَعُوْدُنَّ فِيْ مِلَّتِنَاؕ فَاَوْحٰۤى اِلَيْهِمْ رَبُّهُمْ لَنُهْلِكَنَّ الظَّالِمِيْنَ
কাফিররা তাদের রাসূলদেরকে বলেছিল, আমরা অবশ্যই তোমাদেরকে আমাদের দেশ হতে বহিষ্কার করব অথবা তোমাদেরকে আমাদের ধর্মে ফিরে আসতে হবে। অতঃপর রাসূলদেরকে তাদের প্রতিপালক ওহী করলেন যে, যালিমদেরকে অবশ্যই আমি বিনাশ করব। (সূরা ইবরাহীম- ১৩)
নবী মুহাম্মাদ ﷺ কেও হিজরত করতে হয়েছে :
اِلَّا تَنْصُرُوْهُ فَقَدْ نَصَرَهُ اللهُ اِذْ اَخْرَجَهُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا ثَانِيَ اثْنَيْنِ اِذْ هُمَا فِى الْغَارِ اِذْ يَقُوْلُ لِصَاحِبِهٖ لَا تَحْزَنْ اِنَّ اللهَ مَعَنَا
যদি তোমরা তাঁকে সাহায্য না করো, তবে আল্লাহ তো তাকে সাহায্য করেছিলেন যখন কাফিররা তাকে বহিষ্কার করেছিল এবং সে ছিল দু’জনের দ্বিতীয়জন। যখন তারা উভয়ে গুহার মধ্যে ছিল; সে তখন তার সঙ্গীকে বলেছিল, চিন্তিত হয়ো না, নিশ্চয় আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন। (সূরা তাওবা- ৪০)
ব্যাখ্যা : হিজরতের সময় যখন নবী ﷺ আবু বকর (রাঃ) কে সাথে নিয়ে হেরা পর্বতের গোহায় আত্মগোপন করলেন এবং শত্রুরাও এক সময় খুঁজতে খুঁজতে একদম কাছে এসে গিয়েছিল, এমনকি তাদের পায়ের শব্দও শোনা যাচ্ছিল তখন আবু বকর (রাঃ) ভয় পেয়ে ছিলেন এবং বলেছিলেন, শত্রুদের একজন যদি একটু ভেতরে ঢুকে উঁকি দেয়, তাহলে দেখে ফেলবে। কিন্তু নবী ﷺ একটুও বিচলিত না হয়ে আবু বকর (রাঃ) কে এ বলে সান্ত্বনা দিলেন, ‘‘চিন্তিত হয়ো না এবং মন খারাপও করো না; কেননা আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন।’’
সাহাবীদের মধ্যে কেউ মুহাজির এবং কেউ আনসার ছিলেন :
وَالسَّابِقُوْنَ الْاَوَّلُوْنَ مِنَ الْمُهَاجِرِيْنَ وَالْاَنْصَارِ وَالَّذِيْنَ اتَّبَعُوْهُمْ بِاِحْسَانٍ رَّضِيَ اللهُ عَنْهُمْ وَرَضُوْا عَنْهُ
মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা অগ্রগামী এবং যারা নিষ্ঠার সাথে তাদের অনুসরণ করে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও তাতে সন্তুষ্ট। (সূরা তাওবা- ১০০)
আনসার সাহাবীরা মুহাজিরদেরকে খুবই সম্মান করতেন :
وَالَّذِيْنَ تَبَوَّءُوا الدَّارَ وَالْاِيْمَانَ مِنْ قَبْلِهِمْ يُحِبُّوْنَ مَنْ هَاجَرَ اِلَيْهِمْ وَلَا يَجِدُوْنَ فِيْ صُدُوْرِهِمْ حَاجَةً مِّمَّاۤ اُوْتُوْا وَيُؤْثِرُوْنَ عَلٰۤى اَنْفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ وَمَنْ يُّوْقَ شُحَّ نَفْسِهٖ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
আর মুহাজিরদের (আগমনের) পূর্বে যারা এ নগরীতে (মদিনায়) বসবাস করেছে এবং ঈমান এনেছে, তারা তাদেরকে (মুহাজিরদেরকে) ভালোবাসে এবং মুহাজিরদেরকে যা দেয়া হয়েছে তার জন্য তারা অন্তরে আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে না। তারা অভাবগ্রস্ত হলেও তাদেরকে নিজেদের উপর প্রাধান্য দেয়। আর যারা নিজেদেরকে কৃপণতা হতে মুক্ত করেছে, তারাই সফলকাম। (সূরা হাশর- ৯)
হিজরতকালে পড়ার দু‘আ :
رَبِّ اَدْخِلْنِيْ مُدْخَلَ صِدْقٍ وَّاَخْرِجْنِيْ مُخْرَجَ صِدْقٍ وَّاجْعَلْ لِّيْ مِنْ لَّدُنْكَ سُلْطَانًا نَّصِيْرًا
বলো, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে প্রবেশ করাও কল্যাণের সাথে এবং আমাকে বের করাও কল্যাণের সাথে। আর তোমার নিকট হতে আমাকে দান করো সাহায্যকারী শক্তি। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৮০)
আল্লাহ হিজরতকারীদেরকে উত্তম ব্যবস্থা দান করেন :
وَمَنْ يُّهَاجِرْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ يَجِدْ فِى الْاَرْضِ مُرَاغَمًا كَثِيْرًا وَّسَعَةً
যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে হিজরত করবে, সে পৃথিবীতে বহু আশ্রয়স্থল এবং প্রার্চুয লাভ করবে। (সূরা নিসা- ১০০)
وَالَّذِيْنَ هَاجَرُوْا فِى اللهِ مِنْ ۢبَعْدِ مَا ظُلِمُوْا لَنُبَوِّئَنَّهُمْ فِى الدُّنْيَا حَسَنَةً
আর যারা অত্যাচারিত হওয়ার পর আল্লাহর পথে হিজরত করেছে, অবশ্যই আমি তাদেরকে দুনিয়ায় উত্তম আবাস দান করব। (সূরা নাহল- ৪১)
ব্যাখ্যা : যে ব্যক্তি আল্লাহর দ্বীনের উপর ঈমান এনেছে তার জন্য কুফরী জীবনব্যবস্থার অধীনে জীবন-যাপন করা কেবল দু’টি অবস্থায় বৈধ হতে পারে।
(এক) ইসলামকে ঐ দেশে বিজয়ী করার ও কুফরী জীবনব্যবস্থাকে ইসলামী জীবনব্যবস্থায় পরিবর্তিত করার জন্য সে প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম চালাতে থাকবে যেমন আম্বিয়া (আঃ) ও তাঁর প্রাথমিক অনুসারীবৃন্দ চালিয়ে এসেছেন।
(দুই) সে সেখান থেকে বের হয়ে আসার কোন পথ পায়নি, তাই চরম ঘৃণা ও অনিচ্ছা সহকারে বাধ্য হয়ে সেখানে অবস্থান করবে। এ দু’টি অবস্থা ছাড়া অন্য যে কোন অবস্থায় দারুল কুফরে অবস্থান করলে পাপ হবে।
হিজরতের সময় প্রাণের ভয় করা উচিত নয় :
كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِ ثُمَّ اِلَيْنَا تُرْجَعُوْنَ
প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণকারী; অতঃপর তোমরা আমারই নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা আনকাবূত- ৫৭)
ব্যাখ্যা : হিজরতের সময় প্রাণের কথা ভেব না। কেননা তা কখনো না কখনো চলে যাবেই। চিরকাল থাকার জন্য কেউই দুনিয়ায় আসেনি। কাজেই এ দুনিয়ায় কীভাবে প্রাণ বাঁচিয়ে চলতে হবে- এটা তোমাদের জন্য কোন চিন্তাযোগ্য বিষয় নয়। বরং আসল চিন্তার বিষয় হচ্ছে, ঈমান কেমন করে বাঁচানো যাবে এবং আল্লাহর আনুগত্যের দাবী কীভাবে পূরণ করা যাবে। মনে রাখবে, শেষ পর্যন্ত তোমাদেরকে আমার দিকেই ফিরে আসতে হবে। সুতরাং যদি তোমরা দুনিয়ায় প্রাণ বাঁচানোর জন্য ঈমান হারিয়ে ফেল, তাহলে এর পরিণাম হবে খুবই ভয়াবহ। আর যদি ঈমান বাঁচানোর জন্য প্রাণ হারিয়ে ফেল, তাহলে এর ফল হবে অতি মঙ্গলজনক।
হিজরতের সময় রিযিকের ভয় করা যাবে না :
وَكَاَيِّنْ مِّنْ دَآبَّةٍ لَّا تَحْمِلُ رِزْقَهَاۗ اَللهُ يَرْزُقُهَا وَاِيَّاكُمْؗ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
এমন কত জীবজন্তু আছে, যারা নিজেদের খাদ্য মওজুদ রাখে না। আল্লাহই রিযিক দান করেন তাদেরকে ও তোমাদেরকে; আর তিনিই সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞা। (সূরা আনকাবূত- ৬০)
ব্যাখ্যা : হিজরত করার ব্যাপারে তোমাদের প্রাণের চিন্তা তো দূরের কথা জীবিকার চিন্তাতেও অস্থির হওয়া উচিত নয়। তোমাদের চোখের সামনে যে অসংখ্য প্রাণী জলে-স্থলে বিচরণ করে বেড়াচ্ছে, তাদের জীবিকার দায়িত্ব কে বহন করছে? আল্লাহই তো এদের সবাইকে প্রতিপালন করছেন। এরা যেখানেই যায় আল্লাহর অনুগ্রহে কোন না কোনভাবে জীবিকা লাভ করে থাকে। কাজেই তোমরা এ কথা ভেবে সাহস হারিয়ে ফেল না যে, যদি ঈমান রক্ষার জন্য বাড়িঘর ছেড়ে বের হয়ে পড়ি তাহলে খাব কী? জেনে রেখো, আল্লাহ যেখান থেকে তাঁর অসংখ্য সৃষ্টিকে রিযিক দিচ্ছেন সেখান থেকে তোমাদেরকেও দেবেন।
وَاَرْضُ اللهِ وَاسِعَةٌ ‐ اِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُوْنَ اَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ
আল্লাহর জমিন প্রশস্ত; নিশ্চয় ধৈর্যশীলদেরকে অগণিত পুরস্কার দেয়া হবে। (সূরা যুমার- ১০)
يَا عِبَادِيَ الَّذِيْنَ اٰ مَنُوْاۤ اِنَّ اَرْضِيْ وَاسِعَةٌ فَاِيَّايَ فَاعْبُدُوْنِ
হে আমার মুমিন বান্দাগণ! নিশ্চয় আমার জমিন প্রশস্ত; সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদাত করো। (সূরা আনকাবূত- ৫৬)
প্রয়োজন হলে অবশ্যই হিজরত করতে হবে :
اِنَّ الَّذِيْنَ تَوَفَّاهُمُ الْمَلَآئِكَةُ ظَالِمِيْۤ اَنْفُسِهِمْ قَالُوْا فِيْمَ كُنْتُمْؕ قَالُوْا كُنَّا مُسْتَضْعَفِيْنَ فِى الْاَرْضِؕ قَالُوْاۤ اَلَمْ تَكُنْ اَرْضُ اللهِ وَاسِعَةً فَتُهَاجِرُوْا فِيْهَاؕ فَاُولٰٓئِكَ مَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ ؕ وَسَآءَتْ مَصِيْرًا
যারা নিজেদের উপর যুলুম করে ফেরেশতাগণ তাদের প্রাণ গ্রহণের সময় বলে, তোমরা কী অবস্থায় ছিলে? তারা বলে, দুনিয়াতে আমরা অসহায় অবস্থায় ছিলাম। ফেরেশতাগণ বলে, আল্লাহর জমিন কি এমন প্রশস্ত ছিল না, যেখানে তোমরা হিজরত করতে পারতে? এদের আবাসস্থল জাহান্নাম, আর তা কতই না মন্দ আবাস! (সূরা নিসা- ৯৭)
ব্যাখ্যা : এখানে এমন লোকদের কথা বলা হয়েছে, যারা ইসলাম গ্রহণ করার পরও কোন প্রকার অক্ষমতা ছাড়াই কাফির গোত্রের সাথে অবস্থান করছিল। তারা আংশিক মুসলিম ও আংশিক কাফির অবস্থায় জীবন-যাপন করেই সন্তুষ্ট ছিল। অথচ ইতোমধ্যে একটি দারুল ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছিল। সেখানে হিজরত করে নিজেদের দ্বীন ও আকীদা-বিশ্বাস অনুযায়ী ইসলামী জীবন-যাপন করা তাদের পক্ষে সম্ভবপর হয়ে উঠেছিল। আর এটিই ছিল নিজেদের উপর তাদের যুলুম। কেননা পূর্ণাঙ্গ ইসলামী জীবন-যাপনের মুকাবিলায় এই আধা কুফরী ও আধা ইসলামী জীবনে যে জিনিসটি তাদেরকে সন্তুষ্ট ও নিশ্চিন্ত করে তুলেছিল, সেটি যথার্থ কোন অক্ষমতা ছিল না। বরং সেটি ছিল নিজেদের পরিবার, সহায়-সম্পত্তি ও পার্থিব স্বার্থপ্রীতি। দ্বীনের উপর তারা এগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়েছিল।
যারা অক্ষম আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন :
اِلَّا الْمُسْتَضْعَفِيْنَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَآءِ وَالْوِلْدَانِ لَا يَسْتَطِيْعُوْنَ حِيْلَةً وَّلَا يَهْتَدُوْنَ سَبِيْلًا ‐ فَاُولٰٓئِكَ عَسَى اللهُ اَنْ يَّعْفُوَ عَنْهُمْؕ وَكَانَ اللهُ عَفُوًّا غَفُوْرًا
তবে যেসব অসহায় পুরুষ, নারী ও শিশু কোন উপায় অবলম্বন করতে পারে না এবং কোন পথও পায় না। আল্লাহ অচিরেই তাদের পাপ মোচন করবেন; আর আল্লাহ পাপ মোচনকারী ও ক্ষমাশীল। (সূরা নিসা- ৯৮, ৯৯)
নবী-রাসূলদেরকেও হিজরত করতে হয়েছে :
وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِرُسُلِهِمْ لَنُخْرِجَنَّكُمْ مِّنْ اَرْضِنَاۤ اَوْ لَتَعُوْدُنَّ فِيْ مِلَّتِنَاؕ فَاَوْحٰۤى اِلَيْهِمْ رَبُّهُمْ لَنُهْلِكَنَّ الظَّالِمِيْنَ
কাফিররা তাদের রাসূলদেরকে বলেছিল, আমরা অবশ্যই তোমাদেরকে আমাদের দেশ হতে বহিষ্কার করব অথবা তোমাদেরকে আমাদের ধর্মে ফিরে আসতে হবে। অতঃপর রাসূলদেরকে তাদের প্রতিপালক ওহী করলেন যে, যালিমদেরকে অবশ্যই আমি বিনাশ করব। (সূরা ইবরাহীম- ১৩)
নবী মুহাম্মাদ ﷺ কেও হিজরত করতে হয়েছে :
اِلَّا تَنْصُرُوْهُ فَقَدْ نَصَرَهُ اللهُ اِذْ اَخْرَجَهُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا ثَانِيَ اثْنَيْنِ اِذْ هُمَا فِى الْغَارِ اِذْ يَقُوْلُ لِصَاحِبِهٖ لَا تَحْزَنْ اِنَّ اللهَ مَعَنَا
যদি তোমরা তাঁকে সাহায্য না করো, তবে আল্লাহ তো তাকে সাহায্য করেছিলেন যখন কাফিররা তাকে বহিষ্কার করেছিল এবং সে ছিল দু’জনের দ্বিতীয়জন। যখন তারা উভয়ে গুহার মধ্যে ছিল; সে তখন তার সঙ্গীকে বলেছিল, চিন্তিত হয়ো না, নিশ্চয় আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন। (সূরা তাওবা- ৪০)
ব্যাখ্যা : হিজরতের সময় যখন নবী ﷺ আবু বকর (রাঃ) কে সাথে নিয়ে হেরা পর্বতের গোহায় আত্মগোপন করলেন এবং শত্রুরাও এক সময় খুঁজতে খুঁজতে একদম কাছে এসে গিয়েছিল, এমনকি তাদের পায়ের শব্দও শোনা যাচ্ছিল তখন আবু বকর (রাঃ) ভয় পেয়ে ছিলেন এবং বলেছিলেন, শত্রুদের একজন যদি একটু ভেতরে ঢুকে উঁকি দেয়, তাহলে দেখে ফেলবে। কিন্তু নবী ﷺ একটুও বিচলিত না হয়ে আবু বকর (রাঃ) কে এ বলে সান্ত্বনা দিলেন, ‘‘চিন্তিত হয়ো না এবং মন খারাপও করো না; কেননা আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন।’’
সাহাবীদের মধ্যে কেউ মুহাজির এবং কেউ আনসার ছিলেন :
وَالسَّابِقُوْنَ الْاَوَّلُوْنَ مِنَ الْمُهَاجِرِيْنَ وَالْاَنْصَارِ وَالَّذِيْنَ اتَّبَعُوْهُمْ بِاِحْسَانٍ رَّضِيَ اللهُ عَنْهُمْ وَرَضُوْا عَنْهُ
মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা অগ্রগামী এবং যারা নিষ্ঠার সাথে তাদের অনুসরণ করে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও তাতে সন্তুষ্ট। (সূরা তাওবা- ১০০)
আনসার সাহাবীরা মুহাজিরদেরকে খুবই সম্মান করতেন :
وَالَّذِيْنَ تَبَوَّءُوا الدَّارَ وَالْاِيْمَانَ مِنْ قَبْلِهِمْ يُحِبُّوْنَ مَنْ هَاجَرَ اِلَيْهِمْ وَلَا يَجِدُوْنَ فِيْ صُدُوْرِهِمْ حَاجَةً مِّمَّاۤ اُوْتُوْا وَيُؤْثِرُوْنَ عَلٰۤى اَنْفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ وَمَنْ يُّوْقَ شُحَّ نَفْسِهٖ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
আর মুহাজিরদের (আগমনের) পূর্বে যারা এ নগরীতে (মদিনায়) বসবাস করেছে এবং ঈমান এনেছে, তারা তাদেরকে (মুহাজিরদেরকে) ভালোবাসে এবং মুহাজিরদেরকে যা দেয়া হয়েছে তার জন্য তারা অন্তরে আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে না। তারা অভাবগ্রস্ত হলেও তাদেরকে নিজেদের উপর প্রাধান্য দেয়। আর যারা নিজেদেরকে কৃপণতা হতে মুক্ত করেছে, তারাই সফলকাম। (সূরা হাশর- ৯)
হিজরতকালে পড়ার দু‘আ :
رَبِّ اَدْخِلْنِيْ مُدْخَلَ صِدْقٍ وَّاَخْرِجْنِيْ مُخْرَجَ صِدْقٍ وَّاجْعَلْ لِّيْ مِنْ لَّدُنْكَ سُلْطَانًا نَّصِيْرًا
বলো, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে প্রবেশ করাও কল্যাণের সাথে এবং আমাকে বের করাও কল্যাণের সাথে। আর তোমার নিকট হতে আমাকে দান করো সাহায্যকারী শক্তি। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৮০)
আল্লাহ হিজরতকারীদেরকে উত্তম ব্যবস্থা দান করেন :
وَمَنْ يُّهَاجِرْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ يَجِدْ فِى الْاَرْضِ مُرَاغَمًا كَثِيْرًا وَّسَعَةً
যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে হিজরত করবে, সে পৃথিবীতে বহু আশ্রয়স্থল এবং প্রার্চুয লাভ করবে। (সূরা নিসা- ১০০)
وَالَّذِيْنَ هَاجَرُوْا فِى اللهِ مِنْ ۢبَعْدِ مَا ظُلِمُوْا لَنُبَوِّئَنَّهُمْ فِى الدُّنْيَا حَسَنَةً
আর যারা অত্যাচারিত হওয়ার পর আল্লাহর পথে হিজরত করেছে, অবশ্যই আমি তাদেরকে দুনিয়ায় উত্তম আবাস দান করব। (সূরা নাহল- ৪১)
ব্যাখ্যা : যে ব্যক্তি আল্লাহর দ্বীনের উপর ঈমান এনেছে তার জন্য কুফরী জীবনব্যবস্থার অধীনে জীবন-যাপন করা কেবল দু’টি অবস্থায় বৈধ হতে পারে।
(এক) ইসলামকে ঐ দেশে বিজয়ী করার ও কুফরী জীবনব্যবস্থাকে ইসলামী জীবনব্যবস্থায় পরিবর্তিত করার জন্য সে প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম চালাতে থাকবে যেমন আম্বিয়া (আঃ) ও তাঁর প্রাথমিক অনুসারীবৃন্দ চালিয়ে এসেছেন।
(দুই) সে সেখান থেকে বের হয়ে আসার কোন পথ পায়নি, তাই চরম ঘৃণা ও অনিচ্ছা সহকারে বাধ্য হয়ে সেখানে অবস্থান করবে। এ দু’টি অবস্থা ছাড়া অন্য যে কোন অবস্থায় দারুল কুফরে অবস্থান করলে পাপ হবে।
হিজরতের সময় প্রাণের ভয় করা উচিত নয় :
كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِ ثُمَّ اِلَيْنَا تُرْجَعُوْنَ
প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণকারী; অতঃপর তোমরা আমারই নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা আনকাবূত- ৫৭)
ব্যাখ্যা : হিজরতের সময় প্রাণের কথা ভেব না। কেননা তা কখনো না কখনো চলে যাবেই। চিরকাল থাকার জন্য কেউই দুনিয়ায় আসেনি। কাজেই এ দুনিয়ায় কীভাবে প্রাণ বাঁচিয়ে চলতে হবে- এটা তোমাদের জন্য কোন চিন্তাযোগ্য বিষয় নয়। বরং আসল চিন্তার বিষয় হচ্ছে, ঈমান কেমন করে বাঁচানো যাবে এবং আল্লাহর আনুগত্যের দাবী কীভাবে পূরণ করা যাবে। মনে রাখবে, শেষ পর্যন্ত তোমাদেরকে আমার দিকেই ফিরে আসতে হবে। সুতরাং যদি তোমরা দুনিয়ায় প্রাণ বাঁচানোর জন্য ঈমান হারিয়ে ফেল, তাহলে এর পরিণাম হবে খুবই ভয়াবহ। আর যদি ঈমান বাঁচানোর জন্য প্রাণ হারিয়ে ফেল, তাহলে এর ফল হবে অতি মঙ্গলজনক।
হিজরতের সময় রিযিকের ভয় করা যাবে না :
وَكَاَيِّنْ مِّنْ دَآبَّةٍ لَّا تَحْمِلُ رِزْقَهَاۗ اَللهُ يَرْزُقُهَا وَاِيَّاكُمْؗ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
এমন কত জীবজন্তু আছে, যারা নিজেদের খাদ্য মওজুদ রাখে না। আল্লাহই রিযিক দান করেন তাদেরকে ও তোমাদেরকে; আর তিনিই সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞা। (সূরা আনকাবূত- ৬০)
ব্যাখ্যা : হিজরত করার ব্যাপারে তোমাদের প্রাণের চিন্তা তো দূরের কথা জীবিকার চিন্তাতেও অস্থির হওয়া উচিত নয়। তোমাদের চোখের সামনে যে অসংখ্য প্রাণী জলে-স্থলে বিচরণ করে বেড়াচ্ছে, তাদের জীবিকার দায়িত্ব কে বহন করছে? আল্লাহই তো এদের সবাইকে প্রতিপালন করছেন। এরা যেখানেই যায় আল্লাহর অনুগ্রহে কোন না কোনভাবে জীবিকা লাভ করে থাকে। কাজেই তোমরা এ কথা ভেবে সাহস হারিয়ে ফেল না যে, যদি ঈমান রক্ষার জন্য বাড়িঘর ছেড়ে বের হয়ে পড়ি তাহলে খাব কী? জেনে রেখো, আল্লাহ যেখান থেকে তাঁর অসংখ্য সৃষ্টিকে রিযিক দিচ্ছেন সেখান থেকে তোমাদেরকেও দেবেন।
হিজরতকারীরাই প্রকৃত ঈমানদার :
وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَهَاجَرُوْا وَجَاهَدُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَالَّذِيْنَ اٰوَوْا وَّنَصَرُوْاۤ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُوْنَ حَقًّاؕ لَهُمْ مَّغْفِرَةٌ وَّرِزْقٌ كَرِيْمٌ
যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে; আর যারা আশ্রয় দান করেছে এবং সাহায্য করেছে, তারাই প্রকৃত মুমিন। তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা। (সূরা আনফাল- ৭৪)
হিজরতকারীরা সফলকাম হয় :
اَلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَهَاجَرُوْا وَجَاهَدُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْ اَعْظَمُ دَرَجَةً عِنْدَ اللهِؕ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَآئِزُوْنَ
যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং নিজেদের সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে, তারা আল্লাহর নিকট মর্যাদায় শ্রেয়, আর তারাই সফলকাম। (সূরা তাওবা- ২০)
আল্লাহ হিজরতকারীদেরকে ক্ষমা করেন :
ثُمَّ اِنَّ رَبَّكَ لِلَّذِيْنَ هَاجَرُوْا مِنْ ۢبَعْدِ مَا فُتِنُوْا ثُمَّ جَاهَدُوْا وَصَبَرُوْاۤ اِنَّ رَبَّكَ مِنْ ۢبَعْدِهَا لَغَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
যারা নির্যাতিত হওয়ার পর হিজরত করে, তারপর জিহাদ করে এবং ধৈর্যধারণ করে; নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক এ সবকিছুর পর (তাদের প্রতি) ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা নাহল- ১১০)
হিজরতকালে মারা গেলেও পুরস্কার রয়েছে :
وَمَنْ يَّخْرُجْ مِنْ ۢبَيْتِهٖ مُهَاجِرًا اِلَى اللهِ وَرَسُوْلِهٖ ثُمَّ يُدْرِكْهُ الْمَوْتُ فَقَدْ وَقَعَ اَجْرُهٗ عَلَى اللهِؕ وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا
যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যে নিজ গৃহ হতে মুহাজির হয়ে বের হয়, অতঃপর মৃত্যু তাকে পেয়ে বসে; তার পুরস্কার আল্লাহর উপর বর্তাবে। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা নিসা- ১০০)
وَالَّذِيْنَ هَاجَرُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ ثُمَّ قُتِلُوْاۤ اَوْ مَاتُوْا لَيَرْزُقَنَّهُمُ اللهُ رِزْقًا حَسَنًاؕ وَاِنَّ اللهَ لَهُوَ خَيْرُ الرَّازِقِيْنَ
আর যারা আল্লাহর পথে হিজরত করেছে, অতঃপর নিহত হয়েছে অথবা মারা গিয়েছে, অবশ্যই আল্লাহ তাদেরকে উৎকৃষ্ট জীবিকা দান করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ, তিনিই তো সর্বোৎকৃষ্ট রিযিকদাতা। (সূরা হজ্জ- ৫৮)
ব্যাখ্যা : যদি ঈমান ও নেকীর পথে চলে কেউ দুনিয়ার সমস্ত নিয়ামত থেকে বঞ্চিতও হয়, তবুও কিয়ামতের দিন অবশ্যই এর ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। এমনকি এর বিনিময়ে সর্বোত্তম প্রতিদানও পাওয়া যাবে। সত্যের দাওয়াতের পথে এমন একটি পর্যায় এসে যায়, যখন একজন সত্যপ্রিয় মানুষের জন্য উপকরণের নির্ভরতা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে একমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা করে প্রাণপণ প্রচেষ্টায় লিপ্ত হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। এ অবস্থায় যারা হিসাব করে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা বিচার করে এবং পা বাড়ানোর আগে প্রাণ রক্ষা ও জীবিকা উপার্জনের নিশ্চয়তা খুঁজে বেড়ায় তারা কিছুই করতে পারে না। এ অবস্থায় সফল হয় এমনসব লোক, যারা প্রতি মুহূর্তে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং সবধরনের বিপদ উপেক্ষা করে নির্দ্বিধায় এগিয়ে যায়। তাদেরই ত্যাগ ও কুরবানীর ফলে শেষ পর্যন্ত এমন এক সময় উপস্থিত হয়, যখন ইসলাম সকল ভ্রান্ত মতবাদের উপর বিজয়ী হয়।
হিজরতের ফলাফল দুনিয়াতেও পাওয়া যায় :
فَلَمَّا اعْتَزَلَهُمْ وَمَا يَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ وَهَبْنَا لَهُۤ اِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَؕ وَكُلًّا جَعَلْنَا نَبِيًّا
অতঃপর যখন সে সত্যিই তাদের কাছ থেকে পৃথক হয়ে গেল এবং (পৃথক হয়ে গেল তাদের থেকেও) যাদেরকে তারা আল্লাহর পরিবর্তে ডাকত, তখন আমি তাকে ইসহাক ও (ইসহাক পুত্র) ইয়াকূব দান করলাম; এদের সবাইকেই আমি নবী বানিয়েছিলাম। (সূরা মারইয়াম- ৪৯)
ব্যাখ্যা : যেসব মুহাজির গৃহত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন এগুলো তাদের জন্য সান্ত্বনাবাণী। তাদেরকে বলা হচ্ছে, হিজরত করার মাধ্যমে ইবরাহীম (আঃ) যেমন তাঁর পরিবারবর্গ থেকে বিচ্ছিনণ হয়ে যাননি; বরং উল্টো সফলকাম হয়েছিলেন, ঠিক তেমনি তোমরাও ধ্বংস হয়ে যাবে না। বরং তোমরা এমন মর্যাদা লাভ করবে, জাহেলিয়াতের অন্ধকারে পড়ে থাকা কুরাইশ বংশীয় কাফিররা যার কল্পনাও করতে পারবে না।
আল্লাহ হিজরতকারীদেরকে জান্নাত দান করবেন :
فَاسْتَجَابَ لَهُمْ رَبُّهُمْ اَنِّيْ لَاۤ اُضِيْعُ عَمَلَ عَامِلٍ مِّنْكُمْ مِّنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰىۚ بَعْضُكُمْ مِّنْ ۢبَعْضٍؕ فَالَّذِيْنَ هَاجَرُوْا وَاُخْرِجُوْا مِنْ دِيَارِهِمْ وَاُوْذُوْا فِيْ سَبِيْلِيْ وَقَاتَلُوْا وَقُتِلُوْا لَاُكَفِّرَنَّ عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْ وَلَاُدْخِلَنَّهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ ثَوَابًا مِّنْ عِنْدِ اللهِؕ وَاللهُ عِنْدَهٗ حُسْنُ الثَّوَابِ
অতঃপর তাদের প্রতিপালক তাদের আহবানে সাড়া দিলেন যে, আমি তোমাদের পুরুষ অথবা নারীর মধ্য হতে কোন আমলকারীর আমল নষ্ট করব না, তোমরা পরস্পর এক। অতএব যারা হিজরত করেছে, তাদের ঘরবাড়ি হতে বিতাড়িত হয়েছে, আমার পথে নির্যাতিত হয়েছে এবং সংগ্রাম করেছে ও নিহত হয়েছে, অবশ্যই আমি তাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেব এবং তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাব, যার নিচ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত থাকবে। এটা আল্লাহর নিকট হতে (তাদের জন্য) প্রতিদান; (মূলত) আল্লাহর নিকটই রয়েছে উত্তম প্রতিদান। (সূরা আলে ইমরান- ১৯৫)
শানে নুযূল : উম্মে সালামা (রাঃ) বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ মুহাজির পুরুষদের সম্বন্ধে কুরআনের অনেক স্থানেই প্রশংসা করেছেন, কিন্তু মুহাজির নারীদের ব্যাপারে কোনকিছুই বলেননি। তবে কি আমরা হিজরতের কোন সওয়াব পাব না? তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতটি নাযিল করেন। (তিরমিযী, হা/৩০২৩)
হিজরতকারীরা আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী হয় :
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَالَّذِيْنَ هَاجَرُوْا وَجَاهَدُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ اُولٰٓئِكَ يَرْجُوْنَ رَحْمَتَ اللهِؕ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে, তারাই আল্লাহর রহমতের আশা পোষণ করে। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল ও অতি দয়ালু। (সূরা বাক্বারা- ২১৮)
মুহাজির ও আনসারগণ একে অপরের বন্ধু :
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَهَاجَرُوْا وَجَاهَدُوْا بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَالَّذِيْنَ اٰوَوْا وَّنَصَرُوْاۤ اُولٰٓئِكَ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍ
যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং জীবন ও সম্পদ দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে; আর যারা আশ্রয় দান করেছে এবং সাহায্য করেছে, তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। সূরা আনফাল- ৭২)
মুমিন মহিলারাও হিজরত করবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا جَآءَكُمُ الْمُؤْمِنَاتُ مُهَاجِرَاتٍ فَامْتَحِنُوْهُنَّؕ اَللهُ اَعْلَمُ بِاِيْمَانِهِنَّۚ فَاِنْ عَلِمْتُمُوْهُنَّ مُؤْمِنَاتٍ فَلَا تَرْجِعُوْهُنَّ اِلَى الْكُفَّارِؕ لَا هُنَّ حِلٌّ لَّهُمْ وَلَا هُمْ يَحِلُّوْنَ لَهُنَّ
হে মুমিনগণ! যখন তোমাদের নিকট মুমিন নারীরা হিজরত করে আসে, তখন তোমরা তাদেরকে (প্রথমে) পরীক্ষা করে নাও। তবে আল্লাহ তাদের ঈমান সম্বন্ধে সম্যক অবগত আছেন। অতঃপর যদি তোমরা জানতে পার যে, তারা মুমিন তবে তাদেরকে কাফিরদের নিকট ফেরত পাঠিয়ে দিয়ো না। মুমিন নারীরা কাফিরদের জন্য বৈধ নয় এবং কাফিররা মুমিন নারীদের জন্যও বৈধ নয়। (সূরা মুমতাহিনা- ১০)
মুসলিমরা তাদেরকে বিয়ে করতে পারবে :
وَاٰتُوْهُمْ مَّاۤ اَنْفَقُوْاؕ وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ اَنْ تَنْكِحُوْهُنَّ اِذَاۤ اٰتَيْتُمُوْهُنَّ اُجُوْرَهُنَّ
কাফিররা যা ব্যয় করেছে, তা তাদেরকে ফিরিয়ে দেবে। অতঃপর যদি তোমরা তাদেরকে বিয়ে কর এবং তাদেরকে তাদের মোহরানা দিয়ে দাও, তবে তোমাদের কোন অপরাধ হবে না। (সূরা মুমতাহিনা- ১০)
وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَهَاجَرُوْا وَجَاهَدُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَالَّذِيْنَ اٰوَوْا وَّنَصَرُوْاۤ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُوْنَ حَقًّاؕ لَهُمْ مَّغْفِرَةٌ وَّرِزْقٌ كَرِيْمٌ
যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে; আর যারা আশ্রয় দান করেছে এবং সাহায্য করেছে, তারাই প্রকৃত মুমিন। তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা। (সূরা আনফাল- ৭৪)
হিজরতকারীরা সফলকাম হয় :
اَلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَهَاجَرُوْا وَجَاهَدُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْ اَعْظَمُ دَرَجَةً عِنْدَ اللهِؕ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَآئِزُوْنَ
যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং নিজেদের সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে, তারা আল্লাহর নিকট মর্যাদায় শ্রেয়, আর তারাই সফলকাম। (সূরা তাওবা- ২০)
আল্লাহ হিজরতকারীদেরকে ক্ষমা করেন :
ثُمَّ اِنَّ رَبَّكَ لِلَّذِيْنَ هَاجَرُوْا مِنْ ۢبَعْدِ مَا فُتِنُوْا ثُمَّ جَاهَدُوْا وَصَبَرُوْاۤ اِنَّ رَبَّكَ مِنْ ۢبَعْدِهَا لَغَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
যারা নির্যাতিত হওয়ার পর হিজরত করে, তারপর জিহাদ করে এবং ধৈর্যধারণ করে; নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক এ সবকিছুর পর (তাদের প্রতি) ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা নাহল- ১১০)
হিজরতকালে মারা গেলেও পুরস্কার রয়েছে :
وَمَنْ يَّخْرُجْ مِنْ ۢبَيْتِهٖ مُهَاجِرًا اِلَى اللهِ وَرَسُوْلِهٖ ثُمَّ يُدْرِكْهُ الْمَوْتُ فَقَدْ وَقَعَ اَجْرُهٗ عَلَى اللهِؕ وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا
যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যে নিজ গৃহ হতে মুহাজির হয়ে বের হয়, অতঃপর মৃত্যু তাকে পেয়ে বসে; তার পুরস্কার আল্লাহর উপর বর্তাবে। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা নিসা- ১০০)
وَالَّذِيْنَ هَاجَرُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ ثُمَّ قُتِلُوْاۤ اَوْ مَاتُوْا لَيَرْزُقَنَّهُمُ اللهُ رِزْقًا حَسَنًاؕ وَاِنَّ اللهَ لَهُوَ خَيْرُ الرَّازِقِيْنَ
আর যারা আল্লাহর পথে হিজরত করেছে, অতঃপর নিহত হয়েছে অথবা মারা গিয়েছে, অবশ্যই আল্লাহ তাদেরকে উৎকৃষ্ট জীবিকা দান করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ, তিনিই তো সর্বোৎকৃষ্ট রিযিকদাতা। (সূরা হজ্জ- ৫৮)
ব্যাখ্যা : যদি ঈমান ও নেকীর পথে চলে কেউ দুনিয়ার সমস্ত নিয়ামত থেকে বঞ্চিতও হয়, তবুও কিয়ামতের দিন অবশ্যই এর ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। এমনকি এর বিনিময়ে সর্বোত্তম প্রতিদানও পাওয়া যাবে। সত্যের দাওয়াতের পথে এমন একটি পর্যায় এসে যায়, যখন একজন সত্যপ্রিয় মানুষের জন্য উপকরণের নির্ভরতা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে একমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা করে প্রাণপণ প্রচেষ্টায় লিপ্ত হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। এ অবস্থায় যারা হিসাব করে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা বিচার করে এবং পা বাড়ানোর আগে প্রাণ রক্ষা ও জীবিকা উপার্জনের নিশ্চয়তা খুঁজে বেড়ায় তারা কিছুই করতে পারে না। এ অবস্থায় সফল হয় এমনসব লোক, যারা প্রতি মুহূর্তে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং সবধরনের বিপদ উপেক্ষা করে নির্দ্বিধায় এগিয়ে যায়। তাদেরই ত্যাগ ও কুরবানীর ফলে শেষ পর্যন্ত এমন এক সময় উপস্থিত হয়, যখন ইসলাম সকল ভ্রান্ত মতবাদের উপর বিজয়ী হয়।
হিজরতের ফলাফল দুনিয়াতেও পাওয়া যায় :
فَلَمَّا اعْتَزَلَهُمْ وَمَا يَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ وَهَبْنَا لَهُۤ اِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَؕ وَكُلًّا جَعَلْنَا نَبِيًّا
অতঃপর যখন সে সত্যিই তাদের কাছ থেকে পৃথক হয়ে গেল এবং (পৃথক হয়ে গেল তাদের থেকেও) যাদেরকে তারা আল্লাহর পরিবর্তে ডাকত, তখন আমি তাকে ইসহাক ও (ইসহাক পুত্র) ইয়াকূব দান করলাম; এদের সবাইকেই আমি নবী বানিয়েছিলাম। (সূরা মারইয়াম- ৪৯)
ব্যাখ্যা : যেসব মুহাজির গৃহত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন এগুলো তাদের জন্য সান্ত্বনাবাণী। তাদেরকে বলা হচ্ছে, হিজরত করার মাধ্যমে ইবরাহীম (আঃ) যেমন তাঁর পরিবারবর্গ থেকে বিচ্ছিনণ হয়ে যাননি; বরং উল্টো সফলকাম হয়েছিলেন, ঠিক তেমনি তোমরাও ধ্বংস হয়ে যাবে না। বরং তোমরা এমন মর্যাদা লাভ করবে, জাহেলিয়াতের অন্ধকারে পড়ে থাকা কুরাইশ বংশীয় কাফিররা যার কল্পনাও করতে পারবে না।
আল্লাহ হিজরতকারীদেরকে জান্নাত দান করবেন :
فَاسْتَجَابَ لَهُمْ رَبُّهُمْ اَنِّيْ لَاۤ اُضِيْعُ عَمَلَ عَامِلٍ مِّنْكُمْ مِّنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰىۚ بَعْضُكُمْ مِّنْ ۢبَعْضٍؕ فَالَّذِيْنَ هَاجَرُوْا وَاُخْرِجُوْا مِنْ دِيَارِهِمْ وَاُوْذُوْا فِيْ سَبِيْلِيْ وَقَاتَلُوْا وَقُتِلُوْا لَاُكَفِّرَنَّ عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْ وَلَاُدْخِلَنَّهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ ثَوَابًا مِّنْ عِنْدِ اللهِؕ وَاللهُ عِنْدَهٗ حُسْنُ الثَّوَابِ
অতঃপর তাদের প্রতিপালক তাদের আহবানে সাড়া দিলেন যে, আমি তোমাদের পুরুষ অথবা নারীর মধ্য হতে কোন আমলকারীর আমল নষ্ট করব না, তোমরা পরস্পর এক। অতএব যারা হিজরত করেছে, তাদের ঘরবাড়ি হতে বিতাড়িত হয়েছে, আমার পথে নির্যাতিত হয়েছে এবং সংগ্রাম করেছে ও নিহত হয়েছে, অবশ্যই আমি তাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেব এবং তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাব, যার নিচ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত থাকবে। এটা আল্লাহর নিকট হতে (তাদের জন্য) প্রতিদান; (মূলত) আল্লাহর নিকটই রয়েছে উত্তম প্রতিদান। (সূরা আলে ইমরান- ১৯৫)
শানে নুযূল : উম্মে সালামা (রাঃ) বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ মুহাজির পুরুষদের সম্বন্ধে কুরআনের অনেক স্থানেই প্রশংসা করেছেন, কিন্তু মুহাজির নারীদের ব্যাপারে কোনকিছুই বলেননি। তবে কি আমরা হিজরতের কোন সওয়াব পাব না? তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতটি নাযিল করেন। (তিরমিযী, হা/৩০২৩)
হিজরতকারীরা আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী হয় :
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَالَّذِيْنَ هَاجَرُوْا وَجَاهَدُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ اُولٰٓئِكَ يَرْجُوْنَ رَحْمَتَ اللهِؕ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে, তারাই আল্লাহর রহমতের আশা পোষণ করে। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল ও অতি দয়ালু। (সূরা বাক্বারা- ২১৮)
মুহাজির ও আনসারগণ একে অপরের বন্ধু :
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَهَاجَرُوْا وَجَاهَدُوْا بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَالَّذِيْنَ اٰوَوْا وَّنَصَرُوْاۤ اُولٰٓئِكَ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍ
যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং জীবন ও সম্পদ দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে; আর যারা আশ্রয় দান করেছে এবং সাহায্য করেছে, তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। সূরা আনফাল- ৭২)
মুমিন মহিলারাও হিজরত করবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا جَآءَكُمُ الْمُؤْمِنَاتُ مُهَاجِرَاتٍ فَامْتَحِنُوْهُنَّؕ اَللهُ اَعْلَمُ بِاِيْمَانِهِنَّۚ فَاِنْ عَلِمْتُمُوْهُنَّ مُؤْمِنَاتٍ فَلَا تَرْجِعُوْهُنَّ اِلَى الْكُفَّارِؕ لَا هُنَّ حِلٌّ لَّهُمْ وَلَا هُمْ يَحِلُّوْنَ لَهُنَّ
হে মুমিনগণ! যখন তোমাদের নিকট মুমিন নারীরা হিজরত করে আসে, তখন তোমরা তাদেরকে (প্রথমে) পরীক্ষা করে নাও। তবে আল্লাহ তাদের ঈমান সম্বন্ধে সম্যক অবগত আছেন। অতঃপর যদি তোমরা জানতে পার যে, তারা মুমিন তবে তাদেরকে কাফিরদের নিকট ফেরত পাঠিয়ে দিয়ো না। মুমিন নারীরা কাফিরদের জন্য বৈধ নয় এবং কাফিররা মুমিন নারীদের জন্যও বৈধ নয়। (সূরা মুমতাহিনা- ১০)
মুসলিমরা তাদেরকে বিয়ে করতে পারবে :
وَاٰتُوْهُمْ مَّاۤ اَنْفَقُوْاؕ وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ اَنْ تَنْكِحُوْهُنَّ اِذَاۤ اٰتَيْتُمُوْهُنَّ اُجُوْرَهُنَّ
কাফিররা যা ব্যয় করেছে, তা তাদেরকে ফিরিয়ে দেবে। অতঃপর যদি তোমরা তাদেরকে বিয়ে কর এবং তাদেরকে তাদের মোহরানা দিয়ে দাও, তবে তোমাদের কোন অপরাধ হবে না। (সূরা মুমতাহিনা- ১০)
আল্লাহ তাদের ঘটনা বর্ণনা করেছেন :
اَمْ حَسِبْتَ اَنَّ اَصْحَابَ الْكَهْفِ وَالرَّقِيْمِ كَانُوْا مِنْ اٰيَاتِنَا عَجَبًا
তুমি কি মনে করো যে, গুহা ও রাকীমের অধিবাসীরা আমার নিদর্শনাবলির মধ্যে বিস্ময়কর? (সূরা কাহফ- ৯)
نَحْنُ نَقُصُّ عَلَيْكَ نَبَاَهُمْ بِالْحَقِّ
আমি তোমার নিকট তাদের বৃত্তামত্ম সঠিকভাবে বর্ণনা করছি। (সূরা কাহফ- ১৩)
তারা ছিলেন কয়েকজন ঈমানদার যুবক :
اِنَّهُمْ فِتْيَةٌ اٰمَنُوْا بِرَبِّهِمْ وَزِدْنَاهُمْ هُدًى
তারা ছিল কয়েকজন যুবক, তারা তাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান এনেছিল এবং আমি তাদেরকে সৎপথে চলার শক্তি বৃদ্ধি করে দিয়েছিলাম। (সূরা কাহফ- ১৩)
তাদের সংখ্যা নিয়ে লোকেরা মতভেদ করেছিল :
سَيَقُوْلُوْنَ ثَلَاثَةٌ رَّابِعُهُمْ كَلْبُهُمْۚ وَيَقُوْلُوْنَ خَمْسَةٌ سَادِسُهُمْ كَلْبُهُمْ رَجْمًا ۢبِالْغَيْبِۚ وَيَقُوْلُوْنَ سَبْعَةٌ وَّثَامِنُهُمْ كَلْبُهُمْؕ قُلْ رَّبِّيْۤ اَعْلَمُ بِعِدَّتِهِمْ مَّا يَعْلَمُهُمْ اِلَّا قَلِيْلٌ فَلَا تُمَارِ فِيْهِمْ اِلَّا مِرَآءً ظَاهِرًا وَّلَا تَسْتَفْتِ فِيْهِمْ مِّنْهُمْ اَحَدًا
অচিরেই তারা বলবে, তারা ছিল তিনজন, তাদের চতুর্থটি ছিল তাদের কুকুর। আবার কেউ কেউ বলবে, তারা ছিল পাঁচজন, তাদের ষষ্ঠটি ছিল তাদের কুকুর- (মূলত) তারা অজানা বিষয়ে অনুমানের উপর নির্ভর করে। আবার কেউ কেউ বলবে, তারা ছিল সাতজন, তাদের অষ্টমটি ছিল তাদের কুকুর। বলো, আমার প্রতিপালকই তাদের সংখ্যা ভালোভাবে জানেন; আর (প্রকৃতপক্ষে) তাদের সংখ্যা অল্প কয়েকজনই জানে। সাধারণ আলোচনা ব্যতীত তুমি তাদের বিষয়ে বিতর্ক করো না এবং এদের কাউকে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করো না। (সূরা কাহফ- ২২)
তারা ছিল আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী :
وَرَبَطْنَا عَلٰى قُلُوْبِهِمْ اِذْ قَامُوْا فَقَالُوْا رَبُّنَا رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ لَنْ نَّدْعُوَاْ مِنْ دُوْنِهٖۤ اِلٰهًا لَّقَدْ قُلْنَاۤ اِذًا شَطَطًا
আর আমি তাদের অন্তর দৃঢ় করে দিলাম। ফলে যখন তারা উঠে দাঁড়াল তখন বলল, আমাদের প্রতিপালক তিনিই যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর প্রতিপালক। আমরা কখনই তাঁর পরিবর্তে অন্য কোন ইলাহকে আহবান করব না। আর যদি আমরা এমনটি বলে থাকি, তবে তা হবে অতিশয় গর্হিত কাজ। (সূরা কাহফ- ১৪)
তাদের জাতি শিরকে লিপ্ত ছিল :
هٰۤؤُلَآءِ قَوْمُنَا اتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِهٖۤ اٰلِهَةًؕ لَوْلَا يَأْتُوْنَ عَلَيْهِمْ بِسُلْطَانٍ ۢبَيِّنٍؕ فَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرٰى عَلَى اللهِ كَذِبًا
আমাদেরই এ সম্প্রদায় আল্লাহর পরিবর্তে অনেক ইলাহ্ গ্রহণ করেছে। তারা এ সমসত্ম ইলাহ্ সম্বন্ধে স্পষ্ট প্রমাণ উপস্থিত করে না কেন? আর যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? (সূরা কাহফ- ১৫)
তারা আল্লাহর রহমত কামনা করে একটি গুহায় আশ্রয় নেয় :
اِذْ اَوَى الْفِتْيَةُ اِلَى الْكَهْفِ فَقَالُوْا رَبَّنَاۤ اٰتِنَا مِنْ لَّدُنْكَ رَحْمَةً وَّهَيِّئْ لَنَا مِنْ اَمْرِنَا رَشَدًا
যখন যুবকরা গুহায় আশ্রয় নিল তখন তারা বলেছিল, হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি নিজ হতে আমাদেরকে অনুগ্রহ দান করো এবং আমাদের জন্য আমাদের কাজকর্ম সঠিকভাবে পরিচালনার ব্যবস্থা করো। (সূরা কাহফ- ১০)
আল্লাহ তাদের প্রতি দয়া করলেন :
وَاِذِ اعْتَزَلْتُمُوْهُمْ وَمَا يَعْبُدُوْنَ اِلَّا اللهَ فَأْوُوْاۤ اِلَى الْكَهْفِ يَنْشُرْ لَكُمْ رَبُّكُمْ مِّنْ رَّحْمَتِهٖ وَيُهَيِّئْ لَكُمْ مِّنْ اَمْرِكُمْ مِّرْفَقًا
যখন তোমরা তাদের ও তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদাত করে তাদের হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে, অতঃপর তোমরা গুহায় আশ্রয় গ্রহণ করলে তখন তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্য তাঁর দয়া বিসত্মার করলেন এবং তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কাজকর্মকে ফলপ্রসূ করার ব্যবস্থা করলেন। (সূরা কাহফ- ১৬)
তারা নিদ্রাবস্থায় পার্শ্ব পরিবর্তন করত :
وَتَحْسَبُهُمْ اَيْقَاظًا وَّهُمْ رُقُوْدٌۗ وَنُقَلِّبُهُمْ ذَاتَ الْيَمِيْنِ وَذَاتَ الشِّمَالِ
তুমি মনে করতে তারা জাগ্রত, কিন্তু তারা ছিল নিদ্রিত। আমি তাদেরকে পার্শ্ব পরিবর্তন করাতাম ডান দিকে ও বাম দিকে। (সূরা কাহফ- ১৮)
সূর্যের কিরণ তাদের গর্তে প্রবেশ করত না :
وَتَرَى الشَّمْسَ اِذَا طَلَعَتْ تَّزَاوَرُ عَنْ كَهْفِهِمْ ذَاتَ الْيَمِيْنِ وَاِذَا غَرَبَتْ تَّقْرِضُهُمْ ذَاتَ الشِّمَالِ وَهُمْ فِيْ فَجْوَةٍ مِّنْهُؕ ذٰلِكَ مِنْ اٰيَاتِ اللهِؕ مَنْ يَّهْدِ اللهُ فَهُوَ الْمُهْتَدِۚ وَمَنْ يُّضْلِلْ فَلَنْ تَجِدَ لَهٗ وَلِيًّا مُّرْشِدًا
তুমি দেখতে পেতে- তারা গুহার প্রশসত্ম চত্বরে অবস্থিত, সূর্য উদয়কালে (তার কিরণ) তাদের গুহার দক্ষিণ পার্শ্বে হেলে যায় এবং অসত্মকালে (তার কিরণ) বাম পার্শ্ব দিয়ে তাদেরকে অতিক্রম করে, এগুলো আল্লাহর নিদর্শন। আল্লাহ যাকে পথপ্রদর্শন করেন, সে সৎপথপ্রাপ্ত হয় এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তুমি কখনো তার কোন পথপ্রদর্শনকারী অভিভাবক পাবে না। (সূরা কাহফ- ১৭)
একটি কুকুর তাদেরকে পাহারা দিত :
وَكَلْبُهُمْ بَاسِطٌ ذِرَاعَيْهِ بِالْوَصِيْدِ لَوِ اطَّلَعْتَ عَلَيْهِمْ لَوَلَّيْتَ مِنْهُمْ فِرَارًا وَّلَمُلِئْتَ مِنْهُمْ رُعْبًا
আর তাদের কুকুর সম্মুখের পা দু’টি গুহাদ্বারে প্রসারিত করে তাকিয়ে ছিল, তাদেরকে দেখলে তুমি পেছন ফিরে পলায়ন করতে এবং তাদের ভয়ে আতংকগ্রসত্ম হয়ে পড়তে। (সূরা কাহফ- ১৮)
পরে আল্লাহ তাদেরকে জীবিত করেছেন :
ثُمَّ بَعَثْنَاهُمْ لِنَعْلَمَ اَيُّ الْحِزْبَيْنِ اَحْصٰى لِمَا لَبِثُوْاۤ اَمَدًا
তারপর আমি তাদেরকে জাগ্রত করলাম এ কথা জানানোর জন্য যে, দু’দলের মধ্যে কারা তাদের অবস্থানকাল সঠিকভাবে নির্ণয় করতে পারে। (সূরা কাহফ- ১২)
কতদিন গর্তে ছিল তা তারা বুঝতে পারেনি :
وَكَذٰلِكَ بَعَثْنَاهُمْ لِيَتَسَآءَلُوْا بَيْنَهُمْؕ قَالَ قَآئِلٌ مِّنْهُمْ كَمْ لَبِثْتُمْؕ قَالُوْا لَبِثْنَا يَوْمًا اَوْ بَعْضَ يَوْمٍؕ قَالُوْا رَبُّكُمْ اَعْلَمُ بِمَا لَبِثْتُمْ
এভাবেই আমি তাদেরকে জাগ্রত করলাম, যাতে তারা পরস্পরের মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করে নেয়। অতঃপর তাদের একজন বলল, তোমরা এখানে কত কাল অবস্থান করেছ? কেউ কেউ বলল, আমরা অবস্থান করেছি এক দিন অথবা এক দিনের কিছু অংশ। কেউ বলল, তোমরা কত কাল অবস্থান করেছ তা তোমাদের প্রতিপালকই ভালো জানেন। (সূরা কাহফ- ১৯)
তাদের গোহায় অবস্থানকাল :
فَضَرَبْنَا عَلٰۤى اٰذَانِهِمْ فِى الْكَهْفِ سِنِيْنَ عَدَدًا
অতঃপর আমি তাদেরকে গুহায় কয়েক বৎসর ঘুমমত্ম অবস্থায় রাখলাম। (সূরা কাহফ- ১১)
قُلِ اللهُ اَعْلَمُ بِمَا لَبِثُوْاۚ لَهٗ غَيْبُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِؕ اَبْصِرْ بِهٖ وَاَسْمِعْؕ مَا لَهُمْ مِّنْ دُوْنِهٖ مِنْ وَّلِيٍّؗ وَلَا يُشْرِكُ فِيْ حُكْمِهٖۤ اَحَدًا
বলো, তারা কত কাল ছিল তা আল্লাহই ভালো জানেন, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর অজ্ঞাত বিষয়ের জ্ঞান তাঁরই। তিনি কত সুন্দর দ্রষ্টা ও শ্রোতা! তিনি ব্যতীত তাদের অন্য কোন অভিভাবক নেই। আর তিনি কাউকে নিজ কর্তৃত্বে শরীক করেন না। (সূরা কাহফ- ২৬)
وَلَبِثُوْا فِيْ كَهْفِهِمْ ثَلَاثَ مِائَةٍ سِنِيْنَ وَازْدَادُوْا تِسْعًا
তারা তাদের গুহায় ছিল তিনশ’ বৎসর এবং আরো নয় বৎসর। (সূরা কাহফ- ২৫)
আসহাবে কাহফের কাহিনীর শিক্ষা :
কুরআন যে তাওহীদের দাওয়াত দিচ্ছে আসহাবে কাহফের লোকেরা ছিলেন এরই প্রবক্তা। তাদের অবস্থা মক্কার মজলুম মুসলিমদের অবস্থা থেকে ভিন্নতর ছিল না। তাদের জাতির মনোভাব ও ভূমিকা মক্কার কুরাইশ বংশীয় কাফিরদের মতোই ছিল। এ কাহিনী থেকে ঈমানদারদেরকে এ শিক্ষা দেয়া হয়েছে যে, যদি কাফিররা সীমাহীন ক্ষমতা ও আধিপত্যের অধিকারী হয়ে থাকে এবং তাদের যুলুম-নির্যাতনের ফলে মুমিনরা সীমাহীন কষ্ট পায়, তবুও বাতিলের সামনে মাথা নত করা উচিত নয়। বরং আল্লাহর উপর ভরসা করে দেশ থেকে বের হয়ে যাওয়া উচিত। এ প্রসঙ্গে আনুসাঙ্গিকভাবে এ কথাও বলা হয়েছে যে, আসহাবে কাহাফের কাহিনী আখিরাত বিশ্বাসের নির্ভুলতার একটি প্রমাণ। যেভাবে আল্লাহ তা‘আলা আসহাবে কাহফকে সুদীর্ঘকাল মৃত্যু নিদ্রায় বিভোর করে রাখার পর আবার জীবিত করে তুললেন- ঠিক তেমনিভাবে তিনি কিয়ামতের দিন সকল মানুষকে একত্রে জীবিত করতেও সক্ষম।
اَمْ حَسِبْتَ اَنَّ اَصْحَابَ الْكَهْفِ وَالرَّقِيْمِ كَانُوْا مِنْ اٰيَاتِنَا عَجَبًا
তুমি কি মনে করো যে, গুহা ও রাকীমের অধিবাসীরা আমার নিদর্শনাবলির মধ্যে বিস্ময়কর? (সূরা কাহফ- ৯)
نَحْنُ نَقُصُّ عَلَيْكَ نَبَاَهُمْ بِالْحَقِّ
আমি তোমার নিকট তাদের বৃত্তামত্ম সঠিকভাবে বর্ণনা করছি। (সূরা কাহফ- ১৩)
তারা ছিলেন কয়েকজন ঈমানদার যুবক :
اِنَّهُمْ فِتْيَةٌ اٰمَنُوْا بِرَبِّهِمْ وَزِدْنَاهُمْ هُدًى
তারা ছিল কয়েকজন যুবক, তারা তাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান এনেছিল এবং আমি তাদেরকে সৎপথে চলার শক্তি বৃদ্ধি করে দিয়েছিলাম। (সূরা কাহফ- ১৩)
তাদের সংখ্যা নিয়ে লোকেরা মতভেদ করেছিল :
سَيَقُوْلُوْنَ ثَلَاثَةٌ رَّابِعُهُمْ كَلْبُهُمْۚ وَيَقُوْلُوْنَ خَمْسَةٌ سَادِسُهُمْ كَلْبُهُمْ رَجْمًا ۢبِالْغَيْبِۚ وَيَقُوْلُوْنَ سَبْعَةٌ وَّثَامِنُهُمْ كَلْبُهُمْؕ قُلْ رَّبِّيْۤ اَعْلَمُ بِعِدَّتِهِمْ مَّا يَعْلَمُهُمْ اِلَّا قَلِيْلٌ فَلَا تُمَارِ فِيْهِمْ اِلَّا مِرَآءً ظَاهِرًا وَّلَا تَسْتَفْتِ فِيْهِمْ مِّنْهُمْ اَحَدًا
অচিরেই তারা বলবে, তারা ছিল তিনজন, তাদের চতুর্থটি ছিল তাদের কুকুর। আবার কেউ কেউ বলবে, তারা ছিল পাঁচজন, তাদের ষষ্ঠটি ছিল তাদের কুকুর- (মূলত) তারা অজানা বিষয়ে অনুমানের উপর নির্ভর করে। আবার কেউ কেউ বলবে, তারা ছিল সাতজন, তাদের অষ্টমটি ছিল তাদের কুকুর। বলো, আমার প্রতিপালকই তাদের সংখ্যা ভালোভাবে জানেন; আর (প্রকৃতপক্ষে) তাদের সংখ্যা অল্প কয়েকজনই জানে। সাধারণ আলোচনা ব্যতীত তুমি তাদের বিষয়ে বিতর্ক করো না এবং এদের কাউকে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করো না। (সূরা কাহফ- ২২)
তারা ছিল আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী :
وَرَبَطْنَا عَلٰى قُلُوْبِهِمْ اِذْ قَامُوْا فَقَالُوْا رَبُّنَا رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ لَنْ نَّدْعُوَاْ مِنْ دُوْنِهٖۤ اِلٰهًا لَّقَدْ قُلْنَاۤ اِذًا شَطَطًا
আর আমি তাদের অন্তর দৃঢ় করে দিলাম। ফলে যখন তারা উঠে দাঁড়াল তখন বলল, আমাদের প্রতিপালক তিনিই যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর প্রতিপালক। আমরা কখনই তাঁর পরিবর্তে অন্য কোন ইলাহকে আহবান করব না। আর যদি আমরা এমনটি বলে থাকি, তবে তা হবে অতিশয় গর্হিত কাজ। (সূরা কাহফ- ১৪)
তাদের জাতি শিরকে লিপ্ত ছিল :
هٰۤؤُلَآءِ قَوْمُنَا اتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِهٖۤ اٰلِهَةًؕ لَوْلَا يَأْتُوْنَ عَلَيْهِمْ بِسُلْطَانٍ ۢبَيِّنٍؕ فَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرٰى عَلَى اللهِ كَذِبًا
আমাদেরই এ সম্প্রদায় আল্লাহর পরিবর্তে অনেক ইলাহ্ গ্রহণ করেছে। তারা এ সমসত্ম ইলাহ্ সম্বন্ধে স্পষ্ট প্রমাণ উপস্থিত করে না কেন? আর যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? (সূরা কাহফ- ১৫)
তারা আল্লাহর রহমত কামনা করে একটি গুহায় আশ্রয় নেয় :
اِذْ اَوَى الْفِتْيَةُ اِلَى الْكَهْفِ فَقَالُوْا رَبَّنَاۤ اٰتِنَا مِنْ لَّدُنْكَ رَحْمَةً وَّهَيِّئْ لَنَا مِنْ اَمْرِنَا رَشَدًا
যখন যুবকরা গুহায় আশ্রয় নিল তখন তারা বলেছিল, হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি নিজ হতে আমাদেরকে অনুগ্রহ দান করো এবং আমাদের জন্য আমাদের কাজকর্ম সঠিকভাবে পরিচালনার ব্যবস্থা করো। (সূরা কাহফ- ১০)
আল্লাহ তাদের প্রতি দয়া করলেন :
وَاِذِ اعْتَزَلْتُمُوْهُمْ وَمَا يَعْبُدُوْنَ اِلَّا اللهَ فَأْوُوْاۤ اِلَى الْكَهْفِ يَنْشُرْ لَكُمْ رَبُّكُمْ مِّنْ رَّحْمَتِهٖ وَيُهَيِّئْ لَكُمْ مِّنْ اَمْرِكُمْ مِّرْفَقًا
যখন তোমরা তাদের ও তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদাত করে তাদের হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে, অতঃপর তোমরা গুহায় আশ্রয় গ্রহণ করলে তখন তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্য তাঁর দয়া বিসত্মার করলেন এবং তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কাজকর্মকে ফলপ্রসূ করার ব্যবস্থা করলেন। (সূরা কাহফ- ১৬)
তারা নিদ্রাবস্থায় পার্শ্ব পরিবর্তন করত :
وَتَحْسَبُهُمْ اَيْقَاظًا وَّهُمْ رُقُوْدٌۗ وَنُقَلِّبُهُمْ ذَاتَ الْيَمِيْنِ وَذَاتَ الشِّمَالِ
তুমি মনে করতে তারা জাগ্রত, কিন্তু তারা ছিল নিদ্রিত। আমি তাদেরকে পার্শ্ব পরিবর্তন করাতাম ডান দিকে ও বাম দিকে। (সূরা কাহফ- ১৮)
সূর্যের কিরণ তাদের গর্তে প্রবেশ করত না :
وَتَرَى الشَّمْسَ اِذَا طَلَعَتْ تَّزَاوَرُ عَنْ كَهْفِهِمْ ذَاتَ الْيَمِيْنِ وَاِذَا غَرَبَتْ تَّقْرِضُهُمْ ذَاتَ الشِّمَالِ وَهُمْ فِيْ فَجْوَةٍ مِّنْهُؕ ذٰلِكَ مِنْ اٰيَاتِ اللهِؕ مَنْ يَّهْدِ اللهُ فَهُوَ الْمُهْتَدِۚ وَمَنْ يُّضْلِلْ فَلَنْ تَجِدَ لَهٗ وَلِيًّا مُّرْشِدًا
তুমি দেখতে পেতে- তারা গুহার প্রশসত্ম চত্বরে অবস্থিত, সূর্য উদয়কালে (তার কিরণ) তাদের গুহার দক্ষিণ পার্শ্বে হেলে যায় এবং অসত্মকালে (তার কিরণ) বাম পার্শ্ব দিয়ে তাদেরকে অতিক্রম করে, এগুলো আল্লাহর নিদর্শন। আল্লাহ যাকে পথপ্রদর্শন করেন, সে সৎপথপ্রাপ্ত হয় এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তুমি কখনো তার কোন পথপ্রদর্শনকারী অভিভাবক পাবে না। (সূরা কাহফ- ১৭)
একটি কুকুর তাদেরকে পাহারা দিত :
وَكَلْبُهُمْ بَاسِطٌ ذِرَاعَيْهِ بِالْوَصِيْدِ لَوِ اطَّلَعْتَ عَلَيْهِمْ لَوَلَّيْتَ مِنْهُمْ فِرَارًا وَّلَمُلِئْتَ مِنْهُمْ رُعْبًا
আর তাদের কুকুর সম্মুখের পা দু’টি গুহাদ্বারে প্রসারিত করে তাকিয়ে ছিল, তাদেরকে দেখলে তুমি পেছন ফিরে পলায়ন করতে এবং তাদের ভয়ে আতংকগ্রসত্ম হয়ে পড়তে। (সূরা কাহফ- ১৮)
পরে আল্লাহ তাদেরকে জীবিত করেছেন :
ثُمَّ بَعَثْنَاهُمْ لِنَعْلَمَ اَيُّ الْحِزْبَيْنِ اَحْصٰى لِمَا لَبِثُوْاۤ اَمَدًا
তারপর আমি তাদেরকে জাগ্রত করলাম এ কথা জানানোর জন্য যে, দু’দলের মধ্যে কারা তাদের অবস্থানকাল সঠিকভাবে নির্ণয় করতে পারে। (সূরা কাহফ- ১২)
কতদিন গর্তে ছিল তা তারা বুঝতে পারেনি :
وَكَذٰلِكَ بَعَثْنَاهُمْ لِيَتَسَآءَلُوْا بَيْنَهُمْؕ قَالَ قَآئِلٌ مِّنْهُمْ كَمْ لَبِثْتُمْؕ قَالُوْا لَبِثْنَا يَوْمًا اَوْ بَعْضَ يَوْمٍؕ قَالُوْا رَبُّكُمْ اَعْلَمُ بِمَا لَبِثْتُمْ
এভাবেই আমি তাদেরকে জাগ্রত করলাম, যাতে তারা পরস্পরের মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করে নেয়। অতঃপর তাদের একজন বলল, তোমরা এখানে কত কাল অবস্থান করেছ? কেউ কেউ বলল, আমরা অবস্থান করেছি এক দিন অথবা এক দিনের কিছু অংশ। কেউ বলল, তোমরা কত কাল অবস্থান করেছ তা তোমাদের প্রতিপালকই ভালো জানেন। (সূরা কাহফ- ১৯)
তাদের গোহায় অবস্থানকাল :
فَضَرَبْنَا عَلٰۤى اٰذَانِهِمْ فِى الْكَهْفِ سِنِيْنَ عَدَدًا
অতঃপর আমি তাদেরকে গুহায় কয়েক বৎসর ঘুমমত্ম অবস্থায় রাখলাম। (সূরা কাহফ- ১১)
قُلِ اللهُ اَعْلَمُ بِمَا لَبِثُوْاۚ لَهٗ غَيْبُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِؕ اَبْصِرْ بِهٖ وَاَسْمِعْؕ مَا لَهُمْ مِّنْ دُوْنِهٖ مِنْ وَّلِيٍّؗ وَلَا يُشْرِكُ فِيْ حُكْمِهٖۤ اَحَدًا
বলো, তারা কত কাল ছিল তা আল্লাহই ভালো জানেন, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর অজ্ঞাত বিষয়ের জ্ঞান তাঁরই। তিনি কত সুন্দর দ্রষ্টা ও শ্রোতা! তিনি ব্যতীত তাদের অন্য কোন অভিভাবক নেই। আর তিনি কাউকে নিজ কর্তৃত্বে শরীক করেন না। (সূরা কাহফ- ২৬)
وَلَبِثُوْا فِيْ كَهْفِهِمْ ثَلَاثَ مِائَةٍ سِنِيْنَ وَازْدَادُوْا تِسْعًا
তারা তাদের গুহায় ছিল তিনশ’ বৎসর এবং আরো নয় বৎসর। (সূরা কাহফ- ২৫)
আসহাবে কাহফের কাহিনীর শিক্ষা :
কুরআন যে তাওহীদের দাওয়াত দিচ্ছে আসহাবে কাহফের লোকেরা ছিলেন এরই প্রবক্তা। তাদের অবস্থা মক্কার মজলুম মুসলিমদের অবস্থা থেকে ভিন্নতর ছিল না। তাদের জাতির মনোভাব ও ভূমিকা মক্কার কুরাইশ বংশীয় কাফিরদের মতোই ছিল। এ কাহিনী থেকে ঈমানদারদেরকে এ শিক্ষা দেয়া হয়েছে যে, যদি কাফিররা সীমাহীন ক্ষমতা ও আধিপত্যের অধিকারী হয়ে থাকে এবং তাদের যুলুম-নির্যাতনের ফলে মুমিনরা সীমাহীন কষ্ট পায়, তবুও বাতিলের সামনে মাথা নত করা উচিত নয়। বরং আল্লাহর উপর ভরসা করে দেশ থেকে বের হয়ে যাওয়া উচিত। এ প্রসঙ্গে আনুসাঙ্গিকভাবে এ কথাও বলা হয়েছে যে, আসহাবে কাহাফের কাহিনী আখিরাত বিশ্বাসের নির্ভুলতার একটি প্রমাণ। যেভাবে আল্লাহ তা‘আলা আসহাবে কাহফকে সুদীর্ঘকাল মৃত্যু নিদ্রায় বিভোর করে রাখার পর আবার জীবিত করে তুললেন- ঠিক তেমনিভাবে তিনি কিয়ামতের দিন সকল মানুষকে একত্রে জীবিত করতেও সক্ষম।
জিহাদের সংজ্ঞা : জিহাদ অর্থ হচ্ছে, কোন লক্ষ্য অর্জনের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য সবরকমের প্রচেষ্টা ও সাধনা এর অন্তর্ভুক্ত। আর কিতাল হচ্ছে, দ্বীন ইসলামকে বিজয়ী করার জন্য চূড়ান্তভাবে শত্রুর বিরুদ্ধে সশস্ত্র মুকাবেলা করা।
মুজাহিদ এমন ব্যক্তিকে বলা হয়, যে সর্বক্ষণ জিহাদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সাধনে নিমগ্ন থাকে। মুজাহিদের হাত, পা ও শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ জিহাদের উদ্দেশ্য সম্পাদনের জন্য সারাক্ষণ প্রচেষ্টা করে চলে। তার মস্তিষ্ক সবসময় ঐ উদ্দেশ্য সম্পাদনের উপায় ও কৌশল উদ্ভাবনে ব্যস্ত থাকে। তার কণ্ঠ ও লেখনী এ উদ্দেশ্যের প্রচারণায় নিয়োজিত থাকে। জিহাদের উদ্দেশ্য পূর্ণ করার জন্য সে নিজের সম্ভাব্য সমস্ত উপায়-উপকরণ প্রয়োগ করে, পূর্ণ শক্তি দিয়ে এ পথের সমস্ত বাধার মুকাবিলা করে। এমনকি শেষ পর্যন্ত যখন প্রাণ উৎসর্গ করার প্রয়োজন দেখা দেয়, তখন নির্দ্বিধায় এগিয়ে যায়। আল্লাহর পথে জিহাদ হচ্ছে, এ সবকিছু একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করা। এ দুনিয়ায় একমাত্র আল্লাহর দ্বীন তথা আল্লাহপ্রদত্ত জীবনবিধান প্রতিষ্ঠা করা এবং তাকে অন্যান্য সকল বিধানের উপর বিজয়ী করা। মুজাহিদের সামনে এছাড়া আর দ্বিতীয় কোন উদ্দেশ্য থাকে না।
জিহাদের ক্ষেত্র : জিহাদের প্রথম অভিযান পরিচালিত হয় মানুষের নাফসে আম্মারার বিরুদ্ধে। এ নফসই মানুষকে সবসময় ঈমান ও আনুগত্যের পথ থেকে সরিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা করে। তাকে নিয়ন্ত্রণ না করা পর্যন্ত বাইরের কোন প্রচেষ্টা ও সংগ্রামের সম্ভাবনা নেই। এরপর সারা দুনিয়াই হচ্ছে জিহাদের ক্ষেত্র। যেসব শক্তি আল্লাহর পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে, যারা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী চলতে বাধা দেয়, যারা পুরোপুরি আল্লাহর বান্দা হিসেবে জীবন-যাপন করতে দেয় না এবং যারা নিজের বা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো বান্দা হওয়ার জন্য বাধ্য করে, তাদের বিরুদ্ধে নিজেদের সম্ভাব্য সমস্ত শক্তি দিয়ে সংগ্রাম চালাতে হয়। যেসব মতবাদ, রীতিনীতি, রসম-রেওয়াজ, সাংস্কৃতিক ধারা ও সামাজিক নিয়ম সত্য দ্বীনের সাথে সাংঘর্ষিক সেগুলোর সাথে মুমিনকে লড়তে হয়।
যেসব রাষ্ট্রব্যবস্থার ভিত্তি গড়ে উঠেছে আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের উপর এবং যা মানুষকে সত্যের আনুগত্য করার পরিবর্তে মিথ্যার আনুগত্য করতে বাধ্য করে, যা আল্লাহর আনুগত্যমুক্ত থেকে নিজের ফরমান জারী করে এবং সত্যের পরিবর্তে মিথ্যাকে বিকশিত করার জন্য শক্তি প্রয়োগ করে- এসব প্রতিবন্ধক ও সংঘর্ষশীল শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে নিজের লক্ষ্য অর্জন করতে হয়। এ প্রচেষ্টা বা সংগ্রাম দু’এক দিনের জন্য নয়, বরং সারাজীবনের জন্য। দিন-রাতের চবিবশ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিটি মুহূর্তের। একটি ময়দানে নয় বরং জীবনের প্রত্যেকটি ময়দানে ও প্রতিটি দিকে।
মুজাহিদ এমন ব্যক্তিকে বলা হয়, যে সর্বক্ষণ জিহাদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সাধনে নিমগ্ন থাকে। মুজাহিদের হাত, পা ও শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ জিহাদের উদ্দেশ্য সম্পাদনের জন্য সারাক্ষণ প্রচেষ্টা করে চলে। তার মস্তিষ্ক সবসময় ঐ উদ্দেশ্য সম্পাদনের উপায় ও কৌশল উদ্ভাবনে ব্যস্ত থাকে। তার কণ্ঠ ও লেখনী এ উদ্দেশ্যের প্রচারণায় নিয়োজিত থাকে। জিহাদের উদ্দেশ্য পূর্ণ করার জন্য সে নিজের সম্ভাব্য সমস্ত উপায়-উপকরণ প্রয়োগ করে, পূর্ণ শক্তি দিয়ে এ পথের সমস্ত বাধার মুকাবিলা করে। এমনকি শেষ পর্যন্ত যখন প্রাণ উৎসর্গ করার প্রয়োজন দেখা দেয়, তখন নির্দ্বিধায় এগিয়ে যায়। আল্লাহর পথে জিহাদ হচ্ছে, এ সবকিছু একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করা। এ দুনিয়ায় একমাত্র আল্লাহর দ্বীন তথা আল্লাহপ্রদত্ত জীবনবিধান প্রতিষ্ঠা করা এবং তাকে অন্যান্য সকল বিধানের উপর বিজয়ী করা। মুজাহিদের সামনে এছাড়া আর দ্বিতীয় কোন উদ্দেশ্য থাকে না।
জিহাদের ক্ষেত্র : জিহাদের প্রথম অভিযান পরিচালিত হয় মানুষের নাফসে আম্মারার বিরুদ্ধে। এ নফসই মানুষকে সবসময় ঈমান ও আনুগত্যের পথ থেকে সরিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা করে। তাকে নিয়ন্ত্রণ না করা পর্যন্ত বাইরের কোন প্রচেষ্টা ও সংগ্রামের সম্ভাবনা নেই। এরপর সারা দুনিয়াই হচ্ছে জিহাদের ক্ষেত্র। যেসব শক্তি আল্লাহর পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে, যারা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী চলতে বাধা দেয়, যারা পুরোপুরি আল্লাহর বান্দা হিসেবে জীবন-যাপন করতে দেয় না এবং যারা নিজের বা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো বান্দা হওয়ার জন্য বাধ্য করে, তাদের বিরুদ্ধে নিজেদের সম্ভাব্য সমস্ত শক্তি দিয়ে সংগ্রাম চালাতে হয়। যেসব মতবাদ, রীতিনীতি, রসম-রেওয়াজ, সাংস্কৃতিক ধারা ও সামাজিক নিয়ম সত্য দ্বীনের সাথে সাংঘর্ষিক সেগুলোর সাথে মুমিনকে লড়তে হয়।
যেসব রাষ্ট্রব্যবস্থার ভিত্তি গড়ে উঠেছে আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের উপর এবং যা মানুষকে সত্যের আনুগত্য করার পরিবর্তে মিথ্যার আনুগত্য করতে বাধ্য করে, যা আল্লাহর আনুগত্যমুক্ত থেকে নিজের ফরমান জারী করে এবং সত্যের পরিবর্তে মিথ্যাকে বিকশিত করার জন্য শক্তি প্রয়োগ করে- এসব প্রতিবন্ধক ও সংঘর্ষশীল শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে নিজের লক্ষ্য অর্জন করতে হয়। এ প্রচেষ্টা বা সংগ্রাম দু’এক দিনের জন্য নয়, বরং সারাজীবনের জন্য। দিন-রাতের চবিবশ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিটি মুহূর্তের। একটি ময়দানে নয় বরং জীবনের প্রত্যেকটি ময়দানে ও প্রতিটি দিকে।
আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের জন্য রয়েছে বিরাট পুরস্কার :
لَا يَسْتَوِى الْقَاعِدُوْنَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ غَيْرُ اُولِى الضَّرَرِ وَالْمُجَاهِدُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْؕ فَضَّلَ اللهُ الْمُجَاهِدِيْنَ بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْ عَلَى الْقَاعِدِيْنَ دَرَجَةًؕ وَكُلًّا وَّعَدَ اللهُ الْحُسْنٰىؕ وَفَضَّلَ اللهُ الْمُجَاهِدِيْنَ عَلَى الْقَاعِدِيْنَ اَجْرًا عَظِيْمًا
মুমিনদের মধ্যে যারা অক্ষম নয়, অথচ ঘরে বসে থাকে এবং যারা আল্লাহর পথে স্বীয় জান-মাল দ্বারা জিহাদ করে, তারা সমান নয়। যারা স্বীয় জান-মাল দ্বারা জিহাদ করে আল্লাহ তাদেরকে ঘরে বসে থাকা ব্যক্তিদের উপর মর্যাদা দিয়েছেন; আর আল্লাহ সকলকেই কল্যাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আল্লাহ মহাপুরস্কারের ক্ষেত্রে মুজাহিদদেরকে ঘরে বসে থাকা লোকদের তুলনায় শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। (সূরা নিসা- ৯৫)
اَجَعَلْتُمْ سِقَايَةَ الْحَآجِّ وَعِمَارَةَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ كَمَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَجَاهَدَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِؕ لَا يَسْتَوُوْنَ عِنْدَ اللهِؕ وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
হাজীদের জন্য পানি সরবরাহ করা এবং মাসজিদুল হারামের রক্ষণাবেক্ষণ করাকে তোমরা কি তাদের পুণ্যের সমান মনে কর, যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান আনে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করে? কিন্তু তারা আল্লাহর নিকট সমান নয়। আর আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথ প্রদর্শন করেন না। (সূরা তাওবা- ১৯)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর কাছে লোক দেখানো ধর্মীয় কাজ করার কোন মূল্য নেই; বরং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা এবং তাঁর পথে কুরবানী ও ত্যাগ স্বীকার করার মধ্যেই যথার্থ মর্যাদা বিদ্ধমান। যে ব্যক্তি এসবের অধিকারী হয়, সে কোন উচ্চ বংশ ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের সাথে সম্পর্কিত না হলেও সে-ই যথার্থ মর্যাদাবান। কিন্তু যারা এসব গুণের অধিকারী নয়, তারা নিছক কিছু ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে থাকলেও তারা কোন অবস্থাতেই প্রকৃত মর্যাদার অধিকারী হতে পারবে না।
জিহাদে বের হওয়ার পর প্রতিটি কাজের বিনিময়ে সওয়াব লেখা হয় :
مَا كَانَ لِاَهْلِ الْمَدِيْنَةِ وَمَنْ حَوْلَهُمْ مِّنَ الْاَعْرَابِ اَنْ يَّتَخَلَّفُوْا عَنْ رَّسُوْلِ اللهِ وَلَا يَرْغَبُوْا بِاَنْفُسِهِمْ عَنْ نَّفْسِهٖؕ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ لَا يُصِيْبُهُمْ ظَمَأٌ وَّلَا نَصَبٌ وَّلَا مَخْمَصَةٌ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَلَا يَطَئُوْنَ مَوْطِئًا يَّغِيْظُ الْكُفَّارَ وَلَا يَنَالُوْنَ مِنْ عَدُوٍّ نَّيْلًا اِلَّا كُتِبَ لَهُمْ بِهٖ عَمَلٌ صَالِحٌؕ اِنَّ اللهَ لَا يُضِيْعُ اَجْرَ الْمُحْسِنِيْنَ ‐ وَلَا يُنْفِقُوْنَ نَفَقَةً صَغِيْرَةً وَّلَا كَبِيْرَةً وَّلَا يَقْطَعُوْنَ وَادِيًا اِلَّا كُتِبَ لَهُمْ لِيَجْزِيَهُمُ اللهُ اَحْسَنَ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
মদিনাবাসী ও তাদের পার্শ্ববর্তী মরুবাসীদের জন্য সঙ্গত নয় যে, তারা আল্লাহর রাসূলের সহগামী না হয়ে পেছনে রয়ে যাবে এবং তাঁর জীবনের চেয়ে নিজেদের জীবনকে প্রিয় মনে করবে। কেননা আল্লাহর পথে তাদের তৃষ্ণা, ক্লান্তি ও ক্ষুধায় ক্লিষ্ট হওয়া, কাফিরদের ক্রোধ উপেক্ষা করে (উপযুক্ত) পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং শত্রুদের নিকট হতে কিছু প্রাপ্ত হওয়া- সবই সৎকর্ম হিসেবে গণ্য হয়। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের প্রতিদান নষ্ট করেন না। আর তারা ক্ষুদ্র অথবা বৃহৎ যাই ব্যয় করে এবং যে কোন প্রান্তরই অতিক্রম করুক না কেন- এর সওয়াব তাদের জন্যই লিখে রাখা হয়; যাতে তারা যা করে আল্লাহ তাদেরকে তার চেয়ে আরো উত্তম পুরস্কার দিতে পারেন। (সূরা তাওবা- ১২০, ১২১)
জিহাদকারীরাই সফলতা লাভ করবে :
اَ لَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَهَاجَرُوْا وَجَاهَدُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْ اَعْظَمُ دَرَجَةً عِنْدَ اللهِؕ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَآئِزُوْنَ
যারা ঈমান আনে, হিজরত করে এবং নিজেদের সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে তারা আল্লাহর নিকট মর্যাদায় শ্রেষ্ঠ; আর তারাই সফলকাম। (সূরা তাওবা- ২০)
لٰكِنِ الرَّسُوْلُ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَعَهٗ جَاهَدُوْا بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْؕ وَاُولٰٓئِكَ لَهُمُ الْخَيْرَاتُ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ ‐ اَعَدَّ اللّٰهُ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَاؕ ذٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ
কিন্তু আল্লাহর রাসূল এবং তাঁর সাথে যারা ঈমান এনেছে তারা নিজেদের জান-মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে। অতএব যাবতীয় কল্যাণ তাদের জন্যই নির্দিষ্ট এবং তারাই সফলকাম। আল্লাহ তাদের জন্য এমন এক জান্নাত প্রস্তুত করে রেখেছেন, যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত রয়েছে। সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে; বস্তুত এটাই হচ্ছে সর্বোত্তম সাফল্য। (সূরা তাওবা- ৮৮, ৮৯)
আল্লাহ জিহাদকারীদেরকে ভালোবাসেন :
اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الَّذِيْنَ يُقَاتِلُوْنَ فِيْ سَبِيْلِهٖ صَفًّا كَاَنَّهُمْ بُنْيَانٌ مَّرْصُوْصٌ
নিশ্চয় যারা সারিবদ্ধভাবে সীসাঢালা প্রাচীরের মতো আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে, আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা সাফ- ৪)
জিহাদ করলে নিজেরই কল্যাণ হয় :
وَمَنْ جَاهَدَ فَاِنَّمَا يُجَاهِدُ لِنَفْسِهٖؕ اِنَّ اللّٰهَ لَغَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِيْنَ
যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদ করে, সে তার নিজের কল্যাণের জন্যই তা করে। নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্ববাসীদের থেকে অমুখাপেক্ষী। (সূরা আনকাবূত- ৬)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ মানুষের কাছে সংগ্রামের দাবী এজন্য করছেন না যে, নিজের সার্বভৌম কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মানুষের সাহায্যের প্রয়োজন, বরং এটিই মানুষের উন্নতি ও অগ্রগতির পথ। এ পথে অগ্রসর হয়ে মুসলিমরা এমন শক্তির অধিকারী হতে পারে, যার ফলে তারা দুনিয়ায় কল্যাণের অধিকারী এবং পরকালে আল্লাহর জান্নাত লাভের সৌভাগ্য লাভ করতে পারবে। এ সংগ্রাম চালিয়ে গেলে তারা নিজেরাই উপকৃত হবে।
জিহাদ করলে দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার তাওফীক হয় :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنْ تَنْصُرُوا اللّٰهَ يَنْصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ اَقْدَامَكُمْ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি (দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে) আল্লাহকে সাহায্য কর, তবে আল্লাহও তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা সমূহ সুদৃঢ় রাখবেন। (সূরা মুহাম্মাদ- ৭)
জিহাদ জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায় :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا هَلْ اَدُلُّكُمْ عَلٰى تِجَارَةٍ تُنْجِيْكُمْ مِّنْ عَذَابٍ اَلِيْمٍ ‐ تُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ وَرَسُوْلِهٖ وَتُجَاهِدُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ بِاَمْوَالِكُمْ وَاَنْفُسِكُمْ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
হে মুমিনগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন বাণিজ্যের সন্ধান দেব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হতে রক্ষা করবে? (তা এই যে) তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং তোমাদের ধনসম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে! (সূরা সাফ- ১০, ১১)
জিহাদ জান্নাত লাভের মাধ্যম :
يَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ وَيُدْخِلْكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِيْ جَنَّاتِ عَدْنٍؕ ذٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ
(আল্লাহ) তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন এবং তোমাদেরকে এমন এক জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত রয়েছে। (তাদের জন্য আরো রয়েছে) স্থায়ী জান্নাতের উত্তম বাসগৃহ; আর এটাই মহাসাফল্য। (সূরা সাফ- ১২)
জিহাদের নির্দেশ :
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ جَاهِدِ الْكُفَّارَ وَالْمُنَافِقِيْنَ وَاغْلُظْ عَلَيْهِمْؕ وَمَاْوَاهُمْ جَهَنَّمُؕ وَبِئْسَ الْمَصِيْرُ
হে নবী! কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করো ও তাদের প্রতি কঠোর হও। তাদের আবাসস্থল হচ্ছে জাহান্নাম, আর তা কতই না নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল! (সূরা তাওবা- ৭৩)
জিহাদের জন্য উৎসাহ প্রদান :
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ حَرِّضِ الْمُؤْمِنِيْنَ عَلَى الْقِتَالِؕ اِنْ يَّكُنْ مِّنْكُمْ عِشْرُوْنَ صَابِرُوْنَ يَغْلِبُوْا مِائَتَيْنِۚ وَاِنْ يَّكُنْ مِّنْكُمْ مِّائَةٌ يَّغْلِبُوْاۤ اَلْفًا مِّنَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِاَنَّهُمْ قَوْمٌ لَّا يَفْقَهُوْنَ
হে নবী! মুমিনদেরকে যুদ্ধের জন্য উদ্বুদ্ধ করো; তোমাদের মধ্যে বিশজন ধৈর্যশীল থাকলে তাদের (শত্রুদের) দু’শ জনের উপর বিজয়ী হবে এবং তোমাদের মধ্যে একশ’ জন থাকলে এক সহস্র কাফিরের উপর বিজয়ী হবে। কারণ তারা এমন এক সম্প্রদায়, যাদের কোন বোধশক্তি নেই। (সূরা আনফাল- ৬৫)
فَقَاتِلْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِۚ لَا تُكَلَّفُ اِلَّا نَفْسَكَ وَحَرِّضِ الْمُؤْمِنِيْنَۚ عَسَى اللهُ اَنْ يَّكُفَّ بَاْسَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاؕ وَاللهُ اَشَدُّ بَاْسًا وَّاَشَدُّ تَنْكِيْلًا
সুতরাং আল্লাহর পথে যুদ্ধ করো; তোমাকে শুধু তোমার নিজের জন্য দায়ী করা হবে এবং মুমিনদেরকে উদ্বুদ্ধ করো, হয়তো আল্লাহ কাফিরদের শক্তি সংযত করবেন। আর আল্লাহ শক্তিতে প্রবল ও শাস্তিদানে খুবই কঠোর। (সূরা নিসা- ৮৪)
আল্লাহ জিহাদকে ফরয করে দিয়েছেন :
وَقَاتِلُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
তোমরা আল্লাহর পথে লড়াই করো এবং জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী। (সূরা বাক্বারা- ২৪৪)
كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ وَهُوَ كُرْهٌ لَّكُمْۚ وَعَسٰۤى اَنْ تَكْرَهُوْا شَيْئًا وَّهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْۚ وَعَسٰۤى اَنْ تُحِبُّوْا شَيْئًا وَّهُوَ شَرٌّ لَّكُمْؕ وَاللهُ يَعْلَمُ وَاَنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ
যুদ্ধ করাকে তোমাদের উপর ফরয করে দেয়া হয়েছে, যা তোমাদের নিকট খুবই অপ্রিয়। হ্যাঁ, তোমরা যা অপছন্দ করছ, হতে পারে তা-ই তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আবার তোমরা যা পছন্দ করছ, হতে পারে তা-ই তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। মূলত আল্লাহই জানেন, কিন্তু তোমরাই জান না। (সূরা বাক্বারা- ২১৬)
অনেক নবী এবং তাদের অনুসারীরা যুদ্ধ করেছেন :
وَكَاَيِّنْ مِّنْ نَّبِيٍّ قَاتَلَ مَعَهٗ رِبِّيُّوْنَ كَثِيْرٌۚ فَمَا وَهَنُوْا لِمَاۤ اَصَابَهُمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَمَا ضَعُفُوْا وَمَا اسْتَكَانُوْاؕ وَاللهُ يُحِبُّ الصَّابِرِيْنَ
এমন অনেক নবী ছিলেন, যাদের সাথে আল্লাহওয়ালা অনেক লোক যুদ্ধ করেছিল। অতঃপর আল্লাহর পথে যা সংঘটিত হয়েছিল তাতে তারা নিরুৎসাহ হয়নি, শক্তিহীন হয়নি এবং বিচলিতও হয়নি। (জেনে রেখো) আল্লাহ ধৈর্যশীলদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৪৬)
মুমিনগণ আল্লাহর পথে লড়াই করে, আর কাফিররা তাগুতের পথে লড়াই করে :
اَ لَّذِيْنَ اٰمَنُوْا يُقَاتِلُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِۚ وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا يُقَاتِلُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ الطَّاغُوْتِ فَقَاتِلُوْاۤ اَوْلِيَآءَ الشَّيْطَانِۚ اِنَّ كَيْدَ الشَّيْطَانِ كَانَ ضَعِيْفًا
যারা মুমিন তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে এবং যারা কাফির তারা তাগুতের পথে যুদ্ধ করে। সুতরাং তোমরা শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো; নিশ্চয় শয়তানের কৌশল খুবই দুর্বল। (সূরা নিসা- ৭৬)
অস্ত্র কম হোক আর বেশি হোক বেরিয়ে পড়তে হবে :
اِنْفِرُوْا خِفَافًا وَّثِقَالًا وَّجَاهِدُوْا بِاَمْوَالِكُمْ وَاَنْفُسِكُمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِؕ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
তোমরা অভিযানে বের হয়ে পড়ো, হালকা অবস্থায় হোক অথবা ভারি অবস্থায় এবং তোমাদের সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করো। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা জানতে! (সূরা তাওবা- ৪১)
ব্যাখ্যা : এখানে মুসলিমদেরকে যুদ্ধ করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে এবং দ্বীনের ব্যাপারে কোন প্রকার সম্পর্ক, আত্মীয়তা ও বৈষয়িক সুবিধার কথা একটুও বিবেচনায় না এনে বেরিয়ে পড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
لَا يَسْتَوِى الْقَاعِدُوْنَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ غَيْرُ اُولِى الضَّرَرِ وَالْمُجَاهِدُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْؕ فَضَّلَ اللهُ الْمُجَاهِدِيْنَ بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْ عَلَى الْقَاعِدِيْنَ دَرَجَةًؕ وَكُلًّا وَّعَدَ اللهُ الْحُسْنٰىؕ وَفَضَّلَ اللهُ الْمُجَاهِدِيْنَ عَلَى الْقَاعِدِيْنَ اَجْرًا عَظِيْمًا
মুমিনদের মধ্যে যারা অক্ষম নয়, অথচ ঘরে বসে থাকে এবং যারা আল্লাহর পথে স্বীয় জান-মাল দ্বারা জিহাদ করে, তারা সমান নয়। যারা স্বীয় জান-মাল দ্বারা জিহাদ করে আল্লাহ তাদেরকে ঘরে বসে থাকা ব্যক্তিদের উপর মর্যাদা দিয়েছেন; আর আল্লাহ সকলকেই কল্যাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আল্লাহ মহাপুরস্কারের ক্ষেত্রে মুজাহিদদেরকে ঘরে বসে থাকা লোকদের তুলনায় শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। (সূরা নিসা- ৯৫)
اَجَعَلْتُمْ سِقَايَةَ الْحَآجِّ وَعِمَارَةَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ كَمَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَجَاهَدَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِؕ لَا يَسْتَوُوْنَ عِنْدَ اللهِؕ وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
হাজীদের জন্য পানি সরবরাহ করা এবং মাসজিদুল হারামের রক্ষণাবেক্ষণ করাকে তোমরা কি তাদের পুণ্যের সমান মনে কর, যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান আনে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করে? কিন্তু তারা আল্লাহর নিকট সমান নয়। আর আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথ প্রদর্শন করেন না। (সূরা তাওবা- ১৯)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর কাছে লোক দেখানো ধর্মীয় কাজ করার কোন মূল্য নেই; বরং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা এবং তাঁর পথে কুরবানী ও ত্যাগ স্বীকার করার মধ্যেই যথার্থ মর্যাদা বিদ্ধমান। যে ব্যক্তি এসবের অধিকারী হয়, সে কোন উচ্চ বংশ ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের সাথে সম্পর্কিত না হলেও সে-ই যথার্থ মর্যাদাবান। কিন্তু যারা এসব গুণের অধিকারী নয়, তারা নিছক কিছু ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে থাকলেও তারা কোন অবস্থাতেই প্রকৃত মর্যাদার অধিকারী হতে পারবে না।
জিহাদে বের হওয়ার পর প্রতিটি কাজের বিনিময়ে সওয়াব লেখা হয় :
مَا كَانَ لِاَهْلِ الْمَدِيْنَةِ وَمَنْ حَوْلَهُمْ مِّنَ الْاَعْرَابِ اَنْ يَّتَخَلَّفُوْا عَنْ رَّسُوْلِ اللهِ وَلَا يَرْغَبُوْا بِاَنْفُسِهِمْ عَنْ نَّفْسِهٖؕ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ لَا يُصِيْبُهُمْ ظَمَأٌ وَّلَا نَصَبٌ وَّلَا مَخْمَصَةٌ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَلَا يَطَئُوْنَ مَوْطِئًا يَّغِيْظُ الْكُفَّارَ وَلَا يَنَالُوْنَ مِنْ عَدُوٍّ نَّيْلًا اِلَّا كُتِبَ لَهُمْ بِهٖ عَمَلٌ صَالِحٌؕ اِنَّ اللهَ لَا يُضِيْعُ اَجْرَ الْمُحْسِنِيْنَ ‐ وَلَا يُنْفِقُوْنَ نَفَقَةً صَغِيْرَةً وَّلَا كَبِيْرَةً وَّلَا يَقْطَعُوْنَ وَادِيًا اِلَّا كُتِبَ لَهُمْ لِيَجْزِيَهُمُ اللهُ اَحْسَنَ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
মদিনাবাসী ও তাদের পার্শ্ববর্তী মরুবাসীদের জন্য সঙ্গত নয় যে, তারা আল্লাহর রাসূলের সহগামী না হয়ে পেছনে রয়ে যাবে এবং তাঁর জীবনের চেয়ে নিজেদের জীবনকে প্রিয় মনে করবে। কেননা আল্লাহর পথে তাদের তৃষ্ণা, ক্লান্তি ও ক্ষুধায় ক্লিষ্ট হওয়া, কাফিরদের ক্রোধ উপেক্ষা করে (উপযুক্ত) পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং শত্রুদের নিকট হতে কিছু প্রাপ্ত হওয়া- সবই সৎকর্ম হিসেবে গণ্য হয়। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের প্রতিদান নষ্ট করেন না। আর তারা ক্ষুদ্র অথবা বৃহৎ যাই ব্যয় করে এবং যে কোন প্রান্তরই অতিক্রম করুক না কেন- এর সওয়াব তাদের জন্যই লিখে রাখা হয়; যাতে তারা যা করে আল্লাহ তাদেরকে তার চেয়ে আরো উত্তম পুরস্কার দিতে পারেন। (সূরা তাওবা- ১২০, ১২১)
জিহাদকারীরাই সফলতা লাভ করবে :
اَ لَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَهَاجَرُوْا وَجَاهَدُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْ اَعْظَمُ دَرَجَةً عِنْدَ اللهِؕ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَآئِزُوْنَ
যারা ঈমান আনে, হিজরত করে এবং নিজেদের সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে তারা আল্লাহর নিকট মর্যাদায় শ্রেষ্ঠ; আর তারাই সফলকাম। (সূরা তাওবা- ২০)
لٰكِنِ الرَّسُوْلُ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَعَهٗ جَاهَدُوْا بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْؕ وَاُولٰٓئِكَ لَهُمُ الْخَيْرَاتُ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ ‐ اَعَدَّ اللّٰهُ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَاؕ ذٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ
কিন্তু আল্লাহর রাসূল এবং তাঁর সাথে যারা ঈমান এনেছে তারা নিজেদের জান-মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে। অতএব যাবতীয় কল্যাণ তাদের জন্যই নির্দিষ্ট এবং তারাই সফলকাম। আল্লাহ তাদের জন্য এমন এক জান্নাত প্রস্তুত করে রেখেছেন, যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত রয়েছে। সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে; বস্তুত এটাই হচ্ছে সর্বোত্তম সাফল্য। (সূরা তাওবা- ৮৮, ৮৯)
আল্লাহ জিহাদকারীদেরকে ভালোবাসেন :
اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الَّذِيْنَ يُقَاتِلُوْنَ فِيْ سَبِيْلِهٖ صَفًّا كَاَنَّهُمْ بُنْيَانٌ مَّرْصُوْصٌ
নিশ্চয় যারা সারিবদ্ধভাবে সীসাঢালা প্রাচীরের মতো আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে, আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা সাফ- ৪)
জিহাদ করলে নিজেরই কল্যাণ হয় :
وَمَنْ جَاهَدَ فَاِنَّمَا يُجَاهِدُ لِنَفْسِهٖؕ اِنَّ اللّٰهَ لَغَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِيْنَ
যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদ করে, সে তার নিজের কল্যাণের জন্যই তা করে। নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্ববাসীদের থেকে অমুখাপেক্ষী। (সূরা আনকাবূত- ৬)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ মানুষের কাছে সংগ্রামের দাবী এজন্য করছেন না যে, নিজের সার্বভৌম কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মানুষের সাহায্যের প্রয়োজন, বরং এটিই মানুষের উন্নতি ও অগ্রগতির পথ। এ পথে অগ্রসর হয়ে মুসলিমরা এমন শক্তির অধিকারী হতে পারে, যার ফলে তারা দুনিয়ায় কল্যাণের অধিকারী এবং পরকালে আল্লাহর জান্নাত লাভের সৌভাগ্য লাভ করতে পারবে। এ সংগ্রাম চালিয়ে গেলে তারা নিজেরাই উপকৃত হবে।
জিহাদ করলে দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার তাওফীক হয় :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنْ تَنْصُرُوا اللّٰهَ يَنْصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ اَقْدَامَكُمْ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি (দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে) আল্লাহকে সাহায্য কর, তবে আল্লাহও তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা সমূহ সুদৃঢ় রাখবেন। (সূরা মুহাম্মাদ- ৭)
জিহাদ জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায় :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا هَلْ اَدُلُّكُمْ عَلٰى تِجَارَةٍ تُنْجِيْكُمْ مِّنْ عَذَابٍ اَلِيْمٍ ‐ تُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ وَرَسُوْلِهٖ وَتُجَاهِدُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ بِاَمْوَالِكُمْ وَاَنْفُسِكُمْ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
হে মুমিনগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন বাণিজ্যের সন্ধান দেব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হতে রক্ষা করবে? (তা এই যে) তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং তোমাদের ধনসম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে! (সূরা সাফ- ১০, ১১)
জিহাদ জান্নাত লাভের মাধ্যম :
يَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ وَيُدْخِلْكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِيْ جَنَّاتِ عَدْنٍؕ ذٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ
(আল্লাহ) তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন এবং তোমাদেরকে এমন এক জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত রয়েছে। (তাদের জন্য আরো রয়েছে) স্থায়ী জান্নাতের উত্তম বাসগৃহ; আর এটাই মহাসাফল্য। (সূরা সাফ- ১২)
জিহাদের নির্দেশ :
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ جَاهِدِ الْكُفَّارَ وَالْمُنَافِقِيْنَ وَاغْلُظْ عَلَيْهِمْؕ وَمَاْوَاهُمْ جَهَنَّمُؕ وَبِئْسَ الْمَصِيْرُ
হে নবী! কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করো ও তাদের প্রতি কঠোর হও। তাদের আবাসস্থল হচ্ছে জাহান্নাম, আর তা কতই না নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল! (সূরা তাওবা- ৭৩)
জিহাদের জন্য উৎসাহ প্রদান :
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ حَرِّضِ الْمُؤْمِنِيْنَ عَلَى الْقِتَالِؕ اِنْ يَّكُنْ مِّنْكُمْ عِشْرُوْنَ صَابِرُوْنَ يَغْلِبُوْا مِائَتَيْنِۚ وَاِنْ يَّكُنْ مِّنْكُمْ مِّائَةٌ يَّغْلِبُوْاۤ اَلْفًا مِّنَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِاَنَّهُمْ قَوْمٌ لَّا يَفْقَهُوْنَ
হে নবী! মুমিনদেরকে যুদ্ধের জন্য উদ্বুদ্ধ করো; তোমাদের মধ্যে বিশজন ধৈর্যশীল থাকলে তাদের (শত্রুদের) দু’শ জনের উপর বিজয়ী হবে এবং তোমাদের মধ্যে একশ’ জন থাকলে এক সহস্র কাফিরের উপর বিজয়ী হবে। কারণ তারা এমন এক সম্প্রদায়, যাদের কোন বোধশক্তি নেই। (সূরা আনফাল- ৬৫)
فَقَاتِلْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِۚ لَا تُكَلَّفُ اِلَّا نَفْسَكَ وَحَرِّضِ الْمُؤْمِنِيْنَۚ عَسَى اللهُ اَنْ يَّكُفَّ بَاْسَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاؕ وَاللهُ اَشَدُّ بَاْسًا وَّاَشَدُّ تَنْكِيْلًا
সুতরাং আল্লাহর পথে যুদ্ধ করো; তোমাকে শুধু তোমার নিজের জন্য দায়ী করা হবে এবং মুমিনদেরকে উদ্বুদ্ধ করো, হয়তো আল্লাহ কাফিরদের শক্তি সংযত করবেন। আর আল্লাহ শক্তিতে প্রবল ও শাস্তিদানে খুবই কঠোর। (সূরা নিসা- ৮৪)
আল্লাহ জিহাদকে ফরয করে দিয়েছেন :
وَقَاتِلُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
তোমরা আল্লাহর পথে লড়াই করো এবং জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী। (সূরা বাক্বারা- ২৪৪)
كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ وَهُوَ كُرْهٌ لَّكُمْۚ وَعَسٰۤى اَنْ تَكْرَهُوْا شَيْئًا وَّهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْۚ وَعَسٰۤى اَنْ تُحِبُّوْا شَيْئًا وَّهُوَ شَرٌّ لَّكُمْؕ وَاللهُ يَعْلَمُ وَاَنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ
যুদ্ধ করাকে তোমাদের উপর ফরয করে দেয়া হয়েছে, যা তোমাদের নিকট খুবই অপ্রিয়। হ্যাঁ, তোমরা যা অপছন্দ করছ, হতে পারে তা-ই তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আবার তোমরা যা পছন্দ করছ, হতে পারে তা-ই তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। মূলত আল্লাহই জানেন, কিন্তু তোমরাই জান না। (সূরা বাক্বারা- ২১৬)
অনেক নবী এবং তাদের অনুসারীরা যুদ্ধ করেছেন :
وَكَاَيِّنْ مِّنْ نَّبِيٍّ قَاتَلَ مَعَهٗ رِبِّيُّوْنَ كَثِيْرٌۚ فَمَا وَهَنُوْا لِمَاۤ اَصَابَهُمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَمَا ضَعُفُوْا وَمَا اسْتَكَانُوْاؕ وَاللهُ يُحِبُّ الصَّابِرِيْنَ
এমন অনেক নবী ছিলেন, যাদের সাথে আল্লাহওয়ালা অনেক লোক যুদ্ধ করেছিল। অতঃপর আল্লাহর পথে যা সংঘটিত হয়েছিল তাতে তারা নিরুৎসাহ হয়নি, শক্তিহীন হয়নি এবং বিচলিতও হয়নি। (জেনে রেখো) আল্লাহ ধৈর্যশীলদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৪৬)
মুমিনগণ আল্লাহর পথে লড়াই করে, আর কাফিররা তাগুতের পথে লড়াই করে :
اَ لَّذِيْنَ اٰمَنُوْا يُقَاتِلُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِۚ وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا يُقَاتِلُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ الطَّاغُوْتِ فَقَاتِلُوْاۤ اَوْلِيَآءَ الشَّيْطَانِۚ اِنَّ كَيْدَ الشَّيْطَانِ كَانَ ضَعِيْفًا
যারা মুমিন তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে এবং যারা কাফির তারা তাগুতের পথে যুদ্ধ করে। সুতরাং তোমরা শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো; নিশ্চয় শয়তানের কৌশল খুবই দুর্বল। (সূরা নিসা- ৭৬)
অস্ত্র কম হোক আর বেশি হোক বেরিয়ে পড়তে হবে :
اِنْفِرُوْا خِفَافًا وَّثِقَالًا وَّجَاهِدُوْا بِاَمْوَالِكُمْ وَاَنْفُسِكُمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِؕ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
তোমরা অভিযানে বের হয়ে পড়ো, হালকা অবস্থায় হোক অথবা ভারি অবস্থায় এবং তোমাদের সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করো। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা জানতে! (সূরা তাওবা- ৪১)
ব্যাখ্যা : এখানে মুসলিমদেরকে যুদ্ধ করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে এবং দ্বীনের ব্যাপারে কোন প্রকার সম্পর্ক, আত্মীয়তা ও বৈষয়িক সুবিধার কথা একটুও বিবেচনায় না এনে বেরিয়ে পড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সকল মতবাদের উপর আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করা :
هُوَ الَّذِيْۤ اَرْسَلَ رَسُوْلَهٗ بِالْهُدٰى وَدِيْنِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهٗ عَلَى الدِّيْنِ كُلِّهٖ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُوْنَ
তিনিই তাঁর রাসূলকে হেদায়াত এবং সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন, যাতে এটাকে সকল দ্বীনের উপর বিজয়ী করা হয়; যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে। (সূরা সাফ- ৯)
يُرِيْدُوْنَ اَنْ يُّطْفِئُوْا نُوْرَ اللهِ بِاَفْوَاهِهِمْ وَيَاْبَى اللهُ اِلَّاۤ اَنْ يُّتِمَّ نُوْرَهٗ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُوْنَ ‐ هُوَ الَّذِيْۤ اَرْسَلَ رَسُوْلَهٗ بِالْهُدٰى وَدِيْنِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهٗ عَلَى الدِّيْنِ كُلِّهٖ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُوْنَ
তারা তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর জ্যোতি (দ্বীনকে) নিভিয়ে দিতে চায়। (কিন্তু) কাফিররা অপ্রীতিকর মনে করলেও আল্লাহ তাঁর জ্যোতি পূর্ণ করা ব্যতীত অন্য কিছু চান না। আর মুশরিকরা অপ্রীতিকর মনে করলেও অন্যান্য সকল দ্বীনের উপর (তাঁর দ্বীনকে) বিজয়ী করার জন্যই তিনি পথনির্দেশ ও সত্য দ্বীনসহ তাঁর রাসূলকে প্রেরণ করেছেন। (সূরা তাওবা- ৩২, ৩৩)
পৃথিবীতে মানুষের মধ্যে ভারসাম্য ঠিক রাখা :
وَلَوْلَا دَفْعُ اللهِ النَّاسَ بَعْضَهُمْ بِبَعْضٍ لَّفَسَدَتِ الْاَرْضُ وَلٰكِنَّ اللهَ ذُوْ فَضْلٍ عَلَى الْعَالَمِيْنَ
যদি আল্লাহ মানুষের একদলকে অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে অবশ্যই পৃথিবী বিশৃঙ্খলাপূর্ণ হয়ে যেত। কিন্তু আল্লাহ বিশ্বজগতের উপর অনুগ্রহশীল। (সূরা বাক্বারা- ২৫১)
وَلَوْلَا دَفْعُ اللّٰهِ النَّاسَ بَعْضَهُمْ بِبَعْضٍ لَّهُدِّمَتْ صَوَامِعُ وَبِيَعٌ وَّصَلَوَاتٌ وَّمَسَاجِدُ يُذْكَرُ فِيْهَا اسْمُ اللهِ كَثِيْرًاؕ وَلَيَنْصُرَنَّ اللهُ مَنْ يَّنْصُرُهٗؕ اِنَّ اللهَ لَقَوِيٌّ عَزِيْزٌ
আল্লাহ যদি মানবজাতির একদলকে অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে বিধ্বস্ত হয়ে যেত খ্রিস্টান সংসারবিরাগীদের উপাসনালয়, গির্জা এবং ইয়াহুদিদের উপাসনালয় ও মসজিদসমূহ- যেসব স্থানে আল্লাহর নাম অধিক হারে স্মরণ করা হয়। নিশ্চয় আল্লাহ তাকেই সাহায্য করেন, যে তাঁকে সাহায্য করে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশক্তিমান ও পরাক্রমশালী। (সূরা হজ্জ- ৪০)
ঈমানদারগণকে পরিশুদ্ধ করা এবং কাফিরদেকে ধ্বংস করা :
وَلِيُمَحِّصَ اللهُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَيَمْحَقَ الْكَافِرِيْنَ
এর মাধ্যমে মূলত তিনি ঈমানদার বান্দাদেরকে পরিশুদ্ধ করতে এবং কাফিরদেরকে ধ্বংস করতে চান।
(সূরা আলে ইমরান- ১৪১)
কারা আল্লাহর জন্য জীবন উৎসর্গ করে তা পরীক্ষা করা :
اَمْ حَسِبْتُمْ اَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ اللهُ الَّذِيْنَ جَاهَدُوْا مِنْكُمْ وَيَعْلَمَ الصَّابِرِيْنَ
তোমরা কি ধারণা করছ যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ তোমাদের মধ্য হতে যারা জিহাদ করে আল্লাহ তাদের ব্যাপারে অবগত হবেন না এবং ধৈর্যশীলদের ব্যাপারেও জেনে নেবেন না। (সূরা আলে ইমরান- ১৪২)
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ حَتّٰى نَعْلَمَ الْمُجَاهِدِيْنَ مِنْكُمْ وَالصَّابِرِيْنَ
আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব, যাতে তোমাদের অবস্থা যাচাই করে নিতে পারি এবং দেখে নিতে পারি যে, তোমাদের মধ্যে কারা মুজাহিদ ও ধৈর্যশীল। (সূরা মুহাম্মাদ- ৩১)
খাঁটি মুমিন ও মুনাফিকদের মধ্যে পার্থক্য করা :
لِيَمِيْزَ اللّٰهُ الْخَبِيْثَ مِنَ الطَّيِّبِ وَيَجْعَلَ الْخَبِيْثَ بَعْضَهٗ عَلٰى بَعْضٍ فَيَرْكُمَهٗ جَمِيْعًا فَيَجْعَلَهٗ فِيْ جَهَنَّمَ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ
যাতে করে আল্লাহ অপবিত্রকে পবিত্র থেকে পৃথক করতে পারেন। অতঃপর অপবিত্রগুলো একটিকে অপরটির উপর রেখে স্তুপাকার করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন- মূলত তারাই প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরা আনফাল- ৩৭)
ব্যাখ্যা : ইসলাম ও কুফরের দ্বন্দ্ব একটি মাপকাঠিস্বরূপ। এর মাধ্যমে খাঁটি মুমিন ও নকল ঈমানের দাবীদারদের মধ্যে পার্থক্য সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। যে ব্যক্তি নিজেকে মনপ্রাণ দিয়ে ইসলামকে বিজয়ী করার সংগ্রামে নিয়োজিত করে এবং এ পথে যে কোন প্রকার ত্যাগ স্বীকার করতে কুণ্ঠিত হয় না, সে-ই প্রকৃত মুমিন। পক্ষান্তরে এ সংঘাতে যে ব্যক্তি ইসলামের বিজয়ের জন্য জান-মালের কুরবানী করতে কুণ্ঠিত হয়, তার কার্যকলাপ এ সত্যটিকে সুস্পষ্ট করে দেয় যে, তার অন্তরে ঈমান নেই।
হক ও বাতিল পন্থীদের চিহ্নিত করা :
وَلَوْ يَشَآءُ اللهُ لَانْتَصَرَ مِنْهُمْ وَلٰكِنْ لِّيَبْلُوَاْ بَعْضَكُمْ بِبَعْضٍ
আর যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন তবে তাদের থেকে প্রতিশোধ নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তো তোমাদের একজনকে অপরজনের দ্বারা পরীক্ষা করে নিতে চান। (সূরা মুহাম্মাদ- ৪)
বাতিলপন্থীদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করা :
كُلَّمَاۤ اَوْقَدُوْا نَارًا لِّلْحَرْبِ اَطْفَاَهَا اللّٰهُ وَيَسْعَوْنَ فِى الْاَرْضِ فَسَادًاؕ وَاللّٰهُ لَا يُحِبُّ الْمُفْسِدِيْنَ
যখনি তারা যুদ্ধের আগুন জ্বালিয়ে দিতে চেয়েছে, তখনি আল্লাহ তা নিভিয়ে দিয়েছেন। তারা এ জমিনে (বার বার) বিপর্যয় সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছে; আর আল্লাহ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদেরকে ভালোবাসেন না। (সূরা মায়েদা- ৬৪)
لِيُحِقَّ الْحَقَّ وَيُبْطِلَ الْبَاطِلَ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُوْنَ
তিনি সত্যকে সত্য ও অসত্যকে অসত্য প্রতিপন্ন করে থাকেন, যদিও অপরাধীরা এটাকে অপছন্দ করে।
(সূরা আনফাল- ৮)
মুমিনদের হাতে শত্রুদেরকে লাঞ্ছিত করা :
قَاتِلُوْهُمْ يُعَذِّبْهُمُ اللهُ بِاَيْدِيْكُمْ وَيُخْزِهِمْ وَيَنْصُرْكُمْ عَلَيْهِمْ وَيَشْفِ صُدُوْرَ قَوْمٍ مُّؤْمِنِيْنَ
তোমরা তাদের সাথে লড়াই করো, কেননা আল্লাহ তোমাদের হাত দ্বারাই তাদেরকে শাস্তি দেবেন এবং তাদেরকে অপমাণিত করবেন। আর তাদের উপর তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তিনি মুমিন সম্প্রদায়ের অন্তরকে প্রশান্ত করবেন। (সূরা তাওবা- ১৪)
ফিতনা দূর করে আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করা :
وَقَاتِلُوْهُمْ حَتّٰى لَا تَكُوْنَ فِتْنَةٌ وَّيَكُوْنَ الدِّيْنُ كُلُّهٗ لِلّٰهِ فَاِنِ انْتَهَوْا فَاِنَّ اللهَ بِمَا يَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
তোমরা তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে থাকো, যতক্ষণ না ফিতনা দূরীভূত হয় এবং আল্লাহর দ্বীন সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। আর যদি তারা বিরত হয়, তবে তারা যা করে আল্লাহ সে ব্যাপারে সম্যক দ্রষ্টা। (সূরা আনফাল- ৩৯)
وَقَاتِلُوْهُمْ حَتّٰى لَا تَكُوْنَ فِتْنَةٌ وَّيَكُوْنَ الدِّيْنُ لِلّٰهِ فَاِنِ انْتَهَوْا فَلَا عُدْوَانَ اِلَّا عَلَى الظَّالِمِيْنَ
ফিতনা দূরীভূত হয়ে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করে যাও। অতঃপর যদি তারা বিরত হয়, তবে অত্যাচারী ছাড়া কারো উপর বাড়াবাড়ি করা যাবে না। (সূরা বাক্বারা- ১৯৩)
ব্যাখ্যা : সমাজে যখন মানুষের উপর মানুষের প্রভুত্ব ও সার্বভৌম কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় এবং আল্লাহর বিধান অনুযায়ী জীবন-যাপন অসম্ভব হয়ে পড়ে, তখন সমাজের এ অবস্থাকে ফিতনা বলা হয়। এ ফিতনার জায়গায় এমন একটি ব্যবস্থা সৃষ্টি করা ইসলামী জিহাদের লক্ষ্য, যেখানে মানুষ একমাত্র আল্লাহর বিধানের অনুগত থাকবে।
শত্রুদের পরাজিত করা :
فَاِذَا لَقِيْتُمُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا فَضَرْبَ الرِّقَابِؕ حَتّٰۤى اِذَاۤ اَثْخَنْتُمُوْهُمْ فَشُدُّوا الْوَثَاقَۗ فَاِمَّا مَنًّا ۢبَعْدُ وَاِمَّا فِدَآءً حَتّٰى تَضَعَ الْحَرْبُ اَوْزَارَهَا
যখন তোমরা কাফিরদের মুখোমুখি হবে তখন (তাদের) গর্দানে আঘাত করবে। এমনকি যখন তোমরা তাদেরকে সম্পূর্ণ পর্যুদস্ত করে ফেলবে, তখন (বন্দীদেরকে) কষে বাঁধবে। অতঃপর হয় তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করবে, নতুবা তাদের থেকে মুক্তিপণ গ্রহণ করবে। (তোমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাবে) যে পর্যন্ত না শত্রুপক্ষ অস্ত্র সমর্পণ করে। (সূরা মুহাম্মাদ- ৪)
قَاتِلُوا الَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَلَا بِالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَلَا يُحَرِّمُوْنَ مَا حَرَّمَ اللّٰهُ وَرَسُوْلُهٗ وَلَا يَدِيْنُوْنَ دِيْنَ الْحَقِّ مِنَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ حَتّٰى يُعْطُوا الْجِزْيَةَ عَنْ يَّدٍ وَّهُمْ صَاغِرُوْنَ
ইতোপূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে যারা আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি ঈমান আনয়ন করে না, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল যা কিছু হারাম বলে ঘোষণা দিয়েছেন তা হারাম বলে স্বীকার করে না, তোমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাও; যে পর্যন্ত না তারা নত হয়ে জিয্ইয়া (কর) দিতে শুরু করে। (সূরা তাওবা- ২৯)
هُوَ الَّذِيْۤ اَرْسَلَ رَسُوْلَهٗ بِالْهُدٰى وَدِيْنِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهٗ عَلَى الدِّيْنِ كُلِّهٖ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُوْنَ
তিনিই তাঁর রাসূলকে হেদায়াত এবং সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন, যাতে এটাকে সকল দ্বীনের উপর বিজয়ী করা হয়; যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে। (সূরা সাফ- ৯)
يُرِيْدُوْنَ اَنْ يُّطْفِئُوْا نُوْرَ اللهِ بِاَفْوَاهِهِمْ وَيَاْبَى اللهُ اِلَّاۤ اَنْ يُّتِمَّ نُوْرَهٗ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُوْنَ ‐ هُوَ الَّذِيْۤ اَرْسَلَ رَسُوْلَهٗ بِالْهُدٰى وَدِيْنِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهٗ عَلَى الدِّيْنِ كُلِّهٖ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُوْنَ
তারা তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর জ্যোতি (দ্বীনকে) নিভিয়ে দিতে চায়। (কিন্তু) কাফিররা অপ্রীতিকর মনে করলেও আল্লাহ তাঁর জ্যোতি পূর্ণ করা ব্যতীত অন্য কিছু চান না। আর মুশরিকরা অপ্রীতিকর মনে করলেও অন্যান্য সকল দ্বীনের উপর (তাঁর দ্বীনকে) বিজয়ী করার জন্যই তিনি পথনির্দেশ ও সত্য দ্বীনসহ তাঁর রাসূলকে প্রেরণ করেছেন। (সূরা তাওবা- ৩২, ৩৩)
পৃথিবীতে মানুষের মধ্যে ভারসাম্য ঠিক রাখা :
وَلَوْلَا دَفْعُ اللهِ النَّاسَ بَعْضَهُمْ بِبَعْضٍ لَّفَسَدَتِ الْاَرْضُ وَلٰكِنَّ اللهَ ذُوْ فَضْلٍ عَلَى الْعَالَمِيْنَ
যদি আল্লাহ মানুষের একদলকে অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে অবশ্যই পৃথিবী বিশৃঙ্খলাপূর্ণ হয়ে যেত। কিন্তু আল্লাহ বিশ্বজগতের উপর অনুগ্রহশীল। (সূরা বাক্বারা- ২৫১)
وَلَوْلَا دَفْعُ اللّٰهِ النَّاسَ بَعْضَهُمْ بِبَعْضٍ لَّهُدِّمَتْ صَوَامِعُ وَبِيَعٌ وَّصَلَوَاتٌ وَّمَسَاجِدُ يُذْكَرُ فِيْهَا اسْمُ اللهِ كَثِيْرًاؕ وَلَيَنْصُرَنَّ اللهُ مَنْ يَّنْصُرُهٗؕ اِنَّ اللهَ لَقَوِيٌّ عَزِيْزٌ
আল্লাহ যদি মানবজাতির একদলকে অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে বিধ্বস্ত হয়ে যেত খ্রিস্টান সংসারবিরাগীদের উপাসনালয়, গির্জা এবং ইয়াহুদিদের উপাসনালয় ও মসজিদসমূহ- যেসব স্থানে আল্লাহর নাম অধিক হারে স্মরণ করা হয়। নিশ্চয় আল্লাহ তাকেই সাহায্য করেন, যে তাঁকে সাহায্য করে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশক্তিমান ও পরাক্রমশালী। (সূরা হজ্জ- ৪০)
ঈমানদারগণকে পরিশুদ্ধ করা এবং কাফিরদেকে ধ্বংস করা :
وَلِيُمَحِّصَ اللهُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَيَمْحَقَ الْكَافِرِيْنَ
এর মাধ্যমে মূলত তিনি ঈমানদার বান্দাদেরকে পরিশুদ্ধ করতে এবং কাফিরদেরকে ধ্বংস করতে চান।
(সূরা আলে ইমরান- ১৪১)
কারা আল্লাহর জন্য জীবন উৎসর্গ করে তা পরীক্ষা করা :
اَمْ حَسِبْتُمْ اَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ اللهُ الَّذِيْنَ جَاهَدُوْا مِنْكُمْ وَيَعْلَمَ الصَّابِرِيْنَ
তোমরা কি ধারণা করছ যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ তোমাদের মধ্য হতে যারা জিহাদ করে আল্লাহ তাদের ব্যাপারে অবগত হবেন না এবং ধৈর্যশীলদের ব্যাপারেও জেনে নেবেন না। (সূরা আলে ইমরান- ১৪২)
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ حَتّٰى نَعْلَمَ الْمُجَاهِدِيْنَ مِنْكُمْ وَالصَّابِرِيْنَ
আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব, যাতে তোমাদের অবস্থা যাচাই করে নিতে পারি এবং দেখে নিতে পারি যে, তোমাদের মধ্যে কারা মুজাহিদ ও ধৈর্যশীল। (সূরা মুহাম্মাদ- ৩১)
খাঁটি মুমিন ও মুনাফিকদের মধ্যে পার্থক্য করা :
لِيَمِيْزَ اللّٰهُ الْخَبِيْثَ مِنَ الطَّيِّبِ وَيَجْعَلَ الْخَبِيْثَ بَعْضَهٗ عَلٰى بَعْضٍ فَيَرْكُمَهٗ جَمِيْعًا فَيَجْعَلَهٗ فِيْ جَهَنَّمَ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ
যাতে করে আল্লাহ অপবিত্রকে পবিত্র থেকে পৃথক করতে পারেন। অতঃপর অপবিত্রগুলো একটিকে অপরটির উপর রেখে স্তুপাকার করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন- মূলত তারাই প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরা আনফাল- ৩৭)
ব্যাখ্যা : ইসলাম ও কুফরের দ্বন্দ্ব একটি মাপকাঠিস্বরূপ। এর মাধ্যমে খাঁটি মুমিন ও নকল ঈমানের দাবীদারদের মধ্যে পার্থক্য সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। যে ব্যক্তি নিজেকে মনপ্রাণ দিয়ে ইসলামকে বিজয়ী করার সংগ্রামে নিয়োজিত করে এবং এ পথে যে কোন প্রকার ত্যাগ স্বীকার করতে কুণ্ঠিত হয় না, সে-ই প্রকৃত মুমিন। পক্ষান্তরে এ সংঘাতে যে ব্যক্তি ইসলামের বিজয়ের জন্য জান-মালের কুরবানী করতে কুণ্ঠিত হয়, তার কার্যকলাপ এ সত্যটিকে সুস্পষ্ট করে দেয় যে, তার অন্তরে ঈমান নেই।
হক ও বাতিল পন্থীদের চিহ্নিত করা :
وَلَوْ يَشَآءُ اللهُ لَانْتَصَرَ مِنْهُمْ وَلٰكِنْ لِّيَبْلُوَاْ بَعْضَكُمْ بِبَعْضٍ
আর যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন তবে তাদের থেকে প্রতিশোধ নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তো তোমাদের একজনকে অপরজনের দ্বারা পরীক্ষা করে নিতে চান। (সূরা মুহাম্মাদ- ৪)
বাতিলপন্থীদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করা :
كُلَّمَاۤ اَوْقَدُوْا نَارًا لِّلْحَرْبِ اَطْفَاَهَا اللّٰهُ وَيَسْعَوْنَ فِى الْاَرْضِ فَسَادًاؕ وَاللّٰهُ لَا يُحِبُّ الْمُفْسِدِيْنَ
যখনি তারা যুদ্ধের আগুন জ্বালিয়ে দিতে চেয়েছে, তখনি আল্লাহ তা নিভিয়ে দিয়েছেন। তারা এ জমিনে (বার বার) বিপর্যয় সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছে; আর আল্লাহ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদেরকে ভালোবাসেন না। (সূরা মায়েদা- ৬৪)
لِيُحِقَّ الْحَقَّ وَيُبْطِلَ الْبَاطِلَ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُوْنَ
তিনি সত্যকে সত্য ও অসত্যকে অসত্য প্রতিপন্ন করে থাকেন, যদিও অপরাধীরা এটাকে অপছন্দ করে।
(সূরা আনফাল- ৮)
মুমিনদের হাতে শত্রুদেরকে লাঞ্ছিত করা :
قَاتِلُوْهُمْ يُعَذِّبْهُمُ اللهُ بِاَيْدِيْكُمْ وَيُخْزِهِمْ وَيَنْصُرْكُمْ عَلَيْهِمْ وَيَشْفِ صُدُوْرَ قَوْمٍ مُّؤْمِنِيْنَ
তোমরা তাদের সাথে লড়াই করো, কেননা আল্লাহ তোমাদের হাত দ্বারাই তাদেরকে শাস্তি দেবেন এবং তাদেরকে অপমাণিত করবেন। আর তাদের উপর তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তিনি মুমিন সম্প্রদায়ের অন্তরকে প্রশান্ত করবেন। (সূরা তাওবা- ১৪)
ফিতনা দূর করে আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করা :
وَقَاتِلُوْهُمْ حَتّٰى لَا تَكُوْنَ فِتْنَةٌ وَّيَكُوْنَ الدِّيْنُ كُلُّهٗ لِلّٰهِ فَاِنِ انْتَهَوْا فَاِنَّ اللهَ بِمَا يَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
তোমরা তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে থাকো, যতক্ষণ না ফিতনা দূরীভূত হয় এবং আল্লাহর দ্বীন সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। আর যদি তারা বিরত হয়, তবে তারা যা করে আল্লাহ সে ব্যাপারে সম্যক দ্রষ্টা। (সূরা আনফাল- ৩৯)
وَقَاتِلُوْهُمْ حَتّٰى لَا تَكُوْنَ فِتْنَةٌ وَّيَكُوْنَ الدِّيْنُ لِلّٰهِ فَاِنِ انْتَهَوْا فَلَا عُدْوَانَ اِلَّا عَلَى الظَّالِمِيْنَ
ফিতনা দূরীভূত হয়ে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করে যাও। অতঃপর যদি তারা বিরত হয়, তবে অত্যাচারী ছাড়া কারো উপর বাড়াবাড়ি করা যাবে না। (সূরা বাক্বারা- ১৯৩)
ব্যাখ্যা : সমাজে যখন মানুষের উপর মানুষের প্রভুত্ব ও সার্বভৌম কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় এবং আল্লাহর বিধান অনুযায়ী জীবন-যাপন অসম্ভব হয়ে পড়ে, তখন সমাজের এ অবস্থাকে ফিতনা বলা হয়। এ ফিতনার জায়গায় এমন একটি ব্যবস্থা সৃষ্টি করা ইসলামী জিহাদের লক্ষ্য, যেখানে মানুষ একমাত্র আল্লাহর বিধানের অনুগত থাকবে।
শত্রুদের পরাজিত করা :
فَاِذَا لَقِيْتُمُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا فَضَرْبَ الرِّقَابِؕ حَتّٰۤى اِذَاۤ اَثْخَنْتُمُوْهُمْ فَشُدُّوا الْوَثَاقَۗ فَاِمَّا مَنًّا ۢبَعْدُ وَاِمَّا فِدَآءً حَتّٰى تَضَعَ الْحَرْبُ اَوْزَارَهَا
যখন তোমরা কাফিরদের মুখোমুখি হবে তখন (তাদের) গর্দানে আঘাত করবে। এমনকি যখন তোমরা তাদেরকে সম্পূর্ণ পর্যুদস্ত করে ফেলবে, তখন (বন্দীদেরকে) কষে বাঁধবে। অতঃপর হয় তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করবে, নতুবা তাদের থেকে মুক্তিপণ গ্রহণ করবে। (তোমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাবে) যে পর্যন্ত না শত্রুপক্ষ অস্ত্র সমর্পণ করে। (সূরা মুহাম্মাদ- ৪)
قَاتِلُوا الَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَلَا بِالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَلَا يُحَرِّمُوْنَ مَا حَرَّمَ اللّٰهُ وَرَسُوْلُهٗ وَلَا يَدِيْنُوْنَ دِيْنَ الْحَقِّ مِنَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ حَتّٰى يُعْطُوا الْجِزْيَةَ عَنْ يَّدٍ وَّهُمْ صَاغِرُوْنَ
ইতোপূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে যারা আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি ঈমান আনয়ন করে না, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল যা কিছু হারাম বলে ঘোষণা দিয়েছেন তা হারাম বলে স্বীকার করে না, তোমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাও; যে পর্যন্ত না তারা নত হয়ে জিয্ইয়া (কর) দিতে শুরু করে। (সূরা তাওবা- ২৯)
কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে :
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ جَاهِدِ الْكُفَّارَ وَالْمُنَافِقِيْنَ وَاغْلُظْ عَلَيْهِمْؕ وَمَاْوَاهُمْ جَهَنَّمُؕ وَبِئْسَ الْمَصِيْرُ
হে নবী! কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করো এবং তাদের ব্যাপারে কঠোর হও। তাদের আশ্রয়স্থল হলো জাহান্নাম; আর তা কতই না নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল। (সূরা তাহরীম- ৯, সূরা তাওবা- ৭৩)
ব্যাখ্যা : মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার অর্থ ইসলামী সমাজে মুনাফিকীর বিষ ছড়ানোর যে সুযোগ তারা পেয়েছে তা ভবিষ্যতের জন্য সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিতে হবে। যে দল নিজের মধ্যে মুনাফিকী লালন করে, তার নৈতিক অধঃপতন এবং সবশেষে পূর্ণ ধ্বংস ছাড়া আর কোন পথ নেই।
মুশরিকদের বিরুদ্ধে :
فَاِذَا انْسَلَخَ الْاَشْهُرُ الْحُرُمُ فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِيْنَ حَيْثُ وَجَدْتُّمُوْهُمْ وَخُذُوْهُمْ وَاحْصُرُوْهُمْ وَاقْعُدُوْا لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍۚ فَاِنْ تَابُوْا وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ فَخَلُّوْا سَبِيْلَهُمْؕ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে মুশরিকদেরকে যেখানে পাবে হত্যা করবে, বন্দী করবে, অবরোধ করবে এবং প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের জন্য ওঁৎ পেতে থাকবে। কিন্তু যদি তারা তাওবা করে, সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয়, তবে তাদের পথ ছেড়ে দেবে; নিশ্চয় আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা তাওবা- ৫)
যারা আল্লাহর বিধান মানতে চায় না তাদের বিরুদ্ধে :
قَاتِلُوا الَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَلَا بِالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَلَا يُحَرِّمُوْنَ مَا حَرَّمَ اللهُ وَرَسُوْلُهٗ وَلَا يَدِيْنُوْنَ دِيْنَ الْحَقِّ مِنَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ حَتّٰى يُعْطُوا الْجِزْيَةَ عَنْ يَّدٍ وَّهُمْ صَاغِرُوْنَ
যাদের প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে তাদের মধ্যে যারা আল্লাহর প্রতি ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান আনয়ন করে না, আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা হারাম করেছেন তা হারাম হিসেবে গণ্য করে না এবং সত্য দ্বীনের অনুসরণ করে না তাদের সাথে যুদ্ধ করবে, যে পর্যন্ত না তারা নত হয়ে স্বহস্তে জিযয়া (কর) দেয়। (সূরা তাওবা- ২৯)
যারা চুক্তি ভঙ্গ করে এবং দ্বীন নিয়ে বিদ্রূপ করে তাদের বিরুদ্ধে :
وَاِنْ نَّكَثُوْاۤ اَيْمَانَهُمْ مِّنْ ۢبَعْدِ عَهْدِهِمْ وَطَعَنُوْا فِيْ دِيْنِكُمْ فَقَاتِلُوْاۤ اَئِمَّةَ الْكُفْرِ اِنَّهُمْ لَاۤ اَيْمَانَ لَهُمْ لَعَلَّهُمْ يَنْتَهُوْنَ
তাদের সাথে চুক্তির পর তারা যদি তা ভঙ্গ করে ও তোমাদের দ্বীন সম্বন্ধে বিদ্রূপ করে, তবে কাফিরদের প্রধানদের সাথে যুদ্ধ করো- এরা এমন লোক যাদের কোন প্রতিশ্রুতি আর বাকি রইল না, হয়তো তারা (এর ফলে) বিরত থাকবে। (সূরা তাওবা- ১২)
اَلَا تُقَاتِلُوْنَ قَوْمًا نَّكَثُوْاۤ اَيْمَانَهُمْ وَهَمُّوْا بِاِخْرَاجِ الرَّسُوْلِ وَهُمْ بَدَءُوْكُمْ اَوَّلَ مَرَّةٍؕ اَتَخْشَوْنَهُمْۚ فَاللهُ اَحَقُّ اَنْ تَخْشَوْهُ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
তোমরা কি সে সম্প্রদায়ের সাথে যুদ্ধ করবে না, যারা নিজেদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে ও রাসূলকে বহিষ্কার করার জন্য সংকল্প করেছে? তারাই তো প্রথম তোমাদের বিরুদ্ধাচরণ করেছে। তোমরা কি তাদেরকে ভয় কর? অথচ যদি তোমরা মুমিন হও তাহলে আল্লাহকে ভয় করাই তোমাদের জন্য অধিক সমীচীন। (সূরা তাওবা- ১৩)
যারা মুসলিমদের উপর আক্রমণ চালায় তাদের বিরুদ্ধে :
فَاِنْ قَاتَلُوْكُمْ فَاقْتُلُوْهُمْؕ كَذٰلِكَ جَزَآءُ الْكَافِرِيْنَ
যদি তারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে, তবে তোমরাও তাদের সাথে যুদ্ধ করো। আর এটাই কাফিরদের প্রতিদান। (সূরা বাক্বারা- ১৯১)
وَقَاتِلُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ الَّذِيْنَ يُقَاتِلُوْنَكُمْ وَلَا تَعْتَدُوْاؕ اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِيْنَ
আর যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তোমরাও তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করো এবং সীমালঙ্ঘন করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে ভালোবাসেন না। (সূরা বাক্বারা- ১৯০)
ব্যাখ্যা : এখানে বলা হয়েছে, যারা আল্লাহর কাজে তোমাদের পথ রোধ করে দাঁড়ায়, আল্লাহ প্রদত্ত জীবনবিধান অনুযায়ী তোমরা জীবনব্যবস্থার সংস্কার ও সংশোধন করতে চাও বলে যারা তোমাদের শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং তোমাদের সংশোধন ও সংস্কার কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার জন্য যুলুম-অত্যাচার চালাচ্ছে, তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করো। এর আগে মুসলিমরা যতদিন দুর্বল ও বিক্ষিপ্ত ছিল, ততদিন তাদেরকে কেবলমাত্র ইসলাম প্রচারের হুকুম দেয়া হয়েছিল এবং বিপক্ষের যুলুম-নির্যাতনের ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ করার তাকীদ করা হয়েছিল। এখন মদিনায় তাদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে যে, যারাই এ সংস্কারমূলক দাওয়াতের পথে সশস্ত্র প্রতিরোধ সৃষ্টি করছে অস্ত্র দিয়েই তাদের জবাব দাও। এরপরই অনুষ্ঠিত হয় বদরের যুদ্ধ। তারপর একের পর এক যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হতেই থাকে।
যারা ইসলামপন্থীদের উপর নির্যাতন চালায় তাদের বিরুদ্ধে :
وَمَا لَكُمْ لَا تُقَاتِلُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَالْمُسْتَضْعَفِيْنَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَآءِ وَالْوِلْدَانِ الَّذِيْنَ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَاۤ اَخْرِجْنَا مِنْ هٰذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ اَهْلُهَا وَاجْعَلْ لَّنَا مِنْ لَّدُنْكَ وَلِيًّاۚ وَاجْعَلْ لَّنَا مِنْ لَّدُنْكَ نَصِيْرًا
তোমাদের কী হলো যে, তোমরা আল্লাহর পথে অসহায় নর-নারী এবং শিশুদের জন্য যুদ্ধ করবে না? যারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! এ জনপদ হতে আমাদেরকে বের করে নিয়ে যাও; কেননা তার অধিবাসীরা অত্যাচারী। আর তোমার নিকট হতে কাউকে আমাদের জন্য অভিভাবক হিসেবে মনোনীত করো এবং তোমার পক্ষ হতে আমাদেরকে সাহায্য করো। (সূরা নিসা- ৭৫)
وَاقْتُلُوْهُمْ حَيْثُ ثَقِفْتُمُوْهُمْ وَاَخْرِجُوْهُمْ مِّنْ حَيْثُ اَخْرَجُوْكُمْ وَالْفِتْنَةُ اَشَدُّ مِنَ الْقَتْلِ
তোমরা তাদেরকে যেখানেই পাবে হত্যা করবে। তারা তোমাদেরকে যেসব স্থান থেকে বের করে দিয়েছে, তোমরাও তাদেরকে সেসব স্থান থেকে বের করে দেবে। জেনে রেখো, ফিতনা হত্যা থেকেও মারাত্মক অপরাধ। (সূরা বাক্বারা- ১৯১)
ব্যাখ্যা : আয়াতের মূল বক্তব্য হচ্ছে, নরহত্যা নিঃসন্দেহে একটি জঘণ্য অপরাধ; কিন্তু কোন মানবগোষ্ঠী বা দল যখন জোরপূর্বক নিজের স্বৈরতান্ত্রিক চিন্তাধারা অন্যদের উপর চাপিয়ে দেয়, সত্য গ্রহণ থেকে লোকদেরকে জোরপূর্বক বিরত রাখে এবং পাশবিক শক্তি প্রয়োগে সংশোধনের ন্যায়সঙ্গত প্রচেষ্টার মুকাবিলা করতে শুরু করে, তখন এটা নরহত্যার চেয়েও জঘণ্যতম অন্যায় কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়। কোন ব্যক্তি বা দল প্রচলিত চিন্তাধারা ও মতবাদের পরিবর্তে অন্য কোন চিন্তাধারা ও মতবাদকে সত্য হিসেবে জানার কারণে তা গ্রহণ করেছে এবং প্রচারের মাধ্যমে সমাজে প্রচলিত ব্যবস্থার সংশোধনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, এজন্য তার উপর যুলুম-নির্যাতন চালানো- এটা অমানবিক ও মারাত্মক অন্যায়। এ ধরনের দলকে অস্ত্রের সাহায্যে পথ থেকে সরিয়ে দেয়াই ন্যায়সঙ্গত।
যারা জমিনে অশান্তি সৃষ্টি করে তাদের বিরুদ্ধে :
اِنَّمَا جَزَآءُ الَّذِيْنَ يُحَارِبُوْنَ اللّٰهَ وَرَسُوْلَهٗ وَيَسْعَوْنَ فِى الْاَرْضِ فَسَادًا اَنْ يُّقَتَّلُوْاۤ اَوْ يُصَلَّبُوْاۤ اَوْ تُقَطَّعَ اَيْدِيْهِمْ وَاَرْجُلُهُمْ مِّنْ خِلَافٍ اَوْ يُنْفَوْا مِنَ الْاَرْضِؕ ذٰلِكَ لَهُمْ خِزْيٌ فِى الدُّنْيَا وَلَهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং পৃথিবীতে ফিতনা সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাদের শাস্তি হলো- তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে অথবা তাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলা হবে অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এ অপমানজনক শাস্তি তাদের দুনিয়ার জীবনের জন্য; আর পরকালে তাদের জন্য রয়েছে আরো ভয়াবহ শাস্তি। (সূরা মায়েদা- ৩৩)
ব্যাখ্যা : পৃথিবী বলতে এখানে পৃথিবীর সেই অঞ্চলকে বুঝানো হয়েছে, যেখানে ইসলামী সরকার শান্তি ও নিরাপত্তাব্যবস্থা কায়েম করার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে লড়াই করার অর্থ হচ্ছে, ইসলামী সরকার দেশে যে ইসলামী সমাজব্যবস্থার প্রচলন করেছে তার বিরুদ্ধে লড়াই করা। পৃথিবীতে একটি সত্যনিষ্ঠ রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করাই আল্লাহর ইচ্ছা, যার অধীনে পৃথিবীতে অবস্থানকারী মানুষ ও পশুপাখীসহ সমস্ত সৃষ্টি শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করবে। পৃথিবীর সমুদয় উপায়-উপকরণ এমনভাবে ব্যবহৃত হবে, যার ফলে সেগুলো মানবতার ধ্বংসে নয়; বরং তার উন্নতিতে সহায়ক হবে। এ ধরনের ব্যবস্থা কোন ভূখন্ডে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাওয়ার পর তাকে নষ্ট করার প্রচেষ্টা চালানো অথবা ক্ষুদ্র পরিসরে হত্যা, লুণ্ঠন, রাহাজানি, ডাকাতি ইত্যাদির মাধ্যমে বিপর্যয় সৃষ্টি করে এ ব্যবস্থাকে উৎখাত করে তার জায়গায় অন্য কোন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা চালানো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হিসেবেই বিবেচিত হবে। এখানে সংক্ষেপে বিভিন্ন ধরনের শাস্তির কথা বলে দেয়া হয়েছে, যাতে করে কাযী বা সমকালীন ইসলামী শাসক নিজের ইজতিহাদের মাধ্যমে প্রত্যেক অপরাধীকে তার অপরাধের ধরন ও মাত্রানুযায়ী শাস্তি দিতে পারেন। তবে আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে এ কথা প্রকাশ করা যে, ইসলামী হুকুমতের আওতায় বাস করে কোন ব্যক্তির ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থাকে পরিবর্তন করার প্রচেষ্টা চালানো নিকৃষ্ট ধরনের অপরাধ। এজন্য তাকে উল্লেখিত চরম শাস্তিগুলোর মধ্য থেকে যে কোন শাস্তি দেয়া যেতে পারে।
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ جَاهِدِ الْكُفَّارَ وَالْمُنَافِقِيْنَ وَاغْلُظْ عَلَيْهِمْؕ وَمَاْوَاهُمْ جَهَنَّمُؕ وَبِئْسَ الْمَصِيْرُ
হে নবী! কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করো এবং তাদের ব্যাপারে কঠোর হও। তাদের আশ্রয়স্থল হলো জাহান্নাম; আর তা কতই না নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল। (সূরা তাহরীম- ৯, সূরা তাওবা- ৭৩)
ব্যাখ্যা : মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার অর্থ ইসলামী সমাজে মুনাফিকীর বিষ ছড়ানোর যে সুযোগ তারা পেয়েছে তা ভবিষ্যতের জন্য সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিতে হবে। যে দল নিজের মধ্যে মুনাফিকী লালন করে, তার নৈতিক অধঃপতন এবং সবশেষে পূর্ণ ধ্বংস ছাড়া আর কোন পথ নেই।
মুশরিকদের বিরুদ্ধে :
فَاِذَا انْسَلَخَ الْاَشْهُرُ الْحُرُمُ فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِيْنَ حَيْثُ وَجَدْتُّمُوْهُمْ وَخُذُوْهُمْ وَاحْصُرُوْهُمْ وَاقْعُدُوْا لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍۚ فَاِنْ تَابُوْا وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ فَخَلُّوْا سَبِيْلَهُمْؕ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে মুশরিকদেরকে যেখানে পাবে হত্যা করবে, বন্দী করবে, অবরোধ করবে এবং প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের জন্য ওঁৎ পেতে থাকবে। কিন্তু যদি তারা তাওবা করে, সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয়, তবে তাদের পথ ছেড়ে দেবে; নিশ্চয় আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা তাওবা- ৫)
যারা আল্লাহর বিধান মানতে চায় না তাদের বিরুদ্ধে :
قَاتِلُوا الَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَلَا بِالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَلَا يُحَرِّمُوْنَ مَا حَرَّمَ اللهُ وَرَسُوْلُهٗ وَلَا يَدِيْنُوْنَ دِيْنَ الْحَقِّ مِنَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ حَتّٰى يُعْطُوا الْجِزْيَةَ عَنْ يَّدٍ وَّهُمْ صَاغِرُوْنَ
যাদের প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে তাদের মধ্যে যারা আল্লাহর প্রতি ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান আনয়ন করে না, আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা হারাম করেছেন তা হারাম হিসেবে গণ্য করে না এবং সত্য দ্বীনের অনুসরণ করে না তাদের সাথে যুদ্ধ করবে, যে পর্যন্ত না তারা নত হয়ে স্বহস্তে জিযয়া (কর) দেয়। (সূরা তাওবা- ২৯)
যারা চুক্তি ভঙ্গ করে এবং দ্বীন নিয়ে বিদ্রূপ করে তাদের বিরুদ্ধে :
وَاِنْ نَّكَثُوْاۤ اَيْمَانَهُمْ مِّنْ ۢبَعْدِ عَهْدِهِمْ وَطَعَنُوْا فِيْ دِيْنِكُمْ فَقَاتِلُوْاۤ اَئِمَّةَ الْكُفْرِ اِنَّهُمْ لَاۤ اَيْمَانَ لَهُمْ لَعَلَّهُمْ يَنْتَهُوْنَ
তাদের সাথে চুক্তির পর তারা যদি তা ভঙ্গ করে ও তোমাদের দ্বীন সম্বন্ধে বিদ্রূপ করে, তবে কাফিরদের প্রধানদের সাথে যুদ্ধ করো- এরা এমন লোক যাদের কোন প্রতিশ্রুতি আর বাকি রইল না, হয়তো তারা (এর ফলে) বিরত থাকবে। (সূরা তাওবা- ১২)
اَلَا تُقَاتِلُوْنَ قَوْمًا نَّكَثُوْاۤ اَيْمَانَهُمْ وَهَمُّوْا بِاِخْرَاجِ الرَّسُوْلِ وَهُمْ بَدَءُوْكُمْ اَوَّلَ مَرَّةٍؕ اَتَخْشَوْنَهُمْۚ فَاللهُ اَحَقُّ اَنْ تَخْشَوْهُ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
তোমরা কি সে সম্প্রদায়ের সাথে যুদ্ধ করবে না, যারা নিজেদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে ও রাসূলকে বহিষ্কার করার জন্য সংকল্প করেছে? তারাই তো প্রথম তোমাদের বিরুদ্ধাচরণ করেছে। তোমরা কি তাদেরকে ভয় কর? অথচ যদি তোমরা মুমিন হও তাহলে আল্লাহকে ভয় করাই তোমাদের জন্য অধিক সমীচীন। (সূরা তাওবা- ১৩)
যারা মুসলিমদের উপর আক্রমণ চালায় তাদের বিরুদ্ধে :
فَاِنْ قَاتَلُوْكُمْ فَاقْتُلُوْهُمْؕ كَذٰلِكَ جَزَآءُ الْكَافِرِيْنَ
যদি তারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে, তবে তোমরাও তাদের সাথে যুদ্ধ করো। আর এটাই কাফিরদের প্রতিদান। (সূরা বাক্বারা- ১৯১)
وَقَاتِلُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ الَّذِيْنَ يُقَاتِلُوْنَكُمْ وَلَا تَعْتَدُوْاؕ اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِيْنَ
আর যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তোমরাও তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করো এবং সীমালঙ্ঘন করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে ভালোবাসেন না। (সূরা বাক্বারা- ১৯০)
ব্যাখ্যা : এখানে বলা হয়েছে, যারা আল্লাহর কাজে তোমাদের পথ রোধ করে দাঁড়ায়, আল্লাহ প্রদত্ত জীবনবিধান অনুযায়ী তোমরা জীবনব্যবস্থার সংস্কার ও সংশোধন করতে চাও বলে যারা তোমাদের শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং তোমাদের সংশোধন ও সংস্কার কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার জন্য যুলুম-অত্যাচার চালাচ্ছে, তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করো। এর আগে মুসলিমরা যতদিন দুর্বল ও বিক্ষিপ্ত ছিল, ততদিন তাদেরকে কেবলমাত্র ইসলাম প্রচারের হুকুম দেয়া হয়েছিল এবং বিপক্ষের যুলুম-নির্যাতনের ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ করার তাকীদ করা হয়েছিল। এখন মদিনায় তাদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে যে, যারাই এ সংস্কারমূলক দাওয়াতের পথে সশস্ত্র প্রতিরোধ সৃষ্টি করছে অস্ত্র দিয়েই তাদের জবাব দাও। এরপরই অনুষ্ঠিত হয় বদরের যুদ্ধ। তারপর একের পর এক যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হতেই থাকে।
যারা ইসলামপন্থীদের উপর নির্যাতন চালায় তাদের বিরুদ্ধে :
وَمَا لَكُمْ لَا تُقَاتِلُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَالْمُسْتَضْعَفِيْنَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَآءِ وَالْوِلْدَانِ الَّذِيْنَ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَاۤ اَخْرِجْنَا مِنْ هٰذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ اَهْلُهَا وَاجْعَلْ لَّنَا مِنْ لَّدُنْكَ وَلِيًّاۚ وَاجْعَلْ لَّنَا مِنْ لَّدُنْكَ نَصِيْرًا
তোমাদের কী হলো যে, তোমরা আল্লাহর পথে অসহায় নর-নারী এবং শিশুদের জন্য যুদ্ধ করবে না? যারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! এ জনপদ হতে আমাদেরকে বের করে নিয়ে যাও; কেননা তার অধিবাসীরা অত্যাচারী। আর তোমার নিকট হতে কাউকে আমাদের জন্য অভিভাবক হিসেবে মনোনীত করো এবং তোমার পক্ষ হতে আমাদেরকে সাহায্য করো। (সূরা নিসা- ৭৫)
وَاقْتُلُوْهُمْ حَيْثُ ثَقِفْتُمُوْهُمْ وَاَخْرِجُوْهُمْ مِّنْ حَيْثُ اَخْرَجُوْكُمْ وَالْفِتْنَةُ اَشَدُّ مِنَ الْقَتْلِ
তোমরা তাদেরকে যেখানেই পাবে হত্যা করবে। তারা তোমাদেরকে যেসব স্থান থেকে বের করে দিয়েছে, তোমরাও তাদেরকে সেসব স্থান থেকে বের করে দেবে। জেনে রেখো, ফিতনা হত্যা থেকেও মারাত্মক অপরাধ। (সূরা বাক্বারা- ১৯১)
ব্যাখ্যা : আয়াতের মূল বক্তব্য হচ্ছে, নরহত্যা নিঃসন্দেহে একটি জঘণ্য অপরাধ; কিন্তু কোন মানবগোষ্ঠী বা দল যখন জোরপূর্বক নিজের স্বৈরতান্ত্রিক চিন্তাধারা অন্যদের উপর চাপিয়ে দেয়, সত্য গ্রহণ থেকে লোকদেরকে জোরপূর্বক বিরত রাখে এবং পাশবিক শক্তি প্রয়োগে সংশোধনের ন্যায়সঙ্গত প্রচেষ্টার মুকাবিলা করতে শুরু করে, তখন এটা নরহত্যার চেয়েও জঘণ্যতম অন্যায় কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়। কোন ব্যক্তি বা দল প্রচলিত চিন্তাধারা ও মতবাদের পরিবর্তে অন্য কোন চিন্তাধারা ও মতবাদকে সত্য হিসেবে জানার কারণে তা গ্রহণ করেছে এবং প্রচারের মাধ্যমে সমাজে প্রচলিত ব্যবস্থার সংশোধনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, এজন্য তার উপর যুলুম-নির্যাতন চালানো- এটা অমানবিক ও মারাত্মক অন্যায়। এ ধরনের দলকে অস্ত্রের সাহায্যে পথ থেকে সরিয়ে দেয়াই ন্যায়সঙ্গত।
যারা জমিনে অশান্তি সৃষ্টি করে তাদের বিরুদ্ধে :
اِنَّمَا جَزَآءُ الَّذِيْنَ يُحَارِبُوْنَ اللّٰهَ وَرَسُوْلَهٗ وَيَسْعَوْنَ فِى الْاَرْضِ فَسَادًا اَنْ يُّقَتَّلُوْاۤ اَوْ يُصَلَّبُوْاۤ اَوْ تُقَطَّعَ اَيْدِيْهِمْ وَاَرْجُلُهُمْ مِّنْ خِلَافٍ اَوْ يُنْفَوْا مِنَ الْاَرْضِؕ ذٰلِكَ لَهُمْ خِزْيٌ فِى الدُّنْيَا وَلَهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং পৃথিবীতে ফিতনা সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাদের শাস্তি হলো- তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে অথবা তাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলা হবে অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এ অপমানজনক শাস্তি তাদের দুনিয়ার জীবনের জন্য; আর পরকালে তাদের জন্য রয়েছে আরো ভয়াবহ শাস্তি। (সূরা মায়েদা- ৩৩)
ব্যাখ্যা : পৃথিবী বলতে এখানে পৃথিবীর সেই অঞ্চলকে বুঝানো হয়েছে, যেখানে ইসলামী সরকার শান্তি ও নিরাপত্তাব্যবস্থা কায়েম করার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে লড়াই করার অর্থ হচ্ছে, ইসলামী সরকার দেশে যে ইসলামী সমাজব্যবস্থার প্রচলন করেছে তার বিরুদ্ধে লড়াই করা। পৃথিবীতে একটি সত্যনিষ্ঠ রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করাই আল্লাহর ইচ্ছা, যার অধীনে পৃথিবীতে অবস্থানকারী মানুষ ও পশুপাখীসহ সমস্ত সৃষ্টি শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করবে। পৃথিবীর সমুদয় উপায়-উপকরণ এমনভাবে ব্যবহৃত হবে, যার ফলে সেগুলো মানবতার ধ্বংসে নয়; বরং তার উন্নতিতে সহায়ক হবে। এ ধরনের ব্যবস্থা কোন ভূখন্ডে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাওয়ার পর তাকে নষ্ট করার প্রচেষ্টা চালানো অথবা ক্ষুদ্র পরিসরে হত্যা, লুণ্ঠন, রাহাজানি, ডাকাতি ইত্যাদির মাধ্যমে বিপর্যয় সৃষ্টি করে এ ব্যবস্থাকে উৎখাত করে তার জায়গায় অন্য কোন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা চালানো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হিসেবেই বিবেচিত হবে। এখানে সংক্ষেপে বিভিন্ন ধরনের শাস্তির কথা বলে দেয়া হয়েছে, যাতে করে কাযী বা সমকালীন ইসলামী শাসক নিজের ইজতিহাদের মাধ্যমে প্রত্যেক অপরাধীকে তার অপরাধের ধরন ও মাত্রানুযায়ী শাস্তি দিতে পারেন। তবে আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে এ কথা প্রকাশ করা যে, ইসলামী হুকুমতের আওতায় বাস করে কোন ব্যক্তির ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থাকে পরিবর্তন করার প্রচেষ্টা চালানো নিকৃষ্ট ধরনের অপরাধ। এজন্য তাকে উল্লেখিত চরম শাস্তিগুলোর মধ্য থেকে যে কোন শাস্তি দেয়া যেতে পারে।
আল্লাহ জান্নাতের বিনিময়ে মুমিনের জান-মাল কিনে নিয়েছেন :
اِنَّ اللهَ اشْتَرٰى مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ اَنْفُسَهُمْ وَاَمْوَالَهُمْ بِاَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَؕ يُقَاتِلُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَيَقْتُلُوْنَ وَيُقْتَلُوْنَ وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا فِى التَّوْرَاةِ وَالْاِنْجِيْلِ وَالْقُرْاٰنِؕ وَمَنْ اَوْفٰى بِعَهْدِهٖ مِنَ اللهِ فَاسْتَبْشِرُوْا بِبَيْعِكُمُ الَّذِيْ بَايَعْتُمْ بِهٖؕ وَذٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ
নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের নিকট হতে তাদের জীবন ও সম্পদ ক্রয় করে নিয়েছেন; কেননা তাদের জন্য (এর বিনিময়ে) রয়েছে জান্নাত। তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে; অতঃপর তারা হত্যা করে ও নিহত হয়। তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআনে এ সম্পর্কে তাদের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি রয়েছে। আর নিজ প্রতিজ্ঞা পালনে আল্লাহর চেয়ে শ্রেষ্ঠতর আর কে আছে? (সুতরাং) তোমরা যা বিক্রয় করেছ সে বিক্রয়ের জন্য আনন্দিত হও; আর সেটাই তো মহাসাফল্য। (সূরা তাওবা- ১১১)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে ঈমান একটি চুক্তি। এ চুক্তির প্রেক্ষিতে বান্দা তার নিজের প্রাণ ও নিজের ধনসম্পদ আল্লাহর কাছে বিক্রি করে দেয়। আর এর বিনিময়ে সে আল্লাহর পক্ষ থেকে এ ওয়াদা চেয়ে নেয় যে, মৃত্যুপরবর্তী জীবনে তিনি তাকে জান্নাত দান করবেন। এ কেনা-বেচা এ অর্থে নয় যে, মানুষের একটি জিনিস আল্লাহ কিনতে চান। প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে, যে জিনিসটি আল্লাহর মালিকানাধীন, যাকে তিনি আমানত হিসেবে মানুষের হাতে সোপর্দ করেছেন সে ব্যাপারে তিনি মানুষের কাছে এ দাবী করেন যে, আমার জিনিসকে তুমি স্বেচ্ছায় ও সাগ্রহে আমার জিনিস বলে মেনে নাও এবং সারা জীবন আমানতদার হিসেবে তা ব্যবহার করার বিষয়টি গ্রহণ করে নাও। এর সঙ্গে খেয়ানত করার যে স্বাধীনতা তোমাকে দিয়েছি, তা তুমি নিজেই প্রত্যাহার করো। এভাবে যদি তুমি দুনিয়ার বর্তমান অস্থায়ী জীবনে নিজের স্বাধীনতাকে আমার হাতে বিক্রি করে দিতে পার, তাহলে আমি পরবর্তী চিরন্তন জীবনে এর মূল্য জান্নাতের আকারে তোমাকে দান করব। যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কেনা-বেচার এ চুক্তি সম্পাদন করে সে মুমিন। আর যে ব্যক্তি এটা অস্বীকার করবে সে কাফির। যে মুসলিম ব্যক্তি সঠিক অর্থে আল্লাহর উপর ঈমান এনেছে সে জীবনের সকল বিভাগে আল্লাহর ইচ্ছার অনুগত হয়ে কাজ করে। অনুরূপভাবে ঈমানদারদের সমন্বয়ে গঠিত কোন দল বা সমাজ সমষ্টিগতভাবেও আল্লাহর ইচ্ছা ও তাঁর শরয়ী আইনের বিধি-নিষেধমুক্ত হয়ে কোন পদ্ধতি, রাষ্ট্রীয় নীতি, সাংস্কৃতিক পদ্ধতি এবং কোন অর্থনৈতিক, সামাজিক ও আন্তর্জাতিক আচরণ অবলম্বন করতে পারে না। এ কেনা-বেচার মূল্য (অর্থাৎ জান্নাত) বর্তমান পার্থিব জীবনের অবসানের পর দেয়ার কথা বলা হয়েছে। সুতরাং বিক্রেতার পার্থিব জীবনকাল শেষ হওয়ার পর যখন প্রমাণিত হবে যে, কেনা-বেচার চুক্তি করার পর সে নিজের পার্থিব জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চুক্তির শর্তসমূহ পুরোপুরিভাবে মেনে চলেছে, একমাত্র তখনই এ বিক্রি সম্পন্ন হবে। এর আগ পর্যন্ত সে মূল্য পাওয়ার অধিকারী হতে পারে না।
জিহাদে মাল না দিলে নিজেরই ক্ষতি হবে :
هَاۤ اَنْتُمْ هٰۤؤُلَآءِ تُدْعَوْنَ لِتُنْفِقُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللّٰهِۚ فَمِنْكُمْ مَّنْ يَّبْخَلُۚ وَمَنْ يَّبْخَلْ فَاِنَّمَا يَبْخَلُ عَنْ نَّفْسِهٖؕ وَاللهُ الْغَنِيُّ وَاَنْتُمُ الْفُقَرَآءُۚ وَاِنْ تَتَوَلَّوْا يَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ ثُمَّ لَا يَكُوْنُوْاۤ اَمْثَالَكُمْ
তোমরা তো তারাই, যাদেরকে আল্লাহর পথে মাল খরচ করার জন্য ডাকা হলো, তখন তোমাদের মধ্য থেকে কিছু লোক কৃপণতা করেছে। আর যে কৃপণতা করেছে, সে আসলে নিজের সাথেই কৃপণতা করেছে। আল্লাহ অভাবমুক্ত, আর তোমরাই অভাবগ্রস্ত। যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে রাখ, তাহলে আল্লাহ তোমাদের বদলে অন্য এক সম্প্রদায়কে নিয়ে আসবেন। অতঃপর তারা তোমাদের মতো হবে না। (সূরা মুহাম্মাদ- ৩৮)
اِنَّ اللهَ اشْتَرٰى مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ اَنْفُسَهُمْ وَاَمْوَالَهُمْ بِاَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَؕ يُقَاتِلُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَيَقْتُلُوْنَ وَيُقْتَلُوْنَ وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا فِى التَّوْرَاةِ وَالْاِنْجِيْلِ وَالْقُرْاٰنِؕ وَمَنْ اَوْفٰى بِعَهْدِهٖ مِنَ اللهِ فَاسْتَبْشِرُوْا بِبَيْعِكُمُ الَّذِيْ بَايَعْتُمْ بِهٖؕ وَذٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ
নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের নিকট হতে তাদের জীবন ও সম্পদ ক্রয় করে নিয়েছেন; কেননা তাদের জন্য (এর বিনিময়ে) রয়েছে জান্নাত। তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে; অতঃপর তারা হত্যা করে ও নিহত হয়। তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআনে এ সম্পর্কে তাদের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি রয়েছে। আর নিজ প্রতিজ্ঞা পালনে আল্লাহর চেয়ে শ্রেষ্ঠতর আর কে আছে? (সুতরাং) তোমরা যা বিক্রয় করেছ সে বিক্রয়ের জন্য আনন্দিত হও; আর সেটাই তো মহাসাফল্য। (সূরা তাওবা- ১১১)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে ঈমান একটি চুক্তি। এ চুক্তির প্রেক্ষিতে বান্দা তার নিজের প্রাণ ও নিজের ধনসম্পদ আল্লাহর কাছে বিক্রি করে দেয়। আর এর বিনিময়ে সে আল্লাহর পক্ষ থেকে এ ওয়াদা চেয়ে নেয় যে, মৃত্যুপরবর্তী জীবনে তিনি তাকে জান্নাত দান করবেন। এ কেনা-বেচা এ অর্থে নয় যে, মানুষের একটি জিনিস আল্লাহ কিনতে চান। প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে, যে জিনিসটি আল্লাহর মালিকানাধীন, যাকে তিনি আমানত হিসেবে মানুষের হাতে সোপর্দ করেছেন সে ব্যাপারে তিনি মানুষের কাছে এ দাবী করেন যে, আমার জিনিসকে তুমি স্বেচ্ছায় ও সাগ্রহে আমার জিনিস বলে মেনে নাও এবং সারা জীবন আমানতদার হিসেবে তা ব্যবহার করার বিষয়টি গ্রহণ করে নাও। এর সঙ্গে খেয়ানত করার যে স্বাধীনতা তোমাকে দিয়েছি, তা তুমি নিজেই প্রত্যাহার করো। এভাবে যদি তুমি দুনিয়ার বর্তমান অস্থায়ী জীবনে নিজের স্বাধীনতাকে আমার হাতে বিক্রি করে দিতে পার, তাহলে আমি পরবর্তী চিরন্তন জীবনে এর মূল্য জান্নাতের আকারে তোমাকে দান করব। যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কেনা-বেচার এ চুক্তি সম্পাদন করে সে মুমিন। আর যে ব্যক্তি এটা অস্বীকার করবে সে কাফির। যে মুসলিম ব্যক্তি সঠিক অর্থে আল্লাহর উপর ঈমান এনেছে সে জীবনের সকল বিভাগে আল্লাহর ইচ্ছার অনুগত হয়ে কাজ করে। অনুরূপভাবে ঈমানদারদের সমন্বয়ে গঠিত কোন দল বা সমাজ সমষ্টিগতভাবেও আল্লাহর ইচ্ছা ও তাঁর শরয়ী আইনের বিধি-নিষেধমুক্ত হয়ে কোন পদ্ধতি, রাষ্ট্রীয় নীতি, সাংস্কৃতিক পদ্ধতি এবং কোন অর্থনৈতিক, সামাজিক ও আন্তর্জাতিক আচরণ অবলম্বন করতে পারে না। এ কেনা-বেচার মূল্য (অর্থাৎ জান্নাত) বর্তমান পার্থিব জীবনের অবসানের পর দেয়ার কথা বলা হয়েছে। সুতরাং বিক্রেতার পার্থিব জীবনকাল শেষ হওয়ার পর যখন প্রমাণিত হবে যে, কেনা-বেচার চুক্তি করার পর সে নিজের পার্থিব জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চুক্তির শর্তসমূহ পুরোপুরিভাবে মেনে চলেছে, একমাত্র তখনই এ বিক্রি সম্পন্ন হবে। এর আগ পর্যন্ত সে মূল্য পাওয়ার অধিকারী হতে পারে না।
জিহাদে মাল না দিলে নিজেরই ক্ষতি হবে :
هَاۤ اَنْتُمْ هٰۤؤُلَآءِ تُدْعَوْنَ لِتُنْفِقُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللّٰهِۚ فَمِنْكُمْ مَّنْ يَّبْخَلُۚ وَمَنْ يَّبْخَلْ فَاِنَّمَا يَبْخَلُ عَنْ نَّفْسِهٖؕ وَاللهُ الْغَنِيُّ وَاَنْتُمُ الْفُقَرَآءُۚ وَاِنْ تَتَوَلَّوْا يَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ ثُمَّ لَا يَكُوْنُوْاۤ اَمْثَالَكُمْ
তোমরা তো তারাই, যাদেরকে আল্লাহর পথে মাল খরচ করার জন্য ডাকা হলো, তখন তোমাদের মধ্য থেকে কিছু লোক কৃপণতা করেছে। আর যে কৃপণতা করেছে, সে আসলে নিজের সাথেই কৃপণতা করেছে। আল্লাহ অভাবমুক্ত, আর তোমরাই অভাবগ্রস্ত। যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে রাখ, তাহলে আল্লাহ তোমাদের বদলে অন্য এক সম্প্রদায়কে নিয়ে আসবেন। অতঃপর তারা তোমাদের মতো হবে না। (সূরা মুহাম্মাদ- ৩৮)
ইসলামের পক্ষে জিহাদ করার জন্য বায়‘আত করতে হবে :
اِنَّ الَّذِيْنَ يُبَايِعُوْنَكَ اِنَّمَا يُبَايِعُوْنَ اللهَؕ يَدُ اللهِ فَوْقَ اَيْدِيْهِمْۚ فَمَنْ نَّكَثَ فَاِنَّمَا يَنْكُثُ عَلٰى نَفْسِهٖۚ وَمَنْ اَوْفٰى بِمَا عَاهَدَ عَلَيْهُ اللهَ فَسَيُؤْتِيْهِ اَجْرًا عَظِيْمًا
(হে রাসূল!) যারা আপনার কাছে বায়‘আত গ্রহণ করেছিল তারা মূলত আল্লাহর কাছেই বায়‘আত করেছিল, তাদের হাতের উপর ছিল আল্লাহর হাত। সুতরাং এখন যে ব্যক্তি এ ওয়াদা ভঙ্গ করবে এর কুফল তার উপরই পড়বে। আর যে আল্লাহর সাথে ওয়াদা করে তা পূরণ করবে, অচিরেই তাকে মহাপুরস্কারে ভূষিত করা হবে। (সূরা ফাতহ- ১০)
لَقَدْ رَضِيَ اللهُ عَنِ الْمُؤْمِنِيْنَ اِذْ يُبَايِعُوْنَكَ تَحْتَ الشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِيْ قُلُوْبِهِمْ فَاَنْزَلَ السَّكِيْنَةَ عَلَيْهِمْ وَاَثَابَهُمْ فَتْحًا قَرِيْبًا
(হে রাসূল!) আল্লাহ মুমিনদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে গেলেন, যখন তারা গাছের নিচে আপনার কাছে বায়‘আত গ্রহণ করেছিল। তাদের অন্তরের অবস্থা তিনি জানেন। তাই তিনি তাদের উপর প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং পুরস্কার হিসেবে নিকটবর্তী বিজয় দান করলেন। (সূরা ফাতহ- ১৮)
জিহাদের জন্য অস্ত্র যোগাড় করতে হবে :
وَاَعِدُّوْا لَهُمْ مَّا اسْتَطَعْتُمْ مِّنْ قُوَّةٍ وَّمِنْ رِّبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُوْنَ بِهٖ عَدُوَّ اللهِ وَعَدُوَّكُمْ وَاٰخَرِيْنَ مِنْ دُوْنِهِمْۚ لَا تَعْلَمُوْنَهُمُۚ اَللهُ يَعْلَمُهُمْؕ وَمَا تُنْفِقُوْا مِنْ شَيْءٍ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ يُوَفَّ اِلَيْكُمْ وَاَنْتُمْ لَا تُظْلَمُوْنَ
তোমরা তাদের মুকাবিলার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ব-বাহিনী প্রস্তুত রাখবে। এর দ্বারা তোমরা ভীত-সন্ত্রস্ত করবে আল্লাহ ও তোমাদের শত্রুকে। এছাড়া এমন কিছু শত্রুকেও (ভীত-সন্ত্রস্ত করবে) যাদেরকে তোমরা জান না, কিন্তু আল্লাহ তাদেরকে জানেন। আল্লাহর পথে তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে, তোমাদেরকে তার পূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে এবং তোমাদের প্রতি কোন যুলুম করা হবে না। (সূরা আনফাল- ৬০)
সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا خُذُوْا حِذْرَكُمْ فَانْفِرُوْا ثُبَاتٍ اَوِ انْفِرُوْا جَمِيْعًا
হে মুমিনগণ! সতর্কতা অবলম্বন করো; অতঃপর হয় দলে দলে বিভক্ত হয়ে অগ্রসর হও অথবা একসঙ্গে অগ্রসর হও। (সূরা নিসা- ৭১)
সঠিক জায়গায় সৈন্য নিযুক্ত করতে হবে :
وَاِذْ غَدَوْتَ مِنْ اَهْلِكَ تُبَوِّئُ الْمُؤْمِنِيْنَ مَقَاعِدَ لِلْقِتَالِؕ وَاللهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
(স্মরণ করো) যখন তুমি তোমার পরিবার থেকে সকালে বের হয়েছিলে, তখন মুমিনদেরকে যুদ্ধের জন্য ঘাঁটিতে নিয়োজিত করেছিলে। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী। (সূরা আলে ইমরান- ১২১)
জিহাদের ডাক শুনলে মুজাহিদদের ঈমান বৃদ্ধি পায় :
اَ لَّذِيْنَ قَالَ لَهُمُ النَّاسُ اِنَّ النَّاسَ قَدْ جَمَعُوْا لَكُمْ فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ اِيْمَانًاۗ وَقَالُوْا حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الْوَكِيْلُ
লোকেরা যাদেরকে বলেছিল, নিশ্চয় তোমাদের বিরুদ্ধে লোকজন সমবেত হয়েছে। অতএব তোমরা তাদেরকে ভয় করো; কিন্তু এতে তাদের বিশ্বাস আরো বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং তারা বলেছিল, আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং মঙ্গলময় কর্মবিধায়ক। (সূরা আলে ইমরান- ১৭৩)
তারা পেছনে থাকার জন্য বাহানা খুঁজে না :
لَا يَسْتَاْذِنُكَ الَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ اَنْ يُّجَاهِدُوْا بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْؕ وَاللهُ عَلِيْمٌ ۢبِالْمُتَّقِيْنَ
যারা আল্লাহর প্রতি ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান আনে, তারা তোমার নিকট নিজ সম্পদ ও জীবন দ্বারা জিহাদ করা থেকে অব্যহতি পাওয়ার জন্য আবেদন করে না। আল্লাহ মুত্তাক্বীদের সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত। (সূরা তাওবা- ৪৪)
তারা আল্লাহর রহমত কামনা করে :
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَالَّذِيْنَ هَاجَرُوْا وَجَاهَدُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللّٰهِ اُولٰٓئِكَ يَرْجُوْنَ رَحْمَتَ اللهِ ؕ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
নিশ্চয় যারা ঈমান আনয়ন করেছে, হিজরত করেছে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে, তারাই আল্লাহর রহমত পাওয়ার আশা করতে পারে। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু। (সূরা বাক্বারা- ২১৮)
তারা আখিরাতের বিনিময়ে দুনিয়াকে বিক্রি করে দেয় :
فَلْيُقَاتِلْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ الَّذِيْنَ يَشْرُوْنَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا بِالْاٰخِرَةِؕ وَمَنْ يُّقَاتِلْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَيُقْتَلْ اَوْ يَغْلِبْ فَسَوْفَ نُؤْتِيْهِ اَجْرًا عَظِيْمًا
যারা আখিরাতের বিনিময়ে পার্থিব জীবনকে বিক্রয় করে দিয়েছে তারা যেন আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে যুদ্ধ করবে সে নিহত হোক অথবা বিজয়ী হোক- আমি তাকে মহাপুরস্কার দান করবই। (সূরা নিসা- ৭৪)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর পথে লড়াই করা দুনিয়ার স্বার্থ পূজারী লোকদের কাজ নয়। এটা এমন লোকদের কাজ, যারা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কাজ করে, যারা আল্লাহ ও আখিরাতের উপর পূর্ণ আস্থা রাখে এবং নিজেদের পার্থিব সমৃদ্ধির সমস্ত সম্ভাবনা একমাত্র আল্লাহর জন্য ত্যাগ করতে প্রস্তুত থাকে। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হয়, তাদের রব যেন তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান এবং আখিরাতে যেন তাদের শ্রম বিফলে না যায়।
তারা শত্রুকে ভয় করে না, বরং আল্লাহকেই ভয় করে :
اَلَا تُقَاتِلُوْنَ قَوْمًا نَّكَثُوْاۤ اَيْمَانَهُمْ وَهَمُّوا بِاِخْرَاجِ الرَّسُوْلِ وَهُمْ بَدَءُوْكُمْ اَوَّلَ مَرَّةٍ اَتَخْشَوْنَهُمْ فَاللهُ اَحَقُّ اَنْ تَخْشَوْهُ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
তোমরা কি এমন একটি দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে না, যারা বার বার নিজেদের অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে। যারা আল্লাহর রাসূলকে স্বদেশ থেকে বের করার পরিকল্পনা করেছে এবং তারাই তো প্রথম তোমাদের উপর হামলা শুরু করেছে। তোমরা কি তাদেরকে ভয় কর? অথচ যদি তোমরা মুমিন হও, তাহলে তোমাদের উচিত আল্লাহকেই সবচেয়ে বেশি ভয় করা। (সূরা তাওবা- ১৩)
তারা কোন নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় করে না :
يُجَاهِدُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَلَا يَخَافُوْنَ لَوْمَةَ لَآئِمٍؕ ذٰلِكَ فَضْلُ اللهِ يُؤْتِيْهِ مَنْ يَّشَآءُؕ وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ
তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে, কোন নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় করে না; এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছা তিনি তা দান করেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও সর্বজ্ঞ। (সূরা মায়েদা- ৫৪)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ তারা আল্লাহর দ্বীনের অনুসরণ করার ব্যাপারে, তাঁর বিধানসমূহ কার্যকর করার ব্যাপারে এবং এ দ্বীনের দৃষ্টিতে যা সত্য তাকে সত্য আর যা মিথ্যা তাকে মিথ্যা বলার ব্যাপারে আপোষহীন ও নির্ভীক। তারা কারো বিরোধিতা, নিন্দা, তিরস্কার ও আপত্তির পরোয়া করে না। সকল মানুষও যদি ইসলাম বিরোধী হয়, তাহলেও তারা সত্য পথেই চলতে থাকে।
তারা শাহাদাত কামনা করে :
مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ رِجَالٌ صَدَقُوْا مَا عَاهَدُوا اللهَ عَلَيْهِۚ فَمِنْهُمْ مَّنْ قَضٰى نَحْبَهٗ وَمِنْهُمْ مَّنْ يَّنْتَظِرُ وَمَا بَدَّلُوْا تَبْدِيْلًا
মুমিনদের মধ্যে কতক লোক এমনও রয়েছে, যারা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে; তাদের মধ্যে কেউ কেউ শাহাদাতবরণ করেছে এবং কেউ কেউ অপেক্ষায় রয়েছে। তারা স্বীয় সংকল্প একটুও পরিবর্তন করেনি। (সূরা আহযাব- ২৩)
তারা মুমিনদের ব্যাপারে কোমল ও শত্রুদের ব্যাপারে কঠোর :
مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللّٰهِ وَالَّذِيْنَ مَعَهٗۤ اَشِدَّآءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَآءُ بَيْنَهُمْ
মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল, আর তাঁর (মুহাম্মদের) সাথে যারা আছে তারা কাফিরদের ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর, তবে নিজেদের ব্যাপারে একান্ত সহানুভূতিশীল। (সূরা ফাতহ- ২৯)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا قَاتِلُوا الَّذِيْنَ يَلُوْنَكُمْ مِّنَ الْكُفَّارِ وَلْيَجِدُوْا فِيْكُمْ غِلْظَةً وَّاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللّٰهَ مَعَ الْمُتَّقِيْنَ
হে ঈমানদারগণ! কাফিরদের মধ্যে যারা তোমাদের সীমান্তের কাছাকাছি রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে এমনভাবে জিহাদ করো, যেন তারা তোমাদের মধ্যে কঠোরতা দেখতে পায়। জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাক্বীদের সাথেই রয়েছেন। (সূরা তাওবা- ১২৩)
ব্যাখ্যা : কাফিরদের ব্যাপারে কঠোর হওয়ার অর্থ হচ্ছে, নিজের মজবুত ঈমান, নিঃস্বার্থ ও একনিষ্ঠ দ্বীনদারী, চারিত্রিক শক্তি ও ঈমানী দূরদৃষ্টির কারণে একজন মুমিন ইসলাম বিরোধীদের মুকাবিলায় পাহাড়ের মতো অটল থাকবে। নিজের স্থান থেকে তাকে এক চুলও নড়ানো যাবে না। ইসলাম বিরোধীরা কখনো তাকে নমনীয়, দোদুল্যমান এবং সহজে গলধঃকরণ করার মতো খাদ্য মনে করতে পারবে না। যখনই তারা তার মুখোমুখি হয় তখনই টের পেয়ে যায় যে, আল্লাহর এ বান্দা মরে যেতে পারে; কিন্তু কখনো কোন মূল্যে বিক্রি হবে না এবং কোন চাপের কাছে নতি স্বীকারও করবে না।
কাফিরদের ন্যায় অহংকার করা যাবে না :
وَلَا تَكُوْنُوْا كَالَّذِيْنَ خَرَجُوْا مِنْ دِيَارِهِمْ بَطَرًا وَّرِئَآءَ النَّاسِ وَيَصُدُّوْنَ عَنْ سَبِيْلِ اللّٰهِؕ وَاللهُ بِمَا يَعْمَلُوْنَ مُحِيْطٌ
তোমরা কখনো তাদের মতো হয়ো না, যারা অহংকার করে এবং লোকদেরকে নিজেদের জাঁকজমক দেখানোর জন্য নিজেদের ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে এবং যারা সাধারণ মানুষদেরকে আল্লাহর পথ থেকে ফিরিয়ে রেখেছে। মূলত আল্লাহ তাদের সকল কার্যকলাপই পরিবেষ্টন করে আছেন। (সূরা আনফাল- ৪৭)
ব্যাখ্যা : কুরাইশ সেনাবাহিনী মক্কা থেকে বের হয়েছিল অত্যন্ত জাঁকজমকের সাথে। পথের মাঝখানে বিভিন্ন জায়গায় থেমে তারা নাচ-গান, মদ্য পান ও আনন্দ উল্লাসের আসর জমিয়ে তুলেছিল। তারা এমনভাবে বীরত্ব দেখাচ্ছিল, যেন তাদের সামনে দাঁড়ানোর মতো কেউ নেই। যে উদ্দেশ্যে তারা ঘর থেকে বের হয়েছিল, তা ছিল তাদের নৈতিক অবস্থার চেয়েও আরো বেশি নোংরা ও অপবিত্র। তারা চাচ্ছিল সত্য, সততা ও ইনসাফের ঝান্ডা যাতে বুলন্দ না হয় এবং যারা এ পথে এগিয়ে এসেছে, তাদেরকেও খতম করা যায়। এ ব্যাপারে মুসলিমদেরকে সতর্ক করে দেয়া হচ্ছে যে, তোমরা তাদের মতো হয়ো না। আল্লাহ তোমাদের ঈমান ও সত্যপ্রিয়তার যে নিয়ামত দান করেছেন তার দাবী অনুযায়ী তোমাদের চরিত্র যেমন পাক-পবিত্র হতে হবে তেমনি তোমাদের যুদ্ধের উদ্দেশ্যও হতে হবে মহৎ।
জিহাদ করতে গিয়ে সীমালঙ্ঘন করা যাবে না :
وَقَاتِلُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ الَّذِيْنَ يُقَاتِلُوْنَكُمْ وَلَا تَعْتَدُوْاۤ اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِيْنَ
যারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে তোমরাও তাদের সাথে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করো, তবে সীমলঙ্ঘন করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে ভালোবাসেন না। (সূরা বাক্বারা- ১৯০)
وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَاٰنُ قَوْمٍ اَنْ صَدُّوْكُمْ عَنِ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ اَنْ تَعْتَدُوْا
তোমাদেরকে মাসজিদুল হারামে প্রবেশে বাধা দেয়ার কারণে কোন সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ তোমাদেরকে যেন কখনই সীমালঙ্ঘনে প্ররোচিত না করে। (সূরা মায়েদা- ২)
জেনে বুঝে পদক্ষেপ নিতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا ضَرَبْتُمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَتَبَيَّنُوْا وَلَا تَقُوْلُوْا لِمَنْ اَلْقٰۤى اِلَيْكُمُ السَّلَامَ لَسْتَ مُؤْمِنًاۚ تَبْتَغُوْنَ عَرَضَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا فَعِنْدَ اللهِ مَغَانِمُ كَثِيْرَةٌؕ كَذٰلِكَ كُنْتُمْ مِّنْ قَبْلُ فَمَنَّ اللهُ عَلَيْكُمْ فَتَبَيَّنُوْاؕ اِنَّ اللهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِيْرًا
হে মুমিনগণ! যখন তোমরা আল্লাহর পথে বের হবে, তখন পরীক্ষা করে নেবে এবং কেউ তোমাদেরকে সালাম বললে ইহজীবনের সম্পদের আকাঙ্ক্ষায় তাকে বলো না যে, তুমি মুমিন নও; কারণ আল্লাহর নিকট প্রচুর গনিমতের সম্পদ রয়েছে। তোমরা তো পূর্বে এরূপই ছিলে। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন; সুতরাং তোমরা পরীক্ষা করে নেবে। নিশ্চয় তোমরা যা কর আল্লাহ সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত। (সূরা নিসা- ৯৪)
শানে নুযূল : ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক লোক একটি ছোট্ট বকরীর পাল চরাচ্ছিল। এমতাবস্থায় কতক মুসলিম তার কাছে আগমন করলে সে বলল, ‘‘আস্সালামু ‘আলাকুম’’। এতদসত্ত্বেও তারা তাকে পাকড়াও করল। অতঃপর তারা তাকে হত্যা করে তার এ ছোট্ট বকরীর পালটি নিয়ে নিল। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে অত্র আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (সহীহ বুখারী, হা/৭৪৩৫)
আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে :
وَعَلَى اللهِ فَتَوَكَّلُوْاۤ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
আল্লাহর উপরই নির্ভর করো, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক। (সূরা মায়েদা- ২৩)
আল্লাহকে স্মরণ করতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا لَقِيْتُمْ فِئَةً فَاثْبُتُوْا وَاذْكُرُوا اللهَ كَثِيْرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা যখন কোন দলের সম্মুখীন হবে তখন অবিচল থাকবে এবং আল্লাহকে অধিক হারে স্মরণ করবে, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সূরা আনফাল- ৪৫)
সৈন্যদের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখতে হবে :
وَاَطِيْعُوا اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَلَا تَنَازَعُوْا فَتَفْشَلُوْا وَتَذْهَبَ رِيْحُكُمْ وَاصْبِرُوْاؕ اِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِيْنَ
তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে ও নিজেদের মধ্যে বিবাদ করবে না, নতুবা তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলবে এবং তোমাদের শক্তি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তোমরা ধৈর্যধারণ করো; নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন। (সূরা আনফাল- ৪৬)
শত্রুদের চেয়ে বেশি দৃঢ়তা অবলম্বন করতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اصْبِرُوْا وَصَابِرُوْا وَرَابِطُوْا وَاتَّقُوا اللّٰهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্যধারণ করো, দৃঢ়তা প্রদর্শন করো, (নিজেদের প্রতিরক্ষাকল্পে) পারস্পরিক বন্ধন মজবুত করো এবং আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা আলে ইমরান- ২০০)
ব্যাখ্যা : صَابِرُوْا (সাবিরু) এর দু’টি অর্থ হয়। (এক) কাফিররা কুফরীর ব্যাপারে যে দৃঢ়তা দেখাচ্ছে এবং কুফরীর ঝান্ডা সমুন্নত রাখার জন্য যে ধরনের কষ্ট স্বীকার করছে, তোমরা তাদের মুকাবিলায় তাদের চেয়েও বেশি দৃঢ়তা দেখাও। (দুই) তাদের মুকাবিলায় দৃঢ়তা দেখানোর ব্যাপারে পরস্পরের মধ্যে প্রতিযোগিতা করো।
শত্রুদেরকে হত্যা করতে হবে :
فَاِذَا لَقِيْتُمُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا فَضَرْبَ الرِّقَابِ
যখন তোমরা কাফিরদের মুখোমুখি হবে তখন (তাদের) গর্দানে আঘাত করবে। (সূরা মুহাম্মাদ- ৪)
শত্রুদেরকে বন্দী করতে হবে :
حَتّٰۤى اِذَاۤ اَثْخَنْتُمُوْهُمْ فَشُدُّوا الْوَثَاقَ
এমনকি যখন তোমরা তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পরাজিত করে ফেলবে, তখন (বন্দীদেরকে) শক্তভাবে বাঁধবে। (সূরা মুহাম্মাদ- ৪)
فَاِمَّا تَثْقَفَنَّهُمْ فِى الْحَرْبِ فَشَرِّدْ بِهِمْ مَّنْ خَلْفَهُمْ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُوْنَ
যুদ্ধে তোমরা যদি তাদেরকে তোমাদের আয়ত্তে পাও, তবে তাদেরকে তাদের পশ্চাতে যারা আছে তাদের হতে বিচ্ছিন্ন করে এমনভাবে বিধ্বস্ত করবে, যাতে তারা শিক্ষা লাভ করতে পারে। (সূরা আনফাল- ৫৭)
শত্রুদের ধাওয়া করতে গিয়ে দুর্বর্র্র্লতা দেখানো যাবে না :
وَلَا تَهِنُوْا فِى ابْتِغَآءِ الْقَوْمِؕ اِنْ تَكُوْنُوْا تَاْلَمُوْنَ فَاِنَّهُمْ يَاْلَمُوْنَ كَمَا تَاْلَمُوْنَۚ وَتَرْجُوْنَ مِنَ اللهِ مَا لَا يَرْجُوْنَؕ وَكَانَ اللهُ عَلِيْمًا حَكِيْمًا
শত্রু সম্প্রদায়ের সন্ধানে তোমরা দুর্বল হয়ো না। যদি তোমরা যন্ত্রণা পাও, তবে তারাও তো তোমাদের মতোই যন্ত্রণা পায়। আর তোমরা আল্লাহর নিকট যা আশা কর, তারা তা আশা করে না। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা- ১০৪)
ব্যাখ্যা : কাফিররা বাতিলের জন্য যে পরিমাণ কষ্ট স্বীকার করছে ঈমানদাররা যদি হকের জন্য অন্তত এতটুকু কষ্টও সহ্য করতে না পারে, তাহলে তা হবে সত্যিই বিস্ময়কর। কেননা কাফিররা কেবল দুনিয়া ও তার ক্ষণস্থায়ী স্বার্থ ছাড়া অন্য কিছুই করে না। কিন্তু ঈমানদাররা এ ক্ষণস্থায়ী স্বার্থের দিকে না তাকিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তাঁর চিরন্তন পুরস্কার লাভের বৃহত্তম আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে। কাজেই বৃহত্তম স্বার্থে মুমিনদেরকে অবশ্যই কাফিরদের তুলনায় একটু বেশিই কষ্ট সহ্য করতে হবে।
নেতার আদেশ অমান্য করা যাবে না :
وَلَقَدْ صَدَقَكُمُ اللهُ وَعْدَهٗۤ اِذْ تَحُسُّوْنَهُمْ بِاِذْنِهٖ حَتّٰۤى اِذَا فَشِلْتُمْ وَتَنَازَعْتُمْ فِى الْاَمْرِ وَعَصَيْتُمْ مِّنْ ۢبَعْدِ مَاۤ اَرَاكُمْ مَّا تُحِبُّوْنَ
আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বীয় অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করেছেন যখন তাঁর নির্দেশে তোমরা তাদেরকে হত্যা করছিলে, কিন্তু পরে তোমরা ছত্রভঙ্গ হয়েছিলে ও কর্তব্য স্থির করার ব্যাপারে বিবাদে লিপ্ত হয়েছিলে এবং তোমরা যা ভালোবেসেছিলে, তা তিনি তোমাদেরকে দেখানোর পর তাঁর আদেশের অবাধ্য হয়েছিলে। (সূরা আলে ইমরান- ১৫২)
ব্যাখ্যা : রাসূল ﷺ ওহুদের যুদ্ধের আক্রমণ ঠেকানোর উদ্দেশ্যে আবদুল্লাহ ইবনে যুবারের (রাঃ) এর নেতৃত্বে ৫০ জন তীরন্দাজকে নিযুক্ত করেন এবং সুস্পষ্ট নির্দেশ না পাওয়া পর্যমত্ম এ স্থান ত্যাগ করতে নিষেধ করেন। অতঃপর যখন যুদ্ধ আরম্ভ হয়, তখন মুসলিম বাহিনী একের পর এক সাফল্য লাভ করতে থাকে এবং কুরাইশ বাহিনী পলায়ন করতে থাকে। যুদ্ধের প্রাথমিক সাফল্যের উল্লাসে মুসলিম সৈন্যবাহিনী শৃঙ্খলা হারিয়ে ফেলে এবং গিরিপথের রক্ষণাবেক্ষণের পরিবর্তে গনিমতের মাল সংগ্রহে নিয়োজিত হয়। এ সুযোগে কুরাইশ সেনাপতি খালিদ ইবনে ওয়ালীদ পেছন থেকে অতর্কিত হামলা করে মুসলিমদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
ময়দান ছেড়ে পলায়ন করা যাবে না :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا لَقِيْتُمُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا زَحْفًا فَلَا تُوَلُّوْهُمُ الْاَدْبَارَ
হে মুমিনগণ! যখন তোমরা কাফির বাহিনীর সম্মুখীন হবে, তখন তোমরা তাদের পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে না।
(সূরা আনফাল- ১৫)
ময়দান থেকে পলায়ন করা বড় অন্যায় :
وَمَنْ يُّوَلِّهِمْ يَوْمَئِذٍ دُبُرَهٗۤ اِلَّا مُتَحَرِّفًا لِّقِتَالٍ اَوْ مُتَحَيِّزًا اِلٰى فِئَةٍ فَقَدْ بَآءَ بِغَضَبٍ مِّنَ اللهِ وَمَاْوَاهُ جَهَنَّمُؕ وَبِئْسَ الْمَصِيْرُ
সেদিন যারা যুদ্ধ কৌশল অবলম্বন কিংবা দলে স্থান নেয়া ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে, সে আল্লাহর ক্রোধে পতিত হবে। তার আশ্রয়স্থল হবে জাহান্নাম; আর তা কতই না নিকৃষ্টতম প্রত্যাবর্তনস্থল। (সূরা আনফাল- ১৬)
সাময়িক পরাজয় হলেও দুঃখ করতে নেই :
وَلَا تَهِنُوْا وَلَا تَحْزَنُوْا وَاَنْتُمُ الْاَعْلَوْنَ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
আর তোমরা দুর্বল হয়ো না এবং চিন্তিতও হয়ো না। যদি তোমরা বিশ্বাসী হও, তবে তোমরাই বিজয়ী হবে।
(সূরা আলে ইমরান- ১৩৯)
فَلَا تَهِنُوْا وَتَدْعُوْاۤ اِلَى السَّلْمِ وَاَنْتُمُ الْاَعْلَوْنَۗ وَاللهُ مَعَكُمْ وَلَنْ يَّتِرَكُمْ اَعْمَالَكُمْ
তোমরা হীনতা স্বীকার করে সন্ধির প্রস্তাব দিয়ো না; কেননা তোমরাই তো বিজয়ী থাকবে। আল্লাহ তোমাদের সাথে আছেন এবং তিনি তোমাদের আমলের প্রতিদান মোটেই কম দেবেন না। (সূরা মুহাম্মাদ - ৩৫)
ব্যাখ্যা : ঈমানদাররা বিজয়ী হলে এটা যে তাদের জন্য ভালো- এ কথা সবার জানা। কিন্তু নিজেদের উদ্দেশ্য সাধনের পথে প্রাণ দান করে যদি তারা মাটিতে বিলীন হয়ে যায়, তাহলে দুনিয়াবাসীরা এটাকে তাদের চরম ব্যর্থ বলে মনে করলেও প্রকৃতপক্ষে এটিও এক প্রকার সাফল্য। কারণ মুমিন একটি দেশ বিজয় করল কি করল না অথবা কোন সরকার প্রতিষ্ঠিত করল কি করল না, এটা তার সাফল্য ও ব্যর্থতার মাপকাঠি নয়। বরং মুমিন আল্লাহর কালিমা উঁচু করার জন্য নিজের মন-মস্তিষ্ক, দেহ ও প্রাণের সমুদয় শক্তি নিয়োজিত করেছে কি না, এটাই তার মাপকাঠি। এ কাজ যদি সে করে থাকে, তাহলে দুনিয়ার বিচারে তার ফলাফল শূন্য হলেও প্রকৃতপক্ষে সে সফলকাম।
اِنَّ الَّذِيْنَ يُبَايِعُوْنَكَ اِنَّمَا يُبَايِعُوْنَ اللهَؕ يَدُ اللهِ فَوْقَ اَيْدِيْهِمْۚ فَمَنْ نَّكَثَ فَاِنَّمَا يَنْكُثُ عَلٰى نَفْسِهٖۚ وَمَنْ اَوْفٰى بِمَا عَاهَدَ عَلَيْهُ اللهَ فَسَيُؤْتِيْهِ اَجْرًا عَظِيْمًا
(হে রাসূল!) যারা আপনার কাছে বায়‘আত গ্রহণ করেছিল তারা মূলত আল্লাহর কাছেই বায়‘আত করেছিল, তাদের হাতের উপর ছিল আল্লাহর হাত। সুতরাং এখন যে ব্যক্তি এ ওয়াদা ভঙ্গ করবে এর কুফল তার উপরই পড়বে। আর যে আল্লাহর সাথে ওয়াদা করে তা পূরণ করবে, অচিরেই তাকে মহাপুরস্কারে ভূষিত করা হবে। (সূরা ফাতহ- ১০)
لَقَدْ رَضِيَ اللهُ عَنِ الْمُؤْمِنِيْنَ اِذْ يُبَايِعُوْنَكَ تَحْتَ الشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِيْ قُلُوْبِهِمْ فَاَنْزَلَ السَّكِيْنَةَ عَلَيْهِمْ وَاَثَابَهُمْ فَتْحًا قَرِيْبًا
(হে রাসূল!) আল্লাহ মুমিনদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে গেলেন, যখন তারা গাছের নিচে আপনার কাছে বায়‘আত গ্রহণ করেছিল। তাদের অন্তরের অবস্থা তিনি জানেন। তাই তিনি তাদের উপর প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং পুরস্কার হিসেবে নিকটবর্তী বিজয় দান করলেন। (সূরা ফাতহ- ১৮)
জিহাদের জন্য অস্ত্র যোগাড় করতে হবে :
وَاَعِدُّوْا لَهُمْ مَّا اسْتَطَعْتُمْ مِّنْ قُوَّةٍ وَّمِنْ رِّبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُوْنَ بِهٖ عَدُوَّ اللهِ وَعَدُوَّكُمْ وَاٰخَرِيْنَ مِنْ دُوْنِهِمْۚ لَا تَعْلَمُوْنَهُمُۚ اَللهُ يَعْلَمُهُمْؕ وَمَا تُنْفِقُوْا مِنْ شَيْءٍ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ يُوَفَّ اِلَيْكُمْ وَاَنْتُمْ لَا تُظْلَمُوْنَ
তোমরা তাদের মুকাবিলার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ব-বাহিনী প্রস্তুত রাখবে। এর দ্বারা তোমরা ভীত-সন্ত্রস্ত করবে আল্লাহ ও তোমাদের শত্রুকে। এছাড়া এমন কিছু শত্রুকেও (ভীত-সন্ত্রস্ত করবে) যাদেরকে তোমরা জান না, কিন্তু আল্লাহ তাদেরকে জানেন। আল্লাহর পথে তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে, তোমাদেরকে তার পূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে এবং তোমাদের প্রতি কোন যুলুম করা হবে না। (সূরা আনফাল- ৬০)
সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا خُذُوْا حِذْرَكُمْ فَانْفِرُوْا ثُبَاتٍ اَوِ انْفِرُوْا جَمِيْعًا
হে মুমিনগণ! সতর্কতা অবলম্বন করো; অতঃপর হয় দলে দলে বিভক্ত হয়ে অগ্রসর হও অথবা একসঙ্গে অগ্রসর হও। (সূরা নিসা- ৭১)
সঠিক জায়গায় সৈন্য নিযুক্ত করতে হবে :
وَاِذْ غَدَوْتَ مِنْ اَهْلِكَ تُبَوِّئُ الْمُؤْمِنِيْنَ مَقَاعِدَ لِلْقِتَالِؕ وَاللهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
(স্মরণ করো) যখন তুমি তোমার পরিবার থেকে সকালে বের হয়েছিলে, তখন মুমিনদেরকে যুদ্ধের জন্য ঘাঁটিতে নিয়োজিত করেছিলে। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী। (সূরা আলে ইমরান- ১২১)
জিহাদের ডাক শুনলে মুজাহিদদের ঈমান বৃদ্ধি পায় :
اَ لَّذِيْنَ قَالَ لَهُمُ النَّاسُ اِنَّ النَّاسَ قَدْ جَمَعُوْا لَكُمْ فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ اِيْمَانًاۗ وَقَالُوْا حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الْوَكِيْلُ
লোকেরা যাদেরকে বলেছিল, নিশ্চয় তোমাদের বিরুদ্ধে লোকজন সমবেত হয়েছে। অতএব তোমরা তাদেরকে ভয় করো; কিন্তু এতে তাদের বিশ্বাস আরো বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং তারা বলেছিল, আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং মঙ্গলময় কর্মবিধায়ক। (সূরা আলে ইমরান- ১৭৩)
তারা পেছনে থাকার জন্য বাহানা খুঁজে না :
لَا يَسْتَاْذِنُكَ الَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ اَنْ يُّجَاهِدُوْا بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْؕ وَاللهُ عَلِيْمٌ ۢبِالْمُتَّقِيْنَ
যারা আল্লাহর প্রতি ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান আনে, তারা তোমার নিকট নিজ সম্পদ ও জীবন দ্বারা জিহাদ করা থেকে অব্যহতি পাওয়ার জন্য আবেদন করে না। আল্লাহ মুত্তাক্বীদের সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত। (সূরা তাওবা- ৪৪)
তারা আল্লাহর রহমত কামনা করে :
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَالَّذِيْنَ هَاجَرُوْا وَجَاهَدُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللّٰهِ اُولٰٓئِكَ يَرْجُوْنَ رَحْمَتَ اللهِ ؕ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
নিশ্চয় যারা ঈমান আনয়ন করেছে, হিজরত করেছে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে, তারাই আল্লাহর রহমত পাওয়ার আশা করতে পারে। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু। (সূরা বাক্বারা- ২১৮)
তারা আখিরাতের বিনিময়ে দুনিয়াকে বিক্রি করে দেয় :
فَلْيُقَاتِلْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ الَّذِيْنَ يَشْرُوْنَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا بِالْاٰخِرَةِؕ وَمَنْ يُّقَاتِلْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَيُقْتَلْ اَوْ يَغْلِبْ فَسَوْفَ نُؤْتِيْهِ اَجْرًا عَظِيْمًا
যারা আখিরাতের বিনিময়ে পার্থিব জীবনকে বিক্রয় করে দিয়েছে তারা যেন আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে যুদ্ধ করবে সে নিহত হোক অথবা বিজয়ী হোক- আমি তাকে মহাপুরস্কার দান করবই। (সূরা নিসা- ৭৪)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর পথে লড়াই করা দুনিয়ার স্বার্থ পূজারী লোকদের কাজ নয়। এটা এমন লোকদের কাজ, যারা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কাজ করে, যারা আল্লাহ ও আখিরাতের উপর পূর্ণ আস্থা রাখে এবং নিজেদের পার্থিব সমৃদ্ধির সমস্ত সম্ভাবনা একমাত্র আল্লাহর জন্য ত্যাগ করতে প্রস্তুত থাকে। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হয়, তাদের রব যেন তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান এবং আখিরাতে যেন তাদের শ্রম বিফলে না যায়।
তারা শত্রুকে ভয় করে না, বরং আল্লাহকেই ভয় করে :
اَلَا تُقَاتِلُوْنَ قَوْمًا نَّكَثُوْاۤ اَيْمَانَهُمْ وَهَمُّوا بِاِخْرَاجِ الرَّسُوْلِ وَهُمْ بَدَءُوْكُمْ اَوَّلَ مَرَّةٍ اَتَخْشَوْنَهُمْ فَاللهُ اَحَقُّ اَنْ تَخْشَوْهُ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
তোমরা কি এমন একটি দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে না, যারা বার বার নিজেদের অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে। যারা আল্লাহর রাসূলকে স্বদেশ থেকে বের করার পরিকল্পনা করেছে এবং তারাই তো প্রথম তোমাদের উপর হামলা শুরু করেছে। তোমরা কি তাদেরকে ভয় কর? অথচ যদি তোমরা মুমিন হও, তাহলে তোমাদের উচিত আল্লাহকেই সবচেয়ে বেশি ভয় করা। (সূরা তাওবা- ১৩)
তারা কোন নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় করে না :
يُجَاهِدُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَلَا يَخَافُوْنَ لَوْمَةَ لَآئِمٍؕ ذٰلِكَ فَضْلُ اللهِ يُؤْتِيْهِ مَنْ يَّشَآءُؕ وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ
তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে, কোন নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় করে না; এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছা তিনি তা দান করেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও সর্বজ্ঞ। (সূরা মায়েদা- ৫৪)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ তারা আল্লাহর দ্বীনের অনুসরণ করার ব্যাপারে, তাঁর বিধানসমূহ কার্যকর করার ব্যাপারে এবং এ দ্বীনের দৃষ্টিতে যা সত্য তাকে সত্য আর যা মিথ্যা তাকে মিথ্যা বলার ব্যাপারে আপোষহীন ও নির্ভীক। তারা কারো বিরোধিতা, নিন্দা, তিরস্কার ও আপত্তির পরোয়া করে না। সকল মানুষও যদি ইসলাম বিরোধী হয়, তাহলেও তারা সত্য পথেই চলতে থাকে।
তারা শাহাদাত কামনা করে :
مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ رِجَالٌ صَدَقُوْا مَا عَاهَدُوا اللهَ عَلَيْهِۚ فَمِنْهُمْ مَّنْ قَضٰى نَحْبَهٗ وَمِنْهُمْ مَّنْ يَّنْتَظِرُ وَمَا بَدَّلُوْا تَبْدِيْلًا
মুমিনদের মধ্যে কতক লোক এমনও রয়েছে, যারা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে; তাদের মধ্যে কেউ কেউ শাহাদাতবরণ করেছে এবং কেউ কেউ অপেক্ষায় রয়েছে। তারা স্বীয় সংকল্প একটুও পরিবর্তন করেনি। (সূরা আহযাব- ২৩)
তারা মুমিনদের ব্যাপারে কোমল ও শত্রুদের ব্যাপারে কঠোর :
مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللّٰهِ وَالَّذِيْنَ مَعَهٗۤ اَشِدَّآءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَآءُ بَيْنَهُمْ
মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল, আর তাঁর (মুহাম্মদের) সাথে যারা আছে তারা কাফিরদের ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর, তবে নিজেদের ব্যাপারে একান্ত সহানুভূতিশীল। (সূরা ফাতহ- ২৯)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا قَاتِلُوا الَّذِيْنَ يَلُوْنَكُمْ مِّنَ الْكُفَّارِ وَلْيَجِدُوْا فِيْكُمْ غِلْظَةً وَّاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللّٰهَ مَعَ الْمُتَّقِيْنَ
হে ঈমানদারগণ! কাফিরদের মধ্যে যারা তোমাদের সীমান্তের কাছাকাছি রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে এমনভাবে জিহাদ করো, যেন তারা তোমাদের মধ্যে কঠোরতা দেখতে পায়। জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাক্বীদের সাথেই রয়েছেন। (সূরা তাওবা- ১২৩)
ব্যাখ্যা : কাফিরদের ব্যাপারে কঠোর হওয়ার অর্থ হচ্ছে, নিজের মজবুত ঈমান, নিঃস্বার্থ ও একনিষ্ঠ দ্বীনদারী, চারিত্রিক শক্তি ও ঈমানী দূরদৃষ্টির কারণে একজন মুমিন ইসলাম বিরোধীদের মুকাবিলায় পাহাড়ের মতো অটল থাকবে। নিজের স্থান থেকে তাকে এক চুলও নড়ানো যাবে না। ইসলাম বিরোধীরা কখনো তাকে নমনীয়, দোদুল্যমান এবং সহজে গলধঃকরণ করার মতো খাদ্য মনে করতে পারবে না। যখনই তারা তার মুখোমুখি হয় তখনই টের পেয়ে যায় যে, আল্লাহর এ বান্দা মরে যেতে পারে; কিন্তু কখনো কোন মূল্যে বিক্রি হবে না এবং কোন চাপের কাছে নতি স্বীকারও করবে না।
কাফিরদের ন্যায় অহংকার করা যাবে না :
وَلَا تَكُوْنُوْا كَالَّذِيْنَ خَرَجُوْا مِنْ دِيَارِهِمْ بَطَرًا وَّرِئَآءَ النَّاسِ وَيَصُدُّوْنَ عَنْ سَبِيْلِ اللّٰهِؕ وَاللهُ بِمَا يَعْمَلُوْنَ مُحِيْطٌ
তোমরা কখনো তাদের মতো হয়ো না, যারা অহংকার করে এবং লোকদেরকে নিজেদের জাঁকজমক দেখানোর জন্য নিজেদের ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে এবং যারা সাধারণ মানুষদেরকে আল্লাহর পথ থেকে ফিরিয়ে রেখেছে। মূলত আল্লাহ তাদের সকল কার্যকলাপই পরিবেষ্টন করে আছেন। (সূরা আনফাল- ৪৭)
ব্যাখ্যা : কুরাইশ সেনাবাহিনী মক্কা থেকে বের হয়েছিল অত্যন্ত জাঁকজমকের সাথে। পথের মাঝখানে বিভিন্ন জায়গায় থেমে তারা নাচ-গান, মদ্য পান ও আনন্দ উল্লাসের আসর জমিয়ে তুলেছিল। তারা এমনভাবে বীরত্ব দেখাচ্ছিল, যেন তাদের সামনে দাঁড়ানোর মতো কেউ নেই। যে উদ্দেশ্যে তারা ঘর থেকে বের হয়েছিল, তা ছিল তাদের নৈতিক অবস্থার চেয়েও আরো বেশি নোংরা ও অপবিত্র। তারা চাচ্ছিল সত্য, সততা ও ইনসাফের ঝান্ডা যাতে বুলন্দ না হয় এবং যারা এ পথে এগিয়ে এসেছে, তাদেরকেও খতম করা যায়। এ ব্যাপারে মুসলিমদেরকে সতর্ক করে দেয়া হচ্ছে যে, তোমরা তাদের মতো হয়ো না। আল্লাহ তোমাদের ঈমান ও সত্যপ্রিয়তার যে নিয়ামত দান করেছেন তার দাবী অনুযায়ী তোমাদের চরিত্র যেমন পাক-পবিত্র হতে হবে তেমনি তোমাদের যুদ্ধের উদ্দেশ্যও হতে হবে মহৎ।
জিহাদ করতে গিয়ে সীমালঙ্ঘন করা যাবে না :
وَقَاتِلُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ الَّذِيْنَ يُقَاتِلُوْنَكُمْ وَلَا تَعْتَدُوْاۤ اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِيْنَ
যারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে তোমরাও তাদের সাথে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করো, তবে সীমলঙ্ঘন করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে ভালোবাসেন না। (সূরা বাক্বারা- ১৯০)
وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَاٰنُ قَوْمٍ اَنْ صَدُّوْكُمْ عَنِ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ اَنْ تَعْتَدُوْا
তোমাদেরকে মাসজিদুল হারামে প্রবেশে বাধা দেয়ার কারণে কোন সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ তোমাদেরকে যেন কখনই সীমালঙ্ঘনে প্ররোচিত না করে। (সূরা মায়েদা- ২)
জেনে বুঝে পদক্ষেপ নিতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا ضَرَبْتُمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَتَبَيَّنُوْا وَلَا تَقُوْلُوْا لِمَنْ اَلْقٰۤى اِلَيْكُمُ السَّلَامَ لَسْتَ مُؤْمِنًاۚ تَبْتَغُوْنَ عَرَضَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا فَعِنْدَ اللهِ مَغَانِمُ كَثِيْرَةٌؕ كَذٰلِكَ كُنْتُمْ مِّنْ قَبْلُ فَمَنَّ اللهُ عَلَيْكُمْ فَتَبَيَّنُوْاؕ اِنَّ اللهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِيْرًا
হে মুমিনগণ! যখন তোমরা আল্লাহর পথে বের হবে, তখন পরীক্ষা করে নেবে এবং কেউ তোমাদেরকে সালাম বললে ইহজীবনের সম্পদের আকাঙ্ক্ষায় তাকে বলো না যে, তুমি মুমিন নও; কারণ আল্লাহর নিকট প্রচুর গনিমতের সম্পদ রয়েছে। তোমরা তো পূর্বে এরূপই ছিলে। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন; সুতরাং তোমরা পরীক্ষা করে নেবে। নিশ্চয় তোমরা যা কর আল্লাহ সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত। (সূরা নিসা- ৯৪)
শানে নুযূল : ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক লোক একটি ছোট্ট বকরীর পাল চরাচ্ছিল। এমতাবস্থায় কতক মুসলিম তার কাছে আগমন করলে সে বলল, ‘‘আস্সালামু ‘আলাকুম’’। এতদসত্ত্বেও তারা তাকে পাকড়াও করল। অতঃপর তারা তাকে হত্যা করে তার এ ছোট্ট বকরীর পালটি নিয়ে নিল। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে অত্র আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (সহীহ বুখারী, হা/৭৪৩৫)
আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে :
وَعَلَى اللهِ فَتَوَكَّلُوْاۤ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
আল্লাহর উপরই নির্ভর করো, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক। (সূরা মায়েদা- ২৩)
আল্লাহকে স্মরণ করতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا لَقِيْتُمْ فِئَةً فَاثْبُتُوْا وَاذْكُرُوا اللهَ كَثِيْرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা যখন কোন দলের সম্মুখীন হবে তখন অবিচল থাকবে এবং আল্লাহকে অধিক হারে স্মরণ করবে, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সূরা আনফাল- ৪৫)
সৈন্যদের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখতে হবে :
وَاَطِيْعُوا اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَلَا تَنَازَعُوْا فَتَفْشَلُوْا وَتَذْهَبَ رِيْحُكُمْ وَاصْبِرُوْاؕ اِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِيْنَ
তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে ও নিজেদের মধ্যে বিবাদ করবে না, নতুবা তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলবে এবং তোমাদের শক্তি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তোমরা ধৈর্যধারণ করো; নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন। (সূরা আনফাল- ৪৬)
শত্রুদের চেয়ে বেশি দৃঢ়তা অবলম্বন করতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اصْبِرُوْا وَصَابِرُوْا وَرَابِطُوْا وَاتَّقُوا اللّٰهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্যধারণ করো, দৃঢ়তা প্রদর্শন করো, (নিজেদের প্রতিরক্ষাকল্পে) পারস্পরিক বন্ধন মজবুত করো এবং আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা আলে ইমরান- ২০০)
ব্যাখ্যা : صَابِرُوْا (সাবিরু) এর দু’টি অর্থ হয়। (এক) কাফিররা কুফরীর ব্যাপারে যে দৃঢ়তা দেখাচ্ছে এবং কুফরীর ঝান্ডা সমুন্নত রাখার জন্য যে ধরনের কষ্ট স্বীকার করছে, তোমরা তাদের মুকাবিলায় তাদের চেয়েও বেশি দৃঢ়তা দেখাও। (দুই) তাদের মুকাবিলায় দৃঢ়তা দেখানোর ব্যাপারে পরস্পরের মধ্যে প্রতিযোগিতা করো।
শত্রুদেরকে হত্যা করতে হবে :
فَاِذَا لَقِيْتُمُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا فَضَرْبَ الرِّقَابِ
যখন তোমরা কাফিরদের মুখোমুখি হবে তখন (তাদের) গর্দানে আঘাত করবে। (সূরা মুহাম্মাদ- ৪)
শত্রুদেরকে বন্দী করতে হবে :
حَتّٰۤى اِذَاۤ اَثْخَنْتُمُوْهُمْ فَشُدُّوا الْوَثَاقَ
এমনকি যখন তোমরা তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পরাজিত করে ফেলবে, তখন (বন্দীদেরকে) শক্তভাবে বাঁধবে। (সূরা মুহাম্মাদ- ৪)
فَاِمَّا تَثْقَفَنَّهُمْ فِى الْحَرْبِ فَشَرِّدْ بِهِمْ مَّنْ خَلْفَهُمْ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُوْنَ
যুদ্ধে তোমরা যদি তাদেরকে তোমাদের আয়ত্তে পাও, তবে তাদেরকে তাদের পশ্চাতে যারা আছে তাদের হতে বিচ্ছিন্ন করে এমনভাবে বিধ্বস্ত করবে, যাতে তারা শিক্ষা লাভ করতে পারে। (সূরা আনফাল- ৫৭)
শত্রুদের ধাওয়া করতে গিয়ে দুর্বর্র্র্লতা দেখানো যাবে না :
وَلَا تَهِنُوْا فِى ابْتِغَآءِ الْقَوْمِؕ اِنْ تَكُوْنُوْا تَاْلَمُوْنَ فَاِنَّهُمْ يَاْلَمُوْنَ كَمَا تَاْلَمُوْنَۚ وَتَرْجُوْنَ مِنَ اللهِ مَا لَا يَرْجُوْنَؕ وَكَانَ اللهُ عَلِيْمًا حَكِيْمًا
শত্রু সম্প্রদায়ের সন্ধানে তোমরা দুর্বল হয়ো না। যদি তোমরা যন্ত্রণা পাও, তবে তারাও তো তোমাদের মতোই যন্ত্রণা পায়। আর তোমরা আল্লাহর নিকট যা আশা কর, তারা তা আশা করে না। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা- ১০৪)
ব্যাখ্যা : কাফিররা বাতিলের জন্য যে পরিমাণ কষ্ট স্বীকার করছে ঈমানদাররা যদি হকের জন্য অন্তত এতটুকু কষ্টও সহ্য করতে না পারে, তাহলে তা হবে সত্যিই বিস্ময়কর। কেননা কাফিররা কেবল দুনিয়া ও তার ক্ষণস্থায়ী স্বার্থ ছাড়া অন্য কিছুই করে না। কিন্তু ঈমানদাররা এ ক্ষণস্থায়ী স্বার্থের দিকে না তাকিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তাঁর চিরন্তন পুরস্কার লাভের বৃহত্তম আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে। কাজেই বৃহত্তম স্বার্থে মুমিনদেরকে অবশ্যই কাফিরদের তুলনায় একটু বেশিই কষ্ট সহ্য করতে হবে।
নেতার আদেশ অমান্য করা যাবে না :
وَلَقَدْ صَدَقَكُمُ اللهُ وَعْدَهٗۤ اِذْ تَحُسُّوْنَهُمْ بِاِذْنِهٖ حَتّٰۤى اِذَا فَشِلْتُمْ وَتَنَازَعْتُمْ فِى الْاَمْرِ وَعَصَيْتُمْ مِّنْ ۢبَعْدِ مَاۤ اَرَاكُمْ مَّا تُحِبُّوْنَ
আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বীয় অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করেছেন যখন তাঁর নির্দেশে তোমরা তাদেরকে হত্যা করছিলে, কিন্তু পরে তোমরা ছত্রভঙ্গ হয়েছিলে ও কর্তব্য স্থির করার ব্যাপারে বিবাদে লিপ্ত হয়েছিলে এবং তোমরা যা ভালোবেসেছিলে, তা তিনি তোমাদেরকে দেখানোর পর তাঁর আদেশের অবাধ্য হয়েছিলে। (সূরা আলে ইমরান- ১৫২)
ব্যাখ্যা : রাসূল ﷺ ওহুদের যুদ্ধের আক্রমণ ঠেকানোর উদ্দেশ্যে আবদুল্লাহ ইবনে যুবারের (রাঃ) এর নেতৃত্বে ৫০ জন তীরন্দাজকে নিযুক্ত করেন এবং সুস্পষ্ট নির্দেশ না পাওয়া পর্যমত্ম এ স্থান ত্যাগ করতে নিষেধ করেন। অতঃপর যখন যুদ্ধ আরম্ভ হয়, তখন মুসলিম বাহিনী একের পর এক সাফল্য লাভ করতে থাকে এবং কুরাইশ বাহিনী পলায়ন করতে থাকে। যুদ্ধের প্রাথমিক সাফল্যের উল্লাসে মুসলিম সৈন্যবাহিনী শৃঙ্খলা হারিয়ে ফেলে এবং গিরিপথের রক্ষণাবেক্ষণের পরিবর্তে গনিমতের মাল সংগ্রহে নিয়োজিত হয়। এ সুযোগে কুরাইশ সেনাপতি খালিদ ইবনে ওয়ালীদ পেছন থেকে অতর্কিত হামলা করে মুসলিমদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
ময়দান ছেড়ে পলায়ন করা যাবে না :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا لَقِيْتُمُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا زَحْفًا فَلَا تُوَلُّوْهُمُ الْاَدْبَارَ
হে মুমিনগণ! যখন তোমরা কাফির বাহিনীর সম্মুখীন হবে, তখন তোমরা তাদের পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে না।
(সূরা আনফাল- ১৫)
ময়দান থেকে পলায়ন করা বড় অন্যায় :
وَمَنْ يُّوَلِّهِمْ يَوْمَئِذٍ دُبُرَهٗۤ اِلَّا مُتَحَرِّفًا لِّقِتَالٍ اَوْ مُتَحَيِّزًا اِلٰى فِئَةٍ فَقَدْ بَآءَ بِغَضَبٍ مِّنَ اللهِ وَمَاْوَاهُ جَهَنَّمُؕ وَبِئْسَ الْمَصِيْرُ
সেদিন যারা যুদ্ধ কৌশল অবলম্বন কিংবা দলে স্থান নেয়া ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে, সে আল্লাহর ক্রোধে পতিত হবে। তার আশ্রয়স্থল হবে জাহান্নাম; আর তা কতই না নিকৃষ্টতম প্রত্যাবর্তনস্থল। (সূরা আনফাল- ১৬)
সাময়িক পরাজয় হলেও দুঃখ করতে নেই :
وَلَا تَهِنُوْا وَلَا تَحْزَنُوْا وَاَنْتُمُ الْاَعْلَوْنَ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
আর তোমরা দুর্বল হয়ো না এবং চিন্তিতও হয়ো না। যদি তোমরা বিশ্বাসী হও, তবে তোমরাই বিজয়ী হবে।
(সূরা আলে ইমরান- ১৩৯)
فَلَا تَهِنُوْا وَتَدْعُوْاۤ اِلَى السَّلْمِ وَاَنْتُمُ الْاَعْلَوْنَۗ وَاللهُ مَعَكُمْ وَلَنْ يَّتِرَكُمْ اَعْمَالَكُمْ
তোমরা হীনতা স্বীকার করে সন্ধির প্রস্তাব দিয়ো না; কেননা তোমরাই তো বিজয়ী থাকবে। আল্লাহ তোমাদের সাথে আছেন এবং তিনি তোমাদের আমলের প্রতিদান মোটেই কম দেবেন না। (সূরা মুহাম্মাদ - ৩৫)
ব্যাখ্যা : ঈমানদাররা বিজয়ী হলে এটা যে তাদের জন্য ভালো- এ কথা সবার জানা। কিন্তু নিজেদের উদ্দেশ্য সাধনের পথে প্রাণ দান করে যদি তারা মাটিতে বিলীন হয়ে যায়, তাহলে দুনিয়াবাসীরা এটাকে তাদের চরম ব্যর্থ বলে মনে করলেও প্রকৃতপক্ষে এটিও এক প্রকার সাফল্য। কারণ মুমিন একটি দেশ বিজয় করল কি করল না অথবা কোন সরকার প্রতিষ্ঠিত করল কি করল না, এটা তার সাফল্য ও ব্যর্থতার মাপকাঠি নয়। বরং মুমিন আল্লাহর কালিমা উঁচু করার জন্য নিজের মন-মস্তিষ্ক, দেহ ও প্রাণের সমুদয় শক্তি নিয়োজিত করেছে কি না, এটাই তার মাপকাঠি। এ কাজ যদি সে করে থাকে, তাহলে দুনিয়ার বিচারে তার ফলাফল শূন্য হলেও প্রকৃতপক্ষে সে সফলকাম।
মুমিনদেরকে সাহায্য করা আল্লাহর কর্তব্য :
وَكَانَ حَقًّا عَلَيْنَا نَصْرُ الْمُؤْمِنِيْنَ
মুমিনদের সাহায্য করা তো আমারই কর্তব্য। (সূরা রূম- ৪৭)
ব্যাখ্যা : যতগুলো ময়দানে হক ও বাতিলের সংঘাত হয় তার প্রত্যেকটিতে হকের সমর্থনে সাহায্য পৌঁছানো আল্লাহর কাজ। যুক্তির লড়াই হলে তিনিই সত্যপন্থীদেরকে সঠিক ও পূর্ণশক্তিশালী যুক্তি সরবরাহ করেন। নৈতিকতার লড়াই হলে তিনিই সবদিক থেকে সত্যপন্থীদের নৈতিক শ্রেষ্ঠত্ব দান করেন। সংগঠন-শৃঙ্খলার মুকাবিলা হলে তিনিই বাতিলপন্থীদের হৃদয় ছিন্নভিন্ন এবং হকপন্থীদের হৃদয় সংযুক্ত করেন। মানবিক শক্তির মুকাবিলা হলে তিনিই প্রতিটি পর্যায়ে যোগ্য ও উপযোগী ব্যক্তিবর্গ সরবরাহ করে হকপন্থীদের দলের শক্তি বৃদ্ধি করে দেন। বস্তুগত উপকরণের প্রয়োজন হলে তিনিই সত্যপন্থীদের সামান্য ধন ও উপায়-উপকরণে বরকত দান করেন। প্রাণান্তকর সংঘাতের ময়দানে নামিয়ে দিয়ে তিনি তোমাকে একাকী ছেড়ে দেন না; বরং তোমার সাহায্যার্থে তিনি নিজেই প্রস্তুত থাকেন। সুতরাং অন্তরে সামান্য পরিমাণ ঈমান থাকলে এর চেয়ে বেশি সাহস সঞ্চারকারী কথা আর কী হতে পারে যে, সারা বিশ্বজাহানের মালিক আল্লাহ নিজেই আমাদের সাহায্য দান করছেন ও পথ দেখানোর দায়িত্ব নিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে কেবলমাত্র কাপুরুষ ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ আল্লাহর রাস্তায় সামনে এগিয়ে যেতে ইতস্ততবোধ করবে না।
মুজাহিদদেরকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে আল্লাহর ওয়াদা :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنْ تَنْصُرُوا اللهَ يَنْصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ اَقْدَامَكُمْ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি আল্লাহকে সাহায্য কর, তবে তিনিও তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পাসমূহকে মজবুত করে দেবেন। (সূরা মুহাম্মাদ- ৭)
ব্যাখ্যা : ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজে অংশগ্রহণকে কুরআনে ‘‘আল্লাহকে সাহায্য করা’’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। দুনিয়াতে আল্লাহ মানুষকে ইচ্ছা ও সংকল্পের স্বাধীনতা দান করেছেন। তাদেরকে কুফর বা ঈমানের মধ্য থেকে কোন একটি পথ অবলম্বন করার জন্যও বাধ্য করেননি। এর পরিবর্তে তিনি যুক্তি ও উপদেশের মাধ্যমে মানুষের কাছ থেকে এ স্বতস্ফূর্ত স্বীকৃতি আদায় করতে চেয়েছেন যে, অস্বীকৃতি ও নাফরমানি করার স্বাধীনতা থাকা সত্ত্বেও তার জন্য স্রষ্টার আনুগত্যের পথ অবলম্বন করাই প্রকৃত সত্য এবং এটিই তার সাফল্য ও নাজাতের পথ। এভাবে প্রচার, উপদেশ ও নসীহতের সাহায্যে মানুষকে সত্য ও সঠিক পথে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করাই আল্লাহর কাজ। আর যেসব লোক এ কাজে আল্লাহকে সাহায্য করে, তাদেরকেই আল্লাহর সাহায্যকারী হিসেবে গণ্য করা হয়। আল্লাহর কাছে এটিই মানুষের সর্বোচ্চ মর্যাদা। অপরদিকে কুফর ও ঈমানের সংঘাতে মুমিনরা কখনো একা ও নিঃসঙ্গ হয় না, বরং আল্লাহ নিজেই তাদের পক্ষ হয়ে দাঁড়ান। তাদের বিরুদ্ধে শত্রুদের কৌশল ব্যর্থ করে দেন। অনিষ্টকারীদের অনিষ্টকে তাদের থেকে দূরে সরিয়ে দেন। কাজেই এ আয়াতটি হকপন্থীদের জন্য একটি বড় ধরনের সুসংবাদ। এর কারণ হচ্ছে, হকের বিরুদ্ধে সংঘর্ষে লিপ্ত দ্বিতীয় পক্ষটি বিশ্বাসঘাতক, অকৃতজ্ঞ এবং নিয়ামত অস্বীকারকারী। কাজেই আল্লাহ তাদেরকে অপছন্দ করেন এবং তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত হকপন্থীদেরকে সাহায্য করেন। যারা আল্লাহর বান্দাদেরকে তাওহীদের দিকে আহবান করে এবং সত্য দ্বীন কায়েম করা ও মন্দ জায়গায় ভালোকে বিকশিত করার জন্য প্রচেষ্টা চালায়, তারা মূলত আল্লাহরই সাহায্যকারী। কেননা এগুলো হচ্ছে আল্লাহর কাজ।
আল্লাহ মূসা ও হারূন (আঃ) কে সাহায্য করেছেন :
وَلَقَدْ مَنَنَّا عَلٰى مُوْسٰى وَهَارُوْنَ ‐ وَنَجَّيْنَاهُمَا وَقَوْمَهُمَا مِنَ الْكَرْبِ الْعَظِيْمِ ‐ وَنَصَرْنَاهُمْ فَكَانُوْا هُمُ الْغَالِبِيْنَ
আমি অনুগ্রহ করেছি মূসা ও হারূনের প্রতি। তাদেরকে এবং তাদের জাতিকে বড় কষ্ট থেকে উদ্ধার করেছি। আমি তাদেরকে সাহায্য করেছি, ফলে তারাই বিজয়ী হয়েছে। (সূরা সাফফাত, ১১৪-১১৬)
আল্লাহ ঈসা (আঃ) এর সাথিদেরকে সাহায্য করেছেন :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُوْنُوْاۤ اَنْصَارَ اللهِ كَمَا قَالَ عِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَ لِلْحَوَارِيِّيْنَ مَنْ اَنْصَارِيْۤ اِلَى اللهِؕ قَالَ الْحَوَارِيُّوْنَ نَحْنُ اَنْصَارُ اللّٰهِ فَاٰمَنَتْ طَّآئِفَةٌ مِّنْ ۢبَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ وَكَفَرَتْ طَّآئِفَةٌۚ فَاَيَّدْنَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا عَلٰى عَدُوِّهِمْ فَاَصْبَحُوْا ظَاهِرِيْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর (দ্বীনের) সাহায্যকারী হও, যেমন মারইয়ামের পুত্র ঈসা হাওয়ারীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, কে আল্লাহর পথে আমার সাহায্যকারী হবে? হাওয়ারীরা বলেছিল, আমরাই তো আল্লাহর পথে সাহায্যকারী। অতঃপর বনী ইসরাঈলের একদল ঈমান আনল এবং একদল কুফরী করল। পরে আমি মুমিনদেরকে তাদের শত্রুদের মুকাবিলায় শক্তিশালী করলাম; ফলে তারা বিজয়ী হলো। (সূরা সাফ- ১৪)
বদরের যুদ্ধে আল্লাহর সাহায্যের দৃষ্টান্ত :
وَلَقَدْ نَصَرَكُمُ اللهُ بِبَدْرٍ وَّاَنْتُمْ اَذِلَّةٌۚ فَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ ‐ اِذْ تَقُوْلُ لِلْمُؤْمِنِيْنَ اَلَنْ يَّكْفِيَكُمْ اَنْ يُّمِدَّكُمْ رَبُّكُمْ بِثَلَاثَةِ اٰلَافٍ مِّنَ الْمَلَآئِكَةِ مُنْزَلِيْنَ ‐ بَلٰۤى اِنْ تَصْبِرُوْا وَتَتَّقُوْا وَيَاْتُوْكُمْ مِّنْ فَوْرِهِمْ هٰذَا يُمْدِدْكُمْ رَبُّكُمْ بِخَمْسَةِ اٰلَافٍ مِّنَ الْمَلَآئِكَةِ مُسَوِّمِيْنَ
নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে বদরে সাহায্য করেছিলেন, যখন তোমরা দুর্বল ছিলে। অতএব আল্লাহকে ভয় করো যেন তোমরা কৃতজ্ঞ হও। (স্মরণ করো) যখন তুমি মুমিনদেরকে বলেছিলে, এটা কি তোমাদের জন্য যথেষ্ট নয় যে, তোমাদের প্রতিপালক তিন হাজার ফেরেশতা প্রেরণ করে তোমাদেরকে সাহায্য করবেন? হ্যাঁ, যদি তোমরা ধৈর্যধারণ কর ও সংযমী হও এবং তারা যদি দ্রুত তোমাদের উপর আক্রমণ চালায়, তবে তোমাদের প্রতিপালক চিহ্নিত পাঁচ হাজার ফেরেশতা দ্বারা তোমাদেরকে সাহায্য করবেন। (সূরা আলে ইমরান, ১২৩-১২৫)
আহযাবের যুদ্ধে আল্লাহর সাহায্যের দৃষ্টান্ত :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اذْكُرُوْا نِعْمَةَ اللهِ عَلَيْكُمْ اِذْ جَآءَتْكُمْ جُنُوْدٌ فَاَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ رِيْحًا وَّجُنُوْدًا لَّمْ تَرَوْهَاؕ وَكَانَ اللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرًا
হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর সেই অনুগ্রহকে স্মরণ করো- যখন শত্রু বাহিনী তোমাদের উপর আক্রমণ করেছিল, তখন আমি তাদের উপর প্রেরণ করেছিলাম এক প্রচন্ড বায়ু এবং এমন এক সৈন্যদল, যাদেরকে তোমরা দেখতে পাওনি। (জেনে রেখো) তোমরা যা কর আল্লাহ তা দেখেন। (সূরা আহযাব- ৯)
হুনাইনের যুদ্ধে আল্লাহর সাহায্যের দৃষ্টান্ত :
لَقَدْ نَصَرَكُمُ اللهُ فِيْ مَوَاطِنَ كَثِيْرَةٍ وَّيَوْمَ حُنَيْنٍ اِذْ اَعْجَبَتْكُمْ كَثْرَتُكُمْ فَلَمْ تُغْنِ عَنْكُمْ شَيْئًا وَّضَاقَتْ عَلَيْكُمُ الْاَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ ثُمَّ وَلَّيْتُمْ مُّدْبِرِيْنَ ‐ ثُمَّ اَنْزَلَ اللهُ سَكِيْنَتَهٗ عَلٰى رَسُوْلِهٖ وَعَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ وَاَنْزَلَ جُنُوْدًا لَّمْ تَرَوْهَا وَعَذَّبَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاؕ وَذٰلِكَ جَزَآءُ الْكَافِرِيْنَ
আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করেছেন বহু ক্ষেত্রে এবং হুনাইনের যুদ্ধের দিনে, যখন তোমাদের সংখ্যাধিক্য তোমাদেরকে উৎফুল্ল করেছিল; কিন্তু এটা তোমাদের কোন কাজে আসেনি। আর পৃথিবী বিস্তৃত হওয়া সত্ত্বেও তোমাদের জন্য সংকুচিত হয়ে গিয়েছিল। অবশেষে তোমরা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পলায়ন করেছিলে। অতঃপর আল্লাহ তাঁর নিকট হতে তাঁর রাসূল ও মুমিনদের উপর প্রশান্তি বর্ষণ করলেন এবং এমন এক সৈন্যবাহিনী অবতীর্ণ করলেন, যা তোমরা দেখতে পাওনি। এভাবে তিনি কাফিরদেরকে শাস্তি প্রদান করেন; আর এটাই কাফিরদের কর্মফল। (সূরা তাওবা- ২৫, ২৬)
ছোট দলও বড় দলের উপর বিজয়ী হতে পারে :
كَمْ مِّنْ فِئَةٍ قَلِيْلَةٍ غَلَبَتْ فِئَةً كَثِيْرَةً ۢبِاِذْنِ اللهِؕ وَاللهُ مَعَ الصَّابِرِيْنَ
আল্লাহর হুকুমে কত ছোট দল বড় দলকে পরাজিত করেছে। আর আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথেই রয়েছেন।
(সূরা বাক্বারা- ২৪৯)
সত্যিকার একজন মুমিন দশজন কাফিরকে পরাজিত করতে পারে :
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ حَرِّضِ الْمُؤْمِنِيْنَ عَلَى الْقِتَالِؕ اِنْ يَّكُنْ مِّنْكُمْ عِشْرُوْنَ صَابِرُوْنَ يَغْلِبُوْا مِائَتَيْنِۚ وَاِنْ يَّكُنْ مِّنْكُمْ مِّائَةٌ يَّغْلِبُوْاۤ اَلْفًا مِّنَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِاَنَّهُمْ قَوْمٌ لَّا يَفْقَهُوْنَ
হে নবী! মুমিনদেরকে যুদ্ধের জন্য উদ্বুদ্ধ করো; তোমাদের মধ্যে বিশজন ধৈর্যশীল থাকলে তারা দু’শ জনের উপর বিজয়ী হবে এবং একশ জন থাকলে এক হাজার কাফিরের উপর বিজয়ী হবে। কারণ তারা এমন এক সম্প্রদায় যাদের কোন বোধশক্তি নেই। (সূরা আনফাল- ৬৫)
ব্যাখ্যা : যদিও শারীরিক শক্তির দিক দিয়ে উভয়ের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই, তবুও যে ব্যক্তি সত্যের জ্ঞান রাখে, নিজের অস্তিত্ব, মৃত্যুর তাৎপর্য ও মৃত্যুর পরের জীবনের তাৎপর্য ভালোভাবে উপলব্ধি করে এবং হক ও বাতিলের পার্থক্য সঠিকভাবে জানে, তার শক্তির ধারে কাছেও এমনসব লোক পৌঁছতে পারবে না, যারা জাতীয়তাবাদ বা শ্রেণি সংগ্রামের চেতনা নিয়ে কর্মক্ষেত্রে নেমে আসে। এজন্যই বলা হয়েছে, একজন বোধশক্তিসম্পন্ন সজাগ মুমিন ও একজন কাফিরের মধ্যে সত্যের জ্ঞান ও সত্য সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণেই প্রকৃতিগতভাবে এক ও দশের অনুপাত সৃষ্টি হয়।
শেষ পর্যন্ত ইসলামপন্থীরাই বিজয়ী হবে :
وَلَقَدْ سَبَقَتْ كَلِمَتُنَا لِعِبَادِنَا الْمُرْسَلِيْنَ ‐ اِنَّهُمْ لَهُمُ الْمَنْصُوْرُوْنَ ‐ وَاِنَّ جُنْدَنَا لَهُمُ الْغَالِبُوْنَ
আমার রাসূলদের সম্পর্কে আমার এ কথা আগেই নির্ধারিত হয়েছে যে, অবশ্যই তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে এবং আমার বাহিনীই বিজয় লাভ করবে। (সূরা সাফ্ফাত, ১৭১-১৭৩)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর সেনাদল বলতে এমন ঈমানদারদেরকে বুঝানো হয়েছে, যারা আল্লাহর রাসূলের আনুগত্য করে এবং তার সহযোগী হয়। তাছাড়া এমন অদৃশ্য শক্তিও এর অন্তর্ভুক্ত হয়, যার মাধ্যমে মহান আল্লাহ সত্যপন্থীদেরকে সাহায্য-সহায়তা দান করে থাকেন।
كَتَبَ اللهُ لَاَغْلِبَنَّ اَنَاْ وَرُسُلِيْؕ اِنَّ اللهَ قَوِيٌّ عَزِيْزٌ
আল্লাহ লিখে রেখেছেন যে, আমি এবং আমার রাসূলগণ অবশ্যই বিজয় লাভ করব। নিশ্চয় আল্লাহ মহাশক্তিধর ও মহাপ্রতাপশালী। (সূরা মুজাদালা- ২১)
وَكَانَ حَقًّا عَلَيْنَا نَصْرُ الْمُؤْمِنِيْنَ
মুমিনদের সাহায্য করা তো আমারই কর্তব্য। (সূরা রূম- ৪৭)
ব্যাখ্যা : যতগুলো ময়দানে হক ও বাতিলের সংঘাত হয় তার প্রত্যেকটিতে হকের সমর্থনে সাহায্য পৌঁছানো আল্লাহর কাজ। যুক্তির লড়াই হলে তিনিই সত্যপন্থীদেরকে সঠিক ও পূর্ণশক্তিশালী যুক্তি সরবরাহ করেন। নৈতিকতার লড়াই হলে তিনিই সবদিক থেকে সত্যপন্থীদের নৈতিক শ্রেষ্ঠত্ব দান করেন। সংগঠন-শৃঙ্খলার মুকাবিলা হলে তিনিই বাতিলপন্থীদের হৃদয় ছিন্নভিন্ন এবং হকপন্থীদের হৃদয় সংযুক্ত করেন। মানবিক শক্তির মুকাবিলা হলে তিনিই প্রতিটি পর্যায়ে যোগ্য ও উপযোগী ব্যক্তিবর্গ সরবরাহ করে হকপন্থীদের দলের শক্তি বৃদ্ধি করে দেন। বস্তুগত উপকরণের প্রয়োজন হলে তিনিই সত্যপন্থীদের সামান্য ধন ও উপায়-উপকরণে বরকত দান করেন। প্রাণান্তকর সংঘাতের ময়দানে নামিয়ে দিয়ে তিনি তোমাকে একাকী ছেড়ে দেন না; বরং তোমার সাহায্যার্থে তিনি নিজেই প্রস্তুত থাকেন। সুতরাং অন্তরে সামান্য পরিমাণ ঈমান থাকলে এর চেয়ে বেশি সাহস সঞ্চারকারী কথা আর কী হতে পারে যে, সারা বিশ্বজাহানের মালিক আল্লাহ নিজেই আমাদের সাহায্য দান করছেন ও পথ দেখানোর দায়িত্ব নিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে কেবলমাত্র কাপুরুষ ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ আল্লাহর রাস্তায় সামনে এগিয়ে যেতে ইতস্ততবোধ করবে না।
মুজাহিদদেরকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে আল্লাহর ওয়াদা :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنْ تَنْصُرُوا اللهَ يَنْصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ اَقْدَامَكُمْ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি আল্লাহকে সাহায্য কর, তবে তিনিও তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পাসমূহকে মজবুত করে দেবেন। (সূরা মুহাম্মাদ- ৭)
ব্যাখ্যা : ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজে অংশগ্রহণকে কুরআনে ‘‘আল্লাহকে সাহায্য করা’’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। দুনিয়াতে আল্লাহ মানুষকে ইচ্ছা ও সংকল্পের স্বাধীনতা দান করেছেন। তাদেরকে কুফর বা ঈমানের মধ্য থেকে কোন একটি পথ অবলম্বন করার জন্যও বাধ্য করেননি। এর পরিবর্তে তিনি যুক্তি ও উপদেশের মাধ্যমে মানুষের কাছ থেকে এ স্বতস্ফূর্ত স্বীকৃতি আদায় করতে চেয়েছেন যে, অস্বীকৃতি ও নাফরমানি করার স্বাধীনতা থাকা সত্ত্বেও তার জন্য স্রষ্টার আনুগত্যের পথ অবলম্বন করাই প্রকৃত সত্য এবং এটিই তার সাফল্য ও নাজাতের পথ। এভাবে প্রচার, উপদেশ ও নসীহতের সাহায্যে মানুষকে সত্য ও সঠিক পথে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করাই আল্লাহর কাজ। আর যেসব লোক এ কাজে আল্লাহকে সাহায্য করে, তাদেরকেই আল্লাহর সাহায্যকারী হিসেবে গণ্য করা হয়। আল্লাহর কাছে এটিই মানুষের সর্বোচ্চ মর্যাদা। অপরদিকে কুফর ও ঈমানের সংঘাতে মুমিনরা কখনো একা ও নিঃসঙ্গ হয় না, বরং আল্লাহ নিজেই তাদের পক্ষ হয়ে দাঁড়ান। তাদের বিরুদ্ধে শত্রুদের কৌশল ব্যর্থ করে দেন। অনিষ্টকারীদের অনিষ্টকে তাদের থেকে দূরে সরিয়ে দেন। কাজেই এ আয়াতটি হকপন্থীদের জন্য একটি বড় ধরনের সুসংবাদ। এর কারণ হচ্ছে, হকের বিরুদ্ধে সংঘর্ষে লিপ্ত দ্বিতীয় পক্ষটি বিশ্বাসঘাতক, অকৃতজ্ঞ এবং নিয়ামত অস্বীকারকারী। কাজেই আল্লাহ তাদেরকে অপছন্দ করেন এবং তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত হকপন্থীদেরকে সাহায্য করেন। যারা আল্লাহর বান্দাদেরকে তাওহীদের দিকে আহবান করে এবং সত্য দ্বীন কায়েম করা ও মন্দ জায়গায় ভালোকে বিকশিত করার জন্য প্রচেষ্টা চালায়, তারা মূলত আল্লাহরই সাহায্যকারী। কেননা এগুলো হচ্ছে আল্লাহর কাজ।
আল্লাহ মূসা ও হারূন (আঃ) কে সাহায্য করেছেন :
وَلَقَدْ مَنَنَّا عَلٰى مُوْسٰى وَهَارُوْنَ ‐ وَنَجَّيْنَاهُمَا وَقَوْمَهُمَا مِنَ الْكَرْبِ الْعَظِيْمِ ‐ وَنَصَرْنَاهُمْ فَكَانُوْا هُمُ الْغَالِبِيْنَ
আমি অনুগ্রহ করেছি মূসা ও হারূনের প্রতি। তাদেরকে এবং তাদের জাতিকে বড় কষ্ট থেকে উদ্ধার করেছি। আমি তাদেরকে সাহায্য করেছি, ফলে তারাই বিজয়ী হয়েছে। (সূরা সাফফাত, ১১৪-১১৬)
আল্লাহ ঈসা (আঃ) এর সাথিদেরকে সাহায্য করেছেন :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُوْنُوْاۤ اَنْصَارَ اللهِ كَمَا قَالَ عِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَ لِلْحَوَارِيِّيْنَ مَنْ اَنْصَارِيْۤ اِلَى اللهِؕ قَالَ الْحَوَارِيُّوْنَ نَحْنُ اَنْصَارُ اللّٰهِ فَاٰمَنَتْ طَّآئِفَةٌ مِّنْ ۢبَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ وَكَفَرَتْ طَّآئِفَةٌۚ فَاَيَّدْنَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا عَلٰى عَدُوِّهِمْ فَاَصْبَحُوْا ظَاهِرِيْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর (দ্বীনের) সাহায্যকারী হও, যেমন মারইয়ামের পুত্র ঈসা হাওয়ারীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, কে আল্লাহর পথে আমার সাহায্যকারী হবে? হাওয়ারীরা বলেছিল, আমরাই তো আল্লাহর পথে সাহায্যকারী। অতঃপর বনী ইসরাঈলের একদল ঈমান আনল এবং একদল কুফরী করল। পরে আমি মুমিনদেরকে তাদের শত্রুদের মুকাবিলায় শক্তিশালী করলাম; ফলে তারা বিজয়ী হলো। (সূরা সাফ- ১৪)
বদরের যুদ্ধে আল্লাহর সাহায্যের দৃষ্টান্ত :
وَلَقَدْ نَصَرَكُمُ اللهُ بِبَدْرٍ وَّاَنْتُمْ اَذِلَّةٌۚ فَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ ‐ اِذْ تَقُوْلُ لِلْمُؤْمِنِيْنَ اَلَنْ يَّكْفِيَكُمْ اَنْ يُّمِدَّكُمْ رَبُّكُمْ بِثَلَاثَةِ اٰلَافٍ مِّنَ الْمَلَآئِكَةِ مُنْزَلِيْنَ ‐ بَلٰۤى اِنْ تَصْبِرُوْا وَتَتَّقُوْا وَيَاْتُوْكُمْ مِّنْ فَوْرِهِمْ هٰذَا يُمْدِدْكُمْ رَبُّكُمْ بِخَمْسَةِ اٰلَافٍ مِّنَ الْمَلَآئِكَةِ مُسَوِّمِيْنَ
নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে বদরে সাহায্য করেছিলেন, যখন তোমরা দুর্বল ছিলে। অতএব আল্লাহকে ভয় করো যেন তোমরা কৃতজ্ঞ হও। (স্মরণ করো) যখন তুমি মুমিনদেরকে বলেছিলে, এটা কি তোমাদের জন্য যথেষ্ট নয় যে, তোমাদের প্রতিপালক তিন হাজার ফেরেশতা প্রেরণ করে তোমাদেরকে সাহায্য করবেন? হ্যাঁ, যদি তোমরা ধৈর্যধারণ কর ও সংযমী হও এবং তারা যদি দ্রুত তোমাদের উপর আক্রমণ চালায়, তবে তোমাদের প্রতিপালক চিহ্নিত পাঁচ হাজার ফেরেশতা দ্বারা তোমাদেরকে সাহায্য করবেন। (সূরা আলে ইমরান, ১২৩-১২৫)
আহযাবের যুদ্ধে আল্লাহর সাহায্যের দৃষ্টান্ত :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اذْكُرُوْا نِعْمَةَ اللهِ عَلَيْكُمْ اِذْ جَآءَتْكُمْ جُنُوْدٌ فَاَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ رِيْحًا وَّجُنُوْدًا لَّمْ تَرَوْهَاؕ وَكَانَ اللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرًا
হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর সেই অনুগ্রহকে স্মরণ করো- যখন শত্রু বাহিনী তোমাদের উপর আক্রমণ করেছিল, তখন আমি তাদের উপর প্রেরণ করেছিলাম এক প্রচন্ড বায়ু এবং এমন এক সৈন্যদল, যাদেরকে তোমরা দেখতে পাওনি। (জেনে রেখো) তোমরা যা কর আল্লাহ তা দেখেন। (সূরা আহযাব- ৯)
হুনাইনের যুদ্ধে আল্লাহর সাহায্যের দৃষ্টান্ত :
لَقَدْ نَصَرَكُمُ اللهُ فِيْ مَوَاطِنَ كَثِيْرَةٍ وَّيَوْمَ حُنَيْنٍ اِذْ اَعْجَبَتْكُمْ كَثْرَتُكُمْ فَلَمْ تُغْنِ عَنْكُمْ شَيْئًا وَّضَاقَتْ عَلَيْكُمُ الْاَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ ثُمَّ وَلَّيْتُمْ مُّدْبِرِيْنَ ‐ ثُمَّ اَنْزَلَ اللهُ سَكِيْنَتَهٗ عَلٰى رَسُوْلِهٖ وَعَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ وَاَنْزَلَ جُنُوْدًا لَّمْ تَرَوْهَا وَعَذَّبَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاؕ وَذٰلِكَ جَزَآءُ الْكَافِرِيْنَ
আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করেছেন বহু ক্ষেত্রে এবং হুনাইনের যুদ্ধের দিনে, যখন তোমাদের সংখ্যাধিক্য তোমাদেরকে উৎফুল্ল করেছিল; কিন্তু এটা তোমাদের কোন কাজে আসেনি। আর পৃথিবী বিস্তৃত হওয়া সত্ত্বেও তোমাদের জন্য সংকুচিত হয়ে গিয়েছিল। অবশেষে তোমরা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পলায়ন করেছিলে। অতঃপর আল্লাহ তাঁর নিকট হতে তাঁর রাসূল ও মুমিনদের উপর প্রশান্তি বর্ষণ করলেন এবং এমন এক সৈন্যবাহিনী অবতীর্ণ করলেন, যা তোমরা দেখতে পাওনি। এভাবে তিনি কাফিরদেরকে শাস্তি প্রদান করেন; আর এটাই কাফিরদের কর্মফল। (সূরা তাওবা- ২৫, ২৬)
ছোট দলও বড় দলের উপর বিজয়ী হতে পারে :
كَمْ مِّنْ فِئَةٍ قَلِيْلَةٍ غَلَبَتْ فِئَةً كَثِيْرَةً ۢبِاِذْنِ اللهِؕ وَاللهُ مَعَ الصَّابِرِيْنَ
আল্লাহর হুকুমে কত ছোট দল বড় দলকে পরাজিত করেছে। আর আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথেই রয়েছেন।
(সূরা বাক্বারা- ২৪৯)
সত্যিকার একজন মুমিন দশজন কাফিরকে পরাজিত করতে পারে :
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ حَرِّضِ الْمُؤْمِنِيْنَ عَلَى الْقِتَالِؕ اِنْ يَّكُنْ مِّنْكُمْ عِشْرُوْنَ صَابِرُوْنَ يَغْلِبُوْا مِائَتَيْنِۚ وَاِنْ يَّكُنْ مِّنْكُمْ مِّائَةٌ يَّغْلِبُوْاۤ اَلْفًا مِّنَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِاَنَّهُمْ قَوْمٌ لَّا يَفْقَهُوْنَ
হে নবী! মুমিনদেরকে যুদ্ধের জন্য উদ্বুদ্ধ করো; তোমাদের মধ্যে বিশজন ধৈর্যশীল থাকলে তারা দু’শ জনের উপর বিজয়ী হবে এবং একশ জন থাকলে এক হাজার কাফিরের উপর বিজয়ী হবে। কারণ তারা এমন এক সম্প্রদায় যাদের কোন বোধশক্তি নেই। (সূরা আনফাল- ৬৫)
ব্যাখ্যা : যদিও শারীরিক শক্তির দিক দিয়ে উভয়ের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই, তবুও যে ব্যক্তি সত্যের জ্ঞান রাখে, নিজের অস্তিত্ব, মৃত্যুর তাৎপর্য ও মৃত্যুর পরের জীবনের তাৎপর্য ভালোভাবে উপলব্ধি করে এবং হক ও বাতিলের পার্থক্য সঠিকভাবে জানে, তার শক্তির ধারে কাছেও এমনসব লোক পৌঁছতে পারবে না, যারা জাতীয়তাবাদ বা শ্রেণি সংগ্রামের চেতনা নিয়ে কর্মক্ষেত্রে নেমে আসে। এজন্যই বলা হয়েছে, একজন বোধশক্তিসম্পন্ন সজাগ মুমিন ও একজন কাফিরের মধ্যে সত্যের জ্ঞান ও সত্য সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণেই প্রকৃতিগতভাবে এক ও দশের অনুপাত সৃষ্টি হয়।
শেষ পর্যন্ত ইসলামপন্থীরাই বিজয়ী হবে :
وَلَقَدْ سَبَقَتْ كَلِمَتُنَا لِعِبَادِنَا الْمُرْسَلِيْنَ ‐ اِنَّهُمْ لَهُمُ الْمَنْصُوْرُوْنَ ‐ وَاِنَّ جُنْدَنَا لَهُمُ الْغَالِبُوْنَ
আমার রাসূলদের সম্পর্কে আমার এ কথা আগেই নির্ধারিত হয়েছে যে, অবশ্যই তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে এবং আমার বাহিনীই বিজয় লাভ করবে। (সূরা সাফ্ফাত, ১৭১-১৭৩)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর সেনাদল বলতে এমন ঈমানদারদেরকে বুঝানো হয়েছে, যারা আল্লাহর রাসূলের আনুগত্য করে এবং তার সহযোগী হয়। তাছাড়া এমন অদৃশ্য শক্তিও এর অন্তর্ভুক্ত হয়, যার মাধ্যমে মহান আল্লাহ সত্যপন্থীদেরকে সাহায্য-সহায়তা দান করে থাকেন।
كَتَبَ اللهُ لَاَغْلِبَنَّ اَنَاْ وَرُسُلِيْؕ اِنَّ اللهَ قَوِيٌّ عَزِيْزٌ
আল্লাহ লিখে রেখেছেন যে, আমি এবং আমার রাসূলগণ অবশ্যই বিজয় লাভ করব। নিশ্চয় আল্লাহ মহাশক্তিধর ও মহাপ্রতাপশালী। (সূরা মুজাদালা- ২১)
শহীদরা মরেও অমর থাকে :
وَلَا تَقُوْلُوْا لِمَنْ يُّقْتَلُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ اَمْوَاتٌؕ بَلْ اَحْيَآءٌ وَّلٰكِنْ لَّا تَشْعُرُوْنَ
যারা আল্লাহর পথে শহীদ হয়েছে তোমরা তাদেরকে মৃত বলো না বরং তারা জীবিত; কিন্তু তোমরা তা অনুভব করতে পার না। (সূরা বাক্বারা- ১৫৪)
ব্যাখ্যা : মৃত্যু শব্দটি মানুষের মনে ভীতি সঞ্চার করে। মৃত্যুর কথা শুনে সে সাহস ও শক্তি হারিয়ে ফেলে। তাই আল্লাহর পথে শহীদদেরকে মৃত বলতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ তাদেরকে মৃত বললে মুসলিমদের মধ্যে জিহাদ ও প্রাণ উৎসর্গ করার প্রেরণা স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেবে। এর পরিবর্তে তাদের মনে এ চিন্তা বদ্ধমূল করতে বলা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে প্রাণ দেয় সে আসলে চিরন্তন জীবন লাভ করে। এ চিন্তাটি প্রকৃত ব্যাপারের সাথে পূর্ণ সামঞ্জস্যশীল। এ ধারণা পোষণের ফলে সাহস ও শক্তি ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে। তারা মনে মনে এ কথা স্বীকার করে নেয় যে, আমরা আল্লাহর কর্তৃত্বাধীন। তাই আল্লাহর পথে আমাদের যেসব জিনিস কুরবানী করা হয়, তা সঠিক ক্ষেত্রেই ব্যয় হয়। আর ‘আমাদেরকে আল্লাহর দিকেই ফিরে যেতে হবে’- এর অর্থ হচ্ছে, চিরকাল আমরা এ দুনিয়ায় থাকতে পারব না। অবশেষে একদিন আল্লাহর কাছেই ফিরে যেতে হবে। কাজেই তাঁর পথে লড়াই করে প্রাণ দান করে তাঁর কাছে চলে যাওয়াটাই তো ভালো। এভাবে মৃত্যুবরণ করে তাঁর কাছে চলে যাওয়াটা স্বাভাবিকভাবে অথবা কোন দুর্ঘটনার শিকার হয়ে বা রোগাক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে তাঁর কাছে যাওয়ার চেয়ে বহুগুণ শ্রেয়।
তারা আল্লাহর কাছে বিশেষভাবে রিযিক পায় :
وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِيْنَ قُتِلُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ اَمْوَاتًاؕ بَلْ اَحْيَآءٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُوْنَ
যারা আল্লাহর পথে শহীদ হয়েছে, তাদেরকে মৃত বলে ধারণা করো না; বরং তারা জীবিত, তারা তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে রিযিকপ্রাপ্ত হয়। (সূরা আলে ইমরান- ১৬৯)
তারা আল্লাহর নিয়ামত পেয়ে আনন্দ লাভ করে :
فَرِحِيْنَ بِمَاۤ اٰتَاهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٖ وَيَسْتَبْشِرُوْنَ بِالَّذِيْنَ لَمْ يَلْحَقُوْا بِهِمْ مِّنْ خَلْفِهِمْ اَلَّا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ ‐ يَسْتَبْشِرُوْنَ بِنِعْمَةٍ مِّنَ اللهِ وَفَضْلٍ وَّاَنَّ اللهَ لَا يُضِيْعُ اَجْرَ الْمُؤْمِنِيْنَ
আল্লাহ তাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহ হতে যা দান করেছেন, তাতেই তারা সন্তুষ্ট। আর যারা পেছনে রয়ে গেছে এবং এখনও তাদের সাথে মিলিত হয়নি তাদের এ অবস্থার প্রতিও তারা সন্তুষ্ট হয় যে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না। তারা আল্লাহর নিকট হতে অনুগ্রহ ও নিয়ামত লাভ করার কারণে আনন্দিত হয়। নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্বাসীদের প্রতিদান বিনষ্ট করেন না। (সূরা আলে ইমরান- ১৭০, ১৭১)
ব্যাখ্যা : মুসনাদে আহমাদে নবী ﷺ এর একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। যার বিষয়বস্তু হচ্ছে, যে ব্যক্তি ভালো কাজ করে এ দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়, সে আল্লাহর কাছে এমন আরাম-আয়েশের জীবন লাভ করে যে, তারপর এ দুনিয়ায় ফিরে আসার কোন আকাঙ্ক্ষাই সে করে না। কিন্তু শহীদরা ব্যতিক্রম। তারা আকাঙ্ক্ষা করেন যে, তাদেরকে যেন পুনরায় দুনিয়ায় পাঠানো হয় এবং তারা আল্লাহর পথে জীবন দিতে গিয়ে যে ধরনের আনন্দ ও উৎফুল্লতা অনুভব করেছিলেন, তা যেন আবার অনুভব করতে পারেন। (মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৪৭৬)
শহীদরা আল্লাহর ক্ষমা লাভ করে :
وَلَئِنْ قُتِلْتُمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ اَوْ مُتُّمْ لَمَغْفِرَةٌ مِّنَ اللهِ وَرَحْمَةٌ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُوْنَ
আর যদি তোমরা আল্লাহর পথে শহীদ হও অথবা মৃত্যুমুখে পতিত হও, তবে তারা যা সঞ্চয় করে তার চেয়ে আল্লাহর ক্ষমা ও দয়া অতি উত্তম। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৭)
তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার :
وَمَنْ يُّقَاتِلْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَيُقْتَلْ اَوْ يَغْلِبْ فَسَوْفَ نُؤْتِيْهِ اَجْرًا عَظِيْمًا
যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে, সে নিহত হোক অথবা বিজয়ী হোক, অচিরেই আমি তাকে মহাপুরস্কার দান করব। (সূরা নিসা- ৭৪)
وَالَّذِيْنَ قُتِلُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَلَنْ يُّضِلَّ اَعْمَالَهُمْ ‐ سَيَهْدِيْهِمْ وَيُصْلِحُ بَالَهُمْ ‐ وَيُدْخِلُهُمُ الْجَنَّةَ عَرَّفَهَا لَهُمْ
আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হবে আল্লাহ তাদের আমলকে কখনো বিফল করবেন না। তিনি তাদেরকে সঠিক পথে চালাবেন এবং তাদের অবস্থা আরো ভালো করে দেবেন। আর তাদেরকে ঐ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার কথা তিনি তাদেরকে (আগেই) জানিয়ে দিয়েছেন। (সূরা মুহাম্মাদ, ৪-৬)
হাশরের দিন আল্লাহ তাদেরকে নূর দেবেন :
وَالشُّهَدَآءُ عِنْدَ رَبِّهِمْ لَهُمْ اَجْرُهُمْ وَنُوْرُهُمْ
শহীদদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে তাদের পুরস্কার এবং নূর। (সূরা হাদীদ- ১৯)
وَلَا تَقُوْلُوْا لِمَنْ يُّقْتَلُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ اَمْوَاتٌؕ بَلْ اَحْيَآءٌ وَّلٰكِنْ لَّا تَشْعُرُوْنَ
যারা আল্লাহর পথে শহীদ হয়েছে তোমরা তাদেরকে মৃত বলো না বরং তারা জীবিত; কিন্তু তোমরা তা অনুভব করতে পার না। (সূরা বাক্বারা- ১৫৪)
ব্যাখ্যা : মৃত্যু শব্দটি মানুষের মনে ভীতি সঞ্চার করে। মৃত্যুর কথা শুনে সে সাহস ও শক্তি হারিয়ে ফেলে। তাই আল্লাহর পথে শহীদদেরকে মৃত বলতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ তাদেরকে মৃত বললে মুসলিমদের মধ্যে জিহাদ ও প্রাণ উৎসর্গ করার প্রেরণা স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেবে। এর পরিবর্তে তাদের মনে এ চিন্তা বদ্ধমূল করতে বলা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে প্রাণ দেয় সে আসলে চিরন্তন জীবন লাভ করে। এ চিন্তাটি প্রকৃত ব্যাপারের সাথে পূর্ণ সামঞ্জস্যশীল। এ ধারণা পোষণের ফলে সাহস ও শক্তি ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে। তারা মনে মনে এ কথা স্বীকার করে নেয় যে, আমরা আল্লাহর কর্তৃত্বাধীন। তাই আল্লাহর পথে আমাদের যেসব জিনিস কুরবানী করা হয়, তা সঠিক ক্ষেত্রেই ব্যয় হয়। আর ‘আমাদেরকে আল্লাহর দিকেই ফিরে যেতে হবে’- এর অর্থ হচ্ছে, চিরকাল আমরা এ দুনিয়ায় থাকতে পারব না। অবশেষে একদিন আল্লাহর কাছেই ফিরে যেতে হবে। কাজেই তাঁর পথে লড়াই করে প্রাণ দান করে তাঁর কাছে চলে যাওয়াটাই তো ভালো। এভাবে মৃত্যুবরণ করে তাঁর কাছে চলে যাওয়াটা স্বাভাবিকভাবে অথবা কোন দুর্ঘটনার শিকার হয়ে বা রোগাক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে তাঁর কাছে যাওয়ার চেয়ে বহুগুণ শ্রেয়।
তারা আল্লাহর কাছে বিশেষভাবে রিযিক পায় :
وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِيْنَ قُتِلُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ اَمْوَاتًاؕ بَلْ اَحْيَآءٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُوْنَ
যারা আল্লাহর পথে শহীদ হয়েছে, তাদেরকে মৃত বলে ধারণা করো না; বরং তারা জীবিত, তারা তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে রিযিকপ্রাপ্ত হয়। (সূরা আলে ইমরান- ১৬৯)
তারা আল্লাহর নিয়ামত পেয়ে আনন্দ লাভ করে :
فَرِحِيْنَ بِمَاۤ اٰتَاهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٖ وَيَسْتَبْشِرُوْنَ بِالَّذِيْنَ لَمْ يَلْحَقُوْا بِهِمْ مِّنْ خَلْفِهِمْ اَلَّا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ ‐ يَسْتَبْشِرُوْنَ بِنِعْمَةٍ مِّنَ اللهِ وَفَضْلٍ وَّاَنَّ اللهَ لَا يُضِيْعُ اَجْرَ الْمُؤْمِنِيْنَ
আল্লাহ তাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহ হতে যা দান করেছেন, তাতেই তারা সন্তুষ্ট। আর যারা পেছনে রয়ে গেছে এবং এখনও তাদের সাথে মিলিত হয়নি তাদের এ অবস্থার প্রতিও তারা সন্তুষ্ট হয় যে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না। তারা আল্লাহর নিকট হতে অনুগ্রহ ও নিয়ামত লাভ করার কারণে আনন্দিত হয়। নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্বাসীদের প্রতিদান বিনষ্ট করেন না। (সূরা আলে ইমরান- ১৭০, ১৭১)
ব্যাখ্যা : মুসনাদে আহমাদে নবী ﷺ এর একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। যার বিষয়বস্তু হচ্ছে, যে ব্যক্তি ভালো কাজ করে এ দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়, সে আল্লাহর কাছে এমন আরাম-আয়েশের জীবন লাভ করে যে, তারপর এ দুনিয়ায় ফিরে আসার কোন আকাঙ্ক্ষাই সে করে না। কিন্তু শহীদরা ব্যতিক্রম। তারা আকাঙ্ক্ষা করেন যে, তাদেরকে যেন পুনরায় দুনিয়ায় পাঠানো হয় এবং তারা আল্লাহর পথে জীবন দিতে গিয়ে যে ধরনের আনন্দ ও উৎফুল্লতা অনুভব করেছিলেন, তা যেন আবার অনুভব করতে পারেন। (মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৪৭৬)
শহীদরা আল্লাহর ক্ষমা লাভ করে :
وَلَئِنْ قُتِلْتُمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ اَوْ مُتُّمْ لَمَغْفِرَةٌ مِّنَ اللهِ وَرَحْمَةٌ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُوْنَ
আর যদি তোমরা আল্লাহর পথে শহীদ হও অথবা মৃত্যুমুখে পতিত হও, তবে তারা যা সঞ্চয় করে তার চেয়ে আল্লাহর ক্ষমা ও দয়া অতি উত্তম। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৭)
তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার :
وَمَنْ يُّقَاتِلْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَيُقْتَلْ اَوْ يَغْلِبْ فَسَوْفَ نُؤْتِيْهِ اَجْرًا عَظِيْمًا
যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে, সে নিহত হোক অথবা বিজয়ী হোক, অচিরেই আমি তাকে মহাপুরস্কার দান করব। (সূরা নিসা- ৭৪)
وَالَّذِيْنَ قُتِلُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَلَنْ يُّضِلَّ اَعْمَالَهُمْ ‐ سَيَهْدِيْهِمْ وَيُصْلِحُ بَالَهُمْ ‐ وَيُدْخِلُهُمُ الْجَنَّةَ عَرَّفَهَا لَهُمْ
আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হবে আল্লাহ তাদের আমলকে কখনো বিফল করবেন না। তিনি তাদেরকে সঠিক পথে চালাবেন এবং তাদের অবস্থা আরো ভালো করে দেবেন। আর তাদেরকে ঐ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার কথা তিনি তাদেরকে (আগেই) জানিয়ে দিয়েছেন। (সূরা মুহাম্মাদ, ৪-৬)
হাশরের দিন আল্লাহ তাদেরকে নূর দেবেন :
وَالشُّهَدَآءُ عِنْدَ رَبِّهِمْ لَهُمْ اَجْرُهُمْ وَنُوْرُهُمْ
শহীদদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে তাদের পুরস্কার এবং নূর। (সূরা হাদীদ- ১৯)
বন্দীদের ব্যাপারে প্রাথমিক বিধান :
فَاِمَّا مَنًّا ۢبَعْدُ وَاِمَّا فِدَآءً حَتّٰى تَضَعَ الْحَرْبُ اَوْزَارَهَا
যুদ্ধ সম্পূর্ণ বন্ধ হওয়ার পর তোমরা ইচ্ছা করলে বন্দীদের প্রতি দয়া করবে বা ফিদিয়া নিয়ে ছেড়ে দেবে।
(সূরা মুহাম্মাদ- ৪)
বন্দীদের ব্যাপারে পরবর্তী বিধান :
مَا كَانَ لِنَبِيٍّ اَنْ يَّكُوْنَ لَهٗۤ اَسْرٰى حَتّٰى يُثْخِنَ فِى الْاَرْضِؕ تُرِيْدُوْنَ عَرَضَ الدُّنْيَاۗ وَاللهُ يُرِيْدُ الْاٰخِرَةَؕ وَاللهُ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
দেশে ব্যাপকভাবে শত্রুকে পরাভূত না করা পর্যন্ত বন্দীদেরকে আটকে রাখা কোন নবীর জন্য সঙ্গত নয়। তোমরা শুধু পার্থিব সম্পদের আশা পোষণ কর, কিন্তু আল্লাহ পরকালের কল্যাণ চান; আর আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা আনফাল- ৬৭)
ব্যাখ্যা : বদরের যুদ্ধে কুরাইশদের যেসব লোক বন্দী হয়েছিল তাদের সাথে কেমন ব্যবহার করা হবে- এ নিয়ে পরামর্শ হয়। আবু বকর (রাঃ) পরামর্শ দেন, তাদের কাছ থেকে ফিদিয়া (মুক্তিপণ) নিয়ে ছেড়ে দেয়া হোক। ওমর (রাঃ) বলেন, তাদেরকে হত্যা করা হোক। অবশেষে নবী ﷺ তাঁর নম্র স্বভাবের কারণে আবু বকর (রাঃ) এর মতটিই গ্রহণ করেন। অথচ ওমর (রাঃ) এর মতটিই অধিক উত্তম ছিল। ফলে আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করেন।
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِّمَنْ فِۤيْ اَيْدِيْكُمْ مِّنَ الْاَسْرٰۤى اِنْ يَّعْلَمِ اللهُ فِيْ قُلُوْبِكُمْ خَيْرًا يُّؤْتِكُمْ خَيْرًا مِّمَّاۤ اُخِذَ مِنْكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْؕ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ ‐ وَاِنْ يُّرِيْدُوْا خِيَانَتَكَ فَقَدْ خَانُوا اللهَ مِنْ قَبْلُ فَاَمْكَنَ مِنْهُمْؕ وَاللهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ
হে নবী! তোমাদের হস্তগত যুদ্ধবন্দীদেরকে বলো, আল্লাহ যদি তোমাদের হৃদয়ে ভালো কিছু দেখেন, তবে তোমাদের নিকট হতে যা নেয়া হয়েছে তার চেয়ে আরো উত্তম কিছু দান করবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন; আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। তারা তোমার সাথে বিশ্বাস ভঙ্গ করতে চাইলে, তারা তো ইতোপূর্বে আল্লাহর সাথেও বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে। অতঃপর তিনি (তোমাদেরকে) তাদের উপর শক্তিশালী করেছেন; আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা আনফাল- ৭০, ৭১)
فَاِمَّا مَنًّا ۢبَعْدُ وَاِمَّا فِدَآءً حَتّٰى تَضَعَ الْحَرْبُ اَوْزَارَهَا
যুদ্ধ সম্পূর্ণ বন্ধ হওয়ার পর তোমরা ইচ্ছা করলে বন্দীদের প্রতি দয়া করবে বা ফিদিয়া নিয়ে ছেড়ে দেবে।
(সূরা মুহাম্মাদ- ৪)
বন্দীদের ব্যাপারে পরবর্তী বিধান :
مَا كَانَ لِنَبِيٍّ اَنْ يَّكُوْنَ لَهٗۤ اَسْرٰى حَتّٰى يُثْخِنَ فِى الْاَرْضِؕ تُرِيْدُوْنَ عَرَضَ الدُّنْيَاۗ وَاللهُ يُرِيْدُ الْاٰخِرَةَؕ وَاللهُ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
দেশে ব্যাপকভাবে শত্রুকে পরাভূত না করা পর্যন্ত বন্দীদেরকে আটকে রাখা কোন নবীর জন্য সঙ্গত নয়। তোমরা শুধু পার্থিব সম্পদের আশা পোষণ কর, কিন্তু আল্লাহ পরকালের কল্যাণ চান; আর আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা আনফাল- ৬৭)
ব্যাখ্যা : বদরের যুদ্ধে কুরাইশদের যেসব লোক বন্দী হয়েছিল তাদের সাথে কেমন ব্যবহার করা হবে- এ নিয়ে পরামর্শ হয়। আবু বকর (রাঃ) পরামর্শ দেন, তাদের কাছ থেকে ফিদিয়া (মুক্তিপণ) নিয়ে ছেড়ে দেয়া হোক। ওমর (রাঃ) বলেন, তাদেরকে হত্যা করা হোক। অবশেষে নবী ﷺ তাঁর নম্র স্বভাবের কারণে আবু বকর (রাঃ) এর মতটিই গ্রহণ করেন। অথচ ওমর (রাঃ) এর মতটিই অধিক উত্তম ছিল। ফলে আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করেন।
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِّمَنْ فِۤيْ اَيْدِيْكُمْ مِّنَ الْاَسْرٰۤى اِنْ يَّعْلَمِ اللهُ فِيْ قُلُوْبِكُمْ خَيْرًا يُّؤْتِكُمْ خَيْرًا مِّمَّاۤ اُخِذَ مِنْكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْؕ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ ‐ وَاِنْ يُّرِيْدُوْا خِيَانَتَكَ فَقَدْ خَانُوا اللهَ مِنْ قَبْلُ فَاَمْكَنَ مِنْهُمْؕ وَاللهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ
হে নবী! তোমাদের হস্তগত যুদ্ধবন্দীদেরকে বলো, আল্লাহ যদি তোমাদের হৃদয়ে ভালো কিছু দেখেন, তবে তোমাদের নিকট হতে যা নেয়া হয়েছে তার চেয়ে আরো উত্তম কিছু দান করবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন; আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। তারা তোমার সাথে বিশ্বাস ভঙ্গ করতে চাইলে, তারা তো ইতোপূর্বে আল্লাহর সাথেও বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে। অতঃপর তিনি (তোমাদেরকে) তাদের উপর শক্তিশালী করেছেন; আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা আনফাল- ৭০, ৭১)
গনিমতের মাল মুসলিমদের জন্য হালাল :
فَكُلُوْا مِمَّا غَنِمْتُمْ حَلَالًا طَيِّبًا وَّاتَّقُوا اللهَؕ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
অতএব যা কিছু তোমরা গনিমত হিসেবে লাভ করেছ, তা বৈধ ও উত্তম হিসেবে ভোগ করো এবং আল্লাহকে ভয় করো; নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা আনফাল- ৬৯)
يَسْاَلُوْنَكَ عَنِ الْاَنْفَالِؕ قُلِ الْاَنْفَالُ لِلّٰهِ وَالرَّسُوْلِۚ فَاتَّقُوا اللهَ وَاَصْلِحُوْا ذَاتَ بَيْنِكُمْۚ وَاَطِيْعُوا اللهَ وَرَسُوْلَهٗۤ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
লোকেরা তোমাকে যুদ্ধলব্ধ সম্পদ সম্পর্কে প্রশ্ন করে। তাদেরকে বলে দাও, যুদ্ধলব্ধ সম্পদ আল্লাহ এবং রাসূলের জন্য। সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো এবং নিজেদের পারস্পরিক বিষয়ে সংশোধন করে নাও। আর তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো, যদি তোমরা মুমিন হও। (সূরা আনফাল- ১)
গনিমতের মাল চুরি করার ভয়াবহ পরিণাম :
وَمَا كَانَ لِنَبِيٍّ اَنْ يَّغُلَّؕ وَمَنْ يَّغْلُلْ يَاْتِ بِمَا غَلَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِۚ ثُمَّ تُوَفّٰى كُلُّ نَفْسٍ مَّا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُوْنَ
কোন নবীর পক্ষে আত্মসাৎকরণ শোভনীয় নয়। যে ব্যক্তি আত্মসাৎ করেছে, সে যা আত্মসাৎ করেছে কিয়ামত দিবসে তা নিয়ে হাজির হবে। অতঃপর প্রত্যেক ব্যক্তি যা অর্জন করেছে তা তাকে পূর্ণরূপে দেয়া হবে এবং তাদের উপর কোন যুলুম করা হবে না। (সূরা আলে ইমরান- ১৬১)
গনিমতের মাল বণ্টনের নিয়ম :
وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّمَا غَنِمْتُمْ مِّنْ شَيْءٍ فَاَنَّ لِلّٰهِ خُمُسَهٗ وَلِلرَّسُوْلِ وَلِذِى الْقُرْبٰى وَالْيَتَامٰى وَالْمَسَاكِيْنِ وَابْنِ السَّبِيْلِ
জেনে রেখো, যুদ্ধে তোমরা যা লাভ কর তার এক-পঞ্চমাংশ আল্লাহর ও (তাঁর) রাসূল, (রাসূলের) স্বজন, ইয়াতীম, মিসকীন এবং পথচারীদের জন্য। (সূরা আনফাল- ৪১)
ফাই বা বিনা যুদ্ধে প্রাপ্ত সম্পদ বন্টনের নিয়ম :
مَاۤ اَفَآءَ اللهُ عَلٰى رَسُوْلِهٖ مِنْ اَهْلِ الْقُرٰى فَلِلّٰهِ وَلِلرَّسُوْلِ وَلِذِى الْقُرْبٰى وَالْيَتَامٰى وَالْمَسَاكِيْنِ وَابْنِ السَّبِيْلِ كَيْ لَا يَكُوْنَ دُوْلَةً ۢبَيْنَ الْاَغْنِيَآءِ مِنْكُمْ
আল্লাহ এই জনপদবাসীর নিকট হতে তাঁর রাসূলকে যা কিছু দিয়েছেন তা আল্লাহর, তাঁর রাসূলের, তাঁর (রাসূলের) স্বজনদের এবং ইয়াতীমদের, অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরদের জন্য; যাতে করে তোমাদের মধ্যে যারা ধনী কেবল তাদের মধ্যেই ঐশ্বর্য আবর্তন না করে। (সূরা হাশর- ৭)
فَكُلُوْا مِمَّا غَنِمْتُمْ حَلَالًا طَيِّبًا وَّاتَّقُوا اللهَؕ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
অতএব যা কিছু তোমরা গনিমত হিসেবে লাভ করেছ, তা বৈধ ও উত্তম হিসেবে ভোগ করো এবং আল্লাহকে ভয় করো; নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা আনফাল- ৬৯)
يَسْاَلُوْنَكَ عَنِ الْاَنْفَالِؕ قُلِ الْاَنْفَالُ لِلّٰهِ وَالرَّسُوْلِۚ فَاتَّقُوا اللهَ وَاَصْلِحُوْا ذَاتَ بَيْنِكُمْۚ وَاَطِيْعُوا اللهَ وَرَسُوْلَهٗۤ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
লোকেরা তোমাকে যুদ্ধলব্ধ সম্পদ সম্পর্কে প্রশ্ন করে। তাদেরকে বলে দাও, যুদ্ধলব্ধ সম্পদ আল্লাহ এবং রাসূলের জন্য। সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো এবং নিজেদের পারস্পরিক বিষয়ে সংশোধন করে নাও। আর তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো, যদি তোমরা মুমিন হও। (সূরা আনফাল- ১)
গনিমতের মাল চুরি করার ভয়াবহ পরিণাম :
وَمَا كَانَ لِنَبِيٍّ اَنْ يَّغُلَّؕ وَمَنْ يَّغْلُلْ يَاْتِ بِمَا غَلَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِۚ ثُمَّ تُوَفّٰى كُلُّ نَفْسٍ مَّا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُوْنَ
কোন নবীর পক্ষে আত্মসাৎকরণ শোভনীয় নয়। যে ব্যক্তি আত্মসাৎ করেছে, সে যা আত্মসাৎ করেছে কিয়ামত দিবসে তা নিয়ে হাজির হবে। অতঃপর প্রত্যেক ব্যক্তি যা অর্জন করেছে তা তাকে পূর্ণরূপে দেয়া হবে এবং তাদের উপর কোন যুলুম করা হবে না। (সূরা আলে ইমরান- ১৬১)
গনিমতের মাল বণ্টনের নিয়ম :
وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّمَا غَنِمْتُمْ مِّنْ شَيْءٍ فَاَنَّ لِلّٰهِ خُمُسَهٗ وَلِلرَّسُوْلِ وَلِذِى الْقُرْبٰى وَالْيَتَامٰى وَالْمَسَاكِيْنِ وَابْنِ السَّبِيْلِ
জেনে রেখো, যুদ্ধে তোমরা যা লাভ কর তার এক-পঞ্চমাংশ আল্লাহর ও (তাঁর) রাসূল, (রাসূলের) স্বজন, ইয়াতীম, মিসকীন এবং পথচারীদের জন্য। (সূরা আনফাল- ৪১)
ফাই বা বিনা যুদ্ধে প্রাপ্ত সম্পদ বন্টনের নিয়ম :
مَاۤ اَفَآءَ اللهُ عَلٰى رَسُوْلِهٖ مِنْ اَهْلِ الْقُرٰى فَلِلّٰهِ وَلِلرَّسُوْلِ وَلِذِى الْقُرْبٰى وَالْيَتَامٰى وَالْمَسَاكِيْنِ وَابْنِ السَّبِيْلِ كَيْ لَا يَكُوْنَ دُوْلَةً ۢبَيْنَ الْاَغْنِيَآءِ مِنْكُمْ
আল্লাহ এই জনপদবাসীর নিকট হতে তাঁর রাসূলকে যা কিছু দিয়েছেন তা আল্লাহর, তাঁর রাসূলের, তাঁর (রাসূলের) স্বজনদের এবং ইয়াতীমদের, অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরদের জন্য; যাতে করে তোমাদের মধ্যে যারা ধনী কেবল তাদের মধ্যেই ঐশ্বর্য আবর্তন না করে। (সূরা হাশর- ৭)
যারা অন্ধ, খোঁড়া ও রোগী :
لَيْسَ عَلَى الْاَعْمٰى حَرَجٌ وَّلَا عَلَى الْاَعْرَجِ حَرَجٌ وَّلَا عَلَى الْمَرِيْضِ حَرَجٌ
অবশ্য যদি অন্ধ, খোঁড়া ও রোগী জিহাদে না আসে, তাহলে তাদের কোন দোষ নেই। (সূরা ফাতহ- ১৭)
যাদের পথখরচ নেই :
لَيْسَ عَلَى الضُّعَفَآءِ وَلَا عَلَى الْمَرْضٰى وَلَا عَلَى الَّذِيْنَ لَا يَجِدُوْنَ مَا يُنْفِقُوْنَ حَرَجٌ اِذَا نَصَحُوْا لِلّٰهِ وَرَسُوْلِهٖؕ مَا عَلَى الْمُحْسِنِيْنَ مِنْ سَبِيْلٍؕ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
যারা দুর্বল, অসুস্থ এবং যারা অর্থ-সম্পদ পায় না, তাদের কোন অপরাধ নেই, যদি তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি নিষ্ঠাবান থাকে। আর যারা সৎকর্মপরায়ণ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোন কারণ নেই; আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা তাওবা- ৯১)
যারা বাহন পায় না :
وَلَا عَلَى الَّذِيْنَ اِذَا مَاۤ اَتَوْكَ لِتَحْمِلَهُمْ قُلْتَ لَاۤ اَجِدُ مَاۤ اَحْمِلُكُمْ عَلَيْهِ تَوَلَّوْا وَاَعْيُنُهُمْ تَفِيْضُ مِنَ الدَّمْعِ حَزَنًا اَلَّا يَجِدُوْا مَا يُنْفِقُوْنَ
তাদেরও কোন অপরাধ নেই, যারা তোমার নিকট বাহনের জন্য আসলে তুমি বলেছিলে, আমি তোমাদের জন্য কোন বাহন পাচ্ছি না। অতঃপর তারা অর্থ ব্যয়ে অক্ষম হওয়ার কারণে দুঃখে চোখের পানি ফেলে ফিরে গেল। (সূরা তাওবা- ৯২)
ব্যাখ্যা : যারা জিহাদ করার জন্য সর্বক্ষণ প্রস্তুত থাকে, তারা যদি কোন সত্যিকার অক্ষমতার কারণে অথবা উপায়-উপকরণ বা মাধ্যম যোগাড় না হওয়ার দরুন জিহাদ করতে না পারে, তাহলে মনে ঠিক তেমনি কষ্ট পায় যেমন কোন ব্যক্তির রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে গেলে মনে কষ্ট পায়।
لَيْسَ عَلَى الْاَعْمٰى حَرَجٌ وَّلَا عَلَى الْاَعْرَجِ حَرَجٌ وَّلَا عَلَى الْمَرِيْضِ حَرَجٌ
অবশ্য যদি অন্ধ, খোঁড়া ও রোগী জিহাদে না আসে, তাহলে তাদের কোন দোষ নেই। (সূরা ফাতহ- ১৭)
যাদের পথখরচ নেই :
لَيْسَ عَلَى الضُّعَفَآءِ وَلَا عَلَى الْمَرْضٰى وَلَا عَلَى الَّذِيْنَ لَا يَجِدُوْنَ مَا يُنْفِقُوْنَ حَرَجٌ اِذَا نَصَحُوْا لِلّٰهِ وَرَسُوْلِهٖؕ مَا عَلَى الْمُحْسِنِيْنَ مِنْ سَبِيْلٍؕ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
যারা দুর্বল, অসুস্থ এবং যারা অর্থ-সম্পদ পায় না, তাদের কোন অপরাধ নেই, যদি তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি নিষ্ঠাবান থাকে। আর যারা সৎকর্মপরায়ণ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোন কারণ নেই; আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা তাওবা- ৯১)
যারা বাহন পায় না :
وَلَا عَلَى الَّذِيْنَ اِذَا مَاۤ اَتَوْكَ لِتَحْمِلَهُمْ قُلْتَ لَاۤ اَجِدُ مَاۤ اَحْمِلُكُمْ عَلَيْهِ تَوَلَّوْا وَاَعْيُنُهُمْ تَفِيْضُ مِنَ الدَّمْعِ حَزَنًا اَلَّا يَجِدُوْا مَا يُنْفِقُوْنَ
তাদেরও কোন অপরাধ নেই, যারা তোমার নিকট বাহনের জন্য আসলে তুমি বলেছিলে, আমি তোমাদের জন্য কোন বাহন পাচ্ছি না। অতঃপর তারা অর্থ ব্যয়ে অক্ষম হওয়ার কারণে দুঃখে চোখের পানি ফেলে ফিরে গেল। (সূরা তাওবা- ৯২)
ব্যাখ্যা : যারা জিহাদ করার জন্য সর্বক্ষণ প্রস্তুত থাকে, তারা যদি কোন সত্যিকার অক্ষমতার কারণে অথবা উপায়-উপকরণ বা মাধ্যম যোগাড় না হওয়ার দরুন জিহাদ করতে না পারে, তাহলে মনে ঠিক তেমনি কষ্ট পায় যেমন কোন ব্যক্তির রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে গেলে মনে কষ্ট পায়।
জিহাদ না করার জন্য তিরস্কার :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَا لَكُمْ اِذَا قِيْلَ لَكُمُ انْفِرُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ اثَّاقَلْتُمْ اِلَى الْاَرْضِؕ اَرَضِيْتُمْ بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا مِنَ الْاٰخِرَةِۚ فَمَا مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا فِى الْاٰخِرَةِ اِلَّا قَلِيْلٌ
হে মুমিনগণ! তোমাদের কী হলো যে, যখন তোমাদেরকে আল্লাহর পথে অভিযানে বের হতে বলা হয় তখন তোমরা ভারাক্রান্ত হয়ে জমিনকে আঁকড়ে ধর? তোমরা কি আখিরাতের পরিবর্তে পার্থিব জীবনেই সন্তুষ্ট? (সাবধান) আখিরাতের তুলনায় পার্থিব জীবনের ভোগের উপকরণ খুবই সামান্য। (সূরা তাওবা- ৩৮)
জিহাদ না করলে আযাব ভোগ করতে হবে :
اِلَّا تَنْفِرُوْا يُعَذِّبْكُمْ عَذَابًا اَلِيْمًا وَّيَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ وَلَا تَضُرُّوْهُ شَيْئًاؕ وَاللهُ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
যদি তোমরা অভিযানে বের না হও, তবে তিনি তোমাদেরকে মর্মান্তিক শাস্তি দেবেন এবং অপর জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন। আর তোমরা তাঁর কোন ক্ষতি করতে পারবে না; আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা তাওবা- ৩৯)
জান্নাতে যেতে হলে জিহাদ করতে হবে :
اَمْ حَسِبْتُمْ اَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ اللهُ الَّذِيْنَ جَاهَدُوْا مِنْكُمْ وَيَعْلَمَ الصَّابِرِيْنَ
তোমরা কি ধারণা করছ যে, তোমরা এমনিতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ আল্লাহ জেনে নেবেন না যে, তোমাদের মধ্য হতে কারা জিহাদ করে ও কারা ধৈর্যশীল? (সূরা আলে ইমরান- ১৪২)
জিহাদ না করলে আল্লাহর সতর্কবাণী :
قُلْ اِنْ كَانَ اٰبَآؤُكُمْ وَاَبْنَآؤُكُمْ وَاِخْوَانُكُمْ وَاَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيْرَتُكُمْ وَاَمْوَالُ نِ اقْتَرَفْتُمُوْهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَاۤ اَحَبَّ اِلَيْكُمْ مِّنَ اللهِ وَرَسُوْلِهٖ وَجِهَادٍ فِيْ سَبِيْلِهٖ فَتَرَبَّصُوْا حَتّٰى يَاْتِيَ اللهُ بِاَمْرِهٖؕ وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الْفَاسِقِيْنَ
বলো, তোমাদের নিকট আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করার চেয়ে তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের স্বগোষ্ঠী, তোমাদের অর্জিত সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য যার মন্দা পড়ার আশঙ্কা কর এবং তোমাদের বাসস্থান, যা তোমরা ভালোবাস- এগুলো যদি অধিক প্রিয় হয়, তবে আল্লাহর বিধান না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করো; আর আল্লাহ ফাসিক সম্প্রদায়কে সৎপথ প্রদর্শন করেন না। (সূরা তাওবা- ২৪)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ আল্লাহ তোমাদেরকে সরিয়ে দিয়ে অন্য কোন দলকে দ্বীনের নিয়ামত দান করবেন। তাদেরকে দ্বীনের ধারক-বাহক হওয়ার মর্যাদায় উন্নীত করবেন। মানুষকে সৎপথে পরিচালনা করার নেতৃত্বও তাদের হাতে সোপর্দ করবেন।
আমরা জিহাদ না করলে আল্লাহ অন্য লোক দিয়ে তা করিয়ে নেবেন :
وَاِنْ تَتَوَلَّوْا يَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ ثُمَّ لَا يَكُوْنُوْاۤ اَمْثَالَكُمْ
যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে রাখ, তাহলে আল্লাহ তোমাদের বদলে অন্য এক সম্প্রদায়কে নিয়ে আসবেন। আর তারা তোমাদের মতো হবে না। (সূরা মুহাম্মাদ- ৩৮)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَنْ يَّرْتَدَّ مِنْكُمْ عَنْ دِيْنِهٖ فَسَوْفَ يَاْتِى اللهُ بِقَوْمٍ يُّحِبُّهُمْ وَيُحِبُّوْنَهٗۤ اَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ اَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِيْنَ يُجَاهِدُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَلَا يَخَافُوْنَ لَوْمَةَ لَآئِمٍؕ ذٰلِكَ فَضْلُ اللهِ يُؤْتِيْهِ مَنْ يَّشَآءُؕ وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ
হে মুমিনগণ! তোমাদের মধ্যে কেউ দ্বীন হতে ফিরে গেলে নিশ্চয় আল্লাহ এমন এক সম্প্রদায়কে নিয়ে আসবেন, যাদেরকে তিনি ভালোবাসবেন এবং তারাও তাঁকে ভালোবাসবে। তারা মুমিনদের প্রতি কোমল ও কাফিরদের প্রতি কঠোর হবে, তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে এবং কোন নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় করবে না। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছা তিনি তা দান করেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও সর্বজ্ঞ। (সূরা মায়েদা- ৫৪)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর কাজ কারো উপর নির্ভরশীল নয়। আল্লাহ যাদেরকে তাঁর দ্বীনের খেদমতের সুযোগ দিচ্ছেন, এটা তাদের উপর তাঁর মেহেরবানী। যদি তারা নিজেদের সুযোগ হারায় তাহলে তিনি অন্য কোন জাতিকে এ সুযোগ দেবেন।
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَا لَكُمْ اِذَا قِيْلَ لَكُمُ انْفِرُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ اثَّاقَلْتُمْ اِلَى الْاَرْضِؕ اَرَضِيْتُمْ بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا مِنَ الْاٰخِرَةِۚ فَمَا مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا فِى الْاٰخِرَةِ اِلَّا قَلِيْلٌ
হে মুমিনগণ! তোমাদের কী হলো যে, যখন তোমাদেরকে আল্লাহর পথে অভিযানে বের হতে বলা হয় তখন তোমরা ভারাক্রান্ত হয়ে জমিনকে আঁকড়ে ধর? তোমরা কি আখিরাতের পরিবর্তে পার্থিব জীবনেই সন্তুষ্ট? (সাবধান) আখিরাতের তুলনায় পার্থিব জীবনের ভোগের উপকরণ খুবই সামান্য। (সূরা তাওবা- ৩৮)
জিহাদ না করলে আযাব ভোগ করতে হবে :
اِلَّا تَنْفِرُوْا يُعَذِّبْكُمْ عَذَابًا اَلِيْمًا وَّيَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ وَلَا تَضُرُّوْهُ شَيْئًاؕ وَاللهُ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
যদি তোমরা অভিযানে বের না হও, তবে তিনি তোমাদেরকে মর্মান্তিক শাস্তি দেবেন এবং অপর জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন। আর তোমরা তাঁর কোন ক্ষতি করতে পারবে না; আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা তাওবা- ৩৯)
জান্নাতে যেতে হলে জিহাদ করতে হবে :
اَمْ حَسِبْتُمْ اَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ اللهُ الَّذِيْنَ جَاهَدُوْا مِنْكُمْ وَيَعْلَمَ الصَّابِرِيْنَ
তোমরা কি ধারণা করছ যে, তোমরা এমনিতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ আল্লাহ জেনে নেবেন না যে, তোমাদের মধ্য হতে কারা জিহাদ করে ও কারা ধৈর্যশীল? (সূরা আলে ইমরান- ১৪২)
জিহাদ না করলে আল্লাহর সতর্কবাণী :
قُلْ اِنْ كَانَ اٰبَآؤُكُمْ وَاَبْنَآؤُكُمْ وَاِخْوَانُكُمْ وَاَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيْرَتُكُمْ وَاَمْوَالُ نِ اقْتَرَفْتُمُوْهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَاۤ اَحَبَّ اِلَيْكُمْ مِّنَ اللهِ وَرَسُوْلِهٖ وَجِهَادٍ فِيْ سَبِيْلِهٖ فَتَرَبَّصُوْا حَتّٰى يَاْتِيَ اللهُ بِاَمْرِهٖؕ وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الْفَاسِقِيْنَ
বলো, তোমাদের নিকট আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করার চেয়ে তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের স্বগোষ্ঠী, তোমাদের অর্জিত সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য যার মন্দা পড়ার আশঙ্কা কর এবং তোমাদের বাসস্থান, যা তোমরা ভালোবাস- এগুলো যদি অধিক প্রিয় হয়, তবে আল্লাহর বিধান না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করো; আর আল্লাহ ফাসিক সম্প্রদায়কে সৎপথ প্রদর্শন করেন না। (সূরা তাওবা- ২৪)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ আল্লাহ তোমাদেরকে সরিয়ে দিয়ে অন্য কোন দলকে দ্বীনের নিয়ামত দান করবেন। তাদেরকে দ্বীনের ধারক-বাহক হওয়ার মর্যাদায় উন্নীত করবেন। মানুষকে সৎপথে পরিচালনা করার নেতৃত্বও তাদের হাতে সোপর্দ করবেন।
আমরা জিহাদ না করলে আল্লাহ অন্য লোক দিয়ে তা করিয়ে নেবেন :
وَاِنْ تَتَوَلَّوْا يَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ ثُمَّ لَا يَكُوْنُوْاۤ اَمْثَالَكُمْ
যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে রাখ, তাহলে আল্লাহ তোমাদের বদলে অন্য এক সম্প্রদায়কে নিয়ে আসবেন। আর তারা তোমাদের মতো হবে না। (সূরা মুহাম্মাদ- ৩৮)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَنْ يَّرْتَدَّ مِنْكُمْ عَنْ دِيْنِهٖ فَسَوْفَ يَاْتِى اللهُ بِقَوْمٍ يُّحِبُّهُمْ وَيُحِبُّوْنَهٗۤ اَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ اَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِيْنَ يُجَاهِدُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَلَا يَخَافُوْنَ لَوْمَةَ لَآئِمٍؕ ذٰلِكَ فَضْلُ اللهِ يُؤْتِيْهِ مَنْ يَّشَآءُؕ وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ
হে মুমিনগণ! তোমাদের মধ্যে কেউ দ্বীন হতে ফিরে গেলে নিশ্চয় আল্লাহ এমন এক সম্প্রদায়কে নিয়ে আসবেন, যাদেরকে তিনি ভালোবাসবেন এবং তারাও তাঁকে ভালোবাসবে। তারা মুমিনদের প্রতি কোমল ও কাফিরদের প্রতি কঠোর হবে, তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে এবং কোন নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় করবে না। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছা তিনি তা দান করেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও সর্বজ্ঞ। (সূরা মায়েদা- ৫৪)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর কাজ কারো উপর নির্ভরশীল নয়। আল্লাহ যাদেরকে তাঁর দ্বীনের খেদমতের সুযোগ দিচ্ছেন, এটা তাদের উপর তাঁর মেহেরবানী। যদি তারা নিজেদের সুযোগ হারায় তাহলে তিনি অন্য কোন জাতিকে এ সুযোগ দেবেন।
ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। যেমনিভাবে সহীহ আকীদা ও বিশুদ্ধ আমল জরুরি অনুরূপভাবে রাষ্ট্রনীতি ও সমাজনীতির ক্ষেত্রেও ইসলামী অনুশাসন মেনে চলা আবশ্যক। রাষ্ট্রব্যবস্থাও ধর্মের অন্তর্ভুক্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইসলামী রাষ্ট্র একটি আদর্শভিত্তিক দ্বীনি রাষ্ট্র। ইসলামী রাষ্ট্রের অন্যতম মূলনীতি হল, এ বিশ্ব আল্লাহর এবং সৃষ্টিও তাঁরই। কাজেই শাসনব্যবস্থা প্রণয়ন ও প্রবর্তনের অধিকারও তাঁর। আল্লাহর শাসনব্যবস্থা মেনে তাঁরই অনুগত হয়ে জীবন-যাপনের মধ্যেই মানুষের যথার্থ কল্যাণ নিহিত রয়েছে। সার্বভৌমত্বের মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা এবং বিধানদাতাও তিনিই। ইসলামী রাষ্ট্রে এমন কোন আইন ও বিধান প্রণয়ন ও রচনা করা যাবে না, যা কুরআন-সুন্নাহর পরিপন্থী। হুকুমতের মূল মালিক আল্লাহ তা‘আলা। তিনিই মানুষের প্রতি রাষ্ট্র পরিচালনার গুরু দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। মানুষের উপর অর্পিত এ দায়িত্ব একটি পবিত্র আমানত। ইসলামী রাষ্ট্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হল, এমন একটি সমাজ গঠন করা যেখানে সকল মানুষ জীবনের সর্বক্ষেত্রে বিশ্বস্রষ্টা আল্লাহর বিধানের একনিষ্ঠ অনুগামী হবে।
মানুষ পৃথিবীতে আল্লাহর খলীফা :
وَاِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَآئِكَةِ اِنِّيْ جَاعِلٌ فِى الْاَرْضِ خَلِيْفَةً
(স্মরণ করো!) যখন তোমার রব ফেরেশতাদেরকে বললেন, নিশ্চয় আমি পৃথিবীতে খলিফা (প্রতিনিধি) সৃষ্টি করব। (সূরা বাক্বারা- ৩০)
وَهُوَ الَّذِيْ جَعَلَكُمْ خَلَآئِفَ الْاَرْضِ
তিনিই তোমাদেরকে দুনিয়ার প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত করেছেন। (সূরা আন‘আম- ১৬৫)
আল্লাহ খিলাফত দিয়ে পরীক্ষা করেন :
ثُمَّ جَعَلْنَاكُمْ خَلَآئِفَ فِى الْاَرْضِ مِنْ ۢبَعْدِهِمْ لِنَنْظُرَ كَيْفَ تَعْمَلُوْنَ
অতঃপর আমি জমিনে তাদের পরে তোমাদেরকে খলীফা হিসেবে মনোনীত করেছি; যাতে আমি পরীক্ষা করতে পারি যে, তোমরা কী আমল কর? (সূরা ইউনুস- ১৪)
ব্যাখ্যা : পূর্বের জাতিগুলোকে এ অনুগ্রহের সুযোগ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা শেষ পর্যন্ত যুলুম ও বিদ্রোহের নীতি অবলম্বন করেছিল এবং তাদেরকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য যেসব নবী পাঠানো হয়েছিল তাঁদের কথা অস্বীকার করেছিল। তাই তাদেরকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। এখন তোমাদের পালা এসেছে; তাদের জায়গায় তোমাদেরকে কাজ করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। তোমরা এখন পরীক্ষা কেন্দ্রে অবস্থান করছ। তোমরা যদি তাদের মতো একই পরিণামের সম্মুখীন হতে না চাও, তাহলে তোমরা এ সুযোগ থেকে যথাযথভাবে লাভবান হও। অতীতের জাতিগুলোর ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করো। আর যেসব ভুল তাদের ধ্বংসের কারণ হয়েছিল সেগুলোর পুনরাবৃত্তি করো না।
পৃথিবীর ব্যবস্থাপনা কোন্ সময় কার হাতে সোপর্দ করতে হবে- এ বিষয়টির সিদ্ধান্ত আল্লাহ নিজেই নেন। অথচ অহংকারীরা এ ভুল ধারণা করে যে, পৃথিবীতে বসবাসকারীদের ভাগ্যের ফায়সালা তারা নিজেরাই করে। কিন্তু তারা এ কথা চিন্তা করে না যে, এসব নির্ধারণ করার ক্ষমতা পৃথিবীতে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে কারো আছে কি না? আর তারা এ কথাও ভাবে না যে, কার ইশারায় তাদের মাঝে ক্ষমতার পালা বদল হচ্ছে? কী কারণে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ক্ষমতাধর শক্তি হঠাৎ করে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এবং সবচেয়ে দুর্বলতম শক্তি বৃহত্তম শক্তিতে পরিণত হচ্ছে? কেনইবা পৃথিবীতে কোন একটি দল স্থায়ীভাবে ক্ষমতা ধরে রাখতে পারে না?
সৎকর্মশীলদেরকে খিলাফত দানে আল্লাহর ওয়াদা :
وَعَدَ اللهُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مِنْكُمْ وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِى الْاَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ وَلَيُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دِيْنَهُمُ الَّذِى ارْتَضٰى لَهُمْ وَلَيُبَدِّلَنَّهُمْ مِّنْ ۢبَعْدِ خَوْفِهِمْ اَمْنًاؕ يَعْبُدُوْنَنِيْ لَا يُشْرِكُوْنَ بِيْ شَيْئًاؕ وَمَنْ كَفَرَ بَعْدَ ذٰلِكَ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ
তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে আল্লাহ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে, অবশ্যই তিনি তাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধিত্ব দান করবেন যেমন তিনি প্রতিনিধিত্ব দান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদেরকে। আর তিনি অবশ্যই তাদের জন্য প্রতিষ্ঠিত করবেন তাদের দ্বীনকে, যা তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তিনি তাদেরকে ভয়-ভীতির পরিবর্তে নিরাপত্তা দান করবেন। তারা আমার ইবাদাত করবে এবং আমার সাথে কাউকে শরীক স্থাপন করবে না; এরপরও যারা কুফরী করবে তারাই হবে ফাসিক। (সূরা নূর- ৫৫)
ব্যাখ্যা : খিলাফত ও খিলাফত লাভ কুরআনে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
এর একটি অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর দেয়া ক্ষমতার অধিকারী হওয়া। এ অর্থানুসারে সারা দুনিয়ার সমস্ত মানবসন্তান পৃথিবীতে খিলাফতের আসনে অধিষ্ঠিত।
দ্বিতীয় অর্থটি হচ্ছে, আল্লাহর সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব মেনে নিয়ে তাঁর শরীয়াতী বিধানের আওতায় খিলাফতের ক্ষমতা ব্যবহার করা। এ অর্থে কেবলমাত্র সৎ মুমিনরাই খলীফা হিসেবে গণ্য হয়। কারণ তারাই সঠিকভাবে খিলাফতের হক আদায় করেন। বিপরীত পক্ষে কাফির ও ফাসিক ব্যক্তি খলীফা হওয়ার উপযুক্ত নয়। কারণ তারা আল্লাহর দেয়া ক্ষমতাকে নাফরমানির পথে ব্যবহার করে।
এর তৃতীয় অর্থ হচ্ছে, এক যুগের বিজয়ী ও ক্ষমতাশীল জাতির পরে অন্য জাতি তার স্থান দখল করা।
এখানে خِلَافَةٌ (খিলাফত) শব্দটি এমন এক রাষ্ট্রব্যবস্থার অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, যা আল্লাহর শরীয়াতী বিধান অনুযায়ী তাঁর প্রতিনিধিত্বের যথাযথ হক আদায় করে। এ কারণেই কাফির তো দূরের কথা ইসলামের দাবীদার মুনাফিকদেরকেও এ প্রতিশ্রুতিতে শরীক করা হয়নি। তাই বলা হচ্ছে, একমাত্র ঈমান ও সৎকর্মের গুণে গুণান্বিত লোকেরাই এর অধিকারী। এজন্য খিলাফত প্রতিষ্ঠার ফল হিসেবে বলা হচ্ছে, আল্লাহর পছন্দনীয় দ্বীন অর্থাৎ ইসলাম মজবুত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হবে। আর এজন্য এ পুরস্কার দানের শর্ত হিসেবে বলা হচ্ছে, নির্ভেজাল আল্লাহর দাসত্ব ও আনুগত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকো। এতে যেন শিরকের সামান্যতমও মিশ্রণ না থাকে।
وَاِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَآئِكَةِ اِنِّيْ جَاعِلٌ فِى الْاَرْضِ خَلِيْفَةً
(স্মরণ করো!) যখন তোমার রব ফেরেশতাদেরকে বললেন, নিশ্চয় আমি পৃথিবীতে খলিফা (প্রতিনিধি) সৃষ্টি করব। (সূরা বাক্বারা- ৩০)
وَهُوَ الَّذِيْ جَعَلَكُمْ خَلَآئِفَ الْاَرْضِ
তিনিই তোমাদেরকে দুনিয়ার প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত করেছেন। (সূরা আন‘আম- ১৬৫)
আল্লাহ খিলাফত দিয়ে পরীক্ষা করেন :
ثُمَّ جَعَلْنَاكُمْ خَلَآئِفَ فِى الْاَرْضِ مِنْ ۢبَعْدِهِمْ لِنَنْظُرَ كَيْفَ تَعْمَلُوْنَ
অতঃপর আমি জমিনে তাদের পরে তোমাদেরকে খলীফা হিসেবে মনোনীত করেছি; যাতে আমি পরীক্ষা করতে পারি যে, তোমরা কী আমল কর? (সূরা ইউনুস- ১৪)
ব্যাখ্যা : পূর্বের জাতিগুলোকে এ অনুগ্রহের সুযোগ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা শেষ পর্যন্ত যুলুম ও বিদ্রোহের নীতি অবলম্বন করেছিল এবং তাদেরকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য যেসব নবী পাঠানো হয়েছিল তাঁদের কথা অস্বীকার করেছিল। তাই তাদেরকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। এখন তোমাদের পালা এসেছে; তাদের জায়গায় তোমাদেরকে কাজ করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। তোমরা এখন পরীক্ষা কেন্দ্রে অবস্থান করছ। তোমরা যদি তাদের মতো একই পরিণামের সম্মুখীন হতে না চাও, তাহলে তোমরা এ সুযোগ থেকে যথাযথভাবে লাভবান হও। অতীতের জাতিগুলোর ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করো। আর যেসব ভুল তাদের ধ্বংসের কারণ হয়েছিল সেগুলোর পুনরাবৃত্তি করো না।
পৃথিবীর ব্যবস্থাপনা কোন্ সময় কার হাতে সোপর্দ করতে হবে- এ বিষয়টির সিদ্ধান্ত আল্লাহ নিজেই নেন। অথচ অহংকারীরা এ ভুল ধারণা করে যে, পৃথিবীতে বসবাসকারীদের ভাগ্যের ফায়সালা তারা নিজেরাই করে। কিন্তু তারা এ কথা চিন্তা করে না যে, এসব নির্ধারণ করার ক্ষমতা পৃথিবীতে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে কারো আছে কি না? আর তারা এ কথাও ভাবে না যে, কার ইশারায় তাদের মাঝে ক্ষমতার পালা বদল হচ্ছে? কী কারণে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ক্ষমতাধর শক্তি হঠাৎ করে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এবং সবচেয়ে দুর্বলতম শক্তি বৃহত্তম শক্তিতে পরিণত হচ্ছে? কেনইবা পৃথিবীতে কোন একটি দল স্থায়ীভাবে ক্ষমতা ধরে রাখতে পারে না?
সৎকর্মশীলদেরকে খিলাফত দানে আল্লাহর ওয়াদা :
وَعَدَ اللهُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مِنْكُمْ وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِى الْاَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ وَلَيُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دِيْنَهُمُ الَّذِى ارْتَضٰى لَهُمْ وَلَيُبَدِّلَنَّهُمْ مِّنْ ۢبَعْدِ خَوْفِهِمْ اَمْنًاؕ يَعْبُدُوْنَنِيْ لَا يُشْرِكُوْنَ بِيْ شَيْئًاؕ وَمَنْ كَفَرَ بَعْدَ ذٰلِكَ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ
তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে আল্লাহ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে, অবশ্যই তিনি তাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধিত্ব দান করবেন যেমন তিনি প্রতিনিধিত্ব দান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদেরকে। আর তিনি অবশ্যই তাদের জন্য প্রতিষ্ঠিত করবেন তাদের দ্বীনকে, যা তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তিনি তাদেরকে ভয়-ভীতির পরিবর্তে নিরাপত্তা দান করবেন। তারা আমার ইবাদাত করবে এবং আমার সাথে কাউকে শরীক স্থাপন করবে না; এরপরও যারা কুফরী করবে তারাই হবে ফাসিক। (সূরা নূর- ৫৫)
ব্যাখ্যা : খিলাফত ও খিলাফত লাভ কুরআনে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
এর একটি অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর দেয়া ক্ষমতার অধিকারী হওয়া। এ অর্থানুসারে সারা দুনিয়ার সমস্ত মানবসন্তান পৃথিবীতে খিলাফতের আসনে অধিষ্ঠিত।
দ্বিতীয় অর্থটি হচ্ছে, আল্লাহর সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব মেনে নিয়ে তাঁর শরীয়াতী বিধানের আওতায় খিলাফতের ক্ষমতা ব্যবহার করা। এ অর্থে কেবলমাত্র সৎ মুমিনরাই খলীফা হিসেবে গণ্য হয়। কারণ তারাই সঠিকভাবে খিলাফতের হক আদায় করেন। বিপরীত পক্ষে কাফির ও ফাসিক ব্যক্তি খলীফা হওয়ার উপযুক্ত নয়। কারণ তারা আল্লাহর দেয়া ক্ষমতাকে নাফরমানির পথে ব্যবহার করে।
এর তৃতীয় অর্থ হচ্ছে, এক যুগের বিজয়ী ও ক্ষমতাশীল জাতির পরে অন্য জাতি তার স্থান দখল করা।
এখানে خِلَافَةٌ (খিলাফত) শব্দটি এমন এক রাষ্ট্রব্যবস্থার অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, যা আল্লাহর শরীয়াতী বিধান অনুযায়ী তাঁর প্রতিনিধিত্বের যথাযথ হক আদায় করে। এ কারণেই কাফির তো দূরের কথা ইসলামের দাবীদার মুনাফিকদেরকেও এ প্রতিশ্রুতিতে শরীক করা হয়নি। তাই বলা হচ্ছে, একমাত্র ঈমান ও সৎকর্মের গুণে গুণান্বিত লোকেরাই এর অধিকারী। এজন্য খিলাফত প্রতিষ্ঠার ফল হিসেবে বলা হচ্ছে, আল্লাহর পছন্দনীয় দ্বীন অর্থাৎ ইসলাম মজবুত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হবে। আর এজন্য এ পুরস্কার দানের শর্ত হিসেবে বলা হচ্ছে, নির্ভেজাল আল্লাহর দাসত্ব ও আনুগত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকো। এতে যেন শিরকের সামান্যতমও মিশ্রণ না থাকে।
আল্লাহর জমিনে তাঁর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা ফরয :
شَرَعَ لَكُمْ مِّنَ الدِّيْنِ مَا وَصّٰى بِهٖ نُوْحًا وَّالَّذِيْۤ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ وَمَا وَصَّيْنَا بِهٖۤ اِبْرَاهِيْمَ وَمُوْسٰى وَعِيْسٰۤى اَنْ اَقِيْمُوا الدِّيْنَ وَلَا تَتَفَرَّقُوْا فِيْهِ
তিনি তোমাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন ঐ দ্বীন, যার নির্দেশ দিয়েছিলেন নূহকে এবং যে ব্যাপারে আমি তোমাকে ওহী করেছিলাম। আর যার নির্দেশ দিয়েছিলাম ইবরাহীম, মূসা ও ঈসাকে এই বলে যে, তোমরা এ দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করো এবং তাতে মতভেদ করো না। (সূরা শূরা- ১৩)
এ আয়াত থেকে যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ জানা যায় তা হলো :
(১) নবী ও রাসূলদের মধ্যে কেউই কোন নতুন ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন না। প্রথম থেকেই সকল নবী-রাসূল আল্লাহর পক্ষ থেকে একই দ্বীন পেশ করে আসছেন। মুহাম্মাদ ﷺ তিনিও একই দ্বীন পেশ করেছেন। এ প্রসঙ্গে সর্বপ্রথম নূহ (আঃ) এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মহাপ্লাবনের পর তিনিই ছিলেন বর্তমান মানবজাতির সর্বপ্রথম নবী। তারপর নবী ﷺ এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যিনি শেষ নবী।
(২) আল্লাহই সারা বিশ্বের সবকিছুর মালিক, তিনিই মানুষের প্রকৃত অভিভাবক। মানুষের মধ্যে যে বিষয়েই মতভেদ হোক না কেন তার ফায়সালা করা তাঁরই কাজ। এখন মৌলিকভাবে যেহেতু আল্লাহই মালিক, অভিভাবক ও শাসক, তাই মানুষের জন্য আইন ও বিধিবিধান রচনার অধিকারও একমাত্র তাঁরই। আর এভাবেই তিনি তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন।
(৩) সকল নবী-রাসূলকে দ্বীনের বিধান দেয়ার সাথে সাথে এ নির্দেশও দেয়া হয়েছিল যে, اَقِيْمُوا الدِّيْنَ (আক্বীমুদ দ্বীন) অর্থাৎ ‘‘তোমরা দ্বীনকে কায়েম করো’’ বা ‘‘দ্বীনকে কায়েম রাখো’’ এ দু’টি অর্থই সঠিক। اِقَامَةٌ (ইকামাতুন) শব্দের অর্থ কায়েম করা ও কায়েম রাখা উভয়টিই হয়। নবী-রাসূলগণ এ দু’টি কাজ করতেই আদিষ্ট হয়েছিলেন। তাঁদের প্রথম দায়িত্ব ও কর্তব্য ছিল, যেখানে দ্বীন কায়েম নেই সেখানে তা কায়েম করা। আর দ্বিতীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য ছিল, যেখানে তা কায়েম আছে সেখানে তা কায়েম রাখা। এ কথা সুস্পষ্ট যে, কোন জিনিসকে কায়েম রাখার প্রশ্ন তখনই আসে যখন তা কায়েম থাকে। অন্যথায় প্রথমে তা কায়েম করতে হবে, তারপর তা যাতে কায়েম থাকে সেজন্য ক্রমাগত প্রচেষ্টা চালাতে হবে। কায়েম করা কথাটির অর্থ শুধু কোন জিনিসের প্রচার করাই নয়, বরং তা যথাযথভাবে কার্যে পরিণত করা, তার প্রচলন ঘটানো এবং কার্যত চালু করা। যেমন- অমুক ব্যক্তি তার রাজত্ব কায়েম করেছে এর অর্থ এ হয় না যে, সে তার রাজত্বের দিকে আহবান জানিয়েছে। বরং তার অর্থ হয়, সে দেশের লোকদেরকে নিজের অনুগত করে নিয়েছে এবং সরকারের সকল বিভাগে এমন শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করেছে যে, দেশের সমস্ত ব্যবস্থাপনা তার নির্দেশানুসারে চলতে শুরু করেছে।
(৪) নবী-রাসূলদেরকে যখন এ দ্বীন কায়েম করা ও রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, তখন তার অর্থ শুধু এতটুকুই ছিল না যে, তাঁরা নিজেরাই কেবল এ দ্বীনের বিধান মেনে চলবেন এবং অন্যদের কাছে তার তাবলীগ বা প্রচার করবেন। বরং তার অর্থ এটাও যে, মানুষ যখন তা মেনে নেবে তখন আরো অগ্রসর হয়ে তাদের মাঝে পুরো দ্বীনের প্রচলন ঘটাবেন। দাওয়াত ও তাবলীগ হলো এ কাজের প্রাথমিক স্তর। এ স্তর ছাড়া দ্বিতীয় স্তর আসতেই পারে না। আরো লক্ষণীয় বিষয় এই যে, এ নির্দেশের মধ্যে দ্বীনের দাওয়াত ও তাবলীগকে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বানানো হয়নি বরং দ্বীনকে কায়েম করা ও কায়েম রাখাকেই উদ্দেশ্য বানানো হয়েছে। দাওয়াত ও তাবলীগ অবশ্যই এ উদ্দেশ্য সাধনের মাধ্যম, কিন্তু এটা তার মূল উদ্দেশ্য নয়।
(৫) শরীয়াতের আদেশ-নিষেধ ও বিধিবিধানকে সুস্পষ্ট ভাষায় দ্বীন বলা হয়েছে। আল্লাহ যেসব গোনাহের কারণে জাহান্নামের ভয় দেখিয়েছেন, যেসব অপরাধকে শাস্তির কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, তার পথ রুদ্ধ করার কাজও অবশ্যই দ্বীন হিসেবে গণ্য। কুরআন মুসলিম জাতিকে কুফরী শাসনব্যবস্থার অধীনে থেকে দ্বীনের কিছু বিধান মেনে চলতে শেখায় না। বরং প্রকাশ্যে নিজের শাসন ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়। জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান পালন করা কেবল তখনই সম্ভব হতে পারে, যখন সরকারের ক্ষমতা ইসলামপন্থীদের হাতে থাকে। কুরআনে যাকাত আদায় ও বণ্টনের যে নির্দেশাবলি দেয়া হয়েছে তা সুস্পষ্টভাবে এমন একটি সরকারের প্রয়োজনিয়তা পেশ করেছে, যে একটি নির্দিষ্ট নিয়মানুসারে যাকাত আদায় করে হকদারদের কাছে পৌঁছানোর দায়িত্ব নেবে। কুরআনে সুদ বন্ধ করার যে আদেশ দেয়া হয়েছে এবং সুদী কারবারে তৎপর লোকদের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, তা তখনই বাস্তব রূপ লাভ করতে পারে, যখন দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ইসলামের বিধান অনুযায়ী পরিচালিত হবে। কুরআনে হত্যাকারী থেকে কিসাস গ্রহণের নির্দেশ, চুরির জন্য হাত কাটার নির্দেশ এবং ব্যভিচার ও ব্যভিচারের অপবাদ আরোপের জন্য হদ (শাস্তি) জারী করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এসব নির্দেশ এজন্য দেয়া হয়নি যে, যারা এগুলো বাস্তবায়ন করবে তাদেরকে পুলিশ ও বিচারালয়ের অধীনে থাকতে হবে।
আল্লাহর এ বিধানটি বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ বাস্তবায়ন করেছেন। তিনি তাবলীগ ও তলোয়ার উভয়টির সাহায্যেই গোটা আরবকে বশীভূত করেছিলেন এবং বিস্তারিত শরীয়াত বা বিধিবিধানসহ এমন একটি পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রীয় আদর্শ কায়েম করেছিলেন, যা আকীদা-বিশ্বাস ও ইবাদাত থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত কর্মকান্ড, সামাজিক বিষয়াদি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, রাজনীতি, ন্যায়বিচার, যুদ্ধ ও সন্ধিসহ জীবনের সকল বিভাগে পরিব্যাপ্ত ছিল।
(৬) দ্বীন প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দেয়ার পর আল্লাহ এ আয়াতে সর্বশেষ যে কথা বলেছেন তা হচ্ছে وَلَا تَتَفَرَّقُوْا فِيْهِ অর্থাৎ দ্বীনের মধ্যে কোন বিভেদ সৃষ্টি করো না কিংবা তাতে পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ো না। দ্বীনের অকাট্য উক্তিসমূহের বিকৃত ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে নতুন কিছু আবিষ্কার করা, আবার দ্বীনের উক্তি ও বক্তব্যসমূহ রদবদল করে তা বিকৃত করা- এ ধরনের আচরণের কারণেই নবী-রাসূলদের উম্মতদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। অতঃপর এসব ছোট ছোট দলের অনুসৃত পথই ক্রমান্বয়ে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। যার অনুসারীদের মধ্যে বর্তমানে এ ধারণাটুকু পর্যন্তও বর্তমান নেই যে, এক সময় তাদের মূল ছিল একই। দ্বীনের মাসআলা উদ্ভাবন করার ক্ষেত্রে জ্ঞানী ও পন্ডিতদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে যে মতভেদ সৃষ্টি হয় এবং আল্লাহর কিতাবের ভাষার মধ্যে আভিধানিক ও ব্যাকরণের নিয়মানুসারে যেসব মতভেদ সৃষ্টি হয় তার সাথে এই বিভেদের কোন সম্পর্ক নেই।
(৭) নবীদেরকে দুনিয়ায় পাঠানো হয়েছিল دِيْنُ اللهِ (আল্লাহর আইন) জারী করার জন্য। যারা ধারণা করে যে, নবীদের দাওয়াত শুধুমাত্র সাধারণ ধর্মীয় অর্থে আল্লাহর উপাসনা করা এবং নিছক কতিপয় ধর্মীয় আকীদা-বিশ্বাস ও রীতিনীতি মেনে চলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। মানুষের সমাজ-সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি, আইন-আদালত এবং এ ধরনের অন্যান্য পার্থিব বিষয়াদির সাথে দ্বীনের কোন সম্পর্ক নেই। আর যদি সম্পর্ক থেকেও থাকে, তাহলে উল্লেখিত বিষয়াদি সম্পর্কে দ্বীনের নির্দেশাবলি নিছক ঐচ্ছিক পর্যায়ভুক্ত। এগুলো কার্যকর করতে পারলে ভালো, অন্যথায় মানুষের নিজ হাতে গড়া বিধান মেনে চলাতে কোন ক্ষতি নেই- এটা দ্বীন সম্পর্কে একটি ভ্রান্ত চিন্তা ছাড়া আর কিছুই নয়। দীর্ঘদিন যাবৎ মুসলিমদের মধ্যে এর অনুশীলন চলছে। মুসলিমদেরকে ইসলামী জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম থেকে বিমুখ করে দেয়ার ক্ষেত্রে এ ধারণাটিই বেশি দায়ী। এ ভুলের কারণে মুসলিমরা কুফরী ও জাহেলী জীবনব্যবস্থায় কেবল সন্তুষ্টই হয়নি; বরং এ ব্যবস্থার কলকব্জায় পরিণত হতে এবং নিজেরাই তাকে পরিচালিত করতে উদ্যোগী হয়েছে। যেভাবে নামায, রোযা ও হজ্জ দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত, ঠিক তেমনি যে আইনের ভিত্তিতে দেশ ও সমাজব্যবস্থা পরিচালনা করা হয় তাও দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত। কাজেই اِنَّ الدِّيْنَ عِنْدَ اللهِ الْاِسْلَامُ আয়াতে যে দ্বীনের প্রতি আনুগত্যের দাবী জানানো হয়েছে তার অর্থ শুধু নামায-রোযাই নয়; বরং সমগ্র সমাজব্যবস্থা এর আওতায় এসে যায়।
দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্যই আল্লাহ রাসূল পাঠিয়েছিলেন :
هُوَ الَّذِيْۤ اَرْسَلَ رَسُوْلَهٗ بِالْهُدٰى وَدِيْنِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهٗ عَلَى الدِّيْنِ كُلِّهٖؕ وَكَفٰى بِاللهِ شَهِيْدًا
তিনিই ঐ সত্তা, যিনি তাঁর রাসূলকে হেদায়াত ও সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন, যাতে তিনি ঐ দ্বীনকে অন্যান্য সকল দ্বীনের উপর বিজয়ী করতে পারেন। আর এ বিষয়ে সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। (সূরা ফাতহ- ২৮)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূল এজন্য আসেন না যে, কেবল তাঁর রিসালাতের প্রতি ঈমান আনতে হবে এবং ইচ্ছেমতো যে কারো আনুগত্য করা যাবে। রাসূল আগমনের উদ্দেশ্যই এই যে, তিনি জীবন-যাপনের জন্য যে আইনকানুন নিয়ে এসেছেন, দুনিয়ার সমস্ত আইনকানুন বাদ দিয়ে কেবল তাঁরই আইনের অনুসরণ করতে হবে। আল্লাহর পক্ষ থেকে তিনি যে বিধান দেন অন্যান্য সকল বিধান ত্যাগ করে শুধুমাত্র সে বিধানকেই কার্যকর করতে হবে। যদি কেউ এ কাজে আগ্রহী না হয়, তাহলে তাঁর রাসূলকে রাসূল হিসেবে মেনে নেয়া অর্থহীন হয়ে পড়ে। নবী ﷺ আল্লাহর কাছ থেকে যে দ্বীন এনেছেন এবং আল্লাহর পথপ্রদর্শনের ভিত্তিতে যে পদ্ধতি অনুযায়ী কাজ করেছেন, তা চিরস্থায়ীভাবে মুসলিমদের জন্য চূড়ান্ত সনদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা মুসলিমদের দায়িত্ব :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُوْنُوْا قَوَّامِيْنَ لِلّٰهِ شُهَدَآءَ بِالْقِسْطِ وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَاٰنُ قَوْمٍ عَلٰۤى اَلَّا تَعْدِلُوْاؕ اِعْدِلُوْا هُوَ اَقْرَبُ لِلتَّقْوٰى وَاتَّقُوا اللهَؕ اِنَّ اللهَ خَبِيْرٌ ۢبِمَا تَعْمَلُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর জন্য সত্য ও ন্যায়ের উপর সাক্ষী হিসেবে অবিচল থাকো। মনে রেখো, বিশেষ কোন সম্প্রদায়ের শত্রুতা যেন তোমাদেরকে এমনভাবে প্ররোচিত না করে যে, এর ফলে তোমরা ন্যায় ও ইনসাফের পথ থেকে সরে আসবে। তোমরা ইনসাফ করো, কারণ এ কাজটি আল্লাহকে ভয় করে চলার অধিক নিকটতর পন্থা। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো; নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের কর্মকান্ড সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গভাবে অবহিত। (সূরা মায়েদা- ৮)
যালিমরা ইসলামী নেতৃত্বের উপযুক্ত হতে পারে না :
وَاِذِ ابْتَلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ رَبُّهٗ بِكَلِمَاتٍ فَاَتَمَّهُنَّؕ قَالَ اِنِّيْ جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ اِمَامًاؕ قَالَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِيْؕ قَالَ لَا يَنَالُ عَهْدِى الظَّالِمِيْنَ
স্মরণ করো, যখন তোমার প্রতিপালক ইবরাহীমকে কতিপয় বাক্য দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে তিনি তা পূর্ণ করেছিলেন এবং বলেছিলেন, নিশ্চয় আমি তোমাকে মানবজাতির নেতা বানাব। অতঃপর তিনি (ইবরাহীম আঃ) বলেছিলেন, আমার বংশধরদের হতেও (মানুষের নেতা মনোনীত করুন)। আল্লাহ বললেন, আমার অঙ্গীকার অত্যাচারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। (সূরা বাক্বারা- ১২৪)
আল্লাহ মানবরচিত মতবাদের অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন :
وَاَنَّ هٰذَا صِرَاطِيْ مُسْتَقِيْمًا فَاتَّبِعُوْهُۚ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيْلِهٖؕ ذٰلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهٖ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ
এ পথই আমার সরল পথ। সুতরাং তোমরা এরই অনুসরণ করো এবং অন্য কোন পথের অনুসরণ করো না, নতুবা তোমরা তাঁর পথ হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দেন, যেন তোমরা সাবধান হও। (সূরা আন‘আম- ১৫৩)
ثُمَّ جَعَلْنَاكَ عَلٰى شَرِيْعَةٍ مِّنَ الْاَمْرِ فَاتَّبِعْهَا وَلَا تَتَّبِعْ اَهْوَآءَ الَّذِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ
এরপর আমি তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করেছি দ্বীনের বিশেষ শরীয়াতের উপর; সুতরাং তুমি তার অনুসরণ করো এবং অজ্ঞদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। (সূরা জাসিয়া- ১৮)
আল্লাহর দ্বীন বাস্তবায়ন ছাড়া সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা যায় না :
قُلْ يَاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ لَسْتُمْ عَلٰى شَيْءٍ حَتّٰى تُقِيْمُوا التَّوْرَاةَ وَالْاِنْجِيْلَ وَمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكُمْ مِّنْ رَّبِّكُمْ
বলো, হে আহলে কিতাব! যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তাওরাত, ইঞ্জিল ও তোমাদের প্রতি তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যা নাযিল হয়েছে তা প্রতিষ্ঠিত না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত (মনে করতে হবে যে) তোমরা কোনকিছুর উপরই প্রতিষ্ঠিত নও। (সূরা মায়েদা- ৬৮)
আল্লাহর দ্বীন বাস্তবায়নের মাধ্যমেই জাতীয় উন্নতি সম্ভব :
وَلَوْ اَنَّهُمْ اَقَامُوا التَّوْرَاةَ وَالْاِنْجِيْلَ وَمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْهِمْ مِّنْ رَّبِّهِمْ لَاَكَلُوْا مِنْ فَوْقِهِمْ وَمِنْ تَحْتِ اَرْجُلِهِمْؕ مِنْهُمْ اُمَّةٌ مُّقْتَصِدَةٌؕ وَكَثِيْرٌ مِّنْهُمْ سَآءَ مَا يَعْمَلُوْنَ
যদি তারা তাওরাত, ইঞ্জিল ও তাদের প্রতিপালকের নিকট হতে তাদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা প্রতিষ্ঠিত করত, তাহলে তারা তাদের উপর থেকে ও পায়ের নীচ হতে খাদ্য লাভ করত। তাদের মধ্যে একদল রয়েছে যারা মধ্যমপন্থী; কিন্তু তাদের অধিকাংশ যা করে, তা কতই না নিকৃষ্ট। (সূরা মায়েদা- ৬৬)
রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অর্জনের জন্য আল্লাহ দু‘আ শিখিয়েছেন :
وَقُلْ رَّبِّ اَدْخِلْنِيْ مُدْخَلَ صِدْقٍ وَّاَخْرِجْنِيْ مُخْرَجَ صِدْقٍ وَّاجْعَلْ لِّيْ مِنْ لَّدُنْكَ سُلْطَانًا نَّصِيْرًا
বলো, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে কল্যাণের সাথে প্রবেশ করাও এবং কল্যাণের সাথে বের করাও। আর তোমার নিকট হতে আমাকে সাহায্যকারী শক্তি দান করো। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৮০)
ব্যাখ্যা : এ আয়াত থেকে জানা যায় যে, ইসলাম দুনিয়ায় যে সংশোধন চায় তা শুধুমাত্র ওয়াজ-নসিহতের মাধ্যমে হতে পারে না, বরং তাকে কার্যকর করার জন্য রাষ্ট্রীয় ক্ষমতারও প্রয়োজন হয়। তারপর আল্লাহ নিজেই যখন তাঁর নবীকে এ দু‘আ শিখিয়েছেন তখন এ থেকে এ কথাও প্রমাণিত হয় যে, দ্বীন প্রতিষ্ঠা ও শরীয়াতের আইন প্রবর্তন করা এবং আল্লাহ প্রদত্ত দন্ডবিধি জারী করার জন্য রাষ্ট্রক্ষমতা লাভের প্রত্যাশা করা এবং এজন্য প্রচেষ্টা চালানো শুধু জায়েযই নয় বরং কাঙ্ক্ষিত ও প্রশংসিত। অন্যদিকে যারা এ প্রচেষ্টা ও প্রত্যাশাকে বৈষয়িক স্বার্থপূজা ও দুনিয়াদারী বলে আখ্যায়িত করে তারা ভুলের মধ্যে অবস্থান করছে। কোন ব্যক্তি যদি নিজের জন্য রাষ্ট্রক্ষমতা লাভ করতে চায়, তাহলে তাকে বৈষয়িক স্বার্থপূজা বলা যায়। কিন্তু আল্লাহর দ্বীনের জন্য রাষ্ট্রক্ষমতা লাভের প্রত্যাশা করা বৈষয়িক স্বার্থপূজা নয় বরং আল্লাহর আনুগত্যের প্রত্যক্ষ দাবী।
যালিমরা ইসলামী নেতৃত্বের উপযুক্ত হতে পারে না :
وَاِذِ ابْتَلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ رَبُّهٗ بِكَلِمَاتٍ فَاَتَمَّهُنَّؕ قَالَ اِنِّيْ جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ اِمَامًاؕ قَالَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِيْؕ قَالَ لَا يَنَالُ عَهْدِى الظَّالِمِيْنَ
স্মরণ করো, যখন তোমার প্রতিপালক ইবরাহীমকে কতিপয় বাক্য দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে তিনি তা পূর্ণ করেছিলেন এবং বলেছিলেন, নিশ্চয় আমি তোমাকে মানবজাতির নেতা বানাব। অতঃপর তিনি (ইবরাহীম আঃ) বলেছিলেন, আমার বংশধরদের হতেও (মানুষের নেতা মনোনীত করুন)। আল্লাহ বললেন, আমার অঙ্গীকার অত্যাচারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। (সূরা বাক্বারা- ১২৪)
আল্লাহ মানবরচিত মতবাদের অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন :
وَاَنَّ هٰذَا صِرَاطِيْ مُسْتَقِيْمًا فَاتَّبِعُوْهُۚ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيْلِهٖؕ ذٰلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهٖ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ
এ পথই আমার সরল পথ। সুতরাং তোমরা এরই অনুসরণ করো এবং অন্য কোন পথের অনুসরণ করো না, নতুবা তোমরা তাঁর পথ হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দেন, যেন তোমরা সাবধান হও। (সূরা আন‘আম- ১৫৩)
ثُمَّ جَعَلْنَاكَ عَلٰى شَرِيْعَةٍ مِّنَ الْاَمْرِ فَاتَّبِعْهَا وَلَا تَتَّبِعْ اَهْوَآءَ الَّذِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ
এরপর আমি তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করেছি দ্বীনের বিশেষ শরীয়াতের উপর; সুতরাং তুমি তার অনুসরণ করো এবং অজ্ঞদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। (সূরা জাসিয়া- ১৮)
আল্লাহর দ্বীন বাস্তবায়ন ছাড়া সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা যায় না :
قُلْ يَاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ لَسْتُمْ عَلٰى شَيْءٍ حَتّٰى تُقِيْمُوا التَّوْرَاةَ وَالْاِنْجِيْلَ وَمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكُمْ مِّنْ رَّبِّكُمْ
বলো, হে আহলে কিতাব! যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তাওরাত, ইঞ্জিল ও তোমাদের প্রতি তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যা নাযিল হয়েছে তা প্রতিষ্ঠিত না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত (মনে করতে হবে যে) তোমরা কোনকিছুর উপরই প্রতিষ্ঠিত নও। (সূরা মায়েদা- ৬৮)
আল্লাহর দ্বীন বাস্তবায়নের মাধ্যমেই জাতীয় উন্নতি সম্ভব :
وَلَوْ اَنَّهُمْ اَقَامُوا التَّوْرَاةَ وَالْاِنْجِيْلَ وَمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْهِمْ مِّنْ رَّبِّهِمْ لَاَكَلُوْا مِنْ فَوْقِهِمْ وَمِنْ تَحْتِ اَرْجُلِهِمْؕ مِنْهُمْ اُمَّةٌ مُّقْتَصِدَةٌؕ وَكَثِيْرٌ مِّنْهُمْ سَآءَ مَا يَعْمَلُوْنَ
যদি তারা তাওরাত, ইঞ্জিল ও তাদের প্রতিপালকের নিকট হতে তাদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা প্রতিষ্ঠিত করত, তাহলে তারা তাদের উপর থেকে ও পায়ের নীচ হতে খাদ্য লাভ করত। তাদের মধ্যে একদল রয়েছে যারা মধ্যমপন্থী; কিন্তু তাদের অধিকাংশ যা করে, তা কতই না নিকৃষ্ট। (সূরা মায়েদা- ৬৬)
রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অর্জনের জন্য আল্লাহ দু‘আ শিখিয়েছেন :
وَقُلْ رَّبِّ اَدْخِلْنِيْ مُدْخَلَ صِدْقٍ وَّاَخْرِجْنِيْ مُخْرَجَ صِدْقٍ وَّاجْعَلْ لِّيْ مِنْ لَّدُنْكَ سُلْطَانًا نَّصِيْرًا
বলো, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে কল্যাণের সাথে প্রবেশ করাও এবং কল্যাণের সাথে বের করো। আর তোমার নিকট হতে আমাকে সাহায্যকারী শক্তি দান করো। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৮০)
ব্যাখ্যা : এ আয়াত থেকে জানা যায় যে, ইসলাম দুনিয়ায় যে সংশোধন চায় তা শুধুমাত্র ওয়াজ-নসিহতের মাধ্যমে হতে পারে না, বরং তাকে কার্যকর করার জন্য রাষ্ট্রীয় ক্ষমতারও প্রয়োজন হয়। তারপর আল্লাহ নিজেই যখন তাঁর নবীকে এ দু‘আ শিখিয়েছেন তখন এ থেকে এ কথাও প্রমাণিত হয় যে, দ্বীন প্রতিষ্ঠা ও শরীয়াতের আইন প্রবর্তন করা এবং আল্লাহ প্রদত্ত দন্ডবিধি জারী করার জন্য রাষ্ট্রক্ষমতা লাভের প্রত্যাশা করা এবং এজন্য প্রচেষ্টা চালানো শুধু জায়েযই নয় বরং জরুরি ও প্রশংসিত। অন্যদিকে যারা এ প্রচেষ্টা ও প্রত্যাশাকে বৈষয়িক স্বার্থপূজা ও দুনিয়াদারী বলে আখ্যায়িত করে তারা ভুলের মধ্যে অবস্থান করছে। কোন ব্যক্তি যদি নিজের জন্য রাষ্ট্রক্ষমতা লাভ করতে চায়, তাহলে তাকে বৈষয়িক স্বার্থপূজা বলা যায়। কিন্তু আল্লাহর দ্বীনের জন্য রাষ্ট্রক্ষমতা লাভের প্রত্যাশা করা বৈষয়িক স্বার্থপূজা নয়; বরং আল্লাহর আনুগত্যের প্রত্যক্ষ দাবী।
شَرَعَ لَكُمْ مِّنَ الدِّيْنِ مَا وَصّٰى بِهٖ نُوْحًا وَّالَّذِيْۤ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ وَمَا وَصَّيْنَا بِهٖۤ اِبْرَاهِيْمَ وَمُوْسٰى وَعِيْسٰۤى اَنْ اَقِيْمُوا الدِّيْنَ وَلَا تَتَفَرَّقُوْا فِيْهِ
তিনি তোমাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন ঐ দ্বীন, যার নির্দেশ দিয়েছিলেন নূহকে এবং যে ব্যাপারে আমি তোমাকে ওহী করেছিলাম। আর যার নির্দেশ দিয়েছিলাম ইবরাহীম, মূসা ও ঈসাকে এই বলে যে, তোমরা এ দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করো এবং তাতে মতভেদ করো না। (সূরা শূরা- ১৩)
এ আয়াত থেকে যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ জানা যায় তা হলো :
(১) নবী ও রাসূলদের মধ্যে কেউই কোন নতুন ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন না। প্রথম থেকেই সকল নবী-রাসূল আল্লাহর পক্ষ থেকে একই দ্বীন পেশ করে আসছেন। মুহাম্মাদ ﷺ তিনিও একই দ্বীন পেশ করেছেন। এ প্রসঙ্গে সর্বপ্রথম নূহ (আঃ) এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মহাপ্লাবনের পর তিনিই ছিলেন বর্তমান মানবজাতির সর্বপ্রথম নবী। তারপর নবী ﷺ এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যিনি শেষ নবী।
(২) আল্লাহই সারা বিশ্বের সবকিছুর মালিক, তিনিই মানুষের প্রকৃত অভিভাবক। মানুষের মধ্যে যে বিষয়েই মতভেদ হোক না কেন তার ফায়সালা করা তাঁরই কাজ। এখন মৌলিকভাবে যেহেতু আল্লাহই মালিক, অভিভাবক ও শাসক, তাই মানুষের জন্য আইন ও বিধিবিধান রচনার অধিকারও একমাত্র তাঁরই। আর এভাবেই তিনি তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন।
(৩) সকল নবী-রাসূলকে দ্বীনের বিধান দেয়ার সাথে সাথে এ নির্দেশও দেয়া হয়েছিল যে, اَقِيْمُوا الدِّيْنَ (আক্বীমুদ দ্বীন) অর্থাৎ ‘‘তোমরা দ্বীনকে কায়েম করো’’ বা ‘‘দ্বীনকে কায়েম রাখো’’ এ দু’টি অর্থই সঠিক। اِقَامَةٌ (ইকামাতুন) শব্দের অর্থ কায়েম করা ও কায়েম রাখা উভয়টিই হয়। নবী-রাসূলগণ এ দু’টি কাজ করতেই আদিষ্ট হয়েছিলেন। তাঁদের প্রথম দায়িত্ব ও কর্তব্য ছিল, যেখানে দ্বীন কায়েম নেই সেখানে তা কায়েম করা। আর দ্বিতীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য ছিল, যেখানে তা কায়েম আছে সেখানে তা কায়েম রাখা। এ কথা সুস্পষ্ট যে, কোন জিনিসকে কায়েম রাখার প্রশ্ন তখনই আসে যখন তা কায়েম থাকে। অন্যথায় প্রথমে তা কায়েম করতে হবে, তারপর তা যাতে কায়েম থাকে সেজন্য ক্রমাগত প্রচেষ্টা চালাতে হবে। কায়েম করা কথাটির অর্থ শুধু কোন জিনিসের প্রচার করাই নয়, বরং তা যথাযথভাবে কার্যে পরিণত করা, তার প্রচলন ঘটানো এবং কার্যত চালু করা। যেমন- অমুক ব্যক্তি তার রাজত্ব কায়েম করেছে এর অর্থ এ হয় না যে, সে তার রাজত্বের দিকে আহবান জানিয়েছে। বরং তার অর্থ হয়, সে দেশের লোকদেরকে নিজের অনুগত করে নিয়েছে এবং সরকারের সকল বিভাগে এমন শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করেছে যে, দেশের সমস্ত ব্যবস্থাপনা তার নির্দেশানুসারে চলতে শুরু করেছে।
(৪) নবী-রাসূলদেরকে যখন এ দ্বীন কায়েম করা ও রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, তখন তার অর্থ শুধু এতটুকুই ছিল না যে, তাঁরা নিজেরাই কেবল এ দ্বীনের বিধান মেনে চলবেন এবং অন্যদের কাছে তার তাবলীগ বা প্রচার করবেন। বরং তার অর্থ এটাও যে, মানুষ যখন তা মেনে নেবে তখন আরো অগ্রসর হয়ে তাদের মাঝে পুরো দ্বীনের প্রচলন ঘটাবেন। দাওয়াত ও তাবলীগ হলো এ কাজের প্রাথমিক স্তর। এ স্তর ছাড়া দ্বিতীয় স্তর আসতেই পারে না। আরো লক্ষণীয় বিষয় এই যে, এ নির্দেশের মধ্যে দ্বীনের দাওয়াত ও তাবলীগকে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বানানো হয়নি বরং দ্বীনকে কায়েম করা ও কায়েম রাখাকেই উদ্দেশ্য বানানো হয়েছে। দাওয়াত ও তাবলীগ অবশ্যই এ উদ্দেশ্য সাধনের মাধ্যম, কিন্তু এটা তার মূল উদ্দেশ্য নয়।
(৫) শরীয়াতের আদেশ-নিষেধ ও বিধিবিধানকে সুস্পষ্ট ভাষায় দ্বীন বলা হয়েছে। আল্লাহ যেসব গোনাহের কারণে জাহান্নামের ভয় দেখিয়েছেন, যেসব অপরাধকে শাস্তির কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, তার পথ রুদ্ধ করার কাজও অবশ্যই দ্বীন হিসেবে গণ্য। কুরআন মুসলিম জাতিকে কুফরী শাসনব্যবস্থার অধীনে থেকে দ্বীনের কিছু বিধান মেনে চলতে শেখায় না। বরং প্রকাশ্যে নিজের শাসন ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়। জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান পালন করা কেবল তখনই সম্ভব হতে পারে, যখন সরকারের ক্ষমতা ইসলামপন্থীদের হাতে থাকে। কুরআনে যাকাত আদায় ও বণ্টনের যে নির্দেশাবলি দেয়া হয়েছে তা সুস্পষ্টভাবে এমন একটি সরকারের প্রয়োজনিয়তা পেশ করেছে, যে একটি নির্দিষ্ট নিয়মানুসারে যাকাত আদায় করে হকদারদের কাছে পৌঁছানোর দায়িত্ব নেবে। কুরআনে সুদ বন্ধ করার যে আদেশ দেয়া হয়েছে এবং সুদী কারবারে তৎপর লোকদের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, তা তখনই বাস্তব রূপ লাভ করতে পারে, যখন দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ইসলামের বিধান অনুযায়ী পরিচালিত হবে। কুরআনে হত্যাকারী থেকে কিসাস গ্রহণের নির্দেশ, চুরির জন্য হাত কাটার নির্দেশ এবং ব্যভিচার ও ব্যভিচারের অপবাদ আরোপের জন্য হদ (শাস্তি) জারী করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এসব নির্দেশ এজন্য দেয়া হয়নি যে, যারা এগুলো বাস্তবায়ন করবে তাদেরকে পুলিশ ও বিচারালয়ের অধীনে থাকতে হবে।
আল্লাহর এ বিধানটি বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ বাস্তবায়ন করেছেন। তিনি তাবলীগ ও তলোয়ার উভয়টির সাহায্যেই গোটা আরবকে বশীভূত করেছিলেন এবং বিস্তারিত শরীয়াত বা বিধিবিধানসহ এমন একটি পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রীয় আদর্শ কায়েম করেছিলেন, যা আকীদা-বিশ্বাস ও ইবাদাত থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত কর্মকান্ড, সামাজিক বিষয়াদি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, রাজনীতি, ন্যায়বিচার, যুদ্ধ ও সন্ধিসহ জীবনের সকল বিভাগে পরিব্যাপ্ত ছিল।
(৬) দ্বীন প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দেয়ার পর আল্লাহ এ আয়াতে সর্বশেষ যে কথা বলেছেন তা হচ্ছে وَلَا تَتَفَرَّقُوْا فِيْهِ অর্থাৎ দ্বীনের মধ্যে কোন বিভেদ সৃষ্টি করো না কিংবা তাতে পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ো না। দ্বীনের অকাট্য উক্তিসমূহের বিকৃত ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে নতুন কিছু আবিষ্কার করা, আবার দ্বীনের উক্তি ও বক্তব্যসমূহ রদবদল করে তা বিকৃত করা- এ ধরনের আচরণের কারণেই নবী-রাসূলদের উম্মতদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। অতঃপর এসব ছোট ছোট দলের অনুসৃত পথই ক্রমান্বয়ে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। যার অনুসারীদের মধ্যে বর্তমানে এ ধারণাটুকু পর্যন্তও বর্তমান নেই যে, এক সময় তাদের মূল ছিল একই। দ্বীনের মাসআলা উদ্ভাবন করার ক্ষেত্রে জ্ঞানী ও পন্ডিতদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে যে মতভেদ সৃষ্টি হয় এবং আল্লাহর কিতাবের ভাষার মধ্যে আভিধানিক ও ব্যাকরণের নিয়মানুসারে যেসব মতভেদ সৃষ্টি হয় তার সাথে এই বিভেদের কোন সম্পর্ক নেই।
(৭) নবীদেরকে দুনিয়ায় পাঠানো হয়েছিল دِيْنُ اللهِ (আল্লাহর আইন) জারী করার জন্য। যারা ধারণা করে যে, নবীদের দাওয়াত শুধুমাত্র সাধারণ ধর্মীয় অর্থে আল্লাহর উপাসনা করা এবং নিছক কতিপয় ধর্মীয় আকীদা-বিশ্বাস ও রীতিনীতি মেনে চলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। মানুষের সমাজ-সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি, আইন-আদালত এবং এ ধরনের অন্যান্য পার্থিব বিষয়াদির সাথে দ্বীনের কোন সম্পর্ক নেই। আর যদি সম্পর্ক থেকেও থাকে, তাহলে উল্লেখিত বিষয়াদি সম্পর্কে দ্বীনের নির্দেশাবলি নিছক ঐচ্ছিক পর্যায়ভুক্ত। এগুলো কার্যকর করতে পারলে ভালো, অন্যথায় মানুষের নিজ হাতে গড়া বিধান মেনে চলাতে কোন ক্ষতি নেই- এটা দ্বীন সম্পর্কে একটি ভ্রান্ত চিন্তা ছাড়া আর কিছুই নয়। দীর্ঘদিন যাবৎ মুসলিমদের মধ্যে এর অনুশীলন চলছে। মুসলিমদেরকে ইসলামী জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম থেকে বিমুখ করে দেয়ার ক্ষেত্রে এ ধারণাটিই বেশি দায়ী। এ ভুলের কারণে মুসলিমরা কুফরী ও জাহেলী জীবনব্যবস্থায় কেবল সন্তুষ্টই হয়নি; বরং এ ব্যবস্থার কলকব্জায় পরিণত হতে এবং নিজেরাই তাকে পরিচালিত করতে উদ্যোগী হয়েছে। যেভাবে নামায, রোযা ও হজ্জ দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত, ঠিক তেমনি যে আইনের ভিত্তিতে দেশ ও সমাজব্যবস্থা পরিচালনা করা হয় তাও দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত। কাজেই اِنَّ الدِّيْنَ عِنْدَ اللهِ الْاِسْلَامُ আয়াতে যে দ্বীনের প্রতি আনুগত্যের দাবী জানানো হয়েছে তার অর্থ শুধু নামায-রোযাই নয়; বরং সমগ্র সমাজব্যবস্থা এর আওতায় এসে যায়।
দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্যই আল্লাহ রাসূল পাঠিয়েছিলেন :
هُوَ الَّذِيْۤ اَرْسَلَ رَسُوْلَهٗ بِالْهُدٰى وَدِيْنِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهٗ عَلَى الدِّيْنِ كُلِّهٖؕ وَكَفٰى بِاللهِ شَهِيْدًا
তিনিই ঐ সত্তা, যিনি তাঁর রাসূলকে হেদায়াত ও সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন, যাতে তিনি ঐ দ্বীনকে অন্যান্য সকল দ্বীনের উপর বিজয়ী করতে পারেন। আর এ বিষয়ে সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। (সূরা ফাতহ- ২৮)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূল এজন্য আসেন না যে, কেবল তাঁর রিসালাতের প্রতি ঈমান আনতে হবে এবং ইচ্ছেমতো যে কারো আনুগত্য করা যাবে। রাসূল আগমনের উদ্দেশ্যই এই যে, তিনি জীবন-যাপনের জন্য যে আইনকানুন নিয়ে এসেছেন, দুনিয়ার সমস্ত আইনকানুন বাদ দিয়ে কেবল তাঁরই আইনের অনুসরণ করতে হবে। আল্লাহর পক্ষ থেকে তিনি যে বিধান দেন অন্যান্য সকল বিধান ত্যাগ করে শুধুমাত্র সে বিধানকেই কার্যকর করতে হবে। যদি কেউ এ কাজে আগ্রহী না হয়, তাহলে তাঁর রাসূলকে রাসূল হিসেবে মেনে নেয়া অর্থহীন হয়ে পড়ে। নবী ﷺ আল্লাহর কাছ থেকে যে দ্বীন এনেছেন এবং আল্লাহর পথপ্রদর্শনের ভিত্তিতে যে পদ্ধতি অনুযায়ী কাজ করেছেন, তা চিরস্থায়ীভাবে মুসলিমদের জন্য চূড়ান্ত সনদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা মুসলিমদের দায়িত্ব :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُوْنُوْا قَوَّامِيْنَ لِلّٰهِ شُهَدَآءَ بِالْقِسْطِ وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَاٰنُ قَوْمٍ عَلٰۤى اَلَّا تَعْدِلُوْاؕ اِعْدِلُوْا هُوَ اَقْرَبُ لِلتَّقْوٰى وَاتَّقُوا اللهَؕ اِنَّ اللهَ خَبِيْرٌ ۢبِمَا تَعْمَلُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর জন্য সত্য ও ন্যায়ের উপর সাক্ষী হিসেবে অবিচল থাকো। মনে রেখো, বিশেষ কোন সম্প্রদায়ের শত্রুতা যেন তোমাদেরকে এমনভাবে প্ররোচিত না করে যে, এর ফলে তোমরা ন্যায় ও ইনসাফের পথ থেকে সরে আসবে। তোমরা ইনসাফ করো, কারণ এ কাজটি আল্লাহকে ভয় করে চলার অধিক নিকটতর পন্থা। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো; নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের কর্মকান্ড সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গভাবে অবহিত। (সূরা মায়েদা- ৮)
যালিমরা ইসলামী নেতৃত্বের উপযুক্ত হতে পারে না :
وَاِذِ ابْتَلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ رَبُّهٗ بِكَلِمَاتٍ فَاَتَمَّهُنَّؕ قَالَ اِنِّيْ جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ اِمَامًاؕ قَالَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِيْؕ قَالَ لَا يَنَالُ عَهْدِى الظَّالِمِيْنَ
স্মরণ করো, যখন তোমার প্রতিপালক ইবরাহীমকে কতিপয় বাক্য দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে তিনি তা পূর্ণ করেছিলেন এবং বলেছিলেন, নিশ্চয় আমি তোমাকে মানবজাতির নেতা বানাব। অতঃপর তিনি (ইবরাহীম আঃ) বলেছিলেন, আমার বংশধরদের হতেও (মানুষের নেতা মনোনীত করুন)। আল্লাহ বললেন, আমার অঙ্গীকার অত্যাচারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। (সূরা বাক্বারা- ১২৪)
আল্লাহ মানবরচিত মতবাদের অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন :
وَاَنَّ هٰذَا صِرَاطِيْ مُسْتَقِيْمًا فَاتَّبِعُوْهُۚ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيْلِهٖؕ ذٰلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهٖ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ
এ পথই আমার সরল পথ। সুতরাং তোমরা এরই অনুসরণ করো এবং অন্য কোন পথের অনুসরণ করো না, নতুবা তোমরা তাঁর পথ হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দেন, যেন তোমরা সাবধান হও। (সূরা আন‘আম- ১৫৩)
ثُمَّ جَعَلْنَاكَ عَلٰى شَرِيْعَةٍ مِّنَ الْاَمْرِ فَاتَّبِعْهَا وَلَا تَتَّبِعْ اَهْوَآءَ الَّذِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ
এরপর আমি তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করেছি দ্বীনের বিশেষ শরীয়াতের উপর; সুতরাং তুমি তার অনুসরণ করো এবং অজ্ঞদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। (সূরা জাসিয়া- ১৮)
আল্লাহর দ্বীন বাস্তবায়ন ছাড়া সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা যায় না :
قُلْ يَاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ لَسْتُمْ عَلٰى شَيْءٍ حَتّٰى تُقِيْمُوا التَّوْرَاةَ وَالْاِنْجِيْلَ وَمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكُمْ مِّنْ رَّبِّكُمْ
বলো, হে আহলে কিতাব! যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তাওরাত, ইঞ্জিল ও তোমাদের প্রতি তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যা নাযিল হয়েছে তা প্রতিষ্ঠিত না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত (মনে করতে হবে যে) তোমরা কোনকিছুর উপরই প্রতিষ্ঠিত নও। (সূরা মায়েদা- ৬৮)
আল্লাহর দ্বীন বাস্তবায়নের মাধ্যমেই জাতীয় উন্নতি সম্ভব :
وَلَوْ اَنَّهُمْ اَقَامُوا التَّوْرَاةَ وَالْاِنْجِيْلَ وَمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْهِمْ مِّنْ رَّبِّهِمْ لَاَكَلُوْا مِنْ فَوْقِهِمْ وَمِنْ تَحْتِ اَرْجُلِهِمْؕ مِنْهُمْ اُمَّةٌ مُّقْتَصِدَةٌؕ وَكَثِيْرٌ مِّنْهُمْ سَآءَ مَا يَعْمَلُوْنَ
যদি তারা তাওরাত, ইঞ্জিল ও তাদের প্রতিপালকের নিকট হতে তাদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা প্রতিষ্ঠিত করত, তাহলে তারা তাদের উপর থেকে ও পায়ের নীচ হতে খাদ্য লাভ করত। তাদের মধ্যে একদল রয়েছে যারা মধ্যমপন্থী; কিন্তু তাদের অধিকাংশ যা করে, তা কতই না নিকৃষ্ট। (সূরা মায়েদা- ৬৬)
রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অর্জনের জন্য আল্লাহ দু‘আ শিখিয়েছেন :
وَقُلْ رَّبِّ اَدْخِلْنِيْ مُدْخَلَ صِدْقٍ وَّاَخْرِجْنِيْ مُخْرَجَ صِدْقٍ وَّاجْعَلْ لِّيْ مِنْ لَّدُنْكَ سُلْطَانًا نَّصِيْرًا
বলো, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে কল্যাণের সাথে প্রবেশ করাও এবং কল্যাণের সাথে বের করাও। আর তোমার নিকট হতে আমাকে সাহায্যকারী শক্তি দান করো। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৮০)
ব্যাখ্যা : এ আয়াত থেকে জানা যায় যে, ইসলাম দুনিয়ায় যে সংশোধন চায় তা শুধুমাত্র ওয়াজ-নসিহতের মাধ্যমে হতে পারে না, বরং তাকে কার্যকর করার জন্য রাষ্ট্রীয় ক্ষমতারও প্রয়োজন হয়। তারপর আল্লাহ নিজেই যখন তাঁর নবীকে এ দু‘আ শিখিয়েছেন তখন এ থেকে এ কথাও প্রমাণিত হয় যে, দ্বীন প্রতিষ্ঠা ও শরীয়াতের আইন প্রবর্তন করা এবং আল্লাহ প্রদত্ত দন্ডবিধি জারী করার জন্য রাষ্ট্রক্ষমতা লাভের প্রত্যাশা করা এবং এজন্য প্রচেষ্টা চালানো শুধু জায়েযই নয় বরং কাঙ্ক্ষিত ও প্রশংসিত। অন্যদিকে যারা এ প্রচেষ্টা ও প্রত্যাশাকে বৈষয়িক স্বার্থপূজা ও দুনিয়াদারী বলে আখ্যায়িত করে তারা ভুলের মধ্যে অবস্থান করছে। কোন ব্যক্তি যদি নিজের জন্য রাষ্ট্রক্ষমতা লাভ করতে চায়, তাহলে তাকে বৈষয়িক স্বার্থপূজা বলা যায়। কিন্তু আল্লাহর দ্বীনের জন্য রাষ্ট্রক্ষমতা লাভের প্রত্যাশা করা বৈষয়িক স্বার্থপূজা নয় বরং আল্লাহর আনুগত্যের প্রত্যক্ষ দাবী।
যালিমরা ইসলামী নেতৃত্বের উপযুক্ত হতে পারে না :
وَاِذِ ابْتَلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ رَبُّهٗ بِكَلِمَاتٍ فَاَتَمَّهُنَّؕ قَالَ اِنِّيْ جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ اِمَامًاؕ قَالَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِيْؕ قَالَ لَا يَنَالُ عَهْدِى الظَّالِمِيْنَ
স্মরণ করো, যখন তোমার প্রতিপালক ইবরাহীমকে কতিপয় বাক্য দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে তিনি তা পূর্ণ করেছিলেন এবং বলেছিলেন, নিশ্চয় আমি তোমাকে মানবজাতির নেতা বানাব। অতঃপর তিনি (ইবরাহীম আঃ) বলেছিলেন, আমার বংশধরদের হতেও (মানুষের নেতা মনোনীত করুন)। আল্লাহ বললেন, আমার অঙ্গীকার অত্যাচারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। (সূরা বাক্বারা- ১২৪)
আল্লাহ মানবরচিত মতবাদের অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন :
وَاَنَّ هٰذَا صِرَاطِيْ مُسْتَقِيْمًا فَاتَّبِعُوْهُۚ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيْلِهٖؕ ذٰلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهٖ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ
এ পথই আমার সরল পথ। সুতরাং তোমরা এরই অনুসরণ করো এবং অন্য কোন পথের অনুসরণ করো না, নতুবা তোমরা তাঁর পথ হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দেন, যেন তোমরা সাবধান হও। (সূরা আন‘আম- ১৫৩)
ثُمَّ جَعَلْنَاكَ عَلٰى شَرِيْعَةٍ مِّنَ الْاَمْرِ فَاتَّبِعْهَا وَلَا تَتَّبِعْ اَهْوَآءَ الَّذِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ
এরপর আমি তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করেছি দ্বীনের বিশেষ শরীয়াতের উপর; সুতরাং তুমি তার অনুসরণ করো এবং অজ্ঞদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। (সূরা জাসিয়া- ১৮)
আল্লাহর দ্বীন বাস্তবায়ন ছাড়া সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা যায় না :
قُلْ يَاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ لَسْتُمْ عَلٰى شَيْءٍ حَتّٰى تُقِيْمُوا التَّوْرَاةَ وَالْاِنْجِيْلَ وَمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكُمْ مِّنْ رَّبِّكُمْ
বলো, হে আহলে কিতাব! যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তাওরাত, ইঞ্জিল ও তোমাদের প্রতি তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যা নাযিল হয়েছে তা প্রতিষ্ঠিত না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত (মনে করতে হবে যে) তোমরা কোনকিছুর উপরই প্রতিষ্ঠিত নও। (সূরা মায়েদা- ৬৮)
আল্লাহর দ্বীন বাস্তবায়নের মাধ্যমেই জাতীয় উন্নতি সম্ভব :
وَلَوْ اَنَّهُمْ اَقَامُوا التَّوْرَاةَ وَالْاِنْجِيْلَ وَمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْهِمْ مِّنْ رَّبِّهِمْ لَاَكَلُوْا مِنْ فَوْقِهِمْ وَمِنْ تَحْتِ اَرْجُلِهِمْؕ مِنْهُمْ اُمَّةٌ مُّقْتَصِدَةٌؕ وَكَثِيْرٌ مِّنْهُمْ سَآءَ مَا يَعْمَلُوْنَ
যদি তারা তাওরাত, ইঞ্জিল ও তাদের প্রতিপালকের নিকট হতে তাদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা প্রতিষ্ঠিত করত, তাহলে তারা তাদের উপর থেকে ও পায়ের নীচ হতে খাদ্য লাভ করত। তাদের মধ্যে একদল রয়েছে যারা মধ্যমপন্থী; কিন্তু তাদের অধিকাংশ যা করে, তা কতই না নিকৃষ্ট। (সূরা মায়েদা- ৬৬)
রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অর্জনের জন্য আল্লাহ দু‘আ শিখিয়েছেন :
وَقُلْ رَّبِّ اَدْخِلْنِيْ مُدْخَلَ صِدْقٍ وَّاَخْرِجْنِيْ مُخْرَجَ صِدْقٍ وَّاجْعَلْ لِّيْ مِنْ لَّدُنْكَ سُلْطَانًا نَّصِيْرًا
বলো, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে কল্যাণের সাথে প্রবেশ করাও এবং কল্যাণের সাথে বের করো। আর তোমার নিকট হতে আমাকে সাহায্যকারী শক্তি দান করো। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৮০)
ব্যাখ্যা : এ আয়াত থেকে জানা যায় যে, ইসলাম দুনিয়ায় যে সংশোধন চায় তা শুধুমাত্র ওয়াজ-নসিহতের মাধ্যমে হতে পারে না, বরং তাকে কার্যকর করার জন্য রাষ্ট্রীয় ক্ষমতারও প্রয়োজন হয়। তারপর আল্লাহ নিজেই যখন তাঁর নবীকে এ দু‘আ শিখিয়েছেন তখন এ থেকে এ কথাও প্রমাণিত হয় যে, দ্বীন প্রতিষ্ঠা ও শরীয়াতের আইন প্রবর্তন করা এবং আল্লাহ প্রদত্ত দন্ডবিধি জারী করার জন্য রাষ্ট্রক্ষমতা লাভের প্রত্যাশা করা এবং এজন্য প্রচেষ্টা চালানো শুধু জায়েযই নয় বরং জরুরি ও প্রশংসিত। অন্যদিকে যারা এ প্রচেষ্টা ও প্রত্যাশাকে বৈষয়িক স্বার্থপূজা ও দুনিয়াদারী বলে আখ্যায়িত করে তারা ভুলের মধ্যে অবস্থান করছে। কোন ব্যক্তি যদি নিজের জন্য রাষ্ট্রক্ষমতা লাভ করতে চায়, তাহলে তাকে বৈষয়িক স্বার্থপূজা বলা যায়। কিন্তু আল্লাহর দ্বীনের জন্য রাষ্ট্রক্ষমতা লাভের প্রত্যাশা করা বৈষয়িক স্বার্থপূজা নয়; বরং আল্লাহর আনুগত্যের প্রত্যক্ষ দাবী।
আল্লাহর আইনের বাস্তবায়ন ছাড়া ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত হয় না :
لَقَدْ اَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنَاتِ وَاَنْزَلْنَا مَعَهُمُ الْكِتَابَ وَالْمِيْزَانَ لِيَقُوْمَ النَّاسُ بِالْقِسْطِۚ وَاَنْزَلْنَا الْحَدِيْدَ فِيْهِ بَاْسٌ شَدِيْدٌ وَّمَنَافِعُ لِلنَّاسِ
নিশ্চয় আমি আমার রাসূলদেরকে প্রেরণ করেছি স্পষ্ট প্রমাণসহ এবং তাদের সঙ্গে দিয়েছি কিতাব ও মানদন্ড, যাতে করে মানুষ সুবিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারে। আর আমি লৌহ দিয়েছি, যাতে রয়েছে প্রচন্ড শক্তি ও মানুষের জন্য বহুবিধ কল্যাণ। (সূরা হাদীদ- ২৫)
ব্যাখ্যা : اَلْحَدِيْدُ (আল হাদীদ) অর্থ হলো লৌহ। কিন্তু এখানে হাদীদ দ্বারা রাজনৈতিক শক্তিকে বুঝানো হয়েছে। বর্ণনার ধারাবাহিকতা অনুযায়ী আয়াতের মর্ম হচ্ছে, আল্লাহ তা‘আলা নবী-রাসূলদেরকে মু‘জিযা এবং কিতাব দিয়ে প্রেরণ করেছেন। যাতে করে লোকেরা ইনসাফের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু এটা একেবারে পরিষ্কার যে, কেবল উপদেশ দ্বারা অধিকাংশ মানুষ সৎপথ অবলম্বন করে না। সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক শক্তিই হচ্ছে এমন মাধ্যম যাকে ইসলামের পক্ষে ব্যবহার করলে লোহার মতো শক্ত ভূমিকা রাখতে পারে। আমীরুল মুমিনীন উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) বলেন, اِنَّ اللهَ لَيَزَعُ بِالسُّلْطَانِ مَا لَا يَزَعُ بِالْقُراٰنِ ‘‘আল্লাহ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাবলে এমন কিছুর উচ্ছেদ ঘটান, কুরআনের মাধ্যমে যেগুলোর উচ্ছেদ ঘটান না।’’ অর্থাৎ কুরআনের সতর্কবাণী অধিকাংশ লোকের উপরই প্রভাব বিস্তার করে না। কিন্তু ভয় এবং প্রহারের আঘাত অনেককেই প্রভাবিত করে। উসমান (রাঃ) এর এ উক্তিটির অনেক তাৎপর্য রয়েছে। কারণ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার প্রভাব মারাত্মক। রাষ্ট্রীয় প্রশাসন যদি কোন অন্যায় কাজকে প্রতিহত করতে চায় তাহলে যত সহজে এটা সম্ভব হবে ওয়াজ-নসীহত ও বক্তৃতার মাধ্যমে তা ঐভাবে সম্ভব হয় না। অনেক ক্ষেত্রে ওয়াজ-নসীহতের কোন প্রভাবই লক্ষ্য করা যায় না। এজন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে যদি ইসলামের বিধান পালন করার উদ্যোগ নেয়া হয় এবং এ কাজে মানুষকে বাধ্য করা হয় তবে সকলেই ইসলামের বিধান পালনে অভ্যস্ত হবে। (শারহু সুনানে আবু দাউদ লিশ শায়েখ আবদুল মুহসিন- খন্ড ২৩, পৃ: ৪৫৭)
আল্লাহর আইন দিয়ে বিচার না করলে মুমিন হওয়া যায় না :
اَلَمْ تَرَ اِلَى الَّذِيْنَ يَزْعُمُوْنَ اَنَّهُمْ اٰمَنُوْا بِمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكَ وَمَاۤ اُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيْدُوْنَ اَنْ يَّتَحَاكَمُوْاۤ اِلَى الطَّاغُوْتِ وَقَدْ اُمِرُوْاۤ اَنْ يَّكْفُرُوْا بِهٖؕ وَيُرِيْدُ الشَّيْطَانُ اَنْ يُّضِلَّهُمْ ضَلَالًا ۢبَعِيْدًا
তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা দাবি করে যে, তোমার প্রতি এবং তোমার পূর্ববর্তী নবীদের প্রতি যা নাযিল হয়েছে তাতে তারা বিশ্বাস করে, আবার তারা তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থী হতে চায়? অথচ তা প্রত্যাখ্যান করার জন্য তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর শয়তান তাদেরকে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট করতে চায়। (সূরা নিসা- ৬০)
ব্যাখ্যা : এখানে ‘তাগুত’ বলতে সুস্পষ্টভাবে এমন শাসককে বুঝানো হয়েছে, যে আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে অন্য কোন আইন অনুযায়ী ফায়সালা করে। মূলত যে বিচারব্যবস্থা আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতার আনুগত্য করে না এবং আল্লাহর কিতাবকে চূড়ান্ত সনদ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না তা মূলত তাগুত। কাজেই যে আদালত তাগুতের ভূমিকা পালন করছে, নিজের বিভিন্ন বিষয়ের ফায়সালার জন্য তার কাছে উপস্থিত হওয়া ঈমান বিরোধী কাজ- এ ব্যাপারে এ আয়াতটির বক্তব্য একেবারে সুস্পষ্ট। আর আল্লাহ ও তাঁর কিতাবের উপর ঈমান আনার অপরিহার্য দাবি অনুযায়ী এ ধরনের আদালতকে অস্বীকার করাই প্রত্যেক ঈমানদার ব্যক্তির কর্তব্য। কেননা কুরআনের দৃষ্টিতে তাগুতকে অস্বীকার না করলে ঈমানদার হওয়া যায় না। আর আল্লাহ ও তাগুত উভয়ের সামনে একই সাথে মাথা নত করা হচ্ছে সুস্পষ্ট মুনাফিকী।
শানে নুযূল : একদা জনৈক ইয়াহুদির সাথে জনৈক মুনাফিকের ঝগড়া হলে, ইয়াহুদি রাসূল ﷺ কে বিচারক মানল। সে জানত, ধর্ম বিষয়ে মতবিরোধ থাকলেও তিনি পক্ষপাতিত্ব করবেন না। আর মুনাফিকের দাবী ছিল মিথ্যা, সে মনে করল, আমি বাইরে মুসলিম হলেও রাসূল ﷺ এর নিকট বাক-চাতুরাতীতে কাজ হবে না। তাই একজন অসৎ ইয়াহুদি সরদার কা’ব ইবনে আশরাফকে বিচারক মানতে চাইল। অবশেষে উভয়েই রাসূল ﷺ এর নিকট বিচারপ্রার্থী হলো এবং ইয়াহুদির বিজয় হলো। কিন্তু মুনাফিকটি এতে সন্তুষ্ট না হয়ে ওমর (রাঃ) এর নিকট গেল। সে ধারণা করেছিল ওমর (রাঃ) তার পক্ষে রায় দেবেন। ইয়াহুদিও মনে করল, ওমর (রাঃ) ন্যায়পরায়ণ; তিনি তার পক্ষেই রায় দেবেন। কাজেই মুনাফিকের প্রস্তাবে সে সম্মত হয়ে ওমরের কাছে গেল এবং সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করল। আর বলল যে, রাসূল ﷺ এর বিচার এ ব্যক্তি মানেনি। ওমর (রাঃ) তৎক্ষণাৎ তলোয়ার দ্বারা মুনাফিকের শিরোচ্ছেদ করে দিলেন এবং বললেন, নবীর মীমাংসা অমান্য করার এটাই শাস্তি। অতঃপর মুনাফিকটির ওয়ারীসরা রাসূল ﷺ এর কাছে এসে বলল, একটা আপোষ মীমাংসার জন্যই ওমরের নিকট যাওয়া হয়েছিল, অনর্থক তিনি তাকে হত্যা করেছেন। কাজেই আমরা হত্যার প্রতিশোধ চাই। তখন এ আয়াতটি নাযিল হয়।
তাগুতের অনুসারীরা জাহান্নামী :
اَللهُ وَلِيُّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا يُخْرِجُهُمْ مِّنَ الظُّلُمَاتِ اِلَى النُّوْرِؕ وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اَوْلِيَآؤُهُمُ الطَّاغُوْتُ يُخْرِجُوْنَهُمْ مِّنَ النُّوْرِ اِلَى الظُّلُمَاتِؕ اُولٰٓئِكَ اَصْحَابُ النَّارِۚ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ তাদের অভিভাবক; তিনি তাদেরকে অন্ধকারসমূহ হতে আলোর দিকে নিয়ে আসেন। আর যারা কাফির তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত; তারা তাদেরকে আলো থেকে অন্ধকারসমূহের দিকে নিয়ে যায়। আর তারাই হচ্ছে জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে। (সূরা বাক্বারা- ২৫৭)
তাগুতকে বিশ্বাস করলে আল্লাহর লানত পড়বে :
اَلَمْ تَرَ اِلَى الَّذِيْنَ اُوْتُوْا نَصِيْبًا مِّنَ الْكِتَابِ يُؤْمِنُوْنَ بِالْجِبْتِ وَالطَّاغُوْتِ وَيَقُوْلُوْنَ لِلَّذِيْنَ كَفَرُوْا هٰۤؤُلَآءِ اَهْدٰى مِنَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا سَبِيْلًا ‐ اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ لَعَنَهُمُ اللهُؕ وَمَنْ يَّلْعَنِ اللهُ فَلَنْ تَجِدَ لَهٗ نَصِيْرًا
তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যাদেরকে কিতাবের এক অংশ দেয়া হয়েছিল; তারা জিব্ত ও তাগুতের প্রতি ঈমান রাখত? আর তারা কাফিরদের সম্বন্ধে বলত, এদের পথই মুমিনদের পথ থেকে উত্তম। এরা তারাই, যাদেরকে আল্লাহ লানত করেছেন; আর আল্লাহ যাকে লানত করেন তুমি কখনো তার কোন সাহায্যকারী পাবে না। (সূরা নিসা- ৫১, ৫২)
সকল নবীর মূল মিশন ছিল তাগুতকে অস্বীকার করা :
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِيْ كُلِّ اُمَّةٍ رَّسُوْلًا اَنِ اعْبُدُوا اللهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوْتَ
আমি তো প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসূল পাঠিয়েছি, (এ আদেশ দিয়ে যে) তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো এবং তাগুতকে বর্জন করো। (সূরা নাহল- ৩৬)
তাগুতকে অস্বীকার করাই ঈমানের মূল দাবী :
وَالَّذِيْنَ اجْتَنَبُوا الطَّاغُوْتَ اَنْ يَّعْبُدُوْهَا وَاَنَابُوْاۤ اِلَى اللهِ لَهُمُ الْبُشْرٰى فَبَشِّرْ عِبَادِ
যারা মূর্তিপূজা থেকে বিরত থাকে এবং আল্লাহ অভিমুখী হয়, তাদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ। অতএব আমার বান্দাদেরকে সুসংবাদ দিন। (সূরা যুমার- ১৭)
فَمَنْ يَّكْفُرْ بِالطَّاغُوْتِ وَيُؤْمِنْ ۢبِاللهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقٰىۗ لَا انْفِصَامَ لَهَاؕ وَاللهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
যে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে, সে এমন এক মজবুত রশি ধারণ করল যা কখনো ছিড়বে না। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও মহাজ্ঞানী। (সূরা বাক্বারা- ২৫৬)
لَقَدْ اَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنَاتِ وَاَنْزَلْنَا مَعَهُمُ الْكِتَابَ وَالْمِيْزَانَ لِيَقُوْمَ النَّاسُ بِالْقِسْطِۚ وَاَنْزَلْنَا الْحَدِيْدَ فِيْهِ بَاْسٌ شَدِيْدٌ وَّمَنَافِعُ لِلنَّاسِ
নিশ্চয় আমি আমার রাসূলদেরকে প্রেরণ করেছি স্পষ্ট প্রমাণসহ এবং তাদের সঙ্গে দিয়েছি কিতাব ও মানদন্ড, যাতে করে মানুষ সুবিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারে। আর আমি লৌহ দিয়েছি, যাতে রয়েছে প্রচন্ড শক্তি ও মানুষের জন্য বহুবিধ কল্যাণ। (সূরা হাদীদ- ২৫)
ব্যাখ্যা : اَلْحَدِيْدُ (আল হাদীদ) অর্থ হলো লৌহ। কিন্তু এখানে হাদীদ দ্বারা রাজনৈতিক শক্তিকে বুঝানো হয়েছে। বর্ণনার ধারাবাহিকতা অনুযায়ী আয়াতের মর্ম হচ্ছে, আল্লাহ তা‘আলা নবী-রাসূলদেরকে মু‘জিযা এবং কিতাব দিয়ে প্রেরণ করেছেন। যাতে করে লোকেরা ইনসাফের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু এটা একেবারে পরিষ্কার যে, কেবল উপদেশ দ্বারা অধিকাংশ মানুষ সৎপথ অবলম্বন করে না। সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক শক্তিই হচ্ছে এমন মাধ্যম যাকে ইসলামের পক্ষে ব্যবহার করলে লোহার মতো শক্ত ভূমিকা রাখতে পারে। আমীরুল মুমিনীন উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) বলেন, اِنَّ اللهَ لَيَزَعُ بِالسُّلْطَانِ مَا لَا يَزَعُ بِالْقُراٰنِ ‘‘আল্লাহ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাবলে এমন কিছুর উচ্ছেদ ঘটান, কুরআনের মাধ্যমে যেগুলোর উচ্ছেদ ঘটান না।’’ অর্থাৎ কুরআনের সতর্কবাণী অধিকাংশ লোকের উপরই প্রভাব বিস্তার করে না। কিন্তু ভয় এবং প্রহারের আঘাত অনেককেই প্রভাবিত করে। উসমান (রাঃ) এর এ উক্তিটির অনেক তাৎপর্য রয়েছে। কারণ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার প্রভাব মারাত্মক। রাষ্ট্রীয় প্রশাসন যদি কোন অন্যায় কাজকে প্রতিহত করতে চায় তাহলে যত সহজে এটা সম্ভব হবে ওয়াজ-নসীহত ও বক্তৃতার মাধ্যমে তা ঐভাবে সম্ভব হয় না। অনেক ক্ষেত্রে ওয়াজ-নসীহতের কোন প্রভাবই লক্ষ্য করা যায় না। এজন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে যদি ইসলামের বিধান পালন করার উদ্যোগ নেয়া হয় এবং এ কাজে মানুষকে বাধ্য করা হয় তবে সকলেই ইসলামের বিধান পালনে অভ্যস্ত হবে। (শারহু সুনানে আবু দাউদ লিশ শায়েখ আবদুল মুহসিন- খন্ড ২৩, পৃ: ৪৫৭)
আল্লাহর আইন দিয়ে বিচার না করলে মুমিন হওয়া যায় না :
اَلَمْ تَرَ اِلَى الَّذِيْنَ يَزْعُمُوْنَ اَنَّهُمْ اٰمَنُوْا بِمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكَ وَمَاۤ اُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيْدُوْنَ اَنْ يَّتَحَاكَمُوْاۤ اِلَى الطَّاغُوْتِ وَقَدْ اُمِرُوْاۤ اَنْ يَّكْفُرُوْا بِهٖؕ وَيُرِيْدُ الشَّيْطَانُ اَنْ يُّضِلَّهُمْ ضَلَالًا ۢبَعِيْدًا
তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা দাবি করে যে, তোমার প্রতি এবং তোমার পূর্ববর্তী নবীদের প্রতি যা নাযিল হয়েছে তাতে তারা বিশ্বাস করে, আবার তারা তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থী হতে চায়? অথচ তা প্রত্যাখ্যান করার জন্য তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর শয়তান তাদেরকে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট করতে চায়। (সূরা নিসা- ৬০)
ব্যাখ্যা : এখানে ‘তাগুত’ বলতে সুস্পষ্টভাবে এমন শাসককে বুঝানো হয়েছে, যে আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে অন্য কোন আইন অনুযায়ী ফায়সালা করে। মূলত যে বিচারব্যবস্থা আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতার আনুগত্য করে না এবং আল্লাহর কিতাবকে চূড়ান্ত সনদ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না তা মূলত তাগুত। কাজেই যে আদালত তাগুতের ভূমিকা পালন করছে, নিজের বিভিন্ন বিষয়ের ফায়সালার জন্য তার কাছে উপস্থিত হওয়া ঈমান বিরোধী কাজ- এ ব্যাপারে এ আয়াতটির বক্তব্য একেবারে সুস্পষ্ট। আর আল্লাহ ও তাঁর কিতাবের উপর ঈমান আনার অপরিহার্য দাবি অনুযায়ী এ ধরনের আদালতকে অস্বীকার করাই প্রত্যেক ঈমানদার ব্যক্তির কর্তব্য। কেননা কুরআনের দৃষ্টিতে তাগুতকে অস্বীকার না করলে ঈমানদার হওয়া যায় না। আর আল্লাহ ও তাগুত উভয়ের সামনে একই সাথে মাথা নত করা হচ্ছে সুস্পষ্ট মুনাফিকী।
শানে নুযূল : একদা জনৈক ইয়াহুদির সাথে জনৈক মুনাফিকের ঝগড়া হলে, ইয়াহুদি রাসূল ﷺ কে বিচারক মানল। সে জানত, ধর্ম বিষয়ে মতবিরোধ থাকলেও তিনি পক্ষপাতিত্ব করবেন না। আর মুনাফিকের দাবী ছিল মিথ্যা, সে মনে করল, আমি বাইরে মুসলিম হলেও রাসূল ﷺ এর নিকট বাক-চাতুরাতীতে কাজ হবে না। তাই একজন অসৎ ইয়াহুদি সরদার কা’ব ইবনে আশরাফকে বিচারক মানতে চাইল। অবশেষে উভয়েই রাসূল ﷺ এর নিকট বিচারপ্রার্থী হলো এবং ইয়াহুদির বিজয় হলো। কিন্তু মুনাফিকটি এতে সন্তুষ্ট না হয়ে ওমর (রাঃ) এর নিকট গেল। সে ধারণা করেছিল ওমর (রাঃ) তার পক্ষে রায় দেবেন। ইয়াহুদিও মনে করল, ওমর (রাঃ) ন্যায়পরায়ণ; তিনি তার পক্ষেই রায় দেবেন। কাজেই মুনাফিকের প্রস্তাবে সে সম্মত হয়ে ওমরের কাছে গেল এবং সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করল। আর বলল যে, রাসূল ﷺ এর বিচার এ ব্যক্তি মানেনি। ওমর (রাঃ) তৎক্ষণাৎ তলোয়ার দ্বারা মুনাফিকের শিরোচ্ছেদ করে দিলেন এবং বললেন, নবীর মীমাংসা অমান্য করার এটাই শাস্তি। অতঃপর মুনাফিকটির ওয়ারীসরা রাসূল ﷺ এর কাছে এসে বলল, একটা আপোষ মীমাংসার জন্যই ওমরের নিকট যাওয়া হয়েছিল, অনর্থক তিনি তাকে হত্যা করেছেন। কাজেই আমরা হত্যার প্রতিশোধ চাই। তখন এ আয়াতটি নাযিল হয়।
তাগুতের অনুসারীরা জাহান্নামী :
اَللهُ وَلِيُّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا يُخْرِجُهُمْ مِّنَ الظُّلُمَاتِ اِلَى النُّوْرِؕ وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اَوْلِيَآؤُهُمُ الطَّاغُوْتُ يُخْرِجُوْنَهُمْ مِّنَ النُّوْرِ اِلَى الظُّلُمَاتِؕ اُولٰٓئِكَ اَصْحَابُ النَّارِۚ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ তাদের অভিভাবক; তিনি তাদেরকে অন্ধকারসমূহ হতে আলোর দিকে নিয়ে আসেন। আর যারা কাফির তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত; তারা তাদেরকে আলো থেকে অন্ধকারসমূহের দিকে নিয়ে যায়। আর তারাই হচ্ছে জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে। (সূরা বাক্বারা- ২৫৭)
তাগুতকে বিশ্বাস করলে আল্লাহর লানত পড়বে :
اَلَمْ تَرَ اِلَى الَّذِيْنَ اُوْتُوْا نَصِيْبًا مِّنَ الْكِتَابِ يُؤْمِنُوْنَ بِالْجِبْتِ وَالطَّاغُوْتِ وَيَقُوْلُوْنَ لِلَّذِيْنَ كَفَرُوْا هٰۤؤُلَآءِ اَهْدٰى مِنَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا سَبِيْلًا ‐ اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ لَعَنَهُمُ اللهُؕ وَمَنْ يَّلْعَنِ اللهُ فَلَنْ تَجِدَ لَهٗ نَصِيْرًا
তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যাদেরকে কিতাবের এক অংশ দেয়া হয়েছিল; তারা জিব্ত ও তাগুতের প্রতি ঈমান রাখত? আর তারা কাফিরদের সম্বন্ধে বলত, এদের পথই মুমিনদের পথ থেকে উত্তম। এরা তারাই, যাদেরকে আল্লাহ লানত করেছেন; আর আল্লাহ যাকে লানত করেন তুমি কখনো তার কোন সাহায্যকারী পাবে না। (সূরা নিসা- ৫১, ৫২)
সকল নবীর মূল মিশন ছিল তাগুতকে অস্বীকার করা :
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِيْ كُلِّ اُمَّةٍ رَّسُوْلًا اَنِ اعْبُدُوا اللهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوْتَ
আমি তো প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসূল পাঠিয়েছি, (এ আদেশ দিয়ে যে) তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো এবং তাগুতকে বর্জন করো। (সূরা নাহল- ৩৬)
তাগুতকে অস্বীকার করাই ঈমানের মূল দাবী :
وَالَّذِيْنَ اجْتَنَبُوا الطَّاغُوْتَ اَنْ يَّعْبُدُوْهَا وَاَنَابُوْاۤ اِلَى اللهِ لَهُمُ الْبُشْرٰى فَبَشِّرْ عِبَادِ
যারা মূর্তিপূজা থেকে বিরত থাকে এবং আল্লাহ অভিমুখী হয়, তাদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ। অতএব আমার বান্দাদেরকে সুসংবাদ দিন। (সূরা যুমার- ১৭)
فَمَنْ يَّكْفُرْ بِالطَّاغُوْتِ وَيُؤْمِنْ ۢبِاللهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقٰىۗ لَا انْفِصَامَ لَهَاؕ وَاللهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
যে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে, সে এমন এক মজবুত রশি ধারণ করল যা কখনো ছিড়বে না। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও মহাজ্ঞানী। (সূরা বাক্বারা- ২৫৬)
আল্লাহই সকল ক্ষমতার উৎস :
اَنَّ الْقُوَّةَ لِلّٰهِ جَمِيْعًا
সমুদয় শক্তি আল্লাহর জন্য। (সূরা বাক্বারা- ১৬৫)
আইন হবে আল্লাহর :
اِنِ الْحُكْمُ اِلَّا لِلّٰهِ
বিধান দেয়ার অধিকার কেবলমাত্র আল্লাহরই। (সূরা ইউসুফ- ৪০)
শাসন হবে সৎ ও জ্ঞানী লোকের :
قَالَ اجْعَلْنِيْ عَلٰى خَزَآئِنِ الْاَرْضِ اِنِّيْ حَفِيْظٌ عَلِيْمٌ
ইউসুফ বললেন, আমাকে দেশের ধনভান্ডারের উপর কর্তৃত্ব প্রদান করুন; নিশ্চয় আমি উত্তম রক্ষক ও সুবিজ্ঞ। (সূরা ইউসুফ- ৫৫)
ব্যাখ্যা : ইউসুফ (আঃ) একটি সুদীর্ঘ ধারাবাহিক পরীক্ষার মাধ্যমে এ কথা প্রমাণ করেছিলেন যে, আমানতদারী, সততা, ধৈর্য, সংযম, উদারতা, বুদ্ধিমত্তা, বিচক্ষণতা ও দূরদর্শীতার ক্ষেত্রে সমকালীন লোকদের মধ্যে তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তাঁর ব্যক্তিত্বে এ গুণগুলো এমনভাবে বিকশিত হয়ে উঠেছিল যে, এগুলো অস্বীকার করার সাধ্য কারো ছিল না। এখানে তাঁর সংরক্ষণকারী ও জ্ঞানী হওয়া এ দু’টি গুণকে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী সবকিছু চলবে :
وَجَعَلْنَا مِنْهُمْ اَئِمَّةً يَّهْدُوْنَ بِاَمْرِنَا لَمَّا صَبَرُوْا وَكَانُوْا بِاٰيَاتِنَا يُوْقِنُوْنَ
আর আমি তাদের মধ্য থেকে নেতা নির্বাচন করেছিলাম, যারা আমার আদেশ অনুযায়ী পথনির্দেশ করত এবং এতে তারা ধৈর্যধারণ করেছিল। আর তারা আমার আয়াতসমূহকে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করত। (সূরা সাজদা- ২৪)
মানুষ খলীফা হিসেবে আল্লাহর বিধান বাস্তবায়িত করবে :
يَا دَاوُوْدُ اِنَّا جَعَلْنَاكَ خَلِيْفَةً فِى الْاَرْضِ فَاحْكُمْ بَيْنَ النَّاسِ بِالْحَقِّ وَلَا تَتَّبِعِ الْهَوٰى فَيُضِلَّكَ عَنْ سَبِيْلِ اللهِؕ اِنَّ الَّذِيْنَ يَضِلُّوْنَ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيْدٌ ۢبِمَا نَسُوْا يَوْمَ الْحِسَابِ
হে দাউদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত করেছি। অতএব তুমি মানুষের মধ্যে ন্যায়ভাবে বিচার-মীমাংসা করতে থাকো এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। (যদি এমনটি কর) তাহলে তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে দেবে। নিশ্চয় যারা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয় হিসাবের দিন ভুলে যাওয়ার কারণে তাদের জন্য রয়েছে ভীষণ শাস্তি। (সূরা সোয়াদ- ২৬)
জনগণ ইসলামী শাসকের আনুগত্য করবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَطِيْعُوا اللهَ وَاَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَاُولِى الْاَمْرِ مِنْكُمْ
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করো এবং তাদের আনুগত্য করো যারা তোমাদের মধ্যে ক্ষমতার অধিকারী। (সূরা নিসা- ৫৯)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতটি ইসলামের ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক জীবনের মূল ভিত্তি। এখানে নিম্নলিখিত মূলনীতিগুলো স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত করে দেয়া হয়েছে।
(এক) ইসলামী জীবনব্যবস্থায় আসল আনুগত্য লাভের অধিকারী হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ। একজন মুসলিমের সর্বপ্রথম পরিচয় হচ্ছে, সে আল্লাহর বান্দা; এরপর সে অন্য কিছু। মুসলিমের ব্যক্তিগত জীবন ও সমাজব্যবস্থা উভয়ের কেন্দ্র ও লক্ষ্য হচ্ছে আল্লাহর আনুগত্য করা ও বিশ্বস্ততার সাথে তাঁর নির্দেশ মেনে চলা। অন্যান্য আনুগত্য ও অনুসরণ কেবল তখনই গৃহীত হবে, যখন তা আল্লাহর আনুগত্যের বিপরীত না হবে। কারণ স্রষ্টার নাফরমানি করে কোন সৃষ্টির আনুগত্য করা যাবে না।
(দুই) ইসলামী জীবনব্যবস্থার দ্বিতীয় ভিত্তি হচ্ছে, রাসূল ﷺ এর আনুগত্য। এটি কোন স্বতন্ত্র আনুগত্য নয়; বরং আল্লাহর আনুগত্যের বাস্তব ও কার্যকর পদ্ধতি। রাসূল ﷺ এর প্রমাণপত্র ছাড়া আল্লাহর কোন আনুগত্য গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। নবী ﷺ বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল সে মূলত আল্লাহর আনুগত্য করল। আর যে ব্যক্তি আমার নাফরমানি করল সে মূলত আল্লাহরই নাফরমানি করল।’’ (সহীহ বুখারী, হা/২৯৫৭; সহীহ মুসলিম, হা/৪৮৫৪)
(তিন) উপরোক্ত দু’টি আনুগত্যের পর তৃতীয় আরো একটি আনুগত্য মুসলিমদের উপর ওয়াজিব। সেটি হচ্ছে, ‘উলিল আমর’ তথা দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির আনুগত্য করা। মুসলিমদের সামষ্টিক কার্যাবলির ক্ষেত্রে দায়িত্বসম্পন্ন ও নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিরাই ‘উলিল আমর’-এর অন্তর্ভুক্ত। তাদের মধ্যে রয়েছেন মুসলিমদের নেতৃত্বদানকারী উলামায়ে কেরাম, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, দেশের শাসনকার্য পরিচালনাকারী প্রশাসকবৃন্দ, আদালতে রায় প্রদানকারী বিচারপতি এবং সামাজিক বিষয়ে নেতৃত্বদানকারী নেতাগণ। মোটকথা যে ব্যক্তিই মুসলিমদের নেতৃত্বদানকারী হবেন, তিনিই আনুগত্য লাভের অধিকারী হবেন। তার সাথে বিরোধ সৃষ্টি করে মুসলিমদের সামাজিক জীবনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা যাবে না। তবে এ ক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে, তাকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুগত হতে হবে। নবী ﷺ বলেছেন, ‘‘আল্লাহ ও রাসূলের নাফরমানির ক্ষেত্রে কোন আনুগত্য নেই, আনুগত্য করতে হবে শুধুমাত্র ‘মারূফ’ বা বৈধ ও সৎকাজে।’’ (সহীহ বুখারী, হা/৭২৫৭; সহীহ মুসলিম, হা/৪৮৭১)
(চার) এ আয়াতের চতুর্থ মূলনীতি হচ্ছে, ইসলামী জীবনব্যবস্থায় আল্লাহর হুকুম ও রাসূলের সুন্নাহই হচ্ছে মৌলিক আইন ও চূড়ান্ত সনদ। মুসলিমদের মধ্যে অথবা মুসলিম সরকার ও প্রজাদের মধ্যে কোন বিষয়ে বিরোধ দেখা দিলে তার মীমাংসার জন্য কুরআন ও সুন্নাহের দিকে ফিরে আসতে হবে। কুরআন ও সুন্নাহ এ ব্যাপারে যে ফায়সালা দেবে তা মেনে নিতে হবে। আর এটা ইসলামী জীবনব্যবস্থার এমন একটি বৈশিষ্ট্য, যা তাকে কুফরী জীবনব্যবস্থা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে দেয়। যে ব্যবস্থায় এ জিনিসটি অনুপস্থিত থাকে সেটি হবে অনৈসলামী জীবনব্যবস্থা।
কাফিররা নিজেদের তৈরি মূলনীতি ও বিধানের মাধ্যমে তাদের যাবতীয় বিষয়ের মীমাংসা করে। এসব মূলনীতি ও বিধানের ক্ষেত্রে কোন দলিলের সমর্থন ও স্বীকৃতির প্রয়োজন আছে বলে তারা মনে করে না। বিপরীতপক্ষে মুসলিমরা তাদের প্রতিটি ব্যাপারে সর্বপ্রথম আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে ফিরে যায়। সেখান থেকে কোন নির্দেশ পেলে তারা তার অনুসরণ করে। আর কোন নির্দেশ না পেলে কেবল এ অবস্থায়ই স্বাধীনভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করার সুযোগ লাভ করে। এ ব্যাপারে শরীয়াত প্রণেতার পক্ষ থেকে কোন বিধান না দেয়াই এ কথা প্রমাণ করে যে, তিনি এ ক্ষেত্রে স্বাধীনতা প্রদান করেছেন।
اَنَّ الْقُوَّةَ لِلّٰهِ جَمِيْعًا
সমুদয় শক্তি আল্লাহর জন্য। (সূরা বাক্বারা- ১৬৫)
আইন হবে আল্লাহর :
اِنِ الْحُكْمُ اِلَّا لِلّٰهِ
বিধান দেয়ার অধিকার কেবলমাত্র আল্লাহরই। (সূরা ইউসুফ- ৪০)
শাসন হবে সৎ ও জ্ঞানী লোকের :
قَالَ اجْعَلْنِيْ عَلٰى خَزَآئِنِ الْاَرْضِ اِنِّيْ حَفِيْظٌ عَلِيْمٌ
ইউসুফ বললেন, আমাকে দেশের ধনভান্ডারের উপর কর্তৃত্ব প্রদান করুন; নিশ্চয় আমি উত্তম রক্ষক ও সুবিজ্ঞ। (সূরা ইউসুফ- ৫৫)
ব্যাখ্যা : ইউসুফ (আঃ) একটি সুদীর্ঘ ধারাবাহিক পরীক্ষার মাধ্যমে এ কথা প্রমাণ করেছিলেন যে, আমানতদারী, সততা, ধৈর্য, সংযম, উদারতা, বুদ্ধিমত্তা, বিচক্ষণতা ও দূরদর্শীতার ক্ষেত্রে সমকালীন লোকদের মধ্যে তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তাঁর ব্যক্তিত্বে এ গুণগুলো এমনভাবে বিকশিত হয়ে উঠেছিল যে, এগুলো অস্বীকার করার সাধ্য কারো ছিল না। এখানে তাঁর সংরক্ষণকারী ও জ্ঞানী হওয়া এ দু’টি গুণকে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী সবকিছু চলবে :
وَجَعَلْنَا مِنْهُمْ اَئِمَّةً يَّهْدُوْنَ بِاَمْرِنَا لَمَّا صَبَرُوْا وَكَانُوْا بِاٰيَاتِنَا يُوْقِنُوْنَ
আর আমি তাদের মধ্য থেকে নেতা নির্বাচন করেছিলাম, যারা আমার আদেশ অনুযায়ী পথনির্দেশ করত এবং এতে তারা ধৈর্যধারণ করেছিল। আর তারা আমার আয়াতসমূহকে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করত। (সূরা সাজদা- ২৪)
মানুষ খলীফা হিসেবে আল্লাহর বিধান বাস্তবায়িত করবে :
يَا دَاوُوْدُ اِنَّا جَعَلْنَاكَ خَلِيْفَةً فِى الْاَرْضِ فَاحْكُمْ بَيْنَ النَّاسِ بِالْحَقِّ وَلَا تَتَّبِعِ الْهَوٰى فَيُضِلَّكَ عَنْ سَبِيْلِ اللهِؕ اِنَّ الَّذِيْنَ يَضِلُّوْنَ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيْدٌ ۢبِمَا نَسُوْا يَوْمَ الْحِسَابِ
হে দাউদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত করেছি। অতএব তুমি মানুষের মধ্যে ন্যায়ভাবে বিচার-মীমাংসা করতে থাকো এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। (যদি এমনটি কর) তাহলে তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে দেবে। নিশ্চয় যারা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয় হিসাবের দিন ভুলে যাওয়ার কারণে তাদের জন্য রয়েছে ভীষণ শাস্তি। (সূরা সোয়াদ- ২৬)
জনগণ ইসলামী শাসকের আনুগত্য করবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَطِيْعُوا اللهَ وَاَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَاُولِى الْاَمْرِ مِنْكُمْ
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করো এবং তাদের আনুগত্য করো যারা তোমাদের মধ্যে ক্ষমতার অধিকারী। (সূরা নিসা- ৫৯)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতটি ইসলামের ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক জীবনের মূল ভিত্তি। এখানে নিম্নলিখিত মূলনীতিগুলো স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত করে দেয়া হয়েছে।
(এক) ইসলামী জীবনব্যবস্থায় আসল আনুগত্য লাভের অধিকারী হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ। একজন মুসলিমের সর্বপ্রথম পরিচয় হচ্ছে, সে আল্লাহর বান্দা; এরপর সে অন্য কিছু। মুসলিমের ব্যক্তিগত জীবন ও সমাজব্যবস্থা উভয়ের কেন্দ্র ও লক্ষ্য হচ্ছে আল্লাহর আনুগত্য করা ও বিশ্বস্ততার সাথে তাঁর নির্দেশ মেনে চলা। অন্যান্য আনুগত্য ও অনুসরণ কেবল তখনই গৃহীত হবে, যখন তা আল্লাহর আনুগত্যের বিপরীত না হবে। কারণ স্রষ্টার নাফরমানি করে কোন সৃষ্টির আনুগত্য করা যাবে না।
(দুই) ইসলামী জীবনব্যবস্থার দ্বিতীয় ভিত্তি হচ্ছে, রাসূল ﷺ এর আনুগত্য। এটি কোন স্বতন্ত্র আনুগত্য নয়; বরং আল্লাহর আনুগত্যের বাস্তব ও কার্যকর পদ্ধতি। রাসূল ﷺ এর প্রমাণপত্র ছাড়া আল্লাহর কোন আনুগত্য গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। নবী ﷺ বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল সে মূলত আল্লাহর আনুগত্য করল। আর যে ব্যক্তি আমার নাফরমানি করল সে মূলত আল্লাহরই নাফরমানি করল।’’ (সহীহ বুখারী, হা/২৯৫৭; সহীহ মুসলিম, হা/৪৮৫৪)
(তিন) উপরোক্ত দু’টি আনুগত্যের পর তৃতীয় আরো একটি আনুগত্য মুসলিমদের উপর ওয়াজিব। সেটি হচ্ছে, ‘উলিল আমর’ তথা দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির আনুগত্য করা। মুসলিমদের সামষ্টিক কার্যাবলির ক্ষেত্রে দায়িত্বসম্পন্ন ও নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিরাই ‘উলিল আমর’-এর অন্তর্ভুক্ত। তাদের মধ্যে রয়েছেন মুসলিমদের নেতৃত্বদানকারী উলামায়ে কেরাম, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, দেশের শাসনকার্য পরিচালনাকারী প্রশাসকবৃন্দ, আদালতে রায় প্রদানকারী বিচারপতি এবং সামাজিক বিষয়ে নেতৃত্বদানকারী নেতাগণ। মোটকথা যে ব্যক্তিই মুসলিমদের নেতৃত্বদানকারী হবেন, তিনিই আনুগত্য লাভের অধিকারী হবেন। তার সাথে বিরোধ সৃষ্টি করে মুসলিমদের সামাজিক জীবনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা যাবে না। তবে এ ক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে, তাকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুগত হতে হবে। নবী ﷺ বলেছেন, ‘‘আল্লাহ ও রাসূলের নাফরমানির ক্ষেত্রে কোন আনুগত্য নেই, আনুগত্য করতে হবে শুধুমাত্র ‘মারূফ’ বা বৈধ ও সৎকাজে।’’ (সহীহ বুখারী, হা/৭২৫৭; সহীহ মুসলিম, হা/৪৮৭১)
(চার) এ আয়াতের চতুর্থ মূলনীতি হচ্ছে, ইসলামী জীবনব্যবস্থায় আল্লাহর হুকুম ও রাসূলের সুন্নাহই হচ্ছে মৌলিক আইন ও চূড়ান্ত সনদ। মুসলিমদের মধ্যে অথবা মুসলিম সরকার ও প্রজাদের মধ্যে কোন বিষয়ে বিরোধ দেখা দিলে তার মীমাংসার জন্য কুরআন ও সুন্নাহের দিকে ফিরে আসতে হবে। কুরআন ও সুন্নাহ এ ব্যাপারে যে ফায়সালা দেবে তা মেনে নিতে হবে। আর এটা ইসলামী জীবনব্যবস্থার এমন একটি বৈশিষ্ট্য, যা তাকে কুফরী জীবনব্যবস্থা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে দেয়। যে ব্যবস্থায় এ জিনিসটি অনুপস্থিত থাকে সেটি হবে অনৈসলামী জীবনব্যবস্থা।
কাফিররা নিজেদের তৈরি মূলনীতি ও বিধানের মাধ্যমে তাদের যাবতীয় বিষয়ের মীমাংসা করে। এসব মূলনীতি ও বিধানের ক্ষেত্রে কোন দলিলের সমর্থন ও স্বীকৃতির প্রয়োজন আছে বলে তারা মনে করে না। বিপরীতপক্ষে মুসলিমরা তাদের প্রতিটি ব্যাপারে সর্বপ্রথম আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে ফিরে যায়। সেখান থেকে কোন নির্দেশ পেলে তারা তার অনুসরণ করে। আর কোন নির্দেশ না পেলে কেবল এ অবস্থায়ই স্বাধীনভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করার সুযোগ লাভ করে। এ ব্যাপারে শরীয়াত প্রণেতার পক্ষ থেকে কোন বিধান না দেয়াই এ কথা প্রমাণ করে যে, তিনি এ ক্ষেত্রে স্বাধীনতা প্রদান করেছেন।
আল্লাহর আইন নির্ভুল :
ذٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَۚ فِيْهِۚ هُدًى لِّلْمُتَّقِيْنَ
এটা ঐ গ্রন্থ যার মধ্যে কোনরূপ সন্দেহ নেই; আর মুত্তাক্বীদের জন্য এটা হেদায়াতস্বরূপ। (সূরা বাক্বারা- ২)
আল্লাহর আইন কেউ পরিবর্তন করতে পারে না :
وَاتْلُ مَاۤ اُوْحِيَ اِلَيْكَ مِنْ كِتَابِ رَبِّكَؕ لَا مُبَدِّلَ لِكَلِمَاتِهٖۚ وَلَنْ تَجِدَ مِنْ دُوْنِهٖ مُلْتَحَدًا
তোমার প্রতিপালকের কিতাব হতে তোমার নিকট যা ওহী করা হয়েছে তা পাঠ করো। তাঁর বাক্য পরিবর্তন করার মতো কেউ নেই। তুমি কখনো তাঁকে ছাড়া অন্য কোন আশ্রয়স্থল খুঁজে পাবে না। (সূরা কাহফ- ২৭)
فَلَنْ تَجِدَ لِسُنَّةِ اللهِ تَبْدِيْلًاۚ وَلَنْ تَجِدَ لِسُنَّةِ اللهِ تَحْوِيْلًا
তুমি আল্লাহর বিধানে কখনো কোন পরিবর্তন পাবে না এবং তাঁর বিধানে কোন বিচ্যুতিও দেখতে পাবে না। (সূরা ফাতির- ৪৩)
আল্লাহর আইন সার্বজনীন :
تَبَارَكَ الَّذِيْ نَزَّلَ الْفُرْقَانَ عَلٰى عَبْدِهٖ لِيَكُوْنَ لِلْعَالَمِيْنَ نَذِيْرًا
তিনি কত মহান, যিনি তাঁর বান্দার প্রতি ফুরক্বান (কুরআন) অবতীর্ণ করেছেন, যাতে সে বিশ্বজগতের জন্য সতর্ককারী হতে পারে! (সূরা ফুরক্বান- ১)
আল্লাহর আইন সবচেয়ে সুন্দর :
اَفَحُكْمَ الْجَاهِلِيَّةِ يَبْغُوْنَؕ وَمَنْ اَحْسَنُ مِنَ اللهِ حُكْمًا لِّقَوْمٍ يُّوْقِنُوْنَ
তবে কী তারা জাহেলী যুগের বিধি-বিধানের আশা করে? দৃঢ় বিশ্বাসী লোকদের জন্য বিধান প্রণয়নে আল্লাহর চেয়ে কে উত্তম? (সূরা মায়েদা- ৫০)
আল্লাহর আইন কুরআনের মধ্যে উল্লেখ রয়েছে :
وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَانًا لِّكُلِّ شَيْءٍ وَّهُدًى وَّرَحْمَةً وَّبُشْرٰى لِلْمُسْلِمِيْنَ
আমি তোমার উপর কিতাব নাযিল করেছি, যাতে রয়েছে সবকিছুর ব্যাখ্যা, হেদায়াত ও মুসলিমদের জন্য সুসংবাদ। (সূরা নাহল- ৮৯)
ذٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَۚ فِيْهِۚ هُدًى لِّلْمُتَّقِيْنَ
এটা ঐ গ্রন্থ যার মধ্যে কোনরূপ সন্দেহ নেই; আর মুত্তাক্বীদের জন্য এটা হেদায়াতস্বরূপ। (সূরা বাক্বারা- ২)
আল্লাহর আইন কেউ পরিবর্তন করতে পারে না :
وَاتْلُ مَاۤ اُوْحِيَ اِلَيْكَ مِنْ كِتَابِ رَبِّكَؕ لَا مُبَدِّلَ لِكَلِمَاتِهٖۚ وَلَنْ تَجِدَ مِنْ دُوْنِهٖ مُلْتَحَدًا
তোমার প্রতিপালকের কিতাব হতে তোমার নিকট যা ওহী করা হয়েছে তা পাঠ করো। তাঁর বাক্য পরিবর্তন করার মতো কেউ নেই। তুমি কখনো তাঁকে ছাড়া অন্য কোন আশ্রয়স্থল খুঁজে পাবে না। (সূরা কাহফ- ২৭)
فَلَنْ تَجِدَ لِسُنَّةِ اللهِ تَبْدِيْلًاۚ وَلَنْ تَجِدَ لِسُنَّةِ اللهِ تَحْوِيْلًا
তুমি আল্লাহর বিধানে কখনো কোন পরিবর্তন পাবে না এবং তাঁর বিধানে কোন বিচ্যুতিও দেখতে পাবে না। (সূরা ফাতির- ৪৩)
আল্লাহর আইন সার্বজনীন :
تَبَارَكَ الَّذِيْ نَزَّلَ الْفُرْقَانَ عَلٰى عَبْدِهٖ لِيَكُوْنَ لِلْعَالَمِيْنَ نَذِيْرًا
তিনি কত মহান, যিনি তাঁর বান্দার প্রতি ফুরক্বান (কুরআন) অবতীর্ণ করেছেন, যাতে সে বিশ্বজগতের জন্য সতর্ককারী হতে পারে! (সূরা ফুরক্বান- ১)
আল্লাহর আইন সবচেয়ে সুন্দর :
اَفَحُكْمَ الْجَاهِلِيَّةِ يَبْغُوْنَؕ وَمَنْ اَحْسَنُ مِنَ اللهِ حُكْمًا لِّقَوْمٍ يُّوْقِنُوْنَ
তবে কী তারা জাহেলী যুগের বিধি-বিধানের আশা করে? দৃঢ় বিশ্বাসী লোকদের জন্য বিধান প্রণয়নে আল্লাহর চেয়ে কে উত্তম? (সূরা মায়েদা- ৫০)
আল্লাহর আইন কুরআনের মধ্যে উল্লেখ রয়েছে :
وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَانًا لِّكُلِّ شَيْءٍ وَّهُدًى وَّرَحْمَةً وَّبُشْرٰى لِلْمُسْلِمِيْنَ
আমি তোমার উপর কিতাব নাযিল করেছি, যাতে রয়েছে সবকিছুর ব্যাখ্যা, হেদায়াত ও মুসলিমদের জন্য সুসংবাদ। (সূরা নাহল- ৮৯)
মানুষের জ্ঞান অসম্পূর্ণ :
وَاللهُ يَعْلَمُ وَاَنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ
মূলত আল্লাহই জানেন এবং তোমরা জান না। (সূরা বাক্বারা- ২১৬)
সারা বিশ্বের বাদশা হলেন আল্লাহ :
تَبَارَكَ الَّذِيْ بِيَدِهِ الْمُلْكُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
বরকতময় সেই সত্তা, যাঁর হাতে সর্বময় কর্তৃত্ব; তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। (সূরা মুলক- ১)
পৃথিবীর সবকিছুই আল্লাহর আইন মানে :
اَفَغَيْرَ دِيْنِ اللهِ يَبْغُوْنَ وَلَهٗۤ اَسْلَمَ مَنْ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ طَوْعًا وَّكَرْهًا وَّاِلَيْهِ يُرْجَعُوْنَ
আল্লাহর দেয়া জীবনব্যবস্থা বাদ দিয়ে তারা কি অন্য কিছুর সন্ধান করে, অথচ আকাশ এবং পৃথিবীতে যা আছে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় সবই তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। (অবশেষে) তাদেরকে তাঁর দিকেই ফিরিয়ে নেয়া হবে। (সূরা আলে ইমরান- ৮৩)
আইন প্রণয়নের অধিকার একমাত্র আল্লাহর :
قُلْ اِنَّ الْاَمْرَ كُلَّهٗ لِلّٰهِ
বলো, সকল নির্দেশ আল্লাহর (নিয়ন্ত্রণে)। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৪)
اِنِ الْحُكْمُ اِلَّا لِلّٰهِ يَقُصُّ الْحَقَّ وَهُوَ خَيْرُ الْفَاصِلِيْنَ
কর্তৃত্ব তো আল্লাহরই, তিনি সত্য বিবৃত করেন; আর ফায়সালাকারীদের মধ্যে তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ। (সূরা আন‘আম- ৫৭)
মানুষকে আইন তৈরির অধিকার দেয়া হয়নি :
وَلَا تَقُوْلُوْا لِمَا تَصِفُ اَلْسِنَتُكُمُ الْكَذِبَ هٰذَا حَلَالٌ وَّهٰذَا حَرَامٌ لِّتَفْتَرُوْا عَلَى اللهِ الْكَذِبَؕ اِنَّ الَّذِيْنَ يَفْتَرُوْنَ عَلَى اللهِ الْكَذِبَ لَا يُفْلِحُوْنَ
তোমাদের জিহ্বা দ্বারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে এসব কথা বলো না যে, এটা হালাল এবং এটা হারাম। নিশ্চয় যারা আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন করবে, তারা সফলকাম হয় না। (সূরা নাহল- ১১৬)
পূর্ববর্তী নবীরা আল্লাহর আইন দিয়ে বিচার করতেন :
اِنَّاۤ اَنْزَلْنَا التَّوْرَاةَ فِيْهَا هُدًى وَّنُوْرٌۚ يَحْكُمُ بِهَا النَّبِيُّوْنَ الَّذِيْنَ اَسْلَمُوْا لِلَّذِيْنَ هَادُوْا وَالرَّبَّانِيُّوْنَ وَالْاَحْبَارُ بِمَا اسْتُحْفِظُوْا مِنْ كِتَابِ اللهِ وَكَانُوْا عَلَيْهِ شُهَدَآءَۚ فَلَا تَخْشَوُا النَّاسَ وَاخْشَوْنِ وَلَا تَشْتَرُوْا بِاٰيَاتِيْ ثَمَنًا قَلِيْلًاؕ وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْكَافِرُوْنَ
আমি তো অবতীর্ণ করেছিলাম তাওরাত, যাতে ছিল হেদায়াত ও আলো। এর মাধ্যমে আল্লাহর অনুগত নবী, দরবেশ ও আলিমরা ইয়াহুদিদের মধ্যে মীমাংসা করে দিত। কেননা তাদেরকে আল্লাহর কিতাবের হেফাজতের আদেশ প্রদান করা হয়েছিল, আর তারা ছিল তার সাক্ষী। অতএব তোমরা মানুষকে ভয় করো না, বরং আমাকেই ভয় করো এবং আমার আয়াতসমূহকে সামান্য মূল্যে বিক্রি করে দিয়ো না। আর আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন সে অনুযায়ী যারা মীমাংসা করে না, তারা কাফির। (সূরা মায়েদা- ৪৪)
وَقَفَّيْنَا عَلٰۤى اٰثَارِهِمْ بِعِيْسَى ابْنِ مَرْيَمَ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ التَّوْرَاةِ وَاٰتَيْنَاهُ الْاِنْجِيْلَ فِيْهِ هُدًى وَّنُوْرٌ وَّمُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ التَّوْرَاةِ وَهُدًى وَّمَوْعِظَةً لِّلْمُتَّقِيْنَ ‐ وَلْيَحْكُمْ اَهْلُ الْاِنْجِيْلِ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فِيْهِؕ وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ
আমি তাদের পরে পাঠিয়েছিলাম ঈসা ইবনে মারইয়ামকে, তিনি ছিলেন তাদের নিকট (অবস্থিত) তাওরাতে যা কিছু ছিল তার সত্যতা প্রমাণকারী। আমি তাকে দিয়েছিলাম ইঞ্জিল, তাতে ছিল হেদায়াত ও আলো। আর তা ছিল তাদের সামনে তাওরাতে যা কিছু ছিল তার সমর্থক এবং মুত্তাক্বীদের জন্য হেদায়াত ও উপদেশ। (এটা এজন্য অবতীর্ণ করা হয়েছে যে) আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন ইঞ্জিলের অনুসারীরা যেন সে অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করে। আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন যারা সে অনুযায়ী মীমাংসা করে না, তারা তো ফাসিক। (সূরা মায়েদা- ৪৬, ৪৭)
উম্মতে মুহাম্মাদীকেও কুরআন দিয়ে বিচার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে :
وَاَنْزَلْنَاۤ اِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ الْكِتَابِ وَمُهَيْمِنًا عَلَيْهِ فَاحْكُمْ بَيْنَهُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ وَلَا تَتَّبِعْ اَهْوَآءَهُمْ عَمَّا جَآءَكَ مِنَ الْحَقِّؕ لِكُلٍّ جَعَلْنَا مِنْكُمْ شِرْعَةً وَّمِنْهَاجًا
আমি আপনার উপর অবতীর্ণ করেছি সত্যসহ এ কিতাব, যা পূর্বে অবতীর্ণ কিতাবসমূহের সত্যায়নকারী এবং তার সংরক্ষণকারী। সুতরাং আপনি তাদের মধ্যে আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন সে অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করুন এবং আপনার কাছে যে সত্য এসেছে তা ত্যাগ করে তাদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করবেন না। আমি তোমাদের প্রত্যেকের জন্য শরীয়াত ও পথ নির্দিষ্ট করে দিয়েছি। (সূরা মায়েদা- ৪৮)
اِنَّاۤ اَنْزَلْنَاۤ اِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ لِتَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ بِمَاۤ اَرَاكَ اللهُ وَلَا تَكُنْ لِّلْخَآئِنِيْنَ خَصِيْمًا
আমি তো তোমার প্রতি সত্যসহ কিতাব নাযিল করেছি, যাতে আল্লাহ তোমাকে যা জানিয়েছেন সে অনুসারে মানুষের মধ্যে বিচার-ফায়সালা করতে পার। আর তুমি বিশ্বাসভঙ্গকারীদের সমর্থনে তর্ক করো না। (সূরা নিসা- ১০৫)
আল্লাহর বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা না করার পরিণাম ভয়াবহ :
وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْكَافِرُوْنَ
আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন যারা সে অনুসারে মীমাংসা করে না তারা কাফির। (সূরা মায়েদা- ৪৪)
وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ
আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন যারা সে অনুযায়ী মীমাংসা করে না তারা অত্যাচারী। (সূরা মায়েদা- ৪৫)
وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ
আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন যারা সে অনুযায়ী বিচার করে না তারা ফাসিক। (সূরা মায়েদা- ৪৭)
যারা কিছু মানে আর কিছু মানে না- তারা শাস্তি পাবে :
اَفَتُؤْمِنُوْنَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُوْنَ بِبَعْضٍۚ فَمَا جَزَآءُ مَنْ يَّفْعَلُ ذٰلِكَ مِنْكُمْ اِلَّا خِزْيٌ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَاۚ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّوْنَ اِلٰۤى اَشَدِّ الْعَذَابِؕ وَمَا اللهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ
তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশ বিশ্বাস কর এবং কিছু অংশ অস্বীকার কর? অতএব তোমাদের মধ্যে যারা এরূপ করে তাদের পার্থিব জীবনে দুর্গতি ব্যতীত কিছুই নেই। কিয়ামত দিবসে তারা কঠোর শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হবে। আর তোমরা যা করছ আল্লাহ সে বিষয়ে অমনোযোগী নন। (সূরা বাক্বারা- ৮৫)
আল্লাহর আইনে হস্তক্ষেপ করার অধিকার কারো নেই :
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَّلَا مُؤْمِنَةٍ اِذَا قَضَى اللهُ وَرَسُوْلُهٗۤ اَمْرًا اَنْ يَّكُوْنَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ اَمْرِهِمْؕ وَمَنْ يَّعْصِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُّبِيْنًا
কোন মুমিন পুরুষ কিংবা মুমিন নারীর জন্য এ অবকাশ নেই যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যখন কোন ফায়সালা দেন, তখন সে ব্যাপারে তাদের কোন নিজস্ব সিদ্ধান্তের অধিকার থাকবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করল, সে তো প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় নিপতিত হলো। (সূরা আহযাব- ৩৬)
وَاللهُ يَعْلَمُ وَاَنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ
মূলত আল্লাহই জানেন এবং তোমরা জান না। (সূরা বাক্বারা- ২১৬)
সারা বিশ্বের বাদশা হলেন আল্লাহ :
تَبَارَكَ الَّذِيْ بِيَدِهِ الْمُلْكُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
বরকতময় সেই সত্তা, যাঁর হাতে সর্বময় কর্তৃত্ব; তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। (সূরা মুলক- ১)
পৃথিবীর সবকিছুই আল্লাহর আইন মানে :
اَفَغَيْرَ دِيْنِ اللهِ يَبْغُوْنَ وَلَهٗۤ اَسْلَمَ مَنْ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ طَوْعًا وَّكَرْهًا وَّاِلَيْهِ يُرْجَعُوْنَ
আল্লাহর দেয়া জীবনব্যবস্থা বাদ দিয়ে তারা কি অন্য কিছুর সন্ধান করে, অথচ আকাশ এবং পৃথিবীতে যা আছে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় সবই তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। (অবশেষে) তাদেরকে তাঁর দিকেই ফিরিয়ে নেয়া হবে। (সূরা আলে ইমরান- ৮৩)
আইন প্রণয়নের অধিকার একমাত্র আল্লাহর :
قُلْ اِنَّ الْاَمْرَ كُلَّهٗ لِلّٰهِ
বলো, সকল নির্দেশ আল্লাহর (নিয়ন্ত্রণে)। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৪)
اِنِ الْحُكْمُ اِلَّا لِلّٰهِ يَقُصُّ الْحَقَّ وَهُوَ خَيْرُ الْفَاصِلِيْنَ
কর্তৃত্ব তো আল্লাহরই, তিনি সত্য বিবৃত করেন; আর ফায়সালাকারীদের মধ্যে তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ। (সূরা আন‘আম- ৫৭)
মানুষকে আইন তৈরির অধিকার দেয়া হয়নি :
وَلَا تَقُوْلُوْا لِمَا تَصِفُ اَلْسِنَتُكُمُ الْكَذِبَ هٰذَا حَلَالٌ وَّهٰذَا حَرَامٌ لِّتَفْتَرُوْا عَلَى اللهِ الْكَذِبَؕ اِنَّ الَّذِيْنَ يَفْتَرُوْنَ عَلَى اللهِ الْكَذِبَ لَا يُفْلِحُوْنَ
তোমাদের জিহ্বা দ্বারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে এসব কথা বলো না যে, এটা হালাল এবং এটা হারাম। নিশ্চয় যারা আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন করবে, তারা সফলকাম হয় না। (সূরা নাহল- ১১৬)
পূর্ববর্তী নবীরা আল্লাহর আইন দিয়ে বিচার করতেন :
اِنَّاۤ اَنْزَلْنَا التَّوْرَاةَ فِيْهَا هُدًى وَّنُوْرٌۚ يَحْكُمُ بِهَا النَّبِيُّوْنَ الَّذِيْنَ اَسْلَمُوْا لِلَّذِيْنَ هَادُوْا وَالرَّبَّانِيُّوْنَ وَالْاَحْبَارُ بِمَا اسْتُحْفِظُوْا مِنْ كِتَابِ اللهِ وَكَانُوْا عَلَيْهِ شُهَدَآءَۚ فَلَا تَخْشَوُا النَّاسَ وَاخْشَوْنِ وَلَا تَشْتَرُوْا بِاٰيَاتِيْ ثَمَنًا قَلِيْلًاؕ وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْكَافِرُوْنَ
আমি তো অবতীর্ণ করেছিলাম তাওরাত, যাতে ছিল হেদায়াত ও আলো। এর মাধ্যমে আল্লাহর অনুগত নবী, দরবেশ ও আলিমরা ইয়াহুদিদের মধ্যে মীমাংসা করে দিত। কেননা তাদেরকে আল্লাহর কিতাবের হেফাজতের আদেশ প্রদান করা হয়েছিল, আর তারা ছিল তার সাক্ষী। অতএব তোমরা মানুষকে ভয় করো না, বরং আমাকেই ভয় করো এবং আমার আয়াতসমূহকে সামান্য মূল্যে বিক্রি করে দিয়ো না। আর আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন সে অনুযায়ী যারা মীমাংসা করে না, তারা কাফির। (সূরা মায়েদা- ৪৪)
وَقَفَّيْنَا عَلٰۤى اٰثَارِهِمْ بِعِيْسَى ابْنِ مَرْيَمَ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ التَّوْرَاةِ وَاٰتَيْنَاهُ الْاِنْجِيْلَ فِيْهِ هُدًى وَّنُوْرٌ وَّمُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ التَّوْرَاةِ وَهُدًى وَّمَوْعِظَةً لِّلْمُتَّقِيْنَ ‐ وَلْيَحْكُمْ اَهْلُ الْاِنْجِيْلِ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فِيْهِؕ وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ
আমি তাদের পরে পাঠিয়েছিলাম ঈসা ইবনে মারইয়ামকে, তিনি ছিলেন তাদের নিকট (অবস্থিত) তাওরাতে যা কিছু ছিল তার সত্যতা প্রমাণকারী। আমি তাকে দিয়েছিলাম ইঞ্জিল, তাতে ছিল হেদায়াত ও আলো। আর তা ছিল তাদের সামনে তাওরাতে যা কিছু ছিল তার সমর্থক এবং মুত্তাক্বীদের জন্য হেদায়াত ও উপদেশ। (এটা এজন্য অবতীর্ণ করা হয়েছে যে) আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন ইঞ্জিলের অনুসারীরা যেন সে অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করে। আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন যারা সে অনুযায়ী মীমাংসা করে না, তারা তো ফাসিক। (সূরা মায়েদা- ৪৬, ৪৭)
উম্মতে মুহাম্মাদীকেও কুরআন দিয়ে বিচার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে :
وَاَنْزَلْنَاۤ اِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ الْكِتَابِ وَمُهَيْمِنًا عَلَيْهِ فَاحْكُمْ بَيْنَهُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ وَلَا تَتَّبِعْ اَهْوَآءَهُمْ عَمَّا جَآءَكَ مِنَ الْحَقِّؕ لِكُلٍّ جَعَلْنَا مِنْكُمْ شِرْعَةً وَّمِنْهَاجًا
আমি আপনার উপর অবতীর্ণ করেছি সত্যসহ এ কিতাব, যা পূর্বে অবতীর্ণ কিতাবসমূহের সত্যায়নকারী এবং তার সংরক্ষণকারী। সুতরাং আপনি তাদের মধ্যে আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন সে অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করুন এবং আপনার কাছে যে সত্য এসেছে তা ত্যাগ করে তাদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করবেন না। আমি তোমাদের প্রত্যেকের জন্য শরীয়াত ও পথ নির্দিষ্ট করে দিয়েছি। (সূরা মায়েদা- ৪৮)
اِنَّاۤ اَنْزَلْنَاۤ اِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ لِتَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ بِمَاۤ اَرَاكَ اللهُ وَلَا تَكُنْ لِّلْخَآئِنِيْنَ خَصِيْمًا
আমি তো তোমার প্রতি সত্যসহ কিতাব নাযিল করেছি, যাতে আল্লাহ তোমাকে যা জানিয়েছেন সে অনুসারে মানুষের মধ্যে বিচার-ফায়সালা করতে পার। আর তুমি বিশ্বাসভঙ্গকারীদের সমর্থনে তর্ক করো না। (সূরা নিসা- ১০৫)
আল্লাহর বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা না করার পরিণাম ভয়াবহ :
وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْكَافِرُوْنَ
আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন যারা সে অনুসারে মীমাংসা করে না তারা কাফির। (সূরা মায়েদা- ৪৪)
وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ
আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন যারা সে অনুযায়ী মীমাংসা করে না তারা অত্যাচারী। (সূরা মায়েদা- ৪৫)
وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ
আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন যারা সে অনুযায়ী বিচার করে না তারা ফাসিক। (সূরা মায়েদা- ৪৭)
যারা কিছু মানে আর কিছু মানে না- তারা শাস্তি পাবে :
اَفَتُؤْمِنُوْنَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُوْنَ بِبَعْضٍۚ فَمَا جَزَآءُ مَنْ يَّفْعَلُ ذٰلِكَ مِنْكُمْ اِلَّا خِزْيٌ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَاۚ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّوْنَ اِلٰۤى اَشَدِّ الْعَذَابِؕ وَمَا اللهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ
তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশ বিশ্বাস কর এবং কিছু অংশ অস্বীকার কর? অতএব তোমাদের মধ্যে যারা এরূপ করে তাদের পার্থিব জীবনে দুর্গতি ব্যতীত কিছুই নেই। কিয়ামত দিবসে তারা কঠোর শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হবে। আর তোমরা যা করছ আল্লাহ সে বিষয়ে অমনোযোগী নন। (সূরা বাক্বারা- ৮৫)
আল্লাহর আইনে হস্তক্ষেপ করার অধিকার কারো নেই :
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَّلَا مُؤْمِنَةٍ اِذَا قَضَى اللهُ وَرَسُوْلُهٗۤ اَمْرًا اَنْ يَّكُوْنَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ اَمْرِهِمْؕ وَمَنْ يَّعْصِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُّبِيْنًا
কোন মুমিন পুরুষ কিংবা মুমিন নারীর জন্য এ অবকাশ নেই যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যখন কোন ফায়সালা দেন, তখন সে ব্যাপারে তাদের কোন নিজস্ব সিদ্ধান্তের অধিকার থাকবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করল, সে তো প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় নিপতিত হলো। (সূরা আহযাব- ৩৬)
আইনের চূড়ান্ত সনদ হিসেবে কুরআন ও সুন্নাহকে নির্দিষ্ট করা :
فَاِنْ تَنَازَعْتُمْ فِيْ شَيْءٍ فَرُدُّوْهُ اِلَى اللّٰهِ وَالرَّسُوْلِ اِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِؕ ذٰلِكَ خَيْرٌ وَّاَحْسَنُ تَاْوِيْلًا
অতঃপর তোমাদের মাঝে যদি কোন মতবিরোধ সৃষ্টি হয়, তাহলে সে বিষয়টি ফায়সালার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাও, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি এবং আখিরাতের প্রতি ঈমান আনয়ন করে থাক; এটাই উত্তম এবং চূড়ান্ত সিন্ধান্ত গ্রহণের জন্য অধিকতর উপযুক্ত। (সূরা নিসা- ৫৯)
মানবসমাজকে ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত করা :
لَقَدْ اَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنَاتِ وَاَنْزَلْنَا مَعَهُمُ الْكِتَابَ وَالْمِيْزَانَ لِيَقُوْمَ النَّاسُ بِالْقِسْطِۚ وَاَنْزَلْنَا الْحَدِيْدَ فِيْهِ بَاْسٌ شَدِيْدٌ وَّمَنَافِعُ لِلنَّاسِ
নিশ্চয় আমি আমার রাসূলদেরকে প্রেরণ করেছি স্পষ্ট প্রমাণসহ এবং তাদের সঙ্গে দিয়েছি কিতাব ও তুলাদন্ড, যাতে করে মানুষ সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে। আর আমি লৌহ দিয়েছি, যাতে রয়েছে প্রচন্ড শক্তি ও মানুষের জন্য বহুবিধ কল্যাণ। (সূরা হাদীদ- ২৫)
কিসাস বা নর হত্যার বিধান প্রয়োগ করা :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِصَاصُ فِى الْقَتْلٰىؕ - اَلْحُرُّ بِالْحُرِّ وَالْعَبْدُ بِالْعَبْدِ وَالْاُنْثٰى بِالْاُنْثٰىؕ فَمَنْ عُفِيَ لَه مِنْ اَخِيْهِ شَيْءٌ فَاتِّبَاعٌ ۢبِالْمَعْرُوْفِ وَاَدَآءٌ اِلَيْهِ بِاِحْسَانٍؕ ذٰلِكَ تَخْفِيْفٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَرَحْمَةٌؕ فَمَنِ اعْتَدٰى بَعْدَ ذٰلِكَ فَلَه عَذَابٌ اَلِيْمٌ
হে ঈমানদারগণ! নিহতদের ব্যাপারে তোমাদের জন্য কিসাস (প্রতিশোধ গ্রহণের বিধান) ফরয করে দেয়া হলো। স্বাধীন ব্যক্তির পরিবর্তে স্বাধীন ব্যক্তি, দাসের পরিবর্তে দাস এবং নারীর পরিবর্তে নারী; কিন্তু কেউ যদি তার ভাই কর্তৃক কোন বিষয়ে ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়, তবে যেন ন্যায় সঙ্গতভাবে রক্তমূল্য দাবী করে এবং (হত্যাকারী) সৎভাবে তা পরিশোধ করে দেয়। এটা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে হালকা বিধান ও করুণা। এরপরও যে ব্যক্তি সীমালঙ্ঘন করবে, তার জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরা বাক্বারা- ১৭৮)
ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের শাস্তি প্রয়োগ করা :
اِنَّمَا جَزَآءُ الَّذِيْنَ يُحَارِبُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَيَسْعَوْنَ فِى الْاَرْضِ فَسَادًا اَنْ يُّقَتَّلُوْاۤ اَوْ يُصَلَّبُوْاۤ اَوْ تُقَطَّعَ اَيْدِيْهِمْ وَاَرْجُلُهُمْ مِّنْ خِلَافٍ اَوْ يُنْفَوْا مِنَ الْاَرْضِؕ ذٰلِكَ لَهُمْ خِزْيٌ فِى الدُّنْيَا وَلَهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিপক্ষে লড়াই করে এবং পৃথিবীতে ফিতনা সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাদের শাস্তি হলো- তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে অথবা তাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলা হবে অথবা তাদেরকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটা হলো তাদের জন্য পৃথিবীতে অপমান; কিন্তু পরকালে তাদের জন্য রয়েছে আরো ভয়াবহ শাস্তি। (সূরা মায়েদা- ৩৩)
চুরির শাস্তি প্রয়োগ করা :
وَالسَّارِقُ وَالسَّارِقَةُ فَاقْطَعُوْاۤ اَيْدِيَهُمَا جَزَآءً ۢبِمَا كَسَبَا نَكَالًا مِّنَ اللهِؕ وَاللهُ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
যে পুরুষ এবং যে নারী চুরি করে তাদের কর্মফলের শাস্তি হিসেবে তাদের হাত কেটে দাও, এ হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে দন্ড। আল্লাহ মহাপ্রতাপশালী ও মহাবিজ্ঞ। (সূরা মায়েদা- ৩৮)
যিনার শাস্তি প্রয়োগ করা :
اَلزَّانِيَةُ وَالزَّانِيْ فَاجْلِدُوْا كُلَّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا مِائَةَ جَلْدَةٍ وَّلَا تَاْخُذْكُمْ بِهِمَا رَاْفَةٌ فِيْ دِيْنِ اللهِ اِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِۚ وَلْيَشْهَدْ عَذَابَهُمَا طَآئِفَةٌ مِّنَ الْمُؤْمِنِيْنَ
ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী- তাদের প্রত্যেককে একশ’ বেত্রাঘাত করবে। আল্লাহর বিধান কার্যকরী করণে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদেরকে প্রভাবিত না করে, যদি তোমরা আল্লাহ এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হও। আর মুমিনদের একটি দল যেন তাদের উভয়ের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে। (সূরা নূর- ২)
যিনার অপবাদের শাস্তি প্রদান করা :
وَالَّذِيْنَ يَرْمُوْنَ الْمُحْصَنَاتِ ثُمَّ لَمْ يَاْتُوْا بِاَرْبَعَةِ شُهَدَآءَ فَاجْلِدُوْهُمْ ثَمَانِيْنَ جَلْدَةً وَّلَا تَقْبَلُوْا لَهُمْ شَهَادَةً اَبَدًاۚ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ ‐ اِلَّا الَّذِيْنَ تَابُوْا مِنْ ۢبَعْدِ ذٰلِكَ وَاَصْلَحُوْاۚ فَاِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
যারা সতী-সাধ্বী নারীদের উপর ব্যভিচারের অপবাদ দেবে এবং এর স্বপক্ষে চারজন সাক্ষী উপস্থিত করতে না পারবে, তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত করবে এবং ভবিষ্যতে আর কখনো তাদের থেকে সাক্ষ্য গ্রহণ করবে না। কেননা এরা হচ্ছে নিকৃষ্ট গোনাহগার। তবে এরপর যারা তাওবা করবে এবং নিজেকে সংশোধন করে নেবে তারা ব্যতীত। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু। (সূরা নূর- ৪, ৫)
ব্যাখ্যা : যে ব্যক্তি অন্যের বিরুদ্ধে যিনার অভিযোগ আনে, সে সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে নিজের অভিযোগ প্রমাণ করবে। আর যদি অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারে, তাহলে তাকে আশিটি বেত্রাঘাত করতে হবে, যাতে করে ভবিষ্যতে সে আর কখনো এ ধরনের কোন মিথ্যা কথা বিনা প্রমাণে নিজের মুখ থেকে বের করার সাহস না করে। যখন কোন পুরুষ অথবা নারী অপর কোন সচ্চরিত্রবান পুরুষ অথবা নারীর উপর যিনার অপবাদ চাপিয়ে দেয়, তখন তার জন্য এ আইন প্রযোজ্য হবে। এখানে ‘মুহসিন’ ও ‘মুহসিনা’ অর্থ বিবাহিত পুরুষ ও নারী নয়, বরং সচ্চরিত্রবান পুরুষ ও নারীকে বুঝানো হয়েছে।
পতিতালয় বন্ধ করা :
وَلَا تُكْرِهُوْا فَتَيَاتِكُمْ عَلَى الْبِغَآءِ اِنْ اَرَدْنَ تَحَصُّنًا لِّتَبْتَغُوْا عَرَضَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَاؕ وَمَنْ يُّكْرِهْ هُّنَّ فَاِنَّ اللّٰهَ مِنْ ۢبَعْدِ اِكْرَاهِهِنَّ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
যদি তোমাদের দাসীরা সতীত্ব রক্ষা করতে চায়, তবে পার্থিব জীবনের ধনসম্পদের লোভ-লালসায় তাদেরকে ব্যভিচারিণী হতে বাধ্য করো না। আর কেউ তাদেরকে বাধ্য করলে, তাদের উপর জবরদস্তির পর আল্লাহ তো ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা নূর- ৩৩)
সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদেরকে দমন করা :
لَئِنْ لَّمْ يَنْتَهِ الْمُنَافِقُوْنَ وَالَّذِيْنَ فِيْ قُلُوْبِهِمْ مَّرَضٌ وَّالْمُرْجِفُوْنَ فِى الْمَدِيْنَةِ لَنُغْرِيَنَّكَ بِهِمْ ثُمَّ لَا يُجَاوِرُوْنَكَ فِيْهَاۤ اِلَّا قَلِيْلًا مَّلْعُوْنِيْنَۚ اَيْنَمَا ثُقِفُوْاۤ اُخِذُوْا وَقُتِّلُوْا تَقْتِيْلًا
যদি মুনাফিকরা ও যাদের অন্তরে রোগ আছে তারা এবং মদিনায় গুজব রটনাকারীরা বিরত না হয়, তবে আমি অবশ্যই তোমাকে তাদের উপর প্রবল করে বসিয়ে দেব। অতঃপর তারা সেখানে তোমার প্রতিবেশী হিসেবে খুব সামান্য সময়ই অবস্থান করতে পারবে। এরপরও এখানে যারা থেকে যাবে তারা থাকবে অভিশপ্ত হয়ে। অতঃপর তাদেরকে যেখানেই পাওয়া যাবে পাকড়াও করা হবে এবং হত্যা করার মতোই হত্যা করা হবে। (সূরা আহযাব- ৬০, ৬১)
রাষ্ট্রের সর্বত্র আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত করা :
وَقَاتِلُوْهُمْ حَتّٰى لَا تَكُوْنَ فِتْنَةٌ وَّيَكُوْنَ الدِّيْنُ كُلُّهٗ لِلّٰهِۚ فَاِنِ انْتَهَوْا فَاِنَّ اللهَ بِمَا يَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
তোমরা তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে থাকবে যতক্ষণ না ফিতনা দূরীভূত হয় এবং আল্লাহর দ্বীন সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। আর যদি তারা বিরত হয়, তবে তারা যা করে আল্লাহ সে ব্যাপারে সম্যক দ্রষ্টা। (সূরা আনফাল- ৩৯)
সংবাদ পর্যবেক্ষণ করে পদক্ষেপ নেয়া :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنْ جَآءَكُمْ فَاسِقٌ ۢبِنَبَإٍ فَتَبَيَّنُوْاۤ اَنْ تُصِيْبُوْا قَوْمًا ۢبِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوْا عَلٰى مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِيْنَ
হে ঈমানদারগণ! যদি কোন ফাসিক লোক তোমাদের কাছে কোন খবর নিয়ে আসে তাহলে এর সত্যতা যাচাই করে নিও। এমন যেন না হয় যে, তোমরা না জেনে কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতি করে বস এবং তোমরা যা করেছ সেজন্য পরিতাপ করতে থাক। (সূরা হুজুরাত- ৬)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদেরকে এ মৌলিক নির্দেশটি জানিয়ে দিলেন যে, যখন তোমরা এমন কোন গুরুত্বপূর্ণ খবর পাবে যার ভিত্তিতে বড় রকমের কোন ঘটনা সংঘটিত হতে পারে তখন তা বিশ্বাস করার পূর্বে খবরের বাহক কেমন ব্যক্তি তা যাচাই করে দেখো। সে যদি কোন ফাসিক হয় তাহলে তার দেয়া খবর অনুসারে কাজ করার পূর্বে প্রকৃত ঘটনা কি তা অনুসন্ধান করে দেখো। আললাহর এ নীতি অনুসারে যার চরিত্র ও কাজকর্ম নির্ভরযোগ্য নয় এমন কোন সংবাদদাতার সংবাদের উপর নির্ভর করে কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী কিংবা জাতির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা বৈধ নয়।
বহিরাগতদেরকে নিরাপত্তা দেয়া :
وَاِنْ اَحَدٌ مِّنَ الْمُشْرِكِيْنَ اسْتَجَارَكَ فَاَجِرْهُ حَتّٰى يَسْمَعَ كَلَامَ اللهِ ثُمَّ اَبْلِغْهُ مَاْمَنَه ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ قَوْمٌ لَّا يَعْلَمُوْنَ
মুশরিকদের মধ্যে কেউ তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করলে তুমি তাকে আশ্রয় দেবে; যাতে করে সে আল্লাহর বাণী শুনতে পায়। অতঃপর তাকে তার নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেবে; কারণ তারা কিছুই জানে না। (সূরা তাওবা- ৬)
চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে :
اِلَّا الَّذِيْنَ عَاهَدْتُّمْ مِّنَ الْمُشْرِكِيْنَ ثُمَّ لَمْ يَنْقُصُوْكُمْ شَيْئًا وَّلَمْ يُظَاهِرُوْا عَلَيْكُمْ اَحَدًا فَاَتِمُّوْاۤ اِلَيْهِمْ عَهْدَهُمْ اِلٰى مُدَّتِهِمْؕ اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُتَّقِيْنَ
তবে মুশরিকদের মধ্যে যাদের সাথে তোমরা চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছ, তারপর যারা তোমাদের চুক্তি রক্ষায় কোন ত্রুটি করেনি এবং তোমাদের বিরুদ্ধে কাউকে সাহায্যও করেনি, তোমরা তাদের সাথে নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত চুক্তি পূর্ণ করবে। নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাক্বীদেরকে পছন্দ করেন। (সূরা তাওবা- ৪)
সম্পদের অপব্যবহারকারীদের হাতে অর্থনৈতিক দায়িত্ব না দেয়া :
وَلَا تُؤْتُوا السُّفَهَآءَ اَمْوَالَكُمُ الَّتِيْ جَعَلَ اللّٰهُ لَكُمْ قِيَامًا وَّارْزُقُوْهُمْ فِيْهَا وَاكْسُوْهُمْ وَقُوْلُوْا لَهُمْ قَوْلًا مَّعْرُوْفًا
আল্লাহ তোমাদের যে সম্পদকে দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠা লাভের উপকরণ বানিয়েছেন, তা নির্বোধ লোকদের হাতে ছেড়ে দিয়ো না। তবে অবশ্যই এ থেকে তোমরা তাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করবে, পোশাক সরবরাহ করবে এবং তাদের সাথে ভালো কথা বলবে। (সূরা নিসা- ৫)
ব্যাখ্যা : অর্থ-সম্পদ জীবন-যাপনের একটি মাধ্যম। এ সম্পদ এমন ধরনের অজ্ঞ ও নির্বোধ লোকদের হাতে তুলে দেয়া উচিত নয়, যারা এর ত্রুটিপূর্ণ ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে বিনষ্ট করে দেয়। এমনকি নৈতিক অবস্থাকেও ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়।
সম্পদের সুষম বণ্টন করা :
كَيْ لَا يَكُوْنَ دُوْلَةً ۢبَيْنَ الْاَغْنِيَآءِ مِنْكُمْ
(তোমরা সম্পদ এমনভাবে বণ্টন করবে) যেন তা কেবল তোমাদের সমাজের বিত্তবান লোকদের মাঝেই আবর্তিত না হয়। (সূরা হাশর- ৭)
যাকাত আদায় করে তা বণ্টন করা :
خُذْ مِنْ اَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيْهِمْ بِهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْؕ اِنَّ صَلَاتَكَ سَكَنٌ لَّهُمْؕ وَاللهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
তাদের সম্পদ হতে ‘সাদাকা’ (যাকাত) গ্রহণ করবে। এটার দ্বারা তুমি তাদেরকে পবিত্র করবে এবং পরিশুদ্ধ করবে; আর তুমি তাদের জন্য দু‘আ করবে। নিশ্চয় তোমার দু‘আ তাদের জন্য প্রশান্তিদায়ক। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা তাওবা- ১০৩)
বিশেষ চারটি কাজ করা :
اَ لَّذِيْنَ اِنْ مَّكَّنَّاهُمْ فِى الْاَرْضِ اَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ وَاَمَرُوْا بِالْمَعْرُوْفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنْكَرِ
আমি এদেরকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দান করলে এরা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎকাজ হতে নিষেধ করবে। (সূরা হজ্জ- ৪১)
ব্যাখ্যা : যদি দুনিয়ায় তাদেরকে রাষ্ট্র ও শাসন ক্ষমতা দান করা হয় তাহলে তারা ব্যক্তিগত জীবনে ফাসিকী, দুষ্কৃতি ও অহংকার না করে সালাত কায়েম করবে। তারা বিলাসিতা ও প্রবৃত্তি পূজার পরিবর্তে ধনসম্পদের যাকাত প্রদান করবে। তাদের রাষ্ট্রব্যবস্থা সৎকাজকে দাবিয়ে দেয়ার পরিবর্তে তাকে বিকশিত ও সম্প্রসারিত করবে এবং অসৎকাজকে সম্প্রসারিত করার পরিবর্তে দাবিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করবে। এ আয়াতটির মধ্যে ইসলামী রাষ্ট্রের লক্ষ্য এবং তার কর্মকর্তাদের বৈশিষ্ট্যের নির্যাস বের করে দেয়া হয়েছে। কেউ যদি ইসলামী রাষ্ট্র ও ইসলামী সংগঠনের সাথে পরিচিত হতে চায়, তাহলে সে এ আয়াত থেকেই তা বুঝে নিতে পারবে।
فَاِنْ تَنَازَعْتُمْ فِيْ شَيْءٍ فَرُدُّوْهُ اِلَى اللّٰهِ وَالرَّسُوْلِ اِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِؕ ذٰلِكَ خَيْرٌ وَّاَحْسَنُ تَاْوِيْلًا
অতঃপর তোমাদের মাঝে যদি কোন মতবিরোধ সৃষ্টি হয়, তাহলে সে বিষয়টি ফায়সালার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাও, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি এবং আখিরাতের প্রতি ঈমান আনয়ন করে থাক; এটাই উত্তম এবং চূড়ান্ত সিন্ধান্ত গ্রহণের জন্য অধিকতর উপযুক্ত। (সূরা নিসা- ৫৯)
মানবসমাজকে ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত করা :
لَقَدْ اَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنَاتِ وَاَنْزَلْنَا مَعَهُمُ الْكِتَابَ وَالْمِيْزَانَ لِيَقُوْمَ النَّاسُ بِالْقِسْطِۚ وَاَنْزَلْنَا الْحَدِيْدَ فِيْهِ بَاْسٌ شَدِيْدٌ وَّمَنَافِعُ لِلنَّاسِ
নিশ্চয় আমি আমার রাসূলদেরকে প্রেরণ করেছি স্পষ্ট প্রমাণসহ এবং তাদের সঙ্গে দিয়েছি কিতাব ও তুলাদন্ড, যাতে করে মানুষ সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে। আর আমি লৌহ দিয়েছি, যাতে রয়েছে প্রচন্ড শক্তি ও মানুষের জন্য বহুবিধ কল্যাণ। (সূরা হাদীদ- ২৫)
কিসাস বা নর হত্যার বিধান প্রয়োগ করা :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِصَاصُ فِى الْقَتْلٰىؕ - اَلْحُرُّ بِالْحُرِّ وَالْعَبْدُ بِالْعَبْدِ وَالْاُنْثٰى بِالْاُنْثٰىؕ فَمَنْ عُفِيَ لَه مِنْ اَخِيْهِ شَيْءٌ فَاتِّبَاعٌ ۢبِالْمَعْرُوْفِ وَاَدَآءٌ اِلَيْهِ بِاِحْسَانٍؕ ذٰلِكَ تَخْفِيْفٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَرَحْمَةٌؕ فَمَنِ اعْتَدٰى بَعْدَ ذٰلِكَ فَلَه عَذَابٌ اَلِيْمٌ
হে ঈমানদারগণ! নিহতদের ব্যাপারে তোমাদের জন্য কিসাস (প্রতিশোধ গ্রহণের বিধান) ফরয করে দেয়া হলো। স্বাধীন ব্যক্তির পরিবর্তে স্বাধীন ব্যক্তি, দাসের পরিবর্তে দাস এবং নারীর পরিবর্তে নারী; কিন্তু কেউ যদি তার ভাই কর্তৃক কোন বিষয়ে ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়, তবে যেন ন্যায় সঙ্গতভাবে রক্তমূল্য দাবী করে এবং (হত্যাকারী) সৎভাবে তা পরিশোধ করে দেয়। এটা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে হালকা বিধান ও করুণা। এরপরও যে ব্যক্তি সীমালঙ্ঘন করবে, তার জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরা বাক্বারা- ১৭৮)
ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের শাস্তি প্রয়োগ করা :
اِنَّمَا جَزَآءُ الَّذِيْنَ يُحَارِبُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَيَسْعَوْنَ فِى الْاَرْضِ فَسَادًا اَنْ يُّقَتَّلُوْاۤ اَوْ يُصَلَّبُوْاۤ اَوْ تُقَطَّعَ اَيْدِيْهِمْ وَاَرْجُلُهُمْ مِّنْ خِلَافٍ اَوْ يُنْفَوْا مِنَ الْاَرْضِؕ ذٰلِكَ لَهُمْ خِزْيٌ فِى الدُّنْيَا وَلَهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিপক্ষে লড়াই করে এবং পৃথিবীতে ফিতনা সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাদের শাস্তি হলো- তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে অথবা তাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলা হবে অথবা তাদেরকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটা হলো তাদের জন্য পৃথিবীতে অপমান; কিন্তু পরকালে তাদের জন্য রয়েছে আরো ভয়াবহ শাস্তি। (সূরা মায়েদা- ৩৩)
চুরির শাস্তি প্রয়োগ করা :
وَالسَّارِقُ وَالسَّارِقَةُ فَاقْطَعُوْاۤ اَيْدِيَهُمَا جَزَآءً ۢبِمَا كَسَبَا نَكَالًا مِّنَ اللهِؕ وَاللهُ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
যে পুরুষ এবং যে নারী চুরি করে তাদের কর্মফলের শাস্তি হিসেবে তাদের হাত কেটে দাও, এ হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে দন্ড। আল্লাহ মহাপ্রতাপশালী ও মহাবিজ্ঞ। (সূরা মায়েদা- ৩৮)
যিনার শাস্তি প্রয়োগ করা :
اَلزَّانِيَةُ وَالزَّانِيْ فَاجْلِدُوْا كُلَّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا مِائَةَ جَلْدَةٍ وَّلَا تَاْخُذْكُمْ بِهِمَا رَاْفَةٌ فِيْ دِيْنِ اللهِ اِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِۚ وَلْيَشْهَدْ عَذَابَهُمَا طَآئِفَةٌ مِّنَ الْمُؤْمِنِيْنَ
ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী- তাদের প্রত্যেককে একশ’ বেত্রাঘাত করবে। আল্লাহর বিধান কার্যকরী করণে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদেরকে প্রভাবিত না করে, যদি তোমরা আল্লাহ এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হও। আর মুমিনদের একটি দল যেন তাদের উভয়ের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে। (সূরা নূর- ২)
যিনার অপবাদের শাস্তি প্রদান করা :
وَالَّذِيْنَ يَرْمُوْنَ الْمُحْصَنَاتِ ثُمَّ لَمْ يَاْتُوْا بِاَرْبَعَةِ شُهَدَآءَ فَاجْلِدُوْهُمْ ثَمَانِيْنَ جَلْدَةً وَّلَا تَقْبَلُوْا لَهُمْ شَهَادَةً اَبَدًاۚ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ ‐ اِلَّا الَّذِيْنَ تَابُوْا مِنْ ۢبَعْدِ ذٰلِكَ وَاَصْلَحُوْاۚ فَاِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
যারা সতী-সাধ্বী নারীদের উপর ব্যভিচারের অপবাদ দেবে এবং এর স্বপক্ষে চারজন সাক্ষী উপস্থিত করতে না পারবে, তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত করবে এবং ভবিষ্যতে আর কখনো তাদের থেকে সাক্ষ্য গ্রহণ করবে না। কেননা এরা হচ্ছে নিকৃষ্ট গোনাহগার। তবে এরপর যারা তাওবা করবে এবং নিজেকে সংশোধন করে নেবে তারা ব্যতীত। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু। (সূরা নূর- ৪, ৫)
ব্যাখ্যা : যে ব্যক্তি অন্যের বিরুদ্ধে যিনার অভিযোগ আনে, সে সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে নিজের অভিযোগ প্রমাণ করবে। আর যদি অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারে, তাহলে তাকে আশিটি বেত্রাঘাত করতে হবে, যাতে করে ভবিষ্যতে সে আর কখনো এ ধরনের কোন মিথ্যা কথা বিনা প্রমাণে নিজের মুখ থেকে বের করার সাহস না করে। যখন কোন পুরুষ অথবা নারী অপর কোন সচ্চরিত্রবান পুরুষ অথবা নারীর উপর যিনার অপবাদ চাপিয়ে দেয়, তখন তার জন্য এ আইন প্রযোজ্য হবে। এখানে ‘মুহসিন’ ও ‘মুহসিনা’ অর্থ বিবাহিত পুরুষ ও নারী নয়, বরং সচ্চরিত্রবান পুরুষ ও নারীকে বুঝানো হয়েছে।
পতিতালয় বন্ধ করা :
وَلَا تُكْرِهُوْا فَتَيَاتِكُمْ عَلَى الْبِغَآءِ اِنْ اَرَدْنَ تَحَصُّنًا لِّتَبْتَغُوْا عَرَضَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَاؕ وَمَنْ يُّكْرِهْ هُّنَّ فَاِنَّ اللّٰهَ مِنْ ۢبَعْدِ اِكْرَاهِهِنَّ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
যদি তোমাদের দাসীরা সতীত্ব রক্ষা করতে চায়, তবে পার্থিব জীবনের ধনসম্পদের লোভ-লালসায় তাদেরকে ব্যভিচারিণী হতে বাধ্য করো না। আর কেউ তাদেরকে বাধ্য করলে, তাদের উপর জবরদস্তির পর আল্লাহ তো ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা নূর- ৩৩)
সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদেরকে দমন করা :
لَئِنْ لَّمْ يَنْتَهِ الْمُنَافِقُوْنَ وَالَّذِيْنَ فِيْ قُلُوْبِهِمْ مَّرَضٌ وَّالْمُرْجِفُوْنَ فِى الْمَدِيْنَةِ لَنُغْرِيَنَّكَ بِهِمْ ثُمَّ لَا يُجَاوِرُوْنَكَ فِيْهَاۤ اِلَّا قَلِيْلًا مَّلْعُوْنِيْنَۚ اَيْنَمَا ثُقِفُوْاۤ اُخِذُوْا وَقُتِّلُوْا تَقْتِيْلًا
যদি মুনাফিকরা ও যাদের অন্তরে রোগ আছে তারা এবং মদিনায় গুজব রটনাকারীরা বিরত না হয়, তবে আমি অবশ্যই তোমাকে তাদের উপর প্রবল করে বসিয়ে দেব। অতঃপর তারা সেখানে তোমার প্রতিবেশী হিসেবে খুব সামান্য সময়ই অবস্থান করতে পারবে। এরপরও এখানে যারা থেকে যাবে তারা থাকবে অভিশপ্ত হয়ে। অতঃপর তাদেরকে যেখানেই পাওয়া যাবে পাকড়াও করা হবে এবং হত্যা করার মতোই হত্যা করা হবে। (সূরা আহযাব- ৬০, ৬১)
রাষ্ট্রের সর্বত্র আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত করা :
وَقَاتِلُوْهُمْ حَتّٰى لَا تَكُوْنَ فِتْنَةٌ وَّيَكُوْنَ الدِّيْنُ كُلُّهٗ لِلّٰهِۚ فَاِنِ انْتَهَوْا فَاِنَّ اللهَ بِمَا يَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
তোমরা তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে থাকবে যতক্ষণ না ফিতনা দূরীভূত হয় এবং আল্লাহর দ্বীন সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। আর যদি তারা বিরত হয়, তবে তারা যা করে আল্লাহ সে ব্যাপারে সম্যক দ্রষ্টা। (সূরা আনফাল- ৩৯)
সংবাদ পর্যবেক্ষণ করে পদক্ষেপ নেয়া :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنْ جَآءَكُمْ فَاسِقٌ ۢبِنَبَإٍ فَتَبَيَّنُوْاۤ اَنْ تُصِيْبُوْا قَوْمًا ۢبِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوْا عَلٰى مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِيْنَ
হে ঈমানদারগণ! যদি কোন ফাসিক লোক তোমাদের কাছে কোন খবর নিয়ে আসে তাহলে এর সত্যতা যাচাই করে নিও। এমন যেন না হয় যে, তোমরা না জেনে কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতি করে বস এবং তোমরা যা করেছ সেজন্য পরিতাপ করতে থাক। (সূরা হুজুরাত- ৬)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদেরকে এ মৌলিক নির্দেশটি জানিয়ে দিলেন যে, যখন তোমরা এমন কোন গুরুত্বপূর্ণ খবর পাবে যার ভিত্তিতে বড় রকমের কোন ঘটনা সংঘটিত হতে পারে তখন তা বিশ্বাস করার পূর্বে খবরের বাহক কেমন ব্যক্তি তা যাচাই করে দেখো। সে যদি কোন ফাসিক হয় তাহলে তার দেয়া খবর অনুসারে কাজ করার পূর্বে প্রকৃত ঘটনা কি তা অনুসন্ধান করে দেখো। আললাহর এ নীতি অনুসারে যার চরিত্র ও কাজকর্ম নির্ভরযোগ্য নয় এমন কোন সংবাদদাতার সংবাদের উপর নির্ভর করে কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী কিংবা জাতির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা বৈধ নয়।
বহিরাগতদেরকে নিরাপত্তা দেয়া :
وَاِنْ اَحَدٌ مِّنَ الْمُشْرِكِيْنَ اسْتَجَارَكَ فَاَجِرْهُ حَتّٰى يَسْمَعَ كَلَامَ اللهِ ثُمَّ اَبْلِغْهُ مَاْمَنَه ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ قَوْمٌ لَّا يَعْلَمُوْنَ
মুশরিকদের মধ্যে কেউ তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করলে তুমি তাকে আশ্রয় দেবে; যাতে করে সে আল্লাহর বাণী শুনতে পায়। অতঃপর তাকে তার নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেবে; কারণ তারা কিছুই জানে না। (সূরা তাওবা- ৬)
চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে :
اِلَّا الَّذِيْنَ عَاهَدْتُّمْ مِّنَ الْمُشْرِكِيْنَ ثُمَّ لَمْ يَنْقُصُوْكُمْ شَيْئًا وَّلَمْ يُظَاهِرُوْا عَلَيْكُمْ اَحَدًا فَاَتِمُّوْاۤ اِلَيْهِمْ عَهْدَهُمْ اِلٰى مُدَّتِهِمْؕ اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُتَّقِيْنَ
তবে মুশরিকদের মধ্যে যাদের সাথে তোমরা চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছ, তারপর যারা তোমাদের চুক্তি রক্ষায় কোন ত্রুটি করেনি এবং তোমাদের বিরুদ্ধে কাউকে সাহায্যও করেনি, তোমরা তাদের সাথে নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত চুক্তি পূর্ণ করবে। নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাক্বীদেরকে পছন্দ করেন। (সূরা তাওবা- ৪)
সম্পদের অপব্যবহারকারীদের হাতে অর্থনৈতিক দায়িত্ব না দেয়া :
وَلَا تُؤْتُوا السُّفَهَآءَ اَمْوَالَكُمُ الَّتِيْ جَعَلَ اللّٰهُ لَكُمْ قِيَامًا وَّارْزُقُوْهُمْ فِيْهَا وَاكْسُوْهُمْ وَقُوْلُوْا لَهُمْ قَوْلًا مَّعْرُوْفًا
আল্লাহ তোমাদের যে সম্পদকে দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠা লাভের উপকরণ বানিয়েছেন, তা নির্বোধ লোকদের হাতে ছেড়ে দিয়ো না। তবে অবশ্যই এ থেকে তোমরা তাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করবে, পোশাক সরবরাহ করবে এবং তাদের সাথে ভালো কথা বলবে। (সূরা নিসা- ৫)
ব্যাখ্যা : অর্থ-সম্পদ জীবন-যাপনের একটি মাধ্যম। এ সম্পদ এমন ধরনের অজ্ঞ ও নির্বোধ লোকদের হাতে তুলে দেয়া উচিত নয়, যারা এর ত্রুটিপূর্ণ ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে বিনষ্ট করে দেয়। এমনকি নৈতিক অবস্থাকেও ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়।
সম্পদের সুষম বণ্টন করা :
كَيْ لَا يَكُوْنَ دُوْلَةً ۢبَيْنَ الْاَغْنِيَآءِ مِنْكُمْ
(তোমরা সম্পদ এমনভাবে বণ্টন করবে) যেন তা কেবল তোমাদের সমাজের বিত্তবান লোকদের মাঝেই আবর্তিত না হয়। (সূরা হাশর- ৭)
যাকাত আদায় করে তা বণ্টন করা :
خُذْ مِنْ اَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيْهِمْ بِهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْؕ اِنَّ صَلَاتَكَ سَكَنٌ لَّهُمْؕ وَاللهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
তাদের সম্পদ হতে ‘সাদাকা’ (যাকাত) গ্রহণ করবে। এটার দ্বারা তুমি তাদেরকে পবিত্র করবে এবং পরিশুদ্ধ করবে; আর তুমি তাদের জন্য দু‘আ করবে। নিশ্চয় তোমার দু‘আ তাদের জন্য প্রশান্তিদায়ক। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা তাওবা- ১০৩)
বিশেষ চারটি কাজ করা :
اَ لَّذِيْنَ اِنْ مَّكَّنَّاهُمْ فِى الْاَرْضِ اَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ وَاَمَرُوْا بِالْمَعْرُوْفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنْكَرِ
আমি এদেরকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দান করলে এরা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎকাজ হতে নিষেধ করবে। (সূরা হজ্জ- ৪১)
ব্যাখ্যা : যদি দুনিয়ায় তাদেরকে রাষ্ট্র ও শাসন ক্ষমতা দান করা হয় তাহলে তারা ব্যক্তিগত জীবনে ফাসিকী, দুষ্কৃতি ও অহংকার না করে সালাত কায়েম করবে। তারা বিলাসিতা ও প্রবৃত্তি পূজার পরিবর্তে ধনসম্পদের যাকাত প্রদান করবে। তাদের রাষ্ট্রব্যবস্থা সৎকাজকে দাবিয়ে দেয়ার পরিবর্তে তাকে বিকশিত ও সম্প্রসারিত করবে এবং অসৎকাজকে সম্প্রসারিত করার পরিবর্তে দাবিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করবে। এ আয়াতটির মধ্যে ইসলামী রাষ্ট্রের লক্ষ্য এবং তার কর্মকর্তাদের বৈশিষ্ট্যের নির্যাস বের করে দেয়া হয়েছে। কেউ যদি ইসলামী রাষ্ট্র ও ইসলামী সংগঠনের সাথে পরিচিত হতে চায়, তাহলে সে এ আয়াত থেকেই তা বুঝে নিতে পারবে।
আল্লাহ যুলকারনাইনের কিছু বিষয় বর্ণনা করেছেন :
وَيَسْاَلُوْنَكَ عَنْ ذِى الْقَرْنَيْنِؕ قُلْ سَاَتْلُوْا عَلَيْكُمْ مِّنْهُ ذِكْرًا
লোকেরা তোমাকে যুলকারনাইন সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করে। বলো, অচিরেই আমি তোমাদের নিকট তার বিষয়ে বর্ণনা করব। (সূরা কাহফ- ৮৩)
আল্লাহ তাকে বাদশাহী দিয়েছিলেন :
اِنَّا مَكَّنَّا لَهٗ فِى الْاَرْضِ وَاٰتَيْنَاهُ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ سَبَبًا
আমি তো তাকে পৃথিবীতে কর্তৃত্ব দিয়েছিলাম এবং প্রত্যেক বিষয়ের উপায়-উপকরণ দান করেছিলাম। (সূরা কাহফ- ৮৪)
তিনি পশ্চিম দিকে অভিযান চালিয়ে এক জাতির কাছে গেলেন :
فَاَتْبَعَ سَبَبًا ‐ حَتّٰۤى اِذَا بَلَغَ مَغْرِبَ الشَّمْسِ وَجَدَهَا تَغْرُبُ فِيْ عَيْنٍ حَمِئَةٍ وَّوَجَدَ عِنْدَهَا قَوْمًاؕ قُلْنَا يَا ذَا الْقَرْنَيْنِ اِمَّاۤ اَنْ تُعَذِّبَ وَاِمَّاۤ اَنْ تَتَّخِذَ فِيْهِمْ حُسْنَا
অতঃপর সে এক পথ অবলম্বন করল। চলতে চলতে সে যখন সূর্যের অস্তগমন স্থানে পৌঁছল, তখন সেখানে সে সূর্যকে সাগরের কালো পানিতে ডুবতে দেখল এবং তার পাশে এক সম্প্রদায়কেও বসবাস করতে দেখতে পেল। আমি বললাম, হে যুলকারনাইন! তুমি এদেরকে শাস্তি দিতে পার অথবা এদের ব্যাপারটা সদয়ভাবে গ্রহণ করতে পার। সূরা কাহফ- ৮৫, ৮৬)
তিনি অত্যাচারীদেরকে শাস্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন :
قَالَ اَمَّا مَنْ ظَلَمَ فَسَوْفَ نُعَذِّبُهٗ ثُمَّ يُرَدُّ اِلٰى رَبِّهٖ فَيُعَذِّبُهٗ عَذَابًا نُّكْرًا
সে বলল, যে ব্যক্তি সীমালঙ্ঘন করবে আমি তাকে শাস্তি দেব। অতঃপর সে তার প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে এবং তিনি তাকে আরো কঠিন শাস্তি দেবেন। (সূরা কাহফ- ৮৭)
ভালো লোকদের সাথে ভালো ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিলেন :
وَاَمَّا مَنْ اٰمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَلَهٗ جَزَآءَنِ الْحُسْنٰىۚ وَسَنَقُوْلُ لَهٗ مِنْ اَمْرِنَا يُسْرًا
তবে যে ঈমান আনয়ন করবে এবং সৎকাজ করবে, তার জন্য রয়েছে উত্তম প্রতিদান; আর আমিও তার সাথে আমার কাজকর্ম সম্পাদনের সময় বিনম্র ও সহজ ব্যবহার করব। (সূরা কাহফ- ৮৮)
পূর্ব দিকে আরেকটি অভিযানে এক অসভ্য জাতির দেখা পেলেন :
ثُمَّ اَتْبَعَ سَبَبًا ‐ حَتّٰۤى اِذَا بَلَغَ مَطْلِعَ الشَّمْسِ وَجَدَهَا تَطْلُعُ عَلٰى قَوْمٍ لَّمْ نَجْعَلْ لَّهُمْ مِّنْ دُوْنِهَا سِتْرًا
অতঃপর সে এক পথ ধরল, চলতে চলতে যখন সে সূর্যোদয় স্থলে পৌঁছল তখন সে দেখল যে, সেটা এমন এক সম্প্রদায়ের উপর উদয় হচ্ছে যাদের জন্য আমি সূর্যতাপ হতে কোন অন্তরাল সৃষ্টি করিনি।
(সূরা কাহফ- ৮৯, ৯০)
অপর অভিযান চালিয়ে দু’টি পাহাড়ের মাঝখানে গেলেন :
ثُمَّ اَتْبَعَ سَبَبًا ‐ حَتّٰۤى اِذَا بَلَغَ بَيْنَ السَّدَّيْنِ وَجَدَ مِنْ دُوْنِهِمَا قَوْمًا لَّا يَكَادُوْنَ يَفْقَهُوْنَ قَوْلًا
অতঃপর সে এক পথ ধরল, চলতে চলতে সে যখন দু’টি পর্বতের মধ্যস্থলে পৌঁছল তখন সেখানে সে এক সম্প্রদায়কে পেল, যাদের কোন কথাই সে বুঝতে পারছিল না। (সূরা কাহফ- ৯২, ৯৩)
সেখানকার অধিবাসীরা তার কাছে ইয়াজুজ-মাজুজের ব্যাপারে অভিযোগ করল :
قَالُوْا يَا ذَا الْقَرْنَيْنِ اِنَّ يَاْجُوْجَ وَمَاْجُوْجَ مُفْسِدُوْنَ فِى الْاَرْضِ
তারা বলল, হে যুলকারনাইন! ইয়াজুজ ও মাজুজ পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করছে। (সূরা কাহফ- ৯৪)
তারা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে একটি দেয়াল নির্মাণের আবেদন করল :
فَهَلْ نَجْعَلُ لَكَ خَرْجًا عَلٰۤى اَنْ تَجْعَلَ بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمْ سَدًّا
আমরা কি আপনাকে খরচ দেব, যাতে আপনি আমাদের ও তাদের মধ্যে এক প্রাচীর গড়ে দেবেন? (সূরা কাহফ- ৯৪)
তিনি পারিশ্রমিক ছাড়াই দেয়াল নির্মাণ করে দিলেন :
قَالَ مَا مَكَّنِيْ فِيْهِ رَبِّيْ خَيْرٌ فَاَعِيْنُوْنِيْ بِقُوَّةٍ اَجْعَلْ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُمْ رَدْمًا ‐ اٰتُوْنِيْ زُبَرَ الْحَدِيْدِ حَتّٰۤى اِذَا سَاوٰى بَيْنَ الصَّدَفَيْنِ قَالَ انْفُخُوْاؕ حَتّٰۤى اِذَا جَعَلَهٗ نَارًا قَالَ اٰتُوْنِۤيْ اُفْرِغْ عَلَيْهِ قِطْرًا
সে বলল, আমার প্রতিপালক আমাকে যে ক্ষমতা দিয়েছেন, তাই উৎকৃষ্ট। সুতরাং তোমরা আমাকে শ্রম দ্বারা সাহায্য করো, আমি তোমাদের ও তাদের মধ্যস্থলে এক মজবুত প্রাচীর গড়ে দেব। তোমরা আমার নিকট লোহার পাতসমূহ নিয়ে আসো। অতঃপর যখন মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থান (পূর্ণ হয়ে লৌহ স্তুপগুলো দু’টি পাহাড়ের) সমান হলো তখন সে বলল, তোমরা ফুঁক দিতে থাকো। অতঃপর যখন তা আগুনকে (উত্তপ্ত) করল তখন সে বলল, তোমরা গলিত তামা নিয়ে আসো, আমি তা এর উপর ঢেলে দেই। (সূরা কাহফ- ৯৫, ৯৬)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ শাসনকর্তা হিসেবে প্রজাদেরকে লুটপাটকারীদের হাত থেকে রক্ষা করা আমার কর্তব্য। এ কাজের জন্য তোমাদের উপর আলাদা করে কোন কর বসানো আমার কাজ নয়। আল্লাহ যে অর্থভান্ডার আমার হাতে তুলে দিয়েছেন এ কাজ সম্পাদনের জন্য তা-ই যথেষ্ট। তবে শারীরিক শ্রম দিয়ে তোমরা আমাকে সাহায্য করবে।
ফলে ইয়াজুজ-মাজুজ আটকা পড়ল :
فَمَا اسْطَاعُوْاۤ اَنْ يَّظْهَرُوْهُ وَمَا اسْتَطَاعُوْا لَهٗ نَقْبًا ‐ قَالَ هٰذَا رَحْمَةٌ مِّنْ رَّبِّيْ
এরপর তারা সেটা অতিক্রম করতে পারল না এবং ভেদও করতে পারল না। তখন সে বলল, এটা আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ। (সূরা কাহফ- ৯৭, ৯৮)
কিয়ামতের দিন এই দেয়াল ভেঙ্গে যাবে :
فَاِذَا جَآءَ وَعْدُ رَبِّيْ جَعَلَهٗ دَكَّآءَۚ وَكَانَ وَعْدُ رَبِّيْ حَقًّا
যখন আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হবে, তখন তিনি তাকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দেবেন; আর আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি সত্য। (সূরা কাহফ- ৯৮)
তখন এরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে :
حَتّٰۤى اِذَا فُتِحَتْ يَاْجُوْجُ وَمَاْجُوْجُ وَهُمْ مِّنْ كُلِّ حَدَبٍ يَّنْسِلُوْنَ
এমনকি এক সময় ইয়াজুজ ও মাজুজকে মুক্তি দেয়া হবে এবং তারা প্রতিটি উচ্চভূমি হতে ছুটে আসতে থাকবে। (সূরা আম্বিয়া- ৯৬)
পরে সবাই আল্লাহর সামনে হাজির হবে :
وَتَرَكْنَا بَعْضَهُمْ يَوْمَئِذٍ يَّمُوْجُ فِيْ بَعْضٍ وَّنُفِخَ فِى الصُّوْرِ فَجَمَعْنَاهُمْ جَمْعًا
সেদিন আমি তাদেরকে ছেড়ে দেব এ অবস্থায় যে, একদল আরেক দলের উপর তরঙ্গের ন্যায় পতিত হবে এবং শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে। অতঃপর আমি তাদের সকলকেই একত্র করব। (সূরা কাহফ- ৯৯)
যুলকারনাইনের কাহিনীর শিক্ষা : এ ঘটনা দ্বারা মানুষকে এ শিক্ষা দেয়া হয়েছে যে, তোমরা তো নিজেদের সামান্য ক্ষমতার দাপটে অহংকারী হয়ে যাও। অথচ যুলকারনাইনকে দেখো! তিনি এত বড় শাসক, এত জবরদস্ত বিজেতা, এত বিপুল উপায়-উপকরণের মালিক হয়েও নিজের পরিচয় ভুলে যাননি। তিনি নিজের স্রষ্টার সামনে সবসময় মাথা নত করে থাকতেন। অন্যদিকে তোমরা নিজেদের এ সামান্য পার্থিব সহায়-সম্পদকে চিরস্থায়ী মনে করে বসেছ। কিন্তু তিনি দুনিয়ার সবচেয়ে মজবুত ও সুদৃঢ় প্রতিরক্ষা প্রাচীর নির্মাণ করেও মনে করতেন সর্বাবস্থায় একমাত্র আল্লাহর উপরই নির্ভর করা যেতে পারে, প্রাচীরের উপর নয়। আল্লাহ যতদিন চাইবেন ততদিন এ প্রাচীর শত্রুদের পথ রোধ করতে থাকবে এবং যখনই তাঁর ইচ্ছা ভিন্নতর হবে তখনই এ প্রাচীর ভেঙ্গে যাবে। তিনি নিছক একজন বিজেতা ছিলেন না; বরং তিনি ছিলেন তাওহীদ ও আখিরাত বিশ্বাসী। তিনি তার রাজ্যে ইনসাফ ও দানশীলতার নীতি কার্যকর করেছিলেন। তিনি অন্যান্য মানুষের মতো সংকীর্ণ মনের অধিকারী ছিলেন না। সামান্য নেতৃত্ব লাভ করে মানুষ যেমন মনে করে- আমি অদ্বিতীয় এবং আমার মতো আর কেউ নেই, তিনি তেমনটি মনে করতেন না।
وَيَسْاَلُوْنَكَ عَنْ ذِى الْقَرْنَيْنِؕ قُلْ سَاَتْلُوْا عَلَيْكُمْ مِّنْهُ ذِكْرًا
লোকেরা তোমাকে যুলকারনাইন সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করে। বলো, অচিরেই আমি তোমাদের নিকট তার বিষয়ে বর্ণনা করব। (সূরা কাহফ- ৮৩)
আল্লাহ তাকে বাদশাহী দিয়েছিলেন :
اِنَّا مَكَّنَّا لَهٗ فِى الْاَرْضِ وَاٰتَيْنَاهُ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ سَبَبًا
আমি তো তাকে পৃথিবীতে কর্তৃত্ব দিয়েছিলাম এবং প্রত্যেক বিষয়ের উপায়-উপকরণ দান করেছিলাম। (সূরা কাহফ- ৮৪)
তিনি পশ্চিম দিকে অভিযান চালিয়ে এক জাতির কাছে গেলেন :
فَاَتْبَعَ سَبَبًا ‐ حَتّٰۤى اِذَا بَلَغَ مَغْرِبَ الشَّمْسِ وَجَدَهَا تَغْرُبُ فِيْ عَيْنٍ حَمِئَةٍ وَّوَجَدَ عِنْدَهَا قَوْمًاؕ قُلْنَا يَا ذَا الْقَرْنَيْنِ اِمَّاۤ اَنْ تُعَذِّبَ وَاِمَّاۤ اَنْ تَتَّخِذَ فِيْهِمْ حُسْنَا
অতঃপর সে এক পথ অবলম্বন করল। চলতে চলতে সে যখন সূর্যের অস্তগমন স্থানে পৌঁছল, তখন সেখানে সে সূর্যকে সাগরের কালো পানিতে ডুবতে দেখল এবং তার পাশে এক সম্প্রদায়কেও বসবাস করতে দেখতে পেল। আমি বললাম, হে যুলকারনাইন! তুমি এদেরকে শাস্তি দিতে পার অথবা এদের ব্যাপারটা সদয়ভাবে গ্রহণ করতে পার। সূরা কাহফ- ৮৫, ৮৬)
তিনি অত্যাচারীদেরকে শাস্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন :
قَالَ اَمَّا مَنْ ظَلَمَ فَسَوْفَ نُعَذِّبُهٗ ثُمَّ يُرَدُّ اِلٰى رَبِّهٖ فَيُعَذِّبُهٗ عَذَابًا نُّكْرًا
সে বলল, যে ব্যক্তি সীমালঙ্ঘন করবে আমি তাকে শাস্তি দেব। অতঃপর সে তার প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে এবং তিনি তাকে আরো কঠিন শাস্তি দেবেন। (সূরা কাহফ- ৮৭)
ভালো লোকদের সাথে ভালো ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিলেন :
وَاَمَّا مَنْ اٰمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَلَهٗ جَزَآءَنِ الْحُسْنٰىۚ وَسَنَقُوْلُ لَهٗ مِنْ اَمْرِنَا يُسْرًا
তবে যে ঈমান আনয়ন করবে এবং সৎকাজ করবে, তার জন্য রয়েছে উত্তম প্রতিদান; আর আমিও তার সাথে আমার কাজকর্ম সম্পাদনের সময় বিনম্র ও সহজ ব্যবহার করব। (সূরা কাহফ- ৮৮)
পূর্ব দিকে আরেকটি অভিযানে এক অসভ্য জাতির দেখা পেলেন :
ثُمَّ اَتْبَعَ سَبَبًا ‐ حَتّٰۤى اِذَا بَلَغَ مَطْلِعَ الشَّمْسِ وَجَدَهَا تَطْلُعُ عَلٰى قَوْمٍ لَّمْ نَجْعَلْ لَّهُمْ مِّنْ دُوْنِهَا سِتْرًا
অতঃপর সে এক পথ ধরল, চলতে চলতে যখন সে সূর্যোদয় স্থলে পৌঁছল তখন সে দেখল যে, সেটা এমন এক সম্প্রদায়ের উপর উদয় হচ্ছে যাদের জন্য আমি সূর্যতাপ হতে কোন অন্তরাল সৃষ্টি করিনি।
(সূরা কাহফ- ৮৯, ৯০)
অপর অভিযান চালিয়ে দু’টি পাহাড়ের মাঝখানে গেলেন :
ثُمَّ اَتْبَعَ سَبَبًا ‐ حَتّٰۤى اِذَا بَلَغَ بَيْنَ السَّدَّيْنِ وَجَدَ مِنْ دُوْنِهِمَا قَوْمًا لَّا يَكَادُوْنَ يَفْقَهُوْنَ قَوْلًا
অতঃপর সে এক পথ ধরল, চলতে চলতে সে যখন দু’টি পর্বতের মধ্যস্থলে পৌঁছল তখন সেখানে সে এক সম্প্রদায়কে পেল, যাদের কোন কথাই সে বুঝতে পারছিল না। (সূরা কাহফ- ৯২, ৯৩)
সেখানকার অধিবাসীরা তার কাছে ইয়াজুজ-মাজুজের ব্যাপারে অভিযোগ করল :
قَالُوْا يَا ذَا الْقَرْنَيْنِ اِنَّ يَاْجُوْجَ وَمَاْجُوْجَ مُفْسِدُوْنَ فِى الْاَرْضِ
তারা বলল, হে যুলকারনাইন! ইয়াজুজ ও মাজুজ পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করছে। (সূরা কাহফ- ৯৪)
তারা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে একটি দেয়াল নির্মাণের আবেদন করল :
فَهَلْ نَجْعَلُ لَكَ خَرْجًا عَلٰۤى اَنْ تَجْعَلَ بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمْ سَدًّا
আমরা কি আপনাকে খরচ দেব, যাতে আপনি আমাদের ও তাদের মধ্যে এক প্রাচীর গড়ে দেবেন? (সূরা কাহফ- ৯৪)
তিনি পারিশ্রমিক ছাড়াই দেয়াল নির্মাণ করে দিলেন :
قَالَ مَا مَكَّنِيْ فِيْهِ رَبِّيْ خَيْرٌ فَاَعِيْنُوْنِيْ بِقُوَّةٍ اَجْعَلْ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُمْ رَدْمًا ‐ اٰتُوْنِيْ زُبَرَ الْحَدِيْدِ حَتّٰۤى اِذَا سَاوٰى بَيْنَ الصَّدَفَيْنِ قَالَ انْفُخُوْاؕ حَتّٰۤى اِذَا جَعَلَهٗ نَارًا قَالَ اٰتُوْنِۤيْ اُفْرِغْ عَلَيْهِ قِطْرًا
সে বলল, আমার প্রতিপালক আমাকে যে ক্ষমতা দিয়েছেন, তাই উৎকৃষ্ট। সুতরাং তোমরা আমাকে শ্রম দ্বারা সাহায্য করো, আমি তোমাদের ও তাদের মধ্যস্থলে এক মজবুত প্রাচীর গড়ে দেব। তোমরা আমার নিকট লোহার পাতসমূহ নিয়ে আসো। অতঃপর যখন মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থান (পূর্ণ হয়ে লৌহ স্তুপগুলো দু’টি পাহাড়ের) সমান হলো তখন সে বলল, তোমরা ফুঁক দিতে থাকো। অতঃপর যখন তা আগুনকে (উত্তপ্ত) করল তখন সে বলল, তোমরা গলিত তামা নিয়ে আসো, আমি তা এর উপর ঢেলে দেই। (সূরা কাহফ- ৯৫, ৯৬)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ শাসনকর্তা হিসেবে প্রজাদেরকে লুটপাটকারীদের হাত থেকে রক্ষা করা আমার কর্তব্য। এ কাজের জন্য তোমাদের উপর আলাদা করে কোন কর বসানো আমার কাজ নয়। আল্লাহ যে অর্থভান্ডার আমার হাতে তুলে দিয়েছেন এ কাজ সম্পাদনের জন্য তা-ই যথেষ্ট। তবে শারীরিক শ্রম দিয়ে তোমরা আমাকে সাহায্য করবে।
ফলে ইয়াজুজ-মাজুজ আটকা পড়ল :
فَمَا اسْطَاعُوْاۤ اَنْ يَّظْهَرُوْهُ وَمَا اسْتَطَاعُوْا لَهٗ نَقْبًا ‐ قَالَ هٰذَا رَحْمَةٌ مِّنْ رَّبِّيْ
এরপর তারা সেটা অতিক্রম করতে পারল না এবং ভেদও করতে পারল না। তখন সে বলল, এটা আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ। (সূরা কাহফ- ৯৭, ৯৮)
কিয়ামতের দিন এই দেয়াল ভেঙ্গে যাবে :
فَاِذَا جَآءَ وَعْدُ رَبِّيْ جَعَلَهٗ دَكَّآءَۚ وَكَانَ وَعْدُ رَبِّيْ حَقًّا
যখন আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হবে, তখন তিনি তাকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দেবেন; আর আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি সত্য। (সূরা কাহফ- ৯৮)
তখন এরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে :
حَتّٰۤى اِذَا فُتِحَتْ يَاْجُوْجُ وَمَاْجُوْجُ وَهُمْ مِّنْ كُلِّ حَدَبٍ يَّنْسِلُوْنَ
এমনকি এক সময় ইয়াজুজ ও মাজুজকে মুক্তি দেয়া হবে এবং তারা প্রতিটি উচ্চভূমি হতে ছুটে আসতে থাকবে। (সূরা আম্বিয়া- ৯৬)
পরে সবাই আল্লাহর সামনে হাজির হবে :
وَتَرَكْنَا بَعْضَهُمْ يَوْمَئِذٍ يَّمُوْجُ فِيْ بَعْضٍ وَّنُفِخَ فِى الصُّوْرِ فَجَمَعْنَاهُمْ جَمْعًا
সেদিন আমি তাদেরকে ছেড়ে দেব এ অবস্থায় যে, একদল আরেক দলের উপর তরঙ্গের ন্যায় পতিত হবে এবং শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে। অতঃপর আমি তাদের সকলকেই একত্র করব। (সূরা কাহফ- ৯৯)
যুলকারনাইনের কাহিনীর শিক্ষা : এ ঘটনা দ্বারা মানুষকে এ শিক্ষা দেয়া হয়েছে যে, তোমরা তো নিজেদের সামান্য ক্ষমতার দাপটে অহংকারী হয়ে যাও। অথচ যুলকারনাইনকে দেখো! তিনি এত বড় শাসক, এত জবরদস্ত বিজেতা, এত বিপুল উপায়-উপকরণের মালিক হয়েও নিজের পরিচয় ভুলে যাননি। তিনি নিজের স্রষ্টার সামনে সবসময় মাথা নত করে থাকতেন। অন্যদিকে তোমরা নিজেদের এ সামান্য পার্থিব সহায়-সম্পদকে চিরস্থায়ী মনে করে বসেছ। কিন্তু তিনি দুনিয়ার সবচেয়ে মজবুত ও সুদৃঢ় প্রতিরক্ষা প্রাচীর নির্মাণ করেও মনে করতেন সর্বাবস্থায় একমাত্র আল্লাহর উপরই নির্ভর করা যেতে পারে, প্রাচীরের উপর নয়। আল্লাহ যতদিন চাইবেন ততদিন এ প্রাচীর শত্রুদের পথ রোধ করতে থাকবে এবং যখনই তাঁর ইচ্ছা ভিন্নতর হবে তখনই এ প্রাচীর ভেঙ্গে যাবে। তিনি নিছক একজন বিজেতা ছিলেন না; বরং তিনি ছিলেন তাওহীদ ও আখিরাত বিশ্বাসী। তিনি তার রাজ্যে ইনসাফ ও দানশীলতার নীতি কার্যকর করেছিলেন। তিনি অন্যান্য মানুষের মতো সংকীর্ণ মনের অধিকারী ছিলেন না। সামান্য নেতৃত্ব লাভ করে মানুষ যেমন মনে করে- আমি অদ্বিতীয় এবং আমার মতো আর কেউ নেই, তিনি তেমনটি মনে করতেন না।
সত্য প্রতিষ্ঠায় বাধা থাকবেই :
يَا حَسْرَةً عَلَى الْعِبَادِۚ مَا يَاْتِيْهِمْ مِّنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا كَانُوْا بِهٖ يَسْتَهْزِئُوْنَ
আফসোস! সেসব বান্দাদের জন্য, যাদের কাছে কখনো এমন কোন রাসূল আসেনি, যাকে নিয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেনি। (সূরা ইয়াসীন- ৩০)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর বাণীকে সমুনণত করা ও তাঁর বিধানকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য দুনিয়ার যেখানেই যা কিছু প্রচেষ্টা চলছে, মুসলিমরা যতই নির্যাতিত হচ্ছে তাতে কাফিরদের মনে একটুও সমবেদনা জাগবে না। কেননা কাফিরদের সমস্ত আগ্রহ আল্লাহর হুকুম অমান্য করার সাথে সম্পৃক্ত। আল্লাহর হুকুম অমান্য করার কাজ যে যেখানেই করবে কাফিররা যদি তাতে শরীক নাও হতে পারে, তবুও অন্ততপক্ষে জিন্দাবাদ ধ্বনি দেবে। এভাবে সে আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারীদের বুকে সাহস যোগাবে। অপরদিকে যদি কেউ আল্লাহর হুকুম পালন করতে থাকে, তাহলে কাফিররা তাকে বাধা দেয়ার ব্যাপারে একটুও ইতস্ততবোধ করবে না।
ইসলামের দুশমনরা ইসলামের আলো নিভিয়ে দিতে চায় :
يُرِيْدُوْنَ لِيُطْفِئُوْا نُوْرَ اللهِ بِاَفْوَاهِهِمْ وَاللهُ مُتِمُّ نُوْرِهٖ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُوْنَ
তারা আল্লাহর নূরকে (ইসলামকে) তাদের মুখের ফুৎকার দিয়ে নিভিয়ে দিতে চায়; কিন্তু আল্লাহ তাঁর নূর পূর্ণরূপে প্রকাশকারী, যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে। (সূরা সাফ- ৮)
তারা সত্যকে হেয় করার চেষ্টা করে :
وَيُجَادِلُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِالْبَاطِلِ لِيُدْحِضُوْا بِهِ الْحَقَّ وَاتَّخَذُواۤ اٰيَاتِيْ وَمَاۤ اُنْذِرُوْا هُزُوًا
কাফিররা সত্যকে ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য মিথ্যা যুক্তি পেশ করে বিতর্কে লিপ্ত হয়। আর তারা আমার নিদর্শনাবলি এবং যে বিষয়ে তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে সেগুলোকে বিদ্রূপের বিষয় হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। (সূরা কাহফ- ৫৬)
তারা মুসলিমদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে চায় :
وَاِذَا تُتْلٰى عَلَيْهِمْ اٰيَاتُنَا بَيِّنَاتٍ تَعْرِفُ فِيْ وُجُوْهِ الَّذِيْنَ كَفَرُوا الْمُنْكَرَؕ يَكَادُوْنَ يَسْطُوْنَ بِالَّذِيْنَ يَتْلُوْنَ عَلَيْهِمْ اٰيَاتِنَاؕ قُلْ اَفَاُنَبِّئُكُمْ بِشَرٍّ مِّنْ ذٰلِكُمُؕ اَلنَّارُؕ وَعَدَهَا اللهُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاؕ وَبِئْسَ الْمَصِيْرُ
তাদের নিকট আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করা হলে তুমি কাফিরদের মুখমন্ডলে অসন্তোষ ভাব লক্ষ্য করবে। অবস্থা দেখে মনে হয়, যারা তাদের নিকট আমার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে এখনি তাদের উপর আক্রমণ করবে। বলো, তবে কি আমি তোমাদেরকে এর চেয়ে মন্দ কিছুর সংবাদ দেব? আর তা হলো এমন আগুন, যার ব্যাপারে আল্লাহ কাফিরদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন? আর এটা কতই না নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল! (সূরা হজ্জ- ৭২)
হক ও বাতিলের দ্বন্দ্ব চিরন্তন :
اَ لَّذِيْنَ اٰمَنُوْا يُقَاتِلُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا يُقَاتِلُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ الطَّاغُوْتِ فَقَاتِلُوْاۤ اَوْلِيَآءَ الشَّيْطَانِۚ اِنَّ كَيْدَ الشَّيْطَانِ كَانَ ضَعِيْفًا
যারা মুমিন তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে এবং যারা কাফির তারা তাগুতের পথে যুদ্ধ করে। সুতরাং তোমরা শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো; (মনে রেখো) শয়তানের কৌশল অবশ্যই দুর্বল। (সূরা নিসা- ৭৬)
ব্যাখ্যা : এটি আল্লাহর একটি দ্ব্যর্থহীন ফায়সালা। আল্লাহর জমিনে একমাত্র আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে লড়াই করা হচ্ছে ঈমানদারদের কাজ। যথার্থ ও সত্যিকার মুমিন এ কাজ থেকে কখনো বিরত থাকবে না। আর আল্লাহর পৃথিবীতে আল্লাহদ্রোহীদের রাজত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য তাগুতের পথে লড়াই করা হচ্ছে কাফিরদের কাজ। কোন ঈমানদার ব্যক্তি এ কাজ করতে পারে না।
সত্য প্রতিষ্ঠায় বাধা পরীক্ষাস্বরূপ :
وَجَعَلْنَا بَعْضَكُمْ لِبَعْضٍ فِتْنَةًؕ اَتَصْبِرُوْنَۚ وَكَانَ رَبُّكَ بَصِيْرًا
হে মানুষ! আমি তোমাদের মধ্যে একজনকে অপর জনের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ বানিয়েছি। সুতরাং তোমরা ধৈর্যধারণ করবে কি? তোমার প্রতিপালক সবকিছু দেখছেন। (সূরা ফুরক্বান- ২০)
ব্যাখ্যা : দ্বীনের বিরোধীরা যুলুম, নিপীড়ন ও শত্রুতার যে আগুনের কুন্ড জ্বালিয়ে রেখেছে, তা মূলত প্রকৃত ঈমানদারদেরকে যাচাই করার জন্য একটি সর্বোৎকৃষ্ট মাধ্যম, যার মাধ্যমে দুর্বল ঈমানদাররা চিহ্নত হয়ে যায়। এরপর খাঁটি ঈমানদারদের মুকাবিলায় দুনিয়ার আর কোন শক্তিই দাঁড়াতে পারে না। এ আগুনের কুন্ড না থাকলে ভালো-মন্দ সবধরনের লোক নবী ﷺ এর চারদিকে একত্রিত হতে থাকত এবং দ্বীনের সূচনাই হতো একটি অপরিপক্ক দল থেকে। এ ছাঁকনি ছাড়া যদি রাসূল ﷺ বিরাট শান-শওকতের সাথে এসে সিংহাসনে বসে যেতেন। অতঃপর অর্থভান্ডারের মুখ তাঁর অনুসারীদের জন্য খুলে দেয়া হতো এবং সবার আগে বড় বড় সরদার ও সমাজপতীরা অগ্রসর হয়ে তাঁর আনুগত্য গ্রহণ করে নিত, তাহলে এমন কোন নির্বোধ লোক পাওয়া যেত না যারা তাঁর প্রতি ঈমান আনত না। এ অবস্থায় সত্যপ্রিয় লোকেরা সবার পেছনে থেকে যেত এবং বৈষয়িক স্বার্থ পূজারীরা এগিয়ে যেত।
প্রত্যেক নবীই বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছেন :
وَكَذٰلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا مِّنَ الْمُجْرِمِيْنَؕ وَكَفٰى بِرَبِّكَ هَادِيًا وَّنَصِيْرًا
এভাবেই আমি অপরাধীদেরকে প্রত্যেক নবীর শত্রু বানিয়ে দিয়েছিলাম। পথপ্রদর্শক ও সাহায্যকারী হিসেবে তোমার জন্য তোমার প্রতিপালকই যথেষ্ট। (সূরা ফুরক্বান- ৩১)
وَكَذٰلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا شَيَاطِيْنَ الْاِنْسِ وَالْجِنِّ يُوْحِيْ بَعْضُهُمْ اِلٰى بَعْضٍ زُخْرُفَ الْقَوْلِ غُرُوْرًا
এভাবে আমি মানব ও জিনদের মধ্যে শয়তানদেরকে প্রত্যেক নবীর শত্রু বানিয়ে দিয়েছি। প্রতারণার উদ্দেশ্যে তারা একে অন্যকে চমকপ্রদ কথার দ্বারা প্ররোচিত করে। (সূরা আন‘আম- ১১২)
ব্যাখ্যা : সত্য বিরোধীদের একটি পুরাতন অস্ত্র হলো যখনই কেউ সংস্কারমূলক কাজের কর্মসূচী নিয়ে এগিয়ে আসার চেষ্টা করে, তখনই তার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনা হয় যে, এর উদ্দেশ্য শুধু ক্ষমতা দখল করা। এ অভিযোগটিই ফিরাউন মূসা ও হারূন (আঃ) এর বিরুদ্ধে এনেছিল। সে বলেছিল, তোমরা দেশে শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করার জন্য এসেছ। এ অভিযোগ ঈসা (আঃ) এর বিরুদ্ধেও আনা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, এ ব্যক্তি ইয়াহুদিদের বাদশাহ হতে চায়। আর কুরাইশ সরদাররা নবী ﷺ সম্পর্কেও একই সন্দেহ পোষণ করত। এজন্য কয়েকবার তারা তাঁর সাথে এভাবে চুক্তি করতে চেয়েছিল যে, যদি তুমি কর্তৃত্ব লাভ করতে চাও, তাহলে আমাদের দলে এসে পড়। আমরা তোমাকে বাদশাহ বানিয়ে দেব। সংস্কারকদের বিরুদ্ধে ‘ক্ষমতার লোভ’ এ অপবাদ চিরকাল ক্ষমতাসীন লোকেরা লাগিয়ে এসেছে। অর্থাৎ তারা যেন এ কথা বলতে চায় যে, তারা নিজেরা এবং তাদের প্রভুরা যে ক্ষমতা লাভ করেছে তা যেন তাদের জন্মগত অধিকার। এখানে এ কথাটিও বুঝে নিতে হবে যে, প্রচলিত জীবনব্যবস্থার দোষত্রুটিগুলো দূর করার জন্য যে ব্যক্তিই অগ্রসর হবে এবং এর মুকাবিলায় সংস্কারবাদী হয়ে দাঁড়াবে, তাদেরকে সরিয়ে দেয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালানো হবে। তাছাড়া এ ধরনের লোকের দাওয়াত যখনই সফল হবে, তার স্বাভাবিক পরিণতিতে সে জনগণের উপর কর্তৃত্বশীল হবে। আসলে ক্ষমতার জন্যই ক্ষমতা কামনা করা এবং আল্লাহর আইন বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে ক্ষমতা কামনা করার মধ্যে বিরাট পার্থক্য রয়েছে। এটা এতটাই পার্থক্য যে, যেমন পার্থক্য আছে ডাক্তারের ছুরি ও ডাকাতের ছুরির মধ্যে। কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি ডাকাতকে ডাক্তার এবং ডাক্তারকে ডাকাত মনে করার মতো ভুল করতে পারে না।
অনেক নবীকেই প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়েছে :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَكْفُرُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِ وَيَقْتُلُوْنَ النَّبِيِّيْنَ بِغَيْرِ حَقٍّ وَّيَقْتُلُوْنَ الَّذِيْنَ يَاْمُرُوْنَ بِالْقِسْطِ مِنَ النَّاسِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ اَلِيْمٍ
নিশ্চয় যারা আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করেছে এবং অন্যায়ভাবে নবীদেরকে হত্যা করেছে; আর যারা ইনসাফের নির্দেশ দেয় তাদেরকেও হত্যা করেছে, তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও। (সূরা আলে ইমরান- ২১)
অতীতের মুসলিমরাও চরম বাধার সম্মুখীন হয়েছিলেন :
اَمْ حَسِبْتُمْ اَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَاْتِكُمْ مَّثَلُ الَّذِيْنَ خَلَوْا مِنْ قَبْلِكُمْؕ مَسَّتْهُمُ الْبَاْسَآءُ وَالضَّرَّآءُ وَزُلْزِلُوْا حَتّٰى يَقُوْلَ الرَّسُوْلُ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَعَهٗ مَتٰى نَصْرُ اللهِؕ اَ لَاۤ اِنَّ نَصْرَ اللهِ قَرِيْبٌ
তোমরা কি ধারণা করছ যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ তোমাদের পূর্ববর্তীদের মতো সংকটময় অবস্থা এখনো তোমাদের উপর আসেনি। তাদেরকে বিপদ ও দুঃখ স্পর্শ করেছিল, এমনকি তাদেরকে কাঁপিয়ে তুলা হয়েছিল। অবশেষে রাসূল ও তার সাথে ঈমান আনয়নকারীরা বলতে বাধ্য হয়েছিল যে, কখন আসবে আল্লাহর সাহায্য? জেনে রাখো, নিশ্চয় আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটবর্তী। (সূরা বাক্বারা- ২১৪)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ নিজের ইচ্ছায় তাদেরকেও কাজ করার সুযোগ দিচ্ছেন, যারা নিজেদের প্রচেষ্টা ও সংগ্রামের মাধ্যমে আল্লাহর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। আবার যারা আনুগত্যের পথ অবলম্বন করেছে, তাদেরকেও একইভাবে কাজ করার পূর্ণ সুযোগ দিচ্ছেন। তবে তাঁর সন্তুষ্টি ও সাহায্য-সহায়তার হাত প্রসারিত হয় সত্যপন্থীদের দিকেই, কারণ তিনি যে কাজ পছন্দ করেন তারা তা-ই করে যাচ্ছে। সৎপথের অনুসারীরা এ আশা যেন না করে যে, যারা ঈমান আনতে চায় না আল্লাহ প্রাকৃতিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে তাদেরকে ঈমান গ্রহণে বাধ্য করবেন। অথবা মানুষ ও জিন সম্প্রদায়ের সেসব শয়তানদেরকে জোরপূর্বক তাদের পথ থেকে সরিয়ে দেবেন, যারা নিজেদের সমস্ত শক্তি ও উপায়-উপকরণ সত্যের পথ রোধ করার জন্য ব্যবহার করছে। সত্যের অনুসারীদেরকে বাতিলপন্থীদের মুকাবিলা করতে হবে। মু‘জিযা, কারামত ও অলৌকিক ক্ষমতার জোরে যদি বাতিলকে নির্মূল ও হককে বিজয়ী করা আল্লাহর উদ্দেশ্য হতো, তাহলে সংগ্রামে লিপ্ত হওয়ার কোন প্রয়োজন ছিল না। আল্লাহ নিজেই দুনিয়ার সমস্ত শয়তানকে নির্মূল করে কুফর ও শিরকের সমস্ত পথ রুদ্ধ করে দেয়ার ব্যবস্থা করতে পারতেন।
يَا حَسْرَةً عَلَى الْعِبَادِۚ مَا يَاْتِيْهِمْ مِّنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا كَانُوْا بِهٖ يَسْتَهْزِئُوْنَ
আফসোস! সেসব বান্দাদের জন্য, যাদের কাছে কখনো এমন কোন রাসূল আসেনি, যাকে নিয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেনি। (সূরা ইয়াসীন- ৩০)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর বাণীকে সমুনণত করা ও তাঁর বিধানকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য দুনিয়ার যেখানেই যা কিছু প্রচেষ্টা চলছে, মুসলিমরা যতই নির্যাতিত হচ্ছে তাতে কাফিরদের মনে একটুও সমবেদনা জাগবে না। কেননা কাফিরদের সমস্ত আগ্রহ আল্লাহর হুকুম অমান্য করার সাথে সম্পৃক্ত। আল্লাহর হুকুম অমান্য করার কাজ যে যেখানেই করবে কাফিররা যদি তাতে শরীক নাও হতে পারে, তবুও অন্ততপক্ষে জিন্দাবাদ ধ্বনি দেবে। এভাবে সে আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারীদের বুকে সাহস যোগাবে। অপরদিকে যদি কেউ আল্লাহর হুকুম পালন করতে থাকে, তাহলে কাফিররা তাকে বাধা দেয়ার ব্যাপারে একটুও ইতস্ততবোধ করবে না।
ইসলামের দুশমনরা ইসলামের আলো নিভিয়ে দিতে চায় :
يُرِيْدُوْنَ لِيُطْفِئُوْا نُوْرَ اللهِ بِاَفْوَاهِهِمْ وَاللهُ مُتِمُّ نُوْرِهٖ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُوْنَ
তারা আল্লাহর নূরকে (ইসলামকে) তাদের মুখের ফুৎকার দিয়ে নিভিয়ে দিতে চায়; কিন্তু আল্লাহ তাঁর নূর পূর্ণরূপে প্রকাশকারী, যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে। (সূরা সাফ- ৮)
তারা সত্যকে হেয় করার চেষ্টা করে :
وَيُجَادِلُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِالْبَاطِلِ لِيُدْحِضُوْا بِهِ الْحَقَّ وَاتَّخَذُواۤ اٰيَاتِيْ وَمَاۤ اُنْذِرُوْا هُزُوًا
কাফিররা সত্যকে ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য মিথ্যা যুক্তি পেশ করে বিতর্কে লিপ্ত হয়। আর তারা আমার নিদর্শনাবলি এবং যে বিষয়ে তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে সেগুলোকে বিদ্রূপের বিষয় হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। (সূরা কাহফ- ৫৬)
তারা মুসলিমদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে চায় :
وَاِذَا تُتْلٰى عَلَيْهِمْ اٰيَاتُنَا بَيِّنَاتٍ تَعْرِفُ فِيْ وُجُوْهِ الَّذِيْنَ كَفَرُوا الْمُنْكَرَؕ يَكَادُوْنَ يَسْطُوْنَ بِالَّذِيْنَ يَتْلُوْنَ عَلَيْهِمْ اٰيَاتِنَاؕ قُلْ اَفَاُنَبِّئُكُمْ بِشَرٍّ مِّنْ ذٰلِكُمُؕ اَلنَّارُؕ وَعَدَهَا اللهُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاؕ وَبِئْسَ الْمَصِيْرُ
তাদের নিকট আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করা হলে তুমি কাফিরদের মুখমন্ডলে অসন্তোষ ভাব লক্ষ্য করবে। অবস্থা দেখে মনে হয়, যারা তাদের নিকট আমার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে এখনি তাদের উপর আক্রমণ করবে। বলো, তবে কি আমি তোমাদেরকে এর চেয়ে মন্দ কিছুর সংবাদ দেব? আর তা হলো এমন আগুন, যার ব্যাপারে আল্লাহ কাফিরদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন? আর এটা কতই না নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল! (সূরা হজ্জ- ৭২)
হক ও বাতিলের দ্বন্দ্ব চিরন্তন :
اَ لَّذِيْنَ اٰمَنُوْا يُقَاتِلُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا يُقَاتِلُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ الطَّاغُوْتِ فَقَاتِلُوْاۤ اَوْلِيَآءَ الشَّيْطَانِۚ اِنَّ كَيْدَ الشَّيْطَانِ كَانَ ضَعِيْفًا
যারা মুমিন তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে এবং যারা কাফির তারা তাগুতের পথে যুদ্ধ করে। সুতরাং তোমরা শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো; (মনে রেখো) শয়তানের কৌশল অবশ্যই দুর্বল। (সূরা নিসা- ৭৬)
ব্যাখ্যা : এটি আল্লাহর একটি দ্ব্যর্থহীন ফায়সালা। আল্লাহর জমিনে একমাত্র আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে লড়াই করা হচ্ছে ঈমানদারদের কাজ। যথার্থ ও সত্যিকার মুমিন এ কাজ থেকে কখনো বিরত থাকবে না। আর আল্লাহর পৃথিবীতে আল্লাহদ্রোহীদের রাজত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য তাগুতের পথে লড়াই করা হচ্ছে কাফিরদের কাজ। কোন ঈমানদার ব্যক্তি এ কাজ করতে পারে না।
সত্য প্রতিষ্ঠায় বাধা পরীক্ষাস্বরূপ :
وَجَعَلْنَا بَعْضَكُمْ لِبَعْضٍ فِتْنَةًؕ اَتَصْبِرُوْنَۚ وَكَانَ رَبُّكَ بَصِيْرًا
হে মানুষ! আমি তোমাদের মধ্যে একজনকে অপর জনের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ বানিয়েছি। সুতরাং তোমরা ধৈর্যধারণ করবে কি? তোমার প্রতিপালক সবকিছু দেখছেন। (সূরা ফুরক্বান- ২০)
ব্যাখ্যা : দ্বীনের বিরোধীরা যুলুম, নিপীড়ন ও শত্রুতার যে আগুনের কুন্ড জ্বালিয়ে রেখেছে, তা মূলত প্রকৃত ঈমানদারদেরকে যাচাই করার জন্য একটি সর্বোৎকৃষ্ট মাধ্যম, যার মাধ্যমে দুর্বল ঈমানদাররা চিহ্নত হয়ে যায়। এরপর খাঁটি ঈমানদারদের মুকাবিলায় দুনিয়ার আর কোন শক্তিই দাঁড়াতে পারে না। এ আগুনের কুন্ড না থাকলে ভালো-মন্দ সবধরনের লোক নবী ﷺ এর চারদিকে একত্রিত হতে থাকত এবং দ্বীনের সূচনাই হতো একটি অপরিপক্ক দল থেকে। এ ছাঁকনি ছাড়া যদি রাসূল ﷺ বিরাট শান-শওকতের সাথে এসে সিংহাসনে বসে যেতেন। অতঃপর অর্থভান্ডারের মুখ তাঁর অনুসারীদের জন্য খুলে দেয়া হতো এবং সবার আগে বড় বড় সরদার ও সমাজপতীরা অগ্রসর হয়ে তাঁর আনুগত্য গ্রহণ করে নিত, তাহলে এমন কোন নির্বোধ লোক পাওয়া যেত না যারা তাঁর প্রতি ঈমান আনত না। এ অবস্থায় সত্যপ্রিয় লোকেরা সবার পেছনে থেকে যেত এবং বৈষয়িক স্বার্থ পূজারীরা এগিয়ে যেত।
প্রত্যেক নবীই বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছেন :
وَكَذٰلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا مِّنَ الْمُجْرِمِيْنَؕ وَكَفٰى بِرَبِّكَ هَادِيًا وَّنَصِيْرًا
এভাবেই আমি অপরাধীদেরকে প্রত্যেক নবীর শত্রু বানিয়ে দিয়েছিলাম। পথপ্রদর্শক ও সাহায্যকারী হিসেবে তোমার জন্য তোমার প্রতিপালকই যথেষ্ট। (সূরা ফুরক্বান- ৩১)
وَكَذٰلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا شَيَاطِيْنَ الْاِنْسِ وَالْجِنِّ يُوْحِيْ بَعْضُهُمْ اِلٰى بَعْضٍ زُخْرُفَ الْقَوْلِ غُرُوْرًا
এভাবে আমি মানব ও জিনদের মধ্যে শয়তানদেরকে প্রত্যেক নবীর শত্রু বানিয়ে দিয়েছি। প্রতারণার উদ্দেশ্যে তারা একে অন্যকে চমকপ্রদ কথার দ্বারা প্ররোচিত করে। (সূরা আন‘আম- ১১২)
ব্যাখ্যা : সত্য বিরোধীদের একটি পুরাতন অস্ত্র হলো যখনই কেউ সংস্কারমূলক কাজের কর্মসূচী নিয়ে এগিয়ে আসার চেষ্টা করে, তখনই তার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনা হয় যে, এর উদ্দেশ্য শুধু ক্ষমতা দখল করা। এ অভিযোগটিই ফিরাউন মূসা ও হারূন (আঃ) এর বিরুদ্ধে এনেছিল। সে বলেছিল, তোমরা দেশে শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করার জন্য এসেছ। এ অভিযোগ ঈসা (আঃ) এর বিরুদ্ধেও আনা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, এ ব্যক্তি ইয়াহুদিদের বাদশাহ হতে চায়। আর কুরাইশ সরদাররা নবী ﷺ সম্পর্কেও একই সন্দেহ পোষণ করত। এজন্য কয়েকবার তারা তাঁর সাথে এভাবে চুক্তি করতে চেয়েছিল যে, যদি তুমি কর্তৃত্ব লাভ করতে চাও, তাহলে আমাদের দলে এসে পড়। আমরা তোমাকে বাদশাহ বানিয়ে দেব। সংস্কারকদের বিরুদ্ধে ‘ক্ষমতার লোভ’ এ অপবাদ চিরকাল ক্ষমতাসীন লোকেরা লাগিয়ে এসেছে। অর্থাৎ তারা যেন এ কথা বলতে চায় যে, তারা নিজেরা এবং তাদের প্রভুরা যে ক্ষমতা লাভ করেছে তা যেন তাদের জন্মগত অধিকার। এখানে এ কথাটিও বুঝে নিতে হবে যে, প্রচলিত জীবনব্যবস্থার দোষত্রুটিগুলো দূর করার জন্য যে ব্যক্তিই অগ্রসর হবে এবং এর মুকাবিলায় সংস্কারবাদী হয়ে দাঁড়াবে, তাদেরকে সরিয়ে দেয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালানো হবে। তাছাড়া এ ধরনের লোকের দাওয়াত যখনই সফল হবে, তার স্বাভাবিক পরিণতিতে সে জনগণের উপর কর্তৃত্বশীল হবে। আসলে ক্ষমতার জন্যই ক্ষমতা কামনা করা এবং আল্লাহর আইন বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে ক্ষমতা কামনা করার মধ্যে বিরাট পার্থক্য রয়েছে। এটা এতটাই পার্থক্য যে, যেমন পার্থক্য আছে ডাক্তারের ছুরি ও ডাকাতের ছুরির মধ্যে। কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি ডাকাতকে ডাক্তার এবং ডাক্তারকে ডাকাত মনে করার মতো ভুল করতে পারে না।
অনেক নবীকেই প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়েছে :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَكْفُرُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِ وَيَقْتُلُوْنَ النَّبِيِّيْنَ بِغَيْرِ حَقٍّ وَّيَقْتُلُوْنَ الَّذِيْنَ يَاْمُرُوْنَ بِالْقِسْطِ مِنَ النَّاسِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ اَلِيْمٍ
নিশ্চয় যারা আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করেছে এবং অন্যায়ভাবে নবীদেরকে হত্যা করেছে; আর যারা ইনসাফের নির্দেশ দেয় তাদেরকেও হত্যা করেছে, তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও। (সূরা আলে ইমরান- ২১)
অতীতের মুসলিমরাও চরম বাধার সম্মুখীন হয়েছিলেন :
اَمْ حَسِبْتُمْ اَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَاْتِكُمْ مَّثَلُ الَّذِيْنَ خَلَوْا مِنْ قَبْلِكُمْؕ مَسَّتْهُمُ الْبَاْسَآءُ وَالضَّرَّآءُ وَزُلْزِلُوْا حَتّٰى يَقُوْلَ الرَّسُوْلُ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَعَهٗ مَتٰى نَصْرُ اللهِؕ اَ لَاۤ اِنَّ نَصْرَ اللهِ قَرِيْبٌ
তোমরা কি ধারণা করছ যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ তোমাদের পূর্ববর্তীদের মতো সংকটময় অবস্থা এখনো তোমাদের উপর আসেনি। তাদেরকে বিপদ ও দুঃখ স্পর্শ করেছিল, এমনকি তাদেরকে কাঁপিয়ে তুলা হয়েছিল। অবশেষে রাসূল ও তার সাথে ঈমান আনয়নকারীরা বলতে বাধ্য হয়েছিল যে, কখন আসবে আল্লাহর সাহায্য? জেনে রাখো, নিশ্চয় আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটবর্তী। (সূরা বাক্বারা- ২১৪)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ নিজের ইচ্ছায় তাদেরকেও কাজ করার সুযোগ দিচ্ছেন, যারা নিজেদের প্রচেষ্টা ও সংগ্রামের মাধ্যমে আল্লাহর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। আবার যারা আনুগত্যের পথ অবলম্বন করেছে, তাদেরকেও একইভাবে কাজ করার পূর্ণ সুযোগ দিচ্ছেন। তবে তাঁর সন্তুষ্টি ও সাহায্য-সহায়তার হাত প্রসারিত হয় সত্যপন্থীদের দিকেই, কারণ তিনি যে কাজ পছন্দ করেন তারা তা-ই করে যাচ্ছে। সৎপথের অনুসারীরা এ আশা যেন না করে যে, যারা ঈমান আনতে চায় না আল্লাহ প্রাকৃতিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে তাদেরকে ঈমান গ্রহণে বাধ্য করবেন। অথবা মানুষ ও জিন সম্প্রদায়ের সেসব শয়তানদেরকে জোরপূর্বক তাদের পথ থেকে সরিয়ে দেবেন, যারা নিজেদের সমস্ত শক্তি ও উপায়-উপকরণ সত্যের পথ রোধ করার জন্য ব্যবহার করছে। সত্যের অনুসারীদেরকে বাতিলপন্থীদের মুকাবিলা করতে হবে। মু‘জিযা, কারামত ও অলৌকিক ক্ষমতার জোরে যদি বাতিলকে নির্মূল ও হককে বিজয়ী করা আল্লাহর উদ্দেশ্য হতো, তাহলে সংগ্রামে লিপ্ত হওয়ার কোন প্রয়োজন ছিল না। আল্লাহ নিজেই দুনিয়ার সমস্ত শয়তানকে নির্মূল করে কুফর ও শিরকের সমস্ত পথ রুদ্ধ করে দেয়ার ব্যবস্থা করতে পারতেন।
ক্ষমতাসীন শাসক :
وَلَقَدْ اَرْسَلْنَا مُوْسٰى بِاٰيَاتِنَا وَسُلْطَانٍ مُّبِيْنٍ ‐ اِلٰى فِرْعَوْنَ وَهَامَانَ وَقَارُوْنَ فَقَالُوْا سَاحِرٌ كَذَّابٌ
আমি আমার নিদর্শনাবলি ও স্পষ্ট প্রমাণসহ মূসাকে প্রেরণ করেছিলাম। ফিরাউন, হামান ও কারূনের নিকট; কিন্তু তারা বলেছিল, এ তো এক যাদুকর ও চরম মিথ্যাবাদী। (সূরা মু’মিন- ২৩, ২৪)
সমাজের নেতা ও মোড়লরা :
وَقَالَ الْمَلَاُ مِنْ قَوْمِ فِرْعَوْنَ اَتَذَرُ مُوْسٰى وَقَوْمَهٗ لِيُفْسِدُوْا فِى الْاَرْضِ وَيَذَرَكَ وَاٰلِهَتَكَؕ قَالَ سَنُقَتِّلُ اَبْنَآءَهُمْ وَنَسْتَحْيِيْ نِسَآءَهُمْ ۚ وَاِنَّا فَوْقَهُمْ قَاهِرُوْنَ
ফিরাউন সম্প্রদায়ের প্রধানরা বলল, আপনি কি মূসা ও তার সম্প্রদায়কে রাজ্যে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে এবং আপনাকে ও আপনার দেবতাদেরকে বর্জন করতে দেবেন? সে বলল, আমরা তাদের পুত্রদেরকে হত্যা করব এবং তাদের নারীদেরকে জীবিত রাখব; নিশ্চয় আমরা তাদের উপর প্রবল। (সূরা আ‘রাফ- ১২৭)
যারা অহংকারী :
قَالَ الْمَلَاُ الَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْا مِنْ قَوْمِهٖ لَنُخْرِجَنَّكَ يَا شُعَيْبُ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَعَكَ مِنْ قَرْيَتِنَاۤ اَوْ لَتَعُوْدُنَّ فِيْ مِلَّتِنَاؕ قَالَ اَوَلَوْ كُنَّا كَارِهِيْنَ
তার (শুআইব আ: এর) সম্প্রদায়ের দাম্ভিক প্রধানরা বলল, হে শুয়াইব! আমরা তোমাকে ও তোমার সাথে যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে আমাদের জনপদ হতে বহিষ্কার করবই, অথবা তোমাদেরকে আমাদের ধর্মাদর্শে ফিরে আসতে হবে। সে বলল, যদিও আমরা তা ঘৃণা করি তবুও? (সূরা আ‘রাফ- ৮৮)
যারা আল্লাহর বিধান মানতে চায় না :
وَلَقَدْ اَرْسَلْنَا نُوْحًا اِلٰى قَوْمِهٖ فَقَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرُهٗؕ اَفَلَا تَتَّقُوْنَ ‐ فَقَالَ الْمَلَاُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنْ قَوْمِهٖ مَا هٰذَاۤ اِلَّا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُرِيْدُ اَنْ يَّتَفَضَّلَ عَلَيْكُمْؕ وَلَوْ شَآءَ اللهُ لَاَنْزَلَ مَلَآئِكَةً ‐ مَا سَمِعْنَا بِهٰذَا فِۤيْ اٰبَآئِنَا الْاَوَّلِيْنَ
আমি নূহকে তার সম্প্রদায়ের নিকট প্রেরণ করেছিলাম। সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহর ইবাদাত করো, তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ্ নেই; তবুও কি তোমরা সাবধান হবে না? তখন তার সম্প্রদায়ের প্রধানদের মধ্যে যারা (আগে থেকেই) কুফরী করেছিল তারা বলল, এ তো তোমাদের মতোই একজন মানুষ, সে তোমাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করতে চাচ্ছে, আল্লাহ যদি (নবী পাঠাতেই) চাইতেন তাহলে ফেরেশতাদেরকেই (নবী করে) পাঠাতেন। আমরা তো এমন কোন কথা আমাদের পূর্বপুরুষদের সময়েও (ঘটেছে বলে) শুনিনি। (সূরা মু’মিনূন- ২৩, ২৪)
যারা আখিরাতের আযাবকে ভয় করে না :
وَقَالَ الْمَلَاُ مِنْ قَوْمِهِ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَكَذَّبُوْا بِلِقَآءِ الْاٰخِرَةِ وَاَتْرَفْنَاهُمْ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا مَا هٰذَاۤ اِلَّا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يَاْكُلُ مِمَّا تَاْكُلُوْنَ مِنْهُ وَيَشْرَبُ مِمَّا تَشْرَبُوْنَ ‐ وَلَئِنْ اَطَعْتُمْ بَشَرًا مِّثْلَكُمْ اِنَّكُمْ اِذًا لَّخَاسِرُوْنَ
তার সম্প্রদায়ের প্রধানরা, যারা কুফরী করেছিল ও আখিরাতের সাক্ষাতকে অস্বীকার করেছিল এবং যাদেরকে আমি পার্থিব জীবনে প্রচুর ভোগ-সম্ভার দিয়েছিলাম তারা বলেছিল, এ তো তোমাদের মতোই একজন মানুষ। তোমরা যা আহার কর, সে তাই আহার করে এবং তোমরা যা পান কর, সেও তাই পান করে। যদি তোমরা তোমাদেরই মতো একজন মানুষের আনুগত্য কর, তবে তোমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (সূরা মু’মিনূন- ৩৩, ৩৪)
সম্পদশালী ব্যক্তিবর্গ :
وَمَاۤ اَرْسَلْنَا فِيْ قَرْيَةٍ مِّنْ نَّذِيْرٍ اِلَّا قَالَ مُتْرَفُوْهَاۤ اِنَّا بِمَاۤ اُرْسِلْتُمْ بِهٖ كَافِرُوْنَ ‐ وَقَالُوْا نَحْنُ اَكْثَرُ اَمْوَالًا وَّاَوْلَادًا وَّمَا نَحْنُ بِمُعَذَّبِيْنَ
যখনই আমি কোন জনপদে সতর্ককারী প্রেরণ করেছি তখনই তার বিত্তবানরা বলেছে, তোমরা যে বিষয় নিয়ে প্রেরিত হয়েছ আমরা তা প্রত্যাখ্যান করি। তারা আরো বলত, আমরা ধনে-জনে সমৃদ্ধশালী; সুতরাং আমরা কিছুতেই শাস্তিপ্রাপ্ত হব না। (সূরা সাবা- ৩৪, ৩৫)
ব্যাখ্যা : এখানে বর্ণিত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো ভেবে দেখার মতো। নবীদের বিরোধিতায় যারা এগিয়ে এসেছিল। তারা ছিল জাতির নেতৃস্থানীয় লোক। তাদের সবার মধ্যে যে ভ্রষ্টতা একযোগে কাজ করছিল তা ছিল এই যে, তারা পরকাল অস্বীকার করত। তাই তাদের মনে আল্লাহর সামনে জবাবদিহি করার কোন ভয় ছিল না। আর এজন্যই দুনিয়ার এ জীবনটাই ছিল তাদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়। বৈষয়িক কল্যাণ ও সাফল্যের ঊর্ধ্বে অন্য কোন মূল্যবোধের স্বীকৃতি তাদের কাছে ছিল না। আবার যে জিনিসটি তাদেরকে এ ভ্রষ্টতার মধ্যে একেবারেই নিমজ্জিত করে দিয়েছিল তা ছিল এমন পর্যায়ের প্রাচুর্য ও সুখ-সম্ভোগ, যাকে তারা নিজেদের সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রমাণ মনে করত। এমনকি তারা এ কথাও মেনে নিতে প্রস্তুত ছিল না যে, যে আকীদা-বিশ্বাস, নৈতিক ব্যবস্থা ও জীবনধারার ভিত্তিতে অগ্রসর হয়ে তারা দুনিয়ায় এসব সাফল্য অর্জন করেছে তা ভুলও হতে পারে। মানুষের ইতিহাস বার বার এ সত্যটির পুনরাবৃত্তি করে চলেছে যে, সত্যের দাওয়াতের বিরোধিতাকারীদের দলে সবসময় এসব বৈশিষ্ট্যের অধিকারী লোকেরাই ভূমিকা রেখেছে।
وَلَقَدْ اَرْسَلْنَا مُوْسٰى بِاٰيَاتِنَا وَسُلْطَانٍ مُّبِيْنٍ ‐ اِلٰى فِرْعَوْنَ وَهَامَانَ وَقَارُوْنَ فَقَالُوْا سَاحِرٌ كَذَّابٌ
আমি আমার নিদর্শনাবলি ও স্পষ্ট প্রমাণসহ মূসাকে প্রেরণ করেছিলাম। ফিরাউন, হামান ও কারূনের নিকট; কিন্তু তারা বলেছিল, এ তো এক যাদুকর ও চরম মিথ্যাবাদী। (সূরা মু’মিন- ২৩, ২৪)
সমাজের নেতা ও মোড়লরা :
وَقَالَ الْمَلَاُ مِنْ قَوْمِ فِرْعَوْنَ اَتَذَرُ مُوْسٰى وَقَوْمَهٗ لِيُفْسِدُوْا فِى الْاَرْضِ وَيَذَرَكَ وَاٰلِهَتَكَؕ قَالَ سَنُقَتِّلُ اَبْنَآءَهُمْ وَنَسْتَحْيِيْ نِسَآءَهُمْ ۚ وَاِنَّا فَوْقَهُمْ قَاهِرُوْنَ
ফিরাউন সম্প্রদায়ের প্রধানরা বলল, আপনি কি মূসা ও তার সম্প্রদায়কে রাজ্যে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে এবং আপনাকে ও আপনার দেবতাদেরকে বর্জন করতে দেবেন? সে বলল, আমরা তাদের পুত্রদেরকে হত্যা করব এবং তাদের নারীদেরকে জীবিত রাখব; নিশ্চয় আমরা তাদের উপর প্রবল। (সূরা আ‘রাফ- ১২৭)
যারা অহংকারী :
قَالَ الْمَلَاُ الَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْا مِنْ قَوْمِهٖ لَنُخْرِجَنَّكَ يَا شُعَيْبُ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَعَكَ مِنْ قَرْيَتِنَاۤ اَوْ لَتَعُوْدُنَّ فِيْ مِلَّتِنَاؕ قَالَ اَوَلَوْ كُنَّا كَارِهِيْنَ
তার (শুআইব আ: এর) সম্প্রদায়ের দাম্ভিক প্রধানরা বলল, হে শুয়াইব! আমরা তোমাকে ও তোমার সাথে যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে আমাদের জনপদ হতে বহিষ্কার করবই, অথবা তোমাদেরকে আমাদের ধর্মাদর্শে ফিরে আসতে হবে। সে বলল, যদিও আমরা তা ঘৃণা করি তবুও? (সূরা আ‘রাফ- ৮৮)
যারা আল্লাহর বিধান মানতে চায় না :
وَلَقَدْ اَرْسَلْنَا نُوْحًا اِلٰى قَوْمِهٖ فَقَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرُهٗؕ اَفَلَا تَتَّقُوْنَ ‐ فَقَالَ الْمَلَاُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنْ قَوْمِهٖ مَا هٰذَاۤ اِلَّا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُرِيْدُ اَنْ يَّتَفَضَّلَ عَلَيْكُمْؕ وَلَوْ شَآءَ اللهُ لَاَنْزَلَ مَلَآئِكَةً ‐ مَا سَمِعْنَا بِهٰذَا فِۤيْ اٰبَآئِنَا الْاَوَّلِيْنَ
আমি নূহকে তার সম্প্রদায়ের নিকট প্রেরণ করেছিলাম। সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহর ইবাদাত করো, তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ্ নেই; তবুও কি তোমরা সাবধান হবে না? তখন তার সম্প্রদায়ের প্রধানদের মধ্যে যারা (আগে থেকেই) কুফরী করেছিল তারা বলল, এ তো তোমাদের মতোই একজন মানুষ, সে তোমাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করতে চাচ্ছে, আল্লাহ যদি (নবী পাঠাতেই) চাইতেন তাহলে ফেরেশতাদেরকেই (নবী করে) পাঠাতেন। আমরা তো এমন কোন কথা আমাদের পূর্বপুরুষদের সময়েও (ঘটেছে বলে) শুনিনি। (সূরা মু’মিনূন- ২৩, ২৪)
যারা আখিরাতের আযাবকে ভয় করে না :
وَقَالَ الْمَلَاُ مِنْ قَوْمِهِ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَكَذَّبُوْا بِلِقَآءِ الْاٰخِرَةِ وَاَتْرَفْنَاهُمْ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا مَا هٰذَاۤ اِلَّا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يَاْكُلُ مِمَّا تَاْكُلُوْنَ مِنْهُ وَيَشْرَبُ مِمَّا تَشْرَبُوْنَ ‐ وَلَئِنْ اَطَعْتُمْ بَشَرًا مِّثْلَكُمْ اِنَّكُمْ اِذًا لَّخَاسِرُوْنَ
তার সম্প্রদায়ের প্রধানরা, যারা কুফরী করেছিল ও আখিরাতের সাক্ষাতকে অস্বীকার করেছিল এবং যাদেরকে আমি পার্থিব জীবনে প্রচুর ভোগ-সম্ভার দিয়েছিলাম তারা বলেছিল, এ তো তোমাদের মতোই একজন মানুষ। তোমরা যা আহার কর, সে তাই আহার করে এবং তোমরা যা পান কর, সেও তাই পান করে। যদি তোমরা তোমাদেরই মতো একজন মানুষের আনুগত্য কর, তবে তোমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (সূরা মু’মিনূন- ৩৩, ৩৪)
সম্পদশালী ব্যক্তিবর্গ :
وَمَاۤ اَرْسَلْنَا فِيْ قَرْيَةٍ مِّنْ نَّذِيْرٍ اِلَّا قَالَ مُتْرَفُوْهَاۤ اِنَّا بِمَاۤ اُرْسِلْتُمْ بِهٖ كَافِرُوْنَ ‐ وَقَالُوْا نَحْنُ اَكْثَرُ اَمْوَالًا وَّاَوْلَادًا وَّمَا نَحْنُ بِمُعَذَّبِيْنَ
যখনই আমি কোন জনপদে সতর্ককারী প্রেরণ করেছি তখনই তার বিত্তবানরা বলেছে, তোমরা যে বিষয় নিয়ে প্রেরিত হয়েছ আমরা তা প্রত্যাখ্যান করি। তারা আরো বলত, আমরা ধনে-জনে সমৃদ্ধশালী; সুতরাং আমরা কিছুতেই শাস্তিপ্রাপ্ত হব না। (সূরা সাবা- ৩৪, ৩৫)
ব্যাখ্যা : এখানে বর্ণিত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো ভেবে দেখার মতো। নবীদের বিরোধিতায় যারা এগিয়ে এসেছিল। তারা ছিল জাতির নেতৃস্থানীয় লোক। তাদের সবার মধ্যে যে ভ্রষ্টতা একযোগে কাজ করছিল তা ছিল এই যে, তারা পরকাল অস্বীকার করত। তাই তাদের মনে আল্লাহর সামনে জবাবদিহি করার কোন ভয় ছিল না। আর এজন্যই দুনিয়ার এ জীবনটাই ছিল তাদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়। বৈষয়িক কল্যাণ ও সাফল্যের ঊর্ধ্বে অন্য কোন মূল্যবোধের স্বীকৃতি তাদের কাছে ছিল না। আবার যে জিনিসটি তাদেরকে এ ভ্রষ্টতার মধ্যে একেবারেই নিমজ্জিত করে দিয়েছিল তা ছিল এমন পর্যায়ের প্রাচুর্য ও সুখ-সম্ভোগ, যাকে তারা নিজেদের সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রমাণ মনে করত। এমনকি তারা এ কথাও মেনে নিতে প্রস্তুত ছিল না যে, যে আকীদা-বিশ্বাস, নৈতিক ব্যবস্থা ও জীবনধারার ভিত্তিতে অগ্রসর হয়ে তারা দুনিয়ায় এসব সাফল্য অর্জন করেছে তা ভুলও হতে পারে। মানুষের ইতিহাস বার বার এ সত্যটির পুনরাবৃত্তি করে চলেছে যে, সত্যের দাওয়াতের বিরোধিতাকারীদের দলে সবসময় এসব বৈশিষ্ট্যের অধিকারী লোকেরাই ভূমিকা রেখেছে।
ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য আল্লাহর আহবান :
وَاعْتَصِمُوْا بِحَبْلِ اللهِ جَمِيْعًا وَّلَا تَفَرَّقُوْا
আর তোমরা সকলে মিলে আল্লাহর রশিকে আঁকড়ে ধরো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। (সূরা আলে ইমরান- ১০৩)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর রশি বলতে তাঁর দ্বীনকে বুঝানো হয়েছে। আল্লাহর দ্বীনকে রশির সাথে তুলনা করার কারণ হচ্ছে- এটি এমন একটি সম্পর্ক, যা একদিকে আল্লাহর সাথে ঈমানদারদের সম্পর্ক জুড়ে দেয়। অন্যদিকে সমস্ত ঈমানদারদেরকে পরস্পরের সাথে মিলিয়ে জামায়াতবদ্ধ করে। এ রশিকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরার তাৎপর্য হচ্ছে, মুসলিমরা দ্বীনকেই প্রকৃত গুরুত্বের অধিকারী মনে করবে, সে ব্যাপারেই আগ্রহ পোষণ করবে, তা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রচেষ্টা চালাবে এবং পরস্পরের সাথে সহযোগিতা করবে। যেখানেই মুসলিমরা দ্বীনের মৌলিক শিক্ষা ও দ্বীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়বে এবং তাদের সমগ্র দৃষ্টি খুঁটিনাটি বিষয়ের প্রতি আকৃষ্ট হবে সেখানেই অনিবার্যভাবে তাদের মধ্যে সে একই প্রকারে দলাদলি ও মতবিরোধ দেখা দেবে, যা ইতোপূর্বে বিভিন্ন নবীর উম্মতকে জীবনের মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করে দুনিয়া ও আখিরাতে লাঞ্ছনার গর্তে নিক্ষেপ করেছিল।
আল্লাহ বিভিন্ন দলে বিভক্ত হতে নিষেধ করেছেন :
وَلَا تَكُوْنُوْا كَالَّذِيْنَ تَفَرَّقُوْا وَاخْتَلَفُوْا مِنْ ۢبَعْدِ مَا جَآءَهُمُ الْبَيِّنَاتُؕ وَاُولٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ عَظِيْمٌ
তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং তাদের কাছে স্পষ্ট প্রমাণ আসার পরও মতভেদে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি। (সূরা আলে ইমরান- ১০৫)
ব্যাখ্যা : এখানে পূর্ববর্তী নবীদের এমনসব উম্মতের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, যারা সত্য দ্বীনের সরল ও সুস্পষ্ট শিক্ষা লাভ করেছিল; কিন্তু কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর দ্বীনের মূল বিষয়গুলো পরিত্যাগ করে দ্বীনের সাথে সম্পর্কহীন অপ্রয়োজনীয় খুঁটিনাটি বিষয়াবলির ভিত্তিতে নিজেদেরকে একটি আলাদা ধর্মীয় সম্প্রদায় হিসেবে গড়ে তুলতে শুরু করে দিয়েছিল। তারপর অবান্তর ও অহেতুক কথা নিয়ে এমনভাবে কলহে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল যে, আল্লাহ তাদের উপর যে দায়িত্ব দিয়েছিলেন তার কথা তারা ভুলেই গিয়েছিল এবং বিশ্বাস ও নৈতিকতার যেসব মূলনীতির উপর মানুষের সাফল্য ও কল্যাণের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে, তার প্রতি কোন আগ্রহই তাদের ছিল না।
وَلَا تَكُوْنُوْا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ ‐ مِنَ الَّذِيْنَ فَرَّقُوْا دِيْنَهُمْ وَكَانُوْا شِيَعًاؕ كُلُّ حِزْبٍ ۢبِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُوْنَ
অতএব তুমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না, যারা তাদের দ্বীনকে খন্ড-বিখন্ড করে নিয়েছে এবং ভিন্ন ভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আর প্রত্যেক দলই নিজ নিজ অনুসৃত নিয়ম নিয়েই উল্লাসিত। (সূরা রূম- ৩১, ৩২)
পারস্পরিক বিদ্বেষের কারণেই বিভেদ সৃষ্টি হয় :
وَمَا تَفَرَّقُوْاۤ اِلَّا مِنْ ۢبَعْدِ مَا جَآءَهُمُ الْعِلْمُ بَغْيًا ۢبَيْنَهُمْ
তাদের নিকট (তাওহীদের জ্ঞান) আসার পরও শুধুমাত্র পারস্পরিক বাড়াবাড়ির কারণে তারা নিজেদের মধ্যে মতভেদ ঘটায়। (সূরা শূরা- ১৪)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ বিভেদের কারণ এ ছিল না যে, আল্লাহ নবী-রাসূল পাঠাননি এবং কিতাবও নাযিল করেননি। তাই সঠিক পথ না জানার কারণে মানুষ নিজেদের জন্য আলাদা-আলাদা ধর্ম ও জীবনাদর্শ আবিষ্কার করে নিয়েছে। বরং তাদের মধ্যে এই বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে জ্ঞান আসার পর। তাই সেজন্য আল্লাহ দায়ী নন, বরং সেসব লোক নিজেরাই দায়ী, যারা দ্বীনের সুস্পষ্ট নীতিমালা এবং শরীয়াতের সুস্পষ্ট বিধি-নিষেধ থেকে দূরে সরে গিয়ে নতুন নতুন ধর্ম ও পথ বানিয়ে নিয়েছে। কোন প্রকার সদিচ্ছা এই মতভেদ সৃষ্টির চালিকা শক্তি ছিল না। এটা ছিল অভিনব ধারণা প্রকাশের আকাঙ্ক্ষা মাত্র। নিজেদের নাম ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চিন্তা, পারস্পরিক জেদ, একে অপরকে পরাস্ত করার প্রচেষ্টা এবং সম্পদ ও মর্যাদা অর্জনের প্রচেষ্টা- এসবই ছিল সেই নতুন নতুন আকীদা, ইবাদাত এবং জীবনাদর্শ উদ্ভাবনের পথে উৎসাহ যোগানোর মূল কারণ। এই মতভেদ আল্লাহর বান্দাদের একটি বড় অংশকে দ্বীনের সুস্পষ্ট রাজপথ থেকে সরিয়ে বিভিন্নভাবে বিক্ষিপ্ত করে দিয়েছে। এমনকি এর ফলে রক্তপাতও ঘটছে।
দ্বীনের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টিকারীদের থেকে দূরে থাকতে হবে :
اِنَّ الَّذِيْنَ فَرَّقُوْا دِيْنَهُمْ وَكَانُوْا شِيَعًا لَّسْتَ مِنْهُمْ فِيْ شَيْءٍؕ اِنَّمَاۤ اَمْرُهُمْ اِلَى اللهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُمْ بِمَا كَانُوْا يَفْعَلُوْنَ
নিশ্চয় যারা দ্বীনের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, তাদের উপর তোমার কোন দায়িত্ব নেই; তাদের বিষয়টি আল্লাহর ইচ্ছাধীন। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে অবহিত করবেন। (সূরা আন‘আম- ১৫৯)
ব্যাখ্যা : এখানে নবী ﷺ এর মাধ্যমে আল্লাহর সত্য দ্বীনের সকল অনুসারীকে সম্বোধন করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর বক্তব্যের সারনির্যাস হচ্ছে, এক আল্লাহকে ইলাহ্ ও রব বলে মেনে নাও। আল্লাহর সত্তা, গুণাবলি, ক্ষমতা ও অধিকারে কাউকে শরীক করো না। আল্লাহর সামনে নিজেকে জবাবদিহি করতে হবে মনে করে আখিরাতের প্রতি ঈমান আনো। আল্লাহ তাঁর রাসূলদের ও কিতাবসমূহের মাধ্যমে যে মূলনীতি শিক্ষা দিয়েছেন সে অনুযায়ী জীবন-যাপন করো। এগুলোই চিরকাল আসল দ্বীন হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে এবং এখনো যথার্থ দ্বীন বলতে এগুলোকেই বুঝায়। জন্মের প্রথম দিন থেকে প্রত্যেক মানুষকে এ দ্বীনই দেয়া হয়। পরবর্তীকালে বিভিন্ন যুগের লোকেরা তাদের নিজস্ব চিন্তা ও মানসিকতার ভ্রান্ত উদ্ভাবনী ক্ষমতার সাহায্যে অথবা নিজেদের প্রবৃত্তির প্রভাবে এ আসল দ্বীনকে বিকৃত করে বিভিন্ন প্রকার মতবাদ গড়ে তুলেছে। এ দ্বীনের মধ্যে তারা নতুন নতুন কথা মিশিয়ে দিয়েছে। নিজেদের কুসংস্কার, বিলাসিতা, আন্দাজ-অনুমান ও নিজেদের দার্শনিক চিন্তা-ভাবনার মাধ্যমে এর আকীদা বিশ্বাসে ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করেছে এবং কাট-ছাঁট করে তাকে পুরোপুরি বিকৃত করে দিয়েছে। অনেক নতুন বিষয় উদ্ভাবন করে তার বিধানসমূহের সাথে জুড়ে দিয়েছে। মনগড়া আইন রচনা করেছে। আইনের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো নিয়ে অযথা চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছে। ছোটখাটো বিষয়গুলো নিয়ে মতবিরোধ করার ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করেছে। গুরুত্বপূর্ণকে গুরুত্বহীন ও গুরুত্বহীনকে গুরুত্বপূর্ণ বানিয়ে দিয়েছে। যেসব নবী-রাসূল এ দ্বীন প্রচার করেছেন এবং যেসব মনীষীগণ এ দ্বীন প্রতিষ্ঠায় জীবনপাত করে গেছেন, তাদের কারো কারো প্রতি ভক্তি ও শ্রদ্ধা প্রকাশের ক্ষেত্রে অধিক বাড়াবাড়ি করেছে; আবার কারো কারো প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষের প্রকাশ ঘটিয়েছে এবং তাদের বিরোধিতা করেছে। এভাবে অসংখ্য ধর্ম ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটেই চলছে। এদের প্রত্যেকটি ধর্ম ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উদ্ভব মানবসমাজকে কলহ, বিবাদ ও পারস্পরিক সংঘর্ষে লিপ্ত করেছে। এভাবে মানবসমাজ বিভিন্ন দলে-উপদলে বিভক্ত হয়ে চলেছে। কাজেই বর্তমানে যে ব্যক্তিই আসল দ্বীনের অনুসারী হবে, তার জন্য এসব বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায় ও দলাদলি থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া এবং তাদের থেকে নিজেদের পথকে আলাদা করে নেয়াই অপরিহার্য হবে।
সংগঠিত হতে হবে ঈমানের ভিত্তিতে, আত্মীয়তার ভিত্তিতে নয় :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوْاۤ اٰبَآءَكُمْ وَاِخْوَانَكُمْ اَوْلِيَآءَ اِنِ اسْتَحَبُّوا الْكُفْرَ عَلَى الْاِيْمَانِ
হে মুমিনগণ! তোমাদের পিতা ও ভ্রাতা যদি ঈমানের বিপরীতে কুফরীকে ভালোবাসে, তবে তাদেরকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করো না। (সূরা তাওবা- ২৩)
اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ اِخْوَةٌ فَاَصْلِحُوْا بَيْنَ اَخَوَيْكُمْ وَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ
নিশ্চয় মুমিনরা একে অপরের ভাই। সুতরাং তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে সুসম্পর্ক বহাল রাখো এবং আল্লাহকে ভয় করো। আশা করা যায়, তোমাদের উপর দয়া করা হবে। (সূরা হুজুরাত- ১০)
وَاذْكُرُوْا نِعْمَةَ اللهِ عَلَيْكُمْ اِذْ كُنْتُمْ اَعْدَآءً فَاَلَّفَ بَيْنَ قُلُوْبِكُمْ فَاَصْبَحْتُمْ بِنِعْمَتِهٖۤ اِخْوَانًا
তোমাদের উপর আল্লাহর দেয়া নিয়ামতকে স্মরণ করো। যখন তোমরা একে অপরের শত্রু ছিলে; এমতাবস্থায় তিনি তোমাদের অন্তরে ভালোবাসা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। ফলে তোমরা তার অনুগ্রহে পরস্পর ভাই ভাই হয়ে গেলে। (সূরা আলে ইমরান- ১০৩)
وَاعْتَصِمُوْا بِحَبْلِ اللهِ جَمِيْعًا وَّلَا تَفَرَّقُوْا
আর তোমরা সকলে মিলে আল্লাহর রশিকে আঁকড়ে ধরো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। (সূরা আলে ইমরান- ১০৩)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর রশি বলতে তাঁর দ্বীনকে বুঝানো হয়েছে। আল্লাহর দ্বীনকে রশির সাথে তুলনা করার কারণ হচ্ছে- এটি এমন একটি সম্পর্ক, যা একদিকে আল্লাহর সাথে ঈমানদারদের সম্পর্ক জুড়ে দেয়। অন্যদিকে সমস্ত ঈমানদারদেরকে পরস্পরের সাথে মিলিয়ে জামায়াতবদ্ধ করে। এ রশিকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরার তাৎপর্য হচ্ছে, মুসলিমরা দ্বীনকেই প্রকৃত গুরুত্বের অধিকারী মনে করবে, সে ব্যাপারেই আগ্রহ পোষণ করবে, তা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রচেষ্টা চালাবে এবং পরস্পরের সাথে সহযোগিতা করবে। যেখানেই মুসলিমরা দ্বীনের মৌলিক শিক্ষা ও দ্বীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়বে এবং তাদের সমগ্র দৃষ্টি খুঁটিনাটি বিষয়ের প্রতি আকৃষ্ট হবে সেখানেই অনিবার্যভাবে তাদের মধ্যে সে একই প্রকারে দলাদলি ও মতবিরোধ দেখা দেবে, যা ইতোপূর্বে বিভিন্ন নবীর উম্মতকে জীবনের মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করে দুনিয়া ও আখিরাতে লাঞ্ছনার গর্তে নিক্ষেপ করেছিল।
আল্লাহ বিভিন্ন দলে বিভক্ত হতে নিষেধ করেছেন :
وَلَا تَكُوْنُوْا كَالَّذِيْنَ تَفَرَّقُوْا وَاخْتَلَفُوْا مِنْ ۢبَعْدِ مَا جَآءَهُمُ الْبَيِّنَاتُؕ وَاُولٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ عَظِيْمٌ
তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং তাদের কাছে স্পষ্ট প্রমাণ আসার পরও মতভেদে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি। (সূরা আলে ইমরান- ১০৫)
ব্যাখ্যা : এখানে পূর্ববর্তী নবীদের এমনসব উম্মতের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, যারা সত্য দ্বীনের সরল ও সুস্পষ্ট শিক্ষা লাভ করেছিল; কিন্তু কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর দ্বীনের মূল বিষয়গুলো পরিত্যাগ করে দ্বীনের সাথে সম্পর্কহীন অপ্রয়োজনীয় খুঁটিনাটি বিষয়াবলির ভিত্তিতে নিজেদেরকে একটি আলাদা ধর্মীয় সম্প্রদায় হিসেবে গড়ে তুলতে শুরু করে দিয়েছিল। তারপর অবান্তর ও অহেতুক কথা নিয়ে এমনভাবে কলহে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল যে, আল্লাহ তাদের উপর যে দায়িত্ব দিয়েছিলেন তার কথা তারা ভুলেই গিয়েছিল এবং বিশ্বাস ও নৈতিকতার যেসব মূলনীতির উপর মানুষের সাফল্য ও কল্যাণের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে, তার প্রতি কোন আগ্রহই তাদের ছিল না।
وَلَا تَكُوْنُوْا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ ‐ مِنَ الَّذِيْنَ فَرَّقُوْا دِيْنَهُمْ وَكَانُوْا شِيَعًاؕ كُلُّ حِزْبٍ ۢبِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُوْنَ
অতএব তুমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না, যারা তাদের দ্বীনকে খন্ড-বিখন্ড করে নিয়েছে এবং ভিন্ন ভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আর প্রত্যেক দলই নিজ নিজ অনুসৃত নিয়ম নিয়েই উল্লাসিত। (সূরা রূম- ৩১, ৩২)
পারস্পরিক বিদ্বেষের কারণেই বিভেদ সৃষ্টি হয় :
وَمَا تَفَرَّقُوْاۤ اِلَّا مِنْ ۢبَعْدِ مَا جَآءَهُمُ الْعِلْمُ بَغْيًا ۢبَيْنَهُمْ
তাদের নিকট (তাওহীদের জ্ঞান) আসার পরও শুধুমাত্র পারস্পরিক বাড়াবাড়ির কারণে তারা নিজেদের মধ্যে মতভেদ ঘটায়। (সূরা শূরা- ১৪)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ বিভেদের কারণ এ ছিল না যে, আল্লাহ নবী-রাসূল পাঠাননি এবং কিতাবও নাযিল করেননি। তাই সঠিক পথ না জানার কারণে মানুষ নিজেদের জন্য আলাদা-আলাদা ধর্ম ও জীবনাদর্শ আবিষ্কার করে নিয়েছে। বরং তাদের মধ্যে এই বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে জ্ঞান আসার পর। তাই সেজন্য আল্লাহ দায়ী নন, বরং সেসব লোক নিজেরাই দায়ী, যারা দ্বীনের সুস্পষ্ট নীতিমালা এবং শরীয়াতের সুস্পষ্ট বিধি-নিষেধ থেকে দূরে সরে গিয়ে নতুন নতুন ধর্ম ও পথ বানিয়ে নিয়েছে। কোন প্রকার সদিচ্ছা এই মতভেদ সৃষ্টির চালিকা শক্তি ছিল না। এটা ছিল অভিনব ধারণা প্রকাশের আকাঙ্ক্ষা মাত্র। নিজেদের নাম ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চিন্তা, পারস্পরিক জেদ, একে অপরকে পরাস্ত করার প্রচেষ্টা এবং সম্পদ ও মর্যাদা অর্জনের প্রচেষ্টা- এসবই ছিল সেই নতুন নতুন আকীদা, ইবাদাত এবং জীবনাদর্শ উদ্ভাবনের পথে উৎসাহ যোগানোর মূল কারণ। এই মতভেদ আল্লাহর বান্দাদের একটি বড় অংশকে দ্বীনের সুস্পষ্ট রাজপথ থেকে সরিয়ে বিভিন্নভাবে বিক্ষিপ্ত করে দিয়েছে। এমনকি এর ফলে রক্তপাতও ঘটছে।
দ্বীনের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টিকারীদের থেকে দূরে থাকতে হবে :
اِنَّ الَّذِيْنَ فَرَّقُوْا دِيْنَهُمْ وَكَانُوْا شِيَعًا لَّسْتَ مِنْهُمْ فِيْ شَيْءٍؕ اِنَّمَاۤ اَمْرُهُمْ اِلَى اللهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُمْ بِمَا كَانُوْا يَفْعَلُوْنَ
নিশ্চয় যারা দ্বীনের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, তাদের উপর তোমার কোন দায়িত্ব নেই; তাদের বিষয়টি আল্লাহর ইচ্ছাধীন। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে অবহিত করবেন। (সূরা আন‘আম- ১৫৯)
ব্যাখ্যা : এখানে নবী ﷺ এর মাধ্যমে আল্লাহর সত্য দ্বীনের সকল অনুসারীকে সম্বোধন করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর বক্তব্যের সারনির্যাস হচ্ছে, এক আল্লাহকে ইলাহ্ ও রব বলে মেনে নাও। আল্লাহর সত্তা, গুণাবলি, ক্ষমতা ও অধিকারে কাউকে শরীক করো না। আল্লাহর সামনে নিজেকে জবাবদিহি করতে হবে মনে করে আখিরাতের প্রতি ঈমান আনো। আল্লাহ তাঁর রাসূলদের ও কিতাবসমূহের মাধ্যমে যে মূলনীতি শিক্ষা দিয়েছেন সে অনুযায়ী জীবন-যাপন করো। এগুলোই চিরকাল আসল দ্বীন হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে এবং এখনো যথার্থ দ্বীন বলতে এগুলোকেই বুঝায়। জন্মের প্রথম দিন থেকে প্রত্যেক মানুষকে এ দ্বীনই দেয়া হয়। পরবর্তীকালে বিভিন্ন যুগের লোকেরা তাদের নিজস্ব চিন্তা ও মানসিকতার ভ্রান্ত উদ্ভাবনী ক্ষমতার সাহায্যে অথবা নিজেদের প্রবৃত্তির প্রভাবে এ আসল দ্বীনকে বিকৃত করে বিভিন্ন প্রকার মতবাদ গড়ে তুলেছে। এ দ্বীনের মধ্যে তারা নতুন নতুন কথা মিশিয়ে দিয়েছে। নিজেদের কুসংস্কার, বিলাসিতা, আন্দাজ-অনুমান ও নিজেদের দার্শনিক চিন্তা-ভাবনার মাধ্যমে এর আকীদা বিশ্বাসে ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করেছে এবং কাট-ছাঁট করে তাকে পুরোপুরি বিকৃত করে দিয়েছে। অনেক নতুন বিষয় উদ্ভাবন করে তার বিধানসমূহের সাথে জুড়ে দিয়েছে। মনগড়া আইন রচনা করেছে। আইনের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো নিয়ে অযথা চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছে। ছোটখাটো বিষয়গুলো নিয়ে মতবিরোধ করার ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করেছে। গুরুত্বপূর্ণকে গুরুত্বহীন ও গুরুত্বহীনকে গুরুত্বপূর্ণ বানিয়ে দিয়েছে। যেসব নবী-রাসূল এ দ্বীন প্রচার করেছেন এবং যেসব মনীষীগণ এ দ্বীন প্রতিষ্ঠায় জীবনপাত করে গেছেন, তাদের কারো কারো প্রতি ভক্তি ও শ্রদ্ধা প্রকাশের ক্ষেত্রে অধিক বাড়াবাড়ি করেছে; আবার কারো কারো প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষের প্রকাশ ঘটিয়েছে এবং তাদের বিরোধিতা করেছে। এভাবে অসংখ্য ধর্ম ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটেই চলছে। এদের প্রত্যেকটি ধর্ম ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উদ্ভব মানবসমাজকে কলহ, বিবাদ ও পারস্পরিক সংঘর্ষে লিপ্ত করেছে। এভাবে মানবসমাজ বিভিন্ন দলে-উপদলে বিভক্ত হয়ে চলেছে। কাজেই বর্তমানে যে ব্যক্তিই আসল দ্বীনের অনুসারী হবে, তার জন্য এসব বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায় ও দলাদলি থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া এবং তাদের থেকে নিজেদের পথকে আলাদা করে নেয়াই অপরিহার্য হবে।
সংগঠিত হতে হবে ঈমানের ভিত্তিতে, আত্মীয়তার ভিত্তিতে নয় :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوْاۤ اٰبَآءَكُمْ وَاِخْوَانَكُمْ اَوْلِيَآءَ اِنِ اسْتَحَبُّوا الْكُفْرَ عَلَى الْاِيْمَانِ
হে মুমিনগণ! তোমাদের পিতা ও ভ্রাতা যদি ঈমানের বিপরীতে কুফরীকে ভালোবাসে, তবে তাদেরকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করো না। (সূরা তাওবা- ২৩)
اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ اِخْوَةٌ فَاَصْلِحُوْا بَيْنَ اَخَوَيْكُمْ وَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ
নিশ্চয় মুমিনরা একে অপরের ভাই। সুতরাং তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে সুসম্পর্ক বহাল রাখো এবং আল্লাহকে ভয় করো। আশা করা যায়, তোমাদের উপর দয়া করা হবে। (সূরা হুজুরাত- ১০)
وَاذْكُرُوْا نِعْمَةَ اللهِ عَلَيْكُمْ اِذْ كُنْتُمْ اَعْدَآءً فَاَلَّفَ بَيْنَ قُلُوْبِكُمْ فَاَصْبَحْتُمْ بِنِعْمَتِهٖۤ اِخْوَانًا
তোমাদের উপর আল্লাহর দেয়া নিয়ামতকে স্মরণ করো। যখন তোমরা একে অপরের শত্রু ছিলে; এমতাবস্থায় তিনি তোমাদের অন্তরে ভালোবাসা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। ফলে তোমরা তার অনুগ্রহে পরস্পর ভাই ভাই হয়ে গেলে। (সূরা আলে ইমরান- ১০৩)
যেসব দলে আল্লাহর আইন বাস্তবায়নের কর্মসূচী নেই :
وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْكَافِرُوْنَ
যারা আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন সে অনুসারে মীমাংসা করে না, তারাই কাফির। (সূরা মায়েদা- ৪৪)
যেসব দলের নেতা কাফির :
فَلَا تُطِعِ الْكَافِرِيْنَ وَجَاهِدْهُمْ بِهٖ جِهَادًا كَبِيْرًا
সুতরাং তুমি কাফিরদের আনুগত্য করো না এবং তুমি এর দ্বারা (কুরআনের সাহায্যে) তাদের সাথে প্রবল সংগ্রাম চালিয়ে যাও। (সূরা ফুরক্বান- ৫২)
যেসব দলের নেতা মুনাফিক :
وَلَا تُطِعِ الْكَافِرِيْنَ وَالْمُنَافِقِيْنَ وَدَعْ اَذَاهُمْ
আর তুমি কাফির ও মুনাফিকদের কথা মানবে না এবং তাদের নির্যাতনকে উপেক্ষা করবে। (সূরা আহযাব- ৪৮)
যেসব দলের নেতা মিথ্যাবাদী :
فَلَا تُطِعِ الْمُكَذِّبِيْنَ
অতএব তুমি মিথ্যাপ্রতিপন্নকারীদের অনুসরণ করো না। (সূরা ক্বালাম- ৮)
যেসব দলের নেতা অসৎ ও চরিত্রহীন :
وَلَا تُطِعْ كُلَّ حَلَّافٍ مَّهِيْنٍ ‐ هَمَّازٍ مَّشَّآءٍ ۢبِنَمِيْمٍ ‐ مَنَّاعٍ لِّلْخَيْرِ مُعْتَدٍ اَثِيْمٍ
আর তুমি তাদের অনুসরণ করো না, যারা কথায় কথায় শপথ করে এবং যারা লাঞ্ছিত হয়। যারা বেহুদা গালমন্দ করে, মানুষকে অভিশাপ দেয় এবং চোগলখোরী করে বেড়ায়। আর যারা কল্যাণের কাজে বাধা দান করে এবং সীমালঙ্ঘন করে। (সূরা ক্বালাম, ১০-১২)
ব্যাখ্যা : مَنَّاعٍ لِّلْخَيْرِ (মান্নাইল লিল খায়র) তথা যে কল্যাণের কাজে বাধা দান করে। اَلْخَيْرُ (আল খায়র) শব্দটি সম্পদ অর্থে ব্যবহৃত হয় আবার কল্যাণ অর্থেও ব্যবহৃত হয়। প্রথম অর্থটি গ্রহণ করলে আয়াতের অর্থ হবে, তারা নিজেদের অর্থ-সম্পদ থেকে বান্দা ও আল্লাহ কারো হকই আদায় করত না। দ্বিতীয় অর্থ গ্রহণ করলে আয়াতের অর্থ হবে, তারা কল্যাণের পথ থেকে নিজেরাই যে কেবল বিরত থাকত তা নয়, বরং অন্যদেরকেও তা থেকে বিরত রাখত। তারা পৃথিবীতে কল্যাণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কোনভাবেই যেন কল্যাণ ও সুকৃতি বিস্তার লাভ করতে না পারে এ উদ্দেশ্যেই তারা তাদের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করেছিল।
مُعْتَدٍ (মু‘তাদিন) তথা সীমালঙ্ঘনকারী- যে প্রতিটি কাজে নৈতিকতার ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘনকারী হিসেবে নিজের স্বার্থ ও উদ্দেশ্যাবলির জন্য যে কোন কাজ করতে প্রস্তুত থাকত। হারাম পন্থায় অর্থ-সম্পদ উপার্জন করত এবং হারাম পথেই তা ব্যয় করত। মানুষের অধিকারে হস্তক্ষেপ করত। তার হাত কোন প্রকার যুলুম ও বাড়াবাড়ি থেকে বিরত থাকত না। কল্যাণের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করাকেই সে যথেষ্ট মনে করত না, বরং আরো অগ্রসর হয়ে সততা ও কল্যাণের পথের অনুসারীদেরকে উত্যক্ত করত এবং যারা কল্যাণের জন্য কাজ করত তাদের উপর নির্যাতন চালাত।
যেসব দলের নেতা ফাসিক :
وَلَا تُطِيْعُوْاۤ اَمْرَ الْمُسْرِفِيْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ يُفْسِدُوْنَ فِى الْاَرْضِ وَلَا يُصْلِحُوْنَ
(সেসব) সীমালঙ্ঘনকারীদের আদেশ মান্য করো না, যারা পৃথিবীতে কেবল অশান্তিই সৃষ্টি করে এবং শান্তি স্থাপন করে না। (সূরা শু‘আরা- ১৫১, ১৫২)
যেসব দল বাতিলের অনুসরণ করে :
ذٰلِكَ بِاَنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوا اتَّبَعُوا الْبَاطِلَ وَاَنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّبَعُوا الْحَقَّ مِنْ رَّبِّهِمْؕ كَذٰلِكَ يَضْرِبُ اللهُ لِلنَّاسِ اَمْثَالَهُمْ
এটা এ কারণে যে, যারা কুফরী করেছে তারা বাতিলের অনুসরণ করেছে। আর যারা ঈমান এনেছে তারা তাদের রবের পক্ষ থেকে প্রেরিত হক্বকে মেনে চলেছে। এভাবেই আল্লাহ মানুষকে তাদের সঠিক অবস্থা জানিয়ে দেন। (সূরা মুহাম্মাদ- ৩)
অসৎ নেতারা তাদের দলের সবাইকে নিয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে :
يَقْدُمُ قَوْمَهٗ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَاَوْرَدَهُمُ النَّارَؕ وَبِئْسَ الْوِرْدُ الْمَوْرُوْدُ
সে কিয়ামতের দিন তার সম্প্রদায়ের অগ্রভাগে থাকবে এবং সে তাদেরকে নিয়ে অগ্নিতে প্রবেশ করবে। আর তাদের প্রবেশস্থল কতই না নিকৃষ্ট! (সূরা হুদু ৯৮)
ব্যাখ্যা : এ আয়াত থেকে জানা যায়, যারা দুনিয়ায় কোন জাতি বা দলের নেতৃত্ব দেয় কিয়ামতের দিনও তারাই তাদের নেতা হবে। যদি তারা দুনিয়ায় সত্যের পথে নেতৃত্ব দিয়ে থাকে, তাহলে যারা তাদের অনুসরণ করেছে তারা কিয়ামতের দিনও তাদেরই পতাকাতলে সমবেত হবে এবং তাদের নেতৃত্বে জান্নাতের দিকে এগিয়ে যাবে। আর যদি তারা দুনিয়ায় এমন কোন পথের দিকে মানুষকে আহবান জানিয়ে থাকে, যা সত্য দ্বীনের পথ নয়, তাহলে যারা এখানে তাদের পথে চলেছে তারা সেখানেও তাদেরই পেছনে থাকবে এবং তাদের নেতৃত্বে জাহান্নামের দিকে এগিয়ে যাবে। যেসব নেতা দুনিয়ায় লোকদেরকে গোমরাহ করেছে এবং তাদেরকে সত্যবিরোধী পথে পরিচালিত করেছে তাদের অনুসারীরা যখন নিজেদের চোখে দেখে নেবে- এ যালিমরা তাদেরকে কী ভয়াবহ পরিণতির দিকে টেনে এনেছে, তখন তারা নিজেদের বিপদের জন্য তাদেরকে দায়ী করবে। তারা এমন অবস্থায় জাহান্নামের দিকে রওয়ানা দেবে যে, তাদের সামনে নেতারা চলবে আর তারা পেছনে পেছনে তাদেরকে লানত বর্ষণ করতে করতে চলতে থাকবে। অন্যদিকে যাদের নেতৃত্ব মানুষকে নিয়ামতপূর্ণ জান্নাতের অধিকারী করবে, তাদের অনুসারীরা নিজেদের শুভ পরিণাম দেখে তাদের নেতাদের জন্য দু‘আ করতে থাকবে এবং তাদের প্রশংসা করতে করতে জান্নাতের দিকে এগিয়ে যাবে।
وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْكَافِرُوْنَ
যারা আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন সে অনুসারে মীমাংসা করে না, তারাই কাফির। (সূরা মায়েদা- ৪৪)
যেসব দলের নেতা কাফির :
فَلَا تُطِعِ الْكَافِرِيْنَ وَجَاهِدْهُمْ بِهٖ جِهَادًا كَبِيْرًا
সুতরাং তুমি কাফিরদের আনুগত্য করো না এবং তুমি এর দ্বারা (কুরআনের সাহায্যে) তাদের সাথে প্রবল সংগ্রাম চালিয়ে যাও। (সূরা ফুরক্বান- ৫২)
যেসব দলের নেতা মুনাফিক :
وَلَا تُطِعِ الْكَافِرِيْنَ وَالْمُنَافِقِيْنَ وَدَعْ اَذَاهُمْ
আর তুমি কাফির ও মুনাফিকদের কথা মানবে না এবং তাদের নির্যাতনকে উপেক্ষা করবে। (সূরা আহযাব- ৪৮)
যেসব দলের নেতা মিথ্যাবাদী :
فَلَا تُطِعِ الْمُكَذِّبِيْنَ
অতএব তুমি মিথ্যাপ্রতিপন্নকারীদের অনুসরণ করো না। (সূরা ক্বালাম- ৮)
যেসব দলের নেতা অসৎ ও চরিত্রহীন :
وَلَا تُطِعْ كُلَّ حَلَّافٍ مَّهِيْنٍ ‐ هَمَّازٍ مَّشَّآءٍ ۢبِنَمِيْمٍ ‐ مَنَّاعٍ لِّلْخَيْرِ مُعْتَدٍ اَثِيْمٍ
আর তুমি তাদের অনুসরণ করো না, যারা কথায় কথায় শপথ করে এবং যারা লাঞ্ছিত হয়। যারা বেহুদা গালমন্দ করে, মানুষকে অভিশাপ দেয় এবং চোগলখোরী করে বেড়ায়। আর যারা কল্যাণের কাজে বাধা দান করে এবং সীমালঙ্ঘন করে। (সূরা ক্বালাম, ১০-১২)
ব্যাখ্যা : مَنَّاعٍ لِّلْخَيْرِ (মান্নাইল লিল খায়র) তথা যে কল্যাণের কাজে বাধা দান করে। اَلْخَيْرُ (আল খায়র) শব্দটি সম্পদ অর্থে ব্যবহৃত হয় আবার কল্যাণ অর্থেও ব্যবহৃত হয়। প্রথম অর্থটি গ্রহণ করলে আয়াতের অর্থ হবে, তারা নিজেদের অর্থ-সম্পদ থেকে বান্দা ও আল্লাহ কারো হকই আদায় করত না। দ্বিতীয় অর্থ গ্রহণ করলে আয়াতের অর্থ হবে, তারা কল্যাণের পথ থেকে নিজেরাই যে কেবল বিরত থাকত তা নয়, বরং অন্যদেরকেও তা থেকে বিরত রাখত। তারা পৃথিবীতে কল্যাণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কোনভাবেই যেন কল্যাণ ও সুকৃতি বিস্তার লাভ করতে না পারে এ উদ্দেশ্যেই তারা তাদের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করেছিল।
مُعْتَدٍ (মু‘তাদিন) তথা সীমালঙ্ঘনকারী- যে প্রতিটি কাজে নৈতিকতার ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘনকারী হিসেবে নিজের স্বার্থ ও উদ্দেশ্যাবলির জন্য যে কোন কাজ করতে প্রস্তুত থাকত। হারাম পন্থায় অর্থ-সম্পদ উপার্জন করত এবং হারাম পথেই তা ব্যয় করত। মানুষের অধিকারে হস্তক্ষেপ করত। তার হাত কোন প্রকার যুলুম ও বাড়াবাড়ি থেকে বিরত থাকত না। কল্যাণের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করাকেই সে যথেষ্ট মনে করত না, বরং আরো অগ্রসর হয়ে সততা ও কল্যাণের পথের অনুসারীদেরকে উত্যক্ত করত এবং যারা কল্যাণের জন্য কাজ করত তাদের উপর নির্যাতন চালাত।
যেসব দলের নেতা ফাসিক :
وَلَا تُطِيْعُوْاۤ اَمْرَ الْمُسْرِفِيْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ يُفْسِدُوْنَ فِى الْاَرْضِ وَلَا يُصْلِحُوْنَ
(সেসব) সীমালঙ্ঘনকারীদের আদেশ মান্য করো না, যারা পৃথিবীতে কেবল অশান্তিই সৃষ্টি করে এবং শান্তি স্থাপন করে না। (সূরা শু‘আরা- ১৫১, ১৫২)
যেসব দল বাতিলের অনুসরণ করে :
ذٰلِكَ بِاَنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوا اتَّبَعُوا الْبَاطِلَ وَاَنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّبَعُوا الْحَقَّ مِنْ رَّبِّهِمْؕ كَذٰلِكَ يَضْرِبُ اللهُ لِلنَّاسِ اَمْثَالَهُمْ
এটা এ কারণে যে, যারা কুফরী করেছে তারা বাতিলের অনুসরণ করেছে। আর যারা ঈমান এনেছে তারা তাদের রবের পক্ষ থেকে প্রেরিত হক্বকে মেনে চলেছে। এভাবেই আল্লাহ মানুষকে তাদের সঠিক অবস্থা জানিয়ে দেন। (সূরা মুহাম্মাদ- ৩)
অসৎ নেতারা তাদের দলের সবাইকে নিয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে :
يَقْدُمُ قَوْمَهٗ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَاَوْرَدَهُمُ النَّارَؕ وَبِئْسَ الْوِرْدُ الْمَوْرُوْدُ
সে কিয়ামতের দিন তার সম্প্রদায়ের অগ্রভাগে থাকবে এবং সে তাদেরকে নিয়ে অগ্নিতে প্রবেশ করবে। আর তাদের প্রবেশস্থল কতই না নিকৃষ্ট! (সূরা হুদু ৯৮)
ব্যাখ্যা : এ আয়াত থেকে জানা যায়, যারা দুনিয়ায় কোন জাতি বা দলের নেতৃত্ব দেয় কিয়ামতের দিনও তারাই তাদের নেতা হবে। যদি তারা দুনিয়ায় সত্যের পথে নেতৃত্ব দিয়ে থাকে, তাহলে যারা তাদের অনুসরণ করেছে তারা কিয়ামতের দিনও তাদেরই পতাকাতলে সমবেত হবে এবং তাদের নেতৃত্বে জান্নাতের দিকে এগিয়ে যাবে। আর যদি তারা দুনিয়ায় এমন কোন পথের দিকে মানুষকে আহবান জানিয়ে থাকে, যা সত্য দ্বীনের পথ নয়, তাহলে যারা এখানে তাদের পথে চলেছে তারা সেখানেও তাদেরই পেছনে থাকবে এবং তাদের নেতৃত্বে জাহান্নামের দিকে এগিয়ে যাবে। যেসব নেতা দুনিয়ায় লোকদেরকে গোমরাহ করেছে এবং তাদেরকে সত্যবিরোধী পথে পরিচালিত করেছে তাদের অনুসারীরা যখন নিজেদের চোখে দেখে নেবে- এ যালিমরা তাদেরকে কী ভয়াবহ পরিণতির দিকে টেনে এনেছে, তখন তারা নিজেদের বিপদের জন্য তাদেরকে দায়ী করবে। তারা এমন অবস্থায় জাহান্নামের দিকে রওয়ানা দেবে যে, তাদের সামনে নেতারা চলবে আর তারা পেছনে পেছনে তাদেরকে লানত বর্ষণ করতে করতে চলতে থাকবে। অন্যদিকে যাদের নেতৃত্ব মানুষকে নিয়ামতপূর্ণ জান্নাতের অধিকারী করবে, তাদের অনুসারীরা নিজেদের শুভ পরিণাম দেখে তাদের নেতাদের জন্য দু‘আ করতে থাকবে এবং তাদের প্রশংসা করতে করতে জান্নাতের দিকে এগিয়ে যাবে।
নেতা নির্বাচনের মাপকাঠি হবে তাক্বওয়া :
اِنَّ اَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللهِ اَتْقَاكُمْ
আল্লাহর কাছে তোমাদের মধ্যে তারাই অধিক সম্মানিত, যারা তোমাদের মধ্যে বেশি মুত্তাক্বী। (সূরা হুজুরাত- ১৩)
নেতাকে পূর্ণ আমানতদার হতে হবে :
وَمَا كَانَ لِنَبِيٍّ اَنْ يَّغُلَّؕ وَمَنْ يَّغْلُلْ يَاْتِ بِمَا غَلَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِۚ ثُمَّ تُوَفّٰى كُلُّ نَفْسٍ مَّا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُوْنَ
কোন নবীর পক্ষে আত্মসাৎকরণ শোভনীয় নয়। আর যে ব্যক্তি আত্মসাৎ করেছে সে যা আত্মসাৎ করেছে তা নিয়ে কিয়ামতের দিন উপস্থিত হবে। অতঃপর প্রত্যেক ব্যক্তি যা অর্জন করেছে তা পূর্ণরূপে প্রদত্ত হবে এবং তাদের উপর কোন যুলুম করা হবে না। (সূরা আলে ইমরান- ১৬১)
সাথিদের মধ্যে সাহস সঞ্চার করতে হবে :
فَلَمَّا تَرَآءَ الْجَمْعَانِ قَالَ اَصْحَابُ مُوْسٰۤى اِنَّا لَمُدْرَكُوْنَ ‐ قَالَ كَلَّاؕ اِنَّ مَعِيَ رَبِّيْ سَيَهْدِيْنِ
অতঃপর যখন দু’দল পরস্পরকে দেখল তখন মূসার সাথিরা বলল, আমরা তো ধরা পড়ে গেলাম। মূসা বলল, কখনই নয়! আমার সঙ্গে আমার প্রতিপালক রয়েছেন। অচিরেই তিনি আমাকে পথনির্দেশ করবেন। (সূরা শু‘আরা- ৬১, ৬২)
সাথিদের সাথে নম্র ব্যবহার করতে হবে :
وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ
যারা তোমার অনুসরণ করে, সেসব মুমিনদের প্রতি বিনয়ী হও। (সূরা শু‘আরা- ২১৫)
فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللهِ لِنْتَ لَهُمْۚ وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيْظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوْا مِنْ حَوْلِكَ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِى الْاَمْرِۚ فَاِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللهِؕ اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِيْنَ
অতএব আল্লাহর অনুগ্রহ এই যে, তুমি তাদের প্রতি কোমল হৃদয়ের অধিকারী হয়েছ। আর তুমি যদি কর্কশভাষী ও কঠোর হৃদয়ের অধিকারী হতে, তবে নিশ্চয় তারা তোমার সংস্পর্শে আসা হতে বিরত থাকত। অতএব তুমি তাদেরকে ক্ষমা করো ও তাদের জন্য (আল্লাহর নিকট) ক্ষমাপ্রার্থনা করো এবং যে কোন বিষয়ে তাদের সাথে পরামর্শ করো। অতঃপর যখন তুমি কোন বিষয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হবে, তখন আল্লাহর উপর ভরসা করো। নিশ্চয় আল্লাহ (তাঁর উপর) নির্ভরশীলদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৯)
তাদের সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ট করতে হবে :
وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيْدُوْنَ وَجْهَه
তুমি নিজেকে ধৈর্যের সাথে তাদেরই সংস্পর্শে রাখবে, যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের প্রতিপালককে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আহবান করে থাকে। (সূরা কাহফ- ২৮)
তাদের ভুল-ত্রুটি এড়িয়ে যেতে হবে :
فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ
অতএব তুমি তাদেরকে ক্ষমা করো এবং তাদের জন্য (আল্লাহর কাছেও) ক্ষমাপ্রার্থনা করো। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৯)
কোন কর্মীকে অবহেলা করা যাবে না :
عَبَسَ وَتَوَلّٰى ‐ اَنْ جَآءَهُ الْاَعْمٰى ‐ وَمَا يُدْرِيْكَ لَعَلَّه يَزَّكّٰى ‐ اَوْ يَذَّكَّرُ فَتَنْفَعَهُ الذِّكْرٰى
সে (নবী) ভ্রুকুঞ্চিত করল এবং মুখ ফিরিয়ে নিল, কারণ তার নিকট অন্ধ লোকটি এসেছিল। তুমি কি তার ব্যাপারে কোনকিছু জানতে- হয়তো সে পরিশুদ্ধ হতো অথবা উপদেশ গ্রহণ করত, ফলে সেই উপদেশ তার উপকারে আসত। (সূরা আবাসা, ১-৪)
সাথিদের অনুমতি প্রার্থনার বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে :
فَاِذَا اسْتَاْذَنُوْكَ لِبَعْضِ شَاْنِهِمْ فَاْذَنْ لِّمَنْ شِئْتَ مِنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمُ اللهَؕ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
অতএব তারা তাদের কোন কাজে বাইরে যাওয়ার জন্য তোমার নিকট অনুমতি চাইলে তাদের মধ্যে যাদেরকে ইচ্ছা অনুমতি দাও এবং তাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করো। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা নূর- ৬২)
সাথিদেরকে সান্ত্বনা দিতে হবে :
وَاِذَاجَآءَكَ الَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِاٰيَاتِنَا فَقُلْ سَلَامٌ عَلَيْكُمْ كَتَبَ رَبُّكُمْ عَلٰى نَفْسِهِ الرَّحْمَةَ اَنَّهٗ مَنْ عَمِلَ مِنْكُمْ سُوْٓءًا ۢبِجَهَالَةٍ ثُمَّ تَابَ مِنْ ۢبَعْدِهٖ وَاَصْلَحَ فَاَنَّهٗ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
যারা আমার আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান আনয়ন করেছে তারা যখন তোমার নিকট আসে তখন তাদেরকে বলো, তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক; তোমাদের প্রতিপালক (তোমাদের উপর) দয়া করাকে তাঁর কর্তব্য বলে স্থির করে নিয়েছেন। অতএব তোমাদের মধ্যে কেউ যদি অজ্ঞতার কারণে মন্দকাজ করে ফেলে, অতঃপর তাওবা করে এবং (নিজেকে) সংশোধন করে নেয়, তবে নিশ্চয় আল্লাহ (সে বিষয়ে) ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা আন‘আম- ৫৪)
প্রয়োজনে স্থলাভিষিক্ত নির্ধারণ করা যাবে :
وَوَاعَدْنَا مُوْسٰى ثَلَاثِيْنَ لَيْلَةً وَّاَتْمَمْنَاهَا بِعَشْرٍ فَتَمَّ مِيْقَاتُ رَبِّهٖۤ اَرْبَعِيْنَ لَيْلَةًۚ وَقَالَ مُوْسٰى لِاَخِيْهِ هَارُوْنَ اخْلُفْنِيْ فِيْ قَوْمِيْ وَاَصْلِحْ وَلَا تَتَّبِعْ سَبِيْلَ الْمُفْسِدِيْنَ
স্মরণ করো, যখন আমি মূসার জন্য ত্রিশ রাত্রি নির্ধারণ করেছিলাম এবং আরো দশ দ্বারা তা পূর্ণ করলাম। এভাবে তার প্রতিপালকের নির্ধারিত সময় চল্লিশ রাত্রিতে পূর্ণ হয়। আর মূসা তার ভাই হারূনকে বললেন, আমার অনুপস্থিতিতে আমার সম্প্রদায়ের মধ্যে তুমি প্রতিনিধিত্ব করবে, সমস্যার সমাধান করবে এবং বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পথ অনুসরণ করবে না। (সূরা আ‘রাফ- ১৪২)
পরামর্শ করে কাজ করতে হবে :
وَالَّذِيْنَ اسْتَجَابُوْا لِرَبِّهِمْ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاَمْرُهُمْ شُوْرٰى بَيْنَهُمْ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ
(এগুলো তাদের জন্য) যারা তাদের প্রতিপালকের আহবানে সাড়া দেয়, সালাত প্রতিষ্ঠা করে, নিজেদের মধ্যে পরামর্শের মাধ্যমে কর্ম সম্পাদন করে এবং তাদেরকে আমি যে রিযিক দিয়েছি, তা হতে ব্যয় করে। (সূরা শূরা- ৩৮)
اِنَّ اَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللهِ اَتْقَاكُمْ
আল্লাহর কাছে তোমাদের মধ্যে তারাই অধিক সম্মানিত, যারা তোমাদের মধ্যে বেশি মুত্তাক্বী। (সূরা হুজুরাত- ১৩)
নেতাকে পূর্ণ আমানতদার হতে হবে :
وَمَا كَانَ لِنَبِيٍّ اَنْ يَّغُلَّؕ وَمَنْ يَّغْلُلْ يَاْتِ بِمَا غَلَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِۚ ثُمَّ تُوَفّٰى كُلُّ نَفْسٍ مَّا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُوْنَ
কোন নবীর পক্ষে আত্মসাৎকরণ শোভনীয় নয়। আর যে ব্যক্তি আত্মসাৎ করেছে সে যা আত্মসাৎ করেছে তা নিয়ে কিয়ামতের দিন উপস্থিত হবে। অতঃপর প্রত্যেক ব্যক্তি যা অর্জন করেছে তা পূর্ণরূপে প্রদত্ত হবে এবং তাদের উপর কোন যুলুম করা হবে না। (সূরা আলে ইমরান- ১৬১)
সাথিদের মধ্যে সাহস সঞ্চার করতে হবে :
فَلَمَّا تَرَآءَ الْجَمْعَانِ قَالَ اَصْحَابُ مُوْسٰۤى اِنَّا لَمُدْرَكُوْنَ ‐ قَالَ كَلَّاؕ اِنَّ مَعِيَ رَبِّيْ سَيَهْدِيْنِ
অতঃপর যখন দু’দল পরস্পরকে দেখল তখন মূসার সাথিরা বলল, আমরা তো ধরা পড়ে গেলাম। মূসা বলল, কখনই নয়! আমার সঙ্গে আমার প্রতিপালক রয়েছেন। অচিরেই তিনি আমাকে পথনির্দেশ করবেন। (সূরা শু‘আরা- ৬১, ৬২)
সাথিদের সাথে নম্র ব্যবহার করতে হবে :
وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ
যারা তোমার অনুসরণ করে, সেসব মুমিনদের প্রতি বিনয়ী হও। (সূরা শু‘আরা- ২১৫)
فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللهِ لِنْتَ لَهُمْۚ وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيْظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوْا مِنْ حَوْلِكَ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِى الْاَمْرِۚ فَاِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللهِؕ اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِيْنَ
অতএব আল্লাহর অনুগ্রহ এই যে, তুমি তাদের প্রতি কোমল হৃদয়ের অধিকারী হয়েছ। আর তুমি যদি কর্কশভাষী ও কঠোর হৃদয়ের অধিকারী হতে, তবে নিশ্চয় তারা তোমার সংস্পর্শে আসা হতে বিরত থাকত। অতএব তুমি তাদেরকে ক্ষমা করো ও তাদের জন্য (আল্লাহর নিকট) ক্ষমাপ্রার্থনা করো এবং যে কোন বিষয়ে তাদের সাথে পরামর্শ করো। অতঃপর যখন তুমি কোন বিষয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হবে, তখন আল্লাহর উপর ভরসা করো। নিশ্চয় আল্লাহ (তাঁর উপর) নির্ভরশীলদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৯)
তাদের সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ট করতে হবে :
وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيْدُوْنَ وَجْهَه
তুমি নিজেকে ধৈর্যের সাথে তাদেরই সংস্পর্শে রাখবে, যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের প্রতিপালককে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আহবান করে থাকে। (সূরা কাহফ- ২৮)
তাদের ভুল-ত্রুটি এড়িয়ে যেতে হবে :
فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ
অতএব তুমি তাদেরকে ক্ষমা করো এবং তাদের জন্য (আল্লাহর কাছেও) ক্ষমাপ্রার্থনা করো। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৯)
কোন কর্মীকে অবহেলা করা যাবে না :
عَبَسَ وَتَوَلّٰى ‐ اَنْ جَآءَهُ الْاَعْمٰى ‐ وَمَا يُدْرِيْكَ لَعَلَّه يَزَّكّٰى ‐ اَوْ يَذَّكَّرُ فَتَنْفَعَهُ الذِّكْرٰى
সে (নবী) ভ্রুকুঞ্চিত করল এবং মুখ ফিরিয়ে নিল, কারণ তার নিকট অন্ধ লোকটি এসেছিল। তুমি কি তার ব্যাপারে কোনকিছু জানতে- হয়তো সে পরিশুদ্ধ হতো অথবা উপদেশ গ্রহণ করত, ফলে সেই উপদেশ তার উপকারে আসত। (সূরা আবাসা, ১-৪)
সাথিদের অনুমতি প্রার্থনার বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে :
فَاِذَا اسْتَاْذَنُوْكَ لِبَعْضِ شَاْنِهِمْ فَاْذَنْ لِّمَنْ شِئْتَ مِنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمُ اللهَؕ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
অতএব তারা তাদের কোন কাজে বাইরে যাওয়ার জন্য তোমার নিকট অনুমতি চাইলে তাদের মধ্যে যাদেরকে ইচ্ছা অনুমতি দাও এবং তাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করো। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা নূর- ৬২)
সাথিদেরকে সান্ত্বনা দিতে হবে :
وَاِذَاجَآءَكَ الَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِاٰيَاتِنَا فَقُلْ سَلَامٌ عَلَيْكُمْ كَتَبَ رَبُّكُمْ عَلٰى نَفْسِهِ الرَّحْمَةَ اَنَّهٗ مَنْ عَمِلَ مِنْكُمْ سُوْٓءًا ۢبِجَهَالَةٍ ثُمَّ تَابَ مِنْ ۢبَعْدِهٖ وَاَصْلَحَ فَاَنَّهٗ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
যারা আমার আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান আনয়ন করেছে তারা যখন তোমার নিকট আসে তখন তাদেরকে বলো, তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক; তোমাদের প্রতিপালক (তোমাদের উপর) দয়া করাকে তাঁর কর্তব্য বলে স্থির করে নিয়েছেন। অতএব তোমাদের মধ্যে কেউ যদি অজ্ঞতার কারণে মন্দকাজ করে ফেলে, অতঃপর তাওবা করে এবং (নিজেকে) সংশোধন করে নেয়, তবে নিশ্চয় আল্লাহ (সে বিষয়ে) ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা আন‘আম- ৫৪)
প্রয়োজনে স্থলাভিষিক্ত নির্ধারণ করা যাবে :
وَوَاعَدْنَا مُوْسٰى ثَلَاثِيْنَ لَيْلَةً وَّاَتْمَمْنَاهَا بِعَشْرٍ فَتَمَّ مِيْقَاتُ رَبِّهٖۤ اَرْبَعِيْنَ لَيْلَةًۚ وَقَالَ مُوْسٰى لِاَخِيْهِ هَارُوْنَ اخْلُفْنِيْ فِيْ قَوْمِيْ وَاَصْلِحْ وَلَا تَتَّبِعْ سَبِيْلَ الْمُفْسِدِيْنَ
স্মরণ করো, যখন আমি মূসার জন্য ত্রিশ রাত্রি নির্ধারণ করেছিলাম এবং আরো দশ দ্বারা তা পূর্ণ করলাম। এভাবে তার প্রতিপালকের নির্ধারিত সময় চল্লিশ রাত্রিতে পূর্ণ হয়। আর মূসা তার ভাই হারূনকে বললেন, আমার অনুপস্থিতিতে আমার সম্প্রদায়ের মধ্যে তুমি প্রতিনিধিত্ব করবে, সমস্যার সমাধান করবে এবং বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পথ অনুসরণ করবে না। (সূরা আ‘রাফ- ১৪২)
পরামর্শ করে কাজ করতে হবে :
وَالَّذِيْنَ اسْتَجَابُوْا لِرَبِّهِمْ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاَمْرُهُمْ شُوْرٰى بَيْنَهُمْ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ
(এগুলো তাদের জন্য) যারা তাদের প্রতিপালকের আহবানে সাড়া দেয়, সালাত প্রতিষ্ঠা করে, নিজেদের মধ্যে পরামর্শের মাধ্যমে কর্ম সম্পাদন করে এবং তাদেরকে আমি যে রিযিক দিয়েছি, তা হতে ব্যয় করে। (সূরা শূরা- ৩৮)
নেতার আনুগত্য করতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَطِيْعُوا اللهَ وَاَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَاُولِى الْاَمْرِ مِنْكُمْ
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর ও রাসূলের আনুগত্য করো এবং তাদের আনুগত্য করো, যারা তোমাদের মধ্যে ক্ষমতার অধিকারী। (সূরা নিসা- ৫৯)
প্রচুর ধৈর্য ও সাহস অর্জন করতে হবে :
يَا بُنَيَّ اَقِمِ الصَّلَاةَ وَاْمُرْ بِالْمَعْرُوْفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَاصْبِرْ عَلٰى مَاۤ اَصَابَكَؕ اِنَّ ذٰلِكَ مِنْ عَزْمِ الْاُمُوْرِ
হে আমার ছেলে! সালাত কায়েম করো, সৎকাজের আদেশ দাও, মন্দকাজ হতে নিষেধ করো এবং তোমার উপর যে বিপদ আসে তাতে ধৈর্যধারণ করো। নিশ্চয় এটা দৃঢ় সংকল্পের কাজ। (সূরা লুক্বমান- ১৭)
ব্যাখ্যা : সৎকাজের হুকুম দেয়া এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করার দায়িত্ব যে ব্যক্তি পালন করবে তাকেই অনিবার্যভাবে বিপদাপদের মুখোমুখি হতে হবে। এ ধরনের লোকের পেছনে দুনিয়া কোমর বেঁধে লেগে যাবে এবং তাকে সবধরনের কষ্টের সম্মুখীন হতে হবে; এটি বড়ই সাহসের কাজ। মানবতার সংশোধন এবং তার সংকট উত্তরণে সাহায্য করার কাজ কম সাহসের অধিকারী লোকদের পক্ষে সম্ভব নয়; বরং এসব কাজে অসীম সাহসী হতে হয়।
সাংগঠনিক কাজের ফাঁকে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করতে হবে :
اِنَّ لَكَ فِى النَّهَارِ سَبْحًا طَوِيْلًا ‐ وَاذْكُرِ اسْمَ رَبِّكَ وَتَبَتَّلْ اِلَيْهِ تَبْتِيْلًا
নিশ্চয় দিনে তোমার জন্য রয়েছে দীর্ঘ ব্যস্ততা। সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের নাম স্মরণ করো এবং (অন্যান্য ব্যস্ততা ছিন্ন করে) একনিষ্ঠভাবে তাতে মগ্ন হও। (সূরা মুয্যাম্মিল- ৭, ৮)
فَاِذَا فَرَغْتَ فَانْصَبْ ‐ وَاِلٰى رَبِّكَ فَارْغَبْ
অতএব যখন অবসর পাও পরিশ্রম করো এবং তোমার প্রতিপালকের প্রতি মনোনিবেশ করো। (সূরা ইনশিরাহ- ৭, ৮)
তাহাজ্জুদ সালাত আদায়ের অভ্যাস করতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الْمُزَّمِّلُ ‐ قُمِ اللَّيْلَ اِلَّا قَلِيْلًا ‐ نِصْفَهٗۤ اَوِ انْقُصْ مِنْهُ قَلِيْلًا ‐ اَوْ زِدْ عَلَيْهِ
হে বস্ত্রাবৃত! রাত্রি জাগরণ (রাতে ইবাদাত) করো, (রাত্রির) কিছু অংশ। তার অর্ধেক কিংবা তদপেক্ষা কিছু কম অথবা তার চেয়ে কিছু বেশি। (সূরা মুয্যাম্মিল, ১-৪)
কুরআন অধ্যয়ন করতে হবে :
وَرَتِّلِ الْقُرْاٰنَ تَرْتِيْلًا
আর কুরআন পাঠ করো- ধীরে ধীরে (থেমে থেমে সুন্দরভাবে)। (সূরা মুয্যাম্মিল- ৪)
কোন নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় করা যাবে না :
يُجَاهِدُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَلَا يَخَافُوْنَ لَوْمَةَ لَآئِمٍ
তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে এবং তারা কোন নিন্দুকের নিন্দার ভয় করে না। (সূরা মায়েদা- ৫৪)
সাথিদের ব্যাপারে কোমল ও বিরোধীদের ব্যাপারে কঠোর হতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَنْ يَّرْتَدَّ مِنْكُمْ عَنْ دِيْنِهٖ فَسَوْفَ يَاْتِى اللّٰهُ بِقَوْمٍ يُّحِبُّهُمْ وَيُحِبُّوْنَهٗۤ اَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ اَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِيْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের মধ্যে যদি কেউ দ্বীন থেকে ফিরে যেতে চায়, তবে অচিরেই আল্লাহ এমন একটি সম্প্রদায়ের উত্থান ঘটাবেন যাদেরকে তিনি ভালোবাসবেন এবং তারাও তাঁকে ভালোবাসবে। আর তারা মুমিনদের প্রতি কোমল এবং কাফিরদের প্রতি কঠোরতা অবলম্বন করবে। (সূরা মায়েদা- ৫৪)
পরস্পরকে সহযোগিতা করতে হবে :
وَتَعَاوَنُوْا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوٰى وَلَا تَعَاوَنُوْا عَلَى الْاِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللهَؕ اِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
তোমরা সৎকর্ম ও তাক্বওয়ার বিষয়ে পরস্পরকে সহযোগিতা করো এবং পাপ ও সীমালঙ্ঘনের বিষয়ে একে অন্যের সহযোগিতা করো না। আর আল্লাহকে ভয় করো; নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে খুবই কঠোর। (সূরা মায়েদা- ২)
ব্যাখ্যা : এখানে تَعَاوَنُوْا (তা‘আওয়ানু) বলতে সাহায্য, সহায়তা, সমর্থন, পৃষ্ঠপোষকতা, বন্ধুত্ব, আত্মীয়তা, অভিভাবকত্ব ইত্যাদি বিষয়সমূহকে বুঝানো হয়েছে। তাছাড়া এমন ধরনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও বুঝানো হয়েছে, যা একটি রাষ্ট্রের সাথে নাগরিকদের, নাগরিকদের সাথে রাষ্ট্রের এবং নাগরিকদের নিজেদের মধ্যে বিরাজ করে। এমনকি যদি কোথাও মুসলিমদের উপর যুলুম হতে থাকে এবং ইসলামী সমাজের সাথে সম্পর্কের কারণে তারা দারুল ইসলামের সরকার ও তার অধিবাসীদের কাছে সাহায্য চায়, তাহলে নিজেদের এ মজলুম ভাইদের সাহায্য করা তাদের জন্য ফরয হয়ে যাবে। যেভাবে কাফিররা পরস্পরের সাহায্য-সমর্থন করে, তোমরা (ঈমানদাররা) যদি সেভাবে পরস্পরের সাহায্য-সমর্থন না কর, তাহলে পৃথিবীতে বিরাট বিপর্যয় সৃষ্টি হবে।
পরস্পরের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ করা যাবে না :
وَاَطِيْعُوا اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَلَا تَنَازَعُوْا فَتَفْشَلُوْا وَتَذْهَبَ رِيْحُكُمْ وَاصْبِرُوْاؕ اِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِيْنَ
তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে ও নিজেদের মধ্যে বিবাদ করবে না, নতুবা তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলবে এবং তোমাদের শক্তি বিলুপ্ত হবে। অতএব তোমরা ধৈর্যধারণ করো; নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথেই রয়েছেন। (সূরা আনফাল- ৪৬)
কোন বিরোধ হয়ে গেলে মীমাংসা করে নিতে হবে :
فَاتَّقُوا اللهَ وَاَصْلِحُوْا ذَاتَ بَيْنِكُمْ وَاَطِيْعُوا اللهَ وَرَسُوْلَهٗۤ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
আল্লাহকে ভয় করো এবং নিজেদের মধ্যে সংশোধন করে নাও। আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো, যদি তোমরা মুমিন হও। (সূরা আনফাল- ১)
মজলিস থেকে উঠার সময় অনুমতি নিতে হবে :
اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِه وَاِذَا كَانُوْا مَعَه عَلٰۤى اَمْرٍ جَامِعٍ لَّمْ يَذْهَبُوْا حَتّٰى يَسْتَاْذِنُوْهُ
নিশ্চয় মুমিন তো তারাই যারা আল্লাহর প্রতি এবং তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন করেছে। আর যখন তারা কোন সমষ্টিগত কাজে একত্রিত হয়, তখন তারা অনুমতি ছাড়া সেখান থেকে চলে যায় না। (সূরা নূর- ৬২)
বৈঠকের আদব রক্ষা করতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا قِيْلَ لَكُمْ تَفَسَّحُوْا فِى الْمَجَالِسِ فَافْسَحُوْا يَفْسَحِ اللهُ لَكُمْۚ وَاِذَا قِيْلَ انْشُزُوْا فَانْشُزُوْا
হে ঈমানদারগণ! যখন তোমাদেরকে মজলিসের মধ্যে স্থান প্রশস্ত করে দিতে বলা হয়, তখন তোমরা তা প্রশস্ত করে দিয়ো; তাহলে আল্লাহও তোমাদের জন্য স্থান প্রশস্ত করে দেবেন। আর যখন তোমাদেরকে উঠে যেতে বলা হয়, তখন উঠে যেয়ো। (সূরা মুজাদালা- ১১)
শানে নুযূল : একদা রাসূল ﷺ মসজিদের বারান্দায় অবস্থান করছিলেন, তখন মজলিসে বহু লোক ছিল। এমন সময় কতিপয় বদরী সাহাবী আসলেন, কিন্তু মজলিসের লোকেরা একটু চেপে না বসায় সেখানে তাদের বসার স্থান হলো না; ফলে তারা দাঁড়িয়ে রইলেন। তা দেখে রাসূল ﷺ নাম ধরে কয়েকজন লোককে মজলিস ত্যাগ করতে বললেন। এ সুযোগে মুনাফিকরা এ বলে খোঁচা দিতে লাগল যে, এ কেমন বিচার! তখন রাসূল ﷺ বললেন, যারা নিজেদের ভাইদের জন্য স্থান ছেড়ে দেবে, আল্লাহ তাদেরকে রহম করবেন। তখন এ সম্পর্কে উক্ত আয়াতটি নাযিল হয়। (তাফসীরে ফাতহুল কাদীর; ৭ম খন্ড, ১৭৭ পৃঃ)
বিরোধীদের সমালোচনাকে এড়িয়ে চলতে হবে :
وَاصْبِرْ عَلٰى مَا يَقُوْلُوْنَ وَاهْجُرْهُمْ هَجْرًا جَمِيْلًا
লোকেরা যা বলে, তাতে তুমি ধৈর্যধারণ করো এবং উত্তম পন্থায় তাদেরকে পরিহার করে চলো। (সূরা মুয্যাম্মিল- ১০)
ব্যক্তিগত স্বার্থে কোন শত্রুর সাথে বন্ধুত্ব রাখা যাবে না :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوْا عَدُوِّيْ وَعَدُوَّكُمْ اَوْلِيَآءَ تُلْقُوْنَ اِلَيْهِمْ بِالْمَوَدَّةِ وَقَدْ كَفَرُوْا بِمَا جَآءَكُمْ مِّنَ الْحَقِّ
হে মুমিনগণ! আমার ও তোমাদের শত্রুকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তোমরা কি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করছ? অথচ তোমাদের নিকট যে সত্য এসেছে, তারা তা অস্বীকার করে। (সূরা মুমতাহিনা- ১)
শানে নুযূল : রাসূল ﷺ মক্কা বিজয়ের ইচ্ছা করলে হাতিব ইবনে আবি বালতা (রাঃ) নামক একজন বদরী সাহাবী জনৈক মহিলার হাতে গোপনে মক্কাবাসীদের নিকট এ সংবাদ লিখে পাঠালেন। অতঃপর রাসূল ﷺ বিষয়টি ওহীর মাধ্যমে অবগত হয়ে আলী (রাঃ) এর নেতৃত্বে কতিপয় সাহাবীকে পাঠিয়ে চিঠিটি উদ্ধার করেন। অতঃপর হাতিব (রাঃ) কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আমি জানতাম এতে ইসলামের কোন ক্ষতি হবে না, কেননা ইসলামের বিজয় অনিবার্য। তারপরও আমি মনে করলাম যে, এ চিঠি পেলে মক্কাবাসীরা আমার দ্বারা নিজেদেরকে উপকৃত মনে করে তথায় অবস্থিত আমার পরিবারের কোন ক্ষতি করবে না। এটা শুনে ওমর (রাঃ) তাকে হত্যা করার জন্য রাসূল ﷺ এর কাছে অনুমতি চাইলেন। কিন্তু রাসূল ﷺ বললেন, এ ব্যক্তি বদরী অর্থাৎ সে তো বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। আর আল্লাহ বদরীদের গোনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। তখন এ প্রেক্ষাপটে উক্ত আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (তাফসীরে ফাতহুল কাদীর; ৭ম খন্ড, ২০০ পৃঃ)
যারা শত্রুতা করে না তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করা :
لَا يَنْهَاكُمُ اللهُ عَنِ الَّذِيْنَ لَمْ يُقَاتِلُوْكُمْ فِى الدِّيْنِ وَلَمْ يُخْرِجُوْكُمْ مِّنْ دِيَارِكُمْ اَنْ تَبَرُّوْهُمْ وَتُقْسِطُوْاۤ اِلَيْهِمْؕ اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِيْنَ
যারা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে স্বদেশ হতে বহিষ্কারও করেনি, আল্লাহ তোমাদেরকে তাদের প্রতি সদ্ব্যবহার ও ন্যায়বিচার করতে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা মুমতাহিনা- ৮)
নিজেদেরকে বাদ দিয়ে অন্যদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوْا بِطَانَةً مِّنْ دُوْنِكُمْ لَا يَاْلُوْنَكُمْ خَبَالًاؕ وَدُّوْا مَا عَنِتُّمْۚ قَدْ بَدَتِ الْبَغْضَآءُ مِنْ اَفْوَاهِهِمْۚ وَمَا تُخْفِيْ صُدُوْرُهُمْ اَكْبَرُؕ قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ الْاٰيَاتِ اِنْ كُنْتُمْ تَعْقِلُوْنَ ‐ هَاۤ اَنْتُمْ اُولَآءِ تُحِبُّوْنَهُمْ وَلَا يُحِبُّوْنَكُمْ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে বাদ দিয়ে অন্যদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তারা তোমাদের ব্যাপারে তাই কামনা করে, যা তোমাদের জন্য কষ্টদায়ক। কোন কোন সময় তাদের মুখ থেকেই এই বিদ্বেষ প্রকাশ পেয়ে যায়। আর তাদের অন্তরে যা লুকিয়ে রেখেছে, তা আরো জঘন্য। অবশ্যই আমি তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ বর্ণনা করে দিয়েছি, যদি তোমরা অনুধাবন করতে পার। তোমরা তো তাদেরকে ভালোবাস, কিন্তু তারা তোমাদেরকে ভালোবাসে না। (সূরা আলে ইমরান- ১১৮, ১১৯)
তাদের চক্রান্তকে ভয় করার কারণ নেই :
وَاِنْ تَصْبِرُوْا وَتَتَّقُوْا لَا يَضُرُّكُمْ كَيْدُهُمْ شَيْئًاؕ اِنَّ اللهَ بِمَا يَعْمَلُوْنَ مُحِيْطٌ
যদি তোমরা ধৈর্যধারণ কর এবং তাক্বওয়া অবলম্বন কর, তাহলে তাদের চক্রান্ত তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আর তোমরা যা কর নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু বেষ্টন করে আছেন। (সূরা আলে ইমরান- ১২০)
বিরোধীদের হুমকিকে ভয় করা যাবে না :
فَاُلْقِيَ السَّحَرَةُ سُجَّدًا قَالُوْاۤ اٰمَنَّا بِرَبِّ هَارُوْنَ وَمُوْسٰى ‐ قَالَ اٰمَنْتُمْ لَهٗ قَبْلَ اَنْ اٰذَنَ لَكُمْؕ اِنَّهٗ لَكَبِيْرُكُمُ الَّذِيْ عَلَّمَكُمُ السِّحْرَۚ فَلَاُقَطِّعَنَّ اَيْدِيَكُمْ وَاَرْجُلَكُمْ مِّنْ خِلَافٍ وَّلَاُصَلِّبَنَّكُمْ فِيْ جُذُوْعِ النَّخْلِ وَلَتَعْلَمُنَّ اَيُّنَاۤ اَشَدُّ عَذَابًا وَّاَبْقٰى ‐ قَالُوْا لَنْ نُّؤْثِرَكَ عَلٰى مَا جَآءَنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالَّذِيْ فَطَرَنَا فَاقْضِ مَاۤ اَنْتَ قَاضٍؕ اِنَّمَا تَقْضِيْ هٰذِهِ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا ‐ اِنَّاۤ اٰمَنَّا بِرَبِّنَا لِيَغْفِرَ لَنَا خَطَايَانَا وَمَاۤ اَ كْرَهْتَنَا عَلَيْهِ مِنَ السِّحْرِؕ وَاللهُ خَيْرٌ وَّاَبْقٰى
অতঃপর যাদুকররা সিজদাবনত হলো ও বলল, আমরা হারূন ও মূসার প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনয়ন করলাম। ফিরাউন বলল, কী- আমি তোমাদেরকে অনুমতি দেয়ার পূর্বেই তোমরা তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলে? আমি দেখতে পাচ্ছি, আসলে সে-ই হচ্ছে তোমাদের প্রধান গুরু, সে তোমাদেরকে যাদু শিক্ষা দিয়েছে। সুতরাং আমি তোমাদের হাত-পা বিপরীত দিক হতে কর্তন করবই এবং তোমাদেরকে খেজুর বৃক্ষের কান্ডে শূলবিদ্ধ করবই। তখন তোমরা জানতে পারবে যে, আমাদের মধ্যে কার শাস্তি অধিক কঠোরতর ও অধিক স্থায়ী। তারা বলল, আমাদের নিকট যে স্পষ্ট নিদর্শনাবলি এসেছে তার উপর এবং যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর উপর আমরা তোমাকে কিছুতেই প্রাধান্য দেব না। সুতরাং তুমি যা ইচ্ছা করতে পার। তুমি তো কেবল এ পার্থিব জীবনের উপরই কর্তৃত্ব করতে পার। নিশ্চয় আমরা আমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনয়ন করেছি, যাতে তিনি আমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দেন এবং তুমি আমাদেরকে যে যাদু করতে বাধ্য করেছ, তা হতেও ক্ষমা করে দেন। আর আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ ও স্থায়ী। (সূরা ত্বা-হা, ৭০-৭৩)
প্রাণের ভয় থাকলে, অন্তর ঠিক রেখে কুফরী কথা বলা যাবে :
مَنْ كَفَرَ بِاللهِ مِنْ ۢبَعْدِ اِيْمَانِهٖۤ اِلَّا مَنْ اُكْرِهَ وَقَلْبُهٗ مُطْمَئِنٌّ ۢبِالْاِيْمَانِ وَلٰكِنْ مَّنْ شَرَحَ بِالْكُفْرِ صَدْرًا فَعَلَيْهِمْ غَضَبٌ مِّنَ اللهِۚ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيْمٌ
যে ব্যক্তি ঈমান আনার পর আল্লাহকে অস্বীকার করল এবং তার হৃদয়কে কুফরীর জন্য উন্মুক্ত রাখল, তাঁর উপর আল্লাহর গযব পতিত হবে; আর তার জন্য রয়েছে মহাশাস্তি। তবে তার জন্য নয়, যাকে কুফরীর জন্য বাধ্য করা হয়, কিন্তু তার চিত্ত ঈমানের উপর অবিচল। (সূরা নাহল- ১০৬)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ যদি কোন মুমিন ইসলামের কোন শত্রুদলের ফাঁদে আটকা পড়ে যায় এবং সে তাদের পক্ষ থেকে চরম যুলুম-নির্যাতন, ভয়-ভীতি এমনকি প্রাণনাশের আশঙ্কা করে, তাহলে সে নিজের ঈমান গোপন রেখে কাফিরদের সাথে অবস্থান করতে পারবে। এমনকি চরম অবস্থায় কুফরী বাক্য পর্যন্ত মুখে উচ্চারণ করতে পারবে। তবে শর্ত হলো, তার অন্তর ঈমানের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে হবে। মানুষের ভয় যেন তাকে এমনভাবে আচ্ছন্ন না করে ফেলে, যার ফলে আল্লাহর ভয় মন থেকে ওঠে যায়। মানুষ বড়জোর তার পার্থিব ও বৈষয়িক স্বার্থের ক্ষতি করতে পারে, যার পরিসর দুনিয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু আল্লাহ তাকে চিরন্তন আযাবের মধ্যে নিক্ষেপ করতে পারেন। কাজেই নিজের প্রাণ বাঁচানোর জন্য যদি কখনো বাধ্য হয়ে কাফিরদের সাথে আত্মরক্ষামূলক বন্ধুত্বনীতি অবলম্বন করতে হয়, তাহলে তার পরিসর কেবলমাত্র ইসলামের স্বার্থ ও জান-মালের হেফাজত করা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। তবে লক্ষণীয় যে, ঐ কুফ্রী কথা বা কাজ যেন অন্য কোন মুসলিম ভাইয়ের প্রাণনাশের কারণ না হয়।
এ আয়াতে এমন মুসলিমদের কথা আলোচনা করা হয়েছে, যাদের উপর কঠোর নির্যাতন চালানো হয়েছিল এবং যাদেরকে অসহনীয় কষ্ট ও যন্ত্রণা দিয়ে কুফরী করতে বাধ্য করা হয়েছিল। তাদেরকে বলা হয়েছে, তোমরা যদি কখনো যুলুম-নিপীড়নের চাপে বাধ্য হয়ে নিছক প্রাণ বাঁচানোর জন্য কুফরী কথা মুখে উচ্চারণ কর এবং তোমাদের অন্তর কুফরী আকীদা থেকে মুক্ত থাকে, তাহলে তোমাদেরকে ÿমা করে দেয়া হবে। কিন্তু যদি তোমরা অন্তরে কুফরী গ্রহণ করে থাক, তাহলে দুনিয়ায় প্রাণে বেঁচে গেলেও আখিরাতে আল্লাহর আযাব থেকে বাঁচতে পারবে না। এর অর্থ এ নয় যে, প্রাণ বাঁচানোর জন্য কুফরী কথা বলা বাঞ্ছনীয়। বরং এটি নিছক একটি ‘রুখসাত’ তথা সুবিধা দান ছাড়া আর কিছুই নয়। যদি অন্তরে ঈমান অক্ষুণ্ণ রেখে মানুষ বাধ্য হয়ে এ ধরনের কথা বলে, তাহলে তাকে কোন জবাবদিহি করা হবে না। অন্যথায় দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ ঈমানের পরিচয় হচ্ছে, মানুষের এ রক্ত-মাংসের শরীরটাকে কেটে টুকরো টুকরো করা হলেও সে যেন সত্যের বাণীরই ঘোষণা দিয়ে যেতে থাকে। নবী ﷺ এর যুগে এ উভয় ধরনের ঘটনার দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়।
একদিকে আছেন খাববাব ইবনে আরাত (রাঃ)। তাঁকে জ্বলন্ত অঙ্গারের উপর শোয়ানো হয়। এমনকি তাঁর শরীরের চর্বি গলে পড়ার ফলে আগুন নিভে যায়। কিন্তু এরপরও তিনি দৃঢ়ভাবে ঈমানের উপর অটল থাকেন। আরো আছেন বিলাল (রাঃ)। তাঁকে লোহার বর্ম পরিয়ে উত্তপ্ত রোদে দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়। তারপর উত্তপ্ত বালুর প্রান্তরে শোইয়ে তার উপর দিয়ে তাঁকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু এরপরও তিনি ‘আহাদ, আহাদ’ (আল্লাহ এক, আল্লাহ এক) শব্দ উচ্চারণ করে নিজের ঈমানের উপর দৃঢ় অবস্থানের কথা জানাতে থাকেন। (ইবনে মাজাহ, হা/১৫০)
অন্যদিকে আছেন আম্মার ইবনে ইয়াসির (রাঃ)। তাঁর চোখের সামনে তাঁর পিতামাতাকে কঠিন শাস্তি দিয়ে শহীদ করা হয়। তারপর তাঁকে এমন কঠিন শাস্তি দেয়া হয় যে, শেষ পর্যন্ত নিজের প্রাণ বাঁচানোর জন্য তিনি কাফিরদের চাহিদামতো সবকিছু বললেন। এরপর তিনি কাঁদতে কাঁদতে নবী ﷺ এর কাছে উপস্থিত হয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল ﷺ ! আমি আপনাকে মন্দ এবং তাদের উপাস্যদেরকে ভালো না বলা পর্যন্ত তারা আমাকে ছাড়েনি। রাসূল ﷺ জিজ্ঞেস করলেন, তোমার মনের অবস্থা কী? তিনি জবাব দিলেন, مُطْمَئِنًّا بِالْاِيْمَانِ তথা ঈমানের উপর পরিপূর্ণ নিশ্চিন্ত। এ কথায় নবী ﷺ বললেন, যদি তারা আবারো এ ধরনের যুলুম করে, তাহলে তুমি তাদেরকে আবারো এসব কথা বলে দিয়ো। (সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৭৩৫০)
বিরোধীদের গোপন পরামর্শকে ভয় করতে নেই :
اِنَّمَا النَّجْوٰى مِنَ الشَّيْطَانِ لِيَحْزُنَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَلَيْسَ بِضَآرِّهِمْ شَيْئًا اِلَّا بِاِذْنِ اللهِؕ وَعَلَى اللهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُوْنَ
কানাঘুষা তো কেবল শয়তানের পক্ষ থেকে মুমিনদেরকে দুঃখ দেয়ার জন্যই হয়ে থাকে, তবে আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত তারা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। সুতরাং মুমিনরা যেন একমাত্র আল্লাহর উপরই ভরসা করে। (সূরা মুজাদালা- ১০)
বিরোধীদের জবাব দেয়ার জন্য উত্তেজিত না হওয়া :
وَقُلْ لِّعِبَادِيْ يَقُوْلُوا الَّتِيْ هِيَ اَحْسَنُؕ اِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْزَغُ بَيْنَهُمْؕ اِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلْاِنْسَانِ عَدُوًّا مُّبِيْنًا
আমার বান্দাদেরকে যা উত্তম তা বলতে বলো। কারণ শয়তান তাদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টির জন্য উস্কানি দেয়; নিশ্চয় শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৫৩)
শয়তানের দেখানো ভয়কে এড়িয়ে যেতে হবে :
اِنَّمَا ذٰلِكُمُ الشَّيْطَانُ يُخَوِّفُ اَوْلِيَآءَهٗ فَلَا تَخَافُوْهُمْ وَخَافُوْنِ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
নিশ্চয় এ হচ্ছে তোমাদের সে শয়তান যে তার অনুসারীদেরকে ভয় প্রদর্শন করে; কিন্তু যদি তোমরা বিশ্বাসী হও, তবে তাদেরকে ভয় করো না; বরং আমাকেই ভয় করো। (সূরা আলে ইমরান- ১৭৫ )
ইসলাম বিরোধীদের কাছে দুর্বলতা প্রকাশ না করা :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا قَاتِلُوا الَّذِيْنَ يَلُوْنَكُمْ مِّنَ الْكُفَّارِ وَلْيَجِدُوْا فِيْكُمْ غِلْظَةًؕ وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ مَعَ الْمُتَّقِيْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের নিকটবর্তী কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করো। তারা যেন তোমাদের মধ্যে কঠোরতা দেখতে পায়। জেনে রেখো, আল্লাহ মুত্তাক্বীদের সাথেই রয়েছেন। (সূরা তাওবা- ১২৩)
ব্যাখ্যা : যারা যুলুমের নীতি অবলম্বন করে তাদের সাথে তাদের যুলুমের প্রকৃতি বিবেচনা করে ভিন্ন নীতিও অবলম্বন করা যেতে পারে। সবসময় সবধরনের লোকদের মুকাবিলায় নরম স্বভাবের হয়ে থাকলে চলবে না। মানুষ যেন সত্যের আহবায়কের ভদ্রতাকে দুর্বলতা মনে করতে না পারে। ইসলাম তার অনুসারীদেরকে অবশ্যই ভদ্রতা, বিনয় ও যুক্তিবাদিতার শিক্ষা দেয়; কিন্তু তাদেরকে প্রত্যেক যালিমের যুলুমের সহজ শিকারে পরিণত হওয়ার শিক্ষা দেয় না।
বিরোধীদের হুমকি শুনলে উৎসাহ আরো বাড়াতে হবে :
اَ لَّذِيْنَ قَالَ لَهُمُ النَّاسُ اِنَّ النَّاسَ قَدْ جَمَعُوْا لَكُمْ فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ اِيْمَانًا وَّقَالُوْا حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الْوَكِيْلُ
লোকেরা তাদেরকে বলেছিল, নিশ্চয় তোমাদের বিরুদ্ধে লোকজন সমবেত হয়েছে, অতএব তোমরা তাদেরকে ভয় করো। কিন্তু এতে তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পেয়ে গিয়েছিল এবং তারা বলেছিল, আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং উত্তম কর্মবিধায়ক। (সূরা আলে ইমরান- ১৭৩)
শানু নুযূল : ওহুদের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফেরার পথে বেশ কয়েক মনযিল দূরে চলে যাওয়ার পর মুশরিকদের টনক নড়ল। তারা পরস্পর বলাবলি করতে লাগল, আমরা এটা কী করলাম! মুহাম্মাদের শক্তি ধ্বংস করার যে সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিলাম, তা হারিয়ে ফেললাম? কাজেই তারা এক জায়গায় গিয়ে পরামর্শ করতে বসল। সিদ্ধান্ত হলো, এখনই মদিনার উপর দ্বিতীয় আক্রমণ চালাতে হবে। তারা তড়িঘড়ি করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল। কিন্তু আক্রমণ করার আর সাহস হলো না। ফলে তারা মক্কায় ফিরে এলো। ওদিকে নবী ﷺ এরও আশঙ্কা ছিল যে, কাফিররা আবার ফিরে এসে মদিনার উপর আক্রমণ চালাতে পারে। তাই ওহুদ যুদ্ধের পরদিনই তিনি মুসলিমদেরকে একত্র করে বললেন, কাফিরদের পেছনে ধাওয়া করা উচিত। যদিও সময়টা ছিল অত্যন্ত নাজুক তবুও যারা প্রকৃত মুমিন ছিলেন তাঁরা প্রাণ উৎসর্গ করতে প্রস্তুত হয়ে গেলেন এবং নবী ﷺ এর সাথে হামরাউল আসাদ নামক স্থান পর্যন্ত ধাওয়া করলেন। এ জায়গাটি মদিনা থেকে আট মাইল দূরে অবস্থিত। এ আয়াতে প্রাণ উৎসর্গকারী এসব মুমিনদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
বিরোধীদের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে :
وَاحْذَرْهُمْ اَنْ يَّفْتِنُوْكَ عَنْ ۢبَعْضِ مَاۤ اَنْزَلَ اللّٰهُ اِلَيْكَ
তাদের (এ ষড়যন্ত্র থেকে) সতর্ক থাকো যে, যেন তারা তোমার উপর আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার কোন কোন বিষয়ে তোমাকে ফেতনায় ফেলতে না পারে। (সূরা মায়েদা- ৪৯ )
বিরোধীদেরকে উত্তমভাবে বুঝাতে হবে :
فَلِذٰلِكَ فَادْعُۚ وَاسْتَقِمْ كَمَاۤ اُمِرْتَۚ وَلَا تَتَّبِعْ اَهْوَآءَهُمْۚ وَقُلْ اٰمَنْتُ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ مِنْ كِتَابٍۚ وَاُمِرْتُ لِاَعْدِلَ بَيْنَكُمُؕ اَللهُ رَبُّنَا وَرَبُّكُمْؕ لَنَاۤ اَعْمَالُنَا وَلَكُمْ اَعْمَالُكُمْؕ لَا حُجَّةَ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُؕ اَللهُ يَجْمَعُ بَيْنَنَاۚ وَاِلَيْهِ الْمَصِيْرُ
সুতরাং তুমি তার দিকে (সবাইকে) আহবান করো এবং তোমাকে যেভাবে আদেশ করা হয়েছে সেভাবেই দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকো; আর তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। তাদেরকে বলো, আললাহ যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন আমি তাতে ঈমান আনয়ন করেছি এবং আদিষ্ট হয়েছি যে, যেন আমি তোমাদের মধ্যে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করি। আল্লাহই আমাদের এবং তোমাদের প্রতিপালক। আমাদের আমল আমাদের এবং তোমাদের আমল তোমাদের; আমাদের মধ্যে কোন ঝগড়া-বিবাদ নেই। আল্লাহই আমাদের একত্র করবেন; আর (সকল) প্রত্যাবর্তন তো তাঁরই দিকে। (সূরা শূরা- ১৫)
মন্দকে ভালো দ্বারা প্রতিহত করতে হবে :
وَلَا تَسْتَوِى الْحَسَنَةُ وَلَا السَّيِّئَةُؕ اِدْفَعْ بِالَّتِيْ هِيَ اَحْسَنُ فَاِذَا الَّذِيْ بَيْنَكَ وَبَيْنَهٗ عَدَاوَةٌ كَاَنَّهٗ وَلِيٌّ حَمِيْمٌ
ভালো ও মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দকে প্রতিহত করো ভালো দ্বারা। তাহলে তোমার সাথে যার শত্রুতা আছে সে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মতো হয়ে যাবে। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৩৪)
ব্যাখ্যা : যে অবস্থায় নবী ﷺ ও তাঁর অনুসারীদেরকে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছিল তা ছিল এই যে, তখন চরম হঠকারিতা এবং আক্রমণাত্মক বিরোধিতার মাধ্যমে ইসলামী দাওয়াতের মুকাবিলা করা হচ্ছিল। সেখানে মানবতা এবং ভদ্রতার সমস্ত সীমা লঙ্ঘন করা হচ্ছিল। নবী ﷺ ও তাঁর সাথিদের বিরুদ্ধে সবরকমের মিথ্যারোপ করা হচ্ছিল। তাঁর বদনাম করা এবং তাঁর সম্পর্কে লোকের মনে খারাপ ধারণা সৃষ্টি করে দেয়ার জন্য সবরকমের অপবাদ আরোপ করা হচ্ছিল এবং একদল লোক তাঁর বিরুদ্ধে মানুষের মনে সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি করে যাচ্ছিল। তাঁকে ও তাঁর সাথিদেরকে সর্বপ্রকার কষ্ট দেয়া হচ্ছিল। তাতে অতিষ্ঠ হয়ে অনেক মুসলিম দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল। তাছাড়া ইসলাম প্রচারের ধারাকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য হট্টগোলকারী একদল লোককে সবসময় ওঁত পেতে থাকার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। যখনই তিনি ন্যায় ও সত্যের দাওয়াত দেয়ার জন্য কথা বলতে শুরু করবেন, তখনই তারা শোরগোল করবে ফলে কেউ তাঁর কথা শুনতে পাবে না। এটা এমনই পরিস্থিতি ছিল যে, বাহ্যিকভাবে ইসলামী দাওয়াতের সকল পথ রুদ্ধ বলে মনে হচ্ছিল। এসব বিরোধিতার মুকাবিলা করার জন্য সেসময় নবী ﷺ কে এসব পন্থা বলে দেয়া হয়েছিল।
প্রথম কথা বলা হয়েছে যে, সৎকর্ম ও দুষ্কর্ম সমান নয়। অর্থাৎ তোমাদের বিরোধীরা যত ভয়ানক তুফানই সৃষ্টি করুক না কেন, দুষ্কর্মের কারণে তাদের নিজের মধ্যেই এমন দুর্বলতা আছে, যা শেষ পর্যন্ত তাদেরকে ব্যর্থ করে দেয়। কারণ মানুষ যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ, ততক্ষণ পর্যন্ত তার স্বভাব দুষ্কর্মকে ঘৃণা না করে পারে না। দুষ্কর্মের সহযোগীরা মনে মনে জানে যে, সে মিথ্যাবাদী ও অত্যাচারী। এ জিনিসটি অন্যদের মনে তার প্রতি সম্মানবোধ সৃষ্টি করা তো দূরের কথা তাকে নিজের কাছেই খাটো করে দেয়। অপরদিকে সৎকর্ম নিজেই একটি শক্তি, যা হৃদয়-মনকে জয় করে। তাছাড়া নেকী ও দুষ্কর্ম উভয়টি যখন পুরোপুরিভাবে প্রকাশিত হয়, তখন দুষ্কর্মের প্রতি মানুষ ঘৃণা পোষণ করে এবং সৎকর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়।
দ্বিতীয় কথাটি বলা হয়েছে এই যে, দুষ্কর্মের মুকাবিলা শুধুমাত্র সৎকর্ম দিয়ে নয়, বরং অনেক উচ্চমানের সৎকর্ম দিয়ে করো। অর্থাৎ কেউ যদি তোমাদের সাথে খারাপ আচরণ করে আর তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও, তাহলে এটা হবে শুধু সৎকর্ম। উন্নত পর্যায়ের সৎকর্ম হচ্ছে, যে তোমার সাথে খারাপ আচরণ করবে, সুযোগ পেলে তুমি তাঁর প্রতি অনুগ্রহ করো। ফলে জঘন্যতম শত্রুও অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে যাবে। কারণ এটিই মানুষের প্রকৃতি। তবে এ সাধারণ নিয়মকে এ অর্থে গ্রহণ করা ঠিক নয় যে, উন্নত পর্যায়ের সৎকর্মের মাধ্যমে সবরকমের শত্রু অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে যাবে। পৃথিবীতে এমন জঘন্য মনের মানুষও আছে যে, তার অত্যাচার ক্ষমা করা হলেও তার দুষ্কৃতিতে কখনো ভাটা পড়বে না। তবে এ ধরনের খারাপ মানুষ কমই হয়।
এটা অত্যন্ত কার্যকর ব্যবস্থা হলেও তা কাজে লাগানো কোন ছেলেখেলা নয়। এজন্য দরকার সাহস, দৃঢ় সংকল্প এবং সহনশীলতা। সাময়িকভাবে কেউ কোন দুষ্কর্মের মুকাবিলায় সৎকর্ম করতে পারে। কিন্তু যে ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তিকে এমনসব বাতিলপন্থী দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে ন্যায় ও সত্যের জন্য লড়াই করতে হয়, যারা নৈতিকতার যে কোন সীমালঙ্ঘন করতে দ্বিধা করে না, সেখানে দুষ্কর্মের মুকাবিলায় সৎকর্ম করে যাওয়া কোন সাধারণ মানুষের কাজ নয়। কেবল সে ব্যক্তিই এ কাজ করতে পারে, যে বুঝে-শুনে ন্যায় ও সত্যকে সমুন্নত করার জন্য কাজ করার দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করেছে, যে তার প্রবৃত্তিকে সম্পূর্ণভাবে অনুগত করে নিয়েছে এবং যার মধ্যে সততা এমন গভীরভাবে শিকড় গেড়ে বসেছে যে, বিরোধীদের কোন অপকর্ম তাকে তার উচ্চাসন থেকে নিচে নামিয়ে আনতে পারে না। অত্যন্ত উঁচু মর্যাদার মানুষই কেবল এসব গুণাবলির অধিকারী হয়ে থাকে। আর এটাই প্রকৃতির বিধান। যে ব্যক্তি এসব গুণাবলির অধিকারী হয় দুনিয়ার কোন শক্তিই তাকে সাফল্যের মনযিলে পৌঁছা থেকে বিরত রাখতে পারে না। নীচু প্রকৃতির মানুষ তাদের হীন চক্রান্ত এবং জঘন্য আচরণ দ্বারা তাকে কোনভাবেই পরাস্ত করতে পারবে না।
শয়তানের উস্কানি থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইতে হবে :
وَاِمَّا يَنْزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللهِ اِنَّهٗ هُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে, তবে আল্লাহর আশ্রয় নেবে। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৩৬)
وَقُلْ رَّبِّ اَعُوْذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِيْنِ ‐ وَاَعُوْذُ بِكَ رَبِّ اَنْ يَّحْضُرُوْنِ
বলো, হে আমার প্রতিপালক! আমি তোমার নিকট শয়তানের প্ররোচনা হতে আশ্রয় প্রার্থনা করি এবং আমার নিকট তাদের উপস্থিতি হতেও তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি। (সূরা মু’মিনূন- ৯৭, ৯৮)
ব্যাখ্যা : শয়তান যখন দেখে হক ও বাতিলের লড়াইয়ে ভদ্রতা দ্বারা হীনতার এবং সুকৃতি দ্বারা দুষ্কৃতির মুকাবিলা করা হচ্ছে, তখন সে চরম অস্থিরতার মধ্যে পড়ে যায়। সে চায় যে কোনভাবে একবারের জন্য হলেও হকের পথে সংগ্রামকারীদের দ্বারা এমন কোন ত্রুটি সংঘটিত করিয়ে দিতে, যাতে সাধারণ মানুষকে বলা যায়, দেখুন! খারাপ কাজ এক তরফা হচ্ছে না, তারাও তো অমুক হীন আচরণ করেছে। এক পক্ষের অত্যাচার ও বাড়াবাড়ি এবং অপর পক্ষের জবাবী তৎপরতার মধ্যে ইনসাফের সাথে তুলনামূলক বিচারের যোগ্যতা সাধারণ মানুষের মধ্যে থাকে না। কোন বড় যুলুমের প্রতিবাদে হলেও তাদের দৃষ্টিতে উভয়ই সমান হয়ে যায়। এ কারণে বলা হয়েছে, শয়তানের প্রতারণার ব্যাপারে সাবধান থাকো। সে অত্যন্ত দরদী ও মঙ্গলকামী সেজে এই বলে তোমাদেরকে উত্তেজিত করবে যে, অমুক অত্যাচার কখনো বরদাশত করা উচিত নয়। অমুক কথার দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া উচিত। এ ধরনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তোমরা যখন নিজেদের মধ্যে কোন অযথা উত্তেজনা অনুভব করবে, তখন সাবধান হয়ে যাবে। কারণ তা শয়তানের প্ররোচনা। সে তোমাদেরকে উত্তেজিত করে কোন ভুল সংঘটিত করাতে চায়।
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَطِيْعُوا اللهَ وَاَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَاُولِى الْاَمْرِ مِنْكُمْ
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর ও রাসূলের আনুগত্য করো এবং তাদের আনুগত্য করো, যারা তোমাদের মধ্যে ক্ষমতার অধিকারী। (সূরা নিসা- ৫৯)
প্রচুর ধৈর্য ও সাহস অর্জন করতে হবে :
يَا بُنَيَّ اَقِمِ الصَّلَاةَ وَاْمُرْ بِالْمَعْرُوْفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَاصْبِرْ عَلٰى مَاۤ اَصَابَكَؕ اِنَّ ذٰلِكَ مِنْ عَزْمِ الْاُمُوْرِ
হে আমার ছেলে! সালাত কায়েম করো, সৎকাজের আদেশ দাও, মন্দকাজ হতে নিষেধ করো এবং তোমার উপর যে বিপদ আসে তাতে ধৈর্যধারণ করো। নিশ্চয় এটা দৃঢ় সংকল্পের কাজ। (সূরা লুক্বমান- ১৭)
ব্যাখ্যা : সৎকাজের হুকুম দেয়া এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করার দায়িত্ব যে ব্যক্তি পালন করবে তাকেই অনিবার্যভাবে বিপদাপদের মুখোমুখি হতে হবে। এ ধরনের লোকের পেছনে দুনিয়া কোমর বেঁধে লেগে যাবে এবং তাকে সবধরনের কষ্টের সম্মুখীন হতে হবে; এটি বড়ই সাহসের কাজ। মানবতার সংশোধন এবং তার সংকট উত্তরণে সাহায্য করার কাজ কম সাহসের অধিকারী লোকদের পক্ষে সম্ভব নয়; বরং এসব কাজে অসীম সাহসী হতে হয়।
সাংগঠনিক কাজের ফাঁকে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করতে হবে :
اِنَّ لَكَ فِى النَّهَارِ سَبْحًا طَوِيْلًا ‐ وَاذْكُرِ اسْمَ رَبِّكَ وَتَبَتَّلْ اِلَيْهِ تَبْتِيْلًا
নিশ্চয় দিনে তোমার জন্য রয়েছে দীর্ঘ ব্যস্ততা। সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের নাম স্মরণ করো এবং (অন্যান্য ব্যস্ততা ছিন্ন করে) একনিষ্ঠভাবে তাতে মগ্ন হও। (সূরা মুয্যাম্মিল- ৭, ৮)
فَاِذَا فَرَغْتَ فَانْصَبْ ‐ وَاِلٰى رَبِّكَ فَارْغَبْ
অতএব যখন অবসর পাও পরিশ্রম করো এবং তোমার প্রতিপালকের প্রতি মনোনিবেশ করো। (সূরা ইনশিরাহ- ৭, ৮)
তাহাজ্জুদ সালাত আদায়ের অভ্যাস করতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الْمُزَّمِّلُ ‐ قُمِ اللَّيْلَ اِلَّا قَلِيْلًا ‐ نِصْفَهٗۤ اَوِ انْقُصْ مِنْهُ قَلِيْلًا ‐ اَوْ زِدْ عَلَيْهِ
হে বস্ত্রাবৃত! রাত্রি জাগরণ (রাতে ইবাদাত) করো, (রাত্রির) কিছু অংশ। তার অর্ধেক কিংবা তদপেক্ষা কিছু কম অথবা তার চেয়ে কিছু বেশি। (সূরা মুয্যাম্মিল, ১-৪)
কুরআন অধ্যয়ন করতে হবে :
وَرَتِّلِ الْقُرْاٰنَ تَرْتِيْلًا
আর কুরআন পাঠ করো- ধীরে ধীরে (থেমে থেমে সুন্দরভাবে)। (সূরা মুয্যাম্মিল- ৪)
কোন নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় করা যাবে না :
يُجَاهِدُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَلَا يَخَافُوْنَ لَوْمَةَ لَآئِمٍ
তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে এবং তারা কোন নিন্দুকের নিন্দার ভয় করে না। (সূরা মায়েদা- ৫৪)
সাথিদের ব্যাপারে কোমল ও বিরোধীদের ব্যাপারে কঠোর হতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَنْ يَّرْتَدَّ مِنْكُمْ عَنْ دِيْنِهٖ فَسَوْفَ يَاْتِى اللّٰهُ بِقَوْمٍ يُّحِبُّهُمْ وَيُحِبُّوْنَهٗۤ اَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ اَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِيْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের মধ্যে যদি কেউ দ্বীন থেকে ফিরে যেতে চায়, তবে অচিরেই আল্লাহ এমন একটি সম্প্রদায়ের উত্থান ঘটাবেন যাদেরকে তিনি ভালোবাসবেন এবং তারাও তাঁকে ভালোবাসবে। আর তারা মুমিনদের প্রতি কোমল এবং কাফিরদের প্রতি কঠোরতা অবলম্বন করবে। (সূরা মায়েদা- ৫৪)
পরস্পরকে সহযোগিতা করতে হবে :
وَتَعَاوَنُوْا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوٰى وَلَا تَعَاوَنُوْا عَلَى الْاِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللهَؕ اِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
তোমরা সৎকর্ম ও তাক্বওয়ার বিষয়ে পরস্পরকে সহযোগিতা করো এবং পাপ ও সীমালঙ্ঘনের বিষয়ে একে অন্যের সহযোগিতা করো না। আর আল্লাহকে ভয় করো; নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে খুবই কঠোর। (সূরা মায়েদা- ২)
ব্যাখ্যা : এখানে تَعَاوَنُوْا (তা‘আওয়ানু) বলতে সাহায্য, সহায়তা, সমর্থন, পৃষ্ঠপোষকতা, বন্ধুত্ব, আত্মীয়তা, অভিভাবকত্ব ইত্যাদি বিষয়সমূহকে বুঝানো হয়েছে। তাছাড়া এমন ধরনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও বুঝানো হয়েছে, যা একটি রাষ্ট্রের সাথে নাগরিকদের, নাগরিকদের সাথে রাষ্ট্রের এবং নাগরিকদের নিজেদের মধ্যে বিরাজ করে। এমনকি যদি কোথাও মুসলিমদের উপর যুলুম হতে থাকে এবং ইসলামী সমাজের সাথে সম্পর্কের কারণে তারা দারুল ইসলামের সরকার ও তার অধিবাসীদের কাছে সাহায্য চায়, তাহলে নিজেদের এ মজলুম ভাইদের সাহায্য করা তাদের জন্য ফরয হয়ে যাবে। যেভাবে কাফিররা পরস্পরের সাহায্য-সমর্থন করে, তোমরা (ঈমানদাররা) যদি সেভাবে পরস্পরের সাহায্য-সমর্থন না কর, তাহলে পৃথিবীতে বিরাট বিপর্যয় সৃষ্টি হবে।
পরস্পরের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ করা যাবে না :
وَاَطِيْعُوا اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَلَا تَنَازَعُوْا فَتَفْشَلُوْا وَتَذْهَبَ رِيْحُكُمْ وَاصْبِرُوْاؕ اِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِيْنَ
তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে ও নিজেদের মধ্যে বিবাদ করবে না, নতুবা তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলবে এবং তোমাদের শক্তি বিলুপ্ত হবে। অতএব তোমরা ধৈর্যধারণ করো; নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথেই রয়েছেন। (সূরা আনফাল- ৪৬)
কোন বিরোধ হয়ে গেলে মীমাংসা করে নিতে হবে :
فَاتَّقُوا اللهَ وَاَصْلِحُوْا ذَاتَ بَيْنِكُمْ وَاَطِيْعُوا اللهَ وَرَسُوْلَهٗۤ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
আল্লাহকে ভয় করো এবং নিজেদের মধ্যে সংশোধন করে নাও। আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো, যদি তোমরা মুমিন হও। (সূরা আনফাল- ১)
মজলিস থেকে উঠার সময় অনুমতি নিতে হবে :
اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِه وَاِذَا كَانُوْا مَعَه عَلٰۤى اَمْرٍ جَامِعٍ لَّمْ يَذْهَبُوْا حَتّٰى يَسْتَاْذِنُوْهُ
নিশ্চয় মুমিন তো তারাই যারা আল্লাহর প্রতি এবং তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন করেছে। আর যখন তারা কোন সমষ্টিগত কাজে একত্রিত হয়, তখন তারা অনুমতি ছাড়া সেখান থেকে চলে যায় না। (সূরা নূর- ৬২)
বৈঠকের আদব রক্ষা করতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا قِيْلَ لَكُمْ تَفَسَّحُوْا فِى الْمَجَالِسِ فَافْسَحُوْا يَفْسَحِ اللهُ لَكُمْۚ وَاِذَا قِيْلَ انْشُزُوْا فَانْشُزُوْا
হে ঈমানদারগণ! যখন তোমাদেরকে মজলিসের মধ্যে স্থান প্রশস্ত করে দিতে বলা হয়, তখন তোমরা তা প্রশস্ত করে দিয়ো; তাহলে আল্লাহও তোমাদের জন্য স্থান প্রশস্ত করে দেবেন। আর যখন তোমাদেরকে উঠে যেতে বলা হয়, তখন উঠে যেয়ো। (সূরা মুজাদালা- ১১)
শানে নুযূল : একদা রাসূল ﷺ মসজিদের বারান্দায় অবস্থান করছিলেন, তখন মজলিসে বহু লোক ছিল। এমন সময় কতিপয় বদরী সাহাবী আসলেন, কিন্তু মজলিসের লোকেরা একটু চেপে না বসায় সেখানে তাদের বসার স্থান হলো না; ফলে তারা দাঁড়িয়ে রইলেন। তা দেখে রাসূল ﷺ নাম ধরে কয়েকজন লোককে মজলিস ত্যাগ করতে বললেন। এ সুযোগে মুনাফিকরা এ বলে খোঁচা দিতে লাগল যে, এ কেমন বিচার! তখন রাসূল ﷺ বললেন, যারা নিজেদের ভাইদের জন্য স্থান ছেড়ে দেবে, আল্লাহ তাদেরকে রহম করবেন। তখন এ সম্পর্কে উক্ত আয়াতটি নাযিল হয়। (তাফসীরে ফাতহুল কাদীর; ৭ম খন্ড, ১৭৭ পৃঃ)
বিরোধীদের সমালোচনাকে এড়িয়ে চলতে হবে :
وَاصْبِرْ عَلٰى مَا يَقُوْلُوْنَ وَاهْجُرْهُمْ هَجْرًا جَمِيْلًا
লোকেরা যা বলে, তাতে তুমি ধৈর্যধারণ করো এবং উত্তম পন্থায় তাদেরকে পরিহার করে চলো। (সূরা মুয্যাম্মিল- ১০)
ব্যক্তিগত স্বার্থে কোন শত্রুর সাথে বন্ধুত্ব রাখা যাবে না :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوْا عَدُوِّيْ وَعَدُوَّكُمْ اَوْلِيَآءَ تُلْقُوْنَ اِلَيْهِمْ بِالْمَوَدَّةِ وَقَدْ كَفَرُوْا بِمَا جَآءَكُمْ مِّنَ الْحَقِّ
হে মুমিনগণ! আমার ও তোমাদের শত্রুকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তোমরা কি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করছ? অথচ তোমাদের নিকট যে সত্য এসেছে, তারা তা অস্বীকার করে। (সূরা মুমতাহিনা- ১)
শানে নুযূল : রাসূল ﷺ মক্কা বিজয়ের ইচ্ছা করলে হাতিব ইবনে আবি বালতা (রাঃ) নামক একজন বদরী সাহাবী জনৈক মহিলার হাতে গোপনে মক্কাবাসীদের নিকট এ সংবাদ লিখে পাঠালেন। অতঃপর রাসূল ﷺ বিষয়টি ওহীর মাধ্যমে অবগত হয়ে আলী (রাঃ) এর নেতৃত্বে কতিপয় সাহাবীকে পাঠিয়ে চিঠিটি উদ্ধার করেন। অতঃপর হাতিব (রাঃ) কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আমি জানতাম এতে ইসলামের কোন ক্ষতি হবে না, কেননা ইসলামের বিজয় অনিবার্য। তারপরও আমি মনে করলাম যে, এ চিঠি পেলে মক্কাবাসীরা আমার দ্বারা নিজেদেরকে উপকৃত মনে করে তথায় অবস্থিত আমার পরিবারের কোন ক্ষতি করবে না। এটা শুনে ওমর (রাঃ) তাকে হত্যা করার জন্য রাসূল ﷺ এর কাছে অনুমতি চাইলেন। কিন্তু রাসূল ﷺ বললেন, এ ব্যক্তি বদরী অর্থাৎ সে তো বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। আর আল্লাহ বদরীদের গোনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। তখন এ প্রেক্ষাপটে উক্ত আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (তাফসীরে ফাতহুল কাদীর; ৭ম খন্ড, ২০০ পৃঃ)
যারা শত্রুতা করে না তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করা :
لَا يَنْهَاكُمُ اللهُ عَنِ الَّذِيْنَ لَمْ يُقَاتِلُوْكُمْ فِى الدِّيْنِ وَلَمْ يُخْرِجُوْكُمْ مِّنْ دِيَارِكُمْ اَنْ تَبَرُّوْهُمْ وَتُقْسِطُوْاۤ اِلَيْهِمْؕ اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِيْنَ
যারা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে স্বদেশ হতে বহিষ্কারও করেনি, আল্লাহ তোমাদেরকে তাদের প্রতি সদ্ব্যবহার ও ন্যায়বিচার করতে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা মুমতাহিনা- ৮)
নিজেদেরকে বাদ দিয়ে অন্যদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوْا بِطَانَةً مِّنْ دُوْنِكُمْ لَا يَاْلُوْنَكُمْ خَبَالًاؕ وَدُّوْا مَا عَنِتُّمْۚ قَدْ بَدَتِ الْبَغْضَآءُ مِنْ اَفْوَاهِهِمْۚ وَمَا تُخْفِيْ صُدُوْرُهُمْ اَكْبَرُؕ قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ الْاٰيَاتِ اِنْ كُنْتُمْ تَعْقِلُوْنَ ‐ هَاۤ اَنْتُمْ اُولَآءِ تُحِبُّوْنَهُمْ وَلَا يُحِبُّوْنَكُمْ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে বাদ দিয়ে অন্যদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তারা তোমাদের ব্যাপারে তাই কামনা করে, যা তোমাদের জন্য কষ্টদায়ক। কোন কোন সময় তাদের মুখ থেকেই এই বিদ্বেষ প্রকাশ পেয়ে যায়। আর তাদের অন্তরে যা লুকিয়ে রেখেছে, তা আরো জঘন্য। অবশ্যই আমি তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ বর্ণনা করে দিয়েছি, যদি তোমরা অনুধাবন করতে পার। তোমরা তো তাদেরকে ভালোবাস, কিন্তু তারা তোমাদেরকে ভালোবাসে না। (সূরা আলে ইমরান- ১১৮, ১১৯)
তাদের চক্রান্তকে ভয় করার কারণ নেই :
وَاِنْ تَصْبِرُوْا وَتَتَّقُوْا لَا يَضُرُّكُمْ كَيْدُهُمْ شَيْئًاؕ اِنَّ اللهَ بِمَا يَعْمَلُوْنَ مُحِيْطٌ
যদি তোমরা ধৈর্যধারণ কর এবং তাক্বওয়া অবলম্বন কর, তাহলে তাদের চক্রান্ত তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আর তোমরা যা কর নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু বেষ্টন করে আছেন। (সূরা আলে ইমরান- ১২০)
বিরোধীদের হুমকিকে ভয় করা যাবে না :
فَاُلْقِيَ السَّحَرَةُ سُجَّدًا قَالُوْاۤ اٰمَنَّا بِرَبِّ هَارُوْنَ وَمُوْسٰى ‐ قَالَ اٰمَنْتُمْ لَهٗ قَبْلَ اَنْ اٰذَنَ لَكُمْؕ اِنَّهٗ لَكَبِيْرُكُمُ الَّذِيْ عَلَّمَكُمُ السِّحْرَۚ فَلَاُقَطِّعَنَّ اَيْدِيَكُمْ وَاَرْجُلَكُمْ مِّنْ خِلَافٍ وَّلَاُصَلِّبَنَّكُمْ فِيْ جُذُوْعِ النَّخْلِ وَلَتَعْلَمُنَّ اَيُّنَاۤ اَشَدُّ عَذَابًا وَّاَبْقٰى ‐ قَالُوْا لَنْ نُّؤْثِرَكَ عَلٰى مَا جَآءَنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالَّذِيْ فَطَرَنَا فَاقْضِ مَاۤ اَنْتَ قَاضٍؕ اِنَّمَا تَقْضِيْ هٰذِهِ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا ‐ اِنَّاۤ اٰمَنَّا بِرَبِّنَا لِيَغْفِرَ لَنَا خَطَايَانَا وَمَاۤ اَ كْرَهْتَنَا عَلَيْهِ مِنَ السِّحْرِؕ وَاللهُ خَيْرٌ وَّاَبْقٰى
অতঃপর যাদুকররা সিজদাবনত হলো ও বলল, আমরা হারূন ও মূসার প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনয়ন করলাম। ফিরাউন বলল, কী- আমি তোমাদেরকে অনুমতি দেয়ার পূর্বেই তোমরা তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলে? আমি দেখতে পাচ্ছি, আসলে সে-ই হচ্ছে তোমাদের প্রধান গুরু, সে তোমাদেরকে যাদু শিক্ষা দিয়েছে। সুতরাং আমি তোমাদের হাত-পা বিপরীত দিক হতে কর্তন করবই এবং তোমাদেরকে খেজুর বৃক্ষের কান্ডে শূলবিদ্ধ করবই। তখন তোমরা জানতে পারবে যে, আমাদের মধ্যে কার শাস্তি অধিক কঠোরতর ও অধিক স্থায়ী। তারা বলল, আমাদের নিকট যে স্পষ্ট নিদর্শনাবলি এসেছে তার উপর এবং যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর উপর আমরা তোমাকে কিছুতেই প্রাধান্য দেব না। সুতরাং তুমি যা ইচ্ছা করতে পার। তুমি তো কেবল এ পার্থিব জীবনের উপরই কর্তৃত্ব করতে পার। নিশ্চয় আমরা আমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনয়ন করেছি, যাতে তিনি আমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দেন এবং তুমি আমাদেরকে যে যাদু করতে বাধ্য করেছ, তা হতেও ক্ষমা করে দেন। আর আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ ও স্থায়ী। (সূরা ত্বা-হা, ৭০-৭৩)
প্রাণের ভয় থাকলে, অন্তর ঠিক রেখে কুফরী কথা বলা যাবে :
مَنْ كَفَرَ بِاللهِ مِنْ ۢبَعْدِ اِيْمَانِهٖۤ اِلَّا مَنْ اُكْرِهَ وَقَلْبُهٗ مُطْمَئِنٌّ ۢبِالْاِيْمَانِ وَلٰكِنْ مَّنْ شَرَحَ بِالْكُفْرِ صَدْرًا فَعَلَيْهِمْ غَضَبٌ مِّنَ اللهِۚ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيْمٌ
যে ব্যক্তি ঈমান আনার পর আল্লাহকে অস্বীকার করল এবং তার হৃদয়কে কুফরীর জন্য উন্মুক্ত রাখল, তাঁর উপর আল্লাহর গযব পতিত হবে; আর তার জন্য রয়েছে মহাশাস্তি। তবে তার জন্য নয়, যাকে কুফরীর জন্য বাধ্য করা হয়, কিন্তু তার চিত্ত ঈমানের উপর অবিচল। (সূরা নাহল- ১০৬)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ যদি কোন মুমিন ইসলামের কোন শত্রুদলের ফাঁদে আটকা পড়ে যায় এবং সে তাদের পক্ষ থেকে চরম যুলুম-নির্যাতন, ভয়-ভীতি এমনকি প্রাণনাশের আশঙ্কা করে, তাহলে সে নিজের ঈমান গোপন রেখে কাফিরদের সাথে অবস্থান করতে পারবে। এমনকি চরম অবস্থায় কুফরী বাক্য পর্যন্ত মুখে উচ্চারণ করতে পারবে। তবে শর্ত হলো, তার অন্তর ঈমানের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে হবে। মানুষের ভয় যেন তাকে এমনভাবে আচ্ছন্ন না করে ফেলে, যার ফলে আল্লাহর ভয় মন থেকে ওঠে যায়। মানুষ বড়জোর তার পার্থিব ও বৈষয়িক স্বার্থের ক্ষতি করতে পারে, যার পরিসর দুনিয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু আল্লাহ তাকে চিরন্তন আযাবের মধ্যে নিক্ষেপ করতে পারেন। কাজেই নিজের প্রাণ বাঁচানোর জন্য যদি কখনো বাধ্য হয়ে কাফিরদের সাথে আত্মরক্ষামূলক বন্ধুত্বনীতি অবলম্বন করতে হয়, তাহলে তার পরিসর কেবলমাত্র ইসলামের স্বার্থ ও জান-মালের হেফাজত করা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। তবে লক্ষণীয় যে, ঐ কুফ্রী কথা বা কাজ যেন অন্য কোন মুসলিম ভাইয়ের প্রাণনাশের কারণ না হয়।
এ আয়াতে এমন মুসলিমদের কথা আলোচনা করা হয়েছে, যাদের উপর কঠোর নির্যাতন চালানো হয়েছিল এবং যাদেরকে অসহনীয় কষ্ট ও যন্ত্রণা দিয়ে কুফরী করতে বাধ্য করা হয়েছিল। তাদেরকে বলা হয়েছে, তোমরা যদি কখনো যুলুম-নিপীড়নের চাপে বাধ্য হয়ে নিছক প্রাণ বাঁচানোর জন্য কুফরী কথা মুখে উচ্চারণ কর এবং তোমাদের অন্তর কুফরী আকীদা থেকে মুক্ত থাকে, তাহলে তোমাদেরকে ÿমা করে দেয়া হবে। কিন্তু যদি তোমরা অন্তরে কুফরী গ্রহণ করে থাক, তাহলে দুনিয়ায় প্রাণে বেঁচে গেলেও আখিরাতে আল্লাহর আযাব থেকে বাঁচতে পারবে না। এর অর্থ এ নয় যে, প্রাণ বাঁচানোর জন্য কুফরী কথা বলা বাঞ্ছনীয়। বরং এটি নিছক একটি ‘রুখসাত’ তথা সুবিধা দান ছাড়া আর কিছুই নয়। যদি অন্তরে ঈমান অক্ষুণ্ণ রেখে মানুষ বাধ্য হয়ে এ ধরনের কথা বলে, তাহলে তাকে কোন জবাবদিহি করা হবে না। অন্যথায় দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ ঈমানের পরিচয় হচ্ছে, মানুষের এ রক্ত-মাংসের শরীরটাকে কেটে টুকরো টুকরো করা হলেও সে যেন সত্যের বাণীরই ঘোষণা দিয়ে যেতে থাকে। নবী ﷺ এর যুগে এ উভয় ধরনের ঘটনার দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়।
একদিকে আছেন খাববাব ইবনে আরাত (রাঃ)। তাঁকে জ্বলন্ত অঙ্গারের উপর শোয়ানো হয়। এমনকি তাঁর শরীরের চর্বি গলে পড়ার ফলে আগুন নিভে যায়। কিন্তু এরপরও তিনি দৃঢ়ভাবে ঈমানের উপর অটল থাকেন। আরো আছেন বিলাল (রাঃ)। তাঁকে লোহার বর্ম পরিয়ে উত্তপ্ত রোদে দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়। তারপর উত্তপ্ত বালুর প্রান্তরে শোইয়ে তার উপর দিয়ে তাঁকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু এরপরও তিনি ‘আহাদ, আহাদ’ (আল্লাহ এক, আল্লাহ এক) শব্দ উচ্চারণ করে নিজের ঈমানের উপর দৃঢ় অবস্থানের কথা জানাতে থাকেন। (ইবনে মাজাহ, হা/১৫০)
অন্যদিকে আছেন আম্মার ইবনে ইয়াসির (রাঃ)। তাঁর চোখের সামনে তাঁর পিতামাতাকে কঠিন শাস্তি দিয়ে শহীদ করা হয়। তারপর তাঁকে এমন কঠিন শাস্তি দেয়া হয় যে, শেষ পর্যন্ত নিজের প্রাণ বাঁচানোর জন্য তিনি কাফিরদের চাহিদামতো সবকিছু বললেন। এরপর তিনি কাঁদতে কাঁদতে নবী ﷺ এর কাছে উপস্থিত হয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল ﷺ ! আমি আপনাকে মন্দ এবং তাদের উপাস্যদেরকে ভালো না বলা পর্যন্ত তারা আমাকে ছাড়েনি। রাসূল ﷺ জিজ্ঞেস করলেন, তোমার মনের অবস্থা কী? তিনি জবাব দিলেন, مُطْمَئِنًّا بِالْاِيْمَانِ তথা ঈমানের উপর পরিপূর্ণ নিশ্চিন্ত। এ কথায় নবী ﷺ বললেন, যদি তারা আবারো এ ধরনের যুলুম করে, তাহলে তুমি তাদেরকে আবারো এসব কথা বলে দিয়ো। (সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৭৩৫০)
বিরোধীদের গোপন পরামর্শকে ভয় করতে নেই :
اِنَّمَا النَّجْوٰى مِنَ الشَّيْطَانِ لِيَحْزُنَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَلَيْسَ بِضَآرِّهِمْ شَيْئًا اِلَّا بِاِذْنِ اللهِؕ وَعَلَى اللهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُوْنَ
কানাঘুষা তো কেবল শয়তানের পক্ষ থেকে মুমিনদেরকে দুঃখ দেয়ার জন্যই হয়ে থাকে, তবে আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত তারা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। সুতরাং মুমিনরা যেন একমাত্র আল্লাহর উপরই ভরসা করে। (সূরা মুজাদালা- ১০)
বিরোধীদের জবাব দেয়ার জন্য উত্তেজিত না হওয়া :
وَقُلْ لِّعِبَادِيْ يَقُوْلُوا الَّتِيْ هِيَ اَحْسَنُؕ اِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْزَغُ بَيْنَهُمْؕ اِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلْاِنْسَانِ عَدُوًّا مُّبِيْنًا
আমার বান্দাদেরকে যা উত্তম তা বলতে বলো। কারণ শয়তান তাদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টির জন্য উস্কানি দেয়; নিশ্চয় শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৫৩)
শয়তানের দেখানো ভয়কে এড়িয়ে যেতে হবে :
اِنَّمَا ذٰلِكُمُ الشَّيْطَانُ يُخَوِّفُ اَوْلِيَآءَهٗ فَلَا تَخَافُوْهُمْ وَخَافُوْنِ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
নিশ্চয় এ হচ্ছে তোমাদের সে শয়তান যে তার অনুসারীদেরকে ভয় প্রদর্শন করে; কিন্তু যদি তোমরা বিশ্বাসী হও, তবে তাদেরকে ভয় করো না; বরং আমাকেই ভয় করো। (সূরা আলে ইমরান- ১৭৫ )
ইসলাম বিরোধীদের কাছে দুর্বলতা প্রকাশ না করা :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا قَاتِلُوا الَّذِيْنَ يَلُوْنَكُمْ مِّنَ الْكُفَّارِ وَلْيَجِدُوْا فِيْكُمْ غِلْظَةًؕ وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ مَعَ الْمُتَّقِيْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের নিকটবর্তী কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করো। তারা যেন তোমাদের মধ্যে কঠোরতা দেখতে পায়। জেনে রেখো, আল্লাহ মুত্তাক্বীদের সাথেই রয়েছেন। (সূরা তাওবা- ১২৩)
ব্যাখ্যা : যারা যুলুমের নীতি অবলম্বন করে তাদের সাথে তাদের যুলুমের প্রকৃতি বিবেচনা করে ভিন্ন নীতিও অবলম্বন করা যেতে পারে। সবসময় সবধরনের লোকদের মুকাবিলায় নরম স্বভাবের হয়ে থাকলে চলবে না। মানুষ যেন সত্যের আহবায়কের ভদ্রতাকে দুর্বলতা মনে করতে না পারে। ইসলাম তার অনুসারীদেরকে অবশ্যই ভদ্রতা, বিনয় ও যুক্তিবাদিতার শিক্ষা দেয়; কিন্তু তাদেরকে প্রত্যেক যালিমের যুলুমের সহজ শিকারে পরিণত হওয়ার শিক্ষা দেয় না।
বিরোধীদের হুমকি শুনলে উৎসাহ আরো বাড়াতে হবে :
اَ لَّذِيْنَ قَالَ لَهُمُ النَّاسُ اِنَّ النَّاسَ قَدْ جَمَعُوْا لَكُمْ فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ اِيْمَانًا وَّقَالُوْا حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الْوَكِيْلُ
লোকেরা তাদেরকে বলেছিল, নিশ্চয় তোমাদের বিরুদ্ধে লোকজন সমবেত হয়েছে, অতএব তোমরা তাদেরকে ভয় করো। কিন্তু এতে তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পেয়ে গিয়েছিল এবং তারা বলেছিল, আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং উত্তম কর্মবিধায়ক। (সূরা আলে ইমরান- ১৭৩)
শানু নুযূল : ওহুদের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফেরার পথে বেশ কয়েক মনযিল দূরে চলে যাওয়ার পর মুশরিকদের টনক নড়ল। তারা পরস্পর বলাবলি করতে লাগল, আমরা এটা কী করলাম! মুহাম্মাদের শক্তি ধ্বংস করার যে সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিলাম, তা হারিয়ে ফেললাম? কাজেই তারা এক জায়গায় গিয়ে পরামর্শ করতে বসল। সিদ্ধান্ত হলো, এখনই মদিনার উপর দ্বিতীয় আক্রমণ চালাতে হবে। তারা তড়িঘড়ি করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল। কিন্তু আক্রমণ করার আর সাহস হলো না। ফলে তারা মক্কায় ফিরে এলো। ওদিকে নবী ﷺ এরও আশঙ্কা ছিল যে, কাফিররা আবার ফিরে এসে মদিনার উপর আক্রমণ চালাতে পারে। তাই ওহুদ যুদ্ধের পরদিনই তিনি মুসলিমদেরকে একত্র করে বললেন, কাফিরদের পেছনে ধাওয়া করা উচিত। যদিও সময়টা ছিল অত্যন্ত নাজুক তবুও যারা প্রকৃত মুমিন ছিলেন তাঁরা প্রাণ উৎসর্গ করতে প্রস্তুত হয়ে গেলেন এবং নবী ﷺ এর সাথে হামরাউল আসাদ নামক স্থান পর্যন্ত ধাওয়া করলেন। এ জায়গাটি মদিনা থেকে আট মাইল দূরে অবস্থিত। এ আয়াতে প্রাণ উৎসর্গকারী এসব মুমিনদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
বিরোধীদের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে :
وَاحْذَرْهُمْ اَنْ يَّفْتِنُوْكَ عَنْ ۢبَعْضِ مَاۤ اَنْزَلَ اللّٰهُ اِلَيْكَ
তাদের (এ ষড়যন্ত্র থেকে) সতর্ক থাকো যে, যেন তারা তোমার উপর আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার কোন কোন বিষয়ে তোমাকে ফেতনায় ফেলতে না পারে। (সূরা মায়েদা- ৪৯ )
বিরোধীদেরকে উত্তমভাবে বুঝাতে হবে :
فَلِذٰلِكَ فَادْعُۚ وَاسْتَقِمْ كَمَاۤ اُمِرْتَۚ وَلَا تَتَّبِعْ اَهْوَآءَهُمْۚ وَقُلْ اٰمَنْتُ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ مِنْ كِتَابٍۚ وَاُمِرْتُ لِاَعْدِلَ بَيْنَكُمُؕ اَللهُ رَبُّنَا وَرَبُّكُمْؕ لَنَاۤ اَعْمَالُنَا وَلَكُمْ اَعْمَالُكُمْؕ لَا حُجَّةَ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُؕ اَللهُ يَجْمَعُ بَيْنَنَاۚ وَاِلَيْهِ الْمَصِيْرُ
সুতরাং তুমি তার দিকে (সবাইকে) আহবান করো এবং তোমাকে যেভাবে আদেশ করা হয়েছে সেভাবেই দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকো; আর তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। তাদেরকে বলো, আললাহ যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন আমি তাতে ঈমান আনয়ন করেছি এবং আদিষ্ট হয়েছি যে, যেন আমি তোমাদের মধ্যে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করি। আল্লাহই আমাদের এবং তোমাদের প্রতিপালক। আমাদের আমল আমাদের এবং তোমাদের আমল তোমাদের; আমাদের মধ্যে কোন ঝগড়া-বিবাদ নেই। আল্লাহই আমাদের একত্র করবেন; আর (সকল) প্রত্যাবর্তন তো তাঁরই দিকে। (সূরা শূরা- ১৫)
মন্দকে ভালো দ্বারা প্রতিহত করতে হবে :
وَلَا تَسْتَوِى الْحَسَنَةُ وَلَا السَّيِّئَةُؕ اِدْفَعْ بِالَّتِيْ هِيَ اَحْسَنُ فَاِذَا الَّذِيْ بَيْنَكَ وَبَيْنَهٗ عَدَاوَةٌ كَاَنَّهٗ وَلِيٌّ حَمِيْمٌ
ভালো ও মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দকে প্রতিহত করো ভালো দ্বারা। তাহলে তোমার সাথে যার শত্রুতা আছে সে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মতো হয়ে যাবে। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৩৪)
ব্যাখ্যা : যে অবস্থায় নবী ﷺ ও তাঁর অনুসারীদেরকে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছিল তা ছিল এই যে, তখন চরম হঠকারিতা এবং আক্রমণাত্মক বিরোধিতার মাধ্যমে ইসলামী দাওয়াতের মুকাবিলা করা হচ্ছিল। সেখানে মানবতা এবং ভদ্রতার সমস্ত সীমা লঙ্ঘন করা হচ্ছিল। নবী ﷺ ও তাঁর সাথিদের বিরুদ্ধে সবরকমের মিথ্যারোপ করা হচ্ছিল। তাঁর বদনাম করা এবং তাঁর সম্পর্কে লোকের মনে খারাপ ধারণা সৃষ্টি করে দেয়ার জন্য সবরকমের অপবাদ আরোপ করা হচ্ছিল এবং একদল লোক তাঁর বিরুদ্ধে মানুষের মনে সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি করে যাচ্ছিল। তাঁকে ও তাঁর সাথিদেরকে সর্বপ্রকার কষ্ট দেয়া হচ্ছিল। তাতে অতিষ্ঠ হয়ে অনেক মুসলিম দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল। তাছাড়া ইসলাম প্রচারের ধারাকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য হট্টগোলকারী একদল লোককে সবসময় ওঁত পেতে থাকার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। যখনই তিনি ন্যায় ও সত্যের দাওয়াত দেয়ার জন্য কথা বলতে শুরু করবেন, তখনই তারা শোরগোল করবে ফলে কেউ তাঁর কথা শুনতে পাবে না। এটা এমনই পরিস্থিতি ছিল যে, বাহ্যিকভাবে ইসলামী দাওয়াতের সকল পথ রুদ্ধ বলে মনে হচ্ছিল। এসব বিরোধিতার মুকাবিলা করার জন্য সেসময় নবী ﷺ কে এসব পন্থা বলে দেয়া হয়েছিল।
প্রথম কথা বলা হয়েছে যে, সৎকর্ম ও দুষ্কর্ম সমান নয়। অর্থাৎ তোমাদের বিরোধীরা যত ভয়ানক তুফানই সৃষ্টি করুক না কেন, দুষ্কর্মের কারণে তাদের নিজের মধ্যেই এমন দুর্বলতা আছে, যা শেষ পর্যন্ত তাদেরকে ব্যর্থ করে দেয়। কারণ মানুষ যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ, ততক্ষণ পর্যন্ত তার স্বভাব দুষ্কর্মকে ঘৃণা না করে পারে না। দুষ্কর্মের সহযোগীরা মনে মনে জানে যে, সে মিথ্যাবাদী ও অত্যাচারী। এ জিনিসটি অন্যদের মনে তার প্রতি সম্মানবোধ সৃষ্টি করা তো দূরের কথা তাকে নিজের কাছেই খাটো করে দেয়। অপরদিকে সৎকর্ম নিজেই একটি শক্তি, যা হৃদয়-মনকে জয় করে। তাছাড়া নেকী ও দুষ্কর্ম উভয়টি যখন পুরোপুরিভাবে প্রকাশিত হয়, তখন দুষ্কর্মের প্রতি মানুষ ঘৃণা পোষণ করে এবং সৎকর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়।
দ্বিতীয় কথাটি বলা হয়েছে এই যে, দুষ্কর্মের মুকাবিলা শুধুমাত্র সৎকর্ম দিয়ে নয়, বরং অনেক উচ্চমানের সৎকর্ম দিয়ে করো। অর্থাৎ কেউ যদি তোমাদের সাথে খারাপ আচরণ করে আর তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও, তাহলে এটা হবে শুধু সৎকর্ম। উন্নত পর্যায়ের সৎকর্ম হচ্ছে, যে তোমার সাথে খারাপ আচরণ করবে, সুযোগ পেলে তুমি তাঁর প্রতি অনুগ্রহ করো। ফলে জঘন্যতম শত্রুও অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে যাবে। কারণ এটিই মানুষের প্রকৃতি। তবে এ সাধারণ নিয়মকে এ অর্থে গ্রহণ করা ঠিক নয় যে, উন্নত পর্যায়ের সৎকর্মের মাধ্যমে সবরকমের শত্রু অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে যাবে। পৃথিবীতে এমন জঘন্য মনের মানুষও আছে যে, তার অত্যাচার ক্ষমা করা হলেও তার দুষ্কৃতিতে কখনো ভাটা পড়বে না। তবে এ ধরনের খারাপ মানুষ কমই হয়।
এটা অত্যন্ত কার্যকর ব্যবস্থা হলেও তা কাজে লাগানো কোন ছেলেখেলা নয়। এজন্য দরকার সাহস, দৃঢ় সংকল্প এবং সহনশীলতা। সাময়িকভাবে কেউ কোন দুষ্কর্মের মুকাবিলায় সৎকর্ম করতে পারে। কিন্তু যে ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তিকে এমনসব বাতিলপন্থী দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে ন্যায় ও সত্যের জন্য লড়াই করতে হয়, যারা নৈতিকতার যে কোন সীমালঙ্ঘন করতে দ্বিধা করে না, সেখানে দুষ্কর্মের মুকাবিলায় সৎকর্ম করে যাওয়া কোন সাধারণ মানুষের কাজ নয়। কেবল সে ব্যক্তিই এ কাজ করতে পারে, যে বুঝে-শুনে ন্যায় ও সত্যকে সমুন্নত করার জন্য কাজ করার দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করেছে, যে তার প্রবৃত্তিকে সম্পূর্ণভাবে অনুগত করে নিয়েছে এবং যার মধ্যে সততা এমন গভীরভাবে শিকড় গেড়ে বসেছে যে, বিরোধীদের কোন অপকর্ম তাকে তার উচ্চাসন থেকে নিচে নামিয়ে আনতে পারে না। অত্যন্ত উঁচু মর্যাদার মানুষই কেবল এসব গুণাবলির অধিকারী হয়ে থাকে। আর এটাই প্রকৃতির বিধান। যে ব্যক্তি এসব গুণাবলির অধিকারী হয় দুনিয়ার কোন শক্তিই তাকে সাফল্যের মনযিলে পৌঁছা থেকে বিরত রাখতে পারে না। নীচু প্রকৃতির মানুষ তাদের হীন চক্রান্ত এবং জঘন্য আচরণ দ্বারা তাকে কোনভাবেই পরাস্ত করতে পারবে না।
শয়তানের উস্কানি থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইতে হবে :
وَاِمَّا يَنْزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللهِ اِنَّهٗ هُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে, তবে আল্লাহর আশ্রয় নেবে। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৩৬)
وَقُلْ رَّبِّ اَعُوْذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِيْنِ ‐ وَاَعُوْذُ بِكَ رَبِّ اَنْ يَّحْضُرُوْنِ
বলো, হে আমার প্রতিপালক! আমি তোমার নিকট শয়তানের প্ররোচনা হতে আশ্রয় প্রার্থনা করি এবং আমার নিকট তাদের উপস্থিতি হতেও তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি। (সূরা মু’মিনূন- ৯৭, ৯৮)
ব্যাখ্যা : শয়তান যখন দেখে হক ও বাতিলের লড়াইয়ে ভদ্রতা দ্বারা হীনতার এবং সুকৃতি দ্বারা দুষ্কৃতির মুকাবিলা করা হচ্ছে, তখন সে চরম অস্থিরতার মধ্যে পড়ে যায়। সে চায় যে কোনভাবে একবারের জন্য হলেও হকের পথে সংগ্রামকারীদের দ্বারা এমন কোন ত্রুটি সংঘটিত করিয়ে দিতে, যাতে সাধারণ মানুষকে বলা যায়, দেখুন! খারাপ কাজ এক তরফা হচ্ছে না, তারাও তো অমুক হীন আচরণ করেছে। এক পক্ষের অত্যাচার ও বাড়াবাড়ি এবং অপর পক্ষের জবাবী তৎপরতার মধ্যে ইনসাফের সাথে তুলনামূলক বিচারের যোগ্যতা সাধারণ মানুষের মধ্যে থাকে না। কোন বড় যুলুমের প্রতিবাদে হলেও তাদের দৃষ্টিতে উভয়ই সমান হয়ে যায়। এ কারণে বলা হয়েছে, শয়তানের প্রতারণার ব্যাপারে সাবধান থাকো। সে অত্যন্ত দরদী ও মঙ্গলকামী সেজে এই বলে তোমাদেরকে উত্তেজিত করবে যে, অমুক অত্যাচার কখনো বরদাশত করা উচিত নয়। অমুক কথার দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া উচিত। এ ধরনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তোমরা যখন নিজেদের মধ্যে কোন অযথা উত্তেজনা অনুভব করবে, তখন সাবধান হয়ে যাবে। কারণ তা শয়তানের প্ররোচনা। সে তোমাদেরকে উত্তেজিত করে কোন ভুল সংঘটিত করাতে চায়।
তারা ঈমানকে ভালোবাসতেন :
وَلٰكِنَّ اللهَ حَبَّبَ اِلَيْكُمُ الْاِيْمَانَ وَزَيَّنَهٗ فِيْ قُلُوْبِكُمْ
কিন্তু আল্লাহ তোমাদেরকে ঈমানের প্রতি ভালোবাসা দান করেছেন এবং তিনি তোমাদের অন্তরে তা সুশোভিত করে দিয়েছেন। (সূরা হুজুরাত- ৭)
তারা পাপকে ঘৃণা করতেন :
وَكَرَّهَ اِلَيْكُمُ الْكُفْرَ وَالْفُسُوْقَ وَالْعِصْيَانَؕ اُولٰٓئِكَ هُمُ الرَّاشِدُوْنَ
তিনি তোমাদের অন্তরে কুফরী, ফাসিকী ও নাফরমানির প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করে দিয়েছেন; আর এমন লোকেরাই সুপথে আছে। (সূরা হুজুরাত- ৭)
দুনিয়ার কাজ তাদেরকে ইবাদাত থেকে বিরত রাখতে পারত না :
رِجَالٌ لَّا تُلْهِيْهِمْ تِجَارَةٌ وَّلَا بَيْعٌ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَاِقَامِ الصَّلَاةِ وَاِيْتَآءِ الزَّكَاةِ
তারা এমন লোক, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ হতে এবং সালাত কায়েম ও যাকাত প্রদান করা হতে বিরত রাখে না। (সূরা নূর- ৩৭)
তারা কিয়ামতের বিপদকে খুবই ভয় করতেন :
يَخَافُوْنَ يَوْمًا تَتَقَلَّبُ فِيْهِ الْقُلُوْبُ وَالْاَبْصَارُ
তারা ভয় করে সেদিনকে যেদিন অনেক অমত্মর ও দৃষ্টিসমূহ বিপর্যসত্ম হয়ে পড়বে। (সূরা নূর- ৩৭)
আহত হওয়ার পরও তারা নবীর সাথে জিহাদ করতেন :
اَ لَّذِيْنَ اسْتَجَابُوْا لِلّٰهِ وَالرَّسُوْلِ مِنْ ۢبَعْدِ مَاۤ اَصَابَهُمُ الْقَرْحُؕ لِلَّذِيْنَ اَحْسَنُوْا مِنْهُمْ وَاتَّقَوْا اَجْرٌ عَظِيْمٌ
যারা আঘাত পাওয়ার পরও আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশে সাড়া দিয়েছিল, তাদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে ও তাক্বওয়া অবলম্বন করেছে, তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার। (সূরা আলে ইমরান- ১৭২)
বিরোধীদের হুমকি শুনলে তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পেয়ে যেত :
اَ لَّذِيْنَ قَالَ لَهُمُ النَّاسُ اِنَّ النَّاسَ قَدْ جَمَعُوْا لَكُمْ فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ اِيْمَانًا وَّقَالُوْا حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الْوَكِيْلُ
লোকেরা যাদেরকে বলেছিল, নিশ্চয় তোমাদের বিরুদ্ধে লোকজন সমবেত হয়েছে, অতএব তোমরা তাদেরকে ভয় করো। কিন্তু এতে তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পেয়ে গিয়েছিল এবং তারা বলেছিল, আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং মঙ্গলময় কর্মবিধায়ক। (সূরা আলে ইমরান- ১৭৩)
তারা মুমিনদের ব্যাপারে নরম এবং কাফিরদের ব্যাপারে কঠোর ছিলেন :
مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِؕ وَالَّذِيْنَ مَعَهٗۤ اَشِدَّآءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَآءُ بَيْنَهُمْ
মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল, আর যারা তাঁর সাথে আছে (অর্থাৎ সাহাবীরা) তারা কাফিরদের উপর কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে কোমল। (সূরা ফাতহ- ২৯)
ব্যাখ্যা : কাফিরদের ব্যাপারে সাহাবীদের কঠোর হওয়ার অর্থ এ নয় যে, তারা কাফিরদের সাথে কঠোর আচরণ করতেন; বরং এর অর্থ হচ্ছে, তারা তাদের ঈমানের পরিপক্কতা, নীতির দৃঢ়তা, চারিত্রিক শক্তি এবং ঈমানী দূরদর্শিতার মাধ্যমে কাফিরদের মুকাবিলায় মজবুত পাথরের মতো অনমনীয় ও আপোষহীন ছিলেন। তারা অস্থিরমনা ছিলেন না যে, কাফিররা তাদেরকে যেদিকে ইচ্ছা ঘুরিয়ে দিতে পারবে। যে মহৎ উদ্দেশ্যে তারা জীবন বাজি রেখে মুহাম্মাদ ﷺ কে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত হয়েছেন তা থেকে বিচ্যুত করার ক্ষমতা কাফিরদের ছিল না। তাদের মধ্যে যতটুকু কঠোরতা ছিল তা কাফিরদের জন্য, ঈমানদারদের জন্য নয়। ঈমানদারদের কাছে তারা বিনম্র, স্নেহশীল ও দুঃখের সাথি ছিলেন। নীতি ও উদ্দেশ্যের ঐক্য তাদের পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা ও আন্তরিকতা সৃষ্টি করে দিয়েছিল।
তারা রাতে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করতেন :
اِنَّ رَبَّكَ يَعْلَمُ اَنَّكَ تَقُوْمُ اَدْنٰى مِنْ ثُلُثَيِ اللَّيْلِ وَنِصْفَهٗ وَثُلُثَهٗ وَطَآئِفَةٌ مِّنَ الَّذِيْنَ مَعَكَ
নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক জানেন যে, তুমি জাগরণ কর কখনো রাত্রির প্রায় দুই তৃতীয়াংশ, কখনো অর্ধাংশ এবং কখনো এক তৃতীয়াংশ। আর তোমার সাথে যারা আছে তাদের একটি দলও (এ আমল করে)। (সূরা মুয্যাম্মিল- ২০)
তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইবাদাত করতেন :
تَرَاهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا يَّبْتَغُوْنَ فَضْلًا مِّنَ اللهِ وَرِضْوَانًا
যখন তুমি তাদেরকে দেখবে, তখন তাদেরকে রুকূ-সিজদা অবস্থায় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি তালাশে মগ্ন পাবে। (সূরা ফাতহ- ২৯)
তাদের চেহারাই তাদের পরিচয় বহন করত :
سِيْمَاهُمْ فِيْ وُجُوْهِهِمْ مِّنْ اَثَرِ السُّجُوْدِ
তাদের চেহারায় সিজদার আলামত রয়েছে, যা থেকে তাদেরকে (আলাদাভাবে) চেনা যায়। (সূরা ফাতহ- ২৯)
ব্যাখ্যা : সিজদা করতে করতে কোন কোন নামাযীর কপালে যে দাগ পড়ে এখানে তা বুঝানো হয়নি। এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে আল্লাহভীরুতা, হৃদয়ের বিশালতা, মর্যাদা এবং মহৎ চরিত্রের প্রভাব, যা আল্লাহর সামনে মাথা নত করার কারণে স্বাভাবিকভাবেই কোন মানুষের চেহারায় ফুটে ওঠে। মানুষের চেহারা একটি খোলা গ্রন্থের মতো- যার পাতায় মানুষের মনোজগতের অবস্থা সহজেই অবলোকন করা যেতে পারে। একজন অহংকারীর চেহারা একজন বিনম্র ও কোমল স্বভাবের মানুষের চেহারা থেকে ভিন্ন হয়ে থাকে। একজন দুশ্চরিত্রবান ব্যক্তির চেহারা একজন সচ্চরিত্রবান ব্যক্তির চেহারা থেকে আলাদা থাকে। আল্লাহ তা‘আলার এ উক্তির উদ্দেশ্য হচ্ছে, মুহাম্মাদ ﷺ এর এসব সঙ্গী-সাথি এমন যে, যে কেউ তাদের চেহারা দেখা মাত্রই অনুধাবন করতে পারবে যে, তারা সৃষ্টির সেরা। কারণ তাদের চেহারায় আল্লাহভীরুতার দীপ্তি সমুজ্জল।
তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য নিজেদের ঘরবাড়ি ত্যাগ করেছেন :
لِلْفُقَرَآءِ الْمُهَاجِرِيْنَ الَّذِيْنَ اُخْرِجُوْا مِنْ دِيَارِهِمْ وَاَمْوَالِهِمْ يَبْتَغُوْنَ فَضْلًا مِّنَ اللهِ وَرِضْوَانًا وَّيَنْصُرُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗؕ اُولٰٓئِكَ هُمُ الصَّادِقُوْنَ
(এ সম্পদ) অভাবগ্রস্ত মুহাজিরদের জন্য, যারা নিজেদের ঘরবাড়ী ও সম্পত্তি হতে বহিষ্কৃত হয়েছে। তারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনা করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সাহায্য করে। তারাই তো সত্যবাদী। (সূরা হাশর- ৮)
তারা একে অপরকে খুবই ভালোবাসতেন :
وَالَّذِيْنَ تَبَوَّءُوا الدَّارَ وَالْاِيْمَانَ مِنْ قَبْلِهِمْ يُحِبُّوْنَ مَنْ هَاجَرَ اِلَيْهِمْ
যারা তাদের (মুহাজিরদের আগমনের) পূর্ব থেকেই এ নগরীতে (মদিনায়) বসবাস করে এসেছে এবং ঈমান এনেছে, তারা তাদের নিকট যারা হিজরত করে এসেছিল তাদেরকে ভালোবাসত। (সূরা হাশর- ৯)
ব্যাখ্যা : আরববাসীদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছিলেন আল্লাহ তা‘আলা তাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব, স্নেহ ও ভালোবাসা সৃষ্টি করে দিয়েছিলেন। অথচ তারা বিভিন্ন গোত্র থেকে বের হয়ে এসেছিলেন। তাদের মধ্যে শত শত বছর থেকে শত্রুতা চলে আসছিল। বিশেষ করে আওস ও খাযরাজ গোত্রের ব্যাপারে এটা ছিল সুস্পষ্ট। মাত্র দুই থেকে তিন বছরে তাদের মধ্যে এমন গভীর বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্ব গড়ে ওঠে, যা তাদেরকে একটি সীসা ঢালা প্রাচীরে পরিণত করে।
তারা নিজেদের প্রয়োজন বাদ দিয়ে অপরের প্রয়োজন মেটাতেন :
وَيُؤْثِرُوْنَ عَلٰۤى اَنْفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ
আর তারা অভাবগ্রস্ত হলেও অন্যদেরকে নিজেদের উপর প্রাধান্য দেয়। (সূরা হাশর- ৯)
শানে নুযূল : আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা এক আনসারী লোকের বাড়িতে এক অতিথি রাত কাটালেন। তখন তাঁর কাছে তাঁর ও সন্তানদের জন্য অল্প কিছু খাদ্য ব্যতীত আর কিছুই ছিল না। তিনি তার স্ত্রীকে বললেন, বাচ্চাদের ঘুমিয়ে দাও, আলোটা বন্ধ করে দাও এবং তোমার নিকট যা কিছু আছে তাই অতিথির জন্য পেশ করো। রাবী বলেন, এ প্রেক্ষাপটে উক্ত আয়াতটি নাযিল হয়। (সহীহ মুসলিম, হা/৫২৫৫)
তাদের বিকাশ লাভের একটি দৃষ্টান্ত :
وَمَثَلُهُمْ فِى الْاِنْجِيْلِۚ كَزَرْعٍ اَخْرَجَ شَطْاَهٗ فَاٰزَرَهٗ فَاسْتَغْلَظَ فَاسْتَوٰى عَلٰى سُوْقِهٖ يُعْجِبُ الزُّرَّاعَ لِيَغِيْظَ بِهِمُ الْكُفَّارَ
আর ইঞ্জিলে তাদের উদাহরণ এভাবে দেয়া হয়েছে যে, যেন একটি বীজ বপন করা হলো, যা থেকে প্রথমে অঙ্কুর বের হলো, তারপর তা মজবুত হলো, তারপর পুষ্ট হলো, এরপর নিজের কান্ডের উপর খাড়া হয়ে গেল। (এ দৃশ্য) চাষীকে বিস্মিত করে দেয়, যাতে কাফিরদের (অন্তরে) জ্বালা সৃষ্টি হয়। (সূরা ফাতহ- ২৯)
আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন:
رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ وَرَضُوْا عَنْهُ
আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট। (সূরা তাওবা- ১০০)
তাদের জন্য জান্নাতের ওয়াদা রয়েছে :
وَاَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ تَحْتَهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَاۤ اَبَدًاؕ ذٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ
তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন জান্নাত, যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়ে গেছে এবং সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। আর এটাই মহাসাফল্য। (সূরা তাওবা- ১০০)
وَلٰكِنَّ اللهَ حَبَّبَ اِلَيْكُمُ الْاِيْمَانَ وَزَيَّنَهٗ فِيْ قُلُوْبِكُمْ
কিন্তু আল্লাহ তোমাদেরকে ঈমানের প্রতি ভালোবাসা দান করেছেন এবং তিনি তোমাদের অন্তরে তা সুশোভিত করে দিয়েছেন। (সূরা হুজুরাত- ৭)
তারা পাপকে ঘৃণা করতেন :
وَكَرَّهَ اِلَيْكُمُ الْكُفْرَ وَالْفُسُوْقَ وَالْعِصْيَانَؕ اُولٰٓئِكَ هُمُ الرَّاشِدُوْنَ
তিনি তোমাদের অন্তরে কুফরী, ফাসিকী ও নাফরমানির প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করে দিয়েছেন; আর এমন লোকেরাই সুপথে আছে। (সূরা হুজুরাত- ৭)
দুনিয়ার কাজ তাদেরকে ইবাদাত থেকে বিরত রাখতে পারত না :
رِجَالٌ لَّا تُلْهِيْهِمْ تِجَارَةٌ وَّلَا بَيْعٌ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَاِقَامِ الصَّلَاةِ وَاِيْتَآءِ الزَّكَاةِ
তারা এমন লোক, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ হতে এবং সালাত কায়েম ও যাকাত প্রদান করা হতে বিরত রাখে না। (সূরা নূর- ৩৭)
তারা কিয়ামতের বিপদকে খুবই ভয় করতেন :
يَخَافُوْنَ يَوْمًا تَتَقَلَّبُ فِيْهِ الْقُلُوْبُ وَالْاَبْصَارُ
তারা ভয় করে সেদিনকে যেদিন অনেক অমত্মর ও দৃষ্টিসমূহ বিপর্যসত্ম হয়ে পড়বে। (সূরা নূর- ৩৭)
আহত হওয়ার পরও তারা নবীর সাথে জিহাদ করতেন :
اَ لَّذِيْنَ اسْتَجَابُوْا لِلّٰهِ وَالرَّسُوْلِ مِنْ ۢبَعْدِ مَاۤ اَصَابَهُمُ الْقَرْحُؕ لِلَّذِيْنَ اَحْسَنُوْا مِنْهُمْ وَاتَّقَوْا اَجْرٌ عَظِيْمٌ
যারা আঘাত পাওয়ার পরও আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশে সাড়া দিয়েছিল, তাদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে ও তাক্বওয়া অবলম্বন করেছে, তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার। (সূরা আলে ইমরান- ১৭২)
বিরোধীদের হুমকি শুনলে তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পেয়ে যেত :
اَ لَّذِيْنَ قَالَ لَهُمُ النَّاسُ اِنَّ النَّاسَ قَدْ جَمَعُوْا لَكُمْ فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ اِيْمَانًا وَّقَالُوْا حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الْوَكِيْلُ
লোকেরা যাদেরকে বলেছিল, নিশ্চয় তোমাদের বিরুদ্ধে লোকজন সমবেত হয়েছে, অতএব তোমরা তাদেরকে ভয় করো। কিন্তু এতে তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পেয়ে গিয়েছিল এবং তারা বলেছিল, আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং মঙ্গলময় কর্মবিধায়ক। (সূরা আলে ইমরান- ১৭৩)
তারা মুমিনদের ব্যাপারে নরম এবং কাফিরদের ব্যাপারে কঠোর ছিলেন :
مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِؕ وَالَّذِيْنَ مَعَهٗۤ اَشِدَّآءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَآءُ بَيْنَهُمْ
মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল, আর যারা তাঁর সাথে আছে (অর্থাৎ সাহাবীরা) তারা কাফিরদের উপর কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে কোমল। (সূরা ফাতহ- ২৯)
ব্যাখ্যা : কাফিরদের ব্যাপারে সাহাবীদের কঠোর হওয়ার অর্থ এ নয় যে, তারা কাফিরদের সাথে কঠোর আচরণ করতেন; বরং এর অর্থ হচ্ছে, তারা তাদের ঈমানের পরিপক্কতা, নীতির দৃঢ়তা, চারিত্রিক শক্তি এবং ঈমানী দূরদর্শিতার মাধ্যমে কাফিরদের মুকাবিলায় মজবুত পাথরের মতো অনমনীয় ও আপোষহীন ছিলেন। তারা অস্থিরমনা ছিলেন না যে, কাফিররা তাদেরকে যেদিকে ইচ্ছা ঘুরিয়ে দিতে পারবে। যে মহৎ উদ্দেশ্যে তারা জীবন বাজি রেখে মুহাম্মাদ ﷺ কে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত হয়েছেন তা থেকে বিচ্যুত করার ক্ষমতা কাফিরদের ছিল না। তাদের মধ্যে যতটুকু কঠোরতা ছিল তা কাফিরদের জন্য, ঈমানদারদের জন্য নয়। ঈমানদারদের কাছে তারা বিনম্র, স্নেহশীল ও দুঃখের সাথি ছিলেন। নীতি ও উদ্দেশ্যের ঐক্য তাদের পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা ও আন্তরিকতা সৃষ্টি করে দিয়েছিল।
তারা রাতে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করতেন :
اِنَّ رَبَّكَ يَعْلَمُ اَنَّكَ تَقُوْمُ اَدْنٰى مِنْ ثُلُثَيِ اللَّيْلِ وَنِصْفَهٗ وَثُلُثَهٗ وَطَآئِفَةٌ مِّنَ الَّذِيْنَ مَعَكَ
নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক জানেন যে, তুমি জাগরণ কর কখনো রাত্রির প্রায় দুই তৃতীয়াংশ, কখনো অর্ধাংশ এবং কখনো এক তৃতীয়াংশ। আর তোমার সাথে যারা আছে তাদের একটি দলও (এ আমল করে)। (সূরা মুয্যাম্মিল- ২০)
তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইবাদাত করতেন :
تَرَاهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا يَّبْتَغُوْنَ فَضْلًا مِّنَ اللهِ وَرِضْوَانًا
যখন তুমি তাদেরকে দেখবে, তখন তাদেরকে রুকূ-সিজদা অবস্থায় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি তালাশে মগ্ন পাবে। (সূরা ফাতহ- ২৯)
তাদের চেহারাই তাদের পরিচয় বহন করত :
سِيْمَاهُمْ فِيْ وُجُوْهِهِمْ مِّنْ اَثَرِ السُّجُوْدِ
তাদের চেহারায় সিজদার আলামত রয়েছে, যা থেকে তাদেরকে (আলাদাভাবে) চেনা যায়। (সূরা ফাতহ- ২৯)
ব্যাখ্যা : সিজদা করতে করতে কোন কোন নামাযীর কপালে যে দাগ পড়ে এখানে তা বুঝানো হয়নি। এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে আল্লাহভীরুতা, হৃদয়ের বিশালতা, মর্যাদা এবং মহৎ চরিত্রের প্রভাব, যা আল্লাহর সামনে মাথা নত করার কারণে স্বাভাবিকভাবেই কোন মানুষের চেহারায় ফুটে ওঠে। মানুষের চেহারা একটি খোলা গ্রন্থের মতো- যার পাতায় মানুষের মনোজগতের অবস্থা সহজেই অবলোকন করা যেতে পারে। একজন অহংকারীর চেহারা একজন বিনম্র ও কোমল স্বভাবের মানুষের চেহারা থেকে ভিন্ন হয়ে থাকে। একজন দুশ্চরিত্রবান ব্যক্তির চেহারা একজন সচ্চরিত্রবান ব্যক্তির চেহারা থেকে আলাদা থাকে। আল্লাহ তা‘আলার এ উক্তির উদ্দেশ্য হচ্ছে, মুহাম্মাদ ﷺ এর এসব সঙ্গী-সাথি এমন যে, যে কেউ তাদের চেহারা দেখা মাত্রই অনুধাবন করতে পারবে যে, তারা সৃষ্টির সেরা। কারণ তাদের চেহারায় আল্লাহভীরুতার দীপ্তি সমুজ্জল।
তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য নিজেদের ঘরবাড়ি ত্যাগ করেছেন :
لِلْفُقَرَآءِ الْمُهَاجِرِيْنَ الَّذِيْنَ اُخْرِجُوْا مِنْ دِيَارِهِمْ وَاَمْوَالِهِمْ يَبْتَغُوْنَ فَضْلًا مِّنَ اللهِ وَرِضْوَانًا وَّيَنْصُرُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗؕ اُولٰٓئِكَ هُمُ الصَّادِقُوْنَ
(এ সম্পদ) অভাবগ্রস্ত মুহাজিরদের জন্য, যারা নিজেদের ঘরবাড়ী ও সম্পত্তি হতে বহিষ্কৃত হয়েছে। তারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনা করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সাহায্য করে। তারাই তো সত্যবাদী। (সূরা হাশর- ৮)
তারা একে অপরকে খুবই ভালোবাসতেন :
وَالَّذِيْنَ تَبَوَّءُوا الدَّارَ وَالْاِيْمَانَ مِنْ قَبْلِهِمْ يُحِبُّوْنَ مَنْ هَاجَرَ اِلَيْهِمْ
যারা তাদের (মুহাজিরদের আগমনের) পূর্ব থেকেই এ নগরীতে (মদিনায়) বসবাস করে এসেছে এবং ঈমান এনেছে, তারা তাদের নিকট যারা হিজরত করে এসেছিল তাদেরকে ভালোবাসত। (সূরা হাশর- ৯)
ব্যাখ্যা : আরববাসীদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছিলেন আল্লাহ তা‘আলা তাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব, স্নেহ ও ভালোবাসা সৃষ্টি করে দিয়েছিলেন। অথচ তারা বিভিন্ন গোত্র থেকে বের হয়ে এসেছিলেন। তাদের মধ্যে শত শত বছর থেকে শত্রুতা চলে আসছিল। বিশেষ করে আওস ও খাযরাজ গোত্রের ব্যাপারে এটা ছিল সুস্পষ্ট। মাত্র দুই থেকে তিন বছরে তাদের মধ্যে এমন গভীর বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্ব গড়ে ওঠে, যা তাদেরকে একটি সীসা ঢালা প্রাচীরে পরিণত করে।
তারা নিজেদের প্রয়োজন বাদ দিয়ে অপরের প্রয়োজন মেটাতেন :
وَيُؤْثِرُوْنَ عَلٰۤى اَنْفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ
আর তারা অভাবগ্রস্ত হলেও অন্যদেরকে নিজেদের উপর প্রাধান্য দেয়। (সূরা হাশর- ৯)
শানে নুযূল : আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা এক আনসারী লোকের বাড়িতে এক অতিথি রাত কাটালেন। তখন তাঁর কাছে তাঁর ও সন্তানদের জন্য অল্প কিছু খাদ্য ব্যতীত আর কিছুই ছিল না। তিনি তার স্ত্রীকে বললেন, বাচ্চাদের ঘুমিয়ে দাও, আলোটা বন্ধ করে দাও এবং তোমার নিকট যা কিছু আছে তাই অতিথির জন্য পেশ করো। রাবী বলেন, এ প্রেক্ষাপটে উক্ত আয়াতটি নাযিল হয়। (সহীহ মুসলিম, হা/৫২৫৫)
তাদের বিকাশ লাভের একটি দৃষ্টান্ত :
وَمَثَلُهُمْ فِى الْاِنْجِيْلِۚ كَزَرْعٍ اَخْرَجَ شَطْاَهٗ فَاٰزَرَهٗ فَاسْتَغْلَظَ فَاسْتَوٰى عَلٰى سُوْقِهٖ يُعْجِبُ الزُّرَّاعَ لِيَغِيْظَ بِهِمُ الْكُفَّارَ
আর ইঞ্জিলে তাদের উদাহরণ এভাবে দেয়া হয়েছে যে, যেন একটি বীজ বপন করা হলো, যা থেকে প্রথমে অঙ্কুর বের হলো, তারপর তা মজবুত হলো, তারপর পুষ্ট হলো, এরপর নিজের কান্ডের উপর খাড়া হয়ে গেল। (এ দৃশ্য) চাষীকে বিস্মিত করে দেয়, যাতে কাফিরদের (অন্তরে) জ্বালা সৃষ্টি হয়। (সূরা ফাতহ- ২৯)
আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন:
رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ وَرَضُوْا عَنْهُ
আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট। (সূরা তাওবা- ১০০)
তাদের জন্য জান্নাতের ওয়াদা রয়েছে :
وَاَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ تَحْتَهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَاۤ اَبَدًاؕ ذٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ
তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন জান্নাত, যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়ে গেছে এবং সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। আর এটাই মহাসাফল্য। (সূরা তাওবা- ১০০)
আল্লাহর ফেরেশতারা তাদের সান্ত্বনা দেয় :
اِنَّ الَّذِيْنَ قَالُوْا رَبُّنَا اللهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوْا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَآئِكَةُ اَلَّا تَخَافُوْا وَلَا تَحْزَنُوْا وَاَبْشِرُوْا بِالْجَنَّةِ الَّتِيْ كُنْتُمْ تُوْعَدُوْنَ ‐ نَحْنُ اَوْلِيَآؤُكُمْ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِى الْاٰخِرَةِۚ وَلَكُمْ فِيْهَا مَا تَشْتَهِيْۤ اَنْفُسُكُمْ وَلَكُمْ فِيْهَا مَا تَدَّعُوْنَ ‐ نُزُلًا مِّنْ غَفُوْرٍ رَّحِيْمٍ
নিশ্চয় যারা বলে, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, অতঃপর তাতে অবিচল থাকে, তাদের নিকট ফেরেশতারা অবতীর্ণ হয় এবং বলে, তোমরা ভীত হয়ো না এবং চিন্তিত হয়ো না, বরং তোমাদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল তার সুসংবাদ পেয়ে আনন্দিত হও। দুনিয়ার জীবনে ও আখিরাতে আমরাই তোমাদের বন্ধু; সেখানে তোমরা নিজেদের জন্য যা ইচ্ছা করবে, তা-ই তোমাদের জন্য প্রস্তুত রয়েছে এবং সেখানে তোমরা যা আহবান করবে, তোমাদের জন্য তাও রয়েছে। এটা হলো ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ হতে আপ্যায়ন। (সূরা হা-মীম সাজদা, ৩০-৩২)
ব্যাখ্যা : যে পরিস্থিতিতে এ আয়াতগুলো নাযিল হয়েছে সে সম্পর্কে যদি গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করা যায় তাহলে এ পার্থিব জীবনে ইসলামী জীবনব্যবস্থাকে সমুন্নত করার জন্য যারা জীবন দান করছেন তাদের কাছে ফেরেশতাদের অবতরণের কথা বর্ণনা করাই এখানে মূল উদ্দেশ্য। যাতে করে তারা প্রশান্তি লাভ করতে পারে, মনোবল ফিরে পায় এবং তাদের হৃদয়-মন এই অনুভূতিতে পরিতৃপ্ত হয় যে, তারা সহযোগী ও বন্ধুহীন নয়, বরং আল্লাহর ফেরেশতারা তাদের সাথে আছেন। যে পরিস্থিতিতে এ কথা বলা হয়েছে তা এমন ছিল যে, যে ব্যক্তিই মুসলিম হওয়ার কথা প্রকাশ করত তার উপর বিপদের ঝড় নেমে আসত। যে ব্যক্তি আরো একটু অগ্রসর হয়ে ইসলাম প্রচারের জন্য মুখ খুলত, সে যেন নিজেকে ছিঁড়ে-ফেড়ে খাওয়ার জন্য হিংস্র পশুপালকে আহবান জানাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তির আল্লাহকে রব হিসেবে স্বীকার করে সোজা পথ গ্রহণ করা এবং তা থেকে বিচ্যুত না হওয়া নিঃসন্দেহে বড় মর্যাদার কাজ।
যদিও মৃত্যুর সময় ফেরেশতারা ঈমানদারদেরকে স্বাগত জানাতে আসে, কবরেও তারা তাদেরকে স্বাগত জানায় এবং কিয়ামতের দিনও হাশরের শুরু থেকে জান্নাতে পৌঁছা পর্যন্ত সবসময় তারা তাদের সাথে থাকবে। তবে তাদের এ সঙ্গ কেবল পরকালীন জগতের জন্যই নির্দিষ্ট নয়, এ পৃথিবীতেও চলছে। উল্লেখিত আয়াতে কথার ধারাবাহিকতাই বলে দিচ্ছে, হক ও বাতিলের সংঘাতে বাতিলের অনুসারীদের সাথে যেমন শয়তান ও অপরাধীরা থাকে, তেমনি ঈমানদারদের সাথে ফেরেশতারাও থাকে। একদিকে বাতিলপন্থীদের কৃতকর্মসমূহকে তাদের সঙ্গী-সাথিরা সুন্দর করে দেখায় এবং তাদেরকে এ মর্মে নিশ্চয়তা দেয় যে, সত্যকে হেয় করার জন্য তোমরা যে যুলুম-অত্যাচার করছ সেটিই তোমাদের সফলতার উপায় এবং এভাবে পৃথিবীতে তোমাদের নেতৃত্ব নিরাপদ ও সুরক্ষিত থাকবে। অপরদিকে হকপন্থীদের কাছেও আল্লাহর ফেরেশতারা এসে এসব সুখবর পেশ করে।
পৃথিবীতে ফেরেশতাদের এ উপদেশের অর্থ হচ্ছে, বাতিল শক্তি যতই স্বৈরাচারী হোক না কেন তাদেরকে দেখে কখনো ভীত হয়ো না এবং হকের অনুসারী হওয়ার কারণে যত দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে হয় হোক, সেজন্য দুঃখ করো না। কেননা, এর বিনিময়ে ভবিষ্যতে তোমাদের জন্য এমন কিছু আছে, যার কাছে দুনিয়ার সমস্ত নিয়ামত তুচ্ছ। মৃত্যুর সময় ফেরেশতারা যখন এই কথাগুলো বলে তখন তার অর্থ দাঁড়ায়, তুমি সামনে যে গন্তব্যস্থলের দিকে অগ্রসর হচ্ছ সেখানে তোমার জন্য ভয়ের কোন কারণ নেই। কেননা সেখানে তোমার জন্য জান্নাত অপেক্ষমান। আর দুনিয়াতে তুমি যা কিছু ছেড়ে যাচ্ছ, সেজন্য তোমার দুঃখভারাক্রান্ত হওয়ারও প্রয়োজন নেই। কেননা এখানে আমরা তোমাদের অভিভাবক ও বন্ধু। আলমে বারযাখ ও হাশরের ময়দানে যখন ফেরেশতারা এ কথাগুলো বলবে তখন তার অর্থ হবে, এখানে তোমাদের জন্য কেবল শান্তি আর শান্তি। পার্থিব জীবনে তোমরা যে পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছ, সেজন্য দুঃখ করো না এবং আখিরাতে যা কিছু সামনে আসবে, সেজন্য ভয় করবে না। কারণ আমরা তোমাদেরকে সেই জান্নাতের সুসংবাদ দিচ্ছি, যার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।
আল্লাহর ইবাদাতের উপর দৃঢ়পদ হওয়া এবং এ পথ গ্রহণ করার পর পুনরায় তা থেকে বিচ্যুত না হওয়াটা এমন এক মৌলিক নেকী, যা মানুষকে ফেরেশতাদের বন্ধু এবং জান্নাতের উপযুক্ত বানিয়ে দেয়। এর পরবর্তী স্তর হচ্ছে, তোমরা নিজে নেক কাজ করো, অন্যদেরকে আল্লাহর দিকে আহবান করো এবং ঘোষণা করো যে, ‘আমি মুসলিম’। মানুষের জন্য এর চেয়ে উচ্চ স্তর আর নেই।
আজ হোক বা কাল হোক বিরোধীরা ধ্বংস হবেই :
فَاِمَّا نَذْهَبَنَّ بِكَ فَاِنَّا مِنْهُمْ مُّنْتَقِمُوْنَ ‐ اَوْ نُرِيَنَّكَ الَّذِيْ وَعَدْنَاهُمْ فَاِنَّا عَلَيْهِمْ مُّقْتَدِرُوْنَ
আমি যদিও তোমার মৃত্যু ঘটাই, তবুও আমি তাদের প্রতিশোধ নেব! অথবা আমি তাদেরকে যে আযাবের ওয়াদা করেছি যদি আমি তোমাকে তা প্রত্যক্ষ করাই, তবে (জেনে রেখো) তাদের উপর আমার পূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে। (সূরা যুখরুফ- ৪১, ৪২)
আবু লাহাব ও তার স্ত্রী ধ্বংস হয়েছে :
تَبَّتْ يَدَاۤ اَبِيْ لَهَبٍ وَّتَبَّ ‐ مَاۤ اَغْنٰى عَنْهُ مَالُهٗ وَمَا كَسَبَ ‐ سَيَصْلٰى نَارًا ذَاتَ لَهَبٍ ‐ وَامْرَاَتُهٗ حَمَّالَةَ الْحَطَبِ ‐ فِيْ جِيْدِهَا حَبْلٌ مِّنْ مَّسَدٍ
আবু লাহাবের দু’হাতই ধ্বংস হয়ে যাক এবং ধ্বংস হয়ে যাক সে নিজেও। তার ধনসম্পদ ও আয়-উপার্জন তার কোন কাজে আসবে না। অচিরেই সে লেলিহান শিখাবিশিষ্ট আগুনে প্রবেশ করবে। ধ্বংস হয়ে যাক তার স্ত্রীও, যে কাঠের বোঝা বহন করে। (অবস্থা দেখে মনে হবে) তার গলায় যেন খেজুর পাতার পাকানো শক্ত কোন রশি জড়িয়ে আছে। (সূরা লাহাব)
অতীতের লোকেরাও ধ্বংস হয়েছে :
قُتِلَ اَصْحَابُ الْاُخْدُوْدِ ‐ اَلنَّارِ ذَاتِ الْوَقُوْدِ ‐ اِذْ هُمْ عَلَيْهَا قُعُوْدٌ ‐ وَهُمْ عَلٰى مَا يَفْعَلُوْنَ بِالْمُؤْمِنِيْنَ شُهُوْدٌ ‐ وَمَا نَقَمُوْا مِنْهُمْ اِلَّاۤ اَنْ يُّؤْمِنُوْا بِاللهِ الْعَزِيْزِ الْحَمِيْدِ
ধ্বংস হয়েছে গুহাবাসী, যারা ছিল ইন্ধনপূর্ণ অগ্নিওয়ালা। যখন তারা তার পাশে বসেছিল এবং তারা মুমিনদের সাথে যা করেছিল তা প্রত্যক্ষ করছিল। তারা তাদেরকে নির্যাতন করেছিল শুধুমাত্র এ কারণে যে, তারা এক পরাক্রমশালী ও প্রশংসিত আল্লাহর উপর ঈমান এনেছিল। (সূরা বুরুজ, ৪-৮)
বিরোধীদেরকে একটু সুযোগ দেয়া হচ্ছে :
اِنَّهُمْ يَكِيْدُوْنَ كَيْدًا ‐ وَاَكِيْدُ كَيْدًا ‐ فَمَهِّلِ الْكَافِرِيْنَ اَمْهِلْهُمْ رُوَيْدًا
নিশ্চয় তারা (আমার বিরুদ্ধে) ভীষণ চক্রান্ত করছে, আর আমিও একটি কৌশল অবলম্বন করেছি। অতএব কাফিরদেরকে অবকাশ দাও; আর তাদেরকে অবকাশ দাও কিছুকালের জন্য। (সূরা তারেক, ১৫-১৭)
ব্যাখ্যা : যারা প্রকৃত সত্য সম্পর্কে অবহিত নয় তারা মিথ্যার মুকাবিলায় সত্যের দুর্বলতা এবং বাতিল মতাদর্শের পার্থিব সাফল্য দেখে এ ধারণা করতে থাকে, হয়তো মহান আল্লাহ বাতিলপন্থীদেরকে এ দুনিয়ায় কর্তৃত্বশীল দেখতে চান। ফলে তারা এ সিদ্ধান্তে পৌঁছে যে, সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম আসলে অর্থহীন। এ অবস্থায় কুফরী ও ফাসিকী শাসনের আওতায় দ্বীনের পথে চলার যে সামান্যতম অনুমতিটুকু পাওয়া যাচ্ছে তাতেই সন্তুষ্ট থাকা উচিত। কিন্তু আসল ব্যাপার হচ্ছে, আল্লাহ বাতিলপন্থীদেরকে একটু সুযোগ দিতে চান যাতে তারা শাস্তির পুরোপোরি উপযুক্ত হয়ে যায়।
যারা মুসলিমদেরকে নির্যাতন করেছে তারা রেহাই পাবে না :
اِنَّ الَّذِيْنَ فَتَنُوا الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ ثُمَّ لَمْ يَتُوْبُوْا فَلَهُمْ عَذَابُ جَهَنَّمَ وَلَهُمْ عَذَابُ الْحَرِيْقِ
যারা ঈমানদার নর-নারীর উপর যুলুম-নির্যাতন করেছে এবং পরে তাওবা করেনি, তাদের জন্য জাহান্নামের আযাব ও দহন যন্ত্রণা প্রস্তুত রয়েছে। (সূরা বুরুজ- ১০)
দুঃখের পরে সুখ আসবেই :
فَاِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا ‐ اِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا
আর কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে। নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে। (সূরা ইনশিরাহ- ৫, ৬)
আল্লাহ দ্বীনকে বিজয় দান করবেনই :
كَتَبَ اللهُ لَاَغْلِبَنَّ اَنَاْ وَرُسُلِيْۤ اِنَّ اللهَ قَوِيٌّ عَزِيْزٌ
আল্লাহ লিখে রেখেছেন যে, আমি এবং আমার রাসূলগণ অবশ্যই বিজয় লাভ করব। নিশ্চয় আল্লাহ মহাশক্তিধর ও মহাপ্রতাপশালী। (সূরা মুজাদালা- ২১)
يُرِيْدُوْنَ لِيُطْفِئُوْا نُوْرَ اللهِ بِاَفْوَاهِهِمْ وَاللهُ مُتِمُّ نُوْرِهٖ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُوْنَ
তারা আল্লাহর নূর (শরীয়াত) তাদের মুখ দিয়ে নিভিয়ে দিতে চায়; কিন্তু আল্লাহ তাঁর নূর পূর্ণরূপে প্রকাশকারী, যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে। (সূরা সাফ- ৮)
আল্লাহ সত্য দিয়ে মিথ্যাকে ধ্বংস করেন :
بَلْ نَقْذِفُ بِالْحَقِّ عَلَى الْبَاطِلِ فَيَدْمَغُهٗ فَاِذَا هُوَ زَاهِقٌ
কিন্তু আমি সত্য দ্বারা মিথ্যার উপর আঘাত হানি; ফলে তা মিথ্যাকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দেয় এবং সাথে সাথেই তা নিশ্চি হ্ন হয়ে যায়। (সূরা আম্বিয়া- ১৮)
সত্যের বিজয় হবেই :
وَقُلْ جَآءَ الْحَقُّ وَزَهَقَ الْبَاطِلُ اِنَّ الْبَاطِلَ كَانَ زَهُوْقًا
বলো, সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে; অবশ্যই মিথ্যা বিলুপ্ত হবেই। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৮১)
قُلْ جَآءَ الْحَقُّ وَمَا يُبْدِئُ الْبَاطِلُ وَمَا يُعِيْدُ
বলো, সত্য এসে পড়েছে এবং অসত্য নতুন কিছু সৃষ্টিও করতে পারে না, আর পুনরাবৃত্তিও ঘটাতে পারে না। (সূরা সাবা- ৪৯)
ব্যাখ্যা : এটা আল্লাহর নিয়ম যে, তিনি বাতিলকে কখনো স্থায়িত্ব দান করেন না। একসময় তিনি সত্যকে সত্য হিসেবে প্রমাণ করে দেখিয়ে দেন। বর্তমানে যে কুফরী ও শিরকের অজ্ঞতার ছায়া চারদিকে ছেয়ে আছে এটা কোন স্থায়ী জিনিস নয়। তবে আল্লাহ কখনো আকস্মিক পরিবর্তন আনেন না। বস্তুজগতে যেমনিভাবে সূর্য ধীরে ধীরে উদিত হয় এবং অন্ধকারের ছায়া ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়, ঠিক তেমনিভাবে চিন্তা ও নৈতিকতার জগতেও হেদায়াতের সূর্যের উত্থান ও ভ্রষ্টতার ছায়ার পতন ধীরে ধীরেই হবে। জাহেলিয়াতের রাত শেষ হয়ে গেছে; এখন জ্ঞান, চেতনা ও হেদায়াতের উজ্জ্বল দিবালোকের উদয় ঘটেছে। সুতরাং দেরিতে হলেও ঘুমন্তরা জেগে উঠবেই। তবে যাদের ঘুম হলো মৃত্যুর ঘুম, তারা আর জাগবে না। তাদের না জাগাটাই হবে তাদের নিজেদের জন্য জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া। দ্বীনের কাজ তাদের কারণে বন্ধ হয়ে যাবে না। শুরুতে সত্যের শত্রুরা যতই সফলতার অধিকারী হোক না কেন শেষে একমাত্র তারাই সফলকাম হয়, যারা আল্লাহর ভয়ে কুচিন্তা ও কুকর্মের ভুলপথ ত্যাগ করে হকের উপর কাজ করে। কাজেই এখন যেসব বিপদাপদ ও দুঃখ-কষ্টের মুখোমুখি হতে হচ্ছে এবং হকের দাওয়াতকে দাবিয়ে দেয়ার জন্য বিরোধীদের আপাত দৃষ্টিতে যে সাফল্য দেখা যাচ্ছে, তাতে মন খারাপ করার প্রয়োজন নেই। বরং ধৈর্য ও সাহসিকতার সাথে কাজ করে যেতে হবে। যখন আল্লাহ এ দ্বীনের জন্য জীবন উৎসর্গকারীদের সাফল্য ও বিজয় দান করবেন তখন যারা সত্য দ্বীনের জন্য নিজেদের গায়ে বিন্দুমাত্র আঘাত নিতেও প্রস্তুত নয়; তারা বিজয়ের ফল ভোগ করে নেয়ার জন্য এসে বলবে, আমরা তো তোমাদের সাথেই ছিলাম; তোমাদের সাফল্যের জন্য দু‘আ করেছিলাম। কিন্তু এসব সুযোগ সন্ধানী লোক যখনই দেখে যে, ইসলামের পথ কঠিন হয়ে গেছে তখনই তারা নিরাপত্তা লাভের অজুহাতে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
اِنَّ الَّذِيْنَ قَالُوْا رَبُّنَا اللهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوْا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَآئِكَةُ اَلَّا تَخَافُوْا وَلَا تَحْزَنُوْا وَاَبْشِرُوْا بِالْجَنَّةِ الَّتِيْ كُنْتُمْ تُوْعَدُوْنَ ‐ نَحْنُ اَوْلِيَآؤُكُمْ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِى الْاٰخِرَةِۚ وَلَكُمْ فِيْهَا مَا تَشْتَهِيْۤ اَنْفُسُكُمْ وَلَكُمْ فِيْهَا مَا تَدَّعُوْنَ ‐ نُزُلًا مِّنْ غَفُوْرٍ رَّحِيْمٍ
নিশ্চয় যারা বলে, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, অতঃপর তাতে অবিচল থাকে, তাদের নিকট ফেরেশতারা অবতীর্ণ হয় এবং বলে, তোমরা ভীত হয়ো না এবং চিন্তিত হয়ো না, বরং তোমাদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল তার সুসংবাদ পেয়ে আনন্দিত হও। দুনিয়ার জীবনে ও আখিরাতে আমরাই তোমাদের বন্ধু; সেখানে তোমরা নিজেদের জন্য যা ইচ্ছা করবে, তা-ই তোমাদের জন্য প্রস্তুত রয়েছে এবং সেখানে তোমরা যা আহবান করবে, তোমাদের জন্য তাও রয়েছে। এটা হলো ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ হতে আপ্যায়ন। (সূরা হা-মীম সাজদা, ৩০-৩২)
ব্যাখ্যা : যে পরিস্থিতিতে এ আয়াতগুলো নাযিল হয়েছে সে সম্পর্কে যদি গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করা যায় তাহলে এ পার্থিব জীবনে ইসলামী জীবনব্যবস্থাকে সমুন্নত করার জন্য যারা জীবন দান করছেন তাদের কাছে ফেরেশতাদের অবতরণের কথা বর্ণনা করাই এখানে মূল উদ্দেশ্য। যাতে করে তারা প্রশান্তি লাভ করতে পারে, মনোবল ফিরে পায় এবং তাদের হৃদয়-মন এই অনুভূতিতে পরিতৃপ্ত হয় যে, তারা সহযোগী ও বন্ধুহীন নয়, বরং আল্লাহর ফেরেশতারা তাদের সাথে আছেন। যে পরিস্থিতিতে এ কথা বলা হয়েছে তা এমন ছিল যে, যে ব্যক্তিই মুসলিম হওয়ার কথা প্রকাশ করত তার উপর বিপদের ঝড় নেমে আসত। যে ব্যক্তি আরো একটু অগ্রসর হয়ে ইসলাম প্রচারের জন্য মুখ খুলত, সে যেন নিজেকে ছিঁড়ে-ফেড়ে খাওয়ার জন্য হিংস্র পশুপালকে আহবান জানাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তির আল্লাহকে রব হিসেবে স্বীকার করে সোজা পথ গ্রহণ করা এবং তা থেকে বিচ্যুত না হওয়া নিঃসন্দেহে বড় মর্যাদার কাজ।
যদিও মৃত্যুর সময় ফেরেশতারা ঈমানদারদেরকে স্বাগত জানাতে আসে, কবরেও তারা তাদেরকে স্বাগত জানায় এবং কিয়ামতের দিনও হাশরের শুরু থেকে জান্নাতে পৌঁছা পর্যন্ত সবসময় তারা তাদের সাথে থাকবে। তবে তাদের এ সঙ্গ কেবল পরকালীন জগতের জন্যই নির্দিষ্ট নয়, এ পৃথিবীতেও চলছে। উল্লেখিত আয়াতে কথার ধারাবাহিকতাই বলে দিচ্ছে, হক ও বাতিলের সংঘাতে বাতিলের অনুসারীদের সাথে যেমন শয়তান ও অপরাধীরা থাকে, তেমনি ঈমানদারদের সাথে ফেরেশতারাও থাকে। একদিকে বাতিলপন্থীদের কৃতকর্মসমূহকে তাদের সঙ্গী-সাথিরা সুন্দর করে দেখায় এবং তাদেরকে এ মর্মে নিশ্চয়তা দেয় যে, সত্যকে হেয় করার জন্য তোমরা যে যুলুম-অত্যাচার করছ সেটিই তোমাদের সফলতার উপায় এবং এভাবে পৃথিবীতে তোমাদের নেতৃত্ব নিরাপদ ও সুরক্ষিত থাকবে। অপরদিকে হকপন্থীদের কাছেও আল্লাহর ফেরেশতারা এসে এসব সুখবর পেশ করে।
পৃথিবীতে ফেরেশতাদের এ উপদেশের অর্থ হচ্ছে, বাতিল শক্তি যতই স্বৈরাচারী হোক না কেন তাদেরকে দেখে কখনো ভীত হয়ো না এবং হকের অনুসারী হওয়ার কারণে যত দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে হয় হোক, সেজন্য দুঃখ করো না। কেননা, এর বিনিময়ে ভবিষ্যতে তোমাদের জন্য এমন কিছু আছে, যার কাছে দুনিয়ার সমস্ত নিয়ামত তুচ্ছ। মৃত্যুর সময় ফেরেশতারা যখন এই কথাগুলো বলে তখন তার অর্থ দাঁড়ায়, তুমি সামনে যে গন্তব্যস্থলের দিকে অগ্রসর হচ্ছ সেখানে তোমার জন্য ভয়ের কোন কারণ নেই। কেননা সেখানে তোমার জন্য জান্নাত অপেক্ষমান। আর দুনিয়াতে তুমি যা কিছু ছেড়ে যাচ্ছ, সেজন্য তোমার দুঃখভারাক্রান্ত হওয়ারও প্রয়োজন নেই। কেননা এখানে আমরা তোমাদের অভিভাবক ও বন্ধু। আলমে বারযাখ ও হাশরের ময়দানে যখন ফেরেশতারা এ কথাগুলো বলবে তখন তার অর্থ হবে, এখানে তোমাদের জন্য কেবল শান্তি আর শান্তি। পার্থিব জীবনে তোমরা যে পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছ, সেজন্য দুঃখ করো না এবং আখিরাতে যা কিছু সামনে আসবে, সেজন্য ভয় করবে না। কারণ আমরা তোমাদেরকে সেই জান্নাতের সুসংবাদ দিচ্ছি, যার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।
আল্লাহর ইবাদাতের উপর দৃঢ়পদ হওয়া এবং এ পথ গ্রহণ করার পর পুনরায় তা থেকে বিচ্যুত না হওয়াটা এমন এক মৌলিক নেকী, যা মানুষকে ফেরেশতাদের বন্ধু এবং জান্নাতের উপযুক্ত বানিয়ে দেয়। এর পরবর্তী স্তর হচ্ছে, তোমরা নিজে নেক কাজ করো, অন্যদেরকে আল্লাহর দিকে আহবান করো এবং ঘোষণা করো যে, ‘আমি মুসলিম’। মানুষের জন্য এর চেয়ে উচ্চ স্তর আর নেই।
আজ হোক বা কাল হোক বিরোধীরা ধ্বংস হবেই :
فَاِمَّا نَذْهَبَنَّ بِكَ فَاِنَّا مِنْهُمْ مُّنْتَقِمُوْنَ ‐ اَوْ نُرِيَنَّكَ الَّذِيْ وَعَدْنَاهُمْ فَاِنَّا عَلَيْهِمْ مُّقْتَدِرُوْنَ
আমি যদিও তোমার মৃত্যু ঘটাই, তবুও আমি তাদের প্রতিশোধ নেব! অথবা আমি তাদেরকে যে আযাবের ওয়াদা করেছি যদি আমি তোমাকে তা প্রত্যক্ষ করাই, তবে (জেনে রেখো) তাদের উপর আমার পূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে। (সূরা যুখরুফ- ৪১, ৪২)
আবু লাহাব ও তার স্ত্রী ধ্বংস হয়েছে :
تَبَّتْ يَدَاۤ اَبِيْ لَهَبٍ وَّتَبَّ ‐ مَاۤ اَغْنٰى عَنْهُ مَالُهٗ وَمَا كَسَبَ ‐ سَيَصْلٰى نَارًا ذَاتَ لَهَبٍ ‐ وَامْرَاَتُهٗ حَمَّالَةَ الْحَطَبِ ‐ فِيْ جِيْدِهَا حَبْلٌ مِّنْ مَّسَدٍ
আবু লাহাবের দু’হাতই ধ্বংস হয়ে যাক এবং ধ্বংস হয়ে যাক সে নিজেও। তার ধনসম্পদ ও আয়-উপার্জন তার কোন কাজে আসবে না। অচিরেই সে লেলিহান শিখাবিশিষ্ট আগুনে প্রবেশ করবে। ধ্বংস হয়ে যাক তার স্ত্রীও, যে কাঠের বোঝা বহন করে। (অবস্থা দেখে মনে হবে) তার গলায় যেন খেজুর পাতার পাকানো শক্ত কোন রশি জড়িয়ে আছে। (সূরা লাহাব)
অতীতের লোকেরাও ধ্বংস হয়েছে :
قُتِلَ اَصْحَابُ الْاُخْدُوْدِ ‐ اَلنَّارِ ذَاتِ الْوَقُوْدِ ‐ اِذْ هُمْ عَلَيْهَا قُعُوْدٌ ‐ وَهُمْ عَلٰى مَا يَفْعَلُوْنَ بِالْمُؤْمِنِيْنَ شُهُوْدٌ ‐ وَمَا نَقَمُوْا مِنْهُمْ اِلَّاۤ اَنْ يُّؤْمِنُوْا بِاللهِ الْعَزِيْزِ الْحَمِيْدِ
ধ্বংস হয়েছে গুহাবাসী, যারা ছিল ইন্ধনপূর্ণ অগ্নিওয়ালা। যখন তারা তার পাশে বসেছিল এবং তারা মুমিনদের সাথে যা করেছিল তা প্রত্যক্ষ করছিল। তারা তাদেরকে নির্যাতন করেছিল শুধুমাত্র এ কারণে যে, তারা এক পরাক্রমশালী ও প্রশংসিত আল্লাহর উপর ঈমান এনেছিল। (সূরা বুরুজ, ৪-৮)
বিরোধীদেরকে একটু সুযোগ দেয়া হচ্ছে :
اِنَّهُمْ يَكِيْدُوْنَ كَيْدًا ‐ وَاَكِيْدُ كَيْدًا ‐ فَمَهِّلِ الْكَافِرِيْنَ اَمْهِلْهُمْ رُوَيْدًا
নিশ্চয় তারা (আমার বিরুদ্ধে) ভীষণ চক্রান্ত করছে, আর আমিও একটি কৌশল অবলম্বন করেছি। অতএব কাফিরদেরকে অবকাশ দাও; আর তাদেরকে অবকাশ দাও কিছুকালের জন্য। (সূরা তারেক, ১৫-১৭)
ব্যাখ্যা : যারা প্রকৃত সত্য সম্পর্কে অবহিত নয় তারা মিথ্যার মুকাবিলায় সত্যের দুর্বলতা এবং বাতিল মতাদর্শের পার্থিব সাফল্য দেখে এ ধারণা করতে থাকে, হয়তো মহান আল্লাহ বাতিলপন্থীদেরকে এ দুনিয়ায় কর্তৃত্বশীল দেখতে চান। ফলে তারা এ সিদ্ধান্তে পৌঁছে যে, সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম আসলে অর্থহীন। এ অবস্থায় কুফরী ও ফাসিকী শাসনের আওতায় দ্বীনের পথে চলার যে সামান্যতম অনুমতিটুকু পাওয়া যাচ্ছে তাতেই সন্তুষ্ট থাকা উচিত। কিন্তু আসল ব্যাপার হচ্ছে, আল্লাহ বাতিলপন্থীদেরকে একটু সুযোগ দিতে চান যাতে তারা শাস্তির পুরোপোরি উপযুক্ত হয়ে যায়।
যারা মুসলিমদেরকে নির্যাতন করেছে তারা রেহাই পাবে না :
اِنَّ الَّذِيْنَ فَتَنُوا الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ ثُمَّ لَمْ يَتُوْبُوْا فَلَهُمْ عَذَابُ جَهَنَّمَ وَلَهُمْ عَذَابُ الْحَرِيْقِ
যারা ঈমানদার নর-নারীর উপর যুলুম-নির্যাতন করেছে এবং পরে তাওবা করেনি, তাদের জন্য জাহান্নামের আযাব ও দহন যন্ত্রণা প্রস্তুত রয়েছে। (সূরা বুরুজ- ১০)
দুঃখের পরে সুখ আসবেই :
فَاِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا ‐ اِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا
আর কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে। নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে। (সূরা ইনশিরাহ- ৫, ৬)
আল্লাহ দ্বীনকে বিজয় দান করবেনই :
كَتَبَ اللهُ لَاَغْلِبَنَّ اَنَاْ وَرُسُلِيْۤ اِنَّ اللهَ قَوِيٌّ عَزِيْزٌ
আল্লাহ লিখে রেখেছেন যে, আমি এবং আমার রাসূলগণ অবশ্যই বিজয় লাভ করব। নিশ্চয় আল্লাহ মহাশক্তিধর ও মহাপ্রতাপশালী। (সূরা মুজাদালা- ২১)
يُرِيْدُوْنَ لِيُطْفِئُوْا نُوْرَ اللهِ بِاَفْوَاهِهِمْ وَاللهُ مُتِمُّ نُوْرِهٖ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُوْنَ
তারা আল্লাহর নূর (শরীয়াত) তাদের মুখ দিয়ে নিভিয়ে দিতে চায়; কিন্তু আল্লাহ তাঁর নূর পূর্ণরূপে প্রকাশকারী, যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে। (সূরা সাফ- ৮)
আল্লাহ সত্য দিয়ে মিথ্যাকে ধ্বংস করেন :
بَلْ نَقْذِفُ بِالْحَقِّ عَلَى الْبَاطِلِ فَيَدْمَغُهٗ فَاِذَا هُوَ زَاهِقٌ
কিন্তু আমি সত্য দ্বারা মিথ্যার উপর আঘাত হানি; ফলে তা মিথ্যাকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দেয় এবং সাথে সাথেই তা নিশ্চি হ্ন হয়ে যায়। (সূরা আম্বিয়া- ১৮)
সত্যের বিজয় হবেই :
وَقُلْ جَآءَ الْحَقُّ وَزَهَقَ الْبَاطِلُ اِنَّ الْبَاطِلَ كَانَ زَهُوْقًا
বলো, সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে; অবশ্যই মিথ্যা বিলুপ্ত হবেই। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৮১)
قُلْ جَآءَ الْحَقُّ وَمَا يُبْدِئُ الْبَاطِلُ وَمَا يُعِيْدُ
বলো, সত্য এসে পড়েছে এবং অসত্য নতুন কিছু সৃষ্টিও করতে পারে না, আর পুনরাবৃত্তিও ঘটাতে পারে না। (সূরা সাবা- ৪৯)
ব্যাখ্যা : এটা আল্লাহর নিয়ম যে, তিনি বাতিলকে কখনো স্থায়িত্ব দান করেন না। একসময় তিনি সত্যকে সত্য হিসেবে প্রমাণ করে দেখিয়ে দেন। বর্তমানে যে কুফরী ও শিরকের অজ্ঞতার ছায়া চারদিকে ছেয়ে আছে এটা কোন স্থায়ী জিনিস নয়। তবে আল্লাহ কখনো আকস্মিক পরিবর্তন আনেন না। বস্তুজগতে যেমনিভাবে সূর্য ধীরে ধীরে উদিত হয় এবং অন্ধকারের ছায়া ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়, ঠিক তেমনিভাবে চিন্তা ও নৈতিকতার জগতেও হেদায়াতের সূর্যের উত্থান ও ভ্রষ্টতার ছায়ার পতন ধীরে ধীরেই হবে। জাহেলিয়াতের রাত শেষ হয়ে গেছে; এখন জ্ঞান, চেতনা ও হেদায়াতের উজ্জ্বল দিবালোকের উদয় ঘটেছে। সুতরাং দেরিতে হলেও ঘুমন্তরা জেগে উঠবেই। তবে যাদের ঘুম হলো মৃত্যুর ঘুম, তারা আর জাগবে না। তাদের না জাগাটাই হবে তাদের নিজেদের জন্য জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া। দ্বীনের কাজ তাদের কারণে বন্ধ হয়ে যাবে না। শুরুতে সত্যের শত্রুরা যতই সফলতার অধিকারী হোক না কেন শেষে একমাত্র তারাই সফলকাম হয়, যারা আল্লাহর ভয়ে কুচিন্তা ও কুকর্মের ভুলপথ ত্যাগ করে হকের উপর কাজ করে। কাজেই এখন যেসব বিপদাপদ ও দুঃখ-কষ্টের মুখোমুখি হতে হচ্ছে এবং হকের দাওয়াতকে দাবিয়ে দেয়ার জন্য বিরোধীদের আপাত দৃষ্টিতে যে সাফল্য দেখা যাচ্ছে, তাতে মন খারাপ করার প্রয়োজন নেই। বরং ধৈর্য ও সাহসিকতার সাথে কাজ করে যেতে হবে। যখন আল্লাহ এ দ্বীনের জন্য জীবন উৎসর্গকারীদের সাফল্য ও বিজয় দান করবেন তখন যারা সত্য দ্বীনের জন্য নিজেদের গায়ে বিন্দুমাত্র আঘাত নিতেও প্রস্তুত নয়; তারা বিজয়ের ফল ভোগ করে নেয়ার জন্য এসে বলবে, আমরা তো তোমাদের সাথেই ছিলাম; তোমাদের সাফল্যের জন্য দু‘আ করেছিলাম। কিন্তু এসব সুযোগ সন্ধানী লোক যখনই দেখে যে, ইসলামের পথ কঠিন হয়ে গেছে তখনই তারা নিরাপত্তা লাভের অজুহাতে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
اَلدَّعْوَةُ (আদ্ দাওয়াত) শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো, কোন কিছুর প্রতি আহবান করা। আল্লাহর দিকে দাওয়াত প্রদান করার অর্থ- মানুষকে আল্লাহর পথে চলার জন্য আহবান জানানো, কল্যাণ ও সত্যের দিকে উৎসাহিত করা, তাদেরকে সৎকর্মের দিকে আহবান করা ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করা।
ইসলামী দাওয়াত হচ্ছে সমাজ পরিবর্তনের এমন এক আন্দোলন, যার দ্বারা মানবসমাজকে কুফরী অবস্থা থেকে ইসলামী অবস্থায় রূপান্তরিত করা যায়। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য নিজের শক্তি এবং সামর্থকে সার্বিকভাবে প্রয়োগ করা।
ইসলামী দাওয়াত হচ্ছে সমাজ পরিবর্তনের এমন এক আন্দোলন, যার দ্বারা মানবসমাজকে কুফরী অবস্থা থেকে ইসলামী অবস্থায় রূপান্তরিত করা যায়। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য নিজের শক্তি এবং সামর্থকে সার্বিকভাবে প্রয়োগ করা।
আল্লাহর পথে আহবানকারীর মর্যাদা সর্বোচ্চ :
وَمَنْ اَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّنْ دَعَاۤ اِلَى اللهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَّقَالَ اِنَّنِيْ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ
কথায় ঐ ব্যক্তির চেয়ে উত্তম আর কে হতে পারে, যে মানুষকে আল্লাহর দিকে আহবান করে, সৎকর্ম করে এবং বলে, নিশ্চয় আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৩৩)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর উপর ঈমান এনে তাঁর ইবাদাতের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা এবং এ পথ থেকে বিচ্যুত না হওয়াটা এমন এক মৌলিক গুণ, যা মানুষকে ফেরেশতাদের বন্ধু এবং জান্নাতের উপযুক্ত বানিয়ে দেয়। এর উপরের স্তর হচ্ছে, নিজে নেক কাজ করা, অন্যদেরকেও আল্লাহর দিকে আহবান করা এবং এ ঘোষণা করা যে, ‘আমি মুসলিম’। মানুষের জন্য এটাই সর্বোচ্চ স্তর।
আল্লাহর পথে আহবান করার নির্দেশ :
وَادْعُ اِلٰى رَبِّكَؕ اِنَّكَ لَعَلٰى هُدًى مُّسْتَقِيْمٍ
আর তুমি তোমার প্রতিপালকের দিকে আহবান করো, নিশ্চয় তুমি সরল পথেই প্রতিষ্ঠিত রয়েছ। (সূরা হজ্জ- ৬৭)
আল্লাহ মানুষকে শান্তির পথে ডাকেন :
وَاللهُ يَدْعُوْاۤ اِلٰى دَارِ السَّلَامِؕ وَيَهْدِيْ مَنْ يَّشَآءُ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
আল্লাহ শান্তির আবাসের দিকে আহবান করেন এবং যাকে ইচ্ছা তাকে সরল পথে পরিচালিত করেন। (সূরা ইউনুস- ২৫)
আল্লাহ মানুষকে জান্নাতের পথে ডাকেন :
وَاللهُ يَدْعُوْاۤ اِلَى الْجَنَّةِ وَالْمَغْفِرَةِ بِاِذْنِهٖۚ وَيُبَيِّنُ اٰيَاتِهٖ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُوْنَ
আল্লাহ স্বেচ্ছায় জান্নাত ও ক্ষমার দিকে ডাকেন। আর তাঁর আয়াতসমূহ মানুষের জন্য বর্ণনা করেন, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে। (সূরা বাক্বারা- ২২১)
নবীগণও মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকতেন :
قُلْ هٰذِهٖ سَبِيْلِيْۤ اَدْعُوْاۤ اِلَى اللهِ عَلٰى بَصِيْرَةٍ اَنَاْ وَمَنِ اتَّبَعَنِيْؕ وَسُبْحَانَ اللهِ وَمَاۤ اَنَاْ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
বলো, এটাই আমার পথ। আমি এবং আমার অনুসারীরা সূক্ষ্মদর্শিতার মাধ্যমে আল্লাহর দিকে মানুষকে আহবান করি। আল্লাহ মহিমান্বিত; আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। (সূরা ইউসুফ- ১০৮)
অনেক মুমিন ব্যক্তি মানুষকে নাজাতের পথে ডাকেন :
وَيَا قَوْمِ مَا لِۤيْ اَدْعُوْكُمْ اِلَى النَّجَاةِ وَتَدْعُوْنَنِيْۤ اِلَى النَّارِ
হে আমার সম্প্রদায়! এ কেমন কথা! আমি তোমাদেরকে আহবান করছি মুক্তির দিকে, আর তোমরা আমাকে আহবান করছ জাহান্নামের দিকে? (সূরা মু’মিন- ৪১)
জিনদের একটি দলও আল্লাহর পথে ডাকে :
يَا قَوْمَنَاۤ اَجِيْبُوْا دَاعِيَ اللهِ وَاٰمِنُوْا بِهٖ يَغْفِرْ لَكُمْ مِّنْ ذُنُوْبِكُمْ وَيُجِرْكُمْ مِّنْ عَذَابٍ اَلِيْمٍ
হে আমাদের জাতি! আল্লাহর দিকে যে ডাকে তার ডাকে সাড়া দাও এবং তার প্রতি ঈমান আনয়ন করো। তাহলে আল্লাহ তোমাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন এবং তোমাদেরকে কষ্টদায়ক আযাব থেকে মুক্ত করবেন। (সূরা আহ্কাফ- ৩১)
শয়তান জাহান্নামের দিকে ডাকে :
اَوَلَوْ كَانَ الشَّيْطَانُ يَدْعُوْهُمْ اِلٰى عَذَابِ السَّعِيْرِ
যদিও শয়তান তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তির দিকে আহবান করতে থাকে (তবুও কি তারা তার অনুসরণ করবে)? (সূরা লুক্বমান- ২১)
বাতিল দলগুলোও জাহান্নামের পথে ডাকে :
وَيَا قَوْمِ مَا لِۤيْ اَدْعُوْكُمْ اِلَى النَّجَاةِ وَتَدْعُوْنَنِيْۤ اِلَى النَّارِ ‐ - تَدْعُوْنَنِيْ لِاَكْفُرَ بِاللهِ وَاُشْرِكَ بِهٖ مَا لَيْسَ لِيْ بِهٖ عِلْمٌ وَّاَنَاْ اَدْعُوْكُمْ اِلَى الْعَزِيْزِ الْغَفَّارِ
হে আমার সম্প্রদায়! এ কেমন কথা! আমি তোমাদেরকে আহবান করছি মুক্তির দিকে, আর তোমরা আমাকে আহবান করছ জাহান্নামের দিকে। তোমরা আমাকে ডাকছ আল্লাহকে অস্বীকার করতে এবং তাঁর সাথে শরীক স্থাপন করতে, যা সম্পর্কে আমার কোন জ্ঞান নেই। পক্ষান্তরে আমি তোমাদেরকে আহবান করছি মহাপরাক্রমশালী ও পরম ক্ষমাশীল আল্লাহর দিকে। (সূরা মুমিন- ৪১, ৪২)
আহলে কিতাবদের থেকেও দ্বীন প্রচারের অঙ্গীকার নেয়া হয়েছে :
وَاِذْ اَخَذَ اللهُ مِيْثَاقَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ لَتُبَيِّنُنَّهٗ لِلنَّاسِ وَلَا تَكْتُمُوْنَهٗ فَنَبَذُوْهُ وَرَآءَ ظُهُوْرِهِمْ وَاشْتَرَوْا بِهٖ ثَمَنًا قَلِيْلًاؕ فَبِئْسَ مَا يَشْتَرُوْنَ
আর যখন আল্লাহ কিতাবধারীদের থেকে এ অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলেন যে, নিশ্চয় তোমরা এটা লোকদের মধ্যে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করবে এবং তা গোপন করবে না। কিন্তু তারা তা তাদের পশ্চাতে নিক্ষেপ করল এবং অল্প মূল্যে বিক্রি করে দিল, অথচ তারা যা ক্রয় করেছিল তা কতই না নিকৃষ্ট। (সূরা আলে ইমরান- ১৮৭)
ব্যাখ্যা : এখানে যে অঙ্গীকারের কথা বলা হয়েছে, বাইবেলের বিভিন্ন স্থানে তার উল্লেখ রয়েছে। বিশেষ করে বাইবেলের দ্বিতীয় বিবরণ পুস্তকে মূসা (আঃ) এর যে শেষ ভাষণটি উদ্ধৃত হয়েছে তাতে তাঁকে বার বার বনী ইসরাঈলদের থেকে নিম্নোক্ত অঙ্গীকারটি নিতে দেখা যায়- আমি তোমাদের কাছে যে বিধানটি পৌঁছে দিয়েছি, তা নিজেদের মনের পাতায় খোদাই করে নাও। অতঃপর তোমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদেরকে সেগুলো শিখিয়ে দিয়ো। ওঠাবসা ও চলাফেরা সকল অবস্থাতে সেগুলোর চর্চা করো। নিজেদের ঘরের চৌকাঠে ও বাইরের দরজার গায়ে সেগুলো লিখে রেখো।
ইসলাম প্রচারে জবরদস্তি নেই :
نَحْنُ اَعْلَمُ بِمَا يَقُوْلُوْنَ وَمَاۤ اَنْتَ عَلَيْهِمْ بِجَبَّارٍ فَذَكِّرْ بِالْقُرْاٰنِ مَنْ يَّخَافُ وَعِيْدِ
তারা যা বলে তা আমি জানি, তুমি তাদের উপর বল প্রয়োগকারী নও। সুতরাং যে প্রতিশ্রুত বিষয়াবলিকে ভয় করে, তাকে কুরআনের মাধ্যমে উপদেশ দান করো। (সূরা ক্বাফ- ৪৫)
ইসলাম প্রচারে বিরোধীদের সাথে আপোষ করতে নেই :
قُلْ يَاۤ اَيُّهَا الْكَافِرُوْنَ -‐ لَاۤ اَعْبُدُ مَا تَعْبُدُوْنَ ‐ -- وَلَاۤ اَنْتُمْ عَابِدُوْنَ مَاۤ اَعْبُدُ -‐ وَلَاۤ اَنَاْ عَابِدٌ مَّا عَبَدْتُّمْ ‐ - وَلَاۤ اَنْتُمْ عَابِدُوْنَ مَاۤ اَعْبُدُ -‐ لَكُمْ دِيْنُكُمْ وَلِيَ دِيْنِ
(হে নবী!) বলো, হে কাফিররা! তোমরা যাদের ইবাদাত কর, আমি তাদের ইবাদাত করি না। আর আমি যার ইবাদাত করি, তোমরা তাঁর ইবাদাতকারী নও এবং তোমরা যার ইবাদাত কর, আমিও তার ইবাদাতকারী নই। আর তোমরা তাঁর ইবাদাতকারী নও, যার ইবাদাত আমি করি। অতএব (এ দ্বীনের মধ্যে কোন মিশ্রণ সম্ভব নয়) তোমাদের দ্বীন তোমাদের জন্য এবং আমার দ্বীন আমার জন্য। (সূরা কাফিরূন)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ যখন ইসলামের দাওয়াত দিতে শুরু করলেন, তখন মক্কার কাফির ও মুশরিকরা তাকে এ কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য নানা প্রস্তাব নিয়ে তাঁর কাছে উপস্থিত হতো। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, একদা কুরাইশরা রাসূল ﷺ কে বলল, আমরা আপনাকে এত বেশি পরিমাণ ধনসম্পদ দেব, যার ফলে আপনি মক্কার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হয়ে যাবেন। যে মেয়েটিকে আপনি পছন্দ করবেন তার সাথে আপনার বিয়ে দিয়ে দেব। আমরা আপনাকে নেতা বানিয়ে আপনার পেছনে চলতে প্রস্তুত। আপনি শুধু আমাদের একটি কথা মেনে নেবেন, তা হচ্ছে আমাদের উপাস্যদের নিন্দা করা থেকে বিরত থাকবেন। এ প্রস্তাবটি আপনার পছন্দ না হলে আমরা আরেকটি প্রস্তাব পেশ করছি। এ প্রস্তাবে আপনারও লাভ এবং আমাদেরও লাভ। রাসূল ﷺ জিজ্ঞেস করলেন, সেটি কী? তারা বলল, একবছর আপনি আমাদের উপাস্যদের ইবাদাত করবেন এবং একবছর আমরা আপনার উপাস্যের ইবাদাত করব। রাসূল ﷺ বললেন, থামো! আমি দেখি আমার রবের পক্ষ থেকে কী হুকুম আসে। তখন আল্লাহ তা‘আলা এ সূরাটি নাযিল করেন এবং তাদের প্রস্তাব নাকচ করে দেন।
وَمَنْ اَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّنْ دَعَاۤ اِلَى اللهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَّقَالَ اِنَّنِيْ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ
কথায় ঐ ব্যক্তির চেয়ে উত্তম আর কে হতে পারে, যে মানুষকে আল্লাহর দিকে আহবান করে, সৎকর্ম করে এবং বলে, নিশ্চয় আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৩৩)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর উপর ঈমান এনে তাঁর ইবাদাতের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা এবং এ পথ থেকে বিচ্যুত না হওয়াটা এমন এক মৌলিক গুণ, যা মানুষকে ফেরেশতাদের বন্ধু এবং জান্নাতের উপযুক্ত বানিয়ে দেয়। এর উপরের স্তর হচ্ছে, নিজে নেক কাজ করা, অন্যদেরকেও আল্লাহর দিকে আহবান করা এবং এ ঘোষণা করা যে, ‘আমি মুসলিম’। মানুষের জন্য এটাই সর্বোচ্চ স্তর।
আল্লাহর পথে আহবান করার নির্দেশ :
وَادْعُ اِلٰى رَبِّكَؕ اِنَّكَ لَعَلٰى هُدًى مُّسْتَقِيْمٍ
আর তুমি তোমার প্রতিপালকের দিকে আহবান করো, নিশ্চয় তুমি সরল পথেই প্রতিষ্ঠিত রয়েছ। (সূরা হজ্জ- ৬৭)
আল্লাহ মানুষকে শান্তির পথে ডাকেন :
وَاللهُ يَدْعُوْاۤ اِلٰى دَارِ السَّلَامِؕ وَيَهْدِيْ مَنْ يَّشَآءُ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
আল্লাহ শান্তির আবাসের দিকে আহবান করেন এবং যাকে ইচ্ছা তাকে সরল পথে পরিচালিত করেন। (সূরা ইউনুস- ২৫)
আল্লাহ মানুষকে জান্নাতের পথে ডাকেন :
وَاللهُ يَدْعُوْاۤ اِلَى الْجَنَّةِ وَالْمَغْفِرَةِ بِاِذْنِهٖۚ وَيُبَيِّنُ اٰيَاتِهٖ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُوْنَ
আল্লাহ স্বেচ্ছায় জান্নাত ও ক্ষমার দিকে ডাকেন। আর তাঁর আয়াতসমূহ মানুষের জন্য বর্ণনা করেন, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে। (সূরা বাক্বারা- ২২১)
নবীগণও মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকতেন :
قُلْ هٰذِهٖ سَبِيْلِيْۤ اَدْعُوْاۤ اِلَى اللهِ عَلٰى بَصِيْرَةٍ اَنَاْ وَمَنِ اتَّبَعَنِيْؕ وَسُبْحَانَ اللهِ وَمَاۤ اَنَاْ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
বলো, এটাই আমার পথ। আমি এবং আমার অনুসারীরা সূক্ষ্মদর্শিতার মাধ্যমে আল্লাহর দিকে মানুষকে আহবান করি। আল্লাহ মহিমান্বিত; আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। (সূরা ইউসুফ- ১০৮)
অনেক মুমিন ব্যক্তি মানুষকে নাজাতের পথে ডাকেন :
وَيَا قَوْمِ مَا لِۤيْ اَدْعُوْكُمْ اِلَى النَّجَاةِ وَتَدْعُوْنَنِيْۤ اِلَى النَّارِ
হে আমার সম্প্রদায়! এ কেমন কথা! আমি তোমাদেরকে আহবান করছি মুক্তির দিকে, আর তোমরা আমাকে আহবান করছ জাহান্নামের দিকে? (সূরা মু’মিন- ৪১)
জিনদের একটি দলও আল্লাহর পথে ডাকে :
يَا قَوْمَنَاۤ اَجِيْبُوْا دَاعِيَ اللهِ وَاٰمِنُوْا بِهٖ يَغْفِرْ لَكُمْ مِّنْ ذُنُوْبِكُمْ وَيُجِرْكُمْ مِّنْ عَذَابٍ اَلِيْمٍ
হে আমাদের জাতি! আল্লাহর দিকে যে ডাকে তার ডাকে সাড়া দাও এবং তার প্রতি ঈমান আনয়ন করো। তাহলে আল্লাহ তোমাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন এবং তোমাদেরকে কষ্টদায়ক আযাব থেকে মুক্ত করবেন। (সূরা আহ্কাফ- ৩১)
শয়তান জাহান্নামের দিকে ডাকে :
اَوَلَوْ كَانَ الشَّيْطَانُ يَدْعُوْهُمْ اِلٰى عَذَابِ السَّعِيْرِ
যদিও শয়তান তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তির দিকে আহবান করতে থাকে (তবুও কি তারা তার অনুসরণ করবে)? (সূরা লুক্বমান- ২১)
বাতিল দলগুলোও জাহান্নামের পথে ডাকে :
وَيَا قَوْمِ مَا لِۤيْ اَدْعُوْكُمْ اِلَى النَّجَاةِ وَتَدْعُوْنَنِيْۤ اِلَى النَّارِ ‐ - تَدْعُوْنَنِيْ لِاَكْفُرَ بِاللهِ وَاُشْرِكَ بِهٖ مَا لَيْسَ لِيْ بِهٖ عِلْمٌ وَّاَنَاْ اَدْعُوْكُمْ اِلَى الْعَزِيْزِ الْغَفَّارِ
হে আমার সম্প্রদায়! এ কেমন কথা! আমি তোমাদেরকে আহবান করছি মুক্তির দিকে, আর তোমরা আমাকে আহবান করছ জাহান্নামের দিকে। তোমরা আমাকে ডাকছ আল্লাহকে অস্বীকার করতে এবং তাঁর সাথে শরীক স্থাপন করতে, যা সম্পর্কে আমার কোন জ্ঞান নেই। পক্ষান্তরে আমি তোমাদেরকে আহবান করছি মহাপরাক্রমশালী ও পরম ক্ষমাশীল আল্লাহর দিকে। (সূরা মুমিন- ৪১, ৪২)
আহলে কিতাবদের থেকেও দ্বীন প্রচারের অঙ্গীকার নেয়া হয়েছে :
وَاِذْ اَخَذَ اللهُ مِيْثَاقَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ لَتُبَيِّنُنَّهٗ لِلنَّاسِ وَلَا تَكْتُمُوْنَهٗ فَنَبَذُوْهُ وَرَآءَ ظُهُوْرِهِمْ وَاشْتَرَوْا بِهٖ ثَمَنًا قَلِيْلًاؕ فَبِئْسَ مَا يَشْتَرُوْنَ
আর যখন আল্লাহ কিতাবধারীদের থেকে এ অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলেন যে, নিশ্চয় তোমরা এটা লোকদের মধ্যে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করবে এবং তা গোপন করবে না। কিন্তু তারা তা তাদের পশ্চাতে নিক্ষেপ করল এবং অল্প মূল্যে বিক্রি করে দিল, অথচ তারা যা ক্রয় করেছিল তা কতই না নিকৃষ্ট। (সূরা আলে ইমরান- ১৮৭)
ব্যাখ্যা : এখানে যে অঙ্গীকারের কথা বলা হয়েছে, বাইবেলের বিভিন্ন স্থানে তার উল্লেখ রয়েছে। বিশেষ করে বাইবেলের দ্বিতীয় বিবরণ পুস্তকে মূসা (আঃ) এর যে শেষ ভাষণটি উদ্ধৃত হয়েছে তাতে তাঁকে বার বার বনী ইসরাঈলদের থেকে নিম্নোক্ত অঙ্গীকারটি নিতে দেখা যায়- আমি তোমাদের কাছে যে বিধানটি পৌঁছে দিয়েছি, তা নিজেদের মনের পাতায় খোদাই করে নাও। অতঃপর তোমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদেরকে সেগুলো শিখিয়ে দিয়ো। ওঠাবসা ও চলাফেরা সকল অবস্থাতে সেগুলোর চর্চা করো। নিজেদের ঘরের চৌকাঠে ও বাইরের দরজার গায়ে সেগুলো লিখে রেখো।
ইসলাম প্রচারে জবরদস্তি নেই :
نَحْنُ اَعْلَمُ بِمَا يَقُوْلُوْنَ وَمَاۤ اَنْتَ عَلَيْهِمْ بِجَبَّارٍ فَذَكِّرْ بِالْقُرْاٰنِ مَنْ يَّخَافُ وَعِيْدِ
তারা যা বলে তা আমি জানি, তুমি তাদের উপর বল প্রয়োগকারী নও। সুতরাং যে প্রতিশ্রুত বিষয়াবলিকে ভয় করে, তাকে কুরআনের মাধ্যমে উপদেশ দান করো। (সূরা ক্বাফ- ৪৫)
ইসলাম প্রচারে বিরোধীদের সাথে আপোষ করতে নেই :
قُلْ يَاۤ اَيُّهَا الْكَافِرُوْنَ -‐ لَاۤ اَعْبُدُ مَا تَعْبُدُوْنَ ‐ -- وَلَاۤ اَنْتُمْ عَابِدُوْنَ مَاۤ اَعْبُدُ -‐ وَلَاۤ اَنَاْ عَابِدٌ مَّا عَبَدْتُّمْ ‐ - وَلَاۤ اَنْتُمْ عَابِدُوْنَ مَاۤ اَعْبُدُ -‐ لَكُمْ دِيْنُكُمْ وَلِيَ دِيْنِ
(হে নবী!) বলো, হে কাফিররা! তোমরা যাদের ইবাদাত কর, আমি তাদের ইবাদাত করি না। আর আমি যার ইবাদাত করি, তোমরা তাঁর ইবাদাতকারী নও এবং তোমরা যার ইবাদাত কর, আমিও তার ইবাদাতকারী নই। আর তোমরা তাঁর ইবাদাতকারী নও, যার ইবাদাত আমি করি। অতএব (এ দ্বীনের মধ্যে কোন মিশ্রণ সম্ভব নয়) তোমাদের দ্বীন তোমাদের জন্য এবং আমার দ্বীন আমার জন্য। (সূরা কাফিরূন)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ যখন ইসলামের দাওয়াত দিতে শুরু করলেন, তখন মক্কার কাফির ও মুশরিকরা তাকে এ কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য নানা প্রস্তাব নিয়ে তাঁর কাছে উপস্থিত হতো। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, একদা কুরাইশরা রাসূল ﷺ কে বলল, আমরা আপনাকে এত বেশি পরিমাণ ধনসম্পদ দেব, যার ফলে আপনি মক্কার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হয়ে যাবেন। যে মেয়েটিকে আপনি পছন্দ করবেন তার সাথে আপনার বিয়ে দিয়ে দেব। আমরা আপনাকে নেতা বানিয়ে আপনার পেছনে চলতে প্রস্তুত। আপনি শুধু আমাদের একটি কথা মেনে নেবেন, তা হচ্ছে আমাদের উপাস্যদের নিন্দা করা থেকে বিরত থাকবেন। এ প্রস্তাবটি আপনার পছন্দ না হলে আমরা আরেকটি প্রস্তাব পেশ করছি। এ প্রস্তাবে আপনারও লাভ এবং আমাদেরও লাভ। রাসূল ﷺ জিজ্ঞেস করলেন, সেটি কী? তারা বলল, একবছর আপনি আমাদের উপাস্যদের ইবাদাত করবেন এবং একবছর আমরা আপনার উপাস্যের ইবাদাত করব। রাসূল ﷺ বললেন, থামো! আমি দেখি আমার রবের পক্ষ থেকে কী হুকুম আসে। তখন আল্লাহ তা‘আলা এ সূরাটি নাযিল করেন এবং তাদের প্রস্তাব নাকচ করে দেন।
সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজ হতে নিষেধ করা মুমিনের বিশেষ গুণ :
وَالْمُؤْمِنُوْنَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍ يَّاْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ
মুমিন নর ও মুমিন নারী একে অপরের বন্ধু, এরা সৎকাজের আদেশ দেয় এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করে। (সূরা তাওবা- ৭১)
এর বিপরীত করা মুনাফিকের কাজ :
اَلْمُنَافِقُوْنَ وَالْمُنَافِقَاتُ بَعْضُهُمْ مِّنْ ۢبَعْضٍ يَّاْمُرُوْنَ بِالْمُنْكَرِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمَعْرُوْفِ
মুনাফিক নর ও মুনাফিক নারী একে অপরের অনুরূপ- তারা অসৎকাজের আদেশ দেয় এবং সৎকর্ম থেকে নিষেধ করে। (সূরা তাওবা- ৬৭)
ব্যাখ্যা : এটা মুনাফিকদের একটা সাধারণ বৈশিষ্ট্য। তারা খারাপ কাজের ব্যাপারে আগ্রহী এবং ভালো কাজের প্রতি প্রচন্ড অনিহা ও শত্রুতা পোষণ করে। কোন ব্যক্তি খারাপ কাজ করতে চাইলে তারা তাকে সাহায্য করে। অন্যদিকে কোন ভালো কাজ হতে থাকলে, এর খবর শুনে তারা মনে ব্যথা অনুভব করতে থাকে। এর দিকে কাউকে এগিয়ে যেতে দেখলে তারা অস্থির হয়ে পড়ে এবং সম্ভাব্য সকল পদ্ধতিতে তার পথে বাধা সৃষ্টি করতে তৎপর হয়ে পড়ে।
এ কাজ ব্যক্তিগতভাবে সকলের দায়িত্ব :
يَا بُنَيَّ اَقِمِ الصَّلَاةَ وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوْفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَاصْبِرْ عَلٰى مَاۤ اَصَابَكَؕ اِنَّ ذٰلِكَ مِنْ عَزْمِ الْاُمُوْرِ
হে আমার ছেলে! সালাত কায়েম করো, সৎকাজের আদেশ দাও ও মন্দকাজ করতে নিষেধ করো এবং তোমার উপর যে বিপদ আসে তাতে ধৈর্যধারণ করো। নিশ্চয় এটা দৃঢ় সংকল্পের কাজ। (সূরা লুক্বমান- ১৭)
এ কাজ সরকারের বড় দায়িত্ব :
اَلَّذِيْنَ اِنْ مَّكَّنَّاهُمْ فِى الْاَرْضِ اَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ وَاَمَرُوْا بِالْمَعْرُوْفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنْكَرِؕ وَلِلّٰهِ عَاقِبَةُ الْاُمُوْرِ
আমি তাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে। আর সকল কর্মের পরিণাম আল্লাহর ইচ্ছাধীন। (সূরা হজ্জ- ৪১)
এ কাজ করা উম্মতে মুহাম্মাদীর সকলের দায়িত্ব :
كُنْتُمْ خَيْرَ اُمَّةٍ اُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَتُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ
তোমরাই হচ্ছ শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানবজাতির (কল্যাণের) জন্যই তোমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমরা সৎকাজের আদেশ দেবে ও অসৎকাজ হতে নিষেধ করবে এবং আল্লাহর উপর ঈমান আনয়ন করবে। (সূরা আলে ইমরান- ১১০)
রাসূল ﷺ নিজে এ কাজ করতেন :
يَأْمُرُهُمْ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَاهُمْ عَنِ الْمُنْكَرِ
তিনি তাদেরকে সৎকাজের নির্দেশ দেন ও অসৎকাজ থেকে বাধা প্রদান করেন। (সূরা আ‘রাফ- ১৫৭)
আহলে কিতাবের কিছু লোক এ দায়িত্ব পালন করত :
مِنْ اَهْلِ الْكِتَابِ اُمَّةٌ قَآئِمَةٌ يَّتْلُوْنَ اٰيَاتِ اللهِ اٰنَآءَ اللَّيْلِ وَهُمْ يَسْجُدُوْنَ ‐ - يُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَيَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُسَارِعُوْنَ فِى الْخَيْرَاتِؕ وَاُولٰٓئِكَ مِنَ الصَّالِحِيْنَ
আহলে কিতাবদের মধ্যে একটি দল রয়েছে অটল। তারা রাতে আল্লাহর আয়াত তিলাওয়াত করে এবং সিজদা করে। তারা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, সৎকাজের আদেশ দেয় এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করে। আর তারা কল্যাণের কাজে দ্রুত অগ্রসর হয়। তারাই সৎলোকদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা আলে ইমরান- ১১৩, ১১৪)
যারা এ কাজ করেছে তারাই মুক্তি পেয়েছে :
فَلَمَّا نَسُوْا مَا ذُكِّرُوْا بِهٖۤ اَنْجَيْنَا الَّذِيْنَ يَنْهَوْنَ عَنِ السُّوْٓءِ وَاَخَذْنَا الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا بِعَذَابٍ ۢبَئِيْسٍ ۢۢبِمَا كَانُوْا يَفْسُقُوْنَ
অতঃপর যে উপদেশ তাদেরকে দেয়া হয়েছিল যখন তারা তা ভুলে গেল, তখন আমি (সে সম্প্রদায় থেকে) এমন লোকদেরকে উদ্ধার করলাম, যারা অসৎকার্য হতে বাধা দিত। আর যারা যুলুম করত, তারা যা বিপর্যয় ঘটাত সে কারণে আমি তাদেরকে কঠোর শাস্তি প্রদান করলাম। (সূরা আ‘রাফ- ১৬৫)
যারা এ কাজ করে তারাই সফল হয় :
وَلْتَكُنْ مِّنْكُمْ اُمَّةٌ يَّدْعُوْنَ اِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِؕ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
তোমাদের মধ্যে এমন একদল লোক থাকা জরুরি, যারা মানুষকে কল্যাণের দিকে আহবান করবে এবং সৎকাজের আদেশ দেবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই হবে সফলকাম। (সূরা আলে ইমরান- ১০৪)
যে সমাজে দাওয়াতী কাজ চলে না তা ধ্বংস হয়ে যায় :
فَلَوْلَا كَانَ مِنَ الْقُرُوْنِ مِنْ قَبْلِكُمْ اُولُوْا بَقِيَّةٍ يَّنْهَوْنَ عَنِ الْفَسَادِ فِى الْاَرْضِ اِلَّا قَلِيْلًا مِّمَّنْ اَنْجَيْنَا مِنْهُمْ وَاتَّبَعَ الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا مَاۤ اُتْرِفُوْا فِيْهِ وَكَانُوْا مُجْرِمِيْنَ
তারপর এমনটি কেন হয়নি যে, যেসব উম্মতের লোকেরা তোমাদের আগে অতিবাহিত হয়ে গেছে, (তাদের) অবশিষ্ট লোকেরা (মানুষকে) জমিনে বিপর্যয় সৃষ্টি করা থেকে নিষেধ করত। আমি যাদেরকে আযাব থেকে বাঁচিয়ে রেখেছিলাম তাদের সংখ্যা ছিল নিতান্ত কম। আর যালিমরা যে (বৈষয়িক) প্রাচুর্যের মধ্যে ছিল তার পেছনেই পড়ে থেকেছে; তারা ছিল (আসলেই) অপরাধী। (সূরা হুদ- ১১৬)
ব্যাখ্যা : মানবজাতির অতীত ইতিহাসে যতগুলো জাতিই ধ্বংস হয়েছে তাদের সবাইকে যে জিনিসটি ধ্বংস করেছে তা হচ্ছে, যখন আল্লাহ তাদেরকে স্বীয় নিয়ামত দ্বারা সমৃদ্ধ করেছেন তখন তারা নিজেদের প্রাচুর্য ও সমৃদ্ধির নেশায় মত্ত হয়ে পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে তৎপর হয়েছে। ফলে তাদের সামষ্টিক প্রকৃতি এমন পর্যায়ে বিকৃত হয়ে গিয়েছিল যে, তাদেরকে অসৎকাজ থেকে বিরত রাখার মতো সৎলোক তাদের মধ্যে ছিল না অথবা এ ধরনের কিছু লোক থাকলেও তাদের সংখ্যা এত কম ছিল যে, অসৎকাজ থেকে তারা বিরত রাখার চেষ্টা করলেও বিপর্যয় ঠেকাতে পারেনি। এ কারণেই শেষপর্যন্ত এ জাতিগুলো আল্লাহর আযাবের শিকার হয়েছে।
আযাব থেকে বাঁচতে হলে দাওয়াতী কাজ করতে হবে :
وَاِذْ قَالَتْ اُمَّةٌ مِّنْهُمْ لِمَ تَعِظُوْنَ قَوْمَانِ اللهُ مُهْلِكُهُمْ اَوْ مُعَذِّبُهُمْ عَذَابًا شَدِيْدًاؕ قَالُوْا مَعْذِرَةً اِلٰى رَبِّكُمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَّقُوْنَ
স্মরণ করো, যখন তাদের একদল বলেছিল, আল্লাহ যাদেরকে ধ্বংস করবেন কিংবা কঠোর শাস্তি দেবেন, তোমরা তাদেরকে উপদেশ দাও কেন? তারা বলেছিল, তোমাদের প্রতিপালকের নিকট দায়বদ্ধতা থেকে মুক্তির জন্য। আর হয়তো তারা সাবধানও হতে পারবে। (সূরা আ‘রাফ- ১৬৪)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতে যাদের কথা বলা হয়েছে তাদের মধ্যে তিন ধরনের লোক ছিল। (এক) যারা প্রকাশ্যে ও পূর্ণ ঔদ্ধত্য সহকারে আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধাচরণ করছিল। (দুই) যারা নিজেরা বিরুদ্ধাচরণ করছিল না, কিন্তু নীরবে হাত-পা গুটিয়ে বসে বসে অন্যের বিরুদ্ধাচরণকে পর্যবেক্ষণ করছিল এবং উপদেশ দানকারীদের বলছিল, এ হতভাগাদের উপদেশ দিয়ে কী লাভ? (তিন) যারা ঈমানী মর্যাদাবোধের কারণে আল্লাহর আইনের অমর্যাদা সহ্য করতে পারেনি, তারা এ মনে করে সৎকাজের আদেশ দিতে ও অসৎকাজ থেকে অপরাধীদেরকে বিরত রাখতে তৎপর ছিল যে, হয়তো ঐ অপরাধীরা তাদের উপদেশের প্রভাবে সৎপথে এসে যাবে, আর যদি তারা সৎপথে নাও আসে তাহলে অন্তত নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী কর্তব্য পালন করে আল্লাহর সামনে নিজেদের দায় মুক্তির প্রমাণ পেশ করা যাবে। এ অবস্থায় যখন তাদের উপর আল্লাহর আযাব নেমে আসল তখন এ তিনটি দলের মধ্য থেকে একমাত্র তৃতীয় দলকেই বাঁচিয়ে নেয়া হয়েছিল। কারণ একমাত্র তারাই আল্লাহর সামনে নিজেদের অজুহাত পেশ করার চিন্তা করছিল এবং একমাত্র তারাই নিজেদের দায়িত্ব থেকে মুক্তির প্রমাণ সংগ্রহ করে রেখেছিল। বাকি দল দু’টিকে অপরাধীদের মধ্যে গণ্য করা হলো এবং নিজেদের অপরাধ অনুপাতে তারা শাস্তি ভোগ করল।
এখানে আল্লাহ সুষ্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, আল্লাহর কাছে ওজর পেশ করার জন্য অবশ্যই নিজেদের দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করে যেতে হবে। এভাবে যারা দায়িত্ব থেকে মুক্তির প্রমাণ সংগ্রহ করতে পারবে, একমাত্র তারাই আল্লাহর কাছে ওজর পেশ করতে পারবে। এ থেকে পরিষ্কার প্রমাণিত হচ্ছে, যে জনপদে প্রকাশ্যে আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করা হতে থাকে সেখানকার সবাই জবাবদিহির সম্মুখীন হবে। সেখানকার কোন ব্যক্তি শুধু নিজে অপরাধ করেনি বলেই আল্লাহর সামনে জবাবদিহি থেকে বাঁচতে পারবে না। বরং আল্লাহর সামনে নিজের মুক্তির জন্য অবশ্যই তাকে এ মর্মে প্রমাণ পেশ করতে হবে যে, নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী সে মানুষের সংশোধন ও আল্লাহর সত্য দ্বীনের প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে এসেছে। রাসূল ﷺ বলেছেন, ‘‘মহান আল্লাহ বিশেষ লোকদের অপরাধের কারণে সর্বসাধারণকে শাস্তি দেন না, যতক্ষণ সাধারণ লোকদের অবস্থা এমন পর্যায়ে না পৌঁছে যায় যে, তারা নিজেদের চোখের সামনে খারাপ কাজ হতে দেখে এবং তাতে বাধা দেয়ার ÿমতাও রাখে; কিন্তু বাধা দেয় না। লোকেরা যখন এমন অবস্থায় পৌঁছে যায়, তখন আল্লাহ সাধারণ ও অসাধারণ সবাইকে আযাবের মধ্যে নিক্ষেপ করেন।’’ (মুয়াত্তা মালিক, হা/১৭৯৮)
وَالْمُؤْمِنُوْنَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍ يَّاْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ
মুমিন নর ও মুমিন নারী একে অপরের বন্ধু, এরা সৎকাজের আদেশ দেয় এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করে। (সূরা তাওবা- ৭১)
এর বিপরীত করা মুনাফিকের কাজ :
اَلْمُنَافِقُوْنَ وَالْمُنَافِقَاتُ بَعْضُهُمْ مِّنْ ۢبَعْضٍ يَّاْمُرُوْنَ بِالْمُنْكَرِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمَعْرُوْفِ
মুনাফিক নর ও মুনাফিক নারী একে অপরের অনুরূপ- তারা অসৎকাজের আদেশ দেয় এবং সৎকর্ম থেকে নিষেধ করে। (সূরা তাওবা- ৬৭)
ব্যাখ্যা : এটা মুনাফিকদের একটা সাধারণ বৈশিষ্ট্য। তারা খারাপ কাজের ব্যাপারে আগ্রহী এবং ভালো কাজের প্রতি প্রচন্ড অনিহা ও শত্রুতা পোষণ করে। কোন ব্যক্তি খারাপ কাজ করতে চাইলে তারা তাকে সাহায্য করে। অন্যদিকে কোন ভালো কাজ হতে থাকলে, এর খবর শুনে তারা মনে ব্যথা অনুভব করতে থাকে। এর দিকে কাউকে এগিয়ে যেতে দেখলে তারা অস্থির হয়ে পড়ে এবং সম্ভাব্য সকল পদ্ধতিতে তার পথে বাধা সৃষ্টি করতে তৎপর হয়ে পড়ে।
এ কাজ ব্যক্তিগতভাবে সকলের দায়িত্ব :
يَا بُنَيَّ اَقِمِ الصَّلَاةَ وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوْفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَاصْبِرْ عَلٰى مَاۤ اَصَابَكَؕ اِنَّ ذٰلِكَ مِنْ عَزْمِ الْاُمُوْرِ
হে আমার ছেলে! সালাত কায়েম করো, সৎকাজের আদেশ দাও ও মন্দকাজ করতে নিষেধ করো এবং তোমার উপর যে বিপদ আসে তাতে ধৈর্যধারণ করো। নিশ্চয় এটা দৃঢ় সংকল্পের কাজ। (সূরা লুক্বমান- ১৭)
এ কাজ সরকারের বড় দায়িত্ব :
اَلَّذِيْنَ اِنْ مَّكَّنَّاهُمْ فِى الْاَرْضِ اَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ وَاَمَرُوْا بِالْمَعْرُوْفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنْكَرِؕ وَلِلّٰهِ عَاقِبَةُ الْاُمُوْرِ
আমি তাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে। আর সকল কর্মের পরিণাম আল্লাহর ইচ্ছাধীন। (সূরা হজ্জ- ৪১)
এ কাজ করা উম্মতে মুহাম্মাদীর সকলের দায়িত্ব :
كُنْتُمْ خَيْرَ اُمَّةٍ اُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَتُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ
তোমরাই হচ্ছ শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানবজাতির (কল্যাণের) জন্যই তোমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমরা সৎকাজের আদেশ দেবে ও অসৎকাজ হতে নিষেধ করবে এবং আল্লাহর উপর ঈমান আনয়ন করবে। (সূরা আলে ইমরান- ১১০)
রাসূল ﷺ নিজে এ কাজ করতেন :
يَأْمُرُهُمْ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَاهُمْ عَنِ الْمُنْكَرِ
তিনি তাদেরকে সৎকাজের নির্দেশ দেন ও অসৎকাজ থেকে বাধা প্রদান করেন। (সূরা আ‘রাফ- ১৫৭)
আহলে কিতাবের কিছু লোক এ দায়িত্ব পালন করত :
مِنْ اَهْلِ الْكِتَابِ اُمَّةٌ قَآئِمَةٌ يَّتْلُوْنَ اٰيَاتِ اللهِ اٰنَآءَ اللَّيْلِ وَهُمْ يَسْجُدُوْنَ ‐ - يُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَيَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُسَارِعُوْنَ فِى الْخَيْرَاتِؕ وَاُولٰٓئِكَ مِنَ الصَّالِحِيْنَ
আহলে কিতাবদের মধ্যে একটি দল রয়েছে অটল। তারা রাতে আল্লাহর আয়াত তিলাওয়াত করে এবং সিজদা করে। তারা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, সৎকাজের আদেশ দেয় এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করে। আর তারা কল্যাণের কাজে দ্রুত অগ্রসর হয়। তারাই সৎলোকদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা আলে ইমরান- ১১৩, ১১৪)
যারা এ কাজ করেছে তারাই মুক্তি পেয়েছে :
فَلَمَّا نَسُوْا مَا ذُكِّرُوْا بِهٖۤ اَنْجَيْنَا الَّذِيْنَ يَنْهَوْنَ عَنِ السُّوْٓءِ وَاَخَذْنَا الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا بِعَذَابٍ ۢبَئِيْسٍ ۢۢبِمَا كَانُوْا يَفْسُقُوْنَ
অতঃপর যে উপদেশ তাদেরকে দেয়া হয়েছিল যখন তারা তা ভুলে গেল, তখন আমি (সে সম্প্রদায় থেকে) এমন লোকদেরকে উদ্ধার করলাম, যারা অসৎকার্য হতে বাধা দিত। আর যারা যুলুম করত, তারা যা বিপর্যয় ঘটাত সে কারণে আমি তাদেরকে কঠোর শাস্তি প্রদান করলাম। (সূরা আ‘রাফ- ১৬৫)
যারা এ কাজ করে তারাই সফল হয় :
وَلْتَكُنْ مِّنْكُمْ اُمَّةٌ يَّدْعُوْنَ اِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِؕ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
তোমাদের মধ্যে এমন একদল লোক থাকা জরুরি, যারা মানুষকে কল্যাণের দিকে আহবান করবে এবং সৎকাজের আদেশ দেবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই হবে সফলকাম। (সূরা আলে ইমরান- ১০৪)
যে সমাজে দাওয়াতী কাজ চলে না তা ধ্বংস হয়ে যায় :
فَلَوْلَا كَانَ مِنَ الْقُرُوْنِ مِنْ قَبْلِكُمْ اُولُوْا بَقِيَّةٍ يَّنْهَوْنَ عَنِ الْفَسَادِ فِى الْاَرْضِ اِلَّا قَلِيْلًا مِّمَّنْ اَنْجَيْنَا مِنْهُمْ وَاتَّبَعَ الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا مَاۤ اُتْرِفُوْا فِيْهِ وَكَانُوْا مُجْرِمِيْنَ
তারপর এমনটি কেন হয়নি যে, যেসব উম্মতের লোকেরা তোমাদের আগে অতিবাহিত হয়ে গেছে, (তাদের) অবশিষ্ট লোকেরা (মানুষকে) জমিনে বিপর্যয় সৃষ্টি করা থেকে নিষেধ করত। আমি যাদেরকে আযাব থেকে বাঁচিয়ে রেখেছিলাম তাদের সংখ্যা ছিল নিতান্ত কম। আর যালিমরা যে (বৈষয়িক) প্রাচুর্যের মধ্যে ছিল তার পেছনেই পড়ে থেকেছে; তারা ছিল (আসলেই) অপরাধী। (সূরা হুদ- ১১৬)
ব্যাখ্যা : মানবজাতির অতীত ইতিহাসে যতগুলো জাতিই ধ্বংস হয়েছে তাদের সবাইকে যে জিনিসটি ধ্বংস করেছে তা হচ্ছে, যখন আল্লাহ তাদেরকে স্বীয় নিয়ামত দ্বারা সমৃদ্ধ করেছেন তখন তারা নিজেদের প্রাচুর্য ও সমৃদ্ধির নেশায় মত্ত হয়ে পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে তৎপর হয়েছে। ফলে তাদের সামষ্টিক প্রকৃতি এমন পর্যায়ে বিকৃত হয়ে গিয়েছিল যে, তাদেরকে অসৎকাজ থেকে বিরত রাখার মতো সৎলোক তাদের মধ্যে ছিল না অথবা এ ধরনের কিছু লোক থাকলেও তাদের সংখ্যা এত কম ছিল যে, অসৎকাজ থেকে তারা বিরত রাখার চেষ্টা করলেও বিপর্যয় ঠেকাতে পারেনি। এ কারণেই শেষপর্যন্ত এ জাতিগুলো আল্লাহর আযাবের শিকার হয়েছে।
আযাব থেকে বাঁচতে হলে দাওয়াতী কাজ করতে হবে :
وَاِذْ قَالَتْ اُمَّةٌ مِّنْهُمْ لِمَ تَعِظُوْنَ قَوْمَانِ اللهُ مُهْلِكُهُمْ اَوْ مُعَذِّبُهُمْ عَذَابًا شَدِيْدًاؕ قَالُوْا مَعْذِرَةً اِلٰى رَبِّكُمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَّقُوْنَ
স্মরণ করো, যখন তাদের একদল বলেছিল, আল্লাহ যাদেরকে ধ্বংস করবেন কিংবা কঠোর শাস্তি দেবেন, তোমরা তাদেরকে উপদেশ দাও কেন? তারা বলেছিল, তোমাদের প্রতিপালকের নিকট দায়বদ্ধতা থেকে মুক্তির জন্য। আর হয়তো তারা সাবধানও হতে পারবে। (সূরা আ‘রাফ- ১৬৪)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতে যাদের কথা বলা হয়েছে তাদের মধ্যে তিন ধরনের লোক ছিল। (এক) যারা প্রকাশ্যে ও পূর্ণ ঔদ্ধত্য সহকারে আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধাচরণ করছিল। (দুই) যারা নিজেরা বিরুদ্ধাচরণ করছিল না, কিন্তু নীরবে হাত-পা গুটিয়ে বসে বসে অন্যের বিরুদ্ধাচরণকে পর্যবেক্ষণ করছিল এবং উপদেশ দানকারীদের বলছিল, এ হতভাগাদের উপদেশ দিয়ে কী লাভ? (তিন) যারা ঈমানী মর্যাদাবোধের কারণে আল্লাহর আইনের অমর্যাদা সহ্য করতে পারেনি, তারা এ মনে করে সৎকাজের আদেশ দিতে ও অসৎকাজ থেকে অপরাধীদেরকে বিরত রাখতে তৎপর ছিল যে, হয়তো ঐ অপরাধীরা তাদের উপদেশের প্রভাবে সৎপথে এসে যাবে, আর যদি তারা সৎপথে নাও আসে তাহলে অন্তত নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী কর্তব্য পালন করে আল্লাহর সামনে নিজেদের দায় মুক্তির প্রমাণ পেশ করা যাবে। এ অবস্থায় যখন তাদের উপর আল্লাহর আযাব নেমে আসল তখন এ তিনটি দলের মধ্য থেকে একমাত্র তৃতীয় দলকেই বাঁচিয়ে নেয়া হয়েছিল। কারণ একমাত্র তারাই আল্লাহর সামনে নিজেদের অজুহাত পেশ করার চিন্তা করছিল এবং একমাত্র তারাই নিজেদের দায়িত্ব থেকে মুক্তির প্রমাণ সংগ্রহ করে রেখেছিল। বাকি দল দু’টিকে অপরাধীদের মধ্যে গণ্য করা হলো এবং নিজেদের অপরাধ অনুপাতে তারা শাস্তি ভোগ করল।
এখানে আল্লাহ সুষ্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, আল্লাহর কাছে ওজর পেশ করার জন্য অবশ্যই নিজেদের দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করে যেতে হবে। এভাবে যারা দায়িত্ব থেকে মুক্তির প্রমাণ সংগ্রহ করতে পারবে, একমাত্র তারাই আল্লাহর কাছে ওজর পেশ করতে পারবে। এ থেকে পরিষ্কার প্রমাণিত হচ্ছে, যে জনপদে প্রকাশ্যে আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করা হতে থাকে সেখানকার সবাই জবাবদিহির সম্মুখীন হবে। সেখানকার কোন ব্যক্তি শুধু নিজে অপরাধ করেনি বলেই আল্লাহর সামনে জবাবদিহি থেকে বাঁচতে পারবে না। বরং আল্লাহর সামনে নিজের মুক্তির জন্য অবশ্যই তাকে এ মর্মে প্রমাণ পেশ করতে হবে যে, নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী সে মানুষের সংশোধন ও আল্লাহর সত্য দ্বীনের প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে এসেছে। রাসূল ﷺ বলেছেন, ‘‘মহান আল্লাহ বিশেষ লোকদের অপরাধের কারণে সর্বসাধারণকে শাস্তি দেন না, যতক্ষণ সাধারণ লোকদের অবস্থা এমন পর্যায়ে না পৌঁছে যায় যে, তারা নিজেদের চোখের সামনে খারাপ কাজ হতে দেখে এবং তাতে বাধা দেয়ার ÿমতাও রাখে; কিন্তু বাধা দেয় না। লোকেরা যখন এমন অবস্থায় পৌঁছে যায়, তখন আল্লাহ সাধারণ ও অসাধারণ সবাইকে আযাবের মধ্যে নিক্ষেপ করেন।’’ (মুয়াত্তা মালিক, হা/১৭৯৮)
ইখলাছ অর্জন করতে হবে :
وَجَآءَ مِنْ اَقْصَى الْمَدِيْنَةِ رَجُلٌ يَّسْعٰى قَالَ يَا قَوْمِ اتَّبِعُوا الْمُرْسَلِيْنَ ‐ - اِتَّبِعُوْا مَنْ لَّا يَسْاَلُكُمْ اَجْرًا وَّهُمْ مُّهْتَدُوْنَ
শহরের দূরপ্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি দৌড়ে এসে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা রাসূলদের অনুসরণ করো। আর তাদের অনুসরণ করো, যারা তোমাদের কাছে কোন বিনিময় চায় না এবং তারা নিজেরাও হেদায়াতপ্রাপ্ত। (সূরা ইয়াসীন- ২০, ২১)
قُلْ لَّاۤ اَسْاَلُكُمْ عَلَيْهِ اَجْرًا اِلَّا الْمَوَدَّةَ فِى الْقُرْبٰى
বলো, আমি এর বিনিময়ে তোমাদের নিকট হতে আত্মীয়তার ভালোবাসা ব্যতীত অন্য কোন বিনিময় চাই না। (সূরা শূরা- ২৩)
যোগ্যতা লাভের জন্য আল্লাহর কাছে দু‘আ করতে হবে :
رَبِّ اشْرَحْ لِيْ صَدْرِيْ ‐ - وَيَسِّرْ لِۤيْ اَمْرِيْ ‐ - وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِّنْ لِّسَانِيْ ‐ - يَفْقَهُوْا قَوْلِيْ
(মুসা আঃ বলেছিলেন) হে আমার প্রতিপালক! আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দাও এবং আমার কাজ সহজ করে দাও। আমার জিহবার জড়তা দূর করে দাও, যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে। (সূরা ত্বা-হা, ২৫-২৮)
যা প্রচার করবে তার উপর নিজে আমল করতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لِمَ تَقُوْلُوْنَ مَا لَا تَفْعَلُوْنَ ‐ - كَبُرَ مَقْتًا عِنْدَ اللهِ اَنْ تَقُوْلُوْا مَا لَا تَفْعَلُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা যা কর না, তা কেন বল? তোমরা যা কর না তা বলা আল্লাহর নিকট অতিশয় অসন্তোষজনক। (সূরা সাফ- ২, ৩)
اَتَأْمُرُوْنَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَتَنْسَوْنَ اَنْفُسَكُمْ وَاَنْتُمْ تَتْلُوْنَ الْكِتَابَ ؕ اَفَلَا تَعْقِلُوْنَ
তোমরা কি লোকদেরকে সৎকাজের আদেশ দাও, আর নিজেদের ব্যাপারে ভুলে যাও; অথচ তোমরাই গ্রন্থ পাঠ কর। তবে কি তোমরা বুঝ না? (সূরা বাক্বারা- ৪৪)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ অন্যদেরকে যেসব কাজের নির্দেশ দেয়া হবে, প্রথমে নিজে তার উপর আমল করতে হবে। আর যেসব অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে, নিজেও সেগুলো থেকে দূরে থাকবে। যেসব কলঙ্ক থেকে মানুষকে মুক্ত দেখতে চাও, নিজের জীবনকেও তা থেকে মুক্ত রাখবে। যে পথের দিকে মানুষকে আহবান জানাবে, নিজের জন্যও সেই পথটিই পছন্দ করবে।
সংশোধনের উদ্দেশ্যে প্রচার করতে হবে :
قَالَ يَا قَوْمِ اَرَاَيْتُمْ اِنْ كُنْتُ عَلٰى بَيِّنَةٍ مِّنْ رَّبِّيْ وَرَزَقَنِيْ مِنْهُ رِزْقًا حَسَنًاؕ وَمَاۤ اُرِيْدُ اَنْ اُخَالِفَكُمْ اِلٰى مَاۤ اَنْهَاكُمْ عَنْهُؕ اِنْ اُرِيْدُ اِلَّا الْاِصْلَاحَ مَا اسْتَطَعْتُؕ وَمَا تَوْفِيْقِيْۤ اِلَّا بِاللهِؕ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَاِلَيْهِ اُنِيْبُ
(শুয়াইব আঃ) বললেন, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা ভেবে দেখেছ কি, আমি যদি আমার প্রতিপালক প্রেরিত স্পষ্ট প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকি এবং তিনি যদি তাঁর নিকট হতে আমাকে উৎকৃষ্ট জীবনোপকরণ দান করেন (তাহলে কেন আমি আমার কর্তব্য হতে বিরত থাকব?) আমি তোমাদেরকে যা থেকে নিষেধ করি নিজে তা করতে ইচ্ছা করি না। আমি তো আমার সাধ্যমতো সংস্কারই করতে চাই। আমার কার্যসাধন তো আল্লাহরই সাহায্যে (সংঘটিত হয়); আর আমি তাঁরই উপর নির্ভর করি এবং আমি তাঁরই অভিমুখী। (সূরা হুদ- ৮৮)
জাতির কল্যাণকামী হতে হবে :
اُبَلِّغُكُمْ رِسَالَاتِ رَبِّيْ وَاَنَاْ لَكُمْ نَاصِحٌ اَمِيْنٌ
আমি আমার প্রতিপালকের বাণী তোমাদের নিকট পৌঁছে দিচ্ছি। আর আমি তোমাদের জন্য একজন বিশ্বস্ত শুভাকাঙ্ক্ষী। (সূরা আ‘রাফ- ৬৮)
সমালোচনার ভয়ে কোন হক কথা গোপন রাখা যাবে না :
فَلَعَلَّكَ تَارِكٌ ۢبَعْضَ مَا يُوْحٰۤى اِلَيْكَ وَضَآئِقٌ ۢبِهٖ صَدْرُكَ اَنْ يَّقُوْلُوْا لَوْلَاۤ اُنْزِلَ عَلَيْهِ كَنْزٌ اَوْ جَآءَ مَعَهٗ مَلَكٌ اِنَّمَاۤ اَنْتَ نَذِيْرٌ وَّاللهُ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ وَّكِيْلٌ
(হে নবী) যখন তারা (কাফিররা) বলে, এ ব্যক্তির উপর কোন ধনভান্ডার অবতীর্ণ হলো না কেন, কিংবা তার সাথে (নবুওয়াতের সাক্ষ্য দেয়ার জন্য) কোন ফেরেশতা এলো না কেন? তখন সম্ভবত তোমার কাছে যে ওহী নাযিল হয় তার কিয়দাংশ তুমি ছেড়ে দাও এবং মনে কষ্ট পাও। আসলে তুমি তো কেবল (আযাবের) ভয় প্রদর্শনকারী (একজন রাসূল মাত্র); আর আল্লাহ সবকিছুর উপর কর্মবিধায়ক। (সূরা হুদ- ১২)
ব্যাখ্যা : কোন দেশ বা জাতির জীবনব্যবস্থা যদি কুফর ও শিরকের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে; আর সে অবস্থায় যদি কোন আল্লাহর বান্দা ব্যক্তিগত জীবন থেকে রাষ্ট্রীয় জীবন পর্যন্ত তাওহীদ বা আল্লাহর একত্ববাদ প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, তখন কতিপয় সুস্থ বিবেকসম্পন্ন ব্যক্তি ছাড়া বাকি সব লোকই তার বিরুদ্ধে লেগে যাবে- এতে কোন সন্দেহ নেই। কেউ যুলুম-নির্যাতনের মাধ্যমে তাকে দাবিয়ে দিতে চাইবে। কেউ মিথ্যা দোষারোপ এবং আজেবাজে প্রশ্ন-আপত্তি উত্থাপন করে তার সাহস কমাতে চাইবে। আবার কেউ ঠাট্টা-বিদ্রূপ ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে তার কথাকে গুরুত্বহীন করে দিতে চাইবে। এভাবে এ ব্যক্তির দাওয়াতকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করবে। নবী ﷺ এর সাথে যখন এসব আচরণ করা হয় তখন আল্লাহ তা‘আলা তাকে উপদেশ দিয়ে বলছেন, আমার দৃষ্টিতে যে ব্যক্তি নিজে সৎ হয় এবং সততার পথে ধৈর্য ও অবিচলতার সাথে অগ্রসর হয় প্রকৃতপক্ষে সে-ই মর্যাদার অধিকারী। কাজেই যে ধরনের বিদ্বেষ ও বিরূপ ব্যবহার দ্বারা তোমার মুকাবিলা করা হচ্ছে, তার ফলে তোমার দৃঢ়তা ও অবিচলতায় যেন ফাটল না ধরে। ওহীর মাধ্যমে তোমার সামনে যে মহাসত্যের দ্বার উন্মুক্ত করা হয়েছে, তার প্রতি আহবান জানাতে যেন তুমি একটুও কুণ্ঠিত না হও। কোন বিষয় শোনার সাথে সাথেই যখন লোকেরা তা নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করতে থাকে, তখন তা কেমন করে বলব বা কোন সত্য কথা যখন কেউ শুনতেই প্রস্তুত নয় তখন তা কীভাবে প্রকাশ করব- এসব নিয়ে চিন্তা করো না। কেউ মানুক বা না মানুক ওহীর বাণী নির্দ্বিধায় ও নির্ভয়ে এবং কোন প্রকার কম-বেশি না করে যথাযথভাবে প্রচার করতে থাকো।
মানুষের দেখানো ভয়কে উপেক্ষা করতে হবে :
اَلَيْسَ اللهُ بِكَافٍ عَبْدَهٗؕ وَيُخَوِّفُوْنَكَ بِالَّذِيْنَ مِنْ دُوْنِهٖؕ وَمَنْ يُّضْلِلِ اللهُ فَمَا لَهٗ مِنْ هَادٍ
আল্লাহ কি তাঁর বান্দার জন্য যথেষ্ট নন? অথচ তারা তোমাকে আল্লাহর পরিবর্তে অপরের ভয় দেখায়। (জেনে রেখো) আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তার জন্য কোন পথপ্রদর্শক নেই। (সূরা যুমার- ৩৬)
মনের মধ্যে কোন দুর্বলতাকে স্থান দেয়া যাবে না :
كِتَابٌ اُنْزِلَ اِلَيْكَ فَلَا يَكُنْ فِيْ صَدْرِكَ حَرَجٌ مِّنْهُ لِتُنْذِرَ بِهٖ وَذِكْرٰى لِلْمُؤْمِنِيْنَ
(হে নবী) এ মহাগ্রন্থ তোমার প্রতি নাযিল করা হয়েছে যেন তুমি এর দ্বারা (কাফিরদেরকে) ভয় দেখাতে পার, আর ঈমানদারের জন্য (এটি হচ্ছে) একটি স্মরণিকা। অতএব (এ ব্যাপারে) তোমার মনে যেন কোন প্রকারের সংকীর্ণতা না থাকে। (সূরা আ‘রাফ- ২)
ব্যাখ্যা : বিরোধিতা ও বাধা-বিপত্তির মধ্য দিয়ে নিজের পথ পরিষ্কার না দেখলে মানুষের মন সামনে এগিয়ে চলতে পারে না। এজন্য আল্লাহ বলেন, কোন প্রকার ইতস্ততবোধ ও ভীতি ছাড়াই কুরআনের দাওয়াত মানুষের কাছে পৌঁছে দাও। বিরোধীরা একে কীভাবে গ্রহণ করবে এর কোন পরোয়া করো না। তারা ক্ষেপে যায় যাক, বিদ্রূপ করে করুক, আজেবাজে কথা বলে বলুক এবং তাদের শত্রুতা আরো বেড়ে যায় যাক। তুমি নিশ্চিন্তে ও নিঃসংকোচে তাদের কাছে এ বাণী পৌঁছে দাও এবং এর প্রচারে একটুও গড়িমসি করো না।
ওহীর জ্ঞানই হবে দাওয়াতের বিষয়বস্তু :
قُلْ اِنَّمَاۤ اُنْذِرُكُمْ بِالْوَحْيِ
বলো, আমি তো তোমাদেরকে কেবল ওহী দ্বারাই সতর্ক করে থাকি। (সূরা আম্বিয়া- ৪৫)
মানুষকে কুরআনের মাধ্যমে উপদেশ দিতে হবে :
فَذَكِّرْ بِالْقُرْاٰنِ مَنْ يَّخَافُ وَعِيْدِ
যে আমার শাস্তিকে ভয় করে, তাকে কুরআনের মাধ্যমে উপদেশ দান করো। (সূরা ক্বাফ- ৪৫)
সত্য গোপন করা বা তাতে মিথ্যার সংমিশ্রণ করা যাবে না :
وَلَا تَلْبِسُوا الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ وَتَكْتُمُوا الْحَقَّ وَاَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনে বুঝে সত্যকে গোপন করো না। (সূরা বাক্বারা- ৪২)
আল্লাহর ব্যাপারে কেবল হক কথাই বলতে হবে :
اَلَمْ يُؤْخَذْ عَلَيْهِمْ مِّيْثَاقُ الْكِتَابِ اَنْ لَّا يَقُوْلُوْا عَلَى اللهِ اِلَّا الْحَقَّ
তাদের কাছ থেকে কি আল্লাহর কিতাবের এ প্রতিশ্রুতি নেয়া হয়নি যে, তারা আল্লাহ সম্বন্ধে সত্য ছাড়া কিছুই বলবে না! (সূরা আ‘রাফ- ১৬৯)
সূক্ষ্মদর্শিতার মাধ্যমে দাওয়াত দিতে হবে :
قُلْ هٰذِهٖ سَبِيْلِيْۤ اَدْعُوْاۤ اِلَى اللهِ عَلٰى بَصِيْرَةٍ اَنَاْ وَمَنِ اتَّبَعَنِيْؕ وَسُبْحَانَ اللهِ وَمَاۤ اَنَاْ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
বলো, এটাই আমার পথ। আমি এবং আমার অনুসারীরা সূক্ষ্মদর্শিতার মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি মানুষকে আহবান করি। আল্লাহ মহিমান্বিত; আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। (সূরা ইউসুফ- ১০৮)
ক্ষমার নীতি অবলম্বন করতে হবে :
خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ وَاَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلِيْنَ
তুমি ক্ষমাপরায়ণতা অবলম্বন করো, সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং অজ্ঞদেরকে এড়িয়ে চলো। (সূরা আ‘রাফ- ১৯৯)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতগুলোতে নবী ﷺ কে প্রচার, সংস্কার ও সংশোধনের কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ কৌশল জানিয়ে দেয়া হয়েছে। কেবল নবী ﷺ কে নয়, বরং নবী ﷺ এর স্থলাভিষিক্ত হয়ে যেসব লোক দুনিয়াবাসীকে সঠিক পথ দেখানোর দায়িত্ব পালন করার জন্য এগিয়ে আসবে, তাদেরকেও একই কৌশল শিখানো হয়েছে।
ইসলামের আহবায়কের জন্য যে গুণগুলো সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় সেগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে, তাকে কোমল স্বভাব, সহিষ্ণু ও উদার হৃদয়ের অধিকারী হতে হবে। তাকে হতে হবে নিজের সাথিদের জন্য স্নেহশীল, সাধারণ মানুষের জন্য দয়ার্দ্র এবং বিরোধীদের জন্য সহিষ্ণু। নিজের সাথিদের দুর্বলতাগুলোও সহ্য করে নিতে হবে এবং বিরোধীদের কঠোর ব্যবহারকেও সহ্য করতে হবে। চরম উত্তেজনাকর অবস্থার মধ্যেও নিজের আচরণে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। অত্যন্ত বিরক্তিকর ও অপছন্দনীয় কথাগুলোও উদার মনে এড়িয়ে যেতে হবে। বিরোধীদের পক্ষ থেকে যতই কড়া ভাষায় কথা বলা হোক, অথবা যতই বর্বরোচিত প্রতিরোধ গড়ে তুলা হোক না কেন, অবশ্যই তাকে এ সবকিছুকে উপেক্ষা করতে হবে। কঠোর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা, কর্কশ আচরণ করা, তিক্ত ও কড়া কথা বলা এবং প্রতিশোধমূলক মানসিক উত্তেজনায় ভোগা এ কাজের জন্য বিষতুল্য। এতে গোটা কাজ পন্ড হয়ে যায়। এ জিনিসটিকে নবী ﷺ এভাবে বর্ণনা করেছেন, ‘‘আমার রব আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, আমি যেন ক্রোধ ও সন্তুষ্টি উভয় অবস্থায়ই ইনসাফের কথা বলি, যে আমার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে আমি যেন তার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করি, যে আমাকে আমার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে আমি যেন তাকে তার অধিকার দান করি, যে আমার প্রতি যুলুম করে আমি যেন তাকে ÿমা করে দেই।’’ (মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৪৮৮)
সত্যের দাওয়াতের সাফল্যের মূলমন্ত্র হচ্ছে, দাওয়াত দানকারীরা সূক্ষ্ম বিষয় নিয়ে আলোচনা করার পরিবর্তে লোকদেরকে এমনসব সহজসরল সৎকাজের নির্দেশ দেবেন, যা সবার কাছে সৎকাজ হিসেবে পরিচিত এবং ব্যাপারটি বুঝার জন্য প্রত্যেক মানুষের সাধারণ জ্ঞানই যথেষ্ট হয়। এভাবে সত্যের আহবায়কের আবেদন সবাইকে প্রভাবিত করে। কারণ সাধারণ মানুষ যতই বিদ্বেষভাবাপন্ন হোক না কেন যখন তারা দেখে যে, সৎ, ভদ্র ও উন্নত নৈতিক চরিত্রের অধিকারী এক ব্যক্তি সরল সহজভাবে সৎকাজের দাওয়াত দিচ্ছে, তখন স্বাভাবিকভাবেই ধীরে ধীরে সত্য বিরোধীদের প্রতি তাদের মন বিরূপ হয়ে উঠতে থাকে এবং সত্যের আহবায়কের প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকে। এ কর্মকৌশলের ফলেই নবী ﷺ আরবে সাফল্য অর্জন করেন এবং কিছুকালের ব্যবধানে নিকটবর্তী দেশগুলোতেও ইসলাম বিস্তার লাভ করে।
দাওয়াতের ক্ষেত্রে ন্যায় ও কল্যাণ অনুসন্ধানীদেরকে সৎকাজের দিকে উদ্বুদ্ধ করা জরুরি। মূর্খদের সাথে কোন প্রকার সংঘর্ষ ও বিরোধে জড়িয়ে পড়া উচিত নয়। তারা সংঘর্ষ ও বিরোধ সৃষ্টি করার জন্য যত চেষ্টা করুক না কেন, যারা ন্যায়সঙ্গতভাবে বুদ্ধি-বিবেচনার সাথে বক্তব্য অনুধাবন করতে চায়- আহবায়কের উচিত তাদেরকেই সম্বোধন করা। অন্যদিকে যখন কোন ব্যক্তি নিরেট মূর্খের মতো ব্যবহার শুরু করে দেয় এবং কোন বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক ও গালি-গালাজের পর্যায়ে নেমে আসে, তখন আহবায়কের উচিত তার প্রতিদ্বন্দ্বীর ভূমিকায় অবতীর্ণ না হওয়া। কারণ এ ধরনের বিতর্ক ও ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হয়ে কোন লাভ নেই। বরং এতে বিরাট ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ আহবায়কের যে শক্তি ইসলামী দাওয়াত সম্প্রসারণ ও মানুষের চরিত্র সংশোধনের কাজে ব্যয় করা উচিত, তা অযথা এ বাজে কাজে ব্যয় হয়ে যায়।
শয়তানের উস্কানি থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাইতে হবে :
وَقُلْ رَّبِّ اَعُوْذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِيْنِ ‐ وَاَعُوْذُ بِكَ رَبِّ اَنْ يَّحْضُرُوْنِ
বলো, হে আমার প্রতিপালক! শয়তানের প্ররোচনা হতে আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি এবং আমার নিকট তাদের উপস্থিতি হতেও তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি। (সূরা মু’মিনূন- ৯৭, ৯৮)
وَاِمَّا يَنْزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللهِؕ اِنَّهٗ هُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে, তবে আল্লাহর আশ্রয় নেবে। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৩৬)
ব্যাখ্যা : সত্যের আহবায়ক যখনই বিরোধীদের যুলুম, নির্যাতন এবং তাদের অভিযোগ ও আপত্তির কারণে মানসিক উত্তেজনা অনুভব করবে তখনই তার বুঝে নিতে হবে যে, এটি শয়তানের উস্কানি ছাড়া আর কিছুই নয়। ফলে তখনই তাকে আল্লাহর কাছে এ মর্মে আশ্রয় চাওয়া উচিত যে, আল্লাহ যেন তাকে এ উত্তেজনার স্রোতে ভাসিয়ে না দেন, যার ফলে সে সত্যের দাওয়াত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার মতো কোন কাজ করে বসে। সত্যের দাওয়াতের কাজ ঠান্ডা মাথায় করতে হবে। উত্তেজনার বশবর্তী না হয়ে পরিবেশ-পরিস্থিতি এবং সময়-সুযোগ দেখে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করে যে পদক্ষেপ নেয়া হয়, সেটিই সঠিক হতে পারে। কিন্তু শয়তান যেহেতু এ কাজের উন্নতি কখনো দেখতে পারে না, তাই সে সর্বর্দা সত্যের আহবায়কের উপর নানা ধরনের আক্রমণ চালানোর চেষ্টা করে। আবার প্রত্যেকটি আক্রমণের পর সে আহবায়ককে এ বলে উত্তেজিত করতে থাকে যে, এ আক্রমণের জবাব অবশ্যই দেয়া দরকার। সুতরাং যারা আল্লাহকে ভয় করে কাজ করে এবং অসৎকাজ থেকে বিরত থাকতে চায়, তারা নিজেদের মনে কোন শয়তানী প্ররোচনার প্রভাব এবং কোন অসৎ চিন্তার ছোঁয়া অনুভব করতেই সাথে সাথে সজাগ হয়ে উঠে।
সময়-সুযোগ বুঝে দাওয়াত দিতে হবে :
وَاتَّبَعْتُ مِلَّةَ اٰبَآئِىْۤ اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَؕ مَا كَانَ لَنَاۤ اَنْ نُّشْرِكَ بِاللهِ مِنْ شَيْءٍؕ ذٰلِكَ مِنْ فَضْلِ اللهِ عَلَيْنَا وَعَلَى النَّاسِ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَشْكُرُوْنَ ‐ يَا صَاحِبَيِ السِّجْنِ اَاَرْبَابٌ مُّتَفَرِّقُوْنَ خَيْرٌ اَمِ اللهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ
আমি আমার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম, ইসহাক এবং ইয়াকূবের মতবাদ অনুসরণ করি। আল্লাহর সাথে কোন বস্তুকে শরীক করা আমাদের কাজ নয়। এটা আমাদের ও সমস্ত মানুষের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। হে কারাসঙ্গীদ্বয়! ভিন্ন ভিন্ন বহু প্রতিপালক শ্রেয়, না পরাক্রমশালী এক আল্লাহ? (সূরা ইউসুফু ৩৮, ৩৯)
ব্যাখ্যা : ইউসুফ (আঃ) কারাগারে এ দাওয়াত দিয়েছিলেন। তিনি নিজের বক্তব্য পেশ করার জন্য যেভাবে সুযোগ সৃষ্টি করেছেন তা থেকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা লাভ করতে পারি। দু’জন লোক তাদের স্বপ্ন বর্ণনা করছে এবং এর তা’বীর জিজ্ঞেস করছে। কিন্তু তিনি তা’বীর বলার পূর্বে তাদের কথার ভেতর সুযোগ সৃষ্টি করে তাদের সামনে নিজের দ্বীন পেশ করতে থাকেন। কোন ব্যক্তি যদি সত্য প্রচারে লেগে যায় এবং সে সূক্ষ্ম বুদ্ধিবৃত্তির অধিকারী হয়, তাহলে সে চমৎকারভাবে আলোচনার মোড় নিজের দিকে ফিরিয়ে নিতে পারে। যে ব্যক্তির দাওয়াত দেয়ার মানসিকতা থাকে না, তার সামনে সুযোগের পর সুযোগ আসতে থাকে কিন্তু কোন সুযোগই সে কাজে লাগাতে পারে না। আবার নির্বোধ প্রচারক পরিবেশ-পরিস্থিতির প্রতি দৃষ্টি না রেখে লোকদের কানে জোরপূর্বক নিজের দাওয়াত ঠেসে দেয়ার চেষ্টা করে। তারপর অনর্থক তর্ক-বিতর্ক ও বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে, এতে তাদের মনে উল্টো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ইউসুফ (আঃ) সুযোগ পেতেই ইসলামের বিস্তারিত বিধান ও নীতিমালা পেশ করতে শুরু করেননি। বরং শ্রোতাদের সামনে দ্বীনের এমন একটি সূচনাবিন্দু তুলে ধরেন যেখান থেকে সত্যপন্থী ও মিথ্যাপন্থীদের পথ পরস্পর আলাদা হয়ে গেছে। অর্থাৎ তাওহীদ ও শিরকের পার্থক্য তুলে ধরেছেন। আবার এ পার্থক্যকে এমন যুক্তিসঙ্গত পদ্ধতিতে সুস্পষ্ট করেছেন, যার ফলে সাধারণ বিবেকবুদ্ধিসম্পন্ন যে কোন ব্যক্তিই তা অনুভব করতে পারবে।
দাওয়াত দিতে হবে হেকমত ও সদুপদেশের মাধ্যমে :
اُدْعُ اِلٰى سَبِيْلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِيْ هِيَ اَحْسَنُؕ اِنَّ رَبَّكَ هُوَ اَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِيْلِهٖ وَهُوَ اَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِيْنَ
তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান করো হেকমত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সাথে তর্ক করবে উত্তম পন্থায়। পথ ছেড়ে কে বিপথগামী হয় সে সম্বন্ধে তোমার প্রতিপালক সবিশেষ অবহিত এবং কারা সৎপথে আছে তাও তিনি অধিক জানেন। (সূরা নাহল- ১২৫)
ব্যাখ্যা : দাওয়াত দেয়ার সময় দু’টি জিনিসের প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে। (এক) প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তা। (দুই) সদুপদেশ। জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তার অর্থ হচ্ছে, নির্বোধদের মতো চোখ বন্ধ করে দাওয়াত দেয়া যাবে না। বরং বুদ্ধি খাটিয়ে যাকে দাওয়াত দেয়া হচ্ছে তার মন-মানসিকতা, যোগ্যতা ও অবস্থার দিকে খেয়াল রেখে এবং পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝে কথা বলতে হবে। একই লাঠি দিয়ে সবাইকে তাড়িয়ে নেয়া যাবে না। যে কোন ব্যক্তি বা দলের মুখোমুখি হলে প্রথমে তার রোগ নির্ণয় করতে হবে, তারপর এমন যুক্তি-প্রমাণের সাহায্যে তার রোগ নিরসনের চেষ্টা করতে হবে, যা তার মন-মস্তিষ্কের গভীরে প্রবেশ করে তার রোগের শিকড় উপড়ে ফেলতে পারে।
সদুপদেশের দু’টি অর্থ হয় :
(এক) যাকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে তাকে শুধুমাত্র যুক্তি প্রমাণের সাহায্যে তৃপ্ত করে দিয়ে ক্ষান্ত হলে চলবে না; বরং তার আবেগ-অনুভূতির প্রতিও আবেদন জানাতে হবে। দুষ্কৃতি ও ভ্রষ্টতাকে শুধুমাত্র বুদ্ধিভিত্তিক দিক দিয়ে বাতিল করলে হবে না; বরং মানুষের প্রকৃতিতে এসবের বিরুদ্ধে যে জন্মগত ঘৃণা রয়েছে তাকেও জাগিয়ে তুলতে হবে এবং সেগুলোর অশুভ পরিণতির ভয় দেখাতে হবে। ইসলাম গ্রহণ ও সৎকাজে আত্মনিয়োগ শুধু যে ন্যায়সঙ্গত ও মহৎ গুণ তা যৌক্তিকভাবে প্রমাণ করলে চলবে না বরং সেগুলোর প্রতি আকর্ষণও সৃষ্টি করতে হবে।
(দুই) উপদেশ এমনভাবে দিতে হবে, যাতে আন্তরিকতা সুস্পষ্ট হয়ে উঠে। যাকে উপদেশ দান করা হচ্ছে সে যেন এ কথা মনে না করে যে, উপদেশদাতা তাকে তাচ্ছিল্য করছে এবং নিজের শ্রেষ্ঠত্বের অনুভূতির স্বাদ নিচ্ছে। বরং সে অনুভব করবে উপদেশদাতার মনে তার সংশোধনের প্রবল আকাঙ্ক্ষা রয়েছে এবং আসলে সে তার ভালো চায়।
প্রশংসা ও দরূদ পাঠের মাধ্যমে শুরু করতে হবে:
قُلِ الْحَمْدُ لِلّٰهِ وَسَلَامٌ عَلٰى عِبَادِهِ الَّذِيْنَ اصْطَفٰى
বলো, সকল প্রশংসা আল্লাহরই; অতঃপর তাঁর মনোনীত বান্দাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। (সূরা নামল- ৫৯)
ব্যাখ্যা : মুসলিমরা কীভাবে তাদের বক্তৃতা শুরু করবে এখানে তা শিক্ষা দেয়া হয়েছে। এরই ভিত্তিতে সঠিক ইসলামী চিন্তা ও মানসিকতাসম্পন্ন লোকেরা সবসময় আল্লাহর প্রশংসা এবং তাঁর সৎ বান্দাদের জন্য শান্তি ও নিরাপত্তার দু‘আ করে তাদের বক্তৃতা শুরু করে থাকেন। কিন্তু আজকাল এ যুগের বক্তারা এর মাধ্যমে বক্তৃতা শুরু করতে লজ্জাবোধ করেন।
আল্লাহর কাছে তাওফীক চাইতে হবে :
اِنْ اُرِيْدُ اِلَّا الْاِصْلَاحَ مَا اسْتَطَعْتُؕ وَمَا تَوْفِيْقِيْۤ اِلَّا بِاللهِؕ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَاِلَيْهِ اُنِيْبُ
আমি তো আমার সাধ্যমতো সংস্কারই করতে চাই। আমার কার্যসাধন তো আল্লাহরই সাহায্যে (সংঘটিত হয়), আর আমি তাঁরই উপর নির্ভর করি এবং তাঁরই অভিমুখী। (সূরা হুদ- ৮৮)
সাজিয়ে-গুছিয়ে উত্তম কথা বলতে হবে :
وَقُلْ لِّعِبَادِيْ يَقُوْلُوا الَّتِيْ هِيَ اَحْسَنُؕ اِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْزَغُ بَيْنَهُمْؕ اِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلْاِنْسَانِ عَدُوًّا مُّبِيْنًا
আমার বান্দাদেরকে বলো, তারা যেন উত্তম কথা বলে। নিশ্চয় শয়তান তাদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টির জন্য উস্কানি দেয়; নিশ্চয় শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। (বনী ইসরাঈল- ৫৩)
এমন কথা বলতে হবে, যা মানুষের হৃদয়ে পৌঁছে :
اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ يَعْلَمُ اللهُ مَا فِيْ قُلُوْبِهِمْۗ فَاَعْرِضْ عَنْهُمْ وَعِظْهُمْ وَقُلْ لَّهُمْ فِۤيْ اَنْفُسِهِمْ قَوْلًا ۢبَلِيْغًا
এরাই তারা, যাদের অন্তরে কী আছে আল্লাহ তা জানেন। সুতরাং তুমি তাদেরকে উপেক্ষা করো, তাদেরকে উপদেশ দাও এবং তাদেরকে মর্মস্পর্শী কথা বলো। (সূরা নিসা- ৬৩)
প্রতিপক্ষ যত বড় যালিমই হোক না কেন নরম ভাষায় বুঝাতে হবে :
اِذْهَبَاۤ اِلٰى فِرْعَوْنَ اِنَّهٗ طَغٰى ‐ فَقُوْلَا لَهٗ قَوْلًا لَّيِّنًا لَّعَلَّهٗ يَتَذَكَّرُ اَوْ يَخْشٰى
তোমরা উভয়ে ফিরাউনের নিকট যাও, সে তো সীমালঙ্ঘন করেছে। অতঃপর তোমরা তার সাথে নম্রভাবে কথা বলো; হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভয় করবে। (সূরা ত্বা-হা- ৪৩, ৪৪)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ কাফির, মুশরিক এবং ইসলাম বিরোধীদের সাথে আলাপ-আলোচনা ও বিতর্ক করার সময় কড়া কথা ও বাড়াবাড়ি বর্জন করতে হবে। বিরোধী পক্ষ যতই অপ্রীতিকর কথা বলুক না কেন, কোন ক্রমেই মুসলিমদের মুখ থেকে কোন ন্যায় ও সত্যবিরোধী কথা বের হওয়া উচিত নয়। তাদেরকে ঠান্ডা মাথায় এমনসব কথা বলতে হবে, যা যাচাই বাছাই করা এবং দাওয়াতের মর্যাদার সাথে সঙ্গতিশীল।
মাতৃভাষায় বুঝাতে হবে :
وَمَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهٖ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ
আমি প্রত্যেক রাসূলকেই তার স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি, যাতে করে তারা তাদের নিকট স্পষ্টভাবে বর্ণনা করতে পারে। (সূরা ইবরাহীম- ৪)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ তা‘আলা যে সম্প্রদায়ের মধ্যে যে নবীকেই পাঠিয়েছেন, তার উপর তার নিজের ভাষাতেই ওহী অবতীর্ণ করেছেন। এর উদ্দেশ্য ছিল সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায় যেন তা ভালোভাবে বুঝতে পারে এবং পরবর্তী পর্যায়ে তারা এ ধরনের কোন অজুহাত পেশ করতে না পারে যে, আল্লাহর পাঠানো শিক্ষা তারা বুঝতে পারেনি। আল্লাহর দৃষ্টিতে শিক্ষা দান ও সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই যে কোন জাতিকে তার নিজের ভাষায় বাণী পৌঁছানো প্রয়োজন।
আল্লাহর নিয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে হবে :
فَاذْكُرُوْاۤ اٰلَآءَ اللهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহকে স্মরণ করো, হয়তো তোমরা সফলকাম হতে পারবে। (সূরা আ‘রাফ- ৬৯)
দুনিয়া ও আখিরাতের বাস্তবতা বুঝাতে হবে :
وَقَالَ الَّذِيْۤ اٰمَنَ يَا قَوْمِ اتَّبِعُوْنِ اَهْدِكُمْ سَبِيْلَ الرَّشَادِ ‐ يَا قَوْمِ اِنَّمَا هٰذِهِ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا مَتَاعٌ وَّاِنَّ الْاٰخِرَةَ هِيَ دَارُ الْقَرَارِ
যে ব্যক্তি ঈমান এনেছিল সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আমার অনুসরণ করো, আমি তোমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করব। হে আমার সম্প্রদায়! এ পার্থিব জীবন তো (অস্থায়ী) উপভোগের জন্য; নিশ্চয় আখিরাত হচ্ছে চিরস্থায়ী আবাস। (সূরা মু’মিন- ৩৮, ৩৯)
দ্বীন কায়েমের গুরুত্ব বুঝাতে হবে :
قُلْ يَاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ لَسْتُمْ عَلٰى شَيْءٍ حَتّٰى تُقِيْمُوا التَّوْرَاةَ وَالْاِنْجِيْلَ وَمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكُمْ مِّنْ رَّبِّكُمْ
বলো, হে আহলে কিতাব সম্প্রদায়! যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা তাওরাত, ইঞ্জিল এবং তোমাদের প্রতি তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যেসব বিধান নাযিল হয়েছে সেগুলো যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠিত না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা কোনকিছুর উপরই প্রতিষ্ঠিত নও। (সূরা মায়েদা- ৬৮)
শ্রোতাদেরকে খারাপভাবে সম্বোধন করা যাবে না :
قُلْ مَنْ يَّرْزُقُكُمْ مِّنَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِؕ قُلِ اللهُ وَاِنَّاۤ اَوْ اِيَّاكُمْ لَعَلٰى هُدًى اَوْ فِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ ‐ قُلْ لَّا تُسْاَلُوْنَ عَمَّاۤ اَجْرَمْنَا وَلَا نُسْاَلُ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ
বলো, আকাশ ও পৃথিবী থেকে কে তোমাদেরকে রিযিক প্রদান করেন? বলো, আল্লাহ। নিশ্চয় আমরা অথবা তোমরা (উভয়ের এক পক্ষ) হয় সৎপথের উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছি, কিংবা স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে রয়েছি। বলো, আমরা যে অপরাধ করেছি সেজন্য তোমরা জিজ্ঞেসিত হবে না এবং তোমরা যা কর তার জন্য আমরাও জিজ্ঞেসিত হব না। (সূরা সাবা- ২৪, ২৫)
ব্যাখ্যা : এ বাক্যাংশে প্রচার কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে। যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহর দাসত্ব ও আনুগত্য করবে সে সঠিক পথে থাকবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যদের আনুগত্য করবে সে স্পষ্ট ভ্রষ্টতায় লিপ্ত হবে। এ কারণে বাহ্যত এরপর এ কথাই বলা উচিত ছিল যে, আমরা সঠিক পথে আছি এবং তোমরা পথভ্রষ্ট। কিন্তু এ ধরনের স্পষ্ট উক্তি সত্যকথার দিক দিয়ে যতই সঠিক হোক না কেন, প্রচার কৌশলের দিক থেকে সঠিক হয় না। কারণ যখনই কেউ কোন ব্যক্তিকে সম্বোধন করে সরাসরি তাকে পথভ্রষ্ট বলে আখ্যায়িত করবে এবং নিজেকে সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত বলে দাবী করবে, তখনই ঐ ব্যক্তি জিদ ও হঠকারিতায় লিপ্ত হয়ে যাবে। আল্লাহ নবীকে যেহেতু শুধুমাত্র সত্য কথা বলার জন্যই পাঠাননি; বরং তাঁর প্রতি এ দায়িত্বও আরোপ করেছেন যে, তিনি সর্বাধিক কৌশল অবলম্বন করে বিভ্রান্ত লোকদেরকে সংশোধন করবেন। তাই আল্লাহ এ কথা বলেননি যে, হে নবী! তুমি লোকদেরকে বলে দাও যে, তোমরা পথভ্রষ্ট এবং একমাত্র আমিই সঠিক পথে আছি। বরং এর পরিবর্তে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, তাদেরকে এভাবে বুঝাও যে, আমাদের ও তোমাদের মধ্যকার পার্থক্য তো সুস্পষ্ট হয়ে গেছে। আমরা এমন মা‘বুদকে মানি যিনি রিযিক দেন। পক্ষান্তরে তোমরা এমনসব সত্তাকে মা‘বুদে পরিণত করেছ, যারা রিযিক দেয় না। এখন আমাদের ও তোমাদের একই সাথে সঠিক পথের অনুসারী হওয়া কোনক্রমেই সম্ভব নয়। আমাদের মধ্য থেকে এক পক্ষই সঠিক পথের অনুসারী হতে পারে এবং অন্য পক্ষ অবশ্যই পথভ্রষ্ট হবে। এবার তোমরা নিজেরাই চিন্তা করো- যুক্তি ও প্রমাণের ভিত্তিতে কারা সঠিক পথাবলম্বী এবং কারা পথভ্রষ্ট।
‘‘আমরা জান্নাতী এবং অমুক ব্যক্তি বা দল জাহান্নামী’’- এ ধরনের দাবী কখনো ঈমানদারদের মুখে উচ্চারিত হওয়া উচিত নয়। এ বিষয়টির ফায়সালা একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছাধীন। তিনিই মানুষের ভেতর-বাহির এবং বর্তমান-ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অবগত আছেন। কার প্রতি অনুগ্রহ করতে হবে এবং কাকে শাস্তি দিতে হবে- এ ফায়সালা তিনিই করবেন। আল্লাহর কিতাবের দৃষ্টিতে কোন্ ধরনের মানুষ রহমত লাভের অধিকার রাখে এবং কোন্ ধরনের মানুষ শাস্তি লাভের অধিকারী- নীতিগত দিক দিয়ে মানুষ অবশ্যই এ কথা বলার অধিকার রাখে। কিন্তু অমুক ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া হবে এবং অমুককে ÿমা করে দেয়া হবে- এ কথা বলার অধিকার কারো নেই।
গরীব লোকদেরকে অবহেলা করা যাবে না :
وَلَا تَطْرُدِ الَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيْدُوْنَ وَجْهَهٗ
যারা তাদের প্রতিপালককে সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ডাকে তাদেরকে বিতাড়িত করো না। (সূরা আন‘আম- ৫২)
শানে নুযূল : একদা কতিপয় নেতৃস্থানীয় কাফির রাসূল ﷺ এর কাছে নিবেদন করল- বেলাল, আম্মার এবং সালিম নিম্নস্তরের লোক। আমরা আপনার সঙ্গে দেখা করতে আসলে তারা যেন আপনার মজলিসে না থাকে। কেননা এমন হীন ও নীচ লোকদের সঙ্গে এক মজলিসে বসা আমরা আমাদের মর্যাদাহানী মনে করি। যেহেতু সামাজিক উচ্চমর্যাদা ও নেতৃত্ব অপেক্ষা আল্লাহর নিকট অকপট ও খাঁটি নিয়তই অধিক প্রিয় এবং এ দরিদ্র মুসলিমগণ সর্বদা খাঁটি মহববতের সঙ্গে নবী ﷺ এর মজলিসে উপস্থিত থাকতেন। সুতরাং এ সমস্ত নেতৃস্থানীয় কুরাইশ লোকদের কথাবার্তায় কর্ণপাত করতে নিষেধ করে আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতটি নাযিল করেন।
প্রথমে আত্মীয়দেরকে দাওয়াত দিতে হবে :
وَاَنْذِرْ عَشِيْرَتَكَ الْاَقْرَبِيْنَ
তুমি তোমার নিকটাত্মীয়দেরকে সতর্ক করে দাও। (সূরা শু‘আরা- ২১৪)
না মানলে দায় মুক্তির ঘোষণা দিতে হবে :
فَاِنْ عَصَوْكَ فَقُلْ اِنِّيْ بَرِيْٓءٌ مِّمَّا تَعْمَلُوْنَ
তারা যদি তোমার অবাধ্যতা করে তবে বলে দাও, তোমরা যা কর তা হতে আমি দায়মুক্ত। (সূরা শু‘আরা- ২১৬)
প্রতিপক্ষের অভিযোগের জবাব যুক্তির মাধ্যমে ভদ্র ভাষায় দিতে হবে :
وَلَا تُجَادِلُوْاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ اِلَّا بِالَّتِيْ هِيَ اَحْسَنُ اِلَّا الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا مِنْهُمْ وَقُوْلُوْاۤ اٰمَنَّا بِالَّذِيْۤ اُنْزِلَ اِلَيْنَا وَاُنْزِلَ اِلَيْكُمْ وَاِلٰهُنَا وَاِلٰهُكُمْ وَاحِدٌ وَّنَحْنُ لَهٗ مُسْلِمُوْنَ
তোমরা উত্তমপন্থা ব্যতীত আহলে কিতাবদের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হবে না; তবে তাদের মধ্যে যারা সীমালঙ্ঘন করেছে তাদের সাথে করতে পার। অতঃপর (তাদেরকে) বলো, আমাদের প্রতি ও তোমাদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে আমরা বিশ্বাস স্থাপন করি। আর (আমরা আরো বিশ্বাস স্থাপন করি যে) আমাদের ইলাহ্ ও তোমাদের ইলাহ্ একই (সত্তা)। আর আমরা তাঁরই প্রতি আত্মসমর্পণকারী। (সূরা আনকাবূত- ৪৬)
ব্যাখ্যা : বিতর্ক ও আলাপ-আলোচনা উপযুক্ত যুক্তি-প্রমাণ সহকারে, ভদ্র ও শালীন ভাষায় এবং বুঝার ও বুঝানোর ভাবধারায় উপস্থাপন করতে হবে। প্রচারকের চিন্তা করা উচিত, তিনি কীভাবে শ্রোতার হৃদয়ের দুয়ার উন্মুক্ত করে তার মধ্যে সত্য কথা ঢুকিয়ে দেবেন এবং তাকে সঠিক পথে নিয়ে আসবেন। একজন পালোয়ানের মতো তার লড়াই করা উচিত নয়- যার উদ্দেশ্যই হয় প্রতিপক্ষকে হারিয়ে দেয়া। বরং একজন ডাক্তারের মতো তাকে সবসময় উদ্বিগ্ন থাকতে হবে, যিনি তার রুগীর চিকিৎসা করার সময় এতটা গুরুত্ব দেন যে, তাঁর নিজের কোন ভুলের কারণে রোগীর রোগ যেন আরো বেড়ে না যায় এবং সর্বাধিক কম কষ্ট সহ্য করার মাধ্যমে তাঁর রোগীর রোগ নিরাময় করা সম্ভব হয়। আর এজন্য তিনি সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। দ্বীন প্রচারের ক্ষেত্রেও এমন পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। পেঁচিয়ে কথা বলা, দোষারোপ করা ও অমার্জিত বাক্য ব্যবহার করার প্রবণতা বর্জন করতে হবে। আলোচনায় মধুর বাক্য ব্যবহার করতে হবে। উন্নত পর্যায়ের ভদ্র আচরণ করতে হবে। যাকে উদ্দেশ্য করে বলা হচ্ছে তার মনে যেন জিদ ও একগুঁয়েমী সৃষ্টি হওয়ার অবকাশ দেখা না দেয়। তাকে সহজভাবে বুঝানোর চেষ্টা করতে হবে। যখন মনে হবে যে, সে জিদ ও হঠকারিতায় লিপ্ত হতে চাচ্ছে তখনই তাকে তার অবস্থার উপর ছেড়ে দিতে হবে।
যে ব্যক্তির সাথে বিতর্ক করতে হবে তার ভ্রষ্টতার বিষয়টি আলোচনার শুরুতেই উপস্থাপন করা যাবে না। বরং সত্য ও ন্যায়-নীতির যে অংশগুলো উভয়ের মধ্যে সমভাবে বিরাজ করছে, সেগুলো দিয়ে আলোচনা শুরু করতে হবে। অর্থাৎ বিরোধীয় বিন্দু থেকে আলোচনা শুরু না করে ঐক্যের বিন্দু থেকে শুরু করতে হবে। তারপর সেই সর্বসম্মত বিষয়াবলি থেকে যুক্তি পেশ করে শ্রোতাকে বুঝানোর চেষ্টা করতে হবে যে, যেসব বিষয়ে তোমার ও তার মধ্যে বিরোধ রয়েছে সেগুলোতে তোমার অভিমত সর্বসম্মত ভিত্তিগুলোর সাথে সামঞ্জস্য রাখে; কিন্তু তার অভিমত বিপরীতধর্মী। সুতরাং তার অভিমত ভিত্তিহীন।
দ্বীন প্রচার বাদ দেয়া যাবে না :
وَلَا يَصُدُّنَّكَ عَنْ اٰيَاتِ اللهِ بَعْدَ اِذْ اُنْزِلَتْ اِلَيْكَ وَادْعُ اِلٰى رَبِّكَ وَلَا تَكُوْنَنَّ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
তোমার প্রতি আল্লাহর আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর তারা যেন তোমাকে কিছুতেই তা হতে বিমুখ না করে দেয়। সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের দিকে আহবান করো এবং কিছুতেই মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সূরা ক্বাসাস- ৮৭)
সমাজ সংস্কারের কাজ না করলে সবাই বিপদে পড়বে:
وَاتَّقُوْا فِتْنَةً لَّا تُصِيْبَنَّ الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا مِنْكُمْ خَآصَّةًۚ وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
তোমরা এমন ফিতনাকে ভয় করো, যা বিশেষ করে তোমাদের মধ্যে যারা যালিম কেবল তাদেরকেই স্পর্শ করবে না (বরং সকলের মাঝে ছড়িয়ে যাবে)। জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে খুবই কঠোর। (সূরা আনফাল- ২৫)
নূহ (আঃ) দীর্ঘদিন দাওয়াত দিয়েও বিরক্ত হননি :
وَلَقَدْ اَرْسَلْنَا نُوْحًا اِلٰى قَوْمِهٖ فَلَبِثَ فِيْهِمْ اَلْفَ سَنَةٍ اِلَّا خَمْسِيْنَ عَامًا
আমি তো নূহকে তার সম্প্রদায়ের নিকট প্রেরণ করেছিলাম। সে তাদের মধ্যে অবস্থান করেছিল পঞ্চাশ কম এক হাজার বছর। (সূরা আনকাবূত- ১৪)
মানুষ উপকৃত হবে, অথবা নিজের দায়িত্ব আদায় হবে :
وَاِذْ قَالَتْ اُمَّةٌ مِّنْهُمْ لِمَ تَعِظُوْنَ قَوْمًانِ اللهُ مُهْلِكُهُمْ اَوْ مُعَذِّبُهُمْ عَذَابًا شَدِيْدًاؕ قَالُوْا مَعْذِرَةً اِلٰى رَبِّكُمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَّقُوْنَ
স্মরণ করো, যখন তাদের একদল বলেছিল, আল্লাহ যাদেরকে ধ্বংস করবেন কিংবা কঠোর শাস্তি দেবেন, তোমরা তাদেরকে উপদেশ দাও কেন? তারা বলেছিল, তোমাদের প্রতিপালকের নিকট দায়বদ্ধতা থেকে মুক্তির জন্য। হতে পারে তারা এর ফলে সাবধান হবে। (সূরা আ‘রাফ- ১৬৪)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতে দ্বীনী তাবলীগের একটি নিয়ম বর্ণনা করা হয়েছে। হকের দাওয়াত পেশকারী যখন যুক্তিসঙ্গত প্রমাণাদ্বিসহ কারো সামনে সুস্পষ্টভাবে দাওয়াত পেশ করে এবং তার আপত্তি ও যুক্তি-প্রমাণের জবাব পেশ করে, তখন তার উপর সত্য প্রকাশ করার যে দায়িত্ব ও কর্তব্য থাকে তা থেকে সে অব্যাহতি লাভ করে। এরপরও যদি কেউ তার আকীদা-বিশ্বাস ও ধ্যান-ধারণার প্রতি অটল থাকে, তবে তার দায়-দায়িত্ব হকের দাওয়াত পেশকারীর উপর বর্তায় না। তাই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর পবিত্র কালামের মধ্যে সুস্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন যে, ‘‘এ ধরনের মানুষের প্রতি ভ্রূক্ষেপ করো না, তাদের প্রতি ভ্রূক্ষেপ না করায় তোমাকে তিরস্কার করা হবে না।
وَجَآءَ مِنْ اَقْصَى الْمَدِيْنَةِ رَجُلٌ يَّسْعٰى قَالَ يَا قَوْمِ اتَّبِعُوا الْمُرْسَلِيْنَ ‐ - اِتَّبِعُوْا مَنْ لَّا يَسْاَلُكُمْ اَجْرًا وَّهُمْ مُّهْتَدُوْنَ
শহরের দূরপ্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি দৌড়ে এসে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা রাসূলদের অনুসরণ করো। আর তাদের অনুসরণ করো, যারা তোমাদের কাছে কোন বিনিময় চায় না এবং তারা নিজেরাও হেদায়াতপ্রাপ্ত। (সূরা ইয়াসীন- ২০, ২১)
قُلْ لَّاۤ اَسْاَلُكُمْ عَلَيْهِ اَجْرًا اِلَّا الْمَوَدَّةَ فِى الْقُرْبٰى
বলো, আমি এর বিনিময়ে তোমাদের নিকট হতে আত্মীয়তার ভালোবাসা ব্যতীত অন্য কোন বিনিময় চাই না। (সূরা শূরা- ২৩)
যোগ্যতা লাভের জন্য আল্লাহর কাছে দু‘আ করতে হবে :
رَبِّ اشْرَحْ لِيْ صَدْرِيْ ‐ - وَيَسِّرْ لِۤيْ اَمْرِيْ ‐ - وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِّنْ لِّسَانِيْ ‐ - يَفْقَهُوْا قَوْلِيْ
(মুসা আঃ বলেছিলেন) হে আমার প্রতিপালক! আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দাও এবং আমার কাজ সহজ করে দাও। আমার জিহবার জড়তা দূর করে দাও, যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে। (সূরা ত্বা-হা, ২৫-২৮)
যা প্রচার করবে তার উপর নিজে আমল করতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لِمَ تَقُوْلُوْنَ مَا لَا تَفْعَلُوْنَ ‐ - كَبُرَ مَقْتًا عِنْدَ اللهِ اَنْ تَقُوْلُوْا مَا لَا تَفْعَلُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা যা কর না, তা কেন বল? তোমরা যা কর না তা বলা আল্লাহর নিকট অতিশয় অসন্তোষজনক। (সূরা সাফ- ২, ৩)
اَتَأْمُرُوْنَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَتَنْسَوْنَ اَنْفُسَكُمْ وَاَنْتُمْ تَتْلُوْنَ الْكِتَابَ ؕ اَفَلَا تَعْقِلُوْنَ
তোমরা কি লোকদেরকে সৎকাজের আদেশ দাও, আর নিজেদের ব্যাপারে ভুলে যাও; অথচ তোমরাই গ্রন্থ পাঠ কর। তবে কি তোমরা বুঝ না? (সূরা বাক্বারা- ৪৪)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ অন্যদেরকে যেসব কাজের নির্দেশ দেয়া হবে, প্রথমে নিজে তার উপর আমল করতে হবে। আর যেসব অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে, নিজেও সেগুলো থেকে দূরে থাকবে। যেসব কলঙ্ক থেকে মানুষকে মুক্ত দেখতে চাও, নিজের জীবনকেও তা থেকে মুক্ত রাখবে। যে পথের দিকে মানুষকে আহবান জানাবে, নিজের জন্যও সেই পথটিই পছন্দ করবে।
সংশোধনের উদ্দেশ্যে প্রচার করতে হবে :
قَالَ يَا قَوْمِ اَرَاَيْتُمْ اِنْ كُنْتُ عَلٰى بَيِّنَةٍ مِّنْ رَّبِّيْ وَرَزَقَنِيْ مِنْهُ رِزْقًا حَسَنًاؕ وَمَاۤ اُرِيْدُ اَنْ اُخَالِفَكُمْ اِلٰى مَاۤ اَنْهَاكُمْ عَنْهُؕ اِنْ اُرِيْدُ اِلَّا الْاِصْلَاحَ مَا اسْتَطَعْتُؕ وَمَا تَوْفِيْقِيْۤ اِلَّا بِاللهِؕ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَاِلَيْهِ اُنِيْبُ
(শুয়াইব আঃ) বললেন, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা ভেবে দেখেছ কি, আমি যদি আমার প্রতিপালক প্রেরিত স্পষ্ট প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকি এবং তিনি যদি তাঁর নিকট হতে আমাকে উৎকৃষ্ট জীবনোপকরণ দান করেন (তাহলে কেন আমি আমার কর্তব্য হতে বিরত থাকব?) আমি তোমাদেরকে যা থেকে নিষেধ করি নিজে তা করতে ইচ্ছা করি না। আমি তো আমার সাধ্যমতো সংস্কারই করতে চাই। আমার কার্যসাধন তো আল্লাহরই সাহায্যে (সংঘটিত হয়); আর আমি তাঁরই উপর নির্ভর করি এবং আমি তাঁরই অভিমুখী। (সূরা হুদ- ৮৮)
জাতির কল্যাণকামী হতে হবে :
اُبَلِّغُكُمْ رِسَالَاتِ رَبِّيْ وَاَنَاْ لَكُمْ نَاصِحٌ اَمِيْنٌ
আমি আমার প্রতিপালকের বাণী তোমাদের নিকট পৌঁছে দিচ্ছি। আর আমি তোমাদের জন্য একজন বিশ্বস্ত শুভাকাঙ্ক্ষী। (সূরা আ‘রাফ- ৬৮)
সমালোচনার ভয়ে কোন হক কথা গোপন রাখা যাবে না :
فَلَعَلَّكَ تَارِكٌ ۢبَعْضَ مَا يُوْحٰۤى اِلَيْكَ وَضَآئِقٌ ۢبِهٖ صَدْرُكَ اَنْ يَّقُوْلُوْا لَوْلَاۤ اُنْزِلَ عَلَيْهِ كَنْزٌ اَوْ جَآءَ مَعَهٗ مَلَكٌ اِنَّمَاۤ اَنْتَ نَذِيْرٌ وَّاللهُ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ وَّكِيْلٌ
(হে নবী) যখন তারা (কাফিররা) বলে, এ ব্যক্তির উপর কোন ধনভান্ডার অবতীর্ণ হলো না কেন, কিংবা তার সাথে (নবুওয়াতের সাক্ষ্য দেয়ার জন্য) কোন ফেরেশতা এলো না কেন? তখন সম্ভবত তোমার কাছে যে ওহী নাযিল হয় তার কিয়দাংশ তুমি ছেড়ে দাও এবং মনে কষ্ট পাও। আসলে তুমি তো কেবল (আযাবের) ভয় প্রদর্শনকারী (একজন রাসূল মাত্র); আর আল্লাহ সবকিছুর উপর কর্মবিধায়ক। (সূরা হুদ- ১২)
ব্যাখ্যা : কোন দেশ বা জাতির জীবনব্যবস্থা যদি কুফর ও শিরকের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে; আর সে অবস্থায় যদি কোন আল্লাহর বান্দা ব্যক্তিগত জীবন থেকে রাষ্ট্রীয় জীবন পর্যন্ত তাওহীদ বা আল্লাহর একত্ববাদ প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, তখন কতিপয় সুস্থ বিবেকসম্পন্ন ব্যক্তি ছাড়া বাকি সব লোকই তার বিরুদ্ধে লেগে যাবে- এতে কোন সন্দেহ নেই। কেউ যুলুম-নির্যাতনের মাধ্যমে তাকে দাবিয়ে দিতে চাইবে। কেউ মিথ্যা দোষারোপ এবং আজেবাজে প্রশ্ন-আপত্তি উত্থাপন করে তার সাহস কমাতে চাইবে। আবার কেউ ঠাট্টা-বিদ্রূপ ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে তার কথাকে গুরুত্বহীন করে দিতে চাইবে। এভাবে এ ব্যক্তির দাওয়াতকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করবে। নবী ﷺ এর সাথে যখন এসব আচরণ করা হয় তখন আল্লাহ তা‘আলা তাকে উপদেশ দিয়ে বলছেন, আমার দৃষ্টিতে যে ব্যক্তি নিজে সৎ হয় এবং সততার পথে ধৈর্য ও অবিচলতার সাথে অগ্রসর হয় প্রকৃতপক্ষে সে-ই মর্যাদার অধিকারী। কাজেই যে ধরনের বিদ্বেষ ও বিরূপ ব্যবহার দ্বারা তোমার মুকাবিলা করা হচ্ছে, তার ফলে তোমার দৃঢ়তা ও অবিচলতায় যেন ফাটল না ধরে। ওহীর মাধ্যমে তোমার সামনে যে মহাসত্যের দ্বার উন্মুক্ত করা হয়েছে, তার প্রতি আহবান জানাতে যেন তুমি একটুও কুণ্ঠিত না হও। কোন বিষয় শোনার সাথে সাথেই যখন লোকেরা তা নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করতে থাকে, তখন তা কেমন করে বলব বা কোন সত্য কথা যখন কেউ শুনতেই প্রস্তুত নয় তখন তা কীভাবে প্রকাশ করব- এসব নিয়ে চিন্তা করো না। কেউ মানুক বা না মানুক ওহীর বাণী নির্দ্বিধায় ও নির্ভয়ে এবং কোন প্রকার কম-বেশি না করে যথাযথভাবে প্রচার করতে থাকো।
মানুষের দেখানো ভয়কে উপেক্ষা করতে হবে :
اَلَيْسَ اللهُ بِكَافٍ عَبْدَهٗؕ وَيُخَوِّفُوْنَكَ بِالَّذِيْنَ مِنْ دُوْنِهٖؕ وَمَنْ يُّضْلِلِ اللهُ فَمَا لَهٗ مِنْ هَادٍ
আল্লাহ কি তাঁর বান্দার জন্য যথেষ্ট নন? অথচ তারা তোমাকে আল্লাহর পরিবর্তে অপরের ভয় দেখায়। (জেনে রেখো) আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তার জন্য কোন পথপ্রদর্শক নেই। (সূরা যুমার- ৩৬)
মনের মধ্যে কোন দুর্বলতাকে স্থান দেয়া যাবে না :
كِتَابٌ اُنْزِلَ اِلَيْكَ فَلَا يَكُنْ فِيْ صَدْرِكَ حَرَجٌ مِّنْهُ لِتُنْذِرَ بِهٖ وَذِكْرٰى لِلْمُؤْمِنِيْنَ
(হে নবী) এ মহাগ্রন্থ তোমার প্রতি নাযিল করা হয়েছে যেন তুমি এর দ্বারা (কাফিরদেরকে) ভয় দেখাতে পার, আর ঈমানদারের জন্য (এটি হচ্ছে) একটি স্মরণিকা। অতএব (এ ব্যাপারে) তোমার মনে যেন কোন প্রকারের সংকীর্ণতা না থাকে। (সূরা আ‘রাফ- ২)
ব্যাখ্যা : বিরোধিতা ও বাধা-বিপত্তির মধ্য দিয়ে নিজের পথ পরিষ্কার না দেখলে মানুষের মন সামনে এগিয়ে চলতে পারে না। এজন্য আল্লাহ বলেন, কোন প্রকার ইতস্ততবোধ ও ভীতি ছাড়াই কুরআনের দাওয়াত মানুষের কাছে পৌঁছে দাও। বিরোধীরা একে কীভাবে গ্রহণ করবে এর কোন পরোয়া করো না। তারা ক্ষেপে যায় যাক, বিদ্রূপ করে করুক, আজেবাজে কথা বলে বলুক এবং তাদের শত্রুতা আরো বেড়ে যায় যাক। তুমি নিশ্চিন্তে ও নিঃসংকোচে তাদের কাছে এ বাণী পৌঁছে দাও এবং এর প্রচারে একটুও গড়িমসি করো না।
ওহীর জ্ঞানই হবে দাওয়াতের বিষয়বস্তু :
قُلْ اِنَّمَاۤ اُنْذِرُكُمْ بِالْوَحْيِ
বলো, আমি তো তোমাদেরকে কেবল ওহী দ্বারাই সতর্ক করে থাকি। (সূরা আম্বিয়া- ৪৫)
মানুষকে কুরআনের মাধ্যমে উপদেশ দিতে হবে :
فَذَكِّرْ بِالْقُرْاٰنِ مَنْ يَّخَافُ وَعِيْدِ
যে আমার শাস্তিকে ভয় করে, তাকে কুরআনের মাধ্যমে উপদেশ দান করো। (সূরা ক্বাফ- ৪৫)
সত্য গোপন করা বা তাতে মিথ্যার সংমিশ্রণ করা যাবে না :
وَلَا تَلْبِسُوا الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ وَتَكْتُمُوا الْحَقَّ وَاَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনে বুঝে সত্যকে গোপন করো না। (সূরা বাক্বারা- ৪২)
আল্লাহর ব্যাপারে কেবল হক কথাই বলতে হবে :
اَلَمْ يُؤْخَذْ عَلَيْهِمْ مِّيْثَاقُ الْكِتَابِ اَنْ لَّا يَقُوْلُوْا عَلَى اللهِ اِلَّا الْحَقَّ
তাদের কাছ থেকে কি আল্লাহর কিতাবের এ প্রতিশ্রুতি নেয়া হয়নি যে, তারা আল্লাহ সম্বন্ধে সত্য ছাড়া কিছুই বলবে না! (সূরা আ‘রাফ- ১৬৯)
সূক্ষ্মদর্শিতার মাধ্যমে দাওয়াত দিতে হবে :
قُلْ هٰذِهٖ سَبِيْلِيْۤ اَدْعُوْاۤ اِلَى اللهِ عَلٰى بَصِيْرَةٍ اَنَاْ وَمَنِ اتَّبَعَنِيْؕ وَسُبْحَانَ اللهِ وَمَاۤ اَنَاْ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
বলো, এটাই আমার পথ। আমি এবং আমার অনুসারীরা সূক্ষ্মদর্শিতার মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি মানুষকে আহবান করি। আল্লাহ মহিমান্বিত; আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। (সূরা ইউসুফ- ১০৮)
ক্ষমার নীতি অবলম্বন করতে হবে :
خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ وَاَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلِيْنَ
তুমি ক্ষমাপরায়ণতা অবলম্বন করো, সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং অজ্ঞদেরকে এড়িয়ে চলো। (সূরা আ‘রাফ- ১৯৯)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতগুলোতে নবী ﷺ কে প্রচার, সংস্কার ও সংশোধনের কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ কৌশল জানিয়ে দেয়া হয়েছে। কেবল নবী ﷺ কে নয়, বরং নবী ﷺ এর স্থলাভিষিক্ত হয়ে যেসব লোক দুনিয়াবাসীকে সঠিক পথ দেখানোর দায়িত্ব পালন করার জন্য এগিয়ে আসবে, তাদেরকেও একই কৌশল শিখানো হয়েছে।
ইসলামের আহবায়কের জন্য যে গুণগুলো সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় সেগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে, তাকে কোমল স্বভাব, সহিষ্ণু ও উদার হৃদয়ের অধিকারী হতে হবে। তাকে হতে হবে নিজের সাথিদের জন্য স্নেহশীল, সাধারণ মানুষের জন্য দয়ার্দ্র এবং বিরোধীদের জন্য সহিষ্ণু। নিজের সাথিদের দুর্বলতাগুলোও সহ্য করে নিতে হবে এবং বিরোধীদের কঠোর ব্যবহারকেও সহ্য করতে হবে। চরম উত্তেজনাকর অবস্থার মধ্যেও নিজের আচরণে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। অত্যন্ত বিরক্তিকর ও অপছন্দনীয় কথাগুলোও উদার মনে এড়িয়ে যেতে হবে। বিরোধীদের পক্ষ থেকে যতই কড়া ভাষায় কথা বলা হোক, অথবা যতই বর্বরোচিত প্রতিরোধ গড়ে তুলা হোক না কেন, অবশ্যই তাকে এ সবকিছুকে উপেক্ষা করতে হবে। কঠোর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা, কর্কশ আচরণ করা, তিক্ত ও কড়া কথা বলা এবং প্রতিশোধমূলক মানসিক উত্তেজনায় ভোগা এ কাজের জন্য বিষতুল্য। এতে গোটা কাজ পন্ড হয়ে যায়। এ জিনিসটিকে নবী ﷺ এভাবে বর্ণনা করেছেন, ‘‘আমার রব আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, আমি যেন ক্রোধ ও সন্তুষ্টি উভয় অবস্থায়ই ইনসাফের কথা বলি, যে আমার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে আমি যেন তার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করি, যে আমাকে আমার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে আমি যেন তাকে তার অধিকার দান করি, যে আমার প্রতি যুলুম করে আমি যেন তাকে ÿমা করে দেই।’’ (মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৪৮৮)
সত্যের দাওয়াতের সাফল্যের মূলমন্ত্র হচ্ছে, দাওয়াত দানকারীরা সূক্ষ্ম বিষয় নিয়ে আলোচনা করার পরিবর্তে লোকদেরকে এমনসব সহজসরল সৎকাজের নির্দেশ দেবেন, যা সবার কাছে সৎকাজ হিসেবে পরিচিত এবং ব্যাপারটি বুঝার জন্য প্রত্যেক মানুষের সাধারণ জ্ঞানই যথেষ্ট হয়। এভাবে সত্যের আহবায়কের আবেদন সবাইকে প্রভাবিত করে। কারণ সাধারণ মানুষ যতই বিদ্বেষভাবাপন্ন হোক না কেন যখন তারা দেখে যে, সৎ, ভদ্র ও উন্নত নৈতিক চরিত্রের অধিকারী এক ব্যক্তি সরল সহজভাবে সৎকাজের দাওয়াত দিচ্ছে, তখন স্বাভাবিকভাবেই ধীরে ধীরে সত্য বিরোধীদের প্রতি তাদের মন বিরূপ হয়ে উঠতে থাকে এবং সত্যের আহবায়কের প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকে। এ কর্মকৌশলের ফলেই নবী ﷺ আরবে সাফল্য অর্জন করেন এবং কিছুকালের ব্যবধানে নিকটবর্তী দেশগুলোতেও ইসলাম বিস্তার লাভ করে।
দাওয়াতের ক্ষেত্রে ন্যায় ও কল্যাণ অনুসন্ধানীদেরকে সৎকাজের দিকে উদ্বুদ্ধ করা জরুরি। মূর্খদের সাথে কোন প্রকার সংঘর্ষ ও বিরোধে জড়িয়ে পড়া উচিত নয়। তারা সংঘর্ষ ও বিরোধ সৃষ্টি করার জন্য যত চেষ্টা করুক না কেন, যারা ন্যায়সঙ্গতভাবে বুদ্ধি-বিবেচনার সাথে বক্তব্য অনুধাবন করতে চায়- আহবায়কের উচিত তাদেরকেই সম্বোধন করা। অন্যদিকে যখন কোন ব্যক্তি নিরেট মূর্খের মতো ব্যবহার শুরু করে দেয় এবং কোন বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক ও গালি-গালাজের পর্যায়ে নেমে আসে, তখন আহবায়কের উচিত তার প্রতিদ্বন্দ্বীর ভূমিকায় অবতীর্ণ না হওয়া। কারণ এ ধরনের বিতর্ক ও ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হয়ে কোন লাভ নেই। বরং এতে বিরাট ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ আহবায়কের যে শক্তি ইসলামী দাওয়াত সম্প্রসারণ ও মানুষের চরিত্র সংশোধনের কাজে ব্যয় করা উচিত, তা অযথা এ বাজে কাজে ব্যয় হয়ে যায়।
শয়তানের উস্কানি থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাইতে হবে :
وَقُلْ رَّبِّ اَعُوْذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِيْنِ ‐ وَاَعُوْذُ بِكَ رَبِّ اَنْ يَّحْضُرُوْنِ
বলো, হে আমার প্রতিপালক! শয়তানের প্ররোচনা হতে আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি এবং আমার নিকট তাদের উপস্থিতি হতেও তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি। (সূরা মু’মিনূন- ৯৭, ৯৮)
وَاِمَّا يَنْزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللهِؕ اِنَّهٗ هُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে, তবে আল্লাহর আশ্রয় নেবে। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৩৬)
ব্যাখ্যা : সত্যের আহবায়ক যখনই বিরোধীদের যুলুম, নির্যাতন এবং তাদের অভিযোগ ও আপত্তির কারণে মানসিক উত্তেজনা অনুভব করবে তখনই তার বুঝে নিতে হবে যে, এটি শয়তানের উস্কানি ছাড়া আর কিছুই নয়। ফলে তখনই তাকে আল্লাহর কাছে এ মর্মে আশ্রয় চাওয়া উচিত যে, আল্লাহ যেন তাকে এ উত্তেজনার স্রোতে ভাসিয়ে না দেন, যার ফলে সে সত্যের দাওয়াত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার মতো কোন কাজ করে বসে। সত্যের দাওয়াতের কাজ ঠান্ডা মাথায় করতে হবে। উত্তেজনার বশবর্তী না হয়ে পরিবেশ-পরিস্থিতি এবং সময়-সুযোগ দেখে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করে যে পদক্ষেপ নেয়া হয়, সেটিই সঠিক হতে পারে। কিন্তু শয়তান যেহেতু এ কাজের উন্নতি কখনো দেখতে পারে না, তাই সে সর্বর্দা সত্যের আহবায়কের উপর নানা ধরনের আক্রমণ চালানোর চেষ্টা করে। আবার প্রত্যেকটি আক্রমণের পর সে আহবায়ককে এ বলে উত্তেজিত করতে থাকে যে, এ আক্রমণের জবাব অবশ্যই দেয়া দরকার। সুতরাং যারা আল্লাহকে ভয় করে কাজ করে এবং অসৎকাজ থেকে বিরত থাকতে চায়, তারা নিজেদের মনে কোন শয়তানী প্ররোচনার প্রভাব এবং কোন অসৎ চিন্তার ছোঁয়া অনুভব করতেই সাথে সাথে সজাগ হয়ে উঠে।
সময়-সুযোগ বুঝে দাওয়াত দিতে হবে :
وَاتَّبَعْتُ مِلَّةَ اٰبَآئِىْۤ اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَؕ مَا كَانَ لَنَاۤ اَنْ نُّشْرِكَ بِاللهِ مِنْ شَيْءٍؕ ذٰلِكَ مِنْ فَضْلِ اللهِ عَلَيْنَا وَعَلَى النَّاسِ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَشْكُرُوْنَ ‐ يَا صَاحِبَيِ السِّجْنِ اَاَرْبَابٌ مُّتَفَرِّقُوْنَ خَيْرٌ اَمِ اللهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ
আমি আমার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম, ইসহাক এবং ইয়াকূবের মতবাদ অনুসরণ করি। আল্লাহর সাথে কোন বস্তুকে শরীক করা আমাদের কাজ নয়। এটা আমাদের ও সমস্ত মানুষের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। হে কারাসঙ্গীদ্বয়! ভিন্ন ভিন্ন বহু প্রতিপালক শ্রেয়, না পরাক্রমশালী এক আল্লাহ? (সূরা ইউসুফু ৩৮, ৩৯)
ব্যাখ্যা : ইউসুফ (আঃ) কারাগারে এ দাওয়াত দিয়েছিলেন। তিনি নিজের বক্তব্য পেশ করার জন্য যেভাবে সুযোগ সৃষ্টি করেছেন তা থেকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা লাভ করতে পারি। দু’জন লোক তাদের স্বপ্ন বর্ণনা করছে এবং এর তা’বীর জিজ্ঞেস করছে। কিন্তু তিনি তা’বীর বলার পূর্বে তাদের কথার ভেতর সুযোগ সৃষ্টি করে তাদের সামনে নিজের দ্বীন পেশ করতে থাকেন। কোন ব্যক্তি যদি সত্য প্রচারে লেগে যায় এবং সে সূক্ষ্ম বুদ্ধিবৃত্তির অধিকারী হয়, তাহলে সে চমৎকারভাবে আলোচনার মোড় নিজের দিকে ফিরিয়ে নিতে পারে। যে ব্যক্তির দাওয়াত দেয়ার মানসিকতা থাকে না, তার সামনে সুযোগের পর সুযোগ আসতে থাকে কিন্তু কোন সুযোগই সে কাজে লাগাতে পারে না। আবার নির্বোধ প্রচারক পরিবেশ-পরিস্থিতির প্রতি দৃষ্টি না রেখে লোকদের কানে জোরপূর্বক নিজের দাওয়াত ঠেসে দেয়ার চেষ্টা করে। তারপর অনর্থক তর্ক-বিতর্ক ও বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে, এতে তাদের মনে উল্টো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ইউসুফ (আঃ) সুযোগ পেতেই ইসলামের বিস্তারিত বিধান ও নীতিমালা পেশ করতে শুরু করেননি। বরং শ্রোতাদের সামনে দ্বীনের এমন একটি সূচনাবিন্দু তুলে ধরেন যেখান থেকে সত্যপন্থী ও মিথ্যাপন্থীদের পথ পরস্পর আলাদা হয়ে গেছে। অর্থাৎ তাওহীদ ও শিরকের পার্থক্য তুলে ধরেছেন। আবার এ পার্থক্যকে এমন যুক্তিসঙ্গত পদ্ধতিতে সুস্পষ্ট করেছেন, যার ফলে সাধারণ বিবেকবুদ্ধিসম্পন্ন যে কোন ব্যক্তিই তা অনুভব করতে পারবে।
দাওয়াত দিতে হবে হেকমত ও সদুপদেশের মাধ্যমে :
اُدْعُ اِلٰى سَبِيْلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِيْ هِيَ اَحْسَنُؕ اِنَّ رَبَّكَ هُوَ اَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِيْلِهٖ وَهُوَ اَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِيْنَ
তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান করো হেকমত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সাথে তর্ক করবে উত্তম পন্থায়। পথ ছেড়ে কে বিপথগামী হয় সে সম্বন্ধে তোমার প্রতিপালক সবিশেষ অবহিত এবং কারা সৎপথে আছে তাও তিনি অধিক জানেন। (সূরা নাহল- ১২৫)
ব্যাখ্যা : দাওয়াত দেয়ার সময় দু’টি জিনিসের প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে। (এক) প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তা। (দুই) সদুপদেশ। জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তার অর্থ হচ্ছে, নির্বোধদের মতো চোখ বন্ধ করে দাওয়াত দেয়া যাবে না। বরং বুদ্ধি খাটিয়ে যাকে দাওয়াত দেয়া হচ্ছে তার মন-মানসিকতা, যোগ্যতা ও অবস্থার দিকে খেয়াল রেখে এবং পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝে কথা বলতে হবে। একই লাঠি দিয়ে সবাইকে তাড়িয়ে নেয়া যাবে না। যে কোন ব্যক্তি বা দলের মুখোমুখি হলে প্রথমে তার রোগ নির্ণয় করতে হবে, তারপর এমন যুক্তি-প্রমাণের সাহায্যে তার রোগ নিরসনের চেষ্টা করতে হবে, যা তার মন-মস্তিষ্কের গভীরে প্রবেশ করে তার রোগের শিকড় উপড়ে ফেলতে পারে।
সদুপদেশের দু’টি অর্থ হয় :
(এক) যাকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে তাকে শুধুমাত্র যুক্তি প্রমাণের সাহায্যে তৃপ্ত করে দিয়ে ক্ষান্ত হলে চলবে না; বরং তার আবেগ-অনুভূতির প্রতিও আবেদন জানাতে হবে। দুষ্কৃতি ও ভ্রষ্টতাকে শুধুমাত্র বুদ্ধিভিত্তিক দিক দিয়ে বাতিল করলে হবে না; বরং মানুষের প্রকৃতিতে এসবের বিরুদ্ধে যে জন্মগত ঘৃণা রয়েছে তাকেও জাগিয়ে তুলতে হবে এবং সেগুলোর অশুভ পরিণতির ভয় দেখাতে হবে। ইসলাম গ্রহণ ও সৎকাজে আত্মনিয়োগ শুধু যে ন্যায়সঙ্গত ও মহৎ গুণ তা যৌক্তিকভাবে প্রমাণ করলে চলবে না বরং সেগুলোর প্রতি আকর্ষণও সৃষ্টি করতে হবে।
(দুই) উপদেশ এমনভাবে দিতে হবে, যাতে আন্তরিকতা সুস্পষ্ট হয়ে উঠে। যাকে উপদেশ দান করা হচ্ছে সে যেন এ কথা মনে না করে যে, উপদেশদাতা তাকে তাচ্ছিল্য করছে এবং নিজের শ্রেষ্ঠত্বের অনুভূতির স্বাদ নিচ্ছে। বরং সে অনুভব করবে উপদেশদাতার মনে তার সংশোধনের প্রবল আকাঙ্ক্ষা রয়েছে এবং আসলে সে তার ভালো চায়।
প্রশংসা ও দরূদ পাঠের মাধ্যমে শুরু করতে হবে:
قُلِ الْحَمْدُ لِلّٰهِ وَسَلَامٌ عَلٰى عِبَادِهِ الَّذِيْنَ اصْطَفٰى
বলো, সকল প্রশংসা আল্লাহরই; অতঃপর তাঁর মনোনীত বান্দাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। (সূরা নামল- ৫৯)
ব্যাখ্যা : মুসলিমরা কীভাবে তাদের বক্তৃতা শুরু করবে এখানে তা শিক্ষা দেয়া হয়েছে। এরই ভিত্তিতে সঠিক ইসলামী চিন্তা ও মানসিকতাসম্পন্ন লোকেরা সবসময় আল্লাহর প্রশংসা এবং তাঁর সৎ বান্দাদের জন্য শান্তি ও নিরাপত্তার দু‘আ করে তাদের বক্তৃতা শুরু করে থাকেন। কিন্তু আজকাল এ যুগের বক্তারা এর মাধ্যমে বক্তৃতা শুরু করতে লজ্জাবোধ করেন।
আল্লাহর কাছে তাওফীক চাইতে হবে :
اِنْ اُرِيْدُ اِلَّا الْاِصْلَاحَ مَا اسْتَطَعْتُؕ وَمَا تَوْفِيْقِيْۤ اِلَّا بِاللهِؕ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَاِلَيْهِ اُنِيْبُ
আমি তো আমার সাধ্যমতো সংস্কারই করতে চাই। আমার কার্যসাধন তো আল্লাহরই সাহায্যে (সংঘটিত হয়), আর আমি তাঁরই উপর নির্ভর করি এবং তাঁরই অভিমুখী। (সূরা হুদ- ৮৮)
সাজিয়ে-গুছিয়ে উত্তম কথা বলতে হবে :
وَقُلْ لِّعِبَادِيْ يَقُوْلُوا الَّتِيْ هِيَ اَحْسَنُؕ اِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْزَغُ بَيْنَهُمْؕ اِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلْاِنْسَانِ عَدُوًّا مُّبِيْنًا
আমার বান্দাদেরকে বলো, তারা যেন উত্তম কথা বলে। নিশ্চয় শয়তান তাদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টির জন্য উস্কানি দেয়; নিশ্চয় শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। (বনী ইসরাঈল- ৫৩)
এমন কথা বলতে হবে, যা মানুষের হৃদয়ে পৌঁছে :
اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ يَعْلَمُ اللهُ مَا فِيْ قُلُوْبِهِمْۗ فَاَعْرِضْ عَنْهُمْ وَعِظْهُمْ وَقُلْ لَّهُمْ فِۤيْ اَنْفُسِهِمْ قَوْلًا ۢبَلِيْغًا
এরাই তারা, যাদের অন্তরে কী আছে আল্লাহ তা জানেন। সুতরাং তুমি তাদেরকে উপেক্ষা করো, তাদেরকে উপদেশ দাও এবং তাদেরকে মর্মস্পর্শী কথা বলো। (সূরা নিসা- ৬৩)
প্রতিপক্ষ যত বড় যালিমই হোক না কেন নরম ভাষায় বুঝাতে হবে :
اِذْهَبَاۤ اِلٰى فِرْعَوْنَ اِنَّهٗ طَغٰى ‐ فَقُوْلَا لَهٗ قَوْلًا لَّيِّنًا لَّعَلَّهٗ يَتَذَكَّرُ اَوْ يَخْشٰى
তোমরা উভয়ে ফিরাউনের নিকট যাও, সে তো সীমালঙ্ঘন করেছে। অতঃপর তোমরা তার সাথে নম্রভাবে কথা বলো; হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভয় করবে। (সূরা ত্বা-হা- ৪৩, ৪৪)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ কাফির, মুশরিক এবং ইসলাম বিরোধীদের সাথে আলাপ-আলোচনা ও বিতর্ক করার সময় কড়া কথা ও বাড়াবাড়ি বর্জন করতে হবে। বিরোধী পক্ষ যতই অপ্রীতিকর কথা বলুক না কেন, কোন ক্রমেই মুসলিমদের মুখ থেকে কোন ন্যায় ও সত্যবিরোধী কথা বের হওয়া উচিত নয়। তাদেরকে ঠান্ডা মাথায় এমনসব কথা বলতে হবে, যা যাচাই বাছাই করা এবং দাওয়াতের মর্যাদার সাথে সঙ্গতিশীল।
মাতৃভাষায় বুঝাতে হবে :
وَمَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهٖ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ
আমি প্রত্যেক রাসূলকেই তার স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি, যাতে করে তারা তাদের নিকট স্পষ্টভাবে বর্ণনা করতে পারে। (সূরা ইবরাহীম- ৪)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ তা‘আলা যে সম্প্রদায়ের মধ্যে যে নবীকেই পাঠিয়েছেন, তার উপর তার নিজের ভাষাতেই ওহী অবতীর্ণ করেছেন। এর উদ্দেশ্য ছিল সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায় যেন তা ভালোভাবে বুঝতে পারে এবং পরবর্তী পর্যায়ে তারা এ ধরনের কোন অজুহাত পেশ করতে না পারে যে, আল্লাহর পাঠানো শিক্ষা তারা বুঝতে পারেনি। আল্লাহর দৃষ্টিতে শিক্ষা দান ও সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই যে কোন জাতিকে তার নিজের ভাষায় বাণী পৌঁছানো প্রয়োজন।
আল্লাহর নিয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে হবে :
فَاذْكُرُوْاۤ اٰلَآءَ اللهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহকে স্মরণ করো, হয়তো তোমরা সফলকাম হতে পারবে। (সূরা আ‘রাফ- ৬৯)
দুনিয়া ও আখিরাতের বাস্তবতা বুঝাতে হবে :
وَقَالَ الَّذِيْۤ اٰمَنَ يَا قَوْمِ اتَّبِعُوْنِ اَهْدِكُمْ سَبِيْلَ الرَّشَادِ ‐ يَا قَوْمِ اِنَّمَا هٰذِهِ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا مَتَاعٌ وَّاِنَّ الْاٰخِرَةَ هِيَ دَارُ الْقَرَارِ
যে ব্যক্তি ঈমান এনেছিল সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আমার অনুসরণ করো, আমি তোমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করব। হে আমার সম্প্রদায়! এ পার্থিব জীবন তো (অস্থায়ী) উপভোগের জন্য; নিশ্চয় আখিরাত হচ্ছে চিরস্থায়ী আবাস। (সূরা মু’মিন- ৩৮, ৩৯)
দ্বীন কায়েমের গুরুত্ব বুঝাতে হবে :
قُلْ يَاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ لَسْتُمْ عَلٰى شَيْءٍ حَتّٰى تُقِيْمُوا التَّوْرَاةَ وَالْاِنْجِيْلَ وَمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكُمْ مِّنْ رَّبِّكُمْ
বলো, হে আহলে কিতাব সম্প্রদায়! যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা তাওরাত, ইঞ্জিল এবং তোমাদের প্রতি তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যেসব বিধান নাযিল হয়েছে সেগুলো যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠিত না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা কোনকিছুর উপরই প্রতিষ্ঠিত নও। (সূরা মায়েদা- ৬৮)
শ্রোতাদেরকে খারাপভাবে সম্বোধন করা যাবে না :
قُلْ مَنْ يَّرْزُقُكُمْ مِّنَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِؕ قُلِ اللهُ وَاِنَّاۤ اَوْ اِيَّاكُمْ لَعَلٰى هُدًى اَوْ فِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ ‐ قُلْ لَّا تُسْاَلُوْنَ عَمَّاۤ اَجْرَمْنَا وَلَا نُسْاَلُ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ
বলো, আকাশ ও পৃথিবী থেকে কে তোমাদেরকে রিযিক প্রদান করেন? বলো, আল্লাহ। নিশ্চয় আমরা অথবা তোমরা (উভয়ের এক পক্ষ) হয় সৎপথের উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছি, কিংবা স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে রয়েছি। বলো, আমরা যে অপরাধ করেছি সেজন্য তোমরা জিজ্ঞেসিত হবে না এবং তোমরা যা কর তার জন্য আমরাও জিজ্ঞেসিত হব না। (সূরা সাবা- ২৪, ২৫)
ব্যাখ্যা : এ বাক্যাংশে প্রচার কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে। যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহর দাসত্ব ও আনুগত্য করবে সে সঠিক পথে থাকবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যদের আনুগত্য করবে সে স্পষ্ট ভ্রষ্টতায় লিপ্ত হবে। এ কারণে বাহ্যত এরপর এ কথাই বলা উচিত ছিল যে, আমরা সঠিক পথে আছি এবং তোমরা পথভ্রষ্ট। কিন্তু এ ধরনের স্পষ্ট উক্তি সত্যকথার দিক দিয়ে যতই সঠিক হোক না কেন, প্রচার কৌশলের দিক থেকে সঠিক হয় না। কারণ যখনই কেউ কোন ব্যক্তিকে সম্বোধন করে সরাসরি তাকে পথভ্রষ্ট বলে আখ্যায়িত করবে এবং নিজেকে সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত বলে দাবী করবে, তখনই ঐ ব্যক্তি জিদ ও হঠকারিতায় লিপ্ত হয়ে যাবে। আল্লাহ নবীকে যেহেতু শুধুমাত্র সত্য কথা বলার জন্যই পাঠাননি; বরং তাঁর প্রতি এ দায়িত্বও আরোপ করেছেন যে, তিনি সর্বাধিক কৌশল অবলম্বন করে বিভ্রান্ত লোকদেরকে সংশোধন করবেন। তাই আল্লাহ এ কথা বলেননি যে, হে নবী! তুমি লোকদেরকে বলে দাও যে, তোমরা পথভ্রষ্ট এবং একমাত্র আমিই সঠিক পথে আছি। বরং এর পরিবর্তে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, তাদেরকে এভাবে বুঝাও যে, আমাদের ও তোমাদের মধ্যকার পার্থক্য তো সুস্পষ্ট হয়ে গেছে। আমরা এমন মা‘বুদকে মানি যিনি রিযিক দেন। পক্ষান্তরে তোমরা এমনসব সত্তাকে মা‘বুদে পরিণত করেছ, যারা রিযিক দেয় না। এখন আমাদের ও তোমাদের একই সাথে সঠিক পথের অনুসারী হওয়া কোনক্রমেই সম্ভব নয়। আমাদের মধ্য থেকে এক পক্ষই সঠিক পথের অনুসারী হতে পারে এবং অন্য পক্ষ অবশ্যই পথভ্রষ্ট হবে। এবার তোমরা নিজেরাই চিন্তা করো- যুক্তি ও প্রমাণের ভিত্তিতে কারা সঠিক পথাবলম্বী এবং কারা পথভ্রষ্ট।
‘‘আমরা জান্নাতী এবং অমুক ব্যক্তি বা দল জাহান্নামী’’- এ ধরনের দাবী কখনো ঈমানদারদের মুখে উচ্চারিত হওয়া উচিত নয়। এ বিষয়টির ফায়সালা একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছাধীন। তিনিই মানুষের ভেতর-বাহির এবং বর্তমান-ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অবগত আছেন। কার প্রতি অনুগ্রহ করতে হবে এবং কাকে শাস্তি দিতে হবে- এ ফায়সালা তিনিই করবেন। আল্লাহর কিতাবের দৃষ্টিতে কোন্ ধরনের মানুষ রহমত লাভের অধিকার রাখে এবং কোন্ ধরনের মানুষ শাস্তি লাভের অধিকারী- নীতিগত দিক দিয়ে মানুষ অবশ্যই এ কথা বলার অধিকার রাখে। কিন্তু অমুক ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া হবে এবং অমুককে ÿমা করে দেয়া হবে- এ কথা বলার অধিকার কারো নেই।
গরীব লোকদেরকে অবহেলা করা যাবে না :
وَلَا تَطْرُدِ الَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيْدُوْنَ وَجْهَهٗ
যারা তাদের প্রতিপালককে সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ডাকে তাদেরকে বিতাড়িত করো না। (সূরা আন‘আম- ৫২)
শানে নুযূল : একদা কতিপয় নেতৃস্থানীয় কাফির রাসূল ﷺ এর কাছে নিবেদন করল- বেলাল, আম্মার এবং সালিম নিম্নস্তরের লোক। আমরা আপনার সঙ্গে দেখা করতে আসলে তারা যেন আপনার মজলিসে না থাকে। কেননা এমন হীন ও নীচ লোকদের সঙ্গে এক মজলিসে বসা আমরা আমাদের মর্যাদাহানী মনে করি। যেহেতু সামাজিক উচ্চমর্যাদা ও নেতৃত্ব অপেক্ষা আল্লাহর নিকট অকপট ও খাঁটি নিয়তই অধিক প্রিয় এবং এ দরিদ্র মুসলিমগণ সর্বদা খাঁটি মহববতের সঙ্গে নবী ﷺ এর মজলিসে উপস্থিত থাকতেন। সুতরাং এ সমস্ত নেতৃস্থানীয় কুরাইশ লোকদের কথাবার্তায় কর্ণপাত করতে নিষেধ করে আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতটি নাযিল করেন।
প্রথমে আত্মীয়দেরকে দাওয়াত দিতে হবে :
وَاَنْذِرْ عَشِيْرَتَكَ الْاَقْرَبِيْنَ
তুমি তোমার নিকটাত্মীয়দেরকে সতর্ক করে দাও। (সূরা শু‘আরা- ২১৪)
না মানলে দায় মুক্তির ঘোষণা দিতে হবে :
فَاِنْ عَصَوْكَ فَقُلْ اِنِّيْ بَرِيْٓءٌ مِّمَّا تَعْمَلُوْنَ
তারা যদি তোমার অবাধ্যতা করে তবে বলে দাও, তোমরা যা কর তা হতে আমি দায়মুক্ত। (সূরা শু‘আরা- ২১৬)
প্রতিপক্ষের অভিযোগের জবাব যুক্তির মাধ্যমে ভদ্র ভাষায় দিতে হবে :
وَلَا تُجَادِلُوْاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ اِلَّا بِالَّتِيْ هِيَ اَحْسَنُ اِلَّا الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا مِنْهُمْ وَقُوْلُوْاۤ اٰمَنَّا بِالَّذِيْۤ اُنْزِلَ اِلَيْنَا وَاُنْزِلَ اِلَيْكُمْ وَاِلٰهُنَا وَاِلٰهُكُمْ وَاحِدٌ وَّنَحْنُ لَهٗ مُسْلِمُوْنَ
তোমরা উত্তমপন্থা ব্যতীত আহলে কিতাবদের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হবে না; তবে তাদের মধ্যে যারা সীমালঙ্ঘন করেছে তাদের সাথে করতে পার। অতঃপর (তাদেরকে) বলো, আমাদের প্রতি ও তোমাদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে আমরা বিশ্বাস স্থাপন করি। আর (আমরা আরো বিশ্বাস স্থাপন করি যে) আমাদের ইলাহ্ ও তোমাদের ইলাহ্ একই (সত্তা)। আর আমরা তাঁরই প্রতি আত্মসমর্পণকারী। (সূরা আনকাবূত- ৪৬)
ব্যাখ্যা : বিতর্ক ও আলাপ-আলোচনা উপযুক্ত যুক্তি-প্রমাণ সহকারে, ভদ্র ও শালীন ভাষায় এবং বুঝার ও বুঝানোর ভাবধারায় উপস্থাপন করতে হবে। প্রচারকের চিন্তা করা উচিত, তিনি কীভাবে শ্রোতার হৃদয়ের দুয়ার উন্মুক্ত করে তার মধ্যে সত্য কথা ঢুকিয়ে দেবেন এবং তাকে সঠিক পথে নিয়ে আসবেন। একজন পালোয়ানের মতো তার লড়াই করা উচিত নয়- যার উদ্দেশ্যই হয় প্রতিপক্ষকে হারিয়ে দেয়া। বরং একজন ডাক্তারের মতো তাকে সবসময় উদ্বিগ্ন থাকতে হবে, যিনি তার রুগীর চিকিৎসা করার সময় এতটা গুরুত্ব দেন যে, তাঁর নিজের কোন ভুলের কারণে রোগীর রোগ যেন আরো বেড়ে না যায় এবং সর্বাধিক কম কষ্ট সহ্য করার মাধ্যমে তাঁর রোগীর রোগ নিরাময় করা সম্ভব হয়। আর এজন্য তিনি সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। দ্বীন প্রচারের ক্ষেত্রেও এমন পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। পেঁচিয়ে কথা বলা, দোষারোপ করা ও অমার্জিত বাক্য ব্যবহার করার প্রবণতা বর্জন করতে হবে। আলোচনায় মধুর বাক্য ব্যবহার করতে হবে। উন্নত পর্যায়ের ভদ্র আচরণ করতে হবে। যাকে উদ্দেশ্য করে বলা হচ্ছে তার মনে যেন জিদ ও একগুঁয়েমী সৃষ্টি হওয়ার অবকাশ দেখা না দেয়। তাকে সহজভাবে বুঝানোর চেষ্টা করতে হবে। যখন মনে হবে যে, সে জিদ ও হঠকারিতায় লিপ্ত হতে চাচ্ছে তখনই তাকে তার অবস্থার উপর ছেড়ে দিতে হবে।
যে ব্যক্তির সাথে বিতর্ক করতে হবে তার ভ্রষ্টতার বিষয়টি আলোচনার শুরুতেই উপস্থাপন করা যাবে না। বরং সত্য ও ন্যায়-নীতির যে অংশগুলো উভয়ের মধ্যে সমভাবে বিরাজ করছে, সেগুলো দিয়ে আলোচনা শুরু করতে হবে। অর্থাৎ বিরোধীয় বিন্দু থেকে আলোচনা শুরু না করে ঐক্যের বিন্দু থেকে শুরু করতে হবে। তারপর সেই সর্বসম্মত বিষয়াবলি থেকে যুক্তি পেশ করে শ্রোতাকে বুঝানোর চেষ্টা করতে হবে যে, যেসব বিষয়ে তোমার ও তার মধ্যে বিরোধ রয়েছে সেগুলোতে তোমার অভিমত সর্বসম্মত ভিত্তিগুলোর সাথে সামঞ্জস্য রাখে; কিন্তু তার অভিমত বিপরীতধর্মী। সুতরাং তার অভিমত ভিত্তিহীন।
দ্বীন প্রচার বাদ দেয়া যাবে না :
وَلَا يَصُدُّنَّكَ عَنْ اٰيَاتِ اللهِ بَعْدَ اِذْ اُنْزِلَتْ اِلَيْكَ وَادْعُ اِلٰى رَبِّكَ وَلَا تَكُوْنَنَّ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
তোমার প্রতি আল্লাহর আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর তারা যেন তোমাকে কিছুতেই তা হতে বিমুখ না করে দেয়। সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের দিকে আহবান করো এবং কিছুতেই মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সূরা ক্বাসাস- ৮৭)
সমাজ সংস্কারের কাজ না করলে সবাই বিপদে পড়বে:
وَاتَّقُوْا فِتْنَةً لَّا تُصِيْبَنَّ الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا مِنْكُمْ خَآصَّةًۚ وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
তোমরা এমন ফিতনাকে ভয় করো, যা বিশেষ করে তোমাদের মধ্যে যারা যালিম কেবল তাদেরকেই স্পর্শ করবে না (বরং সকলের মাঝে ছড়িয়ে যাবে)। জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে খুবই কঠোর। (সূরা আনফাল- ২৫)
নূহ (আঃ) দীর্ঘদিন দাওয়াত দিয়েও বিরক্ত হননি :
وَلَقَدْ اَرْسَلْنَا نُوْحًا اِلٰى قَوْمِهٖ فَلَبِثَ فِيْهِمْ اَلْفَ سَنَةٍ اِلَّا خَمْسِيْنَ عَامًا
আমি তো নূহকে তার সম্প্রদায়ের নিকট প্রেরণ করেছিলাম। সে তাদের মধ্যে অবস্থান করেছিল পঞ্চাশ কম এক হাজার বছর। (সূরা আনকাবূত- ১৪)
মানুষ উপকৃত হবে, অথবা নিজের দায়িত্ব আদায় হবে :
وَاِذْ قَالَتْ اُمَّةٌ مِّنْهُمْ لِمَ تَعِظُوْنَ قَوْمًانِ اللهُ مُهْلِكُهُمْ اَوْ مُعَذِّبُهُمْ عَذَابًا شَدِيْدًاؕ قَالُوْا مَعْذِرَةً اِلٰى رَبِّكُمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَّقُوْنَ
স্মরণ করো, যখন তাদের একদল বলেছিল, আল্লাহ যাদেরকে ধ্বংস করবেন কিংবা কঠোর শাস্তি দেবেন, তোমরা তাদেরকে উপদেশ দাও কেন? তারা বলেছিল, তোমাদের প্রতিপালকের নিকট দায়বদ্ধতা থেকে মুক্তির জন্য। হতে পারে তারা এর ফলে সাবধান হবে। (সূরা আ‘রাফ- ১৬৪)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতে দ্বীনী তাবলীগের একটি নিয়ম বর্ণনা করা হয়েছে। হকের দাওয়াত পেশকারী যখন যুক্তিসঙ্গত প্রমাণাদ্বিসহ কারো সামনে সুস্পষ্টভাবে দাওয়াত পেশ করে এবং তার আপত্তি ও যুক্তি-প্রমাণের জবাব পেশ করে, তখন তার উপর সত্য প্রকাশ করার যে দায়িত্ব ও কর্তব্য থাকে তা থেকে সে অব্যাহতি লাভ করে। এরপরও যদি কেউ তার আকীদা-বিশ্বাস ও ধ্যান-ধারণার প্রতি অটল থাকে, তবে তার দায়-দায়িত্ব হকের দাওয়াত পেশকারীর উপর বর্তায় না। তাই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর পবিত্র কালামের মধ্যে সুস্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন যে, ‘‘এ ধরনের মানুষের প্রতি ভ্রূক্ষেপ করো না, তাদের প্রতি ভ্রূক্ষেপ না করায় তোমাকে তিরস্কার করা হবে না।
দাওয়াত পৌঁছার সাথে সাথে মানুষ দু’দলে বিভক্ত হয়ে যায় :
قَالَ الْمَلَاُ الَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْا مِنْ قَوْمِهٖ لِلَّذِيْنَ اسْتُضْعِفُوْا لِمَنْ اٰمَنَ مِنْهُمْ اَتَعْلَمُوْنَ اَنَّ صَالِحًا مُّرْسَلٌ مِّنْ رَّبِّهٖؕ قَالُوْاۤ اِنَّا بِمَاۤ اُرْسِلَ بِهٖ مُؤْمِنُوْنَ ‐ قَالَ الَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْاۤ اِنَّا بِالَّذِيْۤ اٰمَنْتُمْ بِهٖ كَافِرُوْنَ
তার সম্প্রদায়ের দাম্ভিক প্রধানরা সে সম্প্রদায়ের দুর্বল ঈমানদারদেরকে বলল, তোমরা কি জান যে, সালেহ তার প্রতিপালকের পক্ষ হতে প্রেরিত? তারা বলল, তার প্রতি যা প্রেরিত হয়েছে আমরা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করি। তখন অহংকারীরা বলল, তোমরা যা বিশ্বাস কর আমরা তা অস্বীকার করি। (সূরা আ‘রাফ- ৭৫, ৭৬)
অধিকাংশ মানুষ সদুপদেশ দানকারীদেরকে পছন্দ করে না :
فَتَوَلّٰى عَنْهُمْ وَقَالَ يَا قَوْمِ لَقَدْ اَبْلَغْتُكُمْ رِسَالَةَ رَبِّيْ وَنَصَحْتُ لَكُمْ وَلٰكِنْ لَّا تُحِبُّوْنَ النَّاصِحِيْنَ
অতঃপর তিনি (সালেহ আঃ) এ কথা বলে তাদের জনপদ হতে বের হয়ে গেলেন যে, হে আমার সম্প্রদায়! আমি আমার প্রতিপালকের পয়গাম তোমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি এবং আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিয়েছি, কিন্তু তোমরা তো উপদেশ দাতাদেরকে পছন্দ কর না। (সূরা আ‘রাফ- ৭৯)
গাফিল লোকেরা সঠিক পথে না এসে বাঁকা পথে চলতে চায় :
وَاِنْ يَّرَوْا سَبِيْلَ الرُّشْدِ لَا يَتَّخِذُوْهُ سَبِيْلًاۚ وَاِنْ يَّرَوْا سَبِيْلَ الْغَيِّ يَتَّخِذُوْهُ سَبِيْلًاؕ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَا وَكَانُوْا عَنْهَا غَافِلِيْنَ
তারা সৎপথ দেখলেও সেটাকে পথ হিসেবে গ্রহণ করবে না; কিন্তু তারা ভ্রান্ত পথ দেখলে সেটাকে পথ হিসেবে গ্রহণ করবে। কারণ তারা আমার নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করেছে; আর সে সম্বন্ধে তারা ছিল গাফিল। (সূরা আ‘রাফ- ১৪৬)
তাদের চক্ষু খোলা থাকলেও অন্তর মৃত :
اَفَلَمْ يَسِيْرُوْا فِى الْاَرْضِ فَتَكُوْنَ لَهُمْ قُلُوْبٌ يَّعْقِلُوْنَ بِهَاۤ اَوْ اٰذَانٌ يَّسْمَعُوْنَ بِهَاۚ فَاِنَّهَا لَا تَعْمَى الْاَبْصَارُ وَلٰكِنْ تَعْمَى الْقُلُوْبُ الَّتِيْ فِى الصُّدُوْرِ
তারা কি জমিনে ভ্রমণ করেনি? তাহলে তারা জ্ঞানবুদ্ধিসম্পন্ন হৃদয় ও স্মৃতিশক্তিসম্পন্ন শ্রবণের অধিকারী হতে পারত। বস্তুত চক্ষু তো অন্ধ নয়, বরং অন্ধ হচ্ছে বক্ষস্থিত হৃদয়। (সূরা হজ্জ- ৪৬)
ব্যাখ্যা : শ্রবণ কয়েক ধরনের হতে পারে। এক ধরনের শ্রবণ হচ্ছে, পশু-পাখির মতো শ্রবণ। এ ধরনের শ্রবণের মাধ্যমে ব্যক্তি শ্রবণ করে ঠিকই, কিন্তু উক্ত শ্রবণ থেকে কোনকিছু অনুধাবন করতে পারে না। এ অবস্থায় তাকে উপদেশ দেয়া পশু-পাখি ও জীবজন্তুকে উপদেশ দেয়ার সমান হয়ে যায়। আবার আরেক ধরনের শ্রবণ আছে, যার মধ্যে অর্থের দিকে মনোনিবেশ থাকে এবং তাতে এ প্রবণতাও থাকে যে, যুক্তিসঙ্গত কথা হলে মেনে নেয়া হবে। যারা কোন প্রকার বদ্ধ ধারণা বা অন্ধ বিশ্বাসে আক্রান্ত থাকে এবং যারা আগে থেকেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে নেয় যে, নিজের উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া আকীদা-বিশ্বাস ও পদ্ধতিসমূহের বিরুদ্ধে এবং নিজের প্রবৃত্তির আশা-আকাঙ্ক্ষা ও আগ্রহ বিরোধী কথা যত যুক্তিসঙ্গতই হোক না কেন তা মেনে নেবে না; তারা সবকিছু শুনেও আসলে কিছুই শোনে না। তেমনিভাবে যারা দুনিয়ায় পশুর মতো উদাসীন জীবন-যাপন করে, চারদিকে বিচরণ করা ছাড়া আর কিছুতেই যাদের আগ্রহ নেই অথবা যারা প্রবৃত্তির চাহিদার পেছনে এমন পাগলের মতো দৌড়ায় যে, তারা নিজেরা যা কিছু করছে তা ন্যায় বা অন্যায় হওয়ার কথা চিন্তা করে না- এ ধরনের লোকদের কান বধির হয় না কিন্তু অন্তর বধির হয়।
কিছু মানুষের অন্তর পাথরের চেয়েও কঠিন :
ثُمَّ قَسَتْ قُلُوْبُكُمْ مِّنْ ۢبَعْدِ ذٰلِكَ فَهِيَ كَالْحِجَارَةِ اَوْ اَشَدُّ قَسْوَةًؕ وَاِنَّ مِنَ الْحِجَارَةِ لَمَا يَتَفَجَّرُ مِنْهُ الْاَنْهَارُؕ وَاِنَّ مِنْهَا لَمَا يَشَّقَّقُ فَيَخْرُجُ مِنْهُ الْمَآءُؕ وَاِنَّ مِنْهَا لَمَا يَهْبِطُ مِنْ خَشْيَةِ اللهِؕ وَمَا اللهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ
এরপরও তোমাদের হৃদয় কঠিন হয়ে গেল, তা পাথর কিংবা তদপেক্ষাও কঠিন। কতক পাথর এমনও আছে, যা হতে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হয় এবং কতক পাথর এরূপও আছে, যা ফেটে যাওয়ার পর তা হতে পানি নির্গত হয়। আবার কতক পাথর এমনও আছে, যা আল্লাহর ভয়ে ধ্বসে পড়ে। সুতরাং তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে অমনোযোগী নন। (সূরা বাক্বারা- ৭৪)
দাওয়াত শুনে সাড়া দিতে হবে এবং আমলও করতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَطِيْعُوا اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَلَا تَوَلَّوْا عَنْهُ وَاَنْتُمْ تَسْمَعُوْنَ
হে মুমিনগণ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো এবং তোমরা যখন তার কথা শ্রবণ কর, তখন তা হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না। (সূরা আনফাল- ২০)
যারা সাড়া দেয় না তাদের দৃষ্টান্ত পশুর সাথে :
وَمَثَلُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا كَمَثَلِ الَّذِيْ يَنْعِقُ بِمَا لَا يَسْمَعُ اِلَّا دُعَآءً وَّنِدَآءًؕ صُمٌّ ۢبُكْمٌ عُمْيٌ فَهُمْ لَا يَعْقِلُوْنَ
যারা কুফরী করেছে তাদের দৃষ্টান্ত ঐসব ব্যক্তির ন্যায়, যাদেরকে আহবান করা হলে শুধু চিৎকার ও শব্দ ব্যতীত অন্য কিছুই শুনে না- তারা বধির, মূর্খ ও অন্ধ। কাজেই তারা বুঝতে পারে না। (সূরা বাক্বারা- ১৭১)
ব্যাখ্যা : এ উপমাটির দু’টি দিক রয়েছে-
(এক) তাদের অবস্থা সেই নির্বোধ প্রাণীদের মতো, যারা এক একটি পালে বিভক্ত হয়ে কোনকিছু না বুঝেই নিজেদের রাখালদের হাঁক-ডাকের পেছনে চলতে থাকে।
(দুই) তাদেরকে আহবান করা ও তাদের কাছে দ্বীনের দাওয়াত প্রচারের সময় মনে হতে থাকে যেন নির্বোধ জন্তু-জানোয়ারদেরকে আহবান জানানো হচ্ছে- যারা কেবল আওয়াজ শুনতে পায় কিন্তু কী বলা হচ্ছে তা কিছুই বুঝতে পারে না।
অনেক লোক আছে, যারা তাদের নিজেদের শয়তানী প্রবৃত্তি ও পথভ্রষ্টকারী নেতাদের ইশারায় চোখ বন্ধ করে চলছে। অথচ তারা জানে না যে, তাদেরকে কোথায় হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে- কল্যাণের দিকে, না ধ্বংসের দিকে। এ ক্ষেত্রে তাদের অবস্থা গরু-ছাগলের সাথে তুলনীয়।
তাদের অবস্থান পশুর চেয়েও নীচে নেমে আসে :
وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيْرًا مِّنَ الْجِنِّ وَالْاِنْسِ لَهُمْ قُلُوْبٌ لَّا يَفْقَهُوْنَ بِهَا وَلَهُمْ اَعْيُنٌ لَّا يُبْصِرُوْنَ بِهَا وَلَهُمْ اٰذَانٌ لَّا يَسْمَعُوْنَ بِهَاؕ اُولٰٓئِكَ كَالْاَنْعَامِ بَلْ هُمْ اَضَلُّؕ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْغَافِلُوْنَ
আমি তো বহু জিন ও মানবকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি। তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তারা তা দ্বারা উপলব্ধি করে না, তাদের চক্ষু আছে কিন্তু তারা তা দ্বারা দেখে না এবং তাদের কর্ণ আছে কিন্তু তারা তা দ্বারা শ্রবণ করে না। তারা পশুর ন্যায়, বরং তারা (পশুর চেয়েও) অধিক বিভ্রান্ত এবং তারাই গাফিল। (সূরা আ‘রাফ- ১৭৯)
ব্যাখ্যা : এর অর্থ এটা নয় যে, আমি তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার জন্যই সৃষ্টি করেছিলাম এবং তাদেরকে সৃষ্টি করার সময় এ সংকল্প করেছিলাম যে, তাদেরকে জাহান্নামের ইন্ধনে পরিণত করব। বরং এর অর্থ হচ্ছে, আমি তো তাদেরকে হৃদয়, মস্তিষ্ক, কান, চোখ সবকিছুসহ সৃষ্টি করেছিলাম। কিন্তু এ বোকারা এগুলোকে যথাযথভাবে ব্যবহার করেনি। ফলে তারা নিজেদের অসৎকাজের কারণে জাহান্নামের ইন্ধনে পরিণত হয়েছে। চরম দুঃখ প্রকাশ ও আক্ষেপ করার জন্য মানুষের ভাষায় যে ধরনের বাকরীতির প্রচলন রয়েছে, এখানেও সেই একই ধরনের বাকরীতি গ্রহণ করা হয়েছে।
قَالَ الْمَلَاُ الَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْا مِنْ قَوْمِهٖ لِلَّذِيْنَ اسْتُضْعِفُوْا لِمَنْ اٰمَنَ مِنْهُمْ اَتَعْلَمُوْنَ اَنَّ صَالِحًا مُّرْسَلٌ مِّنْ رَّبِّهٖؕ قَالُوْاۤ اِنَّا بِمَاۤ اُرْسِلَ بِهٖ مُؤْمِنُوْنَ ‐ قَالَ الَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْاۤ اِنَّا بِالَّذِيْۤ اٰمَنْتُمْ بِهٖ كَافِرُوْنَ
তার সম্প্রদায়ের দাম্ভিক প্রধানরা সে সম্প্রদায়ের দুর্বল ঈমানদারদেরকে বলল, তোমরা কি জান যে, সালেহ তার প্রতিপালকের পক্ষ হতে প্রেরিত? তারা বলল, তার প্রতি যা প্রেরিত হয়েছে আমরা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করি। তখন অহংকারীরা বলল, তোমরা যা বিশ্বাস কর আমরা তা অস্বীকার করি। (সূরা আ‘রাফ- ৭৫, ৭৬)
অধিকাংশ মানুষ সদুপদেশ দানকারীদেরকে পছন্দ করে না :
فَتَوَلّٰى عَنْهُمْ وَقَالَ يَا قَوْمِ لَقَدْ اَبْلَغْتُكُمْ رِسَالَةَ رَبِّيْ وَنَصَحْتُ لَكُمْ وَلٰكِنْ لَّا تُحِبُّوْنَ النَّاصِحِيْنَ
অতঃপর তিনি (সালেহ আঃ) এ কথা বলে তাদের জনপদ হতে বের হয়ে গেলেন যে, হে আমার সম্প্রদায়! আমি আমার প্রতিপালকের পয়গাম তোমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি এবং আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিয়েছি, কিন্তু তোমরা তো উপদেশ দাতাদেরকে পছন্দ কর না। (সূরা আ‘রাফ- ৭৯)
গাফিল লোকেরা সঠিক পথে না এসে বাঁকা পথে চলতে চায় :
وَاِنْ يَّرَوْا سَبِيْلَ الرُّشْدِ لَا يَتَّخِذُوْهُ سَبِيْلًاۚ وَاِنْ يَّرَوْا سَبِيْلَ الْغَيِّ يَتَّخِذُوْهُ سَبِيْلًاؕ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَا وَكَانُوْا عَنْهَا غَافِلِيْنَ
তারা সৎপথ দেখলেও সেটাকে পথ হিসেবে গ্রহণ করবে না; কিন্তু তারা ভ্রান্ত পথ দেখলে সেটাকে পথ হিসেবে গ্রহণ করবে। কারণ তারা আমার নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করেছে; আর সে সম্বন্ধে তারা ছিল গাফিল। (সূরা আ‘রাফ- ১৪৬)
তাদের চক্ষু খোলা থাকলেও অন্তর মৃত :
اَفَلَمْ يَسِيْرُوْا فِى الْاَرْضِ فَتَكُوْنَ لَهُمْ قُلُوْبٌ يَّعْقِلُوْنَ بِهَاۤ اَوْ اٰذَانٌ يَّسْمَعُوْنَ بِهَاۚ فَاِنَّهَا لَا تَعْمَى الْاَبْصَارُ وَلٰكِنْ تَعْمَى الْقُلُوْبُ الَّتِيْ فِى الصُّدُوْرِ
তারা কি জমিনে ভ্রমণ করেনি? তাহলে তারা জ্ঞানবুদ্ধিসম্পন্ন হৃদয় ও স্মৃতিশক্তিসম্পন্ন শ্রবণের অধিকারী হতে পারত। বস্তুত চক্ষু তো অন্ধ নয়, বরং অন্ধ হচ্ছে বক্ষস্থিত হৃদয়। (সূরা হজ্জ- ৪৬)
ব্যাখ্যা : শ্রবণ কয়েক ধরনের হতে পারে। এক ধরনের শ্রবণ হচ্ছে, পশু-পাখির মতো শ্রবণ। এ ধরনের শ্রবণের মাধ্যমে ব্যক্তি শ্রবণ করে ঠিকই, কিন্তু উক্ত শ্রবণ থেকে কোনকিছু অনুধাবন করতে পারে না। এ অবস্থায় তাকে উপদেশ দেয়া পশু-পাখি ও জীবজন্তুকে উপদেশ দেয়ার সমান হয়ে যায়। আবার আরেক ধরনের শ্রবণ আছে, যার মধ্যে অর্থের দিকে মনোনিবেশ থাকে এবং তাতে এ প্রবণতাও থাকে যে, যুক্তিসঙ্গত কথা হলে মেনে নেয়া হবে। যারা কোন প্রকার বদ্ধ ধারণা বা অন্ধ বিশ্বাসে আক্রান্ত থাকে এবং যারা আগে থেকেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে নেয় যে, নিজের উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া আকীদা-বিশ্বাস ও পদ্ধতিসমূহের বিরুদ্ধে এবং নিজের প্রবৃত্তির আশা-আকাঙ্ক্ষা ও আগ্রহ বিরোধী কথা যত যুক্তিসঙ্গতই হোক না কেন তা মেনে নেবে না; তারা সবকিছু শুনেও আসলে কিছুই শোনে না। তেমনিভাবে যারা দুনিয়ায় পশুর মতো উদাসীন জীবন-যাপন করে, চারদিকে বিচরণ করা ছাড়া আর কিছুতেই যাদের আগ্রহ নেই অথবা যারা প্রবৃত্তির চাহিদার পেছনে এমন পাগলের মতো দৌড়ায় যে, তারা নিজেরা যা কিছু করছে তা ন্যায় বা অন্যায় হওয়ার কথা চিন্তা করে না- এ ধরনের লোকদের কান বধির হয় না কিন্তু অন্তর বধির হয়।
কিছু মানুষের অন্তর পাথরের চেয়েও কঠিন :
ثُمَّ قَسَتْ قُلُوْبُكُمْ مِّنْ ۢبَعْدِ ذٰلِكَ فَهِيَ كَالْحِجَارَةِ اَوْ اَشَدُّ قَسْوَةًؕ وَاِنَّ مِنَ الْحِجَارَةِ لَمَا يَتَفَجَّرُ مِنْهُ الْاَنْهَارُؕ وَاِنَّ مِنْهَا لَمَا يَشَّقَّقُ فَيَخْرُجُ مِنْهُ الْمَآءُؕ وَاِنَّ مِنْهَا لَمَا يَهْبِطُ مِنْ خَشْيَةِ اللهِؕ وَمَا اللهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ
এরপরও তোমাদের হৃদয় কঠিন হয়ে গেল, তা পাথর কিংবা তদপেক্ষাও কঠিন। কতক পাথর এমনও আছে, যা হতে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হয় এবং কতক পাথর এরূপও আছে, যা ফেটে যাওয়ার পর তা হতে পানি নির্গত হয়। আবার কতক পাথর এমনও আছে, যা আল্লাহর ভয়ে ধ্বসে পড়ে। সুতরাং তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে অমনোযোগী নন। (সূরা বাক্বারা- ৭৪)
দাওয়াত শুনে সাড়া দিতে হবে এবং আমলও করতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَطِيْعُوا اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَلَا تَوَلَّوْا عَنْهُ وَاَنْتُمْ تَسْمَعُوْنَ
হে মুমিনগণ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো এবং তোমরা যখন তার কথা শ্রবণ কর, তখন তা হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না। (সূরা আনফাল- ২০)
যারা সাড়া দেয় না তাদের দৃষ্টান্ত পশুর সাথে :
وَمَثَلُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا كَمَثَلِ الَّذِيْ يَنْعِقُ بِمَا لَا يَسْمَعُ اِلَّا دُعَآءً وَّنِدَآءًؕ صُمٌّ ۢبُكْمٌ عُمْيٌ فَهُمْ لَا يَعْقِلُوْنَ
যারা কুফরী করেছে তাদের দৃষ্টান্ত ঐসব ব্যক্তির ন্যায়, যাদেরকে আহবান করা হলে শুধু চিৎকার ও শব্দ ব্যতীত অন্য কিছুই শুনে না- তারা বধির, মূর্খ ও অন্ধ। কাজেই তারা বুঝতে পারে না। (সূরা বাক্বারা- ১৭১)
ব্যাখ্যা : এ উপমাটির দু’টি দিক রয়েছে-
(এক) তাদের অবস্থা সেই নির্বোধ প্রাণীদের মতো, যারা এক একটি পালে বিভক্ত হয়ে কোনকিছু না বুঝেই নিজেদের রাখালদের হাঁক-ডাকের পেছনে চলতে থাকে।
(দুই) তাদেরকে আহবান করা ও তাদের কাছে দ্বীনের দাওয়াত প্রচারের সময় মনে হতে থাকে যেন নির্বোধ জন্তু-জানোয়ারদেরকে আহবান জানানো হচ্ছে- যারা কেবল আওয়াজ শুনতে পায় কিন্তু কী বলা হচ্ছে তা কিছুই বুঝতে পারে না।
অনেক লোক আছে, যারা তাদের নিজেদের শয়তানী প্রবৃত্তি ও পথভ্রষ্টকারী নেতাদের ইশারায় চোখ বন্ধ করে চলছে। অথচ তারা জানে না যে, তাদেরকে কোথায় হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে- কল্যাণের দিকে, না ধ্বংসের দিকে। এ ক্ষেত্রে তাদের অবস্থা গরু-ছাগলের সাথে তুলনীয়।
তাদের অবস্থান পশুর চেয়েও নীচে নেমে আসে :
وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيْرًا مِّنَ الْجِنِّ وَالْاِنْسِ لَهُمْ قُلُوْبٌ لَّا يَفْقَهُوْنَ بِهَا وَلَهُمْ اَعْيُنٌ لَّا يُبْصِرُوْنَ بِهَا وَلَهُمْ اٰذَانٌ لَّا يَسْمَعُوْنَ بِهَاؕ اُولٰٓئِكَ كَالْاَنْعَامِ بَلْ هُمْ اَضَلُّؕ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْغَافِلُوْنَ
আমি তো বহু জিন ও মানবকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি। তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তারা তা দ্বারা উপলব্ধি করে না, তাদের চক্ষু আছে কিন্তু তারা তা দ্বারা দেখে না এবং তাদের কর্ণ আছে কিন্তু তারা তা দ্বারা শ্রবণ করে না। তারা পশুর ন্যায়, বরং তারা (পশুর চেয়েও) অধিক বিভ্রান্ত এবং তারাই গাফিল। (সূরা আ‘রাফ- ১৭৯)
ব্যাখ্যা : এর অর্থ এটা নয় যে, আমি তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার জন্যই সৃষ্টি করেছিলাম এবং তাদেরকে সৃষ্টি করার সময় এ সংকল্প করেছিলাম যে, তাদেরকে জাহান্নামের ইন্ধনে পরিণত করব। বরং এর অর্থ হচ্ছে, আমি তো তাদেরকে হৃদয়, মস্তিষ্ক, কান, চোখ সবকিছুসহ সৃষ্টি করেছিলাম। কিন্তু এ বোকারা এগুলোকে যথাযথভাবে ব্যবহার করেনি। ফলে তারা নিজেদের অসৎকাজের কারণে জাহান্নামের ইন্ধনে পরিণত হয়েছে। চরম দুঃখ প্রকাশ ও আক্ষেপ করার জন্য মানুষের ভাষায় যে ধরনের বাকরীতির প্রচলন রয়েছে, এখানেও সেই একই ধরনের বাকরীতি গ্রহণ করা হয়েছে।
অধিকাংশ মানুষই দ্বীনের কথা মানতে চায় না :
اَمْ تَحْسَبُ اَنَّ اَكْثَرَهُمْ يَسْمَعُوْنَ اَوْ يَعْقِلُوْنَ اِنْ هُمْ اِلَّا كَالْاَنْعَامِ بَلْ هُمْ اَضَلُّ سَبِيْلًا
তুমি কি মনে কর যে, তাদের অধিকাংশই শুনে ও বুঝে? তারা তো পশুর মতোই, বরং তারা অধিকাংশই পথভ্রষ্ট। (সূরা ফুরক্বান- ৪৪)
ব্যাখ্যা : যেমনিভাবে গরু-ছাগলের পাল এ কথা জানে না যে, যারা তাদেরকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তারা চারণক্ষেত্রের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, না কসাইখানার দিকে নিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তেমনিভাবে এসব লোকও তাদের নিজেদের শয়তানী প্রবৃত্তি ও পথভ্রষ্টকারী নেতাদের ইশারায় চোখ বন্ধ করে চলতেই থাকছে। কিন্তু তারা নিজেরাও জানে না যে, তাদেরকে কোথায় হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে- কল্যাণের দিকে, না ধ্বংসের দিকে। এ ক্ষেত্রে তাদের অবস্থা গরু-ছাগলের সাথে তুলনীয়। কিন্তু গরু-ছাগলকে আল্লাহ জ্ঞানবুদ্ধি ও চেতনা শক্তি দান করেননি। তারা যদি চারণক্ষেত্র ও কসাইখানার মধ্যে কোন পার্থক্য করতে না পারে, তাহলে এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তবে অবাক হতে হয় যখন দেখা যায় একদল মানুষ যাদেরকে আল্লাহ জ্ঞানবুদ্ধি ও চেতনা শক্তি দান করেছেন, তারপরও তারা গরু-ছাগলের মতো অসচেতনতা ও গাফলতির মধ্যে ডুবে রয়েছে।
হতভাগারা উপদেশ শুনে না :
فَذَكِّرْ اِنْ نَّفَعَتِ الذِّكْرٰى ‐ سَيَذَّكَّرُ مَنْ يَّخْشٰى ‐ وَيَتَجَنَّبُهَا الْاَشْقٰى ‐ اَ لَّذِيْ يَصْلَى النَّارَ الْكُبْرٰى
অতএব যদি উপদেশ উপকারী হয় তবে উপদেশ দাও। (ফলে) যারা (আল্লাহকে) ভয় করে, অচিরেই তারা উপদেশ গ্রহণ করবে। আর যে নিতান্ত হতভাগ্য সে তা উপেক্ষা করবে, (ফলে) সে বৃহৎ অগ্নিতে প্রবেশ করবে। (সূরা আ‘লা, ৯-১২)
ব্যাখ্যা : যাদের অন্তত এতটুকু বিবেকবুদ্ধি আছে যে, তারা সঠিক বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে পারে এবং তারা উদাসীনতা ও পক্ষপাত থেকে মুক্ত, তাদেরকে যখন কেউ প্রকৃত সত্য সম্পর্কে বুঝায় তখন তারা একাগ্রতার সাথে তার কথা শুনে। কিন্তু যারা মন-মগজ অন্য দিকে ব্যস্ত রাখে, উপদেশদাতার কথা তাদের কানের উপর দিয়েই চলে যায়। ফলে এ থেকে তারা কোন ফায়দা অর্জন করতে পারে না।
সত্যের আহবানে সাড়া না দেয়া ইয়াহুদিদের কাজ :
قَالُوْا سَمِعْنَا وَعَصَيْنَا
তারা বলেছিল, আমরা শুনলাম ও অমান্য করলাম। (সূরা বাক্বারা- ৯৩)
সত্যের বিরুদ্ধে অবস্থানকারীরা সবচেয়ে বড় যালিম :
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرٰى عَلَى اللهِ الْكَذِبَ وَهُوَ يُدْعٰۤى اِلَى الْاِسْلَامِؕ وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে, তার চেয়ে অধিক যালিম আর কে হতে পারে? অথচ তাকে ইসলামের দিকে আহবান করা হয়; আর আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (সূরা সাফ- ৭)
প্রচারকের বিরোধিতা কারীরা কঠিন শাস্তি ভোগ করবে :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَكْفُرُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِ وَيَقْتُلُوْنَ النَّبِيِّيْنَ بِغَيْرِ حَقٍّ وَّيَقْتُلُوْنَ الَّذِيْنَ يَأْمُرُوْنَ بِالْقِسْطِ مِنَ النَّاسِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ اَلِيْمٍ ‐ اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ حَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْ فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ وَمَا لَهُمْ مِّنْ نَّاصِرِيْنَ
নিশ্চয় যারা আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করেছে এবং অন্যায়ভাবে নবীদেরকে হত্যা করেছে; আর যারা ইনসাফের নির্দেশ দেয় তাদেরকেও হত্যা করেছে, তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সংবাদ শুনিয়ে দাও। তারা তো সেসব লোক, দুনিয়া ও আখিরাতে যাদের সকল আমল বরবাদ হয়ে গেছে। আর তাদের কোন সাহায্যকারীও নেই। (সূরা আলে ইমরান- ২১, ২২)
اَمْ تَحْسَبُ اَنَّ اَكْثَرَهُمْ يَسْمَعُوْنَ اَوْ يَعْقِلُوْنَ اِنْ هُمْ اِلَّا كَالْاَنْعَامِ بَلْ هُمْ اَضَلُّ سَبِيْلًا
তুমি কি মনে কর যে, তাদের অধিকাংশই শুনে ও বুঝে? তারা তো পশুর মতোই, বরং তারা অধিকাংশই পথভ্রষ্ট। (সূরা ফুরক্বান- ৪৪)
ব্যাখ্যা : যেমনিভাবে গরু-ছাগলের পাল এ কথা জানে না যে, যারা তাদেরকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তারা চারণক্ষেত্রের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, না কসাইখানার দিকে নিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তেমনিভাবে এসব লোকও তাদের নিজেদের শয়তানী প্রবৃত্তি ও পথভ্রষ্টকারী নেতাদের ইশারায় চোখ বন্ধ করে চলতেই থাকছে। কিন্তু তারা নিজেরাও জানে না যে, তাদেরকে কোথায় হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে- কল্যাণের দিকে, না ধ্বংসের দিকে। এ ক্ষেত্রে তাদের অবস্থা গরু-ছাগলের সাথে তুলনীয়। কিন্তু গরু-ছাগলকে আল্লাহ জ্ঞানবুদ্ধি ও চেতনা শক্তি দান করেননি। তারা যদি চারণক্ষেত্র ও কসাইখানার মধ্যে কোন পার্থক্য করতে না পারে, তাহলে এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তবে অবাক হতে হয় যখন দেখা যায় একদল মানুষ যাদেরকে আল্লাহ জ্ঞানবুদ্ধি ও চেতনা শক্তি দান করেছেন, তারপরও তারা গরু-ছাগলের মতো অসচেতনতা ও গাফলতির মধ্যে ডুবে রয়েছে।
হতভাগারা উপদেশ শুনে না :
فَذَكِّرْ اِنْ نَّفَعَتِ الذِّكْرٰى ‐ سَيَذَّكَّرُ مَنْ يَّخْشٰى ‐ وَيَتَجَنَّبُهَا الْاَشْقٰى ‐ اَ لَّذِيْ يَصْلَى النَّارَ الْكُبْرٰى
অতএব যদি উপদেশ উপকারী হয় তবে উপদেশ দাও। (ফলে) যারা (আল্লাহকে) ভয় করে, অচিরেই তারা উপদেশ গ্রহণ করবে। আর যে নিতান্ত হতভাগ্য সে তা উপেক্ষা করবে, (ফলে) সে বৃহৎ অগ্নিতে প্রবেশ করবে। (সূরা আ‘লা, ৯-১২)
ব্যাখ্যা : যাদের অন্তত এতটুকু বিবেকবুদ্ধি আছে যে, তারা সঠিক বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে পারে এবং তারা উদাসীনতা ও পক্ষপাত থেকে মুক্ত, তাদেরকে যখন কেউ প্রকৃত সত্য সম্পর্কে বুঝায় তখন তারা একাগ্রতার সাথে তার কথা শুনে। কিন্তু যারা মন-মগজ অন্য দিকে ব্যস্ত রাখে, উপদেশদাতার কথা তাদের কানের উপর দিয়েই চলে যায়। ফলে এ থেকে তারা কোন ফায়দা অর্জন করতে পারে না।
সত্যের আহবানে সাড়া না দেয়া ইয়াহুদিদের কাজ :
قَالُوْا سَمِعْنَا وَعَصَيْنَا
তারা বলেছিল, আমরা শুনলাম ও অমান্য করলাম। (সূরা বাক্বারা- ৯৩)
সত্যের বিরুদ্ধে অবস্থানকারীরা সবচেয়ে বড় যালিম :
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرٰى عَلَى اللهِ الْكَذِبَ وَهُوَ يُدْعٰۤى اِلَى الْاِسْلَامِؕ وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে, তার চেয়ে অধিক যালিম আর কে হতে পারে? অথচ তাকে ইসলামের দিকে আহবান করা হয়; আর আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (সূরা সাফ- ৭)
প্রচারকের বিরোধিতা কারীরা কঠিন শাস্তি ভোগ করবে :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَكْفُرُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِ وَيَقْتُلُوْنَ النَّبِيِّيْنَ بِغَيْرِ حَقٍّ وَّيَقْتُلُوْنَ الَّذِيْنَ يَأْمُرُوْنَ بِالْقِسْطِ مِنَ النَّاسِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ اَلِيْمٍ ‐ اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ حَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْ فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ وَمَا لَهُمْ مِّنْ نَّاصِرِيْنَ
নিশ্চয় যারা আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করেছে এবং অন্যায়ভাবে নবীদেরকে হত্যা করেছে; আর যারা ইনসাফের নির্দেশ দেয় তাদেরকেও হত্যা করেছে, তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সংবাদ শুনিয়ে দাও। তারা তো সেসব লোক, দুনিয়া ও আখিরাতে যাদের সকল আমল বরবাদ হয়ে গেছে। আর তাদের কোন সাহায্যকারীও নেই। (সূরা আলে ইমরান- ২১, ২২)
উপদেশ সবার ক্ষেত্রে উপকারী হয় না :
وَلَا يَنْفَعُكُمْ نُصْحِيْۤ اِنْ اَرَدْتُّ اَنْ اَنْصَحَ لَكُمْ اِنْ كَانَ اللهُ يُرِيْدُ اَنْ يُّغْوِيَكُمْ ؕ هُوَ رَبُّكُمْ وَاِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ
আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিতে চাইলেও আমার উপদেশ তোমাদের কোন উপকারে আসবে না, যদি আল্লাহ তোমাদেরকে বিভ্রান্ত করতে চান। তিনিই তোমাদের প্রতিপালক এবং তাঁরই নিকট তোমাদেরকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। (সূরা হুদ- ৩৪)
ব্যাখ্যা : যারা ভুল করার পরও নিজেদের একগুঁয়েমী ও হঠকারিতার কারণে ভুলের উপর অবিচল থাকে এবং যে কথা মেনে নিতে একবার অস্বীকার করেছে তাকে আর কোন উপদেশ, অনুরোধ এবং যুক্তি প্রদর্শনের পরও মেনে নিতে চায় না, এ ধরনের লোকদের উপর আল্লাহর এমন লানত পড়ে যে, তাদের আর কোন দিন সঠিক পথে চলার সুযোগ হয় না।
একজন না মানলে অন্যজন মানবে :
فَاِنْ يَّكْفُرْ بِهَا هٰۤؤُلَآءِ فَقَدْ وَكَّلْنَا بِهَا قَوْمًا لَّيْسُوْا بِهَا بِكَافِرِيْنَ
আজ যদি তারা তা অস্বীকার করে, তবে (তাতে আমার কোন ক্ষতি নেই) আমি তো অতীতে এমন এক সম্প্রদায়ের উপর এ দায়িত্ব অর্পণ করেছিলাম, যারা কখনো এগুলো প্রত্যাখ্যান করেনি। (সূরা আন‘আম- ৯০)
আল্লাহর বিধান জোর করে চাপিয়ে দেয়া যায় না :
لَاۤ اِكْرَاهَ فِى الدِّيْنِۚ قَدْ تَّبَيَّنَ الرُّشْدُ مِنَ الْغَيِّۚ فَمَنْ يَّكْفُرْ بِالطَّاغُوْتِ وَيُؤْمِنْ ۢبِاللهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقٰىۚ لَا انْفِصَامَ لَهَاؕ وَاللهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
দ্বীনের ব্যাপারে কোন বাড়াবাড়ি নেই। ভ্রষ্টতা হতে সুপথ প্রকাশিত হয়ে গেছে, সুতরাং যে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন করবে, সে এমন এক মজবুত রশিকে ধারণ করল, যা কখনো ছিঁড়বে না। আর আল্লাহ তো সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী। (সূরা বাক্বারা- ২৫৬)
ব্যাখ্যা : কোন ঈমানদারকে পুরস্কার এবং কোন অস্বীকারকারীকে শাস্তি দেয়া দাওয়াত দানকারীর কাজ নয়। কাউকে জোর করে ঈমানের দিকে টেনে আনা এবং কাউকে জোরপূর্বক অস্বীকার করা থেকে দূরে রাখার কাজও তাঁর নয়। বরং তাঁর দায়িত্ব হচ্ছে, যে ব্যক্তি সত্য ও সঠিক পথ গ্রহণ করবে, তাকে শুভ পরিণামের সুসংবাদ দেবে এবং যে ব্যক্তি নিজের কুপথে অবিচল থাকবে, তাকে আল্লাহর পাকড়াও ও শাস্তির ভয় দেখাবে। কুরআন মাজীদের যেখানেই এ ধরনের উক্তি এসেছে সেখানেই এসব বক্তব্যের মূল লক্ষ্য হচ্ছে কাফিরসমাজ। মুসলিমদের ব্যাপারে কুরআন বিভিন্ন স্থানে বার বার সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছে যে, নবী ﷺ মুসলিমদের জন্য কেবল সুসংবাদদাতাই নন, বরং তিনি একাধারে শিক্ষক, পরিশুদ্ধকারী এবং কর্মের আদর্শ। তাছাড়া তিনি মুসলিমদের জন্য শাসক ও বিচারক- যার আনুগত্য করা প্রত্যেকের জন্য অত্যাবশ্যক।
قَالَ يَا قَوْمِ اَرَاَيْتُمْ اِنْ كُنْتُ عَلٰى بَيِّنَةٍ مِّنْ رَّبِّيْ وَاٰتَانِيْ رَحْمَةً مِّنْ عِنْدِهٖ فَعُمِّيَتْ عَلَيْكُمْؕ اَنُلْزِمُكُمُوْهَا وَاَنْتُمْ لَهَا كَارِهُوْنَ
সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আমাকে বলো, আমি যদি আমার প্রতিপালকের প্রেরিত স্পষ্ট নিদর্শনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকি এবং তিনি যদি আমাকে তাঁর নিজ অনুগ্রহ হতে কোনকিছু দান করে থাকেন, আর তোমাদের নিকট তা গোপন থাকে, তাহলে আমি কি এ বিষয়ে তোমাদেরকে বাধ্য করতে পারি? অথচ তোমরা এটা অপছন্দ কর? (সূরা হুদ- ২৮)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ যুক্তি-প্রমাণের সাহায্যে হেদায়াত ও গোমরাহীর পার্থক্য স্পষ্ট করে তুলে ধরার এবং সঠিক পথ স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দেয়ার দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করেছেন। এখন যদি কেউ নিজেই সঠিক পথে চলতে না চায়, তাহলে তার জেনে রাখা উচিত যে, নবী ﷺ কে বল প্রয়োগ করে কাউকে সঠিক পথে চালানোর দায়িত্ব দেয়া হয়নি। এভাবে জবরদস্তি করে ঈমান আনা যদি আল্লাহর ইচ্ছা হতো তাহলে নবী পাঠানোর কী প্রয়োজন ছিল? এ কাজ তো তিনি নিজেই যখন ইচ্ছা করতে পারতেন।
সবার ক্ষেত্রে নসীহত ফলপ্রসূ হয় না :
وَاَنْذِرْ بِهِ الَّذِيْنَ يَخَافُوْنَ اَنْ يُّحْشَرُوْاۤ اِلٰى رَبِّهِمْ لَيْسَ لَهُمْ مِّنْ دُوْنِهٖ وَلِيٌّ وَّلَا شَفِيْعٌ لَّعَلَّهُمْ يَتَّقُوْنَ
যারা ভয় করে এ দ্বারা তুমি তাদেরকে এ ব্যাপারে সতর্ক করো যে, তাদেরকে তাদের প্রতিপালকের নিকট সমবেত করা হবে। এমতাবস্থায় তিনি ব্যতীত তাদের জন্য অন্য কোন অভিভাবক বা সুপারিশকারী থাকবে না। (এ উপদেশের মাধ্যমে) হয়তো তারা তাক্বওয়া অর্জন করতে পারবে। (সূরা আন‘আম- ৫১)
ব্যাখ্যা : যারা দুনিয়ার জীবনে এমনভাবে নিমগ্ন হয়েছে যে, তারা মৃত্যুর কথা এবং আল্লাহর সামনে উপস্থিত হওয়ার কথা চিন্তাও করে না, তাদের জন্য নসীহত কখনো ফলপ্রসূ হবে না। কাজেই এ ধরনের লোকদেরকে বাদ দিয়ে এমন লোকদেরকে খোঁজতে হবে, যাদের মনে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হওয়ার ভয় আছে। কেবলমাত্র এ ধরনের লোকদের উপরই নসীহতের প্রভাব পড়তে পারে এবং তাদের সংশোধন হওয়ার আশা করা যেতে পারে।
নবী ﷺ যখন দেখতেন, এ জাতিকে বুঝাতে দীর্ঘকাল চলে গেল অথচ এরা কোনক্রমেই হেদায়াতের পথে আসছে না, তখন অনেক সময় তাঁর মনে এ ধরনের বাসনা জন্ম নিত যে, যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন কোন নিদর্শন প্রকাশিত হতো, যার ফলে এরা কুফরী ত্যাগ করে আমার দাওয়াতকে গ্রহণ করে নিত! তাঁর এ বাসনার জবাব এ আয়াতে দেয়া হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, অধৈর্য হয়ো না। যে বিন্যাস ও ধারাবাহিকতা সহকারে আমি এ কাজটি চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছি তার উপর ধৈর্যধারণ করে এগিয়ে চলো। অলৌকিকতার আশ্রয় নিতে হলে তা কি আমি নিজেই নিতে পারতাম না? কিন্তু আমি জানি, তোমাকে যে সংস্কার সাধনের কাজে নিযুক্ত করা হয়েছে তাকে সফলতার মনযিলে পৌঁছানোর সঠিক পথ এটা নয়। যদি কেবলমাত্র সমস্ত মানুষকে কোন না কোনভাবে সত্যপন্থী বানানো উদ্দেশ্য হতো, তাহলে কিতাব নাযিল করা, মুমিনদেরকে কাফিরদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত করা এবং সত্যের দাওয়াতকে পর্যায়ক্রমে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত এগিয়ে নেয়ার কী প্রয়োজন ছিল? আল্লাহর একটিমাত্র ইঙ্গিতেই এ কাজ সম্পন্ন হতে পারত। কিন্তু আল্লাহ এ কাজটি এ পদ্ধতিতে করতে চান না। তিনি চান সত্যকে যুক্তি-প্রমাণ সহকারে লোকদের সামনে পেশ করতে। তারপর মানুষ সঠিক ও নির্ভুল চিন্তাশক্তি প্রয়োগ করে সত্যকে চিনে নেবে এবং যথাযথভাবে মেনে নেবে। নিজেদের চরিত্রকে সত্যের আলোকে গড়ে তুলবে এবং বাতিল পূজারীদের মুকাবিলায় সর্বশক্তি প্রয়োগ করবে।
নিজের দায়িত্ব পালন করার পর কেউ বক্রপথে চললে সে-ই দায়ী থাকবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا عَلَيْكُمْ اَنْفُسَكُمْۚ لَا يَضُرُّكُمْ مَّنْ ضَلَّ اِذَا اهْتَدَيْتُمْؕ اِلَى اللهِ مَرْجِعُكُمْ جَمِيْعًا فَيُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমাদের দায়িত্ব তোমাদের উপর। তোমরা যদি সৎপথে পরিচালিত হও, তবে যে পথভ্রষ্ট হয়েছে সে তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহর দিকেই তোমাদের সকলের প্রত্যাবর্তন; অতঃপর তোমরা যা করতে তিনি সে সম্বন্ধে তোমাদেরকে অবহিত করবেন। (সূরা মায়েদা- ১০৫)
ব্যাখ্যা : অমুক কী করেছে? অমুকের আকীদার মধ্যে কী কী ভ্রান্তি আছে এবং অমুকের কাজে কোন কোন দোষ-ত্রুটি আছে- এসব দেখার পরিবর্তে মানুষের উচিত তার নিজের চরিত্র ও কার্যাবলির কথা চিন্তা করা। কোন ব্যক্তি নিজে যদি আল্লাহর আনুগত্য করতে থাকে, আল্লাহ ও বান্দার অধিকার আদায় করতে থাকে, সততা ও সঠিক পথ অবলম্বন করে এবং সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজ থেকে বিরত রাখার দায়িত্বও পালন করতে থাকে, তাহলে অন্য কারো বক্র পথে চলার জন্য সে দায়ী থাকবে না। মানুষ কেবলমাত্র নিজের মুক্তির কথা ভাববে, আর অন্যের সংশোধন করার কথা ভাববে না- এটা এ আয়াতের উদ্দেশ্য নয়।
وَلَا يَنْفَعُكُمْ نُصْحِيْۤ اِنْ اَرَدْتُّ اَنْ اَنْصَحَ لَكُمْ اِنْ كَانَ اللهُ يُرِيْدُ اَنْ يُّغْوِيَكُمْ ؕ هُوَ رَبُّكُمْ وَاِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ
আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিতে চাইলেও আমার উপদেশ তোমাদের কোন উপকারে আসবে না, যদি আল্লাহ তোমাদেরকে বিভ্রান্ত করতে চান। তিনিই তোমাদের প্রতিপালক এবং তাঁরই নিকট তোমাদেরকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। (সূরা হুদ- ৩৪)
ব্যাখ্যা : যারা ভুল করার পরও নিজেদের একগুঁয়েমী ও হঠকারিতার কারণে ভুলের উপর অবিচল থাকে এবং যে কথা মেনে নিতে একবার অস্বীকার করেছে তাকে আর কোন উপদেশ, অনুরোধ এবং যুক্তি প্রদর্শনের পরও মেনে নিতে চায় না, এ ধরনের লোকদের উপর আল্লাহর এমন লানত পড়ে যে, তাদের আর কোন দিন সঠিক পথে চলার সুযোগ হয় না।
একজন না মানলে অন্যজন মানবে :
فَاِنْ يَّكْفُرْ بِهَا هٰۤؤُلَآءِ فَقَدْ وَكَّلْنَا بِهَا قَوْمًا لَّيْسُوْا بِهَا بِكَافِرِيْنَ
আজ যদি তারা তা অস্বীকার করে, তবে (তাতে আমার কোন ক্ষতি নেই) আমি তো অতীতে এমন এক সম্প্রদায়ের উপর এ দায়িত্ব অর্পণ করেছিলাম, যারা কখনো এগুলো প্রত্যাখ্যান করেনি। (সূরা আন‘আম- ৯০)
আল্লাহর বিধান জোর করে চাপিয়ে দেয়া যায় না :
لَاۤ اِكْرَاهَ فِى الدِّيْنِۚ قَدْ تَّبَيَّنَ الرُّشْدُ مِنَ الْغَيِّۚ فَمَنْ يَّكْفُرْ بِالطَّاغُوْتِ وَيُؤْمِنْ ۢبِاللهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقٰىۚ لَا انْفِصَامَ لَهَاؕ وَاللهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
দ্বীনের ব্যাপারে কোন বাড়াবাড়ি নেই। ভ্রষ্টতা হতে সুপথ প্রকাশিত হয়ে গেছে, সুতরাং যে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন করবে, সে এমন এক মজবুত রশিকে ধারণ করল, যা কখনো ছিঁড়বে না। আর আল্লাহ তো সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী। (সূরা বাক্বারা- ২৫৬)
ব্যাখ্যা : কোন ঈমানদারকে পুরস্কার এবং কোন অস্বীকারকারীকে শাস্তি দেয়া দাওয়াত দানকারীর কাজ নয়। কাউকে জোর করে ঈমানের দিকে টেনে আনা এবং কাউকে জোরপূর্বক অস্বীকার করা থেকে দূরে রাখার কাজও তাঁর নয়। বরং তাঁর দায়িত্ব হচ্ছে, যে ব্যক্তি সত্য ও সঠিক পথ গ্রহণ করবে, তাকে শুভ পরিণামের সুসংবাদ দেবে এবং যে ব্যক্তি নিজের কুপথে অবিচল থাকবে, তাকে আল্লাহর পাকড়াও ও শাস্তির ভয় দেখাবে। কুরআন মাজীদের যেখানেই এ ধরনের উক্তি এসেছে সেখানেই এসব বক্তব্যের মূল লক্ষ্য হচ্ছে কাফিরসমাজ। মুসলিমদের ব্যাপারে কুরআন বিভিন্ন স্থানে বার বার সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছে যে, নবী ﷺ মুসলিমদের জন্য কেবল সুসংবাদদাতাই নন, বরং তিনি একাধারে শিক্ষক, পরিশুদ্ধকারী এবং কর্মের আদর্শ। তাছাড়া তিনি মুসলিমদের জন্য শাসক ও বিচারক- যার আনুগত্য করা প্রত্যেকের জন্য অত্যাবশ্যক।
قَالَ يَا قَوْمِ اَرَاَيْتُمْ اِنْ كُنْتُ عَلٰى بَيِّنَةٍ مِّنْ رَّبِّيْ وَاٰتَانِيْ رَحْمَةً مِّنْ عِنْدِهٖ فَعُمِّيَتْ عَلَيْكُمْؕ اَنُلْزِمُكُمُوْهَا وَاَنْتُمْ لَهَا كَارِهُوْنَ
সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আমাকে বলো, আমি যদি আমার প্রতিপালকের প্রেরিত স্পষ্ট নিদর্শনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকি এবং তিনি যদি আমাকে তাঁর নিজ অনুগ্রহ হতে কোনকিছু দান করে থাকেন, আর তোমাদের নিকট তা গোপন থাকে, তাহলে আমি কি এ বিষয়ে তোমাদেরকে বাধ্য করতে পারি? অথচ তোমরা এটা অপছন্দ কর? (সূরা হুদ- ২৮)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ যুক্তি-প্রমাণের সাহায্যে হেদায়াত ও গোমরাহীর পার্থক্য স্পষ্ট করে তুলে ধরার এবং সঠিক পথ স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দেয়ার দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করেছেন। এখন যদি কেউ নিজেই সঠিক পথে চলতে না চায়, তাহলে তার জেনে রাখা উচিত যে, নবী ﷺ কে বল প্রয়োগ করে কাউকে সঠিক পথে চালানোর দায়িত্ব দেয়া হয়নি। এভাবে জবরদস্তি করে ঈমান আনা যদি আল্লাহর ইচ্ছা হতো তাহলে নবী পাঠানোর কী প্রয়োজন ছিল? এ কাজ তো তিনি নিজেই যখন ইচ্ছা করতে পারতেন।
সবার ক্ষেত্রে নসীহত ফলপ্রসূ হয় না :
وَاَنْذِرْ بِهِ الَّذِيْنَ يَخَافُوْنَ اَنْ يُّحْشَرُوْاۤ اِلٰى رَبِّهِمْ لَيْسَ لَهُمْ مِّنْ دُوْنِهٖ وَلِيٌّ وَّلَا شَفِيْعٌ لَّعَلَّهُمْ يَتَّقُوْنَ
যারা ভয় করে এ দ্বারা তুমি তাদেরকে এ ব্যাপারে সতর্ক করো যে, তাদেরকে তাদের প্রতিপালকের নিকট সমবেত করা হবে। এমতাবস্থায় তিনি ব্যতীত তাদের জন্য অন্য কোন অভিভাবক বা সুপারিশকারী থাকবে না। (এ উপদেশের মাধ্যমে) হয়তো তারা তাক্বওয়া অর্জন করতে পারবে। (সূরা আন‘আম- ৫১)
ব্যাখ্যা : যারা দুনিয়ার জীবনে এমনভাবে নিমগ্ন হয়েছে যে, তারা মৃত্যুর কথা এবং আল্লাহর সামনে উপস্থিত হওয়ার কথা চিন্তাও করে না, তাদের জন্য নসীহত কখনো ফলপ্রসূ হবে না। কাজেই এ ধরনের লোকদেরকে বাদ দিয়ে এমন লোকদেরকে খোঁজতে হবে, যাদের মনে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হওয়ার ভয় আছে। কেবলমাত্র এ ধরনের লোকদের উপরই নসীহতের প্রভাব পড়তে পারে এবং তাদের সংশোধন হওয়ার আশা করা যেতে পারে।
নবী ﷺ যখন দেখতেন, এ জাতিকে বুঝাতে দীর্ঘকাল চলে গেল অথচ এরা কোনক্রমেই হেদায়াতের পথে আসছে না, তখন অনেক সময় তাঁর মনে এ ধরনের বাসনা জন্ম নিত যে, যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন কোন নিদর্শন প্রকাশিত হতো, যার ফলে এরা কুফরী ত্যাগ করে আমার দাওয়াতকে গ্রহণ করে নিত! তাঁর এ বাসনার জবাব এ আয়াতে দেয়া হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, অধৈর্য হয়ো না। যে বিন্যাস ও ধারাবাহিকতা সহকারে আমি এ কাজটি চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছি তার উপর ধৈর্যধারণ করে এগিয়ে চলো। অলৌকিকতার আশ্রয় নিতে হলে তা কি আমি নিজেই নিতে পারতাম না? কিন্তু আমি জানি, তোমাকে যে সংস্কার সাধনের কাজে নিযুক্ত করা হয়েছে তাকে সফলতার মনযিলে পৌঁছানোর সঠিক পথ এটা নয়। যদি কেবলমাত্র সমস্ত মানুষকে কোন না কোনভাবে সত্যপন্থী বানানো উদ্দেশ্য হতো, তাহলে কিতাব নাযিল করা, মুমিনদেরকে কাফিরদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত করা এবং সত্যের দাওয়াতকে পর্যায়ক্রমে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত এগিয়ে নেয়ার কী প্রয়োজন ছিল? আল্লাহর একটিমাত্র ইঙ্গিতেই এ কাজ সম্পন্ন হতে পারত। কিন্তু আল্লাহ এ কাজটি এ পদ্ধতিতে করতে চান না। তিনি চান সত্যকে যুক্তি-প্রমাণ সহকারে লোকদের সামনে পেশ করতে। তারপর মানুষ সঠিক ও নির্ভুল চিন্তাশক্তি প্রয়োগ করে সত্যকে চিনে নেবে এবং যথাযথভাবে মেনে নেবে। নিজেদের চরিত্রকে সত্যের আলোকে গড়ে তুলবে এবং বাতিল পূজারীদের মুকাবিলায় সর্বশক্তি প্রয়োগ করবে।
নিজের দায়িত্ব পালন করার পর কেউ বক্রপথে চললে সে-ই দায়ী থাকবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا عَلَيْكُمْ اَنْفُسَكُمْۚ لَا يَضُرُّكُمْ مَّنْ ضَلَّ اِذَا اهْتَدَيْتُمْؕ اِلَى اللهِ مَرْجِعُكُمْ جَمِيْعًا فَيُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমাদের দায়িত্ব তোমাদের উপর। তোমরা যদি সৎপথে পরিচালিত হও, তবে যে পথভ্রষ্ট হয়েছে সে তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহর দিকেই তোমাদের সকলের প্রত্যাবর্তন; অতঃপর তোমরা যা করতে তিনি সে সম্বন্ধে তোমাদেরকে অবহিত করবেন। (সূরা মায়েদা- ১০৫)
ব্যাখ্যা : অমুক কী করেছে? অমুকের আকীদার মধ্যে কী কী ভ্রান্তি আছে এবং অমুকের কাজে কোন কোন দোষ-ত্রুটি আছে- এসব দেখার পরিবর্তে মানুষের উচিত তার নিজের চরিত্র ও কার্যাবলির কথা চিন্তা করা। কোন ব্যক্তি নিজে যদি আল্লাহর আনুগত্য করতে থাকে, আল্লাহ ও বান্দার অধিকার আদায় করতে থাকে, সততা ও সঠিক পথ অবলম্বন করে এবং সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজ থেকে বিরত রাখার দায়িত্বও পালন করতে থাকে, তাহলে অন্য কারো বক্র পথে চলার জন্য সে দায়ী থাকবে না। মানুষ কেবলমাত্র নিজের মুক্তির কথা ভাববে, আর অন্যের সংশোধন করার কথা ভাববে না- এটা এ আয়াতের উদ্দেশ্য নয়।
হেদায়াত এর অর্থ হচ্ছে পথ দেখানো। আল্লাহর হেদায়াত দেয়ার অর্থ হচ্ছে, তিনি নিজের নবী ও কিতাবসমূহের সাহায্যে লোকদের সামনে সঠিক চিন্তা ও কর্মধারা সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেন। তারপর যারা স্বেচ্ছায় এ পথে চলতে উদ্যোগী হয়, তাদেরকে এ পথে চলার সুযোগ ও সামর্থ্য দান করেন। আর তিনি যে সঠিক চিন্তা ও কর্মপদ্ধতি বলে দিয়েছেন যদি তার বিপরীত পথে চলার জন্য কেউ প্রচেষ্টা চালায় এবং সোজা পথে চলতে না চায়, তাহলে আল্লাহ জোর করে তাকে সত্য পথ দেখান না। বরং সে যেদিকে যেতে চায়, তাকে সেদিকে যাওয়ার সুযোগ দেন।
অসংখ্য বক্র পথের মধ্যে সোজা পথ দেখানো আল্লাহর কাজ :
اِنَّ عَلَيْنَا لَلْهُدٰى
নিশ্চয় (মানুষকে) পথপ্রদর্শন করাই আমার দায়িত্ব। (সূরা লায়ল- ১২)
وَعَلَى اللهِ قَصْدُ السَّبِيْلِ وَمِنْهَا جَآئِرٌ وَّلَوْ شَآءَ لَهَدَاكُمْ اَجْمَعِيْنَ
সরল পথ দেখানো আল্লাহর কাজ, কিন্তু পথগুলোর মধ্যে (অনেক) বক্র পথও রয়েছে। তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদের সকলকেই সৎপথে পরিচালিত করতে পারতেন। (সূরা নাহল- ৯)
আসল হেদায়াত দানকারী হলেন আল্লাহ :
وَكَفٰى بِرَبِّكَ هَادِيًا وَّنَصِيْرًا
তোমার জন্য পথপ্রদর্শক ও সাহায্যকারী হিসেবে তোমার প্রতিপালকই যথেষ্ট। (সূরা ফুরক্বান- ৩১)
আল্লাহর হেদায়াতই প্রকৃত হেদায়াত :
قُلْ اِنَّ الْهُدٰى هُدَى اللهِ
বলো, আল্লাহর হেদায়াতই হচ্ছে প্রকৃত হেদায়াত। (সূরা আলে ইমরান- ৭৩)
مَنْ يَّهْدِ اللهُ فَهُوَ الْمُهْتَدِيْۚ وَمَنْ يُّضْلِلْ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ
আল্লাহ যাকে পথপ্রদর্শন করেন, (মূলত) সে-ই হেদায়াত পায় এবং যাদেরকে বিপথগামী করেন তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। (সূরা আ‘রাফ- ১৭৮)
আল্লাহ হেদায়াত না করলে আমরা হেদায়াত পেতাম না :
وَمَا كُنَّا لِنَهْتَدِيَ لَوْلَاۤ اَنْ هَدَانَا اللهُ
আল্লাহ আমাদেরকে পথ না দেখালে আমরা কখনো সঠিক পথ পেতাম না। (সূরা আ‘রাফ- ৪৩)
আল্লাহ যাকে চান তাকে হেদায়াত দান করেন :
وَاللّٰهُ يَهْدِيْ مَنْ يَّشَآءُ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন তাকে সঠিক পথ প্রদর্শন করেন। (সূরা নূর- ৪৬)
আল্লাহ হেদায়াত না দিলে কেউ দিতে পারে না :
وَمَنْ يُّضْلِلِ اللهُ فَمَا لَهٗ مِنْ هَادٍ
আল্লাহ যাকে বিভ্রান্ত করেন তার জন্য কোন পথপ্রদর্শক নেই। (সূরা রা‘দ- ৩৩)
مَنْ يُّضْلِلِ اللهُ فَلَا هَادِيَ لَهٗ
আল্লাহ যাকে বিপথগামী করেন, তার জন্য কোন পথপ্রদর্শক নেই। (সূরা আ‘রাফ-১৮৬)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ মানুষের হেদায়াতের জন্য কুরআনের মতো সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব পাঠিয়েছেন, যা অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত এবং কার্যকর উপায়ে প্রকৃত সত্যের জ্ঞান দান করছে এবং জীবনের সঠিক পথ বলে দিচ্ছে। তাদের পথপ্রদর্শনের জন্য মুহাম্মাদ ﷺ এর মতো নবী পাঠিয়েছেন, যিনি পৃথিবীবাসীর জন্য রহমতস্বরূপ। যার মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কিতাবের শিক্ষা বাস্তবজীবনে দেখিয়ে দিয়েছেন। আর এগুলো এখনো যথাযথভাবে মানুষের সামনে উন্মুক্ত রয়েছে। এসব দেখার পরও যদি কোন ব্যক্তি হেদায়াত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে আল্লাহ তাকে পুনরায় সেই গোমরাহীর মধ্যে নিক্ষেপ করবেন যেখান থেকে সে বেরিয়ে আসতে আগ্রহী নয়। আর আল্লাহই যখন কাউকে তাঁর দরজা থেকে তাড়িয়ে দেন, তখন তাকে সঠিক পথে নিয়ে আসার দায়িত্ব কে নিতে পারে? যে ব্যক্তি আল্লাহর কালাম ও রাসূল ﷺ এর জীবন-চরিত্র থেকে হেদায়াত লাভ করেনি, গোমরাহীকে আঁকড়ে ধরার কারণে আল্লাহ যার জন্য হেদায়াতের দরজা বন্ধ করে কেবল গোমরাহীর দরজাগুলোই খুলে দিয়েছেন- এমন ব্যক্তিকে সঠিক পথ দেখানো আসলেই কঠিন।
আল্লাহ যাকে হেদায়াত দিতে চান তার অন্তর প্রশস্ত করে দেন :
فَمَنْ يُّرِدِ اللهُ اَنْ يَّهْدِيَهٗ يَشْرَحْ صَدْرَهٗ لِلْاِسْلَامِۚ وَمَنْ يُّرِدْ اَنْ يُّضِلَّهٗ يَجْعَلْ صَدْرَهٗ ضَيِّقًا حَرَجًا كَاَنَّمَا يَصَّعَّدُ فِى السَّمَآءِؕ كَذٰلِكَ يَجْعَلُ اللهُ الرِّجْسَ عَلَى الَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ
আল্লাহ কাউকে সৎপথে পরিচালিত করতে চাইলে তিনি তার বক্ষ ইসলামের জন্য প্রশস্ত করে দেন। আবার কাউকে বিপথগামী করতে চাইলে তার বক্ষ সংকীর্ণ করে দেন, তার কাছে ইসলামের অনুসরণ আকাশে আরোহণের মতোই দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। সুতরাং যারা বিশ্বাস স্থাপন করে না আল্লাহ তাদেরকে এভাবেই লাঞ্ছিত করে থাকেন। (সূরা আন‘আম- ১২৬)
ব্যাখ্যা : বক্ষদেশকে উন্মুক্ত করে দেয়ার অর্থ হচ্ছে, ইসলামের সত্যতা সম্পর্কে হৃদয়ে পূর্ণ নিশ্চয়তা সৃষ্টি করা এবং যাবতীয় সন্দেহ দূর করে দেয়া। কোন ব্যাপারে মানুষের বক্ষ উন্মুক্ত হয়ে যাওয়া মূলত এমন একটি মানসিক অবস্থার নাম, যখন তার মনে উক্ত বিষয় সম্পর্কে কোন দুশ্চিন্তা কিংবা সন্দেহ-সংশয় থাকে না এবং কোন বিপদের আশঙ্কাও তাকে ঐ বিষয় গ্রহণ করতে বাধা দিতে পারে না। বরং সে পূর্ণ মানসিক তৃপ্তির সাথে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, যে জিনিসটি ন্যায় ও সত্য সে সেটা গ্রহণ করবেই। এতে ভালো-মন্দ যাই ঘটুক না কেন, তাকে তার উপরই চলতে হবে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোন ব্যক্তি যখন ইসলামের পথ অবলম্বন করে, তখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যে নির্দেশই আসুক না কেন, তা সে অনিচ্ছায় নয় বরং খুশী মনে ও আগ্রহের সাথে মেনে নেয়।
আল্লাহ যাকে হেদায়াত দেন তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারে না :
وَمَنْ يَّهْدِ اللهُ فَمَا لَهٗ مِنْ مُّضِلٍّ
আল্লাহ যাকে হেদায়াত দান করেন, তার জন্য কোন পথভ্রষ্টকারী নেই। (সূরা যুমার- ৩৭)
আল্লাহ সঠিক পথ ও ভুলপথ স্পষ্ট করে দিয়েছেন :
اِنَّا هَدَيْنَاهُ السَّبِيْلَ اِمَّا شَاكِرًا وَّاِمَّا كَفُوْرًا
আমি তাকে পথ দেখিয়েছি; এরপর হয় সে কৃতজ্ঞ হবে, নতুবা অকৃতজ্ঞ হবে। (সূরা দাহর- ৩)
কে গোমরাহ আর কে হেদায়াতপ্রাপ্ত আল্লাহই ভালো জানেন :
اِنَّ رَبَّكَ هُوَ اَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِيْلِهٖ وَهُوَ اَعْلَمُ بِمَنِ اهْتَدٰى
তোমাদের প্রতিপালকই ভালো জানেন যে, কে তাঁর পথ হতে বিচ্যুত এবং তিনি এও জানেন যে, কে হেদায়াতপ্রাপ্ত। (সূরা নাজম- ৩০)
اِنَّ عَلَيْنَا لَلْهُدٰى
নিশ্চয় (মানুষকে) পথপ্রদর্শন করাই আমার দায়িত্ব। (সূরা লায়ল- ১২)
وَعَلَى اللهِ قَصْدُ السَّبِيْلِ وَمِنْهَا جَآئِرٌ وَّلَوْ شَآءَ لَهَدَاكُمْ اَجْمَعِيْنَ
সরল পথ দেখানো আল্লাহর কাজ, কিন্তু পথগুলোর মধ্যে (অনেক) বক্র পথও রয়েছে। তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদের সকলকেই সৎপথে পরিচালিত করতে পারতেন। (সূরা নাহল- ৯)
আসল হেদায়াত দানকারী হলেন আল্লাহ :
وَكَفٰى بِرَبِّكَ هَادِيًا وَّنَصِيْرًا
তোমার জন্য পথপ্রদর্শক ও সাহায্যকারী হিসেবে তোমার প্রতিপালকই যথেষ্ট। (সূরা ফুরক্বান- ৩১)
আল্লাহর হেদায়াতই প্রকৃত হেদায়াত :
قُلْ اِنَّ الْهُدٰى هُدَى اللهِ
বলো, আল্লাহর হেদায়াতই হচ্ছে প্রকৃত হেদায়াত। (সূরা আলে ইমরান- ৭৩)
مَنْ يَّهْدِ اللهُ فَهُوَ الْمُهْتَدِيْۚ وَمَنْ يُّضْلِلْ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ
আল্লাহ যাকে পথপ্রদর্শন করেন, (মূলত) সে-ই হেদায়াত পায় এবং যাদেরকে বিপথগামী করেন তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। (সূরা আ‘রাফ- ১৭৮)
আল্লাহ হেদায়াত না করলে আমরা হেদায়াত পেতাম না :
وَمَا كُنَّا لِنَهْتَدِيَ لَوْلَاۤ اَنْ هَدَانَا اللهُ
আল্লাহ আমাদেরকে পথ না দেখালে আমরা কখনো সঠিক পথ পেতাম না। (সূরা আ‘রাফ- ৪৩)
আল্লাহ যাকে চান তাকে হেদায়াত দান করেন :
وَاللّٰهُ يَهْدِيْ مَنْ يَّشَآءُ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন তাকে সঠিক পথ প্রদর্শন করেন। (সূরা নূর- ৪৬)
আল্লাহ হেদায়াত না দিলে কেউ দিতে পারে না :
وَمَنْ يُّضْلِلِ اللهُ فَمَا لَهٗ مِنْ هَادٍ
আল্লাহ যাকে বিভ্রান্ত করেন তার জন্য কোন পথপ্রদর্শক নেই। (সূরা রা‘দ- ৩৩)
مَنْ يُّضْلِلِ اللهُ فَلَا هَادِيَ لَهٗ
আল্লাহ যাকে বিপথগামী করেন, তার জন্য কোন পথপ্রদর্শক নেই। (সূরা আ‘রাফ-১৮৬)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ মানুষের হেদায়াতের জন্য কুরআনের মতো সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব পাঠিয়েছেন, যা অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত এবং কার্যকর উপায়ে প্রকৃত সত্যের জ্ঞান দান করছে এবং জীবনের সঠিক পথ বলে দিচ্ছে। তাদের পথপ্রদর্শনের জন্য মুহাম্মাদ ﷺ এর মতো নবী পাঠিয়েছেন, যিনি পৃথিবীবাসীর জন্য রহমতস্বরূপ। যার মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কিতাবের শিক্ষা বাস্তবজীবনে দেখিয়ে দিয়েছেন। আর এগুলো এখনো যথাযথভাবে মানুষের সামনে উন্মুক্ত রয়েছে। এসব দেখার পরও যদি কোন ব্যক্তি হেদায়াত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে আল্লাহ তাকে পুনরায় সেই গোমরাহীর মধ্যে নিক্ষেপ করবেন যেখান থেকে সে বেরিয়ে আসতে আগ্রহী নয়। আর আল্লাহই যখন কাউকে তাঁর দরজা থেকে তাড়িয়ে দেন, তখন তাকে সঠিক পথে নিয়ে আসার দায়িত্ব কে নিতে পারে? যে ব্যক্তি আল্লাহর কালাম ও রাসূল ﷺ এর জীবন-চরিত্র থেকে হেদায়াত লাভ করেনি, গোমরাহীকে আঁকড়ে ধরার কারণে আল্লাহ যার জন্য হেদায়াতের দরজা বন্ধ করে কেবল গোমরাহীর দরজাগুলোই খুলে দিয়েছেন- এমন ব্যক্তিকে সঠিক পথ দেখানো আসলেই কঠিন।
আল্লাহ যাকে হেদায়াত দিতে চান তার অন্তর প্রশস্ত করে দেন :
فَمَنْ يُّرِدِ اللهُ اَنْ يَّهْدِيَهٗ يَشْرَحْ صَدْرَهٗ لِلْاِسْلَامِۚ وَمَنْ يُّرِدْ اَنْ يُّضِلَّهٗ يَجْعَلْ صَدْرَهٗ ضَيِّقًا حَرَجًا كَاَنَّمَا يَصَّعَّدُ فِى السَّمَآءِؕ كَذٰلِكَ يَجْعَلُ اللهُ الرِّجْسَ عَلَى الَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ
আল্লাহ কাউকে সৎপথে পরিচালিত করতে চাইলে তিনি তার বক্ষ ইসলামের জন্য প্রশস্ত করে দেন। আবার কাউকে বিপথগামী করতে চাইলে তার বক্ষ সংকীর্ণ করে দেন, তার কাছে ইসলামের অনুসরণ আকাশে আরোহণের মতোই দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। সুতরাং যারা বিশ্বাস স্থাপন করে না আল্লাহ তাদেরকে এভাবেই লাঞ্ছিত করে থাকেন। (সূরা আন‘আম- ১২৬)
ব্যাখ্যা : বক্ষদেশকে উন্মুক্ত করে দেয়ার অর্থ হচ্ছে, ইসলামের সত্যতা সম্পর্কে হৃদয়ে পূর্ণ নিশ্চয়তা সৃষ্টি করা এবং যাবতীয় সন্দেহ দূর করে দেয়া। কোন ব্যাপারে মানুষের বক্ষ উন্মুক্ত হয়ে যাওয়া মূলত এমন একটি মানসিক অবস্থার নাম, যখন তার মনে উক্ত বিষয় সম্পর্কে কোন দুশ্চিন্তা কিংবা সন্দেহ-সংশয় থাকে না এবং কোন বিপদের আশঙ্কাও তাকে ঐ বিষয় গ্রহণ করতে বাধা দিতে পারে না। বরং সে পূর্ণ মানসিক তৃপ্তির সাথে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, যে জিনিসটি ন্যায় ও সত্য সে সেটা গ্রহণ করবেই। এতে ভালো-মন্দ যাই ঘটুক না কেন, তাকে তার উপরই চলতে হবে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোন ব্যক্তি যখন ইসলামের পথ অবলম্বন করে, তখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যে নির্দেশই আসুক না কেন, তা সে অনিচ্ছায় নয় বরং খুশী মনে ও আগ্রহের সাথে মেনে নেয়।
আল্লাহ যাকে হেদায়াত দেন তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারে না :
وَمَنْ يَّهْدِ اللهُ فَمَا لَهٗ مِنْ مُّضِلٍّ
আল্লাহ যাকে হেদায়াত দান করেন, তার জন্য কোন পথভ্রষ্টকারী নেই। (সূরা যুমার- ৩৭)
আল্লাহ সঠিক পথ ও ভুলপথ স্পষ্ট করে দিয়েছেন :
اِنَّا هَدَيْنَاهُ السَّبِيْلَ اِمَّا شَاكِرًا وَّاِمَّا كَفُوْرًا
আমি তাকে পথ দেখিয়েছি; এরপর হয় সে কৃতজ্ঞ হবে, নতুবা অকৃতজ্ঞ হবে। (সূরা দাহর- ৩)
কে গোমরাহ আর কে হেদায়াতপ্রাপ্ত আল্লাহই ভালো জানেন :
اِنَّ رَبَّكَ هُوَ اَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِيْلِهٖ وَهُوَ اَعْلَمُ بِمَنِ اهْتَدٰى
তোমাদের প্রতিপালকই ভালো জানেন যে, কে তাঁর পথ হতে বিচ্যুত এবং তিনি এও জানেন যে, কে হেদায়াতপ্রাপ্ত। (সূরা নাজম- ৩০)
যারা ঈমান আনে :
وَمَنْ يُّؤْمِنْ ۢبِاللهِ يَهْدِ قَلْبَهٗؕ وَاللهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ
যে ব্যক্তি আল্লাহকে বিশ্বাস করে, তিনি তার অন্তরকে সঠিক পথে পরিচালিত করেন। আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে জ্ঞানী। (সূরা তাগাবুন- ১১)
যারা ইসলাম গ্রহণ করে :
فَاِنْ اَسْلَمُوْا فَقَدِ اهْتَدَوْا
যদি তারা মুসলিম হয়, তাহলে তারা হেদায়াত পাবে। (সূরা আলে ইমরান- ২০)
যারা সাহাবীদের ঈমানের মতো ঈমান আনয়ন করে :
فَاِنْ اٰمَنُوْا بِمِثْلِ مَاۤ اٰمَنْتُمْ بِهٖ فَقَدِ اهْتَدَوْا
তোমরা যেরূপ ঈমান এনেছ তারাও যদি তদ্রূপ ঈমান আনে, তাহলে অবশ্যই তারা হেদায়াতপ্রাপ্ত হবে। (সূরা বাক্বারা- ১৩৭)
যারা আল্লাহর দিকে ধাবিত হয় :
اَللهُ يَجْتَبِيْۤ اِلَيْهِ مَنْ يَّشَآءُ وَيَهْدِيْۤ اِلَيْهِ مَنْ يُّنِيْبُ
আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে নিজের দিকে নিয়ে আসেন এবং যে ব্যক্তি তার অভিমুখী হয় তিনি তাকে পথপ্রদর্শন করেন। (সূরা শূরা- ১৩)
যারা আল্লাহর পথ অবলম্বন করে :
وَمَنْ يَّعْتَصِمْ بِاللهِ فَقَدْ هُدِيَ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
যে ব্যক্তি মজবুতভাবে আল্লাহকে ধারণ করবে, সে সরল পথে পরিচালিত হবে। (সূরা আলে ইমরান- ১০১)
যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে :
يَهْدِيْ بِهِ اللهُ مَنِ اتَّبَعَ رِضْوَانَهٗ سُبُلَ السَّلَامِ وَيُخْرِجُهُمْ مِّنَ الظُّلُمَاتِ اِلَى النُّوْرِ بِاِذْنِهٖ وَيَهْدِيْهِمْ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে চায়, তিনি এ (কুরআন) দ্বারা তাকে শান্তির পথে পরিচালিত করেন এবং তাকে নিজ ইচ্ছায় অন্ধকার হতে আলোর দিকে বের করে আনেন। আর তিনি তাদেরকে সরল পথে পরিচালিত করেন। (সূরা মায়েদা- ১৬)
যারা নবীর অনুসরণ করে :
فَاٰمِنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِهِ النَّبِيِّ الْاُمِّيِّ الَّذِيْ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَكَلِمَاتِهٖ وَاتَّبِعُوْهُ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ
সুতরাং তোমরা ঈমান আনয়ন করো- আল্লাহর প্রতি এবং তাঁর বার্তাবাহক উম্মী নবীর প্রতি, যিনি আল্লাহ ও তাঁর বাণীর প্রতি ঈমান এনেছেন। অতঃপর তোমরা তার অনুসরণ করো; তাহলে তোমরা হেদায়াতপ্রাপ্ত হবে। (সূরা আ‘রাফ- ১৫৮)
যারা হেদায়াত লাভের চেষ্টা করে :
وَالَّذِيْنَ جَاهَدُوْا فِيْنَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَاؕ وَاِنَّ اللهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِيْنَ
যারা আমার উদ্দেশ্যে সর্বাত্মক চেষ্টা করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করব। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের সঙ্গে থাকেন। (সূরা আনকাবূত- ৬৯)
ব্যাখ্যা : যারা আল্লাহকে পাওয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালায় তারা কীভাবে তাঁর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারবে, তা তিনি প্রতি পদে পদে জানিয়ে দেন। পথের প্রতিটি বাঁকে তিনি তাদেরকে আলো দেখান। যার ফলে কোনটা সঠিক পথ এবং কোনটা ভুলপথ, তা তারা দেখতে পায়। তারা যতই সৎ ও সদিচ্ছা প্রসূত হয় ততই আল্লাহর সাহায্য ও হেদায়াত তাদের সহযোগী হয়।
وَمَنْ يُّؤْمِنْ ۢبِاللهِ يَهْدِ قَلْبَهٗؕ وَاللهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ
যে ব্যক্তি আল্লাহকে বিশ্বাস করে, তিনি তার অন্তরকে সঠিক পথে পরিচালিত করেন। আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে জ্ঞানী। (সূরা তাগাবুন- ১১)
যারা ইসলাম গ্রহণ করে :
فَاِنْ اَسْلَمُوْا فَقَدِ اهْتَدَوْا
যদি তারা মুসলিম হয়, তাহলে তারা হেদায়াত পাবে। (সূরা আলে ইমরান- ২০)
যারা সাহাবীদের ঈমানের মতো ঈমান আনয়ন করে :
فَاِنْ اٰمَنُوْا بِمِثْلِ مَاۤ اٰمَنْتُمْ بِهٖ فَقَدِ اهْتَدَوْا
তোমরা যেরূপ ঈমান এনেছ তারাও যদি তদ্রূপ ঈমান আনে, তাহলে অবশ্যই তারা হেদায়াতপ্রাপ্ত হবে। (সূরা বাক্বারা- ১৩৭)
যারা আল্লাহর দিকে ধাবিত হয় :
اَللهُ يَجْتَبِيْۤ اِلَيْهِ مَنْ يَّشَآءُ وَيَهْدِيْۤ اِلَيْهِ مَنْ يُّنِيْبُ
আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে নিজের দিকে নিয়ে আসেন এবং যে ব্যক্তি তার অভিমুখী হয় তিনি তাকে পথপ্রদর্শন করেন। (সূরা শূরা- ১৩)
যারা আল্লাহর পথ অবলম্বন করে :
وَمَنْ يَّعْتَصِمْ بِاللهِ فَقَدْ هُدِيَ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
যে ব্যক্তি মজবুতভাবে আল্লাহকে ধারণ করবে, সে সরল পথে পরিচালিত হবে। (সূরা আলে ইমরান- ১০১)
যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে :
يَهْدِيْ بِهِ اللهُ مَنِ اتَّبَعَ رِضْوَانَهٗ سُبُلَ السَّلَامِ وَيُخْرِجُهُمْ مِّنَ الظُّلُمَاتِ اِلَى النُّوْرِ بِاِذْنِهٖ وَيَهْدِيْهِمْ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে চায়, তিনি এ (কুরআন) দ্বারা তাকে শান্তির পথে পরিচালিত করেন এবং তাকে নিজ ইচ্ছায় অন্ধকার হতে আলোর দিকে বের করে আনেন। আর তিনি তাদেরকে সরল পথে পরিচালিত করেন। (সূরা মায়েদা- ১৬)
যারা নবীর অনুসরণ করে :
فَاٰمِنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِهِ النَّبِيِّ الْاُمِّيِّ الَّذِيْ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَكَلِمَاتِهٖ وَاتَّبِعُوْهُ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ
সুতরাং তোমরা ঈমান আনয়ন করো- আল্লাহর প্রতি এবং তাঁর বার্তাবাহক উম্মী নবীর প্রতি, যিনি আল্লাহ ও তাঁর বাণীর প্রতি ঈমান এনেছেন। অতঃপর তোমরা তার অনুসরণ করো; তাহলে তোমরা হেদায়াতপ্রাপ্ত হবে। (সূরা আ‘রাফ- ১৫৮)
যারা হেদায়াত লাভের চেষ্টা করে :
وَالَّذِيْنَ جَاهَدُوْا فِيْنَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَاؕ وَاِنَّ اللهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِيْنَ
যারা আমার উদ্দেশ্যে সর্বাত্মক চেষ্টা করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করব। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের সঙ্গে থাকেন। (সূরা আনকাবূত- ৬৯)
ব্যাখ্যা : যারা আল্লাহকে পাওয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালায় তারা কীভাবে তাঁর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারবে, তা তিনি প্রতি পদে পদে জানিয়ে দেন। পথের প্রতিটি বাঁকে তিনি তাদেরকে আলো দেখান। যার ফলে কোনটা সঠিক পথ এবং কোনটা ভুলপথ, তা তারা দেখতে পায়। তারা যতই সৎ ও সদিচ্ছা প্রসূত হয় ততই আল্লাহর সাহায্য ও হেদায়াত তাদের সহযোগী হয়।
যারা কাফির:
وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الْكَافِرِيْنَ
আর আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে পথপ্রদর্শন করেন না। (সূরা বাক্বারা- ২৬৪)
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا ثُمَّ كَفَرُوْا ثُمَّ اٰمَنُوْا ثُمَّ كَفَرُوْا ثُمَّ ازْدَادُوْا كُفْرًا لَّمْ يَكُنِ اللهُ لِيَغْفِرَ لَهُمْ وَلَا لِيَهْدِيَهُمْ سَبِيْلًا
নিশ্চয় যারা ঈমান আনে, অতঃপর কুফরী করে, আবার ঈমান আনে, আবার কুফরী করে, অতঃপর তাদের কুফরী প্রবৃত্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে, আল্লাহ তাদেরকে কিছুতেই ক্ষমা করবেন না এবং তাদেরকে কখনো পথও দেখাবেন না। (সূরা নিসা- ১৩৭)
যারা আল্লাহর আয়াতকে বিশ্বাস করে না :
اِنَّ الَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِ لَا يَهْدِيْهِمُ اللهُ وَلَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
নিশ্চয় যারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না, আল্লাহ তাদেরকে হেদায়াত দান করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে মর্মান্তিক শাস্তি। (সূরা নাহল- ১০৪)
যারা ঈমান আনার পর আবার কুফরী করে :
كَيْفَ يَهْدِى اللهُ قَوْمًا كَفَرُوْا بَعْدَ اِيْمَانِهِمْ وَشَهِدُوْاۤ اَنَّ الرَّسُوْلَ حَقٌّ وَّجَآءَهُمُ الْبَيِّنَاتُؕ وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
এমন জাতিকে আল্লাহ কীভাবে হেদায়াত করবেন যারা ঈমান আনার পর আবার কুফরীতে লিপ্ত হয়, অথচ তারা এ সাক্ষ্যও দেয় যে, রাসূল সত্য। তাছাড়া তিনি (রাসূল) তাদের কাছে স্পষ্ট নিদর্শনাবলিও নিয়ে এসেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে হেদায়াত দান করেন না। (সূরা আলে ইমরান- ৮৬)
যারা ফাসিক :
اِنَّ اللّٰهَ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الْفَاسِقِيْنَ
নিশ্চয় আল্লাহ ফাসিক সম্প্রদায়কে হেদায়াত দান করেন না। (সূরা মুনাফিকূন- ৬)
وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الْفَاسِقِيْنَ
আল্লাহ ফাসিক সম্প্রদায়কে হেদায়াত দান করেন না। (সূরা সাফ- ৫)
যারা যালিম:
وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (সূরা সাফ- ৭)
যারা সীমালঙ্ঘন করে:
اِنَّ اللهَ لَا يَهْدِيْ مَنْ هُوَ مُسْرِفٌ كَذَّابٌ
আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারী ও মিথ্যাবাদীদেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (সূরা মু’মিন- ২৮)
যারা মিথ্যুক :
اِنَّ اللهَ لَا يَهْدِيْ مَنْ هُوَ كَاذِبٌ كَفَّارٌ
আল্লাহ মিথ্যাবাদী ও কাফিরদেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (সূরা যুমার- ৩)
যারা গোমরাহীর অন্ধকারে ডুবে থাকে :
وَمَاۤ اَنْتَ بِهَادِ الْعُمْيِ عَنْ ضَلَالَتِهِمْؕ اِنْ تُسْمِعُ اِلَّا مَنْ يُّؤْمِنُ بِاٰيَاتِنَا فَهُمْ مُّسْلِمُوْنَ
আপনি অন্ধদেরকে তাদের ভ্রষ্টতা থেকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে পারবেন না। আপনি তো কেবল তাদেরকেই শুনাতে পারবেন, যারা আমার আয়াতসমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, অতঃপর তারা আনুগত্যও করে। (সূরা রূম- ৫৩)
ব্যাখ্যা : যাদেরকে আলো দেখানো হয় এবং সত্য ও সরল পথের দিকে আহবান জানানো হয়; কিন্তু তারা সে আহবানে কর্ণপাত না করে নিজেদের বাঁকা পথেই চলতে থাকে, তাদের জন্য এটিই আল্লাহর বিধান যে, অন্ধকারই তাদের কাছে ভালো মনে হতে থাকবে। তারা অন্ধের মতো পথ হাতড়ে চলা এবং এখানে সেখানে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাওয়া পছন্দ করবে। সবধরনের অন্যায়, অত্যাচার, অসৎ ও অশ্লীলতামূলক কাজে আনন্দ উপভোগ করবে।
যারা সন্তান হত্যা করে:
قَدْ خَسِرَ الَّذِيْنَ قَتَلُوْاۤ اَوْلَادَهُمْ سَفَهًا ۢبِغَيْرِ عِلْمٍ وَّحَرَّمُوْا مَا رَزَقَهُمُ اللهُ افْتِرَآءً عَلَى اللهِؕ قَدْ ضَلُّوْا وَمَا كَانُوْا مُهْتَدِيْنَ
যারা নির্বুদ্ধিতার দরুন অজ্ঞতাবশত নিজেদের সন্তানদেরকে হত্যা করে এবং আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা রচনা করার জন্য আল্লাহ প্রদত্ত জীবিকাকে হারাম করে নেয়, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অবশ্যই তারা বিপথগামী হয়েছে, আর তারা সৎপথপ্রাপ্তও ছিল না। (সূরা আন‘আম- ১৪১)
যারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাতকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে :
قَدْ خَسِرَ الَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِلِقَآءِ اللهِ وَمَا كَانُوْا مُهْتَدِيْنَ
যারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাতকে অস্বীকার করেছে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; আর তারা সৎপথপ্রাপ্তও ছিল না। (সূরা ইউনুস- ৪৫)
যারা প্রবৃত্তির অনুসরণ করে :
فَاِنْ لَّمْ يَسْتَجِيْبُوْا لَكَ فَاعْلَمْ اَنَّمَا يَتَّبِعُوْنَ اَهْوَآءَهُمْؕ وَمَنْ اَضَلُّ مِمَّنِ اتَّبَعَ هَوَاهُ بِغَيْرِ هُدًى مِّنَ اللهِؕ اِنَّ اللهَ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
তারা যদি তোমার আহবানে সাড়া না দেয়, তাহলে জানবে যে, তারা কেবল নিজেদের প্রবৃত্তিরই অনুসরণ করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর পথনির্দেশকে অগ্রাহ্য করে নিজ খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে, তার চেয়ে অধিক বিভ্রান্ত আর কে হতে পারে? নিশ্চয় আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (সূরা ক্বাসাস- ৫০)
ব্যাখ্যা : যে নিজেই আল্লাহর দিকে ধাবিত হয় না এবং তাঁর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাকে জোর করে সত্য ও সঠিক পথ দেখানো আল্লাহর রীতি নয়। এ ধরনের লোকেরা সত্য ও সঠিক পথ পরিত্যাগ করে বিভ্রান্তের মতো যেসব ভুল পথে ঘুরে বেড়াতে চায় আল্লাহ তাদেরকে সেসব পথে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ দেন। একজন সত্য সন্ধানী লোকের জন্য যেসব মাধ্যম সত্যপথ লাভের ব্যাপারে সহায়ক হয়, একজন অসত্য ও ভ্রান্ত পথ প্রত্যাশী ব্যক্তির জন্য সেগুলো বিভ্রান্তি ও গোমরাহীর কারণ হয়।
কোন মূর্তি বা দেবতা মানুষকে সৎপথ দেখাতে পারে না :
قُلْ هَلْ مِنْ شُرَكَآئِكُمْ مَّنْ يَّهْدِيْۤ اِلَى الْحَقِّ قُلِ اللهُ يَهْدِيْ لِلْحَقِّؕ اَفَمَنْ يَّهْدِيْۤ اِلَى الْحَقِّؕ اَحَقُّ اَنْ يُّتَّبَعَ اَمَّنْ لَّا يَهِدِّيْۤ اِلَّاۤ اَنْ يُّهْدٰىۚ فَمَا لَكُمْ كَيْفَ تَحْكُمُوْنَ
বলো, তোমরা যাদেরকে শরীক কর তাদের মধ্যে কি এমন কেউ আছে, যে সৎপথ প্রদর্শন করে? বলো, আল্লাহই সৎপথ প্রদর্শন করেন। আর যিনি সৎপথ প্রদর্শন করেন তিনিই তো আনুগত্যের অধিক হকদার, নাকি ঐ ব্যক্তি (বেশি হকদার) যাকে পথ না দেখালে কোন পথ দেখতে পায় না? তোমাদের কী হয়েছে? তোমরা কীভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাক? (সূরা ইউনুস- ৩৫)
অনেকে বিপথগামী হয়েও নিজেকে সৎপন্থী মনে করে :
اِنَّهُمُ اتَّخَذُوا الشَّيَاطِيْنَ اَوْلِيَآءَ مِنْ دُوْنِ اللهِ وَيَحْسَبُوْنَ اَنَّهُمْ مُّهْتَدُوْنَ
তারা আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানদেরকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে; তবুও তারা মনে করে যে, তারাই সৎপথপ্রাপ্ত। (সূরা আ‘রাফ- ৩০)
وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الْكَافِرِيْنَ
আর আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে পথপ্রদর্শন করেন না। (সূরা বাক্বারা- ২৬৪)
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا ثُمَّ كَفَرُوْا ثُمَّ اٰمَنُوْا ثُمَّ كَفَرُوْا ثُمَّ ازْدَادُوْا كُفْرًا لَّمْ يَكُنِ اللهُ لِيَغْفِرَ لَهُمْ وَلَا لِيَهْدِيَهُمْ سَبِيْلًا
নিশ্চয় যারা ঈমান আনে, অতঃপর কুফরী করে, আবার ঈমান আনে, আবার কুফরী করে, অতঃপর তাদের কুফরী প্রবৃত্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে, আল্লাহ তাদেরকে কিছুতেই ক্ষমা করবেন না এবং তাদেরকে কখনো পথও দেখাবেন না। (সূরা নিসা- ১৩৭)
যারা আল্লাহর আয়াতকে বিশ্বাস করে না :
اِنَّ الَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِ لَا يَهْدِيْهِمُ اللهُ وَلَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
নিশ্চয় যারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না, আল্লাহ তাদেরকে হেদায়াত দান করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে মর্মান্তিক শাস্তি। (সূরা নাহল- ১০৪)
যারা ঈমান আনার পর আবার কুফরী করে :
كَيْفَ يَهْدِى اللهُ قَوْمًا كَفَرُوْا بَعْدَ اِيْمَانِهِمْ وَشَهِدُوْاۤ اَنَّ الرَّسُوْلَ حَقٌّ وَّجَآءَهُمُ الْبَيِّنَاتُؕ وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
এমন জাতিকে আল্লাহ কীভাবে হেদায়াত করবেন যারা ঈমান আনার পর আবার কুফরীতে লিপ্ত হয়, অথচ তারা এ সাক্ষ্যও দেয় যে, রাসূল সত্য। তাছাড়া তিনি (রাসূল) তাদের কাছে স্পষ্ট নিদর্শনাবলিও নিয়ে এসেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে হেদায়াত দান করেন না। (সূরা আলে ইমরান- ৮৬)
যারা ফাসিক :
اِنَّ اللّٰهَ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الْفَاسِقِيْنَ
নিশ্চয় আল্লাহ ফাসিক সম্প্রদায়কে হেদায়াত দান করেন না। (সূরা মুনাফিকূন- ৬)
وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الْفَاسِقِيْنَ
আল্লাহ ফাসিক সম্প্রদায়কে হেদায়াত দান করেন না। (সূরা সাফ- ৫)
যারা যালিম:
وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (সূরা সাফ- ৭)
যারা সীমালঙ্ঘন করে:
اِنَّ اللهَ لَا يَهْدِيْ مَنْ هُوَ مُسْرِفٌ كَذَّابٌ
আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারী ও মিথ্যাবাদীদেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (সূরা মু’মিন- ২৮)
যারা মিথ্যুক :
اِنَّ اللهَ لَا يَهْدِيْ مَنْ هُوَ كَاذِبٌ كَفَّارٌ
আল্লাহ মিথ্যাবাদী ও কাফিরদেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (সূরা যুমার- ৩)
যারা গোমরাহীর অন্ধকারে ডুবে থাকে :
وَمَاۤ اَنْتَ بِهَادِ الْعُمْيِ عَنْ ضَلَالَتِهِمْؕ اِنْ تُسْمِعُ اِلَّا مَنْ يُّؤْمِنُ بِاٰيَاتِنَا فَهُمْ مُّسْلِمُوْنَ
আপনি অন্ধদেরকে তাদের ভ্রষ্টতা থেকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে পারবেন না। আপনি তো কেবল তাদেরকেই শুনাতে পারবেন, যারা আমার আয়াতসমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, অতঃপর তারা আনুগত্যও করে। (সূরা রূম- ৫৩)
ব্যাখ্যা : যাদেরকে আলো দেখানো হয় এবং সত্য ও সরল পথের দিকে আহবান জানানো হয়; কিন্তু তারা সে আহবানে কর্ণপাত না করে নিজেদের বাঁকা পথেই চলতে থাকে, তাদের জন্য এটিই আল্লাহর বিধান যে, অন্ধকারই তাদের কাছে ভালো মনে হতে থাকবে। তারা অন্ধের মতো পথ হাতড়ে চলা এবং এখানে সেখানে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাওয়া পছন্দ করবে। সবধরনের অন্যায়, অত্যাচার, অসৎ ও অশ্লীলতামূলক কাজে আনন্দ উপভোগ করবে।
যারা সন্তান হত্যা করে:
قَدْ خَسِرَ الَّذِيْنَ قَتَلُوْاۤ اَوْلَادَهُمْ سَفَهًا ۢبِغَيْرِ عِلْمٍ وَّحَرَّمُوْا مَا رَزَقَهُمُ اللهُ افْتِرَآءً عَلَى اللهِؕ قَدْ ضَلُّوْا وَمَا كَانُوْا مُهْتَدِيْنَ
যারা নির্বুদ্ধিতার দরুন অজ্ঞতাবশত নিজেদের সন্তানদেরকে হত্যা করে এবং আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা রচনা করার জন্য আল্লাহ প্রদত্ত জীবিকাকে হারাম করে নেয়, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অবশ্যই তারা বিপথগামী হয়েছে, আর তারা সৎপথপ্রাপ্তও ছিল না। (সূরা আন‘আম- ১৪১)
যারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাতকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে :
قَدْ خَسِرَ الَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِلِقَآءِ اللهِ وَمَا كَانُوْا مُهْتَدِيْنَ
যারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাতকে অস্বীকার করেছে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; আর তারা সৎপথপ্রাপ্তও ছিল না। (সূরা ইউনুস- ৪৫)
যারা প্রবৃত্তির অনুসরণ করে :
فَاِنْ لَّمْ يَسْتَجِيْبُوْا لَكَ فَاعْلَمْ اَنَّمَا يَتَّبِعُوْنَ اَهْوَآءَهُمْؕ وَمَنْ اَضَلُّ مِمَّنِ اتَّبَعَ هَوَاهُ بِغَيْرِ هُدًى مِّنَ اللهِؕ اِنَّ اللهَ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
তারা যদি তোমার আহবানে সাড়া না দেয়, তাহলে জানবে যে, তারা কেবল নিজেদের প্রবৃত্তিরই অনুসরণ করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর পথনির্দেশকে অগ্রাহ্য করে নিজ খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে, তার চেয়ে অধিক বিভ্রান্ত আর কে হতে পারে? নিশ্চয় আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (সূরা ক্বাসাস- ৫০)
ব্যাখ্যা : যে নিজেই আল্লাহর দিকে ধাবিত হয় না এবং তাঁর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাকে জোর করে সত্য ও সঠিক পথ দেখানো আল্লাহর রীতি নয়। এ ধরনের লোকেরা সত্য ও সঠিক পথ পরিত্যাগ করে বিভ্রান্তের মতো যেসব ভুল পথে ঘুরে বেড়াতে চায় আল্লাহ তাদেরকে সেসব পথে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ দেন। একজন সত্য সন্ধানী লোকের জন্য যেসব মাধ্যম সত্যপথ লাভের ব্যাপারে সহায়ক হয়, একজন অসত্য ও ভ্রান্ত পথ প্রত্যাশী ব্যক্তির জন্য সেগুলো বিভ্রান্তি ও গোমরাহীর কারণ হয়।
কোন মূর্তি বা দেবতা মানুষকে সৎপথ দেখাতে পারে না :
قُلْ هَلْ مِنْ شُرَكَآئِكُمْ مَّنْ يَّهْدِيْۤ اِلَى الْحَقِّ قُلِ اللهُ يَهْدِيْ لِلْحَقِّؕ اَفَمَنْ يَّهْدِيْۤ اِلَى الْحَقِّؕ اَحَقُّ اَنْ يُّتَّبَعَ اَمَّنْ لَّا يَهِدِّيْۤ اِلَّاۤ اَنْ يُّهْدٰىۚ فَمَا لَكُمْ كَيْفَ تَحْكُمُوْنَ
বলো, তোমরা যাদেরকে শরীক কর তাদের মধ্যে কি এমন কেউ আছে, যে সৎপথ প্রদর্শন করে? বলো, আল্লাহই সৎপথ প্রদর্শন করেন। আর যিনি সৎপথ প্রদর্শন করেন তিনিই তো আনুগত্যের অধিক হকদার, নাকি ঐ ব্যক্তি (বেশি হকদার) যাকে পথ না দেখালে কোন পথ দেখতে পায় না? তোমাদের কী হয়েছে? তোমরা কীভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাক? (সূরা ইউনুস- ৩৫)
অনেকে বিপথগামী হয়েও নিজেকে সৎপন্থী মনে করে :
اِنَّهُمُ اتَّخَذُوا الشَّيَاطِيْنَ اَوْلِيَآءَ مِنْ دُوْنِ اللهِ وَيَحْسَبُوْنَ اَنَّهُمْ مُّهْتَدُوْنَ
তারা আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানদেরকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে; তবুও তারা মনে করে যে, তারাই সৎপথপ্রাপ্ত। (সূরা আ‘রাফ- ৩০)
বিপদে ধৈর্যধারণ করা :
اَلَّذِيْنَ اِذَاۤ اَصَابَتْهُمْ مُّصِيْبَةٌ قَالُوْاۤ اِنَّا لِلّٰهِ وَاِنَّاۤ اِلَيْهِ رَاجِعُوْن -‐ اُولٰٓئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِّنْ رَّبِّهِمْ وَرَحْمَةٌؕ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُهْتَدُوْنَ
যাদের উপর কোন বিপদ আসলে তারা বলে, নিশ্চয় আমরা আল্লাহরই জন্য এবং আমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। এদের উপরই তাদের রবের পক্ষ হতে শান্তি ও করুণা বর্ষিত হবে এবং এরাই হেদায়াতপ্রাপ্ত। (সূরা বাক্বারা- ১৫৬, ১৫৭)
শিরকমুক্ত থাকা :
اَلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَلَمْ يَلْبِسُوْاۤ اِيْمَانَهُمْ بِظُلْمٍ اُولٰٓئِكَ لَهُمُ الْاَمْنُ وَهُمْ مُّهْتَدُوْنَ
যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের ঈমানকে যুলুম (শিরক) দ্বারা কলুষিত করেনি, নিরাপত্তা তাদের জন্যই এবং তারাই সৎপথপ্রাপ্ত। (সূরা আন‘আম- ৮২)
মসজিদ আবাদ করা :
اِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللهِ مَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَاَقَامَ الصَّلَاةَ وَاٰتَى الزَّكَاةَ وَلَمْ يَخْشَ اِلَّا اللهَ فَعَسٰۤى اُولٰٓئِكَ اَنْ يَّكُوْنُوْا مِنَ الْمُهْتَدِيْنَ
তারাই আল্লাহর মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করবে, যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান আনয়ন করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় করে না। অতএব আশা করা যায়, তারা সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা তাওবা- ১৮)
তাক্বওয়ার গুণাবলি অর্জন করা :
ذٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ فِيْهِۚ هُدًى لِّلْمُتَّقِيْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ ‐ وَالَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكَ وَمَاۤ اُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَۚ وَبِالْاٰخِرَةِ هُمْ يُوْقِنُوْنَ ‐ اُولٰٓئِكَ عَلٰى هُدًى مِّنْ رَّبِّهِمْۗ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
এটা ঐ গ্রন্থ যার মধ্যে কোনরূপ সন্দেহ নেই; মুত্তাক্বীদের জন্য এটা হেদায়াতস্বরূপ। যারা অদৃশ্য বিষয়গুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে জীবনোপকরণ দান করেছি তা হতে ব্যয় করে। আর যারা তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে এবং তোমার পূর্বে যা অবতীর্ণ করা হয়েছিল তাতে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং পরকালের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখে, তারাই তাদের রবের পক্ষ হতে প্রাপ্ত হেদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে এবং তারাই সফলকাম। (সূরা বাক্বারা, ২-৫)
اَلَّذِيْنَ اِذَاۤ اَصَابَتْهُمْ مُّصِيْبَةٌ قَالُوْاۤ اِنَّا لِلّٰهِ وَاِنَّاۤ اِلَيْهِ رَاجِعُوْن -‐ اُولٰٓئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِّنْ رَّبِّهِمْ وَرَحْمَةٌؕ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُهْتَدُوْنَ
যাদের উপর কোন বিপদ আসলে তারা বলে, নিশ্চয় আমরা আল্লাহরই জন্য এবং আমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। এদের উপরই তাদের রবের পক্ষ হতে শান্তি ও করুণা বর্ষিত হবে এবং এরাই হেদায়াতপ্রাপ্ত। (সূরা বাক্বারা- ১৫৬, ১৫৭)
শিরকমুক্ত থাকা :
اَلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَلَمْ يَلْبِسُوْاۤ اِيْمَانَهُمْ بِظُلْمٍ اُولٰٓئِكَ لَهُمُ الْاَمْنُ وَهُمْ مُّهْتَدُوْنَ
যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের ঈমানকে যুলুম (শিরক) দ্বারা কলুষিত করেনি, নিরাপত্তা তাদের জন্যই এবং তারাই সৎপথপ্রাপ্ত। (সূরা আন‘আম- ৮২)
মসজিদ আবাদ করা :
اِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللهِ مَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَاَقَامَ الصَّلَاةَ وَاٰتَى الزَّكَاةَ وَلَمْ يَخْشَ اِلَّا اللهَ فَعَسٰۤى اُولٰٓئِكَ اَنْ يَّكُوْنُوْا مِنَ الْمُهْتَدِيْنَ
তারাই আল্লাহর মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করবে, যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান আনয়ন করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় করে না। অতএব আশা করা যায়, তারা সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা তাওবা- ১৮)
তাক্বওয়ার গুণাবলি অর্জন করা :
ذٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ فِيْهِۚ هُدًى لِّلْمُتَّقِيْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ ‐ وَالَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكَ وَمَاۤ اُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَۚ وَبِالْاٰخِرَةِ هُمْ يُوْقِنُوْنَ ‐ اُولٰٓئِكَ عَلٰى هُدًى مِّنْ رَّبِّهِمْۗ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
এটা ঐ গ্রন্থ যার মধ্যে কোনরূপ সন্দেহ নেই; মুত্তাক্বীদের জন্য এটা হেদায়াতস্বরূপ। যারা অদৃশ্য বিষয়গুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে জীবনোপকরণ দান করেছি তা হতে ব্যয় করে। আর যারা তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে এবং তোমার পূর্বে যা অবতীর্ণ করা হয়েছিল তাতে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং পরকালের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখে, তারাই তাদের রবের পক্ষ হতে প্রাপ্ত হেদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে এবং তারাই সফলকাম। (সূরা বাক্বারা, ২-৫)
অন্ধভাবে কারো অনুসরণ করা যাবে না :
وَاِذَا قِيْلَ لَهُمُ اتَّبِعُوْا مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ قَالُوْا بَلْ نَتَّبِعُ مَا وَجَدْنَا عَلَيْهِ اٰبَآءَنَا ؕ اَوَلَوْ كَانَ الشَّيْطَانُ يَدْعُوْهُمْ اِلٰى عَذَابِ السَّعِيْرِ
যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তোমরা তার আনুগত্য করো। তখন তারা বলে, বরং আমরা তো তার আনুগত্য করব, যার উপর আমাদের বাপ-দাদাদের পেয়েছি। যদিও শয়তান তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তির দিকে আহবান করতে থাকে তবুও (কি তারা এমনটি করবে)? (সূরা লুক্বমান- ২১)
অন্ধ অনুসরণ ইয়াহুদিদের কাজ :
اِتَّخَذُوْاۤ اَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ اَرْبَابًا مِّنْ دُوْنِ اللهِ وَالْمَسِيْحَ ابْنَ مَرْيَمَ
তারা আল্লাহ ব্যতীত তাদের আলিম ও সংসারবিরাগীদেরকে প্রভু হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং মারইয়ামের পুত্র মাসীহকেও। (সূরা তাওবা- ৩১)
অন্ধভাবে বাপ-দাদার নীতি অনুসরণ করা ঠিক নয় :
وَاِذَا قِيْلَ لَهُمُ اتَّبِعُوْا مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ قَالُوْا بَلْ نَتَّبِعُ مَاۤ اَلْفَيْنَا عَلَيْهِ اٰبَآءَنَا ؕ اَوَلَوْ كَانَ اٰبَآؤُهُمْ لَا يَعْقِلُوْنَ شَيْئًا وَّلَا يَهْتَدُوْنَ
যখন তাদেরকে বলা হয় যে, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার অনুসরণ করো তখন তারা বলে, বরং আমরা তাঁরই অনুসরণ করব যার উপর আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে পেয়েছি। অথচ (এ ব্যাপারে) তাদের পিতৃপুরুষদের কোন জ্ঞান ছিল না এবং তারা হেদায়াতপ্রাপ্তও ছিল না। (সূরা বাক্বারা- ১৭০)
ওহীর কথা বাদ দিয়ে অপর কারো কথা মানা যাবে না :
اِتَّبِعُوْا مَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكُمْ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَلَا تَتَّبِعُوْا مِنْ دُوْنِهٖۤ اَوْلِيَآءَؕ قَلِيْلًا مَّا تَذَكَّرُوْنَ
তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে তোমাদের নিকট যা অবতীর্ণ হয়েছে তোমরা তার অনুসরণ করো এবং তাঁকে ছাড়া অন্য কোন অভিভাবকের অনুসরণ করো না। তোমরা তো খুব অল্পই উপদেশ গ্রহণ করে থাক। (সূরা আ‘রাফ- ৩)
ব্যাখ্যা : দুনিয়াতে মানুষের জীবন-যাপনের জন্য যে পথনির্দেশনার প্রয়োজন এবং মানুষের সামগ্রিক জীবনধারাকে সঠিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যেসব মূলনীতির প্রয়োজন, সেগুলো আল্লাহ তাঁর রাসূলদের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন। তাই একমাত্র ওহীর অনুসরণ করতে হবে। ওহীর জ্ঞান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে অন্য কোন উৎস থেকে হেদায়াত তালাশ করা মানুষের একটি মৌলিক ভ্রান্ত কর্মপদ্ধতি। এর পরিণামে মানুষকে সবসময় ধ্বংসের সম্মুখীন হতে হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও তাকে এই একই পরিণামের সম্মুখীন হতে হবে।
অধিকাংশ লোকের পথ নয়, বরং সঠিক পথ খোঁজতে হবে :
وَاِنْ تُطِعْ اَكْثَرَ مَنْ فِى الْاَرْضِ يُضِلُّوْكَ عَنْ سَبِيْلِ اللهِؕ اِنْ يَّتَّبِعُوْنَ اِلَّا الظَّنَّ وَاِنْ هُمْ اِلَّا يَخْرُصُوْنَ ‐ اِنَّ رَبَّكَ هُوَ اَعْلَمُ مَنْ يَّضِلُّ عَنْ سَبِيْلِهٖۚ وَهُوَ اَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِيْنَ
(হে নবী) যদি তুমি দুনিয়ার অধিকাংশ লোকের কথামতো চল, তবে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত করে দেবে। কেননা এরা নিছক অনুমানের উপর ভিত্তি করে চলে এবং (অধিকাংশ ব্যাপারে) মিথ্যা ছাড়া অন্য কিছুই বলে না। আর তোমার প্রতিপালক (এ কথা) ভালো করেই জানেন যে, কে তাঁর পথ ছেড়ে বিপথগামী হচ্ছে? তাছাড়া তিনি হেদায়াতপ্রাপ্তদের সম্পর্কেও সবিশেষ অবহিত। (সূরা আন‘আম- ১১৭, ১১৮)
ব্যাখ্যা : দুনিয়ার অধিকাংশ লোক নির্ভুল জ্ঞানের পরিবর্তে অনুমানের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তাদের আকীদা-বিশ্বাস, দর্শন, চিন্তাধারা ও জীবন-যাপনের মূলনীতি সবকিছুই ধারণা ও অনুমানের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। কাজেই দুনিয়ার বেশির ভাগ লোক কোন পথে যাচ্ছে, কোন সত্য সন্ধানীর পক্ষে এটা দেখা উচিত নয়; বরং আল্লাহ যে পথটি দেখিয়ে দিয়েছেন সে পথেই এগিয়ে চলা উচিত। এ পথে চলতে গিয়ে দুনিয়ায় যদি সে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ে, তাহলেও তাকে একাকী সে পথেই চলতে হবে।
وَاِذَا قِيْلَ لَهُمُ اتَّبِعُوْا مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ قَالُوْا بَلْ نَتَّبِعُ مَا وَجَدْنَا عَلَيْهِ اٰبَآءَنَا ؕ اَوَلَوْ كَانَ الشَّيْطَانُ يَدْعُوْهُمْ اِلٰى عَذَابِ السَّعِيْرِ
যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তোমরা তার আনুগত্য করো। তখন তারা বলে, বরং আমরা তো তার আনুগত্য করব, যার উপর আমাদের বাপ-দাদাদের পেয়েছি। যদিও শয়তান তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তির দিকে আহবান করতে থাকে তবুও (কি তারা এমনটি করবে)? (সূরা লুক্বমান- ২১)
অন্ধ অনুসরণ ইয়াহুদিদের কাজ :
اِتَّخَذُوْاۤ اَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ اَرْبَابًا مِّنْ دُوْنِ اللهِ وَالْمَسِيْحَ ابْنَ مَرْيَمَ
তারা আল্লাহ ব্যতীত তাদের আলিম ও সংসারবিরাগীদেরকে প্রভু হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং মারইয়ামের পুত্র মাসীহকেও। (সূরা তাওবা- ৩১)
অন্ধভাবে বাপ-দাদার নীতি অনুসরণ করা ঠিক নয় :
وَاِذَا قِيْلَ لَهُمُ اتَّبِعُوْا مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ قَالُوْا بَلْ نَتَّبِعُ مَاۤ اَلْفَيْنَا عَلَيْهِ اٰبَآءَنَا ؕ اَوَلَوْ كَانَ اٰبَآؤُهُمْ لَا يَعْقِلُوْنَ شَيْئًا وَّلَا يَهْتَدُوْنَ
যখন তাদেরকে বলা হয় যে, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার অনুসরণ করো তখন তারা বলে, বরং আমরা তাঁরই অনুসরণ করব যার উপর আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে পেয়েছি। অথচ (এ ব্যাপারে) তাদের পিতৃপুরুষদের কোন জ্ঞান ছিল না এবং তারা হেদায়াতপ্রাপ্তও ছিল না। (সূরা বাক্বারা- ১৭০)
ওহীর কথা বাদ দিয়ে অপর কারো কথা মানা যাবে না :
اِتَّبِعُوْا مَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكُمْ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَلَا تَتَّبِعُوْا مِنْ دُوْنِهٖۤ اَوْلِيَآءَؕ قَلِيْلًا مَّا تَذَكَّرُوْنَ
তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে তোমাদের নিকট যা অবতীর্ণ হয়েছে তোমরা তার অনুসরণ করো এবং তাঁকে ছাড়া অন্য কোন অভিভাবকের অনুসরণ করো না। তোমরা তো খুব অল্পই উপদেশ গ্রহণ করে থাক। (সূরা আ‘রাফ- ৩)
ব্যাখ্যা : দুনিয়াতে মানুষের জীবন-যাপনের জন্য যে পথনির্দেশনার প্রয়োজন এবং মানুষের সামগ্রিক জীবনধারাকে সঠিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যেসব মূলনীতির প্রয়োজন, সেগুলো আল্লাহ তাঁর রাসূলদের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন। তাই একমাত্র ওহীর অনুসরণ করতে হবে। ওহীর জ্ঞান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে অন্য কোন উৎস থেকে হেদায়াত তালাশ করা মানুষের একটি মৌলিক ভ্রান্ত কর্মপদ্ধতি। এর পরিণামে মানুষকে সবসময় ধ্বংসের সম্মুখীন হতে হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও তাকে এই একই পরিণামের সম্মুখীন হতে হবে।
অধিকাংশ লোকের পথ নয়, বরং সঠিক পথ খোঁজতে হবে :
وَاِنْ تُطِعْ اَكْثَرَ مَنْ فِى الْاَرْضِ يُضِلُّوْكَ عَنْ سَبِيْلِ اللهِؕ اِنْ يَّتَّبِعُوْنَ اِلَّا الظَّنَّ وَاِنْ هُمْ اِلَّا يَخْرُصُوْنَ ‐ اِنَّ رَبَّكَ هُوَ اَعْلَمُ مَنْ يَّضِلُّ عَنْ سَبِيْلِهٖۚ وَهُوَ اَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِيْنَ
(হে নবী) যদি তুমি দুনিয়ার অধিকাংশ লোকের কথামতো চল, তবে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত করে দেবে। কেননা এরা নিছক অনুমানের উপর ভিত্তি করে চলে এবং (অধিকাংশ ব্যাপারে) মিথ্যা ছাড়া অন্য কিছুই বলে না। আর তোমার প্রতিপালক (এ কথা) ভালো করেই জানেন যে, কে তাঁর পথ ছেড়ে বিপথগামী হচ্ছে? তাছাড়া তিনি হেদায়াতপ্রাপ্তদের সম্পর্কেও সবিশেষ অবহিত। (সূরা আন‘আম- ১১৭, ১১৮)
ব্যাখ্যা : দুনিয়ার অধিকাংশ লোক নির্ভুল জ্ঞানের পরিবর্তে অনুমানের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তাদের আকীদা-বিশ্বাস, দর্শন, চিন্তাধারা ও জীবন-যাপনের মূলনীতি সবকিছুই ধারণা ও অনুমানের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। কাজেই দুনিয়ার বেশির ভাগ লোক কোন পথে যাচ্ছে, কোন সত্য সন্ধানীর পক্ষে এটা দেখা উচিত নয়; বরং আল্লাহ যে পথটি দেখিয়ে দিয়েছেন সে পথেই এগিয়ে চলা উচিত। এ পথে চলতে গিয়ে দুনিয়ায় যদি সে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ে, তাহলেও তাকে একাকী সে পথেই চলতে হবে।
আল্লাহ তা‘আলা আলিমগণকে অনেক মর্যাদা দিয়েছেন :
يَرْفَعِ اللهُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مِنْكُمْ وَالَّذِيْنَ اُوْتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ
তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদের মর্যাদা আরো উন্নত করে দেবেন। (সূরা মুজাদালা- ১১)
ব্যাখ্যা : আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল ﷺ বলেছেন, দুনিয়ায় যে ব্যক্তি কোন ঈমানদারের মুসীবত দূর করে দেবে, আল্লাহ তা‘আলা বিচার দিবসে তার থেকে মুসীবত দূর করে দেবেন। যে ব্যক্তি কোন অভাবী ব্যক্তির অভাব দূর করবে, আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার অভাব দূর করে দেবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ-ত্রুটি লুকিয়ে রাখবে আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ-ত্রুটি লুকিয়ে রাখবেন। বান্দা যতক্ষণ পর্যন্ত তার ভাই-এর সহযোগিতায় আত্মনিয়োগ করে আল্লাহ ততক্ষণ তার সহযোগিতা করতে থাকেন। যে লোক জ্ঞানার্জনের জন্য রাস্তায় বের হয়, আল্লাহ এর বিনিময়ে তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন। যখন কোন সম্প্রদায় আল্লাহর গৃহসমূহের কোন একটি গৃহে একত্রিত হয়ে আল্লাহর কিতাব পাঠ করে এবং একে অপরের সাথে মিলে (কুরআন) অধ্যয়নে লিপ্ত থাকে তখন তাদের উপর প্রশান্তি অবতীর্ণ হয়। রহমত তাদেরকে আচ্ছন্ন করে ফেলে এবং ফেরেশতাগণ তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রাখেন। আর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিকটবর্তীদের (ফেরেশতাগণের) সাথে তাদের কথা আলোচনা করেন। আর যাকে তার কৃতকর্ম পেছনে সরিয়ে দেবে, তার বংশমর্যাদা তাকে অগ্রসর করতে পারবে না। (সহীহ মুসলিম, হা/৬৬০৮)
যারা জানে আর যারা জানে না তারা সমান নয় :
قُلْ هَلْ يَسْتَوِى الَّذِيْنَ يَعْلَمُوْنَ وَالَّذِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَؕ اِنَّمَا يَتَذَكَّرُ اُولُوْا الْاَلْبَابِ
বলো, যারা জানে আর যারা জানে না, তারা কি সমান হতে পারে? শুধুমাত্র জ্ঞানবান লোকেরাই তো উপদেশ গ্রহণ করে থাকে। (সূরা যুমার- ৯)
জ্ঞান হলো জীবন, আর মূর্খতা মৃত্যুর সমান :
اَوَمَنْ كَانَ مَيْتًا فَاَحْيَيْنَاهُ وَجَعَلْنَا لَهٗ نُوْرًا يَّمْشِيْ بِهٖ فِى النَّاسِ كَمَنْ مَّثَلُهٗ فِى الظُّلُمَاتِ لَيْسَ بِخَارِجٍ مِّنْهَا
যে ব্যক্তি মৃত ছিল, অতঃপর তাকে আমি জীবিত করেছি এবং তাকে মানুষের মধ্যে চলার জন্য আলো দিয়েছি- সে কি ঐ ব্যক্তির মতো, যে অন্ধকারে রয়েছে এবং সেখান থেকে সে বের হতে পারছে না? (সূরা আন‘আম- ১২২)
যার মধ্যে আল্লাহর ভয় আছে তিনিই প্রকৃত আলিম :
اِنَّمَا يَخْشَى اللهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَآءُ
নিশ্চয় আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই তাঁকে ভয় করে থাকে। (সূরা ফাতির- ২৮)
يَرْفَعِ اللهُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مِنْكُمْ وَالَّذِيْنَ اُوْتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ
তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদের মর্যাদা আরো উন্নত করে দেবেন। (সূরা মুজাদালা- ১১)
ব্যাখ্যা : আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল ﷺ বলেছেন, দুনিয়ায় যে ব্যক্তি কোন ঈমানদারের মুসীবত দূর করে দেবে, আল্লাহ তা‘আলা বিচার দিবসে তার থেকে মুসীবত দূর করে দেবেন। যে ব্যক্তি কোন অভাবী ব্যক্তির অভাব দূর করবে, আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার অভাব দূর করে দেবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ-ত্রুটি লুকিয়ে রাখবে আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ-ত্রুটি লুকিয়ে রাখবেন। বান্দা যতক্ষণ পর্যন্ত তার ভাই-এর সহযোগিতায় আত্মনিয়োগ করে আল্লাহ ততক্ষণ তার সহযোগিতা করতে থাকেন। যে লোক জ্ঞানার্জনের জন্য রাস্তায় বের হয়, আল্লাহ এর বিনিময়ে তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন। যখন কোন সম্প্রদায় আল্লাহর গৃহসমূহের কোন একটি গৃহে একত্রিত হয়ে আল্লাহর কিতাব পাঠ করে এবং একে অপরের সাথে মিলে (কুরআন) অধ্যয়নে লিপ্ত থাকে তখন তাদের উপর প্রশান্তি অবতীর্ণ হয়। রহমত তাদেরকে আচ্ছন্ন করে ফেলে এবং ফেরেশতাগণ তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রাখেন। আর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিকটবর্তীদের (ফেরেশতাগণের) সাথে তাদের কথা আলোচনা করেন। আর যাকে তার কৃতকর্ম পেছনে সরিয়ে দেবে, তার বংশমর্যাদা তাকে অগ্রসর করতে পারবে না। (সহীহ মুসলিম, হা/৬৬০৮)
যারা জানে আর যারা জানে না তারা সমান নয় :
قُلْ هَلْ يَسْتَوِى الَّذِيْنَ يَعْلَمُوْنَ وَالَّذِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَؕ اِنَّمَا يَتَذَكَّرُ اُولُوْا الْاَلْبَابِ
বলো, যারা জানে আর যারা জানে না, তারা কি সমান হতে পারে? শুধুমাত্র জ্ঞানবান লোকেরাই তো উপদেশ গ্রহণ করে থাকে। (সূরা যুমার- ৯)
জ্ঞান হলো জীবন, আর মূর্খতা মৃত্যুর সমান :
اَوَمَنْ كَانَ مَيْتًا فَاَحْيَيْنَاهُ وَجَعَلْنَا لَهٗ نُوْرًا يَّمْشِيْ بِهٖ فِى النَّاسِ كَمَنْ مَّثَلُهٗ فِى الظُّلُمَاتِ لَيْسَ بِخَارِجٍ مِّنْهَا
যে ব্যক্তি মৃত ছিল, অতঃপর তাকে আমি জীবিত করেছি এবং তাকে মানুষের মধ্যে চলার জন্য আলো দিয়েছি- সে কি ঐ ব্যক্তির মতো, যে অন্ধকারে রয়েছে এবং সেখান থেকে সে বের হতে পারছে না? (সূরা আন‘আম- ১২২)
যার মধ্যে আল্লাহর ভয় আছে তিনিই প্রকৃত আলিম :
اِنَّمَا يَخْشَى اللهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَآءُ
নিশ্চয় আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই তাঁকে ভয় করে থাকে। (সূরা ফাতির- ২৮)
দ্বীন বুঝা ও তা প্রচার করা আলিমগণের দায়িত্ব :
فَلَوْلَا نَفَرَ مِنْ كُلِّ فِرْقَةٍ مِّنْهُمْ طَآئِفَةٌ لِّيَتَفَقَّهُوْا فِى الدِّيْنِ وَلِيُنْذِرُوْا قَوْمَهُمْ اِذَا رَجَعُوْاۤ اِلَيْهِمْ لَعَلَّهُمْ يَحْذَرُوْنَ
তাদের প্রত্যেক দল থেকে এমন একটি অংশ কেন বের হয় না, যারা দ্বীন সম্বন্ধে জ্ঞানানুশীলন করত। যখন তারা তাদের সম্প্রদায়ের নিকট ফিরে আসত তখন তাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করত, যাতে করে তারা সতর্ক হয়ে যায়। (সূরা তাওবা- ১২২)
ব্যাখ্যা : প্রত্যেক গ্রাম অথবা গোত্র থেকে কয়েকজন করে লোক বের হতে হবে। তারা দেশ-বিদেশে ভ্রমণ করে জ্ঞান আহরণ করবে। অতঃপর তারা নিজেদের জাতি ও জনবসতির কাছে ফিরে যাবে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে দ্বীনী চেতনা ও জাগরণ সৃষ্টিতে তৎপর হবে। এ আয়াতে যে শিক্ষাব্যবস্থার নির্দেশ দেয়া হয়েছে তার আসল উদ্দেশ্য হলো, লোকদের মধ্যে দ্বীনের জ্ঞান দেয়া এবং তাদেরকে অমুসলিম সুলভ জীবনধারা থেকে রক্ষা করা, খারাপ পরিণামের জন্য সতর্ক করা।
দলিল-প্রমাণের ভিত্তিতে দ্বীন প্রচার করতে হবে :
وَلَا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهٖ عِلْمٌؕ اِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ اُولٰٓئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُوْلًا
যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তার অনুসরণ করো না। নিশ্চয় কর্ণ, চক্ষু ও হৃদয়- তাদের প্রত্যেকটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩৬)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতে আকীদা-বিশ্বাসের ক্ষেত্রে সবধরনের ধারণা, কল্পনা ও কুসংস্কারের মূল উপড়ে ফেলা হয়েছে এবং ঈমানদারদেরকে শুধুমাত্র আল্লাহ ও রাসূল ﷺ প্রদত্ত জ্ঞানের ভিত্তিতে প্রমাণিত বিষয়সমূহ মেনে নেয়ার শিক্ষা দেয়া হয়েছে। লোকেরা নিজেদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে ধারণা ও অনুমানের পরিবর্তে জ্ঞানের অনুসরণ করবে- ইসলামী সমাজে এ ধারাটি ব্যাপকভাবে নৈতিক ব্যবস্থায়, আইনে, রাজনীতিতে, দেশ শাসনে, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও কারিগরী বিদ্যায়, শিক্ষাব্যবস্থায় তথা জীবনের সকল ক্ষেত্রে সুষ্ঠভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। জ্ঞানের পরিবর্তে অনুমানের পেছনে চলার কারণে মানুষের জীবনে যে অসংখ্য ভ্রান্ত মত সৃষ্টি হয়, তা থেকে চিন্তা ও কর্মকে মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। নৈতিকতার ক্ষেত্রে কুধারণা থেকে দূরে থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং অনুমান করে কারো বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। অপরাধ তদন্তের ক্ষেত্রে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, অনুমানের ভিত্তিতে কাউকে গ্রেফতার, মারধর বা জেলে আটক রাখা সম্পূর্ণ অবৈধ।
কুরআন-সুন্নাহর আলোকে মতভেদের মিমাংসা করতে হবে :
فَاِنْ تَنَازَعْتُمْ فِيْ شَيْءٍ فَرُدُّوْهُ اِلَى اللهِ وَالرَّسُوْلِ اِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِؕ ذٰلِكَ خَيْرٌ وَّاَحْسَنُ تَأْوِيْلًا
যদি তোমাদের মধ্যে কোন বিষয়ে মতভেদ ঘটে, তবে তা আল্লাহ ও রাসূলের নিকট উপস্থাপন করো; যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে থাক। আর এটাই উত্তম পন্থা ও পরিণামে উৎকৃষ্টতর। (সূরা নিসা- ৫৯)
মতভেদ মীমাংসা করার জন্য আল্লাহ কিতাব দিয়েছেন :
وَمَاۤ اَنْزَلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ اِلَّا لِتُبَيِّنَ لَهُمُ الَّذِى اخْتَلَفُوْا فِيْهِ وَهُدًى وَّرَحْمَةً لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ
আমি তো তোমার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যারা মতভেদ করে তাদেরকে সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য। আর এটি (অবতীর্ণ করেছি) মুমিনদের জন্য পথনির্দেশ ও রহমতস্বরূপ। (সূরা নাহল- ৬৪)
কুরআন-সুন্নাহর সিদ্ধান্তের উপর নিজস্ব সিদ্ধান্তের অধিকার কারো নেই :
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَّلَا مُؤْمِنَةٍ اِذَا قَضَى اللهُ وَرَسُوْلُهٗۤ اَمْرًا اَنْ يَّكُوْنَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ اَمْرِهِمْؕ وَمَنْ يَّعْصِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُّبِيْنًا
কোন মুমিন পুরুষ কিংবা মুমিন নারীর জন্য এ অবকাশ নেই যে, যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোনকিছুর নির্দেশ দেন, তখন সে বিষয়ে তাদের কোন নিজস্ব সিদ্ধান্তের অধিকার থাকবে। যদি কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করে, তবে সে প্রকাশ্য ভ্রষ্টতায় নিপতিত হয়। (সূরা আহ্যাব- ৩৬)
কোন হালালকে হারাম করা যাবে না :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تُحَرِّمُوْا طَيِّبَاتِ مَاۤ اَحَلَّ اللهُ لَكُمْ وَلَا تَعْتَدُوْاؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِيْنَ
হে মুমিনগণ! আল্লাহ তোমাদের জন্য যেসব পবিত্র বস্তুসমূহকে হালাল করে দিয়েছেন, সেগুলোকে তোমরা হারাম করো না এবং সীমালঙ্ঘন করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা মায়েদা- ৮৭)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতে দু’টি কথা বলা হয়েছে-
(এক) তোমরা নিজেরাই কোন জিনিস হালাল ও হারাম সাব্যস্ত করার অধিকারী হয়ে বসো না। আল্লাহ যা হালাল করেছেন তা হালাল এবং যা হারাম করেছেন তা-ই হারাম।
(দুই) খ্রিস্টান সন্যাসী, হিন্দু যোগী, বৌদ্ধ ভিক্ষু ও ভন্ডদের মতো বৈরাগ্যতা, সংসার বিমুখতা ও দুনিয়ার বৈধ স্বাদ পরিহার করার পদ্ধতি অবলম্বন করো না। ধর্মীয় মানসিকতাসম্পন্ন লোকদের মধ্যে সাধারণভাবে এ প্রবণতা দেখা গেছে যে, শরীর ও প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণ করাকে তারা আধ্যাত্মিক উন্নতির অন্তরায় মনে করে। আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন এক সময় তিন ব্যক্তির একটি দল রাসূল ﷺ এর স্ত্রীদের কাছে তাঁর ইবাদাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য আসেন। অতঃপর তাদেরকে নবী ﷺ এর ইবাদাত সম্পর্কে খবর দেয়া হলে তারা নবী ﷺ এর ইবাদাতের তুলনায় নিজেদের আমলের পরিমাণ খুব কম মনে করল এবং বলল, আমরা নবী ﷺ এর সমকক্ষ হব কী করে? যাঁর আগের ও পরের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। অতঃপর তাদের একজন বলল, আমি আজীবন রাতভর নামায পড়তে থাকব। দ্বিতীয় জন বলল, আমি সারা বছর রোযা রাখব, কখনো বিরতি দেব না। তৃতীয় ব্যক্তি বলল, আমি সর্বদা নারী বিবর্জিত থাকব, কখনো বিয়ে করব না। অতঃপর রাসূল ﷺ তাদের নিকট এসে বললেন, তোমরা কি সেসব ব্যক্তি যারা এমন এমন কথা বলেছ? তিনি আরো বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি আল্লাহর প্রতি তোমাদের চেয়ে বেশি অনুগত এবং তাঁকে তোমাদের চেয়ে বেশি ভয় করি। তা সত্ত্বেও আমি রোযা রাখি আবার বিরতিও দেই। রাত্রে নিদ্রাও যাই এবং মহিলাদেরকে বিয়েও করি। সুতরাং যারা আমার সুন্নাতের প্রতি অনীহা প্রকাশ করবে, তারা আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়। (সহীহ বুখারী, হা/৫০৬৩)
অনেকের ইলিম থাকলেও তারা সত্যকে গ্রহণ করে না :
اَفَتَطْمَعُوْنَ اَنْ يُّؤْمِنُوْا لَكُمْ وَقَدْ كَانَ فَرِيْقٌ مِّنْهُمْ يَسْمَعُوْنَ كَلَامَ اللهِ ثُمَّ يُحَرِّفُوْنَهٗ مِنْ ۢبَعْدِ مَا عَقَلُوْهُ وَهُمْ يَعْلَمُوْنَ
তোমরা কি আশা কর যে, তোমাদের কথায় তারা ঈমান আনবে? অথচ তাদের মধ্যে এমন কতক লোক গত হয়েছে, যারা আল্লাহর কালাম শুনত। অতঃপর তারা তা বুঝার পরও বিকৃত করে ফেলত। (সূরা বাক্বারা- ৭৫)
ব্যাখ্যা : ইসলাম গ্রহণের পূর্বে মদিনার নওমুসলিমরা ইয়াহুদিদের মুখ থেকে শুনেছিলেন যে, দুনিয়ায় আরো একজন নবী আসবেন। যারা তাঁকে সহযোগিতা করবে সারা দুনিয়ায় তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। ইসলাম গ্রহণের পর তারা আশা করছিল, যারা আগে থেকে নবী ও আসমানী কিতাবের অনুসারী তারা নিশ্চয় এ পথে অগ্রগামী হবে এবং তাদের আহবানে সাড়া দেবে। এ প্রত্যাশা নিয়ে মদিনার নওমুসলিমরা তাদের ইয়াহুদি প্রতিবেশীদের কাছে যেত এবং তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিত। অতঃপর তারা এ দাওয়াত গ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে মুনাফিক ও ইসলাম বিরোধিরা এ সুযোগ গ্রহণ করত। তারা এ থেকে এ কথা প্রমাণ করার চেষ্টা করত যে, ব্যাপারটা বেশ সন্দেহজনক ও সংশয়পূর্ণ মনে হচ্ছে, নতুবা মুহাম্মাদ ﷺ যদি সত্যিই নবী হতেন তাহলে আহলে কিতাবদের উলামা, মাশায়েখ ও বুযর্গগণ কি জেনে-বুঝে ঈমান আনতে অস্বীকৃতি জানাত এবং তারা কি অনর্থক এভাবে নিজেদের পরকাল নষ্ট করত? তাই সরলপ্রাণ মুসলিমদেরকে বলা হচ্ছে, তাদের ব্যাপারে তোমরা বেশি কিছু আশা করো না। আল্লাহর যেসব আয়াত শুনে তোমাদের দিল কেঁপে ওঠে, সেগুলোকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতে করতে তাদের কয়েক প্রজন্ম কেটে গেছে। তারা আল্লাহর সত্য দ্বীনকে নিজেদের ইচ্ছা ও চাহিদানুযায়ী বিকৃত করেছে। এ বিকৃত দ্বীনের মাধ্যমেই তারা পরকালীন নাজাত লাভের প্রত্যাশা করে। সত্যের আওয়াজ শুনার সাথে সাথে তারা সেটা গ্রহণ করবে না।
দ্বীনী ইলিম দ্বারা দুনিয়া অর্জনকারীর পরিণাম :
فَخَلَفَ مِنْ ۢبَعْدِهِمْ خَلْفٌ وَّرِثُوا الْكِتَابَ يَأْخُذُوْنَ عَرَضَ هٰذَا الْاَدْنٰى وَيَقُوْلُوْنَ سَيُغْفَرُ لَنَاۚ وَاِنْ يَّأْتِهِمْ عَرَضٌ مِّثْلُهٗ يَأْخُذُوْهُؕ اَلَمْ يُؤْخَذْ عَلَيْهِمْ مِّيثَاقُ الْكِتَابِ اَنْ لَّا يَقُوْلُوْا عَلَى اللهِ اِلَّا الْحَقَّ وَدَرَسُوْا مَا فِيْهِؕ وَالدَّارُ الْاٰخِرَةُ خَيْرٌ لِّلَّذِيْنَ يَتَّقُوْنَؕ اَفَلَا تَعْقِلُوْنَ
অতঃপর অযোগ্য উত্তরাধিকারীরা একের পর এক তাদের স্থলাভিষিক্ত হলো এবং (আল্লাহর) কিতাবেরও উত্তরাধিকারী হলো। তারা এ তুচ্ছ দুনিয়ার সম্পদ করায়ত্ত করত এবং (মূর্খের মতো) বলত, আমাদেরকে ক্ষমা করা হবে। কিন্তু যদি (পরবর্তীতে আবারও অর্জিত সম্পদের) অনুরূপ সম্পদ তাদের নিকট আসত, তবে তারা তাও হস্তগত করে নিত। তাদের নিকট থেকে কি কিতাবের ব্যাপারে এ অঙ্গীকার নেয়া হয়নি যে, তারা আল্লাহ সম্বন্ধে সত্য ছাড়া অন্য কিছুই বলবে না? আর তারা তো সে কিতাব (বহু বার) অধ্যয়ন করেছে। সুতরাং যারা আল্লাহকে ভয় করে তাদের জন্য পরকালীন ঘরবাড়ীই হচ্ছে উত্তম নিবাস; তবুও কি তোমরা (এ বিষয়ে) অনুধাবন করবে না? (সূরা আ‘রাফ- ১৬৯)
ব্যাখ্যা : তারা জানে, এ কাজটি করা গোনাহ; তবুও তারা এ আশায় কাজটি করে যে, কোনভাবে তাদের গোনাহ ÿমা করে দেয়া হবে। কারণ তারা মনে করে, তারা আল্লাহর প্রিয়পাত্র এবং তারা যত কঠিন অপরাধই করুক না কেন তাদের ক্ষমা লাভ অপরিহার্য। এ ভুল ধারণার ফলে কোন গোনাহ করার পর তারা লজ্জিত হয় না এবং তাওবাও করে না। বরং এ একই ধরনের গোনাহ করার সুযোগ এলে তারা আবার তাতে জড়িয়ে পড়ে। অথচ তারা এমন একটি কিতাবের উত্তরাধিকারী ছিল, যা তাদেরকে দুনিয়ার নেতৃত্বের পদে আসীন করতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের হীনমন্যতার ফলে তারা এর সাহায্যে তুচ্ছ পার্থিব সম্পদ আহরণ করার চেয়ে বড় কোন জিনিস অর্জনের ইচ্ছাই করল না। তারা দুনিয়ায় ন্যায়-ইনসাফ, সত্য ও সততার পতাকাবাহী এবং কল্যাণ ও সুকৃতির অগ্রপথিক ও পথপ্রদর্শক হওয়ার পরিবর্তে নিছক দুনিয়াদার হয়েই রইল।
দুনিয়াপূজারী এক আলিমের কাহিনী :
وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَاَ الَّذِيْۤ اٰتَيْنَاهُ اٰيَاتِنَا فَانْسَلَخَ مِنْهَا فَاَتْبَعَهُ الشَّيْطَانُ فَكَانَ مِنَ الْغَاوِيْنَ
তাদেরকে ঐ ব্যক্তির বৃত্তান্ত পড়ে শুনাও, যাকে আমি নিদর্শন দিয়েছিলাম, কিন্তু সে তা বর্জন করে। অতঃপর শয়তান তার পেছনে লাগে এবং সে বিপথগামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। (সূরা আ‘রাফ- ১৭৫)
দুনিয়ায় লোভী হওয়াতে তাকে কুকুরের সাথে তুলনা করা হয়েছে :
وَلَوْ شِئْنَا لَرَفَعْنَاهُ بِهَا وَلٰكِنَّهٗۤ اَخْلَدَ اِلَى الْاَرْضِ وَاتَّبَعَ هَوَاهُۚ فَمَثَلُهٗ كَمَثَلِ الْكَلْبِؕ اِنْ تَحْمِلْ عَلَيْهِ يَلْهَثْ اَوْ تَتْرُكْهُ يَلْهَثْؕ ذٰلِكَ مَثَلُ الْقَوْمِ الَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَاۚ فَاقْصُصِ الْقَصَصَ لَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُوْنَ
আমি ইচ্ছা করলে এর দ্বারা তাকে উচ্চমর্যাদা দান করতে পারতাম, কিন্তু সে দুনিয়ার প্রতি ঝুঁকে পড়ে ও প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। তার অবস্থা কুকুরের ন্যায়, যাদের উপর বোঝা চাপালেও হাঁপাতে থাকে এবং না চাপালেও হাঁপায়। সুতরাং যে সম্প্রদায় আমার নিদর্শনাবলিকে প্রত্যাখ্যান করে, তাদের অবস্থাও এরূপ। অতএব তুমি এ ঘটনা বর্ণনা করে যাও, যেন তারা চিন্তা করে। (সূরা আ‘রাফ- ১৭৬)
ব্যাখ্যা : এখানে যে ব্যক্তির উদাহরণ পেশ করা হয়েছে, সে আল্লাহর কিতাবের জ্ঞানের অধিকারী ছিল। তার উচিত ছিল, ভুল কর্মনীতি থেকে দূরে থাকা এবং সঠিক কর্মনীতি অবলম্বন করা। কিন্তু সে কেবল পার্থিব স্বার্থ ও আরাম-আয়েশের দিকে ঝুঁঁকে পড়ে। প্রবৃত্তির লালসার মুকাবিলা করার পরিবর্তে সে এর সামনে নতজানু হয়ে পড়ে। তার বিবেক যেসব সীমানা রক্ষণাবেক্ষণের দাবী জানিয়ে আসছিল সে সেগুলো লঙ্ঘন করেছিল। তারপর যখন সে নিজের নৈতিক দুর্বলতার কারণে জেনে-বুঝে সত্যকে উপেক্ষা করে এগিয়ে চলল, তখন ওঁৎ পেতে থাকা শয়তান তার পেছনে লেগে গেল এবং অনবরত তাকে এক অধঃপতন থেকে আরেক অধঃপতনের দিকে টেনে নিয়ে যেতে থাকল। এরপর আল্লাহ এ ব্যক্তির অবস্থাকে এমন একটি কুকুরের সাথে তুলনা করেছেন, যার জিভ সবসময় ঝুলে থাকে এবং এ ঝুলন্ত জিভ থেকে অনবরত লালা ঝরতে থাকে। যেভাবে আমরা পার্থিব লালসায় অন্ধ ব্যক্তিকে দুনিয়ার কুকুর বলে থাকি, ঠিক তেমনিভাবে এ বিষয়টিকে এখানে উপমা হিসেবে পেশ করা হয়েছে। কুকুরের স্বভাব হলো, চলাফেরার পথে তার নাক সবসময় মাটি শুঁকতে থাকে, হয়তো কোথাও কোন খাবারের গন্ধ পাওয়া যাবে এ আশায়। তার গায়ে কেউ পাথর ছুঁড়ে মারলেও তার মনে সন্দেহ জাগবে যে, যে জিনিসটি দিয়ে তাকে মারা হয়েছে সেটি হয়তো কোন হাড় বা রুটির টুকরো হবে। পেট পূজারি কুকুর দৌড়ে গিয়ে সেই নিক্ষিপ্ত পাথরটিও কামড়ে ধরে। সে তার পেটের দৃষ্টি দিয়ে সারা দুনিয়াকে দেখে। কোথাও যদি কোন বড় লাশ পড়ে থাকে, তবে সেটি কয়েকটি কুকুরের পেট ভরার জন্য যথেষ্ট হলেও একটি কুকুর তার মধ্য থেকে কেবলমাত্র তার নিজের অংশটি নিয়েই ক্ষান্ত হয় না বরং সম্পূর্ণ লাশটিকে নিজের জন্য আগলে রাখার চেষ্টা করে এবং অন্য কাউকে তার ধারে কাছেও আসতে দেয় না। এ পেটের লালসার পর যদি দ্বিতীয় কোন বস্তু তার উপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে তাহলে সেটি হচ্ছে যৌন লালসা। সারা শরীরের মধ্যে কেবলমাত্র লজ্জাস্থানটিই তার কাছে আকর্ষণীয়। ফলে সে সেটিরই ঘ্রাণ নিতে থাকে এবং সেটিকেই চাটতে থাকে। কাজেই এখানে এ উপমা দেয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে এ কথাটি সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা যে, দুনিয়াদার ব্যক্তি যখন জ্ঞান ও ঈমানের বাঁধন ছিড়ে ফেলে প্রবৃত্তির লালসার কাছে আত্মসমর্পন করে চলতে থাকে, তখন তার অবস্থা পেট ও যৌনাঙ্গ পূজারি কুকুরের মতো হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না।
فَلَوْلَا نَفَرَ مِنْ كُلِّ فِرْقَةٍ مِّنْهُمْ طَآئِفَةٌ لِّيَتَفَقَّهُوْا فِى الدِّيْنِ وَلِيُنْذِرُوْا قَوْمَهُمْ اِذَا رَجَعُوْاۤ اِلَيْهِمْ لَعَلَّهُمْ يَحْذَرُوْنَ
তাদের প্রত্যেক দল থেকে এমন একটি অংশ কেন বের হয় না, যারা দ্বীন সম্বন্ধে জ্ঞানানুশীলন করত। যখন তারা তাদের সম্প্রদায়ের নিকট ফিরে আসত তখন তাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করত, যাতে করে তারা সতর্ক হয়ে যায়। (সূরা তাওবা- ১২২)
ব্যাখ্যা : প্রত্যেক গ্রাম অথবা গোত্র থেকে কয়েকজন করে লোক বের হতে হবে। তারা দেশ-বিদেশে ভ্রমণ করে জ্ঞান আহরণ করবে। অতঃপর তারা নিজেদের জাতি ও জনবসতির কাছে ফিরে যাবে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে দ্বীনী চেতনা ও জাগরণ সৃষ্টিতে তৎপর হবে। এ আয়াতে যে শিক্ষাব্যবস্থার নির্দেশ দেয়া হয়েছে তার আসল উদ্দেশ্য হলো, লোকদের মধ্যে দ্বীনের জ্ঞান দেয়া এবং তাদেরকে অমুসলিম সুলভ জীবনধারা থেকে রক্ষা করা, খারাপ পরিণামের জন্য সতর্ক করা।
দলিল-প্রমাণের ভিত্তিতে দ্বীন প্রচার করতে হবে :
وَلَا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهٖ عِلْمٌؕ اِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ اُولٰٓئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُوْلًا
যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তার অনুসরণ করো না। নিশ্চয় কর্ণ, চক্ষু ও হৃদয়- তাদের প্রত্যেকটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩৬)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতে আকীদা-বিশ্বাসের ক্ষেত্রে সবধরনের ধারণা, কল্পনা ও কুসংস্কারের মূল উপড়ে ফেলা হয়েছে এবং ঈমানদারদেরকে শুধুমাত্র আল্লাহ ও রাসূল ﷺ প্রদত্ত জ্ঞানের ভিত্তিতে প্রমাণিত বিষয়সমূহ মেনে নেয়ার শিক্ষা দেয়া হয়েছে। লোকেরা নিজেদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে ধারণা ও অনুমানের পরিবর্তে জ্ঞানের অনুসরণ করবে- ইসলামী সমাজে এ ধারাটি ব্যাপকভাবে নৈতিক ব্যবস্থায়, আইনে, রাজনীতিতে, দেশ শাসনে, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও কারিগরী বিদ্যায়, শিক্ষাব্যবস্থায় তথা জীবনের সকল ক্ষেত্রে সুষ্ঠভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। জ্ঞানের পরিবর্তে অনুমানের পেছনে চলার কারণে মানুষের জীবনে যে অসংখ্য ভ্রান্ত মত সৃষ্টি হয়, তা থেকে চিন্তা ও কর্মকে মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। নৈতিকতার ক্ষেত্রে কুধারণা থেকে দূরে থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং অনুমান করে কারো বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। অপরাধ তদন্তের ক্ষেত্রে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, অনুমানের ভিত্তিতে কাউকে গ্রেফতার, মারধর বা জেলে আটক রাখা সম্পূর্ণ অবৈধ।
কুরআন-সুন্নাহর আলোকে মতভেদের মিমাংসা করতে হবে :
فَاِنْ تَنَازَعْتُمْ فِيْ شَيْءٍ فَرُدُّوْهُ اِلَى اللهِ وَالرَّسُوْلِ اِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِؕ ذٰلِكَ خَيْرٌ وَّاَحْسَنُ تَأْوِيْلًا
যদি তোমাদের মধ্যে কোন বিষয়ে মতভেদ ঘটে, তবে তা আল্লাহ ও রাসূলের নিকট উপস্থাপন করো; যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে থাক। আর এটাই উত্তম পন্থা ও পরিণামে উৎকৃষ্টতর। (সূরা নিসা- ৫৯)
মতভেদ মীমাংসা করার জন্য আল্লাহ কিতাব দিয়েছেন :
وَمَاۤ اَنْزَلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ اِلَّا لِتُبَيِّنَ لَهُمُ الَّذِى اخْتَلَفُوْا فِيْهِ وَهُدًى وَّرَحْمَةً لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ
আমি তো তোমার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যারা মতভেদ করে তাদেরকে সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য। আর এটি (অবতীর্ণ করেছি) মুমিনদের জন্য পথনির্দেশ ও রহমতস্বরূপ। (সূরা নাহল- ৬৪)
কুরআন-সুন্নাহর সিদ্ধান্তের উপর নিজস্ব সিদ্ধান্তের অধিকার কারো নেই :
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَّلَا مُؤْمِنَةٍ اِذَا قَضَى اللهُ وَرَسُوْلُهٗۤ اَمْرًا اَنْ يَّكُوْنَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ اَمْرِهِمْؕ وَمَنْ يَّعْصِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُّبِيْنًا
কোন মুমিন পুরুষ কিংবা মুমিন নারীর জন্য এ অবকাশ নেই যে, যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোনকিছুর নির্দেশ দেন, তখন সে বিষয়ে তাদের কোন নিজস্ব সিদ্ধান্তের অধিকার থাকবে। যদি কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করে, তবে সে প্রকাশ্য ভ্রষ্টতায় নিপতিত হয়। (সূরা আহ্যাব- ৩৬)
কোন হালালকে হারাম করা যাবে না :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تُحَرِّمُوْا طَيِّبَاتِ مَاۤ اَحَلَّ اللهُ لَكُمْ وَلَا تَعْتَدُوْاؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِيْنَ
হে মুমিনগণ! আল্লাহ তোমাদের জন্য যেসব পবিত্র বস্তুসমূহকে হালাল করে দিয়েছেন, সেগুলোকে তোমরা হারাম করো না এবং সীমালঙ্ঘন করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা মায়েদা- ৮৭)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতে দু’টি কথা বলা হয়েছে-
(এক) তোমরা নিজেরাই কোন জিনিস হালাল ও হারাম সাব্যস্ত করার অধিকারী হয়ে বসো না। আল্লাহ যা হালাল করেছেন তা হালাল এবং যা হারাম করেছেন তা-ই হারাম।
(দুই) খ্রিস্টান সন্যাসী, হিন্দু যোগী, বৌদ্ধ ভিক্ষু ও ভন্ডদের মতো বৈরাগ্যতা, সংসার বিমুখতা ও দুনিয়ার বৈধ স্বাদ পরিহার করার পদ্ধতি অবলম্বন করো না। ধর্মীয় মানসিকতাসম্পন্ন লোকদের মধ্যে সাধারণভাবে এ প্রবণতা দেখা গেছে যে, শরীর ও প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণ করাকে তারা আধ্যাত্মিক উন্নতির অন্তরায় মনে করে। আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন এক সময় তিন ব্যক্তির একটি দল রাসূল ﷺ এর স্ত্রীদের কাছে তাঁর ইবাদাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য আসেন। অতঃপর তাদেরকে নবী ﷺ এর ইবাদাত সম্পর্কে খবর দেয়া হলে তারা নবী ﷺ এর ইবাদাতের তুলনায় নিজেদের আমলের পরিমাণ খুব কম মনে করল এবং বলল, আমরা নবী ﷺ এর সমকক্ষ হব কী করে? যাঁর আগের ও পরের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। অতঃপর তাদের একজন বলল, আমি আজীবন রাতভর নামায পড়তে থাকব। দ্বিতীয় জন বলল, আমি সারা বছর রোযা রাখব, কখনো বিরতি দেব না। তৃতীয় ব্যক্তি বলল, আমি সর্বদা নারী বিবর্জিত থাকব, কখনো বিয়ে করব না। অতঃপর রাসূল ﷺ তাদের নিকট এসে বললেন, তোমরা কি সেসব ব্যক্তি যারা এমন এমন কথা বলেছ? তিনি আরো বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি আল্লাহর প্রতি তোমাদের চেয়ে বেশি অনুগত এবং তাঁকে তোমাদের চেয়ে বেশি ভয় করি। তা সত্ত্বেও আমি রোযা রাখি আবার বিরতিও দেই। রাত্রে নিদ্রাও যাই এবং মহিলাদেরকে বিয়েও করি। সুতরাং যারা আমার সুন্নাতের প্রতি অনীহা প্রকাশ করবে, তারা আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়। (সহীহ বুখারী, হা/৫০৬৩)
অনেকের ইলিম থাকলেও তারা সত্যকে গ্রহণ করে না :
اَفَتَطْمَعُوْنَ اَنْ يُّؤْمِنُوْا لَكُمْ وَقَدْ كَانَ فَرِيْقٌ مِّنْهُمْ يَسْمَعُوْنَ كَلَامَ اللهِ ثُمَّ يُحَرِّفُوْنَهٗ مِنْ ۢبَعْدِ مَا عَقَلُوْهُ وَهُمْ يَعْلَمُوْنَ
তোমরা কি আশা কর যে, তোমাদের কথায় তারা ঈমান আনবে? অথচ তাদের মধ্যে এমন কতক লোক গত হয়েছে, যারা আল্লাহর কালাম শুনত। অতঃপর তারা তা বুঝার পরও বিকৃত করে ফেলত। (সূরা বাক্বারা- ৭৫)
ব্যাখ্যা : ইসলাম গ্রহণের পূর্বে মদিনার নওমুসলিমরা ইয়াহুদিদের মুখ থেকে শুনেছিলেন যে, দুনিয়ায় আরো একজন নবী আসবেন। যারা তাঁকে সহযোগিতা করবে সারা দুনিয়ায় তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। ইসলাম গ্রহণের পর তারা আশা করছিল, যারা আগে থেকে নবী ও আসমানী কিতাবের অনুসারী তারা নিশ্চয় এ পথে অগ্রগামী হবে এবং তাদের আহবানে সাড়া দেবে। এ প্রত্যাশা নিয়ে মদিনার নওমুসলিমরা তাদের ইয়াহুদি প্রতিবেশীদের কাছে যেত এবং তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিত। অতঃপর তারা এ দাওয়াত গ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে মুনাফিক ও ইসলাম বিরোধিরা এ সুযোগ গ্রহণ করত। তারা এ থেকে এ কথা প্রমাণ করার চেষ্টা করত যে, ব্যাপারটা বেশ সন্দেহজনক ও সংশয়পূর্ণ মনে হচ্ছে, নতুবা মুহাম্মাদ ﷺ যদি সত্যিই নবী হতেন তাহলে আহলে কিতাবদের উলামা, মাশায়েখ ও বুযর্গগণ কি জেনে-বুঝে ঈমান আনতে অস্বীকৃতি জানাত এবং তারা কি অনর্থক এভাবে নিজেদের পরকাল নষ্ট করত? তাই সরলপ্রাণ মুসলিমদেরকে বলা হচ্ছে, তাদের ব্যাপারে তোমরা বেশি কিছু আশা করো না। আল্লাহর যেসব আয়াত শুনে তোমাদের দিল কেঁপে ওঠে, সেগুলোকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতে করতে তাদের কয়েক প্রজন্ম কেটে গেছে। তারা আল্লাহর সত্য দ্বীনকে নিজেদের ইচ্ছা ও চাহিদানুযায়ী বিকৃত করেছে। এ বিকৃত দ্বীনের মাধ্যমেই তারা পরকালীন নাজাত লাভের প্রত্যাশা করে। সত্যের আওয়াজ শুনার সাথে সাথে তারা সেটা গ্রহণ করবে না।
দ্বীনী ইলিম দ্বারা দুনিয়া অর্জনকারীর পরিণাম :
فَخَلَفَ مِنْ ۢبَعْدِهِمْ خَلْفٌ وَّرِثُوا الْكِتَابَ يَأْخُذُوْنَ عَرَضَ هٰذَا الْاَدْنٰى وَيَقُوْلُوْنَ سَيُغْفَرُ لَنَاۚ وَاِنْ يَّأْتِهِمْ عَرَضٌ مِّثْلُهٗ يَأْخُذُوْهُؕ اَلَمْ يُؤْخَذْ عَلَيْهِمْ مِّيثَاقُ الْكِتَابِ اَنْ لَّا يَقُوْلُوْا عَلَى اللهِ اِلَّا الْحَقَّ وَدَرَسُوْا مَا فِيْهِؕ وَالدَّارُ الْاٰخِرَةُ خَيْرٌ لِّلَّذِيْنَ يَتَّقُوْنَؕ اَفَلَا تَعْقِلُوْنَ
অতঃপর অযোগ্য উত্তরাধিকারীরা একের পর এক তাদের স্থলাভিষিক্ত হলো এবং (আল্লাহর) কিতাবেরও উত্তরাধিকারী হলো। তারা এ তুচ্ছ দুনিয়ার সম্পদ করায়ত্ত করত এবং (মূর্খের মতো) বলত, আমাদেরকে ক্ষমা করা হবে। কিন্তু যদি (পরবর্তীতে আবারও অর্জিত সম্পদের) অনুরূপ সম্পদ তাদের নিকট আসত, তবে তারা তাও হস্তগত করে নিত। তাদের নিকট থেকে কি কিতাবের ব্যাপারে এ অঙ্গীকার নেয়া হয়নি যে, তারা আল্লাহ সম্বন্ধে সত্য ছাড়া অন্য কিছুই বলবে না? আর তারা তো সে কিতাব (বহু বার) অধ্যয়ন করেছে। সুতরাং যারা আল্লাহকে ভয় করে তাদের জন্য পরকালীন ঘরবাড়ীই হচ্ছে উত্তম নিবাস; তবুও কি তোমরা (এ বিষয়ে) অনুধাবন করবে না? (সূরা আ‘রাফ- ১৬৯)
ব্যাখ্যা : তারা জানে, এ কাজটি করা গোনাহ; তবুও তারা এ আশায় কাজটি করে যে, কোনভাবে তাদের গোনাহ ÿমা করে দেয়া হবে। কারণ তারা মনে করে, তারা আল্লাহর প্রিয়পাত্র এবং তারা যত কঠিন অপরাধই করুক না কেন তাদের ক্ষমা লাভ অপরিহার্য। এ ভুল ধারণার ফলে কোন গোনাহ করার পর তারা লজ্জিত হয় না এবং তাওবাও করে না। বরং এ একই ধরনের গোনাহ করার সুযোগ এলে তারা আবার তাতে জড়িয়ে পড়ে। অথচ তারা এমন একটি কিতাবের উত্তরাধিকারী ছিল, যা তাদেরকে দুনিয়ার নেতৃত্বের পদে আসীন করতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের হীনমন্যতার ফলে তারা এর সাহায্যে তুচ্ছ পার্থিব সম্পদ আহরণ করার চেয়ে বড় কোন জিনিস অর্জনের ইচ্ছাই করল না। তারা দুনিয়ায় ন্যায়-ইনসাফ, সত্য ও সততার পতাকাবাহী এবং কল্যাণ ও সুকৃতির অগ্রপথিক ও পথপ্রদর্শক হওয়ার পরিবর্তে নিছক দুনিয়াদার হয়েই রইল।
দুনিয়াপূজারী এক আলিমের কাহিনী :
وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَاَ الَّذِيْۤ اٰتَيْنَاهُ اٰيَاتِنَا فَانْسَلَخَ مِنْهَا فَاَتْبَعَهُ الشَّيْطَانُ فَكَانَ مِنَ الْغَاوِيْنَ
তাদেরকে ঐ ব্যক্তির বৃত্তান্ত পড়ে শুনাও, যাকে আমি নিদর্শন দিয়েছিলাম, কিন্তু সে তা বর্জন করে। অতঃপর শয়তান তার পেছনে লাগে এবং সে বিপথগামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। (সূরা আ‘রাফ- ১৭৫)
দুনিয়ায় লোভী হওয়াতে তাকে কুকুরের সাথে তুলনা করা হয়েছে :
وَلَوْ شِئْنَا لَرَفَعْنَاهُ بِهَا وَلٰكِنَّهٗۤ اَخْلَدَ اِلَى الْاَرْضِ وَاتَّبَعَ هَوَاهُۚ فَمَثَلُهٗ كَمَثَلِ الْكَلْبِؕ اِنْ تَحْمِلْ عَلَيْهِ يَلْهَثْ اَوْ تَتْرُكْهُ يَلْهَثْؕ ذٰلِكَ مَثَلُ الْقَوْمِ الَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَاۚ فَاقْصُصِ الْقَصَصَ لَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُوْنَ
আমি ইচ্ছা করলে এর দ্বারা তাকে উচ্চমর্যাদা দান করতে পারতাম, কিন্তু সে দুনিয়ার প্রতি ঝুঁকে পড়ে ও প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। তার অবস্থা কুকুরের ন্যায়, যাদের উপর বোঝা চাপালেও হাঁপাতে থাকে এবং না চাপালেও হাঁপায়। সুতরাং যে সম্প্রদায় আমার নিদর্শনাবলিকে প্রত্যাখ্যান করে, তাদের অবস্থাও এরূপ। অতএব তুমি এ ঘটনা বর্ণনা করে যাও, যেন তারা চিন্তা করে। (সূরা আ‘রাফ- ১৭৬)
ব্যাখ্যা : এখানে যে ব্যক্তির উদাহরণ পেশ করা হয়েছে, সে আল্লাহর কিতাবের জ্ঞানের অধিকারী ছিল। তার উচিত ছিল, ভুল কর্মনীতি থেকে দূরে থাকা এবং সঠিক কর্মনীতি অবলম্বন করা। কিন্তু সে কেবল পার্থিব স্বার্থ ও আরাম-আয়েশের দিকে ঝুঁঁকে পড়ে। প্রবৃত্তির লালসার মুকাবিলা করার পরিবর্তে সে এর সামনে নতজানু হয়ে পড়ে। তার বিবেক যেসব সীমানা রক্ষণাবেক্ষণের দাবী জানিয়ে আসছিল সে সেগুলো লঙ্ঘন করেছিল। তারপর যখন সে নিজের নৈতিক দুর্বলতার কারণে জেনে-বুঝে সত্যকে উপেক্ষা করে এগিয়ে চলল, তখন ওঁৎ পেতে থাকা শয়তান তার পেছনে লেগে গেল এবং অনবরত তাকে এক অধঃপতন থেকে আরেক অধঃপতনের দিকে টেনে নিয়ে যেতে থাকল। এরপর আল্লাহ এ ব্যক্তির অবস্থাকে এমন একটি কুকুরের সাথে তুলনা করেছেন, যার জিভ সবসময় ঝুলে থাকে এবং এ ঝুলন্ত জিভ থেকে অনবরত লালা ঝরতে থাকে। যেভাবে আমরা পার্থিব লালসায় অন্ধ ব্যক্তিকে দুনিয়ার কুকুর বলে থাকি, ঠিক তেমনিভাবে এ বিষয়টিকে এখানে উপমা হিসেবে পেশ করা হয়েছে। কুকুরের স্বভাব হলো, চলাফেরার পথে তার নাক সবসময় মাটি শুঁকতে থাকে, হয়তো কোথাও কোন খাবারের গন্ধ পাওয়া যাবে এ আশায়। তার গায়ে কেউ পাথর ছুঁড়ে মারলেও তার মনে সন্দেহ জাগবে যে, যে জিনিসটি দিয়ে তাকে মারা হয়েছে সেটি হয়তো কোন হাড় বা রুটির টুকরো হবে। পেট পূজারি কুকুর দৌড়ে গিয়ে সেই নিক্ষিপ্ত পাথরটিও কামড়ে ধরে। সে তার পেটের দৃষ্টি দিয়ে সারা দুনিয়াকে দেখে। কোথাও যদি কোন বড় লাশ পড়ে থাকে, তবে সেটি কয়েকটি কুকুরের পেট ভরার জন্য যথেষ্ট হলেও একটি কুকুর তার মধ্য থেকে কেবলমাত্র তার নিজের অংশটি নিয়েই ক্ষান্ত হয় না বরং সম্পূর্ণ লাশটিকে নিজের জন্য আগলে রাখার চেষ্টা করে এবং অন্য কাউকে তার ধারে কাছেও আসতে দেয় না। এ পেটের লালসার পর যদি দ্বিতীয় কোন বস্তু তার উপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে তাহলে সেটি হচ্ছে যৌন লালসা। সারা শরীরের মধ্যে কেবলমাত্র লজ্জাস্থানটিই তার কাছে আকর্ষণীয়। ফলে সে সেটিরই ঘ্রাণ নিতে থাকে এবং সেটিকেই চাটতে থাকে। কাজেই এখানে এ উপমা দেয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে এ কথাটি সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা যে, দুনিয়াদার ব্যক্তি যখন জ্ঞান ও ঈমানের বাঁধন ছিড়ে ফেলে প্রবৃত্তির লালসার কাছে আত্মসমর্পন করে চলতে থাকে, তখন তার অবস্থা পেট ও যৌনাঙ্গ পূজারি কুকুরের মতো হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না।
আল্লাহর বিধান গোপন রাখলে অভিশাপ পড়বে :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَكْتُمُوْنَ مَاۤ اَنْزَلْنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدٰى مِنْ ۢ بَعْدِ مَا بَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِى الْكِتَابِ اُولٰٓئِكَ يَلْعَنُهُمُ اللهُ وَيَلْعَنُهُمُ اللَّاعِنُوْنَ
আমি যেসব উজ্জ্বল নিদর্শন ও হেদায়াত নাযিল করেছি সেগুলোকে কিতাবের মধ্যে মানুষের নিকট প্রকাশ করার পরও যারা ঐসব বিষয়গুলোকে গোপন করে, আল্লাহ তাদেরকে লানত করেন এবং লানতকারীগণও তাদেরকে লানত করে থাকে। (সূরা বাক্বারা- ১৫৯)
ব্যাখ্যা : ইয়াহুদি আলিমদের বড় অপরাধ ছিল এই যে, তারা আল্লাহর কিতাবের জ্ঞান সর্বসাধারণের মাঝে প্রচার করার পরিবর্তে একটি সীমিত ধর্মীয় পেশাদার গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছিল। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা ইয়াহুদি জনতাকেও এ জ্ঞানের স্পর্শ থেকে দূরে রাখা হয়েছিল। সাধারণত অজ্ঞতার কারণে জনগণ যখন ব্যাপকভাবে ভ্রষ্টতার শিকার হলো, তখন ইয়াহুদি আলিমসমাজ জনগণের চিন্তা ও কর্মের সংস্কার সাধনে নিয়োজিত হয়নি। বরং উল্টো জনগণের মধ্যে নিজেদের জনপ্রিয়তা অব্যাহত রাখার জন্য যে ভ্রষ্টতা ও শরীয়াত বিরোধী কর্ম জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ত তাকে তারা নিজেদের কথা ও কাজের সাহায্যে অথবা নীরব সমর্থনের মাধ্যমে বৈধতার ছাড়পত্র দান করত। ফলে তারা নিজেরা পথভ্রষ্ট হতো এবং অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করত। এ কারণে মুসলিমদেরকে এ ধরনের প্রবণতা ও কর্মনীতি অবলম্বন না করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সমগ্র বিশ্ববাসীকে হেদায়াত করার গুরুদায়িত্ব যে উম্মতের উপর সোপর্দ করা হয়েছে, সে হেদায়াতকে কৃপণের ধনের মতো আগলে না রেখে বেশি করে সম্প্রসারিত করাই হচ্ছে আলিমগণের কর্তব্য।
ওহীর জ্ঞান গোপন রাখা বড় ধরনের যুলুম :
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ كَتَمَ شَهَادَةً عِنْدَهٗ مِنَ اللهِؕ وَمَا اللهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ
যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট হতে প্রাপ্ত সাক্ষ্য গোপন করছে, তার চেয়ে বড় অত্যাচারী আর কে হতে পারে? আর তোমরা যা করছ আল্লাহ তা হতে অমনোযোগী নন। (সূরা বাক্বারা- ১৪০)
আল্লাহ সত্যকে গোপন করতে নিষেধ করেছেন :
وَلَا تَلْبِسُوا الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ وَتَكْتُمُوا الْحَقَّ وَاَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনে বুঝে সত্যকে গোপন করো না। (সূরা বাক্বারা- ৪২)
সত্য গোপন করা ইয়াহুদিদের কাজ :
وَاِنَّ فَرِيْقًا مِّنْهُمْ لَيَكْتُمُوْنَ الْحَقَّ وَهُمْ يَعْلَمُوْنَ
তাদের একদল জেনে বুঝে সত্যকে গোপন করেছে। (সূরা বাক্বারা- ১৪৬)
ব্যাখ্যা : সাধারণ লোকদের মধ্যে যত প্রকার কুসংস্কার প্রচলিত আছে এবং বাতিল রীতিনীতি ও অর্থহীন বিধি-নিষেধের যেসব নতুন নতুন শরীয়াত তৈরি হয়েছে- সেগুলোর জন্য দায়ী হচ্ছে সেই আলিমসমাজ, যাদের কাছে আল্লাহর কিতাবের জ্ঞান ছিল, কিন্তু তারা সাধারণ মানুষের কাছে তা পৌঁছায়নি। তারপর অজ্ঞতার কারণে লোকদের মধ্যে যখন ভুল পদ্ধতির প্রচলন হতে থাকে তখনো তারা মুখ বন্ধ করে বসে থেকেছে এবং আল্লাহর কিতাবের বিধানের উপর আবরণ পড়ে থাকাটাই নিজেদের জন্য লাভজনক বলে মনে করেছে।
সত্য গোপনের জন্য আল্লাহ ইয়াহুদিদেরকে তিরস্কার করেছেন :
يَاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ لِمَ تَلْبِسُوْنَ الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ وَتَكْتُمُوْنَ الْحَقَّ وَاَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
হে আহলে কিতাব! তোমরা কেন সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করছ এবং সত্য গোপন করছ, অথচ তোমরা জান? (সূরা আলে ইমরান- ৭১)
কিতাবের শিক্ষা গোপন না করার জন্য আল্লাহ অঙ্গীকার নিয়েছেন :
وَاِذْ اَخَذَ اللهُ مِيْثَاقَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ لَتُبَيِّنُنَّهٗ لِلنَّاسِ وَلَا تَكْتُمُوْنَهٗ فَنَبَذُوْهُ وَرَآءَ ظُهُوْرِهِمْ وَاشْتَرَوْا بِهٖ ثَمَنًا قَلِيْلًاؕ فَبِئْسَ مَا يَشْتَرُوْنَ
আর যখন আল্লাহ কিতাবধারীদের থেকে এ অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলেন যে, অবশ্যই তোমরা এটা লোকদের মধ্যে প্রকাশ করবে এবং (কোনকিছুই) গোপন করবে না। কিন্তু তারা এটাকে তাদের পশ্চাতে নিক্ষেপ করল এবং অল্প মূল্যে বিক্রি করে দিল; অথচ তারা যা ক্রয় করেছিল তা খুবই নিকৃষ্টতর। (সূরা আলে ইমরান- ১৮৭)
পার্থিব স্বার্থে আল্লাহর বিধান গোপন রাখার ভয়াবহ পরিণতি :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَكْتُمُوْنَ مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ مِنَ الْكِتَابِ وَيَشْتَرُوْنَ بِهٖ ثَمَنًا قَلِيْلًا اُولٰٓئِكَ مَا يَأْكُلُوْنَ فِيْ بُطُوْنِهِمْ اِلَّا النَّارَ وَلَا يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يُزَكِّيْهِمْۚ وَلَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ ‐ اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ اشْتَرَوُا الضَّلَالَةَ بِالْهُدٰى وَالْعَذَابَ بِالْمَغْفِرَةِۚ فَمَاۤ اَصْبَرَهُمْ عَلَى النَّارِ
আল্লাহ কিতাবে যা নাযিল করেছেন যারা তা গোপন করে এবং অল্প মূল্যে বিক্রি করে দেয়, তারা নিজেদের পেটে আগুন ভর্তি করে। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না, তাদেরকে পবিত্রও করবেন না; সুতরাং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। তারাই সুপথের বিনিময়ে গোমরাহী এবং ক্ষমার পরিবর্তে শাস্তি ক্রয় করে নিয়েছে। সুতরাং কীভাবে তারা জাহান্নামের আযাব সহ্য করবে? (সূরা বাক্বারা- ১৭৪, ১৭৫)
اِنَّ الَّذِيْنَ يَكْتُمُوْنَ مَاۤ اَنْزَلْنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدٰى مِنْ ۢ بَعْدِ مَا بَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِى الْكِتَابِ اُولٰٓئِكَ يَلْعَنُهُمُ اللهُ وَيَلْعَنُهُمُ اللَّاعِنُوْنَ
আমি যেসব উজ্জ্বল নিদর্শন ও হেদায়াত নাযিল করেছি সেগুলোকে কিতাবের মধ্যে মানুষের নিকট প্রকাশ করার পরও যারা ঐসব বিষয়গুলোকে গোপন করে, আল্লাহ তাদেরকে লানত করেন এবং লানতকারীগণও তাদেরকে লানত করে থাকে। (সূরা বাক্বারা- ১৫৯)
ব্যাখ্যা : ইয়াহুদি আলিমদের বড় অপরাধ ছিল এই যে, তারা আল্লাহর কিতাবের জ্ঞান সর্বসাধারণের মাঝে প্রচার করার পরিবর্তে একটি সীমিত ধর্মীয় পেশাদার গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছিল। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা ইয়াহুদি জনতাকেও এ জ্ঞানের স্পর্শ থেকে দূরে রাখা হয়েছিল। সাধারণত অজ্ঞতার কারণে জনগণ যখন ব্যাপকভাবে ভ্রষ্টতার শিকার হলো, তখন ইয়াহুদি আলিমসমাজ জনগণের চিন্তা ও কর্মের সংস্কার সাধনে নিয়োজিত হয়নি। বরং উল্টো জনগণের মধ্যে নিজেদের জনপ্রিয়তা অব্যাহত রাখার জন্য যে ভ্রষ্টতা ও শরীয়াত বিরোধী কর্ম জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ত তাকে তারা নিজেদের কথা ও কাজের সাহায্যে অথবা নীরব সমর্থনের মাধ্যমে বৈধতার ছাড়পত্র দান করত। ফলে তারা নিজেরা পথভ্রষ্ট হতো এবং অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করত। এ কারণে মুসলিমদেরকে এ ধরনের প্রবণতা ও কর্মনীতি অবলম্বন না করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সমগ্র বিশ্ববাসীকে হেদায়াত করার গুরুদায়িত্ব যে উম্মতের উপর সোপর্দ করা হয়েছে, সে হেদায়াতকে কৃপণের ধনের মতো আগলে না রেখে বেশি করে সম্প্রসারিত করাই হচ্ছে আলিমগণের কর্তব্য।
ওহীর জ্ঞান গোপন রাখা বড় ধরনের যুলুম :
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ كَتَمَ شَهَادَةً عِنْدَهٗ مِنَ اللهِؕ وَمَا اللهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ
যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট হতে প্রাপ্ত সাক্ষ্য গোপন করছে, তার চেয়ে বড় অত্যাচারী আর কে হতে পারে? আর তোমরা যা করছ আল্লাহ তা হতে অমনোযোগী নন। (সূরা বাক্বারা- ১৪০)
আল্লাহ সত্যকে গোপন করতে নিষেধ করেছেন :
وَلَا تَلْبِسُوا الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ وَتَكْتُمُوا الْحَقَّ وَاَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনে বুঝে সত্যকে গোপন করো না। (সূরা বাক্বারা- ৪২)
সত্য গোপন করা ইয়াহুদিদের কাজ :
وَاِنَّ فَرِيْقًا مِّنْهُمْ لَيَكْتُمُوْنَ الْحَقَّ وَهُمْ يَعْلَمُوْنَ
তাদের একদল জেনে বুঝে সত্যকে গোপন করেছে। (সূরা বাক্বারা- ১৪৬)
ব্যাখ্যা : সাধারণ লোকদের মধ্যে যত প্রকার কুসংস্কার প্রচলিত আছে এবং বাতিল রীতিনীতি ও অর্থহীন বিধি-নিষেধের যেসব নতুন নতুন শরীয়াত তৈরি হয়েছে- সেগুলোর জন্য দায়ী হচ্ছে সেই আলিমসমাজ, যাদের কাছে আল্লাহর কিতাবের জ্ঞান ছিল, কিন্তু তারা সাধারণ মানুষের কাছে তা পৌঁছায়নি। তারপর অজ্ঞতার কারণে লোকদের মধ্যে যখন ভুল পদ্ধতির প্রচলন হতে থাকে তখনো তারা মুখ বন্ধ করে বসে থেকেছে এবং আল্লাহর কিতাবের বিধানের উপর আবরণ পড়ে থাকাটাই নিজেদের জন্য লাভজনক বলে মনে করেছে।
সত্য গোপনের জন্য আল্লাহ ইয়াহুদিদেরকে তিরস্কার করেছেন :
يَاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ لِمَ تَلْبِسُوْنَ الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ وَتَكْتُمُوْنَ الْحَقَّ وَاَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
হে আহলে কিতাব! তোমরা কেন সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করছ এবং সত্য গোপন করছ, অথচ তোমরা জান? (সূরা আলে ইমরান- ৭১)
কিতাবের শিক্ষা গোপন না করার জন্য আল্লাহ অঙ্গীকার নিয়েছেন :
وَاِذْ اَخَذَ اللهُ مِيْثَاقَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ لَتُبَيِّنُنَّهٗ لِلنَّاسِ وَلَا تَكْتُمُوْنَهٗ فَنَبَذُوْهُ وَرَآءَ ظُهُوْرِهِمْ وَاشْتَرَوْا بِهٖ ثَمَنًا قَلِيْلًاؕ فَبِئْسَ مَا يَشْتَرُوْنَ
আর যখন আল্লাহ কিতাবধারীদের থেকে এ অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলেন যে, অবশ্যই তোমরা এটা লোকদের মধ্যে প্রকাশ করবে এবং (কোনকিছুই) গোপন করবে না। কিন্তু তারা এটাকে তাদের পশ্চাতে নিক্ষেপ করল এবং অল্প মূল্যে বিক্রি করে দিল; অথচ তারা যা ক্রয় করেছিল তা খুবই নিকৃষ্টতর। (সূরা আলে ইমরান- ১৮৭)
পার্থিব স্বার্থে আল্লাহর বিধান গোপন রাখার ভয়াবহ পরিণতি :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَكْتُمُوْنَ مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ مِنَ الْكِتَابِ وَيَشْتَرُوْنَ بِهٖ ثَمَنًا قَلِيْلًا اُولٰٓئِكَ مَا يَأْكُلُوْنَ فِيْ بُطُوْنِهِمْ اِلَّا النَّارَ وَلَا يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يُزَكِّيْهِمْۚ وَلَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ ‐ اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ اشْتَرَوُا الضَّلَالَةَ بِالْهُدٰى وَالْعَذَابَ بِالْمَغْفِرَةِۚ فَمَاۤ اَصْبَرَهُمْ عَلَى النَّارِ
আল্লাহ কিতাবে যা নাযিল করেছেন যারা তা গোপন করে এবং অল্প মূল্যে বিক্রি করে দেয়, তারা নিজেদের পেটে আগুন ভর্তি করে। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না, তাদেরকে পবিত্রও করবেন না; সুতরাং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। তারাই সুপথের বিনিময়ে গোমরাহী এবং ক্ষমার পরিবর্তে শাস্তি ক্রয় করে নিয়েছে। সুতরাং কীভাবে তারা জাহান্নামের আযাব সহ্য করবে? (সূরা বাক্বারা- ১৭৪, ১৭৫)
ঈমান ও আমলের ক্ষেত্রে যেমনিভাবে আল্লাহর বিধান রয়েছে, অনুরূপভাবে অর্থ উপার্জন ও ব্যয় এবং ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রেও তাঁর বিধান রয়েছে। অর্থনৈতিক জীবনে যাতে ভারসাম্য ক্ষুণ্ণ না হয় সে জন্য হালাল-হারামের বিধান প্রবর্তন করা হয়েছে। শ্রমিকের মজুরী নিশ্চিত করা হয়েছে। গরীব যেন অনাহারে-অর্ধাহারে মারা না যায় সেজন্য যাকাত, উশর, খারাজ ইত্যাদির বিধান রাখা হয়েছে। এমনিভাবে শোষণমূলক সুদ, জুয়া, লটারী, কালোবাজারী, মজুদদারী ইত্যাদি উপার্জনের পন্থাকে হারাম করা হয়েছে। বস্তুত ইসলামী অর্থব্যবস্থায় কোনরূপ যুলুম, শোষণ, বঞ্চনা ও বৈষম্যের অবকাশ নেই। মদিনার ইসলামী রাষ্ট্রে এর বাস্তব নমুনা প্রত্যক্ষ করা যায়। যে আরবের অধিবাসীরা একদিন বৈষম্য ও দারিদ্রের শিকার ছিল, ইসলামী অর্থনীতির সংস্পর্শে এসে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই তাঁদের আর্থিক ও সামাজিক অবস্থাতে বিরাট পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল।
বর্তমান বিশ্বে যেসব অর্থব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে তার কোনটিতেই মানুষের প্রকৃত মুক্তি ও পূর্ণ সফলতা নেই। বরং সব ক’টিতেই রয়েছে চরম প্রান্তিকতা। মূলত অর্থনৈতিক মুক্তি, উন্নতি এবং মানুষের সার্বিক কল্যাণ আল্লাহর বিধান ও মহানবী ﷺ এর আনীত আদর্শের মধ্যেই বিদ্যমান রয়েছে।
বর্তমান বিশ্বে যেসব অর্থব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে তার কোনটিতেই মানুষের প্রকৃত মুক্তি ও পূর্ণ সফলতা নেই। বরং সব ক’টিতেই রয়েছে চরম প্রান্তিকতা। মূলত অর্থনৈতিক মুক্তি, উন্নতি এবং মানুষের সার্বিক কল্যাণ আল্লাহর বিধান ও মহানবী ﷺ এর আনীত আদর্শের মধ্যেই বিদ্যমান রয়েছে।
সবকিছুর প্রকৃত মালিকানা আল্লাহর হাতে :
لِلّٰهِ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَرْضِ
আকাশমন্ডলী এবং পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর। (সূরা বাক্বারা- ২৮৪)
وَلِلّٰهِ مِيْرَاثُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মালিকানা আল্লাহরই। (সূরা হাদীদ- ১০)
মানুষের কল্যাণের জন্যই আল্লাহ সবকিছু সৃষ্টি করেছেন :
هُوَ الَّذِيْ خَلَقَ لَكُمْ مَّا فِى الْاَرْضِ جَمِيْعًا
তিনি সেই সত্তা, যিনি পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবকিছুই তোমাদের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করেছেন। (সূরা বাক্বারা- ২৯)
সম্পদের আবর্তন হওয়া জরুরি :
كَيْ لَا يَكُوْنَ دُوْلَةً ۢبَيْنَ الْاَغْنِيَآءِ مِنْكُمْ
যাতে করে তোমাদের মধ্যে যারা ধনী কেবল তাদের মধ্যেই সম্পদ আবর্তন না করে। (সূরা হাশর- ৭)
সম্পদ গচ্ছিত রাখা মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয় :
وَيْلٌ لِّكُلِّ هُمَزَةٍ لُّمَزَةٍ ‐ اَلَّذِيْ جَمَعَ مَالًا وَّعَدَّدَهٗ
দুর্ভোগ, প্রত্যেক পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দাকারীর জন্য। যে অর্থ সঞ্চয় করে ও গণনা করে। (সূরা হুমাযাহ- ১, ২)
খরচের ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে :
وَالَّذِيْنَ اِذَاۤ اَنْفَقُوْا لَمْ يُسْرِفُوْا وَلَمْ يَقْتُرُوْا وَكَانَ بَيْنَ ذٰلِكَ قَوَامًا
(মুমিনের একটি গুণ হলো) যখন তারা ব্যয় করে, তখন অপব্যয় করে না এবং কার্পণ্যও করে না; বরং তারা মধ্যম পন্থায় ব্যয় করে। (সূরা ফুরক্বান- ৬৭)
ব্যাখ্যা : ইসলামের দৃষ্টিতে তিনটি জিনিসকে ইসরাফ বা অমিতব্যয়িতা বলা হয়।
(এক) অবৈধ কাজে অর্থ ব্যয় করা, যদিও তা একটি পয়সার সমপরিমাণ হয়।
(দুই) বৈধ কাজে ব্যয় করতে গিয়ে সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া। এক্ষেত্রে সে নিজের সামর্থ্যের চেয়ে বেশি ব্যয় করে অথবা সে যে অর্থসম্পদ লাভ করেছে তা হতে নিজের প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে ব্যয় করে।
(তিন) সৎকাজে ব্যয় করা, যা আল্লাহর জন্য নয় বরং অন্যান্য মানুষকে দেখানোর জন্য। পক্ষান্তরে কার্পণ্য বলে বিবেচিত হয় দু’টি জিনিস। এক, প্রয়োজন পূরণের জন্য নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় না করা। দুই, ভালো ও সৎকাজে ব্যয় না করা। এ দু’টি প্রান্তিকতার মাঝে ইসলামই হচ্ছে ভারসাম্যের সঠিক পথ।
মিতব্যয়ী হতে হবে :
وَلَا تَجْعَلْ يَدَكَ مَغْلُوْلَةً اِلٰى عُنُقِكَ وَلَا تَبْسُطْهَا كُلَّ الْبَسْطِ فَتَقْعُدَ مَلُوْمًا مَّحْسُوْرًا
তুমি তোমার হস্ত তোমার ঘাড়ে আবদ্ধ করে রেখো না এবং তা সম্পূর্ণ প্রসারিতও করো না, তাহলে তুমি তিরস্কৃত ও নিঃস্ব হয়ে পড়বে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ২৯)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ তোমাদেরকে এমন হতে হবে, যাতে কৃপণ হয়ে অর্থের আবর্তন বন্ধ করে না দাও অথবা অপব্যয়ী হয়ে নিজের অর্থনৈতিক শক্তি ধ্বংস করে না ফেল। বরং তোমাদের মধ্যে ভারসাম্যের এমন মানসিকতা থাকতে হবে, যার ফলে তোমরা যথার্থ ব্যয় থেকে বিরত হবে না, আবার অযথা ব্যয়জনিত ক্ষতিরও শিকার হবে না। অহংকার ও লোক দেখানো ব্যয়, বিলাসিতা, ফাসিকী ও অশ্লীল কাজে ব্যয় এবং যে ব্যয় মানুষের ধনসম্পদ প্রকৃত প্রয়োজনে কাজে লাগার পরিবর্তে ভুল পথে ব্যয় হয়- এসবই আল্লাহর নিয়ামত অস্বীকার করার নামান্তর। যারা এভাবে নিজেদের ধনসম্পদ খরচ করে তাদেরকে শয়তানের ভাই বলা হয়েছে।
অপচয় বর্জন করতে হবে :
وَكُلُوْا وَاشْرَبُوْا وَلَا تُسْرِفُوْاۚ اِنَّهٗ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِيْنَ
তোমরা খাও এবং পান করো, কিন্তু অপচয় করো না; নিশ্চয় আল্লাহ অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা আ‘রাফ- ৩১)
কৃপণতা ত্যাগ করতে হবে :
وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِيْنَ يَبْخَلُوْنَ بِمَاۤ اٰتَاهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٖ هُوَ خَيْرًا لَّهُمْؕ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَّهُمْؕ سَيُطَوَّقُوْنَ مَا بَخِلُوْا بِهٖ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
আল্লাহ যাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহ হতে যা কিছু দান করেছেন সে বিষয়ে যারা কার্পণ্য করে তারা যেন এরূপ ধারণা না করে যে, তা তাদের জন্য কল্যাণকর। বরং তা তাদের জন্য ক্ষতিকর, তারা যে বিষয়ে কৃপণতা করেছে পুনরুত্থান দিবসে সেটাই তাদের গলার বেড়ি হবে। (সূরা আলে ইমরান- ১৮০)
দান খয়রাত করতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَنْفِقُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا كَسَبْتُمْ وَمِمَّاۤ اَخْرَجْنَا لَكُمْ مِّنَ الْاَرْضِ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যা উপার্জন করেছ এবং আমি জমিন থেকে যা উৎপন্ন করি তার মধ্য হতে পবিত্র জিনিসসমূহ দান করো। (সূরা বাক্বারা- ২৬৭)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ পৃথিবী ও আকাশের যে জিনিসই যে কেউ ব্যবহার করুক না কেন তা মূলত আল্লাহর মালিকানাধীন। তার উপর সৃষ্টির আধিপত্য ও তাকে ব্যবহার করার অধিকার সাময়িক। প্রত্যেককে অবশ্যই তার দখল ছাড়তে হবে। অবশেষে সবকিছুই আল্লাহর কাছে চলে যাবে। কাজেই এ সাময়িক দখল লাভ করে যে ব্যক্তি আল্লাহর সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে, সে-ই বুদ্ধিমান।
لِلّٰهِ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَرْضِ
আকাশমন্ডলী এবং পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর। (সূরা বাক্বারা- ২৮৪)
وَلِلّٰهِ مِيْرَاثُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মালিকানা আল্লাহরই। (সূরা হাদীদ- ১০)
মানুষের কল্যাণের জন্যই আল্লাহ সবকিছু সৃষ্টি করেছেন :
هُوَ الَّذِيْ خَلَقَ لَكُمْ مَّا فِى الْاَرْضِ جَمِيْعًا
তিনি সেই সত্তা, যিনি পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবকিছুই তোমাদের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করেছেন। (সূরা বাক্বারা- ২৯)
সম্পদের আবর্তন হওয়া জরুরি :
كَيْ لَا يَكُوْنَ دُوْلَةً ۢبَيْنَ الْاَغْنِيَآءِ مِنْكُمْ
যাতে করে তোমাদের মধ্যে যারা ধনী কেবল তাদের মধ্যেই সম্পদ আবর্তন না করে। (সূরা হাশর- ৭)
সম্পদ গচ্ছিত রাখা মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয় :
وَيْلٌ لِّكُلِّ هُمَزَةٍ لُّمَزَةٍ ‐ اَلَّذِيْ جَمَعَ مَالًا وَّعَدَّدَهٗ
দুর্ভোগ, প্রত্যেক পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দাকারীর জন্য। যে অর্থ সঞ্চয় করে ও গণনা করে। (সূরা হুমাযাহ- ১, ২)
খরচের ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে :
وَالَّذِيْنَ اِذَاۤ اَنْفَقُوْا لَمْ يُسْرِفُوْا وَلَمْ يَقْتُرُوْا وَكَانَ بَيْنَ ذٰلِكَ قَوَامًا
(মুমিনের একটি গুণ হলো) যখন তারা ব্যয় করে, তখন অপব্যয় করে না এবং কার্পণ্যও করে না; বরং তারা মধ্যম পন্থায় ব্যয় করে। (সূরা ফুরক্বান- ৬৭)
ব্যাখ্যা : ইসলামের দৃষ্টিতে তিনটি জিনিসকে ইসরাফ বা অমিতব্যয়িতা বলা হয়।
(এক) অবৈধ কাজে অর্থ ব্যয় করা, যদিও তা একটি পয়সার সমপরিমাণ হয়।
(দুই) বৈধ কাজে ব্যয় করতে গিয়ে সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া। এক্ষেত্রে সে নিজের সামর্থ্যের চেয়ে বেশি ব্যয় করে অথবা সে যে অর্থসম্পদ লাভ করেছে তা হতে নিজের প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে ব্যয় করে।
(তিন) সৎকাজে ব্যয় করা, যা আল্লাহর জন্য নয় বরং অন্যান্য মানুষকে দেখানোর জন্য। পক্ষান্তরে কার্পণ্য বলে বিবেচিত হয় দু’টি জিনিস। এক, প্রয়োজন পূরণের জন্য নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় না করা। দুই, ভালো ও সৎকাজে ব্যয় না করা। এ দু’টি প্রান্তিকতার মাঝে ইসলামই হচ্ছে ভারসাম্যের সঠিক পথ।
মিতব্যয়ী হতে হবে :
وَلَا تَجْعَلْ يَدَكَ مَغْلُوْلَةً اِلٰى عُنُقِكَ وَلَا تَبْسُطْهَا كُلَّ الْبَسْطِ فَتَقْعُدَ مَلُوْمًا مَّحْسُوْرًا
তুমি তোমার হস্ত তোমার ঘাড়ে আবদ্ধ করে রেখো না এবং তা সম্পূর্ণ প্রসারিতও করো না, তাহলে তুমি তিরস্কৃত ও নিঃস্ব হয়ে পড়বে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ২৯)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ তোমাদেরকে এমন হতে হবে, যাতে কৃপণ হয়ে অর্থের আবর্তন বন্ধ করে না দাও অথবা অপব্যয়ী হয়ে নিজের অর্থনৈতিক শক্তি ধ্বংস করে না ফেল। বরং তোমাদের মধ্যে ভারসাম্যের এমন মানসিকতা থাকতে হবে, যার ফলে তোমরা যথার্থ ব্যয় থেকে বিরত হবে না, আবার অযথা ব্যয়জনিত ক্ষতিরও শিকার হবে না। অহংকার ও লোক দেখানো ব্যয়, বিলাসিতা, ফাসিকী ও অশ্লীল কাজে ব্যয় এবং যে ব্যয় মানুষের ধনসম্পদ প্রকৃত প্রয়োজনে কাজে লাগার পরিবর্তে ভুল পথে ব্যয় হয়- এসবই আল্লাহর নিয়ামত অস্বীকার করার নামান্তর। যারা এভাবে নিজেদের ধনসম্পদ খরচ করে তাদেরকে শয়তানের ভাই বলা হয়েছে।
অপচয় বর্জন করতে হবে :
وَكُلُوْا وَاشْرَبُوْا وَلَا تُسْرِفُوْاۚ اِنَّهٗ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِيْنَ
তোমরা খাও এবং পান করো, কিন্তু অপচয় করো না; নিশ্চয় আল্লাহ অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা আ‘রাফ- ৩১)
কৃপণতা ত্যাগ করতে হবে :
وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِيْنَ يَبْخَلُوْنَ بِمَاۤ اٰتَاهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٖ هُوَ خَيْرًا لَّهُمْؕ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَّهُمْؕ سَيُطَوَّقُوْنَ مَا بَخِلُوْا بِهٖ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
আল্লাহ যাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহ হতে যা কিছু দান করেছেন সে বিষয়ে যারা কার্পণ্য করে তারা যেন এরূপ ধারণা না করে যে, তা তাদের জন্য কল্যাণকর। বরং তা তাদের জন্য ক্ষতিকর, তারা যে বিষয়ে কৃপণতা করেছে পুনরুত্থান দিবসে সেটাই তাদের গলার বেড়ি হবে। (সূরা আলে ইমরান- ১৮০)
দান খয়রাত করতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَنْفِقُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا كَسَبْتُمْ وَمِمَّاۤ اَخْرَجْنَا لَكُمْ مِّنَ الْاَرْضِ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যা উপার্জন করেছ এবং আমি জমিন থেকে যা উৎপন্ন করি তার মধ্য হতে পবিত্র জিনিসসমূহ দান করো। (সূরা বাক্বারা- ২৬৭)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ পৃথিবী ও আকাশের যে জিনিসই যে কেউ ব্যবহার করুক না কেন তা মূলত আল্লাহর মালিকানাধীন। তার উপর সৃষ্টির আধিপত্য ও তাকে ব্যবহার করার অধিকার সাময়িক। প্রত্যেককে অবশ্যই তার দখল ছাড়তে হবে। অবশেষে সবকিছুই আল্লাহর কাছে চলে যাবে। কাজেই এ সাময়িক দখল লাভ করে যে ব্যক্তি আল্লাহর সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে, সে-ই বুদ্ধিমান।
আল্লাহ জীবিকা অর্জনের জন্য দিন সৃষ্টি করে দিয়েছেন :
وَجَعَلْنَا النَّهَارَ مَعَاشًا
আমি দিবসকে জীবিকা অর্জনের মাধ্যম করেছি। (সূরা নাবা- ১১)
উপার্জনের জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন :
وَتَرَى الْفُلْكَ مَوَاخِرَ فِيْهِ وَلِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِهٖ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
তোমরা দেখতে পাও যে, সমুদ্রের বুক চিরে নৌযান চলাচল করে। এটা এজন্য যে, যাতে করে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা নাহল- ১৪)
সালাত শেষে হালাল রুজী অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন :
فَاِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانْتَشِرُوْا فِى الْاَرْضِ وَابْتَغُوْا مِنْ فَضْلِ اللهِ وَاذْكُرُوا اللهَ كَثِيْرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
অতঃপর যখন সালাত শেষ হয় তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করো। আর তোমরা আল্লাহকে অধিক হারে স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা জুমু‘আ- ১০)
হালাল জিনিস উপভোগ করতে বাধা নেই :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تُحَرِّمُوْا طَيِّبَاتِ مَاۤ اَحَلَّ اللهُ لَكُمْ وَلَا تَعْتَدُوْاؕ اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِيْنَ
হে মুমিনগণ! আল্লাহ তোমাদের জন্য যেসব পবিত্র বস্তু হালাল করে দিয়েছেন, তোমরা সেগুলোকে হারাম করো না এবং সীমালঙ্ঘন করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা মায়েদা- ৮৭)
قُلْ مَنْ حَرَّمَ زِيْنَةَ اللهِ الَّتِيْۤ اَخْرَجَ لِعِبَادِهٖ وَالطَّيِّبَاتِ مِنَ الرِّزْقِؕ قُلْ هِيَ لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا خَالِصَةً يَّوْمَ الْقِيَامَةِ
বলো, আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের জন্য যেসব সৌন্দর্যমন্ডিত বস্তু ও পবিত্র জীবিকা সৃষ্টি করেছেন, কে তা হারাম করেছে? বলো, এগুলো পার্থিব জীবনে (জীবিকাস্বরূপ) মুমিনদের জন্য দেয়া হয়েছে। আর কিয়ামতের দিন (এগুলো) কেবল তাদের জন্যই নির্দিষ্ট। (সূরা আ‘রাফ- ৩২)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ দুনিয়ার সমস্ত শোভা-সৌন্দর্য এবং সমস্ত পাক-পবিত্র জিনিস তাঁর বান্দাদের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। এখন যদি কোন ধর্ম বা নৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থা এগুলোকে হারাম অথবা আত্মিক উন্নতির প্রতিবন্ধক বলে গণ্য করে তাহলে বুঝতে হবে যে, সেটি আল্লাহর পক্ষ থেকে আসেনি। হালাল জীবিকা থেকে বঞ্চিত থাকা আল্লাহর কাছে প্রিয় নয়। বরং তাঁর দেয়া উত্তম পোশাক পরিধান করলে এবং পবিত্র ও হালাল খাবার ভক্ষণ করলেই তিনি বেশি খুশি হন। কেননা এসব নিয়ামত আল্লাহ ভোগ করার জন্যই দিয়েছেন। কিন্তু মানুষ যখন হালালকে হারাম করার বা হারামকে হালাল করার জন্য তাঁর নির্ধারিত সীমারেখা অতিক্রম করে, তখনই তিনি অসন্তুষ্ট হন। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর সৃষ্ট সমস্ত জিনিস দুনিয়া ও আখিরাতে উভয় জগতেই ঈমানদারদের জন্য নির্দিষ্ট। কারণ তারাই আল্লাহর বিশ্বস্ত প্রজা। আর একমাত্র বিশ্বস্ত ও অনুগত লোকেরাই অনুগ্রহ লাভের অধিকারী হতে পারে। কিন্তু দুনিয়ার বর্তমান ব্যবস্থাপনা যেহেতু পরীক্ষা ও অবকাশ দানের নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত, তাই এখানে অধিকাংশ সময় আল্লাহর অনুগ্রহগুলো অকৃতজ্ঞদেরকেও দেয়া হয়। তবে আখিরাতের জীবনের আরাম-আয়েশের সমস্ত উপকরণ একমাত্র কৃতজ্ঞ বান্দাদের জন্যই নির্ধারিত থাকবে, নাফরমানরা সেখানে কিছুই পাবে না।
আল্লাহকে ভয় করে চললে রিযিক বৃদ্ধি পায় :
وَلَوْ اَنَّ اَهْلَ الْقُرٰۤى اٰمَنُوْا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَرَكَاتٍ مِّنَ السَّمَآءِ وَالْاَرْضِ
যদি সকল জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত ও তাক্বওয়া অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের জন্য আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর কল্যাণের দ্বার উন্মুক্ত করে দিতাম। (সূরা আ‘রাফ- ৯৬)
وَمَنْ يَّتَّقِ اللهَ يَجْعَلْ لَّهٗ مَخْرَجًا ‐ وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ
যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার উপায় বের করে দেন এবং তিনি ঐ ব্যক্তিকে এমন দিক হতে রিযিক দান করেন, যা সে কল্পনাও করতে পারে না। (সূরা তালাক্ব- ২, ৩)
আল্লাহ পবিত্র ও হালাল রিযিক খাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন :
فَكُلُوْا مِمَّا رَزَقَكُمُ اللهُ حَلَالًا طَيِّبًا۪ وَاشْكُرُوْا نِعْمَتَ اللهِ اِنْ كُنْتُمْ اِيَّاهُ تَعْبُدُوْنَ
আল্লাহ তোমাদেরকে হালাল ও পবিত্র যা কিছু রিযিক হিসেবে দান করেছেন তোমরা তা হতে আহার করো এবং আল্লাহর অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো, যদি তোমরা কেবল তাঁরই ইবাদাত করে থাক। (সূরা নাহল- ১১৪)
পূর্ববর্তী উম্মতের উপরও এই নির্দেশ ছিল :
يَا بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ قَدْ اَنْجَيْنَاكُمْ مِّنْ عَدُوِّكُمْ وَوَاعَدْنَاكُمْ جَانِبَ الطُّوْرِ الْاَيْمَنَ وَنَزَّلْنَا عَلَيْكُمُ الْمَنَّ وَالسَّلْوٰى ‐ كُلُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ وَلَا تَطْغَوْا فِيْهِ فَيَحِلَّ عَلَيْكُمْ غَضَبِيْۚ وَمَنْ يَّحْلِلْ عَلَيْهِ غَضَبِيْ فَقَدْ هَوٰى
হে বনী ইসরাঈল! আমি তোমাদেরকে শত্রু হতে উদ্ধার করেছিলাম এবং তূর পর্বতের দক্ষিণ পার্শ্বের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। আর তোমাদের নিকট মান্না ও সালওয়া প্রেরণ করেছিলাম; (অতঃপর বলেছিলাম) তোমাদেরকে রিযিক হিসেবে যা দান করেছি তা হতে পবিত্র বস্তুসমূহ আহার করো এবং এ বিষয়ে সীমালঙ্ঘন করো না, নতুবা তোমাদের উপর আমার ক্রোধ অবধারিত হয়ে যাবে। আর যার উপর আমার ক্রোধ অবধারিত হয়, সে ধ্বংস হয়ে যায়। (সূরা ত্বা-হা- ৮০, ৮১)
দান-সাদাকা কবুলের জন্য সম্পদ হালাল হওয়া অপরিহার্য :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَنْفِقُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا كَسَبْتُمْ وَمِمَّاۤ اَخْرَجْنَا لَكُمْ مِّنَ الْاَرْضِ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যা উপার্জন করেছ এবং আমি জমিন থেকে যা উৎপন্ন করি, তার মধ্য হতে পবিত্র বস্তুসমূহ ব্যয় করো। (সূরা বাক্বারা- ২৬৭)
আমল কবুল হওয়ার জন্য পূর্বশর্ত হলো হালাল খাদ্য খাওয়া :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُلُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ وَاشْكُرُوْا لِلّٰهِ اِنْ كُنْتُمْ اِيَّاهُ تَعْبُدُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে জীবিকাস্বরূপ যা দান করেছি, সেসব পবিত্র বস্তুসমূহ হতে খাও এবং আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো, যদি তোমরা তাঁরই ইবাদাত করে থাক। (সূরা বাক্বারা- ১৭২)
يَاۤ اَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوْا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوْا صَالِحًاؕ اِنِّيْ بِمَا تَعْمَلُوْنَ عَلِيْمٌ
হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু হতে আহার করো ও সৎকর্ম করো; নিশ্চয় তোমরা যা কর, সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবহিত। (সূরা মু’মিনূন- ৫১)
ব্যাখ্যা : বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশ ও জাতির মধ্যে আগমনকারী নবীদেরকে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছিল এবং স্থান-কালের ভিন্নতা সত্ত্বেও তাঁদের সকলকে একই হুকুমের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। পবিত্র বস্তু বলতে এমন বস্তুসমূহকে বুঝানো হয়েছে, যা পবিত্র এবং হালাল পথে অর্জিত একজন মুসলিম যেমনিভাবে বৈরাগী ও যোগীদের মতো পবিত্র জীবিকা থেকে নিজেকে বঞ্চিত করতে পারে না, ঠিক তেমনি সে দুনিয়াপূজারী ও ভোগবাদীর মতো হালাল-হারামের পার্থক্য না করে সব জিনিসে মুখও লাগাতে পারে না। সৎকাজ করার আগে পবিত্র ও হালাল জিনিস খাওয়ার নির্দেশের মধ্যে পরিষ্কারভাবে এ ইঙ্গিত রয়েছে যে, হারাম খেয়ে সৎকাজ করার কোন অর্থ হয় না। আল্লাহর কাছে সৎকর্ম কবুল হওয়ার শর্ত হচ্ছে, রিযিক হালাল হওয়া। যেহেতু আল্লাহ নিজে পবিত্র আর তিনি পবিত্র জিনিসই পছন্দ করেন; সেহেতু বস্তুটি হালাল হলেও তা হারাম পথে উপার্জনের কারণে অপবিত্র হওয়ায় তা আল্লাহ তা‘আলা পছন্দ করেন না।
হালাল-হারাম না জেনে খাওয়া কাফিরদের কাজ :
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا يَتَمَتَّعُوْنَ وَيَأْكُلُوْنَ كَمَا تَأْكُلُ الْاَنْعَامُ وَالنَّارُ مَثْوًى لَّهُمْ
আর যারা কুফরী করেছে তারা দুনিয়ায় কিছু দিনের স্বাদ ভোগ করছে ও চতুষ্পদ জন্তুর মতো খাওয়া-দাওয়া করছে। তবে জাহান্নামই হলো তাদের ঠিকানা। (সূরা মুহাম্মাদ- ১২)
ব্যাখ্যা : জীবজন্তু আহার করে অথচ আদৌ চিন্তা করে না যে, এ রিযিক কোথা থেকে এসেছে? কে তা তৈরি করেছে? আর এ রিযিকের সাথে তার উপর রিযিকদাতার কী কী অধিকার বর্তাচ্ছে? ঠিক তেমনি এসব লোকও শুধু খেয়ে যাচ্ছে, এর চেয়ে অধিক আর কোন চিন্তাই তাদের নেই।
অপবিত্র ও হারাম বস্তু খাওয়া শয়তানের কাজ :
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ كُلُوْا مِمَّا فِى الْاَرْضِ حَلَالًا طَيِّبًاؗ وَلَا تَتَّبِعُوْا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِؕ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ
হে মানবজাতি! পৃথিবীর মধ্যে যা হালাল ও পবিত্র তা হতে খাও। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা বাক্বারা- ১৬৮)
وَجَعَلْنَا النَّهَارَ مَعَاشًا
আমি দিবসকে জীবিকা অর্জনের মাধ্যম করেছি। (সূরা নাবা- ১১)
উপার্জনের জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন :
وَتَرَى الْفُلْكَ مَوَاخِرَ فِيْهِ وَلِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِهٖ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
তোমরা দেখতে পাও যে, সমুদ্রের বুক চিরে নৌযান চলাচল করে। এটা এজন্য যে, যাতে করে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা নাহল- ১৪)
সালাত শেষে হালাল রুজী অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন :
فَاِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانْتَشِرُوْا فِى الْاَرْضِ وَابْتَغُوْا مِنْ فَضْلِ اللهِ وَاذْكُرُوا اللهَ كَثِيْرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
অতঃপর যখন সালাত শেষ হয় তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করো। আর তোমরা আল্লাহকে অধিক হারে স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা জুমু‘আ- ১০)
হালাল জিনিস উপভোগ করতে বাধা নেই :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تُحَرِّمُوْا طَيِّبَاتِ مَاۤ اَحَلَّ اللهُ لَكُمْ وَلَا تَعْتَدُوْاؕ اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِيْنَ
হে মুমিনগণ! আল্লাহ তোমাদের জন্য যেসব পবিত্র বস্তু হালাল করে দিয়েছেন, তোমরা সেগুলোকে হারাম করো না এবং সীমালঙ্ঘন করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা মায়েদা- ৮৭)
قُلْ مَنْ حَرَّمَ زِيْنَةَ اللهِ الَّتِيْۤ اَخْرَجَ لِعِبَادِهٖ وَالطَّيِّبَاتِ مِنَ الرِّزْقِؕ قُلْ هِيَ لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا خَالِصَةً يَّوْمَ الْقِيَامَةِ
বলো, আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের জন্য যেসব সৌন্দর্যমন্ডিত বস্তু ও পবিত্র জীবিকা সৃষ্টি করেছেন, কে তা হারাম করেছে? বলো, এগুলো পার্থিব জীবনে (জীবিকাস্বরূপ) মুমিনদের জন্য দেয়া হয়েছে। আর কিয়ামতের দিন (এগুলো) কেবল তাদের জন্যই নির্দিষ্ট। (সূরা আ‘রাফ- ৩২)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ দুনিয়ার সমস্ত শোভা-সৌন্দর্য এবং সমস্ত পাক-পবিত্র জিনিস তাঁর বান্দাদের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। এখন যদি কোন ধর্ম বা নৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থা এগুলোকে হারাম অথবা আত্মিক উন্নতির প্রতিবন্ধক বলে গণ্য করে তাহলে বুঝতে হবে যে, সেটি আল্লাহর পক্ষ থেকে আসেনি। হালাল জীবিকা থেকে বঞ্চিত থাকা আল্লাহর কাছে প্রিয় নয়। বরং তাঁর দেয়া উত্তম পোশাক পরিধান করলে এবং পবিত্র ও হালাল খাবার ভক্ষণ করলেই তিনি বেশি খুশি হন। কেননা এসব নিয়ামত আল্লাহ ভোগ করার জন্যই দিয়েছেন। কিন্তু মানুষ যখন হালালকে হারাম করার বা হারামকে হালাল করার জন্য তাঁর নির্ধারিত সীমারেখা অতিক্রম করে, তখনই তিনি অসন্তুষ্ট হন। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর সৃষ্ট সমস্ত জিনিস দুনিয়া ও আখিরাতে উভয় জগতেই ঈমানদারদের জন্য নির্দিষ্ট। কারণ তারাই আল্লাহর বিশ্বস্ত প্রজা। আর একমাত্র বিশ্বস্ত ও অনুগত লোকেরাই অনুগ্রহ লাভের অধিকারী হতে পারে। কিন্তু দুনিয়ার বর্তমান ব্যবস্থাপনা যেহেতু পরীক্ষা ও অবকাশ দানের নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত, তাই এখানে অধিকাংশ সময় আল্লাহর অনুগ্রহগুলো অকৃতজ্ঞদেরকেও দেয়া হয়। তবে আখিরাতের জীবনের আরাম-আয়েশের সমস্ত উপকরণ একমাত্র কৃতজ্ঞ বান্দাদের জন্যই নির্ধারিত থাকবে, নাফরমানরা সেখানে কিছুই পাবে না।
আল্লাহকে ভয় করে চললে রিযিক বৃদ্ধি পায় :
وَلَوْ اَنَّ اَهْلَ الْقُرٰۤى اٰمَنُوْا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَرَكَاتٍ مِّنَ السَّمَآءِ وَالْاَرْضِ
যদি সকল জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত ও তাক্বওয়া অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের জন্য আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর কল্যাণের দ্বার উন্মুক্ত করে দিতাম। (সূরা আ‘রাফ- ৯৬)
وَمَنْ يَّتَّقِ اللهَ يَجْعَلْ لَّهٗ مَخْرَجًا ‐ وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ
যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার উপায় বের করে দেন এবং তিনি ঐ ব্যক্তিকে এমন দিক হতে রিযিক দান করেন, যা সে কল্পনাও করতে পারে না। (সূরা তালাক্ব- ২, ৩)
আল্লাহ পবিত্র ও হালাল রিযিক খাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন :
فَكُلُوْا مِمَّا رَزَقَكُمُ اللهُ حَلَالًا طَيِّبًا۪ وَاشْكُرُوْا نِعْمَتَ اللهِ اِنْ كُنْتُمْ اِيَّاهُ تَعْبُدُوْنَ
আল্লাহ তোমাদেরকে হালাল ও পবিত্র যা কিছু রিযিক হিসেবে দান করেছেন তোমরা তা হতে আহার করো এবং আল্লাহর অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো, যদি তোমরা কেবল তাঁরই ইবাদাত করে থাক। (সূরা নাহল- ১১৪)
পূর্ববর্তী উম্মতের উপরও এই নির্দেশ ছিল :
يَا بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ قَدْ اَنْجَيْنَاكُمْ مِّنْ عَدُوِّكُمْ وَوَاعَدْنَاكُمْ جَانِبَ الطُّوْرِ الْاَيْمَنَ وَنَزَّلْنَا عَلَيْكُمُ الْمَنَّ وَالسَّلْوٰى ‐ كُلُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ وَلَا تَطْغَوْا فِيْهِ فَيَحِلَّ عَلَيْكُمْ غَضَبِيْۚ وَمَنْ يَّحْلِلْ عَلَيْهِ غَضَبِيْ فَقَدْ هَوٰى
হে বনী ইসরাঈল! আমি তোমাদেরকে শত্রু হতে উদ্ধার করেছিলাম এবং তূর পর্বতের দক্ষিণ পার্শ্বের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। আর তোমাদের নিকট মান্না ও সালওয়া প্রেরণ করেছিলাম; (অতঃপর বলেছিলাম) তোমাদেরকে রিযিক হিসেবে যা দান করেছি তা হতে পবিত্র বস্তুসমূহ আহার করো এবং এ বিষয়ে সীমালঙ্ঘন করো না, নতুবা তোমাদের উপর আমার ক্রোধ অবধারিত হয়ে যাবে। আর যার উপর আমার ক্রোধ অবধারিত হয়, সে ধ্বংস হয়ে যায়। (সূরা ত্বা-হা- ৮০, ৮১)
দান-সাদাকা কবুলের জন্য সম্পদ হালাল হওয়া অপরিহার্য :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَنْفِقُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا كَسَبْتُمْ وَمِمَّاۤ اَخْرَجْنَا لَكُمْ مِّنَ الْاَرْضِ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যা উপার্জন করেছ এবং আমি জমিন থেকে যা উৎপন্ন করি, তার মধ্য হতে পবিত্র বস্তুসমূহ ব্যয় করো। (সূরা বাক্বারা- ২৬৭)
আমল কবুল হওয়ার জন্য পূর্বশর্ত হলো হালাল খাদ্য খাওয়া :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُلُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ وَاشْكُرُوْا لِلّٰهِ اِنْ كُنْتُمْ اِيَّاهُ تَعْبُدُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে জীবিকাস্বরূপ যা দান করেছি, সেসব পবিত্র বস্তুসমূহ হতে খাও এবং আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো, যদি তোমরা তাঁরই ইবাদাত করে থাক। (সূরা বাক্বারা- ১৭২)
يَاۤ اَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوْا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوْا صَالِحًاؕ اِنِّيْ بِمَا تَعْمَلُوْنَ عَلِيْمٌ
হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু হতে আহার করো ও সৎকর্ম করো; নিশ্চয় তোমরা যা কর, সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবহিত। (সূরা মু’মিনূন- ৫১)
ব্যাখ্যা : বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশ ও জাতির মধ্যে আগমনকারী নবীদেরকে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছিল এবং স্থান-কালের ভিন্নতা সত্ত্বেও তাঁদের সকলকে একই হুকুমের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। পবিত্র বস্তু বলতে এমন বস্তুসমূহকে বুঝানো হয়েছে, যা পবিত্র এবং হালাল পথে অর্জিত একজন মুসলিম যেমনিভাবে বৈরাগী ও যোগীদের মতো পবিত্র জীবিকা থেকে নিজেকে বঞ্চিত করতে পারে না, ঠিক তেমনি সে দুনিয়াপূজারী ও ভোগবাদীর মতো হালাল-হারামের পার্থক্য না করে সব জিনিসে মুখও লাগাতে পারে না। সৎকাজ করার আগে পবিত্র ও হালাল জিনিস খাওয়ার নির্দেশের মধ্যে পরিষ্কারভাবে এ ইঙ্গিত রয়েছে যে, হারাম খেয়ে সৎকাজ করার কোন অর্থ হয় না। আল্লাহর কাছে সৎকর্ম কবুল হওয়ার শর্ত হচ্ছে, রিযিক হালাল হওয়া। যেহেতু আল্লাহ নিজে পবিত্র আর তিনি পবিত্র জিনিসই পছন্দ করেন; সেহেতু বস্তুটি হালাল হলেও তা হারাম পথে উপার্জনের কারণে অপবিত্র হওয়ায় তা আল্লাহ তা‘আলা পছন্দ করেন না।
হালাল-হারাম না জেনে খাওয়া কাফিরদের কাজ :
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا يَتَمَتَّعُوْنَ وَيَأْكُلُوْنَ كَمَا تَأْكُلُ الْاَنْعَامُ وَالنَّارُ مَثْوًى لَّهُمْ
আর যারা কুফরী করেছে তারা দুনিয়ায় কিছু দিনের স্বাদ ভোগ করছে ও চতুষ্পদ জন্তুর মতো খাওয়া-দাওয়া করছে। তবে জাহান্নামই হলো তাদের ঠিকানা। (সূরা মুহাম্মাদ- ১২)
ব্যাখ্যা : জীবজন্তু আহার করে অথচ আদৌ চিন্তা করে না যে, এ রিযিক কোথা থেকে এসেছে? কে তা তৈরি করেছে? আর এ রিযিকের সাথে তার উপর রিযিকদাতার কী কী অধিকার বর্তাচ্ছে? ঠিক তেমনি এসব লোকও শুধু খেয়ে যাচ্ছে, এর চেয়ে অধিক আর কোন চিন্তাই তাদের নেই।
অপবিত্র ও হারাম বস্তু খাওয়া শয়তানের কাজ :
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ كُلُوْا مِمَّا فِى الْاَرْضِ حَلَالًا طَيِّبًاؗ وَلَا تَتَّبِعُوْا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِؕ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ
হে মানবজাতি! পৃথিবীর মধ্যে যা হালাল ও পবিত্র তা হতে খাও। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা বাক্বারা- ১৬৮)
হারাম উপায়ে অর্জিত অনেক সম্পদের চেয়ে হালাল অল্পও ভালো :
قُلْ لَّا يَسْتَوِى الْخَبِيْثُ وَالطَّيِّبُ وَلَوْ اَعْجَبَكَ كَثْرَةُ الْخَبِيْثِۚ فَاتَّقُوا اللهَ يَاۤ اُولِى الْاَلْبَابِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
বলো, মন্দ ও ভালো সমান নয়, যদিও মন্দের আধিক্য তোমাকে চমৎকৃত করে। সুতরাং হে জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গ! আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা মায়েদা- ১০০)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতটি মূল্যায়নের এমন একটি মানদন্ড পেশ করে, যা দুনিয়ালোভী মানুষের মানদন্ড থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। তাদের দৃষ্টিতে পাঁচ টাকার তুলনায় একশ টাকার দাম অবশ্যই অনেক বেশি। কিন্তু এ আয়াতটি বলছে, যদি আল্লাহর নাফরমানি করে একশ টাকা লাভ করা হয়, তাহলেও তা নাপাক এবং অপবিত্র। অন্যদিকে আল্লাহর হুকুম পালনের আওতায় যদি পাঁচ টাকা লাভ করা হয়, তাহলেও তা পবিত্র। আর অপবিত্রের পরিমাণ যতবেশিই হোক না কেন তা কোন দিন পবিত্রের সমান হতে পারবে না। আবর্জনার একটি স্তূপের তুলনায় এক ফোঁটা আতরের মর্যাদা অনেক বেশি। কাজেই আপাত দৃষ্টিতে পরিমাণ যত সামান্যই হোক না কেন একজন যথার্থ বুদ্ধিমান ব্যক্তির অবশ্যই হালাল জিনিস নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা উচিত। হারাম বস্তু বাহ্যত যত বিপুল পরিমাণই হোক না কেন সেদিকে কোন অবস্থাতেই হাত বাড়ানো উচিত নয়।
দুনিয়ার জীবিকা দুনিয়াদাররাও পাচ্ছে এবং আখিরাত প্রত্যাশীরাও পাচ্ছে। আখিরাত প্রত্যাশীদেরকে জীবিকা থেকে বঞ্চিত করার ক্ষমতা দুনিয়া পূজারীদের নেই এবং দুনিয়া পূজারীদের কাছে আল্লাহর নিয়ামত পৌঁছার পথে বাধা দেয়ার ক্ষমতা আখিরাত প্রত্যাশীদেরও নেই। তবে আখিরাত প্রত্যাশীরা যে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী তা দুনিয়াতেই সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। এটা এ দৃষ্টিতে নয় যে, তাদের খাবার-দাবার, পোশাক-পরিচ্ছদ, গাড়ি-বাড়ি ও সভ্যতা-সংস্কৃতি দুনিয়া পূজারীদের চেয়ে বেশি দামি। বরং পার্থক্যটা এখানে যে, তারা যা কিছু পায় সততা, বিশ্বস্ততা ও ঈমানদারীর সাথে পায়। আর দুনিয়াদাররা যা কিছু লাভ করে তা যুলুম, নিপীড়ন, ধোঁকা, বেঈমানী এবং হারাম পথ অবলম্বনের মাধ্যমে। আবার আখিরাত প্রত্যাশীরা যা কিছু পায়, তা ভারসাম্যের সাথে খরচ করে। তা থেকে হকদারদের হক আদায় করে, নিজের প্রয়োজন পূর্ণ করে এবং অপরকেও সাহায্য করে। আবার আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে অন্যান্য সৎকাজেও ব্যয় করে। পক্ষান্তরে দুনিয়া পূজারীরা যা কিছু পায় তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিলাসিতা, অন্যায় ও বিপর্যয় সৃষ্টিকারী কাজে ব্যয় করে থাকে। এভাবে সবদিক দিয়েই আখিরাত প্রত্যাশীদের জীবনে আল্লাহভীতি ও নৈতিকতার এমন আদর্শ ফুটে ওঠে, যা তালি দেয়া কাপড়ে এবং খড়ের তৈরি কুঁড়ে ঘরেও ঔজ্জ্বল্য বিকীরণ করে। অপরদিকে এ পদ্ধতি বিদ্ধমান না থাকলে বড় বড় বাদশাহদের জন্যও জনগণের হৃদয়ে কখনো সত্যিকার মর্যাদাবোধ এবং ভালোবাসা জাগে না।
সুদ খাওয়া হারাম :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَأْكُلُوا الرِّبَاۤ اَضْعَافًا مُّضَاعَفَةً۪ وَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা দ্বিগুণের উপর দ্বিগুণ (চক্রবৃদ্ধি হারে) সুদ ভক্ষণ করো না। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যেন তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা আলে ইমরান- ১৩০)
ইয়াতীমের মাল খাওয়া হারাম :
وَاٰتُوا الْيَتَامٰۤى اَمْوَالَهُمْ وَلَا تَتَبَدَّلُوا الْخَبِيْثَ بِالطَّيِّبِ۪ وَلَا تَأْكُلُوْاۤ اَمْوَالَهُمْ اِلٰۤى اَمْوَالِكُمْؕ اِنَّهٗ كَانَ حُوْبًا كَبِيْرًا
ইয়াতীমদেরকে তাদের ধনসম্পদ বুঝিয়ে দাও এবং খারাপ মালের সাথে উত্তম মালের বিনিময় করো না। তোমাদের ধনসম্পদের সাথে তাদের ধনসম্পদও ভোগ করো না, নিশ্চয় এটা কবীরা গোনাহ। (সূরা নিসা- ২)
পতিতাবৃত্তির মাধ্যমে উপার্জন করা হারাম :
وَلَا تُكْرِهُوْا فَتَيَاتِكُمْ عَلَى الْبِغَآءِ اِنْ اَرَدْنَ تَحَصُّنًا لِّتَبْتَغُوْا عَرَضَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَاؕ وَمَنْ يُّكْرِهْهُّنَّ فَاِنَّ اللهَ مِنْ ۢبَعْدِ اِكْرَاهِهِنَّ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
যদি তোমাদের দাসীগণ সতীত্ব রক্ষা করতে চায়, তবে পার্থিব জীবনের ধনসম্পদের লালসায় তাদেরকে ব্যভিচারিণী হতে বাধ্য করো না। এরপরও যদি কেউ তাদেরকে বাধ্য করে, তবে তাদের উপর জবরদস্তির পর আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা নূর- ৩৩)
ব্যাখ্যা : জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে উবাই এর দু’জন বাঁদী ছিল। একজনের নাম ছিল মুসাইকাহ এবং অপরজনের নাম ছিল উমাইমাহ। সে দু’জন বাঁদীকে দিয়ে জোরপূর্বক বেশ্যাবৃত্তি করাত। তাই তারা এ বিষয়ে নবী ﷺ এর নিকট অভিযোগ করল। তখন এ আয়াত নাযিল হয়। (সহীহ মুসলিম, হা/৭৪৪৩)
মদ ও জুয়ার ব্যবসা হারাম :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْاَنْصَابُ وَالْاَزْلَامُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوْهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! নিশ্চয় মদ, জুয়া, মূর্তি ও ভাগ্য নির্ধারক তীর এসব শয়তানের কাজ। অতএব তা বর্জন করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা মায়েদা- ৯০)
ব্যাখ্যা : ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল ﷺ মদের ব্যাপারে বলেছেন, নিশ্চয় যিনি মদ্যপানকে হারাম করেছেন, তিনি মদ ক্রয়-বিক্রয়কেও হারাম করেছেন। (সহীহ মুসলিম, হা/৪১২৮)
গান ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যবসা হারাম :
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّشْتَرِيْ لَهْوَ الْحَدِيْثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ بِغَيْرِ عِلْمٍۗ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًاؕ اُولٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُّهِيْنٌ
মানুষের মধ্যে এমন লোকও আছে, যারা লোকদেরকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার জন্য অজ্ঞতাবশত অমূলক কাহিনী ক্রয় করে নেয় এবং আল্লাহর দেখানো পথকে ঠাট্টা-বিদ্রূপের বস্তু বানিয়ে নেয়। (জেনে রেখো) এদের জন্যই রয়েছে অপমানজনক শাস্তি। (সূরা লুক্বমান- ৬)
চুরি ও ডাকাতির মাল হারাম :
وَالسَّارِقُ وَالسَّارِقَةُ فَاقْطَعُوْاۤ اَيْدِيَهُمَا جَزَآءً ۢبِمَا كَسَبَا نَكَالًا مِّنَ اللهِؕ وَاللهُ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
যে পুরুষ ও নারী চুরি করে তাদের কর্মফলের শাস্তি হিসেবে তাদের হাত কেটে দাও, এটা হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে দন্ড। আল্লাহ মহাপ্রতাপশালী ও মহাবিজ্ঞ। (সূরা মায়েদা- ৩৮)
ধর্মের নামে অনেকে হারাম খায় :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنَّ كَثِيْرًا مِّنَ الْاَحْبَارِ وَالرُّهْبَانِ لَيَأْكُلُوْنَ اَمْوَالَ النَّاسِ بِالْبَاطِلِ
হে মুমিনগণ! পন্ডিত এবং সংসারবিরাগীদের মধ্যে অনেকেই অন্যের ধনসম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করে থাকে। (সূরা তাওবা- ৩৪)
অন্যায়ভাবে মানুষের মাল খাওয়ার জন্য বিচারকের নিকট যাওয়া নিষেধ :
وَلَا تَأْكُلُوْاۤ اَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ وَتُدْلُوْا بِهَاۤ اِلَى الْحُكَّامِ لِتَأْكُلُوْا فَرِيْقًا مِّنْ اَمْوَالِ النَّاسِ بِالْاِثْمِ وَاَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
তোমরা পরস্পরের ধনসম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং তা বিচারকের নিকট এজন্য উপস্থাপন করো না, যাতে তোমরা অন্যায়ভাবে জেনে-বুঝে মানুষের মালের কিছু অংশ খেতে পার। (সূরা বাক্বারা- ১৮৮)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতটির দু’টি অর্থ হতে পারে। একটি অর্থ হচ্ছে, তোমরা শাসকদেরকে ঘুষ দিয়ে অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করো না। আর দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, তোমরা নিজেরাই যখন জান এগুলো অন্যের সম্পদ, তখন তা ভোগ করার আশায় কোন অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে আদালতের কাছে যেয়ো না। কেননা আদালত থেকে ঐ সম্পদের মালিকানা লাভ করার পরও প্রকৃতপক্ষে তুমি তার বৈধ মালিক হতে পারবে না। আল্লাহর কাছে তা তোমার জন্য হারামই থেকে যাবে।
যে ব্যক্তি বিচারককে ধোঁকা দিয়ে নিজের পক্ষে সত্যের বিপরীত ফায়সালা করিয়ে নেয়, সে আসলে নিজেকে এ ভুল ধারণার শিকার করে যে, এ ধরনের কলাকৌশল অবলম্বন করার ফলে সত্য তার পক্ষে এসে গেছে। অথচ প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর দৃষ্টিতে সত্য যার দিকে মূলত তার দিকেই থেকে যায়। এ ক্ষেত্রে প্রতারিত বিচারপতির ফায়সালার কারণে আসল সত্যের উপর কোন প্রভাব পড়ে না।
অন্যায়ভাবে মানুষের মাল খাওয়া হারাম :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَأْكُلُوْاۤ اَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ اِلَّاۤ اَنْ تَكُوْنَ تِجَارَةً عَنْ تَرَاضٍ مِّنْكُمْ وَلَا تَقْتُلُوْاۤ اَنْفُسَكُمْؕ اِنَّ اللهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيْمًا
হে মুমিনগণ! তোমরা একে অপরের ধনসম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না, তবে তোমাদের পরস্পরের সন্তুষ্টিতে ব্যবসা করা বৈধ। আর তোমরা একে অপরকে হত্যা করো না, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। (সূরা নিসা- ২৯)
ব্যাখ্যা : অন্যায়ভাবে বলতে এখানে এমন পদ্ধতির কথা বুঝানো হয়েছে, যা সত্য ও ন্যায়নীতি বিরোধী এবং নৈতিক দিক দিয়েও শরীয়াতের দৃষ্টিতে নাজায়েয। লেনদেন অর্থ হচ্ছে, পরস্পরের মধ্যে স্বার্থ ও মুনাফার বিনিময় করা। যেমন- ব্যবসা, শিল্প ও কারিগরীর ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। সেখানে একজন অন্যজনের প্রয়োজন সরবরাহ করার জন্য পরিশ্রম করে এবং তার বিনিময় দান করে। পারস্পরিক সন্তুষ্টি অর্থ হচ্ছে, কোন অবৈধ চাপ বা ধোঁকা ও প্রতারণার মাধ্যমে লেনদেন হবে না। ঘুষ ও সুদের মধ্যে সাময়িক সন্তুষ্টি থাকলেও মূলত এ সন্তুষ্টির পেছনে থাকে অক্ষমতা। প্রতিপক্ষ নিজের অক্ষমতার কারণে বাধ্য হয়ে চাপের মুখে ঘুষ ও সুদ দিতে রাজী হয়। জুয়ার মধ্যেও বাহ্যিক দৃষ্টিতে সন্তুষ্টিই মনে হয়। কিন্তু আসলে জুয়াতে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক ব্যক্তিই বিজয়ী হওয়ার আশায় অংশগ্রহণ করে। পরাজয়ের উদ্দেশ্য নিয়ে কেউ এতে অংশগ্রহণ করে না। প্রতারণা ও জালিয়াতির কারবারেও বাহ্যত সন্তুষ্টি দেখা যায়, কিন্তু এখানে সন্তুষ্টির পেছনে এ ভুল ধারণা কাজ করে যে, এর মধ্যে প্রতারণা ও জালিয়াতি নেই। দ্বিতীয় পক্ষ যদি জানতে পারে যে, প্রথম পক্ষ তার সাথে প্রতারণা ও জালিয়াতি করছে, তাহলে সে কখনই এতে রাজি হবে না।
قُلْ لَّا يَسْتَوِى الْخَبِيْثُ وَالطَّيِّبُ وَلَوْ اَعْجَبَكَ كَثْرَةُ الْخَبِيْثِۚ فَاتَّقُوا اللهَ يَاۤ اُولِى الْاَلْبَابِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
বলো, মন্দ ও ভালো সমান নয়, যদিও মন্দের আধিক্য তোমাকে চমৎকৃত করে। সুতরাং হে জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গ! আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা মায়েদা- ১০০)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতটি মূল্যায়নের এমন একটি মানদন্ড পেশ করে, যা দুনিয়ালোভী মানুষের মানদন্ড থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। তাদের দৃষ্টিতে পাঁচ টাকার তুলনায় একশ টাকার দাম অবশ্যই অনেক বেশি। কিন্তু এ আয়াতটি বলছে, যদি আল্লাহর নাফরমানি করে একশ টাকা লাভ করা হয়, তাহলেও তা নাপাক এবং অপবিত্র। অন্যদিকে আল্লাহর হুকুম পালনের আওতায় যদি পাঁচ টাকা লাভ করা হয়, তাহলেও তা পবিত্র। আর অপবিত্রের পরিমাণ যতবেশিই হোক না কেন তা কোন দিন পবিত্রের সমান হতে পারবে না। আবর্জনার একটি স্তূপের তুলনায় এক ফোঁটা আতরের মর্যাদা অনেক বেশি। কাজেই আপাত দৃষ্টিতে পরিমাণ যত সামান্যই হোক না কেন একজন যথার্থ বুদ্ধিমান ব্যক্তির অবশ্যই হালাল জিনিস নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা উচিত। হারাম বস্তু বাহ্যত যত বিপুল পরিমাণই হোক না কেন সেদিকে কোন অবস্থাতেই হাত বাড়ানো উচিত নয়।
দুনিয়ার জীবিকা দুনিয়াদাররাও পাচ্ছে এবং আখিরাত প্রত্যাশীরাও পাচ্ছে। আখিরাত প্রত্যাশীদেরকে জীবিকা থেকে বঞ্চিত করার ক্ষমতা দুনিয়া পূজারীদের নেই এবং দুনিয়া পূজারীদের কাছে আল্লাহর নিয়ামত পৌঁছার পথে বাধা দেয়ার ক্ষমতা আখিরাত প্রত্যাশীদেরও নেই। তবে আখিরাত প্রত্যাশীরা যে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী তা দুনিয়াতেই সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। এটা এ দৃষ্টিতে নয় যে, তাদের খাবার-দাবার, পোশাক-পরিচ্ছদ, গাড়ি-বাড়ি ও সভ্যতা-সংস্কৃতি দুনিয়া পূজারীদের চেয়ে বেশি দামি। বরং পার্থক্যটা এখানে যে, তারা যা কিছু পায় সততা, বিশ্বস্ততা ও ঈমানদারীর সাথে পায়। আর দুনিয়াদাররা যা কিছু লাভ করে তা যুলুম, নিপীড়ন, ধোঁকা, বেঈমানী এবং হারাম পথ অবলম্বনের মাধ্যমে। আবার আখিরাত প্রত্যাশীরা যা কিছু পায়, তা ভারসাম্যের সাথে খরচ করে। তা থেকে হকদারদের হক আদায় করে, নিজের প্রয়োজন পূর্ণ করে এবং অপরকেও সাহায্য করে। আবার আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে অন্যান্য সৎকাজেও ব্যয় করে। পক্ষান্তরে দুনিয়া পূজারীরা যা কিছু পায় তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিলাসিতা, অন্যায় ও বিপর্যয় সৃষ্টিকারী কাজে ব্যয় করে থাকে। এভাবে সবদিক দিয়েই আখিরাত প্রত্যাশীদের জীবনে আল্লাহভীতি ও নৈতিকতার এমন আদর্শ ফুটে ওঠে, যা তালি দেয়া কাপড়ে এবং খড়ের তৈরি কুঁড়ে ঘরেও ঔজ্জ্বল্য বিকীরণ করে। অপরদিকে এ পদ্ধতি বিদ্ধমান না থাকলে বড় বড় বাদশাহদের জন্যও জনগণের হৃদয়ে কখনো সত্যিকার মর্যাদাবোধ এবং ভালোবাসা জাগে না।
সুদ খাওয়া হারাম :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَأْكُلُوا الرِّبَاۤ اَضْعَافًا مُّضَاعَفَةً۪ وَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা দ্বিগুণের উপর দ্বিগুণ (চক্রবৃদ্ধি হারে) সুদ ভক্ষণ করো না। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যেন তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা আলে ইমরান- ১৩০)
ইয়াতীমের মাল খাওয়া হারাম :
وَاٰتُوا الْيَتَامٰۤى اَمْوَالَهُمْ وَلَا تَتَبَدَّلُوا الْخَبِيْثَ بِالطَّيِّبِ۪ وَلَا تَأْكُلُوْاۤ اَمْوَالَهُمْ اِلٰۤى اَمْوَالِكُمْؕ اِنَّهٗ كَانَ حُوْبًا كَبِيْرًا
ইয়াতীমদেরকে তাদের ধনসম্পদ বুঝিয়ে দাও এবং খারাপ মালের সাথে উত্তম মালের বিনিময় করো না। তোমাদের ধনসম্পদের সাথে তাদের ধনসম্পদও ভোগ করো না, নিশ্চয় এটা কবীরা গোনাহ। (সূরা নিসা- ২)
পতিতাবৃত্তির মাধ্যমে উপার্জন করা হারাম :
وَلَا تُكْرِهُوْا فَتَيَاتِكُمْ عَلَى الْبِغَآءِ اِنْ اَرَدْنَ تَحَصُّنًا لِّتَبْتَغُوْا عَرَضَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَاؕ وَمَنْ يُّكْرِهْهُّنَّ فَاِنَّ اللهَ مِنْ ۢبَعْدِ اِكْرَاهِهِنَّ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
যদি তোমাদের দাসীগণ সতীত্ব রক্ষা করতে চায়, তবে পার্থিব জীবনের ধনসম্পদের লালসায় তাদেরকে ব্যভিচারিণী হতে বাধ্য করো না। এরপরও যদি কেউ তাদেরকে বাধ্য করে, তবে তাদের উপর জবরদস্তির পর আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা নূর- ৩৩)
ব্যাখ্যা : জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে উবাই এর দু’জন বাঁদী ছিল। একজনের নাম ছিল মুসাইকাহ এবং অপরজনের নাম ছিল উমাইমাহ। সে দু’জন বাঁদীকে দিয়ে জোরপূর্বক বেশ্যাবৃত্তি করাত। তাই তারা এ বিষয়ে নবী ﷺ এর নিকট অভিযোগ করল। তখন এ আয়াত নাযিল হয়। (সহীহ মুসলিম, হা/৭৪৪৩)
মদ ও জুয়ার ব্যবসা হারাম :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْاَنْصَابُ وَالْاَزْلَامُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوْهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! নিশ্চয় মদ, জুয়া, মূর্তি ও ভাগ্য নির্ধারক তীর এসব শয়তানের কাজ। অতএব তা বর্জন করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা মায়েদা- ৯০)
ব্যাখ্যা : ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল ﷺ মদের ব্যাপারে বলেছেন, নিশ্চয় যিনি মদ্যপানকে হারাম করেছেন, তিনি মদ ক্রয়-বিক্রয়কেও হারাম করেছেন। (সহীহ মুসলিম, হা/৪১২৮)
গান ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যবসা হারাম :
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّشْتَرِيْ لَهْوَ الْحَدِيْثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ بِغَيْرِ عِلْمٍۗ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًاؕ اُولٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُّهِيْنٌ
মানুষের মধ্যে এমন লোকও আছে, যারা লোকদেরকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার জন্য অজ্ঞতাবশত অমূলক কাহিনী ক্রয় করে নেয় এবং আল্লাহর দেখানো পথকে ঠাট্টা-বিদ্রূপের বস্তু বানিয়ে নেয়। (জেনে রেখো) এদের জন্যই রয়েছে অপমানজনক শাস্তি। (সূরা লুক্বমান- ৬)
চুরি ও ডাকাতির মাল হারাম :
وَالسَّارِقُ وَالسَّارِقَةُ فَاقْطَعُوْاۤ اَيْدِيَهُمَا جَزَآءً ۢبِمَا كَسَبَا نَكَالًا مِّنَ اللهِؕ وَاللهُ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
যে পুরুষ ও নারী চুরি করে তাদের কর্মফলের শাস্তি হিসেবে তাদের হাত কেটে দাও, এটা হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে দন্ড। আল্লাহ মহাপ্রতাপশালী ও মহাবিজ্ঞ। (সূরা মায়েদা- ৩৮)
ধর্মের নামে অনেকে হারাম খায় :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنَّ كَثِيْرًا مِّنَ الْاَحْبَارِ وَالرُّهْبَانِ لَيَأْكُلُوْنَ اَمْوَالَ النَّاسِ بِالْبَاطِلِ
হে মুমিনগণ! পন্ডিত এবং সংসারবিরাগীদের মধ্যে অনেকেই অন্যের ধনসম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করে থাকে। (সূরা তাওবা- ৩৪)
অন্যায়ভাবে মানুষের মাল খাওয়ার জন্য বিচারকের নিকট যাওয়া নিষেধ :
وَلَا تَأْكُلُوْاۤ اَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ وَتُدْلُوْا بِهَاۤ اِلَى الْحُكَّامِ لِتَأْكُلُوْا فَرِيْقًا مِّنْ اَمْوَالِ النَّاسِ بِالْاِثْمِ وَاَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
তোমরা পরস্পরের ধনসম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং তা বিচারকের নিকট এজন্য উপস্থাপন করো না, যাতে তোমরা অন্যায়ভাবে জেনে-বুঝে মানুষের মালের কিছু অংশ খেতে পার। (সূরা বাক্বারা- ১৮৮)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতটির দু’টি অর্থ হতে পারে। একটি অর্থ হচ্ছে, তোমরা শাসকদেরকে ঘুষ দিয়ে অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করো না। আর দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, তোমরা নিজেরাই যখন জান এগুলো অন্যের সম্পদ, তখন তা ভোগ করার আশায় কোন অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে আদালতের কাছে যেয়ো না। কেননা আদালত থেকে ঐ সম্পদের মালিকানা লাভ করার পরও প্রকৃতপক্ষে তুমি তার বৈধ মালিক হতে পারবে না। আল্লাহর কাছে তা তোমার জন্য হারামই থেকে যাবে।
যে ব্যক্তি বিচারককে ধোঁকা দিয়ে নিজের পক্ষে সত্যের বিপরীত ফায়সালা করিয়ে নেয়, সে আসলে নিজেকে এ ভুল ধারণার শিকার করে যে, এ ধরনের কলাকৌশল অবলম্বন করার ফলে সত্য তার পক্ষে এসে গেছে। অথচ প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর দৃষ্টিতে সত্য যার দিকে মূলত তার দিকেই থেকে যায়। এ ক্ষেত্রে প্রতারিত বিচারপতির ফায়সালার কারণে আসল সত্যের উপর কোন প্রভাব পড়ে না।
অন্যায়ভাবে মানুষের মাল খাওয়া হারাম :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَأْكُلُوْاۤ اَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ اِلَّاۤ اَنْ تَكُوْنَ تِجَارَةً عَنْ تَرَاضٍ مِّنْكُمْ وَلَا تَقْتُلُوْاۤ اَنْفُسَكُمْؕ اِنَّ اللهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيْمًا
হে মুমিনগণ! তোমরা একে অপরের ধনসম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না, তবে তোমাদের পরস্পরের সন্তুষ্টিতে ব্যবসা করা বৈধ। আর তোমরা একে অপরকে হত্যা করো না, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। (সূরা নিসা- ২৯)
ব্যাখ্যা : অন্যায়ভাবে বলতে এখানে এমন পদ্ধতির কথা বুঝানো হয়েছে, যা সত্য ও ন্যায়নীতি বিরোধী এবং নৈতিক দিক দিয়েও শরীয়াতের দৃষ্টিতে নাজায়েয। লেনদেন অর্থ হচ্ছে, পরস্পরের মধ্যে স্বার্থ ও মুনাফার বিনিময় করা। যেমন- ব্যবসা, শিল্প ও কারিগরীর ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। সেখানে একজন অন্যজনের প্রয়োজন সরবরাহ করার জন্য পরিশ্রম করে এবং তার বিনিময় দান করে। পারস্পরিক সন্তুষ্টি অর্থ হচ্ছে, কোন অবৈধ চাপ বা ধোঁকা ও প্রতারণার মাধ্যমে লেনদেন হবে না। ঘুষ ও সুদের মধ্যে সাময়িক সন্তুষ্টি থাকলেও মূলত এ সন্তুষ্টির পেছনে থাকে অক্ষমতা। প্রতিপক্ষ নিজের অক্ষমতার কারণে বাধ্য হয়ে চাপের মুখে ঘুষ ও সুদ দিতে রাজী হয়। জুয়ার মধ্যেও বাহ্যিক দৃষ্টিতে সন্তুষ্টিই মনে হয়। কিন্তু আসলে জুয়াতে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক ব্যক্তিই বিজয়ী হওয়ার আশায় অংশগ্রহণ করে। পরাজয়ের উদ্দেশ্য নিয়ে কেউ এতে অংশগ্রহণ করে না। প্রতারণা ও জালিয়াতির কারবারেও বাহ্যত সন্তুষ্টি দেখা যায়, কিন্তু এখানে সন্তুষ্টির পেছনে এ ভুল ধারণা কাজ করে যে, এর মধ্যে প্রতারণা ও জালিয়াতি নেই। দ্বিতীয় পক্ষ যদি জানতে পারে যে, প্রথম পক্ষ তার সাথে প্রতারণা ও জালিয়াতি করছে, তাহলে সে কখনই এতে রাজি হবে না।
ব্যবসার মাধ্যমে উপার্জন করা হালাল :
وَاَحَلَّ اللهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا
আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন আর সুদকে হারাম করেছেন। (সূরা বাক্বারা- ২৭৫)
ব্যবসা করতে গিয়ে আল্লাহকে ভুলা যাবে না :
رِجَالٌ لَّا تُلْهِيْهِمْ تِجَارَةٌ وَّلَا بَيْعٌ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَاِقَامِ الصَّلَاةِ وَاِيْتَآءِ الزَّكَاةِ
তারা এমন লোক, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ হতে এবং সালাত কায়েম ও যাকাত প্রদান করা হতে বিরত রাখে না। (সূরা নূর- ৩৭)
জুমু‘আর আযানের পর ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا نُوْدِيَ لِلصَّلَاةِ مِنْ يَّوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا اِلٰى ذِكْرِ اللهِ وَذَرُوا الْبَيْعَؕ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! যখন জুমু‘আর দিন সালাতের জন্য আহবান করা হবে, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ করো। আর এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা বুঝতে পারতে। (সূরা জুমু‘আ- ৯)
وَاَحَلَّ اللهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا
আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন আর সুদকে হারাম করেছেন। (সূরা বাক্বারা- ২৭৫)
ব্যবসা করতে গিয়ে আল্লাহকে ভুলা যাবে না :
رِجَالٌ لَّا تُلْهِيْهِمْ تِجَارَةٌ وَّلَا بَيْعٌ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَاِقَامِ الصَّلَاةِ وَاِيْتَآءِ الزَّكَاةِ
তারা এমন লোক, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ হতে এবং সালাত কায়েম ও যাকাত প্রদান করা হতে বিরত রাখে না। (সূরা নূর- ৩৭)
জুমু‘আর আযানের পর ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا نُوْدِيَ لِلصَّلَاةِ مِنْ يَّوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا اِلٰى ذِكْرِ اللهِ وَذَرُوا الْبَيْعَؕ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! যখন জুমু‘আর দিন সালাতের জন্য আহবান করা হবে, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ করো। আর এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা বুঝতে পারতে। (সূরা জুমু‘আ- ৯)
আল্লাহ দাঁড়িপাল্লা অবতীর্ণ করেছেন :
اَللهُ الَّذِيْۤ اَنْزَلَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ وَالْمِيْزَانَ
আল্লাহ ঐ সত্তা, যিনি সত্যসহ কিতাব এবং দাঁড়িপাল্লা অবতীর্ণ করেছেন। (সূরা শূরা- ১৭)
পরিপূর্ণভাবে ওজন করার নির্দেশ :
وَزِنُوْا بِالْقِسْطَاسِ الْمُسْتَقِيْمِ
সঠিক পরিমাণে দাঁড়িপাল্লায় ওজন করো। (সূরা শু‘আরা- ১৮২)
وَاَوْفُوا الْكَيْلَ اِذَا كِلْتُمْ وَزِنُوْا بِالْقِسْطَاسِ الْمُسْتَقِيْمِؕ ذٰلِكَ خَيْرٌ وَّاَحْسَنُ تَأْوِيْلًا
মেপে দেয়ার সময় পূর্ণভাবে মেপে দেবে এবং সঠিকভাবে দাঁড়িপাল্লায় ওজন করবে। আর এটাই উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্ট। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩৫)
ব্যাখ্যা : হাট-বাজার ও দোকানগুলোতে দাঁড়িপাল্লাগুলোর তদারকি করা এবং ওজনে ও মাপে কম দেয়া বন্ধ করা রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব। এখান থেকেই এ ব্যাপক মূলনীতি গৃহীত হয় যে, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে সবধরনের অধিকার হরণের পথ রোধ করা সরকারের দায়িত্ব। এর ফলে পারস্পরিক আস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়, ক্রেতা ও বিক্রেতা পরস্পরের উপর ভরসা করে এবং ব্যবসায় উন্নতি আসে।
আল্লাহ ওজনে কম দিতে নিষেধ করেছেন :
وَاَقِيْمُوا الْوَزْنَ بِالْقِسْطِ وَلَا تُخْسِرُوا الْمِيْزَانَ
ওজনের ক্ষেত্রে ন্যায্য মান প্রতিষ্ঠা করো এবং মাপে কম দিয়ো না। (সূরা আর রহমান- ৯)
ব্যাখ্যা : যেহেতু তোমরা এমন একটি ভারসাম্যপূর্ণ বিশ্বে বসবাস করছ, যার গোটা ব্যবস্থাপনাই সুবিচার ও ইনসাফের উপর প্রতিষ্ঠিত। তাই তোমাদেরকেও সুবিচার ও ইনসাফের উপর প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। যে সীমার মধ্যে তোমাদেরকে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে সেখানে যদি তোমরা বেইনসাফী কর এবং যে হকদারদের হক তোমাদের হাতে দেয়া হয়েছে তাদের অধিকার হরণ কর, তাহলে তা হবে বিশ্বপ্রকৃতির বিরুদ্ধে বিদ্রোহের শামিল। এ মহাবিশ্বের প্রকৃতি যুলুম, বেইনসাফী ও অধিকার হরণকে স্বীকার করে না। এখানে বড় রকমের কোন যুলুম তো দূরের কথা, দাঁড়িপাল্লার ভারসাম্য বিঘ্নিত করে কেউ যদি ক্রেতাকে এক তোলা পরিমাণ পণ্যও কম দেয়, তাহলে সে যেন বিশ্বলোকের ভারসাম্যে বিপর্যয় সৃষ্টি করে।
فَاَوْفُوا الْكَيْلَ وَالْمِيْزَانَ وَلَا تَبْخَسُوا النَّاسَ اَشْيَآءَهُمْ
তোমরা ওজন ও পরিমাপ (পূর্ণমাত্রায়) আদায় করে দেবে এবং মানুষকে তাদের প্রাপ্য বস্তু কম দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না। (সূরা আ‘রাফ- ৮৫)
যারা ওজনে কমবেশি করে তারা ধ্বংস হবে :
وَيْلٌ لِّلْمُطَفِّفِيْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ اِذَا اكْتَالُوْا عَلَى النَّاسِ يَسْتَوْفُوْنَ ‐ وَاِذَا كَالُوْهُمْ اَوْ وَّزَنُوْهُمْ يُخْسِرُوْنَ ‐ اَلَا يَظُنُّ اُولٰٓئِكَ اَنَّهُمْ مَّبْعُوْثُوْنَ ‐ لِيَوْمٍ عَظِيْمٍ
মন্দ পরিণাম তাদের জন্য, যারা মাপে কম দেয় এবং যারা লোকের নিকট হতে নেয়ার সময় পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে, কিন্তু তাদের জন্য মেপে অথবা ওজন করে দেয়ার সময় কম দেয়। তারা কি চিন্তা করে না যে, তাদেরকে এক মহান দিবসে (কিয়ামত দিবসে) পুনরুত্থিত করা হবে? (সূরা মুতাফফিফীন, ১-৫)
মাদইয়ানবাসীরা এ অপরাধে লিপ্ত ছিল :
وَاِلٰى مَدْيَنَ اَخَاهُمْ شُعَيْبًاؕ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرُهٗؕ قَدْ جَآءَتْكُمْ بَيِّنَةٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ فَاَوْفُوا الْكَيْلَ وَالْمِيْزَانَ وَلَا تَبْخَسُوا النَّاسَ اَشْيَآءَهُمْ
আমি মাদইয়ানবাসীর কাছে তাদেরই ভাই শুয়াইবকে পাঠিয়েছিলাম। সে তাঁর স্বজাতিকে সম্বোধন করে বলেছিল, হে আমার জাতি! তোমরা (শিরক বর্জন করে) একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোন সত্য মা‘বুদ নেই। এখন তোমাদের প্রভুর পক্ষ হতে তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট দলীল এসে গেছে। সুতরাং তোমরা ওজন ও পরিমাপ পূর্ণমাত্রায় আদায় করে দেবে, মানুষকে তাদের প্রাপ্য বস্তু কম দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না। (সূরা আ‘রাফ- ৮৫)
ফলে আল্লাহ গযব দিয়ে তাদেরকে ধ্বংস করেছেন :
وَلَمَّا جَآءَ اَمْرُنَا نَجَّيْنَا شُعَيْبًا وَّالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَعَهٗ بِرَحْمَةٍ مِّنَّا وَاَخَذَتِ الَّذِيْنَ ظَلَمُوا الصَّيْحَةُ فَاَصْبَحُوْا فِيْ دِيَارِهِمْ جَاثِمِيْنَ
যখন আমার নির্দেশ এসে গেল তখন আমি শুয়াইব ও তাঁর সঙ্গে যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে আমার অনুগ্রহে রক্ষা করেছিলাম। আর যারা সীমালঙ্ঘন করেছিল তাদেরকে এক বিকট গর্জন আঘাত করল, ফলে তারা নিজ নিজ গৃহে নতজানু অবস্থায় পড়ে রইল। (সূরা হুদ- ৯৪)
اَللهُ الَّذِيْۤ اَنْزَلَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ وَالْمِيْزَانَ
আল্লাহ ঐ সত্তা, যিনি সত্যসহ কিতাব এবং দাঁড়িপাল্লা অবতীর্ণ করেছেন। (সূরা শূরা- ১৭)
পরিপূর্ণভাবে ওজন করার নির্দেশ :
وَزِنُوْا بِالْقِسْطَاسِ الْمُسْتَقِيْمِ
সঠিক পরিমাণে দাঁড়িপাল্লায় ওজন করো। (সূরা শু‘আরা- ১৮২)
وَاَوْفُوا الْكَيْلَ اِذَا كِلْتُمْ وَزِنُوْا بِالْقِسْطَاسِ الْمُسْتَقِيْمِؕ ذٰلِكَ خَيْرٌ وَّاَحْسَنُ تَأْوِيْلًا
মেপে দেয়ার সময় পূর্ণভাবে মেপে দেবে এবং সঠিকভাবে দাঁড়িপাল্লায় ওজন করবে। আর এটাই উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্ট। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩৫)
ব্যাখ্যা : হাট-বাজার ও দোকানগুলোতে দাঁড়িপাল্লাগুলোর তদারকি করা এবং ওজনে ও মাপে কম দেয়া বন্ধ করা রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব। এখান থেকেই এ ব্যাপক মূলনীতি গৃহীত হয় যে, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে সবধরনের অধিকার হরণের পথ রোধ করা সরকারের দায়িত্ব। এর ফলে পারস্পরিক আস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়, ক্রেতা ও বিক্রেতা পরস্পরের উপর ভরসা করে এবং ব্যবসায় উন্নতি আসে।
আল্লাহ ওজনে কম দিতে নিষেধ করেছেন :
وَاَقِيْمُوا الْوَزْنَ بِالْقِسْطِ وَلَا تُخْسِرُوا الْمِيْزَانَ
ওজনের ক্ষেত্রে ন্যায্য মান প্রতিষ্ঠা করো এবং মাপে কম দিয়ো না। (সূরা আর রহমান- ৯)
ব্যাখ্যা : যেহেতু তোমরা এমন একটি ভারসাম্যপূর্ণ বিশ্বে বসবাস করছ, যার গোটা ব্যবস্থাপনাই সুবিচার ও ইনসাফের উপর প্রতিষ্ঠিত। তাই তোমাদেরকেও সুবিচার ও ইনসাফের উপর প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। যে সীমার মধ্যে তোমাদেরকে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে সেখানে যদি তোমরা বেইনসাফী কর এবং যে হকদারদের হক তোমাদের হাতে দেয়া হয়েছে তাদের অধিকার হরণ কর, তাহলে তা হবে বিশ্বপ্রকৃতির বিরুদ্ধে বিদ্রোহের শামিল। এ মহাবিশ্বের প্রকৃতি যুলুম, বেইনসাফী ও অধিকার হরণকে স্বীকার করে না। এখানে বড় রকমের কোন যুলুম তো দূরের কথা, দাঁড়িপাল্লার ভারসাম্য বিঘ্নিত করে কেউ যদি ক্রেতাকে এক তোলা পরিমাণ পণ্যও কম দেয়, তাহলে সে যেন বিশ্বলোকের ভারসাম্যে বিপর্যয় সৃষ্টি করে।
فَاَوْفُوا الْكَيْلَ وَالْمِيْزَانَ وَلَا تَبْخَسُوا النَّاسَ اَشْيَآءَهُمْ
তোমরা ওজন ও পরিমাপ (পূর্ণমাত্রায়) আদায় করে দেবে এবং মানুষকে তাদের প্রাপ্য বস্তু কম দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না। (সূরা আ‘রাফ- ৮৫)
যারা ওজনে কমবেশি করে তারা ধ্বংস হবে :
وَيْلٌ لِّلْمُطَفِّفِيْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ اِذَا اكْتَالُوْا عَلَى النَّاسِ يَسْتَوْفُوْنَ ‐ وَاِذَا كَالُوْهُمْ اَوْ وَّزَنُوْهُمْ يُخْسِرُوْنَ ‐ اَلَا يَظُنُّ اُولٰٓئِكَ اَنَّهُمْ مَّبْعُوْثُوْنَ ‐ لِيَوْمٍ عَظِيْمٍ
মন্দ পরিণাম তাদের জন্য, যারা মাপে কম দেয় এবং যারা লোকের নিকট হতে নেয়ার সময় পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে, কিন্তু তাদের জন্য মেপে অথবা ওজন করে দেয়ার সময় কম দেয়। তারা কি চিন্তা করে না যে, তাদেরকে এক মহান দিবসে (কিয়ামত দিবসে) পুনরুত্থিত করা হবে? (সূরা মুতাফফিফীন, ১-৫)
মাদইয়ানবাসীরা এ অপরাধে লিপ্ত ছিল :
وَاِلٰى مَدْيَنَ اَخَاهُمْ شُعَيْبًاؕ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرُهٗؕ قَدْ جَآءَتْكُمْ بَيِّنَةٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ فَاَوْفُوا الْكَيْلَ وَالْمِيْزَانَ وَلَا تَبْخَسُوا النَّاسَ اَشْيَآءَهُمْ
আমি মাদইয়ানবাসীর কাছে তাদেরই ভাই শুয়াইবকে পাঠিয়েছিলাম। সে তাঁর স্বজাতিকে সম্বোধন করে বলেছিল, হে আমার জাতি! তোমরা (শিরক বর্জন করে) একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোন সত্য মা‘বুদ নেই। এখন তোমাদের প্রভুর পক্ষ হতে তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট দলীল এসে গেছে। সুতরাং তোমরা ওজন ও পরিমাপ পূর্ণমাত্রায় আদায় করে দেবে, মানুষকে তাদের প্রাপ্য বস্তু কম দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না। (সূরা আ‘রাফ- ৮৫)
ফলে আল্লাহ গযব দিয়ে তাদেরকে ধ্বংস করেছেন :
وَلَمَّا جَآءَ اَمْرُنَا نَجَّيْنَا شُعَيْبًا وَّالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَعَهٗ بِرَحْمَةٍ مِّنَّا وَاَخَذَتِ الَّذِيْنَ ظَلَمُوا الصَّيْحَةُ فَاَصْبَحُوْا فِيْ دِيَارِهِمْ جَاثِمِيْنَ
যখন আমার নির্দেশ এসে গেল তখন আমি শুয়াইব ও তাঁর সঙ্গে যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে আমার অনুগ্রহে রক্ষা করেছিলাম। আর যারা সীমালঙ্ঘন করেছিল তাদেরকে এক বিকট গর্জন আঘাত করল, ফলে তারা নিজ নিজ গৃহে নতজানু অবস্থায় পড়ে রইল। (সূরা হুদ- ৯৪)
করযে হাসানা দেয়া সওয়াবের কাজ :
اِنْ تُقْرِضُوا اللهَ قَرْضًا حَسَنًا يُّضَاعِفْهُ لَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْؕ وَاللهُ شَكُوْرٌ حَلِيْمٌ
যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান কর, তবে তিনি তোমাদের জন্য এটা বহু গুণে বৃদ্ধি করে দেবেন এবং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী ও সহনশীল। (সূরা তাগাবুন - ১৭)
ঋণগ্রহীতাকে সুযোগ দিতে হবে :
وَاِنْ كَانَ ذُو ْعُسْرَةٍ فَنَظِرَةٌ اِلٰى مَيْسَرَةٍ
ঋণগ্রহীতা যদি অভাবগ্রস্ত হয়, তবে সচ্ছলতা আসা পর্যন্ত তাকে অবকাশ দাও। (সূরা বাক্বারা- ২৮০)
ব্যাখ্যা : এ আয়াত থেকে শরীয়াতের এ বিধান পাওয়া যায় যে, যে ব্যক্তি ঋণ পরিশোধ করতে অক্ষম হয়ে পড়েছে তাকে ‘সময়’ দিতে হবে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে তার সমস্ত দেনা বা আংশিক দেনা ÿমা করে দেয়ারও ব্যবস্থা করতে হবে। কোন ব্যক্তির থাকার ঘর, খাবার বাসনপত্র, কাপড়-চোপড় এবং যেসব যন্ত্রপাতি দিয়ে সে রুজি-রোজগার করে, সেগুলো কোন অবস্থাতেই বাজেয়াপ্ত করা উচিৎ নয়।
বাকীতে লেনদেন করলে লিখে রাখতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا تَدَايَنْتُمْ بِدَيْنٍ اِلٰۤى اَجَلٍ مُّسَمًّى فَاكْتُبُوْهُ
হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা কোন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঋণের লেনদেন করবে, তখন তা লিখে রাখবে। (সূরা বাক্বারা- ২৮২)
ব্যাখ্যা : সাধারণত বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে লেনদেনের ব্যাপারে দলীল বা প্রমাণপত্র লেখা এবং সাক্ষী রাখাকে দূষণীয় মনে করা হয়। কিন্তু আল্লাহর নির্দেশ হচ্ছে, ঋণ ও ব্যবসা সংক্রান্ত লেনদেনের চুক্তি সাক্ষ্য প্রমাণাদিসহ লিখিতাকারে সম্পাদিত হওয়া উচিত। এর ফলে লোকদের মধ্যকার লেনদেন স্বচ্ছ থাকবে।
একজন লেখক ন্যায়সঙ্গতভাবে লিখে দেবে :
وَلْيَكْتُبْ بَّيْنَكُمْ كَاتِبٌ ۢبِالْعَدْلِ
তোমাদের মধ্যে একজন লেখক ন্যায়সঙ্গতভাবে যেন তা লিখে দেয়। (সূরা বাক্বারা- ২৮২)
ঋণগ্রহীতা লিখিয়ে নেবে :
وَلْيُمْلِلِ الَّذِيْ عَلَيْهِ الْحَقُّ وَلْيَتَّقِ اللهَ رَبَّهٗ وَلَا يَبْخَسْ مِنْهُ شَيْئًاؕ فَاِنْ كَانَ الَّذِيْ عَلَيْهِ الْحَقُّ سَفِيْهًا اَوْ ضَعِيْفًا اَوْ لَا يَسْتَطِيْعُ اَنْ يُّمِلَّ هُوَ فَلْيُمْلِلْ وَلِيُّهٗ بِالْعَدْلِ
ঋণগ্রহীতা লেখার বিষয় বলে দেবে এবং তার প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করবে। আর সে এতে কোনকিছুর কমতি করবে না। যদি ঋণগ্রহীতা নির্বোধ হয় অথবা দুর্বল হয় অথবা লেখার বিষয়বস্তু বলে দিতে অক্ষম হয়, তবে তার অভিভাবক যেন তা ন্যায়সঙ্গতভাবে বলে দেয়। (সূরা বাক্বারা- ২৮২)
লিখিত দলীল রাখলে সন্দেহ থেকে বাঁচা যায় :
ذٰلِكُمْ اَقْسَطُ عِنْدَ اللّٰهِ وَاَقْوَمُ لِلشَّهَادَةِ وَاَدْنٰۤى اَلَّا تَرْتَابُوْا
এটা আল্লাহর কাছে তোমাদের জন্য সঠিক পন্থা, সাক্ষ্যের জন্য মজবুত এবং সন্দেহে না পড়ার কাছাকাছি। (সূরা বাক্বারা- ২৮২)
নগদ বেচাকেনা লিখে রাখা জরুরি নয় :
اِلَّاۤ اَنْ تَكُوْنَ تِجَارَةً حَاضِرَةً تُدِيْرُوْنَهَا بَيْنَكُمْ فَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ اَلَّا تَكْتُبُوْهَاؕ وَاَشْهِدُوْاۤ اِذَا تَبَايَعْتُمْ
তবে যদি পরস্পরের মধ্যে নগদ লেনদেন হয়, তাহলে তোমরা লিখে না রাখলে কোন গোনাহ হবে না। আর যখন তোমরা ক্রয়-বিক্রয় করবে, তখন সাক্ষী রাখবে। (সূরা বাক্বারা- ২৮২)
কোন লেখক বা সাক্ষীকে ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না :
وَلَا يُضَآرَّ كَاتِبٌ وَّلَا شَهِيْدٌؕ وَاِنْ تَفْعَلُوْا فَاِنَّهٗ فُسُوْقٌ ۢبِكُمْؕ وَاتَّقُوا اللّٰهَؕ وَيُعَلِّمُكُمُ اللّٰهُؕ وَاللّٰهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ
লেখক ও সাক্ষীর মধ্যে কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না। যদি তোমরা এমনটা কর, তবে তা গোনাহের কাজ বলে গণ্য হবে। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, তিনি তোমাদেরকে শিক্ষা দান করেন। তিনি সর্ববিষয়ে জ্ঞানী। (সূরা বাক্বারা- ২৮২)
বিশেষ প্রয়োজনে কোন জিনিস বন্ধক রাখা যাবে :
وَاِنْ كُنْتُمْ عَلٰى سَفَرٍ وَّلَمْ تَجِدُوْا كَاتِبًا فَرِهَانٌ مَّقْبُوْضَةٌؕ فَاِنْ اَمِنَ بَعْضُكُمْ بَعْضًا فَلْيُؤَدِّ الَّذِى اؤْتُمِنَ اَمَانَتَهٗ وَلْيَتَّقِ اللّٰهَ رَبَّهٗؕ وَلَا تَكْتُمُوا الشَّهَادَةَؕ وَمَنْ يَّكْتُمْهَا فَاِنَّهٗۤ اٰثِمٌ قَلْبُهٗؕ وَاللّٰهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ عَلِيْمٌ
আর যদি তোমরা সফরে থাক এবং কোন লেখক না পাও, তবে কোনকিছু বন্ধক রাখতে পার। যদি তোমরা পরস্পরের প্রতি বিশ্বাসী হও, তবে যার কাছে আমানত রাখা হয় সে যেন তা ফিরিয়ে দেয় এবং তার প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করে। আর তোমরা সাক্ষ্য গোপন করো না। যে গোপন করবে তার অন্তর পাপী হিসেবে গণ্য হবে। আর তোমরা যা কর আল্লাহ সে বিষয়ে জানেন। (সূরা বাক্বারা- ২৮৩)
ব্যাখ্যা : নিছক দলীলের উপর নির্ভর করে কেউ টাকা ধার দিতে রাজী না হলে ঋণগ্রহীতা নিজের কোন জিনিস বন্ধক রেখে টাকা ধার নেবে। নিজের ঋণ বাবদ প্রদত্ত অর্থের বিনিময়ে প্রাপ্ত বন্ধকী জিনিস থেকে কোন প্রকার লাভবান হওয়ার অধিকার তার নেই।
اِنْ تُقْرِضُوا اللهَ قَرْضًا حَسَنًا يُّضَاعِفْهُ لَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْؕ وَاللهُ شَكُوْرٌ حَلِيْمٌ
যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান কর, তবে তিনি তোমাদের জন্য এটা বহু গুণে বৃদ্ধি করে দেবেন এবং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী ও সহনশীল। (সূরা তাগাবুন - ১৭)
ঋণগ্রহীতাকে সুযোগ দিতে হবে :
وَاِنْ كَانَ ذُو ْعُسْرَةٍ فَنَظِرَةٌ اِلٰى مَيْسَرَةٍ
ঋণগ্রহীতা যদি অভাবগ্রস্ত হয়, তবে সচ্ছলতা আসা পর্যন্ত তাকে অবকাশ দাও। (সূরা বাক্বারা- ২৮০)
ব্যাখ্যা : এ আয়াত থেকে শরীয়াতের এ বিধান পাওয়া যায় যে, যে ব্যক্তি ঋণ পরিশোধ করতে অক্ষম হয়ে পড়েছে তাকে ‘সময়’ দিতে হবে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে তার সমস্ত দেনা বা আংশিক দেনা ÿমা করে দেয়ারও ব্যবস্থা করতে হবে। কোন ব্যক্তির থাকার ঘর, খাবার বাসনপত্র, কাপড়-চোপড় এবং যেসব যন্ত্রপাতি দিয়ে সে রুজি-রোজগার করে, সেগুলো কোন অবস্থাতেই বাজেয়াপ্ত করা উচিৎ নয়।
বাকীতে লেনদেন করলে লিখে রাখতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا تَدَايَنْتُمْ بِدَيْنٍ اِلٰۤى اَجَلٍ مُّسَمًّى فَاكْتُبُوْهُ
হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা কোন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঋণের লেনদেন করবে, তখন তা লিখে রাখবে। (সূরা বাক্বারা- ২৮২)
ব্যাখ্যা : সাধারণত বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে লেনদেনের ব্যাপারে দলীল বা প্রমাণপত্র লেখা এবং সাক্ষী রাখাকে দূষণীয় মনে করা হয়। কিন্তু আল্লাহর নির্দেশ হচ্ছে, ঋণ ও ব্যবসা সংক্রান্ত লেনদেনের চুক্তি সাক্ষ্য প্রমাণাদিসহ লিখিতাকারে সম্পাদিত হওয়া উচিত। এর ফলে লোকদের মধ্যকার লেনদেন স্বচ্ছ থাকবে।
একজন লেখক ন্যায়সঙ্গতভাবে লিখে দেবে :
وَلْيَكْتُبْ بَّيْنَكُمْ كَاتِبٌ ۢبِالْعَدْلِ
তোমাদের মধ্যে একজন লেখক ন্যায়সঙ্গতভাবে যেন তা লিখে দেয়। (সূরা বাক্বারা- ২৮২)
ঋণগ্রহীতা লিখিয়ে নেবে :
وَلْيُمْلِلِ الَّذِيْ عَلَيْهِ الْحَقُّ وَلْيَتَّقِ اللهَ رَبَّهٗ وَلَا يَبْخَسْ مِنْهُ شَيْئًاؕ فَاِنْ كَانَ الَّذِيْ عَلَيْهِ الْحَقُّ سَفِيْهًا اَوْ ضَعِيْفًا اَوْ لَا يَسْتَطِيْعُ اَنْ يُّمِلَّ هُوَ فَلْيُمْلِلْ وَلِيُّهٗ بِالْعَدْلِ
ঋণগ্রহীতা লেখার বিষয় বলে দেবে এবং তার প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করবে। আর সে এতে কোনকিছুর কমতি করবে না। যদি ঋণগ্রহীতা নির্বোধ হয় অথবা দুর্বল হয় অথবা লেখার বিষয়বস্তু বলে দিতে অক্ষম হয়, তবে তার অভিভাবক যেন তা ন্যায়সঙ্গতভাবে বলে দেয়। (সূরা বাক্বারা- ২৮২)
লিখিত দলীল রাখলে সন্দেহ থেকে বাঁচা যায় :
ذٰلِكُمْ اَقْسَطُ عِنْدَ اللّٰهِ وَاَقْوَمُ لِلشَّهَادَةِ وَاَدْنٰۤى اَلَّا تَرْتَابُوْا
এটা আল্লাহর কাছে তোমাদের জন্য সঠিক পন্থা, সাক্ষ্যের জন্য মজবুত এবং সন্দেহে না পড়ার কাছাকাছি। (সূরা বাক্বারা- ২৮২)
নগদ বেচাকেনা লিখে রাখা জরুরি নয় :
اِلَّاۤ اَنْ تَكُوْنَ تِجَارَةً حَاضِرَةً تُدِيْرُوْنَهَا بَيْنَكُمْ فَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ اَلَّا تَكْتُبُوْهَاؕ وَاَشْهِدُوْاۤ اِذَا تَبَايَعْتُمْ
তবে যদি পরস্পরের মধ্যে নগদ লেনদেন হয়, তাহলে তোমরা লিখে না রাখলে কোন গোনাহ হবে না। আর যখন তোমরা ক্রয়-বিক্রয় করবে, তখন সাক্ষী রাখবে। (সূরা বাক্বারা- ২৮২)
কোন লেখক বা সাক্ষীকে ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না :
وَلَا يُضَآرَّ كَاتِبٌ وَّلَا شَهِيْدٌؕ وَاِنْ تَفْعَلُوْا فَاِنَّهٗ فُسُوْقٌ ۢبِكُمْؕ وَاتَّقُوا اللّٰهَؕ وَيُعَلِّمُكُمُ اللّٰهُؕ وَاللّٰهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ
লেখক ও সাক্ষীর মধ্যে কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না। যদি তোমরা এমনটা কর, তবে তা গোনাহের কাজ বলে গণ্য হবে। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, তিনি তোমাদেরকে শিক্ষা দান করেন। তিনি সর্ববিষয়ে জ্ঞানী। (সূরা বাক্বারা- ২৮২)
বিশেষ প্রয়োজনে কোন জিনিস বন্ধক রাখা যাবে :
وَاِنْ كُنْتُمْ عَلٰى سَفَرٍ وَّلَمْ تَجِدُوْا كَاتِبًا فَرِهَانٌ مَّقْبُوْضَةٌؕ فَاِنْ اَمِنَ بَعْضُكُمْ بَعْضًا فَلْيُؤَدِّ الَّذِى اؤْتُمِنَ اَمَانَتَهٗ وَلْيَتَّقِ اللّٰهَ رَبَّهٗؕ وَلَا تَكْتُمُوا الشَّهَادَةَؕ وَمَنْ يَّكْتُمْهَا فَاِنَّهٗۤ اٰثِمٌ قَلْبُهٗؕ وَاللّٰهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ عَلِيْمٌ
আর যদি তোমরা সফরে থাক এবং কোন লেখক না পাও, তবে কোনকিছু বন্ধক রাখতে পার। যদি তোমরা পরস্পরের প্রতি বিশ্বাসী হও, তবে যার কাছে আমানত রাখা হয় সে যেন তা ফিরিয়ে দেয় এবং তার প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করে। আর তোমরা সাক্ষ্য গোপন করো না। যে গোপন করবে তার অন্তর পাপী হিসেবে গণ্য হবে। আর তোমরা যা কর আল্লাহ সে বিষয়ে জানেন। (সূরা বাক্বারা- ২৮৩)
ব্যাখ্যা : নিছক দলীলের উপর নির্ভর করে কেউ টাকা ধার দিতে রাজী না হলে ঋণগ্রহীতা নিজের কোন জিনিস বন্ধক রেখে টাকা ধার নেবে। নিজের ঋণ বাবদ প্রদত্ত অর্থের বিনিময়ে প্রাপ্ত বন্ধকী জিনিস থেকে কোন প্রকার লাভবান হওয়ার অধিকার তার নেই।
বিয়ে করে পরিবার গঠন করা নবীদের সুন্নাত :
وَلَقَدْ اَرْسَلْنَا رُسُلًا مِّنْ قَبْلِكَ وَجَعَلْنَا لَهُمْ اَزْوَاجًا وَّذُرِّيَّةً
নিশ্চয় আমি তোমার পূর্বে অনেক রাসূল প্রেরণ করেছিলাম এবং তাদেরকে স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিও দান করেছিলাম। (সূরা রা‘দ- ৩৮)
বিবাহ মানব বংশের ধারা জারি রাখে :
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوْا رَبَّكُمُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ وَّخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيْرًا وَّنِسَآءً
হে মানবমন্ডলী! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো, যিনি তোমাদেরকে একই ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকে তার স্ত্রীকেও সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তাদের উভয় হতে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন। (সূরা নিসা- ১)
অবিবাহিতাদের বিয়ের ব্যবস্থা করা অভিভাবকদের দায়িত্ব :
وَاَنْكِحُوا الْاَيَامٰى مِنْكُمْ وَالصَّالِحِيْنَ مِنْ عِبَادِكُمْ وَاِمَآئِكُمْؕ اِنْ يَّكُوْنُوْا فُقَرَآءَ يُغْنِهِمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٖؕ وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ ‐ اِنْ يَّكُوْنُوْا فُقَرَآءَ يُغْنِهِمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٖؕ وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ
তোমাদের মধ্যে যাদের স্ত্রী নেই তাদের বিবাহের ব্যবস্থা করো এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরও বিবাহের ব্যবস্থা করো। যদি তারা অভাবী হয়, (তাহলে) আল্লাহ (অচিরেই) তাঁর অনুগ্রহ দিয়ে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন; আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও সর্বজ্ঞ। তারা অভাবগ্রস্ত হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ তো প্রাচুর্যময় ও সর্বজ্ঞ। (সূরা নূর- ৩২)
ব্যাখ্যা : اَيَمٌ (আয়ামুন) এমন প্রত্যেক পুরুষকে বলা হয়, যার কোন স্ত্রী নেই এবং এমন প্রত্যেক নারীকেও বলা হয়, যার কোন স্বামী নেই। মুসলিমদেরকে সাধারণভাবে এ চিন্তা করা উচিত যে, তাদের সমাজে যেন লোকেরা অবিবাহিত অবস্থায় না থাকে। পরিবারের সাথে জড়িত লোকেরা, বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশী সবাই এ ব্যাপারে তাকে সাহায্য করবে। আর যার কেউ নেই তাকে সাহায্য করবে রাষ্ট্র। আরো বলা হয়েছে, লোকেরা যেন এ ব্যাপারে খুব বেশি হিসেবী না হয়। এজন্য মেয়ে পক্ষকে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, কোন সৎ, ভদ্র ও রুচিশীল ব্যক্তি যদি তাদের কাছে প্রস্তাব পাঠায়, তাহলে নিছক তার দারিদ্রতা দেখেই যেন তা প্রত্যাখ্যান না করা হয়। আবার ছেলে পক্ষকেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আয়-রোজগারের অজুহাত দেখিয়ে কোন যুবককে যেন অবিবাহিত করে না রাখা হয়। আর যুবকদেরকেও উপদেশ দেয়া হচ্ছে, বেশি সচ্ছলতার অপেক্ষায় বসে থেকে নিজেদের বিয়ের ব্যাপারকে অযথা পিছিয়ে দিয়ো না। অনেক সময় বিয়ে নিজেই মানুষের আর্থিক সচ্ছলতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দায়িত্ব মাথার উপর এসে পড়ার পর মানুষ আগের চেয়েও বেশি পরিশ্রম ও প্রচেষ্টা চালাতে থাকে। উপার্জনের কাজে স্ত্রীও সাহায্য করতে পারে।
খুব বেশি অভাবী হলে সামর্থ্য হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সংযত থাকতে হবে :
وَلْيَسْتَعْفِفِ الَّذِيْنَ لَا يَجِدُوْنَ نِكَاحًا حَتّٰى يُغْنِيَهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٖ
যাদের বিবাহের সামর্থ্য নেই, আল্লাহ তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে অভাবমুক্ত না করা পর্যন্ত তারা যেন সংযমতা অবলম্বন করে। (সূরা নূর- ৩৩)
অভিভাবকদের অনুমতি সাপেক্ষে মোহরানা দিয়ে বিয়ে করতে হবে :
فَانْكِحُوْهُنَّ بِاِذْنِ اَهْلِهِنَّ وَاٰتُوْهُنَّ اُجُوْرَهُنَّ بِالْمَعْرُوْفِ
তোমরা তাদেরকে বিয়ে করবে তাদের অভিভাকের অনুমতিক্রমে এবং ন্যায়সঙ্গতভাবে তাদের মোহর দিয়ে দেবে। (সূরা নিসা- ২৫)
وَلَقَدْ اَرْسَلْنَا رُسُلًا مِّنْ قَبْلِكَ وَجَعَلْنَا لَهُمْ اَزْوَاجًا وَّذُرِّيَّةً
নিশ্চয় আমি তোমার পূর্বে অনেক রাসূল প্রেরণ করেছিলাম এবং তাদেরকে স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিও দান করেছিলাম। (সূরা রা‘দ- ৩৮)
বিবাহ মানব বংশের ধারা জারি রাখে :
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوْا رَبَّكُمُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ وَّخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيْرًا وَّنِسَآءً
হে মানবমন্ডলী! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো, যিনি তোমাদেরকে একই ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকে তার স্ত্রীকেও সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তাদের উভয় হতে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন। (সূরা নিসা- ১)
অবিবাহিতাদের বিয়ের ব্যবস্থা করা অভিভাবকদের দায়িত্ব :
وَاَنْكِحُوا الْاَيَامٰى مِنْكُمْ وَالصَّالِحِيْنَ مِنْ عِبَادِكُمْ وَاِمَآئِكُمْؕ اِنْ يَّكُوْنُوْا فُقَرَآءَ يُغْنِهِمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٖؕ وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ ‐ اِنْ يَّكُوْنُوْا فُقَرَآءَ يُغْنِهِمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٖؕ وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ
তোমাদের মধ্যে যাদের স্ত্রী নেই তাদের বিবাহের ব্যবস্থা করো এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরও বিবাহের ব্যবস্থা করো। যদি তারা অভাবী হয়, (তাহলে) আল্লাহ (অচিরেই) তাঁর অনুগ্রহ দিয়ে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন; আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও সর্বজ্ঞ। তারা অভাবগ্রস্ত হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ তো প্রাচুর্যময় ও সর্বজ্ঞ। (সূরা নূর- ৩২)
ব্যাখ্যা : اَيَمٌ (আয়ামুন) এমন প্রত্যেক পুরুষকে বলা হয়, যার কোন স্ত্রী নেই এবং এমন প্রত্যেক নারীকেও বলা হয়, যার কোন স্বামী নেই। মুসলিমদেরকে সাধারণভাবে এ চিন্তা করা উচিত যে, তাদের সমাজে যেন লোকেরা অবিবাহিত অবস্থায় না থাকে। পরিবারের সাথে জড়িত লোকেরা, বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশী সবাই এ ব্যাপারে তাকে সাহায্য করবে। আর যার কেউ নেই তাকে সাহায্য করবে রাষ্ট্র। আরো বলা হয়েছে, লোকেরা যেন এ ব্যাপারে খুব বেশি হিসেবী না হয়। এজন্য মেয়ে পক্ষকে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, কোন সৎ, ভদ্র ও রুচিশীল ব্যক্তি যদি তাদের কাছে প্রস্তাব পাঠায়, তাহলে নিছক তার দারিদ্রতা দেখেই যেন তা প্রত্যাখ্যান না করা হয়। আবার ছেলে পক্ষকেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আয়-রোজগারের অজুহাত দেখিয়ে কোন যুবককে যেন অবিবাহিত করে না রাখা হয়। আর যুবকদেরকেও উপদেশ দেয়া হচ্ছে, বেশি সচ্ছলতার অপেক্ষায় বসে থেকে নিজেদের বিয়ের ব্যাপারকে অযথা পিছিয়ে দিয়ো না। অনেক সময় বিয়ে নিজেই মানুষের আর্থিক সচ্ছলতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দায়িত্ব মাথার উপর এসে পড়ার পর মানুষ আগের চেয়েও বেশি পরিশ্রম ও প্রচেষ্টা চালাতে থাকে। উপার্জনের কাজে স্ত্রীও সাহায্য করতে পারে।
খুব বেশি অভাবী হলে সামর্থ্য হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সংযত থাকতে হবে :
وَلْيَسْتَعْفِفِ الَّذِيْنَ لَا يَجِدُوْنَ نِكَاحًا حَتّٰى يُغْنِيَهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٖ
যাদের বিবাহের সামর্থ্য নেই, আল্লাহ তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে অভাবমুক্ত না করা পর্যন্ত তারা যেন সংযমতা অবলম্বন করে। (সূরা নূর- ৩৩)
অভিভাবকদের অনুমতি সাপেক্ষে মোহরানা দিয়ে বিয়ে করতে হবে :
فَانْكِحُوْهُنَّ بِاِذْنِ اَهْلِهِنَّ وَاٰتُوْهُنَّ اُجُوْرَهُنَّ بِالْمَعْرُوْفِ
তোমরা তাদেরকে বিয়ে করবে তাদের অভিভাকের অনুমতিক্রমে এবং ন্যায়সঙ্গতভাবে তাদের মোহর দিয়ে দেবে। (সূরা নিসা- ২৫)
যে সকল মহিলাকে বিয়ে করা হারাম :
حُرِّمَتْ عَلَيْكُمْ اُمَّهَاتُكُمْ وَبَنَاتُكُمْ وَاَخَوَاتُكُمْ وَعَمَّاتُكُمْ وَخَالَاتُكُمْ وَبَنَاتُ الْاَخِ وَبَنَاتُ الْاُخْتِ وَاُمَّهَاتُكُمُ اللَّاتِۤيْ اَرْضَعْنَكُمْ وَاَخَوَاتُكُمْ مِّنَ الرَّضَاعَةِ وَاُمَّهَاتُ نِسَآئِكُمْ وَرَبَآئِبُكُمُ اللَّاتِيْ فِيْ حُجُوْرِكُمْ مِّنْ نِّسَآئِكُمُ اللَّاتِيْ دَخَلْتُمْ بِهِنَّؗ فَاِنْ لَّمْ تَكُوْنُوْا دَخَلْتُمْ بِهِنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْؗ وَحَلَآئِلُ اَبْنَآئِكُمُ الَّذِيْنَ مِنْ اَصْلَابِكُمْ وَاَنْ تَجْمَعُوْا بَيْنَ الْاُخْتَيْنِ اِلَّا مَا قَدْ سَلَفَؕ اِنَّ اللهَ كَانَ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا
তোমাদের জন্য তোমাদের মাতা, কন্যা, বোন, ফুফু, খালা, ভাতিজী, ভাগিনী, দুধমাতা, দুধবোন ও শাশুড়িকে (বিবাহ করা) হারাম করা হয়েছে। আর তোমাদের স্ত্রীদের পূর্ব স্বামীর কন্যা, যারা তোমাদের অভিভাবকত্বে আছে; যদি তোমরা ঐ স্ত্রীদের সাথে মিলন করে থাক (তবে তাদেরকে বিবাহ করা হারাম করা হয়েছে)। কিন্তু যদি তোমরা মিলন না করে থাক, তবে (তাদেরকে বিবাহ করাতে) কোন দোষ নেই। তোমাদের ঔরসজাত পুত্রবধু এবং দু’বোনকেও একসাথে বিয়ে করা হারাম করা হয়েছে। তবে আগে যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও অতি দয়ালু। (সূরা নিসা- ২৩)
ব্যাখ্যা : মা বলতে আপন মা ও সৎ মা উভয়কেই বুঝায়। তাই উভয়ই হারাম। এছাড়া পিতার মা ও মায়ের মা অর্থাৎ দাদী ও নানীও এ হারামের অন্তর্ভুক্ত। নাতনী ও দৌহিত্রীও কন্যার অন্তর্ভুক্ত। সহোদর বোন, বৈপিত্রেয় বোন ও বৈমাত্রেয় বোন- তিনজনই সমানভাবে এ নির্দেশের আওতাধীন। বাপ ও মায়ের সহোদর বোন, বৈপিত্রেয় ও বৈমাত্রেয় যে পর্যায়েরই হোক না কেন তারা অবশ্যই পুত্রের জন্য হারাম। অনুরূপভাবে সহোদর ভাই ও বোন, বৈপিত্রেয় ও বৈমাত্রেয় যে কোন পর্যায়েরই হোক না কেন তাদের কন্যারা নিজের কন্যার মতোই হারাম। একটি ছেলে বা মেয়ে যে স্ত্রীলোকের দুধ পান করে তার জন্য ঐ স্ত্রীলোকটি মায়ের পর্যায়ভুক্ত। আর তার স্বামী বাপের পর্যায়ভুক্ত হয়ে যায়। সুতরাং প্রকৃত পিতামাতার সম্পর্কের কারণে যে সমস্ত আত্মীয়তা হারাম হয়ে যায়, দুধ মা ও দুধ বাপের সম্পর্কের কারণেও সেসব আত্মীয়তা তার জন্য হারাম হয়ে যায়। কোন ব্যক্তি যাকে পালকপুত্র হিসেবে গ্রহণ করেছে, তার বিধবা বা তালাক প্রাপ্তা স্ত্রী ঐ ব্যক্তির জন্য হারাম নয়। কেবল নিজের ঔরসজাত পুত্রের স্ত্রীই বাপের জন্য হারাম। এভাবে পুত্রের ন্যায় প্রপুত্র ও দৌহিত্রের স্ত্রীও দাদা ও নানার জন্য হারাম। দুই মহিলার মধ্যে খালা ও ভাগিনী অথবা ফুফু ও ভাইঝির সম্পর্ক হলে তাদেরকে এক সাথে বিয়ে করা হারাম। এ ব্যাপারে একটি মূলনীতি রয়েছে। সেটি হচ্ছে, এমন ধরনের দু’টি মেয়েকে একত্রে বিয়ে করা হারাম, যাদের একজন যদি পুরুষ হতো তাহলে তাদের মধ্যে বিয়ে হারাম হতো।
সৎ মাতা :
وَلَا تَنْكِحُوْا مَا نَكَحَ اٰبَآؤُكُمْ مِّنَ النِّسَآءِ اِلَّا مَا قَدْ سَلَفَؕ اِنَّهٗ كَانَ فَاحِشَةً وَّمَقْتًاؕ وَسَآءَ سَبِيْلًا
তোমাদের বাপ-দাদারা যেসব নারীদেরকে বিয়ে করেছে তোমরা তাদেরকে বিয়ে করো না, তবে আগে যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। নিশ্চয় এটা অশ্লীলতা ও গোনাহের কাজ এবং অত্যন্ত নিকৃষ্ট পন্থা। (সূরা নিসা- ২২)
বিবাহিত মহিলা যার স্বামী আছে :
وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ النِّسَآءِ اِلَّا مَا مَلَكَتْ اَيْمَانُكُمْۚ كِتَابَ اللهِ عَلَيْكُمْ
তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসী ছাড়া অন্যের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ নারীদেরকেও বিয়ে করা হারাম। এটা হলো তোমাদের প্রতি আল্লাহর নির্দেশ। (সূরা নিসা- ২৪)
বিধর্মীদের সাথে বিবাহ জায়েয নেই :
وَلَا تَنْكِحُوا الْمُشْرِكَاتِ حَتّٰى يُؤْمِنَّؕ وَلَاَمَةٌ مُّؤْمِنَةٌ خَيْرٌ مِّنْ مُّشْرِكَةٍ وَّلَوْ اَعْجَبَتْكُمْۚ وَلَا تُنْكِحُوا الْمُشْرِكِيْنَ حَتّٰى يُؤْمِنُوْاؕ وَلَعَبْدٌ مُّؤْمِنٌ خَيْرٌ مِّنْ مُّشْرِكٍ وَّلَوْ اَعْجَبَكُمْ
তোমরা মুশরিক নারীদেরকে বিবাহ করো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। একজন ঈমানদার দাসী একজন স্বাধীন মুশরিক মহিলার চেয়ে উত্তম, যদিও ঐ মুশরিক মহিলা তোমাদেরকে আশ্চর্যান্বিত করে। আর তোমরা (মুমিন নারীদেরকে) মুশরিক পুরুষদের সাথে বিয়ে দিয়ো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। একজন ঈমানদার দাস একজন স্বাধীন মুশরিকের চেয়ে উত্তম, যদিও সে তোমাদেরকে আশ্চর্যান্বিত করে। (সূরা বাক্বারা- ২২১)
মুশরিকদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক না রাখার কারণ : বিয়েটা নারী ও পুরুষের মধ্যে নিছক একটি যৌন সম্পর্ক নয়; বরং এটি একটি গভীর সাংস্কৃতিক, নৈতিক ও মানসিক সম্পর্ক। মুশরিক স্বামী বা স্ত্রীর ধ্যাণ-ধারণা, চিন্তা-ভাবনা ও আচার-ব্যবহারে কেবলমাত্র মুমিন স্বামী বা স্ত্রীরই নয় বরং তার সমগ্র পরিবার ও পরবর্তী বংশধররাও প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ধরনের দাম্পত্য জীবনের ফলশ্রুতিতে ইসলাম, কুফর ও শিরকের এমন একটি মিশ্রিত জীবনধারা লালিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যাকে অমুসলিমরা যতই পছন্দ করুক না কেন ইসলাম তাকে পছন্দ করে না। কোন খাঁটি মুমিন কেবল নিজের যৌন লালসা পরিতৃপ্তির জন্য কখনো নিজ গৃহে ও পরিবারে কুফর ও শিরক লালন করতে পারে না।
حُرِّمَتْ عَلَيْكُمْ اُمَّهَاتُكُمْ وَبَنَاتُكُمْ وَاَخَوَاتُكُمْ وَعَمَّاتُكُمْ وَخَالَاتُكُمْ وَبَنَاتُ الْاَخِ وَبَنَاتُ الْاُخْتِ وَاُمَّهَاتُكُمُ اللَّاتِۤيْ اَرْضَعْنَكُمْ وَاَخَوَاتُكُمْ مِّنَ الرَّضَاعَةِ وَاُمَّهَاتُ نِسَآئِكُمْ وَرَبَآئِبُكُمُ اللَّاتِيْ فِيْ حُجُوْرِكُمْ مِّنْ نِّسَآئِكُمُ اللَّاتِيْ دَخَلْتُمْ بِهِنَّؗ فَاِنْ لَّمْ تَكُوْنُوْا دَخَلْتُمْ بِهِنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْؗ وَحَلَآئِلُ اَبْنَآئِكُمُ الَّذِيْنَ مِنْ اَصْلَابِكُمْ وَاَنْ تَجْمَعُوْا بَيْنَ الْاُخْتَيْنِ اِلَّا مَا قَدْ سَلَفَؕ اِنَّ اللهَ كَانَ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا
তোমাদের জন্য তোমাদের মাতা, কন্যা, বোন, ফুফু, খালা, ভাতিজী, ভাগিনী, দুধমাতা, দুধবোন ও শাশুড়িকে (বিবাহ করা) হারাম করা হয়েছে। আর তোমাদের স্ত্রীদের পূর্ব স্বামীর কন্যা, যারা তোমাদের অভিভাবকত্বে আছে; যদি তোমরা ঐ স্ত্রীদের সাথে মিলন করে থাক (তবে তাদেরকে বিবাহ করা হারাম করা হয়েছে)। কিন্তু যদি তোমরা মিলন না করে থাক, তবে (তাদেরকে বিবাহ করাতে) কোন দোষ নেই। তোমাদের ঔরসজাত পুত্রবধু এবং দু’বোনকেও একসাথে বিয়ে করা হারাম করা হয়েছে। তবে আগে যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও অতি দয়ালু। (সূরা নিসা- ২৩)
ব্যাখ্যা : মা বলতে আপন মা ও সৎ মা উভয়কেই বুঝায়। তাই উভয়ই হারাম। এছাড়া পিতার মা ও মায়ের মা অর্থাৎ দাদী ও নানীও এ হারামের অন্তর্ভুক্ত। নাতনী ও দৌহিত্রীও কন্যার অন্তর্ভুক্ত। সহোদর বোন, বৈপিত্রেয় বোন ও বৈমাত্রেয় বোন- তিনজনই সমানভাবে এ নির্দেশের আওতাধীন। বাপ ও মায়ের সহোদর বোন, বৈপিত্রেয় ও বৈমাত্রেয় যে পর্যায়েরই হোক না কেন তারা অবশ্যই পুত্রের জন্য হারাম। অনুরূপভাবে সহোদর ভাই ও বোন, বৈপিত্রেয় ও বৈমাত্রেয় যে কোন পর্যায়েরই হোক না কেন তাদের কন্যারা নিজের কন্যার মতোই হারাম। একটি ছেলে বা মেয়ে যে স্ত্রীলোকের দুধ পান করে তার জন্য ঐ স্ত্রীলোকটি মায়ের পর্যায়ভুক্ত। আর তার স্বামী বাপের পর্যায়ভুক্ত হয়ে যায়। সুতরাং প্রকৃত পিতামাতার সম্পর্কের কারণে যে সমস্ত আত্মীয়তা হারাম হয়ে যায়, দুধ মা ও দুধ বাপের সম্পর্কের কারণেও সেসব আত্মীয়তা তার জন্য হারাম হয়ে যায়। কোন ব্যক্তি যাকে পালকপুত্র হিসেবে গ্রহণ করেছে, তার বিধবা বা তালাক প্রাপ্তা স্ত্রী ঐ ব্যক্তির জন্য হারাম নয়। কেবল নিজের ঔরসজাত পুত্রের স্ত্রীই বাপের জন্য হারাম। এভাবে পুত্রের ন্যায় প্রপুত্র ও দৌহিত্রের স্ত্রীও দাদা ও নানার জন্য হারাম। দুই মহিলার মধ্যে খালা ও ভাগিনী অথবা ফুফু ও ভাইঝির সম্পর্ক হলে তাদেরকে এক সাথে বিয়ে করা হারাম। এ ব্যাপারে একটি মূলনীতি রয়েছে। সেটি হচ্ছে, এমন ধরনের দু’টি মেয়েকে একত্রে বিয়ে করা হারাম, যাদের একজন যদি পুরুষ হতো তাহলে তাদের মধ্যে বিয়ে হারাম হতো।
সৎ মাতা :
وَلَا تَنْكِحُوْا مَا نَكَحَ اٰبَآؤُكُمْ مِّنَ النِّسَآءِ اِلَّا مَا قَدْ سَلَفَؕ اِنَّهٗ كَانَ فَاحِشَةً وَّمَقْتًاؕ وَسَآءَ سَبِيْلًا
তোমাদের বাপ-দাদারা যেসব নারীদেরকে বিয়ে করেছে তোমরা তাদেরকে বিয়ে করো না, তবে আগে যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। নিশ্চয় এটা অশ্লীলতা ও গোনাহের কাজ এবং অত্যন্ত নিকৃষ্ট পন্থা। (সূরা নিসা- ২২)
বিবাহিত মহিলা যার স্বামী আছে :
وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ النِّسَآءِ اِلَّا مَا مَلَكَتْ اَيْمَانُكُمْۚ كِتَابَ اللهِ عَلَيْكُمْ
তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসী ছাড়া অন্যের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ নারীদেরকেও বিয়ে করা হারাম। এটা হলো তোমাদের প্রতি আল্লাহর নির্দেশ। (সূরা নিসা- ২৪)
বিধর্মীদের সাথে বিবাহ জায়েয নেই :
وَلَا تَنْكِحُوا الْمُشْرِكَاتِ حَتّٰى يُؤْمِنَّؕ وَلَاَمَةٌ مُّؤْمِنَةٌ خَيْرٌ مِّنْ مُّشْرِكَةٍ وَّلَوْ اَعْجَبَتْكُمْۚ وَلَا تُنْكِحُوا الْمُشْرِكِيْنَ حَتّٰى يُؤْمِنُوْاؕ وَلَعَبْدٌ مُّؤْمِنٌ خَيْرٌ مِّنْ مُّشْرِكٍ وَّلَوْ اَعْجَبَكُمْ
তোমরা মুশরিক নারীদেরকে বিবাহ করো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। একজন ঈমানদার দাসী একজন স্বাধীন মুশরিক মহিলার চেয়ে উত্তম, যদিও ঐ মুশরিক মহিলা তোমাদেরকে আশ্চর্যান্বিত করে। আর তোমরা (মুমিন নারীদেরকে) মুশরিক পুরুষদের সাথে বিয়ে দিয়ো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। একজন ঈমানদার দাস একজন স্বাধীন মুশরিকের চেয়ে উত্তম, যদিও সে তোমাদেরকে আশ্চর্যান্বিত করে। (সূরা বাক্বারা- ২২১)
মুশরিকদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক না রাখার কারণ : বিয়েটা নারী ও পুরুষের মধ্যে নিছক একটি যৌন সম্পর্ক নয়; বরং এটি একটি গভীর সাংস্কৃতিক, নৈতিক ও মানসিক সম্পর্ক। মুশরিক স্বামী বা স্ত্রীর ধ্যাণ-ধারণা, চিন্তা-ভাবনা ও আচার-ব্যবহারে কেবলমাত্র মুমিন স্বামী বা স্ত্রীরই নয় বরং তার সমগ্র পরিবার ও পরবর্তী বংশধররাও প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ধরনের দাম্পত্য জীবনের ফলশ্রুতিতে ইসলাম, কুফর ও শিরকের এমন একটি মিশ্রিত জীবনধারা লালিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যাকে অমুসলিমরা যতই পছন্দ করুক না কেন ইসলাম তাকে পছন্দ করে না। কোন খাঁটি মুমিন কেবল নিজের যৌন লালসা পরিতৃপ্তির জন্য কখনো নিজ গৃহে ও পরিবারে কুফর ও শিরক লালন করতে পারে না।
হারাম তালিকার বাইরের সব মহিলাই হালাল :
وَاُحِلَّ لَكُمْ مَّا وَرَآءَ ذٰلِكُمْ اَنْ تَبْتَغُوْا بِاَمْوَالِكُمْ مُّحْصِنِيْنَ غَيْرَ مُسَافِحِيْنَؕ فَمَا اسْتَمْتَعْتُمْ بِهٖ مِنْهُنَّ فَاٰتُوْهُنَّ اُجُوْرَهُنَّ فَرِيْضَةًؕ وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيْمَا تَرَاضَيْتُمْ بِهٖ مِنْ ۢبَعْدِ الْفَرِيْضَةِؕ اِنَّ اللهَ كَانَ عَلِيْمًا حَكِيْمًا
এদের ছাড়া অন্যান্য সকল নারীদেরকে বিয়ে করা তোমাদের জন্য হালাল; এ শর্তে যে, তোমরা তাদেরকে অর্থের বিনিময়ে বিয়ে করার জন্য কামনা করবে, ব্যভিচারের জন্য নয়। তোমরা বিয়ের মাধ্যমে যেসব নারীদের উপভোগ করেছ, তাদের ধার্যকৃত মোহর তাদেরকে দিয়ে দেবে। আর যদি মোহর ধার্য করার পর কোন বিষয়ে উভয়ে একমত হও, তাহলে তোমাদের কোন গোনাহ হবে না। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা- ২৪)
দারুল কুফর থেকে হিজরত করে আসা মহিলাদেরকেও বিয়ে করা যাবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا جَآءَكُمُ الْمُؤْمِنَاتُ مُهَاجِرَاتٍ فَامْتَحِنُوْهُنَّؕ اَللهُ اَعْلَمُ بِاِيْمَانِهِنَّۚ فَاِنْ عَلِمْتُمُوْهُنَّ مُؤْمِنَاتٍ فَلَا تَرْجِعُوْهُنَّ اِلَى الْكُفَّارِؕ لَا هُنَّ حِلٌّ لَّهُمْ وَلَا هُمْ يَحِلُّوْنَ لَهُنَّؕ وَاٰتُوْهُمْ مَّاۤ اَنْفَقُوْاؕ وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ اَنْ تَنْكِحُوْهُنَّ اِذَاۤ اٰتَيْتُمُوْهُنَّ اُجُوْرَهُنَّؕ وَلَا تُمْسِكُوْا بِعِصَمِ الْكَوَافِرِ وَاسْاَلُوْا مَاۤ اَنْفَقْتُمْ وَلْيَسْاَلُوْا مَاۤ اَنْفَقُوْاؕ ذٰلِكُمْ حُكْمُ اللهِؕ يَحْكُمُ بَيْنَكُمْؕ وَاللهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ
হে মুমিনগণ! তোমাদের নিকট যেসব মুমিন নারীরা হিজরত করে আসে তোমরা তাদেরকে পরীক্ষা করে নাও, আল্লাহ তাদের ঈমান সম্বন্ধে সম্যক অবগত আছেন। যদি তোমরা জানতে পার যে, তারা মুমিন তবে তাদেরকে কাফিরদের নিকট ফেরত পাঠিয়ে দিয়ো না। মুমিন নারীরা কাফিরদের জন্য বৈধ নয় এবং কাফিররাও মুমিন নারীদের জন্য বৈধ নয়। কাফিররা (তাদের জন্য) যা ব্যয় করেছে তা তাদেরকে ফিরিয়ে দেবে। অতঃপর তোমরা যদি তাদেরকে বিয়ে কর, তবে তোমাদের কোন অপরাধ হবে না- যদি তোমরা তাদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও। তোমরা কাফির নারীদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক (যা পূর্বে ছিল) বজায় রেখো না। তোমরা যা ব্যয় করেছ তা ফেরত চাইবে এবং কাফিররা যা ব্যয় করেছে তা তারা ফেরত চাইবে। এটাই আল্লাহর বিধান, যার দ্বারা তিনি তোমাদের মধ্যে ফায়সালা করে থাকেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাবান। (সূরা মুমতাহিনা- ১০)
মুসলিম দাসী :
وَمَنْ لَّمْ يَسْتَطِعْ مِنْكُمْ طَوْلًا اَنْ يَّنْكِحَ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ فَمِنْ مَّا مَلَكَتْ اَيْمَانُكُمْ مِّنْ فَتَيَاتِكُمُ الْمُؤْمِنَاتِ
তোমাদের মধ্যে যদি কেউ স্বাধীন মুসলিম নারীকে বিয়ে করার ক্ষমতা না রাখে, তবে সে তোমাদের আয়ত্তাধীন ঈমানদার দাসীদেরকে বিয়ে করে নেবে। (সূরা নিসা- ২৫)
ব্যাখ্যা : বিবাহিত স্ত্রী ছাড়া মালিকানাধীন নারীদের সাথেও মিলনের অনুমতি রয়েছে এবং তাদের ব্যাপারে কোন সংখ্যা নির্ধারিত নেই। অনুরূপভাবে যুদ্ধে গ্রেফতারকৃত মহিলাদেরকে যখন তাদের লোকেরা মুসলিম বন্দীদের বিনিময়ে অথবা মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে এগিয়ে না আসে, তখন ইসলামী শরীয়াত তাদেরকে দাসী হিসেবে গ্রহণ করার অনুমিত দিয়েছে। তাদেরকে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যেসব ব্যক্তির মালিকানায় দিয়ে দেয়া হয় তাদেরকে ঐ সব মহিলার সাথে সহবাস করার অধিকার দিয়েছে। এর ফলে তাদের অস্তিত্ব সমাজে নৈতিক বিপর্যয় সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়ায় না। তারপর যেহেতু বিভিন্ন যুদ্ধে গ্রেফতার হয়ে আসা লোকদের কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা থাকতে পারে না, তাই আইনগতভাবে এক ব্যক্তি একই সাথে ক’জন গোলাম বা দাসী রাখতে পারে এরও কোন সীমা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। গোলাম ও দাসীদের বেচাকেনাও এজন্য বৈধ রাখা হয়েছে যে, যদি কোন গোলাম বা দাসীর সাথে তার মালিকের সাথে সমঝোতা না হয় তাহলে সে অন্য মালিকের অধীনে চলে যেতে পারবে। শরীয়াত এ সমস্ত নিয়ম ও বিধান তৈরি করেছে মানুষের অবস্থা ও প্রয়োজন সামনে রেখে তার সুবিধার জন্য। যদি ধনী লোকেরা একে বিলাসিতার মাধ্যমে পরিণত করে থাকে তাহলে এজন্য শরীয়াত নয়, তারাই অভিযুক্ত হবে। উল্লেখ্য যে, কাজের মেয়ে কোন ভাবেই ঐ দাসীর অন্তর্ভুক্ত নয়, তাদের সাথে মেলামেশা করাও জায়েজ নেই।
আহলে কিতাবের মহিলা :
اَلْيَوْمَ اُحِلَّ لَكُمُ الطَّيِّبَاتُؕ وَطَعَامُ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ حِلٌّ لَّكُمْ۪ وَطَعَامُكُمْ حِلٌّ لَّهُمْؗ وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ
আজ তোমাদের জন্য সমস্ত পবিত্র জিনিস হালাল করা হলো, যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের খাদ্যদ্রব্য তোমাদের জন্য হালাল এবং তোমাদের খাদ্যদ্রব্যও তাদের জন্য হালাল। আর মুমিন সচ্চরিত্রা নারী ও তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের সচ্চরিত্রা নারী, তোমাদের জন্য বৈধ করা হলো। (সূরা মায়েদা- ৫)
ব্যাখ্যা : ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদের মধ্যে কেবল মেয়েদের ব্যাপারেই বিয়ের অনুমতি দেয়া হয়েছে। সাথে সাথে এ শর্তও আরোপ করা হয়েছে যে, তাদের ‘মুহসানাত’ (সতী-সাধ্বী মহিলা) হতে হবে। ওমর (রাঃ) এর মতে, মুহসানাত এর অর্থ পবিত্র ও নিষ্কলূষ চরিত্রের অধিকারী মেয়ে। মুহসানাত শব্দের এ অর্থ গ্রহণ করার কারণে তিনি আহলে কিতাবদের স্বেচ্ছাচারী মেয়েদের বিয়ে করাকে এ অনুমতির আওতার বাইরে রেখেছেন। আহলে কিতাবদের মেয়েদেরকে বিয়ে করার এ অনুমতি থেকে যে ব্যক্তি লাভবান হতে চাইবে, সে যেন নিজের ঈমান ও চরিত্রের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করে। এমন যেন না হয় যে, কোন মুসলিম কাফির মেয়ের প্রেমে আত্মহারা হয়ে অথবা তার আকীদা ও কর্মকান্ডে প্রভাবিত হয়ে নিজের ঈমানের মূল্যবান সম্পদ হারিয়ে ফেলে।
সৎ কন্যা যার মায়ের সাথে মিলন হয়নি :
وَرَبَآئِبُكُمُ اللَّاتِيْ فِيْ حُجُوْرِكُمْ مِّنْ نِّسَآئِكُمُ اللَّاتِيْ دَخَلْتُمْ بِهِنَّؗ فَاِنْ لَّمْ تَكُوْنُوْا دَخَلْتُمْ بِهِنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ
তোমাদের স্ত্রীদের পূর্ব স্বামীর কন্যা, যারা তোমাদের অভিভাবকত্বে আছে যদি তোমরা ঐ স্ত্রীদের সাথে মিলন করে থাক (তবে তারা তোমাদের জন্য হারাম); আর যদি মিলন না করে থাক তবে কোন দোষ নেই। (সূরা নিসা- ২৩)
পালক পুত্রের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী :
فَلَمَّا قَضٰى زَيْدٌ مِّنْهَا وَطَرًا زَوَّجْنَاكَهَا لِكَيْ لَا يَكُوْنَ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ حَرَجٌ فِۤيْ اَزْوَاجِ اَدْعِيَآئِهِمْ اِذَا قَضَوْا مِنْهُنَّ وَطَرًاؕ وَكَانَ اَمْرُ اللهِ مَفْعُوْلًا
যায়িদ যখন তার প্রয়োজন শেষে (যায়নাবের সাথে) বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করল, তখন আমি তাকে তোমার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করলাম; যাতে মুমিনদের কোন সমস্যা না থাকে। আর আল্লাহর নির্দেশ কার্যকর হয়েই থাকে। (সূরা আহযাব- ৩৭)
মামাত, খালাত, চাচাত ও ফুফাত বোন :
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ اِنَّاۤ اَحْلَلْنَا لَكَ اَزْوَاجَكَ اللَّاتِۤيْ اٰتَيْتَ اُجُوْرَهُنَّ وَمَا مَلَكَتْ يَمِيْنُكَ مِمَّاۤ اَفَآءَ اللهُ عَلَيْكَ وَبَنَاتِ عَمِّكَ وَبَنَاتِ عَمَّاتِكَ وَبَنَاتِ خَالِكَ وَبَنَاتِ خَالَاتِكَ اللَّاتِيْ هَاجَرْنَ مَعَكَ
হে নবী! আমি আপনার জন্য সেসব নারীদেরকেও হালাল করেছি, যাদেরকে আপনি মোহরানা আদায় করে বিবাহ করেন এবং যাদেরকে গনিমতের মাল হিসেবে আল্লাহ আপনার মালিকানাধীন করেছেন। আর আপনার চাচার কন্যা, ফুফুর কন্যা, মামার কন্যা, খালার কন্যা এবং যারা আপনার সাথে হিজরত করেছে (তাদেরকেও হালাল করা হয়েছে)। (সূরা আহযাব- ৫০)
وَاُحِلَّ لَكُمْ مَّا وَرَآءَ ذٰلِكُمْ اَنْ تَبْتَغُوْا بِاَمْوَالِكُمْ مُّحْصِنِيْنَ غَيْرَ مُسَافِحِيْنَؕ فَمَا اسْتَمْتَعْتُمْ بِهٖ مِنْهُنَّ فَاٰتُوْهُنَّ اُجُوْرَهُنَّ فَرِيْضَةًؕ وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيْمَا تَرَاضَيْتُمْ بِهٖ مِنْ ۢبَعْدِ الْفَرِيْضَةِؕ اِنَّ اللهَ كَانَ عَلِيْمًا حَكِيْمًا
এদের ছাড়া অন্যান্য সকল নারীদেরকে বিয়ে করা তোমাদের জন্য হালাল; এ শর্তে যে, তোমরা তাদেরকে অর্থের বিনিময়ে বিয়ে করার জন্য কামনা করবে, ব্যভিচারের জন্য নয়। তোমরা বিয়ের মাধ্যমে যেসব নারীদের উপভোগ করেছ, তাদের ধার্যকৃত মোহর তাদেরকে দিয়ে দেবে। আর যদি মোহর ধার্য করার পর কোন বিষয়ে উভয়ে একমত হও, তাহলে তোমাদের কোন গোনাহ হবে না। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা- ২৪)
দারুল কুফর থেকে হিজরত করে আসা মহিলাদেরকেও বিয়ে করা যাবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا جَآءَكُمُ الْمُؤْمِنَاتُ مُهَاجِرَاتٍ فَامْتَحِنُوْهُنَّؕ اَللهُ اَعْلَمُ بِاِيْمَانِهِنَّۚ فَاِنْ عَلِمْتُمُوْهُنَّ مُؤْمِنَاتٍ فَلَا تَرْجِعُوْهُنَّ اِلَى الْكُفَّارِؕ لَا هُنَّ حِلٌّ لَّهُمْ وَلَا هُمْ يَحِلُّوْنَ لَهُنَّؕ وَاٰتُوْهُمْ مَّاۤ اَنْفَقُوْاؕ وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ اَنْ تَنْكِحُوْهُنَّ اِذَاۤ اٰتَيْتُمُوْهُنَّ اُجُوْرَهُنَّؕ وَلَا تُمْسِكُوْا بِعِصَمِ الْكَوَافِرِ وَاسْاَلُوْا مَاۤ اَنْفَقْتُمْ وَلْيَسْاَلُوْا مَاۤ اَنْفَقُوْاؕ ذٰلِكُمْ حُكْمُ اللهِؕ يَحْكُمُ بَيْنَكُمْؕ وَاللهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ
হে মুমিনগণ! তোমাদের নিকট যেসব মুমিন নারীরা হিজরত করে আসে তোমরা তাদেরকে পরীক্ষা করে নাও, আল্লাহ তাদের ঈমান সম্বন্ধে সম্যক অবগত আছেন। যদি তোমরা জানতে পার যে, তারা মুমিন তবে তাদেরকে কাফিরদের নিকট ফেরত পাঠিয়ে দিয়ো না। মুমিন নারীরা কাফিরদের জন্য বৈধ নয় এবং কাফিররাও মুমিন নারীদের জন্য বৈধ নয়। কাফিররা (তাদের জন্য) যা ব্যয় করেছে তা তাদেরকে ফিরিয়ে দেবে। অতঃপর তোমরা যদি তাদেরকে বিয়ে কর, তবে তোমাদের কোন অপরাধ হবে না- যদি তোমরা তাদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও। তোমরা কাফির নারীদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক (যা পূর্বে ছিল) বজায় রেখো না। তোমরা যা ব্যয় করেছ তা ফেরত চাইবে এবং কাফিররা যা ব্যয় করেছে তা তারা ফেরত চাইবে। এটাই আল্লাহর বিধান, যার দ্বারা তিনি তোমাদের মধ্যে ফায়সালা করে থাকেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাবান। (সূরা মুমতাহিনা- ১০)
মুসলিম দাসী :
وَمَنْ لَّمْ يَسْتَطِعْ مِنْكُمْ طَوْلًا اَنْ يَّنْكِحَ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ فَمِنْ مَّا مَلَكَتْ اَيْمَانُكُمْ مِّنْ فَتَيَاتِكُمُ الْمُؤْمِنَاتِ
তোমাদের মধ্যে যদি কেউ স্বাধীন মুসলিম নারীকে বিয়ে করার ক্ষমতা না রাখে, তবে সে তোমাদের আয়ত্তাধীন ঈমানদার দাসীদেরকে বিয়ে করে নেবে। (সূরা নিসা- ২৫)
ব্যাখ্যা : বিবাহিত স্ত্রী ছাড়া মালিকানাধীন নারীদের সাথেও মিলনের অনুমতি রয়েছে এবং তাদের ব্যাপারে কোন সংখ্যা নির্ধারিত নেই। অনুরূপভাবে যুদ্ধে গ্রেফতারকৃত মহিলাদেরকে যখন তাদের লোকেরা মুসলিম বন্দীদের বিনিময়ে অথবা মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে এগিয়ে না আসে, তখন ইসলামী শরীয়াত তাদেরকে দাসী হিসেবে গ্রহণ করার অনুমিত দিয়েছে। তাদেরকে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যেসব ব্যক্তির মালিকানায় দিয়ে দেয়া হয় তাদেরকে ঐ সব মহিলার সাথে সহবাস করার অধিকার দিয়েছে। এর ফলে তাদের অস্তিত্ব সমাজে নৈতিক বিপর্যয় সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়ায় না। তারপর যেহেতু বিভিন্ন যুদ্ধে গ্রেফতার হয়ে আসা লোকদের কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা থাকতে পারে না, তাই আইনগতভাবে এক ব্যক্তি একই সাথে ক’জন গোলাম বা দাসী রাখতে পারে এরও কোন সীমা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। গোলাম ও দাসীদের বেচাকেনাও এজন্য বৈধ রাখা হয়েছে যে, যদি কোন গোলাম বা দাসীর সাথে তার মালিকের সাথে সমঝোতা না হয় তাহলে সে অন্য মালিকের অধীনে চলে যেতে পারবে। শরীয়াত এ সমস্ত নিয়ম ও বিধান তৈরি করেছে মানুষের অবস্থা ও প্রয়োজন সামনে রেখে তার সুবিধার জন্য। যদি ধনী লোকেরা একে বিলাসিতার মাধ্যমে পরিণত করে থাকে তাহলে এজন্য শরীয়াত নয়, তারাই অভিযুক্ত হবে। উল্লেখ্য যে, কাজের মেয়ে কোন ভাবেই ঐ দাসীর অন্তর্ভুক্ত নয়, তাদের সাথে মেলামেশা করাও জায়েজ নেই।
আহলে কিতাবের মহিলা :
اَلْيَوْمَ اُحِلَّ لَكُمُ الطَّيِّبَاتُؕ وَطَعَامُ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ حِلٌّ لَّكُمْ۪ وَطَعَامُكُمْ حِلٌّ لَّهُمْؗ وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ
আজ তোমাদের জন্য সমস্ত পবিত্র জিনিস হালাল করা হলো, যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের খাদ্যদ্রব্য তোমাদের জন্য হালাল এবং তোমাদের খাদ্যদ্রব্যও তাদের জন্য হালাল। আর মুমিন সচ্চরিত্রা নারী ও তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের সচ্চরিত্রা নারী, তোমাদের জন্য বৈধ করা হলো। (সূরা মায়েদা- ৫)
ব্যাখ্যা : ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদের মধ্যে কেবল মেয়েদের ব্যাপারেই বিয়ের অনুমতি দেয়া হয়েছে। সাথে সাথে এ শর্তও আরোপ করা হয়েছে যে, তাদের ‘মুহসানাত’ (সতী-সাধ্বী মহিলা) হতে হবে। ওমর (রাঃ) এর মতে, মুহসানাত এর অর্থ পবিত্র ও নিষ্কলূষ চরিত্রের অধিকারী মেয়ে। মুহসানাত শব্দের এ অর্থ গ্রহণ করার কারণে তিনি আহলে কিতাবদের স্বেচ্ছাচারী মেয়েদের বিয়ে করাকে এ অনুমতির আওতার বাইরে রেখেছেন। আহলে কিতাবদের মেয়েদেরকে বিয়ে করার এ অনুমতি থেকে যে ব্যক্তি লাভবান হতে চাইবে, সে যেন নিজের ঈমান ও চরিত্রের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করে। এমন যেন না হয় যে, কোন মুসলিম কাফির মেয়ের প্রেমে আত্মহারা হয়ে অথবা তার আকীদা ও কর্মকান্ডে প্রভাবিত হয়ে নিজের ঈমানের মূল্যবান সম্পদ হারিয়ে ফেলে।
সৎ কন্যা যার মায়ের সাথে মিলন হয়নি :
وَرَبَآئِبُكُمُ اللَّاتِيْ فِيْ حُجُوْرِكُمْ مِّنْ نِّسَآئِكُمُ اللَّاتِيْ دَخَلْتُمْ بِهِنَّؗ فَاِنْ لَّمْ تَكُوْنُوْا دَخَلْتُمْ بِهِنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ
তোমাদের স্ত্রীদের পূর্ব স্বামীর কন্যা, যারা তোমাদের অভিভাবকত্বে আছে যদি তোমরা ঐ স্ত্রীদের সাথে মিলন করে থাক (তবে তারা তোমাদের জন্য হারাম); আর যদি মিলন না করে থাক তবে কোন দোষ নেই। (সূরা নিসা- ২৩)
পালক পুত্রের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী :
فَلَمَّا قَضٰى زَيْدٌ مِّنْهَا وَطَرًا زَوَّجْنَاكَهَا لِكَيْ لَا يَكُوْنَ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ حَرَجٌ فِۤيْ اَزْوَاجِ اَدْعِيَآئِهِمْ اِذَا قَضَوْا مِنْهُنَّ وَطَرًاؕ وَكَانَ اَمْرُ اللهِ مَفْعُوْلًا
যায়িদ যখন তার প্রয়োজন শেষে (যায়নাবের সাথে) বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করল, তখন আমি তাকে তোমার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করলাম; যাতে মুমিনদের কোন সমস্যা না থাকে। আর আল্লাহর নির্দেশ কার্যকর হয়েই থাকে। (সূরা আহযাব- ৩৭)
মামাত, খালাত, চাচাত ও ফুফাত বোন :
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ اِنَّاۤ اَحْلَلْنَا لَكَ اَزْوَاجَكَ اللَّاتِۤيْ اٰتَيْتَ اُجُوْرَهُنَّ وَمَا مَلَكَتْ يَمِيْنُكَ مِمَّاۤ اَفَآءَ اللهُ عَلَيْكَ وَبَنَاتِ عَمِّكَ وَبَنَاتِ عَمَّاتِكَ وَبَنَاتِ خَالِكَ وَبَنَاتِ خَالَاتِكَ اللَّاتِيْ هَاجَرْنَ مَعَكَ
হে নবী! আমি আপনার জন্য সেসব নারীদেরকেও হালাল করেছি, যাদেরকে আপনি মোহরানা আদায় করে বিবাহ করেন এবং যাদেরকে গনিমতের মাল হিসেবে আল্লাহ আপনার মালিকানাধীন করেছেন। আর আপনার চাচার কন্যা, ফুফুর কন্যা, মামার কন্যা, খালার কন্যা এবং যারা আপনার সাথে হিজরত করেছে (তাদেরকেও হালাল করা হয়েছে)। (সূরা আহযাব- ৫০)
যাকে পছন্দ হয় তাকেই বিয়ে করবে :
فَانْكِحُوْا مَا طَابَ لَكُمْ مِّنَ النِّسَآءِ
তোমরা নারীদের মধ্য হতে যাদেরকে পছন্দ কর তাদেরকেই বিয়ে করে নাও। (সূরা নিসা- ৩)
খারাপ লোকের জন্য খারাপ আর পবিত্র লোকদের জন্য পবিত্র সঙ্গিনীই মানায় :
اَلْخَبِيْثَاتُ لِلْخَبِيْثِيْنَ وَالْخَبِيْثُوْنَ لِلْخَبِيْثَاتِۚ وَالطَّيِّبَاتُ لِلطَّيِّبِيْنَ وَالطَّيِّبُوْنَ لِلطَّيِّبَاتِۚ اُولٰٓئِكَ مُبَرَّءُوْنَ مِمَّا يَقُوْلُوْنَؕ لَهُمْ مَّغْفِرَةٌ وَّرِزْقٌ كَرِيْمٌ
দুশ্চরিত্রা নারী দুশ্চরিত্র পুরুষের জন্য, দুশ্চরিত্র পুরুষ দুশ্চরিত্রা নারীর জন্য, সচ্চরিত্রা নারী সচ্চরিত্র পুরুষের জন্য এবং সচ্চরিত্র পুরুষ সচ্চরিত্রা নারীর জন্য (নির্ধারিত)। লোকে যা বলে তারা তা হতে পবিত্র, এদের জন্য রয়েছে ক্ষমা এবং সম্মানজনক জীবিকা। (সূরা নূর- ২৬)
اَلزَّانِيْ لَا يَنْكِحُ اِلَّا زَانِيَةً اَوْ مُشْرِكَةًؗ وَالزَّانِيَةُ لَا يَنْكِحُهَاۤ اِلَّا زَانٍ اَوْ مُشْرِكٌۚ وَحُرِّمَ ذٰلِكَ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ
ব্যভিচারী পুরুষ ব্যভিচারী নারী অথবা মুশরিক নারী ব্যতীত অন্য কাউকে বিবাহ করে না এবং ব্যভিচারী নারীও ব্যভিচারী পুরুষ অথবা মুশরিক পুরুষ ব্যতীত অন্য কারো সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় না। মুমিনদের জন্য এটা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। (সূরা নূর- ৩)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতের উদ্দেশ্য হচ্ছে এ কথা বলা যে, যিনা একটি চরম নিকৃষ্ট কুকর্ম। যে ব্যক্তি মুসলিম হয়েও এ কাজ করে সে মুসলিম সমাজের সৎ ও পবিত্র লোকদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে তুলার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে। সুতরাং তাদের উচিত ঐসব নারী অথবা পুরুষকে বিবাহ করা, যারা সমাজে তারই মতো অশ্লীল কাজ করে বেড়ায় এবং যারা আল্লাহর বিধানের প্রতি আদৌ বিশ্বাস রাখে না।
উত্তম পাত্র-পাত্রীর গুণাবলি :
اِنَّ الْمُسْلِمِيْنَ وَالْمُسْلِمَاتِ وَالْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْقَانِتِيْنَ وَالْقَانِتَاتِ وَالصَّادِقِيْنَ وَالصَّادِقَاتِ وَالصَّابِرِيْنَ وَالصَّابِرَاتِ وَالْخَاشِعِيْنَ وَالْخَاشِعَاتِ وَالْمُتَصَدِّقِيْنَ وَالْمُتَصَدِّقَاتِ وَالصَّآئِمِيْنَ وَالصَّآئِمَاتِ وَالْحَافِظِيْنَ فُرُوْجَهُمْ وَالْحَافِظَاتِ وَالذَّاكِرِيْنَ اللهَ كَثِيْرًا وَّالذَّاكِرَاتِ اَعَدَّ اللهُ لَهُمْ مَّغْفِرَةً وَّاَجْرًا عَظِيْمًا
নিশ্চয় মুসলিম পুরুষ ও মুসলিম নারী, মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী, অনুগত পুরুষ ও অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী, বিনয়ী পুরুষ ও বিনয়ী নারী, দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, রোযাদার পুরুষ ও রোযাদার নারী, স্বীয় লজ্জাস্থান হেফাজতকারী পুরুষ ও স্বীয় লজ্জাস্থান হেফাজতকারী নারী এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও অধিক স্মরণকারী নারী, এদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত করে রেখেছেন ক্ষমা ও বিরাট প্রতিদান। (সূরা আহ্যাব- ৩৫)
فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِّلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللهُ
সুতরাং সতী-সাধ্বী নারীরা একান্ত অনুগত হয় এবং লোকচক্ষুর অন্তরালে আল্লাহ যা সংরক্ষণ করতে বলেছেন, তা সংরক্ষণ করে। (সূরা নিসা- ৩৪)
عَسٰى رَبُّهٗۤ اِنْ طَلَّقَكُنَّ اَنْ يُّبْدِلَهٗۤ اَزْوَاجًا خَيْرًا مِّنْكُنَّ مُسْلِمَاتٍ مُّؤْمِنَاتٍ قَانِتَاتٍ تَآئِبَاتٍ عَابِدَاتٍ سَآئِحَاتٍ ثَيِّبَاتٍ وَّاَبْكَارًا
যদি নবী তোমাদের সকলকে পরিত্যাগ করেন, তবে তাঁর প্রতিপালক তাকে তোমাদের চেয়ে আরো উৎকৃষ্টতর স্ত্রী দিতে পারেন। তারা হবে আনুগত্যকারিণী, তাওবাকারিণী, ইবাদাতকারিণী, সিয়াম পালনকারিণী, অকুমারী এবং কুমারী। (সূরা তাহরীম- ৫)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ বলেছেন, ‘‘সে স্ত্রীই সর্বোত্তম, যাকে দেখলে তোমার মন আনন্দে ভরে যায়। তুমি তাকে কোন আদেশ করলে সে তোমার আনুগত্য করে। তুমি ঘরে না থাকলে সে তোমার অনুপস্থিতিতে তোমার ধনসম্পদের ও তার নিজের হেফাজত করে।’’ (মুসনাদুল বাযযার, হা/৮৫৩৭)
এ হাদীসটি এ আয়াতের চমৎকার ব্যাখ্যা প্রদান করে। কিন্তু এখানে এ কথাও বুঝে নিতে হবে যে, স্ত্রীর জন্য নিজের স্বামীর আনুগত্যের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আল্লাহর আনুগত্য। কাজেই কোন স্বামী যদি তার স্ত্রীকে আল্লাহর নাফরমানি করার হুকুম দেয় অথবা আল্লাহর অর্পিত কোন ফরয থেকে তাকে বিরত রাখার চেষ্টা করে, তাহলে এ ক্ষেত্রে স্বামীর আনুগত্য করতে অস্বীকার করা স্ত্রীর জন্য ফরয হয়ে যায়। এ অবস্থায় যদি স্ত্রী স্বামীর আনুগত্য করে, তাহলে সে গোনাহগার হবে। তবে স্বামী যদি স্ত্রীকে নফল রোযা রাখতে নিষেধ করে, তাহলে স্বামীর কথা মেনে চলা তার জন্য অপরিহার্য।
পাত্রী খুব সুন্দরী না হলেও তার মধ্যে অন্যান্য গুণ থাকতে পারে :
فَاِنْ كَرِهْتُمُوْهُنَّ فَعَسٰۤى اَنْ تَكْرَهُوْا شَيْئًا وَّيَجْعَلَ اللهُ فِيْهِ خَيْرًا كَثِيْرًا
আর যদি তোমরা তাদেরকে অপছন্দ কর, তাহলে এমনও হতে পারে যে, তোমরা তাদেরকে যে বিষয়ে অপছন্দ করছ, অথচ আল্লাহ তাতেই অনেক কল্যাণ নিহিত রেখেছেন। (সূরা নিসা- ১৯)
ব্যাখ্যা : স্ত্রী যদি সুন্দরী না হয় অথবা তার মধ্যে এমন কোন ত্রুটি থাকে যে কারণে স্বামী তাকে অপছন্দ করে, তাহলে তৎক্ষণাৎ হতাশ হয়ে তাকে পরিত্যাগ করার চিন্তা করা উচিত নয়। যতদূর সম্ভব তাকে ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা অবলম্বন করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়, স্ত্রী সুন্দরী হয় না ঠিকই কিন্তু তার মধ্যে এমন কিছু গুণ থাকে, যা দাম্পত্য জীবনে সুন্দর মুখের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব লাভ করে। যদি সে তার এ গুণাবলি প্রকাশের সুযোগ পায়, তাহলে দেখা যাবে তার স্বামী যিনি প্রথম দিকে শুধুমাত্র স্ত্রীর অসুন্দর মুখ দেখে হতাশ হয়ে পড়ছিলেন, এখন তার চারিত্রিক মাধুর্যের কারণে তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে গেছেন। এমনিভাবে অনেক সময় দাম্পত্য জীবনের শুরুতে স্ত্রীর কোন কোন কথা ও আচরণ স্বামীর কাছে বিরক্তিকর মনে হয় এবং এজন্য তার মন ভেঙে যায়। এক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ করে স্ত্রীকে তার সম্ভাব্য সকল যোগ্যতা প্রকাশের সুযোগ দেয়া উচিত।
فَانْكِحُوْا مَا طَابَ لَكُمْ مِّنَ النِّسَآءِ
তোমরা নারীদের মধ্য হতে যাদেরকে পছন্দ কর তাদেরকেই বিয়ে করে নাও। (সূরা নিসা- ৩)
খারাপ লোকের জন্য খারাপ আর পবিত্র লোকদের জন্য পবিত্র সঙ্গিনীই মানায় :
اَلْخَبِيْثَاتُ لِلْخَبِيْثِيْنَ وَالْخَبِيْثُوْنَ لِلْخَبِيْثَاتِۚ وَالطَّيِّبَاتُ لِلطَّيِّبِيْنَ وَالطَّيِّبُوْنَ لِلطَّيِّبَاتِۚ اُولٰٓئِكَ مُبَرَّءُوْنَ مِمَّا يَقُوْلُوْنَؕ لَهُمْ مَّغْفِرَةٌ وَّرِزْقٌ كَرِيْمٌ
দুশ্চরিত্রা নারী দুশ্চরিত্র পুরুষের জন্য, দুশ্চরিত্র পুরুষ দুশ্চরিত্রা নারীর জন্য, সচ্চরিত্রা নারী সচ্চরিত্র পুরুষের জন্য এবং সচ্চরিত্র পুরুষ সচ্চরিত্রা নারীর জন্য (নির্ধারিত)। লোকে যা বলে তারা তা হতে পবিত্র, এদের জন্য রয়েছে ক্ষমা এবং সম্মানজনক জীবিকা। (সূরা নূর- ২৬)
اَلزَّانِيْ لَا يَنْكِحُ اِلَّا زَانِيَةً اَوْ مُشْرِكَةًؗ وَالزَّانِيَةُ لَا يَنْكِحُهَاۤ اِلَّا زَانٍ اَوْ مُشْرِكٌۚ وَحُرِّمَ ذٰلِكَ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ
ব্যভিচারী পুরুষ ব্যভিচারী নারী অথবা মুশরিক নারী ব্যতীত অন্য কাউকে বিবাহ করে না এবং ব্যভিচারী নারীও ব্যভিচারী পুরুষ অথবা মুশরিক পুরুষ ব্যতীত অন্য কারো সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় না। মুমিনদের জন্য এটা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। (সূরা নূর- ৩)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতের উদ্দেশ্য হচ্ছে এ কথা বলা যে, যিনা একটি চরম নিকৃষ্ট কুকর্ম। যে ব্যক্তি মুসলিম হয়েও এ কাজ করে সে মুসলিম সমাজের সৎ ও পবিত্র লোকদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে তুলার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে। সুতরাং তাদের উচিত ঐসব নারী অথবা পুরুষকে বিবাহ করা, যারা সমাজে তারই মতো অশ্লীল কাজ করে বেড়ায় এবং যারা আল্লাহর বিধানের প্রতি আদৌ বিশ্বাস রাখে না।
উত্তম পাত্র-পাত্রীর গুণাবলি :
اِنَّ الْمُسْلِمِيْنَ وَالْمُسْلِمَاتِ وَالْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْقَانِتِيْنَ وَالْقَانِتَاتِ وَالصَّادِقِيْنَ وَالصَّادِقَاتِ وَالصَّابِرِيْنَ وَالصَّابِرَاتِ وَالْخَاشِعِيْنَ وَالْخَاشِعَاتِ وَالْمُتَصَدِّقِيْنَ وَالْمُتَصَدِّقَاتِ وَالصَّآئِمِيْنَ وَالصَّآئِمَاتِ وَالْحَافِظِيْنَ فُرُوْجَهُمْ وَالْحَافِظَاتِ وَالذَّاكِرِيْنَ اللهَ كَثِيْرًا وَّالذَّاكِرَاتِ اَعَدَّ اللهُ لَهُمْ مَّغْفِرَةً وَّاَجْرًا عَظِيْمًا
নিশ্চয় মুসলিম পুরুষ ও মুসলিম নারী, মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী, অনুগত পুরুষ ও অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী, বিনয়ী পুরুষ ও বিনয়ী নারী, দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, রোযাদার পুরুষ ও রোযাদার নারী, স্বীয় লজ্জাস্থান হেফাজতকারী পুরুষ ও স্বীয় লজ্জাস্থান হেফাজতকারী নারী এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও অধিক স্মরণকারী নারী, এদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত করে রেখেছেন ক্ষমা ও বিরাট প্রতিদান। (সূরা আহ্যাব- ৩৫)
فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِّلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللهُ
সুতরাং সতী-সাধ্বী নারীরা একান্ত অনুগত হয় এবং লোকচক্ষুর অন্তরালে আল্লাহ যা সংরক্ষণ করতে বলেছেন, তা সংরক্ষণ করে। (সূরা নিসা- ৩৪)
عَسٰى رَبُّهٗۤ اِنْ طَلَّقَكُنَّ اَنْ يُّبْدِلَهٗۤ اَزْوَاجًا خَيْرًا مِّنْكُنَّ مُسْلِمَاتٍ مُّؤْمِنَاتٍ قَانِتَاتٍ تَآئِبَاتٍ عَابِدَاتٍ سَآئِحَاتٍ ثَيِّبَاتٍ وَّاَبْكَارًا
যদি নবী তোমাদের সকলকে পরিত্যাগ করেন, তবে তাঁর প্রতিপালক তাকে তোমাদের চেয়ে আরো উৎকৃষ্টতর স্ত্রী দিতে পারেন। তারা হবে আনুগত্যকারিণী, তাওবাকারিণী, ইবাদাতকারিণী, সিয়াম পালনকারিণী, অকুমারী এবং কুমারী। (সূরা তাহরীম- ৫)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ বলেছেন, ‘‘সে স্ত্রীই সর্বোত্তম, যাকে দেখলে তোমার মন আনন্দে ভরে যায়। তুমি তাকে কোন আদেশ করলে সে তোমার আনুগত্য করে। তুমি ঘরে না থাকলে সে তোমার অনুপস্থিতিতে তোমার ধনসম্পদের ও তার নিজের হেফাজত করে।’’ (মুসনাদুল বাযযার, হা/৮৫৩৭)
এ হাদীসটি এ আয়াতের চমৎকার ব্যাখ্যা প্রদান করে। কিন্তু এখানে এ কথাও বুঝে নিতে হবে যে, স্ত্রীর জন্য নিজের স্বামীর আনুগত্যের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আল্লাহর আনুগত্য। কাজেই কোন স্বামী যদি তার স্ত্রীকে আল্লাহর নাফরমানি করার হুকুম দেয় অথবা আল্লাহর অর্পিত কোন ফরয থেকে তাকে বিরত রাখার চেষ্টা করে, তাহলে এ ক্ষেত্রে স্বামীর আনুগত্য করতে অস্বীকার করা স্ত্রীর জন্য ফরয হয়ে যায়। এ অবস্থায় যদি স্ত্রী স্বামীর আনুগত্য করে, তাহলে সে গোনাহগার হবে। তবে স্বামী যদি স্ত্রীকে নফল রোযা রাখতে নিষেধ করে, তাহলে স্বামীর কথা মেনে চলা তার জন্য অপরিহার্য।
পাত্রী খুব সুন্দরী না হলেও তার মধ্যে অন্যান্য গুণ থাকতে পারে :
فَاِنْ كَرِهْتُمُوْهُنَّ فَعَسٰۤى اَنْ تَكْرَهُوْا شَيْئًا وَّيَجْعَلَ اللهُ فِيْهِ خَيْرًا كَثِيْرًا
আর যদি তোমরা তাদেরকে অপছন্দ কর, তাহলে এমনও হতে পারে যে, তোমরা তাদেরকে যে বিষয়ে অপছন্দ করছ, অথচ আল্লাহ তাতেই অনেক কল্যাণ নিহিত রেখেছেন। (সূরা নিসা- ১৯)
ব্যাখ্যা : স্ত্রী যদি সুন্দরী না হয় অথবা তার মধ্যে এমন কোন ত্রুটি থাকে যে কারণে স্বামী তাকে অপছন্দ করে, তাহলে তৎক্ষণাৎ হতাশ হয়ে তাকে পরিত্যাগ করার চিন্তা করা উচিত নয়। যতদূর সম্ভব তাকে ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা অবলম্বন করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়, স্ত্রী সুন্দরী হয় না ঠিকই কিন্তু তার মধ্যে এমন কিছু গুণ থাকে, যা দাম্পত্য জীবনে সুন্দর মুখের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব লাভ করে। যদি সে তার এ গুণাবলি প্রকাশের সুযোগ পায়, তাহলে দেখা যাবে তার স্বামী যিনি প্রথম দিকে শুধুমাত্র স্ত্রীর অসুন্দর মুখ দেখে হতাশ হয়ে পড়ছিলেন, এখন তার চারিত্রিক মাধুর্যের কারণে তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে গেছেন। এমনিভাবে অনেক সময় দাম্পত্য জীবনের শুরুতে স্ত্রীর কোন কোন কথা ও আচরণ স্বামীর কাছে বিরক্তিকর মনে হয় এবং এজন্য তার মন ভেঙে যায়। এক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ করে স্ত্রীকে তার সম্ভাব্য সকল যোগ্যতা প্রকাশের সুযোগ দেয়া উচিত।
বিয়ের প্রস্তাব মেয়ের পক্ষ থেকেও আগে দেয়া যায় :
قَالَ اِنِّۤيْ اُرِيْدُ اَنْ اُنْكِحَكَ اِحْدَى ابْنَتَيَّ هَاتَيْنِ عَلٰۤى اَنْ تَأْجُرَنِيْ ثَمَانِيْ حِجَجٍ
সে বলল, আমি আমার এ কন্যাদ্বয়ের একজনকে তোমার সঙ্গে বিবাহ দিতে চাই- এ শর্তে যে, তুমি আট বছর আমার কাজ করবে। (সূরা ক্বাসাস- ২৭)
বিয়ে গোপনে নয়, প্রকাশ্যে হতে হবে :
فَانْكِحُوْهُنَّ بِاِذْنِ اَهْلِهِنَّ وَاٰتُوْهُنَّ اُجُوْرَهُنَّ بِالْمَعْرُوْفِ
সুতরাং তোমরা তাদেরকে বিয়ে করবে তাদের পরিবারের (অভিভাবকের) অনুমতিক্রমে এবং ন্যায়সঙ্গতভাবে তাদের মোহর দিয়ে দেবে। (সূরা নিসা- ২৫)
একসাথে সর্বোচ্চ চারজন স্ত্রী রাখা যায় :
وَاِنْ خِفْتُمْ اَلَّا تُقْسِطُوْا فِى الْيَتَامٰى فَانْكِحُوْا مَا طَابَ لَكُمْ مِّنَ النِّسَآءِ مَثْنٰى وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ
যদি তোমরা ভয় কর যে ইয়াতীম মেয়েদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তবে নারীদের মধ্য হতে তোমাদের পছন্দ অনুযায়ী দু’জন, তিনজন অথবা চারজনকে বিয়ে করে নাও। (সূরা নিসা- ৩)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতের মাধ্যেমে স্ত্রীর সংখ্যা সীমিত করে দেয়া হয়েছে এবং একসাথে এক ব্যক্তিকে চারজনের বেশি স্ত্রী রাখা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়াও এ আয়াতে একাধিক স্ত্রী রাখার বৈধতার ক্ষেত্রে ইনসাফ ও ন্যায়নিষ্ঠ ব্যবহার করাকে শর্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যে ব্যক্তি ইনসাফের শর্ত পূরণ না করে একাধিক স্ত্রী রাখার বৈধতার সুযোগ গ্রহণ করে, সে মূলত আল্লাহর সাথে প্রতারণা করে। আর যারা স্ত্রীদের সাথে ইনসাফ করে না, ইসলামী সরকারের আদালতসমূহ তাদের অভিযোগ শুনে সে ব্যাপারে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।
সাধ্যানুযায়ী সমতা রক্ষা করতে হবে :
وَلَنْ تَسْتَطِيْعُوْاۤ اَنْ تَعْدِلُوْا بَيْنَ النِّسَآءِ وَلَوْ حَرَصْتُمْ فَلَا تَمِيْلُوْا كُلَّ الْمَيْلِ فَتَذَرُوْهَا كَالْمُعَلَّقَةِؕ وَاِنْ تُصْلِحُوْا وَتَتَّقُوْا فَاِنَّ اللهَ كَانَ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا
তোমরা যতই ইচ্ছা কর না কেন তোমাদের স্ত্রীদের প্রতি সমান ব্যবহার করতে পারবে না, তবে তোমরা কোন একজনের দিকে সম্পূর্ণভাবে ঝুঁকে পড়ো না ও অপরকে ঝুলানো অবস্থায় রেখো না। যদি তোমরা নিজেদেরকে সংশোধন করে নাও এবং সাবধান হয়ে যাও, তবে নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা নিসা- ১২৯)
ব্যাখ্যা : মানুষ সবসময় একাধিক স্ত্রীদের মধ্যে সবদিক দিয়ে পূর্ণ সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। স্ত্রীদের মধ্যে প্রকৃতিগতভাবে বিভিন্ন পার্থক্য থাকতে পারে। এর ফলে স্বভাবতই এক স্ত্রীর প্রতি আকর্ষণ বেশি ও অন্য স্ত্রীর প্রতি কম হতে পারে। কিন্তু স্বামী যদি ইচ্ছা করে কোন স্ত্রীর প্রতি যুলুম না করে এবং ইনসাফ ও ন্যায়নিষ্ঠার পরিচয় দিতে থাকে, তাহলে অক্ষমতার কারণে সামান্য ভুল-ত্রুটি হয়ে গেলে আল্লাহ তা ÿমা করে দেবেন।
সমতা রক্ষা করতে না পারলে একজনকেই বিয়ে করবে :
فَاِنْ خِفْتُمْ اَلَّا تَعْدِلُوْا فَوَاحِدَةً اَوْ مَا مَلَكَتْ اَيْمَانُكُمْؕ ذٰلِكَ اَدْنٰۤى اَلَّا تَعُوْلُوْا
কিন্তু যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, (একাধিক স্ত্রীর মধ্যে) ন্যায়বিচার করতে পারবে না, তবে একটি (বিয়ে করো) অথবা তোমাদের ডান হাত যার অধিকারী হয় (ক্রীতদাসী)। এটা অবিচার না করার নিকটবর্তী (পন্থা)। (সূরা নিসা - ৩)
قَالَ اِنِّۤيْ اُرِيْدُ اَنْ اُنْكِحَكَ اِحْدَى ابْنَتَيَّ هَاتَيْنِ عَلٰۤى اَنْ تَأْجُرَنِيْ ثَمَانِيْ حِجَجٍ
সে বলল, আমি আমার এ কন্যাদ্বয়ের একজনকে তোমার সঙ্গে বিবাহ দিতে চাই- এ শর্তে যে, তুমি আট বছর আমার কাজ করবে। (সূরা ক্বাসাস- ২৭)
বিয়ে গোপনে নয়, প্রকাশ্যে হতে হবে :
فَانْكِحُوْهُنَّ بِاِذْنِ اَهْلِهِنَّ وَاٰتُوْهُنَّ اُجُوْرَهُنَّ بِالْمَعْرُوْفِ
সুতরাং তোমরা তাদেরকে বিয়ে করবে তাদের পরিবারের (অভিভাবকের) অনুমতিক্রমে এবং ন্যায়সঙ্গতভাবে তাদের মোহর দিয়ে দেবে। (সূরা নিসা- ২৫)
একসাথে সর্বোচ্চ চারজন স্ত্রী রাখা যায় :
وَاِنْ خِفْتُمْ اَلَّا تُقْسِطُوْا فِى الْيَتَامٰى فَانْكِحُوْا مَا طَابَ لَكُمْ مِّنَ النِّسَآءِ مَثْنٰى وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ
যদি তোমরা ভয় কর যে ইয়াতীম মেয়েদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তবে নারীদের মধ্য হতে তোমাদের পছন্দ অনুযায়ী দু’জন, তিনজন অথবা চারজনকে বিয়ে করে নাও। (সূরা নিসা- ৩)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতের মাধ্যেমে স্ত্রীর সংখ্যা সীমিত করে দেয়া হয়েছে এবং একসাথে এক ব্যক্তিকে চারজনের বেশি স্ত্রী রাখা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়াও এ আয়াতে একাধিক স্ত্রী রাখার বৈধতার ক্ষেত্রে ইনসাফ ও ন্যায়নিষ্ঠ ব্যবহার করাকে শর্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যে ব্যক্তি ইনসাফের শর্ত পূরণ না করে একাধিক স্ত্রী রাখার বৈধতার সুযোগ গ্রহণ করে, সে মূলত আল্লাহর সাথে প্রতারণা করে। আর যারা স্ত্রীদের সাথে ইনসাফ করে না, ইসলামী সরকারের আদালতসমূহ তাদের অভিযোগ শুনে সে ব্যাপারে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।
সাধ্যানুযায়ী সমতা রক্ষা করতে হবে :
وَلَنْ تَسْتَطِيْعُوْاۤ اَنْ تَعْدِلُوْا بَيْنَ النِّسَآءِ وَلَوْ حَرَصْتُمْ فَلَا تَمِيْلُوْا كُلَّ الْمَيْلِ فَتَذَرُوْهَا كَالْمُعَلَّقَةِؕ وَاِنْ تُصْلِحُوْا وَتَتَّقُوْا فَاِنَّ اللهَ كَانَ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا
তোমরা যতই ইচ্ছা কর না কেন তোমাদের স্ত্রীদের প্রতি সমান ব্যবহার করতে পারবে না, তবে তোমরা কোন একজনের দিকে সম্পূর্ণভাবে ঝুঁকে পড়ো না ও অপরকে ঝুলানো অবস্থায় রেখো না। যদি তোমরা নিজেদেরকে সংশোধন করে নাও এবং সাবধান হয়ে যাও, তবে নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা নিসা- ১২৯)
ব্যাখ্যা : মানুষ সবসময় একাধিক স্ত্রীদের মধ্যে সবদিক দিয়ে পূর্ণ সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। স্ত্রীদের মধ্যে প্রকৃতিগতভাবে বিভিন্ন পার্থক্য থাকতে পারে। এর ফলে স্বভাবতই এক স্ত্রীর প্রতি আকর্ষণ বেশি ও অন্য স্ত্রীর প্রতি কম হতে পারে। কিন্তু স্বামী যদি ইচ্ছা করে কোন স্ত্রীর প্রতি যুলুম না করে এবং ইনসাফ ও ন্যায়নিষ্ঠার পরিচয় দিতে থাকে, তাহলে অক্ষমতার কারণে সামান্য ভুল-ত্রুটি হয়ে গেলে আল্লাহ তা ÿমা করে দেবেন।
সমতা রক্ষা করতে না পারলে একজনকেই বিয়ে করবে :
فَاِنْ خِفْتُمْ اَلَّا تَعْدِلُوْا فَوَاحِدَةً اَوْ مَا مَلَكَتْ اَيْمَانُكُمْؕ ذٰلِكَ اَدْنٰۤى اَلَّا تَعُوْلُوْا
কিন্তু যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, (একাধিক স্ত্রীর মধ্যে) ন্যায়বিচার করতে পারবে না, তবে একটি (বিয়ে করো) অথবা তোমাদের ডান হাত যার অধিকারী হয় (ক্রীতদাসী)। এটা অবিচার না করার নিকটবর্তী (পন্থা)। (সূরা নিসা - ৩)
মোহরের বিনিময়েই স্ত্রী হালাল হয় :
وَاُحِلَّ لَكُمْ مَّا وَرَآءَ ذٰلِكُمْ اَنْ تَبْتَغُوْا بِاَمْوَالِكُمْ مُّحْصِنِيْنَ غَيْرَ مُسَافِحِيْنَ
এদের ছাড়া অন্যান্য নারীদেরকে বিয়ে করা তোমাদের জন্য হালাল- এ শর্তে যে, তোমরা তাদেরকে সম্পদের (মোহরানার) বিনিময়ে বিয়ে করার জন্য কামনা করবে, ব্যভিচারের জন্য নয়। (সূরা নিসা- ২৪)
মোহরানা আদায় করা স্বামীর উপর ফরয :
فَاٰتُوْهُنَّ اُجُوْرَهُنَّ فَرِيْضَةً
তাদের ধার্যকৃত মোহর তাদেরকে দিয়ে দেবে। (সূরা নিসা- ২৪)
খুশি মনে স্ত্রীর মোহর দিতে হবে :
وَاٰتُوا النِّسَآءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً
নারীদেরকে সন্তুষ্টচিত্তে তাদের মোহর দিয়ে দাও। (সূরা নিসা- ৪)
স্ত্রী স্বেচ্ছায় ক্ষমা করে দিলে স্বামী গোনাহগার হবে না :
وَاٰتُوا النِّسَآءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً فَاِنْ طِبْنَ لَكُمْ عَنْ شَيْءٍ مِّنْهُ نَفْسًا فَكُلُوْهُ هَنِيْٓئًا مَّرِيْٓئًا
নারীদেরকে তাদের মোহর প্রদান করো, কিন্তু যদি তারা সন্তুষ্টচিত্তে (মোহরের) কিছু অংশ তোমাদেরকে দিয়ে দেয়, তবে (তা) তৃপ্তির সাথে ভোগ করো। (সূরা নিসা- ৪)
মোহর ঠিক করার পরেও স্বামী-স্ত্রী কমবেশি করতে পারে :
وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيْمَا تَرَاضَيْتُمْ بِهٖ مِنْ ۢبَعْدِ الْفَرِيْضَةِؕ اِنَّ اللهَ كَانَ عَلِيْمًا حَكِيْمًا
যদি মোহর ধার্য করার পরও কোন বিষয়ে তোমরা উভয়ে একমত হও, তবে তোমাদের কোন গোনাহ হবে না। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা- ২৪)
সহবাসের আগে তালাক দিলেও অর্ধেক মোহর দিতে হবে :
وَاِنْ طَلَّقْتُمُوْهُنَّ مِنْ قَبْلِ اَنْ تَمَسُّوْهُنَّ وَقَدْ فَرَضْتُمْ لَهُنَّ فَرِيْضَةً فَنِصْفُ مَا فَرَضْتُمْ
যদি তোমরা মোহর ধার্য করার পর তাদেরকে স্পর্শ করার পূর্বেই তালাক দিয়ে দাও, তবে যা (মোহর হিসেবে) নির্ধারণ করেছ (স্ত্রী) তার অর্ধেক পাবে। (সূরা বাক্বারা- ২৩৭)
ব্যাখ্যা : সম্পর্ক স্থাপন করার পর ভেঙে দেয়ার কারণে স্ত্রীলোকের অবশ্যই কিছু না কিছু ক্ষতি হয়ে যায়। সাধ্যমতো এ ক্ষতি পূরণ করার জন্যই আল্লাহ এ নির্দেশ দিয়েছেন।
অনেক মোহরানা দিলেও তা ফেরত নেয়া যাবে না :
وَاِنْ اَرَدْتُّمُ اسْتِبْدَالَ زَوْجٍ مَّكَانَ زَوْجٍ وَّاٰتَيْتُمْ اِحْدَاهُنَّ قِنْطَارًا فَلَا تَأْخُذُوْا مِنْهُ شَيْئًاؕ اَتَأْخُذُوْنَهٗ بُهْتَانًا وَّاِثْمًا مُّبِيْنًا ‐ وَكَيْفَ تَأْخُذُوْنَهٗ وَقَدْ اَفْضٰى بَعْضُكُمْ اِلٰى بَعْضٍ وَّاَخَذْنَ مِنْكُمْ مِّيْثَاقًا غَلِيْظًا
আর যদি তোমরা এক স্ত্রীর পরিবর্তে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করতে চাও এবং তাদের কাউকে অঢেল সম্পদও দিয়ে থাক, তবুও তা থেকে কিছুই গ্রহণ করবে না। তোমরা কি তা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপাচারের মাধ্যমে গ্রহণ করতে চাও। আর কীভাবে তোমরা তা গ্রহণ করবে, অথচ তোমরা একে অপরের সাথে মিলিত হয়েছ এবং তোমাদের নিকট থেকে তারা (স্ত্রীরা) দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়েছে। (সূরা নিসা- ২০, ২১)
জোরপূর্বক নারীদের উত্তরাধিকারী হওয়া হালাল নয় :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا يَحِلُّ لَكُمْ اَنْ تَرِثُوا النِّسَآءَ كَرْهًاؕ وَلَا تَعْضُلُوْهُنَّ لِتَذْهَبُوْا بِبَعْضِ مَاۤ اٰتَيْتُمُوْهُنَّ اِلَّاۤ اَنْ يَّأْتِيْنَ بِفَاحِشَةٍ مُّبَيِّنَةٍۚ وَعَاشِرُوْهُنَّ بِالْمَعْرُوْفِ
হে ঈমানদারগণ! জোরপূর্বক নারীদের উত্তরাধিকারী হওয়া তোমাদের জন্য হালাল নয়। আর তোমরা তাদেরকে যা দিয়েছ তা গ্রহণ করার উদ্দেশ্যে বন্দি করে রেখো না, কিন্তু তারা যদি প্রকাশ্যে ব্যভিচারে লিপ্ত হয় (তাহলে ভিন্ন কথা)। আর তোমরা তাদের সাথে সুন্দরভাবে জীবন-যাপন করো। (সূরা নিসা- ১৯)
শানে নুযূল : জাহেলীযুগে নিয়ম ছিল, পিতার মৃত্যুর পর ছেলেরা সৎমাতাকে গৃহে আবদ্ধ রেখে তার উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পদ আত্মসাৎ করে নিত। ছেলে না থাকলে মৃত ব্যক্তির ভাইয়েরা ভাইয়ের স্ত্রীকে নানা উপায়ে কষ্ট দিয়ে তার সম্পত্তি আত্মসাৎ করত। এ অন্যায় বন্ধ করার জন্য উক্ত আয়াতটি নাযিল হয়।
وَاُحِلَّ لَكُمْ مَّا وَرَآءَ ذٰلِكُمْ اَنْ تَبْتَغُوْا بِاَمْوَالِكُمْ مُّحْصِنِيْنَ غَيْرَ مُسَافِحِيْنَ
এদের ছাড়া অন্যান্য নারীদেরকে বিয়ে করা তোমাদের জন্য হালাল- এ শর্তে যে, তোমরা তাদেরকে সম্পদের (মোহরানার) বিনিময়ে বিয়ে করার জন্য কামনা করবে, ব্যভিচারের জন্য নয়। (সূরা নিসা- ২৪)
মোহরানা আদায় করা স্বামীর উপর ফরয :
فَاٰتُوْهُنَّ اُجُوْرَهُنَّ فَرِيْضَةً
তাদের ধার্যকৃত মোহর তাদেরকে দিয়ে দেবে। (সূরা নিসা- ২৪)
খুশি মনে স্ত্রীর মোহর দিতে হবে :
وَاٰتُوا النِّسَآءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً
নারীদেরকে সন্তুষ্টচিত্তে তাদের মোহর দিয়ে দাও। (সূরা নিসা- ৪)
স্ত্রী স্বেচ্ছায় ক্ষমা করে দিলে স্বামী গোনাহগার হবে না :
وَاٰتُوا النِّسَآءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً فَاِنْ طِبْنَ لَكُمْ عَنْ شَيْءٍ مِّنْهُ نَفْسًا فَكُلُوْهُ هَنِيْٓئًا مَّرِيْٓئًا
নারীদেরকে তাদের মোহর প্রদান করো, কিন্তু যদি তারা সন্তুষ্টচিত্তে (মোহরের) কিছু অংশ তোমাদেরকে দিয়ে দেয়, তবে (তা) তৃপ্তির সাথে ভোগ করো। (সূরা নিসা- ৪)
মোহর ঠিক করার পরেও স্বামী-স্ত্রী কমবেশি করতে পারে :
وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيْمَا تَرَاضَيْتُمْ بِهٖ مِنْ ۢبَعْدِ الْفَرِيْضَةِؕ اِنَّ اللهَ كَانَ عَلِيْمًا حَكِيْمًا
যদি মোহর ধার্য করার পরও কোন বিষয়ে তোমরা উভয়ে একমত হও, তবে তোমাদের কোন গোনাহ হবে না। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা- ২৪)
সহবাসের আগে তালাক দিলেও অর্ধেক মোহর দিতে হবে :
وَاِنْ طَلَّقْتُمُوْهُنَّ مِنْ قَبْلِ اَنْ تَمَسُّوْهُنَّ وَقَدْ فَرَضْتُمْ لَهُنَّ فَرِيْضَةً فَنِصْفُ مَا فَرَضْتُمْ
যদি তোমরা মোহর ধার্য করার পর তাদেরকে স্পর্শ করার পূর্বেই তালাক দিয়ে দাও, তবে যা (মোহর হিসেবে) নির্ধারণ করেছ (স্ত্রী) তার অর্ধেক পাবে। (সূরা বাক্বারা- ২৩৭)
ব্যাখ্যা : সম্পর্ক স্থাপন করার পর ভেঙে দেয়ার কারণে স্ত্রীলোকের অবশ্যই কিছু না কিছু ক্ষতি হয়ে যায়। সাধ্যমতো এ ক্ষতি পূরণ করার জন্যই আল্লাহ এ নির্দেশ দিয়েছেন।
অনেক মোহরানা দিলেও তা ফেরত নেয়া যাবে না :
وَاِنْ اَرَدْتُّمُ اسْتِبْدَالَ زَوْجٍ مَّكَانَ زَوْجٍ وَّاٰتَيْتُمْ اِحْدَاهُنَّ قِنْطَارًا فَلَا تَأْخُذُوْا مِنْهُ شَيْئًاؕ اَتَأْخُذُوْنَهٗ بُهْتَانًا وَّاِثْمًا مُّبِيْنًا ‐ وَكَيْفَ تَأْخُذُوْنَهٗ وَقَدْ اَفْضٰى بَعْضُكُمْ اِلٰى بَعْضٍ وَّاَخَذْنَ مِنْكُمْ مِّيْثَاقًا غَلِيْظًا
আর যদি তোমরা এক স্ত্রীর পরিবর্তে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করতে চাও এবং তাদের কাউকে অঢেল সম্পদও দিয়ে থাক, তবুও তা থেকে কিছুই গ্রহণ করবে না। তোমরা কি তা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপাচারের মাধ্যমে গ্রহণ করতে চাও। আর কীভাবে তোমরা তা গ্রহণ করবে, অথচ তোমরা একে অপরের সাথে মিলিত হয়েছ এবং তোমাদের নিকট থেকে তারা (স্ত্রীরা) দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়েছে। (সূরা নিসা- ২০, ২১)
জোরপূর্বক নারীদের উত্তরাধিকারী হওয়া হালাল নয় :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا يَحِلُّ لَكُمْ اَنْ تَرِثُوا النِّسَآءَ كَرْهًاؕ وَلَا تَعْضُلُوْهُنَّ لِتَذْهَبُوْا بِبَعْضِ مَاۤ اٰتَيْتُمُوْهُنَّ اِلَّاۤ اَنْ يَّأْتِيْنَ بِفَاحِشَةٍ مُّبَيِّنَةٍۚ وَعَاشِرُوْهُنَّ بِالْمَعْرُوْفِ
হে ঈমানদারগণ! জোরপূর্বক নারীদের উত্তরাধিকারী হওয়া তোমাদের জন্য হালাল নয়। আর তোমরা তাদেরকে যা দিয়েছ তা গ্রহণ করার উদ্দেশ্যে বন্দি করে রেখো না, কিন্তু তারা যদি প্রকাশ্যে ব্যভিচারে লিপ্ত হয় (তাহলে ভিন্ন কথা)। আর তোমরা তাদের সাথে সুন্দরভাবে জীবন-যাপন করো। (সূরা নিসা- ১৯)
শানে নুযূল : জাহেলীযুগে নিয়ম ছিল, পিতার মৃত্যুর পর ছেলেরা সৎমাতাকে গৃহে আবদ্ধ রেখে তার উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পদ আত্মসাৎ করে নিত। ছেলে না থাকলে মৃত ব্যক্তির ভাইয়েরা ভাইয়ের স্ত্রীকে নানা উপায়ে কষ্ট দিয়ে তার সম্পত্তি আত্মসাৎ করত। এ অন্যায় বন্ধ করার জন্য উক্ত আয়াতটি নাযিল হয়।
পুরুষরা নারীদের পরিচালক হবে :
اَلرِّجَالُ قَوَّامُوْنَ عَلَى النِّسَآءِ بِمَا فَضَّلَ اللهُ بَعْضَهُمْ عَلٰى بَعْضٍ وَّبِمَاۤ اَنْفَقُوْا مِنْ اَمْوَالِهِمْ
পুরুষরা নারীদের কর্তা, আল্লাহ তাদেরকে একে অপরের উপর কিছু শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। কেননা পুরুষরা (নারীদের জন্য) তাদের ধনসম্পদ ব্যয় করে। (সূরা নিসা- ৩৪)
ব্যাখ্যা : এখানে শ্রেষ্ঠত্ব শব্দটি সম্মান ও মর্যাদা অর্থে ব্যবহার করা হয়নি। বরং এখানে এর অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ তাদের এক পক্ষকে তথা পুরুষদেরকে প্রকৃতিগতভাবে এমনসব বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলি দান করেছেন, যা অন্য পক্ষকে তথা নারীদেরকে দেননি অথবা দিলেও প্রথম পক্ষের চেয়ে কম দিয়েছেন। এজন্য পারিবারিক ব্যবস্থাপনায় পুরুষই ‘কাওয়াম’ বা কর্তা হওয়ার যোগ্যতা রাখে। আর নারীকে প্রাকৃতিক দিক দিয়ে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যার কারণে পারিবারিক জীবনে তাকে পুরুষের হেফাজত ও তত্বাবধানে থাকা উচিত।
পুরুষরা সামর্থ্যানুযায়ী নারীদের ব্যয়ভার বহন করবে :
لِيُنْفِقْ ذُوْ سَعَةٍ مِّنْ سَعَتِهٖؕ وَمَنْ قُدِرَ عَلَيْهِ رِزْقُهٗ فَلْيُنْفِقْ مِمَّاۤ اٰتَاهُ اللهُؕ لَا يُكَلِّفُ اللهُ نَفْسًا اِلَّا مَاۤ اٰتَاهَاؕ سَيَجْعَلُ اللهُ بَعْدَ عُسْرٍ يُّسْرًا
সামর্থ্যবান ব্যক্তি নিজ সামর্থ্যানুযায়ী ব্যয় করবে এবং যার জীবনোপকরণ সীমিত সে আল্লাহ যা দান করেছেন তা হতে ব্যয় করবে। আল্লাহ যাকে যে সামর্থ্য দিয়েছেন তার চেয়ে অতিরিক্ত বোঝা তিনি তার উপর চাপিয়ে দেন না। অচিরেই আল্লাহ কষ্টের পর সুখ (সহজতা) আনয়ন করবেন। (সূরা তালাক্ব- ৭)
পুরুষদের উপর স্ত্রীদেরও অধিকার রয়েছে :
وَلَهُنَّ مِثْلُ الَّذِيْ عَلَيْهِنَّ بِالْمَعْرُوْفِ۪ وَلِلرِّجَالِ عَلَيْهِنَّ دَرَجَةٌؕ وَاللهُ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
মহিলাদের জন্যও ন্যায়সঙ্গত অধিকার রয়েছে যেভাবে তাদের উপর পুরুষদের অধিকার রয়েছে। তবে তাদের উপর পুরুষদের মর্যাদা একটু বেশি রয়েছে। আর আল্লাহ পরাক্রমশালী ও মহাবিজ্ঞ। (সূরা বাক্বারা- ২২৮)
স্ত্রীকে খুশি করার জন্য কোন গোনাহের কাজ করা যাবে না :
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ لِمَ تُحَرِّمُ مَاۤ اَحَلَّ اللهُ لَكَۚ تَبْتَغِيْ مَرْضَاتَ اَزْوَاجِكَؕ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
হে নবী! আল্লাহ তোমার জন্য যা হালাল করেছেন তুমি তা কেন হারাম করেছ? তুমি কি তোমার স্ত্রীদের সন্তুষ্ট করতে চাচ্ছ? আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা তাহরীম- ১)
হায়েয অবস্থায় সহবাস করা যাবে না :
وَيَسْاَلُوْنَكَ عَنِ الْمَحِيْضِؕ قُلْ هُوَ اَذًى فَاعْتَزِلُوا النِّسَآءَ فِى الْمَحِيْضِ وَلَا تَقْرَبُوْهُنَّ حَتّٰى يَطْهُرْنَۚ فَاِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوْهُنَّ مِنْ حَيْثُ اَمَرَكُمُ اللهُؕ اِنَّ اللهَ يُحِبُّ التَّوَّابِيْنَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِيْنَ
(হে নবী!) তারা তোমাকে হায়েয সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বলো, তা খুবই কষ্টদায়ক। সুতরাং হায়েযের সময় তোমরা সহবাস করা থেকে দূরে থাকো। তারা পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তোমরা তাদের সাথে মেলামেশা করো না। আর যখন তারা (মাসিক থেকে) পবিত্র হয়ে যায়, তখন তোমরা আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় তাদের সাথে মেলামেশা করো। নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদেরকে ভালোবাসেন এবং পবিত্রতা অবলম্বনকারীদেরকেও ভালোবাসেন। (সূরা বাক্বারা- ২২২)
ব্যাখ্যা : اَذٰى (আযা) শব্দের অর্থ হচ্ছে, কষ্ট, অপরিচ্ছন্নতা। আবার এটি রোগ-ব্যাধির অর্থেও ব্যবহৃত হয়। হায়েয কেবলমাত্র একটি অশুচিতা (অপবিত্রতা) নয় বরং চিকিৎসা শাস্ত্রের দৃষ্টিতেও এ অবস্থাটি সুস্থতার তুলনায় অসুস্থতারই বেশি কাছাকাছি। এখানে ‘‘দূরে থাকা’’ ও ‘‘ধারে-কাছে না যাওয়া’’ শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু এর অর্থ এ নয় যে, ঋতুবতী নারীর সাথে এক বিছানায় বসা বা এক সাথে খাওয়া-দাওয়া করা যাবে না। রাসূল ﷺ এ নির্দেশটির যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা থেকে বুঝা যায়, ঋতুবতী অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে কেবলমাত্র সহবাস ছাড়া বাকি সকল প্রকার সম্পর্ক বজায় রাখা যাবে।
স্ত্রীদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে :
وَعَاشِرُوْهُنَّ بِالْمَعْرُوْفِ
তোমরা তাদের সাথে সুন্দরভাবে জীবন-যাপন করো। (সূরা নিসা- ১৯)
স্ত্রীদের ছোটখাট ভুল-ত্রুটি উপেক্ষা করতে হবে :
وَاِنْ تَعْفُوْا وَتَصْفَحُوْا وَتَغْفِرُوْا فَاِنَّ اللّٰهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
তোমরা যদি তাদেরকে মার্জনা কর, তাদের দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা কর এবং তাদেরকে ক্ষমা কর, তবে আল্লাহও মহাক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা তাগাবুন- ১৪)
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক একেবারে ঘনিষ্ঠ :
هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَاَنْتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ
তারা তোমাদের জন্য আবরণ এবং তোমরা তাদের জন্য আবরণস্বরূপ। (সূরা বাক্বারা- ১৮৭)
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার ভালোবাসা আল্লাহর নিদর্শন :
وَمِنْ اٰيَاتِهٖۤ اَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِّنْ اَنْفُسِكُمْ اَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوْاۤ اِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَّوَدَّةً وَّرَحْمَةًؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ
তাঁর দৃষ্টান্তগুলোর মধ্যে একটি এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের নিজেদের মধ্য থেকে স্ত্রীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি লাভ করতে পার। অতঃপর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করে দিয়েছেন। নিশ্চয় এতে ঐসব লোকের জন্য নিদর্শন রয়েছে, যারা গভীরভাবে চিন্তা করে। (সূরা রূম- ২১)
اَلرِّجَالُ قَوَّامُوْنَ عَلَى النِّسَآءِ بِمَا فَضَّلَ اللهُ بَعْضَهُمْ عَلٰى بَعْضٍ وَّبِمَاۤ اَنْفَقُوْا مِنْ اَمْوَالِهِمْ
পুরুষরা নারীদের কর্তা, আল্লাহ তাদেরকে একে অপরের উপর কিছু শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। কেননা পুরুষরা (নারীদের জন্য) তাদের ধনসম্পদ ব্যয় করে। (সূরা নিসা- ৩৪)
ব্যাখ্যা : এখানে শ্রেষ্ঠত্ব শব্দটি সম্মান ও মর্যাদা অর্থে ব্যবহার করা হয়নি। বরং এখানে এর অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ তাদের এক পক্ষকে তথা পুরুষদেরকে প্রকৃতিগতভাবে এমনসব বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলি দান করেছেন, যা অন্য পক্ষকে তথা নারীদেরকে দেননি অথবা দিলেও প্রথম পক্ষের চেয়ে কম দিয়েছেন। এজন্য পারিবারিক ব্যবস্থাপনায় পুরুষই ‘কাওয়াম’ বা কর্তা হওয়ার যোগ্যতা রাখে। আর নারীকে প্রাকৃতিক দিক দিয়ে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যার কারণে পারিবারিক জীবনে তাকে পুরুষের হেফাজত ও তত্বাবধানে থাকা উচিত।
পুরুষরা সামর্থ্যানুযায়ী নারীদের ব্যয়ভার বহন করবে :
لِيُنْفِقْ ذُوْ سَعَةٍ مِّنْ سَعَتِهٖؕ وَمَنْ قُدِرَ عَلَيْهِ رِزْقُهٗ فَلْيُنْفِقْ مِمَّاۤ اٰتَاهُ اللهُؕ لَا يُكَلِّفُ اللهُ نَفْسًا اِلَّا مَاۤ اٰتَاهَاؕ سَيَجْعَلُ اللهُ بَعْدَ عُسْرٍ يُّسْرًا
সামর্থ্যবান ব্যক্তি নিজ সামর্থ্যানুযায়ী ব্যয় করবে এবং যার জীবনোপকরণ সীমিত সে আল্লাহ যা দান করেছেন তা হতে ব্যয় করবে। আল্লাহ যাকে যে সামর্থ্য দিয়েছেন তার চেয়ে অতিরিক্ত বোঝা তিনি তার উপর চাপিয়ে দেন না। অচিরেই আল্লাহ কষ্টের পর সুখ (সহজতা) আনয়ন করবেন। (সূরা তালাক্ব- ৭)
পুরুষদের উপর স্ত্রীদেরও অধিকার রয়েছে :
وَلَهُنَّ مِثْلُ الَّذِيْ عَلَيْهِنَّ بِالْمَعْرُوْفِ۪ وَلِلرِّجَالِ عَلَيْهِنَّ دَرَجَةٌؕ وَاللهُ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
মহিলাদের জন্যও ন্যায়সঙ্গত অধিকার রয়েছে যেভাবে তাদের উপর পুরুষদের অধিকার রয়েছে। তবে তাদের উপর পুরুষদের মর্যাদা একটু বেশি রয়েছে। আর আল্লাহ পরাক্রমশালী ও মহাবিজ্ঞ। (সূরা বাক্বারা- ২২৮)
স্ত্রীকে খুশি করার জন্য কোন গোনাহের কাজ করা যাবে না :
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ لِمَ تُحَرِّمُ مَاۤ اَحَلَّ اللهُ لَكَۚ تَبْتَغِيْ مَرْضَاتَ اَزْوَاجِكَؕ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
হে নবী! আল্লাহ তোমার জন্য যা হালাল করেছেন তুমি তা কেন হারাম করেছ? তুমি কি তোমার স্ত্রীদের সন্তুষ্ট করতে চাচ্ছ? আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা তাহরীম- ১)
হায়েয অবস্থায় সহবাস করা যাবে না :
وَيَسْاَلُوْنَكَ عَنِ الْمَحِيْضِؕ قُلْ هُوَ اَذًى فَاعْتَزِلُوا النِّسَآءَ فِى الْمَحِيْضِ وَلَا تَقْرَبُوْهُنَّ حَتّٰى يَطْهُرْنَۚ فَاِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوْهُنَّ مِنْ حَيْثُ اَمَرَكُمُ اللهُؕ اِنَّ اللهَ يُحِبُّ التَّوَّابِيْنَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِيْنَ
(হে নবী!) তারা তোমাকে হায়েয সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বলো, তা খুবই কষ্টদায়ক। সুতরাং হায়েযের সময় তোমরা সহবাস করা থেকে দূরে থাকো। তারা পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তোমরা তাদের সাথে মেলামেশা করো না। আর যখন তারা (মাসিক থেকে) পবিত্র হয়ে যায়, তখন তোমরা আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় তাদের সাথে মেলামেশা করো। নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদেরকে ভালোবাসেন এবং পবিত্রতা অবলম্বনকারীদেরকেও ভালোবাসেন। (সূরা বাক্বারা- ২২২)
ব্যাখ্যা : اَذٰى (আযা) শব্দের অর্থ হচ্ছে, কষ্ট, অপরিচ্ছন্নতা। আবার এটি রোগ-ব্যাধির অর্থেও ব্যবহৃত হয়। হায়েয কেবলমাত্র একটি অশুচিতা (অপবিত্রতা) নয় বরং চিকিৎসা শাস্ত্রের দৃষ্টিতেও এ অবস্থাটি সুস্থতার তুলনায় অসুস্থতারই বেশি কাছাকাছি। এখানে ‘‘দূরে থাকা’’ ও ‘‘ধারে-কাছে না যাওয়া’’ শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু এর অর্থ এ নয় যে, ঋতুবতী নারীর সাথে এক বিছানায় বসা বা এক সাথে খাওয়া-দাওয়া করা যাবে না। রাসূল ﷺ এ নির্দেশটির যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা থেকে বুঝা যায়, ঋতুবতী অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে কেবলমাত্র সহবাস ছাড়া বাকি সকল প্রকার সম্পর্ক বজায় রাখা যাবে।
স্ত্রীদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে :
وَعَاشِرُوْهُنَّ بِالْمَعْرُوْفِ
তোমরা তাদের সাথে সুন্দরভাবে জীবন-যাপন করো। (সূরা নিসা- ১৯)
স্ত্রীদের ছোটখাট ভুল-ত্রুটি উপেক্ষা করতে হবে :
وَاِنْ تَعْفُوْا وَتَصْفَحُوْا وَتَغْفِرُوْا فَاِنَّ اللّٰهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
তোমরা যদি তাদেরকে মার্জনা কর, তাদের দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা কর এবং তাদেরকে ক্ষমা কর, তবে আল্লাহও মহাক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা তাগাবুন- ১৪)
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক একেবারে ঘনিষ্ঠ :
هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَاَنْتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ
তারা তোমাদের জন্য আবরণ এবং তোমরা তাদের জন্য আবরণস্বরূপ। (সূরা বাক্বারা- ১৮৭)
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার ভালোবাসা আল্লাহর নিদর্শন :
وَمِنْ اٰيَاتِهٖۤ اَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِّنْ اَنْفُسِكُمْ اَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوْاۤ اِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَّوَدَّةً وَّرَحْمَةًؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ
তাঁর দৃষ্টান্তগুলোর মধ্যে একটি এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের নিজেদের মধ্য থেকে স্ত্রীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি লাভ করতে পার। অতঃপর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করে দিয়েছেন। নিশ্চয় এতে ঐসব লোকের জন্য নিদর্শন রয়েছে, যারা গভীরভাবে চিন্তা করে। (সূরা রূম- ২১)
স্ত্রীকে দায়িত্বশীল ও নিষ্ঠাবান হতে হবে :
فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِّلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللهُ
সুতরাং সতী-সধ্বী নারীরা একান্ত অনুগত হয় এবং লোকচক্ষুর অন্তরালে আল্লাহ যা সংরক্ষণ করতে বলেছেন, তা সংরক্ষণ করে। (সূরা নিসা- ৩৪)
স্বামীকে দ্বীনের কাজে বাধা সৃষ্টি করবে না :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنَّ مِنْ اَزْوَاجِكُمْ وَاَوْلَادِكُمْ عَدُوًّا لَّكُمْ فَاحْذَرُوْهُمْ
হে মুমিনগণ! নিশ্চয় তোমাদের স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে কেউ কেউ তোমাদের শত্রু, অতএব তোমরা তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকো। (সূরা তাগাবুন- ১৪)
স্বামীর খিয়ানত করবে না :
ضَرَبَ اللهُ مَثَلًا لِّلَّذِيْنَ كَفَرُوا امْرَاَتَ نُوْحٍ وَّامْرَاَتَ لُوْطٍؕ كَانَتَا تَحْتَ عَبْدَيْنِ مِنْ عِبَادِنَا صَالِحَيْنِ فَخَانَتَاهُمَا فَلَمْ يُغْنِيَا عَنْهُمَا مِنَ اللهِ شَيْئًا وَّقِيْلَ ادْخُلَا النَّارَ مَعَ الدَّاخِلِيْنَ
আল্লাহ কাফিরদের জন্য নূহ ও লূতের স্ত্রীদের দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন, তারা ছিল আমার বান্দাদের মধ্যে দু’জন সৎকর্মপরায়ণ বান্দার অধীন, কিন্তু তারা তাদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। ফলে নূহ ও লূত (উভয়ের কেউই) তাদেরকে আল্লাহর শাস্তি হতে রক্ষা করতে পারল না। অতঃপর তাদেরকে (সে স্ত্রীদেরকে) বলা হলো, জাহান্নামে প্রবেশকারীদের সাথে তোমরাও তাতে প্রবেশ করো। (সূরা তাহরীম- ১০)
স্বামীর গোপন বিষয় প্রকাশ করবে না :
وَاِذْ اَسَرَّ النَّبِيُّ اِلٰى بَعْضِ اَزْوَاجِهٖ حَدِيْثًاۚ فَلَمَّا نَبَّاَتْ بِهٖ وَاَظْهَرَهُ اللهُ عَلَيْهِ عَرَّفَ بَعْضَهٗ وَاَعْرَضَ عَنْ ۢبَعْضٍۚ فَلَمَّا نَبَّاَهَا بِهٖ قَالَتْ مَنْ اَنْۢبَاَكَ هٰذَاؕ قَالَ نَبَّاَنِيَ الْعَلِيْمُ الْخَبِيْرُ
নবী তাঁর স্ত্রীদের একজনকে গোপনে কিছু বলেছিলেন। অতঃপর যখন সে তা অন্যকে বলে দিয়েছিল এবং আল্লাহ নবীকে তা জানিয়ে দিয়েছিলেন, তখন তিনি এ বিষয়ে কিছু প্রকাশ করলেন এবং কিছু গোপন রাখলেন। যখন নবী তাঁর সেই স্ত্রীকে তা জানালেন তখন সে বলল, কে আপনাকে এটা অবহিত করল? নবী বললেন, আমাকে তিনিই অবহিত করেছেন, যিনি সর্বজ্ঞ ও সম্যক অবহিত। (সূরা তাহরীম- ৩)
স্ত্রীদেরকে দুনিয়ায় ভোগবিলাসী না হয়ে আখিরাতমুখী হতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِّاَزْوَاجِكَ اِنْ كُنْتُنَّ تُرِدْنَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا وَزِيْنَتَهَا فَتَعَالَيْنَ اُمَتِّعْكُنَّ وَاُسَرِّحْكُنَّ سَرَاحًا جَمِيْلًا ‐ وَاِنْ كُنْتُنَّ تُرِدْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَالدَّارَ الْاٰخِرَةَ فَاِنَّ اللهَ اَعَدَّ لِلْمُحْسِنَاتِ مِنْكُنَّ اَجْرًا عَظِيْمًا
হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে বলে দিন, যদি তোমরা পার্থিব জীবন ও তার সৌন্দর্য চাও তবে এসো, আমি তোমাদের ভোগের ব্যবস্থা করে দেই এবং তোমাদেরকে সম্মানের সাথে বিদায় দেই। আর যদি তোমরা আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও পরকাল চাও, তবে তোমাদের মধ্যে যারা সৎ আল্লাহ তাদের জন্য বিরাট পুরস্কার প্রস্তুত করে রেখেছেন। (সূরা আহযাব- ২৮, ২৯)
শানে নুযূল : জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আবু বকর (রাঃ) এসে রাসূল ﷺ এর নিকট প্রবেশ করার অনুমতি প্রার্থনা করলেন। তিনি তাঁর দরজায় অনেক লোককে উপবিষ্ট দেখতে পেলেন। তবে তাদের কাউকে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি। তিনি (বর্ণনাকারী) বলেন, এরপর তিনি আবু বকর (রাঃ) কে প্রবেশের অনুমতি প্রদান করলে তিনি প্রবেশ করলেন। এরপর ওমর (রাঃ) এলেন এবং তিনি অনুমতি প্রার্থনা করলেন। তখন তাঁকেও প্রবেশের অনুমতি প্রদান করা হলো। তিনি নবী ﷺ কে চিন্তিত ও নীরবে বসে থাকতে দেখলেন আর তখন তাঁর চতুষ্পার্শ্বে তাঁর সহধর্মিণীগণ উপবিষ্ট ছিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, ওমর (রাঃ) বললেন, নিশ্চয় আমি নবী ﷺ এর নিকট এমন কথা বলব যা তাঁকে হাসাবে। এরপর তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি যদি খারিজার কন্যাকে (ওমর রাঃ এর স্ত্রী) আমার কাছে খোরপোষ তলব করতে দেখতেন তাহলে (তৎক্ষণাৎ) আপনি তাঁর দিকে অগ্রসর হয়ে তার স্কন্ধে আঘাত করতেন। তখন রাসূল ﷺ হেসে উঠলেন এবং বললেন, আমার চতুষ্পার্শ্বে তোমরা যাদেরকে দেখতে পাচ্ছ তারা আমার কাছে খোরপোষ দাবী করছে। অমনি আবু বকর (রাঃ) আয়েশা (রাঃ) এর দিকে ছুটলেন এবং তাঁর গর্দানে আঘাত করলেন। ওমর (রাঃ)ও দাঁড়িয়ে গেলেন এবং হাফসা (রাঃ) এর দিকে অগ্রসর হয়ে তাঁর ঘাড়ে আঘাত করলেন। তাঁরা উভয়ে বললেন, তোমরা নবী ﷺ এর নিকট এমন জিনিস দাবী করছ, যা তাঁর কাছে নেই। তখন তাঁরা (নবী ﷺ এর সহধর্মিণীগণ) বললেন, আল্লাহর কসম! আমরা আর কখনো রাসূল ﷺ এর কাছে এমন জিনিস চাইব না, যা তাঁর কাছে নেই। এরপর তিনি তাঁদের থেকে এক মাস কিংবা ঊনত্রিশ দিন পৃথক রইলেন। অতঃপর তাঁর প্রতি উপরোক্ত আয়াত নাযিল হয়। রাবী বলেন, রাসূল আয়েশা (রাঃ) কে দিয়ে (আয়াতের নির্দেশ তামীল করতে) শুরু করলেন। তখন তিনি বললেন, হে আয়েশা! আমি তোমার কাছে একটি (গুরুত্বপূর্ণ) বিষয়ে আলাপ করতে চাই। তবে সে বিষয়ে তোমার পিতামাতার সঙ্গে পরামর্শ না করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করাই আমি পছন্দ করি। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার ব্যাপারে আমি কি আমার পিতামাতার কাছে পরামর্শ নিতে যাব? (এর কোন প্রয়োজন নেই)। না, বরং আমি আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও আখিরাতকেই বেছে নিয়েছি। তবে আপনার কাছে আমার একান্ত নিবেদন, আমি যা বলেছি সে সম্পর্কে আপনি আপনার অন্যান্য সহধর্মিণীদের কারো কাছে ব্যক্ত করবেন না। তিনি বললেন, তাঁদের যে কেউ সে বিষয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলে আমি অবশ্যই তাঁকে তা বলে দেব। কারণ আল্লাহ আমাকে কঠোরতা আরোপকারী ও অত্যাচারীরূপে নয় বরং সহজ পন্থায় (শিক্ষাদানকারী) হিসেবে প্রেরণ করেছেন। (সহীহ মুসলিম, হা/৩৫৮২)
فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِّلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللهُ
সুতরাং সতী-সধ্বী নারীরা একান্ত অনুগত হয় এবং লোকচক্ষুর অন্তরালে আল্লাহ যা সংরক্ষণ করতে বলেছেন, তা সংরক্ষণ করে। (সূরা নিসা- ৩৪)
স্বামীকে দ্বীনের কাজে বাধা সৃষ্টি করবে না :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنَّ مِنْ اَزْوَاجِكُمْ وَاَوْلَادِكُمْ عَدُوًّا لَّكُمْ فَاحْذَرُوْهُمْ
হে মুমিনগণ! নিশ্চয় তোমাদের স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে কেউ কেউ তোমাদের শত্রু, অতএব তোমরা তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকো। (সূরা তাগাবুন- ১৪)
স্বামীর খিয়ানত করবে না :
ضَرَبَ اللهُ مَثَلًا لِّلَّذِيْنَ كَفَرُوا امْرَاَتَ نُوْحٍ وَّامْرَاَتَ لُوْطٍؕ كَانَتَا تَحْتَ عَبْدَيْنِ مِنْ عِبَادِنَا صَالِحَيْنِ فَخَانَتَاهُمَا فَلَمْ يُغْنِيَا عَنْهُمَا مِنَ اللهِ شَيْئًا وَّقِيْلَ ادْخُلَا النَّارَ مَعَ الدَّاخِلِيْنَ
আল্লাহ কাফিরদের জন্য নূহ ও লূতের স্ত্রীদের দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন, তারা ছিল আমার বান্দাদের মধ্যে দু’জন সৎকর্মপরায়ণ বান্দার অধীন, কিন্তু তারা তাদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। ফলে নূহ ও লূত (উভয়ের কেউই) তাদেরকে আল্লাহর শাস্তি হতে রক্ষা করতে পারল না। অতঃপর তাদেরকে (সে স্ত্রীদেরকে) বলা হলো, জাহান্নামে প্রবেশকারীদের সাথে তোমরাও তাতে প্রবেশ করো। (সূরা তাহরীম- ১০)
স্বামীর গোপন বিষয় প্রকাশ করবে না :
وَاِذْ اَسَرَّ النَّبِيُّ اِلٰى بَعْضِ اَزْوَاجِهٖ حَدِيْثًاۚ فَلَمَّا نَبَّاَتْ بِهٖ وَاَظْهَرَهُ اللهُ عَلَيْهِ عَرَّفَ بَعْضَهٗ وَاَعْرَضَ عَنْ ۢبَعْضٍۚ فَلَمَّا نَبَّاَهَا بِهٖ قَالَتْ مَنْ اَنْۢبَاَكَ هٰذَاؕ قَالَ نَبَّاَنِيَ الْعَلِيْمُ الْخَبِيْرُ
নবী তাঁর স্ত্রীদের একজনকে গোপনে কিছু বলেছিলেন। অতঃপর যখন সে তা অন্যকে বলে দিয়েছিল এবং আল্লাহ নবীকে তা জানিয়ে দিয়েছিলেন, তখন তিনি এ বিষয়ে কিছু প্রকাশ করলেন এবং কিছু গোপন রাখলেন। যখন নবী তাঁর সেই স্ত্রীকে তা জানালেন তখন সে বলল, কে আপনাকে এটা অবহিত করল? নবী বললেন, আমাকে তিনিই অবহিত করেছেন, যিনি সর্বজ্ঞ ও সম্যক অবহিত। (সূরা তাহরীম- ৩)
স্ত্রীদেরকে দুনিয়ায় ভোগবিলাসী না হয়ে আখিরাতমুখী হতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِّاَزْوَاجِكَ اِنْ كُنْتُنَّ تُرِدْنَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا وَزِيْنَتَهَا فَتَعَالَيْنَ اُمَتِّعْكُنَّ وَاُسَرِّحْكُنَّ سَرَاحًا جَمِيْلًا ‐ وَاِنْ كُنْتُنَّ تُرِدْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَالدَّارَ الْاٰخِرَةَ فَاِنَّ اللهَ اَعَدَّ لِلْمُحْسِنَاتِ مِنْكُنَّ اَجْرًا عَظِيْمًا
হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে বলে দিন, যদি তোমরা পার্থিব জীবন ও তার সৌন্দর্য চাও তবে এসো, আমি তোমাদের ভোগের ব্যবস্থা করে দেই এবং তোমাদেরকে সম্মানের সাথে বিদায় দেই। আর যদি তোমরা আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও পরকাল চাও, তবে তোমাদের মধ্যে যারা সৎ আল্লাহ তাদের জন্য বিরাট পুরস্কার প্রস্তুত করে রেখেছেন। (সূরা আহযাব- ২৮, ২৯)
শানে নুযূল : জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আবু বকর (রাঃ) এসে রাসূল ﷺ এর নিকট প্রবেশ করার অনুমতি প্রার্থনা করলেন। তিনি তাঁর দরজায় অনেক লোককে উপবিষ্ট দেখতে পেলেন। তবে তাদের কাউকে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি। তিনি (বর্ণনাকারী) বলেন, এরপর তিনি আবু বকর (রাঃ) কে প্রবেশের অনুমতি প্রদান করলে তিনি প্রবেশ করলেন। এরপর ওমর (রাঃ) এলেন এবং তিনি অনুমতি প্রার্থনা করলেন। তখন তাঁকেও প্রবেশের অনুমতি প্রদান করা হলো। তিনি নবী ﷺ কে চিন্তিত ও নীরবে বসে থাকতে দেখলেন আর তখন তাঁর চতুষ্পার্শ্বে তাঁর সহধর্মিণীগণ উপবিষ্ট ছিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, ওমর (রাঃ) বললেন, নিশ্চয় আমি নবী ﷺ এর নিকট এমন কথা বলব যা তাঁকে হাসাবে। এরপর তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি যদি খারিজার কন্যাকে (ওমর রাঃ এর স্ত্রী) আমার কাছে খোরপোষ তলব করতে দেখতেন তাহলে (তৎক্ষণাৎ) আপনি তাঁর দিকে অগ্রসর হয়ে তার স্কন্ধে আঘাত করতেন। তখন রাসূল ﷺ হেসে উঠলেন এবং বললেন, আমার চতুষ্পার্শ্বে তোমরা যাদেরকে দেখতে পাচ্ছ তারা আমার কাছে খোরপোষ দাবী করছে। অমনি আবু বকর (রাঃ) আয়েশা (রাঃ) এর দিকে ছুটলেন এবং তাঁর গর্দানে আঘাত করলেন। ওমর (রাঃ)ও দাঁড়িয়ে গেলেন এবং হাফসা (রাঃ) এর দিকে অগ্রসর হয়ে তাঁর ঘাড়ে আঘাত করলেন। তাঁরা উভয়ে বললেন, তোমরা নবী ﷺ এর নিকট এমন জিনিস দাবী করছ, যা তাঁর কাছে নেই। তখন তাঁরা (নবী ﷺ এর সহধর্মিণীগণ) বললেন, আল্লাহর কসম! আমরা আর কখনো রাসূল ﷺ এর কাছে এমন জিনিস চাইব না, যা তাঁর কাছে নেই। এরপর তিনি তাঁদের থেকে এক মাস কিংবা ঊনত্রিশ দিন পৃথক রইলেন। অতঃপর তাঁর প্রতি উপরোক্ত আয়াত নাযিল হয়। রাবী বলেন, রাসূল আয়েশা (রাঃ) কে দিয়ে (আয়াতের নির্দেশ তামীল করতে) শুরু করলেন। তখন তিনি বললেন, হে আয়েশা! আমি তোমার কাছে একটি (গুরুত্বপূর্ণ) বিষয়ে আলাপ করতে চাই। তবে সে বিষয়ে তোমার পিতামাতার সঙ্গে পরামর্শ না করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করাই আমি পছন্দ করি। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার ব্যাপারে আমি কি আমার পিতামাতার কাছে পরামর্শ নিতে যাব? (এর কোন প্রয়োজন নেই)। না, বরং আমি আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও আখিরাতকেই বেছে নিয়েছি। তবে আপনার কাছে আমার একান্ত নিবেদন, আমি যা বলেছি সে সম্পর্কে আপনি আপনার অন্যান্য সহধর্মিণীদের কারো কাছে ব্যক্ত করবেন না। তিনি বললেন, তাঁদের যে কেউ সে বিষয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলে আমি অবশ্যই তাঁকে তা বলে দেব। কারণ আল্লাহ আমাকে কঠোরতা আরোপকারী ও অত্যাচারীরূপে নয় বরং সহজ পন্থায় (শিক্ষাদানকারী) হিসেবে প্রেরণ করেছেন। (সহীহ মুসলিম, হা/৩৫৮২)
স্ত্রী সংশোধনের পদ্ধতি :
وَاللَّاتِيْ تَخَافُوْنَ نُشُوْزَهُنَّ فَعِظُوْهُنَّ وَاهْجُرُوْهُنَّ فِى المَضَاجِعِ وَاضْرِبُوْهُنَّۚ فَاِنْ اَطَعْنَكُمْ فَلَا تَبْغُوْا عَلَيْهِنَّ سَبِيْلًاؕ اِنَّ اللهَ كَانَ عَلِيًّا كَبِيْرًا
তোমরা স্ত্রীদের মধ্যে যাদের অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদেরকে সদুপদেশ দাও। তারপর (যদি না মানে তবে) তাদের বিছানা ত্যাগ করো এবং (তারপরও যদি না মানে তবে) তাদেরকে প্রহার করো। অতঃপর যদি তারা তোমাদের অনুগত হয়, তবে তাদের বিরুদ্ধে কোন পথ অন্বেষণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বোচ্চ ও সর্বশ্রেষ্ঠ। (সূরা নিসা- ৩৪)
ব্যাখ্যা : এখানে তিনটি কাজ একই সঙ্গে করার কথা বলা হয়নি; বরং বলা হচ্ছে, অবাধ্যতা দেখা দিলে এ তিনটি ব্যবস্থা অবলম্বন করার অনুমতি রয়েছে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই দোষ ও শাস্তির মধ্যে আনুপাতিক সম্পর্ক থাকতে হবে। যেখানে হালকা ব্যবস্থায় কাজ হয়ে যায়, সেখানে কঠোর ব্যবস্থা অবলম্বন করা উচিত নয়। নবী ﷺ যেখানেই স্ত্রীদেরকে প্রহার করার অনুমতি দিয়েছেন, সেখানে তা একান্ত অনিচ্ছা সহকারে এবং নিরুপায় হয়েই দিয়েছেন। এরপরও তিনি একে অপছন্দ করেছেন। তবুও কোন কোন স্ত্রী এমন হয়ে থাকে, যাদেরকে মারধর না করলে সোজা থাকে না। এ অবস্থায় নবী ﷺ এর নির্দেশ হচ্ছে, তাদের চেহারায় মারবে না, নির্দয়ভাবে মারবে না এবং এমন কিছু দিয়ে মারবে না, যা শরীর জখম করে ফেলে। (সহীহ মুসলিম, হা/৩০০৯)
কোন বিবাদ প্রথমে নিজেরাই সমঝোতা করে নেয়ার চেষ্টা করবে :
وَاِنِ امْرَاَةٌ خَافَتْ مِنْ ۢبَعْلِهَا نُشُوْزًا اَوْ اِعْرَاضًا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَاۤ اَنْ يُّصْلِحَا بَيْنَهُمَا صُلْحًاؕ وَالصُّلْحُ خَيْرٌ
কোন স্ত্রী যদি তার স্বামীর পক্ষ থেকে দুর্ব্যবহার কিংবা উপেক্ষার আশঙ্কা করে, তবে তারা আপোষ করতে চাইলে তাদের কোন গোনাহ নেই; আর (এ ব্যাপারে) আপোষই শ্রেয়। (সূরা নিসা- ১২৮)
ব্যাখ্যা : তালাক ও বিচ্ছিন্নতার পরিবর্তে যে স্ত্রী তার জীবনের একটি অংশ এক স্বামীর সাথে অতিবাহিত করেছে এভাবে পারস্পরিক সমঝোতা ও চুক্তির মাধ্যমে বাকি জীবনটা তার সাথে অবস্থান করাটাই উত্তম। স্ত্রী যদি নিজের মধ্যে দুর্বলতা থাকার পরও স্বামীর কাছ থেকে এমন আচরণ আশা করে, যা সুস্থ ও আকর্ষণীয় নারীর ক্ষেত্রে করা হয় তবে এটিই হবে স্ত্রীর মনের সংকীর্ণতা। আর স্বামী যদি কোন স্ত্রীকে সীমাতিরিক্তভাবে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করে এবং তার অধিকার ছিনিয়ে নিতে চায়, তাহলে এটি হবে স্বামীর পক্ষ থেকে মনের সংকীর্ণতা। আল্লাহ পুরুষের উদার মনোবৃত্তির প্রতি আহবান জানিয়েছেন। তিনি সকল প্রকার আকর্ষণহীনতা সত্ত্বেও মেয়েটির সাথে অনুগ্রহপূর্ণ ব্যবহার করার জন্য পুরুষের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। কারণ মেয়েটি দীর্ঘদিন ধরে তার জীবনসঙ্গিনী হিসেবে জীবন অতিবাহিত করেছে। একই সাথে আল্লাহকে ভয় করারও নির্দেশ দিয়েছেন।
তা না হলে দু’জন বিচারক বিবাদ মিটিয়ে দেবেন :
وَاِنْ خِفْتُمْ شِقَاقَ بَيْنِهِمَا فَابْعَثُوْا حَكَمًا مِّنْ اَهْلِهٖ وَحَكَمًا مِّنْ اَهْلِهَاۚ اِنْ يُّرِيْدَاۤ اِصْلَاحًا يُّوَفِّقِ اللهُ بَيْنَهُمَاؕ اِنَّ اللهَ كَانَ عَلِيْمًا خَبِيْرًا
তাদের উভয়ের মধ্যে বিরোধ আশঙ্কা করলে তোমরা স্বামীর পরিবার হতে একজন ও স্ত্রীর পরিবার হতে একজন বিচারক নিযুক্ত করবে। অতঃপর তারা উভয়ে নিষ্পত্তি চাইলে আল্লাহ তাদের মধ্যে মীমাংসার অনুকূল অবস্থা সৃষ্টি করে দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও সবিশেষ অবহিত। (সূরা নিসা- ৩৫)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের অবনতি দেখা দিলে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পর্যায়ে পৌঁছানোর পূর্বে অথবা ব্যাপারটি আদালত পর্যন্ত গড়ানোর আগেই ঘরে তার মীমাংসার চেষ্টা করা উচিত। এজন্য এ পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে যে, স্বামী ও স্ত্রীর উভয়ের পরিবার থেকে একজন করে লোক নিয়ে দু’জনের একটি সালিশ কমিটি গঠন করতে হবে। তারা উভয়ে মিলে বিরোধের ব্যাপারে অনুসন্ধান চালাবেন। তারপর এক সাথে বসে মীমাংসার পথ বের করবেন। সালিশ কে নিযুক্ত করবে- এ প্রশ্নটি আল্লাহ অস্পষ্ট রেখেছেন। সুতরাং স্বামী-স্ত্রী চাইলে নিজেদের আত্মীয়দের মধ্য থেকে নিজেরাই একজন করে লোক বাছাই করে আনতে পারে। আবার উভয়ের পরিবারের বয়স্ক লোকেরা এগিয়ে এসে এ ধরনের সালিশ নিযুক্ত করতে পারে।
وَاللَّاتِيْ تَخَافُوْنَ نُشُوْزَهُنَّ فَعِظُوْهُنَّ وَاهْجُرُوْهُنَّ فِى المَضَاجِعِ وَاضْرِبُوْهُنَّۚ فَاِنْ اَطَعْنَكُمْ فَلَا تَبْغُوْا عَلَيْهِنَّ سَبِيْلًاؕ اِنَّ اللهَ كَانَ عَلِيًّا كَبِيْرًا
তোমরা স্ত্রীদের মধ্যে যাদের অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদেরকে সদুপদেশ দাও। তারপর (যদি না মানে তবে) তাদের বিছানা ত্যাগ করো এবং (তারপরও যদি না মানে তবে) তাদেরকে প্রহার করো। অতঃপর যদি তারা তোমাদের অনুগত হয়, তবে তাদের বিরুদ্ধে কোন পথ অন্বেষণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বোচ্চ ও সর্বশ্রেষ্ঠ। (সূরা নিসা- ৩৪)
ব্যাখ্যা : এখানে তিনটি কাজ একই সঙ্গে করার কথা বলা হয়নি; বরং বলা হচ্ছে, অবাধ্যতা দেখা দিলে এ তিনটি ব্যবস্থা অবলম্বন করার অনুমতি রয়েছে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই দোষ ও শাস্তির মধ্যে আনুপাতিক সম্পর্ক থাকতে হবে। যেখানে হালকা ব্যবস্থায় কাজ হয়ে যায়, সেখানে কঠোর ব্যবস্থা অবলম্বন করা উচিত নয়। নবী ﷺ যেখানেই স্ত্রীদেরকে প্রহার করার অনুমতি দিয়েছেন, সেখানে তা একান্ত অনিচ্ছা সহকারে এবং নিরুপায় হয়েই দিয়েছেন। এরপরও তিনি একে অপছন্দ করেছেন। তবুও কোন কোন স্ত্রী এমন হয়ে থাকে, যাদেরকে মারধর না করলে সোজা থাকে না। এ অবস্থায় নবী ﷺ এর নির্দেশ হচ্ছে, তাদের চেহারায় মারবে না, নির্দয়ভাবে মারবে না এবং এমন কিছু দিয়ে মারবে না, যা শরীর জখম করে ফেলে। (সহীহ মুসলিম, হা/৩০০৯)
কোন বিবাদ প্রথমে নিজেরাই সমঝোতা করে নেয়ার চেষ্টা করবে :
وَاِنِ امْرَاَةٌ خَافَتْ مِنْ ۢبَعْلِهَا نُشُوْزًا اَوْ اِعْرَاضًا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَاۤ اَنْ يُّصْلِحَا بَيْنَهُمَا صُلْحًاؕ وَالصُّلْحُ خَيْرٌ
কোন স্ত্রী যদি তার স্বামীর পক্ষ থেকে দুর্ব্যবহার কিংবা উপেক্ষার আশঙ্কা করে, তবে তারা আপোষ করতে চাইলে তাদের কোন গোনাহ নেই; আর (এ ব্যাপারে) আপোষই শ্রেয়। (সূরা নিসা- ১২৮)
ব্যাখ্যা : তালাক ও বিচ্ছিন্নতার পরিবর্তে যে স্ত্রী তার জীবনের একটি অংশ এক স্বামীর সাথে অতিবাহিত করেছে এভাবে পারস্পরিক সমঝোতা ও চুক্তির মাধ্যমে বাকি জীবনটা তার সাথে অবস্থান করাটাই উত্তম। স্ত্রী যদি নিজের মধ্যে দুর্বলতা থাকার পরও স্বামীর কাছ থেকে এমন আচরণ আশা করে, যা সুস্থ ও আকর্ষণীয় নারীর ক্ষেত্রে করা হয় তবে এটিই হবে স্ত্রীর মনের সংকীর্ণতা। আর স্বামী যদি কোন স্ত্রীকে সীমাতিরিক্তভাবে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করে এবং তার অধিকার ছিনিয়ে নিতে চায়, তাহলে এটি হবে স্বামীর পক্ষ থেকে মনের সংকীর্ণতা। আল্লাহ পুরুষের উদার মনোবৃত্তির প্রতি আহবান জানিয়েছেন। তিনি সকল প্রকার আকর্ষণহীনতা সত্ত্বেও মেয়েটির সাথে অনুগ্রহপূর্ণ ব্যবহার করার জন্য পুরুষের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। কারণ মেয়েটি দীর্ঘদিন ধরে তার জীবনসঙ্গিনী হিসেবে জীবন অতিবাহিত করেছে। একই সাথে আল্লাহকে ভয় করারও নির্দেশ দিয়েছেন।
তা না হলে দু’জন বিচারক বিবাদ মিটিয়ে দেবেন :
وَاِنْ خِفْتُمْ شِقَاقَ بَيْنِهِمَا فَابْعَثُوْا حَكَمًا مِّنْ اَهْلِهٖ وَحَكَمًا مِّنْ اَهْلِهَاۚ اِنْ يُّرِيْدَاۤ اِصْلَاحًا يُّوَفِّقِ اللهُ بَيْنَهُمَاؕ اِنَّ اللهَ كَانَ عَلِيْمًا خَبِيْرًا
তাদের উভয়ের মধ্যে বিরোধ আশঙ্কা করলে তোমরা স্বামীর পরিবার হতে একজন ও স্ত্রীর পরিবার হতে একজন বিচারক নিযুক্ত করবে। অতঃপর তারা উভয়ে নিষ্পত্তি চাইলে আল্লাহ তাদের মধ্যে মীমাংসার অনুকূল অবস্থা সৃষ্টি করে দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও সবিশেষ অবহিত। (সূরা নিসা- ৩৫)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের অবনতি দেখা দিলে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পর্যায়ে পৌঁছানোর পূর্বে অথবা ব্যাপারটি আদালত পর্যন্ত গড়ানোর আগেই ঘরে তার মীমাংসার চেষ্টা করা উচিত। এজন্য এ পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে যে, স্বামী ও স্ত্রীর উভয়ের পরিবার থেকে একজন করে লোক নিয়ে দু’জনের একটি সালিশ কমিটি গঠন করতে হবে। তারা উভয়ে মিলে বিরোধের ব্যাপারে অনুসন্ধান চালাবেন। তারপর এক সাথে বসে মীমাংসার পথ বের করবেন। সালিশ কে নিযুক্ত করবে- এ প্রশ্নটি আল্লাহ অস্পষ্ট রেখেছেন। সুতরাং স্বামী-স্ত্রী চাইলে নিজেদের আত্মীয়দের মধ্য থেকে নিজেরাই একজন করে লোক বাছাই করে আনতে পারে। আবার উভয়ের পরিবারের বয়স্ক লোকেরা এগিয়ে এসে এ ধরনের সালিশ নিযুক্ত করতে পারে।
‘তালাক’ শব্দের অর্থ হচ্ছে বিচ্ছেদ। কোনভাবেই যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব না হয় তবে তালাকের মাধ্যমে তারা বিচ্ছেদ হয়ে যেতে পারে। তালাক তিন প্রকার। (এক) তালাকে রেজঈ। এটি দু’বার দেয়া যায়। এ তালাক দিলে কোন পুনর্বিবাহ ছাড়াই স্বামী স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনতে পারবে। (দুই) বাইন তালাক। এ তালাক প্রদানের পর পুনরায় বিবাহবন্ধনের মাধ্যমে স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনা যায়। (তিন) তালাকে মুগাল্লাযা। এ তালাক পতিত হওয়ার পর ঐ স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার কোন সুযোগ থাকে না, যতক্ষণ না অন্য কোথাও তার বিবাহ হয় এবং ঐ স্বামী তাকে স্বেচ্ছায় তালাক না দেয়।
কুরআন ও হাদীস থেকে তালাকের যে সঠিক পদ্ধতি জানা যায় তা হচ্ছে, স্ত্রীকে ‘তুহর’ (মাসিক থেকে পবিত্র) অবস্থায় তালাক দিতে হবে। যদি এমন সময় স্ত্রীর সাথে ঝগড়া হয় যখন তার মাসিক ঋতুস্রাব চলছে, তাহলে তখনই তালাক দেয়া সঙ্গত নয়; বরং ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তারপর এক তালাক দেয়ার পর চাইলে দ্বিতীয় ‘তুহরে’ আরেক তালাক দিতে পারে। অন্যথায় প্রথম তালাকটি দিয়ে ক্ষান্ত হওয়াই ভালো। দ্বিতীয় তালাক দেয়ার পর ইদ্দত শেষ হয়ে যাওয়ার পরও উভয়ের পারস্পরিক সম্মতির মাধ্যমে পুনর্বার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সুযোগ থাকে। কিন্তু তৃতীয় ‘তুহরে’ তৃতীয়বার তালাক দেয়ার পর স্বামী আর স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়ার বা পুনরায় উভয়ের এক সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার কোন সুযোগ থাকে না। তবে একই সময় তিন তালাক দেয়ার ব্যাপারটি যেমন অজ্ঞ লোকেরা আজকাল সাধারণভাবে করে থাকে, শরীয়াতের দৃষ্টিতেও তা কঠিন গোনাহ। নবী ﷺ কঠোরভাবে এর নিন্দা করেছেন। এমনকি ওমর (রাঃ) থেকে এ বিষয়টি প্রমাণিত যে, যে ব্যক্তি একই সময়ে স্ত্রীকে তিন তালাক দিত তাকে তিনি বেত্রাঘাত করতেন।
তালাক প্রদানে তাড়াহুড়া করা যাবে না :
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ اِذَا طَلَّقْتُمُ النِّسَآءَ فَطَلِّقُوْهُنَّ لِعِدَّتِهِنَّ وَاَحْصُوا الْعِدَّةَ
হে নবী! তোমরা যদি তোমাদের স্ত্রীদেরকে তালাক দিতে চাও, তবে তাদেরকে ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে তালাক দিয়ো এবং ইদ্দতের হিসাব রেখো। (সূরা তালাক্ব- ১)
রেজঈ তালাক দু’বার দেয়া যায় :
اَلطَّلَاقُ مَرَّتَانِ۪ فَاِمْسَاكٌ ۢبِمَعْرُوْفٍ اَوْ تَسْرِيْحٌ ۢبِاِحْسَانٍ
(রেজঈ) তালাক দু’বার দেয়া যায়। এরপর হয়তো ন্যায়সঙ্গতভাবে স্ত্রীকে রাখবে অথবা সদয়ভাবে মুক্ত করে দেবে। (সূরা বাক্বারা- ২২৯)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতটির মাধ্যমে জাহেলী যুগে আরবে প্রচলিত একটি বড় ধরনের সামাজিক ত্রুটি সংশোধন করা হয়েছে। জাহেলী যুগে আরবে এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে অসংখ্যবার তালাক দিতে পারত। স্বামী তার স্ত্রীর প্রতি বিরূপ হয়ে গেলে তাকে বার বার তালাক দিত এবং আবার ফিরিয়ে নিত। এভাবে স্ত্রী না স্বামীর সাথে ঘর-সংসার করতে পারত আর না স্বাধীনভাবে অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারত। স্ত্রীর প্রতি তাদের এ ধরনের আচরণ ছিল এক ধরনের যুলুম। কুরআন মাজীদের এ আয়াতটি এ যুলুমের পথ বন্ধ করে দিয়েছে। এ আয়াতের দৃষ্টিতে স্বামী একটি বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে নিজের স্ত্রীকে বড়জোর দুইবার তালাক দিতে পারে। যে ব্যক্তি তার স্ত্রীকে দুইবার তালাক দেয়ার পর আবার তাকে ফিরিয়ে নিয়েছে এবং পরবর্তী জীবনকালে যখন তাকে তৃতীয়বার তালাক দেবে, তখন সে স্ত্রী তার থেকে স্থায়ীভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
রেজঈ তালাক দিলে ইদ্দতের মধ্যেই ফিরিয়ে আনতে পারবে :
وَبُعُوْلَتُهُنَّ اَحَقُّ بِرَدِّهِنَّ فِيْ ذٰلِكَ اِنْ اَرَادُوْاۤ اِصْلَاحًا
আর যদি তারা আপোষে মীমাংসা করে নিতে চায়, তবে তাদের স্বামীরা ঐ সময়ের মধ্যে (ইদ্দতের মধ্যে) তাদেরকে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে অধিক হকদার। (সূরা বাক্বারা- ২২৮)
স্ত্রীকে রাখলে ভালোভাবে রাখতে হবে, নতুবা বিদায় করে দেবে :
وَاِذَا طَلَّقْتُمُ النِّسَآءَ فَبَلَغْنَ اَجَلَهُنَّ فَاَمْسِكُوْهُنَّ بِمَعْرُوْفٍ اَوْ سَرِّحُوْهُنَّ بِمَعْرُوْفٍ
যখন তোমরা তোমাদের স্ত্রীদেরকে তালাক দিয়ে দাও এবং তারা তাদের ‘ইদ্দত’ পূর্ণ করে, তখন তোমরা তাদেরকে হয় ন্যায়সঙ্গতভাবে রেখে দাও অথবা ভদ্রভাবে মুক্ত করে দাও। (সূরা বাক্বারা- ২৩১)
তালাক দেয়া ও ফিরিয়ে নেয়ার সময় সাক্ষী রাখতে হবে :
فَاِذَا بَلَغْنَ اَجَلَهُنَّ فَاَمْسِكُوْهُنَّ بِمَعْرُوْفٍ اَوْ فَارِقُوْهُنَّ بِمَعْرُوْفٍ وَّاَشْهِدُوْا ذَوَيْ عَدْلٍ مِّنْكُمْ
যখন তারা তাদের ইদ্দতে পৌঁছে যায়, তখন হয় তোমরা তাদেরকে সম্মানজনক পন্থায় রেখে দেবে; না হয় বিচ্ছিন্ন করে দেবে এবং তোমাদের মধ্য হতে দু’জন ন্যায়পরায়ণ লোককে সাক্ষী রাখবে। (সূরা তালাক্ব- ২)
কষ্ট দেয়ার জন্য স্ত্রীকে আটকে রাখা জায়েয নয় :
وَلَا تُمْسِكُوْهُنَّ ضِرَارًا لِّتَعْتَدُوْاۚ وَمَنْ يَّفْعَلْ ذٰلِكَ فَقَدْ ظَلَمَ نَفْسَهٗ
তোমরা বাড়াবাড়ি করে কষ্ট দেয়ার উদ্দেশ্যে তাদেরকে আটকে রেখো না। আর যে এমনটা করল সে যেন তার নিজের উপর অত্যাচার করল। (সূরা বাক্বারা- ২৩১)
তৃতীয় তালাকের পর অন্য বিয়ে না হলে ঐ স্ত্রী হালাল হবে না :
فَاِنْ طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهٗ مِنْ ۢبَعْدُ حَتّٰى تَنْكِحَ زَوْجًا غَيْرَهٗؕ فَاِنْ طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَاۤ اَنْ يَّتَرَاجَعَاۤ اِنْ ظَنَّاۤ اَنْ يُّقِيْمَا حُدُوْدَ اللّٰهِؕ وَتِلْكَ حُدُوْدُ اللّٰهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَّعْلَمُوْنَ
তারপরও যদি স্বামী স্ত্রীকে তালাক দেয় (তৃতীয় বার), তবে ঐ স্ত্রী তার জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত হালাল হবে না, যতক্ষণ না সে অন্য স্বামীকে বিয়ে করে। অতঃপর যদি (দ্বিতীয়) স্বামী তাকে তালাক দেয় এবং ধারণা করে যে, আল্লাহর সীমারেখা মেনে চলতে পারবে, তবে পুনরায় সংসার করাতে তাদের কোন গোনাহ হবে না। এটা হলো আল্লাহর বিধানের সীমারেখা। জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য তিনি তা বর্ণনা করেন। (সূরা বাক্বারা- ২৩০)
ব্যাখ্যা : সহীহ হাদীস থেকে জানা যায়, যদি কোন ব্যক্তি নিজের তালাক দেয়া স্ত্রীকে নিছক নিজের জন্য হালাল করার উদ্দেশ্যে কারো সাথে বিয়ে দেয় এবং প্রথম থেকে তার সাথে এ চুক্তি করে নেয় যে, বিয়ে করার পর সে তাকে তালাক দিয়ে দেবে, তাহলে এটা হবে সম্পূর্ণ অবৈধ কাজ। এ ধরনের বিয়ে প্রকৃতপক্ষে বিয়ে বলে গণ্য হবে না; বরং এটি হবে নিছক একটি ব্যভিচার। আর এ ধরনের বিয়ে ও তালাকের মাধ্যমে কোন ক্রমেই কোন মহিলা তার পূর্ব স্বামীর জন্য হালাল হবে না। আলী (রাঃ) সহ আরো অন্যান্য সাহাবীগণ নবী ﷺ থেকে একযোগে বর্ণনা করেছেন যে, যারা এভাবে তালাক দেয়া স্ত্রীদেরকে হালাল করে এবং যাদের মাধ্যমে হালাল করা হয়, তাদের উভয়ের উপর আল্লাহ লানত বর্ষণ করেছেন। (আবু দাউদ, হা/২০৭৮)
তালাক দেয়ার সময় মোহরানা ফিরিয়ে নেয়া যাবে না :
وَاِنْ اَرَدْتُّمُ اسْتِبْدَالَ زَوْجٍ مَّكَانَ زَوْجٍ وَّاٰتَيْتُمْ اِحْدَاهُنَّ قِنْطَارًا فَلَا تَأْخُذُوْا مِنْهُ شَيْئًاؕ اَتَأْخُذُوْنَهٗ بُهْتَانًا وَّاِثْمًا مُّبِيْنًا
আর যদি তোমরা এক স্ত্রীর পরিবর্তে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করতে চাও এবং তাদের কাউকে অঢেল সম্পদও দিয়ে থাক, তবুও তা থেকে কিছুই গ্রহণ করবে না। তোমরা কি তা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপাচারের মাধ্যমে গ্রহণ করতে চাও? (সূরা নিসা- ২০)
وَلَا يَحِلُّ لَكُمْ اَنْ تَأْخُذُوْا مِمَّاۤ اٰتَيْتُمُوْهُنَّ شَيْئًا
তোমরা যে মোহরানা তাদেরকে দিয়েছ, তা থেকে কোনকিছু গ্রহণ করা তোমাদের জন্য হালাল নয়।
(সূরা বাক্বারা- ২২৯)
ব্যাখ্যা : মোহরানা, গহনাপত্র ও কাপড়-চোপড় ইত্যাদি যেগুলো স্বামী ইতোপূর্বে স্ত্রীকে দিয়েছিল, সেগুলোর কোন একটি ফিরিয়ে নেয়ার অধিকার তার নেই। এমনিতে কোন ব্যক্তিকে কোন দান বা উপহার হিসেবে কোন জিনিস দিয়ে দেয়ার পর তার কাছ থেকে আবার তা ফিরিয়ে নেয়া ইসলামী নৈতিকতার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এ ঘৃণ্য কাজকে হাদীসে এমন কুকুরের কাজের সাথে তুলনা করা হয়েছে, যে নিজে বমি করে আবার তা খেয়ে ফেলে।
তালাকপ্রাপ্তা নারীকে কিছু দিয়ে বিদায় দেয়া উচিৎ :
وَلِلْمُطَلَّقَاتِ مَتَاعٌ ۢبِالْمَعْرُوْفِؕ حَقًّا عَلَى الْمُتَّقِيْنَ
তালাকপ্রাপ্তাদের জন্য ন্যায়সঙ্গতভাবে ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করা মুত্তাক্বীদের কর্তব্য। (সূরা বাক্বারা- ২৪১)
সহবাসের আগে তালাক দিলেও অর্ধেক মোহর দিতে হবে :
وَاِنْ طَلَّقْتُمُوْهُنَّ مِنْ قَبْلِ اَنْ تَمَسُّوْهُنَّ وَقَدْ فَرَضْتُمْ لَهُنَّ فَرِيْضَةً فَنِصْفُ مَا فَرَضْتُمْ
যদি তোমরা তাদের মোহর ধার্য করার পর তাদেরকে স্পর্শ করার পূর্বেই তালাক দিয়ে দাও, তবে যা (মোহরানা) নির্ধারণ করেছ (স্ত্রী) তার অর্ধেক পাবে। (সূরা বাক্বারা- ২৩৭)
তবে নারীপক্ষ ক্ষমা করে দেয়াই উত্তম হবে :
اِلَّاۤ اَنْ يَّعْفُوْنَ اَوْ يَعْفُوَ الَّذِيْ بِيَدِهٖ عُقْدَةُ النِّكَاحِ وَاَنْ تَعْفُوْاۤ اَقْرَبُ لِلتَّقْوٰى وَلَا تَنْسَوُا الْفَضْلَ بَيْنَكُمْ اِنَّ اللهَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
তবে যদি তারা ক্ষমা করে দেয় অথবা যার হাতে বিয়ের চুক্তি করা হয়েছে সে ক্ষমা করে দেয়, তবে ক্ষমা করাই তোমাদের জন্য তাক্বওয়ার অধিক নিকটবর্তী। আর তোমরা পরস্পরের উপকারকে ভুলে যেও না। নিশ্চয় তোমরা যা কর আল্লাহ তা পর্যবেক্ষণ করেন। (সূরা বাক্বারা- ২৩৭)
কুরআন ও হাদীস থেকে তালাকের যে সঠিক পদ্ধতি জানা যায় তা হচ্ছে, স্ত্রীকে ‘তুহর’ (মাসিক থেকে পবিত্র) অবস্থায় তালাক দিতে হবে। যদি এমন সময় স্ত্রীর সাথে ঝগড়া হয় যখন তার মাসিক ঋতুস্রাব চলছে, তাহলে তখনই তালাক দেয়া সঙ্গত নয়; বরং ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তারপর এক তালাক দেয়ার পর চাইলে দ্বিতীয় ‘তুহরে’ আরেক তালাক দিতে পারে। অন্যথায় প্রথম তালাকটি দিয়ে ক্ষান্ত হওয়াই ভালো। দ্বিতীয় তালাক দেয়ার পর ইদ্দত শেষ হয়ে যাওয়ার পরও উভয়ের পারস্পরিক সম্মতির মাধ্যমে পুনর্বার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সুযোগ থাকে। কিন্তু তৃতীয় ‘তুহরে’ তৃতীয়বার তালাক দেয়ার পর স্বামী আর স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়ার বা পুনরায় উভয়ের এক সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার কোন সুযোগ থাকে না। তবে একই সময় তিন তালাক দেয়ার ব্যাপারটি যেমন অজ্ঞ লোকেরা আজকাল সাধারণভাবে করে থাকে, শরীয়াতের দৃষ্টিতেও তা কঠিন গোনাহ। নবী ﷺ কঠোরভাবে এর নিন্দা করেছেন। এমনকি ওমর (রাঃ) থেকে এ বিষয়টি প্রমাণিত যে, যে ব্যক্তি একই সময়ে স্ত্রীকে তিন তালাক দিত তাকে তিনি বেত্রাঘাত করতেন।
তালাক প্রদানে তাড়াহুড়া করা যাবে না :
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ اِذَا طَلَّقْتُمُ النِّسَآءَ فَطَلِّقُوْهُنَّ لِعِدَّتِهِنَّ وَاَحْصُوا الْعِدَّةَ
হে নবী! তোমরা যদি তোমাদের স্ত্রীদেরকে তালাক দিতে চাও, তবে তাদেরকে ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে তালাক দিয়ো এবং ইদ্দতের হিসাব রেখো। (সূরা তালাক্ব- ১)
রেজঈ তালাক দু’বার দেয়া যায় :
اَلطَّلَاقُ مَرَّتَانِ۪ فَاِمْسَاكٌ ۢبِمَعْرُوْفٍ اَوْ تَسْرِيْحٌ ۢبِاِحْسَانٍ
(রেজঈ) তালাক দু’বার দেয়া যায়। এরপর হয়তো ন্যায়সঙ্গতভাবে স্ত্রীকে রাখবে অথবা সদয়ভাবে মুক্ত করে দেবে। (সূরা বাক্বারা- ২২৯)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতটির মাধ্যমে জাহেলী যুগে আরবে প্রচলিত একটি বড় ধরনের সামাজিক ত্রুটি সংশোধন করা হয়েছে। জাহেলী যুগে আরবে এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে অসংখ্যবার তালাক দিতে পারত। স্বামী তার স্ত্রীর প্রতি বিরূপ হয়ে গেলে তাকে বার বার তালাক দিত এবং আবার ফিরিয়ে নিত। এভাবে স্ত্রী না স্বামীর সাথে ঘর-সংসার করতে পারত আর না স্বাধীনভাবে অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারত। স্ত্রীর প্রতি তাদের এ ধরনের আচরণ ছিল এক ধরনের যুলুম। কুরআন মাজীদের এ আয়াতটি এ যুলুমের পথ বন্ধ করে দিয়েছে। এ আয়াতের দৃষ্টিতে স্বামী একটি বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে নিজের স্ত্রীকে বড়জোর দুইবার তালাক দিতে পারে। যে ব্যক্তি তার স্ত্রীকে দুইবার তালাক দেয়ার পর আবার তাকে ফিরিয়ে নিয়েছে এবং পরবর্তী জীবনকালে যখন তাকে তৃতীয়বার তালাক দেবে, তখন সে স্ত্রী তার থেকে স্থায়ীভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
রেজঈ তালাক দিলে ইদ্দতের মধ্যেই ফিরিয়ে আনতে পারবে :
وَبُعُوْلَتُهُنَّ اَحَقُّ بِرَدِّهِنَّ فِيْ ذٰلِكَ اِنْ اَرَادُوْاۤ اِصْلَاحًا
আর যদি তারা আপোষে মীমাংসা করে নিতে চায়, তবে তাদের স্বামীরা ঐ সময়ের মধ্যে (ইদ্দতের মধ্যে) তাদেরকে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে অধিক হকদার। (সূরা বাক্বারা- ২২৮)
স্ত্রীকে রাখলে ভালোভাবে রাখতে হবে, নতুবা বিদায় করে দেবে :
وَاِذَا طَلَّقْتُمُ النِّسَآءَ فَبَلَغْنَ اَجَلَهُنَّ فَاَمْسِكُوْهُنَّ بِمَعْرُوْفٍ اَوْ سَرِّحُوْهُنَّ بِمَعْرُوْفٍ
যখন তোমরা তোমাদের স্ত্রীদেরকে তালাক দিয়ে দাও এবং তারা তাদের ‘ইদ্দত’ পূর্ণ করে, তখন তোমরা তাদেরকে হয় ন্যায়সঙ্গতভাবে রেখে দাও অথবা ভদ্রভাবে মুক্ত করে দাও। (সূরা বাক্বারা- ২৩১)
তালাক দেয়া ও ফিরিয়ে নেয়ার সময় সাক্ষী রাখতে হবে :
فَاِذَا بَلَغْنَ اَجَلَهُنَّ فَاَمْسِكُوْهُنَّ بِمَعْرُوْفٍ اَوْ فَارِقُوْهُنَّ بِمَعْرُوْفٍ وَّاَشْهِدُوْا ذَوَيْ عَدْلٍ مِّنْكُمْ
যখন তারা তাদের ইদ্দতে পৌঁছে যায়, তখন হয় তোমরা তাদেরকে সম্মানজনক পন্থায় রেখে দেবে; না হয় বিচ্ছিন্ন করে দেবে এবং তোমাদের মধ্য হতে দু’জন ন্যায়পরায়ণ লোককে সাক্ষী রাখবে। (সূরা তালাক্ব- ২)
কষ্ট দেয়ার জন্য স্ত্রীকে আটকে রাখা জায়েয নয় :
وَلَا تُمْسِكُوْهُنَّ ضِرَارًا لِّتَعْتَدُوْاۚ وَمَنْ يَّفْعَلْ ذٰلِكَ فَقَدْ ظَلَمَ نَفْسَهٗ
তোমরা বাড়াবাড়ি করে কষ্ট দেয়ার উদ্দেশ্যে তাদেরকে আটকে রেখো না। আর যে এমনটা করল সে যেন তার নিজের উপর অত্যাচার করল। (সূরা বাক্বারা- ২৩১)
তৃতীয় তালাকের পর অন্য বিয়ে না হলে ঐ স্ত্রী হালাল হবে না :
فَاِنْ طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهٗ مِنْ ۢبَعْدُ حَتّٰى تَنْكِحَ زَوْجًا غَيْرَهٗؕ فَاِنْ طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَاۤ اَنْ يَّتَرَاجَعَاۤ اِنْ ظَنَّاۤ اَنْ يُّقِيْمَا حُدُوْدَ اللّٰهِؕ وَتِلْكَ حُدُوْدُ اللّٰهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَّعْلَمُوْنَ
তারপরও যদি স্বামী স্ত্রীকে তালাক দেয় (তৃতীয় বার), তবে ঐ স্ত্রী তার জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত হালাল হবে না, যতক্ষণ না সে অন্য স্বামীকে বিয়ে করে। অতঃপর যদি (দ্বিতীয়) স্বামী তাকে তালাক দেয় এবং ধারণা করে যে, আল্লাহর সীমারেখা মেনে চলতে পারবে, তবে পুনরায় সংসার করাতে তাদের কোন গোনাহ হবে না। এটা হলো আল্লাহর বিধানের সীমারেখা। জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য তিনি তা বর্ণনা করেন। (সূরা বাক্বারা- ২৩০)
ব্যাখ্যা : সহীহ হাদীস থেকে জানা যায়, যদি কোন ব্যক্তি নিজের তালাক দেয়া স্ত্রীকে নিছক নিজের জন্য হালাল করার উদ্দেশ্যে কারো সাথে বিয়ে দেয় এবং প্রথম থেকে তার সাথে এ চুক্তি করে নেয় যে, বিয়ে করার পর সে তাকে তালাক দিয়ে দেবে, তাহলে এটা হবে সম্পূর্ণ অবৈধ কাজ। এ ধরনের বিয়ে প্রকৃতপক্ষে বিয়ে বলে গণ্য হবে না; বরং এটি হবে নিছক একটি ব্যভিচার। আর এ ধরনের বিয়ে ও তালাকের মাধ্যমে কোন ক্রমেই কোন মহিলা তার পূর্ব স্বামীর জন্য হালাল হবে না। আলী (রাঃ) সহ আরো অন্যান্য সাহাবীগণ নবী ﷺ থেকে একযোগে বর্ণনা করেছেন যে, যারা এভাবে তালাক দেয়া স্ত্রীদেরকে হালাল করে এবং যাদের মাধ্যমে হালাল করা হয়, তাদের উভয়ের উপর আল্লাহ লানত বর্ষণ করেছেন। (আবু দাউদ, হা/২০৭৮)
তালাক দেয়ার সময় মোহরানা ফিরিয়ে নেয়া যাবে না :
وَاِنْ اَرَدْتُّمُ اسْتِبْدَالَ زَوْجٍ مَّكَانَ زَوْجٍ وَّاٰتَيْتُمْ اِحْدَاهُنَّ قِنْطَارًا فَلَا تَأْخُذُوْا مِنْهُ شَيْئًاؕ اَتَأْخُذُوْنَهٗ بُهْتَانًا وَّاِثْمًا مُّبِيْنًا
আর যদি তোমরা এক স্ত্রীর পরিবর্তে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করতে চাও এবং তাদের কাউকে অঢেল সম্পদও দিয়ে থাক, তবুও তা থেকে কিছুই গ্রহণ করবে না। তোমরা কি তা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপাচারের মাধ্যমে গ্রহণ করতে চাও? (সূরা নিসা- ২০)
وَلَا يَحِلُّ لَكُمْ اَنْ تَأْخُذُوْا مِمَّاۤ اٰتَيْتُمُوْهُنَّ شَيْئًا
তোমরা যে মোহরানা তাদেরকে দিয়েছ, তা থেকে কোনকিছু গ্রহণ করা তোমাদের জন্য হালাল নয়।
(সূরা বাক্বারা- ২২৯)
ব্যাখ্যা : মোহরানা, গহনাপত্র ও কাপড়-চোপড় ইত্যাদি যেগুলো স্বামী ইতোপূর্বে স্ত্রীকে দিয়েছিল, সেগুলোর কোন একটি ফিরিয়ে নেয়ার অধিকার তার নেই। এমনিতে কোন ব্যক্তিকে কোন দান বা উপহার হিসেবে কোন জিনিস দিয়ে দেয়ার পর তার কাছ থেকে আবার তা ফিরিয়ে নেয়া ইসলামী নৈতিকতার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এ ঘৃণ্য কাজকে হাদীসে এমন কুকুরের কাজের সাথে তুলনা করা হয়েছে, যে নিজে বমি করে আবার তা খেয়ে ফেলে।
তালাকপ্রাপ্তা নারীকে কিছু দিয়ে বিদায় দেয়া উচিৎ :
وَلِلْمُطَلَّقَاتِ مَتَاعٌ ۢبِالْمَعْرُوْفِؕ حَقًّا عَلَى الْمُتَّقِيْنَ
তালাকপ্রাপ্তাদের জন্য ন্যায়সঙ্গতভাবে ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করা মুত্তাক্বীদের কর্তব্য। (সূরা বাক্বারা- ২৪১)
সহবাসের আগে তালাক দিলেও অর্ধেক মোহর দিতে হবে :
وَاِنْ طَلَّقْتُمُوْهُنَّ مِنْ قَبْلِ اَنْ تَمَسُّوْهُنَّ وَقَدْ فَرَضْتُمْ لَهُنَّ فَرِيْضَةً فَنِصْفُ مَا فَرَضْتُمْ
যদি তোমরা তাদের মোহর ধার্য করার পর তাদেরকে স্পর্শ করার পূর্বেই তালাক দিয়ে দাও, তবে যা (মোহরানা) নির্ধারণ করেছ (স্ত্রী) তার অর্ধেক পাবে। (সূরা বাক্বারা- ২৩৭)
তবে নারীপক্ষ ক্ষমা করে দেয়াই উত্তম হবে :
اِلَّاۤ اَنْ يَّعْفُوْنَ اَوْ يَعْفُوَ الَّذِيْ بِيَدِهٖ عُقْدَةُ النِّكَاحِ وَاَنْ تَعْفُوْاۤ اَقْرَبُ لِلتَّقْوٰى وَلَا تَنْسَوُا الْفَضْلَ بَيْنَكُمْ اِنَّ اللهَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
তবে যদি তারা ক্ষমা করে দেয় অথবা যার হাতে বিয়ের চুক্তি করা হয়েছে সে ক্ষমা করে দেয়, তবে ক্ষমা করাই তোমাদের জন্য তাক্বওয়ার অধিক নিকটবর্তী। আর তোমরা পরস্পরের উপকারকে ভুলে যেও না। নিশ্চয় তোমরা যা কর আল্লাহ তা পর্যবেক্ষণ করেন। (সূরা বাক্বারা- ২৩৭)
শরীয়াতের পরিভাষায় ‘খুলা’ তালাক বলা হয়, স্বামীর কাছ থেকে কোনকিছুর বিনিময়ে নিঃস্বার্থভাবে তালাক আদায় করে নেয়া। এ ব্যাপারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঘরোয়াভাবে যদি কিছু স্থির হয়ে যায়, তাহলে তা-ই কার্যকর হবে। কিন্তু ব্যাপারটি যদি আদালত পর্যন্ত গড়ায়, তাহলে আদালত কেবল এতটুকু অনুসন্ধান করবে যে, এ মহিলা তার স্বামীর প্রতি যথার্থই এত বেশি বিরূপ হয়ে পড়েছে কি না, যার ফলে তাদের দু’জনের এক সাথে ঘর-সংসার করা কোনক্রমেই সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে সঠিক অনুসন্ধান চালিয়ে নিশ্চিত হওয়ার পর আদালত অবস্থার প্রেক্ষিতে যে কোন বিনিময় নির্ধারণ করার ক্ষমতা রাখে। এ বিনিময় গ্রহণ করে স্বামী অবশ্যই স্ত্রীকে তালাক দেবে। ‘খুলা’ তালাক ‘রেজঈ’ নয়; বরং ‘বায়েন’ তালাক। যেহেতু স্ত্রী মূল্য দিয়ে এক অর্থে তালাকটি কিনে নিয়েছে, তাই এ তালাকের পর আবার রুজু তথা ফিরিয়ে নেয়ার অধিকার স্বামীর থাকে না। তবে আবার যদি তারা পরস্পরের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চায়, তাহলে এমনটি করা তাদের জন্য বৈধ।
فَاِنْ خِفْتُمْ اَلَّا يُقِيْمَا حُدُوْدَ اللهِ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا فِيْمَا افْتَدَتْ بِهٖؕ تِلْكَ حُدُوْدُ اللهِ فَلَا تَعْتَدُوْهَاۚ وَمَنْ يَّتَعَدَّ حُدُوْدَ اللهِ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ
তবে যদি স্বামী-স্ত্রী উভয়ই আশঙ্কা করে যে, তারা আল্লাহর সীমারেখা ঠিক রাখতে পারবে না, সে অবস্থায় স্ত্রী যদি বিনিময় দিয়ে মুক্ত হতে চায় তবে কোন গোনাহ হবে না। এগুলো আল্লাহর সীমারেখা, সুতরাং তোমরা তা লঙ্ঘন করো না। আর যারা আল্লাহর সীমা অতিক্রম করবে তারা অত্যাচারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা বাক্বারা- ২২৯)
فَاِنْ خِفْتُمْ اَلَّا يُقِيْمَا حُدُوْدَ اللهِ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا فِيْمَا افْتَدَتْ بِهٖؕ تِلْكَ حُدُوْدُ اللهِ فَلَا تَعْتَدُوْهَاۚ وَمَنْ يَّتَعَدَّ حُدُوْدَ اللهِ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ
তবে যদি স্বামী-স্ত্রী উভয়ই আশঙ্কা করে যে, তারা আল্লাহর সীমারেখা ঠিক রাখতে পারবে না, সে অবস্থায় স্ত্রী যদি বিনিময় দিয়ে মুক্ত হতে চায় তবে কোন গোনাহ হবে না। এগুলো আল্লাহর সীমারেখা, সুতরাং তোমরা তা লঙ্ঘন করো না। আর যারা আল্লাহর সীমা অতিক্রম করবে তারা অত্যাচারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা বাক্বারা- ২২৯)
ঈলার সময়সীমা চার মাস :
لِلَّذِيْنَ يُؤْلُوْنَ مِنْ نِّسَآئِهِمْ تَرَبُّصُ اَرْبَعَةِ اَشْهُرٍۚ فَاِنْ فَآءُوْا فَاِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
যারা নিজেদের স্ত্রীদের থেকে পৃথক থাকার জন্য কসম করে তারা চার মাস অপেক্ষা করবে। অতঃপর যদি তারা (কসম ভঙ্গ করে) ফিরে আসে, তবে আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা বাক্বারা- ২২৬)
প্রত্যাবর্তন না করলে তালাক হয়ে যাবে :
وَاِنْ عَزَمُوا الطَّلَاقَ فَاِنَّ اللهَ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
আর যদি তারা (শপথ ভঙ্গ করে ফিরে না আসে) তালাক দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে (সে ব্যাপারেও) আল্লাহ শ্রবণকারী ও মহাজ্ঞানী। (সূরা বাক্বারা- ২২৭)
ব্যাখ্যা : স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সবসময় মধুর সম্পর্ক থাকে না। বিভিন্ন সময় সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার বহুবিধ কারণ সৃষ্টি হয়ে যায়। কিন্তু আল্লাহর শরীয়াত এ ধরনের সম্পর্ক ভাঙ্গা পছন্দ করে না। যার ফলে যে দম্পতি কেবল আইনগতভাবে বিবাহ বন্ধনে আটকে থাকে; কিন্তু কার্যত পরস্পর এমনভাবে আলাদা থাকে যেন তারা স্বামী-স্ত্রী নয়। এ ধরনের সম্পর্ক বিকৃতির জন্য আল্লাহ চার মাস সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এ চার মাসের মধ্যে উভয়ের মাঝে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে হবে। অন্যথায় এ সম্পর্ক ছিন্ন করে দিতে হবে। তারপর উভয়ে স্বাধীনভাবে নিজেদের ইচ্ছেমতো বিয়ে করতে পারবে।
لِلَّذِيْنَ يُؤْلُوْنَ مِنْ نِّسَآئِهِمْ تَرَبُّصُ اَرْبَعَةِ اَشْهُرٍۚ فَاِنْ فَآءُوْا فَاِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
যারা নিজেদের স্ত্রীদের থেকে পৃথক থাকার জন্য কসম করে তারা চার মাস অপেক্ষা করবে। অতঃপর যদি তারা (কসম ভঙ্গ করে) ফিরে আসে, তবে আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা বাক্বারা- ২২৬)
প্রত্যাবর্তন না করলে তালাক হয়ে যাবে :
وَاِنْ عَزَمُوا الطَّلَاقَ فَاِنَّ اللهَ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
আর যদি তারা (শপথ ভঙ্গ করে ফিরে না আসে) তালাক দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে (সে ব্যাপারেও) আল্লাহ শ্রবণকারী ও মহাজ্ঞানী। (সূরা বাক্বারা- ২২৭)
ব্যাখ্যা : স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সবসময় মধুর সম্পর্ক থাকে না। বিভিন্ন সময় সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার বহুবিধ কারণ সৃষ্টি হয়ে যায়। কিন্তু আল্লাহর শরীয়াত এ ধরনের সম্পর্ক ভাঙ্গা পছন্দ করে না। যার ফলে যে দম্পতি কেবল আইনগতভাবে বিবাহ বন্ধনে আটকে থাকে; কিন্তু কার্যত পরস্পর এমনভাবে আলাদা থাকে যেন তারা স্বামী-স্ত্রী নয়। এ ধরনের সম্পর্ক বিকৃতির জন্য আল্লাহ চার মাস সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এ চার মাসের মধ্যে উভয়ের মাঝে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে হবে। অন্যথায় এ সম্পর্ক ছিন্ন করে দিতে হবে। তারপর উভয়ে স্বাধীনভাবে নিজেদের ইচ্ছেমতো বিয়ে করতে পারবে।
স্বামী-স্ত্রী যদি কেউ কারো উপর যিনার অপবাদ দেয় এবং এর স্বপক্ষে চারজন সাক্ষী উপস্থিত করতে না পারে তাহলে শপথের মাধ্যমে এবং ধ্বংস কামনা করে তারা এ দায় থেকে মুক্ত হতে পারে। শরীয়াতে এটাকে লেয়ান বলে।
লেয়ানের নিয়ম :
وَالَّذِيْنَ يَرْمُوْنَ اَزْوَاجَهُمْ وَلَمْ يَكُنْ لَّهُمْ شُهَدَآءُ اِلَّاۤ اَنْفُسُهُمْ فَشَهَادَةُ اَحَدِهِمْ اَرْبَعُ شَهَادَاتٍ ۢبِاللهِ اِنَّهٗ لَمِنَ الصَّادِقِيْنَ ‐ وَالْخَامِسَةُ اَنَّ لَعْنَتَ اللهِ عَلَيْهِ اِنْ كَانَ مِنَ الْكَاذِبِيْنَ
যারা নিজেদের স্ত্রীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করে এবং নিজেরা ব্যতীত তাদের অন্য কোন সাক্ষী না থাকে, তাদের প্রত্যেকের সাক্ষ্য এ হবে যে, সে আল্লাহর নামে চারবার শপথ করে বলবে যে, সে অবশ্যই সত্যবাদী এবং পঞ্চমবারে বলবে যে, সে যদি মিথ্যাবাদী হয় তাহলে যেন তার উপর আল্লাহর লানত পড়ে। (সূরা নূর- ৬, ৭)
অতঃপর স্ত্রীও তাই করবে এবং শাস্তি থেকে মুক্তি লাভ করবে :
وَيَدْرَاُ عَنْهَا الْعَذَابَ اَنْ تَشْهَدَ اَرْبَعَ شَهَادَاتٍ ۢبِاللهِ اِنَّهٗ لَمِنَ الْكَاذِبِيْنَ ‐ وَالْخَامِسَةَ اَنَّ غَضَبَ اللهِ عَلَيْهَاۤ اِنْ كَانَ مِنَ الصَّادِقِيْنَ
তবে স্ত্রীর শাস্তি রহিত হবে যদি সে চারবার আল্লাহর নামে শপথ করে সাক্ষ্য দেয় যে, তার স্বামীই মিথ্যাবাদী এবং পঞ্চমবারে বলে যে, তার স্বামী যদি সত্যবাদী হয় তবে তার নিজের উপর যেন আল্লাহর গযব পড়ে। (সূরা নূর- ৮, ৯)
লেয়ানের নিয়ম :
وَالَّذِيْنَ يَرْمُوْنَ اَزْوَاجَهُمْ وَلَمْ يَكُنْ لَّهُمْ شُهَدَآءُ اِلَّاۤ اَنْفُسُهُمْ فَشَهَادَةُ اَحَدِهِمْ اَرْبَعُ شَهَادَاتٍ ۢبِاللهِ اِنَّهٗ لَمِنَ الصَّادِقِيْنَ ‐ وَالْخَامِسَةُ اَنَّ لَعْنَتَ اللهِ عَلَيْهِ اِنْ كَانَ مِنَ الْكَاذِبِيْنَ
যারা নিজেদের স্ত্রীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করে এবং নিজেরা ব্যতীত তাদের অন্য কোন সাক্ষী না থাকে, তাদের প্রত্যেকের সাক্ষ্য এ হবে যে, সে আল্লাহর নামে চারবার শপথ করে বলবে যে, সে অবশ্যই সত্যবাদী এবং পঞ্চমবারে বলবে যে, সে যদি মিথ্যাবাদী হয় তাহলে যেন তার উপর আল্লাহর লানত পড়ে। (সূরা নূর- ৬, ৭)
অতঃপর স্ত্রীও তাই করবে এবং শাস্তি থেকে মুক্তি লাভ করবে :
وَيَدْرَاُ عَنْهَا الْعَذَابَ اَنْ تَشْهَدَ اَرْبَعَ شَهَادَاتٍ ۢبِاللهِ اِنَّهٗ لَمِنَ الْكَاذِبِيْنَ ‐ وَالْخَامِسَةَ اَنَّ غَضَبَ اللهِ عَلَيْهَاۤ اِنْ كَانَ مِنَ الصَّادِقِيْنَ
তবে স্ত্রীর শাস্তি রহিত হবে যদি সে চারবার আল্লাহর নামে শপথ করে সাক্ষ্য দেয় যে, তার স্বামীই মিথ্যাবাদী এবং পঞ্চমবারে বলে যে, তার স্বামী যদি সত্যবাদী হয় তবে তার নিজের উপর যেন আল্লাহর গযব পড়ে। (সূরা নূর- ৮, ৯)
স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তার মা-বোন অথবা গাইরে মাহরাম কোন মহিলার সাথে তুলনা করাকে জেহার বলে। জাহেলী যুগে এক ধরনের প্রথা ছিল যে, কোন ব্যক্তি যখন তার স্ত্রীর উপর রাগান্বিত হতো তখন তালাক শব্দ ব্যবহার না করে বলত, তুমি আমার নিকট আমার মায়ের মতো অথবা বোনের মতো। এর দ্বারা সে সম্পর্কচ্ছেদকে বুঝাত। জেহার মূলত ব্যক্তির নিয়তের উপর নির্ভর করে। এর দ্বারা সে যদি তালাক নিয়ত করে তবে তালাক প্রযোজ্য হবে। যারা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে জেহার করে, অতঃপর যা বলেছে তা হতে অনুতপ্ত হয়ে ফিরে আসতে চায় তাদেরকে কাফফারা আদায় করতে হবে।
জেহারের কারণে স্ত্রী মা হয়ে যায় না :
وَمَا جَعَلَ اَزْوَاجَكُمُ اللَّآئِيْ تُظَاهِرُوْنَ مِنْهُنَّ اُمَّهَاتِكُمْ
তোমাদের স্ত্রীদের মধ্য হতে যাদের সাথে তোমরা জেহার কর, তিনি তাদেরকে তোমাদের মা বানিয়ে দেননি। (সূরা আহযাব- ৪)
اَلَّذِيْنَ يُظَاهِرُوْنَ مِنْكُمْ مِّنْ نِّسَآئِهِمْ مَّا هُنَّ اُمَّهَاتِهِمْؕ اِنْ اُمَّهَاتُهُمْ اِلَّا اللَّآئِيْ وَلَدْنَهُمْ
তোমাদের মধ্যে যারা স্বীয় স্ত্রীদের সাথে জেহার করে (তারা জেনে রাখুক), তাদের স্ত্রীগণ তাদের মাতা নয়। তাদের মাতা তো কেবল তারাই, যারা তাদেরকে জন্মদান করেছেন। (সূরা মুজাদালা- ২)
জেহার একটি মিথ্যা ও অশুভ উক্তি :
وَاِنَّهُمْ لَيَقُوْلُوْنَ مُنْكَرًا مِّنَ الْقَوْلِ وَزُوْرًاؕ وَاِنَّ اللهَ لَعَفُوٌّ غَفُوْرٌ
তারা তো একটি অসঙ্গত ও মিথ্যা কথাই বলছে। আর আল্লাহ অতীব গোনাহ মোচনকারী ও পরম ক্ষমাশীল। (সূরা মুজাদালা- ২)
জেহারের কাফফারা :
وَالَّذِيْنَ يُظَاهِرُوْنَ مِنْ نِّسَآئِهِمْ ثُمَّ يَعُوْدُوْنَ لِمَا قَالُوْا فَتَحْرِيْرُ رَقَبَةٍ مِّنْ قَبْلِ اَنْ يَّتَمَآسَّاؕ ذٰلِكُمْ تُوْعَظُوْنَ بِهٖؕ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِيْرٌ ‐ فَمَنْ لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ مِنْ قَبْلِ اَنْ يَّتَمَآسَّاؕ فَمَنْ لَّمْ يَسْتَطِعْ فَاِطْعَامُ سِتِّيْنَ مِسْكِيْنًاؕ ذٰلِكَ لِتُؤْمِنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِهٖؕ وَتِلْكَ حُدُوْدُ اللهِؕ وَلِلْكَافِرِيْنَ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
যারা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে জেহার করে, অতঃপর (অনুতপ্ত হয়ে) যা কিছু বলে ফেলেছে তা হতে ফিরে আসতে চায় (তাদের জন্য বিধান হচ্ছে), তাদের একে অপরকে স্পর্শ করার পূর্বে একটি গোলাম আজাদ করে দেয়া। এ আদেশ দিয়ে তোমাদেরকে নসীহত করা যাচ্ছে। তোমরা যা কর, আল্লাহ তা সবিশেষ অবহিত। তবে যার এ সামর্থ্য নেই, সে একে অপরকে স্পর্শ করার পূর্বে ধারাবাহিকভাবে দু’মাস রোযা রাখবে। আর যে ব্যক্তি এতেও অসমর্থ হয়, সে ষাটজন মিসকীনকে খানা খাওয়াবে। এ নির্দেশ এজন্য যে, তোমরা যেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন কর, এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা। আর (এসব সীমারেখা লঙ্ঘনকারী) কাফিরদের জন্য প্রস্তুত রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরা মুজাদালা- ৩, ৪)
জেহারের কারণে স্ত্রী মা হয়ে যায় না :
وَمَا جَعَلَ اَزْوَاجَكُمُ اللَّآئِيْ تُظَاهِرُوْنَ مِنْهُنَّ اُمَّهَاتِكُمْ
তোমাদের স্ত্রীদের মধ্য হতে যাদের সাথে তোমরা জেহার কর, তিনি তাদেরকে তোমাদের মা বানিয়ে দেননি। (সূরা আহযাব- ৪)
اَلَّذِيْنَ يُظَاهِرُوْنَ مِنْكُمْ مِّنْ نِّسَآئِهِمْ مَّا هُنَّ اُمَّهَاتِهِمْؕ اِنْ اُمَّهَاتُهُمْ اِلَّا اللَّآئِيْ وَلَدْنَهُمْ
তোমাদের মধ্যে যারা স্বীয় স্ত্রীদের সাথে জেহার করে (তারা জেনে রাখুক), তাদের স্ত্রীগণ তাদের মাতা নয়। তাদের মাতা তো কেবল তারাই, যারা তাদেরকে জন্মদান করেছেন। (সূরা মুজাদালা- ২)
জেহার একটি মিথ্যা ও অশুভ উক্তি :
وَاِنَّهُمْ لَيَقُوْلُوْنَ مُنْكَرًا مِّنَ الْقَوْلِ وَزُوْرًاؕ وَاِنَّ اللهَ لَعَفُوٌّ غَفُوْرٌ
তারা তো একটি অসঙ্গত ও মিথ্যা কথাই বলছে। আর আল্লাহ অতীব গোনাহ মোচনকারী ও পরম ক্ষমাশীল। (সূরা মুজাদালা- ২)
জেহারের কাফফারা :
وَالَّذِيْنَ يُظَاهِرُوْنَ مِنْ نِّسَآئِهِمْ ثُمَّ يَعُوْدُوْنَ لِمَا قَالُوْا فَتَحْرِيْرُ رَقَبَةٍ مِّنْ قَبْلِ اَنْ يَّتَمَآسَّاؕ ذٰلِكُمْ تُوْعَظُوْنَ بِهٖؕ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِيْرٌ ‐ فَمَنْ لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ مِنْ قَبْلِ اَنْ يَّتَمَآسَّاؕ فَمَنْ لَّمْ يَسْتَطِعْ فَاِطْعَامُ سِتِّيْنَ مِسْكِيْنًاؕ ذٰلِكَ لِتُؤْمِنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِهٖؕ وَتِلْكَ حُدُوْدُ اللهِؕ وَلِلْكَافِرِيْنَ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
যারা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে জেহার করে, অতঃপর (অনুতপ্ত হয়ে) যা কিছু বলে ফেলেছে তা হতে ফিরে আসতে চায় (তাদের জন্য বিধান হচ্ছে), তাদের একে অপরকে স্পর্শ করার পূর্বে একটি গোলাম আজাদ করে দেয়া। এ আদেশ দিয়ে তোমাদেরকে নসীহত করা যাচ্ছে। তোমরা যা কর, আল্লাহ তা সবিশেষ অবহিত। তবে যার এ সামর্থ্য নেই, সে একে অপরকে স্পর্শ করার পূর্বে ধারাবাহিকভাবে দু’মাস রোযা রাখবে। আর যে ব্যক্তি এতেও অসমর্থ হয়, সে ষাটজন মিসকীনকে খানা খাওয়াবে। এ নির্দেশ এজন্য যে, তোমরা যেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন কর, এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা। আর (এসব সীমারেখা লঙ্ঘনকারী) কাফিরদের জন্য প্রস্তুত রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরা মুজাদালা- ৩, ৪)
ইদ্দত শব্দের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে গণনা করা। পারিভাষিক অর্থে স্ত্রীর জরায়ুতে সন্তান আছে কি না তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য যে কয়দিন অপেক্ষা করতে হয় তাকেই ইদ্দত বলে।
সতর্কতার সাথে ইদ্দতের সময়ের হিসাব রাখতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ اِذَا طَلَّقْتُمُ النِّسَآءَ فَطَلِّقُوْهُنَّ لِعِدَّتِهِنَّ وَاَحْصُوا الْعِدَّةَ
হে নবী! তোমরা যখন তোমাদের স্ত্রীদেরকে তালাক দিতে ইচ্ছা কর, তখন তাদেরকে তালাক দেয়ার ক্ষেত্রে ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখো এবং ইদ্দতের (দিনগুলোর) হিসাব রেখো। (সূরা তালাক্ব- ১)
সহবাসের আগে তালাক দিলে ইদ্দত নেই :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا نَكَحْتُمُ الْمُؤْمِنَاتِ ثُمَّ طَلَّقْتُمُوْهُنَّ مِنْ قَبْلِ اَنْ تَمَسُّوْهُنَّ فَمَا لَكُمْ عَلَيْهِنَّ مِنْ عِدَّةٍ
হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা মুমিন নারীদেরকে বিবাহ কর, তারপর তাদেরকে স্পর্শ করার পূর্বেই তালাক দিয়ে দাও, তখন তোমাদের জন্য তাদের উপর কোন ইদ্দত নেই। (সূরা আহযাব- ৪৯)
তালাকপ্রাপ্তা মহিলার ইদ্দত হলো তিন হায়েয :
وَالْمُطَلَّقَاتُ يَتَرَبَّصْنَ بِاَنْفُسِهِنَّ ثَلَاثَةَ قُرُوْٓءٍ
আর তালাকপ্রাপ্তা মহিলারা তিনটি মাসিক পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। (সূরা বাক্বারা- ২২৮)
যার হায়েয হয় না বা বন্ধ হয়ে গেছে, তার ইদ্দত তিন মাস :
وَاللَّآئِيْ يَئِسْنَ مِنَ الْمَحِيْضِ مِنْ نِّسَآئِكُمْ اِنِ ارْتَبْتُمْ فَعِدَّتُهُنَّ ثَلَاثَةُ اَشْهُرٍ وَّاللَّآئِيْ لَمْ يَحِضْنَ
তোমাদের যেসব স্ত্রীদের ব্যাপারে ঋতুবতী হওয়ার আশা নেই তাদের ইদ্দত সম্পর্কে যদি তোমরা সন্দেহ পোষণ কর, তবে তাদের ইদ্দতকাল হবে তিন মাস এবং যাদের ঋতুকাল এখনো শুরু হয়নি তারাও (তিন মাস ইদ্দত) পালন করবে। (সূরা তালাক্ব- ৪)
স্বামী মারা গেলে ইদ্দত চারমাস দশ দিন :
وَالَّذِيْنَ يُتَوَفَّوْنَ مِنْكُمْ وَيَذَرُوْنَ اَزْوَاجًا يَّتَرَبَّصْنَ بِاَنْفُسِهِنَّ اَرْبَعَةَ اَشْهُرٍ وَّعَشْرًا
তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রী রেখে মারা যায়, তাদের স্ত্রীরা চার মাস দশ দিন অপেক্ষা করবে। (সূরা বাক্বারা- ২৩৪)
গর্ভবতী নারীর ইদ্দত সন্তান প্রসবের পূর্ব পর্যন্ত :
وَاُولَاتُ الْاَحْمَالِ اَجَلُهُنَّ اَنْ يَّضَعْنَ حَمْلَهُنَّ
গর্ভবতী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত। (সূরা তালাক্ব- ৪)
ইদ্দত পালনকালীন সময় স্বামীই খরচ বহন করবে :
وَاِنْ كُنَّ اُولَاتِ حَمْلٍ فَاَنْفِقُوْا عَلَيْهِنَّ حَتّٰى يَضَعْنَ حَمْلَهُنَّ
আর যদি তারা গর্ভবতী থাকে, তবে সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত তাদের জন্য ব্যয় করবে। (সূরা তালাক্ব- ৬)
সন্তান আছে মনে হলে তা প্রকাশ করতে হবে :
وَلَا يَحِلُّ لَهُنَّ اَنْ يَّكْتُمْنَ مَا خَلَقَ اللهُ فِۤيْ اَرْحَامِهِنَّ اِنْ كُنَّ يُؤْمِنَّ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ
আর তাদের গর্ভে আল্লাহ যা সৃষ্টি করেছেন তা গোপন করা তাদের জন্য বৈধ হবে না, যদি তারা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে। (সূরা বাক্বারা- ২২৮)
তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী বাচ্চাকে দুধ খাওয়ালে তাকে বিনিময় দিতে হবে :
فَاِنْ اَرْضَعْنَ لَكُمْ فَاٰتُوْهُنَّ اُجُوْرَهُنَّ وَأْتَمِرُوْا بَيْنَكُمْ بِمَعْرُوْفٍ
অতঃপর যদি তারা (ধাত্রীরা) তোমাদের সন্তানদেরকে স্তন্যদান করে, তবে তাদেরকে পারিশ্রমিক দেবে এবং সন্তানের কল্যাণ সম্পর্কে তোমরা ন্যায়সঙ্গতভাবে নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে নেবে। (সূরা তালাক্ব- ৬)
ইদ্দত চলাকালে স্বামীর বাড়িতেই থাকবে :
لَا تُخْرِجُوْهُنَّ مِنْ ۢبُيُوْتِهِنَّ وَلَا يَخْرُجْنَ اِلَّاۤ اَنْ يَّأْتِيْنَ بِفَاحِشَةٍ مُّبَيِّنَةٍ
তোমরা তাদেরকে (তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীদেরকে) তাদের বাসগৃহ হতে বের করে দিয়ো না এবং তারাও যেন বের না হয়ে যায় (তাদের সাথে এমন ব্যবহার করো না)। তবে যদি তারা স্পষ্ট অশ্লীলতায় লিপ্ত হয় (তবে বের করে দেয়া যাবে)। (সূরা তালাক্ব- ১)
ইদ্দত চলাকালে তাকে কোন কষ্ট দেয়া যাবে না :
وَلَا تُضَآرُّوْهُنَّ لِتُضَيِّقُوْا عَلَيْهِنَّ
আর তাদেরকে সংকটে ফেলার জন্য কষ্ট দিয়ো না। (সূরা তালাক্ব- ৬)
স্বামী তার সামর্থ্যানুযায়ী খরচ বহন করবে :
لِيُنْفِقْ ذُوْ سَعَةٍ مِّنْ سَعَتِهٖؕ وَمَنْ قُدِرَ عَلَيْهِ رِزْقُهٗ فَلْيُنْفِقْ مِمَّاۤ اٰتَاهُ اللهُؕ لَا يُكَلِّفُ اللهُ نَفْسًا اِلَّا مَاۤ اٰتَاهَاؕ سَيَجْعَلُ اللهُ بَعْدَ عُسْرٍ يُّسْرًا
সামর্থ্যবান ব্যক্তি নিজ সামর্থ্যানুযায়ী ব্যয় করবে। আর যার জীবনোপকরণ সীমিত, সে আল্লাহ যা দান করেছেন তা হতে ব্যয় করবে। আল্লাহ যাকে যে সামর্থ্য দিয়েছেন তদপেক্ষা অতিরিক্ত বোঝা তিনি তার উপর চাপিয়ে দেন না। অচিরেই আল্লাহ কষ্টের পর সহজ করে দেবেন। (সূরা তালাক্ব- ৭)
ইদ্দত চলাকালীন সময়ে বিয়ের কল্পনা করা যায় :
وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيْمَا عَرَّضْتُمْ بِهٖ مِنْ خِطْبَةِ النِّسَآءِ اَوْ اَكْنَنْتُمْ فِۤيْ اَنْفُسِكُمْؕ عَلِمَ اللهُ اَنَّكُمْ سَتَذْكُرُوْنَهُنَّ
যদি তোমরা ইদ্দতের মধ্যে নারীদের কাছে ইঙ্গিতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাও অথবা নিজেদের মনে তা গোপন রাখ, তবে তাতে তোমাদের কোন গোনাহ হবে না। কেননা আল্লাহ জানেন যে, অচিরেই তোমরা তাদের কথা বার বার মনে করবে। (সূরা বাক্বারা- ২৩৫)
তবে বিয়ের পুরোপুরি সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না :
وَلَا تَعْزِمُوْا عُقْدَةَ النِّكَاحِ حَتّٰى يَبْلُغَ الْكِتَابُ اَجَلَهٗؕ وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ يَعْلَمُ مَا فِۤيْ اَنْفُسِكُمْ فَاحْذَرُوْهُۚ وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ غَفُوْرٌ حَلِيْمٌ
ইদ্দত পূর্ণ হওয়ার পূর্বে বিয়ের কাজ পাকাপোক্ত করার ইচ্ছা করো না। জেনে রেখো, তোমাদের মনে যা আছে আল্লাহ সবই জানেন। সুতরাং তোমরা তাকে ভয় করো এবং জেনে রেখো যে, আল্লাহ ক্ষমাশীল ও ধৈর্যশীল। (সূরা বাক্বারা- ২৩৫)
ইদ্দত শেষ হওয়ার পর বিয়ে বসতে বাধা নেই :
فَاِذَا بَلَغْنَ اَجَلَهُنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيْمَا فَعَلْنَ فِۤيْ اَنْفُسِهِنَّ بِالْمَعْرُوْفِؕ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِيْرٌ
অতঃপর যখন তাদের ইদ্দত পূর্ণ হয়ে যাবে তখন তারা নিজেদের ব্যাপারে নিয়মানুযায়ী যা (সিদ্ধান্ত গ্রহণ) করবে, তাতে তোমাদের কোন গোনাহ হবে না। আর তোমরা যা কর আল্লাহ সে বিষয়ে খবর রাখেন।
(সূরা বাক্বারা- ২৩৪)
ইদ্দত শেষ হলে নারীদেরকে বিয়ে বসতে বাধা দেয়া যাবে না :
وَاِذَا طَلَّقْتُمُ النِّسَآءَ فَبَلَغْنَ اَجَلَهُنَّ فَلَا تَعْضُلُوْهُنَّ اَنْ يَّنْكِحْنَ اَزْوَاجَهُنَّ اِذَا تَرَاضَوْا بَيْنَهُمْ بِالْمَعْرُوْفِ
আর যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দাও এবং তারা ইদ্দত পূর্ণ করে, তবে তারা যদি তাদের স্বামীদের সাথে বিধি মোতাবেক পরস্পরের সম্মতিতে বিয়ে করতে চায়, তবে তোমরা তাদেরকে বাধা দেবে না।
(সূরা বাক্বারা- ২৩২)
ব্যাখ্যা : কোন মহিলাকে তার স্বামী তালাক দিয়ে দেয়ার পর ইদ্দতকালের মধ্যে যদি তাকে ফিরিয়ে না নেয় এবং ইদ্দতকাল শেষ হওয়ার পর তারা দু’জন পারস্পরিক সম্মতিক্রমে আবার বিয়ে করতে চায়, তবে এ ক্ষেত্রে মহিলার আত্মীয়স্বজনদের তাদের এ পদক্ষেপে বাধা দেয়া উচিত নয়। এ ছাড়া এ আয়াতটির এ অর্থও হতে পারে যে, যদি কোন ব্যক্তি নিজের স্ত্রীকে তালাক দেয় এবং তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী ইদ্দতকাল শেষ করার পর তার থেকে মুক্ত হয়ে গিয়ে নিজের পছন্দ মতো অন্য কাউকে বিয়ে করতে চায়, তাহলে এ ক্ষেত্রে তার পূর্বের স্বামী যেন তার এ বিয়েতে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। যে মহিলাকে সে ত্যাগ করেছে তাকে যাতে আর কেউ গ্রহণ করতে এগিয়ে না আসে, এজন্য সে যেন কোন ধরনের প্রচেষ্টা না চালায়।
সতর্কতার সাথে ইদ্দতের সময়ের হিসাব রাখতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ اِذَا طَلَّقْتُمُ النِّسَآءَ فَطَلِّقُوْهُنَّ لِعِدَّتِهِنَّ وَاَحْصُوا الْعِدَّةَ
হে নবী! তোমরা যখন তোমাদের স্ত্রীদেরকে তালাক দিতে ইচ্ছা কর, তখন তাদেরকে তালাক দেয়ার ক্ষেত্রে ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখো এবং ইদ্দতের (দিনগুলোর) হিসাব রেখো। (সূরা তালাক্ব- ১)
সহবাসের আগে তালাক দিলে ইদ্দত নেই :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا نَكَحْتُمُ الْمُؤْمِنَاتِ ثُمَّ طَلَّقْتُمُوْهُنَّ مِنْ قَبْلِ اَنْ تَمَسُّوْهُنَّ فَمَا لَكُمْ عَلَيْهِنَّ مِنْ عِدَّةٍ
হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা মুমিন নারীদেরকে বিবাহ কর, তারপর তাদেরকে স্পর্শ করার পূর্বেই তালাক দিয়ে দাও, তখন তোমাদের জন্য তাদের উপর কোন ইদ্দত নেই। (সূরা আহযাব- ৪৯)
তালাকপ্রাপ্তা মহিলার ইদ্দত হলো তিন হায়েয :
وَالْمُطَلَّقَاتُ يَتَرَبَّصْنَ بِاَنْفُسِهِنَّ ثَلَاثَةَ قُرُوْٓءٍ
আর তালাকপ্রাপ্তা মহিলারা তিনটি মাসিক পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। (সূরা বাক্বারা- ২২৮)
যার হায়েয হয় না বা বন্ধ হয়ে গেছে, তার ইদ্দত তিন মাস :
وَاللَّآئِيْ يَئِسْنَ مِنَ الْمَحِيْضِ مِنْ نِّسَآئِكُمْ اِنِ ارْتَبْتُمْ فَعِدَّتُهُنَّ ثَلَاثَةُ اَشْهُرٍ وَّاللَّآئِيْ لَمْ يَحِضْنَ
তোমাদের যেসব স্ত্রীদের ব্যাপারে ঋতুবতী হওয়ার আশা নেই তাদের ইদ্দত সম্পর্কে যদি তোমরা সন্দেহ পোষণ কর, তবে তাদের ইদ্দতকাল হবে তিন মাস এবং যাদের ঋতুকাল এখনো শুরু হয়নি তারাও (তিন মাস ইদ্দত) পালন করবে। (সূরা তালাক্ব- ৪)
স্বামী মারা গেলে ইদ্দত চারমাস দশ দিন :
وَالَّذِيْنَ يُتَوَفَّوْنَ مِنْكُمْ وَيَذَرُوْنَ اَزْوَاجًا يَّتَرَبَّصْنَ بِاَنْفُسِهِنَّ اَرْبَعَةَ اَشْهُرٍ وَّعَشْرًا
তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রী রেখে মারা যায়, তাদের স্ত্রীরা চার মাস দশ দিন অপেক্ষা করবে। (সূরা বাক্বারা- ২৩৪)
গর্ভবতী নারীর ইদ্দত সন্তান প্রসবের পূর্ব পর্যন্ত :
وَاُولَاتُ الْاَحْمَالِ اَجَلُهُنَّ اَنْ يَّضَعْنَ حَمْلَهُنَّ
গর্ভবতী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত। (সূরা তালাক্ব- ৪)
ইদ্দত পালনকালীন সময় স্বামীই খরচ বহন করবে :
وَاِنْ كُنَّ اُولَاتِ حَمْلٍ فَاَنْفِقُوْا عَلَيْهِنَّ حَتّٰى يَضَعْنَ حَمْلَهُنَّ
আর যদি তারা গর্ভবতী থাকে, তবে সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত তাদের জন্য ব্যয় করবে। (সূরা তালাক্ব- ৬)
সন্তান আছে মনে হলে তা প্রকাশ করতে হবে :
وَلَا يَحِلُّ لَهُنَّ اَنْ يَّكْتُمْنَ مَا خَلَقَ اللهُ فِۤيْ اَرْحَامِهِنَّ اِنْ كُنَّ يُؤْمِنَّ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ
আর তাদের গর্ভে আল্লাহ যা সৃষ্টি করেছেন তা গোপন করা তাদের জন্য বৈধ হবে না, যদি তারা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে। (সূরা বাক্বারা- ২২৮)
তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী বাচ্চাকে দুধ খাওয়ালে তাকে বিনিময় দিতে হবে :
فَاِنْ اَرْضَعْنَ لَكُمْ فَاٰتُوْهُنَّ اُجُوْرَهُنَّ وَأْتَمِرُوْا بَيْنَكُمْ بِمَعْرُوْفٍ
অতঃপর যদি তারা (ধাত্রীরা) তোমাদের সন্তানদেরকে স্তন্যদান করে, তবে তাদেরকে পারিশ্রমিক দেবে এবং সন্তানের কল্যাণ সম্পর্কে তোমরা ন্যায়সঙ্গতভাবে নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে নেবে। (সূরা তালাক্ব- ৬)
ইদ্দত চলাকালে স্বামীর বাড়িতেই থাকবে :
لَا تُخْرِجُوْهُنَّ مِنْ ۢبُيُوْتِهِنَّ وَلَا يَخْرُجْنَ اِلَّاۤ اَنْ يَّأْتِيْنَ بِفَاحِشَةٍ مُّبَيِّنَةٍ
তোমরা তাদেরকে (তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীদেরকে) তাদের বাসগৃহ হতে বের করে দিয়ো না এবং তারাও যেন বের না হয়ে যায় (তাদের সাথে এমন ব্যবহার করো না)। তবে যদি তারা স্পষ্ট অশ্লীলতায় লিপ্ত হয় (তবে বের করে দেয়া যাবে)। (সূরা তালাক্ব- ১)
ইদ্দত চলাকালে তাকে কোন কষ্ট দেয়া যাবে না :
وَلَا تُضَآرُّوْهُنَّ لِتُضَيِّقُوْا عَلَيْهِنَّ
আর তাদেরকে সংকটে ফেলার জন্য কষ্ট দিয়ো না। (সূরা তালাক্ব- ৬)
স্বামী তার সামর্থ্যানুযায়ী খরচ বহন করবে :
لِيُنْفِقْ ذُوْ سَعَةٍ مِّنْ سَعَتِهٖؕ وَمَنْ قُدِرَ عَلَيْهِ رِزْقُهٗ فَلْيُنْفِقْ مِمَّاۤ اٰتَاهُ اللهُؕ لَا يُكَلِّفُ اللهُ نَفْسًا اِلَّا مَاۤ اٰتَاهَاؕ سَيَجْعَلُ اللهُ بَعْدَ عُسْرٍ يُّسْرًا
সামর্থ্যবান ব্যক্তি নিজ সামর্থ্যানুযায়ী ব্যয় করবে। আর যার জীবনোপকরণ সীমিত, সে আল্লাহ যা দান করেছেন তা হতে ব্যয় করবে। আল্লাহ যাকে যে সামর্থ্য দিয়েছেন তদপেক্ষা অতিরিক্ত বোঝা তিনি তার উপর চাপিয়ে দেন না। অচিরেই আল্লাহ কষ্টের পর সহজ করে দেবেন। (সূরা তালাক্ব- ৭)
ইদ্দত চলাকালীন সময়ে বিয়ের কল্পনা করা যায় :
وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيْمَا عَرَّضْتُمْ بِهٖ مِنْ خِطْبَةِ النِّسَآءِ اَوْ اَكْنَنْتُمْ فِۤيْ اَنْفُسِكُمْؕ عَلِمَ اللهُ اَنَّكُمْ سَتَذْكُرُوْنَهُنَّ
যদি তোমরা ইদ্দতের মধ্যে নারীদের কাছে ইঙ্গিতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাও অথবা নিজেদের মনে তা গোপন রাখ, তবে তাতে তোমাদের কোন গোনাহ হবে না। কেননা আল্লাহ জানেন যে, অচিরেই তোমরা তাদের কথা বার বার মনে করবে। (সূরা বাক্বারা- ২৩৫)
তবে বিয়ের পুরোপুরি সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না :
وَلَا تَعْزِمُوْا عُقْدَةَ النِّكَاحِ حَتّٰى يَبْلُغَ الْكِتَابُ اَجَلَهٗؕ وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ يَعْلَمُ مَا فِۤيْ اَنْفُسِكُمْ فَاحْذَرُوْهُۚ وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ غَفُوْرٌ حَلِيْمٌ
ইদ্দত পূর্ণ হওয়ার পূর্বে বিয়ের কাজ পাকাপোক্ত করার ইচ্ছা করো না। জেনে রেখো, তোমাদের মনে যা আছে আল্লাহ সবই জানেন। সুতরাং তোমরা তাকে ভয় করো এবং জেনে রেখো যে, আল্লাহ ক্ষমাশীল ও ধৈর্যশীল। (সূরা বাক্বারা- ২৩৫)
ইদ্দত শেষ হওয়ার পর বিয়ে বসতে বাধা নেই :
فَاِذَا بَلَغْنَ اَجَلَهُنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيْمَا فَعَلْنَ فِۤيْ اَنْفُسِهِنَّ بِالْمَعْرُوْفِؕ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِيْرٌ
অতঃপর যখন তাদের ইদ্দত পূর্ণ হয়ে যাবে তখন তারা নিজেদের ব্যাপারে নিয়মানুযায়ী যা (সিদ্ধান্ত গ্রহণ) করবে, তাতে তোমাদের কোন গোনাহ হবে না। আর তোমরা যা কর আল্লাহ সে বিষয়ে খবর রাখেন।
(সূরা বাক্বারা- ২৩৪)
ইদ্দত শেষ হলে নারীদেরকে বিয়ে বসতে বাধা দেয়া যাবে না :
وَاِذَا طَلَّقْتُمُ النِّسَآءَ فَبَلَغْنَ اَجَلَهُنَّ فَلَا تَعْضُلُوْهُنَّ اَنْ يَّنْكِحْنَ اَزْوَاجَهُنَّ اِذَا تَرَاضَوْا بَيْنَهُمْ بِالْمَعْرُوْفِ
আর যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দাও এবং তারা ইদ্দত পূর্ণ করে, তবে তারা যদি তাদের স্বামীদের সাথে বিধি মোতাবেক পরস্পরের সম্মতিতে বিয়ে করতে চায়, তবে তোমরা তাদেরকে বাধা দেবে না।
(সূরা বাক্বারা- ২৩২)
ব্যাখ্যা : কোন মহিলাকে তার স্বামী তালাক দিয়ে দেয়ার পর ইদ্দতকালের মধ্যে যদি তাকে ফিরিয়ে না নেয় এবং ইদ্দতকাল শেষ হওয়ার পর তারা দু’জন পারস্পরিক সম্মতিক্রমে আবার বিয়ে করতে চায়, তবে এ ক্ষেত্রে মহিলার আত্মীয়স্বজনদের তাদের এ পদক্ষেপে বাধা দেয়া উচিত নয়। এ ছাড়া এ আয়াতটির এ অর্থও হতে পারে যে, যদি কোন ব্যক্তি নিজের স্ত্রীকে তালাক দেয় এবং তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী ইদ্দতকাল শেষ করার পর তার থেকে মুক্ত হয়ে গিয়ে নিজের পছন্দ মতো অন্য কাউকে বিয়ে করতে চায়, তাহলে এ ক্ষেত্রে তার পূর্বের স্বামী যেন তার এ বিয়েতে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। যে মহিলাকে সে ত্যাগ করেছে তাকে যাতে আর কেউ গ্রহণ করতে এগিয়ে না আসে, এজন্য সে যেন কোন ধরনের প্রচেষ্টা না চালায়।
আল্লাহ যাকে যেমন চান সন্তান দান করেন :
لِلّٰهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِؕ يَخْلُقُ مَا يَشَآءُؕ يَهَبُ لِمَنْ يَّشَآءُ اِنَاثًا وَّيَهَبُ لِمَنْ يَّشَآءُ الذُّكُوْرَ ‐ اَوْ يُزَوِّجُهُمْ ذُكْرَانًا وَّاِنَاثًاۚ وَيَجْعَلُ مَنْ يَّشَآءُ عَقِيْمًاؕ اِنَّهٗ عَلِيْمٌ قَدِيْرٌ
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর কর্তৃত্ব আল্লাহরই, তিনি যা ইচ্ছা তা-ই সৃষ্টি করেন; তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যাসন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্রসন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে পুত্র ও কন্যা উভয়ই দান করেন, আবার যাকে ইচ্ছা তাকে নিঃসন্তান (বন্ধ্যা) করেন। নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান। (সূরা শূরা- ৪৯, ৫০)
দুধ পান করানোর পূর্ণ মেয়াদ দু’বছর :
وَالْوَالِدَاتُ يُرْضِعْنَ اَوْلَادَهُنَّ حَوْلَيْنِ كَامِلَيْنِ لِمَنْ اَرَادَ اَنْ يُّتِمَّ الرَّضَاعَةَ
যারা দুধ পান করানোর সময় পূর্ণ করতে চায়, সেসব মায়েরা তাদের সন্তানদেরকে পূর্ণ দু’বছর দুধ পান করাবে। (সূরা বাক্বারা- ২৩৩)
ইচ্ছা করলে দু’বছরের কমেও দুধ ছাড়ানো যায় :
فَاِنْ اَرَادَا فِصَالًا عَنْ تَرَاضٍ مِّنْهُمَا وَتَشَاوُرٍ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا
অতঃপর পিতামাতা যদি উভয়ের পরামর্শ ও সমুতষ্টির ভিত্তিতে (দু’বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই) দুধ খাওয়ানো বন্ধ করতে চায়, তবে তাদের কোন গোনাহ হবে না। (সূরা বাক্বারা- ২৩৩)
বিনিময় দিয়ে অপর মহিলার মাধ্যমে দুধ পান করানো যায় :
وَاِنْ اَرَدْتُّمْ اَنْ تَسْتَرْضِعُوْاۤ اَوْلَادَكُمْ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ اِذَا سَلَّمْتُمْ مَّاۤ اٰتَيْتُمْ بِالْمَعْرُوْفِؕ وَاتَّقُوا اللهَ وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
আর যদি তোমরা (ধাত্রী দিয়ে) তোমাদের সন্তানদেরকে দুধ পান করিয়ে নিতে চাও, তাতেও তোমাদের কোন গোনাহ হবে না যদি তোমরা বিধি মোতাবেক তাদের বিনিময় দিয়ে দাও এবং আল্লাহকে ভয় করো। জেনে রেখো, তোমরা যা কর অবশ্যই আল্লাহ তা দেখেন। (সূরা বাক্বারা- ২৩৩)
স্ত্রী তালাকপ্রাপ্তা হলে সন্তানের পিতা খরচ বহন করবে :
وَعَلَى الْمَوْلُوْدِ لَهٗ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوْفِ
পিতার দায়িত্ব হলো বিধিসম্মতভাবে বাচ্চার মায়ের ভরণ-পোষণ দেয়া। (সূরা বাক্বারা- ২৩৩)
মাতা-পিতা কাউকেই কষ্টে ফেলা উচিৎ নয় :
لَا تُكَلَّفُ نَفْسٌ اِلَّا وُسْعَهَاۚ لَا تُضَآرَّ وَالِدَةٌ ۢبِوَلَدِهَا وَلَا مَوْلُوْدٌ لَّهٗ بِوَلَدِهٖ
কোন মানুষকে তার সাধ্যের বাহিরে কষ্ট দেয়া হয় না। সুতরাং কোন মাকে তার সন্তানের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না। আবার কোন পিতাকেও তার সন্তানের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না। (সূরা বাক্বারা- ২৩৩)
পিতা না থাকলে সন্তানের অভিভাবক দায়িত্ব নেবে :
وَعَلَى الْوَارِثِ مِثْلُ ذٰلِكَ
আর ওয়ারিশদের উপরও অনুরূপ দায়িত্ব বর্তাবে। (সূরা বাক্বারা- ২৩৩)
لِلّٰهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِؕ يَخْلُقُ مَا يَشَآءُؕ يَهَبُ لِمَنْ يَّشَآءُ اِنَاثًا وَّيَهَبُ لِمَنْ يَّشَآءُ الذُّكُوْرَ ‐ اَوْ يُزَوِّجُهُمْ ذُكْرَانًا وَّاِنَاثًاۚ وَيَجْعَلُ مَنْ يَّشَآءُ عَقِيْمًاؕ اِنَّهٗ عَلِيْمٌ قَدِيْرٌ
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর কর্তৃত্ব আল্লাহরই, তিনি যা ইচ্ছা তা-ই সৃষ্টি করেন; তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যাসন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্রসন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে পুত্র ও কন্যা উভয়ই দান করেন, আবার যাকে ইচ্ছা তাকে নিঃসন্তান (বন্ধ্যা) করেন। নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান। (সূরা শূরা- ৪৯, ৫০)
দুধ পান করানোর পূর্ণ মেয়াদ দু’বছর :
وَالْوَالِدَاتُ يُرْضِعْنَ اَوْلَادَهُنَّ حَوْلَيْنِ كَامِلَيْنِ لِمَنْ اَرَادَ اَنْ يُّتِمَّ الرَّضَاعَةَ
যারা দুধ পান করানোর সময় পূর্ণ করতে চায়, সেসব মায়েরা তাদের সন্তানদেরকে পূর্ণ দু’বছর দুধ পান করাবে। (সূরা বাক্বারা- ২৩৩)
ইচ্ছা করলে দু’বছরের কমেও দুধ ছাড়ানো যায় :
فَاِنْ اَرَادَا فِصَالًا عَنْ تَرَاضٍ مِّنْهُمَا وَتَشَاوُرٍ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا
অতঃপর পিতামাতা যদি উভয়ের পরামর্শ ও সমুতষ্টির ভিত্তিতে (দু’বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই) দুধ খাওয়ানো বন্ধ করতে চায়, তবে তাদের কোন গোনাহ হবে না। (সূরা বাক্বারা- ২৩৩)
বিনিময় দিয়ে অপর মহিলার মাধ্যমে দুধ পান করানো যায় :
وَاِنْ اَرَدْتُّمْ اَنْ تَسْتَرْضِعُوْاۤ اَوْلَادَكُمْ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ اِذَا سَلَّمْتُمْ مَّاۤ اٰتَيْتُمْ بِالْمَعْرُوْفِؕ وَاتَّقُوا اللهَ وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
আর যদি তোমরা (ধাত্রী দিয়ে) তোমাদের সন্তানদেরকে দুধ পান করিয়ে নিতে চাও, তাতেও তোমাদের কোন গোনাহ হবে না যদি তোমরা বিধি মোতাবেক তাদের বিনিময় দিয়ে দাও এবং আল্লাহকে ভয় করো। জেনে রেখো, তোমরা যা কর অবশ্যই আল্লাহ তা দেখেন। (সূরা বাক্বারা- ২৩৩)
স্ত্রী তালাকপ্রাপ্তা হলে সন্তানের পিতা খরচ বহন করবে :
وَعَلَى الْمَوْلُوْدِ لَهٗ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوْفِ
পিতার দায়িত্ব হলো বিধিসম্মতভাবে বাচ্চার মায়ের ভরণ-পোষণ দেয়া। (সূরা বাক্বারা- ২৩৩)
মাতা-পিতা কাউকেই কষ্টে ফেলা উচিৎ নয় :
لَا تُكَلَّفُ نَفْسٌ اِلَّا وُسْعَهَاۚ لَا تُضَآرَّ وَالِدَةٌ ۢبِوَلَدِهَا وَلَا مَوْلُوْدٌ لَّهٗ بِوَلَدِهٖ
কোন মানুষকে তার সাধ্যের বাহিরে কষ্ট দেয়া হয় না। সুতরাং কোন মাকে তার সন্তানের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না। আবার কোন পিতাকেও তার সন্তানের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না। (সূরা বাক্বারা- ২৩৩)
পিতা না থাকলে সন্তানের অভিভাবক দায়িত্ব নেবে :
وَعَلَى الْوَارِثِ مِثْلُ ذٰلِكَ
আর ওয়ারিশদের উপরও অনুরূপ দায়িত্ব বর্তাবে। (সূরা বাক্বারা- ২৩৩)
পালক পুত্র আসল পুত্রের স্থান লাভ করে না :
وَمَا جَعَلَ اَدْعِيَآءَكُمْ اَبْنَآءَكُمْ ذٰلِكُمْ قَوْلُكُمْ بِاَفْوَاهِكُمْ
তোমাদের পালক পুত্রদেরকে তোমাদের ছেলে বানিয়ে দেননি। ওগুলো তোমাদের মুখের কথা মাত্র। (সূরা আহযাব- ৪)
পালক পুত্রকে তার প্রকৃত পিতার পরিচয় দিয়ে ডাকতে হবে :
اُدْعُوْهُمْ لِاٰبَآئِهِمْ هُوَ اَقْسَطُ عِنْدَ اللهِ
তোমরা তাদেরকে তাদের পিতৃপরিচয়ে আহবান করো, এটাই আল্লাহর কাছে অধিক সঠিক। (সূরা আহযাব- ৫)
পালক পুত্র দ্বীনি ভাইয়ের মর্যাদা পাবে :
فَاِنْ لَّمْ تَعْلَمُوْاۤ اٰبَآءَهُمْ فَاِخْوَانُكُمْ فِى الدِّيْنِ وَمَوَالِيْكُمْ
যদি তোমরা তাদের প্রকৃত পিতৃপরিচয় না জান, তবে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই এবং বন্ধু হিসেবে গণ্য হবে। (সূরা আহযাব- ৫)
ব্যাখ্যা : কাউকে অধিক স্নেহের কারণে পুত্র বলে ফেললে, এতে কোন গোনাহ হবে না। অনুরূপভাবে মা, মেয়ে, বোন, ভাই ইত্যাদি শব্দাবলিও যদি কারো জন্য নিছক ভদ্রতার খাতিরে ব্যবহার করা হয়, তাহলে তাতে কোন গোনাহ হবে না। কিন্তু যদি এরূপ নিয়ত সহকারে এ কথা বলা হয় যে, এ সম্পর্কগুলোর যেটা প্রকৃত মর্যাদা সেই মর্যাদায় অভিসিক্ত করতে হবে এবং তার সাথে ঠিক তেমনি সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে যেমন সেই পর্যায়ের আত্মীয়দের সাথে করা হয়ে থাকে, তাহলে তা খুবই আপত্তিকর। এ হুকুমটি পালন করার জন্য সর্বপ্রথম যে সংশোধনমূলক কাজটি করা হয় সেটি হচ্ছে, নবী ﷺ এর পালকপুত্র যায়েদ (রাঃ) কে যায়েদ ইবনে মুহাম্মাদ বলার পরিবর্তে তার প্রকৃত পিতার সাথে সম্পর্কিত করে যায়েদ ইবনে হারেসা বলা শুরু করা হয়। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা এ আয়াত নাযিল হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত রাসূল ﷺ এর আযাদকৃত গোলাম যায়েদ ইবনে হারেসাকে যায়েদ ইবনে মুহাম্মাদ বলে ডাকতাম। (সহীহ বুখারী, হা/৪৭৮২)
নবী ﷺ বলেছেন, ‘‘ যে ব্যক্তি নিজেকে আপন পিতা ছাড়া অন্য কারো পুত্র বলে দাবী করে, অথচ সে জানে ঐ ব্যক্তি তার পিতা নয়, তার জন্য জান্নাত হারাম।’’ (সহীহ বুখারী, হা/৪৩২৬; সহীহ মুসলিম, হা/২২৯)
وَمَا جَعَلَ اَدْعِيَآءَكُمْ اَبْنَآءَكُمْ ذٰلِكُمْ قَوْلُكُمْ بِاَفْوَاهِكُمْ
তোমাদের পালক পুত্রদেরকে তোমাদের ছেলে বানিয়ে দেননি। ওগুলো তোমাদের মুখের কথা মাত্র। (সূরা আহযাব- ৪)
পালক পুত্রকে তার প্রকৃত পিতার পরিচয় দিয়ে ডাকতে হবে :
اُدْعُوْهُمْ لِاٰبَآئِهِمْ هُوَ اَقْسَطُ عِنْدَ اللهِ
তোমরা তাদেরকে তাদের পিতৃপরিচয়ে আহবান করো, এটাই আল্লাহর কাছে অধিক সঠিক। (সূরা আহযাব- ৫)
পালক পুত্র দ্বীনি ভাইয়ের মর্যাদা পাবে :
فَاِنْ لَّمْ تَعْلَمُوْاۤ اٰبَآءَهُمْ فَاِخْوَانُكُمْ فِى الدِّيْنِ وَمَوَالِيْكُمْ
যদি তোমরা তাদের প্রকৃত পিতৃপরিচয় না জান, তবে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই এবং বন্ধু হিসেবে গণ্য হবে। (সূরা আহযাব- ৫)
ব্যাখ্যা : কাউকে অধিক স্নেহের কারণে পুত্র বলে ফেললে, এতে কোন গোনাহ হবে না। অনুরূপভাবে মা, মেয়ে, বোন, ভাই ইত্যাদি শব্দাবলিও যদি কারো জন্য নিছক ভদ্রতার খাতিরে ব্যবহার করা হয়, তাহলে তাতে কোন গোনাহ হবে না। কিন্তু যদি এরূপ নিয়ত সহকারে এ কথা বলা হয় যে, এ সম্পর্কগুলোর যেটা প্রকৃত মর্যাদা সেই মর্যাদায় অভিসিক্ত করতে হবে এবং তার সাথে ঠিক তেমনি সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে যেমন সেই পর্যায়ের আত্মীয়দের সাথে করা হয়ে থাকে, তাহলে তা খুবই আপত্তিকর। এ হুকুমটি পালন করার জন্য সর্বপ্রথম যে সংশোধনমূলক কাজটি করা হয় সেটি হচ্ছে, নবী ﷺ এর পালকপুত্র যায়েদ (রাঃ) কে যায়েদ ইবনে মুহাম্মাদ বলার পরিবর্তে তার প্রকৃত পিতার সাথে সম্পর্কিত করে যায়েদ ইবনে হারেসা বলা শুরু করা হয়। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা এ আয়াত নাযিল হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত রাসূল ﷺ এর আযাদকৃত গোলাম যায়েদ ইবনে হারেসাকে যায়েদ ইবনে মুহাম্মাদ বলে ডাকতাম। (সহীহ বুখারী, হা/৪৭৮২)
নবী ﷺ বলেছেন, ‘‘ যে ব্যক্তি নিজেকে আপন পিতা ছাড়া অন্য কারো পুত্র বলে দাবী করে, অথচ সে জানে ঐ ব্যক্তি তার পিতা নয়, তার জন্য জান্নাত হারাম।’’ (সহীহ বুখারী, হা/৪৩২৬; সহীহ মুসলিম, হা/২২৯)
সন্তানের জীবন রক্ষায় যত্নবান হতে হবে :
وَلَا تَقْتُلُوْاۤ اَوْلَادَكُمْ خَشْيَةَ اِمْلَاقٍؕ نَحْنُ نَرْزُقُهُمْ وَاِيَّاكُمْؕ اِنَّ قَتْلَهُمْ كَانَ خِطْئًا كَبِيْرًا
তোমাদের সন্তানদেরকে দারিদ্র্যতার ভয়ে হত্যা করো না। কেননা আমি তাদেরকে রিযিক প্রদান করি এবং তোমাদেরকেও। নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা মহাপাপ। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩১)
ব্যাখ্যা : জাহেলী যুগে দারিদ্রে্যর ভয়ে শিশুহত্যা ও অকালে গর্ভপাত করা হতো। আর আজ তা দুনিয়াবাসীকে তৃতীয় একটি কৌশল অর্থাৎ গর্ভরোধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কিন্তু ইসলাম মানুষের সংখ্যা কমানোর এ নিকৃষ্ট প্রচেষ্টা ত্যাগ করে এমনসব গঠনমূলক কাজে নিজের শক্তি ও যোগ্যতা প্রয়োগ করার নির্দেশ দেয়, যেগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর প্রাকৃতিক বিধানানুযায়ী রিযিক বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। অর্থনৈতিক উপায়-উপকরণের স্বল্পতার আশঙ্কায় সন্তান উৎপাদনের ধারাবাহিকতা বন্ধ করে দিতে উদ্যত হওয়া মানুষের কাজ নয়। কুরআনের এ আয়াতটি মানুষকে এ বলে সাবধান করে দিচ্ছে যে, রিযিক পৌঁছানোর ব্যবস্থাপনা তোমাদের আয়ত্তাধীন নয়, বরং এটি এমন এক আল্লাহর আয়ত্তাধীন যিনি তোমাকেও রিযিক দিচ্ছেন। পূর্বে আগমনকারীদেরকে তিনি যেভাবে রিযিক দিয়ে এসেছেন তেমনিভাবে তোমাদেরকেও দেবেন। ইতিহাসের অভিজ্ঞতাও এ কথাই বলে। দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে জনসংখ্যা যতই বৃদ্ধি হয়েছে ঠিক সেই পরিমাণে বা তার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে অর্থনৈতিক উপায় উপকরণ বেড়ে গিয়েছে। কাজেই আল্লাহর ব্যবস্থাপনায় মানুষের হস্তক্ষেপ নির্বুদ্ধিতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
সন্তানদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا قُوْاۤ اَنْفُسَكُمْ وَاَهْلِيْكُمْ نَارًا وَّقُوْدُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلَآئِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَّا يَعْصُوْنَ اللهَ مَاۤ اَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُوْنَ مَا يُؤْمَرُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে ঐ অগ্নি হতে রক্ষা করো, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর; যাতে নিয়োজিত আছে নির্মম হৃদয় ও কঠোর স্বভাবের ফেরেশতাগণ। (তারা আল্লাহর এমন বান্দা) যারা আল্লাহ যা আদেশ করেন তা অমান্য করে না। আর তারা যা করতে আদিষ্ট হয়, তাই করে। (সূরা তাহরীম- ৬)
সন্তান সৎ হওয়ার জন্য দু‘আ করতে হবে :
رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ اَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ اَعْيُنٍ وَّاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِيْنَ اِمَامًا
হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তান দান করো, যারা আমাদের জন্য চক্ষুশীতলের কারণ হবে। আর আমাদেরকে মুত্তাক্বীদের জন্য অনুসরণযোগ্য বানিয়ে দাও। (সূরা ফুরক্বান- ৭৪)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ তাদেরকে ঈমান ও সৎকাজের তাওফীক দান করো এবং পরিচ্ছন্ন চারিত্রিক গুণাবলির অধিকারী করো। কারণ একজন মুমিন তার স্ত্রী ও সন্তানদের দৈহিক সৌন্দর্য ও আরাম-আয়েশ থেকে নয়, বরং সদাচার ও সচ্চরিত্রতা থেকেই মানসিক প্রশান্তি লাভ করে। তারা আল্লাহভীতি ও আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের ক্ষেত্রে সবার চেয়ে এগিয়ে যাবে। কল্যাণ ও সৎকর্মশীলদের ক্ষেত্রে সবার চেয়ে অগ্রগামী হবে। ফলে দুনিয়াতে শুধু কল্যাণ ও সৎকর্মশীলতাই প্রসার লাভ করবে। দুনিয়ায় যারা সবচেয়ে প্রিয়, তাদেরকে জাহান্নামের ইন্ধনে পরিণত হতে দেখার চেয়ে বেশি কষ্টকর বিষয় মানুষের জন্য আর কী হতে পারে?
লুক্বমান (আঃ) এর মতো উপদেশ দিতে হবে :
وَلَقَدْ اٰتَيْنَا لُقْمَانَ الْحِكْمَةَ اَنِ اشْكُرْ لِلّٰهِؕ وَمَنْ يَّشْكُرْ فَاِنَّمَا يَشْكُرُ لِنَفْسِهٖۚ وَمَنْ كَفَرَ فَاِنَّ اللهَ غَنِيٌّ حَمِيْدٌ
আমি তো লুক্বমানকে প্রজ্ঞা দান করেছিলাম এবং এ আদেশ দিয়েছিলাম যে, তুমি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। বস্তুত যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে তো তা নিজের কল্যাণের জন্যই করে; আর যে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে (তাও সে নিজের জন্যই করে)। নিশ্চয় আল্লাহ অভাবমুক্ত ও প্রশংসিত। (সূরা লুক্বমান- ১২)
সন্তানের প্রতি শিরক না করার উপদেশ :
وَاِذْ قَالَ لُقْمَانُ لِابْنِهٖ وَهُوَ يَعِظُهٗ يَا بُنَيَّ لَا تُشْرِكْ بِاللهِؕ اِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيْمٌ
স্মরণ করো, যখন লুক্বমান স্বীয় ছেলেকে বলেছিলেন, হে আমার ছেলে! আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করো না। নিশ্চয় শিরক হচ্ছে সবচেয়ে বড় যুলুম। (সূরা লুক্বমান- ১৩)
ব্যাখ্যা : মানুষ দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশি যার সাথে আন্তরিকতা বজায় রাখে, তা হলো তার নিজ সন্তান। এক ব্যক্তি অন্যকে ধোঁকা দিতে পারে এমনকি মুনাফিকী আচরণ করতে পারে; কিন্তু সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোকটিও নিজ পুত্রকে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা কখনই করতে পারে না। যেমন লুক্বমান (আঃ) তার নিজ পুত্রকে এ নসীহত করা অকাট্যভাবে প্রমাণ করে যে, তাঁর মতে শিরক যথার্থই একটি মহাযুলুম। তাই তিনি সর্বপ্রথম নিজের প্রাণপ্রিয় পুত্রকে এ গোমরাহী থেকে দূরে থাকার উপদেশ দেন। যুলুমের প্রকৃত অর্থ হচ্ছে, কারো অধিকার হরণ করা এবং ইনসাফ বিরোধী কাজ করা। শিরক এ কারণে বড় যুলুম যে, এর মাধ্যমে মানুষ এমনসব সত্তাকে নিজের স্রষ্টা, রিযিকদাতা ও উপাস্য হিসেবে ধরে নেয়, যাদের মূলত কোনকিছু সৃষ্টি করা বা রিযিক দান করা বা উপাস্য হওয়ার কোন অধিকার নেই। মানুষ আল্লাহর ইবাদাত করার সাথে সাথে অন্যকিছুরও ইবাদাত করে আল্লাহর অধিকার নষ্ট করে এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য সত্তার ইবাদাত করতে গিয়ে মানুষ যে কাজই করে তাতে সে নিজের দেহ ও মন থেকে শুরু করে পৃথিবী ও আকাশের বহু জিনিসকে আল্লাহ ছাড়া অন্যের দাসত্বে ব্যবহার করে। অথচ এ সমস্ত জিনিস এক আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন। তাই কোন জিনিসকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো দাসত্বে ব্যবহার করার অধিকার কারো নেই। মানুষ নিজের উপর এ অধিকার রাখে যে, সে নিজেকে লাঞ্ছনা ও দুর্ভোগের মধ্যে ঠেলে দেবে না। কিন্তু সে স্রষ্টাকে বাদ দিয়ে সৃষ্টির আনুগত্য করে নিজেকে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করে এবং নিজেকে শাস্তির যোগ্য বানিয়ে তুলে। এভাবে একজন মুশরিকের সমগ্র জীবন সার্বক্ষণিক যুলুমে পরিণত হয়। তার কোন একটি মুহূর্তও যুলুমমুক্ত নয়।
আকিদা বিশুদ্ধ করার তাকিদ :
يَا بُنَيَّ اِنَّهَاۤ اِنْ تَكُ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِّنْ خَرْدَلٍ فَتَكُنْ فِيْ صَخْرَةٍ اَوْ فِى السَّمَاوَاتِ اَوْ فِى الْاَرْضِ يَأْتِ بِهَا اللهُؕ اِنَّ اللهَ لَطِيْفٌ خَبِيْرٌ
হে আমার ছেলে! কোনকিছুর (আকৃতি) যদি সরিষার বীজের পরিমাণও হয় এবং তা যদি পাথরের ভেতরে অথবা আকাশে কিংবা ভূগর্ভে (যেকোন স্থানে) থেকে থাকে, তাহলেও আল্লাহ তা উপস্থিত করবেন। নিশ্চই আল্লাহ সূক্ষ্মদর্শী ও সম্যক অবহিত। (সূরা লুক্বমান- ১৬)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর জ্ঞান ও তাঁর পাকড়াও হতে কেউ বাঁচতে পারবে না। পাথরের মধ্যে ছোট্ট একটি কণা মানুষের দৃষ্টির অগোচরে থাকতে পারে কিন্তু তাঁর কাছে তা সুস্পষ্ট। আকাশের একটি ক্ষুদ্রতম কণিকা মানুষ থেকে বহু দূরবর্তী হতে পারে, ভূমির গভীরে অবস্থিত কোন জিনিসের প্রতি তার দৃষ্টি শেষ হয়ে যেতে পারে; কিন্তু তা আল্লাহর অতি নিকটতর। কাজেই মানুষ কোথাও এমন কোন সৎ বা অসৎকাজ করতে পারে না, যা আল্লাহর অগোচরে থেকে যায়। তিনি তা কেবল জানেন তা নয় বরং যখন হিসাব-নিকাশের সময় আসবে তখন তিনি মানুষের প্রত্যেকটি কাজের রেকর্ডও তাদের সামনে উপস্থাপন করবেন।
সালাত প্রতিষ্ঠা ও দাওয়াতী কাজের নির্দেশ :
يَا بُنَيَّ اَقِمِ الصَّلَاةَ وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوْفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ
হে আমার ছেলে! সালাত কায়েম করো, সৎকাজের আদেশ দাও ও অসৎকাজ হতে বাধা প্রদান করো। (সূরা লুক্বমান- ১৭)
ধৈর্যধারণ করার নির্দেশ :
وَاصْبِرْ عَلٰى مَاۤ اَصَابَكَؕ اِنَّ ذٰلِكَ مِنْ عَزْمِ الْاُمُوْرِ
তোমার উপর যে বিপদ আসে তাতে ধৈর্যধারণ করো; নিশ্চয় এটা দৃঢ় সংকল্পের কাজ। (সূরা লুক্বমান- ১৭)
বিনয়ী হওয়ার নির্দেশ :
وَلَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمْشِ فِى الْاَرْضِ مَرَحًا ؕ اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُوْرٍ
আর তুমি অহংকারবশে মানুষকে অবহেলা করো না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে বিচরণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক-অহংকারীকে ভালোবাসেন না। (সূরা লুক্বমান- ১৮)
ব্যাখ্যা : صَعَرْ (সা‘আর) বলা হয় একটি রোগকে। এ রোগটি হয় উটের ঘাড়ে। এ রোগে আক্রান্ত হলে উট তার ঘাড় সবসময় একদিকে ফিরিয়ে রাখে। কেউ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে অর্থ অহংকারপূর্ণ ব্যবহার করল এবং মুখ ফিরিয়ে কথা বলল।
مُخْتَالٌ (মুখতাল) অর্থ হচ্ছে, এমন ব্যক্তি যে নিজেই নিজেকে বড় কিছু মনে করে।
فَخُوْرٌ (ফাখূর) তাকে বলে, যে নিজের বড়াই অন্যের কাছে করে। মানুষের চালচলনে অহংকার ও দম্ভ তখনই প্রকাশ পায়, যখন সে অন্যদেরকে নিজের বড়াই ও শ্রেষ্ঠত্ব অনুভব করাতে চায়।
কথাবার্তা ও চালচলনে ভারসাম্য রক্ষার নির্দেশ :
وَاقْصِدْ فِيْ مَشْيِكَ وَاغْضُضْ مِنْ صَوْتِكَؕ اِنَّ اَنْكَرَ الْاَصْوَاتِ لَصَوْتُ الْحَمِيْرِ
তুমি তোমার চলাফেরায় মধ্যমপন্থা অবলম্বন করো এবং তোমার কণ্ঠস্বর নীচু রাখো; নিঃসন্দেহে স্বরের মধ্যে গাধার স্বরই সবচেয়ে বেশি অপছন্দনীয়। (সূরা লুক্বমান- ১৯)
ব্যাখ্যা : এখানে উদ্দেশ্য হচ্ছে, প্রবৃত্তির এমন সংশোধন করা, যার প্রভাবে চলার মধ্যে দম্ভ অথবা হীনতার প্রকাশ ঘটে। ধনসম্পদ, ক্ষমতা, কর্তৃত্ব, সৌন্দর্য, জ্ঞান, শক্তি এবং এ ধরনের অন্যান্য যত কিছুই মানুষের মধ্যে অহংকার সৃষ্টি করে বিশেষ ধরনের চালচলনের মাধ্যমে তা প্রকাশ হয়ে যায়। এটা দূষণীয় মানসিক অবস্থার প্রভাবে হয়ে থাকে। লুক্বমান (আঃ) এর উপদেশের উদ্দেশ্য হচ্ছে, নিজের মনকে এমনভাবে পরিবর্তন করো যেমন তুমি একজন ভদ্রলোক। তোমার মধ্যে কোন অহংকার, দুর্বলতা ও লোক দেখানো কোন বিনয় থাকবে না।
স্বাভাবিক প্রয়োজনের খাতিরে আওয়াজের এক ধরনের নিম্নগামিতা ও উচ্চগামিতা এবং কঠোরতা ও কোমলতা হয়ে থাকে। কাছের বা কম সংখ্যক লোকের সাথে কথা বললে আস্তে বলতে হবে। দূরের অথবা অনেক লোকের সাথে কথা বলতে হলে অব্যশই জোরে বলতে হবে। এমনিভাবে উচ্চারণভঙ্গীর পার্থক্যের ব্যাপারটাও স্থান ও কালের সাথে জড়িত। প্রশংসা বাক্যের উচ্চারণভঙ্গী নিন্দা বাক্যের উচ্চারণভঙ্গী থেকে এবং সন্তোষ প্রকাশের বাক্য অসন্তোষ প্রকাশের বাক্য হতে আলাদা হবে। লুক্বমান (আঃ) এর নসীহতের অর্থ হলো, অহংকার প্রকাশ, ভীতি প্রদর্শন এবং অন্যকে অপমানিত করার জন্য গলা ফাটিয়ে গাধার স্বরে কথা না বলা।
সন্তান সৎ হলে পরকালেও উপকারে আসবে :
وَمَاۤ اَمْوَالُكُمْ وَلَاۤ اَوْلَادُكُمْ بِالَّتِيْ تُقَرِّبُكُمْ عِنْدَنَا زُلْفٰۤى اِلَّا مَنْ اٰمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًاؗ فَاُولٰٓئِكَ لَهُمْ جَزَآءُ الضِّعْفِ بِمَا عَمِلُوْا وَهُمْ فِى الْغُرُفَاتِ اٰمِنُوْنَ
তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি এমন কিছু নয়, যা তোমাদেরকে আমার নিকটবর্তী করে দেবে। তবে যারা ঈমান আনবে ও সৎকর্ম করবে তারাই তাদের কর্মের জন্য পাবে বহুগুণ পুরস্কার, আর তারা প্রাসাদসমূহে নিরাপদে বসবাস করবে। (সূরা সাবা- ৩৭)
কোন কোন সন্তান দ্বীনের কাজে শত্রু হয়ে যায় :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنَّ مِنْ اَزْوَاجِكُمْ وَاَوْلَادِكُمْ عَدُوًّا لَّكُمْ فَاحْذَرُوْهُمْۚ وَاِنْ تَعْفُوْا وَتَصْفَحُوْا وَتَغْفِرُوْا فَاِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
হে মুমিনগণ! তোমাদের স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে কেউ কেউ তোমাদের শত্রু, অতএব তাদের সম্পর্কে সতর্ক থেকো। তোমরা যদি তাদেরকে মার্জনা কর, তাদের দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা কর এবং তাদেরকে ক্ষমা কর, তবে আল্লাহও (তোমাদের ও তাদের প্রতি) ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা তাগাবুন- ১৪)
শানে নুযূল : একদা কিছু লোক রাসূল ﷺ এর কাছে ইসলাম কবুল করে মদিনায় হিজরত করতে মনস্থ করলেন। কিন্তু স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততির কান্না-কাটি ও ভলোবাসা তাদের হিজরতের মধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়াল। ফলে তারা হিজরত করতে অক্ষম হয়ে পড়লেন। তখন তাদের সম্বন্ধে এ আয়াতটি নাযিল হয়।
সন্তান-সন্ততি পরীক্ষাস্বরূপ :
اِنَّمَاۤ اَمْوَالُكُمْ وَاَوْلَادُكُمْ فِتْنَةٌؕ وَاللهُ عِنْدَهٗۤ اَجْرٌ عَظِيْمٌ
তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তোমাদের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ; আর আল্লাহরই নিকট রয়েছে এর মহাপ্রতিদান। (সূরা তাগাবুন- ১৫)
সন্তান যেন আল্লাহর ইবাদাতে বাধা হয়ে না দাঁড়ায় :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تُلْهِكُمْ اَمْوَالُكُمْ وَلَاۤ اَوْلَادُكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَمَنْ يَّفْعَلْ ذٰلِكَ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ হতে উদাসীন করে না দেয়। যারা এমন করবে তারাই তো ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা মুনাফিকূন- ৯)
অসৎ সন্তান কিয়ামতের দিন কোন কাজে আসবে না :
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوْا رَبَّكُمْ وَاخْشَوْا يَوْمًا لَّا يَجْزِيْ وَالِدٌ عَنْ وَّلَدِهٖؗ وَلَا مَوْلُوْدٌ هُوَ جَازٍ عَنْ وَّالِدِهٖ شَيْئًاؕ اِنَّ وَعْدَ اللهِ حَقٌّ فَلَا تَغُرَّنَّكُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا وَلَا يَغُرَّنَّكُمْ بِاللهِ الْغَرُوْرُ
হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো এবং ভয় করো সেদিনকে, যেদিন পিতা সন্তানের কোন উপকারে আসবে না এবং সন্তানও পিতার কোন উপকারে আসবে না, নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য। সুতরাং দুনিয়ার জীবন যেন কিছুতেই তোমাদেরকে ধোঁকা না দেয় এবং কোন প্রতারকও যেন কিছুতেই তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারিত না করে। (সূরা লুক্বমান- ৩৩)
وَلَا تَقْتُلُوْاۤ اَوْلَادَكُمْ خَشْيَةَ اِمْلَاقٍؕ نَحْنُ نَرْزُقُهُمْ وَاِيَّاكُمْؕ اِنَّ قَتْلَهُمْ كَانَ خِطْئًا كَبِيْرًا
তোমাদের সন্তানদেরকে দারিদ্র্যতার ভয়ে হত্যা করো না। কেননা আমি তাদেরকে রিযিক প্রদান করি এবং তোমাদেরকেও। নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা মহাপাপ। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩১)
ব্যাখ্যা : জাহেলী যুগে দারিদ্রে্যর ভয়ে শিশুহত্যা ও অকালে গর্ভপাত করা হতো। আর আজ তা দুনিয়াবাসীকে তৃতীয় একটি কৌশল অর্থাৎ গর্ভরোধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কিন্তু ইসলাম মানুষের সংখ্যা কমানোর এ নিকৃষ্ট প্রচেষ্টা ত্যাগ করে এমনসব গঠনমূলক কাজে নিজের শক্তি ও যোগ্যতা প্রয়োগ করার নির্দেশ দেয়, যেগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর প্রাকৃতিক বিধানানুযায়ী রিযিক বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। অর্থনৈতিক উপায়-উপকরণের স্বল্পতার আশঙ্কায় সন্তান উৎপাদনের ধারাবাহিকতা বন্ধ করে দিতে উদ্যত হওয়া মানুষের কাজ নয়। কুরআনের এ আয়াতটি মানুষকে এ বলে সাবধান করে দিচ্ছে যে, রিযিক পৌঁছানোর ব্যবস্থাপনা তোমাদের আয়ত্তাধীন নয়, বরং এটি এমন এক আল্লাহর আয়ত্তাধীন যিনি তোমাকেও রিযিক দিচ্ছেন। পূর্বে আগমনকারীদেরকে তিনি যেভাবে রিযিক দিয়ে এসেছেন তেমনিভাবে তোমাদেরকেও দেবেন। ইতিহাসের অভিজ্ঞতাও এ কথাই বলে। দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে জনসংখ্যা যতই বৃদ্ধি হয়েছে ঠিক সেই পরিমাণে বা তার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে অর্থনৈতিক উপায় উপকরণ বেড়ে গিয়েছে। কাজেই আল্লাহর ব্যবস্থাপনায় মানুষের হস্তক্ষেপ নির্বুদ্ধিতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
সন্তানদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا قُوْاۤ اَنْفُسَكُمْ وَاَهْلِيْكُمْ نَارًا وَّقُوْدُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلَآئِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَّا يَعْصُوْنَ اللهَ مَاۤ اَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُوْنَ مَا يُؤْمَرُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে ঐ অগ্নি হতে রক্ষা করো, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর; যাতে নিয়োজিত আছে নির্মম হৃদয় ও কঠোর স্বভাবের ফেরেশতাগণ। (তারা আল্লাহর এমন বান্দা) যারা আল্লাহ যা আদেশ করেন তা অমান্য করে না। আর তারা যা করতে আদিষ্ট হয়, তাই করে। (সূরা তাহরীম- ৬)
সন্তান সৎ হওয়ার জন্য দু‘আ করতে হবে :
رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ اَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ اَعْيُنٍ وَّاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِيْنَ اِمَامًا
হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তান দান করো, যারা আমাদের জন্য চক্ষুশীতলের কারণ হবে। আর আমাদেরকে মুত্তাক্বীদের জন্য অনুসরণযোগ্য বানিয়ে দাও। (সূরা ফুরক্বান- ৭৪)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ তাদেরকে ঈমান ও সৎকাজের তাওফীক দান করো এবং পরিচ্ছন্ন চারিত্রিক গুণাবলির অধিকারী করো। কারণ একজন মুমিন তার স্ত্রী ও সন্তানদের দৈহিক সৌন্দর্য ও আরাম-আয়েশ থেকে নয়, বরং সদাচার ও সচ্চরিত্রতা থেকেই মানসিক প্রশান্তি লাভ করে। তারা আল্লাহভীতি ও আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের ক্ষেত্রে সবার চেয়ে এগিয়ে যাবে। কল্যাণ ও সৎকর্মশীলদের ক্ষেত্রে সবার চেয়ে অগ্রগামী হবে। ফলে দুনিয়াতে শুধু কল্যাণ ও সৎকর্মশীলতাই প্রসার লাভ করবে। দুনিয়ায় যারা সবচেয়ে প্রিয়, তাদেরকে জাহান্নামের ইন্ধনে পরিণত হতে দেখার চেয়ে বেশি কষ্টকর বিষয় মানুষের জন্য আর কী হতে পারে?
লুক্বমান (আঃ) এর মতো উপদেশ দিতে হবে :
وَلَقَدْ اٰتَيْنَا لُقْمَانَ الْحِكْمَةَ اَنِ اشْكُرْ لِلّٰهِؕ وَمَنْ يَّشْكُرْ فَاِنَّمَا يَشْكُرُ لِنَفْسِهٖۚ وَمَنْ كَفَرَ فَاِنَّ اللهَ غَنِيٌّ حَمِيْدٌ
আমি তো লুক্বমানকে প্রজ্ঞা দান করেছিলাম এবং এ আদেশ দিয়েছিলাম যে, তুমি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। বস্তুত যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে তো তা নিজের কল্যাণের জন্যই করে; আর যে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে (তাও সে নিজের জন্যই করে)। নিশ্চয় আল্লাহ অভাবমুক্ত ও প্রশংসিত। (সূরা লুক্বমান- ১২)
সন্তানের প্রতি শিরক না করার উপদেশ :
وَاِذْ قَالَ لُقْمَانُ لِابْنِهٖ وَهُوَ يَعِظُهٗ يَا بُنَيَّ لَا تُشْرِكْ بِاللهِؕ اِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيْمٌ
স্মরণ করো, যখন লুক্বমান স্বীয় ছেলেকে বলেছিলেন, হে আমার ছেলে! আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করো না। নিশ্চয় শিরক হচ্ছে সবচেয়ে বড় যুলুম। (সূরা লুক্বমান- ১৩)
ব্যাখ্যা : মানুষ দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশি যার সাথে আন্তরিকতা বজায় রাখে, তা হলো তার নিজ সন্তান। এক ব্যক্তি অন্যকে ধোঁকা দিতে পারে এমনকি মুনাফিকী আচরণ করতে পারে; কিন্তু সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোকটিও নিজ পুত্রকে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা কখনই করতে পারে না। যেমন লুক্বমান (আঃ) তার নিজ পুত্রকে এ নসীহত করা অকাট্যভাবে প্রমাণ করে যে, তাঁর মতে শিরক যথার্থই একটি মহাযুলুম। তাই তিনি সর্বপ্রথম নিজের প্রাণপ্রিয় পুত্রকে এ গোমরাহী থেকে দূরে থাকার উপদেশ দেন। যুলুমের প্রকৃত অর্থ হচ্ছে, কারো অধিকার হরণ করা এবং ইনসাফ বিরোধী কাজ করা। শিরক এ কারণে বড় যুলুম যে, এর মাধ্যমে মানুষ এমনসব সত্তাকে নিজের স্রষ্টা, রিযিকদাতা ও উপাস্য হিসেবে ধরে নেয়, যাদের মূলত কোনকিছু সৃষ্টি করা বা রিযিক দান করা বা উপাস্য হওয়ার কোন অধিকার নেই। মানুষ আল্লাহর ইবাদাত করার সাথে সাথে অন্যকিছুরও ইবাদাত করে আল্লাহর অধিকার নষ্ট করে এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য সত্তার ইবাদাত করতে গিয়ে মানুষ যে কাজই করে তাতে সে নিজের দেহ ও মন থেকে শুরু করে পৃথিবী ও আকাশের বহু জিনিসকে আল্লাহ ছাড়া অন্যের দাসত্বে ব্যবহার করে। অথচ এ সমস্ত জিনিস এক আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন। তাই কোন জিনিসকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো দাসত্বে ব্যবহার করার অধিকার কারো নেই। মানুষ নিজের উপর এ অধিকার রাখে যে, সে নিজেকে লাঞ্ছনা ও দুর্ভোগের মধ্যে ঠেলে দেবে না। কিন্তু সে স্রষ্টাকে বাদ দিয়ে সৃষ্টির আনুগত্য করে নিজেকে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করে এবং নিজেকে শাস্তির যোগ্য বানিয়ে তুলে। এভাবে একজন মুশরিকের সমগ্র জীবন সার্বক্ষণিক যুলুমে পরিণত হয়। তার কোন একটি মুহূর্তও যুলুমমুক্ত নয়।
আকিদা বিশুদ্ধ করার তাকিদ :
يَا بُنَيَّ اِنَّهَاۤ اِنْ تَكُ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِّنْ خَرْدَلٍ فَتَكُنْ فِيْ صَخْرَةٍ اَوْ فِى السَّمَاوَاتِ اَوْ فِى الْاَرْضِ يَأْتِ بِهَا اللهُؕ اِنَّ اللهَ لَطِيْفٌ خَبِيْرٌ
হে আমার ছেলে! কোনকিছুর (আকৃতি) যদি সরিষার বীজের পরিমাণও হয় এবং তা যদি পাথরের ভেতরে অথবা আকাশে কিংবা ভূগর্ভে (যেকোন স্থানে) থেকে থাকে, তাহলেও আল্লাহ তা উপস্থিত করবেন। নিশ্চই আল্লাহ সূক্ষ্মদর্শী ও সম্যক অবহিত। (সূরা লুক্বমান- ১৬)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর জ্ঞান ও তাঁর পাকড়াও হতে কেউ বাঁচতে পারবে না। পাথরের মধ্যে ছোট্ট একটি কণা মানুষের দৃষ্টির অগোচরে থাকতে পারে কিন্তু তাঁর কাছে তা সুস্পষ্ট। আকাশের একটি ক্ষুদ্রতম কণিকা মানুষ থেকে বহু দূরবর্তী হতে পারে, ভূমির গভীরে অবস্থিত কোন জিনিসের প্রতি তার দৃষ্টি শেষ হয়ে যেতে পারে; কিন্তু তা আল্লাহর অতি নিকটতর। কাজেই মানুষ কোথাও এমন কোন সৎ বা অসৎকাজ করতে পারে না, যা আল্লাহর অগোচরে থেকে যায়। তিনি তা কেবল জানেন তা নয় বরং যখন হিসাব-নিকাশের সময় আসবে তখন তিনি মানুষের প্রত্যেকটি কাজের রেকর্ডও তাদের সামনে উপস্থাপন করবেন।
সালাত প্রতিষ্ঠা ও দাওয়াতী কাজের নির্দেশ :
يَا بُنَيَّ اَقِمِ الصَّلَاةَ وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوْفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ
হে আমার ছেলে! সালাত কায়েম করো, সৎকাজের আদেশ দাও ও অসৎকাজ হতে বাধা প্রদান করো। (সূরা লুক্বমান- ১৭)
ধৈর্যধারণ করার নির্দেশ :
وَاصْبِرْ عَلٰى مَاۤ اَصَابَكَؕ اِنَّ ذٰلِكَ مِنْ عَزْمِ الْاُمُوْرِ
তোমার উপর যে বিপদ আসে তাতে ধৈর্যধারণ করো; নিশ্চয় এটা দৃঢ় সংকল্পের কাজ। (সূরা লুক্বমান- ১৭)
বিনয়ী হওয়ার নির্দেশ :
وَلَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمْشِ فِى الْاَرْضِ مَرَحًا ؕ اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُوْرٍ
আর তুমি অহংকারবশে মানুষকে অবহেলা করো না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে বিচরণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক-অহংকারীকে ভালোবাসেন না। (সূরা লুক্বমান- ১৮)
ব্যাখ্যা : صَعَرْ (সা‘আর) বলা হয় একটি রোগকে। এ রোগটি হয় উটের ঘাড়ে। এ রোগে আক্রান্ত হলে উট তার ঘাড় সবসময় একদিকে ফিরিয়ে রাখে। কেউ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে অর্থ অহংকারপূর্ণ ব্যবহার করল এবং মুখ ফিরিয়ে কথা বলল।
مُخْتَالٌ (মুখতাল) অর্থ হচ্ছে, এমন ব্যক্তি যে নিজেই নিজেকে বড় কিছু মনে করে।
فَخُوْرٌ (ফাখূর) তাকে বলে, যে নিজের বড়াই অন্যের কাছে করে। মানুষের চালচলনে অহংকার ও দম্ভ তখনই প্রকাশ পায়, যখন সে অন্যদেরকে নিজের বড়াই ও শ্রেষ্ঠত্ব অনুভব করাতে চায়।
কথাবার্তা ও চালচলনে ভারসাম্য রক্ষার নির্দেশ :
وَاقْصِدْ فِيْ مَشْيِكَ وَاغْضُضْ مِنْ صَوْتِكَؕ اِنَّ اَنْكَرَ الْاَصْوَاتِ لَصَوْتُ الْحَمِيْرِ
তুমি তোমার চলাফেরায় মধ্যমপন্থা অবলম্বন করো এবং তোমার কণ্ঠস্বর নীচু রাখো; নিঃসন্দেহে স্বরের মধ্যে গাধার স্বরই সবচেয়ে বেশি অপছন্দনীয়। (সূরা লুক্বমান- ১৯)
ব্যাখ্যা : এখানে উদ্দেশ্য হচ্ছে, প্রবৃত্তির এমন সংশোধন করা, যার প্রভাবে চলার মধ্যে দম্ভ অথবা হীনতার প্রকাশ ঘটে। ধনসম্পদ, ক্ষমতা, কর্তৃত্ব, সৌন্দর্য, জ্ঞান, শক্তি এবং এ ধরনের অন্যান্য যত কিছুই মানুষের মধ্যে অহংকার সৃষ্টি করে বিশেষ ধরনের চালচলনের মাধ্যমে তা প্রকাশ হয়ে যায়। এটা দূষণীয় মানসিক অবস্থার প্রভাবে হয়ে থাকে। লুক্বমান (আঃ) এর উপদেশের উদ্দেশ্য হচ্ছে, নিজের মনকে এমনভাবে পরিবর্তন করো যেমন তুমি একজন ভদ্রলোক। তোমার মধ্যে কোন অহংকার, দুর্বলতা ও লোক দেখানো কোন বিনয় থাকবে না।
স্বাভাবিক প্রয়োজনের খাতিরে আওয়াজের এক ধরনের নিম্নগামিতা ও উচ্চগামিতা এবং কঠোরতা ও কোমলতা হয়ে থাকে। কাছের বা কম সংখ্যক লোকের সাথে কথা বললে আস্তে বলতে হবে। দূরের অথবা অনেক লোকের সাথে কথা বলতে হলে অব্যশই জোরে বলতে হবে। এমনিভাবে উচ্চারণভঙ্গীর পার্থক্যের ব্যাপারটাও স্থান ও কালের সাথে জড়িত। প্রশংসা বাক্যের উচ্চারণভঙ্গী নিন্দা বাক্যের উচ্চারণভঙ্গী থেকে এবং সন্তোষ প্রকাশের বাক্য অসন্তোষ প্রকাশের বাক্য হতে আলাদা হবে। লুক্বমান (আঃ) এর নসীহতের অর্থ হলো, অহংকার প্রকাশ, ভীতি প্রদর্শন এবং অন্যকে অপমানিত করার জন্য গলা ফাটিয়ে গাধার স্বরে কথা না বলা।
সন্তান সৎ হলে পরকালেও উপকারে আসবে :
وَمَاۤ اَمْوَالُكُمْ وَلَاۤ اَوْلَادُكُمْ بِالَّتِيْ تُقَرِّبُكُمْ عِنْدَنَا زُلْفٰۤى اِلَّا مَنْ اٰمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًاؗ فَاُولٰٓئِكَ لَهُمْ جَزَآءُ الضِّعْفِ بِمَا عَمِلُوْا وَهُمْ فِى الْغُرُفَاتِ اٰمِنُوْنَ
তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি এমন কিছু নয়, যা তোমাদেরকে আমার নিকটবর্তী করে দেবে। তবে যারা ঈমান আনবে ও সৎকর্ম করবে তারাই তাদের কর্মের জন্য পাবে বহুগুণ পুরস্কার, আর তারা প্রাসাদসমূহে নিরাপদে বসবাস করবে। (সূরা সাবা- ৩৭)
কোন কোন সন্তান দ্বীনের কাজে শত্রু হয়ে যায় :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنَّ مِنْ اَزْوَاجِكُمْ وَاَوْلَادِكُمْ عَدُوًّا لَّكُمْ فَاحْذَرُوْهُمْۚ وَاِنْ تَعْفُوْا وَتَصْفَحُوْا وَتَغْفِرُوْا فَاِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
হে মুমিনগণ! তোমাদের স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে কেউ কেউ তোমাদের শত্রু, অতএব তাদের সম্পর্কে সতর্ক থেকো। তোমরা যদি তাদেরকে মার্জনা কর, তাদের দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা কর এবং তাদেরকে ক্ষমা কর, তবে আল্লাহও (তোমাদের ও তাদের প্রতি) ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা তাগাবুন- ১৪)
শানে নুযূল : একদা কিছু লোক রাসূল ﷺ এর কাছে ইসলাম কবুল করে মদিনায় হিজরত করতে মনস্থ করলেন। কিন্তু স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততির কান্না-কাটি ও ভলোবাসা তাদের হিজরতের মধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়াল। ফলে তারা হিজরত করতে অক্ষম হয়ে পড়লেন। তখন তাদের সম্বন্ধে এ আয়াতটি নাযিল হয়।
সন্তান-সন্ততি পরীক্ষাস্বরূপ :
اِنَّمَاۤ اَمْوَالُكُمْ وَاَوْلَادُكُمْ فِتْنَةٌؕ وَاللهُ عِنْدَهٗۤ اَجْرٌ عَظِيْمٌ
তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তোমাদের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ; আর আল্লাহরই নিকট রয়েছে এর মহাপ্রতিদান। (সূরা তাগাবুন- ১৫)
সন্তান যেন আল্লাহর ইবাদাতে বাধা হয়ে না দাঁড়ায় :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تُلْهِكُمْ اَمْوَالُكُمْ وَلَاۤ اَوْلَادُكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَمَنْ يَّفْعَلْ ذٰلِكَ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ হতে উদাসীন করে না দেয়। যারা এমন করবে তারাই তো ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা মুনাফিকূন- ৯)
অসৎ সন্তান কিয়ামতের দিন কোন কাজে আসবে না :
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوْا رَبَّكُمْ وَاخْشَوْا يَوْمًا لَّا يَجْزِيْ وَالِدٌ عَنْ وَّلَدِهٖؗ وَلَا مَوْلُوْدٌ هُوَ جَازٍ عَنْ وَّالِدِهٖ شَيْئًاؕ اِنَّ وَعْدَ اللهِ حَقٌّ فَلَا تَغُرَّنَّكُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا وَلَا يَغُرَّنَّكُمْ بِاللهِ الْغَرُوْرُ
হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো এবং ভয় করো সেদিনকে, যেদিন পিতা সন্তানের কোন উপকারে আসবে না এবং সন্তানও পিতার কোন উপকারে আসবে না, নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য। সুতরাং দুনিয়ার জীবন যেন কিছুতেই তোমাদেরকে ধোঁকা না দেয় এবং কোন প্রতারকও যেন কিছুতেই তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারিত না করে। (সূরা লুক্বমান- ৩৩)
প্রাচীন যুগে আরবের লোকেরা নির্দ্বিধায় একে অপরের ঘরে ঢুকে পড়ত। কেউ যদি কারো সাথে দেখা করতে চাইত, তাহলে অনুমতি নিয়ে ভেতরে যাওয়ার নিয়ম ছিল না। এ জাহেলী পদ্ধতি বহু ক্ষতির কারণ হয়ে পড়েছিল। এর ফলে অনেক সময় বহু নৈতিক অপকর্মেরও সূচনা হতো। ওমর (রাঃ) পর্দার আয়াত নাযিল হওয়ার পূর্বে কয়েকবার নবী ﷺ এর কাছে নিবেদন করেছিলেন, ‘‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনার ঘরে ভালোমন্দ সবরকম লোক আসে। যদি আপনি আপনার পবিত্র স্ত্রীদেরকে পর্দা করার হুকুম দিতেন! কিন্তু রাসূল ﷺ যেহেতু আইন রচনার ক্ষেত্রে স্বাধীন ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন না, তাই তিনি আল্লাহর ইশারার অপেক্ষায় ছিলেন। শেষ পর্যন্ত এ হুকুম নাযিল হলো যে, ‘‘ মাহরাম পুরুষ ছাড়া অন্য কোন পুরুষ নবী ﷺ এর গৃহে প্রবেশ করবে না। আর মহিলাদের কাছে যার কোনকিছুর প্রয়োজন হবে, তাকে পর্দার আড়ালে থেকেই কথা বলতে হবে।’’ এ হুকুমের পর পবিত্র স্ত্রীদের গৃহে দরজার উপর পর্দা ঝুলিয়ে দেয়া হয়। যেহেতু নবী ﷺ এর গৃহই ছিল সকল মুসলিমের জন্য আর্দশগৃহ, তাই সকল মুসলিমের গৃহের দরজার উপরও পর্দা ঝুলিয়ে দেয়া হয়। আরো বলা হয় যে, কোন বন্ধু বা আত্মীয়স্বজন হলেও বিনা অনুমতিতে কারো গৃহে প্রবেশ করতে পারবে না।
পর্দার উদ্দেশ্য হলো নারী-পুরুষের চরিত্রকে পবিত্র রাখা :
ذٰلِكُمْ اَطْهَرُ لِقُلُوْبِكُمْ وَقُلُوْبِهِنَّ
এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্র উপায়। (সূরা আহযাব- ৫৩)
নারীরা ঘরের দরজা-জানালায় পর্দা ঝুলিয়ে রাখবে :
وَاِذَا سَاَلْتُمُوْهُنَّ مَتَاعًا فَاسْاَلُوْهُنَّ مِنْ وَّرَآءِ حِجَابٍ
তোমরা যখন নবীর স্ত্রীদের কাছ থেকে কোনকিছু চাইবে, তখন পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। (সূরা আহযাব- ৫৩)
নারীরা জাহেলী যুগের নারীদের মতো ঘুরাফিরা করবে না :
وَقَرْنَ فِيْ بُيُوْتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْاُوْلٰى
তোমরা নিজেদের ঘরে অবস্থান করবে এবং প্রাথমিক অজ্ঞতার যুগের ন্যায় নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না। (সূরা আহযাব- ৩৩)
মাথা ও বুকের উপর ওড়না ঝুলিয়ে দেবে :
وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلٰى جُيُوْبِهِنَّ
তারা যেন তাদের গলদেশ ও বক্ষদেশ মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত করে নেয়। (সূরা নূর- ৩১)
রাস্তায় বের হওয়ার সময় সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে নেবে :
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِّاَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَآءِ الْمُؤْمِنِيْنَ يُدْنِيْنَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيْبِهِنَّؕ ذٰلِكَ اَدْنٰۤى اَنْ يُّعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَؕ وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا
হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে, আপনার কন্যাদেরকে এবং মুমিন নারীদেরকে বলে দিন, তারা যেন তাদের চাদর নিজেদের উপর ঝুলিয়ে দেয়, এতে সহজেই তাদের পরিচয় পাওয়া যাবে, ফলে তারা লাঞ্ছিত হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও করুণাময়। (সূরা আহযাব- ৫৯)
ব্যাখ্যা : جِلْبَابُ (জিলবাব) বলা হয় বড় চাদরকে। আর يُدْنِيْنَ (ইউদনীনা) শব্দের আসল অর্থ হচ্ছে, নিকটবর্তী করা ও ঢেকে নেয়া। কিন্তু যখন তার সাথে عَلٰى (আলা) অব্যয় বসে তখন তার অর্থ হয় উপর থেকে ঝুলিয়ে দেয়া। আয়াতের পরিষ্কার অর্থ হচ্ছে, নারীরা যেন নিজেদের চাদর ভালোভাবে জড়িয়ে নিয়ে তার একটি অংশ নিজেদের উপর ঝুলিয়ে দেয়, সাধারণভাবে যাকে বলা হয় ঘোমটা। এখানে আল্লাহ মহিলাদেরকে হুকুম দিয়েছেন যে, যখন তারা কোন কাজে ঘরের বাইরে বের হবে তখন চাদরের একটি অংশ নিজেদের উপর দিয়ে ঝুলিয়ে দিয়ে বের হবে। যাতে করে নিজেদের বক্ষদেশ, গলা, চুল ও মুখ ঢাকা পড়ে যায় এবং রাস্তা চেনার জন্য শুধুমাত্র চোখগুলো খোলা থাকে। এ আয়াতটিতে যুবতী মেয়েদের চেহারা অপরিচিত পুরুষদের থেকে লুকিয়ে রাখার হুকুম দেয়া হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, লোকেরা যেন জানতে পারে যে, এরা দুশ্চরিত্রা মেয়ে নয়। কারণ যে মেয়েটি নিজের চেহারা ঢাকবে, অথচ চেহারা সতরের অন্তর্ভুক্ত নয়, তার কাছে কেউ এ আশা করতে পারে না যে, সে নিজের সতর অন্যের সামনে খুলতে রাজী হবে। এভাবে প্রত্যেক ব্যক্তি জানবে, এ মেয়েটি পর্দাশীল, একে যিনার কাজে লিপ্ত করার আশা করা যেতে পারে না। এভাবে সে বখাটেদের হাতে উত্ত্যক্ত ও লাঞ্ছিত হওয়া থেকে বাঁচতে পারবে। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে এ বিধানটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এখানে চাদর দিয়ে ঢাকার যে হুকুম দেয়া হয়েছে তার উদ্দেশ্য হচ্ছে, অপরিচিতদের থেকে সৌন্দর্য লুকানো। আর এ কথা সুস্পষ্ট যে, এ উদ্দেশ্য তখনই পূর্ণ হতে পারে যখন চাদরটি হবে সাদামাটা। একটি উন্নত নকশাদার ও দৃষ্টিনন্দিত কাপড় জড়িয়ে নিলে এর উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়ে যাবে। তারপর আল্লাহ নিজেই এ হুকুমটির কারণ বর্ণনা করে দিয়েছেন যে, এটি এমন একটি সর্বাধিক উপযোগী পদ্ধতি, যা থেকে মুসলিম মহিলাদেরকে চিনে নেয়া যাবে এবং তারা উত্যক্ত হওয়া থেকেও বেঁচে যাবে।
সৎকর্মশীলা মহিলাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, যদি সত্যই তোমরা এভাবে নিজেদেরকে পরিচিত করাতে না চাও এবং পুরুষদের যৌন লালসার দৃষ্টি সত্যিই তোমাদের জন্য আনন্দদায়ক না হয়ে কষ্টকর হয়ে থাকে, তাহলে এজন্য তোমরা খুব ভালোভাবে সাজসজ্জা করে বাসর রাতের কনে সেজে ঘর থেকে বের হয়ো না। দর্শকদের লালসার দৃষ্টির সামনে নিজেদের সৌন্দর্যকে উজ্জল করে তুলে ধরো না। বাইরে বের হওয়ার আগে যেসব মেয়েরা সাজগোজ করে পুরুষদেরকে নিজেদের দিকে আকৃষ্ট করতে চায়, তারা যদি উল্টো পুরুষদেরকেই দোষারোপ করে তাহলে এটা প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। মানুষের কথা তার নিয়ত নির্ধারণ করে না বরং কাজই তার আসল নিয়ত প্রকাশ করে। কাজেই যে নারী আকর্ষণীয় হয়ে পরপুরুষের সামনে যায়, তার এ কাজের পেছনে কোন ধরনের উদ্দেশ্য কাজ করছে সেটা ঐ কাজ দ্বারাই প্রকাশ পায়। কাজেই এসব মহিলাদের থেকে যা আশা করা যেতে পারে, ফিতনাবাজ লোকেরা তাদের থেকে তাই আশা করে থাকে।
এসব জানার পরও যে ব্যক্তি পর্দার বিরুদ্ধাচরণ করবে সে এ কথা মেনে নিয়েই করবে যে, হয় সে কুরআনবিরোধী কাজ করছে অথবা কুরআনের নির্দেশনাকে ভুল মনে করছে। আল্লাহর এ বিধান জানার পর যারা নিজেদেরকে সংশোধন করে নেবে, আশা করা যায় আল্লাহ তাদের অতীতের ভুলসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর যারা কুরআনের বিধান লঙ্ঘন করছে, তারা নিজেরাই নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যেদিন তাদের চেহারা আগুনে উলটপালট করা হবে তখন তারা বলবে, হায়! যদি আমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করতাম! কিন্তু তখন এ আফসোস কোন কাজে লাগবে না।
এমনভাবে চলাফেরা করবে না যাতে সৌন্দর্য বেরিয়ে যায় :
وَلَا يَضْرِبْنَ بِاَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِيْنَ مِنْ زِيْنَتِهِنَّؕ وَتُوْبُوْاۤ اِلَى اللهِ جَمِيْعًا اَيُّهَا الْمُؤْمِنُوْنَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
তারা যেন তাদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদক্ষেপ না করে। হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর দিকে ফিরে আস, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা নূর- ৩১)
ব্যাখ্যা : জাহেলী যুগের মহিলাদের সামনের দিকে বুকের একটি অংশ খোলা থাকত। এতে গলা ও বুকের উপরের দিকের অংশটি পরিষ্কার দেখা যেত। বুকে জামা ছাড়া আর কিছুই থাকত না। পেছনের দিকে দু’তিনটা খোঁপা দেখা যেত। এ আয়াত নাযিল হওয়ার পর মুসলিম মহিলাদের মধ্যে ওড়নার প্রচলন শুরু হয়। এ ওড়না বর্তমান মেয়েদের মতো ভাঁজ করে পেঁচিয়ে গলার মালা বানিয়ে ফ্যাশন করা উদ্দেশ্যে ছিল না। বরং এর মূল উদ্দেশ্য ছিল, যাতে করে এর দ্বারা কোমর, বুক ইত্যাদি আকর্ষণীয় অঙ্গসমূহ ভালোভাবে ঢেকে নেয়া যায়। মুমিন মহিলারা কুরআনের এ হুকুমটি শোনার সাথে সাথেই অত্যন্ত আগ্রহভরে একে কার্যকর করতে প্রতিযোগিতায় নেমে গিয়েছিলেন। আয়েশা (রাঃ) বলেন, সূরা নূর নাযিল হলে রাসূল ﷺ এর মুখ থেকে তা শুনে লোকেরা ঘরে ফিরে আসে এবং নিজেদের স্ত্রী, মেয়ে ও বোনদেরকে তা শোনায়। ফলে আনসারী মেয়েদের মধ্যে এমন একজনও ছিল না যে وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلٰى جُيُوبِهِنَّ (অর্থাৎ তারা যেন তাদের মাথার উপর ওড়না ঝুলিয়ে দেয়) বাক্যাংশ শোনার পর নিজের জায়গায় বসে ছিল। বরং প্রত্যেকে উঠে দাঁড়িয়েছিল এবং এ আদেশ পালন করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। অনেকে নিজের কোমরে বাঁধা কাপড় খুলে নিয়ে আবার অনেকে চাদর তুলে নিয়ে সাথে সাথে ওড়না বানিয়ে ফেলেন এবং তা দিয়ে শরীর ঢেকে নেন। পরদিন ফজরের নামাযের সময় যতজন মহিলা মসজিদে নববীতে হাজির হয়েছিলেন তারা সবাই ওড়না পরা ছিলেন। এ সম্পর্কিত অন্য একটি হাদীসে আয়েশা (রাঃ) আরো বিস্তারিত বর্ণনা করে বলেন, মহিলারা পাতলা কাপড় পরিত্যাগ করে মোটা কাপড় বাছাই করে তা দিয়ে ওড়না তৈরি করে। (ইবনে কাসীর, ৩য় খন্ড, ২৮৪ পৃ:)
নিজের চোখ নিয়ন্ত্রণে রাখবে, লজ্জাস্থানের হেফাজত করতে হবে :
وَقُلْ لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ اَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوْجَهُنَّ
আর মুমিন নারীদেরকে বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে ও তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। (সূরা নূর- ৩১)
কোমল কণ্ঠে পরপুরুষের সাথে কথা বলা যাবে না :
يَا نِسَآءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَاَحَدٍ مِّنَ النِّسَآءِ اِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِيْ فِيْ قَلْبِهٖ مَرَضٌ وَّقُلْنَ قَوْلًا مَّعْرُوْفًا
হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা কোন সাধারণ স্ত্রীলোকের মতো নও, যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তবে (পরপুরুষের সাথে) কথা বলার সময় এমনভাবে কোমল কণ্ঠে কথা বলবে না, যাতে যার অন্তরে (কুপ্রবৃত্তির) রোগ রয়েছে সে লালায়িত হতে পারে। আর তোমরা ন্যায়সঙ্গত কথা বলবে। (সূরা আহযাব- ৩২)
ذٰلِكُمْ اَطْهَرُ لِقُلُوْبِكُمْ وَقُلُوْبِهِنَّ
এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্র উপায়। (সূরা আহযাব- ৫৩)
নারীরা ঘরের দরজা-জানালায় পর্দা ঝুলিয়ে রাখবে :
وَاِذَا سَاَلْتُمُوْهُنَّ مَتَاعًا فَاسْاَلُوْهُنَّ مِنْ وَّرَآءِ حِجَابٍ
তোমরা যখন নবীর স্ত্রীদের কাছ থেকে কোনকিছু চাইবে, তখন পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। (সূরা আহযাব- ৫৩)
নারীরা জাহেলী যুগের নারীদের মতো ঘুরাফিরা করবে না :
وَقَرْنَ فِيْ بُيُوْتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْاُوْلٰى
তোমরা নিজেদের ঘরে অবস্থান করবে এবং প্রাথমিক অজ্ঞতার যুগের ন্যায় নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না। (সূরা আহযাব- ৩৩)
মাথা ও বুকের উপর ওড়না ঝুলিয়ে দেবে :
وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلٰى جُيُوْبِهِنَّ
তারা যেন তাদের গলদেশ ও বক্ষদেশ মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত করে নেয়। (সূরা নূর- ৩১)
রাস্তায় বের হওয়ার সময় সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে নেবে :
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِّاَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَآءِ الْمُؤْمِنِيْنَ يُدْنِيْنَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيْبِهِنَّؕ ذٰلِكَ اَدْنٰۤى اَنْ يُّعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَؕ وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا
হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে, আপনার কন্যাদেরকে এবং মুমিন নারীদেরকে বলে দিন, তারা যেন তাদের চাদর নিজেদের উপর ঝুলিয়ে দেয়, এতে সহজেই তাদের পরিচয় পাওয়া যাবে, ফলে তারা লাঞ্ছিত হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও করুণাময়। (সূরা আহযাব- ৫৯)
ব্যাখ্যা : جِلْبَابُ (জিলবাব) বলা হয় বড় চাদরকে। আর يُدْنِيْنَ (ইউদনীনা) শব্দের আসল অর্থ হচ্ছে, নিকটবর্তী করা ও ঢেকে নেয়া। কিন্তু যখন তার সাথে عَلٰى (আলা) অব্যয় বসে তখন তার অর্থ হয় উপর থেকে ঝুলিয়ে দেয়া। আয়াতের পরিষ্কার অর্থ হচ্ছে, নারীরা যেন নিজেদের চাদর ভালোভাবে জড়িয়ে নিয়ে তার একটি অংশ নিজেদের উপর ঝুলিয়ে দেয়, সাধারণভাবে যাকে বলা হয় ঘোমটা। এখানে আল্লাহ মহিলাদেরকে হুকুম দিয়েছেন যে, যখন তারা কোন কাজে ঘরের বাইরে বের হবে তখন চাদরের একটি অংশ নিজেদের উপর দিয়ে ঝুলিয়ে দিয়ে বের হবে। যাতে করে নিজেদের বক্ষদেশ, গলা, চুল ও মুখ ঢাকা পড়ে যায় এবং রাস্তা চেনার জন্য শুধুমাত্র চোখগুলো খোলা থাকে। এ আয়াতটিতে যুবতী মেয়েদের চেহারা অপরিচিত পুরুষদের থেকে লুকিয়ে রাখার হুকুম দেয়া হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, লোকেরা যেন জানতে পারে যে, এরা দুশ্চরিত্রা মেয়ে নয়। কারণ যে মেয়েটি নিজের চেহারা ঢাকবে, অথচ চেহারা সতরের অন্তর্ভুক্ত নয়, তার কাছে কেউ এ আশা করতে পারে না যে, সে নিজের সতর অন্যের সামনে খুলতে রাজী হবে। এভাবে প্রত্যেক ব্যক্তি জানবে, এ মেয়েটি পর্দাশীল, একে যিনার কাজে লিপ্ত করার আশা করা যেতে পারে না। এভাবে সে বখাটেদের হাতে উত্ত্যক্ত ও লাঞ্ছিত হওয়া থেকে বাঁচতে পারবে। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে এ বিধানটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এখানে চাদর দিয়ে ঢাকার যে হুকুম দেয়া হয়েছে তার উদ্দেশ্য হচ্ছে, অপরিচিতদের থেকে সৌন্দর্য লুকানো। আর এ কথা সুস্পষ্ট যে, এ উদ্দেশ্য তখনই পূর্ণ হতে পারে যখন চাদরটি হবে সাদামাটা। একটি উন্নত নকশাদার ও দৃষ্টিনন্দিত কাপড় জড়িয়ে নিলে এর উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়ে যাবে। তারপর আল্লাহ নিজেই এ হুকুমটির কারণ বর্ণনা করে দিয়েছেন যে, এটি এমন একটি সর্বাধিক উপযোগী পদ্ধতি, যা থেকে মুসলিম মহিলাদেরকে চিনে নেয়া যাবে এবং তারা উত্যক্ত হওয়া থেকেও বেঁচে যাবে।
সৎকর্মশীলা মহিলাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, যদি সত্যই তোমরা এভাবে নিজেদেরকে পরিচিত করাতে না চাও এবং পুরুষদের যৌন লালসার দৃষ্টি সত্যিই তোমাদের জন্য আনন্দদায়ক না হয়ে কষ্টকর হয়ে থাকে, তাহলে এজন্য তোমরা খুব ভালোভাবে সাজসজ্জা করে বাসর রাতের কনে সেজে ঘর থেকে বের হয়ো না। দর্শকদের লালসার দৃষ্টির সামনে নিজেদের সৌন্দর্যকে উজ্জল করে তুলে ধরো না। বাইরে বের হওয়ার আগে যেসব মেয়েরা সাজগোজ করে পুরুষদেরকে নিজেদের দিকে আকৃষ্ট করতে চায়, তারা যদি উল্টো পুরুষদেরকেই দোষারোপ করে তাহলে এটা প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। মানুষের কথা তার নিয়ত নির্ধারণ করে না বরং কাজই তার আসল নিয়ত প্রকাশ করে। কাজেই যে নারী আকর্ষণীয় হয়ে পরপুরুষের সামনে যায়, তার এ কাজের পেছনে কোন ধরনের উদ্দেশ্য কাজ করছে সেটা ঐ কাজ দ্বারাই প্রকাশ পায়। কাজেই এসব মহিলাদের থেকে যা আশা করা যেতে পারে, ফিতনাবাজ লোকেরা তাদের থেকে তাই আশা করে থাকে।
এসব জানার পরও যে ব্যক্তি পর্দার বিরুদ্ধাচরণ করবে সে এ কথা মেনে নিয়েই করবে যে, হয় সে কুরআনবিরোধী কাজ করছে অথবা কুরআনের নির্দেশনাকে ভুল মনে করছে। আল্লাহর এ বিধান জানার পর যারা নিজেদেরকে সংশোধন করে নেবে, আশা করা যায় আল্লাহ তাদের অতীতের ভুলসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর যারা কুরআনের বিধান লঙ্ঘন করছে, তারা নিজেরাই নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যেদিন তাদের চেহারা আগুনে উলটপালট করা হবে তখন তারা বলবে, হায়! যদি আমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করতাম! কিন্তু তখন এ আফসোস কোন কাজে লাগবে না।
এমনভাবে চলাফেরা করবে না যাতে সৌন্দর্য বেরিয়ে যায় :
وَلَا يَضْرِبْنَ بِاَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِيْنَ مِنْ زِيْنَتِهِنَّؕ وَتُوْبُوْاۤ اِلَى اللهِ جَمِيْعًا اَيُّهَا الْمُؤْمِنُوْنَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
তারা যেন তাদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদক্ষেপ না করে। হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর দিকে ফিরে আস, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা নূর- ৩১)
ব্যাখ্যা : জাহেলী যুগের মহিলাদের সামনের দিকে বুকের একটি অংশ খোলা থাকত। এতে গলা ও বুকের উপরের দিকের অংশটি পরিষ্কার দেখা যেত। বুকে জামা ছাড়া আর কিছুই থাকত না। পেছনের দিকে দু’তিনটা খোঁপা দেখা যেত। এ আয়াত নাযিল হওয়ার পর মুসলিম মহিলাদের মধ্যে ওড়নার প্রচলন শুরু হয়। এ ওড়না বর্তমান মেয়েদের মতো ভাঁজ করে পেঁচিয়ে গলার মালা বানিয়ে ফ্যাশন করা উদ্দেশ্যে ছিল না। বরং এর মূল উদ্দেশ্য ছিল, যাতে করে এর দ্বারা কোমর, বুক ইত্যাদি আকর্ষণীয় অঙ্গসমূহ ভালোভাবে ঢেকে নেয়া যায়। মুমিন মহিলারা কুরআনের এ হুকুমটি শোনার সাথে সাথেই অত্যন্ত আগ্রহভরে একে কার্যকর করতে প্রতিযোগিতায় নেমে গিয়েছিলেন। আয়েশা (রাঃ) বলেন, সূরা নূর নাযিল হলে রাসূল ﷺ এর মুখ থেকে তা শুনে লোকেরা ঘরে ফিরে আসে এবং নিজেদের স্ত্রী, মেয়ে ও বোনদেরকে তা শোনায়। ফলে আনসারী মেয়েদের মধ্যে এমন একজনও ছিল না যে وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلٰى جُيُوبِهِنَّ (অর্থাৎ তারা যেন তাদের মাথার উপর ওড়না ঝুলিয়ে দেয়) বাক্যাংশ শোনার পর নিজের জায়গায় বসে ছিল। বরং প্রত্যেকে উঠে দাঁড়িয়েছিল এবং এ আদেশ পালন করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। অনেকে নিজের কোমরে বাঁধা কাপড় খুলে নিয়ে আবার অনেকে চাদর তুলে নিয়ে সাথে সাথে ওড়না বানিয়ে ফেলেন এবং তা দিয়ে শরীর ঢেকে নেন। পরদিন ফজরের নামাযের সময় যতজন মহিলা মসজিদে নববীতে হাজির হয়েছিলেন তারা সবাই ওড়না পরা ছিলেন। এ সম্পর্কিত অন্য একটি হাদীসে আয়েশা (রাঃ) আরো বিস্তারিত বর্ণনা করে বলেন, মহিলারা পাতলা কাপড় পরিত্যাগ করে মোটা কাপড় বাছাই করে তা দিয়ে ওড়না তৈরি করে। (ইবনে কাসীর, ৩য় খন্ড, ২৮৪ পৃ:)
নিজের চোখ নিয়ন্ত্রণে রাখবে, লজ্জাস্থানের হেফাজত করতে হবে :
وَقُلْ لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ اَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوْجَهُنَّ
আর মুমিন নারীদেরকে বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে ও তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। (সূরা নূর- ৩১)
কোমল কণ্ঠে পরপুরুষের সাথে কথা বলা যাবে না :
يَا نِسَآءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَاَحَدٍ مِّنَ النِّسَآءِ اِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِيْ فِيْ قَلْبِهٖ مَرَضٌ وَّقُلْنَ قَوْلًا مَّعْرُوْفًا
হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা কোন সাধারণ স্ত্রীলোকের মতো নও, যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তবে (পরপুরুষের সাথে) কথা বলার সময় এমনভাবে কোমল কণ্ঠে কথা বলবে না, যাতে যার অন্তরে (কুপ্রবৃত্তির) রোগ রয়েছে সে লালায়িত হতে পারে। আর তোমরা ন্যায়সঙ্গত কথা বলবে। (সূরা আহযাব- ৩২)
বৃদ্ধা মহিলারা চেহারা খোলা রাখতে পারবে :
وَالْقَوَاعِدُ مِنَ النِّسَآءِ اللَّاتِيْ لَا يَرْجُوْنَ نِكَاحًا فَلَيْسَ عَلَيْهِنَّ جُنَاحٌ اَنْ يَّضَعْنَ ثِيَابَهُنَّ غَيْرَ مُتَبَرِّجَاتٍ ۢبِزِيْنَةٍ
বৃদ্ধা নারী, যারা বিবাহের আশা রাখে না, তারা নিজেদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে চেহারা খুলে রাখাতে কোন দোষ নেই। (সূরা নূর- ৬০)
তবে পর্দা করাই উত্তম :
وَاَنْ يَّسْتَعْفِفْنَ خَيْرٌ لَّهُنَّؕ وَاللهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
তবে এটা হতে বিরত থাকাই তাদের জন্য উত্তম। আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা নূর- ৬০)
নারীরা যাদের সামনে যেতে পারবে :
وَلَا يُبْدِيْنَ زِيْنَتَهُنَّ اِلَّا لِبُعُوْلَتِهِنَّ اَوْ اٰبَآئِهِنَّ اَوْ اٰبَآءِ بُعُوْلَتِهِنَّ اَوْ اَبْنَآئِهِنَّ اَوْ اَبْنَآءِ بُعُوْلَتِهِنَّ اَوْ اِخْوَانِهِنَّ اَوْ بَنِيْۤ اِخْوَانِهِنَّ اَوْ بَنِيْۤ اَخَوَاتِهِنَّ اَوْ نِسَآئِهِنَّ اَوْ مَا مَلَكَتْ اَيْمَانُهُنَّ اَوِ التَّابِعِيْنَ غَيْرِ اُولِى الْاِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ اَوِ الطِّفْلِ الَّذِيْنَ لَمْ يَظْهَرُوْا عَلٰى عَوْرَاتِ النِّسَآءِ
নারীরা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, আপন নারী, তাদের মালিকানাধীন দাসী, পুরুষদের মধ্য থেকে যৌন কামনা রহিত পুরুষ এবং নারীদের গোপনাঙ্গ সম্বন্ধে অজ্ঞ বালক ব্যতীত কারো নিকট তাদের আবরণ প্রকাশ না করে। (সূরা নূর- ৩১)
وَالْقَوَاعِدُ مِنَ النِّسَآءِ اللَّاتِيْ لَا يَرْجُوْنَ نِكَاحًا فَلَيْسَ عَلَيْهِنَّ جُنَاحٌ اَنْ يَّضَعْنَ ثِيَابَهُنَّ غَيْرَ مُتَبَرِّجَاتٍ ۢبِزِيْنَةٍ
বৃদ্ধা নারী, যারা বিবাহের আশা রাখে না, তারা নিজেদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে চেহারা খুলে রাখাতে কোন দোষ নেই। (সূরা নূর- ৬০)
তবে পর্দা করাই উত্তম :
وَاَنْ يَّسْتَعْفِفْنَ خَيْرٌ لَّهُنَّؕ وَاللهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
তবে এটা হতে বিরত থাকাই তাদের জন্য উত্তম। আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা নূর- ৬০)
নারীরা যাদের সামনে যেতে পারবে :
وَلَا يُبْدِيْنَ زِيْنَتَهُنَّ اِلَّا لِبُعُوْلَتِهِنَّ اَوْ اٰبَآئِهِنَّ اَوْ اٰبَآءِ بُعُوْلَتِهِنَّ اَوْ اَبْنَآئِهِنَّ اَوْ اَبْنَآءِ بُعُوْلَتِهِنَّ اَوْ اِخْوَانِهِنَّ اَوْ بَنِيْۤ اِخْوَانِهِنَّ اَوْ بَنِيْۤ اَخَوَاتِهِنَّ اَوْ نِسَآئِهِنَّ اَوْ مَا مَلَكَتْ اَيْمَانُهُنَّ اَوِ التَّابِعِيْنَ غَيْرِ اُولِى الْاِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ اَوِ الطِّفْلِ الَّذِيْنَ لَمْ يَظْهَرُوْا عَلٰى عَوْرَاتِ النِّسَآءِ
নারীরা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, আপন নারী, তাদের মালিকানাধীন দাসী, পুরুষদের মধ্য থেকে যৌন কামনা রহিত পুরুষ এবং নারীদের গোপনাঙ্গ সম্বন্ধে অজ্ঞ বালক ব্যতীত কারো নিকট তাদের আবরণ প্রকাশ না করে। (সূরা নূর- ৩১)
নারীর সামনে না গিয়ে আড়াল থেকে কাজ সমাধা করতে হবে :
وَاِذَا سَاَلْتُمُوْهُنَّ مَتَاعًا فَاسْاَلُوْهُنَّ مِنْ وَّرَآءِ حِجَابٍ ذٰلِكُمْ اَطْهَرُ لِقُلُوْبِكُمْ وَقُلُوْبِهِنَّ
তোমরা যখন নবীর স্ত্রীদের কাছ থেকে কোনকিছু চাইবে, তখন পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্র উপায়। (সূরা আহযাব- ৫৩)
চোখ ও লজ্জাস্থানের হেফাজত করতে হবে :
قُلْ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ يَغُضُّوْا مِنْ اَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوْا فُرُوْجَهُمْؕ ذٰلِكَ اَزْكٰى لَهُمْؕ اِنَّ اللهَ خَبِيْرٌ ۢبِمَا يَصْنَعُوْنَ
মুমিনদেরকে বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে, এটাই তাদের জন্য উত্তম। তারা যা করে নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত। (সূরা নূর- ৩০)
চোখের ব্যাপারে আল্লাহর সতর্কবাণী :
يَعْلَمُ خَآئِنَةَ الْاَعْيُنِ وَمَا تُخْفِى الصُّدُوْرُ
চক্ষুর অপব্যবহার ও অন্তরে যা গোপন আছে সে সম্বন্ধে তিনি অবহিত। (সূরা মু’মিন- ১৯)
اِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولٰٓئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُوْلًا
কর্ণ, চক্ষু ও হৃদয় এগুলোর প্রত্যেকটি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩৬)
অনুমতি ছাড়া অন্যের ঘরে প্রবেশ করবে না :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَدْخُلُوْا بُيُوْتًا غَيْرَ بُيُوْتِكُمْ حَتّٰى تَسْتَأْنِسُوْا وَتُسَلِّمُوْا عَلٰۤى اَهْلِهَاؕ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য কারো গৃহে গৃহবাসীদের অনুমতি না নিয়ে এবং তাদেরকে সালাম না দিয়ে প্রবেশ করো না। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। (সূরা নূর- ২৭)
ব্যাখ্যা : আয়াতের অর্থ হলো, তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত লোকদের গৃহে প্রবেশ করো না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের সম্মতি জেনে নিতে পারবে। অতঃপর যদি জানতে পার যে, গৃহমালিক তোমার আগমনকে অপছন্দ মনে করছে না তবে তার গৃহে পবেশ করবে; নতুবা তা হতে বিরত থাকবে।
জাহেলী যুগে আরবদের নিয়ম ছিল, তারা حُيِّيْتُمْ صَبَاحًا ، حُيِّيْتُمْ مَّسَاءً (সুপ্রভাত, শুভ সন্ধ্যা) বলতে বলতে নির্দ্বিধায় একজন অন্যজনের গৃহে ঢুকে যেত। অনেক সময় বহিরাগত ব্যক্তি গৃহমালিক ও তার বাড়ির মহিলাদেরকে অমার্জনীয় অবস্থায় দেখে ফেলত। ফলে তা উভয় পক্ষের লজ্জার কারণে পরিণত হতো। আল্লাহ এটা সংশোধনের জন্য এ নীতি নির্ধারণ করেন যে, প্রত্যেক ব্যক্তির ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করার অধিকার রয়েছে। সুতরাং তার অনুমতি ছাড়া এ গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপ করা অন্য ব্যক্তির জন্য জায়েয নয়। এ হুকুমটি নাযিল হওয়ার পর নবী ﷺ ব্যক্তিগত গোপনীয়তার এ অধিকারকে কেবল গৃহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেননি; বরং এটিকে প্রতিটি লোকের জন্য একটি সাধারণ অধিকার বলে গণ্য করেন। এ প্রেক্ষিতে অন্যের গৃহে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করা, অন্যের গৃহে উঁকি মারা, বাহির থেকে দেখা, অন্যের চিঠি অথবা ডায়েরী বিনা অনুমতিতে পড়ে নেয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। নবী ﷺ বলেছেন, ‘‘যদি কোন ব্যক্তি তোমার গৃহে উঁকি মারে এবং তুমি একটি কঙ্কর মেরে তার চোখ কানা করে দাও, তাহলে তাতে কোন গোনাহ হবে না।’’ (সহীহ বুখারী, হা/৬৮৮৮; মুসিলম, হা/৫৭৬৯)
অত্র হাদীসে কাউকে খাস বা নির্দিষ্ট করা হয়নি। সুতরাং মা-বাবা, ভাই-বোন, সন্তান-সন্ততি, বন্ধু-বান্ধুব, আত্মীয়স্বজন, কাজের লোক, সাধারণ জনগণ সকলেই এর অন্তর্ভুক্ত। তবে নিজ স্বামী অথবা স্ত্রীর ক্ষেত্রে অতিরিক্ত গোপনীয়তার জন্য অন্ততপক্ষে একটু আওয়াজ দিয়ে যেতে বলা হয়েছে। যায়নাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) যখনই গৃহে আসতেন তখন আগেই এমন কোন আওয়াজ দিতেন, যাতে তিনি আসছেন বলে জানা যেত। আর তিনি হঠাৎ ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়া পছন্দ করতেন না।
নিজের স্ত্রী ছাড়া অন্যত্র লজ্জাস্থান ব্যবহার করা হারাম :
وَالَّذِيْنَ هُمْ لِفُرُوْجِهِمْ حَافِظُوْنَ ‐ اِلَّا عَلٰۤى اَزْوَاجِهِمْ اَوْ مَا مَلَكَتْ اَيْمَانُهُمْ فَاِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُوْمِيْنَ ‐ فَمَنِ ابْتَغٰى وَرَآءَ ذٰلِكَ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْعَادُوْنَ
যারা নিজেদের স্ত্রী অথবা অধিকারভুক্ত দাসীগণ ব্যতীত অন্য সকলের কাছ থেকে নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে, তারা নিন্দনীয় হবে না। কিন্তু কেউ যদি তাদেরকে ছাড়া অন্য কাউকে কামনা করে, তবে তারা সীমালঙ্ঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (সূরা মু’মিনূন- ৫, ৭)
ব্যাখ্যা : বৈধ স্থানে নিজের প্রবৃত্তির কামনা পূর্ণ করা কোন নিন্দনীয় কাজ নয়। তবে কাম প্রবৃত্তি পূর্ণ করার জন্য বৈধ পথ এড়িয়ে অন্য কোন পথে চলা অবশ্যই গোনাহের কাজ। লজ্জাস্থান হেফাজত করার হুকুম থেকে দু’ধরনের স্ত্রীলোককে বাদ দেয়া হয়েছে।
(এক) স্ত্রী, যার প্রতিশব্দে আরবি ভাষায় اَزْوَاجٌ (আযওয়াজ) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আর اَزْوَاجٌ (আযওয়াজ) শব্দটি কেবলমাত্র এমনসব নারীকে বুঝায় যাদেরকে যথানিয়মে বিবাহ করা হয়েছে।
(দুই) বাঁদী, যাকে কুরআনে مَا مَلَكَتْ اَيْمَانَكُمْ বাক্য দ্বারা ইঙ্গিত করা হয়েছে। আর مَا مَلَكَتْ اَيْمَانَكُمْ বলতে এমন বাঁদীকে বুঝায়, যার উপর মানুষের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উল্লেখিত দু’টি বৈধ ব্যবস্থা ছাড়া যিনা বা সমকাম অথবা পশু-সঙ্গম কিংবা কাম প্রবৃত্তি চরিতার্থ করার জন্য অন্য যা কিছুই হোক না কেন সবই হারাম করা হয়েছে।
وَاِذَا سَاَلْتُمُوْهُنَّ مَتَاعًا فَاسْاَلُوْهُنَّ مِنْ وَّرَآءِ حِجَابٍ ذٰلِكُمْ اَطْهَرُ لِقُلُوْبِكُمْ وَقُلُوْبِهِنَّ
তোমরা যখন নবীর স্ত্রীদের কাছ থেকে কোনকিছু চাইবে, তখন পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্র উপায়। (সূরা আহযাব- ৫৩)
চোখ ও লজ্জাস্থানের হেফাজত করতে হবে :
قُلْ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ يَغُضُّوْا مِنْ اَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوْا فُرُوْجَهُمْؕ ذٰلِكَ اَزْكٰى لَهُمْؕ اِنَّ اللهَ خَبِيْرٌ ۢبِمَا يَصْنَعُوْنَ
মুমিনদেরকে বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে, এটাই তাদের জন্য উত্তম। তারা যা করে নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত। (সূরা নূর- ৩০)
চোখের ব্যাপারে আল্লাহর সতর্কবাণী :
يَعْلَمُ خَآئِنَةَ الْاَعْيُنِ وَمَا تُخْفِى الصُّدُوْرُ
চক্ষুর অপব্যবহার ও অন্তরে যা গোপন আছে সে সম্বন্ধে তিনি অবহিত। (সূরা মু’মিন- ১৯)
اِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولٰٓئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُوْلًا
কর্ণ, চক্ষু ও হৃদয় এগুলোর প্রত্যেকটি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩৬)
অনুমতি ছাড়া অন্যের ঘরে প্রবেশ করবে না :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَدْخُلُوْا بُيُوْتًا غَيْرَ بُيُوْتِكُمْ حَتّٰى تَسْتَأْنِسُوْا وَتُسَلِّمُوْا عَلٰۤى اَهْلِهَاؕ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য কারো গৃহে গৃহবাসীদের অনুমতি না নিয়ে এবং তাদেরকে সালাম না দিয়ে প্রবেশ করো না। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। (সূরা নূর- ২৭)
ব্যাখ্যা : আয়াতের অর্থ হলো, তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত লোকদের গৃহে প্রবেশ করো না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের সম্মতি জেনে নিতে পারবে। অতঃপর যদি জানতে পার যে, গৃহমালিক তোমার আগমনকে অপছন্দ মনে করছে না তবে তার গৃহে পবেশ করবে; নতুবা তা হতে বিরত থাকবে।
জাহেলী যুগে আরবদের নিয়ম ছিল, তারা حُيِّيْتُمْ صَبَاحًا ، حُيِّيْتُمْ مَّسَاءً (সুপ্রভাত, শুভ সন্ধ্যা) বলতে বলতে নির্দ্বিধায় একজন অন্যজনের গৃহে ঢুকে যেত। অনেক সময় বহিরাগত ব্যক্তি গৃহমালিক ও তার বাড়ির মহিলাদেরকে অমার্জনীয় অবস্থায় দেখে ফেলত। ফলে তা উভয় পক্ষের লজ্জার কারণে পরিণত হতো। আল্লাহ এটা সংশোধনের জন্য এ নীতি নির্ধারণ করেন যে, প্রত্যেক ব্যক্তির ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করার অধিকার রয়েছে। সুতরাং তার অনুমতি ছাড়া এ গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপ করা অন্য ব্যক্তির জন্য জায়েয নয়। এ হুকুমটি নাযিল হওয়ার পর নবী ﷺ ব্যক্তিগত গোপনীয়তার এ অধিকারকে কেবল গৃহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেননি; বরং এটিকে প্রতিটি লোকের জন্য একটি সাধারণ অধিকার বলে গণ্য করেন। এ প্রেক্ষিতে অন্যের গৃহে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করা, অন্যের গৃহে উঁকি মারা, বাহির থেকে দেখা, অন্যের চিঠি অথবা ডায়েরী বিনা অনুমতিতে পড়ে নেয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। নবী ﷺ বলেছেন, ‘‘যদি কোন ব্যক্তি তোমার গৃহে উঁকি মারে এবং তুমি একটি কঙ্কর মেরে তার চোখ কানা করে দাও, তাহলে তাতে কোন গোনাহ হবে না।’’ (সহীহ বুখারী, হা/৬৮৮৮; মুসিলম, হা/৫৭৬৯)
অত্র হাদীসে কাউকে খাস বা নির্দিষ্ট করা হয়নি। সুতরাং মা-বাবা, ভাই-বোন, সন্তান-সন্ততি, বন্ধু-বান্ধুব, আত্মীয়স্বজন, কাজের লোক, সাধারণ জনগণ সকলেই এর অন্তর্ভুক্ত। তবে নিজ স্বামী অথবা স্ত্রীর ক্ষেত্রে অতিরিক্ত গোপনীয়তার জন্য অন্ততপক্ষে একটু আওয়াজ দিয়ে যেতে বলা হয়েছে। যায়নাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) যখনই গৃহে আসতেন তখন আগেই এমন কোন আওয়াজ দিতেন, যাতে তিনি আসছেন বলে জানা যেত। আর তিনি হঠাৎ ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়া পছন্দ করতেন না।
নিজের স্ত্রী ছাড়া অন্যত্র লজ্জাস্থান ব্যবহার করা হারাম :
وَالَّذِيْنَ هُمْ لِفُرُوْجِهِمْ حَافِظُوْنَ ‐ اِلَّا عَلٰۤى اَزْوَاجِهِمْ اَوْ مَا مَلَكَتْ اَيْمَانُهُمْ فَاِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُوْمِيْنَ ‐ فَمَنِ ابْتَغٰى وَرَآءَ ذٰلِكَ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْعَادُوْنَ
যারা নিজেদের স্ত্রী অথবা অধিকারভুক্ত দাসীগণ ব্যতীত অন্য সকলের কাছ থেকে নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে, তারা নিন্দনীয় হবে না। কিন্তু কেউ যদি তাদেরকে ছাড়া অন্য কাউকে কামনা করে, তবে তারা সীমালঙ্ঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (সূরা মু’মিনূন- ৫, ৭)
ব্যাখ্যা : বৈধ স্থানে নিজের প্রবৃত্তির কামনা পূর্ণ করা কোন নিন্দনীয় কাজ নয়। তবে কাম প্রবৃত্তি পূর্ণ করার জন্য বৈধ পথ এড়িয়ে অন্য কোন পথে চলা অবশ্যই গোনাহের কাজ। লজ্জাস্থান হেফাজত করার হুকুম থেকে দু’ধরনের স্ত্রীলোককে বাদ দেয়া হয়েছে।
(এক) স্ত্রী, যার প্রতিশব্দে আরবি ভাষায় اَزْوَاجٌ (আযওয়াজ) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আর اَزْوَاجٌ (আযওয়াজ) শব্দটি কেবলমাত্র এমনসব নারীকে বুঝায় যাদেরকে যথানিয়মে বিবাহ করা হয়েছে।
(দুই) বাঁদী, যাকে কুরআনে مَا مَلَكَتْ اَيْمَانَكُمْ বাক্য দ্বারা ইঙ্গিত করা হয়েছে। আর مَا مَلَكَتْ اَيْمَانَكُمْ বলতে এমন বাঁদীকে বুঝায়, যার উপর মানুষের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উল্লেখিত দু’টি বৈধ ব্যবস্থা ছাড়া যিনা বা সমকাম অথবা পশু-সঙ্গম কিংবা কাম প্রবৃত্তি চরিতার্থ করার জন্য অন্য যা কিছুই হোক না কেন সবই হারাম করা হয়েছে।
সৃষ্টির শুরু হতেই নারীরা মানবজাতির একটি অংশ :
هُوَ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ وَّجَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا لِيَسْكُنَ اِلَيْهَا
তিনিই তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন ও তা হতে তার স্ত্রীকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে করে সে তার নিকট প্রশান্তি লাভ করে। (সূরা আ‘রাফ- ১৮৯)
নারী-পুরুষ উভয়কেই একে অপরের সহযোগী ও দায়িত্বশীল করা হয়েছে :
وَالْمُؤْمِنُوْنَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍۘ يَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَيُطِيْعُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗؕ اُولٰٓئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللهُؕ اِنَّ اللهَ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
মুমিন নর ও মুমিন নারী একে অপরের বন্ধু, এরা সৎকাজের নির্দেশ দেয় এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। অচিরেই আল্লাহ এদের প্রতি দয়া করবেন; নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা - ৭১)
সৎকর্মের পুরস্কার পাওয়ার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমান :
مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهٗ حَيَاةً طَيِّبَةًۚ وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ اَجْرَهُمْ بِاَحْسَنِ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
মুমিন পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে ব্যক্তি সৎকর্ম করবে, অবশ্যই তাকে আমি পবিত্র জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব। (সূরা নাহল- ৯৭)
فَاسْتَجَابَ لَهُمْ رَبُّهُمْ اَنِّي لَاۤ اُضِيْعُ عَمَلَ عَامِلٍ مِّنْكُمْ مِّنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰىۚ بَعْضُكُمْ مِّنْ ۢبَعْضٍ
অতঃপর তাদের প্রতিপালক তাদের আহবানে সাড়া দিলেন যে, আমি তোমাদের পুরুষ অথবা নারীদের মধ্য হতে কোন আমলকারীর আমল নষ্ট করব না, তোমরা পরস্পর এক। (সূরা আলে ইমরান- ১৯৫)
ব্যাখ্যা : আমার দৃষ্টিতে তোমরা সবাই সমান। আমার কাছে নারী-পুরুষ, চাকর-মনিব, সাদা-কালো ও বড়-ছোটর মধ্যে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কোন ভিন্ন নীতি নেই। ফলে তাদের মধ্যে কোন বিষয়ে মীমাংসা করার সময় আলাদা আলাদা মানদন্ড কায়েম করা হয় না।
আল্লাহ উভয়কেই জান্নাত দেবেন :
وَمَنْ يَّعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ مِنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَاُولٰٓئِكَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ وَلَا يُظْلَمُوْنَ نَقِيْرًا
মুমিন অবস্থায় পুরুষ অথবা নারীর মধ্যে যারা সৎকাজ করে তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি অণুপরিমাণও যুলুম করা হবে না। (সূরা নিসা- ১২৪)
مَنْ عَمِلَ سَيِّئَةً فَلَا يُجْزٰۤى اِلَّا مِثْلَهَاۚ وَمَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَاُولٰٓئِكَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ يُرْزَقُوْنَ فِيْهَا بِغَيْرِ حِسَابٍ
যে ব্যক্তি মন্দ আমল করবে সে শুধু তার আমলের অনুরূপ শাস্তিই পাবে। আর মুমিন অবস্থায় পুরুষ অথবা নারীদের মধ্যে যারা সৎকাজ করে তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে; সেখানে তারা অসংখ্য রিযিকপ্রাপ্ত হবে। (সূরা মু’মিন - ৪০)
আল্লাহর কাছে সম্মানের ক্ষেত্রেও নারী-পুরুষ সমান :
اِنَّ اَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللهِ اَتْقَاكُمْؕ اِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ خَبِيْرٌ
নিশ্চয় আল্লাহর কাছে তোমাদের মধ্যে তারাই অধিক সম্মানিত, যারা তোমাদের মধ্যে বেশি মুত্তাক্বী। আল্লাহ সবকিছু জানেন ও সবকিছুর খবর রাখেন। (সূরা হুজুরাত- ১৩)
নারীরা যা উপার্জন করবে তাতে তাদের অধিকার রয়েছে :
لِلرِّجَالِ نَصِيْبٌ مِّمَّا اكْتَسَبُوْاؕ وَلِلنِّسَآءِ نَصِيْبٌ مِّمَّا اكْتَسَبْنَ
পুরুষ যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য এবং নারী যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য। (সূরা নিসা- ৩২)
পিতার সম্পদে নারীদের অংশ রয়েছে :
وَلِلنِّسَآءِ نَصِيْبٌ مِّمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ وَالْاَقْرَبُوْنَ۪ مِمَّا قَلَّ مِنْهُ اَوْ كَثُرَؕ نَصِيْبًا مَّفْرُوْضًا
নারীদের জন্যও পিতামাতা ও আত্মীয়স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পদে অংশ রয়েছে। কম হোক বা বেশি হোক, এসব অংশ নির্ধারিত। (সূরা নিসা- ৭)
নারীদের প্রতি অন্যায় করতে নিষেধ করা হয়েছে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا يَحِلُّ لَكُمْ اَنْ تَرِثُوا النِّسَآءَ كَرْهًا
হে ঈমানদারগণ! জোরপূর্বক নারীদের উত্তরাধিকারী হওয়া তোমাদের জন্য হালাল নয়। (সূরা নিসা- ১৯)
هُوَ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ وَّجَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا لِيَسْكُنَ اِلَيْهَا
তিনিই তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন ও তা হতে তার স্ত্রীকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে করে সে তার নিকট প্রশান্তি লাভ করে। (সূরা আ‘রাফ- ১৮৯)
নারী-পুরুষ উভয়কেই একে অপরের সহযোগী ও দায়িত্বশীল করা হয়েছে :
وَالْمُؤْمِنُوْنَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍۘ يَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَيُطِيْعُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗؕ اُولٰٓئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللهُؕ اِنَّ اللهَ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
মুমিন নর ও মুমিন নারী একে অপরের বন্ধু, এরা সৎকাজের নির্দেশ দেয় এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। অচিরেই আল্লাহ এদের প্রতি দয়া করবেন; নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা - ৭১)
সৎকর্মের পুরস্কার পাওয়ার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমান :
مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهٗ حَيَاةً طَيِّبَةًۚ وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ اَجْرَهُمْ بِاَحْسَنِ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
মুমিন পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে ব্যক্তি সৎকর্ম করবে, অবশ্যই তাকে আমি পবিত্র জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব। (সূরা নাহল- ৯৭)
فَاسْتَجَابَ لَهُمْ رَبُّهُمْ اَنِّي لَاۤ اُضِيْعُ عَمَلَ عَامِلٍ مِّنْكُمْ مِّنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰىۚ بَعْضُكُمْ مِّنْ ۢبَعْضٍ
অতঃপর তাদের প্রতিপালক তাদের আহবানে সাড়া দিলেন যে, আমি তোমাদের পুরুষ অথবা নারীদের মধ্য হতে কোন আমলকারীর আমল নষ্ট করব না, তোমরা পরস্পর এক। (সূরা আলে ইমরান- ১৯৫)
ব্যাখ্যা : আমার দৃষ্টিতে তোমরা সবাই সমান। আমার কাছে নারী-পুরুষ, চাকর-মনিব, সাদা-কালো ও বড়-ছোটর মধ্যে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কোন ভিন্ন নীতি নেই। ফলে তাদের মধ্যে কোন বিষয়ে মীমাংসা করার সময় আলাদা আলাদা মানদন্ড কায়েম করা হয় না।
আল্লাহ উভয়কেই জান্নাত দেবেন :
وَمَنْ يَّعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ مِنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَاُولٰٓئِكَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ وَلَا يُظْلَمُوْنَ نَقِيْرًا
মুমিন অবস্থায় পুরুষ অথবা নারীর মধ্যে যারা সৎকাজ করে তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি অণুপরিমাণও যুলুম করা হবে না। (সূরা নিসা- ১২৪)
مَنْ عَمِلَ سَيِّئَةً فَلَا يُجْزٰۤى اِلَّا مِثْلَهَاۚ وَمَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَاُولٰٓئِكَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ يُرْزَقُوْنَ فِيْهَا بِغَيْرِ حِسَابٍ
যে ব্যক্তি মন্দ আমল করবে সে শুধু তার আমলের অনুরূপ শাস্তিই পাবে। আর মুমিন অবস্থায় পুরুষ অথবা নারীদের মধ্যে যারা সৎকাজ করে তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে; সেখানে তারা অসংখ্য রিযিকপ্রাপ্ত হবে। (সূরা মু’মিন - ৪০)
আল্লাহর কাছে সম্মানের ক্ষেত্রেও নারী-পুরুষ সমান :
اِنَّ اَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللهِ اَتْقَاكُمْؕ اِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ خَبِيْرٌ
নিশ্চয় আল্লাহর কাছে তোমাদের মধ্যে তারাই অধিক সম্মানিত, যারা তোমাদের মধ্যে বেশি মুত্তাক্বী। আল্লাহ সবকিছু জানেন ও সবকিছুর খবর রাখেন। (সূরা হুজুরাত- ১৩)
নারীরা যা উপার্জন করবে তাতে তাদের অধিকার রয়েছে :
لِلرِّجَالِ نَصِيْبٌ مِّمَّا اكْتَسَبُوْاؕ وَلِلنِّسَآءِ نَصِيْبٌ مِّمَّا اكْتَسَبْنَ
পুরুষ যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য এবং নারী যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য। (সূরা নিসা- ৩২)
পিতার সম্পদে নারীদের অংশ রয়েছে :
وَلِلنِّسَآءِ نَصِيْبٌ مِّمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ وَالْاَقْرَبُوْنَ۪ مِمَّا قَلَّ مِنْهُ اَوْ كَثُرَؕ نَصِيْبًا مَّفْرُوْضًا
নারীদের জন্যও পিতামাতা ও আত্মীয়স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পদে অংশ রয়েছে। কম হোক বা বেশি হোক, এসব অংশ নির্ধারিত। (সূরা নিসা- ৭)
নারীদের প্রতি অন্যায় করতে নিষেধ করা হয়েছে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا يَحِلُّ لَكُمْ اَنْ تَرِثُوا النِّسَآءَ كَرْهًا
হে ঈমানদারগণ! জোরপূর্বক নারীদের উত্তরাধিকারী হওয়া তোমাদের জন্য হালাল নয়। (সূরা নিসা- ১৯)
১. মারইয়াম (আঃ) :
وَاِذْ قَالَتِ الْمَلَآئِكَةُ يَا مَرْيَمُ اِنَّ اللهَ اصْطَفَاكِ وَطَهَّرَكِ وَاصْطَفَاكِ عَلٰى نِسَآءِ الْعَالَمِيْنَ
স্মরণ করো, যখন ফেরেশতারা বলেছিলেন, হে মারইয়াম! নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে মনোনীত করেছেন এবং তোমাকে পবিত্র করেছেন। আর তিনি তোমাকে বিশ্বজাহানের নারীদের উপর নির্বাচিত করেছেন।
(সূরা আলে ইমরান- ৪২)
وَمَرْيَمَ ابْنَتَ عِمْرَانَ الَّتِيْۤ اَحْصَنَتْ فَرْجَهَا فَنَفَخْنَا فِيْهِ مِنْ رُّوْحِنَا وَصَدَّقَتْ بِكَلِمَاتِ رَبِّهَا وَكُتُبِهٖ وَكَانَتْ مِنَ الْقَانِتِيْنَ
(আরো দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন) ইমরানের কন্যা মারইয়ামের, যিনি তার সতীত্ব রক্ষা করেছিলেন। ফলে আমি তার মধ্যে আমার রূহ হতে (একটি রূহ) ফুঁকে দিয়েছিলাম এবং তিনি তার প্রতিপালকের বাণী ও তাঁর কিতাবসমূহ সত্য বলে গ্রহণ করেছিলেন; আর তিনি ছিলেন আনুগত্যশীলাদের একজন। (সূরা তাহরীম- ১২)
২. ফিরাউনের স্ত্রী :
وَضَرَبَ اللهُ مَثَلًا لِّلَّذِيْنَ اٰمَنُوا امْرَاَتَ فِرْعَوْنَۘ اِذْ قَالَتْ رَبِّ ابْنِ لِيْ عِنْدَكَ بَيْتًا فِى الْجَنَّةِ وَنَجِّنِيْ مِنْ فِرْعَوْنَ وَعَمَلِهٖ وَنَجِّنِيْ مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِيْنَ
আল্লাহ মুমিনদের জন্য উপস্থিত করেছেন ফিরাউনের স্ত্রীর দৃষ্টান্ত। যিনি প্রার্থনা করেছিলেন, হে আমার প্রতিপালক! আপনার নিকট জান্নাতে আমার জন্য একটি গৃহ নির্মাণ করুন। আমাকে ফিরাউন ও তার দুষ্কৃতি হতে উদ্ধার করুন এবং আমাকে উদ্ধার করুন যালিম সম্প্রদায় হতে। (সূরা তাহরীম- ১১)
وَاِذْ قَالَتِ الْمَلَآئِكَةُ يَا مَرْيَمُ اِنَّ اللهَ اصْطَفَاكِ وَطَهَّرَكِ وَاصْطَفَاكِ عَلٰى نِسَآءِ الْعَالَمِيْنَ
স্মরণ করো, যখন ফেরেশতারা বলেছিলেন, হে মারইয়াম! নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে মনোনীত করেছেন এবং তোমাকে পবিত্র করেছেন। আর তিনি তোমাকে বিশ্বজাহানের নারীদের উপর নির্বাচিত করেছেন।
(সূরা আলে ইমরান- ৪২)
وَمَرْيَمَ ابْنَتَ عِمْرَانَ الَّتِيْۤ اَحْصَنَتْ فَرْجَهَا فَنَفَخْنَا فِيْهِ مِنْ رُّوْحِنَا وَصَدَّقَتْ بِكَلِمَاتِ رَبِّهَا وَكُتُبِهٖ وَكَانَتْ مِنَ الْقَانِتِيْنَ
(আরো দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন) ইমরানের কন্যা মারইয়ামের, যিনি তার সতীত্ব রক্ষা করেছিলেন। ফলে আমি তার মধ্যে আমার রূহ হতে (একটি রূহ) ফুঁকে দিয়েছিলাম এবং তিনি তার প্রতিপালকের বাণী ও তাঁর কিতাবসমূহ সত্য বলে গ্রহণ করেছিলেন; আর তিনি ছিলেন আনুগত্যশীলাদের একজন। (সূরা তাহরীম- ১২)
২. ফিরাউনের স্ত্রী :
وَضَرَبَ اللهُ مَثَلًا لِّلَّذِيْنَ اٰمَنُوا امْرَاَتَ فِرْعَوْنَۘ اِذْ قَالَتْ رَبِّ ابْنِ لِيْ عِنْدَكَ بَيْتًا فِى الْجَنَّةِ وَنَجِّنِيْ مِنْ فِرْعَوْنَ وَعَمَلِهٖ وَنَجِّنِيْ مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِيْنَ
আল্লাহ মুমিনদের জন্য উপস্থিত করেছেন ফিরাউনের স্ত্রীর দৃষ্টান্ত। যিনি প্রার্থনা করেছিলেন, হে আমার প্রতিপালক! আপনার নিকট জান্নাতে আমার জন্য একটি গৃহ নির্মাণ করুন। আমাকে ফিরাউন ও তার দুষ্কৃতি হতে উদ্ধার করুন এবং আমাকে উদ্ধার করুন যালিম সম্প্রদায় হতে। (সূরা তাহরীম- ১১)
আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা হারাম। কুরআন মাজীদের কয়েকটি স্থানে আত্মীয়স্বজনের সাথে উত্তম ব্যবহারকে বড় নেকীর কাজ বলে গণ্য করা হয়েছে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক যত গভীর তার অধিকার ততবেশি এবং তার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা ততবড় গোনাহ। আত্মীয়তা রক্ষা করার অর্থ হলো, আত্মীয়ের উপকার করার যতটুকু সামর্থ্য আছে তা করতে দ্বিধা না করা। আর আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার অর্থ হচ্ছে, তার সাথে খারাপ আচরণ করা, অথবা যে উপকার করা তার পক্ষে সম্ভব তা না করে পাশ কাটিয়ে চলা।
সম্পর্ক অটুট রাখা মুমিনের গুণ :
وَالَّذِيْنَ يَصِلُوْنَ مَاۤ اَمَرَ اللهُ بِهٖۤ اَنْ يُّوْصَلَ
আল্লাহ যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখতে আদেশ করেছেন যারা তা অক্ষুণ্ণ রাখে। (সূরা রা‘দ- ২১)
পারস্পরিক সম্পর্ক ছিন্নকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে :
اَلَّذِيْنَ يَنْقُضُوْنَ عَهْدَ اللهِ مِنْ ۢبَعْدِ مِيْثَاقِهٖ وَيَقْطَعُوْنَ مَاۤ اَمَرَ اللهُ بِهٖۤ اَنْ يُّوْصَلَ وَيُفْسِدُوْنَ فِى الْاَرْضِ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ
যারা আল্লাহর সঙ্গে দৃঢ়ভাবে ওয়াদাবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে এবং আল্লাহ যেসব (সম্পর্ক) অক্ষুণ্ণ রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন তা ছিন্ন করে, আর যারা পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরা বাক্বারা- ২৭)
ব্যাখ্যা : যেসব সম্পর্ককে শক্তিশালী ও প্রতিষ্ঠিত করার উপর মানুষের ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক কল্যাণ নির্ভর করে এবং আল্লাহ যেগুলোকে ত্রুটিমুক্ত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, এরা সেগুলোর উপর অস্ত্র চালায়। এই সংক্ষিপ্ত বাক্যটির মধ্যে অর্থের অনেক ব্যাপকতা রয়েছে। সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে মানবিক সভ্যতা, সংস্কৃতি ও নৈতিকতার বিশাল জগৎ গড়ে উঠেছে। এসব সম্পর্ককে বিনষ্ট করলে মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায় এবং নৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা ধ্বংসের মুখোমুখি হয়।
সম্পর্ক ছিন্নকারীরা জাহান্নামী :
وَالَّذِيْنَ يَنْقُضُوْنَ عَهْدَ اللهِ مِنْ ۢبَعْدِ مِيْثَاقِهٖ وَيَقْطَعُوْنَ مَاۤ اَمَرَ اللهُ بِهٖۤ اَنْ يُّوْصَلَ وَيُفْسِدُوْنَ فِى الْاَرْضِ اُولٰٓئِكَ لَهُمُ اللَّعْنَةُ وَلَهُمْ سُوْٓءُ الدَّارِ
যারা আল্লাহর সঙ্গে দৃঢ়ভাবে ওয়াদাবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে এবং আল্লাহ যেসব (সম্পর্ক) অক্ষুণ্ণ রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন তা ছিন্ন করে। আর যারা পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাদের জন্য রয়েছে লানত এবং তাদের জন্য রয়েছে মন্দ আবাসস্থল। (সূরা রা‘দ- ২৫)
وَالَّذِيْنَ يَصِلُوْنَ مَاۤ اَمَرَ اللهُ بِهٖۤ اَنْ يُّوْصَلَ
আল্লাহ যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখতে আদেশ করেছেন যারা তা অক্ষুণ্ণ রাখে। (সূরা রা‘দ- ২১)
পারস্পরিক সম্পর্ক ছিন্নকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে :
اَلَّذِيْنَ يَنْقُضُوْنَ عَهْدَ اللهِ مِنْ ۢبَعْدِ مِيْثَاقِهٖ وَيَقْطَعُوْنَ مَاۤ اَمَرَ اللهُ بِهٖۤ اَنْ يُّوْصَلَ وَيُفْسِدُوْنَ فِى الْاَرْضِ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ
যারা আল্লাহর সঙ্গে দৃঢ়ভাবে ওয়াদাবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে এবং আল্লাহ যেসব (সম্পর্ক) অক্ষুণ্ণ রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন তা ছিন্ন করে, আর যারা পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরা বাক্বারা- ২৭)
ব্যাখ্যা : যেসব সম্পর্ককে শক্তিশালী ও প্রতিষ্ঠিত করার উপর মানুষের ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক কল্যাণ নির্ভর করে এবং আল্লাহ যেগুলোকে ত্রুটিমুক্ত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, এরা সেগুলোর উপর অস্ত্র চালায়। এই সংক্ষিপ্ত বাক্যটির মধ্যে অর্থের অনেক ব্যাপকতা রয়েছে। সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে মানবিক সভ্যতা, সংস্কৃতি ও নৈতিকতার বিশাল জগৎ গড়ে উঠেছে। এসব সম্পর্ককে বিনষ্ট করলে মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায় এবং নৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা ধ্বংসের মুখোমুখি হয়।
সম্পর্ক ছিন্নকারীরা জাহান্নামী :
وَالَّذِيْنَ يَنْقُضُوْنَ عَهْدَ اللهِ مِنْ ۢبَعْدِ مِيْثَاقِهٖ وَيَقْطَعُوْنَ مَاۤ اَمَرَ اللهُ بِهٖۤ اَنْ يُّوْصَلَ وَيُفْسِدُوْنَ فِى الْاَرْضِ اُولٰٓئِكَ لَهُمُ اللَّعْنَةُ وَلَهُمْ سُوْٓءُ الدَّارِ
যারা আল্লাহর সঙ্গে দৃঢ়ভাবে ওয়াদাবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে এবং আল্লাহ যেসব (সম্পর্ক) অক্ষুণ্ণ রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন তা ছিন্ন করে। আর যারা পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাদের জন্য রয়েছে লানত এবং তাদের জন্য রয়েছে মন্দ আবাসস্থল। (সূরা রা‘দ- ২৫)
মানুষের উপর আল্লাহর পরে সবচেয়ে বেশি হক হচ্ছে পিতামাতার। সন্তানকে পিতামাতার প্রতি আনুগত্যশীল হতে হবে। সর্বদা তাদের সেবা করে যেতে হবে। বিশেষ করে বৃদ্ধ বয়সে ঠিক তেমনিভাবে পিতামাতার সেবা করতে হবে, যেমনিভাবে পিতামাতা শিশুকালে তাদেরকে লালন-পালন করেছেন। মুসলিমদের শিষ্টাচারের ক্ষেত্রে পিতামাতার প্রতি আনুগত্য এবং তাদের অধিকারের রক্ষণাবেক্ষণকে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ইসলাম চিরকালের জন্য এ নীতি নির্ধারণ করে দিয়েছে যে, ইসলামী রাষ্ট্র তার আইন, ব্যবস্থাপনা ও শিক্ষানীতির মাধ্যমে পরিবার নামক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী ও সংরক্ষিত রাখার চেষ্টা করবে।
আল্লাহর হক আদায়ের পরেই পিতামাতার হক আদায় করতে হবে :
وَقَضٰى رَبُّكَ اَلَّا تَعْبُدُوْاۤ اِلَّاۤ اِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ اِحْسَانًا
তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁকে ব্যতীত অন্য কারো ইবাদাত করো না এবং পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করো। (সূরা বনী ইসরাঈল- ২৩)
তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করা আল্লাহর নির্দেশ :
وَاعْبُدُوا اللهَ وَلَا تُشْرِكُوْا بِهٖ شَيْئًا وَّبِالْوَالِدَيْنِ اِحْسَانًا
তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করবে, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না এবং পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে। (সূরা নিসা- ৩৬)
পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে হবে :
وَوَصَّيْنَا الْاِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِۚ حَمَلَتْهُ اُمُّهٗ وَهْنًا عَلٰى وَهْنٍ وَّفِصَالُهٗ فِيْ عَامَيْنِ اَنِ اشْكُرْ لِيْ وَلِوَالِدَيْكَؕ اِلَيَّ الْمَصِيْرُ
আমি মানুষকে তার পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। কেননা তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে গর্ভে ধারণ করেছে এবং তাকে পূর্ণ দু’বছর দুধ পান করিয়েছে। সুতরাং আমার কৃতজ্ঞ হও এবং তোমার মাতা-পিতার (কৃতজ্ঞ হও)। অবশেষে আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে। (সূরা লুক্বমান- ১৪)
বিশেষভাবে বৃদ্ধ বয়সে তাদের প্রতি যত্নবান হতে হবে :
اِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ اَحَدُهُمَاۤ اَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُلْ لَّهُمَاۤ اُفٍّ وَّلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَّهُمَا قَوْلًا كَرِيْمًا
তাদের একজন অথবা উভয়ই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে ‘উফ’ শব্দ পর্যন্ত বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিয়ো না। আর তাদের সাথে সম্মানসূচক কথা বলো। (সূরা বনী ইসরাঈল- ২৩)
আচরণের ক্ষেত্রে তাদের সাথে বিনয় ও নম্রতা প্রদর্শন করতে হবে :
وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ
তাদের জন্য সদয়ভাবে নম্রতার বাহু প্রসারিত করে দাও। (সূরা বনী ইসরাঈল- ২৪)
পিতামাতার জন্য টাকা-পয়সা খরচ করতে হবে :
يَسْاَلُوْنَكَ مَاذَا يُنْفِقُوْنَؕ قُلْ مَاۤ اَنْفَقْتُمْ مِّنْ خَيْرٍ فَلِلْوَالِدَيْنِ وَالْاَقْرَبِيْنَ وَالْيَتَامٰى وَالْمَسَاكِيْنِ وَابْنِ السَّبِيْلِؕ وَمَا تَفْعَلُوْا مِنْ خَيْرٍ فَاِنَّ اللهَ بِهٖ عَلِيْمٌ
লোকেরা তোমাকে জিজ্ঞেস করে, তারা কী ব্যয় করবে? বলে দাও, তোমরা ধনসম্পদ হতে যা ব্যয় করবে তা পিতামাতা, আত্মীয়স্বজন, ইয়াতীম ও পথিকদের জন্য ব্যয় করো। আর তোমরা যেসব সৎকর্ম কর নিশ্চয় আল্লাহ সে সম্পর্কে অবগত। (সূরা বাক্বারা- ২১৫)
মাতা-পিতা অমুসলিম হলেও দুনিয়াতে ভালো ব্যবহার করতে হবে :
وَصَاحِبْهُمَا فِى الدُّنْيَا مَعْرُوْفًا
আর দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ব্যবহার কর। (সূরা লুক্বমান- ১৫)
আল্লাহর হক আদায়ের পরেই পিতামাতার হক আদায় করতে হবে :
وَقَضٰى رَبُّكَ اَلَّا تَعْبُدُوْاۤ اِلَّاۤ اِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ اِحْسَانًا
তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁকে ব্যতীত অন্য কারো ইবাদাত করো না এবং পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করো। (সূরা বনী ইসরাঈল- ২৩)
তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করা আল্লাহর নির্দেশ :
وَاعْبُدُوا اللهَ وَلَا تُشْرِكُوْا بِهٖ شَيْئًا وَّبِالْوَالِدَيْنِ اِحْسَانًا
তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করবে, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না এবং পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে। (সূরা নিসা- ৩৬)
পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে হবে :
وَوَصَّيْنَا الْاِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِۚ حَمَلَتْهُ اُمُّهٗ وَهْنًا عَلٰى وَهْنٍ وَّفِصَالُهٗ فِيْ عَامَيْنِ اَنِ اشْكُرْ لِيْ وَلِوَالِدَيْكَؕ اِلَيَّ الْمَصِيْرُ
আমি মানুষকে তার পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। কেননা তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে গর্ভে ধারণ করেছে এবং তাকে পূর্ণ দু’বছর দুধ পান করিয়েছে। সুতরাং আমার কৃতজ্ঞ হও এবং তোমার মাতা-পিতার (কৃতজ্ঞ হও)। অবশেষে আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে। (সূরা লুক্বমান- ১৪)
বিশেষভাবে বৃদ্ধ বয়সে তাদের প্রতি যত্নবান হতে হবে :
اِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ اَحَدُهُمَاۤ اَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُلْ لَّهُمَاۤ اُفٍّ وَّلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَّهُمَا قَوْلًا كَرِيْمًا
তাদের একজন অথবা উভয়ই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে ‘উফ’ শব্দ পর্যন্ত বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিয়ো না। আর তাদের সাথে সম্মানসূচক কথা বলো। (সূরা বনী ইসরাঈল- ২৩)
আচরণের ক্ষেত্রে তাদের সাথে বিনয় ও নম্রতা প্রদর্শন করতে হবে :
وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ
তাদের জন্য সদয়ভাবে নম্রতার বাহু প্রসারিত করে দাও। (সূরা বনী ইসরাঈল- ২৪)
পিতামাতার জন্য টাকা-পয়সা খরচ করতে হবে :
يَسْاَلُوْنَكَ مَاذَا يُنْفِقُوْنَؕ قُلْ مَاۤ اَنْفَقْتُمْ مِّنْ خَيْرٍ فَلِلْوَالِدَيْنِ وَالْاَقْرَبِيْنَ وَالْيَتَامٰى وَالْمَسَاكِيْنِ وَابْنِ السَّبِيْلِؕ وَمَا تَفْعَلُوْا مِنْ خَيْرٍ فَاِنَّ اللهَ بِهٖ عَلِيْمٌ
লোকেরা তোমাকে জিজ্ঞেস করে, তারা কী ব্যয় করবে? বলে দাও, তোমরা ধনসম্পদ হতে যা ব্যয় করবে তা পিতামাতা, আত্মীয়স্বজন, ইয়াতীম ও পথিকদের জন্য ব্যয় করো। আর তোমরা যেসব সৎকর্ম কর নিশ্চয় আল্লাহ সে সম্পর্কে অবগত। (সূরা বাক্বারা- ২১৫)
মাতা-পিতা অমুসলিম হলেও দুনিয়াতে ভালো ব্যবহার করতে হবে :
وَصَاحِبْهُمَا فِى الدُّنْيَا مَعْرُوْفًا
আর দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ব্যবহার কর। (সূরা লুক্বমান- ১৫)
মা গর্ভধারণ ও প্রসবের কষ্ট সহ্য করেন :
وَوَصَّيْنَا الْاِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ اِحْسَانًاؕ حَمَلَتْهُ اُمُّهٗ كُرْهًا وَّوَضَعَتْهُ كُرْهًاؕ وَحَمْلُهٗ وَفِصَالُهٗ ثَلَاثُوْنَ شَهْرًا
আমি মানুষকে পিতামাতার সাথে ভালো ব্যবহার করার হুকুম দিয়েছি। তার মা কষ্ট করে তাকে পেটে রেখেছে এবং তাকে কষ্ট করেই প্রসব করেছে। অতঃপর তাকে পেটে বহন করতে ও দুধ ছাড়াতে ত্রিশ মাস লেগেছে। (সূরা আহকাফ- ১৫)
ব্যাখ্যা : যদিও সন্তানের জন্য পিতামাতা উভয়েরই সেবা করা আবশ্যক; তবুও গুরুত্বের দিক দিয়ে মায়ের অধিকার বেশি। কারণ মা সন্তানের জন্য বেশি কষ্ট স্বীকার করেন। এ আয়াত এ দিকেই ইঙ্গিত করে। একটি হাদীস থেকেও এ বিষয়টি জানা যায়। ‘‘এক ব্যক্তি নবী ﷺ কে জিজ্ঞেস করল, আমার উপর কার খেদমতের হক সবচেয়ে বেশি? নবী ﷺ বললেন, তোমার মায়ের। সে বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মায়ের। সে আবার জিজ্ঞেস করল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মায়ের। সে আবারো জিজ্ঞেস করল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার পিতার।’’ (সহীহ বুখারী, হা/৫৯৭১; সহীহ মুসলিম, হা/৬৬৬৪) নবী ﷺ এর এ বাণী হুবহু এ আয়াতেরই ব্যাখ্যা। কারণ এতেও মায়ের তিনগুণ বেশি অধিকারের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। ১. মা কষ্ট করে তাকে গর্ভে ধারণ করেছেন। ২. কষ্ট করেই তাকে প্রসব করেছেন এবং ৩. গর্ভধারণ ও দুধ পান করাতে ৩০ মাস লেগেছে।
মাতা-পিতার খেদমতে ত্রুটি হয়ে গেলে তাওবা করতে হবে :
رَبُّكُمْ اَعْلَمُ بِمَا فِيْ نُفُوْسِكُمْ اِنْ تَكُوْنُوْا صَالِحِيْنَ فَاِنَّهٗ كَانَ لِلْاَ وَّابِيْنَ غَفُوْرًا
তোমাদের অন্তরে যা আছে তোমাদের প্রতিপালক সে সম্পর্কে অধিক জানেন। যদি তোমরা সৎকর্মপরায়ণ হও, তবে তিনি আল্লাহ অভিমুখীদের প্রতি অতিশয় ক্ষমাশীল হবেন। (সূরা বনী ইসরাঈল- ২৫)
মাতা-পিতার জন্য দু‘আ করতে হবে :
رَبَّنَا اغْفِرْ لِيْ وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ يَوْمَ يَقُوْمُ الْحِسَابُ
হে আমাদের প্রতিপালক! যেদিন হিসাব অনুষ্ঠিত হবে সেদিন আমাকে, আমার পিতামাতাকে এবং মুমিনদেরকে ক্ষমা করুন। (সূরা ইবরাহীম- ৪১)
رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِيْ صَغِيْرًا
হে আমার প্রতিপালক! তাদের প্রতি দয়া করুন, যেভাবে তারা আমাকে শৈশবে প্রতিপালন করেছিলেন।
(সূরা বনী ইসরাঈল- ২৪)
وَوَصَّيْنَا الْاِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ اِحْسَانًاؕ حَمَلَتْهُ اُمُّهٗ كُرْهًا وَّوَضَعَتْهُ كُرْهًاؕ وَحَمْلُهٗ وَفِصَالُهٗ ثَلَاثُوْنَ شَهْرًا
আমি মানুষকে পিতামাতার সাথে ভালো ব্যবহার করার হুকুম দিয়েছি। তার মা কষ্ট করে তাকে পেটে রেখেছে এবং তাকে কষ্ট করেই প্রসব করেছে। অতঃপর তাকে পেটে বহন করতে ও দুধ ছাড়াতে ত্রিশ মাস লেগেছে। (সূরা আহকাফ- ১৫)
ব্যাখ্যা : যদিও সন্তানের জন্য পিতামাতা উভয়েরই সেবা করা আবশ্যক; তবুও গুরুত্বের দিক দিয়ে মায়ের অধিকার বেশি। কারণ মা সন্তানের জন্য বেশি কষ্ট স্বীকার করেন। এ আয়াত এ দিকেই ইঙ্গিত করে। একটি হাদীস থেকেও এ বিষয়টি জানা যায়। ‘‘এক ব্যক্তি নবী ﷺ কে জিজ্ঞেস করল, আমার উপর কার খেদমতের হক সবচেয়ে বেশি? নবী ﷺ বললেন, তোমার মায়ের। সে বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মায়ের। সে আবার জিজ্ঞেস করল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মায়ের। সে আবারো জিজ্ঞেস করল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার পিতার।’’ (সহীহ বুখারী, হা/৫৯৭১; সহীহ মুসলিম, হা/৬৬৬৪) নবী ﷺ এর এ বাণী হুবহু এ আয়াতেরই ব্যাখ্যা। কারণ এতেও মায়ের তিনগুণ বেশি অধিকারের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। ১. মা কষ্ট করে তাকে গর্ভে ধারণ করেছেন। ২. কষ্ট করেই তাকে প্রসব করেছেন এবং ৩. গর্ভধারণ ও দুধ পান করাতে ৩০ মাস লেগেছে।
মাতা-পিতার খেদমতে ত্রুটি হয়ে গেলে তাওবা করতে হবে :
رَبُّكُمْ اَعْلَمُ بِمَا فِيْ نُفُوْسِكُمْ اِنْ تَكُوْنُوْا صَالِحِيْنَ فَاِنَّهٗ كَانَ لِلْاَ وَّابِيْنَ غَفُوْرًا
তোমাদের অন্তরে যা আছে তোমাদের প্রতিপালক সে সম্পর্কে অধিক জানেন। যদি তোমরা সৎকর্মপরায়ণ হও, তবে তিনি আল্লাহ অভিমুখীদের প্রতি অতিশয় ক্ষমাশীল হবেন। (সূরা বনী ইসরাঈল- ২৫)
মাতা-পিতার জন্য দু‘আ করতে হবে :
رَبَّنَا اغْفِرْ لِيْ وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ يَوْمَ يَقُوْمُ الْحِسَابُ
হে আমাদের প্রতিপালক! যেদিন হিসাব অনুষ্ঠিত হবে সেদিন আমাকে, আমার পিতামাতাকে এবং মুমিনদেরকে ক্ষমা করুন। (সূরা ইবরাহীম- ৪১)
رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِيْ صَغِيْرًا
হে আমার প্রতিপালক! তাদের প্রতি দয়া করুন, যেভাবে তারা আমাকে শৈশবে প্রতিপালন করেছিলেন।
(সূরা বনী ইসরাঈল- ২৪)
আল্লাহর নাফরমানির ক্ষেত্রে মাতা-পিতার কথা শুনা যাবে না :
وَاِنْ جَاهَدَاكَ لِتُشْرِكَ بِيْ مَا لَيْسَ لَكَ بِهٖ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا
তারা যদি তোমার উপর বল প্রয়োগ করে আমার সাথে এমন কিছুকে শরীক করার জন্য যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তবে তুমি তাদের অনুসরণ করো না। (সূরা আনকাবূত- ৮)
ব্যাখ্যা : অবশ্যই এটা পিতামাতার অধিকার যে, ছেলে-মেয়েরা তাদের সেবা করবে, তাদেরকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করবে এবং বৈধ বিষয়ে তাদের কথা মেনে চলবে। কিন্তু তাদেরকে এ অধিকার দেয়া হয়নি যে, মানুষ নিজের জ্ঞানের বিরুদ্ধে তাদের অন্ধ অনুসরণ করবে। শুধুমাত্র পিতামাতার ধর্ম বলেই ছেলে বা মেয়ের সেই ধর্ম মেনে চলার কোন কারণ নেই। সন্তান যদি এ জ্ঞান লাভ করে যে, তার পিতামাতার ধর্ম ভুল ও মিথ্যা, তাহলে তাদের ধর্ম পরিত্যাগ করে সঠিক ধর্ম গ্রহণ করা উচিত। এমনকি তাদের উপর চাপ প্রয়োগের পরও যে পথের ভ্রান্তি তার কাছে সুস্পষ্ট হয়ে গেছে সে পথ থেকে সরে আসা উচিত। পিতামাতার সাথে যখন এ ধরনের ব্যবহার করতে হবে তখন দুনিয়ার প্রত্যেক ব্যক্তির সাথেও এ ব্যবহার করা উচিত। যতক্ষণ না কোন ব্যক্তির সত্য পথে থাকা সম্পর্কে জানা যাবে ততক্ষণ তার অনুসরণ করা বৈধ নয়। সন্তান যদি সঠিক পথ অবলম্বন করে থাকে এবং পিতামাতার বৈধ অধিকার আদায় করার ক্ষেত্রেও কোন প্রকার ত্রুটি না করে থাকে; আর পিতামাতা যদি কেবল পথভ্রষ্টতার ক্ষেত্রে তাদের সহযোগী না হওয়ার কারণে তাকে নির্যাতন করে থাকে, তাহলে তারা আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাঁচতে পারবে না।
বাহ্যিক আচরণ বজায় রেখে আল্লাহর কথাই মানতে হবে :
وَصَاحِبْهُمَا فِى الدُّنْيَا مَعْرُوْفًاؗ وَاتَّبِعْ سَبِيْلَ مَنْ اَنَابَ اِلَيَّ ۚ ثُمَّ اِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَاُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে এবং যে আমার অভিমুখী হয়েছে তার পথ অনুসরণ করবে। অবশেষে তোমাদেরকে আমার দিকেই ফিরে আসতে হবে। অতঃপর তোমরা যা করতে তা আমি তোমাদেরকে অবহিত করব। (সূরা লুক্বমান- ১৫)
পিতামাতা কুফরের প্রতি আকৃষ্ট হলে আন্তরিক বন্ধুত্ব রাখা যাবে না :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوْاۤ اٰبَآءَكُمْ وَاِخْوَانَكُمْ اَوْلِيَآءَ اِنِ اسْتَحَبُّوا الْكُفْرَ عَلَى الْاِيْمَانِؕ وَمَنْ يَّتَوَلَّهُمْ مِّنْكُمْ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমাদের পিতা ও ভ্রাতাগণ যদি ঈমানের মুকাবিলায় কুফরীকে পছন্দ করে, তবে তাদেরকে অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তোমাদের মধ্যে যারা তাদেরকে অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে তারাই যালিম। (সূরা তাওবা- ২৩)
শানে নুযূল : রাসূল ﷺ এর প্রতি হিজরতের নির্দেশ হওয়ার সাথে সাথে কতিপয় সাহাবী স্বেচ্ছায় আনন্দের সঙ্গে মদিনায় হিজরত করলেন, কিন্তু কেউ কেউ নিজ মাতা-পিতা, স্ত্রী, পুত্র ও ধনসম্পদের আকর্ষণে হিজরত করেননি। তাদের সম্বন্ধে এ আয়াতটি নাযিল হয়।
অমুসলিম মা-বাবার জন্য মাগফিরাতের দু‘আ করা জায়েয নয় :
مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَنْ يَّسْتَغْفِرُوْا لِلْمُشْرِكِيْنَ وَلَوْ كَانُوْاۤ اُولِيْ قُرْبٰى مِنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ اَنَّهُمْ اَصْحَابُ الْجَحِيْمِ
কোন নবী এবং ঈমানদারদের জন্য এটা উচিত নয় যে, তারা কোন মুশরিকদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করবে, যদিও তারা নিকটাত্মীয় হয়; তাদের কাছে এ কথা স্পষ্ট হওয়ার পরও যে, তারা জাহান্নামবাসী। (সূরা তাওবা- ১১৩)
ইবরাহীম (আঃ) তাঁর মুশরিক পিতামাতার জন্য দু‘আ করেছেন :
وَمَا كَانَ اسْتِغْفَارُ اِبْرَاهِيْمَ لِاَبِيْهِ اِلَّا عَنْ مَّوْعِدَةٍ وَّعَدَهَاۤ اِيَّاهُۚ فَلَمَّا تَبَيَّنَ لَهٗۤ اَنَّهٗ عَدُوٌّ لِّلّٰهِ تَبَرَّاَ مِنْهُؕ اِنَّ اِبْرَاهِيْمَ لَاَوَّاهٌ حَلِيْمٌ
আর ইবরাহীম তার পিতার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করেছিলেন এজন্য যে, তিনি তাকে এ ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। অতঃপর যখন এটা তার নিকট সুস্পষ্ট হয়ে গেল যে, সে আল্লাহর শত্রু; তখন ইবরাহীম তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করল। নিশ্চয় ইবরাহীম কোমল হৃদয়ের অধিকারী ও সহনশীল। (সূরা তাওবা- ১১৪)
মাতা-পিতার বিপক্ষে হলেও ন্যায়ের সাক্ষ্য দিতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُوْنُوْا قَوَّامِيْنَ بِالْقِسْطِ شُهَدَآءَ لِلّٰهِ وَلَوْ عَلٰۤى اَنْفُسِكُمْ اَوِ الْوَالِدَيْنِ وَالْاَقْرَبِيْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর সাক্ষীস্বরূপ ইনসাফের উপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকো। যদিও তা তোমাদের নিজেদের অথবা পিতামাতা এবং আত্মীয়স্বজনদের বিরুদ্ধে হয়। (সূরা নিসা- ১৩৫)
মাতা-পিতা ভুল পথে চললে তাদেরকে ভদ্র ভাষায় দাওয়াত দিতে হবে :
وَاذْكُرْ فِى الْكِتَابِ اِبْرَاهِيْمَؕ اِنَّهٗ كَانَ صِدِّيْقًا نَّبِيًّا ‐ اِذْ قَالَ لِاَبِيْهِ يَاۤ اَبَتِ لِمَ تَعْبُدُ مَا لَا يَسْمَعُ وَلَا يُبْصِرُ وَلَا يُغْنِيْ عَنْكَ شَيْئًا ‐ يَاۤ اَبَتِ اِنِّيْ قَدْ جَآءَنِيْ مِنَ الْعِلْمِ مَا لَمْ يَأْتِكَ فَاتَّبِعْنِيْۤ اَهْدِكَ صِرَاطًا سَوِيًّا ‐ يَاۤ اَبَتِ لَا تَعْبُدِ الشَّيْطَانَؕ اِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلرَّحْمٰنِ عَصِيًّا ‐ يَاۤ اَبَتِ اِنِّۤيْ اَخَافُ اَنْ يَّمَسَّكَ عَذَابٌ مِّنَ الرَّحْمٰنِ فَتَكُوْنَ لِلشَّيْطَانِ وَلِيًّا
স্মরণ করো, এ কিতাবে উল্লেখিত ইবরাহীমের কথা, সে ছিল সত্যনিষ্ঠ নবী। সে তার পিতাকে বলল, হে আমার পিতা! আপনি কেন তার ইবাদাত করেন যে শুনতে পায় না, দেখতে পায় না এবং আপনার কোন উপকার করতে পারে না? (যখন সে তার পিতাকে বলল) হে আমার পিতা! আমার নিকট তো এমন জ্ঞান এসেছে, যা আপনার নিকট আসেনি। সুতরাং আমার অনুসরণ করুন, আমি আপনাকে সঠিক পথ দেখাব। হে আমার পিতা! শয়তানের ইবাদাত করবেন না; নিশ্চয় শয়তান দয়াময়ের অবাধ্য। হে আমার পিতা! আমি আশঙ্কা করি যে, আপনাকে দয়াময়ের শাস্তি স্পর্শ করবে, তখন তো আপনি শয়তানের বন্ধুতে পরিণত হয়ে যাবেন। (সূরা মারইয়াম, ৪১-৪৫)
পিতৃপুরুষ ভুল পথে থাকলে তাদের অনুসরণ করা জায়েয নয় :
وَاِذَا قِيْلَ لَهُمُ اتَّبِعُوْا مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ قَالُوْا بَلْ نَتَّبِعُ مَاۤ اَلْفَيْنَا عَلَيْهِ اٰبَآءَنَاۤ اَوَلَوْ كَانَ اٰبَآؤُهُمْ لَا يَعْقِلُوْنَ شَيْئًا وَّلَا يَهْتَدُوْنَ
আর যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার অনুসরণ করো। তখন তারা বলে, বরং আমরা তাঁরই অনুসরণ করব যার উপর আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে পেয়েছি। যদিও তাদের পিতৃপুরুষদের কোন জ্ঞানই ছিল না এবং তারা হেদায়াতপ্রাপ্তও ছিল না, তবুও কি (তারা তাদের অনুসরণ করবে?) (সূরা বাক্বারা- ১৭০)
মানুষ বাপ-দাদার ধর্মকে আঁকড়ে ধরে পথভ্রষ্ট হয় :
وَكَذٰلِكَ مَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ فِيْ قَرْيَةٍ مِّنْ نَّذِيْرٍ اِلَّا قَالَ مُتْرَفُوْهَاۤ اِنَّا وَجَدْنَا اٰبَآءَنَا عَلٰۤى اُمَّةٍ وَّاِنَّا عَلٰۤى اٰثَارِهِمْ مُّقْتَدُوْنَ
অনুরূপভাবে তোমার পূর্বে কোন জনপদে যখনই কোন সতর্ককারী প্রেরণ করেছি তখনই তাদের সমৃদ্ধশালী ব্যক্তিরা বলত, আমরা তো আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে পেয়েছি এক মতাদর্শের উপর এবং আমরা তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করছি। (সূরা যুখরুফ- ২৩)
তারা হেদায়াতের সঠিক পথকেও অস্বীকার করে :
قَالَ اَوَلَوْ جِئْتُكُمْ بِاَهْدٰى مِمَّا وَجَدْتُّمْ عَلَيْهِ اٰبَآءَكُمْ قَالُوْاۤ اِنَّا بِمَاۤ اُرْسِلْتُمْ بِهٖ كَافِرُوْنَ
তিনি (নবী) বলতেন, তোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষদেরকে যে পথে পেয়েছ, আমি যদি তোমাদের জন্য তার চেয়ে উত্তম পথনির্দেশ আনয়ন করি তবুও কি (তোমরা তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে)? তখন তারা বলত, তোমরা যা নিয়ে প্রেরিত হয়েছ আমরা তা প্রত্যাখ্যান করি। (সূরা যুখরুফ- ২৪)
وَاِذَا قِيْلَ لَهُمْ تَعَالَوْا اِلٰى مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ وَاِلَى الرَّسُوْلِ قَالُوْا حَسْبُنَا مَا وَجَدْنَا عَلَيْهِ اٰبَآءَنَاۤ اَوَلَوْ كَانَ اٰبَآؤُهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ شَيْئًا وَّلَا يَهْتَدُوْنَ
যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তার দিকে ও রাসূলের দিকে আসো। তখন তারা বলে, আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে যাতে পেয়েছি তাই আমাদের জন্য যথেষ্ট। যদিও তাদের পূর্বপুরুষরা কিছুই জানত না এবং সৎপথপ্রাপ্তও ছিল না, তবুও কি (তারা তাদের অনুসরণ করবে?) (সূরা মায়েদা- ১০৪)
পিতৃপুরুষরা সৎপথে থাকলে তাদের অনুসরণ করা যাবে :
اَمْ كُنْتُمْ شُهَدَآءَ اِذْ حَضَرَ يَعْقُوْبَ الْمَوْتُ اِذْ قَالَ لِبَنِيْهِ مَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ ۢبَعْدِيْؕ قَالُوْا نَعْبُدُ اِلٰهَكَ وَاِلٰهَ اٰبَآئِكَ اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ وَاِسْحَاقَ اِلٰهًا وَّاحِدًاۚ وَنَحْنُ لَهٗ مُسْلِمُوْنَ
তোমরা কি তখন উপস্থিত ছিলে, যখন ইয়াকূবের মৃত্যু উপস্থিত হলো তখন তিনি নিজ পুত্রদেরকে বলেছিলেন, আমার পরে তোমরা কোন জিনিসের ইবাদাত করবে? তারা বলেছিল, আমরা আপনার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাকের ইলাহের ইবাদাত করব, তিনি একক উপাস্য এবং আমরা তাঁরই অনুগত থাকব। (সূরা বাক্বারা- ১৩৩)
وَاتَّبَعْتُ مِلَّةَ اٰبَآئِيْۤ اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَؕ مَا كَانَ لَنَاۤ اَنْ نُّشْرِكَ بِاللهِ مِنْ شَيْءٍؕ ذٰلِكَ مِنْ فَضْلِ اللهِ عَلَيْنَا وَعَلَى النَّاسِ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَشْكُرُوْنَ
আমি তো আমার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম, ইসহাক এবং ইয়াকূবের মতবাদের অনুসরণ করি। আল্লাহর সাথে কোন বস্তুকে শরীক করা আমাদের কাজ নয়। এটা (তাওহীদের অনুসারী হওয়া) আমাদের ও সমস্ত মানুষের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ, কিন্তু অধিকাংশ মানুষই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। (সূরা ইউসুফ- ৩৮)
وَاِنْ جَاهَدَاكَ لِتُشْرِكَ بِيْ مَا لَيْسَ لَكَ بِهٖ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا
তারা যদি তোমার উপর বল প্রয়োগ করে আমার সাথে এমন কিছুকে শরীক করার জন্য যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তবে তুমি তাদের অনুসরণ করো না। (সূরা আনকাবূত- ৮)
ব্যাখ্যা : অবশ্যই এটা পিতামাতার অধিকার যে, ছেলে-মেয়েরা তাদের সেবা করবে, তাদেরকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করবে এবং বৈধ বিষয়ে তাদের কথা মেনে চলবে। কিন্তু তাদেরকে এ অধিকার দেয়া হয়নি যে, মানুষ নিজের জ্ঞানের বিরুদ্ধে তাদের অন্ধ অনুসরণ করবে। শুধুমাত্র পিতামাতার ধর্ম বলেই ছেলে বা মেয়ের সেই ধর্ম মেনে চলার কোন কারণ নেই। সন্তান যদি এ জ্ঞান লাভ করে যে, তার পিতামাতার ধর্ম ভুল ও মিথ্যা, তাহলে তাদের ধর্ম পরিত্যাগ করে সঠিক ধর্ম গ্রহণ করা উচিত। এমনকি তাদের উপর চাপ প্রয়োগের পরও যে পথের ভ্রান্তি তার কাছে সুস্পষ্ট হয়ে গেছে সে পথ থেকে সরে আসা উচিত। পিতামাতার সাথে যখন এ ধরনের ব্যবহার করতে হবে তখন দুনিয়ার প্রত্যেক ব্যক্তির সাথেও এ ব্যবহার করা উচিত। যতক্ষণ না কোন ব্যক্তির সত্য পথে থাকা সম্পর্কে জানা যাবে ততক্ষণ তার অনুসরণ করা বৈধ নয়। সন্তান যদি সঠিক পথ অবলম্বন করে থাকে এবং পিতামাতার বৈধ অধিকার আদায় করার ক্ষেত্রেও কোন প্রকার ত্রুটি না করে থাকে; আর পিতামাতা যদি কেবল পথভ্রষ্টতার ক্ষেত্রে তাদের সহযোগী না হওয়ার কারণে তাকে নির্যাতন করে থাকে, তাহলে তারা আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাঁচতে পারবে না।
বাহ্যিক আচরণ বজায় রেখে আল্লাহর কথাই মানতে হবে :
وَصَاحِبْهُمَا فِى الدُّنْيَا مَعْرُوْفًاؗ وَاتَّبِعْ سَبِيْلَ مَنْ اَنَابَ اِلَيَّ ۚ ثُمَّ اِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَاُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে এবং যে আমার অভিমুখী হয়েছে তার পথ অনুসরণ করবে। অবশেষে তোমাদেরকে আমার দিকেই ফিরে আসতে হবে। অতঃপর তোমরা যা করতে তা আমি তোমাদেরকে অবহিত করব। (সূরা লুক্বমান- ১৫)
পিতামাতা কুফরের প্রতি আকৃষ্ট হলে আন্তরিক বন্ধুত্ব রাখা যাবে না :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوْاۤ اٰبَآءَكُمْ وَاِخْوَانَكُمْ اَوْلِيَآءَ اِنِ اسْتَحَبُّوا الْكُفْرَ عَلَى الْاِيْمَانِؕ وَمَنْ يَّتَوَلَّهُمْ مِّنْكُمْ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমাদের পিতা ও ভ্রাতাগণ যদি ঈমানের মুকাবিলায় কুফরীকে পছন্দ করে, তবে তাদেরকে অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তোমাদের মধ্যে যারা তাদেরকে অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে তারাই যালিম। (সূরা তাওবা- ২৩)
শানে নুযূল : রাসূল ﷺ এর প্রতি হিজরতের নির্দেশ হওয়ার সাথে সাথে কতিপয় সাহাবী স্বেচ্ছায় আনন্দের সঙ্গে মদিনায় হিজরত করলেন, কিন্তু কেউ কেউ নিজ মাতা-পিতা, স্ত্রী, পুত্র ও ধনসম্পদের আকর্ষণে হিজরত করেননি। তাদের সম্বন্ধে এ আয়াতটি নাযিল হয়।
অমুসলিম মা-বাবার জন্য মাগফিরাতের দু‘আ করা জায়েয নয় :
مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَنْ يَّسْتَغْفِرُوْا لِلْمُشْرِكِيْنَ وَلَوْ كَانُوْاۤ اُولِيْ قُرْبٰى مِنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ اَنَّهُمْ اَصْحَابُ الْجَحِيْمِ
কোন নবী এবং ঈমানদারদের জন্য এটা উচিত নয় যে, তারা কোন মুশরিকদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করবে, যদিও তারা নিকটাত্মীয় হয়; তাদের কাছে এ কথা স্পষ্ট হওয়ার পরও যে, তারা জাহান্নামবাসী। (সূরা তাওবা- ১১৩)
ইবরাহীম (আঃ) তাঁর মুশরিক পিতামাতার জন্য দু‘আ করেছেন :
وَمَا كَانَ اسْتِغْفَارُ اِبْرَاهِيْمَ لِاَبِيْهِ اِلَّا عَنْ مَّوْعِدَةٍ وَّعَدَهَاۤ اِيَّاهُۚ فَلَمَّا تَبَيَّنَ لَهٗۤ اَنَّهٗ عَدُوٌّ لِّلّٰهِ تَبَرَّاَ مِنْهُؕ اِنَّ اِبْرَاهِيْمَ لَاَوَّاهٌ حَلِيْمٌ
আর ইবরাহীম তার পিতার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করেছিলেন এজন্য যে, তিনি তাকে এ ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। অতঃপর যখন এটা তার নিকট সুস্পষ্ট হয়ে গেল যে, সে আল্লাহর শত্রু; তখন ইবরাহীম তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করল। নিশ্চয় ইবরাহীম কোমল হৃদয়ের অধিকারী ও সহনশীল। (সূরা তাওবা- ১১৪)
মাতা-পিতার বিপক্ষে হলেও ন্যায়ের সাক্ষ্য দিতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُوْنُوْا قَوَّامِيْنَ بِالْقِسْطِ شُهَدَآءَ لِلّٰهِ وَلَوْ عَلٰۤى اَنْفُسِكُمْ اَوِ الْوَالِدَيْنِ وَالْاَقْرَبِيْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর সাক্ষীস্বরূপ ইনসাফের উপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকো। যদিও তা তোমাদের নিজেদের অথবা পিতামাতা এবং আত্মীয়স্বজনদের বিরুদ্ধে হয়। (সূরা নিসা- ১৩৫)
মাতা-পিতা ভুল পথে চললে তাদেরকে ভদ্র ভাষায় দাওয়াত দিতে হবে :
وَاذْكُرْ فِى الْكِتَابِ اِبْرَاهِيْمَؕ اِنَّهٗ كَانَ صِدِّيْقًا نَّبِيًّا ‐ اِذْ قَالَ لِاَبِيْهِ يَاۤ اَبَتِ لِمَ تَعْبُدُ مَا لَا يَسْمَعُ وَلَا يُبْصِرُ وَلَا يُغْنِيْ عَنْكَ شَيْئًا ‐ يَاۤ اَبَتِ اِنِّيْ قَدْ جَآءَنِيْ مِنَ الْعِلْمِ مَا لَمْ يَأْتِكَ فَاتَّبِعْنِيْۤ اَهْدِكَ صِرَاطًا سَوِيًّا ‐ يَاۤ اَبَتِ لَا تَعْبُدِ الشَّيْطَانَؕ اِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلرَّحْمٰنِ عَصِيًّا ‐ يَاۤ اَبَتِ اِنِّۤيْ اَخَافُ اَنْ يَّمَسَّكَ عَذَابٌ مِّنَ الرَّحْمٰنِ فَتَكُوْنَ لِلشَّيْطَانِ وَلِيًّا
স্মরণ করো, এ কিতাবে উল্লেখিত ইবরাহীমের কথা, সে ছিল সত্যনিষ্ঠ নবী। সে তার পিতাকে বলল, হে আমার পিতা! আপনি কেন তার ইবাদাত করেন যে শুনতে পায় না, দেখতে পায় না এবং আপনার কোন উপকার করতে পারে না? (যখন সে তার পিতাকে বলল) হে আমার পিতা! আমার নিকট তো এমন জ্ঞান এসেছে, যা আপনার নিকট আসেনি। সুতরাং আমার অনুসরণ করুন, আমি আপনাকে সঠিক পথ দেখাব। হে আমার পিতা! শয়তানের ইবাদাত করবেন না; নিশ্চয় শয়তান দয়াময়ের অবাধ্য। হে আমার পিতা! আমি আশঙ্কা করি যে, আপনাকে দয়াময়ের শাস্তি স্পর্শ করবে, তখন তো আপনি শয়তানের বন্ধুতে পরিণত হয়ে যাবেন। (সূরা মারইয়াম, ৪১-৪৫)
পিতৃপুরুষ ভুল পথে থাকলে তাদের অনুসরণ করা জায়েয নয় :
وَاِذَا قِيْلَ لَهُمُ اتَّبِعُوْا مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ قَالُوْا بَلْ نَتَّبِعُ مَاۤ اَلْفَيْنَا عَلَيْهِ اٰبَآءَنَاۤ اَوَلَوْ كَانَ اٰبَآؤُهُمْ لَا يَعْقِلُوْنَ شَيْئًا وَّلَا يَهْتَدُوْنَ
আর যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার অনুসরণ করো। তখন তারা বলে, বরং আমরা তাঁরই অনুসরণ করব যার উপর আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে পেয়েছি। যদিও তাদের পিতৃপুরুষদের কোন জ্ঞানই ছিল না এবং তারা হেদায়াতপ্রাপ্তও ছিল না, তবুও কি (তারা তাদের অনুসরণ করবে?) (সূরা বাক্বারা- ১৭০)
মানুষ বাপ-দাদার ধর্মকে আঁকড়ে ধরে পথভ্রষ্ট হয় :
وَكَذٰلِكَ مَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ فِيْ قَرْيَةٍ مِّنْ نَّذِيْرٍ اِلَّا قَالَ مُتْرَفُوْهَاۤ اِنَّا وَجَدْنَا اٰبَآءَنَا عَلٰۤى اُمَّةٍ وَّاِنَّا عَلٰۤى اٰثَارِهِمْ مُّقْتَدُوْنَ
অনুরূপভাবে তোমার পূর্বে কোন জনপদে যখনই কোন সতর্ককারী প্রেরণ করেছি তখনই তাদের সমৃদ্ধশালী ব্যক্তিরা বলত, আমরা তো আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে পেয়েছি এক মতাদর্শের উপর এবং আমরা তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করছি। (সূরা যুখরুফ- ২৩)
তারা হেদায়াতের সঠিক পথকেও অস্বীকার করে :
قَالَ اَوَلَوْ جِئْتُكُمْ بِاَهْدٰى مِمَّا وَجَدْتُّمْ عَلَيْهِ اٰبَآءَكُمْ قَالُوْاۤ اِنَّا بِمَاۤ اُرْسِلْتُمْ بِهٖ كَافِرُوْنَ
তিনি (নবী) বলতেন, তোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষদেরকে যে পথে পেয়েছ, আমি যদি তোমাদের জন্য তার চেয়ে উত্তম পথনির্দেশ আনয়ন করি তবুও কি (তোমরা তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে)? তখন তারা বলত, তোমরা যা নিয়ে প্রেরিত হয়েছ আমরা তা প্রত্যাখ্যান করি। (সূরা যুখরুফ- ২৪)
وَاِذَا قِيْلَ لَهُمْ تَعَالَوْا اِلٰى مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ وَاِلَى الرَّسُوْلِ قَالُوْا حَسْبُنَا مَا وَجَدْنَا عَلَيْهِ اٰبَآءَنَاۤ اَوَلَوْ كَانَ اٰبَآؤُهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ شَيْئًا وَّلَا يَهْتَدُوْنَ
যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তার দিকে ও রাসূলের দিকে আসো। তখন তারা বলে, আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে যাতে পেয়েছি তাই আমাদের জন্য যথেষ্ট। যদিও তাদের পূর্বপুরুষরা কিছুই জানত না এবং সৎপথপ্রাপ্তও ছিল না, তবুও কি (তারা তাদের অনুসরণ করবে?) (সূরা মায়েদা- ১০৪)
পিতৃপুরুষরা সৎপথে থাকলে তাদের অনুসরণ করা যাবে :
اَمْ كُنْتُمْ شُهَدَآءَ اِذْ حَضَرَ يَعْقُوْبَ الْمَوْتُ اِذْ قَالَ لِبَنِيْهِ مَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ ۢبَعْدِيْؕ قَالُوْا نَعْبُدُ اِلٰهَكَ وَاِلٰهَ اٰبَآئِكَ اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ وَاِسْحَاقَ اِلٰهًا وَّاحِدًاۚ وَنَحْنُ لَهٗ مُسْلِمُوْنَ
তোমরা কি তখন উপস্থিত ছিলে, যখন ইয়াকূবের মৃত্যু উপস্থিত হলো তখন তিনি নিজ পুত্রদেরকে বলেছিলেন, আমার পরে তোমরা কোন জিনিসের ইবাদাত করবে? তারা বলেছিল, আমরা আপনার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাকের ইলাহের ইবাদাত করব, তিনি একক উপাস্য এবং আমরা তাঁরই অনুগত থাকব। (সূরা বাক্বারা- ১৩৩)
وَاتَّبَعْتُ مِلَّةَ اٰبَآئِيْۤ اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَؕ مَا كَانَ لَنَاۤ اَنْ نُّشْرِكَ بِاللهِ مِنْ شَيْءٍؕ ذٰلِكَ مِنْ فَضْلِ اللهِ عَلَيْنَا وَعَلَى النَّاسِ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَشْكُرُوْنَ
আমি তো আমার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম, ইসহাক এবং ইয়াকূবের মতবাদের অনুসরণ করি। আল্লাহর সাথে কোন বস্তুকে শরীক করা আমাদের কাজ নয়। এটা (তাওহীদের অনুসারী হওয়া) আমাদের ও সমস্ত মানুষের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ, কিন্তু অধিকাংশ মানুষই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। (সূরা ইউসুফ- ৩৮)
সকল প্রকার আত্মীয়ের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে :
وَاعْبُدُوا اللهَ وَلَا تُشْرِكُوْا بِهٖ شَيْئًا وَّبِالْوَالِدَيْنِ اِحْسَانًا وَّبِذِى الْقُرْبٰى وَالْيَتَامٰى وَالْمَسَاكِيْنِ وَالْجَارِ ذِى الْقُرْبٰى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنْۢبِ وَابْنِ السَّبِيْلِ وَمَا مَلَكَتْ اَيْمَانُكُمْؕ اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ مَنْ كَانَ مُخْتَالًا فَخُوْرًا
তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করবে, কোনকিছুকে তাঁর সাথে শরীক করবে না এবং পিতামাতা, আত্মীয়স্বজন, ইয়াতীম, অভাবগ্রস্ত, নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথি, মুসাফির ও তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করবে। নিশ্চয় আল্লাহ দাম্ভিক ও অহংকারীকে পছন্দ করেন না। (সূরা নিসা- ৩৬)
আত্মীয়দের সাথে সদ্ব্যবহার না করার শপথ করা ঠিক নয় :
وَلَا يَأْتَلِ اُولُو الْفَضْلِ مِنْكُمْ وَالسَّعَةِ اَنْ يُّؤْتُوْاۤ اُولِى الْقُرْبٰى وَالْمَسَاكِيْنَ وَالْمُهَاجِرِيْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَلْيَعْفُوْا وَلْيَصْفَحُوْاۤ اَلَا تُحِبُّوْنَ اَنْ يَّغْفِرَ اللهُ لَكُمْ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
তোমাদের মধ্যে যারা ঐশ্বর্য্য ও প্রাচুর্যের অধিকারী তারা যেন এ মর্মে শপথ না করে যে, তারা আত্মীয়স্বজন ও অভাবগ্রস্তদেরকে এবং আল্লাহর রাস্তায় হিজরতকারীদেরকে কিছুই দেবে না। তারা যেন তাদেরকে ক্ষমা করে এবং তাদের দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা করে। তোমরা কি চাও না যে, আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করুন? আর আল্লাহ তো ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা নূর- ২২)
শানে নুযূল : ইফ্কের ঘটনায় আয়েশা (রাঃ) নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার পর আবু বকর (রাঃ) ও আরো কতিপয় সাহাবী ভীষণভাবে রাগান্বিত হয়ে শপথ করে বললেন যে, যারা এ অপবাদ রটনায় যোগ দিয়েছে, তাদেরকে আর কোন আর্থিক সাহায্য করা হবে না। এদের মধ্যে কেউ কেউ অভাবগ্রস্তও ছিল। তখন আল্লাহ তা‘আলা উক্ত আয়াতে তাদের দোষ-ত্রুটি ক্ষমা করে দিয়ে আর্থিক সাহায্য করার নির্দেশ প্রদান করেন।
আত্মীয়স্বজনদের জন্য মাল খরচ করতে হবে :
وَاٰتِ ذَا الْقُرْبٰى حَقَّهٗ وَالْمِسْكِيْنَ وَابْنَ السَّبِيْلِ
আত্মীয়স্বজনকে তার হক আদায় করে দেবে এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও (তাদের হক আদায় করে দেবে)। (সূরা বনী ইসরাঈল- ২৬)
ব্যাখ্যা : আত্মীয়স্বজন, মিসকীন ও মুসাফিরকে দান-খয়রাত করার কথা বলা হয়নি; বরং বলা হয়েছে, এটা তাদের অধিকার মনে করেই দেয়া উচিত। এ অধিকার দিতে গিয়ে যেন তোমার মনে এ ধারণা না জন্মে যে, তার প্রতি তুমি অনুগ্রহ করছ; বরং এ কথা ভালোভাবে মনে রাখা উচিত যে, সম্পদের আসল মালিক যদি তোমাকে বেশি এবং অন্য বান্দাদেরকে কম দিয়ে থাকেন, তাহলে এ বর্ধিত সম্পদ তোমাকে পরীক্ষা করার জন্য দেয়া হয়েছে। তুমি অন্যদের অধিকার আদায় করছ কি না এটা তোমার প্রতিপালক দেখতে চান।
فَاٰتِ ذَا الْقُرْبٰى حَقَّهٗ وَالْمِسْكِيْنَ وَابْنَ السَّبِيْلِؕ ذٰلِكَ خَيْرٌ لِّلَّذِيْنَ يُرِيْدُوْنَ وَجْهَ اللهِ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
অতএব আত্মীয়স্বজনকে তাদের হক দিয়ে দাও এবং মিসকীন ও মুসাফিরদেরকেও (তাদের হক দিয়ে দাও)। এটা তাদের জন্য উত্তম, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে; আর তারাই সফলকাম। (সূরা রূম- ৩৮)
আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্ট করা যাবে না :
وَاتَّقُوا اللهَ الَّذِيْ تَسَآءَلُوْنَ بِهٖ وَالْاَرْحَامَؕ اِنَّ اللهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيْبًا
তোমরা ঐ আল্লাহকে ভয় করো, যার অসীলা নিয়ে তোমরা একে অপরের কাছে চাও; আর তোমরা আত্মীয়তার সম্পর্ককেও ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর রক্ষণাবেক্ষণকারী। (সূরা নিসা- ১)
সম্পর্ক রক্ষা করা জান্নাতী লোকদের বৈশিষ্ট্য :
وَالَّذِيْنَ يَصِلُوْنَ مَاۤ اَمَرَ اللهُ بِهٖۤ اَنْ يُّوْصَلَ وَيَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ وَيَخَافُوْنَ سُوْٓءَ الْحِسَابِ
আল্লাহ যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখতে আদেশ করেছেন যারা তা অক্ষুণ্ণ রাখে, তাদের প্রতিপালককে ভয় করে এবং কঠোর হিসাবকেও ভয় করে (তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত)। (সূরা রা‘দ- ২১)
وَاعْبُدُوا اللهَ وَلَا تُشْرِكُوْا بِهٖ شَيْئًا وَّبِالْوَالِدَيْنِ اِحْسَانًا وَّبِذِى الْقُرْبٰى وَالْيَتَامٰى وَالْمَسَاكِيْنِ وَالْجَارِ ذِى الْقُرْبٰى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنْۢبِ وَابْنِ السَّبِيْلِ وَمَا مَلَكَتْ اَيْمَانُكُمْؕ اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ مَنْ كَانَ مُخْتَالًا فَخُوْرًا
তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করবে, কোনকিছুকে তাঁর সাথে শরীক করবে না এবং পিতামাতা, আত্মীয়স্বজন, ইয়াতীম, অভাবগ্রস্ত, নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথি, মুসাফির ও তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করবে। নিশ্চয় আল্লাহ দাম্ভিক ও অহংকারীকে পছন্দ করেন না। (সূরা নিসা- ৩৬)
আত্মীয়দের সাথে সদ্ব্যবহার না করার শপথ করা ঠিক নয় :
وَلَا يَأْتَلِ اُولُو الْفَضْلِ مِنْكُمْ وَالسَّعَةِ اَنْ يُّؤْتُوْاۤ اُولِى الْقُرْبٰى وَالْمَسَاكِيْنَ وَالْمُهَاجِرِيْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَلْيَعْفُوْا وَلْيَصْفَحُوْاۤ اَلَا تُحِبُّوْنَ اَنْ يَّغْفِرَ اللهُ لَكُمْ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
তোমাদের মধ্যে যারা ঐশ্বর্য্য ও প্রাচুর্যের অধিকারী তারা যেন এ মর্মে শপথ না করে যে, তারা আত্মীয়স্বজন ও অভাবগ্রস্তদেরকে এবং আল্লাহর রাস্তায় হিজরতকারীদেরকে কিছুই দেবে না। তারা যেন তাদেরকে ক্ষমা করে এবং তাদের দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা করে। তোমরা কি চাও না যে, আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করুন? আর আল্লাহ তো ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা নূর- ২২)
শানে নুযূল : ইফ্কের ঘটনায় আয়েশা (রাঃ) নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার পর আবু বকর (রাঃ) ও আরো কতিপয় সাহাবী ভীষণভাবে রাগান্বিত হয়ে শপথ করে বললেন যে, যারা এ অপবাদ রটনায় যোগ দিয়েছে, তাদেরকে আর কোন আর্থিক সাহায্য করা হবে না। এদের মধ্যে কেউ কেউ অভাবগ্রস্তও ছিল। তখন আল্লাহ তা‘আলা উক্ত আয়াতে তাদের দোষ-ত্রুটি ক্ষমা করে দিয়ে আর্থিক সাহায্য করার নির্দেশ প্রদান করেন।
আত্মীয়স্বজনদের জন্য মাল খরচ করতে হবে :
وَاٰتِ ذَا الْقُرْبٰى حَقَّهٗ وَالْمِسْكِيْنَ وَابْنَ السَّبِيْلِ
আত্মীয়স্বজনকে তার হক আদায় করে দেবে এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও (তাদের হক আদায় করে দেবে)। (সূরা বনী ইসরাঈল- ২৬)
ব্যাখ্যা : আত্মীয়স্বজন, মিসকীন ও মুসাফিরকে দান-খয়রাত করার কথা বলা হয়নি; বরং বলা হয়েছে, এটা তাদের অধিকার মনে করেই দেয়া উচিত। এ অধিকার দিতে গিয়ে যেন তোমার মনে এ ধারণা না জন্মে যে, তার প্রতি তুমি অনুগ্রহ করছ; বরং এ কথা ভালোভাবে মনে রাখা উচিত যে, সম্পদের আসল মালিক যদি তোমাকে বেশি এবং অন্য বান্দাদেরকে কম দিয়ে থাকেন, তাহলে এ বর্ধিত সম্পদ তোমাকে পরীক্ষা করার জন্য দেয়া হয়েছে। তুমি অন্যদের অধিকার আদায় করছ কি না এটা তোমার প্রতিপালক দেখতে চান।
فَاٰتِ ذَا الْقُرْبٰى حَقَّهٗ وَالْمِسْكِيْنَ وَابْنَ السَّبِيْلِؕ ذٰلِكَ خَيْرٌ لِّلَّذِيْنَ يُرِيْدُوْنَ وَجْهَ اللهِ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
অতএব আত্মীয়স্বজনকে তাদের হক দিয়ে দাও এবং মিসকীন ও মুসাফিরদেরকেও (তাদের হক দিয়ে দাও)। এটা তাদের জন্য উত্তম, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে; আর তারাই সফলকাম। (সূরা রূম- ৩৮)
আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্ট করা যাবে না :
وَاتَّقُوا اللهَ الَّذِيْ تَسَآءَلُوْنَ بِهٖ وَالْاَرْحَامَؕ اِنَّ اللهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيْبًا
তোমরা ঐ আল্লাহকে ভয় করো, যার অসীলা নিয়ে তোমরা একে অপরের কাছে চাও; আর তোমরা আত্মীয়তার সম্পর্ককেও ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর রক্ষণাবেক্ষণকারী। (সূরা নিসা- ১)
সম্পর্ক রক্ষা করা জান্নাতী লোকদের বৈশিষ্ট্য :
وَالَّذِيْنَ يَصِلُوْنَ مَاۤ اَمَرَ اللهُ بِهٖۤ اَنْ يُّوْصَلَ وَيَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ وَيَخَافُوْنَ سُوْٓءَ الْحِسَابِ
আল্লাহ যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখতে আদেশ করেছেন যারা তা অক্ষুণ্ণ রাখে, তাদের প্রতিপালককে ভয় করে এবং কঠোর হিসাবকেও ভয় করে (তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত)। (সূরা রা‘দ- ২১)
আপনজনের বিপক্ষে হলেও ন্যায়বিচার করতে হবে :
وَاِذَا قُلْتُمْ فَاعْدِلُوْا وَلَوْ كَانَ ذَا قُرْبٰى
যখন তোমরা কথা বলবে তখন ইনসাফের সাথে কথা বলবে, যদিও তা আত্মীয়স্বজনদের বিপক্ষে হয়।
(সূরা আন‘আম- ১৫২)
অমুসলিম আত্মীয়ের জন্য মাগফিরাতের দু‘আ করা যাবে না :
مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَنْ يَّسْتَغْفِرُوْا لِلْمُشْرِكِيْنَ وَلَوْ كَانُوْاۤ اُولِيْ قُرْبٰى مِنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ اَنَّهُمْ اَصْحَابُ الْجَحِيْمِ
আত্মীয়স্বজন হলেও মুশরিকদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করা নবী এবং মুমিনদের জন্য সংগত নয়; যখন এটা সুস্পষ্ট হয়ে যাবে যে, নিশ্চয় তারা জাহান্নামী। (সূরা তাওবা- ১১৩)
আত্মীয়রা দ্বীনদার না হলে আন্তরিক সম্পর্ক চলবে না :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوْاۤ اٰبَآءَكُمْ وَاِخْوَانَكُمْ اَوْلِيَآءَ اِنِ اسْتَحَبُّوا الْكُفْرَ عَلَى الْاِيْمَانِؕ وَمَنْ يَّتَوَلَّهُمْ مِّنْكُمْ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমাদের পিতা ও ভ্রাতাগণ যদি ঈমানের মুকাবিলায় কুফরীকে ভালোবাসে, তবে তাদেরকে অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তোমাদের মধ্যে যারা তাদেরকে অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে, তারাই যালিম। (সূরা তাওবা- ২৩)
আত্মীয়দের থেকে আল্লাহর দ্বীনকে বেশি ভালোবাসতে হবে :
قُلْ اِنْ كَانَ اٰبَآؤُكُمْ وَاَبْنَآؤُكُمْ وَاِخْوَانُكُمْ وَاَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيْرَتُكُمْ وَاَمْوَالُ نِ اقْتَرَفْتُمُوْهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَاۤ اَحَبَّ اِلَيْكُمْ مِّنَ اللهِ وَرَسُوْلِهٖ وَجِهَادٍ فِيْ سَبِيْلِهٖ فَتَرَبَّصُوْا حَتّٰى يَأْتِيَ اللهُ بِاَمْرِهٖؕ وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الْفَاسِقِيْنَ
বলো, তোমাদের নিকট যদি আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করার চেয়ে তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের বংশধর, তোমাদের অর্জিত সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য যার মন্দা পড়ার আশঙ্কা কর এবং তোমাদের বাসস্থান যাকে তোমরা ভালোবাস- এসব অধিক প্রিয় হয়, তবে আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করো। নিশ্চয় আল্লাহ ফাসিক সম্প্রদায়কে সৎপথ প্রদর্শন করেন না। (সূরা তাওবা- ২৪)
আত্মীয়তার সম্পর্ক কিয়ামতের দিন কোন কাজে লাগবে না :
لَنْ تَنْفَعَكُمْ اَرْحَامُكُمْ وَلَاۤ اَوْلَادُكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِۚ يَفْصِلُ بَيْنَكُمْؕ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
কিয়ামতের দিন তোমাদের আত্মীয়স্বজন ও সন্তান-সন্ততি কোন কাজে আসবে না। আল্লাহ তোমাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেবেন; তোমরা যা কর তিনি সে সম্পর্কে মহাদ্রষ্টা। (সূরা মুমতাহিনা- ৩)
وَاِذَا قُلْتُمْ فَاعْدِلُوْا وَلَوْ كَانَ ذَا قُرْبٰى
যখন তোমরা কথা বলবে তখন ইনসাফের সাথে কথা বলবে, যদিও তা আত্মীয়স্বজনদের বিপক্ষে হয়।
(সূরা আন‘আম- ১৫২)
অমুসলিম আত্মীয়ের জন্য মাগফিরাতের দু‘আ করা যাবে না :
مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَنْ يَّسْتَغْفِرُوْا لِلْمُشْرِكِيْنَ وَلَوْ كَانُوْاۤ اُولِيْ قُرْبٰى مِنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ اَنَّهُمْ اَصْحَابُ الْجَحِيْمِ
আত্মীয়স্বজন হলেও মুশরিকদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করা নবী এবং মুমিনদের জন্য সংগত নয়; যখন এটা সুস্পষ্ট হয়ে যাবে যে, নিশ্চয় তারা জাহান্নামী। (সূরা তাওবা- ১১৩)
আত্মীয়রা দ্বীনদার না হলে আন্তরিক সম্পর্ক চলবে না :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوْاۤ اٰبَآءَكُمْ وَاِخْوَانَكُمْ اَوْلِيَآءَ اِنِ اسْتَحَبُّوا الْكُفْرَ عَلَى الْاِيْمَانِؕ وَمَنْ يَّتَوَلَّهُمْ مِّنْكُمْ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমাদের পিতা ও ভ্রাতাগণ যদি ঈমানের মুকাবিলায় কুফরীকে ভালোবাসে, তবে তাদেরকে অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তোমাদের মধ্যে যারা তাদেরকে অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে, তারাই যালিম। (সূরা তাওবা- ২৩)
আত্মীয়দের থেকে আল্লাহর দ্বীনকে বেশি ভালোবাসতে হবে :
قُلْ اِنْ كَانَ اٰبَآؤُكُمْ وَاَبْنَآؤُكُمْ وَاِخْوَانُكُمْ وَاَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيْرَتُكُمْ وَاَمْوَالُ نِ اقْتَرَفْتُمُوْهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَاۤ اَحَبَّ اِلَيْكُمْ مِّنَ اللهِ وَرَسُوْلِهٖ وَجِهَادٍ فِيْ سَبِيْلِهٖ فَتَرَبَّصُوْا حَتّٰى يَأْتِيَ اللهُ بِاَمْرِهٖؕ وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الْفَاسِقِيْنَ
বলো, তোমাদের নিকট যদি আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করার চেয়ে তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের বংশধর, তোমাদের অর্জিত সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য যার মন্দা পড়ার আশঙ্কা কর এবং তোমাদের বাসস্থান যাকে তোমরা ভালোবাস- এসব অধিক প্রিয় হয়, তবে আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করো। নিশ্চয় আল্লাহ ফাসিক সম্প্রদায়কে সৎপথ প্রদর্শন করেন না। (সূরা তাওবা- ২৪)
আত্মীয়তার সম্পর্ক কিয়ামতের দিন কোন কাজে লাগবে না :
لَنْ تَنْفَعَكُمْ اَرْحَامُكُمْ وَلَاۤ اَوْلَادُكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِۚ يَفْصِلُ بَيْنَكُمْؕ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
কিয়ামতের দিন তোমাদের আত্মীয়স্বজন ও সন্তান-সন্ততি কোন কাজে আসবে না। আল্লাহ তোমাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেবেন; তোমরা যা কর তিনি সে সম্পর্কে মহাদ্রষ্টা। (সূরা মুমতাহিনা- ৩)
রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়তার ভিত্তিতেই মিরাস বণ্টিত হবে :
وَاُولُو الْاَرْحَامِ بَعْضُهُمْ اَوْلٰى بِبَعْضٍ فِيْ كِتَابِ اللهِؕ اِنَّ اللهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ
আল্লাহর বিধানে রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়রাও একে অপরের চেয়ে অধিক হকদার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক অবহিত। (সূরা আনফাল- ৭৫)
শানে নুযূল : উত্তরাধিকার বণ্টনের ব্যাপারে ইসলামী সম্পর্কের পরিবর্তে আত্মীয়তার সম্পর্কই প্রাধান্য পাবে। হিজরতের পর নবী ﷺ মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন কায়েম করেছিলেন তার ফলে এ দ্বীনী ভাইয়েরা পরস্পরের উত্তরাধিকারও হবে বলে কেউ কেউ ধারণা করতে শুরু করেছিলেন। তাদের এ ধারণা যে ঠিক নয়, তা বুঝানোর জন্য আল্লাহ এ কথা বলেছেন।
মিরাস আল্লাহ নিজেই বণ্টন করে দিয়েছেন :
فَرِيْضَةً مِّنَ اللهِؕ اِنَّ اللهَ كَانَ عَلِيْمًا حَكِيْمًا
এ বণ্টন আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত; নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা- ১১)
মিরাসে নারী-পুরুষ উভয়েরই অংশ রয়েছে :
لِلرِّجَالِ نَصِيْبٌ مِّمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ وَالْاَقْرَبُوْنَ وَلِلنِّسَآءِ نَصِيْبٌ مِّمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ وَالْاَقْرَبُوْنَ
পুরুষদের জন্য পিতামাতা ও আত্মীয়স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পদে অংশ রয়েছে এবং নারীদের জন্যও পিতামাতা ও আত্মীয়স্বজনদের পরিত্যক্ত সম্পদে অংশ রয়েছে। (সূরা নিসা- ৭)
কম হোক বা বেশি হোক সম্পদ বণ্টন করতেই হবে :
مِمَّا قَلَّ مِنْهُ اَوْ كَثُرَ نَصِيْبًا مَّفْرُوْضًا
কম হোক বা বেশি হোক এসব অংশ নির্ধারিত। (সূরা নিসা- ৭)
বণ্টন হবে ঋণ পরিশোধ ও অসিয়ত পূরণের পর :
مِنْ ۢبَعْدِ وَصِيَّةٍ يُّوْصِيْ بِهَاۤ اَوْ دَيْنٍ
এসব (বণ্টিত হবে) মৃত ব্যক্তির অসিয়ত অথবা ঋণ পরিশোধের পর। (সূরা নিসা- ১১)
ব্যাখ্যা : উপরোক্ত আয়াতসমূহ হতে মিরাস বণ্টনের ব্যাপারে যেসব নীতিগত বিধান পাওয়া যায় তা হচ্ছে,
(এক) মিরাস কেবল পুরুষদের নয়, মেয়েদেরও অধিকার।
(দুই) যত কমই হোক না কেন মিরাস অবশ্যই বণ্টিত হবে। এমন কি মৃত ব্যক্তি যদি এক গজ কাপড়ও রেখে যায় এবং তার দশজন ওয়ারিস থাকে, তাহলেও তা ওয়ারিসদের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে দিতে হবে। তবে একজন ওয়ারিস অন্যজনের থেকে যদি তার অংশ কিনে নেয়, তাহলে তা ভিন্ন কথা। (তিন) মিরাসের বিধান স্থাবর-অস্থাবর, কৃষি-শিল্প বা অন্য যে কোন ধরনের সম্পত্তি হোক না কেন সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
(চার) মিরাসের অধিকার তখনই সৃষ্টি হয়, যখন মৃত ব্যক্তি কোন সম্পদ রেখে মারা যায়।
(পাঁচ) নিকটতম আত্মীয়ের বর্তমানে দূরতম আত্মীয় মিরাস লাভ করবে না।
(ছয়) মিরাস বণ্টন হবে ঋণ পরিশোধ ও অসিয়ত পূরণের পর।
وَاُولُو الْاَرْحَامِ بَعْضُهُمْ اَوْلٰى بِبَعْضٍ فِيْ كِتَابِ اللهِؕ اِنَّ اللهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ
আল্লাহর বিধানে রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়রাও একে অপরের চেয়ে অধিক হকদার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক অবহিত। (সূরা আনফাল- ৭৫)
শানে নুযূল : উত্তরাধিকার বণ্টনের ব্যাপারে ইসলামী সম্পর্কের পরিবর্তে আত্মীয়তার সম্পর্কই প্রাধান্য পাবে। হিজরতের পর নবী ﷺ মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন কায়েম করেছিলেন তার ফলে এ দ্বীনী ভাইয়েরা পরস্পরের উত্তরাধিকারও হবে বলে কেউ কেউ ধারণা করতে শুরু করেছিলেন। তাদের এ ধারণা যে ঠিক নয়, তা বুঝানোর জন্য আল্লাহ এ কথা বলেছেন।
মিরাস আল্লাহ নিজেই বণ্টন করে দিয়েছেন :
فَرِيْضَةً مِّنَ اللهِؕ اِنَّ اللهَ كَانَ عَلِيْمًا حَكِيْمًا
এ বণ্টন আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত; নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা- ১১)
মিরাসে নারী-পুরুষ উভয়েরই অংশ রয়েছে :
لِلرِّجَالِ نَصِيْبٌ مِّمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ وَالْاَقْرَبُوْنَ وَلِلنِّسَآءِ نَصِيْبٌ مِّمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ وَالْاَقْرَبُوْنَ
পুরুষদের জন্য পিতামাতা ও আত্মীয়স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পদে অংশ রয়েছে এবং নারীদের জন্যও পিতামাতা ও আত্মীয়স্বজনদের পরিত্যক্ত সম্পদে অংশ রয়েছে। (সূরা নিসা- ৭)
কম হোক বা বেশি হোক সম্পদ বণ্টন করতেই হবে :
مِمَّا قَلَّ مِنْهُ اَوْ كَثُرَ نَصِيْبًا مَّفْرُوْضًا
কম হোক বা বেশি হোক এসব অংশ নির্ধারিত। (সূরা নিসা- ৭)
বণ্টন হবে ঋণ পরিশোধ ও অসিয়ত পূরণের পর :
مِنْ ۢبَعْدِ وَصِيَّةٍ يُّوْصِيْ بِهَاۤ اَوْ دَيْنٍ
এসব (বণ্টিত হবে) মৃত ব্যক্তির অসিয়ত অথবা ঋণ পরিশোধের পর। (সূরা নিসা- ১১)
ব্যাখ্যা : উপরোক্ত আয়াতসমূহ হতে মিরাস বণ্টনের ব্যাপারে যেসব নীতিগত বিধান পাওয়া যায় তা হচ্ছে,
(এক) মিরাস কেবল পুরুষদের নয়, মেয়েদেরও অধিকার।
(দুই) যত কমই হোক না কেন মিরাস অবশ্যই বণ্টিত হবে। এমন কি মৃত ব্যক্তি যদি এক গজ কাপড়ও রেখে যায় এবং তার দশজন ওয়ারিস থাকে, তাহলেও তা ওয়ারিসদের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে দিতে হবে। তবে একজন ওয়ারিস অন্যজনের থেকে যদি তার অংশ কিনে নেয়, তাহলে তা ভিন্ন কথা। (তিন) মিরাসের বিধান স্থাবর-অস্থাবর, কৃষি-শিল্প বা অন্য যে কোন ধরনের সম্পত্তি হোক না কেন সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
(চার) মিরাসের অধিকার তখনই সৃষ্টি হয়, যখন মৃত ব্যক্তি কোন সম্পদ রেখে মারা যায়।
(পাঁচ) নিকটতম আত্মীয়ের বর্তমানে দূরতম আত্মীয় মিরাস লাভ করবে না।
(ছয়) মিরাস বণ্টন হবে ঋণ পরিশোধ ও অসিয়ত পূরণের পর।
ছেলে-মেয়ের অংশ :
يُوْصِيْكُمُ اللهُ فِۤيْ اَوْلَادِكُمْ لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْاُنْثَيَيْنِۚ فَاِنْ كُنَّ نِسَآءً فَوْقَ اثْنَتَيْنِ فَلَهُنَّ ثُلُثَا مَا تَرَكَۚ وَاِنْ كَانَتْ وَاحِدَةً فَلَهَا النِّصْفُ
আল্লাহ তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে এ বিধান দিয়েছেন যে, এক পুত্রের অংশ দুই কন্যার অংশের সমান। তবে যদি কন্যা দু’জনের বেশি হয় তাহলে তারা পরিত্যক্ত সম্পদের তিন ভাগের দু’ভাগ পাবে। আর যদি কন্যা একজন হয়, তবে সে অর্ধেক পাবে। (সূরা নিসা- ১১)
শানে নুযূল : ওহুদ যুদ্ধের পর সা‘দ ইবনে রুবীর স্ত্রী তাঁর দু’টি শিশু সন্তানকে নিয়ে নবী ﷺ এর খেদমতে উপস্থিত হন। তিনি বলেন, ‘‘হে আল্লাহর রাসূল! এরা সা‘দের মেয়ে। এদের পিতা আপনার সাথে ওহুদের যুদ্ধে গিয়ে শহীদ হয়ে গেছেন। এদের চাচা তার সমস্ত সম্পত্তি নিজের আয়ত্তাধীন করে নিয়েছে। এদের জন্য একটি দানাও রাখেনি। এখন বলুন, কে এ (সহায় সম্পত্তিহীনা) মেয়েদেরকে বিয়ে করবে? তখন এ আয়াতটি নাযিল হয়।
ব্যাখ্যা : মিরাসের ব্যাপারে একটি প্রধান মৌলিক বিধান হচ্ছে, পুরুষদের অংশ হবে মেয়েদের দ্বিগুণ। যেহেতু পারিবারিক জীবন ক্ষেত্রে শরীয়াত পুরুষদের উপর অর্থনৈতিক দায়িত্বের বোঝা বেশি চাপিয়ে দিয়েছে এবং মেয়েদেরকে অনেকগুলো অর্থনৈতিক দায়িত্ব থেকে মুক্তি দিয়েছে, তাই মিরাসের ব্যাপারে মেয়েদের অংশ পুরুষদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম রাখা হয়েছে। আর এটিই ছিল ইনসাফের দাবী। কারো যদি পুত্রসন্তান না থাকে এবং সবগুলোই কন্যাসন্তান থাকে তাহলে কন্যাদের সংখ্যা দুই বা দু’য়ের বেশিই হোক না কেন, তারা সমগ্র পরিত্যক্ত সম্পত্তির তিন ভাগের দু’ভাগ পাবে। অবশিষ্ট এক ভাগ অন্যান্য ওয়ারিসদের মধ্যে বণ্টন করা হবে। কিন্তু মৃত ব্যক্তির যদি শুধুমাত্র একটি পুত্র থাকে, তাহলে সে-ই সমস্ত সম্পত্তির ওয়ারিস হবে। আর যদি অন্যান্য ওয়ারিসরাও থাকে, তাহলে তাদের অংশ দেয়ার পর বাকি সমস্ত সম্পত্তি সে-ই পাবে।
মাতা-পিতার অংশ :
وَلِاَبَوَيْهِ لِكُلِّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا السُّدُسُ مِمَّا تَرَكَ اِنْ كَانَ لَهٗ وَلَدٌۚ فَاِنْ لَّمْ يَكُنْ لَّهٗ وَلَدٌ وَّوَرِثَهٗۤ اَبَوَاهُ فَلِاُمِّهِ الثُّلُثُۚ فَاِنْ كَانَ لَهٗۤ اِخْوَةٌ فَلِاُمِّهِ السُّدُسُ
যদি মৃত ব্যক্তির সন্তান থাকে, তবে তার পিতামাতা প্রত্যেকে তার রেখে যাওয়া সম্পদের ছয় ভাগের একভাগ পাবে। আর যদি সে (মৃত ব্যক্তি) নিঃসন্তান হয় এবং পিতামাতাই ওয়ারিস হয়, তাহলে মা পাবে তিনভাগের একভাগ, কিন্তু যদি তার একাধিক ভাই-বোন থাকে, তবে মা পাবে ছয় ভাগের একভাগ। (সূরা নিসা- ১১)
ব্যাখ্যা : মৃত ব্যক্তির সন্তান থাকলে তার পিতামাতা প্রত্যেকে ছয় ভাগের এক ভাগ পাবে। পিতামাতা ছাড়া যদি আর কেউ ওয়ারিস না থাকে তাহলে বাকি তিন ভাগের দু’ভাগ পিতা পাবে। অন্যথায় তিন ভাগের দু’ভাগে পিতা ও অন্যান্য ওয়ারিসরা শরীক হবে।
স্বামী-স্ত্রীর অংশ :
وَلَكُمْ نِصْفُ مَا تَرَكَ اَزْوَاجُكُمْ اِنْ لَّمْ يَكُنْ لَّهُنَّ وَلَدٌۚ فَاِنْ كَانَ لَهُنَّ وَلَدٌ فَلَكُمُ الرُّبُعُ مِمَّا تَرَكْنَ مِنْ ۢبَعْدِ وَصِيَّةٍ يُّوْصِيْنَ بِهَاۤ اَوْ دَيْنٍؕ وَلَهُنَّ الرُّبُعُ مِمَّا تَرَكْتُمْ اِنْ لَّمْ يَكُنْ لَّكُمْ وَلَدٌۚ فَاِنْ كَانَ لَكُمْ وَلَدٌ فَلَهُنَّ الثُّمُنُ مِمَّا تَرَكْتُمْ مِّنْ ۢبَعْدِ وَصِيَّةٍ تُوْصُوْنَ بِهَاۤ اَوْ دَيْنٍ
তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সম্পদের অর্ধেক পাবে, যদি তাদের সন্তান না থাকে। আর যদি সন্তান থাকে, তাহলে তোমরা তাদের রেখে যাওয়া সম্পদের চার ভাগের একভাগ পাবে, অসিয়ত পালন ও ঋণ পরিশোধের পর। আর তোমাদের স্ত্রীরাও সম্পদের চার ভাগের একভাগ পাবে, যদি তোমাদের কোন সন্তান না থাকে। আর যদি সন্তান থাকে, তাহলে তারা তোমাদের রেখে যাওয়া সম্পদের আট ভাগের একভাগ পাবে, অসিয়ত পালন ও ঋণ পরিশোধের পর। (সূরা নিসা- ১২)
ব্যাখ্যা : স্ত্রী একজন হোক বা একাধিক হোক তাদের যদি সন্তান থাকে তাহলে তারা আট ভাগের একভাগ এবং সন্তান না থাকলে চার ভাগের এক ভাগ পাবে। আর এ চার ভাগের এক ভাগ বা আট ভাগের এক ভাগ সকল স্ত্রীর মধ্যে সমানভাবে বণ্টিত হবে।
বৈমাত্রেয় ভাই-বোনদের অংশ :
وَاِنْ كَانَ رَجُلٌ يُّوْرَثُ كَلَالَةً اَوِ امْرَاَةٌ وَّلَهٗۤ اَخٌ اَوْ اُخْتٌ فَلِكُلِّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا السُّدُسُۚ فَاِنْ كَانُوْاۤ اَكْثَرَ مِنْ ذٰلِكَ فَهُمْ شُرَكَآءُ فِى الثُّلُثِ مِنْ ۢبَعْدِ وَصِيَّةٍ يُّوْصٰى بِهَاۤ اَوْ دَيْنٍ غَيْرَ مُضَآرٍّۚ وَصِيَّةً مِّنَ اللهِ وَاللهُ عَلِيْمٌ حَلِيْمٌ
আর যদি পিতামাতা ও সন্তানহীন কোন পুরুষ অথবা নারী এ অবস্থায় মারা যায় যে, তার একজন ভাই কিংবা বোন থাকে, তবে তারা প্রত্যেকে ছয় ভাগের একভাগ পাবে। কিন্তু তারা যদি একাধিক হয়, তবে তারা প্রত্যেকে তিন ভাগের একভাগ সমান হারে পাবে; (তারা এ অংশ পাবে) অসিয়ত পালন ও ঋণ পরিশোধের পর (অবশিষ্ট সম্পদ থেকে)। (তবে শর্ত হচ্ছে) অসিয়ত যেন কারো জন্য ক্ষতিকর না হয়- এ বিধান আল্লাহর পক্ষ থেকে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও সহনশীল। (সূরা নিসা- ১২)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর জ্ঞানের কথা উচ্চারণ করার পেছনে এখানে দু’টি কারণ রয়েছে।
(এক) যদি এ বিধানের বিরুদ্ধাচরণ করা হয়, তাহলে মানুষ আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাঁচতে পারবে না।
(দুই) আল্লাহ যে অংশ যেভাবে নির্ধারণ করেছেন, তা একেবারেই নির্ভুল। কারণ যে বিষয়ে মানুষের কল্যাণ ও সুবিধা রয়েছে, তা মানুষের চেয়ে আল্লাহই ভালো জানেন। এখানে আল্লাহর ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা এ দু’টি গুণের কথা বলার কারণ হচ্ছে, এ আইন প্রবর্তনের ব্যাপারে আল্লাহ কোন কঠোরতা আরোপ করেননি। বরং তিনি এমন নিয়মনীতি প্রবর্তন করেছেন, যা মেনে চলা মানুষের জন্য অত্যন্ত সহজ। যার ফলে মানুষ কোন কষ্ট, অভাব ও সংকীর্ণতার মুখোমুখি হবে না।
পিতামাতাহীন নিঃসন্তান ব্যক্তির মাসআলা :
يَسْتَفْتُوْنَكَؕ قُلِ اللهُ يُفْتِيْكُمْ فِى الْكَلَالَةِؕ اِنِ امْرُؤٌ هَلَكَ لَيْسَ لَهٗ وَلَدٌ وَّلَهٗۤ اُخْتٌ فَلَهَا نِصْفُ مَا تَرَكَۚ وَهُوَ يَرِثُهَاۤ اِنْ لَّمْ يَكُنْ لَّهَا وَلَدٌؕ فَاِنْ كَانَتَا اثْنَتَيْنِ فَلَهُمَا الثُّلُثَانِ مِمَّا تَرَكَؕ وَاِنْ كَانُوْاۤ اِخْوَةً رِّجَالًا وَّنِسَآءً فَلِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْاُنْثَيَيْنِؕ يُبَيِّنُ اللهُ لَكُمْ اَنْ تَضِلُّوْاؕ وَاللهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ
(হে নবী) লোকেরা তোমার নিকট ফতোয়া জানতে চায়। বলো, আল্লাহ তোমাদেরকে পিতামাতাহীন নিঃসন্তান ব্যক্তি সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন যে, যদি কোন পুরুষ মারা যায়, আর তার কোন সন্তান না থাকে এবং একজন বোন থাকে, তবে তার জন্য পরিত্যক্ত সম্পদের অর্ধেক (নির্ধারিত করা হয়েছে)। আবার যদি সে (বোন) সন্তানহীনা হয় (এবং সে মারা যায়, কিন্তু ভাই জীবিত থাকে), তবে তার ভাই তার (সম্পূর্ণ সম্পদের) উত্তরাধিকারী হবে। আর যদি দু’জন বোন থাকে, তবে তাদের জন্য পরিত্যক্ত সম্পদের দুই তৃতীয়াংশ (নির্ধারণ করা হয়েছে)। কিন্তু যদি ভাই-বোন উভয়ে (জীবিত) থাকে, তবে একজন পুরুষের অংশ দু’জন নারীর অংশের সমান। আল্লাহ (উত্তরাধিকারের এ বিধান) অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন, যাতে করে তোমরা কোন রকম বিভ্রান্তিতে না পড়। আর আল্লাহ তো সকল বিষয়ে সম্যক অবগত। (সূরা নিসা- ১৭৬)
ব্যাখ্যা : اَلْكَلَالَةُ (আল কালালাহ) বলা হয় ঐ ব্যক্তিকে, যার কোন সন্তান নেই এবং পিতামাতাও জীবিত নেই। তার পরিত্যক্ত সম্পদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা এজন্য আলোচনা করেছেন যে, যে ব্যক্তির সন্তানাদি অথবা পিতামাতা কেউ জীবিত না থাকে, সাধারণত তার মধ্যে নিজের ধনসম্পদ নষ্ট করার প্রবণতা দেখা দেয়। ফলে সে দূরবর্তী আত্মীয়দেরকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করে।
যারা মিরাস সম্পর্কিত আইন পরিবর্তন করে তারা জাহান্নামে যাবে :
وَمَنْ يَّعْصِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَيَتَعَدَّ حُدُوْدَهٗ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيْهَا وَلَهٗ عَذَابٌ مُّهِيْنٌ
যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করবে এবং তাঁর (নির্ধারিত) সীমা লঙ্ঘন করবে তিনি তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন, সেখানে সে চিরকাল অবস্থান করবে। আর তার জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি। (সূরা নিসা- ১৪)
ব্যাখ্যা : যারা আল্লাহর রচিত মিরাস সম্পর্কিত আইন পরিবর্তন করে অথবা আল্লাহ তাঁর কিতাবে অন্যান্য যেসব আইনগত সুস্পষ্ট সীমা নির্ধারণ করেছেন সেগুলো ভঙ্গ করে, তাদের জন্য এ আয়াতে চিরস্থায়ী আযাবের ভয় দেখানো হয়েছে। এ দিক দিয়ে এটি একটি অত্যন্ত ভীতি সৃষ্টিকারী আয়াত। কিন্তু বড়ই আফসোসের সাথে বলতে হয়, এমন মারাত্মক ভীতি প্রদর্শন করার পরও মানুষ নির্লজ্জভাবে আল্লাহর আইনে পরিবর্তন সাধন করেছে এবং তার সীমারেখা পরিবর্তন করার দুঃসাহস দেখিয়েছে। এ মিরাস আইনের ব্যাপারে যে নাফরমানি করা হয়েছে, তা আল্লাহর বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট বিদ্রোহের শামিল। কোথাও মেয়েদেরকে স্থায়ীভাবে মিরাস থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। কোথাও কেবল বড় ছেলেকে মিরাসের হকদার হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। কোথাও কুরআনে নির্ধারিত মিরাস বণ্টন করার পদ্ধতি পুরোপুরি পরিহার করে যৌথ পারিবারিক সম্পত্তি হিসেবে একে ব্যবহার করা হয়েছে। কোথাও মেয়েদের ও ছেলেদের অংশ সমান করে দেয়া হয়েছে।
মিরাস বণ্টনের সময় ইয়াতীমদেরকে কিছু দেয়া উচিত :
وَاِذَا حَضَرَ الْقِسْمَةَ اُولُو الْقُرْبٰى وَالْيَتَامٰى وَالْمَسَاكِيْنُ فَارْزُقُوْهُمْ مِّنْهُ وَقُوْلُوْا لَهُمْ قَوْلًا مَّعْرُوْفًا
যখন তা (মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পদ) বণ্টনের সময় আত্মীয়স্বজন, ইয়াতীম এবং দরিদ্রগণ উপস্থিত হয়, তখন সে সম্পদ হতে তাদেরকেও (একটি অংশ) জীবিকা (হিসেবে) দান করো এবং তাদের সাথে সুন্দরভাবে কথা বলো। (সূরা নিসা- ৮)
ব্যাখ্যা : এখানে মৃত ব্যক্তির ওয়ারিসদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে। তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, মিরাস বণ্টনের সময় নিকট ও দূরের আত্মীয়রা, নিজের গোত্র ও পরিবারের গরীব লোকেরা এবং যেসব ইয়াতীম ছেলে-মেয়ে উপস্থিত থাকে, তাদের সাথে হৃদয়হীন ব্যবহার করো না। মিরাসে তাদের অংশ নেই ঠিকই কিন্তু একটু সহানুভূতির পরিচয় দিয়ে পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে তাদেরকেও কিছু দিয়ে দাও। সাধারণভাবে এমন অবস্থায় সংকীর্ণমনা লোকেরা যে ধরনের নির্মম আচরণ করে ও কথাবার্তা বলে, তাদের সাথে তেমনটি করো না।
يُوْصِيْكُمُ اللهُ فِۤيْ اَوْلَادِكُمْ لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْاُنْثَيَيْنِۚ فَاِنْ كُنَّ نِسَآءً فَوْقَ اثْنَتَيْنِ فَلَهُنَّ ثُلُثَا مَا تَرَكَۚ وَاِنْ كَانَتْ وَاحِدَةً فَلَهَا النِّصْفُ
আল্লাহ তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে এ বিধান দিয়েছেন যে, এক পুত্রের অংশ দুই কন্যার অংশের সমান। তবে যদি কন্যা দু’জনের বেশি হয় তাহলে তারা পরিত্যক্ত সম্পদের তিন ভাগের দু’ভাগ পাবে। আর যদি কন্যা একজন হয়, তবে সে অর্ধেক পাবে। (সূরা নিসা- ১১)
শানে নুযূল : ওহুদ যুদ্ধের পর সা‘দ ইবনে রুবীর স্ত্রী তাঁর দু’টি শিশু সন্তানকে নিয়ে নবী ﷺ এর খেদমতে উপস্থিত হন। তিনি বলেন, ‘‘হে আল্লাহর রাসূল! এরা সা‘দের মেয়ে। এদের পিতা আপনার সাথে ওহুদের যুদ্ধে গিয়ে শহীদ হয়ে গেছেন। এদের চাচা তার সমস্ত সম্পত্তি নিজের আয়ত্তাধীন করে নিয়েছে। এদের জন্য একটি দানাও রাখেনি। এখন বলুন, কে এ (সহায় সম্পত্তিহীনা) মেয়েদেরকে বিয়ে করবে? তখন এ আয়াতটি নাযিল হয়।
ব্যাখ্যা : মিরাসের ব্যাপারে একটি প্রধান মৌলিক বিধান হচ্ছে, পুরুষদের অংশ হবে মেয়েদের দ্বিগুণ। যেহেতু পারিবারিক জীবন ক্ষেত্রে শরীয়াত পুরুষদের উপর অর্থনৈতিক দায়িত্বের বোঝা বেশি চাপিয়ে দিয়েছে এবং মেয়েদেরকে অনেকগুলো অর্থনৈতিক দায়িত্ব থেকে মুক্তি দিয়েছে, তাই মিরাসের ব্যাপারে মেয়েদের অংশ পুরুষদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম রাখা হয়েছে। আর এটিই ছিল ইনসাফের দাবী। কারো যদি পুত্রসন্তান না থাকে এবং সবগুলোই কন্যাসন্তান থাকে তাহলে কন্যাদের সংখ্যা দুই বা দু’য়ের বেশিই হোক না কেন, তারা সমগ্র পরিত্যক্ত সম্পত্তির তিন ভাগের দু’ভাগ পাবে। অবশিষ্ট এক ভাগ অন্যান্য ওয়ারিসদের মধ্যে বণ্টন করা হবে। কিন্তু মৃত ব্যক্তির যদি শুধুমাত্র একটি পুত্র থাকে, তাহলে সে-ই সমস্ত সম্পত্তির ওয়ারিস হবে। আর যদি অন্যান্য ওয়ারিসরাও থাকে, তাহলে তাদের অংশ দেয়ার পর বাকি সমস্ত সম্পত্তি সে-ই পাবে।
মাতা-পিতার অংশ :
وَلِاَبَوَيْهِ لِكُلِّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا السُّدُسُ مِمَّا تَرَكَ اِنْ كَانَ لَهٗ وَلَدٌۚ فَاِنْ لَّمْ يَكُنْ لَّهٗ وَلَدٌ وَّوَرِثَهٗۤ اَبَوَاهُ فَلِاُمِّهِ الثُّلُثُۚ فَاِنْ كَانَ لَهٗۤ اِخْوَةٌ فَلِاُمِّهِ السُّدُسُ
যদি মৃত ব্যক্তির সন্তান থাকে, তবে তার পিতামাতা প্রত্যেকে তার রেখে যাওয়া সম্পদের ছয় ভাগের একভাগ পাবে। আর যদি সে (মৃত ব্যক্তি) নিঃসন্তান হয় এবং পিতামাতাই ওয়ারিস হয়, তাহলে মা পাবে তিনভাগের একভাগ, কিন্তু যদি তার একাধিক ভাই-বোন থাকে, তবে মা পাবে ছয় ভাগের একভাগ। (সূরা নিসা- ১১)
ব্যাখ্যা : মৃত ব্যক্তির সন্তান থাকলে তার পিতামাতা প্রত্যেকে ছয় ভাগের এক ভাগ পাবে। পিতামাতা ছাড়া যদি আর কেউ ওয়ারিস না থাকে তাহলে বাকি তিন ভাগের দু’ভাগ পিতা পাবে। অন্যথায় তিন ভাগের দু’ভাগে পিতা ও অন্যান্য ওয়ারিসরা শরীক হবে।
স্বামী-স্ত্রীর অংশ :
وَلَكُمْ نِصْفُ مَا تَرَكَ اَزْوَاجُكُمْ اِنْ لَّمْ يَكُنْ لَّهُنَّ وَلَدٌۚ فَاِنْ كَانَ لَهُنَّ وَلَدٌ فَلَكُمُ الرُّبُعُ مِمَّا تَرَكْنَ مِنْ ۢبَعْدِ وَصِيَّةٍ يُّوْصِيْنَ بِهَاۤ اَوْ دَيْنٍؕ وَلَهُنَّ الرُّبُعُ مِمَّا تَرَكْتُمْ اِنْ لَّمْ يَكُنْ لَّكُمْ وَلَدٌۚ فَاِنْ كَانَ لَكُمْ وَلَدٌ فَلَهُنَّ الثُّمُنُ مِمَّا تَرَكْتُمْ مِّنْ ۢبَعْدِ وَصِيَّةٍ تُوْصُوْنَ بِهَاۤ اَوْ دَيْنٍ
তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সম্পদের অর্ধেক পাবে, যদি তাদের সন্তান না থাকে। আর যদি সন্তান থাকে, তাহলে তোমরা তাদের রেখে যাওয়া সম্পদের চার ভাগের একভাগ পাবে, অসিয়ত পালন ও ঋণ পরিশোধের পর। আর তোমাদের স্ত্রীরাও সম্পদের চার ভাগের একভাগ পাবে, যদি তোমাদের কোন সন্তান না থাকে। আর যদি সন্তান থাকে, তাহলে তারা তোমাদের রেখে যাওয়া সম্পদের আট ভাগের একভাগ পাবে, অসিয়ত পালন ও ঋণ পরিশোধের পর। (সূরা নিসা- ১২)
ব্যাখ্যা : স্ত্রী একজন হোক বা একাধিক হোক তাদের যদি সন্তান থাকে তাহলে তারা আট ভাগের একভাগ এবং সন্তান না থাকলে চার ভাগের এক ভাগ পাবে। আর এ চার ভাগের এক ভাগ বা আট ভাগের এক ভাগ সকল স্ত্রীর মধ্যে সমানভাবে বণ্টিত হবে।
বৈমাত্রেয় ভাই-বোনদের অংশ :
وَاِنْ كَانَ رَجُلٌ يُّوْرَثُ كَلَالَةً اَوِ امْرَاَةٌ وَّلَهٗۤ اَخٌ اَوْ اُخْتٌ فَلِكُلِّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا السُّدُسُۚ فَاِنْ كَانُوْاۤ اَكْثَرَ مِنْ ذٰلِكَ فَهُمْ شُرَكَآءُ فِى الثُّلُثِ مِنْ ۢبَعْدِ وَصِيَّةٍ يُّوْصٰى بِهَاۤ اَوْ دَيْنٍ غَيْرَ مُضَآرٍّۚ وَصِيَّةً مِّنَ اللهِ وَاللهُ عَلِيْمٌ حَلِيْمٌ
আর যদি পিতামাতা ও সন্তানহীন কোন পুরুষ অথবা নারী এ অবস্থায় মারা যায় যে, তার একজন ভাই কিংবা বোন থাকে, তবে তারা প্রত্যেকে ছয় ভাগের একভাগ পাবে। কিন্তু তারা যদি একাধিক হয়, তবে তারা প্রত্যেকে তিন ভাগের একভাগ সমান হারে পাবে; (তারা এ অংশ পাবে) অসিয়ত পালন ও ঋণ পরিশোধের পর (অবশিষ্ট সম্পদ থেকে)। (তবে শর্ত হচ্ছে) অসিয়ত যেন কারো জন্য ক্ষতিকর না হয়- এ বিধান আল্লাহর পক্ষ থেকে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও সহনশীল। (সূরা নিসা- ১২)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর জ্ঞানের কথা উচ্চারণ করার পেছনে এখানে দু’টি কারণ রয়েছে।
(এক) যদি এ বিধানের বিরুদ্ধাচরণ করা হয়, তাহলে মানুষ আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাঁচতে পারবে না।
(দুই) আল্লাহ যে অংশ যেভাবে নির্ধারণ করেছেন, তা একেবারেই নির্ভুল। কারণ যে বিষয়ে মানুষের কল্যাণ ও সুবিধা রয়েছে, তা মানুষের চেয়ে আল্লাহই ভালো জানেন। এখানে আল্লাহর ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা এ দু’টি গুণের কথা বলার কারণ হচ্ছে, এ আইন প্রবর্তনের ব্যাপারে আল্লাহ কোন কঠোরতা আরোপ করেননি। বরং তিনি এমন নিয়মনীতি প্রবর্তন করেছেন, যা মেনে চলা মানুষের জন্য অত্যন্ত সহজ। যার ফলে মানুষ কোন কষ্ট, অভাব ও সংকীর্ণতার মুখোমুখি হবে না।
পিতামাতাহীন নিঃসন্তান ব্যক্তির মাসআলা :
يَسْتَفْتُوْنَكَؕ قُلِ اللهُ يُفْتِيْكُمْ فِى الْكَلَالَةِؕ اِنِ امْرُؤٌ هَلَكَ لَيْسَ لَهٗ وَلَدٌ وَّلَهٗۤ اُخْتٌ فَلَهَا نِصْفُ مَا تَرَكَۚ وَهُوَ يَرِثُهَاۤ اِنْ لَّمْ يَكُنْ لَّهَا وَلَدٌؕ فَاِنْ كَانَتَا اثْنَتَيْنِ فَلَهُمَا الثُّلُثَانِ مِمَّا تَرَكَؕ وَاِنْ كَانُوْاۤ اِخْوَةً رِّجَالًا وَّنِسَآءً فَلِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْاُنْثَيَيْنِؕ يُبَيِّنُ اللهُ لَكُمْ اَنْ تَضِلُّوْاؕ وَاللهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ
(হে নবী) লোকেরা তোমার নিকট ফতোয়া জানতে চায়। বলো, আল্লাহ তোমাদেরকে পিতামাতাহীন নিঃসন্তান ব্যক্তি সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন যে, যদি কোন পুরুষ মারা যায়, আর তার কোন সন্তান না থাকে এবং একজন বোন থাকে, তবে তার জন্য পরিত্যক্ত সম্পদের অর্ধেক (নির্ধারিত করা হয়েছে)। আবার যদি সে (বোন) সন্তানহীনা হয় (এবং সে মারা যায়, কিন্তু ভাই জীবিত থাকে), তবে তার ভাই তার (সম্পূর্ণ সম্পদের) উত্তরাধিকারী হবে। আর যদি দু’জন বোন থাকে, তবে তাদের জন্য পরিত্যক্ত সম্পদের দুই তৃতীয়াংশ (নির্ধারণ করা হয়েছে)। কিন্তু যদি ভাই-বোন উভয়ে (জীবিত) থাকে, তবে একজন পুরুষের অংশ দু’জন নারীর অংশের সমান। আল্লাহ (উত্তরাধিকারের এ বিধান) অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন, যাতে করে তোমরা কোন রকম বিভ্রান্তিতে না পড়। আর আল্লাহ তো সকল বিষয়ে সম্যক অবগত। (সূরা নিসা- ১৭৬)
ব্যাখ্যা : اَلْكَلَالَةُ (আল কালালাহ) বলা হয় ঐ ব্যক্তিকে, যার কোন সন্তান নেই এবং পিতামাতাও জীবিত নেই। তার পরিত্যক্ত সম্পদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা এজন্য আলোচনা করেছেন যে, যে ব্যক্তির সন্তানাদি অথবা পিতামাতা কেউ জীবিত না থাকে, সাধারণত তার মধ্যে নিজের ধনসম্পদ নষ্ট করার প্রবণতা দেখা দেয়। ফলে সে দূরবর্তী আত্মীয়দেরকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করে।
যারা মিরাস সম্পর্কিত আইন পরিবর্তন করে তারা জাহান্নামে যাবে :
وَمَنْ يَّعْصِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَيَتَعَدَّ حُدُوْدَهٗ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيْهَا وَلَهٗ عَذَابٌ مُّهِيْنٌ
যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করবে এবং তাঁর (নির্ধারিত) সীমা লঙ্ঘন করবে তিনি তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন, সেখানে সে চিরকাল অবস্থান করবে। আর তার জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি। (সূরা নিসা- ১৪)
ব্যাখ্যা : যারা আল্লাহর রচিত মিরাস সম্পর্কিত আইন পরিবর্তন করে অথবা আল্লাহ তাঁর কিতাবে অন্যান্য যেসব আইনগত সুস্পষ্ট সীমা নির্ধারণ করেছেন সেগুলো ভঙ্গ করে, তাদের জন্য এ আয়াতে চিরস্থায়ী আযাবের ভয় দেখানো হয়েছে। এ দিক দিয়ে এটি একটি অত্যন্ত ভীতি সৃষ্টিকারী আয়াত। কিন্তু বড়ই আফসোসের সাথে বলতে হয়, এমন মারাত্মক ভীতি প্রদর্শন করার পরও মানুষ নির্লজ্জভাবে আল্লাহর আইনে পরিবর্তন সাধন করেছে এবং তার সীমারেখা পরিবর্তন করার দুঃসাহস দেখিয়েছে। এ মিরাস আইনের ব্যাপারে যে নাফরমানি করা হয়েছে, তা আল্লাহর বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট বিদ্রোহের শামিল। কোথাও মেয়েদেরকে স্থায়ীভাবে মিরাস থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। কোথাও কেবল বড় ছেলেকে মিরাসের হকদার হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। কোথাও কুরআনে নির্ধারিত মিরাস বণ্টন করার পদ্ধতি পুরোপুরি পরিহার করে যৌথ পারিবারিক সম্পত্তি হিসেবে একে ব্যবহার করা হয়েছে। কোথাও মেয়েদের ও ছেলেদের অংশ সমান করে দেয়া হয়েছে।
মিরাস বণ্টনের সময় ইয়াতীমদেরকে কিছু দেয়া উচিত :
وَاِذَا حَضَرَ الْقِسْمَةَ اُولُو الْقُرْبٰى وَالْيَتَامٰى وَالْمَسَاكِيْنُ فَارْزُقُوْهُمْ مِّنْهُ وَقُوْلُوْا لَهُمْ قَوْلًا مَّعْرُوْفًا
যখন তা (মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পদ) বণ্টনের সময় আত্মীয়স্বজন, ইয়াতীম এবং দরিদ্রগণ উপস্থিত হয়, তখন সে সম্পদ হতে তাদেরকেও (একটি অংশ) জীবিকা (হিসেবে) দান করো এবং তাদের সাথে সুন্দরভাবে কথা বলো। (সূরা নিসা- ৮)
ব্যাখ্যা : এখানে মৃত ব্যক্তির ওয়ারিসদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে। তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, মিরাস বণ্টনের সময় নিকট ও দূরের আত্মীয়রা, নিজের গোত্র ও পরিবারের গরীব লোকেরা এবং যেসব ইয়াতীম ছেলে-মেয়ে উপস্থিত থাকে, তাদের সাথে হৃদয়হীন ব্যবহার করো না। মিরাসে তাদের অংশ নেই ঠিকই কিন্তু একটু সহানুভূতির পরিচয় দিয়ে পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে তাদেরকেও কিছু দিয়ে দাও। সাধারণভাবে এমন অবস্থায় সংকীর্ণমনা লোকেরা যে ধরনের নির্মম আচরণ করে ও কথাবার্তা বলে, তাদের সাথে তেমনটি করো না।
সম্পদের এক তৃতীয়াংশে অসিয়ত করা যায় :
كُتِبَ عَلَيْكُمْ اِذَا حَضَرَ اَحَدَكُمُ الْمَوْتُ اِنْ تَرَكَ خَيْرَانِ الْوَصِيَّةُ لِلْوَالِدَيْنِ وَالْاَقْرَبِيْنَ بِالْمَعْرُوْفِۚ حَقًّا عَلَى الْمُتَّقِيْنَ
তোমাদের উপর এ বিধান দেয়া হলো যে, যখন তোমাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হয় এবং সে যদি কোন ধনসম্পদ রেখে যায়, তাহলে সে যেন ইনসাফের ভিত্তিতে মাতা-পিতা ও আত্মীয়দের জন্য অসিয়ত করে যায়। মুত্তাক্বীদের জন্য এটা কর্তব্য। (সূরা বাক্বারা- ১৮০)
ব্যাখ্যা : অসিয়তের এ নিয়ম প্রবর্তনের কারণ হচ্ছে, মিরাসী আইনের মাধ্যমে যেসব আত্মীয়স্বজন পরিত্যক্ত সম্পত্তির কোন অংশ পায় না, তাদের মধ্যে যাকে যে পরিমাণ সাহায্য দেয়ার প্রয়োজন উপলব্ধি করা হয়, অসিয়তের মাধ্যমে তা নির্ধারণ করা যেতে পারে। যেমন কোন ইয়াতীম নাতি বা নাতনী রয়েছে। মৃত পুত্রের কোন বিধবা স্ত্রী কষ্টে জীবন-যাপন করছে। অথবা কোন ভাই, বোন, ভাবী, ভাইপো, ভাগিনা বা কোন আত্মীয় সাহায্য লাভের মুখাপেক্ষী। এ ক্ষেত্রে অসিয়তের মাধ্যমে তাদের জন্য একটি অংশ সংরক্ষণ করা যেতে পারে। আর যদি আত্মীয়দের মধ্যে এমন কেউ না থাকে, তাহলে অন্যদের জন্য বা কোন জনকল্যাণমূলক কাজে সম্পত্তির কোন অংশ অসিয়ত করা যেতে পারে। সারকথা হচ্ছে, সম্পত্তির তিন ভাগের দু’ভাগ বা তার চেয়ে কিছু বেশি অংশের উপর ইসলামী শরীয়াত মিরাসের আইন বলবৎ করেছে, যা শরীয়াতের মনোনীত ওয়ারিসদের মধ্যে বণ্টন করা হবে। আর তিন ভাগের এক ভাগ বা তার চেয়ে কিছু কম অংশ বণ্টনের অধিকার মালিককে দেয়া হয়েছে। তবে অসিয়ত যদি এমনভাবে করা হয় যে, এর মাধ্যমে হকদার আত্মীয়দের হক নষ্ট হয়, তাহলে এ ধরনের অসিয়ত বৈধ নয়। আর নিছক হকদারদেরকে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্যে কোন ব্যক্তির এমন কোন ঋণের স্বীকৃতি দেয়া, যা সে প্রকৃতপক্ষে নেয়নি অথবা হকদারকে মিরাস থেকে বঞ্চিত করার লক্ষ্যে কোন চালবাজি করা প্রতারণার শামিল। ইসলামী শরীয়াতে এ ধরনের ক্ষতিকর বিষয়সমূহকে কবীরা গোনাহ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
অসিয়ত পরিবর্তন করা গোনাহের কাজ :
فَمَنْ ۢ بَدَّلَهٗ بَعْدَمَا سَمِعَهٗ فَاِنَّمَاۤ اِثْمُهٗ عَلَى الَّذِيْنَ يُبَدِّلُوْنَهٗؕ اِنَّ اللهَ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
এ বিধান শোনার পর যে ব্যক্তি তা পরিবর্তন করবে, এর পাপ সেই পরিবর্তনকারীদের উপরই বর্তাবে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা বাক্বারা- ১৮১)
অসিয়তকারী ভুল করলে সংশোধন করে নেয়া যাবে :
فَمَنْ خَافَ مِنْ مُّوْصٍ جَنَفًا اَوْ اِثْمًا فَاَصْلَحَ بَيْنَهُمْ فَلَاۤ اِثْمَ عَلَيْهِؕ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
আর যদি কেউ অসিয়তকারীর ব্যাপারে পক্ষপাতিত্ব বা পাপের আশঙ্কা করে। অতঃপর তাদের মধ্যে মীমাংসা করে নেয়, তবে তাতে কোন গোনাহ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়। (সূরা বাক্বারা- ১৮২)
অসিয়তের সময় সাক্ষী রাখা প্রয়োজন :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا شَهَادَةُ بَيْنِكُمْ اِذَا حَضَرَ اَحَدَكُمُ الْمَوْتُ حِيْنَ الْوَصِيَّةِ اثْنَانِ ذَوَا عَدْلٍ مِّنْكُمْ
হে ঈমানদারগণ! যখন তোমাদের মধ্যে কারো মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন (কোনকিছু) অসিয়ত করার সময় তোমাদের মধ্য হতে দু’জন ন্যায়পরায়ণ লোককে সাক্ষী রাখবে। (সূরা মায়েদা- ১০৬)
كُتِبَ عَلَيْكُمْ اِذَا حَضَرَ اَحَدَكُمُ الْمَوْتُ اِنْ تَرَكَ خَيْرَانِ الْوَصِيَّةُ لِلْوَالِدَيْنِ وَالْاَقْرَبِيْنَ بِالْمَعْرُوْفِۚ حَقًّا عَلَى الْمُتَّقِيْنَ
তোমাদের উপর এ বিধান দেয়া হলো যে, যখন তোমাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হয় এবং সে যদি কোন ধনসম্পদ রেখে যায়, তাহলে সে যেন ইনসাফের ভিত্তিতে মাতা-পিতা ও আত্মীয়দের জন্য অসিয়ত করে যায়। মুত্তাক্বীদের জন্য এটা কর্তব্য। (সূরা বাক্বারা- ১৮০)
ব্যাখ্যা : অসিয়তের এ নিয়ম প্রবর্তনের কারণ হচ্ছে, মিরাসী আইনের মাধ্যমে যেসব আত্মীয়স্বজন পরিত্যক্ত সম্পত্তির কোন অংশ পায় না, তাদের মধ্যে যাকে যে পরিমাণ সাহায্য দেয়ার প্রয়োজন উপলব্ধি করা হয়, অসিয়তের মাধ্যমে তা নির্ধারণ করা যেতে পারে। যেমন কোন ইয়াতীম নাতি বা নাতনী রয়েছে। মৃত পুত্রের কোন বিধবা স্ত্রী কষ্টে জীবন-যাপন করছে। অথবা কোন ভাই, বোন, ভাবী, ভাইপো, ভাগিনা বা কোন আত্মীয় সাহায্য লাভের মুখাপেক্ষী। এ ক্ষেত্রে অসিয়তের মাধ্যমে তাদের জন্য একটি অংশ সংরক্ষণ করা যেতে পারে। আর যদি আত্মীয়দের মধ্যে এমন কেউ না থাকে, তাহলে অন্যদের জন্য বা কোন জনকল্যাণমূলক কাজে সম্পত্তির কোন অংশ অসিয়ত করা যেতে পারে। সারকথা হচ্ছে, সম্পত্তির তিন ভাগের দু’ভাগ বা তার চেয়ে কিছু বেশি অংশের উপর ইসলামী শরীয়াত মিরাসের আইন বলবৎ করেছে, যা শরীয়াতের মনোনীত ওয়ারিসদের মধ্যে বণ্টন করা হবে। আর তিন ভাগের এক ভাগ বা তার চেয়ে কিছু কম অংশ বণ্টনের অধিকার মালিককে দেয়া হয়েছে। তবে অসিয়ত যদি এমনভাবে করা হয় যে, এর মাধ্যমে হকদার আত্মীয়দের হক নষ্ট হয়, তাহলে এ ধরনের অসিয়ত বৈধ নয়। আর নিছক হকদারদেরকে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্যে কোন ব্যক্তির এমন কোন ঋণের স্বীকৃতি দেয়া, যা সে প্রকৃতপক্ষে নেয়নি অথবা হকদারকে মিরাস থেকে বঞ্চিত করার লক্ষ্যে কোন চালবাজি করা প্রতারণার শামিল। ইসলামী শরীয়াতে এ ধরনের ক্ষতিকর বিষয়সমূহকে কবীরা গোনাহ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
অসিয়ত পরিবর্তন করা গোনাহের কাজ :
فَمَنْ ۢ بَدَّلَهٗ بَعْدَمَا سَمِعَهٗ فَاِنَّمَاۤ اِثْمُهٗ عَلَى الَّذِيْنَ يُبَدِّلُوْنَهٗؕ اِنَّ اللهَ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
এ বিধান শোনার পর যে ব্যক্তি তা পরিবর্তন করবে, এর পাপ সেই পরিবর্তনকারীদের উপরই বর্তাবে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা বাক্বারা- ১৮১)
অসিয়তকারী ভুল করলে সংশোধন করে নেয়া যাবে :
فَمَنْ خَافَ مِنْ مُّوْصٍ جَنَفًا اَوْ اِثْمًا فَاَصْلَحَ بَيْنَهُمْ فَلَاۤ اِثْمَ عَلَيْهِؕ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
আর যদি কেউ অসিয়তকারীর ব্যাপারে পক্ষপাতিত্ব বা পাপের আশঙ্কা করে। অতঃপর তাদের মধ্যে মীমাংসা করে নেয়, তবে তাতে কোন গোনাহ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়। (সূরা বাক্বারা- ১৮২)
অসিয়তের সময় সাক্ষী রাখা প্রয়োজন :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا شَهَادَةُ بَيْنِكُمْ اِذَا حَضَرَ اَحَدَكُمُ الْمَوْتُ حِيْنَ الْوَصِيَّةِ اثْنَانِ ذَوَا عَدْلٍ مِّنْكُمْ
হে ঈমানদারগণ! যখন তোমাদের মধ্যে কারো মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন (কোনকিছু) অসিয়ত করার সময় তোমাদের মধ্য হতে দু’জন ন্যায়পরায়ণ লোককে সাক্ষী রাখবে। (সূরা মায়েদা- ১০৬)
ইয়াতীমদের সাথে ভালো আচরণ করতে হবে :
وَاعْبُدُوا اللهَ وَلَا تُشْرِكُوْا بِهٖ شَيْئًا وَّبِالْوَالِدَيْنِ اِحْسَانًا وَّبِذِى الْقُرْبٰى وَالْيَتَامٰى وَالْمَسَاكِيْنِ
তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করবে, কোনকিছুকে তাঁর সাথে শরীক করবে না এবং পিতামাতা, আত্মীয়স্বজন, ইয়াতীম ও অভাবগ্রস্তদের প্রতি সদ্ব্যবহার করবে। (সূরা নিসা- ৩৬)
আল্লাহর এ বিধান পূর্বযুগেও ছিল :
وَاِذْ اَخَذْنَا مِيْثَاقَ بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ لَا تَعْبُدُوْنَ اِلَّا اللهَؕ وَبِالْوَالِدَيْنِ اِحْسَانًا وَّذِى الْقُرْبٰى وَالْيَتَامٰى وَالْمَسَاكِيْنِ
যখন আমি বনী ইসরাঈল হতে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো ইবাদাত করবে না, পিতামাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে এবং আত্মীয়, ইয়াতীম ও মিসকিনদের সঙ্গেও (সদ্ব্যবহার করবে)। (সূরা বাক্বারা- ৮৩)
ইয়াতীমদেরকে ধমক দেয়া যাবে না :
فَاَمَّا الْيَتِيْمَ فَلَا تَقْهَرْ
আর আপনি ইয়াতীমের প্রতি কঠোর হবেন না। (সূরা যোহা- ৯)
এটা কাফিরদের কাজ :
اَرَاَيْتَ الَّذِيْ يُكَذِّبُ بِالدِّيْنِ ‐ فَذٰلِكَ الَّذِيْ يَدُعُّ الْيَتِيْمَ
তুমি কি সে ব্যক্তির কথা (কখনো) ভেবে দেখেছ, যে শেষবিচার দিবসকে অস্বীকার করে? এ তো সেই ব্যক্তি, যে (নিরীহ) ইয়াতীমদেরকে গলা ধাক্কা দেয়। (সূরা মাঊন- ১, ২)
বিশ্বনবী ﷺ ইয়াতীম অবস্থায় বড় হয়েছেন :
اَلَمْ يَجِدْكَ يَتِيْمًا فَاٰوٰى
তিনি কি আপনাকে ইয়াতীম হিসেবে পাননি? অতঃপর তিনিই আপনাকে আশ্রয় দিয়েছেন। (সূরা যুহা- ৬)
ইয়াতীমদেরকে সম্মান না করার জন্য আল্লাহর তিরস্কার :
كَلَّا بَلْ لَّا تُكْرِمُوْنَ الْيَتِيْمَ
কখনো নয়, বরং তোমরা ইয়াতীমদেরকে সম্মান কর না। (সূরা ফাজর- ১৭)
তাদেরকে খাবার দেয়া ও লালন-পালন করা সওয়াবের কাজ :
وَيُطْعِمُوْنَ الطَّعَامَ عَلٰى حُبِّهٖ مِسْكِيْنًا وَّيَتِيْمًا وَّاَسِيْرًا ‐ اِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللهِ لَا نُرِيْدُ مِنْكُمْ جَزَآءً وَّلَا شُكُوْرًا
তারা খাদ্যের প্রতি আসক্তি সত্ত্বেও অভাবগ্রস্ত, ইয়াতীম ও বন্দীদেরকে আহার্য দান করে এবং বলে, আমরা তো শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তোমাদেরকে খাদ্য দান করি, আমরা তোমাদের নিকট হতে কোন প্রতিদান চাই না এবং কৃতজ্ঞতাও চাই না। (সূরা দাহর- ৮, ৯)
ইয়াতীমদের ব্যাপারে যা মঙ্গলজনক তাই করা উচিত :
وَيَسْاَلُوْنَكَ عَنِ الْيَتَامٰىؕ قُلْ اِصْلَاحٌ لَّهُمْ خَيْرٌؕ وَاِنْ تُخَالِطُوْهُمْ فَاِخْوَانُكُمْؕ وَاللهُ يَعْلَمُ الْمُفْسِدَ مِنَ الْمُصْلِحِ
তারা তোমাকে ইয়াতীমদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে; বলো, তাদের জন্য সুব্যবস্থা গ্রহণ করাই উত্তম। আর যদি তোমরা তাদেরকে (নিজেদের পরিবারের সাথে) মিলিয়ে নাও, তবে তারা তো তোমাদেরই ভাই। আর আল্লাহ জানেন- সংশোধনকারীদের মধ্যে কে ফাসাদ সৃষ্টিকারী। (সূরা বাক্বারা- ২২০)
শানে নুযূল : ‘‘ইয়াতীমের মাল খাওয়া জাহান্নামের জ্বলন্ত আগুন খাওয়ারই শামিল’’- এ আয়াতটি নাযিল হলে শ্রবণকারীরা ভীত হয়ে ইয়াতীমদের লালন-পালন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ রূপে পৃথক করে দেয়। কিন্তু এরূপ স্বতন্ত্র ব্যবস্থা রাখা খুবই অসুবিধাজনক। ফলে এর সুব্যবস্থার জন্য তারা রাসূল ﷺ এর নিকট আবেদন করলে এ আয়াতটি নাযিল হয়।
ইয়াতীমদের ব্যাপারে ইনসাফের নীতি অবলম্বন করতে হবে :
وَيَسْتَفْتُوْنَكَ فِى النِّسَآءِؕ قُلِ اللهُ يُفْتِيْكُمْ فِيْهِنَّ وَمَا يُتْلٰى عَلَيْكُمْ فِى الْكِتَابِ فِيْ يَتَامَى النِّسَآءِ اللَّاتِيْ لَا تُؤْتُوْنَهُنَّ مَا كُتِبَ لَهُنَّ وَتَرْغَبُوْنَ اَنْ تَنْكِحُوْهُنَّ وَالْمُسْتَضْعَفِيْنَ مِنَ الْوِلْدَانِ وَاَنْ تَقُوْمُوْا لِلْيَتَامٰى بِالْقِسْطِؕ وَمَا تَفْعَلُوْا مِنْ خَيْرٍ فَاِنَّ اللهَ كَانَ بِهٖ عَلِيْمًا
লোকেরা তোমার নিকট নারীদের বিষয়ে ফতোয়া জানতে চায়। বলো, আল্লাহ তোমাদেরকে তাদের সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিচ্ছেন। আর এ কিতাব থেকেও সেসব ইয়াতীম নারীদের ব্যাপারে যা কিছু তোমাদের উপর পঠিত হচ্ছে (তাও জানিয়ে দিচ্ছেন)। তোমরা তো তাদের নির্ধারিত প্রাপ্য (মোহরানা) প্রদান করো না; অথচ তাদেরকে বিবাহ করতে চাও। আর অসহায় শিশু ও ইয়াতীমদের ব্যাপারে (বলা হচ্ছে) তোমরা যেন সুবিচার কায়েম করো; তোমরা যেসব সৎকাজ কর নিশ্চয় আল্লাহ তা সবিশেষ অবহিত। (সূরা নিসা- ১২৭)
শানে নুযূল : কোন কোন ব্যক্তির প্রতিপালনে কুৎসিত ধনবতী ইয়াতীম বালিকা থাকত। কিন্তু কুৎসিত হওয়ার দরুন নিজেও তাকে বিবাহ করতে চাইত না এবং অন্যের সঙ্গেও বিবাহ দিত না- এ কারণে যে, সম্পত্তি অপরের নিকট চলে যাবে। তখন এ সম্বন্ধে রাসূল ﷺ কে জিজ্ঞাসা করা হলে এ আয়াতটি নাযিল হয়। আয়েশা (রাঃ) এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, জাহেলী যুগে যেসব ইয়াতীম মেয়ে কারো আয়ত্তাধীন থাকত তাদের সম্পদ ও সৌন্দর্যের কারণে অনেক অভিভাবক নিজেরাই তাদেরকে বিয়ে করে নিত, তারপর তাদের উপর যুলুম করত। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বলা হয়েছে, তোমরা যদি আশঙ্কা করো যে, তাদের সাথে ইনসাফ করতে পারবে না, তাহলে সমাজে আরো অনেক মেয়ে আছে, তাদের মধ্য থেকে নিজেদের পছন্দমতো কাউকে বিয়ে করে নাও।
জ্ঞানবুদ্ধি না হওয়া পর্যন্ত ইয়াতীমদের সম্পদের হেফাজত করতে হবে :
وَلَا تُؤْتُوا السُّفَهَآءَ اَمْوَالَكُمُ الَّتِيْ جَعَلَ اللهُ لَكُمْ قِيَامًا
আল্লাহ তোমাদের জন্য যে ধনসম্পদ নির্ধারিত করেছেন, তা নির্বোধদেরকে প্রদান করো না। (সূরা নিসা- ৫)
তাদের সম্পদ থেকে তাদের ভরণ-পোষণ দেয়া যাবে :
وَارْزُقُوْهُمْ فِيْهَا وَاكْسُوْهُمْ وَقُوْلُوْا لَهُمْ قَوْلًا مَّعْرُوْفًا
তা হতে তাদেরকে খাওয়াও, পরাও এবং তাদের সাথে সুন্দরভাবে কথা বলো। (সূরা নিসা- ৫)
অভিভাবক দরিদ্র হলে ভাতা নিতে পারবে :
وَمَنْ كَانَ فَقِيْرًا فَلْيَأْكُلْ بِالْمَعْرُوْفِؕ فَاِذَا دَفَعْتُمْ اِلَيْهِمْ اَمْوَالَهُمْ فَاَشْهِدُوْا عَلَيْهِمْؕ وَكَفٰى بِاللهِ حَسِيْبًا
যে ব্যক্তি অভাবগ্রস্ত হবে সে (ঐ ইয়াতীমের সম্পদ থেকে) ন্যায়সঙ্গত পরিমাণ ভোগ করবে। অতঃপর যখন তাদের সম্পদ তাদেরকে সমর্পণ করতে চাও, তখন তাদের জন্য সাক্ষী রেখো; হিসাব গ্রহণের ব্যাপারে আল্লাহই যথেষ্ট। (সূরা নিসা- ৬)
ব্যাখ্যা : সম্পত্তি দেখাশুনার বিনিময়ে নিজের পারিশ্রমিক ঠিক ততটুকু পরিমাণ গ্রহণ করতে পারে, যতটুকু গ্রহণ করাকে একজন নিরপেক্ষ ও সুবিবেচক ব্যক্তি ন্যায়সঙ্গত বলে মনে করতে পারে। তাছাড়া নিজের পারিশ্রমিক হিসেবে সে যতটুকু গ্রহণ করবে, তা গোপনে গ্রহণ করবে না; বরং প্রকাশ্যে গ্রহণ করবে এবং তার হিসাব রাখবে।
ইয়াতীমদের সম্পদ অন্যান্য সম্পদের সাথে মিশ্রিত করা যাবে না :
وَاٰتُوا الْيَتَامٰۤى اَمْوَالَهُمْ وَلَا تَتَبَدَّلُوا الْخَبِيْثَ بِالطَّيِّبِ وَلَا تَأْكُلُوْاۤ اَمْوَالَهُمْ اِلٰۤى اَمْوَالِكُمْؕ اِنَّهٗ كَانَ حُوْبًا كَبِيْرًا
ইয়াতীমদেরকে তাদের ধনসম্পদ বুঝিয়ে দাও এবং খারাপ মালের সাথে উত্তম মালের বিনিময় করো না। আর তোমাদের ধনসম্পদের সাথে তাদের ধনসম্পদ ভোগ করে নিয়ো না। নিশ্চয় এটা মারাত্মক অপরাধ। (সূরা নিসা- ২)
তাদের সম্পদ আত্মসাৎ করা যাবে না :
وَلَا تَقْرَبُوْا مَالَ الْيَتِيْمِ اِلَّا بِالَّتِيْ هِيَ اَحْسَنُ حَتّٰى يَبْلُغَ اَشُدَّهٗ
ইয়াতীম প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত উত্তম ব্যবস্থা ব্যতীত তোমরা তাদের সম্পত্তির নিকটবর্তী হয়ো না। (সূরা আন‘আম- ১৫২)
وَلَا تَأْكُلُوْهَاۤ اِسْرَافًا وَّبِدَارًا اَنْ يَّكْبَرُوْا
তারা বড় হয়ে যাওয়ার ভয়ে তাড়াহুড়া করে তাদের মাল আত্মসাৎ করো না। (সূরা নিসা- ৬)
তাদের সম্পদ খাওয়া আগুন খাওয়ার সমান :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَأْكُلُوْنَ اَمْوَالَ الْيَتَامٰى ظُلْمًا اِنَّمَا يَأْكُلُوْنَ فِيْ بُطُوْنِهِمْ نَارًاؕ وَسَيَصْلَوْنَ سَعِيْرًا
নিশ্চয় যারা অন্যায়ভাবে ইয়াতীমদের সম্পদ খায়, তারা তাদের পেটে কেবল আগুনই ভর্তি করে। অচিরেই তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (সূরা নিসা- ১০)
প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গেলে তাদের সম্পদ বুঝিয়ে দিতে হবে :
وَابْتَلُوا الْيَتَامٰى حَتّٰۤى اِذَا بَلَغُوا النِّكَاحَ فَاِنْ اٰنَسْتُمْ مِّنْهُمْ رُشْدًا فَادْفَعُوْاۤ اِلَيْهِمْ اَمْوَالَهُمْ
ইয়াতীমদেরকে লালন-পালন করবে যতক্ষণ না তারা প্রাপ্তবয়স্ক হয়। অতঃপর যদি তাদের মাঝে বিচারবোধ লক্ষ্য কর, তবে তাদের মাল তাদের নিকট ফিরিয়ে দাও। (সূরা নিসা- ৬)
ব্যাখ্যা : যতদিন তারা অপ্রাপ্তবয়স্ক থাকে, ততদিন তদের ধনসম্পদ তাদের স্বার্থে ব্যয় করো। আর প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে যাওয়ার পর তাদের হক তাদের কাছে ফিরিয়ে দাও। এখানে ধনসম্পদ তাদের হাতে সোপর্দ করার জন্য দু’টি শর্তারোপ করা হয়েছে। একটি হচ্ছে, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, যোগ্যতা অর্থাৎ সম্পদ সঠিকভাবে ব্যবহার করার যোগ্যতা অর্জন করা। সাবালক হওয়ার পরও যদি ইয়াতীমের মধ্যে সে যোগ্যতা না পাওয়া যায়, তাহলে তার অভিভাবককে আরো অপেক্ষা করতে হবে।
সম্পদ ফিরিয়ে দেয়ার সময় সাক্ষী রাখতে হবে :
فَاِذَا دَفَعْتُمْ اِلَيْهِمْ اَمْوَالَهُمْ فَاَشْهِدُوْا عَلَيْهِمْؕ وَكَفٰى بِاللهِ حَسِيْبًا
যখন তাদের সম্পদ তাদেরকে সমর্পণ করতে চাও, তখন তাদের জন্য সাক্ষী রেখো; হিসাব গ্রহণের ব্যাপারে আল্লাহই যথেষ্ট। (সূরা নিসা- ৬)
وَاعْبُدُوا اللهَ وَلَا تُشْرِكُوْا بِهٖ شَيْئًا وَّبِالْوَالِدَيْنِ اِحْسَانًا وَّبِذِى الْقُرْبٰى وَالْيَتَامٰى وَالْمَسَاكِيْنِ
তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করবে, কোনকিছুকে তাঁর সাথে শরীক করবে না এবং পিতামাতা, আত্মীয়স্বজন, ইয়াতীম ও অভাবগ্রস্তদের প্রতি সদ্ব্যবহার করবে। (সূরা নিসা- ৩৬)
আল্লাহর এ বিধান পূর্বযুগেও ছিল :
وَاِذْ اَخَذْنَا مِيْثَاقَ بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ لَا تَعْبُدُوْنَ اِلَّا اللهَؕ وَبِالْوَالِدَيْنِ اِحْسَانًا وَّذِى الْقُرْبٰى وَالْيَتَامٰى وَالْمَسَاكِيْنِ
যখন আমি বনী ইসরাঈল হতে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো ইবাদাত করবে না, পিতামাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে এবং আত্মীয়, ইয়াতীম ও মিসকিনদের সঙ্গেও (সদ্ব্যবহার করবে)। (সূরা বাক্বারা- ৮৩)
ইয়াতীমদেরকে ধমক দেয়া যাবে না :
فَاَمَّا الْيَتِيْمَ فَلَا تَقْهَرْ
আর আপনি ইয়াতীমের প্রতি কঠোর হবেন না। (সূরা যোহা- ৯)
এটা কাফিরদের কাজ :
اَرَاَيْتَ الَّذِيْ يُكَذِّبُ بِالدِّيْنِ ‐ فَذٰلِكَ الَّذِيْ يَدُعُّ الْيَتِيْمَ
তুমি কি সে ব্যক্তির কথা (কখনো) ভেবে দেখেছ, যে শেষবিচার দিবসকে অস্বীকার করে? এ তো সেই ব্যক্তি, যে (নিরীহ) ইয়াতীমদেরকে গলা ধাক্কা দেয়। (সূরা মাঊন- ১, ২)
বিশ্বনবী ﷺ ইয়াতীম অবস্থায় বড় হয়েছেন :
اَلَمْ يَجِدْكَ يَتِيْمًا فَاٰوٰى
তিনি কি আপনাকে ইয়াতীম হিসেবে পাননি? অতঃপর তিনিই আপনাকে আশ্রয় দিয়েছেন। (সূরা যুহা- ৬)
ইয়াতীমদেরকে সম্মান না করার জন্য আল্লাহর তিরস্কার :
كَلَّا بَلْ لَّا تُكْرِمُوْنَ الْيَتِيْمَ
কখনো নয়, বরং তোমরা ইয়াতীমদেরকে সম্মান কর না। (সূরা ফাজর- ১৭)
তাদেরকে খাবার দেয়া ও লালন-পালন করা সওয়াবের কাজ :
وَيُطْعِمُوْنَ الطَّعَامَ عَلٰى حُبِّهٖ مِسْكِيْنًا وَّيَتِيْمًا وَّاَسِيْرًا ‐ اِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللهِ لَا نُرِيْدُ مِنْكُمْ جَزَآءً وَّلَا شُكُوْرًا
তারা খাদ্যের প্রতি আসক্তি সত্ত্বেও অভাবগ্রস্ত, ইয়াতীম ও বন্দীদেরকে আহার্য দান করে এবং বলে, আমরা তো শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তোমাদেরকে খাদ্য দান করি, আমরা তোমাদের নিকট হতে কোন প্রতিদান চাই না এবং কৃতজ্ঞতাও চাই না। (সূরা দাহর- ৮, ৯)
ইয়াতীমদের ব্যাপারে যা মঙ্গলজনক তাই করা উচিত :
وَيَسْاَلُوْنَكَ عَنِ الْيَتَامٰىؕ قُلْ اِصْلَاحٌ لَّهُمْ خَيْرٌؕ وَاِنْ تُخَالِطُوْهُمْ فَاِخْوَانُكُمْؕ وَاللهُ يَعْلَمُ الْمُفْسِدَ مِنَ الْمُصْلِحِ
তারা তোমাকে ইয়াতীমদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে; বলো, তাদের জন্য সুব্যবস্থা গ্রহণ করাই উত্তম। আর যদি তোমরা তাদেরকে (নিজেদের পরিবারের সাথে) মিলিয়ে নাও, তবে তারা তো তোমাদেরই ভাই। আর আল্লাহ জানেন- সংশোধনকারীদের মধ্যে কে ফাসাদ সৃষ্টিকারী। (সূরা বাক্বারা- ২২০)
শানে নুযূল : ‘‘ইয়াতীমের মাল খাওয়া জাহান্নামের জ্বলন্ত আগুন খাওয়ারই শামিল’’- এ আয়াতটি নাযিল হলে শ্রবণকারীরা ভীত হয়ে ইয়াতীমদের লালন-পালন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ রূপে পৃথক করে দেয়। কিন্তু এরূপ স্বতন্ত্র ব্যবস্থা রাখা খুবই অসুবিধাজনক। ফলে এর সুব্যবস্থার জন্য তারা রাসূল ﷺ এর নিকট আবেদন করলে এ আয়াতটি নাযিল হয়।
ইয়াতীমদের ব্যাপারে ইনসাফের নীতি অবলম্বন করতে হবে :
وَيَسْتَفْتُوْنَكَ فِى النِّسَآءِؕ قُلِ اللهُ يُفْتِيْكُمْ فِيْهِنَّ وَمَا يُتْلٰى عَلَيْكُمْ فِى الْكِتَابِ فِيْ يَتَامَى النِّسَآءِ اللَّاتِيْ لَا تُؤْتُوْنَهُنَّ مَا كُتِبَ لَهُنَّ وَتَرْغَبُوْنَ اَنْ تَنْكِحُوْهُنَّ وَالْمُسْتَضْعَفِيْنَ مِنَ الْوِلْدَانِ وَاَنْ تَقُوْمُوْا لِلْيَتَامٰى بِالْقِسْطِؕ وَمَا تَفْعَلُوْا مِنْ خَيْرٍ فَاِنَّ اللهَ كَانَ بِهٖ عَلِيْمًا
লোকেরা তোমার নিকট নারীদের বিষয়ে ফতোয়া জানতে চায়। বলো, আল্লাহ তোমাদেরকে তাদের সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিচ্ছেন। আর এ কিতাব থেকেও সেসব ইয়াতীম নারীদের ব্যাপারে যা কিছু তোমাদের উপর পঠিত হচ্ছে (তাও জানিয়ে দিচ্ছেন)। তোমরা তো তাদের নির্ধারিত প্রাপ্য (মোহরানা) প্রদান করো না; অথচ তাদেরকে বিবাহ করতে চাও। আর অসহায় শিশু ও ইয়াতীমদের ব্যাপারে (বলা হচ্ছে) তোমরা যেন সুবিচার কায়েম করো; তোমরা যেসব সৎকাজ কর নিশ্চয় আল্লাহ তা সবিশেষ অবহিত। (সূরা নিসা- ১২৭)
শানে নুযূল : কোন কোন ব্যক্তির প্রতিপালনে কুৎসিত ধনবতী ইয়াতীম বালিকা থাকত। কিন্তু কুৎসিত হওয়ার দরুন নিজেও তাকে বিবাহ করতে চাইত না এবং অন্যের সঙ্গেও বিবাহ দিত না- এ কারণে যে, সম্পত্তি অপরের নিকট চলে যাবে। তখন এ সম্বন্ধে রাসূল ﷺ কে জিজ্ঞাসা করা হলে এ আয়াতটি নাযিল হয়। আয়েশা (রাঃ) এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, জাহেলী যুগে যেসব ইয়াতীম মেয়ে কারো আয়ত্তাধীন থাকত তাদের সম্পদ ও সৌন্দর্যের কারণে অনেক অভিভাবক নিজেরাই তাদেরকে বিয়ে করে নিত, তারপর তাদের উপর যুলুম করত। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বলা হয়েছে, তোমরা যদি আশঙ্কা করো যে, তাদের সাথে ইনসাফ করতে পারবে না, তাহলে সমাজে আরো অনেক মেয়ে আছে, তাদের মধ্য থেকে নিজেদের পছন্দমতো কাউকে বিয়ে করে নাও।
জ্ঞানবুদ্ধি না হওয়া পর্যন্ত ইয়াতীমদের সম্পদের হেফাজত করতে হবে :
وَلَا تُؤْتُوا السُّفَهَآءَ اَمْوَالَكُمُ الَّتِيْ جَعَلَ اللهُ لَكُمْ قِيَامًا
আল্লাহ তোমাদের জন্য যে ধনসম্পদ নির্ধারিত করেছেন, তা নির্বোধদেরকে প্রদান করো না। (সূরা নিসা- ৫)
তাদের সম্পদ থেকে তাদের ভরণ-পোষণ দেয়া যাবে :
وَارْزُقُوْهُمْ فِيْهَا وَاكْسُوْهُمْ وَقُوْلُوْا لَهُمْ قَوْلًا مَّعْرُوْفًا
তা হতে তাদেরকে খাওয়াও, পরাও এবং তাদের সাথে সুন্দরভাবে কথা বলো। (সূরা নিসা- ৫)
অভিভাবক দরিদ্র হলে ভাতা নিতে পারবে :
وَمَنْ كَانَ فَقِيْرًا فَلْيَأْكُلْ بِالْمَعْرُوْفِؕ فَاِذَا دَفَعْتُمْ اِلَيْهِمْ اَمْوَالَهُمْ فَاَشْهِدُوْا عَلَيْهِمْؕ وَكَفٰى بِاللهِ حَسِيْبًا
যে ব্যক্তি অভাবগ্রস্ত হবে সে (ঐ ইয়াতীমের সম্পদ থেকে) ন্যায়সঙ্গত পরিমাণ ভোগ করবে। অতঃপর যখন তাদের সম্পদ তাদেরকে সমর্পণ করতে চাও, তখন তাদের জন্য সাক্ষী রেখো; হিসাব গ্রহণের ব্যাপারে আল্লাহই যথেষ্ট। (সূরা নিসা- ৬)
ব্যাখ্যা : সম্পত্তি দেখাশুনার বিনিময়ে নিজের পারিশ্রমিক ঠিক ততটুকু পরিমাণ গ্রহণ করতে পারে, যতটুকু গ্রহণ করাকে একজন নিরপেক্ষ ও সুবিবেচক ব্যক্তি ন্যায়সঙ্গত বলে মনে করতে পারে। তাছাড়া নিজের পারিশ্রমিক হিসেবে সে যতটুকু গ্রহণ করবে, তা গোপনে গ্রহণ করবে না; বরং প্রকাশ্যে গ্রহণ করবে এবং তার হিসাব রাখবে।
ইয়াতীমদের সম্পদ অন্যান্য সম্পদের সাথে মিশ্রিত করা যাবে না :
وَاٰتُوا الْيَتَامٰۤى اَمْوَالَهُمْ وَلَا تَتَبَدَّلُوا الْخَبِيْثَ بِالطَّيِّبِ وَلَا تَأْكُلُوْاۤ اَمْوَالَهُمْ اِلٰۤى اَمْوَالِكُمْؕ اِنَّهٗ كَانَ حُوْبًا كَبِيْرًا
ইয়াতীমদেরকে তাদের ধনসম্পদ বুঝিয়ে দাও এবং খারাপ মালের সাথে উত্তম মালের বিনিময় করো না। আর তোমাদের ধনসম্পদের সাথে তাদের ধনসম্পদ ভোগ করে নিয়ো না। নিশ্চয় এটা মারাত্মক অপরাধ। (সূরা নিসা- ২)
তাদের সম্পদ আত্মসাৎ করা যাবে না :
وَلَا تَقْرَبُوْا مَالَ الْيَتِيْمِ اِلَّا بِالَّتِيْ هِيَ اَحْسَنُ حَتّٰى يَبْلُغَ اَشُدَّهٗ
ইয়াতীম প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত উত্তম ব্যবস্থা ব্যতীত তোমরা তাদের সম্পত্তির নিকটবর্তী হয়ো না। (সূরা আন‘আম- ১৫২)
وَلَا تَأْكُلُوْهَاۤ اِسْرَافًا وَّبِدَارًا اَنْ يَّكْبَرُوْا
তারা বড় হয়ে যাওয়ার ভয়ে তাড়াহুড়া করে তাদের মাল আত্মসাৎ করো না। (সূরা নিসা- ৬)
তাদের সম্পদ খাওয়া আগুন খাওয়ার সমান :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَأْكُلُوْنَ اَمْوَالَ الْيَتَامٰى ظُلْمًا اِنَّمَا يَأْكُلُوْنَ فِيْ بُطُوْنِهِمْ نَارًاؕ وَسَيَصْلَوْنَ سَعِيْرًا
নিশ্চয় যারা অন্যায়ভাবে ইয়াতীমদের সম্পদ খায়, তারা তাদের পেটে কেবল আগুনই ভর্তি করে। অচিরেই তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (সূরা নিসা- ১০)
প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গেলে তাদের সম্পদ বুঝিয়ে দিতে হবে :
وَابْتَلُوا الْيَتَامٰى حَتّٰۤى اِذَا بَلَغُوا النِّكَاحَ فَاِنْ اٰنَسْتُمْ مِّنْهُمْ رُشْدًا فَادْفَعُوْاۤ اِلَيْهِمْ اَمْوَالَهُمْ
ইয়াতীমদেরকে লালন-পালন করবে যতক্ষণ না তারা প্রাপ্তবয়স্ক হয়। অতঃপর যদি তাদের মাঝে বিচারবোধ লক্ষ্য কর, তবে তাদের মাল তাদের নিকট ফিরিয়ে দাও। (সূরা নিসা- ৬)
ব্যাখ্যা : যতদিন তারা অপ্রাপ্তবয়স্ক থাকে, ততদিন তদের ধনসম্পদ তাদের স্বার্থে ব্যয় করো। আর প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে যাওয়ার পর তাদের হক তাদের কাছে ফিরিয়ে দাও। এখানে ধনসম্পদ তাদের হাতে সোপর্দ করার জন্য দু’টি শর্তারোপ করা হয়েছে। একটি হচ্ছে, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, যোগ্যতা অর্থাৎ সম্পদ সঠিকভাবে ব্যবহার করার যোগ্যতা অর্জন করা। সাবালক হওয়ার পরও যদি ইয়াতীমের মধ্যে সে যোগ্যতা না পাওয়া যায়, তাহলে তার অভিভাবককে আরো অপেক্ষা করতে হবে।
সম্পদ ফিরিয়ে দেয়ার সময় সাক্ষী রাখতে হবে :
فَاِذَا دَفَعْتُمْ اِلَيْهِمْ اَمْوَالَهُمْ فَاَشْهِدُوْا عَلَيْهِمْؕ وَكَفٰى بِاللهِ حَسِيْبًا
যখন তাদের সম্পদ তাদেরকে সমর্পণ করতে চাও, তখন তাদের জন্য সাক্ষী রেখো; হিসাব গ্রহণের ব্যাপারে আল্লাহই যথেষ্ট। (সূরা নিসা- ৬)
আল্লাহ মুসাফীরদের হক আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন :
فَاٰتِ ذَا الْقُرْبٰى حَقَّهٗ وَالْمِسْكِيْنَ وَابْنَ السَّبِيْلِ
অতএব আত্মীয়স্বজনকে তাদের হক দিয়ে দাও এবং মিসকীন ও মুসাফিরদেরকেও (নিজ নিজ পাওনা বুঝিয়ে দাও)। (সূরা রূম- ৩৮)
মুসাফিরদেরকে সহায়তা করতে হবে :
يَسْاَلُوْنَكَ مَاذَا يُنْفِقُوْنَؕ قُلْ مَاۤ اَنْفَقْتُمْ مِّنْ خَيْرٍ فَلِلْوَالِدَيْنِ وَالْاَقْرَبِيْنَ وَالْيَتَامٰى وَالْمَسَاكِيْنِ وَابْنِ السَّبِيْلِ
লোকেরা তোমাকে জিজ্ঞেস করছে, তারা কী (কাদের জন্য) ব্যয় করবে? বলে দাও, তোমরা ধনসম্পদ হতে যা ব্যয় করবে তা পিতামাতা, আত্মীয়স্বজন, ইয়াতীম, মিসকীন ও পথিকদের জন্য ব্যয় করবে। (সূরা বাক্বারা- ২১৫)
মুসাফিরদেরকে যাকাতের মালও দেয়া যাবে :
اِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَآءِ وَالْمَسَاكِيْنِ وَالْعَامِلِيْنَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوْبُهُمْ وَفِى الرِّقَابِ وَالْغَارِمِيْنَ وَفِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَابْنِ السَّبِيْلِؕ فَرِيْضَةً مِّنَ اللهِؕ وَاللهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ
সাদাকা তো কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত ও তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জন্য, (অমুসলিমদের) অন্তর আকৃষ্ট করার জন্য, দাসমুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে ব্যয় করার জন্য এবং মুসাফিরদের জন্য। এটা আল্লাহর বিধান; আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা- ৬০)
فَاٰتِ ذَا الْقُرْبٰى حَقَّهٗ وَالْمِسْكِيْنَ وَابْنَ السَّبِيْلِ
অতএব আত্মীয়স্বজনকে তাদের হক দিয়ে দাও এবং মিসকীন ও মুসাফিরদেরকেও (নিজ নিজ পাওনা বুঝিয়ে দাও)। (সূরা রূম- ৩৮)
মুসাফিরদেরকে সহায়তা করতে হবে :
يَسْاَلُوْنَكَ مَاذَا يُنْفِقُوْنَؕ قُلْ مَاۤ اَنْفَقْتُمْ مِّنْ خَيْرٍ فَلِلْوَالِدَيْنِ وَالْاَقْرَبِيْنَ وَالْيَتَامٰى وَالْمَسَاكِيْنِ وَابْنِ السَّبِيْلِ
লোকেরা তোমাকে জিজ্ঞেস করছে, তারা কী (কাদের জন্য) ব্যয় করবে? বলে দাও, তোমরা ধনসম্পদ হতে যা ব্যয় করবে তা পিতামাতা, আত্মীয়স্বজন, ইয়াতীম, মিসকীন ও পথিকদের জন্য ব্যয় করবে। (সূরা বাক্বারা- ২১৫)
মুসাফিরদেরকে যাকাতের মালও দেয়া যাবে :
اِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَآءِ وَالْمَسَاكِيْنِ وَالْعَامِلِيْنَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوْبُهُمْ وَفِى الرِّقَابِ وَالْغَارِمِيْنَ وَفِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَابْنِ السَّبِيْلِؕ فَرِيْضَةً مِّنَ اللهِؕ وَاللهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ
সাদাকা তো কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত ও তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জন্য, (অমুসলিমদের) অন্তর আকৃষ্ট করার জন্য, দাসমুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে ব্যয় করার জন্য এবং মুসাফিরদের জন্য। এটা আল্লাহর বিধান; আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা- ৬০)
গরীবদেরকে সাহায্য করা পুণ্যের কাজ :
لَيْسَ الْبِرَّ اَنْ تُوَلُّوْا وُجُوْهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلٰكِنَّ الْبِرَّ مَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَالْمَلَآئِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّيْنَۚ وَاٰتَى الْمَالَ عَلٰى حُبِّهٖ ذَوِى الْقُرْبٰى وَالْيَتَامٰى وَالْمَسَاكِيْنَ وَابْنَ السَّبِيْلِ وَالسَّآئِلِيْنَ وَفِى الرِّقَابِ
তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল পূর্ব আর পশ্চিম দিকে ঘুরাও তাতে কোন পুণ্য নেই; বরং পুণ্য তো সেই ব্যক্তির জন্য যে আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতাগণ, কিতাব ও নবীগণের প্রতি ঈমান আনয়ন করে এবং তাঁরই ভালোবাসা অর্জনের জন্য আত্মীয়স্বজন, ইয়াতীম, মিসকীন, মুসাফির, ভিক্ষুক ও দাসমুক্ত করার জন্য ব্যয় করে। (সূরা বাক্বারা- ১৭৭)
গরীবদেরকে খেতে দেয়া জান্নাতীদের বৈশিষ্ট্য :
وَيُطْعِمُوْنَ الطَّعَامَ عَلٰى حُبِّهٖ مِسْكِيْنًا وَّيَتِيْمًا وَّاَسِيْرًا ‐ اِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللهِ لَا نُرِيْدُ مِنْكُمْ جَزَآءً وَّلَا شُكُوْرًا
তারা আল্লাহর ভালোবাসায় অভাবগ্রস্ত, ইয়াতীম ও বন্দীদেরকে খাদ্য দান করে এবং বলে, আমরা তো শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তোমাদেরকে খাদ্য দান করি, আমরা তোমাদের নিকট হতে কোন প্রতিদান চাই না এবং কৃতজ্ঞতাও চাই না। (সূরা দাহর- ৮, ৯)
গরীবদেরকে কুরবানীর গোশত দেয়ার নির্দেশ :
فَكُلُوْا مِنْهَا وَاَطْعِمُوا الْبَآئِسَ الْفَقِيْرَ
অতঃপর তোমরা তা (কুরবানীর গোশত) হতে আহার করো এবং দুঃস্থ ও অভাবগ্রস্তদেরকেও আহার করাও। (সূরা হজ্জ- ২৮)
যাকাতের টাকা অভাবীদেরকে দিতে হবে :
اِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَآءِ وَالْمَسَاكِيْنِ وَالْعَامِلِيْنَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوْبُهُمْ وَفِى الرِّقَابِ وَالْغَارِمِيْنَ وَفِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَابْنِ السَّبِيْلِؕ فَرِيْضَةً مِّنَ اللهِ ؕ وَاللهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ
সাদাকা তো কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত ও তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জন্য, (অমুসলিমদের) অন্তর আকৃষ্ট করার জন্য, দাসমুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে ব্যয় করার জন্য এবং মুসাফিরদের জন্য। এটা আল্লাহর বিধান; আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা- ৬০)
গনিমতের মালে তাদের অংশ রয়েছে :
وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّمَا غَنِمْتُمْ مِّنْ شَيْءٍ فَاَنَّ لِلّٰهِ خُمُسَهٗ وَلِلرَّسُوْلِ وَلِذِى الْقُرْبٰى وَالْيَتَامٰى وَالْمَسَاكِيْنِ وَابْنِ السَّبِيْلِ
জেনে রেখো, যুদ্ধে তোমরা যা লাভ কর তার এক-পঞ্চমাংশ আল্লাহর ও (তাঁর) রাসূলের জন্য, (রাসূলের) স্বজনদের জন্য, ইয়াতীমদের জন্য, মিসকীনদের জন্য এবং পথচারীদের জন্য। (সূরা আনফাল- ৪১)
গরীবদেরকে অবহেলা করা কাফিরদের আচরণ :
اَرَاَيْتَ الَّذِيْ يُكَذِّبُ بِالدِّيْنِ ‐ فَذٰلِكَ الَّذِيْ يَدُعُّ الْيَتِيْمَ ‐ وَلَا يَحُضُّ عَلٰى طَعَامِ الْمِسْكِيْنِ
তুমি কি সে ব্যক্তির কথা ভেবে দেখেছ, যে শেষ বিচারের দিনকে অস্বীকার করে? এ তো সেই ব্যক্তি, যে ইয়াতীমকে গলাধাক্কা দেয় এবং মিসকীনদের খাবার দিতে উৎসাহ দেয় না। (সূরা মাঊন, ১-৩)
গরীবদের হক না দিলে পরকালেও শাস্তি হবে :
مَا سَلَكَكُمْ فِيْ سَقَرَ ‐ قَالُوْا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّيْنَ ‐ وَلَمْ نَكُ نُطْعِمُ الْمِسْكِيْنَ
তোমাদেরকে কিসে সাকার (জাহান্নাম) এ নিক্ষেপ করেছে? তারা বলবে, আমরা সালাত আদায়কারী ছিলাম না এবং আমরা অভাবগ্রস্তদের খাবার দিতাম না। (সূরা মুদ্দাসসির, ৪২-৪৪)
আল্লাহ ভিক্ষুকদেরকে ধমক দিতে নিষেধ করেছেন :
وَاَمَّا السَّآئِلَ فَلَا تَنْهَرْ
আর সওয়ালকারীদেরকে ধমক দেবে না। (সূরা দুহা- ১০)
ধনীদের সম্পদে ভিক্ষুকদের হক রয়েছে :
وَفِۤيْ اَمْوَالِهِمْ حَقٌّ لِّلسَّآئِلِ وَالْمَحْرُوْمِ
আর তাদের ধনসম্পদে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের হক রয়েছে। (সূরা যারিয়াত- ১৯)
وَالَّذِيْنَ فِۤيْ اَمْوَالِهِمْ حَقٌّ مَّعْلُوْمٌ ‐ لِلسَّآئِلِ وَالْمَحْرُوْمِ
(যারা মনে করে) তাদের সম্পদে ভিক্ষুক ও বঞ্চিতদের জন্য নির্ধারিত হক রয়েছে (তারা জান্নাতে থাকবে)। (সূরা মা‘আরিজ- ২৪, ২৫)
ভিক্ষুককে দেয়ার মতো কিছু না থাকলে ভদ্রভাবে বিদায় দিতে হবে :
وَاِمَّا تُعْرِضَنَّ عَنْهُمُ ابْتِغَآءَ رَحْمَةٍ مِّنْ رَّبِّكَ تَرْجُوْهَا فَقُلْ لَّهُمْ قَوْلًا مَّيْسُوْرًا
যদি তাদের হতে তোমার মুখ ফিরাতেই হয়, তবে তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে অনুগ্রহ লাভের প্রত্যাশায় তাদের সাথে নম্রভাবে কথা বলো। (সূরা বনী ইসরাঈল- ২৮)
প্রতিবেশী, সহকর্মী ও অধীনস্তদের সাথেও সদ্ব্যবহার করতে হবে :
وَاعْبُدُوا اللهَ وَلَا تُشْرِكُوْا بِهٖ شَيْئًا وَّبِالْوَالِدَيْنِ اِحْسَانًا وَّبِذِى الْقُرْبٰى وَالْيَتَامٰى وَالْمَسَاكِيْنِ وَالْجَارِ ذِى الْقُرْبٰى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنْۢبِ وَابْنِ السَّبِيْلِ وَمَا مَلَكَتْ اَيْمَانُكُمْؕ اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ مَنْ كَانَ مُخْتَالًا فَخُوْرًا
তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করবে, কোনকিছুকে তাঁর সাথে শরীক করবে না এবং পিতামাতা, আত্মীয়স্বজন, ইয়াতীম, অভাবগ্রস্ত (মিসকীন), নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথি, মুসাফির ও তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করবে। নিশ্চয় আল্লাহ দাম্ভিক ও অহংকারীকে পছন্দ করেন না। (সূরা নিসা- ৩৬)
ব্যাখ্যা : اَلصَّاحِبُ بِالْجَنْۢبِ (আসসা-হিবু বিল জানবি) বলতে ‘অন্তরঙ্গ বন্ধু’ হতে পারে, আবার এমন লোকও হতে পারে, যে জীবনে চলার ক্ষেত্রে সঙ্গ দিয়ে থাকে। যেমন কেউ বাজারে যাচ্ছে এবং পথে কোন ব্যক্তি তার সাথে চলছে, অথবা কোন দোকানে পণ্য কিনছে এবং অন্য কোন ক্রেতা তার পাশে রয়েছে। অথবা সফরের মাঝপথে কোন ব্যক্তি তার সফর সঙ্গী হয়ে গেল। এরকম সাময়িক ক্ষেত্রেও এ সঙ্গীর সাথে সদ্ব্যবহার করতে হবে এবং তাকে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
لَيْسَ الْبِرَّ اَنْ تُوَلُّوْا وُجُوْهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلٰكِنَّ الْبِرَّ مَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَالْمَلَآئِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّيْنَۚ وَاٰتَى الْمَالَ عَلٰى حُبِّهٖ ذَوِى الْقُرْبٰى وَالْيَتَامٰى وَالْمَسَاكِيْنَ وَابْنَ السَّبِيْلِ وَالسَّآئِلِيْنَ وَفِى الرِّقَابِ
তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল পূর্ব আর পশ্চিম দিকে ঘুরাও তাতে কোন পুণ্য নেই; বরং পুণ্য তো সেই ব্যক্তির জন্য যে আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতাগণ, কিতাব ও নবীগণের প্রতি ঈমান আনয়ন করে এবং তাঁরই ভালোবাসা অর্জনের জন্য আত্মীয়স্বজন, ইয়াতীম, মিসকীন, মুসাফির, ভিক্ষুক ও দাসমুক্ত করার জন্য ব্যয় করে। (সূরা বাক্বারা- ১৭৭)
গরীবদেরকে খেতে দেয়া জান্নাতীদের বৈশিষ্ট্য :
وَيُطْعِمُوْنَ الطَّعَامَ عَلٰى حُبِّهٖ مِسْكِيْنًا وَّيَتِيْمًا وَّاَسِيْرًا ‐ اِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللهِ لَا نُرِيْدُ مِنْكُمْ جَزَآءً وَّلَا شُكُوْرًا
তারা আল্লাহর ভালোবাসায় অভাবগ্রস্ত, ইয়াতীম ও বন্দীদেরকে খাদ্য দান করে এবং বলে, আমরা তো শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তোমাদেরকে খাদ্য দান করি, আমরা তোমাদের নিকট হতে কোন প্রতিদান চাই না এবং কৃতজ্ঞতাও চাই না। (সূরা দাহর- ৮, ৯)
গরীবদেরকে কুরবানীর গোশত দেয়ার নির্দেশ :
فَكُلُوْا مِنْهَا وَاَطْعِمُوا الْبَآئِسَ الْفَقِيْرَ
অতঃপর তোমরা তা (কুরবানীর গোশত) হতে আহার করো এবং দুঃস্থ ও অভাবগ্রস্তদেরকেও আহার করাও। (সূরা হজ্জ- ২৮)
যাকাতের টাকা অভাবীদেরকে দিতে হবে :
اِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَآءِ وَالْمَسَاكِيْنِ وَالْعَامِلِيْنَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوْبُهُمْ وَفِى الرِّقَابِ وَالْغَارِمِيْنَ وَفِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَابْنِ السَّبِيْلِؕ فَرِيْضَةً مِّنَ اللهِ ؕ وَاللهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ
সাদাকা তো কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত ও তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জন্য, (অমুসলিমদের) অন্তর আকৃষ্ট করার জন্য, দাসমুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে ব্যয় করার জন্য এবং মুসাফিরদের জন্য। এটা আল্লাহর বিধান; আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা- ৬০)
গনিমতের মালে তাদের অংশ রয়েছে :
وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّمَا غَنِمْتُمْ مِّنْ شَيْءٍ فَاَنَّ لِلّٰهِ خُمُسَهٗ وَلِلرَّسُوْلِ وَلِذِى الْقُرْبٰى وَالْيَتَامٰى وَالْمَسَاكِيْنِ وَابْنِ السَّبِيْلِ
জেনে রেখো, যুদ্ধে তোমরা যা লাভ কর তার এক-পঞ্চমাংশ আল্লাহর ও (তাঁর) রাসূলের জন্য, (রাসূলের) স্বজনদের জন্য, ইয়াতীমদের জন্য, মিসকীনদের জন্য এবং পথচারীদের জন্য। (সূরা আনফাল- ৪১)
গরীবদেরকে অবহেলা করা কাফিরদের আচরণ :
اَرَاَيْتَ الَّذِيْ يُكَذِّبُ بِالدِّيْنِ ‐ فَذٰلِكَ الَّذِيْ يَدُعُّ الْيَتِيْمَ ‐ وَلَا يَحُضُّ عَلٰى طَعَامِ الْمِسْكِيْنِ
তুমি কি সে ব্যক্তির কথা ভেবে দেখেছ, যে শেষ বিচারের দিনকে অস্বীকার করে? এ তো সেই ব্যক্তি, যে ইয়াতীমকে গলাধাক্কা দেয় এবং মিসকীনদের খাবার দিতে উৎসাহ দেয় না। (সূরা মাঊন, ১-৩)
গরীবদের হক না দিলে পরকালেও শাস্তি হবে :
مَا سَلَكَكُمْ فِيْ سَقَرَ ‐ قَالُوْا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّيْنَ ‐ وَلَمْ نَكُ نُطْعِمُ الْمِسْكِيْنَ
তোমাদেরকে কিসে সাকার (জাহান্নাম) এ নিক্ষেপ করেছে? তারা বলবে, আমরা সালাত আদায়কারী ছিলাম না এবং আমরা অভাবগ্রস্তদের খাবার দিতাম না। (সূরা মুদ্দাসসির, ৪২-৪৪)
আল্লাহ ভিক্ষুকদেরকে ধমক দিতে নিষেধ করেছেন :
وَاَمَّا السَّآئِلَ فَلَا تَنْهَرْ
আর সওয়ালকারীদেরকে ধমক দেবে না। (সূরা দুহা- ১০)
ধনীদের সম্পদে ভিক্ষুকদের হক রয়েছে :
وَفِۤيْ اَمْوَالِهِمْ حَقٌّ لِّلسَّآئِلِ وَالْمَحْرُوْمِ
আর তাদের ধনসম্পদে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের হক রয়েছে। (সূরা যারিয়াত- ১৯)
وَالَّذِيْنَ فِۤيْ اَمْوَالِهِمْ حَقٌّ مَّعْلُوْمٌ ‐ لِلسَّآئِلِ وَالْمَحْرُوْمِ
(যারা মনে করে) তাদের সম্পদে ভিক্ষুক ও বঞ্চিতদের জন্য নির্ধারিত হক রয়েছে (তারা জান্নাতে থাকবে)। (সূরা মা‘আরিজ- ২৪, ২৫)
ভিক্ষুককে দেয়ার মতো কিছু না থাকলে ভদ্রভাবে বিদায় দিতে হবে :
وَاِمَّا تُعْرِضَنَّ عَنْهُمُ ابْتِغَآءَ رَحْمَةٍ مِّنْ رَّبِّكَ تَرْجُوْهَا فَقُلْ لَّهُمْ قَوْلًا مَّيْسُوْرًا
যদি তাদের হতে তোমার মুখ ফিরাতেই হয়, তবে তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে অনুগ্রহ লাভের প্রত্যাশায় তাদের সাথে নম্রভাবে কথা বলো। (সূরা বনী ইসরাঈল- ২৮)
প্রতিবেশী, সহকর্মী ও অধীনস্তদের সাথেও সদ্ব্যবহার করতে হবে :
وَاعْبُدُوا اللهَ وَلَا تُشْرِكُوْا بِهٖ شَيْئًا وَّبِالْوَالِدَيْنِ اِحْسَانًا وَّبِذِى الْقُرْبٰى وَالْيَتَامٰى وَالْمَسَاكِيْنِ وَالْجَارِ ذِى الْقُرْبٰى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنْۢبِ وَابْنِ السَّبِيْلِ وَمَا مَلَكَتْ اَيْمَانُكُمْؕ اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ مَنْ كَانَ مُخْتَالًا فَخُوْرًا
তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করবে, কোনকিছুকে তাঁর সাথে শরীক করবে না এবং পিতামাতা, আত্মীয়স্বজন, ইয়াতীম, অভাবগ্রস্ত (মিসকীন), নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথি, মুসাফির ও তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করবে। নিশ্চয় আল্লাহ দাম্ভিক ও অহংকারীকে পছন্দ করেন না। (সূরা নিসা- ৩৬)
ব্যাখ্যা : اَلصَّاحِبُ بِالْجَنْۢبِ (আসসা-হিবু বিল জানবি) বলতে ‘অন্তরঙ্গ বন্ধু’ হতে পারে, আবার এমন লোকও হতে পারে, যে জীবনে চলার ক্ষেত্রে সঙ্গ দিয়ে থাকে। যেমন কেউ বাজারে যাচ্ছে এবং পথে কোন ব্যক্তি তার সাথে চলছে, অথবা কোন দোকানে পণ্য কিনছে এবং অন্য কোন ক্রেতা তার পাশে রয়েছে। অথবা সফরের মাঝপথে কোন ব্যক্তি তার সফর সঙ্গী হয়ে গেল। এরকম সাময়িক ক্ষেত্রেও এ সঙ্গীর সাথে সদ্ব্যবহার করতে হবে এবং তাকে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
মুমিনরা একে অপরের বন্ধু :
وَالْمُؤْمِنُوْنَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍ
মুমিন নর ও মুমিন নারী একে অপরের বন্ধু। (সূরা তাওবা- ৭১)
সৎ বন্ধুত্ব পরকালেও ঠিক থাকবে :
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ سَيَجْعَلُ لَهُمُ الرَّحْمٰنُ وُدًّا
যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে দয়াময় অবশ্যই তাদের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি করে দেবেন। (সূরা মারইয়াম- ৯৬)
কাফিরদের বন্ধু হলো তাগুত ও শয়তান :
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اَوْلِيَآؤُهُمُ الطَّاغُوْتُ
আর যারা কাফির তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত। (সূরা বাক্বারা- ২৫৭)
اِنَّا جَعَلْنَا الشَّيَاطِيْنَ اَوْلِيَآءَ لِلَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ
যারা ঈমান আনে না, শয়তানকে আমি তাদের অভিভাবক বানিয়ে দিয়েছি। (সূরা আ‘রাফ- ২৭)
যারা শয়তানকে বন্ধু বানায় তারা পরকালে আক্ষেপ করবে :
وَمَنْ يَّعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْمٰنِ نُقَيِّضْ لَهٗ شَيْطَانًا فَهُوَ لَهٗقَرِيْنٌ ‐ وَاِنَّهُمْ لَيَصُدُّوْنَهُمْ عَنِ السَّبِيْلِ وَيَحْسَبُوْنَ اَنَّهُمْ مُّهْتَدُوْنَ ‐ حَتّٰۤى اِذَا جَآءَنَا قَالَ يَا لَيْتَ بَيْنِيْ وَبَيْنَكَ بُعْدَ الْمَشْرِقَيْنِ فَبِئْسَ الْقَرِيْنُ
যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ হয়ে যায়, আমি তার জন্য একটি শয়তান নিয়োজিত করি, অতঃপর সে-ই হয় তার সহচর। তারাই (শয়তানরা) মানুষকে সৎপথ হতে বিরত রাখে, অথচ মানুষ মনে করে যে, তারা হেদায়াতের উপর পরিচালিত হচ্ছে। অবশেষে যখন সে আমার নিকট উপস্থিত হবে, তখন সে (শয়তানকে) বলবে, হায়! আমার ও তোমার মধ্যে যদি পূর্ব ও পশ্চিমের (মতো) ব্যবধান থাকত! সুতরাং সে কতই না নিকৃষ্ট সহচর! (সূরা যুখরুফ, ৩৬-৩৮)
যালিমরা একে অপরের বন্ধু :
وَاِنَّ الظَّالِمِيْنَ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍۚ وَاللهُ وَلِيُّ الْمُتَّقِيْنَ
নিশ্চয় যালিমরা একে অপরের বন্ধু; আর আল্লাহ মুত্তাক্বীদের বন্ধু। (সূরা জাসিয়া- ১৯)
কাফিররাও একে অন্যের বন্ধু :
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍ
যারা কুফরী করেছে তারা এক অপরের বন্ধু। (সূরা আনফাল- ৭৩)
এরা সবাই শয়তানের দল :
اِسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَاَنْسَاهُمْ ذِكْرَ اللهِؕ اُولٰٓئِكَ حِزْبُ الشَّيْطَانِؕ اَ لَاۤ اِنَّ حِزْبَ الشَّيْطَانِ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ
শয়তান তাদের উপর পরিপূর্ণভাবে আধিপত্য বিস্তার করে নিয়েছে এবং সে তাদেরকে আল্লাহর স্মরণ হতে ভুলিয়ে দিয়েছে; এরাই তো শয়তানের দল। জেনে রেখো, নিশ্চয় শয়তানের দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (সূরা মুজাদালা- ১৯)
খারাপ লোকের সঙ্গী খারাপ লোকই হয়ে থাকে :
وَقَيَّضْنَا لَهُمْ قُرَنَآءَ فَزَيَّنُوْا لَهُمْ مَّا بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَحَقَّ عَلَيْهِمُ الْقَوْلُ فِۤيْ اُمَمٍ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِمْ مِّنَ الْجِنِّ وَالْاِنْسِۚ اِنَّهُمْ كَانُوْا خَاسِرِيْنَ
আমি তাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম সহচরবৃন্দ, যারা তাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে যা আছে তা তাদের দৃষ্টিতে শোভন করে দেখিয়েছিল। অবশেষে তাদের ব্যাপারেও তাদের পূর্ববর্তী জিন ও মানুষের ন্যায় আল্লাহর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়েছে। নিশ্চয় তারা ছিল ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা হা-মীম সাজদা- ২৫)
ব্যাখ্যা : এটা আল্লাহর স্বতন্ত্র ও স্থায়ী বিধান। খারাপ নিয়ত ও খারাপ আকাঙ্ক্ষা পোষণকারী মানুষের জন্য তিনি কখনো ভালো সঙ্গী দেন না। তার ঝোঁক ও আগ্রহ অনুসারে তিনি তাকে খারাপ সঙ্গীই জুটিয়ে দেন। সে যতই দুষ্কর্মের গহবরে নামতে থাকে ততই জঘন্যতর মানুষ ও শয়তান তার সহচর ও পরামর্শদাতা হতে থাকে। কারো কারো উক্তি, অমুক ব্যক্তি নিজে খুব ভালো কিন্তু তার বন্ধুবান্ধব জুটেছে খারাপ- এটা বাস্তবের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। প্রকৃতির বিধান হলো, প্রতিটি ব্যক্তি নিজে যেমন তার বন্ধুও জোটে ঠিক তেমনি। একজন সৎ ও নেক মানুষের সাহচর্যে খারাপ মানুষ আসলেও বেশি সময় সে তার সাথে থাকতে পারে না। অনুরূপ অসৎ উদ্দেশ্যে কর্মরত একজন দুষ্কর্মশীল মানুষের সাথে হঠাৎ সৎ মানুষের বন্ধুত্ব হলেও তা বেশি সময় টিকে থাকতে পারে না।
ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদের সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে না :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُوْدَ وَالنَّصَارٰۤى اَوْلِيَآءَ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍؕ وَمَنْ يَّتَوَلَّهُمْ مِّنْكُمْ فَاِنَّهٗ مِنْهُمْؕ اِنَّ اللهَ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। কেননা তারা একে অপরের বন্ধু (কিন্তু তারা উভয়েই তোমাদের শত্রু)। সুতরাং তোমাদের মধ্য থেকে যে কেউ তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে, সে তাদেরই একজন বলে গণ্য হবে। নিশ্চয় আল্লাহ অত্যাচারীদেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (সূরা মায়েদা- ৫১)
ইসলামকে নিয়ে তামাশাকারীদের সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে না :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوا الَّذِيْنَ اتَّخَذُوْا دِيْنَكُمْ هُزُوًا وَّلَعِبًا مِّنَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَالْكُفَّارَ اَوْلِيَآءَۚ وَاتَّقُوا اللهَ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
হে মুমিনগণ! তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে যারা তোমাদের দ্বীনকে হাসি-তামাশা ও ক্রীড়ার বস্তু হিসেবে গ্রহণ করে তোমরা তাদেরকে ও কাফিরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। আর আল্লাহকে ভয় করো, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক। (সূরা মায়েদা- ৫৭)
কাফিরদেরকে বন্ধু বানানো যাবে না :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوا الْكَافِرِيْنَ اَوْلِيَآءَ مِنْ دُوْنِ الْمُؤْمِنِيْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা মুমিনদের পরিবর্তে কাফিরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। (সূরা নিসা- ১৪৪)
কাফিরদের সাথে বন্ধুত্বকারীরা মুনাফিক :
بَشِّرِ الْمُنَافِقِيْنَ بِاَنَّ لَهُمْ عَذَابًا اَلِيْمًا ‐ اَلَّذِيْنَ يَتَّخِذُوْنَ الْكَافِرِيْنَ اَوْلِيَآءَ مِنْ دُوْنِ الْمُؤْمِنِيْنَؕ اَيَبْتَغُوْنَ عِنْدَهُمُ الْعِزَّةَ فَاِنَّ الْعِزَّةَ لِلّٰهِ جَمِيْعًا
মুনাফিকদেরকে সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য মর্মান্তিক শাস্তি প্রস্তুত রয়েছে। যারা মুমিনদের পরিবর্তে কাফিরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে, তারা কি তাদের নিকট সম্মান কামনা করে? নিশ্চয় সমস্ত সম্মান আল্লাহরই। (সূরা নিসা- ১৩৮, ১৩৯)
ইসলামের দুশমন যতই ঘনিষ্ট হোক বন্ধুত্ব চলবে না :
لَا تَجِدُ قَوْمًا يُّؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ يُوَآدُّوْنَ مَنْ حَآدَّ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَلَوْ كَانُوْاۤ اٰبَآءَهُمْ اَوْ اَبْنَآءَهُمْ اَوْ اِخْوَانَهُمْ اَوْ عَشِيْرَتَهُمْ
যারা আল্লাহর প্রতি ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, তাদেরকে আপনি এমন লোকদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে, যদিও তারা তাদের পিতা অথবা পুত্র অথবা ভাই কিংবা তাদের গোষ্ঠীর কেউ হয়। (সূরা মুজাদালা- ২২)
বন্ধু গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوْا بِطَانَةً مِّنْ دُوْنِكُمْ لَا يَأْلُوْنَكُمْ خَبَالًاؕ وَدُّوْا مَا عَنِتُّمْ قَدْ بَدَتِ الْبَغْضَآءُ مِنْ اَفْوَاهِهِمْۚ وَمَا تُخْفِيْ صُدُوْرُهُمْ اَكْبَرُ قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ الْاٰيَاتِ اِنْ كُنْتُمْ تَعْقِلُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে বাদ দিয়ে অন্যকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তারা তোমাদের ব্যাপারে তাই কামনা করে, যা তোমাদের জন্য কষ্টদায়ক। কোন কোন সময় তাদের মুখ থেকেই এই বিদ্বেষ প্রকাশ পেয়ে যায়। তাদের অন্তর যা লুকিয়ে রেখেছে তা আরো জঘন্য। আর আমি তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ বর্ণনা করে দিয়েছি, যাতে করে তোমরা অনুধাবন করতে পার। (সূরা আলে ইমরান- ১১৮)
অসৎ বন্ধু সৎকর্মে বাধা হয়ে যায় :
يَا وَيْلَتٰى لَيْتَنِيْ لَمْ اَتَّخِذْ فُلَانًا خَلِيْلًا ‐ لَقَدْ اَضَلَّنِيْ عَنِ الذِّكْرِ بَعْدَ اِذْ جَآءَنِيْؕ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِلْاِنْسَانِ خَذُوْلًا
হায় আমার দুর্ভোগ! আমি যদি অমুককে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করতাম! (কেননা) আমার নিকট উপদেশ পৌঁছার পরও সে আমাকে বিভ্রান্ত করেছিল। আর শয়তান তো মানুষের জন্য মহাপ্রতারক। (সূরা ফুরক্বান- ২৮, ২৯)
অসৎ বন্ধুত্ব পরকালে শত্রুতায় পরিণত হবে :
اَ لْاَخِلَّآءُ يَوْمَئِذٍ ۢبَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ اِلَّا الْمُتَّقِيْنَ
সেদিন বন্ধুরা একে অপরের শত্রুতে পরিণত হবে, তবে মুত্তাক্বীরা ব্যতীত। (সূরা যুখরুফ- ৬৭)
ব্যাখ্যা : পরকালে কেবল সেসব বন্ধুত্ব টিকে থাকবে, যা নেকী ও আল্লাহভীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। অন্যসব বন্ধুত্ব শত্রুতায় রূপান্তরিত হবে। আজ যারা গোমরাহী, যুলুম-অত্যাচার এবং গোনাহের কাজে একে অপরের বন্ধু ও সহযোগী, কাল কিয়ামতের দিন তারাই একে অপরের প্রতি দোষারোপ করবে এবং নিজেকে রক্ষার প্রচেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে পড়বে। এ বিষয়টি কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় বার বার বলা হয়েছে। যাতে প্রত্যেকটি মানুষ এ পৃথিবীতেই ভালোভাবে ভেবে চিন্তে দেখতে সক্ষম হয় যে, কোন প্রকৃতির লোকদের বন্ধু হওয়া তাদের জন্য কল্যাণকর এবং কোন প্রকৃতির লোকদের বন্ধু হওয়া ধ্বংসাত্মক।
অসৎ বন্ধুত্ব পরকালে পরিতাপের কারণ হয়ে দাঁড়াবে :
وَيَوْمَ يَعَضُّ الظَّالِمُ عَلٰى يَدَيْهِ يَقُوْلُ يَا لَيْتَنِى اتَّخَذْتُ مَعَ الرَّسُوْلِ سَبِيْلًا ‐ يَا وَيْلَتٰى لَيْتَنِيْ لَمْ اَتَّخِذْ فُلَانًا خَلِيْلًا ‐ لَقَدْ اَضَلَّنِيْ عَنِ الذِّكْرِ بَعْدَ اِذْ جَآءَنِيْ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِلْاِنْسَانِ خَذُوْلًا
সেদিন যালিম ব্যক্তি নিজ হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে, হায় আমি যদি রাসূলের সাথে সৎপথ অবলম্বন করতাম! হায় দুর্ভোগ আমার, আমি যদি অমুককে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করতাম! আমার নিকট উপদেশ পৌঁছার পরও সে আমাকে বিভ্রান্ত করেছিল। আর শয়তান তো মানুষের জন্য মহাপ্রতারক। (সূরা ফুরক্বান, ২৭- ২৯)
وَالْمُؤْمِنُوْنَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍ
মুমিন নর ও মুমিন নারী একে অপরের বন্ধু। (সূরা তাওবা- ৭১)
সৎ বন্ধুত্ব পরকালেও ঠিক থাকবে :
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ سَيَجْعَلُ لَهُمُ الرَّحْمٰنُ وُدًّا
যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে দয়াময় অবশ্যই তাদের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি করে দেবেন। (সূরা মারইয়াম- ৯৬)
কাফিরদের বন্ধু হলো তাগুত ও শয়তান :
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اَوْلِيَآؤُهُمُ الطَّاغُوْتُ
আর যারা কাফির তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত। (সূরা বাক্বারা- ২৫৭)
اِنَّا جَعَلْنَا الشَّيَاطِيْنَ اَوْلِيَآءَ لِلَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ
যারা ঈমান আনে না, শয়তানকে আমি তাদের অভিভাবক বানিয়ে দিয়েছি। (সূরা আ‘রাফ- ২৭)
যারা শয়তানকে বন্ধু বানায় তারা পরকালে আক্ষেপ করবে :
وَمَنْ يَّعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْمٰنِ نُقَيِّضْ لَهٗ شَيْطَانًا فَهُوَ لَهٗقَرِيْنٌ ‐ وَاِنَّهُمْ لَيَصُدُّوْنَهُمْ عَنِ السَّبِيْلِ وَيَحْسَبُوْنَ اَنَّهُمْ مُّهْتَدُوْنَ ‐ حَتّٰۤى اِذَا جَآءَنَا قَالَ يَا لَيْتَ بَيْنِيْ وَبَيْنَكَ بُعْدَ الْمَشْرِقَيْنِ فَبِئْسَ الْقَرِيْنُ
যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ হয়ে যায়, আমি তার জন্য একটি শয়তান নিয়োজিত করি, অতঃপর সে-ই হয় তার সহচর। তারাই (শয়তানরা) মানুষকে সৎপথ হতে বিরত রাখে, অথচ মানুষ মনে করে যে, তারা হেদায়াতের উপর পরিচালিত হচ্ছে। অবশেষে যখন সে আমার নিকট উপস্থিত হবে, তখন সে (শয়তানকে) বলবে, হায়! আমার ও তোমার মধ্যে যদি পূর্ব ও পশ্চিমের (মতো) ব্যবধান থাকত! সুতরাং সে কতই না নিকৃষ্ট সহচর! (সূরা যুখরুফ, ৩৬-৩৮)
যালিমরা একে অপরের বন্ধু :
وَاِنَّ الظَّالِمِيْنَ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍۚ وَاللهُ وَلِيُّ الْمُتَّقِيْنَ
নিশ্চয় যালিমরা একে অপরের বন্ধু; আর আল্লাহ মুত্তাক্বীদের বন্ধু। (সূরা জাসিয়া- ১৯)
কাফিররাও একে অন্যের বন্ধু :
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍ
যারা কুফরী করেছে তারা এক অপরের বন্ধু। (সূরা আনফাল- ৭৩)
এরা সবাই শয়তানের দল :
اِسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَاَنْسَاهُمْ ذِكْرَ اللهِؕ اُولٰٓئِكَ حِزْبُ الشَّيْطَانِؕ اَ لَاۤ اِنَّ حِزْبَ الشَّيْطَانِ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ
শয়তান তাদের উপর পরিপূর্ণভাবে আধিপত্য বিস্তার করে নিয়েছে এবং সে তাদেরকে আল্লাহর স্মরণ হতে ভুলিয়ে দিয়েছে; এরাই তো শয়তানের দল। জেনে রেখো, নিশ্চয় শয়তানের দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (সূরা মুজাদালা- ১৯)
খারাপ লোকের সঙ্গী খারাপ লোকই হয়ে থাকে :
وَقَيَّضْنَا لَهُمْ قُرَنَآءَ فَزَيَّنُوْا لَهُمْ مَّا بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَحَقَّ عَلَيْهِمُ الْقَوْلُ فِۤيْ اُمَمٍ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِمْ مِّنَ الْجِنِّ وَالْاِنْسِۚ اِنَّهُمْ كَانُوْا خَاسِرِيْنَ
আমি তাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম সহচরবৃন্দ, যারা তাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে যা আছে তা তাদের দৃষ্টিতে শোভন করে দেখিয়েছিল। অবশেষে তাদের ব্যাপারেও তাদের পূর্ববর্তী জিন ও মানুষের ন্যায় আল্লাহর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়েছে। নিশ্চয় তারা ছিল ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা হা-মীম সাজদা- ২৫)
ব্যাখ্যা : এটা আল্লাহর স্বতন্ত্র ও স্থায়ী বিধান। খারাপ নিয়ত ও খারাপ আকাঙ্ক্ষা পোষণকারী মানুষের জন্য তিনি কখনো ভালো সঙ্গী দেন না। তার ঝোঁক ও আগ্রহ অনুসারে তিনি তাকে খারাপ সঙ্গীই জুটিয়ে দেন। সে যতই দুষ্কর্মের গহবরে নামতে থাকে ততই জঘন্যতর মানুষ ও শয়তান তার সহচর ও পরামর্শদাতা হতে থাকে। কারো কারো উক্তি, অমুক ব্যক্তি নিজে খুব ভালো কিন্তু তার বন্ধুবান্ধব জুটেছে খারাপ- এটা বাস্তবের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। প্রকৃতির বিধান হলো, প্রতিটি ব্যক্তি নিজে যেমন তার বন্ধুও জোটে ঠিক তেমনি। একজন সৎ ও নেক মানুষের সাহচর্যে খারাপ মানুষ আসলেও বেশি সময় সে তার সাথে থাকতে পারে না। অনুরূপ অসৎ উদ্দেশ্যে কর্মরত একজন দুষ্কর্মশীল মানুষের সাথে হঠাৎ সৎ মানুষের বন্ধুত্ব হলেও তা বেশি সময় টিকে থাকতে পারে না।
ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদের সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে না :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُوْدَ وَالنَّصَارٰۤى اَوْلِيَآءَ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍؕ وَمَنْ يَّتَوَلَّهُمْ مِّنْكُمْ فَاِنَّهٗ مِنْهُمْؕ اِنَّ اللهَ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। কেননা তারা একে অপরের বন্ধু (কিন্তু তারা উভয়েই তোমাদের শত্রু)। সুতরাং তোমাদের মধ্য থেকে যে কেউ তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে, সে তাদেরই একজন বলে গণ্য হবে। নিশ্চয় আল্লাহ অত্যাচারীদেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (সূরা মায়েদা- ৫১)
ইসলামকে নিয়ে তামাশাকারীদের সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে না :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوا الَّذِيْنَ اتَّخَذُوْا دِيْنَكُمْ هُزُوًا وَّلَعِبًا مِّنَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَالْكُفَّارَ اَوْلِيَآءَۚ وَاتَّقُوا اللهَ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
হে মুমিনগণ! তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে যারা তোমাদের দ্বীনকে হাসি-তামাশা ও ক্রীড়ার বস্তু হিসেবে গ্রহণ করে তোমরা তাদেরকে ও কাফিরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। আর আল্লাহকে ভয় করো, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক। (সূরা মায়েদা- ৫৭)
কাফিরদেরকে বন্ধু বানানো যাবে না :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوا الْكَافِرِيْنَ اَوْلِيَآءَ مِنْ دُوْنِ الْمُؤْمِنِيْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা মুমিনদের পরিবর্তে কাফিরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। (সূরা নিসা- ১৪৪)
কাফিরদের সাথে বন্ধুত্বকারীরা মুনাফিক :
بَشِّرِ الْمُنَافِقِيْنَ بِاَنَّ لَهُمْ عَذَابًا اَلِيْمًا ‐ اَلَّذِيْنَ يَتَّخِذُوْنَ الْكَافِرِيْنَ اَوْلِيَآءَ مِنْ دُوْنِ الْمُؤْمِنِيْنَؕ اَيَبْتَغُوْنَ عِنْدَهُمُ الْعِزَّةَ فَاِنَّ الْعِزَّةَ لِلّٰهِ جَمِيْعًا
মুনাফিকদেরকে সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য মর্মান্তিক শাস্তি প্রস্তুত রয়েছে। যারা মুমিনদের পরিবর্তে কাফিরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে, তারা কি তাদের নিকট সম্মান কামনা করে? নিশ্চয় সমস্ত সম্মান আল্লাহরই। (সূরা নিসা- ১৩৮, ১৩৯)
ইসলামের দুশমন যতই ঘনিষ্ট হোক বন্ধুত্ব চলবে না :
لَا تَجِدُ قَوْمًا يُّؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ يُوَآدُّوْنَ مَنْ حَآدَّ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَلَوْ كَانُوْاۤ اٰبَآءَهُمْ اَوْ اَبْنَآءَهُمْ اَوْ اِخْوَانَهُمْ اَوْ عَشِيْرَتَهُمْ
যারা আল্লাহর প্রতি ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, তাদেরকে আপনি এমন লোকদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে, যদিও তারা তাদের পিতা অথবা পুত্র অথবা ভাই কিংবা তাদের গোষ্ঠীর কেউ হয়। (সূরা মুজাদালা- ২২)
বন্ধু গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوْا بِطَانَةً مِّنْ دُوْنِكُمْ لَا يَأْلُوْنَكُمْ خَبَالًاؕ وَدُّوْا مَا عَنِتُّمْ قَدْ بَدَتِ الْبَغْضَآءُ مِنْ اَفْوَاهِهِمْۚ وَمَا تُخْفِيْ صُدُوْرُهُمْ اَكْبَرُ قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ الْاٰيَاتِ اِنْ كُنْتُمْ تَعْقِلُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে বাদ দিয়ে অন্যকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তারা তোমাদের ব্যাপারে তাই কামনা করে, যা তোমাদের জন্য কষ্টদায়ক। কোন কোন সময় তাদের মুখ থেকেই এই বিদ্বেষ প্রকাশ পেয়ে যায়। তাদের অন্তর যা লুকিয়ে রেখেছে তা আরো জঘন্য। আর আমি তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ বর্ণনা করে দিয়েছি, যাতে করে তোমরা অনুধাবন করতে পার। (সূরা আলে ইমরান- ১১৮)
অসৎ বন্ধু সৎকর্মে বাধা হয়ে যায় :
يَا وَيْلَتٰى لَيْتَنِيْ لَمْ اَتَّخِذْ فُلَانًا خَلِيْلًا ‐ لَقَدْ اَضَلَّنِيْ عَنِ الذِّكْرِ بَعْدَ اِذْ جَآءَنِيْؕ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِلْاِنْسَانِ خَذُوْلًا
হায় আমার দুর্ভোগ! আমি যদি অমুককে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করতাম! (কেননা) আমার নিকট উপদেশ পৌঁছার পরও সে আমাকে বিভ্রান্ত করেছিল। আর শয়তান তো মানুষের জন্য মহাপ্রতারক। (সূরা ফুরক্বান- ২৮, ২৯)
অসৎ বন্ধুত্ব পরকালে শত্রুতায় পরিণত হবে :
اَ لْاَخِلَّآءُ يَوْمَئِذٍ ۢبَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ اِلَّا الْمُتَّقِيْنَ
সেদিন বন্ধুরা একে অপরের শত্রুতে পরিণত হবে, তবে মুত্তাক্বীরা ব্যতীত। (সূরা যুখরুফ- ৬৭)
ব্যাখ্যা : পরকালে কেবল সেসব বন্ধুত্ব টিকে থাকবে, যা নেকী ও আল্লাহভীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। অন্যসব বন্ধুত্ব শত্রুতায় রূপান্তরিত হবে। আজ যারা গোমরাহী, যুলুম-অত্যাচার এবং গোনাহের কাজে একে অপরের বন্ধু ও সহযোগী, কাল কিয়ামতের দিন তারাই একে অপরের প্রতি দোষারোপ করবে এবং নিজেকে রক্ষার প্রচেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে পড়বে। এ বিষয়টি কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় বার বার বলা হয়েছে। যাতে প্রত্যেকটি মানুষ এ পৃথিবীতেই ভালোভাবে ভেবে চিন্তে দেখতে সক্ষম হয় যে, কোন প্রকৃতির লোকদের বন্ধু হওয়া তাদের জন্য কল্যাণকর এবং কোন প্রকৃতির লোকদের বন্ধু হওয়া ধ্বংসাত্মক।
অসৎ বন্ধুত্ব পরকালে পরিতাপের কারণ হয়ে দাঁড়াবে :
وَيَوْمَ يَعَضُّ الظَّالِمُ عَلٰى يَدَيْهِ يَقُوْلُ يَا لَيْتَنِى اتَّخَذْتُ مَعَ الرَّسُوْلِ سَبِيْلًا ‐ يَا وَيْلَتٰى لَيْتَنِيْ لَمْ اَتَّخِذْ فُلَانًا خَلِيْلًا ‐ لَقَدْ اَضَلَّنِيْ عَنِ الذِّكْرِ بَعْدَ اِذْ جَآءَنِيْ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِلْاِنْسَانِ خَذُوْلًا
সেদিন যালিম ব্যক্তি নিজ হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে, হায় আমি যদি রাসূলের সাথে সৎপথ অবলম্বন করতাম! হায় দুর্ভোগ আমার, আমি যদি অমুককে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করতাম! আমার নিকট উপদেশ পৌঁছার পরও সে আমাকে বিভ্রান্ত করেছিল। আর শয়তান তো মানুষের জন্য মহাপ্রতারক। (সূরা ফুরক্বান, ২৭- ২৯)
কোন মুসলিমের সাথে সাক্ষাৎ হলে সালাম দেয়া উচিৎ :
وَاِذَا جَآءَكَ الَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِاٰيَاتِنَا فَقُلْ سَلَامٌ عَلَيْكُمْ
যারা আমার আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান আনে, যখন তারা তোমার নিকট আসে তখন তুমি তাদেরকে বলো, তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। (সূরা আন‘আম- ৫৪)
সালামের জবাবে শব্দ একটু বাড়িয়ে বলা সুন্নাত :
وَاِذَا حُيِّيْتُمْ بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّوْا بِاَحْسَنَ مِنْهَاۤ اَوْ رُدُّوْهَا
তোমাদেরকে যখন সালাম দেয়া হয়, তখন তোমরাও তার চেয়ে আরো উত্তমভাবে উত্তর প্রদান করবে অথবা তারই অনুরূপ করবে। (সূরা নিসা- ৮৬)
যেমন কেউ اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ বললে তার উত্তরে وَعَلَيْكُمُ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهٗ বলা।
ঘরে প্রবেশের সময় সালাম দিয়ে প্রবেশ করতে হবে :
فَاِذَا دَخَلْتُمْ بُيُوْتًا فَسَلِّمُوْا عَلٰۤى اَنْفُسِكُمْ تَحِيَّةً مِّنْ عِنْدِ اللهِ مُبَارَكَةً طَيِّبَةً
যখন তোমরা গৃহে প্রবেশ করবে, তখন তোমরা তোমাদের স্বজনদের প্রতি অভিবাদন হিসেবে সালাম প্রদান করবে, যা আল্লাহর নিকট কল্যাণময় ও পবিত্র। (সূরা নূর- ৬১)
وَاِذَا جَآءَكَ الَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِاٰيَاتِنَا فَقُلْ سَلَامٌ عَلَيْكُمْ
যারা আমার আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান আনে, যখন তারা তোমার নিকট আসে তখন তুমি তাদেরকে বলো, তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। (সূরা আন‘আম- ৫৪)
সালামের জবাবে শব্দ একটু বাড়িয়ে বলা সুন্নাত :
وَاِذَا حُيِّيْتُمْ بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّوْا بِاَحْسَنَ مِنْهَاۤ اَوْ رُدُّوْهَا
তোমাদেরকে যখন সালাম দেয়া হয়, তখন তোমরাও তার চেয়ে আরো উত্তমভাবে উত্তর প্রদান করবে অথবা তারই অনুরূপ করবে। (সূরা নিসা- ৮৬)
যেমন কেউ اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ বললে তার উত্তরে وَعَلَيْكُمُ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهٗ বলা।
ঘরে প্রবেশের সময় সালাম দিয়ে প্রবেশ করতে হবে :
فَاِذَا دَخَلْتُمْ بُيُوْتًا فَسَلِّمُوْا عَلٰۤى اَنْفُسِكُمْ تَحِيَّةً مِّنْ عِنْدِ اللهِ مُبَارَكَةً طَيِّبَةً
যখন তোমরা গৃহে প্রবেশ করবে, তখন তোমরা তোমাদের স্বজনদের প্রতি অভিবাদন হিসেবে সালাম প্রদান করবে, যা আল্লাহর নিকট কল্যাণময় ও পবিত্র। (সূরা নূর- ৬১)
অন্যের ঘরে প্রবেশ করার সময় সালামের মাধ্যমে অনুমতি চাইতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَدْخُلُوْا بُيُوْتًا غَيْرَ بُيُوْتِكُمْ حَتّٰى تَسْتَأْنِسُوْا وَتُسَلِّمُوْا عَلٰۤى اَهْلِهَا
হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য কারো গৃহে গৃহবাসীদের অনুমতি না নিয়ে এবং তাদেরকে সালাম না দিয়ে প্রবেশ করো না। (সূরা নূর- ২৭)
ব্যাখ্যা : অনুমতি চাওয়ার সবচেয়ে উত্তম নিয়ম হচ্ছে, যখন কোন ব্যক্তি কারো গৃহে অথবা আলোচনারত কোন জনসমষ্টিতে প্রবেশ করতে চাইবে তখন প্রথমে তার কাছে অনুমতি গ্রহণের জন্য এভাবে সম্ভোধন করবে - اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ اَاَدْخُلُ (আসসালামু আলাইকুম আআদখুলু) অর্থাৎ তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক, আমি কি প্রবেশ করতে পারি? এভাবে তিনবার সম্ভোধনের পরও যদি সাড়া না পাওয়া যায়, তবে ফিরে যাবে এবং অন্য কোন অসৎ উপায় গ্রহণ করবে না। নবী ﷺ বলেছেন, ‘‘যদি তিনবার ডাক দেয়ার পরও জবাব না পাওয়া যায়, তাহলে ফিরে যাও।’’ (আবু দাউদ, হা/৫১৭৯; মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/১৭৩০; সহীহ মুসলিম, হা/৫৭৫১)
অনুমতি না পেলে ফিরে আসতে হবে :
فَاِنْ لَّمْ تَجِدُوْا فِيْهَاۤ اَحَدًا فَلَا تَدْخُلُوْهَا حَتّٰى يُؤْذَنَ لَكُمْۚ وَاِنْ قِيْلَ لَكُمُ ارْجِعُوْا فَارْجِعُوْا هُوَ اَزْكٰى لَكُمْؕ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ عَلِيْمٌ
যদি তোমরা গৃহে কাউকে না পাও তাহলে তাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া হয়। যদি তোমাদেরকে বলা হয়, ফিরে যাও, তবে তোমরা ফিরে যাবে; এটাই তোমাদের জন্য উত্তম। আর তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত। (সূরা নূর- ২৮)
যেখানে সাধারণ অনুমতি আছে সেখানে প্রবেশ করা যাবে :
لَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ اَنْ تَدْخُلُوْا بُيُوْتًا غَيْرَ مَسْكُوْنَةٍ فِيْهَا مَتَاعٌ لَّكُمْؕ وَاللهُ يَعْلَمُ مَا تُبْدُوْنَ وَمَا تَكْتُمُوْنَ
যে গৃহে কেউ বসবাস করে না এবং যেখানে তোমাদের দ্রব্যসামগ্রী রয়েছে, সেখানে তোমাদের প্রবেশে কোন গোনাহ নেই। আর তোমরা যা প্রকাশ কর এবং যা গোপন কর আল্লাহ তা জানেন। (সূরা নূর- ২৯)
বালক-বালিকাদেরকেও তিনটি সময়ে অনুমতি নিতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لِيَسْتَأْذِنْكُمُ الَّذِيْنَ مَلَكَتْ اَيْمَانُكُمْ وَالَّذِيْنَ لَمْ يَبْلُغُوا الْحُلُمَ مِنْكُمْ ثَلَاثَ مَرَّاتٍؕ مِنْ قَبْلِ صَلَاةِ الْفَجْرِ وَحِيْنَ تَضَعُوْنَ ثِيَابَكُمْ مِّنَ الظَّهِيْرَةِ وَمِنْ ۢبَعْدِ صَلَاةِ الْعِشَآءِ ثَلَاثُ عَوْرَاتٍ لَّكُمْؕ لَيْسَ عَلَيْكُمْ وَلَا عَلَيْهِمْ جُنَاحٌ ۢبَعْدَهُنَّؕ طَوَّافُوْنَ عَلَيْكُمْ بَعْضُكُمْ عَلٰى بَعْضٍؕ كَذٰلِكَ يُبَيِّنُ اللهُ لَكُمُ الْاٰيَاتِؕ وَاللهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ
হে মুমিনগণ! তোমাদের মালিকানাধীন দাস-দাসী এবং তোমাদের মধ্যে যারা প্রাপ্তবয়স্ক হয়নি তারা যেন তোমাদের কক্ষে প্রবেশ করতে তিনটি সময়ে অনুমতি গ্রহণ করে। ফজরের সালাতের পূর্বে, দ্বিপ্রহরে- যখন তোমরা তোমাদের পোশাক খুলে রাখ এবং এশার সালাতের পর; এ তিনটি সময় তোমাদের গোপনীয়তার সময়। এ তিন সময় ব্যতীত অন্য সময়ে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করলে তোমাদের জন্য এবং তাদের জন্য কোন দোষ নেই। তোমাদের একজনকে অপরজনের নিকট তো যাতায়াত করতেই হয়। এভাবে আল্লাহ তোমাদের নিকট তাঁর নিদর্শনসমূহ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা নূর- ৫৮)
ব্যাখ্যা : এর অর্থ হচ্ছে এ সময়গুলোতে তোমরা একাকী বা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে এমন অবস্থায় থাক, যে অবস্থায় গৃহের ছেলেমেয়ে বা চাকর-বাকরদের হঠাৎ তোমাদের কাছে চলে আসা সংগত নয়। কাজেই এ তিন সময়ে তারা যখন তোমাদের নির্জন স্থানে আসতে চায়, তখন তাদেরকে অনুমতি নেয়ার নির্দেশ দাও। অর্থাৎ এ তিন সময় ছাড়া অন্য সময় নাবালেগ ছেলেমেয়েরা এবং গৃহস্বামী ও গৃহকর্ত্রীর মালিকানাধীন গোলাম ও বাঁদীরা সবসময় তাদের রুমে বা নির্জন স্থানে বিনা অনুমতিতে যেতে পারে। এ সময় যদি তোমরা কোন অসতর্ক অবস্থায় থাক এবং তারা অনুমতি ছাড়াই এসে যায়, তাহলে তাদের হুমকি ধমকি দেয়ার অধিকার তোমাদের নেই। কারণ কাজের সময় অসতর্ক অবস্থায় থাকা তোমাদের নিজেদেরই বোকামী। তবে যদি তোমরা তাদেরকে এ ব্যাপারে কোন আদব-কায়দা ও আচার-আচরণ শিক্ষা দিয়ে থাক এবং এরপরও তারা এ তিন সময়ের কোন এক সময় তোমাদের অনুমতি ছাড়াই এসে পড়ে, তাহলে তারা দোষী হবে।
তবে বালেগ হয়ে গেলে সবসময় অনুমতি নিতে হবে :
وَاِذَا بَلَغَ الْاَطْفَالُ مِنْكُمُ الْحُلُمَ فَلْيَسْتَأْذِنُوْا كَمَا اسْتَأْذَنَ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ
তোমাদের সন্তান-সন্ততি প্রাপ্তবয়স্ক হলে তারাও যেন অনুমতি প্রার্থনা করে, যেমন অনুমতি প্রার্থনা করে থাকে তাদের পূর্ববর্তীরা। (সূরা নূর- ৫৯)
কারো ঘরে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে পালনীয় বিধান :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَدْخُلُوْا بُيُوْتَ النَّبِيِّ اِلَّاۤ اَنْ يُّؤْذَنَ لَكُمْ اِلٰى طَعَامٍ غَيْرَ نَاظِرِيْنَ اِنَاهُ وَلٰكِنْ اِذَا دُعِيْتُمْ فَادْخُلُوْا فَاِذَا طَعِمْتُمْ فَانْتَشِرُوْا وَلَا مُسْتَأْنِسِيْنَ لِحَدِيْثٍؕ اِنَّ ذٰلِكُمْ كَانَ يُؤْذِى النَّبِيَّ فَيَسْتَحْيِيْ مِنْكُمْ وَاللهُ لَا يَسْتَحْيِيْ مِنَ الْحَقِّؕ وَاِذَا سَاَلْتُمُوْهُنَّ مَتَاعًا فَاسْاَلُوْهُنَّ مِنْ وَّرَآءِ حِجَابٍؕ ذٰلِكُمْ اَطْهَرُ لِقُلُوْبِكُمْ وَقُلُوْبِهِنَّؕ وَمَا كَانَ لَكُمْ اَنْ تُؤْذُوْا رَسُوْلَ اللهِ وَلَاۤ اَنْ تَنْكِحُوْاۤ اَزْوَاجَهٗ مِنْ ۢبَعْدِهۤ اَبَدًاؕ اِنَّ ذٰلِكُمْ كَانَ عِنْدَ اللهِ عَظِيْمًا
হে ঈমানদারগণ! তোমরা নবীর ঘরে অনুমতি ব্যতীত প্রবেশ করবে না, তবে তোমাদেরকে খাওয়ার জন্য ডাকা হলে তোমরা প্রবেশ করবে এবং খাওয়া শেষ হলে নিজেরাই চলে যাবে, কথাবার্তায় মাশগুল হয়ে পড়বে না। তোমাদের এ আচরণ অবশ্যই নবীকে কষ্ট দেয়। তিনি তোমাদেরকে উঠিয়ে দিতে সংকোচবোধ করেন। কিন্তু আল্লাহ সত্য বলতে সংকোচবোধ করেন না। তোমরা যখন তাঁর স্ত্রীদের কাছ থেকে কোনকিছু চাইবে তখন পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের এবং তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্র উপায়। আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয়া এবং তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রীদেরকে বিবাহ করা তোমাদের কারো জন্য বৈধ নয়। এটা আল্লাহর কাছে গুরুতর অপরাধ। (সূরা আহযাব- ৫৩)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ এর পরিবারকে কেন্দ্র করে এ আয়াতে বেশ কয়েকটি সামাজিক আদব কায়দা শেখানো হয়েছে :
১. কারো ঘরে প্রবেশ করার পূর্বে অনুমতি নেয়া।
২. অযথা খাওয়ার সময় কারো মেহমান না হওয়া।
৩. কারো ঘরে গেলে প্রয়োজন শেষে চলে আসা।
৪. নারীদের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাওয়া।
আরববাসীদের মধ্যে যেসব সভ্যতা বিবর্জিত আচরণের প্রচলন ছিল তার মধ্যে এটাও ছিল যে, কোন বন্ধু বা পরিচিত লোকের গৃহে তারা ঠিক খাবারের সময় পৌঁছে যেত। অথবা তার গৃহে এসে বসে থাকত এমনকি খাবার সময় এসে যেত। যখন যতজন লোকই আসুক সবসময় তৎক্ষনাৎ তাদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করার মতো সামর্থ্য সবাই রাখে না। আল্লাহ এ অভদ্র আচরণ করতে তাদেরকে নিষেধ করেন এবং এ হুকুম দেন যে, কোন ব্যক্তির গৃহে খাওয়ার জন্য তখনই যেতে হবে যখন গৃহকর্তা খাওয়ার দাওয়াত দেবে। এ হুকুম নবী ﷺ এর জন্য নির্দিষ্ট ছিল না বরং এটি ছিল সকলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। নবী ﷺ এর গৃহে এ নিয়ম এজন্যই চালু করা হয়েছিল, যেন তা মুসলিমদের সাংস্কৃতিক জীবনে নিয়মে পরিণত হয়ে যায়। তাদের আরো একটি অসভ্য আচরণ ছিল যে, কোন কোন লোক দাওয়াতে এসে খাওয়া সেরে এমনভাবে আলাপ জুড়ে দিত যে, মনে হয় এ আলাপ আর শেষ হবে না। এতে গৃহবাসীদের কোন অসুবিধা হচ্ছে কি না তার কোন পরোয়াই করত না। এসব ভদ্রতা বিবর্জিত আচরণ নবী ﷺ কে খুবই কষ্ট দিত, কিন্তু তিনি নিজের উদার স্বভাবের কারণে এসব সহ্য করে যেতেন। ফলে আল্লাহ তা‘আলা এ অভ্যাসগুলো সম্পর্কে লোকদেরকে সতর্ক করে আয়াত নাযিল করেন এবং এসব থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন।
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَدْخُلُوْا بُيُوْتًا غَيْرَ بُيُوْتِكُمْ حَتّٰى تَسْتَأْنِسُوْا وَتُسَلِّمُوْا عَلٰۤى اَهْلِهَا
হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য কারো গৃহে গৃহবাসীদের অনুমতি না নিয়ে এবং তাদেরকে সালাম না দিয়ে প্রবেশ করো না। (সূরা নূর- ২৭)
ব্যাখ্যা : অনুমতি চাওয়ার সবচেয়ে উত্তম নিয়ম হচ্ছে, যখন কোন ব্যক্তি কারো গৃহে অথবা আলোচনারত কোন জনসমষ্টিতে প্রবেশ করতে চাইবে তখন প্রথমে তার কাছে অনুমতি গ্রহণের জন্য এভাবে সম্ভোধন করবে - اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ اَاَدْخُلُ (আসসালামু আলাইকুম আআদখুলু) অর্থাৎ তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক, আমি কি প্রবেশ করতে পারি? এভাবে তিনবার সম্ভোধনের পরও যদি সাড়া না পাওয়া যায়, তবে ফিরে যাবে এবং অন্য কোন অসৎ উপায় গ্রহণ করবে না। নবী ﷺ বলেছেন, ‘‘যদি তিনবার ডাক দেয়ার পরও জবাব না পাওয়া যায়, তাহলে ফিরে যাও।’’ (আবু দাউদ, হা/৫১৭৯; মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/১৭৩০; সহীহ মুসলিম, হা/৫৭৫১)
অনুমতি না পেলে ফিরে আসতে হবে :
فَاِنْ لَّمْ تَجِدُوْا فِيْهَاۤ اَحَدًا فَلَا تَدْخُلُوْهَا حَتّٰى يُؤْذَنَ لَكُمْۚ وَاِنْ قِيْلَ لَكُمُ ارْجِعُوْا فَارْجِعُوْا هُوَ اَزْكٰى لَكُمْؕ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ عَلِيْمٌ
যদি তোমরা গৃহে কাউকে না পাও তাহলে তাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া হয়। যদি তোমাদেরকে বলা হয়, ফিরে যাও, তবে তোমরা ফিরে যাবে; এটাই তোমাদের জন্য উত্তম। আর তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত। (সূরা নূর- ২৮)
যেখানে সাধারণ অনুমতি আছে সেখানে প্রবেশ করা যাবে :
لَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ اَنْ تَدْخُلُوْا بُيُوْتًا غَيْرَ مَسْكُوْنَةٍ فِيْهَا مَتَاعٌ لَّكُمْؕ وَاللهُ يَعْلَمُ مَا تُبْدُوْنَ وَمَا تَكْتُمُوْنَ
যে গৃহে কেউ বসবাস করে না এবং যেখানে তোমাদের দ্রব্যসামগ্রী রয়েছে, সেখানে তোমাদের প্রবেশে কোন গোনাহ নেই। আর তোমরা যা প্রকাশ কর এবং যা গোপন কর আল্লাহ তা জানেন। (সূরা নূর- ২৯)
বালক-বালিকাদেরকেও তিনটি সময়ে অনুমতি নিতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لِيَسْتَأْذِنْكُمُ الَّذِيْنَ مَلَكَتْ اَيْمَانُكُمْ وَالَّذِيْنَ لَمْ يَبْلُغُوا الْحُلُمَ مِنْكُمْ ثَلَاثَ مَرَّاتٍؕ مِنْ قَبْلِ صَلَاةِ الْفَجْرِ وَحِيْنَ تَضَعُوْنَ ثِيَابَكُمْ مِّنَ الظَّهِيْرَةِ وَمِنْ ۢبَعْدِ صَلَاةِ الْعِشَآءِ ثَلَاثُ عَوْرَاتٍ لَّكُمْؕ لَيْسَ عَلَيْكُمْ وَلَا عَلَيْهِمْ جُنَاحٌ ۢبَعْدَهُنَّؕ طَوَّافُوْنَ عَلَيْكُمْ بَعْضُكُمْ عَلٰى بَعْضٍؕ كَذٰلِكَ يُبَيِّنُ اللهُ لَكُمُ الْاٰيَاتِؕ وَاللهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ
হে মুমিনগণ! তোমাদের মালিকানাধীন দাস-দাসী এবং তোমাদের মধ্যে যারা প্রাপ্তবয়স্ক হয়নি তারা যেন তোমাদের কক্ষে প্রবেশ করতে তিনটি সময়ে অনুমতি গ্রহণ করে। ফজরের সালাতের পূর্বে, দ্বিপ্রহরে- যখন তোমরা তোমাদের পোশাক খুলে রাখ এবং এশার সালাতের পর; এ তিনটি সময় তোমাদের গোপনীয়তার সময়। এ তিন সময় ব্যতীত অন্য সময়ে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করলে তোমাদের জন্য এবং তাদের জন্য কোন দোষ নেই। তোমাদের একজনকে অপরজনের নিকট তো যাতায়াত করতেই হয়। এভাবে আল্লাহ তোমাদের নিকট তাঁর নিদর্শনসমূহ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা নূর- ৫৮)
ব্যাখ্যা : এর অর্থ হচ্ছে এ সময়গুলোতে তোমরা একাকী বা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে এমন অবস্থায় থাক, যে অবস্থায় গৃহের ছেলেমেয়ে বা চাকর-বাকরদের হঠাৎ তোমাদের কাছে চলে আসা সংগত নয়। কাজেই এ তিন সময়ে তারা যখন তোমাদের নির্জন স্থানে আসতে চায়, তখন তাদেরকে অনুমতি নেয়ার নির্দেশ দাও। অর্থাৎ এ তিন সময় ছাড়া অন্য সময় নাবালেগ ছেলেমেয়েরা এবং গৃহস্বামী ও গৃহকর্ত্রীর মালিকানাধীন গোলাম ও বাঁদীরা সবসময় তাদের রুমে বা নির্জন স্থানে বিনা অনুমতিতে যেতে পারে। এ সময় যদি তোমরা কোন অসতর্ক অবস্থায় থাক এবং তারা অনুমতি ছাড়াই এসে যায়, তাহলে তাদের হুমকি ধমকি দেয়ার অধিকার তোমাদের নেই। কারণ কাজের সময় অসতর্ক অবস্থায় থাকা তোমাদের নিজেদেরই বোকামী। তবে যদি তোমরা তাদেরকে এ ব্যাপারে কোন আদব-কায়দা ও আচার-আচরণ শিক্ষা দিয়ে থাক এবং এরপরও তারা এ তিন সময়ের কোন এক সময় তোমাদের অনুমতি ছাড়াই এসে পড়ে, তাহলে তারা দোষী হবে।
তবে বালেগ হয়ে গেলে সবসময় অনুমতি নিতে হবে :
وَاِذَا بَلَغَ الْاَطْفَالُ مِنْكُمُ الْحُلُمَ فَلْيَسْتَأْذِنُوْا كَمَا اسْتَأْذَنَ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ
তোমাদের সন্তান-সন্ততি প্রাপ্তবয়স্ক হলে তারাও যেন অনুমতি প্রার্থনা করে, যেমন অনুমতি প্রার্থনা করে থাকে তাদের পূর্ববর্তীরা। (সূরা নূর- ৫৯)
কারো ঘরে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে পালনীয় বিধান :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَدْخُلُوْا بُيُوْتَ النَّبِيِّ اِلَّاۤ اَنْ يُّؤْذَنَ لَكُمْ اِلٰى طَعَامٍ غَيْرَ نَاظِرِيْنَ اِنَاهُ وَلٰكِنْ اِذَا دُعِيْتُمْ فَادْخُلُوْا فَاِذَا طَعِمْتُمْ فَانْتَشِرُوْا وَلَا مُسْتَأْنِسِيْنَ لِحَدِيْثٍؕ اِنَّ ذٰلِكُمْ كَانَ يُؤْذِى النَّبِيَّ فَيَسْتَحْيِيْ مِنْكُمْ وَاللهُ لَا يَسْتَحْيِيْ مِنَ الْحَقِّؕ وَاِذَا سَاَلْتُمُوْهُنَّ مَتَاعًا فَاسْاَلُوْهُنَّ مِنْ وَّرَآءِ حِجَابٍؕ ذٰلِكُمْ اَطْهَرُ لِقُلُوْبِكُمْ وَقُلُوْبِهِنَّؕ وَمَا كَانَ لَكُمْ اَنْ تُؤْذُوْا رَسُوْلَ اللهِ وَلَاۤ اَنْ تَنْكِحُوْاۤ اَزْوَاجَهٗ مِنْ ۢبَعْدِهۤ اَبَدًاؕ اِنَّ ذٰلِكُمْ كَانَ عِنْدَ اللهِ عَظِيْمًا
হে ঈমানদারগণ! তোমরা নবীর ঘরে অনুমতি ব্যতীত প্রবেশ করবে না, তবে তোমাদেরকে খাওয়ার জন্য ডাকা হলে তোমরা প্রবেশ করবে এবং খাওয়া শেষ হলে নিজেরাই চলে যাবে, কথাবার্তায় মাশগুল হয়ে পড়বে না। তোমাদের এ আচরণ অবশ্যই নবীকে কষ্ট দেয়। তিনি তোমাদেরকে উঠিয়ে দিতে সংকোচবোধ করেন। কিন্তু আল্লাহ সত্য বলতে সংকোচবোধ করেন না। তোমরা যখন তাঁর স্ত্রীদের কাছ থেকে কোনকিছু চাইবে তখন পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের এবং তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্র উপায়। আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয়া এবং তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রীদেরকে বিবাহ করা তোমাদের কারো জন্য বৈধ নয়। এটা আল্লাহর কাছে গুরুতর অপরাধ। (সূরা আহযাব- ৫৩)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ এর পরিবারকে কেন্দ্র করে এ আয়াতে বেশ কয়েকটি সামাজিক আদব কায়দা শেখানো হয়েছে :
১. কারো ঘরে প্রবেশ করার পূর্বে অনুমতি নেয়া।
২. অযথা খাওয়ার সময় কারো মেহমান না হওয়া।
৩. কারো ঘরে গেলে প্রয়োজন শেষে চলে আসা।
৪. নারীদের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাওয়া।
আরববাসীদের মধ্যে যেসব সভ্যতা বিবর্জিত আচরণের প্রচলন ছিল তার মধ্যে এটাও ছিল যে, কোন বন্ধু বা পরিচিত লোকের গৃহে তারা ঠিক খাবারের সময় পৌঁছে যেত। অথবা তার গৃহে এসে বসে থাকত এমনকি খাবার সময় এসে যেত। যখন যতজন লোকই আসুক সবসময় তৎক্ষনাৎ তাদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করার মতো সামর্থ্য সবাই রাখে না। আল্লাহ এ অভদ্র আচরণ করতে তাদেরকে নিষেধ করেন এবং এ হুকুম দেন যে, কোন ব্যক্তির গৃহে খাওয়ার জন্য তখনই যেতে হবে যখন গৃহকর্তা খাওয়ার দাওয়াত দেবে। এ হুকুম নবী ﷺ এর জন্য নির্দিষ্ট ছিল না বরং এটি ছিল সকলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। নবী ﷺ এর গৃহে এ নিয়ম এজন্যই চালু করা হয়েছিল, যেন তা মুসলিমদের সাংস্কৃতিক জীবনে নিয়মে পরিণত হয়ে যায়। তাদের আরো একটি অসভ্য আচরণ ছিল যে, কোন কোন লোক দাওয়াতে এসে খাওয়া সেরে এমনভাবে আলাপ জুড়ে দিত যে, মনে হয় এ আলাপ আর শেষ হবে না। এতে গৃহবাসীদের কোন অসুবিধা হচ্ছে কি না তার কোন পরোয়াই করত না। এসব ভদ্রতা বিবর্জিত আচরণ নবী ﷺ কে খুবই কষ্ট দিত, কিন্তু তিনি নিজের উদার স্বভাবের কারণে এসব সহ্য করে যেতেন। ফলে আল্লাহ তা‘আলা এ অভ্যাসগুলো সম্পর্কে লোকদেরকে সতর্ক করে আয়াত নাযিল করেন এবং এসব থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন।
আমানতকে হকদারের কাছে পৌঁছে দিতে হবে :
اِنَّ اللهَ يَأْمُرُكُمْ اَنْ تُؤَدُّوا الْاَمَانَاتِ اِلٰۤى اَهْلِهَا
নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা আমানতকে তার হকদারের নিকট বুঝিয়ে দাও। (সূরা নিসা- ৫৮)
ব্যাখ্যা : আমানত এমন যাবতীয় চুক্তি, প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকারের অন্তর্ভুক্ত, যা মানুষ ও আল্লাহর মধ্যে অথবা মানুষ ও মানুষের মধ্যে কিংবা জাতি ও জাতির মধ্যে সম্পাদিত হয়েছে। মুমিনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, সে কখনো আমানতের খেয়ানত করে না এবং কখনো নিজের চুক্তি ও অঙ্গীকার ভঙ্গ করে না। কারণ যার মধ্যে আমানতদারীর গুণ নেই, তার মধ্যে ঈমান নেই এবং যার মধ্যে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার গুণ নেই, তার মধ্যে দ্বীনদারী নেই। (ইবনে হিববান, হা/১৯৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৪০৬)
আল্লাহ আমানতের খেয়ানত করতে নিষেধ করেছেন :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَخُوْنُوا اللهَ وَالرَّسُوْلَ وَتَخُوْنُوْاۤ اَمَانَاتِكُمْ وَاَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা জেনে-শুনে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে বিশ্বাস ভঙ্গ করো না এবং তোমাদের পরস্পরের আমানত সম্পর্কেও বিশ্বাস ভঙ্গ করো না। (সূরা আনফাল- ২৭)
আমানতের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করা উচিত :
فَاِنْ اَمِنَ بَعْضُكُمْ بَعْضًا فَلْيُؤَدِّ الَّذِى اؤْتُمِنَ اَمَانَتَهٗ وَلْيَتَّقِ اللّٰهَ رَبَّهٗ
যদি তোমরা পরস্পরের প্রতি বিশ্বাসী হও, তবে যার কাছে আমানত রাখা হয় সে যেন তা ফিরিয়ে দেয় এবং তার রবকে ভয় করে। (সূরা বাক্বারা- ২৮৩)
আমানত রক্ষা করা মুমিনের উত্তম গুণ :
وَالَّذِيْنَ هُمْ لِاَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُوْنَ
আর যারা নিজেদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে (তারাই তো মুমিন)। (সূরা মু’মিনূন- ৮)
اِنَّ اللهَ يَأْمُرُكُمْ اَنْ تُؤَدُّوا الْاَمَانَاتِ اِلٰۤى اَهْلِهَا
নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা আমানতকে তার হকদারের নিকট বুঝিয়ে দাও। (সূরা নিসা- ৫৮)
ব্যাখ্যা : আমানত এমন যাবতীয় চুক্তি, প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকারের অন্তর্ভুক্ত, যা মানুষ ও আল্লাহর মধ্যে অথবা মানুষ ও মানুষের মধ্যে কিংবা জাতি ও জাতির মধ্যে সম্পাদিত হয়েছে। মুমিনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, সে কখনো আমানতের খেয়ানত করে না এবং কখনো নিজের চুক্তি ও অঙ্গীকার ভঙ্গ করে না। কারণ যার মধ্যে আমানতদারীর গুণ নেই, তার মধ্যে ঈমান নেই এবং যার মধ্যে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার গুণ নেই, তার মধ্যে দ্বীনদারী নেই। (ইবনে হিববান, হা/১৯৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৪০৬)
আল্লাহ আমানতের খেয়ানত করতে নিষেধ করেছেন :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَخُوْنُوا اللهَ وَالرَّسُوْلَ وَتَخُوْنُوْاۤ اَمَانَاتِكُمْ وَاَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা জেনে-শুনে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে বিশ্বাস ভঙ্গ করো না এবং তোমাদের পরস্পরের আমানত সম্পর্কেও বিশ্বাস ভঙ্গ করো না। (সূরা আনফাল- ২৭)
আমানতের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করা উচিত :
فَاِنْ اَمِنَ بَعْضُكُمْ بَعْضًا فَلْيُؤَدِّ الَّذِى اؤْتُمِنَ اَمَانَتَهٗ وَلْيَتَّقِ اللّٰهَ رَبَّهٗ
যদি তোমরা পরস্পরের প্রতি বিশ্বাসী হও, তবে যার কাছে আমানত রাখা হয় সে যেন তা ফিরিয়ে দেয় এবং তার রবকে ভয় করে। (সূরা বাক্বারা- ২৮৩)
আমানত রক্ষা করা মুমিনের উত্তম গুণ :
وَالَّذِيْنَ هُمْ لِاَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُوْنَ
আর যারা নিজেদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে (তারাই তো মুমিন)। (সূরা মু’মিনূন- ৮)
অঙ্গীকার বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন-
(এক) মানুষ আল্লাহর সাথে যেসব অঙ্গীকার করেছে। এর গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি।
(দুই) মানুষ একে অপরের সাথে যেসব অঙ্গীকার করেছে এবং এর উপর আল্লাহর নামে কসম খেয়েছে। অথবা অন্য কোন উপায়ে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে নিজের কথার দৃঢ়তাকে নিশ্চিত করেছে। এটির গুরুত্ব দ্বিতীয় পর্যায়ে।
(তিন) আল্লাহর নাম না নিয়ে যে অঙ্গীকার করা হয়েছে। এর গুরুত্ব উপরের দু’প্রকার অঙ্গীকারের পরবর্তী পর্যায়ের। তবে উল্লিখিত সবকয়টি অঙ্গীকারই পালন করতে হবে। এর মধ্য থেকে কোন একটি ভঙ্গ করা বৈধ নয়।
ওয়াদা পালন করার নির্দেশ :
وَاَوْفُوْا بِعَهْدِ اللهِ اِذَا عَاهَدْتُّمْ وَلَا تَنْقُضُوا الْاَيْمَانَ بَعْدَ تَوْكِيْدِهَا
যখন তোমরা নিজেদের মধ্যে আল্লাহর নামে অঙ্গীকার করবে, তখন তোমরা তা পূর্ণ করবে এবং একবার পাকাপোক্ত করার পর সে অঙ্গীকার আর ভঙ্গ করবে না। (সূরা নাহল- ৯১)
وَبِعَهْدِ اللهِ اَوْفُوْا ذٰلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهٖ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ
তোমরা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করবে। এভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দেন, যেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ করতে পার। (সূরা আন‘আম- ১৫২)
ওয়াদা ভঙ্গ করতে নিষেধ করা হয়েছে :
وَلَا تَشْتَرُوْا بِعَهْدِ اللهِ ثَمَنًا قَلِيْلًاؕ اِنَّمَا عِنْدَ اللهِ هُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
তোমরা আল্লাহর সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে দিয়ো না। (জেনে রেখো) আল্লাহর নিকট যা আছে তোমাদের জন্য তাই উত্তম; যদি তোমরা জানতে! (সূরা নাহল- ৯৫)
ওয়াদা রক্ষার ব্যাপারে আল্লাহ জবাবদিহি করবেন :
وَاَوْفُوْا بِالْعَهْدِۚ اِنَّ الْعَهْدَ كَانَ مَسْئُوْلًا
আর তোমরা প্রতিশ্রুতি পালন করো, নিশ্চয় (বিচার দিবসে) প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩৪)
ওয়াদা ভঙ্গকারীরা জাহান্নামে যাবে :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَشْتَرُوْنَ بِعَهْدِ اللهِ وَاَيْمَانِهِمْ ثَمَنًا قَلِيْلًا اُولٰٓئِكَ لَا خَلَاقَ لَهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ وَلَا يُكَلِّمُهُمُ اللهُ وَلَا يَنْظُرُ اِلَيْهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يُزَكِّيْهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
নিশ্চয় যারা আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা এবং নিজেদের শপথের বিনিময়ে অল্প মূল্য গ্রহণ করে, পরকালে তাদের কোন অংশ থাকবে না। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের সাথে কোন কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদেরকে পবিত্রও করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরা আলে ইমরান- ৭৭)
ওয়াদা রক্ষা করা তাক্বওয়ার পরিচয় :
وَالْمُوْفُوْنَ بِعَهْدِهِمْ اِذَا عَاهَدُوْاۚ وَالصَّابِرِيْنَ فِى الْبَأْسَآءِ وَالضَّرَّآءِ وَحِيْنَ الْبَأْسِؕ اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ صَدَقُوْاؕ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُتَّقُوْنَ
যারা অঙ্গীকার করার পর তা পূর্ণ করে এবং যারা অভাবে, কষ্টে এবং যুদ্ধকালে ধৈর্যশীল, তারাই সত্যবাদী এবং তারাই মুত্তাক্বী। (সূরা বাক্বারা- ১৭৭)
ওয়াদা পালন করা জান্নাতীদের বিশেষ গুণ :
وَالَّذِيْنَ هُمْ لِاَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُوْنَ ‐ وَالَّذِيْنَ هُمْ عَلٰى صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُوْنَ ‐ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْوَارِثُوْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ يَرِثُوْنَ الْفِرْدَوْسَؕ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
আর যারা নিজেদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে এবং যারা নিজেদের সালাতে যত্নবান থাকে তারাই হবে ফিরদাউসের অধিকারী; সেখানে তারা চিরকাল (বসবাস) করবে। (সূরা মু’মিনূন, ৮-১১)
(এক) মানুষ আল্লাহর সাথে যেসব অঙ্গীকার করেছে। এর গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি।
(দুই) মানুষ একে অপরের সাথে যেসব অঙ্গীকার করেছে এবং এর উপর আল্লাহর নামে কসম খেয়েছে। অথবা অন্য কোন উপায়ে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে নিজের কথার দৃঢ়তাকে নিশ্চিত করেছে। এটির গুরুত্ব দ্বিতীয় পর্যায়ে।
(তিন) আল্লাহর নাম না নিয়ে যে অঙ্গীকার করা হয়েছে। এর গুরুত্ব উপরের দু’প্রকার অঙ্গীকারের পরবর্তী পর্যায়ের। তবে উল্লিখিত সবকয়টি অঙ্গীকারই পালন করতে হবে। এর মধ্য থেকে কোন একটি ভঙ্গ করা বৈধ নয়।
ওয়াদা পালন করার নির্দেশ :
وَاَوْفُوْا بِعَهْدِ اللهِ اِذَا عَاهَدْتُّمْ وَلَا تَنْقُضُوا الْاَيْمَانَ بَعْدَ تَوْكِيْدِهَا
যখন তোমরা নিজেদের মধ্যে আল্লাহর নামে অঙ্গীকার করবে, তখন তোমরা তা পূর্ণ করবে এবং একবার পাকাপোক্ত করার পর সে অঙ্গীকার আর ভঙ্গ করবে না। (সূরা নাহল- ৯১)
وَبِعَهْدِ اللهِ اَوْفُوْا ذٰلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهٖ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ
তোমরা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করবে। এভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দেন, যেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ করতে পার। (সূরা আন‘আম- ১৫২)
ওয়াদা ভঙ্গ করতে নিষেধ করা হয়েছে :
وَلَا تَشْتَرُوْا بِعَهْدِ اللهِ ثَمَنًا قَلِيْلًاؕ اِنَّمَا عِنْدَ اللهِ هُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
তোমরা আল্লাহর সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে দিয়ো না। (জেনে রেখো) আল্লাহর নিকট যা আছে তোমাদের জন্য তাই উত্তম; যদি তোমরা জানতে! (সূরা নাহল- ৯৫)
ওয়াদা রক্ষার ব্যাপারে আল্লাহ জবাবদিহি করবেন :
وَاَوْفُوْا بِالْعَهْدِۚ اِنَّ الْعَهْدَ كَانَ مَسْئُوْلًا
আর তোমরা প্রতিশ্রুতি পালন করো, নিশ্চয় (বিচার দিবসে) প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩৪)
ওয়াদা ভঙ্গকারীরা জাহান্নামে যাবে :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَشْتَرُوْنَ بِعَهْدِ اللهِ وَاَيْمَانِهِمْ ثَمَنًا قَلِيْلًا اُولٰٓئِكَ لَا خَلَاقَ لَهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ وَلَا يُكَلِّمُهُمُ اللهُ وَلَا يَنْظُرُ اِلَيْهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يُزَكِّيْهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
নিশ্চয় যারা আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা এবং নিজেদের শপথের বিনিময়ে অল্প মূল্য গ্রহণ করে, পরকালে তাদের কোন অংশ থাকবে না। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের সাথে কোন কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদেরকে পবিত্রও করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরা আলে ইমরান- ৭৭)
ওয়াদা রক্ষা করা তাক্বওয়ার পরিচয় :
وَالْمُوْفُوْنَ بِعَهْدِهِمْ اِذَا عَاهَدُوْاۚ وَالصَّابِرِيْنَ فِى الْبَأْسَآءِ وَالضَّرَّآءِ وَحِيْنَ الْبَأْسِؕ اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ صَدَقُوْاؕ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُتَّقُوْنَ
যারা অঙ্গীকার করার পর তা পূর্ণ করে এবং যারা অভাবে, কষ্টে এবং যুদ্ধকালে ধৈর্যশীল, তারাই সত্যবাদী এবং তারাই মুত্তাক্বী। (সূরা বাক্বারা- ১৭৭)
ওয়াদা পালন করা জান্নাতীদের বিশেষ গুণ :
وَالَّذِيْنَ هُمْ لِاَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُوْنَ ‐ وَالَّذِيْنَ هُمْ عَلٰى صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُوْنَ ‐ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْوَارِثُوْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ يَرِثُوْنَ الْفِرْدَوْسَؕ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
আর যারা নিজেদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে এবং যারা নিজেদের সালাতে যত্নবান থাকে তারাই হবে ফিরদাউসের অধিকারী; সেখানে তারা চিরকাল (বসবাস) করবে। (সূরা মু’মিনূন, ৮-১১)
পরস্পরের বিবাদ মীমাংসা করে দেয়া মুমিনের দায়িত্ব :
اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ اِخْوَةٌ فَاَصْلِحُوْا بَيْنَ اَخَوَيْكُمْ وَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ
মুমিনরা একে অপরের ভাই। অতএব (বিরোধ দেখা দিলে) তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে মীমাংসা করে নাও। আর আল্লাহকে ভয় করো; আশা করা যায়, তোমাদের উপর দয়া করা হবে। (সূরা হুজুরাত- ১০)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতটি দুনিয়ার সমস্ত মুসলিমকে এক বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে। দুনিয়ার অন্য কোন আদর্শ বা মত ও পথের অনুসারীদের মধ্যে এমন কোন ভ্রাতৃত্ব বন্ধন পাওয়া যায় না, যা মুসলিমদের মধ্যে পাওয়া যায়। এ নির্দেশের দাবী ও গুরুত্বসমূহ কী, বহুসংখ্যক হাদীসে রাসূল ﷺ তা বর্ণনা করেছেন। ঐসব হাদীসের আলোকে এ আয়াতের আসল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বোধগম্য হতে পারে। জারীর ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল ﷺ আমার থেকে তিনটি বিষয়ে বায়‘আত নিয়েছেন। (এক) নামায কায়েম করব। (দুই) যাকাত আদায় করব। (তিন) প্রত্যেক মুসলিমের কল্যাণ কামনা করব। (সহীহ বুখারী, হা/৫৭; সহীহ মুসলিম, হা/২০৮)
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসূল ﷺ বলেছেন, মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসিকী এবং তার সাথে লড়াই করা কুফরী। (সহীহ বুখারী, হা/৪৮; সহীহ মুসলিম, হা/২৩০)
আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসূল ﷺ বলেছেন, প্রত্যেক মুসলিমের জন্য অপর মুসলিমের জান, মাল ও ইজ্জত হারাম।’’ (আবু দাউদ, হা/৩৯৩৩)
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) ও আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার উপর যুলুম করবে না, তাকে সহযোগিতা করা পরিত্যাগ করবে না এবং তাকে লাঞ্ছিত ও হেয় করবে না। কোন ব্যক্তির জন্য তার কোন মুসলিম ভাইকে হেয় ও তুচ্ছ জ্ঞান করার মতো অপকর্ম আর নেই। (সহীহ মুসলিম, হা/৬৭০৬)
দু’দলের মধ্যে লড়াই বাঁধলে মীমাংসা করে দিতে হবে :
وَاِنْ طَآئِفَتَانِ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ اقْتَتَلُوْا فَاَصْلِحُوْا بَيْنَهُمَاۚ فَاِنْ ۢ بَغَتْ اِحْدَاهُمَا عَلَى الْاُخْرٰى فَقَاتِلُوا الَّتِيْ تَبْغِيْ حَتّٰى تَفِيْٓءَ اِلٰۤى اَمْرِ اللهِۚ فَاِنْ فَآءَتْ فَاَصْلِحُوْا بَيْنَهُمَا بِالْعَدْلِ وَاَقْسِطُوْاؕ اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِيْنَ
যদি ঈমানদারদের দু’দল একে অপরের সাথে লড়াই করে, তাহলে তাদের মধ্যে আপোষ করিয়ে দাও। এরপরও যদি একদল অপর দলের সাথে বাড়াবাড়ি করে, তবে তোমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করো; যতক্ষণ না সে দলটি আল্লাহর হুকুমের দিকে ফিরে আসে। অতঃপর যদি (সে দলটি) ফিরে আসে, তাহলে উভয় দলের মধ্যে ইনসাফের সাথে মীমাংসা করে দাও এবং সুবিচার করো। নিশ্চয় আল্লাহ সুবিচারকারীদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা হুজুরাত- ৯)
ব্যাখ্যা : পরস্পর লড়াইয়ে লিপ্ত হওয়া মুসলিমদের নীতি ও স্বভাব নয় এবং হওয়া উচিতও নয়। মুমিন হয়েও তারা পরস্পর লড়াই করবে- এটা তাদের কাছ থেকে আশা করা যায় না। মুসলিমদের দু’টি দল পরস্পর লড়াই করতে থাকবে আর মুসলিমরা নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে বসে তা দেখবে- এটা মুসলিমদের কাজ নয়। বরং এ ধরনের দুঃখজনক পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটলে সমস্ত ঈমানদার লোকদের উচিত তাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে যথাসম্ভব চেষ্টা করা। উভয় পক্ষকে লড়াই করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিতে হবে। তাদেরকে আল্লাহর ভয় দেখাতে হবে। প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ উভয় পক্ষের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সাথে সাক্ষাৎ করবে, বিবাদের কারণসমূহ জানবে এবং নিজ নিজ সাধ্যমতো তাদের মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠার সবরকম প্রচেষ্টা চালাবে।
ন্যায় ও ইনসাফের ভিত্তিতে বিবাদ মীমাংসা করতে হবে :
وَ اِنْ حَكَمْتَ فَاحْكُمْ بَيْنَهُمْ بِالْقِسْطِؕ اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِيْنَ
আর যদি তোমাকে বিচার-মীমাংসা করতে হয়, তবে তুমি তাদের মধ্যে সঠিক বিচার করবে। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়বিচারকদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা মায়েদা- ৪২)
মানুষের বিবাদ মিটিয়ে দেয়া সওয়াবের কাজ :
لَا خَيْرَ فِيْ كَثِيْرٍ مِّنْ نَّجْوَاهُمْ اِلَّا مَنْ اَمَرَ بِصَدَقَةٍ اَوْ مَعْرُوْفٍ اَوْ اِصْلَاحٍ ۢبَيْنَ النَّاسِؕ وَمَنْ يَّفْعَلْ ذٰلِكَ ابْتِغَآءَ مَرْضَاتِ اللهِ فَسَوْفَ نُؤْتِيْهِ اَجْرًا عَظِيْمًا
তাদের অধিকাংশের গোপন পরামর্শে কোন কল্যাণ নেই। তবে কল্যাণ রয়েছে (তার পরামর্শে) যে দান-খয়রাত ও সৎকর্ম করে এবং মানুষের মধ্যে শান্তি স্থাপনের নির্দেশ দেয়। যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় তা করে, অচিরেই আমি তাকে মহাপুরস্কারে ভূষিত করব। (সূরা নিসা- ১১৪)
اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ اِخْوَةٌ فَاَصْلِحُوْا بَيْنَ اَخَوَيْكُمْ وَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ
মুমিনরা একে অপরের ভাই। অতএব (বিরোধ দেখা দিলে) তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে মীমাংসা করে নাও। আর আল্লাহকে ভয় করো; আশা করা যায়, তোমাদের উপর দয়া করা হবে। (সূরা হুজুরাত- ১০)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতটি দুনিয়ার সমস্ত মুসলিমকে এক বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে। দুনিয়ার অন্য কোন আদর্শ বা মত ও পথের অনুসারীদের মধ্যে এমন কোন ভ্রাতৃত্ব বন্ধন পাওয়া যায় না, যা মুসলিমদের মধ্যে পাওয়া যায়। এ নির্দেশের দাবী ও গুরুত্বসমূহ কী, বহুসংখ্যক হাদীসে রাসূল ﷺ তা বর্ণনা করেছেন। ঐসব হাদীসের আলোকে এ আয়াতের আসল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বোধগম্য হতে পারে। জারীর ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল ﷺ আমার থেকে তিনটি বিষয়ে বায়‘আত নিয়েছেন। (এক) নামায কায়েম করব। (দুই) যাকাত আদায় করব। (তিন) প্রত্যেক মুসলিমের কল্যাণ কামনা করব। (সহীহ বুখারী, হা/৫৭; সহীহ মুসলিম, হা/২০৮)
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসূল ﷺ বলেছেন, মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসিকী এবং তার সাথে লড়াই করা কুফরী। (সহীহ বুখারী, হা/৪৮; সহীহ মুসলিম, হা/২৩০)
আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসূল ﷺ বলেছেন, প্রত্যেক মুসলিমের জন্য অপর মুসলিমের জান, মাল ও ইজ্জত হারাম।’’ (আবু দাউদ, হা/৩৯৩৩)
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) ও আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার উপর যুলুম করবে না, তাকে সহযোগিতা করা পরিত্যাগ করবে না এবং তাকে লাঞ্ছিত ও হেয় করবে না। কোন ব্যক্তির জন্য তার কোন মুসলিম ভাইকে হেয় ও তুচ্ছ জ্ঞান করার মতো অপকর্ম আর নেই। (সহীহ মুসলিম, হা/৬৭০৬)
দু’দলের মধ্যে লড়াই বাঁধলে মীমাংসা করে দিতে হবে :
وَاِنْ طَآئِفَتَانِ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ اقْتَتَلُوْا فَاَصْلِحُوْا بَيْنَهُمَاۚ فَاِنْ ۢ بَغَتْ اِحْدَاهُمَا عَلَى الْاُخْرٰى فَقَاتِلُوا الَّتِيْ تَبْغِيْ حَتّٰى تَفِيْٓءَ اِلٰۤى اَمْرِ اللهِۚ فَاِنْ فَآءَتْ فَاَصْلِحُوْا بَيْنَهُمَا بِالْعَدْلِ وَاَقْسِطُوْاؕ اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِيْنَ
যদি ঈমানদারদের দু’দল একে অপরের সাথে লড়াই করে, তাহলে তাদের মধ্যে আপোষ করিয়ে দাও। এরপরও যদি একদল অপর দলের সাথে বাড়াবাড়ি করে, তবে তোমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করো; যতক্ষণ না সে দলটি আল্লাহর হুকুমের দিকে ফিরে আসে। অতঃপর যদি (সে দলটি) ফিরে আসে, তাহলে উভয় দলের মধ্যে ইনসাফের সাথে মীমাংসা করে দাও এবং সুবিচার করো। নিশ্চয় আল্লাহ সুবিচারকারীদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা হুজুরাত- ৯)
ব্যাখ্যা : পরস্পর লড়াইয়ে লিপ্ত হওয়া মুসলিমদের নীতি ও স্বভাব নয় এবং হওয়া উচিতও নয়। মুমিন হয়েও তারা পরস্পর লড়াই করবে- এটা তাদের কাছ থেকে আশা করা যায় না। মুসলিমদের দু’টি দল পরস্পর লড়াই করতে থাকবে আর মুসলিমরা নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে বসে তা দেখবে- এটা মুসলিমদের কাজ নয়। বরং এ ধরনের দুঃখজনক পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটলে সমস্ত ঈমানদার লোকদের উচিত তাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে যথাসম্ভব চেষ্টা করা। উভয় পক্ষকে লড়াই করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিতে হবে। তাদেরকে আল্লাহর ভয় দেখাতে হবে। প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ উভয় পক্ষের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সাথে সাক্ষাৎ করবে, বিবাদের কারণসমূহ জানবে এবং নিজ নিজ সাধ্যমতো তাদের মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠার সবরকম প্রচেষ্টা চালাবে।
ন্যায় ও ইনসাফের ভিত্তিতে বিবাদ মীমাংসা করতে হবে :
وَ اِنْ حَكَمْتَ فَاحْكُمْ بَيْنَهُمْ بِالْقِسْطِؕ اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِيْنَ
আর যদি তোমাকে বিচার-মীমাংসা করতে হয়, তবে তুমি তাদের মধ্যে সঠিক বিচার করবে। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়বিচারকদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা মায়েদা- ৪২)
মানুষের বিবাদ মিটিয়ে দেয়া সওয়াবের কাজ :
لَا خَيْرَ فِيْ كَثِيْرٍ مِّنْ نَّجْوَاهُمْ اِلَّا مَنْ اَمَرَ بِصَدَقَةٍ اَوْ مَعْرُوْفٍ اَوْ اِصْلَاحٍ ۢبَيْنَ النَّاسِؕ وَمَنْ يَّفْعَلْ ذٰلِكَ ابْتِغَآءَ مَرْضَاتِ اللهِ فَسَوْفَ نُؤْتِيْهِ اَجْرًا عَظِيْمًا
তাদের অধিকাংশের গোপন পরামর্শে কোন কল্যাণ নেই। তবে কল্যাণ রয়েছে (তার পরামর্শে) যে দান-খয়রাত ও সৎকর্ম করে এবং মানুষের মধ্যে শান্তি স্থাপনের নির্দেশ দেয়। যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় তা করে, অচিরেই আমি তাকে মহাপুরস্কারে ভূষিত করব। (সূরা নিসা- ১১৪)
সঠিক সাক্ষ্য দেয়া মুমিন ব্যক্তির একটি গুণ :
وَالَّذِيْنَ هُمْ بِشَهَادَاتِهِمْ قَآئِمُوْنَ
আর যারা তাদের সাক্ষ্য দানে (সততার উপর) অটল। (সূরা মা‘আরিজ- ৩৩)
মুমিন ব্যক্তি কখনো মিথ্যা সাক্ষ্য দেবে না :
وَالَّذِيْنَ لَا يَشْهَدُوْنَ الزُّوْرَ
যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না। (সূরা ফুরক্বান- ৭২)
আল্লাহ সাক্ষ্য গোপন করতে নিষেধ করেছেন :
وَلَا تَكْتُمُوا الشَّهَادَ ةَؕ وَمَنْ يَّكْتُمْهَا فَاِنَّهٗۤ اٰثِمٌ قَلْبُهٗ
আর তোমরা সাক্ষ্য গোপন করো না; যে গোপন করবে তার অন্তর পাপী হয়ে যাবে। (সূরা বাক্বারা- ২৮৩)
নিজের বিপক্ষে গেলেও ন্যায়ের সাক্ষ্য দিতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُوْنُوْا قَوَّامِيْنَ بِالْقِسْطِ شُهَدَآءَ لِلّٰهِ وَلَوْ عَلٰۤى اَنْفُسِكُمْ اَوِ الْوَالِدَيْنِ وَالْاَقْرَبِيْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর সাক্ষীস্বরূপ ইনসাফের উপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকো; যদিও তা তোমাদের নিজেদের অথবা পিতামাতা এবং আত্মীয়স্বজনদের বিরুদ্ধে হয়। (সূরা নিসা- ১৩৫)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ তোমাদের সাক্ষ্য একমাত্র আল্লাহর জন্য হওয়া উচিত। এতে কারো প্রতি দরদ ও সহানুভূতির কোন প্রশ্ন থাকবে না। কোন ব্যক্তিগত স্বার্থ বা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো সন্তুষ্টি অর্জন তোমাদের লক্ষ্য হবে না।
দু’জন ন্যায়পরায়ণ পুরুষকে সাক্ষী রাখতে হবে :
وَاَشْهِدُوْا ذَوَيْ عَدْلٍ مِّنْكُمْ
তোমাদের মধ্য হতে দু’জন ন্যায়পরায়ণ লোককে সাক্ষী বানাবে। (সূরা তালাক্ব- ২)
ব্যাখ্যা : যেকোন ব্যক্তিকে সাক্ষী বানানো যাবে না। বরং এমনসব লোককে সাক্ষী করতে হবে, যারা নিজেদের নৈতিক চরিত্র ও বিশ্বস্ততার কারণে সাধারণভাবে লোকদের মধ্যে নির্ভরশীল বলে বিবেচিত।
পুরুষ একজন হলে মহিলা দু’জন থাকতে হবে :
وَاسْتَشْهِدُوْا شَهِيْدَيْنِ مِنْ رِّجَالِكُمْۚ فَاِنْ لَّمْ يَكُوْنَا رَجُلَيْنِ فَرَجُلٌ وَّامْرَاَتَانِ مِمَّنْ تَرْضَوْنَ مِنَ الشُّهَدَآءِ اَنْ تَضِلَّ اِحْدَاهُمَا فَتُذَكِّرَ اِحْدَاهُمَا الْاُخْرٰى
সাক্ষীদের মধ্যে যাদের উপর তোমরা সন্তুষ্ট তাদের পুরুষদের মধ্য থেকে দু’জন সাক্ষী রাখো। যদি দু’জন পুরুষ না পাও, তবে একজন পুরুষ এবং দু’জন মহিলা (কে সাক্ষী রাখো)। এটা এজন্য যে, তাদের একজন ভুলে গেলে অপরজন তা স্মরণ করিয়ে দেবে। (সূরা বাক্বারা- ২৮২)
সাক্ষ্য দিতে ডাকা হলে অস্বীকার করা যাবে না :
وَلَا يَأْبَ الشُّهَدَآءُ اِذَا مَا دُعُوْا
আর যখন সাক্ষীদেরকে ডাকা হয়, তখন তারা যেন অস্বীকার না করে। (সূরা বাক্বারা- ২৮২)
وَالَّذِيْنَ هُمْ بِشَهَادَاتِهِمْ قَآئِمُوْنَ
আর যারা তাদের সাক্ষ্য দানে (সততার উপর) অটল। (সূরা মা‘আরিজ- ৩৩)
মুমিন ব্যক্তি কখনো মিথ্যা সাক্ষ্য দেবে না :
وَالَّذِيْنَ لَا يَشْهَدُوْنَ الزُّوْرَ
যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না। (সূরা ফুরক্বান- ৭২)
আল্লাহ সাক্ষ্য গোপন করতে নিষেধ করেছেন :
وَلَا تَكْتُمُوا الشَّهَادَ ةَؕ وَمَنْ يَّكْتُمْهَا فَاِنَّهٗۤ اٰثِمٌ قَلْبُهٗ
আর তোমরা সাক্ষ্য গোপন করো না; যে গোপন করবে তার অন্তর পাপী হয়ে যাবে। (সূরা বাক্বারা- ২৮৩)
নিজের বিপক্ষে গেলেও ন্যায়ের সাক্ষ্য দিতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُوْنُوْا قَوَّامِيْنَ بِالْقِسْطِ شُهَدَآءَ لِلّٰهِ وَلَوْ عَلٰۤى اَنْفُسِكُمْ اَوِ الْوَالِدَيْنِ وَالْاَقْرَبِيْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর সাক্ষীস্বরূপ ইনসাফের উপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকো; যদিও তা তোমাদের নিজেদের অথবা পিতামাতা এবং আত্মীয়স্বজনদের বিরুদ্ধে হয়। (সূরা নিসা- ১৩৫)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ তোমাদের সাক্ষ্য একমাত্র আল্লাহর জন্য হওয়া উচিত। এতে কারো প্রতি দরদ ও সহানুভূতির কোন প্রশ্ন থাকবে না। কোন ব্যক্তিগত স্বার্থ বা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো সন্তুষ্টি অর্জন তোমাদের লক্ষ্য হবে না।
দু’জন ন্যায়পরায়ণ পুরুষকে সাক্ষী রাখতে হবে :
وَاَشْهِدُوْا ذَوَيْ عَدْلٍ مِّنْكُمْ
তোমাদের মধ্য হতে দু’জন ন্যায়পরায়ণ লোককে সাক্ষী বানাবে। (সূরা তালাক্ব- ২)
ব্যাখ্যা : যেকোন ব্যক্তিকে সাক্ষী বানানো যাবে না। বরং এমনসব লোককে সাক্ষী করতে হবে, যারা নিজেদের নৈতিক চরিত্র ও বিশ্বস্ততার কারণে সাধারণভাবে লোকদের মধ্যে নির্ভরশীল বলে বিবেচিত।
পুরুষ একজন হলে মহিলা দু’জন থাকতে হবে :
وَاسْتَشْهِدُوْا شَهِيْدَيْنِ مِنْ رِّجَالِكُمْۚ فَاِنْ لَّمْ يَكُوْنَا رَجُلَيْنِ فَرَجُلٌ وَّامْرَاَتَانِ مِمَّنْ تَرْضَوْنَ مِنَ الشُّهَدَآءِ اَنْ تَضِلَّ اِحْدَاهُمَا فَتُذَكِّرَ اِحْدَاهُمَا الْاُخْرٰى
সাক্ষীদের মধ্যে যাদের উপর তোমরা সন্তুষ্ট তাদের পুরুষদের মধ্য থেকে দু’জন সাক্ষী রাখো। যদি দু’জন পুরুষ না পাও, তবে একজন পুরুষ এবং দু’জন মহিলা (কে সাক্ষী রাখো)। এটা এজন্য যে, তাদের একজন ভুলে গেলে অপরজন তা স্মরণ করিয়ে দেবে। (সূরা বাক্বারা- ২৮২)
সাক্ষ্য দিতে ডাকা হলে অস্বীকার করা যাবে না :
وَلَا يَأْبَ الشُّهَدَآءُ اِذَا مَا دُعُوْا
আর যখন সাক্ষীদেরকে ডাকা হয়, তখন তারা যেন অস্বীকার না করে। (সূরা বাক্বারা- ২৮২)
আল্লাহ ন্যায়বিচারের নির্দেশ দিয়েছেন :
اِنَّ اللهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالْاِحْسَانِ وَاِيْتَآءِ ذِى الْقُرْبٰى وَيَنْهٰى عَنِ الْفَحْشَآءِ وَالْمُنْكَرِ وَالْبَغْيِۚ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ
আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ ও আত্মীয়স্বজনকে দানের নির্দেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসৎকার্য ও সীমালঙ্ঘন করা থেকে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন, যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পার। (সূরা নাহল- ৯০)
اِعْدِلُوْاؕ هُوَ اَقْرَبُ لِلتَّقْوٰى وَاتَّقُوا اللهَؕ اِنَّ اللهَ خَبِيْرٌ ۢبِمَا تَعْمَلُوْنَ
তোমরা ন্যায়বিচার করো; কেননা তা তাক্বওয়ার অধিকতর নিকটবর্তী এবং আল্লাহকে ভয় করো, নিশ্চয় তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবগত। (সূরা মায়েদা- ৮)
ইনসাফ ও ন্যায়ের দৃষ্টিতে বিচার করার জন্য আল্লাহর নির্দেশ :
وَاِذَا حَكَمْتُمْ بَيْنَ النَّاسِ اَنْ تَحْكُمُوْا بِالْعَدْلِؕ اِنَّ اللهَ نِعِمَّا يَعِظُكُمْ بِهٖؕ اِنَّ اللهَ كَانَ سَمِيْعًا ۢبَصِيْرًا
তোমরা যখন মানুষের মধ্যে বিচারকার্য পরিচালনা করবে তখন ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে বিচার করবে। আল্লাহ তোমাদেরকে যে উপদেশ দেন তা কতই না উৎকৃষ্ট! নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। (সূরা নিসা- ৫৮)
ব্যাখ্যা : বনী ইসরাঈলরা যেসব খারাপ কাজে লিপ্ত হয়েছিল তোমরা সেগুলো থেকে দূরে থেকো। বনী ইসরাঈলদের একটি মৌলিক দোষ ছিল এই যে, তারা নিজেদের পতনের যুগে আমানতসমূহ অর্থাৎ ধর্মীয় ও জাতীয় নেতৃত্বের দায়িত্বপূর্ণ পদসমূহ এমনসব লোকদেরকে দেয়া শুরু করেছিল যারা ছিল অযোগ্য, সংকীর্ণমনা, দুশ্চরিত্র, দুর্নীতিপরায়ণ, খেয়ানতকারী ও ব্যভিচারী। ফলে অসৎ লোকদের নেতৃত্বে সমগ্র জাতি অনাচারে লিপ্ত হয়ে গিয়েছিল। এজন্য মুসলিমদেরকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে যে, তোমরা বনী ইসরাঈলদের মতো আচরণ করো না। বরং তোমরা যোগ্য লোকদের কাছে আমানত সোপর্দ করো। অর্থাৎ আমানতের বোঝা বহন করার ক্ষমতা যাদের আছে কেবল তাদের হাতে আমানত তুলে দাও। বনী ইসরাঈলদের দ্বিতীয় বড় দুর্বলতা ছিল এই যে, তাদের মধ্যে ইনসাফ ও ন্যায়নীতির প্রাণশক্তি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। ব্যক্তিগত ও জাতীয় স্বার্থে তারা নির্দ্বিধায় ঈমান বিরোধী কাজ করে চলত। ইনসাফের গলায় ছুরি চালাতে তারা কখনো একটুও কুণ্ঠাবোধ করত না। মহান আল্লাহ তাদের এ বেইনসাফির বিরুদ্ধে সতর্কবাণী উচ্চারণ করার পর এবার মুসলিমদের উপদেশ দিচ্ছেন, তোমরা তাদের মতো বেইনসাফকারী হয়ো না। কারো সাথে বন্ধুত্ব বা শত্রুতা যাই হোক না কেন সব অবস্থায় ইনসাফ ও ন্যায়নীতির কথা বলবে এবং ইনসাফ ও সুবিচার সহকারে ফায়সালা করবে।
ন্যায়বিচার করার জন্য দাউদ (আঃ) এর প্রতি আল্লাহর নির্দেশ :
يَا دَاوُوْدُ اِنَّا جَعَلْنَاكَ خَلِيْفَةً فِى الْاَرْضِ فَاحْكُمْ بَيْنَ النَّاسِ بِالْحَقِّ وَلَا تَتَّبِعِ الْهَوٰى فَيُضِلَّكَ عَنْ سَبِيْلِ اللهِؕ اِنَّ الَّذِيْنَ يَضِلُّوْنَ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيْدٌ
হে দাউদ! আমি আপনাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত করেছি। অতএব আপনি মানুষের মধ্যে ন্যায়ভাবে বিচার-মীমাংসা করতে থাকুন এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না। নতুবা তা আপনাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে দেবে। নিশ্চয় যারা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়, তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। (সূরা সোয়াদ- ২৬)
কারো উপর অবিচার করা যাবে না :
وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَاٰنُ قَوْمٍ عَلٰۤى اَلَّا تَعْدِلُوْاؕ اِعْدِلُوْا هُوَ اَقْرَبُ لِلتَّقْوٰى وَاتَّقُوا اللهَؕ اِنَّ اللهَ خَبِيْرٌ ۢبِمَا تَعْمَلُوْنَ
কোন সম্প্রদায়ের শত্রুতা যেন তোমাদেরকে এর প্রতি উদ্যত না করে যে, তোমরা ন্যায়বিচার করবে না। তোমরা ন্যায়বিচার করো, কেননা এটা তাক্বওয়ার অধিকতর নিকটবর্তী। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, নিশ্চয় তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত। (সূরা মায়েদা- ৮)
ব্যক্তিগত ও গোত্রীয় স্বার্থের কারণে অবিচার করা যাবে না :
وَاِذَا قُلْتُمْ فَاعْدِلُوْا وَلَوْ كَانَ ذَا قُرْبٰىۚ وَبِعَهْدِ اللهِ اَوْفُوْاؕ ذٰلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهٖ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ
যখন তোমরা কথা বলবে তখন ন্যায্যভাবে বলবে, যদিও তা আত্মীয়ের বিরুদ্ধে হয়। আর আল্লাহকে প্রদত্ত অঙ্গীকার পূর্ণ করবে। এভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন, যেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। (সূরা আন‘আম- ১৫২)
ন্যায়বিচার না করলে আল্লাহর সতর্কবাণী :
فَلَا تَتَّبِعُوا الْهَوٰۤى اَنْ تَعْدِلُوْاۚ وَاِنْ تَلْوُوْاۤ اَوْ تُعْرِضُوْا فَاِنَّ اللهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِيْرًا
সুতরাং তোমরা ন্যায়বিচার করতে প্রবৃত্তির অনুগামী হয়ো না। যদি তোমরা (বিচার করতে গিয়ে) পেঁচালো কথা বল অথবা পাশ কাটিয়ে যাও, তবে (জেনে রেখো) তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক খবর রাখেন। (সূরা নিসা- ১৩৫)
কিছু লোক আছে যারা ন্যায়সঙ্গত বিচার করে :
وَمِمَّنْ خَلَقْنَاۤ اُمَّةٌ يَّهْدُوْنَ بِالْحَقِّ وَبِهٖ يَعْدِلُوْنَ
যাদেরকে আমি সৃষ্টি করেছি তাদের মধ্যে একদল লোক আছে, যারা সঠিক পথ দেখায় এবং ন্যায়সঙ্গতভাবে বিচার-ফায়সালা করে। (সূরা আ‘রাফ- ১৮১)
ঘুষ খেয়ে বিচারে পক্ষপাতিত্ব করা ইয়াহুদিদের কাজ :
سَمَّاعُوْنَ لِلْكَذِبِ اَكَّالُوْنَ لِلسُّحْتِ
তারা যেমন মিথ্যা কথা শুনতে অভ্যস্ত, তেমনিভাবে হারাম খেতেও অত্যন্ত আসক্ত। (সূরা মায়েদা- ৪২)
وَتَرٰى كَثِيْرًا مِّنْهُمْ يُسَارِعُوْنَ فِى الْاِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاَكْلِهِمُ السُّحْتَؕ لَبِئْسَ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
আর তুমি তাদের মধ্যে এমন অসংখ্য লোক দেখবে, যারা প্রতিযোগিতামূলকভাবে পাপ, যুলুম ও হারাম ভক্ষণে নিপতিত হচ্ছে, বাস্তবিকই তাদের এ কাজ (খুবই) মন্দ (কাজ)। (সূরা মায়েদা- ৬২)
اِنَّ اللهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالْاِحْسَانِ وَاِيْتَآءِ ذِى الْقُرْبٰى وَيَنْهٰى عَنِ الْفَحْشَآءِ وَالْمُنْكَرِ وَالْبَغْيِۚ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ
আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ ও আত্মীয়স্বজনকে দানের নির্দেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসৎকার্য ও সীমালঙ্ঘন করা থেকে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন, যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পার। (সূরা নাহল- ৯০)
اِعْدِلُوْاؕ هُوَ اَقْرَبُ لِلتَّقْوٰى وَاتَّقُوا اللهَؕ اِنَّ اللهَ خَبِيْرٌ ۢبِمَا تَعْمَلُوْنَ
তোমরা ন্যায়বিচার করো; কেননা তা তাক্বওয়ার অধিকতর নিকটবর্তী এবং আল্লাহকে ভয় করো, নিশ্চয় তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবগত। (সূরা মায়েদা- ৮)
ইনসাফ ও ন্যায়ের দৃষ্টিতে বিচার করার জন্য আল্লাহর নির্দেশ :
وَاِذَا حَكَمْتُمْ بَيْنَ النَّاسِ اَنْ تَحْكُمُوْا بِالْعَدْلِؕ اِنَّ اللهَ نِعِمَّا يَعِظُكُمْ بِهٖؕ اِنَّ اللهَ كَانَ سَمِيْعًا ۢبَصِيْرًا
তোমরা যখন মানুষের মধ্যে বিচারকার্য পরিচালনা করবে তখন ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে বিচার করবে। আল্লাহ তোমাদেরকে যে উপদেশ দেন তা কতই না উৎকৃষ্ট! নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। (সূরা নিসা- ৫৮)
ব্যাখ্যা : বনী ইসরাঈলরা যেসব খারাপ কাজে লিপ্ত হয়েছিল তোমরা সেগুলো থেকে দূরে থেকো। বনী ইসরাঈলদের একটি মৌলিক দোষ ছিল এই যে, তারা নিজেদের পতনের যুগে আমানতসমূহ অর্থাৎ ধর্মীয় ও জাতীয় নেতৃত্বের দায়িত্বপূর্ণ পদসমূহ এমনসব লোকদেরকে দেয়া শুরু করেছিল যারা ছিল অযোগ্য, সংকীর্ণমনা, দুশ্চরিত্র, দুর্নীতিপরায়ণ, খেয়ানতকারী ও ব্যভিচারী। ফলে অসৎ লোকদের নেতৃত্বে সমগ্র জাতি অনাচারে লিপ্ত হয়ে গিয়েছিল। এজন্য মুসলিমদেরকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে যে, তোমরা বনী ইসরাঈলদের মতো আচরণ করো না। বরং তোমরা যোগ্য লোকদের কাছে আমানত সোপর্দ করো। অর্থাৎ আমানতের বোঝা বহন করার ক্ষমতা যাদের আছে কেবল তাদের হাতে আমানত তুলে দাও। বনী ইসরাঈলদের দ্বিতীয় বড় দুর্বলতা ছিল এই যে, তাদের মধ্যে ইনসাফ ও ন্যায়নীতির প্রাণশক্তি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। ব্যক্তিগত ও জাতীয় স্বার্থে তারা নির্দ্বিধায় ঈমান বিরোধী কাজ করে চলত। ইনসাফের গলায় ছুরি চালাতে তারা কখনো একটুও কুণ্ঠাবোধ করত না। মহান আল্লাহ তাদের এ বেইনসাফির বিরুদ্ধে সতর্কবাণী উচ্চারণ করার পর এবার মুসলিমদের উপদেশ দিচ্ছেন, তোমরা তাদের মতো বেইনসাফকারী হয়ো না। কারো সাথে বন্ধুত্ব বা শত্রুতা যাই হোক না কেন সব অবস্থায় ইনসাফ ও ন্যায়নীতির কথা বলবে এবং ইনসাফ ও সুবিচার সহকারে ফায়সালা করবে।
ন্যায়বিচার করার জন্য দাউদ (আঃ) এর প্রতি আল্লাহর নির্দেশ :
يَا دَاوُوْدُ اِنَّا جَعَلْنَاكَ خَلِيْفَةً فِى الْاَرْضِ فَاحْكُمْ بَيْنَ النَّاسِ بِالْحَقِّ وَلَا تَتَّبِعِ الْهَوٰى فَيُضِلَّكَ عَنْ سَبِيْلِ اللهِؕ اِنَّ الَّذِيْنَ يَضِلُّوْنَ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيْدٌ
হে দাউদ! আমি আপনাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত করেছি। অতএব আপনি মানুষের মধ্যে ন্যায়ভাবে বিচার-মীমাংসা করতে থাকুন এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না। নতুবা তা আপনাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে দেবে। নিশ্চয় যারা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়, তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। (সূরা সোয়াদ- ২৬)
কারো উপর অবিচার করা যাবে না :
وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَاٰنُ قَوْمٍ عَلٰۤى اَلَّا تَعْدِلُوْاؕ اِعْدِلُوْا هُوَ اَقْرَبُ لِلتَّقْوٰى وَاتَّقُوا اللهَؕ اِنَّ اللهَ خَبِيْرٌ ۢبِمَا تَعْمَلُوْنَ
কোন সম্প্রদায়ের শত্রুতা যেন তোমাদেরকে এর প্রতি উদ্যত না করে যে, তোমরা ন্যায়বিচার করবে না। তোমরা ন্যায়বিচার করো, কেননা এটা তাক্বওয়ার অধিকতর নিকটবর্তী। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, নিশ্চয় তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত। (সূরা মায়েদা- ৮)
ব্যক্তিগত ও গোত্রীয় স্বার্থের কারণে অবিচার করা যাবে না :
وَاِذَا قُلْتُمْ فَاعْدِلُوْا وَلَوْ كَانَ ذَا قُرْبٰىۚ وَبِعَهْدِ اللهِ اَوْفُوْاؕ ذٰلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهٖ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ
যখন তোমরা কথা বলবে তখন ন্যায্যভাবে বলবে, যদিও তা আত্মীয়ের বিরুদ্ধে হয়। আর আল্লাহকে প্রদত্ত অঙ্গীকার পূর্ণ করবে। এভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন, যেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। (সূরা আন‘আম- ১৫২)
ন্যায়বিচার না করলে আল্লাহর সতর্কবাণী :
فَلَا تَتَّبِعُوا الْهَوٰۤى اَنْ تَعْدِلُوْاۚ وَاِنْ تَلْوُوْاۤ اَوْ تُعْرِضُوْا فَاِنَّ اللهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِيْرًا
সুতরাং তোমরা ন্যায়বিচার করতে প্রবৃত্তির অনুগামী হয়ো না। যদি তোমরা (বিচার করতে গিয়ে) পেঁচালো কথা বল অথবা পাশ কাটিয়ে যাও, তবে (জেনে রেখো) তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক খবর রাখেন। (সূরা নিসা- ১৩৫)
কিছু লোক আছে যারা ন্যায়সঙ্গত বিচার করে :
وَمِمَّنْ خَلَقْنَاۤ اُمَّةٌ يَّهْدُوْنَ بِالْحَقِّ وَبِهٖ يَعْدِلُوْنَ
যাদেরকে আমি সৃষ্টি করেছি তাদের মধ্যে একদল লোক আছে, যারা সঠিক পথ দেখায় এবং ন্যায়সঙ্গতভাবে বিচার-ফায়সালা করে। (সূরা আ‘রাফ- ১৮১)
ঘুষ খেয়ে বিচারে পক্ষপাতিত্ব করা ইয়াহুদিদের কাজ :
سَمَّاعُوْنَ لِلْكَذِبِ اَكَّالُوْنَ لِلسُّحْتِ
তারা যেমন মিথ্যা কথা শুনতে অভ্যস্ত, তেমনিভাবে হারাম খেতেও অত্যন্ত আসক্ত। (সূরা মায়েদা- ৪২)
وَتَرٰى كَثِيْرًا مِّنْهُمْ يُسَارِعُوْنَ فِى الْاِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاَكْلِهِمُ السُّحْتَؕ لَبِئْسَ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
আর তুমি তাদের মধ্যে এমন অসংখ্য লোক দেখবে, যারা প্রতিযোগিতামূলকভাবে পাপ, যুলুম ও হারাম ভক্ষণে নিপতিত হচ্ছে, বাস্তবিকই তাদের এ কাজ (খুবই) মন্দ (কাজ)। (সূরা মায়েদা- ৬২)
যৌথ কাজ-কারবারে পরামর্শ করতে হবে :
وَالَّذِيْنَ اسْتَجَابُوْا لِرَبِّهِمْ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاَمْرُهُمْ شُوْرٰى بَيْنَهُمْ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ
যারা তাদের প্রতিপালকের আহবানে সাড়া দেয়, সালাত প্রতিষ্ঠা করে, পরামর্শের মাধ্যমে নিজেদের কাজ সম্পাদন করে এবং তাদেরকে আমি যে রিযিক দিয়েছি তা হতে ব্যয় করে। (সূরা শূরা- ৩৮)
وَشَاوِرْهُمْ فِى الْاَمْرِۚ فَاِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللهِؕ اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِيْنَ
কাজকর্মে তাদের সাথে পরামর্শ করবে, অতঃপর যখন তুমি কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হবে, তখন আল্লাহর প্রতি ভরসা করবে; নিশ্চয় আল্লাহ নির্ভরশীলদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৯)
ব্যাখ্যা : পরামর্শ ইসলামী জীবনপ্রণালীর একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। পরামর্শ ছাড়া সামষ্টিক কাজ পরিচালনা করা আল্লাহর বিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। যে বিষয়টি দুই বা আরো বেশি লোকের স্বার্থের সাথে জড়িত সে ক্ষেত্রে কোন এক ব্যক্তির নিজস্ব মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা এবং সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যক্তিদের উপেক্ষা করা যুলুম। ইনসাফের দাবী হচ্ছে, কোন বিষয়ে যত লোকের স্বার্থ জড়িত সে ব্যাপারে তাদের সবার মতামত গ্রহণ করতে হবে। মুমিন কখনো স্বার্থপর হয় না। তাই সে অন্যদের অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ করে ফায়দা হাসিল করতে পারে না এবং নিজেকে মহাজ্ঞানী মনে করতে পারে না।
যেসব বিষয় অন্যদের অধিকার ও স্বার্থের সাথে জড়িত সেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা একটা বড় দায়িত্ব। যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে এবং এ কথা জানে যে, তাকে তার রবের কাছে জবাবদিহি করতে হবে, সে কখনো একা এই গুরুভার নিজের কাঁধে উঠিয়ে নেয়ার দুঃসাহস করতে পারে না।
সমাজের ছোট বড় প্রতিটি ব্যাপারেই পরামর্শের নীতি কার্যকর থাকা উচিত। পারিবারিক ব্যাপার হলে স্বামী-স্ত্রী পরামর্শ করে কাজ করবে এবং ছেলে-মেয়ে বড় হলে তাদেরকেও পরামর্শে শরীক করবে। গোষ্ঠীর ব্যাপার হলে গোষ্ঠীর সমস্ত বুদ্ধিমান ও বয়োঃপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মতামত গ্রহণ করতে হবে। জাতীয় বিষয়গুলোকে এমনসব ব্যক্তিবর্গের পরার্মশানুসারে পরিচালনা করতে হবে, জাতি যাদেরকে নির্ভরযোগ্য মনে করে।
পরামর্শদাতাদের সর্বসম্মত অথবা সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজকর্ম পরিচালনা করা প্রয়োজন। পরামর্শভিত্তিক কাজ পরিচালনা নীতির সাথে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, মুসলিমদের পারস্পরিক বিষয়সমূহ পরিচালনায় এই পরামর্শ পরিষদ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী নয়, বরং অবশ্যই এটি সেই দ্বীনের বিধিবিধান দ্বারা সীমাবদ্ধ, যা আল্লাহ নিজেই রচনা করেছেন। যে ব্যাপারে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সিদ্ধান্ত দিয়েছেন সে ব্যাপারে মুসলিমরা নিজেরা স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে- এ উদ্দেশ্যে কোন পরামর্শ হতে পারে না।
খারাপ কাজের জন্য গোপন পরামর্শ করা যাবে না :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا تَنَاجَيْتُمْ فَلَا تَتَنَاجَوْا بِالْاِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَمَعْصِيَةِ الرَّسُوْلِ وَتَنَاجَوْا بِالْبِرِّ وَالتَّقْوٰىؕ وَاتَّقُوا اللهَ الَّذِيْۤ اِلَيْهِ تُحْشَرُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন কানে কানে কথা বল তখন পাপকার্য, সীমালঙ্ঘন ও রাসূলের অবাধ্যাচরণ সম্পর্কে কানাকানি করো না; বরং সৎকাজ ও তাক্বওয়া সম্পর্কে কানাঘুষা করো। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যার কাছে তোমাদেরকে একত্র করা হবে। (সূরা মুজাদালা- ৯)
وَالَّذِيْنَ اسْتَجَابُوْا لِرَبِّهِمْ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاَمْرُهُمْ شُوْرٰى بَيْنَهُمْ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ
যারা তাদের প্রতিপালকের আহবানে সাড়া দেয়, সালাত প্রতিষ্ঠা করে, পরামর্শের মাধ্যমে নিজেদের কাজ সম্পাদন করে এবং তাদেরকে আমি যে রিযিক দিয়েছি তা হতে ব্যয় করে। (সূরা শূরা- ৩৮)
وَشَاوِرْهُمْ فِى الْاَمْرِۚ فَاِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللهِؕ اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِيْنَ
কাজকর্মে তাদের সাথে পরামর্শ করবে, অতঃপর যখন তুমি কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হবে, তখন আল্লাহর প্রতি ভরসা করবে; নিশ্চয় আল্লাহ নির্ভরশীলদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৯)
ব্যাখ্যা : পরামর্শ ইসলামী জীবনপ্রণালীর একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। পরামর্শ ছাড়া সামষ্টিক কাজ পরিচালনা করা আল্লাহর বিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। যে বিষয়টি দুই বা আরো বেশি লোকের স্বার্থের সাথে জড়িত সে ক্ষেত্রে কোন এক ব্যক্তির নিজস্ব মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা এবং সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যক্তিদের উপেক্ষা করা যুলুম। ইনসাফের দাবী হচ্ছে, কোন বিষয়ে যত লোকের স্বার্থ জড়িত সে ব্যাপারে তাদের সবার মতামত গ্রহণ করতে হবে। মুমিন কখনো স্বার্থপর হয় না। তাই সে অন্যদের অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ করে ফায়দা হাসিল করতে পারে না এবং নিজেকে মহাজ্ঞানী মনে করতে পারে না।
যেসব বিষয় অন্যদের অধিকার ও স্বার্থের সাথে জড়িত সেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা একটা বড় দায়িত্ব। যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে এবং এ কথা জানে যে, তাকে তার রবের কাছে জবাবদিহি করতে হবে, সে কখনো একা এই গুরুভার নিজের কাঁধে উঠিয়ে নেয়ার দুঃসাহস করতে পারে না।
সমাজের ছোট বড় প্রতিটি ব্যাপারেই পরামর্শের নীতি কার্যকর থাকা উচিত। পারিবারিক ব্যাপার হলে স্বামী-স্ত্রী পরামর্শ করে কাজ করবে এবং ছেলে-মেয়ে বড় হলে তাদেরকেও পরামর্শে শরীক করবে। গোষ্ঠীর ব্যাপার হলে গোষ্ঠীর সমস্ত বুদ্ধিমান ও বয়োঃপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মতামত গ্রহণ করতে হবে। জাতীয় বিষয়গুলোকে এমনসব ব্যক্তিবর্গের পরার্মশানুসারে পরিচালনা করতে হবে, জাতি যাদেরকে নির্ভরযোগ্য মনে করে।
পরামর্শদাতাদের সর্বসম্মত অথবা সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজকর্ম পরিচালনা করা প্রয়োজন। পরামর্শভিত্তিক কাজ পরিচালনা নীতির সাথে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, মুসলিমদের পারস্পরিক বিষয়সমূহ পরিচালনায় এই পরামর্শ পরিষদ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী নয়, বরং অবশ্যই এটি সেই দ্বীনের বিধিবিধান দ্বারা সীমাবদ্ধ, যা আল্লাহ নিজেই রচনা করেছেন। যে ব্যাপারে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সিদ্ধান্ত দিয়েছেন সে ব্যাপারে মুসলিমরা নিজেরা স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে- এ উদ্দেশ্যে কোন পরামর্শ হতে পারে না।
খারাপ কাজের জন্য গোপন পরামর্শ করা যাবে না :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا تَنَاجَيْتُمْ فَلَا تَتَنَاجَوْا بِالْاِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَمَعْصِيَةِ الرَّسُوْلِ وَتَنَاجَوْا بِالْبِرِّ وَالتَّقْوٰىؕ وَاتَّقُوا اللهَ الَّذِيْۤ اِلَيْهِ تُحْشَرُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন কানে কানে কথা বল তখন পাপকার্য, সীমালঙ্ঘন ও রাসূলের অবাধ্যাচরণ সম্পর্কে কানাকানি করো না; বরং সৎকাজ ও তাক্বওয়া সম্পর্কে কানাঘুষা করো। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যার কাছে তোমাদেরকে একত্র করা হবে। (সূরা মুজাদালা- ৯)
বংশ ও জাতীয়তার সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত থাকতে হবে :
يَا اَيُّهَا النَّاسُ اِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِّنْ ذَكَرٍ وَّاُنْثٰى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوْبًا وَّقَبَآئِلَ لِتَعَارَفُوْاؕ اِنَّ اَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللهِ اَتْقَاكُمْؕ اِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ خَبِيْرٌ
হে মানবজাতি! আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি। তারপর আমি তোমাদের জন্য জাতি ও গোত্র বানিয়েছি, যাতে করে (এর মাধ্যমে) তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পার। কিন্তু আল্লাহর কাছে সর্বাধিক মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি হচ্ছে সে, যে (আল্লাহকে) বেশি ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু জানেন এবং সবকিছুর খবর রাখেন। (সূরা হুজুরাত- ১৩)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতে গোটা মানবজাতিকে উদ্দেশ্য করে একটি বিরাট গোমরাহীর সংশোধন করা হচ্ছে, যা যুগ যুগ ধরে বিশ্বব্যাপী বিপর্যয় সৃষ্টির কারণ হিসেবে বিদ্যমান রয়েছে। বংশ, বর্ণ, ভাষা, দেশ এবং জাতীয়তার সংকীর্ণতা প্রাচীনতম যুগ থেকে আজ পর্যন্ত মানুষের চারপাশে ছোট ছোট বৃত্ত টেনেছে। এ বৃত্তের মধ্যে জন্মগ্রহণকারীদেরকে সে তার আপনজন এবং বাইরে জন্মগ্রহণকারীদেরকে পর মনে করেছে। এর ফলে মানবসমাজ ঘৃণা, শত্রুতা, অবমাননা এবং নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এ আয়াতটিতে আল্লাহ তা‘আলা সকল মানুষকে সম্বোধন করে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক সত্য বর্ণনা করেছেন :
(এক) তোমাদের সবার মূল উৎস এক। মাত্র একজন পুরুষ এবং একজন নারী থেকে তোমাদের গোটা জাতি অস্তিত্ব লাভ করেছে। বর্তমানে পৃথিবীতে তোমাদের যত বংশধারা দেখা যায়, প্রকৃতপক্ষে তা একটিমাত্র প্রাথমিক বংশধারার বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা। এক আল্লাহই তোমাদের স্রষ্টা। তোমরা একই উপকরণ দ্বারা সৃষ্টি হয়েছ, একই নিয়মে জন্মলাভ করেছ। তাছাড়া তোমরা একই পিতামাতার সন্তান। এ সৃষ্টি ধারার মধ্যে কোথাও এ বিভেদ এবং উঁচু-নীচুর কোন ভিত্তি বর্তমান নেই; অথচ তোমরা এ ভ্রান্ত ধারণায় নিমজ্জিত রয়েছ।
(দুই) মূল উৎসের দিক দিয়ে এক হওয়া সত্ত্বেও তোমাদের বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত হওয়া ছিল একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। এ কথা স্পষ্ট যে, সমগ্র বিশ্বে গোটা মানবসমাজের একটিমাত্র বংশধারা আদৌ হতে পারত না। বংশ বৃদ্ধির সাথে সাথে বিভিন্ন বংশধারার সৃষ্টি হওয়া অপরিহার্য ছিল। অনুরূপ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বসতি স্থাপনের পর বর্ণ, দেহাকৃতি, ভাষা এবং জীবন-যাপন রীতিও অবশ্যম্ভাবীরূপে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু প্রকৃতিগত এ পার্থক্য ও ভিন্নতার দাবী এ নয় যে, এর ভিত্তিতে উঁচু-নীচু, ইতর-ভদ্র এবং শ্রেষ্ঠ ও নিকৃষ্ট হওয়ার ভেদাভেদ সৃষ্টি করা হবে, এক বর্ণের লোক অন্য বর্ণের লোকদের হেয় মনে করবে, এক জাতি অন্য জাতির উপর নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব কায়েম করবে এবং মানবাধিকারের ক্ষেত্রে এক জাতি অন্য জাতির উপর অগ্রাধিকার লাভ করবে। যে কারণে সৃষ্টিকর্তা মানব গোষ্ঠীসমূহকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিন্যস্ত করেছিলেন তা হচ্ছে, তাদের মধ্যে পারস্পরিক পরিচয় জানা। এ পদ্ধতিতে একটি পরিবার, একটি গোত্র এবং একটি জাতির লোক মিলে একটি সম্মিলিত সমাজ গড়তে এবং জীবনের বিভিন্ন ব্যাপারে একে অপরের সাহায্যকারী হতে পারবে। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা যাকে পারস্পরিক পরিচয়ের উপায় বানিয়েছেন মানুষ তাকে গর্ব ও ঘৃণার উপকরণ বানিয়ে নিয়েছে এবং এ বিষয়টিকে অত্যাচার ও সীমালঙ্ঘনের পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে।
(তিন) মানুষের মধ্যে মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের বুনিয়াদ যদি কিছু থেকে থাকে, তাহলে তা হচ্ছে নৈতিক মর্যাদা। জন্মগতভাবে সমস্ত মানুষ সমান। যে মূল জিনিসের ভিত্তিতে এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির উপর মর্যাদা লাভ করতে পারে তা হচ্ছে, সে অন্য সবার তুলনায় অধিক আল্লাহভীরু, মন্দ থেকে দূরে অবস্থানকারী এবং নেকীর পথ অবলম্বনকারী। এরূপ ব্যক্তি যে কোন বংশ, যে কোন জাতি এবং যে কোন দেশেরই হোক না কেন সে সম্মান ও মর্যাদার পাত্র। যার অবস্থা এর বিপরীত, সর্বাবস্থায়ই সে একজন নিকৃষ্টতর মানুষ। সে সাদা হোক বা কালো হোক এবং প্রাচ্যে জন্মলাভ করুক বা পাশ্চাত্যে তাতে কিছু আসে যায় না।
এ সত্য কথাগুলোই কুরআনের একটি ছোট্ট আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে। রাসূল ﷺ তাঁর বিভিন্ন উক্তিতেও এটা বর্ণনা করেছেন। মক্কা বিজয়ের সময় কা‘বাঘর তাওয়াফের পর তিনি যে বক্তৃতা করেছিলেন, তাতে তিনি বলেছিলেন, ‘‘সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর, যিনি তোমাদের থেকে জাহেলিয়াতের দোষ-ত্রুটি ও অহংকার দূর করে দিয়েছেন। হে লোকেরা! সমস্ত মানুষ দু’ভাগে বিভক্ত। (এক) নেককার ও পরহেযগার, যারা আল্লাহর দৃষ্টিতে মর্যাদার অধিকারী। (দুই) পাপী ও দূরাচারী, যারা আল্লাহর দৃষ্টিতে নিকৃষ্ট। অন্যথায় সমস্ত মানুষই আদমের সন্তান। আর আদম মাটির সৃষ্টি। (তিরমিযী, হা/৩৯৫৬)
প্রকৃতপক্ষে গুণাবলির দিক দিয়ে কে উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন মানুষ আর কে নীচু মর্যাদার মানুষ তা আল্লাহই ভালো জানেন। মানুষ নিজেরা যে মানদন্ড বানিয়ে রেখেছে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। হতে পারে দুনিয়াতে যাকে অনেক উচ্চমর্যাদার মানুষ মনে করা হয় আল্লাহর চূড়ান্ত ফায়সালায় সে অতি নীচু স্তরের মানুষ হিসেবে সাব্যস্ত হবে এবং যাকে অতি নগণ্য মনে করা হয় সে সেখানে অনেক উচ্চমর্যাদা লাভ করবে। দুনিয়ার সম্মান ও লাঞ্ছনা আসল বিষয় নয়, বরং আল্লাহর কাছে কে সম্মানী আর কে লাঞ্ছিত সেটাই আসল বিষয়। তাই যেসব গুণাবলি মানুষকে আল্লাহর কাছে মর্যাদা লাভের উপযুক্ত বানাতে পারে, সেসব গুণাবলি অর্জনের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা উচিত।
হিংসা, শত্রুতা ও সংঘাত থেকে দূরে থাকতে হবে :
وَلَا تَتَمَنَّوْا مَا فَضَّلَ اللهُ بِه بَعْضَكُمْ عَلٰى بَعْضٍؕ لِلرِّجَالِ نَصِيْبٌ مِّمَّا اكْتَسَبُوْاؕ وَلِلنِّسَآءِ نَصِيْبٌ مِّمَّا اكْتَسَبْنَؕ وَاسْاَلُوا اللهَ مِنْ فَضْلِه ؕ اِنَّ اللهَ كَانَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمًا
আল্লাহ যা দ্বারা তোমাদের কাউকে কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন তোমরা তার লালসা করো না। পুরুষরা যা অর্জন করে তাতে তাদের প্রাপ্য অংশ রয়েছে এবং নারীরা যা অর্জন করে তাতে তাদেরও প্রাপ্য অংশ রয়েছে। সুতরাং তোমরা আল্লাহর নিকট তাঁর অনুগ্রহ প্রার্থনা করো, নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ। (সূরা নিসা- ৩২)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতে একটি বিরাট গুরুত্বপূর্ণ নৈতিক বিধান দেয়া হয়েছে। এটি যথাযথভাবে কার্যকর করা হলে সমাজ জীবনে মানুষ বিপুল শান্তি ও নিরাপত্তা লাভে সক্ষম হবে। আল্লাহ সব মানুষকে সমান করে সৃষ্টি করেননি। তাদের মধ্যে অসংখ্য দিক দিয়ে পার্থক্য সৃষ্টি করে রেখেছেন। কেউ সুশ্রী, কেউ কুশ্রী। কেউ সুকণ্ঠের অধিকারী, কেউ কর্কশভাষী। কেউ শক্তিশালী, কেউ দুর্বল। কেউ পূর্ণাঙ্গ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অধিকারী, আবার কেউ পঙ্গু। কাউকে শারীরিক ও মানসিক শক্তির মধ্যে কোন একটি শক্তি বেশি দেয়া হয়েছে, আবার কাউকে দেয়া হয়েছে অন্য কোন শক্তি। কাউকে অপেক্ষাকৃত ভালো অবস্থায় সৃষ্টি করা হয়েছে, আবার কাউকে খারাপ অবস্থায়। কাউকে বেশি উপায় উপকরণ দেয়া হয়েছে, কাউকে দেয়া হয়েছে কম। এ তারতম্যের ভিত্তিতেই মানুষের সমাজ-সংস্কৃতি বৈচিত্র্যমন্ডিত হয়েছে। কিন্তু যেখানেই এ পার্থক্যের স্বাভাবিক সীমানা ছাড়িয়ে মানুষ তার উপর নিজের কৃত্রিম পার্থক্যের বোঝা চাপিয়ে দেয়, সেখানেই এক ধরনের বিপর্যয় দেখা দেয়। আর যেখানে এ পার্থক্যকে বিলুপ্ত করে দেয়ার জন্য প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করার প্রচেষ্টা চালানো হয়, সেখানে আরো বেশি বিপর্যয় দেখা দেয়। মানুষের মধ্যে একটি বিশেষ মানসিকতা দেখা যায় যে, নিজের চেয়ে কাউকে অগ্রসর দেখতে পেলে সে অস্থির হয়ে পড়ে। তাই সমাজ জীবনে হিংসা-বিদ্বেষ, শত্রুতা, দ্বন্দ্ব ও সংঘাত ইত্যাদি সৃষ্টি হয়। এরই ফলে যে বস্তু সে পায়নি বা বৈধ পথে অর্জন করতে পারে না, তাকে অবৈধ পথে লাভ করার জন্য ওঠেপড়ে লাগে। আল্লাহ এ আয়াতে মানুষদেরকে এ মানসিকতা থেকে দূরে থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহর বক্তব্যের উদ্দেশ্য হচ্ছে, অন্যদের প্রতি তিনি যে অনুগ্রহ করেছেন তুমি তার আকাঙ্ক্ষা করো না। তবে আল্লাহর কাছে অনুগ্রহের জন্য দু‘আ করো। তিনি নিজের জ্ঞান ও প্রজ্ঞা অনুযায়ী তোমার জন্য যে অনুগ্রহটি উপযোগী মনে করবেন, সেটিই তোমাকে দান করবেন। পুরুষ ও মেয়েদের মধ্য থেকে আল্লাহ যাকে যা কিছু দিয়েছেন তা ব্যবহার করে যে যেরকম নেকী বা গোনাহ অর্জন করবে, সে আল্লাহর কাছে ঐ অনুযায়ী শাস্তি বা পুরস্কার লাভ করবে।
খারাপ কাজের বিস্তার হতে দেয়া যাবে না :
اِنَّ الَّذِيْنَ يُحِبُّوْنَ اَنْ تَشِيْعَ الْفَاحِشَةُ فِى الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِؕ وَاللهُ يَعْلَمُ وَاَنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ
যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে, তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতে মর্মান্তিক শাস্তি। আল্লাহ সবকিছুই জানেন, তোমরা জান না। (সূরা নূর- ১৯)
ব্যাখ্যা : فَاحِشَةٌ (ফাহিশা) তথা অশ্লীলতা হলো, যা চরিত্রহীনতাকে উৎসাহিত করে। যেমন- উত্তেজনামূলক কিসসা-কাহিনী, কবিতা, গান, ছবি ও খেলাধূলা ইত্যাদি। তাছাড়া এমন ধরনের ক্লাব, হোটেল ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও এর আওতায় এসে যায়, যেখানে নারী-পুরুষের মিলিত নৃত্য ও আমোদফূর্তির ব্যবস্থা করা হয়। কুরআনে এদের সবাইকে অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত করেছে এবং প্রত্যেকের জন্য তাদের অপরাধের পরিমাপ অনুযায়ী শাস্তিও নির্ধারণ করে দিয়েছে। এইডস, নানা ধরনের যৌন রোগ, যুবক-যুবতীদের চারিত্রিক বিপর্যয়, ইভটিজিং, ধর্ষণ, হত্যা ইত্যাদি অশ্লীলতার ফলল। অশ্লীলতার কারণে ব্যক্তি নিজে তো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেই, তদুপরি দেশ ও জাতিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। কাজেই অশ্লীলতার এসব উপায়-উপকরণের পথ রোধ করা একটি ইসলামী রাষ্ট্রের অপরিহার্য কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত। কুরআন যেসব কাজকে অপরাধ বলে গণ্য করেছে এবং তা সম্পাদনকারীকে শাস্তিলাভের যোগ্য বলে ফায়সালা দিয়েছে, ইসলামী রাষ্ট্রের দন্ডবিধি আইনে সেসব কাজকে শাস্তিযোগ্য কাজ বলে আখ্যায়িত করতে হবে এবং পুলিশের হস্তক্ষেপের ব্যবস্থা করতে হবে। অতঃপর কুরআনে যে অপরাধের যে শাস্তি যেভাবে প্রয়োগ করতে বলেছে, সে অপরাধের শাস্তি সেভাবেই প্রয়োগ করতে হবে।
একদল আরেক দলের বিদ্রূপ করবে না :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِّنْ قَوْمٍ عَسٰۤى اَنْ يَّكُوْنُوْا خَيْرًا مِّنْهُمْ وَلَا نِسَآءٌ مِّنْ نِّسَآءٍ عَسٰۤى اَنْ يَّكُنَّ خَيْرًا مِّنْهُنَّ
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের কোন সম্প্রদায় যেন অপর কোন সম্প্রদায়কে নিয়ে ঠাট্টা না করে। হতে পারে, তারাই এদের চেয়ে উত্তম আবার কোন মহিলা সম্প্রদায়ও যেন অপর কোন মহিলা সম্প্রদায়কে নিয়ে ঠাট্টা না করে। হতে পারে, তারাই এদের চেয়ে বেশি উত্তম। (সূরা হুজুরাত- ১১)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতে এমনসব বড় বড় অন্যায়ের পথ রুদ্ধ করার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে, যা সাধারণত লোকদের পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট করে দেয়। পারস্পরিক শত্রুতা সৃষ্টির মূল কারণ হলো- একে অপরের ইজ্জতের উপর হামলা করা, মনোকষ্ট দেয়া, অপরের প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করা এবং একে অপরের দোষ-ত্রুটি তালাশ করা। এসব কারণ অন্যান্য কারণের সাথে মিশে বড় বড় ফিতনা সৃষ্টি করে। ইসলামী আইন প্রত্যেক ব্যক্তির এমন একটি মৌলিক মর্যাদার স্বীকৃতি দেয়, যার উপর কোন আক্রমণ চালানোর অধিকার নেই। এক্ষেত্রে হামলা বাস্তবতাভিত্তিক হোক বা না হোক এবং যার উপর আক্রমণ করা হয়, জনসমক্ষে তার কোন সুপরিচিত মর্যাদা থাক বা না থাক তাতে কিছু যায় আসে না। একজন ব্যক্তি অপর একজন ব্যক্তিকে অপমান করেছে শুধু এতটুকু বিষয়ই তাকে অপরাধী প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট। তবে এ অপমান করার যদি কোন শরীয়াতসম্মত বৈধতা থাকে তাহলে ভিন্ন কথা।
বিদ্রূপ করার অর্থ কেবল হাসি-তামাশা করাই নয়। বরং কারো কোন কাজের অভিনয় করা, তার প্রতি ইঙ্গিত করা, তার কথা, কাজ বা পোশাক নিয়ে হাসাহাসি করা অথবা তার কোন দোষের দিকে এমনভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করা, যাতে অন্যরা হাসাহাসি করে। এ ধরনের হাসি-তামাশা ও ঠাট্টা-বিদ্রূপের পেছনে নিশ্চিতভাবে নিজের বড়ত্ব প্রদর্শন এবং অন্যকে অপমান করা ও হেয় করে দেখানোর মনোবৃত্তি কাজ করে। যা নৈতিকভাবে অত্যন্ত দোষণীয়। তাছাড়া এভাবে অন্যের মনে কষ্ট হয়, যার কারণে সমাজে বিপর্যয় ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এ কারণেই এ কাজকে হারাম করে দেয়া হয়েছে। যে কারণে নারী ও পুরুষদের বিষয় আলাদা করে উল্লেখ করা হয়েছে তা হচ্ছে, ইসলাম এমন সমাজ আদৌ সমর্থন করে না, যেখানে নারী-পুরুষ অবাধে মেলামেশা করতে পারে অথবা মাহরাম নয় এমন নারী-পুরুষ কোন মজলিসে একত্র হয়ে পরস্পর হাসি-তামাশা করবে। তাই মুসলিম সমাজের একটি মজলিসে পুরুষ কোন নারীকে উপহাস করবে কিংবা নারী কোন পুরুষকে উপহাস করবে এমন বিষয় কল্পনার যোগ্যও মনে করা হয়নি।
একে অপরকে খারাপ নামে ডাকবে না :
وَلَا تَلْمِزُوْاۤ اَنْفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوْا بِالْاَلْقَابِؕ بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوْقُ بَعْدَ الْاِيْمَانِۚ وَمَنْ لَّمْ يَتُبْ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ
তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে খারাপ নাম নিয়েও সম্বোধন করো না; ঈমান আনার পর মন্দ নামে ডাকা কতই না জঘন্য কাজ! যারা এ ধরনের আচরণ থেকে ফিরে না আসে, (প্রকৃতপক্ষে) তারাই যালিম। (সূরা হুজুরাত- ১১)
ব্যাখ্যা : لَمْزٌ (লামযুন) শব্দটির মধ্যে বিদ্রূপ ও কুৎসা ছাড়াও আরো অর্থ রয়েছে। যেমন- উপহাস করা, অপবাদ আরোপ করা, দোষ বের করা এবং খোলাখুলি বা গোপনে অথবা ইশারা-ইঙ্গিত করে কাউকে তিরস্কারের লক্ষ্যস্থল বানানো। এসব কাজও যেহেতু পারস্পরিক সুসম্পর্ক নষ্ট করে এবং সমাজে বিপর্যয় সৃষ্টি করে তাই এসব হারাম করে দেয়া হয়েছে। ‘নিজেকে নিজে বিদ্রূপ করো না’ কথাটি দ্বারা এ কথার ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, অন্যদের বিদ্রূপ ও উপহাসকারীরা প্রকৃতপক্ষে নিজেকেই বিদ্রূপ ও উপহাস করে। কেননা যতক্ষণ কারো মনে কারো সম্পর্কে কুধারণা না জন্মাবে ততক্ষণ তার মুখ অন্যদের কুৎসা রটনার জন্য খুলবে না। এভাবে এ মানসিকতা লালনকারী অন্যদের আগে নিজেকেই কুকর্মের আস্তানা বানিয়ে ফেলে। তারপর যখন সে অন্যদের উপর আঘাত করে তখন তার অর্থ দাঁড়ায়, সে তার নিজের উপর আঘাত করার জন্য অন্যদেরকে আহবান করছে। ভদ্রতার কারণে কেউ যদি তার আক্রমণ এড়িয়ে চলে তাহলে তা ভিন্ন কথা। কিন্তু সে যার দুর্ণাম করল সেও পাল্টা তার উপর আক্রমণ করুক এ দরজা সে নিজেই খুলে দিয়েছে। এ নির্দেশের উদ্দেশ্য হচ্ছে, কাউকে যেন এমন নামে ডাকা না হয় অথবা এমন উপাধি না দেয়া হয়, যা তার অপছন্দ এবং যা দ্বারা তার অমর্যাদা হয়। যেমন কাউকে ফাসিক বা মুনাফিক বলা। কাউকে খোঁড়া, অন্ধ অথবা কানা বলা। কাউকে তার নিজের কিংবা মা-বাপের অথবা বংশের কোন দোষ-ত্রুটির সাথে সম্পর্কিত করে উপাধি দেয়া। কোন ব্যক্তি, বংশ, আত্মীয়তা অথবা গোষ্ঠীর এমন নাম দেয়া, যার মধ্যে তার নিন্দা ও অপমানের দিকটি বিদ্যমান। তবে যেসব উপাধি পরিচয়ের সহায়ক এমনসব উপাধি এ নির্দেশের মধ্যে পড়ে না। ঈমানদার হওয়া সত্ত্বেও কটুভাষী হওয়া এবং অসৎ ও অন্যায় কাজের জন্য বিখ্যাত হওয়া এটা একজন ঈমানদারের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক ব্যাপার। কেউ আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস করা সত্ত্বেও যদি এরূপ হীন বিশেষণে ভূষিত হয়, তাহলে তা তার জন্য অতি দুঃখজনক বিষয়।
বেশি বেশি ধারণা করবে না :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اجْتَنِبُوْا كَثِيْرًا مِّنَ الظَّنِّ اِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ اِثْمٌ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা বেশি বেশি ধারণা করা থেকে বিরত থাকো। কারণ, কতক ধারণা গোনাহের কাজ। (সূরা হুজুরাত- ১২)
ব্যাখ্যা : একেবারেই ধারণা করতে নিষেধ করা হয়নি। বরং খুব বেশি ধারণার ভিত্তিতে কাজ করতে এবং সবরকম ধারণার অনুসরণ থেকে নিষেধ করা হয়েছে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, অনেক ধারণা গোনাহের পর্যায়ে পড়ে। যেমন- বিনা কারণে কারো প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করা কিংবা এমন লোকদের ব্যাপারে খারাপ ধারণা পোষণ করা, যাদের বাহ্যিক অবস্থা তাদের সৎ হওয়ার প্রমাণ দেয়। অনুরূপভাবে কোন ব্যক্তির কোন কথা বা কাজে যদি ভালো ও মন্দের সমান সম্ভাবনা থাকে; কিন্তু ভালো সম্ভাবনার দিকটি বাদ দিয়ে খারাপ সম্ভাবনার দিকটি গ্রহণ করার কারণ খারাপ ধারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। এ সতর্কীকরণ দ্বারা বুঝা যায় যে, যখনই কোন ব্যক্তি ধারণার ভিত্তিতে কোন সিদ্ধান্ত নিতে যায় তখন তার ভালোভাবে যাচাই বাছাই করে দেখা উচিত যে, সে যে ধারণা করছে তা গোনাহের অন্তর্ভুক্ত কি না। যারা আল্লাহকে ভয় করে তারা এতটুকু সাবধানতা অবশ্যই অবলম্বন করবে। লাগামহীন ধারণা পোষণ কেবল তাদেরই কাজ যারা আল্লাহর ভয় থেকে মুক্ত এবং আখিরাতের জবাবদিহি সম্পর্কে উদাসীন।
একে অপরের দোষ না খোঁজা :
وَلَا تَجَسَّسُوْا
আর তোমরা একে অপরের গোপন বিষয় অনুসন্ধান করো না। (সূরা হুজুরাত- ১২)
ব্যাখ্যা : মানুষের গোপন বিষয় অনুসন্ধান করো না। একজন আরেকজনের দোষ খুঁজো না। খারাপ ধারণার বশবর্তী হয়ে এ আচরণ করা হোক কিংবা অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য হোক অথবা শুধু নিজের কৌতুহল নিবারণের জন্য করা হোক শরীয়াতের দৃষ্টিতে তা সর্বাবস্থায় নিষিদ্ধ। অন্যদের যেসব বিষয় লোকচক্ষুর অন্তরালে আছে তা খোঁজাখুজি করা এবং কার কী দোষ-ত্রুটি আছে ও কার কী কী দুর্বলতা গোপন আছে কোন বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া জানার চেষ্টা করা কোন মুমিনের কাজ নয়। মানুষের ব্যক্তিগত চিঠিপত্র পড়া, দু’জনের কথোপকথন কান পেতে শোনা, প্রতিবেশীর ঘরে উঁকি দেয়া এবং বিভিন্ন পন্থায় অন্যদের ব্যক্তিগত বিষয়াদি খোঁজ করা- এসব অনৈতিক কাজ। এর দ্বারা নানা রকম ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি হয়। এ কারণে একবার নবী ﷺ তাঁর খুতবায় দোষ অন্বেষণকারীদের সম্পর্কে বলেছেন, ‘‘হে ঐ সব লোক! যারা মুখে ঈমান এনেছ; কিন্তু এখনো ঈমান তোমাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি, তোমরা মুসলিমদের গোপনীয় বিষয় অনুসন্ধান করো না। যে ব্যক্তি মুসলিমদের দোষ-ত্রুটি অনুসন্ধান করে বেড়াবে, আল্লাহও তার দোষ-ত্রুটির প্রকাশ করে দেবেন। আর আল্লাহ যার দোষ-ত্রুটি তালাশ করেন, তাকে তার ঘরের মধ্যেও লাঞ্ছিত করে ছাড়েন।’’ (আবু দাউদ, হা/৪৮৮২)
তবে কোন বিশেষ পরিস্থিতিতে যদি খোঁজখবর নেয়া ও অনুসন্ধান করা একান্তই প্রয়োজন হয়ে পড়ে, তাহলে সেটা এ নির্দেশের আওতাভুক্ত নয়। যেমন কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর আচার-আচরণে বিদ্রোহের কিছুটা লক্ষণ সুস্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। ফলে তারা কোন অপরাধ সংঘটিত করতে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা সৃষ্টি হলে তাদের ব্যাপারে অনুসন্ধান চালাতে হবে। অথবা যদি কোন ব্যক্তিকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়া হয় বা তার সাথে ব্যবসায়িক লেনদেন করতে চায় তাহলে তার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য তার সম্পর্কে অনুসন্ধান করা ও খোঁজখবর নেয়া দোষণীয় নয়।
পরনিন্দা বা গীবত না করা :
وَلَا يَغْتَبْ بَّعْضُكُمْ بَعْضًاؕ اَيُحِبُّ اَحَدُكُمْ اَنْ يَّاْكُلَ لَحْمَ اَخِيْهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوْهُؕ وَاتَّقُوا اللهَؕ اِنَّ اللهَ تَوَّابٌ رَّحِيْمٌ
তোমরা কেউ কারো গীবত করো না। তোমাদের মধ্যে কি এমন কেউ আছে, যে তার মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করে? তোমরা তো তা ঘৃণা করে থাক। সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো; নিশ্চয় আল্লাহ বড়ই তাওবা কবুলকারী ও মেহেরবান। (সূরা হুজুরাত- ১২)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতাংশে আল্লাহ তা‘আলা গীবতকে মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সাথে তুলনা করে এ কাজ চরম ঘৃণিত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। মৃতের গোশত খাওয়া এমনিতেই ঘৃণ্য ব্যাপার। সে গোশতও যখন অন্য কোন জন্তুর না হয়ে মানুষের হয় এবং সে মানুষটিও যদি নিজের আপন ভাই হয়, তাহলে তো কোন কথাই নেই। তারপর এ উপমাকে প্রশ্নের আকারে পেশ করে আরো অধিক গুরুতর অপরাধ ও ঘৃণ্যবস্তু হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে- যাতে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করে নিজেই এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে যে, সে কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে প্রস্তুত? সে যদি তা খেতে রাজি না হয় এবং তার প্রবৃত্তি এতে ঘৃণাবোধ করে, তাহলে সে কীভাবে এ কাজ পছন্দ করতে পারে যে, সে তার কোন মুমিন ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার মান-মর্যাদার উপর হামলা চালাবে।
গীবতের সংজ্ঞা হচ্ছে, ‘‘কারো অনুপস্থিতিতে তার সম্পর্কে এমন কোন কথা বলা, যা শুনলে সে অপছন্দ করবে।’’ কারো বিরুদ্ধে তার অনুপস্থিতিতে মিথ্যা অভিযোগ করা অপবাদ। আর তার সত্যিকার দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করা গীবত। এ কাজ স্পষ্ট বক্তব্যের মাধ্যমে করা হোক বা ইশারা ইঙ্গিতের মাধ্যমে করা হোক সর্বাবস্থায় তা হারাম। অনুরূপভাবে এ কাজ ব্যক্তির জীবদ্দশায় করা হোক বা মৃত্যুর পরে করা হোক উভয় অবস্থায় হারাম। একদা নবী ﷺ কে জিজ্ঞেস করা হয়, গীবত কী? জবাবে তিনি বলেন,
ذِكْرُكَ اَخَاكَ بِمَا يَكْرَهُ
‘‘তোমার ভাইয়ের আলোচনা এমনভাবে করা, যা সে অপছন্দ করে।’’ তারপর আবারো জিজ্ঞেস করা হয় যে, যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে সত্যিই সে দোষ থেকে থাকে? তিনি জবাব দেন :
اِنْ كَانَ فِيْهِ مَا تَقُوْلُ فَقَدِ اغْتَبْتَهٗ وَاِنْ لَّمْ يَكُنْ فِيْهِ مَا تَقُوْلُ فَقَدْ بَهَتَّهٗ
‘‘তুমি যে দোষের কথা বলছ তা যদি তার মধ্যে থাকে, তাহলে তুমি তার গীবত করলে। আর যদি তা তার মধ্যে না থাকে, তাহলে তার উপর অপবাদ দিলে (যা আরো গুরুতর অপরাধ)।’’ (সহীহ মুসলিম, হা/৬৭৫৮; আবু দাউদ, হা/৪৮৭৬)
যেসব ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে বা তার মৃত্যুর পর তার মন্দ দিকগুলো বর্ণনা করার এমন কোন প্রয়োজন দেখা দেয় আর ঐ প্রয়োজন পূরণের জন্য গীবত না করা হলে তার চেয়েও অধিক মন্দকাজ অপরিহার্য হয়ে পড়ে- এমন ক্ষেত্রসমূহে গীবত করা হারাম নয়। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুন আমাদের বই- গীবত থেকে বাঁচার উপায় ও তাওবা করার পদ্ধতি।
يَا اَيُّهَا النَّاسُ اِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِّنْ ذَكَرٍ وَّاُنْثٰى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوْبًا وَّقَبَآئِلَ لِتَعَارَفُوْاؕ اِنَّ اَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللهِ اَتْقَاكُمْؕ اِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ خَبِيْرٌ
হে মানবজাতি! আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি। তারপর আমি তোমাদের জন্য জাতি ও গোত্র বানিয়েছি, যাতে করে (এর মাধ্যমে) তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পার। কিন্তু আল্লাহর কাছে সর্বাধিক মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি হচ্ছে সে, যে (আল্লাহকে) বেশি ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু জানেন এবং সবকিছুর খবর রাখেন। (সূরা হুজুরাত- ১৩)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতে গোটা মানবজাতিকে উদ্দেশ্য করে একটি বিরাট গোমরাহীর সংশোধন করা হচ্ছে, যা যুগ যুগ ধরে বিশ্বব্যাপী বিপর্যয় সৃষ্টির কারণ হিসেবে বিদ্যমান রয়েছে। বংশ, বর্ণ, ভাষা, দেশ এবং জাতীয়তার সংকীর্ণতা প্রাচীনতম যুগ থেকে আজ পর্যন্ত মানুষের চারপাশে ছোট ছোট বৃত্ত টেনেছে। এ বৃত্তের মধ্যে জন্মগ্রহণকারীদেরকে সে তার আপনজন এবং বাইরে জন্মগ্রহণকারীদেরকে পর মনে করেছে। এর ফলে মানবসমাজ ঘৃণা, শত্রুতা, অবমাননা এবং নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এ আয়াতটিতে আল্লাহ তা‘আলা সকল মানুষকে সম্বোধন করে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক সত্য বর্ণনা করেছেন :
(এক) তোমাদের সবার মূল উৎস এক। মাত্র একজন পুরুষ এবং একজন নারী থেকে তোমাদের গোটা জাতি অস্তিত্ব লাভ করেছে। বর্তমানে পৃথিবীতে তোমাদের যত বংশধারা দেখা যায়, প্রকৃতপক্ষে তা একটিমাত্র প্রাথমিক বংশধারার বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা। এক আল্লাহই তোমাদের স্রষ্টা। তোমরা একই উপকরণ দ্বারা সৃষ্টি হয়েছ, একই নিয়মে জন্মলাভ করেছ। তাছাড়া তোমরা একই পিতামাতার সন্তান। এ সৃষ্টি ধারার মধ্যে কোথাও এ বিভেদ এবং উঁচু-নীচুর কোন ভিত্তি বর্তমান নেই; অথচ তোমরা এ ভ্রান্ত ধারণায় নিমজ্জিত রয়েছ।
(দুই) মূল উৎসের দিক দিয়ে এক হওয়া সত্ত্বেও তোমাদের বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত হওয়া ছিল একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। এ কথা স্পষ্ট যে, সমগ্র বিশ্বে গোটা মানবসমাজের একটিমাত্র বংশধারা আদৌ হতে পারত না। বংশ বৃদ্ধির সাথে সাথে বিভিন্ন বংশধারার সৃষ্টি হওয়া অপরিহার্য ছিল। অনুরূপ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বসতি স্থাপনের পর বর্ণ, দেহাকৃতি, ভাষা এবং জীবন-যাপন রীতিও অবশ্যম্ভাবীরূপে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু প্রকৃতিগত এ পার্থক্য ও ভিন্নতার দাবী এ নয় যে, এর ভিত্তিতে উঁচু-নীচু, ইতর-ভদ্র এবং শ্রেষ্ঠ ও নিকৃষ্ট হওয়ার ভেদাভেদ সৃষ্টি করা হবে, এক বর্ণের লোক অন্য বর্ণের লোকদের হেয় মনে করবে, এক জাতি অন্য জাতির উপর নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব কায়েম করবে এবং মানবাধিকারের ক্ষেত্রে এক জাতি অন্য জাতির উপর অগ্রাধিকার লাভ করবে। যে কারণে সৃষ্টিকর্তা মানব গোষ্ঠীসমূহকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিন্যস্ত করেছিলেন তা হচ্ছে, তাদের মধ্যে পারস্পরিক পরিচয় জানা। এ পদ্ধতিতে একটি পরিবার, একটি গোত্র এবং একটি জাতির লোক মিলে একটি সম্মিলিত সমাজ গড়তে এবং জীবনের বিভিন্ন ব্যাপারে একে অপরের সাহায্যকারী হতে পারবে। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা যাকে পারস্পরিক পরিচয়ের উপায় বানিয়েছেন মানুষ তাকে গর্ব ও ঘৃণার উপকরণ বানিয়ে নিয়েছে এবং এ বিষয়টিকে অত্যাচার ও সীমালঙ্ঘনের পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে।
(তিন) মানুষের মধ্যে মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের বুনিয়াদ যদি কিছু থেকে থাকে, তাহলে তা হচ্ছে নৈতিক মর্যাদা। জন্মগতভাবে সমস্ত মানুষ সমান। যে মূল জিনিসের ভিত্তিতে এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির উপর মর্যাদা লাভ করতে পারে তা হচ্ছে, সে অন্য সবার তুলনায় অধিক আল্লাহভীরু, মন্দ থেকে দূরে অবস্থানকারী এবং নেকীর পথ অবলম্বনকারী। এরূপ ব্যক্তি যে কোন বংশ, যে কোন জাতি এবং যে কোন দেশেরই হোক না কেন সে সম্মান ও মর্যাদার পাত্র। যার অবস্থা এর বিপরীত, সর্বাবস্থায়ই সে একজন নিকৃষ্টতর মানুষ। সে সাদা হোক বা কালো হোক এবং প্রাচ্যে জন্মলাভ করুক বা পাশ্চাত্যে তাতে কিছু আসে যায় না।
এ সত্য কথাগুলোই কুরআনের একটি ছোট্ট আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে। রাসূল ﷺ তাঁর বিভিন্ন উক্তিতেও এটা বর্ণনা করেছেন। মক্কা বিজয়ের সময় কা‘বাঘর তাওয়াফের পর তিনি যে বক্তৃতা করেছিলেন, তাতে তিনি বলেছিলেন, ‘‘সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর, যিনি তোমাদের থেকে জাহেলিয়াতের দোষ-ত্রুটি ও অহংকার দূর করে দিয়েছেন। হে লোকেরা! সমস্ত মানুষ দু’ভাগে বিভক্ত। (এক) নেককার ও পরহেযগার, যারা আল্লাহর দৃষ্টিতে মর্যাদার অধিকারী। (দুই) পাপী ও দূরাচারী, যারা আল্লাহর দৃষ্টিতে নিকৃষ্ট। অন্যথায় সমস্ত মানুষই আদমের সন্তান। আর আদম মাটির সৃষ্টি। (তিরমিযী, হা/৩৯৫৬)
প্রকৃতপক্ষে গুণাবলির দিক দিয়ে কে উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন মানুষ আর কে নীচু মর্যাদার মানুষ তা আল্লাহই ভালো জানেন। মানুষ নিজেরা যে মানদন্ড বানিয়ে রেখেছে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। হতে পারে দুনিয়াতে যাকে অনেক উচ্চমর্যাদার মানুষ মনে করা হয় আল্লাহর চূড়ান্ত ফায়সালায় সে অতি নীচু স্তরের মানুষ হিসেবে সাব্যস্ত হবে এবং যাকে অতি নগণ্য মনে করা হয় সে সেখানে অনেক উচ্চমর্যাদা লাভ করবে। দুনিয়ার সম্মান ও লাঞ্ছনা আসল বিষয় নয়, বরং আল্লাহর কাছে কে সম্মানী আর কে লাঞ্ছিত সেটাই আসল বিষয়। তাই যেসব গুণাবলি মানুষকে আল্লাহর কাছে মর্যাদা লাভের উপযুক্ত বানাতে পারে, সেসব গুণাবলি অর্জনের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা উচিত।
হিংসা, শত্রুতা ও সংঘাত থেকে দূরে থাকতে হবে :
وَلَا تَتَمَنَّوْا مَا فَضَّلَ اللهُ بِه بَعْضَكُمْ عَلٰى بَعْضٍؕ لِلرِّجَالِ نَصِيْبٌ مِّمَّا اكْتَسَبُوْاؕ وَلِلنِّسَآءِ نَصِيْبٌ مِّمَّا اكْتَسَبْنَؕ وَاسْاَلُوا اللهَ مِنْ فَضْلِه ؕ اِنَّ اللهَ كَانَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمًا
আল্লাহ যা দ্বারা তোমাদের কাউকে কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন তোমরা তার লালসা করো না। পুরুষরা যা অর্জন করে তাতে তাদের প্রাপ্য অংশ রয়েছে এবং নারীরা যা অর্জন করে তাতে তাদেরও প্রাপ্য অংশ রয়েছে। সুতরাং তোমরা আল্লাহর নিকট তাঁর অনুগ্রহ প্রার্থনা করো, নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ। (সূরা নিসা- ৩২)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতে একটি বিরাট গুরুত্বপূর্ণ নৈতিক বিধান দেয়া হয়েছে। এটি যথাযথভাবে কার্যকর করা হলে সমাজ জীবনে মানুষ বিপুল শান্তি ও নিরাপত্তা লাভে সক্ষম হবে। আল্লাহ সব মানুষকে সমান করে সৃষ্টি করেননি। তাদের মধ্যে অসংখ্য দিক দিয়ে পার্থক্য সৃষ্টি করে রেখেছেন। কেউ সুশ্রী, কেউ কুশ্রী। কেউ সুকণ্ঠের অধিকারী, কেউ কর্কশভাষী। কেউ শক্তিশালী, কেউ দুর্বল। কেউ পূর্ণাঙ্গ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অধিকারী, আবার কেউ পঙ্গু। কাউকে শারীরিক ও মানসিক শক্তির মধ্যে কোন একটি শক্তি বেশি দেয়া হয়েছে, আবার কাউকে দেয়া হয়েছে অন্য কোন শক্তি। কাউকে অপেক্ষাকৃত ভালো অবস্থায় সৃষ্টি করা হয়েছে, আবার কাউকে খারাপ অবস্থায়। কাউকে বেশি উপায় উপকরণ দেয়া হয়েছে, কাউকে দেয়া হয়েছে কম। এ তারতম্যের ভিত্তিতেই মানুষের সমাজ-সংস্কৃতি বৈচিত্র্যমন্ডিত হয়েছে। কিন্তু যেখানেই এ পার্থক্যের স্বাভাবিক সীমানা ছাড়িয়ে মানুষ তার উপর নিজের কৃত্রিম পার্থক্যের বোঝা চাপিয়ে দেয়, সেখানেই এক ধরনের বিপর্যয় দেখা দেয়। আর যেখানে এ পার্থক্যকে বিলুপ্ত করে দেয়ার জন্য প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করার প্রচেষ্টা চালানো হয়, সেখানে আরো বেশি বিপর্যয় দেখা দেয়। মানুষের মধ্যে একটি বিশেষ মানসিকতা দেখা যায় যে, নিজের চেয়ে কাউকে অগ্রসর দেখতে পেলে সে অস্থির হয়ে পড়ে। তাই সমাজ জীবনে হিংসা-বিদ্বেষ, শত্রুতা, দ্বন্দ্ব ও সংঘাত ইত্যাদি সৃষ্টি হয়। এরই ফলে যে বস্তু সে পায়নি বা বৈধ পথে অর্জন করতে পারে না, তাকে অবৈধ পথে লাভ করার জন্য ওঠেপড়ে লাগে। আল্লাহ এ আয়াতে মানুষদেরকে এ মানসিকতা থেকে দূরে থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহর বক্তব্যের উদ্দেশ্য হচ্ছে, অন্যদের প্রতি তিনি যে অনুগ্রহ করেছেন তুমি তার আকাঙ্ক্ষা করো না। তবে আল্লাহর কাছে অনুগ্রহের জন্য দু‘আ করো। তিনি নিজের জ্ঞান ও প্রজ্ঞা অনুযায়ী তোমার জন্য যে অনুগ্রহটি উপযোগী মনে করবেন, সেটিই তোমাকে দান করবেন। পুরুষ ও মেয়েদের মধ্য থেকে আল্লাহ যাকে যা কিছু দিয়েছেন তা ব্যবহার করে যে যেরকম নেকী বা গোনাহ অর্জন করবে, সে আল্লাহর কাছে ঐ অনুযায়ী শাস্তি বা পুরস্কার লাভ করবে।
খারাপ কাজের বিস্তার হতে দেয়া যাবে না :
اِنَّ الَّذِيْنَ يُحِبُّوْنَ اَنْ تَشِيْعَ الْفَاحِشَةُ فِى الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِؕ وَاللهُ يَعْلَمُ وَاَنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ
যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে, তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতে মর্মান্তিক শাস্তি। আল্লাহ সবকিছুই জানেন, তোমরা জান না। (সূরা নূর- ১৯)
ব্যাখ্যা : فَاحِشَةٌ (ফাহিশা) তথা অশ্লীলতা হলো, যা চরিত্রহীনতাকে উৎসাহিত করে। যেমন- উত্তেজনামূলক কিসসা-কাহিনী, কবিতা, গান, ছবি ও খেলাধূলা ইত্যাদি। তাছাড়া এমন ধরনের ক্লাব, হোটেল ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও এর আওতায় এসে যায়, যেখানে নারী-পুরুষের মিলিত নৃত্য ও আমোদফূর্তির ব্যবস্থা করা হয়। কুরআনে এদের সবাইকে অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত করেছে এবং প্রত্যেকের জন্য তাদের অপরাধের পরিমাপ অনুযায়ী শাস্তিও নির্ধারণ করে দিয়েছে। এইডস, নানা ধরনের যৌন রোগ, যুবক-যুবতীদের চারিত্রিক বিপর্যয়, ইভটিজিং, ধর্ষণ, হত্যা ইত্যাদি অশ্লীলতার ফলল। অশ্লীলতার কারণে ব্যক্তি নিজে তো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেই, তদুপরি দেশ ও জাতিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। কাজেই অশ্লীলতার এসব উপায়-উপকরণের পথ রোধ করা একটি ইসলামী রাষ্ট্রের অপরিহার্য কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত। কুরআন যেসব কাজকে অপরাধ বলে গণ্য করেছে এবং তা সম্পাদনকারীকে শাস্তিলাভের যোগ্য বলে ফায়সালা দিয়েছে, ইসলামী রাষ্ট্রের দন্ডবিধি আইনে সেসব কাজকে শাস্তিযোগ্য কাজ বলে আখ্যায়িত করতে হবে এবং পুলিশের হস্তক্ষেপের ব্যবস্থা করতে হবে। অতঃপর কুরআনে যে অপরাধের যে শাস্তি যেভাবে প্রয়োগ করতে বলেছে, সে অপরাধের শাস্তি সেভাবেই প্রয়োগ করতে হবে।
একদল আরেক দলের বিদ্রূপ করবে না :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِّنْ قَوْمٍ عَسٰۤى اَنْ يَّكُوْنُوْا خَيْرًا مِّنْهُمْ وَلَا نِسَآءٌ مِّنْ نِّسَآءٍ عَسٰۤى اَنْ يَّكُنَّ خَيْرًا مِّنْهُنَّ
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের কোন সম্প্রদায় যেন অপর কোন সম্প্রদায়কে নিয়ে ঠাট্টা না করে। হতে পারে, তারাই এদের চেয়ে উত্তম আবার কোন মহিলা সম্প্রদায়ও যেন অপর কোন মহিলা সম্প্রদায়কে নিয়ে ঠাট্টা না করে। হতে পারে, তারাই এদের চেয়ে বেশি উত্তম। (সূরা হুজুরাত- ১১)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতে এমনসব বড় বড় অন্যায়ের পথ রুদ্ধ করার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে, যা সাধারণত লোকদের পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট করে দেয়। পারস্পরিক শত্রুতা সৃষ্টির মূল কারণ হলো- একে অপরের ইজ্জতের উপর হামলা করা, মনোকষ্ট দেয়া, অপরের প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করা এবং একে অপরের দোষ-ত্রুটি তালাশ করা। এসব কারণ অন্যান্য কারণের সাথে মিশে বড় বড় ফিতনা সৃষ্টি করে। ইসলামী আইন প্রত্যেক ব্যক্তির এমন একটি মৌলিক মর্যাদার স্বীকৃতি দেয়, যার উপর কোন আক্রমণ চালানোর অধিকার নেই। এক্ষেত্রে হামলা বাস্তবতাভিত্তিক হোক বা না হোক এবং যার উপর আক্রমণ করা হয়, জনসমক্ষে তার কোন সুপরিচিত মর্যাদা থাক বা না থাক তাতে কিছু যায় আসে না। একজন ব্যক্তি অপর একজন ব্যক্তিকে অপমান করেছে শুধু এতটুকু বিষয়ই তাকে অপরাধী প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট। তবে এ অপমান করার যদি কোন শরীয়াতসম্মত বৈধতা থাকে তাহলে ভিন্ন কথা।
বিদ্রূপ করার অর্থ কেবল হাসি-তামাশা করাই নয়। বরং কারো কোন কাজের অভিনয় করা, তার প্রতি ইঙ্গিত করা, তার কথা, কাজ বা পোশাক নিয়ে হাসাহাসি করা অথবা তার কোন দোষের দিকে এমনভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করা, যাতে অন্যরা হাসাহাসি করে। এ ধরনের হাসি-তামাশা ও ঠাট্টা-বিদ্রূপের পেছনে নিশ্চিতভাবে নিজের বড়ত্ব প্রদর্শন এবং অন্যকে অপমান করা ও হেয় করে দেখানোর মনোবৃত্তি কাজ করে। যা নৈতিকভাবে অত্যন্ত দোষণীয়। তাছাড়া এভাবে অন্যের মনে কষ্ট হয়, যার কারণে সমাজে বিপর্যয় ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এ কারণেই এ কাজকে হারাম করে দেয়া হয়েছে। যে কারণে নারী ও পুরুষদের বিষয় আলাদা করে উল্লেখ করা হয়েছে তা হচ্ছে, ইসলাম এমন সমাজ আদৌ সমর্থন করে না, যেখানে নারী-পুরুষ অবাধে মেলামেশা করতে পারে অথবা মাহরাম নয় এমন নারী-পুরুষ কোন মজলিসে একত্র হয়ে পরস্পর হাসি-তামাশা করবে। তাই মুসলিম সমাজের একটি মজলিসে পুরুষ কোন নারীকে উপহাস করবে কিংবা নারী কোন পুরুষকে উপহাস করবে এমন বিষয় কল্পনার যোগ্যও মনে করা হয়নি।
একে অপরকে খারাপ নামে ডাকবে না :
وَلَا تَلْمِزُوْاۤ اَنْفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوْا بِالْاَلْقَابِؕ بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوْقُ بَعْدَ الْاِيْمَانِۚ وَمَنْ لَّمْ يَتُبْ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ
তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে খারাপ নাম নিয়েও সম্বোধন করো না; ঈমান আনার পর মন্দ নামে ডাকা কতই না জঘন্য কাজ! যারা এ ধরনের আচরণ থেকে ফিরে না আসে, (প্রকৃতপক্ষে) তারাই যালিম। (সূরা হুজুরাত- ১১)
ব্যাখ্যা : لَمْزٌ (লামযুন) শব্দটির মধ্যে বিদ্রূপ ও কুৎসা ছাড়াও আরো অর্থ রয়েছে। যেমন- উপহাস করা, অপবাদ আরোপ করা, দোষ বের করা এবং খোলাখুলি বা গোপনে অথবা ইশারা-ইঙ্গিত করে কাউকে তিরস্কারের লক্ষ্যস্থল বানানো। এসব কাজও যেহেতু পারস্পরিক সুসম্পর্ক নষ্ট করে এবং সমাজে বিপর্যয় সৃষ্টি করে তাই এসব হারাম করে দেয়া হয়েছে। ‘নিজেকে নিজে বিদ্রূপ করো না’ কথাটি দ্বারা এ কথার ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, অন্যদের বিদ্রূপ ও উপহাসকারীরা প্রকৃতপক্ষে নিজেকেই বিদ্রূপ ও উপহাস করে। কেননা যতক্ষণ কারো মনে কারো সম্পর্কে কুধারণা না জন্মাবে ততক্ষণ তার মুখ অন্যদের কুৎসা রটনার জন্য খুলবে না। এভাবে এ মানসিকতা লালনকারী অন্যদের আগে নিজেকেই কুকর্মের আস্তানা বানিয়ে ফেলে। তারপর যখন সে অন্যদের উপর আঘাত করে তখন তার অর্থ দাঁড়ায়, সে তার নিজের উপর আঘাত করার জন্য অন্যদেরকে আহবান করছে। ভদ্রতার কারণে কেউ যদি তার আক্রমণ এড়িয়ে চলে তাহলে তা ভিন্ন কথা। কিন্তু সে যার দুর্ণাম করল সেও পাল্টা তার উপর আক্রমণ করুক এ দরজা সে নিজেই খুলে দিয়েছে। এ নির্দেশের উদ্দেশ্য হচ্ছে, কাউকে যেন এমন নামে ডাকা না হয় অথবা এমন উপাধি না দেয়া হয়, যা তার অপছন্দ এবং যা দ্বারা তার অমর্যাদা হয়। যেমন কাউকে ফাসিক বা মুনাফিক বলা। কাউকে খোঁড়া, অন্ধ অথবা কানা বলা। কাউকে তার নিজের কিংবা মা-বাপের অথবা বংশের কোন দোষ-ত্রুটির সাথে সম্পর্কিত করে উপাধি দেয়া। কোন ব্যক্তি, বংশ, আত্মীয়তা অথবা গোষ্ঠীর এমন নাম দেয়া, যার মধ্যে তার নিন্দা ও অপমানের দিকটি বিদ্যমান। তবে যেসব উপাধি পরিচয়ের সহায়ক এমনসব উপাধি এ নির্দেশের মধ্যে পড়ে না। ঈমানদার হওয়া সত্ত্বেও কটুভাষী হওয়া এবং অসৎ ও অন্যায় কাজের জন্য বিখ্যাত হওয়া এটা একজন ঈমানদারের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক ব্যাপার। কেউ আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস করা সত্ত্বেও যদি এরূপ হীন বিশেষণে ভূষিত হয়, তাহলে তা তার জন্য অতি দুঃখজনক বিষয়।
বেশি বেশি ধারণা করবে না :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اجْتَنِبُوْا كَثِيْرًا مِّنَ الظَّنِّ اِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ اِثْمٌ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা বেশি বেশি ধারণা করা থেকে বিরত থাকো। কারণ, কতক ধারণা গোনাহের কাজ। (সূরা হুজুরাত- ১২)
ব্যাখ্যা : একেবারেই ধারণা করতে নিষেধ করা হয়নি। বরং খুব বেশি ধারণার ভিত্তিতে কাজ করতে এবং সবরকম ধারণার অনুসরণ থেকে নিষেধ করা হয়েছে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, অনেক ধারণা গোনাহের পর্যায়ে পড়ে। যেমন- বিনা কারণে কারো প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করা কিংবা এমন লোকদের ব্যাপারে খারাপ ধারণা পোষণ করা, যাদের বাহ্যিক অবস্থা তাদের সৎ হওয়ার প্রমাণ দেয়। অনুরূপভাবে কোন ব্যক্তির কোন কথা বা কাজে যদি ভালো ও মন্দের সমান সম্ভাবনা থাকে; কিন্তু ভালো সম্ভাবনার দিকটি বাদ দিয়ে খারাপ সম্ভাবনার দিকটি গ্রহণ করার কারণ খারাপ ধারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। এ সতর্কীকরণ দ্বারা বুঝা যায় যে, যখনই কোন ব্যক্তি ধারণার ভিত্তিতে কোন সিদ্ধান্ত নিতে যায় তখন তার ভালোভাবে যাচাই বাছাই করে দেখা উচিত যে, সে যে ধারণা করছে তা গোনাহের অন্তর্ভুক্ত কি না। যারা আল্লাহকে ভয় করে তারা এতটুকু সাবধানতা অবশ্যই অবলম্বন করবে। লাগামহীন ধারণা পোষণ কেবল তাদেরই কাজ যারা আল্লাহর ভয় থেকে মুক্ত এবং আখিরাতের জবাবদিহি সম্পর্কে উদাসীন।
একে অপরের দোষ না খোঁজা :
وَلَا تَجَسَّسُوْا
আর তোমরা একে অপরের গোপন বিষয় অনুসন্ধান করো না। (সূরা হুজুরাত- ১২)
ব্যাখ্যা : মানুষের গোপন বিষয় অনুসন্ধান করো না। একজন আরেকজনের দোষ খুঁজো না। খারাপ ধারণার বশবর্তী হয়ে এ আচরণ করা হোক কিংবা অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য হোক অথবা শুধু নিজের কৌতুহল নিবারণের জন্য করা হোক শরীয়াতের দৃষ্টিতে তা সর্বাবস্থায় নিষিদ্ধ। অন্যদের যেসব বিষয় লোকচক্ষুর অন্তরালে আছে তা খোঁজাখুজি করা এবং কার কী দোষ-ত্রুটি আছে ও কার কী কী দুর্বলতা গোপন আছে কোন বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া জানার চেষ্টা করা কোন মুমিনের কাজ নয়। মানুষের ব্যক্তিগত চিঠিপত্র পড়া, দু’জনের কথোপকথন কান পেতে শোনা, প্রতিবেশীর ঘরে উঁকি দেয়া এবং বিভিন্ন পন্থায় অন্যদের ব্যক্তিগত বিষয়াদি খোঁজ করা- এসব অনৈতিক কাজ। এর দ্বারা নানা রকম ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি হয়। এ কারণে একবার নবী ﷺ তাঁর খুতবায় দোষ অন্বেষণকারীদের সম্পর্কে বলেছেন, ‘‘হে ঐ সব লোক! যারা মুখে ঈমান এনেছ; কিন্তু এখনো ঈমান তোমাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি, তোমরা মুসলিমদের গোপনীয় বিষয় অনুসন্ধান করো না। যে ব্যক্তি মুসলিমদের দোষ-ত্রুটি অনুসন্ধান করে বেড়াবে, আল্লাহও তার দোষ-ত্রুটির প্রকাশ করে দেবেন। আর আল্লাহ যার দোষ-ত্রুটি তালাশ করেন, তাকে তার ঘরের মধ্যেও লাঞ্ছিত করে ছাড়েন।’’ (আবু দাউদ, হা/৪৮৮২)
তবে কোন বিশেষ পরিস্থিতিতে যদি খোঁজখবর নেয়া ও অনুসন্ধান করা একান্তই প্রয়োজন হয়ে পড়ে, তাহলে সেটা এ নির্দেশের আওতাভুক্ত নয়। যেমন কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর আচার-আচরণে বিদ্রোহের কিছুটা লক্ষণ সুস্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। ফলে তারা কোন অপরাধ সংঘটিত করতে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা সৃষ্টি হলে তাদের ব্যাপারে অনুসন্ধান চালাতে হবে। অথবা যদি কোন ব্যক্তিকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়া হয় বা তার সাথে ব্যবসায়িক লেনদেন করতে চায় তাহলে তার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য তার সম্পর্কে অনুসন্ধান করা ও খোঁজখবর নেয়া দোষণীয় নয়।
পরনিন্দা বা গীবত না করা :
وَلَا يَغْتَبْ بَّعْضُكُمْ بَعْضًاؕ اَيُحِبُّ اَحَدُكُمْ اَنْ يَّاْكُلَ لَحْمَ اَخِيْهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوْهُؕ وَاتَّقُوا اللهَؕ اِنَّ اللهَ تَوَّابٌ رَّحِيْمٌ
তোমরা কেউ কারো গীবত করো না। তোমাদের মধ্যে কি এমন কেউ আছে, যে তার মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করে? তোমরা তো তা ঘৃণা করে থাক। সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো; নিশ্চয় আল্লাহ বড়ই তাওবা কবুলকারী ও মেহেরবান। (সূরা হুজুরাত- ১২)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতাংশে আল্লাহ তা‘আলা গীবতকে মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সাথে তুলনা করে এ কাজ চরম ঘৃণিত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। মৃতের গোশত খাওয়া এমনিতেই ঘৃণ্য ব্যাপার। সে গোশতও যখন অন্য কোন জন্তুর না হয়ে মানুষের হয় এবং সে মানুষটিও যদি নিজের আপন ভাই হয়, তাহলে তো কোন কথাই নেই। তারপর এ উপমাকে প্রশ্নের আকারে পেশ করে আরো অধিক গুরুতর অপরাধ ও ঘৃণ্যবস্তু হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে- যাতে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করে নিজেই এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে যে, সে কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে প্রস্তুত? সে যদি তা খেতে রাজি না হয় এবং তার প্রবৃত্তি এতে ঘৃণাবোধ করে, তাহলে সে কীভাবে এ কাজ পছন্দ করতে পারে যে, সে তার কোন মুমিন ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার মান-মর্যাদার উপর হামলা চালাবে।
গীবতের সংজ্ঞা হচ্ছে, ‘‘কারো অনুপস্থিতিতে তার সম্পর্কে এমন কোন কথা বলা, যা শুনলে সে অপছন্দ করবে।’’ কারো বিরুদ্ধে তার অনুপস্থিতিতে মিথ্যা অভিযোগ করা অপবাদ। আর তার সত্যিকার দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করা গীবত। এ কাজ স্পষ্ট বক্তব্যের মাধ্যমে করা হোক বা ইশারা ইঙ্গিতের মাধ্যমে করা হোক সর্বাবস্থায় তা হারাম। অনুরূপভাবে এ কাজ ব্যক্তির জীবদ্দশায় করা হোক বা মৃত্যুর পরে করা হোক উভয় অবস্থায় হারাম। একদা নবী ﷺ কে জিজ্ঞেস করা হয়, গীবত কী? জবাবে তিনি বলেন,
ذِكْرُكَ اَخَاكَ بِمَا يَكْرَهُ
‘‘তোমার ভাইয়ের আলোচনা এমনভাবে করা, যা সে অপছন্দ করে।’’ তারপর আবারো জিজ্ঞেস করা হয় যে, যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে সত্যিই সে দোষ থেকে থাকে? তিনি জবাব দেন :
اِنْ كَانَ فِيْهِ مَا تَقُوْلُ فَقَدِ اغْتَبْتَهٗ وَاِنْ لَّمْ يَكُنْ فِيْهِ مَا تَقُوْلُ فَقَدْ بَهَتَّهٗ
‘‘তুমি যে দোষের কথা বলছ তা যদি তার মধ্যে থাকে, তাহলে তুমি তার গীবত করলে। আর যদি তা তার মধ্যে না থাকে, তাহলে তার উপর অপবাদ দিলে (যা আরো গুরুতর অপরাধ)।’’ (সহীহ মুসলিম, হা/৬৭৫৮; আবু দাউদ, হা/৪৮৭৬)
যেসব ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে বা তার মৃত্যুর পর তার মন্দ দিকগুলো বর্ণনা করার এমন কোন প্রয়োজন দেখা দেয় আর ঐ প্রয়োজন পূরণের জন্য গীবত না করা হলে তার চেয়েও অধিক মন্দকাজ অপরিহার্য হয়ে পড়ে- এমন ক্ষেত্রসমূহে গীবত করা হারাম নয়। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুন আমাদের বই- গীবত থেকে বাঁচার উপায় ও তাওবা করার পদ্ধতি।
চোখ ও লজ্জাস্থানের হেফাজত করার নির্দেশ :
قُلْ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ يَغُضُّوْا مِنْ اَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوْا فُرُوْجَهُمْؕ ذٰلِكَ اَزْكٰى لَهُمْؕ اِنَّ اللهَ خَبِيْرٌ ۢبِمَا يَصْنَعُوْنَ
মুমিনদেরকে বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে; এটাই তাদের জন্য উত্তম। তারা যা করে নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবগত। (সূরা নূর- ৩০)
ব্যাখ্যা : غَضٌّ (গাদ্বদুন) অর্থ হচ্ছে, কোন জিনিস কম করা, হ্রাস করা ও নিচু করা ইত্যাদি।
আর غَضُّ الْبَصَرِ (গাদ্বদুল বাসার) এর অর্থ হচ্ছে, পূর্ণ দৃষ্টিভরে না দেখা এবং দেখার জন্য দৃষ্টিকে স্বাধীনভাবে ছেড়ে না দেয়া। অর্থাৎ যে জিনিসটি দেখা সংগত নয় তার উপর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেবে। এজন্য দৃষ্টি নত করা যায় আবার অন্য কোন দিকে নজর ঘুরিয়েও নেয়া যায়। এ বিধি-নিষেধ যে জিনিসের উপর আরোপ করা হয়েছে সেটি হচ্ছে, পুরুষরা মহিলাদেরকে দেখবে না এবং মহিলারাও কোন পরপুরুষের দিকে তাকিয়ে থাকবে না। কেউ কারো লজ্জাস্থানে দৃষ্টি দেবে না এবং অশ্লীল দৃশ্যের দিকেও তাকিয়ে থাকবে না। নিজের স্ত্রী বা মাহরাম নারীদের ছাড়া কাউকে নজর ভরে দেখা মানুষের জন্য জায়েয নয়। একবার হঠাৎ নজর পড়ে গেলে ক্ষমাযোগ্য। কিন্তু প্রথম দৃষ্টিতে আকর্ষণীয় মনে হলে সেখানে আবার দৃষ্টিপাত করা ক্ষমাযোগ্য নয়। নবী ﷺ এ ধরনের দেখাকে চোখের যিনা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। (মুসনাদুল বাযযার, হা/৭৬১১)
নারীদের জন্যও পুরুষদের মতো দৃষ্টি সংযত রাখার বিধান রয়েছে :
وَقُلْ لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ اَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوْجَهُنَّ
মুমিন নারীদেরকে বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। (সূরা নূর- ৩১)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ ইচ্ছা করে পরপুরুষদের দেখা উচিত নয়। কিন্তু যদি হঠাৎ কোন পরপুরুষের প্রতি দৃষ্টি পড়ে যায়, তবে সাথে সাথে ফিরিয়ে নিতে হবে এবং দ্বিতীয়বার দেখা থেকে বিরত থাকতে হবে। সকল ধরনের অশ্লীল দৃশ্য দেখার ক্ষেত্রেও এ নীতি অবলম্বন করতে হবে।
লজ্জাস্থানের হেফাজত মুমিনের উত্তম বৈশিষ্ট্য :
وَالَّذِيْنَ هُمْ لِفُرُوْجِهِمْ حَافِظُوْنَ
(আর ঐসব ব্যক্তিগণও মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত) যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে। (সূরা মু’মিনূন- ৫)
ব্যাখ্যা : লজ্জাস্থানের হেফাজত করার দু’টি অর্থ হয়।
(এক) নিজের লজ্জাস্থান ঢেকে রাখা এবং অন্যের সামনে লজ্জাস্থান না খুলে।
(দুই) নিজেদের সততা ও পবিত্রতা সংরক্ষণ করা। অর্থাৎ যৌন স্বাধীনতা দান না করা এবং কামশক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে লাগামহীন না হওয়া।
قُلْ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ يَغُضُّوْا مِنْ اَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوْا فُرُوْجَهُمْؕ ذٰلِكَ اَزْكٰى لَهُمْؕ اِنَّ اللهَ خَبِيْرٌ ۢبِمَا يَصْنَعُوْنَ
মুমিনদেরকে বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে; এটাই তাদের জন্য উত্তম। তারা যা করে নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবগত। (সূরা নূর- ৩০)
ব্যাখ্যা : غَضٌّ (গাদ্বদুন) অর্থ হচ্ছে, কোন জিনিস কম করা, হ্রাস করা ও নিচু করা ইত্যাদি।
আর غَضُّ الْبَصَرِ (গাদ্বদুল বাসার) এর অর্থ হচ্ছে, পূর্ণ দৃষ্টিভরে না দেখা এবং দেখার জন্য দৃষ্টিকে স্বাধীনভাবে ছেড়ে না দেয়া। অর্থাৎ যে জিনিসটি দেখা সংগত নয় তার উপর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেবে। এজন্য দৃষ্টি নত করা যায় আবার অন্য কোন দিকে নজর ঘুরিয়েও নেয়া যায়। এ বিধি-নিষেধ যে জিনিসের উপর আরোপ করা হয়েছে সেটি হচ্ছে, পুরুষরা মহিলাদেরকে দেখবে না এবং মহিলারাও কোন পরপুরুষের দিকে তাকিয়ে থাকবে না। কেউ কারো লজ্জাস্থানে দৃষ্টি দেবে না এবং অশ্লীল দৃশ্যের দিকেও তাকিয়ে থাকবে না। নিজের স্ত্রী বা মাহরাম নারীদের ছাড়া কাউকে নজর ভরে দেখা মানুষের জন্য জায়েয নয়। একবার হঠাৎ নজর পড়ে গেলে ক্ষমাযোগ্য। কিন্তু প্রথম দৃষ্টিতে আকর্ষণীয় মনে হলে সেখানে আবার দৃষ্টিপাত করা ক্ষমাযোগ্য নয়। নবী ﷺ এ ধরনের দেখাকে চোখের যিনা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। (মুসনাদুল বাযযার, হা/৭৬১১)
নারীদের জন্যও পুরুষদের মতো দৃষ্টি সংযত রাখার বিধান রয়েছে :
وَقُلْ لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ اَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوْجَهُنَّ
মুমিন নারীদেরকে বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। (সূরা নূর- ৩১)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ ইচ্ছা করে পরপুরুষদের দেখা উচিত নয়। কিন্তু যদি হঠাৎ কোন পরপুরুষের প্রতি দৃষ্টি পড়ে যায়, তবে সাথে সাথে ফিরিয়ে নিতে হবে এবং দ্বিতীয়বার দেখা থেকে বিরত থাকতে হবে। সকল ধরনের অশ্লীল দৃশ্য দেখার ক্ষেত্রেও এ নীতি অবলম্বন করতে হবে।
লজ্জাস্থানের হেফাজত মুমিনের উত্তম বৈশিষ্ট্য :
وَالَّذِيْنَ هُمْ لِفُرُوْجِهِمْ حَافِظُوْنَ
(আর ঐসব ব্যক্তিগণও মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত) যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে। (সূরা মু’মিনূন- ৫)
ব্যাখ্যা : লজ্জাস্থানের হেফাজত করার দু’টি অর্থ হয়।
(এক) নিজের লজ্জাস্থান ঢেকে রাখা এবং অন্যের সামনে লজ্জাস্থান না খুলে।
(দুই) নিজেদের সততা ও পবিত্রতা সংরক্ষণ করা। অর্থাৎ যৌন স্বাধীনতা দান না করা এবং কামশক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে লাগামহীন না হওয়া।
মানুষ যা বলে ফেরেশতারা তা রেকর্ড করে রাখেন :
اِذْ يَتَلَقَّى الْمُتَلَقِّيَانِ عَنِ الْيَمِيْنِ وَعَنِ الشِّمَالِ قَعِيْدٌ ‐ مَا يَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ اِلَّا لَدَيْهِ رَقِيْبٌ عَتِيْدٌ
স্মরণ করো, দু’জন লেখক তার ডানে ও বামে বসে সকল কর্ম লিপিবদ্ধ করে। মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে, তা লিপিবদ্ধ করার জন্য তৎপর প্রহরী তার নিকটেই রয়েছে। (সূরা ক্বাফ- ১৭, ১৮)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ এমন ধরনের ফেরেশতা নিযুক্ত করেন, যারা মানুষের প্রত্যেকটি কথা ও তৎপরতার উপর নজর রাখে। অতঃপর তারা তোমাদের প্রতিটি গতিবিধি লিপিবদ্ধ করে সংরক্ষণ করতে থাকে।
মানুষের খারাপ কথা বলা আল্লাহর পছন্দ নয় :
لَا يُحِبُّ اللهُ الْجَهْرَ بِالسُّوْٓءِ مِنَ الْقَوْلِ اِلَّا مَنْ ظُلِمَؕ وَكَانَ اللهُ سَمِيْعًا عَلِيْمًا
আল্লাহ মন্দ কথার প্রচারণা পছন্দ করেন না; তবে যার উপর যুলুম করা হয়েছে সে ব্যতীত। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা নিসা- ১৪৮)
ব্যাখ্যা : ইসলামের প্রাথমিক যুগে মুনাফিক, ইয়াহুদি ও মূর্তিপূজারী সবাই একই সঙ্গে সম্ভাব্য যাবতীয় উপায়ে ইসলামের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার এবং ইসলাম গ্রহণকারীদের কষ্ট দেয়ার জন্য ওঠে পড়ে লেগেছিল। কাজেই মুসলিমদের মনে ক্রোধের অনুভূতি সৃষ্টি হওয়াই ছিল একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। তাদের মনে এ ধরনের অনুভূতি সৃষ্টি হতে দেখে আল্লাহ বলেন, তোমাদের খারাপ কথা বলা ও অশ্লীল বাক্য উচ্চারণ করা আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় কাজ নয়। তোমরা মাজলুম, এতে কোন সন্দেহ নেই। আর মাজলুম যদি যালেমের বিরুদ্ধে অশ্লীল কথা বলে, তাহলে তার সে অধিকার আছে। তবুও প্রকাশ্যে ও গোপনে সর্বাবস্থায় ভালো কাজ করে যাওয়া ও খারাপ কাজ পরিহার করাই উত্তম।
কাজের সাথে মিল নেই এমন কথা বলতে নেই :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لِمَ تَقُوْلُوْنَ مَا لَا تَفْعَلُوْنَ ‐ كَبُرَ مَقْتًا عِنْدَ اللهِ اَنْ تَقُوْلُوْا مَا لَا تَفْعَلُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা যা কর না তা কেন বল? আর যা কর না তা বলা আল্লাহর নিকট অতিশয় অসন্তোষজনক। (সূরা সাফ- ২,৩)
সঠিক ও হক কথা বলতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَقُوْلُوْا قَوْلًا سَدِيْدًا
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বলো। (সূরা আহযাব- ৭০)
সুন্দর কথা বলতে হবে :
وَقُلْ لِّعِبَادِيْ يَقُوْلُوا الَّتِيْ هِيَ اَحْسَنُؕ اِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْزَغُ بَيْنَهُمْؕ اِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلْاِنْسَانِ عَدُوًّا مُّبِيْنًا
আমার বান্দাদেরকে যা উত্তম তা বলতে বলো। নিশ্চয় শয়তান তাদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টির জন্য উস্কানি দেয়; নিশ্চয় শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৫৩)
ভালো কথা কখনো কখনো সাদাকা থেকেও উত্তম হয় :
قَوْلٌ مَّعْرُوْفٌ وَّمَغْفِرَةٌ خَيْرٌ مِّنْ صَدَقَةٍ يَّتْبَعُهَاۤ اَذًى
ভালো কথা বলা এবং ক্ষমা প্রদর্শন করা ঐ দানের চেয়ে উত্তম যে দানের পরে কষ্ট দেয়া হয়। (সূরা বাক্বারা- ২৬৩)
কথা সংশোধন করা যাবতীয় আমল সংশোধনের উপায় :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَقُوْلُوْا قَوْلًا سَدِيْدًا ‐ يُصْلِحْ لَكُمْ اَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْؕ وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيْمًا
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বলো। আল্লাহ তোমাদের আমলগুলোকে সংশোধন করবেন এবং তোমাদের গোনাহ ক্ষমা করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, সে তো মহাসাফল্য লাভ করবে। (সূরা আহযাব - ৭০, ৭১)
اِذْ يَتَلَقَّى الْمُتَلَقِّيَانِ عَنِ الْيَمِيْنِ وَعَنِ الشِّمَالِ قَعِيْدٌ ‐ مَا يَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ اِلَّا لَدَيْهِ رَقِيْبٌ عَتِيْدٌ
স্মরণ করো, দু’জন লেখক তার ডানে ও বামে বসে সকল কর্ম লিপিবদ্ধ করে। মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে, তা লিপিবদ্ধ করার জন্য তৎপর প্রহরী তার নিকটেই রয়েছে। (সূরা ক্বাফ- ১৭, ১৮)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ এমন ধরনের ফেরেশতা নিযুক্ত করেন, যারা মানুষের প্রত্যেকটি কথা ও তৎপরতার উপর নজর রাখে। অতঃপর তারা তোমাদের প্রতিটি গতিবিধি লিপিবদ্ধ করে সংরক্ষণ করতে থাকে।
মানুষের খারাপ কথা বলা আল্লাহর পছন্দ নয় :
لَا يُحِبُّ اللهُ الْجَهْرَ بِالسُّوْٓءِ مِنَ الْقَوْلِ اِلَّا مَنْ ظُلِمَؕ وَكَانَ اللهُ سَمِيْعًا عَلِيْمًا
আল্লাহ মন্দ কথার প্রচারণা পছন্দ করেন না; তবে যার উপর যুলুম করা হয়েছে সে ব্যতীত। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা নিসা- ১৪৮)
ব্যাখ্যা : ইসলামের প্রাথমিক যুগে মুনাফিক, ইয়াহুদি ও মূর্তিপূজারী সবাই একই সঙ্গে সম্ভাব্য যাবতীয় উপায়ে ইসলামের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার এবং ইসলাম গ্রহণকারীদের কষ্ট দেয়ার জন্য ওঠে পড়ে লেগেছিল। কাজেই মুসলিমদের মনে ক্রোধের অনুভূতি সৃষ্টি হওয়াই ছিল একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। তাদের মনে এ ধরনের অনুভূতি সৃষ্টি হতে দেখে আল্লাহ বলেন, তোমাদের খারাপ কথা বলা ও অশ্লীল বাক্য উচ্চারণ করা আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় কাজ নয়। তোমরা মাজলুম, এতে কোন সন্দেহ নেই। আর মাজলুম যদি যালেমের বিরুদ্ধে অশ্লীল কথা বলে, তাহলে তার সে অধিকার আছে। তবুও প্রকাশ্যে ও গোপনে সর্বাবস্থায় ভালো কাজ করে যাওয়া ও খারাপ কাজ পরিহার করাই উত্তম।
কাজের সাথে মিল নেই এমন কথা বলতে নেই :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لِمَ تَقُوْلُوْنَ مَا لَا تَفْعَلُوْنَ ‐ كَبُرَ مَقْتًا عِنْدَ اللهِ اَنْ تَقُوْلُوْا مَا لَا تَفْعَلُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা যা কর না তা কেন বল? আর যা কর না তা বলা আল্লাহর নিকট অতিশয় অসন্তোষজনক। (সূরা সাফ- ২,৩)
সঠিক ও হক কথা বলতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَقُوْلُوْا قَوْلًا سَدِيْدًا
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বলো। (সূরা আহযাব- ৭০)
সুন্দর কথা বলতে হবে :
وَقُلْ لِّعِبَادِيْ يَقُوْلُوا الَّتِيْ هِيَ اَحْسَنُؕ اِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْزَغُ بَيْنَهُمْؕ اِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلْاِنْسَانِ عَدُوًّا مُّبِيْنًا
আমার বান্দাদেরকে যা উত্তম তা বলতে বলো। নিশ্চয় শয়তান তাদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টির জন্য উস্কানি দেয়; নিশ্চয় শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৫৩)
ভালো কথা কখনো কখনো সাদাকা থেকেও উত্তম হয় :
قَوْلٌ مَّعْرُوْفٌ وَّمَغْفِرَةٌ خَيْرٌ مِّنْ صَدَقَةٍ يَّتْبَعُهَاۤ اَذًى
ভালো কথা বলা এবং ক্ষমা প্রদর্শন করা ঐ দানের চেয়ে উত্তম যে দানের পরে কষ্ট দেয়া হয়। (সূরা বাক্বারা- ২৬৩)
কথা সংশোধন করা যাবতীয় আমল সংশোধনের উপায় :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَقُوْلُوْا قَوْلًا سَدِيْدًا ‐ يُصْلِحْ لَكُمْ اَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْؕ وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيْمًا
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বলো। আল্লাহ তোমাদের আমলগুলোকে সংশোধন করবেন এবং তোমাদের গোনাহ ক্ষমা করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, সে তো মহাসাফল্য লাভ করবে। (সূরা আহযাব - ৭০, ৭১)
অনর্থক কথা ও কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে :
قَدْ اَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ هُمْ فِيْ صَلَاتِهِمْ خَاشِعُوْنَ ‐ وَالَّذِيْنَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُوْنَ
অবশ্যই মুমিনগণ সফলকাম হয়েছে, যারা নিজেদের সালাতে বিনয় ও নম্র এবং যারা অনর্থক ক্রিয়াকলাপ হতে বিরত থাকে। (সূরা মু’মিনূন- ১, ৩)
ব্যাখ্যা : لَغْوٌ (লাগভুন) বলতে এমন প্রত্যেকটি কথা ও কাজকে বুঝানো হয়, যা একেবারেই অপ্রয়োজনীয় ও অর্থহীন এবং যাতে কোন ফায়দা হয় না। তাছাড়া যেগুলোর পরিণাম কল্যাণময় নয় এবং যেগুলোর উদ্দেশ্যও ভালো নয়- তা সবই ‘লাগভুন’ এর অন্তর্ভুক্ত। আয়াতের পূর্ণ বক্তব্য হচ্ছে, মুমিন অনর্থক ও বেহুদা কথা ও কাজে কান দেয় না, সেদিকে দৃষ্টি দেয় না এবং সে ব্যাপারে কোন প্রকার কৌতুহলও প্রকাশ করে না। যেখানে এ ধরনের কথাবার্তা হতে থাকে, সেখানে সে অংশগ্রহণ করে না। আর যদি কোথাও এসবের মুখোমুখি হয়েও যায়, তাহলে তা এড়িয়ে চলে যায় অথবা অন্ততপক্ষে তা থেকে সম্পর্কহীন হয়ে যায়। এ ছোট্ট ও সংক্ষিপ্ত বাক্যটিতে যে কথা বলা হয়েছে তা আসলে মুমিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুণাবলির অন্তর্ভুক্ত। মুমিন এমন এক ব্যক্তি, যার মধ্যে সবসময় দায়িত্বানুভূতি সজাগ থাকে, সে মনে করে দুনিয়াটা আসলে একটা পরীক্ষাগৃহ। যে জিনিসটিকে জীবন, বয়স, সময় ইত্যাদি বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে, সেটি আসলে একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ। তাকে পরীক্ষা করার জন্য এ সময়টি দেয়া হয়েছে। যে ছাত্র পরীক্ষার হলে বসে নিজের প্রশ্নপত্রের জবাব লিখে যাচ্ছে, সে যেমন নিজের কাজকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে পূর্ণ ব্যস্ততা সহকারে তার মধ্যে নিজেকে নিমগ্ন করে দেয়, ঠিক তেমনি মুমিন ব্যক্তিও গুরুত্বপূর্ণ কাজে সময় কাটায়। ছাত্রটি যেমন এ ঘণ্টাগুলোর একটি সেকেন্ডও অহেতুক কাজে নষ্ট করতে চায় না, ঠিক তেমনি মুমিনও দুনিয়ার সময়কে এমনসব কাজে ব্যয় করে, যা পরিণামের দিক দিয়ে কল্যাণকর। এমনকি সে খেলাধুলা ও আনন্দ উপভোগের ক্ষেত্রেও এমনসব জিনিস নির্বাচন করে, যা নিছক সময় কাটানোর কারণ হয় না বরং কোন অপেক্ষাকৃত ভালো উদ্দেশ্য পূর্ণ করার জন্য তাকে তৈরি করে। তার দৃষ্টিতে সময় অবহেলা করার জিনিস নয় বরং ব্যবহার করার জিনিস। এছাড়াও মুমিন ব্যক্তি সবসময় শান্ত প্রকৃতি এবং পবিত্র-পরিচ্ছন্ন স্বভাব ও সুস্থ রুচিসম্পন্ন গুণের অধিকারী হয়। সে ফলদায়ক কথা বলতে পারে, কিন্তু অহেতুক কথা বলতে পারে না। সে ব্যঙ্গ, কৌতুক ও হালকা পরিহাস করতে পারে, কিন্তু ঠাট্টা-তামাশায় মেতে উঠতে পারে না, বাজে ঠাট্টা-মস্করা সহ্য করতে পারে না এবং আনন্দ-ফূর্তির কথাবার্তাকে নিজের পেশায় পরিণত করতে পারে না। মুমিনের কান গালি-গালাজ, পরনিন্দা, পরচর্চা, অপবাদ, মিথ্যা কথা, গান-বাজনা ও অশ্লীল কথাবার্তা থেকে নিরাপদ থাকবে। যে সমাজে এসব চলে ঐ সমাজে সে শান্তিতে বসবাস করতে পারে না।
قَدْ اَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ هُمْ فِيْ صَلَاتِهِمْ خَاشِعُوْنَ ‐ وَالَّذِيْنَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُوْنَ
অবশ্যই মুমিনগণ সফলকাম হয়েছে, যারা নিজেদের সালাতে বিনয় ও নম্র এবং যারা অনর্থক ক্রিয়াকলাপ হতে বিরত থাকে। (সূরা মু’মিনূন- ১, ৩)
ব্যাখ্যা : لَغْوٌ (লাগভুন) বলতে এমন প্রত্যেকটি কথা ও কাজকে বুঝানো হয়, যা একেবারেই অপ্রয়োজনীয় ও অর্থহীন এবং যাতে কোন ফায়দা হয় না। তাছাড়া যেগুলোর পরিণাম কল্যাণময় নয় এবং যেগুলোর উদ্দেশ্যও ভালো নয়- তা সবই ‘লাগভুন’ এর অন্তর্ভুক্ত। আয়াতের পূর্ণ বক্তব্য হচ্ছে, মুমিন অনর্থক ও বেহুদা কথা ও কাজে কান দেয় না, সেদিকে দৃষ্টি দেয় না এবং সে ব্যাপারে কোন প্রকার কৌতুহলও প্রকাশ করে না। যেখানে এ ধরনের কথাবার্তা হতে থাকে, সেখানে সে অংশগ্রহণ করে না। আর যদি কোথাও এসবের মুখোমুখি হয়েও যায়, তাহলে তা এড়িয়ে চলে যায় অথবা অন্ততপক্ষে তা থেকে সম্পর্কহীন হয়ে যায়। এ ছোট্ট ও সংক্ষিপ্ত বাক্যটিতে যে কথা বলা হয়েছে তা আসলে মুমিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুণাবলির অন্তর্ভুক্ত। মুমিন এমন এক ব্যক্তি, যার মধ্যে সবসময় দায়িত্বানুভূতি সজাগ থাকে, সে মনে করে দুনিয়াটা আসলে একটা পরীক্ষাগৃহ। যে জিনিসটিকে জীবন, বয়স, সময় ইত্যাদি বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে, সেটি আসলে একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ। তাকে পরীক্ষা করার জন্য এ সময়টি দেয়া হয়েছে। যে ছাত্র পরীক্ষার হলে বসে নিজের প্রশ্নপত্রের জবাব লিখে যাচ্ছে, সে যেমন নিজের কাজকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে পূর্ণ ব্যস্ততা সহকারে তার মধ্যে নিজেকে নিমগ্ন করে দেয়, ঠিক তেমনি মুমিন ব্যক্তিও গুরুত্বপূর্ণ কাজে সময় কাটায়। ছাত্রটি যেমন এ ঘণ্টাগুলোর একটি সেকেন্ডও অহেতুক কাজে নষ্ট করতে চায় না, ঠিক তেমনি মুমিনও দুনিয়ার সময়কে এমনসব কাজে ব্যয় করে, যা পরিণামের দিক দিয়ে কল্যাণকর। এমনকি সে খেলাধুলা ও আনন্দ উপভোগের ক্ষেত্রেও এমনসব জিনিস নির্বাচন করে, যা নিছক সময় কাটানোর কারণ হয় না বরং কোন অপেক্ষাকৃত ভালো উদ্দেশ্য পূর্ণ করার জন্য তাকে তৈরি করে। তার দৃষ্টিতে সময় অবহেলা করার জিনিস নয় বরং ব্যবহার করার জিনিস। এছাড়াও মুমিন ব্যক্তি সবসময় শান্ত প্রকৃতি এবং পবিত্র-পরিচ্ছন্ন স্বভাব ও সুস্থ রুচিসম্পন্ন গুণের অধিকারী হয়। সে ফলদায়ক কথা বলতে পারে, কিন্তু অহেতুক কথা বলতে পারে না। সে ব্যঙ্গ, কৌতুক ও হালকা পরিহাস করতে পারে, কিন্তু ঠাট্টা-তামাশায় মেতে উঠতে পারে না, বাজে ঠাট্টা-মস্করা সহ্য করতে পারে না এবং আনন্দ-ফূর্তির কথাবার্তাকে নিজের পেশায় পরিণত করতে পারে না। মুমিনের কান গালি-গালাজ, পরনিন্দা, পরচর্চা, অপবাদ, মিথ্যা কথা, গান-বাজনা ও অশ্লীল কথাবার্তা থেকে নিরাপদ থাকবে। যে সমাজে এসব চলে ঐ সমাজে সে শান্তিতে বসবাস করতে পারে না।
নফসে আম্মারা খারাপ কাজের নির্দেশ দেয় :
وَمَاۤ اُبَرِّئُ نَفْسِيْۚ اِنَّ النَّفْسَ لَاَمَّارَةٌ ۢبِالسُّوْٓءِ اِلَّا مَا رَحِمَ رَبِّيْ ؕ اِنَّ رَبِّيْ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
(ইউসুফ আঃ বললেন) আমি নিজেকে নির্দোষ মনে করি না, মানুষের মন অবশ্যই মন্দকর্ম প্রবণ; কিন্তু সে নয় যার প্রতি আমার প্রতিপালক দয়া করেন। নিশ্চয় আমার প্রতিপালক অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা ইউসুফ- ৫৩)
নফসে লাওয়ামা মন্দকাজকে ঘৃণা করে :
وَلَاۤ اُقْسِمُ بِالنَّفْسِ اللَّوَّامَةِ
আরো শপথ করছি তিরস্কারকারী আত্মার। (সূরা ক্বিয়ামাহ- ২)
ব্যাখ্যা : যারা প্রবৃত্তিপূজারী হয়েও ঈমানদারী ও সততার সাথে কিছুটা সম্পর্ক রেখে চলে এ ধরনের লোকদের রীতি হচ্ছে, যখনই প্রবৃত্তি তাদের কাছে কোন খারাপ কাজ করার তাগিদ দেয় তখনই ঈমানের তাগিদ মুলতবি রেখে তারা প্রথমে প্রবৃত্তির তাগিদ পূর্ণ করে নেয়। এ সময় বিবেক ভেতর থেকে দংশন করতে থাকলে তাকে এ বলে সান্ত্বনা দেয় যে, এ গোনাহটি না করলে আমার কাজ আটকে থাকে। কাজেই এটা করতে দাও। এ নাফসের অধিকারী মানুষ খারাপ কাজ করে ফেলে; কিন্তু পরে যখন তার বিবেক সজাগ হয় তখন সে নিজেকে তিরস্কার করে।
নফসে মুতমাইন্না কেবল ভালো কাজের উৎসাহ দেয় :
يَاۤ اَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ ‐ اِرْجِعِيْۤ اِلٰى رَبِّكِ رَاضِيَةً مَّرْضِيَّةً ‐ فَادْخُلِيْ فِيْ عِبَادِيْ ‐ وَادْخُلِيْ جَنَّتِيْ
হে প্রশান্ত আত্মা! তুমি সন্তুষ্টচিত্তে ও প্রিয়পাত্র হয়ে তোমার প্রতিপালকের নিকট ফিরে এসো এবং আমার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও। আর আমার জান্নাতে প্রবেশ করো। (সূরা ফাজর, ২৭-৩০)
ব্যাখ্যা : নফসের উপর চেষ্টা সাধনা করতে করতে যখন এমন স্তরে পৌঁছে যায় যে, তার মধ্যে মন্দকাজের কোন স্পৃহা থাকে না, গোনাহের কাজে ভয় পায় আর ভালো কাজে খুশী হয় তখন তাকে নফসে মুতমাইন্না বলা হয়। শরীরের পবিত্রতা যেমন একটি নিয়ামত ঠিক তেমনি আত্মার পবিত্রতাও একটি নিয়ামত। আর মানুষের উপর আল্লাহর নিয়ামত তখনই পূর্ণতা লাভ করবে, যখন সে আত্মা ও শরীর উভয় দিক থেকে পবিত্রতা অর্জন করে পূর্ণ হেদায়াত লাভ করতে সক্ষম হবে।
মানুষের আত্মাকে পবিত্র করা নবীগণের দায়িত্ব ছিল :
هُوَ الَّذِيْ بَعَثَ فِى الْاُمِّيِّيْنَ رَسُوْلًا مِّنْهُمْ يَتْلُوْا عَلَيْهِمْ اٰيَاتِهٖ وَيُزَكِّيْهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَۗ وَاِنْ كَانُوْا مِنْ قَبْلُ لَفِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ
তিনিই উম্মীদের (নিরক্ষর জাতির) মধ্য হতে একজনকে রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছেন, যিনি তাদের নিকট তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং কিতাব ও হিকমতের (সুন্নাহের) শিক্ষা দান করেন; যদিও ইতোপূর্বে তারা স্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত ছিল। (সূরা জুমু‘আ- ২)
আত্মশুদ্ধি লাভ করলে নিজেরই কল্যাণ হয় :
وَمَنْ تَزَكّٰى فَاِنَّمَا يَتَزَكّٰى لِنَفْسِهٖؕ وَاِلَى اللهِ الْمَصِيْرُ
আর যে ব্যক্তি নিজেকে পরিশুদ্ধ করে, সে তো নিজেরই কল্যাণের জন্য পরিশুদ্ধ করে; আর আল্লাহর কাছেই সবাইকে ফিরে যেতে হবে। (সূরা ফাতির- ১৮)
আত্মশুদ্ধি লাভ করার মধ্যেই রয়েছে সফলতা :
قَدْ اَفْلَحَ مَنْ زَكَّاهَا
যে ব্যক্তি নিজেকে পরিশুদ্ধ করে, সেই সফলকাম হয়। (সূরা শামস- ৯)
قَدْ اَفْلَحَ مَنْ تَزَكّٰى ‐ وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهٖ فَصَلّٰى
নিশ্চয় যে পরিশুদ্ধতা অবলম্বন করে এবং তার প্রতিপালকের নাম স্মরণ করে ও সালাত কায়েম করে সে সাফল্য লাভ করে। (সূরা আ‘লা- ১৪, ১৫)
আত্মশুদ্ধির অন্যতম উপায় আল্লাহর পথে ব্যয় করা :
وَسَيُجَنَّبُهَا الْاَتْقٰى ‐ اَلَّذِيْ يُؤْتِيْ مَالَهٗ يَتَزَكّٰى
এ (জাহান্নাম) থেকে দূরে রাখা হবে আল্লাহভীরু ব্যক্তিকে, যে আত্মশুদ্ধির জন্য তার ধনসম্পদ দান করে।
(সূরা লাইল- ১৭, ১৮)
আত্মশুদ্ধি লাভকারীরা জান্নাতে প্রবেশ করবে :
وَمَنْ يَّأْتِهٖ مُؤْمِنًا قَدْ عَمِلَ الصَّالِحَاتِ فَاُولٰٓئِكَ لَهُمُ الدَّرَجَاتُ الْعُلَا ‐ جَنَّاتُ عَدْنٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَاؕ وَذٰلِكَ جَزَآءُ مَنْ تَزَكّٰى
যারা (কিয়ামত দিবসে) তাঁর নিকট মুমিন অবস্থায় সৎকর্ম নিয়ে উপস্থিত হবে, তাদের জন্য রয়েছে সমুচ্চ মর্যাদা- স্থায়ী জান্নাত, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়ে গেছে; সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আর এ পুরস্কার তাদের জন্য, যারা আত্মশুদ্ধি অর্জন করে। (সূরা ত্বা-হা- ৭৫, ৭৬)
وَمَاۤ اُبَرِّئُ نَفْسِيْۚ اِنَّ النَّفْسَ لَاَمَّارَةٌ ۢبِالسُّوْٓءِ اِلَّا مَا رَحِمَ رَبِّيْ ؕ اِنَّ رَبِّيْ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
(ইউসুফ আঃ বললেন) আমি নিজেকে নির্দোষ মনে করি না, মানুষের মন অবশ্যই মন্দকর্ম প্রবণ; কিন্তু সে নয় যার প্রতি আমার প্রতিপালক দয়া করেন। নিশ্চয় আমার প্রতিপালক অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা ইউসুফ- ৫৩)
নফসে লাওয়ামা মন্দকাজকে ঘৃণা করে :
وَلَاۤ اُقْسِمُ بِالنَّفْسِ اللَّوَّامَةِ
আরো শপথ করছি তিরস্কারকারী আত্মার। (সূরা ক্বিয়ামাহ- ২)
ব্যাখ্যা : যারা প্রবৃত্তিপূজারী হয়েও ঈমানদারী ও সততার সাথে কিছুটা সম্পর্ক রেখে চলে এ ধরনের লোকদের রীতি হচ্ছে, যখনই প্রবৃত্তি তাদের কাছে কোন খারাপ কাজ করার তাগিদ দেয় তখনই ঈমানের তাগিদ মুলতবি রেখে তারা প্রথমে প্রবৃত্তির তাগিদ পূর্ণ করে নেয়। এ সময় বিবেক ভেতর থেকে দংশন করতে থাকলে তাকে এ বলে সান্ত্বনা দেয় যে, এ গোনাহটি না করলে আমার কাজ আটকে থাকে। কাজেই এটা করতে দাও। এ নাফসের অধিকারী মানুষ খারাপ কাজ করে ফেলে; কিন্তু পরে যখন তার বিবেক সজাগ হয় তখন সে নিজেকে তিরস্কার করে।
নফসে মুতমাইন্না কেবল ভালো কাজের উৎসাহ দেয় :
يَاۤ اَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ ‐ اِرْجِعِيْۤ اِلٰى رَبِّكِ رَاضِيَةً مَّرْضِيَّةً ‐ فَادْخُلِيْ فِيْ عِبَادِيْ ‐ وَادْخُلِيْ جَنَّتِيْ
হে প্রশান্ত আত্মা! তুমি সন্তুষ্টচিত্তে ও প্রিয়পাত্র হয়ে তোমার প্রতিপালকের নিকট ফিরে এসো এবং আমার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও। আর আমার জান্নাতে প্রবেশ করো। (সূরা ফাজর, ২৭-৩০)
ব্যাখ্যা : নফসের উপর চেষ্টা সাধনা করতে করতে যখন এমন স্তরে পৌঁছে যায় যে, তার মধ্যে মন্দকাজের কোন স্পৃহা থাকে না, গোনাহের কাজে ভয় পায় আর ভালো কাজে খুশী হয় তখন তাকে নফসে মুতমাইন্না বলা হয়। শরীরের পবিত্রতা যেমন একটি নিয়ামত ঠিক তেমনি আত্মার পবিত্রতাও একটি নিয়ামত। আর মানুষের উপর আল্লাহর নিয়ামত তখনই পূর্ণতা লাভ করবে, যখন সে আত্মা ও শরীর উভয় দিক থেকে পবিত্রতা অর্জন করে পূর্ণ হেদায়াত লাভ করতে সক্ষম হবে।
মানুষের আত্মাকে পবিত্র করা নবীগণের দায়িত্ব ছিল :
هُوَ الَّذِيْ بَعَثَ فِى الْاُمِّيِّيْنَ رَسُوْلًا مِّنْهُمْ يَتْلُوْا عَلَيْهِمْ اٰيَاتِهٖ وَيُزَكِّيْهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَۗ وَاِنْ كَانُوْا مِنْ قَبْلُ لَفِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ
তিনিই উম্মীদের (নিরক্ষর জাতির) মধ্য হতে একজনকে রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছেন, যিনি তাদের নিকট তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং কিতাব ও হিকমতের (সুন্নাহের) শিক্ষা দান করেন; যদিও ইতোপূর্বে তারা স্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত ছিল। (সূরা জুমু‘আ- ২)
আত্মশুদ্ধি লাভ করলে নিজেরই কল্যাণ হয় :
وَمَنْ تَزَكّٰى فَاِنَّمَا يَتَزَكّٰى لِنَفْسِهٖؕ وَاِلَى اللهِ الْمَصِيْرُ
আর যে ব্যক্তি নিজেকে পরিশুদ্ধ করে, সে তো নিজেরই কল্যাণের জন্য পরিশুদ্ধ করে; আর আল্লাহর কাছেই সবাইকে ফিরে যেতে হবে। (সূরা ফাতির- ১৮)
আত্মশুদ্ধি লাভ করার মধ্যেই রয়েছে সফলতা :
قَدْ اَفْلَحَ مَنْ زَكَّاهَا
যে ব্যক্তি নিজেকে পরিশুদ্ধ করে, সেই সফলকাম হয়। (সূরা শামস- ৯)
قَدْ اَفْلَحَ مَنْ تَزَكّٰى ‐ وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهٖ فَصَلّٰى
নিশ্চয় যে পরিশুদ্ধতা অবলম্বন করে এবং তার প্রতিপালকের নাম স্মরণ করে ও সালাত কায়েম করে সে সাফল্য লাভ করে। (সূরা আ‘লা- ১৪, ১৫)
আত্মশুদ্ধির অন্যতম উপায় আল্লাহর পথে ব্যয় করা :
وَسَيُجَنَّبُهَا الْاَتْقٰى ‐ اَلَّذِيْ يُؤْتِيْ مَالَهٗ يَتَزَكّٰى
এ (জাহান্নাম) থেকে দূরে রাখা হবে আল্লাহভীরু ব্যক্তিকে, যে আত্মশুদ্ধির জন্য তার ধনসম্পদ দান করে।
(সূরা লাইল- ১৭, ১৮)
আত্মশুদ্ধি লাভকারীরা জান্নাতে প্রবেশ করবে :
وَمَنْ يَّأْتِهٖ مُؤْمِنًا قَدْ عَمِلَ الصَّالِحَاتِ فَاُولٰٓئِكَ لَهُمُ الدَّرَجَاتُ الْعُلَا ‐ جَنَّاتُ عَدْنٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَاؕ وَذٰلِكَ جَزَآءُ مَنْ تَزَكّٰى
যারা (কিয়ামত দিবসে) তাঁর নিকট মুমিন অবস্থায় সৎকর্ম নিয়ে উপস্থিত হবে, তাদের জন্য রয়েছে সমুচ্চ মর্যাদা- স্থায়ী জান্নাত, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়ে গেছে; সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আর এ পুরস্কার তাদের জন্য, যারা আত্মশুদ্ধি অর্জন করে। (সূরা ত্বা-হা- ৭৫, ৭৬)
আল্লাহর দাসত্ব করতে হবে একনিষ্ঠভাবে :
اِنَّاۤ اَنْزَلْنَاۤ اِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ فَاعْبُدِ اللهَ مُخْلِصًا لَّهُ الدِّيْنَ
আমি তোমার প্রতি এ কিতাব সত্যসহ নাযিল করেছি। অতএব নিষ্ঠার সাথে তুমি আল্লাহর ইবাদাত করো। (সূরা যুমার- ২)
মানুষকে নিষ্ঠার সাথে ইবাদাত করতে আদেশ দেয়া হয়েছে :
وَمَاۤ اُمِرُوْاۤ اِلَّا لِيَعْبُدُوا اللهَ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ حُنَفَآءَوَيُقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذٰلِكَ دِيْنُ الْقَيِّمَةِ
তাদেরকে এছাড়া আর কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদাত করবে, নামায প্রতিষ্ঠা করবে ও যাকাত দেবে। আর এটাই হচ্ছে সঠিক দ্বীন। (সূরা বায়্যিনাহ- ৫)
اَ لَا لِلّٰهِ الدِّيْنُ الْخَالِصُ
জেনে রেখো, একনিষ্ঠ ইবাদাত একমাত্র আল্লাহরই জন্য। (সূরা যুমার- ৩)
আল্লাহকে একনিষ্ঠভাবে ডাকতে হবে :
فَادْعُوا اللهَ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ
সুতরাং তোমরা আল্লাহকে তাঁর ইবাদাতে একনিষ্ঠ হয়ে ডাকো। (সূরা মু’মিন- ১৪)
বিপদে পড়লে মানুষ নিষ্ঠার সাথে আল্লাহকে ডাকে :
وَاِذَا غَشِيَهُمْ مَّوْجٌ كَالظُّلَلِ دَعَوُا اللهَ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَۚ فَلَمَّا نَجَّاهُمْ اِلَى الْبَرِّ فَمِنْهُمْ مُّقْتَصِدٌ
যখন (সাগরে) পর্বতের ন্যায় ঢেউগুলো তাদেরকে ঘিরে ফেলে তখন তারা খাঁটি মনে আল্লাহকে আহবান করতে থাকে। কিন্তু যখন তিনি তাদেরকে রক্ষা করে স্থলভাগের দিকে আনেন, তখন তাদের মধ্যে কিছু লোক সৎপথে থাকে। (সূরা লুক্বমান- ৩২)
ব্যাখ্যা : সামুদ্রিক ঝড়ের সময় সবাই শিরক ও নাস্তিক্যবাদ পরিহার করে এক আল্লাহকে ডাকতে থাকে। কিন্তু নিরাপদে উপকূলে পেঁঁŠছার পর অল্প সংখ্যক লোকই এ অভিজ্ঞতা থেকে স্থায়ী শিক্ষা লাভ করে।
শয়তান একনিষ্ঠ বান্দাদেরকে পথভ্রষ্ট করতে পারে না :
قَالَ رَبِّ بِمَاۤ اَغْوَيْتَنِيْ لَاُزَيِّنَنَّ لَهُمْ فِى الْاَرْضِ وَلَاُغْوِيَنَّهُمْ اَجْمَعِيْنَ ‐ اِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِيْنَ
ইবলিস বলল, হে আমার প্রতিপালক! তুমি যেভাবে আমাকে বিপথগামী করে দিলে অবশ্যই আমি মানুষদের জন্য পৃথিবীতে তাদের (গোনাহের কাজসমূহ) শোভন করে তুলব এবং তাদের সবাইকে পথভ্রষ্ট করে ছাড়ব। তবে তাদের মধ্যে যারা তোমার খাঁটি বান্দা তাদেরকে ব্যতীত। (সূরা হিজর- ৩৯, ৪০)
বাহ্যিক কাঠামো নয়, বরং অন্তরের তাক্বওয়াই আল্লাহর কাছে পৌঁছে :
لَنْ يَّنَالَ اللهَ لُحُوْمُهَا وَلَا دِمَآؤُهَا وَلٰكِنْ يَّنَالُهُ التَّقْوٰى مِنْكُمْ
আল্লাহর নিকট তার গোশত ও রক্ত কোনকিছুই পৌঁছে না, বরং তোমাদের তাক্বওয়াই তাঁর নিকট পৌঁছে।
(সূরা হজ্জ- ৩৭)
اِنَّاۤ اَنْزَلْنَاۤ اِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ فَاعْبُدِ اللهَ مُخْلِصًا لَّهُ الدِّيْنَ
আমি তোমার প্রতি এ কিতাব সত্যসহ নাযিল করেছি। অতএব নিষ্ঠার সাথে তুমি আল্লাহর ইবাদাত করো। (সূরা যুমার- ২)
মানুষকে নিষ্ঠার সাথে ইবাদাত করতে আদেশ দেয়া হয়েছে :
وَمَاۤ اُمِرُوْاۤ اِلَّا لِيَعْبُدُوا اللهَ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ حُنَفَآءَوَيُقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذٰلِكَ دِيْنُ الْقَيِّمَةِ
তাদেরকে এছাড়া আর কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদাত করবে, নামায প্রতিষ্ঠা করবে ও যাকাত দেবে। আর এটাই হচ্ছে সঠিক দ্বীন। (সূরা বায়্যিনাহ- ৫)
اَ لَا لِلّٰهِ الدِّيْنُ الْخَالِصُ
জেনে রেখো, একনিষ্ঠ ইবাদাত একমাত্র আল্লাহরই জন্য। (সূরা যুমার- ৩)
আল্লাহকে একনিষ্ঠভাবে ডাকতে হবে :
فَادْعُوا اللهَ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ
সুতরাং তোমরা আল্লাহকে তাঁর ইবাদাতে একনিষ্ঠ হয়ে ডাকো। (সূরা মু’মিন- ১৪)
বিপদে পড়লে মানুষ নিষ্ঠার সাথে আল্লাহকে ডাকে :
وَاِذَا غَشِيَهُمْ مَّوْجٌ كَالظُّلَلِ دَعَوُا اللهَ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَۚ فَلَمَّا نَجَّاهُمْ اِلَى الْبَرِّ فَمِنْهُمْ مُّقْتَصِدٌ
যখন (সাগরে) পর্বতের ন্যায় ঢেউগুলো তাদেরকে ঘিরে ফেলে তখন তারা খাঁটি মনে আল্লাহকে আহবান করতে থাকে। কিন্তু যখন তিনি তাদেরকে রক্ষা করে স্থলভাগের দিকে আনেন, তখন তাদের মধ্যে কিছু লোক সৎপথে থাকে। (সূরা লুক্বমান- ৩২)
ব্যাখ্যা : সামুদ্রিক ঝড়ের সময় সবাই শিরক ও নাস্তিক্যবাদ পরিহার করে এক আল্লাহকে ডাকতে থাকে। কিন্তু নিরাপদে উপকূলে পেঁঁŠছার পর অল্প সংখ্যক লোকই এ অভিজ্ঞতা থেকে স্থায়ী শিক্ষা লাভ করে।
শয়তান একনিষ্ঠ বান্দাদেরকে পথভ্রষ্ট করতে পারে না :
قَالَ رَبِّ بِمَاۤ اَغْوَيْتَنِيْ لَاُزَيِّنَنَّ لَهُمْ فِى الْاَرْضِ وَلَاُغْوِيَنَّهُمْ اَجْمَعِيْنَ ‐ اِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِيْنَ
ইবলিস বলল, হে আমার প্রতিপালক! তুমি যেভাবে আমাকে বিপথগামী করে দিলে অবশ্যই আমি মানুষদের জন্য পৃথিবীতে তাদের (গোনাহের কাজসমূহ) শোভন করে তুলব এবং তাদের সবাইকে পথভ্রষ্ট করে ছাড়ব। তবে তাদের মধ্যে যারা তোমার খাঁটি বান্দা তাদেরকে ব্যতীত। (সূরা হিজর- ৩৯, ৪০)
বাহ্যিক কাঠামো নয়, বরং অন্তরের তাক্বওয়াই আল্লাহর কাছে পৌঁছে :
لَنْ يَّنَالَ اللهَ لُحُوْمُهَا وَلَا دِمَآؤُهَا وَلٰكِنْ يَّنَالُهُ التَّقْوٰى مِنْكُمْ
আল্লাহর নিকট তার গোশত ও রক্ত কোনকিছুই পৌঁছে না, বরং তোমাদের তাক্বওয়াই তাঁর নিকট পৌঁছে।
(সূরা হজ্জ- ৩৭)
বিনয় ও নম্রতা মুমিন বান্দার একটি বিশেষ গুণ :
وَعِبَادُ الرَّحْمٰنِ الَّذِيْنَ يَمْشُوْنَ عَلَى الْاَرْضِ هَوْنًا وَّاِذَا خَاطَبَهُمُ الْجَاهِلُوْنَ قَالُوْا سَلَامًا
‘রহমান’-এর বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে। যখন তাদেরকে অজ্ঞ ব্যক্তিরা সম্বোধন করে তখন তারা বলে, সালাম। (সূরা ফুরক্বান- ৬৩)
মুহাম্মাদ ﷺ বিনয়ী ছিলেন :
فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللهِ لِنْتَ لَهُمْۚ وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيْظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوْا مِنْ حَوْلِكَ
আল্লাহর অনুগ্রহে তুমি তাদের প্রতি কোমলচিত্তের অধিকারী। তুমি যদি কর্কশভাষী ও কঠোর হৃদয়ের অধিকারী হতে, তবে নিশ্চয় তারা তোমার সংস্পর্শে আসা হতে বিরত থাকত। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৯)
বিনয়ীদের জন্য সুসংবাদ রয়েছে :
وَبَشِّرِ الْمُخْبِتِيْنَ ‐ اَلَّذِيْنَ اِذَا ذُكِرَ اللهُ وَجِلَتْ قُلُوْبُهُمْ
বিনয়ীদেরকে সুসংবাদ দাও, যাদের নিকট আল্লাহর নাম স্মরণ করা হলে তাদের হৃদয় ভয়ে কম্পিত হয়। (সূরা হজ্জ- ৩৪, ৩৫)
বিনয়ীদের জন্য জান্নাতের নিয়ামত :
تِلْكَ الدَّارُ الْاٰخِرَةُ نَجْعَلُهَا لِلَّذِيْنَ لَا يُرِيْدُوْنَ عُلُوًّا فِى الْاَرْضِ وَلَا فَسَادًاؕ وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِيْنَ
এটা আখিরাতের সে আবাস (জান্নাত) যা আমি নির্ধারিত করি তাদের জন্য, যারা এ পৃথিবীতে বড়ত্ব প্রকাশ করতে ও বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায় না। আর শুভ পরিণাম মুত্তাক্বীদের জন্য। (সূরা ক্বাসাস- ৮৩)
বিনয়ী হওয়ার জন্য লুক্বমান (আঃ) এর উপদেশ :
وَلَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمْشِ فِى الْاَرْضِ مَرَحًاؕ اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُوْرٍ
আর তুমি অহংকারবশে মানুষকে অবহেলা করো না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে চলাফেরা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক অহংকারীকে ভালোবাসেন না। (সূরা লুক্বমান- ১৮)
وَعِبَادُ الرَّحْمٰنِ الَّذِيْنَ يَمْشُوْنَ عَلَى الْاَرْضِ هَوْنًا وَّاِذَا خَاطَبَهُمُ الْجَاهِلُوْنَ قَالُوْا سَلَامًا
‘রহমান’-এর বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে। যখন তাদেরকে অজ্ঞ ব্যক্তিরা সম্বোধন করে তখন তারা বলে, সালাম। (সূরা ফুরক্বান- ৬৩)
মুহাম্মাদ ﷺ বিনয়ী ছিলেন :
فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللهِ لِنْتَ لَهُمْۚ وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيْظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوْا مِنْ حَوْلِكَ
আল্লাহর অনুগ্রহে তুমি তাদের প্রতি কোমলচিত্তের অধিকারী। তুমি যদি কর্কশভাষী ও কঠোর হৃদয়ের অধিকারী হতে, তবে নিশ্চয় তারা তোমার সংস্পর্শে আসা হতে বিরত থাকত। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৯)
বিনয়ীদের জন্য সুসংবাদ রয়েছে :
وَبَشِّرِ الْمُخْبِتِيْنَ ‐ اَلَّذِيْنَ اِذَا ذُكِرَ اللهُ وَجِلَتْ قُلُوْبُهُمْ
বিনয়ীদেরকে সুসংবাদ দাও, যাদের নিকট আল্লাহর নাম স্মরণ করা হলে তাদের হৃদয় ভয়ে কম্পিত হয়। (সূরা হজ্জ- ৩৪, ৩৫)
বিনয়ীদের জন্য জান্নাতের নিয়ামত :
تِلْكَ الدَّارُ الْاٰخِرَةُ نَجْعَلُهَا لِلَّذِيْنَ لَا يُرِيْدُوْنَ عُلُوًّا فِى الْاَرْضِ وَلَا فَسَادًاؕ وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِيْنَ
এটা আখিরাতের সে আবাস (জান্নাত) যা আমি নির্ধারিত করি তাদের জন্য, যারা এ পৃথিবীতে বড়ত্ব প্রকাশ করতে ও বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায় না। আর শুভ পরিণাম মুত্তাক্বীদের জন্য। (সূরা ক্বাসাস- ৮৩)
বিনয়ী হওয়ার জন্য লুক্বমান (আঃ) এর উপদেশ :
وَلَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمْشِ فِى الْاَرْضِ مَرَحًاؕ اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُوْرٍ
আর তুমি অহংকারবশে মানুষকে অবহেলা করো না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে চলাফেরা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক অহংকারীকে ভালোবাসেন না। (সূরা লুক্বমান- ১৮)
নবীগণ আল্লাহর বাণী শুনে কান্নায় লুটিয়ে পড়তেন :
اِذَا تُتْلٰى عَلَيْهِمْ اٰيَاتُ الرَّحْمٰنِ خَرُّوْا سُجَّدًا وَّبُكِيًّا
যখন তাদের (নবীদের) নিকট দয়াময়ের আয়াতসমূহ পাঠ করা হতো, তখন তারা ক্রন্দন করতে করতে সিজদায় লুটিয়ে পড়ত। (সূরা মারইয়াম- ৫৮)
আহলে কিতাবের সত্যনিষ্ঠ লোকেরা কুরআন শুনে কান্না করত :
وَاِذَا سَمِعُوْا مَاۤ اُنْزِلَ اِلَى الرَّسُوْلِ تَرٰۤى اَعْيُنَهُمْ تَفِيْضُ مِنَ الدَّمْعِ مِمَّا عَرَفُوْا مِنَ الْحَقِّۚ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَاۤ اٰمَنَّا فَاكْتُبْنَا مَعَ الشَّاهِدِيْنَ
রাসূলের উপর যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তারা যখন তা শোনে, তখন তুমি এমন অনেক লোককে দেখতে পাবে যারা সত্য চেনার কারণে বলে উঠে, হে আমাদের মালিক! আমরা ঈমান আনয়ন করেছি, সুতরাং তুমি (আমাদের নাম) সত্যের প্রতি সাক্ষ্যদাতাদের সাথে লিখে নাও। (সূরা মায়েদা- ৮৩)
ব্যাখ্যা : হিজরতের কয়েক বৎসর পর একদা খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ৭০ জন লোক রাসূল ﷺ এর কাছে এসে কুরআনের বাণী শুনে অতিশয় মুগ্ধ হয়ে চোখের পানি ফেলতে থাকে। তখন তাদের মুখে ‘‘রববানা- আ-মান্না’’ (হে আমাদের প্রভু! আমরা ঈমান আনলাম) উচ্চারিত হতে থাকে। উক্ত আয়াতে তাদের অবস্থার দিকেই ইংগিত করা হয়েছে।
সাহাবীগণ জিহাদে যেতে না পারলে কান্না করতেন :
وَ لَا عَلَى الَّذِيْنَ اِذَا مَاۤ اَتَوْكَ لِتَحْمِلَهُمْ قُلْتَ لَا ۤاَجِدُ مَاۤ اَحْمِلُكُمْ عَلَيْهِ۪ تَوَلَّوْا وَّاَعْيُنُهُمْ تَفِيْضُ مِنَ الدَّمْعِ حَزَنًا اَ لَّا يَجِدُوْا مَا يُنْفِقُوْنَ
তাদেরও কোন অপরাধ নেই, যারা তোমার নিকট বাহনের জন্য আসলে তুমি বলেছিলে, তোমাদের জন্য কোন বাহন পাচ্ছি না। তখন তারা জিহাদে যাওয়ার খরচ সংগ্রহ করতে না পারায় দুঃখে অশ্রুবিগলিত অবস্থায় ফিরে গেল। (সূরা তাওবা- ৯২)
কান্না করার জন্য উৎসাহ প্রদান :
اَفَمِنْ هٰذَا الْحَدِيْثِ تَعْجَبُوْنَ ‐ وَتَضْحَكُوْنَ وَلَا تَبْكُوْنَ
তোমরা কি এ বাণীর ব্যাপারে (কুরআনে) বিস্ময়বোধ করছ? হাসছ অথচ কাঁদছ না? (সূরা নাজম- ৫৯, ৬০)
اِذَا تُتْلٰى عَلَيْهِمْ اٰيَاتُ الرَّحْمٰنِ خَرُّوْا سُجَّدًا وَّبُكِيًّا
যখন তাদের (নবীদের) নিকট দয়াময়ের আয়াতসমূহ পাঠ করা হতো, তখন তারা ক্রন্দন করতে করতে সিজদায় লুটিয়ে পড়ত। (সূরা মারইয়াম- ৫৮)
আহলে কিতাবের সত্যনিষ্ঠ লোকেরা কুরআন শুনে কান্না করত :
وَاِذَا سَمِعُوْا مَاۤ اُنْزِلَ اِلَى الرَّسُوْلِ تَرٰۤى اَعْيُنَهُمْ تَفِيْضُ مِنَ الدَّمْعِ مِمَّا عَرَفُوْا مِنَ الْحَقِّۚ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَاۤ اٰمَنَّا فَاكْتُبْنَا مَعَ الشَّاهِدِيْنَ
রাসূলের উপর যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তারা যখন তা শোনে, তখন তুমি এমন অনেক লোককে দেখতে পাবে যারা সত্য চেনার কারণে বলে উঠে, হে আমাদের মালিক! আমরা ঈমান আনয়ন করেছি, সুতরাং তুমি (আমাদের নাম) সত্যের প্রতি সাক্ষ্যদাতাদের সাথে লিখে নাও। (সূরা মায়েদা- ৮৩)
ব্যাখ্যা : হিজরতের কয়েক বৎসর পর একদা খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ৭০ জন লোক রাসূল ﷺ এর কাছে এসে কুরআনের বাণী শুনে অতিশয় মুগ্ধ হয়ে চোখের পানি ফেলতে থাকে। তখন তাদের মুখে ‘‘রববানা- আ-মান্না’’ (হে আমাদের প্রভু! আমরা ঈমান আনলাম) উচ্চারিত হতে থাকে। উক্ত আয়াতে তাদের অবস্থার দিকেই ইংগিত করা হয়েছে।
সাহাবীগণ জিহাদে যেতে না পারলে কান্না করতেন :
وَ لَا عَلَى الَّذِيْنَ اِذَا مَاۤ اَتَوْكَ لِتَحْمِلَهُمْ قُلْتَ لَا ۤاَجِدُ مَاۤ اَحْمِلُكُمْ عَلَيْهِ۪ تَوَلَّوْا وَّاَعْيُنُهُمْ تَفِيْضُ مِنَ الدَّمْعِ حَزَنًا اَ لَّا يَجِدُوْا مَا يُنْفِقُوْنَ
তাদেরও কোন অপরাধ নেই, যারা তোমার নিকট বাহনের জন্য আসলে তুমি বলেছিলে, তোমাদের জন্য কোন বাহন পাচ্ছি না। তখন তারা জিহাদে যাওয়ার খরচ সংগ্রহ করতে না পারায় দুঃখে অশ্রুবিগলিত অবস্থায় ফিরে গেল। (সূরা তাওবা- ৯২)
কান্না করার জন্য উৎসাহ প্রদান :
اَفَمِنْ هٰذَا الْحَدِيْثِ تَعْجَبُوْنَ ‐ وَتَضْحَكُوْنَ وَلَا تَبْكُوْنَ
তোমরা কি এ বাণীর ব্যাপারে (কুরআনে) বিস্ময়বোধ করছ? হাসছ অথচ কাঁদছ না? (সূরা নাজম- ৫৯, ৬০)
আল্লাহর উপর ভরসা করার নির্দেশ :
وَعَلَى اللهِ فَتَوَكَّلُوْاۤ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
আল্লাহর উপরই নির্ভর করো, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক। (সূরা মায়েদা- ২৩)
وَتَوَكَّلْ عَلَى الْحَيِّ الَّذِيْ لَا يَمُوْتُ
তুমি সেই চিরঞ্জীব সত্তার উপর নির্ভর করো, যার কোন মৃত্যু নেই। (সূরা ফুরক্বান- ৫৮)
وَتَوَكَّلْ عَلَى الْعَزِيْزِ الرَّحِيْمِ
তুমি নির্ভর করো মহাপরাক্রমশালী ও পরম দয়ালু (আল্লাহর) উপর। (সূরা শু‘আরা- ২১৭)
وَتَوَكَّلْ عَلَى اللهِؕ وَكَفٰى بِاللهِ وَكِيْلًا
আর তুমি আল্লাহর উপরই নির্ভর করো। বস্তুত তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। (সূরা আহযাব- ৩)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ দুনিয়ার বৃহত্তম শক্তিরও পরোয়া করো না, বরং মহাপরাক্রমশালী ও দয়াময় আল্লাহর উপর নির্ভর করে কাজ করে যাও। তাঁর পরাক্রমশালী হওয়াই এ কথার নিশ্চয়তা দেয় যে, যার পেছনে তাঁর সমর্থন আছে তাকে দুনিয়ার কেউ হেয়প্রতিপন্ন করতে পারে না। আর তাঁর দয়াময় প্রমাণ করার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, যে ব্যক্তি তাঁর জন্য সত্যের ঝান্ডা উঁচু করার কাজে জীবন উৎসর্গ করবে, তিনি কখনো তার প্রচেষ্টাকে নিষ্ফল হতে দেবেন না। এখানে তাওয়াক্কুল তথা আল্লাহর প্রতি ভরসাকে ঈমানের অনিবার্য দাবী এবং আখিরাতের সফলতার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাওয়াক্কুল এর কয়েকটি অর্থ হয়। তা হলো-
(এক) আল্লাহর পথনির্দেশনার উপর ব্যক্তির পূর্ণ আস্থা থাকবে এবং সে মনে করবে, আল্লাহ প্রকৃত সত্য সম্পর্কে যে জ্ঞান, নীতিমালা, হালাল-হারামের যে সীমারেখা এবং পৃথিবীতে জীবন-যাপনের জন্য যেসব বিধিবিধান দিয়েছেন তা-ই সত্য ও সঠিক। এগুলো মেনে চলার মধ্যেই মানুষের কল্যাণ নিহিত।
(দুই) মানুষের নির্ভরতা তার নিজের শক্তি, যোগ্যতা, উপায়-উপকরণ ও ব্যবস্থাপনা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো সহযোগিতার উপর হবে না। তাকে এ কথা পুরোপুরিভাবে মনে রাখতে হবে যে, দুনিয়া ও আখিরাতের প্রতিটি ব্যাপারে তার সাফল্য প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর তাওফীক ও সাহায্যের উপর নির্ভর করে। (তিন) আল্লাহ ঈমান ও নেক কাজের পথ অবলম্বনকারী এবং বাতিলের পরিবর্তে ন্যায় ও সত্যের জন্য কর্মতৎপর বান্দাদেরকে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তাকে তার উপর পরিপূর্ণ আস্থা রাখতে হবে। ঐসব প্রতিশ্রুতির প্রতি আস্থাশীল হয়ে ন্যায় ও সত্যের উপর দৃঢ়পদ থাকার কারণে যেসব বিপদাপদ তার উপর পতিত হয় তা সহ্য করতে হবে।
আল্লাহর উপর ভরসা করা মুমিনের উত্তম বৈশিষ্ট্য :
اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ اِذَا ذُكِرَ اللهُ وَجِلَتْ قُلُوْبُهُمْ وَاِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ اٰيَاتُهٗ زَادَتْهُمْ اِيْمَانًا وَّعَلٰى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ
নিশ্চয় মুমিন তো তারাই যাদের হৃদয় আল্লাহর স্মরণে কম্পিত হয় এবং তাদের সামনে তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হলে তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পায়। আর তারা তাদের প্রতিপালকের উপরই নির্ভর করে। (সূরা আনফাল- ২)
আল্লাহর উপর ভরসা করা ঈমানের দাবী :
وَقَالَ مُوْسٰى يَا قَوْمِ اِنْ كُنْتُمْ اٰمَنْتُمْ بِاللهِ فَعَلَيْهِ تَوَكَّلُوْاۤ اِنْ كُنْتُمْ مُّسْلِمِيْنَ
মূসা বললেন, হে আমার সম্প্রদায়! যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনে থাক এবং তাঁর প্রতি আত্মসমর্পণকারী হও, তবে তোমরা তাঁর উপরই নির্ভর করো। (সূরা ইউনুস- ৮৪)
সকল নবীই আল্লাহর উপর ভরসা করতেন :
وَمَا لَنَاۤ اَلَّا نَتَوَكَّلَ عَلَى اللهِ وَقَدْ هَدَانَا سُبُلَنَا
আমাদের কী হয়েছে যে, আমরা আল্লাহর উপর নির্ভর করব না? তিনিই তো আমাদেরকে পথপ্রদর্শন করেছেন। (সূরা ইবরাহীম- ১২)
নূহ (আঃ) এর উক্তি :
يَا قَوْمِ اِنْ كَانَ كَبُرَ عَلَيْكُمْ مَّقَامِيْ وَتَذْكِيْرِيْ بِاٰيَاتِ اللهِ فَعَلَى اللهِ تَوَكَّلْتُ
হে আমার সম্প্রদায়! আমার অবস্থান ও আল্লাহর নিদর্শন দ্বারা আমার উপদেশ দান করাটা যদি তোমাদের নিকট দুঃসহ হয়ে যায়, তবে (জেনে রেখো) আমি কেবল আল্লাহর উপরই নির্ভর করি। (সূরা ইউনুস- ৭১)
হুদ (আঃ) এর উক্তি :
اِنِّيْ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ رَبِّيْ وَرَبِّكُمْ
নিশ্চয় আমি আমার ও তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহর উপরই নির্ভর করি। (সূরা হুদ- ৫৬)
শুয়াইব (আঃ) এর উক্তি :
وَمَا تَوْفِيْقِيْۤ اِلَّا بِاللهِؕ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَاِلَيْهِ اُنِيْبُ
আমার কার্যসাধন তো আল্লাহরই সাহায্যে (সংঘটিত হয়)। আমি তাঁরই উপর নির্ভর করি এবং আমি তাঁরই অভিমুখী। (সূরা হুদ- ৮৮)
ইয়াকূব (আঃ) এর উক্তি :
اِنِ الْحُكْمُ اِلَّا لِلّٰهِؕ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُۚ وَعَلَيْهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُتَوَكِّلُوْنَ
বিধান দেয়ার ক্ষমতা কেবল আল্লাহরই। আমি তাঁর উপরই নির্ভর করি; আর নির্ভরকারীরা তো আল্লাহর উপরই নির্ভর করে। (সূরা ইউসুফ- ৬৭)
মুহাম্মাদ ﷺ এর উক্তি :
فَاِنْ تَوَلَّوْا فَقُلْ حَسْبِيَ اللهُۗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَؕ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ
অতঃপর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে তুমি (তাদেরকে) বলে দাও, আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই। আমি তাঁরই উপর নির্ভর করি; তিনি মহান আরশের মালিক। (সূরা তাওবা- ১২৯)
আল্লাহ তাঁর উপর নির্ভরকারীদেরকে ভালোবাসেন :
فَتَوَكَّلْ عَلَى اللهِؕ اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِيْنَ
অতএব তুমি আল্লাহর উপরই নির্ভর করো; নিশ্চয় আল্লাহ (তাঁর উপর) নির্ভরশীলদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৯)
আল্লাহ তাদের কাজ সমাধা করে দেন :
وَمَنْ يَّتَوَكَّلْ عَلَى اللهِ فَهُوَ حَسْبُهٗؕ اِنَّ اللهَ بَالِغُ اَمْرِهٖؕ قَدْ جَعَلَ اللهُ لِكُلِّ شَيْءٍ قَدْرًا
যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর নির্ভর করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। নিশ্চয় আল্লাহ তার কার্যাবলি পূরণ করে দেবেন; আর আল্লাহ সবকিছুর জন্য একটি নির্দিষ্ট মাত্রা স্থির করে রেখেছেন। (সূরা তালাক্ব- ৩)
তারা শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকে :
اِنَّهٗ لَيْسَ لَهٗ سُلْطَانٌ عَلَى الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَلٰى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ
নিশ্চয় যারা ঈমান আনে ও তাদের প্রতিপালকের উপরই নির্ভর করে তাদের উপর তার (শয়তানের) কোন আধিপত্য নেই। (সূরা নাহল- ৯৯)
তাদের পুরস্কার খুবই উত্তম :
فَمَاۤ اُوْتِيْتُمْ مِّنْ شَيْءٍ فَمَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَاۚ وَمَا عِنْدَ اللهِ خَيْرٌ وَّاَبْقٰى لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَلٰى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ
তোমরা যা পেয়েছ তা পার্থিব জীবনের ভোগের সামগ্রী মাত্র। কিন্তু আল্লাহর নিকট যা আছে তা সবচেয়ে উত্তম ও স্থায়ী। (ওগুলো) তাদের জন্য, যারা ঈমান আনে ও তাদের প্রতিপালকের উপরই নির্ভর করে।
(সূরা শূরা- ৩৬)
وَعَلَى اللهِ فَتَوَكَّلُوْاۤ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
আল্লাহর উপরই নির্ভর করো, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক। (সূরা মায়েদা- ২৩)
وَتَوَكَّلْ عَلَى الْحَيِّ الَّذِيْ لَا يَمُوْتُ
তুমি সেই চিরঞ্জীব সত্তার উপর নির্ভর করো, যার কোন মৃত্যু নেই। (সূরা ফুরক্বান- ৫৮)
وَتَوَكَّلْ عَلَى الْعَزِيْزِ الرَّحِيْمِ
তুমি নির্ভর করো মহাপরাক্রমশালী ও পরম দয়ালু (আল্লাহর) উপর। (সূরা শু‘আরা- ২১৭)
وَتَوَكَّلْ عَلَى اللهِؕ وَكَفٰى بِاللهِ وَكِيْلًا
আর তুমি আল্লাহর উপরই নির্ভর করো। বস্তুত তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। (সূরা আহযাব- ৩)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ দুনিয়ার বৃহত্তম শক্তিরও পরোয়া করো না, বরং মহাপরাক্রমশালী ও দয়াময় আল্লাহর উপর নির্ভর করে কাজ করে যাও। তাঁর পরাক্রমশালী হওয়াই এ কথার নিশ্চয়তা দেয় যে, যার পেছনে তাঁর সমর্থন আছে তাকে দুনিয়ার কেউ হেয়প্রতিপন্ন করতে পারে না। আর তাঁর দয়াময় প্রমাণ করার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, যে ব্যক্তি তাঁর জন্য সত্যের ঝান্ডা উঁচু করার কাজে জীবন উৎসর্গ করবে, তিনি কখনো তার প্রচেষ্টাকে নিষ্ফল হতে দেবেন না। এখানে তাওয়াক্কুল তথা আল্লাহর প্রতি ভরসাকে ঈমানের অনিবার্য দাবী এবং আখিরাতের সফলতার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাওয়াক্কুল এর কয়েকটি অর্থ হয়। তা হলো-
(এক) আল্লাহর পথনির্দেশনার উপর ব্যক্তির পূর্ণ আস্থা থাকবে এবং সে মনে করবে, আল্লাহ প্রকৃত সত্য সম্পর্কে যে জ্ঞান, নীতিমালা, হালাল-হারামের যে সীমারেখা এবং পৃথিবীতে জীবন-যাপনের জন্য যেসব বিধিবিধান দিয়েছেন তা-ই সত্য ও সঠিক। এগুলো মেনে চলার মধ্যেই মানুষের কল্যাণ নিহিত।
(দুই) মানুষের নির্ভরতা তার নিজের শক্তি, যোগ্যতা, উপায়-উপকরণ ও ব্যবস্থাপনা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো সহযোগিতার উপর হবে না। তাকে এ কথা পুরোপুরিভাবে মনে রাখতে হবে যে, দুনিয়া ও আখিরাতের প্রতিটি ব্যাপারে তার সাফল্য প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর তাওফীক ও সাহায্যের উপর নির্ভর করে। (তিন) আল্লাহ ঈমান ও নেক কাজের পথ অবলম্বনকারী এবং বাতিলের পরিবর্তে ন্যায় ও সত্যের জন্য কর্মতৎপর বান্দাদেরকে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তাকে তার উপর পরিপূর্ণ আস্থা রাখতে হবে। ঐসব প্রতিশ্রুতির প্রতি আস্থাশীল হয়ে ন্যায় ও সত্যের উপর দৃঢ়পদ থাকার কারণে যেসব বিপদাপদ তার উপর পতিত হয় তা সহ্য করতে হবে।
আল্লাহর উপর ভরসা করা মুমিনের উত্তম বৈশিষ্ট্য :
اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ اِذَا ذُكِرَ اللهُ وَجِلَتْ قُلُوْبُهُمْ وَاِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ اٰيَاتُهٗ زَادَتْهُمْ اِيْمَانًا وَّعَلٰى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ
নিশ্চয় মুমিন তো তারাই যাদের হৃদয় আল্লাহর স্মরণে কম্পিত হয় এবং তাদের সামনে তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হলে তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পায়। আর তারা তাদের প্রতিপালকের উপরই নির্ভর করে। (সূরা আনফাল- ২)
আল্লাহর উপর ভরসা করা ঈমানের দাবী :
وَقَالَ مُوْسٰى يَا قَوْمِ اِنْ كُنْتُمْ اٰمَنْتُمْ بِاللهِ فَعَلَيْهِ تَوَكَّلُوْاۤ اِنْ كُنْتُمْ مُّسْلِمِيْنَ
মূসা বললেন, হে আমার সম্প্রদায়! যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনে থাক এবং তাঁর প্রতি আত্মসমর্পণকারী হও, তবে তোমরা তাঁর উপরই নির্ভর করো। (সূরা ইউনুস- ৮৪)
সকল নবীই আল্লাহর উপর ভরসা করতেন :
وَمَا لَنَاۤ اَلَّا نَتَوَكَّلَ عَلَى اللهِ وَقَدْ هَدَانَا سُبُلَنَا
আমাদের কী হয়েছে যে, আমরা আল্লাহর উপর নির্ভর করব না? তিনিই তো আমাদেরকে পথপ্রদর্শন করেছেন। (সূরা ইবরাহীম- ১২)
নূহ (আঃ) এর উক্তি :
يَا قَوْمِ اِنْ كَانَ كَبُرَ عَلَيْكُمْ مَّقَامِيْ وَتَذْكِيْرِيْ بِاٰيَاتِ اللهِ فَعَلَى اللهِ تَوَكَّلْتُ
হে আমার সম্প্রদায়! আমার অবস্থান ও আল্লাহর নিদর্শন দ্বারা আমার উপদেশ দান করাটা যদি তোমাদের নিকট দুঃসহ হয়ে যায়, তবে (জেনে রেখো) আমি কেবল আল্লাহর উপরই নির্ভর করি। (সূরা ইউনুস- ৭১)
হুদ (আঃ) এর উক্তি :
اِنِّيْ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ رَبِّيْ وَرَبِّكُمْ
নিশ্চয় আমি আমার ও তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহর উপরই নির্ভর করি। (সূরা হুদ- ৫৬)
শুয়াইব (আঃ) এর উক্তি :
وَمَا تَوْفِيْقِيْۤ اِلَّا بِاللهِؕ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَاِلَيْهِ اُنِيْبُ
আমার কার্যসাধন তো আল্লাহরই সাহায্যে (সংঘটিত হয়)। আমি তাঁরই উপর নির্ভর করি এবং আমি তাঁরই অভিমুখী। (সূরা হুদ- ৮৮)
ইয়াকূব (আঃ) এর উক্তি :
اِنِ الْحُكْمُ اِلَّا لِلّٰهِؕ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُۚ وَعَلَيْهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُتَوَكِّلُوْنَ
বিধান দেয়ার ক্ষমতা কেবল আল্লাহরই। আমি তাঁর উপরই নির্ভর করি; আর নির্ভরকারীরা তো আল্লাহর উপরই নির্ভর করে। (সূরা ইউসুফ- ৬৭)
মুহাম্মাদ ﷺ এর উক্তি :
فَاِنْ تَوَلَّوْا فَقُلْ حَسْبِيَ اللهُۗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَؕ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ
অতঃপর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে তুমি (তাদেরকে) বলে দাও, আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই। আমি তাঁরই উপর নির্ভর করি; তিনি মহান আরশের মালিক। (সূরা তাওবা- ১২৯)
আল্লাহ তাঁর উপর নির্ভরকারীদেরকে ভালোবাসেন :
فَتَوَكَّلْ عَلَى اللهِؕ اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِيْنَ
অতএব তুমি আল্লাহর উপরই নির্ভর করো; নিশ্চয় আল্লাহ (তাঁর উপর) নির্ভরশীলদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৯)
আল্লাহ তাদের কাজ সমাধা করে দেন :
وَمَنْ يَّتَوَكَّلْ عَلَى اللهِ فَهُوَ حَسْبُهٗؕ اِنَّ اللهَ بَالِغُ اَمْرِهٖؕ قَدْ جَعَلَ اللهُ لِكُلِّ شَيْءٍ قَدْرًا
যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর নির্ভর করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। নিশ্চয় আল্লাহ তার কার্যাবলি পূরণ করে দেবেন; আর আল্লাহ সবকিছুর জন্য একটি নির্দিষ্ট মাত্রা স্থির করে রেখেছেন। (সূরা তালাক্ব- ৩)
তারা শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকে :
اِنَّهٗ لَيْسَ لَهٗ سُلْطَانٌ عَلَى الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَلٰى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ
নিশ্চয় যারা ঈমান আনে ও তাদের প্রতিপালকের উপরই নির্ভর করে তাদের উপর তার (শয়তানের) কোন আধিপত্য নেই। (সূরা নাহল- ৯৯)
তাদের পুরস্কার খুবই উত্তম :
فَمَاۤ اُوْتِيْتُمْ مِّنْ شَيْءٍ فَمَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَاۚ وَمَا عِنْدَ اللهِ خَيْرٌ وَّاَبْقٰى لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَلٰى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ
তোমরা যা পেয়েছ তা পার্থিব জীবনের ভোগের সামগ্রী মাত্র। কিন্তু আল্লাহর নিকট যা আছে তা সবচেয়ে উত্তম ও স্থায়ী। (ওগুলো) তাদের জন্য, যারা ঈমান আনে ও তাদের প্রতিপালকের উপরই নির্ভর করে।
(সূরা শূরা- ৩৬)
মুমিনের উত্তম গুণ হলো অনুগত থাকা :
اَلصَّابِرِيْنَ وَالصَّادِقِيْنَ وَالْقَانِتِيْنَ وَالْمُنْفِقِيْنَ وَالْمُسْتَغْفِرِيْنَ بِالْاَسْحَارِ
(মুমিনদের গুণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো) তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, বিনয়ী, দানকারী এবং শেষরাত্রে ক্ষমা প্রার্থনাকারী। (সূরা আলে ইমরান- ১৭)
সৎ নারীর বিশেষ বৈশিষ্ট্য অনুগত থাকা :
فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِّلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللهُ
সুতরাং সতী-সধ্বী নারীরা একান্ত অনুগত হয় এবং তারা লোকচক্ষুর অন্তরালে আল্লাহ যা সংরক্ষিত করতে বলেছেন তা হেফাজত করে। (সূরা নিসা- ৩৪)
আল্লাহ অনুগতদেরকে বিরাট পুরস্কার দান করবেন :
وَمَنْ يَّقْنُتْ مِنْكُنَّ لِلّٰهِ وَرَسُوْلِهٖ وَتَعْمَلْ صَالِحًا نُّؤْتِهَاۤ اَجْرَهَا مَرَّتَيْنِ وَاَعْتَدْنَا لَهَا رِزْقًا كَرِيْمًا
তোমাদের মধ্যে যে কেউ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে ও সৎকাজ করবে, আমি তাকে দ্বিগুণ পুরস্কার দান করব। আর আমি তার জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি সম্মানজনক জীবিকা। (সূরা আহযাব- ৩১)
ইবরাহীম (আঃ) ছিলেন আল্লাহর অনুগত বান্দা :
اِنَّ اِبْرَاهِيْمَ كَانَ اُمَّةً قَانِتًا لِّلّٰهِ حَنِيْفًاؕ وَلَمْ يَكُ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
নিশ্চয় ইবরাহীম ছিলেন এক উম্মত (এক উম্মতের সমমর্যাদাবান)। তিনি ছিলেন আল্লাহর অনুগত ও একনিষ্ঠ। আর তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। (সূরা নাহল- ১২০)
মারইয়াম (আঃ) ছিলেন আল্লাহর অনুগত মহিলা :
وَمَرْيَمَ ابْنَتَ عِمْرَانَ الَّتِيْۤ اَحْصَنَتْ فَرْجَهَا فَنَفَخْنَا فِيْهِ مِنْ رُّوْحِنَا وَصَدَّقَتْ بِكَلِمَاتِ رَبِّهَا وَكُتُبِهٖ وَكَانَتْ مِنَ الْقَانِتِيْنَ
(আল্লাহ আরো দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন) ইমরানের কন্যা মারইয়ামের- যিনি তাঁর সতীত্ব রক্ষা করেছিলেন, ফলে আমি তাঁর মধ্যে আমার রূহ হতে (একটি রূহ) ফুঁকে দিয়েছিলাম। অতঃপর তিনি তাঁর প্রতিপালকের বাণী ও তাঁর কিতাবসমূহকে সত্য বলে গ্রহণ করেছিলেন; তিনি (মারইয়াম) ছিলেন আনুগত্যশীল নারীদের মধ্যে একজন। (সূরা তাহরীম- ১২)
বিশ্বের সবকিছুই আল্লাহর অনুগত :
وَلَهٗ مَنْ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِؕ كُلٌّ لَّهٗ قَانِتُوْنَ
আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে তা সবই তাঁর এবং সকলেই তাঁর অনুগত। (সূরা রূম- ২৬)
اَلصَّابِرِيْنَ وَالصَّادِقِيْنَ وَالْقَانِتِيْنَ وَالْمُنْفِقِيْنَ وَالْمُسْتَغْفِرِيْنَ بِالْاَسْحَارِ
(মুমিনদের গুণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো) তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, বিনয়ী, দানকারী এবং শেষরাত্রে ক্ষমা প্রার্থনাকারী। (সূরা আলে ইমরান- ১৭)
সৎ নারীর বিশেষ বৈশিষ্ট্য অনুগত থাকা :
فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِّلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللهُ
সুতরাং সতী-সধ্বী নারীরা একান্ত অনুগত হয় এবং তারা লোকচক্ষুর অন্তরালে আল্লাহ যা সংরক্ষিত করতে বলেছেন তা হেফাজত করে। (সূরা নিসা- ৩৪)
আল্লাহ অনুগতদেরকে বিরাট পুরস্কার দান করবেন :
وَمَنْ يَّقْنُتْ مِنْكُنَّ لِلّٰهِ وَرَسُوْلِهٖ وَتَعْمَلْ صَالِحًا نُّؤْتِهَاۤ اَجْرَهَا مَرَّتَيْنِ وَاَعْتَدْنَا لَهَا رِزْقًا كَرِيْمًا
তোমাদের মধ্যে যে কেউ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে ও সৎকাজ করবে, আমি তাকে দ্বিগুণ পুরস্কার দান করব। আর আমি তার জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি সম্মানজনক জীবিকা। (সূরা আহযাব- ৩১)
ইবরাহীম (আঃ) ছিলেন আল্লাহর অনুগত বান্দা :
اِنَّ اِبْرَاهِيْمَ كَانَ اُمَّةً قَانِتًا لِّلّٰهِ حَنِيْفًاؕ وَلَمْ يَكُ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
নিশ্চয় ইবরাহীম ছিলেন এক উম্মত (এক উম্মতের সমমর্যাদাবান)। তিনি ছিলেন আল্লাহর অনুগত ও একনিষ্ঠ। আর তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। (সূরা নাহল- ১২০)
মারইয়াম (আঃ) ছিলেন আল্লাহর অনুগত মহিলা :
وَمَرْيَمَ ابْنَتَ عِمْرَانَ الَّتِيْۤ اَحْصَنَتْ فَرْجَهَا فَنَفَخْنَا فِيْهِ مِنْ رُّوْحِنَا وَصَدَّقَتْ بِكَلِمَاتِ رَبِّهَا وَكُتُبِهٖ وَكَانَتْ مِنَ الْقَانِتِيْنَ
(আল্লাহ আরো দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন) ইমরানের কন্যা মারইয়ামের- যিনি তাঁর সতীত্ব রক্ষা করেছিলেন, ফলে আমি তাঁর মধ্যে আমার রূহ হতে (একটি রূহ) ফুঁকে দিয়েছিলাম। অতঃপর তিনি তাঁর প্রতিপালকের বাণী ও তাঁর কিতাবসমূহকে সত্য বলে গ্রহণ করেছিলেন; তিনি (মারইয়াম) ছিলেন আনুগত্যশীল নারীদের মধ্যে একজন। (সূরা তাহরীম- ১২)
বিশ্বের সবকিছুই আল্লাহর অনুগত :
وَلَهٗ مَنْ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِؕ كُلٌّ لَّهٗ قَانِتُوْنَ
আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে তা সবই তাঁর এবং সকলেই তাঁর অনুগত। (সূরা রূম- ২৬)
সওয়াবের কাজের জন্য মান্নত করা জায়েয :
اِذْ قَالَتِ امْرَاَةُ عِمْرَانَ رَبِّ اِنِّيْ نَذَرْتُ لَكَ مَا فِيْ بَطْنِيْ مُحَرَّرًا فَتَقَبَّلْ مِنِّيْۚ اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
স্মরণ করো, যখন ইমরানের স্ত্রী বলেছিলেন, হে আমার প্রতিপালক! আমার গর্ভের সন্তানকে আপনার জন্য মান্নত করলাম। সুতরাং আপনি আমার পক্ষ থেকে তা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি শ্রবণকারী ও মহাজ্ঞানী। (সূরা আলে ইমরান- ৩৫)
ব্যাখ্যা : মান্নত বলা হয় নজরানাকে। কোন মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করার শর্তে মানুষ যখন নিজের উপর এমন কোন ব্যয়ভার বা সেবাকে ফরয করে নেয় যা তার উপর ফরয নয়, তখন তাকে মান্নত বলে। এ মান্নত যদি কোন হালাল জিনিস সম্পর্কিত হয় এবং তা আল্লাহর কাছে চাওয়া হয়ে থাকে আর তা পূর্ণ হওয়ার পর যে কাজ করার অঙ্গীকার করা হয় তা আল্লাহর জন্যই হয়ে থাকে, তাহলে এ ধরনের মান্নত হবে আল্লাহর আনুগত্যের অন্তর্ভুক্ত। এ মান্নত পূর্ণ করলে সওয়াব পাওয়া যাবে। আর যদি এ ধরনের মান্নত না হয়, তাহলে তা নিজের উপর আরোপিত গোনাহের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আর তা পূর্ণ করলে অবশ্যই আযাবের অংশীদার হতে হবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, মানণত বনী আদমকে এমন কিছু এনে দেয় না, যা আল্লাহ তাদের ভাগ্যে লিপিবদ্ধ করে দেননি। তবে আদম সন্তানকে এক তাক্বদীর থেকে অন্য তাক্বদীরের দিকে নিক্ষেপ করে, যা আল্লাহ তার জন্য নির্ধারিত করে রেখেছেন। আর মান্নত দ্বারা তিনি কৃপণের নিকট থেকে কিছু ধনসম্পদ বের করে নেন। (সহীহ বুখারী, হা/৬৬০৯)
মান্নত পূর্ণ করা আবশ্যক :
يُوْفُوْنَ بِالنَّذْرِ وَيَخَافُوْنَ يَوْمًا كَانَ شَرُّهٗ مُسْتَطِيْرًا
তারা মান্নত পূর্ণ করে এবং সেদিনের ব্যাপারে ভয় করে, যেদিনের অনিষ্টতা হবে ব্যাপক। (সূরা দাহর- ৭)
মান্নত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হলে এর প্রতিদান পাওয়া যাবে :
وَمَاۤ اَنْفَقْتُمْ مِّنْ نَّفَقَةٍ اَوْ نَذَرْتُمْ مِّنْ نَّذْرٍ فَاِنَّ اللّٰهَ يَعْلَمُهٗ
তোমরা যা কিছু দান কর অথবা যা কিছু মান্নত কর, নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে অবগত। (সূরা বাক্বারা- ২৭০)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর পথে ব্যয় করা হোক বা শয়তানের পথে হোক, আল্লাহর জন্য মান্নত করা হোক বা গায়রুল্লাহর জন্য হোক- উভয় অবস্থায়ই মানুষের নিয়ত ও তার কাজ সম্পর্কে আল্লাহ ভালোভাবেই জানেন। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ব্যয় করে এবং তাঁর জন্যই মান্নত করে তারা তাদের প্রতিদান পাবে। আর যারা শয়তানের পথে ব্যয় করে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যদের জন্য মান্নত করে, তাদেরকে আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা করার সাধ্য কারো নেই।
اِذْ قَالَتِ امْرَاَةُ عِمْرَانَ رَبِّ اِنِّيْ نَذَرْتُ لَكَ مَا فِيْ بَطْنِيْ مُحَرَّرًا فَتَقَبَّلْ مِنِّيْۚ اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
স্মরণ করো, যখন ইমরানের স্ত্রী বলেছিলেন, হে আমার প্রতিপালক! আমার গর্ভের সন্তানকে আপনার জন্য মান্নত করলাম। সুতরাং আপনি আমার পক্ষ থেকে তা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি শ্রবণকারী ও মহাজ্ঞানী। (সূরা আলে ইমরান- ৩৫)
ব্যাখ্যা : মান্নত বলা হয় নজরানাকে। কোন মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করার শর্তে মানুষ যখন নিজের উপর এমন কোন ব্যয়ভার বা সেবাকে ফরয করে নেয় যা তার উপর ফরয নয়, তখন তাকে মান্নত বলে। এ মান্নত যদি কোন হালাল জিনিস সম্পর্কিত হয় এবং তা আল্লাহর কাছে চাওয়া হয়ে থাকে আর তা পূর্ণ হওয়ার পর যে কাজ করার অঙ্গীকার করা হয় তা আল্লাহর জন্যই হয়ে থাকে, তাহলে এ ধরনের মান্নত হবে আল্লাহর আনুগত্যের অন্তর্ভুক্ত। এ মান্নত পূর্ণ করলে সওয়াব পাওয়া যাবে। আর যদি এ ধরনের মান্নত না হয়, তাহলে তা নিজের উপর আরোপিত গোনাহের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আর তা পূর্ণ করলে অবশ্যই আযাবের অংশীদার হতে হবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, মানণত বনী আদমকে এমন কিছু এনে দেয় না, যা আল্লাহ তাদের ভাগ্যে লিপিবদ্ধ করে দেননি। তবে আদম সন্তানকে এক তাক্বদীর থেকে অন্য তাক্বদীরের দিকে নিক্ষেপ করে, যা আল্লাহ তার জন্য নির্ধারিত করে রেখেছেন। আর মান্নত দ্বারা তিনি কৃপণের নিকট থেকে কিছু ধনসম্পদ বের করে নেন। (সহীহ বুখারী, হা/৬৬০৯)
মান্নত পূর্ণ করা আবশ্যক :
يُوْفُوْنَ بِالنَّذْرِ وَيَخَافُوْنَ يَوْمًا كَانَ شَرُّهٗ مُسْتَطِيْرًا
তারা মান্নত পূর্ণ করে এবং সেদিনের ব্যাপারে ভয় করে, যেদিনের অনিষ্টতা হবে ব্যাপক। (সূরা দাহর- ৭)
মান্নত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হলে এর প্রতিদান পাওয়া যাবে :
وَمَاۤ اَنْفَقْتُمْ مِّنْ نَّفَقَةٍ اَوْ نَذَرْتُمْ مِّنْ نَّذْرٍ فَاِنَّ اللّٰهَ يَعْلَمُهٗ
তোমরা যা কিছু দান কর অথবা যা কিছু মান্নত কর, নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে অবগত। (সূরা বাক্বারা- ২৭০)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর পথে ব্যয় করা হোক বা শয়তানের পথে হোক, আল্লাহর জন্য মান্নত করা হোক বা গায়রুল্লাহর জন্য হোক- উভয় অবস্থায়ই মানুষের নিয়ত ও তার কাজ সম্পর্কে আল্লাহ ভালোভাবেই জানেন। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ব্যয় করে এবং তাঁর জন্যই মান্নত করে তারা তাদের প্রতিদান পাবে। আর যারা শয়তানের পথে ব্যয় করে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যদের জন্য মান্নত করে, তাদেরকে আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা করার সাধ্য কারো নেই।
শপথের মাধ্যমে মানুষকে ধোঁকা দিলে আযাব ভোগ করতে হবে :
وَلَا تَتَّخِذُوْاۤ اَيْمَانَكُمْ دَخَلًا ۢبَيْنَكُمْ فَتَزِلَّ قَدَمٌ ۢ بَعْدَ ثُبُوْتِهَا وَتَذُوْقُوا السُّوْٓءَ بِمَا صَدَدْتُّمْ عَنْ سَبِيْلِ اللّٰهِۚ وَلَكُمْ عَذَابٌ عَظِيْمٌ
তোমরা তোমাদের শপথগুলোকে ধোঁকা ও প্রতারণার উপায় হিসেবে ব্যবহার করো না। নতুবা দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরও তোমাদের পা পিছলে যাবে এবং আল্লাহর পথে বাধা দেয়ার কারণে (দুনিয়াতে) তোমাদেরকে শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আর (আখিরাতে) তোমাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি। (সূরা নাহল- ৯৪)
প্রবঞ্চনা করার জন্য শপথকে ব্যবহার করা মারাত্মক অপরাধ :
وَلَا تَكُوْنُوْا كَالَّتِيْ نَقَضَتْ غَزْلَهَا مِنْ ۢبَعْدِ قُوَّةٍ اَنْكَاثًاؕ تَتَّخِذُوْنَ اَيْمَانَكُمْ دَخَلًا ۢبَيْنَكُمْ اَنْ تَكُوْنَ اُمَّةٌ هِيَ اَرْبٰى مِنْ اُمَّةٍؕ اِنَّمَا يَبْلُوْكُمُ اللهُ بِهٖ
তোমরা সে নারীর মতো হয়ো না, যে তার সূতা মজবুত করে পাকানোর পর তার পাক খুলে নষ্ট করে দেয়। তোমরা তো তোমাদের শপথসমূহ পরস্পরকে প্রবঞ্চনা করার জন্য ব্যবহার করে থাক, যাতে একদল অন্যদলের চেয়ে অধিক লাভবান হতে পার। আর আল্লাহ এটা দ্বারা তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন। (সূরা নাহল- ৯২)
ভালো কাজ না করার জন্য কসম খাওয়া জায়েয নয় :
وَلَا تَجْعَلُوا اللهَ عُرْضَةً لِّاَيْمَانِكُمْ اَنْ تَبَرُّوْا وَتَتَّقُوْا وَتُصْلِحُوْا بَيْنَ النَّاسِؕ وَاللهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
তোমরা সৎকাজ, পরহেজগারমূলক কাজ এবং মানুষের মধ্যে মীমাংসা করা থেকে বিরত থাকার উদ্দেশ্যে নিজেদের কসমের জন্য আল্লাহর নামকে লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বানিয়ে নিয়ো না। (জেনে রেখো) আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা বাক্বারা- ২২৪)
وَلَا يَأْتَلِ اُولُو الْفَضْلِ مِنْكُمْ وَالسَّعَةِ اَنْ يُّؤْتُوْاۤ اُولِى الْقُرْبٰى وَالْمَسَاكِيْنَ وَالْمُهَاجِرِيْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ
তোমাদের মধ্যে যারা ঐশবর্য্য ও প্রাচুর্যের অধিকারী তারা যেন এ মর্মে শপথ না করে যে, তারা আত্মীয়স্বজন ও অভাবগ্রস্তদেরকে এবং আল্লাহর রাস্তায় হিজরতকারীদেরকে কিছুই দেবে না। (সূরা নূর- ২২)
আল্লাহ অর্থহীন কসমের জন্য ধরবেন না, বরং শক্ত কসমের জন্য ধরবেন :
لَا يُؤَاخِذُكُمُ اللهُ بِاللَّغْوِ فِۤيْ اَيْمَانِكُمْ وَلٰكِنْ يُّؤَاخِذُكُمْ بِمَا كَسَبَتْ قُلُوْبُكُمْؕ وَاللهُ غَفُوْرٌ حَلِيْمٌ
আল্লাহ তোমাদেরকে অনর্থক কসমের জন্য পাকড়াও করবেন না, তবে তিনি তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন তোমাদের অন্তর যা অর্জন করে তার জন্য। নিশ্চয় আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাপরায়ণ ও ধৈর্যশীল। (সূরা বাক্বারা- ২২৫)
لَا يُؤَاخِذُكُمُ اللهُ بِاللَّغْوِ فِۤيْ اَيْمَانِكُمْ وَلٰكِنْ يُّؤَاخِذُكُمْ بِمَا عَقَّدْتُّمُ الْاَيْمَانَ
তোমাদের অনর্থক শপথের জন্য আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন না। কিন্তু যেসব শপথ তোমরা ইচ্ছাকৃতভাবে কর, তার জন্য তিনি তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন। (সূরা মায়েদা- ৮৯)
ব্যাখ্যা : আবদুর রহমান ইবনে সামুরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, হে আবদুর রহমান ইবনে সামুরা! তুমি নেতৃত্ব চেয়ে নিয়ো না। কেননা, যদি তোমাকে তা চাওয়ার কারণে দেয়া হয়, তাহলে তোমার উপর তা সোপর্দ করা হবে। আর যদি না চাওয়ার কারণে দেয়া হয়, তবে সেখানে তোমাকে সাহায্য করা হবে। আর তুমি কোন শপথ করে তার বিপরীত করা উত্তম দেখলে তা ভঙ্গ করবে এবং কাফ্ফারা দিয়ে দেবে। (সহীহ বুখারী, হা/৬৬২২)
কসমের কাফফারা দেয়ার নিয়ম :
فَكَفَّارَتُهٗۤ اِطْعَامُ عَشَرَةِ مَسَاكِيْنَ مِنْ اَوْسَطِ مَا تُطْعِمُوْنَ اَهْلِيْكُمْ اَوْ كِسْوَتُهُمْ اَوْ تَحْرِيْرُ رَقَبَةٍؕ فَمَنْ لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلَاثَةِ اَيَّامٍؕ ذٰلِكَ كَفَّارَةُ اَيْمَانِكُمْ اِذَا حَلَفْتُمْ
কসমের কাফফারা হলো, দশজন দরিদ্রকে মধ্যমমানের খাদ্য দান করা, যা তোমরা তোমাদের পরিবারকে খেতে দাও। অথবা তাদেরকে পোষাক দান করা, কিংবা একজন দাসমুক্ত করা। আর যার সামর্থ্য নেই সে যেন তিনদিন সিয়াম পালন করে। যখন তোমরা শপথ কর (অতঃপর তা ভঙ্গ কর) তখন এটা হচ্ছে তোমাদের শপথ (ভঙ্গের) কাফফারা। (সূরা মায়েদা- ৮৯)
কসমের হেফাজত করা আবশ্যক :
وَاحْفَظُوْاۤ اَيْمَانَكُمْؕ كَذٰلِكَ يُبَيِّنُ اللهُ لَكُمْ اٰيَاتِه لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
আর তোমরা তোমাদের শপথসমূহ হেফাজত করো। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর নিদর্শনসমূহ বর্ণনা করে থাকেন, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পার। (সূরা মায়েদা- ৮৯)
ব্যাখ্যা : ‘কসম’ সংরক্ষণ করার কয়েকটি অর্থ হয়। (এক) কসমকে সঠিক ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হবে এবং গোনাহের কাজে কসম খাওয়া যাবে না। (দুই) কোন বিষয়ে কসম খেলে সেটা মনে রাখতে হবে এবং কোনভাবে তা ভুলে গিয়ে তার বিরুদ্ধাচরণ করা যাবে না। (তিন) কোন সঠিক বিষয়ে জেনে বুঝে ইচ্ছাকৃতভাবে কসম খেলে অবশ্যই তা পূর্ণ করতে হবে নতুবা তাকে কাফফারা আদায় করতে হবে।
وَلَا تَتَّخِذُوْاۤ اَيْمَانَكُمْ دَخَلًا ۢبَيْنَكُمْ فَتَزِلَّ قَدَمٌ ۢ بَعْدَ ثُبُوْتِهَا وَتَذُوْقُوا السُّوْٓءَ بِمَا صَدَدْتُّمْ عَنْ سَبِيْلِ اللّٰهِۚ وَلَكُمْ عَذَابٌ عَظِيْمٌ
তোমরা তোমাদের শপথগুলোকে ধোঁকা ও প্রতারণার উপায় হিসেবে ব্যবহার করো না। নতুবা দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরও তোমাদের পা পিছলে যাবে এবং আল্লাহর পথে বাধা দেয়ার কারণে (দুনিয়াতে) তোমাদেরকে শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আর (আখিরাতে) তোমাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি। (সূরা নাহল- ৯৪)
প্রবঞ্চনা করার জন্য শপথকে ব্যবহার করা মারাত্মক অপরাধ :
وَلَا تَكُوْنُوْا كَالَّتِيْ نَقَضَتْ غَزْلَهَا مِنْ ۢبَعْدِ قُوَّةٍ اَنْكَاثًاؕ تَتَّخِذُوْنَ اَيْمَانَكُمْ دَخَلًا ۢبَيْنَكُمْ اَنْ تَكُوْنَ اُمَّةٌ هِيَ اَرْبٰى مِنْ اُمَّةٍؕ اِنَّمَا يَبْلُوْكُمُ اللهُ بِهٖ
তোমরা সে নারীর মতো হয়ো না, যে তার সূতা মজবুত করে পাকানোর পর তার পাক খুলে নষ্ট করে দেয়। তোমরা তো তোমাদের শপথসমূহ পরস্পরকে প্রবঞ্চনা করার জন্য ব্যবহার করে থাক, যাতে একদল অন্যদলের চেয়ে অধিক লাভবান হতে পার। আর আল্লাহ এটা দ্বারা তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন। (সূরা নাহল- ৯২)
ভালো কাজ না করার জন্য কসম খাওয়া জায়েয নয় :
وَلَا تَجْعَلُوا اللهَ عُرْضَةً لِّاَيْمَانِكُمْ اَنْ تَبَرُّوْا وَتَتَّقُوْا وَتُصْلِحُوْا بَيْنَ النَّاسِؕ وَاللهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
তোমরা সৎকাজ, পরহেজগারমূলক কাজ এবং মানুষের মধ্যে মীমাংসা করা থেকে বিরত থাকার উদ্দেশ্যে নিজেদের কসমের জন্য আল্লাহর নামকে লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বানিয়ে নিয়ো না। (জেনে রেখো) আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা বাক্বারা- ২২৪)
وَلَا يَأْتَلِ اُولُو الْفَضْلِ مِنْكُمْ وَالسَّعَةِ اَنْ يُّؤْتُوْاۤ اُولِى الْقُرْبٰى وَالْمَسَاكِيْنَ وَالْمُهَاجِرِيْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ
তোমাদের মধ্যে যারা ঐশবর্য্য ও প্রাচুর্যের অধিকারী তারা যেন এ মর্মে শপথ না করে যে, তারা আত্মীয়স্বজন ও অভাবগ্রস্তদেরকে এবং আল্লাহর রাস্তায় হিজরতকারীদেরকে কিছুই দেবে না। (সূরা নূর- ২২)
আল্লাহ অর্থহীন কসমের জন্য ধরবেন না, বরং শক্ত কসমের জন্য ধরবেন :
لَا يُؤَاخِذُكُمُ اللهُ بِاللَّغْوِ فِۤيْ اَيْمَانِكُمْ وَلٰكِنْ يُّؤَاخِذُكُمْ بِمَا كَسَبَتْ قُلُوْبُكُمْؕ وَاللهُ غَفُوْرٌ حَلِيْمٌ
আল্লাহ তোমাদেরকে অনর্থক কসমের জন্য পাকড়াও করবেন না, তবে তিনি তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন তোমাদের অন্তর যা অর্জন করে তার জন্য। নিশ্চয় আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাপরায়ণ ও ধৈর্যশীল। (সূরা বাক্বারা- ২২৫)
لَا يُؤَاخِذُكُمُ اللهُ بِاللَّغْوِ فِۤيْ اَيْمَانِكُمْ وَلٰكِنْ يُّؤَاخِذُكُمْ بِمَا عَقَّدْتُّمُ الْاَيْمَانَ
তোমাদের অনর্থক শপথের জন্য আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন না। কিন্তু যেসব শপথ তোমরা ইচ্ছাকৃতভাবে কর, তার জন্য তিনি তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন। (সূরা মায়েদা- ৮৯)
ব্যাখ্যা : আবদুর রহমান ইবনে সামুরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, হে আবদুর রহমান ইবনে সামুরা! তুমি নেতৃত্ব চেয়ে নিয়ো না। কেননা, যদি তোমাকে তা চাওয়ার কারণে দেয়া হয়, তাহলে তোমার উপর তা সোপর্দ করা হবে। আর যদি না চাওয়ার কারণে দেয়া হয়, তবে সেখানে তোমাকে সাহায্য করা হবে। আর তুমি কোন শপথ করে তার বিপরীত করা উত্তম দেখলে তা ভঙ্গ করবে এবং কাফ্ফারা দিয়ে দেবে। (সহীহ বুখারী, হা/৬৬২২)
কসমের কাফফারা দেয়ার নিয়ম :
فَكَفَّارَتُهٗۤ اِطْعَامُ عَشَرَةِ مَسَاكِيْنَ مِنْ اَوْسَطِ مَا تُطْعِمُوْنَ اَهْلِيْكُمْ اَوْ كِسْوَتُهُمْ اَوْ تَحْرِيْرُ رَقَبَةٍؕ فَمَنْ لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلَاثَةِ اَيَّامٍؕ ذٰلِكَ كَفَّارَةُ اَيْمَانِكُمْ اِذَا حَلَفْتُمْ
কসমের কাফফারা হলো, দশজন দরিদ্রকে মধ্যমমানের খাদ্য দান করা, যা তোমরা তোমাদের পরিবারকে খেতে দাও। অথবা তাদেরকে পোষাক দান করা, কিংবা একজন দাসমুক্ত করা। আর যার সামর্থ্য নেই সে যেন তিনদিন সিয়াম পালন করে। যখন তোমরা শপথ কর (অতঃপর তা ভঙ্গ কর) তখন এটা হচ্ছে তোমাদের শপথ (ভঙ্গের) কাফফারা। (সূরা মায়েদা- ৮৯)
কসমের হেফাজত করা আবশ্যক :
وَاحْفَظُوْاۤ اَيْمَانَكُمْؕ كَذٰلِكَ يُبَيِّنُ اللهُ لَكُمْ اٰيَاتِه لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
আর তোমরা তোমাদের শপথসমূহ হেফাজত করো। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর নিদর্শনসমূহ বর্ণনা করে থাকেন, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পার। (সূরা মায়েদা- ৮৯)
ব্যাখ্যা : ‘কসম’ সংরক্ষণ করার কয়েকটি অর্থ হয়। (এক) কসমকে সঠিক ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হবে এবং গোনাহের কাজে কসম খাওয়া যাবে না। (দুই) কোন বিষয়ে কসম খেলে সেটা মনে রাখতে হবে এবং কোনভাবে তা ভুলে গিয়ে তার বিরুদ্ধাচরণ করা যাবে না। (তিন) কোন সঠিক বিষয়ে জেনে বুঝে ইচ্ছাকৃতভাবে কসম খেলে অবশ্যই তা পূর্ণ করতে হবে নতুবা তাকে কাফফারা আদায় করতে হবে।
দান করার জন্য আহবান :
اٰمِنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِهٖ وَاَنْفِقُوْا مِمَّا جَعَلَكُمْ مُّسْتَخْلَفِيْنَ فِيْهِؕ فَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مِنْكُمْ وَاَنْفَقُوْا لَهُمْ اَجْرٌ كَبِيْرٌ
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন করো এবং তিনি তোমাদেরকে যা কিছুর উত্তরাধিকারী করেছেন তা হতে ব্যয় করো। অতঃপর তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও ব্যয় করে, তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার। (সূরা হাদীদ- ৭)
ব্যাখ্যা : এখানে খরচ বলতে নিজের ও নিজের পরিবার-পরিজনের বৈধ প্রয়োজন পূর্ণ করা, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশী ও অভাবীদেরকে সাহায্য করা, জনকল্যাণমূলক কাজে অংশগ্রহণ করা এবং আল্লাহর কালিমাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আর্থিক ত্যাগ স্বীকার করাকে বুঝানো হয়েছে। কেননা অযথা খরচ, ভোগবিলাসের জন্য খরচ এবং লোক দেখানো খরচকে কুরআন খরচ হিসেবে গণ্য করে না। বরং কুরআনের পরিভাষায় এ খরচকে ইসরাফ তথা অপচয় বলে নামকরণ করা হয়েছে। অনুরূপভাবে কার্পণ্য ও সংকীর্ণতা সহকারে যা খরচ করা হয়, তার ফলে মানুষ নিজের পরিবার-পরিজনকেও সংকীর্ণতার মধ্যে রাখে এবং নিজেও নিজের মর্যাদানুযায়ী প্রয়োজন পূর্ণ করতে পারে না। নিজের সামর্থ্যানুযায়ী অন্যদেরকে সাহায্যও করতে পিছপা হয়। এ অবস্থায় মানুষ যদিও কিছু না কিছু খরচ করে, কিন্তু কুরআনের ভাষায় এ খরচের নাম ‘ইনফাক’ নয়; বরং কুরআনে একে কৃপণতা ও মানসিক সংকীর্ণতা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
দান-খয়রাত একটি লাভজনক ব্যবসা :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَتْلُوْنَ كِتَابَ اللهِ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاَنْفَقُوْا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَّعَلَانِيَةً يَّرْجُوْنَ تِجَارَةً لَّنْ تَبُوْرَ
নিশ্চয় যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, সালাত কায়েম করে এবং যা কিছু আমি তাদেরকে রিযিক হিসেবে দান করেছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করে, যাতে কখনো লোকসান হবে না। (সূরা ফাতির- ২৯)
ব্যাখ্যা : যেহেতু মানুষ আল্লাহর পথে যা ব্যয় করে আল্লাহ তার প্রতিটি অংশকে কয়েকগুণ বৃদ্ধি করে ফেরত দেয়ার ওয়াদা করেছেন, তাই কুরআনের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহর পথে অর্থ-সম্পদ ব্যয় করাকে ঋণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং এটাকে এমন ব্যবসার সাথে তুলনা করেছেন, যাতে কখনো লোকসান হবে না। তবে এখানে শর্ত হচ্ছে, তা অবশ্যই উত্তম ঋণ হতে হবে। অর্থাৎ বৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করতে হবে, আল্লাহর বিধান অনুযায়ী ব্যয় করতে হবে এবং আন্তরিকতার সাথে ব্যয় করতে হবে।
দান করা মুমিনের উত্তম বৈশিষ্ট্য :
وَالَّذِيْنَ اسْتَجَابُوْا لِرَبِّهِمْ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ۪ وَاَمْرُهُمْ شُوْرٰى بَيْنَهُمْ۪ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ
যারা তাদের প্রতিপালকের আহবানে সাড়া দেয়, সালাত প্রতিষ্ঠা করে, পরস্পর পরামর্শের মাধ্যমে তাদের কর্ম সম্পাদন করে এবং তাদেরকে আমি যে রিযিক দিয়েছি তা হতে ব্যয় করে (তারাই মুমিন)। (সূরা শূরা- ৩৮)
ব্যাখ্যা : রিযিক থেকে ব্যয় করার অর্থ হলো, (এক) আমি তাদেরকে যে হালাল রিযিক দান করেছি তা থেকে খরচ করে, নিজের ব্যয়ভার নির্বাহের জন্য হারাম অর্থ-সম্পদের দিকে হাত বাড়ায় না। (দুই) আমার দেয়া রিযিককে কৃপণের মতো জমা করে রাখে না, বরং তা হতে আল্লাহর পথে খরচ করে।
দান করা তাক্বওয়ার পরিচয় :
ذٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ فِيْهِۚ هُدًى لِّلْمُتَّقِيْنَ ‐ اَلَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ
এটা ঐ গ্রন্থ, যার মধ্যে কোন সন্দেহ নেই। আর মুত্তাক্বীদের জন্য এটা হেদায়াতস্বরূপ। যারা অদৃশ্য বিষয়গুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদেরকে যে জীবনোপকরণ দান করেছি তা হতে ব্যয় করে। (সূরা বাক্বারা- ২, ৩)
দান করা জান্নাতী লোকদের বিশেষ গুণ :
وَالَّذِيْنَ صَبَرُوا ابْتِغَآءَ وَجْهِ رَبِّهِمْ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاَنْفَقُوْا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَّعَلَانِيَةً وَّيَدْرَءُوْنَ بِالْحَسَنَةِ السَّيِّئَةَ اُولٰٓئِكَ لَهُمْ عُقْبَى الدَّارِ
যারা তাদের প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য ধৈর্যধারণ করে, সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে জীবনোপকরণ দিয়েছি তা হতে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে। আর যারা ভালো দ্বারা মন্দকে দূরীভূত করে, এদের জন্যই রয়েছে শুভ পরিণাম (জান্নাত)। (সূরা রা‘দ- ২২)
আল্লাহ দানকে ঋণ হিসেবে গ্রহণ করে অনেক গুণ বৃদ্ধি করেন :
مَنْ ذَا الَّذِيْ يُقْرِضُ اللهَ قَرْضًا حَسَنًا فَيُضَاعِفَهٗ لَهٗ وَلَهٗۤ اَجْرٌ كَرِيْمٌ
কে আছে যে আল্লাহকে উত্তম ঋণ দেবে? তাহলে তিনি তার জন্য তা বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেবেন। আর তার জন্য রয়েছে উত্তম পুরস্কার। (সূরা হাদীদ- ১১)
مَنْ ذَا الَّذِيْ يُقْرِضُ اللهَ قَرْضًا حَسَنًا فَيُضَاعِفَهٗ لَهٗۤ اَضْعَافًا كَثِيْرَةً
কে আছে যে আল্লাহকে করযে হাসানা দেবে? অতঃপর তিনি তাকে তা অনেক গুণ বাড়িয়ে দেবেন। (সূরা বাক্বারা- ২৪৫)
ব্যাখ্যা : ‘করযে হাসানা’ এর শাব্দিক অনুবাদ হচ্ছে উত্তম ঋণ। অর্থাৎ এমন ঋণ যা কেবলমাত্র সৎকর্মের প্রেরণায় চালিত হয়ে নিঃস্বার্থভাবে কাউকে দেয়া হয়। অনুরূপভাবে আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় করলে আল্লাহ তাকে নিজের জন্য ঋণ বলে গণ্য করেন। এ ক্ষেত্রে তিনি কেবল আসলটি নয় বরং কয়েকগুণ বেশি দেয়ার ওয়াদা করেন। তবে এজন্য শর্তারোপ করে বলেন যে, সেটি ‘করযে হাসানা’ অর্থাৎ এমন ঋণ হতে হবে, যা দেয়ার পেছনে কোন হীন স্বার্থ থাকবে না বরং নিছক আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে এ ঋণ দিতে হবে। আর তা এমন কাজে ব্যয় করতে হবে, যা আল্লাহ পছন্দ করেন।
দানের সওয়াব বিফলে যাবে না :
وَمَا تُنْفِقُوْا مِنْ خَيْرٍ فَلِاَنْفُسِكُمْ وَمَا تُنْفِقُوْنَ اِلَّا ابْتِغَآءَ وَجْهِ اللهِ وَمَا تُنْفِقُوْا مِنْ خَيْرٍ يُّوَفَّ اِلَيْكُمْ وَاَنْتُمْ لَا تُظْلَمُوْنَ
তোমরা যা কিছু দান কর তা মূলত তোমাদের নিজেদের জন্যই। আর তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে ব্যয় করো না। তোমরা উত্তম যা কিছুই দান করবে তার পুরোপুরি প্রতিদান তোমরা পাবে এবং তোমাদের উপর কোন অন্যায় করা হবে না। (সূরা বাক্বারা- ২৭২)
وَمَا تُنْفِقُوْا مِنْ شَيْءٍ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ يُوَفَّ اِلَيْكُمْ وَاَنْتُمْ لَا تُظْلَمُوْنَ
তোমরা আল্লাহর পথে যা কিছু ব্যয় করবে তার পূর্ণ প্রতিদান তোমাদেরকে দেয়া হবে এবং তোমাদের প্রতি (বিন্দু পরিমাণও) যুলুম করা হবে না। (সূরা আনফাল- ৬০)
কোন দানই আল্লাহর কাছে গোপন থাকে না :
وَمَا تُنْفِقُوْا مِنْ خَيْرٍ فَاِنَّ اللهَ بِهٖ عَلِيْمٌ
আর তোমরা যে সম্পদ দান কর আল্লাহ সে সম্পর্কে খবর রাখেন। (সূরা বাক্বারা- ২৭৩)
দান করলে আল্লাহ গোনাহ ক্ষমা করেন :
اِنْ تُبْدُوا الصَّدَقَاتِ فَنِعِمَّا هِيَۚ وَاِنْ تُخْفُوْهَا وَتُؤْتُوْهَا الْفُقَرَآءَ فَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْؕ وَيُكَفِّرُ عَنْكُمْ مِّنْ سَيِّئَاتِكُمْؕ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِيْرٌ
তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান কর, তবে তা ভালো। আর যদি গোপনে গরীবদেরকে দান কর, তবে তা তোমাদের জন্য আরো উত্তম। আল্লাহ তোমাদের গোনাহ ক্ষমা করেন এবং তোমাদের কর্ম সম্পর্কে খবর রাখেন। (সূরা বাক্বারা- ২৭১)
দান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উপায় :
وَمِنَ الْاَعْرَابِ مَنْ يُّؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَيَتَّخِذُ مَا يُنْفِقُ قُرُبَاتٍ عِنْدَ اللهِ وَصَلَوَاتِ الرَّسُوْلِؕ اَلَاۤ اِنَّهَا قُرْبَةٌ لَّهُمْؕ سَيُدْخِلُهُمُ اللهُ فِيْ رَحْمَتِهٖؕ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
মরুবাসীদের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে এবং তারা যা ব্যয় করে তা আল্লাহর সান্নিধ্য ও রাসূলের দু‘আ লাভের উপায় হিসেবে গ্রহণ করে। বাস্তবিকই তা তাদের জন্য আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের উপায়। অচিরেই আল্লাহ তাদেরকে নিজ রহমতের মধ্যে প্রবেশ করাবেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা তাওবা- ৯৯)
সর্বাবস্থায় দান করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে :
اَلَّذِيْنَ يُنْفِقُوْنَ اَمْوَالَهُمْ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ سِرًّا وَّعَلَانِيَةً فَلَهُمْ اَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْۚ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ
যারা রাতে ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে তাদের মাল খরচ করে, তাদের জন্য তাদের রবের নিকট প্রতিদান রয়েছে। তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না। (সূরা বাক্বারা- ২৭৪)
اٰمِنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِهٖ وَاَنْفِقُوْا مِمَّا جَعَلَكُمْ مُّسْتَخْلَفِيْنَ فِيْهِؕ فَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مِنْكُمْ وَاَنْفَقُوْا لَهُمْ اَجْرٌ كَبِيْرٌ
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন করো এবং তিনি তোমাদেরকে যা কিছুর উত্তরাধিকারী করেছেন তা হতে ব্যয় করো। অতঃপর তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও ব্যয় করে, তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার। (সূরা হাদীদ- ৭)
ব্যাখ্যা : এখানে খরচ বলতে নিজের ও নিজের পরিবার-পরিজনের বৈধ প্রয়োজন পূর্ণ করা, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশী ও অভাবীদেরকে সাহায্য করা, জনকল্যাণমূলক কাজে অংশগ্রহণ করা এবং আল্লাহর কালিমাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আর্থিক ত্যাগ স্বীকার করাকে বুঝানো হয়েছে। কেননা অযথা খরচ, ভোগবিলাসের জন্য খরচ এবং লোক দেখানো খরচকে কুরআন খরচ হিসেবে গণ্য করে না। বরং কুরআনের পরিভাষায় এ খরচকে ইসরাফ তথা অপচয় বলে নামকরণ করা হয়েছে। অনুরূপভাবে কার্পণ্য ও সংকীর্ণতা সহকারে যা খরচ করা হয়, তার ফলে মানুষ নিজের পরিবার-পরিজনকেও সংকীর্ণতার মধ্যে রাখে এবং নিজেও নিজের মর্যাদানুযায়ী প্রয়োজন পূর্ণ করতে পারে না। নিজের সামর্থ্যানুযায়ী অন্যদেরকে সাহায্যও করতে পিছপা হয়। এ অবস্থায় মানুষ যদিও কিছু না কিছু খরচ করে, কিন্তু কুরআনের ভাষায় এ খরচের নাম ‘ইনফাক’ নয়; বরং কুরআনে একে কৃপণতা ও মানসিক সংকীর্ণতা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
দান-খয়রাত একটি লাভজনক ব্যবসা :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَتْلُوْنَ كِتَابَ اللهِ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاَنْفَقُوْا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَّعَلَانِيَةً يَّرْجُوْنَ تِجَارَةً لَّنْ تَبُوْرَ
নিশ্চয় যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, সালাত কায়েম করে এবং যা কিছু আমি তাদেরকে রিযিক হিসেবে দান করেছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করে, যাতে কখনো লোকসান হবে না। (সূরা ফাতির- ২৯)
ব্যাখ্যা : যেহেতু মানুষ আল্লাহর পথে যা ব্যয় করে আল্লাহ তার প্রতিটি অংশকে কয়েকগুণ বৃদ্ধি করে ফেরত দেয়ার ওয়াদা করেছেন, তাই কুরআনের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহর পথে অর্থ-সম্পদ ব্যয় করাকে ঋণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং এটাকে এমন ব্যবসার সাথে তুলনা করেছেন, যাতে কখনো লোকসান হবে না। তবে এখানে শর্ত হচ্ছে, তা অবশ্যই উত্তম ঋণ হতে হবে। অর্থাৎ বৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করতে হবে, আল্লাহর বিধান অনুযায়ী ব্যয় করতে হবে এবং আন্তরিকতার সাথে ব্যয় করতে হবে।
দান করা মুমিনের উত্তম বৈশিষ্ট্য :
وَالَّذِيْنَ اسْتَجَابُوْا لِرَبِّهِمْ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ۪ وَاَمْرُهُمْ شُوْرٰى بَيْنَهُمْ۪ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ
যারা তাদের প্রতিপালকের আহবানে সাড়া দেয়, সালাত প্রতিষ্ঠা করে, পরস্পর পরামর্শের মাধ্যমে তাদের কর্ম সম্পাদন করে এবং তাদেরকে আমি যে রিযিক দিয়েছি তা হতে ব্যয় করে (তারাই মুমিন)। (সূরা শূরা- ৩৮)
ব্যাখ্যা : রিযিক থেকে ব্যয় করার অর্থ হলো, (এক) আমি তাদেরকে যে হালাল রিযিক দান করেছি তা থেকে খরচ করে, নিজের ব্যয়ভার নির্বাহের জন্য হারাম অর্থ-সম্পদের দিকে হাত বাড়ায় না। (দুই) আমার দেয়া রিযিককে কৃপণের মতো জমা করে রাখে না, বরং তা হতে আল্লাহর পথে খরচ করে।
দান করা তাক্বওয়ার পরিচয় :
ذٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ فِيْهِۚ هُدًى لِّلْمُتَّقِيْنَ ‐ اَلَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ
এটা ঐ গ্রন্থ, যার মধ্যে কোন সন্দেহ নেই। আর মুত্তাক্বীদের জন্য এটা হেদায়াতস্বরূপ। যারা অদৃশ্য বিষয়গুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদেরকে যে জীবনোপকরণ দান করেছি তা হতে ব্যয় করে। (সূরা বাক্বারা- ২, ৩)
দান করা জান্নাতী লোকদের বিশেষ গুণ :
وَالَّذِيْنَ صَبَرُوا ابْتِغَآءَ وَجْهِ رَبِّهِمْ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاَنْفَقُوْا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَّعَلَانِيَةً وَّيَدْرَءُوْنَ بِالْحَسَنَةِ السَّيِّئَةَ اُولٰٓئِكَ لَهُمْ عُقْبَى الدَّارِ
যারা তাদের প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য ধৈর্যধারণ করে, সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে জীবনোপকরণ দিয়েছি তা হতে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে। আর যারা ভালো দ্বারা মন্দকে দূরীভূত করে, এদের জন্যই রয়েছে শুভ পরিণাম (জান্নাত)। (সূরা রা‘দ- ২২)
আল্লাহ দানকে ঋণ হিসেবে গ্রহণ করে অনেক গুণ বৃদ্ধি করেন :
مَنْ ذَا الَّذِيْ يُقْرِضُ اللهَ قَرْضًا حَسَنًا فَيُضَاعِفَهٗ لَهٗ وَلَهٗۤ اَجْرٌ كَرِيْمٌ
কে আছে যে আল্লাহকে উত্তম ঋণ দেবে? তাহলে তিনি তার জন্য তা বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেবেন। আর তার জন্য রয়েছে উত্তম পুরস্কার। (সূরা হাদীদ- ১১)
مَنْ ذَا الَّذِيْ يُقْرِضُ اللهَ قَرْضًا حَسَنًا فَيُضَاعِفَهٗ لَهٗۤ اَضْعَافًا كَثِيْرَةً
কে আছে যে আল্লাহকে করযে হাসানা দেবে? অতঃপর তিনি তাকে তা অনেক গুণ বাড়িয়ে দেবেন। (সূরা বাক্বারা- ২৪৫)
ব্যাখ্যা : ‘করযে হাসানা’ এর শাব্দিক অনুবাদ হচ্ছে উত্তম ঋণ। অর্থাৎ এমন ঋণ যা কেবলমাত্র সৎকর্মের প্রেরণায় চালিত হয়ে নিঃস্বার্থভাবে কাউকে দেয়া হয়। অনুরূপভাবে আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় করলে আল্লাহ তাকে নিজের জন্য ঋণ বলে গণ্য করেন। এ ক্ষেত্রে তিনি কেবল আসলটি নয় বরং কয়েকগুণ বেশি দেয়ার ওয়াদা করেন। তবে এজন্য শর্তারোপ করে বলেন যে, সেটি ‘করযে হাসানা’ অর্থাৎ এমন ঋণ হতে হবে, যা দেয়ার পেছনে কোন হীন স্বার্থ থাকবে না বরং নিছক আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে এ ঋণ দিতে হবে। আর তা এমন কাজে ব্যয় করতে হবে, যা আল্লাহ পছন্দ করেন।
দানের সওয়াব বিফলে যাবে না :
وَمَا تُنْفِقُوْا مِنْ خَيْرٍ فَلِاَنْفُسِكُمْ وَمَا تُنْفِقُوْنَ اِلَّا ابْتِغَآءَ وَجْهِ اللهِ وَمَا تُنْفِقُوْا مِنْ خَيْرٍ يُّوَفَّ اِلَيْكُمْ وَاَنْتُمْ لَا تُظْلَمُوْنَ
তোমরা যা কিছু দান কর তা মূলত তোমাদের নিজেদের জন্যই। আর তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে ব্যয় করো না। তোমরা উত্তম যা কিছুই দান করবে তার পুরোপুরি প্রতিদান তোমরা পাবে এবং তোমাদের উপর কোন অন্যায় করা হবে না। (সূরা বাক্বারা- ২৭২)
وَمَا تُنْفِقُوْا مِنْ شَيْءٍ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ يُوَفَّ اِلَيْكُمْ وَاَنْتُمْ لَا تُظْلَمُوْنَ
তোমরা আল্লাহর পথে যা কিছু ব্যয় করবে তার পূর্ণ প্রতিদান তোমাদেরকে দেয়া হবে এবং তোমাদের প্রতি (বিন্দু পরিমাণও) যুলুম করা হবে না। (সূরা আনফাল- ৬০)
কোন দানই আল্লাহর কাছে গোপন থাকে না :
وَمَا تُنْفِقُوْا مِنْ خَيْرٍ فَاِنَّ اللهَ بِهٖ عَلِيْمٌ
আর তোমরা যে সম্পদ দান কর আল্লাহ সে সম্পর্কে খবর রাখেন। (সূরা বাক্বারা- ২৭৩)
দান করলে আল্লাহ গোনাহ ক্ষমা করেন :
اِنْ تُبْدُوا الصَّدَقَاتِ فَنِعِمَّا هِيَۚ وَاِنْ تُخْفُوْهَا وَتُؤْتُوْهَا الْفُقَرَآءَ فَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْؕ وَيُكَفِّرُ عَنْكُمْ مِّنْ سَيِّئَاتِكُمْؕ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِيْرٌ
তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান কর, তবে তা ভালো। আর যদি গোপনে গরীবদেরকে দান কর, তবে তা তোমাদের জন্য আরো উত্তম। আল্লাহ তোমাদের গোনাহ ক্ষমা করেন এবং তোমাদের কর্ম সম্পর্কে খবর রাখেন। (সূরা বাক্বারা- ২৭১)
দান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উপায় :
وَمِنَ الْاَعْرَابِ مَنْ يُّؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَيَتَّخِذُ مَا يُنْفِقُ قُرُبَاتٍ عِنْدَ اللهِ وَصَلَوَاتِ الرَّسُوْلِؕ اَلَاۤ اِنَّهَا قُرْبَةٌ لَّهُمْؕ سَيُدْخِلُهُمُ اللهُ فِيْ رَحْمَتِهٖؕ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
মরুবাসীদের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে এবং তারা যা ব্যয় করে তা আল্লাহর সান্নিধ্য ও রাসূলের দু‘আ লাভের উপায় হিসেবে গ্রহণ করে। বাস্তবিকই তা তাদের জন্য আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের উপায়। অচিরেই আল্লাহ তাদেরকে নিজ রহমতের মধ্যে প্রবেশ করাবেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা তাওবা- ৯৯)
সর্বাবস্থায় দান করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে :
اَلَّذِيْنَ يُنْفِقُوْنَ اَمْوَالَهُمْ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ سِرًّا وَّعَلَانِيَةً فَلَهُمْ اَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْۚ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ
যারা রাতে ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে তাদের মাল খরচ করে, তাদের জন্য তাদের রবের নিকট প্রতিদান রয়েছে। তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না। (সূরা বাক্বারা- ২৭৪)
আল্লাহ হালাল ও পবিত্র জিনিস দান করতে বলেছেন :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَنْفِقُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا كَسَبْتُمْ وَمِمَّاۤ اَخْرَجْنَا لَكُمْ مِّنَ الْاَرْضِ۪ وَلَا تَيَمَّمُوا الْخَبِيْثَ مِنْهُ تُنْفِقُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যা উপার্জন করেছ এবং আমি জমিন থেকে যা উৎপন্ন করি তার মধ্য হতে পবিত্র জিনিসসমূহ দান করো। আর তোমরা খারাপ জিনিস দান করার ইচ্ছা পোষণ করো না। (সূরা বাক্বারা- ২৬৭)
প্রিয় জিনিস দান করার মধ্যে সওয়াব নিহিত :
لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتّٰى تُنْفِقُوْا مِمَّا تُحِبُّوْنَؕ وَمَا تُنْفِقُوْا مِنْ شَيْءٍ فَاِنَّ اللهَ بِهٖ عَلِيْمٌ
তোমরা কখনো যথার্থ নেকী অর্জন করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয় জিনিস আল্লাহর পথে খরচ কর। আর তোমরা যা কিছুই দান কর আল্লাহ তা জানেন। (সূরা আলে ইমরান- ৯২)
ব্যাখ্যা : আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মদিনায় আনসারদের মাঝে আবু তালহা (রাঃ) এর খেজুর বাগানের সম্পদ সবচেয়ে বেশি ছিল এবং তাঁর সম্পদের মাঝে ‘বাইরূহা’ বাগানটিই তাঁর অধিকতর প্রিয় ছিল। এটা ছিল মসজিদে নববীর সামনে অবস্থিত। রাসূল ﷺ কখনো কখনো ঐ বাগানে ঢুকতেন এবং সেখানকার মিঠা পানি পান করতেন। আনাস (রাঃ) বলেন, যখন এ আয়াত নাযিল হলো- ‘‘তোমরা যা পছন্দ কর, তা হতে দান না করা পর্যন্ত তোমরা কিছুতেই প্রকৃত নেকী অর্জন করতে পারবে না’’, তখন আবু তালহা (রাঃ) রাসূল ﷺ এর কাছে এসে বললেন, ‘‘হে আল্লাহর রাসূল! মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘‘তোমরা যা পছন্দ কর তা হতে দান না করা পর্যন্ত কিছুতেই প্রকৃত নেকী অর্জন করবে না।’’ (আমি দেখলাম) আমার সম্পদসমূহের মাঝে ‘বাইরূহা’ বাগানটি আমার কাছে অধিকতর প্রিয়। আমি তা আল্লাহর জন্য দান করলাম, আল্লাহর কাছে এর নেকী ও সঞ্চয়ের আশা রাখি। অতএব হে আল্লাহর রাসূল! আপনি এটা নিয়ে নিন এবং যেভাবে আল্লাহ আপনাকে নির্দেশ দেন সেভাবে ব্যবহার করুন। রাসূল ﷺ বললেন, বাহ! এটা তো লাভজনক ব্যবসা, এটা তো লাভজনক ব্যবসা; তুমি যা বললে তা আমি শুনলাম। (তবে) তুমি এটা তোমার আত্মীয়স্বজনদের দিয়ে দেয়াটাই আমি ভালো মনে করি। আবু তালহা (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তাই করব। অতঃপর আবু তালহা (রাঃ) তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ও চাচাত ভাইদের মাঝে বিতরণ করে দিলেন। (সহীহ বুখারী, হা/১৪৬১)
মধ্যম মানের প্রয়োজন পূরণের পরেই দান করতে হবে :
وَيَسْاَ لُوْنَكَ مَاذَا يُنْفِقُوْنَ قُلِ الْعَفْوَ
তারা আপনাকে প্রশ্ন করে, কী ব্যয় করবে? আপনি বলে দিন, (প্রয়োজন বাদে) যা অতিরিক্ত হয় (তাই ব্যয় করবে)। (সূরা বাক্বারা- ২১৯)
প্রকাশ্যে দান করার চেয়ে গোপনে দান করা উত্তম :
اِنْ تُبْدُوا الصَّدَقَاتِ فَنِعِمَّا هِيَۚ وَاِنْ تُخْفُوْهَا وَتُؤْتُوْهَا الْفُقَرَآءَ فَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ
তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান কর, তবে তা ভালো। আর যদি গোপনে গরীবদেরকে দান কর, তবে তা তোমাদের জন্য আরো উত্তম। (সূরা বাক্বারা- ২৭১)
ব্যাখ্যা : যে দান ফরয, সেটি প্রকাশ্যে করাই উত্তম এবং যে দান ফরয নয় তা গোপনে করাই উত্তম। তাছাড়া অন্যান্য সকল উত্তম কাজের ক্ষেত্রেও এ নীতি প্রযোজ্য হবে, অর্থাৎ ফরযগুলো প্রকাশ্যে এবং নফলগুলো গোপনে করাই উত্তম হিসেবে বিবেচিত হবে।
ফরজগুলো প্রকাশ্যে পালন করাতে কয়েকটি উপকারিতা রয়েছে। আর তা হলো,
(১) এ কাজের ব্যাপারে অধিক সাক্ষী সংগ্রহ হয়ে যায়, যা কিয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে প্রদান করা হবে।
(২) তার কাজগুলো দেখে অন্যরাও উৎসাহিত হবে।
(৩) মানুষ তাকে একজন সৎ ব্যক্তি হিসেবে জানবে। ফলে সে কোন উপদেশ দিলে তারা তা মান্য করবে। তবে এ ব্যাপারে শর্ত হচ্ছে, নিয়ত শুদ্ধ রাখা।
আর গোপনে সৎকাজ করার মধ্যে বেশ কয়েকটি উপকারিতা রয়েছে। আর তা হলো,
(১) এর মাধ্যমে মানুষের আত্মার উন্নতি সাধিত হয়।
(২) নিয়তের পরিশুদ্ধতা নিশ্চিত হয়।
(৩) ব্যক্তির সৎ গুণাবলি বিকাশ লাভ করে এবং সকল দোষ-ত্রুটি ও অসৎ বৃত্তিগুলো ধীরে ধীরে নির্মূল হয়ে যায়।
দান করতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য :
وَسَيُجَنَّبُهَا الْاَتْقٰى ‐ اَ لَّذِيْ يُؤْتِيْ مَالَهٗ يَتَزَكّٰى ‐ وَمَا لِاَحَدٍ عِنْدَهٗ مِنْ نِّعْمَةٍ تُجْزٰى ‐ اِلَّا ابْتِغَآءَ وَجْهِ رَبِّهِ الْاَعْلٰى
এ থেকে (জাহান্নাম থেকে) দূরে রাখা হবে আল্লাহভীরু ব্যক্তিদেরকে, যে আত্মশুদ্ধির জন্য তার ধনসম্পদ হতে দান করে। অতঃপর তার উপর মহান পালনকর্তার সন্তুষ্টি ব্যতীত অন্য কোন প্রতিদানযোগ্য অনুগ্রহ থাকে না। (সূরা লাইল, ১৭-২০)
দান করে খোঁটা দেয়া যাবে না :
اَلَّذِيْنَ يُنْفِقُوْنَ اَمْوَالَهُمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ ثُمَّ لَا يُتْبِعُوْنَ مَاۤ اَنْفَقُوْا مَنًّا وَّلَاۤ اَذًى لَّهُمْ اَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْۚ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ
যারা আল্লাহর পথে তাদের মাল খরচ করে, পরে তার জন্য খোঁটা দেয় না এবং কষ্টও দেয় না, তাদের জন্য তাদের রবের নিকট প্রতিদান রয়েছে। তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না। (সূরা বাক্বারা- ২৬২)
দান করে খোঁটা দিলে সওয়াব থেকে বঞ্চিত হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تُبْطِلُوْا صَدَقَاتِكُمْ بِالْمَنِّ وَالْاَذٰى
হে ঈমানদারগণ! খোঁটা এবং কষ্ট দিয়ে তোমরা তোমাদের দানকে বরবাদ করে দিয়ো না। (সূরা বাক্বারা- ২৬৪)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ তোমাদের দান-খয়রাতের মুখাপেক্ষী নন। আল্লাহ নিজেই যেহেতু সহনশীল, তাই তিনি এমন লোকদের পছন্দ করেন যারা সংকীর্ণমনা নয়; বরং বিপুল সাহসের অধিকারী এবং সহিষ্ণু। যে আল্লাহ তোমাদের জীবনে অগণিত উপায়-উপকরণ দান করেছেন এবং বহুবিধ ভুল-ত্রুটি করার পরও তোমাদেরকে বার বার ক্ষমা করে দিচ্ছেন, তিনি কেমন করে এমন লোকদের পছন্দ করতে পারেন, যারা কোন গরীবকে এক মুঠো ভাত খাওয়ানোর পর বার বার নিজের অনুগ্রহের কথা তার সামনে প্রকাশ করে তার আত্মমর্যাদাকে নষ্ট করে দেয়।
একনিষ্ঠভাবে দান করার দৃষ্টান্ত :
مَثَلُ الَّذِيْنَ يُنْفِقُوْنَ اَمْوَالَهُمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ اَنْۢبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِيْ كُلِّ سُنْۢبُلَةٍ مِّائَةُ حَبَّةٍؕ وَاللهُ يُضَاعِفُ لِمَنْ يَّشَآءُؕ وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ
যারা আল্লাহর পথে তাদের মাল খরচ করে তাদের উদাহরণ হচ্ছে একটি শস্যদানার মতো, যা সাতটি শীষ উৎপন্ন করে এবং প্রত্যেক শীষে একশ’ শস্যদানা থাকে। আর আল্লাহ যাকে চান তাকে আরো বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ প্রশস্তকারী ও মহাজ্ঞানী। (সূরা বাক্বারা- ২৬১)
ব্যাখ্যা : ধনসম্পদ নিজেদের প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্য, পরিবার-পরিজন ও সন্তান-সন্ততির ভরণ-পোষণের বা আত্মীয়স্বজনের দেখাশুনা করার জন্য অথবা অভাবীদের সাহায্যার্থে বা জনকল্যাণমূলক কাজে এবং জিহাদের উদ্দেশ্যে যে কোনভাবেই ব্যয় করা হোক না কেন, তা যদি আল্লাহর বিধান অনুযায়ী এবং একমাত্র তাঁরই সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে করা হয়, তাহলে তা আল্লাহর পথে ব্যয় করার মধ্যেই গণ্য হবে। অর্থাৎ যে পরিমাণ আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও গভীর আবেগ-উদ্দীপনা সহকারে মানুষ আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় করবে, আল্লাহর পক্ষ থেকে তার প্রতিদানও ততবেশি ধার্য করা হবে। যে আল্লাহ একটি শস্যদানায় এত বিপুল পরিমাণ বরকত দান করেন যে, তা থেকে সাতশটি শস্য উৎপন্ন হতে পারে, তাঁর পক্ষে মানুষের দান-খয়রাতের মধ্যে এমনভাবে বৃদ্ধি ও দান করা, যার ফলে এক টাকা ব্যয় করলে তা বৃদ্ধি পেয়ে সাতশ’ গুণ হয়ে ফিরে আসবে- এটা মোটেই কঠিন ব্যাপার নয়। এ বাস্তব সত্যটি বর্ণনা করার পর আল্লাহর দু’টি গুণাবলির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। একটি গুণ হচ্ছে, তাঁর হাত সংকীর্ণ নয় বরং তিনি মুক্তহস্তের অধিকারী। মানুষের কাজ প্রকৃতপক্ষে যতটুকু উন্নতি, বৃদ্ধি ও প্রতিদান লাভের যোগ্য, তা তিনি দিতে সক্ষম। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, তিনি সর্বজ্ঞ। অর্থাৎ তিনি কোন বিষয়ে বেখবর নন। যা কিছু মানুষ ব্যয় করে এবং যে মনোভাব, আবেগ ও প্রেরণা সহকারে ব্যয় করে, সে সম্পর্কে তিনি অবহিত; ফলে মানুষ তার যথার্থ প্রতিদান হতে বঞ্চিত হবে না।
وَمَثَلُ الَّذِيْنَ يُنْفِقُوْنَ اَمْوَالَهُمُ ابْتِغَآءَ مَرْضَاةِ اللهِ وَتَثْبِيْتًا مِّنْ اَنْفُسِهِمْ كَمَثَلِ جَنَّةٍ ۢبِرَبْوَةٍ اَصَابَهَا وَابِلٌ فَاٰتَتْ اُكُلَهَا ضِعْفَيْنِۚ فَاِنْ لَّمْ يُصِبْهَا وَابِلٌ فَطَلٌّؕ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এবং নিজেদের (ঈমানকে) দৃঢ় করার জন্য তাদের মাল খরচ করে, তাদের উদাহরণ হচ্ছে উর্বর জমিতে অবস্থিত একটি বাগানের মতো, যাতে প্রবল বৃষ্টি বর্ষিত হয়। ফলে তা দিগুণ খাদ্যশস্য উৎপন্ন করে। যদি প্রবল বৃষ্টি নাও হয়, তবে অল্প বৃষ্টিই যথেষ্ট হয়ে যায়। আর তোমরা যা কর আল্লাহ তা প্রত্যক্ষ করেন। (সূরা বাক্বারা- ২৬৫)
ব্যাখ্যা : বৃষ্টিপাতের ফলে মাটি স্বাভাবিকভাবেই সরস ও সতেজ হয় এবং তাতে চারা জন্মায়। কিন্তু যে মাটিতে সরসতা সৃষ্টি হয়, তার পরিমাণ যদি হয় নামমাত্র এবং তা কেবল উপরিভাগেই লেপটে থাকে আর তার তলায় থাকে পাথর, তাহলে বৃষ্টির পানি তার জন্য লাভজনক হওয়ার পরিবর্তে ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়। অনুরূপভাবে দান-খয়রাত যদিও নেকী ও সৎকর্মকে বিকশিত করার ক্ষমতাসম্পন্ন, কিন্তু তা লাভজনক হওয়ার জন্য সদুদ্দেশ্য ও সৎ নিয়তের শর্ত আরোপিত হয়েছে। নিয়ত সৎ না হলে এ দান নিছক সম্পদের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রবল বৃষ্টিপাত বলতে এমন দান-খয়রাতকে বুঝানো হয়েছে, যার পেছনে থাকে চরম কল্যাণাকাঙ্ক্ষা ও পূর্ণ সদিচ্ছা। আর হালকা বৃষ্টিপাত বলতে কল্যাণাকাঙ্ক্ষার তীব্রতা বিহীন দান-খয়রাতকে বুঝানো হয়েছে।
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَنْفِقُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا كَسَبْتُمْ وَمِمَّاۤ اَخْرَجْنَا لَكُمْ مِّنَ الْاَرْضِ۪ وَلَا تَيَمَّمُوا الْخَبِيْثَ مِنْهُ تُنْفِقُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যা উপার্জন করেছ এবং আমি জমিন থেকে যা উৎপন্ন করি তার মধ্য হতে পবিত্র জিনিসসমূহ দান করো। আর তোমরা খারাপ জিনিস দান করার ইচ্ছা পোষণ করো না। (সূরা বাক্বারা- ২৬৭)
প্রিয় জিনিস দান করার মধ্যে সওয়াব নিহিত :
لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتّٰى تُنْفِقُوْا مِمَّا تُحِبُّوْنَؕ وَمَا تُنْفِقُوْا مِنْ شَيْءٍ فَاِنَّ اللهَ بِهٖ عَلِيْمٌ
তোমরা কখনো যথার্থ নেকী অর্জন করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয় জিনিস আল্লাহর পথে খরচ কর। আর তোমরা যা কিছুই দান কর আল্লাহ তা জানেন। (সূরা আলে ইমরান- ৯২)
ব্যাখ্যা : আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মদিনায় আনসারদের মাঝে আবু তালহা (রাঃ) এর খেজুর বাগানের সম্পদ সবচেয়ে বেশি ছিল এবং তাঁর সম্পদের মাঝে ‘বাইরূহা’ বাগানটিই তাঁর অধিকতর প্রিয় ছিল। এটা ছিল মসজিদে নববীর সামনে অবস্থিত। রাসূল ﷺ কখনো কখনো ঐ বাগানে ঢুকতেন এবং সেখানকার মিঠা পানি পান করতেন। আনাস (রাঃ) বলেন, যখন এ আয়াত নাযিল হলো- ‘‘তোমরা যা পছন্দ কর, তা হতে দান না করা পর্যন্ত তোমরা কিছুতেই প্রকৃত নেকী অর্জন করতে পারবে না’’, তখন আবু তালহা (রাঃ) রাসূল ﷺ এর কাছে এসে বললেন, ‘‘হে আল্লাহর রাসূল! মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘‘তোমরা যা পছন্দ কর তা হতে দান না করা পর্যন্ত কিছুতেই প্রকৃত নেকী অর্জন করবে না।’’ (আমি দেখলাম) আমার সম্পদসমূহের মাঝে ‘বাইরূহা’ বাগানটি আমার কাছে অধিকতর প্রিয়। আমি তা আল্লাহর জন্য দান করলাম, আল্লাহর কাছে এর নেকী ও সঞ্চয়ের আশা রাখি। অতএব হে আল্লাহর রাসূল! আপনি এটা নিয়ে নিন এবং যেভাবে আল্লাহ আপনাকে নির্দেশ দেন সেভাবে ব্যবহার করুন। রাসূল ﷺ বললেন, বাহ! এটা তো লাভজনক ব্যবসা, এটা তো লাভজনক ব্যবসা; তুমি যা বললে তা আমি শুনলাম। (তবে) তুমি এটা তোমার আত্মীয়স্বজনদের দিয়ে দেয়াটাই আমি ভালো মনে করি। আবু তালহা (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তাই করব। অতঃপর আবু তালহা (রাঃ) তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ও চাচাত ভাইদের মাঝে বিতরণ করে দিলেন। (সহীহ বুখারী, হা/১৪৬১)
মধ্যম মানের প্রয়োজন পূরণের পরেই দান করতে হবে :
وَيَسْاَ لُوْنَكَ مَاذَا يُنْفِقُوْنَ قُلِ الْعَفْوَ
তারা আপনাকে প্রশ্ন করে, কী ব্যয় করবে? আপনি বলে দিন, (প্রয়োজন বাদে) যা অতিরিক্ত হয় (তাই ব্যয় করবে)। (সূরা বাক্বারা- ২১৯)
প্রকাশ্যে দান করার চেয়ে গোপনে দান করা উত্তম :
اِنْ تُبْدُوا الصَّدَقَاتِ فَنِعِمَّا هِيَۚ وَاِنْ تُخْفُوْهَا وَتُؤْتُوْهَا الْفُقَرَآءَ فَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ
তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান কর, তবে তা ভালো। আর যদি গোপনে গরীবদেরকে দান কর, তবে তা তোমাদের জন্য আরো উত্তম। (সূরা বাক্বারা- ২৭১)
ব্যাখ্যা : যে দান ফরয, সেটি প্রকাশ্যে করাই উত্তম এবং যে দান ফরয নয় তা গোপনে করাই উত্তম। তাছাড়া অন্যান্য সকল উত্তম কাজের ক্ষেত্রেও এ নীতি প্রযোজ্য হবে, অর্থাৎ ফরযগুলো প্রকাশ্যে এবং নফলগুলো গোপনে করাই উত্তম হিসেবে বিবেচিত হবে।
ফরজগুলো প্রকাশ্যে পালন করাতে কয়েকটি উপকারিতা রয়েছে। আর তা হলো,
(১) এ কাজের ব্যাপারে অধিক সাক্ষী সংগ্রহ হয়ে যায়, যা কিয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে প্রদান করা হবে।
(২) তার কাজগুলো দেখে অন্যরাও উৎসাহিত হবে।
(৩) মানুষ তাকে একজন সৎ ব্যক্তি হিসেবে জানবে। ফলে সে কোন উপদেশ দিলে তারা তা মান্য করবে। তবে এ ব্যাপারে শর্ত হচ্ছে, নিয়ত শুদ্ধ রাখা।
আর গোপনে সৎকাজ করার মধ্যে বেশ কয়েকটি উপকারিতা রয়েছে। আর তা হলো,
(১) এর মাধ্যমে মানুষের আত্মার উন্নতি সাধিত হয়।
(২) নিয়তের পরিশুদ্ধতা নিশ্চিত হয়।
(৩) ব্যক্তির সৎ গুণাবলি বিকাশ লাভ করে এবং সকল দোষ-ত্রুটি ও অসৎ বৃত্তিগুলো ধীরে ধীরে নির্মূল হয়ে যায়।
দান করতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য :
وَسَيُجَنَّبُهَا الْاَتْقٰى ‐ اَ لَّذِيْ يُؤْتِيْ مَالَهٗ يَتَزَكّٰى ‐ وَمَا لِاَحَدٍ عِنْدَهٗ مِنْ نِّعْمَةٍ تُجْزٰى ‐ اِلَّا ابْتِغَآءَ وَجْهِ رَبِّهِ الْاَعْلٰى
এ থেকে (জাহান্নাম থেকে) দূরে রাখা হবে আল্লাহভীরু ব্যক্তিদেরকে, যে আত্মশুদ্ধির জন্য তার ধনসম্পদ হতে দান করে। অতঃপর তার উপর মহান পালনকর্তার সন্তুষ্টি ব্যতীত অন্য কোন প্রতিদানযোগ্য অনুগ্রহ থাকে না। (সূরা লাইল, ১৭-২০)
দান করে খোঁটা দেয়া যাবে না :
اَلَّذِيْنَ يُنْفِقُوْنَ اَمْوَالَهُمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ ثُمَّ لَا يُتْبِعُوْنَ مَاۤ اَنْفَقُوْا مَنًّا وَّلَاۤ اَذًى لَّهُمْ اَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْۚ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ
যারা আল্লাহর পথে তাদের মাল খরচ করে, পরে তার জন্য খোঁটা দেয় না এবং কষ্টও দেয় না, তাদের জন্য তাদের রবের নিকট প্রতিদান রয়েছে। তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না। (সূরা বাক্বারা- ২৬২)
দান করে খোঁটা দিলে সওয়াব থেকে বঞ্চিত হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تُبْطِلُوْا صَدَقَاتِكُمْ بِالْمَنِّ وَالْاَذٰى
হে ঈমানদারগণ! খোঁটা এবং কষ্ট দিয়ে তোমরা তোমাদের দানকে বরবাদ করে দিয়ো না। (সূরা বাক্বারা- ২৬৪)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ তোমাদের দান-খয়রাতের মুখাপেক্ষী নন। আল্লাহ নিজেই যেহেতু সহনশীল, তাই তিনি এমন লোকদের পছন্দ করেন যারা সংকীর্ণমনা নয়; বরং বিপুল সাহসের অধিকারী এবং সহিষ্ণু। যে আল্লাহ তোমাদের জীবনে অগণিত উপায়-উপকরণ দান করেছেন এবং বহুবিধ ভুল-ত্রুটি করার পরও তোমাদেরকে বার বার ক্ষমা করে দিচ্ছেন, তিনি কেমন করে এমন লোকদের পছন্দ করতে পারেন, যারা কোন গরীবকে এক মুঠো ভাত খাওয়ানোর পর বার বার নিজের অনুগ্রহের কথা তার সামনে প্রকাশ করে তার আত্মমর্যাদাকে নষ্ট করে দেয়।
একনিষ্ঠভাবে দান করার দৃষ্টান্ত :
مَثَلُ الَّذِيْنَ يُنْفِقُوْنَ اَمْوَالَهُمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ اَنْۢبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِيْ كُلِّ سُنْۢبُلَةٍ مِّائَةُ حَبَّةٍؕ وَاللهُ يُضَاعِفُ لِمَنْ يَّشَآءُؕ وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ
যারা আল্লাহর পথে তাদের মাল খরচ করে তাদের উদাহরণ হচ্ছে একটি শস্যদানার মতো, যা সাতটি শীষ উৎপন্ন করে এবং প্রত্যেক শীষে একশ’ শস্যদানা থাকে। আর আল্লাহ যাকে চান তাকে আরো বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ প্রশস্তকারী ও মহাজ্ঞানী। (সূরা বাক্বারা- ২৬১)
ব্যাখ্যা : ধনসম্পদ নিজেদের প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্য, পরিবার-পরিজন ও সন্তান-সন্ততির ভরণ-পোষণের বা আত্মীয়স্বজনের দেখাশুনা করার জন্য অথবা অভাবীদের সাহায্যার্থে বা জনকল্যাণমূলক কাজে এবং জিহাদের উদ্দেশ্যে যে কোনভাবেই ব্যয় করা হোক না কেন, তা যদি আল্লাহর বিধান অনুযায়ী এবং একমাত্র তাঁরই সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে করা হয়, তাহলে তা আল্লাহর পথে ব্যয় করার মধ্যেই গণ্য হবে। অর্থাৎ যে পরিমাণ আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও গভীর আবেগ-উদ্দীপনা সহকারে মানুষ আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় করবে, আল্লাহর পক্ষ থেকে তার প্রতিদানও ততবেশি ধার্য করা হবে। যে আল্লাহ একটি শস্যদানায় এত বিপুল পরিমাণ বরকত দান করেন যে, তা থেকে সাতশটি শস্য উৎপন্ন হতে পারে, তাঁর পক্ষে মানুষের দান-খয়রাতের মধ্যে এমনভাবে বৃদ্ধি ও দান করা, যার ফলে এক টাকা ব্যয় করলে তা বৃদ্ধি পেয়ে সাতশ’ গুণ হয়ে ফিরে আসবে- এটা মোটেই কঠিন ব্যাপার নয়। এ বাস্তব সত্যটি বর্ণনা করার পর আল্লাহর দু’টি গুণাবলির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। একটি গুণ হচ্ছে, তাঁর হাত সংকীর্ণ নয় বরং তিনি মুক্তহস্তের অধিকারী। মানুষের কাজ প্রকৃতপক্ষে যতটুকু উন্নতি, বৃদ্ধি ও প্রতিদান লাভের যোগ্য, তা তিনি দিতে সক্ষম। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, তিনি সর্বজ্ঞ। অর্থাৎ তিনি কোন বিষয়ে বেখবর নন। যা কিছু মানুষ ব্যয় করে এবং যে মনোভাব, আবেগ ও প্রেরণা সহকারে ব্যয় করে, সে সম্পর্কে তিনি অবহিত; ফলে মানুষ তার যথার্থ প্রতিদান হতে বঞ্চিত হবে না।
وَمَثَلُ الَّذِيْنَ يُنْفِقُوْنَ اَمْوَالَهُمُ ابْتِغَآءَ مَرْضَاةِ اللهِ وَتَثْبِيْتًا مِّنْ اَنْفُسِهِمْ كَمَثَلِ جَنَّةٍ ۢبِرَبْوَةٍ اَصَابَهَا وَابِلٌ فَاٰتَتْ اُكُلَهَا ضِعْفَيْنِۚ فَاِنْ لَّمْ يُصِبْهَا وَابِلٌ فَطَلٌّؕ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এবং নিজেদের (ঈমানকে) দৃঢ় করার জন্য তাদের মাল খরচ করে, তাদের উদাহরণ হচ্ছে উর্বর জমিতে অবস্থিত একটি বাগানের মতো, যাতে প্রবল বৃষ্টি বর্ষিত হয়। ফলে তা দিগুণ খাদ্যশস্য উৎপন্ন করে। যদি প্রবল বৃষ্টি নাও হয়, তবে অল্প বৃষ্টিই যথেষ্ট হয়ে যায়। আর তোমরা যা কর আল্লাহ তা প্রত্যক্ষ করেন। (সূরা বাক্বারা- ২৬৫)
ব্যাখ্যা : বৃষ্টিপাতের ফলে মাটি স্বাভাবিকভাবেই সরস ও সতেজ হয় এবং তাতে চারা জন্মায়। কিন্তু যে মাটিতে সরসতা সৃষ্টি হয়, তার পরিমাণ যদি হয় নামমাত্র এবং তা কেবল উপরিভাগেই লেপটে থাকে আর তার তলায় থাকে পাথর, তাহলে বৃষ্টির পানি তার জন্য লাভজনক হওয়ার পরিবর্তে ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়। অনুরূপভাবে দান-খয়রাত যদিও নেকী ও সৎকর্মকে বিকশিত করার ক্ষমতাসম্পন্ন, কিন্তু তা লাভজনক হওয়ার জন্য সদুদ্দেশ্য ও সৎ নিয়তের শর্ত আরোপিত হয়েছে। নিয়ত সৎ না হলে এ দান নিছক সম্পদের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রবল বৃষ্টিপাত বলতে এমন দান-খয়রাতকে বুঝানো হয়েছে, যার পেছনে থাকে চরম কল্যাণাকাঙ্ক্ষা ও পূর্ণ সদিচ্ছা। আর হালকা বৃষ্টিপাত বলতে কল্যাণাকাঙ্ক্ষার তীব্রতা বিহীন দান-খয়রাতকে বুঝানো হয়েছে।
দানের খাত :
وَاٰتَى الْمَالَ عَلٰى حُبِّهٖ ذَوِى الْقُرْبٰى وَالْيَتَامٰى وَالْمَسَاكِيْنَ وَابْنَ السَّبِيْلِ وَالسَّآئِلِيْنَ وَفِى الرِّقَابِ
আর তাঁরই ভালোবাসা অর্জনের জন্য আত্মীয়স্বজন, ইয়াতীম, দরিদ্র (মিসকীন), পথিক (মুসাফির), ভিক্ষুক ও দাসমুক্ত করার কাজে অর্থ ব্যয় করে। (সূরা বাক্বারা- ১৭৭)
মাতা-পিতা ও আত্মীয়স্বজন অগ্রাধিকার পাবে :
يَسْأَلُوْنَكَ مَاذَا يُنْفِقُوْنَؕ قُلْ مَاۤ اَنْفَقْتُمْ مِّنْ خَيْرٍ فَلِلْوَالِدَيْنِ وَالْاَقْرَبِيْنَ وَالْيَتَامٰى وَالْمَسَاكِيْنِ وَابْنِ السَّبِيْلِؕ وَمَا تَفْعَلُوْا مِنْ خَيْرٍ فَاِنَّ اللهَ بِهٖ عَلِيْمٌ
লোকেরা তোমাকে জিজ্ঞেস করছে, তারা কী (কাদের জন্য) ব্যয় করবে? বলে দাও, তোমরা ধনসম্পদ হতে যা ব্যয় করবে তা পিতামাতা, আত্মীয়স্বজন, ইয়াতীম, মিসকীন ও পথিকদের জন্য ব্যয় করবে। আর তোমরা যেসব সৎকর্ম কর নিশ্চয় আল্লাহ সে সম্পর্কে অবগত। (সূরা বাক্বারা- ২১৫)
যারা দ্বীনের কাজে ব্যস্ত থাকে এবং উপার্জনের সময় পায় না :
لِلْفُقَرَآءِ الَّذِيْنَ اُحْصِرُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ لَا يَسْتَطِيْعُوْنَ ضَرْبًا فِى الْاَرْضِؗ يَحْسَبُهُمُ الْجَاهِلُ اَغْنِيَآءَ مِنَ التَّعَفُّفِۚ تَعْرِفُهُمْ بِسِيْمَاهُمْۚ لَا يَسْاَلُوْنَ النَّاسَ اِلْحَافًاؕ وَمَا تُنْفِقُوْا مِنْ خَيْرٍ فَاِنَّ اللهَ بِهٖ عَلِيْمٌ
(দান করতে হবে) ঐ সকল গরীবদের জন্য, যারা আল্লাহর পথে অবরুদ্ধ থাকার কারণে (রোজগারের জন্য) জমিনে বিচরণ করতে সক্ষম হয় না। ভিক্ষা করা থেকে দূরে থাকার কারণে মূর্খ লোকেরা তাদেরকে ধনী বলে মনে করে। তুমি লক্ষণ দ্বারা তাদেরকে চিনতে পারবে। তারা কাকুতি-মিনতি করে মানুষের কাছে চায় না। আর তোমরা উত্তম সম্পদ হতে যা কিছু দান কর, নিশ্চয় আল্লাহ সে সম্পর্কে খবর রাখেন। (সূরা বাক্বারা- ২৭৩)
ব্যাখ্যা : এখানে যেসব লোকের কথা বলা হয়েছে, তারা হচ্ছে এমন লোক যারা আল্লাহর দ্বীনের খেদমতে নিজেদেরকে উৎসর্গ করে দেয়। তাদের সমস্ত সময় এ দ্বীনী খেদমতে ব্যয় করার কারণে নিজেদের ক্ষুধা নিবারণের জন্য কোন কাজকর্ম করার সুযোগ পায় না। নবী ﷺ এর যুগে এ ধরনের স্বেচ্ছাসেবীদের একটি স্বতন্ত্র দল ছিল। ইতিহাসে তারা ‘আসহাবে সুফ্ফা’ নামে পরিচিত। যেহেতু তারা ছিলেন সার্বক্ষণিক কর্মী এবং নিজেদের প্রয়োজন পূর্ণ করার মতো উপকরণও তাদের ছিল না, তাই তাদের সাহায্য করাকে আল্লাহর পথে ব্যয়ের সর্বোত্তম খাত বলে উল্লেখ করেছেন। এ হিসেবে বর্তমান যুগেও যারা দুনিয়ার কোন স্বার্থ ছাড়াই দ্বীনের জন্য কাজ করে যাবে এবং নিজের জীবিকার জন্য কাজ করার কোন সুযোগ না পাবে তাদের পেছনে খরচ করাও আল্লাহর পথে ব্যয়ের সর্বোত্তম খাত হিসেবে বিবেচিত হবে।
ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজে দান করতে হবে :
وَاَنْفِقُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَلَا تُلْقُوْا بِاَيْدِيْكُمْ اِلَى التَّهْلُكَةِۚ وَاَحْسِنُوْاۚ اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِيْنَ
তোমরা আল্লাহর পথে খরচ করো এবং নিজ হাতকে ধ্বংসের দিকে প্রসারিত করো না। আর তোমরা ইহসান করতে থাকো; নিশ্চয় আল্লাহ ইহসানকারীদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা বাক্বারা- ১৯৫)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর পথে ব্যয় করার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যে প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম চালানো হয় তাতে অর্থ ব্যয় করা। এখানে আয়াতের অর্থ হচ্ছে, যদি তোমরা আল্লাহর দ্বীনকে উঁচু রাখার এবং তাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নিজের অর্থ সম্পদ ব্যয় না কর এবং তার মুকাবিলায় তোমাদের ব্যক্তিগত স্বার্থকে সবসময় প্রিয় মনে কর, তাহলে এটা তোমাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে ধ্বংসের কারণ হবে। দুনিয়ায় তোমরা কাফিরদের হাতে পরাজিত ও অপমানিত হবে এবং আখিরাতে আল্লাহর সামনে কঠিন জবাবদিহির সম্মুখীন হবে।
প্রয়োজনের সময় দান করলে সওয়াব বেশি হয় :
لَا يَسْتَوِيْ مِنْكُمْ مَّنْ اَنْفَقَ مِنْ قَبْلِ الْفَتْحِ وَقَاتَلَؕ اُولٰٓئِكَ اَعْظَمُ دَرَجَةً مِّنَ الَّذِيْنَ اَنْفَقُوْا مِنْ ۢبَعْدُ وَقَاتَلُوْاؕ وَكُلًّا وَّعَدَ اللهُ الْحُسْنٰىؕ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِيْرٌ
তোমাদের মধ্যে যারা (মক্কা) বিজয়ের পূর্বে ব্যয় করেছে ও সংগ্রাম করেছে তারা সমান নয়। তারা তাদের চেয়ে মর্যাদায় শ্রেষ্ঠতর, যারা পরবর্তীকালে ব্যয় করেছে ও সংগ্রাম করেছে। তবে আল্লাহ উভয়ের ব্যাপারেই কল্যাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তোমরা যা কর আল্লাহ সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত। (সূরা হাদীদ- ১০)
শয়তান দরিদ্রের ভয় দেখিয়ে দান করা থেকে বিরত রাখে :
اَلشَّيْطَانُ يَعِدُكُمُ الْفَقْرَ وَيَأْمُرُكُمْ بِالْفَحْشَآءِۚ وَاللهُ يَعِدُكُمْ مَّغْفِرَةً مِّنْهُ وَفَضْلًاؕ وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ
শয়তান তোমাদেরকে অভাবের ভয় দেখায় এবং অশ্লীল কাজের আদেশ দেয়; অথচ আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর পক্ষ থেকে ক্ষমা এবং অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি দেন। আল্লাহ অসীম করুণাময় ও মহাজ্ঞানী।
(সূরা বাক্বারা- ২৬৮)
দান গ্রহণকারী যা পায় তাতেই খুশী থাকা উচিত :
وَمِنْهُمْ مَّنْ يَّلْمِزُكَ فِى الصَّدَقَاتِۚ فَاِنْ اُعْطُوْا مِنْهَا رَضُوْا وَاِنْ لَّمْ يُعْطَوْا مِنْهَاۤ اِذَا هُمْ يَسْخَطُوْنَ ‐ وَلَوْ اَنَّهُمْ رَضُوْا مَاۤ اٰتَاهُمُ اللهُ وَرَسُوْلُهٗ وَقَالُوْا حَسْبُنَا اللهُ سَيُؤْتِيْنَا اللهُ مِنْ فَضْلِهٖ وَرَسُوْلُهٗۤ اِنَّاۤ اِلَى اللهِ رَاغِبُوْنَ
তাদের মধ্যে এমনও লোক আছে, যারা সাদাকা বণ্টন সম্পর্কে তোমাকে দোষারোপ করে। অতঃপর তার কিছু অংশ তাদেরকে দেয়া হলে তারা সন্তুষ্ট হয় এবং তা থেকে তাদেরকে কিছু না দেয়া হলে তৎক্ষণাৎ তারা ক্ষুব্ধ হয়। ভালো হতো যদি তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তাদেরকে যা দিয়েছেন তাতে সন্তুষ্ট হতো এবং বলত, আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট, আল্লাহ আমাদেরকে দেবেন নিজ করুণায় এবং তাঁর রাসূলও, আমরা আল্লাহরই প্রতি অনুরক্ত। (সূরা তাওবা- ৫৮, ৫৯)
দানকারীর দোষ বের করা অন্যায় :
اَلَّذِيْنَ يَلْمِزُوْنَ الْمُطَّوِّعِيْنَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ فِى الصَّدَقَاتِ وَالَّذِيْنَ لَا يَجِدُوْنَ اِلَّا جُهْدَهُمْ فَيَسْخَرُوْنَ مِنْهُمْ سَخِرَ اللهُ مِنْهُمْؗ وَلَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
মুমিনদের মধ্যে যারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাদাকা করে এবং যারা নিজ শ্রম ব্যতীত কিছুই পায় না, যারা তাদেরকে নিয়ে বিদ্রূপ করে আল্লাহ তাদেরকে নিয়ে বিদ্রূপ করেন; আর তাদের জন্য রয়েছে মর্মান্তিক শাস্তি। (সূরা তাওবা- ৭৯)
وَاٰتَى الْمَالَ عَلٰى حُبِّهٖ ذَوِى الْقُرْبٰى وَالْيَتَامٰى وَالْمَسَاكِيْنَ وَابْنَ السَّبِيْلِ وَالسَّآئِلِيْنَ وَفِى الرِّقَابِ
আর তাঁরই ভালোবাসা অর্জনের জন্য আত্মীয়স্বজন, ইয়াতীম, দরিদ্র (মিসকীন), পথিক (মুসাফির), ভিক্ষুক ও দাসমুক্ত করার কাজে অর্থ ব্যয় করে। (সূরা বাক্বারা- ১৭৭)
মাতা-পিতা ও আত্মীয়স্বজন অগ্রাধিকার পাবে :
يَسْأَلُوْنَكَ مَاذَا يُنْفِقُوْنَؕ قُلْ مَاۤ اَنْفَقْتُمْ مِّنْ خَيْرٍ فَلِلْوَالِدَيْنِ وَالْاَقْرَبِيْنَ وَالْيَتَامٰى وَالْمَسَاكِيْنِ وَابْنِ السَّبِيْلِؕ وَمَا تَفْعَلُوْا مِنْ خَيْرٍ فَاِنَّ اللهَ بِهٖ عَلِيْمٌ
লোকেরা তোমাকে জিজ্ঞেস করছে, তারা কী (কাদের জন্য) ব্যয় করবে? বলে দাও, তোমরা ধনসম্পদ হতে যা ব্যয় করবে তা পিতামাতা, আত্মীয়স্বজন, ইয়াতীম, মিসকীন ও পথিকদের জন্য ব্যয় করবে। আর তোমরা যেসব সৎকর্ম কর নিশ্চয় আল্লাহ সে সম্পর্কে অবগত। (সূরা বাক্বারা- ২১৫)
যারা দ্বীনের কাজে ব্যস্ত থাকে এবং উপার্জনের সময় পায় না :
لِلْفُقَرَآءِ الَّذِيْنَ اُحْصِرُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ لَا يَسْتَطِيْعُوْنَ ضَرْبًا فِى الْاَرْضِؗ يَحْسَبُهُمُ الْجَاهِلُ اَغْنِيَآءَ مِنَ التَّعَفُّفِۚ تَعْرِفُهُمْ بِسِيْمَاهُمْۚ لَا يَسْاَلُوْنَ النَّاسَ اِلْحَافًاؕ وَمَا تُنْفِقُوْا مِنْ خَيْرٍ فَاِنَّ اللهَ بِهٖ عَلِيْمٌ
(দান করতে হবে) ঐ সকল গরীবদের জন্য, যারা আল্লাহর পথে অবরুদ্ধ থাকার কারণে (রোজগারের জন্য) জমিনে বিচরণ করতে সক্ষম হয় না। ভিক্ষা করা থেকে দূরে থাকার কারণে মূর্খ লোকেরা তাদেরকে ধনী বলে মনে করে। তুমি লক্ষণ দ্বারা তাদেরকে চিনতে পারবে। তারা কাকুতি-মিনতি করে মানুষের কাছে চায় না। আর তোমরা উত্তম সম্পদ হতে যা কিছু দান কর, নিশ্চয় আল্লাহ সে সম্পর্কে খবর রাখেন। (সূরা বাক্বারা- ২৭৩)
ব্যাখ্যা : এখানে যেসব লোকের কথা বলা হয়েছে, তারা হচ্ছে এমন লোক যারা আল্লাহর দ্বীনের খেদমতে নিজেদেরকে উৎসর্গ করে দেয়। তাদের সমস্ত সময় এ দ্বীনী খেদমতে ব্যয় করার কারণে নিজেদের ক্ষুধা নিবারণের জন্য কোন কাজকর্ম করার সুযোগ পায় না। নবী ﷺ এর যুগে এ ধরনের স্বেচ্ছাসেবীদের একটি স্বতন্ত্র দল ছিল। ইতিহাসে তারা ‘আসহাবে সুফ্ফা’ নামে পরিচিত। যেহেতু তারা ছিলেন সার্বক্ষণিক কর্মী এবং নিজেদের প্রয়োজন পূর্ণ করার মতো উপকরণও তাদের ছিল না, তাই তাদের সাহায্য করাকে আল্লাহর পথে ব্যয়ের সর্বোত্তম খাত বলে উল্লেখ করেছেন। এ হিসেবে বর্তমান যুগেও যারা দুনিয়ার কোন স্বার্থ ছাড়াই দ্বীনের জন্য কাজ করে যাবে এবং নিজের জীবিকার জন্য কাজ করার কোন সুযোগ না পাবে তাদের পেছনে খরচ করাও আল্লাহর পথে ব্যয়ের সর্বোত্তম খাত হিসেবে বিবেচিত হবে।
ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজে দান করতে হবে :
وَاَنْفِقُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَلَا تُلْقُوْا بِاَيْدِيْكُمْ اِلَى التَّهْلُكَةِۚ وَاَحْسِنُوْاۚ اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِيْنَ
তোমরা আল্লাহর পথে খরচ করো এবং নিজ হাতকে ধ্বংসের দিকে প্রসারিত করো না। আর তোমরা ইহসান করতে থাকো; নিশ্চয় আল্লাহ ইহসানকারীদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা বাক্বারা- ১৯৫)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর পথে ব্যয় করার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যে প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম চালানো হয় তাতে অর্থ ব্যয় করা। এখানে আয়াতের অর্থ হচ্ছে, যদি তোমরা আল্লাহর দ্বীনকে উঁচু রাখার এবং তাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নিজের অর্থ সম্পদ ব্যয় না কর এবং তার মুকাবিলায় তোমাদের ব্যক্তিগত স্বার্থকে সবসময় প্রিয় মনে কর, তাহলে এটা তোমাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে ধ্বংসের কারণ হবে। দুনিয়ায় তোমরা কাফিরদের হাতে পরাজিত ও অপমানিত হবে এবং আখিরাতে আল্লাহর সামনে কঠিন জবাবদিহির সম্মুখীন হবে।
প্রয়োজনের সময় দান করলে সওয়াব বেশি হয় :
لَا يَسْتَوِيْ مِنْكُمْ مَّنْ اَنْفَقَ مِنْ قَبْلِ الْفَتْحِ وَقَاتَلَؕ اُولٰٓئِكَ اَعْظَمُ دَرَجَةً مِّنَ الَّذِيْنَ اَنْفَقُوْا مِنْ ۢبَعْدُ وَقَاتَلُوْاؕ وَكُلًّا وَّعَدَ اللهُ الْحُسْنٰىؕ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِيْرٌ
তোমাদের মধ্যে যারা (মক্কা) বিজয়ের পূর্বে ব্যয় করেছে ও সংগ্রাম করেছে তারা সমান নয়। তারা তাদের চেয়ে মর্যাদায় শ্রেষ্ঠতর, যারা পরবর্তীকালে ব্যয় করেছে ও সংগ্রাম করেছে। তবে আল্লাহ উভয়ের ব্যাপারেই কল্যাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তোমরা যা কর আল্লাহ সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত। (সূরা হাদীদ- ১০)
শয়তান দরিদ্রের ভয় দেখিয়ে দান করা থেকে বিরত রাখে :
اَلشَّيْطَانُ يَعِدُكُمُ الْفَقْرَ وَيَأْمُرُكُمْ بِالْفَحْشَآءِۚ وَاللهُ يَعِدُكُمْ مَّغْفِرَةً مِّنْهُ وَفَضْلًاؕ وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ
শয়তান তোমাদেরকে অভাবের ভয় দেখায় এবং অশ্লীল কাজের আদেশ দেয়; অথচ আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর পক্ষ থেকে ক্ষমা এবং অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি দেন। আল্লাহ অসীম করুণাময় ও মহাজ্ঞানী।
(সূরা বাক্বারা- ২৬৮)
দান গ্রহণকারী যা পায় তাতেই খুশী থাকা উচিত :
وَمِنْهُمْ مَّنْ يَّلْمِزُكَ فِى الصَّدَقَاتِۚ فَاِنْ اُعْطُوْا مِنْهَا رَضُوْا وَاِنْ لَّمْ يُعْطَوْا مِنْهَاۤ اِذَا هُمْ يَسْخَطُوْنَ ‐ وَلَوْ اَنَّهُمْ رَضُوْا مَاۤ اٰتَاهُمُ اللهُ وَرَسُوْلُهٗ وَقَالُوْا حَسْبُنَا اللهُ سَيُؤْتِيْنَا اللهُ مِنْ فَضْلِهٖ وَرَسُوْلُهٗۤ اِنَّاۤ اِلَى اللهِ رَاغِبُوْنَ
তাদের মধ্যে এমনও লোক আছে, যারা সাদাকা বণ্টন সম্পর্কে তোমাকে দোষারোপ করে। অতঃপর তার কিছু অংশ তাদেরকে দেয়া হলে তারা সন্তুষ্ট হয় এবং তা থেকে তাদেরকে কিছু না দেয়া হলে তৎক্ষণাৎ তারা ক্ষুব্ধ হয়। ভালো হতো যদি তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তাদেরকে যা দিয়েছেন তাতে সন্তুষ্ট হতো এবং বলত, আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট, আল্লাহ আমাদেরকে দেবেন নিজ করুণায় এবং তাঁর রাসূলও, আমরা আল্লাহরই প্রতি অনুরক্ত। (সূরা তাওবা- ৫৮, ৫৯)
দানকারীর দোষ বের করা অন্যায় :
اَلَّذِيْنَ يَلْمِزُوْنَ الْمُطَّوِّعِيْنَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ فِى الصَّدَقَاتِ وَالَّذِيْنَ لَا يَجِدُوْنَ اِلَّا جُهْدَهُمْ فَيَسْخَرُوْنَ مِنْهُمْ سَخِرَ اللهُ مِنْهُمْؗ وَلَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
মুমিনদের মধ্যে যারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাদাকা করে এবং যারা নিজ শ্রম ব্যতীত কিছুই পায় না, যারা তাদেরকে নিয়ে বিদ্রূপ করে আল্লাহ তাদেরকে নিয়ে বিদ্রূপ করেন; আর তাদের জন্য রয়েছে মর্মান্তিক শাস্তি। (সূরা তাওবা- ৭৯)
কৃপণের সম্পদ কিয়ামতের দিন গলার সাপ হবে :
وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِيْنَ يَبْخَلُوْنَ بِمَاۤ اٰتَاهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٖ هُوَ خَيْرًا لَّهُمْؕ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَّهُمْؕ سَيُطَوَّقُوْنَ مَا بَخِلُوْا بِهٖ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
আল্লাহ যাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহ হতে কিছু দান করেছেন সে বিষয়ে যারা কার্পণ্য করে, তারা যেন এরূপ ধারণা না করে যে, তা তাদের জন্য কল্যাণকর; বরং ওটাই তাদের জন্য ক্ষতিকর। তারা যে বিষয়ে কৃপণতা করেছে, কিয়ামত দিবসে ওটাই তাদের গলার বেড়ি হবে। (সূরা আলে ইমরান- ১৮০)
যারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না তাদের জন্য কঠিন শাস্তি রয়েছে :
وَالَّذِيْنَ يَكْنِزُوْنَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنْفِقُوْنَهَا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ اَلِيْمٍ
আর যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য জমা করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না তাদেরকে মর্মান্তিক শাস্তির সুসংবাদ দাও। (সূরা তাওবা- ৩৪)
কিয়ামতের দিন তাদের অবস্থা হবে ভয়াবহ :
يَوْمَ يُحْمٰى عَلَيْهَا فِيْ نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوٰى بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوْبُهُمْ وَظُهُوْرُهُمْؕ هٰذَا مَا كَنَزْتُمْ لِاَنْفُسِكُمْ فَذُوْقُوْا مَا كُنْتُمْ تَكْنِزُوْنَ
যেদিন জাহান্নামের অগ্নিতে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্বদেশ ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেয়া হবে। সেদিন বলা হবে, এটা তো সেই বস্তু যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা করতে। সুতরাং তোমরা যা জমা করেছিলে তার স্বাদ গ্রহণ করো। (সূরা তাওবা- ৩৫)
اَيَوَدُّ اَحَدُكُمْ اَنْ تَكُوْنَ لَهٗ جَنَّةٌ مِّنْ نَّخِيْلٍ وَّاَعْنَابٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ لَهٗ فِيْهَا مِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ وَاَصَابَهُ الْكِبَرُ وَلَهٗ ذُرِّيَّةٌ ضُعَفَآءُۚ فَاَصَابَهَاۤ اِعْصَارٌ فِيْهِ نَارٌ فَاحْتَرَقَتْؕ كَذٰلِكَ يُبَيِّنُ اللهُ لَكُمُ الْاٰيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَتَفَكَّرُوْنَ
তোমাদের কেউ কি এটা পছন্দ করে যে, তার একটি খেজুর এবং আঙ্গুরের বাগান থাকবে, যার নিচ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত থাকবে, সেখানে তার সবরকমের ফলও থাকবে। অতঃপর সে বার্ধক্যে উপণীত হবে এবং তার দুর্বল সন্তান-সন্ততিও বেঁচে থাকবে। এমতাবস্থায় অগ্নিময় ঘূর্ণিঝড় এসে সেই বাগান ধ্বংস করে দিল। অনুরূপভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তার নিদর্শনাবলি বর্ণনা করে থাকেন, যাতে তোমরা চিন্তা-ভাবনা করতে পার। (সূরা বাক্বারা- ২৬৬)
ব্যাখ্যা : যখন উপার্জিত সম্পদ মানুষের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় এবং নতুনভাবে কোন উপার্জন করার সুযোগও না থাকে, তখন সে সম্পদ ক্ষয় হয়ে যাওয়াটা সে কোনভাবেই পছন্দ করে না। তাহলে দুনিয়ায় জীবনভর কাজ করার পর আখিরাতের জীবনে প্রবেশ করে হঠাৎ সে জানতে পারবে যে, তার দুনিয়ার জীবনের সমস্ত আমল এখানে মূল্যহীন হয়ে গেছে, যা কিছু দুনিয়ায় উপার্জন করেছিল তা দুনিয়ায় রয়ে গেছে- এটা সে কীভাবে পছন্দ করতে পারে? এ দুনিয়াতেই আখিরাতের জন্য কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এখানে যদি আখিরাতের চিন্তা না করে সারা জীবন দুনিয়ার ধ্যানে মগ্ন থাকে এবং বৈষয়িক স্বার্থ লাভের পেছনে নিজের সমস্ত শক্তি ও প্রচেষ্টা নিয়োজিত করে, তাহলে মৃত্যুর পর তার অবস্থা হবে ঠিক সেই বৃদ্ধের মতো করুণ, যার সারা জীবনের উপার্জন এবং জীবনের সহায় সম্বল ছিল একটিমাত্র বাগান। এমতাবস্থায় তার এ বাগানটি ঠিক এমন এক সময় পুড়ে ছাই হয়ে গেল, যখন তার নতুন করে বাগান তৈরি করার সামর্থ্য নেই। আর তার সন্তানদের একজনও তাকে সাহায্য করার যোগ্য হয়ে ওঠতে পারেনি।
দান করার সময় এখনই :
قُلْ لِّعِبَادِيَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا يُقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَيُنْفِقُوْا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَّعَلَانِيَةً مِّنْ قَبْلِ اَنْ يَّأْتِيَ يَوْمٌ لَّا بَيْعٌ فِيْهِ وَلَا خِلَالٌ
আমার বান্দাদের মধ্যে যারা মুমিন তুমি তাদেরকে এমন কথা বলো, যাতে তারা সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে জীবিকা হিসেবে যা দিয়েছি গোপনে ও প্রকাশ্যে তা হতে ব্যয় করে- সেদিন আসার পূর্বে, যেদিন কোন ধরনের ক্রয়-বিক্রয় ও বন্ধুত্ব থাকবে না। (সূরা ইবরাহীম- ৩১)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَنْفِقُوْا مِمَّا رَزَقْنَاكُمْ مِّنْ قَبْلِ اَنْ يَّأْتِيَ يَوْمٌ لَّا بَيْعٌ فِيْهِ وَلَا خُلَّةٌ وَّلَا شَفَاعَةٌ
হে ঈমানদারগণ! তোমাদেরকে রিযিক হিসেবে যা দেয়া হয়েছে তা হতে ব্যয় করো, সেদিন আসার পূর্বে, যেদিন কোন ধরনের ক্রয়-বিক্রয়, বন্ধুত্ব ও সুপারিশ থাকবে না। (সূরা বাক্বারা- ২৫৪)
মৃত্যু আসার আগেই দান করতে হবে :
وَاَنْفِقُوْا مِنْ مَّا رَزَقْنَاكُمْ مِّنْ قَبْلِ اَنْ يَّأْتِيَ اَحَدَكُمُ الْمَوْتُ فَيَقُوْلَ رَبِّ لَوْلَاۤ اَخَّرْتَنِيْۤ اِلٰۤى اَجَلٍ قَرِيْبٍ فَاَصَّدَّقَ وَاَكُنْ مِّنَ الصَّالِحِيْنَ
আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তোমরা তা হতে ব্যয় করো, তোমাদের কারো মৃত্যু আসার পূর্বে। (যখন মৃত্যু উপস্থিত হবে তখন) বলবে, হে আমার প্রতিপালক! যদি আমাকে আরো কিছু কালের জন্য অবকাশ দিতেন, তবে আমি সাদাকা করতাম এবং সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। (সূরা মুনাফিকূন- ১০)
وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِيْنَ يَبْخَلُوْنَ بِمَاۤ اٰتَاهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٖ هُوَ خَيْرًا لَّهُمْؕ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَّهُمْؕ سَيُطَوَّقُوْنَ مَا بَخِلُوْا بِهٖ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
আল্লাহ যাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহ হতে কিছু দান করেছেন সে বিষয়ে যারা কার্পণ্য করে, তারা যেন এরূপ ধারণা না করে যে, তা তাদের জন্য কল্যাণকর; বরং ওটাই তাদের জন্য ক্ষতিকর। তারা যে বিষয়ে কৃপণতা করেছে, কিয়ামত দিবসে ওটাই তাদের গলার বেড়ি হবে। (সূরা আলে ইমরান- ১৮০)
যারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না তাদের জন্য কঠিন শাস্তি রয়েছে :
وَالَّذِيْنَ يَكْنِزُوْنَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنْفِقُوْنَهَا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ اَلِيْمٍ
আর যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য জমা করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না তাদেরকে মর্মান্তিক শাস্তির সুসংবাদ দাও। (সূরা তাওবা- ৩৪)
কিয়ামতের দিন তাদের অবস্থা হবে ভয়াবহ :
يَوْمَ يُحْمٰى عَلَيْهَا فِيْ نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوٰى بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوْبُهُمْ وَظُهُوْرُهُمْؕ هٰذَا مَا كَنَزْتُمْ لِاَنْفُسِكُمْ فَذُوْقُوْا مَا كُنْتُمْ تَكْنِزُوْنَ
যেদিন জাহান্নামের অগ্নিতে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্বদেশ ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেয়া হবে। সেদিন বলা হবে, এটা তো সেই বস্তু যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা করতে। সুতরাং তোমরা যা জমা করেছিলে তার স্বাদ গ্রহণ করো। (সূরা তাওবা- ৩৫)
اَيَوَدُّ اَحَدُكُمْ اَنْ تَكُوْنَ لَهٗ جَنَّةٌ مِّنْ نَّخِيْلٍ وَّاَعْنَابٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ لَهٗ فِيْهَا مِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ وَاَصَابَهُ الْكِبَرُ وَلَهٗ ذُرِّيَّةٌ ضُعَفَآءُۚ فَاَصَابَهَاۤ اِعْصَارٌ فِيْهِ نَارٌ فَاحْتَرَقَتْؕ كَذٰلِكَ يُبَيِّنُ اللهُ لَكُمُ الْاٰيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَتَفَكَّرُوْنَ
তোমাদের কেউ কি এটা পছন্দ করে যে, তার একটি খেজুর এবং আঙ্গুরের বাগান থাকবে, যার নিচ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত থাকবে, সেখানে তার সবরকমের ফলও থাকবে। অতঃপর সে বার্ধক্যে উপণীত হবে এবং তার দুর্বল সন্তান-সন্ততিও বেঁচে থাকবে। এমতাবস্থায় অগ্নিময় ঘূর্ণিঝড় এসে সেই বাগান ধ্বংস করে দিল। অনুরূপভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তার নিদর্শনাবলি বর্ণনা করে থাকেন, যাতে তোমরা চিন্তা-ভাবনা করতে পার। (সূরা বাক্বারা- ২৬৬)
ব্যাখ্যা : যখন উপার্জিত সম্পদ মানুষের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় এবং নতুনভাবে কোন উপার্জন করার সুযোগও না থাকে, তখন সে সম্পদ ক্ষয় হয়ে যাওয়াটা সে কোনভাবেই পছন্দ করে না। তাহলে দুনিয়ায় জীবনভর কাজ করার পর আখিরাতের জীবনে প্রবেশ করে হঠাৎ সে জানতে পারবে যে, তার দুনিয়ার জীবনের সমস্ত আমল এখানে মূল্যহীন হয়ে গেছে, যা কিছু দুনিয়ায় উপার্জন করেছিল তা দুনিয়ায় রয়ে গেছে- এটা সে কীভাবে পছন্দ করতে পারে? এ দুনিয়াতেই আখিরাতের জন্য কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এখানে যদি আখিরাতের চিন্তা না করে সারা জীবন দুনিয়ার ধ্যানে মগ্ন থাকে এবং বৈষয়িক স্বার্থ লাভের পেছনে নিজের সমস্ত শক্তি ও প্রচেষ্টা নিয়োজিত করে, তাহলে মৃত্যুর পর তার অবস্থা হবে ঠিক সেই বৃদ্ধের মতো করুণ, যার সারা জীবনের উপার্জন এবং জীবনের সহায় সম্বল ছিল একটিমাত্র বাগান। এমতাবস্থায় তার এ বাগানটি ঠিক এমন এক সময় পুড়ে ছাই হয়ে গেল, যখন তার নতুন করে বাগান তৈরি করার সামর্থ্য নেই। আর তার সন্তানদের একজনও তাকে সাহায্য করার যোগ্য হয়ে ওঠতে পারেনি।
দান করার সময় এখনই :
قُلْ لِّعِبَادِيَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا يُقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَيُنْفِقُوْا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَّعَلَانِيَةً مِّنْ قَبْلِ اَنْ يَّأْتِيَ يَوْمٌ لَّا بَيْعٌ فِيْهِ وَلَا خِلَالٌ
আমার বান্দাদের মধ্যে যারা মুমিন তুমি তাদেরকে এমন কথা বলো, যাতে তারা সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে জীবিকা হিসেবে যা দিয়েছি গোপনে ও প্রকাশ্যে তা হতে ব্যয় করে- সেদিন আসার পূর্বে, যেদিন কোন ধরনের ক্রয়-বিক্রয় ও বন্ধুত্ব থাকবে না। (সূরা ইবরাহীম- ৩১)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَنْفِقُوْا مِمَّا رَزَقْنَاكُمْ مِّنْ قَبْلِ اَنْ يَّأْتِيَ يَوْمٌ لَّا بَيْعٌ فِيْهِ وَلَا خُلَّةٌ وَّلَا شَفَاعَةٌ
হে ঈমানদারগণ! তোমাদেরকে রিযিক হিসেবে যা দেয়া হয়েছে তা হতে ব্যয় করো, সেদিন আসার পূর্বে, যেদিন কোন ধরনের ক্রয়-বিক্রয়, বন্ধুত্ব ও সুপারিশ থাকবে না। (সূরা বাক্বারা- ২৫৪)
মৃত্যু আসার আগেই দান করতে হবে :
وَاَنْفِقُوْا مِنْ مَّا رَزَقْنَاكُمْ مِّنْ قَبْلِ اَنْ يَّأْتِيَ اَحَدَكُمُ الْمَوْتُ فَيَقُوْلَ رَبِّ لَوْلَاۤ اَخَّرْتَنِيْۤ اِلٰۤى اَجَلٍ قَرِيْبٍ فَاَصَّدَّقَ وَاَكُنْ مِّنَ الصَّالِحِيْنَ
আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তোমরা তা হতে ব্যয় করো, তোমাদের কারো মৃত্যু আসার পূর্বে। (যখন মৃত্যু উপস্থিত হবে তখন) বলবে, হে আমার প্রতিপালক! যদি আমাকে আরো কিছু কালের জন্য অবকাশ দিতেন, তবে আমি সাদাকা করতাম এবং সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। (সূরা মুনাফিকূন- ১০)
তাক্বওয়া অর্জনের নির্দেশ :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ حَقَّ تُقَاتِهٖ وَلَا تَمُوْتُنَّ اِلَّا وَاَنْتُمْ مُّسْلِمُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যথাযথভাবে আল্লাহকে ভয় করো এবং তোমরা মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। (সূরা আলে ইমরান- ১০২)
জীবনের ভিত্তি গড়তে হবে তাক্বওয়ার উপর :
اَفَمَنْ اَسَّسَ بُنْيَانَهٗ عَلٰى تَقْوٰى مِنَ اللهِ وَرِضْوَانٍ خَيْرٌ اَمْ مَّنْ اَسَّسَ بُنْيَانَهٗ عَلٰى شَفَا جُرُفٍ هَارٍ فَانْهَارَ بِهٖ فِيْ نَارِ جَهَنَّمَؕ وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
যে ব্যক্তি তার ঘরের ভিত্তি স্থাপন করেছে আল্লাহর ভয় ও তাঁর সন্তুষ্টির উপর- সে ব্যক্তি উত্তম? নাকি ঐ ব্যক্তি উত্তম, যে তার ঘরের ভিত্তি দাঁড় করিয়েছে এমন একটি গর্তের কিনারায়, যার তলায় মাটি নেই। ফলে এটা তাকে সহ (অচিরেই) জাহান্নামের (অতল) আগুনের খাদে গিয়ে পড়বে। আর আল্লাহ কখনো যালিম সম্প্রদায়কে হেদায়াত দেন না। (সূরা তাওবা- ১০৯)
ব্যাখ্যা : নদীর এমন কিনারাকে ‘জুরুফ’ বলা হয়, স্রোতের টানে যার তলা থেকে মাটি সরে গেছে এবং উপরের অংশ কোন নির্ভরতা ছাড়াই দাঁড়িয়ে আছে। যারা আল্লাহকে ভয় না করা এবং তাঁর সন্তুষ্টির পরোয়া না করার উপর নিজেদের কার্যক্রমের ভিত্তি গড়ে তুলে, তাদের জীবন গঠনকে এমন একটি ইমারতের সাথে তুলনা করা হয়েছে, যা অস্থিতিশীল সাগর কিনারে নির্মাণ করা হয়েছে। এ উপমাটির সাথে দুনিয়ার জীবনের এ বাহ্যিক স্তরটিরও হুবহু মিল রয়েছে। এ স্তরটির উপরই আমরা সবাই আমাদের জীবনের যাবতীয় কার্যক্রমের ইমারত নির্মাণ করি। অথচ এর কোন স্থায়িত্ব নেই। বরং আল্লাহর ভয়, তাঁর সামনে জবাবদিহির অনুভূতি এবং তাঁর সন্তুষ্টি অনুযায়ী চলার শক্ত পাথরখন্ড যে কাজের ইমারতের নিচে বসানো থাকে, কেবল সে কাজটিই মজবুত ও স্থিতিশীল হয়। যে অজ্ঞ ও অপরিণামদর্শী মানুষ আল্লাহর ভয়ে ভীত না হয়ে এবং তাঁর সন্তুষ্টি লাভের পরোয়া না করে নিছক দুনিয়ার জীবনের বাহ্যিক অবস্থার উপর ভরসা করে দুনিয়ায় কাজ করে যায়, সে আসলে নিজের জীবন গঠনের বুনিয়াদ গোড়া থেকেই ভিত্তিহীন করে দেয়। ভিত্তিহীন যে উপরিস্তরের উপর সে তার সারা জীবনের সঞ্চয় জমা করেছে, একদিন হঠাৎ তা ধ্বসে পড়বে এবং তাকে তার জীবনের সমস্ত সম্পদসহ ধ্বংস করে দেবে।
তাক্বওয়া হলো মর্যাদার মাপকাঠি :
اِنَّ اَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللهِ اَتْقَاكُمْؕ اِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ خَبِيْرٌ
নিশ্চয় আল্লাহর কাছে তোমাদের মধ্যে তারাই অধিক সম্মানিত এবং যারা বেশি আল্লাহভীরু। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু সম্পর্কে জানেন ও সবকিছুর খবর রাখেন। (সূরা হুজুরাত- ১৩)
তাক্বওয়া ইবাদাতের সারবস্তু :
لَنْ يَّنَالَ اللهَ لُحُوْمُهَا وَلَا دِمَآؤُهَا وَلٰكِنْ يَّنَالُهُ التَّقْوٰى مِنْكُمْ
আল্লাহর নিকট তার গোশত এবং রক্ত কিছুই পৌঁছে না, বরং তোমাদের তাক্বওয়াটাই তাঁর নিকট পৌঁছে।
(সূরা হজ্জ- ৩৭)
তাক্বওয়া দ্বারা আল্লাহর রহমত লাভ হয় :
وَرَحْمَتِيْ وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍؕ فَسَأَكْتُبُهَا لِلَّذِيْنَ يَتَّقُوْنَ وَيُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَالَّذِيْنَ هُمْ بِاٰيَاتِنَا يُؤْمِنُوْنَ
আমার দয়া প্রত্যেক বস্তুতে ব্যাপ্ত। সুতরাং আমি সেটা তাদের জন্য নির্ধারিত করব যারা তাক্বওয়া অবলম্বন করে, যাকাত দেয় এবং আমার নিদর্শনসমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে। (সূরা আ‘রাফ- ১৫৬)
তাক্বওয়া মানুষকে আল্লাহর বন্ধু বানায় :
اَلَاۤ اِنَّ اَوْلِيَآءَ اللهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ ‐ اَلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَكَانُوْا يَتَّقُوْنَ
জেনে রেখো! নিশ্চয় আল্লাহর বন্ধুদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না। (তারা হচ্ছে ঐসব ব্যক্তি) যারা ঈমান আনয়ন করে এবং তাক্বওয়া অবলম্বন করে। (সূরা ইউনুস- ৬২, ৬৩)
তাক্বওয়া জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায় :
وَاِنْ مِّنْكُمْ اِلَّا وَارِدُهَاۚ كَانَ عَلٰى رَبِّكَ حَتْمًا مَّقْضِيًّا ‐ ثُمَّ نُنَجِّى الَّذِيْنَ اتَّقَوْا وَّنَذَرُ الظَّالِمِيْنَ فِيْهَا جِثِيًّا
তোমাদের প্রত্যেকেই সেটা (পুলসিরাত) অতিক্রম করবে; এটা তোমার প্রতিপালকের অনিবার্য সিদ্ধান্ত। পরে আমি মুত্তাক্বীদেরকে উদ্ধার করব এবং যালিমদেরকে সেথায় নতজানু অবস্থায় রেখে দেব। (সূরা মারইয়াম- ৭১, ৭২)
তাক্বওয়া জান্নাত লাভের মাধ্যম :
وَسِيْقَ الَّذِيْنَ اتَّقَوْا رَبَّهُمْ اِلَى الْجَنَّةِ زُمَرًا
যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করত, তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। (সূরা যুমার- ৭৩)
তাক্বওয়া শয়তানের ধোঁকাবাজি ধরিয়ে দেয় :
اِنَّ الَّذِيْنَ اتَّقَوْا اِذَا مَسَّهُمْ طَآئِفٌ مِّنَ الشَّيْطَانِ تَذَكَّرُوْا فَاِذَا هُمْ مُّبْصِرُوْنَ
যারা তাক্বওয়ার অধিকারী হয় তাদেরকে শয়তান যখন কুমন্ত্রণা দেয় তখন তারা আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তৎক্ষণাৎ তাদের চক্ষু খুলে যায়। (সূরা আ‘রাফ- ২০১)
ব্যাখ্যা : যারা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহকে ভয় করে এবং অসৎকাজ থেকে দূরে থাকতে চায় তাদের মনে যদি কখনো অসৎ চিন্তার সামান্যতম স্পর্শও লাগে, তাহলে তা তাদের মনকে ঠিক তেমনিভাবে আহত করে যেমন চোখে বালি পড়লে মানুষ যন্ত্রণাবোধ করে। তাদের বিবেক জেগে উঠে এবং তারা অসৎ প্রবণতার এ ধূলোমাটি ঝেড়ে ফেলার কাজে লেগে যায়। অন্যদিকে যারা আল্লাহকে ভয় করে না, অসৎকাজ থেকে বাঁচতেও চায় না এবং শয়তানকে সাথে রেখে চলে, তাদের মনে অসৎ চিন্তা ও অসৎ উদ্দেশ্য পরিপক্কতা লাভ করতে থাকে এবং তারা এসব পঁচা দুর্গন্ধময় আবর্জনায় কোন প্রকার অস্বস্তি অনুভব করে না।
তাক্বওয়া সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের কষ্ঠিপাথর :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنْ تَتَّقُوا اللهَ يَجْعَلْ لَّكُمْ فُرْقَانًا وَّيُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْؕ وَاللهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيْمِ
হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে আল্লাহ তোমাদেরকে ন্যায়-অন্যায় পার্থক্য করার শক্তি দেবেন, তোমাদের পাপ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অতিশয় মঙ্গলময়। (সূরা আনফাল- ২৯)
ব্যাখ্যা : যদি তোমরা দুনিয়ায় আল্লাহকে ভয় করে কাজ করতে থাক তাহলে তিনি তোমাদের মধ্যে এমন পার্থক্যকারী শক্তি সৃষ্টি করে দেবেন, যার ফলে তোমরা পদে পদে জানতে পারবে যে, কোন্ কর্মনীতিটা ভুল এবং কোন্টা নির্ভুল। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে তোমাদের অন্তর্দৃষ্টি বলে দেবে যে, কোন্ দিকে চলা উচিত এবং কোন্ দিকে চলা উচিত নয়। কোন্টি প্রকৃত সত্যের পথ, যা আল্লাহর দিকে নিয়ে যায় এবং কোনটি মিথ্যা ও অসত্যের পথ, যা শয়তানের সাথে সম্পর্ক জুড়ে দেয়।
তাক্বওয়া উন্নতি লাভের উপায় :
وَلَوْ اَنَّ اَهْلَ الْقُرٰۤى اٰمَنُوْا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَرَكَاتٍ مِّنَ السَّمَآءِ وَالْاَرْضِ وَلٰكِنْ كَذَّبُوْا فَاَخَذْنَاهُمْ بِمَا كَانُوْا يَكْسِبُوْنَ
যদি সেসব জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত ও তাক্বওয়া অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের জন্য আসমান ও জমিনের সকল কল্যাণ উন্মুক্ত করে দিতাম, কিন্তু তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছিল। সুতরাং তাদের কৃতকর্মের জন্য তাদেরকে শাস্তি দিয়েছি। (সূরা আ‘রাফ- ৯৬)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ حَقَّ تُقَاتِهٖ وَلَا تَمُوْتُنَّ اِلَّا وَاَنْتُمْ مُّسْلِمُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যথাযথভাবে আল্লাহকে ভয় করো এবং তোমরা মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। (সূরা আলে ইমরান- ১০২)
জীবনের ভিত্তি গড়তে হবে তাক্বওয়ার উপর :
اَفَمَنْ اَسَّسَ بُنْيَانَهٗ عَلٰى تَقْوٰى مِنَ اللهِ وَرِضْوَانٍ خَيْرٌ اَمْ مَّنْ اَسَّسَ بُنْيَانَهٗ عَلٰى شَفَا جُرُفٍ هَارٍ فَانْهَارَ بِهٖ فِيْ نَارِ جَهَنَّمَؕ وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
যে ব্যক্তি তার ঘরের ভিত্তি স্থাপন করেছে আল্লাহর ভয় ও তাঁর সন্তুষ্টির উপর- সে ব্যক্তি উত্তম? নাকি ঐ ব্যক্তি উত্তম, যে তার ঘরের ভিত্তি দাঁড় করিয়েছে এমন একটি গর্তের কিনারায়, যার তলায় মাটি নেই। ফলে এটা তাকে সহ (অচিরেই) জাহান্নামের (অতল) আগুনের খাদে গিয়ে পড়বে। আর আল্লাহ কখনো যালিম সম্প্রদায়কে হেদায়াত দেন না। (সূরা তাওবা- ১০৯)
ব্যাখ্যা : নদীর এমন কিনারাকে ‘জুরুফ’ বলা হয়, স্রোতের টানে যার তলা থেকে মাটি সরে গেছে এবং উপরের অংশ কোন নির্ভরতা ছাড়াই দাঁড়িয়ে আছে। যারা আল্লাহকে ভয় না করা এবং তাঁর সন্তুষ্টির পরোয়া না করার উপর নিজেদের কার্যক্রমের ভিত্তি গড়ে তুলে, তাদের জীবন গঠনকে এমন একটি ইমারতের সাথে তুলনা করা হয়েছে, যা অস্থিতিশীল সাগর কিনারে নির্মাণ করা হয়েছে। এ উপমাটির সাথে দুনিয়ার জীবনের এ বাহ্যিক স্তরটিরও হুবহু মিল রয়েছে। এ স্তরটির উপরই আমরা সবাই আমাদের জীবনের যাবতীয় কার্যক্রমের ইমারত নির্মাণ করি। অথচ এর কোন স্থায়িত্ব নেই। বরং আল্লাহর ভয়, তাঁর সামনে জবাবদিহির অনুভূতি এবং তাঁর সন্তুষ্টি অনুযায়ী চলার শক্ত পাথরখন্ড যে কাজের ইমারতের নিচে বসানো থাকে, কেবল সে কাজটিই মজবুত ও স্থিতিশীল হয়। যে অজ্ঞ ও অপরিণামদর্শী মানুষ আল্লাহর ভয়ে ভীত না হয়ে এবং তাঁর সন্তুষ্টি লাভের পরোয়া না করে নিছক দুনিয়ার জীবনের বাহ্যিক অবস্থার উপর ভরসা করে দুনিয়ায় কাজ করে যায়, সে আসলে নিজের জীবন গঠনের বুনিয়াদ গোড়া থেকেই ভিত্তিহীন করে দেয়। ভিত্তিহীন যে উপরিস্তরের উপর সে তার সারা জীবনের সঞ্চয় জমা করেছে, একদিন হঠাৎ তা ধ্বসে পড়বে এবং তাকে তার জীবনের সমস্ত সম্পদসহ ধ্বংস করে দেবে।
তাক্বওয়া হলো মর্যাদার মাপকাঠি :
اِنَّ اَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللهِ اَتْقَاكُمْؕ اِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ خَبِيْرٌ
নিশ্চয় আল্লাহর কাছে তোমাদের মধ্যে তারাই অধিক সম্মানিত এবং যারা বেশি আল্লাহভীরু। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু সম্পর্কে জানেন ও সবকিছুর খবর রাখেন। (সূরা হুজুরাত- ১৩)
তাক্বওয়া ইবাদাতের সারবস্তু :
لَنْ يَّنَالَ اللهَ لُحُوْمُهَا وَلَا دِمَآؤُهَا وَلٰكِنْ يَّنَالُهُ التَّقْوٰى مِنْكُمْ
আল্লাহর নিকট তার গোশত এবং রক্ত কিছুই পৌঁছে না, বরং তোমাদের তাক্বওয়াটাই তাঁর নিকট পৌঁছে।
(সূরা হজ্জ- ৩৭)
তাক্বওয়া দ্বারা আল্লাহর রহমত লাভ হয় :
وَرَحْمَتِيْ وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍؕ فَسَأَكْتُبُهَا لِلَّذِيْنَ يَتَّقُوْنَ وَيُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَالَّذِيْنَ هُمْ بِاٰيَاتِنَا يُؤْمِنُوْنَ
আমার দয়া প্রত্যেক বস্তুতে ব্যাপ্ত। সুতরাং আমি সেটা তাদের জন্য নির্ধারিত করব যারা তাক্বওয়া অবলম্বন করে, যাকাত দেয় এবং আমার নিদর্শনসমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে। (সূরা আ‘রাফ- ১৫৬)
তাক্বওয়া মানুষকে আল্লাহর বন্ধু বানায় :
اَلَاۤ اِنَّ اَوْلِيَآءَ اللهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ ‐ اَلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَكَانُوْا يَتَّقُوْنَ
জেনে রেখো! নিশ্চয় আল্লাহর বন্ধুদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না। (তারা হচ্ছে ঐসব ব্যক্তি) যারা ঈমান আনয়ন করে এবং তাক্বওয়া অবলম্বন করে। (সূরা ইউনুস- ৬২, ৬৩)
তাক্বওয়া জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায় :
وَاِنْ مِّنْكُمْ اِلَّا وَارِدُهَاۚ كَانَ عَلٰى رَبِّكَ حَتْمًا مَّقْضِيًّا ‐ ثُمَّ نُنَجِّى الَّذِيْنَ اتَّقَوْا وَّنَذَرُ الظَّالِمِيْنَ فِيْهَا جِثِيًّا
তোমাদের প্রত্যেকেই সেটা (পুলসিরাত) অতিক্রম করবে; এটা তোমার প্রতিপালকের অনিবার্য সিদ্ধান্ত। পরে আমি মুত্তাক্বীদেরকে উদ্ধার করব এবং যালিমদেরকে সেথায় নতজানু অবস্থায় রেখে দেব। (সূরা মারইয়াম- ৭১, ৭২)
তাক্বওয়া জান্নাত লাভের মাধ্যম :
وَسِيْقَ الَّذِيْنَ اتَّقَوْا رَبَّهُمْ اِلَى الْجَنَّةِ زُمَرًا
যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করত, তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। (সূরা যুমার- ৭৩)
তাক্বওয়া শয়তানের ধোঁকাবাজি ধরিয়ে দেয় :
اِنَّ الَّذِيْنَ اتَّقَوْا اِذَا مَسَّهُمْ طَآئِفٌ مِّنَ الشَّيْطَانِ تَذَكَّرُوْا فَاِذَا هُمْ مُّبْصِرُوْنَ
যারা তাক্বওয়ার অধিকারী হয় তাদেরকে শয়তান যখন কুমন্ত্রণা দেয় তখন তারা আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তৎক্ষণাৎ তাদের চক্ষু খুলে যায়। (সূরা আ‘রাফ- ২০১)
ব্যাখ্যা : যারা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহকে ভয় করে এবং অসৎকাজ থেকে দূরে থাকতে চায় তাদের মনে যদি কখনো অসৎ চিন্তার সামান্যতম স্পর্শও লাগে, তাহলে তা তাদের মনকে ঠিক তেমনিভাবে আহত করে যেমন চোখে বালি পড়লে মানুষ যন্ত্রণাবোধ করে। তাদের বিবেক জেগে উঠে এবং তারা অসৎ প্রবণতার এ ধূলোমাটি ঝেড়ে ফেলার কাজে লেগে যায়। অন্যদিকে যারা আল্লাহকে ভয় করে না, অসৎকাজ থেকে বাঁচতেও চায় না এবং শয়তানকে সাথে রেখে চলে, তাদের মনে অসৎ চিন্তা ও অসৎ উদ্দেশ্য পরিপক্কতা লাভ করতে থাকে এবং তারা এসব পঁচা দুর্গন্ধময় আবর্জনায় কোন প্রকার অস্বস্তি অনুভব করে না।
তাক্বওয়া সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের কষ্ঠিপাথর :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنْ تَتَّقُوا اللهَ يَجْعَلْ لَّكُمْ فُرْقَانًا وَّيُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْؕ وَاللهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيْمِ
হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে আল্লাহ তোমাদেরকে ন্যায়-অন্যায় পার্থক্য করার শক্তি দেবেন, তোমাদের পাপ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অতিশয় মঙ্গলময়। (সূরা আনফাল- ২৯)
ব্যাখ্যা : যদি তোমরা দুনিয়ায় আল্লাহকে ভয় করে কাজ করতে থাক তাহলে তিনি তোমাদের মধ্যে এমন পার্থক্যকারী শক্তি সৃষ্টি করে দেবেন, যার ফলে তোমরা পদে পদে জানতে পারবে যে, কোন্ কর্মনীতিটা ভুল এবং কোন্টা নির্ভুল। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে তোমাদের অন্তর্দৃষ্টি বলে দেবে যে, কোন্ দিকে চলা উচিত এবং কোন্ দিকে চলা উচিত নয়। কোন্টি প্রকৃত সত্যের পথ, যা আল্লাহর দিকে নিয়ে যায় এবং কোনটি মিথ্যা ও অসত্যের পথ, যা শয়তানের সাথে সম্পর্ক জুড়ে দেয়।
তাক্বওয়া উন্নতি লাভের উপায় :
وَلَوْ اَنَّ اَهْلَ الْقُرٰۤى اٰمَنُوْا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَرَكَاتٍ مِّنَ السَّمَآءِ وَالْاَرْضِ وَلٰكِنْ كَذَّبُوْا فَاَخَذْنَاهُمْ بِمَا كَانُوْا يَكْسِبُوْنَ
যদি সেসব জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত ও তাক্বওয়া অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের জন্য আসমান ও জমিনের সকল কল্যাণ উন্মুক্ত করে দিতাম, কিন্তু তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছিল। সুতরাং তাদের কৃতকর্মের জন্য তাদেরকে শাস্তি দিয়েছি। (সূরা আ‘রাফ- ৯৬)
নূহ (আঃ) এর দাওয়াত :
كَذَّبَتْ قَوْمُ نُوْحِ نِ الْمُرْسَلِيْنَ ‐ اِذْ قَالَ لَهُمْ اَخُوْهُمْ نُوْحٌ اَلَا تَتَّقُوْنَ ‐ اِنِّيْ لَكُمْ رَسُوْلٌ اَمِيْنٌ ‐ فَاتَّقُوا اللهَ وَاَطِيْعُوْنِ
নূহের সম্প্রদায় রাসূলগণের প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল। যখন তাদের ভাই নূহ তাদেরকে বললেন, তোমরা কি (আল্লাহকে) ভয় করবে না? আমি তো তোমাদের জন্য এক বিশ্বস্ত রাসূল। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো। (সূরা শু‘আরা, ১০৫-১০৮)
হুদ (আঃ) এর দাওয়াত :
كَذَّبَتْ عَادُنِ الْمُرْسَلِيْنَ ‐ اِذْ قَالَ لَهُمْ اَخُوْهُمْ هُوْدٌ اَ لَا تَتَّقُوْنَ ‐ اِنِّيْ لَكُمْ رَسُوْلٌ اَمِيْنٌ ‐ فَاتَّقُوا اللهَ وَاَطِيْعُوْنِ
আদ সম্প্রদায় রাসূলগণকে মিথ্যারোপ করেছিল। যখন তাদের ভাই হুদ তাদেরকে বললেন, তোমরা কি (আল্লাহকে) ভয় করবে না? আমি তো তোমাদের জন্য এক বিশ্বস্ত রাসূল। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো। (সূরা শু‘আরা, ১২৩-১২৬)
সালেহ (আঃ) এর দাওয়াত :
كَذَّبَتْ ثَمُوْدُ الْمُرْسَلِيْنَ ‐ اِذْ قَالَ لَهُمْ اَخُوْهُمْ صَالِحٌ اَ لَا تَتَّقُوْنَ ‐ اِنِّيْ لَكُمْ رَسُوْلٌ اَمِيْنٌ ‐ فَاتَّقُوا اللهَ وَاَطِيْعُوْنِ
সামূদ সম্প্রদায় রাসূলগণকে মিথ্যারোপ করেছিল। যখন তাদের ভাই সালেহ তাদেরকে বললেন, তোমরা কি (আল্লাহকে) ভয় করবে না? আমি তো তোমাদের জন্য এক বিশ্বস্ত রাসূল। অতএব আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো। (সূরা শু‘আরা, ১৪১-১৪৪)
লূত (আঃ) এর দাওয়াত :
كَذَّبَتْ قَوْمُ لُوْطِ نِ الْمُرْسَلِيْنَ ‐ اِذْ قَالَ لَهُمْ اَخُوْهُمْ لُوْطٌ اَ لَا تَتَّقُوْنَ ‐ اِنِّيْ لَكُمْ رَسُوْلٌ اَمِيْنٌ ‐ فَاتَّقُوا اللهَ وَاَطِيْعُوْنِ
লূতের সম্প্রদায় রাসূলগণকে মিথ্যারোপ করেছিল। যখন তাদের ভাই লূত তাদেরকে বললেন, তোমরা কি (আল্লাহকে) ভয় করবে না? আমি তো তোমাদের জন্য এক বিশ্বস্ত রাসূল। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো। (সূরা শু‘আরা, ১৬০-১৬৩)
শুয়াইব (আঃ) এর দাওয়াত :
كَذَّبَ اَصْحَابُ الْاَيْكَةِ الْمُرْسَلِيْنَ ‐ اِذْ قَالَ لَهُمْ شُعَيْبٌ اَ لَا تَتَّقُوْنَ ‐ اِنِّيْ لَكُمْ رَسُوْلٌ اَمِيْنٌ ‐ فَاتَّقُوا اللهَ وَاَطِيْعُوْنِ
আইকাবাসীরা রাসূলগণকে মিথ্যারোপ করেছিল, যখন শুয়াইব তাদেরকে বলেছিলেন, তোমরা কি (আল্লাহকে) ভয় করবে না? আমি তো তোমাদের জন্য এক বিশ্বস্ত রাসূল। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো। (সূরা শু‘আরা, ১৭৬-১৭৯)
ইলয়াস (আঃ) এর দাওয়াত :
وَاِنَّ اِلْيَاسَ لَمِنَ الْمُرْسَلِيْنَ ‐ اِذْ قَالَ لِقَوْمِهٖۤ اَلَا تَتَّقُوْنَ
নিঃসন্দেহে ইলয়াসও ছিলেন রাসূলদের মধ্যে অন্যতম। স্মরণ করো, যখন তিনি তার সম্প্রদায়কে বলেছিলেন, তোমরা কি আল্লাহকে ভয় করবে না? (সূরা সাফ্ফাত- ১২৩, ১২৪)
মূসা (আঃ) এর দাওয়াত :
وَاِذْ نَادٰى رَبُّكَ مُوْسٰۤى اَنِ ائْتِ الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ ‐ قَوْمَ فِرْعَوْنَؕ اَ لَا يَتَّقُوْنَ
স্মরণ করো, যখন তোমার প্রতিপালক মূসাকে ডেকে বললেন, তুমি যালিম সম্প্রদায়- ফিরাউনের সম্প্রদায়ের নিকট যাও। তারা কি (আল্লাহকে) ভয় করবে না? (সূরা শু‘আরা- ১০, ১১)
ঈসা (আঃ) এর দাওয়াত :
وَجِئْتُكُمْ بِاٰيَةٍ مِّنْ رَّبِّكُمْ فَاتَّقُوا اللهَ وَاَطِيْعُوْنِ
আমি তোমাদের কাছে এসেছি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে নিদর্শন সহকারে। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার অনুসরণ করো। (সূরা আলে ইমরান- ৫০)
মুহাম্মাদ ﷺ এর দাওয়াত :
اَرَاَيْتَ اِنْ كَانَ عَلَى الْهُدٰى ‐ اَوْ اَمَرَ بِالتَّقْوٰى
তুমি কি দেখেছ, যদি তিনি সৎপথে থাকেন অথবা আল্লাহভীতি শিক্ষা দেন (তবে এটা কতই না ভালো হতো)। (সূরা আলাক্ব- ১১, ১২)
كَذَّبَتْ قَوْمُ نُوْحِ نِ الْمُرْسَلِيْنَ ‐ اِذْ قَالَ لَهُمْ اَخُوْهُمْ نُوْحٌ اَلَا تَتَّقُوْنَ ‐ اِنِّيْ لَكُمْ رَسُوْلٌ اَمِيْنٌ ‐ فَاتَّقُوا اللهَ وَاَطِيْعُوْنِ
নূহের সম্প্রদায় রাসূলগণের প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল। যখন তাদের ভাই নূহ তাদেরকে বললেন, তোমরা কি (আল্লাহকে) ভয় করবে না? আমি তো তোমাদের জন্য এক বিশ্বস্ত রাসূল। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো। (সূরা শু‘আরা, ১০৫-১০৮)
হুদ (আঃ) এর দাওয়াত :
كَذَّبَتْ عَادُنِ الْمُرْسَلِيْنَ ‐ اِذْ قَالَ لَهُمْ اَخُوْهُمْ هُوْدٌ اَ لَا تَتَّقُوْنَ ‐ اِنِّيْ لَكُمْ رَسُوْلٌ اَمِيْنٌ ‐ فَاتَّقُوا اللهَ وَاَطِيْعُوْنِ
আদ সম্প্রদায় রাসূলগণকে মিথ্যারোপ করেছিল। যখন তাদের ভাই হুদ তাদেরকে বললেন, তোমরা কি (আল্লাহকে) ভয় করবে না? আমি তো তোমাদের জন্য এক বিশ্বস্ত রাসূল। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো। (সূরা শু‘আরা, ১২৩-১২৬)
সালেহ (আঃ) এর দাওয়াত :
كَذَّبَتْ ثَمُوْدُ الْمُرْسَلِيْنَ ‐ اِذْ قَالَ لَهُمْ اَخُوْهُمْ صَالِحٌ اَ لَا تَتَّقُوْنَ ‐ اِنِّيْ لَكُمْ رَسُوْلٌ اَمِيْنٌ ‐ فَاتَّقُوا اللهَ وَاَطِيْعُوْنِ
সামূদ সম্প্রদায় রাসূলগণকে মিথ্যারোপ করেছিল। যখন তাদের ভাই সালেহ তাদেরকে বললেন, তোমরা কি (আল্লাহকে) ভয় করবে না? আমি তো তোমাদের জন্য এক বিশ্বস্ত রাসূল। অতএব আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো। (সূরা শু‘আরা, ১৪১-১৪৪)
লূত (আঃ) এর দাওয়াত :
كَذَّبَتْ قَوْمُ لُوْطِ نِ الْمُرْسَلِيْنَ ‐ اِذْ قَالَ لَهُمْ اَخُوْهُمْ لُوْطٌ اَ لَا تَتَّقُوْنَ ‐ اِنِّيْ لَكُمْ رَسُوْلٌ اَمِيْنٌ ‐ فَاتَّقُوا اللهَ وَاَطِيْعُوْنِ
লূতের সম্প্রদায় রাসূলগণকে মিথ্যারোপ করেছিল। যখন তাদের ভাই লূত তাদেরকে বললেন, তোমরা কি (আল্লাহকে) ভয় করবে না? আমি তো তোমাদের জন্য এক বিশ্বস্ত রাসূল। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো। (সূরা শু‘আরা, ১৬০-১৬৩)
শুয়াইব (আঃ) এর দাওয়াত :
كَذَّبَ اَصْحَابُ الْاَيْكَةِ الْمُرْسَلِيْنَ ‐ اِذْ قَالَ لَهُمْ شُعَيْبٌ اَ لَا تَتَّقُوْنَ ‐ اِنِّيْ لَكُمْ رَسُوْلٌ اَمِيْنٌ ‐ فَاتَّقُوا اللهَ وَاَطِيْعُوْنِ
আইকাবাসীরা রাসূলগণকে মিথ্যারোপ করেছিল, যখন শুয়াইব তাদেরকে বলেছিলেন, তোমরা কি (আল্লাহকে) ভয় করবে না? আমি তো তোমাদের জন্য এক বিশ্বস্ত রাসূল। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো। (সূরা শু‘আরা, ১৭৬-১৭৯)
ইলয়াস (আঃ) এর দাওয়াত :
وَاِنَّ اِلْيَاسَ لَمِنَ الْمُرْسَلِيْنَ ‐ اِذْ قَالَ لِقَوْمِهٖۤ اَلَا تَتَّقُوْنَ
নিঃসন্দেহে ইলয়াসও ছিলেন রাসূলদের মধ্যে অন্যতম। স্মরণ করো, যখন তিনি তার সম্প্রদায়কে বলেছিলেন, তোমরা কি আল্লাহকে ভয় করবে না? (সূরা সাফ্ফাত- ১২৩, ১২৪)
মূসা (আঃ) এর দাওয়াত :
وَاِذْ نَادٰى رَبُّكَ مُوْسٰۤى اَنِ ائْتِ الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ ‐ قَوْمَ فِرْعَوْنَؕ اَ لَا يَتَّقُوْنَ
স্মরণ করো, যখন তোমার প্রতিপালক মূসাকে ডেকে বললেন, তুমি যালিম সম্প্রদায়- ফিরাউনের সম্প্রদায়ের নিকট যাও। তারা কি (আল্লাহকে) ভয় করবে না? (সূরা শু‘আরা- ১০, ১১)
ঈসা (আঃ) এর দাওয়াত :
وَجِئْتُكُمْ بِاٰيَةٍ مِّنْ رَّبِّكُمْ فَاتَّقُوا اللهَ وَاَطِيْعُوْنِ
আমি তোমাদের কাছে এসেছি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে নিদর্শন সহকারে। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার অনুসরণ করো। (সূরা আলে ইমরান- ৫০)
মুহাম্মাদ ﷺ এর দাওয়াত :
اَرَاَيْتَ اِنْ كَانَ عَلَى الْهُدٰى ‐ اَوْ اَمَرَ بِالتَّقْوٰى
তুমি কি দেখেছ, যদি তিনি সৎপথে থাকেন অথবা আল্লাহভীতি শিক্ষা দেন (তবে এটা কতই না ভালো হতো)। (সূরা আলাক্ব- ১১, ১২)
আল্লাহ মুত্তাক্বীদেরকে ভালোবাসেন :
اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُتَّقِيْنَ
নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকবীদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা তাওবা- ৭)
আল্লাহ মুত্তাক্বীদের সঙ্গে রয়েছেন :
وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ مَعَ الْمُتَّقِيْنَ
জেনে রেখো! আল্লাহ মুত্তাক্বীদের সঙ্গেই রয়েছেন। (সূরা তাওবা- ৩৬)
اِنَّ اللهَ مَعَ الَّذِيْنَ اتَّقَوْا وَّالَّذِيْنَ هُمْ مُّحْسِنُوْنَ
আল্লাহ তাদেরই সঙ্গে আছেন, যারা তাক্বওয়া অবলম্বন করে এবং যারা সৎকর্মপরায়ণ। (সূরা নাহল- ১২৮)
আল্লাহ তাদেরকে বিপদাপদ থেকে রক্ষা করেন :
وَاَنْجَيْنَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَكَانُوْا يَتَّقُوْنَ
অতঃপর যারা মুমিন ও মুত্তাক্বী ছিল, তাদেরকে আমি উদ্ধার করেছি। (সূরা নামল- ৫৩)
তাদের যে কোন সংকট দূর করে দেন :
وَمَنْ يَّتَّقِ اللهَ يَجْعَلْ لَّهٗ مَخْرَجًا
যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার (সংকট থেকে বের হওয়ার) পথ বের করে দেন। (সূরা তালাক্ব- ২)
তাদের কাজকর্ম সহজ করে দেন :
وَمَنْ يَّتَّقِ اللهَ يَجْعَلْ لَّهٗ مِنْ اَمْرِهٖ يُسْرًا
যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার কাজকর্ম সহজ করে দেন। (সূরা তালাক্ব- ৪)
তাদেরকে বিরাট পুরস্কারে ভূষিত করবেন :
وَمَنْ يَّتَّقِ اللهَ يُكَفِّرْ عَنْهُ سَيِّئَاتِهٖ وَيُعْظِمْ لَهٗۤ اَجْرًا
যে আল্লাহকে ভয় করে তিনি তার পাপ মোচন করবেন এবং তাকে মহাপুরস্কারে ভূষিত করবেন। (সূরা তালাক্ব- ৫)
তাদের পুরস্কার নষ্ট করা হবে না :
اِنَّهٗ مَنْ يَّتَّقِ وَيَصْبِرْ فَاِنَّ اللهَ لَا يُضِيْعُ اَجْرَ الْمُحْسِنِيْنَ
নিশ্চয় যে তাক্বওয়া অবলম্বন করে ও ধৈর্যশীল হয়, আল্লাহ এমন সৎকর্মপরায়ণদের শ্রমফল নষ্ট করেন না।
(সূরা ইউসুফ- ৯০)
শুভ পরিণাম মুত্তাক্বীদের জন্য :
اِنَّ الْعَاقِبَةَ لِلْمُتَّقِيْنَ
নিশ্চয় শুভ পরিণাম মুত্তাক্বীদের জন্য। (সূরা হুদ- ৪৯)
وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَيَخْشَ اللهَ وَيَتَّقْهِ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَآئِزُوْنَ
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে ও তাঁর অবাধ্যতা হতে সাবধান থাকে তারাই সফলকাম। (সূরা নূর- ৫২)
মুত্তাক্বীরা জান্নাতের মধ্যে থাকবে :
وَسَارِعُوْاۤ اِلٰى مَغْفِرَةٍ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمٰوَاتُ وَالْاَرْضُ اُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِيْنَ
তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে ধাবিত হও, যার প্রসারতা ও বিস্তৃতি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সদৃশ। আর তা মুত্তাক্বীদের জন্যই নির্মিত হয়েছে। (সূরা আলে ইমরান- ১৩৩)
اِنَّ الْمُتَّقِيْنَ فِىْ جَنَّاتٍ وَّعُيُوْنٍ
সেদিন মুত্তাক্বীরা জান্নাত ও ঝর্ণার মধ্যে থাকবে। (সূরা যারিয়াত- ১৫)
اِنَّ الْمُتَّقِيْنَ فِيْ جَنَّاتٍ وَّنَهَرٍ
নিশ্চয় মুত্তাক্বীগণ থাকবে বাগান ও ঝর্ণাধারার মাঝে। (সূরা ক্বামার- ৫৪)
اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُتَّقِيْنَ
নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকবীদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা তাওবা- ৭)
আল্লাহ মুত্তাক্বীদের সঙ্গে রয়েছেন :
وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ مَعَ الْمُتَّقِيْنَ
জেনে রেখো! আল্লাহ মুত্তাক্বীদের সঙ্গেই রয়েছেন। (সূরা তাওবা- ৩৬)
اِنَّ اللهَ مَعَ الَّذِيْنَ اتَّقَوْا وَّالَّذِيْنَ هُمْ مُّحْسِنُوْنَ
আল্লাহ তাদেরই সঙ্গে আছেন, যারা তাক্বওয়া অবলম্বন করে এবং যারা সৎকর্মপরায়ণ। (সূরা নাহল- ১২৮)
আল্লাহ তাদেরকে বিপদাপদ থেকে রক্ষা করেন :
وَاَنْجَيْنَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَكَانُوْا يَتَّقُوْنَ
অতঃপর যারা মুমিন ও মুত্তাক্বী ছিল, তাদেরকে আমি উদ্ধার করেছি। (সূরা নামল- ৫৩)
তাদের যে কোন সংকট দূর করে দেন :
وَمَنْ يَّتَّقِ اللهَ يَجْعَلْ لَّهٗ مَخْرَجًا
যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার (সংকট থেকে বের হওয়ার) পথ বের করে দেন। (সূরা তালাক্ব- ২)
তাদের কাজকর্ম সহজ করে দেন :
وَمَنْ يَّتَّقِ اللهَ يَجْعَلْ لَّهٗ مِنْ اَمْرِهٖ يُسْرًا
যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার কাজকর্ম সহজ করে দেন। (সূরা তালাক্ব- ৪)
তাদেরকে বিরাট পুরস্কারে ভূষিত করবেন :
وَمَنْ يَّتَّقِ اللهَ يُكَفِّرْ عَنْهُ سَيِّئَاتِهٖ وَيُعْظِمْ لَهٗۤ اَجْرًا
যে আল্লাহকে ভয় করে তিনি তার পাপ মোচন করবেন এবং তাকে মহাপুরস্কারে ভূষিত করবেন। (সূরা তালাক্ব- ৫)
তাদের পুরস্কার নষ্ট করা হবে না :
اِنَّهٗ مَنْ يَّتَّقِ وَيَصْبِرْ فَاِنَّ اللهَ لَا يُضِيْعُ اَجْرَ الْمُحْسِنِيْنَ
নিশ্চয় যে তাক্বওয়া অবলম্বন করে ও ধৈর্যশীল হয়, আল্লাহ এমন সৎকর্মপরায়ণদের শ্রমফল নষ্ট করেন না।
(সূরা ইউসুফ- ৯০)
শুভ পরিণাম মুত্তাক্বীদের জন্য :
اِنَّ الْعَاقِبَةَ لِلْمُتَّقِيْنَ
নিশ্চয় শুভ পরিণাম মুত্তাক্বীদের জন্য। (সূরা হুদ- ৪৯)
وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَيَخْشَ اللهَ وَيَتَّقْهِ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَآئِزُوْنَ
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে ও তাঁর অবাধ্যতা হতে সাবধান থাকে তারাই সফলকাম। (সূরা নূর- ৫২)
মুত্তাক্বীরা জান্নাতের মধ্যে থাকবে :
وَسَارِعُوْاۤ اِلٰى مَغْفِرَةٍ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمٰوَاتُ وَالْاَرْضُ اُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِيْنَ
তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে ধাবিত হও, যার প্রসারতা ও বিস্তৃতি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সদৃশ। আর তা মুত্তাক্বীদের জন্যই নির্মিত হয়েছে। (সূরা আলে ইমরান- ১৩৩)
اِنَّ الْمُتَّقِيْنَ فِىْ جَنَّاتٍ وَّعُيُوْنٍ
সেদিন মুত্তাক্বীরা জান্নাত ও ঝর্ণার মধ্যে থাকবে। (সূরা যারিয়াত- ১৫)
اِنَّ الْمُتَّقِيْنَ فِيْ جَنَّاتٍ وَّنَهَرٍ
নিশ্চয় মুত্তাক্বীগণ থাকবে বাগান ও ঝর্ণাধারার মাঝে। (সূরা ক্বামার- ৫৪)
আল্লাহর ইবাদাত করা :
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوْا رَبَّكُمُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ وَالَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ
হে মানবসমাজ! তোমরা তোমাদের রবের ইবাদাত করো, যিনি তোমাদেরকে ও তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন; যাতে তোমরা তাক্বওয়া অবলম্বন করতে পার। (সূরা বাক্বারা- ২১)
আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করা :
وَلَكُمْ فِى الْقِصَاصِ حَيَاةٌ يَّاۤ اُولِى الْاَلْبَابِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ
হে জ্ঞানবান লোকেরা! কিসাস (প্রতিশোধ) গ্রহণের মধ্যে তোমাদের জন্য জীবন রয়েছে। (এ পদ্ধতির মাধ্যমে) তোমরা তাক্বওয়া অবলম্বন করতে পারবে। (সূরা বাক্বারা- ১৭৯)
রোযা রাখা :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করে দেয়া হয়েছে, যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরয করা হয়েছিল; যাতে করে তোমরা মুত্তাক্বী হতে পার। (সূরা বাক্বারা- ১৮৩)
সালাত কায়েম করা :
وَاَنْ اَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاتَّقُوْهُ وَهُوَ الَّذِيْۤ اِلَيْهِ تُحْشَرُوْنَ
সালাত কায়েম করো এবং তাঁকে (আল্লাহকে) ভয় করো। তিনিই তো সেই সত্তা, যার নিকট তোমাদেরকে সমবেত করা হবে। (সূরা আন‘আম- ৭২)
কুরআন বুঝে পড়া :
قُرْاٰنًا عَرَبِيًّا غَيْرَ ذِيْ عِوَجٍ لَّعَلَّهُمْ يَتَّقُوْنَ
এ কুরআন আরবি ভাষায় (অবতীর্ণ করা হয়েছে), এতে বিন্দুমাত্রও বক্রতা নেই। (এর মাধ্যমে) তারা তাক্বওয়া অর্জন করতে পারবে। (সূরা যুমার- ২৮)
সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকা :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَكُوْنُوْا مَعَ الصَّادِقِيْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও। (সূরা তাওবা- ১১৯)
সঠিক পথের অনুসরণ করা :
وَاَنَّ هٰذَا صِرَاطِيْ مُسْتَقِيْمًا فَاتَّبِعُوْهُۚ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيْلِهٖؕ ذٰلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهٖ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ
এ পথই আমার সরল পথ। সুতরাং তোমরা এরই অনুসরণ করো এবং বিভিন্ন পথ অনুসরণ করো না, নতুবা তোমাদেরকে তাঁর পথ হতে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হবে। এভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে করে তোমরা তাক্বওয়া অর্জন করতে পার। (সূরা আন‘আম- ১৫৩)
রাসূলের সুন্নাতের অনুসরণ করা :
وَمَاۤ اٰتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُۚ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْاۚ وَاتَّقُوا اللهَؕ اِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
রাসূল তোমাদেরকে যা দেয় তা তোমরা গ্রহণ করো এবং যা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করে তা হতে বিরত থাকো। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো; নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি দানে অত্যন্ত কঠোর। (সূরা হাশর- ৭)
মহিলাদের পর্দা করা :
يَا نِسَآءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَاَحَدٍ مِّنَ النِّسَآءِ اِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِيْ فِيْ قَلْبِهٖ مَرَضٌ وَّقُلْنَ قَوْلًا مَّعْرُوْفًا ‐ وَقَرْنَ فِيْ بُيُوْتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْاُوْلٰى
হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা কোন সাধারণ স্ত্রীলোকের মতো নও। যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে (পরপুরুষের সাথে) কথা বলার সময় এমনভাবে কোমল কণ্ঠে কথা বলবে না, যাতে করে যার অন্তরে (কুপ্রবৃত্তির) রোগ রয়েছে সে লালায়িত হয়। আর তোমরা (কথা বলার সময়) ন্যায়সঙ্গত কথা বলবে। তোমরা নিজেদের ঘরে অবস্থান করবে এবং প্রাথমিক জাহেলী যুগের ন্যায় নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না। (সূরা আহযাব- ৩২, ৩৩)
সঠিক কথা বলা :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَقُوْلُوْا قَوْلًا سَدِيْدًا
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বলো। (সূরা আহযাব- ৭০)
কিয়ামতের ভয়ংকর অবস্থাকে ভয় করা :
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوْا رَبَّكُمْۚ اِنَّ زَلْزَلَةَ السَّاعَةِ شَيْءٌ عَظِيْمٌ
হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো; নিশ্চয় কিয়ামতের প্রকম্পন খুবই ভয়ংকর! (সূরা হজ্জ- ১)
নিজের আমল নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَّا قَدَّمَتْ لِغَدٍۚ وَاتَّقُوا اللهَؕ اِنَّ اللهَ خَبِيْرٌ ۢبِمَا تَعْمَلُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। প্রত্যেক মানুষেরই ভেবে দেখা উচিৎ যে, সে আগামীকালের (কিয়ামতের) জন্য কী পাঠিয়েছে। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো; নিশ্চয় তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে সর্বাধিক অবহিত। (সূরা হাশর- ১৮)
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوْا رَبَّكُمُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ وَالَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ
হে মানবসমাজ! তোমরা তোমাদের রবের ইবাদাত করো, যিনি তোমাদেরকে ও তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন; যাতে তোমরা তাক্বওয়া অবলম্বন করতে পার। (সূরা বাক্বারা- ২১)
আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করা :
وَلَكُمْ فِى الْقِصَاصِ حَيَاةٌ يَّاۤ اُولِى الْاَلْبَابِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ
হে জ্ঞানবান লোকেরা! কিসাস (প্রতিশোধ) গ্রহণের মধ্যে তোমাদের জন্য জীবন রয়েছে। (এ পদ্ধতির মাধ্যমে) তোমরা তাক্বওয়া অবলম্বন করতে পারবে। (সূরা বাক্বারা- ১৭৯)
রোযা রাখা :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করে দেয়া হয়েছে, যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরয করা হয়েছিল; যাতে করে তোমরা মুত্তাক্বী হতে পার। (সূরা বাক্বারা- ১৮৩)
সালাত কায়েম করা :
وَاَنْ اَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاتَّقُوْهُ وَهُوَ الَّذِيْۤ اِلَيْهِ تُحْشَرُوْنَ
সালাত কায়েম করো এবং তাঁকে (আল্লাহকে) ভয় করো। তিনিই তো সেই সত্তা, যার নিকট তোমাদেরকে সমবেত করা হবে। (সূরা আন‘আম- ৭২)
কুরআন বুঝে পড়া :
قُرْاٰنًا عَرَبِيًّا غَيْرَ ذِيْ عِوَجٍ لَّعَلَّهُمْ يَتَّقُوْنَ
এ কুরআন আরবি ভাষায় (অবতীর্ণ করা হয়েছে), এতে বিন্দুমাত্রও বক্রতা নেই। (এর মাধ্যমে) তারা তাক্বওয়া অর্জন করতে পারবে। (সূরা যুমার- ২৮)
সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকা :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَكُوْنُوْا مَعَ الصَّادِقِيْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও। (সূরা তাওবা- ১১৯)
সঠিক পথের অনুসরণ করা :
وَاَنَّ هٰذَا صِرَاطِيْ مُسْتَقِيْمًا فَاتَّبِعُوْهُۚ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيْلِهٖؕ ذٰلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهٖ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ
এ পথই আমার সরল পথ। সুতরাং তোমরা এরই অনুসরণ করো এবং বিভিন্ন পথ অনুসরণ করো না, নতুবা তোমাদেরকে তাঁর পথ হতে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হবে। এভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে করে তোমরা তাক্বওয়া অর্জন করতে পার। (সূরা আন‘আম- ১৫৩)
রাসূলের সুন্নাতের অনুসরণ করা :
وَمَاۤ اٰتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُۚ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْاۚ وَاتَّقُوا اللهَؕ اِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
রাসূল তোমাদেরকে যা দেয় তা তোমরা গ্রহণ করো এবং যা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করে তা হতে বিরত থাকো। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো; নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি দানে অত্যন্ত কঠোর। (সূরা হাশর- ৭)
মহিলাদের পর্দা করা :
يَا نِسَآءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَاَحَدٍ مِّنَ النِّسَآءِ اِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِيْ فِيْ قَلْبِهٖ مَرَضٌ وَّقُلْنَ قَوْلًا مَّعْرُوْفًا ‐ وَقَرْنَ فِيْ بُيُوْتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْاُوْلٰى
হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা কোন সাধারণ স্ত্রীলোকের মতো নও। যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে (পরপুরুষের সাথে) কথা বলার সময় এমনভাবে কোমল কণ্ঠে কথা বলবে না, যাতে করে যার অন্তরে (কুপ্রবৃত্তির) রোগ রয়েছে সে লালায়িত হয়। আর তোমরা (কথা বলার সময়) ন্যায়সঙ্গত কথা বলবে। তোমরা নিজেদের ঘরে অবস্থান করবে এবং প্রাথমিক জাহেলী যুগের ন্যায় নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না। (সূরা আহযাব- ৩২, ৩৩)
সঠিক কথা বলা :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَقُوْلُوْا قَوْلًا سَدِيْدًا
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বলো। (সূরা আহযাব- ৭০)
কিয়ামতের ভয়ংকর অবস্থাকে ভয় করা :
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوْا رَبَّكُمْۚ اِنَّ زَلْزَلَةَ السَّاعَةِ شَيْءٌ عَظِيْمٌ
হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো; নিশ্চয় কিয়ামতের প্রকম্পন খুবই ভয়ংকর! (সূরা হজ্জ- ১)
নিজের আমল নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَّا قَدَّمَتْ لِغَدٍۚ وَاتَّقُوا اللهَؕ اِنَّ اللهَ خَبِيْرٌ ۢبِمَا تَعْمَلُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। প্রত্যেক মানুষেরই ভেবে দেখা উচিৎ যে, সে আগামীকালের (কিয়ামতের) জন্য কী পাঠিয়েছে। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো; নিশ্চয় তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে সর্বাধিক অবহিত। (সূরা হাশর- ১৮)
ধৈর্যধারণ করার জন্য আল্লাহর নির্দেশ :
فَاصْبِرْ صَبْرًا جَمِيْلًا
সুতরাং তুমি উত্তমভাবে ধৈর্যধারণ করো (সূরা মা‘আরিজ- ৫)
ব্যাখ্যা : صَبْرٌ جَمِيْلٌ (সাবরুন জামীল) এর শাব্দিক অর্থ ভালো সবর বা উত্তম ধৈর্য। এটা এমন সবর, যার মধ্যে অভিযোগ, ফরিয়াদ ও কান্নাকাটি নেই। একজন উচ্চ ও প্রশস্ত হৃদয়ের অধিকারী মানুষের উপর যে বিপদ আসে তাকে ধীরস্থির চিত্তে মুকাবিলা করে যাওয়াই এ সবরের প্রকৃতি।
ধৈর্যধারণ করতে হবে নবীদের মতো :
فَاصْبِرْ كَمَا صَبَرَ اُولُو الْعَزْمِ مِنَ الرُّسُلِ
অতএব (হে রাসূল!) আপনি ধৈর্যধারণ করুন, যেমনিভাবে দৃঢ়চিত্তের অধিকারী রাসূলগণ ধৈর্যধারণ করেছেন। (সূরা আহকাফ- ৩৫)
সকল নবীই ধৈর্যধারণ করেছেন :
وَلَقَدْ كُذِّبَتْ رُسُلٌ مِّنْ قَبْلِكَ فَصَبَرُوْا عَلٰى مَا كُذِّبُوْا وَاُوْذُوْا حَتّٰۤى اَتَاهُمْ نَصْرُنَا
এভাবে তোমার আগেও রাসূলদেরকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁদেরকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করা ও নানা রকম নির্যাতন চালানোর পরও তাঁরা কঠোর ধৈর্যধারণ করেছিল, অবশেষে তাদের কাছে আমার সাহায্য পৌঁছল। (সূরা আন‘আম- ৩৪)
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ধৈর্যধারণ করতে হবে :
وَلِرَبِّكَ فَاصْبِرْ
তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে ধৈর্যধারণ করো। (সূরা মুদ্দাসসির- ৭)
একে অপরকে ধৈর্যধারণের প্রশিক্ষণ দিতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اصْبِرُوْا وَصَابِرُوْا
হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্যধারণ করো এবং (ধৈর্যধারণ করার জন্য) পরস্পর প্রতিযোগিতা করো।
(সূরা আলে ইমরান- ২০০)
وَ الْعَصْرِ ‐ اِنَّ الْاِنْسَانَ لَفِيْ خُسْرٍ ‐ اِلَّا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ
যুগের কসম! নিশ্চয় মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত; কিন্তু তারা নয়, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে, সৎ আমল করে এবং পরস্পরকে সত্যের ও ধৈর্যধারণের উপদেশ দেয়। (সূরা আসর)
ধৈর্যধারণকারীরা জান্নাতবাসী হবে :
ثُمَّ كَانَ مِنَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ وَتَوَاصَوْا بِالْمَرْحَمَةِ ‐ اُولٰٓئِكَ اَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ
তাদের মধ্যে যারা ঈমান আনয়ন করেছে এবং যারা পরস্পরকে ধৈর্যধারণের, দয়া ও করুণার উপদেশ দেয়, এরাই ডান হাতওয়ালা (জান্নাতবাসী)। (সূরা বালাদ- ১৭, ১৮)
কারা ধৈর্যশীল তা আল্লাহ পরীক্ষা করেন :
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ حَتّٰى نَعْلَمَ الْمُجَاهِدِيْنَ مِنْكُمْ وَالصَّابِرِيْنَ
আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব, যাতে করে তোমাদের অবস্থা যাচাই করে নিতে পারি এবং দেখে নিতে পারি যে, তোমাদের মধ্যে কারা মুজাহিদ ও কারা ধৈর্যশীল। (সূরা মুহাম্মাদ- ৩১)
فَاصْبِرْ صَبْرًا جَمِيْلًا
সুতরাং তুমি উত্তমভাবে ধৈর্যধারণ করো (সূরা মা‘আরিজ- ৫)
ব্যাখ্যা : صَبْرٌ جَمِيْلٌ (সাবরুন জামীল) এর শাব্দিক অর্থ ভালো সবর বা উত্তম ধৈর্য। এটা এমন সবর, যার মধ্যে অভিযোগ, ফরিয়াদ ও কান্নাকাটি নেই। একজন উচ্চ ও প্রশস্ত হৃদয়ের অধিকারী মানুষের উপর যে বিপদ আসে তাকে ধীরস্থির চিত্তে মুকাবিলা করে যাওয়াই এ সবরের প্রকৃতি।
ধৈর্যধারণ করতে হবে নবীদের মতো :
فَاصْبِرْ كَمَا صَبَرَ اُولُو الْعَزْمِ مِنَ الرُّسُلِ
অতএব (হে রাসূল!) আপনি ধৈর্যধারণ করুন, যেমনিভাবে দৃঢ়চিত্তের অধিকারী রাসূলগণ ধৈর্যধারণ করেছেন। (সূরা আহকাফ- ৩৫)
সকল নবীই ধৈর্যধারণ করেছেন :
وَلَقَدْ كُذِّبَتْ رُسُلٌ مِّنْ قَبْلِكَ فَصَبَرُوْا عَلٰى مَا كُذِّبُوْا وَاُوْذُوْا حَتّٰۤى اَتَاهُمْ نَصْرُنَا
এভাবে তোমার আগেও রাসূলদেরকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁদেরকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করা ও নানা রকম নির্যাতন চালানোর পরও তাঁরা কঠোর ধৈর্যধারণ করেছিল, অবশেষে তাদের কাছে আমার সাহায্য পৌঁছল। (সূরা আন‘আম- ৩৪)
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ধৈর্যধারণ করতে হবে :
وَلِرَبِّكَ فَاصْبِرْ
তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে ধৈর্যধারণ করো। (সূরা মুদ্দাসসির- ৭)
একে অপরকে ধৈর্যধারণের প্রশিক্ষণ দিতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اصْبِرُوْا وَصَابِرُوْا
হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্যধারণ করো এবং (ধৈর্যধারণ করার জন্য) পরস্পর প্রতিযোগিতা করো।
(সূরা আলে ইমরান- ২০০)
وَ الْعَصْرِ ‐ اِنَّ الْاِنْسَانَ لَفِيْ خُسْرٍ ‐ اِلَّا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ
যুগের কসম! নিশ্চয় মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত; কিন্তু তারা নয়, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে, সৎ আমল করে এবং পরস্পরকে সত্যের ও ধৈর্যধারণের উপদেশ দেয়। (সূরা আসর)
ধৈর্যধারণকারীরা জান্নাতবাসী হবে :
ثُمَّ كَانَ مِنَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ وَتَوَاصَوْا بِالْمَرْحَمَةِ ‐ اُولٰٓئِكَ اَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ
তাদের মধ্যে যারা ঈমান আনয়ন করেছে এবং যারা পরস্পরকে ধৈর্যধারণের, দয়া ও করুণার উপদেশ দেয়, এরাই ডান হাতওয়ালা (জান্নাতবাসী)। (সূরা বালাদ- ১৭, ১৮)
কারা ধৈর্যশীল তা আল্লাহ পরীক্ষা করেন :
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ حَتّٰى نَعْلَمَ الْمُجَاهِدِيْنَ مِنْكُمْ وَالصَّابِرِيْنَ
আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব, যাতে করে তোমাদের অবস্থা যাচাই করে নিতে পারি এবং দেখে নিতে পারি যে, তোমাদের মধ্যে কারা মুজাহিদ ও কারা ধৈর্যশীল। (সূরা মুহাম্মাদ- ৩১)
আল্লাহর ইবাদাতে অটল থাকার জন্য ধৈর্যধারণ করতে হবে :
فَاعْبُدْهُ وَاصْطَبِرْ لِعِبَادَتِهٖ
তোমরা তাঁরই ইবাদাত করো এবং তাঁর ইবাদাতে ধৈর্যশীল থাকো। (সূরা মারইয়াম- ৬৫)
বিপদাপদে ধৈর্যধারণ করতে হবে :
وَالصَّابِرِيْنَ فِى الْبَأْسَآءِ وَالضَّرَّآءِ وَحِيْنَ الْبَأْسِؕ اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ صَدَقُوْاؕ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُتَّقُوْنَ
যারা অভাবে, কষ্টে এবং যুদ্ধকালে ধৈর্যশীল, তারাই সত্যপরায়ণ এবং তারাই মুত্তাক্বী। (সূরা বাক্বারা- ১৭৭)
মানুষের কষ্টদায়ক কথা ও কর্মের উপর ধৈর্যধারণ করতে হবে :
وَاصْبِرْ عَلٰى مَا يَقُوْلُوْنَ وَاهْجُرْهُمْ هَجْرًا جَمِيْلًا
লোকেরা যা বলে, তাতে তুমি ধৈর্যধারণ করো এবং তাদেরকে উত্তম পন্থায় পরিহার করে চলো। (সূরা মুয্যাম্মিল- ১০)
وَجَعَلْنَا بَعْضَكُمْ لِبَعْضٍ فِتْنَةًؕ اَتَصْبِرُوْنَۚ وَكَانَ رَبُّكَ بَصِيْرًا
হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে একে অপরের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ বানিয়েছি। অতএব তোমরা কি ধৈর্যধারণ করবে? তোমার প্রতিপালক সবকিছু দেখেন। (সূরা ফুরক্বান- ২০)
দাওয়াতী কাজে বিরোধিতা আসলে ধৈর্যধারণ করতে হবে :
يَا بُنَيَّ اَقِمِ الصَّلَاةَ وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوْفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَاصْبِرْ عَلٰى مَاۤ اَصَابَكَؕ اِنَّ ذٰلِكَ مِنْ عَزْمِ الْاُمُوْرِ
হে আমার ছেলে! সালাত কায়েম করো, সৎকাজের আদেশ দাও, মন্দকাজ হতে নিষেধ করো এবং তোমার উপর যে বিপদ আসে তাতে ধৈর্যধারণ করো। নিশ্চয় এটা দৃঢ় সংকল্পের কাজ। (সূরা লুক্বমান- ১৭)
শত্রুর নির্যাতনে ধৈর্যধারণ করতে হবে :
وَمَا لَنَاۤ اَلَّا نَتَوَكَّلَ عَلَى اللهِ وَقَدْ هَدَانَا سُبُلَنَاؕ وَلَنَصْبِرَنَّ عَلٰى مَاۤ اٰذَيْتُمُوْنَا
আমাদের কী হয়েছে যে, আমরা আল্লাহর উপর নির্ভর করব না? তিনিই তো আমাদেরকে পথপ্রদর্শন করেছেন। তোমরা আমাদেরকে যে কষ্ট দিচ্ছ, অবশ্যই আমরা তাতে ধৈর্যধারণ করব। (সূরা ইবরাহীম- ১২)
ব্যাখ্যা : প্রকৃত ধৈর্যধারণকারী তারা, যারা নিজেদের প্রবৃত্তি ও আকাঙ্ক্ষা নিয়ন্ত্রণ করে, নিজেদের আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখে, আল্লাহর নাফরমানিতে বিভিন্ন লোভনীয় সুযোগসুবিধা থাকা সত্ত্বেও নিজেদের অবস্থানে অটল থাকে এবং আল্লাহর হুকুম মেনে চলার পথে যেসব ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দেয় সেগুলো সহ্য করে যেতে থাকে। এ দৃষ্টিতে বিচার করলে মুমিনগণ মূলত পুরোপুরি একটি সবরের জীবন-যাপন করে। কারণ সে আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় এবং আখিরাতের স্থায়ী পরিণামের প্রতি দৃষ্টি রেখে এ দুনিয়ায় আত্মসংযম করতে থাকে এবং প্রতিটি পাপ প্রবণতার মুকাবিলা করে।
فَاعْبُدْهُ وَاصْطَبِرْ لِعِبَادَتِهٖ
তোমরা তাঁরই ইবাদাত করো এবং তাঁর ইবাদাতে ধৈর্যশীল থাকো। (সূরা মারইয়াম- ৬৫)
বিপদাপদে ধৈর্যধারণ করতে হবে :
وَالصَّابِرِيْنَ فِى الْبَأْسَآءِ وَالضَّرَّآءِ وَحِيْنَ الْبَأْسِؕ اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ صَدَقُوْاؕ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُتَّقُوْنَ
যারা অভাবে, কষ্টে এবং যুদ্ধকালে ধৈর্যশীল, তারাই সত্যপরায়ণ এবং তারাই মুত্তাক্বী। (সূরা বাক্বারা- ১৭৭)
মানুষের কষ্টদায়ক কথা ও কর্মের উপর ধৈর্যধারণ করতে হবে :
وَاصْبِرْ عَلٰى مَا يَقُوْلُوْنَ وَاهْجُرْهُمْ هَجْرًا جَمِيْلًا
লোকেরা যা বলে, তাতে তুমি ধৈর্যধারণ করো এবং তাদেরকে উত্তম পন্থায় পরিহার করে চলো। (সূরা মুয্যাম্মিল- ১০)
وَجَعَلْنَا بَعْضَكُمْ لِبَعْضٍ فِتْنَةًؕ اَتَصْبِرُوْنَۚ وَكَانَ رَبُّكَ بَصِيْرًا
হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে একে অপরের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ বানিয়েছি। অতএব তোমরা কি ধৈর্যধারণ করবে? তোমার প্রতিপালক সবকিছু দেখেন। (সূরা ফুরক্বান- ২০)
দাওয়াতী কাজে বিরোধিতা আসলে ধৈর্যধারণ করতে হবে :
يَا بُنَيَّ اَقِمِ الصَّلَاةَ وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوْفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَاصْبِرْ عَلٰى مَاۤ اَصَابَكَؕ اِنَّ ذٰلِكَ مِنْ عَزْمِ الْاُمُوْرِ
হে আমার ছেলে! সালাত কায়েম করো, সৎকাজের আদেশ দাও, মন্দকাজ হতে নিষেধ করো এবং তোমার উপর যে বিপদ আসে তাতে ধৈর্যধারণ করো। নিশ্চয় এটা দৃঢ় সংকল্পের কাজ। (সূরা লুক্বমান- ১৭)
শত্রুর নির্যাতনে ধৈর্যধারণ করতে হবে :
وَمَا لَنَاۤ اَلَّا نَتَوَكَّلَ عَلَى اللهِ وَقَدْ هَدَانَا سُبُلَنَاؕ وَلَنَصْبِرَنَّ عَلٰى مَاۤ اٰذَيْتُمُوْنَا
আমাদের কী হয়েছে যে, আমরা আল্লাহর উপর নির্ভর করব না? তিনিই তো আমাদেরকে পথপ্রদর্শন করেছেন। তোমরা আমাদেরকে যে কষ্ট দিচ্ছ, অবশ্যই আমরা তাতে ধৈর্যধারণ করব। (সূরা ইবরাহীম- ১২)
ব্যাখ্যা : প্রকৃত ধৈর্যধারণকারী তারা, যারা নিজেদের প্রবৃত্তি ও আকাঙ্ক্ষা নিয়ন্ত্রণ করে, নিজেদের আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখে, আল্লাহর নাফরমানিতে বিভিন্ন লোভনীয় সুযোগসুবিধা থাকা সত্ত্বেও নিজেদের অবস্থানে অটল থাকে এবং আল্লাহর হুকুম মেনে চলার পথে যেসব ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দেয় সেগুলো সহ্য করে যেতে থাকে। এ দৃষ্টিতে বিচার করলে মুমিনগণ মূলত পুরোপুরি একটি সবরের জীবন-যাপন করে। কারণ সে আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় এবং আখিরাতের স্থায়ী পরিণামের প্রতি দৃষ্টি রেখে এ দুনিয়ায় আত্মসংযম করতে থাকে এবং প্রতিটি পাপ প্রবণতার মুকাবিলা করে।
ধৈর্যধারণ করা মুমিনের উত্তম বৈশিষ্ট্য :
اَلصَّابِرِيْنَ وَالصَّادِقِيْنَ وَالْقَانِتِيْنَ وَالْمُنْفِقِيْنَ وَالْمُسْتَغْفِرِيْنَ بِالْاَسْحَارِ
তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, বিনয়ী, দানকারী এবং শেষরাত্রে ক্ষমা প্রার্থনাকারী। (সূরা আলে ইমরান- ১৭)
সবর করা দৃঢ়প্রত্যয়ের কাজ :
وَلَمَنْ صَبَرَ وَغَفَرَ اِنَّ ذٰلِكَ لَمِنْ عَزْمِ الْأُمُوْرِ
যে ধৈর্যধারণ করে এবং ক্ষমা করে দেয়, তা অবশ্যই দৃঢ় সাহসীকতাপূর্ণ কর্মসমূহের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা শূরা- ৪৩)
ধৈর্যশীলরাই আল্লাহর পথে জীবন উৎসর্গ করতে পারে :
قَالَ يَاۤ اَبَتِ افْعَلْ مَا تُؤْمَرُؗ سَتَجِدُنِيْۤ اِنْ شَآءَ اللهُ مِنَ الصَّابِرِيْنَ
সে বলল, হে আমার বাবা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে তা পূর্ণ করুন। ইন্শা-আল্লাহ, আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত হিসেবেই পাবেন। (সূরা সাফ্ফাত- ১০২)
ধৈর্যধারণ করা শত্রুর উপর বিজয় লাভের মাধ্যম :
وَاِنْ تَصْبِرُوْا وَتَتَّقُوْا لَا يَضُرُّكُمْ كَيْدُهُمْ شَيْئًا
যদি তোমরা ধৈর্যধারণ কর এবং তাক্বওয়া অবলম্বন কর, তাহলে তাদের চক্রান্ত তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। (সূরা আলে ইমরান- ১২০)
ধৈর্যধারণ করা আল্লাহর সাহায্য লাভের মাধ্যম :
وَاسْتَعِيْنُوْا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِؕ وَاِنَّهَا لَكَبِيْرَةٌ اِلَّا عَلَى الْخَاشِعِيْنَ
আর তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয় এ কাজ খুবই কঠিন, তবে বিনয়ীগণ ব্যতীত। (সূরা বাক্বারা- ৪৫)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اسْتَعِيْنُوْا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِؕ اِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِيْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য কামনা করো। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন। (সূরা বাক্বারা- ১৫৩)
আল্লাহ ধৈর্যশীলদেরকে ভালোবাসেন :
وَاللهُ يُحِبُّ الصَّابِرِيْنَ
আল্লাহ ধৈর্যশীলদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৪৬)
ধৈর্যশীলদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ :
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوْفِ وَالْجُوْعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الْاَمْوَالِ وَالْاَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِؕ وَبَشِّرِ الصَّابِرِيْنَ
নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করব ভয়, ক্ষুধা এবং ধনসম্পদ, প্রাণ ও শস্যের ক্ষতি- এসব দ্বারা। সুতরাং তুমি (এসব বিপদাপদে) ধৈর্যশীলদেরকে সুসংবাদ প্রদান করো। (সূরা বাক্বারা- ১৫৫)
আল্লাহ ধৈর্যশীলদেরকে অগণিত পুরস্কার দান করবেন :
اِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُوْنَ اَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ
নিশ্চয় ধৈর্যশীলদেরকে তাদের পুরস্কার অপরিমিতভাবে দেয়া হবে। (সূরা যুমার- ১০)
ধৈর্যশীলদের পুরস্কার নষ্ট করা হবে না :
وَاصْبِرْ فَاِنَّ اللهَ لَا يُضِيْعُ اَجْرَ الْمُحْسِنِيْنَ
তুমি ধৈর্যধারণ করো; নিশ্চয় আললাহ সৎকর্মপরায়ণদের শ্রমফল নষ্ট করেন না। (সূরা হুদ- ১১৫)
ধৈর্যশীলরা জান্নাতবাসী হবে :
اُولٰٓئِكَ يُجْزَوْنَ الْغُرْفَةَ بِمَا صَبَرُوْا وَيُلَقَّوْنَ فِيْهَا تَحِيَّةً وَّسَلَامًا
তাদেরকে প্রতিদান দেয়া হবে জান্নাতের সুউচ্চ কক্ষ, যেহেতু তারা ছিল ধৈর্যশীল। সেখানে তাদেরকে অভ্যর্থনা করা হবে অভিবাদন ও সালাম সহকারে। (সূরা ফুরক্বান- ৭৫)
ব্যাখ্যা : ধৈর্যধারণকারী বলতে এমন লোকদেরকে বুঝায়, যারা সবধরনের লোভ-লালসা ও কামনা-বাসনার বিপরীতে সততার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে। এ দুনিয়ায় সত্য ও ন্যায়ের পথ অবলম্বন করলে যেসব ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়, তারা সেগুলোকে সহ্য করে। দুনিয়ায় অবৈধ পন্থা অবলম্বন করলে যেসব লাভ পাওয়া যেতে পারে, তারা সেগুলোকে দূরে নিক্ষেপ করে। তারা ভালো কাজের সুফল লাভ করার জন্য সে সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে প্রস্তুত থাকে, যে সময়টি পার্থিব জীবনের অবসানের পর অন্য জগতে আসবে।
اَلصَّابِرِيْنَ وَالصَّادِقِيْنَ وَالْقَانِتِيْنَ وَالْمُنْفِقِيْنَ وَالْمُسْتَغْفِرِيْنَ بِالْاَسْحَارِ
তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, বিনয়ী, দানকারী এবং শেষরাত্রে ক্ষমা প্রার্থনাকারী। (সূরা আলে ইমরান- ১৭)
সবর করা দৃঢ়প্রত্যয়ের কাজ :
وَلَمَنْ صَبَرَ وَغَفَرَ اِنَّ ذٰلِكَ لَمِنْ عَزْمِ الْأُمُوْرِ
যে ধৈর্যধারণ করে এবং ক্ষমা করে দেয়, তা অবশ্যই দৃঢ় সাহসীকতাপূর্ণ কর্মসমূহের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা শূরা- ৪৩)
ধৈর্যশীলরাই আল্লাহর পথে জীবন উৎসর্গ করতে পারে :
قَالَ يَاۤ اَبَتِ افْعَلْ مَا تُؤْمَرُؗ سَتَجِدُنِيْۤ اِنْ شَآءَ اللهُ مِنَ الصَّابِرِيْنَ
সে বলল, হে আমার বাবা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে তা পূর্ণ করুন। ইন্শা-আল্লাহ, আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত হিসেবেই পাবেন। (সূরা সাফ্ফাত- ১০২)
ধৈর্যধারণ করা শত্রুর উপর বিজয় লাভের মাধ্যম :
وَاِنْ تَصْبِرُوْا وَتَتَّقُوْا لَا يَضُرُّكُمْ كَيْدُهُمْ شَيْئًا
যদি তোমরা ধৈর্যধারণ কর এবং তাক্বওয়া অবলম্বন কর, তাহলে তাদের চক্রান্ত তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। (সূরা আলে ইমরান- ১২০)
ধৈর্যধারণ করা আল্লাহর সাহায্য লাভের মাধ্যম :
وَاسْتَعِيْنُوْا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِؕ وَاِنَّهَا لَكَبِيْرَةٌ اِلَّا عَلَى الْخَاشِعِيْنَ
আর তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয় এ কাজ খুবই কঠিন, তবে বিনয়ীগণ ব্যতীত। (সূরা বাক্বারা- ৪৫)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اسْتَعِيْنُوْا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِؕ اِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِيْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য কামনা করো। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন। (সূরা বাক্বারা- ১৫৩)
আল্লাহ ধৈর্যশীলদেরকে ভালোবাসেন :
وَاللهُ يُحِبُّ الصَّابِرِيْنَ
আল্লাহ ধৈর্যশীলদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৪৬)
ধৈর্যশীলদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ :
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوْفِ وَالْجُوْعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الْاَمْوَالِ وَالْاَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِؕ وَبَشِّرِ الصَّابِرِيْنَ
নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করব ভয়, ক্ষুধা এবং ধনসম্পদ, প্রাণ ও শস্যের ক্ষতি- এসব দ্বারা। সুতরাং তুমি (এসব বিপদাপদে) ধৈর্যশীলদেরকে সুসংবাদ প্রদান করো। (সূরা বাক্বারা- ১৫৫)
আল্লাহ ধৈর্যশীলদেরকে অগণিত পুরস্কার দান করবেন :
اِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُوْنَ اَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ
নিশ্চয় ধৈর্যশীলদেরকে তাদের পুরস্কার অপরিমিতভাবে দেয়া হবে। (সূরা যুমার- ১০)
ধৈর্যশীলদের পুরস্কার নষ্ট করা হবে না :
وَاصْبِرْ فَاِنَّ اللهَ لَا يُضِيْعُ اَجْرَ الْمُحْسِنِيْنَ
তুমি ধৈর্যধারণ করো; নিশ্চয় আললাহ সৎকর্মপরায়ণদের শ্রমফল নষ্ট করেন না। (সূরা হুদ- ১১৫)
ধৈর্যশীলরা জান্নাতবাসী হবে :
اُولٰٓئِكَ يُجْزَوْنَ الْغُرْفَةَ بِمَا صَبَرُوْا وَيُلَقَّوْنَ فِيْهَا تَحِيَّةً وَّسَلَامًا
তাদেরকে প্রতিদান দেয়া হবে জান্নাতের সুউচ্চ কক্ষ, যেহেতু তারা ছিল ধৈর্যশীল। সেখানে তাদেরকে অভ্যর্থনা করা হবে অভিবাদন ও সালাম সহকারে। (সূরা ফুরক্বান- ৭৫)
ব্যাখ্যা : ধৈর্যধারণকারী বলতে এমন লোকদেরকে বুঝায়, যারা সবধরনের লোভ-লালসা ও কামনা-বাসনার বিপরীতে সততার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে। এ দুনিয়ায় সত্য ও ন্যায়ের পথ অবলম্বন করলে যেসব ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়, তারা সেগুলোকে সহ্য করে। দুনিয়ায় অবৈধ পন্থা অবলম্বন করলে যেসব লাভ পাওয়া যেতে পারে, তারা সেগুলোকে দূরে নিক্ষেপ করে। তারা ভালো কাজের সুফল লাভ করার জন্য সে সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে প্রস্তুত থাকে, যে সময়টি পার্থিব জীবনের অবসানের পর অন্য জগতে আসবে।
প্রশংসা পাওয়ার প্রকৃত মালিক একমাত্র আল্লাহ :
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহর জন্য, যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক। (সূরা ফাতিহা- ১)
শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা এবং শেষেও তাঁর প্রশংসা :
لَهُ الْحَمْدُ فِى الْاُوْلٰى وَالْاٰخِرَةِ وَلَهُ الْحُكْمُ وَاِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ
শুরুতে এবং শেষে সমস্ত প্রশংসা তাঁরই, বিধানও তাঁরই; আর তোমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে।
(সূরা ক্বাসাস- ৭০)
‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে আল্লাহর প্রশংসা করতে হবে :
قُلِ الْحَمْدُ لِلّٰهِ وَسَلَامٌ عَلٰى عِبَادِهِ الَّذِيْنَ اصْطَفٰى
বলো, সকল প্রশংসা আল্লাহরই এবং শান্তি তাঁর মনোনীত বান্দাদের প্রতি। (সূরা নামল- ৫৯)
আল্লাহর প্রশংসা করা মুমিনের অন্যতম গুণ :
اَلتَّآئِبُوْنَ الْعَابِدُوْنَ الْحَامِدُوْنَ
তারা তাওবাকারী, ইবাদাতকারী ও আল্লাহর প্রশংসাকারী। (সূরা তাওবা- ১১২)
মুমিনগণ জান্নাতেও আল্লাহর প্রশংসা করবে :
وَقَالُوا الْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ صَدَقَنَا وَعْدَهٗ وَاَوْرَثَنَا الْاَرْضَ نَتَبَوَّاُ مِنَ الْجَنَّةِ حَيْثُ نَشَآءُۚ فَنِعْمَ اَجْرُ الْعَامِلِيْنَ
জান্নাতীরা বলবে, যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের প্রতি তাঁর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছেন এবং আমাদেরকে এই ভূমির অধিকারী করেছেন, আমরা জান্নাতে যেখানে ইচ্ছা বসবাস করব। সুতরাং (সৎ) আমলকারীদের বিনিময় কতই না উত্তম! (সূরা যুমার- ৭৪)
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহর জন্য, যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক। (সূরা ফাতিহা- ১)
শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা এবং শেষেও তাঁর প্রশংসা :
لَهُ الْحَمْدُ فِى الْاُوْلٰى وَالْاٰخِرَةِ وَلَهُ الْحُكْمُ وَاِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ
শুরুতে এবং শেষে সমস্ত প্রশংসা তাঁরই, বিধানও তাঁরই; আর তোমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে।
(সূরা ক্বাসাস- ৭০)
‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে আল্লাহর প্রশংসা করতে হবে :
قُلِ الْحَمْدُ لِلّٰهِ وَسَلَامٌ عَلٰى عِبَادِهِ الَّذِيْنَ اصْطَفٰى
বলো, সকল প্রশংসা আল্লাহরই এবং শান্তি তাঁর মনোনীত বান্দাদের প্রতি। (সূরা নামল- ৫৯)
আল্লাহর প্রশংসা করা মুমিনের অন্যতম গুণ :
اَلتَّآئِبُوْنَ الْعَابِدُوْنَ الْحَامِدُوْنَ
তারা তাওবাকারী, ইবাদাতকারী ও আল্লাহর প্রশংসাকারী। (সূরা তাওবা- ১১২)
মুমিনগণ জান্নাতেও আল্লাহর প্রশংসা করবে :
وَقَالُوا الْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ صَدَقَنَا وَعْدَهٗ وَاَوْرَثَنَا الْاَرْضَ نَتَبَوَّاُ مِنَ الْجَنَّةِ حَيْثُ نَشَآءُۚ فَنِعْمَ اَجْرُ الْعَامِلِيْنَ
জান্নাতীরা বলবে, যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের প্রতি তাঁর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছেন এবং আমাদেরকে এই ভূমির অধিকারী করেছেন, আমরা জান্নাতে যেখানে ইচ্ছা বসবাস করব। সুতরাং (সৎ) আমলকারীদের বিনিময় কতই না উত্তম! (সূরা যুমার- ৭৪)
তিনিই সবকিছুর প্রভু :
فَلِلّٰهِ الْحَمْدُ رَبِّ السَّمَاوَاتِ وَرَبِّ الْاَرْضِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
সকল প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী ও জগতসমূহের প্রতিপালক। (সূরা জাসিয়া- ৩৬)
তিনিই সবকিছুর স্রষ্টা :
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ وَجَعَلَ الظُّلُمَاتِ وَالنُّوْرَ
সকল প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন এবং সৃষ্টি করেছেন অন্ধকার ও আলো।
(সূরা আন‘আম- ১)
তিনিই কুরআন নাযিল করেছেন :
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْۤ اَنْزَلَ عَلٰى عَبْدِهِ الْكِتَابَ وَلَمْ يَجْعَلْ لَّهٗ عِوَجًا
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি তাঁর বান্দার প্রতি এ কিতাব অবতীর্ণ করেছেন এবং তাতে কোন বক্রতা রাখেননি। (সূরা কাহফ- ১)
فَلِلّٰهِ الْحَمْدُ رَبِّ السَّمَاوَاتِ وَرَبِّ الْاَرْضِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
সকল প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী ও জগতসমূহের প্রতিপালক। (সূরা জাসিয়া- ৩৬)
তিনিই সবকিছুর স্রষ্টা :
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ وَجَعَلَ الظُّلُمَاتِ وَالنُّوْرَ
সকল প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন এবং সৃষ্টি করেছেন অন্ধকার ও আলো।
(সূরা আন‘আম- ১)
তিনিই কুরআন নাযিল করেছেন :
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْۤ اَنْزَلَ عَلٰى عَبْدِهِ الْكِتَابَ وَلَمْ يَجْعَلْ لَّهٗ عِوَجًا
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি তাঁর বান্দার প্রতি এ কিতাব অবতীর্ণ করেছেন এবং তাতে কোন বক্রতা রাখেননি। (সূরা কাহফ- ১)
আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করার নির্দেশ :
فَاذْكُرُوْنِيْۤ اَذْكُرْكُمْ وَاشْكُرُوْا لِيْ وَلَا تَكْفُرُوْنِ
অতএব তোমরা আমাকে স্মরণ করো, (তাহলে) আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব। আর তোমরা আমার শুকরিয়া আদায় করো এবং অকৃতজ্ঞ হয়ো না। (সূরা বাক্বারা- ১৫২)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُلُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ وَاشْكُرُوْا لِلّٰهِ اِنْ كُنْتُمْ اِيَّاهُ تَعْبُدُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে জীবিকা হিসেবে যা দান করেছি সেই পবিত্র বস্তুসমূহ হতে খাও এবং আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো, যদি তোমরা তাঁরই ইবাদাত করে থাক। (সূরা বাক্বারা- ১৭২)
আল্লাহর রিযিক ভোগ করার জন্য শুকরিয়া আদায় করতে হবে :
وَرَزَقَكُمْ مِّنَ الطَّيِّبَاتِ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
তিনিই তোমাদেরকে উত্তম বস্তুসমূহ জীবিকা হিসেবে দান করেন, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হও। (সূরা আনফাল- ২৬)
ব্যাখ্যা : যে ব্যক্তি নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন করে এবং তাঁকেই রিযিকদাতা মনে করে, সে কখনো আল্লাহকে ভুলে থাকা লোকদের মতো সংকীর্ণমনের পরিচয় দিতে পারে না। সে অনেক রিযিক লাভ করলে অহংকারে মত্ত হয় না। বরং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে এবং আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি মমতা ও ঔদার্যপূর্ণ ব্যবহার করে। সে কখনো আল্লাহর সম্পদ দ্বীনের পথে ব্যয় করতে কুণ্ঠাবোধ করে না। সংকীর্ণ জীবিকা লাভ করুক বা অনাহারে থাকুক সর্বাবস্থায় সে ধৈর্যধারণ করে, কখনো নিজ আমানতদারী ও আত্মমর্যাদা বিসর্জন দেয় না। শেষ সময় পর্যন্ত আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহের আশায় বসে থাকে। কোন নাস্তিক বা মুশরিক এ নৈতিক শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করতে পারে না।
সকল নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে হবে :
وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهٗ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
আল্লাহ তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করতে চান, যাতে করে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর। (সূরা মায়েদা- ৬)
فَاذْكُرُوْنِيْۤ اَذْكُرْكُمْ وَاشْكُرُوْا لِيْ وَلَا تَكْفُرُوْنِ
অতএব তোমরা আমাকে স্মরণ করো, (তাহলে) আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব। আর তোমরা আমার শুকরিয়া আদায় করো এবং অকৃতজ্ঞ হয়ো না। (সূরা বাক্বারা- ১৫২)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُلُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ وَاشْكُرُوْا لِلّٰهِ اِنْ كُنْتُمْ اِيَّاهُ تَعْبُدُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে জীবিকা হিসেবে যা দান করেছি সেই পবিত্র বস্তুসমূহ হতে খাও এবং আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো, যদি তোমরা তাঁরই ইবাদাত করে থাক। (সূরা বাক্বারা- ১৭২)
আল্লাহর রিযিক ভোগ করার জন্য শুকরিয়া আদায় করতে হবে :
وَرَزَقَكُمْ مِّنَ الطَّيِّبَاتِ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
তিনিই তোমাদেরকে উত্তম বস্তুসমূহ জীবিকা হিসেবে দান করেন, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হও। (সূরা আনফাল- ২৬)
ব্যাখ্যা : যে ব্যক্তি নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন করে এবং তাঁকেই রিযিকদাতা মনে করে, সে কখনো আল্লাহকে ভুলে থাকা লোকদের মতো সংকীর্ণমনের পরিচয় দিতে পারে না। সে অনেক রিযিক লাভ করলে অহংকারে মত্ত হয় না। বরং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে এবং আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি মমতা ও ঔদার্যপূর্ণ ব্যবহার করে। সে কখনো আল্লাহর সম্পদ দ্বীনের পথে ব্যয় করতে কুণ্ঠাবোধ করে না। সংকীর্ণ জীবিকা লাভ করুক বা অনাহারে থাকুক সর্বাবস্থায় সে ধৈর্যধারণ করে, কখনো নিজ আমানতদারী ও আত্মমর্যাদা বিসর্জন দেয় না। শেষ সময় পর্যন্ত আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহের আশায় বসে থাকে। কোন নাস্তিক বা মুশরিক এ নৈতিক শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করতে পারে না।
সকল নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে হবে :
وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهٗ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
আল্লাহ তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করতে চান, যাতে করে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর। (সূরা মায়েদা- ৬)
কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন মুক্তির উপায় :
مَا يَفْعَلُ اللّٰهُ بِعَذَابِكُمْ اِنْ شَكَرْتُمْ وَاٰمَنْتُمْؕ وَكَانَ اللهُ شَاكِرًا عَلِيْمًا
তোমরা যদি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর ও ঈমান আনয়ন কর, তবে তোমাদেরকে শাস্তি দিয়ে আল্লাহর কী লাভ? আল্লাহ কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী ও সর্বজ্ঞ। (সূরা নিসা- ১৪৭)
ব্যাখ্যা : যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাক, তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে অনর্থক কোন শাস্তি দেবেন না। হৃদয়ের সমগ্র অনুভূতি দিয়ে তাঁর অনুগ্রহের স্বীকৃতি দেয়া এবং নিজের কার্যকলাপের মাধ্যমে অনুগৃহীত হওয়ার প্রমাণ পেশ করাই হচ্ছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সঠিক উপায়। এসব কাজের সমবেত রূপই হচ্ছে ‘শুকর’। এই শুকরের দাবী হচ্ছে : প্রথমত, অনুগ্রহকে অনুগ্রহকারীর অবদান বলে স্বীকার করতে হবে। অনুগ্রহের স্বীকৃতি দেয়া এবং শুকরিয়া আদায় করার ক্ষেত্রে অনুগ্রহকারীর সাথে আর কাউকে শরীক করা যাবে না। দ্বিতীয়ত, অনুগ্রহকারীর প্রতি ভালোবাসা, বিশ্বস্ততা ও আনুগত্যের অনুভূতিতে নিজের হৃদয় ভরপুর থাকবে এবং অনুগ্রহকারীর বিরোধীদের প্রতি বিন্দুমাত্র আন্তরিকতা ও বিশ্বস্ততার সম্পর্ক থাকবে না। তৃতীয়ত, কার্যত অনুগ্রহকারীর আনুগত্য করতে হবে, তাঁর হুকুম মেনে চলতে হবে এবং তিনি যে নিয়ামতগুলো দান করেছেন সেগুলো তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবহার করতে হবে।
শুকরিয়া আদায় করলে নিজেরই উপকার হয় :
وَمَنْ يَّشْكُرْ فَاِنَّمَا يَشْكُرُ لِنَفْسِهٖۚ وَمَنْ كَفَرَ فَاِنَّ اللهَ غَنِيٌّ حَمِيْدٌ
যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে তো তা নিজের কল্যাণের জন্যই করে। আর যে অকৃতজ্ঞ হয় (সে নিজেরই ক্ষতি সাধন করে); নিশ্চয় আল্লাহ অভাবমুক্ত ও প্রশংসিত। (সূরা লুক্বমান- ১২)
وَمَنْ شَكَرَ فَاِنَّمَا يَشْكُرُ لِنَفْسِهٖۚ وَمَنْ كَفَرَ فَاِنَّ رَبِّيْ غَنِيٌّ كَرِيْمٌ
যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে তো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে নিজেরই কল্যাণের জন্য। আর কেউ যদি অকৃতজ্ঞ হয়, তবে (তার জেনে রাখা উচিত) আমার প্রতিপালক অভাবমুক্ত ও সম্মানিত। (সূরা নামল- ৪০)
কৃতজ্ঞ থাকলে আল্লাহ খুশী হন :
اِنْ تَكْفُرُوْا فَاِنَّ اللهَ غَنِيٌّ عَنْكُمْؕ وَلَا يَرْضٰى لِعِبَادِهِ الْكُفْرَۚ وَاِنْ تَشْكُرُوْا يَرْضَهُ لَكُمْ
যদি তোমরা কুফরী কর, তবে (জেনে রেখো) আল্লাহ তোমাদের মুখাপেক্ষী নন। তাছাড়া তিনি তার বান্দাদের জন্য কুফরী পছন্দ করেন না। আর যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও, তবে তিনি তোমাদের জন্য তা পছন্দ করেন। (সূরা যুমার- ৭)
অবশ্যই আল্লাহ কৃতজ্ঞতার পুরস্কার দান করবেন :
وَسَنَجْزِى الشَّاكِرِيْنَ
অচিরেই আমি কৃতজ্ঞদেরকে পুরস্কার দান করব। (সূরা আলে ইমরান- ১৪৫)
আল্লাহ শুকরিয়া আদায়কারী বান্দাদের সম্পর্কে জানেন :
اَلَيْسَ اللهُ بِاَعْلَمَ بِالشَّاكِرِيْنَ
আল্লাহ কি কৃতজ্ঞ লোকদের সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত নন? (সূরা আন‘আম- ৫৩)
শুকরিয়া আদায় করলে নিয়ামত বৃদ্ধি পায় :
وَاِذْ تَاَذَّنَ رَبُّكُمْ لَئِنْ شَكَرْتُمْ لَاَزِيْدَنَّكُمْ وَلَئِنْ كَفَرْتُمْ اِنَّ عَذَابِيْ لَشَدِيْدٌ
স্মরণ করো, যখন তোমাদের প্রতিপালক ঘোষণা করেন, যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও তবে অবশ্যই আমি তোমাদেরকে নিয়ামত বৃদ্ধি করে দেব। আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, (তবে জেনে রেখো) নিশ্চয় আমার শাস্তি খুবই কঠোর। (সূরা ইবরাহীম- ৭)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ যদি তোমরা আমার নিয়ামতসমূহের অধিকার ও মর্যাদা চিহ্নিত করে সেগুলোকে সঠিকভাবে ব্যবহার কর, আমার বিধানের মুকাবিলায় বিদ্রোহ করতে উদ্বুদ্ধ না হও এবং আমার অনুগ্রহ স্বীকার করে আমার বিধান মেনে চল, তাহলে আমার নিয়ামত আরো বাড়িয়ে দেব।
শুকরিয়া আদায়কারী লোকের সংখ্যা খুবই কম :
وَقَلِيْلٌ مِّنْ عِبَادِيَ الشَّكُوْرُ
আমার বান্দাদের মধ্যে খুব অল্পই কৃতজ্ঞ। (সূরা সাবা- ১৩)
اِنَّ اللهَ لَذُوْ فَضْلٍ عَلَى النَّاسِ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَشْكُرُوْنَ
নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি অনুগ্রহশীল; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। (সূরা মু’মিন- ৬১)
وَهُوَ الَّذِيْۤ اَنْشَاَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْاَبْصَارَ وَالْاَفْئِدَةَؕ قَلِيْلًا مَّا تَشْكُرُوْنَ
তিনিই তোমাদের জন্য কর্ণ, চক্ষু ও অন্তঃকরণ সৃষ্টি করেছেন; কিন্তু তোমরা খুব অল্পই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাক। (সূরা মু’মিনূন- ৭৮)
নেক আমলের মাধ্যমে শুকরিয়া আদায় করতে হয় :
اِعْمَلُوْاۤ اٰلَ دَاوُوْدَ شُكْرًا
হে দাউদের সম্প্রদায়! কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে কাজ করে যাও। (সূরা সাবা- ১৩)
ব্যাখ্যা : কৃতজ্ঞতা শুধু মৌখিকভাবেই সীমাবদ্ধ থাকবে না বরং কথা, কাজ ও চিন্তা- এ তিন পর্যায়েই পরিব্যাপ্ত হবে। তার কণ্ঠে সর্বদা আল্লাহর অনুগ্রহের স্বীকৃতি উচ্চারিত হবে। কাজকর্মেও সে আল্লাহর হুকুম মেনে চলবে, তাঁর হুকুম অমান্য করা হতে দূরে থাকবে, তাঁর সন্তুষ্টির জন্য প্রচেষ্টা করতে থাকবে, তাঁর দেয়া নিয়ামতসমূহ তাঁর বান্দাদের কাছে পৌঁছে দেবে এবং তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারীদের সাথে সংগ্রাম করে এ কথা প্রমাণ করবে যে, প্রকৃতপক্ষে সে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ।
শুকরিয়া আদায়ের তাওফীক লাভের দু‘আ :
رَبِّ اَوْزِعْنِيْۤ اَنْ اَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِيْۤ اَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلٰى وَالِدَيَّ وَاَنْ اَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضَاهُ وَاَصْلِحْ لِيْ فِيْ ذُرِّيَّتِيْۚ اِنِّيْ تُبْتُ اِلَيْكَ وَاِنِّيْ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ
হে আমার রব! আমাকে তাওফীক দিন, যেন আমি সেসব নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে পারি, যা আপনি আমাকে ও আমার পিতামাতাকে দিয়েছেন এবং যেন আমি এমন নেক আমল করতে পারি, যা আপনি পছন্দ করেন। আর আমার সন্তানদেরকেও সংশোধন করে দিন। নিশ্চয় আমি আপনারই নিকট প্রত্যাবর্তন করছি; আর আমি আপনার অনুগত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা আহকাফ- ১৫)
مَا يَفْعَلُ اللّٰهُ بِعَذَابِكُمْ اِنْ شَكَرْتُمْ وَاٰمَنْتُمْؕ وَكَانَ اللهُ شَاكِرًا عَلِيْمًا
তোমরা যদি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর ও ঈমান আনয়ন কর, তবে তোমাদেরকে শাস্তি দিয়ে আল্লাহর কী লাভ? আল্লাহ কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী ও সর্বজ্ঞ। (সূরা নিসা- ১৪৭)
ব্যাখ্যা : যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাক, তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে অনর্থক কোন শাস্তি দেবেন না। হৃদয়ের সমগ্র অনুভূতি দিয়ে তাঁর অনুগ্রহের স্বীকৃতি দেয়া এবং নিজের কার্যকলাপের মাধ্যমে অনুগৃহীত হওয়ার প্রমাণ পেশ করাই হচ্ছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সঠিক উপায়। এসব কাজের সমবেত রূপই হচ্ছে ‘শুকর’। এই শুকরের দাবী হচ্ছে : প্রথমত, অনুগ্রহকে অনুগ্রহকারীর অবদান বলে স্বীকার করতে হবে। অনুগ্রহের স্বীকৃতি দেয়া এবং শুকরিয়া আদায় করার ক্ষেত্রে অনুগ্রহকারীর সাথে আর কাউকে শরীক করা যাবে না। দ্বিতীয়ত, অনুগ্রহকারীর প্রতি ভালোবাসা, বিশ্বস্ততা ও আনুগত্যের অনুভূতিতে নিজের হৃদয় ভরপুর থাকবে এবং অনুগ্রহকারীর বিরোধীদের প্রতি বিন্দুমাত্র আন্তরিকতা ও বিশ্বস্ততার সম্পর্ক থাকবে না। তৃতীয়ত, কার্যত অনুগ্রহকারীর আনুগত্য করতে হবে, তাঁর হুকুম মেনে চলতে হবে এবং তিনি যে নিয়ামতগুলো দান করেছেন সেগুলো তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবহার করতে হবে।
শুকরিয়া আদায় করলে নিজেরই উপকার হয় :
وَمَنْ يَّشْكُرْ فَاِنَّمَا يَشْكُرُ لِنَفْسِهٖۚ وَمَنْ كَفَرَ فَاِنَّ اللهَ غَنِيٌّ حَمِيْدٌ
যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে তো তা নিজের কল্যাণের জন্যই করে। আর যে অকৃতজ্ঞ হয় (সে নিজেরই ক্ষতি সাধন করে); নিশ্চয় আল্লাহ অভাবমুক্ত ও প্রশংসিত। (সূরা লুক্বমান- ১২)
وَمَنْ شَكَرَ فَاِنَّمَا يَشْكُرُ لِنَفْسِهٖۚ وَمَنْ كَفَرَ فَاِنَّ رَبِّيْ غَنِيٌّ كَرِيْمٌ
যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে তো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে নিজেরই কল্যাণের জন্য। আর কেউ যদি অকৃতজ্ঞ হয়, তবে (তার জেনে রাখা উচিত) আমার প্রতিপালক অভাবমুক্ত ও সম্মানিত। (সূরা নামল- ৪০)
কৃতজ্ঞ থাকলে আল্লাহ খুশী হন :
اِنْ تَكْفُرُوْا فَاِنَّ اللهَ غَنِيٌّ عَنْكُمْؕ وَلَا يَرْضٰى لِعِبَادِهِ الْكُفْرَۚ وَاِنْ تَشْكُرُوْا يَرْضَهُ لَكُمْ
যদি তোমরা কুফরী কর, তবে (জেনে রেখো) আল্লাহ তোমাদের মুখাপেক্ষী নন। তাছাড়া তিনি তার বান্দাদের জন্য কুফরী পছন্দ করেন না। আর যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও, তবে তিনি তোমাদের জন্য তা পছন্দ করেন। (সূরা যুমার- ৭)
অবশ্যই আল্লাহ কৃতজ্ঞতার পুরস্কার দান করবেন :
وَسَنَجْزِى الشَّاكِرِيْنَ
অচিরেই আমি কৃতজ্ঞদেরকে পুরস্কার দান করব। (সূরা আলে ইমরান- ১৪৫)
আল্লাহ শুকরিয়া আদায়কারী বান্দাদের সম্পর্কে জানেন :
اَلَيْسَ اللهُ بِاَعْلَمَ بِالشَّاكِرِيْنَ
আল্লাহ কি কৃতজ্ঞ লোকদের সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত নন? (সূরা আন‘আম- ৫৩)
শুকরিয়া আদায় করলে নিয়ামত বৃদ্ধি পায় :
وَاِذْ تَاَذَّنَ رَبُّكُمْ لَئِنْ شَكَرْتُمْ لَاَزِيْدَنَّكُمْ وَلَئِنْ كَفَرْتُمْ اِنَّ عَذَابِيْ لَشَدِيْدٌ
স্মরণ করো, যখন তোমাদের প্রতিপালক ঘোষণা করেন, যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও তবে অবশ্যই আমি তোমাদেরকে নিয়ামত বৃদ্ধি করে দেব। আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, (তবে জেনে রেখো) নিশ্চয় আমার শাস্তি খুবই কঠোর। (সূরা ইবরাহীম- ৭)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ যদি তোমরা আমার নিয়ামতসমূহের অধিকার ও মর্যাদা চিহ্নিত করে সেগুলোকে সঠিকভাবে ব্যবহার কর, আমার বিধানের মুকাবিলায় বিদ্রোহ করতে উদ্বুদ্ধ না হও এবং আমার অনুগ্রহ স্বীকার করে আমার বিধান মেনে চল, তাহলে আমার নিয়ামত আরো বাড়িয়ে দেব।
শুকরিয়া আদায়কারী লোকের সংখ্যা খুবই কম :
وَقَلِيْلٌ مِّنْ عِبَادِيَ الشَّكُوْرُ
আমার বান্দাদের মধ্যে খুব অল্পই কৃতজ্ঞ। (সূরা সাবা- ১৩)
اِنَّ اللهَ لَذُوْ فَضْلٍ عَلَى النَّاسِ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَشْكُرُوْنَ
নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি অনুগ্রহশীল; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। (সূরা মু’মিন- ৬১)
وَهُوَ الَّذِيْۤ اَنْشَاَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْاَبْصَارَ وَالْاَفْئِدَةَؕ قَلِيْلًا مَّا تَشْكُرُوْنَ
তিনিই তোমাদের জন্য কর্ণ, চক্ষু ও অন্তঃকরণ সৃষ্টি করেছেন; কিন্তু তোমরা খুব অল্পই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাক। (সূরা মু’মিনূন- ৭৮)
নেক আমলের মাধ্যমে শুকরিয়া আদায় করতে হয় :
اِعْمَلُوْاۤ اٰلَ دَاوُوْدَ شُكْرًا
হে দাউদের সম্প্রদায়! কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে কাজ করে যাও। (সূরা সাবা- ১৩)
ব্যাখ্যা : কৃতজ্ঞতা শুধু মৌখিকভাবেই সীমাবদ্ধ থাকবে না বরং কথা, কাজ ও চিন্তা- এ তিন পর্যায়েই পরিব্যাপ্ত হবে। তার কণ্ঠে সর্বদা আল্লাহর অনুগ্রহের স্বীকৃতি উচ্চারিত হবে। কাজকর্মেও সে আল্লাহর হুকুম মেনে চলবে, তাঁর হুকুম অমান্য করা হতে দূরে থাকবে, তাঁর সন্তুষ্টির জন্য প্রচেষ্টা করতে থাকবে, তাঁর দেয়া নিয়ামতসমূহ তাঁর বান্দাদের কাছে পৌঁছে দেবে এবং তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারীদের সাথে সংগ্রাম করে এ কথা প্রমাণ করবে যে, প্রকৃতপক্ষে সে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ।
শুকরিয়া আদায়ের তাওফীক লাভের দু‘আ :
رَبِّ اَوْزِعْنِيْۤ اَنْ اَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِيْۤ اَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلٰى وَالِدَيَّ وَاَنْ اَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضَاهُ وَاَصْلِحْ لِيْ فِيْ ذُرِّيَّتِيْۚ اِنِّيْ تُبْتُ اِلَيْكَ وَاِنِّيْ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ
হে আমার রব! আমাকে তাওফীক দিন, যেন আমি সেসব নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে পারি, যা আপনি আমাকে ও আমার পিতামাতাকে দিয়েছেন এবং যেন আমি এমন নেক আমল করতে পারি, যা আপনি পছন্দ করেন। আর আমার সন্তানদেরকেও সংশোধন করে দিন। নিশ্চয় আমি আপনারই নিকট প্রত্যাবর্তন করছি; আর আমি আপনার অনুগত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা আহকাফ- ১৫)
যিকিরের নির্দেশ :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اذْكُرُوا اللهَ ذِكْرًا كَثِيْرًا
হে ঈমানদারগণ! তোমরা বেশি বেশি আল্লাহকে স্মরণ করো। (সূরা আহযাব- ৪১)
সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর যিকির করার নির্দেশ :
وَاذْكُرِ اسْمَ رَبِّكَ بُكْرَةً وَّاَصِيْلًا
তুমি সকাল-সন্ধ্যায় তোমার প্রতিপালকের নাম স্মরণ করো। (সূরা দাহর- ২৫)
হজ্জের সময় আল্লাহকে স্মরণ করার নির্দেশ :
فَاِذَا قَضَيْتُمْ مَّنَاسِكَكُمْ فَاذْكُرُوا اللهَ كَذِكْرِكُمْ اٰبَآءَكُمْ اَوْ اَشَدَّ ذِكْرًا
অতঃপর যখন তোমরা তোমাদের (হজ্জের) অনুষ্ঠানগুলো সম্পন্ন করে ফেল তখন যেভাবে তোমাদের পিতৃ-পুরুষদেরকে স্মরণ করতে সেভাবে আল্লাহকেও স্মরণ করো; এমনকি তার চেয়ে অধিক হারে স্মরণ করো। (সূরা বাক্বারা- ২০০)
দাওয়াতী কাজের সময়ও যিকির করার নির্দেশ :
اِذْهَبْ اَنْتَ وَاَخُوْكَ بِاٰيَاتِيْ وَلَا تَنِيَا فِيْ ذِكْرِيْ
তুমি ও তোমার ভ্রাতা আমার নিদর্শনসহ যাত্রা করো এবং আমার স্মরণে শৈথিল্য করো না। (সূরা ত্বা-হা- ৪২)
সর্বাবস্থায় আল্লাহর যিকিরের নির্দেশ :
فَاِذَا قَضَيْتُمُ الصَّلَاةَ فَاذْكُرُوا اللهَ قِيَامًا وَّقُعُوْدًا وَّعَلٰى جُنُوْبِكُمْ
যখন তোমরা সালাত সমাপ্ত করবে তখন দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করবে। (সূরা নিসা- ১০৩)
وَاذْكُرُوا اللهَ كَثِيْرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
আল্লাহকে অধিক স্মরণ করবে, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা জুমু‘আ- ১০)
যিকিরের প্রতি উৎসাহ প্রদান :
اَلَمْ يَأْنِ لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَنْ تَخْشَعَ قُلُوْبُهُمْ لِذِكْرِ اللهِ
মুমিনদের কি এখনও সময় আসেনি যে, তাদের অন্তর আল্লাহর স্মরণে ভীত হবে? (সূরা হাদীদ- ১৬)
সাহাবাদের কোন কাজই আল্লাহর স্মরণে বাধা হতো না :
رِجَالٌ لَّا تُلْهِيْهِمْ تِجَارَةٌ وَّلَا بَيْعٌ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَاِقَامِ الصَّلَاةِ وَاِيْتَآءِ الزَّكَاةِ يَخَافُوْنَ يَوْمًا تَتَقَلَّبُ فِيْهِ الْقُلُوْبُ وَالْاَبْصَارُ
তারা এমন লোক, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ হতে এবং সালাত কায়েম ও যাকাত প্রদান হতে বিরত রাখে না। তারা ভয় করে সেদিনকে, যেদিন অনেক অন্তর ও দৃষ্টি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। (সূরা নূর- ৩৭)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اذْكُرُوا اللهَ ذِكْرًا كَثِيْرًا
হে ঈমানদারগণ! তোমরা বেশি বেশি আল্লাহকে স্মরণ করো। (সূরা আহযাব- ৪১)
সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর যিকির করার নির্দেশ :
وَاذْكُرِ اسْمَ رَبِّكَ بُكْرَةً وَّاَصِيْلًا
তুমি সকাল-সন্ধ্যায় তোমার প্রতিপালকের নাম স্মরণ করো। (সূরা দাহর- ২৫)
হজ্জের সময় আল্লাহকে স্মরণ করার নির্দেশ :
فَاِذَا قَضَيْتُمْ مَّنَاسِكَكُمْ فَاذْكُرُوا اللهَ كَذِكْرِكُمْ اٰبَآءَكُمْ اَوْ اَشَدَّ ذِكْرًا
অতঃপর যখন তোমরা তোমাদের (হজ্জের) অনুষ্ঠানগুলো সম্পন্ন করে ফেল তখন যেভাবে তোমাদের পিতৃ-পুরুষদেরকে স্মরণ করতে সেভাবে আল্লাহকেও স্মরণ করো; এমনকি তার চেয়ে অধিক হারে স্মরণ করো। (সূরা বাক্বারা- ২০০)
দাওয়াতী কাজের সময়ও যিকির করার নির্দেশ :
اِذْهَبْ اَنْتَ وَاَخُوْكَ بِاٰيَاتِيْ وَلَا تَنِيَا فِيْ ذِكْرِيْ
তুমি ও তোমার ভ্রাতা আমার নিদর্শনসহ যাত্রা করো এবং আমার স্মরণে শৈথিল্য করো না। (সূরা ত্বা-হা- ৪২)
সর্বাবস্থায় আল্লাহর যিকিরের নির্দেশ :
فَاِذَا قَضَيْتُمُ الصَّلَاةَ فَاذْكُرُوا اللهَ قِيَامًا وَّقُعُوْدًا وَّعَلٰى جُنُوْبِكُمْ
যখন তোমরা সালাত সমাপ্ত করবে তখন দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করবে। (সূরা নিসা- ১০৩)
وَاذْكُرُوا اللهَ كَثِيْرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
আল্লাহকে অধিক স্মরণ করবে, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা জুমু‘আ- ১০)
যিকিরের প্রতি উৎসাহ প্রদান :
اَلَمْ يَأْنِ لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَنْ تَخْشَعَ قُلُوْبُهُمْ لِذِكْرِ اللهِ
মুমিনদের কি এখনও সময় আসেনি যে, তাদের অন্তর আল্লাহর স্মরণে ভীত হবে? (সূরা হাদীদ- ১৬)
সাহাবাদের কোন কাজই আল্লাহর স্মরণে বাধা হতো না :
رِجَالٌ لَّا تُلْهِيْهِمْ تِجَارَةٌ وَّلَا بَيْعٌ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَاِقَامِ الصَّلَاةِ وَاِيْتَآءِ الزَّكَاةِ يَخَافُوْنَ يَوْمًا تَتَقَلَّبُ فِيْهِ الْقُلُوْبُ وَالْاَبْصَارُ
তারা এমন লোক, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ হতে এবং সালাত কায়েম ও যাকাত প্রদান হতে বিরত রাখে না। তারা ভয় করে সেদিনকে, যেদিন অনেক অন্তর ও দৃষ্টি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। (সূরা নূর- ৩৭)
সালাতের মাধ্যমে আল্লাহকে স্মরণ করতে হবে :
وَاَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِيْ
আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম করো। (সূরা ত্বা-হা- ১৪)
যিকির করতে হবে ভীত অবস্থায় মনে মনে :
وَاذْكُرْ رَّبَّكَ فِيْ نَفْسِكَ تَضَرُّعًا وَّخِيْفَةً وَّدُوْنَ الْجَهْرِ مِنَ الْقَوْلِ بِالْغُدُوِّ وَالْاٰصَالِ وَلَا تَكُنْ مِّنَ الْغَافِلِيْنَ
তোমার প্রতিপালককে মনে মনে, সবিনয়ে ও ভীতিসহকারে, অনুচ্চৈঃস্বরে, প্রত্যূষে ও সন্ধ্যায় স্মরণ করবে এবং তুমি উদাসীন হবে না। (সূরা আ‘রাফ- ২০৫)
ব্যাখ্যা : তোমাদের অবস্থা যেন গাফিলদের মতো না হয়ে যায়। দুনিয়ায় যেসব গোমরাহী ছড়িয়ে রয়েছে এবং মানুষের নৈতিক চরিত্রে ও কর্মকান্ডে যে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে তার একমাত্র কারণ হচ্ছে, এ কথা ভুলে যাওয়া যে, আল্লাহ তার রব এবং সে আল্লাহর বান্দা, দুনিয়ায় তাকে পরীক্ষা করার জন্য পাঠানো হয়েছে এবং এ দুনিয়ার জীবন শেষ হওয়ার পর তাকে তার রবের কাছে হিসাব দিতে হবে। কাজেই যে ব্যক্তি নিজে সঠিক পথে চলতে চায় এবং দুনিয়ার অন্যান্য মানুষকেও সে পথে চালাতে চায় সে নিজে যেন কখনো এ ধরনের ভুল না করে, এ ব্যাপারে তাকে কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এজন্যই নামায ও আল্লাহর যিকিরের মাধ্যমে সবসময় স্থায়ীভাবে আল্লাহর প্রতি আকৃষ্ট থাকার ও তাঁর সাথে সম্পর্ক রাখার জন্য বার বার তাকীদ দেয়া হয়েছে।
وَاَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِيْ
আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম করো। (সূরা ত্বা-হা- ১৪)
যিকির করতে হবে ভীত অবস্থায় মনে মনে :
وَاذْكُرْ رَّبَّكَ فِيْ نَفْسِكَ تَضَرُّعًا وَّخِيْفَةً وَّدُوْنَ الْجَهْرِ مِنَ الْقَوْلِ بِالْغُدُوِّ وَالْاٰصَالِ وَلَا تَكُنْ مِّنَ الْغَافِلِيْنَ
তোমার প্রতিপালককে মনে মনে, সবিনয়ে ও ভীতিসহকারে, অনুচ্চৈঃস্বরে, প্রত্যূষে ও সন্ধ্যায় স্মরণ করবে এবং তুমি উদাসীন হবে না। (সূরা আ‘রাফ- ২০৫)
ব্যাখ্যা : তোমাদের অবস্থা যেন গাফিলদের মতো না হয়ে যায়। দুনিয়ায় যেসব গোমরাহী ছড়িয়ে রয়েছে এবং মানুষের নৈতিক চরিত্রে ও কর্মকান্ডে যে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে তার একমাত্র কারণ হচ্ছে, এ কথা ভুলে যাওয়া যে, আল্লাহ তার রব এবং সে আল্লাহর বান্দা, দুনিয়ায় তাকে পরীক্ষা করার জন্য পাঠানো হয়েছে এবং এ দুনিয়ার জীবন শেষ হওয়ার পর তাকে তার রবের কাছে হিসাব দিতে হবে। কাজেই যে ব্যক্তি নিজে সঠিক পথে চলতে চায় এবং দুনিয়ার অন্যান্য মানুষকেও সে পথে চালাতে চায় সে নিজে যেন কখনো এ ধরনের ভুল না করে, এ ব্যাপারে তাকে কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এজন্যই নামায ও আল্লাহর যিকিরের মাধ্যমে সবসময় স্থায়ীভাবে আল্লাহর প্রতি আকৃষ্ট থাকার ও তাঁর সাথে সম্পর্ক রাখার জন্য বার বার তাকীদ দেয়া হয়েছে।
যিকিরের মাধ্যমে অন্তর প্রশান্তি লাভ করে :
اَلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوْبُهُمْ بِذِكْرِ اللهِؕ اَلَا بِذِكْرِ اللهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوْبُ
যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের অন্তর প্রশান্ত হয়। (জেনে রেখো!) আল্লাহর যিকিরই অন্তরসমূহকে প্রশান্তি দান করে। (সূরা রা‘দ- ২৮)
মুমিনের শরীর ও অন্তর আল্লাহর স্মরণে নরম হয় :
ثُمَّ تَلِيْنُ جُلُوْدُهُمْ وَقُلُوْبُهُمْ اِلٰى ذِكْرِ اللهِ
অতঃপর তাদের দেহ ও মন আল্লাহর স্মরণে প্রশান্তি লাভ করে। (সূরা যুমার- ২৩)
আল্লাহকে স্মরণ করলে তিনিও বান্দাদেরকে স্মরণ করেন :
فَاذْكُرُوْنِيْۤ اَذْكُرْكُمْ
অতএব তোমরা আমাকে স্মরণ করো, তাহলে আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব। (সূরা বাক্বারা- ১৫২)
যিকিরকারীরা সফলকাম হয় :
قَدْ اَفْلَحَ مَنْ تَزَكّٰى ‐ وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّه فَصَلّٰى
যে ব্যক্তি পরিশুদ্ধি অর্জন করেছে এবং যে নিজের মালিকের নাম স্মরণ করে ও সালাত আদায় করে, সে অবশ্যই সফলকাম হয়েছে। (সূরা আ‘লা- ১৪, ১৫)
اَلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوْبُهُمْ بِذِكْرِ اللهِؕ اَلَا بِذِكْرِ اللهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوْبُ
যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের অন্তর প্রশান্ত হয়। (জেনে রেখো!) আল্লাহর যিকিরই অন্তরসমূহকে প্রশান্তি দান করে। (সূরা রা‘দ- ২৮)
মুমিনের শরীর ও অন্তর আল্লাহর স্মরণে নরম হয় :
ثُمَّ تَلِيْنُ جُلُوْدُهُمْ وَقُلُوْبُهُمْ اِلٰى ذِكْرِ اللهِ
অতঃপর তাদের দেহ ও মন আল্লাহর স্মরণে প্রশান্তি লাভ করে। (সূরা যুমার- ২৩)
আল্লাহকে স্মরণ করলে তিনিও বান্দাদেরকে স্মরণ করেন :
فَاذْكُرُوْنِيْۤ اَذْكُرْكُمْ
অতএব তোমরা আমাকে স্মরণ করো, তাহলে আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব। (সূরা বাক্বারা- ১৫২)
যিকিরকারীরা সফলকাম হয় :
قَدْ اَفْلَحَ مَنْ تَزَكّٰى ‐ وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّه فَصَلّٰى
যে ব্যক্তি পরিশুদ্ধি অর্জন করেছে এবং যে নিজের মালিকের নাম স্মরণ করে ও সালাত আদায় করে, সে অবশ্যই সফলকাম হয়েছে। (সূরা আ‘লা- ১৪, ১৫)
শয়তান মানুষকে যিকির হতে বিরত রাখে :
اِسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَاَنْسَاهُمْ ذِكْرَ اللهِ
শয়তান তাদের উপর আধিপত্য বিস্তার করেছে। অতঃপর সে তাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে ভুলিয়ে দিয়েছে। (সূরা মুজাদালা- ১৯)
আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ হলে শয়তান সঙ্গী হয়ে যায় :
وَمَنْ يَّعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْمٰنِ نُقَيِّضْ لَهٗ شَيْطَانًا فَهُوَ لَهٗ قَرِيْنٌ
যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ হয়, আমি তার জন্য নিয়োজিত করি এক শয়তান; অতঃপর সেই হয় তার অন্তরঙ্গ সহচর। (সূরা যুখরুফ- ৩৬)
যারা যিকির থেকে গাফিল থাকে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تُلْهِكُمْ اَمْوَالُكُمْ وَلَاۤ اَوْلَادُكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَمَنْ يَّفْعَلْ ذٰلِكَ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ হতে উদাসীন করে না দেয়। যারা এমনটি করবে তারাই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (সূরা মুনাফিকূন- ৯)
যিকির থেকে গাফিল ব্যক্তিদেরকে এড়িয়ে চলতে হবে :
فَاَعْرِضْ عَنْ مَّنْ تَوَلّٰى عَنْ ذِكْرِنَا وَلَمْ يُرِدْ اِلَّا الْحَيَاةَ الدُّنْيَا
অতএব যে আমার স্মরণ হতে বিমুখ হয়ে যায় তাকে উপেক্ষা করে চলো; সে তো শুধু পার্থিব জীবনই কামনা করে। (সূরা নাজম- ২৯)
اِسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَاَنْسَاهُمْ ذِكْرَ اللهِ
শয়তান তাদের উপর আধিপত্য বিস্তার করেছে। অতঃপর সে তাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে ভুলিয়ে দিয়েছে। (সূরা মুজাদালা- ১৯)
আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ হলে শয়তান সঙ্গী হয়ে যায় :
وَمَنْ يَّعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْمٰنِ نُقَيِّضْ لَهٗ شَيْطَانًا فَهُوَ لَهٗ قَرِيْنٌ
যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ হয়, আমি তার জন্য নিয়োজিত করি এক শয়তান; অতঃপর সেই হয় তার অন্তরঙ্গ সহচর। (সূরা যুখরুফ- ৩৬)
যারা যিকির থেকে গাফিল থাকে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تُلْهِكُمْ اَمْوَالُكُمْ وَلَاۤ اَوْلَادُكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَمَنْ يَّفْعَلْ ذٰلِكَ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ হতে উদাসীন করে না দেয়। যারা এমনটি করবে তারাই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (সূরা মুনাফিকূন- ৯)
যিকির থেকে গাফিল ব্যক্তিদেরকে এড়িয়ে চলতে হবে :
فَاَعْرِضْ عَنْ مَّنْ تَوَلّٰى عَنْ ذِكْرِنَا وَلَمْ يُرِدْ اِلَّا الْحَيَاةَ الدُّنْيَا
অতএব যে আমার স্মরণ হতে বিমুখ হয়ে যায় তাকে উপেক্ষা করে চলো; সে তো শুধু পার্থিব জীবনই কামনা করে। (সূরা নাজম- ২৯)
আল্লাহর তাসবীহ পাঠের নির্দেশ :
فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَكُنْ مِّنَ السَّاجِدِيْنَ
প্রশংসার সাথে তুমি তোমার রবের তাসবীহ পাঠ করো এবং সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হও। (সূরা হিজর- ৯৮)
سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْاَعْلٰى
তুমি তোমার সুমহান প্রতিপালকের নামে পবিত্রতা ঘোষণা করো। (সূরা আ‘লা- ১)
فَسَبِّحْ بِاسْمِ رَبِّكَ الْعَظِيْمِ
সুতরাং তুমি তোমার মহান প্রতিপালকের নামের সাথে পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো। (সূরা ওয়াক্বিয়া- ৭৪)
সকাল-সন্ধ্যায় তাসবীহ পাঠের নির্দেশ :
فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ بِالْعَشِيِّ وَالْاِبْكَارِ
সকাল-সন্ধ্যায় তোমার প্রতিপালকের প্রশংসা, পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো। (সূরা মু’মিন- ৫৫)
وَسَبِّحْ بِالْعَشِيِّ وَالْاِبْكَارِ
সকাল ও সন্ধ্যায় তাসবীহ পাঠ করো। (সূরা আলে ইমরান- ৪১)
সালাতের শেষে তাসবীহ পাঠের আদেশ :
وَمِنَ اللَّيْلِ فَسَبِّحْهُ وَاَدْبَارَ السُّجُوْدِ
তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো রাত্রির একাংশে এবং সালাতের পরেও। (সূরা ক্বাফ- ৪০)
ঘুম থেকে উঠার পর তাসবীহ পাঠের আদেশ :
وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ حِيْنَ تَقُوْمُ
যখন তুমি শয্যা ত্যাগ কর তখন তুমি তোমার প্রতিপালকের প্রশংসা, পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো। (সূরা তূর- ৪৮)
ব্যাখ্যা : এ কথাটির কয়েকটি অর্থ হতে পারে। আর এখানে সবগুলো অর্থ গ্রহণীয় হওয়া সম্ভব। (এক) তুমি যখনই কোন মজলিস থেকে উঠবে আল্লাহর প্রশংসা ও তাসবীহ পাঠ করে উঠবে। (দুই) যখন তোমরা ঘুম থেকে জেগে বিছানা ত্যাগ করবে তখন তোমার রবের প্রশংসা করবে। (তিন) তোমরা যখন নামাযের জন্য দাঁড়াবে তখন আল্লাহর হামদ ও তাসবীহ দ্বারা সূচনা করবে। (চার) যখন তোমরা আল্লাহর পথে আহবান জানানোর জন্য প্রস্তুত হবে, তখন আল্লাহর প্রশংসা ও তাসবীহ দ্বারা সূচনা করবে। নবী ﷺ এ নির্দেশটি নিয়মিত পালন করতেন। তিনি সবসময় আল্লাহর প্রশংসার মাধ্যমে এসব কাজ শুরু করতেন।
ফেরেশতারা আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করে :
وَالْمَلَآئِكَةُ يُسَبِّحُوْنَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ
ফেরেশতারা প্রশংসার সাথে তাদের প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। (সূরা শূরা- ৫)
তারা তাসবীহ পাঠে কোন ত্রুটি করে না এবং ক্লান্তও হয় না :
يُسَبِّحُوْنَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ لَا يَفْتُرُوْنَ
তারা রাত্রে ও দিনে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং এতে কোন রকম শৈথিল্য করে না। (সূরা আম্বিয়া- ২০)
দাউদ (আঃ) এর সাথে পাহাড় ও পাখীরাও তাসবীহ পাঠ করত :
وَسَخَّرْنَا مَعَ دَاوُوْدَ الْجِبَالَ يُسَبِّحْنَ وَالطَّيْرَ وَكُنَّا فَاعِلِيْنَ
আমি পর্বত ও বিহঙ্গকুলকে দাউদের অধীন করে দিয়েছিলাম, ফলে তারা দাউদের সঙ্গে আমার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করত। আর আমিই এ সবকিছুর কর্তা। (সূরা আম্বিয়া- ৭৯)
বজ্রধ্বনিও আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করে :
وَيُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهٖ وَالْمَلَآئِكَةُ مِنْ خِيْفَتِهٖ
আর বজ্রধ্বনিও প্রশংসার সাথে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং ফেরেশতারাও তাঁর ভয়ে (তাসবীহ পাঠ করে)। (সূরা রা‘দ- ১৩)
আকাশ ও পৃথিবীর সবকিছুই আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করে :
يُسَبِّحُ لِلّٰهِ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَرْضِ
আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবকিছুই আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। (সূরা জুমু‘আ- ১; সূরা তাগাবুন- ১; সূরা সাফ- ১)
সকলেই নিজ নিজ তাসবীহের ধরণ বুঝতে পারে :
اَلَمْ تَرَ اَنَّ اللهَ يُسَبِّحُ لَهٗ مَنْ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَالطَّيْرُ صَآفَّاتٍ ؕ كُلٌّ قَدْ عَلِمَ صَلَاتَهٗ وَتَسْبِيْحَهٗؕ وَاللهُ عَلِيْمٌ ۢبِمَا يَفْعَلُوْنَ
তুমি কি দেখ না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যারা আছে তারা এবং উড্ডীয়মান বিহঙ্গকুল আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে? প্রত্যেকেই তাঁর ইবাদাত ও পবিত্রতা ঘোষণার পদ্ধতি সম্পর্কে জানে। আর তারা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবগত। (সূরা নূর- ৪১)
মানুষ তাদের তাসবীহ বুঝতে পারে না :
تُسَبِّحُ لَهُ السَّمٰوَاتُ السَّبْعُ وَالْاَرْضُ وَمَنْ فِيْهِنَّؕ وَاِنْ مِّنْ شَيْءٍ اِلَّا يُسَبِّحُ بِحَمْدِهٖ وَلٰكِنْ لَّا تَفْقَهُوْنَ تَسْبِيْحَهُمْ
সপ্তাকাশ, পৃথিবী এবং তাদের অন্তর্বর্তী সবকিছু তাঁরই পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। আর এমন কিছু নেই, যা তাঁর প্রশংসা, পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে না। কিন্তু তোমরা তাদের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করাটা অনুধাবন করতে পার না। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৪৪)
মুমিন ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য হলো তাসবীহ পাঠ করা :
اِنَّمَا يُؤْمِنُ بِاٰيَاتِنَا الَّذِيْنَ اِذَا ذُكِّرُوْا بِهَا خَرُّوْا سُجَّدًا وَّسَبَّحُوْا بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَهُمْ لَا يَسْتَكْبِرُوْنَ
কেবল তারাই আমার নিদর্শনগুলোর প্রতি ঈমান রাখে, যাদেরকে আমার আয়াতসমূহ স্মরণ করিয়ে দেয়া হলে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং স্বীয় প্রতিপালকের প্রশংসা, পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে; আর তারা অহংকার করে না। (সূরা সাজদা- ১৫)
তাসবীহ পাঠ বিপদ থেকে মুক্তি লাভের উপায় :
فَنَادٰى فِى الظُّلُمَاتِ اَنْ لَّاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنْتَ سُبْحَانَكَ اِنِّيْ كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْنَ ‐ فَاسْتَجَبْنَا لَهٗ وَنَجَّيْنَاهُ مِنَ الْغَمِّؕ وَكَذٰلِكَ نُنْجِى الْمُؤْمِنِيْنَ
অতঃপর সে (ইউনুস আঃ) অন্ধকার হতে (মাছের পেট থেকে) আহবান করেছিল যে, ‘‘তুমি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই, তুমিই পবিত্র ও মহান এবং আমি সীমালঙ্ঘনকারী।’’ তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম এবং তাকে তার মানসিক দুশ্চিন্তা হতে রক্ষা করেছিলাম। এভাবেই আমি মুমিনদেরকে উদ্ধার করে থাকি। (সূরা আম্বিয়া- ৮৭, ৮৮)
যানবাহনে সওয়ার হওয়ার তাসবীহ :
سُبْحَانَ الَّذِيْ سَخَّرَ لَنَا هٰذَا وَمَا كُنَّا لَهٗ مُقْرِنِيْنَ
তিনিই পবিত্র ও মহান, যিনি এদেরকে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন, যদিও আমরা এদেরকে বশীভূত করতে সক্ষম ছিলাম না। (সূরা যুখরুফ- ১৩)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ প্রতিটি সফরে যাওয়ার সময় স্মরণ করো যে, সামনে আরো একটি বড় সফর আছে; আর সেটিই শেষ সফর। তাছাড়া যে কোন সওয়ারী ব্যবহার করার ক্ষেত্রে এ সম্ভাবনাও থাকে যে, হয়তো কোন দুর্ঘটনা এ সফরকেই তার শেষ সফর বানিয়ে দেবে। তাই মুমিন ব্যক্তির জন্য উত্তম হচ্ছে, সবসময় সে তার রবের কাছে ফিরে যাওয়ার বিষয়টিকে স্মরণ করে যাত্রা করবে। যে ব্যক্তি কোন সওয়ারীতে আরোহণের সময় পূর্ণ অনুভূতির সাথে এভাবে আল্লাহকে এবং তাঁর কাছে ফিরে যাওয়া ও জবাবদিহি করার কথা স্মরণ করে সে অগ্রসর হয়ে কোন পাপাচার অথবা যুলুম-নির্যাতনে জড়িত হতে পারে না। এসব কথা উচ্চারণ করে কেউ কোন চরিত্রহীনার সাথে সাক্ষাতের জন্য, কিংবা ক্লাবে মদ্যপান বা জুয়াখেলার উদ্দেশ্যে বের হতে পারে না। কোন শাসক, সরকারি কর্মচারী অথবা ব্যবসায়ী- যে মনে মনে এসব কথা ভাবে এবং মুখে উচ্চারণ করে বাড়ি থেকে বের হয় সে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে মানুষের হক নষ্ট করতে পারে না। আর এই একটিমাত্র জিনিসই তাকে গোনাহের কাজের প্রতিটি তৎপরতায় বাধা সৃষ্টি করার জন্য যথেষ্ট।
তাসবীহ পাঠের কয়েকটি বাক্য :
وَسُبْحَانَ اللهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ পবিত্র ও মহিমান্বিত। (সূরা নামল- ৮)
فَسُبْحَانَ الَّذِيْ بِيَدِهٖ مَلَكُوْتُ كُلِّ شَيْءٍ
অতএব তিনি পবিত্র, যাঁর হাতে রয়েছে সর্ববিষয়ের সর্বময় ক্ষমতা। (সূরা ইয়াসীন- ৮৩)
سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُوْنَ ‐ وَسَلَامٌ عَلَى الْمُرْسَلِيْنَ ‐ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
তারা (মুশরিকরা আল্লাহর ব্যাপারে) যা বলে থাকে তা থেকে আপনার প্রতিপালক মহিমান্বিত। ‘সালাম’ বর্ষিত হোক রাসূলগণের প্রতি। আর সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি সারাবিশ্বের প্রতিপালক। (সূরা সাফ্ফাত, ১৮০-১৮২)
فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَكُنْ مِّنَ السَّاجِدِيْنَ
প্রশংসার সাথে তুমি তোমার রবের তাসবীহ পাঠ করো এবং সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হও। (সূরা হিজর- ৯৮)
سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْاَعْلٰى
তুমি তোমার সুমহান প্রতিপালকের নামে পবিত্রতা ঘোষণা করো। (সূরা আ‘লা- ১)
فَسَبِّحْ بِاسْمِ رَبِّكَ الْعَظِيْمِ
সুতরাং তুমি তোমার মহান প্রতিপালকের নামের সাথে পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো। (সূরা ওয়াক্বিয়া- ৭৪)
সকাল-সন্ধ্যায় তাসবীহ পাঠের নির্দেশ :
فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ بِالْعَشِيِّ وَالْاِبْكَارِ
সকাল-সন্ধ্যায় তোমার প্রতিপালকের প্রশংসা, পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো। (সূরা মু’মিন- ৫৫)
وَسَبِّحْ بِالْعَشِيِّ وَالْاِبْكَارِ
সকাল ও সন্ধ্যায় তাসবীহ পাঠ করো। (সূরা আলে ইমরান- ৪১)
সালাতের শেষে তাসবীহ পাঠের আদেশ :
وَمِنَ اللَّيْلِ فَسَبِّحْهُ وَاَدْبَارَ السُّجُوْدِ
তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো রাত্রির একাংশে এবং সালাতের পরেও। (সূরা ক্বাফ- ৪০)
ঘুম থেকে উঠার পর তাসবীহ পাঠের আদেশ :
وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ حِيْنَ تَقُوْمُ
যখন তুমি শয্যা ত্যাগ কর তখন তুমি তোমার প্রতিপালকের প্রশংসা, পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো। (সূরা তূর- ৪৮)
ব্যাখ্যা : এ কথাটির কয়েকটি অর্থ হতে পারে। আর এখানে সবগুলো অর্থ গ্রহণীয় হওয়া সম্ভব। (এক) তুমি যখনই কোন মজলিস থেকে উঠবে আল্লাহর প্রশংসা ও তাসবীহ পাঠ করে উঠবে। (দুই) যখন তোমরা ঘুম থেকে জেগে বিছানা ত্যাগ করবে তখন তোমার রবের প্রশংসা করবে। (তিন) তোমরা যখন নামাযের জন্য দাঁড়াবে তখন আল্লাহর হামদ ও তাসবীহ দ্বারা সূচনা করবে। (চার) যখন তোমরা আল্লাহর পথে আহবান জানানোর জন্য প্রস্তুত হবে, তখন আল্লাহর প্রশংসা ও তাসবীহ দ্বারা সূচনা করবে। নবী ﷺ এ নির্দেশটি নিয়মিত পালন করতেন। তিনি সবসময় আল্লাহর প্রশংসার মাধ্যমে এসব কাজ শুরু করতেন।
ফেরেশতারা আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করে :
وَالْمَلَآئِكَةُ يُسَبِّحُوْنَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ
ফেরেশতারা প্রশংসার সাথে তাদের প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। (সূরা শূরা- ৫)
তারা তাসবীহ পাঠে কোন ত্রুটি করে না এবং ক্লান্তও হয় না :
يُسَبِّحُوْنَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ لَا يَفْتُرُوْنَ
তারা রাত্রে ও দিনে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং এতে কোন রকম শৈথিল্য করে না। (সূরা আম্বিয়া- ২০)
দাউদ (আঃ) এর সাথে পাহাড় ও পাখীরাও তাসবীহ পাঠ করত :
وَسَخَّرْنَا مَعَ دَاوُوْدَ الْجِبَالَ يُسَبِّحْنَ وَالطَّيْرَ وَكُنَّا فَاعِلِيْنَ
আমি পর্বত ও বিহঙ্গকুলকে দাউদের অধীন করে দিয়েছিলাম, ফলে তারা দাউদের সঙ্গে আমার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করত। আর আমিই এ সবকিছুর কর্তা। (সূরা আম্বিয়া- ৭৯)
বজ্রধ্বনিও আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করে :
وَيُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهٖ وَالْمَلَآئِكَةُ مِنْ خِيْفَتِهٖ
আর বজ্রধ্বনিও প্রশংসার সাথে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং ফেরেশতারাও তাঁর ভয়ে (তাসবীহ পাঠ করে)। (সূরা রা‘দ- ১৩)
আকাশ ও পৃথিবীর সবকিছুই আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করে :
يُسَبِّحُ لِلّٰهِ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَرْضِ
আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবকিছুই আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। (সূরা জুমু‘আ- ১; সূরা তাগাবুন- ১; সূরা সাফ- ১)
সকলেই নিজ নিজ তাসবীহের ধরণ বুঝতে পারে :
اَلَمْ تَرَ اَنَّ اللهَ يُسَبِّحُ لَهٗ مَنْ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَالطَّيْرُ صَآفَّاتٍ ؕ كُلٌّ قَدْ عَلِمَ صَلَاتَهٗ وَتَسْبِيْحَهٗؕ وَاللهُ عَلِيْمٌ ۢبِمَا يَفْعَلُوْنَ
তুমি কি দেখ না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যারা আছে তারা এবং উড্ডীয়মান বিহঙ্গকুল আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে? প্রত্যেকেই তাঁর ইবাদাত ও পবিত্রতা ঘোষণার পদ্ধতি সম্পর্কে জানে। আর তারা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবগত। (সূরা নূর- ৪১)
মানুষ তাদের তাসবীহ বুঝতে পারে না :
تُسَبِّحُ لَهُ السَّمٰوَاتُ السَّبْعُ وَالْاَرْضُ وَمَنْ فِيْهِنَّؕ وَاِنْ مِّنْ شَيْءٍ اِلَّا يُسَبِّحُ بِحَمْدِهٖ وَلٰكِنْ لَّا تَفْقَهُوْنَ تَسْبِيْحَهُمْ
সপ্তাকাশ, পৃথিবী এবং তাদের অন্তর্বর্তী সবকিছু তাঁরই পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। আর এমন কিছু নেই, যা তাঁর প্রশংসা, পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে না। কিন্তু তোমরা তাদের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করাটা অনুধাবন করতে পার না। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৪৪)
মুমিন ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য হলো তাসবীহ পাঠ করা :
اِنَّمَا يُؤْمِنُ بِاٰيَاتِنَا الَّذِيْنَ اِذَا ذُكِّرُوْا بِهَا خَرُّوْا سُجَّدًا وَّسَبَّحُوْا بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَهُمْ لَا يَسْتَكْبِرُوْنَ
কেবল তারাই আমার নিদর্শনগুলোর প্রতি ঈমান রাখে, যাদেরকে আমার আয়াতসমূহ স্মরণ করিয়ে দেয়া হলে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং স্বীয় প্রতিপালকের প্রশংসা, পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে; আর তারা অহংকার করে না। (সূরা সাজদা- ১৫)
তাসবীহ পাঠ বিপদ থেকে মুক্তি লাভের উপায় :
فَنَادٰى فِى الظُّلُمَاتِ اَنْ لَّاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنْتَ سُبْحَانَكَ اِنِّيْ كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْنَ ‐ فَاسْتَجَبْنَا لَهٗ وَنَجَّيْنَاهُ مِنَ الْغَمِّؕ وَكَذٰلِكَ نُنْجِى الْمُؤْمِنِيْنَ
অতঃপর সে (ইউনুস আঃ) অন্ধকার হতে (মাছের পেট থেকে) আহবান করেছিল যে, ‘‘তুমি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই, তুমিই পবিত্র ও মহান এবং আমি সীমালঙ্ঘনকারী।’’ তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম এবং তাকে তার মানসিক দুশ্চিন্তা হতে রক্ষা করেছিলাম। এভাবেই আমি মুমিনদেরকে উদ্ধার করে থাকি। (সূরা আম্বিয়া- ৮৭, ৮৮)
যানবাহনে সওয়ার হওয়ার তাসবীহ :
سُبْحَانَ الَّذِيْ سَخَّرَ لَنَا هٰذَا وَمَا كُنَّا لَهٗ مُقْرِنِيْنَ
তিনিই পবিত্র ও মহান, যিনি এদেরকে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন, যদিও আমরা এদেরকে বশীভূত করতে সক্ষম ছিলাম না। (সূরা যুখরুফ- ১৩)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ প্রতিটি সফরে যাওয়ার সময় স্মরণ করো যে, সামনে আরো একটি বড় সফর আছে; আর সেটিই শেষ সফর। তাছাড়া যে কোন সওয়ারী ব্যবহার করার ক্ষেত্রে এ সম্ভাবনাও থাকে যে, হয়তো কোন দুর্ঘটনা এ সফরকেই তার শেষ সফর বানিয়ে দেবে। তাই মুমিন ব্যক্তির জন্য উত্তম হচ্ছে, সবসময় সে তার রবের কাছে ফিরে যাওয়ার বিষয়টিকে স্মরণ করে যাত্রা করবে। যে ব্যক্তি কোন সওয়ারীতে আরোহণের সময় পূর্ণ অনুভূতির সাথে এভাবে আল্লাহকে এবং তাঁর কাছে ফিরে যাওয়া ও জবাবদিহি করার কথা স্মরণ করে সে অগ্রসর হয়ে কোন পাপাচার অথবা যুলুম-নির্যাতনে জড়িত হতে পারে না। এসব কথা উচ্চারণ করে কেউ কোন চরিত্রহীনার সাথে সাক্ষাতের জন্য, কিংবা ক্লাবে মদ্যপান বা জুয়াখেলার উদ্দেশ্যে বের হতে পারে না। কোন শাসক, সরকারি কর্মচারী অথবা ব্যবসায়ী- যে মনে মনে এসব কথা ভাবে এবং মুখে উচ্চারণ করে বাড়ি থেকে বের হয় সে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে মানুষের হক নষ্ট করতে পারে না। আর এই একটিমাত্র জিনিসই তাকে গোনাহের কাজের প্রতিটি তৎপরতায় বাধা সৃষ্টি করার জন্য যথেষ্ট।
তাসবীহ পাঠের কয়েকটি বাক্য :
وَسُبْحَانَ اللهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ পবিত্র ও মহিমান্বিত। (সূরা নামল- ৮)
فَسُبْحَانَ الَّذِيْ بِيَدِهٖ مَلَكُوْتُ كُلِّ شَيْءٍ
অতএব তিনি পবিত্র, যাঁর হাতে রয়েছে সর্ববিষয়ের সর্বময় ক্ষমতা। (সূরা ইয়াসীন- ৮৩)
سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُوْنَ ‐ وَسَلَامٌ عَلَى الْمُرْسَلِيْنَ ‐ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
তারা (মুশরিকরা আল্লাহর ব্যাপারে) যা বলে থাকে তা থেকে আপনার প্রতিপালক মহিমান্বিত। ‘সালাম’ বর্ষিত হোক রাসূলগণের প্রতি। আর সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি সারাবিশ্বের প্রতিপালক। (সূরা সাফ্ফাত, ১৮০-১৮২)
চিন্তা-ভাবনা করাটা জ্ঞানী লোকের পরিচয় :
اِنَّ فِيْ خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَاٰيَاتٍ لِّاُولِى الْاَ لْبَابِ ‐ اَلَّذِيْنَ يَذْكُرُوْنَ اللهَ قِيَامًا وَّقُعُوْدًا وَّعَلٰى جُنُوْبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُوْنَ فِيْ خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ
নিশ্চয় আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টিতে এবং রাত্রি ও দিনের আবর্তনে জ্ঞানী লোকদের জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে- (তারা এমন লোক) যারা দন্ডায়মান, উপবেশন ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশ ও জমিনের সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে। (সূরা আলে ইমরান- ১৯১)
চিন্তা করতে হবে আল্লাহর সৃষ্টিকে নিয়ে:
اَوَلَمْ يَتَفَكَّرُوْا فِۤيْ اَنْفُسِهِمْؕ مَا خَلَقَ اللهُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَاۤ اِلَّا بِالْحَقِّ وَاَجَلٍ مُّسَمًّى
তারা কি নিজেরা ভেবে দেখে না যে, আল্লাহ আসমান, জমিন এবং এতোদুভয়ের মধ্যবর্তী যা কিছু আছে সবই সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। (সূরা রূম- ৮)
চিন্তা করতে হবে আল্লাহর নিদর্শন নিয়ে :
وَتِلْكَ الْاَمْثَالُ نَضْرِبُهَا لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُوْنَ
আমি এসব দৃষ্টান্ত বর্ণনা করি মানুষের জন্য, যাতে করে তারা চিন্তা-ভাবনা করে। (সূরা হাশর- ২১)
চিন্তা করতে হবে কুরআনে বর্ণিত ঘটনাবলিকে নিয়ে :
فَاقْصُصِ الْقَصَصَ لَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُوْنَ
আপনি এসব কাহিনী বর্ণনা করুন, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করতে পারে। (সূরা আ‘রাফ- ১৭)
গবেষণা করতে হবে কুরআন সম্পর্কে :
اَفَلَا يَتَدَبَّرُوْنَ الْقُرْاٰنَ
তারা কি কুরআনকে নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে না? (সূরা নিসা- ৮২)
وَاَنْزَلْنَاۤ اِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ اِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُوْنَ
আমি তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করেছি, যাতে করে তুমি তাদের (মানুষদের) কাছে যা পাঠানো হয়েছে তা তাদেরকে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিতে পার। হয়তো তারা চিন্তা-ভাবনা করবে। (সূরা নাহল- ৪৪)
اِنَّ فِيْ خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَاٰيَاتٍ لِّاُولِى الْاَ لْبَابِ ‐ اَلَّذِيْنَ يَذْكُرُوْنَ اللهَ قِيَامًا وَّقُعُوْدًا وَّعَلٰى جُنُوْبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُوْنَ فِيْ خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ
নিশ্চয় আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টিতে এবং রাত্রি ও দিনের আবর্তনে জ্ঞানী লোকদের জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে- (তারা এমন লোক) যারা দন্ডায়মান, উপবেশন ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশ ও জমিনের সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে। (সূরা আলে ইমরান- ১৯১)
চিন্তা করতে হবে আল্লাহর সৃষ্টিকে নিয়ে:
اَوَلَمْ يَتَفَكَّرُوْا فِۤيْ اَنْفُسِهِمْؕ مَا خَلَقَ اللهُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَاۤ اِلَّا بِالْحَقِّ وَاَجَلٍ مُّسَمًّى
তারা কি নিজেরা ভেবে দেখে না যে, আল্লাহ আসমান, জমিন এবং এতোদুভয়ের মধ্যবর্তী যা কিছু আছে সবই সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। (সূরা রূম- ৮)
চিন্তা করতে হবে আল্লাহর নিদর্শন নিয়ে :
وَتِلْكَ الْاَمْثَالُ نَضْرِبُهَا لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُوْنَ
আমি এসব দৃষ্টান্ত বর্ণনা করি মানুষের জন্য, যাতে করে তারা চিন্তা-ভাবনা করে। (সূরা হাশর- ২১)
চিন্তা করতে হবে কুরআনে বর্ণিত ঘটনাবলিকে নিয়ে :
فَاقْصُصِ الْقَصَصَ لَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُوْنَ
আপনি এসব কাহিনী বর্ণনা করুন, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করতে পারে। (সূরা আ‘রাফ- ১৭)
গবেষণা করতে হবে কুরআন সম্পর্কে :
اَفَلَا يَتَدَبَّرُوْنَ الْقُرْاٰنَ
তারা কি কুরআনকে নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে না? (সূরা নিসা- ৮২)
وَاَنْزَلْنَاۤ اِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ اِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُوْنَ
আমি তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করেছি, যাতে করে তুমি তাদের (মানুষদের) কাছে যা পাঠানো হয়েছে তা তাদেরকে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিতে পার। হয়তো তারা চিন্তা-ভাবনা করবে। (সূরা নাহল- ৪৪)
اَلتَّوْبَةُ (আত তাওবাতু) শব্দের অর্থ হচ্ছে ফিরে আসা। গোনাহ করার পর আল্লাহর কাছে বান্দার তাওবা করার অর্থ হচ্ছে, যে দাসটি তার প্রভুর অবাধ্য হয়ে প্রভুর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল সে এখন নিজের কার্যকলাপে অনুতপ্ত। সে প্রভুর আনুগত্য ও তাঁর হুকুম মেনে চলার জন্য ফিরে এসেছে। আর আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার দিকে তাওবা করার অর্থ হচ্ছে, দাসের উপর থেকে প্রভুর যে অনুগ্রহের দৃষ্টি সরে গিয়েছিল তা আবার নতুন করে তার প্রতি নিবদ্ধ হয়েছে। মুমিনের জীবনে বার বার এমন সময় আসতে থাকে, যখন সে সাময়িকভাবে আল্লাহর সাথে করা চুক্তি ভুলে যায়। কিন্তু একজন প্রকৃত ও যথার্থ মুমিনের বৈশিষ্ট্য এই যে, যখনই সে অনুভব করতে থাকে যে, অবচেতনভাবে সে আল্লাহর নাফরমানি করে ফেলেছে তখনই সে লজ্জা অনুভব করে ও তীব্র অনুশোচনা সহকারে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করে ক্ষমা চায়। প্রত্যেকটি পদস্খলনের পর বিশ্বস্ততার সাথে ফিরে আসাই ঈমানের স্থায়িত্বের প্রতীক। আল্লাহ তা‘আলা এটিকে মুমিনের প্রশংসনীয় গুণ হিসেবে গণ্য করেছেন।
তাওবা করার জন্য আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন :
وَتُوْبُوْاۤ اِلَى اللهِ جَمِيْعًا اَيُّهَا الْمُؤْمِنُوْنَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা নূর- ৩১)
আল্লাহ বান্দার তাওবা কবুল করেন :
اَلَمْ يَعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ هُوَ يَقْبَلُ التَّوْبَةَ عَنْ عِبَادِهٖ وَيَأْخُذُ الصَّدَقَاتِ وَاَنَّ اللهَ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ
তারা কি জানে না যে, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের তাওবা কবুল করেন এবং সাদাকা গ্রহণ করেন? নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা তাওবা- ১০৪)
وَهُوَ الَّذِيْ يَقْبَلُ التَّوْبَةَ عَنْ عِبَادِهٖ وَيَعْفُوْا عَنِ السَّيِّئَاتِ وَيَعْلَمُ مَا تَفْعَلُوْنَ
তিনিই তাঁর বান্দাদের তাওবা কবুল করেন এবং পাপ মোচন করেন। আর তোমরা যা কর তা তিনি জানেন। (সূরা শূরা- ২৫)
আল্লাহ আদম (আঃ) এর তাওবা কবুল করেছেন :
فَتَلَقّٰۤى اٰدَمُ مِنْ رَّبِّهٖ كَلِمَاتٍ فَتَابَ عَلَيْهِؕ اِنَّهٗ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ
আদম তাঁর রবের পক্ষ হতে কতিপয় বাক্য শিক্ষা লাভ করলেন (তাওবা করলেন)। অতঃপর আল্লাহ তাঁর তাওবা কবুল করলেন এবং তাঁকে ক্ষমা করলেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল ও করুণাময়। (সূরা বাক্বারা- ৩৭)
তাওবা করা মুমিনের উত্তম গুণ :
اَلتَّآئِبُوْنَ الْعَابِدُوْنَ الْحَامِدُوْنَ السَّآئِحُوْنَ الرَّاكِعُوْنَ السَّاجِدُوْنَ الْاٰمِرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَالنَّاهُوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَالْحَافِظُوْنَ لِحُدُوْدِ اللهِؕ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِيْنَ
তারা তাওবাকারী, ইবাদাতকারী, আল্লাহর প্রশংসাকারী, সিয়াম পালনকারী, রুকূকারী, সিজদাকারী, সৎকাজের আদেশ দানকারী, অসৎকাজ হতে নিষেধকারী এবং আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা সংরক্ষণকারী; সুতরাং তুমি মুমিনদেরকে সুসংবাদ দাও। (সূরা তাওবা- ১১২)
وَتُوْبُوْاۤ اِلَى اللهِ جَمِيْعًا اَيُّهَا الْمُؤْمِنُوْنَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা নূর- ৩১)
আল্লাহ বান্দার তাওবা কবুল করেন :
اَلَمْ يَعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ هُوَ يَقْبَلُ التَّوْبَةَ عَنْ عِبَادِهٖ وَيَأْخُذُ الصَّدَقَاتِ وَاَنَّ اللهَ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ
তারা কি জানে না যে, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের তাওবা কবুল করেন এবং সাদাকা গ্রহণ করেন? নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা তাওবা- ১০৪)
وَهُوَ الَّذِيْ يَقْبَلُ التَّوْبَةَ عَنْ عِبَادِهٖ وَيَعْفُوْا عَنِ السَّيِّئَاتِ وَيَعْلَمُ مَا تَفْعَلُوْنَ
তিনিই তাঁর বান্দাদের তাওবা কবুল করেন এবং পাপ মোচন করেন। আর তোমরা যা কর তা তিনি জানেন। (সূরা শূরা- ২৫)
আল্লাহ আদম (আঃ) এর তাওবা কবুল করেছেন :
فَتَلَقّٰۤى اٰدَمُ مِنْ رَّبِّهٖ كَلِمَاتٍ فَتَابَ عَلَيْهِؕ اِنَّهٗ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ
আদম তাঁর রবের পক্ষ হতে কতিপয় বাক্য শিক্ষা লাভ করলেন (তাওবা করলেন)। অতঃপর আল্লাহ তাঁর তাওবা কবুল করলেন এবং তাঁকে ক্ষমা করলেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল ও করুণাময়। (সূরা বাক্বারা- ৩৭)
তাওবা করা মুমিনের উত্তম গুণ :
اَلتَّآئِبُوْنَ الْعَابِدُوْنَ الْحَامِدُوْنَ السَّآئِحُوْنَ الرَّاكِعُوْنَ السَّاجِدُوْنَ الْاٰمِرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَالنَّاهُوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَالْحَافِظُوْنَ لِحُدُوْدِ اللهِؕ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِيْنَ
তারা তাওবাকারী, ইবাদাতকারী, আল্লাহর প্রশংসাকারী, সিয়াম পালনকারী, রুকূকারী, সিজদাকারী, সৎকাজের আদেশ দানকারী, অসৎকাজ হতে নিষেধকারী এবং আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা সংরক্ষণকারী; সুতরাং তুমি মুমিনদেরকে সুসংবাদ দাও। (সূরা তাওবা- ১১২)
খালিস নিয়তে তাওবা করতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا تُوْبُوْاۤ اِلَى اللهِ تَوْبَةً نَّصُوْحًاؕ عَسٰى رَبُّكُمْ اَنْ يُّكَفِّرَ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা করো- একান্ত বিশুদ্ধ তাওবা। তাহলে তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের মন্দকর্মসমূহের (গোনাহগুলো) মোচন করে দেবেন এবং তোমাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়ে গেছে। (সূরা তাহরীম- ৮)
তাড়াতাড়ি তাওবা করতে হবে :
اِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللهِ لِلَّذِيْنَ يَعْمَلُوْنَ السُّوْٓءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوْبُوْنَ مِنْ قَرِيْبٍ فَاُولٰٓئِكَ يَتُوْبُ اللهُ عَلَيْهِمْؕ وَكَانَ اللهُ عَلِيْمًا حَكِيْمًا
আল্লাহ কেবল তাদের তাওবাই কবুল করেন, যারা অজ্ঞতাবশত পাপ করে ফেলে, অতঃপর তাড়াতাড়ি তাওবা করে নেয়। আল্লাহ এসব লোকের তাওবাই কবুল করেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা- ১৭)
ব্যাখ্যা : মহান আল্লাহ এ আয়াতে বলেন, আমার ক্ষমার দরজা কেবল সেসব বান্দাদের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে, যারা ইচ্ছা করে নয় বরং অজ্ঞতার কারণে ভুল করে বসে। কিন্তু চোখের উপর থেকে অজ্ঞতার পর্দা সরে গেলে লজ্জিত হয়ে নিজের ভুলের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী হয়। এমন বান্দা তার ভুল বুঝতে পেরে যখনই আল্লাহর দিকে ফিরে আসবে, তখনই সে তাওবার দরজা উন্মুক্ত দেখতে পাবে। কিন্তু যারা আল্লাহকে ভয় না করে সারা জীবন বেপরোয়াভাবে গোনাহ করতে থাকে এমনকি যখন মৃত্যুর ফেরেশতা সামনে এসে দাঁড়ায়, তখন আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে থাকে, তাদের জন্য কোন তাওবা নেই এবং তাদের গোনাহের কোন ক্ষমাও নেই।
মৃত্যু এসে গেলে তাওবা কবুল হয় না :
وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِيْنَ يَعْمَلُوْنَ السَّيِّئَاتِۚ حَتّٰۤى اِذَا حَضَرَ اَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ اِنِّيْ تُبْتُ الْاٰنَ وَلَا الَّذِيْنَ يَمُوْتُوْنَ وَهُمْ كُفَّارٌؕ اُولٰٓئِكَ اَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا اَلِيْمًا
তাদের জন্য কোন তাওবা নেই যারা পাপকাজ করতেই থাকে, এমনকি যখন তাদের কারো নিকট মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন বলে, আমি এখন তাওবা করছি। আর তাদেরও কোন তাওবা নেই, যারা কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। এদের জন্য আমি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। (সূরা নিসা- ১৮)
ব্যাখ্যা : মৃত্যুর পর তাদেরকে এ কথা বলা হবে না যে, এখন তোমরা তোমাদের রবের কাছে নিজেদের ভুল-ভ্রান্তি ও অপরাধগুলোর জন্য ক্ষমা চেয়ে নাও। কারণ সেটা হবে ফায়সালার সময়; ক্ষমা চাওয়ার সময় দুনিয়াতেই শেষ হয়ে গেছে। কুরআন ও হাদীস এ কথা পরিষ্কার জানিয়ে দিচ্ছে যে, এ দুনিয়াতেই তাওবা করতে হবে। কেননা আখিরাতে এর কোন সুযোগ থাকবে না। আবার দুনিয়াতেও এর সুযোগ শুধুমাত্র ততক্ষণ পর্যন্ত থাকবে যতক্ষণ না মৃত্যুর চিহ্নগুলো ফুটে ওঠে। যখন মানুষের নিশ্চিত বিশ্বাস হবে যে, তার শেষ সময় এসে গেছে তখন তার তাওবা গ্রহণ করা হবে না। মৃত্যুর সীমান্তে পৌঁছার সাথে সাথেই মানুষের আমলের সুযোগ শেষ হয়ে যায়, তখন শুধুমাত্র পুরস্কার ও শাস্তি পাওয়ার সময়টুকু অবশিষ্ট থাকে।
বার বার কুফরী করলে তাওবা কবুল হয় না :
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بَعْدَ اِيْمَانِهِمْ ثُمَّ ازْدَادُوْا كُفْرًا لَّنْ تُقْبَلَ تَوْبَتُهُمْ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الضَّآ لُّوْنَ
নিশ্চয় যারা ঈমান আনার পর কুফরী করেছে এবং সেই কুফরীকে আরো বৃদ্ধি করেছে, তাদের তাওবা কখনো কবুল করা হবে না; তারাই পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা আলে ইমরান- ৯০)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا تُوْبُوْاۤ اِلَى اللهِ تَوْبَةً نَّصُوْحًاؕ عَسٰى رَبُّكُمْ اَنْ يُّكَفِّرَ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা করো- একান্ত বিশুদ্ধ তাওবা। তাহলে তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের মন্দকর্মসমূহের (গোনাহগুলো) মোচন করে দেবেন এবং তোমাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়ে গেছে। (সূরা তাহরীম- ৮)
তাড়াতাড়ি তাওবা করতে হবে :
اِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللهِ لِلَّذِيْنَ يَعْمَلُوْنَ السُّوْٓءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوْبُوْنَ مِنْ قَرِيْبٍ فَاُولٰٓئِكَ يَتُوْبُ اللهُ عَلَيْهِمْؕ وَكَانَ اللهُ عَلِيْمًا حَكِيْمًا
আল্লাহ কেবল তাদের তাওবাই কবুল করেন, যারা অজ্ঞতাবশত পাপ করে ফেলে, অতঃপর তাড়াতাড়ি তাওবা করে নেয়। আল্লাহ এসব লোকের তাওবাই কবুল করেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা- ১৭)
ব্যাখ্যা : মহান আল্লাহ এ আয়াতে বলেন, আমার ক্ষমার দরজা কেবল সেসব বান্দাদের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে, যারা ইচ্ছা করে নয় বরং অজ্ঞতার কারণে ভুল করে বসে। কিন্তু চোখের উপর থেকে অজ্ঞতার পর্দা সরে গেলে লজ্জিত হয়ে নিজের ভুলের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী হয়। এমন বান্দা তার ভুল বুঝতে পেরে যখনই আল্লাহর দিকে ফিরে আসবে, তখনই সে তাওবার দরজা উন্মুক্ত দেখতে পাবে। কিন্তু যারা আল্লাহকে ভয় না করে সারা জীবন বেপরোয়াভাবে গোনাহ করতে থাকে এমনকি যখন মৃত্যুর ফেরেশতা সামনে এসে দাঁড়ায়, তখন আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে থাকে, তাদের জন্য কোন তাওবা নেই এবং তাদের গোনাহের কোন ক্ষমাও নেই।
মৃত্যু এসে গেলে তাওবা কবুল হয় না :
وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِيْنَ يَعْمَلُوْنَ السَّيِّئَاتِۚ حَتّٰۤى اِذَا حَضَرَ اَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ اِنِّيْ تُبْتُ الْاٰنَ وَلَا الَّذِيْنَ يَمُوْتُوْنَ وَهُمْ كُفَّارٌؕ اُولٰٓئِكَ اَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا اَلِيْمًا
তাদের জন্য কোন তাওবা নেই যারা পাপকাজ করতেই থাকে, এমনকি যখন তাদের কারো নিকট মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন বলে, আমি এখন তাওবা করছি। আর তাদেরও কোন তাওবা নেই, যারা কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। এদের জন্য আমি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। (সূরা নিসা- ১৮)
ব্যাখ্যা : মৃত্যুর পর তাদেরকে এ কথা বলা হবে না যে, এখন তোমরা তোমাদের রবের কাছে নিজেদের ভুল-ভ্রান্তি ও অপরাধগুলোর জন্য ক্ষমা চেয়ে নাও। কারণ সেটা হবে ফায়সালার সময়; ক্ষমা চাওয়ার সময় দুনিয়াতেই শেষ হয়ে গেছে। কুরআন ও হাদীস এ কথা পরিষ্কার জানিয়ে দিচ্ছে যে, এ দুনিয়াতেই তাওবা করতে হবে। কেননা আখিরাতে এর কোন সুযোগ থাকবে না। আবার দুনিয়াতেও এর সুযোগ শুধুমাত্র ততক্ষণ পর্যন্ত থাকবে যতক্ষণ না মৃত্যুর চিহ্নগুলো ফুটে ওঠে। যখন মানুষের নিশ্চিত বিশ্বাস হবে যে, তার শেষ সময় এসে গেছে তখন তার তাওবা গ্রহণ করা হবে না। মৃত্যুর সীমান্তে পৌঁছার সাথে সাথেই মানুষের আমলের সুযোগ শেষ হয়ে যায়, তখন শুধুমাত্র পুরস্কার ও শাস্তি পাওয়ার সময়টুকু অবশিষ্ট থাকে।
বার বার কুফরী করলে তাওবা কবুল হয় না :
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بَعْدَ اِيْمَانِهِمْ ثُمَّ ازْدَادُوْا كُفْرًا لَّنْ تُقْبَلَ تَوْبَتُهُمْ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الضَّآ لُّوْنَ
নিশ্চয় যারা ঈমান আনার পর কুফরী করেছে এবং সেই কুফরীকে আরো বৃদ্ধি করেছে, তাদের তাওবা কখনো কবুল করা হবে না; তারাই পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা আলে ইমরান- ৯০)
যারা তাওবা করে না তারা যালিম :
وَمَنْ لَّمْ يَتُبْ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ
যারা তাওবা করে না তারাই যালিম। (সূরা হুজুরাত- ১১)
তারা কঠিন শাস্তি ভোগ করবে :
اِنَّ الَّذِيْنَ فَتَنُوا الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ ثُمَّ لَمْ يَتُوْبُوْا فَلَهُمْ عَذَابُ جَهَنَّمَ وَلَهُمْ عَذَابُ الْحَرِيْقِ
যারা ঈমানদার নর-নারীদের উপর যুলুম-নির্যাতন করেছে এবং পরে তাওবাও করেনি, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আযাব ও দহন যন্ত্রণা। (সূরা বুরূজ- ১০)
আল্লাহ তাদেরকে তিরস্কার করেন :
اَفَلَا يَتُوْبُوْنَ اِلَى اللهِ وَيَسْتَغْفِرُوْنَهٗؕ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
তবে কি তারা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করবে না এবং তাঁর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করবে না? আল্লাহ তো ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা মায়েদা- ৭৪)
وَمَنْ لَّمْ يَتُبْ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ
যারা তাওবা করে না তারাই যালিম। (সূরা হুজুরাত- ১১)
তারা কঠিন শাস্তি ভোগ করবে :
اِنَّ الَّذِيْنَ فَتَنُوا الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ ثُمَّ لَمْ يَتُوْبُوْا فَلَهُمْ عَذَابُ جَهَنَّمَ وَلَهُمْ عَذَابُ الْحَرِيْقِ
যারা ঈমানদার নর-নারীদের উপর যুলুম-নির্যাতন করেছে এবং পরে তাওবাও করেনি, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আযাব ও দহন যন্ত্রণা। (সূরা বুরূজ- ১০)
আল্লাহ তাদেরকে তিরস্কার করেন :
اَفَلَا يَتُوْبُوْنَ اِلَى اللهِ وَيَسْتَغْفِرُوْنَهٗؕ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
তবে কি তারা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করবে না এবং তাঁর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করবে না? আল্লাহ তো ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা মায়েদা- ৭৪)
আল্লাহ তাওবাকারীদের গোনাহ ক্ষমা করেন :
وَالَّذِيْنَ عَمِلُوا السَّيِّئَاتِ ثُمَّ تَابُوْا مِنْ ۢبَعْدِهَا وَاٰمَنُوْاۤ اِنَّ رَبَّكَ مِنْ ۢبَعْدِهَا لَغَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
যারা পাপকাজ করে, অতঃপর তাওবা করে এবং ঈমান আনয়ন করে, তাদের ব্যাপারে তোমার প্রতিপালক বড়ই ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা আ‘রাফ- ১৫৩)
আল্লাহ তাদের গোনাহ নেকী দ্বারা বদলে দেন :
اِلَّا مَنْ تَابَ وَاٰمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَاُولٰٓئِكَ يُبَدِّلُ اللهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍؕ وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا
তবে তারা নয়, যারা তাওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে। আল্লাহ তাদের পাপকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা ফুরক্বান- ৭০)
ব্যাখ্যা : যখন তারা তাওবা করবে তখন ইতোপূর্বে তারা যে সমস্ত খারাপ কাজ করত, আল্লাহ তার জায়গায় তাদেরকে সৎকাজ করার সুযোগ দেবেন। ফলে এসব সৎকাজ তাদের অসৎকাজের জায়গাগুলো দখল করে নেবে। আর তাওবার ফলে তাদের আমলনামা থেকে কেবল অপরাধসমূহ কেটে দেয়া হবে না, বরং এর পরিবর্তে প্রত্যেকের আমলনামায় সমপরিমাণ নেকীও লেখা হবে। যতবারই বান্দা নিজের পূর্ববর্তী জীবনের খারাপ কাজগুলো স্মরণ করে লজ্জিত হবে এবং নিজের প্রতিপালকের কাছে তাওবা করতে থাকবে, ততবারই তার আমলনামায় সমপরিমাণ নেকী লিখে দেয়া হবে। কারণ ভুলের জন্য লজ্জিত হওয়া ও ক্ষমা চাওয়াই একটি নেকীর কাজ। এভাবে তার আমলনামায় পরবর্তী নেকীসমূহ পূর্বের সমস্ত পাপের জায়গা দখল করে নেবে। ফলে সে কেবল শাস্তি থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং উল্টো তাকে পুরস্কৃতও করা হবে।
আল্লাহ তাদেরকে আযাব থেকে মুক্তি দেবেন :
اِلَّا الَّذِيْنَ تَابُوْا وَاَصْلَحُوْا وَاعْتَصَمُوْا بِاللهِ وَاَخْلَصُوْا دِيْنَهُمْ لِلّٰهِ فَاُولٰٓئِكَ مَعَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَسَوْفَ يُؤْتِ اللهُ الْمُؤْمِنِيْنَ اَجْرًا عَظِيْمًا
কিন্তু যারা তাওবা করে নিজেদেরকে সংশোধন করে নেয়, আল্লাহর রশি শক্ত করে ধরে রাখে এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিজেদের দ্বীনে একনিষ্ঠ থাকে, তারা মুমিনদের সঙ্গে থাকবে। অচিরেই আল্লাহ মুমিনদেরকে মহাপুরস্কারে ভূষিত করবেন। (সূরা নিসা- ১৪৬)
পাপ থেকে ফিরে আসলে আল্লাহ আযাব দেয়া থেকে ফিরে আসেন :
فَمَنْ تَابَ مِنْ ۢبَعْدِ ظُلْمِهٖ وَاَصْلَحَ فَاِنَّ اللهَ يَتُوْبُ عَلَيْهِ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
সুতরাং যে অত্যাচার করার পর তাওবা করে এবং নিজেকে সংশোধন করে নেয়, নিশ্চয় আল্লাহ তার তাওবা কবুল করেন। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা মায়েদা- ৩৯)
তাওবাকারীরা সফল হবে :
فَاَمَّا مَنْ تَابَ وَاٰمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَعَسٰۤى اَنْ يَّكُوْنَ مِنَ الْمُفْلِحِيْنَ
যে ব্যক্তি তাওবা করেছে, ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে, আশা করা যায় সে সাফল্য অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা ক্বাসাস- ৬৭)
তাওবাকারীরা জান্নাতে প্রবেশ করবে :
مَنْ تَابَ وَاٰمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَاُولٰٓئِكَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ وَلَا يُظْلَمُوْنَ شَيْئًا
যারা তাওবা করেছে, ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি কোন যুলুম করা হবে না। (সূরা মারইয়াম- ৬০)
وَالَّذِيْنَ عَمِلُوا السَّيِّئَاتِ ثُمَّ تَابُوْا مِنْ ۢبَعْدِهَا وَاٰمَنُوْاۤ اِنَّ رَبَّكَ مِنْ ۢبَعْدِهَا لَغَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
যারা পাপকাজ করে, অতঃপর তাওবা করে এবং ঈমান আনয়ন করে, তাদের ব্যাপারে তোমার প্রতিপালক বড়ই ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা আ‘রাফ- ১৫৩)
আল্লাহ তাদের গোনাহ নেকী দ্বারা বদলে দেন :
اِلَّا مَنْ تَابَ وَاٰمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَاُولٰٓئِكَ يُبَدِّلُ اللهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍؕ وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا
তবে তারা নয়, যারা তাওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে। আল্লাহ তাদের পাপকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা ফুরক্বান- ৭০)
ব্যাখ্যা : যখন তারা তাওবা করবে তখন ইতোপূর্বে তারা যে সমস্ত খারাপ কাজ করত, আল্লাহ তার জায়গায় তাদেরকে সৎকাজ করার সুযোগ দেবেন। ফলে এসব সৎকাজ তাদের অসৎকাজের জায়গাগুলো দখল করে নেবে। আর তাওবার ফলে তাদের আমলনামা থেকে কেবল অপরাধসমূহ কেটে দেয়া হবে না, বরং এর পরিবর্তে প্রত্যেকের আমলনামায় সমপরিমাণ নেকীও লেখা হবে। যতবারই বান্দা নিজের পূর্ববর্তী জীবনের খারাপ কাজগুলো স্মরণ করে লজ্জিত হবে এবং নিজের প্রতিপালকের কাছে তাওবা করতে থাকবে, ততবারই তার আমলনামায় সমপরিমাণ নেকী লিখে দেয়া হবে। কারণ ভুলের জন্য লজ্জিত হওয়া ও ক্ষমা চাওয়াই একটি নেকীর কাজ। এভাবে তার আমলনামায় পরবর্তী নেকীসমূহ পূর্বের সমস্ত পাপের জায়গা দখল করে নেবে। ফলে সে কেবল শাস্তি থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং উল্টো তাকে পুরস্কৃতও করা হবে।
আল্লাহ তাদেরকে আযাব থেকে মুক্তি দেবেন :
اِلَّا الَّذِيْنَ تَابُوْا وَاَصْلَحُوْا وَاعْتَصَمُوْا بِاللهِ وَاَخْلَصُوْا دِيْنَهُمْ لِلّٰهِ فَاُولٰٓئِكَ مَعَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَسَوْفَ يُؤْتِ اللهُ الْمُؤْمِنِيْنَ اَجْرًا عَظِيْمًا
কিন্তু যারা তাওবা করে নিজেদেরকে সংশোধন করে নেয়, আল্লাহর রশি শক্ত করে ধরে রাখে এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিজেদের দ্বীনে একনিষ্ঠ থাকে, তারা মুমিনদের সঙ্গে থাকবে। অচিরেই আল্লাহ মুমিনদেরকে মহাপুরস্কারে ভূষিত করবেন। (সূরা নিসা- ১৪৬)
পাপ থেকে ফিরে আসলে আল্লাহ আযাব দেয়া থেকে ফিরে আসেন :
فَمَنْ تَابَ مِنْ ۢبَعْدِ ظُلْمِهٖ وَاَصْلَحَ فَاِنَّ اللهَ يَتُوْبُ عَلَيْهِ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
সুতরাং যে অত্যাচার করার পর তাওবা করে এবং নিজেকে সংশোধন করে নেয়, নিশ্চয় আল্লাহ তার তাওবা কবুল করেন। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা মায়েদা- ৩৯)
তাওবাকারীরা সফল হবে :
فَاَمَّا مَنْ تَابَ وَاٰمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَعَسٰۤى اَنْ يَّكُوْنَ مِنَ الْمُفْلِحِيْنَ
যে ব্যক্তি তাওবা করেছে, ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে, আশা করা যায় সে সাফল্য অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা ক্বাসাস- ৬৭)
তাওবাকারীরা জান্নাতে প্রবেশ করবে :
مَنْ تَابَ وَاٰمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَاُولٰٓئِكَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ وَلَا يُظْلَمُوْنَ شَيْئًا
যারা তাওবা করেছে, ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি কোন যুলুম করা হবে না। (সূরা মারইয়াম- ৬০)
ক্ষমা চাওয়ার জন্য আল্লাহর নির্দেশ :
وَاسْتَغْفِرِ اللهَ اِنَّ اللهَ كَانَ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا
আর আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করো; নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা নিসা- ১০৬)
فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ اِنَّهٗ كَانَ تَوَّابًا
অতঃপর তুমি প্রশংসার সাথে তোমার মালিকের তাসবীহ পাঠ করো এবং তাঁর কাছেই ক্ষমাপ্রার্থনা করো। নিশ্চয় তিনি তাওবা কবুলকারী। (সূরা নাসর- ৩)
قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِيْنَ اَسْرَفُوْا عَلٰۤى اَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوْا مِنْ رَّحْمَةِ اللهِؕ اِنَّ اللهَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِيْعًاؕ اِنَّهٗ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ
বলো, হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, তারা আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়ো না; নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি তো অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা যুমার- ৫৩)
ব্যাখ্যা : যখন শিরকের ব্যাপারে কঠোর শাস্তির ভয় প্রদর্শন করা হয়েছে এবং তাওহীদের দিকে আহবান করা হয়েছে তখন কারো কারো মনে সন্দেহ হলো যে, ইসলাম গ্রহণ করলে মুশরিক অবস্থায় কৃত পাপসমূহ ক্ষমা করা হবে কি না? তা যদি না হয় তবে ইসলাম গ্রহণ করে লাভ কি? উক্ত আয়াতে এ প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়েছে। এ আয়াতটি প্রকৃতপক্ষে সেসব লোকের আশার বাণী বয়ে এনেছিল, যারা জাহেলী যুগে গোনাহের কাজে লিপ্ত ছিল। আর এসব অপরাধ যে ÿমা হতে পারে সে ব্যাপারে নিরাশ ছিল। তাদেরকে বলা হয়েছে, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। তোমরা এখনো যদি তোমাদের রবের আনুগত্যের দিকে ফিরে আস, তাহলে সবকিছু ÿমা হয়ে যাবে।
আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল :
نَبِّئْ عِبَادِيْۤ اَنِّۤيْ اَنَا الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ
আমার বান্দাদেরকে বলে দাও যে, আমি পরম ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা হিজর- ৪৯)
وَاِنَّ رَبَّكَ لَذُوْ مَغْفِرَةٍ لِّلنَّاسِ عَلٰى ظُلْمِهِمْۚ وَاِنَّ رَبَّكَ لَشَدِيْدُ الْعِقَابِ
মানুষের সীমালঙ্ঘন সত্ত্বেও তোমার প্রতিপালক মানুষের প্রতি অতি ক্ষমাশীল; নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক শাস্তি দানেও অত্যন্ত কঠোর। (সূরা রা‘দ- ৬)
اِنَّ رَبَّكَ وَاسِعُ الْمَغْفِرَةِ
নিশ্চয় তোমার প্রতিপালকের ক্ষমার পরিধি অনেক বিস্তৃত। (সূরা নাজম- ৩২)
আল্লাহ মানুষকে ক্ষমার দিকে ডাকেন :
وَاللهُ يَدْعُوْاۤ اِلَى الْجَنَّةِ وَالْمَغْفِرَةِ بِاِذْنِهٖ
আল্লাহ স্বেচ্ছায় জান্নাত ও ক্ষমার দিকে ডাকেন। (সূরা বাক্বারা- ২২১)
ক্ষমা চাওয়ার উপযুক্ত সময় শেষ রাত :
وَبِالْاَسْحَارِ هُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ
তারা রাতের শেষ প্রহরে ক্ষমাপ্রার্থনা করে। (সূরা যারিয়াত- ১৮)
اَلصَّابِرِيْنَ وَالصَّادِقِيْنَ وَالْقَانِتِيْنَ وَالْمُنْفِقِيْنَ وَالْمُسْتَغْفِرِيْنَ بِالْاَسْحَارِ
তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, বিনয়ী, দানকারী এবং শেষরাতে ক্ষমাপ্রার্থনাকারী। (সূরা আলে ইমরান- ১৭)
আল্লাহর আযাব থেকে মুক্তির মাধ্যম হলো ক্ষমা চাওয়া :
وَمَا كَانَ اللهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ
আল্লাহ এমনও নয় যে, তারা ক্ষমাপ্রার্থনা করবে, অথচ তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন। (সূরা আনফাল- ৩৩)
وَاسْتَغْفِرِ اللهَ اِنَّ اللهَ كَانَ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا
আর আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করো; নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা নিসা- ১০৬)
فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ اِنَّهٗ كَانَ تَوَّابًا
অতঃপর তুমি প্রশংসার সাথে তোমার মালিকের তাসবীহ পাঠ করো এবং তাঁর কাছেই ক্ষমাপ্রার্থনা করো। নিশ্চয় তিনি তাওবা কবুলকারী। (সূরা নাসর- ৩)
قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِيْنَ اَسْرَفُوْا عَلٰۤى اَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوْا مِنْ رَّحْمَةِ اللهِؕ اِنَّ اللهَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِيْعًاؕ اِنَّهٗ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ
বলো, হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, তারা আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়ো না; নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি তো অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা যুমার- ৫৩)
ব্যাখ্যা : যখন শিরকের ব্যাপারে কঠোর শাস্তির ভয় প্রদর্শন করা হয়েছে এবং তাওহীদের দিকে আহবান করা হয়েছে তখন কারো কারো মনে সন্দেহ হলো যে, ইসলাম গ্রহণ করলে মুশরিক অবস্থায় কৃত পাপসমূহ ক্ষমা করা হবে কি না? তা যদি না হয় তবে ইসলাম গ্রহণ করে লাভ কি? উক্ত আয়াতে এ প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়েছে। এ আয়াতটি প্রকৃতপক্ষে সেসব লোকের আশার বাণী বয়ে এনেছিল, যারা জাহেলী যুগে গোনাহের কাজে লিপ্ত ছিল। আর এসব অপরাধ যে ÿমা হতে পারে সে ব্যাপারে নিরাশ ছিল। তাদেরকে বলা হয়েছে, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। তোমরা এখনো যদি তোমাদের রবের আনুগত্যের দিকে ফিরে আস, তাহলে সবকিছু ÿমা হয়ে যাবে।
আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল :
نَبِّئْ عِبَادِيْۤ اَنِّۤيْ اَنَا الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ
আমার বান্দাদেরকে বলে দাও যে, আমি পরম ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা হিজর- ৪৯)
وَاِنَّ رَبَّكَ لَذُوْ مَغْفِرَةٍ لِّلنَّاسِ عَلٰى ظُلْمِهِمْۚ وَاِنَّ رَبَّكَ لَشَدِيْدُ الْعِقَابِ
মানুষের সীমালঙ্ঘন সত্ত্বেও তোমার প্রতিপালক মানুষের প্রতি অতি ক্ষমাশীল; নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক শাস্তি দানেও অত্যন্ত কঠোর। (সূরা রা‘দ- ৬)
اِنَّ رَبَّكَ وَاسِعُ الْمَغْفِرَةِ
নিশ্চয় তোমার প্রতিপালকের ক্ষমার পরিধি অনেক বিস্তৃত। (সূরা নাজম- ৩২)
আল্লাহ মানুষকে ক্ষমার দিকে ডাকেন :
وَاللهُ يَدْعُوْاۤ اِلَى الْجَنَّةِ وَالْمَغْفِرَةِ بِاِذْنِهٖ
আল্লাহ স্বেচ্ছায় জান্নাত ও ক্ষমার দিকে ডাকেন। (সূরা বাক্বারা- ২২১)
ক্ষমা চাওয়ার উপযুক্ত সময় শেষ রাত :
وَبِالْاَسْحَارِ هُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ
তারা রাতের শেষ প্রহরে ক্ষমাপ্রার্থনা করে। (সূরা যারিয়াত- ১৮)
اَلصَّابِرِيْنَ وَالصَّادِقِيْنَ وَالْقَانِتِيْنَ وَالْمُنْفِقِيْنَ وَالْمُسْتَغْفِرِيْنَ بِالْاَسْحَارِ
তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, বিনয়ী, দানকারী এবং শেষরাতে ক্ষমাপ্রার্থনাকারী। (সূরা আলে ইমরান- ১৭)
আল্লাহর আযাব থেকে মুক্তির মাধ্যম হলো ক্ষমা চাওয়া :
وَمَا كَانَ اللهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ
আল্লাহ এমনও নয় যে, তারা ক্ষমাপ্রার্থনা করবে, অথচ তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন। (সূরা আনফাল- ৩৩)
যারা মূর্খতাবশত পাপ করার পর তাওবা করে :
مَنْ عَمِلَ مِنْكُمْ سُوْٓءًا ۢبِجَهَالَةٍ ثُمَّ تَابَ مِنْ ۢبَعْدِهٖ وَاَصْلَحَ فَاَنَّهٗ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অজ্ঞতাবশত মন্দকাজ করে, অতঃপর তাওবা করে এবং সংশোধন করে নেয়, তবে তো আল্লাহ (তার প্রতি) ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা আন‘আম- ৫৪)
وَمَنْ يَّعْمَلْ سُوْٓءًا اَوْ يَظْلِمْ نَفْسَهٗ ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ اللهَ يَجِدِ اللهَ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا
আর যে ব্যক্তি মন্দকাজ করে অথবা নিজের প্রতি যুলুম করে, অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করে, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু হিসেবেই পাবে। (সূরা নিসা- ১১০)
যারা পাপ থেকে বিরত হয়ে যায় :
فَاِنِ انْتَهَوْا فَاِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
যদি তারা বিরত হয়, তবে নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়। (সূরা বাক্বারা- ১৯২)
যারা নিজেদেরকে সংশোধন করে নেয় :
اِلَّا الَّذِيْنَ تَابُوْا مِنْ ۢبَعْدِ ذٰلِكَ وَاَصْلَحُوْاۗ فَاِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
তবে যারা পাপ করার পর তাওবা করে এবং নিজেদেরকে সংশোধন করে নেয়, নিশ্চয় আল্লাহ (তাদের ক্ষেত্রে) ক্ষমাশীল ও দয়াময়। (সূরা আলে ইমরান- ৮৯)
اِلَّا مَنْ ظَلَمَ ثُمَّ بَدَّلَ حُسْنًا ۢبَعْدَ سُوْٓءٍ فَاِنِّيْ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
তবে যারা যুলুম করার পর মন্দকর্মের পরিবর্তে সৎকর্ম করে, নিশ্চয় আমি তাদের প্রতি অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা নামল- ১১)
যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে :
وَاِنِّيْ لَغَفَّارٌ لِّمَنْ تَابَ وَاٰمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا ثُمَّ اهْتَدٰى
অবশ্যই আমি তার প্রতি ক্ষমাশীল, যে তাওবা করে, ঈমান আনে, সৎকর্ম করে ও সৎপথে অবিচল থাকে। (সূরা ত্বা-হা- ৮২)
فَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَهُمْ مَّغْفِرَةٌ وَّرِزْقٌ كَرِيْمٌ
যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা। (সূরা হজ্জ- ৫০)
যারা না দেখে আল্লাহকে ভয় করে :
اِنَّمَا تُنْذِرُ مَنِ اتَّبَعَ الذِّكْرَ وَخَشِيَ الرَّحْمٰنَ بِالْغَيْبِۚ فَبَشِّرْهُ بِمَغْفِرَةٍ وَّاَجْرٍ كَرِيْمٍ
আপনি কেবল তাকেই সতর্ক করতে পারেন, যে উপদেশ মেনে চলে এবং দয়াময় আল্লাহকে না দেখে ভয় করে। অতএব আপনি (এমন ব্যক্তিকে) ক্ষমা ও উত্তম পুরস্কারের সুসংবাদ দিন। (সূরা ইয়াসীন- ১১)
যারা তাক্বওয়া অর্জন করে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنْ تَتَّقُوا اللهَ يَجْعَلْ لَّكُمْ فُرْقَانًا وَّيُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْؕ وَاللهُ ذُوالْفَضْلِ الْعَظِيْمِ
হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে আল্লাহ তোমাদেরকে ন্যায়-অন্যায় পার্থক্য করার শক্তি দেবেন, তোমাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অতিশয় মঙ্গলময়। (সূরা আনফাল- ২৯)
যারা জান-মাল দিয়ে জিহাদ করে :
فَالَّذِيْنَ هَاجَرُوْا وَاُخْرِجُوْا مِنْ دِيَارِهِمْ وَاُوْذُوْا فِيْ سَبِيْلِيْ وَقَاتَلُوْا وَقُتِلُوْا لَاُكَفِّرَنَّ عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْ وَلَاُدْخِلَنَّهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ
যারা হিজরত করেছে, নিজেদের ঘরবাড়ি হতে বিতাড়িত হয়েছে, আমার পথে নির্যাতিত হয়েছে এবং সংগ্রাম করেছে ও নিহত হয়েছে, নিশ্চয় আমি তাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেব এবং তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাব, যার নিচ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়ে গেছে। (সূরা আলে ইমরান- ১৯৫)
যারা আল্লাহর পথে দান করে :
اِنْ تُقْرِضُوا اللهَ قَرْضًا حَسَنًا يُّضَاعِفْهُ لَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْؕ وَاللهُ شَكُوْرٌ حَلِيْمٌ
যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান কর, তবে তিনি তোমাদের জন্য তা বহু গুণে বৃদ্ধি করে দেবেন এবং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ গুণগ্রাহী ও সহনশীল। (সূরা তাগাবুন- ১৭)
যারা নবীর অনুসরণ করে :
قُلْ اِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّوْنَ اللهَ فَاتَّبِعُوْنِيْ يُحْبِبْكُمُ اللهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ ؕ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
বলো, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস তবে আমার অনুসরণ করো, তাহলে আল্লাহও তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা আলে ইমরান- ৩১)
যারা সত্য ও সঠিক কথা বলে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَقُوْلُوْا قَوْلًا سَدِيْدًا- يُّصْلِحْ لَكُمْ اَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বলো। আল্লাহ তোমাদের আমলগুলোকে সংশোধন করবেন এবং তোমাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। (সূরা আহযাব- ৭০)
যারা মানুষের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দেয় :
وَلْيَعْفُوْا وَلْيَصْفَحُوْاۤ اَ لَا تُحِبُّوْنَ اَنْ يَّغْفِرَ اللهُ لَكُمْ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
সুতরাং তারা যেন মানুষকে ক্ষমা করে এবং তাদের দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা করে। তোমরা কি চাও না যে, আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করুন? আর আল্লাহ তো অতিশয় ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা নূর- ২২)
যারা কবীরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকে :
اِنْ تَجْتَنِبُوْا كَبَآئِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَنُدْخِلْكُمْ مُّدْخَلًا كَرِيْمًا
তোমাদেরকে যে সকল কবীরা গোনাহ হতে নিষেধ করা হয়েছে যদি তোমরা তা থেকে বিরত থাক, তবে আমি তোমাদের (অতীতের) গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেব এবং তোমাদেরকে সম্মানজনক স্থানে প্রবেশ করাব। (সূরা নিসা- ৩১)
مَنْ عَمِلَ مِنْكُمْ سُوْٓءًا ۢبِجَهَالَةٍ ثُمَّ تَابَ مِنْ ۢبَعْدِهٖ وَاَصْلَحَ فَاَنَّهٗ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অজ্ঞতাবশত মন্দকাজ করে, অতঃপর তাওবা করে এবং সংশোধন করে নেয়, তবে তো আল্লাহ (তার প্রতি) ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা আন‘আম- ৫৪)
وَمَنْ يَّعْمَلْ سُوْٓءًا اَوْ يَظْلِمْ نَفْسَهٗ ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ اللهَ يَجِدِ اللهَ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا
আর যে ব্যক্তি মন্দকাজ করে অথবা নিজের প্রতি যুলুম করে, অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করে, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু হিসেবেই পাবে। (সূরা নিসা- ১১০)
যারা পাপ থেকে বিরত হয়ে যায় :
فَاِنِ انْتَهَوْا فَاِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
যদি তারা বিরত হয়, তবে নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়। (সূরা বাক্বারা- ১৯২)
যারা নিজেদেরকে সংশোধন করে নেয় :
اِلَّا الَّذِيْنَ تَابُوْا مِنْ ۢبَعْدِ ذٰلِكَ وَاَصْلَحُوْاۗ فَاِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
তবে যারা পাপ করার পর তাওবা করে এবং নিজেদেরকে সংশোধন করে নেয়, নিশ্চয় আল্লাহ (তাদের ক্ষেত্রে) ক্ষমাশীল ও দয়াময়। (সূরা আলে ইমরান- ৮৯)
اِلَّا مَنْ ظَلَمَ ثُمَّ بَدَّلَ حُسْنًا ۢبَعْدَ سُوْٓءٍ فَاِنِّيْ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
তবে যারা যুলুম করার পর মন্দকর্মের পরিবর্তে সৎকর্ম করে, নিশ্চয় আমি তাদের প্রতি অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা নামল- ১১)
যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে :
وَاِنِّيْ لَغَفَّارٌ لِّمَنْ تَابَ وَاٰمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا ثُمَّ اهْتَدٰى
অবশ্যই আমি তার প্রতি ক্ষমাশীল, যে তাওবা করে, ঈমান আনে, সৎকর্ম করে ও সৎপথে অবিচল থাকে। (সূরা ত্বা-হা- ৮২)
فَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَهُمْ مَّغْفِرَةٌ وَّرِزْقٌ كَرِيْمٌ
যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা। (সূরা হজ্জ- ৫০)
যারা না দেখে আল্লাহকে ভয় করে :
اِنَّمَا تُنْذِرُ مَنِ اتَّبَعَ الذِّكْرَ وَخَشِيَ الرَّحْمٰنَ بِالْغَيْبِۚ فَبَشِّرْهُ بِمَغْفِرَةٍ وَّاَجْرٍ كَرِيْمٍ
আপনি কেবল তাকেই সতর্ক করতে পারেন, যে উপদেশ মেনে চলে এবং দয়াময় আল্লাহকে না দেখে ভয় করে। অতএব আপনি (এমন ব্যক্তিকে) ক্ষমা ও উত্তম পুরস্কারের সুসংবাদ দিন। (সূরা ইয়াসীন- ১১)
যারা তাক্বওয়া অর্জন করে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنْ تَتَّقُوا اللهَ يَجْعَلْ لَّكُمْ فُرْقَانًا وَّيُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْؕ وَاللهُ ذُوالْفَضْلِ الْعَظِيْمِ
হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে আল্লাহ তোমাদেরকে ন্যায়-অন্যায় পার্থক্য করার শক্তি দেবেন, তোমাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অতিশয় মঙ্গলময়। (সূরা আনফাল- ২৯)
যারা জান-মাল দিয়ে জিহাদ করে :
فَالَّذِيْنَ هَاجَرُوْا وَاُخْرِجُوْا مِنْ دِيَارِهِمْ وَاُوْذُوْا فِيْ سَبِيْلِيْ وَقَاتَلُوْا وَقُتِلُوْا لَاُكَفِّرَنَّ عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْ وَلَاُدْخِلَنَّهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ
যারা হিজরত করেছে, নিজেদের ঘরবাড়ি হতে বিতাড়িত হয়েছে, আমার পথে নির্যাতিত হয়েছে এবং সংগ্রাম করেছে ও নিহত হয়েছে, নিশ্চয় আমি তাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেব এবং তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাব, যার নিচ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়ে গেছে। (সূরা আলে ইমরান- ১৯৫)
যারা আল্লাহর পথে দান করে :
اِنْ تُقْرِضُوا اللهَ قَرْضًا حَسَنًا يُّضَاعِفْهُ لَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْؕ وَاللهُ شَكُوْرٌ حَلِيْمٌ
যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান কর, তবে তিনি তোমাদের জন্য তা বহু গুণে বৃদ্ধি করে দেবেন এবং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ গুণগ্রাহী ও সহনশীল। (সূরা তাগাবুন- ১৭)
যারা নবীর অনুসরণ করে :
قُلْ اِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّوْنَ اللهَ فَاتَّبِعُوْنِيْ يُحْبِبْكُمُ اللهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ ؕ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
বলো, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস তবে আমার অনুসরণ করো, তাহলে আল্লাহও তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা আলে ইমরান- ৩১)
যারা সত্য ও সঠিক কথা বলে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَقُوْلُوْا قَوْلًا سَدِيْدًا- يُّصْلِحْ لَكُمْ اَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বলো। আল্লাহ তোমাদের আমলগুলোকে সংশোধন করবেন এবং তোমাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। (সূরা আহযাব- ৭০)
যারা মানুষের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দেয় :
وَلْيَعْفُوْا وَلْيَصْفَحُوْاۤ اَ لَا تُحِبُّوْنَ اَنْ يَّغْفِرَ اللهُ لَكُمْ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
সুতরাং তারা যেন মানুষকে ক্ষমা করে এবং তাদের দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা করে। তোমরা কি চাও না যে, আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করুন? আর আল্লাহ তো অতিশয় ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা নূর- ২২)
যারা কবীরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকে :
اِنْ تَجْتَنِبُوْا كَبَآئِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَنُدْخِلْكُمْ مُّدْخَلًا كَرِيْمًا
তোমাদেরকে যে সকল কবীরা গোনাহ হতে নিষেধ করা হয়েছে যদি তোমরা তা থেকে বিরত থাক, তবে আমি তোমাদের (অতীতের) গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেব এবং তোমাদেরকে সম্মানজনক স্থানে প্রবেশ করাব। (সূরা নিসা- ৩১)
যারা শিরকে লিপ্ত থাকে :
اِنَّ اللهَ لَا يَغْفِرُ اَنْ يُّشْرَكَ بِهٖ وَيَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذٰلِكَ لِمَن يَّشَآءُ
নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সঙ্গে শরীক স্থাপন করার অপরাধ ক্ষমা করবেন না। এটা ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দেবেন। (সূরা নিসা- ৪৮)
যারা মুনাফিকী করে :
سَوَآءٌ عَلَيْهِمْ اَسْتَغْفَرْتَ لَهُمْ اَمْ لَمْ تَسْتَغْفِرْ لَهُمْؕ لَنْ يَّغْفِرَ اللهُ لَهُمْ
তুমি তাদের (মুনাফিকদের) জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা কর অথবা না কর, উভয়ই তাদের জন্য সমান। আল্লাহ তাদেরকে কখনো ক্ষমা করবেন না। (সূরা মুনাফিকূন- ৬)
যারা কুফরী করে ও অত্যাচার করে :
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَظَلَمُوْا لَمْ يَكُنِ اللهُ لِيَغْفِرَ لَهُمْ وَلَا لِيَهْدِيَهُمْ طَرِيْقًا
যারা কুফরী করেছে ও সীমালঙ্ঘন করেছে আল্লাহ তাদেরকে কখনো ক্ষমা করবেন না এবং তাদেরকে কোন পথও দেখাবেন না। (সূরা নিসা- ১৬৮)
যারা ঈমান এনেও বার বার কুফরী করে :
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا ثُمَّ كَفَرُوْا ثُمَّ اٰمَنُوْا ثُمَّ كَفَرُوْا ثُمَّ ازْدَادُوْا كُفْرًا لَّمْ يَكُنِ اللهُ لِيَغْفِرَ لَهُمْ وَلَا لِيَهْدِيَهُمْ سَبِيْلًا
নিশ্চয় যারা ঈমান আনে, অতঃপর কুফরী করে, আবার ঈমান আনে এবং আবার কুফরী করে, অতঃপর তাদের কুফরী বৃদ্ধি পেতে থাকে, আল্লাহ তাদেরকে কিছুতেই ক্ষমা করবেন না এবং তাদেরকে কোন পথও দেখাবেন না। (সূরা নিসা- ১৩৭)
যারা কাফির অবস্থায় মারা যায় :
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَصَدُّوْا عَنْ سَبِيْلِ اللهِ ثُمَّ مَاتُوْا وَهُمْ كُفَّارٌ فَلَنْ يَّغْفِرَ اللهُ لَهُمْ
নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে ও আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করেছে। অতঃপর কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে, আল্লাহ তাদেরকে কখনো ক্ষমা করবেন না। (সূরা মুহাম্মাদ- ৩৪)
اِنَّ اللهَ لَا يَغْفِرُ اَنْ يُّشْرَكَ بِهٖ وَيَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذٰلِكَ لِمَن يَّشَآءُ
নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সঙ্গে শরীক স্থাপন করার অপরাধ ক্ষমা করবেন না। এটা ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দেবেন। (সূরা নিসা- ৪৮)
যারা মুনাফিকী করে :
سَوَآءٌ عَلَيْهِمْ اَسْتَغْفَرْتَ لَهُمْ اَمْ لَمْ تَسْتَغْفِرْ لَهُمْؕ لَنْ يَّغْفِرَ اللهُ لَهُمْ
তুমি তাদের (মুনাফিকদের) জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা কর অথবা না কর, উভয়ই তাদের জন্য সমান। আল্লাহ তাদেরকে কখনো ক্ষমা করবেন না। (সূরা মুনাফিকূন- ৬)
যারা কুফরী করে ও অত্যাচার করে :
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَظَلَمُوْا لَمْ يَكُنِ اللهُ لِيَغْفِرَ لَهُمْ وَلَا لِيَهْدِيَهُمْ طَرِيْقًا
যারা কুফরী করেছে ও সীমালঙ্ঘন করেছে আল্লাহ তাদেরকে কখনো ক্ষমা করবেন না এবং তাদেরকে কোন পথও দেখাবেন না। (সূরা নিসা- ১৬৮)
যারা ঈমান এনেও বার বার কুফরী করে :
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا ثُمَّ كَفَرُوْا ثُمَّ اٰمَنُوْا ثُمَّ كَفَرُوْا ثُمَّ ازْدَادُوْا كُفْرًا لَّمْ يَكُنِ اللهُ لِيَغْفِرَ لَهُمْ وَلَا لِيَهْدِيَهُمْ سَبِيْلًا
নিশ্চয় যারা ঈমান আনে, অতঃপর কুফরী করে, আবার ঈমান আনে এবং আবার কুফরী করে, অতঃপর তাদের কুফরী বৃদ্ধি পেতে থাকে, আল্লাহ তাদেরকে কিছুতেই ক্ষমা করবেন না এবং তাদেরকে কোন পথও দেখাবেন না। (সূরা নিসা- ১৩৭)
যারা কাফির অবস্থায় মারা যায় :
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَصَدُّوْا عَنْ سَبِيْلِ اللهِ ثُمَّ مَاتُوْا وَهُمْ كُفَّارٌ فَلَنْ يَّغْفِرَ اللهُ لَهُمْ
নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে ও আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করেছে। অতঃপর কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে, আল্লাহ তাদেরকে কখনো ক্ষমা করবেন না। (সূরা মুহাম্মাদ- ৩৪)
দু‘আ করার জন্য আল্লাহর আহবান :
وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُوْنِۤيْ اَسْتَجِبْ لَكُمْؕ اِنَّ الَّذِيْنَ يَسْتَكْبِرُوْنَ عَنْ عِبَادَتِيْ سَيَدْخُلُوْنَ جَهَنَّمَ دَاخِرِيْنَ
তোমাদের প্রতিপালক বলেন- তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। যারা অহংকারবশত আমার ইবাদাত থেকে বিমুখ থাকে, অবশ্যই তারা লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে । (সূরা মু’মিন- ৬০)
ব্যাখ্যা : اَلدَّعْوَةُ (আদ দা‘ওয়াতু) অর্থ নিজের অভাব পূরণের উদ্দেশ্যে সাহায্যের জন্য ডাকা। এর তাৎপর্য হচ্ছে, অভাব ও প্রয়োজন পূর্ণ করে সংকটমুক্ত করার সব ক্ষমতা একমাত্র তাঁর হাতেই কেন্দ্রীভূত। তাই একমাত্র তাঁর কাছে প্রার্থনা করাই যথার্থ ও সঠিক বলে বিবেচিত। মানুষের আভ্যন্তরীণ অনুভূতি তাকে দু‘আ করতে উদ্বুদ্ধ করে। বস্তুজগতের প্রাকৃতিক উপায়-উপকরণ যখন তার কোন কষ্ট নিবারণ কিংবা কোন প্রয়োজন পূরণ করার জন্য যথেষ্ট না হয়, তখনই মানুষ কোন প্রাকৃতিক ক্ষমতার অধিকারী সত্তার কাছে ধরনা দেয়। অতঃপর তাঁকে না দেখেই অনবরত ডাকতে থাকে এবং তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে। আর এ বিষয়টি একটি বিশ্বাসের ভিত্তিতেই সংঘটিত হয়। আর তা হচ্ছে, তিনি এমন অসীম ক্ষমতার অধিকারী যে, তাঁর কাছে প্রার্থনাকারী যেখানেই অবস্থান করুক না কেন তিনি তাকে সাহায্য করতে পারেন। তার বিপর্যস্ত ভাগ্যকে পুনরায় তৈরি করতে পারেন- এমন সত্তা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ হতে পারে না। এখন যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন সত্তাকে সাহায্যের জন্য ডাকে সে স্পষ্ট শিরকে লিপ্ত হয়। কারণ যেসব গুণাবলি কেবল আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট, তা অন্য সত্তার মধ্যেও আছে বলে সে বিশ্বাস করে। তা না হলে আল্লাহ ছাড়া অন্যের কাছে দু‘আ করার কল্পনাও তার মনে আসত না।
আল্লাহ বান্দার দু‘আ শুনতে পান :
اِنَّ رَبِّيْ لَسَمِيْعُ الدُّعَآءِ
আমার প্রতিপালক অবশ্যই প্রার্থনা শুনে থাকেন। (সূরা ইবরাহীম- ৩৯)
هُنَالِكَ دَعَا زَكَرِيَّا رَبَّهٗۚ - قَالَ رَبِّ هَبْ لِيْ مِنْ لَّدُنْكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةًۚ اِنَّكَ سَمِيْعُ الدُّعَآءِ
সেখানে যাকারিয়া তার রবকে ডেকে বললেন, হে আমার রব! আপনার পক্ষ থেকে আমাকে পবিত্র সন্তান দান করুন। নিশ্চয় আপনি দু‘আ শ্রবণকারী। (সূরা আলে ইমরান- ৩৮)
আল্লাহ দু‘আ কবুল করেন :
وَاِذَا سَاَلَكَ عِبَادِيْ عَنِّيْ فَاِنِّي قَرِيْبٌؕ اُجِيْبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ اِذَا دَعَانِ
আর যখন আমার বান্দাগণ আমার সম্বন্ধে তোমাকে জিজ্ঞেস করে তখন তাদেরকে বলে দাও, নিশ্চয় আমি নিকটেই রয়েছি। কোন আহবানকারী যখনই আমাকে ডাকে, তখনই আমি তার আহবানে সাড়া দেই। (সূরা বাক্বারা- ১৮৬)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, যদিও তোমরা আমাকে দেখতে পাও না, তবুও আমাকে তোমাদের থেকে দূরে মনে করো না। আমি জানার দিক থেকে আমার প্রত্যেক বান্দার অতি নিকটেই অবস্থান করছি। আমি হচ্ছি এ বিশাল বিশ্বজাহানের একচ্ছত্র অধিপতি। সকল সার্বভৌম ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব আমারই হাতে কেন্দ্রীভূত। তোমরা নিজেরা সরাসরি সর্বত্র ও সবসময় আমার কাছে নিজেদের আবেদন নিবেদন পেশ করতে পার। কাজেই তোমরা একের পর এক অক্ষম ও বানোয়াট উপাস্যের দ্বারে দ্বারে ধরনা দেয়ার বেড়াজাল ছিঁড়ে ফেলো। আমি তোমাদেরকে যে আহবান জানাচ্ছি সে আহবানে সাড়া দাও। আমার দিকে ফিরে এসো, আমার উপর নির্ভর করো এবং আমার আনুগত্য করো।
আল্লাহর নাম দিয়েই তাঁকে ডাকতে হবে :
وَلِلّٰهِ الْاَ سْمَآءُ الْحُسْنٰى فَادْعُوْهُ بِهَا
আল্লাহর জন্য রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম। অতএব তোমরা তাঁকে সেসব নামেই আহবান করো। (সূরা আ‘রাফ- ১৮০)
ভয় ও আশা নিয়ে আল্লাহকে ডাকতে হবে :
وَادْعُوْهُ خَوْفًا وَّطَمَعًاؕ اِنَّ رَحْمَتَ اللهِ قَرِيْبٌ مِّنَ الْمُحْسِنِيْنَ
তোমরা ভয় ও আশা নিয়ে একমাত্র আল্লাহকেই ডাকো; নিশ্চয় আল্লাহর রহমত নেক লোকদের অতি নিকটে। (সূরা আ‘রাফ- ৫৬)
ব্যাখ্যা : ভয় ও আশা সহকারে ডাকার অর্থ হচ্ছে, কাউকে ভয় করতে হলে একমাত্র আল্লাহকেই করতে হবে। কোন আশা পোষণ করতে হলে তাও একমাত্র আল্লাহরই কাছে করতে হবে। এ অনুভূতি সহকারে আল্লাহকে ডাকতে হবে যে, মানুষের ভাগ্য পুরোপুরি তাঁরই করুণা নির্ভর। সৌভাগ্য, সাফল্য ও মুক্তিলাভ একমাত্র তাঁরই সাহায্যে সম্ভব। অন্যথায় তাঁর সাহায্য থেকে বঞ্চিত হলে ব্যর্থতা ও ধ্বংস অনিবার্য।
وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُوْنِۤيْ اَسْتَجِبْ لَكُمْؕ اِنَّ الَّذِيْنَ يَسْتَكْبِرُوْنَ عَنْ عِبَادَتِيْ سَيَدْخُلُوْنَ جَهَنَّمَ دَاخِرِيْنَ
তোমাদের প্রতিপালক বলেন- তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। যারা অহংকারবশত আমার ইবাদাত থেকে বিমুখ থাকে, অবশ্যই তারা লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে । (সূরা মু’মিন- ৬০)
ব্যাখ্যা : اَلدَّعْوَةُ (আদ দা‘ওয়াতু) অর্থ নিজের অভাব পূরণের উদ্দেশ্যে সাহায্যের জন্য ডাকা। এর তাৎপর্য হচ্ছে, অভাব ও প্রয়োজন পূর্ণ করে সংকটমুক্ত করার সব ক্ষমতা একমাত্র তাঁর হাতেই কেন্দ্রীভূত। তাই একমাত্র তাঁর কাছে প্রার্থনা করাই যথার্থ ও সঠিক বলে বিবেচিত। মানুষের আভ্যন্তরীণ অনুভূতি তাকে দু‘আ করতে উদ্বুদ্ধ করে। বস্তুজগতের প্রাকৃতিক উপায়-উপকরণ যখন তার কোন কষ্ট নিবারণ কিংবা কোন প্রয়োজন পূরণ করার জন্য যথেষ্ট না হয়, তখনই মানুষ কোন প্রাকৃতিক ক্ষমতার অধিকারী সত্তার কাছে ধরনা দেয়। অতঃপর তাঁকে না দেখেই অনবরত ডাকতে থাকে এবং তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে। আর এ বিষয়টি একটি বিশ্বাসের ভিত্তিতেই সংঘটিত হয়। আর তা হচ্ছে, তিনি এমন অসীম ক্ষমতার অধিকারী যে, তাঁর কাছে প্রার্থনাকারী যেখানেই অবস্থান করুক না কেন তিনি তাকে সাহায্য করতে পারেন। তার বিপর্যস্ত ভাগ্যকে পুনরায় তৈরি করতে পারেন- এমন সত্তা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ হতে পারে না। এখন যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন সত্তাকে সাহায্যের জন্য ডাকে সে স্পষ্ট শিরকে লিপ্ত হয়। কারণ যেসব গুণাবলি কেবল আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট, তা অন্য সত্তার মধ্যেও আছে বলে সে বিশ্বাস করে। তা না হলে আল্লাহ ছাড়া অন্যের কাছে দু‘আ করার কল্পনাও তার মনে আসত না।
আল্লাহ বান্দার দু‘আ শুনতে পান :
اِنَّ رَبِّيْ لَسَمِيْعُ الدُّعَآءِ
আমার প্রতিপালক অবশ্যই প্রার্থনা শুনে থাকেন। (সূরা ইবরাহীম- ৩৯)
هُنَالِكَ دَعَا زَكَرِيَّا رَبَّهٗۚ - قَالَ رَبِّ هَبْ لِيْ مِنْ لَّدُنْكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةًۚ اِنَّكَ سَمِيْعُ الدُّعَآءِ
সেখানে যাকারিয়া তার রবকে ডেকে বললেন, হে আমার রব! আপনার পক্ষ থেকে আমাকে পবিত্র সন্তান দান করুন। নিশ্চয় আপনি দু‘আ শ্রবণকারী। (সূরা আলে ইমরান- ৩৮)
আল্লাহ দু‘আ কবুল করেন :
وَاِذَا سَاَلَكَ عِبَادِيْ عَنِّيْ فَاِنِّي قَرِيْبٌؕ اُجِيْبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ اِذَا دَعَانِ
আর যখন আমার বান্দাগণ আমার সম্বন্ধে তোমাকে জিজ্ঞেস করে তখন তাদেরকে বলে দাও, নিশ্চয় আমি নিকটেই রয়েছি। কোন আহবানকারী যখনই আমাকে ডাকে, তখনই আমি তার আহবানে সাড়া দেই। (সূরা বাক্বারা- ১৮৬)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, যদিও তোমরা আমাকে দেখতে পাও না, তবুও আমাকে তোমাদের থেকে দূরে মনে করো না। আমি জানার দিক থেকে আমার প্রত্যেক বান্দার অতি নিকটেই অবস্থান করছি। আমি হচ্ছি এ বিশাল বিশ্বজাহানের একচ্ছত্র অধিপতি। সকল সার্বভৌম ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব আমারই হাতে কেন্দ্রীভূত। তোমরা নিজেরা সরাসরি সর্বত্র ও সবসময় আমার কাছে নিজেদের আবেদন নিবেদন পেশ করতে পার। কাজেই তোমরা একের পর এক অক্ষম ও বানোয়াট উপাস্যের দ্বারে দ্বারে ধরনা দেয়ার বেড়াজাল ছিঁড়ে ফেলো। আমি তোমাদেরকে যে আহবান জানাচ্ছি সে আহবানে সাড়া দাও। আমার দিকে ফিরে এসো, আমার উপর নির্ভর করো এবং আমার আনুগত্য করো।
আল্লাহর নাম দিয়েই তাঁকে ডাকতে হবে :
وَلِلّٰهِ الْاَ سْمَآءُ الْحُسْنٰى فَادْعُوْهُ بِهَا
আল্লাহর জন্য রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম। অতএব তোমরা তাঁকে সেসব নামেই আহবান করো। (সূরা আ‘রাফ- ১৮০)
ভয় ও আশা নিয়ে আল্লাহকে ডাকতে হবে :
وَادْعُوْهُ خَوْفًا وَّطَمَعًاؕ اِنَّ رَحْمَتَ اللهِ قَرِيْبٌ مِّنَ الْمُحْسِنِيْنَ
তোমরা ভয় ও আশা নিয়ে একমাত্র আল্লাহকেই ডাকো; নিশ্চয় আল্লাহর রহমত নেক লোকদের অতি নিকটে। (সূরা আ‘রাফ- ৫৬)
ব্যাখ্যা : ভয় ও আশা সহকারে ডাকার অর্থ হচ্ছে, কাউকে ভয় করতে হলে একমাত্র আল্লাহকেই করতে হবে। কোন আশা পোষণ করতে হলে তাও একমাত্র আল্লাহরই কাছে করতে হবে। এ অনুভূতি সহকারে আল্লাহকে ডাকতে হবে যে, মানুষের ভাগ্য পুরোপুরি তাঁরই করুণা নির্ভর। সৌভাগ্য, সাফল্য ও মুক্তিলাভ একমাত্র তাঁরই সাহায্যে সম্ভব। অন্যথায় তাঁর সাহায্য থেকে বঞ্চিত হলে ব্যর্থতা ও ধ্বংস অনিবার্য।
ক্ষমা চাওয়ার কিছু দু‘আ :
وَاعْفُ عَنَّاۗ وَاغْفِرْ لَنَاۗ وَارْحَمْنَاۗ اَنْتَ مَوْلَانَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِيْنَ
হে আমাদের রব! আমাদেরকে মুক্তি দান করুন, ক্ষমা করুন এবং দয়া করুন। আপনি আমাদের অভিভাবক। সুতরাং আমাদেরকে কাফিরদের উপর সাহায্য করুন। (সূরা বাক্বারা- ২৮৬)
رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْاَبْرَارِ
হে আমাদের রব! আমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করুন, আমাদের গোনাহগুলো মুছে দিন এবং পুণ্যবানদের সাথে মৃত্যুদান করুন। (সূরা আলে ইমরান- ১৯৩)
رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَاَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِيْنَ
বলো, হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং দয়া করুন, আপনিই তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু। (সূরা মু’মিনূন- ১১৮)
মাতা-পিতা ও সকল মুমিনের জন্য ক্ষমা চাওয়ার দু‘আ :
رَبَّنَا اغْفِرْ لِيْ وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ يَوْمَ يَقُوْمُ الْحِسَابُ
হে আমাদের প্রতিপালক! যেদিন হিসাব (কিয়ামত) অনুষ্ঠিত হবে সেদিন আমাকে, আমার পিতামাতাকে এবং মুমিনগণকে ক্ষমা করে দিয়ো। (সূরা ইবরাহীম- ৪১)
পূর্ববর্তী মুমিনদের জন্য ক্ষমা চাওয়ার দু‘আ :
رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِاِخْوَانِنَا الَّذِيْنَ سَبَقُوْنَا بِالْاِيْمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِيْ قُلُوْبِنَا غِلًّا لِّلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا رَبَّنَاۤ اِنَّكَ رَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ
যারা তাদের পরে এসেছে (পৃথিবীতে) তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এবং আমাদের সেসব ভাইদেরকে ক্ষমা করুন, যারা আমাদের পূর্বে ঈমান এনেছে। আর মুমিনদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টি করবেন না। হে আমাদের প্রতিপালক! নিশ্চয় আপনি দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। (সূরা হাশর- ১০)
আদম ও হাওয়া (আঃ) যে দু‘আ করে ক্ষমা চেয়েছিলেন :
رَبَّنَا ظَلَمْنَاۤ اَنْفُسَنَا وَاِنْ لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُوْنَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
তারা বলল, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছি, যদি তুমি আমাদেরকে ক্ষমা না কর এবং দয়া না কর, তবে আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব। (সূরা আ‘রাফ- ২৩)
হেদায়াত লাভের দু‘আ :
اِهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيْمَ
আমাদেরকে সরলসঠিক পথপ্রদর্শন করুন। (সূরা ফাতিহা- ৬)
হেদায়াতের উপর টিকে থাকার জন্য দু‘আ :
رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوْبَنَا بَعْدَ اِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِنْ لَّدُنْكَ رَحْمَةًۚ اِنَّكَ اَنْتَ الْوَهَّابُ
হে আমাদের রব! হেদায়াত দানের পর আমাদের অন্তরসমূহকে বক্র করে দেবেন না। আর আপনার পক্ষ থেকে আমাদেরকে রহমত দান করুন। নিশ্চয় আপনি মহান দাতা। (সূরা আলে ইমরান- ৮)
যালিমের কবল থেকে বাঁচার জন্য দু‘আ :
رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِيْنَ
হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে যালিমদের অন্তর্ভুক্ত করে দিয়ো না। (সূরা আ‘রাফ- ৪৭)
মুসলিম অবস্থায় মৃত্যু নসীবের জন্য দু‘আ :
رَبَّنَاۤ اَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَّتَوَفَّنَا مُسْلِمِيْنَ
হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে ধৈর্য দান করুন এবং মুসলিম অবস্থায় মৃত্যু দান করুন। (সূরা আ‘রাফ- ১২৬)
জাহান্নাম থেকে বাঁচার দু‘আ :
رَبَّنَا اصْرِفْ عَنَّا عَذَابَ جَهَنَّمَۗ اِنَّ عَذَابَهَا كَانَ غَرَامًا
হে আল্লাহ! আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে মুক্তি দান করুন। যেহেতু জাহান্নামের আযাব সর্বনাশকারী। (সূরা ফুরক্বানু ৬৫)
দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ লাভের দু‘আ :
رَبَّنَاۤ اٰتِنَا فِى الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّفِى الْاٰخِرَةِ حَسَنَةً وَّقِنَا عَذَابَ النَّارِ
হে আমাদের রব! আমাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ দান করুন এবং জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন। (সূরা বাক্বারা– ২০০)
وَاعْفُ عَنَّاۗ وَاغْفِرْ لَنَاۗ وَارْحَمْنَاۗ اَنْتَ مَوْلَانَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِيْنَ
হে আমাদের রব! আমাদেরকে মুক্তি দান করুন, ক্ষমা করুন এবং দয়া করুন। আপনি আমাদের অভিভাবক। সুতরাং আমাদেরকে কাফিরদের উপর সাহায্য করুন। (সূরা বাক্বারা- ২৮৬)
رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْاَبْرَارِ
হে আমাদের রব! আমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করুন, আমাদের গোনাহগুলো মুছে দিন এবং পুণ্যবানদের সাথে মৃত্যুদান করুন। (সূরা আলে ইমরান- ১৯৩)
رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَاَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِيْنَ
বলো, হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং দয়া করুন, আপনিই তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু। (সূরা মু’মিনূন- ১১৮)
মাতা-পিতা ও সকল মুমিনের জন্য ক্ষমা চাওয়ার দু‘আ :
رَبَّنَا اغْفِرْ لِيْ وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ يَوْمَ يَقُوْمُ الْحِسَابُ
হে আমাদের প্রতিপালক! যেদিন হিসাব (কিয়ামত) অনুষ্ঠিত হবে সেদিন আমাকে, আমার পিতামাতাকে এবং মুমিনগণকে ক্ষমা করে দিয়ো। (সূরা ইবরাহীম- ৪১)
পূর্ববর্তী মুমিনদের জন্য ক্ষমা চাওয়ার দু‘আ :
رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِاِخْوَانِنَا الَّذِيْنَ سَبَقُوْنَا بِالْاِيْمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِيْ قُلُوْبِنَا غِلًّا لِّلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا رَبَّنَاۤ اِنَّكَ رَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ
যারা তাদের পরে এসেছে (পৃথিবীতে) তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এবং আমাদের সেসব ভাইদেরকে ক্ষমা করুন, যারা আমাদের পূর্বে ঈমান এনেছে। আর মুমিনদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টি করবেন না। হে আমাদের প্রতিপালক! নিশ্চয় আপনি দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। (সূরা হাশর- ১০)
আদম ও হাওয়া (আঃ) যে দু‘আ করে ক্ষমা চেয়েছিলেন :
رَبَّنَا ظَلَمْنَاۤ اَنْفُسَنَا وَاِنْ لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُوْنَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
তারা বলল, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছি, যদি তুমি আমাদেরকে ক্ষমা না কর এবং দয়া না কর, তবে আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব। (সূরা আ‘রাফ- ২৩)
হেদায়াত লাভের দু‘আ :
اِهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيْمَ
আমাদেরকে সরলসঠিক পথপ্রদর্শন করুন। (সূরা ফাতিহা- ৬)
হেদায়াতের উপর টিকে থাকার জন্য দু‘আ :
رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوْبَنَا بَعْدَ اِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِنْ لَّدُنْكَ رَحْمَةًۚ اِنَّكَ اَنْتَ الْوَهَّابُ
হে আমাদের রব! হেদায়াত দানের পর আমাদের অন্তরসমূহকে বক্র করে দেবেন না। আর আপনার পক্ষ থেকে আমাদেরকে রহমত দান করুন। নিশ্চয় আপনি মহান দাতা। (সূরা আলে ইমরান- ৮)
যালিমের কবল থেকে বাঁচার জন্য দু‘আ :
رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِيْنَ
হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে যালিমদের অন্তর্ভুক্ত করে দিয়ো না। (সূরা আ‘রাফ- ৪৭)
মুসলিম অবস্থায় মৃত্যু নসীবের জন্য দু‘আ :
رَبَّنَاۤ اَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَّتَوَفَّنَا مُسْلِمِيْنَ
হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে ধৈর্য দান করুন এবং মুসলিম অবস্থায় মৃত্যু দান করুন। (সূরা আ‘রাফ- ১২৬)
জাহান্নাম থেকে বাঁচার দু‘আ :
رَبَّنَا اصْرِفْ عَنَّا عَذَابَ جَهَنَّمَۗ اِنَّ عَذَابَهَا كَانَ غَرَامًا
হে আল্লাহ! আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে মুক্তি দান করুন। যেহেতু জাহান্নামের আযাব সর্বনাশকারী। (সূরা ফুরক্বানু ৬৫)
দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ লাভের দু‘আ :
رَبَّنَاۤ اٰتِنَا فِى الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّفِى الْاٰخِرَةِ حَسَنَةً وَّقِنَا عَذَابَ النَّارِ
হে আমাদের রব! আমাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ দান করুন এবং জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন। (সূরা বাক্বারা– ২০০)
কুরআন পড়ে ঈমান বৃদ্ধি করা :
وَاِذَا مَاۤ اُنْزِلَتْ سُوْرَةٌ فَمِنْهُمْ مَّنْ يَّقُوْلُ اَيُّكُمْ زَادَتْهُ هٰذِه ۤ اِيْمَانًاۚ فَاَمَّا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا فَزَادَتْهُمْ اِيْمَانًا وَّهُمْ يَسْتَبْشِرُوْنَ
যখনই কোন সূরা অবতীর্ণ হয় তখন তাদের কেউ কেউ বলে, এটা তোমাদের মধ্যে কারো ঈমান বৃদ্ধি করল কি? অতঃপর যারা ঈমান আনয়ন করেছে এতে তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পায় এবং তারাই আনন্দিত হয়। (সূরা তাওবা - ১২৪)
সর্বদা আল্লাহর সৃষ্টির রহস্য নিয়ে চিন্তা করা :
اَلَّذِيْنَ يَذْكُرُوْنَ اللهَ قِيَامًا وَّقُعُوْدًا وَّعَلٰى جُنُوْبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُوْنَ فِيْ خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِۚ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هٰذَا بَاطِلًاۚ سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
যারা দন্ডায়মান, উপবেশন ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষয়ে চিন্তা করে এবং বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি তা বৃথা সৃষ্টি করেননি; আপনি কতই না পবিত্র। অতএব আপনি আমাদেরকে জাহান্নাম হতে রক্ষা করুন। (সূরা আলে ইমরান- ১৯১)
আল্লাহকে গভীরভাবে ভালোবাসা :
وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَشَدُّ حُبًّا لِّلّٰهِ
যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি তাদের ভালোবাসা দৃঢ়তর। (সূরা বাক্বারা- ১৬৫)
জান মাল দিয়ে জিহাদ করা :
لٰكِنِ الرَّسُوْلُ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَعَه جَاهَدُوْا بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْ وَاُولٰٓئِكَ لَهُمُ الْخَيْرَاتُ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
তবে রাসূল এবং তাঁর সাথে যারা ঈমান এনেছিল, তারা তাদের সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে; তাদের জন্যই রয়েছে কল্যাণ এবং তারাই সফলকাম। (সূরা তাওবা- ৮৮)
আল্লাহর স্মরণ দ্বারা মনকে শান্ত করা :
اَلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوْبُهُمْ بِذِكْرِ اللهِؕ اَلَا بِذِكْرِ اللهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوْبُ
যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের চিত্ত প্রশান্ত হয় (তারাই আল্লাহমুখী)। (প্রকৃতপক্ষে) আল্লাহর স্মরণেই অন্তর প্রশান্তি লাভ করে। (সূরা রা‘দ- ২৮)
আল্লাহর উপর নির্ভরশীল হওয়া :
فَمَاۤ اُوْتِيْتُمْ مِّنْ شَيْءٍ فَمَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَاۚ وَمَا عِنْدَ اللهِ خَيْرٌ وَّاَبْقٰى لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَلٰى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ
তোমরা (দুনিয়াতে) যা পেয়েছ তা পার্থিব জীবনের ভোগ-সম্ভার মাত্র। কিন্তু আল্লাহর নিকট যা আছে তা আরো উত্তম ও স্থায়ী। তবে এগুলো তাদের জন্য নির্ধারিত, যারা ঈমান আনে ও তাদের প্রতিপালকের উপর নির্ভর করে। (সূরা শূরা- ৩৬)
একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করা, তাঁর দিকেই আহবান করা :
قُلْ اِنَّمَاۤ اُمِرْتُ اَنْ اَعْبُدَ اللهَ وَلَاۤ اُشْرِكَ بِه ؕ اِلَيْهِ اَدْعُوْا وَاِلَيْهِ مَاٰبِ
বলো, আমি তো আল্লাহর ইবাদাত করতে ও তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করতে আদিষ্ট হয়েছি। আমি তাঁরই দিকে আহবান করি এবং তাঁরই নিকট আমার প্রত্যাবর্তন। (সূরা রা‘দ- ৩৬)
আল্লাহওয়ালাদের পথ অনুসরণ করা :
وَاتَّبِعْ سَبِيْلَ مَنْ اَنَابَ اِلَيَّ
আর তুমি তার অনুসরণ করো, যে আমার অভিমুখী হয়েছে। (সুরা লুক্বমান- ১৫)
আল্লাহর আযাবকে ভয় করা :
وَالَّذِيْنَ هُمْ مِّنْ عَذَابِ رَبِّهِمْ مُّشْفِقُوْنَ
আর যারা তাদের প্রতিপালকের আযাব সম্পর্কে ভীত-সন্ত্রস্ত। (সূরা মা‘আরিজ- ২৭)
কঠিন হিসাবকে ভয় করা :
وَالَّذِيْنَ يَصِلُوْنَ مَاۤ اَمَرَ اللهُ بِه ۤ اَنْ يُّوْصَلَ وَيَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ وَيَخَافُوْنَ سُوْٓءَ الْحِسَابِ
আর যারা সেসব সম্পর্ক বহাল রাখে, যা বহাল রাখার জন্য আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন। আর তারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে এবং ভয়াবহ হিসাব-নিকাশকে ভয় করে। (সূরা রা‘দ- ২১)
কুরআনের বাণী শুনে প্রভাবিত হওয়া :
وَالَّذِيْنَ اِذَا ذُكِّرُوْا بِاٰيَاتِ رَبِّهِمْ لَمْ يَخِرُّوْا عَلَيْهَا صُمًّا وَّعُمْيَانًا
(মুমিন তো তারাই) যখন তাদেরকে তাদের প্রতিপালকের আয়াতসমূহ স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়, তখন তারা অন্ধ এবং বধিরের মতো আচরণ করে না। (সূরা ফুরক্বান- ৭৩)
ব্যাখ্যা : তারা এমন লোক নয়, যারা আল্লাহর আয়াত শুনে একটুও প্রভাবিত হয় না। বরং তারা এর দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়। সংশ্লিষ্ট আয়াতগুলোতে যেসব নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তারা তা মেনে চলে। যা ফরয করা হয়েছে, তা অবশ্যই পালন করে। যে কাজের নিন্দা করা হয়েছে, তা থেকে বিরত থাকে। যে আযাবের ভয় দেখানো হয়েছে, তার কল্পনা করতেই তাদের হৃদয় কেঁপে ওঠে।
বিনাবাক্যে আল্লাহ ও তাঁর নবীর ফায়সালা মেনে নেয়া :
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَّلَا مُؤْمِنَةٍ اِذَا قَضَى اللهُ وَرَسُوْلُهٗۤ اَمْرًا اَنْ يَّكُوْنَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ اَمْرِهِمْؕ وَمَنْ يَّعْصِ اللهَ وَرَسُوْلَه فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُّبِيْنًا
কোন মুমিন পুরুষ কিংবা মুমিন নারীর জন্য এ অবকাশ নেই যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যখন কোন কাজের নির্দেশ দেন, তখন সে কাজে তাদের কোন নিজস্ব সিদ্ধান্তের অধিকার থাকবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করে, সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়। (সূরা আহযাব- ৩৬)
ইসলামের কোন বিধান জানার সাথে সাথে তা মেনে নেয়া :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَطِيْعُوا اللهَ وَرَسُوْلَه وَلَا تَوَلَّوْا عَنْهُ وَاَنْتُمْ تَسْمَعُوْنَ ‐ وَلَا تَكُوْنُوْا كَالَّذِيْنَ قَالُوْا سَمِعْنَا وَهُمْ لَا يَسْمَعُوْنَ
হে মুমিনগণ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো এবং তোমরা যখন তাঁর কথা শ্রবণ কর তখন তা হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না। আর তোমরা তাদের ন্যায় হয়ো না, যারা বলে- শ্রবণ করলাম; বস্তুত তারা শ্রবণ করে না। (সূরা আনফাল- ২০, ২১)
ব্যাখ্যা : এখানে শ্রবণ করা বলতে এমনভাবে শ্রবণ করাকে বুঝানো হয়েছে, যা মেনে নেয়া ও গ্রহণ করার অর্থ প্রকাশ করে। যেসব মুনাফিক মুখে ঈমানের কথা বলত কিন্তু আল্লাহর হুকুম মেনে চলত না এবং তার আনুগত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিত- এখানে তাদের দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।
দ্বীনের উপর অটল থাকা :
يُثَبِّتُ اللهُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِى الْاٰخِرَةِ
যারা শাশ্বত বাণীর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়ার জীবনে ও আখিরাতে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবেন। (সূরা ইবরাহীম- ২৭)
ধৈর্য, সততা ও আনুগত্যের জ্ঞানার্জন করা :
اَلصَّابِرِيْنَ وَالصَّادِقِيْنَ وَالْقَانِتِيْنَ وَالْمُنْفِقِيْنَ وَالْمُسْتَغْفِرِيْنَ بِالْاَسْحَارِ
তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, বিনয়ী, দানশীল এবং শেষ রাত্রে ক্ষমা প্রার্থনাকারী। (সূরা আলে ইমরান- ১৭)
বিনয়ের সাথে সালাত প্রতিষ্ঠা করা :
قَدْ اَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ ₋ اَ لَّذِيْنَ هُمْ فِيْ صَلَاتِهِمْ خَاشِعُوْنَ
অবশ্যই মুমিনগণ সফলকাম হয়েছে। আর (মুমিন তো তারাই) যারা নিজেদের সালাতে বিনয়ী। (সূরা মু’মিনূন- ১, ২)
তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করা :
وَالَّذِيْنَ يَبِيْتُوْنَ لِرَبِّهِمْ سُجَّدًا وَّقِيَامًا
তারা তাদের প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সিজদাবনত ও দন্ডায়মান হয়ে রাত্রি অতিবাহিত করে। (সূরা ফুরক্বান- ৬৪)
শেষরাতে আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করা :
كَانُوْا قَلِيْلًا مِّنَ اللَّيْلِ مَا يَهْجَعُوْنَ ₋ وَبِالْاَسْحَارِ هُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ
তারা রাত্রির সামান্য অংশই নিদ্রাবস্থায় অতিবাহিত করত এবং রাত্রির শেষ প্রহরে ক্ষমাপ্রার্থনা করত।
(সূরা যারিয়াত- ১৭, ১৮)
কোন পাপ হয়ে গেলে সাথে সাথে তাওবা করা :
وَالَّذِيْنَ اِذَا فَعَلُوْا فَاحِشَةً اَوْ ظَلَمُوْاۤ اَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللهَ فَاسْتَغْفَرُوْا لِذُنُوْبِهِمْؕ وَمَنْ يَّغْفِرُ الذُّنُوْبَ اِلَّا اللهُ وَلَمْ يُصِرُّوْا عَلٰى مَا فَعَلُوْا وَهُمْ يَعْلَمُوْنَ
যারা- যখনই কোন অশ্লীল কাজ করে ফেলে কিংবা নিজেদের জীবনের প্রতি অত্যাচার করে ফেলে, তখনই আল্লাহকে স্মরণ করে নিজেদের অপরাধসমূহের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে (তারাই মুমিন)। আর আল্লাহ ব্যতীত কে আছে, যে অপরাধসমূহ ক্ষমা করতে পারে? আর তারা যা (পাপ) করেছে, তার উপর জেনে-শুনে অটল থাকে না। (সূরা আলে ইমরান- ১৩৫)
ভীত অবস্থায় আল্লাহকে ডাকা :
تَتَجَافٰى جُنُوْبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَّطَمَعًا وَّمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ
তাদের দেহ বিছানা থেকে আলাদা থাকে, তারা তাদের প্রতিপালককে আহবান করতে থাকে ভয় ও আশার সাথে। আর আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে। (সূরা সাজদা- ১৬)
আমল কবুল হচ্ছে কি না- এ ভয়ে ভীত থাকা :
وَالَّذِيْنَ يُؤْتُوْنَ مَاۤ اٰتَوْا وَّقُلُوْبُهُمْ وَجِلَةٌ اَنَّهُمْ اِلٰى رَبِّهِمْ رَاجِعُوْنَ ₋ اُولٰٓئِكَ يُسَارِعُوْنَ فِى الخَيْرَاتِ وَهُمْ لَهَا سَابِقُوْنَ
যারা তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত সম্পদ থেকে দান করে এবং মনে মনে এ ভয়ও রাখে যে, তাদেরকে একদিন তাদের প্রতিপালকের কাছে ফিরে যেতে হবে। তারাই কল্যাণকর কাজ দ্রুত সম্পাদন করে এবং তারা তাতে দ্রুত অগ্রগামী হয়। (সূরা মু’মিনূন- ৬০, ৬১)
ব্যাখ্যা : ইবাদাত মুমিনদের অন্তরে কোন অহংকার জন্ম দেয় না। অধিক ইবাদাতের ফলে আগুন তাদেরকে স্পর্শ করতে পারবে না- এ ধরনের আত্মগর্বও তাদের মনে সৃষ্টি হয় না। বরং নিজেদের সমস্ত সৎকাজ ও ইবাদাত থাকা সত্ত্বেও তারা এ ভয়ে কাঁপতে থাকে যে, এসব আমল কবুল হলো কি না? আবার তারা কাজের বিনিময়ে জান্নাত লাভ করে নেয়ার অহংকারও করে না। বরং তারা নিজেদের মানবিক দুর্বলতার কথা চিন্তা করে সর্বদা আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহের উপর ভরসা করে। আল্লাহর হুকুম পালনের ক্ষেত্রে তারা যেসব ত্যাগ স্বীকার করে সেজন্য একটুও গর্ব করে না এবং আল্লাহর প্রিয়পাত্র হয়ে যাওয়ার অহংকারেও লিপ্ত হয় না। বরং নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী সবকিছু করার পরও এ মর্মে আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকে যে, এসব আমল তাঁর কাছে গৃহীত হবে কি না, নিজেদের গোনাহের মুকাবিলায় এগুলো ভারী প্রমাণিত হবে কি না এবং আল্লাহর কাছে মাগফিরাতের জন্য এগুলো যথেষ্ট হবে কি না।
পরিবারকে পাপ থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করা :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا قُوْاۤ اَنْفُسَكُمْ وَاَهْلِيْكُمْ نَارًا وَّقُوْدُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ
হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং নিজেদের পরিবার-পরিজনকে ঐ অগ্নি হতে রক্ষা করো, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। (সূরা তাহরীম- ৬)
তাদেরকে সালাত ও ইবাদাতের নির্দেশ দেয়া :
وَاْمُرْ اَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا لَا نَسْاَلُكَ رِزْقًاؕ نَحْنُ نَرْزُقُكَؕ وَالْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوٰى
তোমরা তোমাদের পরিবারবর্গকে সালাতের আদেশ দাও ও তাতে অটল থাকো। আমি তোমার নিকট কোন রিযিক চাই না, কেননা আমিই তো তোমাকে রিযিক দেই। আর শুভ পরিণাম মুত্তাক্বীদের জন্য। (সূরা ত্বা-হা- ১৩২)
মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা :
وَالَّذِيْنَ اِذَاۤ اَنْفَقُوْا لَمْ يُسْرِفُوْا وَلَمْ يَقْتُرُوْا وَكَانَ بَيْنَ ذٰلِكَ قَوَامًا
আর যখন তারা ব্যয় করে তখন অপব্যয় করে না এবং কার্পণ্যও করে না। বরং তারা এতদুভয়ের মাঝে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করে। (সূরা ফুরক্বান- ৬৭)
ব্যাখ্যা : তাদের অবস্থা এ নয় যে, আরাম-আয়েশ, বিলাসিতা, মদ-জুয়া, বন্ধুবান্ধব, মেলা ও বিয়ে-শাদীর পেছনে অথবা নিজেদের সামর্থ্যের চেয়ে অনেক বেশি করে নিজেকে উপস্থাপনের জন্য খাবার-দাবার, পোশাক-পরিচ্ছদ, বাড়ি-গাড়ি, সাজ-গোজ ইত্যাদির পেছনে অঢেল সম্পদ ব্যয় করে চলছে। আবার তারা এমন অর্থলোভীর মতোও নয়, যারা প্রতিটি পয়সা গুণে গুণে জমা রাখে। ফলে সে নিজেও ভালোভাবে খায় না, নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী নিজের ছেলে-মেয়ে ও পরিবার-পরিজনের লোকদের প্রয়োজনও সঠিকভাবে পূর্ণ করে না এবং কোন ভালো কাজে প্রাণ খুলে কোনকিছু ব্যয়ও করে না। বরং তারা ভারসাম্য রক্ষা করে চলে, যা আল্লাহর সৎ বান্দাদের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
বিনয় ও নম্রতার সাথে জীবন-যাপন করা :
وَعِبَادُ الرَّحْمٰنِ الَّذِيْنَ يَمْشُوْنَ عَلَى الْاَرْضِ هَوْنًا وَّاِذَا خَاطَبَهُمُ الْجَاهِلُوْنَ قَالُوْا سَلَامًا
‘রহমান’-এর বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং যখন তাদেরকে অজ্ঞ ব্যক্তিরা সম্বোধন করে, তখন তারা বলে, ‘সালাম’। (সূরা ফুরক্বান- ৬৩)
চালচলনে ভারসাম্য রক্ষা করা :
وَاقْصِدْ فِيْ مَشْيِكَ وَاغْضُضْ مِنْ صَوْتِكَؕ اِنَّ اَنْكَرَ الْاَصْوَاتِ لَصَوْتُ الْحَمِيْرِ
আর তুমি তোমার চলাফেরায় মধ্যমপন্থা অবলম্বন করো এবং তোমার কণ্ঠস্বর নীচু রাখো। নিঃসন্দেহে স্বরের মধ্যে গাধার স্বরই সবচেয়ে অপছন্দনীয়। (সূরা লুক্বমান- ১৯)
মানুষের সাথে কোমল আচরণ করা :
فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللهِ لِنْتَ لَهُمْۚ وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيْظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوْا مِنْ حَوْلِكَ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِى الْاَمْرِ فَاِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللهِۚ اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِيْنَ
অতএব আল্লাহর অনুগ্রহ এই যে, তুমি তাদের সাথে কোমলচিত্তের অধিকারী হিসেবে রয়েছ। তুমি যদি কর্কশভাষী ও কঠোর হৃদয়ের অধিকারী হতে, তবে নিশ্চয় তারা তোমার সংস্পর্শে আসা হতে বিরত থাকত। অতএব তুমি তাদের (ভুল-ত্রুটিসমূহ) উপেক্ষা করো এবং তাদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করো। আর কাজকর্মে তাদের সাথে পরামর্শ করো। অতঃপর যখন তুমি (কোন বিষয়ে) সঙ্কল্পবদ্ধ হও, তখন আল্লাহর উপর নির্ভর করো। নিশ্চয় আল্লাহ (তাঁর উপর) নির্ভরশীলদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৯)
ভিক্ষুক ও গরীবের হক আদায় করা :
وَالَّذِيْنَ فِۤيْ اَمْوَالِهِمْ حَقٌّ مَّعْلُوْمٌ ₋ لِلسَّآئِلِ وَالْمَحْرُوْمِ
আর (যারা মনে করে) তাদের সম্পদে নির্ধারিত হক রয়েছে- ভিক্ষুক ও বঞ্চিতদের জন্য। (সূরা মা‘আরিজ- ২৪, ২৫)
মেহমানের সেবা করা :
هَلْ اَتَاكَ حَدِيْثُ ضَيْفِ اِبْرَاهِيْمَ الْمُكْرَمِيْنَ ‐ اِذْ دَخَلُوْا عَلَيْهِ فَقَالُوْا سَلَامًاؕ قَالَ سَلَامٌۚ قَوْمٌ مُّنْكَرُوْنَ ‐ فَرَاغَ اِلٰۤى اَهْلِه فَجَآءَ بِعِجْلٍ سَمِيْنٍ
হে নবী! তোমার নিকট ইবরাহীমের সম্মানিত মেহমানদের কাহিনী এসেছে কি? যখন তারা তাঁর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, (আপনার প্রতি) সালাম। উত্তরে তিনি বললেন, (আপনাদেরকেও) সালাম, তোমরা তো অপরিচিত সম্প্রদায়। অতঃপর সে তাঁর স্ত্রীর নিকট গেল এবং একটি ভূনা করা মোটা-তাজা গরুর বাছুর নিয়ে আসল। (সূরা যারিয়াত, ২৪-২৬)
অসহায় মানুষ দেখলে সাহায্য করা :
وَلَمَّا وَرَدَ مَآءَ مَدْيَنَ وَجَدَ عَلَيْهِ اُمَّةً مِّنَ النَّاسِ يَسْقُوْنَ وَوَجَدَ مِنْ دُوْنِهِمُ امْرَاَتَيْنِ تَذُوْدَانِۚ قَالَ مَا خَطْبُكُمَاؕ قَالَتَا لَا نَسْقِيْ حَتّٰى يُصْدِرَ الرِّعَآءُ وَاَبُوْنَا شَيْخٌ كَبِيْرٌ ‐ فَسَقٰى لَهُمَا ثُمَّ تَوَلّٰۤى اِلَى الظِّلِّ فَقَالَ رَبِّ اِنِّيْ لِمَاۤ اَنْزَلْتَ اِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ فَقِيْرٌ
যখন তিনি (মূসা আঃ) মাদইয়ানের কূপের নিকট পৌঁছলেন এবং দেখলেন যে, একদল লোক তাদের পশুগুলোকে পানি পান করাচ্ছে এবং তাদের পেছনে দু’জন নারী তাদের পশুগুলোকে আগলে রাখছে। তখন তিনি বললেন, তোমাদের কী ব্যাপার? তারা বলল, আমরা আমাদের পশুগুলোকে পানি পান করাতে পারি না, যতক্ষণ না রাখালরা তাদের পশুগুলোকে নিয়ে সরে না যায়। আর আমাদের পিতা অতি বৃদ্ধ। অতঃপর তিনি তাদের পশুগুলোকে পানি পান করিয়ে দিলেন। তারপর তিনি এক ছায়ার নিচে আশ্রয় গ্রহণ করে বললেন, হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ দান করবে, আমি তো তারই মুখাপেক্ষী। (সূরা ক্বাসাস- ২৩, ২৪)
কেউ উপকার করলে নিজেও তার উপকার করার চেষ্টা করা :
فَجَآءَتْهُ اِحْدَاهُمَا تَمْشِيْ عَلَى اسْتِحْيَآءٍۚ قَالَتْ اِنَّ اَبِيْ يَدْعُوْكَ لِيَجْزِيَكَ اَجْرَ مَا سَقَيْتَ لَنَا
তখন নারীদ্বয়ের একজন লজ্জাবনত অবস্থায় তাঁর নিকট আসল এবং বলল, আমার পিতা আমাদের পশুগুলোকে পানি পান করানোর পারিশ্রমিক দেয়ার জন্য আপনাকে আমন্ত্রণ করেছেন। (সূরা ক্বাসাস- ২৫)
একজন যতটুকু ভদ্রতা দেখায় তার সাথে তার চেয়ে বেশি ভদ্রতা দেখানো :
وَاِذَا حُيِّيْتُمْ بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّوْا بِاَحْسَنَ مِنْهَاۤ اَوْ رُدُّوْهَا ؕ اِنَّ اللهَ كَانَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ حَسِيْبًا
তোমাদেরকে যখন অভিবাদন করা হয়, তখন তোমরাও তার চেয়ে আরো উত্তম অভিবাদন জানাবে অথবা তারই অনুরূপ করবে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ের হিসাব গ্রহণকারী। (সূরা নিসা- ৮৬)
মানুষের ভুল-ত্রুটিকে ক্ষমা করে দেয়া :
اَلَّذِيْنَ يُنْفِقُوْنَ فِى السَّرَّآءِ وَالضَّرَّآءِ وَالْكَاظِمِيْنَ الْغَيْظَ وَالْعَافِيْنَ عَنِ النَّاسِؕ وَاللهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِيْنَ
যারা স্বচ্ছলতা ও অভাবের মধ্যে থেকেও ব্যয় করে এবং যারা ক্রোধ সংবরণ করে ও মানুষকে ক্ষমা করে। আর আল্লাহ সৎকর্মশীলদেরকেই ভালোবাসেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৩৪)
খারাপ আচরণের মুকাবিলায় ভালো আচরণ করা :
وَيَدْرَءُوْنَ بِالْحَسَنَةِ السَّيِّئَةَ اُولٰٓئِكَ لَهُمْ عُقْبَى الدَّارِ
যারা ভালো দ্বারা মন্দকে দূরীভূত করে দেয়, এদের জন্যই রয়েছে শুভ পরিণাম। (সূরা রা‘দ- ২২)
তবে ইসলামের শত্রুদের কাছে দুর্বল না হওয়া :
فَاصْبِرْ اِنَّ وَعْدَ اللهِ حَقٌّ وَّلَا يَسْتَخِفَّنَّكَ الَّذِيْنَ لَا يُوْقِنُوْنَ
অতএব আপনি ধৈর্যধারণ করুন; নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য। (সুতরাং) যারা দৃঢ়বিশ্বাসী নয় তারা যেন আপনাকে দুর্বল করতে না পারে। (সূরা রূম- ৬০)
وَالَّذِيْنَ اِذَاۤ اَصَابَهُمُ الْبَغْيُ هُمْ يَنْتَصِرُوْنَ
আর যারা অত্যাচারিত হলে প্রতিশোধ গ্রহণ করে। (সূরা শূরা- ৩৯)
ব্যাখ্যা : এটাও ঈমানদারদের একটি সর্বোৎকৃষ্ট গুণ। তারা যালিম ও নিষ্ঠুরদের জন্য সহজ শিকার নয়। তাদের কোমলতা এবং ক্ষমাশীলতা দুর্বলতার কারণে নয়। তাদেরকে মিসকীন হয়ে থাকার শিক্ষা দেয়া হয়নি। তাদের ভদ্রতার দাবী হচ্ছে, তারা বিজয়ী হলে পরাজিতদের দোষ-ত্রুটি ক্ষমা করে দেয়। অধীনস্ত ও দুর্বল ব্যক্তির দ্বারা কোন ভুল-ত্রুটি সংঘটিত হলে তা উপেক্ষা করে যায়। কিন্তু কোন শক্তিশালী ব্যক্তি যদি তার শক্তির অহংকারে তার প্রতি বাড়াবাড়ি করে, তাহলে বুক টান করে দাঁড়িয়ে যায় এবং তাকে উচিত শিক্ষা দেয়। মুমিন কখনো যালিমের কাছে হার মানে না এবং অহংকারীর সামনে মাথা নত করে না। এ ধরনের লোকদের জন্য তারা বড় কঠিন খাদ্য, যা চিবানোর প্রচেষ্টাকারীর মাড়িই ভেঙ্গে দেয়।
কেউ বাড়াবাড়ি করলে সমপরিমাণ প্রতিশোধ নেয়া :
وَجَزَآءُ سَيِّئَةٍ سَيِّئَةٌ مِّثْلُهَاۚ فَمَنْ عَفَا وَاَصْلَحَ فَاَجْرُهٗ عَلَى اللهِؕ اِنَّهٗ لَا يُحِبُّ الظَّالِمِيْنَ
মন্দের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ, তবে যে ক্ষমা করে দেয় ও সংশোধন করে নেয় তার পুরস্কার আল্লাহর নিকট। নিশ্চয় আল্লাহ যালিমদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা শূরা- ৪০)
ব্যাখ্যা : প্রতিশোধ গ্রহণের বৈধ সীমা হচ্ছে, কারো প্রতি যতটুকু অন্যায় করা হয়েছে সে তার প্রতি ঠিক ততটুকুই প্রতিশোধ নেবে। তার চেয়ে বেশি কিছু করার অধিকার তার নেই। অন্যের কৃত যুলুমের প্রতিশোধ গ্রহণ করতে যেয়ে নিজেই যালিম হওয়া উচিত নয়। একটি অন্যায়ের পরিবর্তে তার চেয়ে বড় অন্যায় করে ফেলা বৈধ নয়। যদি কেউ কাউকে একটি চপেটাঘাত করে তাহলে সে তাকে একটি চপেটাঘাতই করতে পারে, অসংখ্য লাথি ও ঘুঁষি মারতে পারে না। অনুরূপ গোনাহের প্রতিশোধ গোনাহের কাজের মাধ্যমে নেয়া ঠিক নয়। যেমন কোন দুষ্ট লোক যদি কারো বোন বা কন্যার সাথে ব্যভিচার করে, তাহলে সেই ব্যক্তির জন্য তার বোন বা কন্যার সাথে ব্যভিচার করা জায়েয হবে না।
পরস্পর বিবাদ দেখা দিলে মীমাংসা করে নেয়া :
فَاتَّقُوا اللهَ وَاَصْلِحُوْا ذَاتَ بَيْنِكُمْ
আল্লাহকে ভয় করো এবং নিজেদের মধ্যে সংশোধন করে নাও। (সূরা আনফাল- ১)
ভালো কাজে একে অপরের সহযোগিতা করা :
وَتَعَاوَنُوْا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوٰىۚ وَلَا تَعَاوَنُوْا عَلَى الْاِثْمِ وَالْعُدْوَانِؕ وَاتَّقُوا اللهَ اِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
সৎকর্ম ও তাক্বওয়ার কাজে তোমরা পরস্পর সহযোগিতা করো; কিন্তু পাপ ও সীমালঙ্ঘনমূলক কাজে একে অন্যের সহযোগিতা করো না। আর আল্লাহকে ভয় করো; নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে খুবই কঠোর। (সূরা মায়েদা- ২)
সত্য ও সঠিক কথা বলা :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَقُوْلُوْا قَوْلًا سَدِيْدًا ₋ يُصْلِحْ لَكُمْ اَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْؕ وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيْمًا
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বলো। (তাহলে) আল্লাহ তোমাদের আমলগুলোকে সংশোধন করে দেবেন এবং তোমাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে, সে তো মহাসাফল্য লাভ করবে। (সূরা আহযাব- ৭০, ৭১)
পৃথিবীতে ঘুরে আল্লাহর কুদরত অবলোকন করা :
قُلْ سِيْرُوْا فِى الْاَرْضِ فَانْظُرُوْا كَيْفَ بَدَاَ الْخَلْقَ ثُمَّ اللهُ يُنْشِئُ النَّشْاَةَ الْاٰخِرَةَؕ اِنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
বলো, তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করো এবং লক্ষ্য করো, কীভাবে তিনি সৃষ্টি আরম্ভ করেছেন? অতঃপর পরবর্তীতে অপর সৃষ্টিকে আল্লাহ সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা আনকাবূত- ২০)
وَاِذَا مَاۤ اُنْزِلَتْ سُوْرَةٌ فَمِنْهُمْ مَّنْ يَّقُوْلُ اَيُّكُمْ زَادَتْهُ هٰذِه ۤ اِيْمَانًاۚ فَاَمَّا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا فَزَادَتْهُمْ اِيْمَانًا وَّهُمْ يَسْتَبْشِرُوْنَ
যখনই কোন সূরা অবতীর্ণ হয় তখন তাদের কেউ কেউ বলে, এটা তোমাদের মধ্যে কারো ঈমান বৃদ্ধি করল কি? অতঃপর যারা ঈমান আনয়ন করেছে এতে তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পায় এবং তারাই আনন্দিত হয়। (সূরা তাওবা - ১২৪)
সর্বদা আল্লাহর সৃষ্টির রহস্য নিয়ে চিন্তা করা :
اَلَّذِيْنَ يَذْكُرُوْنَ اللهَ قِيَامًا وَّقُعُوْدًا وَّعَلٰى جُنُوْبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُوْنَ فِيْ خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِۚ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هٰذَا بَاطِلًاۚ سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
যারা দন্ডায়মান, উপবেশন ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষয়ে চিন্তা করে এবং বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি তা বৃথা সৃষ্টি করেননি; আপনি কতই না পবিত্র। অতএব আপনি আমাদেরকে জাহান্নাম হতে রক্ষা করুন। (সূরা আলে ইমরান- ১৯১)
আল্লাহকে গভীরভাবে ভালোবাসা :
وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَشَدُّ حُبًّا لِّلّٰهِ
যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি তাদের ভালোবাসা দৃঢ়তর। (সূরা বাক্বারা- ১৬৫)
জান মাল দিয়ে জিহাদ করা :
لٰكِنِ الرَّسُوْلُ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَعَه جَاهَدُوْا بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْ وَاُولٰٓئِكَ لَهُمُ الْخَيْرَاتُ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
তবে রাসূল এবং তাঁর সাথে যারা ঈমান এনেছিল, তারা তাদের সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে; তাদের জন্যই রয়েছে কল্যাণ এবং তারাই সফলকাম। (সূরা তাওবা- ৮৮)
আল্লাহর স্মরণ দ্বারা মনকে শান্ত করা :
اَلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوْبُهُمْ بِذِكْرِ اللهِؕ اَلَا بِذِكْرِ اللهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوْبُ
যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের চিত্ত প্রশান্ত হয় (তারাই আল্লাহমুখী)। (প্রকৃতপক্ষে) আল্লাহর স্মরণেই অন্তর প্রশান্তি লাভ করে। (সূরা রা‘দ- ২৮)
আল্লাহর উপর নির্ভরশীল হওয়া :
فَمَاۤ اُوْتِيْتُمْ مِّنْ شَيْءٍ فَمَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَاۚ وَمَا عِنْدَ اللهِ خَيْرٌ وَّاَبْقٰى لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَلٰى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ
তোমরা (দুনিয়াতে) যা পেয়েছ তা পার্থিব জীবনের ভোগ-সম্ভার মাত্র। কিন্তু আল্লাহর নিকট যা আছে তা আরো উত্তম ও স্থায়ী। তবে এগুলো তাদের জন্য নির্ধারিত, যারা ঈমান আনে ও তাদের প্রতিপালকের উপর নির্ভর করে। (সূরা শূরা- ৩৬)
একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করা, তাঁর দিকেই আহবান করা :
قُلْ اِنَّمَاۤ اُمِرْتُ اَنْ اَعْبُدَ اللهَ وَلَاۤ اُشْرِكَ بِه ؕ اِلَيْهِ اَدْعُوْا وَاِلَيْهِ مَاٰبِ
বলো, আমি তো আল্লাহর ইবাদাত করতে ও তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করতে আদিষ্ট হয়েছি। আমি তাঁরই দিকে আহবান করি এবং তাঁরই নিকট আমার প্রত্যাবর্তন। (সূরা রা‘দ- ৩৬)
আল্লাহওয়ালাদের পথ অনুসরণ করা :
وَاتَّبِعْ سَبِيْلَ مَنْ اَنَابَ اِلَيَّ
আর তুমি তার অনুসরণ করো, যে আমার অভিমুখী হয়েছে। (সুরা লুক্বমান- ১৫)
আল্লাহর আযাবকে ভয় করা :
وَالَّذِيْنَ هُمْ مِّنْ عَذَابِ رَبِّهِمْ مُّشْفِقُوْنَ
আর যারা তাদের প্রতিপালকের আযাব সম্পর্কে ভীত-সন্ত্রস্ত। (সূরা মা‘আরিজ- ২৭)
কঠিন হিসাবকে ভয় করা :
وَالَّذِيْنَ يَصِلُوْنَ مَاۤ اَمَرَ اللهُ بِه ۤ اَنْ يُّوْصَلَ وَيَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ وَيَخَافُوْنَ سُوْٓءَ الْحِسَابِ
আর যারা সেসব সম্পর্ক বহাল রাখে, যা বহাল রাখার জন্য আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন। আর তারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে এবং ভয়াবহ হিসাব-নিকাশকে ভয় করে। (সূরা রা‘দ- ২১)
কুরআনের বাণী শুনে প্রভাবিত হওয়া :
وَالَّذِيْنَ اِذَا ذُكِّرُوْا بِاٰيَاتِ رَبِّهِمْ لَمْ يَخِرُّوْا عَلَيْهَا صُمًّا وَّعُمْيَانًا
(মুমিন তো তারাই) যখন তাদেরকে তাদের প্রতিপালকের আয়াতসমূহ স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়, তখন তারা অন্ধ এবং বধিরের মতো আচরণ করে না। (সূরা ফুরক্বান- ৭৩)
ব্যাখ্যা : তারা এমন লোক নয়, যারা আল্লাহর আয়াত শুনে একটুও প্রভাবিত হয় না। বরং তারা এর দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়। সংশ্লিষ্ট আয়াতগুলোতে যেসব নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তারা তা মেনে চলে। যা ফরয করা হয়েছে, তা অবশ্যই পালন করে। যে কাজের নিন্দা করা হয়েছে, তা থেকে বিরত থাকে। যে আযাবের ভয় দেখানো হয়েছে, তার কল্পনা করতেই তাদের হৃদয় কেঁপে ওঠে।
বিনাবাক্যে আল্লাহ ও তাঁর নবীর ফায়সালা মেনে নেয়া :
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَّلَا مُؤْمِنَةٍ اِذَا قَضَى اللهُ وَرَسُوْلُهٗۤ اَمْرًا اَنْ يَّكُوْنَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ اَمْرِهِمْؕ وَمَنْ يَّعْصِ اللهَ وَرَسُوْلَه فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُّبِيْنًا
কোন মুমিন পুরুষ কিংবা মুমিন নারীর জন্য এ অবকাশ নেই যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যখন কোন কাজের নির্দেশ দেন, তখন সে কাজে তাদের কোন নিজস্ব সিদ্ধান্তের অধিকার থাকবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করে, সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়। (সূরা আহযাব- ৩৬)
ইসলামের কোন বিধান জানার সাথে সাথে তা মেনে নেয়া :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَطِيْعُوا اللهَ وَرَسُوْلَه وَلَا تَوَلَّوْا عَنْهُ وَاَنْتُمْ تَسْمَعُوْنَ ‐ وَلَا تَكُوْنُوْا كَالَّذِيْنَ قَالُوْا سَمِعْنَا وَهُمْ لَا يَسْمَعُوْنَ
হে মুমিনগণ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো এবং তোমরা যখন তাঁর কথা শ্রবণ কর তখন তা হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না। আর তোমরা তাদের ন্যায় হয়ো না, যারা বলে- শ্রবণ করলাম; বস্তুত তারা শ্রবণ করে না। (সূরা আনফাল- ২০, ২১)
ব্যাখ্যা : এখানে শ্রবণ করা বলতে এমনভাবে শ্রবণ করাকে বুঝানো হয়েছে, যা মেনে নেয়া ও গ্রহণ করার অর্থ প্রকাশ করে। যেসব মুনাফিক মুখে ঈমানের কথা বলত কিন্তু আল্লাহর হুকুম মেনে চলত না এবং তার আনুগত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিত- এখানে তাদের দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।
দ্বীনের উপর অটল থাকা :
يُثَبِّتُ اللهُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِى الْاٰخِرَةِ
যারা শাশ্বত বাণীর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়ার জীবনে ও আখিরাতে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবেন। (সূরা ইবরাহীম- ২৭)
ধৈর্য, সততা ও আনুগত্যের জ্ঞানার্জন করা :
اَلصَّابِرِيْنَ وَالصَّادِقِيْنَ وَالْقَانِتِيْنَ وَالْمُنْفِقِيْنَ وَالْمُسْتَغْفِرِيْنَ بِالْاَسْحَارِ
তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, বিনয়ী, দানশীল এবং শেষ রাত্রে ক্ষমা প্রার্থনাকারী। (সূরা আলে ইমরান- ১৭)
বিনয়ের সাথে সালাত প্রতিষ্ঠা করা :
قَدْ اَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ ₋ اَ لَّذِيْنَ هُمْ فِيْ صَلَاتِهِمْ خَاشِعُوْنَ
অবশ্যই মুমিনগণ সফলকাম হয়েছে। আর (মুমিন তো তারাই) যারা নিজেদের সালাতে বিনয়ী। (সূরা মু’মিনূন- ১, ২)
তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করা :
وَالَّذِيْنَ يَبِيْتُوْنَ لِرَبِّهِمْ سُجَّدًا وَّقِيَامًا
তারা তাদের প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সিজদাবনত ও দন্ডায়মান হয়ে রাত্রি অতিবাহিত করে। (সূরা ফুরক্বান- ৬৪)
শেষরাতে আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করা :
كَانُوْا قَلِيْلًا مِّنَ اللَّيْلِ مَا يَهْجَعُوْنَ ₋ وَبِالْاَسْحَارِ هُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ
তারা রাত্রির সামান্য অংশই নিদ্রাবস্থায় অতিবাহিত করত এবং রাত্রির শেষ প্রহরে ক্ষমাপ্রার্থনা করত।
(সূরা যারিয়াত- ১৭, ১৮)
কোন পাপ হয়ে গেলে সাথে সাথে তাওবা করা :
وَالَّذِيْنَ اِذَا فَعَلُوْا فَاحِشَةً اَوْ ظَلَمُوْاۤ اَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللهَ فَاسْتَغْفَرُوْا لِذُنُوْبِهِمْؕ وَمَنْ يَّغْفِرُ الذُّنُوْبَ اِلَّا اللهُ وَلَمْ يُصِرُّوْا عَلٰى مَا فَعَلُوْا وَهُمْ يَعْلَمُوْنَ
যারা- যখনই কোন অশ্লীল কাজ করে ফেলে কিংবা নিজেদের জীবনের প্রতি অত্যাচার করে ফেলে, তখনই আল্লাহকে স্মরণ করে নিজেদের অপরাধসমূহের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে (তারাই মুমিন)। আর আল্লাহ ব্যতীত কে আছে, যে অপরাধসমূহ ক্ষমা করতে পারে? আর তারা যা (পাপ) করেছে, তার উপর জেনে-শুনে অটল থাকে না। (সূরা আলে ইমরান- ১৩৫)
ভীত অবস্থায় আল্লাহকে ডাকা :
تَتَجَافٰى جُنُوْبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَّطَمَعًا وَّمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ
তাদের দেহ বিছানা থেকে আলাদা থাকে, তারা তাদের প্রতিপালককে আহবান করতে থাকে ভয় ও আশার সাথে। আর আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে। (সূরা সাজদা- ১৬)
আমল কবুল হচ্ছে কি না- এ ভয়ে ভীত থাকা :
وَالَّذِيْنَ يُؤْتُوْنَ مَاۤ اٰتَوْا وَّقُلُوْبُهُمْ وَجِلَةٌ اَنَّهُمْ اِلٰى رَبِّهِمْ رَاجِعُوْنَ ₋ اُولٰٓئِكَ يُسَارِعُوْنَ فِى الخَيْرَاتِ وَهُمْ لَهَا سَابِقُوْنَ
যারা তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত সম্পদ থেকে দান করে এবং মনে মনে এ ভয়ও রাখে যে, তাদেরকে একদিন তাদের প্রতিপালকের কাছে ফিরে যেতে হবে। তারাই কল্যাণকর কাজ দ্রুত সম্পাদন করে এবং তারা তাতে দ্রুত অগ্রগামী হয়। (সূরা মু’মিনূন- ৬০, ৬১)
ব্যাখ্যা : ইবাদাত মুমিনদের অন্তরে কোন অহংকার জন্ম দেয় না। অধিক ইবাদাতের ফলে আগুন তাদেরকে স্পর্শ করতে পারবে না- এ ধরনের আত্মগর্বও তাদের মনে সৃষ্টি হয় না। বরং নিজেদের সমস্ত সৎকাজ ও ইবাদাত থাকা সত্ত্বেও তারা এ ভয়ে কাঁপতে থাকে যে, এসব আমল কবুল হলো কি না? আবার তারা কাজের বিনিময়ে জান্নাত লাভ করে নেয়ার অহংকারও করে না। বরং তারা নিজেদের মানবিক দুর্বলতার কথা চিন্তা করে সর্বদা আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহের উপর ভরসা করে। আল্লাহর হুকুম পালনের ক্ষেত্রে তারা যেসব ত্যাগ স্বীকার করে সেজন্য একটুও গর্ব করে না এবং আল্লাহর প্রিয়পাত্র হয়ে যাওয়ার অহংকারেও লিপ্ত হয় না। বরং নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী সবকিছু করার পরও এ মর্মে আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকে যে, এসব আমল তাঁর কাছে গৃহীত হবে কি না, নিজেদের গোনাহের মুকাবিলায় এগুলো ভারী প্রমাণিত হবে কি না এবং আল্লাহর কাছে মাগফিরাতের জন্য এগুলো যথেষ্ট হবে কি না।
পরিবারকে পাপ থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করা :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا قُوْاۤ اَنْفُسَكُمْ وَاَهْلِيْكُمْ نَارًا وَّقُوْدُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ
হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং নিজেদের পরিবার-পরিজনকে ঐ অগ্নি হতে রক্ষা করো, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। (সূরা তাহরীম- ৬)
তাদেরকে সালাত ও ইবাদাতের নির্দেশ দেয়া :
وَاْمُرْ اَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا لَا نَسْاَلُكَ رِزْقًاؕ نَحْنُ نَرْزُقُكَؕ وَالْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوٰى
তোমরা তোমাদের পরিবারবর্গকে সালাতের আদেশ দাও ও তাতে অটল থাকো। আমি তোমার নিকট কোন রিযিক চাই না, কেননা আমিই তো তোমাকে রিযিক দেই। আর শুভ পরিণাম মুত্তাক্বীদের জন্য। (সূরা ত্বা-হা- ১৩২)
মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা :
وَالَّذِيْنَ اِذَاۤ اَنْفَقُوْا لَمْ يُسْرِفُوْا وَلَمْ يَقْتُرُوْا وَكَانَ بَيْنَ ذٰلِكَ قَوَامًا
আর যখন তারা ব্যয় করে তখন অপব্যয় করে না এবং কার্পণ্যও করে না। বরং তারা এতদুভয়ের মাঝে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করে। (সূরা ফুরক্বান- ৬৭)
ব্যাখ্যা : তাদের অবস্থা এ নয় যে, আরাম-আয়েশ, বিলাসিতা, মদ-জুয়া, বন্ধুবান্ধব, মেলা ও বিয়ে-শাদীর পেছনে অথবা নিজেদের সামর্থ্যের চেয়ে অনেক বেশি করে নিজেকে উপস্থাপনের জন্য খাবার-দাবার, পোশাক-পরিচ্ছদ, বাড়ি-গাড়ি, সাজ-গোজ ইত্যাদির পেছনে অঢেল সম্পদ ব্যয় করে চলছে। আবার তারা এমন অর্থলোভীর মতোও নয়, যারা প্রতিটি পয়সা গুণে গুণে জমা রাখে। ফলে সে নিজেও ভালোভাবে খায় না, নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী নিজের ছেলে-মেয়ে ও পরিবার-পরিজনের লোকদের প্রয়োজনও সঠিকভাবে পূর্ণ করে না এবং কোন ভালো কাজে প্রাণ খুলে কোনকিছু ব্যয়ও করে না। বরং তারা ভারসাম্য রক্ষা করে চলে, যা আল্লাহর সৎ বান্দাদের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
বিনয় ও নম্রতার সাথে জীবন-যাপন করা :
وَعِبَادُ الرَّحْمٰنِ الَّذِيْنَ يَمْشُوْنَ عَلَى الْاَرْضِ هَوْنًا وَّاِذَا خَاطَبَهُمُ الْجَاهِلُوْنَ قَالُوْا سَلَامًا
‘রহমান’-এর বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং যখন তাদেরকে অজ্ঞ ব্যক্তিরা সম্বোধন করে, তখন তারা বলে, ‘সালাম’। (সূরা ফুরক্বান- ৬৩)
চালচলনে ভারসাম্য রক্ষা করা :
وَاقْصِدْ فِيْ مَشْيِكَ وَاغْضُضْ مِنْ صَوْتِكَؕ اِنَّ اَنْكَرَ الْاَصْوَاتِ لَصَوْتُ الْحَمِيْرِ
আর তুমি তোমার চলাফেরায় মধ্যমপন্থা অবলম্বন করো এবং তোমার কণ্ঠস্বর নীচু রাখো। নিঃসন্দেহে স্বরের মধ্যে গাধার স্বরই সবচেয়ে অপছন্দনীয়। (সূরা লুক্বমান- ১৯)
মানুষের সাথে কোমল আচরণ করা :
فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللهِ لِنْتَ لَهُمْۚ وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيْظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوْا مِنْ حَوْلِكَ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِى الْاَمْرِ فَاِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللهِۚ اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِيْنَ
অতএব আল্লাহর অনুগ্রহ এই যে, তুমি তাদের সাথে কোমলচিত্তের অধিকারী হিসেবে রয়েছ। তুমি যদি কর্কশভাষী ও কঠোর হৃদয়ের অধিকারী হতে, তবে নিশ্চয় তারা তোমার সংস্পর্শে আসা হতে বিরত থাকত। অতএব তুমি তাদের (ভুল-ত্রুটিসমূহ) উপেক্ষা করো এবং তাদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করো। আর কাজকর্মে তাদের সাথে পরামর্শ করো। অতঃপর যখন তুমি (কোন বিষয়ে) সঙ্কল্পবদ্ধ হও, তখন আল্লাহর উপর নির্ভর করো। নিশ্চয় আল্লাহ (তাঁর উপর) নির্ভরশীলদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৯)
ভিক্ষুক ও গরীবের হক আদায় করা :
وَالَّذِيْنَ فِۤيْ اَمْوَالِهِمْ حَقٌّ مَّعْلُوْمٌ ₋ لِلسَّآئِلِ وَالْمَحْرُوْمِ
আর (যারা মনে করে) তাদের সম্পদে নির্ধারিত হক রয়েছে- ভিক্ষুক ও বঞ্চিতদের জন্য। (সূরা মা‘আরিজ- ২৪, ২৫)
মেহমানের সেবা করা :
هَلْ اَتَاكَ حَدِيْثُ ضَيْفِ اِبْرَاهِيْمَ الْمُكْرَمِيْنَ ‐ اِذْ دَخَلُوْا عَلَيْهِ فَقَالُوْا سَلَامًاؕ قَالَ سَلَامٌۚ قَوْمٌ مُّنْكَرُوْنَ ‐ فَرَاغَ اِلٰۤى اَهْلِه فَجَآءَ بِعِجْلٍ سَمِيْنٍ
হে নবী! তোমার নিকট ইবরাহীমের সম্মানিত মেহমানদের কাহিনী এসেছে কি? যখন তারা তাঁর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, (আপনার প্রতি) সালাম। উত্তরে তিনি বললেন, (আপনাদেরকেও) সালাম, তোমরা তো অপরিচিত সম্প্রদায়। অতঃপর সে তাঁর স্ত্রীর নিকট গেল এবং একটি ভূনা করা মোটা-তাজা গরুর বাছুর নিয়ে আসল। (সূরা যারিয়াত, ২৪-২৬)
অসহায় মানুষ দেখলে সাহায্য করা :
وَلَمَّا وَرَدَ مَآءَ مَدْيَنَ وَجَدَ عَلَيْهِ اُمَّةً مِّنَ النَّاسِ يَسْقُوْنَ وَوَجَدَ مِنْ دُوْنِهِمُ امْرَاَتَيْنِ تَذُوْدَانِۚ قَالَ مَا خَطْبُكُمَاؕ قَالَتَا لَا نَسْقِيْ حَتّٰى يُصْدِرَ الرِّعَآءُ وَاَبُوْنَا شَيْخٌ كَبِيْرٌ ‐ فَسَقٰى لَهُمَا ثُمَّ تَوَلّٰۤى اِلَى الظِّلِّ فَقَالَ رَبِّ اِنِّيْ لِمَاۤ اَنْزَلْتَ اِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ فَقِيْرٌ
যখন তিনি (মূসা আঃ) মাদইয়ানের কূপের নিকট পৌঁছলেন এবং দেখলেন যে, একদল লোক তাদের পশুগুলোকে পানি পান করাচ্ছে এবং তাদের পেছনে দু’জন নারী তাদের পশুগুলোকে আগলে রাখছে। তখন তিনি বললেন, তোমাদের কী ব্যাপার? তারা বলল, আমরা আমাদের পশুগুলোকে পানি পান করাতে পারি না, যতক্ষণ না রাখালরা তাদের পশুগুলোকে নিয়ে সরে না যায়। আর আমাদের পিতা অতি বৃদ্ধ। অতঃপর তিনি তাদের পশুগুলোকে পানি পান করিয়ে দিলেন। তারপর তিনি এক ছায়ার নিচে আশ্রয় গ্রহণ করে বললেন, হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ দান করবে, আমি তো তারই মুখাপেক্ষী। (সূরা ক্বাসাস- ২৩, ২৪)
কেউ উপকার করলে নিজেও তার উপকার করার চেষ্টা করা :
فَجَآءَتْهُ اِحْدَاهُمَا تَمْشِيْ عَلَى اسْتِحْيَآءٍۚ قَالَتْ اِنَّ اَبِيْ يَدْعُوْكَ لِيَجْزِيَكَ اَجْرَ مَا سَقَيْتَ لَنَا
তখন নারীদ্বয়ের একজন লজ্জাবনত অবস্থায় তাঁর নিকট আসল এবং বলল, আমার পিতা আমাদের পশুগুলোকে পানি পান করানোর পারিশ্রমিক দেয়ার জন্য আপনাকে আমন্ত্রণ করেছেন। (সূরা ক্বাসাস- ২৫)
একজন যতটুকু ভদ্রতা দেখায় তার সাথে তার চেয়ে বেশি ভদ্রতা দেখানো :
وَاِذَا حُيِّيْتُمْ بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّوْا بِاَحْسَنَ مِنْهَاۤ اَوْ رُدُّوْهَا ؕ اِنَّ اللهَ كَانَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ حَسِيْبًا
তোমাদেরকে যখন অভিবাদন করা হয়, তখন তোমরাও তার চেয়ে আরো উত্তম অভিবাদন জানাবে অথবা তারই অনুরূপ করবে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ের হিসাব গ্রহণকারী। (সূরা নিসা- ৮৬)
মানুষের ভুল-ত্রুটিকে ক্ষমা করে দেয়া :
اَلَّذِيْنَ يُنْفِقُوْنَ فِى السَّرَّآءِ وَالضَّرَّآءِ وَالْكَاظِمِيْنَ الْغَيْظَ وَالْعَافِيْنَ عَنِ النَّاسِؕ وَاللهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِيْنَ
যারা স্বচ্ছলতা ও অভাবের মধ্যে থেকেও ব্যয় করে এবং যারা ক্রোধ সংবরণ করে ও মানুষকে ক্ষমা করে। আর আল্লাহ সৎকর্মশীলদেরকেই ভালোবাসেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৩৪)
খারাপ আচরণের মুকাবিলায় ভালো আচরণ করা :
وَيَدْرَءُوْنَ بِالْحَسَنَةِ السَّيِّئَةَ اُولٰٓئِكَ لَهُمْ عُقْبَى الدَّارِ
যারা ভালো দ্বারা মন্দকে দূরীভূত করে দেয়, এদের জন্যই রয়েছে শুভ পরিণাম। (সূরা রা‘দ- ২২)
তবে ইসলামের শত্রুদের কাছে দুর্বল না হওয়া :
فَاصْبِرْ اِنَّ وَعْدَ اللهِ حَقٌّ وَّلَا يَسْتَخِفَّنَّكَ الَّذِيْنَ لَا يُوْقِنُوْنَ
অতএব আপনি ধৈর্যধারণ করুন; নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য। (সুতরাং) যারা দৃঢ়বিশ্বাসী নয় তারা যেন আপনাকে দুর্বল করতে না পারে। (সূরা রূম- ৬০)
وَالَّذِيْنَ اِذَاۤ اَصَابَهُمُ الْبَغْيُ هُمْ يَنْتَصِرُوْنَ
আর যারা অত্যাচারিত হলে প্রতিশোধ গ্রহণ করে। (সূরা শূরা- ৩৯)
ব্যাখ্যা : এটাও ঈমানদারদের একটি সর্বোৎকৃষ্ট গুণ। তারা যালিম ও নিষ্ঠুরদের জন্য সহজ শিকার নয়। তাদের কোমলতা এবং ক্ষমাশীলতা দুর্বলতার কারণে নয়। তাদেরকে মিসকীন হয়ে থাকার শিক্ষা দেয়া হয়নি। তাদের ভদ্রতার দাবী হচ্ছে, তারা বিজয়ী হলে পরাজিতদের দোষ-ত্রুটি ক্ষমা করে দেয়। অধীনস্ত ও দুর্বল ব্যক্তির দ্বারা কোন ভুল-ত্রুটি সংঘটিত হলে তা উপেক্ষা করে যায়। কিন্তু কোন শক্তিশালী ব্যক্তি যদি তার শক্তির অহংকারে তার প্রতি বাড়াবাড়ি করে, তাহলে বুক টান করে দাঁড়িয়ে যায় এবং তাকে উচিত শিক্ষা দেয়। মুমিন কখনো যালিমের কাছে হার মানে না এবং অহংকারীর সামনে মাথা নত করে না। এ ধরনের লোকদের জন্য তারা বড় কঠিন খাদ্য, যা চিবানোর প্রচেষ্টাকারীর মাড়িই ভেঙ্গে দেয়।
কেউ বাড়াবাড়ি করলে সমপরিমাণ প্রতিশোধ নেয়া :
وَجَزَآءُ سَيِّئَةٍ سَيِّئَةٌ مِّثْلُهَاۚ فَمَنْ عَفَا وَاَصْلَحَ فَاَجْرُهٗ عَلَى اللهِؕ اِنَّهٗ لَا يُحِبُّ الظَّالِمِيْنَ
মন্দের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ, তবে যে ক্ষমা করে দেয় ও সংশোধন করে নেয় তার পুরস্কার আল্লাহর নিকট। নিশ্চয় আল্লাহ যালিমদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা শূরা- ৪০)
ব্যাখ্যা : প্রতিশোধ গ্রহণের বৈধ সীমা হচ্ছে, কারো প্রতি যতটুকু অন্যায় করা হয়েছে সে তার প্রতি ঠিক ততটুকুই প্রতিশোধ নেবে। তার চেয়ে বেশি কিছু করার অধিকার তার নেই। অন্যের কৃত যুলুমের প্রতিশোধ গ্রহণ করতে যেয়ে নিজেই যালিম হওয়া উচিত নয়। একটি অন্যায়ের পরিবর্তে তার চেয়ে বড় অন্যায় করে ফেলা বৈধ নয়। যদি কেউ কাউকে একটি চপেটাঘাত করে তাহলে সে তাকে একটি চপেটাঘাতই করতে পারে, অসংখ্য লাথি ও ঘুঁষি মারতে পারে না। অনুরূপ গোনাহের প্রতিশোধ গোনাহের কাজের মাধ্যমে নেয়া ঠিক নয়। যেমন কোন দুষ্ট লোক যদি কারো বোন বা কন্যার সাথে ব্যভিচার করে, তাহলে সেই ব্যক্তির জন্য তার বোন বা কন্যার সাথে ব্যভিচার করা জায়েয হবে না।
পরস্পর বিবাদ দেখা দিলে মীমাংসা করে নেয়া :
فَاتَّقُوا اللهَ وَاَصْلِحُوْا ذَاتَ بَيْنِكُمْ
আল্লাহকে ভয় করো এবং নিজেদের মধ্যে সংশোধন করে নাও। (সূরা আনফাল- ১)
ভালো কাজে একে অপরের সহযোগিতা করা :
وَتَعَاوَنُوْا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوٰىۚ وَلَا تَعَاوَنُوْا عَلَى الْاِثْمِ وَالْعُدْوَانِؕ وَاتَّقُوا اللهَ اِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
সৎকর্ম ও তাক্বওয়ার কাজে তোমরা পরস্পর সহযোগিতা করো; কিন্তু পাপ ও সীমালঙ্ঘনমূলক কাজে একে অন্যের সহযোগিতা করো না। আর আল্লাহকে ভয় করো; নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে খুবই কঠোর। (সূরা মায়েদা- ২)
সত্য ও সঠিক কথা বলা :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَقُوْلُوْا قَوْلًا سَدِيْدًا ₋ يُصْلِحْ لَكُمْ اَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْؕ وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيْمًا
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বলো। (তাহলে) আল্লাহ তোমাদের আমলগুলোকে সংশোধন করে দেবেন এবং তোমাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে, সে তো মহাসাফল্য লাভ করবে। (সূরা আহযাব- ৭০, ৭১)
পৃথিবীতে ঘুরে আল্লাহর কুদরত অবলোকন করা :
قُلْ سِيْرُوْا فِى الْاَرْضِ فَانْظُرُوْا كَيْفَ بَدَاَ الْخَلْقَ ثُمَّ اللهُ يُنْشِئُ النَّشْاَةَ الْاٰخِرَةَؕ اِنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
বলো, তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করো এবং লক্ষ্য করো, কীভাবে তিনি সৃষ্টি আরম্ভ করেছেন? অতঃপর পরবর্তীতে অপর সৃষ্টিকে আল্লাহ সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা আনকাবূত- ২০)
শিরক না করা :
وَالَّذِيْنَ هُمْ بِرَبِّهِمْ لَا يُشْرِكُوْنَ
যারা তাদের প্রতিপালকের সাথে শিরক করে না। (সূরা মু’মিনূন- ৫৯)
রাগ দমন করা :
وَاِذَا مَا غَضِبُوْا هُمْ يَغْفِرُوْنَ
যখন তারা ক্রোধান্বিত হয়, তখন ক্ষমা করে দেয়। (সূরা শূরা- ৩৭)
ব্যাখ্যা : মুমিনগণ কঠোর স্বভাবের হয় না, বরং নম্র মেজাজের অধিকারী হয়। তাদের স্বভাব প্রতিশোধ পরায়ণ হয় না। তারা আল্লাহর বান্দাদের সাথে ক্ষমাসূলভ আচরণ করে এবং কোন কারণে ক্রোধান্বিত হলেও তা নিয়ন্ত্রণ করে। এগুলো মানুষের সর্বোত্তম গুণাবলির অন্তর্ভুক্ত। রাসূল ﷺ ব্যক্তিগত কারণে কখনো প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। তবে আল্লাহর কোন মর্যাদার অবমাননা করা হলে তিনি শাস্তির বিধান জারি করতেন।
অপব্যয় না করা :
وَلَا تُبَذِّرْ تَبْذِيْرًا اِنَّ الْمُبَذِّرِيْنَ كَانُوْاۤ اِخْوَانَ الشَّيَاطِيْنِ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّه كَفُوْرًا
তোমরা কিছুতেই অপব্যয় করো না; নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার প্রতিপালকের প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ। (সূরা বনী ইসরাঈল- ২৬, ২৭)
গান-বাজনা থেকে দূরে থাকা :
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّشْتَرِيْ لَهْوَ الْحَدِيْثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَّيَتَّخِذَهَا هُزُوًاؕ اُولٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُّهِيْنٌ
মানুষের মধ্যে এমন ব্যক্তিও রয়েছে, যারা অর্থহীন ও বেহুদা গল্প-কাহিনী ক্রয় করে নেয়। যাতে করে তারা (মানুষদেরকে) অজ্ঞতাবশত আল্লাহর পথ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারে এবং আল্লাহর দেখানো পথকে ঠাট্টা-বিদ্রূপের বস্তু বানিয়ে নেয়। এদের জন্যই রয়েছে অপমানজনক শাস্তি। (সূরা লুক্বমান- ৬)
ব্যাখ্যা : لَهْوُ الْحَدِيْثِ (লাহভুল হাদীস) এমন কথা, যা মানুষকে অন্য সবকিছু থেকে গাফিল করে দেয়। এ শব্দটি খারাপ ও অর্থহীন কথা অর্থেও ব্যবহৃত হয়। যেমন, কিসসা-কাহিনী, হাসি-ঠাট্টা এবং গান-বাজনা ইত্যাদি। ‘লাহভুল হাদীস’ কিনে নেয়ার অর্থ ঐ ব্যক্তি সত্য কথাকে বাদ দিয়ে মিথ্যা কথা গ্রহণ করে এবং সঠিক পথনির্দেশনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে এমন কথার প্রতি আগ্রহী হয়, যার মধ্যে দুনিয়াতেও কোন মঙ্গল নেই এবং আখিরাতেও নেই। এক কথায় এর অর্থ হচ্ছে, মানুষ নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে কোন বাজে জিনিস ক্রয় করে।
চালবাজি, ধোঁকাবাজী, দালালী ও প্রতারণা না করা :
وَالَّذِيْنَ يَمْكُرُوْنَ السَّيِّئَاتِ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيْدٌؕ وَمَكْرُ اُولٰٓئِكَ هُوَ يَبُوْرُ
যারা খারাপ কাজের চক্রান্ত করে তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি, তাদের চক্রান্ত বিফল হবেই। (সূরা ফাতির- ১০)
মানুষকে অবহেলা না করা :
وَلَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمْشِ فِى الْاَرْضِ مَرَحًاؕ اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُوْرٍ
তুমি অহংকারের বশবর্তী হয়ে মানুষকে অবহেলা করো না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে বিচরণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক ও অহংকারীকে ভালোবাসেন না। (সূরা লুক্বমান- ১৮)
নিজেকে ত্রুটিমুক্ত মনে না করা :
اَلَمْ تَرَ اِلَى الَّذِيْنَ يُزَكُّوْنَ اَنْفُسَهُمْ بَلِ اللهُ يُزَكِّيْ مَنْ يَّشَآءُؕ وَلَا يُظْلَمُوْنَ فَتِيْلًا
তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা নিজেদেরকে পবিত্র মনে করে? বরং আল্লাহ যাকে চান তাকে পবিত্র করেন এবং তাদের উপর সামান্য পরিমাণও যুলুম করা হবে না। (সূরা নিসা- ৪৯)
আত্মপ্রশংসা না করা :
فَلَا تُزَكُّوْاۤ اَنْفُسَكُمْ هُوَ اَعْلَمُ بِمَنِ اتَّقٰى
তোমরা নিজেদেরকে পবিত্র মনে করো না, তিনি ভালো করেই জানেন কে মুত্তাক্বী। (সূরা নাজম- ৩২)
অন্যায়, হত্যা ও যিনা থেকে দূরে থাকা :
وَالَّذِيْنَ لَا يَدْعُوْنَ مَعَ اللهِ اِلٰهًا اٰخَرَ وَلَا يَقْتُلُوْنَ النَّفْسَ الَّتِيْ حَرَّمَ اللهُ اِلَّا بِالْحَقِّ وَلَا يَزْنُوْنَۚ وَمَنْ يَّفْعَلْ ذٰلِكَ يَلْقَ اَثَامًا
তারা আল্লাহর সাথে অন্য কোন ইলাহকে ডাকে না, আল্লাহ যাকে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন উপযুক্ত কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না এবং তারা ব্যভিচার করে না। তবে যে এগুলো করে, সে শাস্তি ভোগ করবে। (সূরা ফুরক্বান- ৬৮)
পরস্পরের মধ্যে বিবাদ না করা :
وَلَا تَنَازَعُوْا فَتَفْشَلُوْا وَتَذْهَبَ رِيْحُكُمْ وَاصْبِرُوْاؕ اِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِيْنَ
(হে ঈমানদারগণ) তোমরা নিজেদের মধ্যে বিবাদ করো না, যদি তা কর তবে তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলবে এবং তোমাদের শক্তি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। সুতরাং তোমরা ধৈর্যধারণ করো, নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন। (সূরা আনফাল- ৪৬)
মিথ্যা সাক্ষ্য না দেয়া :
وَالَّذِيْنَ لَا يَشْهَدُوْنَ الزُّوْرَ وَاِذَا مَرُّوْا بِاللَّغْوِ مَرُّوْا كِرَامًا
যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না এবং যখন তারা কোন অযথা বিষয়ের সম্মুখীন হয়ে যায়, তখন একান্ত ভদ্রতার সাথে সেখান থেকে কেটে পড়ে। (সূরা ফুরক্বান- ৭২)
মন্দ কাজে সুপারিশ না করা :
مَنْ يَّشْفَعْ شَفَاعَةً حَسَنَةً يَّكُنْ لَّهٗ نَصِيْبٌ مِّنْهَاۚ وَمَنْ يَّشْفَعْ شَفَاعَةً سَيِّئَةً يَّكُنْ لَّهٗ كِفْلٌ مِّنْهَاؕ وَكَانَ اللهُ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ مُّقِيْتًا
যে ব্যক্তি কোন ভালো কাজের সুপারিশ করবে, তাতে তার জন্যও (সওয়াবের) একটি অংশ থাকবে এবং যে ব্যক্তি কোন মন্দকাজের সুপারিশ করবে, তাতে তার জন্যও (পাপের) একটি অংশ থাকবে। আল্লাহ সর্ববিষয়ে নজর রাখেন। (সূরা নিসা- ৮৫)
পাপিষ্ঠদের প্রতি আকৃষ্ট না হওয়া :
وَلَا تَرْكَنُوْاۤ اِلَى الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا فَتَمَسَّكُمُ النَّارُ وَمَا لَكُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ مِنْ اَوْلِيَآءَ ثُمَّ لَا تُنْصَرُوْنَ
যারা যুলুম করেছে তোমরা তাদের প্রতি ঝুঁকে পড়ো না, তাহলে (জাহান্নামের) অগ্নি তোমাদেরকে স্পর্শ করবে। তখন আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন অভিভাবক থাকবে না এবং তোমাদেরকে কোন সাহায্যও করা হবে না। (সূরা হুদ- ১১৩)
وَالَّذِيْنَ هُمْ بِرَبِّهِمْ لَا يُشْرِكُوْنَ
যারা তাদের প্রতিপালকের সাথে শিরক করে না। (সূরা মু’মিনূন- ৫৯)
রাগ দমন করা :
وَاِذَا مَا غَضِبُوْا هُمْ يَغْفِرُوْنَ
যখন তারা ক্রোধান্বিত হয়, তখন ক্ষমা করে দেয়। (সূরা শূরা- ৩৭)
ব্যাখ্যা : মুমিনগণ কঠোর স্বভাবের হয় না, বরং নম্র মেজাজের অধিকারী হয়। তাদের স্বভাব প্রতিশোধ পরায়ণ হয় না। তারা আল্লাহর বান্দাদের সাথে ক্ষমাসূলভ আচরণ করে এবং কোন কারণে ক্রোধান্বিত হলেও তা নিয়ন্ত্রণ করে। এগুলো মানুষের সর্বোত্তম গুণাবলির অন্তর্ভুক্ত। রাসূল ﷺ ব্যক্তিগত কারণে কখনো প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। তবে আল্লাহর কোন মর্যাদার অবমাননা করা হলে তিনি শাস্তির বিধান জারি করতেন।
অপব্যয় না করা :
وَلَا تُبَذِّرْ تَبْذِيْرًا اِنَّ الْمُبَذِّرِيْنَ كَانُوْاۤ اِخْوَانَ الشَّيَاطِيْنِ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّه كَفُوْرًا
তোমরা কিছুতেই অপব্যয় করো না; নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার প্রতিপালকের প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ। (সূরা বনী ইসরাঈল- ২৬, ২৭)
গান-বাজনা থেকে দূরে থাকা :
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّشْتَرِيْ لَهْوَ الْحَدِيْثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَّيَتَّخِذَهَا هُزُوًاؕ اُولٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُّهِيْنٌ
মানুষের মধ্যে এমন ব্যক্তিও রয়েছে, যারা অর্থহীন ও বেহুদা গল্প-কাহিনী ক্রয় করে নেয়। যাতে করে তারা (মানুষদেরকে) অজ্ঞতাবশত আল্লাহর পথ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারে এবং আল্লাহর দেখানো পথকে ঠাট্টা-বিদ্রূপের বস্তু বানিয়ে নেয়। এদের জন্যই রয়েছে অপমানজনক শাস্তি। (সূরা লুক্বমান- ৬)
ব্যাখ্যা : لَهْوُ الْحَدِيْثِ (লাহভুল হাদীস) এমন কথা, যা মানুষকে অন্য সবকিছু থেকে গাফিল করে দেয়। এ শব্দটি খারাপ ও অর্থহীন কথা অর্থেও ব্যবহৃত হয়। যেমন, কিসসা-কাহিনী, হাসি-ঠাট্টা এবং গান-বাজনা ইত্যাদি। ‘লাহভুল হাদীস’ কিনে নেয়ার অর্থ ঐ ব্যক্তি সত্য কথাকে বাদ দিয়ে মিথ্যা কথা গ্রহণ করে এবং সঠিক পথনির্দেশনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে এমন কথার প্রতি আগ্রহী হয়, যার মধ্যে দুনিয়াতেও কোন মঙ্গল নেই এবং আখিরাতেও নেই। এক কথায় এর অর্থ হচ্ছে, মানুষ নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে কোন বাজে জিনিস ক্রয় করে।
চালবাজি, ধোঁকাবাজী, দালালী ও প্রতারণা না করা :
وَالَّذِيْنَ يَمْكُرُوْنَ السَّيِّئَاتِ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيْدٌؕ وَمَكْرُ اُولٰٓئِكَ هُوَ يَبُوْرُ
যারা খারাপ কাজের চক্রান্ত করে তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি, তাদের চক্রান্ত বিফল হবেই। (সূরা ফাতির- ১০)
মানুষকে অবহেলা না করা :
وَلَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمْشِ فِى الْاَرْضِ مَرَحًاؕ اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُوْرٍ
তুমি অহংকারের বশবর্তী হয়ে মানুষকে অবহেলা করো না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে বিচরণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক ও অহংকারীকে ভালোবাসেন না। (সূরা লুক্বমান- ১৮)
নিজেকে ত্রুটিমুক্ত মনে না করা :
اَلَمْ تَرَ اِلَى الَّذِيْنَ يُزَكُّوْنَ اَنْفُسَهُمْ بَلِ اللهُ يُزَكِّيْ مَنْ يَّشَآءُؕ وَلَا يُظْلَمُوْنَ فَتِيْلًا
তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা নিজেদেরকে পবিত্র মনে করে? বরং আল্লাহ যাকে চান তাকে পবিত্র করেন এবং তাদের উপর সামান্য পরিমাণও যুলুম করা হবে না। (সূরা নিসা- ৪৯)
আত্মপ্রশংসা না করা :
فَلَا تُزَكُّوْاۤ اَنْفُسَكُمْ هُوَ اَعْلَمُ بِمَنِ اتَّقٰى
তোমরা নিজেদেরকে পবিত্র মনে করো না, তিনি ভালো করেই জানেন কে মুত্তাক্বী। (সূরা নাজম- ৩২)
অন্যায়, হত্যা ও যিনা থেকে দূরে থাকা :
وَالَّذِيْنَ لَا يَدْعُوْنَ مَعَ اللهِ اِلٰهًا اٰخَرَ وَلَا يَقْتُلُوْنَ النَّفْسَ الَّتِيْ حَرَّمَ اللهُ اِلَّا بِالْحَقِّ وَلَا يَزْنُوْنَۚ وَمَنْ يَّفْعَلْ ذٰلِكَ يَلْقَ اَثَامًا
তারা আল্লাহর সাথে অন্য কোন ইলাহকে ডাকে না, আল্লাহ যাকে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন উপযুক্ত কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না এবং তারা ব্যভিচার করে না। তবে যে এগুলো করে, সে শাস্তি ভোগ করবে। (সূরা ফুরক্বান- ৬৮)
পরস্পরের মধ্যে বিবাদ না করা :
وَلَا تَنَازَعُوْا فَتَفْشَلُوْا وَتَذْهَبَ رِيْحُكُمْ وَاصْبِرُوْاؕ اِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِيْنَ
(হে ঈমানদারগণ) তোমরা নিজেদের মধ্যে বিবাদ করো না, যদি তা কর তবে তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলবে এবং তোমাদের শক্তি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। সুতরাং তোমরা ধৈর্যধারণ করো, নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন। (সূরা আনফাল- ৪৬)
মিথ্যা সাক্ষ্য না দেয়া :
وَالَّذِيْنَ لَا يَشْهَدُوْنَ الزُّوْرَ وَاِذَا مَرُّوْا بِاللَّغْوِ مَرُّوْا كِرَامًا
যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না এবং যখন তারা কোন অযথা বিষয়ের সম্মুখীন হয়ে যায়, তখন একান্ত ভদ্রতার সাথে সেখান থেকে কেটে পড়ে। (সূরা ফুরক্বান- ৭২)
মন্দ কাজে সুপারিশ না করা :
مَنْ يَّشْفَعْ شَفَاعَةً حَسَنَةً يَّكُنْ لَّهٗ نَصِيْبٌ مِّنْهَاۚ وَمَنْ يَّشْفَعْ شَفَاعَةً سَيِّئَةً يَّكُنْ لَّهٗ كِفْلٌ مِّنْهَاؕ وَكَانَ اللهُ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ مُّقِيْتًا
যে ব্যক্তি কোন ভালো কাজের সুপারিশ করবে, তাতে তার জন্যও (সওয়াবের) একটি অংশ থাকবে এবং যে ব্যক্তি কোন মন্দকাজের সুপারিশ করবে, তাতে তার জন্যও (পাপের) একটি অংশ থাকবে। আল্লাহ সর্ববিষয়ে নজর রাখেন। (সূরা নিসা- ৮৫)
পাপিষ্ঠদের প্রতি আকৃষ্ট না হওয়া :
وَلَا تَرْكَنُوْاۤ اِلَى الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا فَتَمَسَّكُمُ النَّارُ وَمَا لَكُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ مِنْ اَوْلِيَآءَ ثُمَّ لَا تُنْصَرُوْنَ
যারা যুলুম করেছে তোমরা তাদের প্রতি ঝুঁকে পড়ো না, তাহলে (জাহান্নামের) অগ্নি তোমাদেরকে স্পর্শ করবে। তখন আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন অভিভাবক থাকবে না এবং তোমাদেরকে কোন সাহায্যও করা হবে না। (সূরা হুদ- ১১৩)
كُفْرٌ (কুফর) এর আসল অর্থ হচ্ছে গোপন করা বা লুকানো। এ থেকেই অস্বীকারের অর্থ বের হয়েছে। কুরআনের বর্ণনার প্রেক্ষিতে কুফরী মনোভাব ও আচরণ বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। যেমন- ১. আল্লাহকে একেবারেই না মানা। অথবা তাঁর সার্বভৌম কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা স্বীকার না করা এবং তাঁকে নিজের ও সমগ্র বিশ্বের মালিক ও উপাস্য হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকার করা। অথবা তাঁকেই একমাত্র মালিক ও উপাস্য হিসেবে না মানা। ২. আল্লাহকে মেনে নেয়া, কিন্তু তাঁর বিধান ও হেদায়াতসমূহকে জ্ঞান ও আইনের একমাত্র উৎস হিসেবে না মানা। ৩. অথবা মেনে নেয়ার পর কার্যত জেনে বুঝে আল্লাহর বিধানের নাফরমানি করা এবং এ নাফরমানির উপর জোর দিতে থাকা। সেই সাথে দুনিয়ার জীবনে আনুগত্যের পরিবর্তে নাফরমানির উপর নিজের কর্মনীতির ভিত্তি স্থাপন করা।
কুফরী করার কোন যৌক্তিকতা নেই :
كَيْفَ تَكْفُرُوْنَ بِاللهِ وَكُنْتُمْ اَمْوَاتًا فَاَحْيَاكُمْۚ ثُمَّ يُمِيْتُكُمْ ثُمَّ يُحْيِيْكُمْ ثُمَّ اِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ
কীভাবে তোমরা আল্লাহর সাথে কুফরী করছ? অথচ তোমরা ছিলে মৃত, অতঃপর তিনিই তোমাদেরকে জীবন দান করেছেন, এরপর আবার তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন, তারপর আবার জীবিত করবেন, অবশেষে তোমাদেরকে তাঁরই দিকে ফিরে যেতে হবে। (সূরা বাক্বারা- ২৮)
وَكَيْفَ تَكْفُرُوْنَ وَاَنْتُمْ تُتْلٰى عَلَيْكُمْ اٰيَاتُ اللهِ وَفِيْكُمْ رَسُوْلُهٗ
কীভাবে তোমরা আল্লাহর সাথে কুফরী করছ, অথচ আল্লাহর আয়াতসমূহ তোমাদের সামনে পাঠ করে শুনানো হচ্ছে এবং তোমাদের মধ্যে রয়েছে তাঁর রাসূল। (সূরা আলে ইমরান- ১০১)
কুফরী কালিমা নিম্নমানের :
وَجَعَلَ كَلِمَةَ الَّذِيْنَ كَفَرُوا السُّفْلٰىؕ وَكَلِمَةُ اللهِ هِيَ الْعُلْيَاؕ وَاللهُ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
তিনি কাফিরদের কালিমাকে হেয় করলেন, আর আল্লাহর কালিমাই উচ্চ। আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা- ৪০)
কুফরী কালিমার স্থায়িত্ব নেই :
وَمَثَلُ كَلِمَةٍ خَبِيْثَةٍ كَشَجَرَةٍ خَبِيْثَةِنِ اجْتُثَّتْ مِنْ فَوْقِ الْاَرْضِ مَا لَهَا مِنْ قَرَارٍ
অপবিত্র বাক্যের তুলনা একটি মন্দ বৃক্ষের মতো, যার মূল ভূপৃষ্ঠ হতে বিচ্ছিন্ন এবং যার কোন স্থায়িত্ব নেই। (সূরা ইবরাহীম- ২৬)
ব্যাখ্যা : এটি কালিমায়ে তাইয়্যেবার বিপরীত কালিমা। এর দ্বারা এমন বাতিল আকীদা বুঝায়, যার ভিত্তিতে মানুষ নিজের জীবনব্যবস্থা গড়ে তুলে। এ বাতিল আকীদা নাস্তিক্যবাদ, ধর্মর্র্র্দ্রোহিতা, অবিশ্বাস, শিরক, পৌত্তলিকতা অথবা এমন কোন চিন্তাধারাও হতে পারে, যা নবীদের মাধ্যমে আসেনি। বাতিল আকীদা যেহেতু সত্যবিরোধী তাই প্রাকৃতিক আইন কোথাও একে সহযোগিতা করে না। বিশ্বজগতের প্রতিটি বস্তু তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। পৃথিবী ও আকাশের প্রতিটি বস্তু তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। পরীক্ষার খাতিরে মানুষকে যদি নির্বাচন করার স্বাধীনতা ও কর্মের অবকাশ না দেয়া হতো, তাহলে এ কুফরী কালিমার গাছটি কোথাও গজিয়ে উঠতে পারত না। কিন্তু যেহেতু মহান আল্লাহ আদম সন্তানকে নিজের স্বাধীন ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করার সুযোগ দান করেছেন, তাই কিছু নির্বোধ লোক প্রাকৃতিক আইনের বিরুদ্ধে লড়ে এ গাছ লাগানোর চেষ্টা করে। ফলে জমি একে সামান্য কিছু জায়গা দিয়ে দেয়। বাতাস ও পানি থেকে সে কিছু খাদ্য পেয়েই যায় এবং আকাশও তার ডালপালা ছড়ানোর জন্য কিছু জায়গা দিতে প্রস্তুত হয়ে যায়। কিন্তু যতদিন এ গাছ বেঁচে থাকে ততদিন তিক্ত ও বিষাক্ত ফল দিতে থাকে।
কুফরী দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য ক্ষতিকর :
فَاَمَّا الَّذِيْنَ كَفَرُوْا فَاُعَذِّبُهُمْ عَذَابًا شَدِيْدًا فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ وَمَا لَهُمْ مِّنْ نَّاصِرِيْنَ
সুতরাং যারা কুফরী করেছে দুনিয়া ও আখিরাতে আমি তাদেরকে কঠিন শাস্তি দেব; আর তাদের কোন সাহায্যকারীও থাকবে না। (সূরা আলে ইমরান- ৫৬)
কুফরীর কারণে অন্তরে মরিচা পড়ে যায় :
كَذٰلِكَ يَطْبَعُ اللهُ عَلٰى قُلُوْبِ الْكَافِرِيْنَ
এভাবে আল্লাহ কাফিরদের হৃদয়ে মোহর মেরে দেন। (সূরা আ‘রাফ- ১০১)
কুফর বিতর্কে টিকতে পারে না :
اَلَمْ تَرَ اِلَى الَّذِيْ حَآجَّ اِبْرَاهِيْمَ فِيْ رَبِّهٖۤ اَنْ اٰتَاهُ اللهُ الْمُلْكَ اِذْ قَالَ اِبْرَاهِيْمُ رَبِّيَ الَّذِيْ يُحْيِيْ وَيُمِيْتُ قَالَ اَنَاْ اُحْيِيْ وَاُمِيْتُؕ قَالَ اِبْرَاهِيْمُ فَاِنَّ اللهَ يَأْتِيْ بِالشَّمْسِ مِنَ الْمَشْرِقِ فَأْتِ بِهَا مِنَ الْمَغْرِبِ فَبُهِتَ الَّذِيْ كَفَرَ وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
আপনি কি তার দিকে লক্ষ্য করেননি, যে ইবরাহীমের সাথে তাঁর রব সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিল? এজন্য যে, আল্লাহ তাকে রাজত্ব দান করেছিলেন। যখন ইবরাহীম বলেছিলেন, আমার রব তিনি যিনি জীবন এবং মৃত্যু দান করেন। তখন সে বলেছিল, আমিই জীবন এবং মৃত্যু দিয়ে থাকি। এবার ইবরাহীম বললেন, আল্লাহ সূর্যকে পূর্ব দিকে উদিত করেন সুতরাং তুমি তা পশ্চিম দিক থেকে নিয়ে আস। এতে সেই অবিশ্বাসী হতভম্ব হয়ে গেল। কিন্তু আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে পথপ্রদর্শন করেন না। (সূরা বাক্বারা- ২৫৮)
কুফরী করলে আল্লাহর কোন ক্ষতি হয় না :
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَصَدُّوْا عَنْ سَبِيْلِ اللهِ وَشَآقُّوا الرَّسُوْلَ مِنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْهُدٰى لَنْ يَّضُرُّوا اللهَ شَيْئًاؕ وَسَيُحْبِطُ اَعْمَالَهُمْ
হেদায়াতের পথ স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও যারা কুফরী করেছে এবং আল্লাহর পথে (মানুষকে আসতে) বাধা দিয়েছে। আর যারা রাসূলের সাথে ঝগড়া করেছে, তারা বাস্তবে আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবে না; বরং আল্লাহই তাদের সব আমল বরবাদ করে দেবেন। (সূরা মুহাম্মাদ- ৩২)
কুফরী নিজের ক্ষতি ডেকে আনে :
مَنْ كَفَرَ فَعَلَيْهِ كُفْرُهٗ
যে ব্যক্তি কুফরী করে, তার কুফরীর ফল তার উপরই বর্তাবে। (সূরা রূম- ৪৪)
ব্যাখ্যা : মানুষের কুফরীর কারণে আল্লাহর প্রভুত্বের সামান্যতম ক্ষতিও হতে পারে না। মানুষ মানলেও তিনি আল্লাহ, না মানলেও তিনি আল্লাহ; তিনি আছেন এবং থাকবেন। নিজের ক্ষমতায় তাঁর কর্তৃত্ব চলছে। মানুষের মানা বা না মানাতে তাঁর কিছু আসে-যায় না। আর তিনি কারো প্রতি মুখাপেক্ষীও নন। নিজের কোন স্বার্থের জন্য নয়, বরং তিনি বান্দার স্বার্থের জন্য কুফরী করা পছন্দ করেন না। প্রত্যেক ব্যক্তিই তার নিজের কাজকর্মের জন্য দায়ী। কেউ যদি অন্যকে সন্তুষ্ট করার জন্য কিংবা তার অসন্তুষ্টি থেকে বাঁচার জন্য কুফরী করে, তাহলে এর দায়ভার তাকেই বহন করতে হবে। সুতরাং কুফরীর ভ্রান্তি এবং ঈমানের সত্যতা যার কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে তার উচিত ভুল নীতি পরিত্যাগ করে সঠিক নীতি গ্রহণ করা এবং নিজের বংশ বা সম্প্রদায়ের অনুসরণ করে নিজেকে আল্লাহর আযাবের উপযুক্ত না বানানো।
কুফরী মূলত শয়তানের কাজ :
وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ وَلٰكِنَّ الشَّيَاطِيْنَ كَفَرُوْا
সুলায়মান কুফরী করেনি, বরং শয়তানরাই কুফরী করেছিল। (সূরা বাক্বারা- ১০২)
শয়তান মানুষকে কুফরীর দিকে আকৃষ্ট করে :
اَلَمْ تَرَ اَنَّاۤ اَرْسَلْنَا الشَّيَاطِيْنَ عَلَى الْكَافِرِيْنَ تَؤُزُّهُمْ اَزًّا
তুমি কি লক্ষ্য করনি যে, আমি কাফিরদের উপর শয়তানদেরকে ছেড়ে রেখেছি? তারা তাদেরকে মন্দকর্মের দিকে ক্রমাগত উৎসাহ দান করছে। (সূরা মারইয়াম- ৮৩)
কুফরী করার কোন যৌক্তিকতা নেই :
كَيْفَ تَكْفُرُوْنَ بِاللهِ وَكُنْتُمْ اَمْوَاتًا فَاَحْيَاكُمْۚ ثُمَّ يُمِيْتُكُمْ ثُمَّ يُحْيِيْكُمْ ثُمَّ اِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ
কীভাবে তোমরা আল্লাহর সাথে কুফরী করছ? অথচ তোমরা ছিলে মৃত, অতঃপর তিনিই তোমাদেরকে জীবন দান করেছেন, এরপর আবার তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন, তারপর আবার জীবিত করবেন, অবশেষে তোমাদেরকে তাঁরই দিকে ফিরে যেতে হবে। (সূরা বাক্বারা- ২৮)
وَكَيْفَ تَكْفُرُوْنَ وَاَنْتُمْ تُتْلٰى عَلَيْكُمْ اٰيَاتُ اللهِ وَفِيْكُمْ رَسُوْلُهٗ
কীভাবে তোমরা আল্লাহর সাথে কুফরী করছ, অথচ আল্লাহর আয়াতসমূহ তোমাদের সামনে পাঠ করে শুনানো হচ্ছে এবং তোমাদের মধ্যে রয়েছে তাঁর রাসূল। (সূরা আলে ইমরান- ১০১)
কুফরী কালিমা নিম্নমানের :
وَجَعَلَ كَلِمَةَ الَّذِيْنَ كَفَرُوا السُّفْلٰىؕ وَكَلِمَةُ اللهِ هِيَ الْعُلْيَاؕ وَاللهُ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
তিনি কাফিরদের কালিমাকে হেয় করলেন, আর আল্লাহর কালিমাই উচ্চ। আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা- ৪০)
কুফরী কালিমার স্থায়িত্ব নেই :
وَمَثَلُ كَلِمَةٍ خَبِيْثَةٍ كَشَجَرَةٍ خَبِيْثَةِنِ اجْتُثَّتْ مِنْ فَوْقِ الْاَرْضِ مَا لَهَا مِنْ قَرَارٍ
অপবিত্র বাক্যের তুলনা একটি মন্দ বৃক্ষের মতো, যার মূল ভূপৃষ্ঠ হতে বিচ্ছিন্ন এবং যার কোন স্থায়িত্ব নেই। (সূরা ইবরাহীম- ২৬)
ব্যাখ্যা : এটি কালিমায়ে তাইয়্যেবার বিপরীত কালিমা। এর দ্বারা এমন বাতিল আকীদা বুঝায়, যার ভিত্তিতে মানুষ নিজের জীবনব্যবস্থা গড়ে তুলে। এ বাতিল আকীদা নাস্তিক্যবাদ, ধর্মর্র্র্দ্রোহিতা, অবিশ্বাস, শিরক, পৌত্তলিকতা অথবা এমন কোন চিন্তাধারাও হতে পারে, যা নবীদের মাধ্যমে আসেনি। বাতিল আকীদা যেহেতু সত্যবিরোধী তাই প্রাকৃতিক আইন কোথাও একে সহযোগিতা করে না। বিশ্বজগতের প্রতিটি বস্তু তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। পৃথিবী ও আকাশের প্রতিটি বস্তু তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। পরীক্ষার খাতিরে মানুষকে যদি নির্বাচন করার স্বাধীনতা ও কর্মের অবকাশ না দেয়া হতো, তাহলে এ কুফরী কালিমার গাছটি কোথাও গজিয়ে উঠতে পারত না। কিন্তু যেহেতু মহান আল্লাহ আদম সন্তানকে নিজের স্বাধীন ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করার সুযোগ দান করেছেন, তাই কিছু নির্বোধ লোক প্রাকৃতিক আইনের বিরুদ্ধে লড়ে এ গাছ লাগানোর চেষ্টা করে। ফলে জমি একে সামান্য কিছু জায়গা দিয়ে দেয়। বাতাস ও পানি থেকে সে কিছু খাদ্য পেয়েই যায় এবং আকাশও তার ডালপালা ছড়ানোর জন্য কিছু জায়গা দিতে প্রস্তুত হয়ে যায়। কিন্তু যতদিন এ গাছ বেঁচে থাকে ততদিন তিক্ত ও বিষাক্ত ফল দিতে থাকে।
কুফরী দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য ক্ষতিকর :
فَاَمَّا الَّذِيْنَ كَفَرُوْا فَاُعَذِّبُهُمْ عَذَابًا شَدِيْدًا فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ وَمَا لَهُمْ مِّنْ نَّاصِرِيْنَ
সুতরাং যারা কুফরী করেছে দুনিয়া ও আখিরাতে আমি তাদেরকে কঠিন শাস্তি দেব; আর তাদের কোন সাহায্যকারীও থাকবে না। (সূরা আলে ইমরান- ৫৬)
কুফরীর কারণে অন্তরে মরিচা পড়ে যায় :
كَذٰلِكَ يَطْبَعُ اللهُ عَلٰى قُلُوْبِ الْكَافِرِيْنَ
এভাবে আল্লাহ কাফিরদের হৃদয়ে মোহর মেরে দেন। (সূরা আ‘রাফ- ১০১)
কুফর বিতর্কে টিকতে পারে না :
اَلَمْ تَرَ اِلَى الَّذِيْ حَآجَّ اِبْرَاهِيْمَ فِيْ رَبِّهٖۤ اَنْ اٰتَاهُ اللهُ الْمُلْكَ اِذْ قَالَ اِبْرَاهِيْمُ رَبِّيَ الَّذِيْ يُحْيِيْ وَيُمِيْتُ قَالَ اَنَاْ اُحْيِيْ وَاُمِيْتُؕ قَالَ اِبْرَاهِيْمُ فَاِنَّ اللهَ يَأْتِيْ بِالشَّمْسِ مِنَ الْمَشْرِقِ فَأْتِ بِهَا مِنَ الْمَغْرِبِ فَبُهِتَ الَّذِيْ كَفَرَ وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
আপনি কি তার দিকে লক্ষ্য করেননি, যে ইবরাহীমের সাথে তাঁর রব সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিল? এজন্য যে, আল্লাহ তাকে রাজত্ব দান করেছিলেন। যখন ইবরাহীম বলেছিলেন, আমার রব তিনি যিনি জীবন এবং মৃত্যু দান করেন। তখন সে বলেছিল, আমিই জীবন এবং মৃত্যু দিয়ে থাকি। এবার ইবরাহীম বললেন, আল্লাহ সূর্যকে পূর্ব দিকে উদিত করেন সুতরাং তুমি তা পশ্চিম দিক থেকে নিয়ে আস। এতে সেই অবিশ্বাসী হতভম্ব হয়ে গেল। কিন্তু আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে পথপ্রদর্শন করেন না। (সূরা বাক্বারা- ২৫৮)
কুফরী করলে আল্লাহর কোন ক্ষতি হয় না :
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَصَدُّوْا عَنْ سَبِيْلِ اللهِ وَشَآقُّوا الرَّسُوْلَ مِنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْهُدٰى لَنْ يَّضُرُّوا اللهَ شَيْئًاؕ وَسَيُحْبِطُ اَعْمَالَهُمْ
হেদায়াতের পথ স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও যারা কুফরী করেছে এবং আল্লাহর পথে (মানুষকে আসতে) বাধা দিয়েছে। আর যারা রাসূলের সাথে ঝগড়া করেছে, তারা বাস্তবে আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবে না; বরং আল্লাহই তাদের সব আমল বরবাদ করে দেবেন। (সূরা মুহাম্মাদ- ৩২)
কুফরী নিজের ক্ষতি ডেকে আনে :
مَنْ كَفَرَ فَعَلَيْهِ كُفْرُهٗ
যে ব্যক্তি কুফরী করে, তার কুফরীর ফল তার উপরই বর্তাবে। (সূরা রূম- ৪৪)
ব্যাখ্যা : মানুষের কুফরীর কারণে আল্লাহর প্রভুত্বের সামান্যতম ক্ষতিও হতে পারে না। মানুষ মানলেও তিনি আল্লাহ, না মানলেও তিনি আল্লাহ; তিনি আছেন এবং থাকবেন। নিজের ক্ষমতায় তাঁর কর্তৃত্ব চলছে। মানুষের মানা বা না মানাতে তাঁর কিছু আসে-যায় না। আর তিনি কারো প্রতি মুখাপেক্ষীও নন। নিজের কোন স্বার্থের জন্য নয়, বরং তিনি বান্দার স্বার্থের জন্য কুফরী করা পছন্দ করেন না। প্রত্যেক ব্যক্তিই তার নিজের কাজকর্মের জন্য দায়ী। কেউ যদি অন্যকে সন্তুষ্ট করার জন্য কিংবা তার অসন্তুষ্টি থেকে বাঁচার জন্য কুফরী করে, তাহলে এর দায়ভার তাকেই বহন করতে হবে। সুতরাং কুফরীর ভ্রান্তি এবং ঈমানের সত্যতা যার কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে তার উচিত ভুল নীতি পরিত্যাগ করে সঠিক নীতি গ্রহণ করা এবং নিজের বংশ বা সম্প্রদায়ের অনুসরণ করে নিজেকে আল্লাহর আযাবের উপযুক্ত না বানানো।
কুফরী মূলত শয়তানের কাজ :
وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ وَلٰكِنَّ الشَّيَاطِيْنَ كَفَرُوْا
সুলায়মান কুফরী করেনি, বরং শয়তানরাই কুফরী করেছিল। (সূরা বাক্বারা- ১০২)
শয়তান মানুষকে কুফরীর দিকে আকৃষ্ট করে :
اَلَمْ تَرَ اَنَّاۤ اَرْسَلْنَا الشَّيَاطِيْنَ عَلَى الْكَافِرِيْنَ تَؤُزُّهُمْ اَزًّا
তুমি কি লক্ষ্য করনি যে, আমি কাফিরদের উপর শয়তানদেরকে ছেড়ে রেখেছি? তারা তাদেরকে মন্দকর্মের দিকে ক্রমাগত উৎসাহ দান করছে। (সূরা মারইয়াম- ৮৩)
আল্লাহ, ফেরেশতা, নবী ও পরকালকে অস্বীকার করা :
وَمَنْ يَّكْفُرْ بِاللهِ وَمَلَآئِكَتِهٖ وَكُتُبِهٖ وَرُسُلِهٖ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا ۢبَعِيْدًا
যে ব্যক্তি আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ এবং আখিরাতকে অস্বীকার করবে, সে চরমভাবে পথভ্রষ্ট হয়ে পড়বে। (সূরা নিসা- ১৩৬)
রাসূলদের মধ্যে কাউকে মানা ও কাউকে না মানা :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَكْفُرُوْنَ بِاللّٰهِ وَرُسُلِه وَيُرِيْدُوْنَ اَنْ يُّفَرِّقُوْا بَيْنَ اللّٰهِ وَرُسُلِه وَيَقُوْلُوْنَ نُؤْمِنُ بِبَعْضٍ وَّنَكْفُرُ بِبَعْضٍ وَّيُرِيْدُوْنَ اَنْ يَّتَّخِذُوْا بَيْنَ ذٰلِكَ سَبِيْلًا ‐ -اُولٰٓئِكَ هُمُ الْكَافِرُوْنَ حَقًّاۚ وَاَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِيْنَ عَذَابًا مُّهِيْنًا
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলদেরকে অস্বীকার করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের মধ্যে তারতম্য করতে চায় এবং বলে, আমরা কতককে বিশ্বাস করি ও কতককে অস্বীকার করি। আর তারা মধ্যবর্তী কোন পথ অবলম্বন করতে চায়, এরাই প্রকৃত কাফির। আর কাফিরদের জন্য প্রস্তুত রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি। (সূরা নিসা- ১৫০, ১৫১)
আল্লাহর কোন বিধানকে অস্বীকার করা :
وَلِلّٰهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ اِلَيْهِ سَبِيْلًاؕ وَمَنْ كَفَرَ فَاِنَّ اللّٰهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِيْنَ
যারা যাতায়াতের সামর্থ্য রাখে সেসব মানুষের উপর আল্লাহর উদ্দেশ্যে কা‘বাঘরে হজ্জ করা ফরয। আর যে কুফরী করবে তার জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহ বিশ্ববাসীদের থেকে অমুখাপেক্ষী। (সূরা আলে ইমরান- ৯৭)
আল্লাহর সাথে অন্যকে শরীক করা :
وَمَنْ يَّدْعُ مَعَ اللهِ اِلٰهًا اٰخَرَ لَا بُرْهَانَ لَهٗ بِهٖ فَاِنَّمَا حِسَابُهٗ عِنْدَ رَبِّهٖ اِنَّهٗ لَا يُفْلِحُ الْكَافِرُوْنَ
যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহ্কে ডাকে যে বিষয়ে তার নিকট কোন দলিল নেই, তার হিসাব তার প্রতিপালকের নিকট আছে, নিশ্চয় কাফিররা সফলকাম হবে না। (সূরা মু’মিনূন- ১১৭)
আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া :
اِنَّهٗ لَا يَيْاَسُ مِنْ رَّوْحِ اللهِ اِلَّا الْقَوْمُ الْكَافِرُوْنَ
নিশ্চয় কাফির সম্প্রদায় ব্যতীত আল্লাহর রহমত হতে কেউই নিরাশ হয় না। (সূরা ইউসুফ- ৮৭)
আল্লাহর আইন দিয়ে বিচার-ফায়সালা না করা :
وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْكَافِرُوْنَ
আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন সে অনুসারে যারা বিচার-ফায়সালা করে না তারা কাফির। (সূরা মায়েদা- ৪৪)
তাগুতী মতবাদ প্রতিষ্ঠা করার জন্য সংগ্রাম করা :
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا يُقَاتِلُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ الطَّاغُوْتِ
যারা কাফির তারা তাগুতের পথে যুদ্ধ করে। (সূরা নিসা- ৭৬)
وَمَنْ يَّكْفُرْ بِاللهِ وَمَلَآئِكَتِهٖ وَكُتُبِهٖ وَرُسُلِهٖ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا ۢبَعِيْدًا
যে ব্যক্তি আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ এবং আখিরাতকে অস্বীকার করবে, সে চরমভাবে পথভ্রষ্ট হয়ে পড়বে। (সূরা নিসা- ১৩৬)
রাসূলদের মধ্যে কাউকে মানা ও কাউকে না মানা :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَكْفُرُوْنَ بِاللّٰهِ وَرُسُلِه وَيُرِيْدُوْنَ اَنْ يُّفَرِّقُوْا بَيْنَ اللّٰهِ وَرُسُلِه وَيَقُوْلُوْنَ نُؤْمِنُ بِبَعْضٍ وَّنَكْفُرُ بِبَعْضٍ وَّيُرِيْدُوْنَ اَنْ يَّتَّخِذُوْا بَيْنَ ذٰلِكَ سَبِيْلًا ‐ -اُولٰٓئِكَ هُمُ الْكَافِرُوْنَ حَقًّاۚ وَاَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِيْنَ عَذَابًا مُّهِيْنًا
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলদেরকে অস্বীকার করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের মধ্যে তারতম্য করতে চায় এবং বলে, আমরা কতককে বিশ্বাস করি ও কতককে অস্বীকার করি। আর তারা মধ্যবর্তী কোন পথ অবলম্বন করতে চায়, এরাই প্রকৃত কাফির। আর কাফিরদের জন্য প্রস্তুত রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি। (সূরা নিসা- ১৫০, ১৫১)
আল্লাহর কোন বিধানকে অস্বীকার করা :
وَلِلّٰهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ اِلَيْهِ سَبِيْلًاؕ وَمَنْ كَفَرَ فَاِنَّ اللّٰهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِيْنَ
যারা যাতায়াতের সামর্থ্য রাখে সেসব মানুষের উপর আল্লাহর উদ্দেশ্যে কা‘বাঘরে হজ্জ করা ফরয। আর যে কুফরী করবে তার জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহ বিশ্ববাসীদের থেকে অমুখাপেক্ষী। (সূরা আলে ইমরান- ৯৭)
আল্লাহর সাথে অন্যকে শরীক করা :
وَمَنْ يَّدْعُ مَعَ اللهِ اِلٰهًا اٰخَرَ لَا بُرْهَانَ لَهٗ بِهٖ فَاِنَّمَا حِسَابُهٗ عِنْدَ رَبِّهٖ اِنَّهٗ لَا يُفْلِحُ الْكَافِرُوْنَ
যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহ্কে ডাকে যে বিষয়ে তার নিকট কোন দলিল নেই, তার হিসাব তার প্রতিপালকের নিকট আছে, নিশ্চয় কাফিররা সফলকাম হবে না। (সূরা মু’মিনূন- ১১৭)
আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া :
اِنَّهٗ لَا يَيْاَسُ مِنْ رَّوْحِ اللهِ اِلَّا الْقَوْمُ الْكَافِرُوْنَ
নিশ্চয় কাফির সম্প্রদায় ব্যতীত আল্লাহর রহমত হতে কেউই নিরাশ হয় না। (সূরা ইউসুফ- ৮৭)
আল্লাহর আইন দিয়ে বিচার-ফায়সালা না করা :
وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْكَافِرُوْنَ
আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন সে অনুসারে যারা বিচার-ফায়সালা করে না তারা কাফির। (সূরা মায়েদা- ৪৪)
তাগুতী মতবাদ প্রতিষ্ঠা করার জন্য সংগ্রাম করা :
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا يُقَاتِلُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ الطَّاغُوْتِ
যারা কাফির তারা তাগুতের পথে যুদ্ধ করে। (সূরা নিসা- ৭৬)
তারা ধোঁকার মধ্যে ডুবে থাকে :
اِنِ الْكَافِرُوْنَ اِلَّا فِيْ غُرُوْرٍ
কাফিররা ধোঁকার মধ্যে পড়ে আছে। (সূরা মুলক- ২০)
তারা দুনিয়ার ভোগবিলাসকেই শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি মনে করে :
اَيَحْسَبُوْنَ اَنَّمَا نُمِدُّهُمْ بِهٖ مِنْ مَّالٍ وَّبَنِيْنَ ‐ نُسَارِعُ لَهُمْ فِى الخَيْرَاتِؕ بَلْ لَّا يَشْعُرُوْنَ
তারা কি মনে করে যে, আমি তাদেরকে সাহায্যস্বরূপ যেসব ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দান করি তা দ্বারা তাদের জন্য সকল প্রকার মঙ্গল ত্বরান্বিত করছি? না, বরং তারা বুঝে না। (সূরা মু’মিনূন- ৫৫, ৫৬)
তাদের জীবন-যাপন হয় পশুর মতো :
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا يَتَمَتَّعُوْنَ وَيَأْكُلُوْنَ كَمَا تَأْكُلُ الْاَنْعَامُ وَالنَّارُ مَثْوًى لَّهُمْ
যারা কুফরী করেছে তারা দুনিয়ার কয়েক দিনের মজা লুটছে ও জীবজন্তুর মতো আহার করছে; জাহান্নামই হলো তাদের ঠিকানা। (সূরা মুহাম্মাদ- ১২)
কাফিররা শিরক করে :
ثُمَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِرَبِّهِمْ يَعْدِلُوْنَ
অতঃপর কাফিররা তাদের প্রতিপালকের সমকক্ষ দাঁড় করায়। (সূরা আন‘আম- ১)
তারা দুনিয়ার জীবনকে আখিরাতের উপর প্রাধান্য দেয় :
ذٰلِكَ بِاَنَّهُمُ اسْتَحَبُّوا الْحَيَاةَ الدُّنْيَا عَلَى الْاٰخِرَةِ وَاَنَّ اللهَ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الْكَافِرِيْنَ
এটা এজন্য যে, তারা দুনিয়ার জীবনকে আখিরাতের উপর প্রাধান্য দেয়; নিশ্চয় আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে পথপ্রদর্শন করেন না। (সূরা নাহল- ১০৭)
তারা মুসলিমদেরকে নিয়ে উপহাস করে :
زُيِّنَ لِلَّذِيْنَ كَفَرُوا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا وَيَسْخَرُوْنَ مِنَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا
যারা কুফরী করেছে তাদের জন্য দুনিয়ার জীবনকে সুশোভিত করে দেয়া হয়েছে। আর তারা মুমিনদেরকে উপহাস করে থাকে। (সূরা বাক্বারা- ২১২)
শানে নুযূল : বিলাল ও আম্মার (রাঃ) এর মতো গরীব মুসলিমদেরকে দেখে কাফির প্রধানরা বিদ্রূপ করে বলত, মুহাম্মাদ বলে থাকে যে, আমি এসব দরিদ্র লোকের সহযোগিতায় আমার পার্থিব কাজ সম্পন্ন করেছি ও কাফির প্রধানদের অহংকার চূর্ণ করে দিয়েছি। তার ধর্ম সত্য হলে অবশ্যই সে আরব প্রধানদের সহযোগিতা পেত। আল্লাহ তা‘আলা এ কথার উত্তরে উপরোক্ত আয়াতটি নাযিল করেন।
তারা মুসলিমদের কল্যাণ চায় না :
مَا يَوَدُّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنْ اَهْلِ الْكِتَابِ وَلَا الْمُشْرِكِيْنَ اَنْ يُّنَزَّلَ عَلَيْكُمْ مِّنْ خَيْرٍ مِّنْ رَّبِّكُمْ
তোমাদের উপর তোমাদের রবের পক্ষ থেকে কোন কল্যাণ অবতীর্ণ হোক তা আহলে কিতাবের কাফির ও মুশরিকরা মোটেই চায় না। (সূরা বাক্বারা- ১০৫)
তারা মুসলিমদের সাথে শত্রুতা করে :
اِنَّ الْكَافِرِيْنَ كَانُوْا لَكُمْ عَدُوًّا مُّبِيْنًا
নিশ্চয় কাফিররা তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা নিসা- ১০১)
মুসলিমদেরকেও তাদের মতো বানাতে চায় :
وَدُّوْا لَوْ تَكْفُرُوْنَ كَمَا كَفَرُوْا فَتَكُوْنُوْنَ سَوَآءً
তারা কামনা করে যে, তারা যেরূপ কুফরী করেছে তোমরাও সেরূপ কুফরী কর, যাতে তোমরা তাদের সমান হয়ে যাও। (সূরা নিসা- ৮৯)
তারা নিজেদেরকে মুসলিমদের চেয়েও উত্তম মনে করে :
وَاِذَا تُتْلٰى عَلَيْهِمْ اٰيَاتُنَا بَيِّنَاتٍ قَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَيُّ الْفَرِيْقَيْنِ خَيْرٌ مَّقَامًا وَّاَحْسَنُ نَدِيًّا
তাদের নিকট আমার স্পষ্ট আয়াতসমূহ পাঠ করা হলে কাফিররা মুমিনদেরকে বলে, দু’দলের মধ্যে কোনটি মর্যাদায় শ্রেষ্ঠতর ও মজলিস হিসেবে কোনটি উত্তম? (সূরা মারইয়াম- ৭৩)
তারা মুমিনদের সাথে প্রতারণা করে :
وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّبِعُوْا سَبِيْلَنَا وَلْنَحْمِلْ خَطَايَاكُمْ وَمَا هُمْ بِحَامِلِيْنَ مِنْ خَطَايَاهُمْ مِّنْ شَيْءٍ اِنَّهُمْ لَكَاذِبُوْنَ
কাফিররা মুমিনদেরকে বলে, আমাদের পথ অনুসরণ করো, তাহলে আমরা তোমাদের পাপের ভার বহন করব। কিন্তু তারা তো তাদের পাপভারের কিছুই বহন করবে না। অবশ্যই তারা মিথ্যাবাদী (প্রতারক)। (সূরা আনকাবূত- ১২)
তারা ইসলামের ক্ষতি করার জন্য সম্পদ ব্যয় করে :
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا يُنْفِقُوْنَ اَمْوَالَهُمْ لِيَصُدُّوْا عَنْ سَبِيْلِ اللهِؕ فَسَيُنْفِقُوْنَهَا ثُمَّ تَكُوْنُ عَلَيْهِمْ حَسْرَةً ثُمَّ يُغْلَبُوْنَ
আল্লাহর পথ হতে লোকদেরকে বাধা দেয়ার জন্য কাফিররা তাদের ধনসম্পদ ব্যয় করে। অতঃপর তারা ধনসম্পদ ব্যয় করতে থাকবে এবং তা তাদের কাছে আফসোসের কারণ হবে। অবশেষে তারা পরাজিত হবে। (সূরা আনফাল- ৩৬)
তারা বাতিলের অনুসরণ করে :
ذٰلِكَ بِاَنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوا اتَّبَعُوا الْبَاطِلَ
এটা এ কারণে যে, যারা কুফরী করেছে তারা বাতিলের অনুসরণ করেছে। (সূরা মুহাম্মাদ- ৩)
তারা তাগুতের সাথে বন্ধুত্ব করে :
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اَوْلِيَآؤُهُمُ الطَّاغُوْتُ يُخْرِجُوْنَهُمْ مِّنَ النُّوْرِ اِلَى الظُّلُمَاتِؕ اُولٰٓئِكَ اَصْحَابُ النَّارِۚ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
যারা কাফির তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত। তারা তাদেরকে আলো থেকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। আর তারাই জাহান্নামের অধিবাসী; সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে। (সূরা বাক্বারা- ২৫৭)
তারা আল্লাহর দ্বীনকে মিটিয়ে দিতে চায় :
يُرِيْدُوْنَ لِيُطْفِئُوْا نُوْرَ اللهِ بِاَفْوَاهِهِمْ وَاللهُ مُتِمُّ نُوْرِه وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُوْنَ
তারা আল্লাহর নূর (আল্লাহর দ্বীন) কে তাদের মুখের ফুৎকারে নিভিয়ে দিতে চায়, কিন্তু আল্লাহ তো তাঁর নূর পূর্ণরূপে প্রকাশকারী; যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে। (সূরা সাফ- ৮)
তারা সত্যকে মিথ্যা দ্বারা ব্যর্থ করার চেষ্টা করে :
وَيُجَادِلُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِالْبَاطِلِ لِيُدْحِضُوْا بِهِ الْحَقَّ وَاتَّخَذُوْاۤ اٰيَاتِيْ وَمَاۤ اُنْذِرُوْا هُزُوًا
কাফিররা সত্যকে ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য মিথ্যা যুক্তি পেশ করে বিতর্কে লিপ্ত হয়। আর তারা আমার নিদর্শনাবলি এবং যে বিষয়ে তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে সেগুলোকে বিদ্রূপের বিষয় হিসেবে গ্রহণ করে। (সূরা কাহফ- ৫৬)
তারা মানুষকে কুরআন থেকে সরিয়ে রাখতে চেষ্টা করে :
وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَا تَسْمَعُوْا لِهٰذَا الْقُرْاٰنِ وَالْغَوْا فِيْهِ لَعَلَّكُمْ تَغْلِبُوْنَ
কাফিররা বলে, তোমরা এ কুরআন শ্রবণ করো না এবং তা তিলাওয়াতকালে শোরগোল সৃষ্টি করো, যাতে তোমরা বিজয়ী হতে পার। (সূরা হা-মীম সাজদা- ২৬)
তারা ইসলামের বাহকদেরকে উৎখাত করতে চায় :
وَاِذَا تُتْلٰى عَلَيْهِمْ اٰيَاتُنَا بَيِّنَاتٍ تَعْرِفُ فِيْ وُجُوْهِ الَّذِيْنَ كَفَرُوا الْمُنْكَرَؕ يَكَادُوْنَ يَسْطُوْنَ بِالَّذِيْنَ يَتْلُوْنَ عَلَيْهِمْ اٰيَاتِنَا
যখন তাদের নিকট আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করা হয়, তখন তুমি কাফিরদের মুখমন্ডলে অসন্তোষ ভাব লক্ষ্য করবে। যারা তাদের নিকট আমার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে তারা তাদেরকে আক্রমণ করতে উদ্যত হয়। (সূরা হজ্জ- ৭২)
উপদেশ দিলেও তারা সৎপথে আসে না :
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا سَوَآءٌ عَلَيْهِمْ اَ اَنْذَرْتَهُمْ اَمْ لَمْ تُنْذِرْهُمْ لَا يُؤْمِنُوْنَ
নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে তুমি তাদেরকে সতর্ক কর বা না কর- উভয়টিই তাদের জন্য সমান, কেননা তারা ঈমান আনবে না। (সূরা বাক্বারা- ৬)
اِنِ الْكَافِرُوْنَ اِلَّا فِيْ غُرُوْرٍ
কাফিররা ধোঁকার মধ্যে পড়ে আছে। (সূরা মুলক- ২০)
তারা দুনিয়ার ভোগবিলাসকেই শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি মনে করে :
اَيَحْسَبُوْنَ اَنَّمَا نُمِدُّهُمْ بِهٖ مِنْ مَّالٍ وَّبَنِيْنَ ‐ نُسَارِعُ لَهُمْ فِى الخَيْرَاتِؕ بَلْ لَّا يَشْعُرُوْنَ
তারা কি মনে করে যে, আমি তাদেরকে সাহায্যস্বরূপ যেসব ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দান করি তা দ্বারা তাদের জন্য সকল প্রকার মঙ্গল ত্বরান্বিত করছি? না, বরং তারা বুঝে না। (সূরা মু’মিনূন- ৫৫, ৫৬)
তাদের জীবন-যাপন হয় পশুর মতো :
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا يَتَمَتَّعُوْنَ وَيَأْكُلُوْنَ كَمَا تَأْكُلُ الْاَنْعَامُ وَالنَّارُ مَثْوًى لَّهُمْ
যারা কুফরী করেছে তারা দুনিয়ার কয়েক দিনের মজা লুটছে ও জীবজন্তুর মতো আহার করছে; জাহান্নামই হলো তাদের ঠিকানা। (সূরা মুহাম্মাদ- ১২)
কাফিররা শিরক করে :
ثُمَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِرَبِّهِمْ يَعْدِلُوْنَ
অতঃপর কাফিররা তাদের প্রতিপালকের সমকক্ষ দাঁড় করায়। (সূরা আন‘আম- ১)
তারা দুনিয়ার জীবনকে আখিরাতের উপর প্রাধান্য দেয় :
ذٰلِكَ بِاَنَّهُمُ اسْتَحَبُّوا الْحَيَاةَ الدُّنْيَا عَلَى الْاٰخِرَةِ وَاَنَّ اللهَ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الْكَافِرِيْنَ
এটা এজন্য যে, তারা দুনিয়ার জীবনকে আখিরাতের উপর প্রাধান্য দেয়; নিশ্চয় আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে পথপ্রদর্শন করেন না। (সূরা নাহল- ১০৭)
তারা মুসলিমদেরকে নিয়ে উপহাস করে :
زُيِّنَ لِلَّذِيْنَ كَفَرُوا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا وَيَسْخَرُوْنَ مِنَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا
যারা কুফরী করেছে তাদের জন্য দুনিয়ার জীবনকে সুশোভিত করে দেয়া হয়েছে। আর তারা মুমিনদেরকে উপহাস করে থাকে। (সূরা বাক্বারা- ২১২)
শানে নুযূল : বিলাল ও আম্মার (রাঃ) এর মতো গরীব মুসলিমদেরকে দেখে কাফির প্রধানরা বিদ্রূপ করে বলত, মুহাম্মাদ বলে থাকে যে, আমি এসব দরিদ্র লোকের সহযোগিতায় আমার পার্থিব কাজ সম্পন্ন করেছি ও কাফির প্রধানদের অহংকার চূর্ণ করে দিয়েছি। তার ধর্ম সত্য হলে অবশ্যই সে আরব প্রধানদের সহযোগিতা পেত। আল্লাহ তা‘আলা এ কথার উত্তরে উপরোক্ত আয়াতটি নাযিল করেন।
তারা মুসলিমদের কল্যাণ চায় না :
مَا يَوَدُّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنْ اَهْلِ الْكِتَابِ وَلَا الْمُشْرِكِيْنَ اَنْ يُّنَزَّلَ عَلَيْكُمْ مِّنْ خَيْرٍ مِّنْ رَّبِّكُمْ
তোমাদের উপর তোমাদের রবের পক্ষ থেকে কোন কল্যাণ অবতীর্ণ হোক তা আহলে কিতাবের কাফির ও মুশরিকরা মোটেই চায় না। (সূরা বাক্বারা- ১০৫)
তারা মুসলিমদের সাথে শত্রুতা করে :
اِنَّ الْكَافِرِيْنَ كَانُوْا لَكُمْ عَدُوًّا مُّبِيْنًا
নিশ্চয় কাফিররা তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা নিসা- ১০১)
মুসলিমদেরকেও তাদের মতো বানাতে চায় :
وَدُّوْا لَوْ تَكْفُرُوْنَ كَمَا كَفَرُوْا فَتَكُوْنُوْنَ سَوَآءً
তারা কামনা করে যে, তারা যেরূপ কুফরী করেছে তোমরাও সেরূপ কুফরী কর, যাতে তোমরা তাদের সমান হয়ে যাও। (সূরা নিসা- ৮৯)
তারা নিজেদেরকে মুসলিমদের চেয়েও উত্তম মনে করে :
وَاِذَا تُتْلٰى عَلَيْهِمْ اٰيَاتُنَا بَيِّنَاتٍ قَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَيُّ الْفَرِيْقَيْنِ خَيْرٌ مَّقَامًا وَّاَحْسَنُ نَدِيًّا
তাদের নিকট আমার স্পষ্ট আয়াতসমূহ পাঠ করা হলে কাফিররা মুমিনদেরকে বলে, দু’দলের মধ্যে কোনটি মর্যাদায় শ্রেষ্ঠতর ও মজলিস হিসেবে কোনটি উত্তম? (সূরা মারইয়াম- ৭৩)
তারা মুমিনদের সাথে প্রতারণা করে :
وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّبِعُوْا سَبِيْلَنَا وَلْنَحْمِلْ خَطَايَاكُمْ وَمَا هُمْ بِحَامِلِيْنَ مِنْ خَطَايَاهُمْ مِّنْ شَيْءٍ اِنَّهُمْ لَكَاذِبُوْنَ
কাফিররা মুমিনদেরকে বলে, আমাদের পথ অনুসরণ করো, তাহলে আমরা তোমাদের পাপের ভার বহন করব। কিন্তু তারা তো তাদের পাপভারের কিছুই বহন করবে না। অবশ্যই তারা মিথ্যাবাদী (প্রতারক)। (সূরা আনকাবূত- ১২)
তারা ইসলামের ক্ষতি করার জন্য সম্পদ ব্যয় করে :
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا يُنْفِقُوْنَ اَمْوَالَهُمْ لِيَصُدُّوْا عَنْ سَبِيْلِ اللهِؕ فَسَيُنْفِقُوْنَهَا ثُمَّ تَكُوْنُ عَلَيْهِمْ حَسْرَةً ثُمَّ يُغْلَبُوْنَ
আল্লাহর পথ হতে লোকদেরকে বাধা দেয়ার জন্য কাফিররা তাদের ধনসম্পদ ব্যয় করে। অতঃপর তারা ধনসম্পদ ব্যয় করতে থাকবে এবং তা তাদের কাছে আফসোসের কারণ হবে। অবশেষে তারা পরাজিত হবে। (সূরা আনফাল- ৩৬)
তারা বাতিলের অনুসরণ করে :
ذٰلِكَ بِاَنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوا اتَّبَعُوا الْبَاطِلَ
এটা এ কারণে যে, যারা কুফরী করেছে তারা বাতিলের অনুসরণ করেছে। (সূরা মুহাম্মাদ- ৩)
তারা তাগুতের সাথে বন্ধুত্ব করে :
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اَوْلِيَآؤُهُمُ الطَّاغُوْتُ يُخْرِجُوْنَهُمْ مِّنَ النُّوْرِ اِلَى الظُّلُمَاتِؕ اُولٰٓئِكَ اَصْحَابُ النَّارِۚ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
যারা কাফির তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত। তারা তাদেরকে আলো থেকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। আর তারাই জাহান্নামের অধিবাসী; সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে। (সূরা বাক্বারা- ২৫৭)
তারা আল্লাহর দ্বীনকে মিটিয়ে দিতে চায় :
يُرِيْدُوْنَ لِيُطْفِئُوْا نُوْرَ اللهِ بِاَفْوَاهِهِمْ وَاللهُ مُتِمُّ نُوْرِه وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُوْنَ
তারা আল্লাহর নূর (আল্লাহর দ্বীন) কে তাদের মুখের ফুৎকারে নিভিয়ে দিতে চায়, কিন্তু আল্লাহ তো তাঁর নূর পূর্ণরূপে প্রকাশকারী; যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে। (সূরা সাফ- ৮)
তারা সত্যকে মিথ্যা দ্বারা ব্যর্থ করার চেষ্টা করে :
وَيُجَادِلُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِالْبَاطِلِ لِيُدْحِضُوْا بِهِ الْحَقَّ وَاتَّخَذُوْاۤ اٰيَاتِيْ وَمَاۤ اُنْذِرُوْا هُزُوًا
কাফিররা সত্যকে ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য মিথ্যা যুক্তি পেশ করে বিতর্কে লিপ্ত হয়। আর তারা আমার নিদর্শনাবলি এবং যে বিষয়ে তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে সেগুলোকে বিদ্রূপের বিষয় হিসেবে গ্রহণ করে। (সূরা কাহফ- ৫৬)
তারা মানুষকে কুরআন থেকে সরিয়ে রাখতে চেষ্টা করে :
وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَا تَسْمَعُوْا لِهٰذَا الْقُرْاٰنِ وَالْغَوْا فِيْهِ لَعَلَّكُمْ تَغْلِبُوْنَ
কাফিররা বলে, তোমরা এ কুরআন শ্রবণ করো না এবং তা তিলাওয়াতকালে শোরগোল সৃষ্টি করো, যাতে তোমরা বিজয়ী হতে পার। (সূরা হা-মীম সাজদা- ২৬)
তারা ইসলামের বাহকদেরকে উৎখাত করতে চায় :
وَاِذَا تُتْلٰى عَلَيْهِمْ اٰيَاتُنَا بَيِّنَاتٍ تَعْرِفُ فِيْ وُجُوْهِ الَّذِيْنَ كَفَرُوا الْمُنْكَرَؕ يَكَادُوْنَ يَسْطُوْنَ بِالَّذِيْنَ يَتْلُوْنَ عَلَيْهِمْ اٰيَاتِنَا
যখন তাদের নিকট আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করা হয়, তখন তুমি কাফিরদের মুখমন্ডলে অসন্তোষ ভাব লক্ষ্য করবে। যারা তাদের নিকট আমার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে তারা তাদেরকে আক্রমণ করতে উদ্যত হয়। (সূরা হজ্জ- ৭২)
উপদেশ দিলেও তারা সৎপথে আসে না :
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا سَوَآءٌ عَلَيْهِمْ اَ اَنْذَرْتَهُمْ اَمْ لَمْ تُنْذِرْهُمْ لَا يُؤْمِنُوْنَ
নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে তুমি তাদেরকে সতর্ক কর বা না কর- উভয়টিই তাদের জন্য সমান, কেননা তারা ঈমান আনবে না। (সূরা বাক্বারা- ৬)
কাফিরদের তুলনা পশুর সাথে :
وَمَثَلُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا كَمَثَلِ الَّذِيْ يَنْعِقُ بِمَا لَا يَسْمَعُ اِلَّا دُعَآءً وََّنِدَآءًؕ صُمٌّ ۢبُكْمٌ عُمْيٌ فَهُمْ لَا يَعْقِلُوْنَ
যারা কুফরী করেছে তাদের দৃষ্টান্ত তাদের ন্যায়, যাদেরকে আহবান করলে শুধু চিৎকার ও শব্দ ব্যতীত আর কিছুই শুনতে পায় না। তারা বধির, বোবা ও অন্ধ; সুতরাং তারা কিছুই বুঝতে পারে না। (সূরা বাক্বারা- ১৭১)
তাদের আমলের উপমা :
مَثَلُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِرَبِّهِمْ اَعْمَالُهُمْ كَرَمَادِ نِ اشْتَدَّتْ بِهِ الرِِّيْحُ فِيْ يَوْمٍ عَاصِفٍؕ لَا يَقْدِرُوْنَ مِمَّا كَسَبُوْا عَلٰى شَيْءٍؕ ذٰلِكَ هُوَ الضَّلَالُ الْبَعِيْدُ
যারা তাদের প্রতিপালককে অস্বীকার করে, তাদের কর্মসমূহের উপমা ছাইয়ের মতো- যা ঝড়ের দিনের বাতাস প্রচন্ড বেগে উড়িয়ে নিয়ে যায়। অতঃপর তারা যা উপার্জন করে তার কোনকিছুই তারা তাদের কাজে লাগাতে পারে না। এটা তো ঘোর বিভ্রান্তি। (সূরা ইবরাহীম- ১৮)
ব্যাখ্যা : যারা নিজেদের রবের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা ও বিদ্রোহাত্মক কর্মপন্থা অবলম্বন করে এবং নবীগণ যে আনুগত্যের পথ অবলম্বন করার দাওয়াত নিয়ে আসেন তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করে, তাদের সমগ্র জীবনের আমল শেষ পর্যন্ত এমন অর্থহীন প্রমাণিত হবে যেমন একটি ছাইয়ের স্তূপ, দীর্ঘদিন ধরে এক জায়গায় জমা হতে হতে তা এক সময় একটি বিরাট পাহাড়ে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু মাত্র একদিনের ঘূর্ণিঝড়ে তা এমনভাবে উড়ে গেল যে, তার প্রত্যেকটি কণা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। কাফিরদের চাকচিক্যময় সভ্যতা, বিপুল ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি, বিস্ময়কর শিল্প ও কল-কারখানা, মহাপ্রতাপশালী রাষ্ট্র, বিশালায়তন বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ, তাদের শিল্প-সাহিত্য, চারুকলা, ভাস্কর্য ও স্থাপত্যের বিশাল ভান্ডার, এমনকি তাদের ইবাদাত-বন্দেগী, বাহ্যিক সৎকার্যাবলি এবং দান ও জনকল্যাণমূলক এমনসব কাজকর্ম যেগুলোর জন্য তারা দুনিয়ায় গর্ব করে বেড়ায়, সবকিছুই শেষ পর্যন্ত ছাইয়ের স্তূপে পরিণত হবে। কিয়ামতের দিনের ঘূর্ণিঝড় এ স্তূপকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করে দেবে। ফলে আখিরাতের জীবনে আল্লাহর দাঁড়িপাল্লায় রেখে সামান্যতম ওজন পাওয়ার মতো একটি কণাও তাদের কাছে থাকবে না।
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اَعْمَالُهُمْ كَسَرَابٍ ۢبِقِيْعَةٍ يَّحْسَبُهُ الظَّمَاٰنُ مَآءً ؕ حَتّٰۤى اِذَا جَآءَهٗ لَمْ يَجِدْهُ شَيْئًا وََّوَجَدَ اللهَ عِنْدَهٗ فَوَفَّاهُ حِسَابَهٗؕ وَاللهُ سَرِيْعُ الْحِسَابِ
যারা কুফরী করে তাদের কর্ম মরুভূমির ঐ মরীচিকার মতো, পিপাসার্ত ব্যক্তি যাকে পানি মনে করে থাকে। কিন্তু যখন সে তাঁর নিকট উপস্থিত হয়, তখন কিছুই পায় না। অতঃপর সে সেথায় আল্লাহকে পাবে; তখন তিনি তার কর্মফল পূর্ণ মাত্রায় প্রদান করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ হিসাব গ্রহণে খুবই তৎপর। (সূরা নূর- ৩৯)
ব্যাখ্যা : এ উপমায় এমনসব লোকের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে যারা কুফরী ও মুনাফিকী সত্ত্বেও বাহ্যত সৎকাজও করে এবং আখিরাতও মানে। আবার এ অসার চিন্তাও পোষণ করে যে, প্রকৃত ঈমান ও মুমিনের গুণাবলি এবং রাসূল ﷺ এর আনুগত্য ও অনুসরণ ছাড়া তাদের এসব কার্যাবলি আখিরাতে কোন কাজে লাগবে না। উপমার আকারে তাদেরকে জানানো হচ্ছে, তোমরা নিজেদের যেসব বাহ্যিক ও প্রদর্শনীমূলক সৎকাজের মাধ্যমে আখিরাতে লাভবান হওয়ার আশা কর, সেগুলো নিছক মরীচিকা ছাড়া আর কিছুই নয়। মরুভূমিতে দূর থেকে চিকচিক করা বালুরাশি দেখে পিপাসার্ত যেমন একে পানির নদী মনে করে সেদিকে ছুটে যায়, ঠিক তেমনি তোমরাও এসব কর্মের উপর মিথ্যা ভরসা করে বসে আছো। কিন্তু যেমন মরীচিকার দিকে ছুটে চলা ব্যক্তি যে স্থানে পানির নদী আছে বলে মনে করেছিল সেখানে পৌঁছে কিছুই পায় না, ঠিক তেমনি তোমরাও যখন মৃত্যুর দ্বারে প্রবেশ করবে তখন জানতে পারবে সেখানে এমন কোন জিনিস নেই, যা থেকে তোমরা লাভবান হতে পারবে। বরং এর বিপরীতে দেখবে তোমাদের কুফরী ও মুনাফিকী এবং লোকদেখানো সৎকাজ ও অন্যান্য যেসব খারাপ কাজ করছিলে সেগুলোর হিসাব নেয়ার এবং প্রতিদান দেয়ার জন্য আল্লাহ সেখানে উপস্থিত রয়েছেন।
তাদের আমলের কোন ওজন থাকবে না :
قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُمْ بِالْاَخْسَرِيْنَ اَعْمَالًا ‐ ------اَلَّذِيْنَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُوْنَ اَنَّهُمْ يُحْسِنُوْنَ صُنْعًا ‐ - اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِاٰيَاتِ رَبِّهِمْ وَلِقَآئِهٖ فَحَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْ فَلَا نُقِيْمُ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَزْنًا
বলো, আমি কি তোমাদেরকে এমন লোকদের ব্যাপারে সংবাদ দেব, যারা আমলের দিক থেকে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে? এরা হচ্ছে সেসব লোক, পার্থিব জীবনে যাদের সকল প্রচেষ্টা বিনষ্ট হয়ে গেছে। অথচ মনে করে যে, তারা সৎকর্মই করছে। এরাই সেসব লোক, যারা তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলিকে ও তাঁর সাথে তাদের সাক্ষাতের বিষয়কে অস্বীকার করে। ফলে তাদের কর্ম নিষ্ফল হয়ে যায়, সুতরাং কিয়ামতের দিন তাদের জন্য ওজনের কোন ব্যবস্থাই রাখব না। (সূরা কাহফ, ১০৩-১০৫)
ব্যাখ্যা : ‘‘যাদের সমস্ত প্রচেষ্টা ও সাধনা দুনিয়ার জীবনের সাথে সম্পৃক্ত।’’ অর্থাৎ তারা যা কিছু করেছে আল্লাহ থেকে সম্পর্কহীন হয়ে আখিরাতের চিন্তা না করে শুধুমাত্র দুনিয়ার জন্যই করেছে। দুনিয়ার জীবনকেই আসল জীবন মনে করেছে। দুনিয়ার সাফল্য ও সচ্ছলতাকেই নিজেদের উদ্দেশ্যে পরিণত করেছে। আল্লাহর অস্তিত্ব স্বীকার করে নিলেও এক সময় তাঁর সামনে গিয়ে নিজেদের কাজের হিসাব দিতে হবে- এ কথা তারা কখনো চিন্তা করেনি। তারা নিজেদেরকে কেবল স্বেচ্ছাচারী ও দায়িত্বহীন বুদ্ধিমান জীব মনে করত, যার কাজ দুনিয়া থেকে কিছু লাভ হাতিয়ে নেয়া ছাড়া আর কিছু নয়। এ ধরনের লোকেরা দুনিয়াতে যত বড় কৃতিত্বই দেখাক না কেন, দুনিয়া শেষ হওয়ার সাথে সাথে সেগুলোও শেষ হয়ে যাবে। নিজেদের সুরম্য অট্টালিকা, বিশ্ববিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় ও সুবিশাল লাইব্রেরী, নিজেদের আবিষ্কারসমূহ, নিজেদের শিল্প ও কল-কারখানা, নিজেদের জ্ঞান-বিজ্ঞানসহ অন্যান্য যেসব জিনিস নিয়ে তারা গর্ব করে, তার মধ্য থেকে কোন একটি জিনিসও তারা আল্লাহর তুলাদন্ডে ওজন করার জন্য নিজেদের সাথে নিয়ে উপস্থিত হতে পারবে না। সেখানে থাকবে শুধুমাত্র কর্মের উদ্দেশ্য এবং তার ফলাফল। যদি কেউ তার নিজের সমস্ত কাজের উদ্দেশ্য ও ফল দুনিয়ায় দেখেও থাকে, তাহলে তার সমস্ত কার্যকলাপ এ ধ্বংসশীল দুনিয়ার সাথেই ধ্বংস হয়ে গেছে। আখিরাতে যা ওজন পেতে পারে তা অবশ্যই এমন কর্ম হতে হবে, যা সে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য তাঁর হুকুম অনুযায়ী করেছে। এ ধরনের কোন কাজ যদি তার হিসাবের খাতায় না থাকে, তাহলে দুনিয়ায় সে যা কিছু করেছিল সবই নিঃসন্দেহে ব্যর্থ হয়ে যাবে।
তাদের আমলসমূহ ধূলার মতো উড়িয়ে দেয়া হবে :
وَقَدِمْنَاۤ اِلٰى مَا عَمِلُوْا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَآءً مَّنْثُوْرًا
আমি তাদের কৃতকর্মের প্রতি লক্ষ্য করব, অতঃপর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করে দেব। (সূরা ফুরক্বান- ২৩)
وَمَثَلُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا كَمَثَلِ الَّذِيْ يَنْعِقُ بِمَا لَا يَسْمَعُ اِلَّا دُعَآءً وََّنِدَآءًؕ صُمٌّ ۢبُكْمٌ عُمْيٌ فَهُمْ لَا يَعْقِلُوْنَ
যারা কুফরী করেছে তাদের দৃষ্টান্ত তাদের ন্যায়, যাদেরকে আহবান করলে শুধু চিৎকার ও শব্দ ব্যতীত আর কিছুই শুনতে পায় না। তারা বধির, বোবা ও অন্ধ; সুতরাং তারা কিছুই বুঝতে পারে না। (সূরা বাক্বারা- ১৭১)
তাদের আমলের উপমা :
مَثَلُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِرَبِّهِمْ اَعْمَالُهُمْ كَرَمَادِ نِ اشْتَدَّتْ بِهِ الرِِّيْحُ فِيْ يَوْمٍ عَاصِفٍؕ لَا يَقْدِرُوْنَ مِمَّا كَسَبُوْا عَلٰى شَيْءٍؕ ذٰلِكَ هُوَ الضَّلَالُ الْبَعِيْدُ
যারা তাদের প্রতিপালককে অস্বীকার করে, তাদের কর্মসমূহের উপমা ছাইয়ের মতো- যা ঝড়ের দিনের বাতাস প্রচন্ড বেগে উড়িয়ে নিয়ে যায়। অতঃপর তারা যা উপার্জন করে তার কোনকিছুই তারা তাদের কাজে লাগাতে পারে না। এটা তো ঘোর বিভ্রান্তি। (সূরা ইবরাহীম- ১৮)
ব্যাখ্যা : যারা নিজেদের রবের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা ও বিদ্রোহাত্মক কর্মপন্থা অবলম্বন করে এবং নবীগণ যে আনুগত্যের পথ অবলম্বন করার দাওয়াত নিয়ে আসেন তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করে, তাদের সমগ্র জীবনের আমল শেষ পর্যন্ত এমন অর্থহীন প্রমাণিত হবে যেমন একটি ছাইয়ের স্তূপ, দীর্ঘদিন ধরে এক জায়গায় জমা হতে হতে তা এক সময় একটি বিরাট পাহাড়ে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু মাত্র একদিনের ঘূর্ণিঝড়ে তা এমনভাবে উড়ে গেল যে, তার প্রত্যেকটি কণা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। কাফিরদের চাকচিক্যময় সভ্যতা, বিপুল ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি, বিস্ময়কর শিল্প ও কল-কারখানা, মহাপ্রতাপশালী রাষ্ট্র, বিশালায়তন বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ, তাদের শিল্প-সাহিত্য, চারুকলা, ভাস্কর্য ও স্থাপত্যের বিশাল ভান্ডার, এমনকি তাদের ইবাদাত-বন্দেগী, বাহ্যিক সৎকার্যাবলি এবং দান ও জনকল্যাণমূলক এমনসব কাজকর্ম যেগুলোর জন্য তারা দুনিয়ায় গর্ব করে বেড়ায়, সবকিছুই শেষ পর্যন্ত ছাইয়ের স্তূপে পরিণত হবে। কিয়ামতের দিনের ঘূর্ণিঝড় এ স্তূপকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করে দেবে। ফলে আখিরাতের জীবনে আল্লাহর দাঁড়িপাল্লায় রেখে সামান্যতম ওজন পাওয়ার মতো একটি কণাও তাদের কাছে থাকবে না।
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اَعْمَالُهُمْ كَسَرَابٍ ۢبِقِيْعَةٍ يَّحْسَبُهُ الظَّمَاٰنُ مَآءً ؕ حَتّٰۤى اِذَا جَآءَهٗ لَمْ يَجِدْهُ شَيْئًا وََّوَجَدَ اللهَ عِنْدَهٗ فَوَفَّاهُ حِسَابَهٗؕ وَاللهُ سَرِيْعُ الْحِسَابِ
যারা কুফরী করে তাদের কর্ম মরুভূমির ঐ মরীচিকার মতো, পিপাসার্ত ব্যক্তি যাকে পানি মনে করে থাকে। কিন্তু যখন সে তাঁর নিকট উপস্থিত হয়, তখন কিছুই পায় না। অতঃপর সে সেথায় আল্লাহকে পাবে; তখন তিনি তার কর্মফল পূর্ণ মাত্রায় প্রদান করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ হিসাব গ্রহণে খুবই তৎপর। (সূরা নূর- ৩৯)
ব্যাখ্যা : এ উপমায় এমনসব লোকের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে যারা কুফরী ও মুনাফিকী সত্ত্বেও বাহ্যত সৎকাজও করে এবং আখিরাতও মানে। আবার এ অসার চিন্তাও পোষণ করে যে, প্রকৃত ঈমান ও মুমিনের গুণাবলি এবং রাসূল ﷺ এর আনুগত্য ও অনুসরণ ছাড়া তাদের এসব কার্যাবলি আখিরাতে কোন কাজে লাগবে না। উপমার আকারে তাদেরকে জানানো হচ্ছে, তোমরা নিজেদের যেসব বাহ্যিক ও প্রদর্শনীমূলক সৎকাজের মাধ্যমে আখিরাতে লাভবান হওয়ার আশা কর, সেগুলো নিছক মরীচিকা ছাড়া আর কিছুই নয়। মরুভূমিতে দূর থেকে চিকচিক করা বালুরাশি দেখে পিপাসার্ত যেমন একে পানির নদী মনে করে সেদিকে ছুটে যায়, ঠিক তেমনি তোমরাও এসব কর্মের উপর মিথ্যা ভরসা করে বসে আছো। কিন্তু যেমন মরীচিকার দিকে ছুটে চলা ব্যক্তি যে স্থানে পানির নদী আছে বলে মনে করেছিল সেখানে পৌঁছে কিছুই পায় না, ঠিক তেমনি তোমরাও যখন মৃত্যুর দ্বারে প্রবেশ করবে তখন জানতে পারবে সেখানে এমন কোন জিনিস নেই, যা থেকে তোমরা লাভবান হতে পারবে। বরং এর বিপরীতে দেখবে তোমাদের কুফরী ও মুনাফিকী এবং লোকদেখানো সৎকাজ ও অন্যান্য যেসব খারাপ কাজ করছিলে সেগুলোর হিসাব নেয়ার এবং প্রতিদান দেয়ার জন্য আল্লাহ সেখানে উপস্থিত রয়েছেন।
তাদের আমলের কোন ওজন থাকবে না :
قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُمْ بِالْاَخْسَرِيْنَ اَعْمَالًا ‐ ------اَلَّذِيْنَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُوْنَ اَنَّهُمْ يُحْسِنُوْنَ صُنْعًا ‐ - اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِاٰيَاتِ رَبِّهِمْ وَلِقَآئِهٖ فَحَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْ فَلَا نُقِيْمُ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَزْنًا
বলো, আমি কি তোমাদেরকে এমন লোকদের ব্যাপারে সংবাদ দেব, যারা আমলের দিক থেকে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে? এরা হচ্ছে সেসব লোক, পার্থিব জীবনে যাদের সকল প্রচেষ্টা বিনষ্ট হয়ে গেছে। অথচ মনে করে যে, তারা সৎকর্মই করছে। এরাই সেসব লোক, যারা তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলিকে ও তাঁর সাথে তাদের সাক্ষাতের বিষয়কে অস্বীকার করে। ফলে তাদের কর্ম নিষ্ফল হয়ে যায়, সুতরাং কিয়ামতের দিন তাদের জন্য ওজনের কোন ব্যবস্থাই রাখব না। (সূরা কাহফ, ১০৩-১০৫)
ব্যাখ্যা : ‘‘যাদের সমস্ত প্রচেষ্টা ও সাধনা দুনিয়ার জীবনের সাথে সম্পৃক্ত।’’ অর্থাৎ তারা যা কিছু করেছে আল্লাহ থেকে সম্পর্কহীন হয়ে আখিরাতের চিন্তা না করে শুধুমাত্র দুনিয়ার জন্যই করেছে। দুনিয়ার জীবনকেই আসল জীবন মনে করেছে। দুনিয়ার সাফল্য ও সচ্ছলতাকেই নিজেদের উদ্দেশ্যে পরিণত করেছে। আল্লাহর অস্তিত্ব স্বীকার করে নিলেও এক সময় তাঁর সামনে গিয়ে নিজেদের কাজের হিসাব দিতে হবে- এ কথা তারা কখনো চিন্তা করেনি। তারা নিজেদেরকে কেবল স্বেচ্ছাচারী ও দায়িত্বহীন বুদ্ধিমান জীব মনে করত, যার কাজ দুনিয়া থেকে কিছু লাভ হাতিয়ে নেয়া ছাড়া আর কিছু নয়। এ ধরনের লোকেরা দুনিয়াতে যত বড় কৃতিত্বই দেখাক না কেন, দুনিয়া শেষ হওয়ার সাথে সাথে সেগুলোও শেষ হয়ে যাবে। নিজেদের সুরম্য অট্টালিকা, বিশ্ববিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় ও সুবিশাল লাইব্রেরী, নিজেদের আবিষ্কারসমূহ, নিজেদের শিল্প ও কল-কারখানা, নিজেদের জ্ঞান-বিজ্ঞানসহ অন্যান্য যেসব জিনিস নিয়ে তারা গর্ব করে, তার মধ্য থেকে কোন একটি জিনিসও তারা আল্লাহর তুলাদন্ডে ওজন করার জন্য নিজেদের সাথে নিয়ে উপস্থিত হতে পারবে না। সেখানে থাকবে শুধুমাত্র কর্মের উদ্দেশ্য এবং তার ফলাফল। যদি কেউ তার নিজের সমস্ত কাজের উদ্দেশ্য ও ফল দুনিয়ায় দেখেও থাকে, তাহলে তার সমস্ত কার্যকলাপ এ ধ্বংসশীল দুনিয়ার সাথেই ধ্বংস হয়ে গেছে। আখিরাতে যা ওজন পেতে পারে তা অবশ্যই এমন কর্ম হতে হবে, যা সে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য তাঁর হুকুম অনুযায়ী করেছে। এ ধরনের কোন কাজ যদি তার হিসাবের খাতায় না থাকে, তাহলে দুনিয়ায় সে যা কিছু করেছিল সবই নিঃসন্দেহে ব্যর্থ হয়ে যাবে।
তাদের আমলসমূহ ধূলার মতো উড়িয়ে দেয়া হবে :
وَقَدِمْنَاۤ اِلٰى مَا عَمِلُوْا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَآءً مَّنْثُوْرًا
আমি তাদের কৃতকর্মের প্রতি লক্ষ্য করব, অতঃপর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করে দেব। (সূরা ফুরক্বান- ২৩)
কাফিররা সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রাণী :
اِنَّ شَرَّ الدَّوَآبِّ عِنْدَ اللهِ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا فَهُمْ لَا يُؤْمِنُوْنَ
নিশ্চয় আল্লাহর নিকট নিকৃষ্ট জীব তারাই, যারা কুফরী করে; তাই তারা ঈমান আনয়ন করে না। (সূরা আনফাল- ৫৫)
তাদেরকে ক্ষমা করা হবে না :
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَصَدُّوْا عَنْ سَبِيْلِ اللهِ ثُمَّ مَاتُوْا وَهُمْ كُفَّارٌ فَلَنْ يَّغْفِرَ اللّٰهُ لَهُمْ
যারা কুফরী করেছে ও আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করেছে এবং কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে, আল্লাহ তাদেরকে কখনো ক্ষমা করবেন না। (সূরা মুহাম্মাদ- ৩৪)
উপদেশ তাদের কোন কাজে আসে না :
وَسَوَآءٌ عَلَيْهِمْ اَ اَنْذَرْتَهُمْ اَمْ لَمْ تُنْذِرْهُمْ لَا يُؤْمِنُوْنَ
আপনি তাদেরকে সতর্ক করুন কিংবা না করুন তাদের পক্ষে উভয়ই সমান, তারা ঈমান আনবে না। (সূরা ইয়াসীন- ১০)
ব্যাখ্যা : এর অর্থ এ নয় যে, এ অবস্থায় সত্য দ্বীনের প্রচার অর্থহীন। বরং এর অর্থ হচ্ছে, তোমার সাধারণ প্রচার সবধরনের মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। তাদের মধ্য থেকে কিছু লোক কুফরীর উপর স্থির থাকবে। আবার মানুষের এ ভীড়ের মধ্যে আল্লাহর এমন বান্দাও আছে, যারা উপদেশ গ্রহণ করবে, আল্লাহকে ভয় করবে এবং সরলসঠিক পথে চলে আসবে।
তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে :
وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا بِالْبَاطِلِ وَكَفَرُوْا بِاللهِ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ
যারা বাতিলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে ও আল্লাহকে অস্বীকার করে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরা আনকাবূত- ৫২)
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِاٰيَاتِ اللهِ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ
যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরা যুমার- ৬৩)
তাদের আমল নষ্ট হয়ে যাবে :
وَمَنْ يَّكْفُرْ بِالْاِيْمَانِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهٗ وَهُوَ فِى الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
যে ব্যক্তি ঈমানকে অস্বীকার করল, সে তার কর্মফল নিষ্ফল করে দিল; আখিরাতে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা মায়েদা- ৫)
কাফিররা সফল হতে পারবে না :
وَيْكَاَنَّهٗ لَا يُفْلِحُ الْكَافِرُوْنَ
হায়! কাফিররা সফলকাম হয় না। (সূরা ক্বাসাস- ৮২)
তাদের কোন সাহায্যকারী নেই :
ذٰلِكَ بِاَنَّ اللهَ مَوْلَى الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَاَنَّ الْكَافِرِيْنَ لَا مَوْلٰى لَهُمْ
এটা এজন্য যে, যারা ঈমান এনেছে আল্লাহই তাদের সাহায্যকারী; আর কাফিরদের কোন সাহায্যকারী নেই। (সূরা মুহাম্মাদ- ১১)
মৃত্যুর সময় তাদের অবস্থা হবে ভয়াবহ :
وَلَوْ تَرٰۤى اِذْ يَتَوَفَّى الَّذِيْنَ كَفَرُوا الْمَلَآئِكَةُ يَضْرِبُوْنَ وُجُوْهَهُمْ وَاَدْبَارَهُمْ وَذُوْقُوْا عَذَابَ الْحَرِيْقِ
তুমি যদি দেখতে, (সেই করুণ অবস্থা) যখন ফেরেশতারা কাফিরদের মুখমন্ডলে ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করতে করতে তাদের প্রাণ হরণ করবে এবং বলবে, তোমরা দহনযন্ত্রণা ভোগ করো। (সূরা আনফাল- ৫০)
কিয়ামতের দিন তাদের চেহারা মলিন হয়ে যাবে :
يَوْمَ تَبْيَضُّ وُجُوْهٌ وَّتَسْوَدُّ وُجُوْهٌۚ فَاَمَّا الَّذِيْنَ اسْوَدَّتْ وُجُوْهُهُمْؕ اَكَفَرْتُمْ بَعْدَ اِيْمَانِكُمْ فَذُوْقُوا الْعَذَابَ بِمَا كُنْتُمْ تَكْفُرُوْنَ
সেদিন কিছু চেহারা হবে উজ্জ্বল এবং কিছু চেহারা হবে কালো। অতঃপর যাদের চেহারা কালো হবে তাদেরকে বলা হবে, তোমরা কি ঈমান আনার পর কুফরী করেছিলে? সুতরাং তোমরা কুফরী করার কারণে শাস্তি ভোগ করো। (সূরা আলে ইমরান- ১০৬)
তাদের উপর আল্লাহর লানত পতিত হবে :
اِنَّ اللهَ لَعَنَ الْكَافِرِيْنَ وَاَعَدَّ لَهُمْ سَعِيْرًا
নিশ্চয় আল্লাহ লানত করেছেন কাফিরদেরকে এবং তাদের জন্য তৈরি করে রেখেছেন জ্বলন্ত আগুন। (সূরা আহযাব- ৬৪)
এমনকি সকল সৃষ্টির লানত পড়বে :
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَمَاتُوْا وَهُمْ كُفَّارٌ اُولٰٓئِكَ عَلَيْهِمْ لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلَآئِكَةِ وَالنَّاسِ اَجْمَعِيْنَ
নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে এবং কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে তাদের উপর আল্লাহর, ফেরেশতাদের ও সকল মানুষের লানত। (সূরা বাক্বারা- ১৬১)
তারা হবে জাহান্নামের অধিবাসী :
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَكَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَاۤ اُولٰٓئِكَ اَصْحَابُ النَّارِؕ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
যারা কুফরী করবে এবং আমার নিদর্শনসমূহকে মিথ্যারোপ করবে, তারাই জাহান্নামের অধিবাসী; সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে। (সূরা বাক্বারা- ৩৯)
তাদের হাশর হবে জাহান্নামের দিকে :
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اِلٰى جَهَنَّمَ يُحْشَرُوْنَ
যারা কুফরী করে তাদের হাশর হবে জাহান্নামের দিকে। (সূরা আনফাল- ৩৬)
তারা জাহান্নামের গরম পানি পান করবে :
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَهُمْ شَرَابٌ مِّنْ حَمِيْمٍ وَّعَذَابٌ اَلِيْمٌ ۢبِمَا كَانُوْا يَكْفُرُوْنَ
যারা কাফির তাদের জন্য রয়েছে উত্তপ্ত পানীয় ও মর্মান্তিক শাস্তি, কেননা তারা কুফরী করত। (সূরা ইউনুস- ৪)
তারা মুখমন্ডল থেকে আগুন সরাতে পারবে না :
لَوْ يَعْلَمُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا حِيْنَ لَا يَكُفُّوْنَ عَنْ وُّجُوْهِهِمُ النَّارَ وَلَا عَنْ ظُهُوْرِهِمْ وَلَا هُمْ يُنْصَرُوْنَ
হায়! যদি কাফিররা সে সময়ের কথা জানত যখন তারা তাদের সম্মুখ ও পশ্চাৎ হতে আগুন সরাতে পারবে না এবং তাদেরকে কোন সাহায্যও করা হবে না। (সূরা আম্বিয়া- ৩৯)
তাদের সম্পদ ও সন্তান কোন কাজে আসবে না :
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَنْ تُغْنِيَ عَنْهُمْ اَمْوَالُهُمْ وَلَاۤ اَوْلَادُهُمْ مِّنَ اللهِ شَيْئًاؕ وَاُولٰٓئِكَ اَصْحَابُ النَّارِ ؕ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে আল্লাহর সামনে তাদের সন্তান-সন্ততি এবং ধনসম্পদ কোন কাজে আসবে না। আর তারাই হবে জাহান্নামের অধিবাসী; সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে। (সূরা আলে ইমরান- ১১৬)
তাদের থেকে কোন বিনিময় গ্রহণ করা হবে না :
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَمَاتُوْا وَهُمْ كُفَّارٌ فَلَنْ يُّقْبَلَ مِنْ اَحَدِهِمْ مِّلْءُ الْاَرْضِ ذَهَبًا وَّلَوِ افْتَدٰى بِهٖؕ اُولٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ وَّمَا لَهُمْ مِّنْ نَّاصِرِيْنَ
নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে এবং কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে, তাদের কাছ থেকে পৃথিবী পরিমাণ স্বর্ণও গ্রহণ করা হবে না; যদিও তারা বিনিময় হিসেবে তা দিতে চায়। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি এবং তাদের কোন সাহায্যকারীও থাকবে না। (সূরা আলে ইমরান- ৯১)
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَوْ اَنَّ لَهُمْ مَّا فِى الْاَرْضِ جَمِيْعًا وَّمِثْلَهٗ مَعَهٗ لِيَفْتَدُوْا بِهٖ مِنْ عَذَابِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَا تُقُبِّلَ مِنْهُمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
যারা কুফরী করেছে তাদের কাছে যদি পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ থাকে এবং তার সাথে সমপরিমাণ আরো থাকে এবং এগুলোর বিনিময়ে কিয়ামতের দিন শাস্তি থেকে রেহাই পেতে চায়, তবুও তাদের কাছ থেকে তা কবুল করা হবে না। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরা মায়েদা- ৩৬)
তাদের জন্য জান্নাতের নিয়ামত হারাম করে দেয়া হয়েছে :
وَنَادٰۤى اَصْحَابُ النَّارِ اَصْحَابَ الْجَنَّةِ اَنْ اَفِيْضُوْا عَلَيْنَا مِنَ الْمَآءِ اَوْ مِمَّا رَزَقَكُمُ اللهُ ؕ قَالُوْاۤ اِنَّ اللهَ حَرَّمَهُمَا عَلَى الْكَافِرِيْنَ
জাহান্নামবাসীরা জান্নাতবাসীদেরকে সম্বোধন করে বলবে, আমাদের উপর কিছু পানি ঢেলে দাও অথবা আল্লাহ তোমাদেরকে জীবিকাস্বরূপ যা দিয়েছেন তা হতে কিছু দাও। তারা বলবে, আল্লাহ এ দু’টি কাফিরদের জন্য হারাম করে দিয়েছেন। (সূরা আ‘রাফ- ৫০)
তারা কেবল আফসোস করতে থাকবে :
اِنَّاۤ اَنْذَرْنَاكُمْ عَذَابًا قَرِيْبًاۚ يَوْمَ يَنْظُرُ الْمَرْءُ مَا قَدَّمَتْ يَدَاهُ وَيَقُوْلُ الْكَافِرُ يَا لَيْتَنِيْ كُنْتُ تُرَابًا
আমি তো তোমাদেরকে এক আসন্ন আযাবের ভয় প্রদর্শন করলাম, সেদিন মানুষ দেখতে পাবে যা সে নিজ হাতে আগে পাঠিয়েছিল। তখন কাফিররা বলবে, হায়! আমরা যদি মাটি হয়ে যেতাম। (সূরা নাবা- ৪০)
اِنَّ شَرَّ الدَّوَآبِّ عِنْدَ اللهِ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا فَهُمْ لَا يُؤْمِنُوْنَ
নিশ্চয় আল্লাহর নিকট নিকৃষ্ট জীব তারাই, যারা কুফরী করে; তাই তারা ঈমান আনয়ন করে না। (সূরা আনফাল- ৫৫)
তাদেরকে ক্ষমা করা হবে না :
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَصَدُّوْا عَنْ سَبِيْلِ اللهِ ثُمَّ مَاتُوْا وَهُمْ كُفَّارٌ فَلَنْ يَّغْفِرَ اللّٰهُ لَهُمْ
যারা কুফরী করেছে ও আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করেছে এবং কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে, আল্লাহ তাদেরকে কখনো ক্ষমা করবেন না। (সূরা মুহাম্মাদ- ৩৪)
উপদেশ তাদের কোন কাজে আসে না :
وَسَوَآءٌ عَلَيْهِمْ اَ اَنْذَرْتَهُمْ اَمْ لَمْ تُنْذِرْهُمْ لَا يُؤْمِنُوْنَ
আপনি তাদেরকে সতর্ক করুন কিংবা না করুন তাদের পক্ষে উভয়ই সমান, তারা ঈমান আনবে না। (সূরা ইয়াসীন- ১০)
ব্যাখ্যা : এর অর্থ এ নয় যে, এ অবস্থায় সত্য দ্বীনের প্রচার অর্থহীন। বরং এর অর্থ হচ্ছে, তোমার সাধারণ প্রচার সবধরনের মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। তাদের মধ্য থেকে কিছু লোক কুফরীর উপর স্থির থাকবে। আবার মানুষের এ ভীড়ের মধ্যে আল্লাহর এমন বান্দাও আছে, যারা উপদেশ গ্রহণ করবে, আল্লাহকে ভয় করবে এবং সরলসঠিক পথে চলে আসবে।
তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে :
وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا بِالْبَاطِلِ وَكَفَرُوْا بِاللهِ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ
যারা বাতিলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে ও আল্লাহকে অস্বীকার করে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরা আনকাবূত- ৫২)
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِاٰيَاتِ اللهِ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ
যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরা যুমার- ৬৩)
তাদের আমল নষ্ট হয়ে যাবে :
وَمَنْ يَّكْفُرْ بِالْاِيْمَانِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهٗ وَهُوَ فِى الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
যে ব্যক্তি ঈমানকে অস্বীকার করল, সে তার কর্মফল নিষ্ফল করে দিল; আখিরাতে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা মায়েদা- ৫)
কাফিররা সফল হতে পারবে না :
وَيْكَاَنَّهٗ لَا يُفْلِحُ الْكَافِرُوْنَ
হায়! কাফিররা সফলকাম হয় না। (সূরা ক্বাসাস- ৮২)
তাদের কোন সাহায্যকারী নেই :
ذٰلِكَ بِاَنَّ اللهَ مَوْلَى الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَاَنَّ الْكَافِرِيْنَ لَا مَوْلٰى لَهُمْ
এটা এজন্য যে, যারা ঈমান এনেছে আল্লাহই তাদের সাহায্যকারী; আর কাফিরদের কোন সাহায্যকারী নেই। (সূরা মুহাম্মাদ- ১১)
মৃত্যুর সময় তাদের অবস্থা হবে ভয়াবহ :
وَلَوْ تَرٰۤى اِذْ يَتَوَفَّى الَّذِيْنَ كَفَرُوا الْمَلَآئِكَةُ يَضْرِبُوْنَ وُجُوْهَهُمْ وَاَدْبَارَهُمْ وَذُوْقُوْا عَذَابَ الْحَرِيْقِ
তুমি যদি দেখতে, (সেই করুণ অবস্থা) যখন ফেরেশতারা কাফিরদের মুখমন্ডলে ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করতে করতে তাদের প্রাণ হরণ করবে এবং বলবে, তোমরা দহনযন্ত্রণা ভোগ করো। (সূরা আনফাল- ৫০)
কিয়ামতের দিন তাদের চেহারা মলিন হয়ে যাবে :
يَوْمَ تَبْيَضُّ وُجُوْهٌ وَّتَسْوَدُّ وُجُوْهٌۚ فَاَمَّا الَّذِيْنَ اسْوَدَّتْ وُجُوْهُهُمْؕ اَكَفَرْتُمْ بَعْدَ اِيْمَانِكُمْ فَذُوْقُوا الْعَذَابَ بِمَا كُنْتُمْ تَكْفُرُوْنَ
সেদিন কিছু চেহারা হবে উজ্জ্বল এবং কিছু চেহারা হবে কালো। অতঃপর যাদের চেহারা কালো হবে তাদেরকে বলা হবে, তোমরা কি ঈমান আনার পর কুফরী করেছিলে? সুতরাং তোমরা কুফরী করার কারণে শাস্তি ভোগ করো। (সূরা আলে ইমরান- ১০৬)
তাদের উপর আল্লাহর লানত পতিত হবে :
اِنَّ اللهَ لَعَنَ الْكَافِرِيْنَ وَاَعَدَّ لَهُمْ سَعِيْرًا
নিশ্চয় আল্লাহ লানত করেছেন কাফিরদেরকে এবং তাদের জন্য তৈরি করে রেখেছেন জ্বলন্ত আগুন। (সূরা আহযাব- ৬৪)
এমনকি সকল সৃষ্টির লানত পড়বে :
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَمَاتُوْا وَهُمْ كُفَّارٌ اُولٰٓئِكَ عَلَيْهِمْ لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلَآئِكَةِ وَالنَّاسِ اَجْمَعِيْنَ
নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে এবং কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে তাদের উপর আল্লাহর, ফেরেশতাদের ও সকল মানুষের লানত। (সূরা বাক্বারা- ১৬১)
তারা হবে জাহান্নামের অধিবাসী :
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَكَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَاۤ اُولٰٓئِكَ اَصْحَابُ النَّارِؕ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
যারা কুফরী করবে এবং আমার নিদর্শনসমূহকে মিথ্যারোপ করবে, তারাই জাহান্নামের অধিবাসী; সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে। (সূরা বাক্বারা- ৩৯)
তাদের হাশর হবে জাহান্নামের দিকে :
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اِلٰى جَهَنَّمَ يُحْشَرُوْنَ
যারা কুফরী করে তাদের হাশর হবে জাহান্নামের দিকে। (সূরা আনফাল- ৩৬)
তারা জাহান্নামের গরম পানি পান করবে :
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَهُمْ شَرَابٌ مِّنْ حَمِيْمٍ وَّعَذَابٌ اَلِيْمٌ ۢبِمَا كَانُوْا يَكْفُرُوْنَ
যারা কাফির তাদের জন্য রয়েছে উত্তপ্ত পানীয় ও মর্মান্তিক শাস্তি, কেননা তারা কুফরী করত। (সূরা ইউনুস- ৪)
তারা মুখমন্ডল থেকে আগুন সরাতে পারবে না :
لَوْ يَعْلَمُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا حِيْنَ لَا يَكُفُّوْنَ عَنْ وُّجُوْهِهِمُ النَّارَ وَلَا عَنْ ظُهُوْرِهِمْ وَلَا هُمْ يُنْصَرُوْنَ
হায়! যদি কাফিররা সে সময়ের কথা জানত যখন তারা তাদের সম্মুখ ও পশ্চাৎ হতে আগুন সরাতে পারবে না এবং তাদেরকে কোন সাহায্যও করা হবে না। (সূরা আম্বিয়া- ৩৯)
তাদের সম্পদ ও সন্তান কোন কাজে আসবে না :
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَنْ تُغْنِيَ عَنْهُمْ اَمْوَالُهُمْ وَلَاۤ اَوْلَادُهُمْ مِّنَ اللهِ شَيْئًاؕ وَاُولٰٓئِكَ اَصْحَابُ النَّارِ ؕ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে আল্লাহর সামনে তাদের সন্তান-সন্ততি এবং ধনসম্পদ কোন কাজে আসবে না। আর তারাই হবে জাহান্নামের অধিবাসী; সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে। (সূরা আলে ইমরান- ১১৬)
তাদের থেকে কোন বিনিময় গ্রহণ করা হবে না :
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَمَاتُوْا وَهُمْ كُفَّارٌ فَلَنْ يُّقْبَلَ مِنْ اَحَدِهِمْ مِّلْءُ الْاَرْضِ ذَهَبًا وَّلَوِ افْتَدٰى بِهٖؕ اُولٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ وَّمَا لَهُمْ مِّنْ نَّاصِرِيْنَ
নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে এবং কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে, তাদের কাছ থেকে পৃথিবী পরিমাণ স্বর্ণও গ্রহণ করা হবে না; যদিও তারা বিনিময় হিসেবে তা দিতে চায়। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি এবং তাদের কোন সাহায্যকারীও থাকবে না। (সূরা আলে ইমরান- ৯১)
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَوْ اَنَّ لَهُمْ مَّا فِى الْاَرْضِ جَمِيْعًا وَّمِثْلَهٗ مَعَهٗ لِيَفْتَدُوْا بِهٖ مِنْ عَذَابِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَا تُقُبِّلَ مِنْهُمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
যারা কুফরী করেছে তাদের কাছে যদি পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ থাকে এবং তার সাথে সমপরিমাণ আরো থাকে এবং এগুলোর বিনিময়ে কিয়ামতের দিন শাস্তি থেকে রেহাই পেতে চায়, তবুও তাদের কাছ থেকে তা কবুল করা হবে না। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরা মায়েদা- ৩৬)
তাদের জন্য জান্নাতের নিয়ামত হারাম করে দেয়া হয়েছে :
وَنَادٰۤى اَصْحَابُ النَّارِ اَصْحَابَ الْجَنَّةِ اَنْ اَفِيْضُوْا عَلَيْنَا مِنَ الْمَآءِ اَوْ مِمَّا رَزَقَكُمُ اللهُ ؕ قَالُوْاۤ اِنَّ اللهَ حَرَّمَهُمَا عَلَى الْكَافِرِيْنَ
জাহান্নামবাসীরা জান্নাতবাসীদেরকে সম্বোধন করে বলবে, আমাদের উপর কিছু পানি ঢেলে দাও অথবা আল্লাহ তোমাদেরকে জীবিকাস্বরূপ যা দিয়েছেন তা হতে কিছু দাও। তারা বলবে, আল্লাহ এ দু’টি কাফিরদের জন্য হারাম করে দিয়েছেন। (সূরা আ‘রাফ- ৫০)
তারা কেবল আফসোস করতে থাকবে :
اِنَّاۤ اَنْذَرْنَاكُمْ عَذَابًا قَرِيْبًاۚ يَوْمَ يَنْظُرُ الْمَرْءُ مَا قَدَّمَتْ يَدَاهُ وَيَقُوْلُ الْكَافِرُ يَا لَيْتَنِيْ كُنْتُ تُرَابًا
আমি তো তোমাদেরকে এক আসন্ন আযাবের ভয় প্রদর্শন করলাম, সেদিন মানুষ দেখতে পাবে যা সে নিজ হাতে আগে পাঠিয়েছিল। তখন কাফিররা বলবে, হায়! আমরা যদি মাটি হয়ে যেতাম। (সূরা নাবা- ৪০)
কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا قَاتِلُوا الَّذِيْنَ يَلُوْنَكُمْ مِّنَ الْكُفَّارِ وَلْيَجِدُوْا فِيْكُمْ غِلْظَةً
হে মুমিনগণ! কাফিরদের মধ্যে যারা তোমাদের নিকটবর্তী তাদের সাথে যুদ্ধ করো এবং তারা যেন তোমাদের মধ্যে কঠোরতা দেখতে পায়। (সূরা তাওবা- ১২৩)
তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوا الْكَافِرِيْنَ اَوْلِيَآءَ مِنْ دُوْنِ الْمُؤْمِنِيْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা মুমিনদের পরিবর্তে কাফিরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। (সূরা নিসা- ১৪৪)
তাদের অনুসরণ করা যাবে না :
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ اتَّقِ اللهَ وَلَا تُطِعِ الْكَافِرِيْنَ وَالْمُنَافِقِيْنَؕ اِنَّ اللهَ كَانَ عَلِيْمًا حَكِيْمًا
হে নবী! আল্লাহকে ভয় করো এবং কাফির ও মুনাফিকদের অনুসরণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ মহাজ্ঞানী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা আহযাব- ১)
তাদেরকে সাহায্য করা যাবে না :
فَلَا تَكُوْنَنَّ ظَهِيْرًا لِّلْكَافِرِيْنَ
তুমি কখনো কাফিরদের সহায় হয়ো না। (সূরা ক্বাসাস- ৮৬)
তাদের তৎপরতা দেখে চিন্তিত হওয়া যাবে না :
وَلَا يَحْزُنْكَ الَّذِيْنَ يُسَارِعُوْنَ فِى الْكُفْرِۚ اِنَّهُمْ لَنْ يَّضُرُّوا اللهَ شَيْئًا
যারা দ্রুতগতিতে কুফরীর দিকে ধাবমান হচ্ছে, তুমি তাদের জন্য চিন্তিত হয়ো না। বস্তুত তারা আল্লাহর কোন অনিষ্ট করতে পারবে না। (সূরা আলে ইমরান- ১৭৬)
وَمَنْ كَفَرَ فَلَا يَحْزُنْكَ كُفْرُهٗۤ اِلَيْنَا مَرْجِعُهُمْ فَنُنَبِّئُهُمْ بِمَا عَمِلُوْا
কেউ কুফরী করলে তার কুফরী যেন তোমাকে চিন্তিত না করে। আমার কাছেই তাদের প্রত্যাবর্তনস্থল। অতঃপর তারা যা করত আমি তাদেরকে তা অবহিত করব। (সূরা লুক্বমান- ২৩)
তাদের বিলাসিতা দেখে ধোঁকায় পড়া যাবে না :
لَا يَغُرَّنَّكَ تَقَلُّبُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا فِى الْبِلَادِ
নগরীতে কাফিরদের (বিলাসিতাপূর্ণ) চালচলন যেন তোমাকে প্রতারিত না করে। (সূরা আলে ইমরান- ১৯৬)
এসব তাদের জন্য উপকারী নয় :
وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اَنَّمَا نُمْلِيْ لَهُمْ خَيْرٌ لِّاَنْفُسِهِمْ
যারা অবিশ্বাস করেছে তারা যেন এটা ধারণা না করে যে, আমি তাদেরকে যে সুযোগ দিয়েছি তা তাদের নিজেদের জন্য কল্যাণকর। (সূরা আলে ইমরান- ১৭৮)
শানে নুযূল : কাফিররা বলত আমরা এখানে সুখশান্তিতে আছি। এতে বুঝা যায়, আল্লাহ আমাদের প্রতি অসন্তুষ্ট নন। অতএব পরকাল বলে কিছু থাকলে সেখানেও আমরা সুখেই থাকব। তখন তাদের প্রতিউত্তরে এ আয়াতটি নাযিল হয়।
তাদেরকে সামান্য অবকাশ দেয়া হচ্ছে :
اِنَّمَا نُمْلِيْ لَهُمْ لِيَزْدَادُوْاۤ اِثْمًا
নিশ্চয় আমি তাদেরকে অবকাশ দেই, যাতে করে তারা স্বীয় পাপে উন্নতি লাভ করতে পারে। (সূরা আলে ইমরান- ১৭৮)
কাফিরদের উপর বিজয়ী হওয়ার দু‘আ :
رَبَّنَاۤ اَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَّثَبِّتْ اَقْدَامَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِيْنَ
হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে ধৈর্যধারণ করার শক্তি দান করুন এবং আমাদেরকে (হকের উপর) প্রতিষ্ঠিত রাখুন। আর আপনি আমাদেরকে কাফির সম্প্রদায়ের উপর সাহায্য করুন। (সূরা বাক্বারা- ২৫০)
رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا فِتْنَةً لِّلَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَاغْفِرْ لَنَا رَبَّنَاۤ اِنَّكَ اَنْتَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদেরকে কাফিরদের জন্য পরীক্ষার বস্তুতে পরিণত করবেন না। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাবান। (সূরা মুমতাহিনা- ৫)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا قَاتِلُوا الَّذِيْنَ يَلُوْنَكُمْ مِّنَ الْكُفَّارِ وَلْيَجِدُوْا فِيْكُمْ غِلْظَةً
হে মুমিনগণ! কাফিরদের মধ্যে যারা তোমাদের নিকটবর্তী তাদের সাথে যুদ্ধ করো এবং তারা যেন তোমাদের মধ্যে কঠোরতা দেখতে পায়। (সূরা তাওবা- ১২৩)
তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوا الْكَافِرِيْنَ اَوْلِيَآءَ مِنْ دُوْنِ الْمُؤْمِنِيْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা মুমিনদের পরিবর্তে কাফিরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। (সূরা নিসা- ১৪৪)
তাদের অনুসরণ করা যাবে না :
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ اتَّقِ اللهَ وَلَا تُطِعِ الْكَافِرِيْنَ وَالْمُنَافِقِيْنَؕ اِنَّ اللهَ كَانَ عَلِيْمًا حَكِيْمًا
হে নবী! আল্লাহকে ভয় করো এবং কাফির ও মুনাফিকদের অনুসরণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ মহাজ্ঞানী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা আহযাব- ১)
তাদেরকে সাহায্য করা যাবে না :
فَلَا تَكُوْنَنَّ ظَهِيْرًا لِّلْكَافِرِيْنَ
তুমি কখনো কাফিরদের সহায় হয়ো না। (সূরা ক্বাসাস- ৮৬)
তাদের তৎপরতা দেখে চিন্তিত হওয়া যাবে না :
وَلَا يَحْزُنْكَ الَّذِيْنَ يُسَارِعُوْنَ فِى الْكُفْرِۚ اِنَّهُمْ لَنْ يَّضُرُّوا اللهَ شَيْئًا
যারা দ্রুতগতিতে কুফরীর দিকে ধাবমান হচ্ছে, তুমি তাদের জন্য চিন্তিত হয়ো না। বস্তুত তারা আল্লাহর কোন অনিষ্ট করতে পারবে না। (সূরা আলে ইমরান- ১৭৬)
وَمَنْ كَفَرَ فَلَا يَحْزُنْكَ كُفْرُهٗۤ اِلَيْنَا مَرْجِعُهُمْ فَنُنَبِّئُهُمْ بِمَا عَمِلُوْا
কেউ কুফরী করলে তার কুফরী যেন তোমাকে চিন্তিত না করে। আমার কাছেই তাদের প্রত্যাবর্তনস্থল। অতঃপর তারা যা করত আমি তাদেরকে তা অবহিত করব। (সূরা লুক্বমান- ২৩)
তাদের বিলাসিতা দেখে ধোঁকায় পড়া যাবে না :
لَا يَغُرَّنَّكَ تَقَلُّبُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا فِى الْبِلَادِ
নগরীতে কাফিরদের (বিলাসিতাপূর্ণ) চালচলন যেন তোমাকে প্রতারিত না করে। (সূরা আলে ইমরান- ১৯৬)
এসব তাদের জন্য উপকারী নয় :
وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اَنَّمَا نُمْلِيْ لَهُمْ خَيْرٌ لِّاَنْفُسِهِمْ
যারা অবিশ্বাস করেছে তারা যেন এটা ধারণা না করে যে, আমি তাদেরকে যে সুযোগ দিয়েছি তা তাদের নিজেদের জন্য কল্যাণকর। (সূরা আলে ইমরান- ১৭৮)
শানে নুযূল : কাফিররা বলত আমরা এখানে সুখশান্তিতে আছি। এতে বুঝা যায়, আল্লাহ আমাদের প্রতি অসন্তুষ্ট নন। অতএব পরকাল বলে কিছু থাকলে সেখানেও আমরা সুখেই থাকব। তখন তাদের প্রতিউত্তরে এ আয়াতটি নাযিল হয়।
তাদেরকে সামান্য অবকাশ দেয়া হচ্ছে :
اِنَّمَا نُمْلِيْ لَهُمْ لِيَزْدَادُوْاۤ اِثْمًا
নিশ্চয় আমি তাদেরকে অবকাশ দেই, যাতে করে তারা স্বীয় পাপে উন্নতি লাভ করতে পারে। (সূরা আলে ইমরান- ১৭৮)
কাফিরদের উপর বিজয়ী হওয়ার দু‘আ :
رَبَّنَاۤ اَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَّثَبِّتْ اَقْدَامَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِيْنَ
হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে ধৈর্যধারণ করার শক্তি দান করুন এবং আমাদেরকে (হকের উপর) প্রতিষ্ঠিত রাখুন। আর আপনি আমাদেরকে কাফির সম্প্রদায়ের উপর সাহায্য করুন। (সূরা বাক্বারা- ২৫০)
رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا فِتْنَةً لِّلَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَاغْفِرْ لَنَا رَبَّنَاۤ اِنَّكَ اَنْتَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদেরকে কাফিরদের জন্য পরীক্ষার বস্তুতে পরিণত করবেন না। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাবান। (সূরা মুমতাহিনা- ৫)
আল্লাহ শিরক করতে নিষেধ করেছেন :
وَاعْبُدُوا اللهَ وَلَا تُشْرِكُوْا بِهٖ شَيْئًا
তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো এবং তাঁর সাথে কোনকিছুকে শরীক সাব্যস্ত করো না। (সূরা নিসা- ৩৬)
قُلْ اِنَّمَاۤ اُمِرْتُ اَنْ اَعْبُدَ اللهَ وَلَاۤ اُشْرِكَ بِهٖ
বলো, নিশ্চয় আমি আল্লাহর ইবাদাত করতে ও তাঁর সাথে শরীক না করতে আদিষ্ট হয়েছি। (সূরা রা‘দ- ৩৬)
وَقَالَ اللهُ لَا تَتَّخِذُوْاۤ اِلٰهَيْنِ اثْنَيْنِ اِنَّمَا هُوَ اِلٰهٌ وَّاحِدٌۚ فَاِيَّايَ فَارْهَبُوْنِ
আল্লাহ বললেন, তোমরা দুই ইলাহ গ্রহণ করো না; কেননা তিনিই একমাত্র ইলাহ। সুতরাং তোমরা আমাকেই ভয় করো। (সূরা নাহল- ৫১)
لَا تَجْعَلْ مَعَ اللهِ اِلٰهًا اٰخَرَ فَتَقْعُدَ مَذْمُوْمًا مَّخْذُوْلًا
আল্লাহর সাথে অপর কোন ইলাহ্ সাব্যস্ত করো না, নতুবা তোমরা নিন্দিত ও লাঞ্ছিত হয়ে পড়বে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ২২)
فَاجْتَنِبُوا الرِّجْسَ مِنَ الْاَوْثَانِ وَاجْتَنِبُوْا قَوْلَ الزُوْرِ
তোমরা মূর্তিপূজার অপবিত্রতা বর্জন করো এবং মিথ্যা কথা হতে দূরে থাকো। (সূরা হজ্জ- ৩০)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ তোমরা মূর্তিপূজা থেকে এমনভাবে দূরে থাকো যেমন দুর্গন্ধময় ময়লা-আবর্জনা থেকে মানুষ নাকে কাপড় দিয়ে দূরে সরে আসে। অন্য কথায় বলা যায়, তা যেন এমন নাপাক ও ময়লা-আবর্জনায় পরিপূর্ণ, যার কাছে গেলেই মানুষ নাপাক ও নোংরা হয়ে যাবে। যেহেতু অত্র আয়াতে মূর্তিপূজার কাছে যেতেও নিষেধ করা হয়েছে, সেহেতু মূর্তিপূজার কাজে নিজেকে সংশ্লিষ্ট রাখা তথা মূর্তিপূজার কাজে আর্থিক অথবা শারীরিক সহযোগিতা করা, তাদের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়া, তাদের সাথে আন্তরিক সম্পর্ক বিদ্যমান রাখা, তাদের অনুষ্ঠান থেকে কোনকিছু গ্রহণ করা ইত্যাদি সবকিছুই নিষিদ্ধ।
আল্লাহ শিরককে হারাম করে দিয়েছেন :
قُلْ تَعَالَوْا اَتْلُ مَا حَرَّمَ رَبُّكُمْ عَلَيْكُمْ اَلَّا تُشْرِكُوْا بِهٖ شَيْئًا
আপনি বলুন, এসো! তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্য যা হারাম করেছেন তা আমি তোমাদেরকে পাঠ করে শোনাই। আর তা হলো, তোমরা তাঁর সাথে কোন শরীক স্থাপন করো না। (সূরা আন‘আম- ১৫১)
قُلْ اِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالْاِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَاَنْ تُشْرِكُوْا بِاللهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهٖ سُلْطَانًا وَّاَنْ تَقُوْلُوْا عَلَى اللهِ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ
বলো, নিশ্চয় আমার প্রতিপালক (তোমাদের জন্য) যা কিছু হারাম করে দিয়েছেন তা হচ্ছে, প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অশ্লীলতা, গোনাহ ও অন্যায়ভাবে বাড়াবাড়িমূলক কর্ম এবং কোনকিছুকে আল্লাহর শরীক করা, যার কোন প্রমাণ তিনি প্রেরণ করেননি। আর তিনি আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কিছু বলা থেকেও নিষেধ করেছেন, যা তোমরা জান না। (সূরা আ‘রাফ- ৩৩)
মাতা-পিতা আদেশ করলেও শিরক করা যাবে না :
وَاِنْ جَاهَدَاكَ لِتُشْرِكَ بِيْ مَا لَيْسَ لَكَ بِهٖ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا
তারা (পিতামাতা) যদি আমার সাথে এমন কিছুকে শরীক করার জন্য তোমার উপর বল প্রয়োগ করে, যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তাহলে তুমি তাদের আনুগত্য করো না। (সূরা আনকাবূত- ৮)
লুক্বমান (আঃ) ছেলেকে শিরক করতে নিষেধ করেছেন :
وَاِذْ قَالَ لُقْمَانُ لِابْنِهٖ وَهُوَ يَعِظُهٗ يَا بُنَيَّ لَا تُشْرِكْ بِاللهِؕ اِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيْمٌ
স্মরণ করো, যখন লুক্বমান স্বীয় ছেলেকে উপদেশ প্রদান করে বলল, হে আমার ছেলে! আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করো না; নিশ্চয় শিরক হচ্ছে মহা অন্যায়। (সূরা লুক্বমান- ১৩)
কোন নবীই শিরককে সমর্থন করেননি :
وَاسْاَلْ مَنْ اَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رُّسُلِنَاۤ اَجَعَلْنَا مِنْ دُوْنِ الرَّحْمٰنِ اٰلِهَةً يُّعْبَدُوْنَ
তোমার পূর্বে আমি যেসব রাসূল প্রেরণ করেছিলাম তাদেরকে জিজ্ঞেস করে দেখো, আমি কি দয়াময় (আল্লাহ) ব্যতীত এমন কোন উপাস্য স্থির করেছিলাম, যাদের ইবাদাত করা যায়? (সূরা যুখরুফ- ৪৫)
وَاعْبُدُوا اللهَ وَلَا تُشْرِكُوْا بِهٖ شَيْئًا
তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো এবং তাঁর সাথে কোনকিছুকে শরীক সাব্যস্ত করো না। (সূরা নিসা- ৩৬)
قُلْ اِنَّمَاۤ اُمِرْتُ اَنْ اَعْبُدَ اللهَ وَلَاۤ اُشْرِكَ بِهٖ
বলো, নিশ্চয় আমি আল্লাহর ইবাদাত করতে ও তাঁর সাথে শরীক না করতে আদিষ্ট হয়েছি। (সূরা রা‘দ- ৩৬)
وَقَالَ اللهُ لَا تَتَّخِذُوْاۤ اِلٰهَيْنِ اثْنَيْنِ اِنَّمَا هُوَ اِلٰهٌ وَّاحِدٌۚ فَاِيَّايَ فَارْهَبُوْنِ
আল্লাহ বললেন, তোমরা দুই ইলাহ গ্রহণ করো না; কেননা তিনিই একমাত্র ইলাহ। সুতরাং তোমরা আমাকেই ভয় করো। (সূরা নাহল- ৫১)
لَا تَجْعَلْ مَعَ اللهِ اِلٰهًا اٰخَرَ فَتَقْعُدَ مَذْمُوْمًا مَّخْذُوْلًا
আল্লাহর সাথে অপর কোন ইলাহ্ সাব্যস্ত করো না, নতুবা তোমরা নিন্দিত ও লাঞ্ছিত হয়ে পড়বে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ২২)
فَاجْتَنِبُوا الرِّجْسَ مِنَ الْاَوْثَانِ وَاجْتَنِبُوْا قَوْلَ الزُوْرِ
তোমরা মূর্তিপূজার অপবিত্রতা বর্জন করো এবং মিথ্যা কথা হতে দূরে থাকো। (সূরা হজ্জ- ৩০)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ তোমরা মূর্তিপূজা থেকে এমনভাবে দূরে থাকো যেমন দুর্গন্ধময় ময়লা-আবর্জনা থেকে মানুষ নাকে কাপড় দিয়ে দূরে সরে আসে। অন্য কথায় বলা যায়, তা যেন এমন নাপাক ও ময়লা-আবর্জনায় পরিপূর্ণ, যার কাছে গেলেই মানুষ নাপাক ও নোংরা হয়ে যাবে। যেহেতু অত্র আয়াতে মূর্তিপূজার কাছে যেতেও নিষেধ করা হয়েছে, সেহেতু মূর্তিপূজার কাজে নিজেকে সংশ্লিষ্ট রাখা তথা মূর্তিপূজার কাজে আর্থিক অথবা শারীরিক সহযোগিতা করা, তাদের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়া, তাদের সাথে আন্তরিক সম্পর্ক বিদ্যমান রাখা, তাদের অনুষ্ঠান থেকে কোনকিছু গ্রহণ করা ইত্যাদি সবকিছুই নিষিদ্ধ।
আল্লাহ শিরককে হারাম করে দিয়েছেন :
قُلْ تَعَالَوْا اَتْلُ مَا حَرَّمَ رَبُّكُمْ عَلَيْكُمْ اَلَّا تُشْرِكُوْا بِهٖ شَيْئًا
আপনি বলুন, এসো! তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্য যা হারাম করেছেন তা আমি তোমাদেরকে পাঠ করে শোনাই। আর তা হলো, তোমরা তাঁর সাথে কোন শরীক স্থাপন করো না। (সূরা আন‘আম- ১৫১)
قُلْ اِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالْاِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَاَنْ تُشْرِكُوْا بِاللهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهٖ سُلْطَانًا وَّاَنْ تَقُوْلُوْا عَلَى اللهِ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ
বলো, নিশ্চয় আমার প্রতিপালক (তোমাদের জন্য) যা কিছু হারাম করে দিয়েছেন তা হচ্ছে, প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অশ্লীলতা, গোনাহ ও অন্যায়ভাবে বাড়াবাড়িমূলক কর্ম এবং কোনকিছুকে আল্লাহর শরীক করা, যার কোন প্রমাণ তিনি প্রেরণ করেননি। আর তিনি আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কিছু বলা থেকেও নিষেধ করেছেন, যা তোমরা জান না। (সূরা আ‘রাফ- ৩৩)
মাতা-পিতা আদেশ করলেও শিরক করা যাবে না :
وَاِنْ جَاهَدَاكَ لِتُشْرِكَ بِيْ مَا لَيْسَ لَكَ بِهٖ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا
তারা (পিতামাতা) যদি আমার সাথে এমন কিছুকে শরীক করার জন্য তোমার উপর বল প্রয়োগ করে, যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তাহলে তুমি তাদের আনুগত্য করো না। (সূরা আনকাবূত- ৮)
লুক্বমান (আঃ) ছেলেকে শিরক করতে নিষেধ করেছেন :
وَاِذْ قَالَ لُقْمَانُ لِابْنِهٖ وَهُوَ يَعِظُهٗ يَا بُنَيَّ لَا تُشْرِكْ بِاللهِؕ اِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيْمٌ
স্মরণ করো, যখন লুক্বমান স্বীয় ছেলেকে উপদেশ প্রদান করে বলল, হে আমার ছেলে! আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করো না; নিশ্চয় শিরক হচ্ছে মহা অন্যায়। (সূরা লুক্বমান- ১৩)
কোন নবীই শিরককে সমর্থন করেননি :
وَاسْاَلْ مَنْ اَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رُّسُلِنَاۤ اَجَعَلْنَا مِنْ دُوْنِ الرَّحْمٰنِ اٰلِهَةً يُّعْبَدُوْنَ
তোমার পূর্বে আমি যেসব রাসূল প্রেরণ করেছিলাম তাদেরকে জিজ্ঞেস করে দেখো, আমি কি দয়াময় (আল্লাহ) ব্যতীত এমন কোন উপাস্য স্থির করেছিলাম, যাদের ইবাদাত করা যায়? (সূরা যুখরুফ- ৪৫)
শিরকের কোন ভিত্তি নেই :
وَجَعَلُوْا لِلّٰهِ شُرَكَآءَؕ قُلْ سَمُّوْهُمْؕ اَمْ تُنَبِّئُوْنَهٗ بِمَا لَا يَعْلَمُ فِى الْاَرْضِ اَمْ بِظَاهِرٍ مِّنَ الْقَوْلِ
তারা আল্লাহর সাথে বহু শরীক স্থাপন করেছে। বলো, তোমরা তাদের পরিচয় দাও। তোমরা কি পৃথিবীর মধ্যে এমন কোন বিষয়ের ব্যাপারে সংবাদ দিতে চাও- যা তিনি জানেন না? নাকি এটা বাহ্যিক কথা মাত্র? (সূরা রা‘দ- ৩৩)
قُلْ اَرَاَيْتُمْ مَّا تَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ اَرُوْنِيْ مَاذَا خَلَقُوْا مِنَ الْاَرْضِ اَمْ لَهُمْ شِرْكٌ فِى السَّمَاوَاتِؕ اِيْتُوْنِيْ بِكِتَابٍ مِّنْ قَبْلِ هٰذَاۤ اَوْ اَثَارَةٍ مِّنْ عِلْمٍ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ
বলো, তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে আহবান করে থাক, তাদের কথা কি কখনো ভেবে দেখেছ? তারা দুনিয়াতে কী কী সৃষ্টি করেছে তা আমাকে একটু দেখাও। অথবা আসমান (সৃষ্টিতে) কি তাদের কোন অংশীদারিত্ব আছে? তোমরা যদি (তোমাদের কথায়) সত্যবাদী হয়ে থাক, তাহলে (এর প্রমাণ হিসেবে) আগের কোন (আসমানী) কিতাব বা (সবার কাছে) স্বীকৃত কোন ইলিম পেশ করো। (সূরা আহকাফ- ৪)
শিরকের কোন দলীল-প্রমাণ নেই :
وَيَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهٖ سُلْطَانًا وَّمَا لَيْسَ لَهُمْ بِه عِلْمٌ
তারা আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর ইবাদাত করে, যার সম্পর্কে তিনি কোন দলীল প্রেরণ করেননি এবং যার সম্বন্ধে তাদের কোন জ্ঞান নেই। (সূরা হজ্জ- ৭১)
مَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِهۤ اِلَّاۤ اَسْمَآءً سَمَّيْتُمُوْهَاۤ اَنْتُمْ وَاٰبَآؤُكُمْ مَّاۤ اَنْزَلَ اللهُ بِهَا مِنْ سُلْطَانٍ
তোমরা তাকে ছেড়ে যাদের ইবাদাত করছ, সেগুলো তো কতিপয় নাম মাত্র। এ নামগুলো তোমরা এবং তোমাদের পূর্বপুরুষরাই রেখেছ, যে ব্যাপারে আল্লাহ কোন দলীল নাযিল করেননি। (সূরা ইউসুফ- ৪০)
শিরকের ভিত্তি হলো অনুমান :
وَمَا يَتَّبِعُ الَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ شُرَكَآءَ ؕ اِنْ يَّتَّبِعُوْنَ اِلَّا الظَّنَّ وَاِنْ هُمْ اِلَّا يَخْرُصُوْنَ
যারা আল্লাহ ব্যতীত অপরকে অংশীদার হিসেবে ডাকে, তারা কিসের অনুসরণ করে? তারা তো কেবল ধারণা ও অনুমানের অনুসরণ করে থাকে। (সূরা ইউনুস- ৬৬)
ব্যাখ্যা : কেবল তাওহীদের ব্যাপারেই ঐক্যমত্য হওয়া সম্ভব। শিরকের ব্যাপারে ঐক্যমত্য হওয়া সম্ভব নয়। কোন্ কোন্ সত্তা আল্লাহর কাছে পৌঁছার মাধ্যম হতে পারে- সে ব্যাপারে দুনিয়ার মুশরিকরা কখনো একমত পোষণ করতে পারেনি। কারো কাছে দেব-দেবীরা এর মাধ্যম। কারো কাছে চাঁদ, সূর্য, মঙ্গল ও বৃহস্পতি এর মাধ্যম। কারো মতে মৃত মহাপুরুষগণ এর মাধ্যম। কিন্তু এদের মধ্যেও অনেক মতামত বিদ্যমান। কারণ এসব ধারণা কোন জ্ঞানের ভিত্তিতে গড়ে উঠেনি কিংবা আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের কাছে এমন কোন তালিকাও আসেনি যাতে বলা হয়েছে, অমুক ও অমুক ব্যক্তি আমার বিশেষ নৈকট্যপ্রাপ্ত। এসব আকীদা কেবল কুসংস্কার ও অন্ধভক্তি মাত্র। পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুসরণের কারণে মানুষের মধ্যে তা বিস্তার লাভ করেছে।
মুশরিকদের ধারণা :
وَقَالُوْا لَوْ شَآءَ الرَّحْمٰنُ مَا عَبَدْنَاهُمْؕ مَا لَهُمْ بِذٰلِكَ مِنْ عِلْمٍ اِنْ هُمْ اِلَّا يَخْرُصُوْنَ ‐ اَمْ اٰتَيْنَاهُمْ كِتَابًا مِّنْ قَبْلِهٖ فَهُمْ بِهٖ مُسْتَمْسِكُوْنَ
তারা বলে, দয়াময় আল্লাহ ইচ্ছা করলে আমরা এদের পূজা করতাম না। এ বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান নেই; তারা তো শুধু অনুমানের উপর ভিত্তি করে কথা বলে। আমি কি তাদেরকে এর (কুরআনের) পূর্বে এমন কোন কিতাব দিয়েছিলাম, যা তারা দৃঢ়ভাবে ধারণ করে আছে? (সূরা যুখরুফ- ২০, ২১)
ব্যাখ্যা : মুশরিকরা আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতা বা দাসত্বে অন্যকে শরীক করার কথা বলে। অথবা এ কথা বলে যে, নিজের বান্দাদের হেদায়াত ও গোমরাহীর ব্যাপারে আল্লাহর কোন আগ্রহ নেই এবং তিনি আমাদের পথ দেখানোর জন্য কোন কিতাব বা নবী পাঠাননি। বরং তিনি আমাদেরকে স্বাধীনভাবে ছেড়ে দিয়েছেন। সুতরাং যেভাবে ইচ্ছা আমরা আমাদের জীবন পরিচালনা করতে পারি। অথবা বলে, আল্লাহ আমাদেরকে খেলাচ্ছলে সৃষ্টি করেছেন এবং এভাবেই আমাদেরকে দুনিয়া হতে তুলে নেবেন। তাঁর সামনে আমাদের কোন জবাবদিহি করতে হবে না। কাজেই আমাদের কোন পুরস্কার বা শাস্তিও লাভ করতে হবে না।
শিরকের ভিত্তি হলো পূর্ববর্তীদের অন্ধ অনুসরণ :
بَلْ قَالُوْاۤ اِنَّا وَجَدْنَاۤ اٰبَآءَنَا عَلٰۤى اُمَّةٍ وَّاِنَّا عَلٰۤى اٰثَارِهِمْ مُّهْتَدُوْنَ ‐ وَكَذٰلِكَ مَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ فِيْ قَرْيَةٍ مِّنْ نَّذِيْرٍ اِلَّا قَالَ مُتْرَفُوْهَاۤ اِنَّا وَجَدْنَاۤ اٰبَآءَنَا عَلٰۤى اُمَّةٍ وَّاِنَّا عَلٰۤى اٰثَارِهِمْ مُّقْتَدُوْنَ ‐ قَالَ اَوَلَوْ جِئْتُكُمْ بِاَهْدٰى مِمَّا وَجَدْتُّمْ عَلَيْهِ اٰبَآءَكُمْؕ قَالُوْاۤ اِنَّا بِمَاۤ اُرْسِلْتُمْ بِهٖ كَافِرُوْنَ
বরং তারা বলে, আমরা তো আমাদের পূর্বপুরুষদের পেয়েছি এক মতাদর্শের উপর এবং আমরা তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করে হেদায়াতপ্রাপ্ত হয়েছি। অনুরূপভাবে তোমার পূর্বে কোন জনপদে যখনই কোন সতর্ককারী প্রেরণ করেছি তখন তাদের সমৃদ্ধশালী ব্যক্তিরা বলত, আমরা তো আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে পেয়েছি এক মতাদর্শের উপর এবং আমরা তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করছি। তখন সে (সতর্ককারী) বলত, তোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষদেরকে যে পথে পেয়েছ, আমি যদি তোমাদের জন্য তার চেয়ে উত্তম পথনির্দেশ আনয়ন করি তবুও কি (তোমরা তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে)? তারা বলত, তোমরা যা নিয়ে প্রেরিত হয়েছ আমরা তা প্রত্যাখ্যান করি। (সূরা যুখরুফ, ২২-২৪)
فَلَا تَكُ فِيْ مِرْيَةٍ مِّمَّا يَعْبُدُ هٰۤؤُلَآءِؕ مَا يَعْبُدُوْنَ اِلَّا كَمَا يَعْبُدُ اٰبَآؤُهُمْ مِّنْ قَبْلُؕ وَاِنَّا لَمُوَفُّوْهُمْ نَصِيْبَهُمْ غَيْرَ مَنْقُوْصٍ
সুতরাং তারা যাদের ইবাদাত করে তাদের সম্বন্ধে সংশয়ে থেকো না। ইতোপূর্বে তাদের পিতৃপুরুষরা যাদের ইবাদাত করত, তারা তো তাদেরই ইবাদাত করে। অবশ্যই আমি তাদেরকে তাদের প্রাপ্য কমানো ছাড়াই পুরোপুরিভাবে দিয়ে দেব। (সূরা হুদ- ১০৯)
ব্যাখ্যা : যারা বিভিন্নভাবে শিরকের মধ্যে লিপ্ত রয়েছে তারা এ সবকিছু ইলমের ভিত্তিতে করেনি; বরং নিছক ধারণা ও অনুমানের ভিত্তিতে করেছে। আর যারা এসব ধর্মীয় ও পার্থিব নেতাদের অনুসরণ করেছে, তারাও জেনে-বুঝে তা করেনি; বরং এ ধারণার ভিত্তিতে তাদের আনুগত্য করেছে যে, যখন এত বড় বড় লোক এ কথা বলেছেন, আমাদের বাপ-দাদারাও যেহেতু তাদের মান্য করে এসেছেন এবং দুনিয়ার অধিকাংশ লোকও যেহেতু তাদের অনুসরণ করছে, তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে যাব কেন?
শিরকের ভিত্তি হলো তাকদীরের প্রতি অবাস্তব ধারণা :
وَقَالُوْا لَوْ شَآءَ الرَّحْمٰنُ مَا عَبَدْنَاهُمْؕ مَا لَهُمْ بِذٰلِكَ مِنْ عِلْمٍ اِنْ هُمْ اِلَّا يَخْرُصُوْنَ
তারা বলে, দয়াময় আল্লাহ ইচ্ছা করলে আমরা এদের পূজা করতাম না। এ বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান নেই; তারা তো শুধু ধারণার উপর ভিত্তি করে কথা বলে। (সূরা যুখরুফ- ২০)
وَجَعَلُوْا لِلّٰهِ شُرَكَآءَؕ قُلْ سَمُّوْهُمْؕ اَمْ تُنَبِّئُوْنَهٗ بِمَا لَا يَعْلَمُ فِى الْاَرْضِ اَمْ بِظَاهِرٍ مِّنَ الْقَوْلِ
তারা আল্লাহর সাথে বহু শরীক স্থাপন করেছে। বলো, তোমরা তাদের পরিচয় দাও। তোমরা কি পৃথিবীর মধ্যে এমন কোন বিষয়ের ব্যাপারে সংবাদ দিতে চাও- যা তিনি জানেন না? নাকি এটা বাহ্যিক কথা মাত্র? (সূরা রা‘দ- ৩৩)
قُلْ اَرَاَيْتُمْ مَّا تَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ اَرُوْنِيْ مَاذَا خَلَقُوْا مِنَ الْاَرْضِ اَمْ لَهُمْ شِرْكٌ فِى السَّمَاوَاتِؕ اِيْتُوْنِيْ بِكِتَابٍ مِّنْ قَبْلِ هٰذَاۤ اَوْ اَثَارَةٍ مِّنْ عِلْمٍ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ
বলো, তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে আহবান করে থাক, তাদের কথা কি কখনো ভেবে দেখেছ? তারা দুনিয়াতে কী কী সৃষ্টি করেছে তা আমাকে একটু দেখাও। অথবা আসমান (সৃষ্টিতে) কি তাদের কোন অংশীদারিত্ব আছে? তোমরা যদি (তোমাদের কথায়) সত্যবাদী হয়ে থাক, তাহলে (এর প্রমাণ হিসেবে) আগের কোন (আসমানী) কিতাব বা (সবার কাছে) স্বীকৃত কোন ইলিম পেশ করো। (সূরা আহকাফ- ৪)
শিরকের কোন দলীল-প্রমাণ নেই :
وَيَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهٖ سُلْطَانًا وَّمَا لَيْسَ لَهُمْ بِه عِلْمٌ
তারা আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর ইবাদাত করে, যার সম্পর্কে তিনি কোন দলীল প্রেরণ করেননি এবং যার সম্বন্ধে তাদের কোন জ্ঞান নেই। (সূরা হজ্জ- ৭১)
مَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِهۤ اِلَّاۤ اَسْمَآءً سَمَّيْتُمُوْهَاۤ اَنْتُمْ وَاٰبَآؤُكُمْ مَّاۤ اَنْزَلَ اللهُ بِهَا مِنْ سُلْطَانٍ
তোমরা তাকে ছেড়ে যাদের ইবাদাত করছ, সেগুলো তো কতিপয় নাম মাত্র। এ নামগুলো তোমরা এবং তোমাদের পূর্বপুরুষরাই রেখেছ, যে ব্যাপারে আল্লাহ কোন দলীল নাযিল করেননি। (সূরা ইউসুফ- ৪০)
শিরকের ভিত্তি হলো অনুমান :
وَمَا يَتَّبِعُ الَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ شُرَكَآءَ ؕ اِنْ يَّتَّبِعُوْنَ اِلَّا الظَّنَّ وَاِنْ هُمْ اِلَّا يَخْرُصُوْنَ
যারা আল্লাহ ব্যতীত অপরকে অংশীদার হিসেবে ডাকে, তারা কিসের অনুসরণ করে? তারা তো কেবল ধারণা ও অনুমানের অনুসরণ করে থাকে। (সূরা ইউনুস- ৬৬)
ব্যাখ্যা : কেবল তাওহীদের ব্যাপারেই ঐক্যমত্য হওয়া সম্ভব। শিরকের ব্যাপারে ঐক্যমত্য হওয়া সম্ভব নয়। কোন্ কোন্ সত্তা আল্লাহর কাছে পৌঁছার মাধ্যম হতে পারে- সে ব্যাপারে দুনিয়ার মুশরিকরা কখনো একমত পোষণ করতে পারেনি। কারো কাছে দেব-দেবীরা এর মাধ্যম। কারো কাছে চাঁদ, সূর্য, মঙ্গল ও বৃহস্পতি এর মাধ্যম। কারো মতে মৃত মহাপুরুষগণ এর মাধ্যম। কিন্তু এদের মধ্যেও অনেক মতামত বিদ্যমান। কারণ এসব ধারণা কোন জ্ঞানের ভিত্তিতে গড়ে উঠেনি কিংবা আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের কাছে এমন কোন তালিকাও আসেনি যাতে বলা হয়েছে, অমুক ও অমুক ব্যক্তি আমার বিশেষ নৈকট্যপ্রাপ্ত। এসব আকীদা কেবল কুসংস্কার ও অন্ধভক্তি মাত্র। পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুসরণের কারণে মানুষের মধ্যে তা বিস্তার লাভ করেছে।
মুশরিকদের ধারণা :
وَقَالُوْا لَوْ شَآءَ الرَّحْمٰنُ مَا عَبَدْنَاهُمْؕ مَا لَهُمْ بِذٰلِكَ مِنْ عِلْمٍ اِنْ هُمْ اِلَّا يَخْرُصُوْنَ ‐ اَمْ اٰتَيْنَاهُمْ كِتَابًا مِّنْ قَبْلِهٖ فَهُمْ بِهٖ مُسْتَمْسِكُوْنَ
তারা বলে, দয়াময় আল্লাহ ইচ্ছা করলে আমরা এদের পূজা করতাম না। এ বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান নেই; তারা তো শুধু অনুমানের উপর ভিত্তি করে কথা বলে। আমি কি তাদেরকে এর (কুরআনের) পূর্বে এমন কোন কিতাব দিয়েছিলাম, যা তারা দৃঢ়ভাবে ধারণ করে আছে? (সূরা যুখরুফ- ২০, ২১)
ব্যাখ্যা : মুশরিকরা আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতা বা দাসত্বে অন্যকে শরীক করার কথা বলে। অথবা এ কথা বলে যে, নিজের বান্দাদের হেদায়াত ও গোমরাহীর ব্যাপারে আল্লাহর কোন আগ্রহ নেই এবং তিনি আমাদের পথ দেখানোর জন্য কোন কিতাব বা নবী পাঠাননি। বরং তিনি আমাদেরকে স্বাধীনভাবে ছেড়ে দিয়েছেন। সুতরাং যেভাবে ইচ্ছা আমরা আমাদের জীবন পরিচালনা করতে পারি। অথবা বলে, আল্লাহ আমাদেরকে খেলাচ্ছলে সৃষ্টি করেছেন এবং এভাবেই আমাদেরকে দুনিয়া হতে তুলে নেবেন। তাঁর সামনে আমাদের কোন জবাবদিহি করতে হবে না। কাজেই আমাদের কোন পুরস্কার বা শাস্তিও লাভ করতে হবে না।
শিরকের ভিত্তি হলো পূর্ববর্তীদের অন্ধ অনুসরণ :
بَلْ قَالُوْاۤ اِنَّا وَجَدْنَاۤ اٰبَآءَنَا عَلٰۤى اُمَّةٍ وَّاِنَّا عَلٰۤى اٰثَارِهِمْ مُّهْتَدُوْنَ ‐ وَكَذٰلِكَ مَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ فِيْ قَرْيَةٍ مِّنْ نَّذِيْرٍ اِلَّا قَالَ مُتْرَفُوْهَاۤ اِنَّا وَجَدْنَاۤ اٰبَآءَنَا عَلٰۤى اُمَّةٍ وَّاِنَّا عَلٰۤى اٰثَارِهِمْ مُّقْتَدُوْنَ ‐ قَالَ اَوَلَوْ جِئْتُكُمْ بِاَهْدٰى مِمَّا وَجَدْتُّمْ عَلَيْهِ اٰبَآءَكُمْؕ قَالُوْاۤ اِنَّا بِمَاۤ اُرْسِلْتُمْ بِهٖ كَافِرُوْنَ
বরং তারা বলে, আমরা তো আমাদের পূর্বপুরুষদের পেয়েছি এক মতাদর্শের উপর এবং আমরা তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করে হেদায়াতপ্রাপ্ত হয়েছি। অনুরূপভাবে তোমার পূর্বে কোন জনপদে যখনই কোন সতর্ককারী প্রেরণ করেছি তখন তাদের সমৃদ্ধশালী ব্যক্তিরা বলত, আমরা তো আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে পেয়েছি এক মতাদর্শের উপর এবং আমরা তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করছি। তখন সে (সতর্ককারী) বলত, তোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষদেরকে যে পথে পেয়েছ, আমি যদি তোমাদের জন্য তার চেয়ে উত্তম পথনির্দেশ আনয়ন করি তবুও কি (তোমরা তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে)? তারা বলত, তোমরা যা নিয়ে প্রেরিত হয়েছ আমরা তা প্রত্যাখ্যান করি। (সূরা যুখরুফ, ২২-২৪)
فَلَا تَكُ فِيْ مِرْيَةٍ مِّمَّا يَعْبُدُ هٰۤؤُلَآءِؕ مَا يَعْبُدُوْنَ اِلَّا كَمَا يَعْبُدُ اٰبَآؤُهُمْ مِّنْ قَبْلُؕ وَاِنَّا لَمُوَفُّوْهُمْ نَصِيْبَهُمْ غَيْرَ مَنْقُوْصٍ
সুতরাং তারা যাদের ইবাদাত করে তাদের সম্বন্ধে সংশয়ে থেকো না। ইতোপূর্বে তাদের পিতৃপুরুষরা যাদের ইবাদাত করত, তারা তো তাদেরই ইবাদাত করে। অবশ্যই আমি তাদেরকে তাদের প্রাপ্য কমানো ছাড়াই পুরোপুরিভাবে দিয়ে দেব। (সূরা হুদ- ১০৯)
ব্যাখ্যা : যারা বিভিন্নভাবে শিরকের মধ্যে লিপ্ত রয়েছে তারা এ সবকিছু ইলমের ভিত্তিতে করেনি; বরং নিছক ধারণা ও অনুমানের ভিত্তিতে করেছে। আর যারা এসব ধর্মীয় ও পার্থিব নেতাদের অনুসরণ করেছে, তারাও জেনে-বুঝে তা করেনি; বরং এ ধারণার ভিত্তিতে তাদের আনুগত্য করেছে যে, যখন এত বড় বড় লোক এ কথা বলেছেন, আমাদের বাপ-দাদারাও যেহেতু তাদের মান্য করে এসেছেন এবং দুনিয়ার অধিকাংশ লোকও যেহেতু তাদের অনুসরণ করছে, তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে যাব কেন?
শিরকের ভিত্তি হলো তাকদীরের প্রতি অবাস্তব ধারণা :
وَقَالُوْا لَوْ شَآءَ الرَّحْمٰنُ مَا عَبَدْنَاهُمْؕ مَا لَهُمْ بِذٰلِكَ مِنْ عِلْمٍ اِنْ هُمْ اِلَّا يَخْرُصُوْنَ
তারা বলে, দয়াময় আল্লাহ ইচ্ছা করলে আমরা এদের পূজা করতাম না। এ বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান নেই; তারা তো শুধু ধারণার উপর ভিত্তি করে কথা বলে। (সূরা যুখরুফ- ২০)
আল্লাহর কোন সন্তান নেই :
وَقَالُوا اتَّخَذَ اللهُ وَلَدًا سُبْحَانَهٗؕ بَلْ لَّهٗ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِؕ كُلٌّ لَّهٗ قَانِتُوْنَ
তারা বলে, আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন। অথচ তিনি তা থেকে পবিত্র, বরং আকাশমন্ডলী ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছু তাঁরই (মালিকানাধীন) এবং সবকিছু তাঁরই অনুগত। (সূরা বাক্বারা- ১১৬)
وَقَالُوا اتَّخَذَ الرَّحْمٰنُ وَلَدًا ‐ لَقَدْ جِئْتُمْ شَيْئًا اِدًّا ‐ تَكَادُ السَّمَاوَاتُ يَتَفَطَّرْنَ مِنْهُ وَتَنْشَقُّ الْاَرْضُ وَتَخِرُّ الْجِبَالُ هَدًّا ‐ اَنْ دَعَوْا لِلرَّحْمٰنِ وَلَدًا
তারা বলে, দয়াময় (আল্লাহ) সন্তান গ্রহণ করেছেন। তোমরা তো এক কঠিন বিষয়ের অবতারণা করেছ। (এটা এতই কঠিন যে, এ কারণে) আকাশমন্ডলী বিদীর্ণ হয়ে যাবে, পৃথিবী খন্ড-বিখন্ড হয়ে যাবে এবং পর্বতগুলো চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে পতিত হয়ে যাবে। যেহেতু তারা দয়াময়ের প্রতি সন্তান আরোপ করে। (সূরা মারইয়াম, ৮৮-৯১)
ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানরা আল্লাহর পুত্র সাব্যস্ত করে :
وَقَالَتِ الْيَهُوْدُ عُزَيْرُنِ ابْنُ اللهِ وَقَالَتِ النَّصَارَى الْمَسِيْحُ ابْنُ اللهِ
ইয়াহুদিরা বলে, উযাইর আল্লাহর পুত্র এবং খ্রিস্টানরা বলে, মাসীহ আল্লাহর পুত্র। (সূরা তাওবা- ৩০)
ব্যাখ্যা : পুত্র দু’রকম হতে পারে। ঔরসজাত আর পালিত। তারা যদি কাউকে ঔরসজাত অর্থে আল্লাহর পুত্র গণ্য করে তাহলে এর অর্থ হবে, তারা আল্লাহকে এমন এক জীবের মতো মনে করে, যে মরণশীল এবং যার অস্তিত্বের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার জন্য একজন স্ত্রী হতে হবে এবং তাদের দু’জনের সম্পর্কের মাধ্যমে তার সন্তান হবে। আর যদি তারা রূপক অর্থে কাউকে আল্লাহর পুত্র হিসেবে গণ্য করে তাহলে এর অর্থ হবে, তারা আল্লাহকে এমন এক মানুষের মতো মনে করে, যে নিঃসন্তান হওয়ার কারণে নিজের উত্তরাধিকারী করার উদ্দেশ্যে কোন একজনকে পালকপুত্র হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।
আল্লাহর সন্তান আছে- এটা তাদের মনগড়া দাবী :
اَلَاۤ اِنَّهُمْ مِّنْ اِفْكِهِمْ لَيَقُوْلُوْنَ ‐ وَلَدَ اللهُ وَاِنَّهُمْ لَكَاذِبُوْنَ
দেখো, তারা তো নিজেদের মনগড়া কথা অনুযায়ী বলে থাকে যে, আল্লাহ সন্তান জন্ম দিয়েছেন; নিশ্চয় তারা মিথ্যাবাদী। (সূরা সাফ্ফাত- ১৫১, ১৫২)
এর কোন দলীল নেই :
قَالُوا اتَّخَذَ اللهُ وَلَدًا سُبْحَانَهٗؕ هُوَ الْغَنِيُّؕ لَهٗ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَرْضِؕ اِنْ عِنْدَكُمْ مِّنْ سُلْطَانٍ ۢبِهٰذَاؕ اَتَقُوْلُوْنَ عَلَى اللهِ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ
তারা বলে, আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন; অথচ তিনি (এ থেকে) পবিত্র এবং তিনি অভাবমুক্ত। আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবকিছু তাঁরই (মালিকানাধীন); কিন্তু এ বিষয়ে তোমাদের নিকট কোন দলিল নেই। তোমরা কি আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কিছু বলছ, যে বিষয়ে তোমাদের কোন জ্ঞান নেই? (সূরা ইউনুস- ৬৮)
মুশরিকরা ফেরেশতাদেরকে আল্লাহর কন্যা সাব্যস্ত করে :
وَجَعَلُوا الْمَلَآئِكَةَ الَّذِيْنَ هُمْ عِبَادُ الرَّحْمٰنِ اِنَاثًاؕ اَشَهِدُوْا خَلْقَهُمْؕ سَتُكْتَبُ شَهَادَتُهُمْ وَيُسْاَلُوْنَ
তারা দয়াময় আল্লাহর বান্দা ফেরেশতাদেরকে কন্যা হিসেবে গণ্য করেছে। এদের সৃষ্টির সময় কি তারা উপস্থিত ছিল? তাদের সাক্ষী লিপিবদ্ধ করা হবে এবং তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে। (সূরা যুখরুফ- ১৯)
اَفَاَصْفَاكُمْ رَبُّكُمْ بِالْبَنِيْنَ وَاتَّخَذَ مِنَ الْمَلَآئِكَةِ اِنَاثًاؕ اِنَّكُمْ لَتَقُوْلُوْنَ قَوْلًا عَظِيْمًا
তোমাদের প্রতিপালক কি তোমাদেরকে পুত্রসন্তানের জন্য নির্বাচিত করেছেন এবং তিনি কি নিজে ফেরেশতাদেরকে কন্যা হিসেবে গ্রহণ করেছেন? তোমরা তো ভয়ানক কথা বলে থাক! (সূরা বনী ইসরাঈল- ৪০)
এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বণ্টন :
اَصْطَفَى الْبَنَاتِ عَلَى الْبَنِيْنَ ‐ مَا لَكُمْؕ كَيْفَ تَحْكُمُوْنَ
তিনি কি পুত্রসন্তানের পরিবর্তে কন্যাসন্তানকে নির্বাচন করেছেন? তোমাদের কী হলো? তোমরা এ কেমন সিদ্ধান্ত দিচ্ছ? (সূরা সাফ্ফাত- ১৫৩, ১৫৪)
اَلَكُمُ الذَّكَرُ وَلَهُ الْاُنْثٰى ‐ تِلْكَ اِذًا قِسْمَةٌ ضِيْزٰى
তবে কি তোমাদের জন্য পুত্র, আর তাঁর (আল্লাহর) জন্য কন্যাসন্তান (নির্ধারণ করেছ)? এ প্রকার বণ্টন তো অসঙ্গত। (সূরা নাজম- ২১, ২২)
তারা নিজেরাই কন্যাসন্তান পছন্দ করে না :
وَاِذَا بُشِّرَ اَحَدُهُمْ بِالْاُنْثٰى ظَلَّ وَجْهُهٗ مُسْوَدًّا وَّهُوَ كَظِيْمٌ ‐ يَتَوَارٰى مِنَ الْقَوْمِ مِنْ سُوْٓءِ مَا بُشِّرَ بِهٖؕ اَيُمْسِكُهٗ عَلٰى هُوْنٍ اَمْ يَدُسُّهٗ فِى التُّرَابِؕ اَ لَا سَآءَ مَا يَحْكُمُوْنَ
যখন তাদের কাউকে কন্যাসন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয়, তখন তার মুখমন্ডল কালো হয়ে যায় এবং সে অসহনীয় আক্ষেপে ক্লিষ্ট হয়। তাদেরকে যে বিষয়ে সুসংবাদ দেয়া হয়, তার কারণে মনের কষ্টে সে নিজ সম্প্রদায় হতে আত্মগোপন করে। সে চিন্তা করে যে, হীনতা সত্ত্বেও সে তাকে রেখে দেবে, নাকি মাটিতে পুঁতে দেবে। সাবধান! তারা যা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তা কতই না নিকৃষ্ট। (সূরা নাহল- ৫৮, ৫৯)
সন্তান গ্রহণ করা আল্লাহর কাজ নয় :
مَا كَانَ لِلّٰهِ اَنْ يَّتَّخِذَ مِنْ وَّلَدٍ سُبْحَانَهٗؕ اِذَا قَضٰۤى اَمْرًا فَاِنَّمَا يَقُوْلُ لَهٗ كُنْ فَيَكُوْنُ
সন্তান গ্রহণ করা আল্লাহর কাজ নয়, তিনি (এর থেকে) পবিত্র ও মহিমাময়। তিনি যখনই কোনকিছু স্থির করেন তখন বলেন, হও; ফলে সেটা (সাথে সাথেই) হয়ে যায়। (সূরা মারইয়াম- ৩৫)
وَمَا يَنْۢبَغِيْ لِلرَّحْمٰنِ اَنْ يَّتَّخِذَ وَلَدًا
আর সন্তান গ্রহণ করা দয়াময়ের জন্য শোভনীয় নয়! (সূরা মারইয়াম- ৯২)
وَقَالُوا اتَّخَذَ اللهُ وَلَدًا سُبْحَانَهٗؕ بَلْ لَّهٗ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِؕ كُلٌّ لَّهٗ قَانِتُوْنَ
তারা বলে, আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন। অথচ তিনি তা থেকে পবিত্র, বরং আকাশমন্ডলী ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছু তাঁরই (মালিকানাধীন) এবং সবকিছু তাঁরই অনুগত। (সূরা বাক্বারা- ১১৬)
وَقَالُوا اتَّخَذَ الرَّحْمٰنُ وَلَدًا ‐ لَقَدْ جِئْتُمْ شَيْئًا اِدًّا ‐ تَكَادُ السَّمَاوَاتُ يَتَفَطَّرْنَ مِنْهُ وَتَنْشَقُّ الْاَرْضُ وَتَخِرُّ الْجِبَالُ هَدًّا ‐ اَنْ دَعَوْا لِلرَّحْمٰنِ وَلَدًا
তারা বলে, দয়াময় (আল্লাহ) সন্তান গ্রহণ করেছেন। তোমরা তো এক কঠিন বিষয়ের অবতারণা করেছ। (এটা এতই কঠিন যে, এ কারণে) আকাশমন্ডলী বিদীর্ণ হয়ে যাবে, পৃথিবী খন্ড-বিখন্ড হয়ে যাবে এবং পর্বতগুলো চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে পতিত হয়ে যাবে। যেহেতু তারা দয়াময়ের প্রতি সন্তান আরোপ করে। (সূরা মারইয়াম, ৮৮-৯১)
ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানরা আল্লাহর পুত্র সাব্যস্ত করে :
وَقَالَتِ الْيَهُوْدُ عُزَيْرُنِ ابْنُ اللهِ وَقَالَتِ النَّصَارَى الْمَسِيْحُ ابْنُ اللهِ
ইয়াহুদিরা বলে, উযাইর আল্লাহর পুত্র এবং খ্রিস্টানরা বলে, মাসীহ আল্লাহর পুত্র। (সূরা তাওবা- ৩০)
ব্যাখ্যা : পুত্র দু’রকম হতে পারে। ঔরসজাত আর পালিত। তারা যদি কাউকে ঔরসজাত অর্থে আল্লাহর পুত্র গণ্য করে তাহলে এর অর্থ হবে, তারা আল্লাহকে এমন এক জীবের মতো মনে করে, যে মরণশীল এবং যার অস্তিত্বের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার জন্য একজন স্ত্রী হতে হবে এবং তাদের দু’জনের সম্পর্কের মাধ্যমে তার সন্তান হবে। আর যদি তারা রূপক অর্থে কাউকে আল্লাহর পুত্র হিসেবে গণ্য করে তাহলে এর অর্থ হবে, তারা আল্লাহকে এমন এক মানুষের মতো মনে করে, যে নিঃসন্তান হওয়ার কারণে নিজের উত্তরাধিকারী করার উদ্দেশ্যে কোন একজনকে পালকপুত্র হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।
আল্লাহর সন্তান আছে- এটা তাদের মনগড়া দাবী :
اَلَاۤ اِنَّهُمْ مِّنْ اِفْكِهِمْ لَيَقُوْلُوْنَ ‐ وَلَدَ اللهُ وَاِنَّهُمْ لَكَاذِبُوْنَ
দেখো, তারা তো নিজেদের মনগড়া কথা অনুযায়ী বলে থাকে যে, আল্লাহ সন্তান জন্ম দিয়েছেন; নিশ্চয় তারা মিথ্যাবাদী। (সূরা সাফ্ফাত- ১৫১, ১৫২)
এর কোন দলীল নেই :
قَالُوا اتَّخَذَ اللهُ وَلَدًا سُبْحَانَهٗؕ هُوَ الْغَنِيُّؕ لَهٗ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَرْضِؕ اِنْ عِنْدَكُمْ مِّنْ سُلْطَانٍ ۢبِهٰذَاؕ اَتَقُوْلُوْنَ عَلَى اللهِ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ
তারা বলে, আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন; অথচ তিনি (এ থেকে) পবিত্র এবং তিনি অভাবমুক্ত। আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবকিছু তাঁরই (মালিকানাধীন); কিন্তু এ বিষয়ে তোমাদের নিকট কোন দলিল নেই। তোমরা কি আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কিছু বলছ, যে বিষয়ে তোমাদের কোন জ্ঞান নেই? (সূরা ইউনুস- ৬৮)
মুশরিকরা ফেরেশতাদেরকে আল্লাহর কন্যা সাব্যস্ত করে :
وَجَعَلُوا الْمَلَآئِكَةَ الَّذِيْنَ هُمْ عِبَادُ الرَّحْمٰنِ اِنَاثًاؕ اَشَهِدُوْا خَلْقَهُمْؕ سَتُكْتَبُ شَهَادَتُهُمْ وَيُسْاَلُوْنَ
তারা দয়াময় আল্লাহর বান্দা ফেরেশতাদেরকে কন্যা হিসেবে গণ্য করেছে। এদের সৃষ্টির সময় কি তারা উপস্থিত ছিল? তাদের সাক্ষী লিপিবদ্ধ করা হবে এবং তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে। (সূরা যুখরুফ- ১৯)
اَفَاَصْفَاكُمْ رَبُّكُمْ بِالْبَنِيْنَ وَاتَّخَذَ مِنَ الْمَلَآئِكَةِ اِنَاثًاؕ اِنَّكُمْ لَتَقُوْلُوْنَ قَوْلًا عَظِيْمًا
তোমাদের প্রতিপালক কি তোমাদেরকে পুত্রসন্তানের জন্য নির্বাচিত করেছেন এবং তিনি কি নিজে ফেরেশতাদেরকে কন্যা হিসেবে গ্রহণ করেছেন? তোমরা তো ভয়ানক কথা বলে থাক! (সূরা বনী ইসরাঈল- ৪০)
এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বণ্টন :
اَصْطَفَى الْبَنَاتِ عَلَى الْبَنِيْنَ ‐ مَا لَكُمْؕ كَيْفَ تَحْكُمُوْنَ
তিনি কি পুত্রসন্তানের পরিবর্তে কন্যাসন্তানকে নির্বাচন করেছেন? তোমাদের কী হলো? তোমরা এ কেমন সিদ্ধান্ত দিচ্ছ? (সূরা সাফ্ফাত- ১৫৩, ১৫৪)
اَلَكُمُ الذَّكَرُ وَلَهُ الْاُنْثٰى ‐ تِلْكَ اِذًا قِسْمَةٌ ضِيْزٰى
তবে কি তোমাদের জন্য পুত্র, আর তাঁর (আল্লাহর) জন্য কন্যাসন্তান (নির্ধারণ করেছ)? এ প্রকার বণ্টন তো অসঙ্গত। (সূরা নাজম- ২১, ২২)
তারা নিজেরাই কন্যাসন্তান পছন্দ করে না :
وَاِذَا بُشِّرَ اَحَدُهُمْ بِالْاُنْثٰى ظَلَّ وَجْهُهٗ مُسْوَدًّا وَّهُوَ كَظِيْمٌ ‐ يَتَوَارٰى مِنَ الْقَوْمِ مِنْ سُوْٓءِ مَا بُشِّرَ بِهٖؕ اَيُمْسِكُهٗ عَلٰى هُوْنٍ اَمْ يَدُسُّهٗ فِى التُّرَابِؕ اَ لَا سَآءَ مَا يَحْكُمُوْنَ
যখন তাদের কাউকে কন্যাসন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয়, তখন তার মুখমন্ডল কালো হয়ে যায় এবং সে অসহনীয় আক্ষেপে ক্লিষ্ট হয়। তাদেরকে যে বিষয়ে সুসংবাদ দেয়া হয়, তার কারণে মনের কষ্টে সে নিজ সম্প্রদায় হতে আত্মগোপন করে। সে চিন্তা করে যে, হীনতা সত্ত্বেও সে তাকে রেখে দেবে, নাকি মাটিতে পুঁতে দেবে। সাবধান! তারা যা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তা কতই না নিকৃষ্ট। (সূরা নাহল- ৫৮, ৫৯)
সন্তান গ্রহণ করা আল্লাহর কাজ নয় :
مَا كَانَ لِلّٰهِ اَنْ يَّتَّخِذَ مِنْ وَّلَدٍ سُبْحَانَهٗؕ اِذَا قَضٰۤى اَمْرًا فَاِنَّمَا يَقُوْلُ لَهٗ كُنْ فَيَكُوْنُ
সন্তান গ্রহণ করা আল্লাহর কাজ নয়, তিনি (এর থেকে) পবিত্র ও মহিমাময়। তিনি যখনই কোনকিছু স্থির করেন তখন বলেন, হও; ফলে সেটা (সাথে সাথেই) হয়ে যায়। (সূরা মারইয়াম- ৩৫)
وَمَا يَنْۢبَغِيْ لِلرَّحْمٰنِ اَنْ يَّتَّخِذَ وَلَدًا
আর সন্তান গ্রহণ করা দয়াময়ের জন্য শোভনীয় নয়! (সূরা মারইয়াম- ৯২)
কেউ আল্লাহর সৃষ্টবস্তু অথবা মূর্তির ইবাদাত করে :
وَاتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِهٖۤ اٰلِهَةً لَّا يَخْلُقُوْنَ شَيْئًا وَّهُمْ يُخْلَقُوْنَ وَلَا يَمْلِكُوْنَ لِاَنْفُسِهِمْ ضَرًّا وَّلَا نَفْعًا وَّلَا يَمْلِكُوْنَ مَوْتًا وَّلَا حَيَاةً وَّلَا نُشُوْرًا
তারা তাঁর পরিবর্তে এমন কিছুকে ইলাহ্ হিসেবে গ্রহণ করেছে, যারা কোনকিছুই সৃষ্টি করতে পারে না, বরং তাদেরকেই সৃষ্টি করা হয়েছে। তারা নিজেদেরই কোন অপকার কিংবা উপকারের ক্ষমতা রাখে না এবং মৃত্যু, জীবন ও উত্থানের উপরও কোন ক্ষমতা রাখে না। (সূরা ফুরক্বান- ৩)
ব্যাখ্যা : এখানে মা‘বুদ বলতে দু’ধরনের মনগড়া উপাস্যকে বুঝানো হয়েছে-
(১) আল্লাহর অনেক সৃষ্টি, যাদেরকে কিছু মানুষ মা‘বুদ বানিয়ে নিয়েছে। যেমন- ফেরেশতা, জিন, নবী, ওলী-আউলিয়া, সূর্য, চন্দ্র, গ্রহ, নক্ষত্র, নদ-নদী, গাছপালা ও পশুপাখী ইত্যাদি।
(২) মানুষ নিজেরাই কিছু জিনিস থেকে একটি অবয়ব তৈরি করে তাদেরকে মা‘বুদ বানিয়ে নিয়েছে। যেমন- পাথর, কাঠ ও মাটির তৈরি মূর্তি ইত্যাদি।
কেউ মানুষের তৈরি আইন মেনে শিরক করে :
وَاِنَّ الشَّيَاطِيْنَ لَيُوْحُوْنَ اِلٰۤى اَوْلِيَآئِهِمْ لِيُجَادِلُوْكُمْۚ وَاِنْ اَطَعْتُمُوْهُمْ اِنَّكُمْ لَمُشْرِكُوْنَ
নিশ্চয় শয়তানরা তাদের বন্ধুদেরকে তোমাদের সাথে বিবাদ করার জন্য প্ররোচনা দেয়। যদি তোমরা তাদের কথামতো চল, তবে অবশ্যই তোমরা মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (সূরা আন‘আম- ১২১)
ব্যাখ্যা : এখানে জিন ও মানবজাতির শয়তানদের কথা বলা হয়েছে, যাদেরকে দুনিয়ায় আল্লাহর সাথে শরীক করা হয়েছিল, যাদের কথার মুকাবিলায় আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কথা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল এবং যাদের উপর ভরসা করে সরলসঠিক পথ পরিত্যাগ করে ভুলপথ অবলম্বন করা হয়েছিল। এ ধরনের লোকদেরকে কেউ ইলাহ্ বলুক বা না বলুক- যখন তাদের আনুগত্য এমনভাবে করা হয়েছে যেমন আল্লাহর আনুগত্য হওয়া উচিত, তখন অবশ্যই তাদেরকে আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্বে শরীক করা হয়েছে। একদিকে আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্বের স্বীকৃতি দেয়া এবং অন্যদিকে আল্লাহ বিমুখ লোকদের বিধান অনুযায়ী চলা এবং তাদের নির্ধারিত পদ্ধতির অনুসরণ করাই হচ্ছে শিরক। আর জীবনের সমগ্র বিভাগে আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ আনুগত্য কায়েম করার নামই তাওহীদ। আল্লাহর সাথে অন্যদেরকে যদি আকীদাগতভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ আনুগত্যলাভের অধিকারী বলে মনে করা হয়, তাহলে তা হবে আকীদাগত শিরক। আর যদি এমন লোকদের আনুগত্য করা হয়, যারা আল্লাহর বিধানের পরোয়া না করে নিজেরাই বিধি-নিষেধের মালিক হয়ে বসে, তাহলে তা হবে কর্মগত শিরক।
কেউ মাজারে গিয়ে শিরকে লিপ্ত হয় :
وَالَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ لَا يَخْلُقُوْنَ شَيْئًا وَّهُمْ يُخْلَقُوْنَ ‐ اَمْوَاتٌ غَيْرُ اَحْيَآءٍۚ وَمَا يَشْعُرُوْنَ اَيَّانَ يُبْعَثُوْنَ
তারা আল্লাহ ব্যতীত অপর যাদেরকে আহবান করে, তারা কিছুই সৃষ্টি করে না; অথচ তাদেরকেই সৃষ্টি করা হয়েছে। সেগুলো তো কতিপয় মৃত বস্তু মাত্র, তারা জীবিত নয়। অথচ তাদের এতটুকুও বোধশক্তি নেই যে, তাদেরকে আবার কখন উঠিয়ে আনা হবে। (সূরা নাহল- ২০, ২১)
ব্যাখ্যা : ‘তারা জানে না যে, কবে তাদেরকে পুনরুজ্জীবিত করা হবে’- এ বাক্যের মাধ্যমে যেসব বানোয়াট উপাস্যের প্রতিবাদ করা হচ্ছে তারা ফেরেশতা, জিন, শয়তান বা কাঠ-পাথরের মূর্তি নয়, বরং তারা হচ্ছে কবরবাসী। কারণ ফেরেশতা ও শয়তানরা তো জীবিত আছে, তাদের প্রতি মৃত শব্দ প্রযোজ্য হতে পারে না। আর কাঠ-পাথরের মূর্তির ক্ষেত্রে মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের কোন প্রশ্নই ওঠে না। তাই এখানে মানুষ আল্লাহকে বাদ দিয়ে যেসব কবরস্থ নবী, পীর, আউলিয়া, শহীদ ও সৎ ব্যক্তিবর্গকে প্রতিকারকারী, আশ্রয়দাতা, ধনদাতা এবং আরো কত কিছু মনে করে নিজেদের প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্য ডাকে, তাদেরকে বুঝানো হয়েছে। যারা এসব করে তারা স্পষ্ট শিরকের মধ্যে লিপ্ত রয়েছে। মৃত লোকেরাই ছিল আরব মুশরিকদের বহু লোকের উপাস্য। পরবর্তী প্রজন্ম পূর্ববর্তী মৃত লোকদেরকে নিজেদের উপাস্য বানিয়ে নিয়েছিল। ওয়াদ, সুওয়া, ইয়াগূস, ইয়াউক ও নাসর- এসবই ছিল পূর্ব যুগের সৎ লোকদের নাম। তারা মৃত্যুবরণ করার পর শয়তানের প্ররোচনায় পরবর্তী যুগের লোকেরা তাদের মূর্তি নির্মাণ করেছিল। এরপর ধীরে ধীরে কালের আবর্তনে লোকেরা তাদেরকেই রিযিকদাতা, আশ্রয়দাতা, সুপারিশকারী এমনকি উপাস্য বানিয়ে নিয়েছিল। আয়েশা (রাঃ) এর বর্ণনা অনুযায়ী, ইসাফ ও নায়েলাহ উভয়ই মানুষ ছিল। এ ধরনের বর্ণনা লাত, মানাত ও উযযা সম্পর্কেও পাওয়া যায়।
মাজারওয়ালারা কারো আহবানে সাড়া দিতে পারে না :
اِنْ تَدْعُوْهُمْ لَا يَسْمَعُوْا دُعَآءَكُمْۚ وَلَوْ سَمِعُوْا مَا اسْتَجَابُوْا لَكُمْؕ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكْفُرُوْنَ بِشِرْكِكُمْؕ وَلَا يُنَبِّئُكَ مِثْلُ خَبِيْرٍ
যদি তোমরা তাদেরকে আহবান কর, তবে তারা তোমাদের আহবানে সাড়া দেবে না। কিয়ামতের দিন তারা তোমাদের শিরক করাকে অস্বীকার করবে। সর্বজ্ঞ আল্লাহর ন্যায় কেউই তোমাকে সঠিক সংবাদ দিতে পারবে না। (সূরা ফাতির- ১৪)
وَمَنْ اَضَلُّ مِمَّنْ يَّدْعُوْا مِنْ دُوْنِ اللهِ مَنْ لَّا يَسْتَجِيْبُ لَهٗۤ اِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَهُمْ عَنْ دُعَآئِهِمْ غَافِلُوْنَ
ঐ লোকের চেয়ে বেশি গোমরাহ আর কে হতে পারে, যে আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন কাউকে ডাকে, যে কিয়ামতের দিন পর্যন্তও কোন সাড়া দেবে না। বরং তাদেরকে যে ডাকা হয়েছে, সে কথা তারা জানেই না। (সূরা আহকাফ- ৫)
কিয়ামতের দিন তারা মানুষের ডাককে অস্বীকার করবে :
وَيَوْمَ نَحْشُرُهُمْ جَمِيْعًا ثُمَّ نَقُوْلُ لِلَّذِيْنَ اَشْرَكُوْا مَكَانَكُمْ اَنْتُمْ وَشُرَكَآؤُكُمْۚ فَزَيَّلْنَا بَيْنَهُمْ وَقَالَ شُرَكَآؤُهُمْ مَّا كُنْتُمْ اِيَّانَا تَعْبُدُوْنَ ‐ فَكَفٰى بِاللهِ شَهِيْدًا ۢبَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ اِنْ كُنَّا عَنْ عِبَادَتِكُمْ لَغَافِلِيْنَ
সেদিন আমি তাদের সকলকে একত্র করে মুশরিকদেরকে বলব, তোমরা এবং তোমরা যাদেরকে শরীক করেছিলে তারা স্ব স্ব স্থানে অবস্থান করো। অতঃপর আমি তাদেরকে পরস্পর হতে পৃথক করে দেব, তখন তারা যাদেরকে শরীক করেছিল তারা বলবে, তোমরা তো আমাদের ইবাদাত করতে না। তোমরা যে আমাদের ইবাদাত করতে এবং আমরা যে এ বিষয়ে গাফিল ছিলাম- এর সাক্ষ্য হিসেবে আমাদের ও তোমাদের মধ্যে আল্লাহই যথেষ্ট। (সূরা ইউনুস- ২৮, ২৯)
তারা নিজেরাই আল্লাহর মুখাপেক্ষী :
قُلِ ادْعُوا الَّذِيْنَ زَعَمْتُمْ مِّنْ دُوْنِهٖ فَلَا يَمْلِكُوْنَ كَشْفَ الضُّرِّ عَنْكُمْ وَلَا تَحْوِيْلًا ‐ اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ يَبْتَغُوْنَ اِلٰى رَبِّهِمُ الْوَسِيْلَةَ اَيُّهُمْ اَقْرَبُ وَيَرْجُوْنَ رَحْمَتَهٗ وَيَخَافُوْنَ عَذَابَهٗؕ اِنَّ عَذَابَ رَبِّكَ كَانَ مَحْذُوْرًا
বলো, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে ইলাহ্ মনে কর তাদেরকে আহবান করো। তবে দেখতে পাবে যে, তোমাদের দুঃখ-দৈন্য দূর করার অথবা একে পরিবর্তন করার কোন শক্তি তাদের নেই। তারা যাদেরকে আহবান করে তারাই তো এভাবে তাদের প্রতিপালকের নৈকট্য লাভের উপায় সন্ধান করে যে, তাদের মধ্যে কে কত নিকটতর হতে পারে। তারা তাঁর দয়া প্রত্যাশা করে এবং তাঁর শাস্তিকে ভয় করে। নিশ্চয় তোমার প্রতিপালকের শাস্তি খুবই ভয়াবহ। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৫৬, ৫৭)
وَاتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِهٖۤ اٰلِهَةً لَّا يَخْلُقُوْنَ شَيْئًا وَّهُمْ يُخْلَقُوْنَ وَلَا يَمْلِكُوْنَ لِاَنْفُسِهِمْ ضَرًّا وَّلَا نَفْعًا وَّلَا يَمْلِكُوْنَ مَوْتًا وَّلَا حَيَاةً وَّلَا نُشُوْرًا
তারা তাঁর পরিবর্তে এমন কিছুকে ইলাহ্ হিসেবে গ্রহণ করেছে, যারা কোনকিছুই সৃষ্টি করতে পারে না, বরং তাদেরকেই সৃষ্টি করা হয়েছে। তারা নিজেদেরই কোন অপকার কিংবা উপকারের ক্ষমতা রাখে না এবং মৃত্যু, জীবন ও উত্থানের উপরও কোন ক্ষমতা রাখে না। (সূরা ফুরক্বান- ৩)
ব্যাখ্যা : এখানে মা‘বুদ বলতে দু’ধরনের মনগড়া উপাস্যকে বুঝানো হয়েছে-
(১) আল্লাহর অনেক সৃষ্টি, যাদেরকে কিছু মানুষ মা‘বুদ বানিয়ে নিয়েছে। যেমন- ফেরেশতা, জিন, নবী, ওলী-আউলিয়া, সূর্য, চন্দ্র, গ্রহ, নক্ষত্র, নদ-নদী, গাছপালা ও পশুপাখী ইত্যাদি।
(২) মানুষ নিজেরাই কিছু জিনিস থেকে একটি অবয়ব তৈরি করে তাদেরকে মা‘বুদ বানিয়ে নিয়েছে। যেমন- পাথর, কাঠ ও মাটির তৈরি মূর্তি ইত্যাদি।
কেউ মানুষের তৈরি আইন মেনে শিরক করে :
وَاِنَّ الشَّيَاطِيْنَ لَيُوْحُوْنَ اِلٰۤى اَوْلِيَآئِهِمْ لِيُجَادِلُوْكُمْۚ وَاِنْ اَطَعْتُمُوْهُمْ اِنَّكُمْ لَمُشْرِكُوْنَ
নিশ্চয় শয়তানরা তাদের বন্ধুদেরকে তোমাদের সাথে বিবাদ করার জন্য প্ররোচনা দেয়। যদি তোমরা তাদের কথামতো চল, তবে অবশ্যই তোমরা মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (সূরা আন‘আম- ১২১)
ব্যাখ্যা : এখানে জিন ও মানবজাতির শয়তানদের কথা বলা হয়েছে, যাদেরকে দুনিয়ায় আল্লাহর সাথে শরীক করা হয়েছিল, যাদের কথার মুকাবিলায় আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কথা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল এবং যাদের উপর ভরসা করে সরলসঠিক পথ পরিত্যাগ করে ভুলপথ অবলম্বন করা হয়েছিল। এ ধরনের লোকদেরকে কেউ ইলাহ্ বলুক বা না বলুক- যখন তাদের আনুগত্য এমনভাবে করা হয়েছে যেমন আল্লাহর আনুগত্য হওয়া উচিত, তখন অবশ্যই তাদেরকে আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্বে শরীক করা হয়েছে। একদিকে আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্বের স্বীকৃতি দেয়া এবং অন্যদিকে আল্লাহ বিমুখ লোকদের বিধান অনুযায়ী চলা এবং তাদের নির্ধারিত পদ্ধতির অনুসরণ করাই হচ্ছে শিরক। আর জীবনের সমগ্র বিভাগে আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ আনুগত্য কায়েম করার নামই তাওহীদ। আল্লাহর সাথে অন্যদেরকে যদি আকীদাগতভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ আনুগত্যলাভের অধিকারী বলে মনে করা হয়, তাহলে তা হবে আকীদাগত শিরক। আর যদি এমন লোকদের আনুগত্য করা হয়, যারা আল্লাহর বিধানের পরোয়া না করে নিজেরাই বিধি-নিষেধের মালিক হয়ে বসে, তাহলে তা হবে কর্মগত শিরক।
কেউ মাজারে গিয়ে শিরকে লিপ্ত হয় :
وَالَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ لَا يَخْلُقُوْنَ شَيْئًا وَّهُمْ يُخْلَقُوْنَ ‐ اَمْوَاتٌ غَيْرُ اَحْيَآءٍۚ وَمَا يَشْعُرُوْنَ اَيَّانَ يُبْعَثُوْنَ
তারা আল্লাহ ব্যতীত অপর যাদেরকে আহবান করে, তারা কিছুই সৃষ্টি করে না; অথচ তাদেরকেই সৃষ্টি করা হয়েছে। সেগুলো তো কতিপয় মৃত বস্তু মাত্র, তারা জীবিত নয়। অথচ তাদের এতটুকুও বোধশক্তি নেই যে, তাদেরকে আবার কখন উঠিয়ে আনা হবে। (সূরা নাহল- ২০, ২১)
ব্যাখ্যা : ‘তারা জানে না যে, কবে তাদেরকে পুনরুজ্জীবিত করা হবে’- এ বাক্যের মাধ্যমে যেসব বানোয়াট উপাস্যের প্রতিবাদ করা হচ্ছে তারা ফেরেশতা, জিন, শয়তান বা কাঠ-পাথরের মূর্তি নয়, বরং তারা হচ্ছে কবরবাসী। কারণ ফেরেশতা ও শয়তানরা তো জীবিত আছে, তাদের প্রতি মৃত শব্দ প্রযোজ্য হতে পারে না। আর কাঠ-পাথরের মূর্তির ক্ষেত্রে মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের কোন প্রশ্নই ওঠে না। তাই এখানে মানুষ আল্লাহকে বাদ দিয়ে যেসব কবরস্থ নবী, পীর, আউলিয়া, শহীদ ও সৎ ব্যক্তিবর্গকে প্রতিকারকারী, আশ্রয়দাতা, ধনদাতা এবং আরো কত কিছু মনে করে নিজেদের প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্য ডাকে, তাদেরকে বুঝানো হয়েছে। যারা এসব করে তারা স্পষ্ট শিরকের মধ্যে লিপ্ত রয়েছে। মৃত লোকেরাই ছিল আরব মুশরিকদের বহু লোকের উপাস্য। পরবর্তী প্রজন্ম পূর্ববর্তী মৃত লোকদেরকে নিজেদের উপাস্য বানিয়ে নিয়েছিল। ওয়াদ, সুওয়া, ইয়াগূস, ইয়াউক ও নাসর- এসবই ছিল পূর্ব যুগের সৎ লোকদের নাম। তারা মৃত্যুবরণ করার পর শয়তানের প্ররোচনায় পরবর্তী যুগের লোকেরা তাদের মূর্তি নির্মাণ করেছিল। এরপর ধীরে ধীরে কালের আবর্তনে লোকেরা তাদেরকেই রিযিকদাতা, আশ্রয়দাতা, সুপারিশকারী এমনকি উপাস্য বানিয়ে নিয়েছিল। আয়েশা (রাঃ) এর বর্ণনা অনুযায়ী, ইসাফ ও নায়েলাহ উভয়ই মানুষ ছিল। এ ধরনের বর্ণনা লাত, মানাত ও উযযা সম্পর্কেও পাওয়া যায়।
মাজারওয়ালারা কারো আহবানে সাড়া দিতে পারে না :
اِنْ تَدْعُوْهُمْ لَا يَسْمَعُوْا دُعَآءَكُمْۚ وَلَوْ سَمِعُوْا مَا اسْتَجَابُوْا لَكُمْؕ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكْفُرُوْنَ بِشِرْكِكُمْؕ وَلَا يُنَبِّئُكَ مِثْلُ خَبِيْرٍ
যদি তোমরা তাদেরকে আহবান কর, তবে তারা তোমাদের আহবানে সাড়া দেবে না। কিয়ামতের দিন তারা তোমাদের শিরক করাকে অস্বীকার করবে। সর্বজ্ঞ আল্লাহর ন্যায় কেউই তোমাকে সঠিক সংবাদ দিতে পারবে না। (সূরা ফাতির- ১৪)
وَمَنْ اَضَلُّ مِمَّنْ يَّدْعُوْا مِنْ دُوْنِ اللهِ مَنْ لَّا يَسْتَجِيْبُ لَهٗۤ اِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَهُمْ عَنْ دُعَآئِهِمْ غَافِلُوْنَ
ঐ লোকের চেয়ে বেশি গোমরাহ আর কে হতে পারে, যে আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন কাউকে ডাকে, যে কিয়ামতের দিন পর্যন্তও কোন সাড়া দেবে না। বরং তাদেরকে যে ডাকা হয়েছে, সে কথা তারা জানেই না। (সূরা আহকাফ- ৫)
কিয়ামতের দিন তারা মানুষের ডাককে অস্বীকার করবে :
وَيَوْمَ نَحْشُرُهُمْ جَمِيْعًا ثُمَّ نَقُوْلُ لِلَّذِيْنَ اَشْرَكُوْا مَكَانَكُمْ اَنْتُمْ وَشُرَكَآؤُكُمْۚ فَزَيَّلْنَا بَيْنَهُمْ وَقَالَ شُرَكَآؤُهُمْ مَّا كُنْتُمْ اِيَّانَا تَعْبُدُوْنَ ‐ فَكَفٰى بِاللهِ شَهِيْدًا ۢبَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ اِنْ كُنَّا عَنْ عِبَادَتِكُمْ لَغَافِلِيْنَ
সেদিন আমি তাদের সকলকে একত্র করে মুশরিকদেরকে বলব, তোমরা এবং তোমরা যাদেরকে শরীক করেছিলে তারা স্ব স্ব স্থানে অবস্থান করো। অতঃপর আমি তাদেরকে পরস্পর হতে পৃথক করে দেব, তখন তারা যাদেরকে শরীক করেছিল তারা বলবে, তোমরা তো আমাদের ইবাদাত করতে না। তোমরা যে আমাদের ইবাদাত করতে এবং আমরা যে এ বিষয়ে গাফিল ছিলাম- এর সাক্ষ্য হিসেবে আমাদের ও তোমাদের মধ্যে আল্লাহই যথেষ্ট। (সূরা ইউনুস- ২৮, ২৯)
তারা নিজেরাই আল্লাহর মুখাপেক্ষী :
قُلِ ادْعُوا الَّذِيْنَ زَعَمْتُمْ مِّنْ دُوْنِهٖ فَلَا يَمْلِكُوْنَ كَشْفَ الضُّرِّ عَنْكُمْ وَلَا تَحْوِيْلًا ‐ اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ يَبْتَغُوْنَ اِلٰى رَبِّهِمُ الْوَسِيْلَةَ اَيُّهُمْ اَقْرَبُ وَيَرْجُوْنَ رَحْمَتَهٗ وَيَخَافُوْنَ عَذَابَهٗؕ اِنَّ عَذَابَ رَبِّكَ كَانَ مَحْذُوْرًا
বলো, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে ইলাহ্ মনে কর তাদেরকে আহবান করো। তবে দেখতে পাবে যে, তোমাদের দুঃখ-দৈন্য দূর করার অথবা একে পরিবর্তন করার কোন শক্তি তাদের নেই। তারা যাদেরকে আহবান করে তারাই তো এভাবে তাদের প্রতিপালকের নৈকট্য লাভের উপায় সন্ধান করে যে, তাদের মধ্যে কে কত নিকটতর হতে পারে। তারা তাঁর দয়া প্রত্যাশা করে এবং তাঁর শাস্তিকে ভয় করে। নিশ্চয় তোমার প্রতিপালকের শাস্তি খুবই ভয়াবহ। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৫৬, ৫৭)
মানুষের ধারণা শরীকরা সহায়ক হবে :
وَاتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِ اللهِ اٰلِهَةً لِّيَكُوْنُوْا لَهُمْ عِزًّا ‐ كَلَّاؕ سَيَكْفُرُوْنَ بِعِبَادَتِهِمْ وَيَكُوْنُوْنَ عَلَيْهِمْ ضِدًّا
তারা আল্লাহ ব্যতীত অন্য ইলাহ্ গ্রহণ করে এজন্য যে, যাতে করে তারা তাদের সহায় হয়। কখনই নয়; অচিরেই তারা তাদের ইবাদাতকে অস্বীকার করবে এবং তাদের বিরোধী হয়ে যাবে। (সূরা মারইয়াম- ৮১, ৮২)
ব্যাখ্যা : عِزًّا (ইয্যান) শব্দের অর্থ হলো, সম্মান বা মর্যাদা। আরবদের ভাষায় ইজ্জত বলতে কোন ব্যক্তির এতবেশি শক্তিশালী ও ক্ষমতাধর হয়ে যাওয়াকে বুঝানো হয়, যার ফলে তার গায়ে কেউ হাত দেয়ার ক্ষমতা রাখে না। অর্থাৎ ঐ ব্যক্তি সম্মান ও মর্যাদার সর্বোচ্চ স্তরে অধিষ্ঠিত। সুতরাং এক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির জন্য ইজ্জতের কারণে পরিণত হওয়ার অর্থ হচ্ছে, প্রথম ব্যক্তি দ্বিতীয় ব্যক্তির এমন সহায়ক হওয়া, যার ফলে তার কোন বিরোধী তার মুকাবিলা করতে সাহস পায় না। আর মুশরিকরা তাদের শরীকদের ব্যাপারে এরকমই ধারণা পোষণ করে।
وَاتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِ اللهِ اٰلِهَةً لَّعَلَّهُمْ يُنْصَرُوْنَ
তারা আল্লাহ ব্যতীত অনেক ইলাহ্ গ্রহণ করেছে এ আশায় যে, হয়তো তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে। (সূরা ইয়াসীন- ৭৪)
শরীকরা তাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেবে :
وَالَّذِيْنَ اتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِهٖۤ اَوْلِيَآءَ مَا نَعْبُدُهُمْ اِلَّا لِيُقَرِّبُوْنَاۤ اِلَى اللهِ زُلْفٰى
যারা আল্লাহকে ছেড়ে অপরকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করেছে (তারা বলে) আমরা তাদের ইবাদাত এজন্য করি যাতে তারা আমাদেরকে আল্লাহর নৈকট্যে পৌঁছে দেয়। (সূরা যুমার- ৩)
ব্যাখ্যা : দুনিয়ার সকল কাফির ও মুশরিকরাও এ কথাই বলে থাকে যে, আমরা স্রষ্টা মনে করে অন্যান্য সত্তার ইবাদাত করি না। আমরা তো আল্লাহকেই প্রকৃত স্রষ্টা বলে মানি এবং তাঁকেই সত্যিকার উপাস্য মনে করি। যেহেতু তাঁর দরবার অনেক উঁচু, আমরা সেখানে কী করে পৌঁছতে পারি? তাই আমরা এসব দেবতাদেরকে মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করি, যাতে তারা আমাদের প্রার্থনা আল্লাহর কাছে পৌঁছে দেয়।
শরীকরা তাদের জন্য শাফা‘আত করবে :
وَيَقُوْلُوْنَ هٰۤؤُلَآءِ شُفَعَآؤُنَا عِنْدَ اللهِؕ قُلْ اَتُنَبِّئُوْنَ اللهَ بِمَا لَا يَعْلَمُ فِى السَّمَاوَاتِ وَلَا فِى الْاَرْضِؕ سُبْحَانَهٗ وَتَعَالٰى عَمَّا يُشْرِكُوْنَ
তারা বলে, এগুলো আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী। বলো, তোমরা কি আল্লাহকে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর এমন কোন বিষয় সম্পর্কে সংবাদ দেবে, যা তিনি জানেন না? (জেনে রেখো) তিনি মহান ও পবিত্র। তার সাথে যাকে শরীক করা হয়, তা হতে তিনি অনেক ঊর্ধ্বে। (সূরা ইউনুস- ১৮)
আল্লাহ সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকা :
قُلْ اَغَيْرَ اللهِ اَتَّخِذُ وَلِيًّا فَاطِرِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَهُوَ يُطْعِمُ وَلَا يُطْعَمُؕ قُلْ اِنِّۤيْ اُمِرْتُ اَنْ اَكُوْنَ اَوَّلَ مَنْ اَسْلَمَ وَلَا تَكُوْنَنَّ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
বলো, আমি কি আসমান ও জমিনের স্রষ্টা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করব? অথচ তিনিই তো খাদ্য দান করেন, কিন্তু তাঁকে কেউ খাদ্য দান করে না। বলো, আমি এ ব্যাপারে আদেশপ্রাপ্ত হয়েছি যে, যেন আমি আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে প্রথম ব্যক্তি হই। আর তুমি কখনো মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সূরা আন‘আম- ১৪)
وَاِنْ يَّمْسَسْكَ اللهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهٗۤ اِلَّا هُوَ ؕ وَاِنْ يَّمْسَسْكَ بِخَيْرٍ فَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ ‐ وَهُوَ الْقَاهِرُ فَوْقَ عِبَادِهٖؕ وَهُوَ الْحَكِيْمُ الْخَبِيْرُ
যদি আল্লাহ তোমাকে কষ্ট দেন, তবে তিনি ব্যতীত তা মোচনকারী আর কেউ নেই। আর তিনি যদি তোমার কোন কল্যাণ করেন, তবে তিনিই তো সর্ববিষয়ে শক্তিমান। তিনি তাঁর বান্দাদের উপর পরাক্রমশালী, আর তিনি প্রজ্ঞাময় ও সর্বজ্ঞ। (সূরা আন‘আম- ১৭, ১৮)
مَا يَفْتَحِ اللهُ لِلنَّاسِ مِنْ رَّحْمَةٍ فَلَا مُمْسِكَ لَهَاۚ وَمَا يُمْسِكْ فَلَا مُرْسِلَ لَهٗ مِنْ ۢبَعْدِهٖؕ وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
আল্লাহ মানুষের জন্য যে রহমত উন্মুক্ত করে দেন তা কেউ প্রতিরোধ করতে পারে না; আর যা তিনি বন্ধ করে দেন পরবর্তীতে তা কেউ উন্মুক্ত করতে পারে না। তিনি প্রতাপশালী ও পরম কৌশলী। (সূরা ফাতির- ২)
وَاتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِ اللهِ اٰلِهَةً لِّيَكُوْنُوْا لَهُمْ عِزًّا ‐ كَلَّاؕ سَيَكْفُرُوْنَ بِعِبَادَتِهِمْ وَيَكُوْنُوْنَ عَلَيْهِمْ ضِدًّا
তারা আল্লাহ ব্যতীত অন্য ইলাহ্ গ্রহণ করে এজন্য যে, যাতে করে তারা তাদের সহায় হয়। কখনই নয়; অচিরেই তারা তাদের ইবাদাতকে অস্বীকার করবে এবং তাদের বিরোধী হয়ে যাবে। (সূরা মারইয়াম- ৮১, ৮২)
ব্যাখ্যা : عِزًّا (ইয্যান) শব্দের অর্থ হলো, সম্মান বা মর্যাদা। আরবদের ভাষায় ইজ্জত বলতে কোন ব্যক্তির এতবেশি শক্তিশালী ও ক্ষমতাধর হয়ে যাওয়াকে বুঝানো হয়, যার ফলে তার গায়ে কেউ হাত দেয়ার ক্ষমতা রাখে না। অর্থাৎ ঐ ব্যক্তি সম্মান ও মর্যাদার সর্বোচ্চ স্তরে অধিষ্ঠিত। সুতরাং এক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির জন্য ইজ্জতের কারণে পরিণত হওয়ার অর্থ হচ্ছে, প্রথম ব্যক্তি দ্বিতীয় ব্যক্তির এমন সহায়ক হওয়া, যার ফলে তার কোন বিরোধী তার মুকাবিলা করতে সাহস পায় না। আর মুশরিকরা তাদের শরীকদের ব্যাপারে এরকমই ধারণা পোষণ করে।
وَاتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِ اللهِ اٰلِهَةً لَّعَلَّهُمْ يُنْصَرُوْنَ
তারা আল্লাহ ব্যতীত অনেক ইলাহ্ গ্রহণ করেছে এ আশায় যে, হয়তো তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে। (সূরা ইয়াসীন- ৭৪)
শরীকরা তাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেবে :
وَالَّذِيْنَ اتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِهٖۤ اَوْلِيَآءَ مَا نَعْبُدُهُمْ اِلَّا لِيُقَرِّبُوْنَاۤ اِلَى اللهِ زُلْفٰى
যারা আল্লাহকে ছেড়ে অপরকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করেছে (তারা বলে) আমরা তাদের ইবাদাত এজন্য করি যাতে তারা আমাদেরকে আল্লাহর নৈকট্যে পৌঁছে দেয়। (সূরা যুমার- ৩)
ব্যাখ্যা : দুনিয়ার সকল কাফির ও মুশরিকরাও এ কথাই বলে থাকে যে, আমরা স্রষ্টা মনে করে অন্যান্য সত্তার ইবাদাত করি না। আমরা তো আল্লাহকেই প্রকৃত স্রষ্টা বলে মানি এবং তাঁকেই সত্যিকার উপাস্য মনে করি। যেহেতু তাঁর দরবার অনেক উঁচু, আমরা সেখানে কী করে পৌঁছতে পারি? তাই আমরা এসব দেবতাদেরকে মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করি, যাতে তারা আমাদের প্রার্থনা আল্লাহর কাছে পৌঁছে দেয়।
শরীকরা তাদের জন্য শাফা‘আত করবে :
وَيَقُوْلُوْنَ هٰۤؤُلَآءِ شُفَعَآؤُنَا عِنْدَ اللهِؕ قُلْ اَتُنَبِّئُوْنَ اللهَ بِمَا لَا يَعْلَمُ فِى السَّمَاوَاتِ وَلَا فِى الْاَرْضِؕ سُبْحَانَهٗ وَتَعَالٰى عَمَّا يُشْرِكُوْنَ
তারা বলে, এগুলো আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী। বলো, তোমরা কি আল্লাহকে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর এমন কোন বিষয় সম্পর্কে সংবাদ দেবে, যা তিনি জানেন না? (জেনে রেখো) তিনি মহান ও পবিত্র। তার সাথে যাকে শরীক করা হয়, তা হতে তিনি অনেক ঊর্ধ্বে। (সূরা ইউনুস- ১৮)
আল্লাহ সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকা :
قُلْ اَغَيْرَ اللهِ اَتَّخِذُ وَلِيًّا فَاطِرِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَهُوَ يُطْعِمُ وَلَا يُطْعَمُؕ قُلْ اِنِّۤيْ اُمِرْتُ اَنْ اَكُوْنَ اَوَّلَ مَنْ اَسْلَمَ وَلَا تَكُوْنَنَّ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
বলো, আমি কি আসমান ও জমিনের স্রষ্টা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করব? অথচ তিনিই তো খাদ্য দান করেন, কিন্তু তাঁকে কেউ খাদ্য দান করে না। বলো, আমি এ ব্যাপারে আদেশপ্রাপ্ত হয়েছি যে, যেন আমি আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে প্রথম ব্যক্তি হই। আর তুমি কখনো মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সূরা আন‘আম- ১৪)
وَاِنْ يَّمْسَسْكَ اللهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهٗۤ اِلَّا هُوَ ؕ وَاِنْ يَّمْسَسْكَ بِخَيْرٍ فَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ ‐ وَهُوَ الْقَاهِرُ فَوْقَ عِبَادِهٖؕ وَهُوَ الْحَكِيْمُ الْخَبِيْرُ
যদি আল্লাহ তোমাকে কষ্ট দেন, তবে তিনি ব্যতীত তা মোচনকারী আর কেউ নেই। আর তিনি যদি তোমার কোন কল্যাণ করেন, তবে তিনিই তো সর্ববিষয়ে শক্তিমান। তিনি তাঁর বান্দাদের উপর পরাক্রমশালী, আর তিনি প্রজ্ঞাময় ও সর্বজ্ঞ। (সূরা আন‘আম- ১৭, ১৮)
مَا يَفْتَحِ اللهُ لِلنَّاسِ مِنْ رَّحْمَةٍ فَلَا مُمْسِكَ لَهَاۚ وَمَا يُمْسِكْ فَلَا مُرْسِلَ لَهٗ مِنْ ۢبَعْدِهٖؕ وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
আল্লাহ মানুষের জন্য যে রহমত উন্মুক্ত করে দেন তা কেউ প্রতিরোধ করতে পারে না; আর যা তিনি বন্ধ করে দেন পরবর্তীতে তা কেউ উন্মুক্ত করতে পারে না। তিনি প্রতাপশালী ও পরম কৌশলী। (সূরা ফাতির- ২)
শরীকরা শাফা‘আতের ক্ষমতা রাখে না :
وَلَا يَمْلِكُ الَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهِ الشَّفَاعَةَ اِلَّا مَنْ شَهِدَ بِالْحَقِّ وَهُمْ يَعْلَمُوْنَ
তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাকে তারা শাফা‘আতের ক্ষমতার মালিক নয়, তবে যারা জেনে শুনে সত্যের সাক্ষ্য দেবে তারা ব্যতীত। (সূরা যুখরুফ- ৮৬)
وَلَمْ يَكُنْ لَّهُمْ مِّنْ شُرَكَآئِهِمْ شُفَعَآءُ وَكَانُوْا بِشُرَكَآئِهِمْ كَافِرِيْنَ
তাদের শরীকদের মধ্য হতে তাদের জন্য সুপারিশ করার মতো কেউ থাকবে না। বরং তারা নিজেদের শরীক করাকেই অস্বীকার করবে। (সূরা রূম- ১৩)
তাদের উপকারের চেয়ে অপকার বেশি :
يَدْعُوْا مِنْ دُوْنِ اللهِ مَا لَا يَضُرُّهٗ وَمَا لَا يَنْفَعُهٗؕ ذٰلِكَ هُوَ الضَّلَالُ الْبَعِيْدُ ‐ يَدْعُوْا لَمَنْ ضَرُّهٗۤ اَقْرَبُ مِنْ نَّفْعِهٖؕ لَبِئْسَ الْمَوْلٰى وَلَبِئْسَ الْعَشِيْرُ
সে আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুকে ডাকে, যা কোন অপকারও করতে পারে না এবং কোন উপকারও করতে পারে না; এটা চরম বিভ্রান্তি। সে এমন কিছুকে ডাকে, যার ক্ষতি সেটার উপকার অপেক্ষা অধিক নিকটতর। (সুতরাং তারা যাদেরকে ডাকে তারা) কতই না নিকৃষ্ট অভিভাবক এবং কতই না নিকৃষ্ট সহচর!
(সূরা হজ্জ- ১২, ১৩)
তাদের সকল অঙ্গই অকেজো :
اِنَّ الَّذِيْنَ تَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ عِبَادٌ اَمْثَالُكُمْ فَادْعُوْهُمْ فَلْيَسْتَجِيْبُوْا لَكُمْ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ ‐ اَلَهُمْ اَرْجُلٌ يَّمْشُوْنَ بِهَاۤ اَمْ لَهُمْ اَيْدٍ يَّبْطِشُوْنَ بِهَاۤ اَمْ لَهُمْ اَعْيُنٌ يُّبْصِرُوْنَ بِهَاۤ اَمْ لَهُمْ اٰذَانٌ يَّسْمَعُوْنَ بِهَا
তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে আহবান কর, তারা তো তোমাদের মতোই একজন বান্দা। অতএব যদি তোমরা সত্যবাদী হও, তবে তাদেরকে আহবান করো; আর তারা তোমাদের আহবানে সাড়া দিক। তাদের কি পা আছে, যা দ্বারা তারা চলতে পারবে? তাদের কি হাত আছে, যা দ্বারা তারা ধরতে পারবে? তাদের কি চক্ষু আছে, যা দ্বারা তারা দেখতে পারবে? কিংবা তাদের কি কোন কান আছে, যা দ্বারা তারা শ্রবণ করতে পারবে? (সূরা আ‘রাফ- ১৯৪, ১৯৫)
তারা কোনকিছু সৃষ্টি করতে পারে না :
وَالَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ لَا يَخْلُقُوْنَ شَيْئًا وَّهُمْ يُخْلَقُوْنَ
তারা আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে আহবান করে তারা কিছুই সৃষ্টি করতে পারে না, বরং তাদেরকেই সৃষ্টি করা হয়। (সূরা নাহল- ২০)
তারা মৃত :
اَمْوَاتٌ غَيْرُ اَحْيَاءٍ وَّمَا يَشْعُرُوْنَ اَيَّانَ يُبْعَثُوْنَ
তারা নিষ্প্রাণ, নির্জীব এবং কখন তাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে সে বিষয়ে তাদের কোন চেতনা নেই। (সূরা নাহল- ২১)
তারা কারো জীবন বা মরণ দিতে পারে না :
وَاتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِهٖۤ اٰلِهَةً لَّا يَخْلُقُوْنَ شَيْئًا وَّهُمْ يُخْلَقُوْنَ وَلَا يَمْلِكُوْنَ لِاَنْفُسِهِمْ ضَرًّا وَّلَا نَفْعًا وَّلَا يَمْلِكُوْنَ مَوْتًا وَّلَا حَيَاةً وَّلَا نُشُوْرًا
তারা তাঁর পরিবর্তে এমন কিছুকে ইলাহ্ হিসেবে গ্রহণ করেছে, যারা কোনকিছুই সৃষ্টি করতে পারে না, বরং তাদেরকেই সৃষ্টি করা হয়েছে। তারা নিজেদেরই কোন অপকার কিংবা উপকারের ক্ষমতা রাখে না এবং মৃত্যু, জীবন ও উত্থানের উপরও কোন ক্ষমতা রাখে না। (সূরা ফুরক্বান- ৩)
তারা দুনিয়াতেও কোন উপকার করতে পারে না :
وَلَقَدْ اَهْلَكْنَا مَا حَوْلَكُمْ مِّنَ الْقُرٰى وَصَرَّفْنَا الْاٰيَاتِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُوْنَ ‐ فَلَوْلَا نَصَرَهُمُ الَّذِيْنَ اتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِ اللهِ قُرْبَانًا اٰلِهَةً ۢبَلْ ضَلُّوْا عَنْهُمْۚ وَذٰلِكَ اِفْكُهُمْ وَمَا كَانُوْا يَفْتَرُوْنَ
তোমাদের আশপাশের এলাকার অনেক জনবসতি আমি ধ্বংস করে দিয়েছি। আর আমি আয়াতসমূহ বার বার তাদেরকে বুঝিয়েছি, যেন তারা ফিরে আসে। তারা আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায় মনে করে মা‘বুদ বানিয়ে নিয়েছিল, তারা কেন এদেরকে কোন সাহায্য করল না? বরং তারা তো তাদের কাছ থেকে হারিয়ে গেল। তারা যে মিথ্যা ও মনগড়া আকীদা বানিয়ে নিয়েছিল- এর পরিণাম এটাই। (সূরা আহকাফ- ২৭, ২৮)
فَمَاۤ اَغْنَتْ عَنْهُمْ اٰلِهَتُهُمُ الَّتِيْ يَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ مِنْ شَيْءٍ لَّمَّا جَآءَ اَمْرُ رَبِّكَؕ وَمَا زَادُوْهُمْ غَيْرَ تَتْبِيْبٍ
যখন তোমার প্রতিপালকের বিধান আসল, তখন তারা আল্লাহ ব্যতীত যে ইলাহসমূহের ইবাদাত করত তারা তাদের কোন কাজে আসল না। আর তারা ধ্বংস ব্যতীত তাদের জন্য অন্য কোনকিছুই বৃদ্ধি করল না। (সূরা হুদ- ১০১)
وَلَا يَمْلِكُ الَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهِ الشَّفَاعَةَ اِلَّا مَنْ شَهِدَ بِالْحَقِّ وَهُمْ يَعْلَمُوْنَ
তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাকে তারা শাফা‘আতের ক্ষমতার মালিক নয়, তবে যারা জেনে শুনে সত্যের সাক্ষ্য দেবে তারা ব্যতীত। (সূরা যুখরুফ- ৮৬)
وَلَمْ يَكُنْ لَّهُمْ مِّنْ شُرَكَآئِهِمْ شُفَعَآءُ وَكَانُوْا بِشُرَكَآئِهِمْ كَافِرِيْنَ
তাদের শরীকদের মধ্য হতে তাদের জন্য সুপারিশ করার মতো কেউ থাকবে না। বরং তারা নিজেদের শরীক করাকেই অস্বীকার করবে। (সূরা রূম- ১৩)
তাদের উপকারের চেয়ে অপকার বেশি :
يَدْعُوْا مِنْ دُوْنِ اللهِ مَا لَا يَضُرُّهٗ وَمَا لَا يَنْفَعُهٗؕ ذٰلِكَ هُوَ الضَّلَالُ الْبَعِيْدُ ‐ يَدْعُوْا لَمَنْ ضَرُّهٗۤ اَقْرَبُ مِنْ نَّفْعِهٖؕ لَبِئْسَ الْمَوْلٰى وَلَبِئْسَ الْعَشِيْرُ
সে আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুকে ডাকে, যা কোন অপকারও করতে পারে না এবং কোন উপকারও করতে পারে না; এটা চরম বিভ্রান্তি। সে এমন কিছুকে ডাকে, যার ক্ষতি সেটার উপকার অপেক্ষা অধিক নিকটতর। (সুতরাং তারা যাদেরকে ডাকে তারা) কতই না নিকৃষ্ট অভিভাবক এবং কতই না নিকৃষ্ট সহচর!
(সূরা হজ্জ- ১২, ১৩)
তাদের সকল অঙ্গই অকেজো :
اِنَّ الَّذِيْنَ تَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ عِبَادٌ اَمْثَالُكُمْ فَادْعُوْهُمْ فَلْيَسْتَجِيْبُوْا لَكُمْ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ ‐ اَلَهُمْ اَرْجُلٌ يَّمْشُوْنَ بِهَاۤ اَمْ لَهُمْ اَيْدٍ يَّبْطِشُوْنَ بِهَاۤ اَمْ لَهُمْ اَعْيُنٌ يُّبْصِرُوْنَ بِهَاۤ اَمْ لَهُمْ اٰذَانٌ يَّسْمَعُوْنَ بِهَا
তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে আহবান কর, তারা তো তোমাদের মতোই একজন বান্দা। অতএব যদি তোমরা সত্যবাদী হও, তবে তাদেরকে আহবান করো; আর তারা তোমাদের আহবানে সাড়া দিক। তাদের কি পা আছে, যা দ্বারা তারা চলতে পারবে? তাদের কি হাত আছে, যা দ্বারা তারা ধরতে পারবে? তাদের কি চক্ষু আছে, যা দ্বারা তারা দেখতে পারবে? কিংবা তাদের কি কোন কান আছে, যা দ্বারা তারা শ্রবণ করতে পারবে? (সূরা আ‘রাফ- ১৯৪, ১৯৫)
তারা কোনকিছু সৃষ্টি করতে পারে না :
وَالَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ لَا يَخْلُقُوْنَ شَيْئًا وَّهُمْ يُخْلَقُوْنَ
তারা আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে আহবান করে তারা কিছুই সৃষ্টি করতে পারে না, বরং তাদেরকেই সৃষ্টি করা হয়। (সূরা নাহল- ২০)
তারা মৃত :
اَمْوَاتٌ غَيْرُ اَحْيَاءٍ وَّمَا يَشْعُرُوْنَ اَيَّانَ يُبْعَثُوْنَ
তারা নিষ্প্রাণ, নির্জীব এবং কখন তাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে সে বিষয়ে তাদের কোন চেতনা নেই। (সূরা নাহল- ২১)
তারা কারো জীবন বা মরণ দিতে পারে না :
وَاتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِهٖۤ اٰلِهَةً لَّا يَخْلُقُوْنَ شَيْئًا وَّهُمْ يُخْلَقُوْنَ وَلَا يَمْلِكُوْنَ لِاَنْفُسِهِمْ ضَرًّا وَّلَا نَفْعًا وَّلَا يَمْلِكُوْنَ مَوْتًا وَّلَا حَيَاةً وَّلَا نُشُوْرًا
তারা তাঁর পরিবর্তে এমন কিছুকে ইলাহ্ হিসেবে গ্রহণ করেছে, যারা কোনকিছুই সৃষ্টি করতে পারে না, বরং তাদেরকেই সৃষ্টি করা হয়েছে। তারা নিজেদেরই কোন অপকার কিংবা উপকারের ক্ষমতা রাখে না এবং মৃত্যু, জীবন ও উত্থানের উপরও কোন ক্ষমতা রাখে না। (সূরা ফুরক্বান- ৩)
তারা দুনিয়াতেও কোন উপকার করতে পারে না :
وَلَقَدْ اَهْلَكْنَا مَا حَوْلَكُمْ مِّنَ الْقُرٰى وَصَرَّفْنَا الْاٰيَاتِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُوْنَ ‐ فَلَوْلَا نَصَرَهُمُ الَّذِيْنَ اتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِ اللهِ قُرْبَانًا اٰلِهَةً ۢبَلْ ضَلُّوْا عَنْهُمْۚ وَذٰلِكَ اِفْكُهُمْ وَمَا كَانُوْا يَفْتَرُوْنَ
তোমাদের আশপাশের এলাকার অনেক জনবসতি আমি ধ্বংস করে দিয়েছি। আর আমি আয়াতসমূহ বার বার তাদেরকে বুঝিয়েছি, যেন তারা ফিরে আসে। তারা আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায় মনে করে মা‘বুদ বানিয়ে নিয়েছিল, তারা কেন এদেরকে কোন সাহায্য করল না? বরং তারা তো তাদের কাছ থেকে হারিয়ে গেল। তারা যে মিথ্যা ও মনগড়া আকীদা বানিয়ে নিয়েছিল- এর পরিণাম এটাই। (সূরা আহকাফ- ২৭, ২৮)
فَمَاۤ اَغْنَتْ عَنْهُمْ اٰلِهَتُهُمُ الَّتِيْ يَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ مِنْ شَيْءٍ لَّمَّا جَآءَ اَمْرُ رَبِّكَؕ وَمَا زَادُوْهُمْ غَيْرَ تَتْبِيْبٍ
যখন তোমার প্রতিপালকের বিধান আসল, তখন তারা আল্লাহ ব্যতীত যে ইলাহসমূহের ইবাদাত করত তারা তাদের কোন কাজে আসল না। আর তারা ধ্বংস ব্যতীত তাদের জন্য অন্য কোনকিছুই বৃদ্ধি করল না। (সূরা হুদ- ১০১)
মুশরিকদের আকাঙ্ক্ষার উপমা মাকড়সার জালের সাথে :
مَثَلُ الَّذِيْنَ اتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِ اللهِ اَوْلِيَآءَ كَمَثَلِ الْعَنْكَبُوْتِۚ اِتَّخَذَتْ بَيْتًاؕ وَاِنَّ اَوْهَنَ الْبُيُوْتِ لَبَيْتُ الْعَنْكَبُوْتِ لَوْ كَانُوْا يَعْلَمُوْنَ
যারা আল্লাহর পরিবর্তে অপরকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে তাদের দৃষ্টান্ত মাকড়সার ন্যায়, যে নিজের জন্য ঘর বানায়। আর ঘরের মধ্যে মাকড়শার ঘরই তো দুর্বলতম, যদি তারা জানত। (সূরা আনকাবূত- ৪১)
ব্যাখ্যা : মুশরিকদের আকীদা হলো, শরীকরা আমাদের সাহায্যকারী ও পৃষ্ঠপোষক। এদের পূজা করে এবং এদেরকে মান্নত ও নজরানা পেশ করে যখন আমরা এদের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করব তখন এরা আমাদেরকে সবধরনের বিপদাপদ থেকে বাঁচাবে। কিন্তু মহান আল্লাহ মুশরিকদেরকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে, তোমরা বিশ্বের প্রকৃত মালিক ও শাসনকর্তাকে বাদ দিয়ে একেবারে অক্ষম ও সম্পূর্ণ কাল্পনিক উপাস্যদের উপর নির্ভর করে যে আশার অট্টালিকা রচনা করেছ, তার প্রকৃত অবস্থা মাকড়শার জালের চেয়েও ভিত্তিহীন। মাকড়শার জাল যেমন আঙ্গুলের সামান্য একটি টোকাও সহ্য করতে পারে না, তেমনি তোমাদের আশার অট্টালিকা এতই দুর্বল যে, যখন তোমরা পরকালের পথে পা রাখবে তখনই তা নিঃশেষ হয়ে যাবে। অতএব সত্যের সামান্যতম জ্ঞানও যদি তোমাদের থাকত, তাহলে তোমরা কখনো এসব ভিত্তিহীন কল্পনার উপর জীবনব্যবস্থা গড়ে তুলতে না। সত্য এটাই যে, সারা বিশ্বের একচ্ছত্র ক্ষমতার মালিক একমাত্র আল্লাহ এবং সবকিছু একমাত্র তাঁরই উপর নির্ভরশীল।
শরীকদের নিকট কিছু চাওয়ার উপমা :
لَهٗ دَعْوَةُ الْحَقِّؕ وَالَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖ لَا يَسْتَجِيْبُوْنَ لَهُمْ بِشَيْءٍ اِلَّا كَبَاسِطِ كَفَّيْهِ اِلَى الْمَآءِ لِيَبْلُغَ فَاهُ وَمَا هُوَ بِبَالِغِهٖؕ وَمَا دُعَآءُ الْكَافِرِيْنَ اِلَّا فِيْ ضَلَالٍ
সত্যের আহবান তাঁরই (আল্লাহরই); যারা তাঁকে ব্যতীত অপরকে আহবান করে, যারা তাদেরকে কোন সাড়া দেয় না তাদের দৃষ্টান্ত সে ব্যক্তির মতো, যে তার মুখে পানি পৌঁছাবে- এ আশায় তার হস্তদ্বয় প্রসারিত করে পানির দিকে, অথচ সেটা তার মুখে পৌঁছানোর মতো নয়। আর কাফিরদের আহবান ভ্রষ্টতা (নিষ্ফল হওয়া) ছাড়া আর কিছুই নয়। (সূরা রা‘দ- ১৪)
মুশরিকদের ভ্রষ্টতার এক চমৎকার উদাহরণ :
وَمَنْ يُّشْرِكْ بِاللهِ فَكَاَنَّمَا خَرَّ مِنَ السَّمَآءِ فَتَخْطَفُهُ الطَّيْرُ اَوْ تَهْوِيْ بِهِ الرِّيْحُ فِي ْمَكَانٍ سَحِيْقٍ
যে আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন করে (তার উপমা হচ্ছে) সে যেন আকাশ হতে পড়ল। অতঃপর পাখি তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল, কিংবা বায়ু তাকে উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে এক দূরবর্তী স্থানে নিক্ষেপ করল। (সূরা হজ্জ- ৩১)
ব্যাখ্যা : এখানে আকাশ বলতে বুঝানো হয়েছে মানুষের স্বাভাবিক অবস্থাকে। এ অবস্থায় তার মস্তিষ্ক এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ইলাহ্ হিসেবে মেনে নেয় না এবং তার প্রকৃতি তাওহীদ ছাড়া অন্য কোন ধর্মকে চিনে না। মানুষ যদি নবী প্রদত্ত পথনির্দেশনা গ্রহণ করে তাহলে সে জ্ঞান ও অন্তর্দৃষ্টির বলে নিজ প্রাকৃতিক অবস্থার উপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় এবং পরবর্তী পর্যায়ে সে নিচের দিকে নয় বরং উপরের দিকে উঠতে থাকে। কিন্তু যখনই সে শিরক এবং নাস্তিক্যবাদ গ্রহণ করে, তখনই সে নিজের প্রকৃতির আকাশ থেকে ধপাস করে নিচে পড়ে যায়। তখন সে অনিবার্যভাবে দু’টি অবস্থার যে কোন একটির মুখোমুখী হয়।
একটি অবস্থা হচ্ছে, শয়তান ও বিপথে পরিচালনাকারী মানুষ- যাদেরকে শিকারী পাখির সাথে তুলনা করা হয়েছে। অতঃপর তারা তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং প্রত্যেকে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
আর দ্বিতীয় অবস্থাটি হচ্ছে, তার নিজের প্রবৃত্তির কামনা-বাসনা, আবেগ, অনুভূতি ও চিন্তাধারা- যাকে বাতাসের সাথে তুলনা করা হয়েছে, তা তাকে উড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় এবং শেষ পর্যন্ত তাকে কোন গভীর খাদে নিক্ষেপ করে। অত্র আয়াতে গভীর খাদকে سَحِيْقٌ (সাহীক্ব) বলা হয়েছে। কোন জায়গাকে এমন অবস্থায় সাহীক বলা হয়, যখন তা এতবেশি গভীর হয় যে, তার মধ্যে কোন জিনিস পড়ে গেলে তা ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এখানে চিন্তা-চেতনা ও নৈতিক চরিত্রের অধঃপতনকে এমন গভীর খাদের সাথে তুলনা করা হয়েছে, যার মধ্যে পড়ে গিয়ে মানুষের সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
উদাহরণের মাধ্যমে যুক্তি পেশ :
وَاللهُ فَضَّلَ بَعْضَكُمْ عَلٰى بَعْضٍ فِى الرِّزْقِ فَمَا الَّذِيْنَ فُضِّلُوْا بِرَآدِّيْ رِزْقِهِمْ عَلٰى مَا مَلَكَتْ اَيْمَانُهُمْ فَهُمْ فِيْهِ سَوَآءٌؕ اَفَبِنِعْمَةِ اللهِ يَجْحَدُوْنَ
আল্লাহ জীবনোপকরণের ক্ষেত্রে তোমাদের কাউকে কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। আর যাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে তারা তাদের অধীনস্থ দাস-দাসীদেরকে নিজেদের জীবনোপকরণ হতে এমন কিছু দেয় না, যাতে তারা এ বিষয়ে তাদের সমান হয়ে যায়। তবে কি তারা আল্লাহর অনুগ্রহকে অস্বীকার করে? (সূরা নাহল- ৭১)
ضَرَبَ اللهُ مَثَلًا عَبْدًا مَّمْلُوْكًا لَّا يَقْدِرُ عَلٰى شَيْءٍ وَّمَنْ رَّزَقْنَاهُ مِنَّا رِزْقًا حَسَنًا فَهُوَ يُنْفِقُ مِنْهُ سِرًّا وَّجَهْرًاؕ هَلْ يَسْتَوُوْنَؕ اَلْحَمْدُ لِلّٰهِؕ بَلْ اَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ
আল্লাহ উপমা দিচ্ছেন অপরের অধিকারভুক্ত এক দাসের, যে কোনকিছুর উপর ক্ষমতা রাখে না এবং এমন এক ব্যক্তির, যাকে তিনি নিজের পক্ষ হতে উত্তম রিযিক দান করেছেন। অতঃপর সে তা হতে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে; তারা কি একে অপরের সমান? সকল প্রশংসা আল্লাহরই প্রাপ্য; অথচ তাদের অধিকাংশই তা জানে না। (সূরা নাহল- ৭৫)
ضَرَبَ لَكُمْ مَّثَلًا مِّنْ اَنْفُسِكُمْؕ هَلْ لَّكُمْ مِّنْ مَّا مَلَكَتْ اَيْمَانُكُمْ مِّنْ شُرَكَآءَ فِيْ مَا رَزَقْنَاكُمْ فَاَنْتُمْ فِيْهِ سَوَآءٌ تَخَافُوْنَهُمْ كَخِيْفَتِكُمْ اَنْفُسَكُمْؕ كَذٰلِكَ نُفَصِّلُ الْاٰيَاتِ لِقَوْمٍ يَّعْقِلُوْنَ
আল্লাহ তোমাদের জন্য তোমাদের নিজেদের মধ্য হতে একটি দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন যে, আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দান করেছি, তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের কেউ কি তাতে অংশীদার, যাতে করে তোমরা ও তারা সমপর্যায়ের হয়ে যাও? তোমরা তাদেরকে সেরূপ ভয় কর, যেরূপ তোমরা নিজেদের লোকদেরকে ভয় কর। এভাবেই আমি বুদ্ধিমান সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শনসমূহ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করে থাকি। (সূরা রূম- ২৮)
ব্যাখ্যা : যদিও মুশরিকরা মানুষের মধ্যে ক্ষমতাধর ও ক্ষমতাহীনদের মধ্যে পার্থক্য অনুভব করে এবং এ পার্থক্য সামনে রেখেই প্রত্যেকের সাথে আলাদা আলাদা আচরণ করে, তবুও তারা এত মূর্খ ও অবুঝ সেজে আছে যে, তারা স্রষ্টা ও সৃষ্টির পার্থক্যটুকুও বুঝতে পারে না। স্রষ্টার সত্তা, গুণাবলি, অধিকার ও শক্তি সবকিছুতেই তারা সৃষ্টিকে শরীক মনে করছে এবং সৃষ্টির সাথে এমন আচরণ করছে, যা একমাত্র স্রষ্টার সাথেই করা যেতে পারে। উপায়-উপকরণের উপর নির্ভরশীল এ জগতে কারো কাছে কোন জিনিস চাইতে হলে আমরা গৃহস্বামীর কাছেই চেয়ে থাকি; চাকর-বাকরদের কাছে চাই না। কিন্তু সমগ্র দয়ার উৎস যে সত্তা তাঁর কাছ থেকে নিজের প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্য যখন সচেষ্ট হই, তখন তাঁকে বাদ দিয়ে তাঁর বান্দাদের কাছে হাত পাতি- এর চেয়ে বড় বোকামী আর কী হতে পারে?
وَضَرَبَ اللهُ مَثَلًا رَّجُلَيْنِ اَحَدُهُمَاۤ اَبْكَمُ لَا يَقْدِرُ عَلٰى شَيْءٍ وَّهُوَ كَلٌّ عَلٰى مَوْلَاهُ اَيْنَمَا يُوَجِّهْهُّ لَا يَأْتِ بِخَيْرٍؕ هَلْ يَسْتَوِيْ هُوَ وَمَنْ يَّأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَهُوَ عَلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
আল্লাহ আরো দু’জন ব্যক্তির উপমা দিচ্ছেন- তাদের একজন বোবা, যে কোনকিছুরই শক্তি রাখে না এবং সে তার মনিবের বোঝা হয়ে থাকে। তাকে যেখানেই পাঠানো হোক না কেন সে ভালো কিছুই করে আসতে পারে না। সে কি ঐ ব্যক্তির সমান হবে, যে ন্যায়ের নির্দেশ দেয় এবং যে আছে সরল পথে? (সূরা নাহল- ৭৬)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ এবং বানোয়াট মা‘বুদদের মধ্যে পার্থক্য কেবল এতটুকুই নয় যে, একজন ক্ষমতাধর মালিক এবং অন্যজন ক্ষমতাহীন গোলাম। বরং এ ছাড়াও তাদের মধ্যে এ পার্থক্যটিও রয়েছে যে, এ গোলাম তোমাদের আহবানও শোনে না, তার জবাবও দিতে পারে না এবং নিজের ক্ষমতাবলে কোন একটা কাজও করতে পারে না। তার নিজের সারাটি জীবন তার প্রভুর উপর নির্ভরশীল। প্রভু যদি তার উপর কোন কাজ ছেড়ে দেয়, তাহলে সে কিছুই করতে পারে না। অন্যদিকে আল্লাহর অবস্থা হচ্ছে, তিনি কেবল বক্তাই নন বরং একজন জ্ঞানী সত্তা। তিনি দুনিয়াকে ইনসাফের হুকুম দেন। তিনি কেবল কাজ করার ক্ষমতাই রাখেন না বরং যা করেন তা সঠিক ও ন্যায়সঙ্গতভাবেই করেন।
ضَرَبَ اللهُ مَثَلًا رَّجُلًا فِيْهِ شُرَكَآءُ مُتَشَاكِسُوْنَ وَرَجُلًا سَلَمًا لِّرَجُلٍؕ هَلْ يَسْتَوِيَانِ مَثَلًاؕ اَلْحَمْدُ لِلّٰهِؕ بَلْ اَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ
আল্লাহ দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন এমন এক ব্যক্তির (দাসের) যার পরস্পর বিরুদ্ধ ভাবাপন্ন কয়েকজন মালিক রয়েছে। আর অপর একজন ব্যক্তি (দাস) যার কেবল একজন মালিক রয়েছে। এদের উভয়ের অবস্থা কি সমান হতে পারে? সকল প্রশংসা আল্লাহর; বরং তাদের অধিকাংশই তা জানে না। (সূরা যুমার- ২৯)
ব্যাখ্যা : এ উপমাতে আল্লাহ তা‘আলা শিরক ও তাওহীদের পার্থক্য এবং এ দু’টির প্রভাব পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করেছেন। যে ব্যক্তি অনেক মনিবের অধীন এবং তারা প্রত্যেকেই তাকে নিজের দিকে টানে। অতঃপর তার সেবা গ্রহণ করতে চায় কিন্তু তাদের সকলের নির্দেশ শুনতে গিয়ে যার নির্দেশই সে পালন করতে অপারগ হয় সে তাকে ধমক দেয়, এমনকি শাস্তিও দেয়। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি এক মনিবের চাকর সে অতি শান্তিতে জীবন-যাপন করে। তাকে অন্য কারো সন্তুষ্টির দিকে খেয়াল রাখার প্রয়োজন পড়ে না। এটা এমন সহজসরল কথা যা বুঝার জন্য বেশি চিন্তা-ভাবনা করতে হয় না যে, এক আল্লাহর দাসত্বে মানুষের জন্য যে শান্তি ও নিরাপত্তা আছে বহু সংখ্যক ইলাহের দাসত্ব করে কখনো তা লাভ করা যেতে পারে না।
এ উপমা সেসব জীবন্ত মনিবদের ক্ষেত্রেই খাটে, যারা কার্যতই পরস্পর বিরোধী নির্দেশ প্রদান করে এবং নিজের দিকে টানতে থাকে। মানুষের নিজের প্রবৃত্তির মধ্যে এক মনিব বসে আছে। আরো অসংখ্য মনিব বিদ্যমান আছে ঘরের মধ্যে, বংশের মধ্যে, জাতি-গোষ্ঠীর মধ্যে, দেশ ও সমাজের মধ্যে, ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে, শাসক ও আইন প্রণেতাদের মধ্যে, কাজকর্ম ও জীবিকার গন্ডির মধ্যে। তাদের পরস্পর বিরোধী আকাঙ্ক্ষা ও বিভিন্ন দাবী মানুষকে সবসময় পূরণ করতে হয়। অতঃপর সে যার দাবী পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, সে তাকে শাস্তি দেয়। তবে প্রত্যেকের শাস্তি ভিন্ন ভিন্ন। কেউ মনে আঘাত দেয়, কেউ উপহাস করে, কেউ সম্পর্ক ছিন্ন করে। কেউ নির্বোধ বলে আখ্যায়িত করে, কেউ ধর্মের উপর আক্রমণ করে এবং কেউ আইনের আশ্রয় নিয়ে শাস্তি দেয়। মানুষের জন্য এ থেকে বাঁচার একটিমাত্র উপায় হচ্ছে, তাওহীদের পথ গ্রহণ করে এক আল্লাহর বান্দা হয়ে যাওয়া এবং অন্যদের দাসত্বের শৃঙ্খল ছিড়ে দূরে নিক্ষেপ করা।
তাওহীদের পথ অবলম্বন করারও দু’টি পন্থা আছে এবং এর ফলাফলও ভিন্ন ভিন্ন। একটি পন্থা হলো, কেউ ব্যক্তিগত পর্যায়ে এক আল্লাহর বান্দা হয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নেবে কিন্তু চারদিকের পরিবেশ তার সহযোগী হবে না। সে যদি সরল মনে এ পথ অবলম্বন করে থাকে তাহলে মনের দিক দিয়ে শান্তি লাভ করবে। সে প্রবৃত্তির এমন প্রতিটি আকাঙ্ক্ষা প্রত্যাখ্যান করবে যা আল্লাহর নির্দেশের পরিপন্থী। সে পরিবার, গোত্র, সরকার, ধর্মীয় নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের এমন কোন দাবীও গ্রহণ করবে না যা আল্লাহর আইনের সাথে সাংঘর্ষিক। এর ফলে সে সীমাহীন দুঃখ-দুর্দশার সম্মুখীন হতে পারে; কিন্তু তার মন এ ব্যাপারে পুরোপুরি পরিতৃপ্ত থাকবে যে, আমি আল্লাহর দাসত্বের দাবী পূরণ করছি। আমি যাদের বান্দা নই আমার কাছে তাদের এমন কোন অধিকার নেই, যে কারণে আমি আমার রবের নির্দেশের বিরুদ্ধে তাদের দাসত্ব করব। দুনিয়ার কোন শক্তিই তার থেকে মনের এ প্রশান্তি ছিনিয়ে নিতে পারে না। এমনকি যদি তাকে ফাঁসির মঞ্চেও চড়তে হয়, তাহলেও সে প্রশান্ত মনে ফাঁসিতে ঝুলে যাবে। সে এ কথা ভেবে সামান্য অনুশোচনাও করবে না যে, আমি কেন মিথ্যা প্রভুদের সামনে মাথা নত করে আমার জীবন রক্ষা করলাম না।
দ্বিতীয় পন্থা হলো, গোটা সমাজ তাওহীদের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাক এবং সেখানে নৈতিক চরিত্র, সভ্যতা, সংস্কৃতি, শিক্ষা, ধর্ম, আইনকানুন, রাজনীতি, অর্থনীতি মোটকথা জীবনের প্রতিটি বিভাগের জন্য আকীদা-বিশ্বাস হিসেবে সেসব মূলনীতি মেনে নেয়া হোক এবং কার্যত চালু করা হোক, যা মহান আল্লাহ তাঁর কিতাব ও রাসূলের মাধ্যমে দিয়েছেন। আল্লাহর দ্বীন যেটিকে গোনাহ বলবে, সরকারের প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা সেগুলোকে উৎখাত করবে। মিম্বার ও মিহরাব থেকে এর বিরুদ্ধেই আওয়াজ উঠবে। অনুরূপভাবে আল্লাহর দ্বীন যে জিনিসকে কল্যাণ হিসেবে আখ্যায়িত করবে, আইন তাকেই সমর্থন করবে। ব্যবস্থাপনার শক্তি তা লালন করবে। গোটা শিক্ষাব্যবস্থা মন-মগজে সেটিকে বদ্ধমূল করতে চেষ্টা করবে। এভাবেই মানুষ পূর্ণ শান্তি লাভ করবে এবং উন্নতির সমস্ত দরজা তার জন্য খুলে যাবে।
দ্বিতীয় অবস্থাটি সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত সর্বাবস্থায় তাওহীদকেই আদর্শ হিসেবে মেনে চলতে হবে এবং সবরকম বিপদাপদ ও দুঃখ-কষ্টের মুকাবিলা করে আল্লাহর দাসত্ব করতে হবে। কিন্তু এ কথা অস্বীকার করা যায় না যে, ইসলামের চূড়ান্ত লক্ষ্য এ দ্বিতীয় অবস্থা সৃষ্টি করা। নবী-রাসূলদের চেষ্টা ও সাধনার লক্ষ্য শুধু ব্যক্তিগত ঈমান ও আনুগত্য ছিল না, বরং সামাজিক জীবনে ন্যায় ও সত্যের আদর্শ কায়েম করারও ছিল তাঁদের উদ্দেশ্য।
مَثَلُ الَّذِيْنَ اتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِ اللهِ اَوْلِيَآءَ كَمَثَلِ الْعَنْكَبُوْتِۚ اِتَّخَذَتْ بَيْتًاؕ وَاِنَّ اَوْهَنَ الْبُيُوْتِ لَبَيْتُ الْعَنْكَبُوْتِ لَوْ كَانُوْا يَعْلَمُوْنَ
যারা আল্লাহর পরিবর্তে অপরকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে তাদের দৃষ্টান্ত মাকড়সার ন্যায়, যে নিজের জন্য ঘর বানায়। আর ঘরের মধ্যে মাকড়শার ঘরই তো দুর্বলতম, যদি তারা জানত। (সূরা আনকাবূত- ৪১)
ব্যাখ্যা : মুশরিকদের আকীদা হলো, শরীকরা আমাদের সাহায্যকারী ও পৃষ্ঠপোষক। এদের পূজা করে এবং এদেরকে মান্নত ও নজরানা পেশ করে যখন আমরা এদের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করব তখন এরা আমাদেরকে সবধরনের বিপদাপদ থেকে বাঁচাবে। কিন্তু মহান আল্লাহ মুশরিকদেরকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে, তোমরা বিশ্বের প্রকৃত মালিক ও শাসনকর্তাকে বাদ দিয়ে একেবারে অক্ষম ও সম্পূর্ণ কাল্পনিক উপাস্যদের উপর নির্ভর করে যে আশার অট্টালিকা রচনা করেছ, তার প্রকৃত অবস্থা মাকড়শার জালের চেয়েও ভিত্তিহীন। মাকড়শার জাল যেমন আঙ্গুলের সামান্য একটি টোকাও সহ্য করতে পারে না, তেমনি তোমাদের আশার অট্টালিকা এতই দুর্বল যে, যখন তোমরা পরকালের পথে পা রাখবে তখনই তা নিঃশেষ হয়ে যাবে। অতএব সত্যের সামান্যতম জ্ঞানও যদি তোমাদের থাকত, তাহলে তোমরা কখনো এসব ভিত্তিহীন কল্পনার উপর জীবনব্যবস্থা গড়ে তুলতে না। সত্য এটাই যে, সারা বিশ্বের একচ্ছত্র ক্ষমতার মালিক একমাত্র আল্লাহ এবং সবকিছু একমাত্র তাঁরই উপর নির্ভরশীল।
শরীকদের নিকট কিছু চাওয়ার উপমা :
لَهٗ دَعْوَةُ الْحَقِّؕ وَالَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖ لَا يَسْتَجِيْبُوْنَ لَهُمْ بِشَيْءٍ اِلَّا كَبَاسِطِ كَفَّيْهِ اِلَى الْمَآءِ لِيَبْلُغَ فَاهُ وَمَا هُوَ بِبَالِغِهٖؕ وَمَا دُعَآءُ الْكَافِرِيْنَ اِلَّا فِيْ ضَلَالٍ
সত্যের আহবান তাঁরই (আল্লাহরই); যারা তাঁকে ব্যতীত অপরকে আহবান করে, যারা তাদেরকে কোন সাড়া দেয় না তাদের দৃষ্টান্ত সে ব্যক্তির মতো, যে তার মুখে পানি পৌঁছাবে- এ আশায় তার হস্তদ্বয় প্রসারিত করে পানির দিকে, অথচ সেটা তার মুখে পৌঁছানোর মতো নয়। আর কাফিরদের আহবান ভ্রষ্টতা (নিষ্ফল হওয়া) ছাড়া আর কিছুই নয়। (সূরা রা‘দ- ১৪)
মুশরিকদের ভ্রষ্টতার এক চমৎকার উদাহরণ :
وَمَنْ يُّشْرِكْ بِاللهِ فَكَاَنَّمَا خَرَّ مِنَ السَّمَآءِ فَتَخْطَفُهُ الطَّيْرُ اَوْ تَهْوِيْ بِهِ الرِّيْحُ فِي ْمَكَانٍ سَحِيْقٍ
যে আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন করে (তার উপমা হচ্ছে) সে যেন আকাশ হতে পড়ল। অতঃপর পাখি তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল, কিংবা বায়ু তাকে উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে এক দূরবর্তী স্থানে নিক্ষেপ করল। (সূরা হজ্জ- ৩১)
ব্যাখ্যা : এখানে আকাশ বলতে বুঝানো হয়েছে মানুষের স্বাভাবিক অবস্থাকে। এ অবস্থায় তার মস্তিষ্ক এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ইলাহ্ হিসেবে মেনে নেয় না এবং তার প্রকৃতি তাওহীদ ছাড়া অন্য কোন ধর্মকে চিনে না। মানুষ যদি নবী প্রদত্ত পথনির্দেশনা গ্রহণ করে তাহলে সে জ্ঞান ও অন্তর্দৃষ্টির বলে নিজ প্রাকৃতিক অবস্থার উপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় এবং পরবর্তী পর্যায়ে সে নিচের দিকে নয় বরং উপরের দিকে উঠতে থাকে। কিন্তু যখনই সে শিরক এবং নাস্তিক্যবাদ গ্রহণ করে, তখনই সে নিজের প্রকৃতির আকাশ থেকে ধপাস করে নিচে পড়ে যায়। তখন সে অনিবার্যভাবে দু’টি অবস্থার যে কোন একটির মুখোমুখী হয়।
একটি অবস্থা হচ্ছে, শয়তান ও বিপথে পরিচালনাকারী মানুষ- যাদেরকে শিকারী পাখির সাথে তুলনা করা হয়েছে। অতঃপর তারা তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং প্রত্যেকে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
আর দ্বিতীয় অবস্থাটি হচ্ছে, তার নিজের প্রবৃত্তির কামনা-বাসনা, আবেগ, অনুভূতি ও চিন্তাধারা- যাকে বাতাসের সাথে তুলনা করা হয়েছে, তা তাকে উড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় এবং শেষ পর্যন্ত তাকে কোন গভীর খাদে নিক্ষেপ করে। অত্র আয়াতে গভীর খাদকে سَحِيْقٌ (সাহীক্ব) বলা হয়েছে। কোন জায়গাকে এমন অবস্থায় সাহীক বলা হয়, যখন তা এতবেশি গভীর হয় যে, তার মধ্যে কোন জিনিস পড়ে গেলে তা ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এখানে চিন্তা-চেতনা ও নৈতিক চরিত্রের অধঃপতনকে এমন গভীর খাদের সাথে তুলনা করা হয়েছে, যার মধ্যে পড়ে গিয়ে মানুষের সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
উদাহরণের মাধ্যমে যুক্তি পেশ :
وَاللهُ فَضَّلَ بَعْضَكُمْ عَلٰى بَعْضٍ فِى الرِّزْقِ فَمَا الَّذِيْنَ فُضِّلُوْا بِرَآدِّيْ رِزْقِهِمْ عَلٰى مَا مَلَكَتْ اَيْمَانُهُمْ فَهُمْ فِيْهِ سَوَآءٌؕ اَفَبِنِعْمَةِ اللهِ يَجْحَدُوْنَ
আল্লাহ জীবনোপকরণের ক্ষেত্রে তোমাদের কাউকে কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। আর যাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে তারা তাদের অধীনস্থ দাস-দাসীদেরকে নিজেদের জীবনোপকরণ হতে এমন কিছু দেয় না, যাতে তারা এ বিষয়ে তাদের সমান হয়ে যায়। তবে কি তারা আল্লাহর অনুগ্রহকে অস্বীকার করে? (সূরা নাহল- ৭১)
ضَرَبَ اللهُ مَثَلًا عَبْدًا مَّمْلُوْكًا لَّا يَقْدِرُ عَلٰى شَيْءٍ وَّمَنْ رَّزَقْنَاهُ مِنَّا رِزْقًا حَسَنًا فَهُوَ يُنْفِقُ مِنْهُ سِرًّا وَّجَهْرًاؕ هَلْ يَسْتَوُوْنَؕ اَلْحَمْدُ لِلّٰهِؕ بَلْ اَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ
আল্লাহ উপমা দিচ্ছেন অপরের অধিকারভুক্ত এক দাসের, যে কোনকিছুর উপর ক্ষমতা রাখে না এবং এমন এক ব্যক্তির, যাকে তিনি নিজের পক্ষ হতে উত্তম রিযিক দান করেছেন। অতঃপর সে তা হতে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে; তারা কি একে অপরের সমান? সকল প্রশংসা আল্লাহরই প্রাপ্য; অথচ তাদের অধিকাংশই তা জানে না। (সূরা নাহল- ৭৫)
ضَرَبَ لَكُمْ مَّثَلًا مِّنْ اَنْفُسِكُمْؕ هَلْ لَّكُمْ مِّنْ مَّا مَلَكَتْ اَيْمَانُكُمْ مِّنْ شُرَكَآءَ فِيْ مَا رَزَقْنَاكُمْ فَاَنْتُمْ فِيْهِ سَوَآءٌ تَخَافُوْنَهُمْ كَخِيْفَتِكُمْ اَنْفُسَكُمْؕ كَذٰلِكَ نُفَصِّلُ الْاٰيَاتِ لِقَوْمٍ يَّعْقِلُوْنَ
আল্লাহ তোমাদের জন্য তোমাদের নিজেদের মধ্য হতে একটি দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন যে, আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দান করেছি, তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের কেউ কি তাতে অংশীদার, যাতে করে তোমরা ও তারা সমপর্যায়ের হয়ে যাও? তোমরা তাদেরকে সেরূপ ভয় কর, যেরূপ তোমরা নিজেদের লোকদেরকে ভয় কর। এভাবেই আমি বুদ্ধিমান সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শনসমূহ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করে থাকি। (সূরা রূম- ২৮)
ব্যাখ্যা : যদিও মুশরিকরা মানুষের মধ্যে ক্ষমতাধর ও ক্ষমতাহীনদের মধ্যে পার্থক্য অনুভব করে এবং এ পার্থক্য সামনে রেখেই প্রত্যেকের সাথে আলাদা আলাদা আচরণ করে, তবুও তারা এত মূর্খ ও অবুঝ সেজে আছে যে, তারা স্রষ্টা ও সৃষ্টির পার্থক্যটুকুও বুঝতে পারে না। স্রষ্টার সত্তা, গুণাবলি, অধিকার ও শক্তি সবকিছুতেই তারা সৃষ্টিকে শরীক মনে করছে এবং সৃষ্টির সাথে এমন আচরণ করছে, যা একমাত্র স্রষ্টার সাথেই করা যেতে পারে। উপায়-উপকরণের উপর নির্ভরশীল এ জগতে কারো কাছে কোন জিনিস চাইতে হলে আমরা গৃহস্বামীর কাছেই চেয়ে থাকি; চাকর-বাকরদের কাছে চাই না। কিন্তু সমগ্র দয়ার উৎস যে সত্তা তাঁর কাছ থেকে নিজের প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্য যখন সচেষ্ট হই, তখন তাঁকে বাদ দিয়ে তাঁর বান্দাদের কাছে হাত পাতি- এর চেয়ে বড় বোকামী আর কী হতে পারে?
وَضَرَبَ اللهُ مَثَلًا رَّجُلَيْنِ اَحَدُهُمَاۤ اَبْكَمُ لَا يَقْدِرُ عَلٰى شَيْءٍ وَّهُوَ كَلٌّ عَلٰى مَوْلَاهُ اَيْنَمَا يُوَجِّهْهُّ لَا يَأْتِ بِخَيْرٍؕ هَلْ يَسْتَوِيْ هُوَ وَمَنْ يَّأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَهُوَ عَلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
আল্লাহ আরো দু’জন ব্যক্তির উপমা দিচ্ছেন- তাদের একজন বোবা, যে কোনকিছুরই শক্তি রাখে না এবং সে তার মনিবের বোঝা হয়ে থাকে। তাকে যেখানেই পাঠানো হোক না কেন সে ভালো কিছুই করে আসতে পারে না। সে কি ঐ ব্যক্তির সমান হবে, যে ন্যায়ের নির্দেশ দেয় এবং যে আছে সরল পথে? (সূরা নাহল- ৭৬)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ এবং বানোয়াট মা‘বুদদের মধ্যে পার্থক্য কেবল এতটুকুই নয় যে, একজন ক্ষমতাধর মালিক এবং অন্যজন ক্ষমতাহীন গোলাম। বরং এ ছাড়াও তাদের মধ্যে এ পার্থক্যটিও রয়েছে যে, এ গোলাম তোমাদের আহবানও শোনে না, তার জবাবও দিতে পারে না এবং নিজের ক্ষমতাবলে কোন একটা কাজও করতে পারে না। তার নিজের সারাটি জীবন তার প্রভুর উপর নির্ভরশীল। প্রভু যদি তার উপর কোন কাজ ছেড়ে দেয়, তাহলে সে কিছুই করতে পারে না। অন্যদিকে আল্লাহর অবস্থা হচ্ছে, তিনি কেবল বক্তাই নন বরং একজন জ্ঞানী সত্তা। তিনি দুনিয়াকে ইনসাফের হুকুম দেন। তিনি কেবল কাজ করার ক্ষমতাই রাখেন না বরং যা করেন তা সঠিক ও ন্যায়সঙ্গতভাবেই করেন।
ضَرَبَ اللهُ مَثَلًا رَّجُلًا فِيْهِ شُرَكَآءُ مُتَشَاكِسُوْنَ وَرَجُلًا سَلَمًا لِّرَجُلٍؕ هَلْ يَسْتَوِيَانِ مَثَلًاؕ اَلْحَمْدُ لِلّٰهِؕ بَلْ اَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ
আল্লাহ দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন এমন এক ব্যক্তির (দাসের) যার পরস্পর বিরুদ্ধ ভাবাপন্ন কয়েকজন মালিক রয়েছে। আর অপর একজন ব্যক্তি (দাস) যার কেবল একজন মালিক রয়েছে। এদের উভয়ের অবস্থা কি সমান হতে পারে? সকল প্রশংসা আল্লাহর; বরং তাদের অধিকাংশই তা জানে না। (সূরা যুমার- ২৯)
ব্যাখ্যা : এ উপমাতে আল্লাহ তা‘আলা শিরক ও তাওহীদের পার্থক্য এবং এ দু’টির প্রভাব পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করেছেন। যে ব্যক্তি অনেক মনিবের অধীন এবং তারা প্রত্যেকেই তাকে নিজের দিকে টানে। অতঃপর তার সেবা গ্রহণ করতে চায় কিন্তু তাদের সকলের নির্দেশ শুনতে গিয়ে যার নির্দেশই সে পালন করতে অপারগ হয় সে তাকে ধমক দেয়, এমনকি শাস্তিও দেয়। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি এক মনিবের চাকর সে অতি শান্তিতে জীবন-যাপন করে। তাকে অন্য কারো সন্তুষ্টির দিকে খেয়াল রাখার প্রয়োজন পড়ে না। এটা এমন সহজসরল কথা যা বুঝার জন্য বেশি চিন্তা-ভাবনা করতে হয় না যে, এক আল্লাহর দাসত্বে মানুষের জন্য যে শান্তি ও নিরাপত্তা আছে বহু সংখ্যক ইলাহের দাসত্ব করে কখনো তা লাভ করা যেতে পারে না।
এ উপমা সেসব জীবন্ত মনিবদের ক্ষেত্রেই খাটে, যারা কার্যতই পরস্পর বিরোধী নির্দেশ প্রদান করে এবং নিজের দিকে টানতে থাকে। মানুষের নিজের প্রবৃত্তির মধ্যে এক মনিব বসে আছে। আরো অসংখ্য মনিব বিদ্যমান আছে ঘরের মধ্যে, বংশের মধ্যে, জাতি-গোষ্ঠীর মধ্যে, দেশ ও সমাজের মধ্যে, ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে, শাসক ও আইন প্রণেতাদের মধ্যে, কাজকর্ম ও জীবিকার গন্ডির মধ্যে। তাদের পরস্পর বিরোধী আকাঙ্ক্ষা ও বিভিন্ন দাবী মানুষকে সবসময় পূরণ করতে হয়। অতঃপর সে যার দাবী পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, সে তাকে শাস্তি দেয়। তবে প্রত্যেকের শাস্তি ভিন্ন ভিন্ন। কেউ মনে আঘাত দেয়, কেউ উপহাস করে, কেউ সম্পর্ক ছিন্ন করে। কেউ নির্বোধ বলে আখ্যায়িত করে, কেউ ধর্মের উপর আক্রমণ করে এবং কেউ আইনের আশ্রয় নিয়ে শাস্তি দেয়। মানুষের জন্য এ থেকে বাঁচার একটিমাত্র উপায় হচ্ছে, তাওহীদের পথ গ্রহণ করে এক আল্লাহর বান্দা হয়ে যাওয়া এবং অন্যদের দাসত্বের শৃঙ্খল ছিড়ে দূরে নিক্ষেপ করা।
তাওহীদের পথ অবলম্বন করারও দু’টি পন্থা আছে এবং এর ফলাফলও ভিন্ন ভিন্ন। একটি পন্থা হলো, কেউ ব্যক্তিগত পর্যায়ে এক আল্লাহর বান্দা হয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নেবে কিন্তু চারদিকের পরিবেশ তার সহযোগী হবে না। সে যদি সরল মনে এ পথ অবলম্বন করে থাকে তাহলে মনের দিক দিয়ে শান্তি লাভ করবে। সে প্রবৃত্তির এমন প্রতিটি আকাঙ্ক্ষা প্রত্যাখ্যান করবে যা আল্লাহর নির্দেশের পরিপন্থী। সে পরিবার, গোত্র, সরকার, ধর্মীয় নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের এমন কোন দাবীও গ্রহণ করবে না যা আল্লাহর আইনের সাথে সাংঘর্ষিক। এর ফলে সে সীমাহীন দুঃখ-দুর্দশার সম্মুখীন হতে পারে; কিন্তু তার মন এ ব্যাপারে পুরোপুরি পরিতৃপ্ত থাকবে যে, আমি আল্লাহর দাসত্বের দাবী পূরণ করছি। আমি যাদের বান্দা নই আমার কাছে তাদের এমন কোন অধিকার নেই, যে কারণে আমি আমার রবের নির্দেশের বিরুদ্ধে তাদের দাসত্ব করব। দুনিয়ার কোন শক্তিই তার থেকে মনের এ প্রশান্তি ছিনিয়ে নিতে পারে না। এমনকি যদি তাকে ফাঁসির মঞ্চেও চড়তে হয়, তাহলেও সে প্রশান্ত মনে ফাঁসিতে ঝুলে যাবে। সে এ কথা ভেবে সামান্য অনুশোচনাও করবে না যে, আমি কেন মিথ্যা প্রভুদের সামনে মাথা নত করে আমার জীবন রক্ষা করলাম না।
দ্বিতীয় পন্থা হলো, গোটা সমাজ তাওহীদের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাক এবং সেখানে নৈতিক চরিত্র, সভ্যতা, সংস্কৃতি, শিক্ষা, ধর্ম, আইনকানুন, রাজনীতি, অর্থনীতি মোটকথা জীবনের প্রতিটি বিভাগের জন্য আকীদা-বিশ্বাস হিসেবে সেসব মূলনীতি মেনে নেয়া হোক এবং কার্যত চালু করা হোক, যা মহান আল্লাহ তাঁর কিতাব ও রাসূলের মাধ্যমে দিয়েছেন। আল্লাহর দ্বীন যেটিকে গোনাহ বলবে, সরকারের প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা সেগুলোকে উৎখাত করবে। মিম্বার ও মিহরাব থেকে এর বিরুদ্ধেই আওয়াজ উঠবে। অনুরূপভাবে আল্লাহর দ্বীন যে জিনিসকে কল্যাণ হিসেবে আখ্যায়িত করবে, আইন তাকেই সমর্থন করবে। ব্যবস্থাপনার শক্তি তা লালন করবে। গোটা শিক্ষাব্যবস্থা মন-মগজে সেটিকে বদ্ধমূল করতে চেষ্টা করবে। এভাবেই মানুষ পূর্ণ শান্তি লাভ করবে এবং উন্নতির সমস্ত দরজা তার জন্য খুলে যাবে।
দ্বিতীয় অবস্থাটি সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত সর্বাবস্থায় তাওহীদকেই আদর্শ হিসেবে মেনে চলতে হবে এবং সবরকম বিপদাপদ ও দুঃখ-কষ্টের মুকাবিলা করে আল্লাহর দাসত্ব করতে হবে। কিন্তু এ কথা অস্বীকার করা যায় না যে, ইসলামের চূড়ান্ত লক্ষ্য এ দ্বিতীয় অবস্থা সৃষ্টি করা। নবী-রাসূলদের চেষ্টা ও সাধনার লক্ষ্য শুধু ব্যক্তিগত ঈমান ও আনুগত্য ছিল না, বরং সামাজিক জীবনে ন্যায় ও সত্যের আদর্শ কায়েম করারও ছিল তাঁদের উদ্দেশ্য।
তোমরা কোন্ দলিলের ভিত্তিতে শিরক করছ?
اَمْ اَنْزَلْنَا عَلَيْهِمْ سُلْطَانًا فَهُوَ يَتَكَلَّمُ بِمَا كَانُوْا بِهٖ يُشْرِكُوْنَ
আমি কি তাদের কাছে এমন কোন দলীল অবতীর্ণ করেছি, যা তাদেরকে আমার সাথে অংশীদার স্থাপন করতে বলে? (সূরা রূম- ৩৫)
وَجَعَلُوْا لِلّٰهِ شُرَكَآءَؕ قُلْ سَمُّوْهُمْؕ اَمْ تُنَبِّئُوْنَهٗ بِمَا لَا يَعْلَمُ فِى الْاَرْضِ اَمْ بِظَاهِرٍ مِّنَ الْقَوْلِ
তারা আল্লাহর সাথে বহু শরীক স্থাপন করেছে। (তাদেরকে) বলো, এদের পরিচয় দাও। তোমরা কি পৃথিবীর মধ্যে এমন কোন বিষয়ের সংবাদ দিতে চাও- যা তিনি (আল্লাহ) জানেন না? নাকি এটা বাহ্যিক কথা মাত্র। (সূরা রা‘দ- ৩৩)
যারা লাভ-ক্ষতির ক্ষমতা রাখে না তাদেরকে ডাকছ কেন?
قُلْ اَفَرَاَيْتُمْ مَّا تَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ اِنْ اَرَادَنِيَ اللهُ بِضُرٍّ هَلْ هُنَّ كَاشِفَاتُ ضُرِّهٖۤ اَوْ اَرَادَنِيْ بِرَحْمَةٍ هَلْ هُنَّ مُمْسِكَاتُ رَحْمَتِهٖ
বলো, তোমরা কি ভেবে দেখেছ যে, যদি আল্লাহ আমার কোন অনিষ্ট চান, তবে তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাক তারা কি সে অনিষ্ট দূর করতে পারবে? অথবা তিনি যদি আমার প্রতি অনুগ্রহ করতে চান, তবে কি তারা সে অনুগ্রহকে বন্ধ করতে পারবে? (সূরা যুমার- ৩৮)
শরীকরা কি কোন শরীয়াত প্রদান করেছে?
اَمْ لَهُمْ شُرَكَآءُ شَرَعُوْا لَهُمْ مِّنَ الدِّيْنِ مَا لَمْ يَأْذَنْ ۢبِهِ اللهُ
তাদের কি এমন কতকগুলো শরীকও আছে, যারা তাদের জন্য দ্বীনের এমন বিধান প্রবর্তন করেছে, যার অনুমতি আল্লাহ দেননি? (সূরা শূরা- ২১)
বিপদে পড়লে কাকে ডাক?
قُلْ اَرَاَيْتَكُمْ اِنْ اَتَاكُمْ عَذَابُ اللهِ اَوْ اَتَتْكُمُ السَّاعَةُ اَغَيْرَ اللهِ تَدْعُوْنَۚ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ ‐ بَلْ اِيَّاهُ تَدْعُوْنَ فَيَكْشِفُ مَا تَدْعُوْنَ اِلَيْهِ اِنْ شَآءَ وَتَنْسَوْنَ مَا تُشْرِكُوْنَ
বলো, তোমরা কি ভেবে দেখেছ যে, যদি আল্লাহর শাস্তি তোমাদের উপর এসে যায় অথবা তোমাদের নিকট কিয়ামত উপস্থিত হয়, তবে তোমরা কি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ডাকবে, যদি তোমরা সত্যবাদী হও? বরং, তোমরা শুধু তাকেই ডাকবে; তোমরা যে কষ্টের জন্য তাকে ডাকবে, তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদের থেকে তা দূর করে দেবেন। ফলে তোমরা যাকে তাঁর শরীক স্থাপন করতে, তাকে ভুলে যাবে। (সূরা আন‘আম- ৪০, ৪১)
قُلْ مَنْ يُّنَجِّيْكُمْ مِّنْ ظُلُمَاتِ الْبَرِّ وَالْبَحْرِ تَدْعُوْنَهٗ تَضَرُّعًا وَّخُفْيَةًۚ لَئِنْ اَنْجَانَا مِنْ هٰذِهٖ لَنَكُوْنَنَّ مِنَ الشَّاكِرِيْنَ ‐ قُلِ اللهُ يُنَجِّيْكُمْ مِّنْهَا وَمِنْ كُلِّ كَرْبٍ ثُمَّ اَنْتُمْ تُشْرِكُوْنَ
বলো, কে তোমাদেরকে স্থলভাগ ও সমুদ্রের অন্ধকার হতে মুক্তি দান করেন? যখন তোমরা বিনম্রভাবে এবং গোপনে তাঁকে ডাকতে থাক (এ বলে) যে, যদি তুমি আমাদেরকে এটা হতে মুক্তি দান কর তবে আমরা অবশ্যই কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হব। বলো, আল্লাহই তোমাদেরকে তা হতে এবং সমস্ত দুঃখ-কষ্ট হতে মুক্তি দান করেন। তারপরও তোমরা তাঁর সাথে শরীক স্থাপন কর। (সূরা আন‘আম- ৬৩, ৬৪)
শরীকরা উপাস্য হলে জাহান্নামে যাবে কেন?
اِنَّكُمْ وَمَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ حَصَبُ جَهَنَّمَؕ اَنْتُمْ لَهَا وَارِدُوْنَ ‐ لَوْ كَانَ هٰۤؤُلَآءِ اٰلِهَةً مَّا وَرَدُوْهَا وَكُلٌّ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের ইবাদাত কর, সেগুলো তো জাহান্নামের ইন্ধন মাত্র; তোমরা সকলে তাতে প্রবেশ করবে। যদি তারা ইলাহ্ হতো, তবে তারা জাহান্নামে প্রবেশ করত না; উপরন্তু তাদের সকলেই তাতে স্থায়ী হবে। (সূরা আম্বিয়া- ৯৮, ৯৯)
এ পৃথিবীর মালিক কে?
قُلْ لِّمَنِ الْاَرْضُ وَمَنْ فِيْهَاۤ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ ‐ سَيَقُوْلُوْنَ لِلّٰهِؕ قُلْ اَفَلَا تَذَكَّرُوْنَ
বলো, এ পৃথিবী এবং এর মধ্যস্থিত সবকিছু কার, যদি তোমরা জেনে থাক? তারা বলবে, আল্লাহর। বলো, তবুও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না?। (সূরা মু’মিনূন- ৮৪, ৮৫)
আসমান ও আরশের মালিক কে?
قُلْ مَنْ رَّبُّ السَّمَاوَاتِ السَّبْعِ وَرَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ ‐ سَيَقُوْلُوْنَ لِلّٰهِؕ قُلْ اَفَلَا تَتَّقُوْنَ
বলো, সপ্তাকাশ এবং মহা-আরশের অধিপতি কে? তারা বলবে, আল্লাহ। বলো, তবুও কি তোমরা সাবধান হবে না?। (সূরা মু’মিনূন- ৮৬, ৮৭)
বিশ্বের সবকিছু কার?
قُلْ لِّمَنْ مَّا فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِؕ قُلْ لِّلّٰهِ
বলো, আসমান ও জমিনে যা আছে তা কার? বলো, আল্লাহরই। (সূরা আন‘আম- ১২)
আসমান ও জমিন কে সৃষ্টি করেছে?
وَلَئِنْ سَاَلْتَهُمْ مَّنْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ لَيَقُوْلُنَّ اللهُؕ قُلِ الْحَمْدُ لِلّٰهِؕ بَلْ اَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ
আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, আসমান ও জমিন কে সৃষ্টি করেছেন, তবে অবশ্যই তারা বলবে, আল্লাহ। বলো, সকল প্রশংসা আল্লাহরই। কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না। (সূরা লুক্বমান- ২৫)
পৃথিবী, নদী, পাহাড় ও সাগর কে সৃষ্টি করেছে?
اَمَّنْ جَعَلَ الْاَرْضَ قَرَارًا وَّجَعَلَ خِلَالَهَاۤ اَنْهَارًا وَّجَعَلَ لَهَا رَوَاسِيَ وَجَعَلَ بَيْنَ الْبَحْرَيْنِ حَاجِزًاؕ اَاِلٰهٌ مَّعَ اللهِ ؕ بَلْ اَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ
তিনি কি ঐ স্রষ্টা নন, যিনি পৃথিবীকে করেছেন বাসোপযোগী এবং তার মাঝে প্রবাহিত করেছেন নদী-নালা এবং তাতে স্থাপন করেছেন সুদৃঢ় পবর্ত ও দু’সাগরের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন অন্তরায়? (বলো) এরপরও আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোন ইলাহ্ আছে কি? তবুও তাদের অধিকাংশই তা জানে না। (সূরা নামল- ৬১)
আল্লাহ ছাড়া কে তোমাদের সৃষ্টিকর্তা?
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اذْكُرُوْا نِعْمَتَ اللهِ عَلَيْكُمْؕ هَلْ مِنْ خَالِقٍ غَيْرُ اللهِ يَرْزُقُكُمْ مِّنَ السَّمَآءِ وَالْاَرْضِؕ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ فَاَنّٰى تُؤْفَكُوْنَ
হে মানুষ! তোমাদের উপর আল্লাহর যেসব নিয়ামত রয়েছে তা স্মরণ করো। আল্লাহ ছাড়া এমন কোন স্রষ্টা আছে কি, যে তোমাদেরকে আকাশ ও পৃথিবী থেকে রিযিক দান করে? (মনে রেখো) তিনি ছাড়া (তোমাদের) কোন ইলাহ্ নেই। অতএব তোমাদেরকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? (সূরা ফাতির- ৩)
কে সৃষ্টি করে এবং রিযিকের ব্যবস্থা করে?
اَمَّنْ يَّبْدَاُ الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيْدُهٗ وَمَنْ يَّرْزُقُكُمْ مِّنَ السَّمَآءِ وَالْاَرْضِؕ اَاِلٰهٌ مَّعَ اللهِؕ قُلْ هَاتُوْا بُرْهَانَكُمْ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ
তিনি (সেই স্রষ্টা) যিনি সৃষ্টির সূচনা করেন, অতঃপর তার পুনরাবৃত্তি করবেন এবং যিনি তোমাদেরকে আকাশ ও পৃথিবী হতে জীবনোপকরণ দান করেন। সুতরাং আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোন ইলাহ্ আছে কি? বলো, তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে তোমাদের প্রমাণ পেশ করো। (সূরা নামল- ৬৪)
জীবন-মরণের পরিকল্পনা কে করে?
قُلْ مَنْ يَّرْزُقُكُمْ مِّنَ السَّمَآءِ وَالْاَرْضِ اَمَّنْ يَّمْلِكُ السَّمْعَ وَالْاَبْصَارَ وَمَنْ يُّخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَيُخْرِجُ الْمَيِّتَ مِنَ الْحَيِّ وَمَنْ يُّدَبِّرُ الْاَمْرَؕ فَسَيَقُوْلُوْنَ اللهُؕ فَقُلْ اَفَلَا تَتَّقُوْنَ ‐ فَذٰلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمُ الْحَقُّۚ فَمَاذَا بَعْدَ الْحَقِّ اِلَّا الضَّلَالُۚ فَاَنّٰى تُصْرَفُوْنَ
বলো, কে তোমাদেরকে আকাশ ও পৃথিবী হতে জীবনোপকরণ সরবরাহ করেন? অথবা শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি কার কর্তৃত্বাধীন? জীবিতকে মৃত হতে এবং মৃতকে জীবিত হতে কে বের করে আনেন? এবং সকল বিষয় কে নিয়ন্ত্রণ করেন? তখন তারা বলবে, আল্লাহ। বলো, তবুও কি তোমরা সাবধান হবে না? তিনিই আল্লাহ, তোমাদের সত্য প্রতিপালক। সত্য ত্যাগ করার পর বিভ্রান্তি ব্যতীত আর কী অবশিষ্ট থাকে? সুতরাং তোমরা কোথায় চালিত হচ্ছ? (সূরা ইউনুস- ৩১, ৩২)
কে পানি দিয়ে ফসল উৎপাদন করে?
اَمَّنْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ وَاَنْزَلَ لَكُمْ مِّنَ السَّمَآءِ مَآءً ۚ فَاَنْۢبَتْنَا بِهٖ حَدَآئِقَ ذَاتَ بَهْجَةٍۚ مَا كَانَ لَكُمْ اَنْ تُنْۢبِتُوْا شَجَرَهَاؕ اَاِلٰهٌ مَّعَ اللهِؕ بَلْ هُمْ قَوْمٌ يَّعْدِلُوْنَ
তিনি কে, যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি আকাশ হতে তোমাদের জন্য বৃষ্টি বর্ষণ করেন। অতঃপর আমি তা দ্বারা সৃষ্টি করি মনোরম উদ্যান, অথচ তাতে একটি ক্ষুদ্র বৃক্ষ সৃষ্টি করার ক্ষমতাও তোমাদের নেই। অতএব (বলো) আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোন ইলাহ্ আছে কি? বরং তারা সত্যবিচ্যুত সম্প্রদায়। (সূরা নামল- ৬০)
কে মৃত জমিনকে জীবিত করে?
وَلَئِنْ سَاَلْتَهُمْ مَّنْ نَّزَّلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَحْيَا بِهِ الْاَرْضَ مِنْ ۢبَعْدِ مَوْتِهَا لَيَقُوْلُنَّ اللهُؕ قُلِ الْحَمْدُ لِلّٰهِؕ بَلْ اَكْثَرُهُمْ لَا يَعْقِلُوْنَ
যদি তুমি তাদেরকে জিজ্ঞেস কর, আকাশ হতে পানি বর্ষণ করেন কে? অতঃপর তিনি ভূমিকে মৃত্যুর পর জীবিত (সঞ্জীবিত) করেন। অবশ্যই তারা বলবে, আল্লাহ। বলো, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই। কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা অনুধাবন করে না। (সূরা আনকাবূত- ৬৩)
কে নিরুপায় ব্যক্তির দু‘আ কবুল করে?
اَمَّنْ يُّجِيْبُ الْمُضْطَرَّ اِذَا دَعَاهُ وَيَكْشِفُ السُوْٓءَ وَيَجْعَلُكُمْ خُلَفَآءَ الْاَرْضِؕ اَاِلٰهٌ مَّعَ اللهِؕ قَلِيْلًا مَّا تَذَكَّرُوْنَ
তিনি কে, যিনি বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির আহবানে সাড়া দেন, যখন সে তাঁকে ডাকে। অতঃপর তিনি তার বিপদাপদ দূরীভূত করেন এবং তোমাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত করেন। (এসব কাজে) আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোন ইলাহ্ আছে কি? আসলে তোমরা খুব সামান্যই উপদেশ গ্রহণ করে থাক। (সূরা নামল- ৬২)
কে অন্ধকারে পথের সন্ধান দেবে?
اَمَّنْ يَّهْدِيْكُمْ فِيْ ظُلُمَاتِ الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَمَنْ يُّرْسِلُ الرِّيَاحَ بُشْرًا ۢبَيْنَ يَدَيْ رَحْمَتِهٖؕ اَاِلٰهٌ مَّعَ اللهِؕ تَعَالَى اللهُ عَمَّا يُشْرِكُوْنَ
তিনি কে, যিনি তোমাদেরকে স্থলে ও পানির অন্ধকারে পথপ্রদর্শন করেন? এবং স্বীয় অনুগ্রহের প্রাক্কালে সুসংবাদবাহী বায়ু প্রেরণ করেন। অতএব আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোন ইলাহ্ আছে কি? তারা যাকে শরীক করে আল্লাহ তা হতে অনেক ঊর্ধ্বে। (সূরা নামল- ৬৩)
বিশ্বব্যবস্থায় ব্যতিক্রম ঘটলে ঠিক করার ক্ষমতা কার আছে?
اِنَّ اللهَ يُمْسِكُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ اَنْ تَزُوْلًا ۚ وَلَئِنْ زَالَتَاۤ اِنْ اَمْسَكَهُمَا مِنْ اَحَدٍ مِّنْ ۢبَعْدِهٖؕ اِنَّهٗ كَانَ حَلِيْمًا غَفُوْرًا
নিশ্চয় আল্লাহই আসমান ও জমিনকে স্থিরভাবে ধরে রাখেন, যাতে ওরা টলে না যায়। যদি ওরা টলে যায় তবে তিনি ছাড়া কে এদেরকে ধরে রাখবে? তিনি অতিশয় সহনশীল ও পরম ক্ষমাশীল। (সূরা ফাতির- ৪১)
শুধু রাত থাকলে কে দিন এনে দিতে পারবে?
قُلْ اَرَاَيْتُمْ اِنْ جَعَلَ اللهُ عَلَيْكُمُ اللَّيْلَ سَرْمَدًا اِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَنْ اِلٰهٌ غَيْرُ اللهِ يَأْتِيْكُمْ بِضِيَآءٍؕ اَفَلَا تَسْمَعُوْنَ
বলো, তোমরা কি ভেবে দেখেছ, আল্লাহ যদি রাতকে কিয়ামত দিবস পর্যন্ত স্থায়ী করে দেন, তবে আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন ইলাহ্ আছে কি, যে তোমাদেরকে আলো এনে দিতে পারে? তবুও কি তোমরা কর্ণপাত করবে না?। (সূরা ক্বাসাস- ৭১)
শুধু দিন থাকলে কে রাত এনে দিতে পারবে?
قُلْ اَرَاَيْتُمْ اِنْ جَعَلَ اللهُ عَلَيْكُمُ النَّهَارَ سَرْمَدًا اِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَنْ اِلٰهٌ غَيْرُ اللهِ يَأْتِيْكُمْ بِلَيْلٍ تَسْكُنُوْنَ فِيْهِؕ اَفَلَا تُبْصِرُوْنَ
বলো, তোমরা ভেবে দেখছ কি, আল্লাহ যদি দিনকে কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী করে দেন, তবে আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন ইলাহ্ আছে কি, যে তোমাদের জন্য রাতের আবির্ভাব ঘটাবে, যাতে তোমরা বিশ্রাম করতে পার? তবুও কি তোমরা ভেবে দেখবে না? (সূরা ক্বাসাস- ৭২)
রিযিক বন্ধ করে দিলে তা কে সরবরাহ করবে?
اَمَّنْ هٰذَا الَّذِيْ يَرْزُقُكُمْ اِنْ اَمْسَكَ رِزْقَهٗۚ بَلْ لَّجُّوْا فِيْ عُتُوٍّ وَّنُفُوْرٍ
এমন কে আছে যে, যদি তিনি রিযিক বন্ধ করে দেন তাহলে তোমাদেরকে রিযিক দান করবে? বস্তুত তারা অবাধ্যতা ও সত্য বিমুখতায় অবিচল রয়েছে। (সূরা মুলক- ২১)
পানি না থাকলে কে তার ব্যবস্থা করে?
قُلْ اَرَاَيْتُمْ اِنْ اَصْبَحَ مَآؤُكُمْ غَوْرًا فَمَنْ يَّأْتِيْكُمْ بِمَآءٍ مَّعِيْنٍ
বলো, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, যদি তোমাদের পানি ভূগর্ভের তলদেশে চলে যায়, তবে কে তোমাদেরকে প্রবাহমান পানি এনে দেবে? (সূরা মুলক- ৩০)
তোমাদের অঙ্গগুলো স্থায়ী রাখার ক্ষমতা কার আছে?
قُلْ اَرَاَيْتُمْ اِنْ اَخَذَ اللهُ سَمْعَكُمْ وَاَبْصَارَكُمْ وَخَتَمَ عَلٰى قُلُوْبِكُمْ مَّنْ اِلٰهٌ غَيْرُ اللهِ يَأْتِيْكُمْ بِهٖ
বলো, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, আল্লাহ যদি তোমাদের শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি গ্রাস করে নেন এবং তোমাদের হৃদয়ে মোহর মেরে দেন, তবে আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ্ আছে কি যিনি তোমাদেরকে এগুলো ফিরিয়ে দেবেন? (সূরা আন‘আম- ৪৬)
আল্লাহর বিরুদ্ধে কারা তোমাদেরকে সাহায্য করবে?
اَمَّنْ هٰذَا الَّذِيْ هُوَ جُنْدٌ لَّكُمْ يَنْصُرُكُمْ مِّنْ دُوْنِ الرَّحْمٰنِؕ اِنِ الْكَافِرُوْنَ اِلَّا فِيْ غُرُوْرٍ
দয়াময় (আল্লাহ) ব্যতীত তোমাদের এমন কোন সৈন্যবাহিনী আছে কি, যারা তোমাদেরকে সাহায্য করবে? কাফিররা তো ধোঁকায় পড়ে আছে মাত্র। (সূরা মুলক- ২০)
আল্লাহর পাকড়াও থেকে তোমাদেরকে কে রক্ষা করবে?
قُلْ مَنْ يَّكْلَؤُكُمْ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ مِنَ الرَّحْمٰنِؕ بَلْ هُمْ عَنْ ذِكْرِ رَبِّهِمْ مُّعْرِضُوْنَ ‐ اَمْ لَهُمْ اٰلِهَةٌ تَمْنَعُهُمْ مِّنْ دُوْنِنَاؕ لَا يَسْتَطِيْعُوْنَ نَصْرَ اَنْفُسِهِمْ وَلَا هُمْ مِّنَّا يُصْحَبُوْنَ
বলো, রাতে ও দিবসে রহমান হতে কে তোমাদেরকে রক্ষা করবে? তবুও তারা তাদের প্রতিপালকের স্মরণ হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তবে কি আমি ব্যতীত তাদের এমন কোন ইলাহ্ আছে, যারা তাদেরকে রক্ষা করতে পারে? এরা তো নিজেদেরকেই সাহায্য করতে পারে না এবং আমার বিরুদ্ধে তাদের কোন সাহায্যকারীও থাকবে না। (সূরা আম্বিয়া- ৪২, ৪৩)
কে মৃত্যুর পর আবার জীবন দিতে পারে?
قُلْ هَلْ مِنْ شُرَكَآئِكُمْ مَّنْ يَّبْدَاُ الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيْدُهٗؕ قُلِ اللهُ يَبْدَاُ الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيْدُهٗ فَاَنّٰى تُؤْفَكُوْنَ
বলো, তোমরা যাদেরকে শরীক কর তাদের মধ্যে কি এমন কেউ আছে, যে সৃষ্টিকে অস্তিত্ব দান করে এবং পরে তার পুনরাবর্তন ঘটায়? বলো, আল্লাহই সৃষ্টিকে অস্তিত্ব দান করেন এবং পরে তার পুনরাবর্তন ঘটান। সুতরাং তোমরা কেমন করে সত্য থেকে বিচ্যুত হয়ে যাচ্ছ? (সূরা ইউনুস- ৩৪)
اَللهُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ ثُمَّ رَزَقَكُمْ ثُمَّ يُمِيْتُكُمْ ثُمَّ يُحْيِيْكُمْؕ هَلْ مِنْ شُرَكَآئِكُمْ مَّنْ يَّفْعَلُ مِنْ ذٰلِكُمْ مِّنْ شَيْءٍؕ سُبْحَانَهٗ وَتَعَالٰى عَمَّا يُشْرِكُوْنَ
আল্লাহ সেই সত্তা, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাদেরকে রিযিক দান করেছেন। এরপর তিনি তোমাদেরকে মৃত্যু ঘটাবেন, অতঃপর তোমাদেরকে আবার জীবিত করবেন। তোমাদের শরীকদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি, যে এসব কাজের মধ্য থেকে কোন একটি করতে পারে? তারা (তাঁর সাথে) যা কিছু শরীক স্থাপন করে, আল্লাহ তা থেকে অনেক পবিত্র ও মহান। (সূরা রূম- ৪০)
যিনি সৃষ্টি করেন আর যারা করে না উভয়ে কি সমান?
اَفَمَنْ يَّخْلُقُ كَمَنْ لَّا يَخْلُقُؕ اَفَلَا تَذََكَّرُوْنَ
সুতরাং যিনি সৃষ্টি করেন, তিনি কি তারই মতো যে সৃষ্টি করে না? তবুও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না?
(সূরা নাহল- ১৭)
আল্লাহ ছাড়া তাদের কোন সত্য মা‘বুদ আছে কি?
اَمْ لَهُمْ اِلٰهٌ غَيْرُ اللهِ ؕ سُبْحَانَ اللهِ عَمَّا يُشْرِكُوْنَ
নাকি আল্লাহ ব্যতীত তাদের অন্য কোন (সত্য) মা‘বুদ আছে? (জেনে রেখো) তারা যাকে শরীক স্থাপন করে, আল্লাহ তা হতে অনেক পবিত্র। (সূরা তূর- ৪৩)
কে সঠিক পথের সন্ধান দিতে পারে?
قُلْ هَلْ مِنْ شُرَكَآئِكُمْ مَّنْ يَّهْدِيْۤ اِلَى الْحَقِّؕ قُلِ اللهُ يَهْدِيْ لِلْحَقِّؕ اَفَمَنْ يَّهْدِيْۤ اِلَى الْحَقِّ اَحَقُّ اَنْ يُّتَّبَعَ اَمَّنْ لَّا يَهِدِّيْۤ اِلَّاۤ اَنْ يُّهْدٰىۚ فَمَا لَكُمْ كَيْفَ تَحْكُمُوْنَ
বলো, তোমাদের শরীকদের মধ্যে কি এমন কেউ আছে, যে সত্যের দিকে পথপ্রদর্শন করে? বলো, আল্লাহই সত্যের দিকে পথপ্রদর্শন করেন। আর যিনি সত্যের দিকে পথপ্রদর্শন করেন তিনি আনুগত্যের অধিকতর হকদার, নাকি ঐ ব্যক্তি (বেশি হকদার) যাকে পথ না দেখালে সে কোন পথ (দেখতে) পায় না? তোমাদের কী হয়েছে? তোমরা কীভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাক? (সূরা ইউনুস- ৩৫)
আল্লাহকে বাদ দিয়ে তোমরা কোন দিকে যাবে?
فَذٰلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمُ الْحَقُّۚ فَمَاذَا بَعْدَ الْحَقِّ اِلَّا الضَّلَالُۚ فَاَنّٰى تُصْرَفُوْنَ
তিনিই আল্লাহ, তোমাদের সত্য প্রতিপালক। সত্য ত্যাগ করার পর বিভ্রান্তি ব্যতীত আর কী (বাকি) থাকে? সুতরাং তোমাদেরকে কোথায় ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে? (সূরা ইউনুস- ৩২)
ব্যাখ্যা : এখানে এ কথা বলা হয়নি যে, তোমরা কোথায় ফিরে যাচ্ছ? বরং বলা হয়েছে, তোমাদেরকে কোথায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? অর্থাৎ কেউ তোমাদেরকে বিপথগামী করছে এবং তোমরা তার প্রতারণার ফাঁদে পড়ে সহজ ও যুক্তিসঙ্গত কথাও বুঝতে পারছ না।
اَمْ اَنْزَلْنَا عَلَيْهِمْ سُلْطَانًا فَهُوَ يَتَكَلَّمُ بِمَا كَانُوْا بِهٖ يُشْرِكُوْنَ
আমি কি তাদের কাছে এমন কোন দলীল অবতীর্ণ করেছি, যা তাদেরকে আমার সাথে অংশীদার স্থাপন করতে বলে? (সূরা রূম- ৩৫)
وَجَعَلُوْا لِلّٰهِ شُرَكَآءَؕ قُلْ سَمُّوْهُمْؕ اَمْ تُنَبِّئُوْنَهٗ بِمَا لَا يَعْلَمُ فِى الْاَرْضِ اَمْ بِظَاهِرٍ مِّنَ الْقَوْلِ
তারা আল্লাহর সাথে বহু শরীক স্থাপন করেছে। (তাদেরকে) বলো, এদের পরিচয় দাও। তোমরা কি পৃথিবীর মধ্যে এমন কোন বিষয়ের সংবাদ দিতে চাও- যা তিনি (আল্লাহ) জানেন না? নাকি এটা বাহ্যিক কথা মাত্র। (সূরা রা‘দ- ৩৩)
যারা লাভ-ক্ষতির ক্ষমতা রাখে না তাদেরকে ডাকছ কেন?
قُلْ اَفَرَاَيْتُمْ مَّا تَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ اِنْ اَرَادَنِيَ اللهُ بِضُرٍّ هَلْ هُنَّ كَاشِفَاتُ ضُرِّهٖۤ اَوْ اَرَادَنِيْ بِرَحْمَةٍ هَلْ هُنَّ مُمْسِكَاتُ رَحْمَتِهٖ
বলো, তোমরা কি ভেবে দেখেছ যে, যদি আল্লাহ আমার কোন অনিষ্ট চান, তবে তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাক তারা কি সে অনিষ্ট দূর করতে পারবে? অথবা তিনি যদি আমার প্রতি অনুগ্রহ করতে চান, তবে কি তারা সে অনুগ্রহকে বন্ধ করতে পারবে? (সূরা যুমার- ৩৮)
শরীকরা কি কোন শরীয়াত প্রদান করেছে?
اَمْ لَهُمْ شُرَكَآءُ شَرَعُوْا لَهُمْ مِّنَ الدِّيْنِ مَا لَمْ يَأْذَنْ ۢبِهِ اللهُ
তাদের কি এমন কতকগুলো শরীকও আছে, যারা তাদের জন্য দ্বীনের এমন বিধান প্রবর্তন করেছে, যার অনুমতি আল্লাহ দেননি? (সূরা শূরা- ২১)
বিপদে পড়লে কাকে ডাক?
قُلْ اَرَاَيْتَكُمْ اِنْ اَتَاكُمْ عَذَابُ اللهِ اَوْ اَتَتْكُمُ السَّاعَةُ اَغَيْرَ اللهِ تَدْعُوْنَۚ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ ‐ بَلْ اِيَّاهُ تَدْعُوْنَ فَيَكْشِفُ مَا تَدْعُوْنَ اِلَيْهِ اِنْ شَآءَ وَتَنْسَوْنَ مَا تُشْرِكُوْنَ
বলো, তোমরা কি ভেবে দেখেছ যে, যদি আল্লাহর শাস্তি তোমাদের উপর এসে যায় অথবা তোমাদের নিকট কিয়ামত উপস্থিত হয়, তবে তোমরা কি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ডাকবে, যদি তোমরা সত্যবাদী হও? বরং, তোমরা শুধু তাকেই ডাকবে; তোমরা যে কষ্টের জন্য তাকে ডাকবে, তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদের থেকে তা দূর করে দেবেন। ফলে তোমরা যাকে তাঁর শরীক স্থাপন করতে, তাকে ভুলে যাবে। (সূরা আন‘আম- ৪০, ৪১)
قُلْ مَنْ يُّنَجِّيْكُمْ مِّنْ ظُلُمَاتِ الْبَرِّ وَالْبَحْرِ تَدْعُوْنَهٗ تَضَرُّعًا وَّخُفْيَةًۚ لَئِنْ اَنْجَانَا مِنْ هٰذِهٖ لَنَكُوْنَنَّ مِنَ الشَّاكِرِيْنَ ‐ قُلِ اللهُ يُنَجِّيْكُمْ مِّنْهَا وَمِنْ كُلِّ كَرْبٍ ثُمَّ اَنْتُمْ تُشْرِكُوْنَ
বলো, কে তোমাদেরকে স্থলভাগ ও সমুদ্রের অন্ধকার হতে মুক্তি দান করেন? যখন তোমরা বিনম্রভাবে এবং গোপনে তাঁকে ডাকতে থাক (এ বলে) যে, যদি তুমি আমাদেরকে এটা হতে মুক্তি দান কর তবে আমরা অবশ্যই কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হব। বলো, আল্লাহই তোমাদেরকে তা হতে এবং সমস্ত দুঃখ-কষ্ট হতে মুক্তি দান করেন। তারপরও তোমরা তাঁর সাথে শরীক স্থাপন কর। (সূরা আন‘আম- ৬৩, ৬৪)
শরীকরা উপাস্য হলে জাহান্নামে যাবে কেন?
اِنَّكُمْ وَمَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ حَصَبُ جَهَنَّمَؕ اَنْتُمْ لَهَا وَارِدُوْنَ ‐ لَوْ كَانَ هٰۤؤُلَآءِ اٰلِهَةً مَّا وَرَدُوْهَا وَكُلٌّ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের ইবাদাত কর, সেগুলো তো জাহান্নামের ইন্ধন মাত্র; তোমরা সকলে তাতে প্রবেশ করবে। যদি তারা ইলাহ্ হতো, তবে তারা জাহান্নামে প্রবেশ করত না; উপরন্তু তাদের সকলেই তাতে স্থায়ী হবে। (সূরা আম্বিয়া- ৯৮, ৯৯)
এ পৃথিবীর মালিক কে?
قُلْ لِّمَنِ الْاَرْضُ وَمَنْ فِيْهَاۤ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ ‐ سَيَقُوْلُوْنَ لِلّٰهِؕ قُلْ اَفَلَا تَذَكَّرُوْنَ
বলো, এ পৃথিবী এবং এর মধ্যস্থিত সবকিছু কার, যদি তোমরা জেনে থাক? তারা বলবে, আল্লাহর। বলো, তবুও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না?। (সূরা মু’মিনূন- ৮৪, ৮৫)
আসমান ও আরশের মালিক কে?
قُلْ مَنْ رَّبُّ السَّمَاوَاتِ السَّبْعِ وَرَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ ‐ سَيَقُوْلُوْنَ لِلّٰهِؕ قُلْ اَفَلَا تَتَّقُوْنَ
বলো, সপ্তাকাশ এবং মহা-আরশের অধিপতি কে? তারা বলবে, আল্লাহ। বলো, তবুও কি তোমরা সাবধান হবে না?। (সূরা মু’মিনূন- ৮৬, ৮৭)
বিশ্বের সবকিছু কার?
قُلْ لِّمَنْ مَّا فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِؕ قُلْ لِّلّٰهِ
বলো, আসমান ও জমিনে যা আছে তা কার? বলো, আল্লাহরই। (সূরা আন‘আম- ১২)
আসমান ও জমিন কে সৃষ্টি করেছে?
وَلَئِنْ سَاَلْتَهُمْ مَّنْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ لَيَقُوْلُنَّ اللهُؕ قُلِ الْحَمْدُ لِلّٰهِؕ بَلْ اَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ
আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, আসমান ও জমিন কে সৃষ্টি করেছেন, তবে অবশ্যই তারা বলবে, আল্লাহ। বলো, সকল প্রশংসা আল্লাহরই। কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না। (সূরা লুক্বমান- ২৫)
পৃথিবী, নদী, পাহাড় ও সাগর কে সৃষ্টি করেছে?
اَمَّنْ جَعَلَ الْاَرْضَ قَرَارًا وَّجَعَلَ خِلَالَهَاۤ اَنْهَارًا وَّجَعَلَ لَهَا رَوَاسِيَ وَجَعَلَ بَيْنَ الْبَحْرَيْنِ حَاجِزًاؕ اَاِلٰهٌ مَّعَ اللهِ ؕ بَلْ اَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ
তিনি কি ঐ স্রষ্টা নন, যিনি পৃথিবীকে করেছেন বাসোপযোগী এবং তার মাঝে প্রবাহিত করেছেন নদী-নালা এবং তাতে স্থাপন করেছেন সুদৃঢ় পবর্ত ও দু’সাগরের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন অন্তরায়? (বলো) এরপরও আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোন ইলাহ্ আছে কি? তবুও তাদের অধিকাংশই তা জানে না। (সূরা নামল- ৬১)
আল্লাহ ছাড়া কে তোমাদের সৃষ্টিকর্তা?
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اذْكُرُوْا نِعْمَتَ اللهِ عَلَيْكُمْؕ هَلْ مِنْ خَالِقٍ غَيْرُ اللهِ يَرْزُقُكُمْ مِّنَ السَّمَآءِ وَالْاَرْضِؕ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ فَاَنّٰى تُؤْفَكُوْنَ
হে মানুষ! তোমাদের উপর আল্লাহর যেসব নিয়ামত রয়েছে তা স্মরণ করো। আল্লাহ ছাড়া এমন কোন স্রষ্টা আছে কি, যে তোমাদেরকে আকাশ ও পৃথিবী থেকে রিযিক দান করে? (মনে রেখো) তিনি ছাড়া (তোমাদের) কোন ইলাহ্ নেই। অতএব তোমাদেরকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? (সূরা ফাতির- ৩)
কে সৃষ্টি করে এবং রিযিকের ব্যবস্থা করে?
اَمَّنْ يَّبْدَاُ الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيْدُهٗ وَمَنْ يَّرْزُقُكُمْ مِّنَ السَّمَآءِ وَالْاَرْضِؕ اَاِلٰهٌ مَّعَ اللهِؕ قُلْ هَاتُوْا بُرْهَانَكُمْ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ
তিনি (সেই স্রষ্টা) যিনি সৃষ্টির সূচনা করেন, অতঃপর তার পুনরাবৃত্তি করবেন এবং যিনি তোমাদেরকে আকাশ ও পৃথিবী হতে জীবনোপকরণ দান করেন। সুতরাং আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোন ইলাহ্ আছে কি? বলো, তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে তোমাদের প্রমাণ পেশ করো। (সূরা নামল- ৬৪)
জীবন-মরণের পরিকল্পনা কে করে?
قُلْ مَنْ يَّرْزُقُكُمْ مِّنَ السَّمَآءِ وَالْاَرْضِ اَمَّنْ يَّمْلِكُ السَّمْعَ وَالْاَبْصَارَ وَمَنْ يُّخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَيُخْرِجُ الْمَيِّتَ مِنَ الْحَيِّ وَمَنْ يُّدَبِّرُ الْاَمْرَؕ فَسَيَقُوْلُوْنَ اللهُؕ فَقُلْ اَفَلَا تَتَّقُوْنَ ‐ فَذٰلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمُ الْحَقُّۚ فَمَاذَا بَعْدَ الْحَقِّ اِلَّا الضَّلَالُۚ فَاَنّٰى تُصْرَفُوْنَ
বলো, কে তোমাদেরকে আকাশ ও পৃথিবী হতে জীবনোপকরণ সরবরাহ করেন? অথবা শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি কার কর্তৃত্বাধীন? জীবিতকে মৃত হতে এবং মৃতকে জীবিত হতে কে বের করে আনেন? এবং সকল বিষয় কে নিয়ন্ত্রণ করেন? তখন তারা বলবে, আল্লাহ। বলো, তবুও কি তোমরা সাবধান হবে না? তিনিই আল্লাহ, তোমাদের সত্য প্রতিপালক। সত্য ত্যাগ করার পর বিভ্রান্তি ব্যতীত আর কী অবশিষ্ট থাকে? সুতরাং তোমরা কোথায় চালিত হচ্ছ? (সূরা ইউনুস- ৩১, ৩২)
কে পানি দিয়ে ফসল উৎপাদন করে?
اَمَّنْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ وَاَنْزَلَ لَكُمْ مِّنَ السَّمَآءِ مَآءً ۚ فَاَنْۢبَتْنَا بِهٖ حَدَآئِقَ ذَاتَ بَهْجَةٍۚ مَا كَانَ لَكُمْ اَنْ تُنْۢبِتُوْا شَجَرَهَاؕ اَاِلٰهٌ مَّعَ اللهِؕ بَلْ هُمْ قَوْمٌ يَّعْدِلُوْنَ
তিনি কে, যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি আকাশ হতে তোমাদের জন্য বৃষ্টি বর্ষণ করেন। অতঃপর আমি তা দ্বারা সৃষ্টি করি মনোরম উদ্যান, অথচ তাতে একটি ক্ষুদ্র বৃক্ষ সৃষ্টি করার ক্ষমতাও তোমাদের নেই। অতএব (বলো) আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোন ইলাহ্ আছে কি? বরং তারা সত্যবিচ্যুত সম্প্রদায়। (সূরা নামল- ৬০)
কে মৃত জমিনকে জীবিত করে?
وَلَئِنْ سَاَلْتَهُمْ مَّنْ نَّزَّلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَحْيَا بِهِ الْاَرْضَ مِنْ ۢبَعْدِ مَوْتِهَا لَيَقُوْلُنَّ اللهُؕ قُلِ الْحَمْدُ لِلّٰهِؕ بَلْ اَكْثَرُهُمْ لَا يَعْقِلُوْنَ
যদি তুমি তাদেরকে জিজ্ঞেস কর, আকাশ হতে পানি বর্ষণ করেন কে? অতঃপর তিনি ভূমিকে মৃত্যুর পর জীবিত (সঞ্জীবিত) করেন। অবশ্যই তারা বলবে, আল্লাহ। বলো, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই। কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা অনুধাবন করে না। (সূরা আনকাবূত- ৬৩)
কে নিরুপায় ব্যক্তির দু‘আ কবুল করে?
اَمَّنْ يُّجِيْبُ الْمُضْطَرَّ اِذَا دَعَاهُ وَيَكْشِفُ السُوْٓءَ وَيَجْعَلُكُمْ خُلَفَآءَ الْاَرْضِؕ اَاِلٰهٌ مَّعَ اللهِؕ قَلِيْلًا مَّا تَذَكَّرُوْنَ
তিনি কে, যিনি বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির আহবানে সাড়া দেন, যখন সে তাঁকে ডাকে। অতঃপর তিনি তার বিপদাপদ দূরীভূত করেন এবং তোমাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত করেন। (এসব কাজে) আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোন ইলাহ্ আছে কি? আসলে তোমরা খুব সামান্যই উপদেশ গ্রহণ করে থাক। (সূরা নামল- ৬২)
কে অন্ধকারে পথের সন্ধান দেবে?
اَمَّنْ يَّهْدِيْكُمْ فِيْ ظُلُمَاتِ الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَمَنْ يُّرْسِلُ الرِّيَاحَ بُشْرًا ۢبَيْنَ يَدَيْ رَحْمَتِهٖؕ اَاِلٰهٌ مَّعَ اللهِؕ تَعَالَى اللهُ عَمَّا يُشْرِكُوْنَ
তিনি কে, যিনি তোমাদেরকে স্থলে ও পানির অন্ধকারে পথপ্রদর্শন করেন? এবং স্বীয় অনুগ্রহের প্রাক্কালে সুসংবাদবাহী বায়ু প্রেরণ করেন। অতএব আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোন ইলাহ্ আছে কি? তারা যাকে শরীক করে আল্লাহ তা হতে অনেক ঊর্ধ্বে। (সূরা নামল- ৬৩)
বিশ্বব্যবস্থায় ব্যতিক্রম ঘটলে ঠিক করার ক্ষমতা কার আছে?
اِنَّ اللهَ يُمْسِكُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ اَنْ تَزُوْلًا ۚ وَلَئِنْ زَالَتَاۤ اِنْ اَمْسَكَهُمَا مِنْ اَحَدٍ مِّنْ ۢبَعْدِهٖؕ اِنَّهٗ كَانَ حَلِيْمًا غَفُوْرًا
নিশ্চয় আল্লাহই আসমান ও জমিনকে স্থিরভাবে ধরে রাখেন, যাতে ওরা টলে না যায়। যদি ওরা টলে যায় তবে তিনি ছাড়া কে এদেরকে ধরে রাখবে? তিনি অতিশয় সহনশীল ও পরম ক্ষমাশীল। (সূরা ফাতির- ৪১)
শুধু রাত থাকলে কে দিন এনে দিতে পারবে?
قُلْ اَرَاَيْتُمْ اِنْ جَعَلَ اللهُ عَلَيْكُمُ اللَّيْلَ سَرْمَدًا اِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَنْ اِلٰهٌ غَيْرُ اللهِ يَأْتِيْكُمْ بِضِيَآءٍؕ اَفَلَا تَسْمَعُوْنَ
বলো, তোমরা কি ভেবে দেখেছ, আল্লাহ যদি রাতকে কিয়ামত দিবস পর্যন্ত স্থায়ী করে দেন, তবে আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন ইলাহ্ আছে কি, যে তোমাদেরকে আলো এনে দিতে পারে? তবুও কি তোমরা কর্ণপাত করবে না?। (সূরা ক্বাসাস- ৭১)
শুধু দিন থাকলে কে রাত এনে দিতে পারবে?
قُلْ اَرَاَيْتُمْ اِنْ جَعَلَ اللهُ عَلَيْكُمُ النَّهَارَ سَرْمَدًا اِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَنْ اِلٰهٌ غَيْرُ اللهِ يَأْتِيْكُمْ بِلَيْلٍ تَسْكُنُوْنَ فِيْهِؕ اَفَلَا تُبْصِرُوْنَ
বলো, তোমরা ভেবে দেখছ কি, আল্লাহ যদি দিনকে কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী করে দেন, তবে আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন ইলাহ্ আছে কি, যে তোমাদের জন্য রাতের আবির্ভাব ঘটাবে, যাতে তোমরা বিশ্রাম করতে পার? তবুও কি তোমরা ভেবে দেখবে না? (সূরা ক্বাসাস- ৭২)
রিযিক বন্ধ করে দিলে তা কে সরবরাহ করবে?
اَمَّنْ هٰذَا الَّذِيْ يَرْزُقُكُمْ اِنْ اَمْسَكَ رِزْقَهٗۚ بَلْ لَّجُّوْا فِيْ عُتُوٍّ وَّنُفُوْرٍ
এমন কে আছে যে, যদি তিনি রিযিক বন্ধ করে দেন তাহলে তোমাদেরকে রিযিক দান করবে? বস্তুত তারা অবাধ্যতা ও সত্য বিমুখতায় অবিচল রয়েছে। (সূরা মুলক- ২১)
পানি না থাকলে কে তার ব্যবস্থা করে?
قُلْ اَرَاَيْتُمْ اِنْ اَصْبَحَ مَآؤُكُمْ غَوْرًا فَمَنْ يَّأْتِيْكُمْ بِمَآءٍ مَّعِيْنٍ
বলো, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, যদি তোমাদের পানি ভূগর্ভের তলদেশে চলে যায়, তবে কে তোমাদেরকে প্রবাহমান পানি এনে দেবে? (সূরা মুলক- ৩০)
তোমাদের অঙ্গগুলো স্থায়ী রাখার ক্ষমতা কার আছে?
قُلْ اَرَاَيْتُمْ اِنْ اَخَذَ اللهُ سَمْعَكُمْ وَاَبْصَارَكُمْ وَخَتَمَ عَلٰى قُلُوْبِكُمْ مَّنْ اِلٰهٌ غَيْرُ اللهِ يَأْتِيْكُمْ بِهٖ
বলো, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, আল্লাহ যদি তোমাদের শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি গ্রাস করে নেন এবং তোমাদের হৃদয়ে মোহর মেরে দেন, তবে আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ্ আছে কি যিনি তোমাদেরকে এগুলো ফিরিয়ে দেবেন? (সূরা আন‘আম- ৪৬)
আল্লাহর বিরুদ্ধে কারা তোমাদেরকে সাহায্য করবে?
اَمَّنْ هٰذَا الَّذِيْ هُوَ جُنْدٌ لَّكُمْ يَنْصُرُكُمْ مِّنْ دُوْنِ الرَّحْمٰنِؕ اِنِ الْكَافِرُوْنَ اِلَّا فِيْ غُرُوْرٍ
দয়াময় (আল্লাহ) ব্যতীত তোমাদের এমন কোন সৈন্যবাহিনী আছে কি, যারা তোমাদেরকে সাহায্য করবে? কাফিররা তো ধোঁকায় পড়ে আছে মাত্র। (সূরা মুলক- ২০)
আল্লাহর পাকড়াও থেকে তোমাদেরকে কে রক্ষা করবে?
قُلْ مَنْ يَّكْلَؤُكُمْ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ مِنَ الرَّحْمٰنِؕ بَلْ هُمْ عَنْ ذِكْرِ رَبِّهِمْ مُّعْرِضُوْنَ ‐ اَمْ لَهُمْ اٰلِهَةٌ تَمْنَعُهُمْ مِّنْ دُوْنِنَاؕ لَا يَسْتَطِيْعُوْنَ نَصْرَ اَنْفُسِهِمْ وَلَا هُمْ مِّنَّا يُصْحَبُوْنَ
বলো, রাতে ও দিবসে রহমান হতে কে তোমাদেরকে রক্ষা করবে? তবুও তারা তাদের প্রতিপালকের স্মরণ হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তবে কি আমি ব্যতীত তাদের এমন কোন ইলাহ্ আছে, যারা তাদেরকে রক্ষা করতে পারে? এরা তো নিজেদেরকেই সাহায্য করতে পারে না এবং আমার বিরুদ্ধে তাদের কোন সাহায্যকারীও থাকবে না। (সূরা আম্বিয়া- ৪২, ৪৩)
কে মৃত্যুর পর আবার জীবন দিতে পারে?
قُلْ هَلْ مِنْ شُرَكَآئِكُمْ مَّنْ يَّبْدَاُ الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيْدُهٗؕ قُلِ اللهُ يَبْدَاُ الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيْدُهٗ فَاَنّٰى تُؤْفَكُوْنَ
বলো, তোমরা যাদেরকে শরীক কর তাদের মধ্যে কি এমন কেউ আছে, যে সৃষ্টিকে অস্তিত্ব দান করে এবং পরে তার পুনরাবর্তন ঘটায়? বলো, আল্লাহই সৃষ্টিকে অস্তিত্ব দান করেন এবং পরে তার পুনরাবর্তন ঘটান। সুতরাং তোমরা কেমন করে সত্য থেকে বিচ্যুত হয়ে যাচ্ছ? (সূরা ইউনুস- ৩৪)
اَللهُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ ثُمَّ رَزَقَكُمْ ثُمَّ يُمِيْتُكُمْ ثُمَّ يُحْيِيْكُمْؕ هَلْ مِنْ شُرَكَآئِكُمْ مَّنْ يَّفْعَلُ مِنْ ذٰلِكُمْ مِّنْ شَيْءٍؕ سُبْحَانَهٗ وَتَعَالٰى عَمَّا يُشْرِكُوْنَ
আল্লাহ সেই সত্তা, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাদেরকে রিযিক দান করেছেন। এরপর তিনি তোমাদেরকে মৃত্যু ঘটাবেন, অতঃপর তোমাদেরকে আবার জীবিত করবেন। তোমাদের শরীকদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি, যে এসব কাজের মধ্য থেকে কোন একটি করতে পারে? তারা (তাঁর সাথে) যা কিছু শরীক স্থাপন করে, আল্লাহ তা থেকে অনেক পবিত্র ও মহান। (সূরা রূম- ৪০)
যিনি সৃষ্টি করেন আর যারা করে না উভয়ে কি সমান?
اَفَمَنْ يَّخْلُقُ كَمَنْ لَّا يَخْلُقُؕ اَفَلَا تَذََكَّرُوْنَ
সুতরাং যিনি সৃষ্টি করেন, তিনি কি তারই মতো যে সৃষ্টি করে না? তবুও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না?
(সূরা নাহল- ১৭)
আল্লাহ ছাড়া তাদের কোন সত্য মা‘বুদ আছে কি?
اَمْ لَهُمْ اِلٰهٌ غَيْرُ اللهِ ؕ سُبْحَانَ اللهِ عَمَّا يُشْرِكُوْنَ
নাকি আল্লাহ ব্যতীত তাদের অন্য কোন (সত্য) মা‘বুদ আছে? (জেনে রেখো) তারা যাকে শরীক স্থাপন করে, আল্লাহ তা হতে অনেক পবিত্র। (সূরা তূর- ৪৩)
কে সঠিক পথের সন্ধান দিতে পারে?
قُلْ هَلْ مِنْ شُرَكَآئِكُمْ مَّنْ يَّهْدِيْۤ اِلَى الْحَقِّؕ قُلِ اللهُ يَهْدِيْ لِلْحَقِّؕ اَفَمَنْ يَّهْدِيْۤ اِلَى الْحَقِّ اَحَقُّ اَنْ يُّتَّبَعَ اَمَّنْ لَّا يَهِدِّيْۤ اِلَّاۤ اَنْ يُّهْدٰىۚ فَمَا لَكُمْ كَيْفَ تَحْكُمُوْنَ
বলো, তোমাদের শরীকদের মধ্যে কি এমন কেউ আছে, যে সত্যের দিকে পথপ্রদর্শন করে? বলো, আল্লাহই সত্যের দিকে পথপ্রদর্শন করেন। আর যিনি সত্যের দিকে পথপ্রদর্শন করেন তিনি আনুগত্যের অধিকতর হকদার, নাকি ঐ ব্যক্তি (বেশি হকদার) যাকে পথ না দেখালে সে কোন পথ (দেখতে) পায় না? তোমাদের কী হয়েছে? তোমরা কীভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাক? (সূরা ইউনুস- ৩৫)
আল্লাহকে বাদ দিয়ে তোমরা কোন দিকে যাবে?
فَذٰلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمُ الْحَقُّۚ فَمَاذَا بَعْدَ الْحَقِّ اِلَّا الضَّلَالُۚ فَاَنّٰى تُصْرَفُوْنَ
তিনিই আল্লাহ, তোমাদের সত্য প্রতিপালক। সত্য ত্যাগ করার পর বিভ্রান্তি ব্যতীত আর কী (বাকি) থাকে? সুতরাং তোমাদেরকে কোথায় ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে? (সূরা ইউনুস- ৩২)
ব্যাখ্যা : এখানে এ কথা বলা হয়নি যে, তোমরা কোথায় ফিরে যাচ্ছ? বরং বলা হয়েছে, তোমাদেরকে কোথায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? অর্থাৎ কেউ তোমাদেরকে বিপথগামী করছে এবং তোমরা তার প্রতারণার ফাঁদে পড়ে সহজ ও যুক্তিসঙ্গত কথাও বুঝতে পারছ না।
মুশরিকরা শরীকদেরকে আল্লাহর মতো ভালোবাসে :
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّتَّخِذُ مِنْ دُوْنِ اللهِ اَنْدَادًا يُّحِبُّوْنَهُمْ كَحُبِّ اللهِ
মানুষের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে, যারা আল্লাহর পরিবর্তে অপরকে শরীক স্থাপন করে এবং তাদেরকে আল্লাহকে ভালোবাসার ন্যায় ভালোবেসে থাকে। (সূরা বাক্বারা- ১৬৫)
দ্বীনের দাওয়াত তাদের কাছে কঠিন মনে হয় :
كَبُرَ عَلَى الْمُشْرِكِيْنَ مَا تَدْعُوْهُمْ اِلَيْهِ
তুমি মুশরিকদেরকে যার প্রতি আহবান করছ, তা তাদের নিকট কঠিন মনে হয়। (সূরা শূরা- ১৩)
তারা বিপদে পড়লে আল্লাহর দিকে ফিরে আসে :
وَاِذَا مَسَّكُمُ الضُّرُّ فِى الْبَحْرِ ضَلَّ مَنْ تَدْعُوْنَ اِلَّاۤ اِيَّاهُۚ فَلَمَّا نَجَّاكُمْ اِلَى الْبَرِّ اَعْرَضْتُمْؕ وَكَانَ الْاِنْسَانُ كَفُوْرًا
যখন সমুদ্রে তোমাদেরকে বিপদ স্পর্শ করে, তখন কেবল তিনি ব্যতীত অপর যাদেরকে আহবান করে থাক, তারা হারিয়ে যায়। অতঃপর তিনি যখন তোমাদেরকে উদ্ধার করে স্থলে আনেন, তখন তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও। নিশ্চয় মানুষ অতিশয় অকৃতজ্ঞ। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৬৭)
ব্যাখ্যা : মুশরিকদের হৃদয়ের অভ্যন্তরে তাওহীদের প্রমাণ রয়েছে- এ কথাটিই তার সুস্পষ্ট প্রমাণ। তারা যেসব আশার প্রাসাদ গড়ে তুলেছিল সেগুলো যখনই ভেঙে পড়তে থাকে তখনই তাদের অন্তর এই বলে চিৎকার করতে থাকে যে, বিশ্বজাহানের মালিকই আসল শাসন কর্তৃত্বের অধিকারী এবং তাঁরই সাহায্যে তারা নিজেদের ধ্বংস রোধ করতে পারে। সামুদ্রিক ঝড়ের সময় সবার টনক নড়ে যায়। তখন শিরক ও নাস্তিক্যবাদ পরিহার করে সবাই এক আল্লাহকে ডাকতে থাকে। কিন্তু নিরাপদে উপকূলে পেঁঁŠছার পর অল্প সংখ্যক লোকই এ অভিজ্ঞতা থেকে কোন স্থায়ী শিক্ষা লাভ করে।
وَاِذَا مَسَّ الْاِنْسَانَ ضُرٌّ دَعَا رَبَّهٗ مُنِيْبًا اِلَيْهِ ثُمَّ اِذَا خَوَّلَهٗ نِعْمَةً مِّنْهُ نَسِيَ مَا كَانَ يَدْعُوْاۤ اِلَيْهِ مِنْ قَبْلُ وَجَعَلَ لِلّٰهِ اَنْدَادًا لِّيُضِلَّ عَنْ سَبِيْلِهٖؕ قُلْ تَمَتَّعْ بِكُفْرِكَ قَلِيْلًا اِنَّكَ مِنْ اَصْحَابِ النَّارِ
যখন মানুষের উপর কোন বিপদ এসে পড়ে, তখন সে একাগ্রচিত্তে তার প্রতিপালককে আহবান করতে থাকে- তাঁরই অভিমুখী হয়ে। অতঃপর যখন তিনি তাকে নিজের পক্ষ থেকে নিয়ামত দান করেন তখন সে সেসব কথা ভুলে যায়, যার জন্য ইতোপূর্বে তাঁকে আহবান করা হয়েছিল। অতঃপর তারা আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থাপন করে, যাতে তারা অপরকেও আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করতে পারে। বলো, কুফর অবস্থায় কিছুকাল উপভোগ করে নাও, নিশ্চয় তুমি জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা যুমার- ৮)
নিখুঁত সন্তান পেলে শুকরিয়া আদায় করার ওয়াদা করে, কিন্তু পরে শিরক করে :
فَلَمَّاۤ اَثْقَلَتْ دَّعَوَا اللهَ رَبَّهُمَا لَئِنْ اٰتَيْتَنَا صَالِحًا لَّنَكُوْنَنَّ مِنَ الشَّاكِرِيْنَ ‐ فَلَمَّاۤ اٰتَاهُمَا صَالِحًا جَعَلَا لَهٗ شُرَكَآءَ فِيْمَاۤ اٰتَاهُمَا فَتَعَالَى اللهُ عَمَّا يُشْرِكُوْنَ
গর্ভ যখন ভারি হয়, তখন তারা উভয়ে তাদের প্রতিপালক আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে যে, যদি তুমি আমাদেরকে এক পূর্ণাঙ্গ সন্তান দাও তবে অবশ্যই আমরা কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হব। পরে যখন তিনি তাদেরকে এক পূর্ণাঙ্গ সন্তান দান করেন, তখন তারা তাদেরকে যা দেয়া হয় সে সম্বন্ধে আল্লাহর শরীক স্থাপন করে, কিন্তু তারা যাকে শরীক করে আল্লাহ তা অপেক্ষা অনেক ঊর্ধ্বে। (সূরা আ‘রাফ- ১৮৯)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতে কোন বিশেষ পুরুষ ও নারীর কথা বলা হয়নি; বরং মুশরিকদের প্রত্যেকটি পুরুষ ও নারীর অবস্থা এখানে তুলে ধরা হয়েছে। গর্ভাবস্থায় সুস্থ, সবল ও নিখুঁত অবয়বধারী শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার ব্যাপারে আল্লাহর উপরই পূর্ণ ভরসা করা হয়। কিন্তু সেই আশা পূর্ণ হয়ে যদি চাঁদের মতো ফুটফুটে সুন্দর শিশু ভূমিষ্ঠ হয়, তাহলেও জাহেলী কর্মকান্ড নতুন রূপ নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে কোন দেবী, অলী ও পীরের নামে নজরানা নিবেদন করে এবং শিশুকে এমনসব নামে অভিহিত করে মনে হয় যেন সে আল্লাহর নয়; বরং অন্য কারো অনুগ্রহের ফল। প্রথম যে দম্পতির মাধ্যমে পৃথিবীতে মানব বংশের সূচনা হয়েছিল, তার স্রষ্টা ছিলেন আল্লাহ। তখন তার সাহায্যকারী কেউ ছিল না। তারপর প্রত্যেকটি পুরুষ ও নারীর মিলনে যে শিশু জন্ম নেয়, তার স্রষ্টাও সেই একই আল্লাহ। সুতরাং যখন তোমরা কোনকিছুর আশা কর, তখন সেই আল্লাহর কাছেই দু‘আ করে থাক। কিন্তু যখন আশা পূর্ণ হয়ে যায়, তখন তোমাদের মাথায় আবার শিরকের উদ্ভব হয়। এ আয়াতে আল্লাহ যাদের নিন্দা করেছেন তারা ছিল আরবের মুশরিক সম্প্রদায়। তাদের অপরাধ ছিল, তারা সুস্থ-সবল সন্তান জন্মের জন্য আল্লাহর কাছে দু‘আ করত; কিন্তু সন্তান জন্মের পর আল্লাহর এ দানে অন্যদেরকে অংশীদার করত। নিঃসন্দেহে তাদের এ আচরণ ছিল অত্যন্ত খারাপ। কিন্তু বর্তমানে তাওহীদের দাবীদারদের মধ্যে যেসব শিরক দেখা যায় তা এর চেয়েও ভয়াবহ। এ তাওহীদের দাবীদাররা সন্তানও চায় আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যদের কাছে। গর্ভ সঞ্চারের পর আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যদের নামে মান্নত করে এবং সন্তান জন্মের পর তাদেরই আস্তানায় গিয়ে নজরানা নিবেদন করে।
তারা আল্লাহ ও তাদের শরীকদের মধ্যে খাদ্য বণ্টন করে :
وَجَعَلُوْا لِلّٰهِ مِمَّا ذَرَاَ مِنَ الْحَرْثِ وَالْاَنْعَامِ نَصِيْبًا فَقَالُوْا هٰذَا لِلّٰهِ بِزَعْمِهِمْ وَهٰذَا لِشُرَكَآئِنَاۚ فَمَا كَانَ لِشُرَكَآئِهِمْ فَلَا يَصِلُ اِلَى اللهِۚ وَمَا كَانَ لِلّٰهِ فَهُوَ يَصِلُ اِلٰى شُرَكَآئِهِمْؕ سَآءَ مَا يَحْكُمُوْنَ
আল্লাহ যে শস্য ও গবাদি পশু সৃষ্টি করেছেন তন্মধ্য হতে তারা আল্লাহর জন্য একটি অংশ নির্দিষ্ট করে এবং নিজেদের ধারণা অনুযায়ী বলে, এটা আল্লাহর জন্য এবং এটা আমাদের দেবতাদের জন্য। অতঃপর যা তাদের দেবতাদের অংশ তা আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না এবং যা আল্লাহর অংশ তা তাদের দেবতাদের কাছে পৌঁছায়; তারা যা ফায়সালা করে তা কতই না নিকৃষ্ট! (সূরা আন‘আম- ১৩৬)
ব্যাখ্যা : আরবের মুশরিকরা উৎপন্ন শস্যের অর্ধেক আল্লাহর জন্য এবং অপর অর্ধেক দেবতাদের জন্য নির্ধারণ করে নিত। এভাবে গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তুও ভাগ করে কিছু আল্লাহর জন্য এবং কিছু দেবতাদের জন্য নির্ধারণ করে নিত। অতঃপর তারা আল্লাহর অংশ মেহমান এবং গরীবদেরকে দান করে দিত। আর দেবতাদের অংশ প্রতিবেশী এবং চাকরদেরকে দিয়ে দিত। আর আল্লাহর অংশ উত্তম হলে দেবতাদের অংশের সাথে বদল করে নিত। আর দেবতাদের অংশ উত্তম হলে সে অবস্থাতেই রেখে দিত এবং বলত, আল্লাহ ধনী; তাঁর অংশ নিকৃষ্ট হলে কোন ক্ষতি নেই। আর আল্লাহর অংশ হতে কিছু জিনিস দেবতার অংশের সাথে মিশে গেলে সবটুকুই দেবতার জন্য রেখে দিত এবং বলত, এরা অভাবী। তাদের এ আচরণের পরিপ্রেক্ষিতেই আল্লাহ তা‘আলা উক্ত আয়াত নাযিল করেন।
নিজেরাই বিধান তৈরি করে :
وَقَالُوْا هٰذِهٖۤ اَنْعَامٌ وَّحَرْثٌ حِجْرٌ لَّا يَطْعَمُهَاۤ اِلَّا مَنْ نَّشَآءُ بِزَعْمِهِمْ وَاَنْعَامٌ حُرِّمَتْ ظُهُوْرُهَا وَاَنْعَامٌ لَّا يَذْكُرُوْنَ اسْمَ اللهِ عَلَيْهَا افْتِرَآءً عَلَيْهِؕ سَيَجْزِيْهِمْ بِمَا كَانُوْا يَفْتَرُوْنَ ‐ وَقَالُوْا مَا فِيْ بُطُوْنِ هٰذِهِ الْاَنْعَامِ خَالِصَةٌ لِّذُكُوْرِنَا وَمُحَرَّمٌ عَلٰۤى اَزْوَاجِنَاۚ وَاِنْ يَّكُنْ مَّيْتَةً فَهُمْ فِيْهِ شُرَكَآءُؕ سَيَجْزِيْهِمْ وَصْفَهُمْؕ اِنَّهٗ حَكِيْمٌ عَلِيْمٌ
তারা (তাদের ধারণা অনুসারে) বলে, এই গবাদি পশু ও ফসল সুরক্ষিত। আমরা যার জন্য ইচ্ছা সে ছাড়া কেউ এগুলো খেতে পারবে না। (তারা আরো মনে করে যে) কতক গবাদি পশুর পিঠে চড়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং কতক গবাদি পশু যবেহ করার সময় তারা আল্লাহর নাম নেয় না। এসব মিথ্যা রচনার জন্য অতি শীঘ্রই তিনি তাদেরকে প্রতিফল দেবেন। তারা আরো বলে যে, এসব গবাদি পশুর গর্ভে যা আছে তা শুধুমাত্র আমাদের পুরুষদের জন্য নির্দিষ্ট এবং স্ত্রীদের জন্য অবৈধ। আর তা যদি মৃত হয়, তবে এতে সকলের অংশ রয়েছে। তাদের এই কৃতকর্মের প্রতিফল অচিরেই তিনি তাদেরকে প্রদান করবেন। নিশ্চয় তিনি প্রজ্ঞাময় ও সর্বজ্ঞ। (সূরা আন‘আম- ১৩৮, ১৩৯)
সন্তানকে হত্যা করে :
وَكَذٰلِكَ زَيَّنَ لِكَثِيْرٍ مِّنَ الْمُشْرِكِيْنَ قَتْلَ اَوْلَادِهِمْ شُرَكَآؤُهُمْ لِيُرْدُوْهُمْ وَلِيَلْبِسُوْا عَلَيْهِمْ دِيْنَهُمْؕ وَلَوْ شَآءَ اللهُ مَا فَعَلُوْهُ فَذَرْهُمْ وَمَا يَفْتَرُوْنَ
এভাবে তাদের দেবতারা অধিকাংশ মুশরিকদের দৃষ্টিতে তাদের সন্তানদের হত্যাকে শোভন করে দিয়েছে, তাদের ধ্বংস সাধনের জন্য এবং তাদের ধর্ম সম্বন্ধে তাদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য; তবে আল্লাহ ইচ্ছা করলে তারা তা করতে পারত না। সুতরাং তাদেরকে তাদের মিথ্যা নিয়ে থাকতে দাও। (সূরা আন‘আম- ১৩৭)
قَدْ خَسِرَ الَّذِيْنَ قَتَلُوْاۤ اَوْلَادَهُمْ سَفَهًا ۢبِغَيْرِ عِلْمٍ وَّحَرَّمُوْا مَا رَزَقَهُمُ اللهُ افْتِرَآءً عَلَى اللهِؕ قَدْ ضَلُّوْا وَمَا كَانُوْا مُهْتَدِيْنَ
যারা নির্বুদ্ধিতার দরুন ও অজ্ঞতাবশত নিজেদের সন্তানদেরকে হত্যা করে এবং আল্লাহ প্রদত্ত জীবিকাকে আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করার উদ্দেশ্যে নিষিদ্ধ করে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা বিপথগামী হয়েছে এবং তারা হেদায়াতপ্রাপ্তও ছিল না। (সূরা আন‘আম- ১৪০)
শিরকের জন্য আল্লাহকে দায়ী করে :
وَقَالَ الَّذِيْنَ اَشْرَكُوْا لَوْ شَآءَ اللهُ مَا عَبَدْنَا مِنْ دُوْنِهٖ مِنْ شَيْءٍ نَّحْنُ وَلَاۤ اٰبَآؤُنَا وَلَا حَرَّمْنَا مِنْ دُوْنِهٖ مِنْ شَيْءٍؕ كَذٰلِكَ فَعَلَ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ
মুশরিকরা বলবে, আল্লাহ ইচ্ছা করলে আমাদের পিতৃপুরুষরা ও আমরা তাঁকে ব্যতীত অপর কোনকিছুর ইবাদাত করতাম না এবং তাঁর আদেশ ব্যতীত কোনকিছুই নিষিদ্ধ করতাম না। তাদের পূর্ববর্তীরাও এরূপই করত। (সূরা নাহল- ৩৫)
سَيَقُوْلُ الَّذِيْنَ اَشْرَكُوْا لَوْ شَآءَ اللهُ مَاۤ اَشْرَكْنَا وَلَاۤ اٰبَآؤُنَا وَلَا حَرَّمْنَا مِنْ شَيْءٍؕ كَذٰلِكَ كَذَّبَ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ حَتّٰى ذَاقُوْا بَأْسَنَا
যারা শিরক করেছে তারা বলবে, আল্লাহ যদি ইচ্ছা করতেন, তবে আমরা ও আমাদের পূর্বপুরুষরা শিরক করতাম না এবং কোনকিছুই হারাম করতাম না। এভাবে তাদের পূর্ববর্তীরাও মিথ্যা বলেছিল, অবশেষে তারা আমার শাস্তি ভোগ করেছে। (সূরা আন‘আম- ১৪৮)
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّتَّخِذُ مِنْ دُوْنِ اللهِ اَنْدَادًا يُّحِبُّوْنَهُمْ كَحُبِّ اللهِ
মানুষের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে, যারা আল্লাহর পরিবর্তে অপরকে শরীক স্থাপন করে এবং তাদেরকে আল্লাহকে ভালোবাসার ন্যায় ভালোবেসে থাকে। (সূরা বাক্বারা- ১৬৫)
দ্বীনের দাওয়াত তাদের কাছে কঠিন মনে হয় :
كَبُرَ عَلَى الْمُشْرِكِيْنَ مَا تَدْعُوْهُمْ اِلَيْهِ
তুমি মুশরিকদেরকে যার প্রতি আহবান করছ, তা তাদের নিকট কঠিন মনে হয়। (সূরা শূরা- ১৩)
তারা বিপদে পড়লে আল্লাহর দিকে ফিরে আসে :
وَاِذَا مَسَّكُمُ الضُّرُّ فِى الْبَحْرِ ضَلَّ مَنْ تَدْعُوْنَ اِلَّاۤ اِيَّاهُۚ فَلَمَّا نَجَّاكُمْ اِلَى الْبَرِّ اَعْرَضْتُمْؕ وَكَانَ الْاِنْسَانُ كَفُوْرًا
যখন সমুদ্রে তোমাদেরকে বিপদ স্পর্শ করে, তখন কেবল তিনি ব্যতীত অপর যাদেরকে আহবান করে থাক, তারা হারিয়ে যায়। অতঃপর তিনি যখন তোমাদেরকে উদ্ধার করে স্থলে আনেন, তখন তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও। নিশ্চয় মানুষ অতিশয় অকৃতজ্ঞ। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৬৭)
ব্যাখ্যা : মুশরিকদের হৃদয়ের অভ্যন্তরে তাওহীদের প্রমাণ রয়েছে- এ কথাটিই তার সুস্পষ্ট প্রমাণ। তারা যেসব আশার প্রাসাদ গড়ে তুলেছিল সেগুলো যখনই ভেঙে পড়তে থাকে তখনই তাদের অন্তর এই বলে চিৎকার করতে থাকে যে, বিশ্বজাহানের মালিকই আসল শাসন কর্তৃত্বের অধিকারী এবং তাঁরই সাহায্যে তারা নিজেদের ধ্বংস রোধ করতে পারে। সামুদ্রিক ঝড়ের সময় সবার টনক নড়ে যায়। তখন শিরক ও নাস্তিক্যবাদ পরিহার করে সবাই এক আল্লাহকে ডাকতে থাকে। কিন্তু নিরাপদে উপকূলে পেঁঁŠছার পর অল্প সংখ্যক লোকই এ অভিজ্ঞতা থেকে কোন স্থায়ী শিক্ষা লাভ করে।
وَاِذَا مَسَّ الْاِنْسَانَ ضُرٌّ دَعَا رَبَّهٗ مُنِيْبًا اِلَيْهِ ثُمَّ اِذَا خَوَّلَهٗ نِعْمَةً مِّنْهُ نَسِيَ مَا كَانَ يَدْعُوْاۤ اِلَيْهِ مِنْ قَبْلُ وَجَعَلَ لِلّٰهِ اَنْدَادًا لِّيُضِلَّ عَنْ سَبِيْلِهٖؕ قُلْ تَمَتَّعْ بِكُفْرِكَ قَلِيْلًا اِنَّكَ مِنْ اَصْحَابِ النَّارِ
যখন মানুষের উপর কোন বিপদ এসে পড়ে, তখন সে একাগ্রচিত্তে তার প্রতিপালককে আহবান করতে থাকে- তাঁরই অভিমুখী হয়ে। অতঃপর যখন তিনি তাকে নিজের পক্ষ থেকে নিয়ামত দান করেন তখন সে সেসব কথা ভুলে যায়, যার জন্য ইতোপূর্বে তাঁকে আহবান করা হয়েছিল। অতঃপর তারা আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থাপন করে, যাতে তারা অপরকেও আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করতে পারে। বলো, কুফর অবস্থায় কিছুকাল উপভোগ করে নাও, নিশ্চয় তুমি জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা যুমার- ৮)
নিখুঁত সন্তান পেলে শুকরিয়া আদায় করার ওয়াদা করে, কিন্তু পরে শিরক করে :
فَلَمَّاۤ اَثْقَلَتْ دَّعَوَا اللهَ رَبَّهُمَا لَئِنْ اٰتَيْتَنَا صَالِحًا لَّنَكُوْنَنَّ مِنَ الشَّاكِرِيْنَ ‐ فَلَمَّاۤ اٰتَاهُمَا صَالِحًا جَعَلَا لَهٗ شُرَكَآءَ فِيْمَاۤ اٰتَاهُمَا فَتَعَالَى اللهُ عَمَّا يُشْرِكُوْنَ
গর্ভ যখন ভারি হয়, তখন তারা উভয়ে তাদের প্রতিপালক আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে যে, যদি তুমি আমাদেরকে এক পূর্ণাঙ্গ সন্তান দাও তবে অবশ্যই আমরা কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হব। পরে যখন তিনি তাদেরকে এক পূর্ণাঙ্গ সন্তান দান করেন, তখন তারা তাদেরকে যা দেয়া হয় সে সম্বন্ধে আল্লাহর শরীক স্থাপন করে, কিন্তু তারা যাকে শরীক করে আল্লাহ তা অপেক্ষা অনেক ঊর্ধ্বে। (সূরা আ‘রাফ- ১৮৯)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতে কোন বিশেষ পুরুষ ও নারীর কথা বলা হয়নি; বরং মুশরিকদের প্রত্যেকটি পুরুষ ও নারীর অবস্থা এখানে তুলে ধরা হয়েছে। গর্ভাবস্থায় সুস্থ, সবল ও নিখুঁত অবয়বধারী শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার ব্যাপারে আল্লাহর উপরই পূর্ণ ভরসা করা হয়। কিন্তু সেই আশা পূর্ণ হয়ে যদি চাঁদের মতো ফুটফুটে সুন্দর শিশু ভূমিষ্ঠ হয়, তাহলেও জাহেলী কর্মকান্ড নতুন রূপ নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে কোন দেবী, অলী ও পীরের নামে নজরানা নিবেদন করে এবং শিশুকে এমনসব নামে অভিহিত করে মনে হয় যেন সে আল্লাহর নয়; বরং অন্য কারো অনুগ্রহের ফল। প্রথম যে দম্পতির মাধ্যমে পৃথিবীতে মানব বংশের সূচনা হয়েছিল, তার স্রষ্টা ছিলেন আল্লাহ। তখন তার সাহায্যকারী কেউ ছিল না। তারপর প্রত্যেকটি পুরুষ ও নারীর মিলনে যে শিশু জন্ম নেয়, তার স্রষ্টাও সেই একই আল্লাহ। সুতরাং যখন তোমরা কোনকিছুর আশা কর, তখন সেই আল্লাহর কাছেই দু‘আ করে থাক। কিন্তু যখন আশা পূর্ণ হয়ে যায়, তখন তোমাদের মাথায় আবার শিরকের উদ্ভব হয়। এ আয়াতে আল্লাহ যাদের নিন্দা করেছেন তারা ছিল আরবের মুশরিক সম্প্রদায়। তাদের অপরাধ ছিল, তারা সুস্থ-সবল সন্তান জন্মের জন্য আল্লাহর কাছে দু‘আ করত; কিন্তু সন্তান জন্মের পর আল্লাহর এ দানে অন্যদেরকে অংশীদার করত। নিঃসন্দেহে তাদের এ আচরণ ছিল অত্যন্ত খারাপ। কিন্তু বর্তমানে তাওহীদের দাবীদারদের মধ্যে যেসব শিরক দেখা যায় তা এর চেয়েও ভয়াবহ। এ তাওহীদের দাবীদাররা সন্তানও চায় আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যদের কাছে। গর্ভ সঞ্চারের পর আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যদের নামে মান্নত করে এবং সন্তান জন্মের পর তাদেরই আস্তানায় গিয়ে নজরানা নিবেদন করে।
তারা আল্লাহ ও তাদের শরীকদের মধ্যে খাদ্য বণ্টন করে :
وَجَعَلُوْا لِلّٰهِ مِمَّا ذَرَاَ مِنَ الْحَرْثِ وَالْاَنْعَامِ نَصِيْبًا فَقَالُوْا هٰذَا لِلّٰهِ بِزَعْمِهِمْ وَهٰذَا لِشُرَكَآئِنَاۚ فَمَا كَانَ لِشُرَكَآئِهِمْ فَلَا يَصِلُ اِلَى اللهِۚ وَمَا كَانَ لِلّٰهِ فَهُوَ يَصِلُ اِلٰى شُرَكَآئِهِمْؕ سَآءَ مَا يَحْكُمُوْنَ
আল্লাহ যে শস্য ও গবাদি পশু সৃষ্টি করেছেন তন্মধ্য হতে তারা আল্লাহর জন্য একটি অংশ নির্দিষ্ট করে এবং নিজেদের ধারণা অনুযায়ী বলে, এটা আল্লাহর জন্য এবং এটা আমাদের দেবতাদের জন্য। অতঃপর যা তাদের দেবতাদের অংশ তা আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না এবং যা আল্লাহর অংশ তা তাদের দেবতাদের কাছে পৌঁছায়; তারা যা ফায়সালা করে তা কতই না নিকৃষ্ট! (সূরা আন‘আম- ১৩৬)
ব্যাখ্যা : আরবের মুশরিকরা উৎপন্ন শস্যের অর্ধেক আল্লাহর জন্য এবং অপর অর্ধেক দেবতাদের জন্য নির্ধারণ করে নিত। এভাবে গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তুও ভাগ করে কিছু আল্লাহর জন্য এবং কিছু দেবতাদের জন্য নির্ধারণ করে নিত। অতঃপর তারা আল্লাহর অংশ মেহমান এবং গরীবদেরকে দান করে দিত। আর দেবতাদের অংশ প্রতিবেশী এবং চাকরদেরকে দিয়ে দিত। আর আল্লাহর অংশ উত্তম হলে দেবতাদের অংশের সাথে বদল করে নিত। আর দেবতাদের অংশ উত্তম হলে সে অবস্থাতেই রেখে দিত এবং বলত, আল্লাহ ধনী; তাঁর অংশ নিকৃষ্ট হলে কোন ক্ষতি নেই। আর আল্লাহর অংশ হতে কিছু জিনিস দেবতার অংশের সাথে মিশে গেলে সবটুকুই দেবতার জন্য রেখে দিত এবং বলত, এরা অভাবী। তাদের এ আচরণের পরিপ্রেক্ষিতেই আল্লাহ তা‘আলা উক্ত আয়াত নাযিল করেন।
নিজেরাই বিধান তৈরি করে :
وَقَالُوْا هٰذِهٖۤ اَنْعَامٌ وَّحَرْثٌ حِجْرٌ لَّا يَطْعَمُهَاۤ اِلَّا مَنْ نَّشَآءُ بِزَعْمِهِمْ وَاَنْعَامٌ حُرِّمَتْ ظُهُوْرُهَا وَاَنْعَامٌ لَّا يَذْكُرُوْنَ اسْمَ اللهِ عَلَيْهَا افْتِرَآءً عَلَيْهِؕ سَيَجْزِيْهِمْ بِمَا كَانُوْا يَفْتَرُوْنَ ‐ وَقَالُوْا مَا فِيْ بُطُوْنِ هٰذِهِ الْاَنْعَامِ خَالِصَةٌ لِّذُكُوْرِنَا وَمُحَرَّمٌ عَلٰۤى اَزْوَاجِنَاۚ وَاِنْ يَّكُنْ مَّيْتَةً فَهُمْ فِيْهِ شُرَكَآءُؕ سَيَجْزِيْهِمْ وَصْفَهُمْؕ اِنَّهٗ حَكِيْمٌ عَلِيْمٌ
তারা (তাদের ধারণা অনুসারে) বলে, এই গবাদি পশু ও ফসল সুরক্ষিত। আমরা যার জন্য ইচ্ছা সে ছাড়া কেউ এগুলো খেতে পারবে না। (তারা আরো মনে করে যে) কতক গবাদি পশুর পিঠে চড়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং কতক গবাদি পশু যবেহ করার সময় তারা আল্লাহর নাম নেয় না। এসব মিথ্যা রচনার জন্য অতি শীঘ্রই তিনি তাদেরকে প্রতিফল দেবেন। তারা আরো বলে যে, এসব গবাদি পশুর গর্ভে যা আছে তা শুধুমাত্র আমাদের পুরুষদের জন্য নির্দিষ্ট এবং স্ত্রীদের জন্য অবৈধ। আর তা যদি মৃত হয়, তবে এতে সকলের অংশ রয়েছে। তাদের এই কৃতকর্মের প্রতিফল অচিরেই তিনি তাদেরকে প্রদান করবেন। নিশ্চয় তিনি প্রজ্ঞাময় ও সর্বজ্ঞ। (সূরা আন‘আম- ১৩৮, ১৩৯)
সন্তানকে হত্যা করে :
وَكَذٰلِكَ زَيَّنَ لِكَثِيْرٍ مِّنَ الْمُشْرِكِيْنَ قَتْلَ اَوْلَادِهِمْ شُرَكَآؤُهُمْ لِيُرْدُوْهُمْ وَلِيَلْبِسُوْا عَلَيْهِمْ دِيْنَهُمْؕ وَلَوْ شَآءَ اللهُ مَا فَعَلُوْهُ فَذَرْهُمْ وَمَا يَفْتَرُوْنَ
এভাবে তাদের দেবতারা অধিকাংশ মুশরিকদের দৃষ্টিতে তাদের সন্তানদের হত্যাকে শোভন করে দিয়েছে, তাদের ধ্বংস সাধনের জন্য এবং তাদের ধর্ম সম্বন্ধে তাদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য; তবে আল্লাহ ইচ্ছা করলে তারা তা করতে পারত না। সুতরাং তাদেরকে তাদের মিথ্যা নিয়ে থাকতে দাও। (সূরা আন‘আম- ১৩৭)
قَدْ خَسِرَ الَّذِيْنَ قَتَلُوْاۤ اَوْلَادَهُمْ سَفَهًا ۢبِغَيْرِ عِلْمٍ وَّحَرَّمُوْا مَا رَزَقَهُمُ اللهُ افْتِرَآءً عَلَى اللهِؕ قَدْ ضَلُّوْا وَمَا كَانُوْا مُهْتَدِيْنَ
যারা নির্বুদ্ধিতার দরুন ও অজ্ঞতাবশত নিজেদের সন্তানদেরকে হত্যা করে এবং আল্লাহ প্রদত্ত জীবিকাকে আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করার উদ্দেশ্যে নিষিদ্ধ করে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা বিপথগামী হয়েছে এবং তারা হেদায়াতপ্রাপ্তও ছিল না। (সূরা আন‘আম- ১৪০)
শিরকের জন্য আল্লাহকে দায়ী করে :
وَقَالَ الَّذِيْنَ اَشْرَكُوْا لَوْ شَآءَ اللهُ مَا عَبَدْنَا مِنْ دُوْنِهٖ مِنْ شَيْءٍ نَّحْنُ وَلَاۤ اٰبَآؤُنَا وَلَا حَرَّمْنَا مِنْ دُوْنِهٖ مِنْ شَيْءٍؕ كَذٰلِكَ فَعَلَ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ
মুশরিকরা বলবে, আল্লাহ ইচ্ছা করলে আমাদের পিতৃপুরুষরা ও আমরা তাঁকে ব্যতীত অপর কোনকিছুর ইবাদাত করতাম না এবং তাঁর আদেশ ব্যতীত কোনকিছুই নিষিদ্ধ করতাম না। তাদের পূর্ববর্তীরাও এরূপই করত। (সূরা নাহল- ৩৫)
سَيَقُوْلُ الَّذِيْنَ اَشْرَكُوْا لَوْ شَآءَ اللهُ مَاۤ اَشْرَكْنَا وَلَاۤ اٰبَآؤُنَا وَلَا حَرَّمْنَا مِنْ شَيْءٍؕ كَذٰلِكَ كَذَّبَ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ حَتّٰى ذَاقُوْا بَأْسَنَا
যারা শিরক করেছে তারা বলবে, আল্লাহ যদি ইচ্ছা করতেন, তবে আমরা ও আমাদের পূর্বপুরুষরা শিরক করতাম না এবং কোনকিছুই হারাম করতাম না। এভাবে তাদের পূর্ববর্তীরাও মিথ্যা বলেছিল, অবশেষে তারা আমার শাস্তি ভোগ করেছে। (সূরা আন‘আম- ১৪৮)
মুশরিকদের থেকে দূরে থাকার নির্দেশ :
فَاصْدَعْ بِمَا تُؤْمَرُ وَاَعْرِضْ عَنِ الْمُشْرِكِيْنَ
অতএব তুমি যে বিষয়ে আদিষ্ট হয়েছ, তা প্রকাশ্যে প্রচার করো এবং মুশরিকদেরকে উপেক্ষা করো। (সূরা হিজর- ৯৪)
ব্যাখ্যা : এখানে এমনসব লোকদের থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার দাবী জানানো হয়েছে, যারা কোন না কোনভাবে শিরক করে থাকে। শুধু আকীদা-বিশ্বাসের ক্ষেত্রেই নয় বরং কাজকর্ম, ব্যক্তি জীবন, সামষ্টিক জীবন, উপাসনালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আদালত, আইন পরিষদ, রাজনৈতিক মঞ্চ, অর্থনৈতিক বাজার সর্বত্রই যারা নিজেদের চিন্তা ও কর্মের সমগ্র ব্যবস্থাই আল্লাহর আনুগত্য ও গায়রুল্লাহর আনুগত্যের মিশ্রণের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করে রেখেছে, সব ক্ষেত্রেই তাদের পদ্ধতি থেকে নিজেদের পদ্ধতি আলাদা করে নাও। কেননা তাওহীদের অনুসারীরা জীবনের কোন ক্ষেত্রেই শিরকের অনুসারীদের সাথে হাত মিলিয়ে চলতে পারে না। তাদের সাথে মিলে মিশে চলার পরও তাওহীদের দাবী পূরণ হতে থাকবে- এ কথা কল্পনাও করা যায় না। শুধুমাত্র শিরকে জলী (প্রকাশ্য শিরক) থেকে দূরে থাকার আদেশ দেয়া হয়নি বরং শিরকে খফী (গোপন শিরক) থেকেও দূরে থাকার আদেশ দেয়া হয়েছে। কেননা অস্পষ্ট শিরক আরো বেশি বিপজ্জনক। আর তাই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার প্রয়োজনও অনেক বেশি। খফী অর্থ হালকা নয় বরং গোপনে লুকিয়ে থাকা। যে শত্রু লুকিয়ে থাকে বা বন্ধুর ছদ্মবেশে মেলামেশা করছে সে-ই বেশি বিপজ্জনক, যে রোগ ভেতরে ভেতরে স্বাস্থ্যকে খেয়ে ফেলে সেটাই বেশি বিপজ্জনক।
মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার নির্দেশ :
وَادْعُ اِلٰى رَبِّكَ وَلَا تَكُوْنَنَّ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
তুমি তোমার প্রতিপালকের দিকে আহবান করতে থাকো এবং মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সূরা ক্বাসাস- ৮৭)
মুশরিকদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করা নিষেধ :
مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَنْ يَّسْتَغْفِرُوْا لِلْمُشْرِكِيْنَ وَلَوْ كَانُوْاۤ اُولِيْ قُرْبٰى مِنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ اَنَّهُمْ اَصْحَابُ الْجَحِيْمِ
আত্মীয়স্বজন হলেও মুশরিকদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করা নবী এবং মুমিনদের জন্য সংগত নয়, যখন এটা সুস্পষ্ট হয়ে যাবে যে, তারা নিশ্চিত জাহান্নামী। (সূরা তাওবা- ১১৩)
মুশরিক মহিলাদেরকে বিয়ে করা নিষেধ :
وَلَا تَنْكِحُوا الْمُشْرِكَاتِ حَتّٰى يُؤْمِنَّ
তোমরা মুশরিক নারীদেরকে বিয়ে করো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনয়ন করে। (সূরা বাক্বারা- ২২১)
মুশরিক স্বাধীন মহিলা থেকে একজন মুমিন দাসীও উত্তম :
وَلَاَمَةٌ مُّؤْمِنَةٌ خَيْرٌ مِّنْ مُّشْرِكَةٍ وَّلَوْ اَعْجَبَتْكُمْ
একজন ঈমানদার দাসী একজন স্বাধীন মুশরিক মহিলার চেয়ে উত্তম, যদিও ঐ মুশরিক মহিলা (সৌন্দর্যে ও চালচলনে) তোমাদেরকে আশ্চর্যান্বিত করে। (সূরা বাক্বারা- ২২১)
মুশরিক স্বাধীন পুরুষ থেকে একজন মুমিন ক্রীতদাসও উত্তম :
وَلَعَبْدٌ مُّؤْمِنٌ خَيْرٌ مِّنْ مُّشْرِكٍ وَّلَوْ اَعْجَبَكُمْ
একজন ঈমানদার দাস একজন স্বাধীন মুশরিকের চেয়েও উত্তম, যদিও সে তোমাদেরকে (চালচলনে) আশ্চর্যান্বিত করে। (সূরা বাক্বারা- ২২১)
মুশরিকদের উপাস্যদেরকে গালি দেয়া যাবে না :
وَلَا تَسُبُّوا الَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ فَيَسُبُّوا اللهَ عَدْوًا ۢبِغَيْرِ عِلْمٍ
তারা আল্লাহকে ছেড়ে যাদেরকে ডাকে তোমরা তাদেরকে গালি দিয়ো না। কেননা তারা সীমালঙ্ঘন করে অজ্ঞতাবশত আল্লাহকেও গালি দেবে। (সূরা আন‘আম- ১০৮)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ এর অনুসারীদেরকে এ উপদেশ দেয়া হয়েছিল। তাদেরকে বলা হয়েছিল, নিজেদের ইসলাম প্রচারের আবেগে তারা যেন এমন লাগামহীন ও বেসামাল না হয়ে পড়েন, যার ফলে অমুসলিমদের আকীদা-বিশ্বাসের কঠোর সমালোচনা করতে গিয়ে তাদের নেতৃবৃন্দ ও উপাস্যদেরকে গালিগালাজ করে বসেন। কারণ এগুলো তাদেরকে সত্যের নিকটবর্তী করার পরিবর্তে তা থেকে আরো দূরে সরিয়ে নিয়ে যাবে।
এদেরকে দাওয়াত দিতে হবে :
قُلْ اَنَدْعُوْا مِنْ دُوْنِ اللهِ مَا لَا يَنْفَعُنَا وَلَا يَضُرُّنَا وَنُرَدُّ عَلٰۤى اَعْقَابِنَا بَعْدَ اِذْ هَدَانَا اللهُ كَالَّذِى اسْتَهْوَتْهُ الشَّيَاطِيْنُ فِى الْاَرْضِ حَيْرَانَ لَهٗۤ اَصْحَابٌ يَّدْعُوْنَهٗۤ اِلَى الْهُدَى ائْتِنَاؕ قُلْ اِنَّ هُدَى اللهِ هُوَ الْهُدٰىؕ وَاُمِرْنَا لِنُسْلِمَ لِرَبِّ الْعَالَمِيْنَ ‐ وَاَنْ اَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاتَّقُوْهُؕ وَهُوَ الَّذِيْۤ اِلَيْهِ تُحْشَرُوْنَ
বলো, আমরা কি আল্লাহ ব্যতীত এমন কিছুকে ডাকব, যা আমাদের কোন উপকার করতে পারে না এবং অপকারও করতে পারে না? আল্লাহ আমাদেরকে সৎপথ প্রদর্শনের পর আমরা কি সেই ব্যক্তির ন্যায় পূর্বাবস্থায় ফিরে যাব, যাকে শয়তান দুনিয়ায় পথ ভুলিয়ে ক্লান্ত করে দিয়েছে? যদিও তার সহচর তাকে সঠিক পথে আহবান করে বলে, আমাদের কাছে আসো। বলো, আল্লাহর পথই আসল পথ; আমরা জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট আত্মসমর্পণ করতে, সালাত কায়েম করতে ও তাঁকে ভয় করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি। আর তিনি সেই সত্তা, যার দিকে তোমাদের সবাইকে একত্র করা হবে। (সূরা আন‘আম- ৭১, ৭২)
তাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা :
بَرَآءَةٌ مِّنَ اللهِ وَرَسُوْلِهٖۤ اِلَى الَّذِيْنَ عَاهَدْتُّمْ مِّنَ الْمُشْرِكِيْنَ
এ সম্পর্কচ্ছেদ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ হতে সেসব মুশরিকদের সাথে, যাদের সাথে তোমরা পারস্পরিক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিলে। (সূরা তাওবা- ১)
আশ্রয় চাইলে সুযোগ দিতে হবে :
وَاِنْ اَحَدٌ مِّنَ الْمُشْرِكِيْنَ اسْتَجَارَكَ فَاَجِرْهُ حَتّٰى يَسْمَعَ كَلَامَ اللهِ ثُمَّ اَبْلِغْهُ مَأْمَنَهٗؕ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ قَوْمٌ لَّا يَعْلَمُوْنَ
মুশরিকদের মধ্যে কেউ তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করলে, তুমি তাকে আশ্রয় দেবে। যাতে করে সে তোমাদের বাণী শুনতে পায়; অতঃপর তাকে তার নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেবে; কারণ তারা অজ্ঞ লোক। (সূরা তাওবা- ৬)
মুশরিকদের সাথে জিহাদ করার জন্য উৎসাহ প্রদান :
قَاتِلُوْهُمْ يُعَذِّبْهُمُ اللهُ بِاَيْدِيْكُمْ وَيُخْزِهِمْ وَيَنْصُرْكُمْ عَلَيْهِمْ وَيَشْفِ صُدُوْرَ قَوْمٍ مُّؤْمِنِيْنَ
তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করবে। আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের হাতে শাস্তি দেবেন, তাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন, তাদের উপর তোমাদেরকে বিজয়ী করবেন এবং মুমিনদের অন্তরকে প্রশান্ত করবেন। (সূরা তাওবা- ১৪)
তারা মসজিদে প্রবেশ করতে পারবে না :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنَّمَا الْمُشْرِكُوْنَ نَجَسٌ فَلَا يَقْرَبُوا الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ بَعْدَ عَامِهِمْ هٰذَا
হে মুমিনগণ! নিশ্চয় মুশরিকরা অপবিত্র; সুতরাং এ বৎসরের পর তারা যেন মাসজিদুল হারামের নিকটেও না আসে। (সূরা তাওবা- ২৮)
فَاصْدَعْ بِمَا تُؤْمَرُ وَاَعْرِضْ عَنِ الْمُشْرِكِيْنَ
অতএব তুমি যে বিষয়ে আদিষ্ট হয়েছ, তা প্রকাশ্যে প্রচার করো এবং মুশরিকদেরকে উপেক্ষা করো। (সূরা হিজর- ৯৪)
ব্যাখ্যা : এখানে এমনসব লোকদের থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার দাবী জানানো হয়েছে, যারা কোন না কোনভাবে শিরক করে থাকে। শুধু আকীদা-বিশ্বাসের ক্ষেত্রেই নয় বরং কাজকর্ম, ব্যক্তি জীবন, সামষ্টিক জীবন, উপাসনালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আদালত, আইন পরিষদ, রাজনৈতিক মঞ্চ, অর্থনৈতিক বাজার সর্বত্রই যারা নিজেদের চিন্তা ও কর্মের সমগ্র ব্যবস্থাই আল্লাহর আনুগত্য ও গায়রুল্লাহর আনুগত্যের মিশ্রণের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করে রেখেছে, সব ক্ষেত্রেই তাদের পদ্ধতি থেকে নিজেদের পদ্ধতি আলাদা করে নাও। কেননা তাওহীদের অনুসারীরা জীবনের কোন ক্ষেত্রেই শিরকের অনুসারীদের সাথে হাত মিলিয়ে চলতে পারে না। তাদের সাথে মিলে মিশে চলার পরও তাওহীদের দাবী পূরণ হতে থাকবে- এ কথা কল্পনাও করা যায় না। শুধুমাত্র শিরকে জলী (প্রকাশ্য শিরক) থেকে দূরে থাকার আদেশ দেয়া হয়নি বরং শিরকে খফী (গোপন শিরক) থেকেও দূরে থাকার আদেশ দেয়া হয়েছে। কেননা অস্পষ্ট শিরক আরো বেশি বিপজ্জনক। আর তাই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার প্রয়োজনও অনেক বেশি। খফী অর্থ হালকা নয় বরং গোপনে লুকিয়ে থাকা। যে শত্রু লুকিয়ে থাকে বা বন্ধুর ছদ্মবেশে মেলামেশা করছে সে-ই বেশি বিপজ্জনক, যে রোগ ভেতরে ভেতরে স্বাস্থ্যকে খেয়ে ফেলে সেটাই বেশি বিপজ্জনক।
মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার নির্দেশ :
وَادْعُ اِلٰى رَبِّكَ وَلَا تَكُوْنَنَّ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
তুমি তোমার প্রতিপালকের দিকে আহবান করতে থাকো এবং মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সূরা ক্বাসাস- ৮৭)
মুশরিকদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করা নিষেধ :
مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَنْ يَّسْتَغْفِرُوْا لِلْمُشْرِكِيْنَ وَلَوْ كَانُوْاۤ اُولِيْ قُرْبٰى مِنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ اَنَّهُمْ اَصْحَابُ الْجَحِيْمِ
আত্মীয়স্বজন হলেও মুশরিকদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করা নবী এবং মুমিনদের জন্য সংগত নয়, যখন এটা সুস্পষ্ট হয়ে যাবে যে, তারা নিশ্চিত জাহান্নামী। (সূরা তাওবা- ১১৩)
মুশরিক মহিলাদেরকে বিয়ে করা নিষেধ :
وَلَا تَنْكِحُوا الْمُشْرِكَاتِ حَتّٰى يُؤْمِنَّ
তোমরা মুশরিক নারীদেরকে বিয়ে করো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনয়ন করে। (সূরা বাক্বারা- ২২১)
মুশরিক স্বাধীন মহিলা থেকে একজন মুমিন দাসীও উত্তম :
وَلَاَمَةٌ مُّؤْمِنَةٌ خَيْرٌ مِّنْ مُّشْرِكَةٍ وَّلَوْ اَعْجَبَتْكُمْ
একজন ঈমানদার দাসী একজন স্বাধীন মুশরিক মহিলার চেয়ে উত্তম, যদিও ঐ মুশরিক মহিলা (সৌন্দর্যে ও চালচলনে) তোমাদেরকে আশ্চর্যান্বিত করে। (সূরা বাক্বারা- ২২১)
মুশরিক স্বাধীন পুরুষ থেকে একজন মুমিন ক্রীতদাসও উত্তম :
وَلَعَبْدٌ مُّؤْمِنٌ خَيْرٌ مِّنْ مُّشْرِكٍ وَّلَوْ اَعْجَبَكُمْ
একজন ঈমানদার দাস একজন স্বাধীন মুশরিকের চেয়েও উত্তম, যদিও সে তোমাদেরকে (চালচলনে) আশ্চর্যান্বিত করে। (সূরা বাক্বারা- ২২১)
মুশরিকদের উপাস্যদেরকে গালি দেয়া যাবে না :
وَلَا تَسُبُّوا الَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ فَيَسُبُّوا اللهَ عَدْوًا ۢبِغَيْرِ عِلْمٍ
তারা আল্লাহকে ছেড়ে যাদেরকে ডাকে তোমরা তাদেরকে গালি দিয়ো না। কেননা তারা সীমালঙ্ঘন করে অজ্ঞতাবশত আল্লাহকেও গালি দেবে। (সূরা আন‘আম- ১০৮)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ এর অনুসারীদেরকে এ উপদেশ দেয়া হয়েছিল। তাদেরকে বলা হয়েছিল, নিজেদের ইসলাম প্রচারের আবেগে তারা যেন এমন লাগামহীন ও বেসামাল না হয়ে পড়েন, যার ফলে অমুসলিমদের আকীদা-বিশ্বাসের কঠোর সমালোচনা করতে গিয়ে তাদের নেতৃবৃন্দ ও উপাস্যদেরকে গালিগালাজ করে বসেন। কারণ এগুলো তাদেরকে সত্যের নিকটবর্তী করার পরিবর্তে তা থেকে আরো দূরে সরিয়ে নিয়ে যাবে।
এদেরকে দাওয়াত দিতে হবে :
قُلْ اَنَدْعُوْا مِنْ دُوْنِ اللهِ مَا لَا يَنْفَعُنَا وَلَا يَضُرُّنَا وَنُرَدُّ عَلٰۤى اَعْقَابِنَا بَعْدَ اِذْ هَدَانَا اللهُ كَالَّذِى اسْتَهْوَتْهُ الشَّيَاطِيْنُ فِى الْاَرْضِ حَيْرَانَ لَهٗۤ اَصْحَابٌ يَّدْعُوْنَهٗۤ اِلَى الْهُدَى ائْتِنَاؕ قُلْ اِنَّ هُدَى اللهِ هُوَ الْهُدٰىؕ وَاُمِرْنَا لِنُسْلِمَ لِرَبِّ الْعَالَمِيْنَ ‐ وَاَنْ اَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاتَّقُوْهُؕ وَهُوَ الَّذِيْۤ اِلَيْهِ تُحْشَرُوْنَ
বলো, আমরা কি আল্লাহ ব্যতীত এমন কিছুকে ডাকব, যা আমাদের কোন উপকার করতে পারে না এবং অপকারও করতে পারে না? আল্লাহ আমাদেরকে সৎপথ প্রদর্শনের পর আমরা কি সেই ব্যক্তির ন্যায় পূর্বাবস্থায় ফিরে যাব, যাকে শয়তান দুনিয়ায় পথ ভুলিয়ে ক্লান্ত করে দিয়েছে? যদিও তার সহচর তাকে সঠিক পথে আহবান করে বলে, আমাদের কাছে আসো। বলো, আল্লাহর পথই আসল পথ; আমরা জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট আত্মসমর্পণ করতে, সালাত কায়েম করতে ও তাঁকে ভয় করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি। আর তিনি সেই সত্তা, যার দিকে তোমাদের সবাইকে একত্র করা হবে। (সূরা আন‘আম- ৭১, ৭২)
তাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা :
بَرَآءَةٌ مِّنَ اللهِ وَرَسُوْلِهٖۤ اِلَى الَّذِيْنَ عَاهَدْتُّمْ مِّنَ الْمُشْرِكِيْنَ
এ সম্পর্কচ্ছেদ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ হতে সেসব মুশরিকদের সাথে, যাদের সাথে তোমরা পারস্পরিক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিলে। (সূরা তাওবা- ১)
আশ্রয় চাইলে সুযোগ দিতে হবে :
وَاِنْ اَحَدٌ مِّنَ الْمُشْرِكِيْنَ اسْتَجَارَكَ فَاَجِرْهُ حَتّٰى يَسْمَعَ كَلَامَ اللهِ ثُمَّ اَبْلِغْهُ مَأْمَنَهٗؕ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ قَوْمٌ لَّا يَعْلَمُوْنَ
মুশরিকদের মধ্যে কেউ তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করলে, তুমি তাকে আশ্রয় দেবে। যাতে করে সে তোমাদের বাণী শুনতে পায়; অতঃপর তাকে তার নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেবে; কারণ তারা অজ্ঞ লোক। (সূরা তাওবা- ৬)
মুশরিকদের সাথে জিহাদ করার জন্য উৎসাহ প্রদান :
قَاتِلُوْهُمْ يُعَذِّبْهُمُ اللهُ بِاَيْدِيْكُمْ وَيُخْزِهِمْ وَيَنْصُرْكُمْ عَلَيْهِمْ وَيَشْفِ صُدُوْرَ قَوْمٍ مُّؤْمِنِيْنَ
তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করবে। আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের হাতে শাস্তি দেবেন, তাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন, তাদের উপর তোমাদেরকে বিজয়ী করবেন এবং মুমিনদের অন্তরকে প্রশান্ত করবেন। (সূরা তাওবা- ১৪)
তারা মসজিদে প্রবেশ করতে পারবে না :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنَّمَا الْمُشْرِكُوْنَ نَجَسٌ فَلَا يَقْرَبُوا الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ بَعْدَ عَامِهِمْ هٰذَا
হে মুমিনগণ! নিশ্চয় মুশরিকরা অপবিত্র; সুতরাং এ বৎসরের পর তারা যেন মাসজিদুল হারামের নিকটেও না আসে। (সূরা তাওবা- ২৮)
মুশরিকদের প্রতি হুশিয়ারী :
فَلَا تَكُ فِيْ مِرْيَةٍ مِّمَّا يَعْبُدُ هٰۤؤُلَآءِؕ مَا يَعْبُدُوْنَ اِلَّا كَمَا يَعْبُدُ اٰبَآؤُهُمْ مِّنْ قَبْلُؕ وَاِنَّا لَمُوَفُّوْهُمْ نَصِيْبَهُمْ غَيْرَ مَنْقُوْصٍ
সুতরাং তারা যাদের ইবাদাত করে তাদের সম্বন্ধে সংশয়ে থেকো না, ইতোপূর্বে তাদের পিতৃপুরুষরা যাদের ইবাদাত করত তারা তো কেবল তাদেরই ইবাদাত করে। অবশ্যই আমি তাদেরকে তাদের প্রাপ্য পরিপূর্ণভাবে আদায় করব এবং কোনকিছুই হ্রাস করব না। (সূরা হুদ- ১০৯)
আল্লাহ তাদের কাজকর্ম দেখছেন :
وَالَّذِيْنَ اتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِهٖۤ اَوْلِيَآءَ اللهُ حَفِيْظٌ عَلَيْهِمْ وَمَاۤ اَنْتَ عَلَيْهِمْ بِوَكِيْلٍ
যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্য কাউকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে, আল্লাহ তাদের প্রতি কঠোর দৃষ্টি রাখেন। আর তুমি তাদের তত্ত্বাবধায়ক নও। (সূরা শূরা- ৬)
তারা তাদের পরিণাম সম্পর্কে জানতে পারবে :
اَلَّذِيْنَ يَجْعَلُوْنَ مَعَ اللهِ اِلٰهًا اٰخَرَۚ فَسَوْفَ يَعْلَمُوْنَ
যারা আল্লাহর সাথে অপর কোন ইলাহ্ নির্ধারণ করেছে, অতি শীঘ্রই তারা (এর পরিণাম সম্পর্কে) জানতে পারবে। (সূরা হিজর- ৯৬)
মৃত্যুর সময় শরীকরা কোন কাজে আসবে না :
حَتّٰۤى اِذَا جَآءَتْهُمْ رُسُلُنَا يَتَوَفَّوْنَهُمْ قَالُوْاۤ اَيْنَ مَا كُنْتُمْ تَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِؕ قَالُوْا ضَلُّوْا عَنَّا وَشَهِدُوْا عَلٰۤى اَنْفُسِهِمْ اَنَّهُمْ كَانُوْا كَافِرِيْنَ
যখন আমার ফেরেশতাগণ জান কবজের জন্য তাদের নিকট আসবে ও জিজ্ঞেস করবে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে ডাকতে তারা কোথায়? তারা বলবে, তারা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। সেদিন তারা নিজেদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে যে, নিশ্চয় তারা কাফির ছিল। (সূরা আ‘রাফ- ৩৭)
পরকালে মুশরিকদের কাছে আল্লাহ প্রশ্ন করবেন :
وَيَوْمَ نَحْشُرُهُمْ جَمِيْعًا ثُمَّ نَقُوْلُ لِلَّذِيْنَ اَشْرَكُوْاۤ اَيْنَ شُرَكَآؤُكُمُ الَّذِيْنَ كُنْتُمْ تَزْعُمُوْنَ
স্মরণ করো, যেদিন তাদের সকলকে একত্র করব। অতঃপর মুশরিকদেরকে বলব, তোমরা যাদেরকে আমার শরীক মনে করতে তারা কোথায়? (সূরা আন‘আম- ২২)
ثُمَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يُخْزِيْهِمْ وَيَقُوْلُ اَيْنَ شُرَكَآئِىَ الَّذِيْنَ كُنْتُمْ تُشَآقُّوْنَ فِيْهِمْؕ قَالَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْعِلْمَ اِنَّ الْخِزْيَ الْيَوْمَ وَالسُّوْٓءَ عَلَى الْكَافِرِيْنَ
অতঃপর কিয়ামতের দিন তিনি তাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন এবং বলবেন, আমার সেসব শরীকরা কোথায়, যাদের সম্বন্ধে তোমরা বাক-বিতন্ডায় লিপ্ত হতে? তখন যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছিল তারা বলবে, আজ কাফিরদের জন্য শুধু লাঞ্ছনা ও অমঙ্গল। (সূরা নাহল- ২৭)
মুশরিকরা মিথ্যা জবাব দেবে :
ثُمَّ لَمْ تَكُنْ فِتْنَتُهُمْ اِلَّاۤ اَنْ قَالُوْا وَاللهِ رَبِّنَا مَا كُنَّا مُشْرِكِيْنَ
অতঃপর তাদের এটা ছাড়া বলার মতো অন্য কোন অজুহাত থাকবে না- হে আমাদের প্রতিপালক! আল্লাহর শপথ, আমরা তো মুশরিক ছিলাম না। (সূরা আন‘আম- ২৩)
মিথ্যা বললেও আযাব থেকে বাঁচতে পারবে না :
ثُمَّ قِيْلَ لَهُمْ اَيْنَ مَا كُنْتُمْ تُشْرِكُوْنَۚ مِنْ دُوْنِ اللهِ قَالُوْا ضَلُّوْا عَنَّا بَلْ لَّمْ نَكُنْ نَّدْعُوْا مِنْ قَبْلُ شَيْئًاؕ كَذٰلِكَ يُضِلُّ اللهُ الْكَافِرِيْنَ ‐ ذٰلِكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَفْرَحُوْنَ فِى الْاَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَبِمَا كُنْتُمْ تَمْرَحُوْنَ ‐ اُدْخُلُوْاۤ اَبْوَابَ جَهَنَّمَ خَالِدِيْنَ فِيْهَاۚ فَبِئْسَ مَثْوَى الْمُتَكَبِّرِيْنَ
অতঃপর তাদেরকে বলা হবে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে (তাঁর) শরীক স্থাপন করতে তারা কোথায়? তারা বলবে, তারা তো আমাদের নিকট হতে অদৃশ্য হয়ে গেছে। বস্তুত ইতোপূর্বে আমরা তো কাউকে ডাকিনি। এভাবে আল্লাহ কাফিরদেরকে বিভ্রান্ত করবেন। এটা এ কারণে যে, তোমরা পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে উল্লাস করতে এবং তোমরা অহংকার করে বেড়াতে। সুতরাং তোমরা স্থায়ীভাবে অবস্থানের জন্য জাহান্নামের দ্বারসমূহে প্রবেশ করো; অহংকারীদের আবাসস্থল কতই না নিকৃষ্ট! (সূরা মু’মিন, ৭৩-৭৬)
আল্লাহ শিরকের উপর প্রমাণ পেশ করতে বলবেন :
وَنَزَعْنَا مِنْ كُلِّ اُمَّةٍ شَهِيْدًا فَقُلْنَا هَاتُوْا بُرْهَانَكُمْ فَعَلِمُوْاۤ اَنَّ الْحَقَّ لِلّٰهِ وَضَلَّ عَنْهُمْ مَّا كَانُوْا يَفْتَرُوْنَ
প্রত্যেক সম্প্রদায় হতে আমি একজন সাক্ষী বের করে আনব এবং বলব, তোমাদের প্রমাণ উপস্থিত করো। তখন তারা জানতে পারবে, সত্য (ইলাহ হওয়ার অধিকার) কেবল আল্লাহরই এবং তারা যা উদ্ভাবন করত তা তাদের নিকট হতে হারিয়ে গেছে। (সূরা ক্বাসাস- ৭৫)
হাশরের দিন শরীকরা উধাও হয়ে যাবে :
وَلَقَدْ جِئْتُمُوْنَا فُرَادٰى كَمَا خَلَقْنَاكُمْ اَوَّلَ مَرَّةٍ وَّتَرَكْتُمْ مَّا خَوَّلْنَاكُمْ وَرَآءَ ظُهُوْرِكُمْۚ وَمَا نَرٰى مَعَكُمْ شُفَعَآءَكُمُ الَّذِيْنَ زَعَمْتُمْ اَنَّهُمْ فِيْكُمْ شُرَكَآءُ
আজ তোমরা তো আমার নিকট নিঃসঙ্গ অবস্থায় এসেছ, যেমনিভাবে আমি তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম। তোমাদেরকে যা দিয়েছিলাম তা তোমরা পেছনে ফেলে এসেছ। আজ তোমাদের সেই সুপারিশকারীদেরকেও তো তোমাদের সাথে দেখছি না। (সূরা আন‘আম- ৯৪)
وَضَلَّ عَنْهُمْ مَّا كَانُوْا يَفْتَرُوْنَ
তাদের উদ্ভাবিত মিথ্যা তাদের নিকট হতে হারিয়ে যাবে। (সূরা ইউনুস- ৩০)
وَضَلَّ عَنْهُمْ مَّا كَانُوْا يَدْعُوْنَ مِنْ قَبْلُ وَظَنُّوْا مَا لَهُمْ مِّنْ مَّحِيْصٍ
পূর্বে তারা যাদেরকে আহবান করত তারা অদৃশ্য হয়ে যাবে এবং অংশীবাদীরা উপলব্ধি করবে যে, তাদের মুক্তির কোন উপায় নেই। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৪৮)
মুশরিক ও শরীকদের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি হবে :
وَاتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِ اللهِ اٰلِهَةً لِّيَكُوْنُوْا لَهُمْ عِزًّا ‐ كَلَّاؕ سَيَكْفُرُوْنَ بِعِبَادَتِهِمْ وَيَكُوْنُوْنَ عَلَيْهِمْ ضِدًّا
তারা আল্লাহ ব্যতীত অন্য ইলাহ্ গ্রহণ করে এজন্য যে, যাতে তারা তাদের সাহায্যকারী হতে পারে। কখনো নয়; অচিরেই তারা তাদের ইবাদাতকে অস্বীকার করবে এবং তাদের বিরোধী হয়ে যাবে। (সূরা মারইয়াম- ৮১, ৮২)
لَقَدْ تَقَطَّعَ بَيْنَكُمْ وَضَلَّ عَنْكُمْ مَّا كُنْتُمْ تَزْعُمُوْنَ
অবশ্যই (আজ) তোমাদের মধ্যকার সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে এবং তোমরা যা ধারণা করেছিলে তাও নিষ্ফল হয়ে গেছে। (সূরা আন‘আম- ৯৪)
শরীকরা মুশরিকদের ইবাদাতকে অস্বীকার করবে :
وَاِذَا حُشِرَ النَّاسُ كَانُوْا لَهُمْ اَعْدَآءً وَّكَانُوْا بِعِبَادَتِهِمْ كَافِرِيْنَ
যখন সব মানুষকে একত্র করা হবে, তখন তারা যাদেরকে ডাকত তারা তাদের শত্রু হয়ে যাবে এবং তাদের ইবাদাতকে অস্বীকার করবে। (সূরা আহকাফ- ৬)
اِنْ تَدْعُوْهُمْ لَا يَسْمَعُوْا دُعَآءَكُمْۚ وَلَوْ سَمِعُوْا مَا اسْتَجَابُوْا لَكُمْؕ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكْفُرُوْنَ بِشِرْكِكُمْؕ وَلَا يُنَبِّئُكَ مِثْلُ خَبِيْرٍ
যদি তোমরা তাদেরকে আহবান কর, তবে তারা তোমাদের আহবান শুনতে পাবে না। আর যদিও শুনতে পায় তবে তারা তোমাদের আহবানে সাড়া দেবে না। কিয়ামতের দিন তারা তোমাদের শিরক সাব্যস্ত করাকে অস্বীকার করবে। তখন সর্বজ্ঞ আল্লাহ ছাড়া কেউই তোমাকে সঠিক সংবাদ দিতে পারবে না। (সূরা ফাতির- ১৪)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ তারা পরিষ্কার বলে দেবে, আমরা কখনো এদেরকে বলিনি যে, আমরা আল্লাহর শরীক; সুতরাং তোমরা আমাদের ইবাদাত করো। তাছাড়া আমরা এও জানতাম না যে, তোমরা আমাদেরকে আল্লাহর সাথে শরীক করেছ এবং আমাদের কাছে প্রার্থনা করেছ। আর তোমাদের কোন প্রার্থনাও আমাদের কাছে আসেনি এবং কোন নজরানা বা উৎসর্গও আমাদের হস্তগত হয়নি।
وَيَوْمَ نَحْشُرُهُمْ جَمِيْعًا ثُمَّ نَقُوْلُ لِلَّذِيْنَ اَشْرَكُوْا مَكَانَكُمْ اَنْتُمْ وَشُرَكَآؤُكُمْۚ فَزَيَّلْنَا بَيْنَهُمْ وَقَالَ شُرَكَآؤُهُمْ مَّا كُنْتُمْ اِيَّانَا تَعْبُدُوْنَ ‐ فَكَفٰى بِاللهِ شَهِيْدًاۘ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ اِنْ كُنَّا عَنْ عِبَادَتِكُمْ لَغَافِلِيْنَ
সেদিন আমি তাদের সকলকে একত্র করে মুশরিকদেরকে বলব, তোমরা এবং তোমরা যাদেরকে শরীক করেছিলে তারা স্ব স্ব স্থানে অবস্থান করো। অতঃপর আমি তাদেরকে পরস্পর হতে পৃথক করে দেব, তখন তারা যাদেরকে শরীক করেছিল তারা বলবে, তোমরা তো আমাদের ইবাদাত করতে না। আমরা যে তোমাদের সম্পর্কে গাফিল ছিলাম- এর সাক্ষ্য হিসেবে আমাদের ও তোমাদের মধ্যে আল্লাহই যথেষ্ট। (সূরা ইউনুস- ২৮, ২৯)
وَاِذَا رَاَى الَّذِيْنَ اَشْرَكُوْا شُرَكَآءَهُمْ قَالُوْا رَبَّنَا هٰۤؤُلَآءِ شُرَكَآؤُنَا الَّذِيْنَ كُنَّا نَدْعُوْا مِنْ دُوْنِكَۚ فَاَلْقَوْا اِلَيْهِمُ الْقَوْلَ اِنَّكُمْ لَكَاذِبُوْنَ ‐ وَاَلْقَوْا اِلَى اللهِ يَوْمَئِذِنِ السَّلَمَ وَضَلَّ عَنْهُمْ مَّا كَانُوْا يَفْتَرُوْنَ
মুশরিকরা যাদেরকে আল্লাহর শরীক স্থাপন করেছিল, যখন তারা তাদেরকে দেখবে তখন বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! এরাই তো তারা, যাদেরকে আমরা আপনার শরীক স্থাপন করেছিলাম এবং যাদেরকে আমরা আপনার পরিবর্তে আহবান করতাম। তখন তাদেরকে বলা হবে, অবশ্যই তোমরা মিথ্যাবাদী। সেদিন তারা আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করবে এবং তারা যে মিথ্যা উদ্ভাবন করত, তা তাদের জন্য নিষ্ফল হয়ে যাবে। (সূরা নাহল- ৮৬, ৮৭)
শরীকরা কেউই দায়িত্ব নেবে না :
وَيَوْمَ يُنَادِيْهِمْ فَيَقُوْلُ اَيْنَ شُرَكَآئِيَ الَّذِيْنَ كُنْتُمْ تَزْعُمُوْنَ ‐ قَالَ الَّذِيْنَ حَقَّ عَلَيْهِمُ الْقَوْلُ رَبَّنَا هٰۤؤُلَآءِ الَّذِيْنَ اَغْوَيْنَا ۚ اَغْوَيْنَاهُمْ كَمَا غَوَيْنَاۚ تَبَرَّأْنَاۤ اِلَيْكَ مَا كَانُوْاۤ اِيَّانَا يَعْبُدُوْنَ ‐ وَقِيْلَ ادْعُوْا شُرَكَآءَكُمْ فَدَعَوْهُمْ فَلَمْ يَسْتَجِيْبُوْا لَهُمْ وَرَاَوُا الْعَذَابَۚ لَوْ اَنَّهُمْ كَانُوْا يَهْتَدُوْنَ
সেদিন তিনি তাদেরকে আহবান করে বলবেন, তোমরা যাদেরকে আমার শরীক মনে করতে তারা কোথায়? অতঃপর যাদের জন্য শাস্তি অবধারিত হয়েছে তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! এদেরকেই তো আমরা বিভ্রান্ত করেছিলাম। আমরা যেমনিভাবে এদেরকে বিভ্রান্ত করেছিলাম, ঠিক তেমনিভাবে আমরাও বিভ্রান্ত হয়েছিলাম। আজ আমরা আপনার কাছে দায়িত্ব হতে অব্যাহতি চাইছি। এরা কেবল আমাদেরই গোলামী করত না (বরং এরা নিজেরা নিজেদের প্রবৃত্তিরও গোলামী করত)। অতঃপর তাদেরকে বলা হবে, তোমাদের দেবতাদেরকে আহবান করো। তখন তারা তাদেরকে ডাকবে; কিন্তু তারা তাদের ডাকে সাড়া দেবে না। ইতোমধ্যে তারা (মুশরিকরা নিজেদের চোখে) আযাব প্রত্যক্ষ করতে পারবে। (তখন তারা আফসোস করে বলবে) হায়! এরা যদি সৎপথ অনুসরণ করত। (সূরা ক্বাসাস, ৬২-৬৪)
وَيَوْمَ يَحْشُرُهُمْ وَمَا يَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ فَيَقُوْلُ اَاَنْتُمْ اَضْلَلْتُمْ عِبَادِيْ هٰۤؤُلَآءِ اَمْ هُمْ ضَلُّوا السَّبِيْلَ ‐ قَالُوْا سُبْحَانَكَ مَا كَانَ يَنْۢبَغِيْ لَنَاۤ اَنْ نَّتَّخِذَ مِنْ دُوْنِكَ مِنْ اَوْلِيَآءَ وَلٰكِنْ مَّتَّعْتَهُمْ وَاٰبَآءَهُمْ حَتّٰى نَسُوا الذِّكْرَۚ وَكَانُوْا قَوْمًا ۢبُوْرًا
যেদিন তিনি তাদেরকে এবং তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদাত করত তাদেরকে একত্র করে জিজ্ঞেস করবেন, তোমরাই কি আমার এ বান্দাদেরকে বিভ্রান্ত করেছিলে, নাকি তারা নিজেরাই পথভ্রষ্ট হয়েছিল? তারা বলবে, আমরা তোমার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি। আমরা তোমার পরিবর্তে অন্য কাউকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করতে পারি না। তুমিই তো এদেরকে এবং এদের পিতৃপুরুষদেরকে ভোগ-সম্ভার দিয়েছিলে; পরিণামে তারা উপদেশবাণীকে ভুলে গিয়েছিল এবং এক ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিতে পরিণত হয়েছিল।
(সূরা ফুরক্বান, ১৭-১৮)
ফেরেশতারাও কোন দায়িত্ব নেবে না :
وَيَوْمَ يَحْشُرُهُمْ جَمِيْعًا ثُمَّ يَقُوْلُ لِلْمَلَآئِكَةِ اَهٰۤؤُلَآءِ اِيَّاكُمْ كَانُوْا يَعْبُدُوْنَ ‐ قَالُوْا سُبْحَانَكَ اَنْتَ وَلِيُّنَا مِنْ دُوْنِهِمْۚ بَلْ كَانُوْا يَعْبُدُوْنَ الْجِنَّۚ اَكْثَرُهُمْ بِهِمْ مُّؤْمِنُوْنَ
যেদিন তিনি তাদের সবাইকে একত্র করবেন এবং ফেরেশতাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন, এরা কি তোমাদেরই পূজা করত? ফেরেশতারা বলবে, আপনি পবিত্র ও মহান! তারা ব্যতীত আমাদের অভিভাবক আপনিই। বরং তারা জিনদের পূজা করত; আর তাদের অধিকাংশই ছিল তাদের প্রতি বিশ্বাসী। (সূরা সাবা- ৪০, ৪১)
নবীরাও মুশরিকদের কোন দায়িত্ব নেবেন না :
وَاِذْ قَالَ اللهُ يَا عِيْسَى ابْنَ مَرْيَمَ اَاَنْتَ قُلْتَ لِلنَّاسِ اتَّخِذُوْنِيْ وَاُمِّيَ اِلٰهَيْنِ مِنْ دُوْنِ اللهِ قَالَ سُبْحَانَكَ مَا يَكُوْنُ لِۤيْ اَنْ اَقُوْلَ مَا لَيْسَ لِيْ بِحَقٍّ اِنْ كُنْتُ قُلْتُهٗ فَقَدْ عَلِمْتَهٗ تَعْلَمُ مَا فِيْ نَفْسِيْ وَلَاۤ اَعْلَمُ مَا فِيْ نَفْسِكَ اِنَّكَ اَنْتَ عَلَّامُ الْغُيُوْبِ
যখন আল্লাহ বলবেন, হে মারইয়ামের পুত্র ঈসা! তুমি কি কখনো লোকদেরকে বলেছিলে যে, তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে আমাকে ও আমার মাকে ইলাহ্ হিসেবে গ্রহণ করো। তখন ঈসা বলবেন, তুমি (এ থেকে অনেক) পবিত্র ও মহান; এমন কোন কথা বলা আমার জন্য শোভা পায় না, যে কথা বলার কোন অধিকার আমার নেই। আর আমি যদি তা বলতাম, তবে অবশ্যই তুমি তা জানতে। কেননা আমার অন্তরে কী আছে সে সম্পর্কে তুমি অবগত, কিন্তু তোমার অন্তরে কী আছে সে সম্পর্কে আমি অবগত নই। (সূরা আন‘আম- ১১৬)
ব্যাখ্যা : কিয়ামতের দিন এমনসব ফেরেশতা, জিন, রূহ, পূর্ববর্তী মনীষী, পূর্বপুরুষ, নবী, অলী ও শহীদ সকলকে একত্র করা হবে, যাদেরকে দুনিয়ায় পূজা করা হয়েছে, আল্লাহর গুণাবলিতে অংশীদার স্থাপন করা হয়েছে, সাথে সাথে তাদেরকে এমনও অধিকার দান করা হয়েছে যেগুলো কেবল আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট। তখন তারা তাদের পূজারীদেরকে স্পষ্ট বলে দেবে যে, তোমরা যে আমাদের পূজা করতে তা তো আমরা জানতামই না। তোমাদের কোন দু‘আ, আকুতি, আবেদন, মান্নত, শিরনী, প্রশংসা এবং কোন সিজদা, চুম্বন ও দরগাহ প্রদক্ষিণ আমাদের কাছে পৌঁছেনি। আমরা জোর করে তোমাদেরকে গোমরাহ করিনি। তোমাদের দৃষ্টি ও শ্রবণ শক্তি ছিনিয়ে নেইনি এবং তোমাদের চিন্তা ও অনুধাবন শক্তিও কেঁড়ে নেইনি। আবার এমন অবস্থাও সৃষ্টি করিনি যে, তোমরা সঠিক পথের দিকে যেতে চাচ্ছিলে, কিন্তু আমরা হাত ধরে টেনে জোর করে ভুলপথে নিয়ে গিয়েছিলাম। বরং আমরা যেমন স্বেচ্ছায় ভুলপথ অবলম্বন করেছিলাম, তেমনি তোমাদের সামনেও আমরা ভুলপথ পেশ করেছিলাম। আর তোমরাও স্বেচ্ছায় তা গ্রহণ করেছিলে। কাজেই আমরা তোমাদের দায়িত্ব গ্রহণ করছি না। আমরা নিজেরাই নিজেদের কাজের জন্য দায়ী, তোমাদের কোন কর্মকান্ডের জন্য আমরা দায়ী নই; বরং ভুলপথ গ্রহণ করার জন্য তোমরা নিজেরাই দায়ী।
শরীকরা কাউকে সাহায্যও করতে পারবে না :
وَاتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِ اللهِ اٰلِهَةً لَّعَلَّهُمْ يُنْصَرُوْنَ ‐ لَا يَسْتَطِيْعُوْنَ نَصْرَهُمْ وَهُمْ لَهُمْ جُنْدٌ مُّحْضَرُوْنَ
তারা আল্লাহ ব্যতীত অনেক ইলাহ্ গ্রহণ করেছে এ আশায় যে, তাদেরকে অনুগ্রহ করা হবে। অথচ এসব ইলাহ্ তাদের কোনই সাহায্য করতে সক্ষম নয়। এরা তাদের সৈন্য হিসেবে উপস্থাপিত হবে। (সূরা ইয়াসীন- ৭৪, ৭৫)
মুশরিকরা পরকালে স্পষ্ট ক্ষতির শিকার হবে :
اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ خَسِرُوْاۤ اَنْفُسَهُمْ وَضَلَّ عَنْهُمْ مَّا كَانُوْا يَفْتَرُوْنَ ‐ لَا جَرَمَ اَنَّهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ هُمُ الْاَخْسَرُوْنَ
এরাই হচ্ছে সেসব লোক, যারা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি সাধন করল এবং তারা যে মিথ্যা কল্পনা রচনা করেছিল, তা তাদের নিকট হতে উধাও হয়ে গেল। নিঃসন্দেহে তারা আখিরাতে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরা হুদ- ২১, ২২)
মুশরিকদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম :
مِنْ وَّرَآئِهِمْ جَهَنَّمُۚ وَلَا يُغْنِيْ عَنْهُمْ مَّا كَسَبُوْا شَيْئًا وَّلَا مَا اتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِ اللهِ اَوْلِيَآءَۚ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيْمٌ
তাদের পশ্চাতে রয়েছে জাহান্নাম; তাদের কৃতকর্ম তাদের কোন কাজে আসবে না, তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করেছে তারাও নয়। তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি। (সূরা জাসিয়া- ১০)
তারা অপমানিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে :
وَلَا تَجْعَلْ مَعَ اللهِ اِلٰهًا اٰخَرَ فَتُلْقٰى فِيْ جَهَنَّمَ مَلُوْمًا مَّدْحُوْرًا
তুমি আল্লাহর সাথে অপর কোন ইলাহ্ গ্রহণ করো না, নতুবা তুমি নিন্দিত ও বিতাড়িত অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩৯)
মুশরিকরা পরকালে পরিতাপ করবে :
فَهَلْ لَّنَا مِنْ شُفَعَآءَ فَيَشْفَعُوْا لَنَاۤ اَوْ نُرَدُّ فَنَعْمَلَ غَيْرَ الَّذِيْ كُنَّا نَعْمَلُؕ قَدْ خَسِرُوْاۤ اَنْفُسَهُمْ وَضَلَّ عَنْهُمْ مَّا كَانُوْا يَفْتَرُوْنَ
আমাদের কি এমন কোন সুপারিশকারী আছে, যে আমাদের জন্য সুপারিশ করবে অথবা আমাদেরকে পুনরায় (দুনিয়াতে) ফিরে যেতে দেয়া হবে, যেন আমরা পূর্বে যা করতাম তা হতে ভিন্ন কিছু করে আসতে পারি? নিশ্চয় তারা নিজেরাই নিজেদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আর তারা যা মিথ্যা রচনা করত, তাও উধাও হয়ে যাবে। (সূরা আ‘রাফ- ৫৩)
মুশরিকদের মূর্তিগুলোও জাহান্নামে যাবে :
اِنَّكُمْ وَمَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ حَصَبُ جَهَنَّمَؕ اَنْتُمْ لَهَا وَارِدُوْنَ ‐ لَوْ كَانَ هٰۤؤُلَآءِ اٰلِهَةً مَّا وَرَدُوْهَاؕ وَكُلٌّ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
তোমরা এবং আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদাত কর সেগুলো তো জাহান্নামের ইন্ধন; তোমরা সকলে তাতে প্রবেশ করবে। যদি তারা ইলাহ্ হতো, তবে তারা তাতে (জাহান্নামে) প্রবেশ করত না; অতঃপর তারা সকলেই তাতে স্থায়ী হবে। (সূরা আম্বিয়া- ৯৮, ৯৯)
اُحْشُرُوا الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا وَاَزْوَاجَهُمْ وَمَا كَانُوْا يَعْبُدُوْنَ ‐ مِنْ دُوْنِ اللهِ فَاهْدُوْهُمْ اِلٰى صِرَاطِ الْجَحِيْمِ
(ফেরেশতাদেরকে বলা হবে) তোমরা যালিমদেরকে এবং তাদের সাথিদেরকে একত্র করো; আর তারা আল্লাহকে ছেড়ে যাদের ইবাদাত করত তাদেরকেও একত্র করো। অতঃপর তাদেরকে জাহান্নামের দিকে পরিচালিত করো। (সূরা সাফফাত- ২২, ২৩)
فَلَا تَكُ فِيْ مِرْيَةٍ مِّمَّا يَعْبُدُ هٰۤؤُلَآءِؕ مَا يَعْبُدُوْنَ اِلَّا كَمَا يَعْبُدُ اٰبَآؤُهُمْ مِّنْ قَبْلُؕ وَاِنَّا لَمُوَفُّوْهُمْ نَصِيْبَهُمْ غَيْرَ مَنْقُوْصٍ
সুতরাং তারা যাদের ইবাদাত করে তাদের সম্বন্ধে সংশয়ে থেকো না, ইতোপূর্বে তাদের পিতৃপুরুষরা যাদের ইবাদাত করত তারা তো কেবল তাদেরই ইবাদাত করে। অবশ্যই আমি তাদেরকে তাদের প্রাপ্য পরিপূর্ণভাবে আদায় করব এবং কোনকিছুই হ্রাস করব না। (সূরা হুদ- ১০৯)
আল্লাহ তাদের কাজকর্ম দেখছেন :
وَالَّذِيْنَ اتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِهٖۤ اَوْلِيَآءَ اللهُ حَفِيْظٌ عَلَيْهِمْ وَمَاۤ اَنْتَ عَلَيْهِمْ بِوَكِيْلٍ
যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্য কাউকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে, আল্লাহ তাদের প্রতি কঠোর দৃষ্টি রাখেন। আর তুমি তাদের তত্ত্বাবধায়ক নও। (সূরা শূরা- ৬)
তারা তাদের পরিণাম সম্পর্কে জানতে পারবে :
اَلَّذِيْنَ يَجْعَلُوْنَ مَعَ اللهِ اِلٰهًا اٰخَرَۚ فَسَوْفَ يَعْلَمُوْنَ
যারা আল্লাহর সাথে অপর কোন ইলাহ্ নির্ধারণ করেছে, অতি শীঘ্রই তারা (এর পরিণাম সম্পর্কে) জানতে পারবে। (সূরা হিজর- ৯৬)
মৃত্যুর সময় শরীকরা কোন কাজে আসবে না :
حَتّٰۤى اِذَا جَآءَتْهُمْ رُسُلُنَا يَتَوَفَّوْنَهُمْ قَالُوْاۤ اَيْنَ مَا كُنْتُمْ تَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِؕ قَالُوْا ضَلُّوْا عَنَّا وَشَهِدُوْا عَلٰۤى اَنْفُسِهِمْ اَنَّهُمْ كَانُوْا كَافِرِيْنَ
যখন আমার ফেরেশতাগণ জান কবজের জন্য তাদের নিকট আসবে ও জিজ্ঞেস করবে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে ডাকতে তারা কোথায়? তারা বলবে, তারা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। সেদিন তারা নিজেদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে যে, নিশ্চয় তারা কাফির ছিল। (সূরা আ‘রাফ- ৩৭)
পরকালে মুশরিকদের কাছে আল্লাহ প্রশ্ন করবেন :
وَيَوْمَ نَحْشُرُهُمْ جَمِيْعًا ثُمَّ نَقُوْلُ لِلَّذِيْنَ اَشْرَكُوْاۤ اَيْنَ شُرَكَآؤُكُمُ الَّذِيْنَ كُنْتُمْ تَزْعُمُوْنَ
স্মরণ করো, যেদিন তাদের সকলকে একত্র করব। অতঃপর মুশরিকদেরকে বলব, তোমরা যাদেরকে আমার শরীক মনে করতে তারা কোথায়? (সূরা আন‘আম- ২২)
ثُمَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يُخْزِيْهِمْ وَيَقُوْلُ اَيْنَ شُرَكَآئِىَ الَّذِيْنَ كُنْتُمْ تُشَآقُّوْنَ فِيْهِمْؕ قَالَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْعِلْمَ اِنَّ الْخِزْيَ الْيَوْمَ وَالسُّوْٓءَ عَلَى الْكَافِرِيْنَ
অতঃপর কিয়ামতের দিন তিনি তাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন এবং বলবেন, আমার সেসব শরীকরা কোথায়, যাদের সম্বন্ধে তোমরা বাক-বিতন্ডায় লিপ্ত হতে? তখন যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছিল তারা বলবে, আজ কাফিরদের জন্য শুধু লাঞ্ছনা ও অমঙ্গল। (সূরা নাহল- ২৭)
মুশরিকরা মিথ্যা জবাব দেবে :
ثُمَّ لَمْ تَكُنْ فِتْنَتُهُمْ اِلَّاۤ اَنْ قَالُوْا وَاللهِ رَبِّنَا مَا كُنَّا مُشْرِكِيْنَ
অতঃপর তাদের এটা ছাড়া বলার মতো অন্য কোন অজুহাত থাকবে না- হে আমাদের প্রতিপালক! আল্লাহর শপথ, আমরা তো মুশরিক ছিলাম না। (সূরা আন‘আম- ২৩)
মিথ্যা বললেও আযাব থেকে বাঁচতে পারবে না :
ثُمَّ قِيْلَ لَهُمْ اَيْنَ مَا كُنْتُمْ تُشْرِكُوْنَۚ مِنْ دُوْنِ اللهِ قَالُوْا ضَلُّوْا عَنَّا بَلْ لَّمْ نَكُنْ نَّدْعُوْا مِنْ قَبْلُ شَيْئًاؕ كَذٰلِكَ يُضِلُّ اللهُ الْكَافِرِيْنَ ‐ ذٰلِكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَفْرَحُوْنَ فِى الْاَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَبِمَا كُنْتُمْ تَمْرَحُوْنَ ‐ اُدْخُلُوْاۤ اَبْوَابَ جَهَنَّمَ خَالِدِيْنَ فِيْهَاۚ فَبِئْسَ مَثْوَى الْمُتَكَبِّرِيْنَ
অতঃপর তাদেরকে বলা হবে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে (তাঁর) শরীক স্থাপন করতে তারা কোথায়? তারা বলবে, তারা তো আমাদের নিকট হতে অদৃশ্য হয়ে গেছে। বস্তুত ইতোপূর্বে আমরা তো কাউকে ডাকিনি। এভাবে আল্লাহ কাফিরদেরকে বিভ্রান্ত করবেন। এটা এ কারণে যে, তোমরা পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে উল্লাস করতে এবং তোমরা অহংকার করে বেড়াতে। সুতরাং তোমরা স্থায়ীভাবে অবস্থানের জন্য জাহান্নামের দ্বারসমূহে প্রবেশ করো; অহংকারীদের আবাসস্থল কতই না নিকৃষ্ট! (সূরা মু’মিন, ৭৩-৭৬)
আল্লাহ শিরকের উপর প্রমাণ পেশ করতে বলবেন :
وَنَزَعْنَا مِنْ كُلِّ اُمَّةٍ شَهِيْدًا فَقُلْنَا هَاتُوْا بُرْهَانَكُمْ فَعَلِمُوْاۤ اَنَّ الْحَقَّ لِلّٰهِ وَضَلَّ عَنْهُمْ مَّا كَانُوْا يَفْتَرُوْنَ
প্রত্যেক সম্প্রদায় হতে আমি একজন সাক্ষী বের করে আনব এবং বলব, তোমাদের প্রমাণ উপস্থিত করো। তখন তারা জানতে পারবে, সত্য (ইলাহ হওয়ার অধিকার) কেবল আল্লাহরই এবং তারা যা উদ্ভাবন করত তা তাদের নিকট হতে হারিয়ে গেছে। (সূরা ক্বাসাস- ৭৫)
হাশরের দিন শরীকরা উধাও হয়ে যাবে :
وَلَقَدْ جِئْتُمُوْنَا فُرَادٰى كَمَا خَلَقْنَاكُمْ اَوَّلَ مَرَّةٍ وَّتَرَكْتُمْ مَّا خَوَّلْنَاكُمْ وَرَآءَ ظُهُوْرِكُمْۚ وَمَا نَرٰى مَعَكُمْ شُفَعَآءَكُمُ الَّذِيْنَ زَعَمْتُمْ اَنَّهُمْ فِيْكُمْ شُرَكَآءُ
আজ তোমরা তো আমার নিকট নিঃসঙ্গ অবস্থায় এসেছ, যেমনিভাবে আমি তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম। তোমাদেরকে যা দিয়েছিলাম তা তোমরা পেছনে ফেলে এসেছ। আজ তোমাদের সেই সুপারিশকারীদেরকেও তো তোমাদের সাথে দেখছি না। (সূরা আন‘আম- ৯৪)
وَضَلَّ عَنْهُمْ مَّا كَانُوْا يَفْتَرُوْنَ
তাদের উদ্ভাবিত মিথ্যা তাদের নিকট হতে হারিয়ে যাবে। (সূরা ইউনুস- ৩০)
وَضَلَّ عَنْهُمْ مَّا كَانُوْا يَدْعُوْنَ مِنْ قَبْلُ وَظَنُّوْا مَا لَهُمْ مِّنْ مَّحِيْصٍ
পূর্বে তারা যাদেরকে আহবান করত তারা অদৃশ্য হয়ে যাবে এবং অংশীবাদীরা উপলব্ধি করবে যে, তাদের মুক্তির কোন উপায় নেই। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৪৮)
মুশরিক ও শরীকদের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি হবে :
وَاتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِ اللهِ اٰلِهَةً لِّيَكُوْنُوْا لَهُمْ عِزًّا ‐ كَلَّاؕ سَيَكْفُرُوْنَ بِعِبَادَتِهِمْ وَيَكُوْنُوْنَ عَلَيْهِمْ ضِدًّا
তারা আল্লাহ ব্যতীত অন্য ইলাহ্ গ্রহণ করে এজন্য যে, যাতে তারা তাদের সাহায্যকারী হতে পারে। কখনো নয়; অচিরেই তারা তাদের ইবাদাতকে অস্বীকার করবে এবং তাদের বিরোধী হয়ে যাবে। (সূরা মারইয়াম- ৮১, ৮২)
لَقَدْ تَقَطَّعَ بَيْنَكُمْ وَضَلَّ عَنْكُمْ مَّا كُنْتُمْ تَزْعُمُوْنَ
অবশ্যই (আজ) তোমাদের মধ্যকার সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে এবং তোমরা যা ধারণা করেছিলে তাও নিষ্ফল হয়ে গেছে। (সূরা আন‘আম- ৯৪)
শরীকরা মুশরিকদের ইবাদাতকে অস্বীকার করবে :
وَاِذَا حُشِرَ النَّاسُ كَانُوْا لَهُمْ اَعْدَآءً وَّكَانُوْا بِعِبَادَتِهِمْ كَافِرِيْنَ
যখন সব মানুষকে একত্র করা হবে, তখন তারা যাদেরকে ডাকত তারা তাদের শত্রু হয়ে যাবে এবং তাদের ইবাদাতকে অস্বীকার করবে। (সূরা আহকাফ- ৬)
اِنْ تَدْعُوْهُمْ لَا يَسْمَعُوْا دُعَآءَكُمْۚ وَلَوْ سَمِعُوْا مَا اسْتَجَابُوْا لَكُمْؕ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكْفُرُوْنَ بِشِرْكِكُمْؕ وَلَا يُنَبِّئُكَ مِثْلُ خَبِيْرٍ
যদি তোমরা তাদেরকে আহবান কর, তবে তারা তোমাদের আহবান শুনতে পাবে না। আর যদিও শুনতে পায় তবে তারা তোমাদের আহবানে সাড়া দেবে না। কিয়ামতের দিন তারা তোমাদের শিরক সাব্যস্ত করাকে অস্বীকার করবে। তখন সর্বজ্ঞ আল্লাহ ছাড়া কেউই তোমাকে সঠিক সংবাদ দিতে পারবে না। (সূরা ফাতির- ১৪)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ তারা পরিষ্কার বলে দেবে, আমরা কখনো এদেরকে বলিনি যে, আমরা আল্লাহর শরীক; সুতরাং তোমরা আমাদের ইবাদাত করো। তাছাড়া আমরা এও জানতাম না যে, তোমরা আমাদেরকে আল্লাহর সাথে শরীক করেছ এবং আমাদের কাছে প্রার্থনা করেছ। আর তোমাদের কোন প্রার্থনাও আমাদের কাছে আসেনি এবং কোন নজরানা বা উৎসর্গও আমাদের হস্তগত হয়নি।
وَيَوْمَ نَحْشُرُهُمْ جَمِيْعًا ثُمَّ نَقُوْلُ لِلَّذِيْنَ اَشْرَكُوْا مَكَانَكُمْ اَنْتُمْ وَشُرَكَآؤُكُمْۚ فَزَيَّلْنَا بَيْنَهُمْ وَقَالَ شُرَكَآؤُهُمْ مَّا كُنْتُمْ اِيَّانَا تَعْبُدُوْنَ ‐ فَكَفٰى بِاللهِ شَهِيْدًاۘ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ اِنْ كُنَّا عَنْ عِبَادَتِكُمْ لَغَافِلِيْنَ
সেদিন আমি তাদের সকলকে একত্র করে মুশরিকদেরকে বলব, তোমরা এবং তোমরা যাদেরকে শরীক করেছিলে তারা স্ব স্ব স্থানে অবস্থান করো। অতঃপর আমি তাদেরকে পরস্পর হতে পৃথক করে দেব, তখন তারা যাদেরকে শরীক করেছিল তারা বলবে, তোমরা তো আমাদের ইবাদাত করতে না। আমরা যে তোমাদের সম্পর্কে গাফিল ছিলাম- এর সাক্ষ্য হিসেবে আমাদের ও তোমাদের মধ্যে আল্লাহই যথেষ্ট। (সূরা ইউনুস- ২৮, ২৯)
وَاِذَا رَاَى الَّذِيْنَ اَشْرَكُوْا شُرَكَآءَهُمْ قَالُوْا رَبَّنَا هٰۤؤُلَآءِ شُرَكَآؤُنَا الَّذِيْنَ كُنَّا نَدْعُوْا مِنْ دُوْنِكَۚ فَاَلْقَوْا اِلَيْهِمُ الْقَوْلَ اِنَّكُمْ لَكَاذِبُوْنَ ‐ وَاَلْقَوْا اِلَى اللهِ يَوْمَئِذِنِ السَّلَمَ وَضَلَّ عَنْهُمْ مَّا كَانُوْا يَفْتَرُوْنَ
মুশরিকরা যাদেরকে আল্লাহর শরীক স্থাপন করেছিল, যখন তারা তাদেরকে দেখবে তখন বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! এরাই তো তারা, যাদেরকে আমরা আপনার শরীক স্থাপন করেছিলাম এবং যাদেরকে আমরা আপনার পরিবর্তে আহবান করতাম। তখন তাদেরকে বলা হবে, অবশ্যই তোমরা মিথ্যাবাদী। সেদিন তারা আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করবে এবং তারা যে মিথ্যা উদ্ভাবন করত, তা তাদের জন্য নিষ্ফল হয়ে যাবে। (সূরা নাহল- ৮৬, ৮৭)
শরীকরা কেউই দায়িত্ব নেবে না :
وَيَوْمَ يُنَادِيْهِمْ فَيَقُوْلُ اَيْنَ شُرَكَآئِيَ الَّذِيْنَ كُنْتُمْ تَزْعُمُوْنَ ‐ قَالَ الَّذِيْنَ حَقَّ عَلَيْهِمُ الْقَوْلُ رَبَّنَا هٰۤؤُلَآءِ الَّذِيْنَ اَغْوَيْنَا ۚ اَغْوَيْنَاهُمْ كَمَا غَوَيْنَاۚ تَبَرَّأْنَاۤ اِلَيْكَ مَا كَانُوْاۤ اِيَّانَا يَعْبُدُوْنَ ‐ وَقِيْلَ ادْعُوْا شُرَكَآءَكُمْ فَدَعَوْهُمْ فَلَمْ يَسْتَجِيْبُوْا لَهُمْ وَرَاَوُا الْعَذَابَۚ لَوْ اَنَّهُمْ كَانُوْا يَهْتَدُوْنَ
সেদিন তিনি তাদেরকে আহবান করে বলবেন, তোমরা যাদেরকে আমার শরীক মনে করতে তারা কোথায়? অতঃপর যাদের জন্য শাস্তি অবধারিত হয়েছে তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! এদেরকেই তো আমরা বিভ্রান্ত করেছিলাম। আমরা যেমনিভাবে এদেরকে বিভ্রান্ত করেছিলাম, ঠিক তেমনিভাবে আমরাও বিভ্রান্ত হয়েছিলাম। আজ আমরা আপনার কাছে দায়িত্ব হতে অব্যাহতি চাইছি। এরা কেবল আমাদেরই গোলামী করত না (বরং এরা নিজেরা নিজেদের প্রবৃত্তিরও গোলামী করত)। অতঃপর তাদেরকে বলা হবে, তোমাদের দেবতাদেরকে আহবান করো। তখন তারা তাদেরকে ডাকবে; কিন্তু তারা তাদের ডাকে সাড়া দেবে না। ইতোমধ্যে তারা (মুশরিকরা নিজেদের চোখে) আযাব প্রত্যক্ষ করতে পারবে। (তখন তারা আফসোস করে বলবে) হায়! এরা যদি সৎপথ অনুসরণ করত। (সূরা ক্বাসাস, ৬২-৬৪)
وَيَوْمَ يَحْشُرُهُمْ وَمَا يَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ فَيَقُوْلُ اَاَنْتُمْ اَضْلَلْتُمْ عِبَادِيْ هٰۤؤُلَآءِ اَمْ هُمْ ضَلُّوا السَّبِيْلَ ‐ قَالُوْا سُبْحَانَكَ مَا كَانَ يَنْۢبَغِيْ لَنَاۤ اَنْ نَّتَّخِذَ مِنْ دُوْنِكَ مِنْ اَوْلِيَآءَ وَلٰكِنْ مَّتَّعْتَهُمْ وَاٰبَآءَهُمْ حَتّٰى نَسُوا الذِّكْرَۚ وَكَانُوْا قَوْمًا ۢبُوْرًا
যেদিন তিনি তাদেরকে এবং তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদাত করত তাদেরকে একত্র করে জিজ্ঞেস করবেন, তোমরাই কি আমার এ বান্দাদেরকে বিভ্রান্ত করেছিলে, নাকি তারা নিজেরাই পথভ্রষ্ট হয়েছিল? তারা বলবে, আমরা তোমার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি। আমরা তোমার পরিবর্তে অন্য কাউকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করতে পারি না। তুমিই তো এদেরকে এবং এদের পিতৃপুরুষদেরকে ভোগ-সম্ভার দিয়েছিলে; পরিণামে তারা উপদেশবাণীকে ভুলে গিয়েছিল এবং এক ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিতে পরিণত হয়েছিল।
(সূরা ফুরক্বান, ১৭-১৮)
ফেরেশতারাও কোন দায়িত্ব নেবে না :
وَيَوْمَ يَحْشُرُهُمْ جَمِيْعًا ثُمَّ يَقُوْلُ لِلْمَلَآئِكَةِ اَهٰۤؤُلَآءِ اِيَّاكُمْ كَانُوْا يَعْبُدُوْنَ ‐ قَالُوْا سُبْحَانَكَ اَنْتَ وَلِيُّنَا مِنْ دُوْنِهِمْۚ بَلْ كَانُوْا يَعْبُدُوْنَ الْجِنَّۚ اَكْثَرُهُمْ بِهِمْ مُّؤْمِنُوْنَ
যেদিন তিনি তাদের সবাইকে একত্র করবেন এবং ফেরেশতাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন, এরা কি তোমাদেরই পূজা করত? ফেরেশতারা বলবে, আপনি পবিত্র ও মহান! তারা ব্যতীত আমাদের অভিভাবক আপনিই। বরং তারা জিনদের পূজা করত; আর তাদের অধিকাংশই ছিল তাদের প্রতি বিশ্বাসী। (সূরা সাবা- ৪০, ৪১)
নবীরাও মুশরিকদের কোন দায়িত্ব নেবেন না :
وَاِذْ قَالَ اللهُ يَا عِيْسَى ابْنَ مَرْيَمَ اَاَنْتَ قُلْتَ لِلنَّاسِ اتَّخِذُوْنِيْ وَاُمِّيَ اِلٰهَيْنِ مِنْ دُوْنِ اللهِ قَالَ سُبْحَانَكَ مَا يَكُوْنُ لِۤيْ اَنْ اَقُوْلَ مَا لَيْسَ لِيْ بِحَقٍّ اِنْ كُنْتُ قُلْتُهٗ فَقَدْ عَلِمْتَهٗ تَعْلَمُ مَا فِيْ نَفْسِيْ وَلَاۤ اَعْلَمُ مَا فِيْ نَفْسِكَ اِنَّكَ اَنْتَ عَلَّامُ الْغُيُوْبِ
যখন আল্লাহ বলবেন, হে মারইয়ামের পুত্র ঈসা! তুমি কি কখনো লোকদেরকে বলেছিলে যে, তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে আমাকে ও আমার মাকে ইলাহ্ হিসেবে গ্রহণ করো। তখন ঈসা বলবেন, তুমি (এ থেকে অনেক) পবিত্র ও মহান; এমন কোন কথা বলা আমার জন্য শোভা পায় না, যে কথা বলার কোন অধিকার আমার নেই। আর আমি যদি তা বলতাম, তবে অবশ্যই তুমি তা জানতে। কেননা আমার অন্তরে কী আছে সে সম্পর্কে তুমি অবগত, কিন্তু তোমার অন্তরে কী আছে সে সম্পর্কে আমি অবগত নই। (সূরা আন‘আম- ১১৬)
ব্যাখ্যা : কিয়ামতের দিন এমনসব ফেরেশতা, জিন, রূহ, পূর্ববর্তী মনীষী, পূর্বপুরুষ, নবী, অলী ও শহীদ সকলকে একত্র করা হবে, যাদেরকে দুনিয়ায় পূজা করা হয়েছে, আল্লাহর গুণাবলিতে অংশীদার স্থাপন করা হয়েছে, সাথে সাথে তাদেরকে এমনও অধিকার দান করা হয়েছে যেগুলো কেবল আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট। তখন তারা তাদের পূজারীদেরকে স্পষ্ট বলে দেবে যে, তোমরা যে আমাদের পূজা করতে তা তো আমরা জানতামই না। তোমাদের কোন দু‘আ, আকুতি, আবেদন, মান্নত, শিরনী, প্রশংসা এবং কোন সিজদা, চুম্বন ও দরগাহ প্রদক্ষিণ আমাদের কাছে পৌঁছেনি। আমরা জোর করে তোমাদেরকে গোমরাহ করিনি। তোমাদের দৃষ্টি ও শ্রবণ শক্তি ছিনিয়ে নেইনি এবং তোমাদের চিন্তা ও অনুধাবন শক্তিও কেঁড়ে নেইনি। আবার এমন অবস্থাও সৃষ্টি করিনি যে, তোমরা সঠিক পথের দিকে যেতে চাচ্ছিলে, কিন্তু আমরা হাত ধরে টেনে জোর করে ভুলপথে নিয়ে গিয়েছিলাম। বরং আমরা যেমন স্বেচ্ছায় ভুলপথ অবলম্বন করেছিলাম, তেমনি তোমাদের সামনেও আমরা ভুলপথ পেশ করেছিলাম। আর তোমরাও স্বেচ্ছায় তা গ্রহণ করেছিলে। কাজেই আমরা তোমাদের দায়িত্ব গ্রহণ করছি না। আমরা নিজেরাই নিজেদের কাজের জন্য দায়ী, তোমাদের কোন কর্মকান্ডের জন্য আমরা দায়ী নই; বরং ভুলপথ গ্রহণ করার জন্য তোমরা নিজেরাই দায়ী।
শরীকরা কাউকে সাহায্যও করতে পারবে না :
وَاتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِ اللهِ اٰلِهَةً لَّعَلَّهُمْ يُنْصَرُوْنَ ‐ لَا يَسْتَطِيْعُوْنَ نَصْرَهُمْ وَهُمْ لَهُمْ جُنْدٌ مُّحْضَرُوْنَ
তারা আল্লাহ ব্যতীত অনেক ইলাহ্ গ্রহণ করেছে এ আশায় যে, তাদেরকে অনুগ্রহ করা হবে। অথচ এসব ইলাহ্ তাদের কোনই সাহায্য করতে সক্ষম নয়। এরা তাদের সৈন্য হিসেবে উপস্থাপিত হবে। (সূরা ইয়াসীন- ৭৪, ৭৫)
মুশরিকরা পরকালে স্পষ্ট ক্ষতির শিকার হবে :
اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ خَسِرُوْاۤ اَنْفُسَهُمْ وَضَلَّ عَنْهُمْ مَّا كَانُوْا يَفْتَرُوْنَ ‐ لَا جَرَمَ اَنَّهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ هُمُ الْاَخْسَرُوْنَ
এরাই হচ্ছে সেসব লোক, যারা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি সাধন করল এবং তারা যে মিথ্যা কল্পনা রচনা করেছিল, তা তাদের নিকট হতে উধাও হয়ে গেল। নিঃসন্দেহে তারা আখিরাতে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরা হুদ- ২১, ২২)
মুশরিকদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম :
مِنْ وَّرَآئِهِمْ جَهَنَّمُۚ وَلَا يُغْنِيْ عَنْهُمْ مَّا كَسَبُوْا شَيْئًا وَّلَا مَا اتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِ اللهِ اَوْلِيَآءَۚ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيْمٌ
তাদের পশ্চাতে রয়েছে জাহান্নাম; তাদের কৃতকর্ম তাদের কোন কাজে আসবে না, তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করেছে তারাও নয়। তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি। (সূরা জাসিয়া- ১০)
তারা অপমানিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে :
وَلَا تَجْعَلْ مَعَ اللهِ اِلٰهًا اٰخَرَ فَتُلْقٰى فِيْ جَهَنَّمَ مَلُوْمًا مَّدْحُوْرًا
তুমি আল্লাহর সাথে অপর কোন ইলাহ্ গ্রহণ করো না, নতুবা তুমি নিন্দিত ও বিতাড়িত অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩৯)
মুশরিকরা পরকালে পরিতাপ করবে :
فَهَلْ لَّنَا مِنْ شُفَعَآءَ فَيَشْفَعُوْا لَنَاۤ اَوْ نُرَدُّ فَنَعْمَلَ غَيْرَ الَّذِيْ كُنَّا نَعْمَلُؕ قَدْ خَسِرُوْاۤ اَنْفُسَهُمْ وَضَلَّ عَنْهُمْ مَّا كَانُوْا يَفْتَرُوْنَ
আমাদের কি এমন কোন সুপারিশকারী আছে, যে আমাদের জন্য সুপারিশ করবে অথবা আমাদেরকে পুনরায় (দুনিয়াতে) ফিরে যেতে দেয়া হবে, যেন আমরা পূর্বে যা করতাম তা হতে ভিন্ন কিছু করে আসতে পারি? নিশ্চয় তারা নিজেরাই নিজেদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আর তারা যা মিথ্যা রচনা করত, তাও উধাও হয়ে যাবে। (সূরা আ‘রাফ- ৫৩)
মুশরিকদের মূর্তিগুলোও জাহান্নামে যাবে :
اِنَّكُمْ وَمَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ حَصَبُ جَهَنَّمَؕ اَنْتُمْ لَهَا وَارِدُوْنَ ‐ لَوْ كَانَ هٰۤؤُلَآءِ اٰلِهَةً مَّا وَرَدُوْهَاؕ وَكُلٌّ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
তোমরা এবং আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদাত কর সেগুলো তো জাহান্নামের ইন্ধন; তোমরা সকলে তাতে প্রবেশ করবে। যদি তারা ইলাহ্ হতো, তবে তারা তাতে (জাহান্নামে) প্রবেশ করত না; অতঃপর তারা সকলেই তাতে স্থায়ী হবে। (সূরা আম্বিয়া- ৯৮, ৯৯)
اُحْشُرُوا الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا وَاَزْوَاجَهُمْ وَمَا كَانُوْا يَعْبُدُوْنَ ‐ مِنْ دُوْنِ اللهِ فَاهْدُوْهُمْ اِلٰى صِرَاطِ الْجَحِيْمِ
(ফেরেশতাদেরকে বলা হবে) তোমরা যালিমদেরকে এবং তাদের সাথিদেরকে একত্র করো; আর তারা আল্লাহকে ছেড়ে যাদের ইবাদাত করত তাদেরকেও একত্র করো। অতঃপর তাদেরকে জাহান্নামের দিকে পরিচালিত করো। (সূরা সাফফাত- ২২, ২৩)
মুনাফিকরা মুখে ঈমানদার বলে পরিচয় দেয় :
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّقُوْلُ اٰمَنَّا بِاللهِ وَبِالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَمَا هُمْ بِمُؤْمِنِيْنَ
মানুষের মধ্যে এমনও লোক আছে যারা বলে, আমরা আল্লাহর এবং বিচার দিনের উপর ঈমান এনেছি; অথচ তারা মোটেই ঈমানদার নয়। (সূরা বাক্বারা- ৮)
তারা মুসলিমদের সাথে প্রতারণা করে :
يُخَادِعُوْنَ اللهَ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۚ وَمَا يَخْدَعُوْنَ اِلَّاۤ اَنْفُسَهُمْ وَمَا يَشْعُرُوْنَ
তারা আল্লাহ ও মুমিনদের সাথে প্রতারণা করে। প্রকৃতপক্ষে তারা নিজেদের ব্যতীত অন্য কারো সাথে প্রতারণা করে না; অথচ তারা এটা অনুভব করতে পারে না। (সূরা বাক্বারা- ৯)
তারা আল্লাহর সাথেও ধোঁকাবাজি করে :
اِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ يُخَادِعُوْنَ اللهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْ
নিশ্চয় মুনাফিকরা আল্লাহর সঙ্গে ধোঁকাবাজি করে; বস্তুত তিনিই তাদেরকে এর দ্বারা ধোঁকায় ফেলে দিচ্ছেন। (সূরা নিসা- ১৪২)
তাদের অন্তরে মুনাফিকীর রোগ থাকে :
فِيْ قُلُوْبِهِمْ مَّرَضٌ فَزَادَهُمُ اللهُ مَرَضًا
তাদের অন্তরে রোগ রয়েছে, উপরন্তু আল্লাহ তাদের রোগ আরো বৃদ্ধি করে দিয়েছেন। (সূরা বাক্বারা- ১০)
ব্যাখ্যা : এখানে মুনাফিকীকেই রোগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ‘‘আল্লাহ মুনাফিকদের এ রোগ আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন’’- এ কথার অর্থ হচ্ছে, তিনি ঘটনাস্থলেই মুনাফিকদেরকে তাদের কার্যকলাপের শাস্তি দেন না বরং তাদেরকে ছাড় দিতে থাকেন। এর ফলে মুনাফিকরা নিজেদের কলা-কৌশলগুলোকে আপাত দৃষ্টিতে সফল হতে দেখে আরো বেশি মুনাফিকী কার্যকলাপে লিপ্ত হতে থাকে।
উপদেশ দিলে পাল্টা জবাব দেয় :
وَاِذَا قِيْلَ لَهُمْ لَا تُفْسِدُوْا فِى الْاَرْضِ قَالُوْاۤ اِنَّمَا نَحْنُ مُصْلِحُوْنَ
যখন তাদেরকে বলা হয়, তোমরা পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করো না। তখন তারা বলে, আমরা তো কেবল সংশোধনকারী মাত্র। (সূরা বাক্বারা- ১১)
মুনাফিকরা ফাসাদ সৃষ্টি করে :
اَلَاۤ اِنَّهُمْ هُمُ الْمُفْسِدُوْنَ وَلٰكِنْ لَّا يَشْعُرُوْنَ
সাবধান! তারাই অশান্তি সৃষ্টিকারী; কিন্তু তারা বুঝে না। (সূরা বাক্বারা- ১২)
তারা প্রকৃত ঈমানদারদেরকে নির্বোধ মনে করে :
وَاِذَا قِيْلَ لَهُمْ اٰمِنُوْا كَمَاۤ اٰمَنَ النَّاسُ قَالُوْاۤ اَنُؤْمِنُ كَمَاۤ اٰمَنَ السُّفَهَآءُ
যখন তাদেরকে বলা হয়, লোকেরা যেরূপ ঈমান এনেছে তোমরাও অনুরূপ ঈমান আনয়ন করো। তখন তারা বলে, নির্বোধরা যেরূপ ঈমান এনেছে আমরাও কি সেরূপ ঈমান আনব? (সূরা বাক্বারা- ১৩)
ব্যাখ্যা : যারা একাগ্রচিত্তে নিষ্ঠার সাথে ইসলাম গ্রহণ করে নিজেদেরকে নানা নির্যাতন, কষ্ট ও বিপদের মুখে নিক্ষেপ করছিল মুনাফিকরা তাদেরকে নির্বোধ মনে করত। তাদের মতে, নিছক সত্য ও ন্যায়ের জন্য সারা দেশের জনসমাজের শত্রুতার মুখোমুখি হওয়া নিরেট বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। হক্ব ও বাতিলের বিতর্কে না জড়িয়ে সব ব্যাপারেই নিজের স্বার্থের দিকে দৃষ্টি রাখাই প্রকৃত বুদ্ধিমানের কাজ।
আসলে মুনাফিকরাই নির্বোধ :
اَ لَاۤ اِنَّهُمْ هُمُ السُّفَهَآءُ وَلٰكِنْ لَّا يَعْلَمُوْنَ
সাবধান! নিশ্চয় তারাই নির্বোধ, কিন্তু তারা তা জানে না। (সূরা বাক্বারা- ১৩)
তারা ঈমান ও কুফরীর মাঝখানে দোদুল্যমান থাকে :
وَاِذَا لَقُوا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا قَالُوْاۤ اٰمَنَّاۚ وَاِذَا خَلَوْا اِلٰى شَيَاطِيْنِهِمْ قَالُوْاۤ اِنَّا مَعَكُمْ اِنَّمَا نَحْنُ مُسْتَهْزِئُوْنَ
যখন তারা মুমিনদের সাথে মিলিত হয় তখন তারা বলে, আমরা ঈমান এনেছি। আর যখন তারা নিজেদের শয়তানদের সাথে মিলিত হয় তখন বলে, আমরা তো তোমাদের সঙ্গেই আছি; আমরা তো শুধু (তাদের সাথে) ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে থাকি। (সূরা বাক্বারা- ১৪)
ব্যাখ্যা : এখানে شَيَاطِيْنُ (শায়াত্বীন) বলতে মুশরিকদের বড় বড় সরদারদেরকে বুঝানো হয়েছে। কেননা তারা তখন ইসলামের বিরোধিতার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছিল।
مُذَبْذَبِيْنَ بَيْنَ ذٰلِكَ لَاۤ اِلٰى هٰۤؤُلَآءِ وَلَاۤ اِلٰى هٰۤؤُلَآءِؕ وَمَنْ يُّضْلِلِ اللهُ فَلَنْ تَجِدَ لَهٗ سَبِيْلًا
এরা দোদুল্যমান অবস্থায় ঝুলন্ত; এদিকেও নয় ওদিকেও নয়। বস্তুত আল্লাহ যাদেরকে পথভ্রষ্ট করেন, তুমি তাদের জন্য কখনো কোন পথই খুঁজে পাবে না। (সূরা নিসা- ১৪৩)
মুনাফিকরা গোমরাহীর পথকে বেছে নেয় :
اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ اشْتَرَوُا الضَّلَالَةَ بِالْهُدٰى فَمَا رَبِحَتْ تِّجَارَتُهُمْ وَمَا كَانُوْا مُهْتَدِيْنَ
এরাই তারা, যারা হেদায়াতের পরিবর্তে গোমরাহীকে ক্রয় করে নিয়েছে। সুতরাং তাদের ব্যবসা লাভজনক হয়নি এবং তারা সঠিক পথেও পরিচালিত হয়নি। (সূরা বাক্বারা- ১৬)
তারা খারাপ কাজের নির্দেশ দেয় :
اَ لْمُنَافِقُوْنَ وَالْمُنَافِقَاتُ بَعْضُهُمْ مِّنْ ۢبَعْضٍ يَّأْمُرُوْنَ بِالْمُنْكَرِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمَعْرُوْفِ وَيَقْبِضُوْنَ اَيْدِيَهُمْ
মুনাফিক নর ও মুনাফিক নারী একে অপরের অনুরূপ, তারা অসৎকাজের নির্দেশ দেয় এবং সৎকাজ থেকে নিষেধ করে; আর তারা (আল্লাহর পথে ব্যয় করা হতে) নিজেদের হাত গুটিয়ে রাখে। (সূরা তাওবা- ৬৭)
তারা আল্লাহকে ভুলে যায় :
نَسُوا اللهَ فَنَسِيَهُمْؕ اِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ
তারা আল্লাহকে ভুলে গেছে, ফলে তিনিও তাদেরকে ভুলে গেছেন; নিশ্চয় মুনাফিকরাই পাপাচারী (সম্প্রদায়)। (সূরা তাওবা- ৬৭)
কসম খেয়ে মিথ্যা কথা বলে :
يَحْلِفُوْنَ بِاللهِ مَا قَالُوْاؕ وَلَقَدْ قَالُوْا كَلِمَةَ الْكُفْرِ وَكَفَرُوْا بَعْدَ اِسْلَامِهِمْ
তারা আল্লাহর নামে শপথ করে যে, তারা কিছুই বলেনি। অথচ তারা কুফরীর কথা বলেছে এবং ইসলাম গ্রহণের পর কাফির হয়ে গেছে। (সূরা তাওবা- ৭৪)
তারা মুখে যা বলে তাদের অন্তরে তা থাকে না :
يَقُوْلُوْنَ بِاَفْوَاهِهِمْ مَّا لَيْسَ فِيْ قُلُوْبِهِمْؕ وَاللهُ اَعْلَمُ بِمَا يَكْتُمُوْنَ
যা তাদের অন্তরে নেই, তারা তাই মুখে বলে থাকে। তবে তারা যা গোপন করে, আল্লাহ সে সম্পর্কে অবহিত রয়েছেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৬৭)
মুনাফিকরা ওয়াদা ভঙ্গ করে :
وَمِنْهُمْ مَّنْ عَاهَدَ اللهَ لَئِنْ اٰتَانَا مِنْ فَضْلِهٖ لَنَصَّدَّقَنَّ وَلَنَكُوْنَنَّ مِنَ الصَّالِحِيْنَ ‐ فَلَمَّاۤ اٰتَاهُمْ مِّنْ فَضْلِهٖ بَخِلُوْا بِهٖ وَتَوَلَّوْا وَّهُمْ مُّعْرِضُوْنَ
তাদের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহর নিকট অঙ্গীকার করেছিল যে, আল্লাহ নিজ কৃপায় আমাদেরকে দান করলে নিশ্চয় আমরা সাদাকা করব এবং সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হব। অতঃপর যখন তিনি নিজ কৃপায় তাদেরকে তা দান করলেন, তখন তারা এ বিষয়ে কার্পণ্য করল এবং বিরুদ্ধভাবাপন্ন হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিল। (সূরা তাওবা- ৭৫, ৭৬)
তারা আল্লাহর পথে ব্যয় করাকে জরিমানা মনে করে :
وَمِنَ الْاَعْرَابِ مَنْ يَّتَّخِذُ مَا يُنْفِقُ مَغْرَمًا
মরুবাসীদের কেউ কেউ এমন আছে যে, যা তারা (আল্লাহর পথে) ব্যয় করে তা অর্থদন্ড মনে করে। (সূরা তাওবা- ৯৮)
তারা স্বেচ্ছায় আল্লাহর পথে ব্যয় করে না :
وَمَا مَنَعَهُمْ اَنْ تُقْبَلَ مِنْهُمْ نَفَقَاتُهُمْ اِلَّاۤ اَنَّهُمْ كَفَرُوْا بِاللهِ وَبِرَسُوْلِهٖ وَلَا يَأْتُوْنَ الصَّلَاةَ اِلَّا وَهُمْ كُسَالٰى وَلَا يُنْفِقُوْنَ اِلَّا وَهُمْ كَارِهُوْنَ
তাদের ব্যয়কৃত কোনকিছু গ্রহণ করতে নিষেধ করা হয়েছে এজন্য যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করে, সালাতে শৈথিল্যের সাথে উপস্থিত হয় এবং অনিচ্ছাকৃতভাবে (আল্লাহর পথে) ব্যয় করে। (সূরা তাওবা- ৫৪)
তারা নামাযে অলসতা করে :
فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّيْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُوْنَ
দুর্ভোগ সেসব (মুনাফিক) নামাযীদের জন্য, যারা নিজেদের নামায থেকে উদাসীন থাকে। (সূরা মাঊন- ৪, ৫)
তারা মানুষকে দেখানোর জন্য আমল করে :
وَاِذَا قَامُوْاۤ اِلَى الصَّلَاةِ قَامُوْا كُسَالٰى يُرَآءُوْنَ النَّاسَ
যখন তারা সালাতে দাঁড়ায় তখন শৈথিল্যের সঙ্গে কেবল লোক দেখানোর জন্য দাঁড়ায়। (সূরা নিসা- ১৪২)
মানুষকে ভালো কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখে :
اِتَّخَذُوْاۤ اَيْمَانَهُمْ جُنَّةً فَصَدُّوْا عَنْ سَبِيْلِ اللهِ فَلَهُمْ عَذَابٌ مُّهِيْنٌ
তারা তাদের শপথকে ঢাল হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে, এভাবে তারা (লোকদেরকে) আল্লাহর পথ থেকে বিরত রাখে। অতএব তাদের জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি। (সূরা মুজাদালা- ১৬)
তারা মুমিনদেরকেও তাদের মতো বানাতে চায় :
وَدُّوْا لَوْ تَكْفُرُوْنَ كَمَا كَفَرُوْا فَتَكُوْنُوْنَ سَوَآءً
তারা এটা কামনা করে যে, তারা যেরূপ কুফরী করেছে তোমরাও সেরূপ কুফরী কর, যাতে তোমরা তাদের সমান হয়ে যাও। (সূরা নিসা- ৮৯)
তারা কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব করে :
بَشِّرِ الْمُنَافِقِيْنَ بِاَنَّ لَهُمْ عَذَابًا اَلِيْمًا ‐ اَ لَّذِيْنَ يَتَّخِذُوْنَ الْكَافِرِيْنَ اَوْلِيَآءَ مِنْ دُوْنِ الْمُؤْمِنِيْنَؕ اَيَبْتَغُوْنَ عِنْدَهُمُ الْعِزَّةَ فَاِنَّ الْعِزَّةَ لِلّٰهِ جَمِيْعًا
মুনাফিকদেরকে সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য রয়েছে মর্মান্তিক শাস্তি- যারা মুমিনদের পরিবর্তে কাফিরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছে; (এর দ্বারা) তারা কি তাদের নিকট সম্মান পেতে চায়? বরং সমস্ত সম্মান তো আল্লাহরই। (সূরা নিসা- ১৩৮, ১৩৯)
তারা কাফিরদের অনুসরণ করতে চায় :
ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ قَالُوْا لِلَّذِيْنَ كَرِهُوْا مَا نَزَّلَ اللهُ سَنُطِيْعُكُمْ فِيْ بَعْضِ الْاَمْرِۚ وَاللهُ يَعْلَمُ اِسْرَارَهُمْ
এটা এজন্য যে, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তা যারা অপছন্দ করে তাদেরকে মুনাফিকরা বলে, কোন কোন ব্যাপারে আমরা তোমাদের কথাও মানব। আল্লাহ তাদের এসব গোপন বিষয় সম্পর্কে অবগত রয়েছেন। (সূরা মুহাম্মাদ- ২৬)
তারা সত্যকে দেখে না এবং শোনেও না :
اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ لَعَنَهُمُ اللهُ فَاَصَمَّهُمْ وَاَعْمٰۤى اَبْصَارَهُمْ
এরা ঐসব লোক, যাদের উপর আল্লাহ লানত করেছেন এবং তাদের শ্রবণ করা ও দেখার শক্তি নষ্ট করে দিয়েছেন। (সূরা মুহাম্মাদ- ২৩)
মুনাফিকরা কুরআন নিয়ে গবেষণা করে না :
اَفَلَا يَتَدَبَّرُوْنَ الْقُرْاٰنَ اَمْ عَلٰى قُلُوْبٍ اَقْفَالُهَا
তবে কি তারা কুরআন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে না? নাকি তাদের অন্তরে তালা লেগে গেছে? (সূরা মুহাম্মাদ- ২৪)
শয়তান তাদের খারাপ কাজকে সুন্দর করে দেখায় :
اِنَّ الَّذِيْنَ ارْتَدُّوْا عَلٰۤى اَدْبَارِهِمْ مِّنْ ۢ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْهُدَى الشَّيْطَانُ سَوَّلَ لَهُمْؕ وَاَمْلٰى لَهُمْ
নিশ্চয় যারা তাদের কাছে হেদায়াত স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও মুখ ফিরিয়ে নেয়, শয়তান তাদেরকে সেদিকেই লোভ দেখায় এবং মিথ্যা আশার জাল বিস্তার করে দেয়। (সূরা মুহাম্মাদ- ২৫)
শয়তান তাদের উপর আধিপত্য বিস্তার করে :
اِسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَاَنْسَاهُمْ ذِكْرَ اللهِؕ اُولٰٓئِكَ حِزْبُ الشَّيْطَانِؕ اَ لَاۤ اِنَّ حِزْبَ الشَّيْطَانِ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ
শয়তান তাদের উপর পরিপূর্ণ আধিপত্য বিস্তার করে নিয়েছে। অতঃপর সে তাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে ভুলিয়ে রেখেছে। সাবধান! তারা শয়তানের দল; তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেই। (সূরা মুজাদালা- ১৯)
তারা আল্লাহর বিধি-বিধানের জ্ঞান রাখে না :
اَ لْاَعْرَابُ اَشَدُّ كُفْرًا وَّنِفَاقًا وَّاَجْدَرُ اَ لَّا يَعْلَمُوْا حُدُوْدَ مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ عَلٰى رَسُوْلِهٖؕ وَاللهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ
মরুবাসীরা কুফরী ও কপটতায় খুবই কঠোর এবং এরা সেসব সীমারেখা না জানারই যোগ্য, যা আল্লাহ তাঁর রাসূলের উপর অবতীর্ণ করেছেন। মূলত আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও অত্যন্ত কৌশলী। (সূরা তাওবা- ৯৭)
ব্যাখ্যা : অধিকাংশ মরুবাসীদের জন্য ইসলাম গ্রহণ করা নিছক স্বার্থ, সুবিধা ও কৌশলের ব্যাপার ছিল। তাদের উপর নামায পড়ার ও রোযা রাখার যে বিধান আরোপিত হতো, যে যাকাত আদায় করা হতো, একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য তাদের কাছ থেকে যে জানমালের কুরবানী চাওয়া হচ্ছিল- এসব জিনিস তাদের কাছে ছিল খুবই বিরক্তিকর। এগুলোর হাত থেকে বাঁচার জন্য তারা নানা ধরনের অজুহাতের আশ্রয় নিত। তাছাড়া নগরবাসীদের তুলনায় গ্রামীণ লোকেরাই বেশি মুনাফিকী আচরণ করে থাকে এবং সত্যকে অস্বীকার করার প্রবণতা তাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। নগরবাসীরা জ্ঞানীগুণী লোকদের সাহচর্যে এসে দ্বীন সম্পর্কে কিছু না কিছু জ্ঞান লাভ করতেও পারে; কিন্তু গ্রামবাসীরা দিন-রাত কেবল রুজী-রোজগারের ব্যস্ততায় লেগে থাকে এবং উন্নত পর্যায়ের কোন জিনিসের প্রতি দৃষ্টি দেয়ার সময়ই তাদের থাকে না। তাই ইসলাম ও তার বিধিবিধান সম্পর্কে তাদের অজ্ঞ থাকার সম্ভাবনাই বেশি।
মানুষের পক্ষ থেকে আসা বিপদকে আল্লাহর আযাব মনে করে :
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّقُوْلُ اٰمَنَّا بِاللهِ فَاِذَاۤ اُوْذِيَ فِى اللهِ جَعَلَ فِتْنَةَ النَّاسِ كَعَذَابِ اللهِؕ وَلَئِنْ جَآءَ نَصْرٌ مِّنْ رَّبِّكَ لَيَقُوْلُنَّ اِنَّا كُنَّا مَعَكُمْ
মানুষের মধ্যে কেউ কেউ বলে, আমরা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করি। কিন্তু যখন তারা আল্লাহর পথে চলার জন্য কষ্টে পতিত হয়, তখন তারা মানুষের পক্ষ হতে প্রাপ্ত দুঃখ-কষ্টকে আল্লাহর শাস্তির মতো মনে করে। অতঃপর তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে কোন সাহায্য আসলে তারা বলতে থাকে, আমরা তো তোমাদের সঙ্গেই ছিলাম। (সূরা আনকাবূত- ১০)
ব্যাখ্যা : তারা মানুষের নির্যাতনের ভয়ে সৎকাজ থেকে বিরত থাকে। তারা যখন কাফিরদের হুমকি ও নির্যাতনের সম্মুখীন হয় তখন মনে করে যে, মরে যাওয়ার পর জাহান্নামের যে আযাব ভোগ করতে হবে সে আযাব তো পরে ভোগ করব; কিন্তু এখন এ নগদ আযাব থেকে নিস্তার লাভ করার জন্য আমাকে কুফরীর মধ্যে চলে যাওয়া উচিত। এভাবে দুনিয়ার জীবনটা আরামের মধ্য দিয়ে কেটে যাবে। সত্য দ্বীনের জন্য নিজের গায়ে বিন্দুমাত্র আঘাত নিতেও সে প্রস্তুত নয়; কিন্তু যখন আল্লাহ এ দ্বীনের জন্য জীবন উৎসর্গকারীদের সাফল্য ও বিজয় দান করবেন তখন এ ব্যক্তি বিজয়ের ফল ভোগ করে নেয়ার জন্য এসে বলবে, আমি তো তোমাদের সাথেই ছিলাম; তোমাদের সাফল্যের জন্য দু‘আ করেছিলাম। কিন্তু এসব সুযোগ সন্ধানী লোক যখনই দেখে যে, ইসলামের পথ কঠিন হয়ে গেছে তখনই সে নিরাপত্তা লাভের অজুহাতে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করে।
তারা আল্লাহ সম্পর্কে খারাপ ধারণা করে :
وَيُعَذِّبَ الْمُنَافِقِيْنَ وَالْمُنَافِقَاتِ وَالْمُشْرِكِيْنَ وَالْمُشْرِكَاتِ الظَّآنِّيْنَ بِاللهِ ظَنَّ السَّوْءِ
আল্লাহ মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারী এবং মুশরিক পুরুষ ও মুশরিক নারীদেরকে আযাব দেবেন, (কেননা) তারা আল্লাহর সম্পর্কে খারাপ ধারণা রাখে। (সূরা ফাতহ- ৬)
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّقُوْلُ اٰمَنَّا بِاللهِ وَبِالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَمَا هُمْ بِمُؤْمِنِيْنَ
মানুষের মধ্যে এমনও লোক আছে যারা বলে, আমরা আল্লাহর এবং বিচার দিনের উপর ঈমান এনেছি; অথচ তারা মোটেই ঈমানদার নয়। (সূরা বাক্বারা- ৮)
তারা মুসলিমদের সাথে প্রতারণা করে :
يُخَادِعُوْنَ اللهَ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۚ وَمَا يَخْدَعُوْنَ اِلَّاۤ اَنْفُسَهُمْ وَمَا يَشْعُرُوْنَ
তারা আল্লাহ ও মুমিনদের সাথে প্রতারণা করে। প্রকৃতপক্ষে তারা নিজেদের ব্যতীত অন্য কারো সাথে প্রতারণা করে না; অথচ তারা এটা অনুভব করতে পারে না। (সূরা বাক্বারা- ৯)
তারা আল্লাহর সাথেও ধোঁকাবাজি করে :
اِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ يُخَادِعُوْنَ اللهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْ
নিশ্চয় মুনাফিকরা আল্লাহর সঙ্গে ধোঁকাবাজি করে; বস্তুত তিনিই তাদেরকে এর দ্বারা ধোঁকায় ফেলে দিচ্ছেন। (সূরা নিসা- ১৪২)
তাদের অন্তরে মুনাফিকীর রোগ থাকে :
فِيْ قُلُوْبِهِمْ مَّرَضٌ فَزَادَهُمُ اللهُ مَرَضًا
তাদের অন্তরে রোগ রয়েছে, উপরন্তু আল্লাহ তাদের রোগ আরো বৃদ্ধি করে দিয়েছেন। (সূরা বাক্বারা- ১০)
ব্যাখ্যা : এখানে মুনাফিকীকেই রোগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ‘‘আল্লাহ মুনাফিকদের এ রোগ আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন’’- এ কথার অর্থ হচ্ছে, তিনি ঘটনাস্থলেই মুনাফিকদেরকে তাদের কার্যকলাপের শাস্তি দেন না বরং তাদেরকে ছাড় দিতে থাকেন। এর ফলে মুনাফিকরা নিজেদের কলা-কৌশলগুলোকে আপাত দৃষ্টিতে সফল হতে দেখে আরো বেশি মুনাফিকী কার্যকলাপে লিপ্ত হতে থাকে।
উপদেশ দিলে পাল্টা জবাব দেয় :
وَاِذَا قِيْلَ لَهُمْ لَا تُفْسِدُوْا فِى الْاَرْضِ قَالُوْاۤ اِنَّمَا نَحْنُ مُصْلِحُوْنَ
যখন তাদেরকে বলা হয়, তোমরা পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করো না। তখন তারা বলে, আমরা তো কেবল সংশোধনকারী মাত্র। (সূরা বাক্বারা- ১১)
মুনাফিকরা ফাসাদ সৃষ্টি করে :
اَلَاۤ اِنَّهُمْ هُمُ الْمُفْسِدُوْنَ وَلٰكِنْ لَّا يَشْعُرُوْنَ
সাবধান! তারাই অশান্তি সৃষ্টিকারী; কিন্তু তারা বুঝে না। (সূরা বাক্বারা- ১২)
তারা প্রকৃত ঈমানদারদেরকে নির্বোধ মনে করে :
وَاِذَا قِيْلَ لَهُمْ اٰمِنُوْا كَمَاۤ اٰمَنَ النَّاسُ قَالُوْاۤ اَنُؤْمِنُ كَمَاۤ اٰمَنَ السُّفَهَآءُ
যখন তাদেরকে বলা হয়, লোকেরা যেরূপ ঈমান এনেছে তোমরাও অনুরূপ ঈমান আনয়ন করো। তখন তারা বলে, নির্বোধরা যেরূপ ঈমান এনেছে আমরাও কি সেরূপ ঈমান আনব? (সূরা বাক্বারা- ১৩)
ব্যাখ্যা : যারা একাগ্রচিত্তে নিষ্ঠার সাথে ইসলাম গ্রহণ করে নিজেদেরকে নানা নির্যাতন, কষ্ট ও বিপদের মুখে নিক্ষেপ করছিল মুনাফিকরা তাদেরকে নির্বোধ মনে করত। তাদের মতে, নিছক সত্য ও ন্যায়ের জন্য সারা দেশের জনসমাজের শত্রুতার মুখোমুখি হওয়া নিরেট বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। হক্ব ও বাতিলের বিতর্কে না জড়িয়ে সব ব্যাপারেই নিজের স্বার্থের দিকে দৃষ্টি রাখাই প্রকৃত বুদ্ধিমানের কাজ।
আসলে মুনাফিকরাই নির্বোধ :
اَ لَاۤ اِنَّهُمْ هُمُ السُّفَهَآءُ وَلٰكِنْ لَّا يَعْلَمُوْنَ
সাবধান! নিশ্চয় তারাই নির্বোধ, কিন্তু তারা তা জানে না। (সূরা বাক্বারা- ১৩)
তারা ঈমান ও কুফরীর মাঝখানে দোদুল্যমান থাকে :
وَاِذَا لَقُوا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا قَالُوْاۤ اٰمَنَّاۚ وَاِذَا خَلَوْا اِلٰى شَيَاطِيْنِهِمْ قَالُوْاۤ اِنَّا مَعَكُمْ اِنَّمَا نَحْنُ مُسْتَهْزِئُوْنَ
যখন তারা মুমিনদের সাথে মিলিত হয় তখন তারা বলে, আমরা ঈমান এনেছি। আর যখন তারা নিজেদের শয়তানদের সাথে মিলিত হয় তখন বলে, আমরা তো তোমাদের সঙ্গেই আছি; আমরা তো শুধু (তাদের সাথে) ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে থাকি। (সূরা বাক্বারা- ১৪)
ব্যাখ্যা : এখানে شَيَاطِيْنُ (শায়াত্বীন) বলতে মুশরিকদের বড় বড় সরদারদেরকে বুঝানো হয়েছে। কেননা তারা তখন ইসলামের বিরোধিতার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছিল।
مُذَبْذَبِيْنَ بَيْنَ ذٰلِكَ لَاۤ اِلٰى هٰۤؤُلَآءِ وَلَاۤ اِلٰى هٰۤؤُلَآءِؕ وَمَنْ يُّضْلِلِ اللهُ فَلَنْ تَجِدَ لَهٗ سَبِيْلًا
এরা দোদুল্যমান অবস্থায় ঝুলন্ত; এদিকেও নয় ওদিকেও নয়। বস্তুত আল্লাহ যাদেরকে পথভ্রষ্ট করেন, তুমি তাদের জন্য কখনো কোন পথই খুঁজে পাবে না। (সূরা নিসা- ১৪৩)
মুনাফিকরা গোমরাহীর পথকে বেছে নেয় :
اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ اشْتَرَوُا الضَّلَالَةَ بِالْهُدٰى فَمَا رَبِحَتْ تِّجَارَتُهُمْ وَمَا كَانُوْا مُهْتَدِيْنَ
এরাই তারা, যারা হেদায়াতের পরিবর্তে গোমরাহীকে ক্রয় করে নিয়েছে। সুতরাং তাদের ব্যবসা লাভজনক হয়নি এবং তারা সঠিক পথেও পরিচালিত হয়নি। (সূরা বাক্বারা- ১৬)
তারা খারাপ কাজের নির্দেশ দেয় :
اَ لْمُنَافِقُوْنَ وَالْمُنَافِقَاتُ بَعْضُهُمْ مِّنْ ۢبَعْضٍ يَّأْمُرُوْنَ بِالْمُنْكَرِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمَعْرُوْفِ وَيَقْبِضُوْنَ اَيْدِيَهُمْ
মুনাফিক নর ও মুনাফিক নারী একে অপরের অনুরূপ, তারা অসৎকাজের নির্দেশ দেয় এবং সৎকাজ থেকে নিষেধ করে; আর তারা (আল্লাহর পথে ব্যয় করা হতে) নিজেদের হাত গুটিয়ে রাখে। (সূরা তাওবা- ৬৭)
তারা আল্লাহকে ভুলে যায় :
نَسُوا اللهَ فَنَسِيَهُمْؕ اِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ
তারা আল্লাহকে ভুলে গেছে, ফলে তিনিও তাদেরকে ভুলে গেছেন; নিশ্চয় মুনাফিকরাই পাপাচারী (সম্প্রদায়)। (সূরা তাওবা- ৬৭)
কসম খেয়ে মিথ্যা কথা বলে :
يَحْلِفُوْنَ بِاللهِ مَا قَالُوْاؕ وَلَقَدْ قَالُوْا كَلِمَةَ الْكُفْرِ وَكَفَرُوْا بَعْدَ اِسْلَامِهِمْ
তারা আল্লাহর নামে শপথ করে যে, তারা কিছুই বলেনি। অথচ তারা কুফরীর কথা বলেছে এবং ইসলাম গ্রহণের পর কাফির হয়ে গেছে। (সূরা তাওবা- ৭৪)
তারা মুখে যা বলে তাদের অন্তরে তা থাকে না :
يَقُوْلُوْنَ بِاَفْوَاهِهِمْ مَّا لَيْسَ فِيْ قُلُوْبِهِمْؕ وَاللهُ اَعْلَمُ بِمَا يَكْتُمُوْنَ
যা তাদের অন্তরে নেই, তারা তাই মুখে বলে থাকে। তবে তারা যা গোপন করে, আল্লাহ সে সম্পর্কে অবহিত রয়েছেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৬৭)
মুনাফিকরা ওয়াদা ভঙ্গ করে :
وَمِنْهُمْ مَّنْ عَاهَدَ اللهَ لَئِنْ اٰتَانَا مِنْ فَضْلِهٖ لَنَصَّدَّقَنَّ وَلَنَكُوْنَنَّ مِنَ الصَّالِحِيْنَ ‐ فَلَمَّاۤ اٰتَاهُمْ مِّنْ فَضْلِهٖ بَخِلُوْا بِهٖ وَتَوَلَّوْا وَّهُمْ مُّعْرِضُوْنَ
তাদের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহর নিকট অঙ্গীকার করেছিল যে, আল্লাহ নিজ কৃপায় আমাদেরকে দান করলে নিশ্চয় আমরা সাদাকা করব এবং সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হব। অতঃপর যখন তিনি নিজ কৃপায় তাদেরকে তা দান করলেন, তখন তারা এ বিষয়ে কার্পণ্য করল এবং বিরুদ্ধভাবাপন্ন হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিল। (সূরা তাওবা- ৭৫, ৭৬)
তারা আল্লাহর পথে ব্যয় করাকে জরিমানা মনে করে :
وَمِنَ الْاَعْرَابِ مَنْ يَّتَّخِذُ مَا يُنْفِقُ مَغْرَمًا
মরুবাসীদের কেউ কেউ এমন আছে যে, যা তারা (আল্লাহর পথে) ব্যয় করে তা অর্থদন্ড মনে করে। (সূরা তাওবা- ৯৮)
তারা স্বেচ্ছায় আল্লাহর পথে ব্যয় করে না :
وَمَا مَنَعَهُمْ اَنْ تُقْبَلَ مِنْهُمْ نَفَقَاتُهُمْ اِلَّاۤ اَنَّهُمْ كَفَرُوْا بِاللهِ وَبِرَسُوْلِهٖ وَلَا يَأْتُوْنَ الصَّلَاةَ اِلَّا وَهُمْ كُسَالٰى وَلَا يُنْفِقُوْنَ اِلَّا وَهُمْ كَارِهُوْنَ
তাদের ব্যয়কৃত কোনকিছু গ্রহণ করতে নিষেধ করা হয়েছে এজন্য যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করে, সালাতে শৈথিল্যের সাথে উপস্থিত হয় এবং অনিচ্ছাকৃতভাবে (আল্লাহর পথে) ব্যয় করে। (সূরা তাওবা- ৫৪)
তারা নামাযে অলসতা করে :
فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّيْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُوْنَ
দুর্ভোগ সেসব (মুনাফিক) নামাযীদের জন্য, যারা নিজেদের নামায থেকে উদাসীন থাকে। (সূরা মাঊন- ৪, ৫)
তারা মানুষকে দেখানোর জন্য আমল করে :
وَاِذَا قَامُوْاۤ اِلَى الصَّلَاةِ قَامُوْا كُسَالٰى يُرَآءُوْنَ النَّاسَ
যখন তারা সালাতে দাঁড়ায় তখন শৈথিল্যের সঙ্গে কেবল লোক দেখানোর জন্য দাঁড়ায়। (সূরা নিসা- ১৪২)
মানুষকে ভালো কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখে :
اِتَّخَذُوْاۤ اَيْمَانَهُمْ جُنَّةً فَصَدُّوْا عَنْ سَبِيْلِ اللهِ فَلَهُمْ عَذَابٌ مُّهِيْنٌ
তারা তাদের শপথকে ঢাল হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে, এভাবে তারা (লোকদেরকে) আল্লাহর পথ থেকে বিরত রাখে। অতএব তাদের জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি। (সূরা মুজাদালা- ১৬)
তারা মুমিনদেরকেও তাদের মতো বানাতে চায় :
وَدُّوْا لَوْ تَكْفُرُوْنَ كَمَا كَفَرُوْا فَتَكُوْنُوْنَ سَوَآءً
তারা এটা কামনা করে যে, তারা যেরূপ কুফরী করেছে তোমরাও সেরূপ কুফরী কর, যাতে তোমরা তাদের সমান হয়ে যাও। (সূরা নিসা- ৮৯)
তারা কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব করে :
بَشِّرِ الْمُنَافِقِيْنَ بِاَنَّ لَهُمْ عَذَابًا اَلِيْمًا ‐ اَ لَّذِيْنَ يَتَّخِذُوْنَ الْكَافِرِيْنَ اَوْلِيَآءَ مِنْ دُوْنِ الْمُؤْمِنِيْنَؕ اَيَبْتَغُوْنَ عِنْدَهُمُ الْعِزَّةَ فَاِنَّ الْعِزَّةَ لِلّٰهِ جَمِيْعًا
মুনাফিকদেরকে সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য রয়েছে মর্মান্তিক শাস্তি- যারা মুমিনদের পরিবর্তে কাফিরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছে; (এর দ্বারা) তারা কি তাদের নিকট সম্মান পেতে চায়? বরং সমস্ত সম্মান তো আল্লাহরই। (সূরা নিসা- ১৩৮, ১৩৯)
তারা কাফিরদের অনুসরণ করতে চায় :
ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ قَالُوْا لِلَّذِيْنَ كَرِهُوْا مَا نَزَّلَ اللهُ سَنُطِيْعُكُمْ فِيْ بَعْضِ الْاَمْرِۚ وَاللهُ يَعْلَمُ اِسْرَارَهُمْ
এটা এজন্য যে, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তা যারা অপছন্দ করে তাদেরকে মুনাফিকরা বলে, কোন কোন ব্যাপারে আমরা তোমাদের কথাও মানব। আল্লাহ তাদের এসব গোপন বিষয় সম্পর্কে অবগত রয়েছেন। (সূরা মুহাম্মাদ- ২৬)
তারা সত্যকে দেখে না এবং শোনেও না :
اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ لَعَنَهُمُ اللهُ فَاَصَمَّهُمْ وَاَعْمٰۤى اَبْصَارَهُمْ
এরা ঐসব লোক, যাদের উপর আল্লাহ লানত করেছেন এবং তাদের শ্রবণ করা ও দেখার শক্তি নষ্ট করে দিয়েছেন। (সূরা মুহাম্মাদ- ২৩)
মুনাফিকরা কুরআন নিয়ে গবেষণা করে না :
اَفَلَا يَتَدَبَّرُوْنَ الْقُرْاٰنَ اَمْ عَلٰى قُلُوْبٍ اَقْفَالُهَا
তবে কি তারা কুরআন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে না? নাকি তাদের অন্তরে তালা লেগে গেছে? (সূরা মুহাম্মাদ- ২৪)
শয়তান তাদের খারাপ কাজকে সুন্দর করে দেখায় :
اِنَّ الَّذِيْنَ ارْتَدُّوْا عَلٰۤى اَدْبَارِهِمْ مِّنْ ۢ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْهُدَى الشَّيْطَانُ سَوَّلَ لَهُمْؕ وَاَمْلٰى لَهُمْ
নিশ্চয় যারা তাদের কাছে হেদায়াত স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও মুখ ফিরিয়ে নেয়, শয়তান তাদেরকে সেদিকেই লোভ দেখায় এবং মিথ্যা আশার জাল বিস্তার করে দেয়। (সূরা মুহাম্মাদ- ২৫)
শয়তান তাদের উপর আধিপত্য বিস্তার করে :
اِسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَاَنْسَاهُمْ ذِكْرَ اللهِؕ اُولٰٓئِكَ حِزْبُ الشَّيْطَانِؕ اَ لَاۤ اِنَّ حِزْبَ الشَّيْطَانِ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ
শয়তান তাদের উপর পরিপূর্ণ আধিপত্য বিস্তার করে নিয়েছে। অতঃপর সে তাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে ভুলিয়ে রেখেছে। সাবধান! তারা শয়তানের দল; তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেই। (সূরা মুজাদালা- ১৯)
তারা আল্লাহর বিধি-বিধানের জ্ঞান রাখে না :
اَ لْاَعْرَابُ اَشَدُّ كُفْرًا وَّنِفَاقًا وَّاَجْدَرُ اَ لَّا يَعْلَمُوْا حُدُوْدَ مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ عَلٰى رَسُوْلِهٖؕ وَاللهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ
মরুবাসীরা কুফরী ও কপটতায় খুবই কঠোর এবং এরা সেসব সীমারেখা না জানারই যোগ্য, যা আল্লাহ তাঁর রাসূলের উপর অবতীর্ণ করেছেন। মূলত আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও অত্যন্ত কৌশলী। (সূরা তাওবা- ৯৭)
ব্যাখ্যা : অধিকাংশ মরুবাসীদের জন্য ইসলাম গ্রহণ করা নিছক স্বার্থ, সুবিধা ও কৌশলের ব্যাপার ছিল। তাদের উপর নামায পড়ার ও রোযা রাখার যে বিধান আরোপিত হতো, যে যাকাত আদায় করা হতো, একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য তাদের কাছ থেকে যে জানমালের কুরবানী চাওয়া হচ্ছিল- এসব জিনিস তাদের কাছে ছিল খুবই বিরক্তিকর। এগুলোর হাত থেকে বাঁচার জন্য তারা নানা ধরনের অজুহাতের আশ্রয় নিত। তাছাড়া নগরবাসীদের তুলনায় গ্রামীণ লোকেরাই বেশি মুনাফিকী আচরণ করে থাকে এবং সত্যকে অস্বীকার করার প্রবণতা তাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। নগরবাসীরা জ্ঞানীগুণী লোকদের সাহচর্যে এসে দ্বীন সম্পর্কে কিছু না কিছু জ্ঞান লাভ করতেও পারে; কিন্তু গ্রামবাসীরা দিন-রাত কেবল রুজী-রোজগারের ব্যস্ততায় লেগে থাকে এবং উন্নত পর্যায়ের কোন জিনিসের প্রতি দৃষ্টি দেয়ার সময়ই তাদের থাকে না। তাই ইসলাম ও তার বিধিবিধান সম্পর্কে তাদের অজ্ঞ থাকার সম্ভাবনাই বেশি।
মানুষের পক্ষ থেকে আসা বিপদকে আল্লাহর আযাব মনে করে :
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّقُوْلُ اٰمَنَّا بِاللهِ فَاِذَاۤ اُوْذِيَ فِى اللهِ جَعَلَ فِتْنَةَ النَّاسِ كَعَذَابِ اللهِؕ وَلَئِنْ جَآءَ نَصْرٌ مِّنْ رَّبِّكَ لَيَقُوْلُنَّ اِنَّا كُنَّا مَعَكُمْ
মানুষের মধ্যে কেউ কেউ বলে, আমরা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করি। কিন্তু যখন তারা আল্লাহর পথে চলার জন্য কষ্টে পতিত হয়, তখন তারা মানুষের পক্ষ হতে প্রাপ্ত দুঃখ-কষ্টকে আল্লাহর শাস্তির মতো মনে করে। অতঃপর তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে কোন সাহায্য আসলে তারা বলতে থাকে, আমরা তো তোমাদের সঙ্গেই ছিলাম। (সূরা আনকাবূত- ১০)
ব্যাখ্যা : তারা মানুষের নির্যাতনের ভয়ে সৎকাজ থেকে বিরত থাকে। তারা যখন কাফিরদের হুমকি ও নির্যাতনের সম্মুখীন হয় তখন মনে করে যে, মরে যাওয়ার পর জাহান্নামের যে আযাব ভোগ করতে হবে সে আযাব তো পরে ভোগ করব; কিন্তু এখন এ নগদ আযাব থেকে নিস্তার লাভ করার জন্য আমাকে কুফরীর মধ্যে চলে যাওয়া উচিত। এভাবে দুনিয়ার জীবনটা আরামের মধ্য দিয়ে কেটে যাবে। সত্য দ্বীনের জন্য নিজের গায়ে বিন্দুমাত্র আঘাত নিতেও সে প্রস্তুত নয়; কিন্তু যখন আল্লাহ এ দ্বীনের জন্য জীবন উৎসর্গকারীদের সাফল্য ও বিজয় দান করবেন তখন এ ব্যক্তি বিজয়ের ফল ভোগ করে নেয়ার জন্য এসে বলবে, আমি তো তোমাদের সাথেই ছিলাম; তোমাদের সাফল্যের জন্য দু‘আ করেছিলাম। কিন্তু এসব সুযোগ সন্ধানী লোক যখনই দেখে যে, ইসলামের পথ কঠিন হয়ে গেছে তখনই সে নিরাপত্তা লাভের অজুহাতে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করে।
তারা আল্লাহ সম্পর্কে খারাপ ধারণা করে :
وَيُعَذِّبَ الْمُنَافِقِيْنَ وَالْمُنَافِقَاتِ وَالْمُشْرِكِيْنَ وَالْمُشْرِكَاتِ الظَّآنِّيْنَ بِاللهِ ظَنَّ السَّوْءِ
আল্লাহ মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারী এবং মুশরিক পুরুষ ও মুশরিক নারীদেরকে আযাব দেবেন, (কেননা) তারা আল্লাহর সম্পর্কে খারাপ ধারণা রাখে। (সূরা ফাতহ- ৬)
মুনাফিকরা জিহাদ থেকে পিছিয়ে থাকে :
وَقِيْلَ لَهُمْ تَعَالَوْا قَاتِلُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ اَوِ ادْفَعُوْاؕ قَالُوْا لَوْ نَعْلَمُ قِتَالًا لَّاتَّبَعْنَاكُمْؕ هُمْ لِلْكُفْرِ يَوْمَئِذٍ اَقْرَبُ مِنْهُمْ لِلْاِيْمَانِۚ يَقُوْلُوْنَ بِاَفْوَاهِهِمْ مَّا لَيْسَ فِيْ قُلُوْبِهِمْؕ وَاللهُ اَعْلَمُ بِمَا يَكْتُمُوْنَ
মুনাফিকদেরকে বলা হয়েছিল- এসো, আল্লাহর পথে সংগ্রাম করো অথবা তাদেরকে প্রতিরোধ করো। তখন তারা বলেছিল, যদি আমরা যুদ্ধ করতে জানতাম তবে অবশ্যই তোমাদের আনুগত্য করতাম। সেদিন তারা বিশ্বাসের চেয়ে অবিশ্বাসেরই অধিক নিকটবর্তী ছিল। তারা মুখ দিয়ে তাই বলে, যা তাদের অন্তরে নেই। আর তারা যা গোপন করে, আল্লাহ সে সম্পর্কে অবহিত। (সূরা আলে ইমরান- ১৬৭)
তারা অন্যকেও জিহাদে বের হতে দেয় না :
فَرِحَ الْمُخَلَّفُوْنَ بِمَقْعَدِهِمْ خِلَافَ رَسُوْلِ اللهِ وَكَرِهُوْاۤ اَنْ يُّجَاهِدُوْا بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَقَالُوْا لَا تَنْفِرُوْا فِى الْحَرِّؕ قُلْ نَارُ جَهَنَّمَ اَشَدُّ حَرًّاؕ لَوْ كَانُوْا يَفْقَهُوْنَ
যারা পশ্চাতে রয়ে গেল তারা আল্লাহর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে বসে থাকাতেই আনন্দ বোধ করল এবং তাদের ধনসম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করাকে অপছন্দ করল। তারা বলল, গরমের মধ্যে অভিযানে বের হয়ো না। বলো, জাহান্নামের আগুন আরো প্রচন্ড গরম, যদি তারা বুঝত! (সূরা তাওবা- ৮১)
তারা যুদ্ধে না গিয়ে খেলতামাশা করে :
وَيَقُوْلُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَوْلَا نُزِّلَتْ سُوْرَةٌۚ فَاِذَاۤ اُنْزِلَتْ سُوْرَةٌ مُّحْكَمَةٌ وَّذُكِرَ فِيْهَا الْقِتَالُ رَاَيْتَ الَّذِيْنَ فِيْ قُلُوْبِهِمْ مَّرَضٌ يَّنْظُرُوْنَ اِلَيْكَ نَظَرَ الْمَغْشِيِّ عَلَيْهِ مِنَ الْمَوْتِؕ فَاَوْلٰى لَهُمْ
যারা ঈমানদার তারা বলেছিল, (যুদ্ধের আদেশসহ) কোন সূরা নাযিল হচ্ছে না কেন? কিন্তু যখন যুদ্ধের কথা উল্লেখ করে একটি সুস্পষ্ট সূরা নাযিল হলো তখন আপনি দেখতে পেলেন যে, যাদের অন্তরে রোগ আছে তারা আপনার দিকে এমনভাবে তাকাচ্ছে, যেমন মৃত্যুর সময় কেউ বেহুশ অবস্থায় তাকায়। তাদের জন্য আফসোস! (সূরা মুহাম্মাদ- ২০)
ব্যাখ্যা : সে সময় মুসলিমরা যে পরিস্থিতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছিল এবং ইসলাম ও মুসলিমদের সাথে কাফিরদের যে আচরণ চলছিল তার কারণে যুদ্ধের নির্দেশ আসার পূর্বেই মুসলিমদের সাধারণ মতামত ছিল যে, এখন আমাদের যুদ্ধের অনুমতি পাওয়া উচিত। তারা ব্যাকুলচিত্তে আল্লাহর নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করছিল এবং বার বার জানতে চাচ্ছিল যে, এ যালিমদের বিরুদ্ধে তাদেরকে লড়াই করার অনুমতি দেয়া হচ্ছে না কেন? কিন্তু যারা মুনাফিকীর রোগ নিয়ে মুসলিমদের দলে শামিল হয়েছিল, তাদের অবস্থা ছিল মুমিনদের অবস্থা থেকে ভিন্ন। তারা তাদের প্রাণ ও অর্থ-সম্পদকে আল্লাহ ও তাঁর দ্বীনের চেয়ে অনেক বেশি প্রিয় মনে করত এবং সেক্ষেত্রে কোন রকম বিপদের ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত ছিল না। এ নির্দেশ না আসা পর্যন্ত তাদের ও ঈমানদারদের মধ্যে বাহ্যিক কোন পার্থক্য দেখা যেত না। তারা উভয় দলই এক সাথে নামায পড়ত। রোযা রাখতেও তাদের কোন দ্বিধা-সংকোচ ছিল না। ঠান্ডা প্রকৃতির ইসলাম তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল। কিন্তু যখন ইসলামের জন্য জীবন বাজি রাখার সময় আসল, তখন তাদের মুনাফিকী প্রকাশ হয়ে গেল এবং তারা যে ঈমানের মুখোশ পরেছিল তা খুলে গেল।
তারা মহিলাদের মতো ঘরে বসে থাকতে চায় :
رَضُوْا بِاَنْ يَّكُوْنُوْا مَعَ الْخَوَالِفِ وَطُبِعَ عَلٰى قُلُوْبِهِمْ فَهُمْ لَا يَفْقَهُوْنَ
তারা পেছনে থাকা লোকদের সঙ্গে অবস্থান করাই পছন্দ করেছে। সুতরাং তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেয়া হয়েছে; ফলে তারা বুঝতে পারে না। (সূরা তাওবা- ৮৭)
وَمِنْهُمْ مَّنْ يَّقُوْلُ ائْذَنْ لِّيْ وَلَا تَفْتِنِّيْؕ اَ لَا فِى الْفِتْنَةِ سَقَطُوْا وَاِنَّ جَهَنَّمَ لَمُحِيْطَةٌ ۢبِالْكَافِرِيْنَ
তাদের মধ্যে এমনও লোক আছে যারা বলে, আমাকে অব্যাহতি দাও এবং আমাকে ফিতনায় ফেলো না। সাবধান! তারা নিজেরাই ফিতনায় পড়ে আছে। নিশ্চয় জাহান্নাম কাফিরদেরকে বেষ্টন করে আছে। (সূরা তাওবা- ৪৯)
শানে নুযূল : তাবুক যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করার পক্ষে যাদ ইবনে কাইস নামক এক মুনাফিক ওজর পেশ করল যে, আমি সুন্দরী স্ত্রীলোক দেখলেই আকৃষ্ট হয়ে পড়ি, শুনেছি রোমান মহিলারা খুবই সুন্দরী। সুতরাং আমি সেখানে গেলে তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যেতে পারি। তখন উক্ত আয়াতটি নাযিল হয়।
তারা সুযোগের সন্ধানে থাকে :
اَلَّذِيْنَ يَتَرَبَّصُوْنَ بِكُمْؕ فَاِنْ كَانَ لَكُمْ فَتْحٌ مِّنَ اللهِ قَالُوْاۤ اَلَمْ نَكُنْ مَّعَكُمْ وَاِنْ كَانَ لِلْكَافِرِيْنَ نَصِيْبٌ قَالُوْاۤ اَلَمْ نَسْتَحْوِذْ عَلَيْكُمْ وَنَمْنَعْكُمْ مِّنَ الْمُؤْمِنِيْنَ
যারা তোমাদের অমঙ্গলের প্রতীক্ষায় থাকে তারা আল্লাহর পক্ষ হতে তোমাদের বিজয় হলে বলে, আমরা কি তোমাদের সঙ্গে ছিলাম না? আর যদি কাফিররা কিছুটা হলেও জয়লাভ করে, তবে তারা বলে আমরা কি তোমাদেরকে পরিবেষ্টন করে রেখেছিলাম না এবং আমরা কি তোমাদেরকে মুমিনদের হাত হতে রক্ষা করিনি? (সূরা নিসা- ১৪১)
ব্যাখ্যা : এটি প্রত্যেক যুগের মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য। মৌখিক স্বীকারোক্তি ও ইসলামের গন্ডির মধ্যে নামমাত্র প্রবেশের মাধ্যমে মুসলিম হিসেবে যতটুকু স্বার্থ ভোগ করা যায়, তা তারা ভোগ করে। আবার অন্যদিকে কাফির হিসেবে যে স্বার্থটুকু ভোগ করা সম্ভব, তা ভোগ করার জন্য তারা কাফিরদের সাথে যোগ দেয়। তারা সর্বোতভাবে কাফিরদের বিশ্বাসভাজন হওয়ার চেষ্টা করে। তারা তাদেরকে বলে, আমরা মোটেই গোঁড়া ও বিদ্বেষপরায়ণ মুসলিম নই। মুসলিমদের সাথে আমাদের কেবল নামের সম্পর্কটাই বিদ্যমান রয়েছে, কিন্তু আমাদের মানসিক ঝোঁক ও বিশ্বস্ততা রয়েছে তোমাদের প্রতি। চিন্তা-ভাবনা, আচার-ব্যবহার, রুচি-প্রকৃতি ইত্যাদি সবদিক দিয়ে তোমাদের সাথে আমাদের গভীর মিল রয়েছে। তাছাড়া ইসলাম ও কুফরীর সংঘর্ষে আমরা তোমাদের পক্ষই অবলম্বন করব।
সফর সুবিধাজনক হলে বের হতো, নতুবা নয় :
لَوْ كَانَ عَرَضًا قَرِيْبًا وَّسَفَرًا قَاصِدًا لَّاتَّبَعُوْكَ وَلٰكِنْ ۢبَعُدَتْ عَلَيْهِمُ الشُّقَّةُؕ وَسَيَحْلِفُوْنَ بِاللهِ لَوِ اسْتَطَعْنَا لَخَرَجْنَا مَعَكُمْۚ يُهْلِكُوْنَ اَنْفُسَهُمْۚ وَاللهُ يَعْلَمُ اِنَّهُمْ لَكَاذِبُوْنَ
আর যদি নগদ সম্পদ লাভের সম্ভাবনা থাকত এবং সফর সহজ মনে হতো, তবে নিশ্চয় তারা তোমার অনুসরণ করত, কিন্তু তাদের নিকট যাত্রাপথ সুদীর্ঘ মনে হলো। তারা অচিরেই আল্লাহর নামে শপথ করে বলবে, আমরা যদি সক্ষম হতাম তবে অবশ্যই আমরা তোমাদের সঙ্গে বের হতাম। এভাবে (মিথ্যা অজুহাতের মাধ্যমে) তারা নিজেদেরকেই ধ্বংস করেছে। আর আল্লাহ জানেন যে, অবশ্যই তারা মিথ্যাবাদী। (সূরা তাওবা- ৪২)
আসলে তাদের জিহাদে বের হওয়ার কোন ইচ্ছা থাকে না :
وَلَوْ اَرَادُوا الْخُرُوْجَ لَاَعَدُّوْا لَهٗ عُدَّةً وَّلٰكِنْ كَرِهَ اللهُ انْۢبِعَاثَهُمْ فَثَبَّطَهُمْ وَقِيْلَ اقْعُدُوْا مَعَ الْقَاعِدِيْنَ
যদি তারা (যুদ্ধের জন্য) বের হয়ে আসত তবে অবশ্যই তারা এটার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করত, কিন্তু তাদের অভিযাত্রা আল্লাহর অপছন্দ ছিল; সুতরাং তিনি তাদেরকে বিরত রাখেন। ফলে তাদেরকে বলা হয়, যারা বসে আছে তোমরা তাদের সাথে বসে থাকো। (সূরা তাওবা- ৪৬)
ব্যাখ্যা : যখন মুনাফিকরা শরীয়াত মেনে চলতে গিয়ে সামান্যতম ক্ষতি বা কষ্ট সহ্য করতে পারে না, তখন তাদের কাছ থেকে কোনক্রমেই বড় রকমের কোন ত্যাগ ও কুরবানীর আশা করা যায় না। তাদের কাছে যদি প্রাণদান বা ঘরবাড়ি পরিত্যাগ করার দাবী করা হয় তাহলে তারা সঙ্গে সঙ্গেই ছিটকে পড়বে এবং আনুগত্যের পরিবর্তে নাফরমানির পথ অবলম্বন করবে।
তারা প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টায় থাকে :
لَوْ يَجِدُوْنَ مَلْجَأً اَوْ مَغَارَاتٍ اَوْ مُدَّخَلًا لَّوَلَّوْا اِلَيْهِ وَهُمْ يَجْمَحُوْنَ
যদি তারা কোন আশ্রয়স্থল পেত অথবা গুহা কিংবা লুকিয়ে থাকার মতো একটু স্থান পেত, তবে অবশ্যই তারা দ্রুতগতিতে সেদিকেই অগ্রসর হতো। (সূরা তাওবা- ৫৭)
মুনাফিকরা মুমিনদের দোষ খুঁজে :
اَلَّذِيْنَ يَلْمِزُوْنَ الْمُطَّوِّعِيْنَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ فِى الصَّدَقَاتِ وَالَّذِيْنَ لَا يَجِدُوْنَ اِلَّا جُهْدَهُمْ فَيَسْخَرُوْنَ مِنْهُمْؕ سَخِرَ اللهُ مِنْهُمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
মুমিনদের মধ্যে যারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাদাকা দেয় এবং যারা নিজ শ্রম ব্যতীত অন্য কিছুই পায় না, যারা তাদেরকে নিয়ে বিদ্রূপ করে, আল্লাহও তাদের সাথে বিদ্রূপ করেন। তাদের জন্য রয়েছে মর্মান্তিক শাস্তি। (সূরা তাওবা- ৭৯)
শানে নুযূল : আবু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন যাকাত ও দান-খয়রাতের ব্যাপারে আয়াত নাযিল হয়, তখন আমরা শ্রমের কাজ করতাম। এমন সময় আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রাঃ) এসে অনেক অর্থ-সম্পদ দান করেন। তখন মুনাফিকরা বলতে লাগল, এ মানুষটি রিয়াকার (অর্থাৎ সে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে দান করেছে)। তারপর অন্য এক ব্যক্তি (আবু আকীল আনসারী) উপস্থিত হয়ে মাত্র এক সা‘ (দুই সের এগার ছটাক) বস্তু দান করলেন। তখন মুনাফিকরা বলল, আল্লাহ তা‘আলা এ সামান্য বস্তুর প্রতি মুখাপেক্ষী নন। তখন উক্ত আয়াত নাযিল হয়। (সহীহ বুখারী, হা/১৪১৫)
যাকাতের মাল বণ্টনে আপত্তি করে :
وَمِنْهُمْ مَّنْ يَّلْمِزُكَ فِى الصَّدَقَاتِ فَاِنْ اُعْطُوْا مِنْهَا رَضُوْا وَاِنْ لَّمْ يُعْطَوْا مِنْهَاۤ اِذَا هُمْ يَسْخَطُوْنَ
তাদের মধ্যে এমনও লোক আছে, যে সাদাকা বণ্টন সম্পর্কে তোমাকে দোষারোপ করে। অতঃপর তার কিছু অংশ তাদেরকে দেয়া হলে তারা সন্তুষ্ট হয় এবং তা থেকে তাদেরকে কিছু না দেয়া হলে তৎক্ষণাৎ তারা ক্ষুব্ধ হয়। (সূরা তাওবা- ৫৮)
শানে নুযূল : রাসূল ﷺ গণিমতের মাল বণ্টন করার সময় এক মুনাফিক বলল, তোমাদের নবীর প্রতি লক্ষ্য করো, সে তোমাদের প্রাপ্য বকরীর রাখালদের মধ্যে বণ্টন করে দিচ্ছে এবং মনে করছে যে, সে খুব ন্যায় কাজই করেছে। তখন এ সম্পর্কে উক্ত আয়াতটি নাযিল হয়।
তারা তাগুতের কাছে বিচার চায় :
اَلَمْ تَرَ اِلَى الَّذِيْنَ يَزْعُمُوْنَ اَنَّهُمْ اٰمَنُوْا بِمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكَ وَمَاۤ اُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيْدُوْنَ اَنْ يَّتَحَاكَمُوْاۤ اِلَى الطَّاغُوْتِ وَقَدْ اُمِرُوْاۤ اَنْ يَّكْفُرُوْا بِهٖؕ وَيُرِيْدُ الشَّيْطَانُ اَنْ يُّضِلَّهُمْ ضَلَالًا ۢبَعِيْدًا
তুমি কি তাদেরকে দেখনি যারা দাবি করে যে, তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে তারা বিশ্বাস স্থাপন করে; অথচ তারা তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থী হতে চায়? যদিও তা প্রত্যাখ্যান করার জন্য তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মূলত শয়তান তাদেরকে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট করতে চায়। (সূরা নিসা- ৬০)
তারা কুরআন-সুন্নাহর সকল ফায়সালা মানতে চায় না :
وَاِذَا قِيْلَ لَهُمْ تَعَالَوْا اِلٰى مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ وَاِلَى الرَّسُوْلِ رَاَيْتَ الْمُنَافِقِيْنَ يَصُدُّوْنَ عَنْكَ صُدُوْدًا
যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার দিকে এবং রাসূলের দিকে এসো, তখন তুমি মুনাফিকদেরকে তোমার নিকট হতে মুখ ফিরিয়ে নিতে দেখবে। (সূরা নিসা- ৬১)
وَاِذَا دُعُوْاۤ اِلَى اللهِ وَرَسُوْلِهٖ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ اِذَا فَرِيْقٌ مِّنْهُمْ مُّعْرِضُوْنَ
যখন তাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেয়ার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে তাদেরকে আহবান করা হয়, তখন তাদের একদল মুখ ফিরিয়ে নেয়। (সূরা নূর- ৪৮)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতগুলো পরিষ্কার জানিয়ে দিচ্ছে যে, রাসূল ﷺ এর ফায়সালা হচ্ছে আল্লাহর ফায়সালা এবং তাঁর হুকুম আল্লাহরই হুকুম। রাসূল ﷺ এর দিকে আহবান করা নিছক রাসূল ﷺ এর দিকেই আহবান করা নয়, বরং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল উভয়ের দিকেই আহবান করা। তাছাড়া এ আয়াতটি থেকে এ কথা নিঃসন্দেহে সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য ছাড়া ঈমানের দাবী অর্থহীন। সুতরাং প্রতিটি মুসলিমকে ব্যক্তি ও জাতি হিসেবে অবশ্যই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দেয়া আইনের আনুগত্য করতে হবে। নতুবা তার ঈমানের দাবী একটি মুনাফিকী দাবীতে পরিণত হবে। এ ব্যাপারটি কেবল নবী ﷺ এর জীবনের জন্যই ছিল না বরং পরবর্তীতে যিনিই ইসলামী রাষ্ট্রের বিচারকের পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন এবং আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাহ অনুযায়ী ফায়সালা দেবেন, তাঁর আদালতের রায়ই হচ্ছে আল্লাহ ও রাসূলের রায়। সুতরাং যে ব্যক্তি তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, সে মূলত আল্লাহ ও তাঁর রাসূল থেকেই মুখ ফিরিয়ে নেবে এবং সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্য হিসেবে বিবেচিত হবে। এ আয়াতটি পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করছে যে, যে ব্যক্তি শরীয়াতের লাভজনক কথাগুলোকে সানন্দে গ্রহণ করে নেয় কিন্তু যা কিছু তার স্বার্থ ও আশা-আকাঙ্ক্ষার বিরোধী হয় তাকে প্রত্যাখ্যান করে এবং তার বিপরীতে দুনিয়ার অন্যান্য আইনকে প্রাধান্য দেয়, সে মুমিন নয় বরং মুনাফিক। তার ঈমানের দাবী মিথ্যা।
মানুষের এ কর্মনীতি অবলম্বনের পেছনে তিনটি সম্ভাব্য কারণ থাকতে পারে : (এক) যে মানুষটি ঈমানের দাবীদার সে আসলে ঈমানই আনেনি। মুনাফিকী পদ্ধতিতে নিছক ধোঁকা দেয়ার এবং মুসলিমসমাজে প্রবেশ করে অবৈধ স্বার্থ লাভ করার জন্য মুসলিম হয়েছে। (দুই) ঈমান আনা সত্ত্বেও তার মনে এ মর্মে সন্দেহ রয়ে গেছে যে, রাসূল ﷺ আসলে আল্লাহর রাসূল কি না, কুরআন আল্লাহর কিতাব কি না এবং কিয়ামত বাস্তবিকই অনুষ্ঠিত হবে কি না? (তিন) সে আল্লাহকে আল্লাহ এবং রাসূলকে রাসূল বলে মেনে নেয়ার পরও তাঁদের পক্ষ থেকে যুলুমের আশঙ্কা করে। সে মনে করে আল্লাহর কিতাব অমুক হুকুমটি দিয়ে আমাদেরকে বিপদে ফেলে দিয়েছে এবং আল্লাহর রাসূলের অমুক উক্তি বা অমুক পদ্ধতি আমাদের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। এ তিনটি কারণের মধ্যে যেটিই সত্য হোক না কেন, মোটকথা এ ধরনের লোকদের যালেম হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। এ ধরনের চিন্তা সহকারে যে ব্যক্তি মুসলিমদের দলভুক্ত হয়ে ঈমানের দাবী করে এবং মুসলিমসমাজের একজন সদস্য সেজে বিভিন্ন ধরনের স্বার্থ হাসিল করতে থাকে, সে একজন বড় বিশ্বাসঘাতক। সে নিজের উপরও যুলুম করে। রাত-দিন মিথ্যাচারের মাধ্যমে নিজেকে সবচেয়ে নিকৃষ্ট স্বভাবের মানুষে পরিণত করতে থাকে। সে এমন ধরনের মুসলিমদের প্রতিও যুলুম করে, যারা তার বাহ্যিক কালিমা পাঠের উপর নির্ভর করে তাকে মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত বলে মেনে নেয় এবং তার সাথে সবধরনের সম্পর্ক স্থাপন করে।
মুনাফিকরা চারদিকে গুজব রটায় :
وَاِذَا جَآءَهُمْ اَمْرٌ مِّنَ الْاَمْنِ اَوِ الْخَوْفِ اَذَاعُوْا بِهٖ
যখন শান্তি অথবা শঙ্কার কোন সংবাদ তাদের নিকট আসে তখন তারা তা প্রচার করে থাকে। (সূরা নিসা- ৮৩)
তারা কুরআনের মজলিস থেকে চুপিচুপি সরে যায় :
وَاِذَا مَاۤ اُنْزِلَتْ سُوْرَةٌ نَّظَرَ بَعْضُهُمْ اِلٰى بَعْضٍؕ هَلْ يَرَاكُمْ مِّنْ اَحَدٍ ثُمَّ انْصَرَفُوْاؕ صَرَفَ اللهُ قُلُوْبَهُمْ بِاَنَّهُمْ قَوْمٌ لَّا يَفْقَهُوْنَ
যখনই কোন নতুন সূরা নাযিল হয়, তখন তারা একে অপরের দিকে তাকায় এবং (ইশারায় একে অপরকে জিজ্ঞেস করে) কেউ কি তোমাদেরকে দেখতে পাচ্ছে? অতঃপর তারা হেদায়াত থেকে ফিরে যায়। আর আল্লাহ তাদের অন্তরকে এভাবেই সত্য থেকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। কেননা তারা হচ্ছে এমন সম্প্রদায়, যারা কিছুই অনুধাবন করতে পারে না। (সূরা তাওবা- ১২৭)
তারা কসমকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে :
اِتَّخَذُوْاۤ اَيْمَانَهُمْ جُنَّةً فَصَدُّوْا عَنْ سَبِيْلِ اللهِؕ اِنَّهُمْ سَآءَ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ ‐ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ اٰمَنُوْا ثُمَّ كَفَرُوْا فَطُبِعَ عَلٰى قُلُوْبِهِمْ فَهُمْ لَا يَفْقَهُوْنَ
তারা তাদের শপথগুলোকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে এবং (মানুষকে) আল্লাহর পথ হতে বিরত রাখে। নিশ্চয় তারা যা করে তা কতই না মন্দ। এটা এজন্য যে, তারা ঈমান আনার পর কুফরী করেছে, ফলে তাদের হৃদয়ে মোহর মেরে দেয়া হয়েছে। অতএব তারা কিছুই বুঝে না। (সূরা মুনাফিকূন- ২, ৩)
তারা নিজেদেরকে সম্মানী মনে করে :
يَقُوْلُوْنَ لَئِنْ رَّجَعْنَاۤ اِلَى الْمَدِيْنَةِ لَيُخْرِجَنَّ الْاَعَزُّ مِنْهَا الْاَذَلَّ
তারা বলে, আমরা যদি মদিনায় প্রত্যাবর্তন করি, তবে সেখান থেকে সম্মানিতরা (মুনাফিকরা) হীনদেরকে (মুমিনদেরকে) বহিষ্কার করবে। (সূরা মুনাফিকূন- ৮)
কিন্তু প্রকৃত সম্মান কার- তাও তারা জানত না :
وَلِلّٰهِ الْعِزَّةُ وَلِرَسُوْلِهٖ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ وَلٰكِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ
কিন্তু (সমস্ত) মান-সম্মান তো আল্লাহর, তাঁর রাসূল ও মুমিনদের জন্যই; কিন্তু মুনাফিকরা এটা জানে না।
(সূরা মুনাফিকূন- ৮)
মুনাফিকদের দৃষ্টান্ত কাঠের সাথে :
وَاِذَا رَاَيْتَهُمْ تُعْجِبُكَ اَجْسَامُهُمْ ؕ وَاِنْ يَّقُوْلُوْا تَسْمَعْ لِقَوْلِهِمْؕ كَأَنَّهُمْ خُشُبٌ مُّسَنَّدَةٌ
তুমি যখন তাদেরকে দেখবে তখন তাদের দৈহিক গঠন তোমাকে খুশী করে দেবে। অতঃপর তারা যদি কোন কথা বলে, তবে তুমি (আগ্রহের সাথে) তাদের কথা শ্রবণ করবে, যেন তারা দেয়ালে ঠেকানো কাঠের স্তম্ভ সদৃশ। (সূরা মুনাফিকূন- ৪)
মুনাফিকদের দৃষ্টান্ত আগুন প্রজ্বলনকারীর সাথে :
مَثَلُهُمْ كَمَثَلِ الَّذِى اسْتَوْقَدَ نَارًا فَلَمَّاۤ اَضَآءَتْ مَا حَوْلَهٗ ذَهَبَ اللهُ بِنُوْرِهِمْ وَتَرَكَهُمْ فِيْ ظُلُمَاتٍ لَّا يُبْصِرُوْنَ ‐ صُمٌّ ۢ بُكْمٌ عُمْيٌ فَهُمْ لَا يَرْجِعُوْنَ
এদের দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যে আগুন জ্বালাল। অতঃপর অগ্নি যখন তার পার্শ্ববর্তী সমস্ত স্থান আলোকিত করল, তখন আল্লাহ তাদের আলো ছিনিয়ে নিলেন এবং তাদেরকে অন্ধকারের মধ্যে ছেড়ে দিলেন, ফলে তারা কিছুই দেখতে পায় না। তারা বধির, বোবা ও অন্ধ। অতএব তারা (সঠিক পথের দিকে) ফিরে আসবে না। (সূরা বাক্বারা- ১৭, ১৮)
ব্যাখ্যা : যখন আল্লাহর এক বান্দা আলো জ্বালালেন এবং হককে বাতিল থেকে, সত্যকে মিথ্যা থেকে এবং সরল পথকে বক্র পথ থেকে বাছাই করে সুস্পষ্টভাবে আলাদা করে ফেললেন, তখন সত্য সুস্পষ্ট দিবালোকের মতো উদ্ভাসিত হয়ে উঠল। কিন্তু প্রবৃত্তি পূজায় অন্ধ মুনাফিকরা এ আলোতে কিছুই দেখতে পেল না। সত্যের আলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে তারা নিজেরাই যখন বাতিলের অন্ধকারে হাতড়ে মরতে চায়, তখন আল্লাহও তাদেরকে সে সুযোগই দেন। সুতরাং তারা বধির, বোবা ও অন্ধ; কেননা তারা হক্ব কথা শোনতে চায় না, বলতে চায় না এবং যারা হক্ব কথা বলে তাদেরকে ও তাদের কর্মকে দেখতেও পারে না।
তাদের দৃষ্টান্ত গর্জন ও বিদ্যুৎ মিশ্রিত মেঘমালার সাথে :
اَوْ كَصَيِّبٍ مِّنَ السَّمَآءِ فِيْهِ ظُلُمَاتٌ وَّرَعْدٌ وَّبَرْقٌۚ يَجْعَلُوْنَ اَصَابِعَهُمْ فِۤيْ اٰذَانِهِمْ مِّنَ الصَّوَاعِقِ حَذَرَ الْمَوْتِؕ وَاللهُ مُحِيْطٌ ۢبِالْكَافِرِيْنَ ‐ يَكَادُ الْبَرْقُ يَخْطَفُ اَبْصَارَهُمْؕ كُلَّمَاۤ اَضَآءَ لَهُمْ مَّشَوْا فِيْهِ وَاِذَاۤ اَظْلَمَ عَلَيْهِمْ قَامُوْاؕ وَلَوْ شَآءَ اللهُ لَذَهَبَ بِسَمْعِهِمْ وَاَبْصَارِهِمْؕ اِنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
অথবা তাদের দৃষ্টান্ত আকাশ হতে পানি বর্ষণের ন্যায়, যাতে রয়েছে অন্ধকার, গর্জন ও বিদ্যুৎ। তারা বজ্রধ্বনির কারণে মৃত্যুর ভয়ে তাদের কর্ণসমূহে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দেয়; আর আল্লাহ কাফিরদেরকে পরিবেষ্টনকারী। (তাদের অবস্থা দেখে) মনে হয়, যেন বিদ্যুৎ তাদের দৃষ্টি হরণ করে ফেলবে। অতঃপর যখন তিনি তাদের জন্য একটু আলো (বিদ্যুৎ) প্রজ্বলিত করেন, তখন তারা তাতে চলতে থাকে। অতঃপর আবার যখন তাদের উপর অন্ধকার চাপিয়ে দেন, তখন তারা দাঁড়িয়ে যায়। অথচ যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন, তবে অবশ্যই তিনি তাদের শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি হরণ করে নিতে পারেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা বাক্বারা- ১৯, ২০)
ব্যাখ্যা : তারা কানে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিয়ে ধ্বংসের হাত থেকে বেঁচে যাবে- এ ধারণায় কিছুক্ষণের জন্য ডুবে যেতে পারে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা এভাবে বাঁচতে পারবে না। কারণ আল্লাহ তাঁর শক্তি দিয়ে তাদেরকে ঘিরে রেখেছেন। এ দৃষ্টান্তটি সন্দেহ-সংশয় এবং দুর্বল ঈমানের অধিকারীদের জন্য। এরা কিছুটা সত্য স্বীকার করে নেয়, কিন্তু সেজন্য তারা বিপদাপদ বা কষ্ট ও নির্যাতন সহ্য করতে প্রস্তুত নয়। এখানে বৃষ্টি বলতে ইসলামকে বুঝানো হয়েছে। ইসলাম বিশ্বমানবতার জন্য একটি রহমত রূপে আবির্ভূত হয়েছে। অন্ধকার মেঘমালা, বিদ্যুৎচমক ও বজ্রের গর্জন বলে এখানে সেই ব্যাপক দুঃখ-কষ্ট, বিপদাপদ ও সংকটের কথা বুঝানো হয়েছে, যেগুলো ইসলামী আন্দোলনের মুকাবিলায় জাহেলী শক্তির প্রবল বিরোধিতার মুখে একের পর এক সামনে আসে। ব্যাপারটি একটু সহজ হয়ে গেলে তারা চলতে থাকে, আবার সমস্যা-সংকট দেখা দিলে থেমে যায়।
তারা তাদের মনের ঈর্ষা লুকিয়ে রাখতে পারবে না :
اَمْ حَسِبَ الَّذِيْنَ فِيْ قُلُوْبِهِمْ مَّرَضٌ اَنْ لَّنْ يُّخْرِجَ اللهُ اَضْغَانَهُمْ
যাদের অন্তরে রোগ আছে তারা কি মনে করছে যে, আল্লাহ তাদের অন্তরের বিরোধী মনোভাব প্রকাশ করে দেবেন না? (সূরা মুহাম্মাদ- ২৯)
ব্যাখ্যা : একজন মুনাফিক কয়েক দিনের জন্য দুনিয়ায় মানুষকে ধোঁকা দিতে পারে, কিন্তু চিরকাল তার এই ধোঁকাবাজি চলতে পারে না। অবশেষে একদিন তার মুনাফিকী ফাঁস হবেই। তখন সমাজে তার নুন্যতম সম্মানটুকুও অবশিষ্ট থাকবে না। আর আখিরাতে তো ঈমানের মৌলিক দাবীরই কোন মূল্য থাকবে না- যদি আমল তার বিপরীত হয়। অর্থাৎ ঈমানের সাথে যদি আমল না থাকে, তবে পরকালে মুক্তি পাওয়ার কোন সুযোগ থাকবে না।
আল্লাহ তাদের মনের খবর প্রকাশ করে দেন :
يَحْذَرُ الْمُنَافِقُوْنَ اَنْ تُنَزَّلَ عَلَيْهِمْ سُوْرَةٌ تُنَبِّئُهُمْ بِمَا فِيْ قُلُوْبِهِمْؕ قُلِ اسْتَهْزِئُوْاۚ اِنَّ اللهَ مُخْرِجٌ مَّا تَحْذَرُوْنَ
মুনাফিকরা ভয় করে যে, তাদের সম্পর্কে এমন কোন সূরা অবতীর্ণ হয় কি না, যা তাদের অন্তরের কথা ব্যক্ত করে দেবে। (তাদেরকে) বলো, তোমরা বিদ্রূপ করতে থাকো; (জেনে রেখো) তোমরা যে বিষয়ে ভয় কর, অবশ্যই আল্লাহ তা প্রকাশ করে দেবেন। (সূরা তাওবা- ৬৪)
শানে নুযূল : মুনাফিক সম্প্রদায়ের কতিপয় লোক ইসলাম সম্বন্ধে বিদ্রূপাত্মক উক্তি করছিল। সঙ্গে সঙ্গে তাদের এ আশঙ্কাও হচ্ছিল যে, যদি রাসূল ﷺ ওহীর মাধ্যমে এ ঘটনা জানতে পারেন, তবে বিষণ বিপদ হবে। কিন্তু বাস্তবে তা-ই হলো, রাসূল ﷺ ওহীর মাধ্যমে এ খবর জানতে পেরে তাদেরকে জিজ্ঞেস করলে তারা বলল, আমরা তো কেবল হাসি-তামাশা করছিলাম। তখন এ সম্পর্কে উক্ত আয়াতটি নাযিল হয়।
আল্লাহ তাদের অন্তরের অবস্থা জানেন :
اَوَلَيْسَ اللهُ بِاَعْلَمَ بِمَا فِيْ صُدُوْرِ الْعَالَمِيْنَ ‐ وَلَيَعْلَمَنَّ اللهُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَلَيَعْلَمَنَّ الْمُنَافِقِيْنَ
তারা কি মনে করে যে, বিশ্ববাসীর মনের মধ্যে যা রয়েছে আল্লাহ সে সম্পর্কে অবহিত নন? যারা ঈমান আনয়ন করেছে অবশ্যই আল্লাহ তাদের সম্পর্কে ভালো করে জানেন; আর তিনি মুনাফিকদের সম্পর্কেও ভালো করে অবগত আছেন। (সূরা আনকাবূত- ১০, ১১)
তারা তাওবা করলে আল্লাহ ক্ষমা করবেন :
وَلَوْ اَنَّهُمْ اِذْ ظَّلَمُوْاۤ اَنْفُسَهُمْ جَآءُوْكَ فَاسْتَغْفَرُوا اللهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُوْلُ لَوَجَدُوا اللهَ تَوَّابًا رَّحِيْمًا
যদি তারা নিজেদের উপর কোন যুলুম করে, অতঃপর তোমার কাছে ছুটে আসে এবং নিজেদের কৃতকর্মের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করে এবং আল্লাহর রাসূলও তাদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করেন, তাহলে তারা অবশ্যই আল্লাহকে পরম ক্ষমাশীল ও অতীব দয়ালু হিসেবেই পাবে। (সূরা নিসা- ৬৪)
আল্লাহর বিধান না মানলে শাস্তি পাবেই :
لِيُعَذِّبَ اللهُ الْمُنَافِقِيْنَ وَالْمُنَافِقَاتِ وَالْمُشْرِكِيْنَ وَالْمُشْرِكَاتِ وَيَتُوْبَ اللهُ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِؕ وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا
পরিণামে আল্লাহ মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারী এবং মুশরিক পুরুষ ও মুশরিক নারীকে শাস্তি দেবেন। পক্ষান্তরে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের প্রতি ক্ষমাপরবশ হবেন। আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল ও অত্যন্ত দয়ালু। (সূরা আহযাব- ৭৩)
وَقِيْلَ لَهُمْ تَعَالَوْا قَاتِلُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ اَوِ ادْفَعُوْاؕ قَالُوْا لَوْ نَعْلَمُ قِتَالًا لَّاتَّبَعْنَاكُمْؕ هُمْ لِلْكُفْرِ يَوْمَئِذٍ اَقْرَبُ مِنْهُمْ لِلْاِيْمَانِۚ يَقُوْلُوْنَ بِاَفْوَاهِهِمْ مَّا لَيْسَ فِيْ قُلُوْبِهِمْؕ وَاللهُ اَعْلَمُ بِمَا يَكْتُمُوْنَ
মুনাফিকদেরকে বলা হয়েছিল- এসো, আল্লাহর পথে সংগ্রাম করো অথবা তাদেরকে প্রতিরোধ করো। তখন তারা বলেছিল, যদি আমরা যুদ্ধ করতে জানতাম তবে অবশ্যই তোমাদের আনুগত্য করতাম। সেদিন তারা বিশ্বাসের চেয়ে অবিশ্বাসেরই অধিক নিকটবর্তী ছিল। তারা মুখ দিয়ে তাই বলে, যা তাদের অন্তরে নেই। আর তারা যা গোপন করে, আল্লাহ সে সম্পর্কে অবহিত। (সূরা আলে ইমরান- ১৬৭)
তারা অন্যকেও জিহাদে বের হতে দেয় না :
فَرِحَ الْمُخَلَّفُوْنَ بِمَقْعَدِهِمْ خِلَافَ رَسُوْلِ اللهِ وَكَرِهُوْاۤ اَنْ يُّجَاهِدُوْا بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَقَالُوْا لَا تَنْفِرُوْا فِى الْحَرِّؕ قُلْ نَارُ جَهَنَّمَ اَشَدُّ حَرًّاؕ لَوْ كَانُوْا يَفْقَهُوْنَ
যারা পশ্চাতে রয়ে গেল তারা আল্লাহর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে বসে থাকাতেই আনন্দ বোধ করল এবং তাদের ধনসম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করাকে অপছন্দ করল। তারা বলল, গরমের মধ্যে অভিযানে বের হয়ো না। বলো, জাহান্নামের আগুন আরো প্রচন্ড গরম, যদি তারা বুঝত! (সূরা তাওবা- ৮১)
তারা যুদ্ধে না গিয়ে খেলতামাশা করে :
وَيَقُوْلُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَوْلَا نُزِّلَتْ سُوْرَةٌۚ فَاِذَاۤ اُنْزِلَتْ سُوْرَةٌ مُّحْكَمَةٌ وَّذُكِرَ فِيْهَا الْقِتَالُ رَاَيْتَ الَّذِيْنَ فِيْ قُلُوْبِهِمْ مَّرَضٌ يَّنْظُرُوْنَ اِلَيْكَ نَظَرَ الْمَغْشِيِّ عَلَيْهِ مِنَ الْمَوْتِؕ فَاَوْلٰى لَهُمْ
যারা ঈমানদার তারা বলেছিল, (যুদ্ধের আদেশসহ) কোন সূরা নাযিল হচ্ছে না কেন? কিন্তু যখন যুদ্ধের কথা উল্লেখ করে একটি সুস্পষ্ট সূরা নাযিল হলো তখন আপনি দেখতে পেলেন যে, যাদের অন্তরে রোগ আছে তারা আপনার দিকে এমনভাবে তাকাচ্ছে, যেমন মৃত্যুর সময় কেউ বেহুশ অবস্থায় তাকায়। তাদের জন্য আফসোস! (সূরা মুহাম্মাদ- ২০)
ব্যাখ্যা : সে সময় মুসলিমরা যে পরিস্থিতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছিল এবং ইসলাম ও মুসলিমদের সাথে কাফিরদের যে আচরণ চলছিল তার কারণে যুদ্ধের নির্দেশ আসার পূর্বেই মুসলিমদের সাধারণ মতামত ছিল যে, এখন আমাদের যুদ্ধের অনুমতি পাওয়া উচিত। তারা ব্যাকুলচিত্তে আল্লাহর নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করছিল এবং বার বার জানতে চাচ্ছিল যে, এ যালিমদের বিরুদ্ধে তাদেরকে লড়াই করার অনুমতি দেয়া হচ্ছে না কেন? কিন্তু যারা মুনাফিকীর রোগ নিয়ে মুসলিমদের দলে শামিল হয়েছিল, তাদের অবস্থা ছিল মুমিনদের অবস্থা থেকে ভিন্ন। তারা তাদের প্রাণ ও অর্থ-সম্পদকে আল্লাহ ও তাঁর দ্বীনের চেয়ে অনেক বেশি প্রিয় মনে করত এবং সেক্ষেত্রে কোন রকম বিপদের ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত ছিল না। এ নির্দেশ না আসা পর্যন্ত তাদের ও ঈমানদারদের মধ্যে বাহ্যিক কোন পার্থক্য দেখা যেত না। তারা উভয় দলই এক সাথে নামায পড়ত। রোযা রাখতেও তাদের কোন দ্বিধা-সংকোচ ছিল না। ঠান্ডা প্রকৃতির ইসলাম তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল। কিন্তু যখন ইসলামের জন্য জীবন বাজি রাখার সময় আসল, তখন তাদের মুনাফিকী প্রকাশ হয়ে গেল এবং তারা যে ঈমানের মুখোশ পরেছিল তা খুলে গেল।
তারা মহিলাদের মতো ঘরে বসে থাকতে চায় :
رَضُوْا بِاَنْ يَّكُوْنُوْا مَعَ الْخَوَالِفِ وَطُبِعَ عَلٰى قُلُوْبِهِمْ فَهُمْ لَا يَفْقَهُوْنَ
তারা পেছনে থাকা লোকদের সঙ্গে অবস্থান করাই পছন্দ করেছে। সুতরাং তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেয়া হয়েছে; ফলে তারা বুঝতে পারে না। (সূরা তাওবা- ৮৭)
وَمِنْهُمْ مَّنْ يَّقُوْلُ ائْذَنْ لِّيْ وَلَا تَفْتِنِّيْؕ اَ لَا فِى الْفِتْنَةِ سَقَطُوْا وَاِنَّ جَهَنَّمَ لَمُحِيْطَةٌ ۢبِالْكَافِرِيْنَ
তাদের মধ্যে এমনও লোক আছে যারা বলে, আমাকে অব্যাহতি দাও এবং আমাকে ফিতনায় ফেলো না। সাবধান! তারা নিজেরাই ফিতনায় পড়ে আছে। নিশ্চয় জাহান্নাম কাফিরদেরকে বেষ্টন করে আছে। (সূরা তাওবা- ৪৯)
শানে নুযূল : তাবুক যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করার পক্ষে যাদ ইবনে কাইস নামক এক মুনাফিক ওজর পেশ করল যে, আমি সুন্দরী স্ত্রীলোক দেখলেই আকৃষ্ট হয়ে পড়ি, শুনেছি রোমান মহিলারা খুবই সুন্দরী। সুতরাং আমি সেখানে গেলে তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যেতে পারি। তখন উক্ত আয়াতটি নাযিল হয়।
তারা সুযোগের সন্ধানে থাকে :
اَلَّذِيْنَ يَتَرَبَّصُوْنَ بِكُمْؕ فَاِنْ كَانَ لَكُمْ فَتْحٌ مِّنَ اللهِ قَالُوْاۤ اَلَمْ نَكُنْ مَّعَكُمْ وَاِنْ كَانَ لِلْكَافِرِيْنَ نَصِيْبٌ قَالُوْاۤ اَلَمْ نَسْتَحْوِذْ عَلَيْكُمْ وَنَمْنَعْكُمْ مِّنَ الْمُؤْمِنِيْنَ
যারা তোমাদের অমঙ্গলের প্রতীক্ষায় থাকে তারা আল্লাহর পক্ষ হতে তোমাদের বিজয় হলে বলে, আমরা কি তোমাদের সঙ্গে ছিলাম না? আর যদি কাফিররা কিছুটা হলেও জয়লাভ করে, তবে তারা বলে আমরা কি তোমাদেরকে পরিবেষ্টন করে রেখেছিলাম না এবং আমরা কি তোমাদেরকে মুমিনদের হাত হতে রক্ষা করিনি? (সূরা নিসা- ১৪১)
ব্যাখ্যা : এটি প্রত্যেক যুগের মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য। মৌখিক স্বীকারোক্তি ও ইসলামের গন্ডির মধ্যে নামমাত্র প্রবেশের মাধ্যমে মুসলিম হিসেবে যতটুকু স্বার্থ ভোগ করা যায়, তা তারা ভোগ করে। আবার অন্যদিকে কাফির হিসেবে যে স্বার্থটুকু ভোগ করা সম্ভব, তা ভোগ করার জন্য তারা কাফিরদের সাথে যোগ দেয়। তারা সর্বোতভাবে কাফিরদের বিশ্বাসভাজন হওয়ার চেষ্টা করে। তারা তাদেরকে বলে, আমরা মোটেই গোঁড়া ও বিদ্বেষপরায়ণ মুসলিম নই। মুসলিমদের সাথে আমাদের কেবল নামের সম্পর্কটাই বিদ্যমান রয়েছে, কিন্তু আমাদের মানসিক ঝোঁক ও বিশ্বস্ততা রয়েছে তোমাদের প্রতি। চিন্তা-ভাবনা, আচার-ব্যবহার, রুচি-প্রকৃতি ইত্যাদি সবদিক দিয়ে তোমাদের সাথে আমাদের গভীর মিল রয়েছে। তাছাড়া ইসলাম ও কুফরীর সংঘর্ষে আমরা তোমাদের পক্ষই অবলম্বন করব।
সফর সুবিধাজনক হলে বের হতো, নতুবা নয় :
لَوْ كَانَ عَرَضًا قَرِيْبًا وَّسَفَرًا قَاصِدًا لَّاتَّبَعُوْكَ وَلٰكِنْ ۢبَعُدَتْ عَلَيْهِمُ الشُّقَّةُؕ وَسَيَحْلِفُوْنَ بِاللهِ لَوِ اسْتَطَعْنَا لَخَرَجْنَا مَعَكُمْۚ يُهْلِكُوْنَ اَنْفُسَهُمْۚ وَاللهُ يَعْلَمُ اِنَّهُمْ لَكَاذِبُوْنَ
আর যদি নগদ সম্পদ লাভের সম্ভাবনা থাকত এবং সফর সহজ মনে হতো, তবে নিশ্চয় তারা তোমার অনুসরণ করত, কিন্তু তাদের নিকট যাত্রাপথ সুদীর্ঘ মনে হলো। তারা অচিরেই আল্লাহর নামে শপথ করে বলবে, আমরা যদি সক্ষম হতাম তবে অবশ্যই আমরা তোমাদের সঙ্গে বের হতাম। এভাবে (মিথ্যা অজুহাতের মাধ্যমে) তারা নিজেদেরকেই ধ্বংস করেছে। আর আল্লাহ জানেন যে, অবশ্যই তারা মিথ্যাবাদী। (সূরা তাওবা- ৪২)
আসলে তাদের জিহাদে বের হওয়ার কোন ইচ্ছা থাকে না :
وَلَوْ اَرَادُوا الْخُرُوْجَ لَاَعَدُّوْا لَهٗ عُدَّةً وَّلٰكِنْ كَرِهَ اللهُ انْۢبِعَاثَهُمْ فَثَبَّطَهُمْ وَقِيْلَ اقْعُدُوْا مَعَ الْقَاعِدِيْنَ
যদি তারা (যুদ্ধের জন্য) বের হয়ে আসত তবে অবশ্যই তারা এটার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করত, কিন্তু তাদের অভিযাত্রা আল্লাহর অপছন্দ ছিল; সুতরাং তিনি তাদেরকে বিরত রাখেন। ফলে তাদেরকে বলা হয়, যারা বসে আছে তোমরা তাদের সাথে বসে থাকো। (সূরা তাওবা- ৪৬)
ব্যাখ্যা : যখন মুনাফিকরা শরীয়াত মেনে চলতে গিয়ে সামান্যতম ক্ষতি বা কষ্ট সহ্য করতে পারে না, তখন তাদের কাছ থেকে কোনক্রমেই বড় রকমের কোন ত্যাগ ও কুরবানীর আশা করা যায় না। তাদের কাছে যদি প্রাণদান বা ঘরবাড়ি পরিত্যাগ করার দাবী করা হয় তাহলে তারা সঙ্গে সঙ্গেই ছিটকে পড়বে এবং আনুগত্যের পরিবর্তে নাফরমানির পথ অবলম্বন করবে।
তারা প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টায় থাকে :
لَوْ يَجِدُوْنَ مَلْجَأً اَوْ مَغَارَاتٍ اَوْ مُدَّخَلًا لَّوَلَّوْا اِلَيْهِ وَهُمْ يَجْمَحُوْنَ
যদি তারা কোন আশ্রয়স্থল পেত অথবা গুহা কিংবা লুকিয়ে থাকার মতো একটু স্থান পেত, তবে অবশ্যই তারা দ্রুতগতিতে সেদিকেই অগ্রসর হতো। (সূরা তাওবা- ৫৭)
মুনাফিকরা মুমিনদের দোষ খুঁজে :
اَلَّذِيْنَ يَلْمِزُوْنَ الْمُطَّوِّعِيْنَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ فِى الصَّدَقَاتِ وَالَّذِيْنَ لَا يَجِدُوْنَ اِلَّا جُهْدَهُمْ فَيَسْخَرُوْنَ مِنْهُمْؕ سَخِرَ اللهُ مِنْهُمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
মুমিনদের মধ্যে যারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাদাকা দেয় এবং যারা নিজ শ্রম ব্যতীত অন্য কিছুই পায় না, যারা তাদেরকে নিয়ে বিদ্রূপ করে, আল্লাহও তাদের সাথে বিদ্রূপ করেন। তাদের জন্য রয়েছে মর্মান্তিক শাস্তি। (সূরা তাওবা- ৭৯)
শানে নুযূল : আবু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন যাকাত ও দান-খয়রাতের ব্যাপারে আয়াত নাযিল হয়, তখন আমরা শ্রমের কাজ করতাম। এমন সময় আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রাঃ) এসে অনেক অর্থ-সম্পদ দান করেন। তখন মুনাফিকরা বলতে লাগল, এ মানুষটি রিয়াকার (অর্থাৎ সে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে দান করেছে)। তারপর অন্য এক ব্যক্তি (আবু আকীল আনসারী) উপস্থিত হয়ে মাত্র এক সা‘ (দুই সের এগার ছটাক) বস্তু দান করলেন। তখন মুনাফিকরা বলল, আল্লাহ তা‘আলা এ সামান্য বস্তুর প্রতি মুখাপেক্ষী নন। তখন উক্ত আয়াত নাযিল হয়। (সহীহ বুখারী, হা/১৪১৫)
যাকাতের মাল বণ্টনে আপত্তি করে :
وَمِنْهُمْ مَّنْ يَّلْمِزُكَ فِى الصَّدَقَاتِ فَاِنْ اُعْطُوْا مِنْهَا رَضُوْا وَاِنْ لَّمْ يُعْطَوْا مِنْهَاۤ اِذَا هُمْ يَسْخَطُوْنَ
তাদের মধ্যে এমনও লোক আছে, যে সাদাকা বণ্টন সম্পর্কে তোমাকে দোষারোপ করে। অতঃপর তার কিছু অংশ তাদেরকে দেয়া হলে তারা সন্তুষ্ট হয় এবং তা থেকে তাদেরকে কিছু না দেয়া হলে তৎক্ষণাৎ তারা ক্ষুব্ধ হয়। (সূরা তাওবা- ৫৮)
শানে নুযূল : রাসূল ﷺ গণিমতের মাল বণ্টন করার সময় এক মুনাফিক বলল, তোমাদের নবীর প্রতি লক্ষ্য করো, সে তোমাদের প্রাপ্য বকরীর রাখালদের মধ্যে বণ্টন করে দিচ্ছে এবং মনে করছে যে, সে খুব ন্যায় কাজই করেছে। তখন এ সম্পর্কে উক্ত আয়াতটি নাযিল হয়।
তারা তাগুতের কাছে বিচার চায় :
اَلَمْ تَرَ اِلَى الَّذِيْنَ يَزْعُمُوْنَ اَنَّهُمْ اٰمَنُوْا بِمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكَ وَمَاۤ اُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيْدُوْنَ اَنْ يَّتَحَاكَمُوْاۤ اِلَى الطَّاغُوْتِ وَقَدْ اُمِرُوْاۤ اَنْ يَّكْفُرُوْا بِهٖؕ وَيُرِيْدُ الشَّيْطَانُ اَنْ يُّضِلَّهُمْ ضَلَالًا ۢبَعِيْدًا
তুমি কি তাদেরকে দেখনি যারা দাবি করে যে, তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে তারা বিশ্বাস স্থাপন করে; অথচ তারা তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থী হতে চায়? যদিও তা প্রত্যাখ্যান করার জন্য তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মূলত শয়তান তাদেরকে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট করতে চায়। (সূরা নিসা- ৬০)
তারা কুরআন-সুন্নাহর সকল ফায়সালা মানতে চায় না :
وَاِذَا قِيْلَ لَهُمْ تَعَالَوْا اِلٰى مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ وَاِلَى الرَّسُوْلِ رَاَيْتَ الْمُنَافِقِيْنَ يَصُدُّوْنَ عَنْكَ صُدُوْدًا
যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার দিকে এবং রাসূলের দিকে এসো, তখন তুমি মুনাফিকদেরকে তোমার নিকট হতে মুখ ফিরিয়ে নিতে দেখবে। (সূরা নিসা- ৬১)
وَاِذَا دُعُوْاۤ اِلَى اللهِ وَرَسُوْلِهٖ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ اِذَا فَرِيْقٌ مِّنْهُمْ مُّعْرِضُوْنَ
যখন তাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেয়ার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে তাদেরকে আহবান করা হয়, তখন তাদের একদল মুখ ফিরিয়ে নেয়। (সূরা নূর- ৪৮)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতগুলো পরিষ্কার জানিয়ে দিচ্ছে যে, রাসূল ﷺ এর ফায়সালা হচ্ছে আল্লাহর ফায়সালা এবং তাঁর হুকুম আল্লাহরই হুকুম। রাসূল ﷺ এর দিকে আহবান করা নিছক রাসূল ﷺ এর দিকেই আহবান করা নয়, বরং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল উভয়ের দিকেই আহবান করা। তাছাড়া এ আয়াতটি থেকে এ কথা নিঃসন্দেহে সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য ছাড়া ঈমানের দাবী অর্থহীন। সুতরাং প্রতিটি মুসলিমকে ব্যক্তি ও জাতি হিসেবে অবশ্যই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দেয়া আইনের আনুগত্য করতে হবে। নতুবা তার ঈমানের দাবী একটি মুনাফিকী দাবীতে পরিণত হবে। এ ব্যাপারটি কেবল নবী ﷺ এর জীবনের জন্যই ছিল না বরং পরবর্তীতে যিনিই ইসলামী রাষ্ট্রের বিচারকের পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন এবং আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাহ অনুযায়ী ফায়সালা দেবেন, তাঁর আদালতের রায়ই হচ্ছে আল্লাহ ও রাসূলের রায়। সুতরাং যে ব্যক্তি তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, সে মূলত আল্লাহ ও তাঁর রাসূল থেকেই মুখ ফিরিয়ে নেবে এবং সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্য হিসেবে বিবেচিত হবে। এ আয়াতটি পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করছে যে, যে ব্যক্তি শরীয়াতের লাভজনক কথাগুলোকে সানন্দে গ্রহণ করে নেয় কিন্তু যা কিছু তার স্বার্থ ও আশা-আকাঙ্ক্ষার বিরোধী হয় তাকে প্রত্যাখ্যান করে এবং তার বিপরীতে দুনিয়ার অন্যান্য আইনকে প্রাধান্য দেয়, সে মুমিন নয় বরং মুনাফিক। তার ঈমানের দাবী মিথ্যা।
মানুষের এ কর্মনীতি অবলম্বনের পেছনে তিনটি সম্ভাব্য কারণ থাকতে পারে : (এক) যে মানুষটি ঈমানের দাবীদার সে আসলে ঈমানই আনেনি। মুনাফিকী পদ্ধতিতে নিছক ধোঁকা দেয়ার এবং মুসলিমসমাজে প্রবেশ করে অবৈধ স্বার্থ লাভ করার জন্য মুসলিম হয়েছে। (দুই) ঈমান আনা সত্ত্বেও তার মনে এ মর্মে সন্দেহ রয়ে গেছে যে, রাসূল ﷺ আসলে আল্লাহর রাসূল কি না, কুরআন আল্লাহর কিতাব কি না এবং কিয়ামত বাস্তবিকই অনুষ্ঠিত হবে কি না? (তিন) সে আল্লাহকে আল্লাহ এবং রাসূলকে রাসূল বলে মেনে নেয়ার পরও তাঁদের পক্ষ থেকে যুলুমের আশঙ্কা করে। সে মনে করে আল্লাহর কিতাব অমুক হুকুমটি দিয়ে আমাদেরকে বিপদে ফেলে দিয়েছে এবং আল্লাহর রাসূলের অমুক উক্তি বা অমুক পদ্ধতি আমাদের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। এ তিনটি কারণের মধ্যে যেটিই সত্য হোক না কেন, মোটকথা এ ধরনের লোকদের যালেম হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। এ ধরনের চিন্তা সহকারে যে ব্যক্তি মুসলিমদের দলভুক্ত হয়ে ঈমানের দাবী করে এবং মুসলিমসমাজের একজন সদস্য সেজে বিভিন্ন ধরনের স্বার্থ হাসিল করতে থাকে, সে একজন বড় বিশ্বাসঘাতক। সে নিজের উপরও যুলুম করে। রাত-দিন মিথ্যাচারের মাধ্যমে নিজেকে সবচেয়ে নিকৃষ্ট স্বভাবের মানুষে পরিণত করতে থাকে। সে এমন ধরনের মুসলিমদের প্রতিও যুলুম করে, যারা তার বাহ্যিক কালিমা পাঠের উপর নির্ভর করে তাকে মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত বলে মেনে নেয় এবং তার সাথে সবধরনের সম্পর্ক স্থাপন করে।
মুনাফিকরা চারদিকে গুজব রটায় :
وَاِذَا جَآءَهُمْ اَمْرٌ مِّنَ الْاَمْنِ اَوِ الْخَوْفِ اَذَاعُوْا بِهٖ
যখন শান্তি অথবা শঙ্কার কোন সংবাদ তাদের নিকট আসে তখন তারা তা প্রচার করে থাকে। (সূরা নিসা- ৮৩)
তারা কুরআনের মজলিস থেকে চুপিচুপি সরে যায় :
وَاِذَا مَاۤ اُنْزِلَتْ سُوْرَةٌ نَّظَرَ بَعْضُهُمْ اِلٰى بَعْضٍؕ هَلْ يَرَاكُمْ مِّنْ اَحَدٍ ثُمَّ انْصَرَفُوْاؕ صَرَفَ اللهُ قُلُوْبَهُمْ بِاَنَّهُمْ قَوْمٌ لَّا يَفْقَهُوْنَ
যখনই কোন নতুন সূরা নাযিল হয়, তখন তারা একে অপরের দিকে তাকায় এবং (ইশারায় একে অপরকে জিজ্ঞেস করে) কেউ কি তোমাদেরকে দেখতে পাচ্ছে? অতঃপর তারা হেদায়াত থেকে ফিরে যায়। আর আল্লাহ তাদের অন্তরকে এভাবেই সত্য থেকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। কেননা তারা হচ্ছে এমন সম্প্রদায়, যারা কিছুই অনুধাবন করতে পারে না। (সূরা তাওবা- ১২৭)
তারা কসমকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে :
اِتَّخَذُوْاۤ اَيْمَانَهُمْ جُنَّةً فَصَدُّوْا عَنْ سَبِيْلِ اللهِؕ اِنَّهُمْ سَآءَ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ ‐ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ اٰمَنُوْا ثُمَّ كَفَرُوْا فَطُبِعَ عَلٰى قُلُوْبِهِمْ فَهُمْ لَا يَفْقَهُوْنَ
তারা তাদের শপথগুলোকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে এবং (মানুষকে) আল্লাহর পথ হতে বিরত রাখে। নিশ্চয় তারা যা করে তা কতই না মন্দ। এটা এজন্য যে, তারা ঈমান আনার পর কুফরী করেছে, ফলে তাদের হৃদয়ে মোহর মেরে দেয়া হয়েছে। অতএব তারা কিছুই বুঝে না। (সূরা মুনাফিকূন- ২, ৩)
তারা নিজেদেরকে সম্মানী মনে করে :
يَقُوْلُوْنَ لَئِنْ رَّجَعْنَاۤ اِلَى الْمَدِيْنَةِ لَيُخْرِجَنَّ الْاَعَزُّ مِنْهَا الْاَذَلَّ
তারা বলে, আমরা যদি মদিনায় প্রত্যাবর্তন করি, তবে সেখান থেকে সম্মানিতরা (মুনাফিকরা) হীনদেরকে (মুমিনদেরকে) বহিষ্কার করবে। (সূরা মুনাফিকূন- ৮)
কিন্তু প্রকৃত সম্মান কার- তাও তারা জানত না :
وَلِلّٰهِ الْعِزَّةُ وَلِرَسُوْلِهٖ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ وَلٰكِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ
কিন্তু (সমস্ত) মান-সম্মান তো আল্লাহর, তাঁর রাসূল ও মুমিনদের জন্যই; কিন্তু মুনাফিকরা এটা জানে না।
(সূরা মুনাফিকূন- ৮)
মুনাফিকদের দৃষ্টান্ত কাঠের সাথে :
وَاِذَا رَاَيْتَهُمْ تُعْجِبُكَ اَجْسَامُهُمْ ؕ وَاِنْ يَّقُوْلُوْا تَسْمَعْ لِقَوْلِهِمْؕ كَأَنَّهُمْ خُشُبٌ مُّسَنَّدَةٌ
তুমি যখন তাদেরকে দেখবে তখন তাদের দৈহিক গঠন তোমাকে খুশী করে দেবে। অতঃপর তারা যদি কোন কথা বলে, তবে তুমি (আগ্রহের সাথে) তাদের কথা শ্রবণ করবে, যেন তারা দেয়ালে ঠেকানো কাঠের স্তম্ভ সদৃশ। (সূরা মুনাফিকূন- ৪)
মুনাফিকদের দৃষ্টান্ত আগুন প্রজ্বলনকারীর সাথে :
مَثَلُهُمْ كَمَثَلِ الَّذِى اسْتَوْقَدَ نَارًا فَلَمَّاۤ اَضَآءَتْ مَا حَوْلَهٗ ذَهَبَ اللهُ بِنُوْرِهِمْ وَتَرَكَهُمْ فِيْ ظُلُمَاتٍ لَّا يُبْصِرُوْنَ ‐ صُمٌّ ۢ بُكْمٌ عُمْيٌ فَهُمْ لَا يَرْجِعُوْنَ
এদের দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যে আগুন জ্বালাল। অতঃপর অগ্নি যখন তার পার্শ্ববর্তী সমস্ত স্থান আলোকিত করল, তখন আল্লাহ তাদের আলো ছিনিয়ে নিলেন এবং তাদেরকে অন্ধকারের মধ্যে ছেড়ে দিলেন, ফলে তারা কিছুই দেখতে পায় না। তারা বধির, বোবা ও অন্ধ। অতএব তারা (সঠিক পথের দিকে) ফিরে আসবে না। (সূরা বাক্বারা- ১৭, ১৮)
ব্যাখ্যা : যখন আল্লাহর এক বান্দা আলো জ্বালালেন এবং হককে বাতিল থেকে, সত্যকে মিথ্যা থেকে এবং সরল পথকে বক্র পথ থেকে বাছাই করে সুস্পষ্টভাবে আলাদা করে ফেললেন, তখন সত্য সুস্পষ্ট দিবালোকের মতো উদ্ভাসিত হয়ে উঠল। কিন্তু প্রবৃত্তি পূজায় অন্ধ মুনাফিকরা এ আলোতে কিছুই দেখতে পেল না। সত্যের আলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে তারা নিজেরাই যখন বাতিলের অন্ধকারে হাতড়ে মরতে চায়, তখন আল্লাহও তাদেরকে সে সুযোগই দেন। সুতরাং তারা বধির, বোবা ও অন্ধ; কেননা তারা হক্ব কথা শোনতে চায় না, বলতে চায় না এবং যারা হক্ব কথা বলে তাদেরকে ও তাদের কর্মকে দেখতেও পারে না।
তাদের দৃষ্টান্ত গর্জন ও বিদ্যুৎ মিশ্রিত মেঘমালার সাথে :
اَوْ كَصَيِّبٍ مِّنَ السَّمَآءِ فِيْهِ ظُلُمَاتٌ وَّرَعْدٌ وَّبَرْقٌۚ يَجْعَلُوْنَ اَصَابِعَهُمْ فِۤيْ اٰذَانِهِمْ مِّنَ الصَّوَاعِقِ حَذَرَ الْمَوْتِؕ وَاللهُ مُحِيْطٌ ۢبِالْكَافِرِيْنَ ‐ يَكَادُ الْبَرْقُ يَخْطَفُ اَبْصَارَهُمْؕ كُلَّمَاۤ اَضَآءَ لَهُمْ مَّشَوْا فِيْهِ وَاِذَاۤ اَظْلَمَ عَلَيْهِمْ قَامُوْاؕ وَلَوْ شَآءَ اللهُ لَذَهَبَ بِسَمْعِهِمْ وَاَبْصَارِهِمْؕ اِنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
অথবা তাদের দৃষ্টান্ত আকাশ হতে পানি বর্ষণের ন্যায়, যাতে রয়েছে অন্ধকার, গর্জন ও বিদ্যুৎ। তারা বজ্রধ্বনির কারণে মৃত্যুর ভয়ে তাদের কর্ণসমূহে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দেয়; আর আল্লাহ কাফিরদেরকে পরিবেষ্টনকারী। (তাদের অবস্থা দেখে) মনে হয়, যেন বিদ্যুৎ তাদের দৃষ্টি হরণ করে ফেলবে। অতঃপর যখন তিনি তাদের জন্য একটু আলো (বিদ্যুৎ) প্রজ্বলিত করেন, তখন তারা তাতে চলতে থাকে। অতঃপর আবার যখন তাদের উপর অন্ধকার চাপিয়ে দেন, তখন তারা দাঁড়িয়ে যায়। অথচ যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন, তবে অবশ্যই তিনি তাদের শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি হরণ করে নিতে পারেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা বাক্বারা- ১৯, ২০)
ব্যাখ্যা : তারা কানে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিয়ে ধ্বংসের হাত থেকে বেঁচে যাবে- এ ধারণায় কিছুক্ষণের জন্য ডুবে যেতে পারে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা এভাবে বাঁচতে পারবে না। কারণ আল্লাহ তাঁর শক্তি দিয়ে তাদেরকে ঘিরে রেখেছেন। এ দৃষ্টান্তটি সন্দেহ-সংশয় এবং দুর্বল ঈমানের অধিকারীদের জন্য। এরা কিছুটা সত্য স্বীকার করে নেয়, কিন্তু সেজন্য তারা বিপদাপদ বা কষ্ট ও নির্যাতন সহ্য করতে প্রস্তুত নয়। এখানে বৃষ্টি বলতে ইসলামকে বুঝানো হয়েছে। ইসলাম বিশ্বমানবতার জন্য একটি রহমত রূপে আবির্ভূত হয়েছে। অন্ধকার মেঘমালা, বিদ্যুৎচমক ও বজ্রের গর্জন বলে এখানে সেই ব্যাপক দুঃখ-কষ্ট, বিপদাপদ ও সংকটের কথা বুঝানো হয়েছে, যেগুলো ইসলামী আন্দোলনের মুকাবিলায় জাহেলী শক্তির প্রবল বিরোধিতার মুখে একের পর এক সামনে আসে। ব্যাপারটি একটু সহজ হয়ে গেলে তারা চলতে থাকে, আবার সমস্যা-সংকট দেখা দিলে থেমে যায়।
তারা তাদের মনের ঈর্ষা লুকিয়ে রাখতে পারবে না :
اَمْ حَسِبَ الَّذِيْنَ فِيْ قُلُوْبِهِمْ مَّرَضٌ اَنْ لَّنْ يُّخْرِجَ اللهُ اَضْغَانَهُمْ
যাদের অন্তরে রোগ আছে তারা কি মনে করছে যে, আল্লাহ তাদের অন্তরের বিরোধী মনোভাব প্রকাশ করে দেবেন না? (সূরা মুহাম্মাদ- ২৯)
ব্যাখ্যা : একজন মুনাফিক কয়েক দিনের জন্য দুনিয়ায় মানুষকে ধোঁকা দিতে পারে, কিন্তু চিরকাল তার এই ধোঁকাবাজি চলতে পারে না। অবশেষে একদিন তার মুনাফিকী ফাঁস হবেই। তখন সমাজে তার নুন্যতম সম্মানটুকুও অবশিষ্ট থাকবে না। আর আখিরাতে তো ঈমানের মৌলিক দাবীরই কোন মূল্য থাকবে না- যদি আমল তার বিপরীত হয়। অর্থাৎ ঈমানের সাথে যদি আমল না থাকে, তবে পরকালে মুক্তি পাওয়ার কোন সুযোগ থাকবে না।
আল্লাহ তাদের মনের খবর প্রকাশ করে দেন :
يَحْذَرُ الْمُنَافِقُوْنَ اَنْ تُنَزَّلَ عَلَيْهِمْ سُوْرَةٌ تُنَبِّئُهُمْ بِمَا فِيْ قُلُوْبِهِمْؕ قُلِ اسْتَهْزِئُوْاۚ اِنَّ اللهَ مُخْرِجٌ مَّا تَحْذَرُوْنَ
মুনাফিকরা ভয় করে যে, তাদের সম্পর্কে এমন কোন সূরা অবতীর্ণ হয় কি না, যা তাদের অন্তরের কথা ব্যক্ত করে দেবে। (তাদেরকে) বলো, তোমরা বিদ্রূপ করতে থাকো; (জেনে রেখো) তোমরা যে বিষয়ে ভয় কর, অবশ্যই আল্লাহ তা প্রকাশ করে দেবেন। (সূরা তাওবা- ৬৪)
শানে নুযূল : মুনাফিক সম্প্রদায়ের কতিপয় লোক ইসলাম সম্বন্ধে বিদ্রূপাত্মক উক্তি করছিল। সঙ্গে সঙ্গে তাদের এ আশঙ্কাও হচ্ছিল যে, যদি রাসূল ﷺ ওহীর মাধ্যমে এ ঘটনা জানতে পারেন, তবে বিষণ বিপদ হবে। কিন্তু বাস্তবে তা-ই হলো, রাসূল ﷺ ওহীর মাধ্যমে এ খবর জানতে পেরে তাদেরকে জিজ্ঞেস করলে তারা বলল, আমরা তো কেবল হাসি-তামাশা করছিলাম। তখন এ সম্পর্কে উক্ত আয়াতটি নাযিল হয়।
আল্লাহ তাদের অন্তরের অবস্থা জানেন :
اَوَلَيْسَ اللهُ بِاَعْلَمَ بِمَا فِيْ صُدُوْرِ الْعَالَمِيْنَ ‐ وَلَيَعْلَمَنَّ اللهُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَلَيَعْلَمَنَّ الْمُنَافِقِيْنَ
তারা কি মনে করে যে, বিশ্ববাসীর মনের মধ্যে যা রয়েছে আল্লাহ সে সম্পর্কে অবহিত নন? যারা ঈমান আনয়ন করেছে অবশ্যই আল্লাহ তাদের সম্পর্কে ভালো করে জানেন; আর তিনি মুনাফিকদের সম্পর্কেও ভালো করে অবগত আছেন। (সূরা আনকাবূত- ১০, ১১)
তারা তাওবা করলে আল্লাহ ক্ষমা করবেন :
وَلَوْ اَنَّهُمْ اِذْ ظَّلَمُوْاۤ اَنْفُسَهُمْ جَآءُوْكَ فَاسْتَغْفَرُوا اللهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُوْلُ لَوَجَدُوا اللهَ تَوَّابًا رَّحِيْمًا
যদি তারা নিজেদের উপর কোন যুলুম করে, অতঃপর তোমার কাছে ছুটে আসে এবং নিজেদের কৃতকর্মের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করে এবং আল্লাহর রাসূলও তাদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করেন, তাহলে তারা অবশ্যই আল্লাহকে পরম ক্ষমাশীল ও অতীব দয়ালু হিসেবেই পাবে। (সূরা নিসা- ৬৪)
আল্লাহর বিধান না মানলে শাস্তি পাবেই :
لِيُعَذِّبَ اللهُ الْمُنَافِقِيْنَ وَالْمُنَافِقَاتِ وَالْمُشْرِكِيْنَ وَالْمُشْرِكَاتِ وَيَتُوْبَ اللهُ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِؕ وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا
পরিণামে আল্লাহ মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারী এবং মুশরিক পুরুষ ও মুশরিক নারীকে শাস্তি দেবেন। পক্ষান্তরে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের প্রতি ক্ষমাপরবশ হবেন। আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল ও অত্যন্ত দয়ালু। (সূরা আহযাব- ৭৩)
তাদের অনুসরণ করা যাবে না :
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ اتَّقِ اللهَ وَلَا تُطِعِ الْكَافِرِيْنَ وَالْمُنَافِقِيْنَؕ اِنَّ اللهَ كَانَ عَلِيْمًا حَكِيْمًا
হে নবী! আল্লাহকে ভয় করুন এবং কাফির ও মুনাফিকদের অনুসরণ করবেন না। নিশ্চয় আল্লাহ মহাজ্ঞানী ও উৎকৃষ্ট। (সূরা আহযাব- ১)
তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না :
وَلَا تَتَّخِذُوْا مِنْهُمْ وَلِيًّا وَّلَا نَصِيْرًا
আর তোমরা কোন অবস্থাতেই তাদের মধ্য থেকে কাউকে বন্ধু ও সাহায্যকারী হিসেবে গ্রহণ করো না। (সূরা নিসা- ৯৮)
তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ جَاهِدِ الْكُفَّارَ وَالْمُنَافِقِيْنَ وَاغْلُظْ عَلَيْهِمْؕ وَمَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُؕ وَبِئْسَ الْمَصِيْرُ
হে নবী! কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করো এবং তাদের ব্যাপারে কঠোর হও। (কেননা) তাদের আবাসস্থল জাহান্নাম; আর তা কতই না নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল! (সূরা তাওবা- ৭৩; সূরা তাহরীম- ৯)
তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে :
يَحْسَبُوْنَ كُلَّ صَيْحَةٍ عَلَيْهِمْؕ هُمُ الْعَدُوُّ فَاحْذَرْهُمْؕ قَاتَلَهُمُ اللهُ اَنّٰى يُؤْفَكُوْنَ
তারা (ভয়ে) যে কোন ধরনের বড় আওয়াজকেই তাদের বিরুদ্ধে মনে করে। তারাই শত্রু, অতএব তাদের সম্পর্কে সতর্ক হও। আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করুন; বিভ্রান্ত হয়ে তারা কোথায় চালিত হচ্ছে? (সূরা মুনাফিকূন- ৪)
তাদেরকে মর্মস্পর্শী ভাষায় বুঝাতে হবে :
اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ يَعْلَمُ اللهُ مَا فِيْ قُلُوْبِهِمْ فَاَعْرِضْ عَنْهُمْ وَعِظْهُمْ وَقُلْ لَّهُمْ فِۤيْ اَنْفُسِهِمْ قَوْلًا ۢبَلِيْغًا
এরাই তারা, যাদের অন্তরে কী আছে আল্লাহ তা জানেন। সুতরাং তুমি তাদেরকে উপেক্ষা করো এবং তাদেরকে ভালো উপদেশ দাও। আর তাদেরকে এমন কথা বলো, যা তাদের অন্তর স্পর্শ করে। (সূরা নিসা- ৬৩)
তাদের দেয়া কষ্টকে এড়িয়ে যেতে হবে :
وَلَا تُطِعِ الْكَافِرِيْنَ وَالْمُنَافِقِيْنَ وَدَعْ اَذَاهُمْ وَتَوَكَّلْ عَلَى اللهِؕ وَكَفٰى بِاللهِ وَكِيْلًا
আর আপনি কাফির ও মুনাফিকদের অনুসরণ করবেন না এবং (তাদের পক্ষ হতে আগত) নির্যাতনকে উপেক্ষা করুন ও আল্লাহর উপর ভরসা করুন। তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। (সূরা আহযাব- ৪৮)
তাদের মসজিদে নামায পড়া যাবে না :
وَالَّذِيْنَ اتَّخَذُوْا مَسْجِدًا ضِرَارًا وَّكُفْرًا وَّتَفْرِيْقًا ۢبَيْنَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَاِرْصَادًا لِّمَنْ حَارَبَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ مِنْ قَبْلُؕ وَلَيَحْلِفُنَّ اِنْ اَرَدْنَاۤ اِلَّا الْحُسْنٰىؕ وَاللهُ يَشْهَدُ اِنَّهُمْ لَكَاذِبُوْنَ ‐ لَا تَقُمْ فِيْهِ اَبَدًاؕ لَمَسْجِدٌ اُسِّسَ عَلَى التَّقْوٰى مِنْ اَوَّلِ يَوْمٍ اَحَقُّ اَنْ تَقُوْمَ فِيْهِؕ فِيْهِ رِجَالٌ يُّحِبُّوْنَ اَنْ يَّتَطَهَّرُوْاؕ وَاللهُ يُحِبُّ الْمُطَّهِّرِيْنَ
যারা (মুসলিমদের) ক্ষতিসাধন, কুফরী ও মুমিনদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এবং ইতোপূর্বে যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে তার গোপন ঘাঁটিস্বরূপ ব্যবহারের উদ্দেশ্যে মসজিদ নির্মাণ করেছে, অবশ্যই তারা শপথ করে বলবে যে, আমরা সৎ উদ্দেশ্য নিয়েই এটা (নির্মাণ) করেছি; (কিন্তু) আল্লাহ সাক্ষী যে, নিশ্চয় তারা মিথ্যাবাদী। তুমি কখনো তাতে (সালাতে) দাঁড়াবে না; যে মসজিদের ভিত্তি প্রথম দিন হতেই তাক্বওয়ার উপর স্থাপিত হয়েছে, সেটাই তোমার সালাতের জন্য অধিক যোগ্য। তথায় এমন লোক আছে যারা পবিত্রতা অর্জন করতে ভালোবাসে; আর আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে পছন্দ করেন। (সূরা তাওবা- ১০৭, ১০৮)
শানে নুযূল : মদিনায় খাযরাজ গোত্রে আবু আমের নামে এক ব্যক্তি ছিল। তাকে আহলে কিতাবের আলিমদের মধ্যে বিশিষ্ট ব্যক্তি বলে গণ্য করা হতো। রাসূল ﷺ যখন মদিনায় পৌঁছলেন তখন সেখানে আবু আমেরের ধর্মীয় কর্তৃত্ব বিরাজ করছিল। কিন্তু সে সত্যকে গ্রহণ করার পরিবর্তে উল্টো তার বিরোধিতা শুরু করল। অতঃপর তার ও মুনাফিকদের মধ্যে একটি চুক্তি সম্পাদিত হলো যে, মদিনায় তারা নিজেদের একটি পৃথক মসজিদ তৈরি করে নেবে। মদিনায় এ সময় দু’টি মসজিদ ছিল। একটি মসজিদে কুবা, অন্যটি মসজিদে নববী। এ দু’টি মসজিদ বর্তমান থাকা সত্ত্বেও তৃতীয় একটি মসজিদ নির্মাণ করার কোন প্রয়োজন ছিল না। তাই তারা নিজেদের পৃথক মসজিদ তৈরি করার আগে তার বৈধতা প্রমাণ করতে বাধ্য ছিল। এ উদ্দেশ্যে তারা নবী ﷺ এর সামনে এ নতুন নির্মাণ কাজের প্রয়োজন পেশ করে বলে, ‘‘আমরা শুধুমাত্র নামাযীদের সুবিধার্থে এ নতুন মসজিদটি নির্মাণ করতে চাই।’’ নির্মাণ কাজ শেষ হলে এরা নবী ﷺ এর নিকট উপস্থিত হলো এবং সেখানে একবার নামায পড়িয়ে মসজিদটির উদ্বোধন করার জন্য তাঁর কাছে আবেদন জানাল। কিন্তু নবী ﷺ বললেন, ‘‘শীঘ্রই আমাকে একটি বড় অভিযানে বের হতে হবে, সেখান থেকে ফিরে এসে দেখা যাবে’’। এ কথা বলে তিনি তাদের আবেদন এড়িয়ে গেলেন। এরপর তিনি তাবুক যুদ্ধের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে গেলেন এবং তাঁর রওয়ানা হওয়ার পর এ মুনাফিকরা এ মসজিদে নিজেদের জোট গড়ে তুলতে এবং ষড়যন্ত্র পাকাতে লাগল। তাবুক থেকে ফেরার পথে নবী ﷺ যখন মদিনার নিকটবর্তী ‘যী আওয়ান’ নামক স্থানে পৌঁছলেন তখন এ আয়াত নাযিল হলো। ফলে তিনি তখনই কয়েকজন লোককে এ দায়িত্ব দিয়ে মদিনায় পাঠিয়ে দিলেন যে, তাঁর মদিনায় পৌঁছার আগেই যেন তারা ‘যিরার’ মসজিদটি ধূলিস্যাৎ করে দেয়।
তাদের জানাযা পড়া যাবে না :
وَلَا تُصَلِّ عَلٰۤى اَحَدٍ مِّنْهُمْ مَّاتَ اَبَدًا وَّلَا تَقُمْ عَلٰى قَبْرِهٖؕ اِنَّهُمْ كَفَرُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِهٖ وَمَاتُوْا وَهُمْ فَاسِقُوْنَ
তাদের মধ্যে কারো মৃত্যু হলে তুমি কখনো তার জন্য (জানাযার) সালাত পড়বে না এবং তার কবরের পার্শ্বেও দাঁড়াবে না। তারা তো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করেছিল এবং তারা পাপাচারী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে। (সূরা তাওবা- ৮৪)
শানে নুযূল : মুনাফিক নেতা আবদুল্লাহ ইবনে উবাই মারা গেলে তার ছেলে আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী ﷺ এর খেদমতে হাযির হয়ে কাফন হিসেবে ব্যবহারের জন্য তাঁর কোর্তা চাইলেন। নবী ﷺ অত্যন্ত উদার হৃদয়ের পরিচয় দিয়ে কোর্তাটি দিয়ে দিলেন। তারপর আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী ﷺ কেই জানাযার নামায পড়ানোর জন্য অনুরোধ করলেন। ফলে তিনি এজন্যও তৈরি হয়ে গেলেন। কিন্তু আল্লাহর হুকুমে তাঁকে জানাযা পড়ানো থেকে বিরত রাখা হলো। কারণ ইসলামী রাষ্ট্রের একটি মূলনীতি হচ্ছে, কোন নেতার জন্য এমন কোন কাজ করা বৈধ হবে না, যাতে শত্রুপক্ষের সাহস বেড়ে যায়।
ব্যাখ্যা : এ থেকে শরীয়াতের এ বিষয়টি নির্ধারিত হয়েছে যে, অশ্লীল এবং ফাসিক কাজকর্মে লিপ্ত ব্যক্তির জানাযার নামায মুসলিমদের ইমাম ও নেতৃস্থানীয় লোকদের পড়ানো উচিত নয়। তাতে শরীক হওয়াও উচিত নয়। এ আয়াতগুলো নাযিল হওয়ার পর নবী ﷺ নিয়ম করে নিয়েছিলেন যে, কোন জানাযায় শরীক হওয়ার জন্য তাকে ডাকা হলে তিনি প্রথমে মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করতেন। জিজ্ঞেস করতেন, সে কেমন লোক ছিল। যদি জানতে পারতেন যে, সে অসচ্চরিত্রের অধিকারী ছিল, তাহলে তার পরিবারের লোকদের বলে দিতেন, তোমরা যেভাবে চাও একে দাফন করে দিতে পার।
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ اتَّقِ اللهَ وَلَا تُطِعِ الْكَافِرِيْنَ وَالْمُنَافِقِيْنَؕ اِنَّ اللهَ كَانَ عَلِيْمًا حَكِيْمًا
হে নবী! আল্লাহকে ভয় করুন এবং কাফির ও মুনাফিকদের অনুসরণ করবেন না। নিশ্চয় আল্লাহ মহাজ্ঞানী ও উৎকৃষ্ট। (সূরা আহযাব- ১)
তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না :
وَلَا تَتَّخِذُوْا مِنْهُمْ وَلِيًّا وَّلَا نَصِيْرًا
আর তোমরা কোন অবস্থাতেই তাদের মধ্য থেকে কাউকে বন্ধু ও সাহায্যকারী হিসেবে গ্রহণ করো না। (সূরা নিসা- ৯৮)
তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ جَاهِدِ الْكُفَّارَ وَالْمُنَافِقِيْنَ وَاغْلُظْ عَلَيْهِمْؕ وَمَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُؕ وَبِئْسَ الْمَصِيْرُ
হে নবী! কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করো এবং তাদের ব্যাপারে কঠোর হও। (কেননা) তাদের আবাসস্থল জাহান্নাম; আর তা কতই না নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল! (সূরা তাওবা- ৭৩; সূরা তাহরীম- ৯)
তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে :
يَحْسَبُوْنَ كُلَّ صَيْحَةٍ عَلَيْهِمْؕ هُمُ الْعَدُوُّ فَاحْذَرْهُمْؕ قَاتَلَهُمُ اللهُ اَنّٰى يُؤْفَكُوْنَ
তারা (ভয়ে) যে কোন ধরনের বড় আওয়াজকেই তাদের বিরুদ্ধে মনে করে। তারাই শত্রু, অতএব তাদের সম্পর্কে সতর্ক হও। আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করুন; বিভ্রান্ত হয়ে তারা কোথায় চালিত হচ্ছে? (সূরা মুনাফিকূন- ৪)
তাদেরকে মর্মস্পর্শী ভাষায় বুঝাতে হবে :
اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ يَعْلَمُ اللهُ مَا فِيْ قُلُوْبِهِمْ فَاَعْرِضْ عَنْهُمْ وَعِظْهُمْ وَقُلْ لَّهُمْ فِۤيْ اَنْفُسِهِمْ قَوْلًا ۢبَلِيْغًا
এরাই তারা, যাদের অন্তরে কী আছে আল্লাহ তা জানেন। সুতরাং তুমি তাদেরকে উপেক্ষা করো এবং তাদেরকে ভালো উপদেশ দাও। আর তাদেরকে এমন কথা বলো, যা তাদের অন্তর স্পর্শ করে। (সূরা নিসা- ৬৩)
তাদের দেয়া কষ্টকে এড়িয়ে যেতে হবে :
وَلَا تُطِعِ الْكَافِرِيْنَ وَالْمُنَافِقِيْنَ وَدَعْ اَذَاهُمْ وَتَوَكَّلْ عَلَى اللهِؕ وَكَفٰى بِاللهِ وَكِيْلًا
আর আপনি কাফির ও মুনাফিকদের অনুসরণ করবেন না এবং (তাদের পক্ষ হতে আগত) নির্যাতনকে উপেক্ষা করুন ও আল্লাহর উপর ভরসা করুন। তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। (সূরা আহযাব- ৪৮)
তাদের মসজিদে নামায পড়া যাবে না :
وَالَّذِيْنَ اتَّخَذُوْا مَسْجِدًا ضِرَارًا وَّكُفْرًا وَّتَفْرِيْقًا ۢبَيْنَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَاِرْصَادًا لِّمَنْ حَارَبَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ مِنْ قَبْلُؕ وَلَيَحْلِفُنَّ اِنْ اَرَدْنَاۤ اِلَّا الْحُسْنٰىؕ وَاللهُ يَشْهَدُ اِنَّهُمْ لَكَاذِبُوْنَ ‐ لَا تَقُمْ فِيْهِ اَبَدًاؕ لَمَسْجِدٌ اُسِّسَ عَلَى التَّقْوٰى مِنْ اَوَّلِ يَوْمٍ اَحَقُّ اَنْ تَقُوْمَ فِيْهِؕ فِيْهِ رِجَالٌ يُّحِبُّوْنَ اَنْ يَّتَطَهَّرُوْاؕ وَاللهُ يُحِبُّ الْمُطَّهِّرِيْنَ
যারা (মুসলিমদের) ক্ষতিসাধন, কুফরী ও মুমিনদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এবং ইতোপূর্বে যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে তার গোপন ঘাঁটিস্বরূপ ব্যবহারের উদ্দেশ্যে মসজিদ নির্মাণ করেছে, অবশ্যই তারা শপথ করে বলবে যে, আমরা সৎ উদ্দেশ্য নিয়েই এটা (নির্মাণ) করেছি; (কিন্তু) আল্লাহ সাক্ষী যে, নিশ্চয় তারা মিথ্যাবাদী। তুমি কখনো তাতে (সালাতে) দাঁড়াবে না; যে মসজিদের ভিত্তি প্রথম দিন হতেই তাক্বওয়ার উপর স্থাপিত হয়েছে, সেটাই তোমার সালাতের জন্য অধিক যোগ্য। তথায় এমন লোক আছে যারা পবিত্রতা অর্জন করতে ভালোবাসে; আর আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে পছন্দ করেন। (সূরা তাওবা- ১০৭, ১০৮)
শানে নুযূল : মদিনায় খাযরাজ গোত্রে আবু আমের নামে এক ব্যক্তি ছিল। তাকে আহলে কিতাবের আলিমদের মধ্যে বিশিষ্ট ব্যক্তি বলে গণ্য করা হতো। রাসূল ﷺ যখন মদিনায় পৌঁছলেন তখন সেখানে আবু আমেরের ধর্মীয় কর্তৃত্ব বিরাজ করছিল। কিন্তু সে সত্যকে গ্রহণ করার পরিবর্তে উল্টো তার বিরোধিতা শুরু করল। অতঃপর তার ও মুনাফিকদের মধ্যে একটি চুক্তি সম্পাদিত হলো যে, মদিনায় তারা নিজেদের একটি পৃথক মসজিদ তৈরি করে নেবে। মদিনায় এ সময় দু’টি মসজিদ ছিল। একটি মসজিদে কুবা, অন্যটি মসজিদে নববী। এ দু’টি মসজিদ বর্তমান থাকা সত্ত্বেও তৃতীয় একটি মসজিদ নির্মাণ করার কোন প্রয়োজন ছিল না। তাই তারা নিজেদের পৃথক মসজিদ তৈরি করার আগে তার বৈধতা প্রমাণ করতে বাধ্য ছিল। এ উদ্দেশ্যে তারা নবী ﷺ এর সামনে এ নতুন নির্মাণ কাজের প্রয়োজন পেশ করে বলে, ‘‘আমরা শুধুমাত্র নামাযীদের সুবিধার্থে এ নতুন মসজিদটি নির্মাণ করতে চাই।’’ নির্মাণ কাজ শেষ হলে এরা নবী ﷺ এর নিকট উপস্থিত হলো এবং সেখানে একবার নামায পড়িয়ে মসজিদটির উদ্বোধন করার জন্য তাঁর কাছে আবেদন জানাল। কিন্তু নবী ﷺ বললেন, ‘‘শীঘ্রই আমাকে একটি বড় অভিযানে বের হতে হবে, সেখান থেকে ফিরে এসে দেখা যাবে’’। এ কথা বলে তিনি তাদের আবেদন এড়িয়ে গেলেন। এরপর তিনি তাবুক যুদ্ধের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে গেলেন এবং তাঁর রওয়ানা হওয়ার পর এ মুনাফিকরা এ মসজিদে নিজেদের জোট গড়ে তুলতে এবং ষড়যন্ত্র পাকাতে লাগল। তাবুক থেকে ফেরার পথে নবী ﷺ যখন মদিনার নিকটবর্তী ‘যী আওয়ান’ নামক স্থানে পৌঁছলেন তখন এ আয়াত নাযিল হলো। ফলে তিনি তখনই কয়েকজন লোককে এ দায়িত্ব দিয়ে মদিনায় পাঠিয়ে দিলেন যে, তাঁর মদিনায় পৌঁছার আগেই যেন তারা ‘যিরার’ মসজিদটি ধূলিস্যাৎ করে দেয়।
তাদের জানাযা পড়া যাবে না :
وَلَا تُصَلِّ عَلٰۤى اَحَدٍ مِّنْهُمْ مَّاتَ اَبَدًا وَّلَا تَقُمْ عَلٰى قَبْرِهٖؕ اِنَّهُمْ كَفَرُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِهٖ وَمَاتُوْا وَهُمْ فَاسِقُوْنَ
তাদের মধ্যে কারো মৃত্যু হলে তুমি কখনো তার জন্য (জানাযার) সালাত পড়বে না এবং তার কবরের পার্শ্বেও দাঁড়াবে না। তারা তো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করেছিল এবং তারা পাপাচারী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে। (সূরা তাওবা- ৮৪)
শানে নুযূল : মুনাফিক নেতা আবদুল্লাহ ইবনে উবাই মারা গেলে তার ছেলে আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী ﷺ এর খেদমতে হাযির হয়ে কাফন হিসেবে ব্যবহারের জন্য তাঁর কোর্তা চাইলেন। নবী ﷺ অত্যন্ত উদার হৃদয়ের পরিচয় দিয়ে কোর্তাটি দিয়ে দিলেন। তারপর আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী ﷺ কেই জানাযার নামায পড়ানোর জন্য অনুরোধ করলেন। ফলে তিনি এজন্যও তৈরি হয়ে গেলেন। কিন্তু আল্লাহর হুকুমে তাঁকে জানাযা পড়ানো থেকে বিরত রাখা হলো। কারণ ইসলামী রাষ্ট্রের একটি মূলনীতি হচ্ছে, কোন নেতার জন্য এমন কোন কাজ করা বৈধ হবে না, যাতে শত্রুপক্ষের সাহস বেড়ে যায়।
ব্যাখ্যা : এ থেকে শরীয়াতের এ বিষয়টি নির্ধারিত হয়েছে যে, অশ্লীল এবং ফাসিক কাজকর্মে লিপ্ত ব্যক্তির জানাযার নামায মুসলিমদের ইমাম ও নেতৃস্থানীয় লোকদের পড়ানো উচিত নয়। তাতে শরীক হওয়াও উচিত নয়। এ আয়াতগুলো নাযিল হওয়ার পর নবী ﷺ নিয়ম করে নিয়েছিলেন যে, কোন জানাযায় শরীক হওয়ার জন্য তাকে ডাকা হলে তিনি প্রথমে মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করতেন। জিজ্ঞেস করতেন, সে কেমন লোক ছিল। যদি জানতে পারতেন যে, সে অসচ্চরিত্রের অধিকারী ছিল, তাহলে তার পরিবারের লোকদের বলে দিতেন, তোমরা যেভাবে চাও একে দাফন করে দিতে পার।
মুনাফিকদের অন্তরে মোহর পড়ে যায় :
اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ طَبَعَ اللهُ عَلٰى قُلُوْبِهِمْ وَاتَّبَعُوْاۤ اَهْوَآءَهُمْ
এরা ঐসব লোক, যাদের অন্তরে আল্লাহ মোহর মেরে দিয়েছেন; ফলে তারা নাফসের গোলামী করে চলেছে। (সূরা মুহাম্মাদ- ১৬)
তাদের দান-সাদাকা কবুল হয় না :
قُلْ اَنْفِقُوْا طَوْعًا اَوْ كَرْهًا لَّنْ يُّتَقَبَّلَ مِنْكُمْ ؕ اِنَّكُمْ كُنْتُمْ قَوْمًا فَاسِقِيْنَ
বলো, তোমরা ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যয় কর অথবা অনিচ্ছাকৃতভাবে, তোমাদের নিকট হতে তা কিছুতেই গৃহীত হবে না; (কেননা) নিশ্চয় তোমরা ফাসিক সম্প্রদায়। (সূরা তাওবা- ৫৩)
তাদের উপর আল্লাহর অভিশাপ পড়বে :
وَعَدَ اللهُ الْمُنَافِقِيْنَ وَالْمُنَافِقَاتِ وَالْكُفَّارَ نَارَ جَهَنَّمَ خَالِدِيْنَ فِيْهَاؕ هِيَ حَسْبُهُمْۚ وَلَعَنَهُمُ اللهُ ۚ وَلَهُمْ عَذَابٌ مُّقِيْمٌ
আল্লাহ মুনাফিক নর-নারী ও কাফিরদেরকে জাহান্নামের অগ্নির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সেখানে তারা স্থায়ী হবে; আর এটাই তাদের জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাদেরকে লানত করেছেন; আর তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী শাস্তি। (সূরা তাওবা- ৬৮)
আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করবেন :
فَاحْذَرْهُمْؕ قَاتَلَهُمُ اللهُ اَنّٰى يُؤْفَكُوْنَ
তাদের সম্পর্কে সতর্ক হও, আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করুন! বিভ্রান্ত হয়ে তারা কোথায় চলেছে? (সূরা মুনাফিকূন- ৪)
তাদের জন্য রয়েছে আযাবের সুসংবাদ :
بَشِّرِ الْمُنَافِقِيْنَ بِاَنَّ لَهُمْ عَذَابًا اَلِيْمًا
মুনাফিকদেরকে সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য রয়েছে মর্মান্তিক শাস্তি। (সূরা নিসা- ১৩৮)
তাদের আমল নষ্ট হয়ে যাবে :
اُولٰٓئِكَ حَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْ فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِۚ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ
এরাই হচ্ছে সেসব লোক, দুনিয়া ও আখিরাতে যাদের কর্মফল বিনষ্ট হয়ে গেছে। আর এরাই হচ্ছে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরা তাওবা- ৬৯)
মুনাফিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে :
وَيَقُوْلُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَهٰۤؤُلَآءِ الَّذِيْنَ اَقْسَمُوْا بِاللهِ جَهْدَ اَيْمَانِهِمْ اِنَّهُمْ لَمَعَكُمْؕ حَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْ فَاَصْبَحُوْا خَاسِرِيْنَ
মুমিনগণ বলবে, এরাই কি তারা যারা আল্লাহর নামে দৃঢ়ভাবে শপথ করেছিল যে, তারা তোমাদের সঙ্গেই আছে? (আজ) তাদের আমল নিষ্ফল হয়ে গেছে; ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। (সূরা মায়েদা- ৫৩)
তাদের মিথ্যা শপথ পরকালে কোন কাজে লাগবে না :
يَوْمَ يَبْعَثُهُمُ اللهُ جَمِيْعًا فَيَحْلِفُوْنَ لَهٗ كَمَا يَحْلِفُوْنَ لَكُمْ وَيَحْسَبُوْنَ اَنَّهُمْ عَلٰى شَيْءٍؕ اَ لَاۤ اِنَّهُمْ هُمُ الْكَاذِبُوْنَ
সেদিন আল্লাহ তাদের সবাইকে পুনরায় জীবিত করে উঠাবেন। তখন তারা আল্লাহর সামনে শপথ করবে, যেভাবে তোমাদের সামনে শপথ করে থাকে। আর তারা এরূপ ধারণা করবে যে, এতে তাদের কোন কাজ হবে। সাবধান, নিশ্চয় তারা মিথ্যাবাদী (সম্প্রদায়)। (সূরা মুজাদালা- ১৮)
কিয়ামতের দিন মুনাফিকরা ঈমানদারদের কাছে নূর চাইবে :
يَوْمَ يَقُوْلُ الْمُنَافِقُوْنَ وَالْمُنَافِقَاتُ لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوا انْظُرُوْنَا نَقْتَبِسْ مِنْ نُّوْرِكُمْ
সেদিন মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারী মুমিনদেরকে বলবে, তোমরা আমাদের জন্য একটু অপেক্ষা করো, যাতে আমরা তোমাদের নূর হতে কিছু গ্রহণ করতে পারি। (সূরা হাদীদ- ১৩)
মুমিনরা বলবে, পেছনে নূরের সন্ধান করো :
قِيْلَ ارْجِعُوْا وَرَآءَكُمْ فَالْتَمِسُوْا نُوْرًا
বলা হবে, তোমরা তোমাদের পেছনে ফিরে যাও এবং আলোর সন্ধান করো। (সূরা হাদীদ- ১৩)
পরে তাদের মধ্যে প্রাচীর তৈরি করে দেয়া হবে :
فَضُرِبَ بَيْنَهُمْ بِسُوْرٍ لَّهٗ بَابٌؕ بَاطِنُهٗ فِيْهِ الرَّحْمَةُ وَظَاهِرُهٗ مِنْ قِبَلِهِ الْعَذَابُ
অতঃপর উভয়ের মাঝামাঝিতে একটি প্রাচীর স্থাপিত হবে, সেখানে একটি দরজা থাকবে, যার অভ্যন্তরে রয়েছে রহমত এবং বহির্ভাগে রয়েছে আযাব। (সূরা হাদীদ- ১৩)
আবার তারা মুমিনদেরকে ডাকবে :
يُنَادُوْنَهُمْ اَلَمْ نَكُنْ مَّعَكُمْ
তারা মুমিনদেরকে ডেকে (জিজ্ঞেস করবে), আমরা কি তোমাদের সঙ্গে ছিলাম না? (সূরা হাদীদ- ১৪)
মুমিনরা তাদের ত্রুটিসমূহ তুলে ধরবে :
قَالُوْا بَلٰى وَلٰكِنَّكُمْ فَتَنْتُمْ اَنْفُسَكُمْ وَتَرَبَّصْتُمْ وَارْتَبْتُمْ وَغَرَّتْكُمُ الْاَمَانِيُّ حَتّٰى جَآءَ اَمْرُ اللهِ وَغَرَّكُمْ بِاللهِ الْغَرُوْرُ
তারা বলবে, হ্যাঁ (তোমরা আমাদের সাথেই ছিলে)! কিন্তু তোমরা নিজেরাই নিজেদেরকে বিপদগ্রস্ত করেছ; তোমরা প্রতীক্ষা করেছিলে এবং সন্দেহ পোষণ করেছিলে। আর (মিথ্যা) আশা-আকাঙ্ক্ষা তোমাদেরকে প্রতারিত করেছে। অবশেষে আল্লাহর হুকুম (মৃত্যু) এসে গেছে; (অপরদিকে) মহাপ্রতারক (শয়তানও) তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারিত করেছিল। (সূরা হাদীদ- ১৪)
মুনাফিকদের বাঁচার কোন উপায় থাকবে না :
فَالْيَوْمَ لَا يُؤْخَذُ مِنْكُمْ فِدْيَةٌ وَّلَا مِنَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاؕ مَأْوَاكُمُ النَّارُؕ هِيَ مَوْلَاكُمْؕ وَبِئْسَ الْمَصِيْرُ
আজ তোমাদের নিকট হতে কোন মুক্তিপণ নেয়া হবে না এবং কাফিরদের নিকট হতেও না। জাহান্নামই তোমাদের আবাসস্থল, এটাই তোমাদের চিরসঙ্গী; আর এটা কতই না নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল।
(সূরা হাদীদ- ১৫)
তারা কাফিরদের সঙ্গে জাহান্নামে থাকবে :
اِنَّ اللهَ جَامِعُ الْمُنَافِقِيْنَ وَالْكَافِرِيْنَ فِيْ جَهَنَّمَ جَمِيْعًا
নিশ্চয় আল্লাহ মুনাফিক এবং কাফির সকলকেই জাহান্নামে একত্র করবেন। (সূরা নিসা- ১৪০)
তারা দুনিয়াতেই শাস্তি ভোগ করবে :
وَلَا تُعْجِبْكَ اَمْوَالُهُمْ وَاَوْلَادُهُمْؕ اِنَّمَا يُرِيْدُ اللهُ اَنْ يُّعَذِّبَهُمْ بِهَا فِى الدُّنْيَا وَتَزْهَقَ اَنْفُسُهُمْ وَهُمْ كَافِرُوْنَ
তাদের সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাকে বিমুগ্ধ না করে দেয়; আল্লাহ তো এর দ্বারাই তাদেরকে পার্থিব জীবনে (এক ধরনের) শাস্তিতে রেখে দিতে চান। ফলে তারা কাফির থাকাবস্থায় তাদের আত্মা দেহ-ত্যাগ করবে। (সূরা তাওবা- ৮৫)
পরকালেও তারা কঠিন শাস্তি ভোগ করবে :
اَعَدَّ اللهُ لَهُمْ عَذَابًا شَدِيْدًاؕ اِنَّهُمْ سَآءَ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
আল্লাহ তাদের জন্য কঠোর শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন। নিশ্চয় তারা যা করত তা কতই না মন্দ।
(সূরা মুজাদালা- ১৫)
তাদের আযাব বড়ই অপমানজনক :
اِتَّخَذُوْاۤ اَيْمَانَهُمْ جُنَّةً فَصَدُّوْا عَنْ سَبِيْلِ اللهِ فَلَهُمْ عَذَابٌ مُّهِيْنٌ
তারা তাদের শপথকে ঢালস্বরূপ করে রেখেছে, এভাবে তারা (লোকদেরকে) আল্লাহর পথ থেকে বিরত রাখে। তাদের জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি। (সূরা মুজাদালা- ১৬)
তাদের ধনসম্পদ কোন কাজে আসবে না :
لَنْ تُغْنِيَ عَنْهُمْ اَمْوَالُهُمْ وَلَاۤ اَوْلَادُهُمْ مِّنَ اللهِ شَيْئًاؕ اُولٰٓئِكَ اَصْحَابُ النَّارِؕ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
আল্লাহর শাস্তির মুকাবিলায় তাদের ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোন কাজে আসবে না। তারাই জাহান্নামের অধিবাসী, সেথায় তারা চিরস্থায়ী হবে। (সূরা মুজাদালা- ১৭)
তারা জাহান্নামের নিম্নস্তরে থাকবে :
اِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ فِى الدَّرْكِ الْاَسْفَلِ مِنَ النَّارِ
নিশ্চয় মুনাফিকরা জাহান্নামের সবচেয়ে নিম্নস্তরে অবস্থান করবে। (সূরা নিসা– ১৪৫)
اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ طَبَعَ اللهُ عَلٰى قُلُوْبِهِمْ وَاتَّبَعُوْاۤ اَهْوَآءَهُمْ
এরা ঐসব লোক, যাদের অন্তরে আল্লাহ মোহর মেরে দিয়েছেন; ফলে তারা নাফসের গোলামী করে চলেছে। (সূরা মুহাম্মাদ- ১৬)
তাদের দান-সাদাকা কবুল হয় না :
قُلْ اَنْفِقُوْا طَوْعًا اَوْ كَرْهًا لَّنْ يُّتَقَبَّلَ مِنْكُمْ ؕ اِنَّكُمْ كُنْتُمْ قَوْمًا فَاسِقِيْنَ
বলো, তোমরা ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যয় কর অথবা অনিচ্ছাকৃতভাবে, তোমাদের নিকট হতে তা কিছুতেই গৃহীত হবে না; (কেননা) নিশ্চয় তোমরা ফাসিক সম্প্রদায়। (সূরা তাওবা- ৫৩)
তাদের উপর আল্লাহর অভিশাপ পড়বে :
وَعَدَ اللهُ الْمُنَافِقِيْنَ وَالْمُنَافِقَاتِ وَالْكُفَّارَ نَارَ جَهَنَّمَ خَالِدِيْنَ فِيْهَاؕ هِيَ حَسْبُهُمْۚ وَلَعَنَهُمُ اللهُ ۚ وَلَهُمْ عَذَابٌ مُّقِيْمٌ
আল্লাহ মুনাফিক নর-নারী ও কাফিরদেরকে জাহান্নামের অগ্নির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সেখানে তারা স্থায়ী হবে; আর এটাই তাদের জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাদেরকে লানত করেছেন; আর তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী শাস্তি। (সূরা তাওবা- ৬৮)
আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করবেন :
فَاحْذَرْهُمْؕ قَاتَلَهُمُ اللهُ اَنّٰى يُؤْفَكُوْنَ
তাদের সম্পর্কে সতর্ক হও, আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করুন! বিভ্রান্ত হয়ে তারা কোথায় চলেছে? (সূরা মুনাফিকূন- ৪)
তাদের জন্য রয়েছে আযাবের সুসংবাদ :
بَشِّرِ الْمُنَافِقِيْنَ بِاَنَّ لَهُمْ عَذَابًا اَلِيْمًا
মুনাফিকদেরকে সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য রয়েছে মর্মান্তিক শাস্তি। (সূরা নিসা- ১৩৮)
তাদের আমল নষ্ট হয়ে যাবে :
اُولٰٓئِكَ حَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْ فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِۚ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ
এরাই হচ্ছে সেসব লোক, দুনিয়া ও আখিরাতে যাদের কর্মফল বিনষ্ট হয়ে গেছে। আর এরাই হচ্ছে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরা তাওবা- ৬৯)
মুনাফিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে :
وَيَقُوْلُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَهٰۤؤُلَآءِ الَّذِيْنَ اَقْسَمُوْا بِاللهِ جَهْدَ اَيْمَانِهِمْ اِنَّهُمْ لَمَعَكُمْؕ حَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْ فَاَصْبَحُوْا خَاسِرِيْنَ
মুমিনগণ বলবে, এরাই কি তারা যারা আল্লাহর নামে দৃঢ়ভাবে শপথ করেছিল যে, তারা তোমাদের সঙ্গেই আছে? (আজ) তাদের আমল নিষ্ফল হয়ে গেছে; ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। (সূরা মায়েদা- ৫৩)
তাদের মিথ্যা শপথ পরকালে কোন কাজে লাগবে না :
يَوْمَ يَبْعَثُهُمُ اللهُ جَمِيْعًا فَيَحْلِفُوْنَ لَهٗ كَمَا يَحْلِفُوْنَ لَكُمْ وَيَحْسَبُوْنَ اَنَّهُمْ عَلٰى شَيْءٍؕ اَ لَاۤ اِنَّهُمْ هُمُ الْكَاذِبُوْنَ
সেদিন আল্লাহ তাদের সবাইকে পুনরায় জীবিত করে উঠাবেন। তখন তারা আল্লাহর সামনে শপথ করবে, যেভাবে তোমাদের সামনে শপথ করে থাকে। আর তারা এরূপ ধারণা করবে যে, এতে তাদের কোন কাজ হবে। সাবধান, নিশ্চয় তারা মিথ্যাবাদী (সম্প্রদায়)। (সূরা মুজাদালা- ১৮)
কিয়ামতের দিন মুনাফিকরা ঈমানদারদের কাছে নূর চাইবে :
يَوْمَ يَقُوْلُ الْمُنَافِقُوْنَ وَالْمُنَافِقَاتُ لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوا انْظُرُوْنَا نَقْتَبِسْ مِنْ نُّوْرِكُمْ
সেদিন মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারী মুমিনদেরকে বলবে, তোমরা আমাদের জন্য একটু অপেক্ষা করো, যাতে আমরা তোমাদের নূর হতে কিছু গ্রহণ করতে পারি। (সূরা হাদীদ- ১৩)
মুমিনরা বলবে, পেছনে নূরের সন্ধান করো :
قِيْلَ ارْجِعُوْا وَرَآءَكُمْ فَالْتَمِسُوْا نُوْرًا
বলা হবে, তোমরা তোমাদের পেছনে ফিরে যাও এবং আলোর সন্ধান করো। (সূরা হাদীদ- ১৩)
পরে তাদের মধ্যে প্রাচীর তৈরি করে দেয়া হবে :
فَضُرِبَ بَيْنَهُمْ بِسُوْرٍ لَّهٗ بَابٌؕ بَاطِنُهٗ فِيْهِ الرَّحْمَةُ وَظَاهِرُهٗ مِنْ قِبَلِهِ الْعَذَابُ
অতঃপর উভয়ের মাঝামাঝিতে একটি প্রাচীর স্থাপিত হবে, সেখানে একটি দরজা থাকবে, যার অভ্যন্তরে রয়েছে রহমত এবং বহির্ভাগে রয়েছে আযাব। (সূরা হাদীদ- ১৩)
আবার তারা মুমিনদেরকে ডাকবে :
يُنَادُوْنَهُمْ اَلَمْ نَكُنْ مَّعَكُمْ
তারা মুমিনদেরকে ডেকে (জিজ্ঞেস করবে), আমরা কি তোমাদের সঙ্গে ছিলাম না? (সূরা হাদীদ- ১৪)
মুমিনরা তাদের ত্রুটিসমূহ তুলে ধরবে :
قَالُوْا بَلٰى وَلٰكِنَّكُمْ فَتَنْتُمْ اَنْفُسَكُمْ وَتَرَبَّصْتُمْ وَارْتَبْتُمْ وَغَرَّتْكُمُ الْاَمَانِيُّ حَتّٰى جَآءَ اَمْرُ اللهِ وَغَرَّكُمْ بِاللهِ الْغَرُوْرُ
তারা বলবে, হ্যাঁ (তোমরা আমাদের সাথেই ছিলে)! কিন্তু তোমরা নিজেরাই নিজেদেরকে বিপদগ্রস্ত করেছ; তোমরা প্রতীক্ষা করেছিলে এবং সন্দেহ পোষণ করেছিলে। আর (মিথ্যা) আশা-আকাঙ্ক্ষা তোমাদেরকে প্রতারিত করেছে। অবশেষে আল্লাহর হুকুম (মৃত্যু) এসে গেছে; (অপরদিকে) মহাপ্রতারক (শয়তানও) তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারিত করেছিল। (সূরা হাদীদ- ১৪)
মুনাফিকদের বাঁচার কোন উপায় থাকবে না :
فَالْيَوْمَ لَا يُؤْخَذُ مِنْكُمْ فِدْيَةٌ وَّلَا مِنَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاؕ مَأْوَاكُمُ النَّارُؕ هِيَ مَوْلَاكُمْؕ وَبِئْسَ الْمَصِيْرُ
আজ তোমাদের নিকট হতে কোন মুক্তিপণ নেয়া হবে না এবং কাফিরদের নিকট হতেও না। জাহান্নামই তোমাদের আবাসস্থল, এটাই তোমাদের চিরসঙ্গী; আর এটা কতই না নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল।
(সূরা হাদীদ- ১৫)
তারা কাফিরদের সঙ্গে জাহান্নামে থাকবে :
اِنَّ اللهَ جَامِعُ الْمُنَافِقِيْنَ وَالْكَافِرِيْنَ فِيْ جَهَنَّمَ جَمِيْعًا
নিশ্চয় আল্লাহ মুনাফিক এবং কাফির সকলকেই জাহান্নামে একত্র করবেন। (সূরা নিসা- ১৪০)
তারা দুনিয়াতেই শাস্তি ভোগ করবে :
وَلَا تُعْجِبْكَ اَمْوَالُهُمْ وَاَوْلَادُهُمْؕ اِنَّمَا يُرِيْدُ اللهُ اَنْ يُّعَذِّبَهُمْ بِهَا فِى الدُّنْيَا وَتَزْهَقَ اَنْفُسُهُمْ وَهُمْ كَافِرُوْنَ
তাদের সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাকে বিমুগ্ধ না করে দেয়; আল্লাহ তো এর দ্বারাই তাদেরকে পার্থিব জীবনে (এক ধরনের) শাস্তিতে রেখে দিতে চান। ফলে তারা কাফির থাকাবস্থায় তাদের আত্মা দেহ-ত্যাগ করবে। (সূরা তাওবা- ৮৫)
পরকালেও তারা কঠিন শাস্তি ভোগ করবে :
اَعَدَّ اللهُ لَهُمْ عَذَابًا شَدِيْدًاؕ اِنَّهُمْ سَآءَ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
আল্লাহ তাদের জন্য কঠোর শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন। নিশ্চয় তারা যা করত তা কতই না মন্দ।
(সূরা মুজাদালা- ১৫)
তাদের আযাব বড়ই অপমানজনক :
اِتَّخَذُوْاۤ اَيْمَانَهُمْ جُنَّةً فَصَدُّوْا عَنْ سَبِيْلِ اللهِ فَلَهُمْ عَذَابٌ مُّهِيْنٌ
তারা তাদের শপথকে ঢালস্বরূপ করে রেখেছে, এভাবে তারা (লোকদেরকে) আল্লাহর পথ থেকে বিরত রাখে। তাদের জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি। (সূরা মুজাদালা- ১৬)
তাদের ধনসম্পদ কোন কাজে আসবে না :
لَنْ تُغْنِيَ عَنْهُمْ اَمْوَالُهُمْ وَلَاۤ اَوْلَادُهُمْ مِّنَ اللهِ شَيْئًاؕ اُولٰٓئِكَ اَصْحَابُ النَّارِؕ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
আল্লাহর শাস্তির মুকাবিলায় তাদের ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোন কাজে আসবে না। তারাই জাহান্নামের অধিবাসী, সেথায় তারা চিরস্থায়ী হবে। (সূরা মুজাদালা- ১৭)
তারা জাহান্নামের নিম্নস্তরে থাকবে :
اِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ فِى الدَّرْكِ الْاَسْفَلِ مِنَ النَّارِ
নিশ্চয় মুনাফিকরা জাহান্নামের সবচেয়ে নিম্নস্তরে অবস্থান করবে। (সূরা নিসা– ১৪৫)
কুফরী নীতি গ্রহণ করা :
وَالْكَافِرُوْنَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ
মূলত কাফিররাই হচ্ছে যালিম। (সূরা বাক্বারা- ২৫৪)
মুনাফিকী করা :
اَفِيْ قُلُوْبِهِمْ مَّرَضٌ اَمِ ارْتَابُوْاۤ اَمْ يَخَافُوْنَ اَنْ يَّحِيْفَ اللهُ عَلَيْهِمْ وَرَسُوْلُهٗؕ بَلْ اُولٰٓئِكَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ
তাদের অন্তরে কি ব্যাধি আছে, নাকি তারা সংশয় পোষণ করে? নাকি তারা ভয় করে যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তাদের প্রতি যুলুম করবেন? বরং তারাই তো যালিম। (সূরা নূর- ৫০)
শিরক করা :
اِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيْمٌ
নিশ্চয় শিরক মহা অন্যায়। (সূরা লুক্বমান- ১৩)
আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করা :
وَمَنْ يَّتَعَدَّ حُدُوْدَ اللهِ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ
যারা আল্লাহর সীমা অতিক্রম করবে তারাই যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা বাক্বারা- ২২৯)
আল্লাহর বিধান অনুযায়ী বিচার না করা :
وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ
আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন যারা সে অনুযায়ী মীমাংসা করে না, তারাই যালিম। (সূরা মায়েদা- ৪৫)
ইসলামের শত্রুকে বন্ধু বানানো :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوْاۤ اٰبَآءَكُمْ وَاِخْوَانَكُمْ اَوْلِيَآءَ اِنِ اسْتَحَبُّوا الكُفْرَ عَلَى الْاِيْمَانِؕ وَمَنْ يَّتَوَلَّهُمْ مِّنْكُمْ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমাদের পিতা ও ভ্রাতা যদি ঈমানের চেয়ে কুফরীকে (বেশি) ভালোবাসে, তবে তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তোমাদের মধ্যে যারা তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে, তারাই যালিম। (সূরা তাওবা- ২৩)
সামাজিক অপরাধ থেকে বিরত না হওয়া :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِّنْ قَوْمٍ عَسٰۤى اَنْ يَّكُوْنُوْا خَيْرًا مِّنْهُمْ وَلَا نِسَآءٌ مِّنْ نِّسَآءٍ عَسٰۤى اَنْ يَّكُنَّ خَيْرًا مِّنْهُنَّۚ وَلَا تَلْمِزُوْاۤ اَنْفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوْا بِالْاَلْقَابِؕ بِئْسَ الْاِسْمُ الْفُسُوْقُ بَعْدَ الْاِيْمَانِۚ وَمَنْ لَّمْ يَتُبْ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা এক সম্প্রদায় অপর সম্প্রদায়কে নিয়ে ঠাট্টা করো না, হতে পারে তারাই এদের চেয়ে উত্তম। আর একদল নারীও অপর দল নারীদের নিয়ে ঠাট্টা করো না, হতে পারে তারাই এদের চেয়ে উত্তম। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে খারাপ নাম নিয়ে আহবান করো না। ঈমান আনার পর মন্দ নামে ডাকা জঘন্য কাজ। যারা (এ ধরনের আচরণ থেকে) ফিরে না আসে তারাই যালিম। (সূরা হুজুরাত- ১১)
وَالْكَافِرُوْنَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ
মূলত কাফিররাই হচ্ছে যালিম। (সূরা বাক্বারা- ২৫৪)
মুনাফিকী করা :
اَفِيْ قُلُوْبِهِمْ مَّرَضٌ اَمِ ارْتَابُوْاۤ اَمْ يَخَافُوْنَ اَنْ يَّحِيْفَ اللهُ عَلَيْهِمْ وَرَسُوْلُهٗؕ بَلْ اُولٰٓئِكَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ
তাদের অন্তরে কি ব্যাধি আছে, নাকি তারা সংশয় পোষণ করে? নাকি তারা ভয় করে যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তাদের প্রতি যুলুম করবেন? বরং তারাই তো যালিম। (সূরা নূর- ৫০)
শিরক করা :
اِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيْمٌ
নিশ্চয় শিরক মহা অন্যায়। (সূরা লুক্বমান- ১৩)
আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করা :
وَمَنْ يَّتَعَدَّ حُدُوْدَ اللهِ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ
যারা আল্লাহর সীমা অতিক্রম করবে তারাই যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা বাক্বারা- ২২৯)
আল্লাহর বিধান অনুযায়ী বিচার না করা :
وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ
আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন যারা সে অনুযায়ী মীমাংসা করে না, তারাই যালিম। (সূরা মায়েদা- ৪৫)
ইসলামের শত্রুকে বন্ধু বানানো :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوْاۤ اٰبَآءَكُمْ وَاِخْوَانَكُمْ اَوْلِيَآءَ اِنِ اسْتَحَبُّوا الكُفْرَ عَلَى الْاِيْمَانِؕ وَمَنْ يَّتَوَلَّهُمْ مِّنْكُمْ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমাদের পিতা ও ভ্রাতা যদি ঈমানের চেয়ে কুফরীকে (বেশি) ভালোবাসে, তবে তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তোমাদের মধ্যে যারা তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে, তারাই যালিম। (সূরা তাওবা- ২৩)
সামাজিক অপরাধ থেকে বিরত না হওয়া :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِّنْ قَوْمٍ عَسٰۤى اَنْ يَّكُوْنُوْا خَيْرًا مِّنْهُمْ وَلَا نِسَآءٌ مِّنْ نِّسَآءٍ عَسٰۤى اَنْ يَّكُنَّ خَيْرًا مِّنْهُنَّۚ وَلَا تَلْمِزُوْاۤ اَنْفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوْا بِالْاَلْقَابِؕ بِئْسَ الْاِسْمُ الْفُسُوْقُ بَعْدَ الْاِيْمَانِۚ وَمَنْ لَّمْ يَتُبْ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা এক সম্প্রদায় অপর সম্প্রদায়কে নিয়ে ঠাট্টা করো না, হতে পারে তারাই এদের চেয়ে উত্তম। আর একদল নারীও অপর দল নারীদের নিয়ে ঠাট্টা করো না, হতে পারে তারাই এদের চেয়ে উত্তম। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে খারাপ নাম নিয়ে আহবান করো না। ঈমান আনার পর মন্দ নামে ডাকা জঘন্য কাজ। যারা (এ ধরনের আচরণ থেকে) ফিরে না আসে তারাই যালিম। (সূরা হুজুরাত- ১১)
যারা আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করে :
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرٰى عَلَى اللهِ كَذِبًا اَوْ كَذَّبَ بِاٰيَاتِهٖۤ اِنَّهٗ لَا يُفْلِحُ الظَّالِمُوْنَ
যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে অথবা তাঁর নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? নিশ্চয় যালিমরা সফলকাম হতে পারবে না। (সূরা আন‘আম- ২১)
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرٰى عَلَى اللهِ الْكَذِبَ وَهُوَ يُدْعٰۤى اِلَى الْاِسْلَامِؕ وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? অথচ তাকে ইসলামের দিকে আহবান করা হয়। আর আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (সূরা সাফ- ৭)
যারা আল্লাহর নিদর্শনাবলিকে অস্বীকার করে :
فَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرٰى عَلَى اللهِ كَذِبًا اَوْ كَذَّبَ بِاٰيَاتِهٖ
যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে কিংবা তাঁর নিদর্শনাবলিকে অস্বীকার করে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? (সূরা আ‘রাফ- ৩৭)
فَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ كَذَّبَ بِاٰيَاتِ اللهِ وَصَدَفَ عَنْهَا
অতঃপর যে ব্যক্তি আল্লাহর নিদর্শনাবলিকে প্রত্যাখ্যান করবে এবং তা হতে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? (সূরা আন‘আম- ১৫৭)
যারা সত্যকে মিথ্যা বলে :
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرٰى عَلَى اللهِ كَذِبًا اَوْ كَذَّبَ بِالْحَقِّ لَمَّا جَآءَهٗ
যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে অথবা তাঁর নিকট হতে আগত সত্যকে অস্বীকার করে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? (সূরা আনকাবূত- ৬৮)
فَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ كَذَبَ عَلَى اللهِ وَكَذَّبَ بِالصِّدْقِ اِذْ جَآءَهٗ
যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে এবং তাঁর নিকট হতে আগত সত্যকে অস্বীকার করে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? (সূরা যুমার- ৩২)
যারা কুরআনের উপদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় :
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ ذُكِّرَ بِاٰيَاتِ رَبِّهٖ فَاَعْرَضَ عَنْهَا وَنَسِيَ مَا قَدَّمَتْ يَدَاهُ
যদি কোন ব্যক্তিকে তার প্রতিপালকের নিদর্শনাবলি স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়, অতঃপর সে যদি তা হতে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তার কৃতকর্মসমূহ ভুলে যায়, তবে তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? (সূরা কাহফ- ৫৭)
যারা মিথ্যা নবুওয়াত দাবী করে :
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرٰى عَلَى اللهِ كَذِبًا اَوْ قَالَ اُوْحِيَ اِلَيَّ وَلَمْ يُوْحَ اِلَيْهِ شَيْءٌ وَّمَنْ قَالَ سَاُنْزِلُ مِثْلَ مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ
তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে, যে আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে কিংবা বলে, আমার নিকট ওহী নাযিল হয়, যদিও তার প্রতি ওহী নাযিল হয় না; আর যে বলে, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন অচিরেই আমিও তার অনুরূপ নাযিল করব? (সূরা আন‘আম- ৯৩)
যারা মানুষকে পথভ্রষ্ট করে :
فَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرٰى عَلَى اللهِ كَذِبًا لِّيُضِلَّ النَّاسَ بِغَيْرِ عِلْمٍؕ اِنَّ اللهَ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
যে ব্যক্তি অজ্ঞতাবশত মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে আছে? নিশ্চয় আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (সূরা আন‘আম- ১৪৪)
যারা সাক্ষ্য গোপন করে :
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ كَتَمَ شَهَادَةً عِنْدَهٗ مِنَ اللهِؕ وَمَا اللهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ
যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট হতে প্রাপ্ত সাক্ষ্য গোপন করছে, তার চেয়ে বড় অত্যাচারী আর কে আছে? আর তোমরা যা করছ আল্লাহ তা হতে অমনোযোগী নন। (সূরা বাক্বারা- ১৪০)
যারা মসজিদে প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে :
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ مَّنَعَ مَسَاجِدَ اللهِ اَنْ يُّذْكَرَ فِيْهَا اسْمُهٗ وَسَعٰى فِيْ خَرَابِهَا
তার চেয়ে বড় যালিম আর কে আছে, যে আল্লাহর মসজিদসমূহের মধ্যে তাঁর নাম উচ্চারণ করতে নিষেধ করে এবং তা ধ্বংস করার চেষ্টা করে। (সূরা বাক্বারা- ১১৪)
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرٰى عَلَى اللهِ كَذِبًا اَوْ كَذَّبَ بِاٰيَاتِهٖۤ اِنَّهٗ لَا يُفْلِحُ الظَّالِمُوْنَ
যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে অথবা তাঁর নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? নিশ্চয় যালিমরা সফলকাম হতে পারবে না। (সূরা আন‘আম- ২১)
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرٰى عَلَى اللهِ الْكَذِبَ وَهُوَ يُدْعٰۤى اِلَى الْاِسْلَامِؕ وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? অথচ তাকে ইসলামের দিকে আহবান করা হয়। আর আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (সূরা সাফ- ৭)
যারা আল্লাহর নিদর্শনাবলিকে অস্বীকার করে :
فَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرٰى عَلَى اللهِ كَذِبًا اَوْ كَذَّبَ بِاٰيَاتِهٖ
যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে কিংবা তাঁর নিদর্শনাবলিকে অস্বীকার করে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? (সূরা আ‘রাফ- ৩৭)
فَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ كَذَّبَ بِاٰيَاتِ اللهِ وَصَدَفَ عَنْهَا
অতঃপর যে ব্যক্তি আল্লাহর নিদর্শনাবলিকে প্রত্যাখ্যান করবে এবং তা হতে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? (সূরা আন‘আম- ১৫৭)
যারা সত্যকে মিথ্যা বলে :
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرٰى عَلَى اللهِ كَذِبًا اَوْ كَذَّبَ بِالْحَقِّ لَمَّا جَآءَهٗ
যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে অথবা তাঁর নিকট হতে আগত সত্যকে অস্বীকার করে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? (সূরা আনকাবূত- ৬৮)
فَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ كَذَبَ عَلَى اللهِ وَكَذَّبَ بِالصِّدْقِ اِذْ جَآءَهٗ
যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে এবং তাঁর নিকট হতে আগত সত্যকে অস্বীকার করে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? (সূরা যুমার- ৩২)
যারা কুরআনের উপদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় :
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ ذُكِّرَ بِاٰيَاتِ رَبِّهٖ فَاَعْرَضَ عَنْهَا وَنَسِيَ مَا قَدَّمَتْ يَدَاهُ
যদি কোন ব্যক্তিকে তার প্রতিপালকের নিদর্শনাবলি স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়, অতঃপর সে যদি তা হতে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তার কৃতকর্মসমূহ ভুলে যায়, তবে তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? (সূরা কাহফ- ৫৭)
যারা মিথ্যা নবুওয়াত দাবী করে :
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرٰى عَلَى اللهِ كَذِبًا اَوْ قَالَ اُوْحِيَ اِلَيَّ وَلَمْ يُوْحَ اِلَيْهِ شَيْءٌ وَّمَنْ قَالَ سَاُنْزِلُ مِثْلَ مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ
তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে, যে আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে কিংবা বলে, আমার নিকট ওহী নাযিল হয়, যদিও তার প্রতি ওহী নাযিল হয় না; আর যে বলে, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন অচিরেই আমিও তার অনুরূপ নাযিল করব? (সূরা আন‘আম- ৯৩)
যারা মানুষকে পথভ্রষ্ট করে :
فَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرٰى عَلَى اللهِ كَذِبًا لِّيُضِلَّ النَّاسَ بِغَيْرِ عِلْمٍؕ اِنَّ اللهَ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
যে ব্যক্তি অজ্ঞতাবশত মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে আছে? নিশ্চয় আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (সূরা আন‘আম- ১৪৪)
যারা সাক্ষ্য গোপন করে :
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ كَتَمَ شَهَادَةً عِنْدَهٗ مِنَ اللهِؕ وَمَا اللهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ
যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট হতে প্রাপ্ত সাক্ষ্য গোপন করছে, তার চেয়ে বড় অত্যাচারী আর কে আছে? আর তোমরা যা করছ আল্লাহ তা হতে অমনোযোগী নন। (সূরা বাক্বারা- ১৪০)
যারা মসজিদে প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে :
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ مَّنَعَ مَسَاجِدَ اللهِ اَنْ يُّذْكَرَ فِيْهَا اسْمُهٗ وَسَعٰى فِيْ خَرَابِهَا
তার চেয়ে বড় যালিম আর কে আছে, যে আল্লাহর মসজিদসমূহের মধ্যে তাঁর নাম উচ্চারণ করতে নিষেধ করে এবং তা ধ্বংস করার চেষ্টা করে। (সূরা বাক্বারা- ১১৪)
আল্লাহ যালিমদেরকে ভালোবাসেন না :
وَاللهُ لَا يُحِبُّ الظَّالِمِيْنَ
আল্লাহ যালিমদেরকে ভালোবাসেন না। (সূরা আলে ইমরান- ৫৭)
আল্লাহ যালিমদেরকে হেদায়াত করেন না :
وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথ প্রদর্শন করেন না। (সূরা বাক্বারা- ২৫৮)
যালিমরা সফল হতে পারে না :
اِنَّهٗ لَا يُفْلِحُ الظَّالِمُوْنَ
যালিমরা কখনো সফলকাম হতে পারবে না। (সূরা আন‘আম- ১৩৫)
যালিমদের উপর দুনিয়াতেই আযাব নেমে আসে :
وَكَذٰلِكَ اَخْذُ رَبِّكَ اِذَاۤ اَخَذَ الْقُرٰى وَهِيَ ظَالِمَةٌؕ اِنَّ اَخْذَهٗۤ اَلِيْمٌ شَدِيْدٌ
(হে নবী) তোমার প্রতিপালক যখন কোন জনপদকে তাদের অধিবাসীদের যুলুমের কারণে পাকড়াও করেন, তখন তাঁর পাকড়াও এমনিই (কঠিন) হয়; নিশ্চয় তাঁর পাকড়াও অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও খুবই কঠোর। (সূরা হুদ- ১০২)
মৃত্যুর সময় যালিমদের কষ্ট হবে :
وَلَوْ تَرٰۤى اِذِ الظَّالِمُوْنَ فِيْ غَمَرَاتِ الْمَوْتِ وَالْمَلَآئِكَةُ بَاسِطُوْاۤ اَيْدِيْهِمْۚ اَخْرِجُوْاۤ اَنْفُسَكُمُؕ اَلْيَوْمَ تُجْزَوْنَ عَذَابَ الْهُوْنِ بِمَا كُنْتُمْ تَقُوْلُوْنَ عَلَى اللهِ غَيْرَ الْحَقِّ وَكُنْتُمْ عَنْ اٰيَاتِهٖ تَسْتَكْبِرُوْنَ
যদি তুমি দেখতে পেতে যে, যখন যালিমরা মৃত্যুযন্ত্রণা ভোগ করতে থাকবে এবং ফেরেশতারা হাত বাড়িয়ে বলবে, তোমরা নিজেদের প্রাণ বের করো। তোমরা আল্লাহ সম্বন্ধে অন্যায় কথাবার্তা বলতে ও তাঁর নিদর্শন সম্বন্ধে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করতে, সেজন্য আজ তোমাদের অপমানজনক শাস্তি দেয়া হবে। (সূরা আন‘আম- ৯৩)
তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি :
فَوَيْلٌ لِّلَّذِيْنَ ظَلَمُوْا مِنْ عَذَابِ يَوْمٍ اَلِيْمٍ
যালিমদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক দিনের শাস্তির দুর্ভোগ। (সূরা যুখরুফ- ৬৫)
তাওবা করলে আল্লাহ ক্ষমা করতে পারেন :
وَمَنْ يَّعْمَلْ سُوْٓءًا اَوْ يَظْلِمْ نَفْسَهٗ ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ اللهَ يَجِدِ اللهَ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا
আর যদি কেউ কোন মন্দকাজ করে অথবা নিজের প্রতি যুলুম করে; অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করে, তবে সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু হিসেবেই পাবে। (সূরা নিসা- ১১০)
তাওবা না করলে ক্ষমা করা হবে না :
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَظَلَمُوْا لَمْ يَكُنِ اللهُ لِيَغْفِرَ لَهُمْ وَلَا لِيَهْدِيَهُمْ طَرِيْقًا
নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে ও সীমালঙ্ঘন করেছে আল্লাহ তাদেরকে কখনো ক্ষমা করবেন না এবং তাদেরকে কোন পথও দেখাবেন না। (সূরা নিসা- ১৬৮)
وَاللهُ لَا يُحِبُّ الظَّالِمِيْنَ
আল্লাহ যালিমদেরকে ভালোবাসেন না। (সূরা আলে ইমরান- ৫৭)
আল্লাহ যালিমদেরকে হেদায়াত করেন না :
وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথ প্রদর্শন করেন না। (সূরা বাক্বারা- ২৫৮)
যালিমরা সফল হতে পারে না :
اِنَّهٗ لَا يُفْلِحُ الظَّالِمُوْنَ
যালিমরা কখনো সফলকাম হতে পারবে না। (সূরা আন‘আম- ১৩৫)
যালিমদের উপর দুনিয়াতেই আযাব নেমে আসে :
وَكَذٰلِكَ اَخْذُ رَبِّكَ اِذَاۤ اَخَذَ الْقُرٰى وَهِيَ ظَالِمَةٌؕ اِنَّ اَخْذَهٗۤ اَلِيْمٌ شَدِيْدٌ
(হে নবী) তোমার প্রতিপালক যখন কোন জনপদকে তাদের অধিবাসীদের যুলুমের কারণে পাকড়াও করেন, তখন তাঁর পাকড়াও এমনিই (কঠিন) হয়; নিশ্চয় তাঁর পাকড়াও অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও খুবই কঠোর। (সূরা হুদ- ১০২)
মৃত্যুর সময় যালিমদের কষ্ট হবে :
وَلَوْ تَرٰۤى اِذِ الظَّالِمُوْنَ فِيْ غَمَرَاتِ الْمَوْتِ وَالْمَلَآئِكَةُ بَاسِطُوْاۤ اَيْدِيْهِمْۚ اَخْرِجُوْاۤ اَنْفُسَكُمُؕ اَلْيَوْمَ تُجْزَوْنَ عَذَابَ الْهُوْنِ بِمَا كُنْتُمْ تَقُوْلُوْنَ عَلَى اللهِ غَيْرَ الْحَقِّ وَكُنْتُمْ عَنْ اٰيَاتِهٖ تَسْتَكْبِرُوْنَ
যদি তুমি দেখতে পেতে যে, যখন যালিমরা মৃত্যুযন্ত্রণা ভোগ করতে থাকবে এবং ফেরেশতারা হাত বাড়িয়ে বলবে, তোমরা নিজেদের প্রাণ বের করো। তোমরা আল্লাহ সম্বন্ধে অন্যায় কথাবার্তা বলতে ও তাঁর নিদর্শন সম্বন্ধে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করতে, সেজন্য আজ তোমাদের অপমানজনক শাস্তি দেয়া হবে। (সূরা আন‘আম- ৯৩)
তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি :
فَوَيْلٌ لِّلَّذِيْنَ ظَلَمُوْا مِنْ عَذَابِ يَوْمٍ اَلِيْمٍ
যালিমদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক দিনের শাস্তির দুর্ভোগ। (সূরা যুখরুফ- ৬৫)
তাওবা করলে আল্লাহ ক্ষমা করতে পারেন :
وَمَنْ يَّعْمَلْ سُوْٓءًا اَوْ يَظْلِمْ نَفْسَهٗ ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ اللهَ يَجِدِ اللهَ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا
আর যদি কেউ কোন মন্দকাজ করে অথবা নিজের প্রতি যুলুম করে; অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করে, তবে সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু হিসেবেই পাবে। (সূরা নিসা- ১১০)
তাওবা না করলে ক্ষমা করা হবে না :
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَظَلَمُوْا لَمْ يَكُنِ اللهُ لِيَغْفِرَ لَهُمْ وَلَا لِيَهْدِيَهُمْ طَرِيْقًا
নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে ও সীমালঙ্ঘন করেছে আল্লাহ তাদেরকে কখনো ক্ষমা করবেন না এবং তাদেরকে কোন পথও দেখাবেন না। (সূরা নিসা- ১৬৮)
যালিমদের অনুসরণ করতে নেই :
وَلَا تَرْكَنُوْاۤ اِلَى الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا فَتَمَسَّكُمُ النَّارُ وَمَا لَكُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ مِنْ اَوْلِيَآءَ ثُمَّ لَا تُنْصَرُوْنَ
যারা সীমালঙ্ঘন করেছে তোমরা তাদের প্রতি ঝুঁকে পড়ো না; নতুবা অগ্নি তোমাদেরকে স্পর্শ করবে। এ অবস্থায় আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন অভিভাবক থাকবে না এবং তোমাদেরকে সাহায্যও করা হবে না। (সূরা হুদ- ১১৩)
তাদের মজলিসে বসতে নেই :
وَاِمَّا يُنْسِيَنَّكَ الشَّيْطَانُ فَلَا تَقْعُدْ بَعْدَ الذِّكْرٰى مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِيْنَ
যদি শয়তান তোমাকে ধোঁকায় ফেলে দেয়, তবে স্মরণ হওয়ার পর পরই যালিম সম্প্রদায়ের সাথে আর বসবে না। (সূরা আন‘আম- ৬৮)
যালিমের কবল থেকে বাঁচার জন্য ফেরাউনের স্ত্রী দু‘আ করেছিলেন :
رَبِّ ابْنِ لِيْ عِنْدَكَ بَيْتًا فِى الْجَنَّةِ وَنَجِّنِيْ مِنْ فِرْعَوْنَ وَعَمَلِهٖ وَنَجِّنِيْ مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِيْنَ
হে আমার প্রতিপালক! আপনার নিকট জান্নাতে আমার জন্য একটি গৃহ নির্মাণ করুন এবং আমাকে ফিরাউন ও তার দুষ্কৃতি হতে উদ্ধার করুন; আর আমাকে যালিম সম্প্রদায় হতে মুক্তি দান করুন। (সূরা তাহরীম- ১১)
বেশি নির্যাতিত হলে হিজরত করতে হবে :
وَالَّذِيْنَ هَاجَرُوْا فِى اللهِ مِنْ ۢبَعْدِ مَا ظُلِمُوْا لَنُبَوِّئَنَّهُمْ فِى الدُّنْيَا حَسَنَةًؕ وَلَاَجْرُ الْاٰخِرَةِ اَكْبَرُ لَوْ كَانُوْا يَعْلَمُوْنَ
যারা অত্যাচারিত হওয়ার পর আল্লাহর পথে হিজরত করেছে, আমি অবশ্যই তাদেরকে দুনিয়ায় উত্তম আবাস দান করব, তবে আখিরাতের পুরস্কারই সর্বশ্রেষ্ঠ। হায়, যদি তারা তা জানত! (সূরা নাহল- ৪১)
যালিমরা বাড়াবাড়ি করলে প্রতিশোধ নেয়া যাবে :
وَالَّذِيْنَ اِذَاۤ اَصَابَهُمُ الْبَغْيُ هُمْ يَنْتَصِرُوْنَ
যারা অত্যাচারিত হলে প্রতিশোধ গ্রহণ করে। (সূরা শূরা- ৩৯)
وَجَزَآءُ سَيِّئَةٍ سَيِّئَةٌ ۢمِّثْلُهَاۚ فَمَنْ عَفَا وَاَصْلَحَ فَاَجْرُهٗ عَلَى اللهِؕ اِنَّهٗ لَا يُحِبُّ الظَّالِمِيْنَ
মন্দের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ, তবে যে ক্ষমা করে দেয় ও সংশোধন করে নেয়, তার বিনিময় আল্লাহর নিকট রয়েছে। নিশ্চয় আল্লাহ যালিমদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা শূরা- ৪০)
وَاِنْ عَاقَبْتُمْ فَعَاقِبُوْا بِمِثْلِ مَا عُوْقِبْتُمْ بِهٖ
যদি তোমরা শাস্তিই দাও, তবে ঠিক ততটুকু শাস্তি দেবে যতটুকু অন্যায় তোমাদের প্রতি করা হয়েছে।
(সূরা নাহল- ১২৬)
وَلَا تَرْكَنُوْاۤ اِلَى الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا فَتَمَسَّكُمُ النَّارُ وَمَا لَكُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ مِنْ اَوْلِيَآءَ ثُمَّ لَا تُنْصَرُوْنَ
যারা সীমালঙ্ঘন করেছে তোমরা তাদের প্রতি ঝুঁকে পড়ো না; নতুবা অগ্নি তোমাদেরকে স্পর্শ করবে। এ অবস্থায় আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন অভিভাবক থাকবে না এবং তোমাদেরকে সাহায্যও করা হবে না। (সূরা হুদ- ১১৩)
তাদের মজলিসে বসতে নেই :
وَاِمَّا يُنْسِيَنَّكَ الشَّيْطَانُ فَلَا تَقْعُدْ بَعْدَ الذِّكْرٰى مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِيْنَ
যদি শয়তান তোমাকে ধোঁকায় ফেলে দেয়, তবে স্মরণ হওয়ার পর পরই যালিম সম্প্রদায়ের সাথে আর বসবে না। (সূরা আন‘আম- ৬৮)
যালিমের কবল থেকে বাঁচার জন্য ফেরাউনের স্ত্রী দু‘আ করেছিলেন :
رَبِّ ابْنِ لِيْ عِنْدَكَ بَيْتًا فِى الْجَنَّةِ وَنَجِّنِيْ مِنْ فِرْعَوْنَ وَعَمَلِهٖ وَنَجِّنِيْ مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِيْنَ
হে আমার প্রতিপালক! আপনার নিকট জান্নাতে আমার জন্য একটি গৃহ নির্মাণ করুন এবং আমাকে ফিরাউন ও তার দুষ্কৃতি হতে উদ্ধার করুন; আর আমাকে যালিম সম্প্রদায় হতে মুক্তি দান করুন। (সূরা তাহরীম- ১১)
বেশি নির্যাতিত হলে হিজরত করতে হবে :
وَالَّذِيْنَ هَاجَرُوْا فِى اللهِ مِنْ ۢبَعْدِ مَا ظُلِمُوْا لَنُبَوِّئَنَّهُمْ فِى الدُّنْيَا حَسَنَةًؕ وَلَاَجْرُ الْاٰخِرَةِ اَكْبَرُ لَوْ كَانُوْا يَعْلَمُوْنَ
যারা অত্যাচারিত হওয়ার পর আল্লাহর পথে হিজরত করেছে, আমি অবশ্যই তাদেরকে দুনিয়ায় উত্তম আবাস দান করব, তবে আখিরাতের পুরস্কারই সর্বশ্রেষ্ঠ। হায়, যদি তারা তা জানত! (সূরা নাহল- ৪১)
যালিমরা বাড়াবাড়ি করলে প্রতিশোধ নেয়া যাবে :
وَالَّذِيْنَ اِذَاۤ اَصَابَهُمُ الْبَغْيُ هُمْ يَنْتَصِرُوْنَ
যারা অত্যাচারিত হলে প্রতিশোধ গ্রহণ করে। (সূরা শূরা- ৩৯)
وَجَزَآءُ سَيِّئَةٍ سَيِّئَةٌ ۢمِّثْلُهَاۚ فَمَنْ عَفَا وَاَصْلَحَ فَاَجْرُهٗ عَلَى اللهِؕ اِنَّهٗ لَا يُحِبُّ الظَّالِمِيْنَ
মন্দের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ, তবে যে ক্ষমা করে দেয় ও সংশোধন করে নেয়, তার বিনিময় আল্লাহর নিকট রয়েছে। নিশ্চয় আল্লাহ যালিমদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা শূরা- ৪০)
وَاِنْ عَاقَبْتُمْ فَعَاقِبُوْا بِمِثْلِ مَا عُوْقِبْتُمْ بِهٖ
যদি তোমরা শাস্তিই দাও, তবে ঠিক ততটুকু শাস্তি দেবে যতটুকু অন্যায় তোমাদের প্রতি করা হয়েছে।
(সূরা নাহল- ১২৬)
মানুষ শয়তানের ধোঁকায় পড়েই মুরতাদ হয় :
اِنَّ الَّذِيْنَ ارْتَدُّوْا عَلٰۤى اَدْبَارِهِمْ مِّنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْهُدَى الشَّيْطَانُ سَوَّلَ لَهُمْؕ وَاَمْلٰى لَهُمْ
নিশ্চয় যারা তাদের কাছে হেদায়াত স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও তা থেকে ফিরে গেছে, শয়তান তাদেরকে সেদিকেই লোভ দেখিয়েছে এবং মিথ্যা আশার জাল বিস্তার করে দিয়েছে। (সূরা মুহাম্মাদ- ২৫)
দ্বীন ত্যাগ করলে সৎপথ হারাবে :
وَمَنْ يَّتَبَدَّلِ الْكُفْرَ بِالْاِيْمَانِ فَقَدْ ضَلَّ سَوَآءَ السَّبِيْلِ
যে ব্যক্তি ঈমানের পরিবর্তে কুফরী অবলম্বন করে নিশ্চয় সে সঠিক পথ হতে দূরে সরে পড়ে। (সূরা বাক্বারা- ১০৮)
বিজাতীর অনুসরণ করলে তারা দ্বীন থেকে ফিরিয়ে দেবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنْ تُطِيْعُوا الَّذِيْنَ كَفَرُوْا يَرُدُّوْكُمْ عَلٰۤى اَعْقَابِكُمْ فَتَنْقَلِبُوْا خَاسِرِيْنَ
হে মুমিনগণ! যদি তোমরা কাফিরদের আনুগত্য কর, তবে তারা তোমাদেরকে পশ্চাদপদে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে এবং তাতে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা আলে ইমরান- ১৪৯)
ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানরা মুরতাদ বানাতে চায় :
وَدَّ كَثِيْرٌ مِّنْ اَهْلِ الْكِتَابِ لَوْ يَرُدُّوْنَكُمْ مِّنْ ۢبَعْدِ اِيْمَانِكُمْ كُفَّارًاۚ حَسَدًا مِّنْ عِنْدِ اَنْفُسِهِمْ مِّنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْحَقُّ
আহলে কিতাবের অনেকেই তাদের অন্তর্নিহিত বিদ্বেষের কারণে এ আশা পোষণ করে যে, যদি তারা তোমাদেরকে তোমাদের ঈমান আনয়নের পর কুফরীর দিকে ফিরিয়ে আনতে পারত! (এমনকি) সত্য তাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও (তারা এ পথ হতে বিরত হবে না)। (সূরা বাক্বারা- ১০৯)
মুরতাদ হলে সকল আমল বাতিল হয়ে যাবে :
وَمَنْ يَّرْتَدِدْ مِنْكُمْ عَنْ دِيْنِهٖ فَيَمُتْ وَهُوَ كَافِرٌ فَاُولٰٓئِكَ حَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْ فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِۚ وَاُولٰٓئِكَ اَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তার দ্বীনকে ত্যাগ করবে, অতঃপর কাফির অবস্থায় মারা যাবে, দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের সকল আমল বরবাদ হয়ে যাবে। আর তারা হবে জাহান্নামের অধিবাসী; সেখানে তারা চিরকাল (বসবাস) করবে। (সূরা বাক্বারা- ২১৭)
মুরতাদের তাওবা কবুল হয় না :
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بَعْدَ اِيْمَانِهِمْ ثُمَّ ازْدَادُوْا كُفْرًا لَّنْ تُقْبَلَ تَوْبَتُهُمْۚ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الضَّآ لُّوْنَ
নিশ্চয় যারা ঈমান আনার পর কুফরী করেছে, তারপর সেই কুফরীকে আরো বৃদ্ধি করেছে, তাদের তাওবা কখনো কবুল করা হবে না। আর তারাই হবে পথভ্রষ্ট। (সূরা আলে ইমরান- ৯০)
আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করবেন না :
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا ثُمَّ كَفَرُوْا ثُمَّ اٰمَنُوْا ثُمَّ كَفَرُوْا ثُمَّ ازْدَادُوْا كُفْرًا لَّمْ يَكُنِ اللهُ لِيَغْفِرَ لَهُمْ وَلَا لِيَهْدِيَهُمْ سَبِيْلًا
নিশ্চয় যারা ঈমান আনে, অতঃপর কুফরী করে, আবার ঈমান আনে, আবার কুফরী করে, অতঃপর তাদের কুফরী প্রবৃত্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে, আল্লাহ তাদেরকে কিছুতেই ক্ষমা করবেন না এবং তাদেরকে কোন পথও দেখাবেন না। (সূরা নিসা- ১৩৭)
তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম :
وَمَن يُّشَاقِقِ الرَّسُوْلَ مِنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدٰى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيْلِ الْمُؤْمِنِيْنَ نُوَلِّهٖ مَا تَوَلّٰى وَنُصْلِهٖ جَهَنَّمَؕ وَسَآءَتْ مَصِيْرًا
যে ব্যক্তি সত্য প্রকাশিত হওয়ার পরও রাসূলের বিরোধিতা করে এবং মুমিনদের পথ ব্যতীত অন্য পথ অনুসরণ করে, তাকে আমি সে পথেই ফিরাব যে পথে সে ফিরে যায়। অতঃপর তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাব; আর এ প্রত্যাবর্তনস্থল কতই না মন্দ! (সূরা নিসা- ১১৫)
কেউ দ্বীন থেকে ফিরে গেলে আল্লাহর কিছু আসে যায় না :
وَمَنْ يَّنْقَلِبْ عَلٰى عَقِبَيْهِ فَلَنْ يَّضُرَّ اللهَ شَيْئًاؕ وَسَيَجْزِى اللهُ الشَّاكِرِيْنَ
যে ব্যক্তি পশ্চাদপদে ফিরে যায়, তাতে সে আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহ অচিরেই কৃতজ্ঞ বান্দাদেরকে প্রতিফল দান করবেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৪৪)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَن يَّرْتَدَّ مِنْكُمْ عَنْ دِيْنِهٖ فَسَوْفَ يَأْتِى اللهُ بِقَوْمٍ يُّحِبُّهُمْ وَيُحِبُّوْنَهٗۤ اَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ اَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِيْنَ يُجَاهِدُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَلَا يَخَافُوْنَ لَوْمَةَ لَآئِمٍؕ ذٰلِكَ فَضْلُ اللهِ يُؤْتِيْهِ مَنْ يَّشَآءُ وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের মধ্যে যদি কেউ দ্বীন থেকে ফিরে যেতে চায়, তবে অচিরেই আল্লাহ এমন একটি সম্প্রদায়ের উত্থান ঘটাবেন, যাদেরকে তিনি ভালোবাসবেন এবং তারাও তাঁকে ভালোবাসবে। তারা মুমিনদের প্রতি কোমল এবং কাফিরদের প্রতি কঠোরতা অবলম্বন করবে। তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে এবং কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারকে ভয় পাবে না। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, তিনি যাকে ইচ্ছা তা দান করে থাকেন; আর আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও সর্বজ্ঞ। (সূরা মায়েদা- ৫৪)
اِنَّ الَّذِيْنَ ارْتَدُّوْا عَلٰۤى اَدْبَارِهِمْ مِّنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْهُدَى الشَّيْطَانُ سَوَّلَ لَهُمْؕ وَاَمْلٰى لَهُمْ
নিশ্চয় যারা তাদের কাছে হেদায়াত স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও তা থেকে ফিরে গেছে, শয়তান তাদেরকে সেদিকেই লোভ দেখিয়েছে এবং মিথ্যা আশার জাল বিস্তার করে দিয়েছে। (সূরা মুহাম্মাদ- ২৫)
দ্বীন ত্যাগ করলে সৎপথ হারাবে :
وَمَنْ يَّتَبَدَّلِ الْكُفْرَ بِالْاِيْمَانِ فَقَدْ ضَلَّ سَوَآءَ السَّبِيْلِ
যে ব্যক্তি ঈমানের পরিবর্তে কুফরী অবলম্বন করে নিশ্চয় সে সঠিক পথ হতে দূরে সরে পড়ে। (সূরা বাক্বারা- ১০৮)
বিজাতীর অনুসরণ করলে তারা দ্বীন থেকে ফিরিয়ে দেবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنْ تُطِيْعُوا الَّذِيْنَ كَفَرُوْا يَرُدُّوْكُمْ عَلٰۤى اَعْقَابِكُمْ فَتَنْقَلِبُوْا خَاسِرِيْنَ
হে মুমিনগণ! যদি তোমরা কাফিরদের আনুগত্য কর, তবে তারা তোমাদেরকে পশ্চাদপদে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে এবং তাতে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা আলে ইমরান- ১৪৯)
ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানরা মুরতাদ বানাতে চায় :
وَدَّ كَثِيْرٌ مِّنْ اَهْلِ الْكِتَابِ لَوْ يَرُدُّوْنَكُمْ مِّنْ ۢبَعْدِ اِيْمَانِكُمْ كُفَّارًاۚ حَسَدًا مِّنْ عِنْدِ اَنْفُسِهِمْ مِّنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْحَقُّ
আহলে কিতাবের অনেকেই তাদের অন্তর্নিহিত বিদ্বেষের কারণে এ আশা পোষণ করে যে, যদি তারা তোমাদেরকে তোমাদের ঈমান আনয়নের পর কুফরীর দিকে ফিরিয়ে আনতে পারত! (এমনকি) সত্য তাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও (তারা এ পথ হতে বিরত হবে না)। (সূরা বাক্বারা- ১০৯)
মুরতাদ হলে সকল আমল বাতিল হয়ে যাবে :
وَمَنْ يَّرْتَدِدْ مِنْكُمْ عَنْ دِيْنِهٖ فَيَمُتْ وَهُوَ كَافِرٌ فَاُولٰٓئِكَ حَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْ فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِۚ وَاُولٰٓئِكَ اَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তার দ্বীনকে ত্যাগ করবে, অতঃপর কাফির অবস্থায় মারা যাবে, দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের সকল আমল বরবাদ হয়ে যাবে। আর তারা হবে জাহান্নামের অধিবাসী; সেখানে তারা চিরকাল (বসবাস) করবে। (সূরা বাক্বারা- ২১৭)
মুরতাদের তাওবা কবুল হয় না :
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بَعْدَ اِيْمَانِهِمْ ثُمَّ ازْدَادُوْا كُفْرًا لَّنْ تُقْبَلَ تَوْبَتُهُمْۚ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الضَّآ لُّوْنَ
নিশ্চয় যারা ঈমান আনার পর কুফরী করেছে, তারপর সেই কুফরীকে আরো বৃদ্ধি করেছে, তাদের তাওবা কখনো কবুল করা হবে না। আর তারাই হবে পথভ্রষ্ট। (সূরা আলে ইমরান- ৯০)
আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করবেন না :
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا ثُمَّ كَفَرُوْا ثُمَّ اٰمَنُوْا ثُمَّ كَفَرُوْا ثُمَّ ازْدَادُوْا كُفْرًا لَّمْ يَكُنِ اللهُ لِيَغْفِرَ لَهُمْ وَلَا لِيَهْدِيَهُمْ سَبِيْلًا
নিশ্চয় যারা ঈমান আনে, অতঃপর কুফরী করে, আবার ঈমান আনে, আবার কুফরী করে, অতঃপর তাদের কুফরী প্রবৃত্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে, আল্লাহ তাদেরকে কিছুতেই ক্ষমা করবেন না এবং তাদেরকে কোন পথও দেখাবেন না। (সূরা নিসা- ১৩৭)
তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম :
وَمَن يُّشَاقِقِ الرَّسُوْلَ مِنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدٰى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيْلِ الْمُؤْمِنِيْنَ نُوَلِّهٖ مَا تَوَلّٰى وَنُصْلِهٖ جَهَنَّمَؕ وَسَآءَتْ مَصِيْرًا
যে ব্যক্তি সত্য প্রকাশিত হওয়ার পরও রাসূলের বিরোধিতা করে এবং মুমিনদের পথ ব্যতীত অন্য পথ অনুসরণ করে, তাকে আমি সে পথেই ফিরাব যে পথে সে ফিরে যায়। অতঃপর তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাব; আর এ প্রত্যাবর্তনস্থল কতই না মন্দ! (সূরা নিসা- ১১৫)
কেউ দ্বীন থেকে ফিরে গেলে আল্লাহর কিছু আসে যায় না :
وَمَنْ يَّنْقَلِبْ عَلٰى عَقِبَيْهِ فَلَنْ يَّضُرَّ اللهَ شَيْئًاؕ وَسَيَجْزِى اللهُ الشَّاكِرِيْنَ
যে ব্যক্তি পশ্চাদপদে ফিরে যায়, তাতে সে আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহ অচিরেই কৃতজ্ঞ বান্দাদেরকে প্রতিফল দান করবেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৪৪)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَن يَّرْتَدَّ مِنْكُمْ عَنْ دِيْنِهٖ فَسَوْفَ يَأْتِى اللهُ بِقَوْمٍ يُّحِبُّهُمْ وَيُحِبُّوْنَهٗۤ اَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ اَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِيْنَ يُجَاهِدُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَلَا يَخَافُوْنَ لَوْمَةَ لَآئِمٍؕ ذٰلِكَ فَضْلُ اللهِ يُؤْتِيْهِ مَنْ يَّشَآءُ وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের মধ্যে যদি কেউ দ্বীন থেকে ফিরে যেতে চায়, তবে অচিরেই আল্লাহ এমন একটি সম্প্রদায়ের উত্থান ঘটাবেন, যাদেরকে তিনি ভালোবাসবেন এবং তারাও তাঁকে ভালোবাসবে। তারা মুমিনদের প্রতি কোমল এবং কাফিরদের প্রতি কঠোরতা অবলম্বন করবে। তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে এবং কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারকে ভয় পাবে না। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, তিনি যাকে ইচ্ছা তা দান করে থাকেন; আর আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও সর্বজ্ঞ। (সূরা মায়েদা- ৫৪)
ওয়াদা ভঙ্গ করা, সম্পর্ক ছিন্ন করা ও ফাসাদ সৃষ্টি করা :
وَمَا يُضِلُّ بِهٖۤ اِلَّا الْفَاسِقِيْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ يَنْقُضُوْنَ عَهْدَ اللهِ مِنْ ۢبَعْدِ مِيْثَاقِهٖ۪ وَيَقْطَعُوْنَ مَاۤ اَمَرَ اللهُ بِهٖۤ اَنْ يُّوْصَلَ وَيُفْسِدُوْنَ فِى الْاَرْضِؕ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ
এর দ্বারা তিনি শুধু ফাসিকদেরকেই বিপথগামী করে থাকেন। যারা আল্লাহর সঙ্গে দৃঢ়ভাবে ওয়াদাবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে এবং ঐসব সম্পর্ক ছিন্ন করে, যা আল্লাহ অক্ষুণ্ণ রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। আর যারা পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরা বাক্বারা- ২৬, ২৭)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ ও বান্দার মধ্যকার সম্পর্ক এবং মানুষ ও মানুষের মধ্যকার সম্পর্ক ছিন্ন করার অনিবার্য পরিণতি হচ্ছে বিপর্যয়। আর যে ব্যক্তি এ বিপর্যয় সৃষ্টি করে সে-ই হচ্ছে ফাসিক।
দেব-দেবীর নামে বলি দেয়া ও তীর দ্বারা ভাগ্য নির্ণয় করা :
حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةُ وَالدَّمُ وَلَحْمُ الْخِنْزِيْرِ وَمَاۤ اُهِلَّ لِغَيْرِ اللهِ بِهٖ وَالْمُنْخَنِقَةُ وَالْمَوْقُوْذَةُ وَالْمُتَرَدِّيَةُ وَالنَّطِيْحَةُ وَمَاۤ اَكَلَ السَّبُعُ اِلَّا مَا ذَكَّيْتُمْ وَمَا ذُبِحَ عَلَى النُّصُبِ وَاَنْ تَسْتَقْسِمُوْا بِالْاَزْلَامِ ذٰلِكُمْ فِسْقٌ
তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত জন্তু, রক্ত, শূকরের মাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত জন্তু এবং হিংস্র পশু কর্তৃক খাওয়া জন্তু; তবে যা তোমরা যবেহ করতে পেরেছ তা ছাড়া। আর যা মূর্তি অথবা দেব দেবীর নামে বলি দেয়া হয় তা এবং জুয়ার তীর দ্বারা ভাগ্য নির্ণয় করা হয় (তাও হারাম)- (কেননা) এসব পাপকাজ। (সূরা মায়েদা- ৩)
ব্যাখ্যা : نُصُبٌ (নুসুব) বলতে এমনসব স্থান বুঝায়, যেগুলোকে লোকেরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে বলিদান ও নজরানা পেশ করার জন্য নির্দিষ্ট করে নিয়েছে। সেখানে কোন পাথর বা কাঠের মূর্তি থাক বা না থাক তাতে কিছু আসে যায় না। আমাদের ভাষায় এটিই বেদী বা আস্তানা নামে পরিচিত। তবে এসব স্থান কোন না কোন মহাপুরুষ, দেবতা বা মুশরিকী আকীদার সাথে জড়িত থাকে।
আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে পশু যবেহ করা :
وَلَا تَأْكُلُوْا مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللهِ عَلَيْهِ وَاِنَّهٗ لَفِسْقٌ
যাতে আল্লাহর নাম নেয়া হয়নি তোমরা তার কিছুই খেয়ো না; নিশ্চয় তা পাপকাজ। (সূরা আন‘আম- ১২১)
আল্লাহর বিধানকে অস্বীকার করা :
وَلَقَدْ اَنْزَلْنَاۤ اِلَيْكَ اٰيَاتٍ ۢبَيِّنَاتٍ وَّمَا يَكْفُرُ بِهَاۤ اِلَّا الْفَاسِقُوْنَ
নিশ্চয় আমি তোমার প্রতি উজ্জ্বল নিদর্শনসমূহ অবতীর্ণ করেছি, যা দুষ্কার্যকারী ব্যতীত অন্য কেউই অবিশ্বাস করতে পারে না। (সূরা বাক্বারা- ৯৯)
যারা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী ফায়সালা করে না তারা ফাসিক :
وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ
আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন যারা সে অনুযায়ী মীমাংসা করে না তারাই ফাসিক। (সূরা মায়েদা- ৪৭)
মুনাফিকরা ফাসিক :
اِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ
নিশ্চয় মুনাফিকরা ফাসিক। (সূরা তাওবা- ৬৭)
অধিকাংশ মানুষই ফাসিক :
وَاِنَّ كَثِيْرًا مِّنَ النَّاسِ لَفَاسِقُوْنَ
নিশ্চয় মানুষের মধ্যে অনেকেই ফাসিক। (সূরা মায়েদা- ৪৯)
সর্বপ্রথম ইবলিস ফাসিকী করেছিল :
وَاِذْ قُلْنَا لِلْمَلَآئِكَةِ اسْجُدُوْا لِاٰدَمَ فَسَجَدُوْاۤ اِلَّاۤ اِبْلِيْسَؕ كَانَ مِنَ الْجِنِّ فَفَسَقَ عَنْ اَمْرِ رَبِّهٖ
(স্মরণ করো) যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বলেছিলাম, তোমরা সবাই আদমকে সিজদা করো। তখন ইবলিস ব্যতীত তারা সকলেই সিজদা করল; আর সে ছিল জিনদের মধ্যে একজন, সে তার প্রতিপালকের আদেশ অমান্য করল। (সূরা কাহফ- ৫০)
মুমিন আর ফাসিক সমান হতে পারে না :
اَفَمَنْ كَانَ مُؤْمِنًا كَمَنْ كَانَ فَاسِقًاؕ لَا يَسْتَوُوْنَ
যে ব্যক্তি ঈমানদার সে কি ঐ ব্যক্তির সমকক্ষ যে ফাসিক? কখনই তারা সমান হতে পারে না। (সূরা সাজদা- ১৮)
আল্লাহ ফাসিকদের উপর সন্তুষ্ট নন :
فَاِنَّ اللهَ لَا يَرْضٰى عَنِ الْقَوْمِ الْفَاسِقِيْنَ
নিশ্চয় আল্লাহ ফাসিক সম্প্রদায়ের প্রতি সন্তুষ্ট হবেন না। (সূরা তাওবা- ৯৬)
ফাসিকরা হেদায়াত পায় না :
وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الْفَاسِقِيْنَ
আল্লাহ ফাসিক সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (সূরা মায়েদা- ১০৮)
ফাসিকের সংবাদ যাচাই-বাছাই করে গ্রহণ করতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنْ جَآءَكُمْ فَاسِقٌ ۢبِنَبَإٍ فَتَبَيَّنُوْاۤ اَنْ تُصِيْبُوْا قَوْمًا ۢبِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوْا عَلٰى مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِيْنَ
হে ঈমানদারগণ! যদি কোন ফাসিক লোক তোমাদের কাছে কোন খবর নিয়ে আসে তাহলে এর সত্যতা যাচাই করে নিও। এমন যেন না হয় যে, তোমরা (প্রকৃত বিষয়টি) না জেনে কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতি করে বস এবং তোমরা যা করেছ সেজন্য পরে আফসোস করতে থাকবে। (সূরা হুজুরাত- ৬)
ফাসিকের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয় :
وَالَّذِيْنَ يَرْمُوْنَ الْمُحْصَنَاتِ ثُمَّ لَمْ يَأْتُوْا بِاَرْبَعَةِ شُهَدَآءَ فَاجْلِدُوْهُمْ ثَمَانِيْنَ جَلْدَةً وَّلَا تَقْبَلُوْا لَهُمْ شَهَادَةً اَبَدًاۚ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ
যারা সতী-সাধ্বী রমণীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে এবং চারজন সাক্ষী উপস্থিত করতে না পারে, তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত করবে এবং কখনো তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করবে না; (জেনে রেখো) এরা ফাসিকদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা নূর- ৪)
ফাসিকীর কারণেই গজব আসে :
وَاِذَاۤ اَرَدْنَاۤ اَنْ نُّهْلِكَ قَرْيَةً اَمَرْنَا مُتْرَفِيْهَا فَفَسَقُوْا فِيْهَا فَحَقَّ عَلَيْهَا الْقَوْلُ فَدَمَّرْنَاهَا تَدْمِيْرًا
যখন আমি কোন জনপদ ধ্বংস করতে চাই, তখন তার সমৃদ্ধশালী ব্যক্তিদেরকে সৎকর্ম করতে আদেশ করি, কিন্তু তারা তাতে ফাসিকী করে। অতঃপর তার প্রতি (শাস্তির) বিধান অনিবার্য হয়ে যায়, পরিশেষে আমি তা সম্পূর্ণরূপে বিনাশ করে দেই। (সূরা বনী ইসরাঈল- ১৬)
اِنَّا مُنْزِلُوْنَ عَلٰۤى اَهْلِ هٰذِهِ الْقَرْيَةِ رِجْزًا مِّنَ السَّمَآءِ بِمَا كَانُوْا يَفْسُقُوْنَ
আমি এ জনপদের উপর আকাশ হতে শাস্তি নাযিল করব, কারণ তারা ফাসিকী কর্ম সংঘটিত করেছিল। (সূরা আনকাবূত- ৩৪)
হাশরের ময়দানে ফাসিকরা লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি ভোগ করবে :
فَالْيَوْمَ تُجْزَوْنَ عَذَابَ الْهُوْنِ بِمَا كُنْتُمْ تَسْتَكْبِرُوْنَ فِى الْاَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَبِمَا كُنْتُمْ تَفْسُقُوْنَ
তোমরা দুনিয়ায় অন্যায়ভাবে যে অহংকার করে বেড়াচ্ছিলে এবং যে ফাসিকী করেছিলে এর পরিবর্তে আজ তোমাদেরকে অপমানজনক আযাব দেয়া হবে। (সূরা আহকাফ- ২০)
وَالَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَا يَمَسُّهُمُ الْعَذَابُ بِمَا كَانُوْا يَفْسُقُوْنَ
যারা আমার নিদর্শনসমূহকে মিথ্যারোপ করেছে, ফাসিকী কাজকর্ম করার জন্য তাদের উপর শাস্তি আসবেই। (সূরা আন‘আম- ৪৯)
ফাসিকদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম :
وَاَمَّا الَّذِيْنَ فَسَقُوْا فَمَأْوَاهُمُ النَّارُؕ كُلَّمَاۤ اَرَادُوْاۤ اَنْ يَّخْرُجُوْا مِنْهَاۤ اُعِيْدُوْا فِيْهَا وَقِيْلَ لَهُمْ ذُوْقُوْا عَذَابَ النَّارِ الَّذِيْ كُنْتُمْ بِهٖ تُكَذِّبُوْنَ
যারা ফাসিকী কাজকর্ম করেছে তাদের বাসস্থান হবে জাহান্নাম। যখনই তারা সেখান থেকে বের হতে চাইবে, তখনই তাদেরকে সেথায় ফিরিয়ে দেয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে, দোযখের আযাব ভোগ করে নাও; (স্মরণ করো, দুনিয়াতে) তোমরা এ বিষয়টিকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে। (সূরা সাজদা- ২০)
وَمَا يُضِلُّ بِهٖۤ اِلَّا الْفَاسِقِيْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ يَنْقُضُوْنَ عَهْدَ اللهِ مِنْ ۢبَعْدِ مِيْثَاقِهٖ۪ وَيَقْطَعُوْنَ مَاۤ اَمَرَ اللهُ بِهٖۤ اَنْ يُّوْصَلَ وَيُفْسِدُوْنَ فِى الْاَرْضِؕ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ
এর দ্বারা তিনি শুধু ফাসিকদেরকেই বিপথগামী করে থাকেন। যারা আল্লাহর সঙ্গে দৃঢ়ভাবে ওয়াদাবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে এবং ঐসব সম্পর্ক ছিন্ন করে, যা আল্লাহ অক্ষুণ্ণ রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। আর যারা পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরা বাক্বারা- ২৬, ২৭)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ ও বান্দার মধ্যকার সম্পর্ক এবং মানুষ ও মানুষের মধ্যকার সম্পর্ক ছিন্ন করার অনিবার্য পরিণতি হচ্ছে বিপর্যয়। আর যে ব্যক্তি এ বিপর্যয় সৃষ্টি করে সে-ই হচ্ছে ফাসিক।
দেব-দেবীর নামে বলি দেয়া ও তীর দ্বারা ভাগ্য নির্ণয় করা :
حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةُ وَالدَّمُ وَلَحْمُ الْخِنْزِيْرِ وَمَاۤ اُهِلَّ لِغَيْرِ اللهِ بِهٖ وَالْمُنْخَنِقَةُ وَالْمَوْقُوْذَةُ وَالْمُتَرَدِّيَةُ وَالنَّطِيْحَةُ وَمَاۤ اَكَلَ السَّبُعُ اِلَّا مَا ذَكَّيْتُمْ وَمَا ذُبِحَ عَلَى النُّصُبِ وَاَنْ تَسْتَقْسِمُوْا بِالْاَزْلَامِ ذٰلِكُمْ فِسْقٌ
তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত জন্তু, রক্ত, শূকরের মাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত জন্তু এবং হিংস্র পশু কর্তৃক খাওয়া জন্তু; তবে যা তোমরা যবেহ করতে পেরেছ তা ছাড়া। আর যা মূর্তি অথবা দেব দেবীর নামে বলি দেয়া হয় তা এবং জুয়ার তীর দ্বারা ভাগ্য নির্ণয় করা হয় (তাও হারাম)- (কেননা) এসব পাপকাজ। (সূরা মায়েদা- ৩)
ব্যাখ্যা : نُصُبٌ (নুসুব) বলতে এমনসব স্থান বুঝায়, যেগুলোকে লোকেরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে বলিদান ও নজরানা পেশ করার জন্য নির্দিষ্ট করে নিয়েছে। সেখানে কোন পাথর বা কাঠের মূর্তি থাক বা না থাক তাতে কিছু আসে যায় না। আমাদের ভাষায় এটিই বেদী বা আস্তানা নামে পরিচিত। তবে এসব স্থান কোন না কোন মহাপুরুষ, দেবতা বা মুশরিকী আকীদার সাথে জড়িত থাকে।
আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে পশু যবেহ করা :
وَلَا تَأْكُلُوْا مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللهِ عَلَيْهِ وَاِنَّهٗ لَفِسْقٌ
যাতে আল্লাহর নাম নেয়া হয়নি তোমরা তার কিছুই খেয়ো না; নিশ্চয় তা পাপকাজ। (সূরা আন‘আম- ১২১)
আল্লাহর বিধানকে অস্বীকার করা :
وَلَقَدْ اَنْزَلْنَاۤ اِلَيْكَ اٰيَاتٍ ۢبَيِّنَاتٍ وَّمَا يَكْفُرُ بِهَاۤ اِلَّا الْفَاسِقُوْنَ
নিশ্চয় আমি তোমার প্রতি উজ্জ্বল নিদর্শনসমূহ অবতীর্ণ করেছি, যা দুষ্কার্যকারী ব্যতীত অন্য কেউই অবিশ্বাস করতে পারে না। (সূরা বাক্বারা- ৯৯)
যারা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী ফায়সালা করে না তারা ফাসিক :
وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ
আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন যারা সে অনুযায়ী মীমাংসা করে না তারাই ফাসিক। (সূরা মায়েদা- ৪৭)
মুনাফিকরা ফাসিক :
اِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ
নিশ্চয় মুনাফিকরা ফাসিক। (সূরা তাওবা- ৬৭)
অধিকাংশ মানুষই ফাসিক :
وَاِنَّ كَثِيْرًا مِّنَ النَّاسِ لَفَاسِقُوْنَ
নিশ্চয় মানুষের মধ্যে অনেকেই ফাসিক। (সূরা মায়েদা- ৪৯)
সর্বপ্রথম ইবলিস ফাসিকী করেছিল :
وَاِذْ قُلْنَا لِلْمَلَآئِكَةِ اسْجُدُوْا لِاٰدَمَ فَسَجَدُوْاۤ اِلَّاۤ اِبْلِيْسَؕ كَانَ مِنَ الْجِنِّ فَفَسَقَ عَنْ اَمْرِ رَبِّهٖ
(স্মরণ করো) যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বলেছিলাম, তোমরা সবাই আদমকে সিজদা করো। তখন ইবলিস ব্যতীত তারা সকলেই সিজদা করল; আর সে ছিল জিনদের মধ্যে একজন, সে তার প্রতিপালকের আদেশ অমান্য করল। (সূরা কাহফ- ৫০)
মুমিন আর ফাসিক সমান হতে পারে না :
اَفَمَنْ كَانَ مُؤْمِنًا كَمَنْ كَانَ فَاسِقًاؕ لَا يَسْتَوُوْنَ
যে ব্যক্তি ঈমানদার সে কি ঐ ব্যক্তির সমকক্ষ যে ফাসিক? কখনই তারা সমান হতে পারে না। (সূরা সাজদা- ১৮)
আল্লাহ ফাসিকদের উপর সন্তুষ্ট নন :
فَاِنَّ اللهَ لَا يَرْضٰى عَنِ الْقَوْمِ الْفَاسِقِيْنَ
নিশ্চয় আল্লাহ ফাসিক সম্প্রদায়ের প্রতি সন্তুষ্ট হবেন না। (সূরা তাওবা- ৯৬)
ফাসিকরা হেদায়াত পায় না :
وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الْفَاسِقِيْنَ
আল্লাহ ফাসিক সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (সূরা মায়েদা- ১০৮)
ফাসিকের সংবাদ যাচাই-বাছাই করে গ্রহণ করতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنْ جَآءَكُمْ فَاسِقٌ ۢبِنَبَإٍ فَتَبَيَّنُوْاۤ اَنْ تُصِيْبُوْا قَوْمًا ۢبِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوْا عَلٰى مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِيْنَ
হে ঈমানদারগণ! যদি কোন ফাসিক লোক তোমাদের কাছে কোন খবর নিয়ে আসে তাহলে এর সত্যতা যাচাই করে নিও। এমন যেন না হয় যে, তোমরা (প্রকৃত বিষয়টি) না জেনে কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতি করে বস এবং তোমরা যা করেছ সেজন্য পরে আফসোস করতে থাকবে। (সূরা হুজুরাত- ৬)
ফাসিকের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয় :
وَالَّذِيْنَ يَرْمُوْنَ الْمُحْصَنَاتِ ثُمَّ لَمْ يَأْتُوْا بِاَرْبَعَةِ شُهَدَآءَ فَاجْلِدُوْهُمْ ثَمَانِيْنَ جَلْدَةً وَّلَا تَقْبَلُوْا لَهُمْ شَهَادَةً اَبَدًاۚ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ
যারা সতী-সাধ্বী রমণীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে এবং চারজন সাক্ষী উপস্থিত করতে না পারে, তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত করবে এবং কখনো তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করবে না; (জেনে রেখো) এরা ফাসিকদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা নূর- ৪)
ফাসিকীর কারণেই গজব আসে :
وَاِذَاۤ اَرَدْنَاۤ اَنْ نُّهْلِكَ قَرْيَةً اَمَرْنَا مُتْرَفِيْهَا فَفَسَقُوْا فِيْهَا فَحَقَّ عَلَيْهَا الْقَوْلُ فَدَمَّرْنَاهَا تَدْمِيْرًا
যখন আমি কোন জনপদ ধ্বংস করতে চাই, তখন তার সমৃদ্ধশালী ব্যক্তিদেরকে সৎকর্ম করতে আদেশ করি, কিন্তু তারা তাতে ফাসিকী করে। অতঃপর তার প্রতি (শাস্তির) বিধান অনিবার্য হয়ে যায়, পরিশেষে আমি তা সম্পূর্ণরূপে বিনাশ করে দেই। (সূরা বনী ইসরাঈল- ১৬)
اِنَّا مُنْزِلُوْنَ عَلٰۤى اَهْلِ هٰذِهِ الْقَرْيَةِ رِجْزًا مِّنَ السَّمَآءِ بِمَا كَانُوْا يَفْسُقُوْنَ
আমি এ জনপদের উপর আকাশ হতে শাস্তি নাযিল করব, কারণ তারা ফাসিকী কর্ম সংঘটিত করেছিল। (সূরা আনকাবূত- ৩৪)
হাশরের ময়দানে ফাসিকরা লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি ভোগ করবে :
فَالْيَوْمَ تُجْزَوْنَ عَذَابَ الْهُوْنِ بِمَا كُنْتُمْ تَسْتَكْبِرُوْنَ فِى الْاَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَبِمَا كُنْتُمْ تَفْسُقُوْنَ
তোমরা দুনিয়ায় অন্যায়ভাবে যে অহংকার করে বেড়াচ্ছিলে এবং যে ফাসিকী করেছিলে এর পরিবর্তে আজ তোমাদেরকে অপমানজনক আযাব দেয়া হবে। (সূরা আহকাফ- ২০)
وَالَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَا يَمَسُّهُمُ الْعَذَابُ بِمَا كَانُوْا يَفْسُقُوْنَ
যারা আমার নিদর্শনসমূহকে মিথ্যারোপ করেছে, ফাসিকী কাজকর্ম করার জন্য তাদের উপর শাস্তি আসবেই। (সূরা আন‘আম- ৪৯)
ফাসিকদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম :
وَاَمَّا الَّذِيْنَ فَسَقُوْا فَمَأْوَاهُمُ النَّارُؕ كُلَّمَاۤ اَرَادُوْاۤ اَنْ يَّخْرُجُوْا مِنْهَاۤ اُعِيْدُوْا فِيْهَا وَقِيْلَ لَهُمْ ذُوْقُوْا عَذَابَ النَّارِ الَّذِيْ كُنْتُمْ بِهٖ تُكَذِّبُوْنَ
যারা ফাসিকী কাজকর্ম করেছে তাদের বাসস্থান হবে জাহান্নাম। যখনই তারা সেখান থেকে বের হতে চাইবে, তখনই তাদেরকে সেথায় ফিরিয়ে দেয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে, দোযখের আযাব ভোগ করে নাও; (স্মরণ করো, দুনিয়াতে) তোমরা এ বিষয়টিকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে। (সূরা সাজদা- ২০)
فَسَادٌ (ফাসাদ) তথা বিপর্যয় হচ্ছে, জীবনব্যবস্থার এমন একটি বিকৃতি, যা সত্য বিচ্যুত হওয়ার ফলে অনিবার্যভাবে দেখা দেয়। আল্লাহর আইন-কানুনের আনুগত্যের সীমানা অতিক্রম করে মানুষ যা কিছু করে তার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সবই বিপর্যয়ে পরিণত হয়। এর একটি অংশ হচ্ছে এমন ধরনের বিপর্যয়, যা হারাম পথে সম্পদ আহরণ এবং হারাম পথে তা ব্যয় করার ফলে সৃষ্টি হয়।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাজা-বাদশারাই ফাসাদ ঘটায় :
اِنَّ الْمُلُوْكَ اِذَا دَخَلُوْا قَرْيَةً اَفْسَدُوْهَا وَجَعَلُوْاۤ اَعِزَّةَ اَهْلِهَاۤ اَذِلَّةً
নিশ্চয় রাজা-বাদশারা যখন কোন জনপদে প্রবেশ করে, তখন তাকে বিপর্যস্ত করে দেয় এবং সেখানের মর্যাদাবান ব্যক্তিদেরকে অপদস্থ করে। (সূরা নামল- ৩৪)
فَهَلْ عَسَيْتُمْ اِنْ تَوَلَّيْتُمْ اَنْ تُفْسِدُوْا فِى الْاَرْضِ وَتُقَطِّعُوْاۤ اَرْحَامَكُمْ
এখন তোমাদের কাছ থেকে এছাড়া আর কী আশা করা যায় যে, যদি তোমরা জনগণের শাসক হও তাহলে দুনিয়াতে ফাসাদ সৃষ্টি করবে, মারামারি করবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক বিনষ্ট করবে? (সূরা মুহাম্মাদ- ২২)
ব্যাখ্যা : মানুষ যখন আল্লাহর আনুগত্য না করে নিজের বা অন্য কারো আনুগত্য করে এবং আল্লাহর পথনির্দেশনা গ্রহণ না করে নিজের সমাজ, সংস্কৃতি ও নৈতিকতাকে এমনসব মূলনীতি ও আইনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করে, যা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কারো পথনির্দেশনা থেকে গৃহীত, তখন নানা বিপর্যয় দেখা দেয়। এসব বিপর্যয়ের পথ রোধ করাই কুরআনের উদ্দেশ্য। কুরআন এ সত্যটি সম্পর্কেও সজাগ করতে চায় যে, বিপর্যয় পৃথিবীর ব্যবস্থাপনার মৌলিক বিষয় নয়; বরং সুস্থতাই হচ্ছে এ ব্যবস্থাপনার মৌলিক বিষয়। মানব জীবনের সূচনা হয়েছে সুস্থ ও সুসভ্য ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে। পরবর্তীকালে দুষ্কর্মশীল লোকেরা নিজেদের নির্বুদ্ধিতা ও দুষ্ট মনোবৃত্তির সাহায্যে এ সুস্থ ব্যবস্থাটিকে ক্রমান্বয়ে বিনষ্ট করেছে। এ বিপর্যয় নির্মূল করে জীবনব্যবস্থাকে আবার নতুন করে সংশোধিত ও সুস্থ করে তুলার জন্যই মহান আল্লাহ যুগে যুগে ধারাবাহিকভাবে নবী ও রাসূল পাঠিয়েছেন। তাঁরা প্রত্যেক যুগে মানুষকে এ একই দাওয়াত দিয়ে এসেছেন যে, যে সুস্থ ও সভ্য বিধানের ভিত্তিতে দুনিয়ার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল তার মধ্যে বিপর্যয় সৃষ্টি করা থেকে বিরত থাকো।
ফিরাউন ফাসাদ সৃষ্টি করেছিল :
اِنَّ فِرْعَوْنَ عَلَا فِى الْاَرْضِ وَجَعَلَ اَهْلَهَا شِيَعًا يَّسْتَضْعِفُ طَآئِفَةً مِّنْهُمْ يُذَبِّحُ اَبْنَآءَهُمْؕ وَيَسْتَحْيِيْ نِسَآءَهُمْ اِنَّهٗ كَانَ مِنَ الْمُفْسِدِيْنَ
ফিরাউন দেশে ক্ষমতা লাভ করেছিল এবং সেখানকার অধিবাসীদেরকে বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত করে রেখেছিল। অতঃপর তাদের মধ্যে একটি শ্রেণিকে সে হীনবল করে রেখেছিল। সে তাদের পুত্রদেরকে হত্যা করত এবং নারীদেরকে জীবিত রাখত। নিশ্চয় সে ছিল বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা ক্বাসাস- ৪)
সামূদ জাতির মধ্যে ফাসাদ সৃষ্টিকারী একটি দল বিদ্যমান ছিল :
وَكَانَ فِى الْمَدِيْنَةِ تِسْعَةُ رَهْطٍ يُّفْسِدُوْنَ فِى الْاَرْضِ وَلَا يُصْلِحُوْنَ
আর ঐ শহরে (সামূদ জাতির মধ্যে) ছিল এমন নয়জন ব্যক্তি, যারা দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়াত এবং সৎকর্ম করত না। (সূরা নামল- ৪৮)
আল্লাহ ফাসাদ সৃষ্টি করতে নিষেধ করেছেন :
وَلَا تُفْسِدُوْا فِى الْاَرْضِ بَعْدَ اِصْلَاحِهَا
দুনিয়ায় শান্তি স্থাপনের পর তোমরা তাতে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না। (সূরা আ‘রাফ- ৫৬)
নবীরা তাদের জাতিকে ফাসাদ সৃষ্টি করা থেকে নিষেধ করতেন :
وَيَا قَوْمِ اَوْفُوا الْمِكْيَالَ وَالْمِيْزَانَ بِالْقِسْطِ وَلَا تَبْخَسُوا النَّاسَ اَشْيَآءَهُمْ وَلَا تَعْثَوْا فِى الْاَرْضِ مُفْسِدِيْنَ
হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা ন্যায়সঙ্গতভাবে মাপ ও ওজন করো, লোকদেরকে তাদের প্রাপ্যবস্তু কম করে দিয়ো না এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না। (সূরা হুদ- ৮৫)
মানুষের কুকর্মই ফাসাদ সৃষ্টির কারণ :
ظَهَرَ الْفَسَادُ فِى الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ اَيْدِى النَّاسِ لِيُذِيْقَهُمْ بَعْضَ الَّذِيْ عَمِلُوْا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُوْنَ
মানুষের কাজকর্মের ফলস্বরূপ স্থলভাগে ও জলভাগের সর্বত্রে অশান্তি ছড়িয়ে পড়েছে, যার ফলে আল্লাহ তাদেরকে তাদের কিছু কিছু কাজের শাস্তি ভোগ করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে। (সূরা রূম- ৪১)
জিহাদ না করলে ফাসাদ বন্ধ হবে না :
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍؕ اِلَّا تَفْعَلُوْهُ تَكُنْ فِتْنَةٌ فِى الْاَرْضِ وَفَسَادٌ كَبِيْرٌ
যারা কুফরী করেছে তারা একে অপরের বন্ধু; যদি তোমরা সেটা (তাদের সাথে জিহাদ) না কর, তবে দেশে ফিতনা ও মহাবিপর্যয় দেখা দেবে। (সূরা আনফাল- ৭৩)
وَلَوْلَا دَفْعُ اللهِ النَّاسَ بَعْضَهُمْ بِبَعْضٍ لَّفَسَدَتِ الْاَرْضُ
আর যদি আল্লাহ মানুষের মধ্য হতে একদলকে অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে অবশ্যই পৃথিবী বিশৃঙ্খলাপূর্ণ হয়ে যেত। (সূরা বাক্বারা- ২৫১)
ব্যাখ্যা : পৃথিবীর ব্যবস্থাপনা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহ যে পদ্ধতি নির্ধারণ করেছেন তা হচ্ছে, তিনি বিভিন্ন মানবগোষ্ঠী ও দলকে একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব লাভের সুযোগ দিয়ে থাকেন। কিন্তু যখনই কোন দল সীমা ছাড়িয়ে যেতে থাকে, তখনই তিনি অন্য একটি দলের সাহায্যে তার শক্তির দাপট চূর্ণ করে দেন। কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা যদি চিরন্তনভাবে একটি জাতি ও একটি দলের মধ্যে কেন্দ্রীভূত করে রাখা হতো এবং তার ক্ষমতার দাপট ও যুলুম-নির্যাতন সীমাহীন হতো, তাহলে নিঃসন্দেহে আল্লাহর এ রাজ্যে মহাবিপর্যয় নেমে আসত।
আল্লাহ ফাসাদকারীদেরকে ভালোবাসেন না :
وَلَا تَبْغِ الْفَسَادَ فِى الْاَرْضِ ؕ اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْمُفْسِدِيْنَ
আর তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে উৎসাহী হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদেরকে ভালোবাসেন না। (সূরা ক্বাসাস- ৭৭)
ফাসাদকারীরা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হবে :
اِنَّ اللهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِيْنَ
আল্লাহ অবশ্যই ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের কাজকর্ম সংশোধন করে দেন না। (সূরা ইউনুস- ৮১)
ফাসাদকারী ও মুমিন ব্যক্তি সমান নয় :
اَمْ نَجْعَلُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ كَالْمُفْسِدِيْنَ فِى الْاَرْضِؗ اَمْ نَجْعَلُ الْمُتَّقِيْنَ كَالْفُجَّارِ
যারা ঈমান আনয়ন করেছে এবং সৎকাজ করেছে আমি কি তাদেরকে ঐসব লোকের সমান করে দেব, যারা পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করে বেড়ায়? অথবা আমি কি মুত্তাক্বীদেরকে গোনাহগারদের সমান করে দেব? (সূরা সোয়াদ- ২৮)
যারা ফাসাদ থেকে দূরে থাকে তারাই জান্নাতে যাবে :
تِلْكَ الدَّارُ الْاٰخِرَةُ نَجْعَلُهَا لِلَّذِيْنَ لَا يُرِيْدُوْنَ عُلُوًّا فِى الْاَرْضِ وَلَا فَسَادًاؕ وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِيْنَ
এটা (জান্নাত) আখিরাতের সে আবাস যা আমি নির্ধারিত করে রেখেছি তাদের জন্য, যারা এ পৃথিবীতে উদ্ধত হতে ও বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায় না। আর শুভ পরিণাম তো মুত্তাক্বীদের জন্যই। (সূরা ক্বাসাস- ৮৩)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ যারা আল্লাহর জমিনে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশী নয়। যারা বিদ্রোহী, স্বৈরাচারী ও দাম্ভিক হয়ে নয়; বরং সাধারণ বান্দা হয়ে থাকে এবং আল্লাহর বান্দাদেরকে নিজেদের বান্দা করে রাখার চেষ্টা করে না।
ফাসাদকারীদের বিরুদ্ধে দু‘আ :
رَبِّ انْصُرْنِيْ عَلَى الْقَوْمِ الْمُفْسِدِيْنَ
হে আমার প্রতিপালক! আমাকে বিপর্যয় সৃষ্টিকারী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সাহায্য করো। (সূরা আনকাবূত- ৩০)
ফাসাদকারীদের উপর লানত পতিত হবে :
وَالَّذِيْنَ يَنْقُضُوْنَ عَهْدَ اللهِ مِنْ ۢبَعْدِ مِيْثَاقِهٖ وَيَقْطَعُوْنَ مَاۤ اَمَرَ اللهُ بِهٖۤ اَنْ يُّوْصَلَ وَيُفْسِدُوْنَ فِى الْاَرْضِۚ اُولٰٓئِكَ لَهُمُ اللَّعْنَةُ وَلَهُمْ سُوْٓءُ الدَّارِ
যারা আল্লাহর সাথে দৃঢ় অঙ্গীকারে আবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে, আল্লাহ যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখতে আদেশ করেছেন তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাদের জন্য লানত; আর তাদের জন্য রয়েছে নিকৃষ্টতম আবাসস্থল। (সূরা রা‘দ- ২৫)
তারা একের পর এক আযাব ভোগ করবে :
اَلَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَصَدُّوْا عَنْ سَبِيْلِ اللهِ زِدْنَاهُمْ عَذَابًا فَوْقَ الْعَذَابِ بِمَا كَانُوْا يُفْسِدُوْنَ
আমি কাফিরদের উপর ও আল্লাহর পথে বাধাদানকারীদের উপর শাস্তির পর শাস্তি বৃদ্ধি করব; কারণ তারা ফাসাদ সৃষ্টি করে বেড়াত। (সূরা নাহল- ৮৮)
দুনিয়াতে ফাসাদকারীদের আইনগত শাস্তি :
اِنَّمَا جَزَآءُ الَّذِيْنَ يُحَارِبُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَيَسْعَوْنَ فِى الْاَرْضِ فَسَادًا اَنْ يُّقَتَّلُوْاۤ اَوْ يُصَلَّبُوْاۤ اَوْ تُقَطَّعَ اَيْدِيْهِمْ وَاَرْجُلُهُمْ مِّنْ خِلَافٍ اَوْ يُنْفَوْا مِنَ الْاَرْضِؕ ذٰلِكَ لَهُمْ خِزْيٌ فِى الدُّنْيَا وَلَهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিপক্ষে লড়াই করে এবং পৃথিবীতে ফিতনা সৃষ্টি করে বেড়ায় তাদের শাস্তি হলো, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে অথবা তাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলা হবে অথবা তাদেরকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এ হলো তাদের জন্য পৃথিবীতে অপমান; আর পরকালে তাদের জন্য রয়েছে ভয়াবহ শাস্তি। (সূরা মায়েদা- ৩৩)
অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাজা-বাদশারাই ফাসাদ ঘটায় :
اِنَّ الْمُلُوْكَ اِذَا دَخَلُوْا قَرْيَةً اَفْسَدُوْهَا وَجَعَلُوْاۤ اَعِزَّةَ اَهْلِهَاۤ اَذِلَّةً
নিশ্চয় রাজা-বাদশারা যখন কোন জনপদে প্রবেশ করে, তখন তাকে বিপর্যস্ত করে দেয় এবং সেখানের মর্যাদাবান ব্যক্তিদেরকে অপদস্থ করে। (সূরা নামল- ৩৪)
فَهَلْ عَسَيْتُمْ اِنْ تَوَلَّيْتُمْ اَنْ تُفْسِدُوْا فِى الْاَرْضِ وَتُقَطِّعُوْاۤ اَرْحَامَكُمْ
এখন তোমাদের কাছ থেকে এছাড়া আর কী আশা করা যায় যে, যদি তোমরা জনগণের শাসক হও তাহলে দুনিয়াতে ফাসাদ সৃষ্টি করবে, মারামারি করবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক বিনষ্ট করবে? (সূরা মুহাম্মাদ- ২২)
ব্যাখ্যা : মানুষ যখন আল্লাহর আনুগত্য না করে নিজের বা অন্য কারো আনুগত্য করে এবং আল্লাহর পথনির্দেশনা গ্রহণ না করে নিজের সমাজ, সংস্কৃতি ও নৈতিকতাকে এমনসব মূলনীতি ও আইনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করে, যা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কারো পথনির্দেশনা থেকে গৃহীত, তখন নানা বিপর্যয় দেখা দেয়। এসব বিপর্যয়ের পথ রোধ করাই কুরআনের উদ্দেশ্য। কুরআন এ সত্যটি সম্পর্কেও সজাগ করতে চায় যে, বিপর্যয় পৃথিবীর ব্যবস্থাপনার মৌলিক বিষয় নয়; বরং সুস্থতাই হচ্ছে এ ব্যবস্থাপনার মৌলিক বিষয়। মানব জীবনের সূচনা হয়েছে সুস্থ ও সুসভ্য ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে। পরবর্তীকালে দুষ্কর্মশীল লোকেরা নিজেদের নির্বুদ্ধিতা ও দুষ্ট মনোবৃত্তির সাহায্যে এ সুস্থ ব্যবস্থাটিকে ক্রমান্বয়ে বিনষ্ট করেছে। এ বিপর্যয় নির্মূল করে জীবনব্যবস্থাকে আবার নতুন করে সংশোধিত ও সুস্থ করে তুলার জন্যই মহান আল্লাহ যুগে যুগে ধারাবাহিকভাবে নবী ও রাসূল পাঠিয়েছেন। তাঁরা প্রত্যেক যুগে মানুষকে এ একই দাওয়াত দিয়ে এসেছেন যে, যে সুস্থ ও সভ্য বিধানের ভিত্তিতে দুনিয়ার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল তার মধ্যে বিপর্যয় সৃষ্টি করা থেকে বিরত থাকো।
ফিরাউন ফাসাদ সৃষ্টি করেছিল :
اِنَّ فِرْعَوْنَ عَلَا فِى الْاَرْضِ وَجَعَلَ اَهْلَهَا شِيَعًا يَّسْتَضْعِفُ طَآئِفَةً مِّنْهُمْ يُذَبِّحُ اَبْنَآءَهُمْؕ وَيَسْتَحْيِيْ نِسَآءَهُمْ اِنَّهٗ كَانَ مِنَ الْمُفْسِدِيْنَ
ফিরাউন দেশে ক্ষমতা লাভ করেছিল এবং সেখানকার অধিবাসীদেরকে বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত করে রেখেছিল। অতঃপর তাদের মধ্যে একটি শ্রেণিকে সে হীনবল করে রেখেছিল। সে তাদের পুত্রদেরকে হত্যা করত এবং নারীদেরকে জীবিত রাখত। নিশ্চয় সে ছিল বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা ক্বাসাস- ৪)
সামূদ জাতির মধ্যে ফাসাদ সৃষ্টিকারী একটি দল বিদ্যমান ছিল :
وَكَانَ فِى الْمَدِيْنَةِ تِسْعَةُ رَهْطٍ يُّفْسِدُوْنَ فِى الْاَرْضِ وَلَا يُصْلِحُوْنَ
আর ঐ শহরে (সামূদ জাতির মধ্যে) ছিল এমন নয়জন ব্যক্তি, যারা দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়াত এবং সৎকর্ম করত না। (সূরা নামল- ৪৮)
আল্লাহ ফাসাদ সৃষ্টি করতে নিষেধ করেছেন :
وَلَا تُفْسِدُوْا فِى الْاَرْضِ بَعْدَ اِصْلَاحِهَا
দুনিয়ায় শান্তি স্থাপনের পর তোমরা তাতে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না। (সূরা আ‘রাফ- ৫৬)
নবীরা তাদের জাতিকে ফাসাদ সৃষ্টি করা থেকে নিষেধ করতেন :
وَيَا قَوْمِ اَوْفُوا الْمِكْيَالَ وَالْمِيْزَانَ بِالْقِسْطِ وَلَا تَبْخَسُوا النَّاسَ اَشْيَآءَهُمْ وَلَا تَعْثَوْا فِى الْاَرْضِ مُفْسِدِيْنَ
হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা ন্যায়সঙ্গতভাবে মাপ ও ওজন করো, লোকদেরকে তাদের প্রাপ্যবস্তু কম করে দিয়ো না এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না। (সূরা হুদ- ৮৫)
মানুষের কুকর্মই ফাসাদ সৃষ্টির কারণ :
ظَهَرَ الْفَسَادُ فِى الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ اَيْدِى النَّاسِ لِيُذِيْقَهُمْ بَعْضَ الَّذِيْ عَمِلُوْا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُوْنَ
মানুষের কাজকর্মের ফলস্বরূপ স্থলভাগে ও জলভাগের সর্বত্রে অশান্তি ছড়িয়ে পড়েছে, যার ফলে আল্লাহ তাদেরকে তাদের কিছু কিছু কাজের শাস্তি ভোগ করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে। (সূরা রূম- ৪১)
জিহাদ না করলে ফাসাদ বন্ধ হবে না :
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍؕ اِلَّا تَفْعَلُوْهُ تَكُنْ فِتْنَةٌ فِى الْاَرْضِ وَفَسَادٌ كَبِيْرٌ
যারা কুফরী করেছে তারা একে অপরের বন্ধু; যদি তোমরা সেটা (তাদের সাথে জিহাদ) না কর, তবে দেশে ফিতনা ও মহাবিপর্যয় দেখা দেবে। (সূরা আনফাল- ৭৩)
وَلَوْلَا دَفْعُ اللهِ النَّاسَ بَعْضَهُمْ بِبَعْضٍ لَّفَسَدَتِ الْاَرْضُ
আর যদি আল্লাহ মানুষের মধ্য হতে একদলকে অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে অবশ্যই পৃথিবী বিশৃঙ্খলাপূর্ণ হয়ে যেত। (সূরা বাক্বারা- ২৫১)
ব্যাখ্যা : পৃথিবীর ব্যবস্থাপনা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহ যে পদ্ধতি নির্ধারণ করেছেন তা হচ্ছে, তিনি বিভিন্ন মানবগোষ্ঠী ও দলকে একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব লাভের সুযোগ দিয়ে থাকেন। কিন্তু যখনই কোন দল সীমা ছাড়িয়ে যেতে থাকে, তখনই তিনি অন্য একটি দলের সাহায্যে তার শক্তির দাপট চূর্ণ করে দেন। কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা যদি চিরন্তনভাবে একটি জাতি ও একটি দলের মধ্যে কেন্দ্রীভূত করে রাখা হতো এবং তার ক্ষমতার দাপট ও যুলুম-নির্যাতন সীমাহীন হতো, তাহলে নিঃসন্দেহে আল্লাহর এ রাজ্যে মহাবিপর্যয় নেমে আসত।
আল্লাহ ফাসাদকারীদেরকে ভালোবাসেন না :
وَلَا تَبْغِ الْفَسَادَ فِى الْاَرْضِ ؕ اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْمُفْسِدِيْنَ
আর তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে উৎসাহী হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদেরকে ভালোবাসেন না। (সূরা ক্বাসাস- ৭৭)
ফাসাদকারীরা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হবে :
اِنَّ اللهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِيْنَ
আল্লাহ অবশ্যই ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের কাজকর্ম সংশোধন করে দেন না। (সূরা ইউনুস- ৮১)
ফাসাদকারী ও মুমিন ব্যক্তি সমান নয় :
اَمْ نَجْعَلُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ كَالْمُفْسِدِيْنَ فِى الْاَرْضِؗ اَمْ نَجْعَلُ الْمُتَّقِيْنَ كَالْفُجَّارِ
যারা ঈমান আনয়ন করেছে এবং সৎকাজ করেছে আমি কি তাদেরকে ঐসব লোকের সমান করে দেব, যারা পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করে বেড়ায়? অথবা আমি কি মুত্তাক্বীদেরকে গোনাহগারদের সমান করে দেব? (সূরা সোয়াদ- ২৮)
যারা ফাসাদ থেকে দূরে থাকে তারাই জান্নাতে যাবে :
تِلْكَ الدَّارُ الْاٰخِرَةُ نَجْعَلُهَا لِلَّذِيْنَ لَا يُرِيْدُوْنَ عُلُوًّا فِى الْاَرْضِ وَلَا فَسَادًاؕ وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِيْنَ
এটা (জান্নাত) আখিরাতের সে আবাস যা আমি নির্ধারিত করে রেখেছি তাদের জন্য, যারা এ পৃথিবীতে উদ্ধত হতে ও বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায় না। আর শুভ পরিণাম তো মুত্তাক্বীদের জন্যই। (সূরা ক্বাসাস- ৮৩)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ যারা আল্লাহর জমিনে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশী নয়। যারা বিদ্রোহী, স্বৈরাচারী ও দাম্ভিক হয়ে নয়; বরং সাধারণ বান্দা হয়ে থাকে এবং আল্লাহর বান্দাদেরকে নিজেদের বান্দা করে রাখার চেষ্টা করে না।
ফাসাদকারীদের বিরুদ্ধে দু‘আ :
رَبِّ انْصُرْنِيْ عَلَى الْقَوْمِ الْمُفْسِدِيْنَ
হে আমার প্রতিপালক! আমাকে বিপর্যয় সৃষ্টিকারী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সাহায্য করো। (সূরা আনকাবূত- ৩০)
ফাসাদকারীদের উপর লানত পতিত হবে :
وَالَّذِيْنَ يَنْقُضُوْنَ عَهْدَ اللهِ مِنْ ۢبَعْدِ مِيْثَاقِهٖ وَيَقْطَعُوْنَ مَاۤ اَمَرَ اللهُ بِهٖۤ اَنْ يُّوْصَلَ وَيُفْسِدُوْنَ فِى الْاَرْضِۚ اُولٰٓئِكَ لَهُمُ اللَّعْنَةُ وَلَهُمْ سُوْٓءُ الدَّارِ
যারা আল্লাহর সাথে দৃঢ় অঙ্গীকারে আবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে, আল্লাহ যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখতে আদেশ করেছেন তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাদের জন্য লানত; আর তাদের জন্য রয়েছে নিকৃষ্টতম আবাসস্থল। (সূরা রা‘দ- ২৫)
তারা একের পর এক আযাব ভোগ করবে :
اَلَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَصَدُّوْا عَنْ سَبِيْلِ اللهِ زِدْنَاهُمْ عَذَابًا فَوْقَ الْعَذَابِ بِمَا كَانُوْا يُفْسِدُوْنَ
আমি কাফিরদের উপর ও আল্লাহর পথে বাধাদানকারীদের উপর শাস্তির পর শাস্তি বৃদ্ধি করব; কারণ তারা ফাসাদ সৃষ্টি করে বেড়াত। (সূরা নাহল- ৮৮)
দুনিয়াতে ফাসাদকারীদের আইনগত শাস্তি :
اِنَّمَا جَزَآءُ الَّذِيْنَ يُحَارِبُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَيَسْعَوْنَ فِى الْاَرْضِ فَسَادًا اَنْ يُّقَتَّلُوْاۤ اَوْ يُصَلَّبُوْاۤ اَوْ تُقَطَّعَ اَيْدِيْهِمْ وَاَرْجُلُهُمْ مِّنْ خِلَافٍ اَوْ يُنْفَوْا مِنَ الْاَرْضِؕ ذٰلِكَ لَهُمْ خِزْيٌ فِى الدُّنْيَا وَلَهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিপক্ষে লড়াই করে এবং পৃথিবীতে ফিতনা সৃষ্টি করে বেড়ায় তাদের শাস্তি হলো, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে অথবা তাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলা হবে অথবা তাদেরকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এ হলো তাদের জন্য পৃথিবীতে অপমান; আর পরকালে তাদের জন্য রয়েছে ভয়াবহ শাস্তি। (সূরা মায়েদা- ৩৩)
অভাবের কারণে সন্তান হত্যা করা হারাম :
وَلَا تَقْتُلُوْاۤ اَوْلَادَكُمْ مِّنْ اِمْلَاقٍؕ نَحْنُ نَرْزُقُكُمْ وَاِيَّاهُمْ
দারিদ্রে্যর ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না, কেননা আমিই তোমাদেরকে ও তাদেরকে রিযিক দান করে থাকি। (সূরা আন‘আম- ১৫১)
সন্তান হত্যা করা কবীরা গোনাহের অন্তর্ভুক্ত :
وَلَا تَقْتُلُوْاۤ اَوْلَادَكُمْ خَشْيَةَ اِمْلَاقٍؕ نَحْنُ نَرْزُقُهُمْ وَاِيَّاكُمْؕ اِنَّ قَتْلَهُمْ كَانَ خِطْئًا كَبِيْرًا
তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে দরিদ্রতার ভয়ে হত্যা করো না। আমিই তাদেরকে রিযিক দেই এবং তোমাদেরকেও। নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা মহাপাপ। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩১)
যারা সন্তান হত্যা করবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে :
قَدْ خَسِرَ الَّذِيْنَ قَتَلُوْاۤ اَوْلَادَهُمْ سَفَهًا ۢبِغَيْرِ عِلْمٍ وَّحَرَّمُوْا مَا رَزَقَهُمُ اللهُ افْتِرَآءً عَلَى اللهِ قَدْ ضَلُّوْا وَمَا كَانُوْا مُهْتَدِيْنَ
যারা নির্বুদ্ধিতার কারণে অজ্ঞতাবশত নিজেদের সন্তানদেরকে হত্যা করে এবং আল্লাহ প্রদত্ত জীবিকাকে আল্লাহর সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করার উদ্দেশ্যে হারাম করে নেয়, অবশ্যই তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর অবশ্যই তারা বিপথগামী হয়েছে এবং তারা (কখনো) সৎপথপ্রাপ্তও ছিল না। (সূরা আন‘আম- ১৪০)
কিয়ামতের দিন এ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে :
وَاِذَا الْمَوْءُوْدَةُ سُئِلَتْ ‐ بِاَيِّ ذَنْۢبٍ قُتِلَتْ
যখন জীবন্ত কবর দেয়া কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে, কী অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল? (সূরা তাকভীর- ৮, ৯)
وَلَا تَقْتُلُوْاۤ اَوْلَادَكُمْ مِّنْ اِمْلَاقٍؕ نَحْنُ نَرْزُقُكُمْ وَاِيَّاهُمْ
দারিদ্রে্যর ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না, কেননা আমিই তোমাদেরকে ও তাদেরকে রিযিক দান করে থাকি। (সূরা আন‘আম- ১৫১)
সন্তান হত্যা করা কবীরা গোনাহের অন্তর্ভুক্ত :
وَلَا تَقْتُلُوْاۤ اَوْلَادَكُمْ خَشْيَةَ اِمْلَاقٍؕ نَحْنُ نَرْزُقُهُمْ وَاِيَّاكُمْؕ اِنَّ قَتْلَهُمْ كَانَ خِطْئًا كَبِيْرًا
তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে দরিদ্রতার ভয়ে হত্যা করো না। আমিই তাদেরকে রিযিক দেই এবং তোমাদেরকেও। নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা মহাপাপ। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩১)
যারা সন্তান হত্যা করবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে :
قَدْ خَسِرَ الَّذِيْنَ قَتَلُوْاۤ اَوْلَادَهُمْ سَفَهًا ۢبِغَيْرِ عِلْمٍ وَّحَرَّمُوْا مَا رَزَقَهُمُ اللهُ افْتِرَآءً عَلَى اللهِ قَدْ ضَلُّوْا وَمَا كَانُوْا مُهْتَدِيْنَ
যারা নির্বুদ্ধিতার কারণে অজ্ঞতাবশত নিজেদের সন্তানদেরকে হত্যা করে এবং আল্লাহ প্রদত্ত জীবিকাকে আল্লাহর সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করার উদ্দেশ্যে হারাম করে নেয়, অবশ্যই তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর অবশ্যই তারা বিপথগামী হয়েছে এবং তারা (কখনো) সৎপথপ্রাপ্তও ছিল না। (সূরা আন‘আম- ১৪০)
কিয়ামতের দিন এ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে :
وَاِذَا الْمَوْءُوْدَةُ سُئِلَتْ ‐ بِاَيِّ ذَنْۢبٍ قُتِلَتْ
যখন জীবন্ত কবর দেয়া কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে, কী অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল? (সূরা তাকভীর- ৮, ৯)
আল্লাহ অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা করতে নিষেধ করেছেন :
وَلَا تَقْتُلُوْاۤ اَنْفُسَكُمْ اِنَّ اللهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيْمًا
একে অপরকে হত্যা করো না, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। (সূরা নিসা- ২৯)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতের দু’টি অর্থ হয়। (এক) পরস্পরকে হত্যা করো না। (দুই) আত্মহত্যা করো না। মহান আল্লাহ মানুষকে মর্যাদাসম্পন্ন করেছেন। অন্যের প্রাণের সাথে সাথে মানুষের নিজের প্রাণও সম্মানের অন্তর্ভুক্ত। কাজেই মানুষ হত্যা যতবড় অপরাধ, আত্মহত্যা করাও ঠিক ততবড় অপরাধ। মানুষ নিজে নিজের প্রাণের মালিক নয় এবং একে নিজ ক্ষমতায় নিঃশেষ করে দেয়ার অধিকারও সে রাখে না। বরং তার এ প্রাণ আল্লাহর মালিকানাধীন, তিনি এ প্রাণকে যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। তিনি ইচ্ছা করলে ব্যক্তির শরীরের মধ্যেও রাখতে পারেন, আবার শরীর থেকে পৃথক করেও রাখতে পারেন। তিনি একে কষ্টেও রাখতে পারেন, আবার প্রশান্তিতেও রাখতে পারেন। মূলত এর দ্বারা তিনি আমাদের পরীক্ষা নিচ্ছেন। তবে তিনি যেভাবেই আমাদের পরীক্ষা নেন না কেন, পরীক্ষার শেষ সময় পর্যন্ত আমাদেরকে সেভাবেই পরীক্ষা দিয়ে যেতে হবে। আল্লাহর দেয়া সময়কে ইচ্ছা করে বিনষ্ট করে দিয়ে পরীক্ষাগৃহ থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা ভুল পদক্ষেপ ছাড়া আর কিছুই নয়। আবার এ পালিয়ে যাওয়ার কাজটিও এমন এক অপরাধের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়, যাকে আল্লাহ সুস্পষ্ট ভাষায় হারাম হিসেবে গণ্য করেছেন। এটা কোন ক্রমেই কাম্য হতে পারে না।
وَلَا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِيْ حَرَّمَ اللهُ اِلَّا بِالْحَقِّؕ ذٰلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهٖ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُوْنَ
আল্লাহ যাকে হত্যা করা নিষিদ্ধ করেছেন, তোমরা তাকে যথার্থ কারণ ছাড়া হত্যা করো না। তিনি তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিলেন, যাতে তোমরা অনুধাবন করতে পার। (সূরা আন‘আম- ১৫১)
একজনকে হত্যা করা সারা দুনিয়ার মানুষকে হত্যা করার সমান :
مَنْ قَتَلَ نَفْسًا ۢبِغَيْرِ نَفْسٍ اَوْ فَسَادٍ فِى الْاَرْضِ فَكَاَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِيْعًاؕ وَمَنْ اَحْيَاهَا فَكَاَنَّمَاۤ اَحْيَا النَّاسَ جَمِيْعًا
যে ব্যক্তি কাউকে প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ কিংবা দুনিয়ায় ফাসাদ সৃষ্টি করার কারণ ব্যতীত অন্য কোন কারণে হত্যা করবে, সে যেন দুনিয়ার সকল মানুষকেই হত্যা করল। আর যে ব্যক্তি কারো প্রাণ বাঁচাল, সে যেন সমস্ত মানুষের প্রাণ বাঁচাল। (সূরা মায়েদা- ৩২)
মানুষ হত্যার সূচনা হয় আদম (আঃ) এর পুত্র কাবিল এর মাধ্যমে :
وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَاَ ابْنَيْ اٰدَمَ بِالْحَقِّ اِذْ قَرَّبَا قُرْبَانًا فَتُقُبِّلَ مِنْ اَحَدِهِمَا وَلَمْ يُتَقَبَّلْ مِنَ الْاٰخَرِؕ قَالَ لَاَقْتُلَنَّكَؕ قَالَ اِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللهُ مِنَ الْمُتَّقِيْنَ
তুমি তাদেরকে আদমের দু’পুত্রের বিবরণ সঠিকভাবে শুনাও। যখন তারা কুরবানী করেছিল তখন তাদের একজনের কুরবানী কবুল করা হয়েছিল এবং অপরজনের কুরবানী কবুল করা হয়নি। অতঃপর (যার কুরবানী কবুল করা হয়নি) সে বলল, ‘‘অবশ্যই আমি তোমাকে হত্যা করব।’’ তখন অপরজন বলল, ‘‘আল্লাহ একমাত্র পরহেযগারদের কুরবানীই কবুল করে থাকেন।’’ (সূরা মায়েদা- ২৭)
হাবিল কাবিলকে হত্যা করতে রাজি ছিল না :
لَئِنْ ۢبَسَطْتَّ اِلَيَّ يَدَكَ لِتَقْتُلَنِيْ مَاۤ اَنَاْ بِبَاسِطٍ يَّدِيَ اِلَيْكَ لِاَقْتُلَكَۚ اِنِّۤيْ اَخَافُ اللهَ رَبَّ الْعَالَمِيْنَ
(হাবিল বলল) যদি তুমি আমাকে হত্যা করার জন্য আমার দিকে তোমার হাত বাড়াও, তবুও আমি তোমাকে হত্যা করার জন্য তোমার দিকে আমার হাত বাড়াব না। কেননা আমি বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করি। (সূরা মায়েদা- ২৮)
اِنِّۤيْ اُرِيْدُ اَنْ تَبُوْٓءَ بِاِثْمِيْ وَاِثْمِكَ فَتَكُوْنَ مِنْ اَصْحَابِ النَّارِۚ وَذٰلِكَ جَزَآءُ الظَّالِمِيْنَ
আমি চাই, তুমি আমার ও তোমার গোনাহের বোঝা বহন কর, তারপর তুমি জাহান্নামবাসীদের মধ্যে শামিল হয়ে যাও। আর এটাই হলো অত্যাচারীদের (প্রকৃত) শাস্তি। (সূরা মায়েদা- ২৯)
কাবিল তার ভাই হাবিলকে হত্যা করল :
فَطَوَّعَتْ لَهٗ نَفْسُهٗ قَتْلَ اَخِيْهِ فَقَتَلَهٗ فَاَصْبَحَ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
অতঃপর তার প্রবৃত্তি তার ভাইকে হত্যা করার উস্কানি দিল এবং সে তাকে হত্যা করল। ফলে সে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে শামিল হয়ে গেল। (সূরা মায়েদা- ৩০)
ভাইকে হত্যা করে কাবিল চরমভাবে লজ্জিত হলো :
فَبَعَثَ اللهُ غُرَابًا يَّبْحَثُ فِى الْاَرْضِ لِيُرِيَهٗ كَيْفَ يُوَارِيْ سَوْاَةَ اَخِيْهِؕ قَالَ يَا وَيْلَتَاۤ اَعَجَزْتُ اَنْ اَكُوْنَ مِثْلَ هٰذَا الْغُرَابِ فَاُوَارِيَ سَوْاَةَ اَخِيْۚ فَاَصْبَحَ مِنَ النَّادِمِيْنَ
তারপর আল্লাহ একটি কাক পাঠালেন, সে মাটি খুঁড়তে লাগল তাকে দেখানোর জন্য যে, কীভাবে সে তার ভাইয়ের লাশ লুকিয়ে রাখবে। (এসব দেখে) সে বলল, হায়! আমি কি এ কাকের মতোও হতে পারলাম না যে, আমার ভাইয়ের লাশ লুকিয়ে রাখতে পারি? অতঃপর সে লাঞ্ছিতদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল। (সূরা মায়েদা- ৩১)
ব্যাখ্যা : মহান আল্লাহ একটি কাকের মাধ্যমে আদম (আঃ) এর বিভ্রান্ত পুত্রটিকে তার মূর্খতা সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন। ফলে যখন সে নিজের মনের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করার সুযোগ পেয়েছে তখন তার লজ্জা কেবলমাত্র এতটুকু বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি যে, সে লাশ লুকানোর কৌশল বের করার ব্যাপারে কাকের চেয়ে পেছনে থেকে গেল বরং তার মনে এ অনুভূতিও জন্ম নিয়েছে যে, নিজের ভাইকে হত্যা করে সে কত বড় মূর্খতার পরিচয় দিয়েছে।
বনী ইসরাঈলরা অনেক নবীকে হত্যা করেছে :
لَقَدْ اَخَذْنَا مِيْثَاقَ بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ وَاَرْسَلْنَاۤ اِلَيْهِمْ رُسُلًاؕ كُلَّمَا جَآءَهُمْ رَسُوْلٌ ۢبِمَا لَا تَهْوٰۤى اَنْفُسُهُمْ فَرِيْقًا كَذَّبُوْا وَفَرِيْقًا يَّقْتُلُوْنَ
আমি বনী ইসরাঈলের নিকট হতে অঙ্গীকার গ্রহণ করছিলাম এবং তাদের নিকট রাসূল প্রেরণ করেছিলাম। অতঃপর যখনই কোন রাসূল তাদের নিকট এমন কিছু নিয়ে এসেছেন যা তাদের মনঃপূত নয়, তখনই তারা কাউকে মিথ্যারোপ করেছে এবং কাউকে হত্যা করেছে। (সূরা মায়েদা- ৭০)
ইবরাহীম (আঃ) কে লোকেরা হত্যা করতে চেয়েছিল :
فَمَا كَانَ جَوَابَ قَوْمِهٖۤ اِلَّاۤ اَنْ قَالُوا اقْتُلُوْهُ اَوْ حَرِّقُوْهُ فَاَنْجَاهُ اللهُ مِنَ النَّارِؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ
উত্তরে ইবরাহীমের সম্প্রদায় শুধু এ বলল যে, একে হত্যা করো অথবা অগ্নিদগ্ধ করো। কিন্তু আল্লাহ তাকে অগ্নি হতে রক্ষা করলেন। নিশ্চয় এতে মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে। (সূরা আনকাবূত- ২৪)
ইউসুফ (আঃ) কে তাঁর ভাইয়েরা হত্যা করতে চেয়েছিল :
اُقْتُلُوْا يُوْسُفَ اَوِ اطْرَحُوْهُ اَرْضًا يَّخْلُ لَكُمْ وَجْهُ اَبِيْكُمْ وَتَكُوْنُوْا مِنْ ۢبَعْدِهٖ قَوْمًا صَالِحِيْنَ
তোমরা ইউসুফকে হত্যা করো অথবা তাঁকে কোন স্থানে ফেলে আসো, ফলে তোমাদের পিতার দৃষ্টি শুধু তোমাদের প্রতিই নিবিষ্ট হবে। অতঃপর তোমরা ভালো লোক হয়ে যাবে। (সূরা ইউসুফ- ৯)
মূসা (আঃ) কে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল :
وَقَالَ فِرْعَوْنُ ذَرُوْنِۤيْ اَقْتُلْ مُوْسٰى وَلْيَدْعُ رَبَّهٗ
ফিরাউন বলল, আমাকে ছেড়ে দাও আমি মূসাকে হত্যা করব, আর সে তার প্রতিপালককে ডাকুক। (সূরা মু’মিন- ২৬)
আমাদের নবীকেও হত্যা করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে :
وَاِذْ يَمْكُرُ بِكَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِيُثْبِتُوْكَ اَوْ يَقْتُلُوْكَ اَوْ يُخْرِجُوْكَؕ وَيَمْكُرُوْنَ وَيَمْكُرُ اللهُؕ وَاللهُ خَيْرُ الْمَاكِرِيْنَ
(স্মরণ করো) যখন কাফিররা তোমার বিরুদ্ধে তোমাকে বন্দী করার জন্য অথবা হত্যা করার জন্য কিংবা নির্বাসিত করার জন্য ষড়যন্ত্র করেছিল। (লক্ষ্য করো) তারা কৌশল অবলম্বন করে এবং আল্লাহও কৌশল অবলম্বন করেন। আর আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ কৌশলী। (সূরা আনফাল- ৩০)
ইসলামের আহবানকারীদেরকে হত্যাকারীরা কঠিন শাস্তি ভোগ করবে :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَكْفُرُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِ وَيَقْتُلُوْنَ النَّبِيِّيْنَ بِغَيْرِ حَقٍّ وَّيَقْتُلُوْنَ الَّذِيْنَ يَأْمُرُوْنَ بِالْقِسْطِ مِنَ النَّاسِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ اَلِيْمٍ
নিশ্চয় যারা আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করেছে, অন্যায়ভাবে নবীদেরকে হত্যা করেছে এবং যারা মানবজাতিকে ন্যায়-ইনসাফের নির্দেশ দেয় তাদেরকেও হত্যা করেছে, তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সংবাদ দাও। (সূরা আলে ইমরান- ২১)
স্বেচ্ছায় কোন মুমিনকে হত্যা করলে চির জাহান্নামী হতে হবে :
وَمَنْ يَّقْتُلْ مُؤْمِنًا مُّتَعَمِّدًا فَجَزَآؤُهٗ جَهَنَّمُ خَالِدًا فِيْهَا وَغَضِبَ اللهُ عَلَيْهِ وَلَعَنَهٗ وَاَعَدَّ لَهٗ عَذَابًا عَظِيْمًا
আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুমিনকে হত্যা করবে, তার শাস্তি হবে জাহান্নাম; সেখানে সে স্থায়ী হবে। আল্লাহ তার প্রতি রাগান্বিত হন, তাকে অভিশপ্ত করেন এবং তার জন্য প্রস্তুত করে রাখেন মহাশাস্তি। (সূরা নিসা- ৯৩)
ভুলে কোন মুমিনকে হত্যা করলে কাফ্ফারা দিতে হবে :
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ اَنْ يَّقْتُلَ مُؤْمِنًا اِلَّا خَطَأًۚ وَمَنْ قَتَلَ مُؤْمِنًا خَطَأً فَتَحْرِيْرُ رَقَبَةٍ مُّؤْمِنَةٍ وَّدِيَةٌ مُّسَلَّمَةٌ اِلٰۤى اَهْلِهٖۤ اِلَّاۤ اَنْ يَّصَّدَّقُوْاؕ فَاِنْ كَانَ مِنْ قَوْمٍ عَدُوًّا لَّكُمْ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَتَحْرِيْرُ رَقَبَةٍ مُّؤْمِنَةٍؕ وَاِنْ كَانَ مِنْ قَوْمٍ ۢبَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُمْ مِّيْثَاقٌ فَدِيَةٌ مُّسَلَّمَةٌ اِلٰۤى اَهْلِهٖ وَتَحْرِيْرُ رَقَبَةٍ مُّؤْمِنَةٍۚ فَمَنْ لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِؗ تَوْبَةً مِّنَ اللهِؕ وَكَانَ اللهُ عَلِيمًا حَكِيْمًا
কোন মুমিনকে হত্যা করা কোন মুমিনের কাজ নয়, তবে ভুলবশত হত্যা করে ফেললে তা স্বতন্ত্র। আর যদি (কোন মুমিন অপর) কোন মুমিনকে ভুলবশত হত্যা করেই ফেলে, তবে সে যেন একজন মুমিন দাস আযাদ করে দেয় এবং তার পরিবারকে রক্তপণ অর্পণ করে; তবে যদি তারা (রক্তপণ) ক্ষমা করে দেয় (তা ভিন্ন কথা)। আর যদি সে তোমাদের শত্রুপক্ষের লোক হয় এবং মুমিন হয়, তবে সে যেন (শুধুমাত্র) একজন মুমিন দাস মুক্ত করে দেয়। আর যদি সে এমন এক সম্প্রদায়ভুক্ত হয়, যার সঙ্গে তোমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ; তবে সে যেন তার পরিবারকে রক্তপণ অর্পণ করে দেয় এবং একজন মুমিন দাস মুক্ত করে দেয়, কিন্তু যে তা করতে পারবে না সে যেন ধারাবাহিকভাবে দু’মাস রোযা রাখে। বস্তুত এটা আল্লাহর পক্ষ হতে তাওবার জন্য একটি ব্যবস্থামাত্র; আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা- ৯২)
অন্যায় হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার বিধান রয়েছে :
وَلَا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِيْ حَرَّمَ اللهُ اِلَّا بِالْحَقِّؕ وَمَنْ قُتِلَ مَظْلُوْمًا فَقَدْ جَعَلْنَا لِوَلِيِّهٖ سُلْطَانًا فَلَا يُسْرِفْ فِّى الْقَتْلِؕ اِنَّهٗ كَانَ مَنْصُوْرًا
আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন যথার্থ কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করো না। এরপরও যদি কেউ অন্যায়ভাবে নিহত হয়, তবে তার উত্তরাধিকারীদেরকে তো আমি এর প্রতিকারের অধিকার দিয়েছিই, কিন্তু হত্যার ব্যাপারে সে যেন বাড়াবাড়ি না করে; (এতে) নিশ্চয় সে সাহায্যপ্রাপ্ত হবে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩৩)
হত্যার কিসাস নেয়াকে ফরজ করা হয়েছে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِصَاصُ فِى الْقَتْلٰىؕ اَ لْحُرُّ بِالْحُرِّ وَالْعَبْدُ بِالْعَبْدِ وَالْاُنْثٰى بِالْاُنْثٰىؕ فَمَنْ عُفِيَ لَهٗ مِنْ اَخِيْهِ شَيْءٌ فَاتِّبَاعٌ ۢبِالْمَعْرُوْفِ وَاَدَآءٌ اِلَيْهِ بِاِحْسَانٍؕ ذٰلِكَ تَخْفِيْفٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَرَحْمَةٌؕ فَمَنِ اعْتَدٰى بَعْدَ ذٰلِكَ فَلَهٗ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
হে ঈমানদারগণ! নিহতদের ব্যাপারে তোমাদের জন্য কিসাস (প্রতিশোধ গ্রহণের বিধান) ফরয করে দেয়া হলো। স্বাধীন ব্যক্তির পরিবর্তে স্বাধীন ব্যক্তি, দাসের পরিবর্তে দাস এবং নারীর পরিবর্তে নারী। কিন্তু কেউ যদি তার ভাই কর্তৃক কোন বিষয়ে ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়, তবে যেন ন্যায়সঙ্গতভাবে (রক্তমূল্য) তাগাদা করে এবং (হত্যাকারী) সদ্ভাবে তা পরিশোধ করে দেবে। এটা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে হালকা বিধান ও করুণা। অতঃপর যে ব্যক্তি সীমালঙ্ঘন করবে, তার জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরা বাক্বারা- ১৭৮)
وَكَتَبْنَا عَلَيْهِمْ فِيْهَاۤ اَنَّ النَّفْسَ بِالنَّفْسِ وَالْعَيْنَ بِالْعَيْنِ وَالْاَنْفَ بِالْاَنْفِ وَالْاُذُنَ بِالْاُذُنِ وَالسِّنَّ بِالسِّنِّ وَالْجُرُوْحَ قِصَاصٌؕ فَمَنْ تَصَدَّقَ بِهٖ فَهُوَ كَفَّارَةٌ لَّهٗؕ وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ
আমি তাদের জন্য তাতে নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম যে, প্রাণের বদলে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান, দাঁতের বদলে দাঁত এবং জখমের বদলে অনুরূপ জখম। তবে কেউ তা ক্ষমা করে দিলে, তা তার (ক্ষমাকারীর) জন্য পাপের কাফফারা হয়ে যাবে। আর আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন যারা সে অনুযায়ী মীমাংসা করে না, তারাই অত্যাচারী। (সূরা মায়েদা- ৪৫)
কিসাসের মধ্যে মানুষের জীবন নিহিত রয়েছে :
وَلَكُمْ فِى الْقِصَاصِ حَيَاةٌ يَّاۤ اُولِى الْاَلْبَابِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ
হে জ্ঞানবান লোকেরা! কিসাস (হত্যার প্রতিশোধ) গ্রহণের মধ্যে তোমাদের জন্য জীবন রয়েছে। যাতে তোমরা ভয় করতে পার। (সূরা বাক্বারা- ১৭৯)
ব্যাখ্যা : قِصَاصٌ (ক্বিসাস) হচ্ছে, রক্তপাতের বদলা বা প্রতিশোধ। অর্থাৎ হত্যাকারীর সাথে এমন ব্যবহার করা যেমন সে নিহত ব্যক্তির সাথে করেছে। কিন্তু এর অর্থ এ নয় যে, হত্যাকারী যেভাবে নিহত ব্যক্তিকে হত্যা করেছে ঠিক সেভাবেই তাকে হত্যা করতে হবে। বরং এর অর্থ হচ্ছে, সে একজনকে হত্যা করেছে তাই তাকেও হত্যা করা হবে।
‘বৈধ হত্যা’ পাঁচটি ক্ষেত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ। (এক) জেনে বুঝে হত্যাকারী থেকে কিসাস নেয়া। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি কাউকে হত্যা করলে এর বিনিময়ে তাকেও হত্যা করা। (দুই) আল্লাহর সত্য দ্বীনের পথে বাধাদানকারীকে শাস্তি দেয়া। (তিন) ইসলামী রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা উৎখাত করার প্রচেষ্টাকারীদের শাস্তি দেয়া। (চার) বিবাহিত পুরুষ ও নারীকে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার শাস্তি দেয়া। (পাঁচ) মুরতাদ তথা যে ইসলাম ত্যাগ করে তাকে শাস্তি দেয়া। শুধুমাত্র এ পাঁচটি ক্ষেত্রে মানুষের প্রাণের মর্যাদা রহিত হয় এবং তাকে হত্যা করা বৈধ হিসেবে গণ্য হয়। হত্যার ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করা নিষিদ্ধ। যেমন অপরাধী ছাড়া অন্যদেরকেও হত্যা করা, অপরাধীকে কষ্ট দিয়ে হত্যা করা, হত্যার পর তার লাশের সাথে অন্যায় আচরণ করা ইত্যাদি।
وَلَا تَقْتُلُوْاۤ اَنْفُسَكُمْ اِنَّ اللهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيْمًا
একে অপরকে হত্যা করো না, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। (সূরা নিসা- ২৯)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতের দু’টি অর্থ হয়। (এক) পরস্পরকে হত্যা করো না। (দুই) আত্মহত্যা করো না। মহান আল্লাহ মানুষকে মর্যাদাসম্পন্ন করেছেন। অন্যের প্রাণের সাথে সাথে মানুষের নিজের প্রাণও সম্মানের অন্তর্ভুক্ত। কাজেই মানুষ হত্যা যতবড় অপরাধ, আত্মহত্যা করাও ঠিক ততবড় অপরাধ। মানুষ নিজে নিজের প্রাণের মালিক নয় এবং একে নিজ ক্ষমতায় নিঃশেষ করে দেয়ার অধিকারও সে রাখে না। বরং তার এ প্রাণ আল্লাহর মালিকানাধীন, তিনি এ প্রাণকে যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। তিনি ইচ্ছা করলে ব্যক্তির শরীরের মধ্যেও রাখতে পারেন, আবার শরীর থেকে পৃথক করেও রাখতে পারেন। তিনি একে কষ্টেও রাখতে পারেন, আবার প্রশান্তিতেও রাখতে পারেন। মূলত এর দ্বারা তিনি আমাদের পরীক্ষা নিচ্ছেন। তবে তিনি যেভাবেই আমাদের পরীক্ষা নেন না কেন, পরীক্ষার শেষ সময় পর্যন্ত আমাদেরকে সেভাবেই পরীক্ষা দিয়ে যেতে হবে। আল্লাহর দেয়া সময়কে ইচ্ছা করে বিনষ্ট করে দিয়ে পরীক্ষাগৃহ থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা ভুল পদক্ষেপ ছাড়া আর কিছুই নয়। আবার এ পালিয়ে যাওয়ার কাজটিও এমন এক অপরাধের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়, যাকে আল্লাহ সুস্পষ্ট ভাষায় হারাম হিসেবে গণ্য করেছেন। এটা কোন ক্রমেই কাম্য হতে পারে না।
وَلَا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِيْ حَرَّمَ اللهُ اِلَّا بِالْحَقِّؕ ذٰلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهٖ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُوْنَ
আল্লাহ যাকে হত্যা করা নিষিদ্ধ করেছেন, তোমরা তাকে যথার্থ কারণ ছাড়া হত্যা করো না। তিনি তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিলেন, যাতে তোমরা অনুধাবন করতে পার। (সূরা আন‘আম- ১৫১)
একজনকে হত্যা করা সারা দুনিয়ার মানুষকে হত্যা করার সমান :
مَنْ قَتَلَ نَفْسًا ۢبِغَيْرِ نَفْسٍ اَوْ فَسَادٍ فِى الْاَرْضِ فَكَاَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِيْعًاؕ وَمَنْ اَحْيَاهَا فَكَاَنَّمَاۤ اَحْيَا النَّاسَ جَمِيْعًا
যে ব্যক্তি কাউকে প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ কিংবা দুনিয়ায় ফাসাদ সৃষ্টি করার কারণ ব্যতীত অন্য কোন কারণে হত্যা করবে, সে যেন দুনিয়ার সকল মানুষকেই হত্যা করল। আর যে ব্যক্তি কারো প্রাণ বাঁচাল, সে যেন সমস্ত মানুষের প্রাণ বাঁচাল। (সূরা মায়েদা- ৩২)
মানুষ হত্যার সূচনা হয় আদম (আঃ) এর পুত্র কাবিল এর মাধ্যমে :
وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَاَ ابْنَيْ اٰدَمَ بِالْحَقِّ اِذْ قَرَّبَا قُرْبَانًا فَتُقُبِّلَ مِنْ اَحَدِهِمَا وَلَمْ يُتَقَبَّلْ مِنَ الْاٰخَرِؕ قَالَ لَاَقْتُلَنَّكَؕ قَالَ اِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللهُ مِنَ الْمُتَّقِيْنَ
তুমি তাদেরকে আদমের দু’পুত্রের বিবরণ সঠিকভাবে শুনাও। যখন তারা কুরবানী করেছিল তখন তাদের একজনের কুরবানী কবুল করা হয়েছিল এবং অপরজনের কুরবানী কবুল করা হয়নি। অতঃপর (যার কুরবানী কবুল করা হয়নি) সে বলল, ‘‘অবশ্যই আমি তোমাকে হত্যা করব।’’ তখন অপরজন বলল, ‘‘আল্লাহ একমাত্র পরহেযগারদের কুরবানীই কবুল করে থাকেন।’’ (সূরা মায়েদা- ২৭)
হাবিল কাবিলকে হত্যা করতে রাজি ছিল না :
لَئِنْ ۢبَسَطْتَّ اِلَيَّ يَدَكَ لِتَقْتُلَنِيْ مَاۤ اَنَاْ بِبَاسِطٍ يَّدِيَ اِلَيْكَ لِاَقْتُلَكَۚ اِنِّۤيْ اَخَافُ اللهَ رَبَّ الْعَالَمِيْنَ
(হাবিল বলল) যদি তুমি আমাকে হত্যা করার জন্য আমার দিকে তোমার হাত বাড়াও, তবুও আমি তোমাকে হত্যা করার জন্য তোমার দিকে আমার হাত বাড়াব না। কেননা আমি বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করি। (সূরা মায়েদা- ২৮)
اِنِّۤيْ اُرِيْدُ اَنْ تَبُوْٓءَ بِاِثْمِيْ وَاِثْمِكَ فَتَكُوْنَ مِنْ اَصْحَابِ النَّارِۚ وَذٰلِكَ جَزَآءُ الظَّالِمِيْنَ
আমি চাই, তুমি আমার ও তোমার গোনাহের বোঝা বহন কর, তারপর তুমি জাহান্নামবাসীদের মধ্যে শামিল হয়ে যাও। আর এটাই হলো অত্যাচারীদের (প্রকৃত) শাস্তি। (সূরা মায়েদা- ২৯)
কাবিল তার ভাই হাবিলকে হত্যা করল :
فَطَوَّعَتْ لَهٗ نَفْسُهٗ قَتْلَ اَخِيْهِ فَقَتَلَهٗ فَاَصْبَحَ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
অতঃপর তার প্রবৃত্তি তার ভাইকে হত্যা করার উস্কানি দিল এবং সে তাকে হত্যা করল। ফলে সে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে শামিল হয়ে গেল। (সূরা মায়েদা- ৩০)
ভাইকে হত্যা করে কাবিল চরমভাবে লজ্জিত হলো :
فَبَعَثَ اللهُ غُرَابًا يَّبْحَثُ فِى الْاَرْضِ لِيُرِيَهٗ كَيْفَ يُوَارِيْ سَوْاَةَ اَخِيْهِؕ قَالَ يَا وَيْلَتَاۤ اَعَجَزْتُ اَنْ اَكُوْنَ مِثْلَ هٰذَا الْغُرَابِ فَاُوَارِيَ سَوْاَةَ اَخِيْۚ فَاَصْبَحَ مِنَ النَّادِمِيْنَ
তারপর আল্লাহ একটি কাক পাঠালেন, সে মাটি খুঁড়তে লাগল তাকে দেখানোর জন্য যে, কীভাবে সে তার ভাইয়ের লাশ লুকিয়ে রাখবে। (এসব দেখে) সে বলল, হায়! আমি কি এ কাকের মতোও হতে পারলাম না যে, আমার ভাইয়ের লাশ লুকিয়ে রাখতে পারি? অতঃপর সে লাঞ্ছিতদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল। (সূরা মায়েদা- ৩১)
ব্যাখ্যা : মহান আল্লাহ একটি কাকের মাধ্যমে আদম (আঃ) এর বিভ্রান্ত পুত্রটিকে তার মূর্খতা সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন। ফলে যখন সে নিজের মনের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করার সুযোগ পেয়েছে তখন তার লজ্জা কেবলমাত্র এতটুকু বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি যে, সে লাশ লুকানোর কৌশল বের করার ব্যাপারে কাকের চেয়ে পেছনে থেকে গেল বরং তার মনে এ অনুভূতিও জন্ম নিয়েছে যে, নিজের ভাইকে হত্যা করে সে কত বড় মূর্খতার পরিচয় দিয়েছে।
বনী ইসরাঈলরা অনেক নবীকে হত্যা করেছে :
لَقَدْ اَخَذْنَا مِيْثَاقَ بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ وَاَرْسَلْنَاۤ اِلَيْهِمْ رُسُلًاؕ كُلَّمَا جَآءَهُمْ رَسُوْلٌ ۢبِمَا لَا تَهْوٰۤى اَنْفُسُهُمْ فَرِيْقًا كَذَّبُوْا وَفَرِيْقًا يَّقْتُلُوْنَ
আমি বনী ইসরাঈলের নিকট হতে অঙ্গীকার গ্রহণ করছিলাম এবং তাদের নিকট রাসূল প্রেরণ করেছিলাম। অতঃপর যখনই কোন রাসূল তাদের নিকট এমন কিছু নিয়ে এসেছেন যা তাদের মনঃপূত নয়, তখনই তারা কাউকে মিথ্যারোপ করেছে এবং কাউকে হত্যা করেছে। (সূরা মায়েদা- ৭০)
ইবরাহীম (আঃ) কে লোকেরা হত্যা করতে চেয়েছিল :
فَمَا كَانَ جَوَابَ قَوْمِهٖۤ اِلَّاۤ اَنْ قَالُوا اقْتُلُوْهُ اَوْ حَرِّقُوْهُ فَاَنْجَاهُ اللهُ مِنَ النَّارِؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ
উত্তরে ইবরাহীমের সম্প্রদায় শুধু এ বলল যে, একে হত্যা করো অথবা অগ্নিদগ্ধ করো। কিন্তু আল্লাহ তাকে অগ্নি হতে রক্ষা করলেন। নিশ্চয় এতে মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে। (সূরা আনকাবূত- ২৪)
ইউসুফ (আঃ) কে তাঁর ভাইয়েরা হত্যা করতে চেয়েছিল :
اُقْتُلُوْا يُوْسُفَ اَوِ اطْرَحُوْهُ اَرْضًا يَّخْلُ لَكُمْ وَجْهُ اَبِيْكُمْ وَتَكُوْنُوْا مِنْ ۢبَعْدِهٖ قَوْمًا صَالِحِيْنَ
তোমরা ইউসুফকে হত্যা করো অথবা তাঁকে কোন স্থানে ফেলে আসো, ফলে তোমাদের পিতার দৃষ্টি শুধু তোমাদের প্রতিই নিবিষ্ট হবে। অতঃপর তোমরা ভালো লোক হয়ে যাবে। (সূরা ইউসুফ- ৯)
মূসা (আঃ) কে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল :
وَقَالَ فِرْعَوْنُ ذَرُوْنِۤيْ اَقْتُلْ مُوْسٰى وَلْيَدْعُ رَبَّهٗ
ফিরাউন বলল, আমাকে ছেড়ে দাও আমি মূসাকে হত্যা করব, আর সে তার প্রতিপালককে ডাকুক। (সূরা মু’মিন- ২৬)
আমাদের নবীকেও হত্যা করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে :
وَاِذْ يَمْكُرُ بِكَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِيُثْبِتُوْكَ اَوْ يَقْتُلُوْكَ اَوْ يُخْرِجُوْكَؕ وَيَمْكُرُوْنَ وَيَمْكُرُ اللهُؕ وَاللهُ خَيْرُ الْمَاكِرِيْنَ
(স্মরণ করো) যখন কাফিররা তোমার বিরুদ্ধে তোমাকে বন্দী করার জন্য অথবা হত্যা করার জন্য কিংবা নির্বাসিত করার জন্য ষড়যন্ত্র করেছিল। (লক্ষ্য করো) তারা কৌশল অবলম্বন করে এবং আল্লাহও কৌশল অবলম্বন করেন। আর আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ কৌশলী। (সূরা আনফাল- ৩০)
ইসলামের আহবানকারীদেরকে হত্যাকারীরা কঠিন শাস্তি ভোগ করবে :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَكْفُرُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِ وَيَقْتُلُوْنَ النَّبِيِّيْنَ بِغَيْرِ حَقٍّ وَّيَقْتُلُوْنَ الَّذِيْنَ يَأْمُرُوْنَ بِالْقِسْطِ مِنَ النَّاسِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ اَلِيْمٍ
নিশ্চয় যারা আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করেছে, অন্যায়ভাবে নবীদেরকে হত্যা করেছে এবং যারা মানবজাতিকে ন্যায়-ইনসাফের নির্দেশ দেয় তাদেরকেও হত্যা করেছে, তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সংবাদ দাও। (সূরা আলে ইমরান- ২১)
স্বেচ্ছায় কোন মুমিনকে হত্যা করলে চির জাহান্নামী হতে হবে :
وَمَنْ يَّقْتُلْ مُؤْمِنًا مُّتَعَمِّدًا فَجَزَآؤُهٗ جَهَنَّمُ خَالِدًا فِيْهَا وَغَضِبَ اللهُ عَلَيْهِ وَلَعَنَهٗ وَاَعَدَّ لَهٗ عَذَابًا عَظِيْمًا
আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুমিনকে হত্যা করবে, তার শাস্তি হবে জাহান্নাম; সেখানে সে স্থায়ী হবে। আল্লাহ তার প্রতি রাগান্বিত হন, তাকে অভিশপ্ত করেন এবং তার জন্য প্রস্তুত করে রাখেন মহাশাস্তি। (সূরা নিসা- ৯৩)
ভুলে কোন মুমিনকে হত্যা করলে কাফ্ফারা দিতে হবে :
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ اَنْ يَّقْتُلَ مُؤْمِنًا اِلَّا خَطَأًۚ وَمَنْ قَتَلَ مُؤْمِنًا خَطَأً فَتَحْرِيْرُ رَقَبَةٍ مُّؤْمِنَةٍ وَّدِيَةٌ مُّسَلَّمَةٌ اِلٰۤى اَهْلِهٖۤ اِلَّاۤ اَنْ يَّصَّدَّقُوْاؕ فَاِنْ كَانَ مِنْ قَوْمٍ عَدُوًّا لَّكُمْ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَتَحْرِيْرُ رَقَبَةٍ مُّؤْمِنَةٍؕ وَاِنْ كَانَ مِنْ قَوْمٍ ۢبَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُمْ مِّيْثَاقٌ فَدِيَةٌ مُّسَلَّمَةٌ اِلٰۤى اَهْلِهٖ وَتَحْرِيْرُ رَقَبَةٍ مُّؤْمِنَةٍۚ فَمَنْ لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِؗ تَوْبَةً مِّنَ اللهِؕ وَكَانَ اللهُ عَلِيمًا حَكِيْمًا
কোন মুমিনকে হত্যা করা কোন মুমিনের কাজ নয়, তবে ভুলবশত হত্যা করে ফেললে তা স্বতন্ত্র। আর যদি (কোন মুমিন অপর) কোন মুমিনকে ভুলবশত হত্যা করেই ফেলে, তবে সে যেন একজন মুমিন দাস আযাদ করে দেয় এবং তার পরিবারকে রক্তপণ অর্পণ করে; তবে যদি তারা (রক্তপণ) ক্ষমা করে দেয় (তা ভিন্ন কথা)। আর যদি সে তোমাদের শত্রুপক্ষের লোক হয় এবং মুমিন হয়, তবে সে যেন (শুধুমাত্র) একজন মুমিন দাস মুক্ত করে দেয়। আর যদি সে এমন এক সম্প্রদায়ভুক্ত হয়, যার সঙ্গে তোমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ; তবে সে যেন তার পরিবারকে রক্তপণ অর্পণ করে দেয় এবং একজন মুমিন দাস মুক্ত করে দেয়, কিন্তু যে তা করতে পারবে না সে যেন ধারাবাহিকভাবে দু’মাস রোযা রাখে। বস্তুত এটা আল্লাহর পক্ষ হতে তাওবার জন্য একটি ব্যবস্থামাত্র; আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা- ৯২)
অন্যায় হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার বিধান রয়েছে :
وَلَا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِيْ حَرَّمَ اللهُ اِلَّا بِالْحَقِّؕ وَمَنْ قُتِلَ مَظْلُوْمًا فَقَدْ جَعَلْنَا لِوَلِيِّهٖ سُلْطَانًا فَلَا يُسْرِفْ فِّى الْقَتْلِؕ اِنَّهٗ كَانَ مَنْصُوْرًا
আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন যথার্থ কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করো না। এরপরও যদি কেউ অন্যায়ভাবে নিহত হয়, তবে তার উত্তরাধিকারীদেরকে তো আমি এর প্রতিকারের অধিকার দিয়েছিই, কিন্তু হত্যার ব্যাপারে সে যেন বাড়াবাড়ি না করে; (এতে) নিশ্চয় সে সাহায্যপ্রাপ্ত হবে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩৩)
হত্যার কিসাস নেয়াকে ফরজ করা হয়েছে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِصَاصُ فِى الْقَتْلٰىؕ اَ لْحُرُّ بِالْحُرِّ وَالْعَبْدُ بِالْعَبْدِ وَالْاُنْثٰى بِالْاُنْثٰىؕ فَمَنْ عُفِيَ لَهٗ مِنْ اَخِيْهِ شَيْءٌ فَاتِّبَاعٌ ۢبِالْمَعْرُوْفِ وَاَدَآءٌ اِلَيْهِ بِاِحْسَانٍؕ ذٰلِكَ تَخْفِيْفٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَرَحْمَةٌؕ فَمَنِ اعْتَدٰى بَعْدَ ذٰلِكَ فَلَهٗ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
হে ঈমানদারগণ! নিহতদের ব্যাপারে তোমাদের জন্য কিসাস (প্রতিশোধ গ্রহণের বিধান) ফরয করে দেয়া হলো। স্বাধীন ব্যক্তির পরিবর্তে স্বাধীন ব্যক্তি, দাসের পরিবর্তে দাস এবং নারীর পরিবর্তে নারী। কিন্তু কেউ যদি তার ভাই কর্তৃক কোন বিষয়ে ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়, তবে যেন ন্যায়সঙ্গতভাবে (রক্তমূল্য) তাগাদা করে এবং (হত্যাকারী) সদ্ভাবে তা পরিশোধ করে দেবে। এটা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে হালকা বিধান ও করুণা। অতঃপর যে ব্যক্তি সীমালঙ্ঘন করবে, তার জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরা বাক্বারা- ১৭৮)
وَكَتَبْنَا عَلَيْهِمْ فِيْهَاۤ اَنَّ النَّفْسَ بِالنَّفْسِ وَالْعَيْنَ بِالْعَيْنِ وَالْاَنْفَ بِالْاَنْفِ وَالْاُذُنَ بِالْاُذُنِ وَالسِّنَّ بِالسِّنِّ وَالْجُرُوْحَ قِصَاصٌؕ فَمَنْ تَصَدَّقَ بِهٖ فَهُوَ كَفَّارَةٌ لَّهٗؕ وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ
আমি তাদের জন্য তাতে নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম যে, প্রাণের বদলে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান, দাঁতের বদলে দাঁত এবং জখমের বদলে অনুরূপ জখম। তবে কেউ তা ক্ষমা করে দিলে, তা তার (ক্ষমাকারীর) জন্য পাপের কাফফারা হয়ে যাবে। আর আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন যারা সে অনুযায়ী মীমাংসা করে না, তারাই অত্যাচারী। (সূরা মায়েদা- ৪৫)
কিসাসের মধ্যে মানুষের জীবন নিহিত রয়েছে :
وَلَكُمْ فِى الْقِصَاصِ حَيَاةٌ يَّاۤ اُولِى الْاَلْبَابِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ
হে জ্ঞানবান লোকেরা! কিসাস (হত্যার প্রতিশোধ) গ্রহণের মধ্যে তোমাদের জন্য জীবন রয়েছে। যাতে তোমরা ভয় করতে পার। (সূরা বাক্বারা- ১৭৯)
ব্যাখ্যা : قِصَاصٌ (ক্বিসাস) হচ্ছে, রক্তপাতের বদলা বা প্রতিশোধ। অর্থাৎ হত্যাকারীর সাথে এমন ব্যবহার করা যেমন সে নিহত ব্যক্তির সাথে করেছে। কিন্তু এর অর্থ এ নয় যে, হত্যাকারী যেভাবে নিহত ব্যক্তিকে হত্যা করেছে ঠিক সেভাবেই তাকে হত্যা করতে হবে। বরং এর অর্থ হচ্ছে, সে একজনকে হত্যা করেছে তাই তাকেও হত্যা করা হবে।
‘বৈধ হত্যা’ পাঁচটি ক্ষেত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ। (এক) জেনে বুঝে হত্যাকারী থেকে কিসাস নেয়া। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি কাউকে হত্যা করলে এর বিনিময়ে তাকেও হত্যা করা। (দুই) আল্লাহর সত্য দ্বীনের পথে বাধাদানকারীকে শাস্তি দেয়া। (তিন) ইসলামী রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা উৎখাত করার প্রচেষ্টাকারীদের শাস্তি দেয়া। (চার) বিবাহিত পুরুষ ও নারীকে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার শাস্তি দেয়া। (পাঁচ) মুরতাদ তথা যে ইসলাম ত্যাগ করে তাকে শাস্তি দেয়া। শুধুমাত্র এ পাঁচটি ক্ষেত্রে মানুষের প্রাণের মর্যাদা রহিত হয় এবং তাকে হত্যা করা বৈধ হিসেবে গণ্য হয়। হত্যার ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করা নিষিদ্ধ। যেমন অপরাধী ছাড়া অন্যদেরকেও হত্যা করা, অপরাধীকে কষ্ট দিয়ে হত্যা করা, হত্যার পর তার লাশের সাথে অন্যায় আচরণ করা ইত্যাদি।
আল্লাহ যিনার ধারে কাছেও যেতে নিষেধ করেছেন :
وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَاۤ اِنَّهٗ كَانَ فَاحِشَةًؕ وَسَآءَ سَبِيْلًا
আর যিনার নিকটবর্তীও হয়ো না, নিশ্চয় এটা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩২)
ব্যাখ্যা : ‘যিনার কাছেও যেয়ো না’- এ হুকুম ব্যক্তির জন্য এবং সামগ্রিকভাবে সমগ্র সমাজের জন্যও। ব্যক্তির জন্য এ হুকুমের অর্থ হচ্ছে, সে নিছক যিনার কাজ থেকে দূরে থেকেই ক্ষান্ত হবে না বরং এ পথের দিকে টেনে নিয়ে যায় এমনসব আকর্ষণ সৃষ্টিকারী বিষয়গুলো থেকেও দূরে থাকবে। আর সমাজের ব্যাপারে বলা যায়, এ হুকুমের প্রেক্ষিতে সমাজজীবনে যিনা ও যিনার কারণসমূহের পথ বন্ধ করে দেয়া সমাজের জন্য ফরয হয়ে যাবে। এ উদ্দেশ্যে সে আইন প্রণয়ন, শিক্ষা ও অনুশীলন দান, সামাজিক পরিবেশের সংস্কার সাধন এবং অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যিনা বা ব্যভিচার বলতে একজন পুরুষ ও একজন স্ত্রীলোক নিজেদের মধ্যে কোন বৈধ দাম্পত্য সম্পর্ক ছাড়াই পরস্পর যৌন মিলনে লিপ্ত হওয়াকে বুঝায়। এ কাজটি নৈতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক দিক হতে দূষণীয় হওয়ার ব্যাপারে প্রাচীন যুগ থেকে আজ পর্যন্ত কোন মানবসমাজেই দ্বিমত নেই। কেননা প্রতিটি মানুষের সাধারণ ফিতরাত বা প্রকৃতি এটি হারাম হওয়ার দাবী জানায়। তাছাড়া মানবজাতির অস্তিত্ব ও স্থায়িত্ব এবং মানবিক সভ্যতা প্রতিষ্ঠা কোনক্রমেই এ বিষয়টির উপর নির্ভর করে না। কেননা এ ধরনের কার্যকলাপের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে শুধুমাত্র আনন্দ উপভোগ করা, যা মানবজাতির অস্তিত্ব ও স্থায়িত্বকে রক্ষা করার পরিবর্তে তার ধ্বংসকেই স্বাগত জানায়। এর মূল পদ্ধতি হচ্ছে, বিবাহ পদ্ধতি। এর মাধ্যমে মানবজাতির প্রতিটি সম্পর্ক এমন একটি স্থায়ী ও বিশ্বস্ততার চুক্তির ভিত্তিতে গড়ে উঠে, যা সমাজের সকলের কাছে পরিচিত এবং সমাজও এর স্থায়িত্বের ব্যাপারে দায়বদ্ধ। কেননা এ ধরনের চুক্তি ছাড়া মানুষের বংশধারা এক দিনের জন্যও চলতে পারে না।
যিনার কাজে কোন মেয়েকে বাধ্য করা যাবে না :
وَلَا تُكْرِهُوْا فَتَيَاتِكُمْ عَلَى الْبِغَآءِ اِنْ اَرَدْنَ تَحَصُّنًا لِّتَبْتَغُوْا عَرَضَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَاؕ وَمَنْ يُّكْرِهْهُّنَّ فَاِنَّ اللهَ مِنْ ۢ بَعْدِ اِكْرَاهِهِنَّ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
তোমাদের দাসীগণ সতীত্ব রক্ষা করতে চাইলে পার্থিব জীবনের ধন-লালসায় তাদেরকে ব্যভিচারিণী হতে বাধ্য করো না। আর যদি তাদেরকে বাধ্য করা হয়, তবে নিশ্চয় আল্লাহ জবরদস্তির পর তাদের উপর ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা নূর- ৩৩)
ব্যাখ্যা : জাহেলী যুগে আরব দেশে দু’ধরনের পতিতাবৃত্তির প্রচলন ছিল। (এক) ঘরোয়া পরিবেশে গোপন বেশ্যাবৃত্তি। (দুই) যথারীতি বেশ্যালয়ে বেশ্যাবৃত্তি। ইসলামী রাষ্ট্রের সীমানার মধ্যে বেশ্যাবৃত্তির ব্যবসাকে সম্পূর্ণরূপে আইনবিরোধী বলে গণ্য করা হয়েছে। নবী ﷺ যিনার বিনিময়ে অর্জিত অর্থকে হারাম ও নিকৃষ্টতম বলে গণ্য করেছেন। (সহীহ বুখারী, হা/৫৩৪৬; সহীহ মুসলিম, হা/৪০৯৪; আবু দাউদ, হা/৩৪৮৬)
লজ্জাস্থানের হেফাজত করা মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য :
وَالَّذِيْنَ هُمْ لِفُرُوْجِهِمْ حَافِظُوْنَ ‐ اِلَّا عَلٰۤى اَزْوَاجِهِمْ اَوْ مَا مَلَكَتْ اَيْمَانُهُمْ فَاِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُوْمِيْنَ ‐ فَمَنِ ابْتَغٰى وَرَآءَ ذٰلِكَ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْعَادُوْنَ
আর যারা নিজেদের স্ত্রী অথবা অধিকারভুক্ত দাসী ব্যতীত (অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে) নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে, এতে তারা নিন্দনীয় হবে না। তবে কেউ যদি তাদেরকে ছাড়া অন্য কাউকে কামনা করে, তবে সে সীমালঙ্ঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (সূরা মু’মিনূন, ৫-৭; সূরা মা‘আরিজ, ২৯-৩১)
যিনা না করার জন্য নবী ﷺ নারীদের কাছ থেকে বায়‘আত (শপথ) নিতেন :
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ اِذَا جَآءَكَ الْمُؤْمِنَاتُ يُبَايِعْنَكَ عَلٰۤى اَنْ لَّا يُشْرِكْنَ بِاللهِ شَيْئًا وَّلَا يَسْرِقْنَ وَلَا يَزْنِيْنَ وَلَا يَقْتُلْنَ اَوْلَادَهُنَّ وَلَا يَأْتِيْنَ بِبُهْتَانٍ يَّفْتَرِيْنَهٗ بَيْنَ اَيْدِيْهِنَّ وَاَرْجُلِهِنَّ وَلَا يَعْصِيْنَكَ فِيْ مَعْرُوْفٍ فَبَايِعْهُنَّ وَاسْتَغْفِرْ لَهُنَّ اللهَؕ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
হে নবী! যখন মুমিন নারীরা তোমার নিকট এসে এ মর্মে বায়‘আত গ্রহণ করে যে, তারা আল্লাহর সাথে কোন শরীক স্থির করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, নিজেদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না, স্বজ্ঞানে নিজেদের মধ্যে কোন অপবাদ রটাবে না এবং কোন সৎকার্যে তোমার বিরোধিতা করবে না, তখন তুমি তাদের বায়‘আত গ্রহণ করো এবং তাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করো। নিশ্চয় আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা মুমতাহিনা- ১২)
وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَاۤ اِنَّهٗ كَانَ فَاحِشَةًؕ وَسَآءَ سَبِيْلًا
আর যিনার নিকটবর্তীও হয়ো না, নিশ্চয় এটা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩২)
ব্যাখ্যা : ‘যিনার কাছেও যেয়ো না’- এ হুকুম ব্যক্তির জন্য এবং সামগ্রিকভাবে সমগ্র সমাজের জন্যও। ব্যক্তির জন্য এ হুকুমের অর্থ হচ্ছে, সে নিছক যিনার কাজ থেকে দূরে থেকেই ক্ষান্ত হবে না বরং এ পথের দিকে টেনে নিয়ে যায় এমনসব আকর্ষণ সৃষ্টিকারী বিষয়গুলো থেকেও দূরে থাকবে। আর সমাজের ব্যাপারে বলা যায়, এ হুকুমের প্রেক্ষিতে সমাজজীবনে যিনা ও যিনার কারণসমূহের পথ বন্ধ করে দেয়া সমাজের জন্য ফরয হয়ে যাবে। এ উদ্দেশ্যে সে আইন প্রণয়ন, শিক্ষা ও অনুশীলন দান, সামাজিক পরিবেশের সংস্কার সাধন এবং অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যিনা বা ব্যভিচার বলতে একজন পুরুষ ও একজন স্ত্রীলোক নিজেদের মধ্যে কোন বৈধ দাম্পত্য সম্পর্ক ছাড়াই পরস্পর যৌন মিলনে লিপ্ত হওয়াকে বুঝায়। এ কাজটি নৈতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক দিক হতে দূষণীয় হওয়ার ব্যাপারে প্রাচীন যুগ থেকে আজ পর্যন্ত কোন মানবসমাজেই দ্বিমত নেই। কেননা প্রতিটি মানুষের সাধারণ ফিতরাত বা প্রকৃতি এটি হারাম হওয়ার দাবী জানায়। তাছাড়া মানবজাতির অস্তিত্ব ও স্থায়িত্ব এবং মানবিক সভ্যতা প্রতিষ্ঠা কোনক্রমেই এ বিষয়টির উপর নির্ভর করে না। কেননা এ ধরনের কার্যকলাপের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে শুধুমাত্র আনন্দ উপভোগ করা, যা মানবজাতির অস্তিত্ব ও স্থায়িত্বকে রক্ষা করার পরিবর্তে তার ধ্বংসকেই স্বাগত জানায়। এর মূল পদ্ধতি হচ্ছে, বিবাহ পদ্ধতি। এর মাধ্যমে মানবজাতির প্রতিটি সম্পর্ক এমন একটি স্থায়ী ও বিশ্বস্ততার চুক্তির ভিত্তিতে গড়ে উঠে, যা সমাজের সকলের কাছে পরিচিত এবং সমাজও এর স্থায়িত্বের ব্যাপারে দায়বদ্ধ। কেননা এ ধরনের চুক্তি ছাড়া মানুষের বংশধারা এক দিনের জন্যও চলতে পারে না।
যিনার কাজে কোন মেয়েকে বাধ্য করা যাবে না :
وَلَا تُكْرِهُوْا فَتَيَاتِكُمْ عَلَى الْبِغَآءِ اِنْ اَرَدْنَ تَحَصُّنًا لِّتَبْتَغُوْا عَرَضَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَاؕ وَمَنْ يُّكْرِهْهُّنَّ فَاِنَّ اللهَ مِنْ ۢ بَعْدِ اِكْرَاهِهِنَّ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
তোমাদের দাসীগণ সতীত্ব রক্ষা করতে চাইলে পার্থিব জীবনের ধন-লালসায় তাদেরকে ব্যভিচারিণী হতে বাধ্য করো না। আর যদি তাদেরকে বাধ্য করা হয়, তবে নিশ্চয় আল্লাহ জবরদস্তির পর তাদের উপর ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা নূর- ৩৩)
ব্যাখ্যা : জাহেলী যুগে আরব দেশে দু’ধরনের পতিতাবৃত্তির প্রচলন ছিল। (এক) ঘরোয়া পরিবেশে গোপন বেশ্যাবৃত্তি। (দুই) যথারীতি বেশ্যালয়ে বেশ্যাবৃত্তি। ইসলামী রাষ্ট্রের সীমানার মধ্যে বেশ্যাবৃত্তির ব্যবসাকে সম্পূর্ণরূপে আইনবিরোধী বলে গণ্য করা হয়েছে। নবী ﷺ যিনার বিনিময়ে অর্জিত অর্থকে হারাম ও নিকৃষ্টতম বলে গণ্য করেছেন। (সহীহ বুখারী, হা/৫৩৪৬; সহীহ মুসলিম, হা/৪০৯৪; আবু দাউদ, হা/৩৪৮৬)
লজ্জাস্থানের হেফাজত করা মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য :
وَالَّذِيْنَ هُمْ لِفُرُوْجِهِمْ حَافِظُوْنَ ‐ اِلَّا عَلٰۤى اَزْوَاجِهِمْ اَوْ مَا مَلَكَتْ اَيْمَانُهُمْ فَاِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُوْمِيْنَ ‐ فَمَنِ ابْتَغٰى وَرَآءَ ذٰلِكَ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْعَادُوْنَ
আর যারা নিজেদের স্ত্রী অথবা অধিকারভুক্ত দাসী ব্যতীত (অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে) নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে, এতে তারা নিন্দনীয় হবে না। তবে কেউ যদি তাদেরকে ছাড়া অন্য কাউকে কামনা করে, তবে সে সীমালঙ্ঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (সূরা মু’মিনূন, ৫-৭; সূরা মা‘আরিজ, ২৯-৩১)
যিনা না করার জন্য নবী ﷺ নারীদের কাছ থেকে বায়‘আত (শপথ) নিতেন :
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ اِذَا جَآءَكَ الْمُؤْمِنَاتُ يُبَايِعْنَكَ عَلٰۤى اَنْ لَّا يُشْرِكْنَ بِاللهِ شَيْئًا وَّلَا يَسْرِقْنَ وَلَا يَزْنِيْنَ وَلَا يَقْتُلْنَ اَوْلَادَهُنَّ وَلَا يَأْتِيْنَ بِبُهْتَانٍ يَّفْتَرِيْنَهٗ بَيْنَ اَيْدِيْهِنَّ وَاَرْجُلِهِنَّ وَلَا يَعْصِيْنَكَ فِيْ مَعْرُوْفٍ فَبَايِعْهُنَّ وَاسْتَغْفِرْ لَهُنَّ اللهَؕ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
হে নবী! যখন মুমিন নারীরা তোমার নিকট এসে এ মর্মে বায়‘আত গ্রহণ করে যে, তারা আল্লাহর সাথে কোন শরীক স্থির করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, নিজেদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না, স্বজ্ঞানে নিজেদের মধ্যে কোন অপবাদ রটাবে না এবং কোন সৎকার্যে তোমার বিরোধিতা করবে না, তখন তুমি তাদের বায়‘আত গ্রহণ করো এবং তাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করো। নিশ্চয় আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা মুমতাহিনা- ১২)
যিনা প্রমাণ করার জন্য চারজন পুরুষ সাক্ষ্য দিতে হবে :
وَاللَّاتِيْ يَأْتِيْنَ الْفَاحِشَةَ مِنْ نِّسَآئِكُمْ فَاسْتَشْهِدُوْا عَلَيْهِنَّ اَرْبَعَةً مِّنْكُمْ
তোমাদের নারীদের মধ্যে যারা ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তাদের উপর তোমাদের মধ্য হতে চারজন সাক্ষী উপস্থিত করবে। (সূরা নিসা- ১৫)
যিনার প্রাথমিক বিধান ছিল মহিলাদেরকে বন্দী করে রাখা :
فَاِنْ شَهِدُوْا فَاَمْسِكُوْهُنَّ فِى الْبُيُوْتِ حَتّٰى يَتَوَفَّاهُنَّ الْمَوْتُ اَوْ يَجْعَلَ اللهُ لَهُنَّ سَبِيْلًا
অতঃপর যদি তারা সাক্ষ্য দেয়, তবে তাদেরকে ঘরে আবদ্ধ রাখবে, যতক্ষণ না তাদের মৃত্যু হয় অথবা আল্লাহ তাদের জন্য কোন পথনির্দেশ দেন। (সূরা নিসা- ১৫)
নারী-পুরুষ উভয়েই শাস্তি পাবে :
وَاللَّذَانِ يَأْتِيَانِهَا مِنْكُمْ فَاٰذُوْهُمَاۚ فَاِنْ تَابَا وَاَصْلَحَا فَاَعْرِضُوْا عَنْهُمَاؕ اِنَّ اللهَ كَانَ تَوَّابًا رَّحِيْمًا
তোমাদের মধ্যে যে দু’জন এ কুকর্মে লিপ্ত হয় তাদেরকে শাস্তি দেবে, তবে যদি তারা তাওবা করে এবং সংশোধন হয়ে যায়, তবে তাদের বিষয়টি এড়িয়ে যাও। নিশ্চয় আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়াময়। (সূরা নিসা- ১৬)
বিবাহিত ক্রীতদাসীর শাস্তি স্বাধীন নারীর অর্ধেক :
فَاِذَاۤ اُحْصِنَّ فَاِنْ اَتَيْنَ بِفَاحِشَةٍ فَعَلَيْهِنَّ نِصْفُ مَا عَلَى الْمُحْصَنَاتِ مِنَ الْعَذَابِ
আর যদি তারা (ক্রীতদাসীরা) বিবাহিতা হওয়ার পরও ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তবে তাদের শাস্তি হবে স্বাধীন নারীদের অর্ধেক। (সূরা নিসা- ২৫)
চূড়ান্ত বিধান হচ্ছে অবিবাহিত হলে উভয়কে একশ’ বেত্রাঘাত করতে হবে :
اَلزَّانِيَةُ وَالزَّانِيْ فَاجْلِدُوْا كُلَّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا مِائَةَ جَلْدَةٍ
ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী প্রত্যেককে একশ’ বেত্রাঘাত করবে। (সূরা নূর- ২)
ব্যাখ্যা : আর যিনাকারী নারী-পুরুষ যদি বিবাহিত হয় তবে তাদেরকে হত্যা করতে হবে।
শাস্তি প্রয়োগে কোন দয়া দেখানো যাবে না :
وَلَا تَأْخُذْكُمْ بِهِمَا رَأْفَةٌ فِيْ دِيْنِ اللهِ اِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ
আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদেরকে প্রভাবিত না করে, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হও। (সূরা নূর- ২)
জনসমাবেশে শাস্তি প্রয়োগ করতে হবে :
وَلْيَشْهَدْ عَذَابَهُمَا طَآئِفَةٌ مِّنَ الْمُؤْمِنِيْنَ
মুমিনদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে। (সূরা নূর- ২)
ব্যাখ্যা : ঘোষণা দিয়ে সাধারণ লোকের সামনে শাস্তি দিতে হবে। এর ফলে একদিকে অপরাধী অপমানিত হবে এবং অন্যদিকে সাধারণ মানুষ শিক্ষা লাভ করবে। ইসলামী আইনে শাস্তির তিনটি উদ্দেশ্য থাকে। আর তা হলো : (এক) অপরাধী থেকে তার যুলুম ও বাড়াবাড়ির প্রতিশোধ নেয়া এবং সে অন্য ব্যক্তি বা সমাজের প্রতি যে অন্যায় করেছে তার কিছুটা স্বাদ আস্বাদন করানো। (দুই) তাকে পুনরায় অপরাধ করা থেকে বিরত রাখা। (তিন) তার শাস্তিকে শিক্ষণীয় করে তুলা, যাতে করে সমাজের খারাপ প্রবণতার অধিকারী অন্য লোকদের শিক্ষা হয়ে যায় এবং তারা যেন এ ধরনের কোন অপরাধ করার সাহস না পায়। এ ছাড়াও প্রকাশ্যে শাস্তি দেয়ার আরো একটি কল্যাণ হচ্ছে, এ অবস্থায় যেন শাসকরা শাস্তি দেয়ার ক্ষেত্রে অহেতুক সুবিধা প্রদান বা অহেতুক কঠোরতা প্রদর্শন করার সাহস না দেখাতে পারে।
যিনাকারী পরকালে দ্বিগুণ শাস্তি ভোগ করবে :
وَمَنْ يَّفْعَلْ ذٰلِكَ يَلْقَ اَثَامًا ‐ يُضَاعَفْ لَهُ الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيَخْلُدْ فِيْهٖ مُهَانًا
যে এগুলো করে, সে শাস্তি ভোগ করবে। কিয়ামতের দিন তার শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে এবং সেখানে সে হীন অবস্থায় স্থায়ী হবে। (সূরা ফুরক্বান- ৬৮, ৬৯)
ব্যাখ্যা : ইসলাম মানবসমাজকে যিনার আশঙ্কা থেকে বাঁচানোর জন্য শুধুমাত্র দন্ডবিধি আইনের উপর নির্ভর করে না, বরং তার জন্য ব্যাপক আকারে সংস্কার ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা অবলম্বন করে। আর এ দন্ডবিধি আইনকে নির্ধারণ করেছে সর্বশেষ উপায় হিসেবে। এর উদ্দেশ্য এ নয় যে, লোকেরা এ অপরাধ করে যেতেই থাকুক এবং তাদেরকে বেত্রাঘাত করার জন্য দিনরাত তাদের উপর নজর রাখা হোক। বরং এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, লোকেরা যেন এ অপরাধ না করে এবং কাউকে শাস্তি দেয়ার সুযোগই না পাওয়া যায়। ইসলাম সবার আগে মানুষের প্রবৃত্তির সংশোধন করে। তার মনের মধ্যে বসিয়ে দেয় অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী এবং সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক আল্লাহর ভয়, যা তার মধ্যে আখিরাতে জিজ্ঞাসাবাদের অনুভূতি জাগিয়ে তুলে। তার মধ্যে আল্লাহর আইনের আনুগত্য করার প্রেরণা সৃষ্টি করে। আর এগুলোই হচ্ছে ঈমানের অপরিহার্য দাবী। তারপর বার বার তাকে এ মর্মে সতর্ক করে দেয় যে, মহান আল্লাহর কাছে যিনা ও সতীত্বহীনতা এত মারাত্মক গোনাহের অন্তর্ভুক্ত, যেগুলো সম্পর্কে কিয়ামতের দিন কঠোরভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এবং এর মাধ্যমে জাহান্নামের কঠিন শাস্তির মুখোমুখী হতে হবে। তারপর ইসলাম মানুষের জন্য সামর্থ্যানুযায়ী বিবাহ করা এবং বিবাহের যাবতীয় সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। এক স্ত্রীতে তৃপ্ত না হলে চারটি পর্যন্ত বৈধ স্ত্রী রাখার সুযোগ দেয়। স্বামী-স্ত্রীর মনের মিল না হলে স্বামীর জন্য তালাক ও স্ত্রীর জন্য ‘খুলা’ তালাকের সুযোগ দেয়। আর উভয়ের মাঝে মনোমালিন্যের সময় পারিবারিক সালিশ থেকে শুরু করে সরকারি আদালত পর্যন্ত আপীল করার সুযাগ থাকে। এর ফলে দু’জনের মধ্যে সমঝোতা হয়ে যেতে পারে; নতুবা উভয়ে বিবাহ বন্ধন হতে মুক্ত হয়ে নিজেদের ইচ্ছামতো অন্য কোথাও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে।
তারপর ইসলাম সমাজ থেকে এমনসব কার্যক্রম নির্মূল করে দেয়, যেগুলো যিনার আগ্রহ ও তার উদ্যোগ সৃষ্টি করে এবং এর জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে পারে। যিনার শাস্তি বর্ণনা করার একবছর আগে সূরা আহযাবে মেয়েদেরকে গৃহ থেকে বের হওয়ার সময় চাদর মুড়ি দিয়ে এবং ঘোমটা টেনে বের হওয়ার হুকুম দেয়া হয়েছিল। মুসলিম মেয়েদের জন্য যে নবীর গৃহ ছিল আদর্শ গৃহ সেখানে বসবাসকারী মহিলাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, তারা যেন নিজেদের সৌন্দর্য ও সাজসজ্জা প্রদর্শন করে বের না হয়। এমনকি বাইরের পুরুষরা যদি তাদের কাছ থেকে কোনকিছু নিতে চায়, তবে যেন পর্দার আড়াল থেকে নেয়। দেখতে দেখতে এ আদর্শ সমস্ত মুমিন মহিলাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। কেননা তাদের কাছে জাহেলী যুগের নির্লজ্জ মহিলারা নয় বরং নবী ﷺ এর স্ত্রী ও কন্যাগণই ছিলেন অনুসরণযোগ্য। অনুরূপভাবে আইনের শাস্তি নির্ধারণ করার আগে নারী ও পুরুষের অবাধ মেলামেশা বন্ধ করা হয়, নারীদের সাজসজ্জা করে বাইরে বের হওয়া বন্ধ করা হয় এবং যে সমস্ত কার্যক্রম ও উপায়-উপকরণ যিনার পথ দেখিয়ে দেয়, সেগুলোর দরজাও বন্ধ করে দেয়া হয়। এসবের পর যিনার শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে, যাতে দৃষ্টি বিনিময় এবং সৌন্দর্যের প্রতি আকর্ষণ যিনা পর্যন্ত পৌঁছাতে না পারে। সাথে সাথে নারীদেরকে নিজেদের ঘরে মাহরাম ও গায়রে মাহরাম আত্মীয়দের মধ্যে পার্থক্য করার এবং গায়রে মাহরামদের সামনে সেজেগুজে না আসার হুকুম দেয়া হয়েছে। এসব কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের পরও যেসব দুষ্ট প্রকৃতির লোক বৈধ সুযোগ বাদ দিয়ে অবৈধ পথ অবলম্বন করে নিজেদের প্রবৃত্তির কামনা পূর্ণ করে, তাদেরকে চরম শাস্তি দেয়ার জন্যই এ শাস্তি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এ শাস্তি নিছক একজন অপরাধীর শাস্তি নয়, বরং এর মাধ্যমে এটিও প্রমাণিত হয় যে, মুসলিমসমাজ ব্যভিচারীদের অবাধ বিচরণস্থল নয়।
وَاللَّاتِيْ يَأْتِيْنَ الْفَاحِشَةَ مِنْ نِّسَآئِكُمْ فَاسْتَشْهِدُوْا عَلَيْهِنَّ اَرْبَعَةً مِّنْكُمْ
তোমাদের নারীদের মধ্যে যারা ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তাদের উপর তোমাদের মধ্য হতে চারজন সাক্ষী উপস্থিত করবে। (সূরা নিসা- ১৫)
যিনার প্রাথমিক বিধান ছিল মহিলাদেরকে বন্দী করে রাখা :
فَاِنْ شَهِدُوْا فَاَمْسِكُوْهُنَّ فِى الْبُيُوْتِ حَتّٰى يَتَوَفَّاهُنَّ الْمَوْتُ اَوْ يَجْعَلَ اللهُ لَهُنَّ سَبِيْلًا
অতঃপর যদি তারা সাক্ষ্য দেয়, তবে তাদেরকে ঘরে আবদ্ধ রাখবে, যতক্ষণ না তাদের মৃত্যু হয় অথবা আল্লাহ তাদের জন্য কোন পথনির্দেশ দেন। (সূরা নিসা- ১৫)
নারী-পুরুষ উভয়েই শাস্তি পাবে :
وَاللَّذَانِ يَأْتِيَانِهَا مِنْكُمْ فَاٰذُوْهُمَاۚ فَاِنْ تَابَا وَاَصْلَحَا فَاَعْرِضُوْا عَنْهُمَاؕ اِنَّ اللهَ كَانَ تَوَّابًا رَّحِيْمًا
তোমাদের মধ্যে যে দু’জন এ কুকর্মে লিপ্ত হয় তাদেরকে শাস্তি দেবে, তবে যদি তারা তাওবা করে এবং সংশোধন হয়ে যায়, তবে তাদের বিষয়টি এড়িয়ে যাও। নিশ্চয় আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়াময়। (সূরা নিসা- ১৬)
বিবাহিত ক্রীতদাসীর শাস্তি স্বাধীন নারীর অর্ধেক :
فَاِذَاۤ اُحْصِنَّ فَاِنْ اَتَيْنَ بِفَاحِشَةٍ فَعَلَيْهِنَّ نِصْفُ مَا عَلَى الْمُحْصَنَاتِ مِنَ الْعَذَابِ
আর যদি তারা (ক্রীতদাসীরা) বিবাহিতা হওয়ার পরও ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তবে তাদের শাস্তি হবে স্বাধীন নারীদের অর্ধেক। (সূরা নিসা- ২৫)
চূড়ান্ত বিধান হচ্ছে অবিবাহিত হলে উভয়কে একশ’ বেত্রাঘাত করতে হবে :
اَلزَّانِيَةُ وَالزَّانِيْ فَاجْلِدُوْا كُلَّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا مِائَةَ جَلْدَةٍ
ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী প্রত্যেককে একশ’ বেত্রাঘাত করবে। (সূরা নূর- ২)
ব্যাখ্যা : আর যিনাকারী নারী-পুরুষ যদি বিবাহিত হয় তবে তাদেরকে হত্যা করতে হবে।
শাস্তি প্রয়োগে কোন দয়া দেখানো যাবে না :
وَلَا تَأْخُذْكُمْ بِهِمَا رَأْفَةٌ فِيْ دِيْنِ اللهِ اِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ
আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদেরকে প্রভাবিত না করে, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হও। (সূরা নূর- ২)
জনসমাবেশে শাস্তি প্রয়োগ করতে হবে :
وَلْيَشْهَدْ عَذَابَهُمَا طَآئِفَةٌ مِّنَ الْمُؤْمِنِيْنَ
মুমিনদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে। (সূরা নূর- ২)
ব্যাখ্যা : ঘোষণা দিয়ে সাধারণ লোকের সামনে শাস্তি দিতে হবে। এর ফলে একদিকে অপরাধী অপমানিত হবে এবং অন্যদিকে সাধারণ মানুষ শিক্ষা লাভ করবে। ইসলামী আইনে শাস্তির তিনটি উদ্দেশ্য থাকে। আর তা হলো : (এক) অপরাধী থেকে তার যুলুম ও বাড়াবাড়ির প্রতিশোধ নেয়া এবং সে অন্য ব্যক্তি বা সমাজের প্রতি যে অন্যায় করেছে তার কিছুটা স্বাদ আস্বাদন করানো। (দুই) তাকে পুনরায় অপরাধ করা থেকে বিরত রাখা। (তিন) তার শাস্তিকে শিক্ষণীয় করে তুলা, যাতে করে সমাজের খারাপ প্রবণতার অধিকারী অন্য লোকদের শিক্ষা হয়ে যায় এবং তারা যেন এ ধরনের কোন অপরাধ করার সাহস না পায়। এ ছাড়াও প্রকাশ্যে শাস্তি দেয়ার আরো একটি কল্যাণ হচ্ছে, এ অবস্থায় যেন শাসকরা শাস্তি দেয়ার ক্ষেত্রে অহেতুক সুবিধা প্রদান বা অহেতুক কঠোরতা প্রদর্শন করার সাহস না দেখাতে পারে।
যিনাকারী পরকালে দ্বিগুণ শাস্তি ভোগ করবে :
وَمَنْ يَّفْعَلْ ذٰلِكَ يَلْقَ اَثَامًا ‐ يُضَاعَفْ لَهُ الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيَخْلُدْ فِيْهٖ مُهَانًا
যে এগুলো করে, সে শাস্তি ভোগ করবে। কিয়ামতের দিন তার শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে এবং সেখানে সে হীন অবস্থায় স্থায়ী হবে। (সূরা ফুরক্বান- ৬৮, ৬৯)
ব্যাখ্যা : ইসলাম মানবসমাজকে যিনার আশঙ্কা থেকে বাঁচানোর জন্য শুধুমাত্র দন্ডবিধি আইনের উপর নির্ভর করে না, বরং তার জন্য ব্যাপক আকারে সংস্কার ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা অবলম্বন করে। আর এ দন্ডবিধি আইনকে নির্ধারণ করেছে সর্বশেষ উপায় হিসেবে। এর উদ্দেশ্য এ নয় যে, লোকেরা এ অপরাধ করে যেতেই থাকুক এবং তাদেরকে বেত্রাঘাত করার জন্য দিনরাত তাদের উপর নজর রাখা হোক। বরং এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, লোকেরা যেন এ অপরাধ না করে এবং কাউকে শাস্তি দেয়ার সুযোগই না পাওয়া যায়। ইসলাম সবার আগে মানুষের প্রবৃত্তির সংশোধন করে। তার মনের মধ্যে বসিয়ে দেয় অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী এবং সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক আল্লাহর ভয়, যা তার মধ্যে আখিরাতে জিজ্ঞাসাবাদের অনুভূতি জাগিয়ে তুলে। তার মধ্যে আল্লাহর আইনের আনুগত্য করার প্রেরণা সৃষ্টি করে। আর এগুলোই হচ্ছে ঈমানের অপরিহার্য দাবী। তারপর বার বার তাকে এ মর্মে সতর্ক করে দেয় যে, মহান আল্লাহর কাছে যিনা ও সতীত্বহীনতা এত মারাত্মক গোনাহের অন্তর্ভুক্ত, যেগুলো সম্পর্কে কিয়ামতের দিন কঠোরভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এবং এর মাধ্যমে জাহান্নামের কঠিন শাস্তির মুখোমুখী হতে হবে। তারপর ইসলাম মানুষের জন্য সামর্থ্যানুযায়ী বিবাহ করা এবং বিবাহের যাবতীয় সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। এক স্ত্রীতে তৃপ্ত না হলে চারটি পর্যন্ত বৈধ স্ত্রী রাখার সুযোগ দেয়। স্বামী-স্ত্রীর মনের মিল না হলে স্বামীর জন্য তালাক ও স্ত্রীর জন্য ‘খুলা’ তালাকের সুযোগ দেয়। আর উভয়ের মাঝে মনোমালিন্যের সময় পারিবারিক সালিশ থেকে শুরু করে সরকারি আদালত পর্যন্ত আপীল করার সুযাগ থাকে। এর ফলে দু’জনের মধ্যে সমঝোতা হয়ে যেতে পারে; নতুবা উভয়ে বিবাহ বন্ধন হতে মুক্ত হয়ে নিজেদের ইচ্ছামতো অন্য কোথাও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে।
তারপর ইসলাম সমাজ থেকে এমনসব কার্যক্রম নির্মূল করে দেয়, যেগুলো যিনার আগ্রহ ও তার উদ্যোগ সৃষ্টি করে এবং এর জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে পারে। যিনার শাস্তি বর্ণনা করার একবছর আগে সূরা আহযাবে মেয়েদেরকে গৃহ থেকে বের হওয়ার সময় চাদর মুড়ি দিয়ে এবং ঘোমটা টেনে বের হওয়ার হুকুম দেয়া হয়েছিল। মুসলিম মেয়েদের জন্য যে নবীর গৃহ ছিল আদর্শ গৃহ সেখানে বসবাসকারী মহিলাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, তারা যেন নিজেদের সৌন্দর্য ও সাজসজ্জা প্রদর্শন করে বের না হয়। এমনকি বাইরের পুরুষরা যদি তাদের কাছ থেকে কোনকিছু নিতে চায়, তবে যেন পর্দার আড়াল থেকে নেয়। দেখতে দেখতে এ আদর্শ সমস্ত মুমিন মহিলাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। কেননা তাদের কাছে জাহেলী যুগের নির্লজ্জ মহিলারা নয় বরং নবী ﷺ এর স্ত্রী ও কন্যাগণই ছিলেন অনুসরণযোগ্য। অনুরূপভাবে আইনের শাস্তি নির্ধারণ করার আগে নারী ও পুরুষের অবাধ মেলামেশা বন্ধ করা হয়, নারীদের সাজসজ্জা করে বাইরে বের হওয়া বন্ধ করা হয় এবং যে সমস্ত কার্যক্রম ও উপায়-উপকরণ যিনার পথ দেখিয়ে দেয়, সেগুলোর দরজাও বন্ধ করে দেয়া হয়। এসবের পর যিনার শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে, যাতে দৃষ্টি বিনিময় এবং সৌন্দর্যের প্রতি আকর্ষণ যিনা পর্যন্ত পৌঁছাতে না পারে। সাথে সাথে নারীদেরকে নিজেদের ঘরে মাহরাম ও গায়রে মাহরাম আত্মীয়দের মধ্যে পার্থক্য করার এবং গায়রে মাহরামদের সামনে সেজেগুজে না আসার হুকুম দেয়া হয়েছে। এসব কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের পরও যেসব দুষ্ট প্রকৃতির লোক বৈধ সুযোগ বাদ দিয়ে অবৈধ পথ অবলম্বন করে নিজেদের প্রবৃত্তির কামনা পূর্ণ করে, তাদেরকে চরম শাস্তি দেয়ার জন্যই এ শাস্তি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এ শাস্তি নিছক একজন অপরাধীর শাস্তি নয়, বরং এর মাধ্যমে এটিও প্রমাণিত হয় যে, মুসলিমসমাজ ব্যভিচারীদের অবাধ বিচরণস্থল নয়।
আল্লাহ সুদ খেতে নিষেধ করেছেন :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَأْكُلُوا الرِّبَاۤ اَضْعَافًا مُّضَاعَفَةً۪ وَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা দ্বিগুণের উপর দ্বিগুণ সুদ (চক্র বৃদ্ধিহারে) ভক্ষণ করো না এবং আল্লাহকে ভয় করো, যেন তোমরা সুফলপ্রাপ্ত হও। (সূরা আলে ইমরান- ১৩০)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَذَرُوْا مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَاۤ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের বকেয়া অংশ বর্জন করো, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক। (সূরা বাক্বারা- ২৭৮)
ব্যাখ্যা : আরবি ভাষায় رِبَا (রিবা) শব্দের অর্থ বৃদ্ধি পাওয়া। পারিভাষিক অর্থে আরবরা এ শব্দটি ব্যবহার করে ঐ অতিরিক্ত অর্থের জন্য, যা ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে মূলধনের উপর নির্ধারিত হার অনুযায়ী আদায় করা হয়। আমাদের ভাষায় একেই বলা হয় সুদ। কুরআন নাযিলের সময় যেসব সুদী লেনদেনের প্রচলন ছিল সেগুলো হলো : ১. একজন অপরজনের কাছে কোন জিনিস বিক্রি করত এবং দাম আদায়ের জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করে দিত। সময়সীমার মধ্যে যদি দাম আদায় করা না হতো, তাহলে তাকে অতিরিক্ত সময় দিত এবং ঐ পণ্যের দাম আরো বৃদ্ধি করে দিত। ২. একজন অপরজনকে ঋণ দিত। অতঃপর ঋণদাতার সাথে এ মর্মে চুক্তি হতো যে, অমুক সময়ের মধ্যে সুদসহ আসল টাকা ফেরত দিতে হবে। যদি ঋণগ্রহিতা ঐ সময়ের মধ্যে টাকা ফেরত দিতে না পারত, তাহলে সুদের পরিমাণ আরো বৃদ্ধি করে দিত।
সুদের মাধ্যমে মূলত সম্পদ বৃদ্ধি পায় না :
وَمَاۤ اٰتَيْتُمْ مِّنْ رِّبًا لِّيَرْبُوَاْ فِۤيْ اَمْوَالِ النَّاسِ فَلَا يَرْبُوْا عِنْدَ اللهِۚ وَمَاۤ اٰتَيْتُمْ مِّنْ زَكَاةٍ تُرِيْدُوْنَ وَجْهَ اللهِ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُضْعِفُوْنَ
মানুষের ধনসম্পদে তোমাদের সম্পদ বৃদ্ধি পাবে, এ আশায় তোমরা যা কিছু সুদ হিসেবে দিয়ে থাক, আল্লাহর কাছে তা বৃদ্ধি পায় না। পক্ষান্তরে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য তোমরা যা কিছু যাকাত হিসেবে দিয়ে থাক (তাই বৃদ্ধি পায়), আর তারা দ্বিগুণ প্রতিদান লাভ করে। (সূরা রূম- ৩৯)
يَمْحَقُ اللهُ الرِّبَا وَيُرْبِى الصَّدَقَاتِؕ وَاللهُ لَا يُحِبُّ كُلَّ كَفَّارٍ اَثِيْمٍ
আল্লাহ সুদকে ধ্বংস করেন এবং দানকে বৃদ্ধি করেন। আর আল্লাহ প্রত্যেক অকৃতজ্ঞ পাপীকে পছন্দ করেন না। (সূরা বাক্বারা- ২৭৬)
ব্যাখ্যা : যদিও আপাতদৃষ্টিতে দেখা যায়, সুদের মাধ্যমে অর্থ বৃদ্ধি হচ্ছে এবং দান-খয়রাতের মাধ্যমে অর্থ-সম্পদ কমে যাচ্ছে, তবুও প্রকৃত ব্যাপারটি এর সম্পূর্ণ বিপরীত। আল্লাহর প্রাকৃতিক বিধান হচ্ছে, সুদ নৈতিক, আধ্যাত্মিক ও অর্থনৈতিক উন্নতির কেবল প্রতিবন্ধকতাই নয় বরং অবনতিরও সহায়ক। অপরপক্ষে দান-খয়রাত, করযে হাসানা বা উত্তম ঋণ- এসবের মাধ্যমে নৈতিক, আধ্যাত্মিক ও অর্থনৈতিক সর্বক্ষেত্রে উন্নতি লাভ করা যায়। সুদ মূলত স্বার্থপরতা, কৃপণতা, সংকীর্ণতা, নির্মমতা ইত্যাদি অসৎ চরিত্রের ফল। সুদের ফলে এ চরিত্রগুলোই মানুষের মধ্যে বিকশিত হয়। অন্যদিকে সহানুভূতি, উদারতা ও মহানুভবতা ইত্যাদি গুণাবলিই দান-খয়রাতের জন্ম দেয়। আর নিয়মিত দান-খয়রাত করতে থাকলে এ গুণগুলো মানুষের মধ্যে বিকশিত হতেই থাকে। যে সমাজের লোকেরা পরস্পরের সাথে স্বার্থবাদী আচরণ করে, নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থ ছাড়া নিঃস্বার্থভাবে অন্যের কোন উপকার করে না, একজনের প্রয়োজন ও অভাবকে অন্যজন নিজের মুনাফা লাভের সুযোগ মনে করে তা থেকে পুরোপুরি লাভবান হয় এবং ধনীদের স্বার্থ সাধারণ মানুষের স্বার্থের বিপরীত মেরুতে অবস্থান করে, সে সমাজ কখনো শক্তিশালী হতে পারে না। সে সমাজের লোকদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসার পরিবর্তে হিংসা-বিদ্বেষ ও নিষ্ঠুরতা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। সে সমাজ সর্বদা বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্যের দিকে এগিয়ে যায়।
আল্লাহ সুদকে চূড়ান্তভাবে হারাম করেছেন :
وَاَحَلَّ اللهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا
আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন আর সুদকে হারাম করেছেন। (সূরা বাক্বারা- ২৭৫)
মানুষ যুক্তি দেখিয়ে সুদ খায় :
ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ قَالُوْاۤ اِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ الرِّبَا
এটা এজন্য যে তারা বলে, ক্রয়-বিক্রয় তো সুদের মতোই। (সূরা বাক্বারা- ২৭৫)
ব্যাখ্যা : তাদের মতামতের ভুল হচ্ছে, তারা ব্যবসায় যে মূলধন খাটায় এবং তার উপর যে মুনাফা আসে, সে মুনাফালব্ধ অর্থ ও সুদের মধ্যে কোন পার্থক্য করে না। এ উভয় অর্থকে একই পর্যায়ভুক্ত মনে করে তারা যুক্তি পেশ করে থাকে যে, ব্যবসায় খাটানো অর্থের মুনাফা যখন বৈধ, তখন ঋণবাবদ প্রদত্ত অর্থের মুনাফা বৈধ হবে না কেন? বর্তমান যুগের সুদখোররাও সুদের স্বপক্ষে এই একই যুক্তি পেশ করে থাকে। কিন্তু তারা এ কথাটি চিন্তা করে না যে, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প, কারিগরি, কৃষি- যাই হোক না কেন, যেখানে মানুষ শ্রম খাটায় অথবা শ্রম ও অর্থ উভয়টিই খাটায়, সেখানে কোন একটি কারবারও এমন নেই যাতে মানুষকে ক্ষতির ঝুঁকি নিতে হয় না। মুনাফা বাবদ একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ অর্জিত হওয়ার গ্যারান্টিও থাকে না। তাহলে দুনিয়ার সমস্ত ব্যবসায় একমাত্র ঋণদাতা পুঁজিপতিরা কেন ক্ষতির ঝুঁকিমুক্ত থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ মুনাফা লাভের হকদার হবে? যারা রাত-দিন নিজেদের কারবারে সময়, মেধা, শ্রম ও পুঁজি খাটিয়ে চলছে এবং যাদের প্রচেষ্টা ও সাধনার উপরই এ কারবার ফলপ্রসূ হওয়া নির্ভর করছে, তাদের জন্য একটি নির্দিষ্ট মুনাফার নিশ্চয়তা নেই বরং ক্ষতির সমস্ত ঝুঁকিই থাকছে তাদের মাথার উপর। কিন্তু যে ব্যক্তি শুধুমাত্র নিজের টাকা ঋণ দিয়েছে, সে নিশ্চিন্তে বসে বসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের মুনাফা অর্জন করতে থাকবে- এটা কোন যুক্তিসম্মত কথা হতে পারে না।
এখন বিরত হলে আগে যা খেয়েছে তার ফায়সালা আল্লাহই করবেন :
فَمَنْ جَآءَهٗ مَوْعِظَةٌ مِّنْ رَّبِّهٖ فَانْتَهٰى فَلَهٗ مَا سَلَفَؕ وَاَمْرُهٗۤ اِلَى اللهِ
সুতরাং যার কাছে তার রবের পক্ষ থেকে (সুদ সংক্রান্ত) উপদেশবাণী পৌঁছবে, অতঃপর সে সুদ খাওয়া থেকে বিরত থাকবে, তবে ইতোপূর্বে যা হয়ে গেছে তা তারই থাকবে। আর তার বিষয়টি (ফায়সালার দায়িত্ব) আল্লাহর কাছে ন্যস্ত। (সূরা বাক্বারা- ২৭৫)
ব্যাখ্যা : এখানে এ কথা বলা হয়নি যে, যা কিছু সে খেয়ে ফেলেছে, আল্লাহ তা ÿমা করে দেবেন। বরং বলা হচ্ছে, তার ব্যাপারটি আল্লাহর হাতে থাকছে। এখানে শুধুমাত্র আইনগত সুবিধার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ ইতোপূর্বে যে সুদ সে খেয়ে ফেলেছে আইনগতভাবে তা ফেরত দেয়ার দাবী করা হবে না। কারণ তা ফেরত দেয়ার দাবী করা হলে মামলা-মোকাদ্দমার এমন একটা ধারাবাহিকতা শুরু হয়ে যাবে, যা আর শেষ হবে না। তবে সুদী কারবারের মাধ্যমে যে ব্যক্তি অর্থ-সম্পদ সংগ্রহ করেছে, নৈতিক দিক দিয়ে তার অপবিত্রতা প্রতিষ্ঠিত থাকবে। যদি তার মনে যথার্থই আল্লাহভীতি স্থান লাভ করে থাকে এবং ইসলাম গ্রহণ করার পর তার নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী সত্যিই পরিবর্তন হয়ে থাকে, তাহলে সে নিজেই এ হারাম পথে উপার্জিত ধনসম্পদ নিজের জন্য ব্যয় করা থেকে বিরত থাকবে এবং যাদের অর্থ-সম্পদ তার কাছে আছে, তাদের সন্ধান লাভ করার জন্য যথাসাথ্য প্রচেষ্টা চালাতে থাকবে। অতঃপর যেসব হকদারদের সন্ধান পাওয়া যাবে, তাদের হক ফিরিয়ে দেবে এবং যেসব হকদারদের সন্ধান পাওয়া যাবে না, তাদের সম্পদগুলো সমাজসেবা ও জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করার ব্যবস্থা করবে। এ কার্যক্রম তাকে আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচতে সাহায্য করবে।
তাওবা করলে সুদখোর তার মূলধন ফেরত আনতে পারবে :
وَاِنْ تُبْتُمْ فَلَكُمْ رُءُوْسُ اَمْوَالِكُمْۚ لَا تَظْلِمُوْنَ وَلَا تُظْلَمُوْنَ
আর যদি তোমরা সুদ থেকে ফিরে আস, তাহলে মূলধন তোমাদের প্রাপ্য। তোমরা কারো উপর যুলুম করবে না এবং তোমাদের উপরও কোন যুলুম করা হবে না। (সূরা বাক্বারা- ২৭৯)
ঋণগ্রহীতা গরীব হলে তাকে সময় দিতে হবে :
وَاِنْ كَانَ ذُوْ عُسْرَةٍ فَنَظِرَةٌ اِلٰى مَيْسَرَةٍ
ঋণগ্রহীতা যদি অভাবগ্রস্ত হয়, তবে সচ্ছলতা না আসা পর্যন্ত তাকে অবকাশ দাও। (সূরা বাক্বারা- ২৮০)
তবে ক্ষমা করে দেয়াই উত্তম :
وَاَنْ تَصَدَّقُوْا خَيْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
আর যদি তোমরা সাদাকা করে দাও, তাহলে তোমাদের জন্য সেটাই উত্তম হবে; যদি তোমরা বুঝ। (সূরা বাক্বারা- ২৮০)
সুদ খাওয়া ছিল ইয়াহুদিদের অভ্যাস :
وَاَخْذِهِمُ الرِّبَا وَقَدْ نُهُوْا عَنْهُ وَاَكْلِهِمْ اَمْوَالَ النَّاسِ بِالْبَاطِلِؕ وَاَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِيْنَ مِنْهُمْ عَذَابًا اَلِيْمًا
যেহেতু তারা সুদ গ্রহণ করত, অথচ তাদেরকে তা থেকে সুস্পষ্টভাবে নিষেধ করা হয়েছিল এবং তারা অন্যের ধনসম্পদ ধোঁকা ও প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাস করে নিত। সুতরাং আমি এসব কাফিরদের জন্য মর্মান্তিক শাস্তি নির্দিষ্ট করে রেখেছি। (সূরা নিসা- ১৬১)
ব্যাখ্যা : তাওরাতে সুস্পষ্ট ভাষায় এ নির্দেশটি লিখিত রয়েছে যে, ‘‘যদি তুমি আমার লোকদের মধ্য থেকে কোন অভাবীকে ঋণ দাও, তাহলে তার কাছ থেকে সুদ নিয়ো না। যদি তুমি কখনো নিজের প্রতিবেশীর কাপড় বন্ধকও রাখো, তাহলে সূর্য অস্ত যাওয়ার আগেই তা ফেরত দাও। কারণ সেটিই তার একমাত্র পরার কাপড়। সেটিই তার শরীর ঢাকার জন্য একমাত্র পোশাক। তা না হলে সে কি গায়ে দিয়ে ঘুমাবে? কাজেই সে ফরিয়াদ করলে আমি তার কথা শুনব। কারণ আমি করুণাময়’’ (যাত্রা পুস্তক ২২ :২৫-২৭)।
এছাড়াও তাওরাতের আরো কয়েক স্থানে সুদ হারাম হওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু এর পরও এ তাওরাতের প্রতি ঈমানের দাবীদার ইয়াহুদিসমাজ আজকের দুনিয়ায় সবচেয়ে বড় সুদখোর জাতি হিসেবে পরিচিত।
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَأْكُلُوا الرِّبَاۤ اَضْعَافًا مُّضَاعَفَةً۪ وَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা দ্বিগুণের উপর দ্বিগুণ সুদ (চক্র বৃদ্ধিহারে) ভক্ষণ করো না এবং আল্লাহকে ভয় করো, যেন তোমরা সুফলপ্রাপ্ত হও। (সূরা আলে ইমরান- ১৩০)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَذَرُوْا مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَاۤ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের বকেয়া অংশ বর্জন করো, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক। (সূরা বাক্বারা- ২৭৮)
ব্যাখ্যা : আরবি ভাষায় رِبَا (রিবা) শব্দের অর্থ বৃদ্ধি পাওয়া। পারিভাষিক অর্থে আরবরা এ শব্দটি ব্যবহার করে ঐ অতিরিক্ত অর্থের জন্য, যা ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে মূলধনের উপর নির্ধারিত হার অনুযায়ী আদায় করা হয়। আমাদের ভাষায় একেই বলা হয় সুদ। কুরআন নাযিলের সময় যেসব সুদী লেনদেনের প্রচলন ছিল সেগুলো হলো : ১. একজন অপরজনের কাছে কোন জিনিস বিক্রি করত এবং দাম আদায়ের জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করে দিত। সময়সীমার মধ্যে যদি দাম আদায় করা না হতো, তাহলে তাকে অতিরিক্ত সময় দিত এবং ঐ পণ্যের দাম আরো বৃদ্ধি করে দিত। ২. একজন অপরজনকে ঋণ দিত। অতঃপর ঋণদাতার সাথে এ মর্মে চুক্তি হতো যে, অমুক সময়ের মধ্যে সুদসহ আসল টাকা ফেরত দিতে হবে। যদি ঋণগ্রহিতা ঐ সময়ের মধ্যে টাকা ফেরত দিতে না পারত, তাহলে সুদের পরিমাণ আরো বৃদ্ধি করে দিত।
সুদের মাধ্যমে মূলত সম্পদ বৃদ্ধি পায় না :
وَمَاۤ اٰتَيْتُمْ مِّنْ رِّبًا لِّيَرْبُوَاْ فِۤيْ اَمْوَالِ النَّاسِ فَلَا يَرْبُوْا عِنْدَ اللهِۚ وَمَاۤ اٰتَيْتُمْ مِّنْ زَكَاةٍ تُرِيْدُوْنَ وَجْهَ اللهِ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُضْعِفُوْنَ
মানুষের ধনসম্পদে তোমাদের সম্পদ বৃদ্ধি পাবে, এ আশায় তোমরা যা কিছু সুদ হিসেবে দিয়ে থাক, আল্লাহর কাছে তা বৃদ্ধি পায় না। পক্ষান্তরে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য তোমরা যা কিছু যাকাত হিসেবে দিয়ে থাক (তাই বৃদ্ধি পায়), আর তারা দ্বিগুণ প্রতিদান লাভ করে। (সূরা রূম- ৩৯)
يَمْحَقُ اللهُ الرِّبَا وَيُرْبِى الصَّدَقَاتِؕ وَاللهُ لَا يُحِبُّ كُلَّ كَفَّارٍ اَثِيْمٍ
আল্লাহ সুদকে ধ্বংস করেন এবং দানকে বৃদ্ধি করেন। আর আল্লাহ প্রত্যেক অকৃতজ্ঞ পাপীকে পছন্দ করেন না। (সূরা বাক্বারা- ২৭৬)
ব্যাখ্যা : যদিও আপাতদৃষ্টিতে দেখা যায়, সুদের মাধ্যমে অর্থ বৃদ্ধি হচ্ছে এবং দান-খয়রাতের মাধ্যমে অর্থ-সম্পদ কমে যাচ্ছে, তবুও প্রকৃত ব্যাপারটি এর সম্পূর্ণ বিপরীত। আল্লাহর প্রাকৃতিক বিধান হচ্ছে, সুদ নৈতিক, আধ্যাত্মিক ও অর্থনৈতিক উন্নতির কেবল প্রতিবন্ধকতাই নয় বরং অবনতিরও সহায়ক। অপরপক্ষে দান-খয়রাত, করযে হাসানা বা উত্তম ঋণ- এসবের মাধ্যমে নৈতিক, আধ্যাত্মিক ও অর্থনৈতিক সর্বক্ষেত্রে উন্নতি লাভ করা যায়। সুদ মূলত স্বার্থপরতা, কৃপণতা, সংকীর্ণতা, নির্মমতা ইত্যাদি অসৎ চরিত্রের ফল। সুদের ফলে এ চরিত্রগুলোই মানুষের মধ্যে বিকশিত হয়। অন্যদিকে সহানুভূতি, উদারতা ও মহানুভবতা ইত্যাদি গুণাবলিই দান-খয়রাতের জন্ম দেয়। আর নিয়মিত দান-খয়রাত করতে থাকলে এ গুণগুলো মানুষের মধ্যে বিকশিত হতেই থাকে। যে সমাজের লোকেরা পরস্পরের সাথে স্বার্থবাদী আচরণ করে, নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থ ছাড়া নিঃস্বার্থভাবে অন্যের কোন উপকার করে না, একজনের প্রয়োজন ও অভাবকে অন্যজন নিজের মুনাফা লাভের সুযোগ মনে করে তা থেকে পুরোপুরি লাভবান হয় এবং ধনীদের স্বার্থ সাধারণ মানুষের স্বার্থের বিপরীত মেরুতে অবস্থান করে, সে সমাজ কখনো শক্তিশালী হতে পারে না। সে সমাজের লোকদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসার পরিবর্তে হিংসা-বিদ্বেষ ও নিষ্ঠুরতা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। সে সমাজ সর্বদা বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্যের দিকে এগিয়ে যায়।
আল্লাহ সুদকে চূড়ান্তভাবে হারাম করেছেন :
وَاَحَلَّ اللهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا
আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন আর সুদকে হারাম করেছেন। (সূরা বাক্বারা- ২৭৫)
মানুষ যুক্তি দেখিয়ে সুদ খায় :
ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ قَالُوْاۤ اِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ الرِّبَا
এটা এজন্য যে তারা বলে, ক্রয়-বিক্রয় তো সুদের মতোই। (সূরা বাক্বারা- ২৭৫)
ব্যাখ্যা : তাদের মতামতের ভুল হচ্ছে, তারা ব্যবসায় যে মূলধন খাটায় এবং তার উপর যে মুনাফা আসে, সে মুনাফালব্ধ অর্থ ও সুদের মধ্যে কোন পার্থক্য করে না। এ উভয় অর্থকে একই পর্যায়ভুক্ত মনে করে তারা যুক্তি পেশ করে থাকে যে, ব্যবসায় খাটানো অর্থের মুনাফা যখন বৈধ, তখন ঋণবাবদ প্রদত্ত অর্থের মুনাফা বৈধ হবে না কেন? বর্তমান যুগের সুদখোররাও সুদের স্বপক্ষে এই একই যুক্তি পেশ করে থাকে। কিন্তু তারা এ কথাটি চিন্তা করে না যে, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প, কারিগরি, কৃষি- যাই হোক না কেন, যেখানে মানুষ শ্রম খাটায় অথবা শ্রম ও অর্থ উভয়টিই খাটায়, সেখানে কোন একটি কারবারও এমন নেই যাতে মানুষকে ক্ষতির ঝুঁকি নিতে হয় না। মুনাফা বাবদ একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ অর্জিত হওয়ার গ্যারান্টিও থাকে না। তাহলে দুনিয়ার সমস্ত ব্যবসায় একমাত্র ঋণদাতা পুঁজিপতিরা কেন ক্ষতির ঝুঁকিমুক্ত থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ মুনাফা লাভের হকদার হবে? যারা রাত-দিন নিজেদের কারবারে সময়, মেধা, শ্রম ও পুঁজি খাটিয়ে চলছে এবং যাদের প্রচেষ্টা ও সাধনার উপরই এ কারবার ফলপ্রসূ হওয়া নির্ভর করছে, তাদের জন্য একটি নির্দিষ্ট মুনাফার নিশ্চয়তা নেই বরং ক্ষতির সমস্ত ঝুঁকিই থাকছে তাদের মাথার উপর। কিন্তু যে ব্যক্তি শুধুমাত্র নিজের টাকা ঋণ দিয়েছে, সে নিশ্চিন্তে বসে বসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের মুনাফা অর্জন করতে থাকবে- এটা কোন যুক্তিসম্মত কথা হতে পারে না।
এখন বিরত হলে আগে যা খেয়েছে তার ফায়সালা আল্লাহই করবেন :
فَمَنْ جَآءَهٗ مَوْعِظَةٌ مِّنْ رَّبِّهٖ فَانْتَهٰى فَلَهٗ مَا سَلَفَؕ وَاَمْرُهٗۤ اِلَى اللهِ
সুতরাং যার কাছে তার রবের পক্ষ থেকে (সুদ সংক্রান্ত) উপদেশবাণী পৌঁছবে, অতঃপর সে সুদ খাওয়া থেকে বিরত থাকবে, তবে ইতোপূর্বে যা হয়ে গেছে তা তারই থাকবে। আর তার বিষয়টি (ফায়সালার দায়িত্ব) আল্লাহর কাছে ন্যস্ত। (সূরা বাক্বারা- ২৭৫)
ব্যাখ্যা : এখানে এ কথা বলা হয়নি যে, যা কিছু সে খেয়ে ফেলেছে, আল্লাহ তা ÿমা করে দেবেন। বরং বলা হচ্ছে, তার ব্যাপারটি আল্লাহর হাতে থাকছে। এখানে শুধুমাত্র আইনগত সুবিধার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ ইতোপূর্বে যে সুদ সে খেয়ে ফেলেছে আইনগতভাবে তা ফেরত দেয়ার দাবী করা হবে না। কারণ তা ফেরত দেয়ার দাবী করা হলে মামলা-মোকাদ্দমার এমন একটা ধারাবাহিকতা শুরু হয়ে যাবে, যা আর শেষ হবে না। তবে সুদী কারবারের মাধ্যমে যে ব্যক্তি অর্থ-সম্পদ সংগ্রহ করেছে, নৈতিক দিক দিয়ে তার অপবিত্রতা প্রতিষ্ঠিত থাকবে। যদি তার মনে যথার্থই আল্লাহভীতি স্থান লাভ করে থাকে এবং ইসলাম গ্রহণ করার পর তার নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী সত্যিই পরিবর্তন হয়ে থাকে, তাহলে সে নিজেই এ হারাম পথে উপার্জিত ধনসম্পদ নিজের জন্য ব্যয় করা থেকে বিরত থাকবে এবং যাদের অর্থ-সম্পদ তার কাছে আছে, তাদের সন্ধান লাভ করার জন্য যথাসাথ্য প্রচেষ্টা চালাতে থাকবে। অতঃপর যেসব হকদারদের সন্ধান পাওয়া যাবে, তাদের হক ফিরিয়ে দেবে এবং যেসব হকদারদের সন্ধান পাওয়া যাবে না, তাদের সম্পদগুলো সমাজসেবা ও জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করার ব্যবস্থা করবে। এ কার্যক্রম তাকে আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচতে সাহায্য করবে।
তাওবা করলে সুদখোর তার মূলধন ফেরত আনতে পারবে :
وَاِنْ تُبْتُمْ فَلَكُمْ رُءُوْسُ اَمْوَالِكُمْۚ لَا تَظْلِمُوْنَ وَلَا تُظْلَمُوْنَ
আর যদি তোমরা সুদ থেকে ফিরে আস, তাহলে মূলধন তোমাদের প্রাপ্য। তোমরা কারো উপর যুলুম করবে না এবং তোমাদের উপরও কোন যুলুম করা হবে না। (সূরা বাক্বারা- ২৭৯)
ঋণগ্রহীতা গরীব হলে তাকে সময় দিতে হবে :
وَاِنْ كَانَ ذُوْ عُسْرَةٍ فَنَظِرَةٌ اِلٰى مَيْسَرَةٍ
ঋণগ্রহীতা যদি অভাবগ্রস্ত হয়, তবে সচ্ছলতা না আসা পর্যন্ত তাকে অবকাশ দাও। (সূরা বাক্বারা- ২৮০)
তবে ক্ষমা করে দেয়াই উত্তম :
وَاَنْ تَصَدَّقُوْا خَيْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
আর যদি তোমরা সাদাকা করে দাও, তাহলে তোমাদের জন্য সেটাই উত্তম হবে; যদি তোমরা বুঝ। (সূরা বাক্বারা- ২৮০)
সুদ খাওয়া ছিল ইয়াহুদিদের অভ্যাস :
وَاَخْذِهِمُ الرِّبَا وَقَدْ نُهُوْا عَنْهُ وَاَكْلِهِمْ اَمْوَالَ النَّاسِ بِالْبَاطِلِؕ وَاَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِيْنَ مِنْهُمْ عَذَابًا اَلِيْمًا
যেহেতু তারা সুদ গ্রহণ করত, অথচ তাদেরকে তা থেকে সুস্পষ্টভাবে নিষেধ করা হয়েছিল এবং তারা অন্যের ধনসম্পদ ধোঁকা ও প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাস করে নিত। সুতরাং আমি এসব কাফিরদের জন্য মর্মান্তিক শাস্তি নির্দিষ্ট করে রেখেছি। (সূরা নিসা- ১৬১)
ব্যাখ্যা : তাওরাতে সুস্পষ্ট ভাষায় এ নির্দেশটি লিখিত রয়েছে যে, ‘‘যদি তুমি আমার লোকদের মধ্য থেকে কোন অভাবীকে ঋণ দাও, তাহলে তার কাছ থেকে সুদ নিয়ো না। যদি তুমি কখনো নিজের প্রতিবেশীর কাপড় বন্ধকও রাখো, তাহলে সূর্য অস্ত যাওয়ার আগেই তা ফেরত দাও। কারণ সেটিই তার একমাত্র পরার কাপড়। সেটিই তার শরীর ঢাকার জন্য একমাত্র পোশাক। তা না হলে সে কি গায়ে দিয়ে ঘুমাবে? কাজেই সে ফরিয়াদ করলে আমি তার কথা শুনব। কারণ আমি করুণাময়’’ (যাত্রা পুস্তক ২২ :২৫-২৭)।
এছাড়াও তাওরাতের আরো কয়েক স্থানে সুদ হারাম হওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু এর পরও এ তাওরাতের প্রতি ঈমানের দাবীদার ইয়াহুদিসমাজ আজকের দুনিয়ায় সবচেয়ে বড় সুদখোর জাতি হিসেবে পরিচিত।
সুদখোররা জাহান্নামী হবে :
وَمَنْ عَادَ فَاُولٰٓئِكَ اَصْحَابُ النَّارِۚ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
আর যারা (উপদেশ শোনার পরও সুদের লেনদেনের দিকে) ফিরে আসবে, তারাই জাহান্নামের অধিবাসী হবে; সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। (সূরা বাক্বারা- ২৭৫)
সুদখোররা কিয়ামতের দিন পাগল অবস্থায় ওঠবে :
اَلَّذِيْنَ يَأْكُلُوْنَ الرِّبَا لَا يَقُوْمُوْنَ اِلَّا كَمَا يَقُوْمُ الَّذِيْ يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ
যারা সুদ খায় তারা (কিয়ামতের দিন) ঐ ব্যক্তির ন্যায় দন্ডায়মান হবে, যাকে শয়তান স্পর্শ করার দ্বারা দিশেহারা করে দেয়। (সূরা বাক্বারা- ২৭৫)
ব্যাখ্যা : আরবরা পাগলকে বলত, مَجْنُوْنٌ (মাজনূন) অর্থাৎ জিন বা প্রেতগ্রস্ত। কোন ব্যক্তি পাগল হয়ে গেছে- এ কথা বলার প্রয়োজন দেখা দিলে তারা বলত, অমুককে জিনে ধরেছে। এ প্রবাদটি ব্যবহার করে কুরআন সুদখোরকে এমন এক ব্যক্তির সাথে তুলনা করেছে, যার বুদ্ধি ভ্রষ্ট হয়ে গেছে। অর্থাৎ বুদ্ধিভ্রষ্ট ব্যক্তিরা যেমন কথা ও কাজে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে, অনুরূপভাবে সুদখোররাও টাকার পেছনে পাগলের মতো ছুটে কথা ও কাজে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। নিজের স্বার্থপর মনোবৃত্তির চাপে পাগলের মতো সে কোনকিছুরই পরোয়া করে না। সুদী লেনদেনের কারণে কতগুলো লোকের দুরাবস্থার বিনিময়ে সে নিজের প্রাচুর্যের ব্যবস্থা করল- এসব বিষয়ে তার কোন মাথা ব্যথাই থাকে না। অতএব যেহেতু মানুষকে আখিরাতে ঐ অবস্থায় ওঠানো হবে যে অবস্থায় সে এ দুনিয়ায় মারা গিয়েছিল, তাই কিয়ামতের দিন সুদখোর ব্যক্তিকেও একজন পাগল ও বুদ্ধিভ্রষ্ট লোকের চেহারায় উপস্থিত করা হবে।
সুদখোরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা :
فَاِنْ لَّمْ تَفْعَلُوْا فَأْذَنُوْا بِحَرْبٍ مِّنَ اللهِ وَرَسُوْلِهٖ
এরপরও যদি তোমরা সুদের লেনদেন না ছাড়, তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত হও। (সূরা বাক্বারা- ২৭৯)
ব্যাখ্যা : আয়াতের শব্দগুলোর কারণে ইবনে আববাস (রাঃ), হাসান বসরী, ইবনে সীরীন ও রুবাঈ ইবনে আনাস প্রমুখ আলিমগণ এ মত প্রকাশ করেন যে, যে ব্যক্তি দারুল ইসলামে সুদ খাবে তাকে তাওবা করতে বাধ্য করা হবে। আর যদি সে তা হতে বিরত না হয়, তাহলে তাকে হত্যা করা হবে। অন্য আলিমগণের মতে, সুদ পরিত্যাগ করার অঙ্গীকার না করা পর্যন্ত তাকে কারারুদ্ধ করে রাখতে হবে।
وَمَنْ عَادَ فَاُولٰٓئِكَ اَصْحَابُ النَّارِۚ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
আর যারা (উপদেশ শোনার পরও সুদের লেনদেনের দিকে) ফিরে আসবে, তারাই জাহান্নামের অধিবাসী হবে; সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। (সূরা বাক্বারা- ২৭৫)
সুদখোররা কিয়ামতের দিন পাগল অবস্থায় ওঠবে :
اَلَّذِيْنَ يَأْكُلُوْنَ الرِّبَا لَا يَقُوْمُوْنَ اِلَّا كَمَا يَقُوْمُ الَّذِيْ يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ
যারা সুদ খায় তারা (কিয়ামতের দিন) ঐ ব্যক্তির ন্যায় দন্ডায়মান হবে, যাকে শয়তান স্পর্শ করার দ্বারা দিশেহারা করে দেয়। (সূরা বাক্বারা- ২৭৫)
ব্যাখ্যা : আরবরা পাগলকে বলত, مَجْنُوْنٌ (মাজনূন) অর্থাৎ জিন বা প্রেতগ্রস্ত। কোন ব্যক্তি পাগল হয়ে গেছে- এ কথা বলার প্রয়োজন দেখা দিলে তারা বলত, অমুককে জিনে ধরেছে। এ প্রবাদটি ব্যবহার করে কুরআন সুদখোরকে এমন এক ব্যক্তির সাথে তুলনা করেছে, যার বুদ্ধি ভ্রষ্ট হয়ে গেছে। অর্থাৎ বুদ্ধিভ্রষ্ট ব্যক্তিরা যেমন কথা ও কাজে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে, অনুরূপভাবে সুদখোররাও টাকার পেছনে পাগলের মতো ছুটে কথা ও কাজে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। নিজের স্বার্থপর মনোবৃত্তির চাপে পাগলের মতো সে কোনকিছুরই পরোয়া করে না। সুদী লেনদেনের কারণে কতগুলো লোকের দুরাবস্থার বিনিময়ে সে নিজের প্রাচুর্যের ব্যবস্থা করল- এসব বিষয়ে তার কোন মাথা ব্যথাই থাকে না। অতএব যেহেতু মানুষকে আখিরাতে ঐ অবস্থায় ওঠানো হবে যে অবস্থায় সে এ দুনিয়ায় মারা গিয়েছিল, তাই কিয়ামতের দিন সুদখোর ব্যক্তিকেও একজন পাগল ও বুদ্ধিভ্রষ্ট লোকের চেহারায় উপস্থিত করা হবে।
সুদখোরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা :
فَاِنْ لَّمْ تَفْعَلُوْا فَأْذَنُوْا بِحَرْبٍ مِّنَ اللهِ وَرَسُوْلِهٖ
এরপরও যদি তোমরা সুদের লেনদেন না ছাড়, তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত হও। (সূরা বাক্বারা- ২৭৯)
ব্যাখ্যা : আয়াতের শব্দগুলোর কারণে ইবনে আববাস (রাঃ), হাসান বসরী, ইবনে সীরীন ও রুবাঈ ইবনে আনাস প্রমুখ আলিমগণ এ মত প্রকাশ করেন যে, যে ব্যক্তি দারুল ইসলামে সুদ খাবে তাকে তাওবা করতে বাধ্য করা হবে। আর যদি সে তা হতে বিরত না হয়, তাহলে তাকে হত্যা করা হবে। অন্য আলিমগণের মতে, সুদ পরিত্যাগ করার অঙ্গীকার না করা পর্যন্ত তাকে কারারুদ্ধ করে রাখতে হবে।
হালাল খাদ্য থেকেই হারাম মদ তৈরি করা হয় :
وَمِنْ ثَمَرَاتِ النَّخِيْلِ وَالْاَعْنَابِ تَتَّخِذُوْنَ مِنْهُ سَكَرًا وَّرِزْقًا حَسَنًا اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّعْقِلُوْنَ
তোমরা খেজুর বৃক্ষের ফল ও আঙ্গুর হতে মাদক ও উত্তম খাদ্য গ্রহণ করে থাক; এতে অবশ্যই বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা নাহল- ৬৭)
ব্যাখ্যা : ফলের রসে এমন উপাদানও রয়েছে যা মানুষের জন্য খাদ্যে পরিণত হতে পারে; আবার এমন উপাদানও আছে, যা পরে মাদক দ্রব্যে পরিণত হয়। এখন মানুষ এ উৎসটি থেকে পবিত্র রিযিক গ্রহণ করবে, না বুদ্ধি ও চিন্তাশক্তিকে বিনষ্টকারী মদ গ্রহণ করবে- এটা প্রত্যেকের নিজের নির্বাচন ক্ষমতার উপর নির্ভর করে।
মদ ও জুয়ায় উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি :
يَسْاَلُوْنَكَ عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِؕ قُلْ فِيْهِمَاۤ اِثْمٌ كَبِيْرٌ وَّمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَاِثْمُهُمَاۤ اَ كْبَرُ مِنْ نَّفْعِهِمَا
লোকেরা তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলো, এ দু’টির মধ্যে বড় ধরনের গোনাহ রয়েছে। এতে মানুষের জন্য কিছুটা উপকার রয়েছে, তবে এ দু’টির অপরাধ উপকারের চেয়ে অনেক বড়। (সূরা বাক্বারা- ২১৯)
প্রথমে নামাযের সময় মদ খাওয়া নিষিদ্ধ করা হয় :
يَاۤا َيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَقْرَبُوا الصَّلَاةَ وَاَنْتُمْ سُكَارٰى حَتّٰى تَعْلَمُوْا مَا تَقُوْلُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সালাতের নিকটবর্তী হয়ো না, যতক্ষণ না তোমরা যা বল তা বুঝতে পার। (সূরা নিসা- ৪৩)
পরে চূড়ান্তভাবে মদ ও জুয়া হারাম করে দেয়া হয় :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْاَنْصَابُ وَالْاَزْلَامُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوْهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ ‐ اِنَّمَا يُرِيْدُ الشَّيْطَانُ اَنْ يُّوْقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَآءَ فِى الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَعَنِ الصَّلَاةِۚ فَهَلْ اَنْتُمْ مُّنْتَهُوْنَ
হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার দেবী ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর ঘৃণ্যবস্তু ও শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। নিশ্চয় শয়তান মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ ও সালাত আদায় করা হতে বাধা প্রদান করতে চায়। তবে কি তোমরা বিরত থাকবে না? (সূরা মায়েদা- ৯০, ৯১)
তাওবা করে মদ ছেড়ে দিলে আল্লাহ পূর্বের গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন :
لَيْسَ عَلَى الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ جُنَاحٌ فِيْمَا طَعِمُوْاۤ اِذَا مَا اتَّقَوْا وَّاٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ ثُمَّ اتَّقَوْا وَّاٰمَنُوْا ثُمَّ اتَّقَوْا وَّاَحْسَنُوْاؕ وَاللهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِيْنَ
যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তারা পূর্বে যা খেয়েছে তার জন্য তাদের কোন গোনাহ নেই। যদি তারা সাবধান হয় এবং ঈমান আনয়ন করে ও সৎকর্ম করে, পুনরায় সাবধান হয় ও বিশ্বাস স্থাপন করে, পুনরায় সাবধান হয় ও সৎকর্ম করে; তবে তো আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা মায়েদা- ৯৩)
শানে নুযূল : মদ্যপান ও জুয়া হারাম হয়ে গেলে কোন কোন সাহাবী আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মধ্যে অনেক লোকই মদ্যপায়ী ছিলেন, জুয়ালব্ধ মালও ভক্ষণ করতেন এবং এ হারাম মাল পেটে থাকা অবস্থায় মৃত্যু মুখে পতিত হয়েছেন, অতঃপর এগুলো হারাম হয়েছে, তাদের কী অবস্থা হবে? সাহাবাদের উক্ত প্রশ্নের জবাবে এ আয়াতটি নাযিল হয়। (ইবনে কাসীর ৩য় খন্ড ১৮৯ পৃঃ)
وَمِنْ ثَمَرَاتِ النَّخِيْلِ وَالْاَعْنَابِ تَتَّخِذُوْنَ مِنْهُ سَكَرًا وَّرِزْقًا حَسَنًا اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّعْقِلُوْنَ
তোমরা খেজুর বৃক্ষের ফল ও আঙ্গুর হতে মাদক ও উত্তম খাদ্য গ্রহণ করে থাক; এতে অবশ্যই বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা নাহল- ৬৭)
ব্যাখ্যা : ফলের রসে এমন উপাদানও রয়েছে যা মানুষের জন্য খাদ্যে পরিণত হতে পারে; আবার এমন উপাদানও আছে, যা পরে মাদক দ্রব্যে পরিণত হয়। এখন মানুষ এ উৎসটি থেকে পবিত্র রিযিক গ্রহণ করবে, না বুদ্ধি ও চিন্তাশক্তিকে বিনষ্টকারী মদ গ্রহণ করবে- এটা প্রত্যেকের নিজের নির্বাচন ক্ষমতার উপর নির্ভর করে।
মদ ও জুয়ায় উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি :
يَسْاَلُوْنَكَ عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِؕ قُلْ فِيْهِمَاۤ اِثْمٌ كَبِيْرٌ وَّمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَاِثْمُهُمَاۤ اَ كْبَرُ مِنْ نَّفْعِهِمَا
লোকেরা তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলো, এ দু’টির মধ্যে বড় ধরনের গোনাহ রয়েছে। এতে মানুষের জন্য কিছুটা উপকার রয়েছে, তবে এ দু’টির অপরাধ উপকারের চেয়ে অনেক বড়। (সূরা বাক্বারা- ২১৯)
প্রথমে নামাযের সময় মদ খাওয়া নিষিদ্ধ করা হয় :
يَاۤا َيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَقْرَبُوا الصَّلَاةَ وَاَنْتُمْ سُكَارٰى حَتّٰى تَعْلَمُوْا مَا تَقُوْلُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সালাতের নিকটবর্তী হয়ো না, যতক্ষণ না তোমরা যা বল তা বুঝতে পার। (সূরা নিসা- ৪৩)
পরে চূড়ান্তভাবে মদ ও জুয়া হারাম করে দেয়া হয় :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْاَنْصَابُ وَالْاَزْلَامُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوْهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ ‐ اِنَّمَا يُرِيْدُ الشَّيْطَانُ اَنْ يُّوْقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَآءَ فِى الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَعَنِ الصَّلَاةِۚ فَهَلْ اَنْتُمْ مُّنْتَهُوْنَ
হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার দেবী ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর ঘৃণ্যবস্তু ও শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। নিশ্চয় শয়তান মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ ও সালাত আদায় করা হতে বাধা প্রদান করতে চায়। তবে কি তোমরা বিরত থাকবে না? (সূরা মায়েদা- ৯০, ৯১)
তাওবা করে মদ ছেড়ে দিলে আল্লাহ পূর্বের গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন :
لَيْسَ عَلَى الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ جُنَاحٌ فِيْمَا طَعِمُوْاۤ اِذَا مَا اتَّقَوْا وَّاٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ ثُمَّ اتَّقَوْا وَّاٰمَنُوْا ثُمَّ اتَّقَوْا وَّاَحْسَنُوْاؕ وَاللهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِيْنَ
যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তারা পূর্বে যা খেয়েছে তার জন্য তাদের কোন গোনাহ নেই। যদি তারা সাবধান হয় এবং ঈমান আনয়ন করে ও সৎকর্ম করে, পুনরায় সাবধান হয় ও বিশ্বাস স্থাপন করে, পুনরায় সাবধান হয় ও সৎকর্ম করে; তবে তো আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা মায়েদা- ৯৩)
শানে নুযূল : মদ্যপান ও জুয়া হারাম হয়ে গেলে কোন কোন সাহাবী আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মধ্যে অনেক লোকই মদ্যপায়ী ছিলেন, জুয়ালব্ধ মালও ভক্ষণ করতেন এবং এ হারাম মাল পেটে থাকা অবস্থায় মৃত্যু মুখে পতিত হয়েছেন, অতঃপর এগুলো হারাম হয়েছে, তাদের কী অবস্থা হবে? সাহাবাদের উক্ত প্রশ্নের জবাবে এ আয়াতটি নাযিল হয়। (ইবনে কাসীর ৩য় খন্ড ১৮৯ পৃঃ)
কেউ ধনসম্পদের কারণে অহংকার করে :
اِنَّ قَارُوْنَ كَانَ مِنْ قَوْمِ مُوْسٰى فَبَغٰى عَلَيْهِمْ وَاٰتَيْنَاهُ مِنَ الْكُنُوْزِ مَاۤ اِنَّ مَفَاتِحَهٗ لَتَنُوْٓءُ بِالْعُصْبَةِ اُولِى الْقُوَّةِۗ اِذْ قَالَ لَهٗ قَوْمُهٗ لَا تَفْرَحْ اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْفَرِحِيْنَ
নিশ্চয় কারূন ছিল মূসার সম্প্রদায়ভুক্ত, কিন্তু সে তাদের প্রতি ঔদ্বত্যভাব প্রকাশ করেছিল। আমি তাকে দান করেছিলাম এমন ধনভান্ডার, যার চাবিগুলো বহন করা একদল শক্তিশালী লোকের পক্ষেও কষ্টসাধ্য ছিল। স্মরণ করো, যখন তার সম্প্রদায় তাকে বলেছিল, অহংকার করো না; নিশ্চয় আল্লাহ অহংকারীদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা ক্বাসাস- ৭৬)
কেউ বিদ্যার কারণে গর্ব করে :
فَلَمَّا جَآءَتْهُمْ رُسُلُهُمْ بِالْبَيِّنَاتِ فَرِحُوْا بِمَا عِنْدَهُمْ مِّنَ الْعِلْمِ
তাদের নিকট যখন নিদর্শনাবলিসহ তাদের রাসূলগণ আসত, তখন তারা নিজেদের জ্ঞানের অহংকার করত। (সূরা মু’মিন- ৮৩)
কেউ বিপদ সরে গেলে অহংকারী হয়ে যায় :
وَلَئِنْ اَذَقْنَاهُ نَعْمَآءَ بَعْدَ ضَرَّآءَ مَسَّتْهُ لَيَقُوْلَنَّ ذَهَبَ السَّيِّئَاتُ عَنِّيْۤ اِنَّهٗ لَفَرِحٌ فَخُوْرٌ
যদি দুঃখ-দৈন্য স্পর্শ করার পর আমি তাকে সুখ-সম্পদ আস্বাদন করাই তখন সে অবশ্যই বলবে, আমার বিপদাপদ কেটে গেছে; নিশ্চয় সে উৎফুল্ল ও অহংকারী। (সূরা হুদ- ১০)
আল্লাহ গর্ব ও অহংকার করতে নিষেধ করেছেন :
وَلَا تَمْشِ فِى الْاَرْضِ مَرَحًاۚ اِنَّكَ لَنْ تَخْرِقَ الْاَرْضَ وَلَنْ تَبْلُغَ الْجِبَالَ طُوْلًا
ভূপৃষ্ঠে অহংকারী হয়ে বিচরণ করো না; তুমি তো কখনই (পায়ের ভরে) ভূপৃষ্ঠ বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং (উচ্চতায়) কখনই পর্বত সমান হতে পারবে না। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩৭)
وَلَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمْشِ فِى الْاَرْضِ مَرَحًاؕ اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُوْرٍ
তুমি অহংকারবশত মানুষকে অবহেলা করো না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে বিচরণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক ও অহংকারীকে ভালোবাসেন না। (সূরা লুক্বমান- ১৮)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ ক্ষমতালোভী ও অহংকারীদের মতো আচরণ করো না। এ নির্দেশটিও ব্যক্তিগত কর্মপদ্ধতি ও জাতীয় আচরণ উভয়ের উপর সমানভাবে প্রযোজ্য। এ নির্দেশের কারণে মদিনায় যে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তার শাসকবৃন্দ ও গভর্নরদের জীবনে ক্ষমতার লোভ বা অহংকারের লেশমাত্রও ছিল না। এমনকি যুদ্ধরত অবস্থায়ও কখনো তাদের মুখ থেকে দম্ভ ও অহংকারের কোন কথাই বের হতো না। তাদের ওঠাবসা, চালচলন, পোশাক-পরিচ্ছদ, ঘরবাড়ি, সওয়ারী ও সাধারণ আচার-আচরণে নম্রতা ও কোমলতার ছাপ স্পষ্ট দেখা যেত। যখন তারা বিজয়ীর বেশে কোন শহরে প্রবেশ করতেন, তখনও অহংকার প্রদর্শন করতেন না।
অহংকার কোন মুমিনের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না :
اِنَّمَا يُؤْمِنُ بِاٰيَاتِنَا الَّذِيْنَ اِذَا ذُكِّرُوْا بِهَا خَرُّوْا سُجَّدًا وَّسَبَّحُوْا بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَهُمْ لَا يَسْتَكْبِرُوْنَ
কেবল তারাই আমার নিদর্শনগুলোর প্রতি ঈমান রাখে, যাদেরকে আমার আয়াতসমূহ স্মরণ করিয়ে দেয়া হলে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং স্বীয় প্রতিপালকের প্রশংসা, পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে; আর তারা অহংকার করে না। (সূরা সাজদা- ১৫)
ফেরেশতারা অহংকার করে না :
وَلِلّٰهِ يَسْجُدُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَرْضِ مِنْ دَآبَّةٍ وَّالْمَلَآئِكَةُ وَهُمْ لَا يَسْتَكْبِرُوْنَ
আকাশমন্ডলীতে যা কিছু আছে এবং পৃথিবীতে যত জীবজন্তু আছে সকলেই আল্লাহকে সিজদা করে এবং ফেরেশতাগণও; আর তারা অহংকার করে না। (সূরা নাহল- ৪৯)
বড়ত্ব ও অহংকার একমাত্র আল্লাহর জন্যই মানায় :
فَلِلّٰهِ الْحَمْدُ رَبِّ السَّمَاوَاتِ وَرَبِّ الْاَرْضِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ‐ وَلَهُ الْكِبْرِيَآءُ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি আকাশমন্ডলীর প্রতিপালক, পৃথিবীর প্রতিপালক এবং জগতসমূহের প্রতিপালক। আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে তাঁরই বড়ত্ব বিদ্যমান; তিনি মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাবান। (সূরা জাসিয়া- ৩৬, ৩৭)
আল্লাহ অহংকারীদেরকে পছন্দ করেন না :
اِنَّهٗ لَا يُحِبُّ الْمُسْتَكْبِرِيْنَ
নিশ্চয় তিনি অহংকারীদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা নাহল- ২৩)
وَاللهُ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُوْرٍ
আল্লাহ প্রত্যেক ঔদ্ধত্য ও অহংকারীদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা হাদীদ- ২৩)
অহংকারীরা নিদর্শন দেখে উপকৃত হয় না :
سَاَصْرِفُ عَنْ اٰيَاتِيَ الَّذِيْنَ يَتَكَبَّرُوْنَ فِى الْاَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ
যারা পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে দম্ভ করে বেড়ায়, তাদের দৃষ্টি আমার নিদর্শন হতে ফিরিয়ে দেব। (সূরা আ‘রাফ- ১৪৬)
ব্যাখ্যা : ‘অহংকার করে বেড়ানো’ বাক্যটি কুরআন মাজীদে এমন এক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, যা থেকে বুঝা যায় যে, বান্দা নিজেকে আল্লাহর আনুগত্য করার ঊর্ধ্বে স্থান দেয়, আল্লাহর আদেশ-নিষেধের কোন ধার ধারে না। এ ধরনের বান্দা হয়ে থাকার কোন অধিকার মানুষের নেই। তাই এখানে বলা হয়েছে, কোন প্রকার অধিকার ছাড়াই যারা পৃথিবীতে বড়াই করে বেড়ায়; প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী এ ধরনের লোকেরা কোন শিক্ষাপ্রদ ঘটনা অনুধাবন করতে এবং কোন শিক্ষণীয় বিষয় থেকে শিক্ষা লাভ করতে পারে না।
আল্লাহ অহংকারীদের অন্তরে মোহর মেরে দেন :
كَذٰلِكَ يَطْبَعُ اللهُ عَلٰى كُلِّ قَلْبِ مُتَكَبِّرٍ جَبَّارٍ
এভাবে আল্লাহ প্রত্যেক অহংকারী ও স্বৈরাচারী ব্যক্তির হৃদয়ে মোহর মেরে দেন। (সূরা মু’মিন- ৩৫)
ইবলিস অহংকার করে বিতাড়িত হয়েছিল :
وَاِذْ قُلْنَا لِلْمَلَآئِكَةِ اسْجُدُوْا لِاٰدَمَ فَسَجَدُوْاۤ اِلَّاۤ اِبْلِيْسَؕ اَبٰى وَاسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِيْنَ
আর আমি যখন ফেরেশতাদেরকে বলেছিলাম, তোমরা আদমকে সিজদা করো, তখন ইবলিস ব্যতীত সকলে সিজদা করেছিল। সে অস্বীকার করল ও অহংকার করল এবং কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল। (সূরা বাক্বারা- ৩৪)
অহংকারীরা জান্নাতে যেতে পারবে না :
اِنَّ الَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَا وَاسْتَكْبَرُوْا عَنْهَا لَا تُفَتَّحُ لَهُمْ اَبْوَابُ السَّمَآءِ وَلَا يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ حَتّٰى يَلِجَ الْجَمَلُ فِيْ سَمِّ الْخِيَاطِ وَكَذٰلِكَ نَجْزِى الْمُجْرِمِيْنَ
যারা আমার নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করে এবং সে সম্বন্ধে অহংকার করে, তাদের জন্য আকাশের দ্বার উন্মুক্ত করা হবে না। তারা জান্নাতেও প্রবেশ করতে পারবে না, যতক্ষণ না সূঁচের ছিদ্রপথে উষ্ট্র প্রবেশ করে। আর এভাবে আমি অপরাধীদেরকে প্রতিফল দান করব। (সূরা আ‘রাফ- ৪০)
অহংকারীদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম :
اَلَيْسَ فِيْ جَهَنَّمَ مَثْوًى لِّلْمُتَكَبِّرِيْنَ
জাহান্নাম কি অহংকারীদের আবাসস্থল নয়? (সূরা যুমার- ৬০)
قِيْلَ ادْخُلُوْاۤ اَبْوَابَ جَهَنَّمَ خَالِدِيْنَ فِيْهَاۚ فَبِئْسَ مَثْوَى الْمُتَكَبِّرِيْنَ
তাদেরকে বলা হবে, স্থায়ীভাবে অবস্থানের জন্য জাহান্নামের দ্বারসমূহে প্রবেশ করো। অহংকারীদের আবাসস্থল কতই না নিকৃষ্ট। (সূরা যুমার- ৭২)
اِنَّ قَارُوْنَ كَانَ مِنْ قَوْمِ مُوْسٰى فَبَغٰى عَلَيْهِمْ وَاٰتَيْنَاهُ مِنَ الْكُنُوْزِ مَاۤ اِنَّ مَفَاتِحَهٗ لَتَنُوْٓءُ بِالْعُصْبَةِ اُولِى الْقُوَّةِۗ اِذْ قَالَ لَهٗ قَوْمُهٗ لَا تَفْرَحْ اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْفَرِحِيْنَ
নিশ্চয় কারূন ছিল মূসার সম্প্রদায়ভুক্ত, কিন্তু সে তাদের প্রতি ঔদ্বত্যভাব প্রকাশ করেছিল। আমি তাকে দান করেছিলাম এমন ধনভান্ডার, যার চাবিগুলো বহন করা একদল শক্তিশালী লোকের পক্ষেও কষ্টসাধ্য ছিল। স্মরণ করো, যখন তার সম্প্রদায় তাকে বলেছিল, অহংকার করো না; নিশ্চয় আল্লাহ অহংকারীদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা ক্বাসাস- ৭৬)
কেউ বিদ্যার কারণে গর্ব করে :
فَلَمَّا جَآءَتْهُمْ رُسُلُهُمْ بِالْبَيِّنَاتِ فَرِحُوْا بِمَا عِنْدَهُمْ مِّنَ الْعِلْمِ
তাদের নিকট যখন নিদর্শনাবলিসহ তাদের রাসূলগণ আসত, তখন তারা নিজেদের জ্ঞানের অহংকার করত। (সূরা মু’মিন- ৮৩)
কেউ বিপদ সরে গেলে অহংকারী হয়ে যায় :
وَلَئِنْ اَذَقْنَاهُ نَعْمَآءَ بَعْدَ ضَرَّآءَ مَسَّتْهُ لَيَقُوْلَنَّ ذَهَبَ السَّيِّئَاتُ عَنِّيْۤ اِنَّهٗ لَفَرِحٌ فَخُوْرٌ
যদি দুঃখ-দৈন্য স্পর্শ করার পর আমি তাকে সুখ-সম্পদ আস্বাদন করাই তখন সে অবশ্যই বলবে, আমার বিপদাপদ কেটে গেছে; নিশ্চয় সে উৎফুল্ল ও অহংকারী। (সূরা হুদ- ১০)
আল্লাহ গর্ব ও অহংকার করতে নিষেধ করেছেন :
وَلَا تَمْشِ فِى الْاَرْضِ مَرَحًاۚ اِنَّكَ لَنْ تَخْرِقَ الْاَرْضَ وَلَنْ تَبْلُغَ الْجِبَالَ طُوْلًا
ভূপৃষ্ঠে অহংকারী হয়ে বিচরণ করো না; তুমি তো কখনই (পায়ের ভরে) ভূপৃষ্ঠ বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং (উচ্চতায়) কখনই পর্বত সমান হতে পারবে না। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩৭)
وَلَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمْشِ فِى الْاَرْضِ مَرَحًاؕ اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُوْرٍ
তুমি অহংকারবশত মানুষকে অবহেলা করো না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে বিচরণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক ও অহংকারীকে ভালোবাসেন না। (সূরা লুক্বমান- ১৮)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ ক্ষমতালোভী ও অহংকারীদের মতো আচরণ করো না। এ নির্দেশটিও ব্যক্তিগত কর্মপদ্ধতি ও জাতীয় আচরণ উভয়ের উপর সমানভাবে প্রযোজ্য। এ নির্দেশের কারণে মদিনায় যে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তার শাসকবৃন্দ ও গভর্নরদের জীবনে ক্ষমতার লোভ বা অহংকারের লেশমাত্রও ছিল না। এমনকি যুদ্ধরত অবস্থায়ও কখনো তাদের মুখ থেকে দম্ভ ও অহংকারের কোন কথাই বের হতো না। তাদের ওঠাবসা, চালচলন, পোশাক-পরিচ্ছদ, ঘরবাড়ি, সওয়ারী ও সাধারণ আচার-আচরণে নম্রতা ও কোমলতার ছাপ স্পষ্ট দেখা যেত। যখন তারা বিজয়ীর বেশে কোন শহরে প্রবেশ করতেন, তখনও অহংকার প্রদর্শন করতেন না।
অহংকার কোন মুমিনের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না :
اِنَّمَا يُؤْمِنُ بِاٰيَاتِنَا الَّذِيْنَ اِذَا ذُكِّرُوْا بِهَا خَرُّوْا سُجَّدًا وَّسَبَّحُوْا بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَهُمْ لَا يَسْتَكْبِرُوْنَ
কেবল তারাই আমার নিদর্শনগুলোর প্রতি ঈমান রাখে, যাদেরকে আমার আয়াতসমূহ স্মরণ করিয়ে দেয়া হলে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং স্বীয় প্রতিপালকের প্রশংসা, পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে; আর তারা অহংকার করে না। (সূরা সাজদা- ১৫)
ফেরেশতারা অহংকার করে না :
وَلِلّٰهِ يَسْجُدُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَرْضِ مِنْ دَآبَّةٍ وَّالْمَلَآئِكَةُ وَهُمْ لَا يَسْتَكْبِرُوْنَ
আকাশমন্ডলীতে যা কিছু আছে এবং পৃথিবীতে যত জীবজন্তু আছে সকলেই আল্লাহকে সিজদা করে এবং ফেরেশতাগণও; আর তারা অহংকার করে না। (সূরা নাহল- ৪৯)
বড়ত্ব ও অহংকার একমাত্র আল্লাহর জন্যই মানায় :
فَلِلّٰهِ الْحَمْدُ رَبِّ السَّمَاوَاتِ وَرَبِّ الْاَرْضِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ‐ وَلَهُ الْكِبْرِيَآءُ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি আকাশমন্ডলীর প্রতিপালক, পৃথিবীর প্রতিপালক এবং জগতসমূহের প্রতিপালক। আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে তাঁরই বড়ত্ব বিদ্যমান; তিনি মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাবান। (সূরা জাসিয়া- ৩৬, ৩৭)
আল্লাহ অহংকারীদেরকে পছন্দ করেন না :
اِنَّهٗ لَا يُحِبُّ الْمُسْتَكْبِرِيْنَ
নিশ্চয় তিনি অহংকারীদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা নাহল- ২৩)
وَاللهُ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُوْرٍ
আল্লাহ প্রত্যেক ঔদ্ধত্য ও অহংকারীদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা হাদীদ- ২৩)
অহংকারীরা নিদর্শন দেখে উপকৃত হয় না :
سَاَصْرِفُ عَنْ اٰيَاتِيَ الَّذِيْنَ يَتَكَبَّرُوْنَ فِى الْاَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ
যারা পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে দম্ভ করে বেড়ায়, তাদের দৃষ্টি আমার নিদর্শন হতে ফিরিয়ে দেব। (সূরা আ‘রাফ- ১৪৬)
ব্যাখ্যা : ‘অহংকার করে বেড়ানো’ বাক্যটি কুরআন মাজীদে এমন এক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, যা থেকে বুঝা যায় যে, বান্দা নিজেকে আল্লাহর আনুগত্য করার ঊর্ধ্বে স্থান দেয়, আল্লাহর আদেশ-নিষেধের কোন ধার ধারে না। এ ধরনের বান্দা হয়ে থাকার কোন অধিকার মানুষের নেই। তাই এখানে বলা হয়েছে, কোন প্রকার অধিকার ছাড়াই যারা পৃথিবীতে বড়াই করে বেড়ায়; প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী এ ধরনের লোকেরা কোন শিক্ষাপ্রদ ঘটনা অনুধাবন করতে এবং কোন শিক্ষণীয় বিষয় থেকে শিক্ষা লাভ করতে পারে না।
আল্লাহ অহংকারীদের অন্তরে মোহর মেরে দেন :
كَذٰلِكَ يَطْبَعُ اللهُ عَلٰى كُلِّ قَلْبِ مُتَكَبِّرٍ جَبَّارٍ
এভাবে আল্লাহ প্রত্যেক অহংকারী ও স্বৈরাচারী ব্যক্তির হৃদয়ে মোহর মেরে দেন। (সূরা মু’মিন- ৩৫)
ইবলিস অহংকার করে বিতাড়িত হয়েছিল :
وَاِذْ قُلْنَا لِلْمَلَآئِكَةِ اسْجُدُوْا لِاٰدَمَ فَسَجَدُوْاۤ اِلَّاۤ اِبْلِيْسَؕ اَبٰى وَاسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِيْنَ
আর আমি যখন ফেরেশতাদেরকে বলেছিলাম, তোমরা আদমকে সিজদা করো, তখন ইবলিস ব্যতীত সকলে সিজদা করেছিল। সে অস্বীকার করল ও অহংকার করল এবং কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল। (সূরা বাক্বারা- ৩৪)
অহংকারীরা জান্নাতে যেতে পারবে না :
اِنَّ الَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَا وَاسْتَكْبَرُوْا عَنْهَا لَا تُفَتَّحُ لَهُمْ اَبْوَابُ السَّمَآءِ وَلَا يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ حَتّٰى يَلِجَ الْجَمَلُ فِيْ سَمِّ الْخِيَاطِ وَكَذٰلِكَ نَجْزِى الْمُجْرِمِيْنَ
যারা আমার নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করে এবং সে সম্বন্ধে অহংকার করে, তাদের জন্য আকাশের দ্বার উন্মুক্ত করা হবে না। তারা জান্নাতেও প্রবেশ করতে পারবে না, যতক্ষণ না সূঁচের ছিদ্রপথে উষ্ট্র প্রবেশ করে। আর এভাবে আমি অপরাধীদেরকে প্রতিফল দান করব। (সূরা আ‘রাফ- ৪০)
অহংকারীদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম :
اَلَيْسَ فِيْ جَهَنَّمَ مَثْوًى لِّلْمُتَكَبِّرِيْنَ
জাহান্নাম কি অহংকারীদের আবাসস্থল নয়? (সূরা যুমার- ৬০)
قِيْلَ ادْخُلُوْاۤ اَبْوَابَ جَهَنَّمَ خَالِدِيْنَ فِيْهَاۚ فَبِئْسَ مَثْوَى الْمُتَكَبِّرِيْنَ
তাদেরকে বলা হবে, স্থায়ীভাবে অবস্থানের জন্য জাহান্নামের দ্বারসমূহে প্রবেশ করো। অহংকারীদের আবাসস্থল কতই না নিকৃষ্ট। (সূরা যুমার- ৭২)
মানুষের মধ্যে অনেকেই মিথ্যুক :
وَاِنَّا لَنَعْلَمُ اَنَّ مِنْكُمْ مُّكَذِّبِيْنَ
আমি ভালো করেই জানি যে, নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে মিথ্যা প্রতিপন্নকারীও রয়েছে। (সূরা হাক্কাহ- ৪৯)
মুনাফিকরা মিথ্যাবাদী :
وَاللهُ يَشْهَدُ اِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ لَكَاذِبُوْنَ
আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, নিশ্চয় মুনাফিকরা মিথ্যাবাদী। (সূরা মুনাফিকূন- ১)
কাফিররাও মিথ্যাবাদী :
بَلِ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا يُكَذِّبُوْنَ
বরং কাফিররা মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। (সূরা ইনশিক্বাক- ২২)
মুশরিকরাও মিথ্যাবাদী :
اَلَاۤ اِنَّهُمْ مِّنْ اِفْكِهِمْ لَيَقُوْلُوْنَ ‐ وَلَدَ اللهُ وَاِنَّهُمْ لَكَاذِبُوْنَ
দেখো, তারা নিজেদের মনগড়া কথা থেকে বলে যে, আল্লাহ সন্তান জন্ম দিয়েছেন। নিশ্চয় তারা মিথ্যাবাদী। (সূরা সাফ্ফাত- ১৫১, ১৫২)
মিথ্যাবাদীদের পরিণাম খারাপ হয়েছে :
فَسِيْرُوْا فِى الْاَرْضِ فَانْظُرُوْا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِيْنَ
তোমরা দুনিয়া ভ্রমণ করো, অতঃপর লক্ষ্য করো যে, মিথ্যাবাদীদের পরিণাম কিরূপ হয়েছে। (সূরা আলে ইমরান- ১৩৭)
মিথ্যারোপকারীরা শাস্তি ভোগ করবে :
فَاَنْذَرْتُكُمْ نَارًا تَلَظّٰى ‐ لَا يَصْلَاهَاۤ اِلَّا الْاَشْقٰى ‐ اَلَّذِيْ كَذَّبَ وَتَوَلّٰى
অতএব আমি তোমাদেরকে প্রজ্বলিত অগ্নি সম্পর্কে সতর্ক করে দিচ্ছি। এতে নিতান্ত হতভাগা ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউই প্রবেশ করবে না। (সে এমন ব্যক্তি) যে মিথ্যারোপ করে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়। (সূরা লাইল, ১৪-১৬)
اِنَّا قَدْ اُوْحِيَ اِلَيْنَاۤ اَنَّ الْعَذَابَ عَلٰى مَنْ كَذَّبَ وَتَوَلّٰى
আমাদের প্রতি ওহী প্রেরণ করা হয়েছে যে, শাস্তি (কেবলমাত্র) তার জন্য (নির্ধারিত) যে মিথ্যারোপ করে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়। (সূরা ত্বা-হা- ৪৮)
আল্লাহ মিথ্যা বলতে নিষেধ করেছেন :
فَاجْتَنِبُوا الرِّجْسَ مِنَ الْاَوْثَانِ وَاجْتَنِبُوْا قَوْلَ الزُّوْرِ
তোমরা মূর্তিপূজার অপবিত্রতা বর্জন করো এবং মিথ্যা কথোপকথন হতে দূরে থাকো। (সূরা হজ্জ- ৩০)
ব্যাখ্যা : অত্র আয়াতে এমনকিছু বাতিল আকিদা-বিশ্বাস, বিধিবিধান ও কুসংস্কারের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, যেগুলোর উপর কুফরী ও শিরকের ভিত্তি গড়ে উঠেছে। যেমন আল্লাহর নিজ সত্তা, গুণাবলি, ক্ষমতা ও অধিকারে অন্য কাউকে অংশীদার স্থাপন করা, আল্লাহ কর্তৃক হালালকৃত পশুকে হারাম মনে করা, দেব-দেবিদের নামে পশু যবাই করা ইত্যাদি। কেননা এগুলোই হচ্ছে সবচেয়ে বড় মিথ্যা কার্যকলাপ। আর তাই অত্র আয়াতের পরবর্তী হুকুমেই সকল ধরনের মিথ্যা কথাকে পরিহার করতে বলা হয়েছে। সুতরাং মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া ও মিথ্যা কসম করাও একই বিধানের অন্তর্ভুক্ত। ইসলামী আইনে এ দু’টি অত্যন্ত শাস্তিযোগ্য অপরাধ। উমর (রাঃ) এর আদালতে এক ব্যক্তির সাক্ষ্য মিথ্যা প্রমাণিত হয়। ফলে তিনি তাকে একদিন প্রকাশ্যে জনসমাগমের স্থানে দাঁড় করিয়ে রাখেন এবং ঘোষণা করে দেন যে, এ ব্যক্তি হচ্ছে অমুকের ছেলে অমুক। সে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছে, তাকে চিনে রেখো। তারপর তাকে কারাগারে আটক করেন।
আল্লাহ মিথ্যা ফতওয়া দিতে নিষেধ করেছেন :
وَلَا تَقُوْلُوْا لِمَا تَصِفُ اَلْسِنَتُكُمُ الْكَذِبَ هٰذَا حَلَالٌ وَّهٰذَا حَرَامٌ لِّتَفْتَرُوْا عَلَى اللهِ الْكَذِبَؕ اِنَّ الَّذِيْنَ يَفْتَرُوْنَ عَلَى اللهِ الْكَذِبَ لَا يُفْلِحُوْنَ
তোমরা তোমাদের জিহবা দ্বারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে (এ কথা) বলো না যে, এটা হালাল এবং ওটা হারাম। নিশ্চয় যারা আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন করবে, তারা সফলকাম হতে পারবে না। (সূরা নাহল- ১১৬)
আল্লাহ মিথ্যাবাদীদেরকে হেদায়াত দান করেন না :
اِنَّ اللهَ لَا يَهْدِيْ مَنْ هُوَ مُسْرِفٌ كَذَّابٌ
নিশ্চয় আল্লাহ তাকে সৎপথে পরিচালিত করেন না, যে সীমালঙ্ঘনকারী ও মিথ্যাবাদী। (সূরা মু’মিন- ২৮)
اِنَّ اللهَ لَا يَهْدِيْ مَنْ هُوَ كَاذِبٌ كَفَّارٌ
নিশ্চয় আল্লাহ তাকে সৎপথে পরিচালিত করেন না, যে মিথ্যাবাদী ও কাফির। (সূরা যুমার- ৩)
মিথ্যুকদেরকে শয়তান আয়ত্তে নিয়ে নেয় :
هَلْ اُنَبِّئُكُمْ عَلٰى مَنْ تَنَزَّلُ الشَّيَاطِيْنُ ‐ تَنَزَّلُ عَلٰى كُلِّ اَفَّاكٍ اَثِيْمٍ
(হে নবী) আমি কি তোমাকে জানিয়ে দেব না যে, শয়তানরা কার নিকট অবতীর্ণ হয়? তারা তো অবতীর্ণ হয় প্রত্যেকটি ঘোর মিথ্যাবাদী ও পাপীর নিকট। (সূরা শু‘আরা- ২২১, ২২২)
মিথ্যুকদের জন্য রয়েছে ধ্বংস :
وَيْلٌ يَّوْمَئِذٍ لِّلْمُكَذِّبِيْنَ
সেদিন দুর্ভোগ মিথ্যারোপকারীদের জন্য। (সূরা মুরসালাত- ১৫)
وَاَمَّاۤ اِنْ كَانَ مِنَ الْمُكَذِّبِيْنَ الضَّآلِّيْنَ ‐ فَنُزُلٌ مِّنْ حَمِيْمٍ ‐ وَتَصْلِيَةُ جَحِيْمٍ
কিন্তু সে যদি মিথ্যা প্রতিপন্নকারী ও বিভ্রান্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়, তবে তার আপ্যায়নের জন্য রয়েছে টগবগে ফুটন্ত পানি এবং জাহান্নামের দহন। (সূরা ওয়াক্বিয়া, ৯২-৯৪)
মিথ্যুকদের অনুসরণ করা যাবে না :
فَلَا تُطِعِ الْمُكَذِّبِيْنَ
অতএব তুমি মিথ্যাবাদীদের অনুসরণ করো না। (সূরা ক্বালাম- ৮)
ব্যাখ্যা : ষষ্ঠ হিজরীতে আয়েশা (রাঃ) বনু মুস্তালিকের যুদ্ধে রাসূল ﷺ এর সঙ্গে ছিলেন। অতঃপর প্রত্যাবর্তনের সময় তাঁরা এক মনযিলে বিশ্রাম গ্রহণ করেন। যাত্রার প্রাক্কালে আয়েশা (রাঃ) ইস্তিঞ্জা করতে গেলেন। কিন্তু যাত্রার আদেশ হলে চালক উট হাঁকিয়ে দিল। ফলে তিনি ফিরে এসে কাউকে দেখতে পেলেন না। পরে পতিত দ্রব্যের সন্ধানকারী সাফওয়ান (রাঃ) এসে তাকে নিয়ে গেলেন। এতে মুনাফিকরা তাঁর প্রতি মিথ্যা অপবাদ রটাল। কতিপয় সাহাবীও এতে যোগ দিলেন। অতঃপর ঘটনার সত্যতা প্রমাণ হলে রাসূল ﷺ অপরাধীদেরকে অপবাদের শাস্তি দিলেন।
وَاِنَّا لَنَعْلَمُ اَنَّ مِنْكُمْ مُّكَذِّبِيْنَ
আমি ভালো করেই জানি যে, নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে মিথ্যা প্রতিপন্নকারীও রয়েছে। (সূরা হাক্কাহ- ৪৯)
মুনাফিকরা মিথ্যাবাদী :
وَاللهُ يَشْهَدُ اِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ لَكَاذِبُوْنَ
আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, নিশ্চয় মুনাফিকরা মিথ্যাবাদী। (সূরা মুনাফিকূন- ১)
কাফিররাও মিথ্যাবাদী :
بَلِ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا يُكَذِّبُوْنَ
বরং কাফিররা মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। (সূরা ইনশিক্বাক- ২২)
মুশরিকরাও মিথ্যাবাদী :
اَلَاۤ اِنَّهُمْ مِّنْ اِفْكِهِمْ لَيَقُوْلُوْنَ ‐ وَلَدَ اللهُ وَاِنَّهُمْ لَكَاذِبُوْنَ
দেখো, তারা নিজেদের মনগড়া কথা থেকে বলে যে, আল্লাহ সন্তান জন্ম দিয়েছেন। নিশ্চয় তারা মিথ্যাবাদী। (সূরা সাফ্ফাত- ১৫১, ১৫২)
মিথ্যাবাদীদের পরিণাম খারাপ হয়েছে :
فَسِيْرُوْا فِى الْاَرْضِ فَانْظُرُوْا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِيْنَ
তোমরা দুনিয়া ভ্রমণ করো, অতঃপর লক্ষ্য করো যে, মিথ্যাবাদীদের পরিণাম কিরূপ হয়েছে। (সূরা আলে ইমরান- ১৩৭)
মিথ্যারোপকারীরা শাস্তি ভোগ করবে :
فَاَنْذَرْتُكُمْ نَارًا تَلَظّٰى ‐ لَا يَصْلَاهَاۤ اِلَّا الْاَشْقٰى ‐ اَلَّذِيْ كَذَّبَ وَتَوَلّٰى
অতএব আমি তোমাদেরকে প্রজ্বলিত অগ্নি সম্পর্কে সতর্ক করে দিচ্ছি। এতে নিতান্ত হতভাগা ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউই প্রবেশ করবে না। (সে এমন ব্যক্তি) যে মিথ্যারোপ করে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়। (সূরা লাইল, ১৪-১৬)
اِنَّا قَدْ اُوْحِيَ اِلَيْنَاۤ اَنَّ الْعَذَابَ عَلٰى مَنْ كَذَّبَ وَتَوَلّٰى
আমাদের প্রতি ওহী প্রেরণ করা হয়েছে যে, শাস্তি (কেবলমাত্র) তার জন্য (নির্ধারিত) যে মিথ্যারোপ করে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়। (সূরা ত্বা-হা- ৪৮)
আল্লাহ মিথ্যা বলতে নিষেধ করেছেন :
فَاجْتَنِبُوا الرِّجْسَ مِنَ الْاَوْثَانِ وَاجْتَنِبُوْا قَوْلَ الزُّوْرِ
তোমরা মূর্তিপূজার অপবিত্রতা বর্জন করো এবং মিথ্যা কথোপকথন হতে দূরে থাকো। (সূরা হজ্জ- ৩০)
ব্যাখ্যা : অত্র আয়াতে এমনকিছু বাতিল আকিদা-বিশ্বাস, বিধিবিধান ও কুসংস্কারের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, যেগুলোর উপর কুফরী ও শিরকের ভিত্তি গড়ে উঠেছে। যেমন আল্লাহর নিজ সত্তা, গুণাবলি, ক্ষমতা ও অধিকারে অন্য কাউকে অংশীদার স্থাপন করা, আল্লাহ কর্তৃক হালালকৃত পশুকে হারাম মনে করা, দেব-দেবিদের নামে পশু যবাই করা ইত্যাদি। কেননা এগুলোই হচ্ছে সবচেয়ে বড় মিথ্যা কার্যকলাপ। আর তাই অত্র আয়াতের পরবর্তী হুকুমেই সকল ধরনের মিথ্যা কথাকে পরিহার করতে বলা হয়েছে। সুতরাং মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া ও মিথ্যা কসম করাও একই বিধানের অন্তর্ভুক্ত। ইসলামী আইনে এ দু’টি অত্যন্ত শাস্তিযোগ্য অপরাধ। উমর (রাঃ) এর আদালতে এক ব্যক্তির সাক্ষ্য মিথ্যা প্রমাণিত হয়। ফলে তিনি তাকে একদিন প্রকাশ্যে জনসমাগমের স্থানে দাঁড় করিয়ে রাখেন এবং ঘোষণা করে দেন যে, এ ব্যক্তি হচ্ছে অমুকের ছেলে অমুক। সে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছে, তাকে চিনে রেখো। তারপর তাকে কারাগারে আটক করেন।
আল্লাহ মিথ্যা ফতওয়া দিতে নিষেধ করেছেন :
وَلَا تَقُوْلُوْا لِمَا تَصِفُ اَلْسِنَتُكُمُ الْكَذِبَ هٰذَا حَلَالٌ وَّهٰذَا حَرَامٌ لِّتَفْتَرُوْا عَلَى اللهِ الْكَذِبَؕ اِنَّ الَّذِيْنَ يَفْتَرُوْنَ عَلَى اللهِ الْكَذِبَ لَا يُفْلِحُوْنَ
তোমরা তোমাদের জিহবা দ্বারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে (এ কথা) বলো না যে, এটা হালাল এবং ওটা হারাম। নিশ্চয় যারা আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন করবে, তারা সফলকাম হতে পারবে না। (সূরা নাহল- ১১৬)
আল্লাহ মিথ্যাবাদীদেরকে হেদায়াত দান করেন না :
اِنَّ اللهَ لَا يَهْدِيْ مَنْ هُوَ مُسْرِفٌ كَذَّابٌ
নিশ্চয় আল্লাহ তাকে সৎপথে পরিচালিত করেন না, যে সীমালঙ্ঘনকারী ও মিথ্যাবাদী। (সূরা মু’মিন- ২৮)
اِنَّ اللهَ لَا يَهْدِيْ مَنْ هُوَ كَاذِبٌ كَفَّارٌ
নিশ্চয় আল্লাহ তাকে সৎপথে পরিচালিত করেন না, যে মিথ্যাবাদী ও কাফির। (সূরা যুমার- ৩)
মিথ্যুকদেরকে শয়তান আয়ত্তে নিয়ে নেয় :
هَلْ اُنَبِّئُكُمْ عَلٰى مَنْ تَنَزَّلُ الشَّيَاطِيْنُ ‐ تَنَزَّلُ عَلٰى كُلِّ اَفَّاكٍ اَثِيْمٍ
(হে নবী) আমি কি তোমাকে জানিয়ে দেব না যে, শয়তানরা কার নিকট অবতীর্ণ হয়? তারা তো অবতীর্ণ হয় প্রত্যেকটি ঘোর মিথ্যাবাদী ও পাপীর নিকট। (সূরা শু‘আরা- ২২১, ২২২)
মিথ্যুকদের জন্য রয়েছে ধ্বংস :
وَيْلٌ يَّوْمَئِذٍ لِّلْمُكَذِّبِيْنَ
সেদিন দুর্ভোগ মিথ্যারোপকারীদের জন্য। (সূরা মুরসালাত- ১৫)
وَاَمَّاۤ اِنْ كَانَ مِنَ الْمُكَذِّبِيْنَ الضَّآلِّيْنَ ‐ فَنُزُلٌ مِّنْ حَمِيْمٍ ‐ وَتَصْلِيَةُ جَحِيْمٍ
কিন্তু সে যদি মিথ্যা প্রতিপন্নকারী ও বিভ্রান্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়, তবে তার আপ্যায়নের জন্য রয়েছে টগবগে ফুটন্ত পানি এবং জাহান্নামের দহন। (সূরা ওয়াক্বিয়া, ৯২-৯৪)
মিথ্যুকদের অনুসরণ করা যাবে না :
فَلَا تُطِعِ الْمُكَذِّبِيْنَ
অতএব তুমি মিথ্যাবাদীদের অনুসরণ করো না। (সূরা ক্বালাম- ৮)
ব্যাখ্যা : ষষ্ঠ হিজরীতে আয়েশা (রাঃ) বনু মুস্তালিকের যুদ্ধে রাসূল ﷺ এর সঙ্গে ছিলেন। অতঃপর প্রত্যাবর্তনের সময় তাঁরা এক মনযিলে বিশ্রাম গ্রহণ করেন। যাত্রার প্রাক্কালে আয়েশা (রাঃ) ইস্তিঞ্জা করতে গেলেন। কিন্তু যাত্রার আদেশ হলে চালক উট হাঁকিয়ে দিল। ফলে তিনি ফিরে এসে কাউকে দেখতে পেলেন না। পরে পতিত দ্রব্যের সন্ধানকারী সাফওয়ান (রাঃ) এসে তাকে নিয়ে গেলেন। এতে মুনাফিকরা তাঁর প্রতি মিথ্যা অপবাদ রটাল। কতিপয় সাহাবীও এতে যোগ দিলেন। অতঃপর ঘটনার সত্যতা প্রমাণ হলে রাসূল ﷺ অপরাধীদেরকে অপবাদের শাস্তি দিলেন।
মানুষ সাধারণত কৃপণ হয়ে থাকে :
قُلْ لَّوْ اَنْتُمْ تَمْلِكُوْنَ خَزَآئِنَ رَحْمَةِ رَبِّۤيْ اِذًا لَّاَمْسَكْتُمْ خَشْيَةَ الْاِنْفَاقِؕ وَكَانَ الْاِنْسَانُ قَتُوْرًا
বলো, যদি তোমরা আমার প্রতিপালকের দয়ার ভান্ডারের অধিকারী হতে, তবুও ‘ব্যয় হয়ে যাবে’- এ আশঙ্কায় সেটা ধরে রাখতে; নিশ্চয় মানুষ অতিশয় কৃপণ। (সূরা বনী ইসরাঈল- ১০০)
وَاُحْضِرَتِ الْا َنْفُسُ الشُّحَّ
আর নফসসমূহ সহজেই কৃপণতার দিকে ঝুঁকে পড়ে। (সূরা নিসা- ১২৮)
সম্পদ হাতে আসলে মানুষ কৃপণ হয়ে যায় :
وَمِنْهُمْ مَّنْ عَاهَدَ اللهَ لَئِنْ اٰتَانَا مِنْ فَضْلِهٖ لَنَصَّدَّقَنَّ وَلَنَكُوْنَنَّ مِنَ الصَّالِحِيْنَ ‐ فَلَمَّاۤ اٰتَاهُمْ مِّنْ فَضْلِهٖ بَخِلُوْا بِهٖ وَتَوَلَّوْا وَّهُمْ مُّعْرِضُوْنَ
তাদের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহর নিকট অঙ্গীকার করেছিল যে, যদি আল্লাহ নিজ কৃপায় আমাদেরকে দান করেন, তবে নিশ্চয় আমরা সাদাকা দেব এবং অবশ্যই সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হব। অতঃপর যখন তিনি নিজ কৃপায় তাদেরকে দান করলেন, তখন তারা এ বিষয়ে কার্পণ্য করল এবং বিরুদ্ধ ভাবাপন্ন হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিল। (সূরা তাওবা- ৭৫, ৭৬)
কৃপণরা সম্পদকে চিরস্থায়ী মনে করে :
اَلَّذِيْ جَمَعَ مَالًا وَّعَدَّدَهٗ ‐ يَحْسَبُ اَنَّ مَالَهٗۤ اَخْلَدَهٗ
যে অর্থ সঞ্চিত করে ও গণনা করে। সে মনে করে যে, তার অর্থ চিরকাল তার সাথে থাকবে। (সূরা হুমাযাহ্- ২, ৩)
কৃপণরা জিহাদে সম্পদ ব্যয় করতে চায় না :
هَاۤ اَنْتُمْ هٰۤؤُلَآءِ تُدْعَوْنَ لِتُنْفِقُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِۚ فَمِنْكُمْ مَّنْ يَّبْخَلُ
দেখো, তোমাদেরকে আল্লাহর পথে মাল খরচ করার জন্য আহবান করা হয়; কিন্তু তোমাদের মধ্যে কতক লোক এতে কৃপণতা করছে। (সূরা মুহাম্মাদ- ৩৮)
কৃপণতা নিজের ক্ষতি ডেকে আনে :
وَمَنْ يَّبْخَلْ فَاِنَّمَا يَبْخَلُ عَنْ نَّفْسِهٖؕ وَاللهُ الْغَنِيُّ وَاَنْتُمُ الْفُقَرَآءُ
যে কৃপণতা করছে সে আসলে নিজের সাথে নিজেই কৃপণতা করছে। (প্রকৃতপক্ষে) আল্লাহ অভাবমুক্ত এবং তোমরাই অভাবগ্রস্ত। (সূরা মুহাম্মাদ- ৩৮)
আল্লাহ কৃপণদেরকে ভালোবাসেন না :
وَاللهُ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُوْرٍ ‐ اَلَّذِيْنَ يَبْخَلُوْنَ وَيَأْمُرُوْنَ النَّاسَ بِالْبُخْلِ
আল্লাহ উদ্ধত ও অহংকারীদেরকে পছন্দ করেন না। (তারা এমন লোক) যারা কার্পণ্য করে এবং মানুষকে কার্পণ্যের নির্দেশ দেয়। (সূরা হাদীদ- ২৩, ২৪)
اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ مَنْ كَانَ مُخْتَالًا فَخُوْرًا ‐ اَلَّذِيْنَ يَبْخَلُوْنَ وَيَأْمُرُوْنَ النَّاسَ بِالْبُخْلِ وَيَكْتُمُوْنَ مَاۤ اٰتَاهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٖؕ وَاَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِيْنَ عَذَابًا مُّهِيْنًا
নিশ্চয় আল্লাহ দাম্ভিক ও অহংকারীকে পছন্দ করেন না। (তারা এমন লোক) যারা কৃপণতা করে এবং মানুষকে কৃপণতার নির্দেশ দেয়; আর আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে যা দিয়েছেন তা গোপন করে। সুতরাং আমি কাফিরদের জন্য আখিরাতে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। (সূরা নিসা- ৩৬, ৩৭)
কৃপণের সম্পদ তার কোন উপকারে আসে না :
وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِيْنَ يَبْخَلُوْنَ بِمَاۤ اٰتَاهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٖ هُوَ خَيْرًا لَّهُمْ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَّهُمْ
আল্লাহ যাদেরকে স্বীয় প্রতিদান হতে কিছু দান করেছেন সে বিষয়ে যারা কার্পণ্য করে, তারা যেন এরূপ ধারণা না করে যে, ওটা তাদের জন্য কল্যাণকর; বরং ওটা তাদের জন্য ক্ষতিকর। (সূরা আলে ইমরান- ১৮০)
এ সম্পদ কিয়ামতের দিন গলার বেড়ি হবে :
سَيُطَوَّقُوْنَ مَا بَخِلُوْا بِهٖ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
তারা যে বিষয়ে কৃপণতা করেছে, কিয়ামত দিবসে ওটাই তাদের গলার বেড়িতে পরিণত হবে। (সূরা আলে ইমরান- ১৮০)
কৃপণকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে :
وَيْلٌ لِّكُلِّ هُمَزَةٍ لُّمَزَةٍ ‐ اَلَّذِيْ جَمَعَ مَالًا وَّعَدَّدَهٗ ‐ يَحْسَبُ اَنَّ مَالَهٗۤ اَخْلَدَهٗ ‐ كَلَّا لَيُنْۢبَذَنَّ فِى الْحُطَمَةِ ‐ وَمَاۤ اَدْرَاكَ مَا الْحُطَمَةُ ‐ نَارُ اللهِ الْمُوْقَدَةُ ‐ اَلَّتِيْ تَطَّلِعُ عَلَى الْاَفْئِدَةِ ‐ اِنَّهَا عَلَيْهِمْ مُّؤْصَدَةٌ ‐ فِيْ عَمَدٍ مُّمَدَّدَةٍ
প্রত্যেক পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দাকারীর জন্য দুর্ভোগ, যে অর্থ সঞ্চয় করে ও গণনা করে। সে মনে করে যে, তার অর্থ চিরকাল তার সাথে থাকবে। কখনো না, সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে চূর্ণবিচূর্ণকারী আগুনের মধ্যে। তুমি কি জান, চূর্ণবিচূর্ণকারী আগুন কেমন? এটা আল্লাহর প্রজ্বলিত অগ্নি, যা হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছবে। এতে তাদেরকে বেঁধে দেয়া হবে, লম্বা লম্বা খুঁটিতে। (সূরা হুমাযাহ)
সংকীর্ণমনতা থেকে বেঁচে থাকাই সফলতা লাভের উপায় :
وَمَنْ يُّوْقَ شُحَّ نَفْسِهٖ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
যারা নিজেদেরকে কৃপণতা হতে মুক্ত করেছে তারাই সফলকাম। (সূরা হাশর- ৯)
قُلْ لَّوْ اَنْتُمْ تَمْلِكُوْنَ خَزَآئِنَ رَحْمَةِ رَبِّۤيْ اِذًا لَّاَمْسَكْتُمْ خَشْيَةَ الْاِنْفَاقِؕ وَكَانَ الْاِنْسَانُ قَتُوْرًا
বলো, যদি তোমরা আমার প্রতিপালকের দয়ার ভান্ডারের অধিকারী হতে, তবুও ‘ব্যয় হয়ে যাবে’- এ আশঙ্কায় সেটা ধরে রাখতে; নিশ্চয় মানুষ অতিশয় কৃপণ। (সূরা বনী ইসরাঈল- ১০০)
وَاُحْضِرَتِ الْا َنْفُسُ الشُّحَّ
আর নফসসমূহ সহজেই কৃপণতার দিকে ঝুঁকে পড়ে। (সূরা নিসা- ১২৮)
সম্পদ হাতে আসলে মানুষ কৃপণ হয়ে যায় :
وَمِنْهُمْ مَّنْ عَاهَدَ اللهَ لَئِنْ اٰتَانَا مِنْ فَضْلِهٖ لَنَصَّدَّقَنَّ وَلَنَكُوْنَنَّ مِنَ الصَّالِحِيْنَ ‐ فَلَمَّاۤ اٰتَاهُمْ مِّنْ فَضْلِهٖ بَخِلُوْا بِهٖ وَتَوَلَّوْا وَّهُمْ مُّعْرِضُوْنَ
তাদের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহর নিকট অঙ্গীকার করেছিল যে, যদি আল্লাহ নিজ কৃপায় আমাদেরকে দান করেন, তবে নিশ্চয় আমরা সাদাকা দেব এবং অবশ্যই সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হব। অতঃপর যখন তিনি নিজ কৃপায় তাদেরকে দান করলেন, তখন তারা এ বিষয়ে কার্পণ্য করল এবং বিরুদ্ধ ভাবাপন্ন হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিল। (সূরা তাওবা- ৭৫, ৭৬)
কৃপণরা সম্পদকে চিরস্থায়ী মনে করে :
اَلَّذِيْ جَمَعَ مَالًا وَّعَدَّدَهٗ ‐ يَحْسَبُ اَنَّ مَالَهٗۤ اَخْلَدَهٗ
যে অর্থ সঞ্চিত করে ও গণনা করে। সে মনে করে যে, তার অর্থ চিরকাল তার সাথে থাকবে। (সূরা হুমাযাহ্- ২, ৩)
কৃপণরা জিহাদে সম্পদ ব্যয় করতে চায় না :
هَاۤ اَنْتُمْ هٰۤؤُلَآءِ تُدْعَوْنَ لِتُنْفِقُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِۚ فَمِنْكُمْ مَّنْ يَّبْخَلُ
দেখো, তোমাদেরকে আল্লাহর পথে মাল খরচ করার জন্য আহবান করা হয়; কিন্তু তোমাদের মধ্যে কতক লোক এতে কৃপণতা করছে। (সূরা মুহাম্মাদ- ৩৮)
কৃপণতা নিজের ক্ষতি ডেকে আনে :
وَمَنْ يَّبْخَلْ فَاِنَّمَا يَبْخَلُ عَنْ نَّفْسِهٖؕ وَاللهُ الْغَنِيُّ وَاَنْتُمُ الْفُقَرَآءُ
যে কৃপণতা করছে সে আসলে নিজের সাথে নিজেই কৃপণতা করছে। (প্রকৃতপক্ষে) আল্লাহ অভাবমুক্ত এবং তোমরাই অভাবগ্রস্ত। (সূরা মুহাম্মাদ- ৩৮)
আল্লাহ কৃপণদেরকে ভালোবাসেন না :
وَاللهُ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُوْرٍ ‐ اَلَّذِيْنَ يَبْخَلُوْنَ وَيَأْمُرُوْنَ النَّاسَ بِالْبُخْلِ
আল্লাহ উদ্ধত ও অহংকারীদেরকে পছন্দ করেন না। (তারা এমন লোক) যারা কার্পণ্য করে এবং মানুষকে কার্পণ্যের নির্দেশ দেয়। (সূরা হাদীদ- ২৩, ২৪)
اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ مَنْ كَانَ مُخْتَالًا فَخُوْرًا ‐ اَلَّذِيْنَ يَبْخَلُوْنَ وَيَأْمُرُوْنَ النَّاسَ بِالْبُخْلِ وَيَكْتُمُوْنَ مَاۤ اٰتَاهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٖؕ وَاَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِيْنَ عَذَابًا مُّهِيْنًا
নিশ্চয় আল্লাহ দাম্ভিক ও অহংকারীকে পছন্দ করেন না। (তারা এমন লোক) যারা কৃপণতা করে এবং মানুষকে কৃপণতার নির্দেশ দেয়; আর আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে যা দিয়েছেন তা গোপন করে। সুতরাং আমি কাফিরদের জন্য আখিরাতে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। (সূরা নিসা- ৩৬, ৩৭)
কৃপণের সম্পদ তার কোন উপকারে আসে না :
وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِيْنَ يَبْخَلُوْنَ بِمَاۤ اٰتَاهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٖ هُوَ خَيْرًا لَّهُمْ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَّهُمْ
আল্লাহ যাদেরকে স্বীয় প্রতিদান হতে কিছু দান করেছেন সে বিষয়ে যারা কার্পণ্য করে, তারা যেন এরূপ ধারণা না করে যে, ওটা তাদের জন্য কল্যাণকর; বরং ওটা তাদের জন্য ক্ষতিকর। (সূরা আলে ইমরান- ১৮০)
এ সম্পদ কিয়ামতের দিন গলার বেড়ি হবে :
سَيُطَوَّقُوْنَ مَا بَخِلُوْا بِهٖ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
তারা যে বিষয়ে কৃপণতা করেছে, কিয়ামত দিবসে ওটাই তাদের গলার বেড়িতে পরিণত হবে। (সূরা আলে ইমরান- ১৮০)
কৃপণকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে :
وَيْلٌ لِّكُلِّ هُمَزَةٍ لُّمَزَةٍ ‐ اَلَّذِيْ جَمَعَ مَالًا وَّعَدَّدَهٗ ‐ يَحْسَبُ اَنَّ مَالَهٗۤ اَخْلَدَهٗ ‐ كَلَّا لَيُنْۢبَذَنَّ فِى الْحُطَمَةِ ‐ وَمَاۤ اَدْرَاكَ مَا الْحُطَمَةُ ‐ نَارُ اللهِ الْمُوْقَدَةُ ‐ اَلَّتِيْ تَطَّلِعُ عَلَى الْاَفْئِدَةِ ‐ اِنَّهَا عَلَيْهِمْ مُّؤْصَدَةٌ ‐ فِيْ عَمَدٍ مُّمَدَّدَةٍ
প্রত্যেক পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দাকারীর জন্য দুর্ভোগ, যে অর্থ সঞ্চয় করে ও গণনা করে। সে মনে করে যে, তার অর্থ চিরকাল তার সাথে থাকবে। কখনো না, সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে চূর্ণবিচূর্ণকারী আগুনের মধ্যে। তুমি কি জান, চূর্ণবিচূর্ণকারী আগুন কেমন? এটা আল্লাহর প্রজ্বলিত অগ্নি, যা হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছবে। এতে তাদেরকে বেঁধে দেয়া হবে, লম্বা লম্বা খুঁটিতে। (সূরা হুমাযাহ)
সংকীর্ণমনতা থেকে বেঁচে থাকাই সফলতা লাভের উপায় :
وَمَنْ يُّوْقَ شُحَّ نَفْسِهٖ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
যারা নিজেদেরকে কৃপণতা হতে মুক্ত করেছে তারাই সফলকাম। (সূরা হাশর- ৯)
বিপদে পড়লে মানুষ নিরাশ হয়ে যায় :
وَاِذَاۤ اَذَقْنَا النَّاسَ رَحْمَةً فَرِحُوْا بِهَاؕ وَاِنْ تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌ ۢبِمَا قَدَّمَتْ اَيْدِيْهِمْ اِذَا هُمْ يَقْنَطُوْنَ
আমি যখন মানুষকে রহমতের স্বাদ ভোগ করাই, তখন তারা তাতে আনন্দিত হয়। আর যদি তাদের কাজকর্মের দরুন তাদের উপর কোন বিপদ এসে যায়, তবে তখনই তারা নিরাশ হয়ে পড়ে। (সূরা রূম- ৩৬)
لَا يَسْاَمُ الْاِنْسَانُ مِنْ دُعَآءِ الْخَيْرِ وَاِنْ مَّسَّهُ الشَّرُّ فَيَئُوْسٌ قَنُوْطٌ
মানুষ কল্যাণ (ধনসম্পদ) প্রার্থনায় কোন ক্লান্তিবোধ করে না; কিন্তু যখন তাকে দুঃখ-কষ্ট স্পর্শ করে তখন সে অত্যন্ত নিরাশ ও হতাশ হয়ে পড়ে। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৪৯)
পথভ্রষ্টরাই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয় :
وَمَنْ يَّقْنَطُ مِنْ رَّحْمَةِ رَبِّهٖۤ اِلَّا الضَّآلُّوْنَ
যারা পথভ্রষ্ট তারা ব্যতীত আর কে তার প্রতিপালকের অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়? (সূরা হিজর- ৫৬)
আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া কাফিরদের অভ্যাস :
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِاٰيَاتِ اللهِ وَلِقَآئِهٖۤ اُولٰٓئِكَ يَئِسُوْا مِنْ رَّحْمَتِيْ وَاُولٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
যারা আল্লাহর নিদর্শন ও তাঁর সাক্ষাতকে অস্বীকার করে, তারাই আমার অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়। আর তাদের জন্য রয়েছে মর্মান্তিক শাস্তি। (সূরা আনকাবূত- ২৩)
اِنَّهٗ لَا يَيْئَسُ مِنْ رَّوْحِ اللهِ اِلَّا الْقَوْمُ الْكَافِرُوْنَ
নিশ্চয় কাফির সম্প্রদায় ছাড়া অন্য কেউই আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয় না। (সূরা ইউসুফ- ৮৭)
আল্লাহ তাঁর রহমত থেকে নিরাশ হতে নিষেধ করেছেন :
قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِيْنَ اَسْرَفُوْا عَلٰۤى اَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوْا مِنْ رَّحْمَةِ اللهِؕ اِنَّ اللهَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِيْعًاؕ اِنَّهٗ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ
বলো, হে আমার ঐসব বান্দারা! যারা নিজেদের নফসের উপর যুলুম করেছ, তোমরা আমার রহমত হতে নিরাশ হয়ো না, আল্লাহ সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা যুমার- ৫৩)
وَاِذَاۤ اَذَقْنَا النَّاسَ رَحْمَةً فَرِحُوْا بِهَاؕ وَاِنْ تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌ ۢبِمَا قَدَّمَتْ اَيْدِيْهِمْ اِذَا هُمْ يَقْنَطُوْنَ
আমি যখন মানুষকে রহমতের স্বাদ ভোগ করাই, তখন তারা তাতে আনন্দিত হয়। আর যদি তাদের কাজকর্মের দরুন তাদের উপর কোন বিপদ এসে যায়, তবে তখনই তারা নিরাশ হয়ে পড়ে। (সূরা রূম- ৩৬)
لَا يَسْاَمُ الْاِنْسَانُ مِنْ دُعَآءِ الْخَيْرِ وَاِنْ مَّسَّهُ الشَّرُّ فَيَئُوْسٌ قَنُوْطٌ
মানুষ কল্যাণ (ধনসম্পদ) প্রার্থনায় কোন ক্লান্তিবোধ করে না; কিন্তু যখন তাকে দুঃখ-কষ্ট স্পর্শ করে তখন সে অত্যন্ত নিরাশ ও হতাশ হয়ে পড়ে। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৪৯)
পথভ্রষ্টরাই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয় :
وَمَنْ يَّقْنَطُ مِنْ رَّحْمَةِ رَبِّهٖۤ اِلَّا الضَّآلُّوْنَ
যারা পথভ্রষ্ট তারা ব্যতীত আর কে তার প্রতিপালকের অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়? (সূরা হিজর- ৫৬)
আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া কাফিরদের অভ্যাস :
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِاٰيَاتِ اللهِ وَلِقَآئِهٖۤ اُولٰٓئِكَ يَئِسُوْا مِنْ رَّحْمَتِيْ وَاُولٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
যারা আল্লাহর নিদর্শন ও তাঁর সাক্ষাতকে অস্বীকার করে, তারাই আমার অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়। আর তাদের জন্য রয়েছে মর্মান্তিক শাস্তি। (সূরা আনকাবূত- ২৩)
اِنَّهٗ لَا يَيْئَسُ مِنْ رَّوْحِ اللهِ اِلَّا الْقَوْمُ الْكَافِرُوْنَ
নিশ্চয় কাফির সম্প্রদায় ছাড়া অন্য কেউই আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয় না। (সূরা ইউসুফ- ৮৭)
আল্লাহ তাঁর রহমত থেকে নিরাশ হতে নিষেধ করেছেন :
قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِيْنَ اَسْرَفُوْا عَلٰۤى اَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوْا مِنْ رَّحْمَةِ اللهِؕ اِنَّ اللهَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِيْعًاؕ اِنَّهٗ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ
বলো, হে আমার ঐসব বান্দারা! যারা নিজেদের নফসের উপর যুলুম করেছ, তোমরা আমার রহমত হতে নিরাশ হয়ো না, আল্লাহ সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা যুমার- ৫৩)
অধিকাংশ মানুষই অকৃতজ্ঞ :
اِنَّ الْاِنْسَانَ لَكَفُوْرٌ مُّبِيْنٌ
নিশ্চয় মানুষ স্পষ্টভাবেই অকৃতজ্ঞ। (সূরা যুখরুফ- ১৫)
اِنَّ الْاِنْسَانَ لَظَلُوْمٌ كَفَّارٌ
নিশ্চয় মানুষ অতিমাত্রায় যালিম ও অকৃতজ্ঞ। (সূরা ইবরাহীম- ৩৪)
আল্লাহ নিয়ামত দিয়ে মানুষকে পরীক্ষা করেন :
قَالَ الَّذِيْ عِنْدَهٗ عِلْمٌ مِّنَ الْكِتَابِ اَنَاْ اٰتِيْكَ بِهٖ قَبْلَ اَنْ يَّرْتَدَّ اِلَيْكَ طَرْفُكَؕ فَلَمَّا رَاٰهُ مُسْتَقِرًّا عِنْدَهٗ قَالَ هٰذَا مِنْ فَضْلِ رَبِّيْ لِيَبْلُوَنِۤيْ اَاَشْكُرُ اَمْ اَكْفُرُؕ وَمَنْ شَكَرَ فَاِنَّمَا يَشْكُرُ لِنَفْسِهٖۚ وَمَنْ كَفَرَ فَاِنَّ رَبِّيْ غَنِيٌّ كَرِيْمٌ
যার কিতাবের জ্ঞান ছিল সে বলল, আপনি চক্ষুর পলক ফেলার পূর্বেই আমি তা (সাবার রাণীর সিংহাসন) আপনাকে এনে দেব। অতঃপর সুলায়মান যখন সেটা সম্মুখে রক্ষিত অবস্থায় দেখতে পেল তখন বলল, এটা আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ, যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা করতে পারেন যে, আমি কৃতজ্ঞ নাকি অকৃতজ্ঞ। যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে তো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে নিজেরই কল্যাণের জন্য এবং যে অকৃতজ্ঞ সে জেনে রাখুক যে, আমার প্রতিপালক অভাবমুক্ত ও মহানুভব। (সূরা নামল- ৪০)
মানুষ আল্লাহর নিয়ামত চেনার পরও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না :
يَعْرِفُوْنَ نِعْمَةَ اللهِ ثُمَّ يُنْكِرُوْنَهَا وَاَكْثَرُهُمُ الْكَافِرُوْنَ
তারা আল্লাহর নিয়ামত চিনতে পারে, তারপরও তারা সেগুলোকে অস্বীকার করে; মূলত তাদের অধিকাংশই কাফির। (সূরা নাহল- ৮৩)
ব্যাখ্যা : নিয়ামত আল্লাহই দান করেন- এ কথা মানুষ স্বীকার করলেও তারা যে ভুল করে তা হলো, এ নিয়ামতগুলোর ব্যাপারে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার সাথে সাথে তারা নিজেদের কথা ও কাজের মাধ্যমে এমন বহু সত্তার কাছেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, যাদেরকে তারা এ নিয়ামতগুলো প্রদানের ক্ষেত্রে অংশীদার বানিয়েছে। এ বিষয়টিকেই কুরআনে ‘আল্লাহর অনুগ্রহের অস্বীকৃতি’ বলে গণ্য করা হয়েছে। যে উপকার করল তার উপকারের জন্য যে উপকার করেনি তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা মূলত উপকারীর উপকার অস্বীকার করারই নামান্তর।
বিপদ কেটে গেলেই মানুষ অকৃতজ্ঞ হয়ে যায় :
وَمَا بِكُمْ مِّنْ نِّعْمَةٍ فَمِنَ اللهِ ثُمَّ اِذَا مَسَّكُمُ الضُّرُّ فَاِلَيْهِ تَجْاَرُوْنَ ‐ ثُمَّ اِذَا كَشَفَ الضُّرَّ عَنْكُمْ اِذَا فَرِيْقٌ مِّنْكُمْ بِرَبِّهِمْ يُشْرِكُوْنَ ‐ لِيَكْفُرُوْا بِمَاۤ اٰتَيْنَاهُمْؕ فَتَمَتَّعُوْا فَسَوْفَ تَعْلَمُوْن
তোমাদের নিকট যে সমস্ত নিয়ামত রয়েছে তা তো আল্লাহর নিকট হতেই প্রাপ্ত। অথচ যখন তোমাদেরকে কোন দুঃখ-দৈন্য স্পর্শ করে, তখন তোমরা তাঁকেই ব্যাকুলভাবে আহবান কর। আবার যখন আল্লাহ তোমাদের দুঃখ-দৈন্য দূরীভূত করেন, তখন তোমাদের একদল তাদের প্রতিপালকের সাথে শরীক স্থাপন করে, যাতে আমি তাদেরকে যা দান করেছি তা তারা অস্বীকার করতে পারে। সুতরাং (তোমরা যারা অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছ তারা) আরো কিছু সময় ভোগ করে নাও, অচিরেই তোমরা (তোমাদের পরিণতি সম্পর্কে) জানতে পারবে। (সূরা নাহল, ৫৩-৫৫)
ব্যাখ্যা : মুসীবত তথা বিপদাপদ আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি পরীক্ষা। মুসীবত মানুষকে এ চেতনা ও অনুভূতি দান করে যে, প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কেউই তা দূর করতে পারে না। কিন্তু যখন মুসীবত দূর হয়ে ভালো সময় আসে তখন মুশরিকরা বলতে শুরু করে যে, এটা আমাদের দেবতা ও সুপারিশকারীদের দয়ার ফলাফল।
আল্লাহ অকৃতজ্ঞ হতে নিষেধ করেন :
فَاذْكُرُوْنِۤيْ اَذْكُرْكُمْ وَاشْكُرُوْا لِيْ وَلَا تَكْفُرُوْنِ
তোমরা আমাকে স্মরণ করো, তাহলে আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব। আর তোমরা আমার শুকরিয়া আদায় করো এবং অকৃতজ্ঞ হয়ো না। (সূরা বাক্বারা- ১৫২)
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে নিজেরই কল্যাণ হয় :
وَمَنْ شَكَرَ فَاِنَّمَا يَشْكُرُ لِنَفْسِهٖ وَمَنْ كَفَرَ فَاِنَّ رَبِّيْ غَنِيٌّ كَرِيْمٌ
যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে তো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে নিজেরই কল্যাণের জন্য; আর যে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে জেনে রাখুক যে, আমার প্রতিপালক অভাবমুক্ত ও মহানুভব। (সূরা নামল- ৪০)
অকৃতজ্ঞদের জন্য রয়েছে শাস্তি :
وَاِذْ تَاَذَّنَ رَبُّكُمْ لَئِنْ شَكَرْتُمْ لَاَزِيْدَنَّكُمْ وَلَئِنْ كَفَرْتُمْ اِنَّ عَذَابِيْ لَشَدِيْدٌ
স্মরণ করো, যখন তোমাদের প্রতিপালক ঘোষণা করেন, যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও তবে অবশ্যই তোমাদেরকে অধিক হারে বৃদ্ধি করে দেব। কিন্তু যদি অকৃতজ্ঞ হও, তবে নিশ্চয় আমার শাস্তি খুবই কঠোর। (সূরা ইবরাহীম- ৭)
অকৃতজ্ঞদের জন্য সতর্কবাণী :
اِنَّ الْاِنْسَانَ لِرَبِّهٖ لَكَنُوْدٌ ‐ وَاِنَّهٗ عَلٰى ذٰلِكَ لَشَهِيْدٌ ‐ وَاِنَّهٗ لِحُبِّ الْخَيْرِ لَشَدِيْدٌ ‐ اَفَلَا يَعْلَمُ اِذَا بُعْثِرَ مَا فِى الْقُبُوْرِ ‐ وَحُصِّلَ مَا فِى الصُّدُوْرِ ‐ اِنَّ رَبَّهُمْ بِهِمْ يَوْمَئِذٍ لَّخَبِيْرٌ
নিশ্চয় মানুষ তার পালনকর্তার প্রতি অকৃতজ্ঞ এবং সে নিজেও এ বিষয়ে সাক্ষী। নিশ্চয় সে ধনসম্পদের ভালোবাসায় মত্ত। সে কি জানে না যে, কবরে যা আছে যখন তা উত্থিত হবে এবং অন্তরে যা আছে তা প্রকাশ করা হবে, সেদিন তাদের কী অবস্থা হবে? সে সম্পর্কে তাদের পালনকর্তা সবিশেষ অবহিত। (সূরা আদিয়াত, ৬-১১)
اِنَّ الْاِنْسَانَ لَكَفُوْرٌ مُّبِيْنٌ
নিশ্চয় মানুষ স্পষ্টভাবেই অকৃতজ্ঞ। (সূরা যুখরুফ- ১৫)
اِنَّ الْاِنْسَانَ لَظَلُوْمٌ كَفَّارٌ
নিশ্চয় মানুষ অতিমাত্রায় যালিম ও অকৃতজ্ঞ। (সূরা ইবরাহীম- ৩৪)
আল্লাহ নিয়ামত দিয়ে মানুষকে পরীক্ষা করেন :
قَالَ الَّذِيْ عِنْدَهٗ عِلْمٌ مِّنَ الْكِتَابِ اَنَاْ اٰتِيْكَ بِهٖ قَبْلَ اَنْ يَّرْتَدَّ اِلَيْكَ طَرْفُكَؕ فَلَمَّا رَاٰهُ مُسْتَقِرًّا عِنْدَهٗ قَالَ هٰذَا مِنْ فَضْلِ رَبِّيْ لِيَبْلُوَنِۤيْ اَاَشْكُرُ اَمْ اَكْفُرُؕ وَمَنْ شَكَرَ فَاِنَّمَا يَشْكُرُ لِنَفْسِهٖۚ وَمَنْ كَفَرَ فَاِنَّ رَبِّيْ غَنِيٌّ كَرِيْمٌ
যার কিতাবের জ্ঞান ছিল সে বলল, আপনি চক্ষুর পলক ফেলার পূর্বেই আমি তা (সাবার রাণীর সিংহাসন) আপনাকে এনে দেব। অতঃপর সুলায়মান যখন সেটা সম্মুখে রক্ষিত অবস্থায় দেখতে পেল তখন বলল, এটা আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ, যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা করতে পারেন যে, আমি কৃতজ্ঞ নাকি অকৃতজ্ঞ। যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে তো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে নিজেরই কল্যাণের জন্য এবং যে অকৃতজ্ঞ সে জেনে রাখুক যে, আমার প্রতিপালক অভাবমুক্ত ও মহানুভব। (সূরা নামল- ৪০)
মানুষ আল্লাহর নিয়ামত চেনার পরও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না :
يَعْرِفُوْنَ نِعْمَةَ اللهِ ثُمَّ يُنْكِرُوْنَهَا وَاَكْثَرُهُمُ الْكَافِرُوْنَ
তারা আল্লাহর নিয়ামত চিনতে পারে, তারপরও তারা সেগুলোকে অস্বীকার করে; মূলত তাদের অধিকাংশই কাফির। (সূরা নাহল- ৮৩)
ব্যাখ্যা : নিয়ামত আল্লাহই দান করেন- এ কথা মানুষ স্বীকার করলেও তারা যে ভুল করে তা হলো, এ নিয়ামতগুলোর ব্যাপারে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার সাথে সাথে তারা নিজেদের কথা ও কাজের মাধ্যমে এমন বহু সত্তার কাছেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, যাদেরকে তারা এ নিয়ামতগুলো প্রদানের ক্ষেত্রে অংশীদার বানিয়েছে। এ বিষয়টিকেই কুরআনে ‘আল্লাহর অনুগ্রহের অস্বীকৃতি’ বলে গণ্য করা হয়েছে। যে উপকার করল তার উপকারের জন্য যে উপকার করেনি তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা মূলত উপকারীর উপকার অস্বীকার করারই নামান্তর।
বিপদ কেটে গেলেই মানুষ অকৃতজ্ঞ হয়ে যায় :
وَمَا بِكُمْ مِّنْ نِّعْمَةٍ فَمِنَ اللهِ ثُمَّ اِذَا مَسَّكُمُ الضُّرُّ فَاِلَيْهِ تَجْاَرُوْنَ ‐ ثُمَّ اِذَا كَشَفَ الضُّرَّ عَنْكُمْ اِذَا فَرِيْقٌ مِّنْكُمْ بِرَبِّهِمْ يُشْرِكُوْنَ ‐ لِيَكْفُرُوْا بِمَاۤ اٰتَيْنَاهُمْؕ فَتَمَتَّعُوْا فَسَوْفَ تَعْلَمُوْن
তোমাদের নিকট যে সমস্ত নিয়ামত রয়েছে তা তো আল্লাহর নিকট হতেই প্রাপ্ত। অথচ যখন তোমাদেরকে কোন দুঃখ-দৈন্য স্পর্শ করে, তখন তোমরা তাঁকেই ব্যাকুলভাবে আহবান কর। আবার যখন আল্লাহ তোমাদের দুঃখ-দৈন্য দূরীভূত করেন, তখন তোমাদের একদল তাদের প্রতিপালকের সাথে শরীক স্থাপন করে, যাতে আমি তাদেরকে যা দান করেছি তা তারা অস্বীকার করতে পারে। সুতরাং (তোমরা যারা অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছ তারা) আরো কিছু সময় ভোগ করে নাও, অচিরেই তোমরা (তোমাদের পরিণতি সম্পর্কে) জানতে পারবে। (সূরা নাহল, ৫৩-৫৫)
ব্যাখ্যা : মুসীবত তথা বিপদাপদ আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি পরীক্ষা। মুসীবত মানুষকে এ চেতনা ও অনুভূতি দান করে যে, প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কেউই তা দূর করতে পারে না। কিন্তু যখন মুসীবত দূর হয়ে ভালো সময় আসে তখন মুশরিকরা বলতে শুরু করে যে, এটা আমাদের দেবতা ও সুপারিশকারীদের দয়ার ফলাফল।
আল্লাহ অকৃতজ্ঞ হতে নিষেধ করেন :
فَاذْكُرُوْنِۤيْ اَذْكُرْكُمْ وَاشْكُرُوْا لِيْ وَلَا تَكْفُرُوْنِ
তোমরা আমাকে স্মরণ করো, তাহলে আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব। আর তোমরা আমার শুকরিয়া আদায় করো এবং অকৃতজ্ঞ হয়ো না। (সূরা বাক্বারা- ১৫২)
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে নিজেরই কল্যাণ হয় :
وَمَنْ شَكَرَ فَاِنَّمَا يَشْكُرُ لِنَفْسِهٖ وَمَنْ كَفَرَ فَاِنَّ رَبِّيْ غَنِيٌّ كَرِيْمٌ
যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে তো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে নিজেরই কল্যাণের জন্য; আর যে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে জেনে রাখুক যে, আমার প্রতিপালক অভাবমুক্ত ও মহানুভব। (সূরা নামল- ৪০)
অকৃতজ্ঞদের জন্য রয়েছে শাস্তি :
وَاِذْ تَاَذَّنَ رَبُّكُمْ لَئِنْ شَكَرْتُمْ لَاَزِيْدَنَّكُمْ وَلَئِنْ كَفَرْتُمْ اِنَّ عَذَابِيْ لَشَدِيْدٌ
স্মরণ করো, যখন তোমাদের প্রতিপালক ঘোষণা করেন, যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও তবে অবশ্যই তোমাদেরকে অধিক হারে বৃদ্ধি করে দেব। কিন্তু যদি অকৃতজ্ঞ হও, তবে নিশ্চয় আমার শাস্তি খুবই কঠোর। (সূরা ইবরাহীম- ৭)
অকৃতজ্ঞদের জন্য সতর্কবাণী :
اِنَّ الْاِنْسَانَ لِرَبِّهٖ لَكَنُوْدٌ ‐ وَاِنَّهٗ عَلٰى ذٰلِكَ لَشَهِيْدٌ ‐ وَاِنَّهٗ لِحُبِّ الْخَيْرِ لَشَدِيْدٌ ‐ اَفَلَا يَعْلَمُ اِذَا بُعْثِرَ مَا فِى الْقُبُوْرِ ‐ وَحُصِّلَ مَا فِى الصُّدُوْرِ ‐ اِنَّ رَبَّهُمْ بِهِمْ يَوْمَئِذٍ لَّخَبِيْرٌ
নিশ্চয় মানুষ তার পালনকর্তার প্রতি অকৃতজ্ঞ এবং সে নিজেও এ বিষয়ে সাক্ষী। নিশ্চয় সে ধনসম্পদের ভালোবাসায় মত্ত। সে কি জানে না যে, কবরে যা আছে যখন তা উত্থিত হবে এবং অন্তরে যা আছে তা প্রকাশ করা হবে, সেদিন তাদের কী অবস্থা হবে? সে সম্পর্কে তাদের পালনকর্তা সবিশেষ অবহিত। (সূরা আদিয়াত, ৬-১১)
আল্লাহ প্রবৃত্তির অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন :
فَلَا تَتَّبِعُوا الْهَوٰۤى اَنْ تَعْدِلُوْاۚ وَاِنْ تَلْوُوْاۤ اَوْ تُعْرِضُوْا فَاِنَّ اللهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِيْرًا
সুতরাং তোমরা ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে প্রবৃত্তির অনুগামী হয়ো না। যদি তোমরা বক্রভাবে কথা বল অথবা পাশ কাটিয়ে যাও, তবে তোমরা যা কর নিশ্চয় আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে খবর রাখেন। (সূরা নিসা- ১৩৫)
وَلَا تَتَّبِعِ الْهَوٰى فَيُضِلَّكَ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ
তুমি প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। নতুবা তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে দেবে। (সূরা সোয়াদ- ২৬)
اَرَاَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ اِلٰهَهٗ هَوَاهُؕ اَفَاَنْتَ تَكُوْنُ عَلَيْهِ وَكِيْلًا
তুমি কি ঐ ব্যক্তির প্রতি লক্ষ্য কর না, যে তার কামনা-বাসনাকে ইলাহ্ হিসেবে গ্রহণ করে? তবুও কি তুমি তার কাজের জিম্মাদার হতে চাও? (সূরা ফুরক্বান- ৪৩)
ব্যাখ্যা : প্রবৃত্তির কামনা-বাসনাকে উপাস্য বানিয়ে নেয়ার অর্থ- ব্যক্তি নিজের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষার দাস হয়ে যাওয়া। তার মন যা চায় তাই সে করে বসে যদিও আল্লাহ তা হারাম করেছেন এবং তার মন যা চায় না সে তা করে না যদিও আল্লাহ তা ফরয করে দিয়েছেন। কোন ব্যক্তি যখন এভাবে কারো আনুগত্য করতে থাকে তখন তার অর্থ দাঁড়ায়, তার উপাস্য আল্লাহ নয়, বরং সে এভাবে যার আনুগত্য করছে সে-ই তার উপাস্য। সে মুখে আল্লাহকে উপাস্য বলুক বা না বলুক কিংবা মূর্তি তৈরি করে তার পূজা করুক বা না করুক; তাতে কিছু আসে যায় না।
প্রবৃত্তির কথা না মেনে দ্বীনের কথাই মানতে হবে :
ثُمَّ جَعَلْنَاكَ عَلٰى شَرِيْعَةٍ مِّنَ الْاَمْرِ فَاتَّبِعْهَا وَلَا تَتَّبِعْ اَهْوَآءَ الَّذِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ
এরপর আমি তোমাকে দ্বীনের বিশেষ শরীয়তের উপর প্রতিষ্ঠিত করেছি; সুতরাং তুমি তার অনুসরণ করো এবং অজ্ঞদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। (সূরা জাসিয়া- ১৮)
সত্য কখনো প্রবৃত্তির অনুসারী হয় না :
وَلَوِ اتَّبَعَ الْحَقُّ اَهْوَآءَهُمْ لَفَسَدَتِ السَّمَاوَاتُ وَالْاَرْضُ وَمَنْ فِيْهِنَّ
সত্য যদি তাদের কামনা-বাসনার অনুগামী হতো, তবে আকাশমন্ডলী, পৃথিবী এবং তাদের মধ্যবর্তী স্থানে যা কিছু আছে সবকিছুই বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ত। (সূরা মু’মিনূন- ৭১)
প্রবৃত্তির অনুসারীরা সবচেয়ে বেশি পথভ্রষ্ট :
وَمَنْ اَضَلُّ مِمَّنِ اتَّبَعَ هَوَاهُ بِغَيْرِ هُدًى مِّنَ اللهِؕ اِنَّ اللهَ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
যে ব্যক্তি আল্লাহর পথনির্দেশকে অগ্রাহ্য করে নিজ খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে তার অপেক্ষা অধিক বিভ্রান্ত আর কে হতে পারে? নিশ্চয় আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে পথনির্দেশ করেন না। (সূরা ক্বাসাস- ৫০)
আল্লাহ ছাড়া এদেরকে হেদায়াত করার কেউ নেই :
بَلِ اتَّبَعَ الَّذِيْنَ ظَلَمُوْاۤ اَهْوَآءَهُمْ بِغَيْرِ عِلْمٍۚ فَمَنْ يَّهْدِيْ مَنْ اَضَلَّ اللهُؕ وَمَا لَهُمْ مِّنْ نَّاصِرِيْنَ
বরং যালিমরা বিনা প্রমাণে নিজেদের ইচ্ছার আনুগত্য করে থাকে। অতএব আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেছেন তাকে কে সৎপথ দেখাবে? আর তাদের জন্য কোন সাহায্যকারীও নেই। (সূরা রূম- ২৯)
اَفَرَاَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ اِلٰهَهٗ هَوَاهُ وَاَضَلَّهُ اللهُ عَلٰى عِلْمٍ وَّخَتَمَ عَلٰى سَمْعِهٖ وَقَلْبِهٖ وَجَعَلَ عَلٰى بَصَرِهٖ غِشَاوَةًؕ فَمَنْ يَّهْدِيْهِ مِنْ ۢبَعْدِ اللهِؕ اَفَلَا تَذَكَّرُوْنَ
তুমি কি ঐ ব্যক্তির প্রতি লক্ষ্য করেছ, যে তার প্রবৃত্তিকে নিজের উপাস্য বানিয়ে নিয়েছে? আল্লাহ জেনে শুনেই তাকে বিভ্রান্ত করেছেন এবং তার কর্ণ ও হৃদয়ে মোহর মেরে দিয়েছেন; আর তার চক্ষুর উপর রেখে দিয়েছেন আবরণ। অতএব আল্লাহর পর কে আছে, যে তাকে হেদায়াত করবে? তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না? (সূরা জাসিয়া- ২৩)
প্রবৃত্তির অনুসরণে অন্তরে মোহর পড়ে যায় :
اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ طَبَعَ اللهُ عَلٰى قُلُوْبِهِمْ وَاتَّبَعُوْاۤ اَهْوَآءَهُمْ
এরা ঐসব লোক, যাদের অন্তরে আল্লাহ মোহর মেরে দিয়েছেন। আর তারা প্রবৃত্তির অনুসরণ করে বেড়ায়। (সূরা মুহাম্মাদ- ১৬)
নফসের অনুসারীরা মানুষকেও বিভ্রান্ত করে :
وَاِنَّ كَثِيْرًا لَّيُضِلُّوْنَ بِاَهْوَآئِهِمْ بِغَيْرِ عِلْمٍؕ اِنَّ رَبَّكَ هُوَ اَعْلَمُ بِالْمُعْتَدِيْنَ
নিশ্চয় অনেকে অজ্ঞতাবশত নিজেদের খেয়াল-খুশী দ্বারা অন্যকে বিপথগামী করে। নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক সীমালঙ্ঘনকারীদের সম্বন্ধে খুব ভালো করেই অবগত আছেন। (সূরা আন‘আম- ১১৯)
প্রবৃত্তির অনুসারীদের পেছনে চলতে নেই :
وَلَا تُطِعْ مَنْ اَغْفَلْنَا قَلْبَهٗ عَنْ ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ اَمْرُهٗ فُرُطًا
তুমি তার আনুগত্য করো না, যার অন্তরকে আমি আমার স্মরণ হতে অমনোযোগী করে দিয়েছি। অতঃপর সে তার খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে এবং কার্যকলাপের ক্ষেত্রে সীমা অতিক্রম করে। (সূরা কাহফ- ২৮)
এদের অনুসরণ করলে পথহারা হতে হবে :
قُلْ لَّاۤ اَتَّبِعُ اَهْوَآءَكُمْ قَدْ ضَلَلْتُ اِذًا وَّمَاۤ اَنَاْ مِنَ الْمُهْتَدِيْنَ
বলো, আমি তোমাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করি না; নতুবা আমি বিপথগামী হয়ে যাব এবং সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত থাকব না। (সূরা আন‘আম- ৫৬)
প্রবৃত্তি পূজারীদের অনুসরণ করলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে :
وَلَئِنِ اتَّبَعْتَ اَهْوَآءَهُمْ بَعْدَ الَّذِيْ جَآءَكَ مِنَ الْعِلْمِ مَا لَكَ مِنَ اللهِ مِنْ وَّلِيٍّ وَّلَا نَصِيْرٍ
অতএব তোমার নিকট জ্ঞান আসার পরও যদি তুমি তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ কর, তবে আল্লাহর পক্ষ হতে তোমার জন্য কোনই অভিভাবক ও সাহায্যকারী থাকবে না। (সূরা বাক্বারা- ১২০)
وَلَئِنِ اتَّبَعْتَ اَهْوَآءَهُمْ بَعْدَمَا جَآءَكَ مِنَ الْعِلْمِ مَا لَكَ مِنَ اللهِ مِنْ وَّلِيٍّ وَّلَا وَاقٍ
জ্ঞান আসার পরও যদি তুমি তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ কর, তবে আল্লাহর বিরুদ্ধে তোমার কোন অভিভাবক ও রক্ষক থাকবে না। (সূরা রা‘দ- ৩৭)
প্রবৃত্তির অনুসরণ না করাই জান্নাত লাভের উপায় :
-وَاَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهٖ وَنَهَى النَّفْسَ عَنِ الْهَوٰى ‐ فَاِنَّ الْجَنَّةَ هِيَ الْمَأْوٰى
যে ব্যক্তি নিজ প্রতিপালকের সামনে দাঁড়ানোর ব্যাপারে ভয় করে এবং নিজেকে কুপ্রবৃত্তি হতে বিরত রাখে তার ঠিকানা হবে জান্নাত। (সূরা নাযি‘আত- ৪০)
যে প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং যে দলীলের উপর রয়েছে উভয়ে সমান নয় :
اَفَمَنْ كَانَ عَلٰى بَيِّنَةٍ مِّنْ رَّبِّهٖ كَمَنْ زُيِّنَ لَهٗ سُوْٓءُ عَمَلِهٖ وَاتَّبَعُوْاۤ اَهْوَآءَهُمْ
যে ব্যক্তি তার রবের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত সুস্পষ্ট হেদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে সে কি ঐ ব্যক্তির সমান হতে পারে, যার বদ আমলকে তার জন্য সুশোভিত করে দেয়া হয়েছে এবং যারা তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে? (সূরা মুহাম্মাদ- ১৪)
فَلَا تَتَّبِعُوا الْهَوٰۤى اَنْ تَعْدِلُوْاۚ وَاِنْ تَلْوُوْاۤ اَوْ تُعْرِضُوْا فَاِنَّ اللهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِيْرًا
সুতরাং তোমরা ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে প্রবৃত্তির অনুগামী হয়ো না। যদি তোমরা বক্রভাবে কথা বল অথবা পাশ কাটিয়ে যাও, তবে তোমরা যা কর নিশ্চয় আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে খবর রাখেন। (সূরা নিসা- ১৩৫)
وَلَا تَتَّبِعِ الْهَوٰى فَيُضِلَّكَ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ
তুমি প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। নতুবা তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে দেবে। (সূরা সোয়াদ- ২৬)
اَرَاَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ اِلٰهَهٗ هَوَاهُؕ اَفَاَنْتَ تَكُوْنُ عَلَيْهِ وَكِيْلًا
তুমি কি ঐ ব্যক্তির প্রতি লক্ষ্য কর না, যে তার কামনা-বাসনাকে ইলাহ্ হিসেবে গ্রহণ করে? তবুও কি তুমি তার কাজের জিম্মাদার হতে চাও? (সূরা ফুরক্বান- ৪৩)
ব্যাখ্যা : প্রবৃত্তির কামনা-বাসনাকে উপাস্য বানিয়ে নেয়ার অর্থ- ব্যক্তি নিজের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষার দাস হয়ে যাওয়া। তার মন যা চায় তাই সে করে বসে যদিও আল্লাহ তা হারাম করেছেন এবং তার মন যা চায় না সে তা করে না যদিও আল্লাহ তা ফরয করে দিয়েছেন। কোন ব্যক্তি যখন এভাবে কারো আনুগত্য করতে থাকে তখন তার অর্থ দাঁড়ায়, তার উপাস্য আল্লাহ নয়, বরং সে এভাবে যার আনুগত্য করছে সে-ই তার উপাস্য। সে মুখে আল্লাহকে উপাস্য বলুক বা না বলুক কিংবা মূর্তি তৈরি করে তার পূজা করুক বা না করুক; তাতে কিছু আসে যায় না।
প্রবৃত্তির কথা না মেনে দ্বীনের কথাই মানতে হবে :
ثُمَّ جَعَلْنَاكَ عَلٰى شَرِيْعَةٍ مِّنَ الْاَمْرِ فَاتَّبِعْهَا وَلَا تَتَّبِعْ اَهْوَآءَ الَّذِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ
এরপর আমি তোমাকে দ্বীনের বিশেষ শরীয়তের উপর প্রতিষ্ঠিত করেছি; সুতরাং তুমি তার অনুসরণ করো এবং অজ্ঞদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। (সূরা জাসিয়া- ১৮)
সত্য কখনো প্রবৃত্তির অনুসারী হয় না :
وَلَوِ اتَّبَعَ الْحَقُّ اَهْوَآءَهُمْ لَفَسَدَتِ السَّمَاوَاتُ وَالْاَرْضُ وَمَنْ فِيْهِنَّ
সত্য যদি তাদের কামনা-বাসনার অনুগামী হতো, তবে আকাশমন্ডলী, পৃথিবী এবং তাদের মধ্যবর্তী স্থানে যা কিছু আছে সবকিছুই বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ত। (সূরা মু’মিনূন- ৭১)
প্রবৃত্তির অনুসারীরা সবচেয়ে বেশি পথভ্রষ্ট :
وَمَنْ اَضَلُّ مِمَّنِ اتَّبَعَ هَوَاهُ بِغَيْرِ هُدًى مِّنَ اللهِؕ اِنَّ اللهَ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
যে ব্যক্তি আল্লাহর পথনির্দেশকে অগ্রাহ্য করে নিজ খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে তার অপেক্ষা অধিক বিভ্রান্ত আর কে হতে পারে? নিশ্চয় আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে পথনির্দেশ করেন না। (সূরা ক্বাসাস- ৫০)
আল্লাহ ছাড়া এদেরকে হেদায়াত করার কেউ নেই :
بَلِ اتَّبَعَ الَّذِيْنَ ظَلَمُوْاۤ اَهْوَآءَهُمْ بِغَيْرِ عِلْمٍۚ فَمَنْ يَّهْدِيْ مَنْ اَضَلَّ اللهُؕ وَمَا لَهُمْ مِّنْ نَّاصِرِيْنَ
বরং যালিমরা বিনা প্রমাণে নিজেদের ইচ্ছার আনুগত্য করে থাকে। অতএব আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেছেন তাকে কে সৎপথ দেখাবে? আর তাদের জন্য কোন সাহায্যকারীও নেই। (সূরা রূম- ২৯)
اَفَرَاَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ اِلٰهَهٗ هَوَاهُ وَاَضَلَّهُ اللهُ عَلٰى عِلْمٍ وَّخَتَمَ عَلٰى سَمْعِهٖ وَقَلْبِهٖ وَجَعَلَ عَلٰى بَصَرِهٖ غِشَاوَةًؕ فَمَنْ يَّهْدِيْهِ مِنْ ۢبَعْدِ اللهِؕ اَفَلَا تَذَكَّرُوْنَ
তুমি কি ঐ ব্যক্তির প্রতি লক্ষ্য করেছ, যে তার প্রবৃত্তিকে নিজের উপাস্য বানিয়ে নিয়েছে? আল্লাহ জেনে শুনেই তাকে বিভ্রান্ত করেছেন এবং তার কর্ণ ও হৃদয়ে মোহর মেরে দিয়েছেন; আর তার চক্ষুর উপর রেখে দিয়েছেন আবরণ। অতএব আল্লাহর পর কে আছে, যে তাকে হেদায়াত করবে? তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না? (সূরা জাসিয়া- ২৩)
প্রবৃত্তির অনুসরণে অন্তরে মোহর পড়ে যায় :
اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ طَبَعَ اللهُ عَلٰى قُلُوْبِهِمْ وَاتَّبَعُوْاۤ اَهْوَآءَهُمْ
এরা ঐসব লোক, যাদের অন্তরে আল্লাহ মোহর মেরে দিয়েছেন। আর তারা প্রবৃত্তির অনুসরণ করে বেড়ায়। (সূরা মুহাম্মাদ- ১৬)
নফসের অনুসারীরা মানুষকেও বিভ্রান্ত করে :
وَاِنَّ كَثِيْرًا لَّيُضِلُّوْنَ بِاَهْوَآئِهِمْ بِغَيْرِ عِلْمٍؕ اِنَّ رَبَّكَ هُوَ اَعْلَمُ بِالْمُعْتَدِيْنَ
নিশ্চয় অনেকে অজ্ঞতাবশত নিজেদের খেয়াল-খুশী দ্বারা অন্যকে বিপথগামী করে। নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক সীমালঙ্ঘনকারীদের সম্বন্ধে খুব ভালো করেই অবগত আছেন। (সূরা আন‘আম- ১১৯)
প্রবৃত্তির অনুসারীদের পেছনে চলতে নেই :
وَلَا تُطِعْ مَنْ اَغْفَلْنَا قَلْبَهٗ عَنْ ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ اَمْرُهٗ فُرُطًا
তুমি তার আনুগত্য করো না, যার অন্তরকে আমি আমার স্মরণ হতে অমনোযোগী করে দিয়েছি। অতঃপর সে তার খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে এবং কার্যকলাপের ক্ষেত্রে সীমা অতিক্রম করে। (সূরা কাহফ- ২৮)
এদের অনুসরণ করলে পথহারা হতে হবে :
قُلْ لَّاۤ اَتَّبِعُ اَهْوَآءَكُمْ قَدْ ضَلَلْتُ اِذًا وَّمَاۤ اَنَاْ مِنَ الْمُهْتَدِيْنَ
বলো, আমি তোমাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করি না; নতুবা আমি বিপথগামী হয়ে যাব এবং সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত থাকব না। (সূরা আন‘আম- ৫৬)
প্রবৃত্তি পূজারীদের অনুসরণ করলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে :
وَلَئِنِ اتَّبَعْتَ اَهْوَآءَهُمْ بَعْدَ الَّذِيْ جَآءَكَ مِنَ الْعِلْمِ مَا لَكَ مِنَ اللهِ مِنْ وَّلِيٍّ وَّلَا نَصِيْرٍ
অতএব তোমার নিকট জ্ঞান আসার পরও যদি তুমি তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ কর, তবে আল্লাহর পক্ষ হতে তোমার জন্য কোনই অভিভাবক ও সাহায্যকারী থাকবে না। (সূরা বাক্বারা- ১২০)
وَلَئِنِ اتَّبَعْتَ اَهْوَآءَهُمْ بَعْدَمَا جَآءَكَ مِنَ الْعِلْمِ مَا لَكَ مِنَ اللهِ مِنْ وَّلِيٍّ وَّلَا وَاقٍ
জ্ঞান আসার পরও যদি তুমি তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ কর, তবে আল্লাহর বিরুদ্ধে তোমার কোন অভিভাবক ও রক্ষক থাকবে না। (সূরা রা‘দ- ৩৭)
প্রবৃত্তির অনুসরণ না করাই জান্নাত লাভের উপায় :
-وَاَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهٖ وَنَهَى النَّفْسَ عَنِ الْهَوٰى ‐ فَاِنَّ الْجَنَّةَ هِيَ الْمَأْوٰى
যে ব্যক্তি নিজ প্রতিপালকের সামনে দাঁড়ানোর ব্যাপারে ভয় করে এবং নিজেকে কুপ্রবৃত্তি হতে বিরত রাখে তার ঠিকানা হবে জান্নাত। (সূরা নাযি‘আত- ৪০)
যে প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং যে দলীলের উপর রয়েছে উভয়ে সমান নয় :
اَفَمَنْ كَانَ عَلٰى بَيِّنَةٍ مِّنْ رَّبِّهٖ كَمَنْ زُيِّنَ لَهٗ سُوْٓءُ عَمَلِهٖ وَاتَّبَعُوْاۤ اَهْوَآءَهُمْ
যে ব্যক্তি তার রবের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত সুস্পষ্ট হেদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে সে কি ঐ ব্যক্তির সমান হতে পারে, যার বদ আমলকে তার জন্য সুশোভিত করে দেয়া হয়েছে এবং যারা তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে? (সূরা মুহাম্মাদ- ১৪)
অধিকাংশ লোক ধারণার ভিত্তিতে চলে :
وَمَا يَتَّبِعُ اَكْثَرُهُمْ اِلَّا ظَنًّاؕ اِنَّ الظَّنَّ لَا يُغْنِيْ مِنَ الْحَقِّ شَيْئًاؕ اِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ ۢبِمَا يَفْعَلُوْنَ
তাদের অধিকাংশই কেবল অনুমানের অনুসরণ করে, অথচ সত্যের পরিবর্তে অনুমান কোন কাজে আসে না। আর তারা যা করে নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে অবহিত। (সূরা ইউনুস- ৩৬)
অনুমান কখনো সত্য ও সঠিক জ্ঞান দিতে পারে না :
اِنْ يَّتَّبِعُوْنَ اِلَّا الظَّنَّ ؕ وَاِنَّ الظَّنَّ لَا يُغْنِيْ مِنَ الْحَقِّ شَيْئًا
তারা শুধু অনুমানের অনুসরণ করে; অথচ সত্যের মুকাবিলায় অনুমানের কোন মূল্য নেই। (সূরা নাজম- ২৮)
মুশরিকরা ধ্যান-ধারণা ও অনুমানের উপর নির্ভরশীল :
وَقَالُوْا لَوْ شَآءَ الرَّحْمٰنُ مَا عَبَدْنَاهُمْؕ مَا لَهُمْ بِذٰلِكَ مِنْ عِلْمٍۗ اِنْ هُمْ اِلَّا يَخْرُصُوْنَ
তারা বলে, দয়াময় (আল্লাহ) যদি ইচ্ছা না করতেন, তবে আমরা কখনো তাদের (ফেরেশতাদের) ইবাদাত করতাম না। মূলত এ ব্যাপারে তাদের কোন জ্ঞান নেই, তারা শুধু অনুমানের উপরই নির্ভর করে চলে। (সূরা যুখরুফ- ২০)
অনুমানের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীরা ধ্বংস হবে :
قُتِلَ الْخَرَّاصُوْنَ
তারা ধ্বংস হোক, যারা শুধু অনুমানের উপর নির্ভরশীল। (সূরা যারিয়াত- ১০)
শয়তান মানুষের মনে কুধারণার জন্ম দেয় :
وَلَقَدْ صَدَّقَ عَلَيْهِمْ اِبْلِيْسُ ظَنَّهٗ فَاتَّبَعُوْهُ اِلَّا فَرِيْقًا مِّنَ الْمُؤْمِنِيْنَ
নিশ্চয় ইবলিস বাস্তবেই তাদের ব্যাপারে তার অনুমান সত্যে পরিণত করল, ফলে মুমিনদের একটি দল ব্যতীত সকলেই তার আনুগত্য করল। (সূরা সাবা- ২০)
আল্লাহ সম্পর্কে ভুল ধারণা মানুষকে ধ্বংস করে দেয় :
وَمَا كُنْتُمْ تَسْتَتِرُوْنَ اَنْ يَّشْهَدَ عَلَيْكُمْ سَمْعُكُمْ وَلَاۤ اَبْصَارُكُمْ وَلَا جُلُوْدُكُمْ وَلٰكِنْ ظَنَنْتُمْ اَنَّ اللهَ لَا يَعْلَمُ كَثِيْرًا مِّمَّا تَعْمَلُوْنَ ‐ وَذٰلِكُمْ ظَنُّكُمُ الَّذِيْ ظَنَنْتُمْ بِرَبِّكُمْ اَرْدَاكُمْ فَاَصْبَحْتُمْ مِّنَ الْخَاسِرِيْنَ
তোমরা তো কোনকিছু গোপন করতে না এই বিশ্বাসে যে, তোমাদের কর্ণ, চক্ষু এবং ত্বক তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে না। বরং তোমরা মনে করতে যে, তোমরা যা করতে তার অনেক কিছুই আল্লাহ জানেন না। তোমাদের প্রতিপালক সম্পর্কে এ ধারণাই তোমাদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে, ফলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছ। (সূরা হা-মীম সাজদা- ২২, ২৩)
কতক ধারণা গোনাহের পর্যায়ে পড়ে :
اِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ اِثْمٌ
নিশ্চয় কোন কোন অনুমান গোনাহের কাজ। (সূরা হুজুরাত- ১২)
আল্লাহ বেশি বেশি ধারণা পোষণ করতে নিষেধ করেছেন :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اجْتَنِبُوْا كَثِيْرًا مِّنَ الظَّنِّ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা বেশি বেশি ধারণা পোষণ করা থেকে বিরত থাকো। (সূরা হুজুরাত- ১২)
অনুমানকারীদের পেছনে চলা যাবে না :
وَاِنْ تُطِعْ اَكْثَرَ مَنْ فِى الْاَرْضِ يُضِلُّوْكَ عَنْ سَبِيْلِ اللهِؕ اِنْ يَّتَّبِعُوْنَ اِلَّا الظَّنَّ وَاِنْ هُمْ اِلَّا يَخْرُصُوْنَ
যদি তুমি দুনিয়ার অধিকাংশ লোকের কথামতো চল, তবে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত করে দেবে। কারণ তারা শুধু ধারণার অনুসরণ করে এবং অনুমানভিত্তিক কথা বলে। (সূরা আন‘আম- ১১৬)
وَمَا يَتَّبِعُ اَكْثَرُهُمْ اِلَّا ظَنًّاؕ اِنَّ الظَّنَّ لَا يُغْنِيْ مِنَ الْحَقِّ شَيْئًاؕ اِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ ۢبِمَا يَفْعَلُوْنَ
তাদের অধিকাংশই কেবল অনুমানের অনুসরণ করে, অথচ সত্যের পরিবর্তে অনুমান কোন কাজে আসে না। আর তারা যা করে নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে অবহিত। (সূরা ইউনুস- ৩৬)
অনুমান কখনো সত্য ও সঠিক জ্ঞান দিতে পারে না :
اِنْ يَّتَّبِعُوْنَ اِلَّا الظَّنَّ ؕ وَاِنَّ الظَّنَّ لَا يُغْنِيْ مِنَ الْحَقِّ شَيْئًا
তারা শুধু অনুমানের অনুসরণ করে; অথচ সত্যের মুকাবিলায় অনুমানের কোন মূল্য নেই। (সূরা নাজম- ২৮)
মুশরিকরা ধ্যান-ধারণা ও অনুমানের উপর নির্ভরশীল :
وَقَالُوْا لَوْ شَآءَ الرَّحْمٰنُ مَا عَبَدْنَاهُمْؕ مَا لَهُمْ بِذٰلِكَ مِنْ عِلْمٍۗ اِنْ هُمْ اِلَّا يَخْرُصُوْنَ
তারা বলে, দয়াময় (আল্লাহ) যদি ইচ্ছা না করতেন, তবে আমরা কখনো তাদের (ফেরেশতাদের) ইবাদাত করতাম না। মূলত এ ব্যাপারে তাদের কোন জ্ঞান নেই, তারা শুধু অনুমানের উপরই নির্ভর করে চলে। (সূরা যুখরুফ- ২০)
অনুমানের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীরা ধ্বংস হবে :
قُتِلَ الْخَرَّاصُوْنَ
তারা ধ্বংস হোক, যারা শুধু অনুমানের উপর নির্ভরশীল। (সূরা যারিয়াত- ১০)
শয়তান মানুষের মনে কুধারণার জন্ম দেয় :
وَلَقَدْ صَدَّقَ عَلَيْهِمْ اِبْلِيْسُ ظَنَّهٗ فَاتَّبَعُوْهُ اِلَّا فَرِيْقًا مِّنَ الْمُؤْمِنِيْنَ
নিশ্চয় ইবলিস বাস্তবেই তাদের ব্যাপারে তার অনুমান সত্যে পরিণত করল, ফলে মুমিনদের একটি দল ব্যতীত সকলেই তার আনুগত্য করল। (সূরা সাবা- ২০)
আল্লাহ সম্পর্কে ভুল ধারণা মানুষকে ধ্বংস করে দেয় :
وَمَا كُنْتُمْ تَسْتَتِرُوْنَ اَنْ يَّشْهَدَ عَلَيْكُمْ سَمْعُكُمْ وَلَاۤ اَبْصَارُكُمْ وَلَا جُلُوْدُكُمْ وَلٰكِنْ ظَنَنْتُمْ اَنَّ اللهَ لَا يَعْلَمُ كَثِيْرًا مِّمَّا تَعْمَلُوْنَ ‐ وَذٰلِكُمْ ظَنُّكُمُ الَّذِيْ ظَنَنْتُمْ بِرَبِّكُمْ اَرْدَاكُمْ فَاَصْبَحْتُمْ مِّنَ الْخَاسِرِيْنَ
তোমরা তো কোনকিছু গোপন করতে না এই বিশ্বাসে যে, তোমাদের কর্ণ, চক্ষু এবং ত্বক তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে না। বরং তোমরা মনে করতে যে, তোমরা যা করতে তার অনেক কিছুই আল্লাহ জানেন না। তোমাদের প্রতিপালক সম্পর্কে এ ধারণাই তোমাদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে, ফলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছ। (সূরা হা-মীম সাজদা- ২২, ২৩)
কতক ধারণা গোনাহের পর্যায়ে পড়ে :
اِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ اِثْمٌ
নিশ্চয় কোন কোন অনুমান গোনাহের কাজ। (সূরা হুজুরাত- ১২)
আল্লাহ বেশি বেশি ধারণা পোষণ করতে নিষেধ করেছেন :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اجْتَنِبُوْا كَثِيْرًا مِّنَ الظَّنِّ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা বেশি বেশি ধারণা পোষণ করা থেকে বিরত থাকো। (সূরা হুজুরাত- ১২)
অনুমানকারীদের পেছনে চলা যাবে না :
وَاِنْ تُطِعْ اَكْثَرَ مَنْ فِى الْاَرْضِ يُضِلُّوْكَ عَنْ سَبِيْلِ اللهِؕ اِنْ يَّتَّبِعُوْنَ اِلَّا الظَّنَّ وَاِنْ هُمْ اِلَّا يَخْرُصُوْنَ
যদি তুমি দুনিয়ার অধিকাংশ লোকের কথামতো চল, তবে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত করে দেবে। কারণ তারা শুধু ধারণার অনুসরণ করে এবং অনুমানভিত্তিক কথা বলে। (সূরা আন‘আম- ১১৬)
অনেকে সত্যের বিপক্ষে বিতর্ক করে :
وَيُجَادِلُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِالْبَاطِلِ لِيُدْحِضُوْا بِهِ الْحَقَّ
কাফিররা সত্যকে ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য মিথ্যা যুক্তি পেশ করে বিতর্কে লিপ্ত হয়। (সূরা কাহফ- ৫৬)
মানুষ সাধারণত ঝগড়াটেই হয়ে থাকে :
وَ كَانَ الْاِنْسَانُ اَكْثَرَ شَيْءٍ جَدَلًا
মানুষ অধিকাংশ ব্যাপারেই বিতর্কপ্রিয়। (সূরা কাহফ- ৫৪)
শয়তান ঝগড়া বাধায় :
وَاِنَّ الشَّيَاطِيْنَ لَيُوْحُوْنَ اِلٰۤى اَوْلِيَآئِهِمْ لِيُجَادِلُوْكُمْۚ وَاِنْ اَطَعْتُمُوْهُمْ اِنَّكُمْ لَمُشْرِكُوْنَ
নিশ্চয় শয়তানরা তাদের বন্ধুদেরকে তোমাদের সাথে বিবাদ করতে প্ররোচনা দেয়। সুতরাং যদি তোমরা তাদের কথামতো চল, তবে অবশ্যই তোমরা মুশরিক হয়ে যাবে। (সূরা আন‘আম- ১২১)
আল্লাহ ঝগড়া-বিবাদ করতে নিষেধ করেছেন :
وَلَا تُجَادِلْ عَنِ الَّذِيْنَ يَخْتَانُوْنَ اَنْفُسَهُمْؕ اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ مَنْ كَانَ خَوَّانًا اَثِيْمًا
যারা নিজেদেরকে প্রতারিত করে, তুমি কখনো তাদের পক্ষে বিতর্কে লিপ্ত হয়ো না, নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্বাস ভঙ্গকারী পাপীকে পছন্দ করেন না। (সূরা নিসা- ১০৭)
মুমিনের বিতর্ক হবে উত্তম পদ্ধতিতে :
وَلَا تُجَادِلُوْاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ اِلَّا بِالَّتِيْ هِيَ اَحْسَنُ
তোমরা আহলে কিতাবদের সাথে উত্তমপন্থা ব্যতীত বিতর্কে লিপ্ত হয়ো না। (সূরা আনকাবূত- ৪৬)
وَيُجَادِلُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِالْبَاطِلِ لِيُدْحِضُوْا بِهِ الْحَقَّ
কাফিররা সত্যকে ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য মিথ্যা যুক্তি পেশ করে বিতর্কে লিপ্ত হয়। (সূরা কাহফ- ৫৬)
মানুষ সাধারণত ঝগড়াটেই হয়ে থাকে :
وَ كَانَ الْاِنْسَانُ اَكْثَرَ شَيْءٍ جَدَلًا
মানুষ অধিকাংশ ব্যাপারেই বিতর্কপ্রিয়। (সূরা কাহফ- ৫৪)
শয়তান ঝগড়া বাধায় :
وَاِنَّ الشَّيَاطِيْنَ لَيُوْحُوْنَ اِلٰۤى اَوْلِيَآئِهِمْ لِيُجَادِلُوْكُمْۚ وَاِنْ اَطَعْتُمُوْهُمْ اِنَّكُمْ لَمُشْرِكُوْنَ
নিশ্চয় শয়তানরা তাদের বন্ধুদেরকে তোমাদের সাথে বিবাদ করতে প্ররোচনা দেয়। সুতরাং যদি তোমরা তাদের কথামতো চল, তবে অবশ্যই তোমরা মুশরিক হয়ে যাবে। (সূরা আন‘আম- ১২১)
আল্লাহ ঝগড়া-বিবাদ করতে নিষেধ করেছেন :
وَلَا تُجَادِلْ عَنِ الَّذِيْنَ يَخْتَانُوْنَ اَنْفُسَهُمْؕ اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ مَنْ كَانَ خَوَّانًا اَثِيْمًا
যারা নিজেদেরকে প্রতারিত করে, তুমি কখনো তাদের পক্ষে বিতর্কে লিপ্ত হয়ো না, নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্বাস ভঙ্গকারী পাপীকে পছন্দ করেন না। (সূরা নিসা- ১০৭)
মুমিনের বিতর্ক হবে উত্তম পদ্ধতিতে :
وَلَا تُجَادِلُوْاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ اِلَّا بِالَّتِيْ هِيَ اَحْسَنُ
তোমরা আহলে কিতাবদের সাথে উত্তমপন্থা ব্যতীত বিতর্কে লিপ্ত হয়ো না। (সূরা আনকাবূত- ৪৬)
প্রত্যেক জনপদেই চক্রান্তকারী রয়েছে :
وَكَذٰلِكَ جَعَلْنَا فِيْ كُلِّ قَرْيَةٍ اَكَابِرَ مُجْرِمِيْهَا لِيَمْكُرُوْا فِيْهَاؕ وَمَا يَمْكُرُوْنَ اِلَّا بِاَنْفُسِهِمْ وَمَا يَشْعُرُوْنَ
এভাবে আমি প্রত্যেক জনপদে সেখানকার অপরাধীদের প্রধানকে সেখানে চক্রান্ত করার অবকাশ দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা শুধু তাদের নিজেদের বিরুদ্ধেই চক্রান্ত করে থাকে, অথচ তারা তা উপলদ্ধি করতে পারে না। (সূরা আন‘আম- ১২৩)
ব্যাখ্যা : مَكَرْ (মাকার) শব্দের অর্থ হচ্ছে, গোপনে কোন চেষ্টা করা। অর্থাৎ কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে এমনভাবে গুটি চালানো, যার ফলে তার উপর চরম আঘাত না আসা পর্যন্ত সে জানতেই পারে না যে, তার উপর এক মহাবিপদ আসন্ন। বাহিরের অবস্থা দেখে সে এ কথাই মনে করতে থাকে যে, সবকিছু ঠিকমতোই চলছে।
অতীতেও অনেক চক্রান্ত করা হয়েছে :
وَقَدْ مَكَرَ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَلِلّٰهِ الْمَكْرُ جَمِيْعًا
তাদের পূর্বে যারা ছিল তারাও চক্রান্ত করেছিল; কিন্তু সমস্ত চক্রান্ত আল্লাহর ইচ্ছাধীন। (সূরা রা‘দ- ৪২)
ইউসুফ (আঃ) এর সাথেও তাঁর ভাইয়েরা প্রতারণা করেছিল :
وَمَا كُنْتَ لَدَيْهِمْ اِذْ اَجْمَعُوْاۤ اَمْرَهُمْ وَهُمْ يَمْكُرُوْنَ
ষড়যন্ত্র করার সময় যখন তারা তাদের কাজে জোটবদ্ধ হয়েছিল, তখন তুমি তো তাদের সঙ্গে ছিলে না। (সূরা ইউসুফ- ১০২)
মুহাম্মাদ ﷺ এর সাথেও চক্রান্ত করা হয়েছে :
وَاِذْ يَمْكُرُ بِكَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِيُثْبِتُوْكَ اَوْ يَقْتُلُوْكَ اَوْ يُخْرِجُوْكَ وَيَمْكُرُوْنَ وَيَمْكُرُ اللهُ وَاللهُ خَيْرُ الْمَاكِرِيْنَ
স্মরণ করো, যখন কাফিররা তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তোমাকে বন্দী করার জন্য, হত্যা করার জন্য অথবা নির্বাসিত করার জন্য। তারা কৌশল অবলম্বন করে এবং আল্লাহও কৌশল অবলম্বন করেন। তবে আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ কৌশলী। (সূরা আনফাল- ৩০)
চক্রান্ত করে কেউ সফল হতে পারেনি :
قَدْ مَكَرَ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَاَتَى اللهُ بُنْيَانَهُمْ مِّنَ الْقَوَاعِدِ فَخَرَّ عَلَيْهِمُ السَّقْفُ مِنْ فَوْقِهِمْ وَاَتَاهُمُ الْعَذَابُ مِنْ حَيْثُ لَا يَشْعُرُوْنَ
তাদের পূর্ববর্তীরাও চক্রান্ত করেছিল; অতঃপর আল্লাহ তাদের ইমারতের ভিত্তিমূলে আঘাত করেছিলেন; ফলে ইমারতের ছাদ তাদের উপর ধ্বসে পড়ল। অতঃপর এমন দিক হতে তাদের উপর শাস্তি পতিত হলো, যা ছিল তাদের কল্পনার বাইরে। (সূরা নাহল- ২৬)
চক্রান্ত যে করে তার নিজেরই ক্ষতি হয় :
وَلَا يَحِيْقُ الْمَكْرُ السَّيِّئُ اِلَّا بِاَهْلِهٖ
হীন ষড়যন্ত্রের কুফল সেই কুচক্রীদের ছাড়া আর কারো উপর পতিত হয় না। (সূরা ফাতির- ৪৩)
ব্যাখ্যা : যে ব্যক্তি অন্যের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে সে আসলে সবার আগে নিজের সাথেই বিশ্বাসঘাতকতা করে। কেননা মন ও মস্তিষ্কের শক্তিগুলো তার কাছে আমানত হিসেবে গচ্ছিত রাখা হয়েছে। সুতরাং যে ব্যক্তি এ আমানতগুলোকে বৈধ কাজে ব্যবহার না করে অবৈধ কাজে ব্যবহার করে, সে মূলত আমানতের খিয়ানত করে। আর যে বিবেককে আল্লাহ তার নৈতিক চরিত্রের পাহারাদার বানিয়েছিলেন সে তাকে এমনভাবে দাবিয়ে দেয়, যার ফলে এই বিশ্বাসঘাতকতার ক্ষেত্রে সে তাকে কোন বাধা দিতে পারে না। মানুষ তার নিজের মধ্যে অত্যাচারমূলক পদক্ষেপকে যখন এভাবে পূর্ণতার পর্যায়ে পৌঁছে দেয়, তখনই বাইরে সে বিশ্বাসঘাতকতা ও পাপকাজ করতে শুরু করে।
চক্রান্তকারীদের জন্য হুশিয়ারী :
اَفَاَمِنَ الَّذِيْنَ مَكَرُوا السَّيِّئَاتِ اَنْ يَّخْسِفَ اللهُ بِهِمُ الْاَرْضَ اَوْ يَأْتِيَهُمُ الْعَذَابُ مِنْ حَيْثُ لَا يَشْعُرُوْنَ ‐ اَوْ يَأْخُذَهُمْ فِيْ تَقَلُّبِهِمْ فَمَا هُمْ بِمُعْجِزِيْنَ ‐ اَوْ يَأْخُذَهُمْ عَلٰى تَخَوُّفٍؕ فَاِنَّ رَبَّكُمْ لَرَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ
যারা কুকর্মের ষড়যন্ত্র করে তারা কি এ বিষয়ে নিশ্চিতভাবে নিরাপদ হয়েছে যে, আল্লাহ তাদেরকে ভূগর্ভে বিলীন করবেন না অথবা এমন দিক হতে শাস্তি প্রদান করবেন না, যা তাদের ধারণাতীত? অথবা চলাফেরা করতে থাকাকালে তিনি তাদেরকে পাকড়াও করবেন না? তারা তো একে প্রতিরোধও করতে পারবে না। অথবা তাদেরকে তিনি ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় পাকড়াও করবেন না? নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। (সূরা নাহল, ৪৫-৪৭)
আল্লাহ চক্রান্তকারীদেরকে দুনিয়াতেই ধ্বংস করে দিয়েছেন :
فَانْظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ مَكْرِهِمْ اَنَّا دَمَّرْنَاهُمْ وَقَوْمَهُمْ اَجْمَعِيْنَ
অতএব লক্ষ্য করো, তাদের চক্রান্তের পরিণাম কী হয়েছিল? আমি অবশ্যই তাদেরকে ও তাদের সম্প্রদায়ের সকলকে ধ্বংস করে দিয়েছি। (সূরা নামল- ৫১)
চক্রান্তকারীদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি :
وَالَّذِيْنَ يَمْكُرُوْنَ السَّيِّئَاتِ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيْدٌؕ وَمَكْرُ اُولٰٓئِكَ هُوَ يَبُوْرُ
আর যারা খারাপ কাজের চক্রান্ত করে, তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। তাদের চক্রান্ত বিফল হবেই। (সূরা ফাতির- ১০)
আল্লাহ সবচেয়ে বড় কৌশলী :
وَمَكَرُوْا وَمَكَرَ اللهُ ؕ وَاللهُ خَيْرُ الْمَاكِرِيْنَ
আর তারা কৌশল অবলম্বন করেছিল এবং আল্লাহও কৌশল গ্রহণ করলেন। মূলত আল্লাহই উত্তম কৌশলী। (সূরা আলে ইমরান- ৫৪)
মানুষের চক্রান্ত ফেরেশতারা লিখে রাখেন :
اِنَّ رُسُلَنَا يَكْتُبُوْنَ مَا تَمْكُرُوْنَ
নিশ্চয় তোমরা যে অপকৌশল কর, তা আমার দূতগণ (ফেরেশতা) লিখে রাখে। (সূরা ইউনুস- ২১)
বিরোধীদের চক্রান্তকে ভয় করতে নেই :
وَلَا تَحْزَنْ عَلَيْهِمْ وَلَا تَكُنْ فِيْ ضَيْقٍ مِّمَّا يَمْكُرُوْنَ
তাদের সম্পর্কে তুমি দুঃখ করো না এবং তাদের চক্রান্তের জন্য মন খারাপও করো না। (সূরা নামল- ৭০)
প্রতারণা ও ধোঁকাবাজি করা মুনাফিকদের কাজ :
اِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ يُخَادِعُوْنَ اللهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْ
নিশ্চয় মুনাফিকরা আল্লাহর সাথে ধোঁকাবাজি করে, বস্তুত তিনিই তাদেরকে ধোঁকায় ফেলে দেন। (সূরা নিসা- ১৪২)
প্রতারণা নিজেরই ক্ষতি ডেকে আনে :
يُخَادِعُوْنَ اللهَ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۚ وَمَا يَخْدَعُوْنَ اِلَّاۤ اَنْفُسَهُمْ وَمَا يَشْعُرُوْنَ
তারা আল্লাহ ও মুমিনদের সাথে প্রতারণা করে। প্রকৃতপক্ষে তারা নিজেদের ব্যতীত অন্য কারো সাথে প্রতারণা করে না, অথচ তারা তা অনুভব করতে পারে না। (সূরা বাক্বারা- ৯)
وَكَذٰلِكَ جَعَلْنَا فِيْ كُلِّ قَرْيَةٍ اَكَابِرَ مُجْرِمِيْهَا لِيَمْكُرُوْا فِيْهَاؕ وَمَا يَمْكُرُوْنَ اِلَّا بِاَنْفُسِهِمْ وَمَا يَشْعُرُوْنَ
এভাবে আমি প্রত্যেক জনপদে সেখানকার অপরাধীদের প্রধানকে সেখানে চক্রান্ত করার অবকাশ দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা শুধু তাদের নিজেদের বিরুদ্ধেই চক্রান্ত করে থাকে, অথচ তারা তা উপলদ্ধি করতে পারে না। (সূরা আন‘আম- ১২৩)
ব্যাখ্যা : مَكَرْ (মাকার) শব্দের অর্থ হচ্ছে, গোপনে কোন চেষ্টা করা। অর্থাৎ কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে এমনভাবে গুটি চালানো, যার ফলে তার উপর চরম আঘাত না আসা পর্যন্ত সে জানতেই পারে না যে, তার উপর এক মহাবিপদ আসন্ন। বাহিরের অবস্থা দেখে সে এ কথাই মনে করতে থাকে যে, সবকিছু ঠিকমতোই চলছে।
অতীতেও অনেক চক্রান্ত করা হয়েছে :
وَقَدْ مَكَرَ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَلِلّٰهِ الْمَكْرُ جَمِيْعًا
তাদের পূর্বে যারা ছিল তারাও চক্রান্ত করেছিল; কিন্তু সমস্ত চক্রান্ত আল্লাহর ইচ্ছাধীন। (সূরা রা‘দ- ৪২)
ইউসুফ (আঃ) এর সাথেও তাঁর ভাইয়েরা প্রতারণা করেছিল :
وَمَا كُنْتَ لَدَيْهِمْ اِذْ اَجْمَعُوْاۤ اَمْرَهُمْ وَهُمْ يَمْكُرُوْنَ
ষড়যন্ত্র করার সময় যখন তারা তাদের কাজে জোটবদ্ধ হয়েছিল, তখন তুমি তো তাদের সঙ্গে ছিলে না। (সূরা ইউসুফ- ১০২)
মুহাম্মাদ ﷺ এর সাথেও চক্রান্ত করা হয়েছে :
وَاِذْ يَمْكُرُ بِكَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِيُثْبِتُوْكَ اَوْ يَقْتُلُوْكَ اَوْ يُخْرِجُوْكَ وَيَمْكُرُوْنَ وَيَمْكُرُ اللهُ وَاللهُ خَيْرُ الْمَاكِرِيْنَ
স্মরণ করো, যখন কাফিররা তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তোমাকে বন্দী করার জন্য, হত্যা করার জন্য অথবা নির্বাসিত করার জন্য। তারা কৌশল অবলম্বন করে এবং আল্লাহও কৌশল অবলম্বন করেন। তবে আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ কৌশলী। (সূরা আনফাল- ৩০)
চক্রান্ত করে কেউ সফল হতে পারেনি :
قَدْ مَكَرَ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَاَتَى اللهُ بُنْيَانَهُمْ مِّنَ الْقَوَاعِدِ فَخَرَّ عَلَيْهِمُ السَّقْفُ مِنْ فَوْقِهِمْ وَاَتَاهُمُ الْعَذَابُ مِنْ حَيْثُ لَا يَشْعُرُوْنَ
তাদের পূর্ববর্তীরাও চক্রান্ত করেছিল; অতঃপর আল্লাহ তাদের ইমারতের ভিত্তিমূলে আঘাত করেছিলেন; ফলে ইমারতের ছাদ তাদের উপর ধ্বসে পড়ল। অতঃপর এমন দিক হতে তাদের উপর শাস্তি পতিত হলো, যা ছিল তাদের কল্পনার বাইরে। (সূরা নাহল- ২৬)
চক্রান্ত যে করে তার নিজেরই ক্ষতি হয় :
وَلَا يَحِيْقُ الْمَكْرُ السَّيِّئُ اِلَّا بِاَهْلِهٖ
হীন ষড়যন্ত্রের কুফল সেই কুচক্রীদের ছাড়া আর কারো উপর পতিত হয় না। (সূরা ফাতির- ৪৩)
ব্যাখ্যা : যে ব্যক্তি অন্যের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে সে আসলে সবার আগে নিজের সাথেই বিশ্বাসঘাতকতা করে। কেননা মন ও মস্তিষ্কের শক্তিগুলো তার কাছে আমানত হিসেবে গচ্ছিত রাখা হয়েছে। সুতরাং যে ব্যক্তি এ আমানতগুলোকে বৈধ কাজে ব্যবহার না করে অবৈধ কাজে ব্যবহার করে, সে মূলত আমানতের খিয়ানত করে। আর যে বিবেককে আল্লাহ তার নৈতিক চরিত্রের পাহারাদার বানিয়েছিলেন সে তাকে এমনভাবে দাবিয়ে দেয়, যার ফলে এই বিশ্বাসঘাতকতার ক্ষেত্রে সে তাকে কোন বাধা দিতে পারে না। মানুষ তার নিজের মধ্যে অত্যাচারমূলক পদক্ষেপকে যখন এভাবে পূর্ণতার পর্যায়ে পৌঁছে দেয়, তখনই বাইরে সে বিশ্বাসঘাতকতা ও পাপকাজ করতে শুরু করে।
চক্রান্তকারীদের জন্য হুশিয়ারী :
اَفَاَمِنَ الَّذِيْنَ مَكَرُوا السَّيِّئَاتِ اَنْ يَّخْسِفَ اللهُ بِهِمُ الْاَرْضَ اَوْ يَأْتِيَهُمُ الْعَذَابُ مِنْ حَيْثُ لَا يَشْعُرُوْنَ ‐ اَوْ يَأْخُذَهُمْ فِيْ تَقَلُّبِهِمْ فَمَا هُمْ بِمُعْجِزِيْنَ ‐ اَوْ يَأْخُذَهُمْ عَلٰى تَخَوُّفٍؕ فَاِنَّ رَبَّكُمْ لَرَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ
যারা কুকর্মের ষড়যন্ত্র করে তারা কি এ বিষয়ে নিশ্চিতভাবে নিরাপদ হয়েছে যে, আল্লাহ তাদেরকে ভূগর্ভে বিলীন করবেন না অথবা এমন দিক হতে শাস্তি প্রদান করবেন না, যা তাদের ধারণাতীত? অথবা চলাফেরা করতে থাকাকালে তিনি তাদেরকে পাকড়াও করবেন না? তারা তো একে প্রতিরোধও করতে পারবে না। অথবা তাদেরকে তিনি ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় পাকড়াও করবেন না? নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। (সূরা নাহল, ৪৫-৪৭)
আল্লাহ চক্রান্তকারীদেরকে দুনিয়াতেই ধ্বংস করে দিয়েছেন :
فَانْظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ مَكْرِهِمْ اَنَّا دَمَّرْنَاهُمْ وَقَوْمَهُمْ اَجْمَعِيْنَ
অতএব লক্ষ্য করো, তাদের চক্রান্তের পরিণাম কী হয়েছিল? আমি অবশ্যই তাদেরকে ও তাদের সম্প্রদায়ের সকলকে ধ্বংস করে দিয়েছি। (সূরা নামল- ৫১)
চক্রান্তকারীদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি :
وَالَّذِيْنَ يَمْكُرُوْنَ السَّيِّئَاتِ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيْدٌؕ وَمَكْرُ اُولٰٓئِكَ هُوَ يَبُوْرُ
আর যারা খারাপ কাজের চক্রান্ত করে, তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। তাদের চক্রান্ত বিফল হবেই। (সূরা ফাতির- ১০)
আল্লাহ সবচেয়ে বড় কৌশলী :
وَمَكَرُوْا وَمَكَرَ اللهُ ؕ وَاللهُ خَيْرُ الْمَاكِرِيْنَ
আর তারা কৌশল অবলম্বন করেছিল এবং আল্লাহও কৌশল গ্রহণ করলেন। মূলত আল্লাহই উত্তম কৌশলী। (সূরা আলে ইমরান- ৫৪)
মানুষের চক্রান্ত ফেরেশতারা লিখে রাখেন :
اِنَّ رُسُلَنَا يَكْتُبُوْنَ مَا تَمْكُرُوْنَ
নিশ্চয় তোমরা যে অপকৌশল কর, তা আমার দূতগণ (ফেরেশতা) লিখে রাখে। (সূরা ইউনুস- ২১)
বিরোধীদের চক্রান্তকে ভয় করতে নেই :
وَلَا تَحْزَنْ عَلَيْهِمْ وَلَا تَكُنْ فِيْ ضَيْقٍ مِّمَّا يَمْكُرُوْنَ
তাদের সম্পর্কে তুমি দুঃখ করো না এবং তাদের চক্রান্তের জন্য মন খারাপও করো না। (সূরা নামল- ৭০)
প্রতারণা ও ধোঁকাবাজি করা মুনাফিকদের কাজ :
اِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ يُخَادِعُوْنَ اللهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْ
নিশ্চয় মুনাফিকরা আল্লাহর সাথে ধোঁকাবাজি করে, বস্তুত তিনিই তাদেরকে ধোঁকায় ফেলে দেন। (সূরা নিসা- ১৪২)
প্রতারণা নিজেরই ক্ষতি ডেকে আনে :
يُخَادِعُوْنَ اللهَ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۚ وَمَا يَخْدَعُوْنَ اِلَّاۤ اَنْفُسَهُمْ وَمَا يَشْعُرُوْنَ
তারা আল্লাহ ও মুমিনদের সাথে প্রতারণা করে। প্রকৃতপক্ষে তারা নিজেদের ব্যতীত অন্য কারো সাথে প্রতারণা করে না, অথচ তারা তা অনুভব করতে পারে না। (সূরা বাক্বারা- ৯)
প্রত্যেক নবীর সাথেই উপহাস করা হয়েছে :
يَا حَسْرَةً عَلَى الْعِبَادِۚ مَا يَأْتِيْهِمْ مِّنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا كَانُوْا بِهٖ يَسْتَهْزِئُوْنَ
আফসোস সেসব বান্দাদের জন্য, যাদের কাছে কখনো এমন কোন রাসূল আসেনি, যাকে নিয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেনি। (সূরা ইয়াসীন- ৩০)
আমাদের নবীর সাথেও উপহাস করা হয়েছে :
وَاِذَا رَاَوْكَ اِنْ يَّتَّخِذُوْنَكَ اِلَّا هُزُوًاؕ اَهٰذَا الَّذِيْ بَعَثَ اللهُ رَسُوْلًا
তারা যখন তোমাকে দেখে তখন তারা তোমাকে কেবল ঠাট্টা-বিদ্রূপের পাত্র হিসেবেই গণ্য করে এবং বলে, এ কি সেই ব্যক্তি যাকে আল্লাহ রাসূল বানিয়ে পাঠিয়েছেন? (সূরা ফুরক্বান- ৪১)
কাফিররা মুমিনদেরকে নিয়ে উপহাস করে :
اِنَّهٗ كَانَ فَرِيْقٌ مِّنْ عِبَادِيْ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَاۤ اٰمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَاَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِيْنَ ‐ فَاتَّخَذْتُمُوْهُمْ سِخْرِيًّا حَتّٰۤى اَنْسَوْكُمْ ذِكْرِيْ وَكُنْتُمْ مِّنْهُمْ تَضْحَكُوْنَ
আমার বান্দাদের মধ্যে একদল ছিল যারা বলত, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ঈমান এনেছি, তুমি আমাদেরকে ক্ষমা করো ও দয়া করো, তুমি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু। অথচ তোমরা তাদেরকে নিয়ে এত ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতে যে, সেটা তোমাদেরকে আমার কথা ভুলিয়ে দিয়েছিল। তোমরা তো তাদেরকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টাতেই লিপ্ত ছিলে। (সূরা মু’মিনূন- ১০৯, ১১০)
মুনাফিকরাও মুমিনদের সাথে উপহাস করত :
وَاِذَا لَقُوا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا قَالُوْاۤ اٰمَنَّا وَاِذَا خَلَوْا اِلٰى شَيَاطِيْنِهِمْ قَالُوْاۤ اِنَّا مَعَكُمْ اِنَّمَا نَحْنُ مُسْتَهْزِئُوْنَ
যখন তারা মুমিনদের সাথে মিলিত হয় তখন বলে, আমরা ঈমান এনেছি এবং যখন তারা নিজেদের শয়তানদের সাথে মিলিত হয় তখন বলে, আমরা তো তোমাদের সঙ্গেই আছি, আমরা তো শুধু (তাদের সাথে) ঠাট্টা-বিদ্রূপই করে থাকি। (সূরা বাক্বারা- ১৪)
কাফিররা আযান দিলেও বিদ্রূপ করত :
وَاِذَا نَادَيْتُمْ اِلَى الصَّلَاةِ اتَّخَذُوْهَا هُزُوًا وَّلَعِبًا ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ قَوْمٌ لَّا يَعْقِلُوْنَ
যখন তোমরা সালাতের জন্য আহবান কর, তখন তারা তাকে হাসি-তামাশা ও ক্রীড়ার বস্তু হিসেবে গ্রহণ করে। এটা এজন্য যে, তারা এমন এক সম্প্রদায় যাদের কোন বোধশক্তি নেই। (সূরা মায়েদা- ৫৮)
উপহাসকারীরাই খারাপ পরিণামের সম্মুখীন হবে :
وَلَقَدِ اسْتُهْزِئَ بِرُسُلٍ مِّنْ قَبْلِكَ فَحَاقَ بِالَّذِيْنَ سَخِرُوْا مِنْهُمْ مَّا كَانُوْا بِهٖ يَسْتَهْزِئُوْنَ
তোমার পূর্বেও অনেক রাসূলকেই ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা হয়েছিল; পরিণামে তাদের মধ্যে যারা উপহাস করত, তারা যা নিয়ে উপহাস করত তা-ই তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রেখেছিল। (সূরা আম্বিয়া- ৪১)
উপহাসকারীদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম :
ذٰلِكَ جَزَآؤُهُمْ جَهَنَّمُ بِمَا كَفَرُوْا وَاتَّخَذُوْاۤ اٰيَاتِيْ وَرُسُلِيْ هُزُوًا
তাদের প্রতিফল হচ্ছে জাহান্নাম, যেহেতু তারা কুফরী করেছে এবং আমার নিদর্শনাবলি ও রাসূলদেরকে ঠাট্টা-বিদ্রূপের বিষয় হিসেবে গ্রহণ করেছে। (সূরা কাহফ- ১০৬)
উপহাসকারীদের মজলিসে বসতে নেই :
اِذَا سَمِعْتُمْ اٰيَاتِ اللهِ يُكْفَرُ بِهَا وَيُسْتَهْزَأُ بِهَا فَلَا تَقْعُدُوْا مَعَهُمْ حَتّٰى يَخُوْضُوْا فِيْ حَدِيْثٍ غَيْرِهٖۤ اِنَّكُمْ اِذًا مِّثْلُهُمْ
যখন তোমরা আল্লাহর আয়াত প্রত্যাখ্যানের কথা এবং তাকে বিদ্রূপ করা হয় এমন কথা শুনতে পাবে, তখন যতক্ষণ পর্যন্ত তারা অন্য প্রসঙ্গে লিপ্ত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তাদের সঙ্গে বসবে না; অন্যথায় তোমরাও তাদের মতো হয়ে যাবে। (সূরা নিসা- ১৪০)
يَا حَسْرَةً عَلَى الْعِبَادِۚ مَا يَأْتِيْهِمْ مِّنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا كَانُوْا بِهٖ يَسْتَهْزِئُوْنَ
আফসোস সেসব বান্দাদের জন্য, যাদের কাছে কখনো এমন কোন রাসূল আসেনি, যাকে নিয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেনি। (সূরা ইয়াসীন- ৩০)
আমাদের নবীর সাথেও উপহাস করা হয়েছে :
وَاِذَا رَاَوْكَ اِنْ يَّتَّخِذُوْنَكَ اِلَّا هُزُوًاؕ اَهٰذَا الَّذِيْ بَعَثَ اللهُ رَسُوْلًا
তারা যখন তোমাকে দেখে তখন তারা তোমাকে কেবল ঠাট্টা-বিদ্রূপের পাত্র হিসেবেই গণ্য করে এবং বলে, এ কি সেই ব্যক্তি যাকে আল্লাহ রাসূল বানিয়ে পাঠিয়েছেন? (সূরা ফুরক্বান- ৪১)
কাফিররা মুমিনদেরকে নিয়ে উপহাস করে :
اِنَّهٗ كَانَ فَرِيْقٌ مِّنْ عِبَادِيْ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَاۤ اٰمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَاَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِيْنَ ‐ فَاتَّخَذْتُمُوْهُمْ سِخْرِيًّا حَتّٰۤى اَنْسَوْكُمْ ذِكْرِيْ وَكُنْتُمْ مِّنْهُمْ تَضْحَكُوْنَ
আমার বান্দাদের মধ্যে একদল ছিল যারা বলত, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ঈমান এনেছি, তুমি আমাদেরকে ক্ষমা করো ও দয়া করো, তুমি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু। অথচ তোমরা তাদেরকে নিয়ে এত ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতে যে, সেটা তোমাদেরকে আমার কথা ভুলিয়ে দিয়েছিল। তোমরা তো তাদেরকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টাতেই লিপ্ত ছিলে। (সূরা মু’মিনূন- ১০৯, ১১০)
মুনাফিকরাও মুমিনদের সাথে উপহাস করত :
وَاِذَا لَقُوا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا قَالُوْاۤ اٰمَنَّا وَاِذَا خَلَوْا اِلٰى شَيَاطِيْنِهِمْ قَالُوْاۤ اِنَّا مَعَكُمْ اِنَّمَا نَحْنُ مُسْتَهْزِئُوْنَ
যখন তারা মুমিনদের সাথে মিলিত হয় তখন বলে, আমরা ঈমান এনেছি এবং যখন তারা নিজেদের শয়তানদের সাথে মিলিত হয় তখন বলে, আমরা তো তোমাদের সঙ্গেই আছি, আমরা তো শুধু (তাদের সাথে) ঠাট্টা-বিদ্রূপই করে থাকি। (সূরা বাক্বারা- ১৪)
কাফিররা আযান দিলেও বিদ্রূপ করত :
وَاِذَا نَادَيْتُمْ اِلَى الصَّلَاةِ اتَّخَذُوْهَا هُزُوًا وَّلَعِبًا ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ قَوْمٌ لَّا يَعْقِلُوْنَ
যখন তোমরা সালাতের জন্য আহবান কর, তখন তারা তাকে হাসি-তামাশা ও ক্রীড়ার বস্তু হিসেবে গ্রহণ করে। এটা এজন্য যে, তারা এমন এক সম্প্রদায় যাদের কোন বোধশক্তি নেই। (সূরা মায়েদা- ৫৮)
উপহাসকারীরাই খারাপ পরিণামের সম্মুখীন হবে :
وَلَقَدِ اسْتُهْزِئَ بِرُسُلٍ مِّنْ قَبْلِكَ فَحَاقَ بِالَّذِيْنَ سَخِرُوْا مِنْهُمْ مَّا كَانُوْا بِهٖ يَسْتَهْزِئُوْنَ
তোমার পূর্বেও অনেক রাসূলকেই ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা হয়েছিল; পরিণামে তাদের মধ্যে যারা উপহাস করত, তারা যা নিয়ে উপহাস করত তা-ই তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রেখেছিল। (সূরা আম্বিয়া- ৪১)
উপহাসকারীদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম :
ذٰلِكَ جَزَآؤُهُمْ جَهَنَّمُ بِمَا كَفَرُوْا وَاتَّخَذُوْاۤ اٰيَاتِيْ وَرُسُلِيْ هُزُوًا
তাদের প্রতিফল হচ্ছে জাহান্নাম, যেহেতু তারা কুফরী করেছে এবং আমার নিদর্শনাবলি ও রাসূলদেরকে ঠাট্টা-বিদ্রূপের বিষয় হিসেবে গ্রহণ করেছে। (সূরা কাহফ- ১০৬)
উপহাসকারীদের মজলিসে বসতে নেই :
اِذَا سَمِعْتُمْ اٰيَاتِ اللهِ يُكْفَرُ بِهَا وَيُسْتَهْزَأُ بِهَا فَلَا تَقْعُدُوْا مَعَهُمْ حَتّٰى يَخُوْضُوْا فِيْ حَدِيْثٍ غَيْرِهٖۤ اِنَّكُمْ اِذًا مِّثْلُهُمْ
যখন তোমরা আল্লাহর আয়াত প্রত্যাখ্যানের কথা এবং তাকে বিদ্রূপ করা হয় এমন কথা শুনতে পাবে, তখন যতক্ষণ পর্যন্ত তারা অন্য প্রসঙ্গে লিপ্ত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তাদের সঙ্গে বসবে না; অন্যথায় তোমরাও তাদের মতো হয়ে যাবে। (সূরা নিসা- ১৪০)
আল্লাহ কাউকে অনুগ্রহ করলে হিংসা করা ঠিক নয় :
اَمْ يَحْسُدُوْنَ النَّاسَ عَلٰى مَاۤ اٰتَاهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٖ
অথবা আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে মানুষকে যা দিয়েছেন সেজন্য কি তারা তাদের সাথে হিংসা করে? (সূরা নিসা- ৫৪)
অপরের হিংসা থেকে বাঁচার দু‘আ :
قُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ ‐ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ ‐ وَمِنْ شَرِّ غَاسِقٍ اِذَا وَقَبَ ‐ وَمِنْ شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِى الْعُقَدِ ‐ وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ اِذَا حَسَدَ
বলো, আমি উজ্জ্বল প্রভাতের মালিকের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি) তাঁর সৃষ্টি করা প্রতিটি জিনিসের অনিষ্ট থেকে এবং রাতের অন্ধকারে সংঘটিত অনিষ্ট থেকে, (বিশেষ করে) যখন রাত তার অন্ধকার বিছিয়ে দেয়। (আমি আরো আশ্রয় প্রার্থনা করছি) গিরায় ফুঁক দিয়ে যাদুটোনাকারিণীদের অনিষ্ট থেকে এবং হিংসুক ব্যক্তির (সবধরনের হিংসার) অনিষ্ট থেকে, যখন সে হিংসা করে। (সূরা ফালাক )
اَمْ يَحْسُدُوْنَ النَّاسَ عَلٰى مَاۤ اٰتَاهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٖ
অথবা আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে মানুষকে যা দিয়েছেন সেজন্য কি তারা তাদের সাথে হিংসা করে? (সূরা নিসা- ৫৪)
অপরের হিংসা থেকে বাঁচার দু‘আ :
قُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ ‐ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ ‐ وَمِنْ شَرِّ غَاسِقٍ اِذَا وَقَبَ ‐ وَمِنْ شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِى الْعُقَدِ ‐ وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ اِذَا حَسَدَ
বলো, আমি উজ্জ্বল প্রভাতের মালিকের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি) তাঁর সৃষ্টি করা প্রতিটি জিনিসের অনিষ্ট থেকে এবং রাতের অন্ধকারে সংঘটিত অনিষ্ট থেকে, (বিশেষ করে) যখন রাত তার অন্ধকার বিছিয়ে দেয়। (আমি আরো আশ্রয় প্রার্থনা করছি) গিরায় ফুঁক দিয়ে যাদুটোনাকারিণীদের অনিষ্ট থেকে এবং হিংসুক ব্যক্তির (সবধরনের হিংসার) অনিষ্ট থেকে, যখন সে হিংসা করে। (সূরা ফালাক )
শয়তান মানুষের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি করে :
اِنَّمَا يُرِيْدُ الشَّيْطَانُ اَنْ يُّوْقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَآءَ
নিশ্চয় শয়তান তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটাতে চায়। (সূরা মায়েদা- ৯১)
ইয়াহুদি ও মুশরিকরা মুসলিমগণের চরম শত্রু :
لَتَجِدَنَّ اَشَدَّ النَّاسِ عَدَاوَةً لِّلَّذِيْنَ اٰمَنُوا الْيَهُوْدَ وَالَّذِيْنَ اَشْرَكُوْا
অবশ্য তুমি মুমিনদের প্রতি শত্রুতায় মানুষের মধ্যে ইয়াহুদি ও মুশরিকদেরকেই সর্বাধিক উগ্র হিসেবে দেখতে পাবে। (সূরা মায়েদা- ৮২)
মুনাফিকরা ইসলামের শত্রু :
يَحْسَبُوْنَ كُلَّ صَيْحَةٍ عَلَيْهِمْ ؕ هُمُ الْعَدُوُّ فَاحْذَرْهُمْ ؕ قَاتَلَهُمُ اللهُ اَنّٰى يُؤْفَكُوْنَ
(মুনাফিকরা এত ভীত সন্ত্রস্ত থাকে যে, বড় ধরনের) কোন শোরগোল হলেই তারা সেটাকে নিজেদের বিরুদ্ধে মনে করে। এরাই হচ্ছে (তোমাদের আসল) শত্রু, কাজেই তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকো। এদের উপর আল্লাহর গযব নির্ধারিত রয়েছে, তাদেরকে কীভাবে ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে! (সূরা মুনাফিকূন- ৪)
কোন কোন স্ত্রী ও সন্তান মুমিনের জন্য শত্রু হয়ে যায় :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنَّ مِنْ اَزْوَاجِكُمْ وَاَوْلَادِكُمْ عَدُوًّا لَّكُمْ فَاحْذَرُوْهُمْ
হে মুমিনগণ! তোমাদের স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে কেউ কেউ তোমাদের শত্রু, অতএব তোমরা তাদের সম্পর্কে সতর্ক থাকো। (সূরা তাগাবুন- ১৪)
ইসলামের শত্রুদেরকে ভয় দেখাতে হবে :
وَاَعِدُّوْا لَهُمْ مَّا اسْتَطَعْتُمْ مِّنْ قُوَّةٍ وَّمِنْ رِّبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُوْنَ بِهٖ عَدُوَّ اللهِ وَعَدُوَّكُمْ وَاٰخَرِيْنَ مِنْ دُوْنِهِمْ لَا تَعْلَمُوْنَهُمُۚ اَللهُ يَعْلَمُهُمْ
তোমরা তাদের মুকাবিলার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ববাহিনী প্রস্তুত রাখবে। এর দ্বারা তোমরা ভীত-সন্ত্রস্ত করবে আল্লাহর ও তোমাদের শত্রুকে এবং এছাড়াও এমন কিছু শত্রুকে যাদেরকে তোমরা জান না, কিন্তু আল্লাহ তাদেরকে জানেন। (সূরা আনফাল- ৬০)
শত্রুতার কাজে শলাপরামর্শ করা জায়েয নেই :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا تَنَاجَيْتُمْ فَلَا تَتَنَاجَوْا بِالْاِثْمِ وَالْعُدْوَانِ
হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা কানে কানে কথা বলো, তখন পাপকার্য ও শত্রুতার বিষয়ে কানাকানি করো না। (সূরা মুজাদালা- ৯)
শত্রুতার কাজে সহযোগিতা করা জায়েয নেই :
وَتَعَاوَنُوْا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوٰى وَلَا تَعَاوَنُوْا عَلَى الْاِثْمِ وَالْعُدْوَانِ
সৎকর্ম ও তাক্বওয়ার কাজে তোমরা পরস্পর সহযোগিতা করবে এবং পাপ ও সীমালঙ্ঘনমূলক কাজে একে অন্যের সহযোগিতা করবে না। (সূরা মায়েদা- ২)
اِنَّمَا يُرِيْدُ الشَّيْطَانُ اَنْ يُّوْقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَآءَ
নিশ্চয় শয়তান তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটাতে চায়। (সূরা মায়েদা- ৯১)
ইয়াহুদি ও মুশরিকরা মুসলিমগণের চরম শত্রু :
لَتَجِدَنَّ اَشَدَّ النَّاسِ عَدَاوَةً لِّلَّذِيْنَ اٰمَنُوا الْيَهُوْدَ وَالَّذِيْنَ اَشْرَكُوْا
অবশ্য তুমি মুমিনদের প্রতি শত্রুতায় মানুষের মধ্যে ইয়াহুদি ও মুশরিকদেরকেই সর্বাধিক উগ্র হিসেবে দেখতে পাবে। (সূরা মায়েদা- ৮২)
মুনাফিকরা ইসলামের শত্রু :
يَحْسَبُوْنَ كُلَّ صَيْحَةٍ عَلَيْهِمْ ؕ هُمُ الْعَدُوُّ فَاحْذَرْهُمْ ؕ قَاتَلَهُمُ اللهُ اَنّٰى يُؤْفَكُوْنَ
(মুনাফিকরা এত ভীত সন্ত্রস্ত থাকে যে, বড় ধরনের) কোন শোরগোল হলেই তারা সেটাকে নিজেদের বিরুদ্ধে মনে করে। এরাই হচ্ছে (তোমাদের আসল) শত্রু, কাজেই তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকো। এদের উপর আল্লাহর গযব নির্ধারিত রয়েছে, তাদেরকে কীভাবে ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে! (সূরা মুনাফিকূন- ৪)
কোন কোন স্ত্রী ও সন্তান মুমিনের জন্য শত্রু হয়ে যায় :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنَّ مِنْ اَزْوَاجِكُمْ وَاَوْلَادِكُمْ عَدُوًّا لَّكُمْ فَاحْذَرُوْهُمْ
হে মুমিনগণ! তোমাদের স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে কেউ কেউ তোমাদের শত্রু, অতএব তোমরা তাদের সম্পর্কে সতর্ক থাকো। (সূরা তাগাবুন- ১৪)
ইসলামের শত্রুদেরকে ভয় দেখাতে হবে :
وَاَعِدُّوْا لَهُمْ مَّا اسْتَطَعْتُمْ مِّنْ قُوَّةٍ وَّمِنْ رِّبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُوْنَ بِهٖ عَدُوَّ اللهِ وَعَدُوَّكُمْ وَاٰخَرِيْنَ مِنْ دُوْنِهِمْ لَا تَعْلَمُوْنَهُمُۚ اَللهُ يَعْلَمُهُمْ
তোমরা তাদের মুকাবিলার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ববাহিনী প্রস্তুত রাখবে। এর দ্বারা তোমরা ভীত-সন্ত্রস্ত করবে আল্লাহর ও তোমাদের শত্রুকে এবং এছাড়াও এমন কিছু শত্রুকে যাদেরকে তোমরা জান না, কিন্তু আল্লাহ তাদেরকে জানেন। (সূরা আনফাল- ৬০)
শত্রুতার কাজে শলাপরামর্শ করা জায়েয নেই :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا تَنَاجَيْتُمْ فَلَا تَتَنَاجَوْا بِالْاِثْمِ وَالْعُدْوَانِ
হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা কানে কানে কথা বলো, তখন পাপকার্য ও শত্রুতার বিষয়ে কানাকানি করো না। (সূরা মুজাদালা- ৯)
শত্রুতার কাজে সহযোগিতা করা জায়েয নেই :
وَتَعَاوَنُوْا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوٰى وَلَا تَعَاوَنُوْا عَلَى الْاِثْمِ وَالْعُدْوَانِ
সৎকর্ম ও তাক্বওয়ার কাজে তোমরা পরস্পর সহযোগিতা করবে এবং পাপ ও সীমালঙ্ঘনমূলক কাজে একে অন্যের সহযোগিতা করবে না। (সূরা মায়েদা- ২)
এ বিশ্বজগতে আল্লাহর অসংখ্য সৃষ্টি রয়েছে :
وَالْخَيْلَ وَالْبِغَالَ وَالْحَمِيْرَ لِتَرْكَبُوْهَا وَزِيْنَةًؕ وَيَخْلُقُ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ
তিনি তোমাদের আরোহণ ও সৌন্দর্যের জন্য সৃষ্টি করেছেন ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা এবং তিনি এমন অনেক কিছু সৃষ্টি করেন, যা তোমরা অবগত নও। (সূরা নাহল- ৮)
আল্লাহর সব সৃষ্টিই সুন্দর :
اَلَّذِيْۤ اَحْسَنَ كُلَّ شَيْءٍ خَلَقَهٗ وَبَدَاَ خَلْقَ الْاِنْسَانِ مِنْ طِيْنٍ
তিনি তার প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে অতি সুন্দররূপে সৃষ্টি করেছেন এবং মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন কাদামাটি দিয়ে। (সূরা সাজদা- ৭)
তিনি যা চান তা-ই সৃষ্টি করেন :
وَرَبُّكَ يَخْلُقُ مَا يَشَآءُ وَيَخْتَارُ
তোমার প্রতিপালক যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং যাকে ইচ্ছা মনোনীত করেন। (সূরা ক্বাসাস- ৬৮)
আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন :
وَمِنْ كُلِّ شَيْءٍ خَلَقْنَا زَوْجَيْنِ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ
আমি প্রত্যেক বস্তু সৃষ্টি করেছি জোড়ায় জোড়ায়, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করতে পার। (সূরা যারিয়াত- ৪৯)
প্রত্যেক জিনিস পরিমাণ মতো সৃষ্টি করেছেন :
اِنَّا كُلَّ شَيْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ
আমি প্রত্যেক জিনিস সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত পরিমাপে। (সূরা ক্বামার- ৪৯)
وَخَلَقَ كُلَّ شَيْءٍ فَقَدَّرَهٗ تَقْدِيْرًا
তিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেককে পরিমিত করেছেন যথাযথ অনুপাতে। (সূরা ফুরক্বান- ২)
আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে কোন ত্রুটি নেই :
مَا تَرٰى فِيْ خَلْقِ الرَّحْمٰنِ مِنْ تَفَاوُتٍؕ فَارْجِعِ الْبَصَرَ هَلْ تَرٰى مِنْ فُطُوْرٍ
দয়াময় (আল্লাহর) সৃষ্টিতে তুমি কোন খুঁত দেখতে পাবে না; (লক্ষ্য করো) তুমি কি (তাঁর সৃষ্টিজগতে) কোন ত্রুটি দেখতে পাও? (সূরা মুলক- ৩)
আল্লাহ কোনকিছুই অনর্থক সৃষ্টি করেননি :
وَمَا خَلَقْنَا السَّمَآءَ وَالْاَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا لَاعِبِيْنَ
আকাশ ও পৃথিবী এবং উভয়ের মধ্যে যা কিছু আছে তা আমি ক্রীড়াচ্ছলে সৃষ্টি করিনি। (সূরা আম্বিয়া- ১৬)
وَمَا خَلَقْنَا السَّمَآءَ وَالْاَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا بَاطِلًاؕ ذٰلِكَ ظَنُّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاۚ فَوَيْلٌ لِّلَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنَ النَّارِ
আমি আসমান, জমিন এবং উভয়ের মধ্যে অবস্থিত কোনকিছুই অনর্থক সৃষ্টি করিনি। (আমি এগুলো অনর্থক সৃষ্টি করেছি) এটা কাফিরদের ধারণা। সুতরাং কাফিরদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম। (সূরা সোয়াদ- ২৭)
সকল সৃষ্টিই মানুষের কল্যাণে নিবেদিত :
هُوَ الَّذِيْ خَلَقَ لَكُمْ مَّا فِى الْاَرْضِ جَمِيْعًا
তিনি সেই সত্তা, যিনি পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবকিছুই তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন। (সূরা বাক্বারা- ২৯)
وَالْخَيْلَ وَالْبِغَالَ وَالْحَمِيْرَ لِتَرْكَبُوْهَا وَزِيْنَةًؕ وَيَخْلُقُ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ
তিনি তোমাদের আরোহণ ও সৌন্দর্যের জন্য সৃষ্টি করেছেন ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা এবং তিনি এমন অনেক কিছু সৃষ্টি করেন, যা তোমরা অবগত নও। (সূরা নাহল- ৮)
আল্লাহর সব সৃষ্টিই সুন্দর :
اَلَّذِيْۤ اَحْسَنَ كُلَّ شَيْءٍ خَلَقَهٗ وَبَدَاَ خَلْقَ الْاِنْسَانِ مِنْ طِيْنٍ
তিনি তার প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে অতি সুন্দররূপে সৃষ্টি করেছেন এবং মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন কাদামাটি দিয়ে। (সূরা সাজদা- ৭)
তিনি যা চান তা-ই সৃষ্টি করেন :
وَرَبُّكَ يَخْلُقُ مَا يَشَآءُ وَيَخْتَارُ
তোমার প্রতিপালক যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং যাকে ইচ্ছা মনোনীত করেন। (সূরা ক্বাসাস- ৬৮)
আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন :
وَمِنْ كُلِّ شَيْءٍ خَلَقْنَا زَوْجَيْنِ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ
আমি প্রত্যেক বস্তু সৃষ্টি করেছি জোড়ায় জোড়ায়, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করতে পার। (সূরা যারিয়াত- ৪৯)
প্রত্যেক জিনিস পরিমাণ মতো সৃষ্টি করেছেন :
اِنَّا كُلَّ شَيْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ
আমি প্রত্যেক জিনিস সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত পরিমাপে। (সূরা ক্বামার- ৪৯)
وَخَلَقَ كُلَّ شَيْءٍ فَقَدَّرَهٗ تَقْدِيْرًا
তিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেককে পরিমিত করেছেন যথাযথ অনুপাতে। (সূরা ফুরক্বান- ২)
আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে কোন ত্রুটি নেই :
مَا تَرٰى فِيْ خَلْقِ الرَّحْمٰنِ مِنْ تَفَاوُتٍؕ فَارْجِعِ الْبَصَرَ هَلْ تَرٰى مِنْ فُطُوْرٍ
দয়াময় (আল্লাহর) সৃষ্টিতে তুমি কোন খুঁত দেখতে পাবে না; (লক্ষ্য করো) তুমি কি (তাঁর সৃষ্টিজগতে) কোন ত্রুটি দেখতে পাও? (সূরা মুলক- ৩)
আল্লাহ কোনকিছুই অনর্থক সৃষ্টি করেননি :
وَمَا خَلَقْنَا السَّمَآءَ وَالْاَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا لَاعِبِيْنَ
আকাশ ও পৃথিবী এবং উভয়ের মধ্যে যা কিছু আছে তা আমি ক্রীড়াচ্ছলে সৃষ্টি করিনি। (সূরা আম্বিয়া- ১৬)
وَمَا خَلَقْنَا السَّمَآءَ وَالْاَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا بَاطِلًاؕ ذٰلِكَ ظَنُّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاۚ فَوَيْلٌ لِّلَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنَ النَّارِ
আমি আসমান, জমিন এবং উভয়ের মধ্যে অবস্থিত কোনকিছুই অনর্থক সৃষ্টি করিনি। (আমি এগুলো অনর্থক সৃষ্টি করেছি) এটা কাফিরদের ধারণা। সুতরাং কাফিরদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম। (সূরা সোয়াদ- ২৭)
সকল সৃষ্টিই মানুষের কল্যাণে নিবেদিত :
هُوَ الَّذِيْ خَلَقَ لَكُمْ مَّا فِى الْاَرْضِ جَمِيْعًا
তিনি সেই সত্তা, যিনি পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবকিছুই তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন। (সূরা বাক্বারা- ২৯)
আল্লাহ পৃথিবীকে প্রশস্ত করেছেন :
وَهُوَ الَّذِيْ مَدَّ الْاَرْضَ وَجَعَلَ فِيْهَا رَوَاسِيَ وَاَنْهَارًا
তিনিই পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন এবং এতে পর্বত ও নদী স্থাপন করে দিয়েছেন। (সূরা রা‘দ- ৩)
পৃথিবীকে তৈরি করেছেন বিছানাস্বরূপ :
وَالْاَرْضَ فَرَشْنَاهَا فَنِعْمَ الْمَاهِدُوْنَ
আর আমি পৃথিবীকে বিছিয়ে দিয়েছি, সুতরাং আমি কতই না সুন্দর বিস্তারকারী। (সূরা যারিয়াত- ৪৮)
পৃথিবীকে বসবাসের উপযোগী করেছেন :
اَللهُ الَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ الْاَرْضَ قَرَارًا وَّالسَّمَآءَ بِنَآءً
আল্লাহই তোমাদের জন্য পৃথিবীকে করেছেন বাসোপযোগী এবং আকাশকে করেছেন ছাদস্বরূপ। (সূরা মু’মিন- ৬৪)
وَالْاَرْضَ وَضَعَهَا لِلْاَنَامِ
তিনি পৃথিবীকে স্থাপন করেছেন সৃষ্টজীবের জন্য। (সূরা আর রহমান- ১০)
ব্যাখ্যা : পৃথিবী বিচিত্র ধরনের সৃষ্টির আবাসস্থল। বৈজ্ঞানিক সমতা ও সামঞ্জস্যতার মাধ্যমে এ গ্রহটিকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। তার বিস্তারিত বিষয়াবলি সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করলে মানুষ বিস্মিত না হয়ে পারে না। সে অনুভব করতে থাকে, এমন ভারসাম্য একজন জ্ঞানী, সর্বজ্ঞ ও পূর্ণ শক্তিসম্পন্ন সত্তার ব্যবস্থাপনা ছাড়া প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারে না। এ ভূগোলটি মহাশূন্যে ঝুলছে। কারো উপর ভর দিয়ে অবস্থান করছে না। কিন্তু এ সত্ত্বেও এর মধ্যে কোন কম্পন নেই। পৃথিবীর কোথাও মাঝে মধ্যে সীমিত পর্যায়ে ভূমিকম্প হলেও তার যে ভয়াবহ চিত্র আমাদের সামনে আসে তাতে গোটা পৃথিবী যদি কম্পনের শিকার হতো তাহলে এখানে বসবাস করা সম্ভবপর হতো না। এ গ্রহটির একটি দিক নিয়মিতভাবে সূর্যের সামনে আসে আবার পেছনে চলে যায়। এর ফলে দিনরাত্রি সৃষ্টি হয়। যদি এর একটি দিক সবসময় সূর্যের দিকে ফেরানো থাকত এবং অন্য দিকটা সবসময় আড়ালে থাকত তাহলে এখানে কোন প্রাণী বসবাস করতে পারত না। কারণ একদিকের সার্বক্ষণিক শৈত্য ও আলোহীনতা উদ্ভিদ ও প্রাণীর জন্মলাভের উপযোগী হতো না এবং অন্যদিকের প্রচন্ড উত্তাপ তাকে উদ্ভিদ ও প্রাণীহীন করে দিত। এ ভূমন্ডলের ৫০০ মাইল উপর পর্যন্ত বাতাসের একটি স্তর দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। উল্কা পতনের ভয়াবহ প্রভাব থেকে তা পৃথিবীকে রক্ষা করে। অন্যথায় প্রতিদিন কোটি কোটি উলকাপিন্ড সেকেন্ডে ৩০ মাইল বেগে পৃথিবীতে আঘাত হানত। ফলে এখানে যে ধ্বংসলীলা চলত তাতে মানুষ, পশুপাখী, গাছপালা কিছুই জীবিত থাকত না। এ বাতাসই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, সমুদ্র থেকে মেঘ উঠিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করে এবং মানুষ, পশু ও উদ্ভিদের জন্য প্রয়োজনীয় গ্যাসের যোগান দেয়। এ বাতাস না হলে পৃথিবী উপযোগী অবস্থানস্থলে পরিণত হতে পারত না। এ ভূমন্ডলের ভূত্বকের কাছাকাছি বিভিন্ন জায়গায় খনিজ ও বিপুল পরিমাণ পানির ভান্ডার রেখে দেয়া হয়েছে। এ ধরনের ব্যবস্থাপনা ছাড়া এখানে জীবনের কোন সম্ভাবনা ছিল না। আবার এ পানি, বাতাস এবং পৃথিবীতে অন্যান্য যেসব জিনিস পাওয়া যায় সেগুলোকে একত্র করে রাখার জন্য অত্যন্ত উপযোগী মধ্যাকর্ষণশক্তি সৃষ্টি করা হয়েছে। এ মধ্যাকর্ষণশক্তি যদি কম হতো, তাহলে বাতাস ও পানি উভয়কে এখানে আটকে রাখা সম্ভব হতো না এবং তাপমাত্রা এত বেশি বেড়ে যেত যে, এখানে টিকে থাকা কঠিন হয়ে যেত। এ মধ্যাকর্ষণ শক্তি যদি বেশি হতো, তাহলে বাতাস অনেক বেশি ঘন হয়ে যেত, তার চাপ অনেক বেশি হয়ে যেত, ভূপৃষ্ঠের খুব কম এলাকাই বসবাসযোগ্য হতো। আর ভারীত্বের আকর্ষণ অনেক বেশি হলে মানুষ ও পশুর শারীরিক দৈর্ঘ্য-প্রস্থ কম হতো কিন্তু তাদের ওজন এত বেড়ে যেত যে তাদের পক্ষে চলাফেরা করা কঠিন হয়ে যেত। তাছাড়া এ গ্রহটিকে সূর্য থেকে জনবসতির সবচেয়ে উপযোগী একটি বিশেষ দূরত্বে রাখা হয়েছে। যদি এ দূরত্ব বেশি হতো, তাহলে সূর্য থেকে সে কম উত্তাপ লাভ করত এবং শীত অনেক বেশি হতো। আবার যদি দূরত্ব কম হতো তবে অনেক তাপমাত্রা থাকত। তখন পৃথিবী নামের এ গ্রহটি আর মানুষের মতো সৃষ্টির বসবাসের উপযোগী থাকত না। এগুলো হচ্ছে পৃথিবীতে বাসোপযোগী হওয়ার কয়েকটি দিক মাত্র। এগুলোর কারণে ভূপৃষ্ঠ তার বর্তমান মানব প্রজাতির জন্য অবস্থানস্থলে পরিণত হয়েছে। বুদ্ধিমান ব্যক্তিমাত্রই এসব বিষয় সামনে রেখে চিন্তা-ভাবনা করলে এক মুহূর্তের জন্যও এ কথা ভাবতে পারে না যে, কোন পূর্ণ জ্ঞানী স্রষ্টার পরিকল্পনা ছাড়া এসব উপযোগিতা ও ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। আর এ কথাও ধারণা করতে পারে না যে, এ মহাসৃষ্টির পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং একে বাস্তবে রূপদান করার ব্যাপারে কোন দেব-দেবী বা জিন অথবা নবী-ওলী কিংবা ফেরেশতার হাত আছে।
পৃথিবীতে অনেক পথ তৈরি করেছেন :
هُوَ الَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ الْاَرْضَ ذَلُوْلًا فَامْشُوْا فِيْ مَنَاكِبِهَا وَكُلُوْا مِنْ رِّزْقِهٖؕ وَاِلَيْهِ النُّشُوْرُ
তিনিই তো তোমাদের জন্য জমিনকে চলাচলের উপযোগী করেছেন। অতএব তোমরা এর দিগ-দিগন্তে বিচরণ করো এবং তাঁর দেয়া রিযিক হতে আহার করো। মূলত তোমাদের প্রত্যাবর্তন তো তাঁরই দিকে। (সূরা মুলক- ১৫)
وَاللهُ جَعَلَ لَكُمُ الْاَرْضَ بِسَاطًا ‐ لِتَسْلُكُوْا مِنْهَا سُبُلًا فِجَاجًا
আল্লাহ তোমাদের জন্য ভূমিকে করেছেন বিস্তৃত, যাতে তোমরা এর প্রশস্ত পথে চলাফেরা করতে পার। (সূরা নূহ- ১৯, ২০)
পৃথিবীতে নদী-নালা তৈরি করেছেন :
اَ مَّنْ جَعَلَ الْاَرْضَ قَرَارًا وَّجَعَلَ خِلَالَهَاۤ اَنْهَارًا
কে সেই সত্তা, যিনি পৃথিবীকে বসবাসের উপযোগী করেছেন এবং তার মাঝে প্রবাহিত করেছেন নদী-নালা। (সূরা নামল- ৬১)
দুই সাগরের মধ্যে অন্তরাল সৃষ্টি করেছেন:
وَجَعَلَ بَيْنَ الْبَحْرَيْنِ حَاجِزًا --
আর তিনি দুই সাগরের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন অন্তরাল। (সূরা নামল- ৬১)
পৃথিবী জীবিত ও মৃত সবাইকে ধারণ করে :
اَلَمْ نَجْعَلِ الْاَرْضَ كِفَاتًا ‐ اَحْيَآءً وَّ اَمْوَاتًا
আমি কি ভূমিকে ধারণকারী করে বানিয়ে রাখিনি, জীবিত ও মৃতদের জন্য? (সূরা মুরসালাত- ২৫, ২৬)
পৃথিবীর সাতটি স্তর রয়েছে :
اَللهُ الَّذِيْ خَلَقَ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ وَّمِنَ الْاَرْضِ مِثْلَهُنَّ
আল্লাহ সেই সত্তা, যিনি সৃষ্টি করেছেন সাত আকাশ ও তাদের অনুরূপ সংখ্যক জমিন। (সূরা তালাক্ব- ১২)
وَهُوَ الَّذِيْ مَدَّ الْاَرْضَ وَجَعَلَ فِيْهَا رَوَاسِيَ وَاَنْهَارًا
তিনিই পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন এবং এতে পর্বত ও নদী স্থাপন করে দিয়েছেন। (সূরা রা‘দ- ৩)
পৃথিবীকে তৈরি করেছেন বিছানাস্বরূপ :
وَالْاَرْضَ فَرَشْنَاهَا فَنِعْمَ الْمَاهِدُوْنَ
আর আমি পৃথিবীকে বিছিয়ে দিয়েছি, সুতরাং আমি কতই না সুন্দর বিস্তারকারী। (সূরা যারিয়াত- ৪৮)
পৃথিবীকে বসবাসের উপযোগী করেছেন :
اَللهُ الَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ الْاَرْضَ قَرَارًا وَّالسَّمَآءَ بِنَآءً
আল্লাহই তোমাদের জন্য পৃথিবীকে করেছেন বাসোপযোগী এবং আকাশকে করেছেন ছাদস্বরূপ। (সূরা মু’মিন- ৬৪)
وَالْاَرْضَ وَضَعَهَا لِلْاَنَامِ
তিনি পৃথিবীকে স্থাপন করেছেন সৃষ্টজীবের জন্য। (সূরা আর রহমান- ১০)
ব্যাখ্যা : পৃথিবী বিচিত্র ধরনের সৃষ্টির আবাসস্থল। বৈজ্ঞানিক সমতা ও সামঞ্জস্যতার মাধ্যমে এ গ্রহটিকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। তার বিস্তারিত বিষয়াবলি সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করলে মানুষ বিস্মিত না হয়ে পারে না। সে অনুভব করতে থাকে, এমন ভারসাম্য একজন জ্ঞানী, সর্বজ্ঞ ও পূর্ণ শক্তিসম্পন্ন সত্তার ব্যবস্থাপনা ছাড়া প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারে না। এ ভূগোলটি মহাশূন্যে ঝুলছে। কারো উপর ভর দিয়ে অবস্থান করছে না। কিন্তু এ সত্ত্বেও এর মধ্যে কোন কম্পন নেই। পৃথিবীর কোথাও মাঝে মধ্যে সীমিত পর্যায়ে ভূমিকম্প হলেও তার যে ভয়াবহ চিত্র আমাদের সামনে আসে তাতে গোটা পৃথিবী যদি কম্পনের শিকার হতো তাহলে এখানে বসবাস করা সম্ভবপর হতো না। এ গ্রহটির একটি দিক নিয়মিতভাবে সূর্যের সামনে আসে আবার পেছনে চলে যায়। এর ফলে দিনরাত্রি সৃষ্টি হয়। যদি এর একটি দিক সবসময় সূর্যের দিকে ফেরানো থাকত এবং অন্য দিকটা সবসময় আড়ালে থাকত তাহলে এখানে কোন প্রাণী বসবাস করতে পারত না। কারণ একদিকের সার্বক্ষণিক শৈত্য ও আলোহীনতা উদ্ভিদ ও প্রাণীর জন্মলাভের উপযোগী হতো না এবং অন্যদিকের প্রচন্ড উত্তাপ তাকে উদ্ভিদ ও প্রাণীহীন করে দিত। এ ভূমন্ডলের ৫০০ মাইল উপর পর্যন্ত বাতাসের একটি স্তর দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। উল্কা পতনের ভয়াবহ প্রভাব থেকে তা পৃথিবীকে রক্ষা করে। অন্যথায় প্রতিদিন কোটি কোটি উলকাপিন্ড সেকেন্ডে ৩০ মাইল বেগে পৃথিবীতে আঘাত হানত। ফলে এখানে যে ধ্বংসলীলা চলত তাতে মানুষ, পশুপাখী, গাছপালা কিছুই জীবিত থাকত না। এ বাতাসই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, সমুদ্র থেকে মেঘ উঠিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করে এবং মানুষ, পশু ও উদ্ভিদের জন্য প্রয়োজনীয় গ্যাসের যোগান দেয়। এ বাতাস না হলে পৃথিবী উপযোগী অবস্থানস্থলে পরিণত হতে পারত না। এ ভূমন্ডলের ভূত্বকের কাছাকাছি বিভিন্ন জায়গায় খনিজ ও বিপুল পরিমাণ পানির ভান্ডার রেখে দেয়া হয়েছে। এ ধরনের ব্যবস্থাপনা ছাড়া এখানে জীবনের কোন সম্ভাবনা ছিল না। আবার এ পানি, বাতাস এবং পৃথিবীতে অন্যান্য যেসব জিনিস পাওয়া যায় সেগুলোকে একত্র করে রাখার জন্য অত্যন্ত উপযোগী মধ্যাকর্ষণশক্তি সৃষ্টি করা হয়েছে। এ মধ্যাকর্ষণশক্তি যদি কম হতো, তাহলে বাতাস ও পানি উভয়কে এখানে আটকে রাখা সম্ভব হতো না এবং তাপমাত্রা এত বেশি বেড়ে যেত যে, এখানে টিকে থাকা কঠিন হয়ে যেত। এ মধ্যাকর্ষণ শক্তি যদি বেশি হতো, তাহলে বাতাস অনেক বেশি ঘন হয়ে যেত, তার চাপ অনেক বেশি হয়ে যেত, ভূপৃষ্ঠের খুব কম এলাকাই বসবাসযোগ্য হতো। আর ভারীত্বের আকর্ষণ অনেক বেশি হলে মানুষ ও পশুর শারীরিক দৈর্ঘ্য-প্রস্থ কম হতো কিন্তু তাদের ওজন এত বেড়ে যেত যে তাদের পক্ষে চলাফেরা করা কঠিন হয়ে যেত। তাছাড়া এ গ্রহটিকে সূর্য থেকে জনবসতির সবচেয়ে উপযোগী একটি বিশেষ দূরত্বে রাখা হয়েছে। যদি এ দূরত্ব বেশি হতো, তাহলে সূর্য থেকে সে কম উত্তাপ লাভ করত এবং শীত অনেক বেশি হতো। আবার যদি দূরত্ব কম হতো তবে অনেক তাপমাত্রা থাকত। তখন পৃথিবী নামের এ গ্রহটি আর মানুষের মতো সৃষ্টির বসবাসের উপযোগী থাকত না। এগুলো হচ্ছে পৃথিবীতে বাসোপযোগী হওয়ার কয়েকটি দিক মাত্র। এগুলোর কারণে ভূপৃষ্ঠ তার বর্তমান মানব প্রজাতির জন্য অবস্থানস্থলে পরিণত হয়েছে। বুদ্ধিমান ব্যক্তিমাত্রই এসব বিষয় সামনে রেখে চিন্তা-ভাবনা করলে এক মুহূর্তের জন্যও এ কথা ভাবতে পারে না যে, কোন পূর্ণ জ্ঞানী স্রষ্টার পরিকল্পনা ছাড়া এসব উপযোগিতা ও ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। আর এ কথাও ধারণা করতে পারে না যে, এ মহাসৃষ্টির পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং একে বাস্তবে রূপদান করার ব্যাপারে কোন দেব-দেবী বা জিন অথবা নবী-ওলী কিংবা ফেরেশতার হাত আছে।
পৃথিবীতে অনেক পথ তৈরি করেছেন :
هُوَ الَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ الْاَرْضَ ذَلُوْلًا فَامْشُوْا فِيْ مَنَاكِبِهَا وَكُلُوْا مِنْ رِّزْقِهٖؕ وَاِلَيْهِ النُّشُوْرُ
তিনিই তো তোমাদের জন্য জমিনকে চলাচলের উপযোগী করেছেন। অতএব তোমরা এর দিগ-দিগন্তে বিচরণ করো এবং তাঁর দেয়া রিযিক হতে আহার করো। মূলত তোমাদের প্রত্যাবর্তন তো তাঁরই দিকে। (সূরা মুলক- ১৫)
وَاللهُ جَعَلَ لَكُمُ الْاَرْضَ بِسَاطًا ‐ لِتَسْلُكُوْا مِنْهَا سُبُلًا فِجَاجًا
আল্লাহ তোমাদের জন্য ভূমিকে করেছেন বিস্তৃত, যাতে তোমরা এর প্রশস্ত পথে চলাফেরা করতে পার। (সূরা নূহ- ১৯, ২০)
পৃথিবীতে নদী-নালা তৈরি করেছেন :
اَ مَّنْ جَعَلَ الْاَرْضَ قَرَارًا وَّجَعَلَ خِلَالَهَاۤ اَنْهَارًا
কে সেই সত্তা, যিনি পৃথিবীকে বসবাসের উপযোগী করেছেন এবং তার মাঝে প্রবাহিত করেছেন নদী-নালা। (সূরা নামল- ৬১)
দুই সাগরের মধ্যে অন্তরাল সৃষ্টি করেছেন:
وَجَعَلَ بَيْنَ الْبَحْرَيْنِ حَاجِزًا --
আর তিনি দুই সাগরের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন অন্তরাল। (সূরা নামল- ৬১)
পৃথিবী জীবিত ও মৃত সবাইকে ধারণ করে :
اَلَمْ نَجْعَلِ الْاَرْضَ كِفَاتًا ‐ اَحْيَآءً وَّ اَمْوَاتًا
আমি কি ভূমিকে ধারণকারী করে বানিয়ে রাখিনি, জীবিত ও মৃতদের জন্য? (সূরা মুরসালাত- ২৫, ২৬)
পৃথিবীর সাতটি স্তর রয়েছে :
اَللهُ الَّذِيْ خَلَقَ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ وَّمِنَ الْاَرْضِ مِثْلَهُنَّ
আল্লাহ সেই সত্তা, যিনি সৃষ্টি করেছেন সাত আকাশ ও তাদের অনুরূপ সংখ্যক জমিন। (সূরা তালাক্ব- ১২)
আল্লাহ কোন খুঁটি ছাড়াই আকাশ স্থাপন করেছেন :
اَللهُ الَّذِيْ رَفَعَ السَّمَاوَاتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا
আল্লাহ ঐ সত্তা, যিনি কোন সত্মম্ভ ছাড়াই আকাশমন্ডলীকে উপরে স্থাপন করেছেন, যা তোমরা দেখতে পাচ্ছ। (সূরা রা‘দ-২)
আল্লাহ আকাশকে উপরে স্থাপন করেছেন:
وَالسَّمَآءَ رَفَعَهَا وَوَضَعَ الْمِيْزَانَ
আর তিনি আকাশকে সমুন্নত করেছেন এবং এতে ভারসাম্য স্থাপন করেছেন। (সূরা আর রহমান- ৭)
ব্যাখ্যা : এখানে اَلْمِيْزَانُ (আল মীযান) অর্থ সুবিচার ও ইনসাফ। আর মীযান প্রতিষ্ঠা করার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ তা‘আলা বিশ্বজাহানের সর্বত্র ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করেছেন। মহাকাশে অবস্থানরত অসংখ্য তারকা, গ্রহ-উপগ্রহ এবং এ বিশ্বলোকে বিদ্যমান অসংখ্য সৃষ্টির মধ্যে যদি পূর্ণমাত্রায় সুবিচার ও ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতেন, তাহলে এ জগৎ এক মুহূর্তের জন্যও চলতে পারত না।
আল্লাহ আকাশকে বানিয়েছেন ছাদস্বরূপ :
اَلَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ الْاَرْضَ فِرَاشًا وَّالسَّمَآءَ بِنَآءً
যিনি তোমাদের জন্য জমিনকে বিছানা ও আকাশকে করেছেন ছাদস্বরূপ। (সূরা বাক্বারা- ২২)
وَجَعَلْنَا السَّمَآءَ سَقْفًا مَّحْفُوْظًاۚ وَهُمْ عَنْ اٰيَاتِهَا مُعْرِضُوْنَ
আমি আকাশকে করেছি সুরক্ষিত ছাদস্বরূপ, কিন্তু তারা তার নিদর্শনাবলি হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়। (সূরা আম্বিয়া- ৩২)
তিনি আকাশকে সাতটি স্তরে ভাগ করেছেন :
اَلَّذِيْ خَلَقَ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ طِبَاقًا
যিনি সাত আকাশকে স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন। (সূরা মুলক- ৩)
আল্লাহ আকাশকে স্থির রাখেন :
وَيُمْسِكُ السَّمَآءَ اَنْ تَقَعَ عَلَى الْاَرْضِ اِلَّا بِاِذْنِهٖؕ اِنَّ اللهَ بِالنَّاسِ لَرَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ
তিনিই আকাশকে স্থির রাখেন, যাতে তাঁর অনুমতি ব্যতীত পৃথিবীর উপর তা পতিত না হয়। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি খুবই দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। (সূরা হজ্জ- ৬৫)
وَمِنْ اٰيَاتِهٖۤ اَنْ تَقُوْمَ السَّمَآءُ وَالْاَرْضُ بِاَمْرِهٖ
তাঁর দৃষ্টান্তগুলোর মধ্যে একটি হলো, আসমান ও জমিন তাঁরই আদেশে স্থির রয়েছে। (সূরা রূম- ২৫)
প্রত্যেক আকাশেই রয়েছে আল্লাহর আইন :
وَاَوْحٰى فِيْ كُلِّ سَمَآءٍ اَمْرَهَا
তিনি প্রত্যেক আকাশেই আদেশনামা প্রেরণ করেন। (সূরা হা-মীম সাজদা- ১২)
আল্লাহ দুনিয়ার আকাশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছেন :
وَزَيَّنَّا السَّمَآءَ الدُّنْيَا بِمَصَابِيْحَۗ وَحِفْظًاؕ ذٰلِكَ تَقْدِيْرُ الْعَزِيْزِ الْعَلِيْمِ
আমি দুনিয়ার আকাশকে তারকারাজি দ্বারা সুশোভিত করেছি এবং (শয়তান থেকে) সুরক্ষিত করেছি। এটা মহাপরাক্রমশালী ও সর্বজ্ঞ আল্লাহর ব্যবস্থাপনা। (সূরা হা-মীম সাজদা- ১২)
وَلَقَدْ زَيَّنَّا السَّمَآءَ الدُّنْيَا بِمَصَابِيْحَ وَجَعَلْنَاهَا رُجُوْمًا لِّلشَّيَاطِيْنِ وَاَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابَ السَّعِيْرِ
আমি দুনিয়ার আকাশকে সৌন্দর্যমন্ডিত করেছি প্রদীপমালা (তারকারাজি) দ্বারা। অতঃপর একে (তারকাসমূহকে) সংস্থাপন করে রেখেছি শয়তানদেরকে তাড়িয়ে দেয়ার উপকরণ (ক্ষেপনাস্ত্র) হিসেবে। আর তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি জাহান্নামের আযাব। (সূরা মুলক- ৫)
আকাশে অনেক কক্ষপথ তৈরি করেছেন :
تَبَارَكَ الَّذِيْ جَعَلَ فِى السَّمَآءِ بُرُوْجًا وَّجَعَلَ فِيْهَا سِرَاجًا وَّقَمَرًا مُّنِيْرًا
বরকতময় সেই সত্তা, যিনি আকাশে নক্ষত্রপুঞ্জ তৈরি করেছেন এবং তাতে সৃষ্টি করে দিয়েছেন একটি প্রদীপ (সূর্য) ও একটি জ্যোতির্ময় চাঁদ। (সূরা ফুরক্বান- ৬১)
ব্যাখ্যা : সমগ্র আকাশে অসংখ্য বিশালাকার গ্রহ-নক্ষত্রকে নিজ নিজ গতিপথে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। কোন তারের সাহায্যে তাদের পরস্পরকে সংযুক্ত করে রাখা হয়নি এবং কোন পেরেকের সাহায্যেও তাদের একটিকে অন্যটির উপর যাওয়া থেকে ঠেকিয়ে রাখা হয়নি।
আকাশের দিকে তাকালে তাওহীদের প্রমাণ পাওয়া যায় :
اِنَّ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ لَاٰيَاتٍ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে মুমিনদের জন্য রয়েছে অনেক নিদর্শন। (সূরা জাসিয়া- ৩)
اَللهُ الَّذِيْ رَفَعَ السَّمَاوَاتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا
আল্লাহ ঐ সত্তা, যিনি কোন সত্মম্ভ ছাড়াই আকাশমন্ডলীকে উপরে স্থাপন করেছেন, যা তোমরা দেখতে পাচ্ছ। (সূরা রা‘দ-২)
আল্লাহ আকাশকে উপরে স্থাপন করেছেন:
وَالسَّمَآءَ رَفَعَهَا وَوَضَعَ الْمِيْزَانَ
আর তিনি আকাশকে সমুন্নত করেছেন এবং এতে ভারসাম্য স্থাপন করেছেন। (সূরা আর রহমান- ৭)
ব্যাখ্যা : এখানে اَلْمِيْزَانُ (আল মীযান) অর্থ সুবিচার ও ইনসাফ। আর মীযান প্রতিষ্ঠা করার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ তা‘আলা বিশ্বজাহানের সর্বত্র ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করেছেন। মহাকাশে অবস্থানরত অসংখ্য তারকা, গ্রহ-উপগ্রহ এবং এ বিশ্বলোকে বিদ্যমান অসংখ্য সৃষ্টির মধ্যে যদি পূর্ণমাত্রায় সুবিচার ও ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতেন, তাহলে এ জগৎ এক মুহূর্তের জন্যও চলতে পারত না।
আল্লাহ আকাশকে বানিয়েছেন ছাদস্বরূপ :
اَلَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ الْاَرْضَ فِرَاشًا وَّالسَّمَآءَ بِنَآءً
যিনি তোমাদের জন্য জমিনকে বিছানা ও আকাশকে করেছেন ছাদস্বরূপ। (সূরা বাক্বারা- ২২)
وَجَعَلْنَا السَّمَآءَ سَقْفًا مَّحْفُوْظًاۚ وَهُمْ عَنْ اٰيَاتِهَا مُعْرِضُوْنَ
আমি আকাশকে করেছি সুরক্ষিত ছাদস্বরূপ, কিন্তু তারা তার নিদর্শনাবলি হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়। (সূরা আম্বিয়া- ৩২)
তিনি আকাশকে সাতটি স্তরে ভাগ করেছেন :
اَلَّذِيْ خَلَقَ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ طِبَاقًا
যিনি সাত আকাশকে স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন। (সূরা মুলক- ৩)
আল্লাহ আকাশকে স্থির রাখেন :
وَيُمْسِكُ السَّمَآءَ اَنْ تَقَعَ عَلَى الْاَرْضِ اِلَّا بِاِذْنِهٖؕ اِنَّ اللهَ بِالنَّاسِ لَرَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ
তিনিই আকাশকে স্থির রাখেন, যাতে তাঁর অনুমতি ব্যতীত পৃথিবীর উপর তা পতিত না হয়। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি খুবই দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। (সূরা হজ্জ- ৬৫)
وَمِنْ اٰيَاتِهٖۤ اَنْ تَقُوْمَ السَّمَآءُ وَالْاَرْضُ بِاَمْرِهٖ
তাঁর দৃষ্টান্তগুলোর মধ্যে একটি হলো, আসমান ও জমিন তাঁরই আদেশে স্থির রয়েছে। (সূরা রূম- ২৫)
প্রত্যেক আকাশেই রয়েছে আল্লাহর আইন :
وَاَوْحٰى فِيْ كُلِّ سَمَآءٍ اَمْرَهَا
তিনি প্রত্যেক আকাশেই আদেশনামা প্রেরণ করেন। (সূরা হা-মীম সাজদা- ১২)
আল্লাহ দুনিয়ার আকাশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছেন :
وَزَيَّنَّا السَّمَآءَ الدُّنْيَا بِمَصَابِيْحَۗ وَحِفْظًاؕ ذٰلِكَ تَقْدِيْرُ الْعَزِيْزِ الْعَلِيْمِ
আমি দুনিয়ার আকাশকে তারকারাজি দ্বারা সুশোভিত করেছি এবং (শয়তান থেকে) সুরক্ষিত করেছি। এটা মহাপরাক্রমশালী ও সর্বজ্ঞ আল্লাহর ব্যবস্থাপনা। (সূরা হা-মীম সাজদা- ১২)
وَلَقَدْ زَيَّنَّا السَّمَآءَ الدُّنْيَا بِمَصَابِيْحَ وَجَعَلْنَاهَا رُجُوْمًا لِّلشَّيَاطِيْنِ وَاَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابَ السَّعِيْرِ
আমি দুনিয়ার আকাশকে সৌন্দর্যমন্ডিত করেছি প্রদীপমালা (তারকারাজি) দ্বারা। অতঃপর একে (তারকাসমূহকে) সংস্থাপন করে রেখেছি শয়তানদেরকে তাড়িয়ে দেয়ার উপকরণ (ক্ষেপনাস্ত্র) হিসেবে। আর তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি জাহান্নামের আযাব। (সূরা মুলক- ৫)
আকাশে অনেক কক্ষপথ তৈরি করেছেন :
تَبَارَكَ الَّذِيْ جَعَلَ فِى السَّمَآءِ بُرُوْجًا وَّجَعَلَ فِيْهَا سِرَاجًا وَّقَمَرًا مُّنِيْرًا
বরকতময় সেই সত্তা, যিনি আকাশে নক্ষত্রপুঞ্জ তৈরি করেছেন এবং তাতে সৃষ্টি করে দিয়েছেন একটি প্রদীপ (সূর্য) ও একটি জ্যোতির্ময় চাঁদ। (সূরা ফুরক্বান- ৬১)
ব্যাখ্যা : সমগ্র আকাশে অসংখ্য বিশালাকার গ্রহ-নক্ষত্রকে নিজ নিজ গতিপথে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। কোন তারের সাহায্যে তাদের পরস্পরকে সংযুক্ত করে রাখা হয়নি এবং কোন পেরেকের সাহায্যেও তাদের একটিকে অন্যটির উপর যাওয়া থেকে ঠেকিয়ে রাখা হয়নি।
আকাশের দিকে তাকালে তাওহীদের প্রমাণ পাওয়া যায় :
اِنَّ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ لَاٰيَاتٍ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে মুমিনদের জন্য রয়েছে অনেক নিদর্শন। (সূরা জাসিয়া- ৩)
আল্লাহ আসমান ও জমিনকে পৃথক করেছেন :
اَوَلَمْ يَرَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اَنَّ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنَاهُمَاؕ وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَآءِ كُلَّ شَيْءٍ حَيٍّؕ اَفَلَا يُؤْمِنُوْنَ
যারা কুফরী করে তারা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী ওতপ্রোতভাবে মিলিত ছিল। অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিয়েছি এবং প্রত্যেক প্রাণীকে পানি হতে সৃষ্টি করেছি; তবুও কি তারা ঈমান আনবে না? (সূরা আম্বিয়া- ৩০)
আল্লাহ কিয়ামতের দিন আসমান-জমিনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসবেন :
يَوْمَ نَطْوِى السَّمَآءَ كَطَيِّ السِّجِلِّ لِلْكُتُبِؕ كَمَا بَدَاْنَاۤ اَوَّلَ خَلْقٍ نُّعِيْدُهٗ
সেদিন আকাশমন্ডলীকে গুটিয়ে ফেলব যেভাবে গুটানো হয় লিখিত খাতা। যেভাবে আমি প্রথম সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করব। (সূরা আম্বিয়া- ১০৪)
وَالْاَرْضُ جَمِيْعًا قَبْضَتُهٗ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَالسَّماوَاتُ مَطْوِيَّاتٌ ۢبِيَمِيْنِهٖ
কিয়ামতের দিন পৃথিবী থাকবে তাঁর হাতের মুঠোয় এবং আকাশমন্ডলী থাকবে তাঁর ডান হাতে ভাঁজ করা অবস্থায়। (সূরা যুমার- ৬৭)
কিয়ামতের দিন এ আসমান ও জমিন বদলে যাবে :
يَوْمَ تُبَدَّلُ الْاَرْضُ غَيْرَ الْاَرْضِ وَالسَّمَاوَاتُ وَبَرَزُوْا لِلّٰهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ
যেদিন এ পৃথিবী পরিবর্তিত হয়ে অন্য পৃথিবীতে পরিণত হবে এবং আকাশমন্ডলীও। অতঃপর সকল মানুষ আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে, যিনি এক ও মহাপরাক্রমশালী। (সূরা ইবরাহীম- ৪৮)
আসমান-জমিন সৃষ্টিতে আল্লাহর নিদর্শন রয়েছে :
اِنَّ فِيْ خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَاٰيَاتٍ لِّاُولِى الْاَ لْبَابِ
নিশ্চয় আসমান ও জমিন সৃষ্টির মধ্যে এবং দিবস ও রাত্রির পরিবর্তনে জ্ঞানীদের জন্য রয়েছে স্পষ্ট নিদর্শনাবলি। (সূরা আলে ইমরান- ১৯০)
اَوَلَمْ يَرَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اَنَّ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنَاهُمَاؕ وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَآءِ كُلَّ شَيْءٍ حَيٍّؕ اَفَلَا يُؤْمِنُوْنَ
যারা কুফরী করে তারা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী ওতপ্রোতভাবে মিলিত ছিল। অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিয়েছি এবং প্রত্যেক প্রাণীকে পানি হতে সৃষ্টি করেছি; তবুও কি তারা ঈমান আনবে না? (সূরা আম্বিয়া- ৩০)
আল্লাহ কিয়ামতের দিন আসমান-জমিনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসবেন :
يَوْمَ نَطْوِى السَّمَآءَ كَطَيِّ السِّجِلِّ لِلْكُتُبِؕ كَمَا بَدَاْنَاۤ اَوَّلَ خَلْقٍ نُّعِيْدُهٗ
সেদিন আকাশমন্ডলীকে গুটিয়ে ফেলব যেভাবে গুটানো হয় লিখিত খাতা। যেভাবে আমি প্রথম সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করব। (সূরা আম্বিয়া- ১০৪)
وَالْاَرْضُ جَمِيْعًا قَبْضَتُهٗ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَالسَّماوَاتُ مَطْوِيَّاتٌ ۢبِيَمِيْنِهٖ
কিয়ামতের দিন পৃথিবী থাকবে তাঁর হাতের মুঠোয় এবং আকাশমন্ডলী থাকবে তাঁর ডান হাতে ভাঁজ করা অবস্থায়। (সূরা যুমার- ৬৭)
কিয়ামতের দিন এ আসমান ও জমিন বদলে যাবে :
يَوْمَ تُبَدَّلُ الْاَرْضُ غَيْرَ الْاَرْضِ وَالسَّمَاوَاتُ وَبَرَزُوْا لِلّٰهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ
যেদিন এ পৃথিবী পরিবর্তিত হয়ে অন্য পৃথিবীতে পরিণত হবে এবং আকাশমন্ডলীও। অতঃপর সকল মানুষ আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে, যিনি এক ও মহাপরাক্রমশালী। (সূরা ইবরাহীম- ৪৮)
আসমান-জমিন সৃষ্টিতে আল্লাহর নিদর্শন রয়েছে :
اِنَّ فِيْ خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَاٰيَاتٍ لِّاُولِى الْاَ لْبَابِ
নিশ্চয় আসমান ও জমিন সৃষ্টির মধ্যে এবং দিবস ও রাত্রির পরিবর্তনে জ্ঞানীদের জন্য রয়েছে স্পষ্ট নিদর্শনাবলি। (সূরা আলে ইমরান- ১৯০)
আল্লাহ ভূপৃষ্ঠে পাহাড় স্থাপন করেছেন :
وَجَعَلَ فِيْهَا رَوَاسِيَ مِنْ فَوْقِهَا وَبَارَكَ فِيْهَا
তিনি ভূপৃষ্ঠে পর্বতমালা স্থাপন করেছেন এবং তাতে রেখেছেন কল্যাণ। (সূরা হা-মীম সাজদা- ১০)
وَالْجِبَالَ اَرْسَاهَا
আর তিনি পাহাড়সমূহকে দৃঢ়ভাবে স্থাপন করেছেন। (সূরা নাযি‘আত- ৩২)
আল্লাহ পাহাড়কে তৈরি করেছেন পেরেকস্বরূপ:
اَ لَمْ نَجْعَلِ الْاَرْضَ مِهَادًا – وَالْجِبَالَ اَوْتَادًا
আমি কি জমিনকে বিছানাস্বরূপ এবং পাহাড়সমূহকে পেরেকস্বরূপ তৈরি করিনি? (সূরা নাবা- ৬, ৭)
পাহাড়ের কারণে পৃথিবী নড়াচড়া করে না :
وَاَلْقٰى فِى الْاَرْضِ رَوَاسِيَ اَنْ تَمِيْدَ بِكُمْ
আর তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বত স্থাপন করেছেন, যাতে পৃথিবী তোমাদেরকে নিয়ে আন্দোলিত না হয়। (সূরা নাহল- ১৫)
وَاَلْقٰى فِى الْاَرْضِ رَوَاسِيَ اَنْ تَمِيْدَ بِكُمْ وَبَثَّ فِيْهَا مِنْ كُلِّ دَآبَّةٍ
তিনি পৃথিবীতে স্থাপন করেছেন সুউচ্চ পর্বতমালা, যেন পৃথিবী তোমাদেরকে নিয়ে ঢলে না পড়ে। অতঃপর তিনি সেখানে সবধরনের জীবজন্তু ছড়িয়ে দিয়েছেন। (সূরা লুক্বমান- ১০)
ব্যাখ্যা : এ থেকে জানা যায় যে, ভূপৃষ্ঠে পাহাড়সমূহ স্থাপনের উপকারিতা হচ্ছে, এর ফলে পৃথিবীর আবর্তন ও গতি সুষ্ঠ ও সুশৃঙ্খল হয়। এ থেকে আমরা বুঝতে পারি, পাহাড়ের অন্য যেসব উপকারিতা আছে সেগুলো একেবারেই গৌণ। মূলত মহাশূন্যে আবর্তনের সময় পৃথিবীকে আন্দোলিত হওয়া থেকে রক্ষা করাই ভূপৃষ্ঠে পাহাড় স্থাপন করার মূল উদ্দেশ্য।
কিয়ামতের দিন পাহাড়গুলো চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে :
وَتَكُوْنُ الْجِبَالُ كَالْعِهْنِ الْمَنْفُوْشِ
আর পর্বতমালা হবে ধুনিত তোলার মতো। (সূরা ক্বারিয়া- ৫)
পাহাড়ে বিভিন্ন বর্ণের গিরিপথ থাকে :
وَمِنَ الْجِبَالِ جُدَدٌ ۢبِيْضٌ وَّحُمْرٌ مُّخْتَلِفٌ اَلْوَانُهَا وَغَرَابِيْبُ سُوْدٌ
পর্বতমালারও রয়েছে বিভিন্ন বর্ণের গিরিপথ- সাদা, লাল ও ঘন কালো। (সূরা ফাতির- ২৭)
কোনটার উচ্চতা অনেক বেশি :
وَجَعَلْنَا فِيْهَا رَوَاسِيَ شَامِخَاتٍ
আমি তাতে স্থাপন করেছি সুদৃঢ় উচ্চ পর্বতমালা। (সূরা মুরসালাত- ২৭)
আল্লাহ পাহাড়কে আশ্রয়স্থল বানিয়েছেন :
وَجَعَلَ لَكُمْ مِّنَ الْجِبَالِ اَكْنَانًا
আল্লাহ তোমাদের জন্য পাহাড়ে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেন। (সূরা নাহল- ৮১)
সামূদ জাতি পাহাড় কেটে ঘর নির্মাণ করত :
وَكَانُوْا يَنْحِتُوْنَ مِنَ الْجِبَالِ بُيُوْتًا اٰمِنِيْنَ
তারা নিরাপদ আবাসের জন্য পাহাড় কেটে গৃহ নির্মাণ করত। (সূরা হিজর- ৮২)
দাউদ (আঃ) এর সঙ্গে পাহাড়ও তাসবীহ পাঠ করত :
وَلَقَدْ اٰتَيْنَا دَاوُوْدَ مِنَّا فَضْلًا يَّا جِبَالُ اَوِّبِيْ مَعَهٗ وَالطَّيْرَ
আর আমি দাউদকে আমার পক্ষ থেকে অনুগ্রহ দান করেছিলাম। (আর বলেছিলাম) হে পাহাড়! তোমরা দাউদের সাথে আমার পবিত্রতা ঘোষণা করো। অতঃপর আমি পাখীগুলোকেও (এরূপ আদেশ দিয়েছিলাম)।
(সূরা সাবা- ১০)
পাহাড় তাওহীদের নিদর্শন :
وَاِلَى الْجِبَالِ كَيْفَ نُصِبَتْ
আর (তুমি কি) পর্বতমালার দিকে (লক্ষ্য কর না) যে, তা কীভাবে স্থাপন করা হয়েছে? (সূরা গাশিয়া- ১৯)
وَجَعَلَ فِيْهَا رَوَاسِيَ مِنْ فَوْقِهَا وَبَارَكَ فِيْهَا
তিনি ভূপৃষ্ঠে পর্বতমালা স্থাপন করেছেন এবং তাতে রেখেছেন কল্যাণ। (সূরা হা-মীম সাজদা- ১০)
وَالْجِبَالَ اَرْسَاهَا
আর তিনি পাহাড়সমূহকে দৃঢ়ভাবে স্থাপন করেছেন। (সূরা নাযি‘আত- ৩২)
আল্লাহ পাহাড়কে তৈরি করেছেন পেরেকস্বরূপ:
اَ لَمْ نَجْعَلِ الْاَرْضَ مِهَادًا – وَالْجِبَالَ اَوْتَادًا
আমি কি জমিনকে বিছানাস্বরূপ এবং পাহাড়সমূহকে পেরেকস্বরূপ তৈরি করিনি? (সূরা নাবা- ৬, ৭)
পাহাড়ের কারণে পৃথিবী নড়াচড়া করে না :
وَاَلْقٰى فِى الْاَرْضِ رَوَاسِيَ اَنْ تَمِيْدَ بِكُمْ
আর তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বত স্থাপন করেছেন, যাতে পৃথিবী তোমাদেরকে নিয়ে আন্দোলিত না হয়। (সূরা নাহল- ১৫)
وَاَلْقٰى فِى الْاَرْضِ رَوَاسِيَ اَنْ تَمِيْدَ بِكُمْ وَبَثَّ فِيْهَا مِنْ كُلِّ دَآبَّةٍ
তিনি পৃথিবীতে স্থাপন করেছেন সুউচ্চ পর্বতমালা, যেন পৃথিবী তোমাদেরকে নিয়ে ঢলে না পড়ে। অতঃপর তিনি সেখানে সবধরনের জীবজন্তু ছড়িয়ে দিয়েছেন। (সূরা লুক্বমান- ১০)
ব্যাখ্যা : এ থেকে জানা যায় যে, ভূপৃষ্ঠে পাহাড়সমূহ স্থাপনের উপকারিতা হচ্ছে, এর ফলে পৃথিবীর আবর্তন ও গতি সুষ্ঠ ও সুশৃঙ্খল হয়। এ থেকে আমরা বুঝতে পারি, পাহাড়ের অন্য যেসব উপকারিতা আছে সেগুলো একেবারেই গৌণ। মূলত মহাশূন্যে আবর্তনের সময় পৃথিবীকে আন্দোলিত হওয়া থেকে রক্ষা করাই ভূপৃষ্ঠে পাহাড় স্থাপন করার মূল উদ্দেশ্য।
কিয়ামতের দিন পাহাড়গুলো চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে :
وَتَكُوْنُ الْجِبَالُ كَالْعِهْنِ الْمَنْفُوْشِ
আর পর্বতমালা হবে ধুনিত তোলার মতো। (সূরা ক্বারিয়া- ৫)
পাহাড়ে বিভিন্ন বর্ণের গিরিপথ থাকে :
وَمِنَ الْجِبَالِ جُدَدٌ ۢبِيْضٌ وَّحُمْرٌ مُّخْتَلِفٌ اَلْوَانُهَا وَغَرَابِيْبُ سُوْدٌ
পর্বতমালারও রয়েছে বিভিন্ন বর্ণের গিরিপথ- সাদা, লাল ও ঘন কালো। (সূরা ফাতির- ২৭)
কোনটার উচ্চতা অনেক বেশি :
وَجَعَلْنَا فِيْهَا رَوَاسِيَ شَامِخَاتٍ
আমি তাতে স্থাপন করেছি সুদৃঢ় উচ্চ পর্বতমালা। (সূরা মুরসালাত- ২৭)
আল্লাহ পাহাড়কে আশ্রয়স্থল বানিয়েছেন :
وَجَعَلَ لَكُمْ مِّنَ الْجِبَالِ اَكْنَانًا
আল্লাহ তোমাদের জন্য পাহাড়ে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেন। (সূরা নাহল- ৮১)
সামূদ জাতি পাহাড় কেটে ঘর নির্মাণ করত :
وَكَانُوْا يَنْحِتُوْنَ مِنَ الْجِبَالِ بُيُوْتًا اٰمِنِيْنَ
তারা নিরাপদ আবাসের জন্য পাহাড় কেটে গৃহ নির্মাণ করত। (সূরা হিজর- ৮২)
দাউদ (আঃ) এর সঙ্গে পাহাড়ও তাসবীহ পাঠ করত :
وَلَقَدْ اٰتَيْنَا دَاوُوْدَ مِنَّا فَضْلًا يَّا جِبَالُ اَوِّبِيْ مَعَهٗ وَالطَّيْرَ
আর আমি দাউদকে আমার পক্ষ থেকে অনুগ্রহ দান করেছিলাম। (আর বলেছিলাম) হে পাহাড়! তোমরা দাউদের সাথে আমার পবিত্রতা ঘোষণা করো। অতঃপর আমি পাখীগুলোকেও (এরূপ আদেশ দিয়েছিলাম)।
(সূরা সাবা- ১০)
পাহাড় তাওহীদের নিদর্শন :
وَاِلَى الْجِبَالِ كَيْفَ نُصِبَتْ
আর (তুমি কি) পর্বতমালার দিকে (লক্ষ্য কর না) যে, তা কীভাবে স্থাপন করা হয়েছে? (সূরা গাশিয়া- ১৯)
মানুষ চন্দ্র ও সূর্যের সাহায্যে দিন গণনা করে :
وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ حُسْبَانًاؕ ذٰلِكَ تَقْدِيْرُ الْعَزِيْزِ الْعَلِيْمِ
তিনিই গণনার জন্য চন্দ্র ও সূর্য সৃষ্টি করেছেন; এসবই মহাপরাক্রমশালী ও সর্বজ্ঞ (আল্লাহ) কর্তৃক নির্ধারিত। (সূরা আন‘আম- ৯৬)
هُوَ الَّذِيْ جَعَلَ الشَّمْسَ ضِيَآءً وَّالْقَمَرَ نُوْرًا وَّقَدَّرَهٗ مَنَازِلَ لِتَعْلَمُوْا عَدَدَ السِّنِيْنَ وَالْحِسَابَؕ مَا خَلَقَ اللهُ ذٰلِكَ اِلَّا بِالْحَقِّۚ يُفَصِّلُ الْاٰيَاتِ لِقَوْمٍ يَّعْلَمُوْنَ
তিনিই সূর্যকে জ্যোতির্ময় ও চন্দ্রকে আলোকময় করেছেন এবং এর (চন্দ্রের) মন্যিল নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা বৎসর গণনা ও (সময়ের) হিসাব জানতে পার। আল্লাহ এটা নিরর্থক সৃষ্টি করেননি; তিনি এসব নিদর্শন জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য বিশদভাবে বর্ণনা করেন। (সূরা ইউনুস- ৫)
ব্যাখ্যা : এসব বিরাট বিরাট গ্রহ-উপগ্রহ অত্যন্ত শক্তিশালী নিয়ম ও শৃঙ্খলার বাঁধনে আবদ্ধ। মানুষ সময়, দিন, তারিখ ও মওসূমের হিসাব করতে সক্ষম হচ্ছে এ কারণে যে, সূর্যের উদয়াস্ত ও বিভিন্ন রাশি অতিক্রমের যে নিয়ম কানুন নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে, তাতে কখনই কোন পরিবর্তন হয় না। পৃথিবীতে অসংখ্য জীবজন্তু বেঁচে আছে এ কারণে যে, চন্দ্র ও সূর্যকে পৃথিবী থেকে একটি বিশেষ দূরত্বে স্থাপন করা হয়েছে এবং একটি নির্ভুল মাপের মাধ্যমে বিশেষ শৃঙ্খলার সাথে এ দূরত্বের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে। কোন হিসাব-নিকাশ ও মাপ ছাড়াই যদি পৃথিবীতে এদের দূরত্বের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটত, তাহলে এখানে কারো পক্ষেই বেঁচে থাকা সম্ভব হতো না।
চন্দ্রের হ্রাস-বৃদ্ধি হয়ে থাকে :
وَالْقَمَرَ قَدَّرْنَاهُ مَنَازِلَ حَتٰى عَادَ كَالْعُرْجُوْنِ الْقَدِيْمٌ
আমি চন্দ্রের জন্য নির্ধারণ করেছি বিভিন্ন স্তর। এমনকি তা ভ্রমণ শেষে ক্ষীণ হয়ে খেজুরের পুরাতন ডালের মতো হয়ে যায়। (সূরা ইয়াসীন- ৩৬)
চন্দ্র মুসলিমদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময় নির্দেশ করে :
يَسْاَلُوْنَكَ عَنِ الْاَهِلَّةِؕ قُلْ هِيَ مَوَاقِيْتُ لِلنَّاسِ وَالْحَجِّ
তারা তোমাকে নতুন চাঁদসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে। বলো, এগুলো হচ্ছে মানুষের এবং হজ্জের জন্য সময় নির্ধারক। (সূরা বাক্বারা- ১৮৯)
সূর্য নামাযের সময় নির্দেশ করে :
اَقِمِ الصَّلَاةَ لِدُلُوْكِ الشَّمْسِ اِلٰى غَسَقِ اللَّيْلِ وَقُرْاٰنَ الْفَجْرِؕ اِنَّ قُرْاٰنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُوْدًا
সূর্য ঢলে যাওয়ার পর থেকে রাতের ঘন অন্ধকার পর্যমত্ম সালাত কায়েম করবে এবং ফজরের সালাত কায়েম করবে। নিশ্চয় ফজরের কুরআন পাঠ (সালাত ফেরেশতাদের) উপস্থিতির সময়। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৭৮)
সূর্যের কারণেই ছায়া ওঠানামা করে :
اَلَمْ تَرَ اِلٰى رَبِّكَ كَيْفَ مَدَّ الظِّلَّۚ وَلَوْ شَآءَ لَجَعَلَهٗ سَاكِنًاۚ ثُمَّ جَعَلْنَا الشَّمْسَ عَلَيْهِ دَلِيْلًا – ثُمَّ قَبَضْنَاهُ اِلَيْنَا قَبْضًا يَّسِيْرًا
তুমি কি তোমার প্রতিপালকের প্রতি লক্ষ্য কর না- কীভাবে তিনি ছায়া সম্প্রসারিত করেন? তিনি ইচ্ছা করলে একে স্থির রাখতে পারতেন। অতঃপর আমি সূর্যকে এর নির্দেশক করেছি। অতঃপর আমি একে আমার দিকে ধীরে ধীরে গুটিয়ে নিয়ে আসি। (সূরা ফুরক্বান- ৪৫, ৪৬)
আল্লাহ চন্দ্রকে আলোকময় করেছেন :
تَبَارَكَ الَّذِيْ جَعَلَ فِى السَّمَآءِ بُرُوْجًا وَّجَعَلَ فِيْهَا سِرَاجًا وَّقَمَرًا مُّنِيْرًا
তিনি কতই না মহান! যিনি নভোমন্ডলে সৃষ্টি করেছেন কক্ষপথ এবং তাতে স্থাপন করেছেন প্রদীপ (সূর্য) ও আলোকময় চন্দ্র। (সূরা ফুরক্বান- ৬১)
আল্লাহ সূর্যকে করেছেন উজ্জ্বল প্রদীপস্বরূপ :
وَجَعَلَ الْقَمَرَ فِيْهِنَّ نُوْرًا وَّجَعَلَ الشَّمْسَ سِرَاجًا
সেখানে চাঁদকে আলো ও সূর্যকে প্রদীপরূপে স্থাপন করেছেন। (সূরা নূহ- ১৬)
وَجَعَلْنَا سِرَاجًا وَّهَّاجًا
আমি সৃষ্টি করেছি একটি দীপ্তমান প্রদীপ। (সূরা নাবা- ১৩)
ব্যাখ্যা : وَهَّاجٌ (ওয়াহ্হাজ) এর অর্থ হচ্ছে, অতি উত্তপ্ত, অতি উজ্জ্বল। এ ছোট বাক্যটিতে মহান আল্লাহর শক্তি ও ক্ষমতার যে বিরাট নিদর্শনটির দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে- তা হচ্ছে সূর্য। এটা পৃথিবী থেকে ১৩ লক্ষ গুণ বড়। তার তাপমাত্রা ১ কোটি ৪০ লক্ষ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। পৃথিবী থেকে ৯ কোটি ৩০ লক্ষ মাইল দূরে অবস্থান করা সত্ত্বেও তার আলোর শক্তি এত বেশি যে, মানুষ খালি চোখে তার দিকে দৃষ্টি রাখার চেষ্টা করলে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলবে। মহান আল্লাহ তাঁর অসীম জ্ঞান ও ক্ষমতার মাধ্যমে পৃথিবীকে সূর্য থেকে এক ভারসাম্যপূর্ণ দূরত্বে স্থাপন করেছেন। পৃথিবী তার বর্তমান অবস্থানের চেয়ে সূর্যের বেশি কাছাকাছি নয় বলে অস্বাভাবিক গরম নয়। আবার বেশি দূরে নয় বলে অস্বাভাবিক ঠান্ডাও নয়। এ কারণে এখানে মানুষ, পশু-পাখি ও উদ্ভিদের জীবন ধারণ সম্ভবপর হয়েছে। সূর্য থেকে শক্তির অপরিমেয় ভান্ডার উৎসারিত হয়ে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ছে এবং এ শক্তিই পৃথিবীর বুকে আমাদের জীবন ধারণের উৎস। এরই সাহায্যে আমাদের ক্ষেতে ফসল পরিপক্ক হচ্ছে। পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণী আহার লাভ করছে। এরই উত্তাপে সাগরের পানি বাষ্প হয়ে আকাশে উঠে যায়, তারপর বাতাসের সাহায্যে দুনিয়ার বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে বৃষ্টি আকারে অবতরণ করে। এ সূর্যের বুকে সর্বশক্তিমান আল্লাহ এমন বিশাল অগ্নিকুন্ড জ্বালিয়ে রেখেছেন, যা কোটি কোটি বছর থেকে সমগ্র সৌরজগতে অব্যাহতভাবে আলো ও উত্তাপ ছড়াচ্ছে।
চন্দ্র ও সূর্য মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত :
وَسَخَّرَ لَكُمُ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ دَآئِبَيْنِۚ وَسَخَّرَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ
তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন; এগুলো অবিরাম একই নিয়মের অনুগামী। আর তিনি তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন রাত্রি ও দিবসকে। (সূরা ইবরাহীম- ৩৩)
وَسَخَّرَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَؕ وَالنُّجُوْمُ مُسَخَّرَاتٌ ۢبِاَمْرِهٖؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَّعْقِلُوْنَ
তিনিই তোমাদের কল্যাণের জন্য নিয়োজিত করেছেন রজনী, দিবস, সূর্য এবং চন্দ্রকে; আর নক্ষত্ররাজিও অধীন হয়েছে তাঁরই নির্দেশে। নিশ্চয় এতে বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিশ্চিত নিদর্শন। (সূরা নাহল- ১২)
চন্দ্র ও সূর্য নিজ নিজ কক্ষপথে ঘুরছে :
وَهُوَ الَّذِيْ خَلَقَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَؕ كُلٌّ فِيْ فَلَكٍ يَّسْبَحُوْنَ
আর তিনি সেই সত্তা, যিনি সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিবস এবং সূর্য ও চন্দ্র; প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণ করে। (সূরা আম্বিয়া- ৩৩)
এগুলো কিয়ামত পর্যন্ত এভাবেই ঘুরতে থাকবে :
كُلٌّ يَّجْرِيْ لِاَجَلٍ مُّسَمًّى
প্রত্যেকে নির্দিষ্টকাল পর্যমত্ম আবর্তন করবে। (সূরা রা‘দ- ২)
وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَؗ كُلٌّ يَّجْرِيْ لِاَجَلٍ مُّسَمًّى
তিনি নিয়োজিত করেছেন সূর্য ও চন্দ্রকে; প্রত্যেকেই একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চলতে থাকবে। (সূরা ফাতির- ১৩)
উভয়ের চলার পথে কোন ভিন্নতা ঘটে না :
لَا الشَّمْسُ يَنْۢبَغِيْ لَهَاۤ اَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلَا اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِؕ وَكُلٌّ فِيْ فَلَكٍ يَّسْبَحُوْنَ
সূর্যের সাধ্য নেই যে, সে চন্দ্রকে ধরে ফেলবে এবং রাত্রিরও (সাধ্য) নেই যে, সে দিনের পূর্বে আসতে পারবে। প্রত্যেকেই নির্ধারিত কক্ষপথে বিচরণ করে। (সূরা ইয়াসীন- ৪০)
কিছু লোক সূর্যের পূজা করে :
وَجَدْتُّهَا وَقَوْمَهَا يَسْجُدُوْنَ لِلشَّمْسِ مِنْ دُوْنِ اللهِ
(হুদহুদ পাখি বলল) আমি তাকে (বিলকিসকে) ও তার সম্প্রদায়কে আল্লাহকে বাদ দিয়ে সূর্যকে সিজদারত অবস্থায় পেলাম। (সূরা নামল- ২৪)
অথচ সূর্য কোন উপাস্য নয় :
فَلَمَّا رَاَى الشَّمْسَ بَازِغَةً قَالَ هٰذَا رَبِّيْ هٰذَاۤ اَكْبَرُۚ فَلَمَّاۤ اَفَلَتْ قَالَ يَا قَوْمِ اِنِّيْ بَرِيْٓءٌ مِّمَّا تُشْرِكُوْنَ ‐ اِنِّيْ وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِيْ فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ حَنِيْفًا وَّمَاۤ اَنَاْ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
অতঃপর যখন সে (ইবরাহীম আঃ) সূর্যকে দীপ্তিমানরূপে উদয় হতে দেখল তখন বলল, এটা আমার রব; আর এটাই সবচেয়ে বড়। কিন্তু যখন এটাও অস্তমিত হয়ে গেল তখন সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা যাকে (প্রতিপালকের সাথে) শরীক কর আমি তা হতে মুক্ত। আমি একনিষ্ঠভাবে তাঁর দিকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছি, যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন; আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। (সূরা আন‘আম- ৭৮, ৭৯)
আল্লাহ চন্দ্র-সূর্যের পূজা করতে নিষেধ করেছেন :
وَمِنْ اٰيَاتِهِ اللَّيْلُ وَالنَّهَارُ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُؕ لَا تَسْجُدُوْا لِلشَّمْسِ وَلَا لِلْقَمَرِ وَاسْجُدُوْا لِلّٰهِ الَّذِيْ خَلَقَهُنَّ اِنْ كُنْتُمْ اِيَّاهُ تَعْبُدُوْنَ
তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে রাত ও দিন, সূর্য ও চন্দ্র। তোমরা সূর্যকে সিজদা করো না এবং চন্দ্রকেও নয়; বরং সিজদা করো আল্লাহকে, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন; যদি তোমরা তাঁরই ইবাদাত করে থাক। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৩৭)
وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ حُسْبَانًاؕ ذٰلِكَ تَقْدِيْرُ الْعَزِيْزِ الْعَلِيْمِ
তিনিই গণনার জন্য চন্দ্র ও সূর্য সৃষ্টি করেছেন; এসবই মহাপরাক্রমশালী ও সর্বজ্ঞ (আল্লাহ) কর্তৃক নির্ধারিত। (সূরা আন‘আম- ৯৬)
هُوَ الَّذِيْ جَعَلَ الشَّمْسَ ضِيَآءً وَّالْقَمَرَ نُوْرًا وَّقَدَّرَهٗ مَنَازِلَ لِتَعْلَمُوْا عَدَدَ السِّنِيْنَ وَالْحِسَابَؕ مَا خَلَقَ اللهُ ذٰلِكَ اِلَّا بِالْحَقِّۚ يُفَصِّلُ الْاٰيَاتِ لِقَوْمٍ يَّعْلَمُوْنَ
তিনিই সূর্যকে জ্যোতির্ময় ও চন্দ্রকে আলোকময় করেছেন এবং এর (চন্দ্রের) মন্যিল নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা বৎসর গণনা ও (সময়ের) হিসাব জানতে পার। আল্লাহ এটা নিরর্থক সৃষ্টি করেননি; তিনি এসব নিদর্শন জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য বিশদভাবে বর্ণনা করেন। (সূরা ইউনুস- ৫)
ব্যাখ্যা : এসব বিরাট বিরাট গ্রহ-উপগ্রহ অত্যন্ত শক্তিশালী নিয়ম ও শৃঙ্খলার বাঁধনে আবদ্ধ। মানুষ সময়, দিন, তারিখ ও মওসূমের হিসাব করতে সক্ষম হচ্ছে এ কারণে যে, সূর্যের উদয়াস্ত ও বিভিন্ন রাশি অতিক্রমের যে নিয়ম কানুন নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে, তাতে কখনই কোন পরিবর্তন হয় না। পৃথিবীতে অসংখ্য জীবজন্তু বেঁচে আছে এ কারণে যে, চন্দ্র ও সূর্যকে পৃথিবী থেকে একটি বিশেষ দূরত্বে স্থাপন করা হয়েছে এবং একটি নির্ভুল মাপের মাধ্যমে বিশেষ শৃঙ্খলার সাথে এ দূরত্বের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে। কোন হিসাব-নিকাশ ও মাপ ছাড়াই যদি পৃথিবীতে এদের দূরত্বের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটত, তাহলে এখানে কারো পক্ষেই বেঁচে থাকা সম্ভব হতো না।
চন্দ্রের হ্রাস-বৃদ্ধি হয়ে থাকে :
وَالْقَمَرَ قَدَّرْنَاهُ مَنَازِلَ حَتٰى عَادَ كَالْعُرْجُوْنِ الْقَدِيْمٌ
আমি চন্দ্রের জন্য নির্ধারণ করেছি বিভিন্ন স্তর। এমনকি তা ভ্রমণ শেষে ক্ষীণ হয়ে খেজুরের পুরাতন ডালের মতো হয়ে যায়। (সূরা ইয়াসীন- ৩৬)
চন্দ্র মুসলিমদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময় নির্দেশ করে :
يَسْاَلُوْنَكَ عَنِ الْاَهِلَّةِؕ قُلْ هِيَ مَوَاقِيْتُ لِلنَّاسِ وَالْحَجِّ
তারা তোমাকে নতুন চাঁদসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে। বলো, এগুলো হচ্ছে মানুষের এবং হজ্জের জন্য সময় নির্ধারক। (সূরা বাক্বারা- ১৮৯)
সূর্য নামাযের সময় নির্দেশ করে :
اَقِمِ الصَّلَاةَ لِدُلُوْكِ الشَّمْسِ اِلٰى غَسَقِ اللَّيْلِ وَقُرْاٰنَ الْفَجْرِؕ اِنَّ قُرْاٰنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُوْدًا
সূর্য ঢলে যাওয়ার পর থেকে রাতের ঘন অন্ধকার পর্যমত্ম সালাত কায়েম করবে এবং ফজরের সালাত কায়েম করবে। নিশ্চয় ফজরের কুরআন পাঠ (সালাত ফেরেশতাদের) উপস্থিতির সময়। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৭৮)
সূর্যের কারণেই ছায়া ওঠানামা করে :
اَلَمْ تَرَ اِلٰى رَبِّكَ كَيْفَ مَدَّ الظِّلَّۚ وَلَوْ شَآءَ لَجَعَلَهٗ سَاكِنًاۚ ثُمَّ جَعَلْنَا الشَّمْسَ عَلَيْهِ دَلِيْلًا – ثُمَّ قَبَضْنَاهُ اِلَيْنَا قَبْضًا يَّسِيْرًا
তুমি কি তোমার প্রতিপালকের প্রতি লক্ষ্য কর না- কীভাবে তিনি ছায়া সম্প্রসারিত করেন? তিনি ইচ্ছা করলে একে স্থির রাখতে পারতেন। অতঃপর আমি সূর্যকে এর নির্দেশক করেছি। অতঃপর আমি একে আমার দিকে ধীরে ধীরে গুটিয়ে নিয়ে আসি। (সূরা ফুরক্বান- ৪৫, ৪৬)
আল্লাহ চন্দ্রকে আলোকময় করেছেন :
تَبَارَكَ الَّذِيْ جَعَلَ فِى السَّمَآءِ بُرُوْجًا وَّجَعَلَ فِيْهَا سِرَاجًا وَّقَمَرًا مُّنِيْرًا
তিনি কতই না মহান! যিনি নভোমন্ডলে সৃষ্টি করেছেন কক্ষপথ এবং তাতে স্থাপন করেছেন প্রদীপ (সূর্য) ও আলোকময় চন্দ্র। (সূরা ফুরক্বান- ৬১)
আল্লাহ সূর্যকে করেছেন উজ্জ্বল প্রদীপস্বরূপ :
وَجَعَلَ الْقَمَرَ فِيْهِنَّ نُوْرًا وَّجَعَلَ الشَّمْسَ سِرَاجًا
সেখানে চাঁদকে আলো ও সূর্যকে প্রদীপরূপে স্থাপন করেছেন। (সূরা নূহ- ১৬)
وَجَعَلْنَا سِرَاجًا وَّهَّاجًا
আমি সৃষ্টি করেছি একটি দীপ্তমান প্রদীপ। (সূরা নাবা- ১৩)
ব্যাখ্যা : وَهَّاجٌ (ওয়াহ্হাজ) এর অর্থ হচ্ছে, অতি উত্তপ্ত, অতি উজ্জ্বল। এ ছোট বাক্যটিতে মহান আল্লাহর শক্তি ও ক্ষমতার যে বিরাট নিদর্শনটির দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে- তা হচ্ছে সূর্য। এটা পৃথিবী থেকে ১৩ লক্ষ গুণ বড়। তার তাপমাত্রা ১ কোটি ৪০ লক্ষ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। পৃথিবী থেকে ৯ কোটি ৩০ লক্ষ মাইল দূরে অবস্থান করা সত্ত্বেও তার আলোর শক্তি এত বেশি যে, মানুষ খালি চোখে তার দিকে দৃষ্টি রাখার চেষ্টা করলে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলবে। মহান আল্লাহ তাঁর অসীম জ্ঞান ও ক্ষমতার মাধ্যমে পৃথিবীকে সূর্য থেকে এক ভারসাম্যপূর্ণ দূরত্বে স্থাপন করেছেন। পৃথিবী তার বর্তমান অবস্থানের চেয়ে সূর্যের বেশি কাছাকাছি নয় বলে অস্বাভাবিক গরম নয়। আবার বেশি দূরে নয় বলে অস্বাভাবিক ঠান্ডাও নয়। এ কারণে এখানে মানুষ, পশু-পাখি ও উদ্ভিদের জীবন ধারণ সম্ভবপর হয়েছে। সূর্য থেকে শক্তির অপরিমেয় ভান্ডার উৎসারিত হয়ে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ছে এবং এ শক্তিই পৃথিবীর বুকে আমাদের জীবন ধারণের উৎস। এরই সাহায্যে আমাদের ক্ষেতে ফসল পরিপক্ক হচ্ছে। পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণী আহার লাভ করছে। এরই উত্তাপে সাগরের পানি বাষ্প হয়ে আকাশে উঠে যায়, তারপর বাতাসের সাহায্যে দুনিয়ার বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে বৃষ্টি আকারে অবতরণ করে। এ সূর্যের বুকে সর্বশক্তিমান আল্লাহ এমন বিশাল অগ্নিকুন্ড জ্বালিয়ে রেখেছেন, যা কোটি কোটি বছর থেকে সমগ্র সৌরজগতে অব্যাহতভাবে আলো ও উত্তাপ ছড়াচ্ছে।
চন্দ্র ও সূর্য মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত :
وَسَخَّرَ لَكُمُ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ دَآئِبَيْنِۚ وَسَخَّرَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ
তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন; এগুলো অবিরাম একই নিয়মের অনুগামী। আর তিনি তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন রাত্রি ও দিবসকে। (সূরা ইবরাহীম- ৩৩)
وَسَخَّرَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَؕ وَالنُّجُوْمُ مُسَخَّرَاتٌ ۢبِاَمْرِهٖؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَّعْقِلُوْنَ
তিনিই তোমাদের কল্যাণের জন্য নিয়োজিত করেছেন রজনী, দিবস, সূর্য এবং চন্দ্রকে; আর নক্ষত্ররাজিও অধীন হয়েছে তাঁরই নির্দেশে। নিশ্চয় এতে বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিশ্চিত নিদর্শন। (সূরা নাহল- ১২)
চন্দ্র ও সূর্য নিজ নিজ কক্ষপথে ঘুরছে :
وَهُوَ الَّذِيْ خَلَقَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَؕ كُلٌّ فِيْ فَلَكٍ يَّسْبَحُوْنَ
আর তিনি সেই সত্তা, যিনি সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিবস এবং সূর্য ও চন্দ্র; প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণ করে। (সূরা আম্বিয়া- ৩৩)
এগুলো কিয়ামত পর্যন্ত এভাবেই ঘুরতে থাকবে :
كُلٌّ يَّجْرِيْ لِاَجَلٍ مُّسَمًّى
প্রত্যেকে নির্দিষ্টকাল পর্যমত্ম আবর্তন করবে। (সূরা রা‘দ- ২)
وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَؗ كُلٌّ يَّجْرِيْ لِاَجَلٍ مُّسَمًّى
তিনি নিয়োজিত করেছেন সূর্য ও চন্দ্রকে; প্রত্যেকেই একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চলতে থাকবে। (সূরা ফাতির- ১৩)
উভয়ের চলার পথে কোন ভিন্নতা ঘটে না :
لَا الشَّمْسُ يَنْۢبَغِيْ لَهَاۤ اَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلَا اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِؕ وَكُلٌّ فِيْ فَلَكٍ يَّسْبَحُوْنَ
সূর্যের সাধ্য নেই যে, সে চন্দ্রকে ধরে ফেলবে এবং রাত্রিরও (সাধ্য) নেই যে, সে দিনের পূর্বে আসতে পারবে। প্রত্যেকেই নির্ধারিত কক্ষপথে বিচরণ করে। (সূরা ইয়াসীন- ৪০)
কিছু লোক সূর্যের পূজা করে :
وَجَدْتُّهَا وَقَوْمَهَا يَسْجُدُوْنَ لِلشَّمْسِ مِنْ دُوْنِ اللهِ
(হুদহুদ পাখি বলল) আমি তাকে (বিলকিসকে) ও তার সম্প্রদায়কে আল্লাহকে বাদ দিয়ে সূর্যকে সিজদারত অবস্থায় পেলাম। (সূরা নামল- ২৪)
অথচ সূর্য কোন উপাস্য নয় :
فَلَمَّا رَاَى الشَّمْسَ بَازِغَةً قَالَ هٰذَا رَبِّيْ هٰذَاۤ اَكْبَرُۚ فَلَمَّاۤ اَفَلَتْ قَالَ يَا قَوْمِ اِنِّيْ بَرِيْٓءٌ مِّمَّا تُشْرِكُوْنَ ‐ اِنِّيْ وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِيْ فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ حَنِيْفًا وَّمَاۤ اَنَاْ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
অতঃপর যখন সে (ইবরাহীম আঃ) সূর্যকে দীপ্তিমানরূপে উদয় হতে দেখল তখন বলল, এটা আমার রব; আর এটাই সবচেয়ে বড়। কিন্তু যখন এটাও অস্তমিত হয়ে গেল তখন সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা যাকে (প্রতিপালকের সাথে) শরীক কর আমি তা হতে মুক্ত। আমি একনিষ্ঠভাবে তাঁর দিকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছি, যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন; আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। (সূরা আন‘আম- ৭৮, ৭৯)
আল্লাহ চন্দ্র-সূর্যের পূজা করতে নিষেধ করেছেন :
وَمِنْ اٰيَاتِهِ اللَّيْلُ وَالنَّهَارُ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُؕ لَا تَسْجُدُوْا لِلشَّمْسِ وَلَا لِلْقَمَرِ وَاسْجُدُوْا لِلّٰهِ الَّذِيْ خَلَقَهُنَّ اِنْ كُنْتُمْ اِيَّاهُ تَعْبُدُوْنَ
তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে রাত ও দিন, সূর্য ও চন্দ্র। তোমরা সূর্যকে সিজদা করো না এবং চন্দ্রকেও নয়; বরং সিজদা করো আল্লাহকে, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন; যদি তোমরা তাঁরই ইবাদাত করে থাক। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৩৭)
বাতাস মেঘের সুসংবাদ বয়ে আনে :
وَهُوَ الَّذِيْۤ اَرْسَلَ الرِّيَاحَ بُشْرًا ۢبَيْنَ يَدَيْ رَحْمَتِهٖۚ وَاَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَآءِ مَآءً طَهُوْرًا
তিনি সেই সত্তা, যিনি স্বীয় অনুগ্রহে সুসংবাদবাহী বায়ু প্রেরণ করেন এবং আমি আকাশ থেকে বিশুদ্ধ পানি বর্ষণ করি। (সূরা ফুরক্বান- ৪৮)
বাতাস মেঘকে বহন করে শুকনো ভূমিতে নিয়ে যায় :
وَاللهُ الَّذِيْۤ اَرْسَلَ الرِّيَاحَ فَتُثِيْرُ سَحَابًا فَسُقْنَاهُ اِلٰى بَلَدٍ مَّيِّتٍ فَاَحْيَيْنَا بِهِ الْاَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا
আর তিনিই আল্লাহ, যিনি বাতাস প্রেরণ করেন, তারপর তা মেঘমালাকে পরিচালিত করে। অতঃপর আমি তা পরিচালিত করি মৃত ভূখন্ডের দিকে, তারপর আমি তা দিয়ে মৃত জমিনকে পুনরায় জীবিত করি। (সূরা ফাতির- ৯)
وَهُوَ الَّذِيْ يُرْسِلُ الرِّيَاحَ بُشْرًا ۢبَيْنَ يَدَيْ رَحْمَتِهٖؕ حَتّٰۤى اِذَاۤ اَقَلَّتْ سَحَابًا ثِقَالًا سُقْنَاهُ لِبَلَدٍ مَّيِّتٍ فَاَنْزَلْنَا بِهِ الْمَآءَ فَاَخْرَجْنَا بِهٖ مِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِؕ كَذٰلِكَ نُخْرِجُ الْمَوْتٰى لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ
তিনিই স্বীয় অনুগ্রহে বায়ুকে সুসংবাদবাহীরূপে প্রেরণ করেন। যখন তা ঘন মেঘ বহন করে তখন আমি তা মৃত ভূখন্ডের দিকে চালনা করি, পরে তা হতে বৃষ্টি বর্ষণ করি। অতঃপর তা দ্বারা সকল প্রকার ফল উৎপাদন করি। এভাবে আমি মৃতকে জীবিত করি, যেন তোমরা শিক্ষা লাভ করতে পার। (সূরা আ‘রাফ- ৫৭)
বাতাস তাওহীদের সাক্ষ্য দেয় :
وَمِنْ اٰيَاتِهٖۤ اَنْ يُّرْسِلَ الرِّيَاحَ مُبَشِّرَاتٍ وَّلِيُذِيْقَكُمْ مِّنْ رَّحْمَتِهٖ وَلِتَجْرِيَ الْفُلْكُ بِاَمْرِهٖ وَلِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِهٖ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
তাঁর দৃষ্টান্তগুলোর মধ্যে একটি এই যে, তিনি বাতাস পাঠান সুসংবাদ দানকারীরূপে। যেন তোমাদেরকে তাঁর অনুগ্রহের স্বাদ ভোগ করান এবং যেন নৌযানসমূহ তাঁর নির্দেশে চলাচল করে। আর যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ অন্বেষণ করতে পার এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা রূম- ৪৬)
وَهُوَ الَّذِيْۤ اَرْسَلَ الرِّيَاحَ بُشْرًا ۢبَيْنَ يَدَيْ رَحْمَتِهٖۚ وَاَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَآءِ مَآءً طَهُوْرًا
তিনি সেই সত্তা, যিনি স্বীয় অনুগ্রহে সুসংবাদবাহী বায়ু প্রেরণ করেন এবং আমি আকাশ থেকে বিশুদ্ধ পানি বর্ষণ করি। (সূরা ফুরক্বান- ৪৮)
বাতাস মেঘকে বহন করে শুকনো ভূমিতে নিয়ে যায় :
وَاللهُ الَّذِيْۤ اَرْسَلَ الرِّيَاحَ فَتُثِيْرُ سَحَابًا فَسُقْنَاهُ اِلٰى بَلَدٍ مَّيِّتٍ فَاَحْيَيْنَا بِهِ الْاَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا
আর তিনিই আল্লাহ, যিনি বাতাস প্রেরণ করেন, তারপর তা মেঘমালাকে পরিচালিত করে। অতঃপর আমি তা পরিচালিত করি মৃত ভূখন্ডের দিকে, তারপর আমি তা দিয়ে মৃত জমিনকে পুনরায় জীবিত করি। (সূরা ফাতির- ৯)
وَهُوَ الَّذِيْ يُرْسِلُ الرِّيَاحَ بُشْرًا ۢبَيْنَ يَدَيْ رَحْمَتِهٖؕ حَتّٰۤى اِذَاۤ اَقَلَّتْ سَحَابًا ثِقَالًا سُقْنَاهُ لِبَلَدٍ مَّيِّتٍ فَاَنْزَلْنَا بِهِ الْمَآءَ فَاَخْرَجْنَا بِهٖ مِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِؕ كَذٰلِكَ نُخْرِجُ الْمَوْتٰى لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ
তিনিই স্বীয় অনুগ্রহে বায়ুকে সুসংবাদবাহীরূপে প্রেরণ করেন। যখন তা ঘন মেঘ বহন করে তখন আমি তা মৃত ভূখন্ডের দিকে চালনা করি, পরে তা হতে বৃষ্টি বর্ষণ করি। অতঃপর তা দ্বারা সকল প্রকার ফল উৎপাদন করি। এভাবে আমি মৃতকে জীবিত করি, যেন তোমরা শিক্ষা লাভ করতে পার। (সূরা আ‘রাফ- ৫৭)
বাতাস তাওহীদের সাক্ষ্য দেয় :
وَمِنْ اٰيَاتِهٖۤ اَنْ يُّرْسِلَ الرِّيَاحَ مُبَشِّرَاتٍ وَّلِيُذِيْقَكُمْ مِّنْ رَّحْمَتِهٖ وَلِتَجْرِيَ الْفُلْكُ بِاَمْرِهٖ وَلِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِهٖ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
তাঁর দৃষ্টান্তগুলোর মধ্যে একটি এই যে, তিনি বাতাস পাঠান সুসংবাদ দানকারীরূপে। যেন তোমাদেরকে তাঁর অনুগ্রহের স্বাদ ভোগ করান এবং যেন নৌযানসমূহ তাঁর নির্দেশে চলাচল করে। আর যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ অন্বেষণ করতে পার এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা রূম- ৪৬)
দু’রকম পানি একই সাগরে প্রবাহিত হচ্ছে :
وَمَا يَسْتَوِى الْبَحْرَانِۗ هٰذَا عَذْبٌ فُرَاتٌ سَآئِغٌ شَرَابُهٗ وَهٰذَا مِلْحٌ اُجَاجٌ
আর দু’টি সমুদ্র সমান নয়। একটির পানি সুমিষ্ট ও সুপেয়, যা পিপাসা দূর করে দেয়। আর তা পান করা সহজ। (প্রক্ষামত্মরে) অপরটি লবণাক্ত ও বিস্বাদ। (সূরা ফাতির- ১২)
وَهُوَ الَّذِيْ مَرَجَ الْبَحْرَيْنِ هٰذَا عَذْبٌ فُرَاتٌ وَّهٰذَا مِلْحٌ اُجَاجٌۚ وَجَعَلَ بَيْنَهُمَا بَرْزَخًا وَّحِجْرًا مَّحْجُوْرًا
তিনিই সেই সত্তা, যিনি দু’সমুদ্রকে মিলিতভাবে প্রবাহিত করেছেন। একটি মিষ্ট ও সুপেয় এবং অপরটি লোনা ও খর। আর উভয়ের মধ্যে এক অমত্মরাল সৃষ্টি করে দিয়েছেন, যা অতিক্রমযোগ্য নয়। (সূরা ফুরক্বান- ৫৩)
উভয় সমুদ্রের পানি একত্রে মিশে না :
اَمْ مَّنْ جَعَلَ الْاَرْضَ قَرَارًا وَّجَعَلَ خِلَالَهَاۤ اَنْهَارًا وَّجَعَلَ لَهَا رَوَاسِيَ وَجَعَلَ بَيْنَ الْبَحْرَيْنِ حَاجِزًاؕ اَ اِلٰهٌ مَّعَ اللهِؕ بَلْ اَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ
তিনি কোন সত্তা, যিনি পৃথিবীকে করেছেন বসোপযোগী, তার মাঝে প্রবাহিত করেছেন নদী-নালা এবং তাতে স্থাপন করেছেন সুদৃঢ় পবর্ত ও দু’সমুদ্রের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন অন্তরাল? অতএব আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোন ইলাহ্ আছে কি? তবুও তাদের অনেকেই তা জানে না। (সূরা নামল- ৬১)
مَرَجَ الْبَحْرَيْنِ يَلْتَقِيَانِ – بَيْنَهُمَا بَرْزَخٌ لَّا يَبْغِيَانِ
তিনি দু’সমুদ্রকে প্রবাহিত করেন, যারা পরস্পর মিলিত হয়। এ দু’য়ের মধ্যে রয়েছে এক অন্তরাল, যা ওরা অতিক্রম করতে পারে না। (সূরা আর রহমান- ১৯, ২০)
আল্লাহ সাগর থেকে মাছ ও অলংকার দিয়ে থাকেন :
وَهُوَ الَّذِيْ سَخَّرَ الْبَحْرَ لِتَاْكُلُوْا مِنْهُ لَحْمًا طَرِيًّا وَّتَسْتَخْرِجُوْا مِنْهُ حِلْيَةً تَلْبَسُوْنَهَا
তিনিই সেই সত্তা, যিনি সমুদ্রকে অধীন করে দিয়েছেন, যেন তোমরা তা হতে তাজা গোশত (মাছ) আহার করতে পার এবং যেন তা হতে আহরণ করতে পার রত্নাবলি, যা তোমরা (ভূষণরূপে) পরিধান কর। (সূরা নাহল- ১৪)
يَخْرُجُ مِنْهُمَا اللُّؤْلُؤُ وَالْمَرْجَانُ ‐ - فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ
উভয় সমুদ্র হতে উৎপন্ন হয় মুক্তা ও প্রবাল। সুতরাং (বলো) তোমরা উভয়ে (মানুষ ও জিন জাতি) তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামতকে অস্বীকার করবে? (সূরা আর রহমান- ২২, ২৩)
জাহাজ চলাচলের জন্য সাগরকে অনুকূল করে দিয়েছেন :
وَسَخَّرَ لَكُمُ الْفُلْكَ لِتَجْرِيَ فِى الْبَحْرِ بِاَمْرِهٖۚ وَسَخَّرَ لَكُمُ الْاَنْهَارَ
তিনি নৌযানকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, যাতে তাঁর ইচ্ছানুযায়ী তা সমুদ্রে চলাচল করতে পারে এবং তিনিই নদীসমূহকে তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করে দিয়েছেন। (সূরা ইবরাহীম- ৩২)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ এসব সমুদ্রগামী জাহাজ তাঁরই অসীম ক্ষমতায় সৃষ্টি হয়েছে। তিনিই মানুষকে সমুদ্র পাড়ি দেয়ার জন্য জাহাজ নির্মাণের যোগ্যতা দান করেছেন। আর তিনিই পানিকে এমন নিয়মের অধীন করে দিয়েছেন, যার কারণে সমুদ্রের বুক চিরে পাহাড়ের ন্যায় বড় বড় জাহাজের চলাচল সম্ভব হয়েছে।
اَللهُ الَّذِيْ سَخَّرَ لَكُمُ الْبَحْرَ لِتَجْرِيَ الْفُلْكُ فِيْهِ بِاَمْرِهٖ وَلِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِهٖ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
তিনিই আল্লাহ, যিনি সমুদ্রকে তোমাদের জন্য নিয়োজিত করেছেন, যাতে তাঁর আদেশে তাতে নৌযানসমূহ চলাচল করতে পারে এবং যেন তোমরা তাঁর অনুগ্রহ অনুসন্ধান করতে পার। আর যাতে তোমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা জাসিয়া- ১২)
নৌযানকে রিযিক তালাশের মাধ্যম বানিয়েছেন :
رَبُّكُمُ الَّذِيْ يُزْجِيْ لَكُمُ الْفُلْكَ فِى الْبَحْرِ لِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِهٖؕ اِنَّهٗ كَانَ بِكُمْ رَحِيْمًا
তিনিই তোমাদের প্রতিপালক যিনি তোমাদের জন্য সমুদ্রে নৌযান পরিচালিত করেন, যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার। নিশ্চয় তিনি তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৬৬)
وَمَا يَسْتَوِى الْبَحْرَانِۗ هٰذَا عَذْبٌ فُرَاتٌ سَآئِغٌ شَرَابُهٗ وَهٰذَا مِلْحٌ اُجَاجٌ
আর দু’টি সমুদ্র সমান নয়। একটির পানি সুমিষ্ট ও সুপেয়, যা পিপাসা দূর করে দেয়। আর তা পান করা সহজ। (প্রক্ষামত্মরে) অপরটি লবণাক্ত ও বিস্বাদ। (সূরা ফাতির- ১২)
وَهُوَ الَّذِيْ مَرَجَ الْبَحْرَيْنِ هٰذَا عَذْبٌ فُرَاتٌ وَّهٰذَا مِلْحٌ اُجَاجٌۚ وَجَعَلَ بَيْنَهُمَا بَرْزَخًا وَّحِجْرًا مَّحْجُوْرًا
তিনিই সেই সত্তা, যিনি দু’সমুদ্রকে মিলিতভাবে প্রবাহিত করেছেন। একটি মিষ্ট ও সুপেয় এবং অপরটি লোনা ও খর। আর উভয়ের মধ্যে এক অমত্মরাল সৃষ্টি করে দিয়েছেন, যা অতিক্রমযোগ্য নয়। (সূরা ফুরক্বান- ৫৩)
উভয় সমুদ্রের পানি একত্রে মিশে না :
اَمْ مَّنْ جَعَلَ الْاَرْضَ قَرَارًا وَّجَعَلَ خِلَالَهَاۤ اَنْهَارًا وَّجَعَلَ لَهَا رَوَاسِيَ وَجَعَلَ بَيْنَ الْبَحْرَيْنِ حَاجِزًاؕ اَ اِلٰهٌ مَّعَ اللهِؕ بَلْ اَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ
তিনি কোন সত্তা, যিনি পৃথিবীকে করেছেন বসোপযোগী, তার মাঝে প্রবাহিত করেছেন নদী-নালা এবং তাতে স্থাপন করেছেন সুদৃঢ় পবর্ত ও দু’সমুদ্রের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন অন্তরাল? অতএব আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোন ইলাহ্ আছে কি? তবুও তাদের অনেকেই তা জানে না। (সূরা নামল- ৬১)
مَرَجَ الْبَحْرَيْنِ يَلْتَقِيَانِ – بَيْنَهُمَا بَرْزَخٌ لَّا يَبْغِيَانِ
তিনি দু’সমুদ্রকে প্রবাহিত করেন, যারা পরস্পর মিলিত হয়। এ দু’য়ের মধ্যে রয়েছে এক অন্তরাল, যা ওরা অতিক্রম করতে পারে না। (সূরা আর রহমান- ১৯, ২০)
আল্লাহ সাগর থেকে মাছ ও অলংকার দিয়ে থাকেন :
وَهُوَ الَّذِيْ سَخَّرَ الْبَحْرَ لِتَاْكُلُوْا مِنْهُ لَحْمًا طَرِيًّا وَّتَسْتَخْرِجُوْا مِنْهُ حِلْيَةً تَلْبَسُوْنَهَا
তিনিই সেই সত্তা, যিনি সমুদ্রকে অধীন করে দিয়েছেন, যেন তোমরা তা হতে তাজা গোশত (মাছ) আহার করতে পার এবং যেন তা হতে আহরণ করতে পার রত্নাবলি, যা তোমরা (ভূষণরূপে) পরিধান কর। (সূরা নাহল- ১৪)
يَخْرُجُ مِنْهُمَا اللُّؤْلُؤُ وَالْمَرْجَانُ ‐ - فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ
উভয় সমুদ্র হতে উৎপন্ন হয় মুক্তা ও প্রবাল। সুতরাং (বলো) তোমরা উভয়ে (মানুষ ও জিন জাতি) তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামতকে অস্বীকার করবে? (সূরা আর রহমান- ২২, ২৩)
জাহাজ চলাচলের জন্য সাগরকে অনুকূল করে দিয়েছেন :
وَسَخَّرَ لَكُمُ الْفُلْكَ لِتَجْرِيَ فِى الْبَحْرِ بِاَمْرِهٖۚ وَسَخَّرَ لَكُمُ الْاَنْهَارَ
তিনি নৌযানকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, যাতে তাঁর ইচ্ছানুযায়ী তা সমুদ্রে চলাচল করতে পারে এবং তিনিই নদীসমূহকে তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করে দিয়েছেন। (সূরা ইবরাহীম- ৩২)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ এসব সমুদ্রগামী জাহাজ তাঁরই অসীম ক্ষমতায় সৃষ্টি হয়েছে। তিনিই মানুষকে সমুদ্র পাড়ি দেয়ার জন্য জাহাজ নির্মাণের যোগ্যতা দান করেছেন। আর তিনিই পানিকে এমন নিয়মের অধীন করে দিয়েছেন, যার কারণে সমুদ্রের বুক চিরে পাহাড়ের ন্যায় বড় বড় জাহাজের চলাচল সম্ভব হয়েছে।
اَللهُ الَّذِيْ سَخَّرَ لَكُمُ الْبَحْرَ لِتَجْرِيَ الْفُلْكُ فِيْهِ بِاَمْرِهٖ وَلِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِهٖ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
তিনিই আল্লাহ, যিনি সমুদ্রকে তোমাদের জন্য নিয়োজিত করেছেন, যাতে তাঁর আদেশে তাতে নৌযানসমূহ চলাচল করতে পারে এবং যেন তোমরা তাঁর অনুগ্রহ অনুসন্ধান করতে পার। আর যাতে তোমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা জাসিয়া- ১২)
নৌযানকে রিযিক তালাশের মাধ্যম বানিয়েছেন :
رَبُّكُمُ الَّذِيْ يُزْجِيْ لَكُمُ الْفُلْكَ فِى الْبَحْرِ لِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِهٖؕ اِنَّهٗ كَانَ بِكُمْ رَحِيْمًا
তিনিই তোমাদের প্রতিপালক যিনি তোমাদের জন্য সমুদ্রে নৌযান পরিচালিত করেন, যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার। নিশ্চয় তিনি তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৬৬)
পৃথিবী সৃষ্টির পূর্বে কেবল পানিই ছিল :
وَهُوَ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ فِيْ سِتَّةِ اَيَّامٍ وَّكَانَ عَرْشُهٗ عَلَى الْمَآءِ
তিনিই আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন, তখন তাঁর আরশ ছিল পানির উপর। (সূরা হুদ- ৭)
মেঘমালা থেকেই পানি অবতীর্ণ হয় :
وَاَنْزَلْنَا مِنَ الْمُعْصِرَاتِ مَآءً ثَجَّاجًا
আমিই পরিপূর্ণ মেঘমালা থেকে প্রচুর পানি বর্ষণ করি। (সূরা নাবা- ১৪)
আল্লাহ বিশুদ্ধ পানি বর্ষণ করেন :
وَهُوَ الَّذِيْۤ اَرْسَلَ الرِّيَاحَ بُشْرًا ۢبَيْنَ يَدَيْ رَحْمَتِهٖ وَاَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَآءِ مَآءً طَهُوْرًا
তিনিই সেই সত্তা, যিনি স্বীয় অনুগ্রহে সুসংবাদবাহীরূপে বায়ু প্রেরণ করেন এবং আমি আকাশ হতে বিশুদ্ধ পানি বর্ষণ করি। (সূরা ফুরক্বান- ৪৮)
মানুষ ও জীব এ পানি পান করে :
لِنُحْيِيَ بِهٖ بَلْدَةً مَّيْتًا وَّنُسْقِيَهٗ مِمَّا خَلَقْنَاۤ اَنْعَامًا وَّاَنَاسِيَّ كَثِيْرًا
আমি পানি দ্বারা মৃত ভূখন্ডকে সঞ্জীবিত করি এবং আমার সৃষ্টির মধ্যে বহু জীবজন্তু ও মানুষকে সেটা পান করাই। (সূরা ফুরক্বান- ৪৯)
وَاَسْقَيْنَاكُمْ مَّآءً فُرَاتًا
আমি তোমাদেরকে সুপেয় পানি পান করিয়েছি। (সূরা মুরসালাত- ২৭)
আল্লাহ পরিমাণ মতো পানি বর্ষণ করেন :
وَالَّذِيْ نَزَّلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً ۢبِقَدَرٍۚ فَاَنْشَرْنَا بِهٖ بَلْدَةً مَّيْتًاۚ كَذٰلِكَ تُخْرَجُوْنَ
যিনি আকাশ হতে পরিমিতভাবে পানি বর্ষণ করেন এবং আমি তার দ্বারা মৃত ভূখন্ডকে জীবিত করি। আর এভাবেই তোমাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে। (সূরা যুখরুফ- ১১)
আল্লাহ নদী-নালায় পানি আটকিয়ে রাখেন :
اَلَمْ تَرَ اَنَّ اللهَ اَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَسَلَكَهٗ يَنَابِيْعَ فِى الْاَرْضِ
তুমি কি লক্ষ্য করনি যে, আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, তারপর তিনিই তা জমিনের ঝর্ণাসমূহের মধ্যে প্রবেশ করান? (সূরা যুমার- ২১)
وَاَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَآءِ مَآءً ۢبِقَدَرٍ فَاَسْكَنَّاهُ فِى الْاَرْضِ
আমিই আকাশ হতে পরিমিতভাবে পানি বর্ষণ করি; অতঃপর তা জমিনে সংরক্ষণ করি। (সূরা মু’মিনূন- ১৮)
আল্লাহ পানি দ্বারা মৃত জমিনকে জীবিত করেন :
وَمِنْ اٰيَاتِهٖۤ اَنَّكَ تَرَى الْاَرْضَ خَاشِعَةً فَاِذَاۤ اَنْزَلْنَا عَلَيْهَا الْمَآءَ اهْتَزَّتْ وَرَبَتْؕ اِنَّ الَّذِيْۤ اَحْيَاهَا لَمُحْيِى الْمَوْتٰىؕ اِنَّهٗ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
তাঁর একটি নিদর্শন এই যে, তুমি ভূমিকে দেখতে পাও শুষ্ক অবস্থায়। অতঃপর যখন আমি তাতে বৃষ্টি বর্ষণ করি, তখন তা আন্দোলিত ও ষ্ফীত হয়ে পড়ে। মূলত যিনি একে (ভূমিকে) জীবিত করেন তিনিই মৃতের জীবন দানকারী। নিশ্চয় তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৩৯)
আল্লাহ পানি দিয়ে উদ্ভিদ সৃষ্টি করেন :
هُوَ الَّذِيْۤ اَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً لَّكُمْ مِّنْهُ شَرَابٌ وَّمِنْهُ شَجَرٌ فِيْهِ تُسِيْمُوْنَ
তিনিই সেই সত্তা, যিনি আকাশ হতে পানি বর্ষণ করেন। তাতে তোমাদের জন্য রয়েছে পানীয় এবং তা হতে জন্মায় উদ্ভিদ, যার মধ্যে তোমরা পশু চরিয়ে থাক। (সূরা নাহল- ১০)
আল্লাহ পানি দ্বারা মানুষের রিযিক উৎপাদন করেন :
اَللهُ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ وَاَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَخْرَجَ بِهٖ مِنَ الثَّمَرَاتِ رِزْقًا لَّكُمْ
তিনিই আল্লাহ, যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, যিনি আকাশ হতে পানি বর্ষণ করে তার দ্বারা তোমাদের জীবিকার জন্য ফলমূল উৎপাদন করেন। (সূরা ইবরাহীম- ৩২)
আল্লাহ পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি দিয়ে বান্দাদেরকে সমৃদ্ধ করেন :
فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوْا رَبَّكُمْؕ اِنَّهٗ كَانَ غَفَّارًا – يُرْسِلِ السَّمَآءَ عَلَيْكُمْ مِّدْرَارًا
অতঃপর আমি তাদেরকে বলেছিলাম, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করো, নিশ্চয় তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য আকাশ হতে প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন। (সূরা নূহ- ১০, ১১)
وَهُوَ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ فِيْ سِتَّةِ اَيَّامٍ وَّكَانَ عَرْشُهٗ عَلَى الْمَآءِ
তিনিই আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন, তখন তাঁর আরশ ছিল পানির উপর। (সূরা হুদ- ৭)
মেঘমালা থেকেই পানি অবতীর্ণ হয় :
وَاَنْزَلْنَا مِنَ الْمُعْصِرَاتِ مَآءً ثَجَّاجًا
আমিই পরিপূর্ণ মেঘমালা থেকে প্রচুর পানি বর্ষণ করি। (সূরা নাবা- ১৪)
আল্লাহ বিশুদ্ধ পানি বর্ষণ করেন :
وَهُوَ الَّذِيْۤ اَرْسَلَ الرِّيَاحَ بُشْرًا ۢبَيْنَ يَدَيْ رَحْمَتِهٖ وَاَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَآءِ مَآءً طَهُوْرًا
তিনিই সেই সত্তা, যিনি স্বীয় অনুগ্রহে সুসংবাদবাহীরূপে বায়ু প্রেরণ করেন এবং আমি আকাশ হতে বিশুদ্ধ পানি বর্ষণ করি। (সূরা ফুরক্বান- ৪৮)
মানুষ ও জীব এ পানি পান করে :
لِنُحْيِيَ بِهٖ بَلْدَةً مَّيْتًا وَّنُسْقِيَهٗ مِمَّا خَلَقْنَاۤ اَنْعَامًا وَّاَنَاسِيَّ كَثِيْرًا
আমি পানি দ্বারা মৃত ভূখন্ডকে সঞ্জীবিত করি এবং আমার সৃষ্টির মধ্যে বহু জীবজন্তু ও মানুষকে সেটা পান করাই। (সূরা ফুরক্বান- ৪৯)
وَاَسْقَيْنَاكُمْ مَّآءً فُرَاتًا
আমি তোমাদেরকে সুপেয় পানি পান করিয়েছি। (সূরা মুরসালাত- ২৭)
আল্লাহ পরিমাণ মতো পানি বর্ষণ করেন :
وَالَّذِيْ نَزَّلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً ۢبِقَدَرٍۚ فَاَنْشَرْنَا بِهٖ بَلْدَةً مَّيْتًاۚ كَذٰلِكَ تُخْرَجُوْنَ
যিনি আকাশ হতে পরিমিতভাবে পানি বর্ষণ করেন এবং আমি তার দ্বারা মৃত ভূখন্ডকে জীবিত করি। আর এভাবেই তোমাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে। (সূরা যুখরুফ- ১১)
আল্লাহ নদী-নালায় পানি আটকিয়ে রাখেন :
اَلَمْ تَرَ اَنَّ اللهَ اَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَسَلَكَهٗ يَنَابِيْعَ فِى الْاَرْضِ
তুমি কি লক্ষ্য করনি যে, আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, তারপর তিনিই তা জমিনের ঝর্ণাসমূহের মধ্যে প্রবেশ করান? (সূরা যুমার- ২১)
وَاَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَآءِ مَآءً ۢبِقَدَرٍ فَاَسْكَنَّاهُ فِى الْاَرْضِ
আমিই আকাশ হতে পরিমিতভাবে পানি বর্ষণ করি; অতঃপর তা জমিনে সংরক্ষণ করি। (সূরা মু’মিনূন- ১৮)
আল্লাহ পানি দ্বারা মৃত জমিনকে জীবিত করেন :
وَمِنْ اٰيَاتِهٖۤ اَنَّكَ تَرَى الْاَرْضَ خَاشِعَةً فَاِذَاۤ اَنْزَلْنَا عَلَيْهَا الْمَآءَ اهْتَزَّتْ وَرَبَتْؕ اِنَّ الَّذِيْۤ اَحْيَاهَا لَمُحْيِى الْمَوْتٰىؕ اِنَّهٗ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
তাঁর একটি নিদর্শন এই যে, তুমি ভূমিকে দেখতে পাও শুষ্ক অবস্থায়। অতঃপর যখন আমি তাতে বৃষ্টি বর্ষণ করি, তখন তা আন্দোলিত ও ষ্ফীত হয়ে পড়ে। মূলত যিনি একে (ভূমিকে) জীবিত করেন তিনিই মৃতের জীবন দানকারী। নিশ্চয় তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৩৯)
আল্লাহ পানি দিয়ে উদ্ভিদ সৃষ্টি করেন :
هُوَ الَّذِيْۤ اَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً لَّكُمْ مِّنْهُ شَرَابٌ وَّمِنْهُ شَجَرٌ فِيْهِ تُسِيْمُوْنَ
তিনিই সেই সত্তা, যিনি আকাশ হতে পানি বর্ষণ করেন। তাতে তোমাদের জন্য রয়েছে পানীয় এবং তা হতে জন্মায় উদ্ভিদ, যার মধ্যে তোমরা পশু চরিয়ে থাক। (সূরা নাহল- ১০)
আল্লাহ পানি দ্বারা মানুষের রিযিক উৎপাদন করেন :
اَللهُ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ وَاَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَخْرَجَ بِهٖ مِنَ الثَّمَرَاتِ رِزْقًا لَّكُمْ
তিনিই আল্লাহ, যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, যিনি আকাশ হতে পানি বর্ষণ করে তার দ্বারা তোমাদের জীবিকার জন্য ফলমূল উৎপাদন করেন। (সূরা ইবরাহীম- ৩২)
আল্লাহ পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি দিয়ে বান্দাদেরকে সমৃদ্ধ করেন :
فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوْا رَبَّكُمْؕ اِنَّهٗ كَانَ غَفَّارًا – يُرْسِلِ السَّمَآءَ عَلَيْكُمْ مِّدْرَارًا
অতঃপর আমি তাদেরকে বলেছিলাম, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করো, নিশ্চয় তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য আকাশ হতে প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন। (সূরা নূহ- ১০, ১১)
আল্লাহ উদ্ভিদ ও ফসলাদী সৃষ্টি করেছেন :
وَهُوَ الَّذِيْۤ اَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءًۚ فَاَخْرَجْنَا بِهٖ نَبَاتَ كُلِّ شَيْءٍ فَاَخْرَجْنَا مِنْهُ خَضِرًا نُّخْرِجُ مِنْهُ حَبًّا مُّتَرَاكِبًاۚ وَمِنَ النَّخْلِ مِنْ طَلْعِهَا قِنْوَانٌ دَانِيَةٌ وَّجَنَّاتٍ مِّنْ اَعْنَابٍ وَّالزَّيْتُوْنَ وَالرُّمَّانَ مُشْتَبِهًا وَّغَيْرَ مُتَشَابِهٍؕ اُنْظُرُوْاۤ اِلٰى ثَمَرِهٖۤ اِذَاۤ اَثْمَرَ وَيَنْعِهٖؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكُمْ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ
তিনিই সেই সত্তা, যিনি আকাশ হতে পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর তা দ্বারা আমি সর্বপ্রকার উদ্ভিদের চারা উৎপন্ন করি। অতঃপর তা হতে সবুজ পাতা বের করি, পরে তা হতে ঘন সন্নিবিষ্ট শস্যদানা উৎপাদন করি এবং খেজুর বৃক্ষের মাথা হতে ঝুলন্ত কাঁদি নির্গত করি; আর আঙ্গুরের বাগান সৃষ্টি করি এবং যায়তুন ও ডালিমও (সৃষ্টি করি)। এরা একে অন্যের সাদৃশ্য এবং বৈসাদৃশ্যও হয়ে থাকে। লক্ষ্য করো তার ফলের প্রতি, যখন তা ফলবান হয় এবং যখন তা পরিপক্ক হয়। নিশ্চয় এতে মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা আন‘আম- ৯৯)
নানা রকম উদ্ভিদ ও বাগান রয়েছে :
فَلْيَنْظُرِ الْاِنْسَانُ اِلٰى طَعَامِهٖ – اَنَّا صَبَبْنَا الْمَآءَ صَبًّا ‐ ثُمَّ شَقَقْنَا الْاَرْضَ شَقًّا ‐ فَاَنْۢبَتْنَا فِيْهَا حَبًّا ‐ وَعِنَبًا وَّقَضْبًا ‐ وَزَيْتُوْنًا وَّنَخْلًا ‐ وَحَدَآئِقَ غُلْبًا ‐ وَفَاكِهَةً وَّاَبًّا – مَتَاعًا لَّكُمْ وَلِاَنْعَامِكُمْ
মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ্য করুক। আমি প্রচুর পানি বর্ষণ করি, অতঃপর আমি ভূমিকে অদ্ভুতভাবে বিদীর্ণ করি। ফলে তাতে উৎপন্ন করি শস্য, আঙ্গুর, শাকসবজি, যায়তুন, খেজুর, বহু নিবিড় ঘন বাগান, ফলফলাদি এবং গবাদি পশুর খাদ্য (ঘাস), তোমাদের ও তোমাদের পশুগুলোর ভোগের সামগ্রী হিসেবে। (সূরা আবাসা, ২৪-৩২)
উঁচু উঁচু খেজুর গাছ :
وَالنَّخْلَ بَاسِقَاتٍ لَّهَا طَلْعٌ نَّضِيْدٌ
(আমি সৃষ্টি করি) উঁচু উঁচু খেজুর বৃক্ষ, যাতে আছে গুচ্ছ গুচ্ছ খেজুর। (সূরা ক্বাফ- ১০)
তেল উৎপাদনকারী উদ্ভিদ :
وَشَجَرَةً تَخْرُجُ مِنْ طُوْرِ سَيْنَآءَ تَنْۢبُتُ بِالدُّهْنِ وَصِبْغٍ لِّلْاٰكِلِيْنَ
(আর আমি সৃষ্টি করি) এক বৃক্ষ, যা জন্মায় সিনাই পর্বতে। এতে উৎপন্ন হয় তেল এবং আহারকারীদের জন্য ব্যঞ্জন (তরকারি)। (সূরা মু’মিনূন- ২০)
খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান :
فَاَنْشَاْنَا لَكُمْ بِهٖ جَنَّاتٍ مِّنْ نَّخِيْلٍ وَّاَعْنَابٍۘ لَكُمْ فِيْهَا فَوَاكِهُ كَثِيْرَةٌ وَّمِنْهَا تَاْكُلُوْنَ
অতঃপর আমি এ দ্বারা তোমাদের জন্য খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান সৃষ্টি করি; এতে তোমাদের জন্য আছে প্রচুর ফল-ফলাদি। আর তা হতে তোমরা আহার করে থাক। (সূরা মু’মিনূন- ১৯)
وَاٰيَةٌ لَّهُمُ الْاَرْضُ الْمَيْتَةُۚ اَحْيَيْنَاهَا وَاَخْرَجْنَا مِنْهَا حَبًّا فَمِنْهُ يَاْكُلُوْنَ – - وَجَعَلْنَا فِيْهَا جَنَّاتٍ مِّنْ نَّخِيْلٍ وَّاَعْنَابٍ وَّفَجَّرْنَا فِيْهَا مِنَ الْعُيُوْنِ – - لِيَاْكُلُوْا مِنْ ثَمَرِهٖ وَمَا عَمِلَتْهُ اَيْدِيْهِمْؕ اَفَلَا يَشْكُرُوْنَ
তাদের জন্য একটি নিদর্শন হচ্ছে মৃত জমিন। আমি তাকে জীবিত করি এবং তা থেকে উৎপন্ন করি শস্য, ফলে তারা তা থেকে আহার করে থাকে। আর আমি তাতে সৃষ্টি করি খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান এবং প্রবাহিত করি র্ঝণাসমূহ। যেন তারা এর ফলমূল থেকে খাদ্য গ্রহণ করতে পারে। এটা তাদের হাতের কাজ নয়। তবুও কি তারা কৃতজ্ঞ হবে না? (সূরা ইয়াসীন, ৩৩-৩৫)
মানুষ ও জীবজন্তুর খাদ্য উদ্ভিদ থেকেই উৎপন্ন হচ্ছে :
اَوَلَمْ يَرَوْا اَنَّا نَسُوْقُ الْمَآءَ اِلَى الْاَرْضِ الْجُرُزِ فَنُخْرِجُ بِهٖ زَرْعًا تَاْكُلُ مِنْهُ اَنْعَامُهُمْ وَاَنْفُسُهُمْ اَفَلَا يُبْصِرُوْنَ
তারা কি লক্ষ্য করে না যে, আমি শুষ্ক ও পতিত জমিতে পানি প্রবাহিত করি, তারপর তার সাহায্যে শস্য উৎপাদন করি; ফলে তারা তা থেকে তাদের চতুষ্পদ জন্তুদেরকে খাওয়ায় এবং তারা নিজেরাও (খায়)? তবুও কি তারা (ভেবে) দেখে না? (সূরা সাজদা- ২৭)
একই পানি দ্বারা সবরকমের বাগানে সেচ দেয়া হচ্ছে :
وَفِى الْاَرْضِ قِطَعٌ مُّتَجَاوِرَاتٌ وَّجَنَّاتٌ مِّنْ اَعْنَابٍ وَّزَرْعٌ وَّنَخِيْلٌ صِنْوَانٌ وَّغَيْرُ صِنْوَانٍ يُّسْقٰى بِمَآءٍ وَّاحِدٍ وَنُفَضِّلُ بَعْضَهَا عَلٰى بَعْضٍ فِى الْاُكُلِؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَّعْقِلُوْنَ
পৃথিবীতে রয়েছে পরস্পর সংলগ্ন ভূখন্ড, এতে আছে আঙ্গুরের বাগান, শস্যক্ষেত্র, একাধিক শীষ বিশিষ্ট অথবা এক শীষ বিশিষ্ট খেজুর বৃক্ষ- এগুলো একই পানিতে সিঞ্চিত হয়। আর আমি ফল হিসেবে তাদের কতককে কতকের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। নিশ্চয় এতে বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা রা‘দ- ৪)
আল্লাহ বিভিন্ন রকম ফল ও বাগান তৈরি করেছেন :
اَلَمْ تَرَ اَنَّ اللهَ اَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَخْرَجْنَا بِهٖ ثَمَرَاتٍ مُّخْتَلِفًا اَ لْوَانُهَا
তুমি কি লক্ষ্য করনি যে, আল্লাহ আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন। তারপর আমি তা দিয়ে নানা বর্ণের ফলমূল উৎপন্ন করি। (সূরা ফাতির- ২৭)
وَهُوَ الَّذِيْۤ اَنْشَاَ جَنَّاتٍ مَّعْرُوْشَاتٍ وَّغَيْرَ مَعْرُوْشَاتٍ وَّالنَّخْلَ وَالزَّرْعَ مُخْتَلِفًا اُكُلُهٗ وَالزَّيْتُوْنَ وَالرُّمَّانَ مُتَشَابِهًا وَّغَيْرَ مُتَشَابِهٍ
তিনি সেই সত্তা, যিনি নানা প্রকার উদ্যান সৃষ্টি করেছেন। (তাতে রয়েছে) লতা-গুল্ম, যা কোন কান্ড ছাড়াই মাচানের উপর তুলে রাখা হয়েছে। আবার কিছু (গাছ) আছে, যা মাচানের উপর তুলে রাখা হয়নি (বরং তা স্বীয় কান্ডের উপর এমনিই দাঁড়িয়ে আছে)। আর (তিনি আরো সৃষ্টি করেছেন) খেজুর বৃক্ষ, বিভিন্ন স্বাদ বিশিষ্ট খাদ্যশস্য, যায়তুন ও ডালিম। এগুলো একটি অন্যটির সাদৃশ্য এবং বৈসাদৃশ্য। (সূরা আন‘আম- ১৪১)
وَهُوَ الَّذِيْۤ اَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءًۚ فَاَخْرَجْنَا بِهٖ نَبَاتَ كُلِّ شَيْءٍ فَاَخْرَجْنَا مِنْهُ خَضِرًا نُّخْرِجُ مِنْهُ حَبًّا مُّتَرَاكِبًاۚ وَمِنَ النَّخْلِ مِنْ طَلْعِهَا قِنْوَانٌ دَانِيَةٌ وَّجَنَّاتٍ مِّنْ اَعْنَابٍ وَّالزَّيْتُوْنَ وَالرُّمَّانَ مُشْتَبِهًا وَّغَيْرَ مُتَشَابِهٍؕ اُنْظُرُوْاۤ اِلٰى ثَمَرِهٖۤ اِذَاۤ اَثْمَرَ وَيَنْعِهٖؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكُمْ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ
তিনিই সেই সত্তা, যিনি আকাশ হতে পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর তা দ্বারা আমি সর্বপ্রকার উদ্ভিদের চারা উৎপন্ন করি। অতঃপর তা হতে সবুজ পাতা বের করি, পরে তা হতে ঘন সন্নিবিষ্ট শস্যদানা উৎপাদন করি এবং খেজুর বৃক্ষের মাথা হতে ঝুলন্ত কাঁদি নির্গত করি; আর আঙ্গুরের বাগান সৃষ্টি করি এবং যায়তুন ও ডালিমও (সৃষ্টি করি)। এরা একে অন্যের সাদৃশ্য এবং বৈসাদৃশ্যও হয়ে থাকে। লক্ষ্য করো তার ফলের প্রতি, যখন তা ফলবান হয় এবং যখন তা পরিপক্ক হয়। নিশ্চয় এতে মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা আন‘আম- ৯৯)
নানা রকম উদ্ভিদ ও বাগান রয়েছে :
فَلْيَنْظُرِ الْاِنْسَانُ اِلٰى طَعَامِهٖ – اَنَّا صَبَبْنَا الْمَآءَ صَبًّا ‐ ثُمَّ شَقَقْنَا الْاَرْضَ شَقًّا ‐ فَاَنْۢبَتْنَا فِيْهَا حَبًّا ‐ وَعِنَبًا وَّقَضْبًا ‐ وَزَيْتُوْنًا وَّنَخْلًا ‐ وَحَدَآئِقَ غُلْبًا ‐ وَفَاكِهَةً وَّاَبًّا – مَتَاعًا لَّكُمْ وَلِاَنْعَامِكُمْ
মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ্য করুক। আমি প্রচুর পানি বর্ষণ করি, অতঃপর আমি ভূমিকে অদ্ভুতভাবে বিদীর্ণ করি। ফলে তাতে উৎপন্ন করি শস্য, আঙ্গুর, শাকসবজি, যায়তুন, খেজুর, বহু নিবিড় ঘন বাগান, ফলফলাদি এবং গবাদি পশুর খাদ্য (ঘাস), তোমাদের ও তোমাদের পশুগুলোর ভোগের সামগ্রী হিসেবে। (সূরা আবাসা, ২৪-৩২)
উঁচু উঁচু খেজুর গাছ :
وَالنَّخْلَ بَاسِقَاتٍ لَّهَا طَلْعٌ نَّضِيْدٌ
(আমি সৃষ্টি করি) উঁচু উঁচু খেজুর বৃক্ষ, যাতে আছে গুচ্ছ গুচ্ছ খেজুর। (সূরা ক্বাফ- ১০)
তেল উৎপাদনকারী উদ্ভিদ :
وَشَجَرَةً تَخْرُجُ مِنْ طُوْرِ سَيْنَآءَ تَنْۢبُتُ بِالدُّهْنِ وَصِبْغٍ لِّلْاٰكِلِيْنَ
(আর আমি সৃষ্টি করি) এক বৃক্ষ, যা জন্মায় সিনাই পর্বতে। এতে উৎপন্ন হয় তেল এবং আহারকারীদের জন্য ব্যঞ্জন (তরকারি)। (সূরা মু’মিনূন- ২০)
খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান :
فَاَنْشَاْنَا لَكُمْ بِهٖ جَنَّاتٍ مِّنْ نَّخِيْلٍ وَّاَعْنَابٍۘ لَكُمْ فِيْهَا فَوَاكِهُ كَثِيْرَةٌ وَّمِنْهَا تَاْكُلُوْنَ
অতঃপর আমি এ দ্বারা তোমাদের জন্য খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান সৃষ্টি করি; এতে তোমাদের জন্য আছে প্রচুর ফল-ফলাদি। আর তা হতে তোমরা আহার করে থাক। (সূরা মু’মিনূন- ১৯)
وَاٰيَةٌ لَّهُمُ الْاَرْضُ الْمَيْتَةُۚ اَحْيَيْنَاهَا وَاَخْرَجْنَا مِنْهَا حَبًّا فَمِنْهُ يَاْكُلُوْنَ – - وَجَعَلْنَا فِيْهَا جَنَّاتٍ مِّنْ نَّخِيْلٍ وَّاَعْنَابٍ وَّفَجَّرْنَا فِيْهَا مِنَ الْعُيُوْنِ – - لِيَاْكُلُوْا مِنْ ثَمَرِهٖ وَمَا عَمِلَتْهُ اَيْدِيْهِمْؕ اَفَلَا يَشْكُرُوْنَ
তাদের জন্য একটি নিদর্শন হচ্ছে মৃত জমিন। আমি তাকে জীবিত করি এবং তা থেকে উৎপন্ন করি শস্য, ফলে তারা তা থেকে আহার করে থাকে। আর আমি তাতে সৃষ্টি করি খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান এবং প্রবাহিত করি র্ঝণাসমূহ। যেন তারা এর ফলমূল থেকে খাদ্য গ্রহণ করতে পারে। এটা তাদের হাতের কাজ নয়। তবুও কি তারা কৃতজ্ঞ হবে না? (সূরা ইয়াসীন, ৩৩-৩৫)
মানুষ ও জীবজন্তুর খাদ্য উদ্ভিদ থেকেই উৎপন্ন হচ্ছে :
اَوَلَمْ يَرَوْا اَنَّا نَسُوْقُ الْمَآءَ اِلَى الْاَرْضِ الْجُرُزِ فَنُخْرِجُ بِهٖ زَرْعًا تَاْكُلُ مِنْهُ اَنْعَامُهُمْ وَاَنْفُسُهُمْ اَفَلَا يُبْصِرُوْنَ
তারা কি লক্ষ্য করে না যে, আমি শুষ্ক ও পতিত জমিতে পানি প্রবাহিত করি, তারপর তার সাহায্যে শস্য উৎপাদন করি; ফলে তারা তা থেকে তাদের চতুষ্পদ জন্তুদেরকে খাওয়ায় এবং তারা নিজেরাও (খায়)? তবুও কি তারা (ভেবে) দেখে না? (সূরা সাজদা- ২৭)
একই পানি দ্বারা সবরকমের বাগানে সেচ দেয়া হচ্ছে :
وَفِى الْاَرْضِ قِطَعٌ مُّتَجَاوِرَاتٌ وَّجَنَّاتٌ مِّنْ اَعْنَابٍ وَّزَرْعٌ وَّنَخِيْلٌ صِنْوَانٌ وَّغَيْرُ صِنْوَانٍ يُّسْقٰى بِمَآءٍ وَّاحِدٍ وَنُفَضِّلُ بَعْضَهَا عَلٰى بَعْضٍ فِى الْاُكُلِؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَّعْقِلُوْنَ
পৃথিবীতে রয়েছে পরস্পর সংলগ্ন ভূখন্ড, এতে আছে আঙ্গুরের বাগান, শস্যক্ষেত্র, একাধিক শীষ বিশিষ্ট অথবা এক শীষ বিশিষ্ট খেজুর বৃক্ষ- এগুলো একই পানিতে সিঞ্চিত হয়। আর আমি ফল হিসেবে তাদের কতককে কতকের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। নিশ্চয় এতে বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা রা‘দ- ৪)
আল্লাহ বিভিন্ন রকম ফল ও বাগান তৈরি করেছেন :
اَلَمْ تَرَ اَنَّ اللهَ اَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَخْرَجْنَا بِهٖ ثَمَرَاتٍ مُّخْتَلِفًا اَ لْوَانُهَا
তুমি কি লক্ষ্য করনি যে, আল্লাহ আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন। তারপর আমি তা দিয়ে নানা বর্ণের ফলমূল উৎপন্ন করি। (সূরা ফাতির- ২৭)
وَهُوَ الَّذِيْۤ اَنْشَاَ جَنَّاتٍ مَّعْرُوْشَاتٍ وَّغَيْرَ مَعْرُوْشَاتٍ وَّالنَّخْلَ وَالزَّرْعَ مُخْتَلِفًا اُكُلُهٗ وَالزَّيْتُوْنَ وَالرُّمَّانَ مُتَشَابِهًا وَّغَيْرَ مُتَشَابِهٍ
তিনি সেই সত্তা, যিনি নানা প্রকার উদ্যান সৃষ্টি করেছেন। (তাতে রয়েছে) লতা-গুল্ম, যা কোন কান্ড ছাড়াই মাচানের উপর তুলে রাখা হয়েছে। আবার কিছু (গাছ) আছে, যা মাচানের উপর তুলে রাখা হয়নি (বরং তা স্বীয় কান্ডের উপর এমনিই দাঁড়িয়ে আছে)। আর (তিনি আরো সৃষ্টি করেছেন) খেজুর বৃক্ষ, বিভিন্ন স্বাদ বিশিষ্ট খাদ্যশস্য, যায়তুন ও ডালিম। এগুলো একটি অন্যটির সাদৃশ্য এবং বৈসাদৃশ্য। (সূরা আন‘আম- ১৪১)
আল্লাহ রাত ও দিনের পরিবর্তন ঘটান :
يُقَلِّبُ اللهُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَعِبْرَةً لِّاُولِى الْاَبْصَارِ
আল্লাহ রাত ও দিনের পরিবর্তন ঘটান, নিশ্চয় এতে অমত্মর্দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য রয়েছে উপদেশ। (সূরা নূর- ৪৪)
يُكَوِّرُ اللَّيْلَ عَلَى النَّهَارِ وَيُكَوِّرُ النَّهَارَ عَلَى اللَّيْلِ
তিনি রাতের মাধ্যমে দিনকে আচ্ছাদিত করেন এবং দিনের মাধ্যমে রাতকে আচ্ছাদিত করেন। (সূরা যুমার- ৫)
দিন ও রাতের আবর্তন তাওহীদের একটি প্রমাণ :
قُلْ اَرَاَيْتُمْ اِنْ جَعَلَ اللهُ عَلَيْكُمُ اللَّيْلَ سَرْمَدًا اِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَنْ اِلٰهٌ غَيْرُ اللهِ يَاْتِيْكُمْ بِضِيَآءٍؕ اَفَلَا تَسْمَعُوْنَ – قُلْ اَرَاَيْتُمْ اِنْ جَعَلَ اللهُ عَلَيْكُمُ النَّهَارَ سَرْمَدًا اِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَنْ اِلٰهٌ غَيْرُ اللهِ يَاْتِيْكُمْ بِلَيْلٍ تَسْكُنُوْنَ فِيْهِؕ اَفَلَا تُبْصِرُوْنَ
(হে নবী! তাদেরকে) বলো, তোমরা কি ভেবে দেখেছ- আল্লাহ যদি রাতকে কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী করে দেন তবে আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন ইলাহ্ আছে কি, যে তোমাদেরকে আলো এনে দিতে পারে? তবুও কি তোমরা কর্ণপাত করবে না? (আরো) বলো, তোমরা কি ভেবে দেখেছ- আল্লাহ যদি দিনকে কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী করে দেন তবে আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন ইলাহ্ আছে কি, যে তোমাদের জন্য রাতের আবির্ভাব ঘটাতে পারবে, যাতে তোমরা বিশ্রাম করতে পার? তবুও কি তোমরা ভেবে দেখবে না? (সূরা ক্বাসাস- ৭১, ৭২)
তিনি রাতকে বিশ্রাম ও দিনকে রোজগারের সময় বানিয়ে দিয়েছেন :
وَجَعَلْنَا اللَّيْلَ لِبَاسًا – وَجَعَلْنَا النَّهَارَ مَعَاشًا
আমি রাতকে করেছি আবরণ (বিশ্রামের সময়) এবং দিনকে বানিয়েছি জীবিকা অর্জনের সময়। (সূরা নাবা- ১০, ১১)
এ সুন্দর ব্যবস্থা আল্লাহর বিশেষ রহমত :
وَمِنْ رَّحْمَتِهٖ جَعَلَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ لِتَسْكُنُوْا فِيْهِ وَلِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِهٖ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
তিনিই নিজ অনুগ্রহে তোমাদের জন্য (সৃষ্টি) করেছেন রাত ও দিন। যাতে তোমরা তাতে বিশ্রাম করতে পার, তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা ক্বাসাস- ৭৩)
اَللهُ الَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ اللَّيْلَ لِتَسْكُنُوْا فِيْهِ وَالنَّهَارَ مُبْصِرًا اِنَّ اللهَ لَذُوْ فَضْلٍ عَلَى النَّاسِ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَشْكُرُوْنَ
আল্লাহই তোমাদের বিশ্রামের জন্য সৃষ্টি করেছেন রাত এবং আলোকোজ্জ্বল করেছেন দিনকে। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি খুবই অনুগ্রহশীল; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। (সূরা মু’মিন- ৬১)
يُقَلِّبُ اللهُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَعِبْرَةً لِّاُولِى الْاَبْصَارِ
আল্লাহ রাত ও দিনের পরিবর্তন ঘটান, নিশ্চয় এতে অমত্মর্দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য রয়েছে উপদেশ। (সূরা নূর- ৪৪)
يُكَوِّرُ اللَّيْلَ عَلَى النَّهَارِ وَيُكَوِّرُ النَّهَارَ عَلَى اللَّيْلِ
তিনি রাতের মাধ্যমে দিনকে আচ্ছাদিত করেন এবং দিনের মাধ্যমে রাতকে আচ্ছাদিত করেন। (সূরা যুমার- ৫)
দিন ও রাতের আবর্তন তাওহীদের একটি প্রমাণ :
قُلْ اَرَاَيْتُمْ اِنْ جَعَلَ اللهُ عَلَيْكُمُ اللَّيْلَ سَرْمَدًا اِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَنْ اِلٰهٌ غَيْرُ اللهِ يَاْتِيْكُمْ بِضِيَآءٍؕ اَفَلَا تَسْمَعُوْنَ – قُلْ اَرَاَيْتُمْ اِنْ جَعَلَ اللهُ عَلَيْكُمُ النَّهَارَ سَرْمَدًا اِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَنْ اِلٰهٌ غَيْرُ اللهِ يَاْتِيْكُمْ بِلَيْلٍ تَسْكُنُوْنَ فِيْهِؕ اَفَلَا تُبْصِرُوْنَ
(হে নবী! তাদেরকে) বলো, তোমরা কি ভেবে দেখেছ- আল্লাহ যদি রাতকে কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী করে দেন তবে আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন ইলাহ্ আছে কি, যে তোমাদেরকে আলো এনে দিতে পারে? তবুও কি তোমরা কর্ণপাত করবে না? (আরো) বলো, তোমরা কি ভেবে দেখেছ- আল্লাহ যদি দিনকে কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী করে দেন তবে আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন ইলাহ্ আছে কি, যে তোমাদের জন্য রাতের আবির্ভাব ঘটাতে পারবে, যাতে তোমরা বিশ্রাম করতে পার? তবুও কি তোমরা ভেবে দেখবে না? (সূরা ক্বাসাস- ৭১, ৭২)
তিনি রাতকে বিশ্রাম ও দিনকে রোজগারের সময় বানিয়ে দিয়েছেন :
وَجَعَلْنَا اللَّيْلَ لِبَاسًا – وَجَعَلْنَا النَّهَارَ مَعَاشًا
আমি রাতকে করেছি আবরণ (বিশ্রামের সময়) এবং দিনকে বানিয়েছি জীবিকা অর্জনের সময়। (সূরা নাবা- ১০, ১১)
এ সুন্দর ব্যবস্থা আল্লাহর বিশেষ রহমত :
وَمِنْ رَّحْمَتِهٖ جَعَلَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ لِتَسْكُنُوْا فِيْهِ وَلِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِهٖ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
তিনিই নিজ অনুগ্রহে তোমাদের জন্য (সৃষ্টি) করেছেন রাত ও দিন। যাতে তোমরা তাতে বিশ্রাম করতে পার, তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা ক্বাসাস- ৭৩)
اَللهُ الَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ اللَّيْلَ لِتَسْكُنُوْا فِيْهِ وَالنَّهَارَ مُبْصِرًا اِنَّ اللهَ لَذُوْ فَضْلٍ عَلَى النَّاسِ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَشْكُرُوْنَ
আল্লাহই তোমাদের বিশ্রামের জন্য সৃষ্টি করেছেন রাত এবং আলোকোজ্জ্বল করেছেন দিনকে। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি খুবই অনুগ্রহশীল; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। (সূরা মু’মিন- ৬১)
আল্লাহ তা‘আলা প্রশামিত্ম লাভের জন্য ঘুম সৃষ্টি করেছেন :
وَهُوَ الَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ اللَّيْلَ لِبَاسًا وَّالنَّوْمَ سُبَاتًا وَّجَعَلَ النَّهَارَ نُشُوْرًا
তিনি তোমাদের জন্য রাতকে করেছেন আবরণস্বরূপ, প্রশামিত্মর জন্য দিয়েছেন ঘুম এবং জীবিকা অর্জনের জন্য দিয়েছেন দিন। (সূরা ফুরক্বান- ৪৭)
وَجَعَلْنَا نَوْمَكُمْ سُبَاتًا
আমি তোমাদের নিদ্রাকে করেছি আরামদায়ক। (সূরা নাবা- ৯)
ঘুম একধরনের মৃত্যু :
اَللهُ يَتَوَفَّى الْاَنْفُسَ حِيْنَ مَوْتِهَا وَالَّتِيْ لَمْ تَمُتْ فِيْ مَنَامِهَاۚ فَيُمْسِكُ الَّتِيْ قَضٰى عَلَيْهَا الْمَوْتَ وَيُرْسِلُ الْاُخْرٰۤى اِلٰۤى اَجَلٍ مُّسَمًّىؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ
আল্লাহ (মানুষের) মৃত্যুর সময় তার প্রাণ বের করে নেন, আর যাদের মৃত্যুর সময় আসেনি ঘুমের সময় তাদেরও (রূহ) বের করে নেন। অতঃপর তিনি যার উপর মৃত্যু অবধারিত করেন তার প্রাণ রেখে দেন এবং বাকীগুলোকে একটি সুনির্দিষ্ট সময়ের জন্য পাঠিয়ে দেন। নিশ্চয় এ (গোটা ব্যবস্থাপনার) মধ্যে নিদর্শন রয়েছে এমন সম্প্রদায়ের জন্য, যারা (বিষয়টি নিয়ে) চিমত্মা-ভাবনা করে। (সূরা যুমার- ৪২)
ব্যাখ্যা : ঘুমন্ত অবস্থায় রূহ কবজ করার অর্থ হচ্ছে, অনুভূতি ও অনুধাবনক্ষমতা নিষ্ক্রিয় করে দেয়া। এতে ঘুমন্ত মানুষও প্রায় মৃত মানুষের মতো হয়ে যায়। এ কথা দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক মানুষকে এ অনুভূতি দিতে চাচ্ছেন যে, তিনি কীভাবে তাদের জীবন ও মৃত্যু নিয়ন্ত্রণ করেন। রাতে ঘুমালে সকালে অবশ্যই জীবিত হয়ে উঠবে- এ নিশ্চয়তা কোন মানুষের জন্যই নেই। কেউই জানে না মুহূর্তের মধ্যে তার উপর কী বিপদ আসতে পারে। আবার পরবর্তী মুহূর্তটি তার জন্য জীবনের মুহূর্ত না মৃত্যুর মুহূর্ত, তাও কেউ জানে না। শয়নে, জাগরণে, ঘরে অবস্থানের সময় কিংবা চলাফেরা করার সময় মানবদেহের আভ্যন্তরীণ কোন ত্রুটি অথবা বাইরের কোন বিপদ আকস্মাৎ এমন মোড় নিতে পারে, যা তার মৃত্যু ঘটাতে পারে। যে মানুষ আল্লাহর হাতে এতটা অসহায়, সে কীভাবে আল্লাহ থেকে বিমুখ হতে পারে?
ঘুমের সময়ও বিপদ আসতে পারে :
اَفَاَمِنَ اَهْلُ الْقُرٰۤى اَنْ يَّاْتِيَهُمْ بَاْسُنَا بَيَاتًا وَّهُمْ نَآئِمُوْنَ
তবে কি জনপদের অধিবাসীবৃন্দ এ নিরাপত্তা পেয়েছে যে, যখন তারা রাতে নিদ্রামগ্ন থাকবে তখন আমার শাস্তি তাদের উপর আসবে না? (সূরা আ‘রাফ- ৯৭)
ঘুম আল্লাহর একটি নিদর্শন :
وَمِنْ اٰيَاتِهٖ مَنَامُكُمْ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَابْتِغَآؤُكُمْ مِّنْ فَضْلِهٖؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَّسْمَعُوْنَ
আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে একটি হচ্ছে, রাতের নিদ্রা এবং দিনে তাঁর অনুগ্রহ অনুসন্ধান করা। অবশ্যই এতে (আন্তরিকভাবে) শ্রবণকারীদের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা রূম- ২৩)
وَهُوَ الَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ اللَّيْلَ لِبَاسًا وَّالنَّوْمَ سُبَاتًا وَّجَعَلَ النَّهَارَ نُشُوْرًا
তিনি তোমাদের জন্য রাতকে করেছেন আবরণস্বরূপ, প্রশামিত্মর জন্য দিয়েছেন ঘুম এবং জীবিকা অর্জনের জন্য দিয়েছেন দিন। (সূরা ফুরক্বান- ৪৭)
وَجَعَلْنَا نَوْمَكُمْ سُبَاتًا
আমি তোমাদের নিদ্রাকে করেছি আরামদায়ক। (সূরা নাবা- ৯)
ঘুম একধরনের মৃত্যু :
اَللهُ يَتَوَفَّى الْاَنْفُسَ حِيْنَ مَوْتِهَا وَالَّتِيْ لَمْ تَمُتْ فِيْ مَنَامِهَاۚ فَيُمْسِكُ الَّتِيْ قَضٰى عَلَيْهَا الْمَوْتَ وَيُرْسِلُ الْاُخْرٰۤى اِلٰۤى اَجَلٍ مُّسَمًّىؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ
আল্লাহ (মানুষের) মৃত্যুর সময় তার প্রাণ বের করে নেন, আর যাদের মৃত্যুর সময় আসেনি ঘুমের সময় তাদেরও (রূহ) বের করে নেন। অতঃপর তিনি যার উপর মৃত্যু অবধারিত করেন তার প্রাণ রেখে দেন এবং বাকীগুলোকে একটি সুনির্দিষ্ট সময়ের জন্য পাঠিয়ে দেন। নিশ্চয় এ (গোটা ব্যবস্থাপনার) মধ্যে নিদর্শন রয়েছে এমন সম্প্রদায়ের জন্য, যারা (বিষয়টি নিয়ে) চিমত্মা-ভাবনা করে। (সূরা যুমার- ৪২)
ব্যাখ্যা : ঘুমন্ত অবস্থায় রূহ কবজ করার অর্থ হচ্ছে, অনুভূতি ও অনুধাবনক্ষমতা নিষ্ক্রিয় করে দেয়া। এতে ঘুমন্ত মানুষও প্রায় মৃত মানুষের মতো হয়ে যায়। এ কথা দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক মানুষকে এ অনুভূতি দিতে চাচ্ছেন যে, তিনি কীভাবে তাদের জীবন ও মৃত্যু নিয়ন্ত্রণ করেন। রাতে ঘুমালে সকালে অবশ্যই জীবিত হয়ে উঠবে- এ নিশ্চয়তা কোন মানুষের জন্যই নেই। কেউই জানে না মুহূর্তের মধ্যে তার উপর কী বিপদ আসতে পারে। আবার পরবর্তী মুহূর্তটি তার জন্য জীবনের মুহূর্ত না মৃত্যুর মুহূর্ত, তাও কেউ জানে না। শয়নে, জাগরণে, ঘরে অবস্থানের সময় কিংবা চলাফেরা করার সময় মানবদেহের আভ্যন্তরীণ কোন ত্রুটি অথবা বাইরের কোন বিপদ আকস্মাৎ এমন মোড় নিতে পারে, যা তার মৃত্যু ঘটাতে পারে। যে মানুষ আল্লাহর হাতে এতটা অসহায়, সে কীভাবে আল্লাহ থেকে বিমুখ হতে পারে?
ঘুমের সময়ও বিপদ আসতে পারে :
اَفَاَمِنَ اَهْلُ الْقُرٰۤى اَنْ يَّاْتِيَهُمْ بَاْسُنَا بَيَاتًا وَّهُمْ نَآئِمُوْنَ
তবে কি জনপদের অধিবাসীবৃন্দ এ নিরাপত্তা পেয়েছে যে, যখন তারা রাতে নিদ্রামগ্ন থাকবে তখন আমার শাস্তি তাদের উপর আসবে না? (সূরা আ‘রাফ- ৯৭)
ঘুম আল্লাহর একটি নিদর্শন :
وَمِنْ اٰيَاتِهٖ مَنَامُكُمْ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَابْتِغَآؤُكُمْ مِّنْ فَضْلِهٖؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَّسْمَعُوْنَ
আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে একটি হচ্ছে, রাতের নিদ্রা এবং দিনে তাঁর অনুগ্রহ অনুসন্ধান করা। অবশ্যই এতে (আন্তরিকভাবে) শ্রবণকারীদের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা রূম- ২৩)
আল্লাহ প্রত্যেক প্রাণীকে পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন :
وَاللهُ خَلَقَ كُلَّ دَآبَّةٍ مِّنْ مَّآءٍ
আল্লাহ সমসত্ম জীব সৃষ্টি করেছেন পানি হতে। (সূরা নূর- ৪৫)
একেক প্রাণী একেকভাবে চলাফেরা করে :
فَمِنْهُمْ مَّنْ يَّمْشِيْ عَلٰى بَطْنِهٖ وَمِنْهُمْ مَّنْ يَّمْشِيْ عَلٰى رِجْلَيْنِ وَمِنْهُمْ مَّنْ يَّمْشِيْ عَلٰۤى اَرْبَعٍؕ يَخْلُقُ اللهُ مَا يَشَآءُؕ اِنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
তাদের কতক পেটে ভর দিয়ে চলে, কতক দু’পায়ে চলে এবং কতক চলে চার পায়ে, আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা নূর- ৪৫)
اَوَلَمْ يَرَوْا اِلَى الطَّيْرِ فَوْقَهُمْ صَآفَّاتٍ وَّيَقْبِضْنَۘ مَا يُمْسِكُهُنَّ اِلَّا الرَّحْمٰنُؕ اِنَّهٗ بِكُلِّ شَيْءٍ ۢبَصِيْرٌ
তারা কি তাদের উপর (উড়ন্ত) পাখিগুলোর প্রতি লক্ষ্য করে না, যারা ডানা বিস্তার করে ও সংকুচিত করে? দয়াময় আল্লাহই তাদেরকে স্থির রাখেন। তিনি সর্ববিষয়ে সম্যক দ্রষ্টা। (সূরা মুলক- ১৯)
বিভিন্ন প্রাণীর রং ও আকৃতি বিভিন্ন রকম :
وَمِنَ النَّاسِ وَالدَّوَآبِّ وَالْاَنْعَامِ مُخْتَلِفٌ اَلْوَانُهٗ
মানুষ, প্রাণী ও চতুষ্পদ জন্তুসমূহের মধ্যে প্রত্যেকে ভিন্ন বর্ণের হয়ে থাকে। (সূরা ফাতির- ২৮)
প্রত্যেক প্রাণীর জোড়া রয়েছে :
جَعَلَ لَكُمْ مِّنْ اَنْفُسِكُمْ اَزْوَاجًا وَّمِنَ الْاَنْعَامِ اَزْوَاجًاۚ يَذْرَؤُكُمْ فِيْهِ
তিনি তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং চতুষ্পদ জন্তুগুলোর মধ্য হতেও (তাদের) জোড়া (সৃষ্টি করেছেন)। এভাবে তিনি তোমাদের বংশবিস্তার করেন। (সূরা শূরা- ১১)
আল্লাহ সকল প্রাণীকে রিযিক দিয়ে থাকেন :
وَكَاَيِّنْ مِّنْ دَآبَّةٍ لَّا تَحْمِلُ رِزْقَهَاۗ اَللهُ يَرْزُقُهَا وَاِيَّاكُمْؗ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
এমন কতক জীবজন্তু আছে, যারা নিজেদের খাদ্য মওজুদ রাখে না। আল্লাহই তাদেরকে ও তোমাদেরকে রিযিক দান করেন; তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা আনকাবূত- ৬০)
وَمَا مِنْ دَآبَّةٍ فِى الْاَرْضِ اِلَّا عَلَى اللهِ رِزْقُهَا
জমিনের উপর বিচরণকারী সকল জীবের রিযিকের দায়িত্ব আল্লাহরই। (সূরা হুদ- ৬)
ব্যাখ্যা : এ পৃথিবীতে পশু ও উদ্ভিদের লক্ষ লক্ষ শ্রেণি পাওয়া যায়। তাদের প্রত্যেকের সংখ্যা শত শত কোটি হবে এবং তাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা খাদ্যের প্রয়োজন। স্রষ্টা তাদের প্রত্যেক শ্রেণির খাদ্যবস্তু এত বিপুল পরিমাণে এবং প্রত্যেকের আহরণ ক্ষমতার এতো কাছাকাছি রেখে দিয়েছেন, যার ফলে কোন শ্রেণির কোন একটি প্রাণীও খাদ্য থেকে বঞ্চিত থাকে না। তার এ ব্যবস্থাপনায় পৃথিবী ও আকাশের এতো বিচিত্র শক্তি মিলেমিশে কাজ করে, যাদের সংখ্যা গণনা করা কঠিন। তাপ, আলো, বাতাস, পানি ও মাটির বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে যদি ঠিকমতো আনুপাতিক হারে সহযোগিতা না থাকত, তাহলে এক বিন্দু পরিমাণ খাদ্যও উৎপন্ন হতো না। কে কল্পনা করতে পারে যে, এ বিজ্ঞ ব্যবস্থাপনা একজন বিজ্ঞ ব্যবস্থাপকের সুচিন্তিত পরিকল্পনা ছাড়া এমনিই সংঘটিত হয়ে যেতে পারে?
সকল প্রাণী আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে থাকে :
مَا مِنْ دَآبَّةٍ اِلَّا هُوَ اٰخِذٌ ۢبِنَاصِيَتِهَاؕ اِنَّ رَبِّيْ عَلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
এমন কোন জীবজন্তু নেই, যার নিয়ন্ত্রণ তার হাতের মুঠোয় নয়; নিশ্চয় আমার প্রতিপালক সরল পথে অধিষ্ঠিত। (সূরা হুদ- ৫৬)
وَاللهُ خَلَقَ كُلَّ دَآبَّةٍ مِّنْ مَّآءٍ
আল্লাহ সমসত্ম জীব সৃষ্টি করেছেন পানি হতে। (সূরা নূর- ৪৫)
একেক প্রাণী একেকভাবে চলাফেরা করে :
فَمِنْهُمْ مَّنْ يَّمْشِيْ عَلٰى بَطْنِهٖ وَمِنْهُمْ مَّنْ يَّمْشِيْ عَلٰى رِجْلَيْنِ وَمِنْهُمْ مَّنْ يَّمْشِيْ عَلٰۤى اَرْبَعٍؕ يَخْلُقُ اللهُ مَا يَشَآءُؕ اِنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
তাদের কতক পেটে ভর দিয়ে চলে, কতক দু’পায়ে চলে এবং কতক চলে চার পায়ে, আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা নূর- ৪৫)
اَوَلَمْ يَرَوْا اِلَى الطَّيْرِ فَوْقَهُمْ صَآفَّاتٍ وَّيَقْبِضْنَۘ مَا يُمْسِكُهُنَّ اِلَّا الرَّحْمٰنُؕ اِنَّهٗ بِكُلِّ شَيْءٍ ۢبَصِيْرٌ
তারা কি তাদের উপর (উড়ন্ত) পাখিগুলোর প্রতি লক্ষ্য করে না, যারা ডানা বিস্তার করে ও সংকুচিত করে? দয়াময় আল্লাহই তাদেরকে স্থির রাখেন। তিনি সর্ববিষয়ে সম্যক দ্রষ্টা। (সূরা মুলক- ১৯)
বিভিন্ন প্রাণীর রং ও আকৃতি বিভিন্ন রকম :
وَمِنَ النَّاسِ وَالدَّوَآبِّ وَالْاَنْعَامِ مُخْتَلِفٌ اَلْوَانُهٗ
মানুষ, প্রাণী ও চতুষ্পদ জন্তুসমূহের মধ্যে প্রত্যেকে ভিন্ন বর্ণের হয়ে থাকে। (সূরা ফাতির- ২৮)
প্রত্যেক প্রাণীর জোড়া রয়েছে :
جَعَلَ لَكُمْ مِّنْ اَنْفُسِكُمْ اَزْوَاجًا وَّمِنَ الْاَنْعَامِ اَزْوَاجًاۚ يَذْرَؤُكُمْ فِيْهِ
তিনি তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং চতুষ্পদ জন্তুগুলোর মধ্য হতেও (তাদের) জোড়া (সৃষ্টি করেছেন)। এভাবে তিনি তোমাদের বংশবিস্তার করেন। (সূরা শূরা- ১১)
আল্লাহ সকল প্রাণীকে রিযিক দিয়ে থাকেন :
وَكَاَيِّنْ مِّنْ دَآبَّةٍ لَّا تَحْمِلُ رِزْقَهَاۗ اَللهُ يَرْزُقُهَا وَاِيَّاكُمْؗ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
এমন কতক জীবজন্তু আছে, যারা নিজেদের খাদ্য মওজুদ রাখে না। আল্লাহই তাদেরকে ও তোমাদেরকে রিযিক দান করেন; তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা আনকাবূত- ৬০)
وَمَا مِنْ دَآبَّةٍ فِى الْاَرْضِ اِلَّا عَلَى اللهِ رِزْقُهَا
জমিনের উপর বিচরণকারী সকল জীবের রিযিকের দায়িত্ব আল্লাহরই। (সূরা হুদ- ৬)
ব্যাখ্যা : এ পৃথিবীতে পশু ও উদ্ভিদের লক্ষ লক্ষ শ্রেণি পাওয়া যায়। তাদের প্রত্যেকের সংখ্যা শত শত কোটি হবে এবং তাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা খাদ্যের প্রয়োজন। স্রষ্টা তাদের প্রত্যেক শ্রেণির খাদ্যবস্তু এত বিপুল পরিমাণে এবং প্রত্যেকের আহরণ ক্ষমতার এতো কাছাকাছি রেখে দিয়েছেন, যার ফলে কোন শ্রেণির কোন একটি প্রাণীও খাদ্য থেকে বঞ্চিত থাকে না। তার এ ব্যবস্থাপনায় পৃথিবী ও আকাশের এতো বিচিত্র শক্তি মিলেমিশে কাজ করে, যাদের সংখ্যা গণনা করা কঠিন। তাপ, আলো, বাতাস, পানি ও মাটির বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে যদি ঠিকমতো আনুপাতিক হারে সহযোগিতা না থাকত, তাহলে এক বিন্দু পরিমাণ খাদ্যও উৎপন্ন হতো না। কে কল্পনা করতে পারে যে, এ বিজ্ঞ ব্যবস্থাপনা একজন বিজ্ঞ ব্যবস্থাপকের সুচিন্তিত পরিকল্পনা ছাড়া এমনিই সংঘটিত হয়ে যেতে পারে?
সকল প্রাণী আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে থাকে :
مَا مِنْ دَآبَّةٍ اِلَّا هُوَ اٰخِذٌ ۢبِنَاصِيَتِهَاؕ اِنَّ رَبِّيْ عَلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
এমন কোন জীবজন্তু নেই, যার নিয়ন্ত্রণ তার হাতের মুঠোয় নয়; নিশ্চয় আমার প্রতিপালক সরল পথে অধিষ্ঠিত। (সূরা হুদ- ৫৬)
প্রাণীর মধ্যে রয়েছে অগণিত উপকারিতা :
وَلَهُمْ فِيْهَا مَنَافِعُ وَمَشَارِبُؕ اَفَلَا يَشْكُرُوْنَ
তাদের জন্য এগুলোর মধ্যে রয়েছে অনেক উপকারিতা এবং বিভিন্ন ধরনের পানীয়। তবুও কি তারা শুকরিয়া আদায় করবে না? (সূরা ইয়াসীন- ৭৩)
কতক প্রাণী পরিবহনের কাজে লাগে :
وَالَّذِيْ خَلَقَ الْاَزْوَاجَ كُلَّهَا وَجَعَلَ لَكُمْ مِّنَ الْفُلْكِ وَالْاَنْعَامِ مَا تَرْكَبُوْنَ
যিনি সবকিছুর জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন নৌযান ও চতুষ্পদ জন্তু, যেন তোমরা তাতে আরোহণ করতে পার। (সূরা যুখরুফ- ১২)
কতক প্রাণীর গোশত খাওয়া হয় :
اَللهُ الَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ الْاَنْعَامَ لِتَرْكَبُوْا مِنْهَا وَمِنْهَا تَاْكُلُوْنَ
আল্লাহই সেই সত্তা, যিনি তোমাদের জন্য চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমরা তাদের উপর আরোহণ করতে পার। আবার কতক রয়েছে যার গোশত তোমরা খাও। (সূরা মু’মিন- ৭৯)
وَالْاَنْعَامَ خَلَقَهَا لَكُمْ فِيْهَا دِفْءٌ وَّمَنَافِعُ وَمِنْهَا تَاْكُلُوْنَ
তিনি চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন। তোমাদের জন্য তাতে রয়েছে শীত নিবারক উপকরণ ও বহু উপকার। আর তোমরা তা হতে আহারও করে থাক। (সূরা নাহল- ৫)
প্রাণীর মধ্যে সৌন্দর্য রয়েছে :
وَلَكُمْ فِيْهَا جَمَالٌ حِيْنَ تُرِيْحُوْنَ وَحِيْنَ تَسْرَحُوْنَ
আর তোমাদের জন্য তাদের মধ্যে সৌন্দর্য রয়েছে, যখন তোমরা তাদেরকে বিকালে চারণভূমি থেকে নিয়ে আস এবং সকালে তাতে নিয়ে যাও। (সূরা নাহল- ৬)
জন্তুর চামড়াও অনেক কাজে লাগে :
وَجَعَلَ لَكُمْ مِّنْ جُلُوْدِ الْاَنْعَامِ بُيُوْتًا تَسْتَخِفُّوْنَهَا يَوْمَ ظَعْنِكُمْ وَيَوْمَ اِقَامَتِكُمْ وَمِنْ اَصْوَافِهَا وَاَوْبَارِهَا وَاَشْعَارِهَاۤ اَثَاثًا وَّمَتَاعًا اِلٰى حِيْنٍ
আল্লাহ তোমাদের জন্য পশুর চামড়ার মাধ্যমে তাঁবুর ব্যবস্থা করেন, তোমরা তাকে সহজে ব্যবহার কর ভ্রমণকালে এবং অবস্থানকালে। আর তিনি তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেন তাদের পশম, লোম ও কেশ হতে কিছু কালের গৃহসামগ্রী ও ব্যবহার উপকরণ। (সূরা নাহল- ৮০)
আল্লাহ গবাদিপশু থেকে দুধ সরবরাহ করেন :
وَاِنَّ لَكُمْ فِى الْاَنْعَامِ لَعِبْرَةً نُّسْقِيْكُمْ مِّمَّا فِيْ بُطُوْنِهٖ مِنْ ۢبَيْنِ فَرْثٍ وَّدَمٍ لَّبَنًا خَالِصًا سَآئِغًا لِّلشَّارِبِيْنَ
নিশ্চয় তোমাদের জন্য গবাদিপশুর মধ্যে রয়েছে শিক্ষা। তাদের উদরস্থিত গোবর ও রক্তের মধ্য হতে তোমাদেরকে পান করাই বিশুদ্ধ দুধ, যা পানকারীদের জন্য সুস্বাদু। (সূরা নাহল- ৬৬)
মৌমাছি মধু তৈরি করে :
وَاَوْحٰى رَبُّكَ اِلَى النَّحْلِ اَنِ اتَّخِذِيْ مِنَ الْجِبَالِ بُيُوْتًا وَّمِنَ الشَّجَرِ وَمِمَّا يَعْرِشُوْنَ – ثُمَّ كُلِيْ مِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ فَاسْلُكِيْ سُبُلَ رَبِّكِ ذُلُلًاؕ يَخْرُجُ مِنْ ۢبُطُوْنِهَا شَرَابٌ مُّخْتَلِفٌ اَلْوَانُهٗ فِيْهِ شِفَآءٌ لِّلنَّاسِ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ
তোমার প্রতিপালক মৌমাছিকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, ‘‘তোমরা গৃহ নির্মাণ করো পাহাড়ে, বৃক্ষে এবং মানুষ যে গৃহ নির্মাণ করে তাতে। অতঃপর প্রত্যেক ফল হতে কিছু কিছু আহার করো এবং তোমার প্রতিপালকের সহজ পথ অনুসরণ করো।’’ তার উদর হতে নির্গত হয় বিবিধ বর্ণের পানীয়, যাতে মানুষের জন্য রয়েছে আরোগ্য। অবশ্যই এতে চিমত্মাশীল সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা নাহল- ৬৮, ৬৯)
আল্লাহ প্রাণীকে মানুষের অনুগত করে দিয়েছেন :
اَوَلَمْ يَرَوْا اَنَّا خَلَقْنَا لَهُمْ مِّمَّا عَمِلَتْ اَيْدِيْنَاۤ اَنْعَامًا فَهُمْ لَهَا مَالِكُوْنَ – وَذَلَّلْنَاهَا لَهُمْ فَمِنْهَا رَكُوْبُهُمْ وَمِنْهَا يَاْكُلُوْنَ
তারা কি লক্ষ্য করে না যে, আমার নিজ হাতে সৃষ্ট বস্তুসমূহের মধ্য থেকে আমি তাদের জন্য পশু সৃষ্টি করেছি? অতঃপর তারা এগুলোর মালিক হয়েছে। আর আমি এগুলোকে তাদের অনুগত করে দিয়েছি, ফলে এদের কতক তাদের বাহন এবং কতককে তারা খায়। (সূরা ইয়াসীন- ৭১, ৭২)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীর সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে শুধু মানুষকে স্থলযান, জলযান ও আকাশযান ইত্যাদি সবকিছু পরিচালনা করার ক্ষমতা দিয়েছেন। তিনি বিশাল সমুদ্রে জাহাজ চালনা সম্ভব করেছেন এবং অসংখ্য প্রজাতির জীবজন্তুর মধ্যে এমন কিছু জীবজন্তু সৃষ্টি করেছেন, যেগুলো আমাদের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও আমাদের অধীন হয়ে থাকে। আমরা তাদের পিঠে আরোহণ করে যে দিকে ইচ্ছা নিয়ে যাই। বিবেকসম্পন্ন মানুষ যখনই এসব সওয়ারীর পিঠে আরোহণ করবে তখনই তার হৃদয়-মন কৃতজ্ঞতার আবেগে বলে উঠবে, আমি সেই মহান সত্তার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি, যিনি আমার জন্য এ সবকিছু অনুগত করে দিয়েছেন।
প্রাণীর মধ্যে তাওহীদের নিদর্শন রয়েছে :
وَمِنْ اٰيَاتِهٖ خَلْقُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَمَا بَثَّ فِيْهِمَا مِنْ دَآبَّةٍ
তাঁর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত হলো আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং এতোদুভয়ের মধ্যে তিনি যেসব জীবজন্তু ছড়িয়ে দিয়েছেন সেগুলোও। (সূরা শূরা- ২৯)
ব্যাখ্যা : প্রাণীর প্রতি সহানুভূতি দেখাতে হবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূল ﷺ বলেন, এক ব্যভিচারিণীকে কেবল এ কারণে ক্ষমা করে দেয়া হয় যে, সে যখন একটি কুকুরের কাছ দিয়ে যাচ্ছিল তখন সে কুকুরটি একটি কূপের পাশে বসে হাঁপাচ্ছিল। পানির পিপাসা তাকে মৃত্যুর কাছাকাছি নিয়ে গিয়েছিল। (এ অবস্থা দেখে) মহিলাটি তার মোজা খুলে ওড়নার সঙ্গে বাঁধল। তারপর (তা কূপে ছেড়ে দিয়ে) পানি উঠিয়ে তাকে পান করাল। এ কারণে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হলো। (সহীহ বুখারী, হা/৩৩২১)
ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূল ﷺ বলেন, এক মহিলা একটি বিড়ালের কারণে জাহান্নামে গিয়েছে। কেননা সে বিড়ালটিকে বেঁধে রেখেছিল। কিন্তু তাকে কোন কিছুই খেতে দিচ্ছিল না, আবার তাকে ছেড়েও দিচ্ছিল না- যাতে সে জমিনের পোকামাকড় ভক্ষণ করতে পারে। (সহীহ বুখারী, হা/৩৩১৮)
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল ﷺ কে বলতে শুনেছি, একদা একটি পিঁপড়া কোন একজন নবীকে কামড় দিলে তিনি উক্ত পিঁপড়ার এলাকা আগুন দ্বারা জ্বালিয়ে দেন। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিকট ওহী পাঠালেন যে, একটি পিঁপড়া তোমায় কামড় দিল, আর তুমি আল্লাহর এমন একদল সৃষ্টিকে পুড়িয়ে দিলে, যারা আল্লাহর তাসবীহ্ তাহ্লীল আদায় করে থাকে।
(সহীহ বুখারী, হা/৩০১৯)
وَلَهُمْ فِيْهَا مَنَافِعُ وَمَشَارِبُؕ اَفَلَا يَشْكُرُوْنَ
তাদের জন্য এগুলোর মধ্যে রয়েছে অনেক উপকারিতা এবং বিভিন্ন ধরনের পানীয়। তবুও কি তারা শুকরিয়া আদায় করবে না? (সূরা ইয়াসীন- ৭৩)
কতক প্রাণী পরিবহনের কাজে লাগে :
وَالَّذِيْ خَلَقَ الْاَزْوَاجَ كُلَّهَا وَجَعَلَ لَكُمْ مِّنَ الْفُلْكِ وَالْاَنْعَامِ مَا تَرْكَبُوْنَ
যিনি সবকিছুর জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন নৌযান ও চতুষ্পদ জন্তু, যেন তোমরা তাতে আরোহণ করতে পার। (সূরা যুখরুফ- ১২)
কতক প্রাণীর গোশত খাওয়া হয় :
اَللهُ الَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ الْاَنْعَامَ لِتَرْكَبُوْا مِنْهَا وَمِنْهَا تَاْكُلُوْنَ
আল্লাহই সেই সত্তা, যিনি তোমাদের জন্য চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমরা তাদের উপর আরোহণ করতে পার। আবার কতক রয়েছে যার গোশত তোমরা খাও। (সূরা মু’মিন- ৭৯)
وَالْاَنْعَامَ خَلَقَهَا لَكُمْ فِيْهَا دِفْءٌ وَّمَنَافِعُ وَمِنْهَا تَاْكُلُوْنَ
তিনি চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন। তোমাদের জন্য তাতে রয়েছে শীত নিবারক উপকরণ ও বহু উপকার। আর তোমরা তা হতে আহারও করে থাক। (সূরা নাহল- ৫)
প্রাণীর মধ্যে সৌন্দর্য রয়েছে :
وَلَكُمْ فِيْهَا جَمَالٌ حِيْنَ تُرِيْحُوْنَ وَحِيْنَ تَسْرَحُوْنَ
আর তোমাদের জন্য তাদের মধ্যে সৌন্দর্য রয়েছে, যখন তোমরা তাদেরকে বিকালে চারণভূমি থেকে নিয়ে আস এবং সকালে তাতে নিয়ে যাও। (সূরা নাহল- ৬)
জন্তুর চামড়াও অনেক কাজে লাগে :
وَجَعَلَ لَكُمْ مِّنْ جُلُوْدِ الْاَنْعَامِ بُيُوْتًا تَسْتَخِفُّوْنَهَا يَوْمَ ظَعْنِكُمْ وَيَوْمَ اِقَامَتِكُمْ وَمِنْ اَصْوَافِهَا وَاَوْبَارِهَا وَاَشْعَارِهَاۤ اَثَاثًا وَّمَتَاعًا اِلٰى حِيْنٍ
আল্লাহ তোমাদের জন্য পশুর চামড়ার মাধ্যমে তাঁবুর ব্যবস্থা করেন, তোমরা তাকে সহজে ব্যবহার কর ভ্রমণকালে এবং অবস্থানকালে। আর তিনি তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেন তাদের পশম, লোম ও কেশ হতে কিছু কালের গৃহসামগ্রী ও ব্যবহার উপকরণ। (সূরা নাহল- ৮০)
আল্লাহ গবাদিপশু থেকে দুধ সরবরাহ করেন :
وَاِنَّ لَكُمْ فِى الْاَنْعَامِ لَعِبْرَةً نُّسْقِيْكُمْ مِّمَّا فِيْ بُطُوْنِهٖ مِنْ ۢبَيْنِ فَرْثٍ وَّدَمٍ لَّبَنًا خَالِصًا سَآئِغًا لِّلشَّارِبِيْنَ
নিশ্চয় তোমাদের জন্য গবাদিপশুর মধ্যে রয়েছে শিক্ষা। তাদের উদরস্থিত গোবর ও রক্তের মধ্য হতে তোমাদেরকে পান করাই বিশুদ্ধ দুধ, যা পানকারীদের জন্য সুস্বাদু। (সূরা নাহল- ৬৬)
মৌমাছি মধু তৈরি করে :
وَاَوْحٰى رَبُّكَ اِلَى النَّحْلِ اَنِ اتَّخِذِيْ مِنَ الْجِبَالِ بُيُوْتًا وَّمِنَ الشَّجَرِ وَمِمَّا يَعْرِشُوْنَ – ثُمَّ كُلِيْ مِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ فَاسْلُكِيْ سُبُلَ رَبِّكِ ذُلُلًاؕ يَخْرُجُ مِنْ ۢبُطُوْنِهَا شَرَابٌ مُّخْتَلِفٌ اَلْوَانُهٗ فِيْهِ شِفَآءٌ لِّلنَّاسِ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ
তোমার প্রতিপালক মৌমাছিকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, ‘‘তোমরা গৃহ নির্মাণ করো পাহাড়ে, বৃক্ষে এবং মানুষ যে গৃহ নির্মাণ করে তাতে। অতঃপর প্রত্যেক ফল হতে কিছু কিছু আহার করো এবং তোমার প্রতিপালকের সহজ পথ অনুসরণ করো।’’ তার উদর হতে নির্গত হয় বিবিধ বর্ণের পানীয়, যাতে মানুষের জন্য রয়েছে আরোগ্য। অবশ্যই এতে চিমত্মাশীল সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা নাহল- ৬৮, ৬৯)
আল্লাহ প্রাণীকে মানুষের অনুগত করে দিয়েছেন :
اَوَلَمْ يَرَوْا اَنَّا خَلَقْنَا لَهُمْ مِّمَّا عَمِلَتْ اَيْدِيْنَاۤ اَنْعَامًا فَهُمْ لَهَا مَالِكُوْنَ – وَذَلَّلْنَاهَا لَهُمْ فَمِنْهَا رَكُوْبُهُمْ وَمِنْهَا يَاْكُلُوْنَ
তারা কি লক্ষ্য করে না যে, আমার নিজ হাতে সৃষ্ট বস্তুসমূহের মধ্য থেকে আমি তাদের জন্য পশু সৃষ্টি করেছি? অতঃপর তারা এগুলোর মালিক হয়েছে। আর আমি এগুলোকে তাদের অনুগত করে দিয়েছি, ফলে এদের কতক তাদের বাহন এবং কতককে তারা খায়। (সূরা ইয়াসীন- ৭১, ৭২)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীর সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে শুধু মানুষকে স্থলযান, জলযান ও আকাশযান ইত্যাদি সবকিছু পরিচালনা করার ক্ষমতা দিয়েছেন। তিনি বিশাল সমুদ্রে জাহাজ চালনা সম্ভব করেছেন এবং অসংখ্য প্রজাতির জীবজন্তুর মধ্যে এমন কিছু জীবজন্তু সৃষ্টি করেছেন, যেগুলো আমাদের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও আমাদের অধীন হয়ে থাকে। আমরা তাদের পিঠে আরোহণ করে যে দিকে ইচ্ছা নিয়ে যাই। বিবেকসম্পন্ন মানুষ যখনই এসব সওয়ারীর পিঠে আরোহণ করবে তখনই তার হৃদয়-মন কৃতজ্ঞতার আবেগে বলে উঠবে, আমি সেই মহান সত্তার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি, যিনি আমার জন্য এ সবকিছু অনুগত করে দিয়েছেন।
প্রাণীর মধ্যে তাওহীদের নিদর্শন রয়েছে :
وَمِنْ اٰيَاتِهٖ خَلْقُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَمَا بَثَّ فِيْهِمَا مِنْ دَآبَّةٍ
তাঁর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত হলো আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং এতোদুভয়ের মধ্যে তিনি যেসব জীবজন্তু ছড়িয়ে দিয়েছেন সেগুলোও। (সূরা শূরা- ২৯)
ব্যাখ্যা : প্রাণীর প্রতি সহানুভূতি দেখাতে হবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূল ﷺ বলেন, এক ব্যভিচারিণীকে কেবল এ কারণে ক্ষমা করে দেয়া হয় যে, সে যখন একটি কুকুরের কাছ দিয়ে যাচ্ছিল তখন সে কুকুরটি একটি কূপের পাশে বসে হাঁপাচ্ছিল। পানির পিপাসা তাকে মৃত্যুর কাছাকাছি নিয়ে গিয়েছিল। (এ অবস্থা দেখে) মহিলাটি তার মোজা খুলে ওড়নার সঙ্গে বাঁধল। তারপর (তা কূপে ছেড়ে দিয়ে) পানি উঠিয়ে তাকে পান করাল। এ কারণে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হলো। (সহীহ বুখারী, হা/৩৩২১)
ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূল ﷺ বলেন, এক মহিলা একটি বিড়ালের কারণে জাহান্নামে গিয়েছে। কেননা সে বিড়ালটিকে বেঁধে রেখেছিল। কিন্তু তাকে কোন কিছুই খেতে দিচ্ছিল না, আবার তাকে ছেড়েও দিচ্ছিল না- যাতে সে জমিনের পোকামাকড় ভক্ষণ করতে পারে। (সহীহ বুখারী, হা/৩৩১৮)
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল ﷺ কে বলতে শুনেছি, একদা একটি পিঁপড়া কোন একজন নবীকে কামড় দিলে তিনি উক্ত পিঁপড়ার এলাকা আগুন দ্বারা জ্বালিয়ে দেন। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিকট ওহী পাঠালেন যে, একটি পিঁপড়া তোমায় কামড় দিল, আর তুমি আল্লাহর এমন একদল সৃষ্টিকে পুড়িয়ে দিলে, যারা আল্লাহর তাসবীহ্ তাহ্লীল আদায় করে থাকে।
(সহীহ বুখারী, হা/৩০১৯)
ফেরেশতারা আল্লাহর গুণগান করে ও আরশ বহন করে :
اَلَّذِيْنَ يَحْمِلُوْنَ الْعَرْشَ وَمَنْ حَوْلَهٗ يُسَبِّحُوْنَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَيُؤْمِنُوْنَ بِهٖ
যারা আরশ ধারণ করে আছে এবং যারা এর চারপাশে রয়েছে, তারা প্রশংসার সাথে তাদের প্রতিপালকের পবিত্রতা ঘোষণা করে এবং তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে। (সূরা মু’মিন- ৭)
ফেরেশতারা আল্লাহর ইবাদাতে ক্লান্ত হয় না :
وَلَه مَنْ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِؕ وَمَنْ عِنْدَهٗ لَا يَسْتَكْبِرُوْنَ عَنْ عِبَادَتِهٖ وَلَا يَسْتَحْسِرُوْنَ
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা আছে সবই তাঁর। আর যারা তাঁর সান্নিধ্যে আছে তারা অহংকারবশে তাঁর ইবাদাত করা হতে বিমুখ হয় না এবং ক্লামিত্মও বোধ করে না। (সূরা আম্বিয়া- ১৯)
اِنَّ الَّذِيْنَ عِنْدَ رَبِّكَ لَا يَسْتَكْبِرُوْنَ عَنْ عِبَادَتِهٖ وَيُسَبِّحُوْنَهٗ وَلَهٗ يَسْجُدُوْنَ
যারা তোমার প্রতিপালকের সান্নিধ্যে রয়েছে তারা অহংকারে তাঁর ইবাদাত হতে বিমুখ হয় না, বরং তারা তাঁরই পবিত্রতা ঘোষণা করে এবং তাঁরই নিকট সিজদাবনত হয়। (সূরা আ‘রাফ- ২০৬)
ফেরেশতারা আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করে :
يُسَبِّحُوْنَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ لَا يَفْتُرُوْنَ
তারা দিনে ও রাত্রে (সর্বদায়) তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে, আর তারা এতে শৈথিল্য করে না। (সূরা আম্বিয়া- ২০)
ফেরেশতারা আল্লাহর জন্য সিজদা করে :
وَلِلّٰهِ يَسْجُدُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَرْضِ مِنْ دَآبَّةٍ وَّالْمَلَآئِكَةُ وَهُمْ لَا يَسْتَكْبِرُوْنَ
আকাশমন্ডলী ও জমিনের মধ্যে যেসব জীবজন্তু আছে সকলেই আল্লাহকে সিজদা করে। আর ফেরেশতাগণও (তাঁকে সিজদা করে) এবং তারা অহংকার করে না। (সূরা নাহল- ৪৯)
ফেরেশতারা আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য দেয় :
شَهِدَ اللهُ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ وَالْمَلَآئِكَةُ وَاُولُو الْعِلْمِ قَآئِمًا ۢبِالْقِسْطِؕ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, তিনি ছাড়া কোন মা‘বুদ নেই। (এ বিষয়ে আরো সাক্ষ্যদানকারী হচ্ছেন) ফেরেশতা ও জ্ঞানীগণ। তিনি ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত, তিনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই। আর তিনি মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা আলে ইমরান- ১৮)
ফেরেশতারা কুরআনের সত্যতার সাক্ষ্য দেয় :
لٰكِنِ اللهُ يَشْهَدُ بِمَاۤ اَنْزَلَ اِلَيْكَ اَنْزَلَهٗ بِعِلْمِهٖۚ وَالْمَلَآئِكَةُ يَشْهَدُوْنَؕ وَكَفٰى بِاللهِ شَهِيْدًا
আল্লাহ এ মর্মে সাক্ষ্য দেন যে, তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছেন তা নাযিল করেছেন নিজ জ্ঞানে এবং ফেরেশতাগণও এর সাক্ষ্য দেয়। আর সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। (সূরা নিসা- ১৬৬)
ফেরেশতাদের আকৃতি বিভিন্ন রকম :
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ فَاطِرِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ جَاعِلِ الْمَلَآئِكَةِ رُسُلًا اُولِۤيْ اَجْنِحَةٍ مَّثْنٰى وَثُلَاثَ وَرُبَاعَؕ يَزِيْدُ فِى الْخَلْقِ مَا يَشَآءُؕ اِنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি ফেরেশতাদেরকে করেছেন সংবাদ বাহক, যারা দুই দুই, তিন তিন ও চার চার ডানা বিশিষ্ট। তিনি সৃষ্টির মধ্যে যা ইচ্ছা বাড়িয়ে দেন; নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা ফাতির- ১)
তারা মানুষের আকৃতি ধারণ করে কথা বলতে পারেন :
فَاَرْسَلْنَاۤ اِلَيْهَا رُوْحَنَا فَتَمَثَّلَ لَهَا بَشَرًا سَوِيًّا – قَالَتْ اِنِّۤيْ اَعُوْذُ بِالرَّحْمٰنِ مِنْكَ اِنْ كُنْتَ تَقِيًّا – قَالَ اِنَّمَاۤ اَنَاْ رَسُوْلُ رَبِّكِ لِاَهَبَ لَكِ غُلَامًا زَكِيًّا
অতঃপর আমি তার নিকট আমার রূহকে (জিবরাঈল) পাঠালাম, সে তার নিকট পূর্ণ মানবাকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করল। মারইয়াম বলল, আল্লাহকে ভয় করো যদি তুমি ‘মুত্তাক্বী’ হও, আমি তোমার হতে দয়াময়ের নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। সে বলল, আমি তো তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে প্রেরিত হয়েছি, তোমাকে একটি পবিত্র পুত্র দান করার জন্য। (সূরা মারইয়াম, ১৭-১৯)
আদম (আঃ) সৃষ্টির সময় ফেরেশতাদের সাথে আল্লাহর আলোচনা :
وَاِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَآئِكَةِ اِنِّيْ جَاعِلٌ فِى الْاَرْضِ خَلِيْفَةًؕ قَالُوْاۤ اَ تَجْعَلُ فِيْهَا مَنْ يُّفْسِدُ فِيْهَا وَيَسْفِكُ الدِّمَآءَ وَنَحْنُ نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَ قَالَ اِنِّۤيْ اَعْلَمُ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ
(স্বরণ করো, সেই সময়ের কথা) যখন তোমার রব ফেরেশতাদেরকে বললেন, নিশ্চয় আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করব। তখন তারা বলল, আপনি কি এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন, যারা সেখানে বিবাদ করবে এবং রক্তপাত করবে? অথচ আমরাই তো আপনার গুণগান করছি এবং আপনারই পবিত্রতা বর্ণনা করে থাকি। তিনি বললেন, নিশ্চয় আমি যা জানি তোমরা তা জান না। (সূরা বাক্বারা- ৩০)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ আমরা আপনার দাস, আমরা আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি এবং তাসবীহ পড়ছি। তাহলে এখন আর কিসের অভাব? জবাবে আল্লাহ বলেন, খলীফা নিযুক্ত করার জন্য যে প্রয়োজনীয়তা রয়েছে তা আমি জানি, কিন্তু তোমরা তা বুঝতে পারবে না। তোমরা নিজেদের যেসব কাজের কথা বলছ, সেগুলোই যথেষ্ট নয়। আমি এর চেয়েও বেশি কিছু চাই। তাই পৃথিবীতে ক্ষমতা ও ইচ্ছাশক্তিসম্পন্ন একটি জীব সৃষ্টি করার সংকল্প করেছি।
ফেরেশতারা আদম (আঃ) কে সিজদা করেছেন :
وَاِذْ قُلْنَا لِلْمَلَآئِكَةِ اسْجُدُوْا لِاٰدَمَ فَسَجَدُوْاۤ اِلَّاۤ اِبْلِيْسَ اَبٰى وَاسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِيْنَ
যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বলেছিলাম যে, তোমরা আদমকে সিজদা করো, তখন ইবলিস ব্যতীত সকলেই সিজদা করেছিল। সে অস্বীকার করল ও অহংকার করল, ফলে সে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল। (সূরা বাক্বারা- ৩৪)
আল্লাহ ফেরেশতাদের দ্বারা মানুষকে সাহায্য করেন :
اِذْ تَسْتَغِيْثُوْنَ رَبَّكُمْ فَاسْتَجَابَ لَكُمْ اَنِّيْ مُمِدُّكُمْ بِاَلْفٍ مِّنَ الْمَلَآئِكَةِ مُرْدِفِيْنَ
স্মরণ করো, যখন তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করেছিলে তখন তিনি তোমাদেরকে জবাব দিয়েছিলেন যে, আমি তোমাদেরকে পর পর আগমনকারী এক হাজার ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করব। (সূরা আনফাল- ৯)
ফেরেশতাদের মধ্যে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বার্তাবাহক নির্বাচন করেন :
اَللهُ يَصْطَفِيْ مِنَ الْمَلَآئِكَةِ رُسُلًا وَّمِنَ النَّاسِ۪ اِنَّ اللهَ سَمِيْعٌ ۢبَصِيْرٌ
আল্লাহ ফেরেশতাদের মধ্য হতে মনোনীত করেন বার্তাবাহক এবং মানুষের মধ্য হতেও; নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। (সূরা হজ্জ- ৭৫)
জিবরাঈল (আঃ) ওহী নিয়ে আসেন :
قُلْ مَنْ كَانَ عَدُوًّا لِّجِبْرِيْلَ فَاِنَّهٗ نَزَّلَهٗ عَلَى قَلْبِكَ بِاِذْنِ اللّٰهِ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ وَهُدًى وَّبُشْرٰى لِلْمُؤْمِنِيْنَ
যে ব্যক্তি জিবরাঈলের সাথে শত্রুতা রাখে তাকে বলে দাও, তিনিই তো আল্লাহর হুকুমে এ কুরআনকে তোমার অন্তঃকরণে পৌঁছে দেন, যা তার পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের সত্যায়ন করে এবং মুমিনদেরকে পথপ্রদর্শন করে ও সুসংবাদ দেয়। (সূরা বাক্বারা- ৯৭)
জিবরাঈল (আঃ) খুবই শক্তিশালী ও জ্ঞানী :
عَلَّمَهٗ شَدِيْدُ الْقُوٰى – ذُوْ مِرَّةٍؕ فَاسْتَوٰى
তাকে (ওহী) শিক্ষা দান করেছে এমন একজন (ফেরেশতা), যিনি প্রবল শক্তির অধিকারী, বুদ্ধিমত্তার অধিকারী; অতঃপর তিনি একদিন নিজ আকৃতিতে (নবীর সামনে এসে) দাঁড়ালেন। (সূরা নাজম- ৫, ৬)
ক্বদরের রাতে অনেক ফেরেশতা অবতীর্ণ হয় :
تَنَزَّلُ الْمَلَآئِكَةُ وَالرُّوْحُ فِيْهَا بِاِذْنِ رَبِّهِمْ مِّنْ كُلِّ اَمْرٍ
এ রাতে প্রত্যেক বিষয়ের জন্য তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয়। (সূরা ক্বদর- ৪)
ফেরেশতারা মানুষের জন্য দু‘আ করেন :
اَلَّذِيْنَ يَحْمِلُوْنَ الْعَرْشَ وَمَنْ حَوْلَهٗ يُسَبِّحُوْنَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَيُؤْمِنُوْنَ بِهٖ وَيَسْتَغْفِرُوْنَ لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۚ رَبَّنَا وَسِعْتَ كُلَّ شَيْءٍ رَّحْمَةً وَّعِلْمًا فَاغْفِرْ لِلَّذِيْنَ تَابُوْا وَاتَّبَعُوْا سَبِيْلَكَ وَقِهِمْ عَذَابَ الْجَحِيْمِ ‐ رَبَّنَا وَاَدْخِلْهُمْ جَنَّاتِ عَدْنِ نِ الَّتِيْ وَعَدْتَّهُمْ وَمَنْ صَلَحَ مِنْ اٰبَآئِهِمْ وَاَزْوَاجِهِمْ وَذُرِّيَّاتِهِمْؕ اِنَّكَ اَنْتَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمِ ‐ وَقِهِمُ السَّيِّئَاتِؕ وَمَنْ تَقِ السَّيِّئَاتِ يَوْمَئِذٍ فَقَدْ رَحِمْتَهٗؕ وَذٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ
যারা আরশ ধারণ করে আছে এবং যারা এর চতুষ্পার্শেব রয়েছে, তারা তাদের প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে প্রশংসার সাথে; আর তারা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং মুমিনদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে। (তারা বলে) হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি সকল কিছুকেই (আপনার) জ্ঞান ও রহমত দ্বারা পরিবেষ্টন করে আছেন। অতএব যারা ফিরে আসে ও আপনার পথ অনুসরণ করে আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা করুন। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি তাদেরকে প্রবেশ করান স্থায়ী জান্নাতে, যার অঙ্গীকার আপনি তাদেরকে দিয়েছেন এবং তাদের বাপ-দাদা, স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততির মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে তাদেরকেও (দিয়েছেন)। নিশ্চয় আপনি মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাবান। আর আপনি তাদেরকে মন্দকাজসমূহ হতে রক্ষা করুন। আপনি যাকে মন্দকাজসমূহ হতে রক্ষা করেন সেটাই তো তার উপর আপনার অনুগ্রহ। আর এটাই তো মহাসাফল্য। (সূরা মু’মিন, ৭-৯)
ফেরেশতারা নবী ﷺ এর প্রতি দরূদ পাঠ করে :
اِنَّ اللهَ وَمَلَآئِكَتَهٗ يُصَلُّوْنَ عَلَى النَّبِيِّؕ يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا صَلُّوْا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا
নিশ্চয় আল্লাহ নবীর প্রতি রহমত প্রেরণ করেন এবং তাঁর ফেরেশতারাও নবীর জন্য রহমত প্রার্থনা করে। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও তার জন্য রহমত প্রার্থনা করো এবং তার প্রতি সালাম প্রেরণ করো। (সূরা আহযাব- ৫৬)
ফেরেশতারা জান্নাতবাসীদেরকে সালাম জানাবে :
وَالْمَلَآئِكَةُ يَدْخُلُوْنَ عَلَيْهِمْ مِّنْ كُلِّ بَابٍ – سَلَامٌ عَلَيْكُمْ بِمَا صَبَرْتُمْ فَنِعْمَ عُقْبَى الدَّارِ
ফেরেশতাগণ তাদের নিকট উপস্থিত হবে প্রত্যেক দরজা দিয়ে এবং বলবে, তোমরা ধৈর্যধারণ করেছ বলে তোমাদের প্রতি শামিত্ম; এ পরিণাম কতই না উত্তম! (সূরা রা‘দ- ২৩, ২৪)
মৃত্যুর ফেরেশতা প্রাণীর জান কবজ করে :
قُلْ يَتَوَفَّاكُمْ مَّلَكُ الْمَوْتِ الَّذِيْ وُكِّلَ بِكُمْ ثُمَّ اِلٰى رَبِّكُمْ تُرْجَعُوْنَ
আপনি বলে দিন, তোমাদের (জীবন হরণের) দায়িত্বে নিয়োজিত মৃত্যুর ফেরেশতা তোমাদের জীবন হরণ করবে। তারপর তোমাদেরকে তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ফিরিয়ে নেয়া হবে। (সূরা সাজদা- ১১)
মৃত্যুর সময় ফেরেশতারা কাফিরদেরকে প্রহার করে :
وَلَوْ تَرٰۤى اِذْ يَتَوَفَّى الَّذِيْنَ كَفَرُوا الْمَلَآئِكَةُ يَضْرِبُوْنَ وُجُوْهَهُمْ وَاَدْبَارَهُمْۚ وَذُوْقُوْا عَذَابَ الْحَرِيْقِ
তুমি যদি (সেই ভয়াবহ অবস্থা) দেখতে পেতে, যখন ফেরেশতাগণ কাফিরদের মুখমন্ডলে ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করে তাদের প্রাণ হরণ করে এবং বলে, তোমরা দহনযন্ত্রণা ভোগ করো। (সূরা আনফাল- ৫০)
মৃত্যুর সময় ফেরেশতারা নেককারদেরকে সালাম জানায় :
اَلَّذِيْنَ تَتَوَفَّاهُمُ الْمَلَآئِكَةُ طَيِّبِيْنَ يَقُوْلُوْنَ سَلَامٌ عَلَيْكُمُ ادْخُلُوا الْجَنَّةَ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
ফেরেশতাগণ পবিত্র থাকাবস্থায় যাদের মৃত্যু ঘটায় তাদেরকে বলে, তোমাদের প্রতি শান্তি! তোমরা যা করতে তার ফলে জান্নাতে প্রবেশ করো। (সূরা নাহল- ৩২)
ফেরেশতারা আল্লাহর আরশ ঘিরে আছেন :
وَتَرَى الْمَلَآئِكَةَ حَآفِّيْنَ مِنْ حَوْلِ الْعَرْشِ يُسَبِّحُوْنَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ
তুমি ফেরেশতাদেরকে দেখতে পাবে যে, তারা আরশের চারদিক ঘিরে তাদের প্রতিপালকের পবিত্রতা ও প্রশংসা করছে। (সূরা যুমার- ৭৫)
কিয়ামতের দিন আটজন ফেরেশতা আরশ বহন করবে :
وَالْمَلَكُ عَلٰۤى اَرْجَآئِهَاؕ وَيَحْمِلُ عَرْشَ رَبِّكَ فَوْقَهُمْ يَوْمَئِذٍ ثَمَانِيَةٌ
ফেরেশতাগণ তাঁর পার্শ্বে থাকবে এবং সেদিন আটজন ফেরেশতা তোমার প্রতিপালকের আরশকে তাদের উপর বহন করবে। (সূরা হাক্কাহ- ১৭)
কিয়ামতের দিন ফেরেশতারা সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়াবে :
يَوْمَ يَقُوْمُ الرُّوْحُ وَالْمَلَآئِكَةُ صَفًّا لَّا يَتَكَلَّمُوْنَ اِلَّا مَنْ اَذِنَ لَهُ الرَّحْمٰنُ وَقَالَ صَوَابًا
সেদিন রূহ ও ফেরেশতারা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াবে। অতঃপর দয়াময় আল্লাহ যাকে অনুমতি দেবেন, সে ব্যতীত অন্য কেউ কথা বলতে পারবে না। আর সে (যা বলবে) সঠিক বলবে। (সূরা নাবা- ৩৮)
وَجَآءَ رَبُّكَ وَالْمَلَكُ صَفًّا صَفًّا
যখন আপনার পালনকর্তা উপস্থিত হবেন তখন ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধ থাকবে। (সূরা ফাজর- ২২)
জাহান্নামের শাস্তির কাজে ফেরেশতারা নিয়োজিত রয়েছে :
عَلَيْهَا تِسْعَةَ عَشَرَ – وَمَا جَعَلْنَاۤ اَصْحَابَ النَّارِ اِلَّا مَلَآئِكَةً۪ وَمَا جَعَلْنَا عِدَّتَهُمْ اِلَّا فِتْنَةً لِّلَّذِيْنَ كَفَرُوْا
সেখানে (জাহান্নামে) রয়েছে ঊনিশজন (প্রহরী)। আর আমি ফেরেশতাদেরকেই জাহান্নামের প্রহরী বানিয়েছি এবং কাফিরদের পরীক্ষার জন্যই তাদের এই সংখ্যা উল্লেখ করেছি। (সূরা মুদ্দাসসির- ৩০, ৩১)
জাহান্নামের ফেরেশতারা কঠোর হৃদয়ের অধিকারী :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا قُوْاۤ اَنْفُسَكُمْ وَاَهْلِيْكُمْ نَارًا وَّقُوْدُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلَآئِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَّا يَعْصُوْنَ اللهَ مَاۤ اَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُوْنَ مَا يُؤْمَرُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে ঐ অগ্নি হতে রক্ষা করো, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। যেখানে নিয়োজিত আছে কঠোর ও নির্মম হৃদয়ের অধিকারী ফেরেশতাগণ, যারা আল্লাহ যা আদেশ করেন তা অমান্য করে না এবং তাঁরা যা করতে আদিষ্ট হয় তাই করেন। (সূরা তাহরীম- ৬)
اَلَّذِيْنَ يَحْمِلُوْنَ الْعَرْشَ وَمَنْ حَوْلَهٗ يُسَبِّحُوْنَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَيُؤْمِنُوْنَ بِهٖ
যারা আরশ ধারণ করে আছে এবং যারা এর চারপাশে রয়েছে, তারা প্রশংসার সাথে তাদের প্রতিপালকের পবিত্রতা ঘোষণা করে এবং তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে। (সূরা মু’মিন- ৭)
ফেরেশতারা আল্লাহর ইবাদাতে ক্লান্ত হয় না :
وَلَه مَنْ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِؕ وَمَنْ عِنْدَهٗ لَا يَسْتَكْبِرُوْنَ عَنْ عِبَادَتِهٖ وَلَا يَسْتَحْسِرُوْنَ
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা আছে সবই তাঁর। আর যারা তাঁর সান্নিধ্যে আছে তারা অহংকারবশে তাঁর ইবাদাত করা হতে বিমুখ হয় না এবং ক্লামিত্মও বোধ করে না। (সূরা আম্বিয়া- ১৯)
اِنَّ الَّذِيْنَ عِنْدَ رَبِّكَ لَا يَسْتَكْبِرُوْنَ عَنْ عِبَادَتِهٖ وَيُسَبِّحُوْنَهٗ وَلَهٗ يَسْجُدُوْنَ
যারা তোমার প্রতিপালকের সান্নিধ্যে রয়েছে তারা অহংকারে তাঁর ইবাদাত হতে বিমুখ হয় না, বরং তারা তাঁরই পবিত্রতা ঘোষণা করে এবং তাঁরই নিকট সিজদাবনত হয়। (সূরা আ‘রাফ- ২০৬)
ফেরেশতারা আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করে :
يُسَبِّحُوْنَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ لَا يَفْتُرُوْنَ
তারা দিনে ও রাত্রে (সর্বদায়) তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে, আর তারা এতে শৈথিল্য করে না। (সূরা আম্বিয়া- ২০)
ফেরেশতারা আল্লাহর জন্য সিজদা করে :
وَلِلّٰهِ يَسْجُدُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَرْضِ مِنْ دَآبَّةٍ وَّالْمَلَآئِكَةُ وَهُمْ لَا يَسْتَكْبِرُوْنَ
আকাশমন্ডলী ও জমিনের মধ্যে যেসব জীবজন্তু আছে সকলেই আল্লাহকে সিজদা করে। আর ফেরেশতাগণও (তাঁকে সিজদা করে) এবং তারা অহংকার করে না। (সূরা নাহল- ৪৯)
ফেরেশতারা আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য দেয় :
شَهِدَ اللهُ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ وَالْمَلَآئِكَةُ وَاُولُو الْعِلْمِ قَآئِمًا ۢبِالْقِسْطِؕ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, তিনি ছাড়া কোন মা‘বুদ নেই। (এ বিষয়ে আরো সাক্ষ্যদানকারী হচ্ছেন) ফেরেশতা ও জ্ঞানীগণ। তিনি ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত, তিনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই। আর তিনি মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা আলে ইমরান- ১৮)
ফেরেশতারা কুরআনের সত্যতার সাক্ষ্য দেয় :
لٰكِنِ اللهُ يَشْهَدُ بِمَاۤ اَنْزَلَ اِلَيْكَ اَنْزَلَهٗ بِعِلْمِهٖۚ وَالْمَلَآئِكَةُ يَشْهَدُوْنَؕ وَكَفٰى بِاللهِ شَهِيْدًا
আল্লাহ এ মর্মে সাক্ষ্য দেন যে, তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছেন তা নাযিল করেছেন নিজ জ্ঞানে এবং ফেরেশতাগণও এর সাক্ষ্য দেয়। আর সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। (সূরা নিসা- ১৬৬)
ফেরেশতাদের আকৃতি বিভিন্ন রকম :
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ فَاطِرِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ جَاعِلِ الْمَلَآئِكَةِ رُسُلًا اُولِۤيْ اَجْنِحَةٍ مَّثْنٰى وَثُلَاثَ وَرُبَاعَؕ يَزِيْدُ فِى الْخَلْقِ مَا يَشَآءُؕ اِنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি ফেরেশতাদেরকে করেছেন সংবাদ বাহক, যারা দুই দুই, তিন তিন ও চার চার ডানা বিশিষ্ট। তিনি সৃষ্টির মধ্যে যা ইচ্ছা বাড়িয়ে দেন; নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা ফাতির- ১)
তারা মানুষের আকৃতি ধারণ করে কথা বলতে পারেন :
فَاَرْسَلْنَاۤ اِلَيْهَا رُوْحَنَا فَتَمَثَّلَ لَهَا بَشَرًا سَوِيًّا – قَالَتْ اِنِّۤيْ اَعُوْذُ بِالرَّحْمٰنِ مِنْكَ اِنْ كُنْتَ تَقِيًّا – قَالَ اِنَّمَاۤ اَنَاْ رَسُوْلُ رَبِّكِ لِاَهَبَ لَكِ غُلَامًا زَكِيًّا
অতঃপর আমি তার নিকট আমার রূহকে (জিবরাঈল) পাঠালাম, সে তার নিকট পূর্ণ মানবাকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করল। মারইয়াম বলল, আল্লাহকে ভয় করো যদি তুমি ‘মুত্তাক্বী’ হও, আমি তোমার হতে দয়াময়ের নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। সে বলল, আমি তো তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে প্রেরিত হয়েছি, তোমাকে একটি পবিত্র পুত্র দান করার জন্য। (সূরা মারইয়াম, ১৭-১৯)
আদম (আঃ) সৃষ্টির সময় ফেরেশতাদের সাথে আল্লাহর আলোচনা :
وَاِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَآئِكَةِ اِنِّيْ جَاعِلٌ فِى الْاَرْضِ خَلِيْفَةًؕ قَالُوْاۤ اَ تَجْعَلُ فِيْهَا مَنْ يُّفْسِدُ فِيْهَا وَيَسْفِكُ الدِّمَآءَ وَنَحْنُ نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَ قَالَ اِنِّۤيْ اَعْلَمُ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ
(স্বরণ করো, সেই সময়ের কথা) যখন তোমার রব ফেরেশতাদেরকে বললেন, নিশ্চয় আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করব। তখন তারা বলল, আপনি কি এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন, যারা সেখানে বিবাদ করবে এবং রক্তপাত করবে? অথচ আমরাই তো আপনার গুণগান করছি এবং আপনারই পবিত্রতা বর্ণনা করে থাকি। তিনি বললেন, নিশ্চয় আমি যা জানি তোমরা তা জান না। (সূরা বাক্বারা- ৩০)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ আমরা আপনার দাস, আমরা আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি এবং তাসবীহ পড়ছি। তাহলে এখন আর কিসের অভাব? জবাবে আল্লাহ বলেন, খলীফা নিযুক্ত করার জন্য যে প্রয়োজনীয়তা রয়েছে তা আমি জানি, কিন্তু তোমরা তা বুঝতে পারবে না। তোমরা নিজেদের যেসব কাজের কথা বলছ, সেগুলোই যথেষ্ট নয়। আমি এর চেয়েও বেশি কিছু চাই। তাই পৃথিবীতে ক্ষমতা ও ইচ্ছাশক্তিসম্পন্ন একটি জীব সৃষ্টি করার সংকল্প করেছি।
ফেরেশতারা আদম (আঃ) কে সিজদা করেছেন :
وَاِذْ قُلْنَا لِلْمَلَآئِكَةِ اسْجُدُوْا لِاٰدَمَ فَسَجَدُوْاۤ اِلَّاۤ اِبْلِيْسَ اَبٰى وَاسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِيْنَ
যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বলেছিলাম যে, তোমরা আদমকে সিজদা করো, তখন ইবলিস ব্যতীত সকলেই সিজদা করেছিল। সে অস্বীকার করল ও অহংকার করল, ফলে সে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল। (সূরা বাক্বারা- ৩৪)
আল্লাহ ফেরেশতাদের দ্বারা মানুষকে সাহায্য করেন :
اِذْ تَسْتَغِيْثُوْنَ رَبَّكُمْ فَاسْتَجَابَ لَكُمْ اَنِّيْ مُمِدُّكُمْ بِاَلْفٍ مِّنَ الْمَلَآئِكَةِ مُرْدِفِيْنَ
স্মরণ করো, যখন তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করেছিলে তখন তিনি তোমাদেরকে জবাব দিয়েছিলেন যে, আমি তোমাদেরকে পর পর আগমনকারী এক হাজার ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করব। (সূরা আনফাল- ৯)
ফেরেশতাদের মধ্যে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বার্তাবাহক নির্বাচন করেন :
اَللهُ يَصْطَفِيْ مِنَ الْمَلَآئِكَةِ رُسُلًا وَّمِنَ النَّاسِ۪ اِنَّ اللهَ سَمِيْعٌ ۢبَصِيْرٌ
আল্লাহ ফেরেশতাদের মধ্য হতে মনোনীত করেন বার্তাবাহক এবং মানুষের মধ্য হতেও; নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। (সূরা হজ্জ- ৭৫)
জিবরাঈল (আঃ) ওহী নিয়ে আসেন :
قُلْ مَنْ كَانَ عَدُوًّا لِّجِبْرِيْلَ فَاِنَّهٗ نَزَّلَهٗ عَلَى قَلْبِكَ بِاِذْنِ اللّٰهِ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ وَهُدًى وَّبُشْرٰى لِلْمُؤْمِنِيْنَ
যে ব্যক্তি জিবরাঈলের সাথে শত্রুতা রাখে তাকে বলে দাও, তিনিই তো আল্লাহর হুকুমে এ কুরআনকে তোমার অন্তঃকরণে পৌঁছে দেন, যা তার পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের সত্যায়ন করে এবং মুমিনদেরকে পথপ্রদর্শন করে ও সুসংবাদ দেয়। (সূরা বাক্বারা- ৯৭)
জিবরাঈল (আঃ) খুবই শক্তিশালী ও জ্ঞানী :
عَلَّمَهٗ شَدِيْدُ الْقُوٰى – ذُوْ مِرَّةٍؕ فَاسْتَوٰى
তাকে (ওহী) শিক্ষা দান করেছে এমন একজন (ফেরেশতা), যিনি প্রবল শক্তির অধিকারী, বুদ্ধিমত্তার অধিকারী; অতঃপর তিনি একদিন নিজ আকৃতিতে (নবীর সামনে এসে) দাঁড়ালেন। (সূরা নাজম- ৫, ৬)
ক্বদরের রাতে অনেক ফেরেশতা অবতীর্ণ হয় :
تَنَزَّلُ الْمَلَآئِكَةُ وَالرُّوْحُ فِيْهَا بِاِذْنِ رَبِّهِمْ مِّنْ كُلِّ اَمْرٍ
এ রাতে প্রত্যেক বিষয়ের জন্য তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয়। (সূরা ক্বদর- ৪)
ফেরেশতারা মানুষের জন্য দু‘আ করেন :
اَلَّذِيْنَ يَحْمِلُوْنَ الْعَرْشَ وَمَنْ حَوْلَهٗ يُسَبِّحُوْنَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَيُؤْمِنُوْنَ بِهٖ وَيَسْتَغْفِرُوْنَ لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۚ رَبَّنَا وَسِعْتَ كُلَّ شَيْءٍ رَّحْمَةً وَّعِلْمًا فَاغْفِرْ لِلَّذِيْنَ تَابُوْا وَاتَّبَعُوْا سَبِيْلَكَ وَقِهِمْ عَذَابَ الْجَحِيْمِ ‐ رَبَّنَا وَاَدْخِلْهُمْ جَنَّاتِ عَدْنِ نِ الَّتِيْ وَعَدْتَّهُمْ وَمَنْ صَلَحَ مِنْ اٰبَآئِهِمْ وَاَزْوَاجِهِمْ وَذُرِّيَّاتِهِمْؕ اِنَّكَ اَنْتَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمِ ‐ وَقِهِمُ السَّيِّئَاتِؕ وَمَنْ تَقِ السَّيِّئَاتِ يَوْمَئِذٍ فَقَدْ رَحِمْتَهٗؕ وَذٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ
যারা আরশ ধারণ করে আছে এবং যারা এর চতুষ্পার্শেব রয়েছে, তারা তাদের প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে প্রশংসার সাথে; আর তারা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং মুমিনদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে। (তারা বলে) হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি সকল কিছুকেই (আপনার) জ্ঞান ও রহমত দ্বারা পরিবেষ্টন করে আছেন। অতএব যারা ফিরে আসে ও আপনার পথ অনুসরণ করে আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা করুন। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি তাদেরকে প্রবেশ করান স্থায়ী জান্নাতে, যার অঙ্গীকার আপনি তাদেরকে দিয়েছেন এবং তাদের বাপ-দাদা, স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততির মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে তাদেরকেও (দিয়েছেন)। নিশ্চয় আপনি মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাবান। আর আপনি তাদেরকে মন্দকাজসমূহ হতে রক্ষা করুন। আপনি যাকে মন্দকাজসমূহ হতে রক্ষা করেন সেটাই তো তার উপর আপনার অনুগ্রহ। আর এটাই তো মহাসাফল্য। (সূরা মু’মিন, ৭-৯)
ফেরেশতারা নবী ﷺ এর প্রতি দরূদ পাঠ করে :
اِنَّ اللهَ وَمَلَآئِكَتَهٗ يُصَلُّوْنَ عَلَى النَّبِيِّؕ يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا صَلُّوْا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا
নিশ্চয় আল্লাহ নবীর প্রতি রহমত প্রেরণ করেন এবং তাঁর ফেরেশতারাও নবীর জন্য রহমত প্রার্থনা করে। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও তার জন্য রহমত প্রার্থনা করো এবং তার প্রতি সালাম প্রেরণ করো। (সূরা আহযাব- ৫৬)
ফেরেশতারা জান্নাতবাসীদেরকে সালাম জানাবে :
وَالْمَلَآئِكَةُ يَدْخُلُوْنَ عَلَيْهِمْ مِّنْ كُلِّ بَابٍ – سَلَامٌ عَلَيْكُمْ بِمَا صَبَرْتُمْ فَنِعْمَ عُقْبَى الدَّارِ
ফেরেশতাগণ তাদের নিকট উপস্থিত হবে প্রত্যেক দরজা দিয়ে এবং বলবে, তোমরা ধৈর্যধারণ করেছ বলে তোমাদের প্রতি শামিত্ম; এ পরিণাম কতই না উত্তম! (সূরা রা‘দ- ২৩, ২৪)
মৃত্যুর ফেরেশতা প্রাণীর জান কবজ করে :
قُلْ يَتَوَفَّاكُمْ مَّلَكُ الْمَوْتِ الَّذِيْ وُكِّلَ بِكُمْ ثُمَّ اِلٰى رَبِّكُمْ تُرْجَعُوْنَ
আপনি বলে দিন, তোমাদের (জীবন হরণের) দায়িত্বে নিয়োজিত মৃত্যুর ফেরেশতা তোমাদের জীবন হরণ করবে। তারপর তোমাদেরকে তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ফিরিয়ে নেয়া হবে। (সূরা সাজদা- ১১)
মৃত্যুর সময় ফেরেশতারা কাফিরদেরকে প্রহার করে :
وَلَوْ تَرٰۤى اِذْ يَتَوَفَّى الَّذِيْنَ كَفَرُوا الْمَلَآئِكَةُ يَضْرِبُوْنَ وُجُوْهَهُمْ وَاَدْبَارَهُمْۚ وَذُوْقُوْا عَذَابَ الْحَرِيْقِ
তুমি যদি (সেই ভয়াবহ অবস্থা) দেখতে পেতে, যখন ফেরেশতাগণ কাফিরদের মুখমন্ডলে ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করে তাদের প্রাণ হরণ করে এবং বলে, তোমরা দহনযন্ত্রণা ভোগ করো। (সূরা আনফাল- ৫০)
মৃত্যুর সময় ফেরেশতারা নেককারদেরকে সালাম জানায় :
اَلَّذِيْنَ تَتَوَفَّاهُمُ الْمَلَآئِكَةُ طَيِّبِيْنَ يَقُوْلُوْنَ سَلَامٌ عَلَيْكُمُ ادْخُلُوا الْجَنَّةَ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
ফেরেশতাগণ পবিত্র থাকাবস্থায় যাদের মৃত্যু ঘটায় তাদেরকে বলে, তোমাদের প্রতি শান্তি! তোমরা যা করতে তার ফলে জান্নাতে প্রবেশ করো। (সূরা নাহল- ৩২)
ফেরেশতারা আল্লাহর আরশ ঘিরে আছেন :
وَتَرَى الْمَلَآئِكَةَ حَآفِّيْنَ مِنْ حَوْلِ الْعَرْشِ يُسَبِّحُوْنَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ
তুমি ফেরেশতাদেরকে দেখতে পাবে যে, তারা আরশের চারদিক ঘিরে তাদের প্রতিপালকের পবিত্রতা ও প্রশংসা করছে। (সূরা যুমার- ৭৫)
কিয়ামতের দিন আটজন ফেরেশতা আরশ বহন করবে :
وَالْمَلَكُ عَلٰۤى اَرْجَآئِهَاؕ وَيَحْمِلُ عَرْشَ رَبِّكَ فَوْقَهُمْ يَوْمَئِذٍ ثَمَانِيَةٌ
ফেরেশতাগণ তাঁর পার্শ্বে থাকবে এবং সেদিন আটজন ফেরেশতা তোমার প্রতিপালকের আরশকে তাদের উপর বহন করবে। (সূরা হাক্কাহ- ১৭)
কিয়ামতের দিন ফেরেশতারা সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়াবে :
يَوْمَ يَقُوْمُ الرُّوْحُ وَالْمَلَآئِكَةُ صَفًّا لَّا يَتَكَلَّمُوْنَ اِلَّا مَنْ اَذِنَ لَهُ الرَّحْمٰنُ وَقَالَ صَوَابًا
সেদিন রূহ ও ফেরেশতারা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াবে। অতঃপর দয়াময় আল্লাহ যাকে অনুমতি দেবেন, সে ব্যতীত অন্য কেউ কথা বলতে পারবে না। আর সে (যা বলবে) সঠিক বলবে। (সূরা নাবা- ৩৮)
وَجَآءَ رَبُّكَ وَالْمَلَكُ صَفًّا صَفًّا
যখন আপনার পালনকর্তা উপস্থিত হবেন তখন ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধ থাকবে। (সূরা ফাজর- ২২)
জাহান্নামের শাস্তির কাজে ফেরেশতারা নিয়োজিত রয়েছে :
عَلَيْهَا تِسْعَةَ عَشَرَ – وَمَا جَعَلْنَاۤ اَصْحَابَ النَّارِ اِلَّا مَلَآئِكَةً۪ وَمَا جَعَلْنَا عِدَّتَهُمْ اِلَّا فِتْنَةً لِّلَّذِيْنَ كَفَرُوْا
সেখানে (জাহান্নামে) রয়েছে ঊনিশজন (প্রহরী)। আর আমি ফেরেশতাদেরকেই জাহান্নামের প্রহরী বানিয়েছি এবং কাফিরদের পরীক্ষার জন্যই তাদের এই সংখ্যা উল্লেখ করেছি। (সূরা মুদ্দাসসির- ৩০, ৩১)
জাহান্নামের ফেরেশতারা কঠোর হৃদয়ের অধিকারী :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا قُوْاۤ اَنْفُسَكُمْ وَاَهْلِيْكُمْ نَارًا وَّقُوْدُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلَآئِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَّا يَعْصُوْنَ اللهَ مَاۤ اَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُوْنَ مَا يُؤْمَرُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে ঐ অগ্নি হতে রক্ষা করো, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। যেখানে নিয়োজিত আছে কঠোর ও নির্মম হৃদয়ের অধিকারী ফেরেশতাগণ, যারা আল্লাহ যা আদেশ করেন তা অমান্য করে না এবং তাঁরা যা করতে আদিষ্ট হয় তাই করেন। (সূরা তাহরীম- ৬)
মুশরিকরা ফেরেশতাদেরকে আল্লাহর কন্যা মনে করে :
وَجَعَلُوا الْمَلَآئِكَةَ الَّذِيْنَ هُمْ عِبَادُ الرَّحْمٰنِ اِنَاثًا – اَشَهِدُوْا خَلْقَهُمْ سَتُكْتَبُ شَهَادَتُهُمْ وَيُسْاَلُوْنَ
তারা দয়াময় আল্লাহর বান্দা ফেরেশতাদেরকে কন্যা হিসেবে গণ্য করেছে। (তারা কীভাবে এরূপ কথা বলে) এদের সৃষ্টির সময় কি তারা উপস্থিত ছিল? তাদের সাক্ষী লিপিবদ্ধ করা হবে এবং তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। (সূরা যুখরুফ- ১৯)
তাদের কাছে আল্লাহর প্রশ্ন :
فَاسْتَفْتِهِمْ اَلِرَبِّكَ الْبَنَاتُ وَلَهُمُ الْبَنُوْنَ – اَمْ خَلَقْنَا الْمَلَآئِكَةَ اِنَاثًا وَّهُمْ شَاهِدُوْنَ
তুমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, তারা কি মনে করে তোমার প্রতিপালকের জন্য কন্যাসন্তান আর তাদের জন্য পুত্রসন্তান? অথবা আমি কি ফেরেশতাদেরকে নারীরূপে সৃষ্টি করেছি, আর তারা সে সময় উপস্থিত ছিল? (সূরা সাফফাত- ১৪৯, ১৫০)
ফেরেশতাগণ উপাস্য হতে পারেন না :
وَلَا يَاْمُرَكُمْ اَنْ تَتَّخِذُوا الْمَلَآئِكَةَ وَالنَّبِيِّيْنَ اَرْبَابًا – اَيَاْمُرُكُمْ بِالْكُفْرِ بَعْدَ اِذْ اَنْتُمْ مُّسْلِمُوْنَ
আর কোন নবী তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিতে পারেন না যে, তোমরা ফেরেশতা এবং নবীদেরকে উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করো। তিনি কি তোমাদেরকে মুসলিম হওয়ার পর কুফরীর নির্দেশ দেবেন? (সূরা আলে ইমরান- ৮০)
অনুমতি ছাড়া ফেরেশতারা কারো জন্য শাফা‘আত করতে পারবে না :
وَكَمْ مِّنْ مَّلَكٍ فِى السَّمَاوَاتِ لَا تُغْنِيْ شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا اِلَّا مِنْ ۢبَعْدِ اَنْ يَّاْذَنَ اللهُ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيَرْضٰى
আকাশসমূহে অনেক ফেরেশতা রয়েছে! যাদের কোন সুপারিশ কাজে আসবে না, যতক্ষণ আল্লাহ যাকে ইচ্ছা এবং যার প্রতি সন্তুষ্ট তাকে অনুমতি না দেন। (সূরা নাজম- ২৬)
وَجَعَلُوا الْمَلَآئِكَةَ الَّذِيْنَ هُمْ عِبَادُ الرَّحْمٰنِ اِنَاثًا – اَشَهِدُوْا خَلْقَهُمْ سَتُكْتَبُ شَهَادَتُهُمْ وَيُسْاَلُوْنَ
তারা দয়াময় আল্লাহর বান্দা ফেরেশতাদেরকে কন্যা হিসেবে গণ্য করেছে। (তারা কীভাবে এরূপ কথা বলে) এদের সৃষ্টির সময় কি তারা উপস্থিত ছিল? তাদের সাক্ষী লিপিবদ্ধ করা হবে এবং তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। (সূরা যুখরুফ- ১৯)
তাদের কাছে আল্লাহর প্রশ্ন :
فَاسْتَفْتِهِمْ اَلِرَبِّكَ الْبَنَاتُ وَلَهُمُ الْبَنُوْنَ – اَمْ خَلَقْنَا الْمَلَآئِكَةَ اِنَاثًا وَّهُمْ شَاهِدُوْنَ
তুমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, তারা কি মনে করে তোমার প্রতিপালকের জন্য কন্যাসন্তান আর তাদের জন্য পুত্রসন্তান? অথবা আমি কি ফেরেশতাদেরকে নারীরূপে সৃষ্টি করেছি, আর তারা সে সময় উপস্থিত ছিল? (সূরা সাফফাত- ১৪৯, ১৫০)
ফেরেশতাগণ উপাস্য হতে পারেন না :
وَلَا يَاْمُرَكُمْ اَنْ تَتَّخِذُوا الْمَلَآئِكَةَ وَالنَّبِيِّيْنَ اَرْبَابًا – اَيَاْمُرُكُمْ بِالْكُفْرِ بَعْدَ اِذْ اَنْتُمْ مُّسْلِمُوْنَ
আর কোন নবী তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিতে পারেন না যে, তোমরা ফেরেশতা এবং নবীদেরকে উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করো। তিনি কি তোমাদেরকে মুসলিম হওয়ার পর কুফরীর নির্দেশ দেবেন? (সূরা আলে ইমরান- ৮০)
অনুমতি ছাড়া ফেরেশতারা কারো জন্য শাফা‘আত করতে পারবে না :
وَكَمْ مِّنْ مَّلَكٍ فِى السَّمَاوَاتِ لَا تُغْنِيْ شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا اِلَّا مِنْ ۢبَعْدِ اَنْ يَّاْذَنَ اللهُ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيَرْضٰى
আকাশসমূহে অনেক ফেরেশতা রয়েছে! যাদের কোন সুপারিশ কাজে আসবে না, যতক্ষণ আল্লাহ যাকে ইচ্ছা এবং যার প্রতি সন্তুষ্ট তাকে অনুমতি না দেন। (সূরা নাজম- ২৬)
ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান আনতে হবে :
لَيْسَ الْبِرَّ اَنْ تُوَلُّوْا وُجُوْهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلٰكِنَّ الْبِرَّ مَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَالْمَلَآئِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّيْنَ
তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল পূর্ব দিকে ফেরাও বা পশ্চিম দিকে ফেরাও, তাতে কোন পুণ্য নেই। বরং পুণ্য রয়েছে তার মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতাগণ, কিতাব ও নবীগণের প্রতি ঈমান আনয়ন করে। (সূরা বাক্বারা- ১৭৭)
যে ফেরেশতাদেরকে অস্বীকার করে সে পথভ্রষ্ট হবে :
وَمَنْ يَّكْفُرْ بِاللهِ وَمَلَآئِكَتِهٖ وَكُتُبِهٖ وَرُسُلِهٖ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا ۢبَعِيْدًا
যে ব্যক্তি আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ এবং আখিরাতকে প্রত্যাখ্যান করবে, সে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট হয়ে পড়বে। (সূরা নিসা- ১৩৬)
ফেরেশতাদের সাথে শত্রুতা করা কুফরী :
مَنْ كَانَ عَدُوًّا لِّلّٰهِ وَمَلَآئِكَتِهٖ وَرُسُلِهٖ وَجِبْرِيْلَ وَمِيْكَالَ فَاِنَّ اللهَ عَدُوٌّ لِّلْكَافِرِيْنَ
যে ব্যক্তি আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর রাসূলগণ, জিবরাঈল এবং মিকাঈলের সাথে শত্রুতা করে, নিশ্চয় আল্লাহ এরূপ কাফিরদের শত্রু। (সূরা বাক্বারা- ৯৮)
لَيْسَ الْبِرَّ اَنْ تُوَلُّوْا وُجُوْهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلٰكِنَّ الْبِرَّ مَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَالْمَلَآئِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّيْنَ
তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল পূর্ব দিকে ফেরাও বা পশ্চিম দিকে ফেরাও, তাতে কোন পুণ্য নেই। বরং পুণ্য রয়েছে তার মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতাগণ, কিতাব ও নবীগণের প্রতি ঈমান আনয়ন করে। (সূরা বাক্বারা- ১৭৭)
যে ফেরেশতাদেরকে অস্বীকার করে সে পথভ্রষ্ট হবে :
وَمَنْ يَّكْفُرْ بِاللهِ وَمَلَآئِكَتِهٖ وَكُتُبِهٖ وَرُسُلِهٖ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا ۢبَعِيْدًا
যে ব্যক্তি আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ এবং আখিরাতকে প্রত্যাখ্যান করবে, সে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট হয়ে পড়বে। (সূরা নিসা- ১৩৬)
ফেরেশতাদের সাথে শত্রুতা করা কুফরী :
مَنْ كَانَ عَدُوًّا لِّلّٰهِ وَمَلَآئِكَتِهٖ وَرُسُلِهٖ وَجِبْرِيْلَ وَمِيْكَالَ فَاِنَّ اللهَ عَدُوٌّ لِّلْكَافِرِيْنَ
যে ব্যক্তি আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর রাসূলগণ, জিবরাঈল এবং মিকাঈলের সাথে শত্রুতা করে, নিশ্চয় আল্লাহ এরূপ কাফিরদের শত্রু। (সূরা বাক্বারা- ৯৮)
জিনকে সৃষ্টি করা হয়েছে আগুন থেকে :
وَخَلَقَ الْجَآنَّ مِنْ مَّارِجٍ مِّنْ نَّارٍ
আর আল্লাহ জিনদেরকে সৃষ্টি করেছেন অগ্নিশিখা হতে। (সূরা আর রহমান- ১৫)
ব্যাখ্যা : نَارٌ (নার) অর্থ এক বিশেষ ধরনের আগুন। কাঠ বা কয়লা জ্বালালে যে আগুন সৃষ্টি হয় এটা সে আগুন নয়। আর مَارِجٌ (মারিজ) অর্থ ধোঁয়াবিহীন শিখা। প্রথম মানুষকে যেভাবে মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে, তারপর সৃষ্টির বিভিন্ন স্তর অতিক্রম করার সময় তার মাটির সত্তা অস্তিমাংসে তৈরি জীবন্ত মানুষের আকৃতি লাভ করেছে এবং পরবর্তী সময়ে শুক্রের সাহায্যে তার বংশধারা চালু হয়েছে: অনুরূপ প্রথম জিনকে নিছক আগুনের শিখা থেকে সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং তার বংশধরদের থেকে পরবর্তী জিনদের বংশধারা সৃষ্টি হয়ে চলেছে।
ইবলিস জিনদের অন্তর্ভুক্ত :
وَاِذْ قُلْنَا لِلْمَلَآئِكَةِ اسْجُدُوْا لِاٰدَمَ فَسَجَدُوْاۤ اِلَّاۤ اِبْلِيْسَؕ كَانَ مِنَ الْجِنِّ فَفَسَقَ عَنْ اَمْرِ رَبِّهٖؕ اَفَتَتَّخِذُوْنَهٗ وَذُرِّيَّتَهٗۤ اَوْلِيَآءَ مِنْ دُوْنِيْ وَهُمْ لَكُمْ عَدُوٌّ ؕ بِئْسَ لِلظَّالِمِيْنَ بَدَلًا
স্মরণ করো, যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বলেছিলাম, আদমকে সিজদা করো, তখন ইবলিস ব্যতীত সকলেই সিজদা করল। (মূলত) সে ছিল জিনদের মধ্যে একজন, সে তার প্রতিপালকের আদেশ অমান্য করল। তবুও কি তোমরা আমার পরিবর্তে তাকে এবং তার বংশধরকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করেছ? অথচ তারা তোমাদের শত্রু। যালিমদের জন্য এ বিনিময় কতই না নিকৃষ্ট। (সূরা কাহফ- ৫০)
ব্যাখ্যা : ইবলিস ফেরেশতাদের দলভুক্ত ছিল না বরং সে ছিল জিনদের একজন। তাই তার পক্ষে আনুগত্য থেকে বের হয়ে যাওয়া সম্ভব হয়। অন্যদিকে জিন হচ্ছে, মানুষের মতো একটি স্বাধীন ক্ষমতাসম্পন্ন সৃষ্টি। তাদেরকে জন্মগতভাবে আনুগত্যশীল হিসেবে সৃষ্টি করা হয়নি। বরং তাদেরকে কুফর ও ঈমান এবং আনুগত্য ও অবাধ্যতা উভয়টি করার ক্ষমতা দান করা হয়েছে। এ সত্যটিই এখানে তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, ইবলিস ছিল জিনদের দলভুক্ত। তাই সে স্বেচ্ছায় নিজের স্বাধীন ক্ষমতা ব্যবহার করে ফাসিকীর পথ বাছাই করে নেয়। এ আয়াতটি লোকদের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচলিত এক ধরনের ভুল ধারণা দূর করে দেয়। আর সে ভুল ধারণাটি হচ্ছে, ইবলিস ফেরেশতাদের দলভুক্ত ছিল। তাও আবার সাধারণ ফেরেশতা নয়, ফেরেশতাদের সরদার।
জিনদের মধ্যে সৎ এবং অসৎ উভয় রয়েছে :
وَاَنَّا مِنَّا الصَّالِحُوْنَ وَمِنَّا دُوْنَ ذٰلِكَ كُنَّا طَرَآئِقَ قِدَدًا
আমাদের কতক সৎকর্মপরায়ণ এবং কতক এর ব্যতিক্রম, আমরা ছিলাম বিভিন্ন পথের অনুসারী। (সূরা জিন- ১১)
তাদের মধ্যে যারা মুসলিম তারা জান্নাতবাসী হবে :
وَاَنَّا مِنَّا الْمُسْلِمُوْنَ وَمِنَّا الْقَاسِطُوْنَ فَمَنْ اَسْلَمَ فَاُولٰٓئِكَ تَحَرَّوْا رَشَدًا
আমাদের কতক মুসলিম এবং কতক অত্যাচারী, তবে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে তারা মুক্তির পথ খুঁজে পেয়েছে। (সূরা জিন- ১৪)
যারা মুসলিম নয় তারা জাহান্নামে জ্বলবে :
وَاَمَّا الْقَاسِطُوْنَ فَكَانُوْا لِجَهَنَّمَ حَطَبًا
অপরপক্ষে অত্যাচারীরা তো জাহান্নামের ইন্ধন। (সূরা জিন- ১৫)
وَلَقَدْ ذَرَاْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيْرًا مِّنَ الْجِنِّ وَالْاِنْسِ لَهُمْ قُلُوْبٌ لَّا يَفْقَهُوْنَ بِهَا وَلَهُمْ اَعْيُنٌ لَّا يُبْصِرُوْنَ بِهَا وَلَهُمْ اٰذَانٌ لَّا يَسْمَعُوْنَ بِهَا اُولٰٓئِكَ كَالْاَنْعَامِ بَلْ هُمْ اَضَلُّ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْغَافِلُوْنَ
আমি তো বহু জিন ও মানবকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি। তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তারা তা দ্বারা উপলব্ধি করতে পারে না, তাদের চক্ষু আছে কিন্তু তারা তা দ্বারা দেখতে পারে না এবং তাদের কর্ণ আছে কিন্তু তারা তা দ্বারা শ্রবণ করতে পারে না। তারাই পশুর ন্যায়, বরং তারা (আরো) অধিক বিভ্রান্ত এবং তারাই গাফিল। (সূরা আ‘রাফ- ১৭৯)
মানুষের মতো জিনদের উপরও আল্লাহর বিধান প্রযোজ্য :
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْاِنْسَ اِلَّا لِيَعْبُدُوْنِ
আমি জিন ও মানুষকে এজন্য সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমারই ইবাদাত করবে। (সূরা যারিয়াত- ৫)
জিনদেরকেও আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে :
يَا مَعْشَرَ الْجِنِّ وَالْاِنْسِ اَلَمْ يَاْتِكُمْ رُسُلٌ مِّنْكُمْ يَقُصُّوْنَ عَلَيْكُمْ اٰيَاتِيْ وَيُنْذِرُوْنَكُمْ لِقَآءَ يَوْمِكُمْ هٰذَا قَالُوْا شَهِدْنَا عَلٰۤى اَنْفُسِنَا وَغَرَّتْهُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا وَشَهِدُوْا عَلٰۤى اَنْفُسِهِمْ اَنَّهُمْ كَانُوْا كَافِرِيْنَ
হে জিন ও মানব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্য হতে কি রাসূলগণ তোমাদের কাছে আসেনি, যারা আমার নিদর্শন তোমাদের নিকট বর্ণনা করত এবং তোমাদেরকে এ দিবসের সম্মুখীন হওয়া সম্বন্ধে সতর্ক করত? তারা বলবে, আমরা আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলাম। বস্তুত পার্থিব জীবন তাদেরকে প্রতারিত করেছিল, ফলে তারা নিজেদের বিরুদ্ধে এ সাক্ষ্য দেবে। নিশ্চয় তারা (ইতোপূর্বে) কাফিরদের অমত্মর্ভূক্ত ছিল। (সূরা আন‘আম- ১৩০)
অনেকে জিনকে আল্লাহর শরীক মনে করে :
وَجَعَلُوْا لِلّٰهِ شُرَكَآءَ الْجِنَّ وَخَلَقَهُمْ وَخَرَقُوْا لَهٗ بَنِيْنَ وَبَنَاتٍ ۢبِغَيْرِ عِلْمٍ سُبْحَانَهٗ وَتَعَالٰى عَمَّا يَصِفُوْنَ
তারা জিনকে আল্লাহর শরীক স্থাপন করে, অথচ তিনিই এদেরকে সৃষ্টি করেছেন। আর তারা অজ্ঞতাবশত আল্লাহর প্রতি পুত্র ও কন্যাসমত্মান আরোপ করে; কিন্তু তিনি (এগুলো হতে) অনেক পবিত্র ও মহিমান্বিত। আর তারা (তাঁকে) যেভাবে গুণান্বিত করে তিনি তা হতে অনেক ঊর্ধ্বে। (সূরা আন‘আম- ১০০)
কিছু মানুষ জিনের আশ্রয় গ্রহণ করে :
كَانَ رِجَالٌ مِّنَ الْاِنْسِ يَعُوْذُوْنَ بِرِجَالٍ مِّنَ الْجِنِّ فَزَادُوْهُمْ رَهَقًا
আর কতিপয় মানুষ কতক জিনের আশ্রয় প্রার্থনা করে, ফলে তারা নিজেদের সীমালঙ্ঘন আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। (সূরা জিন- ৬)
وَخَلَقَ الْجَآنَّ مِنْ مَّارِجٍ مِّنْ نَّارٍ
আর আল্লাহ জিনদেরকে সৃষ্টি করেছেন অগ্নিশিখা হতে। (সূরা আর রহমান- ১৫)
ব্যাখ্যা : نَارٌ (নার) অর্থ এক বিশেষ ধরনের আগুন। কাঠ বা কয়লা জ্বালালে যে আগুন সৃষ্টি হয় এটা সে আগুন নয়। আর مَارِجٌ (মারিজ) অর্থ ধোঁয়াবিহীন শিখা। প্রথম মানুষকে যেভাবে মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে, তারপর সৃষ্টির বিভিন্ন স্তর অতিক্রম করার সময় তার মাটির সত্তা অস্তিমাংসে তৈরি জীবন্ত মানুষের আকৃতি লাভ করেছে এবং পরবর্তী সময়ে শুক্রের সাহায্যে তার বংশধারা চালু হয়েছে: অনুরূপ প্রথম জিনকে নিছক আগুনের শিখা থেকে সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং তার বংশধরদের থেকে পরবর্তী জিনদের বংশধারা সৃষ্টি হয়ে চলেছে।
ইবলিস জিনদের অন্তর্ভুক্ত :
وَاِذْ قُلْنَا لِلْمَلَآئِكَةِ اسْجُدُوْا لِاٰدَمَ فَسَجَدُوْاۤ اِلَّاۤ اِبْلِيْسَؕ كَانَ مِنَ الْجِنِّ فَفَسَقَ عَنْ اَمْرِ رَبِّهٖؕ اَفَتَتَّخِذُوْنَهٗ وَذُرِّيَّتَهٗۤ اَوْلِيَآءَ مِنْ دُوْنِيْ وَهُمْ لَكُمْ عَدُوٌّ ؕ بِئْسَ لِلظَّالِمِيْنَ بَدَلًا
স্মরণ করো, যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বলেছিলাম, আদমকে সিজদা করো, তখন ইবলিস ব্যতীত সকলেই সিজদা করল। (মূলত) সে ছিল জিনদের মধ্যে একজন, সে তার প্রতিপালকের আদেশ অমান্য করল। তবুও কি তোমরা আমার পরিবর্তে তাকে এবং তার বংশধরকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করেছ? অথচ তারা তোমাদের শত্রু। যালিমদের জন্য এ বিনিময় কতই না নিকৃষ্ট। (সূরা কাহফ- ৫০)
ব্যাখ্যা : ইবলিস ফেরেশতাদের দলভুক্ত ছিল না বরং সে ছিল জিনদের একজন। তাই তার পক্ষে আনুগত্য থেকে বের হয়ে যাওয়া সম্ভব হয়। অন্যদিকে জিন হচ্ছে, মানুষের মতো একটি স্বাধীন ক্ষমতাসম্পন্ন সৃষ্টি। তাদেরকে জন্মগতভাবে আনুগত্যশীল হিসেবে সৃষ্টি করা হয়নি। বরং তাদেরকে কুফর ও ঈমান এবং আনুগত্য ও অবাধ্যতা উভয়টি করার ক্ষমতা দান করা হয়েছে। এ সত্যটিই এখানে তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, ইবলিস ছিল জিনদের দলভুক্ত। তাই সে স্বেচ্ছায় নিজের স্বাধীন ক্ষমতা ব্যবহার করে ফাসিকীর পথ বাছাই করে নেয়। এ আয়াতটি লোকদের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচলিত এক ধরনের ভুল ধারণা দূর করে দেয়। আর সে ভুল ধারণাটি হচ্ছে, ইবলিস ফেরেশতাদের দলভুক্ত ছিল। তাও আবার সাধারণ ফেরেশতা নয়, ফেরেশতাদের সরদার।
জিনদের মধ্যে সৎ এবং অসৎ উভয় রয়েছে :
وَاَنَّا مِنَّا الصَّالِحُوْنَ وَمِنَّا دُوْنَ ذٰلِكَ كُنَّا طَرَآئِقَ قِدَدًا
আমাদের কতক সৎকর্মপরায়ণ এবং কতক এর ব্যতিক্রম, আমরা ছিলাম বিভিন্ন পথের অনুসারী। (সূরা জিন- ১১)
তাদের মধ্যে যারা মুসলিম তারা জান্নাতবাসী হবে :
وَاَنَّا مِنَّا الْمُسْلِمُوْنَ وَمِنَّا الْقَاسِطُوْنَ فَمَنْ اَسْلَمَ فَاُولٰٓئِكَ تَحَرَّوْا رَشَدًا
আমাদের কতক মুসলিম এবং কতক অত্যাচারী, তবে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে তারা মুক্তির পথ খুঁজে পেয়েছে। (সূরা জিন- ১৪)
যারা মুসলিম নয় তারা জাহান্নামে জ্বলবে :
وَاَمَّا الْقَاسِطُوْنَ فَكَانُوْا لِجَهَنَّمَ حَطَبًا
অপরপক্ষে অত্যাচারীরা তো জাহান্নামের ইন্ধন। (সূরা জিন- ১৫)
وَلَقَدْ ذَرَاْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيْرًا مِّنَ الْجِنِّ وَالْاِنْسِ لَهُمْ قُلُوْبٌ لَّا يَفْقَهُوْنَ بِهَا وَلَهُمْ اَعْيُنٌ لَّا يُبْصِرُوْنَ بِهَا وَلَهُمْ اٰذَانٌ لَّا يَسْمَعُوْنَ بِهَا اُولٰٓئِكَ كَالْاَنْعَامِ بَلْ هُمْ اَضَلُّ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْغَافِلُوْنَ
আমি তো বহু জিন ও মানবকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি। তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তারা তা দ্বারা উপলব্ধি করতে পারে না, তাদের চক্ষু আছে কিন্তু তারা তা দ্বারা দেখতে পারে না এবং তাদের কর্ণ আছে কিন্তু তারা তা দ্বারা শ্রবণ করতে পারে না। তারাই পশুর ন্যায়, বরং তারা (আরো) অধিক বিভ্রান্ত এবং তারাই গাফিল। (সূরা আ‘রাফ- ১৭৯)
মানুষের মতো জিনদের উপরও আল্লাহর বিধান প্রযোজ্য :
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْاِنْسَ اِلَّا لِيَعْبُدُوْنِ
আমি জিন ও মানুষকে এজন্য সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমারই ইবাদাত করবে। (সূরা যারিয়াত- ৫)
জিনদেরকেও আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে :
يَا مَعْشَرَ الْجِنِّ وَالْاِنْسِ اَلَمْ يَاْتِكُمْ رُسُلٌ مِّنْكُمْ يَقُصُّوْنَ عَلَيْكُمْ اٰيَاتِيْ وَيُنْذِرُوْنَكُمْ لِقَآءَ يَوْمِكُمْ هٰذَا قَالُوْا شَهِدْنَا عَلٰۤى اَنْفُسِنَا وَغَرَّتْهُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا وَشَهِدُوْا عَلٰۤى اَنْفُسِهِمْ اَنَّهُمْ كَانُوْا كَافِرِيْنَ
হে জিন ও মানব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্য হতে কি রাসূলগণ তোমাদের কাছে আসেনি, যারা আমার নিদর্শন তোমাদের নিকট বর্ণনা করত এবং তোমাদেরকে এ দিবসের সম্মুখীন হওয়া সম্বন্ধে সতর্ক করত? তারা বলবে, আমরা আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলাম। বস্তুত পার্থিব জীবন তাদেরকে প্রতারিত করেছিল, ফলে তারা নিজেদের বিরুদ্ধে এ সাক্ষ্য দেবে। নিশ্চয় তারা (ইতোপূর্বে) কাফিরদের অমত্মর্ভূক্ত ছিল। (সূরা আন‘আম- ১৩০)
অনেকে জিনকে আল্লাহর শরীক মনে করে :
وَجَعَلُوْا لِلّٰهِ شُرَكَآءَ الْجِنَّ وَخَلَقَهُمْ وَخَرَقُوْا لَهٗ بَنِيْنَ وَبَنَاتٍ ۢبِغَيْرِ عِلْمٍ سُبْحَانَهٗ وَتَعَالٰى عَمَّا يَصِفُوْنَ
তারা জিনকে আল্লাহর শরীক স্থাপন করে, অথচ তিনিই এদেরকে সৃষ্টি করেছেন। আর তারা অজ্ঞতাবশত আল্লাহর প্রতি পুত্র ও কন্যাসমত্মান আরোপ করে; কিন্তু তিনি (এগুলো হতে) অনেক পবিত্র ও মহিমান্বিত। আর তারা (তাঁকে) যেভাবে গুণান্বিত করে তিনি তা হতে অনেক ঊর্ধ্বে। (সূরা আন‘আম- ১০০)
কিছু মানুষ জিনের আশ্রয় গ্রহণ করে :
كَانَ رِجَالٌ مِّنَ الْاِنْسِ يَعُوْذُوْنَ بِرِجَالٍ مِّنَ الْجِنِّ فَزَادُوْهُمْ رَهَقًا
আর কতিপয় মানুষ কতক জিনের আশ্রয় প্রার্থনা করে, ফলে তারা নিজেদের সীমালঙ্ঘন আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। (সূরা জিন- ৬)
জিনদের একটি দল নবী ﷺ এর মুখে কুরআন শুনতে পায় :
وَاِذْ صَرَفْنَاۤ اِلَيْكَ نَفَرًا مِّنَ الْجِنِّ يَسْتَمِعُوْنَ الْقُرْاٰنَۚ فَلَمَّا حَضَرُوْهُ قَالُوْاۤ اَنْصِتُوْاۚ فَلَمَّا قُضِيَ وَلَّوْا اِلٰى قَوْمِهِمْ مُّنْذِرِيْنَ
যখন আমি একদল জিনকে তোমার কাছে পাঠিয়ে ছিলাম, যাতে তারা কুরআন শ্রবণ করে। অতঃপর যখন তারা ঐ জায়গায় পৌঁছল (যেখানে তুমি কুরআন তিলাওয়াত করছিলে) তখন তারা একে অপরকে বলছিল, তোমরা চুপ করে শুনো। তারপর যখন (কুরআন পড়া) হয়ে গেল, তখন তারা নিজ সম্প্রদায়ের নিকট সতর্ককারী হয়ে ফিরে গেল। (সূরা আহকাফ- ২৯)
তারা কুরআন শুনে ঈমান এনেছে :
وَاَنَّا لَمَّا سَمِعْنَا الْهُدٰۤى اٰمَنَّا بِهٖؕ فَمَنْ يُّؤْمِنْ ۢبِرَبِّهٖ فَلَا يَخَافُ بَخْسًا وَّلَا رَهَقًا
যখন আমরা হেদায়াতের বাণী শুনলাম, তখন তাতে বিশ্বাস স্থাপন করলাম। অতএব যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে, সে যেন তাঁর পক্ষ হতে কোন ক্ষতি ও কোন অন্যায়ের আশঙ্কা না করে। (সূরা জিন- ১৩)
তারা স্বজাতির কাছে কুরআনের প্রশংসা করল :
قَالُوْا يَا قَوْمَنَاۤ اِنَّا سَمِعْنَا كِتَابًا اُنْزِلَ مِنْ ۢبَعْدِ مُوْسٰى مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ يَهْدِيْۤ اِلَى الْحَقِّ وَاِلٰى طَرِيْقٍ مُّسْتَقِيْمٍ
তারা (তাদের সম্প্রদায়ের কাছে গিয়ে) বলল, হে আমাদের কওম! আমরা এমন এক কিতাব শুনলাম, যা মূসার পরে নাযিল করা হয়েছে, যা এর আগের কিতাবগুলোকে সত্যায়ন করে এবং সত্য ও সঠিক পথের দিকে হেদায়াত করে। (সূরা আহকাফ- ৩০)
তারা তাদেরকে কুরআনের প্রতি ঈমান আনার জন্য দাওয়াত দিল :
يَا قَوْمَنَاۤ اَجِيْبُوْا دَاعِيَ اللهِ وَاٰمِنُوْا بِهٖ يَغْفِرْ لَكُمْ مِّنْ ذُنُوْبِكُمْ وَيُجِرْكُمْ مِّنْ عَذَابٍ اَلِيْمٍ
হে আমাদের কওম! যে আল্লাহর দিকে ডাকে তার ডাকে সাড়া দাও এবং তাঁর প্রতি ঈমান আনয়ন করো। (যদি এসব কর) তবে আল্লাহ তোমাদের গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন এবং কষ্টদায়ক আযাব থেকে বাঁচাবেন। (সূরা আহকাফ- ৩১)
কুরআন না মানার পরিণামও বলে দিল :
وَمَنْ لَّا يُجِبْ دَاعِيَ اللهِ فَلَيْسَ بِمُعْجِزٍ فِى الْاَرْضِ وَلَيْسَ لَهٗ مِنْ دُوْنِهٖۤ اَوْلِيَآءُؕ اُولٰٓئِكَ فِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ
আর যে ব্যক্তি আল্লাহর দিকে আহবানকারীর কথা না মানে তার জন্য দুনিয়ায় এমন কোন শক্তি নেই, যে আল্লাহকে হারিয়ে দিতে পারে এবং তার জন্য এমন কোন সহায়ক নেই, যে তাকে আল্লাহর কাছ থেকে বাঁচাতে পারে। এসব লোক স্পষ্ট গোমরাহীতে পড়ে আছে। (সূরা আহকাফ- ৩২)
জিনেরা শিরক না করার সিদ্ধান্ত নিল :
قُلْ اُوْحِيَ اِلَيَّ اَنَّهُ اسْتَمَعَ نَفَرٌ مِّنَ الْجِنِّ فَقَالُوْاۤ اِنَّا سَمِعْنَا قُرْاٰنًا عَجَبًا – يَهْدِيْۤ اِلَى الرُّشْدِ فَاٰمَنَّا بِهٖؕ وَلَنْ نُّشْرِكَ بِرَبِّنَاۤ اَحَدًا
বলো, আমার প্রতি ওহী করা হয়েছে যে, জিনদের একদল মনোযোগ সহকারে (কুরআন) শ্রবণ করেছে। অতঃপর (তারা নিজ জাতির কাছে গিয়ে) বলেছে, আমরা তো এক বিস্ময়কর কুরআন শ্রবণ করেছি, যা সঠিক পথ দেখায়; তাই আমরা এতে ঈমান আনয়ন করেছি। সুতরাং আমরা কখনো আমাদের প্রতিপালকের সাথে কাউকে শরীক করব না। (সূরা জিন- ১, ২)
জিনেরা তাওহীদের ঘোষণা দিল :
وَاَنَّهٗ تَعَالٰى جَدُّ رَبِّنَا مَا اتَّخَذَ صَاحِبَةً وَّلَا وَلَدًا
নিশ্চয় আমাদের প্রতিপালকের মর্যাদা সুমহান; তিনি কোন স্ত্রী বা সন্তান গ্রহণ করেননি। (সূরা জিন- ৩)
আল্লাহ সম্পর্কে স্বজাতির ভুল ধারণা খন্ডন করল :
وَاَنَّهٗ كَانَ يَقُوْلُ سَفِيْهُنَا عَلَى اللهِ شَطَطًا – وَاَنَّا ظَنَنَّاۤ اَنْ لَّنْ تَقُوْلَ الْاِنْسُ وَالْجِنُّ عَلَى اللهِ كَذِبًا
আমাদের নির্বোধরা আল্লাহর সম্বন্ধে অতি মিথ্যা উক্তি করে। অথচ আমরা মনে করতাম যে, মানুষ এবং জিন আল্লাহ সম্বন্ধে কখনো মিথ্যা বলবে না। (সূরা জিন- ৪, ৫)
জিনেরা আল্লাহর ক্ষমতা ভালো করেই জানত :
وَاَنَّا ظَنَنَّاۤ اَنْ لَّنْ نُّعْجِزَ اللهَ فِى الْاَرْضِ وَلَنْ نُّعْجِزَهٗ هَرَبًا
আর আমাদের একান্ত বিশ্বাস হয়ে গেছে যে, আমরা পৃথিবীতে আল্লাহকে কোনক্রমে পরাভূত করতে পারব না এবং পলায়ন করেও তাঁকে ব্যর্থ করতে পারব না। (সূরা জিন- ১২)
দুষ্ট জিনেরা মানুষের সাথে শত্রুতা করে :
وَكَذٰلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا شَيَاطِيْنَ الْاِنْسِ وَالْجِنِّ يُوْحِيْ بَعْضُهُمْ اِلٰى بَعْضٍ زُخْرُفَ الْقَوْلِ غُرُوْرًاؕ وَلَوْ شَآءَ رَبُّكَ مَا فَعَلُوْهُ فَذَرْهُمْ وَمَا يَفْتَرُوْنَ
এভাবে আমি মানব ও জিনের মধ্যে শয়তানদেরকে প্রত্যেক নবীর শত্রু বানিয়ে দিয়েছি। তারা একে অন্যকে প্রতারণার উদ্দেশ্যে চমকপ্রদ কথা দ্বারা প্ররোচিত করে। যদি তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করতেন, তবে তারা এটা করত না। সুতরাং তুমি তাদেরকে ও তাদের মিথ্যা রচনাকে বর্জন করো। (সূরা আন‘আম- ১১২)
জিনদের অনিষ্টতা থেকে বাঁচার দু‘আ :
قُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ النَّاسِ – مَلِكِ النَّاسِ – اِلٰهِ النَّاسِ – مِنْ شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ – اَلَّذِيْ يُوَسْوِسُ فِيْ صُدُوْرِ النَّاسِ – مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ
(হে নবী) বলো, আমি আশ্রয় চাই মানুষের প্রতিপালকের কাছে। (আমি আশ্রয় চাই) মানুষের (আসল) বাদশার কাছে। (আমি আশ্রয় চাই) মানুষের (একমাত্র) মা‘বুদের কাছে। (আমি আশ্রয় চাই) কুমন্ত্রণাদানকারীর অনিষ্ট থেকে, যে (প্ররোচনা দিয়েই) গা ঢাকা দেয়। যে মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়। জিনদের মধ্য থেকে হোক বা মানুষদের মধ্য থেকে। (সূরা নাস)
وَاِذْ صَرَفْنَاۤ اِلَيْكَ نَفَرًا مِّنَ الْجِنِّ يَسْتَمِعُوْنَ الْقُرْاٰنَۚ فَلَمَّا حَضَرُوْهُ قَالُوْاۤ اَنْصِتُوْاۚ فَلَمَّا قُضِيَ وَلَّوْا اِلٰى قَوْمِهِمْ مُّنْذِرِيْنَ
যখন আমি একদল জিনকে তোমার কাছে পাঠিয়ে ছিলাম, যাতে তারা কুরআন শ্রবণ করে। অতঃপর যখন তারা ঐ জায়গায় পৌঁছল (যেখানে তুমি কুরআন তিলাওয়াত করছিলে) তখন তারা একে অপরকে বলছিল, তোমরা চুপ করে শুনো। তারপর যখন (কুরআন পড়া) হয়ে গেল, তখন তারা নিজ সম্প্রদায়ের নিকট সতর্ককারী হয়ে ফিরে গেল। (সূরা আহকাফ- ২৯)
তারা কুরআন শুনে ঈমান এনেছে :
وَاَنَّا لَمَّا سَمِعْنَا الْهُدٰۤى اٰمَنَّا بِهٖؕ فَمَنْ يُّؤْمِنْ ۢبِرَبِّهٖ فَلَا يَخَافُ بَخْسًا وَّلَا رَهَقًا
যখন আমরা হেদায়াতের বাণী শুনলাম, তখন তাতে বিশ্বাস স্থাপন করলাম। অতএব যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে, সে যেন তাঁর পক্ষ হতে কোন ক্ষতি ও কোন অন্যায়ের আশঙ্কা না করে। (সূরা জিন- ১৩)
তারা স্বজাতির কাছে কুরআনের প্রশংসা করল :
قَالُوْا يَا قَوْمَنَاۤ اِنَّا سَمِعْنَا كِتَابًا اُنْزِلَ مِنْ ۢبَعْدِ مُوْسٰى مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ يَهْدِيْۤ اِلَى الْحَقِّ وَاِلٰى طَرِيْقٍ مُّسْتَقِيْمٍ
তারা (তাদের সম্প্রদায়ের কাছে গিয়ে) বলল, হে আমাদের কওম! আমরা এমন এক কিতাব শুনলাম, যা মূসার পরে নাযিল করা হয়েছে, যা এর আগের কিতাবগুলোকে সত্যায়ন করে এবং সত্য ও সঠিক পথের দিকে হেদায়াত করে। (সূরা আহকাফ- ৩০)
তারা তাদেরকে কুরআনের প্রতি ঈমান আনার জন্য দাওয়াত দিল :
يَا قَوْمَنَاۤ اَجِيْبُوْا دَاعِيَ اللهِ وَاٰمِنُوْا بِهٖ يَغْفِرْ لَكُمْ مِّنْ ذُنُوْبِكُمْ وَيُجِرْكُمْ مِّنْ عَذَابٍ اَلِيْمٍ
হে আমাদের কওম! যে আল্লাহর দিকে ডাকে তার ডাকে সাড়া দাও এবং তাঁর প্রতি ঈমান আনয়ন করো। (যদি এসব কর) তবে আল্লাহ তোমাদের গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন এবং কষ্টদায়ক আযাব থেকে বাঁচাবেন। (সূরা আহকাফ- ৩১)
কুরআন না মানার পরিণামও বলে দিল :
وَمَنْ لَّا يُجِبْ دَاعِيَ اللهِ فَلَيْسَ بِمُعْجِزٍ فِى الْاَرْضِ وَلَيْسَ لَهٗ مِنْ دُوْنِهٖۤ اَوْلِيَآءُؕ اُولٰٓئِكَ فِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ
আর যে ব্যক্তি আল্লাহর দিকে আহবানকারীর কথা না মানে তার জন্য দুনিয়ায় এমন কোন শক্তি নেই, যে আল্লাহকে হারিয়ে দিতে পারে এবং তার জন্য এমন কোন সহায়ক নেই, যে তাকে আল্লাহর কাছ থেকে বাঁচাতে পারে। এসব লোক স্পষ্ট গোমরাহীতে পড়ে আছে। (সূরা আহকাফ- ৩২)
জিনেরা শিরক না করার সিদ্ধান্ত নিল :
قُلْ اُوْحِيَ اِلَيَّ اَنَّهُ اسْتَمَعَ نَفَرٌ مِّنَ الْجِنِّ فَقَالُوْاۤ اِنَّا سَمِعْنَا قُرْاٰنًا عَجَبًا – يَهْدِيْۤ اِلَى الرُّشْدِ فَاٰمَنَّا بِهٖؕ وَلَنْ نُّشْرِكَ بِرَبِّنَاۤ اَحَدًا
বলো, আমার প্রতি ওহী করা হয়েছে যে, জিনদের একদল মনোযোগ সহকারে (কুরআন) শ্রবণ করেছে। অতঃপর (তারা নিজ জাতির কাছে গিয়ে) বলেছে, আমরা তো এক বিস্ময়কর কুরআন শ্রবণ করেছি, যা সঠিক পথ দেখায়; তাই আমরা এতে ঈমান আনয়ন করেছি। সুতরাং আমরা কখনো আমাদের প্রতিপালকের সাথে কাউকে শরীক করব না। (সূরা জিন- ১, ২)
জিনেরা তাওহীদের ঘোষণা দিল :
وَاَنَّهٗ تَعَالٰى جَدُّ رَبِّنَا مَا اتَّخَذَ صَاحِبَةً وَّلَا وَلَدًا
নিশ্চয় আমাদের প্রতিপালকের মর্যাদা সুমহান; তিনি কোন স্ত্রী বা সন্তান গ্রহণ করেননি। (সূরা জিন- ৩)
আল্লাহ সম্পর্কে স্বজাতির ভুল ধারণা খন্ডন করল :
وَاَنَّهٗ كَانَ يَقُوْلُ سَفِيْهُنَا عَلَى اللهِ شَطَطًا – وَاَنَّا ظَنَنَّاۤ اَنْ لَّنْ تَقُوْلَ الْاِنْسُ وَالْجِنُّ عَلَى اللهِ كَذِبًا
আমাদের নির্বোধরা আল্লাহর সম্বন্ধে অতি মিথ্যা উক্তি করে। অথচ আমরা মনে করতাম যে, মানুষ এবং জিন আল্লাহ সম্বন্ধে কখনো মিথ্যা বলবে না। (সূরা জিন- ৪, ৫)
জিনেরা আল্লাহর ক্ষমতা ভালো করেই জানত :
وَاَنَّا ظَنَنَّاۤ اَنْ لَّنْ نُّعْجِزَ اللهَ فِى الْاَرْضِ وَلَنْ نُّعْجِزَهٗ هَرَبًا
আর আমাদের একান্ত বিশ্বাস হয়ে গেছে যে, আমরা পৃথিবীতে আল্লাহকে কোনক্রমে পরাভূত করতে পারব না এবং পলায়ন করেও তাঁকে ব্যর্থ করতে পারব না। (সূরা জিন- ১২)
দুষ্ট জিনেরা মানুষের সাথে শত্রুতা করে :
وَكَذٰلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا شَيَاطِيْنَ الْاِنْسِ وَالْجِنِّ يُوْحِيْ بَعْضُهُمْ اِلٰى بَعْضٍ زُخْرُفَ الْقَوْلِ غُرُوْرًاؕ وَلَوْ شَآءَ رَبُّكَ مَا فَعَلُوْهُ فَذَرْهُمْ وَمَا يَفْتَرُوْنَ
এভাবে আমি মানব ও জিনের মধ্যে শয়তানদেরকে প্রত্যেক নবীর শত্রু বানিয়ে দিয়েছি। তারা একে অন্যকে প্রতারণার উদ্দেশ্যে চমকপ্রদ কথা দ্বারা প্ররোচিত করে। যদি তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করতেন, তবে তারা এটা করত না। সুতরাং তুমি তাদেরকে ও তাদের মিথ্যা রচনাকে বর্জন করো। (সূরা আন‘আম- ১১২)
জিনদের অনিষ্টতা থেকে বাঁচার দু‘আ :
قُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ النَّاسِ – مَلِكِ النَّاسِ – اِلٰهِ النَّاسِ – مِنْ شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ – اَلَّذِيْ يُوَسْوِسُ فِيْ صُدُوْرِ النَّاسِ – مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ
(হে নবী) বলো, আমি আশ্রয় চাই মানুষের প্রতিপালকের কাছে। (আমি আশ্রয় চাই) মানুষের (আসল) বাদশার কাছে। (আমি আশ্রয় চাই) মানুষের (একমাত্র) মা‘বুদের কাছে। (আমি আশ্রয় চাই) কুমন্ত্রণাদানকারীর অনিষ্ট থেকে, যে (প্ররোচনা দিয়েই) গা ঢাকা দেয়। যে মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়। জিনদের মধ্য থেকে হোক বা মানুষদের মধ্য থেকে। (সূরা নাস)
শয়তান আল্লাহর অবাধ্য :
اِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلرَّحْمٰنِ عَصِيًّا
নিশ্চয় শয়তান পরম দয়ালু আল্লাহর অবাধ্য। (সূরা মারইয়াম- ৪৪)
শয়তান আদম (আঃ) কে সিজদা করেনি :
وَاِذْ قُلْنَا لِلْمَلَآئِكَةِ اسْجُدُوْا لِاٰدَمَ فَسَجَدُوْاۤ اِلَّاۤ اِبْلِيْسَ
স্মরণ করো, যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বলেছিলাম, ‘আদমকে সিজদা করো’, তখন ইবলিস ব্যতীত তারা সকলেই সিজদা করল। (সূরা কাহফ- ৫০)
শয়তান মানুষের চরম শত্রু :
اِنَّ الشَّيْطَانَ لِلْاِنْسَانِ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ
নিশ্চয় শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা ইউসুফ- ৫)
اِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمْ عَدُوٌّ فَاتَّخِذُوْهُ عَدُوًّا
নিশ্চয় শয়তান তোমাদের শত্রু, সুতরাং তোমরা তাকে শত্রু হিসেবেই গ্রহণ করো। (সূরা ফাতির- ৬)
শয়তান মানুষকে সৎপথ থেকে দূরে সরিয়ে দিতে চায় :
وَيُرِيْدُ الشَّيْطَانُ اَنْ يُّضِلَّهُمْ ضَلَالًا ۢبَعِيْدًا
মূলত শয়তান তাদেরকে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট করতে চায়। (সূরা নিসা- ৬০)
শয়তান মানুষকে দেখে কিন্তু মানুষ তাকে দেখে না :
اِنَّهٗ يَرَاكُمْ هُوَ وَقَبِيْلُهٗ مِنْ حَيْثُ لَا تَرَوْنَهُمْؕ اِنَّا جَعَلْنَا الشَّيَاطِيْنَ اَوْلِيَآءَ لِلَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ
সে নিজে এবং তার দল তোমাদেরকে এমনভাবে দেখে যে, তোমরা তাদেরকে দেখতে পাও না। নিশ্চয় আমি শয়তানদেরকে তাদের অভিভাবক বানিয়ে দিয়েছি, যারা ঈমান আনয়ন করে না। (সূরা আ‘রাফ- ২৭)
শয়তান জাহান্নামের দিকে ডাকে :
اِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمْ عَدُوٌّ فَاتَّخِذُوْهُ عَدُوًّاؕ اِنَّمَا يَدْعُوْا حِزْبَهٗ لِيَكُوْنُوْا مِنْ اَصْحَابِ السَّعِيْرِ
নিশ্চয় শয়তান তোমাদের শত্রু, সুতরাং তোমরা তাকে শত্রু হিসেবেই গ্রহণ করো। সে তো তার দলবলকে শুধু এজন্যই আহবান করে, যেন তারা (পথভ্রষ্ট হয়ে) জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। (সূরা ফাতির- ৬)
শয়তান মানুষকে বিভ্রান্ত করতে ত্রুটি করে না :
وَاِخْوَانُهُمْ يَمُدُّوْنَهُمْ فِى الْغَيِّ ثُمَّ لَا يُقْصِرُوْنَ
তাদের সঙ্গী-সাথিরা তাদেরকে ভ্রান্তির দিকে টেনে নেয় এবং এ বিষয়ে তারা কোন ত্রুটি করে না। (সূরা আ‘রাফ- ২০২)
শয়তান মানুষকে পাপ ও অশ্লীল কাজের আদেশ দেয় :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّبِعُوْا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِؕ وَمَنْ يَّتَّبِعْ خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ فَاِنَّهٗ يَاْمُرُ بِالْفَحْشَآءِ وَالْمُنْكَرِ
হে মুমিনগণ! তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। যে ব্যক্তি শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সে (জেনে রাখুক যে) নিশ্চয় শয়তান কেবল অশ্লীলতা ও মন্দকাজের নির্দেশ দেয়। (সূরা নূর- ২১)
শয়তান পাপকাজকে সুন্দর করে দেখায় :
وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
তারা যা করছিল শয়তান তা তাদের দৃষ্টিতে সুন্দর করে দিয়েছিল। (সূরা আন‘আম- ৪৩)
وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ اَعْمَالَهُمْ فَصَدَّهُمْ عَنِ السَّبِيْلِ فَهُمْ لَا يَهْتَدُوْنَ
শয়তান তাদের কার্যাবলি তাদের নিকট সুশোভিত করে দিয়েছে এবং তাদেরকে সৎপথ হতে নিবৃত্ত করেছে, ফলে তারা হেদায়াত পায় না। (সূরা নামল- ২৪)
শয়তান মানুষকে সালাত ও যিকির থেকে দূরে রাখে :
اِنَّمَا يُرِيْدُ الشَّيْطَانُ اَنْ يُّوْقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَآءَ فِى الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَعَنِ الصَّلَاةِۚ فَهَلْ اَنْتُمْ مُّنْتَهُوْنَ
নিশ্চয় শয়তান মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ হতে ও সালাত হতে বাধা দিতে চায়। তবুও কি তোমরা বিরত থাকবে না? (সূরা মায়েদা- ৯১)
সবধরনের অপরাধই শয়তানী কার্যকলাপ :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْاَنْصَابُ وَالْاَزْلَامُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوْهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়ক তীর হচ্ছে ঘৃনিত শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন করো- যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা মায়েদা- ৯০)
শয়তান বিভিন্নভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করে :
اِنْ يَّدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖۤ اِلَّاۤ اِنَاثًاۚ وَاِنْ يَّدْعُوْنَ اِلَّا شَيْطَانًا مَّرِيْدًا – لَعَنَهُ اللهُۘ وَقَالَ لَاَتَّخِذَنَّ مِنْ عِبَادِكَ نَصِيْبًا مَّفْرُوْضًا ‐ وَلَاُضِلَّنَّهُمْ وَلَاُمَنِّيَنَّهُمْ وَلَاٰمُرَنَّهُمْ فَلَيُبَتِّكُنَّ اٰذَانَ الْاَنْعَامِ وَلَاٰمُرَنَّهُمْ فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلْقَ اللهِؕ وَمَنْ يَّتَّخِذِ الشَّيْطَانَ وَلِيًّا مِّنْ دُوْنِ اللهِ فَقَدْ خَسِرَ خُسْرَانًا مُّبِيْنًا
তারা তাঁর পরিবর্তে দেব-দেবীদেরকেই আহবান করে এবং বিদ্রোহী শয়তানকেই ডাকে, (অথচ) আল্লাহ তাকে লানত করেছেন। সে বলে, আমি অবশ্যই তোমার বান্দাদের এক নির্দিষ্ট অংশকে আমার অনুসারী করে নেব। আমি তাদেরকে পথভ্রষ্ট করবই, তাদের হৃদয়ে মিথ্যা বাসনা সৃষ্টি করবই। অবশ্যই আমি তাদেরকে নির্দেশ দেব, ফলে তারা চতুষ্পদ জন্তুর কর্ণচ্ছেদ করবেই। অবশ্যই তাদেরকে (আরো) নির্দেশ দেব, ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করবেই। অতএব (জেনে রেখো) যে ব্যক্তি আল্লাহর পরিবর্তে শয়তানকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করবে, সে স্পষ্টভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (সূরা নিসা, ১১৭-১১৯)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর সৃষ্টির আকৃতিতে রদবদল করার অর্থ হচ্ছে, কোন বস্তুকে আল্লাহ যে কাজের জন্য সৃষ্টি করেননি তাকে সে কাজে ব্যবহার করা এবং যে কাজের জন্য সৃষ্টি করেছেন সে কাজে ব্যবহার না করা। অন্যকথায় বলা যায়, মানুষ নিজের প্রকৃতির বিরুদ্ধে যেসব কাজ করে এবং প্রকৃতির প্রকৃত উদ্দেশ্য উপেক্ষা করে যেসব পন্থা অবলম্বন করে, তা সবই এ আয়াতের প্রেক্ষিতে শয়তানের বিভ্রান্তিকর আন্দোলনের ফসল। যেমন জন্মশাসন, বৈরাগ্যবাদ, নারী-পুরুষের বন্ধাকরণ, পুরুষদেরকে খাসি বানানো ও মেয়েদের উপর প্রকৃতি যে দায়িত্ব অর্পণ করেছে তাদেরকে সে দায়িত্ব সম্পাদন করা থেকে সরিয়ে রাখা এবং তাদেরকে সমাজ-সংস্কৃতির এমনসব বিভাগে টেনে আনা, যেগুলোর জন্য পুরুষদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। শয়তানের অনুসারীরা দুনিয়ায় এ ধরনের আরো যেসব কাজ করে বেড়াচ্ছে সেগুলো আসলে এ অর্থ প্রকাশ করছে যে, তারা বিশ্বজাহানের স্রষ্টার নির্ধারিত বিধিবিধান ভুল মনে করে এবং তার মধ্যে সংস্কার সাধন করতে চায়।
وَاسْتَفْزِزْ مَنِ اسْتَطَعْتَ مِنْهُمْ بِصَوْتِكَ وَاَجْلِبْ عَلَيْهِمْ بِخَيْلِكَ وَرَجِلِكَ وَشَارِكْهُمْ فِى الْاَمْوَالِ وَالْاَوْلَادِ وَعِدْهُمْؕ وَمَا يَعِدُهُمُ الشَّيْطَانُ اِلَّا غُرُوْرًا
তোমার আহবানের মাধ্যমে তাদের মধ্যে যাকে পার পদস্খলিত করো, তোমার অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী দ্বারা তাদের উপর আক্রমণ করো, তাদের ধনসম্পদ ও সমত্মানসমত্মতিতে শরীক হয়ে যাও এবং তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দাও। আর শয়তান তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয় তা ছলনা মাত্র। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৬৪)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতে শয়তানকে এমন এক ডাকাতের সাথে তুলনা করা হয়েছে, যে তার অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী নিয়ে জনপদ আক্রমণ করে এবং তাদেরকে হুকুম দিতে থাকে- এদিকে লুটপাট করো, ওদিকে সর্বাত্মক আক্রমণ চালাও এবং সেদিকে ধ্বংস করো। শয়তানের অশ্বারোহী ও পদাতিক বলতে এমনসব জিন ও মানুষকে বুঝানো হয়েছে, যারা বিভিন্ন আকৃতিতে ও বিভিন্নভাবে ইবলিসের বিধ্বংসী অভিযানে সহযোগিতা করছে। যে ব্যক্তি অর্থ উপার্জন ও তা খরচ করার ব্যাপারে শয়তানের অনুসরণ করে, তার সাথে যেন শয়তান শরীক হয়ে যায়। পরিশ্রমে তার কোন অংশ নেই; কিন্তু অপরাধ, পাপ ও দুষ্কর্মের অশুভ পরিণতিতে সে শুধু অংশীদারই নয় বরং বৃহত্তম অংশীদার। এভাবে সন্তান হয় মানুষের নিজের, সুতরাং তাকে লালন-পালন করার জন্য সে নিজের কর্মক্ষমতা ও সম্পদ ব্যয় করে, কিন্তু শয়তানের ইঙ্গিতে এ সন্তানকে মানুষ এমনভাবে গোমরাহী ও নৈতিক চরিত্রহীনতার শিক্ষা দেয়, যেন মনে হয় সে একা এ সন্তানের পিতা নয় বরং তার পিতৃত্বে শয়তানও শরীক আছে।
শয়তানের প্রথম কাজ হলো লজ্জা ও পর্দা উঠিয়ে দেয়া :
يَا بَنِيْۤ اٰدَمَ لَايَفْتِنَنَّكُمُ الشَّيْطَانُ كَمَاۤ اَخْرَجَ اَبَوَيْكُمْ مِّنَ الْجَنَّةِ يَنْزِعُ عَنْهُمَا لِبَاسَهُمَا لِيُرِيَهُمَا سَوْاٰتِهِمَا
হে বনী আদম! শয়তান যেন তোমাদেরকে কিছুতেই প্রলুব্ধ করতে না পারে; যেভাবে তোমাদের পিতামাতাকে সে জান্নাত হতে বহিষ্কৃত করেছিল, তাদেরকে তাদের লজ্জাস্থান দেখানোর জন্য বিবস্ত্র করেছিল। (সূরা আ‘রাফ- ২৭)
ব্যাখ্যা : মানুষকে তার স্বভাবসুলভ সহজসরল পথ থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য শয়তানের প্রথম কৌশল হলো লজ্জার অনুভূতিতে আঘাত করা, উলঙ্গপনা ও অশ্লীলতার দরজা খুলে দেয়া এবং তাকে যৌন লালসার পথে পরিচালিত করা। অন্য কথায় বলা যায়, প্রতিপক্ষের উপর আক্রমণ করার জন্য তার যে দুর্বলতম স্থানটিকে সে বেছে নেয় সেটি হলো, যৌনবিষয়ক দিক। আল্লাহ তা‘আলা যে লজ্জাকে মানবীয় প্রকৃতির রক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করেছেন, সে প্রথমে তার উপরই আঘাত হানে। শয়তান ও তার শিষ্যদের এ কর্মনীতি আদিকাল থেকে আজও অপরিবর্তিত রয়েছে। মেয়েদেরকে উলঙ্গ করে প্রকাশ্যে বাজারে না দাঁড় করানো পর্যন্ত তাদের প্রগতির শুরুই হতে পারে না।
শয়তান জিহাদে বের হওয়ার সময় ভয় দেখায় :
اِنَّ الَّذِيْنَ تَوَلَّوْا مِنْكُمْ يَوْمَ الْتَقَى الْجَمْعَانِ اِنَّمَا اسْتَزَلَّهُمُ الشَّيْطَانُ بِبَعْضِ مَا كَسَبُوْا
যেদিন দু’টি দল পরস্পরের সম্মুখীন হয়েছিল সেদিন তোমাদের মধ্য থেকে যারা পলায়ন করেছিল, নিশ্চয় শয়তান তাদের কোন কৃতকর্মের জন্য তাদেরকে প্রতারিত করেছিল। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৫)
দারিদ্রে্যর ভয় দেখিয়ে দান করা থেকে বিরত রাখে :
اَلشَّيْطَانُ يَعِدُكُمُ الْفَقْرَ وَيَاْمُرُكُمْ بِالْفَحْشَآءِ وَاللهُ يَعِدُكُمْ مَّغْفِرَةً مِّنْهُ وَفَضْلًا وَّاللهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ
শয়তান তোমাদেরকে অভাবের ভয় দেখায় এবং অশ্লীল কাজের আদেশ দেয়; অথচ আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর পক্ষ থেকে ক্ষমা এবং অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি দেন। আর আল্লাহ অসীম করুণাময় ও মহাজ্ঞানী। (সূরা বাক্বারা- ২৬৮)
শয়তান মানুষের মনে প্রতারণামূলক আশা দেয় :
اِنَّ الَّذِيْنَ ارْتَدُّوْا عَلٰۤى اَدْبَارِهِمْ مِّنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْهُدَى الشَّيْطَانُ سَوَّلَ لَهُمْؕ وَاَمْلٰى لَهُمْ
যারা তাদের কাছে হেদায়াত স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও তা থেকে ফিরে গেছে, শয়তান তাদেরকে সেদিকে লোভ দেখিয়েছে এবং (তাদেরকে পথভ্রষ্ট করার জন্য) মিথ্যা আশার জাল বিস্তার করে দিয়েছে। (সূরা মুহাম্মাদ- ২৫)
يَعِدُهُمْ وَيُمَنِّيْهِمْ وَمَا يَعِدُهُمُ الشَّيْطَانُ اِلَّا غُرُوْرًا
সে তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তাদের হৃদয়ে মিথ্যা বাসনা সৃষ্টি করে; আর শয়তান তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয় তা ছলনা ছাড়া আর কিছুই নয়। (সূরা নিসা- ১২০)
ব্যাখ্যা : অসৎকাজ করার প্রকাশ্য আহবানকে মানুষ খুব কমই গ্রহণ করে, এটা মানুষের স্বভাবসুলভ প্রবণতা। তাই নিজের জালে আবদ্ধ করার জন্য প্রত্যেক অসৎকর্মের আহবায়ক কল্যাণকামীর ছদ্মবেশে উপস্থিত হয়। মানুষের মধ্যে উচ্চতর বিষয়াবলি লাভের স্বাভাবিক আকাঙ্ক্ষা থাকে। আর শয়তান তাকে ধোঁকা দেয়ার ক্ষেত্রে প্রথম সাফল্য অর্জন করে এ পথেই। শয়তানের সবচেয়ে সফল অস্ত্র হচ্ছে, সে মানুষের সামনে তাকে উন্নতির উচ্চশিখরে নিয়ে যাওয়ার টোপ ফেলে, তারপর তাকে এমন পথের সন্ধান দেয়, যা তাকে নিচের দিকে টেনে নিয়ে যায়। শয়তানের সকল কর্মই চলে মৌখিক ওয়াদা ও আশা-ভরসা দেয়ার ভিত্তিতে। সে ব্যক্তিগত বা সামষ্টিক পর্যায়ে যখন মানুষকে কোন ভুল পথে পরিচালনা করতে চায়, তখন কাউকে ব্যক্তিগত আনন্দ-উপভোগ লাভের আশায় উদ্বুদ্ধ করে। কাউকে জাতীয় উন্নতি ও অগ্রগতির আশ্বাস দেয়। কাউকে মানবজাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধির নিশ্চয়তা দেয়। কাউকে সত্যের কাছে পৌঁছে গেছে বলে মানসিক সান্ত্বনা দেয়। কারো মনে এ ধারণা বদ্ধমূল করে যে, আখিরাত বলতে কিছুই নেই। মৃত্যুর পর সবাইকে মাটিতে মিশে যেতে হবে। কাউকে আশ্বাস দেয় যে, আখিরাত বলে যদি কিছু থেকেও থাকে তাহলে অমুক হুজুরের বদৌলতে, অমুকের দু‘আর বরকতে সেখানকার ধর-পাকড় থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যাবে। মোটকথা যাকে যে ধরনের আশার ছলনায় ভুলানো যায়, তাকে সেভাবে নিজের প্রতারণার জালে ফাঁসানোর চেষ্টা করে।
শয়তান মানুষের সাথে প্রতারণা করে :
لَقَدْ اَضَلَّنِيْ عَنِ الذِّكْرِ بَعْدَ اِذْ جَآءَنِيْؕ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِلْاِنْسَانِ خَذُوْلًا
সে তো আমাকে বিভ্রামত্ম করেছিল আমার নিকট উপদেশ পৌঁছার পর। নিশ্চয় শয়তান মানুষের জন্য মহাপ্রতারক। (সূরা ফুরক্বান- ২৯)
وَاِذْ زَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ اَعْمَالَهُمْ وَقَالَ لَا غَالِبَ لَكُمُ الْيَوْمَ مِنَ النَّاسِ وَاِنِّيْ جَارٌ لَّكُمْۚ فَلَمَّا تَرَآءَتِ الْفِئَتَانِ نَكَصَ عَلٰى عَقِبَيْهِ وَقَالَ اِنِّيْ بَرِيْٓءٌ مِّنْكُمْ اِنِّۤيْ اَرٰى مَا لَا تَرَوْنَ اِنِّۤيْ اَخَافُ اللهَؕ وَاللهُ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
স্মরণ করো, যখন শয়তান তাদের কার্যাবলি তাদের দৃষ্টিতে শোভন করে দিয়েছিল এবং বলেছিল, আজ মানুষের মধ্যে কেউই তোমাদের উপর বিজয়ী হতে পারবে না, আমি তোমাদের পার্শ্বেই থাকব। অতঃপর যখন দু’টি দল পরস্পরের সম্মুখীন হলো তখন সে পেছনে সরে পড়ল এবং বলল, তোমাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই; তোমরা যা দেখতে পাও না আমি তা দেখি। নিশ্চয় আমি আল্লাহকে ভয় করি, নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে খুবই কঠোর। (সূরা আনফাল- ৪৮)
শয়তান মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে :
وَقُلْ لِّعِبَادِيْ يَقُوْلُوا الَّتِيْ هِيَ اَحْسَنُؕ اِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْزَغُ بَيْنَهُمْؕ اِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلْاِنْسَانِ عَدُوًّا مُّبِيْنًا
আমার বান্দাদেরকে যা উত্তম তা বলতে বলো। নিশ্চয় শয়তান তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির জন্য উস্কানি দেয়; নিশ্চয় শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৫৩)
মানুষকে পাপে লিপ্ত করে কেটে পড়ে :
كَمَثَلِ الشَّيْطَانِ اِذْ قَالَ لِلْاِنْسَانِ اكْفُرْۚ فَلَمَّا كَفَرَ قَالَ اِنِّيْ بَرِيْٓءٌ مِّنْكَ اِنِّۤيْ اَخَافُ اللهَ رَبَّ الْعَالَمِيْنَ
তাদের তুলনা শয়তানের মতো, সে মানুষকে কুফরী করতে বলে। অতঃপর যখন সে কুফরী করে তখন শয়তান বলে, তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই; আমি জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করি। (সূরা হাশর- ১৬)
অবাস্তব কথা বলায় :
وَلَا تَتَّبِعُوْا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِؕ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ – اِنَّمَا يَاْمُرُكُمْ بِالسُّوْٓءِ وَالْفَحْشَآءِ وَاَنْ تَقُوْلُوْا عَلَى اللهِ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ
শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। সে তো কেবল তোমাদেরকে মন্দ ও অশ্লীল কাজের এবং আল্লাহ সম্বন্ধে তোমরা যা জান না সে বিষয়ে কথা বলার নির্দেশ দেয়। (সূরা বাক্বারা- ১৬৮, ১৬৯)
শয়তান প্রতারণামূলক ও চমকপ্রদ কথা বলায় :
وَكَذٰلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا شَيَاطِيْنَ الْاِنْسِ وَالْجِنِّ يُوْحِيْ بَعْضُهُمْ اِلٰى بَعْضٍ زُخْرُفَ الْقَوْلِ غُرُوْرًاؕ وَلَوْ شَآءَ رَبُّكَ مَا فَعَلُوْهُ فَذَرْهُمْ وَمَا يَفْتَرُوْنَ
এভাবে আমি মানব ও জিনদের মধ্যে শয়তানদেরকে প্রত্যেক নবীর শত্রু বানিয়ে দিয়েছি, ফলে তারা একে অপরকে প্রতারণার উদ্দেশ্যে চমকপ্রদ কথা দ্বারা প্ররোচিত করে। যদি তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করতেন, তবে তারা এটা করত না; সুতরাং তুমি তাদেরকে ও তাদের মিথ্যা রচনাকে বর্জন করো। (সূরা আন‘আম- ১১২)
শয়তান মানুষকে মন্ত্র¿ ও যাদু শিক্ষা দেয় :
وَاتَّبَعُوْا مَا تَتْلُوا الشَّيَاطِيْنُ عَلٰى مُلْكِ سُلَيْمَانَۚ وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ وَلٰكِنَّ الشَّيَاطِيْنَ كَفَرُوْا يُعَلِّمُوْنَ النَّاسَ السِّحْرَ
সুলায়মানের রাজত্বকালে শয়তানরা যা আবৃত্তি করত, তারা তারই অনুসরণ করছে। সুলায়মান কুফরী করেননি, বরং শয়তানরাই কুফরী করেছিল। তারা লোকদেরকে যাদু বিদ্যা শিক্ষা দিত। (সূরা বাক্বারা- ১০২)
শয়তান নবীদের কথাকেও বিকৃত করত :
وَمَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَّسُوْلٍ وَّلَا نَبِيٍّ اِلَّاۤ اِذَا تَمَنّٰۤى اَلْقَى الشَّيْطَانُ فِۤيْ اُمْنِيَّتِهٖۚ فَيَنْسَخُ اللهُ مَا يُلْقِى الشَّيْطَانُ ثُمَّ يُحْكِمُ اللهُ اٰيَاتِهٖؕ وَاللهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ ‐ لِيَجْعَلَ مَا يُلْقِى الشَّيْطَانُ فِتْنَةً لِّلَّذِيْنَ فِيْ قُلُوْبِهِمْ مَّرَضٌ وَّالْقَاسِيَةِ قُلُوْبُهُمْؕ وَاِنَّ الظَّالِمِيْنَ لَفِيْ شِقَاقٍ ۢبَعِيْدٍ
(হে নবী) আমি তোমার আগে এমন কোন নবী কিংবা রাসূলই প্রেরণ করিনি (যারা এ ঘটনার সম্মুখীন হননি যে) যখন তিনি (আল্লাহর আয়াত পাঠ করার) আগ্রহ প্রকাশ করতেন তখন শয়তান তার সে আগ্রহের কাছে (কাফিরদের মনে) সন্দেহ ঢেলে দেয়নি। অতঃপর আল্লাহ শয়তানের নিক্ষিপ্ত (সন্দেহগুলো) মিটিয়ে দেন এবং নিজের আয়াতসমূহকে (আরো) মজবুত করে দেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। এটা এজন্য যে, শয়তান যা নিক্ষিপ্ত করে তিনি তা তাদের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ করে দেন, যাদের অমত্মরে ব্যাধি রয়েছে এবং যাদের হৃদয় পাষাণ। নিশ্চয় যালিমরা চরম মতভেদে লিপ্ত রয়েছে। (সূরা হজ্জ- ৫২, ৫৩)
ব্যাখ্যা : যখনই নবী ﷺ লোকদেরকে আল্লাহর বাণী শুনিয়েছেন তখনই শয়তান সে সম্পর্কে লোকদের মনে নানা সন্দেহ-সংশয় ও আপত্তি সৃষ্টি করে দিয়েছে এবং তাদের সামনে সেগুলোর সঠিক অর্থ বাদ দিয়ে উল্টো অর্থ তুলে ধরেছে। আল্লাহ শয়তানের বিঘ্ন সৃষ্টি সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত নবীর আশা-আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করেন এবং শয়তানের ঢুকানো সন্দেহ-সংশয় ও আপত্তি দূর করে দেন। শয়তান এক একটি আয়াত সম্পর্কে লোকদের মনে যেসব জটিলতা সৃষ্টি করে দেয়, আল্লাহ তা‘আলা পরবর্তী কোন অধিকতর সুস্পষ্ট আয়াতের মাধ্যমে সেগুলো পরিষ্কার করে দেন। আল্লাহ তা‘আলা শয়তানের ফিতনাকে লোকদের জন্য পরীক্ষা এবং নকল থেকে আসলকে আলাদা করার একটা মাধ্যমে পরিণত করেছেন। বিকৃত মানসিকতাসম্পন্ন লোকেরা এসব জিনিস থেকে ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং এগুলো তাদের জন্য ভ্রষ্টতার উপকরণে পরিণত হয়। অন্যদিকে স্বচ্ছ চিন্তার অধিকারী লোকেরা এসব কথা থেকে নবী ও আল্লাহর কিতাবের সত্য হওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় লাভ করে এবং তারা অনুভব করতে থাকে যে, এগুলো শয়তানের অনিষ্টকর কার্যকলাপ। এ জিনিসটি তাদেরকে একদম নিশ্চিন্ত করে দেয় যে, এটি নির্ঘাত কল্যাণ ও সত্যের দাওয়াত, নতুবা শয়তান এতে এত বেশি অস্থির হয়ে পড়ত না।
হকের দাওয়াতের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেয়া এবং বিভিন্ন প্রকার সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি করা কোন নতুন কথা নয়। পূর্বের সকল নবীর দাওয়াতের মুকাবিলায় এসব হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মহান আল্লাহ এসব শয়তানী ফিতনার মূলোচ্ছেদ করেছেন। বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও সত্যের দাওয়াত সম্প্রসারিত হয়েছে। সুস্পষ্ট ও বিস্তারিত আয়াতের মাধ্যমে সন্দেহ-সংশয়ের বিঘ্ন দূরীভূত হয়েছে। শয়তান ও তার সাথিরা এসব কৌশল অবলম্বন করে আল্লাহর আয়াতকে মর্যাদাহীন করতে চেয়েছে। কিন্তু আল্লাহ সেগুলোকেই মানুষের মধ্যে আসল ও নকলের পার্থক্য করার মাধ্যমে পরিণত করেছেন। এ পথেই আসল ও নির্ভেজাল লোকেরা সত্যের দাওয়াতের দিকে এগিয়ে আসে এবং ভেজাল লোকেরা ছাঁটাই হয়ে আলাদা হয়ে যায়।
اِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلرَّحْمٰنِ عَصِيًّا
নিশ্চয় শয়তান পরম দয়ালু আল্লাহর অবাধ্য। (সূরা মারইয়াম- ৪৪)
শয়তান আদম (আঃ) কে সিজদা করেনি :
وَاِذْ قُلْنَا لِلْمَلَآئِكَةِ اسْجُدُوْا لِاٰدَمَ فَسَجَدُوْاۤ اِلَّاۤ اِبْلِيْسَ
স্মরণ করো, যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বলেছিলাম, ‘আদমকে সিজদা করো’, তখন ইবলিস ব্যতীত তারা সকলেই সিজদা করল। (সূরা কাহফ- ৫০)
শয়তান মানুষের চরম শত্রু :
اِنَّ الشَّيْطَانَ لِلْاِنْسَانِ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ
নিশ্চয় শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা ইউসুফ- ৫)
اِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمْ عَدُوٌّ فَاتَّخِذُوْهُ عَدُوًّا
নিশ্চয় শয়তান তোমাদের শত্রু, সুতরাং তোমরা তাকে শত্রু হিসেবেই গ্রহণ করো। (সূরা ফাতির- ৬)
শয়তান মানুষকে সৎপথ থেকে দূরে সরিয়ে দিতে চায় :
وَيُرِيْدُ الشَّيْطَانُ اَنْ يُّضِلَّهُمْ ضَلَالًا ۢبَعِيْدًا
মূলত শয়তান তাদেরকে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট করতে চায়। (সূরা নিসা- ৬০)
শয়তান মানুষকে দেখে কিন্তু মানুষ তাকে দেখে না :
اِنَّهٗ يَرَاكُمْ هُوَ وَقَبِيْلُهٗ مِنْ حَيْثُ لَا تَرَوْنَهُمْؕ اِنَّا جَعَلْنَا الشَّيَاطِيْنَ اَوْلِيَآءَ لِلَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ
সে নিজে এবং তার দল তোমাদেরকে এমনভাবে দেখে যে, তোমরা তাদেরকে দেখতে পাও না। নিশ্চয় আমি শয়তানদেরকে তাদের অভিভাবক বানিয়ে দিয়েছি, যারা ঈমান আনয়ন করে না। (সূরা আ‘রাফ- ২৭)
শয়তান জাহান্নামের দিকে ডাকে :
اِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمْ عَدُوٌّ فَاتَّخِذُوْهُ عَدُوًّاؕ اِنَّمَا يَدْعُوْا حِزْبَهٗ لِيَكُوْنُوْا مِنْ اَصْحَابِ السَّعِيْرِ
নিশ্চয় শয়তান তোমাদের শত্রু, সুতরাং তোমরা তাকে শত্রু হিসেবেই গ্রহণ করো। সে তো তার দলবলকে শুধু এজন্যই আহবান করে, যেন তারা (পথভ্রষ্ট হয়ে) জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। (সূরা ফাতির- ৬)
শয়তান মানুষকে বিভ্রান্ত করতে ত্রুটি করে না :
وَاِخْوَانُهُمْ يَمُدُّوْنَهُمْ فِى الْغَيِّ ثُمَّ لَا يُقْصِرُوْنَ
তাদের সঙ্গী-সাথিরা তাদেরকে ভ্রান্তির দিকে টেনে নেয় এবং এ বিষয়ে তারা কোন ত্রুটি করে না। (সূরা আ‘রাফ- ২০২)
শয়তান মানুষকে পাপ ও অশ্লীল কাজের আদেশ দেয় :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّبِعُوْا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِؕ وَمَنْ يَّتَّبِعْ خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ فَاِنَّهٗ يَاْمُرُ بِالْفَحْشَآءِ وَالْمُنْكَرِ
হে মুমিনগণ! তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। যে ব্যক্তি শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সে (জেনে রাখুক যে) নিশ্চয় শয়তান কেবল অশ্লীলতা ও মন্দকাজের নির্দেশ দেয়। (সূরা নূর- ২১)
শয়তান পাপকাজকে সুন্দর করে দেখায় :
وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
তারা যা করছিল শয়তান তা তাদের দৃষ্টিতে সুন্দর করে দিয়েছিল। (সূরা আন‘আম- ৪৩)
وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ اَعْمَالَهُمْ فَصَدَّهُمْ عَنِ السَّبِيْلِ فَهُمْ لَا يَهْتَدُوْنَ
শয়তান তাদের কার্যাবলি তাদের নিকট সুশোভিত করে দিয়েছে এবং তাদেরকে সৎপথ হতে নিবৃত্ত করেছে, ফলে তারা হেদায়াত পায় না। (সূরা নামল- ২৪)
শয়তান মানুষকে সালাত ও যিকির থেকে দূরে রাখে :
اِنَّمَا يُرِيْدُ الشَّيْطَانُ اَنْ يُّوْقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَآءَ فِى الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَعَنِ الصَّلَاةِۚ فَهَلْ اَنْتُمْ مُّنْتَهُوْنَ
নিশ্চয় শয়তান মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ হতে ও সালাত হতে বাধা দিতে চায়। তবুও কি তোমরা বিরত থাকবে না? (সূরা মায়েদা- ৯১)
সবধরনের অপরাধই শয়তানী কার্যকলাপ :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْاَنْصَابُ وَالْاَزْلَامُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوْهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়ক তীর হচ্ছে ঘৃনিত শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন করো- যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা মায়েদা- ৯০)
শয়তান বিভিন্নভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করে :
اِنْ يَّدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖۤ اِلَّاۤ اِنَاثًاۚ وَاِنْ يَّدْعُوْنَ اِلَّا شَيْطَانًا مَّرِيْدًا – لَعَنَهُ اللهُۘ وَقَالَ لَاَتَّخِذَنَّ مِنْ عِبَادِكَ نَصِيْبًا مَّفْرُوْضًا ‐ وَلَاُضِلَّنَّهُمْ وَلَاُمَنِّيَنَّهُمْ وَلَاٰمُرَنَّهُمْ فَلَيُبَتِّكُنَّ اٰذَانَ الْاَنْعَامِ وَلَاٰمُرَنَّهُمْ فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلْقَ اللهِؕ وَمَنْ يَّتَّخِذِ الشَّيْطَانَ وَلِيًّا مِّنْ دُوْنِ اللهِ فَقَدْ خَسِرَ خُسْرَانًا مُّبِيْنًا
তারা তাঁর পরিবর্তে দেব-দেবীদেরকেই আহবান করে এবং বিদ্রোহী শয়তানকেই ডাকে, (অথচ) আল্লাহ তাকে লানত করেছেন। সে বলে, আমি অবশ্যই তোমার বান্দাদের এক নির্দিষ্ট অংশকে আমার অনুসারী করে নেব। আমি তাদেরকে পথভ্রষ্ট করবই, তাদের হৃদয়ে মিথ্যা বাসনা সৃষ্টি করবই। অবশ্যই আমি তাদেরকে নির্দেশ দেব, ফলে তারা চতুষ্পদ জন্তুর কর্ণচ্ছেদ করবেই। অবশ্যই তাদেরকে (আরো) নির্দেশ দেব, ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করবেই। অতএব (জেনে রেখো) যে ব্যক্তি আল্লাহর পরিবর্তে শয়তানকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করবে, সে স্পষ্টভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (সূরা নিসা, ১১৭-১১৯)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর সৃষ্টির আকৃতিতে রদবদল করার অর্থ হচ্ছে, কোন বস্তুকে আল্লাহ যে কাজের জন্য সৃষ্টি করেননি তাকে সে কাজে ব্যবহার করা এবং যে কাজের জন্য সৃষ্টি করেছেন সে কাজে ব্যবহার না করা। অন্যকথায় বলা যায়, মানুষ নিজের প্রকৃতির বিরুদ্ধে যেসব কাজ করে এবং প্রকৃতির প্রকৃত উদ্দেশ্য উপেক্ষা করে যেসব পন্থা অবলম্বন করে, তা সবই এ আয়াতের প্রেক্ষিতে শয়তানের বিভ্রান্তিকর আন্দোলনের ফসল। যেমন জন্মশাসন, বৈরাগ্যবাদ, নারী-পুরুষের বন্ধাকরণ, পুরুষদেরকে খাসি বানানো ও মেয়েদের উপর প্রকৃতি যে দায়িত্ব অর্পণ করেছে তাদেরকে সে দায়িত্ব সম্পাদন করা থেকে সরিয়ে রাখা এবং তাদেরকে সমাজ-সংস্কৃতির এমনসব বিভাগে টেনে আনা, যেগুলোর জন্য পুরুষদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। শয়তানের অনুসারীরা দুনিয়ায় এ ধরনের আরো যেসব কাজ করে বেড়াচ্ছে সেগুলো আসলে এ অর্থ প্রকাশ করছে যে, তারা বিশ্বজাহানের স্রষ্টার নির্ধারিত বিধিবিধান ভুল মনে করে এবং তার মধ্যে সংস্কার সাধন করতে চায়।
وَاسْتَفْزِزْ مَنِ اسْتَطَعْتَ مِنْهُمْ بِصَوْتِكَ وَاَجْلِبْ عَلَيْهِمْ بِخَيْلِكَ وَرَجِلِكَ وَشَارِكْهُمْ فِى الْاَمْوَالِ وَالْاَوْلَادِ وَعِدْهُمْؕ وَمَا يَعِدُهُمُ الشَّيْطَانُ اِلَّا غُرُوْرًا
তোমার আহবানের মাধ্যমে তাদের মধ্যে যাকে পার পদস্খলিত করো, তোমার অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী দ্বারা তাদের উপর আক্রমণ করো, তাদের ধনসম্পদ ও সমত্মানসমত্মতিতে শরীক হয়ে যাও এবং তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দাও। আর শয়তান তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয় তা ছলনা মাত্র। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৬৪)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতে শয়তানকে এমন এক ডাকাতের সাথে তুলনা করা হয়েছে, যে তার অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী নিয়ে জনপদ আক্রমণ করে এবং তাদেরকে হুকুম দিতে থাকে- এদিকে লুটপাট করো, ওদিকে সর্বাত্মক আক্রমণ চালাও এবং সেদিকে ধ্বংস করো। শয়তানের অশ্বারোহী ও পদাতিক বলতে এমনসব জিন ও মানুষকে বুঝানো হয়েছে, যারা বিভিন্ন আকৃতিতে ও বিভিন্নভাবে ইবলিসের বিধ্বংসী অভিযানে সহযোগিতা করছে। যে ব্যক্তি অর্থ উপার্জন ও তা খরচ করার ব্যাপারে শয়তানের অনুসরণ করে, তার সাথে যেন শয়তান শরীক হয়ে যায়। পরিশ্রমে তার কোন অংশ নেই; কিন্তু অপরাধ, পাপ ও দুষ্কর্মের অশুভ পরিণতিতে সে শুধু অংশীদারই নয় বরং বৃহত্তম অংশীদার। এভাবে সন্তান হয় মানুষের নিজের, সুতরাং তাকে লালন-পালন করার জন্য সে নিজের কর্মক্ষমতা ও সম্পদ ব্যয় করে, কিন্তু শয়তানের ইঙ্গিতে এ সন্তানকে মানুষ এমনভাবে গোমরাহী ও নৈতিক চরিত্রহীনতার শিক্ষা দেয়, যেন মনে হয় সে একা এ সন্তানের পিতা নয় বরং তার পিতৃত্বে শয়তানও শরীক আছে।
শয়তানের প্রথম কাজ হলো লজ্জা ও পর্দা উঠিয়ে দেয়া :
يَا بَنِيْۤ اٰدَمَ لَايَفْتِنَنَّكُمُ الشَّيْطَانُ كَمَاۤ اَخْرَجَ اَبَوَيْكُمْ مِّنَ الْجَنَّةِ يَنْزِعُ عَنْهُمَا لِبَاسَهُمَا لِيُرِيَهُمَا سَوْاٰتِهِمَا
হে বনী আদম! শয়তান যেন তোমাদেরকে কিছুতেই প্রলুব্ধ করতে না পারে; যেভাবে তোমাদের পিতামাতাকে সে জান্নাত হতে বহিষ্কৃত করেছিল, তাদেরকে তাদের লজ্জাস্থান দেখানোর জন্য বিবস্ত্র করেছিল। (সূরা আ‘রাফ- ২৭)
ব্যাখ্যা : মানুষকে তার স্বভাবসুলভ সহজসরল পথ থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য শয়তানের প্রথম কৌশল হলো লজ্জার অনুভূতিতে আঘাত করা, উলঙ্গপনা ও অশ্লীলতার দরজা খুলে দেয়া এবং তাকে যৌন লালসার পথে পরিচালিত করা। অন্য কথায় বলা যায়, প্রতিপক্ষের উপর আক্রমণ করার জন্য তার যে দুর্বলতম স্থানটিকে সে বেছে নেয় সেটি হলো, যৌনবিষয়ক দিক। আল্লাহ তা‘আলা যে লজ্জাকে মানবীয় প্রকৃতির রক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করেছেন, সে প্রথমে তার উপরই আঘাত হানে। শয়তান ও তার শিষ্যদের এ কর্মনীতি আদিকাল থেকে আজও অপরিবর্তিত রয়েছে। মেয়েদেরকে উলঙ্গ করে প্রকাশ্যে বাজারে না দাঁড় করানো পর্যন্ত তাদের প্রগতির শুরুই হতে পারে না।
শয়তান জিহাদে বের হওয়ার সময় ভয় দেখায় :
اِنَّ الَّذِيْنَ تَوَلَّوْا مِنْكُمْ يَوْمَ الْتَقَى الْجَمْعَانِ اِنَّمَا اسْتَزَلَّهُمُ الشَّيْطَانُ بِبَعْضِ مَا كَسَبُوْا
যেদিন দু’টি দল পরস্পরের সম্মুখীন হয়েছিল সেদিন তোমাদের মধ্য থেকে যারা পলায়ন করেছিল, নিশ্চয় শয়তান তাদের কোন কৃতকর্মের জন্য তাদেরকে প্রতারিত করেছিল। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৫)
দারিদ্রে্যর ভয় দেখিয়ে দান করা থেকে বিরত রাখে :
اَلشَّيْطَانُ يَعِدُكُمُ الْفَقْرَ وَيَاْمُرُكُمْ بِالْفَحْشَآءِ وَاللهُ يَعِدُكُمْ مَّغْفِرَةً مِّنْهُ وَفَضْلًا وَّاللهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ
শয়তান তোমাদেরকে অভাবের ভয় দেখায় এবং অশ্লীল কাজের আদেশ দেয়; অথচ আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর পক্ষ থেকে ক্ষমা এবং অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি দেন। আর আল্লাহ অসীম করুণাময় ও মহাজ্ঞানী। (সূরা বাক্বারা- ২৬৮)
শয়তান মানুষের মনে প্রতারণামূলক আশা দেয় :
اِنَّ الَّذِيْنَ ارْتَدُّوْا عَلٰۤى اَدْبَارِهِمْ مِّنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْهُدَى الشَّيْطَانُ سَوَّلَ لَهُمْؕ وَاَمْلٰى لَهُمْ
যারা তাদের কাছে হেদায়াত স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও তা থেকে ফিরে গেছে, শয়তান তাদেরকে সেদিকে লোভ দেখিয়েছে এবং (তাদেরকে পথভ্রষ্ট করার জন্য) মিথ্যা আশার জাল বিস্তার করে দিয়েছে। (সূরা মুহাম্মাদ- ২৫)
يَعِدُهُمْ وَيُمَنِّيْهِمْ وَمَا يَعِدُهُمُ الشَّيْطَانُ اِلَّا غُرُوْرًا
সে তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তাদের হৃদয়ে মিথ্যা বাসনা সৃষ্টি করে; আর শয়তান তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয় তা ছলনা ছাড়া আর কিছুই নয়। (সূরা নিসা- ১২০)
ব্যাখ্যা : অসৎকাজ করার প্রকাশ্য আহবানকে মানুষ খুব কমই গ্রহণ করে, এটা মানুষের স্বভাবসুলভ প্রবণতা। তাই নিজের জালে আবদ্ধ করার জন্য প্রত্যেক অসৎকর্মের আহবায়ক কল্যাণকামীর ছদ্মবেশে উপস্থিত হয়। মানুষের মধ্যে উচ্চতর বিষয়াবলি লাভের স্বাভাবিক আকাঙ্ক্ষা থাকে। আর শয়তান তাকে ধোঁকা দেয়ার ক্ষেত্রে প্রথম সাফল্য অর্জন করে এ পথেই। শয়তানের সবচেয়ে সফল অস্ত্র হচ্ছে, সে মানুষের সামনে তাকে উন্নতির উচ্চশিখরে নিয়ে যাওয়ার টোপ ফেলে, তারপর তাকে এমন পথের সন্ধান দেয়, যা তাকে নিচের দিকে টেনে নিয়ে যায়। শয়তানের সকল কর্মই চলে মৌখিক ওয়াদা ও আশা-ভরসা দেয়ার ভিত্তিতে। সে ব্যক্তিগত বা সামষ্টিক পর্যায়ে যখন মানুষকে কোন ভুল পথে পরিচালনা করতে চায়, তখন কাউকে ব্যক্তিগত আনন্দ-উপভোগ লাভের আশায় উদ্বুদ্ধ করে। কাউকে জাতীয় উন্নতি ও অগ্রগতির আশ্বাস দেয়। কাউকে মানবজাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধির নিশ্চয়তা দেয়। কাউকে সত্যের কাছে পৌঁছে গেছে বলে মানসিক সান্ত্বনা দেয়। কারো মনে এ ধারণা বদ্ধমূল করে যে, আখিরাত বলতে কিছুই নেই। মৃত্যুর পর সবাইকে মাটিতে মিশে যেতে হবে। কাউকে আশ্বাস দেয় যে, আখিরাত বলে যদি কিছু থেকেও থাকে তাহলে অমুক হুজুরের বদৌলতে, অমুকের দু‘আর বরকতে সেখানকার ধর-পাকড় থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যাবে। মোটকথা যাকে যে ধরনের আশার ছলনায় ভুলানো যায়, তাকে সেভাবে নিজের প্রতারণার জালে ফাঁসানোর চেষ্টা করে।
শয়তান মানুষের সাথে প্রতারণা করে :
لَقَدْ اَضَلَّنِيْ عَنِ الذِّكْرِ بَعْدَ اِذْ جَآءَنِيْؕ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِلْاِنْسَانِ خَذُوْلًا
সে তো আমাকে বিভ্রামত্ম করেছিল আমার নিকট উপদেশ পৌঁছার পর। নিশ্চয় শয়তান মানুষের জন্য মহাপ্রতারক। (সূরা ফুরক্বান- ২৯)
وَاِذْ زَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ اَعْمَالَهُمْ وَقَالَ لَا غَالِبَ لَكُمُ الْيَوْمَ مِنَ النَّاسِ وَاِنِّيْ جَارٌ لَّكُمْۚ فَلَمَّا تَرَآءَتِ الْفِئَتَانِ نَكَصَ عَلٰى عَقِبَيْهِ وَقَالَ اِنِّيْ بَرِيْٓءٌ مِّنْكُمْ اِنِّۤيْ اَرٰى مَا لَا تَرَوْنَ اِنِّۤيْ اَخَافُ اللهَؕ وَاللهُ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
স্মরণ করো, যখন শয়তান তাদের কার্যাবলি তাদের দৃষ্টিতে শোভন করে দিয়েছিল এবং বলেছিল, আজ মানুষের মধ্যে কেউই তোমাদের উপর বিজয়ী হতে পারবে না, আমি তোমাদের পার্শ্বেই থাকব। অতঃপর যখন দু’টি দল পরস্পরের সম্মুখীন হলো তখন সে পেছনে সরে পড়ল এবং বলল, তোমাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই; তোমরা যা দেখতে পাও না আমি তা দেখি। নিশ্চয় আমি আল্লাহকে ভয় করি, নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে খুবই কঠোর। (সূরা আনফাল- ৪৮)
শয়তান মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে :
وَقُلْ لِّعِبَادِيْ يَقُوْلُوا الَّتِيْ هِيَ اَحْسَنُؕ اِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْزَغُ بَيْنَهُمْؕ اِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلْاِنْسَانِ عَدُوًّا مُّبِيْنًا
আমার বান্দাদেরকে যা উত্তম তা বলতে বলো। নিশ্চয় শয়তান তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির জন্য উস্কানি দেয়; নিশ্চয় শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৫৩)
মানুষকে পাপে লিপ্ত করে কেটে পড়ে :
كَمَثَلِ الشَّيْطَانِ اِذْ قَالَ لِلْاِنْسَانِ اكْفُرْۚ فَلَمَّا كَفَرَ قَالَ اِنِّيْ بَرِيْٓءٌ مِّنْكَ اِنِّۤيْ اَخَافُ اللهَ رَبَّ الْعَالَمِيْنَ
তাদের তুলনা শয়তানের মতো, সে মানুষকে কুফরী করতে বলে। অতঃপর যখন সে কুফরী করে তখন শয়তান বলে, তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই; আমি জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করি। (সূরা হাশর- ১৬)
অবাস্তব কথা বলায় :
وَلَا تَتَّبِعُوْا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِؕ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ – اِنَّمَا يَاْمُرُكُمْ بِالسُّوْٓءِ وَالْفَحْشَآءِ وَاَنْ تَقُوْلُوْا عَلَى اللهِ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ
শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। সে তো কেবল তোমাদেরকে মন্দ ও অশ্লীল কাজের এবং আল্লাহ সম্বন্ধে তোমরা যা জান না সে বিষয়ে কথা বলার নির্দেশ দেয়। (সূরা বাক্বারা- ১৬৮, ১৬৯)
শয়তান প্রতারণামূলক ও চমকপ্রদ কথা বলায় :
وَكَذٰلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا شَيَاطِيْنَ الْاِنْسِ وَالْجِنِّ يُوْحِيْ بَعْضُهُمْ اِلٰى بَعْضٍ زُخْرُفَ الْقَوْلِ غُرُوْرًاؕ وَلَوْ شَآءَ رَبُّكَ مَا فَعَلُوْهُ فَذَرْهُمْ وَمَا يَفْتَرُوْنَ
এভাবে আমি মানব ও জিনদের মধ্যে শয়তানদেরকে প্রত্যেক নবীর শত্রু বানিয়ে দিয়েছি, ফলে তারা একে অপরকে প্রতারণার উদ্দেশ্যে চমকপ্রদ কথা দ্বারা প্ররোচিত করে। যদি তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করতেন, তবে তারা এটা করত না; সুতরাং তুমি তাদেরকে ও তাদের মিথ্যা রচনাকে বর্জন করো। (সূরা আন‘আম- ১১২)
শয়তান মানুষকে মন্ত্র¿ ও যাদু শিক্ষা দেয় :
وَاتَّبَعُوْا مَا تَتْلُوا الشَّيَاطِيْنُ عَلٰى مُلْكِ سُلَيْمَانَۚ وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ وَلٰكِنَّ الشَّيَاطِيْنَ كَفَرُوْا يُعَلِّمُوْنَ النَّاسَ السِّحْرَ
সুলায়মানের রাজত্বকালে শয়তানরা যা আবৃত্তি করত, তারা তারই অনুসরণ করছে। সুলায়মান কুফরী করেননি, বরং শয়তানরাই কুফরী করেছিল। তারা লোকদেরকে যাদু বিদ্যা শিক্ষা দিত। (সূরা বাক্বারা- ১০২)
শয়তান নবীদের কথাকেও বিকৃত করত :
وَمَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَّسُوْلٍ وَّلَا نَبِيٍّ اِلَّاۤ اِذَا تَمَنّٰۤى اَلْقَى الشَّيْطَانُ فِۤيْ اُمْنِيَّتِهٖۚ فَيَنْسَخُ اللهُ مَا يُلْقِى الشَّيْطَانُ ثُمَّ يُحْكِمُ اللهُ اٰيَاتِهٖؕ وَاللهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ ‐ لِيَجْعَلَ مَا يُلْقِى الشَّيْطَانُ فِتْنَةً لِّلَّذِيْنَ فِيْ قُلُوْبِهِمْ مَّرَضٌ وَّالْقَاسِيَةِ قُلُوْبُهُمْؕ وَاِنَّ الظَّالِمِيْنَ لَفِيْ شِقَاقٍ ۢبَعِيْدٍ
(হে নবী) আমি তোমার আগে এমন কোন নবী কিংবা রাসূলই প্রেরণ করিনি (যারা এ ঘটনার সম্মুখীন হননি যে) যখন তিনি (আল্লাহর আয়াত পাঠ করার) আগ্রহ প্রকাশ করতেন তখন শয়তান তার সে আগ্রহের কাছে (কাফিরদের মনে) সন্দেহ ঢেলে দেয়নি। অতঃপর আল্লাহ শয়তানের নিক্ষিপ্ত (সন্দেহগুলো) মিটিয়ে দেন এবং নিজের আয়াতসমূহকে (আরো) মজবুত করে দেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। এটা এজন্য যে, শয়তান যা নিক্ষিপ্ত করে তিনি তা তাদের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ করে দেন, যাদের অমত্মরে ব্যাধি রয়েছে এবং যাদের হৃদয় পাষাণ। নিশ্চয় যালিমরা চরম মতভেদে লিপ্ত রয়েছে। (সূরা হজ্জ- ৫২, ৫৩)
ব্যাখ্যা : যখনই নবী ﷺ লোকদেরকে আল্লাহর বাণী শুনিয়েছেন তখনই শয়তান সে সম্পর্কে লোকদের মনে নানা সন্দেহ-সংশয় ও আপত্তি সৃষ্টি করে দিয়েছে এবং তাদের সামনে সেগুলোর সঠিক অর্থ বাদ দিয়ে উল্টো অর্থ তুলে ধরেছে। আল্লাহ শয়তানের বিঘ্ন সৃষ্টি সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত নবীর আশা-আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করেন এবং শয়তানের ঢুকানো সন্দেহ-সংশয় ও আপত্তি দূর করে দেন। শয়তান এক একটি আয়াত সম্পর্কে লোকদের মনে যেসব জটিলতা সৃষ্টি করে দেয়, আল্লাহ তা‘আলা পরবর্তী কোন অধিকতর সুস্পষ্ট আয়াতের মাধ্যমে সেগুলো পরিষ্কার করে দেন। আল্লাহ তা‘আলা শয়তানের ফিতনাকে লোকদের জন্য পরীক্ষা এবং নকল থেকে আসলকে আলাদা করার একটা মাধ্যমে পরিণত করেছেন। বিকৃত মানসিকতাসম্পন্ন লোকেরা এসব জিনিস থেকে ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং এগুলো তাদের জন্য ভ্রষ্টতার উপকরণে পরিণত হয়। অন্যদিকে স্বচ্ছ চিন্তার অধিকারী লোকেরা এসব কথা থেকে নবী ও আল্লাহর কিতাবের সত্য হওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় লাভ করে এবং তারা অনুভব করতে থাকে যে, এগুলো শয়তানের অনিষ্টকর কার্যকলাপ। এ জিনিসটি তাদেরকে একদম নিশ্চিন্ত করে দেয় যে, এটি নির্ঘাত কল্যাণ ও সত্যের দাওয়াত, নতুবা শয়তান এতে এত বেশি অস্থির হয়ে পড়ত না।
হকের দাওয়াতের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেয়া এবং বিভিন্ন প্রকার সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি করা কোন নতুন কথা নয়। পূর্বের সকল নবীর দাওয়াতের মুকাবিলায় এসব হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মহান আল্লাহ এসব শয়তানী ফিতনার মূলোচ্ছেদ করেছেন। বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও সত্যের দাওয়াত সম্প্রসারিত হয়েছে। সুস্পষ্ট ও বিস্তারিত আয়াতের মাধ্যমে সন্দেহ-সংশয়ের বিঘ্ন দূরীভূত হয়েছে। শয়তান ও তার সাথিরা এসব কৌশল অবলম্বন করে আল্লাহর আয়াতকে মর্যাদাহীন করতে চেয়েছে। কিন্তু আল্লাহ সেগুলোকেই মানুষের মধ্যে আসল ও নকলের পার্থক্য করার মাধ্যমে পরিণত করেছেন। এ পথেই আসল ও নির্ভেজাল লোকেরা সত্যের দাওয়াতের দিকে এগিয়ে আসে এবং ভেজাল লোকেরা ছাঁটাই হয়ে আলাদা হয়ে যায়।
যারা ঈমানদার নয় :
اِنَّا جَعَلْنَا الشَّيَاطِيْنَ اَوْلِيَآءَ لِلَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ
যারা ঈমান আনয়ন করে না, শয়তানকে আমি তাদের অভিভাবক বানিয়ে দেই। (সূরা আ‘রাফ- ২৭)
যারা সত্য অস্বীকার করে :
اَلَمْ تَرَ اَنَّاۤ اَرْسَلْنَا الشَّيَاطِيْنَ عَلَى الْكَافِرِيْنَ تَؤُزُّهُمْ اَ زًّا
তুমি কি লক্ষ্য করনি যে, আমি কাফিরদের জন্য শয়তানদেরকে ছেড়ে রেখেছি? যাতে তারা তাদেরকে মন্দকর্মে বিশেষভাবে প্রলুব্ধ করতে পারে। (সূরা মারইয়াম- ৮৩)
যারা শয়তানকে বন্ধু বানায় :
اِنَّمَا سُلْطَانُهٗ عَلَى الَّذِيْنَ يَتَوَلَّوْنَهٗ وَالَّذِيْنَ هُمْ بِهٖ مُشْرِكُوْنَ
তার আধিপত্য তো কেবল তাদেরই উপর, যারা তাকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে এবং যারা তাকে আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন করে। (সূরা নাহল- ১০০)
যারা পাপাচারী ও মিথ্যুক :
تَنَزَّلُ عَلٰى كُلِّ اَفَّاكٍ اَثِيْمٍ
তারা অবতীর্ণ হয় প্রত্যেকটি ঘোর মিথ্যাবাদী ও পাপীর নিকট। (সূরা শু‘আরা- ২২২)
যারা নাফসের দাসত্ব করে এবং লোভী হয়ে থাকে :
وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَاَ الَّذِيْۤ اٰتَيْنَاهُ اٰيَاتِنَا فَانْسَلَخَ مِنْهَا فَاَتْبَعَهُ الشَّيْطَانُ فَكَانَ مِنَ الْغَاوِيْنَ – وَلَوْ شِئْنَا لَرَفَعْنَاهُ بِهَا وَلٰكِنَّهٗۤ اَخْلَدَ اِلَى الْاَرْضِ وَاتَّبَعَ هَوَاهُ فَمَثَلُهٗ كَمَثَلِ الْكَلْبِۚ اِنْ تَحْمِلْ عَلَيْهِ يَلْهَثْ اَوْ تَتْرُكْهُ يَلْهَثْؕ ذٰلِكَ مَثَلُ الْقَوْمِ الَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَاۚ فَاقْصُصِ الْقَصَصَ لَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُوْنَ
তাদেরকে ঐ ব্যক্তির বৃত্তান্ত পড়ে শুনাও, যাকে আমি নিদর্শন দিয়েছিলাম। অতঃপর সে তা বর্জন করে, পরে শয়তান তার পেছনে লাগে, এমনকি সে বিপথগামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ে। আমি ইচ্ছা করলে এর দ্বারা তাকে উচ্চমর্যাদা দান করতাম, কিন্তু সে দুনিয়ার প্রতি ঝুঁকে পড়ে ও তার প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। তার অবস্থা ঐ কুকুরের ন্যায়, যার উপর বোঝা চাপালে সে হাঁপাতে থাকে এবং বোঝা না চাপালেও হাঁপায়। যে সম্প্রদায় আমার নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করে তাদের অবস্থাও এরূপ। অতএব তুমি বৃত্তান্ত বর্ণনা করতে থাকো, যাতে তারা চিন্তা করে। (সূরা আ‘রাফ- ১৭৫, ১৭৬)
যারা আল্লাহর স্মরণ ও কুরআন থেকে গাফিল থাকে :
وَمَنْ يَّعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْمٰنِ نُقَيِّضْ لَهٗ شَيْطَانًا فَهُوَ لَهٗ قَرِيْنٌ ‐ - وَاِنَّهُمْ لَيَصُدُّوْنَهُمْ عَنِ السَّبِيْلِ وَيَحْسَبُوْنَ اَنَّهُمْ مُّهْتَدُوْنَ
যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ হতে বিমুখ হয় আমি তার জন্য এক শয়তান নিয়োজিত করি, অতঃপর সে-ই হয় তার সহচর। তারা (শয়তানরা) মানুষকে সৎপথ হতে বিরত রাখে, অথচ মানুষ মনে করে যে, তারা হেদায়াতের উপরই রয়েছে। (সূরা যুখরুফ- ৩৬, ৩৭)
اِنَّا جَعَلْنَا الشَّيَاطِيْنَ اَوْلِيَآءَ لِلَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ
যারা ঈমান আনয়ন করে না, শয়তানকে আমি তাদের অভিভাবক বানিয়ে দেই। (সূরা আ‘রাফ- ২৭)
যারা সত্য অস্বীকার করে :
اَلَمْ تَرَ اَنَّاۤ اَرْسَلْنَا الشَّيَاطِيْنَ عَلَى الْكَافِرِيْنَ تَؤُزُّهُمْ اَ زًّا
তুমি কি লক্ষ্য করনি যে, আমি কাফিরদের জন্য শয়তানদেরকে ছেড়ে রেখেছি? যাতে তারা তাদেরকে মন্দকর্মে বিশেষভাবে প্রলুব্ধ করতে পারে। (সূরা মারইয়াম- ৮৩)
যারা শয়তানকে বন্ধু বানায় :
اِنَّمَا سُلْطَانُهٗ عَلَى الَّذِيْنَ يَتَوَلَّوْنَهٗ وَالَّذِيْنَ هُمْ بِهٖ مُشْرِكُوْنَ
তার আধিপত্য তো কেবল তাদেরই উপর, যারা তাকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে এবং যারা তাকে আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন করে। (সূরা নাহল- ১০০)
যারা পাপাচারী ও মিথ্যুক :
تَنَزَّلُ عَلٰى كُلِّ اَفَّاكٍ اَثِيْمٍ
তারা অবতীর্ণ হয় প্রত্যেকটি ঘোর মিথ্যাবাদী ও পাপীর নিকট। (সূরা শু‘আরা- ২২২)
যারা নাফসের দাসত্ব করে এবং লোভী হয়ে থাকে :
وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَاَ الَّذِيْۤ اٰتَيْنَاهُ اٰيَاتِنَا فَانْسَلَخَ مِنْهَا فَاَتْبَعَهُ الشَّيْطَانُ فَكَانَ مِنَ الْغَاوِيْنَ – وَلَوْ شِئْنَا لَرَفَعْنَاهُ بِهَا وَلٰكِنَّهٗۤ اَخْلَدَ اِلَى الْاَرْضِ وَاتَّبَعَ هَوَاهُ فَمَثَلُهٗ كَمَثَلِ الْكَلْبِۚ اِنْ تَحْمِلْ عَلَيْهِ يَلْهَثْ اَوْ تَتْرُكْهُ يَلْهَثْؕ ذٰلِكَ مَثَلُ الْقَوْمِ الَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَاۚ فَاقْصُصِ الْقَصَصَ لَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُوْنَ
তাদেরকে ঐ ব্যক্তির বৃত্তান্ত পড়ে শুনাও, যাকে আমি নিদর্শন দিয়েছিলাম। অতঃপর সে তা বর্জন করে, পরে শয়তান তার পেছনে লাগে, এমনকি সে বিপথগামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ে। আমি ইচ্ছা করলে এর দ্বারা তাকে উচ্চমর্যাদা দান করতাম, কিন্তু সে দুনিয়ার প্রতি ঝুঁকে পড়ে ও তার প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। তার অবস্থা ঐ কুকুরের ন্যায়, যার উপর বোঝা চাপালে সে হাঁপাতে থাকে এবং বোঝা না চাপালেও হাঁপায়। যে সম্প্রদায় আমার নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করে তাদের অবস্থাও এরূপ। অতএব তুমি বৃত্তান্ত বর্ণনা করতে থাকো, যাতে তারা চিন্তা করে। (সূরা আ‘রাফ- ১৭৫, ১৭৬)
যারা আল্লাহর স্মরণ ও কুরআন থেকে গাফিল থাকে :
وَمَنْ يَّعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْمٰنِ نُقَيِّضْ لَهٗ شَيْطَانًا فَهُوَ لَهٗ قَرِيْنٌ ‐ - وَاِنَّهُمْ لَيَصُدُّوْنَهُمْ عَنِ السَّبِيْلِ وَيَحْسَبُوْنَ اَنَّهُمْ مُّهْتَدُوْنَ
যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ হতে বিমুখ হয় আমি তার জন্য এক শয়তান নিয়োজিত করি, অতঃপর সে-ই হয় তার সহচর। তারা (শয়তানরা) মানুষকে সৎপথ হতে বিরত রাখে, অথচ মানুষ মনে করে যে, তারা হেদায়াতের উপরই রয়েছে। (সূরা যুখরুফ- ৩৬, ৩৭)
শয়তান ভুল পথে নিয়ে গেলে ফিরে আসতে হবে :
وَاِمَّا يُنْسِيَنَّكَ الشَّيْطَانُ فَلَا تَقْعُدْ بَعْدَ الذِّكْرٰى مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِيْنَ
শয়তান যদি তোমাকে ভুলের মধ্যে ফেলে দেয়, তবে স্মরণ হওয়ার পর যালিম সম্প্রদায়ের সাথে বসবে না। (সূরা আন‘আম- ৬৮)
শয়তানের বাহিনীর সাথে লড়াই করতে হবে :
فَقَاتِلُوْاۤ اَوْلِيَآءَ الشَّيْطَانِؕ اِنَّ كَيْدَ الشَّيْطَانِ كَانَ ضَعِيْفًا
তোমরা শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো; নিশ্চয় শয়তানের কৌশল খুবই দুর্বল। (সূরা নিসা- ৭৬)
শয়তান খাঁটি মুসলিমকে বিভ্রান্ত করতে পারে না :
قَالَ رَبِّ بِمَاۤ اَغْوَيْتَنِيْ لَاُزَيِّنَنَّ لَهُمْ فِى الْاَرْضِ وَلَاُغْوِيَنَّهُمْ اَجْمَعِيْنَ – اِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِيْنَ – قَالَ هٰذَا صِرَاطٌ عَلَيَّ مُسْتَقِيْمٌ – اِنَّ عِبَادِيْ لَيْسَ لَكَ عَلَيْهِمْ سُلْطَانٌ اِلَّا مَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْغَاوِيْنَ
সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আপনি যে আমাকে বিপথগামী করলেন সেজন্য আমি পৃথিবীতে মানুষের নিকট পাপকর্মকে অবশ্যই শোভন করে তুলব এবং আমি তাদের সকলকেই বিপথগামী করব, তবে তাদের মধ্যে আপনার নির্বাচিত বান্দাগণ ব্যতীত। আল্লাহ বললেন, এটাই আমার নিকট পৌঁছার সরল পথ, বিভ্রামত্মদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করবে তারা ব্যতীত আমার বান্দাদের উপর তোমার কোনই ক্ষমতা থাকবে না। (সূরা হিজর, ৩৯-৪২)
قَالَ فَبِعِزَّتِكَ لَاُغْوِيَنَّهُمْ اَجْمَعِيْنَ – اِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِيْنَ
সে বলল, তবে আপনার ক্ষমতার শপথ! আমি তাদের সবাইকে পথভ্রষ্ট করবই। কিন্তু তাদের মধ্যে যারা আপনার খাঁটি বান্দা, তাদেরকে ছাড়া। (সূরা সোয়াদ- ৮২, ৮৩)
ব্যাখ্যা : দাসত্ব ও আনুগত্যের পথই হচ্ছে আল্লাহর কাছে পৌঁছার একমাত্র সোজা পথ। যারা এ পথ অবলম্বন করবে তাদের উপর শয়তানের কোন কর্তৃত্ব চলবে না। শয়তান নিজেও স্বীকৃতি দিচ্ছে যে, তারা তার ফাঁদে পা দেবে না। তবে যারা নিজেরাই দাসত্ব ও আনুগত্যের পথ থেকে সরে এসে নিজেদের কল্যাণ ও সৌভাগ্যের পথ হারিয়ে ফেলবে, তারা ইবলিসের শিকারে পরিণত হবে। ইবলিসকে কেবলমাত্র ধোঁকা দেয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, কারো হাত ধরে জোর করে টেনে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়নি।
আল্লাহভীরু লোকেরা শয়তানের ব্যাপারে সতর্ক থাকে :
اِنَّ الَّذِيْنَ اتَّقَوْا اِذَا مَسَّهُمْ طَآئِفٌ مِّنَ الشَّيْطَانِۚ تَذَكَّرُوْا فَاِذَا هُمْ مُّبْصِرُوْنَ
যারা তাক্বওয়ার অধিকারী শয়তান যখন তাদেরকে কুমন্ত্রণা দেয়, তখন তারা আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তৎক্ষণাৎ তাদের চক্ষু খুলে যায়। (সূরা আ‘রাফ- ২০১)
কুরআন পড়ার সময় শয়তান থেকে আশ্রয় চাইতে হবে :
فَاِذَا قَرَاْتَ الْقُرْاٰنَ فَاسْتَعِذْ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ
যখন তুমি কুরআন পাঠ করবে তখন অভিশপ্ত শয়তান হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে। (সূরা নাহল- ৯৮)
শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচার জন্য দু‘আ করতে হবে :
رَبِّ اَعُوْذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِيْنِ ‐ وَ اَعُوْذُ بِكَ رَبِّ اَنْ يَّحْضُرُوْنِ
বলো, হে আমার প্রতিপালক! আমি শয়তানের প্ররোচনা হতে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি। আর আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি, যেন তারা আমার কাছে না আসতে পারে। (সূরা মু’মিনূন- ৯৭, ৯৮)
وَاِمَّا يُنْسِيَنَّكَ الشَّيْطَانُ فَلَا تَقْعُدْ بَعْدَ الذِّكْرٰى مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِيْنَ
শয়তান যদি তোমাকে ভুলের মধ্যে ফেলে দেয়, তবে স্মরণ হওয়ার পর যালিম সম্প্রদায়ের সাথে বসবে না। (সূরা আন‘আম- ৬৮)
শয়তানের বাহিনীর সাথে লড়াই করতে হবে :
فَقَاتِلُوْاۤ اَوْلِيَآءَ الشَّيْطَانِؕ اِنَّ كَيْدَ الشَّيْطَانِ كَانَ ضَعِيْفًا
তোমরা শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো; নিশ্চয় শয়তানের কৌশল খুবই দুর্বল। (সূরা নিসা- ৭৬)
শয়তান খাঁটি মুসলিমকে বিভ্রান্ত করতে পারে না :
قَالَ رَبِّ بِمَاۤ اَغْوَيْتَنِيْ لَاُزَيِّنَنَّ لَهُمْ فِى الْاَرْضِ وَلَاُغْوِيَنَّهُمْ اَجْمَعِيْنَ – اِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِيْنَ – قَالَ هٰذَا صِرَاطٌ عَلَيَّ مُسْتَقِيْمٌ – اِنَّ عِبَادِيْ لَيْسَ لَكَ عَلَيْهِمْ سُلْطَانٌ اِلَّا مَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْغَاوِيْنَ
সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আপনি যে আমাকে বিপথগামী করলেন সেজন্য আমি পৃথিবীতে মানুষের নিকট পাপকর্মকে অবশ্যই শোভন করে তুলব এবং আমি তাদের সকলকেই বিপথগামী করব, তবে তাদের মধ্যে আপনার নির্বাচিত বান্দাগণ ব্যতীত। আল্লাহ বললেন, এটাই আমার নিকট পৌঁছার সরল পথ, বিভ্রামত্মদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করবে তারা ব্যতীত আমার বান্দাদের উপর তোমার কোনই ক্ষমতা থাকবে না। (সূরা হিজর, ৩৯-৪২)
قَالَ فَبِعِزَّتِكَ لَاُغْوِيَنَّهُمْ اَجْمَعِيْنَ – اِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِيْنَ
সে বলল, তবে আপনার ক্ষমতার শপথ! আমি তাদের সবাইকে পথভ্রষ্ট করবই। কিন্তু তাদের মধ্যে যারা আপনার খাঁটি বান্দা, তাদেরকে ছাড়া। (সূরা সোয়াদ- ৮২, ৮৩)
ব্যাখ্যা : দাসত্ব ও আনুগত্যের পথই হচ্ছে আল্লাহর কাছে পৌঁছার একমাত্র সোজা পথ। যারা এ পথ অবলম্বন করবে তাদের উপর শয়তানের কোন কর্তৃত্ব চলবে না। শয়তান নিজেও স্বীকৃতি দিচ্ছে যে, তারা তার ফাঁদে পা দেবে না। তবে যারা নিজেরাই দাসত্ব ও আনুগত্যের পথ থেকে সরে এসে নিজেদের কল্যাণ ও সৌভাগ্যের পথ হারিয়ে ফেলবে, তারা ইবলিসের শিকারে পরিণত হবে। ইবলিসকে কেবলমাত্র ধোঁকা দেয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, কারো হাত ধরে জোর করে টেনে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়নি।
আল্লাহভীরু লোকেরা শয়তানের ব্যাপারে সতর্ক থাকে :
اِنَّ الَّذِيْنَ اتَّقَوْا اِذَا مَسَّهُمْ طَآئِفٌ مِّنَ الشَّيْطَانِۚ تَذَكَّرُوْا فَاِذَا هُمْ مُّبْصِرُوْنَ
যারা তাক্বওয়ার অধিকারী শয়তান যখন তাদেরকে কুমন্ত্রণা দেয়, তখন তারা আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তৎক্ষণাৎ তাদের চক্ষু খুলে যায়। (সূরা আ‘রাফ- ২০১)
কুরআন পড়ার সময় শয়তান থেকে আশ্রয় চাইতে হবে :
فَاِذَا قَرَاْتَ الْقُرْاٰنَ فَاسْتَعِذْ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ
যখন তুমি কুরআন পাঠ করবে তখন অভিশপ্ত শয়তান হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে। (সূরা নাহল- ৯৮)
শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচার জন্য দু‘আ করতে হবে :
رَبِّ اَعُوْذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِيْنِ ‐ وَ اَعُوْذُ بِكَ رَبِّ اَنْ يَّحْضُرُوْنِ
বলো, হে আমার প্রতিপালক! আমি শয়তানের প্ররোচনা হতে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি। আর আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি, যেন তারা আমার কাছে না আসতে পারে। (সূরা মু’মিনূন- ৯৭, ৯৮)
শয়তানের আনুগত্য না করার জন্য আল্লাহ অঙ্গীকার নিয়েছেন :
اَلَمْ اَعْهَدْ اِلَيْكُمْ يَا بَنِيْۤ اٰدَمَ اَنْ لَّا تَعْبُدُوا الشَّيْطَانَ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوٌّ مٌّبِيْنٌ
আমি কি তোমাদেরকে সতর্ক করিনি (এ বলে যে) হে বনী আদম! তোমরা শয়তানের উপাসনা করো না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা ইয়াসীন- ৬০)
ব্যাখ্যা : মানুষের কাজে তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও মন উভয়ই অংশগ্রহণ করে। আবার কখনো শুধু অঙ্গপ্রতঙ্গের সাহায্যে কাজ করে; কিন্তু অন্তর সে কাজে সহযোগী হয় না। কেউ যদি এমন অবস্থায় কোন গোনাহ করে যে, তার অন্তর তাতে সাড়া দেয়নি এবং তার কণ্ঠ আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী হয়, তাহলে এটা হবে বাইরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সাহায্যে শয়তানের ইবাদাত। আবার কেউ যদি ঠান্ডা মাথায় অপরাধ করে এবং মুখেও এতে সন্তোষ প্রকাশ করে, তাহলে সে হবে ভেতরে ও বাইরে উভয় পর্যায়ে শয়তানের ইবাদাতকারী।
আল্লাহ শয়তানের ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন :
يَا بَنِيْۤ اٰدَمَ لَا يَفْتِنَنَّكُمُ الشَّيْطَانُ كَمَاۤ اَخْرَجَ اَبَوَيْكُمْ مِّنَ الْجَنَّةِ
হে আদম সন্তান! শয়তান যেন তোমাদেরকে কিছুতেই প্রলুদ্ধ না করে, যেভাবে সে তোমাদের পিতামাতাকে জান্নাত হতে বহিষ্কৃত করেছিল। (সূরা আ‘রাফ- ২৭)
وَلَا يَصُدَّنَّكُمُ الشَّيْطَانُؕ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ
শয়তান যেন তোমাদেরকে কিছুতেই নিবৃত্ত না করে, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা যুখরুফ- ৬২)
اَلَمْ اَعْهَدْ اِلَيْكُمْ يَا بَنِيْۤ اٰدَمَ اَنْ لَّا تَعْبُدُوا الشَّيْطَانَ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوٌّ مٌّبِيْنٌ
আমি কি তোমাদেরকে সতর্ক করিনি (এ বলে যে) হে বনী আদম! তোমরা শয়তানের উপাসনা করো না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা ইয়াসীন- ৬০)
ব্যাখ্যা : মানুষের কাজে তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও মন উভয়ই অংশগ্রহণ করে। আবার কখনো শুধু অঙ্গপ্রতঙ্গের সাহায্যে কাজ করে; কিন্তু অন্তর সে কাজে সহযোগী হয় না। কেউ যদি এমন অবস্থায় কোন গোনাহ করে যে, তার অন্তর তাতে সাড়া দেয়নি এবং তার কণ্ঠ আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী হয়, তাহলে এটা হবে বাইরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সাহায্যে শয়তানের ইবাদাত। আবার কেউ যদি ঠান্ডা মাথায় অপরাধ করে এবং মুখেও এতে সন্তোষ প্রকাশ করে, তাহলে সে হবে ভেতরে ও বাইরে উভয় পর্যায়ে শয়তানের ইবাদাতকারী।
আল্লাহ শয়তানের ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন :
يَا بَنِيْۤ اٰدَمَ لَا يَفْتِنَنَّكُمُ الشَّيْطَانُ كَمَاۤ اَخْرَجَ اَبَوَيْكُمْ مِّنَ الْجَنَّةِ
হে আদম সন্তান! শয়তান যেন তোমাদেরকে কিছুতেই প্রলুদ্ধ না করে, যেভাবে সে তোমাদের পিতামাতাকে জান্নাত হতে বহিষ্কৃত করেছিল। (সূরা আ‘রাফ- ২৭)
وَلَا يَصُدَّنَّكُمُ الشَّيْطَانُؕ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ
শয়তান যেন তোমাদেরকে কিছুতেই নিবৃত্ত না করে, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা যুখরুফ- ৬২)
অনেক লোকই শয়তানের অনুসরণ করে :
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يُّجَادِلُ فِى اللهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَّيَتَّبِعُ كُلَّ شَيْطَانٍ مَّرِيْدٍ
মানুষের মধ্যে কতক (লোক) অজ্ঞতাবশত আল্লাহ সম্বন্ধে বিতর্কে লিপ্ত হয় এবং তারা প্রত্যেক বিদ্রোহী শয়তানের অনুসরণ করে। (সূরা হজ্জ- ৩)
তারপরও তারা সঠিক পথে আছে বলে মনে করে :
اِنَّهُمُ اتَّخَذُوا الشَّيَاطِيْنَ اَوْلِيَآءَ مِنْ دُوْنِ اللهِ وَيَحْسَبُوْنَ اَنَّهُمْ مُّهْتَدُوْنَ
তারা আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানকে তাদের অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছিল; তারা মনে করত, তারাই সৎপথপ্রাপ্ত। (সূরা আ‘রাফ- ৩০)
শয়তানের আনুগত্য করা শিরক :
وَاِنَّ الشَّيَاطِيْنَ لَيُوْحُوْنَ اِلٰۤى اَوْلِيَآئِهِمْ لِيُجَادِلُوْكُمْۚ وَاِنْ اَطَعْتُمُوْهُمْ اِنَّكُمْ لَمُشْرِكُوْنَ
নিশ্চয় শয়তানরা তাদের বন্ধুদেরকে তোমাদের সাথে বিবাদ করতে প্ররোচনা দেয়; যদি তোমরা তাদের কথামতো চল, তবে তোমরা অবশ্যই মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (সূরা আন‘আম- ১২১)
আল্লাহ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন :
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ كُلُوْا مِمَّا فِى الْاَرْضِ حَلَالًا طَيِّبًا وَّلَا تَتَّبِعُوْا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِؕ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ
হে মানবজাতি! পৃথিবীর মধ্যে যা হালাল ও পবিত্র তা হতে খাও। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা বাক্বারা- ১৬৮)
وَلَا تَتَّبِعُوْا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِؕ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ
আর তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না; নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা আন‘আম- ১৪২)
যারা শয়তানকে বন্ধু বানায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে :
وَمَنْ يَّتَّخِذِ الشَّيْطَانَ وَلِيًّا مِّنْ دُوْنِ اللهِ فَقَدْ خَسِرَ خُسْرَانًا مُّبِيْنًا
যে ব্যক্তি আল্লাহর পরিবর্তে শয়তানকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করবে, সে স্পষ্টভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (সূরা নিসা- ১১৯)
শয়তানের গোটা বাহিনী ক্ষতিগ্রস্ত হবে :
اَ لَاۤ اِنَّ حِزْبَ الشَّيْطَانِ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ
জেনে রেখো, নিশ্চয় শয়তানের দল ক্ষতিগ্রস্ত হবেই। (সূরা মুজাদালা- ১৯)
শয়তানের অনুসারীরা জাহান্নামে যাবে :
قَالَ فَالْحَقُّؗ وَالْحَقَّ اَقُوْلُ – لَاَمْلَاَنَّ جَهَنَّمَ مِنْكَ وَمِمَّنْ تَبِعَكَ مِنْهُمْ اَجْمَعِيْنَ
আল্লাহ বললেন, তবে তাই ঠিক; আর আমি সত্য কথাই বলে থাকি। অবশ্যই আমি জাহান্নাম পূর্ণ করব তোমাকে দিয়ে এবং তাদের (মানুষ ও জিন জাতির) মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করবে তাদের সবাইকে দিয়ে। (সূরা সোয়াদ- ৮৪, ৮৫)
পাপীদের সাথে শয়তানেরও হাশর ঘটবে :
فَوَرَبِّكَ لَنَحْشُرَنَّهُمْ وَالشَّيَاطِيْنَ ثُمَّ لَنُحْضِرَنَّهُمْ حَوْلَ جَهَنَّمَ جِثِيًّا
শপথ তোমার প্রতিপালকের! আমি তো তাদেরকে এবং শয়তানদেরকে সমবেত করব। তারপর আমি তাদেরকে নতজানু অবস্থায় জাহান্নামের চতুর্দিকে উপস্থিত করবই। (সূরা মারইয়াম- ৬৮)
অপরাধীরা শয়তানকে ধিক্কার দেবে :
حَتّٰۤى اِذَا جَآءَنَا قَالَ يَا لَيْتَ بَيْنِيْ وَبَيْنَكَ بُعْدَ الْمَشْرِقَيْنِ فَبِئْسَ الْقَرِيْنُ
অবশেষে যখন সে আমার নিকট উপস্থিত হবে, তখন সে (শয়তানকে) বলবে, হায়! আমার ও তোমার মধ্যে যদি পূর্ব ও পশ্চিমের ব্যবধান থাকত! সুতরাং (লক্ষ্য করো) সে কতই না নিকৃষ্ট সহচর। (সূরা যুখরুফ- ৩৮)
শয়তান পাশ কাটিয়ে জবাব দেবে :
وَقَالَ الشَّيْطَانُ لَمَّا قُضِيَ الْاَمْرُ اِنَّ اللهَ وَعَدَكُمْ وَعْدَ الْحَقِّ وَوَعَدْتُّكُمْ فَاَخْلَفْتُكُمْؕ وَمَا كَانَ لِيَ عَلَيْكُمْ مِّنْ سُلْطَانٍ اِلَّاۤ اَنْ دَعَوْتُكُمْ فَاسْتَجَبْتُمْ لِيْۚ فَلَا تَلُوْمُوْنِيْ وَلُوْمُوْاۤ اَنْفُسَكُمْؕ مَاۤ اَنَاْ بِمُصْرِخِكُمْ وَمَاۤ اَنْتُمْ بِمُصْرِخِيَّؕ اِنِّيْ كَفَرْتُ بِمَاۤ اَشْرَكْتُمُوْنِ مِنْ قَبْلُؕ اِنَّ الظَّالِمِيْنَ لَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
যখন বিচারকার্য সম্পন্ন হবে তখন শয়তান বলবে, আল্লাহ তো তোমাদেরকে সত্য প্রতিশ্রুতিই দিয়েছিলেন। আর আমিও তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, কিন্তু আমি তোমাদেরকে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছি। আমার তো তোমাদের উপর কোন আধিপত্য ছিল না, আমি কেবল তোমাদেরকে আহবান করেছিলাম এবং তোমরা আমার আহবানে সাড়া দিয়েছিলে। সুতরাং তোমরা আমার প্রতি দোষারোপ করো না, বরং তোমরা নিজেদের প্রতি দোষারোপ করো। আমি তোমাদের উদ্ধারে সাহায্য করতে সক্ষম নই এবং তোমরাও আমার উদ্ধারে সাহায্য করতে সক্ষম নও। তোমরা যে পূর্বে আমাকে আল্লাহর শরীক করেছিলে আমি তা অস্বীকার করছি, নিশ্চয় যালিমদের জন্য (প্রস্তুত) রয়েছে মর্মান্তিক শাসিত্ম। (সূরা ইবরাহীম- ২২)
ব্যাখ্যা : তোমরা দেখতেই পাচ্ছ, আল্লাহর প্রত্যেকটি প্রতিশ্রুতি ও হুমকি অক্ষরে অক্ষরে সত্য প্রমাণিত হয়েছে। অন্যদিকে আমি তোমাদেরকে যেসব আশ্বাস দিয়েছিলাম, যেসব লাভের লোভ দেখিয়েছিলাম এগুলো সবই ছিল নিছক প্রতারণা। আমি তো কেবল তোমাদের সামনে হকের আহবানের মুকাবিলায় বাতিলের আহবান পেশ করেছিলাম, সত্যের মুকাবিলায় মিথ্যার দিকে ডেকেছিলাম, সৎকাজের মুকাবিলায় অসৎকাজ করার জন্য আহবান করেছিলাম। এর বেশি আর কিছুই করিনি। আমার কথা মানা অথবা না মানার পূর্ণ স্বাধীনতা তোমাদের ছিল। তোমাদেরকে বাধ্য করার কোন ক্ষমতা আমার ছিল না। এখন আমার এ দাওয়াতের জন্য নিঃসন্দেহে আমি নিজে দায়ী ছিলাম এবং এর শাস্তিও আমিই নিচ্ছি। কিন্তু তোমরা যে এ দাওয়াতে সাড়া দিয়েছ এর দায়ভার কেমন করে আমার ঘাড়ে চাপাতে চাচ্ছ? নিজেদের ভুল নির্বাচন এবং নিজেদের ক্ষমতার অসৎ ব্যবহারের দায়ভার পুরোপুরি তোমাদেরকেই বহন করতে হবে।
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يُّجَادِلُ فِى اللهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَّيَتَّبِعُ كُلَّ شَيْطَانٍ مَّرِيْدٍ
মানুষের মধ্যে কতক (লোক) অজ্ঞতাবশত আল্লাহ সম্বন্ধে বিতর্কে লিপ্ত হয় এবং তারা প্রত্যেক বিদ্রোহী শয়তানের অনুসরণ করে। (সূরা হজ্জ- ৩)
তারপরও তারা সঠিক পথে আছে বলে মনে করে :
اِنَّهُمُ اتَّخَذُوا الشَّيَاطِيْنَ اَوْلِيَآءَ مِنْ دُوْنِ اللهِ وَيَحْسَبُوْنَ اَنَّهُمْ مُّهْتَدُوْنَ
তারা আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানকে তাদের অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছিল; তারা মনে করত, তারাই সৎপথপ্রাপ্ত। (সূরা আ‘রাফ- ৩০)
শয়তানের আনুগত্য করা শিরক :
وَاِنَّ الشَّيَاطِيْنَ لَيُوْحُوْنَ اِلٰۤى اَوْلِيَآئِهِمْ لِيُجَادِلُوْكُمْۚ وَاِنْ اَطَعْتُمُوْهُمْ اِنَّكُمْ لَمُشْرِكُوْنَ
নিশ্চয় শয়তানরা তাদের বন্ধুদেরকে তোমাদের সাথে বিবাদ করতে প্ররোচনা দেয়; যদি তোমরা তাদের কথামতো চল, তবে তোমরা অবশ্যই মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (সূরা আন‘আম- ১২১)
আল্লাহ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন :
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ كُلُوْا مِمَّا فِى الْاَرْضِ حَلَالًا طَيِّبًا وَّلَا تَتَّبِعُوْا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِؕ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ
হে মানবজাতি! পৃথিবীর মধ্যে যা হালাল ও পবিত্র তা হতে খাও। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা বাক্বারা- ১৬৮)
وَلَا تَتَّبِعُوْا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِؕ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ
আর তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না; নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা আন‘আম- ১৪২)
যারা শয়তানকে বন্ধু বানায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে :
وَمَنْ يَّتَّخِذِ الشَّيْطَانَ وَلِيًّا مِّنْ دُوْنِ اللهِ فَقَدْ خَسِرَ خُسْرَانًا مُّبِيْنًا
যে ব্যক্তি আল্লাহর পরিবর্তে শয়তানকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করবে, সে স্পষ্টভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (সূরা নিসা- ১১৯)
শয়তানের গোটা বাহিনী ক্ষতিগ্রস্ত হবে :
اَ لَاۤ اِنَّ حِزْبَ الشَّيْطَانِ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ
জেনে রেখো, নিশ্চয় শয়তানের দল ক্ষতিগ্রস্ত হবেই। (সূরা মুজাদালা- ১৯)
শয়তানের অনুসারীরা জাহান্নামে যাবে :
قَالَ فَالْحَقُّؗ وَالْحَقَّ اَقُوْلُ – لَاَمْلَاَنَّ جَهَنَّمَ مِنْكَ وَمِمَّنْ تَبِعَكَ مِنْهُمْ اَجْمَعِيْنَ
আল্লাহ বললেন, তবে তাই ঠিক; আর আমি সত্য কথাই বলে থাকি। অবশ্যই আমি জাহান্নাম পূর্ণ করব তোমাকে দিয়ে এবং তাদের (মানুষ ও জিন জাতির) মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করবে তাদের সবাইকে দিয়ে। (সূরা সোয়াদ- ৮৪, ৮৫)
পাপীদের সাথে শয়তানেরও হাশর ঘটবে :
فَوَرَبِّكَ لَنَحْشُرَنَّهُمْ وَالشَّيَاطِيْنَ ثُمَّ لَنُحْضِرَنَّهُمْ حَوْلَ جَهَنَّمَ جِثِيًّا
শপথ তোমার প্রতিপালকের! আমি তো তাদেরকে এবং শয়তানদেরকে সমবেত করব। তারপর আমি তাদেরকে নতজানু অবস্থায় জাহান্নামের চতুর্দিকে উপস্থিত করবই। (সূরা মারইয়াম- ৬৮)
অপরাধীরা শয়তানকে ধিক্কার দেবে :
حَتّٰۤى اِذَا جَآءَنَا قَالَ يَا لَيْتَ بَيْنِيْ وَبَيْنَكَ بُعْدَ الْمَشْرِقَيْنِ فَبِئْسَ الْقَرِيْنُ
অবশেষে যখন সে আমার নিকট উপস্থিত হবে, তখন সে (শয়তানকে) বলবে, হায়! আমার ও তোমার মধ্যে যদি পূর্ব ও পশ্চিমের ব্যবধান থাকত! সুতরাং (লক্ষ্য করো) সে কতই না নিকৃষ্ট সহচর। (সূরা যুখরুফ- ৩৮)
শয়তান পাশ কাটিয়ে জবাব দেবে :
وَقَالَ الشَّيْطَانُ لَمَّا قُضِيَ الْاَمْرُ اِنَّ اللهَ وَعَدَكُمْ وَعْدَ الْحَقِّ وَوَعَدْتُّكُمْ فَاَخْلَفْتُكُمْؕ وَمَا كَانَ لِيَ عَلَيْكُمْ مِّنْ سُلْطَانٍ اِلَّاۤ اَنْ دَعَوْتُكُمْ فَاسْتَجَبْتُمْ لِيْۚ فَلَا تَلُوْمُوْنِيْ وَلُوْمُوْاۤ اَنْفُسَكُمْؕ مَاۤ اَنَاْ بِمُصْرِخِكُمْ وَمَاۤ اَنْتُمْ بِمُصْرِخِيَّؕ اِنِّيْ كَفَرْتُ بِمَاۤ اَشْرَكْتُمُوْنِ مِنْ قَبْلُؕ اِنَّ الظَّالِمِيْنَ لَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
যখন বিচারকার্য সম্পন্ন হবে তখন শয়তান বলবে, আল্লাহ তো তোমাদেরকে সত্য প্রতিশ্রুতিই দিয়েছিলেন। আর আমিও তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, কিন্তু আমি তোমাদেরকে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছি। আমার তো তোমাদের উপর কোন আধিপত্য ছিল না, আমি কেবল তোমাদেরকে আহবান করেছিলাম এবং তোমরা আমার আহবানে সাড়া দিয়েছিলে। সুতরাং তোমরা আমার প্রতি দোষারোপ করো না, বরং তোমরা নিজেদের প্রতি দোষারোপ করো। আমি তোমাদের উদ্ধারে সাহায্য করতে সক্ষম নই এবং তোমরাও আমার উদ্ধারে সাহায্য করতে সক্ষম নও। তোমরা যে পূর্বে আমাকে আল্লাহর শরীক করেছিলে আমি তা অস্বীকার করছি, নিশ্চয় যালিমদের জন্য (প্রস্তুত) রয়েছে মর্মান্তিক শাসিত্ম। (সূরা ইবরাহীম- ২২)
ব্যাখ্যা : তোমরা দেখতেই পাচ্ছ, আল্লাহর প্রত্যেকটি প্রতিশ্রুতি ও হুমকি অক্ষরে অক্ষরে সত্য প্রমাণিত হয়েছে। অন্যদিকে আমি তোমাদেরকে যেসব আশ্বাস দিয়েছিলাম, যেসব লাভের লোভ দেখিয়েছিলাম এগুলো সবই ছিল নিছক প্রতারণা। আমি তো কেবল তোমাদের সামনে হকের আহবানের মুকাবিলায় বাতিলের আহবান পেশ করেছিলাম, সত্যের মুকাবিলায় মিথ্যার দিকে ডেকেছিলাম, সৎকাজের মুকাবিলায় অসৎকাজ করার জন্য আহবান করেছিলাম। এর বেশি আর কিছুই করিনি। আমার কথা মানা অথবা না মানার পূর্ণ স্বাধীনতা তোমাদের ছিল। তোমাদেরকে বাধ্য করার কোন ক্ষমতা আমার ছিল না। এখন আমার এ দাওয়াতের জন্য নিঃসন্দেহে আমি নিজে দায়ী ছিলাম এবং এর শাস্তিও আমিই নিচ্ছি। কিন্তু তোমরা যে এ দাওয়াতে সাড়া দিয়েছ এর দায়ভার কেমন করে আমার ঘাড়ে চাপাতে চাচ্ছ? নিজেদের ভুল নির্বাচন এবং নিজেদের ক্ষমতার অসৎ ব্যবহারের দায়ভার পুরোপুরি তোমাদেরকেই বহন করতে হবে।
মানুষ সৃষ্টির সূচনা হয় মাটি থেকে :
وَمِنْ اٰيَاتِهٖۤ اَنْ خَلَقَكُمْ مِّنْ تُرَابٍ ثُمَّ اِذَاۤ اَنْتُمْ بَشَرٌ تَنْتَشِرُوْنَ
তাঁর নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম এই যে, তিনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। তারপর তোমরা (সকল) মানুষ বিস্তার লাভ করেছ। (সূরা রূম- ২০)
মাটির বিভিন্ন পর্যায় :
وَبَدَاَ خَلْقَ الْاِنْسَانِ مِنْ طِيْنٍ
তিনি মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন কাদামাটি দিয়ে। (সূরা সাজদা- ৭)
هُوَ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ طِيْنٍ
তিনিই তোমাদেরকে কাদামাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। (সূরা আন‘আম- ২)
اِنَّا خَلَقْنَاهُمْ مِّنْ طِيْنٍ لَّازِبٍ
আমি তো তাদেরকে সৃষ্টি করেছি আঠাযুক্ত কাদামাটি থেকে। (সূরা সাফফাত- ১১)
وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْاِنْسَانَ مِنْ صَلْصَالٍ مِّنْ حَمَإٍ مَّسْنُوْنٍ
আমি তো মানুষ সৃষ্টি করেছি গন্ধযুক্ত কাদার শুষ্ক ঠন্ঠনা মাটি হতে। (সূরা হিজর- ২৬)
خَلَقَ الْاِنْسَانَ مِنْ صَلْصَالٍ كَالْفَخَّارِ
তিনি মানুষকে (আদমকে) সৃষ্টি করেছেন পোড়ামাটির মতো শুকনা মাটি হতে। (সূরা আর রহমান- ১৪)
ব্যাখ্যা : কুরআন মাজীদে মানুষ সৃষ্টির যে প্রাথমিক পর্যায়সমূহ বিভিন্ন আয়াতের বর্ণনা করা হয়েছে, তা হলো: ১. তুরাব অর্থাৎ মাটি। ২. ত্বীন অর্থাৎ পঁচা কর্দম, যা মাটিতে পানি মিশিয়ে বানানো হয়। ৩. ত্বীন লাযেব বা আঠালো কাদামাটি। অর্থাৎ এমন কাদা, দীর্ঘদিন পড়ে থাকার কারণে যার মধ্যে আঠা সৃষ্টি হয়ে যায়। ৪. حَمَاءٌ مَّسْنُوْنَ অর্থাৎ যে কাদার মধ্যে গন্ধ সৃষ্টি হয়ে যায়। ৫. صَلْصَالٌ مِّنْ حَمَاءٍ مَّسْنُوْنَ كَالْفَخَّارِ অর্থাৎ পঁচা কাদা, যা শুকিয়ে যাওয়ার পরে মাটির শুকনো ঢিলার মতো হয়ে যায়। ৬. بَشَرٌ (বাশার) মাটির এ শেষ পর্যায় থেকে আদম (আঃ) কে বানানো হয়েছে, আল্লাহ তা‘আলা যার মধ্যে তাঁর বিশেষ রূহ ফুৎকার করেছেন, ফেরেশতাদের দিয়ে যার প্রতি সিজদা করিয়েছেন এবং যার সমজাতীয় থেকে তার জোড়া সৃষ্টি করেছিলেন। ৭. مَاءٌ مَّهِيْنٌ পরবর্তী সময়ে নিকৃষ্ট পানির মতো সংমিশ্রিত দেহনির্যাস থেকে তার বংশধারা চালু করা হয়েছে। এ কথাটি বুঝাতে অন্যস্থানে نُطْفَةٌ (অর্থাৎ শুক্র) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রথম মানুষ থেকেই তার জোড়া সৃষ্টি করা হয় :
هُوَ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ وَّجَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا لِيَسْكُنَ اِلَيْهَا
তিনিই তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তা হতে তার স্ত্রীকে সৃষ্টি করে দিয়েছেন, যাতে সে তার নিকট প্রশান্তি লাভ করতে পারে। (সূরা আ‘রাফ- ১৮৯)
خَلَقَكُمْ مِّنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ ثُمَّ جَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا
তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন একই ব্যক্তি থেকে। তারপর তা থেকেই তার জোড়া সৃষ্টি করেছেন। (সূরা যুমার- ৬)
পরবর্তীতে মানুষ সৃষ্টির উপাদান বীর্যে পরিণত করা হয় :
وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْاِنْسَانَ مِنْ سُلَالَةٍ مِّنْ طِيْنٍ – ثُمَّ جَعَلْنَاهُ نُطْفَةً فِيْ قَرَارٍ مَّكِيْنٍ
আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মৃত্তিকার উপাদান হতে। অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দুরূপে স্থাপন করি এক নিরাপদ আধারে। (সূরা মু’মিনূন- ১২, ১৩)
قُتِلَ الْاِنْسَانُ مَاۤ اَكْفَرَهٗ – مِنْ اَيِّ شَيْءٍ خَلَقَهٗ – مِنْ نُّطْفَةٍؕ خَلَقَهٗ فَقَدَّرَهٗ
মানুষ ধ্বংস হোক! সে কতই না অকৃতজ্ঞ! তাকে তিনি কোন বস্তু হতে সৃষ্টি করেছেন? তিনি তাকে শুক্রবিন্দু হতে সৃষ্টি করেন, অতঃপর তার তাকদীর (ভাগ্য) নির্ধারণ করে দেন। (সূরা আবাসা, ১৭-১৯)
নারী-পুরুষ উভয়ের থেকে এ বীর্য বের হয় :
فَلْيَنْظُرِ الْاِنْسَانُ مِمَّ خُلِقَ – خُلِقَ مِنْ مَّآءٍ دَافِقٍ – يَّخْرُجُ مِنْ ۢبَيْنِ الصُّلْبِ وَالتَّرَآئِبِ
সুতরাং মানুষের লক্ষ্য করা উচিত যে, তাকে কী হতে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে প্রবল বেগে নির্গত পানি হতে, যা বের হয় পিঠ ও বুকের হাড়ের মধ্য হতে। (সূরা তারিক, ৫-৭)
বীর্যকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মায়ের গর্ভে রাখা হয় :
اَلَمْ نَخْلُقْكُّمْ مِّنْ مَّآءٍ مَّهِيْنٍ – فَجَعَلْنَاهُ فِيْ قَرَارٍ مَّكِيْنٍ – اِلٰى قَدَرٍ مَّعْلُوْمٍ – فَقَدَرْنَا فَنِعْمَ الْقَادِرُوْنَ
আমি কি তোমাদেরকে নগণ্য পানি হতে সৃষ্টি করিনি? অতঃপর আমি ওটাকে স্থাপন করেছি নিরাপদ স্থানে এক নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত। আমি একে গঠন করেছি পরিমিতভাবে, অতএব আমি কতই না নিপুণ নিরূপণকারী! (সূরা মুরসালাত, ২০-২৩)
বীর্যকে ক্রমে রক্ত, গোশত ও হাড্ডিতে পরিণত করা হয় :
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اِنْ كُنْتُمْ فِيْ رَيْبٍ مِّنَ الْبَعْثِ فَاِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِّنْ تُرَابٍ ثُمَّ مِنْ نُّطْفَةٍ ثُمَّ مِنْ عَلَقَةٍ ثُمَّ مِنْ مُّضْغَةٍ مُّخَلَّقَةٍ وَّغَيْرِ مُخَلَّقَةٍ لِّنُبَيِّنَ لَكُمْؕ وَنُقِرُّ فِى الْاَرْحَامِ مَا نَشَآءُ اِلٰۤى اَجَلٍ مُّسَمًّى ثُمَّ نُخْرِجُكُمْ طِفْلًا ثُمَّ لِتَبْلُغُوْاۤ اَشُدَّكُمْ
হে মানুষ! যদি তোমরা উত্থান সম্বন্ধে সন্দিহান হও তবে জেনে রেখো, আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি মাটি হতে, তারপর শুক্র হতে, তারপর জমাটবাঁধা রক্তপিন্ড হতে, তারপর মাংসপিন্ড হতে পূর্ণ আকৃতি বিশিষ্ট বা অপূর্ণ আকৃতি বিশিষ্ট অবস্থায়। যাতে করে আমি (আমার শক্তি ও ক্ষমতা) তোমাদের নিকট স্পষ্ট করে তুলে ধরতে পারি। অতঃপর আমি যাকে ইচ্ছা তাকে এক নির্দিষ্টকালের জন্য মাতৃগর্ভে স্থির রাখি, তারপর আমি তোমাদেরকে শিশুরূপে বের করি। অতঃপর (লালন-পালন করি) যাতে তোমরা পরিণত বয়সে উপনীত হও। (সূরা হজ্জ- ৫)
ثُمَّ خَلَقْنَا النُّطْفَةَ عَلَقَةً فَخَلَقْنَا الْعَلَقَةَ مُضْغَةً فَخَلَقْنَا الْمُضْغَةَ عِظَامًا فَكَسَوْنَا الْعِظَامَ لَحْمًاۗ ثُمَّ اَنْشَاْنَاهُ خَلْقًا اٰخَرَؕ فَتَبَارَكَ اللهُ اَحْسَنُ الْخَالِقِيْنَ
আমি শুক্রবিন্দুকে পরিণত করি জমাটবাঁধা রক্তে, অতঃপর জমাটবাঁধা রক্তকে পরিণত করি মাংসপিন্ডে এবং মাংসপিন্ডকে পরিণত করি হাড্ডিতে, অতঃপর হাড্ডিকে আবৃত করে দেই মাংস দ্বারা; অবশেষে তাকে গড়ে তুলি অন্য এক সৃষ্টিরূপে। অতএব বরকতময় আল্লাহই সর্বোত্তম স্রষ্টা! (সূরা মু’মিনূন- ১৪)
অতঃপর এর মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করা হয় :
وَاِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَآئِكَةِ اِنِّيْ خَالِقٌ ۢبَشَرًا مِّنْ صَلْصَالٍ مِّنْ حَمَإٍ مَّسْنُوْنٍ – فَاِذَا سَوَّيْتُهٗ وَنَفَخْتُ فِيْهِ مِنْ رُّوْحِيْ فَقَعُوْا لَهٗ سَاجِدِيْنَ
যখন তোমার প্রতিপালক ফেরেশতাদেরকে বললেন, আমি গন্ধযুক্ত কাঁদার শুষ্ক ঠন্ঠনা মাটি হতে মানুষ সৃষ্টি করেছি। অতএব যখন আমি তাকে সুঠাম করব এবং তাতে আমার পক্ষ হতে রূহ সঞ্চার করব, তখন তোমরা তার প্রতি সিজদাবনত হও। (সূরা হিজর- ২৮, ২৯)
ব্যাখ্যা : অতি ক্ষুদ্র শুক্রকীট থেকে মানুষের মতো বিস্ময়কর সৃষ্টির অস্তিত্ব লাভ করা, মাতৃগর্ভে বেড়ে ওঠা, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যা কিছু করবে এবং যতটুকু নিয়ামতপ্রাপ্ত হবে সবকিছু সেখানেই নির্ধারিত হওয়া, কারো গর্ভপাতের শিকার হওয়া, কারো শিশুকালেই মরে যাওয়া, কারো যৌবনকালে বা বৃদ্ধাবস্থায় পৌঁছা- এসব বিষয় এ সত্যটিই তুলে ধরছে যে, এক সর্বশক্তিমান সত্তা আমাদের জীবন ও মৃত্যুর ব্যাপারে সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী। তাই একমাত্র তাঁরই আইনকানুন ও আদেশ-নিষেধ মেনে চলতে হবে।
তিনটি পর্দার ভেতরে সযত্নে এ কাজ সম্পন্ন হয় :
يَخْلُقُكُمْ فِيْ بُطُوْنِ اُمَّهَاتِكُمْ خَلْقًا مِّنْ ۢبَعْدِ خَلْقٍ فِيْ ظُلُمَاتٍ ثَلَاثٍ ذٰلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمْ لَهُ الْمُلْكُؕ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَۚ فَاَنّٰى تُصْرَفُوْنَ
তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেন তোমাদের মাতৃগর্ভে একের পর এক তিন স্তরের অন্ধকারের মধ্যে। তিনিই আল্লাহ, যিনি তোমাদের প্রতিপালক, সকল কর্তৃত্ব তাঁরই। তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই, অতএব তোমাদেরকে কোথায় ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে? (সূরা যুমার- ৬)
তারপর মানবশিশুকে দুনিয়াতে বের করে আনা হয় :
هُوَ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ تُرَابٍ ثُمَّ مِنْ نُّطْفَةٍ ثُمَّ مِنْ عَلَقَةٍ ثُمَّ يُخْرِجُكُمْ طِفْلًا
তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মাটি হতে; তারপর শুক্রবিন্দু হতে; তারপর জমাটবাঁধা রক্তপিন্ড হতে; তারপর বের করে আনেন শিশুরূপে। (সূরা মু’মিন- ৬৭)
এরপর যৌবনে পদার্পণ করে :
ثُمَّ لِتَبْلُغُوْاۤ اَشُدَّكُمْ ثُمَّ لِتَكُوْنُوْا شُيُوْخًا
অতঃপর যেন তোমরা উপনীত হতে পার যৌবনে, তারপর উপনীত হতে পার বার্ধক্যে। (সূরা মু’মিন- ৬৭)
ধীরে ধীরে মানুষ জ্ঞানবুদ্ধি লাভ করে :
وَاللهُ اَخْرَجَكُمْ مِّنْ ۢبُطُوْنِ اُمَّهَاتِكُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ شَيْئًا وَّجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْاَبْصَارَ وَالْاَفْئِدَةَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের মাতৃগর্ভ হতে বের করেছেন এমন অবস্থায় যে, তোমরা কিছুই জানতে না। তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি এবং হৃদয়, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পার। (সূরা নাহল- ৭৮)
কেউ শিশুকালে মারা যায় :
وَمِنْكُمْ مَّنْ يُّتَوَفّٰى مِنْ قَبْلُ وَلِتَبْلُغُوْاۤ اَجَلًا مُّسَمًّى وَّلَعَلَّكُمْ تَعْقِلُوْنَ
তোমাদের মধ্যে কারো (যৌবনে পদার্পণ করার) পূর্বেই মৃত্যু ঘটে, যাতে তোমরা নির্ধারিত কাল পর্যন্ত পৌঁছে যাও এবং যাতে তোমরা অনুধাবন করতে পার। (সূরা মু’মিন- ৬৭)
কেউ আবার বার্ধক্যের শেষ প্রান্তে পৌঁছে :
وَمِنْكُمْ مَّنْ يُّرَدُّ اِلٰۤى اَرْذَلِ الْعُمُرِ لِكَيْلَا يَعْلَمَ مِنْ ۢبَعْدِ عِلْمٍ شَيْئًا
তোমাদের মধ্যে কাউকে উপনীত করা হয় হীনতম বয়সে, যার ফলে তারা যা কিছু জানত সে সম্বন্ধে কোন জ্ঞানই থাকে না। (সূরা হজ্জ- ৫)
ব্যাখ্যা : শৈশব, যৌবন ও বার্ধক্য এসব অবস্থা আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন। তিনি যাকে চান দুর্বল করে সৃষ্টি করেন, যাকে চান শক্তিশালী করেন, যাকে চান শৈশবেই মৃত্যু দান করেন, যাকে চান যৌবনে মৃত্যু দান করেন, যাকে চান দীর্ঘজীবি করেও সুস্থ রাখেন, আবার যাকে চান তাকে বার্ধক্যের এমন কষ্টকর অবস্থায় পৌঁছে দেন, যার দ্বারা দুনিয়াবাসী শিক্ষালাভ করতে পারে- এসব তাঁরই ইচ্ছা। মানুষ যতই অহংকারে মত্ত হয়ে উঠুক না কেন, আল্লাহর শক্তির শৃংখলে সে এমনভাবে বাঁধা যে, আল্লাহ তাকে যে অবস্থায় রাখতে চান তার মধ্যে কোন পরিবর্তন আনা তার পক্ষে সম্ভব নয়। আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক মানুষকে জীবনের বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করিয়ে সে বিশেষ সময় পর্যন্ত নিয়ে যান, যা তিনি প্রত্যেক মানুষের জন্য নির্ধারণ করে রেখেছেন। বিশেষ করে সে মুহূর্তটি আসার পূর্বে যদি গোটা দুনিয়ার মানুষ মিলিত হয়েও তাকে হত্যা করতে চেষ্টা করে, তবুও কেউ তাকে হত্যা করতে পারবে না। আবার সে মুহূর্তটি এসে যাওয়ার পর দুনিয়ার সমস্ত শক্তি মিলিত হয়েও যদি কাউকে জীবিত রাখার জন্য চেষ্টা করে, তবুও সফল হতে পারবে না। মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত হওয়ার পর সমস্ত মানুষকে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হতে হবে।
এভাবেই মানুষ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে :
وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيْرًا وَّنِسَآءًۚ وَاتَّقُوا اللهَ الَّذِيْ تَسَآءَلُوْنَ بِهٖ وَالْاَرْحَامَؕ اِنَّ اللهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيْبًا
অতঃপর তিনি তাদের উভয় হতে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন। সুতরাং তোমরা ঐ আল্লাহকে ভয় করো, যাঁর নামের দোহাই দিয়ে তোমরা একে অপরের কাছে প্রার্থনা কর এবং আত্মীয়তাকেও ভয় করো (অর্থাৎ আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখো), নিশ্চয় আল্লাহই তোমাদের প্রতি তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখেন। (সূরা নিসা- ১)
বিভিন্ন গোত্রে ও জাতিতে মানুষকে বিভক্ত করা হয়েছে :
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِّنْ ذَكَرٍ وَّاُنْثٰى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوْبًا وَّقَبَآئِلَ لِتَعَارَفُوْا
হে মানবসমাজ! আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি। তারপর তোমাদেরকে বিভিন্ন শাখা ও গোত্রে বিভক্ত করে দিয়েছি, যাতে তোমরা একে অপরকে (ঐসব নামে) চিনতে পার। (সূরা হুজুরাত- ১৩)
মানুষকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করা হয়েছে :
اَلَمْ يَكُ نُطْفَةً مِّنْ مَّنِيِّ يُّمْنٰى – ثُمَّ كَانَ عَلَقَةً فَخَلَقَ فَسَوّٰى – فَجَعَلَ مِنْهُ الزَّوْجَيْنِ الذَّكَرَ وَالْاُنْثٰى
সে কি নিক্ষিপ্ত শুক্রবিন্দু ছিল না? অতঃপর সে রক্তপিন্ডে পরিণত হয়। তারপর তিনি তাকে আকৃতি দান করেন এবং সুঠাম করেন। তারপর তিনি তা হতে সৃষ্টি করেন জোড়ায় জোড়ায় পুরুষ ও নারী। (সূরা ক্বিয়ামাহ, ৩৭-৩৯)
ব্যাখ্যা : নারী ও পুরুষের জুটি মানুষের জন্মের মূল উৎস। জীবজন্তুর বংশধারাও পুরুষ ও স্ত্রী উভয়ের মিলনের সাহায্যেই এগিয়ে চলছে। উদ্ভিদের মধ্যেও বিপরীত লিঙ্গের নীতি কার্যকর রয়েছে। এমনকি নিষ্প্রাণ জড় বস্তুর মধ্যেও দেখা যায় বিভিন্ন বস্তু যখন একটা অন্যটার সাথে মিলিত হয়, তখনই তাদের থেকে নানা প্রকার যৌগিক পদার্থ অস্তিত্ব লাভ করে। পদার্থের মৌলিক গঠন ঋণাত্মক ও ধনাত্মক বৈদ্যুতিক শক্তির সংযোগেই সম্পন্ন হয়েছে। আল্লাহ এসব জিনিস জোড়া জোড়া সৃষ্টি করে এদের মধ্যে জুটি বেঁধে থাকেন।
আল্লাহ মানুষকে অত্যন্ত সুন্দর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন :
لَقَدْ خَلَقْنَا الْاِنْسَانَ فِۤيْ اَحْسَنِ تَقْوِيْمٍ
আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি খুব সুন্দর অবয়বে। (সূরা ত্বীন- ৪)
وَصَوَّرَكُمْ فَاَحْسَنَ صُوَرَكُمْۚ وَاِلَيْهِ الْمَصِيْرُ
তিনি তোমাদেরকে আকৃতি দান করেছেন অতি সুন্দরতম অবয়বে, আর প্রত্যাবর্তন তো তাঁরই দিকে। (সূরা তাগাবুন- ৩)
মাতৃগর্ভে ইচ্ছানুযায়ী মানুষের আকার তৈরি করেছেন :
هُوَ الَّذِيْ يُصَوِّرُكُمْ فِى الْاَرْحَامِ كَيْفَ يَشَآءُۚ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
তিনি ঐ সত্তা, যিনি মাতৃগর্ভে নিজ ইচ্ছানুযায়ী তোমাদের আকৃতি গঠন করেছেন। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তিনি মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা আলে ইমরান- ৬)
মানুষের গঠনে সামঞ্জস্য বিধান করেছেন :
اَلَّذِيْ خَلَقَكَ فَسَوَّاكَ فَعَدَلَكَ – فِۤيْ اَيِّ صُوْرَةٍ مَّا شَآءَ رَكَّبَكَ
যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাকে সুঠাম করেছেন, তারপর সুবিন্যস্ত করেছেন। আর তিনি তোমাকে যে আকৃতিতে চেয়েছেন সংযোজিত করেছেন। (সূরা ইনফিতার- ৭, ৮)
وَمِنْ اٰيَاتِهٖۤ اَنْ خَلَقَكُمْ مِّنْ تُرَابٍ ثُمَّ اِذَاۤ اَنْتُمْ بَشَرٌ تَنْتَشِرُوْنَ
তাঁর নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম এই যে, তিনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। তারপর তোমরা (সকল) মানুষ বিস্তার লাভ করেছ। (সূরা রূম- ২০)
মাটির বিভিন্ন পর্যায় :
وَبَدَاَ خَلْقَ الْاِنْسَانِ مِنْ طِيْنٍ
তিনি মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন কাদামাটি দিয়ে। (সূরা সাজদা- ৭)
هُوَ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ طِيْنٍ
তিনিই তোমাদেরকে কাদামাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। (সূরা আন‘আম- ২)
اِنَّا خَلَقْنَاهُمْ مِّنْ طِيْنٍ لَّازِبٍ
আমি তো তাদেরকে সৃষ্টি করেছি আঠাযুক্ত কাদামাটি থেকে। (সূরা সাফফাত- ১১)
وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْاِنْسَانَ مِنْ صَلْصَالٍ مِّنْ حَمَإٍ مَّسْنُوْنٍ
আমি তো মানুষ সৃষ্টি করেছি গন্ধযুক্ত কাদার শুষ্ক ঠন্ঠনা মাটি হতে। (সূরা হিজর- ২৬)
خَلَقَ الْاِنْسَانَ مِنْ صَلْصَالٍ كَالْفَخَّارِ
তিনি মানুষকে (আদমকে) সৃষ্টি করেছেন পোড়ামাটির মতো শুকনা মাটি হতে। (সূরা আর রহমান- ১৪)
ব্যাখ্যা : কুরআন মাজীদে মানুষ সৃষ্টির যে প্রাথমিক পর্যায়সমূহ বিভিন্ন আয়াতের বর্ণনা করা হয়েছে, তা হলো: ১. তুরাব অর্থাৎ মাটি। ২. ত্বীন অর্থাৎ পঁচা কর্দম, যা মাটিতে পানি মিশিয়ে বানানো হয়। ৩. ত্বীন লাযেব বা আঠালো কাদামাটি। অর্থাৎ এমন কাদা, দীর্ঘদিন পড়ে থাকার কারণে যার মধ্যে আঠা সৃষ্টি হয়ে যায়। ৪. حَمَاءٌ مَّسْنُوْنَ অর্থাৎ যে কাদার মধ্যে গন্ধ সৃষ্টি হয়ে যায়। ৫. صَلْصَالٌ مِّنْ حَمَاءٍ مَّسْنُوْنَ كَالْفَخَّارِ অর্থাৎ পঁচা কাদা, যা শুকিয়ে যাওয়ার পরে মাটির শুকনো ঢিলার মতো হয়ে যায়। ৬. بَشَرٌ (বাশার) মাটির এ শেষ পর্যায় থেকে আদম (আঃ) কে বানানো হয়েছে, আল্লাহ তা‘আলা যার মধ্যে তাঁর বিশেষ রূহ ফুৎকার করেছেন, ফেরেশতাদের দিয়ে যার প্রতি সিজদা করিয়েছেন এবং যার সমজাতীয় থেকে তার জোড়া সৃষ্টি করেছিলেন। ৭. مَاءٌ مَّهِيْنٌ পরবর্তী সময়ে নিকৃষ্ট পানির মতো সংমিশ্রিত দেহনির্যাস থেকে তার বংশধারা চালু করা হয়েছে। এ কথাটি বুঝাতে অন্যস্থানে نُطْفَةٌ (অর্থাৎ শুক্র) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রথম মানুষ থেকেই তার জোড়া সৃষ্টি করা হয় :
هُوَ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ وَّجَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا لِيَسْكُنَ اِلَيْهَا
তিনিই তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তা হতে তার স্ত্রীকে সৃষ্টি করে দিয়েছেন, যাতে সে তার নিকট প্রশান্তি লাভ করতে পারে। (সূরা আ‘রাফ- ১৮৯)
خَلَقَكُمْ مِّنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ ثُمَّ جَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا
তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন একই ব্যক্তি থেকে। তারপর তা থেকেই তার জোড়া সৃষ্টি করেছেন। (সূরা যুমার- ৬)
পরবর্তীতে মানুষ সৃষ্টির উপাদান বীর্যে পরিণত করা হয় :
وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْاِنْسَانَ مِنْ سُلَالَةٍ مِّنْ طِيْنٍ – ثُمَّ جَعَلْنَاهُ نُطْفَةً فِيْ قَرَارٍ مَّكِيْنٍ
আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মৃত্তিকার উপাদান হতে। অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দুরূপে স্থাপন করি এক নিরাপদ আধারে। (সূরা মু’মিনূন- ১২, ১৩)
قُتِلَ الْاِنْسَانُ مَاۤ اَكْفَرَهٗ – مِنْ اَيِّ شَيْءٍ خَلَقَهٗ – مِنْ نُّطْفَةٍؕ خَلَقَهٗ فَقَدَّرَهٗ
মানুষ ধ্বংস হোক! সে কতই না অকৃতজ্ঞ! তাকে তিনি কোন বস্তু হতে সৃষ্টি করেছেন? তিনি তাকে শুক্রবিন্দু হতে সৃষ্টি করেন, অতঃপর তার তাকদীর (ভাগ্য) নির্ধারণ করে দেন। (সূরা আবাসা, ১৭-১৯)
নারী-পুরুষ উভয়ের থেকে এ বীর্য বের হয় :
فَلْيَنْظُرِ الْاِنْسَانُ مِمَّ خُلِقَ – خُلِقَ مِنْ مَّآءٍ دَافِقٍ – يَّخْرُجُ مِنْ ۢبَيْنِ الصُّلْبِ وَالتَّرَآئِبِ
সুতরাং মানুষের লক্ষ্য করা উচিত যে, তাকে কী হতে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে প্রবল বেগে নির্গত পানি হতে, যা বের হয় পিঠ ও বুকের হাড়ের মধ্য হতে। (সূরা তারিক, ৫-৭)
বীর্যকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মায়ের গর্ভে রাখা হয় :
اَلَمْ نَخْلُقْكُّمْ مِّنْ مَّآءٍ مَّهِيْنٍ – فَجَعَلْنَاهُ فِيْ قَرَارٍ مَّكِيْنٍ – اِلٰى قَدَرٍ مَّعْلُوْمٍ – فَقَدَرْنَا فَنِعْمَ الْقَادِرُوْنَ
আমি কি তোমাদেরকে নগণ্য পানি হতে সৃষ্টি করিনি? অতঃপর আমি ওটাকে স্থাপন করেছি নিরাপদ স্থানে এক নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত। আমি একে গঠন করেছি পরিমিতভাবে, অতএব আমি কতই না নিপুণ নিরূপণকারী! (সূরা মুরসালাত, ২০-২৩)
বীর্যকে ক্রমে রক্ত, গোশত ও হাড্ডিতে পরিণত করা হয় :
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اِنْ كُنْتُمْ فِيْ رَيْبٍ مِّنَ الْبَعْثِ فَاِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِّنْ تُرَابٍ ثُمَّ مِنْ نُّطْفَةٍ ثُمَّ مِنْ عَلَقَةٍ ثُمَّ مِنْ مُّضْغَةٍ مُّخَلَّقَةٍ وَّغَيْرِ مُخَلَّقَةٍ لِّنُبَيِّنَ لَكُمْؕ وَنُقِرُّ فِى الْاَرْحَامِ مَا نَشَآءُ اِلٰۤى اَجَلٍ مُّسَمًّى ثُمَّ نُخْرِجُكُمْ طِفْلًا ثُمَّ لِتَبْلُغُوْاۤ اَشُدَّكُمْ
হে মানুষ! যদি তোমরা উত্থান সম্বন্ধে সন্দিহান হও তবে জেনে রেখো, আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি মাটি হতে, তারপর শুক্র হতে, তারপর জমাটবাঁধা রক্তপিন্ড হতে, তারপর মাংসপিন্ড হতে পূর্ণ আকৃতি বিশিষ্ট বা অপূর্ণ আকৃতি বিশিষ্ট অবস্থায়। যাতে করে আমি (আমার শক্তি ও ক্ষমতা) তোমাদের নিকট স্পষ্ট করে তুলে ধরতে পারি। অতঃপর আমি যাকে ইচ্ছা তাকে এক নির্দিষ্টকালের জন্য মাতৃগর্ভে স্থির রাখি, তারপর আমি তোমাদেরকে শিশুরূপে বের করি। অতঃপর (লালন-পালন করি) যাতে তোমরা পরিণত বয়সে উপনীত হও। (সূরা হজ্জ- ৫)
ثُمَّ خَلَقْنَا النُّطْفَةَ عَلَقَةً فَخَلَقْنَا الْعَلَقَةَ مُضْغَةً فَخَلَقْنَا الْمُضْغَةَ عِظَامًا فَكَسَوْنَا الْعِظَامَ لَحْمًاۗ ثُمَّ اَنْشَاْنَاهُ خَلْقًا اٰخَرَؕ فَتَبَارَكَ اللهُ اَحْسَنُ الْخَالِقِيْنَ
আমি শুক্রবিন্দুকে পরিণত করি জমাটবাঁধা রক্তে, অতঃপর জমাটবাঁধা রক্তকে পরিণত করি মাংসপিন্ডে এবং মাংসপিন্ডকে পরিণত করি হাড্ডিতে, অতঃপর হাড্ডিকে আবৃত করে দেই মাংস দ্বারা; অবশেষে তাকে গড়ে তুলি অন্য এক সৃষ্টিরূপে। অতএব বরকতময় আল্লাহই সর্বোত্তম স্রষ্টা! (সূরা মু’মিনূন- ১৪)
অতঃপর এর মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করা হয় :
وَاِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَآئِكَةِ اِنِّيْ خَالِقٌ ۢبَشَرًا مِّنْ صَلْصَالٍ مِّنْ حَمَإٍ مَّسْنُوْنٍ – فَاِذَا سَوَّيْتُهٗ وَنَفَخْتُ فِيْهِ مِنْ رُّوْحِيْ فَقَعُوْا لَهٗ سَاجِدِيْنَ
যখন তোমার প্রতিপালক ফেরেশতাদেরকে বললেন, আমি গন্ধযুক্ত কাঁদার শুষ্ক ঠন্ঠনা মাটি হতে মানুষ সৃষ্টি করেছি। অতএব যখন আমি তাকে সুঠাম করব এবং তাতে আমার পক্ষ হতে রূহ সঞ্চার করব, তখন তোমরা তার প্রতি সিজদাবনত হও। (সূরা হিজর- ২৮, ২৯)
ব্যাখ্যা : অতি ক্ষুদ্র শুক্রকীট থেকে মানুষের মতো বিস্ময়কর সৃষ্টির অস্তিত্ব লাভ করা, মাতৃগর্ভে বেড়ে ওঠা, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যা কিছু করবে এবং যতটুকু নিয়ামতপ্রাপ্ত হবে সবকিছু সেখানেই নির্ধারিত হওয়া, কারো গর্ভপাতের শিকার হওয়া, কারো শিশুকালেই মরে যাওয়া, কারো যৌবনকালে বা বৃদ্ধাবস্থায় পৌঁছা- এসব বিষয় এ সত্যটিই তুলে ধরছে যে, এক সর্বশক্তিমান সত্তা আমাদের জীবন ও মৃত্যুর ব্যাপারে সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী। তাই একমাত্র তাঁরই আইনকানুন ও আদেশ-নিষেধ মেনে চলতে হবে।
তিনটি পর্দার ভেতরে সযত্নে এ কাজ সম্পন্ন হয় :
يَخْلُقُكُمْ فِيْ بُطُوْنِ اُمَّهَاتِكُمْ خَلْقًا مِّنْ ۢبَعْدِ خَلْقٍ فِيْ ظُلُمَاتٍ ثَلَاثٍ ذٰلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمْ لَهُ الْمُلْكُؕ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَۚ فَاَنّٰى تُصْرَفُوْنَ
তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেন তোমাদের মাতৃগর্ভে একের পর এক তিন স্তরের অন্ধকারের মধ্যে। তিনিই আল্লাহ, যিনি তোমাদের প্রতিপালক, সকল কর্তৃত্ব তাঁরই। তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই, অতএব তোমাদেরকে কোথায় ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে? (সূরা যুমার- ৬)
তারপর মানবশিশুকে দুনিয়াতে বের করে আনা হয় :
هُوَ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ تُرَابٍ ثُمَّ مِنْ نُّطْفَةٍ ثُمَّ مِنْ عَلَقَةٍ ثُمَّ يُخْرِجُكُمْ طِفْلًا
তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মাটি হতে; তারপর শুক্রবিন্দু হতে; তারপর জমাটবাঁধা রক্তপিন্ড হতে; তারপর বের করে আনেন শিশুরূপে। (সূরা মু’মিন- ৬৭)
এরপর যৌবনে পদার্পণ করে :
ثُمَّ لِتَبْلُغُوْاۤ اَشُدَّكُمْ ثُمَّ لِتَكُوْنُوْا شُيُوْخًا
অতঃপর যেন তোমরা উপনীত হতে পার যৌবনে, তারপর উপনীত হতে পার বার্ধক্যে। (সূরা মু’মিন- ৬৭)
ধীরে ধীরে মানুষ জ্ঞানবুদ্ধি লাভ করে :
وَاللهُ اَخْرَجَكُمْ مِّنْ ۢبُطُوْنِ اُمَّهَاتِكُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ شَيْئًا وَّجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْاَبْصَارَ وَالْاَفْئِدَةَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের মাতৃগর্ভ হতে বের করেছেন এমন অবস্থায় যে, তোমরা কিছুই জানতে না। তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি এবং হৃদয়, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পার। (সূরা নাহল- ৭৮)
কেউ শিশুকালে মারা যায় :
وَمِنْكُمْ مَّنْ يُّتَوَفّٰى مِنْ قَبْلُ وَلِتَبْلُغُوْاۤ اَجَلًا مُّسَمًّى وَّلَعَلَّكُمْ تَعْقِلُوْنَ
তোমাদের মধ্যে কারো (যৌবনে পদার্পণ করার) পূর্বেই মৃত্যু ঘটে, যাতে তোমরা নির্ধারিত কাল পর্যন্ত পৌঁছে যাও এবং যাতে তোমরা অনুধাবন করতে পার। (সূরা মু’মিন- ৬৭)
কেউ আবার বার্ধক্যের শেষ প্রান্তে পৌঁছে :
وَمِنْكُمْ مَّنْ يُّرَدُّ اِلٰۤى اَرْذَلِ الْعُمُرِ لِكَيْلَا يَعْلَمَ مِنْ ۢبَعْدِ عِلْمٍ شَيْئًا
তোমাদের মধ্যে কাউকে উপনীত করা হয় হীনতম বয়সে, যার ফলে তারা যা কিছু জানত সে সম্বন্ধে কোন জ্ঞানই থাকে না। (সূরা হজ্জ- ৫)
ব্যাখ্যা : শৈশব, যৌবন ও বার্ধক্য এসব অবস্থা আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন। তিনি যাকে চান দুর্বল করে সৃষ্টি করেন, যাকে চান শক্তিশালী করেন, যাকে চান শৈশবেই মৃত্যু দান করেন, যাকে চান যৌবনে মৃত্যু দান করেন, যাকে চান দীর্ঘজীবি করেও সুস্থ রাখেন, আবার যাকে চান তাকে বার্ধক্যের এমন কষ্টকর অবস্থায় পৌঁছে দেন, যার দ্বারা দুনিয়াবাসী শিক্ষালাভ করতে পারে- এসব তাঁরই ইচ্ছা। মানুষ যতই অহংকারে মত্ত হয়ে উঠুক না কেন, আল্লাহর শক্তির শৃংখলে সে এমনভাবে বাঁধা যে, আল্লাহ তাকে যে অবস্থায় রাখতে চান তার মধ্যে কোন পরিবর্তন আনা তার পক্ষে সম্ভব নয়। আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক মানুষকে জীবনের বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করিয়ে সে বিশেষ সময় পর্যন্ত নিয়ে যান, যা তিনি প্রত্যেক মানুষের জন্য নির্ধারণ করে রেখেছেন। বিশেষ করে সে মুহূর্তটি আসার পূর্বে যদি গোটা দুনিয়ার মানুষ মিলিত হয়েও তাকে হত্যা করতে চেষ্টা করে, তবুও কেউ তাকে হত্যা করতে পারবে না। আবার সে মুহূর্তটি এসে যাওয়ার পর দুনিয়ার সমস্ত শক্তি মিলিত হয়েও যদি কাউকে জীবিত রাখার জন্য চেষ্টা করে, তবুও সফল হতে পারবে না। মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত হওয়ার পর সমস্ত মানুষকে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হতে হবে।
এভাবেই মানুষ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে :
وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيْرًا وَّنِسَآءًۚ وَاتَّقُوا اللهَ الَّذِيْ تَسَآءَلُوْنَ بِهٖ وَالْاَرْحَامَؕ اِنَّ اللهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيْبًا
অতঃপর তিনি তাদের উভয় হতে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন। সুতরাং তোমরা ঐ আল্লাহকে ভয় করো, যাঁর নামের দোহাই দিয়ে তোমরা একে অপরের কাছে প্রার্থনা কর এবং আত্মীয়তাকেও ভয় করো (অর্থাৎ আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখো), নিশ্চয় আল্লাহই তোমাদের প্রতি তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখেন। (সূরা নিসা- ১)
বিভিন্ন গোত্রে ও জাতিতে মানুষকে বিভক্ত করা হয়েছে :
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِّنْ ذَكَرٍ وَّاُنْثٰى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوْبًا وَّقَبَآئِلَ لِتَعَارَفُوْا
হে মানবসমাজ! আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি। তারপর তোমাদেরকে বিভিন্ন শাখা ও গোত্রে বিভক্ত করে দিয়েছি, যাতে তোমরা একে অপরকে (ঐসব নামে) চিনতে পার। (সূরা হুজুরাত- ১৩)
মানুষকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করা হয়েছে :
اَلَمْ يَكُ نُطْفَةً مِّنْ مَّنِيِّ يُّمْنٰى – ثُمَّ كَانَ عَلَقَةً فَخَلَقَ فَسَوّٰى – فَجَعَلَ مِنْهُ الزَّوْجَيْنِ الذَّكَرَ وَالْاُنْثٰى
সে কি নিক্ষিপ্ত শুক্রবিন্দু ছিল না? অতঃপর সে রক্তপিন্ডে পরিণত হয়। তারপর তিনি তাকে আকৃতি দান করেন এবং সুঠাম করেন। তারপর তিনি তা হতে সৃষ্টি করেন জোড়ায় জোড়ায় পুরুষ ও নারী। (সূরা ক্বিয়ামাহ, ৩৭-৩৯)
ব্যাখ্যা : নারী ও পুরুষের জুটি মানুষের জন্মের মূল উৎস। জীবজন্তুর বংশধারাও পুরুষ ও স্ত্রী উভয়ের মিলনের সাহায্যেই এগিয়ে চলছে। উদ্ভিদের মধ্যেও বিপরীত লিঙ্গের নীতি কার্যকর রয়েছে। এমনকি নিষ্প্রাণ জড় বস্তুর মধ্যেও দেখা যায় বিভিন্ন বস্তু যখন একটা অন্যটার সাথে মিলিত হয়, তখনই তাদের থেকে নানা প্রকার যৌগিক পদার্থ অস্তিত্ব লাভ করে। পদার্থের মৌলিক গঠন ঋণাত্মক ও ধনাত্মক বৈদ্যুতিক শক্তির সংযোগেই সম্পন্ন হয়েছে। আল্লাহ এসব জিনিস জোড়া জোড়া সৃষ্টি করে এদের মধ্যে জুটি বেঁধে থাকেন।
আল্লাহ মানুষকে অত্যন্ত সুন্দর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন :
لَقَدْ خَلَقْنَا الْاِنْسَانَ فِۤيْ اَحْسَنِ تَقْوِيْمٍ
আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি খুব সুন্দর অবয়বে। (সূরা ত্বীন- ৪)
وَصَوَّرَكُمْ فَاَحْسَنَ صُوَرَكُمْۚ وَاِلَيْهِ الْمَصِيْرُ
তিনি তোমাদেরকে আকৃতি দান করেছেন অতি সুন্দরতম অবয়বে, আর প্রত্যাবর্তন তো তাঁরই দিকে। (সূরা তাগাবুন- ৩)
মাতৃগর্ভে ইচ্ছানুযায়ী মানুষের আকার তৈরি করেছেন :
هُوَ الَّذِيْ يُصَوِّرُكُمْ فِى الْاَرْحَامِ كَيْفَ يَشَآءُۚ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
তিনি ঐ সত্তা, যিনি মাতৃগর্ভে নিজ ইচ্ছানুযায়ী তোমাদের আকৃতি গঠন করেছেন। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তিনি মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা আলে ইমরান- ৬)
মানুষের গঠনে সামঞ্জস্য বিধান করেছেন :
اَلَّذِيْ خَلَقَكَ فَسَوَّاكَ فَعَدَلَكَ – فِۤيْ اَيِّ صُوْرَةٍ مَّا شَآءَ رَكَّبَكَ
যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাকে সুঠাম করেছেন, তারপর সুবিন্যস্ত করেছেন। আর তিনি তোমাকে যে আকৃতিতে চেয়েছেন সংযোজিত করেছেন। (সূরা ইনফিতার- ৭, ৮)
আল্লাহ মানুষকে জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন :
اَلرَّحْمٰنُ – عَلَّمَ الْقُرْاٰنَ
পরম দয়াময় (আল্লাহ), তিনিই শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন। (সূরা আর রহমান- ১, ২)
اَلَّذِيْ عَلَّمَ بِالْقَلَمِ – عَلَّمَ الْاِنْسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ
যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন, যা সে জানত না। (সূরা আলাক্ব- ৪, ৫)
ব্যাখ্যা : তিনি গোটা সৃষ্টিজগতে যা কিছুই সৃষ্টি করেছেন, তা কেবল সৃষ্টি করেই ছেড়ে দেননি। তাকে এমন উপযুক্ত আকার-আকৃতি দিয়েছেন, যার সাহায্যে সে কাজের যোগ্য হতে পারে। সাথে সাথে সে কাজ সম্পাদন করার পন্থাও তাকে শিখিয়েছেন। মানুষের দেহের একেকটি লোম এবং একেকটি কোষকে মানবদেহে যে কাজ আঞ্জাম দিতে হবে সে কাজ শিখেই তা জন্ম লাভ করেছে। তাই মানুষ নিজে কেমন করে তার স্রষ্টার শিক্ষা ও পথনির্দেশ লাভ করা থেকে মুক্ত ও বঞ্চিত হতে পারে? এ বিষয়টি কুরআন মাজীদের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ভঙ্গিতে বুঝানো হয়েছে। ফিরাউন মূসা (আঃ) এর মুখে রিসালাতের পয়গাম শুনে বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘‘তোমার রব কে, যে আমার কাছে দূত পাঠায়? জবাবে মূসা (আঃ) বললেন, ‘‘তিনিই আমার রব, যিনি প্রতিটি জিনিসকে একটি নির্দিষ্ট আকার-আকৃতি দান করে পথপ্রদর্শন করেছেন।’’ অর্থাৎ তিনি তাকে সেই নিয়মপদ্ধতি শিখিয়েছেন, যার সাহায্যে সে বস্তুজগতে তার করণীয় কাজ সম্পাদন করতে পারবে। মানুষকে শিক্ষা দেয়ার জন্য আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে নবী-রাসূল ও কিতাব আসাটা অতি প্রয়োজনীয় বিষয় ছিল।
মানুষকে কথা বলা শিখিয়েছেন :
خَلَقَ الْاِنْسَانَ – عَلَّمَهُ الْبَيَانَ
তিনিই মানুষ সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই তাকে কথা বলা শিখিয়েছেন। (সূরা আর রহমান- ৩, ৪)
ব্যাখ্যা : এর একটি অর্থ হচ্ছে, মনের ভাব প্রকাশ করা। অর্থাৎ কোনকিছু বলা এবং নিজের উদ্দেশ্য ও অভিপ্রায় ব্যক্ত করা। দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, পার্থক্য ও বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট করে তুলা। বাকশক্তি এমন এক বৈশিষ্ট্য, যা মানুষকে পৃথিবীর অন্যান্য সৃষ্টিকুল থেকে পৃথক করে দেয়। একইভাবে মানুষের আরেকটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ গুণ হলো আল্লাহ তা‘আলা তার মধ্যে একটি নৈতিক অনুভূতি সৃষ্টি করে দিয়েছেন, যার কারণে সে প্রকৃতিগতভাবেই ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, যুলুম-ইনসাফ, উচিত-অনুচিতের মধ্যে পার্থক্য করে এবং চরম গোমরাহী ও অজ্ঞতার মধ্যেও তার ভেতরের এ আত্মজ্ঞান ও অনুভূতি লোপ পায় না।
মানুষকে সম্মানিত করেছেন এবং উত্তম রিযিক দান করেছেন :
وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِيْۤ اٰدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِى الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُمْ مِّنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلٰى كَثِيْرٍ مِّمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيْلًا
আমি আদমসমত্মানকে মর্যাদা দান করেছি এবং স্থলে ও সমুদ্রে তাদের চলাচলের বাহন দিয়েছি। তাদেরকে উত্তম রিযিক দান করেছি, এমনকি আমি যাদেরকে সৃষ্টি করেছি তাদের অনেকের উপর তাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৭০)
পৃথিবীকে মানুষের বসবাসের উপযুক্ত করেছেন :
وَلَقَدْ مَكَّنَّاكُمْ فِى الْاَرْضِ وَجَعَلْنَا لَكُمْ فِيْهَا مَعَايِشَؕ قَلِيْلًا مَّا تَشْكُرُوْنَ
আমি তো তোমাদেরকে দুনিয়ায় বসবাসের স্থান দিয়েছি এবং তাতে তোমাদের জীবিকার ব্যবস্থাও করেছি; কিন্তু তোমরা তো খুব অল্পই কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর। (সূরা আ‘রাফ- ১০)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করার পূর্বেই তাদের জন্য একটি সুরক্ষিত ও নিরাপদ আবাসস্থল প্রস্তুত করেছেন। তারপর তাদেরকে এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন যে, একটি সর্বোত্তম দেহকাঠামো, উপযুক্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এবং উন্নত দেহ ও চিন্তা শক্তি দিয়েছেন। এ সুন্দরতম দেহকাঠামো, হাত, পা, চোখ, নাক, কান, জিহবা এবং সর্বোত্তম যোগ্যতার ভান্ডার এ মস্তিষ্ক মানুষ নিজে তৈরি করে আনেনি, তাদের বাবা-মাও তৈরি করেনি, কোন নবী, ওলী কিংবা দেবতার মধ্যেও তা তৈরি করার ক্ষমতা ছিল না। এসব যোগ্যতা ও ক্ষমতার সৃষ্টিকারী ছিলেন সে মহাজ্ঞানী, দয়ালু ও সর্বশক্তিমান সত্তা, যিনি মানুষকে সৃষ্টি করার সময় পৃথিবীতে কাজ করার জন্য তাকে এ নজীরবিহীন দেহ দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর জন্মলাভ করার সাথে সাথে নিজ অনুগ্রহে প্রচুর পরিমাণ খাদ্যবস্তু ও পানাহারের ব্যবস্থা করেছেন। আর সেগুলো খুবই সুস্বাদু ও সুবাসিত, যা মানুষের দেহের লালন ও প্রবৃদ্ধির জন্য উপযোগী। পানি, খাদ্য, শস্য, তরকারী, ফলমূল, দুধ, মধু, গোশত, লবণ, মরিচ ও মসলা মানুষের পুষ্টি সাধন এবং জীবনের পরিপূর্ণ আস্বাদন লাভের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। আর এ ব্যবস্থাপনা সর্বদা চালু রয়েছে। এটি কখনো একটি মুহূর্তের জন্যও বন্ধ হয় না। তাদের রিযিকের এ ব্যবস্থা না করেই যদি মানুষকে সৃষ্টি করা হতো তাহলে তাদের পরিস্থিতি কী দাঁড়াত? সুতরাং এটা এ বিষয়ের সুস্পষ্ট প্রমাণ যে, তোমাদের স্রষ্টা শুধু স্রষ্টাই নন, বরং মহাজ্ঞানী স্রষ্টা এবং অত্যন্ত দয়ালু। অতএব মানুষের উচিত, তাদের প্রতি আল্লাহর এ অনুগ্রহকে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা এবং এতে কাউকে শরীক না করা।
মানুষকে নিয়ামত দিয়ে ভরপুর করে রেখেছেন :
وَاَسْبَغَ عَلَيْكُمْ نِعَمَهٗ ظَاهِرَةً وَّبَاطِنَةً
তিনিই তোমাদের প্রতি তার প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সকল নিয়ামত পূর্ণ করে দিয়েছেন। (সূরা লুক্বমান- ২০)
পরিধান করার জন্য পোশাক দিয়েছেন :
يَا بَنِيْۤ اٰدَمَ قَدْ اَنْزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُّوَارِيْ سَوْاٰتِكُمْ وَرِيْشًاؕ وَلِبَاسُ التَّقْوٰى ذٰلِكَ خَيْرٌ ذٰلِكَ مِنْ اٰيَاتِ اللهِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُوْنَ
হে বনী আদম! তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করা ও বেশভূষার জন্য আমি তোমাদেরকে পোষাক দান করেছি এবং (আরো দিয়েছি) তাক্বওয়ার পোষাক, আর এটাই সর্বোত্তম (পোষাক)। এটা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম, হয়তো তারা (এর মাধ্যমে) উপদেশ গ্রহণ করতে পারবে। (সূরা আ‘রাফ- ২৬)
পথ দেখানোর জন্য নবী ও কিতাব পাঠিয়েছেন :
لَقَدْ اَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنَاتِ وَاَنْزَلْنَا مَعَهُمُ الْكِتَابَ وَالْمِيْزَانَ لِيَقُوْمَ النَّاسُ بِالْقِسْطِ
নিশ্চয় আমি আমার রাসূলদেরকে প্রেরণ করেছি স্পষ্ট প্রমাণসহ এবং তাদের সাথে দিয়েছি কিতাব ও দাঁড়িপাল্লা, যাতে মানুষ সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে। (সূরা হাদীদ- ২৫)
اَلرَّحْمٰنُ – عَلَّمَ الْقُرْاٰنَ
পরম দয়াময় (আল্লাহ), তিনিই শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন। (সূরা আর রহমান- ১, ২)
اَلَّذِيْ عَلَّمَ بِالْقَلَمِ – عَلَّمَ الْاِنْسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ
যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন, যা সে জানত না। (সূরা আলাক্ব- ৪, ৫)
ব্যাখ্যা : তিনি গোটা সৃষ্টিজগতে যা কিছুই সৃষ্টি করেছেন, তা কেবল সৃষ্টি করেই ছেড়ে দেননি। তাকে এমন উপযুক্ত আকার-আকৃতি দিয়েছেন, যার সাহায্যে সে কাজের যোগ্য হতে পারে। সাথে সাথে সে কাজ সম্পাদন করার পন্থাও তাকে শিখিয়েছেন। মানুষের দেহের একেকটি লোম এবং একেকটি কোষকে মানবদেহে যে কাজ আঞ্জাম দিতে হবে সে কাজ শিখেই তা জন্ম লাভ করেছে। তাই মানুষ নিজে কেমন করে তার স্রষ্টার শিক্ষা ও পথনির্দেশ লাভ করা থেকে মুক্ত ও বঞ্চিত হতে পারে? এ বিষয়টি কুরআন মাজীদের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ভঙ্গিতে বুঝানো হয়েছে। ফিরাউন মূসা (আঃ) এর মুখে রিসালাতের পয়গাম শুনে বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘‘তোমার রব কে, যে আমার কাছে দূত পাঠায়? জবাবে মূসা (আঃ) বললেন, ‘‘তিনিই আমার রব, যিনি প্রতিটি জিনিসকে একটি নির্দিষ্ট আকার-আকৃতি দান করে পথপ্রদর্শন করেছেন।’’ অর্থাৎ তিনি তাকে সেই নিয়মপদ্ধতি শিখিয়েছেন, যার সাহায্যে সে বস্তুজগতে তার করণীয় কাজ সম্পাদন করতে পারবে। মানুষকে শিক্ষা দেয়ার জন্য আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে নবী-রাসূল ও কিতাব আসাটা অতি প্রয়োজনীয় বিষয় ছিল।
মানুষকে কথা বলা শিখিয়েছেন :
خَلَقَ الْاِنْسَانَ – عَلَّمَهُ الْبَيَانَ
তিনিই মানুষ সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই তাকে কথা বলা শিখিয়েছেন। (সূরা আর রহমান- ৩, ৪)
ব্যাখ্যা : এর একটি অর্থ হচ্ছে, মনের ভাব প্রকাশ করা। অর্থাৎ কোনকিছু বলা এবং নিজের উদ্দেশ্য ও অভিপ্রায় ব্যক্ত করা। দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, পার্থক্য ও বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট করে তুলা। বাকশক্তি এমন এক বৈশিষ্ট্য, যা মানুষকে পৃথিবীর অন্যান্য সৃষ্টিকুল থেকে পৃথক করে দেয়। একইভাবে মানুষের আরেকটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ গুণ হলো আল্লাহ তা‘আলা তার মধ্যে একটি নৈতিক অনুভূতি সৃষ্টি করে দিয়েছেন, যার কারণে সে প্রকৃতিগতভাবেই ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, যুলুম-ইনসাফ, উচিত-অনুচিতের মধ্যে পার্থক্য করে এবং চরম গোমরাহী ও অজ্ঞতার মধ্যেও তার ভেতরের এ আত্মজ্ঞান ও অনুভূতি লোপ পায় না।
মানুষকে সম্মানিত করেছেন এবং উত্তম রিযিক দান করেছেন :
وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِيْۤ اٰدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِى الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُمْ مِّنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلٰى كَثِيْرٍ مِّمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيْلًا
আমি আদমসমত্মানকে মর্যাদা দান করেছি এবং স্থলে ও সমুদ্রে তাদের চলাচলের বাহন দিয়েছি। তাদেরকে উত্তম রিযিক দান করেছি, এমনকি আমি যাদেরকে সৃষ্টি করেছি তাদের অনেকের উপর তাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৭০)
পৃথিবীকে মানুষের বসবাসের উপযুক্ত করেছেন :
وَلَقَدْ مَكَّنَّاكُمْ فِى الْاَرْضِ وَجَعَلْنَا لَكُمْ فِيْهَا مَعَايِشَؕ قَلِيْلًا مَّا تَشْكُرُوْنَ
আমি তো তোমাদেরকে দুনিয়ায় বসবাসের স্থান দিয়েছি এবং তাতে তোমাদের জীবিকার ব্যবস্থাও করেছি; কিন্তু তোমরা তো খুব অল্পই কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর। (সূরা আ‘রাফ- ১০)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করার পূর্বেই তাদের জন্য একটি সুরক্ষিত ও নিরাপদ আবাসস্থল প্রস্তুত করেছেন। তারপর তাদেরকে এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন যে, একটি সর্বোত্তম দেহকাঠামো, উপযুক্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এবং উন্নত দেহ ও চিন্তা শক্তি দিয়েছেন। এ সুন্দরতম দেহকাঠামো, হাত, পা, চোখ, নাক, কান, জিহবা এবং সর্বোত্তম যোগ্যতার ভান্ডার এ মস্তিষ্ক মানুষ নিজে তৈরি করে আনেনি, তাদের বাবা-মাও তৈরি করেনি, কোন নবী, ওলী কিংবা দেবতার মধ্যেও তা তৈরি করার ক্ষমতা ছিল না। এসব যোগ্যতা ও ক্ষমতার সৃষ্টিকারী ছিলেন সে মহাজ্ঞানী, দয়ালু ও সর্বশক্তিমান সত্তা, যিনি মানুষকে সৃষ্টি করার সময় পৃথিবীতে কাজ করার জন্য তাকে এ নজীরবিহীন দেহ দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর জন্মলাভ করার সাথে সাথে নিজ অনুগ্রহে প্রচুর পরিমাণ খাদ্যবস্তু ও পানাহারের ব্যবস্থা করেছেন। আর সেগুলো খুবই সুস্বাদু ও সুবাসিত, যা মানুষের দেহের লালন ও প্রবৃদ্ধির জন্য উপযোগী। পানি, খাদ্য, শস্য, তরকারী, ফলমূল, দুধ, মধু, গোশত, লবণ, মরিচ ও মসলা মানুষের পুষ্টি সাধন এবং জীবনের পরিপূর্ণ আস্বাদন লাভের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। আর এ ব্যবস্থাপনা সর্বদা চালু রয়েছে। এটি কখনো একটি মুহূর্তের জন্যও বন্ধ হয় না। তাদের রিযিকের এ ব্যবস্থা না করেই যদি মানুষকে সৃষ্টি করা হতো তাহলে তাদের পরিস্থিতি কী দাঁড়াত? সুতরাং এটা এ বিষয়ের সুস্পষ্ট প্রমাণ যে, তোমাদের স্রষ্টা শুধু স্রষ্টাই নন, বরং মহাজ্ঞানী স্রষ্টা এবং অত্যন্ত দয়ালু। অতএব মানুষের উচিত, তাদের প্রতি আল্লাহর এ অনুগ্রহকে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা এবং এতে কাউকে শরীক না করা।
মানুষকে নিয়ামত দিয়ে ভরপুর করে রেখেছেন :
وَاَسْبَغَ عَلَيْكُمْ نِعَمَهٗ ظَاهِرَةً وَّبَاطِنَةً
তিনিই তোমাদের প্রতি তার প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সকল নিয়ামত পূর্ণ করে দিয়েছেন। (সূরা লুক্বমান- ২০)
পরিধান করার জন্য পোশাক দিয়েছেন :
يَا بَنِيْۤ اٰدَمَ قَدْ اَنْزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُّوَارِيْ سَوْاٰتِكُمْ وَرِيْشًاؕ وَلِبَاسُ التَّقْوٰى ذٰلِكَ خَيْرٌ ذٰلِكَ مِنْ اٰيَاتِ اللهِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُوْنَ
হে বনী আদম! তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করা ও বেশভূষার জন্য আমি তোমাদেরকে পোষাক দান করেছি এবং (আরো দিয়েছি) তাক্বওয়ার পোষাক, আর এটাই সর্বোত্তম (পোষাক)। এটা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম, হয়তো তারা (এর মাধ্যমে) উপদেশ গ্রহণ করতে পারবে। (সূরা আ‘রাফ- ২৬)
পথ দেখানোর জন্য নবী ও কিতাব পাঠিয়েছেন :
لَقَدْ اَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنَاتِ وَاَنْزَلْنَا مَعَهُمُ الْكِتَابَ وَالْمِيْزَانَ لِيَقُوْمَ النَّاسُ بِالْقِسْطِ
নিশ্চয় আমি আমার রাসূলদেরকে প্রেরণ করেছি স্পষ্ট প্রমাণসহ এবং তাদের সাথে দিয়েছি কিতাব ও দাঁড়িপাল্লা, যাতে মানুষ সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে। (সূরা হাদীদ- ২৫)
মানুষ সৃষ্টিগতভাবে দুর্বল :
وَخُلِقَ الْاِنْسَانُ ضَعِيْفًا
মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে দুর্বলরূপে। (সূরা নিসা- ২৮)
اَللهُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ ضُعْفٍ ثُمَّ جَعَلَ مِنْ ۢبَعْدِ ضُعْفٍ قُوَّةً ثُمَّ جَعَلَ مِنْ ۢبَعْدِ قُوَّةٍ ضُعْفًا وَّشَيْبَةً يَّخْلُقُ مَا يَشَآءُۚ وَهُوَ الْعَلِيْمُ الْقَدِيْرٌ
তিনিই আল্লাহ, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন দুর্বল অবস্থায়। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে দুর্বলতার পর শক্তি দান করেছেন, তারপর শক্তির পর পুনরায় দুর্বলতা ও বার্ধক্য দান করেছেন। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন; তিনিই সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান। (সূরা রূম- ৫৪)
وَمَنْ نُّعَمِّرْهُ نُنَكِّسْهُ فِى الْخَلْقِؕ اَفَلَا يَعْقِلُوْنَ
আমি যাকে দীর্ঘায়ু দান করি, তার স্বাভাবিক অবস্থা উল্টে দেই। তবুও কি তারা বুঝে না? (সূরা ইয়াসীন- ৬৮)
ব্যাখ্যা : আকৃতি বদলে দেয়ার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ বৃদ্ধ বয়সে মানুষের অবস্থা শিশুদের মতো করে দেন। ঠিক শিশুদের মতোই তারা চলতে ফিরতে অক্ষম হয়ে পড়ে। অন্যরা তাদেরকে ওঠাবসা ও খাওয়া-দাওয়াতে সহায়তা করে। এমনকি তারা নিজেদের কাপড়-চোপড়ে প্রস্রাব-পায়খানা করে দেয়। মোটকথা যে ধরনের দুর্বলতার মধ্য দিয়ে তারা দুনিয়ার জীবন শুরু করেছিল, পুনরায় সে জীবনে পৌঁছে যায়।
وَلَوْ نَشَآءُ لَطَمَسْنَا عَلٰۤى اَعْيُنِهِمْ فَاسْتَبَقُوا الصِّرَاطَ فَأَنّٰى يُبْصِرُوْنَ
আমি ইচ্ছা করলে তাদেরকে দৃষ্টিহীন করে দিতে পারতাম, অতঃপর তারা পথ চলতে চাইলে কেমন করে দেখতে পেত? (সূরা ইয়াসীন- ৬৬)
ব্যাখ্যা : এখানে আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে বলছেন যে, একটু গভীরভাবে চিন্তা করে দেখো, এ দুনিয়ায় যে জীবনের জন্য তোমরা অহংকার করছ, তা কীভাবে আল্লাহর বিপুল শক্তির কাছে একেবারে অসহায় হয়ে আছে? যে চোখের দৃষ্টিশক্তির কারণে তোমরা দুনিয়ার সমস্ত কাজ করে যাচ্ছ, আল্লাহর একটিমাত্র ইশারায় তা অন্ধ হয়ে যেতে পারে। যে পায়ের উপর ভর করে ছুটাছুটি করছ, আল্লাহর একটিমাত্র হুকুমে হঠাৎ তা অবশ হয়ে যেতে পারে। আল্লাহর দেয়া এ শক্তিগুলো যতক্ষণ পর্যন্ত কাজ করতে থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা আত্মহারা হয়ে থাক। কিন্তু যখন এদের মধ্য থেকে একটি শক্তিও দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন তোমাদের শক্তির বাহাদুরি খাটে না।
মানুষ সৃষ্টিগতভাবে ত্বরাপ্রবণ :
خُلِقَ الْاِنْسَانُ مِنْ عَجَلٍؕ سَاُرِيْكُمْ اٰيَاتِيْ فَلَا تَسْتَعْجِلُوْنِ
মানুষ সৃষ্টিগতভাবে ত্বরাপ্রবণ, শীঘ্রই আমি তোমাদেরকে আমার নিদর্শনাবলি দেখাব। সুতরাং তোমরা আমাকে তাড়াতাড়ি করতে বলো না। (সূরা আম্বিয়া- ৩৭)
وَكَانَ الْاِنْسَانُ عَجُوْلًا
মানুষ তো অতি মাত্রায় ত্বরাপ্রবণ। (সূরা বনী ইসরাঈল- ১১)
মানুষ ঝগড়াটে :
وَكَانَ الْاِنْسَانُ اَكْثَرَ شَيْءٍ جَدَلًا
মানুষ অধিকাংশ ব্যাপারেই বিতর্কপ্রিয়। (সূরা কাহফ- ৫৪)
اَوَلَمْ يَرَ الْاِنْسَانُ اَنَّا خَلَقْنَاهُ مِنْ نُّطْفَةٍ فَاِذَا هُوَ خَصِيْمٌ مُّبِيْنٌ
মানুষ কি লক্ষ্য করে না যে, আমি তাকে শুক্রবিন্দু থেকে সৃষ্টি করেছি? এরপরও সে প্রকাশ্য তর্ককারীরূপে পরিণত হলো? (সূরা ইয়াসীন- ৭৭)
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يُّعْجِبُكَ قَوْلُهٗ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيُشْهِدُ اللهَ عَلٰى مَا فِيْ قَلْبِهٖ وَهُوَ اَلَدُّ الْخِصَامِ
মানুষের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে, যার পার্থিব জীবন সংক্রান্ত কথা তোমাকে অবাক করে দেবে। আর সে তার অন্তরের বিষয়ের উপর আল্লাহকে সাক্ষী বানাবে; মূলত সে ভীষণ ঝগড়াটে। (সূরা বাক্বারা- ২০৪)
মানুষ সাধারণত কৃপণ :
قُلْ لَّوْ اَنْتُمْ تَمْلِكُوْنَ خَزَآئِنَ رَحْمَةِ رَبِّۤيْ اِذًا لَّاَمْسَكْتُمْ خَشْيَةَ الْاِنْفَاقِؕ وَكَانَ الْاِنْسَانُ قَتُوْرًا
বলো, যদি তোমরা আমার প্রতিপালকের দয়ার ভান্ডারের অধিকারীও হতে তবুও তোমরা ‘ব্যয় হয়ে যাবে’ এ আশঙ্কায় তা ধরে রাখতে; আর মানুষ অতিশয় কৃপণ। (সূরা বনী ইসরাঈল- ১০০)
اِنَّ الْاِنْسَانَ خُلِقَ هَلُوْعًا – اِذَا مَسَّهُ الشَّرُّ جَزُوْعًا – وَاِذَا مَسَّهُ الْخَيْرُ مَنُوْعًا
মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে অস্থির চিত্তরূপে। যখন তাকে কোন বিপদ স্পর্শ করে, তখন সে হা-হুতাশকারী হয়ে উঠে। আর যখন তাকে কোন কল্যাণ স্পর্শ করে, তখন সে অতি কৃপণে পরিণত হয়। (সূরা মা‘আরিজ, ১৯-২১)
মানুষ অকৃতজ্ঞ :
اِنَّ الْاِنْسَانَ لَكَفُوْرٌ مُّبِيْنٌ
নিশ্চয় মানুষ স্পষ্ট অকৃতজ্ঞ। (সূরা যুখরুফ- ১৫)
اِنَّ الْاِنْسَانَ لِرَبِّهٖ لَكَنُوْدٌ
নিশ্চয় মানুষ তার পালনকর্তার প্রতি অকৃতজ্ঞ। (সূরা আদিয়্যাহ- ৬)
وَاِذَا مَسَّكُمُ الضُّرُّ فِى الْبَحْرِ ضَلَّ مَنْ تَدْعُوْنَ اِلَّاۤ اِيَّاهُۚ فَلَمَّا نَجَّاكُمْ اِلَى الْبَرِّ اَعْرَضْتُمْؕ وَكَانَ الْاِنْسَانُ كَفُوْرًا
যখন সমুদ্রে তোমাদেরকে কোন বিপদ স্পর্শ করে, তখন তোমরা কেবল তিনি ব্যতীত অপর যাদেরকে আহবান করে থাক তারা ব্যর্থ হয়ে যায়। অতঃপর তিনি যখন তোমাদেরকে উদ্ধার করে স্থলে আনেন, তখন তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও। মানুষ অতিশয় অকৃতজ্ঞ। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৬৭)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ তা‘আলার নিয়ামতসমূহের ক্ষেত্রে মানুষের আচরণ বিভিন্ন রকম হয়। যেমন- এ সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা যে মহান আল্লাহ, অনেকে তা আদৌ স্বীকার করে না। আবার কিছু সংখ্যক লোক এ কথা স্বীকার করে যে, এসব জিনিসের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ। তবে তারা এর সাথে অন্যদেরকেও অংশীদার মনে করে, তাঁর নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে অন্যদের কাছে এবং তাঁর দেয়া রিযিক খেয়ে অন্যের গুণ গায়। এটা অস্বীকৃতির আরেকটি রূপ। আরো কিছু লোক আছে যারা আল্লাহকেই সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা স্বীকার করে নেয়, কিন্তু নিজেদের সৃষ্টিকর্তার আদেশ নিষেধের আনুগত্য করে না। এটা অকৃতজ্ঞতা ও নিয়ামত অস্বীকার করার আরেকটি রূপ। কারণ যে ব্যক্তি এরূপ আচরণ করে সে নিয়ামতসমূহ স্বীকার করা সত্ত্বেও নিয়ামতদাতার অধিকারকে অস্বীকার করে। আরো এক শ্রেণির মানুষ মুখে নিয়ামতকে অস্বীকার করে না কিংবা নিয়ামত দানকারীর অধিকারকেও অস্বীকার করে না; কিন্তু কার্যত তাদের এবং একজন অস্বীকৃতি জ্ঞাপনকারীর জীবনে উল্লেখযোগ্য কোন পার্থক্য থাকে না। এটা মৌখিক অস্বীকৃতি নয়, কার্যত অস্বীকৃতি।
মানুষ সাধারণত হিংসুক হয়ে থাকে :
اَمْ يَحْسُدُوْنَ النَّاسَ عَلٰى مَاۤ اٰتَاهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٖ
অথবা আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে মানুষকে যা দিয়েছেন, সেজন্য কি তারা তাদেরকে ঈর্ষা করে? (সূরা নিসা- ৫৪)
মানুষ বেশি দিন বাঁচতে চায়, মরতে চায় না :
وَلَتَجِدَنَّهُمْ اَحْرَصَ النَّاسِ عَلٰى حَيَاةٍۚ وَمِنَ الَّذِيْنَ اَشْرَكُوْا يَوَدُّ اَحَدُهُمْ لَوْ يُعَمَّرُ اَلْفَ سَنَةٍ وَّمَا هُوَ بِمُزَحْزِحِهٖ مِنَ الْعَذَابِ اَنْ يُّعَمَّرَ وَاللهُ بَصِيْرٌ ۢبِمَا يَعْمَلُوْنَ
নিশ্চয় তুমি তাদেরকে অন্যান্য লোক এবং অংশীবাদীদের চেয়েও অধিকতর আয়ু আকাঙ্ক্ষী হিসেবে পাবে। তাদের প্রত্যেকে কামনা করে যে, সে যেন হাজার বছর আয়ুপ্রাপ্ত হয়; অথচ এ দীর্ঘায়ুও তাকে (আমার) শাস্তি হতে মুক্ত করতে পারবে না। আর তারা যা করছে আল্লাহ তার মহাপরিদর্শক। (সূরা বাক্বারা- ৯৬)
মানুষ সীমালঙ্ঘনকারী :
كَلَّاۤ اِنَّ الْاِنْسَانَ لَيَطْغٰى
কখনো নয়, নিশ্চয় মানুষ সীমালঙ্ঘন করে। (সূরা আলাক্ব- ৬)
মানুষ যা চায় তা পায় না :
اَمْ لِلْاِنْسَانِ مَا تَمَنّٰى
মানুষ যা চায় তাই কি সে পায়? (সূরা নাজম- ২৪)
মানুষ তা-ই পায় যার জন্য সে পরিশ্রম করে :
وَاَنْ لَّيْسَ لِلْاِنْسَانِ اِلَّا مَا سَعٰى
মানুষের জন্য কেবল তাই রয়েছে যার জন্য সে চেষ্টা করে। (সূরা নাজম- ৩৯)
মানুষের জ্ঞান সীমিত :
وَمَاۤ اُوْتِيْتُمْ مِّنَ الْعِلْمِ اِلَّا قَلِيْلًا
তোমাদেরকে খুব সামান্যই জ্ঞান দেয়া হয়েছে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৮৫)
মানুষ বিপদে পড়লে আল্লাহকে ডাকে কিন্তু পরে ভুলে যায় :
وَاِذَا مَسَّ الْاِنْسَانَ الضُّرُّ دَعَانَا لِجَنْۢبِهٖۤ اَوْ قَاعِدًا اَوْ قَآئِمًاۚ فَلَمَّا كَشَفْنَا عَنْهُ ضُرَّهٗ مَرَّ كَاَنْ لَّمْ يَدْعُنَاۤ اِلٰى ضُرٍّ مَّسَّهٗؕ كَذٰلِكَ زُيِّنَ لِلْمُسْرِفِيْنَ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
যখন মানুষকে কোন দুঃখ-দুর্দশা স্পর্শ করে তখন সে শুয়ে, বসে অথবা দাঁড়িয়ে আমাকে ডাকতে থাকে। অতঃপর যখন আমি তার দুঃখ-দুর্দশা দূর করে দেই তখন সে এমন পথ অবলম্বন করে, যেন তাকে যে দুঃখ-দৈন্য স্পর্শ করেছিল তার জন্য সে আমাকে ডাকেইনি। এভাবেই সীমালঙ্ঘনকারীদের জন্য তাদের কর্মকে তাদের নিকট শোভনীয় করে দেয়া হয়েছে। (সূরা ইউনুস- ১২)
وَاِذَا مَسَّ الْاِنْسَانَ ضُرٌّ دَعَا رَبَّهٗ مُنِيْبًا اِلَيْهِ ثُمَّ اِذَا خَوَّلَهٗ نِعْمَةً مِّنْهُ نَسِيَ مَا كَانَ يَدْعُوْاۤ اِلَيْهِ مِنْ قَبْلُ وَجَعَلَ لِلّٰهِ اَنْدَادًا لِّيُضِلَّ عَنْ سَبِيْلِهٖؕ قُلْ تَمَتَّعْ بِكُفْرِكَ قَلِيْلًاۗ اِنَّكَ مِنْ اَصْحَابِ النَّارِ
যখন মানুষের উপর কোন বিপদ এসে পড়ে, তখন সে একাগ্রচিত্তে তার প্রতিপালকের অভিমুখী হয়ে তাকে আহবান করতে থাকে। অতঃপর যখন তিনি তাকে নিজের পক্ষ থেকে নিয়ামত দান করেন তখন সে সেই কথাগুলো ভুলে যায়, যার জন্য ইতোপূর্বে তাঁকে আহবান করা হয়েছিল। অতঃপর তারা আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থাপন করে, যাতে তারা অপরকেও আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করতে পারে। (যে এমনটি করে তাকে) বলে দাও! তুমি তোমার কুফর অবস্থায় কিছুকাল উপভোগ করে নাও, নিশ্চয় তুমি আগুনের অধিবাসীদের (জাহান্নামীদের) অন্তর্ভুক্ত। (সূরা যুমার- ৮)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতে মানুষের সংকীর্ণমনতার জন্য তাকে পাকড়াও করা হয়েছে। এ হীনমনা কাপুরুষটি যখন দুনিয়ায় কিছু সম্পদ ও মর্যাদা লাভ করে, তখন এ সবকিছু যে মহান আল্লাহর দান এ কথা ভুলে যায় এবং মনে করে, তার মধ্যে অসাধারণ কিছু আছে; যার ফলে সে এমন কিছু লাভ করেছে, যা থেকে অন্যরা বঞ্চিত হয়েছে। এ বিভ্রান্তির মাধ্যমে সে অহংকারী হয়ে যায়, যার ফলে সে কাউকে পরোয়া করে না। কিন্তু যখনই সৌভাগ্য তার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং দুর্ভাগ্যের আঘাত তাকে স্পর্শ করে, তখন সে হীনতম কাজ করতেও কুণ্ঠিত হয় না, এমনকি শেষ পর্যন্ত সে আত্মহত্যাও করে বসে।
মানুষ অনুগ্রহ পেলে খুশি হয় আর মুসীবত আসলে অকৃতজ্ঞ হয়ে যায় :
وَاِنَّاۤ اِذَاۤ اَذَقْنَا الْاِنْسَانَ مِنَّا رَحْمَةً فَرِحَ بِهَاۚ وَاِنْ تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌ ۢبِمَا قَدَّمَتْ اَيْدِيْهِمْ فَاِنَّ الْاِنْسَانَ كَفُوْرٌ
যখন আমি মানুষকে আমার রহমতের স্বাদ আস্বাদন করাই, তখন সে এতে উৎফুল্ল হয়। আর যখন তাদের কৃতকর্মের জন্য কোন বিপদাপদ আসে, তখন মানুষ অকৃতজ্ঞ হয়ে যায়। (সূরা শূরা- ৪৮)
وَاِذَاۤ اَنْعَمْنَا عَلَى الْاِنْسَانِ اَعْرَضَ وَنَاٰ بِجَانِبِهٖۚ وَاِذَا مَسَّهُ الشَّرُّ فَذُوْ دُعَآءٍ عَرِيْضٍ
যখন আমি মানুষকে নিয়ামত প্রদান করি, তখন সে (অহংকারবশত) মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং দূরে সরে যায়। আবার যখন তাকে কোন অনিষ্ট স্পর্শ করে, তখন সে দীর্ঘ প্রার্থনারত হয়ে পড়ে। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৫১)
ব্যাখ্যা : মানুষের অপরিণামদর্শিতার বাস্তব উদাহরণ হচ্ছে, সে কখনো স্বচ্ছলতা ও প্রাচুর্যের অধিকারী হলে, অহংকার করে বেড়ায়। মনের কোণে তখন এ প্রশ্ন জাগে না যে, এ সবুজের সমারোহ শেষ হয়ে একদিন পাতা ঝরার মওসুমও আসতে পারে। কিন্তু কোন বিপদে পড়লে আবেগে সে কেঁদে ফেলে। বেদনা ও হতাশায় ডুবে যায় তার মন-মস্তিষ্ক। আবার যখন দুঃসময় পার হয়ে সুসময় আসে তখন সে আগের মতোই দম্ভ ও অহংকারে ফিরে যায়। কিন্তু ধৈর্যশীল ব্যক্তি পরিবর্তনশীল অবস্থায় নিজের মানসিক ভারসাম্য অটুট রাখে। সর্বাবস্থায় একটি যুক্তিসঙ্গত ও সঠিক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে চলে। যদি কখনো পরিস্থিতি অনুকূলে আসে এবং সে ধনাঢ্যতার উচ্চাসনে চড়তে থাকে, তাহলে সে শ্রেষ্ঠত্ব ও অহংকারের নেশায় মত্ত হয়ে বিপথে পরিচালিত হয় না। আর কখনো বিপদাপদ ও সমস্যা-সংকটের করাল আঘাত আসলেও সে নিজের মানবিক চরিত্র বিনষ্ট করে না। আল্লাহর পক্ষ থেকে বিপদাপদ যে আকারেই আসুক না কেন সে ধৈর্যধারণ করে এবং দৃঢ়ভাবে ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে। আল্লাহ এমন লোকদের দোষ-ক্রটি ÿমা করে দেন এবং তাদের সৎকাজের পুরস্কারও প্রদান করেন।
وَخُلِقَ الْاِنْسَانُ ضَعِيْفًا
মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে দুর্বলরূপে। (সূরা নিসা- ২৮)
اَللهُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ ضُعْفٍ ثُمَّ جَعَلَ مِنْ ۢبَعْدِ ضُعْفٍ قُوَّةً ثُمَّ جَعَلَ مِنْ ۢبَعْدِ قُوَّةٍ ضُعْفًا وَّشَيْبَةً يَّخْلُقُ مَا يَشَآءُۚ وَهُوَ الْعَلِيْمُ الْقَدِيْرٌ
তিনিই আল্লাহ, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন দুর্বল অবস্থায়। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে দুর্বলতার পর শক্তি দান করেছেন, তারপর শক্তির পর পুনরায় দুর্বলতা ও বার্ধক্য দান করেছেন। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন; তিনিই সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান। (সূরা রূম- ৫৪)
وَمَنْ نُّعَمِّرْهُ نُنَكِّسْهُ فِى الْخَلْقِؕ اَفَلَا يَعْقِلُوْنَ
আমি যাকে দীর্ঘায়ু দান করি, তার স্বাভাবিক অবস্থা উল্টে দেই। তবুও কি তারা বুঝে না? (সূরা ইয়াসীন- ৬৮)
ব্যাখ্যা : আকৃতি বদলে দেয়ার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ বৃদ্ধ বয়সে মানুষের অবস্থা শিশুদের মতো করে দেন। ঠিক শিশুদের মতোই তারা চলতে ফিরতে অক্ষম হয়ে পড়ে। অন্যরা তাদেরকে ওঠাবসা ও খাওয়া-দাওয়াতে সহায়তা করে। এমনকি তারা নিজেদের কাপড়-চোপড়ে প্রস্রাব-পায়খানা করে দেয়। মোটকথা যে ধরনের দুর্বলতার মধ্য দিয়ে তারা দুনিয়ার জীবন শুরু করেছিল, পুনরায় সে জীবনে পৌঁছে যায়।
وَلَوْ نَشَآءُ لَطَمَسْنَا عَلٰۤى اَعْيُنِهِمْ فَاسْتَبَقُوا الصِّرَاطَ فَأَنّٰى يُبْصِرُوْنَ
আমি ইচ্ছা করলে তাদেরকে দৃষ্টিহীন করে দিতে পারতাম, অতঃপর তারা পথ চলতে চাইলে কেমন করে দেখতে পেত? (সূরা ইয়াসীন- ৬৬)
ব্যাখ্যা : এখানে আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে বলছেন যে, একটু গভীরভাবে চিন্তা করে দেখো, এ দুনিয়ায় যে জীবনের জন্য তোমরা অহংকার করছ, তা কীভাবে আল্লাহর বিপুল শক্তির কাছে একেবারে অসহায় হয়ে আছে? যে চোখের দৃষ্টিশক্তির কারণে তোমরা দুনিয়ার সমস্ত কাজ করে যাচ্ছ, আল্লাহর একটিমাত্র ইশারায় তা অন্ধ হয়ে যেতে পারে। যে পায়ের উপর ভর করে ছুটাছুটি করছ, আল্লাহর একটিমাত্র হুকুমে হঠাৎ তা অবশ হয়ে যেতে পারে। আল্লাহর দেয়া এ শক্তিগুলো যতক্ষণ পর্যন্ত কাজ করতে থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা আত্মহারা হয়ে থাক। কিন্তু যখন এদের মধ্য থেকে একটি শক্তিও দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন তোমাদের শক্তির বাহাদুরি খাটে না।
মানুষ সৃষ্টিগতভাবে ত্বরাপ্রবণ :
خُلِقَ الْاِنْسَانُ مِنْ عَجَلٍؕ سَاُرِيْكُمْ اٰيَاتِيْ فَلَا تَسْتَعْجِلُوْنِ
মানুষ সৃষ্টিগতভাবে ত্বরাপ্রবণ, শীঘ্রই আমি তোমাদেরকে আমার নিদর্শনাবলি দেখাব। সুতরাং তোমরা আমাকে তাড়াতাড়ি করতে বলো না। (সূরা আম্বিয়া- ৩৭)
وَكَانَ الْاِنْسَانُ عَجُوْلًا
মানুষ তো অতি মাত্রায় ত্বরাপ্রবণ। (সূরা বনী ইসরাঈল- ১১)
মানুষ ঝগড়াটে :
وَكَانَ الْاِنْسَانُ اَكْثَرَ شَيْءٍ جَدَلًا
মানুষ অধিকাংশ ব্যাপারেই বিতর্কপ্রিয়। (সূরা কাহফ- ৫৪)
اَوَلَمْ يَرَ الْاِنْسَانُ اَنَّا خَلَقْنَاهُ مِنْ نُّطْفَةٍ فَاِذَا هُوَ خَصِيْمٌ مُّبِيْنٌ
মানুষ কি লক্ষ্য করে না যে, আমি তাকে শুক্রবিন্দু থেকে সৃষ্টি করেছি? এরপরও সে প্রকাশ্য তর্ককারীরূপে পরিণত হলো? (সূরা ইয়াসীন- ৭৭)
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يُّعْجِبُكَ قَوْلُهٗ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيُشْهِدُ اللهَ عَلٰى مَا فِيْ قَلْبِهٖ وَهُوَ اَلَدُّ الْخِصَامِ
মানুষের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে, যার পার্থিব জীবন সংক্রান্ত কথা তোমাকে অবাক করে দেবে। আর সে তার অন্তরের বিষয়ের উপর আল্লাহকে সাক্ষী বানাবে; মূলত সে ভীষণ ঝগড়াটে। (সূরা বাক্বারা- ২০৪)
মানুষ সাধারণত কৃপণ :
قُلْ لَّوْ اَنْتُمْ تَمْلِكُوْنَ خَزَآئِنَ رَحْمَةِ رَبِّۤيْ اِذًا لَّاَمْسَكْتُمْ خَشْيَةَ الْاِنْفَاقِؕ وَكَانَ الْاِنْسَانُ قَتُوْرًا
বলো, যদি তোমরা আমার প্রতিপালকের দয়ার ভান্ডারের অধিকারীও হতে তবুও তোমরা ‘ব্যয় হয়ে যাবে’ এ আশঙ্কায় তা ধরে রাখতে; আর মানুষ অতিশয় কৃপণ। (সূরা বনী ইসরাঈল- ১০০)
اِنَّ الْاِنْسَانَ خُلِقَ هَلُوْعًا – اِذَا مَسَّهُ الشَّرُّ جَزُوْعًا – وَاِذَا مَسَّهُ الْخَيْرُ مَنُوْعًا
মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে অস্থির চিত্তরূপে। যখন তাকে কোন বিপদ স্পর্শ করে, তখন সে হা-হুতাশকারী হয়ে উঠে। আর যখন তাকে কোন কল্যাণ স্পর্শ করে, তখন সে অতি কৃপণে পরিণত হয়। (সূরা মা‘আরিজ, ১৯-২১)
মানুষ অকৃতজ্ঞ :
اِنَّ الْاِنْسَانَ لَكَفُوْرٌ مُّبِيْنٌ
নিশ্চয় মানুষ স্পষ্ট অকৃতজ্ঞ। (সূরা যুখরুফ- ১৫)
اِنَّ الْاِنْسَانَ لِرَبِّهٖ لَكَنُوْدٌ
নিশ্চয় মানুষ তার পালনকর্তার প্রতি অকৃতজ্ঞ। (সূরা আদিয়্যাহ- ৬)
وَاِذَا مَسَّكُمُ الضُّرُّ فِى الْبَحْرِ ضَلَّ مَنْ تَدْعُوْنَ اِلَّاۤ اِيَّاهُۚ فَلَمَّا نَجَّاكُمْ اِلَى الْبَرِّ اَعْرَضْتُمْؕ وَكَانَ الْاِنْسَانُ كَفُوْرًا
যখন সমুদ্রে তোমাদেরকে কোন বিপদ স্পর্শ করে, তখন তোমরা কেবল তিনি ব্যতীত অপর যাদেরকে আহবান করে থাক তারা ব্যর্থ হয়ে যায়। অতঃপর তিনি যখন তোমাদেরকে উদ্ধার করে স্থলে আনেন, তখন তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও। মানুষ অতিশয় অকৃতজ্ঞ। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৬৭)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ তা‘আলার নিয়ামতসমূহের ক্ষেত্রে মানুষের আচরণ বিভিন্ন রকম হয়। যেমন- এ সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা যে মহান আল্লাহ, অনেকে তা আদৌ স্বীকার করে না। আবার কিছু সংখ্যক লোক এ কথা স্বীকার করে যে, এসব জিনিসের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ। তবে তারা এর সাথে অন্যদেরকেও অংশীদার মনে করে, তাঁর নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে অন্যদের কাছে এবং তাঁর দেয়া রিযিক খেয়ে অন্যের গুণ গায়। এটা অস্বীকৃতির আরেকটি রূপ। আরো কিছু লোক আছে যারা আল্লাহকেই সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা স্বীকার করে নেয়, কিন্তু নিজেদের সৃষ্টিকর্তার আদেশ নিষেধের আনুগত্য করে না। এটা অকৃতজ্ঞতা ও নিয়ামত অস্বীকার করার আরেকটি রূপ। কারণ যে ব্যক্তি এরূপ আচরণ করে সে নিয়ামতসমূহ স্বীকার করা সত্ত্বেও নিয়ামতদাতার অধিকারকে অস্বীকার করে। আরো এক শ্রেণির মানুষ মুখে নিয়ামতকে অস্বীকার করে না কিংবা নিয়ামত দানকারীর অধিকারকেও অস্বীকার করে না; কিন্তু কার্যত তাদের এবং একজন অস্বীকৃতি জ্ঞাপনকারীর জীবনে উল্লেখযোগ্য কোন পার্থক্য থাকে না। এটা মৌখিক অস্বীকৃতি নয়, কার্যত অস্বীকৃতি।
মানুষ সাধারণত হিংসুক হয়ে থাকে :
اَمْ يَحْسُدُوْنَ النَّاسَ عَلٰى مَاۤ اٰتَاهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٖ
অথবা আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে মানুষকে যা দিয়েছেন, সেজন্য কি তারা তাদেরকে ঈর্ষা করে? (সূরা নিসা- ৫৪)
মানুষ বেশি দিন বাঁচতে চায়, মরতে চায় না :
وَلَتَجِدَنَّهُمْ اَحْرَصَ النَّاسِ عَلٰى حَيَاةٍۚ وَمِنَ الَّذِيْنَ اَشْرَكُوْا يَوَدُّ اَحَدُهُمْ لَوْ يُعَمَّرُ اَلْفَ سَنَةٍ وَّمَا هُوَ بِمُزَحْزِحِهٖ مِنَ الْعَذَابِ اَنْ يُّعَمَّرَ وَاللهُ بَصِيْرٌ ۢبِمَا يَعْمَلُوْنَ
নিশ্চয় তুমি তাদেরকে অন্যান্য লোক এবং অংশীবাদীদের চেয়েও অধিকতর আয়ু আকাঙ্ক্ষী হিসেবে পাবে। তাদের প্রত্যেকে কামনা করে যে, সে যেন হাজার বছর আয়ুপ্রাপ্ত হয়; অথচ এ দীর্ঘায়ুও তাকে (আমার) শাস্তি হতে মুক্ত করতে পারবে না। আর তারা যা করছে আল্লাহ তার মহাপরিদর্শক। (সূরা বাক্বারা- ৯৬)
মানুষ সীমালঙ্ঘনকারী :
كَلَّاۤ اِنَّ الْاِنْسَانَ لَيَطْغٰى
কখনো নয়, নিশ্চয় মানুষ সীমালঙ্ঘন করে। (সূরা আলাক্ব- ৬)
মানুষ যা চায় তা পায় না :
اَمْ لِلْاِنْسَانِ مَا تَمَنّٰى
মানুষ যা চায় তাই কি সে পায়? (সূরা নাজম- ২৪)
মানুষ তা-ই পায় যার জন্য সে পরিশ্রম করে :
وَاَنْ لَّيْسَ لِلْاِنْسَانِ اِلَّا مَا سَعٰى
মানুষের জন্য কেবল তাই রয়েছে যার জন্য সে চেষ্টা করে। (সূরা নাজম- ৩৯)
মানুষের জ্ঞান সীমিত :
وَمَاۤ اُوْتِيْتُمْ مِّنَ الْعِلْمِ اِلَّا قَلِيْلًا
তোমাদেরকে খুব সামান্যই জ্ঞান দেয়া হয়েছে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৮৫)
মানুষ বিপদে পড়লে আল্লাহকে ডাকে কিন্তু পরে ভুলে যায় :
وَاِذَا مَسَّ الْاِنْسَانَ الضُّرُّ دَعَانَا لِجَنْۢبِهٖۤ اَوْ قَاعِدًا اَوْ قَآئِمًاۚ فَلَمَّا كَشَفْنَا عَنْهُ ضُرَّهٗ مَرَّ كَاَنْ لَّمْ يَدْعُنَاۤ اِلٰى ضُرٍّ مَّسَّهٗؕ كَذٰلِكَ زُيِّنَ لِلْمُسْرِفِيْنَ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
যখন মানুষকে কোন দুঃখ-দুর্দশা স্পর্শ করে তখন সে শুয়ে, বসে অথবা দাঁড়িয়ে আমাকে ডাকতে থাকে। অতঃপর যখন আমি তার দুঃখ-দুর্দশা দূর করে দেই তখন সে এমন পথ অবলম্বন করে, যেন তাকে যে দুঃখ-দৈন্য স্পর্শ করেছিল তার জন্য সে আমাকে ডাকেইনি। এভাবেই সীমালঙ্ঘনকারীদের জন্য তাদের কর্মকে তাদের নিকট শোভনীয় করে দেয়া হয়েছে। (সূরা ইউনুস- ১২)
وَاِذَا مَسَّ الْاِنْسَانَ ضُرٌّ دَعَا رَبَّهٗ مُنِيْبًا اِلَيْهِ ثُمَّ اِذَا خَوَّلَهٗ نِعْمَةً مِّنْهُ نَسِيَ مَا كَانَ يَدْعُوْاۤ اِلَيْهِ مِنْ قَبْلُ وَجَعَلَ لِلّٰهِ اَنْدَادًا لِّيُضِلَّ عَنْ سَبِيْلِهٖؕ قُلْ تَمَتَّعْ بِكُفْرِكَ قَلِيْلًاۗ اِنَّكَ مِنْ اَصْحَابِ النَّارِ
যখন মানুষের উপর কোন বিপদ এসে পড়ে, তখন সে একাগ্রচিত্তে তার প্রতিপালকের অভিমুখী হয়ে তাকে আহবান করতে থাকে। অতঃপর যখন তিনি তাকে নিজের পক্ষ থেকে নিয়ামত দান করেন তখন সে সেই কথাগুলো ভুলে যায়, যার জন্য ইতোপূর্বে তাঁকে আহবান করা হয়েছিল। অতঃপর তারা আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থাপন করে, যাতে তারা অপরকেও আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করতে পারে। (যে এমনটি করে তাকে) বলে দাও! তুমি তোমার কুফর অবস্থায় কিছুকাল উপভোগ করে নাও, নিশ্চয় তুমি আগুনের অধিবাসীদের (জাহান্নামীদের) অন্তর্ভুক্ত। (সূরা যুমার- ৮)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতে মানুষের সংকীর্ণমনতার জন্য তাকে পাকড়াও করা হয়েছে। এ হীনমনা কাপুরুষটি যখন দুনিয়ায় কিছু সম্পদ ও মর্যাদা লাভ করে, তখন এ সবকিছু যে মহান আল্লাহর দান এ কথা ভুলে যায় এবং মনে করে, তার মধ্যে অসাধারণ কিছু আছে; যার ফলে সে এমন কিছু লাভ করেছে, যা থেকে অন্যরা বঞ্চিত হয়েছে। এ বিভ্রান্তির মাধ্যমে সে অহংকারী হয়ে যায়, যার ফলে সে কাউকে পরোয়া করে না। কিন্তু যখনই সৌভাগ্য তার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং দুর্ভাগ্যের আঘাত তাকে স্পর্শ করে, তখন সে হীনতম কাজ করতেও কুণ্ঠিত হয় না, এমনকি শেষ পর্যন্ত সে আত্মহত্যাও করে বসে।
মানুষ অনুগ্রহ পেলে খুশি হয় আর মুসীবত আসলে অকৃতজ্ঞ হয়ে যায় :
وَاِنَّاۤ اِذَاۤ اَذَقْنَا الْاِنْسَانَ مِنَّا رَحْمَةً فَرِحَ بِهَاۚ وَاِنْ تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌ ۢبِمَا قَدَّمَتْ اَيْدِيْهِمْ فَاِنَّ الْاِنْسَانَ كَفُوْرٌ
যখন আমি মানুষকে আমার রহমতের স্বাদ আস্বাদন করাই, তখন সে এতে উৎফুল্ল হয়। আর যখন তাদের কৃতকর্মের জন্য কোন বিপদাপদ আসে, তখন মানুষ অকৃতজ্ঞ হয়ে যায়। (সূরা শূরা- ৪৮)
وَاِذَاۤ اَنْعَمْنَا عَلَى الْاِنْسَانِ اَعْرَضَ وَنَاٰ بِجَانِبِهٖۚ وَاِذَا مَسَّهُ الشَّرُّ فَذُوْ دُعَآءٍ عَرِيْضٍ
যখন আমি মানুষকে নিয়ামত প্রদান করি, তখন সে (অহংকারবশত) মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং দূরে সরে যায়। আবার যখন তাকে কোন অনিষ্ট স্পর্শ করে, তখন সে দীর্ঘ প্রার্থনারত হয়ে পড়ে। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৫১)
ব্যাখ্যা : মানুষের অপরিণামদর্শিতার বাস্তব উদাহরণ হচ্ছে, সে কখনো স্বচ্ছলতা ও প্রাচুর্যের অধিকারী হলে, অহংকার করে বেড়ায়। মনের কোণে তখন এ প্রশ্ন জাগে না যে, এ সবুজের সমারোহ শেষ হয়ে একদিন পাতা ঝরার মওসুমও আসতে পারে। কিন্তু কোন বিপদে পড়লে আবেগে সে কেঁদে ফেলে। বেদনা ও হতাশায় ডুবে যায় তার মন-মস্তিষ্ক। আবার যখন দুঃসময় পার হয়ে সুসময় আসে তখন সে আগের মতোই দম্ভ ও অহংকারে ফিরে যায়। কিন্তু ধৈর্যশীল ব্যক্তি পরিবর্তনশীল অবস্থায় নিজের মানসিক ভারসাম্য অটুট রাখে। সর্বাবস্থায় একটি যুক্তিসঙ্গত ও সঠিক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে চলে। যদি কখনো পরিস্থিতি অনুকূলে আসে এবং সে ধনাঢ্যতার উচ্চাসনে চড়তে থাকে, তাহলে সে শ্রেষ্ঠত্ব ও অহংকারের নেশায় মত্ত হয়ে বিপথে পরিচালিত হয় না। আর কখনো বিপদাপদ ও সমস্যা-সংকটের করাল আঘাত আসলেও সে নিজের মানবিক চরিত্র বিনষ্ট করে না। আল্লাহর পক্ষ থেকে বিপদাপদ যে আকারেই আসুক না কেন সে ধৈর্যধারণ করে এবং দৃঢ়ভাবে ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে। আল্লাহ এমন লোকদের দোষ-ক্রটি ÿমা করে দেন এবং তাদের সৎকাজের পুরস্কারও প্রদান করেন।
মানুষকে অনর্থক সৃষ্টি করা হয়েছে- এ ধারণা ভুল :
اَفَحَسِبْتُمْ اَنَّمَا خَلَقْنَاكُمْ عَبَثًا وَّاَنَّكُمْ اِلَيْنَا لَا تُرْجَعُوْنَ
তোমরা কি মনে করেছিলে যে, আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং তোমরা আমার নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে না? (সূরা মু’মিনূন- ১১৫)
মানুষের উপর ক্ষমতাবান আর কেউ নেই- এ ধারণা ভুল :
اَيَحْسَبُ اَنْ لَّنْ يَّقْدِرَ عَلَيْهِ اَحَدٌ
সে কি মনে করে যে, কখনো তার উপর কেউ ক্ষমতা লাভ করতে পারবে না? (সূরা বালাদ- ৫)
اَمْ حَسِبَ الَّذِيْنَ يَعْمَلُوْنَ السَّيِّئَاتِ اَنْ يَّسْبِقُوْنَاؕ سَآءَ مَا يَحْكُمُوْنَ
তবে কি যারা মন্দকাজ করে তারা মনে করে যে, তারা আমার আয়ত্তের বাইরে চলে যাবে? তাদের সিদ্ধান্ত কতই না মন্দ! (সূরা আনকাবূত- ৪)
মানুষকে কেউ দেখছে না- এ ধারণা ভুল :
اَيَحْسَبُ اَنْ لَّمْ يَرَهٗۤ اَحَدٌ
সে কি ধারণা করে যে, তাকে কেউ দেখছে না? (সূরা বালাদ- ৭)
اَمْ يَحْسَبُوْنَ اَنَّا لَا نَسْمَعُ سِرَّهُمْ وَنَجْوَاهُمْؕ بَلٰى وَرُسُلُنَا لَدَيْهِمْ يَكْتُبُوْنَ
তারা কি মনে করে যে, আমি তাদের গোপন বিষয় ও তারা পরস্পরে চুপে চুপে যা বলে তার খবর রাখি না? অবশ্যই রাখি। (তাছাড়া) আমার ফেরেশতারা তাদের নিকট থেকে সবকিছু লিপিবদ্ধ করে রাখে। (সূরা যুখরুফ- ৮০)
মানুষের সম্পদ তাকে চিরস্থায়ী করে রাখবে- এ ধারণা ভুল :
يَحْسَبُ اَنَّ مَالَهٗۤ اَخْلَدَهٗ
সে মনে করে যে, তার অর্থ চিরকাল তার সাথে থাকবে। (সূরা হুমাযাহ- ৩)
মানুষ মরলে আবার জীবিত হবে না- এ ধারণা ভুল :
وَيَقُوْلُ الْاِنْسَانُ اَئِذَا مَا مِتُّ لَسَوْفَ اُخْرَجُ حَيًّا – اَوَلَا يَذْكُرُ الْاِنْسَانُ اَنَّا خَلَقْنَاهُ مِنْ قَبْلُ وَلَمْ يَكُ شَيْئًا
মানুষ বলে, আমার মৃত্যু হলে আমি কি আবার জীবিত অবস্থায় উত্থিত হব? মানুষ কি স্মরণ করে না যে, আমি তাকে পূর্বেও সৃষ্টি করেছি যখন সে কিছুই ছিল না? (সূরা মারইয়াম- ৬৬, ৬৭)
اَيَحْسَبُ الْاِنْسَانُ اَلَّنْ نَّجْمَعَ عِظَامَهٗ
মানুষ কি মনে করে যে, আমি তার হাড়গুলো কোনক্রমে একত্র করতে পারব না। (সূরা ক্বিয়ামাহ- ৩)
মানুষের মুনাফিকী ধরা পড়বে না- এ ধারণা ভুল :
اَمْ حَسِبَ الَّذِيْنَ فِيْ قُلُوْبِهِمْ مَّرَضٌ اَنْ لَّنْ يُّخْرِجَ اللهُ اَضْغَانَهُمْ
যাদের অন্তরে রোগ আছে তারা কি মনে করেছে যে, আল্লাহ তাদের অন্তরের বিরোধী মনোভাব প্রকাশ করে দেবেন না? (সূরা মুহাম্মাদ- ২৯)
পাপীদেরকে ভালো লোকদের সাথে গণ্য করা হবে- এ ধারণা ভুল :
اَمْ حَسِبَ الَّذِيْنَ اجْتَرَحُوا السَّيِّئَاتِ اَنْ نَّجْعَلَهُمْ كَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ سَوَآءً مَّحْيَاهُمْ وَمَمَاتُهُمْؕ سَآءَ مَا يَحْكُمُوْنَ
দুষ্কৃতিকারীরা কি মনে করে যে, আমি জীবন ও মৃত্যুর দিক দিয়ে তাদেরকে তাদের সমান হিসেবে গণ্য করব, যারা ঈমান আনে ও সৎ আমল করে? তাদের সিদ্ধান্ত কতই না মন্দ। (সূরা জাসিয়া- ২১)
মানুষকে পরীক্ষা ছাড়াই ছেড়ে দেয়া হবে- এ ধারণা ভুল :
اَحَسِبَ النَّاسُ اَنْ يُّتْرَكُوْاۤ اَنْ يَّقُوْلُوْاۤ اٰمَنَّا وَهُمْ لَا يُفْتَنُوْنَ
মানুষ কি মনে করে যে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ এ কথা বললেই তাদেরকে পরীক্ষা না করে ছেড়ে দেয়া হবে? (সূরা আনকাবূত- ২)
اَيَحْسَبُ الْاِنْسَانُ اَنْ يُّتْرَكَ سُدًى
মানুষ কি মনে করে যে, তাকে নিরর্থক ছেড়ে দেয়া হবে? (সূরা ক্বিয়ামাহ- ৩৬)
প্রত্যেক মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে- এ ধারণা ভুল :
اَيَطْمَعُ كُلُّ امْرِئٍ مِّنْهُمْ اَنْ يُّدْخَلَ جَنَّةَ نَعِيْمٍ
তাদের সবাই কি এ আশা করে যে, তাকে নিয়ামতপূর্ণ জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে? (সূরা মা‘আরিজ- ৩৮)
اَمْ حَسِبْتُمْ اَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ اللهُ الَّذِيْنَ جَاهَدُوْا مِنْكُمْ وَيَعْلَمَ الصَّابِرِيْنَ
তোমরা কি ধারণা করছ যে, তোমরা এমনিতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ আল্লাহ জেনে নেবেন না যে, তোমাদের মধ্য হতে কারা জিহাদ করেছে ও কারা ধৈর্যশীল? (সূরা আলে ইমরান- ১৪২)
মানুষ মন্দকাজ করেও মনে করে যে, সে ভালো কাজ করছে :
قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُمْ بِالْاَخْسَرِيْنَ اَعْمَالًا – اَلَّذِيْنَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُوْنَ اَنَّهُمْ يُحْسِنُوْنَ صُنْعًا
তাদেরকে বলে দাও, আমি কি তোমাদেরকে আমলের দিক থেকে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রসত্মদের সম্পর্কে সংবাদ দেব? তারা তো ঐসব লোক, পার্থিব জীবনে যাদের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেছে; অথচ তারা মনে করে যে, তারা সৎকর্মই করছে। (সূরা কাহফ- ১০৩, ১০৪)
اِنَّهُمُ اتَّخَذُوا الشَّيَاطِيْنَ اَوْلِيَآءَ مِنْ دُوْنِ اللهِ وَيَحْسَبُوْنَ اَنَّهُمْ مُّهْتَدُوْنَ
তারা আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানকে তাদের অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছিল। অথচ তারা মনে করত যে, একমাত্র তারাই সৎপথপ্রাপ্ত। (সূরা আ‘রাফ- ৩০)
اَفَحَسِبْتُمْ اَنَّمَا خَلَقْنَاكُمْ عَبَثًا وَّاَنَّكُمْ اِلَيْنَا لَا تُرْجَعُوْنَ
তোমরা কি মনে করেছিলে যে, আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং তোমরা আমার নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে না? (সূরা মু’মিনূন- ১১৫)
মানুষের উপর ক্ষমতাবান আর কেউ নেই- এ ধারণা ভুল :
اَيَحْسَبُ اَنْ لَّنْ يَّقْدِرَ عَلَيْهِ اَحَدٌ
সে কি মনে করে যে, কখনো তার উপর কেউ ক্ষমতা লাভ করতে পারবে না? (সূরা বালাদ- ৫)
اَمْ حَسِبَ الَّذِيْنَ يَعْمَلُوْنَ السَّيِّئَاتِ اَنْ يَّسْبِقُوْنَاؕ سَآءَ مَا يَحْكُمُوْنَ
তবে কি যারা মন্দকাজ করে তারা মনে করে যে, তারা আমার আয়ত্তের বাইরে চলে যাবে? তাদের সিদ্ধান্ত কতই না মন্দ! (সূরা আনকাবূত- ৪)
মানুষকে কেউ দেখছে না- এ ধারণা ভুল :
اَيَحْسَبُ اَنْ لَّمْ يَرَهٗۤ اَحَدٌ
সে কি ধারণা করে যে, তাকে কেউ দেখছে না? (সূরা বালাদ- ৭)
اَمْ يَحْسَبُوْنَ اَنَّا لَا نَسْمَعُ سِرَّهُمْ وَنَجْوَاهُمْؕ بَلٰى وَرُسُلُنَا لَدَيْهِمْ يَكْتُبُوْنَ
তারা কি মনে করে যে, আমি তাদের গোপন বিষয় ও তারা পরস্পরে চুপে চুপে যা বলে তার খবর রাখি না? অবশ্যই রাখি। (তাছাড়া) আমার ফেরেশতারা তাদের নিকট থেকে সবকিছু লিপিবদ্ধ করে রাখে। (সূরা যুখরুফ- ৮০)
মানুষের সম্পদ তাকে চিরস্থায়ী করে রাখবে- এ ধারণা ভুল :
يَحْسَبُ اَنَّ مَالَهٗۤ اَخْلَدَهٗ
সে মনে করে যে, তার অর্থ চিরকাল তার সাথে থাকবে। (সূরা হুমাযাহ- ৩)
মানুষ মরলে আবার জীবিত হবে না- এ ধারণা ভুল :
وَيَقُوْلُ الْاِنْسَانُ اَئِذَا مَا مِتُّ لَسَوْفَ اُخْرَجُ حَيًّا – اَوَلَا يَذْكُرُ الْاِنْسَانُ اَنَّا خَلَقْنَاهُ مِنْ قَبْلُ وَلَمْ يَكُ شَيْئًا
মানুষ বলে, আমার মৃত্যু হলে আমি কি আবার জীবিত অবস্থায় উত্থিত হব? মানুষ কি স্মরণ করে না যে, আমি তাকে পূর্বেও সৃষ্টি করেছি যখন সে কিছুই ছিল না? (সূরা মারইয়াম- ৬৬, ৬৭)
اَيَحْسَبُ الْاِنْسَانُ اَلَّنْ نَّجْمَعَ عِظَامَهٗ
মানুষ কি মনে করে যে, আমি তার হাড়গুলো কোনক্রমে একত্র করতে পারব না। (সূরা ক্বিয়ামাহ- ৩)
মানুষের মুনাফিকী ধরা পড়বে না- এ ধারণা ভুল :
اَمْ حَسِبَ الَّذِيْنَ فِيْ قُلُوْبِهِمْ مَّرَضٌ اَنْ لَّنْ يُّخْرِجَ اللهُ اَضْغَانَهُمْ
যাদের অন্তরে রোগ আছে তারা কি মনে করেছে যে, আল্লাহ তাদের অন্তরের বিরোধী মনোভাব প্রকাশ করে দেবেন না? (সূরা মুহাম্মাদ- ২৯)
পাপীদেরকে ভালো লোকদের সাথে গণ্য করা হবে- এ ধারণা ভুল :
اَمْ حَسِبَ الَّذِيْنَ اجْتَرَحُوا السَّيِّئَاتِ اَنْ نَّجْعَلَهُمْ كَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ سَوَآءً مَّحْيَاهُمْ وَمَمَاتُهُمْؕ سَآءَ مَا يَحْكُمُوْنَ
দুষ্কৃতিকারীরা কি মনে করে যে, আমি জীবন ও মৃত্যুর দিক দিয়ে তাদেরকে তাদের সমান হিসেবে গণ্য করব, যারা ঈমান আনে ও সৎ আমল করে? তাদের সিদ্ধান্ত কতই না মন্দ। (সূরা জাসিয়া- ২১)
মানুষকে পরীক্ষা ছাড়াই ছেড়ে দেয়া হবে- এ ধারণা ভুল :
اَحَسِبَ النَّاسُ اَنْ يُّتْرَكُوْاۤ اَنْ يَّقُوْلُوْاۤ اٰمَنَّا وَهُمْ لَا يُفْتَنُوْنَ
মানুষ কি মনে করে যে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ এ কথা বললেই তাদেরকে পরীক্ষা না করে ছেড়ে দেয়া হবে? (সূরা আনকাবূত- ২)
اَيَحْسَبُ الْاِنْسَانُ اَنْ يُّتْرَكَ سُدًى
মানুষ কি মনে করে যে, তাকে নিরর্থক ছেড়ে দেয়া হবে? (সূরা ক্বিয়ামাহ- ৩৬)
প্রত্যেক মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে- এ ধারণা ভুল :
اَيَطْمَعُ كُلُّ امْرِئٍ مِّنْهُمْ اَنْ يُّدْخَلَ جَنَّةَ نَعِيْمٍ
তাদের সবাই কি এ আশা করে যে, তাকে নিয়ামতপূর্ণ জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে? (সূরা মা‘আরিজ- ৩৮)
اَمْ حَسِبْتُمْ اَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ اللهُ الَّذِيْنَ جَاهَدُوْا مِنْكُمْ وَيَعْلَمَ الصَّابِرِيْنَ
তোমরা কি ধারণা করছ যে, তোমরা এমনিতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ আল্লাহ জেনে নেবেন না যে, তোমাদের মধ্য হতে কারা জিহাদ করেছে ও কারা ধৈর্যশীল? (সূরা আলে ইমরান- ১৪২)
মানুষ মন্দকাজ করেও মনে করে যে, সে ভালো কাজ করছে :
قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُمْ بِالْاَخْسَرِيْنَ اَعْمَالًا – اَلَّذِيْنَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُوْنَ اَنَّهُمْ يُحْسِنُوْنَ صُنْعًا
তাদেরকে বলে দাও, আমি কি তোমাদেরকে আমলের দিক থেকে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রসত্মদের সম্পর্কে সংবাদ দেব? তারা তো ঐসব লোক, পার্থিব জীবনে যাদের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেছে; অথচ তারা মনে করে যে, তারা সৎকর্মই করছে। (সূরা কাহফ- ১০৩, ১০৪)
اِنَّهُمُ اتَّخَذُوا الشَّيَاطِيْنَ اَوْلِيَآءَ مِنْ دُوْنِ اللهِ وَيَحْسَبُوْنَ اَنَّهُمْ مُّهْتَدُوْنَ
তারা আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানকে তাদের অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছিল। অথচ তারা মনে করত যে, একমাত্র তারাই সৎপথপ্রাপ্ত। (সূরা আ‘রাফ- ৩০)
মানুষ ও জিন সৃষ্টি করা হয়েছে আল্লাহর ইবাদাতের জন্য :
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْاِنْسَ اِلَّا لِيَعْبُدُوْنِ
আমি জিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমারই ইবাদাত করার জন্য। (সূরা যারিয়াত- ৫৬)
ব্যাখ্যা : এখানে প্রশ্ন থেকে যায় যে, আল্লাহ তা‘আলা কেবল জিন ও মানুষের স্রষ্টা নন। তিনি সমগ্র বিশ্বজাহান ও তার মধ্যকার সবকিছুর স্রষ্টা। কিন্তু এখানে কেবল জিন ও মানুষ সম্পর্কে কেন বলা হয়েছে যে, আমি তাদেরকে আমার ছাড়া আর কারো দাসত্বের জন্য সৃষ্টি করিনি? অথচ গোটা সৃষ্টির প্রতিটি অণু-পরমাণু শুধু আল্লাহর দাসত্বের জন্য। এর জবাব হচ্ছে পৃথিবীতে কেবল জিন ও মানুষই এমন সৃষ্টি, যাদের স্বাধীনতা আছে। তারা তাদের ক্ষমতা ও স্বাধীনতার গন্ডির মধ্যে আল্লাহ তা‘আলার দাসত্ব করতে চাইলে কিংবা তাঁর দাসত্ব থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে চাইলে নেবে এবং আল্লাহ ছাড়া অন্যদের দাসত্ব করতে চাইলেও করতে পারে। জিন ও মানুষ ছাড়া আর যত সৃষ্টি আছে তাদের এ ধরনের কোন স্বাধীনতা নেই। তাই এখানে শুধু জিন ও মানুষ সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তারা তাদের নিজ স্রষ্টার দাসত্ব থেকে মুখ ফিরিয়ে স্বভাব প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তাদের জানা উচিত, তাদেরকে একমাত্র স্রষ্টা ছাড়া আর কারো দাসত্বের জন্য সৃষ্টি করা হয়নি। তাদের জন্য সোজা পথ হচ্ছে, যে স্বাধীনতা তাদেরকে দেয়া হয়েছে তার অন্যায় ব্যবহার যেন না করে। বরং তা এমন সীমার মধ্যে ব্যবহার করবে যেমনিভাবে তার দেহের প্রতিটি লোম তার ক্ষমতা ও ইখতিয়ার বিহীন সীমার মধ্যে তাঁর দাসত্ব করছে।
খিলাফাতের দায়িত্ব পালন করা :
هُوَ الَّذِيْ جَعَلَكُمْ خَلَآئِفَ فِى الْاَرْضِ
তিনিই তোমাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি বানিয়েছেন। (সূরা ফাতির- ৩৯)
ব্যাখ্যা : যে ব্যক্তি কারো অধিকারের আওতাধীনে তার অর্পিত ক্ষমতা ও ইখতিয়ার ব্যবহার করে, তাকে খলীফা বলে। খলীফা নিজে মালিক নয় বরং আসল মালিকের প্রতিনিধি। সে নিজে ক্ষমতার অধিকারী নয় বরং মালিক তাকে যে ক্ষমতার অধিকার প্রদান করেছেন তা-ই সে ব্যবহার করে। সে নিজের ইচ্ছেমতো কাজ করার অধিকার রাখে না, বরং আসল মালিকের ইচ্ছা পূরণ করাই তার মূলকাজ। সে যদি নিজেকে মালিক মনে করে তার উপর অর্পিত ক্ষমতাকে নিজের ইচ্ছেমতো ব্যবহার করতে শুরু করে অথবা আসল মালিককে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে মালিক বলে স্বীকার করে এবং তার নির্দেশ পালন করতে থাকে, তাহলে এগুলো সবই বিদ্রোহ ও বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে গণ্য হবে।
ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা :
يَا دَاوُوْدُ اِنَّا جَعَلْنَاكَ خَلِيْفَةً فِى الْاَرْضِ فَاحْكُمْ بَيْنَ النَّاسِ بِالْحَقِّ وَلَا تَتَّبِعِ الْهَوٰى فَيُضِلَّكَ عَنْ سَبِيْلِ اللهِؕ اِنَّ الَّذِيْنَ يَضِلُّوْنَ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيْدٌ ۢبِمَا نَسُوْا يَوْمَ الْحِسَابِ
হে দাউদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরণ করেছি। অতএব তুমি মানুষের মধ্যে ন্যায়ভাবে বিচার-মীমাংসা করতে থাকো এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। নতুবা তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে দেবে। নিশ্চয় যারা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয়, হিসাবের দিনকে ভুলে যাওয়ার কারণে তাদের জন্য রয়েছে ভীষণ শাস্তি। (সূরা সোয়াদ- ২৬)
ব্যাখ্যা : এ দুনিয়ায় আল্লাহ মানুষকে খলীফা পদে নিযুক্ত করেছেন। খলীফা হওয়ার কারণে কেবল তাঁর ইবাদাত করলেই কর্তব্য শেষ হয়ে যায় না। বরং একই সাথে তাঁর পাঠানো হেদায়াত ও নির্দেশাবলি অনুযায়ী জীবন-যাপনও করতে হবে এবং সর্বত্র ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর যদি তারা এমনটি না করে শয়তানের ইঙ্গিতে চলতে থাকে, তাহলে তারা নিকৃষ্ট পর্যায়ের বিদ্রোহের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হবে এবং এজন্য তাদেরকে চরম পরিণতির সম্মুখীন হতে হবে।
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْاِنْسَ اِلَّا لِيَعْبُدُوْنِ
আমি জিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমারই ইবাদাত করার জন্য। (সূরা যারিয়াত- ৫৬)
ব্যাখ্যা : এখানে প্রশ্ন থেকে যায় যে, আল্লাহ তা‘আলা কেবল জিন ও মানুষের স্রষ্টা নন। তিনি সমগ্র বিশ্বজাহান ও তার মধ্যকার সবকিছুর স্রষ্টা। কিন্তু এখানে কেবল জিন ও মানুষ সম্পর্কে কেন বলা হয়েছে যে, আমি তাদেরকে আমার ছাড়া আর কারো দাসত্বের জন্য সৃষ্টি করিনি? অথচ গোটা সৃষ্টির প্রতিটি অণু-পরমাণু শুধু আল্লাহর দাসত্বের জন্য। এর জবাব হচ্ছে পৃথিবীতে কেবল জিন ও মানুষই এমন সৃষ্টি, যাদের স্বাধীনতা আছে। তারা তাদের ক্ষমতা ও স্বাধীনতার গন্ডির মধ্যে আল্লাহ তা‘আলার দাসত্ব করতে চাইলে কিংবা তাঁর দাসত্ব থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে চাইলে নেবে এবং আল্লাহ ছাড়া অন্যদের দাসত্ব করতে চাইলেও করতে পারে। জিন ও মানুষ ছাড়া আর যত সৃষ্টি আছে তাদের এ ধরনের কোন স্বাধীনতা নেই। তাই এখানে শুধু জিন ও মানুষ সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তারা তাদের নিজ স্রষ্টার দাসত্ব থেকে মুখ ফিরিয়ে স্বভাব প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তাদের জানা উচিত, তাদেরকে একমাত্র স্রষ্টা ছাড়া আর কারো দাসত্বের জন্য সৃষ্টি করা হয়নি। তাদের জন্য সোজা পথ হচ্ছে, যে স্বাধীনতা তাদেরকে দেয়া হয়েছে তার অন্যায় ব্যবহার যেন না করে। বরং তা এমন সীমার মধ্যে ব্যবহার করবে যেমনিভাবে তার দেহের প্রতিটি লোম তার ক্ষমতা ও ইখতিয়ার বিহীন সীমার মধ্যে তাঁর দাসত্ব করছে।
খিলাফাতের দায়িত্ব পালন করা :
هُوَ الَّذِيْ جَعَلَكُمْ خَلَآئِفَ فِى الْاَرْضِ
তিনিই তোমাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি বানিয়েছেন। (সূরা ফাতির- ৩৯)
ব্যাখ্যা : যে ব্যক্তি কারো অধিকারের আওতাধীনে তার অর্পিত ক্ষমতা ও ইখতিয়ার ব্যবহার করে, তাকে খলীফা বলে। খলীফা নিজে মালিক নয় বরং আসল মালিকের প্রতিনিধি। সে নিজে ক্ষমতার অধিকারী নয় বরং মালিক তাকে যে ক্ষমতার অধিকার প্রদান করেছেন তা-ই সে ব্যবহার করে। সে নিজের ইচ্ছেমতো কাজ করার অধিকার রাখে না, বরং আসল মালিকের ইচ্ছা পূরণ করাই তার মূলকাজ। সে যদি নিজেকে মালিক মনে করে তার উপর অর্পিত ক্ষমতাকে নিজের ইচ্ছেমতো ব্যবহার করতে শুরু করে অথবা আসল মালিককে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে মালিক বলে স্বীকার করে এবং তার নির্দেশ পালন করতে থাকে, তাহলে এগুলো সবই বিদ্রোহ ও বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে গণ্য হবে।
ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা :
يَا دَاوُوْدُ اِنَّا جَعَلْنَاكَ خَلِيْفَةً فِى الْاَرْضِ فَاحْكُمْ بَيْنَ النَّاسِ بِالْحَقِّ وَلَا تَتَّبِعِ الْهَوٰى فَيُضِلَّكَ عَنْ سَبِيْلِ اللهِؕ اِنَّ الَّذِيْنَ يَضِلُّوْنَ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيْدٌ ۢبِمَا نَسُوْا يَوْمَ الْحِسَابِ
হে দাউদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরণ করেছি। অতএব তুমি মানুষের মধ্যে ন্যায়ভাবে বিচার-মীমাংসা করতে থাকো এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। নতুবা তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে দেবে। নিশ্চয় যারা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয়, হিসাবের দিনকে ভুলে যাওয়ার কারণে তাদের জন্য রয়েছে ভীষণ শাস্তি। (সূরা সোয়াদ- ২৬)
ব্যাখ্যা : এ দুনিয়ায় আল্লাহ মানুষকে খলীফা পদে নিযুক্ত করেছেন। খলীফা হওয়ার কারণে কেবল তাঁর ইবাদাত করলেই কর্তব্য শেষ হয়ে যায় না। বরং একই সাথে তাঁর পাঠানো হেদায়াত ও নির্দেশাবলি অনুযায়ী জীবন-যাপনও করতে হবে এবং সর্বত্র ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর যদি তারা এমনটি না করে শয়তানের ইঙ্গিতে চলতে থাকে, তাহলে তারা নিকৃষ্ট পর্যায়ের বিদ্রোহের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হবে এবং এজন্য তাদেরকে চরম পরিণতির সম্মুখীন হতে হবে।
মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে পরীক্ষা করার জন্য :
اَلَّذِيْ خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ اَيُّكُمْ اَحْسَنُ عَمَلًاؕ وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْغَفُوْرُ
তিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে এ পরীক্ষা করার জন্য যে, তোমাদের মধ্যে কে আমলের দিক দিয়ে সর্বোত্তম। আর তিনিই মহাপরাক্রমশালী ও ক্ষমাশীল। (সূরা মুলক- ২)
পূর্ববর্তী সবাই পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছে :
اَحَسِبَ النَّاسُ اَنْ يُّتْرَكُوْاۤ اَنْ يَّقُوْلُوْاۤ اٰمَنَّا وَهُمْ لَا يُفْتَنُوْنَ – وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَلَيَعْلَمَنَّ اللهُ الَّذِيْنَ صَدَقُوْا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِيْنَ
মানুষ কি মনে করে যে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’- এ কথা বললেই তাদেরকে পরীক্ষা না করে অব্যাহতি দিয়ে দেয়া হবে? আমি তো এদের পূর্ববর্তীদেরকেও পরীক্ষা করেছিলাম (যারা তাদের মতোই ঈমানের দাবী করত)। অবশ্যই আল্লাহ প্রকাশ করে দেবেন যে, কারা সত্যবাদী এবং কারা মিথ্যাবাদী। (সূরা আনকাবূত- ২, ৩)
মানুষ একে অপরের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ :
وَجَعَلْنَا بَعْضَكُمْ لِبَعْضٍ فِتْنَةًؕ اَتَصْبِرُوْنَۚ وَكَانَ رَبُّكَ بَصِيْرًا
হে মানুষ! আমি তোমাদের মধ্যে একজনকে অপরজনের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ বানিয়েছি। সুতরাং তোমরা ধৈর্যধারণ করবে কি? তোমার প্রতিপালক সবকিছু দেখছেন। (সূরা ফুরক্বান- ২০)
কঠিন পরীক্ষা হয় যুদ্ধের মাঠে :
هُنَالِكَ ابْتُلِيَ الْمُؤْمِنُوْنَ وَزُلْزِلُوْا زِلْزَالًا شَدِيْدًا
সেখানে (আহযাবের যুদ্ধে) মুমিনদেরকে পরীক্ষা করা হয়েছিল এবং তারা ভীষণভাবে প্রকম্পিত হয়েছিল। (সূরা আহযাব- ১১)
আল্লাহ ভালো-মন্দ উভয়টি দিয়েই পরীক্ষা করেন :
وَبَلَوْنَاهُمْ بِالْحَسَنَاتِ وَالسَّيِّئَاتِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُوْنَ
আমি তাদেরকে মঙ্গল ও অমঙ্গল দ্বারা পরীক্ষা করি, যাতে তারা প্রত্যাবর্তন করে। (সূরা আ‘রাফ- ১৬৮)
وَنَبْلُوْكُمْ بِالشَّرِّ وَالْخَيْرِ فِتْنَةًؕ وَاِلَيْنَا تُرْجَعُوْنَ
আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভালো দ্বারা বিশেষভাবে পরীক্ষা করে থাকি। অতঃপর তোমরা তো আমারই নিকট প্রত্যাবর্তন করবে। (সূরা আম্বিয়া- ৩৫)
ব্যাখ্যা : সুখ-দুঃখ, ধনী-গরীব, জয়-পরাজয়, শক্তি ও দুর্বলতা ইত্যাদি সকল অবস্থায় তোমাদেরকে পরীক্ষা করা হচ্ছে। দেখা হচ্ছে, ভালো অবস্থায় তোমরা অহংকারী, যালিম ও প্রবৃত্তির দাস হয়ে যাও কি না। আবার খারাপ অবস্থায় সাহস কমে যাওয়ায় নিম্নমানের ও অবমাননাকর পদ্ধতি এবং অবৈধ পন্থা অবলম্বন কর কি না। কাজেই কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তির পক্ষে এ রকমারি অবস্থা বুঝার ব্যাপারে ভুল করা উচিত নয়। সে যে অবস্থারই সম্মুখীন হোক, তাকে অবশ্যই পরীক্ষার এ দিকটি সামনে রাখতে হবে এবং একে সাফল্যের সাথে অতিক্রম করতে হবে। কেবলমাত্র একজন বোকা ও সংকীর্ণমনা লোকই ভালো অবস্থায় ফিরাউনে পরিণত হয় এবং খারাপ অবস্থা দেখা দিলে হা-হুতাশ শুরু করে দেয়।
আল্লাহ ভয়, ক্ষুধা এবং সম্পদ, স্বাস্থ্য ও ফসলের ক্ষতি দিয়ে পরীক্ষা করেন :
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوْفِ وَالْجُوْعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الْاَمْوَالِ وَالْاَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِيْنَ
নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে ভয়, ক্ষুধা এবং ধনসম্পদ, স্বাস্থ্য ও ফসলের ক্ষতির কোন একটি দ্বারা পরীক্ষা করব। সুতরাং আপনি (এসব বিপদে) ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ প্রদান করুন। (সূরা বাক্বারা- ১৫৫)
اِنَّا جَعَلْنَا مَا عَلَى الْاَرْضِ زِيْنَةً لَّهَا لِنَبْلُوَهُمْ اَيُّهُمْ اَحْسَنُ عَمَلًا
পৃথিবীর উপর যা কিছু আছে আমি সেগুলোকে তার (অধিবাসীদের) জন্য সুশোভিত করে দিয়েছি, যাতে করে তাদেরকে এ পরীক্ষা করে নিতে পারি যে, তাদের মধ্যে কর্মে কে শ্রেষ্ঠ। (সূরা কাহফ- ৭)
মানুষ আল্লাহর পক্ষ থেকে যা-ই পায় সবই পরীক্ষার জন্য :
وَهُوَ الَّذِيْ جَعَلَكُمْ خَلَآئِفَ الْاَرْضِ وَرَفَعَ بَعْضَكُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِّيَبْلُوَكُمْ فِيْ مَاۤ اٰتَاكُمْؕ اِنَّ رَبَّكَ سَرِيْعُ الْعِقَابِؗ وَاِنَّهٗ لَغَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
তিনিই তোমাদেরকে দুনিয়ার প্রতিনিধি বানিয়েছেন এবং তোমাদেরকে (নিয়ামত হিসেবে) যা তিনি দিয়েছেন সে বিষয়ে পরীক্ষার উদ্দেশ্যে তোমাদের একজনকে অপরজনের উপর মর্যাদায় উন্নীত করেছেন। নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক শাস্তি দানে খুবই দ্রুততর; নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল ও দয়াময়। (সূরা আন‘আম- ১৬৫)
وَلَا تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ اِلٰى مَا مَتَّعْنَا بِهۤ ٖ اَزْوَاجًا مِّنْهُمْ زَهْرَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا لِنَفْتِنَهُمْ فِيْهِؕ وَرِزْقُ رَبِّكَ خَيْرٌ وَّاَبْقٰى
তুমি তোমার চক্ষুদ্বয়কে কখনো তার প্রতি প্রসারিত করো না, যা আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণিকে পার্থিব জীবনের সৌন্দর্যস্বরূপ উপভোগের উপকরণ হিসেবে দিয়েছি, যাতে করে এর দ্বারা তাদেরকে পরীক্ষা করে নিতে পারি। আর তোমার প্রতিপালক প্রদত্ত জীবনোপকরণই সর্বোৎকৃষ্ট ও অধিক স্থায়ী। (সূরা ত্বা-হা- ১৩১)
অনেক লোক পরীক্ষার ধরন বুঝে না :
فَاَمَّا الْاِنْسَانُ اِذَا مَا ابْتَلَاهُ رَبُّهٗ فَاَكْرَمَهٗ وَنَعَّمَهٗ فَيَقُوْلُ رَبِّۤيْ اَكْرَمَنِ – وَاَمَّاۤ اِذَا مَا ابْتَلَاهُ فَقَدَرَ عَلَيْهِ رِزْقَهٗ فَيَقُوْلُ رَبِّۤيْ اَهَانَنِ
মানুষ এরূপ যে, যখন তার পালনকর্তা তাকে পরীক্ষা করেন এবং সম্মান ও অনুগ্রহ দান করেন তখন বলে, আমার পালনকর্তা আমাকে সম্মান দান করেছেন। আবার যখন তাকে পরীক্ষা করেন এবং রিযিক সংকুচিত করে দেন তখন বলে, আমার পালনকর্তা আমাকে তুচ্ছ করেছেন। (সূরা ফাজর- ১৫, ১৬)
আল্লাহর প্রিয় বান্দারা পরীক্ষার রহস্য বুঝতে পারে :
قَالَ الَّذِيْ عِنْدَهٗ عِلْمٌ مِّنَ الْكِتَابِ اَنَاْ اٰتِيْكَ بِهٖ قَبْلَ اَنْ يَّرْتَدَّ اِلَيْكَ طَرْفُكَؕ فَلَمَّا رَاٰهُ مُسْتَقِرًّا عِنْدَه قَالَ هٰذَا مِنْ فَضْلِ رَبِّيْ لِيَبْلُوَنِۤيْ اَ اَشْكُرُ اَمْ اَكْفُرُؕ وَمَنْ شَكَرَ فَاِنَّمَا يَشْكُرُ لِنَفْسِهٖۚ وَمَنْ كَفَرَ فَاِنَّ رَبِّيْ غَنِيٌّ كَرِيْمٌ
কিতাবের জ্ঞান যার ছিল সে বলল, আপনি চক্ষুর পলক ফেলার পূর্বেই আমি সেটা (বিলকিসের সিংহাসন) আপনার কাছে এনে দেব। অতঃপর সুলায়মান যখন তা সম্মুখে রক্ষিত অবস্থায় দেখলেন তখন তিনি বললেন, এটা আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ, যেন তিনি আমাকে পরীক্ষা করতে পারেন যে, আমি কৃতজ্ঞ না অকৃতজ্ঞ? মূলত যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে তো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে নিজেরই কল্যাণের জন্য এবং যে অকৃতজ্ঞ সে জেনে রাখুক যে, আমার প্রতিপালক অভাবমুক্ত ও মহানুভব। (সূরা নামল- ৪০)
اَلَّذِيْ خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ اَيُّكُمْ اَحْسَنُ عَمَلًاؕ وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْغَفُوْرُ
তিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে এ পরীক্ষা করার জন্য যে, তোমাদের মধ্যে কে আমলের দিক দিয়ে সর্বোত্তম। আর তিনিই মহাপরাক্রমশালী ও ক্ষমাশীল। (সূরা মুলক- ২)
পূর্ববর্তী সবাই পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছে :
اَحَسِبَ النَّاسُ اَنْ يُّتْرَكُوْاۤ اَنْ يَّقُوْلُوْاۤ اٰمَنَّا وَهُمْ لَا يُفْتَنُوْنَ – وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَلَيَعْلَمَنَّ اللهُ الَّذِيْنَ صَدَقُوْا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِيْنَ
মানুষ কি মনে করে যে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’- এ কথা বললেই তাদেরকে পরীক্ষা না করে অব্যাহতি দিয়ে দেয়া হবে? আমি তো এদের পূর্ববর্তীদেরকেও পরীক্ষা করেছিলাম (যারা তাদের মতোই ঈমানের দাবী করত)। অবশ্যই আল্লাহ প্রকাশ করে দেবেন যে, কারা সত্যবাদী এবং কারা মিথ্যাবাদী। (সূরা আনকাবূত- ২, ৩)
মানুষ একে অপরের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ :
وَجَعَلْنَا بَعْضَكُمْ لِبَعْضٍ فِتْنَةًؕ اَتَصْبِرُوْنَۚ وَكَانَ رَبُّكَ بَصِيْرًا
হে মানুষ! আমি তোমাদের মধ্যে একজনকে অপরজনের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ বানিয়েছি। সুতরাং তোমরা ধৈর্যধারণ করবে কি? তোমার প্রতিপালক সবকিছু দেখছেন। (সূরা ফুরক্বান- ২০)
কঠিন পরীক্ষা হয় যুদ্ধের মাঠে :
هُنَالِكَ ابْتُلِيَ الْمُؤْمِنُوْنَ وَزُلْزِلُوْا زِلْزَالًا شَدِيْدًا
সেখানে (আহযাবের যুদ্ধে) মুমিনদেরকে পরীক্ষা করা হয়েছিল এবং তারা ভীষণভাবে প্রকম্পিত হয়েছিল। (সূরা আহযাব- ১১)
আল্লাহ ভালো-মন্দ উভয়টি দিয়েই পরীক্ষা করেন :
وَبَلَوْنَاهُمْ بِالْحَسَنَاتِ وَالسَّيِّئَاتِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُوْنَ
আমি তাদেরকে মঙ্গল ও অমঙ্গল দ্বারা পরীক্ষা করি, যাতে তারা প্রত্যাবর্তন করে। (সূরা আ‘রাফ- ১৬৮)
وَنَبْلُوْكُمْ بِالشَّرِّ وَالْخَيْرِ فِتْنَةًؕ وَاِلَيْنَا تُرْجَعُوْنَ
আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভালো দ্বারা বিশেষভাবে পরীক্ষা করে থাকি। অতঃপর তোমরা তো আমারই নিকট প্রত্যাবর্তন করবে। (সূরা আম্বিয়া- ৩৫)
ব্যাখ্যা : সুখ-দুঃখ, ধনী-গরীব, জয়-পরাজয়, শক্তি ও দুর্বলতা ইত্যাদি সকল অবস্থায় তোমাদেরকে পরীক্ষা করা হচ্ছে। দেখা হচ্ছে, ভালো অবস্থায় তোমরা অহংকারী, যালিম ও প্রবৃত্তির দাস হয়ে যাও কি না। আবার খারাপ অবস্থায় সাহস কমে যাওয়ায় নিম্নমানের ও অবমাননাকর পদ্ধতি এবং অবৈধ পন্থা অবলম্বন কর কি না। কাজেই কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তির পক্ষে এ রকমারি অবস্থা বুঝার ব্যাপারে ভুল করা উচিত নয়। সে যে অবস্থারই সম্মুখীন হোক, তাকে অবশ্যই পরীক্ষার এ দিকটি সামনে রাখতে হবে এবং একে সাফল্যের সাথে অতিক্রম করতে হবে। কেবলমাত্র একজন বোকা ও সংকীর্ণমনা লোকই ভালো অবস্থায় ফিরাউনে পরিণত হয় এবং খারাপ অবস্থা দেখা দিলে হা-হুতাশ শুরু করে দেয়।
আল্লাহ ভয়, ক্ষুধা এবং সম্পদ, স্বাস্থ্য ও ফসলের ক্ষতি দিয়ে পরীক্ষা করেন :
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوْفِ وَالْجُوْعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الْاَمْوَالِ وَالْاَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِيْنَ
নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে ভয়, ক্ষুধা এবং ধনসম্পদ, স্বাস্থ্য ও ফসলের ক্ষতির কোন একটি দ্বারা পরীক্ষা করব। সুতরাং আপনি (এসব বিপদে) ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ প্রদান করুন। (সূরা বাক্বারা- ১৫৫)
اِنَّا جَعَلْنَا مَا عَلَى الْاَرْضِ زِيْنَةً لَّهَا لِنَبْلُوَهُمْ اَيُّهُمْ اَحْسَنُ عَمَلًا
পৃথিবীর উপর যা কিছু আছে আমি সেগুলোকে তার (অধিবাসীদের) জন্য সুশোভিত করে দিয়েছি, যাতে করে তাদেরকে এ পরীক্ষা করে নিতে পারি যে, তাদের মধ্যে কর্মে কে শ্রেষ্ঠ। (সূরা কাহফ- ৭)
মানুষ আল্লাহর পক্ষ থেকে যা-ই পায় সবই পরীক্ষার জন্য :
وَهُوَ الَّذِيْ جَعَلَكُمْ خَلَآئِفَ الْاَرْضِ وَرَفَعَ بَعْضَكُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِّيَبْلُوَكُمْ فِيْ مَاۤ اٰتَاكُمْؕ اِنَّ رَبَّكَ سَرِيْعُ الْعِقَابِؗ وَاِنَّهٗ لَغَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
তিনিই তোমাদেরকে দুনিয়ার প্রতিনিধি বানিয়েছেন এবং তোমাদেরকে (নিয়ামত হিসেবে) যা তিনি দিয়েছেন সে বিষয়ে পরীক্ষার উদ্দেশ্যে তোমাদের একজনকে অপরজনের উপর মর্যাদায় উন্নীত করেছেন। নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক শাস্তি দানে খুবই দ্রুততর; নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল ও দয়াময়। (সূরা আন‘আম- ১৬৫)
وَلَا تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ اِلٰى مَا مَتَّعْنَا بِهۤ ٖ اَزْوَاجًا مِّنْهُمْ زَهْرَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا لِنَفْتِنَهُمْ فِيْهِؕ وَرِزْقُ رَبِّكَ خَيْرٌ وَّاَبْقٰى
তুমি তোমার চক্ষুদ্বয়কে কখনো তার প্রতি প্রসারিত করো না, যা আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণিকে পার্থিব জীবনের সৌন্দর্যস্বরূপ উপভোগের উপকরণ হিসেবে দিয়েছি, যাতে করে এর দ্বারা তাদেরকে পরীক্ষা করে নিতে পারি। আর তোমার প্রতিপালক প্রদত্ত জীবনোপকরণই সর্বোৎকৃষ্ট ও অধিক স্থায়ী। (সূরা ত্বা-হা- ১৩১)
অনেক লোক পরীক্ষার ধরন বুঝে না :
فَاَمَّا الْاِنْسَانُ اِذَا مَا ابْتَلَاهُ رَبُّهٗ فَاَكْرَمَهٗ وَنَعَّمَهٗ فَيَقُوْلُ رَبِّۤيْ اَكْرَمَنِ – وَاَمَّاۤ اِذَا مَا ابْتَلَاهُ فَقَدَرَ عَلَيْهِ رِزْقَهٗ فَيَقُوْلُ رَبِّۤيْ اَهَانَنِ
মানুষ এরূপ যে, যখন তার পালনকর্তা তাকে পরীক্ষা করেন এবং সম্মান ও অনুগ্রহ দান করেন তখন বলে, আমার পালনকর্তা আমাকে সম্মান দান করেছেন। আবার যখন তাকে পরীক্ষা করেন এবং রিযিক সংকুচিত করে দেন তখন বলে, আমার পালনকর্তা আমাকে তুচ্ছ করেছেন। (সূরা ফাজর- ১৫, ১৬)
আল্লাহর প্রিয় বান্দারা পরীক্ষার রহস্য বুঝতে পারে :
قَالَ الَّذِيْ عِنْدَهٗ عِلْمٌ مِّنَ الْكِتَابِ اَنَاْ اٰتِيْكَ بِهٖ قَبْلَ اَنْ يَّرْتَدَّ اِلَيْكَ طَرْفُكَؕ فَلَمَّا رَاٰهُ مُسْتَقِرًّا عِنْدَه قَالَ هٰذَا مِنْ فَضْلِ رَبِّيْ لِيَبْلُوَنِۤيْ اَ اَشْكُرُ اَمْ اَكْفُرُؕ وَمَنْ شَكَرَ فَاِنَّمَا يَشْكُرُ لِنَفْسِهٖۚ وَمَنْ كَفَرَ فَاِنَّ رَبِّيْ غَنِيٌّ كَرِيْمٌ
কিতাবের জ্ঞান যার ছিল সে বলল, আপনি চক্ষুর পলক ফেলার পূর্বেই আমি সেটা (বিলকিসের সিংহাসন) আপনার কাছে এনে দেব। অতঃপর সুলায়মান যখন তা সম্মুখে রক্ষিত অবস্থায় দেখলেন তখন তিনি বললেন, এটা আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ, যেন তিনি আমাকে পরীক্ষা করতে পারেন যে, আমি কৃতজ্ঞ না অকৃতজ্ঞ? মূলত যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে তো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে নিজেরই কল্যাণের জন্য এবং যে অকৃতজ্ঞ সে জেনে রাখুক যে, আমার প্রতিপালক অভাবমুক্ত ও মহানুভব। (সূরা নামল- ৪০)
মানুষকে সৎ প্রকৃতি দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে :
فَاَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّيْنِ حَنِيْفًاؕ فِطْرَةَ اللهِ الَّتِيْ فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَاؕ لَا تَبْدِيْلَ لِخَلْقِ اللهِؕ ذٰلِكَ الدِّيْنُ الْقَيِّمُۗ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ
অতএব তুমি একনিষ্ঠভাবে নিজেকে দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখো এবং আল্লাহর প্রকৃতির অনুসরণ করো, যার উপর তিনি মানব সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরলসঠিক দ্বীন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। (সূরা রূম- ৩০)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ সমগ্র মানবজাতিকে এ প্রকৃতির উপর সৃষ্টি করা হয়েছে যে, এক আল্লাহ ছাড়া তাদের আর কোন স্রষ্টা, রব অথবা উপাস্য নেই। সুতরাং তোমাদেরকে এ প্রকৃতির উপরই প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। যদি স্বেচ্ছাচারী হয়ে চলার নীতি অবলম্বন কর, তাহলে প্রকৃতির বিরুদ্ধাচরণ করা হবে। আর যদি অন্যের আনুগত্যের শিকল নিজের গলায় পরে নাও, তাহলেও নিজের প্রকৃতির বিরোধী হিসেবে গণ্য হবে। এ বিষয়বস্তুটিই নবী ﷺ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘মাতৃগর্ভ থেকে জন্মলাভকারী প্রতিটি শিশু মানবিক প্রকৃতির উপরই জন্ম লাভ করে। তারপর তার মা-বাবাই তাকে ইয়াহুদি, খ্রিস্টান ও অগ্নিপূজারী হিসেবে গড়ে তুলে। এর দৃষ্টান্ত হচ্ছে, যেমন প্রত্যেকটি পশুর পেট থেকে নিখুঁত ও সুস্থ পশুই বের হয়ে আসে। কোন একটা বাচ্চাও কান কাটা অবস্থায় বের হয়ে আসে না। পরে মুশরিকরা নিজেদের জাহেলী কুসংস্কারের কারণে তার কান কেটে দেয়।’’ (সহীহ বুখারী, হা/১৩৮৫; সহীহ মুসলিম, হা/৬৯২৬)
প্রথমে সকল মানুষ একই সম্প্রদায়ভুক্ত ছিল, পরে বিভেদ সৃষ্টি হয় :
كَانَ النَّاسُ اُمَّةً وَّاحِدَةً فَبَعَثَ اللهُ النَّبِيِّيْنَ مُبَشِّرِيْنَ وَمُنْذِرِيْنَ۪ وَاَنْزَلَ مَعَهُمُ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ لِيَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ فِيْمَا اخْتَلَفُوْا فِيْهِ
মানবজাতি ছিল একই সম্প্রদায়ভুক্ত। অতঃপর (যখন তারা মতভেদে লিপ্ত হয় তখন) আল্লাহ সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারী হিসেবে নবীদেরকে পাঠালেন। তাদের সাথে সত্য সহকারে কিতাব নাযিল করলেন, যাতে করে লোকেরা যে বিষয়ে মতভেদ করেছে সে সম্পর্কে মীমাংসা করে দেয়। (সূরা বাক্বারা- ২১৩)
একে অপরের উপর বাড়াবাড়িই ছিল এর প্রধান কারণ :
وَمَا اخْتَلَفَ فِيْهِ اِلَّا الَّذِيْنَ اُوْتُوْهُ مِنْ ۢبَعْدِ مَا جَآءَتْهُمُ الْبَيِّنَاتُ بَغْيًا ۢبَيْنَهُمْۚ فَهَدَى اللهُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لِمَا اخْتَلَفُوْا فِيْهِ مِنَ الْحَقِّ بِاِذْنِهٖؕ وَاللهُ يَهْدِيْ مَنْ يَّشَآءُ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
মূলত যাদেরকে কিতাব দান করা হয়েছিল তাদের নিকট সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ আসার পরও তারা নিজেদের বাড়াবাড়ির কারণে তাকে (সে কিতাবকে) নিয়ে মতভেদ শুরু করে দিয়েছিল। অতঃপর আল্লাহ স্বেচ্ছায় ঈমানদারদেরকে মতভেদপূর্ণ বিষয় হতে সত্য পথের সন্ধান দিলেন। আর আল্লাহ যাকে চান তাকে সরল পথপ্রদর্শন করেন। (সূরা বাক্বারা- ২১৩)
ব্যাখ্যা : দুনিয়ায় মানুষের মধ্যে অসংখ্য মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। এসব মতবিরোধের ভিত্তিতে বিভিন্ন বংশ, গোত্র, জাতি ও পরিবারের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। এগুলোর ভিত্তিতেই বিভিন্ন মতাদর্শের ধারকরা নিজেদের জন্য আলাদা ধর্ম, সমাজ ও সভ্যতা তৈরি করে নিয়েছে। এক একটি মতাদর্শের সমর্থন ও পক্ষপাতিত্বে হাজার-হাজার, লাখো-লাখো লোক বিভিন্ন সময় ধন, প্রাণ, ইজ্জত-সম্মান সবকিছু কুরবানী করে দিয়েছে। আর এ মতাদর্শের সমর্থকদের মধ্যে অনেক সময় এমন মারাত্মক সংঘর্ষ হয়েছে যে, তাদের একদল অন্য দলকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার চেষ্টা করেছে এবং যারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছিল তারা এ অবস্থাতেও নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গী পরিহার করা থেকে বিরত থেকেছে। এ ধরনের মতবিরোধের ক্ষেত্রে বিবেকের দাবী এই যে, এক সময় না এক সময় সঠিক ও নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হোক যে, যথার্থই তাদের মধ্যে হক কী ছিল এবং বাতিল কী ছিল, কে সত্যপন্থী ছিল এবং কে মিথ্যাপন্থী ছিল। মূলত এ দুনিয়ায় এ পর্দা সরে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই; কেননা এটা হবে পরকালে।
তারা কে কোন পথ অবলম্বন করে আল্লাহ তা দেখতে চান :
وَلَوْ شَآءَ رَبُّكَ لَجَعَلَ النَّاسَ اُمَّةً وَّاحِدَةً وَّلَا يَزَالُوْنَ مُخْتَلِفِيْنَ – اِلَّا مَنْ رَّحِمَ رَبُّكَ وَلِذٰلِكَ خَلَقَهُمْ
তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করলে সমসত্ম মানুষকে এক জাতিতে পরিণত করতে পারতেন। কিন্তু তারা তো মতভেদ করতেই থাকবে, তবে তারা নয় যাদেরকে তোমার প্রতিপালক দয়া করেন; মূলত তিনি তাদেরকে এজন্যই সৃষ্টি করেছেন। (সূরা হুদ- ১১৮, ১১৯)
ব্যাখ্যা : এখানে মানুষের ব্যাপারে আল্লাহর ইচ্ছা সম্পর্কিত বাস্তব সত্যটি পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করে দেয়া হয়েছে। পৃথিবীতে পশু, উদ্ভিদ ও অন্যান্য সৃষ্টির মতো মানুষকেও একটি নির্দিষ্ট পথে পাড়ি জমাতে বাধ্য করা হবে- মানুষের ব্যাপারে আল্লাহ এটা কখনই চান না। যদি এটাই তাঁর ইচ্ছা হতো তাহলে ঈমানের দাওয়াত, নবী প্রেরণ ও কিতাব নাযিলের প্রয়োজন ছিল না। সমস্ত মানুষ মুমিন ও মুসলিম হিসেবে সৃষ্টি হতো, কুফরীর কোন সম্ভাবনাই থাকত না। মানুষের ব্যাপারে আল্লাহ তাঁর যে ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন তা হলো, তাকে নির্বাচন ও গ্রহণ করার স্বাধীনতা দেয়া হবে। তাকে নিজের পছন্দ অনুযায়ী বিভিন্ন পথে চলার ক্ষমতা দেয়া হবে। তার সামনে জান্নাত ও জাহান্নাম উভয়ের পথ খুলে দেয়া হবে। তারপর প্রতিটি মানুষকে এর মধ্য থেকে যে কোন একটি পথ বাছাই করে নিয়ে তার উপর চলার সুযোগ দেয়া হবে। এর ফলে প্রত্যেকে নিজের প্রচেষ্টা ও উপার্জনের ফল হিসেবেই সবকিছু লাভ করবে। কাজেই যে পরিকল্পনার ভিত্তিতে মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে তা যখন নির্বাচনের স্বাধীনতা এবং কুফরী ও ঈমানের নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত তখন যে জাতি নিজে অসৎপথে এগিয়ে যেতে চায়, আল্লাহ তাকে জোর করে সৎপথে নিয়ে যাবেন না। আবার যে সৎপথে থাকতে চায়, তাকে জোর করে অসৎ পথে নিয়ে যাবেন না।
মানুষের মধ্যে কেউ মুমিন আবার কেউ কাফির :
هُوَ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ فَمِنْكُمْ كَافِرٌ وَّمِنْكُمْ مُّؤْمِنٌؕ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাদের মধ্যে কেউ কাফির এবং কেউ মুমিনে পরিণত হয়। তোমরা যা কর আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা। (সূরা তাগাবুন- ২)
আরেক দল আছে মুনাফিক :
اِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ يُخَادِعُوْنَ اللهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْۚ وَاِذَا قَامُوْاۤ اِلَى الصَّلَاةِ قَامُوْا كُسَالٰى يُرَآءُوْنَ النَّاسَ وَلَا يَذْكُرُوْنَ اللهَ اِلَّا قَلِيْلًا – مُذَبْذَبِيْنَ بَيْنَ ذٰلِكَۗ لَاۤ اِلٰى هٰۤؤُلَآءِ وَلَاۤ اِلٰى هٰۤؤُلَآءِؕ وَمَنْ يُّضْلِلِ اللهُ فَلَنْ تَجِدَ لَهٗ سَبِيْلًا
নিশ্চয় মুনাফিকরা আল্লাহর সঙ্গে ধোঁকাবাজি করে; (মূলত এর মাধ্যমে) তিনিই তাদেরকে প্রতারণায় ফেলে দিচ্ছেন। যখন তারা সালাতে দাঁড়ায়, তখন তারা কেবল লোক দেখানোর জন্য শৈথিল্যের সঙ্গে দাঁড়ায়; আর তারা আল্লাহকে খুব অল্পই স্মরণ করে। এরা দোটানায় দোদুল্যমান- না এদের দিকে, না ওদের দিকে! আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তুমি তার জন্য কোন পথ খুঁজে পাবে না। (সূরা নিসা- ১৪২, ১৪৩)
আবার কেউ আছে মুশরিক :
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّتَّخِذُ مِنْ دُوْنِ اللهِ اَنْدَادًا يُّحِبُّوْنَهُمْ كَحُبِّ اللهِ
আর মানুষের মধ্যে এরূপ কিছু লোক আছে, যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্য কাউকে শরীক হিসেবে গ্রহণ করে, তাদেরকে আল্লাহর ভালোবাসার ন্যায় ভালোবেসে থাকে। (সূরা বাক্বারা- ১৬৫)
মানুষের মৌলিক পরিচয় একটাই হয় :
مَا جَعَلَ اللهُ لِرَجُلٍ مِّنْ قَلْبَيْنِ فِيْ جَوْفِهٖ
আল্লাহ কোন মানুষের জন্য তার বক্ষের মধ্যে দু’টি হৃদয় সৃষ্টি করেননি। (সূরা আহযাব- ৪)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ একজন লোক একই সাথে মুমিন ও মুনাফিক, সত্যবাদী ও মিথ্যাবাদী এবং সৎ ও অসৎ হতে পারে না। তার বক্ষদেশে দু’টি হৃদয় নেই যে, একটি হৃদয়ে থাকবে আন্তরিকতা এবং অন্যটিতে থাকবে আললাহর প্রতি বেপরোয়া ভাব। কাজেই একজন লোক এক সময় একটি মর্যাদারই অধিকারী হতে পারে। সে মুমিন হবে অথবা মুনাফিক হবে, কাফির হবে অথবা মুসলিম হবে। এখন যদি কেউ কোন মুমিনকে মুনাফিক বলে অথবা মুনাফিককে মুমিন বলে, তাহলে তাতে প্রকৃত সত্যের কোন পরিবর্তন হবে না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যেমন হবে সে তেমন ফলাফল পাওয়ার উপযুক্ত হবে।
মুসলিমরা তিনভাগে বিভক্ত :
ثُمَّ اَوْرَثْنَا الْكِتَابَ الَّذِيْنَ اصْطَفَيْنَا مِنْ عِبَادِنَاۚ فَمِنْهُمْ ظَالِمٌ لِّنَفْسِهٖۚ وَمِنْهُمْ مُّقْتَصِدٌۚ وَمِنْهُمْ سَابِقٌ ۢبِالْخَيْرَاتِ بِاِذْنِ اللهِؕ ذٰلِكَ هُوَ الْفَضْلُ الْكَبِيْرُ
অতঃপর আমি আমার বানদাদের মধ্য হতে যাদেরকে পছন্দ করেছি তাদেরকে এ কিতাবের উত্তরাধিকারী করেছি। তবে তাদের মধ্যে কেউ কেউ নিজের প্রতি অত্যাচারী, কেউ কেউ মধ্যমপন্থা অবলম্বনকারী এবং কেউ কেউ আল্লাহর হুকুমে নেক কাজে অগ্রগামী। আর এটি আল্লাহর পক্ষ হতে একটি বড় অনুগ্রহ। (সূরা ফাতির- ৩২)
ব্যাখ্যা : মুসলিমরা তিন শ্রেণিতে বিভক্ত : (এক) নিজেদের প্রতি যুলুমকারী। এরা হচ্ছে এমনসব লোক, যারা আন্তরিকতা সহকারে কুরআনকে আল্লাহর কিতাব এবং মুহাম্মাদ ﷺ কে আল্লাহর রাসূল হিসেবে মানে; কিন্তু কার্যত আল্লাহর কিতাব ও রাসূল ﷺ এর সুন্নাহের অনুসরণের হক আদায় করে না। এরা মুমিন কিন্তু গোনাহগার। অপরাধী কিন্তু বিদ্রোহী নয়। দুর্বল ঈমানদার, তবে মুনাফিক ও কাফির নয়। তাই এরাও কিতাবের ওয়ারিসদের অন্তর্ভুক্ত এবং আল্লাহর নির্বাচিত বান্দাদের মধ্যে শামিল। তিন শ্রেণির মধ্য থেকে এ শ্রেণির ঈমানদারদের কথা সবার আগে বলার কারণ হচ্ছে, উম্মতের মধ্যে এদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। (দুই) মাঝামাঝি অবস্থানকারী। এরা হচ্ছে এমন লোক, যারা এ উত্তরাধিকারের হক কমবেশী আদায় করে, কিন্তু পুরোপুরি করে না। তারা আল্লাহর হুকুম পালন করে, আবার অমান্যও করে। নিজেদের প্রবৃত্তিকে পুরোপুরি লাগামহীন করে ছেড়ে দেয়নি, বরং তাকে আল্লাহর অনুগত করার জন্য যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালায়; কিন্তু কখনো কখনো নিজেকে গোমরাহীর পথে ছেড়ে দেয় এবং গোনাহে লিপ্ত হয়ে পড়ে। এভাবে এদের জীবনে ভালো-মন্দ উভয় ধরনের কাজের সমাবেশ ঘটে। এরা সংখ্যায় প্রথম দলের চেয়ে কম এবং তৃতীয় দলের চেয়ে বেশি হয়। তাই এদেরকে দু’নম্বরে রাখা হয়েছে। (তিন) যারা ভালো কাজে অগ্রবর্তী। এরা কিতাবের উত্তরাধিকারের মধ্যে প্রথম সারির লোক। এরাই উত্তরাধিকারের হক পুরোপুরিভাবে আদায়কারী, কুরআন ও সুন্নাহের অনুসরণের ক্ষেত্রেও অগ্রগামী। আল্লাহর পয়গাম তাঁর বান্দাদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয় এবং সত্য দ্বীনের জন্য ত্যাগ স্বীকার করার ক্ষেত্রেও এরাই এগিয়ে থাকে। তাছাড়া সত্য, ন্যায়, ও কল্যাণের যে কোন কাজেও এরা অগ্রবর্তী থাকে। এরা জেনে বুঝে গোনাহ করে না। আর অজান্তে কোন গোনাহের কাজ অনুষ্ঠিত হলেও সে সম্পর্কে জানার সাথে সাথেই এদের মাথা লজ্জায় নত হয়ে যায়। প্রথম দু’টি দলের তুলনায় উম্মতের মধ্যে এদের সংখ্যা কম। তাই এদের কথা সবার শেষে বলা হয়েছে, যদিও উত্তরাধিকারের হক আদায় করার ক্ষেত্রে এরাই অগ্রগামী।
ভালো কাজে অগ্রগামীরা আবার চার প্রকার :
وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَالرَّسُوْلَ فَاُولٰٓئِكَ مَعَ الَّذِيْنَ اَنْعَمَ اللهُ عَلَيْهِمْ مِّنَ النَّبِيِّيْنَ وَالصِّدِّيْقِيْنَ وَالشُّهَدَآءِ وَالصَّالِحِيْنَۚ وَحَسُنَ اُولٰٓئِكَ رَفِيْقًا
যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং রাসূলের আনুগত্য করবে, সে তো নবী, সত্যনিষ্ঠ, শহীদ ও সৎকর্মপরায়ণ এবং যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন তাদেরই সঙ্গী হবে। আর তারা কতই না উত্তম সঙ্গী! (সূরা নিসা- ৬৯)
ব্যাখ্যা : صِدِّيْقٌ (সিদ্দিক) বলতে এমন ব্যক্তিকে বুঝায়, যে পরম সত্যনিষ্ঠ ও সত্যবাদী। তার মধ্যে সততা ও সত্যপ্রিয়তা পূর্ণমাত্রায় বিরাজ করে। নিজের আচার-আচরণ ও লেনদেনের ক্ষেত্রে সর্বদা সুস্পষ্ট ও সরল পথ অবলম্বন করে। সে সবসময় স্বচ্ছ মনে হক ও ইনসাফের সহযোগী হয়। সত্য ও ন্যায়নীতি বিরোধী যে কোন বিষয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। এ ক্ষেত্রে সামান্যতম দুর্বলতাও দেখায় না। সে এমনই পবিত্র ও নিষ্কলুষ চরিত্রের অধিকারী হয় যে, তার আত্মীয়-অনাত্মীয়, বন্ধু-শত্রু, আপন-পর কেউই তার কাছ থেকে নিখুঁত সত্যপ্রীতি, সত্যের সমর্থন ও সত্যের সহযোগিতা ছাড়া আর কিছুরই আশঙ্কা করে না।
شَهِيْدٌ (শাহীদ) শব্দের আসল অর্থ হচ্ছে সাক্ষী। শহীদ বলতে এমন ব্যক্তিকে বুঝায়, যে নিজের জীবনের সমগ্র কর্মকান্ডের মাধ্যমে তার ঈমানের সত্যতার সাক্ষ্য প্রদান করে। আল্লাহর পথে লড়াই করে প্রাণ উৎসর্গকারীকে এ কারণে শহীদ বলা হয় যে, সে প্রাণ উৎসর্গ করে এ কথা প্রমাণ করে দেয় যে, তার কাছে দ্বীন এত বেশি প্রিয় ছিল, যার জন্য নিজের প্রাণ অকাতরে বিলিয়ে দিতেও দ্বিধা করেনি।
صَالِحٌ (সালেহ) বা সৎকর্মশীল বলতে এমন ব্যক্তিকে বুঝায়, যে তার নিজের চিন্তাধারা, আকীদা-বিশ্বাস, ইচ্ছা, কথা ও কর্মের মাধ্যমে সত্য ও সরল পথে প্রতিষ্ঠিত থাকে এবং নিজের জীবনে সৎ ও সুনীতি অবলম্বন করে।
কেউ ভালো কাজে জীবন দিয়ে দেয় :
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّشْرِيْ نَفْسَهُ ابْتِغَآءَ مَرْضَاةِ اللهِؕ وَاللهُ رَءُوْفٌ ۢبِالْعِبَادِ
মানুষের মধ্যে এমনও লোক রয়েছে, যে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নিজের জীবন বিক্রয় করে দেয়। আর আল্লাহ বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত স্নেহপরায়ণ। (সূরা বাক্বারা- ২০৭)
আবার কেউ ভালো-মন্দ দু’টিই করে :
وَاٰخَرُوْنَ اعْتَرَفُوْا بِذُنُوْبِهِمْ خَلَطُوْا عَمَلًا صَالِحًا وَّاٰخَرَ سَيِّئًاؕ عَسَى اللهُ اَنْ يَّتُوْبَ عَلَيْهِمْ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
কতক লোক এমন রয়েছে, যারা নিজেদের অপরাধ স্বীকার করেছে। তারা এক সৎকর্মের সাথে অপর অসৎকর্ম মিশ্রিত করে ফেলেছে। হয়তো আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করবেন; নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা তাওবা- ১০২)
প্রত্যেক মানুষ নিজ নিজ রীতি অনুযায়ী কাজ করে :
قُلْ كُلٌّ يَّعْمَلُ عَلٰى شَاكِلَتِهٖؕ فَرَبُّكُمْ اَعْلَمُ بِمَنْ هُوَ اَهْدٰى سَبِيْلًا
বলো, প্রত্যেকেই নিজ প্রকৃতি অনুযায়ী কাজ করে থাকে। কিন্তু তোমার প্রতিপালক সম্যক অবগত আছেন যে, চলার পথে কে সবচেয়ে নির্ভুল। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৮৪)
ভালো-মন্দ যে যা করবে সে তারই ফলাফল ভোগ করবে :
مَنْ عَمِلَ صَالِحًا فَلِنَفْسِهٖۚ وَمَنْ اَسَآءَ فَعَلَيْهَاؗ ثُمَّ اِلٰى رَبِّكُمْ تُرْجَعُوْنَ
যে সৎ আমল করে সে তার (কল্যাণের) জন্যই করে এবং যে মন্দকর্ম করে তার প্রতিফল সে-ই ভোগ করবে। অতঃপর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা জাসিয়া- ১৫)
اِنْ اَحْسَنْتُمْ اَحْسَنْتُمْ لِاَنْفُسِكُمْ وَاِنْ اَسَاْتُمْ فَلَهَا
যদি তোমরা সৎকর্ম কর, তবে সে সৎকর্মের ফলাফল তোমরা নিজেরাই ভোগ করবে। আর যদি তোমরা খারাপ কাজ কর, তবে তার পরিণামও তোমাদেরকেই ভোগ করতে হবে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৭)
ব্যাখ্যা : প্রত্যেক ব্যক্তিই নিজের কর্ম অনুযায়ী পুরস্কার লাভ করবে। একজনের কাজের পুরস্কার অন্যজন পাবে না। অনুরূপভাবে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজে যে দোষ করেছে সেজন্য তাকে পাকড়াও করা হবে। একজনের দোষের কারণে অন্যজনকে পাকড়াও করা হবে না। তবে এটা সম্ভব যে, কেউ কোন সৎকাজের সূচনা করে গেলে তার আমলনামায় এর সওয়াব লেখা হবে এবং কেউ কোন খারাপ কাজের সূচনা করে গেলে তার আমলনামাতেও তার গোনাহ লেখা হবে। আর এগুলো যদি কিয়ামত পর্যন্তও চলতে থাকে, তবুও তার ফল আমলনামায় লিখে যাওয়া হবে।
مَنْ يَّشْفَعْ شَفَاعَةً حَسَنَةً يَّكُنْ لَّهٗ نَصِيْبٌ مِّنْهَاۚ وَمَنْ يَّشْفَعْ شَفَاعَةً سَيِّئَةً يَّكُنْ لَّهٗ كِفْلٌ مِّنْهَاؕ وَكَانَ اللهُ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ مُّقِيْتًا
কেউ কোন ভালো কাজের সুপারিশ করলে তাতে তার (সওয়াবের) অংশ থাকবে এবং কেউ কোন মন্দকাজের সুপারিশ করলে তাতেও তার (পাপের) অংশ থাকবে। আল্লাহ সর্ববিষয়ে নজর রাখেন। (সূরা নিসা- ৮৫)
ব্যাখ্যা : এটা যার যেমন পছন্দ এবং যার যেমন ভাগ্য। কেউ আল্লাহর পথে প্রচেষ্টা চালানোর এবং সত্যের শির উঁচু রাখার জন্য লোকদেরকেও উৎসাহিত করে- এর পুরস্কার সেও পায়। আবার কেউ মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলা এবং তাদেরকে আল্লাহর কালিমা উচুঁ করার সংগ্রাম থেকে বিরত রাখার জন্য নিজের সর্বশক্তি নিয়োগ করে- এর শাস্তিও সে পায়।
فَاَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّيْنِ حَنِيْفًاؕ فِطْرَةَ اللهِ الَّتِيْ فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَاؕ لَا تَبْدِيْلَ لِخَلْقِ اللهِؕ ذٰلِكَ الدِّيْنُ الْقَيِّمُۗ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ
অতএব তুমি একনিষ্ঠভাবে নিজেকে দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখো এবং আল্লাহর প্রকৃতির অনুসরণ করো, যার উপর তিনি মানব সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরলসঠিক দ্বীন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। (সূরা রূম- ৩০)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ সমগ্র মানবজাতিকে এ প্রকৃতির উপর সৃষ্টি করা হয়েছে যে, এক আল্লাহ ছাড়া তাদের আর কোন স্রষ্টা, রব অথবা উপাস্য নেই। সুতরাং তোমাদেরকে এ প্রকৃতির উপরই প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। যদি স্বেচ্ছাচারী হয়ে চলার নীতি অবলম্বন কর, তাহলে প্রকৃতির বিরুদ্ধাচরণ করা হবে। আর যদি অন্যের আনুগত্যের শিকল নিজের গলায় পরে নাও, তাহলেও নিজের প্রকৃতির বিরোধী হিসেবে গণ্য হবে। এ বিষয়বস্তুটিই নবী ﷺ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘মাতৃগর্ভ থেকে জন্মলাভকারী প্রতিটি শিশু মানবিক প্রকৃতির উপরই জন্ম লাভ করে। তারপর তার মা-বাবাই তাকে ইয়াহুদি, খ্রিস্টান ও অগ্নিপূজারী হিসেবে গড়ে তুলে। এর দৃষ্টান্ত হচ্ছে, যেমন প্রত্যেকটি পশুর পেট থেকে নিখুঁত ও সুস্থ পশুই বের হয়ে আসে। কোন একটা বাচ্চাও কান কাটা অবস্থায় বের হয়ে আসে না। পরে মুশরিকরা নিজেদের জাহেলী কুসংস্কারের কারণে তার কান কেটে দেয়।’’ (সহীহ বুখারী, হা/১৩৮৫; সহীহ মুসলিম, হা/৬৯২৬)
প্রথমে সকল মানুষ একই সম্প্রদায়ভুক্ত ছিল, পরে বিভেদ সৃষ্টি হয় :
كَانَ النَّاسُ اُمَّةً وَّاحِدَةً فَبَعَثَ اللهُ النَّبِيِّيْنَ مُبَشِّرِيْنَ وَمُنْذِرِيْنَ۪ وَاَنْزَلَ مَعَهُمُ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ لِيَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ فِيْمَا اخْتَلَفُوْا فِيْهِ
মানবজাতি ছিল একই সম্প্রদায়ভুক্ত। অতঃপর (যখন তারা মতভেদে লিপ্ত হয় তখন) আল্লাহ সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারী হিসেবে নবীদেরকে পাঠালেন। তাদের সাথে সত্য সহকারে কিতাব নাযিল করলেন, যাতে করে লোকেরা যে বিষয়ে মতভেদ করেছে সে সম্পর্কে মীমাংসা করে দেয়। (সূরা বাক্বারা- ২১৩)
একে অপরের উপর বাড়াবাড়িই ছিল এর প্রধান কারণ :
وَمَا اخْتَلَفَ فِيْهِ اِلَّا الَّذِيْنَ اُوْتُوْهُ مِنْ ۢبَعْدِ مَا جَآءَتْهُمُ الْبَيِّنَاتُ بَغْيًا ۢبَيْنَهُمْۚ فَهَدَى اللهُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لِمَا اخْتَلَفُوْا فِيْهِ مِنَ الْحَقِّ بِاِذْنِهٖؕ وَاللهُ يَهْدِيْ مَنْ يَّشَآءُ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
মূলত যাদেরকে কিতাব দান করা হয়েছিল তাদের নিকট সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ আসার পরও তারা নিজেদের বাড়াবাড়ির কারণে তাকে (সে কিতাবকে) নিয়ে মতভেদ শুরু করে দিয়েছিল। অতঃপর আল্লাহ স্বেচ্ছায় ঈমানদারদেরকে মতভেদপূর্ণ বিষয় হতে সত্য পথের সন্ধান দিলেন। আর আল্লাহ যাকে চান তাকে সরল পথপ্রদর্শন করেন। (সূরা বাক্বারা- ২১৩)
ব্যাখ্যা : দুনিয়ায় মানুষের মধ্যে অসংখ্য মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। এসব মতবিরোধের ভিত্তিতে বিভিন্ন বংশ, গোত্র, জাতি ও পরিবারের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। এগুলোর ভিত্তিতেই বিভিন্ন মতাদর্শের ধারকরা নিজেদের জন্য আলাদা ধর্ম, সমাজ ও সভ্যতা তৈরি করে নিয়েছে। এক একটি মতাদর্শের সমর্থন ও পক্ষপাতিত্বে হাজার-হাজার, লাখো-লাখো লোক বিভিন্ন সময় ধন, প্রাণ, ইজ্জত-সম্মান সবকিছু কুরবানী করে দিয়েছে। আর এ মতাদর্শের সমর্থকদের মধ্যে অনেক সময় এমন মারাত্মক সংঘর্ষ হয়েছে যে, তাদের একদল অন্য দলকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার চেষ্টা করেছে এবং যারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছিল তারা এ অবস্থাতেও নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গী পরিহার করা থেকে বিরত থেকেছে। এ ধরনের মতবিরোধের ক্ষেত্রে বিবেকের দাবী এই যে, এক সময় না এক সময় সঠিক ও নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হোক যে, যথার্থই তাদের মধ্যে হক কী ছিল এবং বাতিল কী ছিল, কে সত্যপন্থী ছিল এবং কে মিথ্যাপন্থী ছিল। মূলত এ দুনিয়ায় এ পর্দা সরে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই; কেননা এটা হবে পরকালে।
তারা কে কোন পথ অবলম্বন করে আল্লাহ তা দেখতে চান :
وَلَوْ شَآءَ رَبُّكَ لَجَعَلَ النَّاسَ اُمَّةً وَّاحِدَةً وَّلَا يَزَالُوْنَ مُخْتَلِفِيْنَ – اِلَّا مَنْ رَّحِمَ رَبُّكَ وَلِذٰلِكَ خَلَقَهُمْ
তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করলে সমসত্ম মানুষকে এক জাতিতে পরিণত করতে পারতেন। কিন্তু তারা তো মতভেদ করতেই থাকবে, তবে তারা নয় যাদেরকে তোমার প্রতিপালক দয়া করেন; মূলত তিনি তাদেরকে এজন্যই সৃষ্টি করেছেন। (সূরা হুদ- ১১৮, ১১৯)
ব্যাখ্যা : এখানে মানুষের ব্যাপারে আল্লাহর ইচ্ছা সম্পর্কিত বাস্তব সত্যটি পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করে দেয়া হয়েছে। পৃথিবীতে পশু, উদ্ভিদ ও অন্যান্য সৃষ্টির মতো মানুষকেও একটি নির্দিষ্ট পথে পাড়ি জমাতে বাধ্য করা হবে- মানুষের ব্যাপারে আল্লাহ এটা কখনই চান না। যদি এটাই তাঁর ইচ্ছা হতো তাহলে ঈমানের দাওয়াত, নবী প্রেরণ ও কিতাব নাযিলের প্রয়োজন ছিল না। সমস্ত মানুষ মুমিন ও মুসলিম হিসেবে সৃষ্টি হতো, কুফরীর কোন সম্ভাবনাই থাকত না। মানুষের ব্যাপারে আল্লাহ তাঁর যে ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন তা হলো, তাকে নির্বাচন ও গ্রহণ করার স্বাধীনতা দেয়া হবে। তাকে নিজের পছন্দ অনুযায়ী বিভিন্ন পথে চলার ক্ষমতা দেয়া হবে। তার সামনে জান্নাত ও জাহান্নাম উভয়ের পথ খুলে দেয়া হবে। তারপর প্রতিটি মানুষকে এর মধ্য থেকে যে কোন একটি পথ বাছাই করে নিয়ে তার উপর চলার সুযোগ দেয়া হবে। এর ফলে প্রত্যেকে নিজের প্রচেষ্টা ও উপার্জনের ফল হিসেবেই সবকিছু লাভ করবে। কাজেই যে পরিকল্পনার ভিত্তিতে মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে তা যখন নির্বাচনের স্বাধীনতা এবং কুফরী ও ঈমানের নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত তখন যে জাতি নিজে অসৎপথে এগিয়ে যেতে চায়, আল্লাহ তাকে জোর করে সৎপথে নিয়ে যাবেন না। আবার যে সৎপথে থাকতে চায়, তাকে জোর করে অসৎ পথে নিয়ে যাবেন না।
মানুষের মধ্যে কেউ মুমিন আবার কেউ কাফির :
هُوَ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ فَمِنْكُمْ كَافِرٌ وَّمِنْكُمْ مُّؤْمِنٌؕ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাদের মধ্যে কেউ কাফির এবং কেউ মুমিনে পরিণত হয়। তোমরা যা কর আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা। (সূরা তাগাবুন- ২)
আরেক দল আছে মুনাফিক :
اِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ يُخَادِعُوْنَ اللهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْۚ وَاِذَا قَامُوْاۤ اِلَى الصَّلَاةِ قَامُوْا كُسَالٰى يُرَآءُوْنَ النَّاسَ وَلَا يَذْكُرُوْنَ اللهَ اِلَّا قَلِيْلًا – مُذَبْذَبِيْنَ بَيْنَ ذٰلِكَۗ لَاۤ اِلٰى هٰۤؤُلَآءِ وَلَاۤ اِلٰى هٰۤؤُلَآءِؕ وَمَنْ يُّضْلِلِ اللهُ فَلَنْ تَجِدَ لَهٗ سَبِيْلًا
নিশ্চয় মুনাফিকরা আল্লাহর সঙ্গে ধোঁকাবাজি করে; (মূলত এর মাধ্যমে) তিনিই তাদেরকে প্রতারণায় ফেলে দিচ্ছেন। যখন তারা সালাতে দাঁড়ায়, তখন তারা কেবল লোক দেখানোর জন্য শৈথিল্যের সঙ্গে দাঁড়ায়; আর তারা আল্লাহকে খুব অল্পই স্মরণ করে। এরা দোটানায় দোদুল্যমান- না এদের দিকে, না ওদের দিকে! আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তুমি তার জন্য কোন পথ খুঁজে পাবে না। (সূরা নিসা- ১৪২, ১৪৩)
আবার কেউ আছে মুশরিক :
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّتَّخِذُ مِنْ دُوْنِ اللهِ اَنْدَادًا يُّحِبُّوْنَهُمْ كَحُبِّ اللهِ
আর মানুষের মধ্যে এরূপ কিছু লোক আছে, যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্য কাউকে শরীক হিসেবে গ্রহণ করে, তাদেরকে আল্লাহর ভালোবাসার ন্যায় ভালোবেসে থাকে। (সূরা বাক্বারা- ১৬৫)
মানুষের মৌলিক পরিচয় একটাই হয় :
مَا جَعَلَ اللهُ لِرَجُلٍ مِّنْ قَلْبَيْنِ فِيْ جَوْفِهٖ
আল্লাহ কোন মানুষের জন্য তার বক্ষের মধ্যে দু’টি হৃদয় সৃষ্টি করেননি। (সূরা আহযাব- ৪)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ একজন লোক একই সাথে মুমিন ও মুনাফিক, সত্যবাদী ও মিথ্যাবাদী এবং সৎ ও অসৎ হতে পারে না। তার বক্ষদেশে দু’টি হৃদয় নেই যে, একটি হৃদয়ে থাকবে আন্তরিকতা এবং অন্যটিতে থাকবে আললাহর প্রতি বেপরোয়া ভাব। কাজেই একজন লোক এক সময় একটি মর্যাদারই অধিকারী হতে পারে। সে মুমিন হবে অথবা মুনাফিক হবে, কাফির হবে অথবা মুসলিম হবে। এখন যদি কেউ কোন মুমিনকে মুনাফিক বলে অথবা মুনাফিককে মুমিন বলে, তাহলে তাতে প্রকৃত সত্যের কোন পরিবর্তন হবে না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যেমন হবে সে তেমন ফলাফল পাওয়ার উপযুক্ত হবে।
মুসলিমরা তিনভাগে বিভক্ত :
ثُمَّ اَوْرَثْنَا الْكِتَابَ الَّذِيْنَ اصْطَفَيْنَا مِنْ عِبَادِنَاۚ فَمِنْهُمْ ظَالِمٌ لِّنَفْسِهٖۚ وَمِنْهُمْ مُّقْتَصِدٌۚ وَمِنْهُمْ سَابِقٌ ۢبِالْخَيْرَاتِ بِاِذْنِ اللهِؕ ذٰلِكَ هُوَ الْفَضْلُ الْكَبِيْرُ
অতঃপর আমি আমার বানদাদের মধ্য হতে যাদেরকে পছন্দ করেছি তাদেরকে এ কিতাবের উত্তরাধিকারী করেছি। তবে তাদের মধ্যে কেউ কেউ নিজের প্রতি অত্যাচারী, কেউ কেউ মধ্যমপন্থা অবলম্বনকারী এবং কেউ কেউ আল্লাহর হুকুমে নেক কাজে অগ্রগামী। আর এটি আল্লাহর পক্ষ হতে একটি বড় অনুগ্রহ। (সূরা ফাতির- ৩২)
ব্যাখ্যা : মুসলিমরা তিন শ্রেণিতে বিভক্ত : (এক) নিজেদের প্রতি যুলুমকারী। এরা হচ্ছে এমনসব লোক, যারা আন্তরিকতা সহকারে কুরআনকে আল্লাহর কিতাব এবং মুহাম্মাদ ﷺ কে আল্লাহর রাসূল হিসেবে মানে; কিন্তু কার্যত আল্লাহর কিতাব ও রাসূল ﷺ এর সুন্নাহের অনুসরণের হক আদায় করে না। এরা মুমিন কিন্তু গোনাহগার। অপরাধী কিন্তু বিদ্রোহী নয়। দুর্বল ঈমানদার, তবে মুনাফিক ও কাফির নয়। তাই এরাও কিতাবের ওয়ারিসদের অন্তর্ভুক্ত এবং আল্লাহর নির্বাচিত বান্দাদের মধ্যে শামিল। তিন শ্রেণির মধ্য থেকে এ শ্রেণির ঈমানদারদের কথা সবার আগে বলার কারণ হচ্ছে, উম্মতের মধ্যে এদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। (দুই) মাঝামাঝি অবস্থানকারী। এরা হচ্ছে এমন লোক, যারা এ উত্তরাধিকারের হক কমবেশী আদায় করে, কিন্তু পুরোপুরি করে না। তারা আল্লাহর হুকুম পালন করে, আবার অমান্যও করে। নিজেদের প্রবৃত্তিকে পুরোপুরি লাগামহীন করে ছেড়ে দেয়নি, বরং তাকে আল্লাহর অনুগত করার জন্য যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালায়; কিন্তু কখনো কখনো নিজেকে গোমরাহীর পথে ছেড়ে দেয় এবং গোনাহে লিপ্ত হয়ে পড়ে। এভাবে এদের জীবনে ভালো-মন্দ উভয় ধরনের কাজের সমাবেশ ঘটে। এরা সংখ্যায় প্রথম দলের চেয়ে কম এবং তৃতীয় দলের চেয়ে বেশি হয়। তাই এদেরকে দু’নম্বরে রাখা হয়েছে। (তিন) যারা ভালো কাজে অগ্রবর্তী। এরা কিতাবের উত্তরাধিকারের মধ্যে প্রথম সারির লোক। এরাই উত্তরাধিকারের হক পুরোপুরিভাবে আদায়কারী, কুরআন ও সুন্নাহের অনুসরণের ক্ষেত্রেও অগ্রগামী। আল্লাহর পয়গাম তাঁর বান্দাদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয় এবং সত্য দ্বীনের জন্য ত্যাগ স্বীকার করার ক্ষেত্রেও এরাই এগিয়ে থাকে। তাছাড়া সত্য, ন্যায়, ও কল্যাণের যে কোন কাজেও এরা অগ্রবর্তী থাকে। এরা জেনে বুঝে গোনাহ করে না। আর অজান্তে কোন গোনাহের কাজ অনুষ্ঠিত হলেও সে সম্পর্কে জানার সাথে সাথেই এদের মাথা লজ্জায় নত হয়ে যায়। প্রথম দু’টি দলের তুলনায় উম্মতের মধ্যে এদের সংখ্যা কম। তাই এদের কথা সবার শেষে বলা হয়েছে, যদিও উত্তরাধিকারের হক আদায় করার ক্ষেত্রে এরাই অগ্রগামী।
ভালো কাজে অগ্রগামীরা আবার চার প্রকার :
وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَالرَّسُوْلَ فَاُولٰٓئِكَ مَعَ الَّذِيْنَ اَنْعَمَ اللهُ عَلَيْهِمْ مِّنَ النَّبِيِّيْنَ وَالصِّدِّيْقِيْنَ وَالشُّهَدَآءِ وَالصَّالِحِيْنَۚ وَحَسُنَ اُولٰٓئِكَ رَفِيْقًا
যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং রাসূলের আনুগত্য করবে, সে তো নবী, সত্যনিষ্ঠ, শহীদ ও সৎকর্মপরায়ণ এবং যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন তাদেরই সঙ্গী হবে। আর তারা কতই না উত্তম সঙ্গী! (সূরা নিসা- ৬৯)
ব্যাখ্যা : صِدِّيْقٌ (সিদ্দিক) বলতে এমন ব্যক্তিকে বুঝায়, যে পরম সত্যনিষ্ঠ ও সত্যবাদী। তার মধ্যে সততা ও সত্যপ্রিয়তা পূর্ণমাত্রায় বিরাজ করে। নিজের আচার-আচরণ ও লেনদেনের ক্ষেত্রে সর্বদা সুস্পষ্ট ও সরল পথ অবলম্বন করে। সে সবসময় স্বচ্ছ মনে হক ও ইনসাফের সহযোগী হয়। সত্য ও ন্যায়নীতি বিরোধী যে কোন বিষয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। এ ক্ষেত্রে সামান্যতম দুর্বলতাও দেখায় না। সে এমনই পবিত্র ও নিষ্কলুষ চরিত্রের অধিকারী হয় যে, তার আত্মীয়-অনাত্মীয়, বন্ধু-শত্রু, আপন-পর কেউই তার কাছ থেকে নিখুঁত সত্যপ্রীতি, সত্যের সমর্থন ও সত্যের সহযোগিতা ছাড়া আর কিছুরই আশঙ্কা করে না।
شَهِيْدٌ (শাহীদ) শব্দের আসল অর্থ হচ্ছে সাক্ষী। শহীদ বলতে এমন ব্যক্তিকে বুঝায়, যে নিজের জীবনের সমগ্র কর্মকান্ডের মাধ্যমে তার ঈমানের সত্যতার সাক্ষ্য প্রদান করে। আল্লাহর পথে লড়াই করে প্রাণ উৎসর্গকারীকে এ কারণে শহীদ বলা হয় যে, সে প্রাণ উৎসর্গ করে এ কথা প্রমাণ করে দেয় যে, তার কাছে দ্বীন এত বেশি প্রিয় ছিল, যার জন্য নিজের প্রাণ অকাতরে বিলিয়ে দিতেও দ্বিধা করেনি।
صَالِحٌ (সালেহ) বা সৎকর্মশীল বলতে এমন ব্যক্তিকে বুঝায়, যে তার নিজের চিন্তাধারা, আকীদা-বিশ্বাস, ইচ্ছা, কথা ও কর্মের মাধ্যমে সত্য ও সরল পথে প্রতিষ্ঠিত থাকে এবং নিজের জীবনে সৎ ও সুনীতি অবলম্বন করে।
কেউ ভালো কাজে জীবন দিয়ে দেয় :
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّشْرِيْ نَفْسَهُ ابْتِغَآءَ مَرْضَاةِ اللهِؕ وَاللهُ رَءُوْفٌ ۢبِالْعِبَادِ
মানুষের মধ্যে এমনও লোক রয়েছে, যে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নিজের জীবন বিক্রয় করে দেয়। আর আল্লাহ বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত স্নেহপরায়ণ। (সূরা বাক্বারা- ২০৭)
আবার কেউ ভালো-মন্দ দু’টিই করে :
وَاٰخَرُوْنَ اعْتَرَفُوْا بِذُنُوْبِهِمْ خَلَطُوْا عَمَلًا صَالِحًا وَّاٰخَرَ سَيِّئًاؕ عَسَى اللهُ اَنْ يَّتُوْبَ عَلَيْهِمْ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
কতক লোক এমন রয়েছে, যারা নিজেদের অপরাধ স্বীকার করেছে। তারা এক সৎকর্মের সাথে অপর অসৎকর্ম মিশ্রিত করে ফেলেছে। হয়তো আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করবেন; নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা তাওবা- ১০২)
প্রত্যেক মানুষ নিজ নিজ রীতি অনুযায়ী কাজ করে :
قُلْ كُلٌّ يَّعْمَلُ عَلٰى شَاكِلَتِهٖؕ فَرَبُّكُمْ اَعْلَمُ بِمَنْ هُوَ اَهْدٰى سَبِيْلًا
বলো, প্রত্যেকেই নিজ প্রকৃতি অনুযায়ী কাজ করে থাকে। কিন্তু তোমার প্রতিপালক সম্যক অবগত আছেন যে, চলার পথে কে সবচেয়ে নির্ভুল। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৮৪)
ভালো-মন্দ যে যা করবে সে তারই ফলাফল ভোগ করবে :
مَنْ عَمِلَ صَالِحًا فَلِنَفْسِهٖۚ وَمَنْ اَسَآءَ فَعَلَيْهَاؗ ثُمَّ اِلٰى رَبِّكُمْ تُرْجَعُوْنَ
যে সৎ আমল করে সে তার (কল্যাণের) জন্যই করে এবং যে মন্দকর্ম করে তার প্রতিফল সে-ই ভোগ করবে। অতঃপর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা জাসিয়া- ১৫)
اِنْ اَحْسَنْتُمْ اَحْسَنْتُمْ لِاَنْفُسِكُمْ وَاِنْ اَسَاْتُمْ فَلَهَا
যদি তোমরা সৎকর্ম কর, তবে সে সৎকর্মের ফলাফল তোমরা নিজেরাই ভোগ করবে। আর যদি তোমরা খারাপ কাজ কর, তবে তার পরিণামও তোমাদেরকেই ভোগ করতে হবে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৭)
ব্যাখ্যা : প্রত্যেক ব্যক্তিই নিজের কর্ম অনুযায়ী পুরস্কার লাভ করবে। একজনের কাজের পুরস্কার অন্যজন পাবে না। অনুরূপভাবে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজে যে দোষ করেছে সেজন্য তাকে পাকড়াও করা হবে। একজনের দোষের কারণে অন্যজনকে পাকড়াও করা হবে না। তবে এটা সম্ভব যে, কেউ কোন সৎকাজের সূচনা করে গেলে তার আমলনামায় এর সওয়াব লেখা হবে এবং কেউ কোন খারাপ কাজের সূচনা করে গেলে তার আমলনামাতেও তার গোনাহ লেখা হবে। আর এগুলো যদি কিয়ামত পর্যন্তও চলতে থাকে, তবুও তার ফল আমলনামায় লিখে যাওয়া হবে।
مَنْ يَّشْفَعْ شَفَاعَةً حَسَنَةً يَّكُنْ لَّهٗ نَصِيْبٌ مِّنْهَاۚ وَمَنْ يَّشْفَعْ شَفَاعَةً سَيِّئَةً يَّكُنْ لَّهٗ كِفْلٌ مِّنْهَاؕ وَكَانَ اللهُ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ مُّقِيْتًا
কেউ কোন ভালো কাজের সুপারিশ করলে তাতে তার (সওয়াবের) অংশ থাকবে এবং কেউ কোন মন্দকাজের সুপারিশ করলে তাতেও তার (পাপের) অংশ থাকবে। আল্লাহ সর্ববিষয়ে নজর রাখেন। (সূরা নিসা- ৮৫)
ব্যাখ্যা : এটা যার যেমন পছন্দ এবং যার যেমন ভাগ্য। কেউ আল্লাহর পথে প্রচেষ্টা চালানোর এবং সত্যের শির উঁচু রাখার জন্য লোকদেরকেও উৎসাহিত করে- এর পুরস্কার সেও পায়। আবার কেউ মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলা এবং তাদেরকে আল্লাহর কালিমা উচুঁ করার সংগ্রাম থেকে বিরত রাখার জন্য নিজের সর্বশক্তি নিয়োগ করে- এর শাস্তিও সে পায়।
পাপী ও পুণ্যবান সমান নয় :
اَمْ نَجْعَلُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ كَالْمُفْسِدِيْنَ فِى الْاَرْضِؗ اَمْ نَجْعَلُ الْمُتَّقِيْنَ كَالْفُجَّارِ
যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে আমি কি তাদেরকে ঐসব লোকের সমান করে দেব, যারা পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করে বেড়ায়? অথবা আমি কি মুত্তাক্বীদেরকে গোনাহগারদের সমান করে দেব?
(সূরা সোয়াদ- ২৮)
اَمْ حَسِبَ الَّذِيْنَ اجْتَرَحُوا السَّيِّئَاتِ اَنْ نَّجْعَلَهُمْ كَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ سَوَآءً مَّحْيَاهُمْ وَمَمَاتُهُمْ سَآءَ مَا يَحْكُمُوْنَ
দুষ্কৃতিকারীরা কি মনে করে যে, আমি জীবন ও মৃত্যুর দিক দিয়ে তাদেরকে ঐসব লোকের সমান বলে গণ্য করব, যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে? তাদের সিদ্ধান্ত কতই না মন্দ! (সূরা জাসিয়া- ২১)
وَمَا يَسْتَوِى الْاَعْمٰى وَالْبَصِيْرُ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَلَا الْمُسِيْٓءُ قَلِيْلًا مَّا تَتَذَكَّرُوْنَ
অন্ধ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন উভয়ে এক সমান নয়। আর যারা ঈমান আনয়ন করে ও সৎকর্ম করে এবং যারা গোনাহগার (তারাও এক সমান নয়)। তোমরা খুব অল্পই উপদেশ গ্রহণ করে থাক। (সূরা মু’মিন- ৫৮)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ সৎ ও অসৎ উভয়ে সমান হয়ে যাবে না। সৎলোক তার সততার পুরস্কার পাবে এবং অসৎলোক তার অসৎকাজের শাস্তি ভোগ করবে। এ কথা সুস্পষ্ট যে, যদি আখিরাত না থাকত, আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন প্রকার জবাবদিহী না করা হতো এবং মানুষের সৎকাজের পুরস্কার ও অসৎকাজের জন্য শাস্তি না দেয়া হতো, তাহলে এর মাধ্যমে আল্লাহর প্রজ্ঞা ও ইনসাফ অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ত এবং বিশ্বের সমগ্র ব্যবস্থা একটি অরাজক ব্যবস্থায় পরিণত হতো। এ ধারণার ভিত্তিতে বিচার করলে দুনিয়ায় আদৌ সৎকাজের কোন উদ্যোক্তা এবং অসৎকাজ থেকে বিরত রাখার জন্য কোন প্রতিবন্ধকতাই থাকে না। আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্ব যদি এমনি অরাজক ব্যাপার হয়, তাহলে এ পৃথিবীতে যে ব্যক্তি কষ্টভোগ করে সৎ জীবন-যাপন করে এবং মানুষের সংস্কার সাধনের কাজে আত্মনিয়োগ করে সে বড়ই নির্বোধ। আর যে ব্যক্তি বাড়াবাড়ি করে সবধরনের ফাসিকী ও অশালীন কার্যকলাপের মাধ্যমে আনন্দ উপভোগ করতে থাকে সেই বুদ্ধিমান (নাউযুবিল্লাহ)। এ জাতীয় চিন্তাধারা কখনই সঠিক হতে পারে না।
পাপের পরিণাম মন্দ, পূণ্যের পরিণাম ভালো :
مَنْ كَفَرَ فَعَلَيْهِ كُفْرُهٗۚ وَمَنْ عَمِلَ صَالِحًا فَلِاَنْفُسِهِمْ يَمْهَدُوْنَ
যে ব্যক্তি কুফরী করে, তার কুফরীর ফল তার উপরই বর্তাবে। আর যে ব্যক্তি নেক কাজ করে, সে তো নিজের জন্যই সুখের ঠিকানা করে নিচ্ছে। (সূরা রূম- ৪৪)
مَنْ عَمِلَ سَيِّئَةً فَلَا يُجْزٰۤى اِلَّا مِثْلَهَاۚ وَمَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَاُولٰٓئِكَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ يُرْزَقُوْنَ فِيْهَا بِغَيْرِ حِسَابٍ
কেউ মন্দ আমল করলে সে কেবল তার আমলের অনুরূপ শাস্তি পাবে। আর পুরুষ কিংবা নারীদের মধ্যে যারা মুমিন হয়ে সৎ আমল করে, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। সেখানে তারা অসংখ্য রিযিকপ্রাপ্ত হবে। (সূরা মু’মিন- ৪০)
মানুষ যা কিছু করে আল্লাহ তার হিসাব রাখেন :
يَوْمَ يَبْعَثُهُمُ اللهُ جَمِيْعًا فَيُنَبِّئُهُمْ بِمَا عَمِلُوْاؕ اَحْصَاهُ اللهُ وَنَسُوْهُؕ وَاللهُ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ شَهِيْدٌ
সেদিন আল্লাহ তাদের সকলকে পুনর্জীবিত করবেন, অতঃপর তারা যা করত তা তাদেরকে জানিয়ে দেবেন। আল্লাহ তা সংরক্ষিত করে রেখেছেন, অথচ তারা তা ভুলে গেছে। আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক দ্রষ্টা। (সূরা মুজাদালা- ৬)
সকলেই তার কর্মফল দেখতে পাবে :
فَمَنْ يَّعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَّرَهٗ – وَمَنْ يَّعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَّرَهٗ
যে ব্যক্তি অণুপরিমাণ সৎকর্ম করবে, সে তা দেখতে পাবে এবং কেউ যদি অণুপরিমাণ অসৎকর্ম করে, তাও সে দেখতে পাবে। (সূরা যিলযাল- ৭, ৮)
يَوْمَ تَجِدُ كُلُّ نَفْسٍ مَّا عَمِلَتْ مِنْ خَيْرٍ مُّحْضَرًاۚ وَمَا عَمِلَتْ مِنْ سُوْٓءٍ
প্রত্যেক মানুষ যা ভালো করেছে এবং খারাপ করেছে কিয়ামতের দিন সবই উপস্থিত পাবে। (সূরা আলে ইমরান- ৩০)
কিয়ামতের দিন সকলেই নিজ নিজ কর্মফল ভোগ করবে :
فَكَيْفَ اِذَا جَمَعْنَاهُمْ لِيَوْمٍ لَّا رَيْبَ فِيْهِ وَوُفِّيَتْ كُلُّ نَفْسٍ مَّا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُوْنَ
সেদিন কী অবস্থা হবে, যখন আমি তাদেরকে সমবেত করব এমন এক দিন, যে দিনের ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। আর (সেদিন) প্রত্যেকে যা করেছে তার পুরোপুরি প্রতিদান দিয়ে দেয়া হবে এবং তাদের উপর কোন অন্যায় করা হবে না। (সূরা আলে ইমরান- ২৫)
وَلِكُلٍّ دَرَجَاتٌ مِّمَّا عَمِلُوْاۚ وَلِيُوَفِّيَهُمْ اَعْمَالَهُمْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُوْنَ
প্রত্যেকের মর্যাদা তার আমল অনুযায়ী হবে, যাতে আল্লাহ তার আমলের পূর্ণ প্রতিদান দিতে পারেন। আর তার উপর কোন যুলুম করা হবে না। (সূরা আহকাফ- ১৯)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ ভালো লোকদের ত্যাগ ও কুরবানী নষ্ট করা হবে না, আবার মন্দ লোকদেরকে তাদের প্রকৃত অপরাধের অধিক শাস্তি দেয়া হবে না। সৎলোক যদি তার পুরস্কার থেকে বঞ্চিত থাকে কিংবা প্রকৃত প্রাপ্যের চেয়ে কম পায়, তাহলে তা হবে যুলুম। আবার খারাপ লোক যদি তার কৃত অপরাধের শাস্তি না পায় কিংবা যতটা অপরাধ করেছে তার চেয়ে বেশি শাস্তি পায়, তাহলে সেটাও যুলুম হিসেবে গণ্য হবে।
اَمْ نَجْعَلُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ كَالْمُفْسِدِيْنَ فِى الْاَرْضِؗ اَمْ نَجْعَلُ الْمُتَّقِيْنَ كَالْفُجَّارِ
যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে আমি কি তাদেরকে ঐসব লোকের সমান করে দেব, যারা পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করে বেড়ায়? অথবা আমি কি মুত্তাক্বীদেরকে গোনাহগারদের সমান করে দেব?
(সূরা সোয়াদ- ২৮)
اَمْ حَسِبَ الَّذِيْنَ اجْتَرَحُوا السَّيِّئَاتِ اَنْ نَّجْعَلَهُمْ كَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ سَوَآءً مَّحْيَاهُمْ وَمَمَاتُهُمْ سَآءَ مَا يَحْكُمُوْنَ
দুষ্কৃতিকারীরা কি মনে করে যে, আমি জীবন ও মৃত্যুর দিক দিয়ে তাদেরকে ঐসব লোকের সমান বলে গণ্য করব, যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে? তাদের সিদ্ধান্ত কতই না মন্দ! (সূরা জাসিয়া- ২১)
وَمَا يَسْتَوِى الْاَعْمٰى وَالْبَصِيْرُ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَلَا الْمُسِيْٓءُ قَلِيْلًا مَّا تَتَذَكَّرُوْنَ
অন্ধ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন উভয়ে এক সমান নয়। আর যারা ঈমান আনয়ন করে ও সৎকর্ম করে এবং যারা গোনাহগার (তারাও এক সমান নয়)। তোমরা খুব অল্পই উপদেশ গ্রহণ করে থাক। (সূরা মু’মিন- ৫৮)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ সৎ ও অসৎ উভয়ে সমান হয়ে যাবে না। সৎলোক তার সততার পুরস্কার পাবে এবং অসৎলোক তার অসৎকাজের শাস্তি ভোগ করবে। এ কথা সুস্পষ্ট যে, যদি আখিরাত না থাকত, আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন প্রকার জবাবদিহী না করা হতো এবং মানুষের সৎকাজের পুরস্কার ও অসৎকাজের জন্য শাস্তি না দেয়া হতো, তাহলে এর মাধ্যমে আল্লাহর প্রজ্ঞা ও ইনসাফ অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ত এবং বিশ্বের সমগ্র ব্যবস্থা একটি অরাজক ব্যবস্থায় পরিণত হতো। এ ধারণার ভিত্তিতে বিচার করলে দুনিয়ায় আদৌ সৎকাজের কোন উদ্যোক্তা এবং অসৎকাজ থেকে বিরত রাখার জন্য কোন প্রতিবন্ধকতাই থাকে না। আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্ব যদি এমনি অরাজক ব্যাপার হয়, তাহলে এ পৃথিবীতে যে ব্যক্তি কষ্টভোগ করে সৎ জীবন-যাপন করে এবং মানুষের সংস্কার সাধনের কাজে আত্মনিয়োগ করে সে বড়ই নির্বোধ। আর যে ব্যক্তি বাড়াবাড়ি করে সবধরনের ফাসিকী ও অশালীন কার্যকলাপের মাধ্যমে আনন্দ উপভোগ করতে থাকে সেই বুদ্ধিমান (নাউযুবিল্লাহ)। এ জাতীয় চিন্তাধারা কখনই সঠিক হতে পারে না।
পাপের পরিণাম মন্দ, পূণ্যের পরিণাম ভালো :
مَنْ كَفَرَ فَعَلَيْهِ كُفْرُهٗۚ وَمَنْ عَمِلَ صَالِحًا فَلِاَنْفُسِهِمْ يَمْهَدُوْنَ
যে ব্যক্তি কুফরী করে, তার কুফরীর ফল তার উপরই বর্তাবে। আর যে ব্যক্তি নেক কাজ করে, সে তো নিজের জন্যই সুখের ঠিকানা করে নিচ্ছে। (সূরা রূম- ৪৪)
مَنْ عَمِلَ سَيِّئَةً فَلَا يُجْزٰۤى اِلَّا مِثْلَهَاۚ وَمَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَاُولٰٓئِكَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ يُرْزَقُوْنَ فِيْهَا بِغَيْرِ حِسَابٍ
কেউ মন্দ আমল করলে সে কেবল তার আমলের অনুরূপ শাস্তি পাবে। আর পুরুষ কিংবা নারীদের মধ্যে যারা মুমিন হয়ে সৎ আমল করে, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। সেখানে তারা অসংখ্য রিযিকপ্রাপ্ত হবে। (সূরা মু’মিন- ৪০)
মানুষ যা কিছু করে আল্লাহ তার হিসাব রাখেন :
يَوْمَ يَبْعَثُهُمُ اللهُ جَمِيْعًا فَيُنَبِّئُهُمْ بِمَا عَمِلُوْاؕ اَحْصَاهُ اللهُ وَنَسُوْهُؕ وَاللهُ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ شَهِيْدٌ
সেদিন আল্লাহ তাদের সকলকে পুনর্জীবিত করবেন, অতঃপর তারা যা করত তা তাদেরকে জানিয়ে দেবেন। আল্লাহ তা সংরক্ষিত করে রেখেছেন, অথচ তারা তা ভুলে গেছে। আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক দ্রষ্টা। (সূরা মুজাদালা- ৬)
সকলেই তার কর্মফল দেখতে পাবে :
فَمَنْ يَّعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَّرَهٗ – وَمَنْ يَّعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَّرَهٗ
যে ব্যক্তি অণুপরিমাণ সৎকর্ম করবে, সে তা দেখতে পাবে এবং কেউ যদি অণুপরিমাণ অসৎকর্ম করে, তাও সে দেখতে পাবে। (সূরা যিলযাল- ৭, ৮)
يَوْمَ تَجِدُ كُلُّ نَفْسٍ مَّا عَمِلَتْ مِنْ خَيْرٍ مُّحْضَرًاۚ وَمَا عَمِلَتْ مِنْ سُوْٓءٍ
প্রত্যেক মানুষ যা ভালো করেছে এবং খারাপ করেছে কিয়ামতের দিন সবই উপস্থিত পাবে। (সূরা আলে ইমরান- ৩০)
কিয়ামতের দিন সকলেই নিজ নিজ কর্মফল ভোগ করবে :
فَكَيْفَ اِذَا جَمَعْنَاهُمْ لِيَوْمٍ لَّا رَيْبَ فِيْهِ وَوُفِّيَتْ كُلُّ نَفْسٍ مَّا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُوْنَ
সেদিন কী অবস্থা হবে, যখন আমি তাদেরকে সমবেত করব এমন এক দিন, যে দিনের ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। আর (সেদিন) প্রত্যেকে যা করেছে তার পুরোপুরি প্রতিদান দিয়ে দেয়া হবে এবং তাদের উপর কোন অন্যায় করা হবে না। (সূরা আলে ইমরান- ২৫)
وَلِكُلٍّ دَرَجَاتٌ مِّمَّا عَمِلُوْاۚ وَلِيُوَفِّيَهُمْ اَعْمَالَهُمْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُوْنَ
প্রত্যেকের মর্যাদা তার আমল অনুযায়ী হবে, যাতে আল্লাহ তার আমলের পূর্ণ প্রতিদান দিতে পারেন। আর তার উপর কোন যুলুম করা হবে না। (সূরা আহকাফ- ১৯)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ ভালো লোকদের ত্যাগ ও কুরবানী নষ্ট করা হবে না, আবার মন্দ লোকদেরকে তাদের প্রকৃত অপরাধের অধিক শাস্তি দেয়া হবে না। সৎলোক যদি তার পুরস্কার থেকে বঞ্চিত থাকে কিংবা প্রকৃত প্রাপ্যের চেয়ে কম পায়, তাহলে তা হবে যুলুম। আবার খারাপ লোক যদি তার কৃত অপরাধের শাস্তি না পায় কিংবা যতটা অপরাধ করেছে তার চেয়ে বেশি শাস্তি পায়, তাহলে সেটাও যুলুম হিসেবে গণ্য হবে।
জান্নাত পেতে হলে অবশ্যই সৎকাজ করতে হবে :
اِنَّ الْاَبْرَارَ لَفِيْ نَعِيْمٍ – عَلَى الْاَرَآئِكِ يَنْظُرُوْنَ – تَعْرِفُ فِيْ وُجُوْهِهِمْ نَضْرَةَ النَّعِيْمِ – يُسْقَوْنَ مِنْ رَّحِيْقٍ مَّخْتُوْمٍ – خِتَامُهٗ مِسْكٌؕ وَفِيْ ذٰلِكَ فَلْيَتَنَافَسِ الْمُتَنَافِسُوْنَ
নিশ্চয় পুণ্যবানগণ থাকবে অতি স্বাচ্ছন্দ্যে (জান্নাতে), তারা সুসজ্জিত আসনে বসে দেখতে থাকবে। তুমি তাদের মুখমন্ডলে স্বাচ্ছন্দ্যের দীপ্তি অনুভব করবে। অতঃপর তাদেরকে মোহর করা বিশুদ্ধতম শরাব হতে পান করানো হবে, এর মোহর হচ্ছে কস্তুরীর। সুতরাং প্রতিযোগীরা এ বিষয়ে প্রতিযোগিতা করুক। (সূরা মুতাফফিফীন, ২২-২৬)
اِنَّ هٰذَا لَهُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ – لِمِثْلِ هٰذَا فَلْيَعْمَلِ الْعَامِلُوْنَ
নিশ্চয় এ তো মহাসাফল্য; এরূপ সফলতার জন্যই কর্মীদের কাজ করা উচিত। (সূরা সাফ্ফাত- ৬০, ৬১)
নেক আমলের বরকতেই জান্নাত লাভ হয় :
اَمَّا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فَلَهُمْ جَنَّاتُ الْمَاْوٰىؗ نُزُلًا ۢبِمَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
অতএব যারা বিশ্বাস করেছে এবং সৎকাজ করেছে, তাদের আমলের প্রতিদানস্বরূপ তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী জান্নাত। (সূরা সাজদা- ১৯)
وَتِلْكَ الْجَنَّةُ الَّتِۤيْ اُوْرِثْتُمُوْهَا بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
এটাই সেই জান্নাত, যা তোমাদের কর্মের প্রতিদানস্বরূপ তোমাদের অধিকারে দেয়া হয়েছে। (সূরা যুখরুফ- ৭২)
اَلَّذِيْنَ تَتَوَفَّاهُمُ الْمَلَآئِكَةُ طَيِّبِيْنَ يَقُوْلُوْنَ سَلَامٌ عَلَيْكُمُ ادْخُلُوا الْجَنَّةَ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
ফেরেশতারা পবিত্র অবস্থায় যাদের মৃত্যু ঘটায় তাদেরকে বলে, তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক! তোমরা যা করতে তার ফলে জান্নাতে প্রবেশ করো। (সূরা নাহল- ৩২)
সৎকর্মের প্রতি আল্লাহর উৎসাহ প্রদান :
فَاسْتَبِقُوا الْخَيْرَاتِؕ اَيْنَ مَا تَكُوْنُوْا يَأْتِ بِكُمُ اللهُ جَمِيْعًاؕ اِنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
অতএব তোমরা কল্যাণের দিকে ধাবিত হও; তোমরা যেখানেই থাক না কেন আল্লাহ তোমাদের সকলকেই একত্র করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে পূর্ণ ক্ষমতাবান। (সূরা বাক্বারা- ১৪৮)
فَمَنْ كَانَ يَرْجُوْا لِقَآءَ رَبِّهٖ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَّلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهٖۤ اَحَدًا
যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে ও তার প্রতিপালকের ইবাদাতে অন্য কাউকে শরীক না করে। (সূরা কাহফ- ১১০)
ব্যাখ্যা : সৎকাজ হচ্ছে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করা। মানুষের চিন্তাধারা, ধারণা-কল্পনা ও ইচ্ছার পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতাই হচ্ছে মন ও মস্তিষ্কের সৎকাজ। খারাপ কথা না বলা এবং হক, ইনসাফ ও সততা অনুযায়ী সব কথা বলাই হচ্ছে কণ্ঠের সৎকাজ। আর মানুষের সমগ্র জীবন আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদাতের মধ্যে অতিবাহিত করাই হচ্ছে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও ইন্দ্রিয়ের সৎকাজ। সৎকর্মশীলতার জীবন অবলম্বন করার কারণে আপনা আপনিই মানুষের নাফসের সংশোধন হয়ে যায় এবং তাদের অনেক দুর্বলতা দূর হয়ে যায়।
সকল নবী সৎকর্মে অগ্রগামী ছিলেন :
اِنَّهُمْ كَانُوْا يُسَارِعُوْنَ فِى الْخَيْرَاتِ وَيَدْعُوْنَنَا رَغَبًا وَّرَهَبًاؕ وَكَانُوْا لَنَا خَاشِعِيْنَ
তারা (নবীগণ) সৎকর্মে প্রতিযোগিতা করতেন, তারা আমাকে ডাকতেন আশা ও ভীতির সাথে এবং তারা ছিলেন আমার নিকট বিনীত। (সূরা আম্বিয়া- ৯০)
নেক আমলের প্রতি পূর্ববর্তী মুমিনদের আগ্রহ :
يُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَيَاْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُسَارِعُوْنَ فِى الْخَيْرَاتِؕ وَاُولٰٓئِكَ مِنَ الصَّالِحِيْنَ
তারা (আহলে কিতাবের কিছু লোক) আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, সৎকাজের আদেশ দেয় ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করে এবং কল্যাণের কাজে দ্রুত অগ্রসর হয়। মূলত তারাই সৎলোকদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা আলে ইমরান- ১১৪)
যে ভালো কাজ করবে সে নিজেই তার ফলাফল পাবে :
وَمَنْ جَاهَدَ فَاِنَّمَا يُجَاهِدُ لِنَفْسِهٖؕ اِنَّ اللهَ لَغَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِيْنَ
যে ব্যক্তি চেষ্টা করে, সে তো নিজের জন্যই চেষ্টা করে। নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্বজগৎ হতে অমুখাপেক্ষী। (সূরা আনকাবূত- ৬)
وَمَنْ تَزَكّٰى فَاِنَّمَا يَتَزَكّٰى لِنَفْسِهٖؕ وَاِلَى اللهِ الْمَصِيْرُ
যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে নেয়, সে তো পরিশুদ্ধ হয় নিজেরই কল্যাণের জন্য। আর সকল প্রত্যাবর্তন তো আল্লাহরই দিকে। (সূরা ফাতির- ১৮)
مَنْ عَمِلَ صَالِحًا فَلِنَفْسِهٖۚ وَمَنْ اَسَآءَ فَعَلَيْهَاؗ ثُمَّ اِلٰى رَبِّكُمْ تُرْجَعُوْنَ
যে সৎ আমল করে, সে তার নিজের (কল্যাণের) জন্যই তা করে এবং কেউ মন্দকর্ম করলে তার প্রতিফল সে-ই ভোগ করবে। অতঃপর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা জাসিয়া- ১৫)
ভালো কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করার জন্য আল্লাহর নির্দেশ :
وَتَعَاوَنُوْا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوٰى وَلَا تَعَاوَنُوْا عَلَى الْاِثْمِ وَالْعُدْوَانِ۪ وَاتَّقُوا اللهَؕ اِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
সৎকর্ম ও আল্লাহভীতিমূলক কাজে তোমরা পরস্পরকে সহযোগিতা করো এবং পাপ ও সীমালঙ্ঘনমূলক কাজে একে অপরের সহযোগিতা করো না। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো; নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে খুবই কঠোর। (সূরা মায়েদা- ২)
اِنَّ الْاَبْرَارَ لَفِيْ نَعِيْمٍ – عَلَى الْاَرَآئِكِ يَنْظُرُوْنَ – تَعْرِفُ فِيْ وُجُوْهِهِمْ نَضْرَةَ النَّعِيْمِ – يُسْقَوْنَ مِنْ رَّحِيْقٍ مَّخْتُوْمٍ – خِتَامُهٗ مِسْكٌؕ وَفِيْ ذٰلِكَ فَلْيَتَنَافَسِ الْمُتَنَافِسُوْنَ
নিশ্চয় পুণ্যবানগণ থাকবে অতি স্বাচ্ছন্দ্যে (জান্নাতে), তারা সুসজ্জিত আসনে বসে দেখতে থাকবে। তুমি তাদের মুখমন্ডলে স্বাচ্ছন্দ্যের দীপ্তি অনুভব করবে। অতঃপর তাদেরকে মোহর করা বিশুদ্ধতম শরাব হতে পান করানো হবে, এর মোহর হচ্ছে কস্তুরীর। সুতরাং প্রতিযোগীরা এ বিষয়ে প্রতিযোগিতা করুক। (সূরা মুতাফফিফীন, ২২-২৬)
اِنَّ هٰذَا لَهُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ – لِمِثْلِ هٰذَا فَلْيَعْمَلِ الْعَامِلُوْنَ
নিশ্চয় এ তো মহাসাফল্য; এরূপ সফলতার জন্যই কর্মীদের কাজ করা উচিত। (সূরা সাফ্ফাত- ৬০, ৬১)
নেক আমলের বরকতেই জান্নাত লাভ হয় :
اَمَّا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فَلَهُمْ جَنَّاتُ الْمَاْوٰىؗ نُزُلًا ۢبِمَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
অতএব যারা বিশ্বাস করেছে এবং সৎকাজ করেছে, তাদের আমলের প্রতিদানস্বরূপ তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী জান্নাত। (সূরা সাজদা- ১৯)
وَتِلْكَ الْجَنَّةُ الَّتِۤيْ اُوْرِثْتُمُوْهَا بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
এটাই সেই জান্নাত, যা তোমাদের কর্মের প্রতিদানস্বরূপ তোমাদের অধিকারে দেয়া হয়েছে। (সূরা যুখরুফ- ৭২)
اَلَّذِيْنَ تَتَوَفَّاهُمُ الْمَلَآئِكَةُ طَيِّبِيْنَ يَقُوْلُوْنَ سَلَامٌ عَلَيْكُمُ ادْخُلُوا الْجَنَّةَ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
ফেরেশতারা পবিত্র অবস্থায় যাদের মৃত্যু ঘটায় তাদেরকে বলে, তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক! তোমরা যা করতে তার ফলে জান্নাতে প্রবেশ করো। (সূরা নাহল- ৩২)
সৎকর্মের প্রতি আল্লাহর উৎসাহ প্রদান :
فَاسْتَبِقُوا الْخَيْرَاتِؕ اَيْنَ مَا تَكُوْنُوْا يَأْتِ بِكُمُ اللهُ جَمِيْعًاؕ اِنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
অতএব তোমরা কল্যাণের দিকে ধাবিত হও; তোমরা যেখানেই থাক না কেন আল্লাহ তোমাদের সকলকেই একত্র করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে পূর্ণ ক্ষমতাবান। (সূরা বাক্বারা- ১৪৮)
فَمَنْ كَانَ يَرْجُوْا لِقَآءَ رَبِّهٖ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَّلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهٖۤ اَحَدًا
যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে ও তার প্রতিপালকের ইবাদাতে অন্য কাউকে শরীক না করে। (সূরা কাহফ- ১১০)
ব্যাখ্যা : সৎকাজ হচ্ছে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করা। মানুষের চিন্তাধারা, ধারণা-কল্পনা ও ইচ্ছার পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতাই হচ্ছে মন ও মস্তিষ্কের সৎকাজ। খারাপ কথা না বলা এবং হক, ইনসাফ ও সততা অনুযায়ী সব কথা বলাই হচ্ছে কণ্ঠের সৎকাজ। আর মানুষের সমগ্র জীবন আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদাতের মধ্যে অতিবাহিত করাই হচ্ছে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও ইন্দ্রিয়ের সৎকাজ। সৎকর্মশীলতার জীবন অবলম্বন করার কারণে আপনা আপনিই মানুষের নাফসের সংশোধন হয়ে যায় এবং তাদের অনেক দুর্বলতা দূর হয়ে যায়।
সকল নবী সৎকর্মে অগ্রগামী ছিলেন :
اِنَّهُمْ كَانُوْا يُسَارِعُوْنَ فِى الْخَيْرَاتِ وَيَدْعُوْنَنَا رَغَبًا وَّرَهَبًاؕ وَكَانُوْا لَنَا خَاشِعِيْنَ
তারা (নবীগণ) সৎকর্মে প্রতিযোগিতা করতেন, তারা আমাকে ডাকতেন আশা ও ভীতির সাথে এবং তারা ছিলেন আমার নিকট বিনীত। (সূরা আম্বিয়া- ৯০)
নেক আমলের প্রতি পূর্ববর্তী মুমিনদের আগ্রহ :
يُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَيَاْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُسَارِعُوْنَ فِى الْخَيْرَاتِؕ وَاُولٰٓئِكَ مِنَ الصَّالِحِيْنَ
তারা (আহলে কিতাবের কিছু লোক) আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, সৎকাজের আদেশ দেয় ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করে এবং কল্যাণের কাজে দ্রুত অগ্রসর হয়। মূলত তারাই সৎলোকদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা আলে ইমরান- ১১৪)
যে ভালো কাজ করবে সে নিজেই তার ফলাফল পাবে :
وَمَنْ جَاهَدَ فَاِنَّمَا يُجَاهِدُ لِنَفْسِهٖؕ اِنَّ اللهَ لَغَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِيْنَ
যে ব্যক্তি চেষ্টা করে, সে তো নিজের জন্যই চেষ্টা করে। নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্বজগৎ হতে অমুখাপেক্ষী। (সূরা আনকাবূত- ৬)
وَمَنْ تَزَكّٰى فَاِنَّمَا يَتَزَكّٰى لِنَفْسِهٖؕ وَاِلَى اللهِ الْمَصِيْرُ
যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে নেয়, সে তো পরিশুদ্ধ হয় নিজেরই কল্যাণের জন্য। আর সকল প্রত্যাবর্তন তো আল্লাহরই দিকে। (সূরা ফাতির- ১৮)
مَنْ عَمِلَ صَالِحًا فَلِنَفْسِهٖۚ وَمَنْ اَسَآءَ فَعَلَيْهَاؗ ثُمَّ اِلٰى رَبِّكُمْ تُرْجَعُوْنَ
যে সৎ আমল করে, সে তার নিজের (কল্যাণের) জন্যই তা করে এবং কেউ মন্দকর্ম করলে তার প্রতিফল সে-ই ভোগ করবে। অতঃপর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা জাসিয়া- ১৫)
ভালো কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করার জন্য আল্লাহর নির্দেশ :
وَتَعَاوَنُوْا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوٰى وَلَا تَعَاوَنُوْا عَلَى الْاِثْمِ وَالْعُدْوَانِ۪ وَاتَّقُوا اللهَؕ اِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
সৎকর্ম ও আল্লাহভীতিমূলক কাজে তোমরা পরস্পরকে সহযোগিতা করো এবং পাপ ও সীমালঙ্ঘনমূলক কাজে একে অপরের সহযোগিতা করো না। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো; নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে খুবই কঠোর। (সূরা মায়েদা- ২)
যারা সৎকর্ম করে না তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে :
وَالْعَصْرِ – اِنَّ الْاِنْسَانَ لَفِيْ خُسْرٍ – اِلَّا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ
যুগের কসম, নিশ্চয় সকল মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু তারা নয়, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকাজ করে। আর যারা পরস্পরকে উপদেশ দেয় সত্যের এবং উপদেশ দেয় সবরের। (সূরা আসর)
তারা মৃত্যুর সময় আফসোস করবে :
حَتّٰۤى اِذَا جَآءَ اَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ رَبِّ ارْجِعُوْنِ – لَعَلِّيْۤ اَعْمَلُ صَالِحًا فِيْمَا تَرَكْتُ كَلَّاؕ اِنَّهَا كَلِمَةٌ هُوَ قَآئِلُهَاؕ وَمِنْ وَّرَآئِهِمْ بَرْزَخٌ اِلٰى يَوْمِ يُبْعَثُوْنَ
যখন তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন সে বলে, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে পুনরায় প্রেরণ করো, যাতে আমি সৎকর্ম করতে পারি যা আমি পূর্বে করিনি। কখনো নয়, এটা তো তার একটি উক্তি মাত্র। তাদের সম্মুখে থাকবে বার্যাখ, উত্থান দিবস পর্যমত্ম। (সূরা মু’মিনূন- ৯৯, ১০০)
তারা সময় চাইবে কিন্তু সময় দেয়া হবে না :
وَاَنْفِقُوْا مِنْ مَّا رَزَقْنَاكُمْ مِّنْ قَبْلِ اَنْ يَّاْتِيَ اَحَدَكُمُ الْمَوْتُ فَيَقُوْلَ رَبِّ لَوْلَاۤ اَخَّرْتَنِيْۤ اِلٰۤى اَجَلٍ قَرِيْبٍ فَاَصَّدَّقَ وَاَكُنْ مِّنَ الصَّالِحِيْنَ – وَلَنْ يُّؤَخِّرَ اللهُ نَفْسًا اِذَا جَآءَ اَجَلُهَاؕ وَاللهُ خَبِيْرٌ ۢبِمَا تَعْمَلُوْنَ
আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তোমরা মৃত্যু আসার পূর্বেই তা হতে ব্যয় করো। (অন্যথায় মৃত্যু আসলে বলবে) হে আমার প্রতিপালক! যদি তুমি আমাকে আরো কিছুকালের জন্য অবকাশ দিতে, তবে আমি সাদাকা করতাম এবং সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতাম। কিন্তু যখন নির্ধারিত কাল উপস্থিত হবে, তখন আল্লাহ কাউকে অবকাশ দেবেন না। তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত। (সূরা মুনাফিকূন- ১০, ১১)
ব্যাখ্যা : সৎকর্মহীন মানুষ পুনরায় এ দুনিয়ায় ফিরে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করবে। তারা বলবে, আমাদেরকে যে সত্যের খবর দেয়া হয়েছিল তা আমরা মেনে নেইনি, এখন চাক্ষুষ দেখার পর আমরা সে ব্যাপারে জেনে গেছি। কাজেই এখন যদি আমাদেরকে আবার দুনিয়ায় পাঠিয়ে দেয়া হয়, তাহলে এখন আমাদের কর্মপদ্ধতি আর আগের মতো হবে না।
وَالْعَصْرِ – اِنَّ الْاِنْسَانَ لَفِيْ خُسْرٍ – اِلَّا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ
যুগের কসম, নিশ্চয় সকল মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু তারা নয়, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকাজ করে। আর যারা পরস্পরকে উপদেশ দেয় সত্যের এবং উপদেশ দেয় সবরের। (সূরা আসর)
তারা মৃত্যুর সময় আফসোস করবে :
حَتّٰۤى اِذَا جَآءَ اَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ رَبِّ ارْجِعُوْنِ – لَعَلِّيْۤ اَعْمَلُ صَالِحًا فِيْمَا تَرَكْتُ كَلَّاؕ اِنَّهَا كَلِمَةٌ هُوَ قَآئِلُهَاؕ وَمِنْ وَّرَآئِهِمْ بَرْزَخٌ اِلٰى يَوْمِ يُبْعَثُوْنَ
যখন তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন সে বলে, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে পুনরায় প্রেরণ করো, যাতে আমি সৎকর্ম করতে পারি যা আমি পূর্বে করিনি। কখনো নয়, এটা তো তার একটি উক্তি মাত্র। তাদের সম্মুখে থাকবে বার্যাখ, উত্থান দিবস পর্যমত্ম। (সূরা মু’মিনূন- ৯৯, ১০০)
তারা সময় চাইবে কিন্তু সময় দেয়া হবে না :
وَاَنْفِقُوْا مِنْ مَّا رَزَقْنَاكُمْ مِّنْ قَبْلِ اَنْ يَّاْتِيَ اَحَدَكُمُ الْمَوْتُ فَيَقُوْلَ رَبِّ لَوْلَاۤ اَخَّرْتَنِيْۤ اِلٰۤى اَجَلٍ قَرِيْبٍ فَاَصَّدَّقَ وَاَكُنْ مِّنَ الصَّالِحِيْنَ – وَلَنْ يُّؤَخِّرَ اللهُ نَفْسًا اِذَا جَآءَ اَجَلُهَاؕ وَاللهُ خَبِيْرٌ ۢبِمَا تَعْمَلُوْنَ
আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তোমরা মৃত্যু আসার পূর্বেই তা হতে ব্যয় করো। (অন্যথায় মৃত্যু আসলে বলবে) হে আমার প্রতিপালক! যদি তুমি আমাকে আরো কিছুকালের জন্য অবকাশ দিতে, তবে আমি সাদাকা করতাম এবং সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতাম। কিন্তু যখন নির্ধারিত কাল উপস্থিত হবে, তখন আল্লাহ কাউকে অবকাশ দেবেন না। তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত। (সূরা মুনাফিকূন- ১০, ১১)
ব্যাখ্যা : সৎকর্মহীন মানুষ পুনরায় এ দুনিয়ায় ফিরে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করবে। তারা বলবে, আমাদেরকে যে সত্যের খবর দেয়া হয়েছিল তা আমরা মেনে নেইনি, এখন চাক্ষুষ দেখার পর আমরা সে ব্যাপারে জেনে গেছি। কাজেই এখন যদি আমাদেরকে আবার দুনিয়ায় পাঠিয়ে দেয়া হয়, তাহলে এখন আমাদের কর্মপদ্ধতি আর আগের মতো হবে না।
যারা ভালো কাজ করে সৃষ্টির মধ্যে তারাই উত্তম :
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ اُولٰٓئِكَ هُمْ خَيْرُ الْبَرِيَّةِ
যারা ঈমান আনয়ন করে ও সৎকর্ম করে, তারাই সৃষ্টির সেরা। (সূরা বায়্যিনাহ- ৭)
তারাই সফলতা লাভ করবে :
فَاَمَّا مَنْ تَابَ وَ اٰمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَعَسٰۤى اَنْ يَّكُوْنَ مِنَ الْمُفْلِحِيْنَ
তবে যে ব্যক্তি তাওবা করবে, ঈমান আনবে ও সৎকর্ম করবে অতি শীঘ্রই সে সাফল্য অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা ক্বাসাস- ৬৭)
সৎকর্ম প্রকৃত সম্মান ও মর্যাদা লাভের ভিত্তি :
مَنْ كَانَ يُرِيْدُ الْعِزَّةَ فَلِلّٰهِ الْعِزَّةُ جَمِيْعًاؕ اِلَيْهِ يَصْعَدُ الْكَلِمُ الطَّيِّبُ وَالْعَمَلُ الصَّالِحُ يَرْفَعُهٗ
যে ব্যক্তি সম্মান লাভ করতে চায় (সে জেনে রাখুক), সকল সম্মান আল্লাহর জন্যই। উত্তম বাক্যসমূহ তাঁরই দিকে পৌঁছে, আর সৎকাজ তাকে তাঁরই কাছে পৌঁছে দেয়। (সূরা ফাতির- ১০)
ব্যাখ্যা : কুরাইশ সরদাররা নবী ﷺ এর মুকাবিলায় যা কিছু করেছিল সবই ছিল তাদের নিজেদের ইজ্জত ও মর্যাদার খাতিরে। তাদের ধারণা ছিল, যদি মুহাম্মাদ ﷺ এর কথা মেনে নেয়া হয় তাহলে আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব খতম হয়ে যাবে। এরই প্রেক্ষিতে বলা হচ্ছে, আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও কুফরী করে তোমরা নিজেদের যে মর্যাদা তৈরি করে রেখেছ, তা তো একটি মিথ্যা মর্যাদা ছাড়া আর কিছুই নয়। তোমাদের মৃত্যুর সাথে সাথেই তা নিঃশেষ হয়ে যাবে। দুনিয়া ও আখিরাতের প্রকৃত ও চিরস্থায়ী মর্যাদা কেবলমাত্র আল্লাহর ইবাদাতের মধ্যেই নিহিত। সুতরাং তুমি যদি তাঁর ইবাদাতের মাধ্যমে সে মর্যাদার অনুসন্ধান কর, তবে তা পেয়ে যাবে। কিন্তু যদি তাঁর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহলে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হবে। আল্লাহর কাছে মিথ্যা ও ক্ষতিকারক কথা কখনো উচ্চমর্যাদা লাভ করে না। তাঁর কাছে একমাত্র এমন কথা উচ্চমর্যাদা লাভ করে, যা সত্য ও বাস্তবমুখী হয়। একটি পবিত্র কথাকে যে জিনিসটি উচ্চমর্যাদার দিকে নিয়ে যায়, সেটি হচ্ছে কথা অনুযায়ী কাজ করা। যেখানে কথা খুবই পবিত্র কিন্তু কাজ তার বিপরীত, সেখানে কথার পবিত্রতা নিস্তেজ হয়ে পড়ে। কেবলমাত্র মুখে কথার খই ফুটালে কোন কথা উচ্চমর্যাদায় উন্নীত হয় না; বরং এজন্য সৎকাজের শক্তিমত্তার প্রয়োজন হয়। কুরআন ভালো কথা ও ভালো কাজকে পরস্পরের অবিচ্ছেদ্য ও অপরিহার্য বিষয় হিসেবে পেশ করে। কোন কাজ নিছক তার বাহ্যিক আকৃতির দিক দিয়ে ভালো হতে পারে না, যতক্ষণ না তার পেছনে থাকে ভালো আকীদা-বিশ্বাস। আর কোন ভালো আকীদা-বিশ্বাস নির্ভরযোগ্য হতে পারে না, যতক্ষণ না মানুষের কাজ তার প্রতি সমর্থন যোগায় এবং তার সত্যতা প্রমাণ করে। কোন ব্যক্তি যদি মুখে বলতে থাকে, আমি এক আল্লাহকে উপাস্য বলে মানি কিন্তু কার্যত সে গাইরুল্লাহর ইবাদাত করে, তাহলে এ কাজ তার কথাকে মিথ্যা প্রমাণ করে। কোন ব্যক্তি যদি মুখে বলতে থাকে মদ হারাম এবং কার্যত সে মদ পান করে চলে, তাহলে তার কথা মানুষের দৃষ্টিতেই গৃহীত হতে পারে না; তাহলে তা আল্লাহর কাছে কীভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে?
সৎকর্মের পুরস্কারের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমান :
وَمَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَاُولٰٓئِكَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ يُرْزَقُوْنَ فِيْهَا بِغَيْرِ حِسَابٍ
পুরুষ কিংবা নারীর মধ্যে যারা মুমিন হয়ে সৎ আমল করে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। সেখানে তারা অসংখ্য রিযিক পাবে। (সূরা মু’মিন- ৪০)
مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهٗ حَيَاةً طَيِّبَةً وَّلَنَجْزِيَنَّهُمْ اَجْرَهُمْ بِاَحْسَنِ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
মুমিন থাকাবস্থায় পুরুষ ও নারীদের মধ্যে যে কেউ সৎকর্ম করবে, নিশ্চয় আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব। (সূরা নাহল- ৯৭)
আল্লাহ সৎকর্মশীলদের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি করে দেবেন :
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ سَيَجْعَلُ لَهُمُ الرَّحْمٰنُ وُدًّا
যারা ঈমান আনয়ন করে ও সৎকর্ম করে, দয়াময় (আল্লাহ) অবশ্যই তাদের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি করে দেবেন। (সূরা মারইয়াম- ৯৬)
আল্লাহ সৎকর্মশীলদের তাওবা কবুল করেন :
اِنْ تَكُوْنُوْا صَالِحِيْنَ فَاِنَّهٗ كَانَ لِلْاَوَّابِيْنَ غَفُوْرًا
যদি তোমরা সৎকর্মপরায়ণ হও, তবে (জেনে রেখো) নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারীদের জন্য অতিশয় ক্ষমাশীল। (সূরা বনী ইসরাইল- ২৫)
وَاِنِّيْ لَغَفَّارٌ لِّمَنْ تَابَ وَاٰمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا ثُمَّ اهْتَدٰى
আমি অবশ্যই তার প্রতি ক্ষমাশীল যে তাওবা করে, ঈমান আনয়ন করে, সৎকর্ম করে ও সৎপথে অবিচল থাকে। (সূরা ত্বা-হা- ৮২)
আল্লাহ তাদের দু‘আ কবুল করেন :
وَيَسْتَجِيْبُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَيَزِيْدُهُمْ مِّنْ فَضْلِهٖ
তিনি মুমিন ও সৎ আমলকারীদের আহবানে সাড়া দেন এবং তাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ বর্ধিত করেন। (সূরা শূরা- ২৬)
আল্লাহ তাদের গোনাহ ক্ষমা করেন :
وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَهُمْ مَّغْفِرَةٌ وَّاَجْرٌ كَبِيْرٌ
আর যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার। (সূরা ফাতির- ৭)
فَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَهُمْ مَّغْفِرَةٌ وَّرِزْقٌ كَرِيْمٌ
যারা ঈমান আনয়ন করে ও সৎকর্ম করে তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা। (সূরা হজ্জ- ৫০)
সৎকর্ম অসৎকর্মকে মিটিয়ে দেয় :
وَاَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِّنَ اللَّيْلِؕ اِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِؕ ذٰلِكَ ذِكْرٰى لِلذَّاكِرِيْنَ
তুমি সালাত কায়েম করো- দিবসের দু’প্রামত্মভাগে ও রজনীর প্রথমাংশে। নিশ্চয় সৎকর্ম অসৎকর্মকে মিটিয়ে দেয়। যারা উপদেশ গ্রহণ করে এটা তাদের জন্য এক উপদেশ। (সূরা হুদ- ১১৪)
আল্লাহ সৎকর্মশীলদেরকে জান্নাত দেবেন :
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ كَانَتْ لَهُمْ جَنَّاتُ الْفِرْدَوْسِ نُزُلًا
যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তাদের আপ্যায়নের জন্য আছে জান্নাতুল ফিরদাউস। (সূরা কাহফ- ১০৭)
وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ سَنُدْخِلُهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَاۤ اَبَدًاؕ وَعْدَ اللهِ حَقًّاؕ وَمَنْ اَصْدَقُ مِنَ اللهِ قِيْلًا
যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে অচিরেই তাদেরকে আমি জান্নাতে প্রবেশ করাব, যার পাদদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। আর আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য; কথায় আল্লাহর চেয়ে অধিক সত্যবাদী আর কে আছে? (সূরা নিসা- ১২২)
وَبَشِّرِ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ اَنَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ
আর যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে তাদেরকে এ সুসংবাদ প্রদান করো যে, তাদের জন্য এমন জান্নাত প্রস্তুত রয়েছে, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে। (সূরা বাক্বারা- ২৫)
তাদের কোন চিন্তা থাকবে না :
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَالَّذِيْنَ هَادُوْا وَالصَّابِئُوْنَ وَالنَّصَارٰى مَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَعَمِلَ صَالِحًا فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ
মুমিন, ইয়াহুদি, সাবিয়ী ও খ্রিস্টানদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান আনে এবং সৎকাজ করে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না। (সূরা মায়েদা- ৬৯)
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ لَهُمْ اَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْۚ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ
নিশ্চয় যারা ঈমান আনে, সৎকাজ করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত আদায় করে তাদের প্রতিদান তাদের রবের কাছে মওজুদ রয়েছে। আর তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না। (সূরা বাক্বারা- ২৭৭)
আমল যত ভালো হবে মর্যাদা তত বাড়বে :
وَمَنْ يَّاْتِهٖ مُؤْمِنًا قَدْ عَمِلَ الصَّالِحَاتِ فَاُولٰٓئِكَ لَهُمُ الدَّرَجَاتُ الْعُلَا – جَنَّاتُ عَدْنٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا وَذٰلِكَ جَزَآءُ مَنْ تَزَكّٰى
যারা মুমিন অবস্থায় সৎকর্ম করে তাঁর নিকট উপস্থিত হবে, তাদের জন্য রয়েছে সমুচ্চ মর্যাদা ও স্থায়ী জান্নাত, যার পাদদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে, সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আর এ পুরস্কার তাদের জন্যই, যারা পবিত্র। (সূরা ত্বা-হা- ৭৫, ৭৬)
সৎকর্মের পুরস্কার উত্তম ও চিরস্থায়ী :
مَا عِنْدَكُمْ يَنْفَدُ وَمَا عِنْدَ اللهِ بَاقٍ
তোমাদের নিকট যা আছে তা নিঃশেষ হয়ে যাবে, আর আল্লাহর নিকট যা আছে তা স্থায়ী। (সূরা নাহল- ৯৬)
وَاَمَّا مَنْ اٰمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَلَهٗ جَزَآءَنِ الْحُسْنٰى
তবে যে ব্যক্তি ঈমান আনয়ন করে এবং সৎকর্ম করে, তার জন্য রয়েছে উত্তম প্রতিদান। (সূরা কাহফ- ৮৮)
ভালো কাজের প্রতিদান আল্লাহর কাছে জমা থাকে :
بَلٰىۗ مَنْ اَسْلَمَ وَجْهَهٗ لِلّٰهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ فَلَهٗۤ اَجْرُهٗ عِنْدَ رَبِّهٖ۪ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ
অবশ্য যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ করেছে, সে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তার প্রতিপালকের নিকট তার জন্য রয়েছে প্রতিদান। আর তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না। (সূরা বাক্বারা- ১১২)
وَمَا تُقَدِّمُوْا لِاَنْفُسِكُمْ مِّنْ خَيْرٍ تَجِدُوْهُ عِنْدَ اللهِ هُوَ خَيْرًا وَّاَعْظَمَ اَجْرًاؕ وَاسْتَغْفِرُوا اللهَؕ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
তোমরা তোমাদের আত্মার মঙ্গলের জন্য ভালো যা কিছু অগ্রিম প্রেরণ করবে তা তোমরা আল্লাহর নিকট পেয়ে যাবে। আর এটা অধিক উত্তম এবং পুরস্কার হিসেবে অনেক বড়। অতএব তোমরা আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করো, নিশ্চয় আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল ও অতি দয়ালু। (সূরা মুয্যাম্মিল- ২০)
আল্লাহ মুমিন বান্দার নেক আমল নষ্ট করেন না :
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ اِنَّا لَا نُضِيْعُ اَجْرَ مَنْ اَحْسَنَ عَمَلًا
যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, এমন সৎকর্মশীলদের প্রতিদান আমি নষ্ট করব না। (সূরা কাহফ- ৩০)
وَاَنَّ اللهَ لَا يُضِيْعُ اَجْرَ الْمُؤْمِنِيْنَ
নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্বাসীদের প্রতিদান বিনষ্ট করেন না। (সূরা আলে ইমরান- ১৭১)
وَمَا كَانَ اللهُ لِيُضِيْعَ اِيْمَانَكُمْؕ اِنَّ اللهَ بِالنَّاسِ لَرَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ
আল্লাহ এরূপ নন যে, তোমাদের ঈমান বিনষ্ট করে দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল ও করুণাময়। (সূরা বাক্বারা- ১৪৩)
আল্লাহ কাউকে ঠকাবেন না :
وَمَا تُنْفِقُوْا مِنْ خَيْرٍ يُّوَفَّ اِلَيْكُمْ وَاَنْتُمْ لَا تُظْلَمُوْنَ
তোমরা উত্তম যা কিছুই দান করবে তার পুরোপুরি প্রতিদান তোমরা পাবে এবং তোমাদের উপর কোন অন্যায় করা হবে না। (সূরা বাক্বারা- ২৭২)
وَمَنْ يَّعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَا يَخَافُ ظُلْمًا وَّلَا هَضْمًا
যে ব্যক্তি মুমিন অবস্থায় সৎকর্ম করে, তার জন্য অবিচারের এবং অন্য কোন ক্ষতির কোন আশঙ্কা নেই। (সূরা ত্বা-হা- ১১২)
فَمَنْ يَّعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَا كُفْرَانَ لِسَعْيِهٖ وَاِنَّا لَهٗ كَاتِبُوْنَ
সুতরাং যদি কেউ মুমিন অবস্থায় সৎকর্ম করে তার কর্মপ্রচেষ্টা অগ্রাহ্য হবে না; আর আমি তো সেটা লিখে রাখি। (সূরা আম্বিয়া- ৯৪)
আল্লাহ সৎকর্মের পুরস্কার বহুগুণে বাড়িয়ে দেন :
وَمَنْ يَّقْتَرِفْ حَسَنَةً نَّزِدْ لَهٗ فِيْهَا حُسْنًاؕ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ شَكُوْرٌ
যে উত্তম কাজ করে আমি তার জন্য এতে কল্যাণ বর্ধিত করে দেই। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল ও বড়ই কৃতজ্ঞ। (সূরা শূরা- ২৩)
لِيُوَفِّيَهُمْ اُجُوْرَهُمْ وَيَزِيْدَهُمْ مِّنْ فَضْلِهٖۤ اِنَّهٗ غَفُوْرٌ شَكُوْرٌ
যাতে তিনি তাদেরকে তাদের কর্মের পূর্ণ প্রতিদান দিতে পারেন। অতঃপর তিনি নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে আরো বাড়িয়ে দেবেন। নিশ্চয় তিনি পরম ক্ষমাশীল ও বড়ই কৃতজ্ঞ। (সূরা ফাতির- ৩০)
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ اُولٰٓئِكَ هُمْ خَيْرُ الْبَرِيَّةِ
যারা ঈমান আনয়ন করে ও সৎকর্ম করে, তারাই সৃষ্টির সেরা। (সূরা বায়্যিনাহ- ৭)
তারাই সফলতা লাভ করবে :
فَاَمَّا مَنْ تَابَ وَ اٰمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَعَسٰۤى اَنْ يَّكُوْنَ مِنَ الْمُفْلِحِيْنَ
তবে যে ব্যক্তি তাওবা করবে, ঈমান আনবে ও সৎকর্ম করবে অতি শীঘ্রই সে সাফল্য অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা ক্বাসাস- ৬৭)
সৎকর্ম প্রকৃত সম্মান ও মর্যাদা লাভের ভিত্তি :
مَنْ كَانَ يُرِيْدُ الْعِزَّةَ فَلِلّٰهِ الْعِزَّةُ جَمِيْعًاؕ اِلَيْهِ يَصْعَدُ الْكَلِمُ الطَّيِّبُ وَالْعَمَلُ الصَّالِحُ يَرْفَعُهٗ
যে ব্যক্তি সম্মান লাভ করতে চায় (সে জেনে রাখুক), সকল সম্মান আল্লাহর জন্যই। উত্তম বাক্যসমূহ তাঁরই দিকে পৌঁছে, আর সৎকাজ তাকে তাঁরই কাছে পৌঁছে দেয়। (সূরা ফাতির- ১০)
ব্যাখ্যা : কুরাইশ সরদাররা নবী ﷺ এর মুকাবিলায় যা কিছু করেছিল সবই ছিল তাদের নিজেদের ইজ্জত ও মর্যাদার খাতিরে। তাদের ধারণা ছিল, যদি মুহাম্মাদ ﷺ এর কথা মেনে নেয়া হয় তাহলে আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব খতম হয়ে যাবে। এরই প্রেক্ষিতে বলা হচ্ছে, আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও কুফরী করে তোমরা নিজেদের যে মর্যাদা তৈরি করে রেখেছ, তা তো একটি মিথ্যা মর্যাদা ছাড়া আর কিছুই নয়। তোমাদের মৃত্যুর সাথে সাথেই তা নিঃশেষ হয়ে যাবে। দুনিয়া ও আখিরাতের প্রকৃত ও চিরস্থায়ী মর্যাদা কেবলমাত্র আল্লাহর ইবাদাতের মধ্যেই নিহিত। সুতরাং তুমি যদি তাঁর ইবাদাতের মাধ্যমে সে মর্যাদার অনুসন্ধান কর, তবে তা পেয়ে যাবে। কিন্তু যদি তাঁর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহলে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হবে। আল্লাহর কাছে মিথ্যা ও ক্ষতিকারক কথা কখনো উচ্চমর্যাদা লাভ করে না। তাঁর কাছে একমাত্র এমন কথা উচ্চমর্যাদা লাভ করে, যা সত্য ও বাস্তবমুখী হয়। একটি পবিত্র কথাকে যে জিনিসটি উচ্চমর্যাদার দিকে নিয়ে যায়, সেটি হচ্ছে কথা অনুযায়ী কাজ করা। যেখানে কথা খুবই পবিত্র কিন্তু কাজ তার বিপরীত, সেখানে কথার পবিত্রতা নিস্তেজ হয়ে পড়ে। কেবলমাত্র মুখে কথার খই ফুটালে কোন কথা উচ্চমর্যাদায় উন্নীত হয় না; বরং এজন্য সৎকাজের শক্তিমত্তার প্রয়োজন হয়। কুরআন ভালো কথা ও ভালো কাজকে পরস্পরের অবিচ্ছেদ্য ও অপরিহার্য বিষয় হিসেবে পেশ করে। কোন কাজ নিছক তার বাহ্যিক আকৃতির দিক দিয়ে ভালো হতে পারে না, যতক্ষণ না তার পেছনে থাকে ভালো আকীদা-বিশ্বাস। আর কোন ভালো আকীদা-বিশ্বাস নির্ভরযোগ্য হতে পারে না, যতক্ষণ না মানুষের কাজ তার প্রতি সমর্থন যোগায় এবং তার সত্যতা প্রমাণ করে। কোন ব্যক্তি যদি মুখে বলতে থাকে, আমি এক আল্লাহকে উপাস্য বলে মানি কিন্তু কার্যত সে গাইরুল্লাহর ইবাদাত করে, তাহলে এ কাজ তার কথাকে মিথ্যা প্রমাণ করে। কোন ব্যক্তি যদি মুখে বলতে থাকে মদ হারাম এবং কার্যত সে মদ পান করে চলে, তাহলে তার কথা মানুষের দৃষ্টিতেই গৃহীত হতে পারে না; তাহলে তা আল্লাহর কাছে কীভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে?
সৎকর্মের পুরস্কারের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমান :
وَمَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَاُولٰٓئِكَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ يُرْزَقُوْنَ فِيْهَا بِغَيْرِ حِسَابٍ
পুরুষ কিংবা নারীর মধ্যে যারা মুমিন হয়ে সৎ আমল করে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। সেখানে তারা অসংখ্য রিযিক পাবে। (সূরা মু’মিন- ৪০)
مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهٗ حَيَاةً طَيِّبَةً وَّلَنَجْزِيَنَّهُمْ اَجْرَهُمْ بِاَحْسَنِ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
মুমিন থাকাবস্থায় পুরুষ ও নারীদের মধ্যে যে কেউ সৎকর্ম করবে, নিশ্চয় আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব। (সূরা নাহল- ৯৭)
আল্লাহ সৎকর্মশীলদের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি করে দেবেন :
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ سَيَجْعَلُ لَهُمُ الرَّحْمٰنُ وُدًّا
যারা ঈমান আনয়ন করে ও সৎকর্ম করে, দয়াময় (আল্লাহ) অবশ্যই তাদের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি করে দেবেন। (সূরা মারইয়াম- ৯৬)
আল্লাহ সৎকর্মশীলদের তাওবা কবুল করেন :
اِنْ تَكُوْنُوْا صَالِحِيْنَ فَاِنَّهٗ كَانَ لِلْاَوَّابِيْنَ غَفُوْرًا
যদি তোমরা সৎকর্মপরায়ণ হও, তবে (জেনে রেখো) নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারীদের জন্য অতিশয় ক্ষমাশীল। (সূরা বনী ইসরাইল- ২৫)
وَاِنِّيْ لَغَفَّارٌ لِّمَنْ تَابَ وَاٰمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا ثُمَّ اهْتَدٰى
আমি অবশ্যই তার প্রতি ক্ষমাশীল যে তাওবা করে, ঈমান আনয়ন করে, সৎকর্ম করে ও সৎপথে অবিচল থাকে। (সূরা ত্বা-হা- ৮২)
আল্লাহ তাদের দু‘আ কবুল করেন :
وَيَسْتَجِيْبُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَيَزِيْدُهُمْ مِّنْ فَضْلِهٖ
তিনি মুমিন ও সৎ আমলকারীদের আহবানে সাড়া দেন এবং তাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ বর্ধিত করেন। (সূরা শূরা- ২৬)
আল্লাহ তাদের গোনাহ ক্ষমা করেন :
وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَهُمْ مَّغْفِرَةٌ وَّاَجْرٌ كَبِيْرٌ
আর যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার। (সূরা ফাতির- ৭)
فَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَهُمْ مَّغْفِرَةٌ وَّرِزْقٌ كَرِيْمٌ
যারা ঈমান আনয়ন করে ও সৎকর্ম করে তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা। (সূরা হজ্জ- ৫০)
সৎকর্ম অসৎকর্মকে মিটিয়ে দেয় :
وَاَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِّنَ اللَّيْلِؕ اِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِؕ ذٰلِكَ ذِكْرٰى لِلذَّاكِرِيْنَ
তুমি সালাত কায়েম করো- দিবসের দু’প্রামত্মভাগে ও রজনীর প্রথমাংশে। নিশ্চয় সৎকর্ম অসৎকর্মকে মিটিয়ে দেয়। যারা উপদেশ গ্রহণ করে এটা তাদের জন্য এক উপদেশ। (সূরা হুদ- ১১৪)
আল্লাহ সৎকর্মশীলদেরকে জান্নাত দেবেন :
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ كَانَتْ لَهُمْ جَنَّاتُ الْفِرْدَوْسِ نُزُلًا
যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তাদের আপ্যায়নের জন্য আছে জান্নাতুল ফিরদাউস। (সূরা কাহফ- ১০৭)
وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ سَنُدْخِلُهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَاۤ اَبَدًاؕ وَعْدَ اللهِ حَقًّاؕ وَمَنْ اَصْدَقُ مِنَ اللهِ قِيْلًا
যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে অচিরেই তাদেরকে আমি জান্নাতে প্রবেশ করাব, যার পাদদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। আর আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য; কথায় আল্লাহর চেয়ে অধিক সত্যবাদী আর কে আছে? (সূরা নিসা- ১২২)
وَبَشِّرِ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ اَنَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ
আর যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে তাদেরকে এ সুসংবাদ প্রদান করো যে, তাদের জন্য এমন জান্নাত প্রস্তুত রয়েছে, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে। (সূরা বাক্বারা- ২৫)
তাদের কোন চিন্তা থাকবে না :
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَالَّذِيْنَ هَادُوْا وَالصَّابِئُوْنَ وَالنَّصَارٰى مَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَعَمِلَ صَالِحًا فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ
মুমিন, ইয়াহুদি, সাবিয়ী ও খ্রিস্টানদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান আনে এবং সৎকাজ করে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না। (সূরা মায়েদা- ৬৯)
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ لَهُمْ اَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْۚ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ
নিশ্চয় যারা ঈমান আনে, সৎকাজ করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত আদায় করে তাদের প্রতিদান তাদের রবের কাছে মওজুদ রয়েছে। আর তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না। (সূরা বাক্বারা- ২৭৭)
আমল যত ভালো হবে মর্যাদা তত বাড়বে :
وَمَنْ يَّاْتِهٖ مُؤْمِنًا قَدْ عَمِلَ الصَّالِحَاتِ فَاُولٰٓئِكَ لَهُمُ الدَّرَجَاتُ الْعُلَا – جَنَّاتُ عَدْنٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا وَذٰلِكَ جَزَآءُ مَنْ تَزَكّٰى
যারা মুমিন অবস্থায় সৎকর্ম করে তাঁর নিকট উপস্থিত হবে, তাদের জন্য রয়েছে সমুচ্চ মর্যাদা ও স্থায়ী জান্নাত, যার পাদদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে, সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আর এ পুরস্কার তাদের জন্যই, যারা পবিত্র। (সূরা ত্বা-হা- ৭৫, ৭৬)
সৎকর্মের পুরস্কার উত্তম ও চিরস্থায়ী :
مَا عِنْدَكُمْ يَنْفَدُ وَمَا عِنْدَ اللهِ بَاقٍ
তোমাদের নিকট যা আছে তা নিঃশেষ হয়ে যাবে, আর আল্লাহর নিকট যা আছে তা স্থায়ী। (সূরা নাহল- ৯৬)
وَاَمَّا مَنْ اٰمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَلَهٗ جَزَآءَنِ الْحُسْنٰى
তবে যে ব্যক্তি ঈমান আনয়ন করে এবং সৎকর্ম করে, তার জন্য রয়েছে উত্তম প্রতিদান। (সূরা কাহফ- ৮৮)
ভালো কাজের প্রতিদান আল্লাহর কাছে জমা থাকে :
بَلٰىۗ مَنْ اَسْلَمَ وَجْهَهٗ لِلّٰهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ فَلَهٗۤ اَجْرُهٗ عِنْدَ رَبِّهٖ۪ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ
অবশ্য যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ করেছে, সে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তার প্রতিপালকের নিকট তার জন্য রয়েছে প্রতিদান। আর তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না। (সূরা বাক্বারা- ১১২)
وَمَا تُقَدِّمُوْا لِاَنْفُسِكُمْ مِّنْ خَيْرٍ تَجِدُوْهُ عِنْدَ اللهِ هُوَ خَيْرًا وَّاَعْظَمَ اَجْرًاؕ وَاسْتَغْفِرُوا اللهَؕ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
তোমরা তোমাদের আত্মার মঙ্গলের জন্য ভালো যা কিছু অগ্রিম প্রেরণ করবে তা তোমরা আল্লাহর নিকট পেয়ে যাবে। আর এটা অধিক উত্তম এবং পুরস্কার হিসেবে অনেক বড়। অতএব তোমরা আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করো, নিশ্চয় আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল ও অতি দয়ালু। (সূরা মুয্যাম্মিল- ২০)
আল্লাহ মুমিন বান্দার নেক আমল নষ্ট করেন না :
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ اِنَّا لَا نُضِيْعُ اَجْرَ مَنْ اَحْسَنَ عَمَلًا
যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, এমন সৎকর্মশীলদের প্রতিদান আমি নষ্ট করব না। (সূরা কাহফ- ৩০)
وَاَنَّ اللهَ لَا يُضِيْعُ اَجْرَ الْمُؤْمِنِيْنَ
নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্বাসীদের প্রতিদান বিনষ্ট করেন না। (সূরা আলে ইমরান- ১৭১)
وَمَا كَانَ اللهُ لِيُضِيْعَ اِيْمَانَكُمْؕ اِنَّ اللهَ بِالنَّاسِ لَرَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ
আল্লাহ এরূপ নন যে, তোমাদের ঈমান বিনষ্ট করে দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল ও করুণাময়। (সূরা বাক্বারা- ১৪৩)
আল্লাহ কাউকে ঠকাবেন না :
وَمَا تُنْفِقُوْا مِنْ خَيْرٍ يُّوَفَّ اِلَيْكُمْ وَاَنْتُمْ لَا تُظْلَمُوْنَ
তোমরা উত্তম যা কিছুই দান করবে তার পুরোপুরি প্রতিদান তোমরা পাবে এবং তোমাদের উপর কোন অন্যায় করা হবে না। (সূরা বাক্বারা- ২৭২)
وَمَنْ يَّعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَا يَخَافُ ظُلْمًا وَّلَا هَضْمًا
যে ব্যক্তি মুমিন অবস্থায় সৎকর্ম করে, তার জন্য অবিচারের এবং অন্য কোন ক্ষতির কোন আশঙ্কা নেই। (সূরা ত্বা-হা- ১১২)
فَمَنْ يَّعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَا كُفْرَانَ لِسَعْيِهٖ وَاِنَّا لَهٗ كَاتِبُوْنَ
সুতরাং যদি কেউ মুমিন অবস্থায় সৎকর্ম করে তার কর্মপ্রচেষ্টা অগ্রাহ্য হবে না; আর আমি তো সেটা লিখে রাখি। (সূরা আম্বিয়া- ৯৪)
আল্লাহ সৎকর্মের পুরস্কার বহুগুণে বাড়িয়ে দেন :
وَمَنْ يَّقْتَرِفْ حَسَنَةً نَّزِدْ لَهٗ فِيْهَا حُسْنًاؕ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ شَكُوْرٌ
যে উত্তম কাজ করে আমি তার জন্য এতে কল্যাণ বর্ধিত করে দেই। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল ও বড়ই কৃতজ্ঞ। (সূরা শূরা- ২৩)
لِيُوَفِّيَهُمْ اُجُوْرَهُمْ وَيَزِيْدَهُمْ مِّنْ فَضْلِهٖۤ اِنَّهٗ غَفُوْرٌ شَكُوْرٌ
যাতে তিনি তাদেরকে তাদের কর্মের পূর্ণ প্রতিদান দিতে পারেন। অতঃপর তিনি নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে আরো বাড়িয়ে দেবেন। নিশ্চয় তিনি পরম ক্ষমাশীল ও বড়ই কৃতজ্ঞ। (সূরা ফাতির- ৩০)
আল্লাহ পাপ করাকে হারাম করে দিয়েছেন :
قُلْ اِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالْاِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَاَنْ تُشْرِكُوْا بِاللهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهٖ سُلْطَانًا وَّاَنْ تَقُوْلُوْا عَلَى اللهِ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ
বলো, নিশ্চয় আমার প্রতিপালক হারাম করে দিয়েছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা, পাপকাজ, অন্যায়ভাবে বিরোধিতা করা এবং আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থাপন করা, যার কোন প্রমাণ তিনি প্রেরণ করেননি। আর আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কিছু বলাও (হারাম করে দিয়েছেন), যা তোমরা জান না। (সূরা আ‘রাফ- ৩৩)
ব্যাখ্যা : اِثْمٌ (ইছমুন) এর আসল অর্থ হচ্ছে ত্রুটি-বিচ্যুতি। আর اٰثِمَةٌ (আছিমাতুন) এমন ধরনের উটনীকে বলা হয়, যে দ্রুত চলতে পারে; কিন্তু জেনে বুঝে অলসভাবে চলে। এ থেকেই এ শব্দের মধ্যে গোনাহের ভাবধারা সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ মানুষ যখন নিজের রবের আনুগত্য করা ও তাঁর হুকুম মেনে চলার ক্ষমতা ও সামর্থর্র্্য থাকা সত্ত্বেও গাফলতী করে এবং জেনে-বুঝে ত্রুটি করে, যার ফলে সে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে অসমর্থ্য হয়, তখন সেই আচরণটিকেই গোনাহ বলা হয়।
وَذَرُوْا ظَاهِرَ الْاِثْمِ وَبَاطِنَهٗۤ اِنَّ الَّذِيْنَ يَكْسِبُوْنَ الْاِثْمَ سَيُجْزَوْنَ بِمَا كَانُوْا يَقْتَرِفُوْنَ
তোমরা প্রকাশ্য এবং গোপনীয় সকল পাপকাজ বর্জন করো। যারা পাপ করে অচিরেই তাদেরকে তাদের পাপকাজের সমুচিত শাস্তি দেয়া হবে। (সূরা আন‘আম- ১২০)
আল্লাহ পাপকাজে সহযোগিতা করতে নিষেধ করেছেন :
وَتَعَاوَنُوْا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوٰى۪ وَلَا تَعَاوَنُوْا عَلَى الْاِثْمِ وَالْعُدْوَانِ
তোমরা সৎকর্ম ও আল্লাহভীতিমূলক কাজে একে অপরকে সহযোগিতা করো এবং পাপ ও সীমালঙ্ঘনমূলক কাজে একে অপরের সহযোগিতা করো না। (সূরা মায়েদা- ২)
মানুষ যেসব পাপ করে আল্লাহ তার হিসাব রাখেন :
وَكَفٰى بِهٖ بِذُنُوْبِ عِبَادِ هٖ خَبِيْرًا
তিনি তাঁর বান্দাদের পাপ সম্পর্কে যথেষ্ট অবহিত। (সূরা ফুরক্বান- ৫৮)
وَكَفٰى بِرَبِّكَ بِذُنُوْبِ عِبَادِ هٖ خَبِيْرًا ۢبَصِيْرًا
বান্দাদের পাপাচারের সংবাদ রাখা ও পর্যবেক্ষণের জন্য তোমার রব-ই যথেষ্ট। (সূরা বনী ইসরাঈল-১৭)
অপরাধীরা আল্লাহর আওতার বাহিরে যেতে পারবে না :
اَمْ حَسِبَ الَّذِيْنَ يَعْمَلُوْنَ السَّيِّئَاتِ اَنْ يَّسْبِقُوْنَاؕ سَآءَ مَا يَحْكُمُوْنَ
তবে কি যারা মন্দকাজ করে তারা মনে করে যে, তারা আমার আয়ত্তের বাইরে চলে যাবে? তাদের সিদ্ধান্ত কতই না মন্দ! (সূরা আনকাবূত- ৪)
অপরাধীদের থেকে আযাব সরানো হয় না :
وَلَا يُرَدُّ بَاْسُهٗ عَنِ الْقَوْمِ الْمُجْرِمِيْنَ
অপরাধী সম্প্রদায়ের উপর হতে তাঁর শাস্তি সরিয়ে নেয়া হয় না। (সূরা আন‘আম- ১৪৭)
আল্লাহ অপরাধীদেরকে ভালোবাসেন না :
وَاللهُ لَا يُحِبُّ كُلَّ كَفَّارٍ اَثِيْمٍ
আর আল্লাহ প্রত্যেক অস্বীকারকারী ও অপরাধীকে ভালোবাসেন না। (সূরা বাক্বারা- ২৭৬)
যে পাপ করবে সে নিজেই এর পরিণাম ভোগ করবে :
وَمَنْ يَّتَعَدَّ حُدُوْدَ اللهِ فَقَدْ ظَلَمَ نَفْسَهٗ
যে আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করে, সে নিজের উপরই যুলুম করে। (সূরা তালাক্ব- ১)
وَمَنْ يَّكْسِبْ اِثْمًا فَاِنَّمَا يَكْسِبُهٗ عَلٰى نَفْسِهٖؕ وَكَانَ اللهُ عَلِيْمًا حَكِيْمًا
যে ব্যক্তি পাপকাজ করে, সে তো তা নিজের (ক্ষতির) জন্যই করে। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা- ১১১)
প্রত্যেকেই নিজ নিজ কৃতকর্মের জন্য দায়ী :
لِكُلِّ امْرِئٍ مِّنْهُمْ مَّا اكْتَسَبَ مِنَ الْاِثْمِ
তাদের প্রত্যেকের জন্যই রয়েছে তাদের কৃত পাপকর্মের ফল। (সূরা নূর- ১১)
كُلُّ امْرِئٍ ۢبِمَا كَسَبَ رَهِيْنٌ
প্রত্যেক ব্যক্তিই নিজ নিজ কৃতকর্মের জন্য জিম্মী। (সূরা তূর- ২১)
ব্যাখ্যা : এখানে ‘জিম্মী’ বা ‘বন্ধক’ শব্দটির রূপক ব্যবহার অত্যন্ত অর্থবহ। কোন ব্যক্তি যদি কাউকে কোন ঋণ দেয় এবং ঋণদাতা তার পাওনা আদায়ের নিশ্চয়তা হিসেবে ঋণ গ্রহীতার কোন জিনিস নিজের কাছে বন্ধক রাখে, তাহলে যতক্ষণ পর্যন্ত সে ঋণ পরিশোধ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত বন্ধকী বস্তু মুক্ত হবে না। তাছাড়া নির্দিষ্ট সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরও যদি বন্ধকী বস্তু মুক্ত না করে তাহলে বন্ধকী বস্তুটি বাজেয়াপ্ত বা হাতছাড়া হয়ে যায়। আল্লাহ তা‘আলাও মানুষের মধ্যকার লেনদেনের বিষয়টিকে এখানে বন্ধকী লেনদেনের সাথে তুলনা করেছেন। আল্লাহ পৃথিবীতে মানুষকে যেসব শক্তি, যোগ্যতা, সাজ-সরঞ্জাম এবং ইখতিয়ার দিয়েছেন, তা যেন ঋণ দিয়েছেন। এ ঋণের জামানত হিসেবে সে নিজেই আল্লাহর কাছে বন্ধক বা জিম্মী হয়ে রয়েছে। বান্দা যদি এসব সাজ-সরঞ্জাম, শক্তি এবং ইখতিয়ার সঠিকভাবে ব্যবহার করে এমন নেকী অর্জন করে, যা দ্বারা এসব ঋণ পরিশোধ হবে, তাহলে সে বন্ধকী মাল অর্থাৎ নিজেকে মুক্ত করে নেবে। অন্যথায় তা বাজেয়াপ্ত করে নেয়া হবে।
সকলেই নিজ নিজ পাপের বোঝা বহন করবে :
وَلَا تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍ اِلَّا عَلَيْهَاۚ وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِّزْرَ اُخْرٰى
প্রত্যেকে স্বীয় কৃতকর্মের জন্য দায়ী এবং কেউ অন্য কারো ভার গ্রহণ করবে না। (সূরা আন‘আম- ১৬৪)
وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِّزْرَ اُخْرٰىؕ وَاِنْ تَدْعُ مُثْقَلَةٌ اِلٰى حِمْلِهَا لَا يُحْمَلْ مِنْهُ شَيْءٌ وَّلَوْ كَانَ ذَا قُرْبٰى
কোন বোঝা বহনকারী অপরের বোঝা বহন করবে না। যদি কোন বোঝা ভারাক্রান্ত ব্যক্তি কাউকে তার বোঝা বহন করতে ডাকে, তবে তা থেকে কিছুই বহন করা হবে না, যদিও সে তার নিকটাত্মীয় হয়।
(সূরা ফাতির- ১৮)
ব্যাখ্যা : প্রত্যেক ব্যক্তিরই একটি স্বতন্ত্র নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে। আল্লাহর সামনে এ দায়িত্ব সম্পর্কে তাকে জবাবদিহি করতে হবে। ইনসাফের মানদন্ডে একজনের পাপের বোঝা অন্যের উপর চাপিয়ে দেয়ার কোন সম্ভাবনাই থাকবে না। তাই একজন জ্ঞানী ব্যক্তির জন্য অন্যরা কী করছে তা দেখা উচিত নয়, বরং তিনি নিজে কী করছেন সেদিকেই তাঁর সর্বক্ষণ দৃষ্টি থাকা উচিত। যদি তার মধ্যে নিজের সকল দায়-দায়িত্বের সঠিক অনুভূতি থাকে, তাহলে অন্যেরা যাই করুক না কেন সে নিজে সফল হবেই।
قُلْ اِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالْاِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَاَنْ تُشْرِكُوْا بِاللهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهٖ سُلْطَانًا وَّاَنْ تَقُوْلُوْا عَلَى اللهِ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ
বলো, নিশ্চয় আমার প্রতিপালক হারাম করে দিয়েছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা, পাপকাজ, অন্যায়ভাবে বিরোধিতা করা এবং আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থাপন করা, যার কোন প্রমাণ তিনি প্রেরণ করেননি। আর আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কিছু বলাও (হারাম করে দিয়েছেন), যা তোমরা জান না। (সূরা আ‘রাফ- ৩৩)
ব্যাখ্যা : اِثْمٌ (ইছমুন) এর আসল অর্থ হচ্ছে ত্রুটি-বিচ্যুতি। আর اٰثِمَةٌ (আছিমাতুন) এমন ধরনের উটনীকে বলা হয়, যে দ্রুত চলতে পারে; কিন্তু জেনে বুঝে অলসভাবে চলে। এ থেকেই এ শব্দের মধ্যে গোনাহের ভাবধারা সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ মানুষ যখন নিজের রবের আনুগত্য করা ও তাঁর হুকুম মেনে চলার ক্ষমতা ও সামর্থর্র্্য থাকা সত্ত্বেও গাফলতী করে এবং জেনে-বুঝে ত্রুটি করে, যার ফলে সে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে অসমর্থ্য হয়, তখন সেই আচরণটিকেই গোনাহ বলা হয়।
وَذَرُوْا ظَاهِرَ الْاِثْمِ وَبَاطِنَهٗۤ اِنَّ الَّذِيْنَ يَكْسِبُوْنَ الْاِثْمَ سَيُجْزَوْنَ بِمَا كَانُوْا يَقْتَرِفُوْنَ
তোমরা প্রকাশ্য এবং গোপনীয় সকল পাপকাজ বর্জন করো। যারা পাপ করে অচিরেই তাদেরকে তাদের পাপকাজের সমুচিত শাস্তি দেয়া হবে। (সূরা আন‘আম- ১২০)
আল্লাহ পাপকাজে সহযোগিতা করতে নিষেধ করেছেন :
وَتَعَاوَنُوْا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوٰى۪ وَلَا تَعَاوَنُوْا عَلَى الْاِثْمِ وَالْعُدْوَانِ
তোমরা সৎকর্ম ও আল্লাহভীতিমূলক কাজে একে অপরকে সহযোগিতা করো এবং পাপ ও সীমালঙ্ঘনমূলক কাজে একে অপরের সহযোগিতা করো না। (সূরা মায়েদা- ২)
মানুষ যেসব পাপ করে আল্লাহ তার হিসাব রাখেন :
وَكَفٰى بِهٖ بِذُنُوْبِ عِبَادِ هٖ خَبِيْرًا
তিনি তাঁর বান্দাদের পাপ সম্পর্কে যথেষ্ট অবহিত। (সূরা ফুরক্বান- ৫৮)
وَكَفٰى بِرَبِّكَ بِذُنُوْبِ عِبَادِ هٖ خَبِيْرًا ۢبَصِيْرًا
বান্দাদের পাপাচারের সংবাদ রাখা ও পর্যবেক্ষণের জন্য তোমার রব-ই যথেষ্ট। (সূরা বনী ইসরাঈল-১৭)
অপরাধীরা আল্লাহর আওতার বাহিরে যেতে পারবে না :
اَمْ حَسِبَ الَّذِيْنَ يَعْمَلُوْنَ السَّيِّئَاتِ اَنْ يَّسْبِقُوْنَاؕ سَآءَ مَا يَحْكُمُوْنَ
তবে কি যারা মন্দকাজ করে তারা মনে করে যে, তারা আমার আয়ত্তের বাইরে চলে যাবে? তাদের সিদ্ধান্ত কতই না মন্দ! (সূরা আনকাবূত- ৪)
অপরাধীদের থেকে আযাব সরানো হয় না :
وَلَا يُرَدُّ بَاْسُهٗ عَنِ الْقَوْمِ الْمُجْرِمِيْنَ
অপরাধী সম্প্রদায়ের উপর হতে তাঁর শাস্তি সরিয়ে নেয়া হয় না। (সূরা আন‘আম- ১৪৭)
আল্লাহ অপরাধীদেরকে ভালোবাসেন না :
وَاللهُ لَا يُحِبُّ كُلَّ كَفَّارٍ اَثِيْمٍ
আর আল্লাহ প্রত্যেক অস্বীকারকারী ও অপরাধীকে ভালোবাসেন না। (সূরা বাক্বারা- ২৭৬)
যে পাপ করবে সে নিজেই এর পরিণাম ভোগ করবে :
وَمَنْ يَّتَعَدَّ حُدُوْدَ اللهِ فَقَدْ ظَلَمَ نَفْسَهٗ
যে আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করে, সে নিজের উপরই যুলুম করে। (সূরা তালাক্ব- ১)
وَمَنْ يَّكْسِبْ اِثْمًا فَاِنَّمَا يَكْسِبُهٗ عَلٰى نَفْسِهٖؕ وَكَانَ اللهُ عَلِيْمًا حَكِيْمًا
যে ব্যক্তি পাপকাজ করে, সে তো তা নিজের (ক্ষতির) জন্যই করে। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা- ১১১)
প্রত্যেকেই নিজ নিজ কৃতকর্মের জন্য দায়ী :
لِكُلِّ امْرِئٍ مِّنْهُمْ مَّا اكْتَسَبَ مِنَ الْاِثْمِ
তাদের প্রত্যেকের জন্যই রয়েছে তাদের কৃত পাপকর্মের ফল। (সূরা নূর- ১১)
كُلُّ امْرِئٍ ۢبِمَا كَسَبَ رَهِيْنٌ
প্রত্যেক ব্যক্তিই নিজ নিজ কৃতকর্মের জন্য জিম্মী। (সূরা তূর- ২১)
ব্যাখ্যা : এখানে ‘জিম্মী’ বা ‘বন্ধক’ শব্দটির রূপক ব্যবহার অত্যন্ত অর্থবহ। কোন ব্যক্তি যদি কাউকে কোন ঋণ দেয় এবং ঋণদাতা তার পাওনা আদায়ের নিশ্চয়তা হিসেবে ঋণ গ্রহীতার কোন জিনিস নিজের কাছে বন্ধক রাখে, তাহলে যতক্ষণ পর্যন্ত সে ঋণ পরিশোধ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত বন্ধকী বস্তু মুক্ত হবে না। তাছাড়া নির্দিষ্ট সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরও যদি বন্ধকী বস্তু মুক্ত না করে তাহলে বন্ধকী বস্তুটি বাজেয়াপ্ত বা হাতছাড়া হয়ে যায়। আল্লাহ তা‘আলাও মানুষের মধ্যকার লেনদেনের বিষয়টিকে এখানে বন্ধকী লেনদেনের সাথে তুলনা করেছেন। আল্লাহ পৃথিবীতে মানুষকে যেসব শক্তি, যোগ্যতা, সাজ-সরঞ্জাম এবং ইখতিয়ার দিয়েছেন, তা যেন ঋণ দিয়েছেন। এ ঋণের জামানত হিসেবে সে নিজেই আল্লাহর কাছে বন্ধক বা জিম্মী হয়ে রয়েছে। বান্দা যদি এসব সাজ-সরঞ্জাম, শক্তি এবং ইখতিয়ার সঠিকভাবে ব্যবহার করে এমন নেকী অর্জন করে, যা দ্বারা এসব ঋণ পরিশোধ হবে, তাহলে সে বন্ধকী মাল অর্থাৎ নিজেকে মুক্ত করে নেবে। অন্যথায় তা বাজেয়াপ্ত করে নেয়া হবে।
সকলেই নিজ নিজ পাপের বোঝা বহন করবে :
وَلَا تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍ اِلَّا عَلَيْهَاۚ وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِّزْرَ اُخْرٰى
প্রত্যেকে স্বীয় কৃতকর্মের জন্য দায়ী এবং কেউ অন্য কারো ভার গ্রহণ করবে না। (সূরা আন‘আম- ১৬৪)
وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِّزْرَ اُخْرٰىؕ وَاِنْ تَدْعُ مُثْقَلَةٌ اِلٰى حِمْلِهَا لَا يُحْمَلْ مِنْهُ شَيْءٌ وَّلَوْ كَانَ ذَا قُرْبٰى
কোন বোঝা বহনকারী অপরের বোঝা বহন করবে না। যদি কোন বোঝা ভারাক্রান্ত ব্যক্তি কাউকে তার বোঝা বহন করতে ডাকে, তবে তা থেকে কিছুই বহন করা হবে না, যদিও সে তার নিকটাত্মীয় হয়।
(সূরা ফাতির- ১৮)
ব্যাখ্যা : প্রত্যেক ব্যক্তিরই একটি স্বতন্ত্র নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে। আল্লাহর সামনে এ দায়িত্ব সম্পর্কে তাকে জবাবদিহি করতে হবে। ইনসাফের মানদন্ডে একজনের পাপের বোঝা অন্যের উপর চাপিয়ে দেয়ার কোন সম্ভাবনাই থাকবে না। তাই একজন জ্ঞানী ব্যক্তির জন্য অন্যরা কী করছে তা দেখা উচিত নয়, বরং তিনি নিজে কী করছেন সেদিকেই তাঁর সর্বক্ষণ দৃষ্টি থাকা উচিত। যদি তার মধ্যে নিজের সকল দায়-দায়িত্বের সঠিক অনুভূতি থাকে, তাহলে অন্যেরা যাই করুক না কেন সে নিজে সফল হবেই।
মানুষের পাপের কারণে পৃথিবীতে বিপদ আসে :
ظَهَرَ الْفَسَادُ فِى الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ اَيْدِى النَّاسِ لِيُذِيْقَهُمْ بَعْضَ الَّذِيْ عَمِلُوْا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُوْنَ
স্থলভাগে ও জলভাগে মানুষের কৃতকর্মের ফলস্বরূপ অশান্তি ছড়িয়ে পড়েছে, যার ফলে আল্লাহ তাদেরকে তাদের কিছু কিছু কাজের শাস্তি ভোগ করাতে চান, যেন তারা ফিরে আসে। (সূরা রূম- ৪১)
وَمَاۤ اَصَابَكُمْ مِّنْ مُّصِيْبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ اَيْدِيْكُمْ وَيَعْفُوْا عَنْ كَثِيْرٍ
তোমাদের যে বিপদাপদ ঘটে, তা তো তোমাদেরই হাতের উপার্জন; অথচ তোমাদের অনেক অপরাধ তিনি ক্ষমা করে দেন। (সূরা শূরা- ৩০)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ যদি মানুষের সমস্ত দোষ-ত্রুটির জন্য পাকড়াও করতেন তাহলে তাদের জীবিতই রাখতেন না। তবে যে বিপদাপদ তাদের উপর আসে, তা কেবল সতর্কীকরণ হিসেবে দেয়া হয়েছে। যাতে তারা নিজেদের কাজকর্মের পর্যালোচনা করে দেখে যে, নিজেদের রবের বিরুদ্ধে তারা কী ধরনের আচরণ করছে। আর এ কথাও বুঝার চেষ্টা করে যে, যে আল্লাহর বিরুদ্ধে তারা বিদ্রোহ করছে তাঁর কাছে তারা কত অসহায়। এ ব্যাপারে খাঁটি মুমিনের জন্য আল্লাহর বিধান ভিন্ন। মুমিনের উপর যে দুঃখ-কষ্ট ও বিপদাপদ পতিত হয়, তা তার গোনাহ ও ত্রুটি-বিচ্যুতিসমূহের কাফ্ফারা হয়ে যায়। রাসূল ﷺ বলেন, ‘‘মুসলিম ব্যক্তি যে কোন দুঃখ-কষ্টের সম্মুখীন হোক না কেন- এমনকি একটি কাঁটা বিদ্ধ হলেও আল্লাহ তাকে তার কোন না কোন গোনাহের কাফ্ফারা বানিয়ে দেন।’’ (সহীহ বুখারী, হা/৫৬৪০)
যখন আযাব আসবে তখন কেউই বাঁচতে পারবে না :
وَاتَّقُوْا فِتْنَةً لَّا تُصِيْبَنَّ الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا مِنْكُمْ خَآصَّةًۚ وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
তোমরা এমন ফিতনাকে ভয় করো, যা বিশেষ করে তোমাদের মধ্যে যারা যালিম কেবল তাদেরকেই স্পর্শ করবে না (বরং সকলকেই স্পর্শ করবে)। জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে খুবই কঠোর। (সূরা আনফাল- ২৫)
ব্যাখ্যা : শুধুমাত্র যারা গোনাহ করে তারাই এ ধ্বংসের শিকার হয় না বরং তারাও এর শিকার হয়, যারা এ পাপাচারে জর্জরিত সমাজে বসবাস করা সহ্য করে নেয়। যখন সমাজের সামষ্টিক বিবেক দুর্বল হয়ে পড়ে, নৈতিক অনিষ্টগুলোকে দমিয়ে রাখা হয় না, সমাজে অসৎ ও দুশ্চরিত্রবান লোকেরা অন্যায় ছড়াতে থাকে, সৎ লোকেরা নিষ্কর্মা হয়ে নিজেদের ব্যক্তিগত সততা ও সদগুণাবলি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকে এবং সামাজিক দুষ্কৃতির ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করে, তখন সামগ্রিকভাবে গোটা সমাজের উপর দুর্ভোগ নেমে আসে। এ সময় এমন ব্যাপক দুর্যোগ সৃষ্টি হয়, যার ফলে ছোট-বড়, সবল-দুর্বল সবাই সমানভাবে বিপর্যস্ত হয়। কাজেই আল্লাহর বক্তব্যের মর্ম হচ্ছে, রাসূল ﷺ যে সংস্কার ও হেদায়াতের দিকে আহবান জানাচ্ছেন, তার মধ্যেই রয়েছে ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনের নিশ্চয়তা। যদি সমাজের বুকে যেসব দুষ্কৃতি ছড়িয়ে রয়েছে সেগুলোকে সহ্য করে যাওয়া হয়, তাহলে ব্যাপক বিপর্যয় দেখা দেবে। যদিও তোমাদের মধ্যে এমন অনেক লোক থাকে, যারা কার্যত দুষ্কৃতিতে লিপ্ত হয় না; তবুও এ ব্যাপক বিপদ তোমাদেরকে আচ্ছন্ন করে ফেলবে।
আল্লাহ প্রত্যেক অপরাধী জাতিকেই পাকড়াও করেছেন :
اَوَلَمْ يَسِيْرُوْا فِى الْاَرْضِ فَيَنْظُرُوْا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الَّذِيْنَ كَانُوْا مِنْ قَبْلِهِمْ ؕ كَانُوْا هُمْ اَشَدَّ مِنْهُمْ قُوَّةً وَّ اٰثَارًا فِى الْاَرْضِ فَاَخَذَهُمُ اللهُ بِذُنُوْبِهِمْؕ وَمَا كَانَ لَهُمْ مِّنَ اللهِ مِنْ وَّاقٍ
তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করে না? তাহলে দেখতে পেত যে, তাদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কী হয়েছিল? পৃথিবীতে তারা ছিল এদের চেয়ে শক্তিতে এবং কীর্তিতে প্রবল। অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে তাদের অপরাধের জন্য শাস্তি দিয়েছিলেন; আর আল্লাহ থেকে তাদেরকে রক্ষাকারী কেউ ছিল না। (সূরা মু’মিন- ২১)
মানুষকে সতর্ক করার জন্যই আল্লাহ এ ব্যবস্থা করেন :
وَلَنُذِيْقَنَّهُمْ مِّنَ الْعَذَابِ الْاَدْنٰى دُوْنَ الْعَذَابِ الْاَ كْبَرِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُوْنَ
নিশ্চয় আমি তাদেরকে সামান্য শাস্তি ভোগ করাব মহাশাস্তির পূর্বে, যেন তারা ফিরে আসে। (সূরা সাজদা- ২১)
ব্যাখ্যা : এখানে বড় শাস্তি বলতে আখিরাতের শাস্তিকে বুঝানো হয়েছে। কুফরী ও ফাসিকীর অপরাধে এ শাস্তি দেয়া হবে। এর বিপরীতে ‘ছোট শাস্তি’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে ইহকালীন জীবনে মানুষের উপর আবর্তিত যাবতীয় বিপদাপদ, যা দ্বারা তাদের কষ্ট অনুভূত হয়। যেমন ব্যক্তিগত জীবনে কঠিন রোগ, নিজের প্রিয়তম লোকদের মৃত্যু, ভয়াবহ দুর্ঘটনা, মারাত্মক ক্ষতি ও ব্যর্থতা ইত্যাদি। সামাজিক জীবনে ঝড়-তুফান, ভূমিকম্প, দুর্ভিক্ষ, যুদ্ধ এবং আরো বহু বিপদাপদ- যা লাখো লাখো কোটি কোটি মানুষকে প্রভাবিত করে। মূলত এসব বিপদাপদ অবতীর্ণ করার মাধ্যমে বড় শাস্তির আগেই মানুষকে সচেতন করে দেয়া হয়। দুনিয়ায় আল্লাহ মানুষকে একেবারেই আনন্দে রাখেননি। কেননা নিশ্চিন্তে ও আরামে জীবনের গাড়ি চলতে থাকলে মানুষ এ ভুল ধারণায় লিপ্ত হয় যে, সে-ই সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান। সুতরাং দুনিয়ার কোন শক্তিই তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। তাই আল্লাহ এমন ব্যবস্থা করে রেখেছেন, যার ফলে মাঝে মধ্যে বিভিন্ন ব্যক্তি, জাতি ও দেশের উপর এমনসব বিপদাপদ পাঠাতে থাকেন, যা তাদেরকে একদিকে নিজেদের অসহায়ত্ব এবং অন্যদিকে নিজেদের চেয়ে বড় এক মহাপরাক্রমশালীর অস্তিত্বের অনুভূতি দান করে। এগুলো দ্বারা প্রত্যেক ব্যক্তি, দল ও জাতিকে এ কথা স্মরণ করিয়ে দেয় যে, এগুলোর উপর তাদের কোন হস্তক্ষেপ নেই বরং অন্য একজন নিয়ন্ত্রক এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। সবকিছু তোমাদের হাতে দিয়ে দেয়া হয়নি। আসল ক্ষমতা রয়েছে তাঁর হাতে, যিনি কর্তৃত্ব সহকারে এসবকিছু সংঘটিত করে আসছেন। তাঁর কাছে তোমরা এতই দুর্বল যে, তোমাদের উপর তাঁর পক্ষ থেকে কোন বিপদ আসলে এর বিরুদ্ধে তোমরা কোন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পার না। এদিক দিয়ে বিচার করলে এ বিপদ নিছক বিপদ নয় বরং আল্লাহর সতর্ক সংকেত। মানুষকে সত্য জানানোর এবং তাঁর বিভ্রান্তি দূর করার জন্য একে পাঠানো হয়। এর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে যদি মানুষ দুনিয়াতেই নিজের বিশ্বাস ও কর্ম সংশোধন করে নেয়, তাহলে আখিরাতে আল্লাহর বড় শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে না।
তারপরও মানুষ সতর্ক হয় না :
اَوَلَا يَرَوْنَ اَنَّهُمْ يُفْتَنُوْنَ فِيْ كُلِّ عَامٍ مَّرَّةً اَوْ مَرَّتَيْنِ ثُمَّ لَا يَتُوْبُوْنَ وَلَا هُمْ يَذَّكَّرُوْنَ
তারা কি দেখে না যে, তাদেরকে প্রতি বৎসর একবার বা দু’বার বিপর্যস্ত করা হয়? এরপরও তারা তাওবা করে না এবং উপদেশ গ্রহণ করে না। (সূরা তাওবা- ১২৬)
খুব কম লোকই বিপদ থেকে শিক্ষা লাভ করে :
وَلَقَدْ اَرْسَلْنَاۤ اِلٰۤى اُمَمٍ مِّنْ قَبْلِكَ فَاَخَذْنَاهُمْ بِالْبَاْسَآءِ وَالضَّرَّآءِ لَعَلَّهُمْ يَتَضَرَّعُوْنَ – فَلَوْلَاۤ اِذْ جَآءَهُمْ بَاْسُنَا تَضَرَّعُوْا وَلٰكِنْ قَسَتْ قُلُوْبُهُمْ وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
তোমার পূর্বে আমি বহু জাতির নিকট রাসূল প্রেরণ করেছি। অতঃপর তাদেরকে অর্থ সংকট ও দুঃখ-কষ্ট দ্বারা পাকড়াও করেছি, যাতে তারা বিনীত হয়। অতঃপর যখন আমার শাস্তি তাদের উপর এসে গেল, তখন তারা কেন বিনীত হলো না? অধিকন্তু তাদের হৃদয় কঠিন হয়ে গিয়েছিল এবং তারা যা করছিল শয়তান তা তাদের দৃষ্টিতে শোভনীয় করে দিয়েছিল। (সূরা আন‘আম- ৪২, ৪৩)
বিপদ সরে গেলে মানুষ আবার নাফরমানি শুরু করে দেয় :
اِنَّا كَاشِفُوا الْعَذَابِ قَلِيْلًا اِنَّكُمْ عَآئِدُوْنَ
আমি (যদি) তোমাদের শাস্তি কিছুকালের জন্য সরিয়ে দেই, তবে তোমরা তো পুনরায় তাই করবে।
(সূরা দুখান- ১৫)
মানুষের উপর একের পর এক বিপদ আসতেই থাকে :
وَلَا يَزَالُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا تُصِيْبُهُمْ بِمَا صَنَعُوْا قَارِعَةٌ اَوْ تَحُلُّ قَرِيْبًا مِّنْ دَارِهِمْ حَتّٰى يَاْتِيَ وَعْدُ اللهِ اِنَّ اللهَ لَا يُخْلِفُ الْمِيْعَادَ
যারা কুফরী করেছে তাদের কর্মফলের জন্য তাদের বিপর্যয় ঘটতেই থাকবে, অথবা বিপর্যয় তাদের আশেপাশে আপতিত হতেই থাকবে, যতক্ষণ পর্যমত্ম না আল্লাহর প্রতিশ্রুতি দিবস উপস্থিত হবে। নিশ্চয় আল্লাহ প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম করেন না। (সূরা রা‘দ- ৩১)
আযাব থেকে বাঁচার উপায় হলো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা :
مَا يَفْعَلُ اللهُ بِعَذَابِكُمْ اِنْ شَكَرْتُمْ وَاٰمَنْتُمْؕ وَكَانَ اللهُ شَاكِرًا عَلِيْمًا
তোমরা যদি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর ও ঈমান আনয়ন কর, তবে তোমাদেরকে শাস্তি দিয়ে আল্লাহর কী লাভ? আর আল্লাহ তো মহাপুরস্কারদাতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা নিসা- ১৪৭)
আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া :
وَمَا كَانَ اللهُ لِيُعَذِّبَهُمْ وَاَنْتَ فِيْهِمْؕ وَمَا كَانَ اللهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ
আল্লাহ এমন নন যে, তুমি তাদের মধ্যে থাকবে অথচ তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন। আর আল্লাহ এমনও নন যে, তারা ক্ষমাপ্রার্থনা করবে অথচ তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন। (সূরা আনফাল- ৩৩)
ظَهَرَ الْفَسَادُ فِى الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ اَيْدِى النَّاسِ لِيُذِيْقَهُمْ بَعْضَ الَّذِيْ عَمِلُوْا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُوْنَ
স্থলভাগে ও জলভাগে মানুষের কৃতকর্মের ফলস্বরূপ অশান্তি ছড়িয়ে পড়েছে, যার ফলে আল্লাহ তাদেরকে তাদের কিছু কিছু কাজের শাস্তি ভোগ করাতে চান, যেন তারা ফিরে আসে। (সূরা রূম- ৪১)
وَمَاۤ اَصَابَكُمْ مِّنْ مُّصِيْبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ اَيْدِيْكُمْ وَيَعْفُوْا عَنْ كَثِيْرٍ
তোমাদের যে বিপদাপদ ঘটে, তা তো তোমাদেরই হাতের উপার্জন; অথচ তোমাদের অনেক অপরাধ তিনি ক্ষমা করে দেন। (সূরা শূরা- ৩০)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ যদি মানুষের সমস্ত দোষ-ত্রুটির জন্য পাকড়াও করতেন তাহলে তাদের জীবিতই রাখতেন না। তবে যে বিপদাপদ তাদের উপর আসে, তা কেবল সতর্কীকরণ হিসেবে দেয়া হয়েছে। যাতে তারা নিজেদের কাজকর্মের পর্যালোচনা করে দেখে যে, নিজেদের রবের বিরুদ্ধে তারা কী ধরনের আচরণ করছে। আর এ কথাও বুঝার চেষ্টা করে যে, যে আল্লাহর বিরুদ্ধে তারা বিদ্রোহ করছে তাঁর কাছে তারা কত অসহায়। এ ব্যাপারে খাঁটি মুমিনের জন্য আল্লাহর বিধান ভিন্ন। মুমিনের উপর যে দুঃখ-কষ্ট ও বিপদাপদ পতিত হয়, তা তার গোনাহ ও ত্রুটি-বিচ্যুতিসমূহের কাফ্ফারা হয়ে যায়। রাসূল ﷺ বলেন, ‘‘মুসলিম ব্যক্তি যে কোন দুঃখ-কষ্টের সম্মুখীন হোক না কেন- এমনকি একটি কাঁটা বিদ্ধ হলেও আল্লাহ তাকে তার কোন না কোন গোনাহের কাফ্ফারা বানিয়ে দেন।’’ (সহীহ বুখারী, হা/৫৬৪০)
যখন আযাব আসবে তখন কেউই বাঁচতে পারবে না :
وَاتَّقُوْا فِتْنَةً لَّا تُصِيْبَنَّ الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا مِنْكُمْ خَآصَّةًۚ وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
তোমরা এমন ফিতনাকে ভয় করো, যা বিশেষ করে তোমাদের মধ্যে যারা যালিম কেবল তাদেরকেই স্পর্শ করবে না (বরং সকলকেই স্পর্শ করবে)। জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে খুবই কঠোর। (সূরা আনফাল- ২৫)
ব্যাখ্যা : শুধুমাত্র যারা গোনাহ করে তারাই এ ধ্বংসের শিকার হয় না বরং তারাও এর শিকার হয়, যারা এ পাপাচারে জর্জরিত সমাজে বসবাস করা সহ্য করে নেয়। যখন সমাজের সামষ্টিক বিবেক দুর্বল হয়ে পড়ে, নৈতিক অনিষ্টগুলোকে দমিয়ে রাখা হয় না, সমাজে অসৎ ও দুশ্চরিত্রবান লোকেরা অন্যায় ছড়াতে থাকে, সৎ লোকেরা নিষ্কর্মা হয়ে নিজেদের ব্যক্তিগত সততা ও সদগুণাবলি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকে এবং সামাজিক দুষ্কৃতির ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করে, তখন সামগ্রিকভাবে গোটা সমাজের উপর দুর্ভোগ নেমে আসে। এ সময় এমন ব্যাপক দুর্যোগ সৃষ্টি হয়, যার ফলে ছোট-বড়, সবল-দুর্বল সবাই সমানভাবে বিপর্যস্ত হয়। কাজেই আল্লাহর বক্তব্যের মর্ম হচ্ছে, রাসূল ﷺ যে সংস্কার ও হেদায়াতের দিকে আহবান জানাচ্ছেন, তার মধ্যেই রয়েছে ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনের নিশ্চয়তা। যদি সমাজের বুকে যেসব দুষ্কৃতি ছড়িয়ে রয়েছে সেগুলোকে সহ্য করে যাওয়া হয়, তাহলে ব্যাপক বিপর্যয় দেখা দেবে। যদিও তোমাদের মধ্যে এমন অনেক লোক থাকে, যারা কার্যত দুষ্কৃতিতে লিপ্ত হয় না; তবুও এ ব্যাপক বিপদ তোমাদেরকে আচ্ছন্ন করে ফেলবে।
আল্লাহ প্রত্যেক অপরাধী জাতিকেই পাকড়াও করেছেন :
اَوَلَمْ يَسِيْرُوْا فِى الْاَرْضِ فَيَنْظُرُوْا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الَّذِيْنَ كَانُوْا مِنْ قَبْلِهِمْ ؕ كَانُوْا هُمْ اَشَدَّ مِنْهُمْ قُوَّةً وَّ اٰثَارًا فِى الْاَرْضِ فَاَخَذَهُمُ اللهُ بِذُنُوْبِهِمْؕ وَمَا كَانَ لَهُمْ مِّنَ اللهِ مِنْ وَّاقٍ
তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করে না? তাহলে দেখতে পেত যে, তাদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কী হয়েছিল? পৃথিবীতে তারা ছিল এদের চেয়ে শক্তিতে এবং কীর্তিতে প্রবল। অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে তাদের অপরাধের জন্য শাস্তি দিয়েছিলেন; আর আল্লাহ থেকে তাদেরকে রক্ষাকারী কেউ ছিল না। (সূরা মু’মিন- ২১)
মানুষকে সতর্ক করার জন্যই আল্লাহ এ ব্যবস্থা করেন :
وَلَنُذِيْقَنَّهُمْ مِّنَ الْعَذَابِ الْاَدْنٰى دُوْنَ الْعَذَابِ الْاَ كْبَرِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُوْنَ
নিশ্চয় আমি তাদেরকে সামান্য শাস্তি ভোগ করাব মহাশাস্তির পূর্বে, যেন তারা ফিরে আসে। (সূরা সাজদা- ২১)
ব্যাখ্যা : এখানে বড় শাস্তি বলতে আখিরাতের শাস্তিকে বুঝানো হয়েছে। কুফরী ও ফাসিকীর অপরাধে এ শাস্তি দেয়া হবে। এর বিপরীতে ‘ছোট শাস্তি’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে ইহকালীন জীবনে মানুষের উপর আবর্তিত যাবতীয় বিপদাপদ, যা দ্বারা তাদের কষ্ট অনুভূত হয়। যেমন ব্যক্তিগত জীবনে কঠিন রোগ, নিজের প্রিয়তম লোকদের মৃত্যু, ভয়াবহ দুর্ঘটনা, মারাত্মক ক্ষতি ও ব্যর্থতা ইত্যাদি। সামাজিক জীবনে ঝড়-তুফান, ভূমিকম্প, দুর্ভিক্ষ, যুদ্ধ এবং আরো বহু বিপদাপদ- যা লাখো লাখো কোটি কোটি মানুষকে প্রভাবিত করে। মূলত এসব বিপদাপদ অবতীর্ণ করার মাধ্যমে বড় শাস্তির আগেই মানুষকে সচেতন করে দেয়া হয়। দুনিয়ায় আল্লাহ মানুষকে একেবারেই আনন্দে রাখেননি। কেননা নিশ্চিন্তে ও আরামে জীবনের গাড়ি চলতে থাকলে মানুষ এ ভুল ধারণায় লিপ্ত হয় যে, সে-ই সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান। সুতরাং দুনিয়ার কোন শক্তিই তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। তাই আল্লাহ এমন ব্যবস্থা করে রেখেছেন, যার ফলে মাঝে মধ্যে বিভিন্ন ব্যক্তি, জাতি ও দেশের উপর এমনসব বিপদাপদ পাঠাতে থাকেন, যা তাদেরকে একদিকে নিজেদের অসহায়ত্ব এবং অন্যদিকে নিজেদের চেয়ে বড় এক মহাপরাক্রমশালীর অস্তিত্বের অনুভূতি দান করে। এগুলো দ্বারা প্রত্যেক ব্যক্তি, দল ও জাতিকে এ কথা স্মরণ করিয়ে দেয় যে, এগুলোর উপর তাদের কোন হস্তক্ষেপ নেই বরং অন্য একজন নিয়ন্ত্রক এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। সবকিছু তোমাদের হাতে দিয়ে দেয়া হয়নি। আসল ক্ষমতা রয়েছে তাঁর হাতে, যিনি কর্তৃত্ব সহকারে এসবকিছু সংঘটিত করে আসছেন। তাঁর কাছে তোমরা এতই দুর্বল যে, তোমাদের উপর তাঁর পক্ষ থেকে কোন বিপদ আসলে এর বিরুদ্ধে তোমরা কোন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পার না। এদিক দিয়ে বিচার করলে এ বিপদ নিছক বিপদ নয় বরং আল্লাহর সতর্ক সংকেত। মানুষকে সত্য জানানোর এবং তাঁর বিভ্রান্তি দূর করার জন্য একে পাঠানো হয়। এর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে যদি মানুষ দুনিয়াতেই নিজের বিশ্বাস ও কর্ম সংশোধন করে নেয়, তাহলে আখিরাতে আল্লাহর বড় শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে না।
তারপরও মানুষ সতর্ক হয় না :
اَوَلَا يَرَوْنَ اَنَّهُمْ يُفْتَنُوْنَ فِيْ كُلِّ عَامٍ مَّرَّةً اَوْ مَرَّتَيْنِ ثُمَّ لَا يَتُوْبُوْنَ وَلَا هُمْ يَذَّكَّرُوْنَ
তারা কি দেখে না যে, তাদেরকে প্রতি বৎসর একবার বা দু’বার বিপর্যস্ত করা হয়? এরপরও তারা তাওবা করে না এবং উপদেশ গ্রহণ করে না। (সূরা তাওবা- ১২৬)
খুব কম লোকই বিপদ থেকে শিক্ষা লাভ করে :
وَلَقَدْ اَرْسَلْنَاۤ اِلٰۤى اُمَمٍ مِّنْ قَبْلِكَ فَاَخَذْنَاهُمْ بِالْبَاْسَآءِ وَالضَّرَّآءِ لَعَلَّهُمْ يَتَضَرَّعُوْنَ – فَلَوْلَاۤ اِذْ جَآءَهُمْ بَاْسُنَا تَضَرَّعُوْا وَلٰكِنْ قَسَتْ قُلُوْبُهُمْ وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
তোমার পূর্বে আমি বহু জাতির নিকট রাসূল প্রেরণ করেছি। অতঃপর তাদেরকে অর্থ সংকট ও দুঃখ-কষ্ট দ্বারা পাকড়াও করেছি, যাতে তারা বিনীত হয়। অতঃপর যখন আমার শাস্তি তাদের উপর এসে গেল, তখন তারা কেন বিনীত হলো না? অধিকন্তু তাদের হৃদয় কঠিন হয়ে গিয়েছিল এবং তারা যা করছিল শয়তান তা তাদের দৃষ্টিতে শোভনীয় করে দিয়েছিল। (সূরা আন‘আম- ৪২, ৪৩)
বিপদ সরে গেলে মানুষ আবার নাফরমানি শুরু করে দেয় :
اِنَّا كَاشِفُوا الْعَذَابِ قَلِيْلًا اِنَّكُمْ عَآئِدُوْنَ
আমি (যদি) তোমাদের শাস্তি কিছুকালের জন্য সরিয়ে দেই, তবে তোমরা তো পুনরায় তাই করবে।
(সূরা দুখান- ১৫)
মানুষের উপর একের পর এক বিপদ আসতেই থাকে :
وَلَا يَزَالُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا تُصِيْبُهُمْ بِمَا صَنَعُوْا قَارِعَةٌ اَوْ تَحُلُّ قَرِيْبًا مِّنْ دَارِهِمْ حَتّٰى يَاْتِيَ وَعْدُ اللهِ اِنَّ اللهَ لَا يُخْلِفُ الْمِيْعَادَ
যারা কুফরী করেছে তাদের কর্মফলের জন্য তাদের বিপর্যয় ঘটতেই থাকবে, অথবা বিপর্যয় তাদের আশেপাশে আপতিত হতেই থাকবে, যতক্ষণ পর্যমত্ম না আল্লাহর প্রতিশ্রুতি দিবস উপস্থিত হবে। নিশ্চয় আল্লাহ প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম করেন না। (সূরা রা‘দ- ৩১)
আযাব থেকে বাঁচার উপায় হলো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা :
مَا يَفْعَلُ اللهُ بِعَذَابِكُمْ اِنْ شَكَرْتُمْ وَاٰمَنْتُمْؕ وَكَانَ اللهُ شَاكِرًا عَلِيْمًا
তোমরা যদি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর ও ঈমান আনয়ন কর, তবে তোমাদেরকে শাস্তি দিয়ে আল্লাহর কী লাভ? আর আল্লাহ তো মহাপুরস্কারদাতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা নিসা- ১৪৭)
আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া :
وَمَا كَانَ اللهُ لِيُعَذِّبَهُمْ وَاَنْتَ فِيْهِمْؕ وَمَا كَانَ اللهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ
আল্লাহ এমন নন যে, তুমি তাদের মধ্যে থাকবে অথচ তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন। আর আল্লাহ এমনও নন যে, তারা ক্ষমাপ্রার্থনা করবে অথচ তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন। (সূরা আনফাল- ৩৩)
লাঞ্ছনা ও দুর্ভিক্ষ :
وَضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ الذِّلَّةُ وَالْمَسْكَنَةُۗ وَبَآءُوْا بِغَضَبٍ مِّنَ اللهِؕ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ كَانُوْا يَكْفُرُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِ وَيَقْتُلُوْنَ النَّبِيِّيْنَ بِغَيْرِ الْحَقِّؕ ذٰلِكَ بِمَا عَصَوْا وَّكَانُوْا يَعْتَدُوْنَ
তাদের উপর লাঞ্ছনা ও দারিদ্র্যতা নিপতিত হলো এবং তারা আল্লাহর ক্রোধে পতিত হলো। এটা এজন্য যে, নিশ্চয় তারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করত এবং নবীদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করত। আর এ কারণেও যে, তারা অবাধ্যাচারণ করেছিল এবং সীমালঙ্ঘন করেছিল। (সূরা বাক্বারা- ৬১)
লাঞ্ছনা-অপমান :
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ مَّنَعَ مَسَاجِدَ اللهِ اَنْ يُّذْكَرَ فِيْهَا اسْمُهٗ وَسَعٰى فِيْ خَرَابِهَاؕ اُولٰٓئِكَ مَا كَانَ لَهُمْ اَنْ يَّدْخُلُوْهَاۤ اِلَّا خَآئِفِيْنَؕ لَهُمْ فِى الدُّنْيَا خِزْيٌ وَّلَهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ
তার চেয়ে বড় যালিম আর কে আছে, যে আল্লাহর মসজিদসমূহের মধ্যে তাঁর নাম উচ্চারণ করতে নিষেধ করে এবং তা ধ্বংস করতে চেষ্টা করে। অথচ এ ধরনের ব্যক্তিদেরকে তাতে ভীত অবস্থায় প্রবেশ করা উচিত। তাদের জন্য দুনিয়ায় লাঞ্ছনা এবং আখিরাতে মহাশাস্তি (প্রস্তুত) রয়েছে। (সূরা বাক্বারা- ১১৪)
বানরে পরিণত করা :
وَلَقَدْ عَلِمْتُمُ الَّذِيْنَ اعْتَدَوْا مِنْكُمْ فِى السَّبْتِ فَقُلْنَا لَهُمْ كُوْنُوْا قِرَدَةً خَاسِئِيْنَ
অবশ্যই তোমরা অবগত আছ যে, তোমাদের মধ্যে যারা শনিবারের ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করেছিল আমি তাদেরকে বলেছিলাম, তোমরা ঘৃণিত বানর হয়ে যাও। (সূরা বাক্বারা- ৬৫)
প্রাণী দ্বারা ধ্বংস করা :
اَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِاَصْحَابِ الْفِيْلِ – اَلَمْ يَجْعَلْ كَيْدَهُمْ فِيْ تَضْلِيْلٍ ‐ وَاَرْسَلَ عَلَيْهِمْ طَيْرًا اَبَابِيْلَ – تَرْمِيْهِمْ بِحِجَارَةٍ مِّنْ سِجِّيْلٍ – فَجَعَلَهُمْ كَعَصْفٍ مَّاْكُوْلٍ
তুমি কি দেখনি, তোমার প্রতিপালক (কা‘বাঘর ধ্বংসের জন্য আগত) হাতিওয়ালাদের সাথে কিরূপ আচরণ করেছেন? তিনি কি (সে সময়) তাদের যাবতীয় ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেননি? তিনি তাদের উপর (ঝাঁকে ঝাঁকে) আবাবীল পাখী পাঠিয়েছেন। তারা তাদের উপর পাথরের টুকরো নিক্ষেপ করেছিল। অতঃপর তিনি তাদেরকে জন্তু জানোয়ারের চর্বিত ঘাস-পাতার মতো করে দিলেন। (সূরা ফীল)
প্রবল বাতাস, বিকট শব্দ, ভূমি ধস ও পানিতে ডুবানো :
فَكُلًّا اَخَذْنَا بِذَنْۢبِهٖۚ فَمِنْهُمْ مَّنْ اَرْسَلْنَا عَلَيْهِ حَاصِبًاۚ وَمِنْهُمْ مَّنْ اَخَذَتْهُ الصَّيْحَةُۚ وَمِنْهُمْ مَّنْ خَسَفْنَا بِهِ الْاَرْضَۚ وَمِنْهُمْ مَّنْ اَغْرَقْنَاۚ وَمَا كَانَ اللهُ لِيَظْلِمَهُمْ وَلٰكِنْ كَانُوْاۤ اَنْفُسَهُمْ يَظْلِمُوْنَ
তাদের প্রত্যেককেই আমি তার অপরাধের জন্য শাস্তি দিয়েছিলাম। তাদের কারো প্রতি প্রেরণ করেছি প্রস্তরসহ প্রবল বাতাস, তাদের কাউকে আঘাত করেছিল বিকট শব্দ, কাউকে জমিনে ধসিয়ে দিয়েছিলাম, আবার কাউকে (পানিতে) নিমজ্জিত করেছিলাম। আল্লাহ তাদের প্রতি কোন যুলুম করেননি, বরং তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি যুলুম করেছিল। (সূরা আনকাবূত- ৪০)
মানুষের উপর মানুষের নির্যাতন :
قُلْ هُوَ الْقَادِرُ عَلٰۤى اَنْ يَّبْعَثَ عَلَيْكُمْ عَذَابًا مِّنْ فَوْقِكُمْ اَوْ مِنْ تَحْتِ اَرْجُلِكُمْ اَوْ يَلْبِسَكُمْ شِيَعًا وَّيُذِيْقَ بَعْضَكُمْ بَاْسَ بَعْضٍ
বলো, তিনি তোমাদের ঊর্ধ্বদেশ অথবা পাদদেশ হতে শাস্তি প্রেরণ করতে, অথবা তোমাদেরকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে একদলকে অপর দলের দ্বারা শাস্তি প্রদান করতে (পরিপূর্ণভাবে) সক্ষম। (সূরা আন‘আম- ৬৫)
ব্যাখ্যা : জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, যে সময় উপর থকে শাসিত্মত পাঠানোর আয়াতাংশ অবতীর্ণ হলো, তখন নবী ﷺ বললেন, হে আল্লাহ! আমি তোমার মহান সত্তার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। তারপর যখন পায়ের নীচ থেকে আযাব পাঠানোর আয়াতাংশ অবতীর্ণ হলো, তখনো তিনি বললেন, হে আল্লাহ! আমি (এ আযাব থেকেও) তোমার মহান সত্তার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। অতঃপর যখন বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে একদলকে অন্যদলের দ্বারা শাসিত্মত দেয়ার আয়াতাংশ নাযিল হলো তখন রাসূল ﷺ বললেন, এটা বরং (আগের দু’টির চেয়ে) সহজতর। (সহীহ বুখারী, হা/৪৬২৮)
وَضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ الذِّلَّةُ وَالْمَسْكَنَةُۗ وَبَآءُوْا بِغَضَبٍ مِّنَ اللهِؕ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ كَانُوْا يَكْفُرُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِ وَيَقْتُلُوْنَ النَّبِيِّيْنَ بِغَيْرِ الْحَقِّؕ ذٰلِكَ بِمَا عَصَوْا وَّكَانُوْا يَعْتَدُوْنَ
তাদের উপর লাঞ্ছনা ও দারিদ্র্যতা নিপতিত হলো এবং তারা আল্লাহর ক্রোধে পতিত হলো। এটা এজন্য যে, নিশ্চয় তারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করত এবং নবীদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করত। আর এ কারণেও যে, তারা অবাধ্যাচারণ করেছিল এবং সীমালঙ্ঘন করেছিল। (সূরা বাক্বারা- ৬১)
লাঞ্ছনা-অপমান :
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ مَّنَعَ مَسَاجِدَ اللهِ اَنْ يُّذْكَرَ فِيْهَا اسْمُهٗ وَسَعٰى فِيْ خَرَابِهَاؕ اُولٰٓئِكَ مَا كَانَ لَهُمْ اَنْ يَّدْخُلُوْهَاۤ اِلَّا خَآئِفِيْنَؕ لَهُمْ فِى الدُّنْيَا خِزْيٌ وَّلَهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ
তার চেয়ে বড় যালিম আর কে আছে, যে আল্লাহর মসজিদসমূহের মধ্যে তাঁর নাম উচ্চারণ করতে নিষেধ করে এবং তা ধ্বংস করতে চেষ্টা করে। অথচ এ ধরনের ব্যক্তিদেরকে তাতে ভীত অবস্থায় প্রবেশ করা উচিত। তাদের জন্য দুনিয়ায় লাঞ্ছনা এবং আখিরাতে মহাশাস্তি (প্রস্তুত) রয়েছে। (সূরা বাক্বারা- ১১৪)
বানরে পরিণত করা :
وَلَقَدْ عَلِمْتُمُ الَّذِيْنَ اعْتَدَوْا مِنْكُمْ فِى السَّبْتِ فَقُلْنَا لَهُمْ كُوْنُوْا قِرَدَةً خَاسِئِيْنَ
অবশ্যই তোমরা অবগত আছ যে, তোমাদের মধ্যে যারা শনিবারের ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করেছিল আমি তাদেরকে বলেছিলাম, তোমরা ঘৃণিত বানর হয়ে যাও। (সূরা বাক্বারা- ৬৫)
প্রাণী দ্বারা ধ্বংস করা :
اَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِاَصْحَابِ الْفِيْلِ – اَلَمْ يَجْعَلْ كَيْدَهُمْ فِيْ تَضْلِيْلٍ ‐ وَاَرْسَلَ عَلَيْهِمْ طَيْرًا اَبَابِيْلَ – تَرْمِيْهِمْ بِحِجَارَةٍ مِّنْ سِجِّيْلٍ – فَجَعَلَهُمْ كَعَصْفٍ مَّاْكُوْلٍ
তুমি কি দেখনি, তোমার প্রতিপালক (কা‘বাঘর ধ্বংসের জন্য আগত) হাতিওয়ালাদের সাথে কিরূপ আচরণ করেছেন? তিনি কি (সে সময়) তাদের যাবতীয় ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেননি? তিনি তাদের উপর (ঝাঁকে ঝাঁকে) আবাবীল পাখী পাঠিয়েছেন। তারা তাদের উপর পাথরের টুকরো নিক্ষেপ করেছিল। অতঃপর তিনি তাদেরকে জন্তু জানোয়ারের চর্বিত ঘাস-পাতার মতো করে দিলেন। (সূরা ফীল)
প্রবল বাতাস, বিকট শব্দ, ভূমি ধস ও পানিতে ডুবানো :
فَكُلًّا اَخَذْنَا بِذَنْۢبِهٖۚ فَمِنْهُمْ مَّنْ اَرْسَلْنَا عَلَيْهِ حَاصِبًاۚ وَمِنْهُمْ مَّنْ اَخَذَتْهُ الصَّيْحَةُۚ وَمِنْهُمْ مَّنْ خَسَفْنَا بِهِ الْاَرْضَۚ وَمِنْهُمْ مَّنْ اَغْرَقْنَاۚ وَمَا كَانَ اللهُ لِيَظْلِمَهُمْ وَلٰكِنْ كَانُوْاۤ اَنْفُسَهُمْ يَظْلِمُوْنَ
তাদের প্রত্যেককেই আমি তার অপরাধের জন্য শাস্তি দিয়েছিলাম। তাদের কারো প্রতি প্রেরণ করেছি প্রস্তরসহ প্রবল বাতাস, তাদের কাউকে আঘাত করেছিল বিকট শব্দ, কাউকে জমিনে ধসিয়ে দিয়েছিলাম, আবার কাউকে (পানিতে) নিমজ্জিত করেছিলাম। আল্লাহ তাদের প্রতি কোন যুলুম করেননি, বরং তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি যুলুম করেছিল। (সূরা আনকাবূত- ৪০)
মানুষের উপর মানুষের নির্যাতন :
قُلْ هُوَ الْقَادِرُ عَلٰۤى اَنْ يَّبْعَثَ عَلَيْكُمْ عَذَابًا مِّنْ فَوْقِكُمْ اَوْ مِنْ تَحْتِ اَرْجُلِكُمْ اَوْ يَلْبِسَكُمْ شِيَعًا وَّيُذِيْقَ بَعْضَكُمْ بَاْسَ بَعْضٍ
বলো, তিনি তোমাদের ঊর্ধ্বদেশ অথবা পাদদেশ হতে শাস্তি প্রেরণ করতে, অথবা তোমাদেরকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে একদলকে অপর দলের দ্বারা শাস্তি প্রদান করতে (পরিপূর্ণভাবে) সক্ষম। (সূরা আন‘আম- ৬৫)
ব্যাখ্যা : জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, যে সময় উপর থকে শাসিত্মত পাঠানোর আয়াতাংশ অবতীর্ণ হলো, তখন নবী ﷺ বললেন, হে আল্লাহ! আমি তোমার মহান সত্তার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। তারপর যখন পায়ের নীচ থেকে আযাব পাঠানোর আয়াতাংশ অবতীর্ণ হলো, তখনো তিনি বললেন, হে আল্লাহ! আমি (এ আযাব থেকেও) তোমার মহান সত্তার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। অতঃপর যখন বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে একদলকে অন্যদলের দ্বারা শাসিত্মত দেয়ার আয়াতাংশ নাযিল হলো তখন রাসূল ﷺ বললেন, এটা বরং (আগের দু’টির চেয়ে) সহজতর। (সহীহ বুখারী, হা/৪৬২৮)
হঠাৎ করে আসতে পারে :
قُلْ اَرَاَيْتَكُمْ اِنْ اَتَاكُمْ عَذَابُ اللهِ بَغْتَةً اَوْ جَهْرَةً هَلْ يُهْلَكُ اِلَّا الْقَوْمُ الظَّالِمُوْنَ
বলো, তোমরা কি ভেবে দেখেছ যে, আল্লাহর শাস্তি আকস্মাৎ অথবা প্রকাশ্যে তোমাদের উপর এসে পড়লে যালিম সম্প্রদায় ব্যতীত আর কেউ ধ্বংস হবে কি? (সূরা আন‘আম- ৪৭)
এমনভাবে আসবে যে মানুষ টেরও পাবে না :
اَفَاَمِنَ الَّذِيْنَ مَكَرُوا السَّيِّئَاتِ اَنْ يَّخْسِفَ اللهُ بِهِمُ الْاَرْضَ اَوْ يَاْتِيَهُمُ الْعَذَابُ مِنْ حَيْثُ لَا يَشْعُرُوْنَ
যারা কুকর্মের ষড়যন্ত্র করে তারা কি এ বিষয়ে নিরাপদ হয়েছে যে, আল্লাহ তাদেরকে ভূগর্ভে বিলীন করবেন না অথবা এমন দিক হতে শাসিত্ম আসবে না, যা তাদের ধারণাতীত? (সূরা নাহল- ৪৫)
রাত-দিন যে কোন সময় আসতে পারে :
قُلْ اَرَاَيْتُمْ اِنْ اَتَاكُمْ عَذَابُهٗ بَيَاتًا اَوْ نَهَارًا مَّاذَا يَسْتَعْجِلُ مِنْهُ الْمُجْرِمُوْنَ
বলো, তোমরা কি ভেবে দেখেছ যে, যদি তাঁর শাস্তি তোমাদের উপর রজনীতে অথবা দিবসে এসে পড়ে (তবে কি অবস্থা হবে)? তাহলে কি অপরাধীরা তা ত্বরান্বিত করতে চায়? (সূরা ইউনুস- ৫০)
ঘুরাফেরার সময়ও আসতে পারে :
اَوْ يَاْخُذَهُمْ فِيْ تَقَلُّبِهِمْ فَمَا هُمْ بِمُعْجِزِيْنَ – اَوْ يَاْخُذَهُمْ عَلٰى تَخَوُّفٍؕ فَاِنَّ رَبَّكُمْ لَرَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ
অথবা চলাফেরা করতে থাকাকালে তিনি কি তাদেরকে পাকড়াও করবেন না? তারা তো এটা ব্যর্থ করতে পারবে না। অথবা তাদেরকে তিনি কি ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় পাকড়াও করবেন না? নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক খুবই দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। (সূরা নাহল- ৪৬, ৪৭)
খেলাধুলার সময়ও আযাব আসতে পারে :
اَوَاَمِنَ اَهْلُ الْقُرٰۤى اَنْ يَّاْتِيَهُمْ بَاْسُنَا ضُحًى وَّهُمْ يَلْعَبُوْنَ
অথবা জনপদের অধিবাসীরা কি ভয় রাখে না যে, আমার শাস্তি তাদের উপর আসবে পূর্বাহ্নে; যখন তারা থাকবে ক্রীড়ারত অবস্থায়? (সূরা আ‘রাফ- ৯৮)
ঘুমের সময়ও আসতে পারে :
وَكَمْ مِّنْ قَرْيَةٍ اَهْلَكْنَاهَا فَجَآءَهَا بَاْسُنَا بَيَاتًا اَوْ هُمْ قَآئِلُوْنَ ‐ فَمَا كَانَ دَعْوَاهُمْ اِذْ جَآءَهُمْ بَاْسُنَاۤ اِلَّاۤ اَنْ قَالُوْاۤ اِنَّا كُنَّا ظَالِمِيْنَ
আমি কত জনপদকে ধ্বংস করেছি! আমার শাস্তি তাদের উপর পতিত হয়েছিল রাতে অথবা দ্বিপ্রহরে, যখন তারা বিশ্রামরত ছিল। যখন আমার শাস্তি তাদের উপর পতিত হয়েছিল তখন তাদের কথা শুধু এটাই ছিল যে, নিশ্চয় আমরা ছিলাম যালিম। (সূরা আ‘রাফ- ৪, ৫)
اَفَاَمِنَ اَهْلُ الْقُرٰۤى اَنْ يَّاْتِيَهُمْ بَاْسُنَا بَيَاتًا وَّهُمْ نَآئِمُوْنَ
তবে কি জনপদের অধিবাসীরা এ ভয় রাখে না যে, আমার শাস্তি তাদের উপর রাত্রিতেও আসতে পারে, যখন তারা থাকবে নিদ্রামগ্ন অবস্থায়? (সূরা আ‘রাফ- ৯৭)
ব্যাখ্যা : তোমরা পালিয়ে এমন কোন জায়গায় চলে যেতে পার না, যেখানে গিয়ে আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাঁচতে পার। তোমরা ভূগর্ভের তলদেশে কোথাও নেমে যাও অথবা আকাশের কোন উচ্চ স্থানে পৌঁছে যাও না কেন, সব জায়গা থেকেই তোমাদেরকে ধরে আনা হবে এবং তোমাদের প্রতিপালকের সামনে উপস্থিত করা হবে। আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্ব ও শাসন থেকে বের হওয়ার শক্তি তোমাদের নেই। তোমাদের এমন কোন অভিভাবক, পৃষ্ঠপোষক বা সাহায্যকারীও নেই, যে আল্লাহর মুকাবিলায় তোমাদের আশ্রয় দিতে পারে এবং তাঁর কাছে জবাবদিহি থেকে তোমাদেরকে বাঁচাতে পারে। যারা আল্লাহর বিধান অস্বীকার করেছে, সমগ্র বিশ্ব তাদের সাহায্যকারী হিসেবে দাঁড়িয়ে গেলেও আল্লাহর আযাবের ফায়সালাকে ঠেকিয়ে রাখার ক্ষমতা কারো নেই। অথবা সমগ্র বিশ্বে এমন একজনও নেই যে আল্লাহর আদালতে দাঁড়িয়ে এ কথা বলার সাহস রাখে যে, এরা আমার লোক; কাজেই এরা যা কিছু করেছে তা ÿমা করে দেয়া হোক।
قُلْ اَرَاَيْتَكُمْ اِنْ اَتَاكُمْ عَذَابُ اللهِ بَغْتَةً اَوْ جَهْرَةً هَلْ يُهْلَكُ اِلَّا الْقَوْمُ الظَّالِمُوْنَ
বলো, তোমরা কি ভেবে দেখেছ যে, আল্লাহর শাস্তি আকস্মাৎ অথবা প্রকাশ্যে তোমাদের উপর এসে পড়লে যালিম সম্প্রদায় ব্যতীত আর কেউ ধ্বংস হবে কি? (সূরা আন‘আম- ৪৭)
এমনভাবে আসবে যে মানুষ টেরও পাবে না :
اَفَاَمِنَ الَّذِيْنَ مَكَرُوا السَّيِّئَاتِ اَنْ يَّخْسِفَ اللهُ بِهِمُ الْاَرْضَ اَوْ يَاْتِيَهُمُ الْعَذَابُ مِنْ حَيْثُ لَا يَشْعُرُوْنَ
যারা কুকর্মের ষড়যন্ত্র করে তারা কি এ বিষয়ে নিরাপদ হয়েছে যে, আল্লাহ তাদেরকে ভূগর্ভে বিলীন করবেন না অথবা এমন দিক হতে শাসিত্ম আসবে না, যা তাদের ধারণাতীত? (সূরা নাহল- ৪৫)
রাত-দিন যে কোন সময় আসতে পারে :
قُلْ اَرَاَيْتُمْ اِنْ اَتَاكُمْ عَذَابُهٗ بَيَاتًا اَوْ نَهَارًا مَّاذَا يَسْتَعْجِلُ مِنْهُ الْمُجْرِمُوْنَ
বলো, তোমরা কি ভেবে দেখেছ যে, যদি তাঁর শাস্তি তোমাদের উপর রজনীতে অথবা দিবসে এসে পড়ে (তবে কি অবস্থা হবে)? তাহলে কি অপরাধীরা তা ত্বরান্বিত করতে চায়? (সূরা ইউনুস- ৫০)
ঘুরাফেরার সময়ও আসতে পারে :
اَوْ يَاْخُذَهُمْ فِيْ تَقَلُّبِهِمْ فَمَا هُمْ بِمُعْجِزِيْنَ – اَوْ يَاْخُذَهُمْ عَلٰى تَخَوُّفٍؕ فَاِنَّ رَبَّكُمْ لَرَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ
অথবা চলাফেরা করতে থাকাকালে তিনি কি তাদেরকে পাকড়াও করবেন না? তারা তো এটা ব্যর্থ করতে পারবে না। অথবা তাদেরকে তিনি কি ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় পাকড়াও করবেন না? নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক খুবই দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। (সূরা নাহল- ৪৬, ৪৭)
খেলাধুলার সময়ও আযাব আসতে পারে :
اَوَاَمِنَ اَهْلُ الْقُرٰۤى اَنْ يَّاْتِيَهُمْ بَاْسُنَا ضُحًى وَّهُمْ يَلْعَبُوْنَ
অথবা জনপদের অধিবাসীরা কি ভয় রাখে না যে, আমার শাস্তি তাদের উপর আসবে পূর্বাহ্নে; যখন তারা থাকবে ক্রীড়ারত অবস্থায়? (সূরা আ‘রাফ- ৯৮)
ঘুমের সময়ও আসতে পারে :
وَكَمْ مِّنْ قَرْيَةٍ اَهْلَكْنَاهَا فَجَآءَهَا بَاْسُنَا بَيَاتًا اَوْ هُمْ قَآئِلُوْنَ ‐ فَمَا كَانَ دَعْوَاهُمْ اِذْ جَآءَهُمْ بَاْسُنَاۤ اِلَّاۤ اَنْ قَالُوْاۤ اِنَّا كُنَّا ظَالِمِيْنَ
আমি কত জনপদকে ধ্বংস করেছি! আমার শাস্তি তাদের উপর পতিত হয়েছিল রাতে অথবা দ্বিপ্রহরে, যখন তারা বিশ্রামরত ছিল। যখন আমার শাস্তি তাদের উপর পতিত হয়েছিল তখন তাদের কথা শুধু এটাই ছিল যে, নিশ্চয় আমরা ছিলাম যালিম। (সূরা আ‘রাফ- ৪, ৫)
اَفَاَمِنَ اَهْلُ الْقُرٰۤى اَنْ يَّاْتِيَهُمْ بَاْسُنَا بَيَاتًا وَّهُمْ نَآئِمُوْنَ
তবে কি জনপদের অধিবাসীরা এ ভয় রাখে না যে, আমার শাস্তি তাদের উপর রাত্রিতেও আসতে পারে, যখন তারা থাকবে নিদ্রামগ্ন অবস্থায়? (সূরা আ‘রাফ- ৯৭)
ব্যাখ্যা : তোমরা পালিয়ে এমন কোন জায়গায় চলে যেতে পার না, যেখানে গিয়ে আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাঁচতে পার। তোমরা ভূগর্ভের তলদেশে কোথাও নেমে যাও অথবা আকাশের কোন উচ্চ স্থানে পৌঁছে যাও না কেন, সব জায়গা থেকেই তোমাদেরকে ধরে আনা হবে এবং তোমাদের প্রতিপালকের সামনে উপস্থিত করা হবে। আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্ব ও শাসন থেকে বের হওয়ার শক্তি তোমাদের নেই। তোমাদের এমন কোন অভিভাবক, পৃষ্ঠপোষক বা সাহায্যকারীও নেই, যে আল্লাহর মুকাবিলায় তোমাদের আশ্রয় দিতে পারে এবং তাঁর কাছে জবাবদিহি থেকে তোমাদেরকে বাঁচাতে পারে। যারা আল্লাহর বিধান অস্বীকার করেছে, সমগ্র বিশ্ব তাদের সাহায্যকারী হিসেবে দাঁড়িয়ে গেলেও আল্লাহর আযাবের ফায়সালাকে ঠেকিয়ে রাখার ক্ষমতা কারো নেই। অথবা সমগ্র বিশ্বে এমন একজনও নেই যে আল্লাহর আদালতে দাঁড়িয়ে এ কথা বলার সাহস রাখে যে, এরা আমার লোক; কাজেই এরা যা কিছু করেছে তা ÿমা করে দেয়া হোক।
যারা পাপের মধ্যে ডুবে থাকে তারা জাহান্নামে যাবে :
بَلٰى مَنْ كَسَبَ سَيِّئَةً وَّاَحَاطَتْ بِهٖ خَطِيْٓئَتُهٗ فَاُولٰٓئِكَ اَصْحَابُ النَّارِۚ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
হ্যাঁ, যে ব্যক্তি পাপ অর্জন করেছে এবং স্বীয় পাপের দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়েছে, বস্তুত তারাই জাহান্নামের অধিবাসী; সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে। (সূরা বাক্বারা- ৮১)
পাপীরা নিজেদের পিঠে পাপের বোঝা বহন করবে :
وَهُمْ يَحْمِلُوْنَ اَوْزَارَهُمْ عَلٰى ظُهُوْرِهِمْؕ اَ لَا سَآءَ مَا يَزِرُوْنَ
তারা তাদের পিঠে নিজেদের পাপ বহন করবে। সাবধান, তারা যা বহন করবে তা খুবই নিকৃষ্ট! (সূরা আন‘আম- ৩১)
পাপের প্রবর্তকরা পরবর্তীদের পাপের বোঝাও বহন করবে :
لِيَحْمِلُوْاۤ اَوْزَارَهُمْ كَامِلَةً يَّوْمَ الْقِيَامَةِ وَمِنْ اَوْزَارِ الَّذِيْنَ يُضِلُّوْنَهُمْ بِغَيْرِ عِلْمٍؕ اَ لَا سَآءَ مَا يَزِرُوْنَ
ফলে কিয়ামত দিবসে তারা তাদের পাপভার পূর্ণমাত্রায় বহন করবে এবং তাদেরও পাপভার (বহন করবে) যাদেরকে তারা অজ্ঞতাবশত বিভ্রামত্ম করেছে। সাবধান! তারা যা বহন করবে তা খুবই নিকৃষ্ট! (সূরা নাহল- ২৫)
কিয়ামতের দিন তাদের চোখ আলোহীন হয়ে যাবে :
يَوْمَ يُنْفَخُ فِى الصُّوْرِ وَنَحْشُرُ الْمُجْرِمِيْنَ يَوْمَئِذٍ زُرْقًا
যেদিন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে এবং যেদিন আমি অপরাধীদেরকে দৃষ্টিহীন অবস্থায় সমবেত করব। (সূরা ত্বা-হা- ১০২)
ব্যাখ্যা : চোখ সাদাটে ও নীলচে ভাব ধারণ করবে। কারণ আতঙ্কে তাদের রক্ত শুকিয়ে যাবে। তাদের অবস্থা এমন হবে যে, যেন তাদের শরীরে এক বিন্দু রক্তও নেই। যখন কারো চোখ আলোহীন হয়ে পড়ে তখন তার চোখের মনি সাদা হয়ে যায়।
কিয়ামতের দিন পাপীদের জন্য কোন সুসংবাদ থাকবে না :
يَوْمَ يَرَوْنَ الْمَلَآئِكَةَ لَا بُشْرٰى يَوْمَئِذٍ لِّلْمُجْرِمِيْنَ وَيَقُوْلُوْنَ حِجْرًا مَّحْجُوْرًا
যেদিন তারা ফেরেশতাদেরকে প্রত্যক্ষ করবে, সেদিন অপরাধীদের জন্য কোন সুসংবাদ থাকবে না। তখন তারা বলবে, ‘রক্ষা করো, রক্ষা করো।’ (সূরা ফুরক্বান- ২২)
সেদিন পাপীরা হতাশ হয়ে পড়বে :
وَيَوْمَ تَقُوْمُ السَّاعَةُ يُبْلِسُ الْمُجْرِمُوْنَ
আর যেদিন কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে, সেদিন পাপীরা হতাশ হয়ে পড়বে। (সূরা রূম- ১২)
তাদেরকে পাপের চিহ্ন দ্বারা চেনা যাবে :
يُعْرَفُ الْمُجْرِمُوْنَ بِسِيْمَاهُمْ فَيُؤْخَذُ بِالنَّوَاصِيْ وَالْاَقْدَامِ
অপরাধীদেরকে তাদের চেহারার আলামত দ্বারা চেনা যাবে। অতঃপর তাদেরকে পাকড়াও করা হবে কপাল (চুলের ঝুঁটি) ও পা ধরে। (সূরা আর রহমান- ৪১)
তারা মাথা নত করে থাকবে :
وَلَوْ تَرٰۤى اِذِ الْمُجْرِمُوْنَ نَاكِسُوْا رُءُوْسِهِمْ عِنْدَ رَبِّهِمْؕ رَبَّنَاۤ اَبْصَرْنَا وَسَمِعْنَا فَارْجِعْنَا نَعْمَلْ صَالِحًا اِنَّا مُوْقِنُوْنَ
আর যদি আপনি দেখতেন, যখন পাপীরা তাদের প্রতিপালকের সামনে স্বীয় মাথা নীচু করে বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা দেখলাম ও শ্রবণ করলাম, এখন আপনি আমাদেরকে পুনরায় (পৃথিবীতে) প্রেরণ করুন; আমরা নেক কাজ করব। এখন আমরা দৃঢ় বিশ্বাসী হয়েছি। (সূরা সাজদা- ১২)
তারা শিকলে বাঁধা থাকবে :
وَتَرَى الْمُجْرِمِيْنَ يَوْمَئِذٍ مُّقَرَّنِيْنَ فِى الْاَصْفَادِ
সেদিন তুমি অপরাধীদেরকে দেখবে শৃঙ্খলিত অবস্থায়। (সূরা ইবরাহীম- ৪৯)
পাপীরা আমলনামা দেখে ভয় পাবে :
وَوُضِعَ الْكِتَابُ فَتَرَى الْمُجْرِمِيْنَ مُشْفِقِيْنَ مِمَّا فِيْهِ وَيَقُوْلُوْنَ يَا وَيْلَتَنَا مَالِ هٰذَا الْكِتَابِ لَا يُغَادِرُ صَغِيْرَةً وَّلَا كَبِيْرَةً اِلَّاۤ اَحْصَاهَاۚ وَوَجَدُوْا مَا عَمِلُوْا حَاضِرًاؕ وَلَا يَظْلِمُ رَبُّكَ اَحَدًا
অতঃপর কিতাব (আমলনামা) উপস্থিত করা হবে। তখন তুমি তাতে যা লিপিবদ্ধ আছে তার কারণে অপরাধীদেরকে ভীত অবস্থায় দেখতে পাবে। এমতাবস্থায় তারা বলতে থাকবে, হায় দুর্ভাগ্য আমাদের, এটা কেমন গ্রন্থ! এতে তো ছোট বড় কোনকিছুই বাদ দেয়া হয়নি; বরং সবকিছুই রেখে দেয়া হয়েছে। তারা তাদের কৃতকর্ম সম্মুখে উপস্থিত পাবে; আর তোমার প্রতিপালক কারো প্রতি যুলুম করবেন না। (সূরা কাহফ- ৪৯)
সেদিন অপরাধীরা অপরাধ স্বীকার করে নেবে :
وَقَالُوْا لَوْ كُنَّا نَسْمَعُ اَوْ نَعْقِلُ مَا كُنَّا فِۤيْ اَصْحَابِ السَّعِيْرِ – فَاعْتَرَفُوْا بِذَنْۢبِهِمْۚ فَسُحْقًا لِّاَصْحَابِ السَّعِيْرِ
তারা বলবে, যদি আমরা শুনতাম অথবা বিবেকবুদ্ধি দিয়ে অনুধাবন করতাম, তবে আমরা জাহান্নামবাসী হতাম না। অতঃপর তারা তাদের অপরাধ স্বীকার করে নেবে। সুতরাং জাহান্নামবাসীদের জন্য অভিশাপ। (সূরা মুলক- ১০, ১১)
قَالُوْا رَبَّنَاۤ اَمَتَّنَا اثْنَتَيْنِ وَاَحْيَيْتَنَا اثْنَتَيْنِ فَاعْتَرَفْنَا بِذُنُوْبِنَا فَهَلْ اِلٰى خُرُوْجٍ مِّنْ سَبِيْلٍ
তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদেরকে দু’বার মৃত্যু দিয়েছেন এবং দু’বার জীবন দান করেছেন। আমরা আমাদের অপরাধ স্বীকার করছি। (সুতরাং এখন নিস্কৃতির জন্য) বহির্গমণের কোন পথ মিলবে কি? (সূরা মু’মিন- ১১)
তাদের থেকে বিনিময় গ্রহণ করা হবে না :
يَوَدُّ الْمُجْرِمُ لَوْ يَفْتَدِيْ مِنْ عَذَابِ يَوْمِئِذٍ ۢبِبَنِيْهِ – وَصَاحِبَتِهٖ وَاَخِيْهِ – وَفَصِيْلَتِهِ الَّتِيْ تُؤْوِيْهِ – وَمَنْ فِى الْاَرْضِ جَمِيْعًا ثُمَّ يُنْجِيْهِ – كَلَّاۤ اِنَّهَا لَظٰى
অপরাধী সেদিনের আযাবের বিনিময়ে তার সন্তান-সন্ততি, স্ত্রী, ভাই, গোষ্ঠী- যারা তাকে আশ্রয় দিত এবং পৃথিবীর সকলকে দিতে চাইবে, তবুও সে যেন (এগুলোর বিনিময়ে) মুক্তি পেতে পারে। কখনো নয় (সে মুক্তি পাবে না), এটা লেলিহান অগ্নিশিখা। (সূরা মা‘আরিজ, ১১-১৫)
তাদেরকে জাহান্নামের দিকে হাঁকিয়ে নেয়া হবে :
وَنَسُوْقُ الْمُجْرِمِيْنَ اِلٰى جَهَنَّمَ وِرْدًا
আর আমি অপরাধীদেরকে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় জাহান্নামের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাব। (সূরা মারইয়াম- ৮৬)
بَلٰى مَنْ كَسَبَ سَيِّئَةً وَّاَحَاطَتْ بِهٖ خَطِيْٓئَتُهٗ فَاُولٰٓئِكَ اَصْحَابُ النَّارِۚ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
হ্যাঁ, যে ব্যক্তি পাপ অর্জন করেছে এবং স্বীয় পাপের দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়েছে, বস্তুত তারাই জাহান্নামের অধিবাসী; সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে। (সূরা বাক্বারা- ৮১)
পাপীরা নিজেদের পিঠে পাপের বোঝা বহন করবে :
وَهُمْ يَحْمِلُوْنَ اَوْزَارَهُمْ عَلٰى ظُهُوْرِهِمْؕ اَ لَا سَآءَ مَا يَزِرُوْنَ
তারা তাদের পিঠে নিজেদের পাপ বহন করবে। সাবধান, তারা যা বহন করবে তা খুবই নিকৃষ্ট! (সূরা আন‘আম- ৩১)
পাপের প্রবর্তকরা পরবর্তীদের পাপের বোঝাও বহন করবে :
لِيَحْمِلُوْاۤ اَوْزَارَهُمْ كَامِلَةً يَّوْمَ الْقِيَامَةِ وَمِنْ اَوْزَارِ الَّذِيْنَ يُضِلُّوْنَهُمْ بِغَيْرِ عِلْمٍؕ اَ لَا سَآءَ مَا يَزِرُوْنَ
ফলে কিয়ামত দিবসে তারা তাদের পাপভার পূর্ণমাত্রায় বহন করবে এবং তাদেরও পাপভার (বহন করবে) যাদেরকে তারা অজ্ঞতাবশত বিভ্রামত্ম করেছে। সাবধান! তারা যা বহন করবে তা খুবই নিকৃষ্ট! (সূরা নাহল- ২৫)
কিয়ামতের দিন তাদের চোখ আলোহীন হয়ে যাবে :
يَوْمَ يُنْفَخُ فِى الصُّوْرِ وَنَحْشُرُ الْمُجْرِمِيْنَ يَوْمَئِذٍ زُرْقًا
যেদিন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে এবং যেদিন আমি অপরাধীদেরকে দৃষ্টিহীন অবস্থায় সমবেত করব। (সূরা ত্বা-হা- ১০২)
ব্যাখ্যা : চোখ সাদাটে ও নীলচে ভাব ধারণ করবে। কারণ আতঙ্কে তাদের রক্ত শুকিয়ে যাবে। তাদের অবস্থা এমন হবে যে, যেন তাদের শরীরে এক বিন্দু রক্তও নেই। যখন কারো চোখ আলোহীন হয়ে পড়ে তখন তার চোখের মনি সাদা হয়ে যায়।
কিয়ামতের দিন পাপীদের জন্য কোন সুসংবাদ থাকবে না :
يَوْمَ يَرَوْنَ الْمَلَآئِكَةَ لَا بُشْرٰى يَوْمَئِذٍ لِّلْمُجْرِمِيْنَ وَيَقُوْلُوْنَ حِجْرًا مَّحْجُوْرًا
যেদিন তারা ফেরেশতাদেরকে প্রত্যক্ষ করবে, সেদিন অপরাধীদের জন্য কোন সুসংবাদ থাকবে না। তখন তারা বলবে, ‘রক্ষা করো, রক্ষা করো।’ (সূরা ফুরক্বান- ২২)
সেদিন পাপীরা হতাশ হয়ে পড়বে :
وَيَوْمَ تَقُوْمُ السَّاعَةُ يُبْلِسُ الْمُجْرِمُوْنَ
আর যেদিন কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে, সেদিন পাপীরা হতাশ হয়ে পড়বে। (সূরা রূম- ১২)
তাদেরকে পাপের চিহ্ন দ্বারা চেনা যাবে :
يُعْرَفُ الْمُجْرِمُوْنَ بِسِيْمَاهُمْ فَيُؤْخَذُ بِالنَّوَاصِيْ وَالْاَقْدَامِ
অপরাধীদেরকে তাদের চেহারার আলামত দ্বারা চেনা যাবে। অতঃপর তাদেরকে পাকড়াও করা হবে কপাল (চুলের ঝুঁটি) ও পা ধরে। (সূরা আর রহমান- ৪১)
তারা মাথা নত করে থাকবে :
وَلَوْ تَرٰۤى اِذِ الْمُجْرِمُوْنَ نَاكِسُوْا رُءُوْسِهِمْ عِنْدَ رَبِّهِمْؕ رَبَّنَاۤ اَبْصَرْنَا وَسَمِعْنَا فَارْجِعْنَا نَعْمَلْ صَالِحًا اِنَّا مُوْقِنُوْنَ
আর যদি আপনি দেখতেন, যখন পাপীরা তাদের প্রতিপালকের সামনে স্বীয় মাথা নীচু করে বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা দেখলাম ও শ্রবণ করলাম, এখন আপনি আমাদেরকে পুনরায় (পৃথিবীতে) প্রেরণ করুন; আমরা নেক কাজ করব। এখন আমরা দৃঢ় বিশ্বাসী হয়েছি। (সূরা সাজদা- ১২)
তারা শিকলে বাঁধা থাকবে :
وَتَرَى الْمُجْرِمِيْنَ يَوْمَئِذٍ مُّقَرَّنِيْنَ فِى الْاَصْفَادِ
সেদিন তুমি অপরাধীদেরকে দেখবে শৃঙ্খলিত অবস্থায়। (সূরা ইবরাহীম- ৪৯)
পাপীরা আমলনামা দেখে ভয় পাবে :
وَوُضِعَ الْكِتَابُ فَتَرَى الْمُجْرِمِيْنَ مُشْفِقِيْنَ مِمَّا فِيْهِ وَيَقُوْلُوْنَ يَا وَيْلَتَنَا مَالِ هٰذَا الْكِتَابِ لَا يُغَادِرُ صَغِيْرَةً وَّلَا كَبِيْرَةً اِلَّاۤ اَحْصَاهَاۚ وَوَجَدُوْا مَا عَمِلُوْا حَاضِرًاؕ وَلَا يَظْلِمُ رَبُّكَ اَحَدًا
অতঃপর কিতাব (আমলনামা) উপস্থিত করা হবে। তখন তুমি তাতে যা লিপিবদ্ধ আছে তার কারণে অপরাধীদেরকে ভীত অবস্থায় দেখতে পাবে। এমতাবস্থায় তারা বলতে থাকবে, হায় দুর্ভাগ্য আমাদের, এটা কেমন গ্রন্থ! এতে তো ছোট বড় কোনকিছুই বাদ দেয়া হয়নি; বরং সবকিছুই রেখে দেয়া হয়েছে। তারা তাদের কৃতকর্ম সম্মুখে উপস্থিত পাবে; আর তোমার প্রতিপালক কারো প্রতি যুলুম করবেন না। (সূরা কাহফ- ৪৯)
সেদিন অপরাধীরা অপরাধ স্বীকার করে নেবে :
وَقَالُوْا لَوْ كُنَّا نَسْمَعُ اَوْ نَعْقِلُ مَا كُنَّا فِۤيْ اَصْحَابِ السَّعِيْرِ – فَاعْتَرَفُوْا بِذَنْۢبِهِمْۚ فَسُحْقًا لِّاَصْحَابِ السَّعِيْرِ
তারা বলবে, যদি আমরা শুনতাম অথবা বিবেকবুদ্ধি দিয়ে অনুধাবন করতাম, তবে আমরা জাহান্নামবাসী হতাম না। অতঃপর তারা তাদের অপরাধ স্বীকার করে নেবে। সুতরাং জাহান্নামবাসীদের জন্য অভিশাপ। (সূরা মুলক- ১০, ১১)
قَالُوْا رَبَّنَاۤ اَمَتَّنَا اثْنَتَيْنِ وَاَحْيَيْتَنَا اثْنَتَيْنِ فَاعْتَرَفْنَا بِذُنُوْبِنَا فَهَلْ اِلٰى خُرُوْجٍ مِّنْ سَبِيْلٍ
তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদেরকে দু’বার মৃত্যু দিয়েছেন এবং দু’বার জীবন দান করেছেন। আমরা আমাদের অপরাধ স্বীকার করছি। (সুতরাং এখন নিস্কৃতির জন্য) বহির্গমণের কোন পথ মিলবে কি? (সূরা মু’মিন- ১১)
তাদের থেকে বিনিময় গ্রহণ করা হবে না :
يَوَدُّ الْمُجْرِمُ لَوْ يَفْتَدِيْ مِنْ عَذَابِ يَوْمِئِذٍ ۢبِبَنِيْهِ – وَصَاحِبَتِهٖ وَاَخِيْهِ – وَفَصِيْلَتِهِ الَّتِيْ تُؤْوِيْهِ – وَمَنْ فِى الْاَرْضِ جَمِيْعًا ثُمَّ يُنْجِيْهِ – كَلَّاۤ اِنَّهَا لَظٰى
অপরাধী সেদিনের আযাবের বিনিময়ে তার সন্তান-সন্ততি, স্ত্রী, ভাই, গোষ্ঠী- যারা তাকে আশ্রয় দিত এবং পৃথিবীর সকলকে দিতে চাইবে, তবুও সে যেন (এগুলোর বিনিময়ে) মুক্তি পেতে পারে। কখনো নয় (সে মুক্তি পাবে না), এটা লেলিহান অগ্নিশিখা। (সূরা মা‘আরিজ, ১১-১৫)
তাদেরকে জাহান্নামের দিকে হাঁকিয়ে নেয়া হবে :
وَنَسُوْقُ الْمُجْرِمِيْنَ اِلٰى جَهَنَّمَ وِرْدًا
আর আমি অপরাধীদেরকে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় জাহান্নামের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাব। (সূরা মারইয়াম- ৮৬)
ঈমানকে অস্বীকার করলে :
وَمَنْ يَّكْفُرْ بِالْاِيْمَانِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهٗؗ وَهُوَ فِى الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
আর যে ব্যক্তি ঈমান প্রত্যাখ্যান করবে, তার কর্ম নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা মায়েদা- ৫)
আখিরাতকে অস্বীকার করলে :
وَالَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَا وَلِقَآءِ الْاٰخِرَةِ حَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْ
যারা আমার নিদর্শন ও আখিরাতের সাক্ষাতকে অস্বীকার করে, তাদের কর্ম নিষ্ফল হয়ে যাবে। (সূরা আ‘রাফ- ১৪৭)
মুরতাদ হয়ে গেলে :
وَمَنْ يَّرْتَدِدْ مِنْكُمْ عَنْ دِيْنِهٖ فَيَمُتْ وَهُوَ كَافِرٌ فَاُولٰٓئِكَ حَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْ فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِۚ وَاُولٰٓئِكَ اَصْحَابُ النَّارِۚ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তার দ্বীনকে ত্যাগ করবে, অতঃপর কাফির অবস্থায় মারা যাবে, দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের সকল আমল বরবাদ হয়ে যাবে। আর তারা হবে জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে। (সূরা বাক্বারা- ২১৭)
মুনাফিকী করলে :
وَيَقُوْلُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَهٰۤؤُلَآءِ الَّذِيْنَ اَقْسَمُوْا بِاللهِ جَهْدَ اَيْمَانِهِمْ اِنَّهُمْ لَمَعَكُمْؕ حَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْ فَاَصْبَحُوْا خَاسِرِيْنَ
মুমিনগণ বলবে, এরাই কি তারা, যারা আল্লাহর নামে দৃঢ়ভাবে শপথ করেছিল যে, তারা তোমাদের সঙ্গেই আছে? (আজ) তাদের কাজ নিষ্ফল হয়ে গেছে; ফলে তারা ক্ষতিগ্রসত্মদের অমত্মর্ভুক্ত হয়ে গেছে। (সূরা মায়েদা- ৫৩)
ব্যাখ্যা : কাজকর্ম বলতে বুঝানো হয়েছে সেসব কর্মকে, যা তারা মুসলিম সেজে করেছে। তাদের নামায, রোযা, যাকাত মোটকথা সেসব ইবাদাত-বন্দেগী ও নেকীর কাজসমূহ- যা বাহ্যিকভাবে নেকীর কাজ বলে গণ্য হতো। এসব নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণ হচ্ছে, তারা মুসলিম হয়েও আল্লাহ, তাঁর দ্বীন তথা ইসলামী মিল্লাতের সাথে আন্তরিকতা ও বিশ্বস্ততাসূলভ আচরণ করেনি; বরং শুধু নিজের পার্থিব স্বার্থের জন্য দ্বীনের শত্রুদের সাথে ষড়যন্ত্র করেছে এবং আল্লাহর পথে জিহাদের সুযোগ আসা মাত্রই নিজেকে বিপদ থেকে রক্ষা করার চিন্তায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কুফর ও ইসলামের যুদ্ধে যার সমবেদনা ইসলাম ও মুসলিমদের পক্ষে নয় বরং কুফরী ব্যবস্থা ও কাফিরদের পক্ষে আল্লাহর কাছে তার কোন আমল গ্রহণযোগ্য হওয়া তো দূরের কথা, তার ঈমানই গ্রহণযোগ্য নয়। এখানে আমলের দু’টি অর্থ। একটি অর্থ হলো, তারা নিজেদের বিবেচনায় যেসব কাজকর্মকে নেকীর কাজ মনে করে পালন করছে, আল্লাহ তা সবই ধ্বংস করে দেবেন এবং তার জন্য তারা আখিরাতে কোন ফলাফল পাবে না। অন্য অর্থটি হচ্ছে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দ্বীনের পথে বাধা সৃষ্টি করার জন্য যেসব কৌশল অবলম্বন করছে তা সবই ব্যর্থ ও নিষ্ফল হয়ে যাবে। অন্য কথায় আমলসমূহের কল্যাণকর ও ফলপ্রসূ হওয়া সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্যের উপর। আনুগত্য থেকে ফিরে যাওয়ার পর কোন আমলই আর নেক আমল থাকে না। তাই এ ধরনের লোক আমলের জন্য প্রতিদান লাভের উপযুক্ত হতে পারে না।
আল্লাহর পথে বাধা দিলে :
اَلَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَصَدُّوْا عَنْ سَبِيْلِ اللهِ اَضَلَّ اَعْمَالَهُمْ
যারা কুফরী করেছে এবং (মানুষকে) আল্লাহর পথ হতে বাধা প্রদান করেছে, আল্লাহ তাদের সকল আমল বিফল করে দিয়েছেন। (সূরা মুহাম্মাদ- ১)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর পথে আসতে বাধা দেয়ার বহু উপায় ও পন্থা আছে। এর একটি পন্থা হলো, জোরপূর্বক কাউকে ঈমান গ্রহণ করা থেকে বিরত রাখা। দ্বিতীয় পন্থা হলো, ইসলাম গ্রহণকারী ব্যক্তির উপর এমন যুলুম-নির্যাতন চালানো যে, তার পক্ষে ইসলামের উপর টিকে থাকা এবং এরূপ ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে অন্যদের ইসলাম গ্রহণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। তৃতীয় পন্থা হলো, সে নানা উপায়ে দ্বীন ও দ্বীনের অনুসারীদের বিরুদ্ধে মানুষকে বিভ্রান্ত করবে এবং এমন সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি করবে, যার দ্বারা মানুষ এ দ্বীন সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করতে শুরু করবে। এ ছাড়াও প্রত্যেক কাফির ব্যক্তিই এ অর্থে আল্লাহর দ্বীনের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী যে, সে তার সন্তান-সন্ততিকে কুফরী রীতিনীতি অনুসারে লালন-পালন করে এবং এ কারণে তার ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য বাপ-দাদার ধর্ম ছেড়ে ইসলাম গ্রহণ করা কঠিন হয়ে যায়। একইভাবে প্রতিটি কুফরীসমাজ আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টিকারী। কারণ এ সমাজ তার শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ন্যায় ও সত্য দ্বীনের প্রসারের পথে বাধা সৃষ্টি করে।
কুফরী করলে :
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا فَتَعْسًا لَّهُمْ وَاَضَلَّ اَعْمَالَهُمْ – ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ كَرِهُوْا مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاَحْبَطَ اَعْمَالَهُمْ
যারা কুফরী করেছে তাদের জন্য ধ্বংস, আল্লাহ তাদের আমল নিষ্ফল করে দিয়েছেন। কারণ, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তা তারা অপছন্দ করেছে; অতঃপর আল্লাহ তাদের আমলসমূহ বরবাদ করে দিয়েছেন।
(সূরা মুহাম্মাদ- ৮, ৯)
قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُمْ بِالْاَخْسَرِيْنَ اَعْمَالًا ‐ اَلَّذِيْنَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُوْنَ اَنَّهُمْ يُحْسِنُوْنَ صُنْعًا – اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِاٰيَاتِ رَبِّهِمْ وَلِقَآئِهٖ فَحَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْ فَلَا نُقِيْمُ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَزْنًا
বলো, আমি কি তোমাদেরকে আমলের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রসত্মদের সম্পর্কে সংবাদ দেব? এরা তো তারাই, যাদের পার্থিব জীবনের সকল প্রচেষ্টা পন্ড হয়ে গেছে। যদিও তারা মনে করে যে, তারা সৎকর্মই করছে। এরাই তারা, যারা তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলি ও তাঁর সাথে তাদের সাক্ষাতের বিষয়কে অস্বীকার করে। ফলে তাদের কর্মসমূহ নিষ্ফল হয়ে যায়, সুতরাং কিয়ামতের দিন তাদের জন্য ওজনের কোন ব্যবস্থাই রাখব না। (সূরা কাহফ, ১০৩-১০৫)
সত্যের বিরোধিতা করলে :
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَصَدُّوْا عَنْ سَبِيْلِ اللهِ وَشَآقُّوا الرَّسُوْلَ مِنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْهُدٰى لَنْ يَّضُرُّوا اللهَ شَيْئًاؕ وَسَيُحْبِطُ اَعْمَالَهُمْ
যারা কুফরী করেছে, (মানুষকে) আল্লাহর পথ হতে বাধা প্রদান করেছে এবং তাদের কাছে হেদায়াতের পথ স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও রাসূলের সাথে ঝগড়া করেছে, তারা বাস্তবে আল্লাহর কোন ক্ষতিই করতে পারবে না। বরং অচিরেই তিনি তাদের সব আমল বরবাদ করে দেবেন। (সূরা মুহাম্মাদ- ৩২)
সত্য প্রচারকদেরকে হত্যা করলে :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَكْفُرُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِ وَيَقْتُلُوْنَ النَّبِيِّيْنَ بِغَيْرِ حَقٍّ وَّيَقْتُلُوْنَ الَّذِيْنَ يَاْمُرُوْنَ بِالْقِسْطِ مِنَ النَّاسِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ اَلِيْمٍ – اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ حَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْ فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِؗ وَمَا لَهُمْ مِّنْ نَّاصِرِيْنَ
নিশ্চয় যারা আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করেছে, অন্যায়ভাবে নবীদেরকে হত্যা করেছে এবং যারা ইনসাফের নির্দেশ দেয় তাদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে, তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ শুনিয়ে দাও। এরাই সেসব লোক, দুনিয়া ও আখিরাতে যাদের সকল আমল বরবাদ হয়ে গেছে এবং তাদের কোন সাহায্যকারীও থাকবে না। (সূরা আলে ইমরান- ২১, ২২)
আল্লাহর নির্বাচিত বান্দাদের সাথে খারাপ আচরণ করলে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَرْفَعُوْاۤ اَصْوَاتَكُمْ فَوْقَ صَوْتِ النَّبِيِّ وَلَا تَجْهَرُوْا لَهٗ بِالْقَوْلِ كَجَهْرِ بَعْضِكُمْ لِبَعْضٍ اَنْ تَحْبَطَ اَعْمَالُكُمْ وَاَنْتُمْ لَا تَشْعُرُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের আওয়াজ নবীর আওয়াজের চেয়ে উঁচু করো না এবং তোমরা তাঁর সাথে সে রকম উঁচু আওয়াজে কথা বলো না, যেভাবে একে অপরের সাথে বলে থাক। এমন যেন না হয় যে, তোমাদের আমল নষ্ট হয়ে যাবে অথচ তোমরা বুঝতেই পারবে না। (সূরা হুজুরাত- ২)
শিরক করলে :
وَلَقَدْ اُوْحِيَ اِلَيْكَ وَاِلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكَۚ لَئِنْ اَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُوْنَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
নিশ্চয় তোমার প্রতি ও তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি ওহী করা হয়েছে যে, যদি তুমি আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন কর, তবে নিঃসন্দেহে তোমার কর্ম নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং অবশ্যই তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (সূরা যুমার- ৬৫)
ذٰلِكَ هُدَى اللهِ يَهْدِيْ بِهٖ مَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهٖؕ وَلَوْ اَشْرَكُوْا لَحَبِطَ عَنْهُمْ مَّا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
এটা আল্লাহর হেদায়াত, স্বীয় বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তিনি এর দ্বারা সৎপথে পরিচালিত করেন। কিন্তু যদি তারা শিরক করে, তবে তাদের আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে। (সূরা আন‘আম- ৮৮)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর কাছে মানুষের সমস্ত কর্ম সফল হওয়া নির্ভর করে দু’টি বিষয়ের উপর। (এক) সেই প্রচেষ্টা ও কর্মটি অনুষ্ঠিত হতে হবে শরীয়াতের আইনের আওতাধীনে। (দুই) দুনিয়ার পরিবর্তে আখিরাতের সাফল্যই হবে সেই কর্মের লক্ষ্য। এ শর্ত দু’টি পূর্ণ না হলে অনিবার্যভাবেই সমস্ত কৃতকর্ম বৃথা হয়ে যাবে। যে ব্যক্তি আল্লাহর হেদায়াত গ্রহণ করে না বরং তা থেকে মুখ ফিরিয়ে বিদ্রোহাত্মক পদ্ধতিতে দুনিয়ায় কাজ করে, সে কোনক্রমেই আল্লাহর কাছে কোন প্রকার প্রতিদানের আশা করার অধিকার রাখে না। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার জন্যই সবকিছু করে আখিরাতের জন্য কিছু্ই করে না, আখিরাতে তার সুফল লাভ করার কোন কারণ নেই। এ নীতি অনুযায়ী শিরক করলেও ব্যক্তির সকল আমল নিস্ফল হয়ে যায়।
وَمَنْ يَّكْفُرْ بِالْاِيْمَانِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهٗؗ وَهُوَ فِى الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
আর যে ব্যক্তি ঈমান প্রত্যাখ্যান করবে, তার কর্ম নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা মায়েদা- ৫)
আখিরাতকে অস্বীকার করলে :
وَالَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَا وَلِقَآءِ الْاٰخِرَةِ حَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْ
যারা আমার নিদর্শন ও আখিরাতের সাক্ষাতকে অস্বীকার করে, তাদের কর্ম নিষ্ফল হয়ে যাবে। (সূরা আ‘রাফ- ১৪৭)
মুরতাদ হয়ে গেলে :
وَمَنْ يَّرْتَدِدْ مِنْكُمْ عَنْ دِيْنِهٖ فَيَمُتْ وَهُوَ كَافِرٌ فَاُولٰٓئِكَ حَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْ فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِۚ وَاُولٰٓئِكَ اَصْحَابُ النَّارِۚ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তার দ্বীনকে ত্যাগ করবে, অতঃপর কাফির অবস্থায় মারা যাবে, দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের সকল আমল বরবাদ হয়ে যাবে। আর তারা হবে জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে। (সূরা বাক্বারা- ২১৭)
মুনাফিকী করলে :
وَيَقُوْلُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَهٰۤؤُلَآءِ الَّذِيْنَ اَقْسَمُوْا بِاللهِ جَهْدَ اَيْمَانِهِمْ اِنَّهُمْ لَمَعَكُمْؕ حَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْ فَاَصْبَحُوْا خَاسِرِيْنَ
মুমিনগণ বলবে, এরাই কি তারা, যারা আল্লাহর নামে দৃঢ়ভাবে শপথ করেছিল যে, তারা তোমাদের সঙ্গেই আছে? (আজ) তাদের কাজ নিষ্ফল হয়ে গেছে; ফলে তারা ক্ষতিগ্রসত্মদের অমত্মর্ভুক্ত হয়ে গেছে। (সূরা মায়েদা- ৫৩)
ব্যাখ্যা : কাজকর্ম বলতে বুঝানো হয়েছে সেসব কর্মকে, যা তারা মুসলিম সেজে করেছে। তাদের নামায, রোযা, যাকাত মোটকথা সেসব ইবাদাত-বন্দেগী ও নেকীর কাজসমূহ- যা বাহ্যিকভাবে নেকীর কাজ বলে গণ্য হতো। এসব নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণ হচ্ছে, তারা মুসলিম হয়েও আল্লাহ, তাঁর দ্বীন তথা ইসলামী মিল্লাতের সাথে আন্তরিকতা ও বিশ্বস্ততাসূলভ আচরণ করেনি; বরং শুধু নিজের পার্থিব স্বার্থের জন্য দ্বীনের শত্রুদের সাথে ষড়যন্ত্র করেছে এবং আল্লাহর পথে জিহাদের সুযোগ আসা মাত্রই নিজেকে বিপদ থেকে রক্ষা করার চিন্তায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কুফর ও ইসলামের যুদ্ধে যার সমবেদনা ইসলাম ও মুসলিমদের পক্ষে নয় বরং কুফরী ব্যবস্থা ও কাফিরদের পক্ষে আল্লাহর কাছে তার কোন আমল গ্রহণযোগ্য হওয়া তো দূরের কথা, তার ঈমানই গ্রহণযোগ্য নয়। এখানে আমলের দু’টি অর্থ। একটি অর্থ হলো, তারা নিজেদের বিবেচনায় যেসব কাজকর্মকে নেকীর কাজ মনে করে পালন করছে, আল্লাহ তা সবই ধ্বংস করে দেবেন এবং তার জন্য তারা আখিরাতে কোন ফলাফল পাবে না। অন্য অর্থটি হচ্ছে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দ্বীনের পথে বাধা সৃষ্টি করার জন্য যেসব কৌশল অবলম্বন করছে তা সবই ব্যর্থ ও নিষ্ফল হয়ে যাবে। অন্য কথায় আমলসমূহের কল্যাণকর ও ফলপ্রসূ হওয়া সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্যের উপর। আনুগত্য থেকে ফিরে যাওয়ার পর কোন আমলই আর নেক আমল থাকে না। তাই এ ধরনের লোক আমলের জন্য প্রতিদান লাভের উপযুক্ত হতে পারে না।
আল্লাহর পথে বাধা দিলে :
اَلَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَصَدُّوْا عَنْ سَبِيْلِ اللهِ اَضَلَّ اَعْمَالَهُمْ
যারা কুফরী করেছে এবং (মানুষকে) আল্লাহর পথ হতে বাধা প্রদান করেছে, আল্লাহ তাদের সকল আমল বিফল করে দিয়েছেন। (সূরা মুহাম্মাদ- ১)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর পথে আসতে বাধা দেয়ার বহু উপায় ও পন্থা আছে। এর একটি পন্থা হলো, জোরপূর্বক কাউকে ঈমান গ্রহণ করা থেকে বিরত রাখা। দ্বিতীয় পন্থা হলো, ইসলাম গ্রহণকারী ব্যক্তির উপর এমন যুলুম-নির্যাতন চালানো যে, তার পক্ষে ইসলামের উপর টিকে থাকা এবং এরূপ ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে অন্যদের ইসলাম গ্রহণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। তৃতীয় পন্থা হলো, সে নানা উপায়ে দ্বীন ও দ্বীনের অনুসারীদের বিরুদ্ধে মানুষকে বিভ্রান্ত করবে এবং এমন সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি করবে, যার দ্বারা মানুষ এ দ্বীন সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করতে শুরু করবে। এ ছাড়াও প্রত্যেক কাফির ব্যক্তিই এ অর্থে আল্লাহর দ্বীনের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী যে, সে তার সন্তান-সন্ততিকে কুফরী রীতিনীতি অনুসারে লালন-পালন করে এবং এ কারণে তার ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য বাপ-দাদার ধর্ম ছেড়ে ইসলাম গ্রহণ করা কঠিন হয়ে যায়। একইভাবে প্রতিটি কুফরীসমাজ আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টিকারী। কারণ এ সমাজ তার শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ন্যায় ও সত্য দ্বীনের প্রসারের পথে বাধা সৃষ্টি করে।
কুফরী করলে :
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا فَتَعْسًا لَّهُمْ وَاَضَلَّ اَعْمَالَهُمْ – ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ كَرِهُوْا مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاَحْبَطَ اَعْمَالَهُمْ
যারা কুফরী করেছে তাদের জন্য ধ্বংস, আল্লাহ তাদের আমল নিষ্ফল করে দিয়েছেন। কারণ, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তা তারা অপছন্দ করেছে; অতঃপর আল্লাহ তাদের আমলসমূহ বরবাদ করে দিয়েছেন।
(সূরা মুহাম্মাদ- ৮, ৯)
قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُمْ بِالْاَخْسَرِيْنَ اَعْمَالًا ‐ اَلَّذِيْنَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُوْنَ اَنَّهُمْ يُحْسِنُوْنَ صُنْعًا – اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِاٰيَاتِ رَبِّهِمْ وَلِقَآئِهٖ فَحَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْ فَلَا نُقِيْمُ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَزْنًا
বলো, আমি কি তোমাদেরকে আমলের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রসত্মদের সম্পর্কে সংবাদ দেব? এরা তো তারাই, যাদের পার্থিব জীবনের সকল প্রচেষ্টা পন্ড হয়ে গেছে। যদিও তারা মনে করে যে, তারা সৎকর্মই করছে। এরাই তারা, যারা তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলি ও তাঁর সাথে তাদের সাক্ষাতের বিষয়কে অস্বীকার করে। ফলে তাদের কর্মসমূহ নিষ্ফল হয়ে যায়, সুতরাং কিয়ামতের দিন তাদের জন্য ওজনের কোন ব্যবস্থাই রাখব না। (সূরা কাহফ, ১০৩-১০৫)
সত্যের বিরোধিতা করলে :
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَصَدُّوْا عَنْ سَبِيْلِ اللهِ وَشَآقُّوا الرَّسُوْلَ مِنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْهُدٰى لَنْ يَّضُرُّوا اللهَ شَيْئًاؕ وَسَيُحْبِطُ اَعْمَالَهُمْ
যারা কুফরী করেছে, (মানুষকে) আল্লাহর পথ হতে বাধা প্রদান করেছে এবং তাদের কাছে হেদায়াতের পথ স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও রাসূলের সাথে ঝগড়া করেছে, তারা বাস্তবে আল্লাহর কোন ক্ষতিই করতে পারবে না। বরং অচিরেই তিনি তাদের সব আমল বরবাদ করে দেবেন। (সূরা মুহাম্মাদ- ৩২)
সত্য প্রচারকদেরকে হত্যা করলে :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَكْفُرُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِ وَيَقْتُلُوْنَ النَّبِيِّيْنَ بِغَيْرِ حَقٍّ وَّيَقْتُلُوْنَ الَّذِيْنَ يَاْمُرُوْنَ بِالْقِسْطِ مِنَ النَّاسِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ اَلِيْمٍ – اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ حَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْ فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِؗ وَمَا لَهُمْ مِّنْ نَّاصِرِيْنَ
নিশ্চয় যারা আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করেছে, অন্যায়ভাবে নবীদেরকে হত্যা করেছে এবং যারা ইনসাফের নির্দেশ দেয় তাদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে, তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ শুনিয়ে দাও। এরাই সেসব লোক, দুনিয়া ও আখিরাতে যাদের সকল আমল বরবাদ হয়ে গেছে এবং তাদের কোন সাহায্যকারীও থাকবে না। (সূরা আলে ইমরান- ২১, ২২)
আল্লাহর নির্বাচিত বান্দাদের সাথে খারাপ আচরণ করলে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَرْفَعُوْاۤ اَصْوَاتَكُمْ فَوْقَ صَوْتِ النَّبِيِّ وَلَا تَجْهَرُوْا لَهٗ بِالْقَوْلِ كَجَهْرِ بَعْضِكُمْ لِبَعْضٍ اَنْ تَحْبَطَ اَعْمَالُكُمْ وَاَنْتُمْ لَا تَشْعُرُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের আওয়াজ নবীর আওয়াজের চেয়ে উঁচু করো না এবং তোমরা তাঁর সাথে সে রকম উঁচু আওয়াজে কথা বলো না, যেভাবে একে অপরের সাথে বলে থাক। এমন যেন না হয় যে, তোমাদের আমল নষ্ট হয়ে যাবে অথচ তোমরা বুঝতেই পারবে না। (সূরা হুজুরাত- ২)
শিরক করলে :
وَلَقَدْ اُوْحِيَ اِلَيْكَ وَاِلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكَۚ لَئِنْ اَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُوْنَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
নিশ্চয় তোমার প্রতি ও তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি ওহী করা হয়েছে যে, যদি তুমি আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন কর, তবে নিঃসন্দেহে তোমার কর্ম নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং অবশ্যই তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (সূরা যুমার- ৬৫)
ذٰلِكَ هُدَى اللهِ يَهْدِيْ بِهٖ مَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهٖؕ وَلَوْ اَشْرَكُوْا لَحَبِطَ عَنْهُمْ مَّا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
এটা আল্লাহর হেদায়াত, স্বীয় বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তিনি এর দ্বারা সৎপথে পরিচালিত করেন। কিন্তু যদি তারা শিরক করে, তবে তাদের আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে। (সূরা আন‘আম- ৮৮)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর কাছে মানুষের সমস্ত কর্ম সফল হওয়া নির্ভর করে দু’টি বিষয়ের উপর। (এক) সেই প্রচেষ্টা ও কর্মটি অনুষ্ঠিত হতে হবে শরীয়াতের আইনের আওতাধীনে। (দুই) দুনিয়ার পরিবর্তে আখিরাতের সাফল্যই হবে সেই কর্মের লক্ষ্য। এ শর্ত দু’টি পূর্ণ না হলে অনিবার্যভাবেই সমস্ত কৃতকর্ম বৃথা হয়ে যাবে। যে ব্যক্তি আল্লাহর হেদায়াত গ্রহণ করে না বরং তা থেকে মুখ ফিরিয়ে বিদ্রোহাত্মক পদ্ধতিতে দুনিয়ায় কাজ করে, সে কোনক্রমেই আল্লাহর কাছে কোন প্রকার প্রতিদানের আশা করার অধিকার রাখে না। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার জন্যই সবকিছু করে আখিরাতের জন্য কিছু্ই করে না, আখিরাতে তার সুফল লাভ করার কোন কারণ নেই। এ নীতি অনুযায়ী শিরক করলেও ব্যক্তির সকল আমল নিস্ফল হয়ে যায়।
দুনিয়া হলো খেলতামাশা :
وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَاۤ اِلَّا لَعِبٌ وَّلَهْوٌؕ وَلَلدَّارُ الْاٰخِرَةُ خَيْرٌ لِّلَّذِيْنَ يَتَّقُوْنَؕ اَفَلَا تَعْقِلُوْنَ
পার্থিব জীবন ক্রীড়া কৌতুক ব্যতীত আর কিছুই নয়। সুতরাং যারা তাক্বওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য আখিরাতের আবাসই শ্রেয়; তোমরা কি তা অনুধাবন কর না? (সূরা আন‘আম- ৩২)
وَمَا هٰذِهِ الْحَيَاةُ الدُّنْيَاۤ اِلَّا لَهْوٌ وَّلَعِبٌؕ وَاِنَّ الدَّارَ الْاٰخِرَةَ لَهِيَ الْحَيَوَانُۘ لَوْ كَانُوْا يَعْلَمُوْنَ
এ পার্থিব জীবন ক্রীড়া কৌতুক ব্যতীত কিছুই নয়। নিশ্চয় পরকালের জীবনই প্রকৃত জীবন, যদি তারা জানত! (সূরা আনকাবূত- ৬৪)
ব্যাখ্যা : আখিরাতের চিরন্তন জীবনের তুলনায় দুনিয়ার এ জীবন ঠিক তেমন, যেমন কোন ব্যক্তি কিছুক্ষণ খেলাধূলা করে আনন্দ লাভ করে; তারপর তার আসল ও গুরুত্বপূর্ণ কাজে মনোনিবেশ করে। তাছাড়া একে খেলাধূলার সাথে তুলনা করার কারণ হচ্ছে, এখানে প্রকৃত সত্য গোপন থাকার ফলে যারা ভেতরে দৃষ্টি না দিয়ে শুধুমাত্র বাইরের অংশটুকু দেখতে অভ্যস্ত, তাদের জন্য বিভ্রান্তির শিকার হওয়ার বহু কারণ বিদ্যমান রয়েছে। এসব বিভ্রান্তির শিকার হয়ে মানুষ প্রকৃত সত্যের বিরুদ্ধে এমনসব অদ্ভূত কর্মপদ্ধতি অবলম্বন করে, যার ফলে তাদের জীবন নিছক একটি খেলা ও তামাশার বস্তুতে পরিণত হয়। যে ব্যক্তি এ পৃথিবীতে রাজার আসনে বসে তার মর্যাদা আসলে নাট্যমঞ্চের সেই কৃত্রিম রাজার চেয়ে মোটেই ভিন্নতর নয়, যে সোনার মুকুট মাথায় দিয়ে সিংহাসনে বসে এবং এমনভাবে হুকুম চালাতে থাকে যেন সে সত্যিকারের একজন বাদশাহ। অথচ প্রকৃত বাদশাহীর সামান্যতম নামগন্ধও তার মধ্যে নেই। দুনিয়ার মাত্র কয়েকদিনের জীবনেই এসব অভিনয় চলছে। মৃত্যুর মুহূর্ত আসার সাথে সাথে এক নিমিষে সবকিছুই বন্ধ হয়ে যাবে। এ জীবনের সীমান্ত পার হওয়ার সাথে সাথেই মানুষ এমন এক জগতে পৌঁছে যাবে, যেখানে সবকিছু্ই হবে প্রকৃত সত্যের অনুরূপ এবং যেখানে এ দুনিয়ার জীবনের সমস্ত বিভ্রান্তির আবরণ খুলে দিয়ে মানুষকে দেখিয়ে দেয়া হবে যে, সে কী পরিমাণ সত্য নিয়ে এসেছে। অতঃপর সত্যের তুলাদন্ডে পরিমাপ করে তার মান নির্ধারণ করা হবে। যদি তারা এ কথা জানত যে, এ দুনিয়ার জীবন একটি পরীক্ষার অবকাশ মাত্র। মানুষের জন্য আসল জীবন হচ্ছে আখিরাতের জীবন, যা চিরকাল স্থায়ী হবে। তাহলে তারা এ পরীক্ষার সময়কালকে খেলতামাশায় নষ্ট না করে এমনসব কাজে ব্যবহার করত, যা তাদের পরকালের স্থায়ী জীবনকে সুখময় করে তুলত।
দুনিয়ার কয়েকটি শোভনীয় জিনিস :
زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَآءِ وَالْبَنِيْنَ وَالْقَنَاطِيْرِ الْمُقَنْطَرَةِ مِنَ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَالْخَيْلِ الْمُسَوَّمَةِ وَالْاَنْعَامِ وَالْحَرْثِؕ ذٰلِكَ مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَاۚ وَاللهُ عِنْدَهٗ حُسْنُ الْمَاٰبِ
নারী, সন্তান, সোনা-রুপার অঢেল ধনসম্পদ, চি হ্নত ঘোড়া, গবাদি পশু, ক্ষেতখামার- এসব জিনিসের ভালোবাসা মানুষের কাছে শোভনীয় করে দেয়া হয়েছে। এসব মূলত দুনিয়ার জীবনের ভোগের সামগ্রী মাত্র। আর আল্লাহর কাছে রয়েছে (এর চেয়েও) উত্তম বাসস্থান। (সূরা আলে ইমরান- ১৪)
দুনিয়ার জীবনের দৃষ্টান্ত :
اِنَّمَا مَثَلُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَآءٍ اَنْزَلْنَاهُ مِنَ السَّمَآءِ فَاخْتَلَطَ بِهٖ نَبَاتُ الْاَرْضِ مِمَّا يَاْكُلُ النَّاسُ وَالْاَنْعَامُؕ حَتّٰۤى اِذَاۤ اَخَذَتِ الْاَرْضُ زُخْرُفَهَا وَازَّيَّنَتْ وَظَنَّ اَهْلُهَاۤ اَنَّهُمْ قَادِرُوْنَ عَلَيْهَاۤ اَتَاهَاۤ اَمْرُنَا لَيْلًا اَوْ نَهَارًا فَجَعَلْنَاهَا حَصِيْدًا كَاَنْ لَّمْ تَغْنَ بِالْاَمْسِؕ كَذٰلِكَ نُفَصِّلُ الْاٰيَاتِ لِقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ
বস্তুত পার্থিব জীবনের দৃষ্টান্ত এরূপ যে, আমি আকাশ হতে বারি বর্ষণ করি, যা দ্বারা জমিনে উদগত উদ্ভিদসমূহ ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে উদগত হয়, যা হতে মানুষ ও জীবজন্তু আহার করে থাকে। অতঃপর যখন ভূমি তার শোভা ধারণ করে এবং নয়নাভিরাম হয়, অতঃপর সেটার অধিকারীগণ সেটাকে তাদের আয়ত্তাধীন মনে করে, তখন দিবসে অথবা রজনীতে আমার নির্দেশ এসে পড়ে। অতঃপর আমি সেটাকে এমনভাবে নির্মূল করে দেই, যেন গতকালও সেটার অস্তিত্ব ছিল না। এভাবে আমি নিদর্শনাবলি বিশদভাবে বিবৃত করি চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য। (সূরা ইউনুস- ২৪)
وَاضْرِبْ لَهُمْ مَّثَلَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَآءٍ اَنْزَلْنَاهُ مِنَ السَّمَآءِ فَاخْتَلَطَ بِهٖ نَبَاتُ الْاَرْضِ فَاَصْبَحَ هَشِيْمًا تَذْرُوْهُ الرِّيَاحُؕ وَكَانَ اللهُ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ مُّقْتَدِرًا
তাদের নিকট পার্থিব জীবনের উপমা পেশ করো। এটা পানির ন্যায়, যা আমি আকাশ হতে বর্ষণ করি, যা দ্বারা জমিনে উদগত উদ্ভিদসমূহ ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে উদগত হয়। অতঃপর তা শুষ্ক হয়ে এমন চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায় যে, বাতাস তাকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। আল্লাহ সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। (সূরা কাহফ- ৪৫)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ তিনি জীবন দান করেন, আবার মৃত্যুও দান করেন। তিনি উত্থান ঘটান, আবার পতনও ঘটান। তাঁর নির্দেশেই বসন্ত আসে এবং শীতও আসে। আজ যদি তুমি সচ্ছল ও আরামের জীবন-যাপন করে থাক, তাহলে এ অহংকারে মত্ত হয়ো না যে, এ অবস্থার পরিবর্তন নেই। যে আল্লাহর হুকুমে তুমি এসব লাভ করেছ তাঁরই হুকুমে এসব তোমার কাছ থেকে ছিনিয়েও নেয়া হতে পারে।
দুনিয়ার জীবনের প্রকৃতি :
اِعْلَمُوْاۤ اَنَّمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا لَعِبٌ وَّلَهْوٌ وَّزِيْنَةٌ وَّتَفَاخُرٌ ۢبَيْنَكُمْ وَتَكَاثُرٌ فِى الْاَمْوَالِ وَالْاَوْلَادِؕ كَمَثَلِ غَيْثٍ اَعْجَبَ الْكُفَّارَ نَبَاتُهٗ ثُمَّ يَهِيْجُ فَتَرَاهُ مُصْفَرًّا ثُمَّ يَكُوْنُ حُطَامًاؕ وَفِى الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ شَدِيْدٌ وَّمَغْفِرَةٌ مِّنَ اللهِ وَرِضْوَانٌؕ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَاۤ اِلَّا مَتَاعُ الْغُرُوْرِ
জেনে রেখো, দুনিয়ার জীবন খেলতামাশা, জাঁকজমক, পারস্পরিক অহংকার প্রকাশ, ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততির প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগিতা ব্যতীত আর কিছুই নয়। এর উপমা বৃষ্টির সাথে, যার দ্বারা উৎপন্ন শস্য কৃষকদের চমৎকৃত করে। অতঃপর তা শুকিয়ে যায়, ফলে তুমি তা হলুদ বর্ণ দেখতে পাও; অবশেষে তা খড়কুটায় পরিণত হয়। অতএব পরকালে রয়েছে কঠিন শাস্তি এবং আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। পক্ষান্তরে দুনিয়ার জীবন ছলনাময় ধোঁকা ব্যতীত আর কিছুই নয়। (সূরা হাদীদ- ২০)
ব্যাখ্যা : এ উপমা থেকে বুদ্ধিমান মানুষ এ শিক্ষা গ্রহণ করে যে, দুনিয়ার এ জীবন ও এর সব সৌন্দর্য ও চাকচিক্য অস্থায়ী। প্রতিটি যৌবনের পরিণাম বার্ধক্য ও মৃত্যু। প্রতিটি উত্থানই অবশেষে পতনের পরিণতি লাভ করে। সুতরাং এ পৃথিবী এমন জিনিস নয়, যার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে মানুষ আল্লাহ ও আখিরাতকে ভুলে যেতে পারে এবং এখানকার ক্ষণস্থায়ী বসন্তের মজা উপভোগ করার জন্য এমন আচরণ করবে, যা তার পরিণামকে ধ্বংস করে দেবে। তাছাড়া একজন বুদ্ধিমান লোক এসব দৃশ্য দেখে এ শিক্ষা গ্রহণ করে যে, এ দুনিয়ায় বসন্ত ও শরৎ আল্লাহর ইচ্ছাতেই আগমন করে। তিনি যাকে ইচ্ছা উত্থান ঘটান এবং যাকে ইচ্ছা তার পতন ঘটান। আল্লাহ যাকে সমৃদ্ধ ও উন্নত করেন তার বেড়ে ওঠা যেমন কেউ রোধ করতে পারে না, তেমনিভাবে তিনি যাকে ধ্বংস করতে চান তাকে রক্ষা করতে পারে এমন শক্তিও কারো নেই।
মানুষ দুনিয়ার ধোঁকায় পড়ে আছে:
وَغَرَّتْهُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا
বস্তুত পার্থিব জীবন তাদেরকে প্রতারিত করেছিল। (সূরা আন‘আম- ১৩০)
ব্যাখ্যা : দুনিয়ার জীবন স্থুলদর্শী লোকদেরকে নানা রকম ভুল ধারণায় নিমজ্জিত করে। কেউ মনে করে, বাঁচা-মরা শুধুমাত্র এ দুনিয়ায় সীমাবদ্ধ, এরপর দ্বিতীয় কোন জীবন নেই। কেউ ক্ষমতা, প্রতিপত্তি ও প্রাচুর্যের নেশায় মত্ত হয়ে নিজের মৃত্যুর কথা ভুলে যায় এবং এ ভুল ধারণা পোষণ করে যে, তার আরাম-আয়েশ ও কর্তৃত্ব চিরস্থায়ী, এর কোন ক্ষয় নেই। কেউ নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উদ্দেশ্য ভুলে গিয়ে কেবলমাত্র বৈষয়িক লাভ ও স্বাদকে জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য মনে করে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যকে কোন গুরুত্বই দেয় না। এর ফলে তার মনুষ্যত্বের মান যত নিচে নেমে যাক না কেন, তার কোন পরোয়াই সে করে না। কেউ মনে করে বৈষয়িক সমৃদ্ধিই ন্যায়-অন্যায় ও সত্য-মিথ্যার আসল মানদন্ড। এ সমৃদ্ধি যে পথেই অর্জিত হবে তা-ই সত্য এবং এর বিপরীত সবকিছুই মিথ্যা। কেউ এ সমৃদ্ধিকেই আল্লাহর নিকট অনুগৃহীত হওয়ার আলামত হিসেবে মনে করে। এর ফলে সে সাধারণভাবে মনে করতে থাকে, যে কোন উপায়েই হোক একজন লোক বিপুল সম্পদের অধিকারী হতে পারলেই সে আল্লাহর প্রিয়পাত্র। আর যার বৈষয়িক অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে, তার পরকাল ঝরঝরে হয়ে গেছে। এ ধরনের যত প্রকার ভুল ধারণা আছে সবগুলোই আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়ার জীবনের প্রতারণা বলে উল্লেখ করেছেন।
আল্লাহর সতর্কবাণী :
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اِنَّ وَعْدَ اللهِ حَقٌّ فَلَا تَغُرَّنَّكُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا وَلَا يَغُرَّنَّكُمْ بِاللهِ الْغَرُوْرُ
হে মানুষ! নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য। সুতরাং পার্থিব জীবন যেন কিছুতেই তোমাদেরকে প্রতারিত না করে এবং প্রতারক (শয়তান) যেন কিছুতেই তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারিত না করে। (সূরা ফাতির- ৫)
وَذَرِ الَّذِيْنَ اتَّخَذُوْا دِيْنَهُمْ لَعِبًا وَّلَهْوًا وَّغَرَّتْهُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا
যারা তাদের দ্বীনকে খেলতামাশা হিসেবে গ্রহণ করে এবং পার্থিব জীবন যাদেরকে প্রতারিত করে তুমি তাদের সঙ্গ বর্জন করো। (সূরা আন‘আম- ৭০)
ব্যাখ্যা : اَلْغَرُوْرُ (আল গারুর) অর্থ প্রতারক। এখানে اَلْغَرُوْرُ (আল গারুর) বলতে শয়তানও হতে পারে, আবার একদল মানুষও হতে পারে, মানুষের মন ও প্রবৃত্তিও হতে পারে এবং অন্য কোন জিনিসও হতে পারে। কোন বিশেষ ব্যক্তি বা বিশেষ বস্তু নির্ধারণ না করে এ বহুমুখী অর্থের অধিকারী শব্দটিকে ব্যবহার করার কারণ হচ্ছে, বিভিন্ন রকম লোকের কাছে প্রতারিত হওয়ার মূল কারণ বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে। যে ব্যক্তি যে উপায়েই প্রতারণার শিকার হয়েছে তা-ই তার জন্য ‘গারূর’ বা প্রতারক। কাউকে তার প্রতারক এ নিশ্চয়তা দেয় যে, আল্লাহ বলতে কিছুই নেই। আবার কাউকে এ ভুল ধারণা দেয় যে, আল্লাহ এ দুনিয়া সৃষ্টি করে হাত-পা গুটিয়ে বসে আছেন এবং এখন তিনি এ দুনিয়া বান্দাদের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন। আল্লাহর এমন কিছু প্রিয়পাত্র আছে, যাদের নৈকট্য অর্জন করলে তুমি যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারবে। তুমি নিশ্চিতভাবেই ক্ষমার অধিকারী হবে। কাউকে এভাবে প্রতারণা দেয় যে, আল্লাহ তো ক্ষমাশীল ও করুণাময়। সুতরাং তোমরা পাপ করতে থাক, তিনি ক্ষমা করে যেতেই থাকবেন। আবার কারো মনে এ ভুল ধারণা সৃষ্টি করে দেয় যে, তোমাদের তো হাত-পা বাঁধা, তোমরা যত খারাপ কাজ করো সব আল্লাহই করান। সুতরাং তোমরা ভালো কাজ থেকে দূরে সরে যাও। কারণ আল্লাহ তা করার তাওফীক তোমাদের দেন না। যদি বিশ্লেষণ করে দেখা হয়, তাহলে শেষ পর্যন্ত প্রত্যেকটি গোনাহ ও অপরাধের মূল কারণ হিসেবে দেখা যাবে যে, মানুষ আল্লাহর ব্যাপারে কোন না কোনভাবে প্রতারণার শিকার হয়েছে। এর ফলেই তার বিশ্বাসে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে এবং সে নৈতিক চরিত্রহীনতার শিকার হয়েছে।
যে দুনিয়া চায় আল্লাহ তাকে দুনিয়া থেকে কিছু দেন :
وَمَنْ يُّرِدْ ثَوَابَ الدُّنْيَا نُؤْتِهٖ مِنْهَاۚ وَمَنْ يُّرِدْ ثَوَابَ الْاٰخِرَةِ نُؤْتِهٖ مِنْهَاؕ وَسَنَجْزِى الشَّاكِرِيْنَ
আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার প্রতিদান কামনা করে, আমি তাকে তা হতে কিছু প্রদান করি। আর যে ব্যক্তি পরকালের প্রতিদান কামনা করে, আমি তাকে তা হতেই প্রদান করে থাকি। অচিরেই আমি কৃতজ্ঞদেরকে পুরস্কার প্রদান করব। (সূরা আলে ইমরান- ১৪৫)
ব্যাখ্যা : পুরস্কার অর্থ কাজের ফল। দুনিয়ার পুরস্কার বলতে বুঝায়- মানুষ তার প্রচেষ্টা ও কাজের ফলস্বরূপ দুনিয়ার জীবনে যে মুনাফা অর্জন করে। আর আখিরাতের পুরস্কার বলতে বুঝায়- দুনিয়ার জীবনে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী চলার ফলস্বরূপ মানুষ আখিরাতের চিরন্তন জীবনে যে পুরস্কার লাভ করে। মানুষ যে প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে, সে ক্ষেত্রে তার দৃষ্টি ইহকালীন না পরকালীন ফলপ্রাপ্তির দিকে নিবদ্ধ থাকবে- ইসলামের দৃষ্টিতে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের বিষয়।
مَنْ كَانَ يُرِيْدُ الْعَاجِلَةَ عَجَّلْنَا لَهٗ فِيْهَا مَا نَشَآءُ لِمَنْ نُّرِيْدُ ثُمَّ جَعَلْنَا لَهٗ جَهَنَّمَۚ يَصْلَاهَا مَذْمُوْمًا مَّدْحُوْرًا
যে ব্যক্তি পার্থিব সুখ-সম্ভোগ কামনা করবে, আমি তাকে যা ইচ্ছা এখানেই দিয়ে থাকি। অতঃপর তার জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত করি, যেখানে সে প্রবেশ করবে নিন্দিত ও অনুগ্রহ হতে বঞ্চিত অবস্থায়। (সূরা বনী ইসরাইল- ১৮)
ব্যাখ্যা : এর অর্থ হচ্ছে, যে ব্যক্তি আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না অথবা আখিরাত পর্যন্ত সবর করতে প্রস্তুত নয় এবং শুধুমাত্র দুনিয়ার সাফল্য ও সমৃদ্ধিকেই নিজের যাবতীয় প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করে, সে যা কিছু পাবে এ দুনিয়াতেই পাবে। আখিরাতে সে কিছুই পাবে না। শুধু তাই নয় বরং দুনিয়ার বৈষয়িক স্বার্থপূজা ও আখিরাতে জবাবদিহির দায়িত্বের ব্যাপারে বেপরোয়া মনোভাব তার কর্মধারাকে মৌলিকভাবে ভ্রান্ত পথে পরিচালিত করবে। যার ফলে সে জাহান্নামের অধিবাসী হবে। যার উদ্দেশ্য শুধু দুনিয়ার জীবনের স্বার্থ ও সুখ লাভ করা সে এ বৈষয়িক স্বার্থ উদ্ধারের জন্য যেমন প্রচেষ্টা চালাবে তেমনি তার ফলও সে এখানে পাবে। আখিরাত যার লক্ষ্য নয় এবং সেজন্য যে কোন চেষ্টাও করে না তার দুনিয়ার প্রচেষ্টার ফল আখিরাত পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হবে না। জীবনের শেষ নিঃশ্বাসের সাথে সাথেই তাকে নিজের সমস্ত সরঞ্জাম এ দুনিয়ায় ছেড়ে চলে যেতে হবে। এর কোন একটি জিনিসও সে সঙ্গে নিয়ে যেতে পারবে না।
কিছু লোক পরকাল বিক্রি করে দুনিয়া ক্রয় করে :
اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ اشْتَرَوُا الْحَيَاةَ الدُّنْيَا بِالْاٰخِرَةِؗ فَلَا يُخَفَّفُ عَنْهُمُ الْعَذَابُ وَلَا هُمْ يُنْصَرُوْنَ
এরাই পরকালের বিনিময়ে পার্থিব জীবন ক্রয় করে নিয়েছে; অতএব তাদের দন্ড হালকা করা হবে না এবং তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না। (সূরা বাক্বারা- ৮৬)
মানুষ দুনিয়াকে প্রাধান্য দেয় :
بَلْ تُؤْثِرُوْنَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا
কিন্তু তোমরা তো পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাক। (সূরা আ‘লা- ১৬)
ذٰلِكَ بِاَنَّهُمُ اسْتَحَبُّوا الْحَيَاةَ الدُّنْيَا عَلَى الْاٰخِرَةِ وَاَنَّ اللهَ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الْكَافِرِيْنَ
এটা এজন্য যে, তারা দুনিয়ার জীবনকে আখিরাতের উপর প্রাধান্য দেয়। নিশ্চয় আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে হেদায়াত করেন না। (সূরা নাহল- ১০৭)
وَفَرِحُوْا بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَاؕ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا فِى الْاٰخِرَةِ اِلَّا مَتَاعٌ
এরা পার্থিব জীবন নিয়ে উল্লাসিত, অথচ দুনিয়ার জীবন আখিরাতের তুলনায় ক্ষণস্থায়ী ভোগমাত্র। (সূরা রা‘দ- ২৬)
ব্যাখ্যা : দুনিয়ার ভোগ এমন কোন রিযিক নয়, যার জন্য মানুষ গর্বিত হতে পারে। কোন মানুষ পৃথিবীতে সর্বাধিক সম্পদ লাভ করলেও স্বল্পতম সময়ের জন্যই লাভ করে। মাত্র কয়েক বছর সে তা ভোগ করে তারপর সবকিছু ছেড়ে খালি হাতে পৃথিবী থেকে বিদায় হয়ে যায়। তাছাড়া সে সম্পদ যত অঢেলই হোক না কেন বাস্তবে তার একটা ক্ষুদ্রতম অংশই ব্যক্তির ব্যবহারে আসে। এ ধরনের সম্পদের কারণে গর্বিত হওয়া এমন কোন মানুষের কাজ নয়, যে এ পৃথিবীর প্রকৃত অবস্থা উপলব্ধি করতে সক্ষম। কেননা আখিরাতের সম্পদ গুণগত ও অবস্থাগত দিক দিয়ে উন্নত মানের। এটি সাময়িক বা অস্থায়ীও নয় বরং চিরস্থায়ী। তাছাড়া রিযিক কমবেশি হওয়ার বিষয়টি আল্লাহর ইচ্ছার সাথে সম্পর্কিত, তাঁর সন্তুষ্টির সাথে নয়। আল্লাহর ইচ্ছা অনুসারে ভালো-মন্দ সবরকমের মানুষ রিযিক লাভ করছে। যারা আল্লাহকে মেনে নিয়েছে তারাও রিযিক পাচ্ছে আবার যারা অস্বীকার করেছে তারাও প্রচুর রিযিক লাভ করছে। তবে প্রচুর রিযিক লাভ করা আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার কথা প্রমাণ বহন করে না। আবার রিযিকের অভাব আল্লাহর ক্রোধান্বিত হওয়ার আলামতও পেশ করে না। আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী একজন যালিম এবং বেঈমান লোকও আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়। অথচ যুলুম ও বেঈমানী আল্লাহ পছন্দ করেন না। পক্ষান্তরে আল্লাহর ইচ্ছাতেই একজন ঈমানদার ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও কষ্ট সহ্য করতে থাকে, অথচ আল্লাহ সত্যবাদিতা ও ঈমানদারীকে পছন্দ করেন। কাজেই যে ব্যক্তি বস্তুগত স্বার্থ ও মুনাফা অর্জনকে ভালো-মন্দের মাপকাঠি হিসেবে গণ্য করে, সে বিরাট ভুলের মধ্যে রয়েছে। আসল ব্যাপারটি হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর এটি অর্জিত হয় এমনসব নৈতিক গুণাবলির মাধ্যমে, যা আল্লাহ পছন্দ করেন। এ গুণাবলির সাথে কেউ যদি দুনিয়ার নিয়ামতগুলোও লাভ করে, তাহলে নিঃসন্দেহে তা হবে আল্লাহর দান এবং এজন্য তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত। কিন্তু যদি কোন ব্যক্তি নৈতিক গুণাবলির দিক দিয়ে আল্লাহর নাফরমান বান্দা হয়ে থাকে এবং এর সাথে সাথে তাকে দুনিয়ার নিয়ামতও দান করা হয় তাহলে তার অর্থ দাঁড়ায়, সে কঠিন জবাবদিহি ও নিকৃষ্টতম শাস্তি ভোগের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
কাফিরদের জন্য দুনিয়ার জীবন স্বাচ্ছন্দ্যময় :
زُيِّنَ لِلَّذِيْنَ كَفَرُوا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا وَيَسْخَرُوْنَ مِنَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۘ وَالَّذِيْنَ اتَّقَوْا فَوْقَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِؕ وَاللهُ يَرْزُقُ مَنْ يَّشَآءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ
যারা কুফরী করেছে দুনিয়ার জীবনকে তাদের জন্য সুশোভিত করা হয়েছে। ফলে তারা মুমিনদেরকে উপহাস করে, অথচ কিয়ামতের দিন মুত্তাক্বীরাই তাদের উপরে থাকবে। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে অগণিত রিযিক দান করেন। (সূরা বাক্বারা- ২১২)
পরকালের তুলনায় দুনিয়া অতি অল্প :
يَا قَوْمِ اِنَّمَا هٰذِهِ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا مَتَاعٌؗ وَاِنَّ الْاٰخِرَةَ هِيَ دَارُ الْقَرَارِ
হে আমার সম্প্রদায়! এ পার্থিব জীবন (অস্থায়ী) উপভোগের উপকরণ মাত্র, নিশ্চয় আখিরাতই হচ্ছে চিরস্থায়ী আবাস। (সূরা মু’মিন- ৩৯)
وَمَاۤ اُوْتِيْتُمْ مِّنْ شَيْءٍ فَمَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَزِيْنَتُهَاۚ وَمَا عِنْدَ اللهِ خَيْرٌ وَّاَبْقٰۤى اَفَلَا تَعْقِلُوْنَ
তোমাদেরকে যা কিছু দেয়া হয়েছে, তা পার্থিব জীবনের ভোগ ও শোভা মাত্র। কিন্তু আল্লাহর নিকট যা আছে তা আরো উত্তম ও স্থায়ী। তবুও কি তোমরা অনুধাবন করবে না? (সূরা ক্বাসাস- ৬০)
ব্যাখ্যা : দুনিয়ার জীবনের আয়ুকাল কারো জন্যই অল্প কতকগুলো বছরের বেশি হয় না। এটি নিছক একটি সফরের সাময়িক পর্যায় মাত্র। আসল জীবনটি হবে চিরস্থায়ী, যা অচিরেই আগমন করবে। এ সাময়িক জীবনে মানুষ যতই সহায়-সম্পদ জমা করুক না কেন এবং যতই আরাম-আয়েশ করুক না কেন, এ জীবন একদিন শেষ হবেই এবং এখানকার সবকিছু এখানে রেখেই তাকে চলে যেতে হবে। এ সংক্ষিপ্ত জীবনকালের আরাম-আয়েশের বিনিময়ে যদি মানুষকে আগামীর অন্তহীন জীবন বিপদের মধ্যে কাটাতে হয়, তাহলে কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি এ ক্ষতি মেনে নিতে পারে না। এর মুকাবিলায় একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি এখানে কয়েক বছর বিপদাপদের মধ্যে জীবন কাটিয়ে দেয়াকে প্রাধান্য দেবে। সে এর মাধ্যমে এমনসব কল্যাণ ও নেকী উপার্জন করতে চাইবে, যা পরবর্তী অন্তহীন জীবনে তার চিরকালীন আরাম-আয়েশের জন্য সহায়ক হবে। আল্লাহর দ্বীন মানুষের কাছে এ দাবী করে না যে, সে এ দুনিয়ার জীবনোপকরণ থেকে লাভবান হতে পারবে না। এর দাবী শুধু এতটুকু যে, এ দুনিয়ার জীবনের উপর আখিরাতকে প্রাধান্য দিতে হবে। কারণ দুনিয়া ধ্বংসশীল এবং আখিরাত চিরস্থায়ী। দুনিয়ার ভোগ-তৃপ্তি নিম্ন পর্যায়ের। পক্ষান্তরে আখিরাতের ভোগ-তৃপ্তি উচ্চ ও উন্নত পর্যায়ের। তাই মানুষকে দুনিয়াতে এমন সম্পদ অর্জন করতে হবে, যা তাকে আখিরাতের চিরন্তন জীবনে সফলকাম করবে অথবা চিরন্তন ক্ষতি থেকে বাঁচাবে। কিন্তু যেখানে মুকাবিলার ব্যাপার এসে যায় অর্থাৎ দুনিয়ার সাফল্য ও আখিরাতের সাফল্য পরস্পর বিরোধী হয়ে দাঁড়ায় সেখানে মানুষের কাছে সত্য দ্বীনের দাবী এবং ভারসাম্যপূর্ণ বুদ্ধিবৃত্তির দাবীও এটিই যে, মানুষ দুনিয়াকে আখিরাতের জন্য উৎসর্গ করে দিক। এ দুনিয়ার সাময়িক সম্পদ ও সৌন্দর্যের জন্য সে কখনো এমন পথ অবলম্বন না করুক, যার ফলে সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আল্লাহ এ কথা বলছেন না যে, তোমরা নিজেদের ব্যবসা গুটিয়ে নাও এবং আমার দ্বীনকে মেনে নিয়ে ফকির হয়ে যাও। বরং তিনি বলছেন, দুনিয়ার যে ধনসম্পদের জন্য তোমরা পাগলপারা, তা অতি সামান্য সম্পদ। আর তোমরা তা থেকে সামান্য ক’দিনের জন্য লাভবান হতে পার। অন্যদিকে আল্লাহর কাছে যা আছে তা এর তুলনায় গুণগত ও পরিমাণগত উভয় দিক দিয়ে ভালো এবং স্থায়ীত্বের অধিকারী। তাই যদি তোমরা এ সাময়িক জীবনের সীমাবদ্ধ নিয়ামত দ্বারা লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে এমন নীতি অবলম্বন কর, যার ফলে আখিরাতে চিরন্তন ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়, তাহলে এর চেয়ে বড় বোকামি আর কী হতে পারে? এক ব্যক্তি কঠোর পরিশ্রম করে নিজের রবের ইবাদাত করে। তারপর চিরকালের জন্য তাঁর পুরস্কার লাভ করে ধন্য হয়। আর অপর এক ব্যক্তি গ্রেফতার হয়ে আল্লাহর আদালতে অপরাধী হিসেবে উপস্থিত হয় এবং গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে সে নিছক কয়েকদিন হারাম সম্পদের মজা লুটার সুযোগ পায়। এ দু’জনের মধ্যে কে সফলকাম হলো? এটা প্রত্যেকেই সহজে বুঝতে পারে।
দুনিয়াপূজারীদের দিকে দৃষ্টি দেয়া নিষেধ :
وَلَا تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ اِلٰى مَا مَتَّعْنَا بِهٖۤ اَزْوَاجًا مِّنْهُمْ زَهْرَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا لِنَفْتِنَهُمْ فِيْهِؕ وَرِزْقُ رَبِّكَ خَيْرٌ وَّاَبْقٰى
তুমি তোমার চক্ষুদ্বয়কে কখনো ঐসব (বিষয়বস্তুর) দিকে প্রসারিত করো না, যা আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণিকে পার্থিব জীবনের সৌন্দর্যস্বরূপ উপভোগের উপকরণ হিসেবে দিয়েছি, যাতে আমি এর দ্বারা তাদেরকে পরীক্ষা করতে পারি। আর তোমার প্রতিপালক প্রদত্ত জীবনোপকরণ তো আরো উৎকৃষ্ট ও অধিক স্থায়ী। (সূরা ত্বা-হা- ১৩১)
পরকালের নিয়ামত ও পার্থিব ভোগ-সম্ভার সমান নয় :
اَفَمَنْ وَّعَدْنَاهُ وَعْدًا حَسَنًا فَهُوَ لَاقِيْهِ كَمَنْ مَّتَّعْنَاهُ مَتَاعَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ثُمَّ هُوَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنَ الْمُحْضَرِيْنَ
আমি যাকে উত্তম পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছি যা সে পাবে, সে কি ঐ ব্যক্তির সমান হবে, যাকে আমি পার্থিব জীবনের ভোগ-সম্ভার দিয়েছি; তারপর কিয়ামতের দিন তাকে হাযির করা হবে (জাহান্নামে)।
(সূরা ক্বাসাস- ৬১)
ব্যাখ্যা : দুনিয়াটা আসলে প্রতিদান পাওয়ার জায়গা নয় বরং পরীক্ষাগৃহ। এখানে শাস্তি ও পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকলেও তা সীমিত ও অসম্পূর্ণ পর্যায়ের। এ সত্যটি এড়িয়ে গিয়ে এ কথা মনে করার কোন সুযোগ নেই যে, এখানে যে ব্যক্তি নিয়ামত লাভ করছে তা লাভ করছে পুরস্কার হিসেবে, যা তার সৎ ও আল্লাহর প্রিয় হওয়ার প্রমাণ। আর যার উপর বিপদ আসছে তা হচ্ছে তার শাস্তি, যা তার অসৎ ও আল্লাহর অপ্রিয় হওয়ার প্রমাণ। এ ধরনের ধারণা করাটা বিভ্রান্তি এবং নির্বুদ্ধিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। যখন কোন ব্যক্তি বা জাতি একদিকে সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং অশ্লীল যুলুম ও সীমালঙ্ঘনমূলক কার্যক্রম করতে থাকে এবং অন্যদিকে তার উপর অনুগ্রহ বর্ষিত হতে থাকে তখন বুঝতে হবে, আল্লাহ তাকে কঠিনতর পরীক্ষার সম্মুখীন করেছেন এবং তার উপর আল্লাহর করুণা নয় বরং তাঁর ক্রোধ চেপে বসেছে। তার উপর যদি আঘাত আসত তাহলে বুঝা যেত যে, আল্লাহ তার প্রতি অনুগ্রহশীল হয়ে তাকে সতর্ক করছেন এবং সংশোধিত হওয়ার সুযোগ দিচ্ছেন। কিন্তু তাকে আরো পুরস্কৃত করার অর্থ হচ্ছে, তাকে কঠিন শাস্তি দেয়ার ফায়সালা হয়ে গেছে এবং তা পাওয়ার জন্য সে তার পাপের মাত্রা পূর্ণ করে নিচ্ছে। পক্ষান্তরে যার মধ্যে একদিকে থাকে আল্লাহর প্রতি সত্যিকার আনুগত্য, চারিত্রিক পবিত্রতা, পরিচ্ছন্ন লেনদেন, সৃষ্টির প্রতি সদাচার, দয়া ও স্নেহমমতা এবং অন্যদিকে তার প্রতি বিপদাপদের অবিরাম ধারা বর্ষিত হতে থাকে এবং আঘাতের পর আঘাতে জর্জরিত হতে থাকে, তার জন্য এটা আল্লাহর ক্রোধের নয় বরং তাঁর অনুগ্রহেরই আলামত।
দুনিয়াপূজারীরা পরকালের নিয়ামত পাবে না :
وَيَوْمَ يُعْرَضُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا عَلَى النَّارِؕ اَذْهَبْتُمْ طَيِّبَاتِكُمْ فِيْ حَيَاتِكُمُ الدُّنْيَا وَاسْتَمْتَعْتُمْ بِهَاۚ فَالْيَوْمَ تُجْزَوْنَ عَذَابَ الْهُوْنِ بِمَا كُنْتُمْ تَسْتَكْبِرُوْنَ فِى الْاَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَبِمَا كُنْتُمْ تَفْسُقُوْنَ
যখন কাফিরদেরকে জাহান্নামের সামনে নিয়ে দাঁড় করানো হবে (তখন তাদেরকে বলা হবে), তোমরা তোমাদের সব নিয়ামত দুনিয়ার জীবনেই শেষ করে ফেলেছ এবং এর মজা ভোগ করে ফেলেছ। তোমরা দুনিয়ায় অন্যায়ভাবে যে অহংকার করে বেড়াচ্ছিলে ও নাফরমানি করেছিলে, তার বদলায় আজ তোমাদেরকে অপমানজনক শাস্তি দেয়া হবে। (সূরা আহকাফ- ২০)
وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَاۤ اِلَّا لَعِبٌ وَّلَهْوٌؕ وَلَلدَّارُ الْاٰخِرَةُ خَيْرٌ لِّلَّذِيْنَ يَتَّقُوْنَؕ اَفَلَا تَعْقِلُوْنَ
পার্থিব জীবন ক্রীড়া কৌতুক ব্যতীত আর কিছুই নয়। সুতরাং যারা তাক্বওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য আখিরাতের আবাসই শ্রেয়; তোমরা কি তা অনুধাবন কর না? (সূরা আন‘আম- ৩২)
وَمَا هٰذِهِ الْحَيَاةُ الدُّنْيَاۤ اِلَّا لَهْوٌ وَّلَعِبٌؕ وَاِنَّ الدَّارَ الْاٰخِرَةَ لَهِيَ الْحَيَوَانُۘ لَوْ كَانُوْا يَعْلَمُوْنَ
এ পার্থিব জীবন ক্রীড়া কৌতুক ব্যতীত কিছুই নয়। নিশ্চয় পরকালের জীবনই প্রকৃত জীবন, যদি তারা জানত! (সূরা আনকাবূত- ৬৪)
ব্যাখ্যা : আখিরাতের চিরন্তন জীবনের তুলনায় দুনিয়ার এ জীবন ঠিক তেমন, যেমন কোন ব্যক্তি কিছুক্ষণ খেলাধূলা করে আনন্দ লাভ করে; তারপর তার আসল ও গুরুত্বপূর্ণ কাজে মনোনিবেশ করে। তাছাড়া একে খেলাধূলার সাথে তুলনা করার কারণ হচ্ছে, এখানে প্রকৃত সত্য গোপন থাকার ফলে যারা ভেতরে দৃষ্টি না দিয়ে শুধুমাত্র বাইরের অংশটুকু দেখতে অভ্যস্ত, তাদের জন্য বিভ্রান্তির শিকার হওয়ার বহু কারণ বিদ্যমান রয়েছে। এসব বিভ্রান্তির শিকার হয়ে মানুষ প্রকৃত সত্যের বিরুদ্ধে এমনসব অদ্ভূত কর্মপদ্ধতি অবলম্বন করে, যার ফলে তাদের জীবন নিছক একটি খেলা ও তামাশার বস্তুতে পরিণত হয়। যে ব্যক্তি এ পৃথিবীতে রাজার আসনে বসে তার মর্যাদা আসলে নাট্যমঞ্চের সেই কৃত্রিম রাজার চেয়ে মোটেই ভিন্নতর নয়, যে সোনার মুকুট মাথায় দিয়ে সিংহাসনে বসে এবং এমনভাবে হুকুম চালাতে থাকে যেন সে সত্যিকারের একজন বাদশাহ। অথচ প্রকৃত বাদশাহীর সামান্যতম নামগন্ধও তার মধ্যে নেই। দুনিয়ার মাত্র কয়েকদিনের জীবনেই এসব অভিনয় চলছে। মৃত্যুর মুহূর্ত আসার সাথে সাথে এক নিমিষে সবকিছুই বন্ধ হয়ে যাবে। এ জীবনের সীমান্ত পার হওয়ার সাথে সাথেই মানুষ এমন এক জগতে পৌঁছে যাবে, যেখানে সবকিছু্ই হবে প্রকৃত সত্যের অনুরূপ এবং যেখানে এ দুনিয়ার জীবনের সমস্ত বিভ্রান্তির আবরণ খুলে দিয়ে মানুষকে দেখিয়ে দেয়া হবে যে, সে কী পরিমাণ সত্য নিয়ে এসেছে। অতঃপর সত্যের তুলাদন্ডে পরিমাপ করে তার মান নির্ধারণ করা হবে। যদি তারা এ কথা জানত যে, এ দুনিয়ার জীবন একটি পরীক্ষার অবকাশ মাত্র। মানুষের জন্য আসল জীবন হচ্ছে আখিরাতের জীবন, যা চিরকাল স্থায়ী হবে। তাহলে তারা এ পরীক্ষার সময়কালকে খেলতামাশায় নষ্ট না করে এমনসব কাজে ব্যবহার করত, যা তাদের পরকালের স্থায়ী জীবনকে সুখময় করে তুলত।
দুনিয়ার কয়েকটি শোভনীয় জিনিস :
زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَآءِ وَالْبَنِيْنَ وَالْقَنَاطِيْرِ الْمُقَنْطَرَةِ مِنَ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَالْخَيْلِ الْمُسَوَّمَةِ وَالْاَنْعَامِ وَالْحَرْثِؕ ذٰلِكَ مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَاۚ وَاللهُ عِنْدَهٗ حُسْنُ الْمَاٰبِ
নারী, সন্তান, সোনা-রুপার অঢেল ধনসম্পদ, চি হ্নত ঘোড়া, গবাদি পশু, ক্ষেতখামার- এসব জিনিসের ভালোবাসা মানুষের কাছে শোভনীয় করে দেয়া হয়েছে। এসব মূলত দুনিয়ার জীবনের ভোগের সামগ্রী মাত্র। আর আল্লাহর কাছে রয়েছে (এর চেয়েও) উত্তম বাসস্থান। (সূরা আলে ইমরান- ১৪)
দুনিয়ার জীবনের দৃষ্টান্ত :
اِنَّمَا مَثَلُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَآءٍ اَنْزَلْنَاهُ مِنَ السَّمَآءِ فَاخْتَلَطَ بِهٖ نَبَاتُ الْاَرْضِ مِمَّا يَاْكُلُ النَّاسُ وَالْاَنْعَامُؕ حَتّٰۤى اِذَاۤ اَخَذَتِ الْاَرْضُ زُخْرُفَهَا وَازَّيَّنَتْ وَظَنَّ اَهْلُهَاۤ اَنَّهُمْ قَادِرُوْنَ عَلَيْهَاۤ اَتَاهَاۤ اَمْرُنَا لَيْلًا اَوْ نَهَارًا فَجَعَلْنَاهَا حَصِيْدًا كَاَنْ لَّمْ تَغْنَ بِالْاَمْسِؕ كَذٰلِكَ نُفَصِّلُ الْاٰيَاتِ لِقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ
বস্তুত পার্থিব জীবনের দৃষ্টান্ত এরূপ যে, আমি আকাশ হতে বারি বর্ষণ করি, যা দ্বারা জমিনে উদগত উদ্ভিদসমূহ ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে উদগত হয়, যা হতে মানুষ ও জীবজন্তু আহার করে থাকে। অতঃপর যখন ভূমি তার শোভা ধারণ করে এবং নয়নাভিরাম হয়, অতঃপর সেটার অধিকারীগণ সেটাকে তাদের আয়ত্তাধীন মনে করে, তখন দিবসে অথবা রজনীতে আমার নির্দেশ এসে পড়ে। অতঃপর আমি সেটাকে এমনভাবে নির্মূল করে দেই, যেন গতকালও সেটার অস্তিত্ব ছিল না। এভাবে আমি নিদর্শনাবলি বিশদভাবে বিবৃত করি চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য। (সূরা ইউনুস- ২৪)
وَاضْرِبْ لَهُمْ مَّثَلَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَآءٍ اَنْزَلْنَاهُ مِنَ السَّمَآءِ فَاخْتَلَطَ بِهٖ نَبَاتُ الْاَرْضِ فَاَصْبَحَ هَشِيْمًا تَذْرُوْهُ الرِّيَاحُؕ وَكَانَ اللهُ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ مُّقْتَدِرًا
তাদের নিকট পার্থিব জীবনের উপমা পেশ করো। এটা পানির ন্যায়, যা আমি আকাশ হতে বর্ষণ করি, যা দ্বারা জমিনে উদগত উদ্ভিদসমূহ ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে উদগত হয়। অতঃপর তা শুষ্ক হয়ে এমন চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায় যে, বাতাস তাকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। আল্লাহ সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। (সূরা কাহফ- ৪৫)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ তিনি জীবন দান করেন, আবার মৃত্যুও দান করেন। তিনি উত্থান ঘটান, আবার পতনও ঘটান। তাঁর নির্দেশেই বসন্ত আসে এবং শীতও আসে। আজ যদি তুমি সচ্ছল ও আরামের জীবন-যাপন করে থাক, তাহলে এ অহংকারে মত্ত হয়ো না যে, এ অবস্থার পরিবর্তন নেই। যে আল্লাহর হুকুমে তুমি এসব লাভ করেছ তাঁরই হুকুমে এসব তোমার কাছ থেকে ছিনিয়েও নেয়া হতে পারে।
দুনিয়ার জীবনের প্রকৃতি :
اِعْلَمُوْاۤ اَنَّمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا لَعِبٌ وَّلَهْوٌ وَّزِيْنَةٌ وَّتَفَاخُرٌ ۢبَيْنَكُمْ وَتَكَاثُرٌ فِى الْاَمْوَالِ وَالْاَوْلَادِؕ كَمَثَلِ غَيْثٍ اَعْجَبَ الْكُفَّارَ نَبَاتُهٗ ثُمَّ يَهِيْجُ فَتَرَاهُ مُصْفَرًّا ثُمَّ يَكُوْنُ حُطَامًاؕ وَفِى الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ شَدِيْدٌ وَّمَغْفِرَةٌ مِّنَ اللهِ وَرِضْوَانٌؕ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَاۤ اِلَّا مَتَاعُ الْغُرُوْرِ
জেনে রেখো, দুনিয়ার জীবন খেলতামাশা, জাঁকজমক, পারস্পরিক অহংকার প্রকাশ, ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততির প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগিতা ব্যতীত আর কিছুই নয়। এর উপমা বৃষ্টির সাথে, যার দ্বারা উৎপন্ন শস্য কৃষকদের চমৎকৃত করে। অতঃপর তা শুকিয়ে যায়, ফলে তুমি তা হলুদ বর্ণ দেখতে পাও; অবশেষে তা খড়কুটায় পরিণত হয়। অতএব পরকালে রয়েছে কঠিন শাস্তি এবং আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। পক্ষান্তরে দুনিয়ার জীবন ছলনাময় ধোঁকা ব্যতীত আর কিছুই নয়। (সূরা হাদীদ- ২০)
ব্যাখ্যা : এ উপমা থেকে বুদ্ধিমান মানুষ এ শিক্ষা গ্রহণ করে যে, দুনিয়ার এ জীবন ও এর সব সৌন্দর্য ও চাকচিক্য অস্থায়ী। প্রতিটি যৌবনের পরিণাম বার্ধক্য ও মৃত্যু। প্রতিটি উত্থানই অবশেষে পতনের পরিণতি লাভ করে। সুতরাং এ পৃথিবী এমন জিনিস নয়, যার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে মানুষ আল্লাহ ও আখিরাতকে ভুলে যেতে পারে এবং এখানকার ক্ষণস্থায়ী বসন্তের মজা উপভোগ করার জন্য এমন আচরণ করবে, যা তার পরিণামকে ধ্বংস করে দেবে। তাছাড়া একজন বুদ্ধিমান লোক এসব দৃশ্য দেখে এ শিক্ষা গ্রহণ করে যে, এ দুনিয়ায় বসন্ত ও শরৎ আল্লাহর ইচ্ছাতেই আগমন করে। তিনি যাকে ইচ্ছা উত্থান ঘটান এবং যাকে ইচ্ছা তার পতন ঘটান। আল্লাহ যাকে সমৃদ্ধ ও উন্নত করেন তার বেড়ে ওঠা যেমন কেউ রোধ করতে পারে না, তেমনিভাবে তিনি যাকে ধ্বংস করতে চান তাকে রক্ষা করতে পারে এমন শক্তিও কারো নেই।
মানুষ দুনিয়ার ধোঁকায় পড়ে আছে:
وَغَرَّتْهُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا
বস্তুত পার্থিব জীবন তাদেরকে প্রতারিত করেছিল। (সূরা আন‘আম- ১৩০)
ব্যাখ্যা : দুনিয়ার জীবন স্থুলদর্শী লোকদেরকে নানা রকম ভুল ধারণায় নিমজ্জিত করে। কেউ মনে করে, বাঁচা-মরা শুধুমাত্র এ দুনিয়ায় সীমাবদ্ধ, এরপর দ্বিতীয় কোন জীবন নেই। কেউ ক্ষমতা, প্রতিপত্তি ও প্রাচুর্যের নেশায় মত্ত হয়ে নিজের মৃত্যুর কথা ভুলে যায় এবং এ ভুল ধারণা পোষণ করে যে, তার আরাম-আয়েশ ও কর্তৃত্ব চিরস্থায়ী, এর কোন ক্ষয় নেই। কেউ নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উদ্দেশ্য ভুলে গিয়ে কেবলমাত্র বৈষয়িক লাভ ও স্বাদকে জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য মনে করে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যকে কোন গুরুত্বই দেয় না। এর ফলে তার মনুষ্যত্বের মান যত নিচে নেমে যাক না কেন, তার কোন পরোয়াই সে করে না। কেউ মনে করে বৈষয়িক সমৃদ্ধিই ন্যায়-অন্যায় ও সত্য-মিথ্যার আসল মানদন্ড। এ সমৃদ্ধি যে পথেই অর্জিত হবে তা-ই সত্য এবং এর বিপরীত সবকিছুই মিথ্যা। কেউ এ সমৃদ্ধিকেই আল্লাহর নিকট অনুগৃহীত হওয়ার আলামত হিসেবে মনে করে। এর ফলে সে সাধারণভাবে মনে করতে থাকে, যে কোন উপায়েই হোক একজন লোক বিপুল সম্পদের অধিকারী হতে পারলেই সে আল্লাহর প্রিয়পাত্র। আর যার বৈষয়িক অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে, তার পরকাল ঝরঝরে হয়ে গেছে। এ ধরনের যত প্রকার ভুল ধারণা আছে সবগুলোই আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়ার জীবনের প্রতারণা বলে উল্লেখ করেছেন।
আল্লাহর সতর্কবাণী :
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اِنَّ وَعْدَ اللهِ حَقٌّ فَلَا تَغُرَّنَّكُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا وَلَا يَغُرَّنَّكُمْ بِاللهِ الْغَرُوْرُ
হে মানুষ! নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য। সুতরাং পার্থিব জীবন যেন কিছুতেই তোমাদেরকে প্রতারিত না করে এবং প্রতারক (শয়তান) যেন কিছুতেই তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারিত না করে। (সূরা ফাতির- ৫)
وَذَرِ الَّذِيْنَ اتَّخَذُوْا دِيْنَهُمْ لَعِبًا وَّلَهْوًا وَّغَرَّتْهُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا
যারা তাদের দ্বীনকে খেলতামাশা হিসেবে গ্রহণ করে এবং পার্থিব জীবন যাদেরকে প্রতারিত করে তুমি তাদের সঙ্গ বর্জন করো। (সূরা আন‘আম- ৭০)
ব্যাখ্যা : اَلْغَرُوْرُ (আল গারুর) অর্থ প্রতারক। এখানে اَلْغَرُوْرُ (আল গারুর) বলতে শয়তানও হতে পারে, আবার একদল মানুষও হতে পারে, মানুষের মন ও প্রবৃত্তিও হতে পারে এবং অন্য কোন জিনিসও হতে পারে। কোন বিশেষ ব্যক্তি বা বিশেষ বস্তু নির্ধারণ না করে এ বহুমুখী অর্থের অধিকারী শব্দটিকে ব্যবহার করার কারণ হচ্ছে, বিভিন্ন রকম লোকের কাছে প্রতারিত হওয়ার মূল কারণ বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে। যে ব্যক্তি যে উপায়েই প্রতারণার শিকার হয়েছে তা-ই তার জন্য ‘গারূর’ বা প্রতারক। কাউকে তার প্রতারক এ নিশ্চয়তা দেয় যে, আল্লাহ বলতে কিছুই নেই। আবার কাউকে এ ভুল ধারণা দেয় যে, আল্লাহ এ দুনিয়া সৃষ্টি করে হাত-পা গুটিয়ে বসে আছেন এবং এখন তিনি এ দুনিয়া বান্দাদের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন। আল্লাহর এমন কিছু প্রিয়পাত্র আছে, যাদের নৈকট্য অর্জন করলে তুমি যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারবে। তুমি নিশ্চিতভাবেই ক্ষমার অধিকারী হবে। কাউকে এভাবে প্রতারণা দেয় যে, আল্লাহ তো ক্ষমাশীল ও করুণাময়। সুতরাং তোমরা পাপ করতে থাক, তিনি ক্ষমা করে যেতেই থাকবেন। আবার কারো মনে এ ভুল ধারণা সৃষ্টি করে দেয় যে, তোমাদের তো হাত-পা বাঁধা, তোমরা যত খারাপ কাজ করো সব আল্লাহই করান। সুতরাং তোমরা ভালো কাজ থেকে দূরে সরে যাও। কারণ আল্লাহ তা করার তাওফীক তোমাদের দেন না। যদি বিশ্লেষণ করে দেখা হয়, তাহলে শেষ পর্যন্ত প্রত্যেকটি গোনাহ ও অপরাধের মূল কারণ হিসেবে দেখা যাবে যে, মানুষ আল্লাহর ব্যাপারে কোন না কোনভাবে প্রতারণার শিকার হয়েছে। এর ফলেই তার বিশ্বাসে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে এবং সে নৈতিক চরিত্রহীনতার শিকার হয়েছে।
যে দুনিয়া চায় আল্লাহ তাকে দুনিয়া থেকে কিছু দেন :
وَمَنْ يُّرِدْ ثَوَابَ الدُّنْيَا نُؤْتِهٖ مِنْهَاۚ وَمَنْ يُّرِدْ ثَوَابَ الْاٰخِرَةِ نُؤْتِهٖ مِنْهَاؕ وَسَنَجْزِى الشَّاكِرِيْنَ
আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার প্রতিদান কামনা করে, আমি তাকে তা হতে কিছু প্রদান করি। আর যে ব্যক্তি পরকালের প্রতিদান কামনা করে, আমি তাকে তা হতেই প্রদান করে থাকি। অচিরেই আমি কৃতজ্ঞদেরকে পুরস্কার প্রদান করব। (সূরা আলে ইমরান- ১৪৫)
ব্যাখ্যা : পুরস্কার অর্থ কাজের ফল। দুনিয়ার পুরস্কার বলতে বুঝায়- মানুষ তার প্রচেষ্টা ও কাজের ফলস্বরূপ দুনিয়ার জীবনে যে মুনাফা অর্জন করে। আর আখিরাতের পুরস্কার বলতে বুঝায়- দুনিয়ার জীবনে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী চলার ফলস্বরূপ মানুষ আখিরাতের চিরন্তন জীবনে যে পুরস্কার লাভ করে। মানুষ যে প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে, সে ক্ষেত্রে তার দৃষ্টি ইহকালীন না পরকালীন ফলপ্রাপ্তির দিকে নিবদ্ধ থাকবে- ইসলামের দৃষ্টিতে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের বিষয়।
مَنْ كَانَ يُرِيْدُ الْعَاجِلَةَ عَجَّلْنَا لَهٗ فِيْهَا مَا نَشَآءُ لِمَنْ نُّرِيْدُ ثُمَّ جَعَلْنَا لَهٗ جَهَنَّمَۚ يَصْلَاهَا مَذْمُوْمًا مَّدْحُوْرًا
যে ব্যক্তি পার্থিব সুখ-সম্ভোগ কামনা করবে, আমি তাকে যা ইচ্ছা এখানেই দিয়ে থাকি। অতঃপর তার জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত করি, যেখানে সে প্রবেশ করবে নিন্দিত ও অনুগ্রহ হতে বঞ্চিত অবস্থায়। (সূরা বনী ইসরাইল- ১৮)
ব্যাখ্যা : এর অর্থ হচ্ছে, যে ব্যক্তি আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না অথবা আখিরাত পর্যন্ত সবর করতে প্রস্তুত নয় এবং শুধুমাত্র দুনিয়ার সাফল্য ও সমৃদ্ধিকেই নিজের যাবতীয় প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করে, সে যা কিছু পাবে এ দুনিয়াতেই পাবে। আখিরাতে সে কিছুই পাবে না। শুধু তাই নয় বরং দুনিয়ার বৈষয়িক স্বার্থপূজা ও আখিরাতে জবাবদিহির দায়িত্বের ব্যাপারে বেপরোয়া মনোভাব তার কর্মধারাকে মৌলিকভাবে ভ্রান্ত পথে পরিচালিত করবে। যার ফলে সে জাহান্নামের অধিবাসী হবে। যার উদ্দেশ্য শুধু দুনিয়ার জীবনের স্বার্থ ও সুখ লাভ করা সে এ বৈষয়িক স্বার্থ উদ্ধারের জন্য যেমন প্রচেষ্টা চালাবে তেমনি তার ফলও সে এখানে পাবে। আখিরাত যার লক্ষ্য নয় এবং সেজন্য যে কোন চেষ্টাও করে না তার দুনিয়ার প্রচেষ্টার ফল আখিরাত পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হবে না। জীবনের শেষ নিঃশ্বাসের সাথে সাথেই তাকে নিজের সমস্ত সরঞ্জাম এ দুনিয়ায় ছেড়ে চলে যেতে হবে। এর কোন একটি জিনিসও সে সঙ্গে নিয়ে যেতে পারবে না।
কিছু লোক পরকাল বিক্রি করে দুনিয়া ক্রয় করে :
اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ اشْتَرَوُا الْحَيَاةَ الدُّنْيَا بِالْاٰخِرَةِؗ فَلَا يُخَفَّفُ عَنْهُمُ الْعَذَابُ وَلَا هُمْ يُنْصَرُوْنَ
এরাই পরকালের বিনিময়ে পার্থিব জীবন ক্রয় করে নিয়েছে; অতএব তাদের দন্ড হালকা করা হবে না এবং তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না। (সূরা বাক্বারা- ৮৬)
মানুষ দুনিয়াকে প্রাধান্য দেয় :
بَلْ تُؤْثِرُوْنَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا
কিন্তু তোমরা তো পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাক। (সূরা আ‘লা- ১৬)
ذٰلِكَ بِاَنَّهُمُ اسْتَحَبُّوا الْحَيَاةَ الدُّنْيَا عَلَى الْاٰخِرَةِ وَاَنَّ اللهَ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الْكَافِرِيْنَ
এটা এজন্য যে, তারা দুনিয়ার জীবনকে আখিরাতের উপর প্রাধান্য দেয়। নিশ্চয় আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে হেদায়াত করেন না। (সূরা নাহল- ১০৭)
وَفَرِحُوْا بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَاؕ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا فِى الْاٰخِرَةِ اِلَّا مَتَاعٌ
এরা পার্থিব জীবন নিয়ে উল্লাসিত, অথচ দুনিয়ার জীবন আখিরাতের তুলনায় ক্ষণস্থায়ী ভোগমাত্র। (সূরা রা‘দ- ২৬)
ব্যাখ্যা : দুনিয়ার ভোগ এমন কোন রিযিক নয়, যার জন্য মানুষ গর্বিত হতে পারে। কোন মানুষ পৃথিবীতে সর্বাধিক সম্পদ লাভ করলেও স্বল্পতম সময়ের জন্যই লাভ করে। মাত্র কয়েক বছর সে তা ভোগ করে তারপর সবকিছু ছেড়ে খালি হাতে পৃথিবী থেকে বিদায় হয়ে যায়। তাছাড়া সে সম্পদ যত অঢেলই হোক না কেন বাস্তবে তার একটা ক্ষুদ্রতম অংশই ব্যক্তির ব্যবহারে আসে। এ ধরনের সম্পদের কারণে গর্বিত হওয়া এমন কোন মানুষের কাজ নয়, যে এ পৃথিবীর প্রকৃত অবস্থা উপলব্ধি করতে সক্ষম। কেননা আখিরাতের সম্পদ গুণগত ও অবস্থাগত দিক দিয়ে উন্নত মানের। এটি সাময়িক বা অস্থায়ীও নয় বরং চিরস্থায়ী। তাছাড়া রিযিক কমবেশি হওয়ার বিষয়টি আল্লাহর ইচ্ছার সাথে সম্পর্কিত, তাঁর সন্তুষ্টির সাথে নয়। আল্লাহর ইচ্ছা অনুসারে ভালো-মন্দ সবরকমের মানুষ রিযিক লাভ করছে। যারা আল্লাহকে মেনে নিয়েছে তারাও রিযিক পাচ্ছে আবার যারা অস্বীকার করেছে তারাও প্রচুর রিযিক লাভ করছে। তবে প্রচুর রিযিক লাভ করা আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার কথা প্রমাণ বহন করে না। আবার রিযিকের অভাব আল্লাহর ক্রোধান্বিত হওয়ার আলামতও পেশ করে না। আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী একজন যালিম এবং বেঈমান লোকও আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়। অথচ যুলুম ও বেঈমানী আল্লাহ পছন্দ করেন না। পক্ষান্তরে আল্লাহর ইচ্ছাতেই একজন ঈমানদার ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও কষ্ট সহ্য করতে থাকে, অথচ আল্লাহ সত্যবাদিতা ও ঈমানদারীকে পছন্দ করেন। কাজেই যে ব্যক্তি বস্তুগত স্বার্থ ও মুনাফা অর্জনকে ভালো-মন্দের মাপকাঠি হিসেবে গণ্য করে, সে বিরাট ভুলের মধ্যে রয়েছে। আসল ব্যাপারটি হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর এটি অর্জিত হয় এমনসব নৈতিক গুণাবলির মাধ্যমে, যা আল্লাহ পছন্দ করেন। এ গুণাবলির সাথে কেউ যদি দুনিয়ার নিয়ামতগুলোও লাভ করে, তাহলে নিঃসন্দেহে তা হবে আল্লাহর দান এবং এজন্য তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত। কিন্তু যদি কোন ব্যক্তি নৈতিক গুণাবলির দিক দিয়ে আল্লাহর নাফরমান বান্দা হয়ে থাকে এবং এর সাথে সাথে তাকে দুনিয়ার নিয়ামতও দান করা হয় তাহলে তার অর্থ দাঁড়ায়, সে কঠিন জবাবদিহি ও নিকৃষ্টতম শাস্তি ভোগের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
কাফিরদের জন্য দুনিয়ার জীবন স্বাচ্ছন্দ্যময় :
زُيِّنَ لِلَّذِيْنَ كَفَرُوا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا وَيَسْخَرُوْنَ مِنَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۘ وَالَّذِيْنَ اتَّقَوْا فَوْقَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِؕ وَاللهُ يَرْزُقُ مَنْ يَّشَآءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ
যারা কুফরী করেছে দুনিয়ার জীবনকে তাদের জন্য সুশোভিত করা হয়েছে। ফলে তারা মুমিনদেরকে উপহাস করে, অথচ কিয়ামতের দিন মুত্তাক্বীরাই তাদের উপরে থাকবে। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে অগণিত রিযিক দান করেন। (সূরা বাক্বারা- ২১২)
পরকালের তুলনায় দুনিয়া অতি অল্প :
يَا قَوْمِ اِنَّمَا هٰذِهِ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا مَتَاعٌؗ وَاِنَّ الْاٰخِرَةَ هِيَ دَارُ الْقَرَارِ
হে আমার সম্প্রদায়! এ পার্থিব জীবন (অস্থায়ী) উপভোগের উপকরণ মাত্র, নিশ্চয় আখিরাতই হচ্ছে চিরস্থায়ী আবাস। (সূরা মু’মিন- ৩৯)
وَمَاۤ اُوْتِيْتُمْ مِّنْ شَيْءٍ فَمَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَزِيْنَتُهَاۚ وَمَا عِنْدَ اللهِ خَيْرٌ وَّاَبْقٰۤى اَفَلَا تَعْقِلُوْنَ
তোমাদেরকে যা কিছু দেয়া হয়েছে, তা পার্থিব জীবনের ভোগ ও শোভা মাত্র। কিন্তু আল্লাহর নিকট যা আছে তা আরো উত্তম ও স্থায়ী। তবুও কি তোমরা অনুধাবন করবে না? (সূরা ক্বাসাস- ৬০)
ব্যাখ্যা : দুনিয়ার জীবনের আয়ুকাল কারো জন্যই অল্প কতকগুলো বছরের বেশি হয় না। এটি নিছক একটি সফরের সাময়িক পর্যায় মাত্র। আসল জীবনটি হবে চিরস্থায়ী, যা অচিরেই আগমন করবে। এ সাময়িক জীবনে মানুষ যতই সহায়-সম্পদ জমা করুক না কেন এবং যতই আরাম-আয়েশ করুক না কেন, এ জীবন একদিন শেষ হবেই এবং এখানকার সবকিছু এখানে রেখেই তাকে চলে যেতে হবে। এ সংক্ষিপ্ত জীবনকালের আরাম-আয়েশের বিনিময়ে যদি মানুষকে আগামীর অন্তহীন জীবন বিপদের মধ্যে কাটাতে হয়, তাহলে কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি এ ক্ষতি মেনে নিতে পারে না। এর মুকাবিলায় একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি এখানে কয়েক বছর বিপদাপদের মধ্যে জীবন কাটিয়ে দেয়াকে প্রাধান্য দেবে। সে এর মাধ্যমে এমনসব কল্যাণ ও নেকী উপার্জন করতে চাইবে, যা পরবর্তী অন্তহীন জীবনে তার চিরকালীন আরাম-আয়েশের জন্য সহায়ক হবে। আল্লাহর দ্বীন মানুষের কাছে এ দাবী করে না যে, সে এ দুনিয়ার জীবনোপকরণ থেকে লাভবান হতে পারবে না। এর দাবী শুধু এতটুকু যে, এ দুনিয়ার জীবনের উপর আখিরাতকে প্রাধান্য দিতে হবে। কারণ দুনিয়া ধ্বংসশীল এবং আখিরাত চিরস্থায়ী। দুনিয়ার ভোগ-তৃপ্তি নিম্ন পর্যায়ের। পক্ষান্তরে আখিরাতের ভোগ-তৃপ্তি উচ্চ ও উন্নত পর্যায়ের। তাই মানুষকে দুনিয়াতে এমন সম্পদ অর্জন করতে হবে, যা তাকে আখিরাতের চিরন্তন জীবনে সফলকাম করবে অথবা চিরন্তন ক্ষতি থেকে বাঁচাবে। কিন্তু যেখানে মুকাবিলার ব্যাপার এসে যায় অর্থাৎ দুনিয়ার সাফল্য ও আখিরাতের সাফল্য পরস্পর বিরোধী হয়ে দাঁড়ায় সেখানে মানুষের কাছে সত্য দ্বীনের দাবী এবং ভারসাম্যপূর্ণ বুদ্ধিবৃত্তির দাবীও এটিই যে, মানুষ দুনিয়াকে আখিরাতের জন্য উৎসর্গ করে দিক। এ দুনিয়ার সাময়িক সম্পদ ও সৌন্দর্যের জন্য সে কখনো এমন পথ অবলম্বন না করুক, যার ফলে সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আল্লাহ এ কথা বলছেন না যে, তোমরা নিজেদের ব্যবসা গুটিয়ে নাও এবং আমার দ্বীনকে মেনে নিয়ে ফকির হয়ে যাও। বরং তিনি বলছেন, দুনিয়ার যে ধনসম্পদের জন্য তোমরা পাগলপারা, তা অতি সামান্য সম্পদ। আর তোমরা তা থেকে সামান্য ক’দিনের জন্য লাভবান হতে পার। অন্যদিকে আল্লাহর কাছে যা আছে তা এর তুলনায় গুণগত ও পরিমাণগত উভয় দিক দিয়ে ভালো এবং স্থায়ীত্বের অধিকারী। তাই যদি তোমরা এ সাময়িক জীবনের সীমাবদ্ধ নিয়ামত দ্বারা লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে এমন নীতি অবলম্বন কর, যার ফলে আখিরাতে চিরন্তন ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়, তাহলে এর চেয়ে বড় বোকামি আর কী হতে পারে? এক ব্যক্তি কঠোর পরিশ্রম করে নিজের রবের ইবাদাত করে। তারপর চিরকালের জন্য তাঁর পুরস্কার লাভ করে ধন্য হয়। আর অপর এক ব্যক্তি গ্রেফতার হয়ে আল্লাহর আদালতে অপরাধী হিসেবে উপস্থিত হয় এবং গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে সে নিছক কয়েকদিন হারাম সম্পদের মজা লুটার সুযোগ পায়। এ দু’জনের মধ্যে কে সফলকাম হলো? এটা প্রত্যেকেই সহজে বুঝতে পারে।
দুনিয়াপূজারীদের দিকে দৃষ্টি দেয়া নিষেধ :
وَلَا تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ اِلٰى مَا مَتَّعْنَا بِهٖۤ اَزْوَاجًا مِّنْهُمْ زَهْرَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا لِنَفْتِنَهُمْ فِيْهِؕ وَرِزْقُ رَبِّكَ خَيْرٌ وَّاَبْقٰى
তুমি তোমার চক্ষুদ্বয়কে কখনো ঐসব (বিষয়বস্তুর) দিকে প্রসারিত করো না, যা আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণিকে পার্থিব জীবনের সৌন্দর্যস্বরূপ উপভোগের উপকরণ হিসেবে দিয়েছি, যাতে আমি এর দ্বারা তাদেরকে পরীক্ষা করতে পারি। আর তোমার প্রতিপালক প্রদত্ত জীবনোপকরণ তো আরো উৎকৃষ্ট ও অধিক স্থায়ী। (সূরা ত্বা-হা- ১৩১)
পরকালের নিয়ামত ও পার্থিব ভোগ-সম্ভার সমান নয় :
اَفَمَنْ وَّعَدْنَاهُ وَعْدًا حَسَنًا فَهُوَ لَاقِيْهِ كَمَنْ مَّتَّعْنَاهُ مَتَاعَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ثُمَّ هُوَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنَ الْمُحْضَرِيْنَ
আমি যাকে উত্তম পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছি যা সে পাবে, সে কি ঐ ব্যক্তির সমান হবে, যাকে আমি পার্থিব জীবনের ভোগ-সম্ভার দিয়েছি; তারপর কিয়ামতের দিন তাকে হাযির করা হবে (জাহান্নামে)।
(সূরা ক্বাসাস- ৬১)
ব্যাখ্যা : দুনিয়াটা আসলে প্রতিদান পাওয়ার জায়গা নয় বরং পরীক্ষাগৃহ। এখানে শাস্তি ও পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকলেও তা সীমিত ও অসম্পূর্ণ পর্যায়ের। এ সত্যটি এড়িয়ে গিয়ে এ কথা মনে করার কোন সুযোগ নেই যে, এখানে যে ব্যক্তি নিয়ামত লাভ করছে তা লাভ করছে পুরস্কার হিসেবে, যা তার সৎ ও আল্লাহর প্রিয় হওয়ার প্রমাণ। আর যার উপর বিপদ আসছে তা হচ্ছে তার শাস্তি, যা তার অসৎ ও আল্লাহর অপ্রিয় হওয়ার প্রমাণ। এ ধরনের ধারণা করাটা বিভ্রান্তি এবং নির্বুদ্ধিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। যখন কোন ব্যক্তি বা জাতি একদিকে সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং অশ্লীল যুলুম ও সীমালঙ্ঘনমূলক কার্যক্রম করতে থাকে এবং অন্যদিকে তার উপর অনুগ্রহ বর্ষিত হতে থাকে তখন বুঝতে হবে, আল্লাহ তাকে কঠিনতর পরীক্ষার সম্মুখীন করেছেন এবং তার উপর আল্লাহর করুণা নয় বরং তাঁর ক্রোধ চেপে বসেছে। তার উপর যদি আঘাত আসত তাহলে বুঝা যেত যে, আল্লাহ তার প্রতি অনুগ্রহশীল হয়ে তাকে সতর্ক করছেন এবং সংশোধিত হওয়ার সুযোগ দিচ্ছেন। কিন্তু তাকে আরো পুরস্কৃত করার অর্থ হচ্ছে, তাকে কঠিন শাস্তি দেয়ার ফায়সালা হয়ে গেছে এবং তা পাওয়ার জন্য সে তার পাপের মাত্রা পূর্ণ করে নিচ্ছে। পক্ষান্তরে যার মধ্যে একদিকে থাকে আল্লাহর প্রতি সত্যিকার আনুগত্য, চারিত্রিক পবিত্রতা, পরিচ্ছন্ন লেনদেন, সৃষ্টির প্রতি সদাচার, দয়া ও স্নেহমমতা এবং অন্যদিকে তার প্রতি বিপদাপদের অবিরাম ধারা বর্ষিত হতে থাকে এবং আঘাতের পর আঘাতে জর্জরিত হতে থাকে, তার জন্য এটা আল্লাহর ক্রোধের নয় বরং তাঁর অনুগ্রহেরই আলামত।
দুনিয়াপূজারীরা পরকালের নিয়ামত পাবে না :
وَيَوْمَ يُعْرَضُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا عَلَى النَّارِؕ اَذْهَبْتُمْ طَيِّبَاتِكُمْ فِيْ حَيَاتِكُمُ الدُّنْيَا وَاسْتَمْتَعْتُمْ بِهَاۚ فَالْيَوْمَ تُجْزَوْنَ عَذَابَ الْهُوْنِ بِمَا كُنْتُمْ تَسْتَكْبِرُوْنَ فِى الْاَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَبِمَا كُنْتُمْ تَفْسُقُوْنَ
যখন কাফিরদেরকে জাহান্নামের সামনে নিয়ে দাঁড় করানো হবে (তখন তাদেরকে বলা হবে), তোমরা তোমাদের সব নিয়ামত দুনিয়ার জীবনেই শেষ করে ফেলেছ এবং এর মজা ভোগ করে ফেলেছ। তোমরা দুনিয়ায় অন্যায়ভাবে যে অহংকার করে বেড়াচ্ছিলে ও নাফরমানি করেছিলে, তার বদলায় আজ তোমাদেরকে অপমানজনক শাস্তি দেয়া হবে। (সূরা আহকাফ- ২০)
ধনসম্পদের ভান্ডার আল্লাহর হাতে :
وَاِنْ مِّنْ شَيْءٍ اِلَّا عِنْدَنَا خَزَآئِنُهٗؗ وَمَا نُنَزِّلُهٗۤ اِلَّا بِقَدَرٍ مَّعْلُوْمٍ
আমারই নিকট আছে প্রত্যেক বস্তুর ভান্ডার, আর আমি সেটা নির্দিষ্ট পরিমাণেই সরবরাহ করে থাকি। (সূরা হিজর- ২১)
তিনি যাকে ইচ্ছা কম বা বেশি দান করেন :
قُلْ اِنَّ رَبِّيْ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيَقْدِرُ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ
বলো, আমার প্রতিপালক যার প্রতি ইচ্ছা রিযিক বর্ধিত করেন অথবা সীমিত করেন; কিন্তু অধিকাংশ মানুষই তা জানে না। (সূরা সাবা- ৩৬)
ধনসম্পদ দুনিয়ার সৌন্দর্য :
اَلْمَالُ وَالْبَنُوْنَ زِيْنَةُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا
ধনসম্পদ ও সমত্মানসমত্মতি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য মাত্র। (সূরা কাহফ- ৪৬)
আল্লাহ ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে মানুষকে সমৃদ্ধ করেন :
وَيُمْدِدْكُمْ بِاَمْوَالٍ وَّبَنِيْنَ
তিনি তোমাদেরকে সমৃদ্ধ করবেন ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততির দ্বারা। (সূরা নূহ- ১২)
ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি মানুষের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ :
اِنَّمَاۤ اَمْوَالُكُمْ وَاَوْلَادُكُمْ فِتْنَةٌؕ وَاللهُ عِنْدَهٗۤ اَجْرٌ عَظِيْمٌ
নিশ্চয় তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি (তোমাদের জন্য) পরীক্ষাস্বরূপ। আর আল্লাহরই নিকট রয়েছে মহাপ্রতিদান। (সূরা তাগাবুন- ১৫)
ব্যাখ্যা : যে জিনিসটি সাধারণত মানুষের ঈমানী চেতনা ও আন্তরিকতায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এবং যে জন্য মানুষ প্রায়ই মুনাফিকী ও খেয়ানতে লিপ্ত হয় সেটি হচ্ছে, তার অর্থনৈতিক ও সন্তান-সন্ততির স্বার্থের প্রতি সীমাতিরিক্ত আগ্রহ। এ কারণে বলা হয়েছে, এ অর্থ-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততির মোহে অন্ধ হয়ে তোমরা সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যাও, অথচ এগুলো তো তোমাদের জন্য দুনিয়ার পরীক্ষাগৃহে পরীক্ষার সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়। যাকে তোমরা পুত্র বা কন্যা বলে জান, প্রকৃতপক্ষে সে তো পরীক্ষার একটি বিষয়। আর যাকে তোমরা সম্পত্তি বা ব্যবসা বলে থাক, তাও পরীক্ষার একটি বিষয় মাত্র। এ জিনিসগুলো তোমাদের হাতে সোপর্দ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, তোমরা অধিকার ও দায়-দায়িত্বের প্রতি কতদূর লক্ষ্য রেখে কাজ কর এবং আল্লাহ তোমাদেরকে যতটুকু অধিকার নির্ধারণ করে দিয়েছেন ততটুকু আদায় কর কি না- তা আল্লাহ দেখতে চান।
ভালো কাজে ব্যবহার না করলে সম্পদ ও সন্তান কোন উপকারে আসবে না :
يَوْمَ لَا يَنْفَعُ مَالٌ وَّلَا بَنُوْنَ – اِلَّا مَنْ اَتَى اللهَ بِقَلْبٍ سَلِيْمٍ
সেদিন ধনসম্পদ ও সমত্মানসমত্মতি কোন কাজে আসবে না। তবে যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট বিশুদ্ধ অমত্মঃকরণ নিয়ে উপস্থিত হবে (কেবল সেই উপকৃত হবে)। (সূরা শু‘আরা- ৮৮, ৮৯)
وَمَاۤ اَمْوَالُكُمْ وَلَاۤ اَوْلَادُكُمْ بِالَّتِيْ تُقَرِّبُكُمْ عِنْدَنَا زُلْفٰۤى اِلَّا مَنْ اٰمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًاؗ فَاُولٰٓئِكَ لَهُمْ جَزَآءُ الضِّعْفِ بِمَا عَمِلُوْا وَهُمْ فِى الْغُرُفَاتِ اٰمِنُوْنَ
তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি এমন কিছু নয়, যা তোমাদেরকে আমার নিকটবর্তী করে দেবে; তবে যারা ঈমান আনয়ন করে ও সৎকর্ম করে, তারাই তাদের কর্মের জন্য বহুগুণ পুরস্কার পাবে; আর তারা প্রাসাদসমূহে নিরাপদে বসবাস করবে। (সূরা সাবা- ৩৭)
ব্যাখ্যা : বাক্যটির দু’টি অর্থ হতে পারে এবং দু’টিই সঠিক। (এক) ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততি মানুষকে আল্লাহর নিকটবর্তী করার মতো জিনিস নয়। বরং ঈমান ও সৎকাজ মানুষকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে। (দুই) ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততি একমাত্র ঐ মুমিনের জন্য আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যমে পরিণত হতে পারে, যে নিজের সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে এবং নিজের সন্তানকে কুরআন ও হাদীসের মাধ্যমে উত্তম শিক্ষা ও অনুশীলন দান করে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপযুক্ত বান্দা হিসেবে গড়ে তুলার চেষ্টা করে।
আল্লাহর কাছে পার্থিব ধনসম্পদের কোন মূল্য নেই :
وَلَوْلَاۤ اَنْ يَّكُوْنَ النَّاسُ اُمَّةً وَّاحِدَةً لَّجَعَلْنَا لِمَنْ يَّكْفُرُ بِالرَّحْمٰنِ لِبُيُوْتِهِمْ سُقُفًا مِّنْ فِضَّةٍ وَّمَعَارِجَ عَلَيْهَا يَظْهَرُوْنَ – وَلِبُيُوْتِهِمْ اَبْوَابًا وَّسُرُرًا عَلَيْهَا يَتَّكِئُوْنَ – وَزُخْرُفًاؕ وَاِنْ كُلُّ ذٰلِكَ لَمَّا مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَاؕ وَالْاٰخِرَةُ عِنْدَ رَبِّكَ لِلْمُتَّقِيْنَ
(সত্য অস্বীকারে) মানুষ এক উম্মতে পরিণত হয়ে পড়বে- এ আশঙ্কা না থাকলে যারা দয়াময় আল্লাহকে অস্বীকার করে, তাদেরকে আমি তাদের গৃহের জন্য রৌপ্য নির্মিত ছাদ ও সিঁড়ি বানিয়ে দিতাম, যার উপর দিয়ে তারা ওঠা (নামা) করত। আর তাদের গৃহের জন্য দরজা ও (বিশ্রামের জন্য) পালঙ্ক দিতাম, যাতে তারা হেলান দিয়ে বসত। আর এসবই স্বর্ণনির্মিত (করে দিতে পারতাম)। কিন্তু এগুলো তো শুধু পার্থিব জীবনের ভোগ সম্ভার। আর মুত্তাক্বীদের জন্য তোমার প্রতিপালকের নিকট রয়েছে আখিরাত (এর কল্যাণ)। (সূরা যুখরুফ, ৩৩-৩৫)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ এই সোনা-রূপা যা কারো লাভ করা তোমাদের দৃষ্টিতে চরম নিয়ামতপ্রাপ্তি এবং সম্মান ও মর্যাদার চরম শিখরে আরোহণ করার নামান্তর, তা আল্লাহর দৃষ্টিতে এতই নগণ্য যে, যদি সমস্ত মানুষের কুফরীর প্রতি ঝুঁকে পড়ার আশঙ্কা না থাকত, তাহলে তিনি প্রত্যেক কাফিরের বাড়িঘর সোনা-রূপা দিয়ে তৈরি করে দিতেন। আর এ নিকৃষ্ট বস্তুটি কখন থেকে মানুষের মর্যাদার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে? এ সম্পদ তো এমনসব মানুষের কাছেও আছে, যাদের ঘৃণ্য কাজকর্মের বিষাক্ত ছোবলে গোটা সমাজ বিষাক্ত হয়ে পড়ে। আর একেই তোমরা মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের মানদন্ড বানিয়ে রেখেছ?
ধনসম্পদ মর্যাদার মাপকাঠি নয় :
اَيَحْسَبُوْنَ اَنَّمَا نُمِدُّهُمْ بِهٖ مِنْ مَّالٍ وَّبَنِيْنَ – نُسَارِعُ لَهُمْ فِى الْخَيْرَاتِ بَلْ لَّا يَشْعُرُوْنَ
তারা কি মনে করে যে, আমি তাদেরকে সাহায্যস্বরূপ যে ধনসম্পদ ও সমত্মানসমত্মতি দান করি তা দ্বারা তাদের সকল প্রকার মঙ্গল ত্বরান্বিত করছি? না, তারা বুঝে না। (সূরা মু’মিনূন- ৫৫, ৫৬)
ব্যাখ্যা : যখন কোন ব্যক্তি অধিক পরিমাণে নিয়ামত লাভ করতে থাকে তখন সে অজ্ঞতার কারণে মনে করে যে, সে তার যোগ্যতার ভিত্তিতেই তা লাভ করছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তাদের এ ধারণাটি সঠিক নয়। কেননা দুনিয়াতে তাদেরকে যা কিছুই দেয়া হচ্ছে তা মূলত তার যোগ্যতার বলে নয় বরং পরীক্ষার উপকরণ হিসেবে দেয়া হচ্ছে। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে যে, পৃথিবীতে বহু সৎকর্মশীল ব্যক্তি বিপদাপদে ডুবে আছে, অথচ তাদের সৎকর্মশীল হওয়া অস্বীকার করা যায় না। আবার বহু দুশ্চরিত্রের লোক আরামে জীবন কাটাচ্ছে। এখন কোন জ্ঞানবান ব্যক্তি একজনের বিপদাপদ এবং আরেকজনের আরাম-আয়েশকে এ কথার প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করতে পারে না যে, আল্লাহ সৎকর্মশীল মানুষদের পছন্দ করেন না এবং দুষ্কর্মশীল মানুষদের পছন্দ করেন।
ধনসম্পদ আনন্দ বা সুখের প্রকৃত কারণ নয় :
لِكَيْلَا تَاْسَوْا عَلٰى مَا فَاتَكُمْ وَلَا تَفْرَحُوْا بِمَاۤ اٰتَاكُمْؕ وَاللهُ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُوْرٍ
এটা এজন্য যে, তোমরা যা হারিয়েছ তাতে যেন তোমরা হতাশ হয়ে না পড় এবং যা তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন তার জন্য গৌরবে ফেটে না পড়। (কেননা) আল্লাহ ঔদ্ধত্য ও অহংকারীদেরকে পছন্দ করেন না । (সূরা হাদীদ- ২৩)
আল্লাহর প্রেমিকরা সম্পদের মোহে পড়ে না :
فَلَمَّا جَآءَ سُلَيْمَانَ قَالَ اَتُمِدُّوْنَنِ بِمَالٍ فَمَاۤ اٰتَانِيَ اللهُ خَيْرٌ مِّمَّاۤ اٰتَاكُمْ بَلْ اَنْتُمْ بِهَدِيَّتِكُمْ تَفْرَحُوْنَ
অতঃপর যখন সে (দূত) সুলায়মানের নিকট আসল তখন সুলায়মান বললেন, তোমরা কি আমাকে ধনসম্পদ দিয়ে সাহায্য করছ? আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছেন তা তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তা হতে উৎকৃষ্ট; অথচ তোমরা তোমাদের উপঢৌকন নিয়ে উৎফুল্ল বোধ কর। (সূরা নামল- ৩৬)
নবীগণ দ্বীন প্রচারের কাজে কোন সম্পদ চাইতেন না :
وَيَا قَوْمِ لَاۤ اَسْاَلُكُمْ عَلَيْهِ مَالًاؕ اِنْ اَجْرِيَ اِلَّا عَلَى اللهِ
হে আমার সম্প্রদায়! এটার (দাওয়াতের) উপর আমি তোমাদের নিকট কোন বিনিময়ও চাই না। আমার প্রতিদান তো আল্লাহর নিকট গচ্ছিত। (সূরা হুদ- ২৯)
আল্লাহ অসৎপন্থায় সম্পদ অর্জন করতে নিষেধ করেছেন :
وَلَا تَاْكُلُوْاۤ اَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ وَتُدْلُوْا بِهَاۤ اِلَى الْحُكَّامِ لِتَاْكُلُوْا فَرِيْقًا مِّنْ اَمْوَالِ النَّاسِ بِالْاِثْمِ وَاَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
তোমরা একে অপরের ধনসম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং তা বিচারকের নিকট এজন্য উপস্থাপন করো না, যাতে তোমরা জেনে-বুঝে অন্যায়ভাবে মানুষের মালের কিছু অংশ খেতে পার। (সূরা বাক্বারা- ১৮৮)
وَاِنْ مِّنْ شَيْءٍ اِلَّا عِنْدَنَا خَزَآئِنُهٗؗ وَمَا نُنَزِّلُهٗۤ اِلَّا بِقَدَرٍ مَّعْلُوْمٍ
আমারই নিকট আছে প্রত্যেক বস্তুর ভান্ডার, আর আমি সেটা নির্দিষ্ট পরিমাণেই সরবরাহ করে থাকি। (সূরা হিজর- ২১)
তিনি যাকে ইচ্ছা কম বা বেশি দান করেন :
قُلْ اِنَّ رَبِّيْ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيَقْدِرُ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ
বলো, আমার প্রতিপালক যার প্রতি ইচ্ছা রিযিক বর্ধিত করেন অথবা সীমিত করেন; কিন্তু অধিকাংশ মানুষই তা জানে না। (সূরা সাবা- ৩৬)
ধনসম্পদ দুনিয়ার সৌন্দর্য :
اَلْمَالُ وَالْبَنُوْنَ زِيْنَةُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا
ধনসম্পদ ও সমত্মানসমত্মতি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য মাত্র। (সূরা কাহফ- ৪৬)
আল্লাহ ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে মানুষকে সমৃদ্ধ করেন :
وَيُمْدِدْكُمْ بِاَمْوَالٍ وَّبَنِيْنَ
তিনি তোমাদেরকে সমৃদ্ধ করবেন ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততির দ্বারা। (সূরা নূহ- ১২)
ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি মানুষের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ :
اِنَّمَاۤ اَمْوَالُكُمْ وَاَوْلَادُكُمْ فِتْنَةٌؕ وَاللهُ عِنْدَهٗۤ اَجْرٌ عَظِيْمٌ
নিশ্চয় তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি (তোমাদের জন্য) পরীক্ষাস্বরূপ। আর আল্লাহরই নিকট রয়েছে মহাপ্রতিদান। (সূরা তাগাবুন- ১৫)
ব্যাখ্যা : যে জিনিসটি সাধারণত মানুষের ঈমানী চেতনা ও আন্তরিকতায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এবং যে জন্য মানুষ প্রায়ই মুনাফিকী ও খেয়ানতে লিপ্ত হয় সেটি হচ্ছে, তার অর্থনৈতিক ও সন্তান-সন্ততির স্বার্থের প্রতি সীমাতিরিক্ত আগ্রহ। এ কারণে বলা হয়েছে, এ অর্থ-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততির মোহে অন্ধ হয়ে তোমরা সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যাও, অথচ এগুলো তো তোমাদের জন্য দুনিয়ার পরীক্ষাগৃহে পরীক্ষার সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়। যাকে তোমরা পুত্র বা কন্যা বলে জান, প্রকৃতপক্ষে সে তো পরীক্ষার একটি বিষয়। আর যাকে তোমরা সম্পত্তি বা ব্যবসা বলে থাক, তাও পরীক্ষার একটি বিষয় মাত্র। এ জিনিসগুলো তোমাদের হাতে সোপর্দ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, তোমরা অধিকার ও দায়-দায়িত্বের প্রতি কতদূর লক্ষ্য রেখে কাজ কর এবং আল্লাহ তোমাদেরকে যতটুকু অধিকার নির্ধারণ করে দিয়েছেন ততটুকু আদায় কর কি না- তা আল্লাহ দেখতে চান।
ভালো কাজে ব্যবহার না করলে সম্পদ ও সন্তান কোন উপকারে আসবে না :
يَوْمَ لَا يَنْفَعُ مَالٌ وَّلَا بَنُوْنَ – اِلَّا مَنْ اَتَى اللهَ بِقَلْبٍ سَلِيْمٍ
সেদিন ধনসম্পদ ও সমত্মানসমত্মতি কোন কাজে আসবে না। তবে যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট বিশুদ্ধ অমত্মঃকরণ নিয়ে উপস্থিত হবে (কেবল সেই উপকৃত হবে)। (সূরা শু‘আরা- ৮৮, ৮৯)
وَمَاۤ اَمْوَالُكُمْ وَلَاۤ اَوْلَادُكُمْ بِالَّتِيْ تُقَرِّبُكُمْ عِنْدَنَا زُلْفٰۤى اِلَّا مَنْ اٰمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًاؗ فَاُولٰٓئِكَ لَهُمْ جَزَآءُ الضِّعْفِ بِمَا عَمِلُوْا وَهُمْ فِى الْغُرُفَاتِ اٰمِنُوْنَ
তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি এমন কিছু নয়, যা তোমাদেরকে আমার নিকটবর্তী করে দেবে; তবে যারা ঈমান আনয়ন করে ও সৎকর্ম করে, তারাই তাদের কর্মের জন্য বহুগুণ পুরস্কার পাবে; আর তারা প্রাসাদসমূহে নিরাপদে বসবাস করবে। (সূরা সাবা- ৩৭)
ব্যাখ্যা : বাক্যটির দু’টি অর্থ হতে পারে এবং দু’টিই সঠিক। (এক) ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততি মানুষকে আল্লাহর নিকটবর্তী করার মতো জিনিস নয়। বরং ঈমান ও সৎকাজ মানুষকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে। (দুই) ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততি একমাত্র ঐ মুমিনের জন্য আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যমে পরিণত হতে পারে, যে নিজের সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে এবং নিজের সন্তানকে কুরআন ও হাদীসের মাধ্যমে উত্তম শিক্ষা ও অনুশীলন দান করে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপযুক্ত বান্দা হিসেবে গড়ে তুলার চেষ্টা করে।
আল্লাহর কাছে পার্থিব ধনসম্পদের কোন মূল্য নেই :
وَلَوْلَاۤ اَنْ يَّكُوْنَ النَّاسُ اُمَّةً وَّاحِدَةً لَّجَعَلْنَا لِمَنْ يَّكْفُرُ بِالرَّحْمٰنِ لِبُيُوْتِهِمْ سُقُفًا مِّنْ فِضَّةٍ وَّمَعَارِجَ عَلَيْهَا يَظْهَرُوْنَ – وَلِبُيُوْتِهِمْ اَبْوَابًا وَّسُرُرًا عَلَيْهَا يَتَّكِئُوْنَ – وَزُخْرُفًاؕ وَاِنْ كُلُّ ذٰلِكَ لَمَّا مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَاؕ وَالْاٰخِرَةُ عِنْدَ رَبِّكَ لِلْمُتَّقِيْنَ
(সত্য অস্বীকারে) মানুষ এক উম্মতে পরিণত হয়ে পড়বে- এ আশঙ্কা না থাকলে যারা দয়াময় আল্লাহকে অস্বীকার করে, তাদেরকে আমি তাদের গৃহের জন্য রৌপ্য নির্মিত ছাদ ও সিঁড়ি বানিয়ে দিতাম, যার উপর দিয়ে তারা ওঠা (নামা) করত। আর তাদের গৃহের জন্য দরজা ও (বিশ্রামের জন্য) পালঙ্ক দিতাম, যাতে তারা হেলান দিয়ে বসত। আর এসবই স্বর্ণনির্মিত (করে দিতে পারতাম)। কিন্তু এগুলো তো শুধু পার্থিব জীবনের ভোগ সম্ভার। আর মুত্তাক্বীদের জন্য তোমার প্রতিপালকের নিকট রয়েছে আখিরাত (এর কল্যাণ)। (সূরা যুখরুফ, ৩৩-৩৫)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ এই সোনা-রূপা যা কারো লাভ করা তোমাদের দৃষ্টিতে চরম নিয়ামতপ্রাপ্তি এবং সম্মান ও মর্যাদার চরম শিখরে আরোহণ করার নামান্তর, তা আল্লাহর দৃষ্টিতে এতই নগণ্য যে, যদি সমস্ত মানুষের কুফরীর প্রতি ঝুঁকে পড়ার আশঙ্কা না থাকত, তাহলে তিনি প্রত্যেক কাফিরের বাড়িঘর সোনা-রূপা দিয়ে তৈরি করে দিতেন। আর এ নিকৃষ্ট বস্তুটি কখন থেকে মানুষের মর্যাদার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে? এ সম্পদ তো এমনসব মানুষের কাছেও আছে, যাদের ঘৃণ্য কাজকর্মের বিষাক্ত ছোবলে গোটা সমাজ বিষাক্ত হয়ে পড়ে। আর একেই তোমরা মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের মানদন্ড বানিয়ে রেখেছ?
ধনসম্পদ মর্যাদার মাপকাঠি নয় :
اَيَحْسَبُوْنَ اَنَّمَا نُمِدُّهُمْ بِهٖ مِنْ مَّالٍ وَّبَنِيْنَ – نُسَارِعُ لَهُمْ فِى الْخَيْرَاتِ بَلْ لَّا يَشْعُرُوْنَ
তারা কি মনে করে যে, আমি তাদেরকে সাহায্যস্বরূপ যে ধনসম্পদ ও সমত্মানসমত্মতি দান করি তা দ্বারা তাদের সকল প্রকার মঙ্গল ত্বরান্বিত করছি? না, তারা বুঝে না। (সূরা মু’মিনূন- ৫৫, ৫৬)
ব্যাখ্যা : যখন কোন ব্যক্তি অধিক পরিমাণে নিয়ামত লাভ করতে থাকে তখন সে অজ্ঞতার কারণে মনে করে যে, সে তার যোগ্যতার ভিত্তিতেই তা লাভ করছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তাদের এ ধারণাটি সঠিক নয়। কেননা দুনিয়াতে তাদেরকে যা কিছুই দেয়া হচ্ছে তা মূলত তার যোগ্যতার বলে নয় বরং পরীক্ষার উপকরণ হিসেবে দেয়া হচ্ছে। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে যে, পৃথিবীতে বহু সৎকর্মশীল ব্যক্তি বিপদাপদে ডুবে আছে, অথচ তাদের সৎকর্মশীল হওয়া অস্বীকার করা যায় না। আবার বহু দুশ্চরিত্রের লোক আরামে জীবন কাটাচ্ছে। এখন কোন জ্ঞানবান ব্যক্তি একজনের বিপদাপদ এবং আরেকজনের আরাম-আয়েশকে এ কথার প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করতে পারে না যে, আল্লাহ সৎকর্মশীল মানুষদের পছন্দ করেন না এবং দুষ্কর্মশীল মানুষদের পছন্দ করেন।
ধনসম্পদ আনন্দ বা সুখের প্রকৃত কারণ নয় :
لِكَيْلَا تَاْسَوْا عَلٰى مَا فَاتَكُمْ وَلَا تَفْرَحُوْا بِمَاۤ اٰتَاكُمْؕ وَاللهُ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُوْرٍ
এটা এজন্য যে, তোমরা যা হারিয়েছ তাতে যেন তোমরা হতাশ হয়ে না পড় এবং যা তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন তার জন্য গৌরবে ফেটে না পড়। (কেননা) আল্লাহ ঔদ্ধত্য ও অহংকারীদেরকে পছন্দ করেন না । (সূরা হাদীদ- ২৩)
আল্লাহর প্রেমিকরা সম্পদের মোহে পড়ে না :
فَلَمَّا جَآءَ سُلَيْمَانَ قَالَ اَتُمِدُّوْنَنِ بِمَالٍ فَمَاۤ اٰتَانِيَ اللهُ خَيْرٌ مِّمَّاۤ اٰتَاكُمْ بَلْ اَنْتُمْ بِهَدِيَّتِكُمْ تَفْرَحُوْنَ
অতঃপর যখন সে (দূত) সুলায়মানের নিকট আসল তখন সুলায়মান বললেন, তোমরা কি আমাকে ধনসম্পদ দিয়ে সাহায্য করছ? আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছেন তা তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তা হতে উৎকৃষ্ট; অথচ তোমরা তোমাদের উপঢৌকন নিয়ে উৎফুল্ল বোধ কর। (সূরা নামল- ৩৬)
নবীগণ দ্বীন প্রচারের কাজে কোন সম্পদ চাইতেন না :
وَيَا قَوْمِ لَاۤ اَسْاَلُكُمْ عَلَيْهِ مَالًاؕ اِنْ اَجْرِيَ اِلَّا عَلَى اللهِ
হে আমার সম্প্রদায়! এটার (দাওয়াতের) উপর আমি তোমাদের নিকট কোন বিনিময়ও চাই না। আমার প্রতিদান তো আল্লাহর নিকট গচ্ছিত। (সূরা হুদ- ২৯)
আল্লাহ অসৎপন্থায় সম্পদ অর্জন করতে নিষেধ করেছেন :
وَلَا تَاْكُلُوْاۤ اَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ وَتُدْلُوْا بِهَاۤ اِلَى الْحُكَّامِ لِتَاْكُلُوْا فَرِيْقًا مِّنْ اَمْوَالِ النَّاسِ بِالْاِثْمِ وَاَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
তোমরা একে অপরের ধনসম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং তা বিচারকের নিকট এজন্য উপস্থাপন করো না, যাতে তোমরা জেনে-বুঝে অন্যায়ভাবে মানুষের মালের কিছু অংশ খেতে পার। (সূরা বাক্বারা- ১৮৮)
অধিক প্রাচুর্য্য অনেকের আকীদা-বিশ্বাস নষ্ট করে দেয় :
اَفَرَاَيْتَ الَّذِيْ كَفَرَ بِاٰيَاتِنَا وَقَالَ لَاُوْتَيَنَّ مَالًا وَّوَلَدًا – اَطَّلَعَ الْغَيْبَ اَمِ اتَّخَذَ عِنْدَ الرَّحْمٰنِ عَهْدًا – كَلَّا سَنَكْتُبُ مَا يَقُوْلُ وَنَمُدُّ لَهٗ مِنَ الْعَذَابِ مَدًّا – وَنَرِثُهٗ مَا يَقُوْلُ وَيَاْتِيْنَا فَرْدًا
তুমি কি লক্ষ্য করেছ সে ব্যক্তিকে, যে আমার আয়াতসমূহ প্রত্যাখ্যান করে এবং বলে, আমাকে ধনসম্পদ ও সমত্মানসমত্মতি দেয়া হবেই। সে কি অদৃশ্য সম্বন্ধে অবহিত হয়েছে অথবা দয়াময়ের নিকট হতে কোন প্রতিশ্রুতি লাভ করেছে? কখনই নয়, তারা যা বলে আমি তা লিখে রাখব এবং তাদের শাসিত্ম বৃদ্ধি করতে থাকব। সে যে বিষয়ের কথা বলে তা আমার অধিকারেই থাকবে এবং সে আমার নিকট আসবে একা। (সূরা মারইয়াম, ৭৭-৮০)
ব্যাখ্যা : খাববাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আস ইবনে ওয়ায়িল-এর কাছে আমার কিছু পাওনা ছিল। এটা আদায়ের জন্য আমি তার নিকট গেলাম। সে বলল, যে পর্যন্ত তুমি মুহাম্মাদকে অস্বীকার না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমি তোমার পাওনা দেব না। এ কথা শুনে আমি তাকে বললাম, তুমি মরার পর আবার জীবিত হয়ে আসলেও আমি কখনো মুহাম্মাদ ﷺ কে অস্বীকার করব না। সে বলল, আমি কি মৃত্যুর পর আবার জীবিত হয়ে উঠব? তাহলে তখনই আমি আমার সম্পদ এবং সন্তানাদি লাভ করে তোমার পাওনা পরিশোধ করব। তখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (সহীহ মুসলিম, হা/৬৯৫৫)
সম্পদ বেশি হলে অনেক সময় মানুষ অবাধ্য হয়ে যায় :
كَلَّاۤ اِنَّ الْاِنْسَانَ لَيَطْغٰى – اَنْ رَّاٰهُ اسْتَغْنٰى
সাবধান! মানুষ সীমালঙ্ঘন করবেই। এ কারণে যে, সে নিজেকে অভাবমুক্ত মনে করে। (সূরা আলাক্ব- ৬, ৭)
তারা পরকালে পরিতাপ করবে :
يَا لَيْتَهَا كَانَتِ الْقَاضِيَةَ – مَاۤ اَغْنٰى عَنِّيْ مَالِيَهْ – هَلَكَ عَنِّيْ سُلْطَانِيَهْ
হায়! আমার মৃত্যুই যদি আমার শেষ (পরিণতি) হতো! আমার ধনসম্পদ আমার কোন কাজেই আসল না। আর আমার ক্ষমতাও বিনাশ হয়ে গেল। (সূরা হাক্কাহ, ২৭-২৯)
কাফিরদের সম্পদ কোন কাজে আসবে না :
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَنْ تُغْنِيَ عَنْهُمْ اَمْوَالُهُمْ وَلَاۤ اَوْلَادُهُمْ مِّنَ اللهِ شَيْئًاؕ وَاُولٰٓئِكَ هُمْ وَقُوْدُ النَّارِ
নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে তাদের ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততি কোন কাজে আসবে না। আর তারাই জাহান্নামের ইন্ধনে পরিণত হবে। (সূরা আলে ইমরান- ১০)
আবু লাহাবের সম্পদ কোন কাজে আসেনি :
تَبَّتْ يَدَاۤ اَبِيْ لَهَبٍ وَّتَبَّ – مَاۤ اَغْنٰى عَنْهُ مَالُهٗ وَمَا كَسَبَ ‐ سَيَصْلٰى نَارًا ذَاتَ لَهَبٍ – وَامْرَاَتُهٗ حَمَّالَةَ الْحَطَبِ – فِيْ جِيْدِهَا حَبْلٌ مِّنْ مَّسَدٍ
আবু লাহাবের দু’হাতই ধ্বংস হয়ে যাক, ধ্বংস হয়ে যাক সে নিজেও; তার ধনসম্পদ ও আয়-উপার্জন তার কোন কাজে আসেনি। অচিরেই সে লেলিহান শিখা বিশিষ্ট আগুনে প্রবেশ করবে। সাথে থাকবে জ্বালানি কাঠের বোঝা বহনকারিণী তার স্ত্রীও (অবস্থা দেখে মনে হবে) তার গলায় যেন খেজুর পাতার পাকানো শক্ত কোন রশি জড়ানো আছে। (সূরা লাহাব)
اَفَرَاَيْتَ الَّذِيْ كَفَرَ بِاٰيَاتِنَا وَقَالَ لَاُوْتَيَنَّ مَالًا وَّوَلَدًا – اَطَّلَعَ الْغَيْبَ اَمِ اتَّخَذَ عِنْدَ الرَّحْمٰنِ عَهْدًا – كَلَّا سَنَكْتُبُ مَا يَقُوْلُ وَنَمُدُّ لَهٗ مِنَ الْعَذَابِ مَدًّا – وَنَرِثُهٗ مَا يَقُوْلُ وَيَاْتِيْنَا فَرْدًا
তুমি কি লক্ষ্য করেছ সে ব্যক্তিকে, যে আমার আয়াতসমূহ প্রত্যাখ্যান করে এবং বলে, আমাকে ধনসম্পদ ও সমত্মানসমত্মতি দেয়া হবেই। সে কি অদৃশ্য সম্বন্ধে অবহিত হয়েছে অথবা দয়াময়ের নিকট হতে কোন প্রতিশ্রুতি লাভ করেছে? কখনই নয়, তারা যা বলে আমি তা লিখে রাখব এবং তাদের শাসিত্ম বৃদ্ধি করতে থাকব। সে যে বিষয়ের কথা বলে তা আমার অধিকারেই থাকবে এবং সে আমার নিকট আসবে একা। (সূরা মারইয়াম, ৭৭-৮০)
ব্যাখ্যা : খাববাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আস ইবনে ওয়ায়িল-এর কাছে আমার কিছু পাওনা ছিল। এটা আদায়ের জন্য আমি তার নিকট গেলাম। সে বলল, যে পর্যন্ত তুমি মুহাম্মাদকে অস্বীকার না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমি তোমার পাওনা দেব না। এ কথা শুনে আমি তাকে বললাম, তুমি মরার পর আবার জীবিত হয়ে আসলেও আমি কখনো মুহাম্মাদ ﷺ কে অস্বীকার করব না। সে বলল, আমি কি মৃত্যুর পর আবার জীবিত হয়ে উঠব? তাহলে তখনই আমি আমার সম্পদ এবং সন্তানাদি লাভ করে তোমার পাওনা পরিশোধ করব। তখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (সহীহ মুসলিম, হা/৬৯৫৫)
সম্পদ বেশি হলে অনেক সময় মানুষ অবাধ্য হয়ে যায় :
كَلَّاۤ اِنَّ الْاِنْسَانَ لَيَطْغٰى – اَنْ رَّاٰهُ اسْتَغْنٰى
সাবধান! মানুষ সীমালঙ্ঘন করবেই। এ কারণে যে, সে নিজেকে অভাবমুক্ত মনে করে। (সূরা আলাক্ব- ৬, ৭)
তারা পরকালে পরিতাপ করবে :
يَا لَيْتَهَا كَانَتِ الْقَاضِيَةَ – مَاۤ اَغْنٰى عَنِّيْ مَالِيَهْ – هَلَكَ عَنِّيْ سُلْطَانِيَهْ
হায়! আমার মৃত্যুই যদি আমার শেষ (পরিণতি) হতো! আমার ধনসম্পদ আমার কোন কাজেই আসল না। আর আমার ক্ষমতাও বিনাশ হয়ে গেল। (সূরা হাক্কাহ, ২৭-২৯)
কাফিরদের সম্পদ কোন কাজে আসবে না :
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَنْ تُغْنِيَ عَنْهُمْ اَمْوَالُهُمْ وَلَاۤ اَوْلَادُهُمْ مِّنَ اللهِ شَيْئًاؕ وَاُولٰٓئِكَ هُمْ وَقُوْدُ النَّارِ
নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে তাদের ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততি কোন কাজে আসবে না। আর তারাই জাহান্নামের ইন্ধনে পরিণত হবে। (সূরা আলে ইমরান- ১০)
আবু লাহাবের সম্পদ কোন কাজে আসেনি :
تَبَّتْ يَدَاۤ اَبِيْ لَهَبٍ وَّتَبَّ – مَاۤ اَغْنٰى عَنْهُ مَالُهٗ وَمَا كَسَبَ ‐ سَيَصْلٰى نَارًا ذَاتَ لَهَبٍ – وَامْرَاَتُهٗ حَمَّالَةَ الْحَطَبِ – فِيْ جِيْدِهَا حَبْلٌ مِّنْ مَّسَدٍ
আবু লাহাবের দু’হাতই ধ্বংস হয়ে যাক, ধ্বংস হয়ে যাক সে নিজেও; তার ধনসম্পদ ও আয়-উপার্জন তার কোন কাজে আসেনি। অচিরেই সে লেলিহান শিখা বিশিষ্ট আগুনে প্রবেশ করবে। সাথে থাকবে জ্বালানি কাঠের বোঝা বহনকারিণী তার স্ত্রীও (অবস্থা দেখে মনে হবে) তার গলায় যেন খেজুর পাতার পাকানো শক্ত কোন রশি জড়ানো আছে। (সূরা লাহাব)
কারূন মূসা (আঃ) এর সম্প্রদায়ের লোক ছিল :
اِنَّ قَارُوْنَ كَانَ مِنْ قَوْمِ مُوْسٰى فَبَغٰى عَلَيْهِمْ
কারূন ছিল মূসার সম্প্রদায়ভুক্ত, কিন্তু সে তাদের প্রতি বাড়াবাড়ি করেছিল। (সূরা ক্বাসাস- ৭৬)
আল্লাহ তাকে প্রচুর সম্পদ দিয়েছিলেন :
وَاٰتَيْنَاهُ مِنَ الْكُنُوْزِ مَاۤ اِنَّ مَفَاتِحَهٗ لَتَنُوْٓءُ بِالْعُصْبَةِ اُولِى الْقُوَّةِ
আমি তাকে দান করেছিলাম এমন ধনভান্ডার, যার চাবিগুলো বহন করা একদল শক্তিশালী লোকের পক্ষেও কষ্টসাধ্য ছিল। (সূরা ক্বাসাস- ৭৬)
জাতির লোকেরা তাকে উপদেশ দিল :
اِذْ قَالَ لَهٗ قَوْمُهٗ لَا تَفْرَحْ اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْفَرِحِيْنَ – وَابْتَغِ فِيْمَاۤ اٰتَاكَ اللهُ الدَّارَ الْاٰخِرَةَ وَلَا تَنْسَ نَصِيْبَكَ مِنَ الدُّنْيَا وَاَحْسِنْ كَمَاۤ اَحْسَنَ اللهُ اِلَيْكَ وَلَا تَبْغِ الْفَسَادَ فِى الْاَرْضِؕ اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْمُفْسِدِيْنَ
স্মরণ করো, যখন তার সম্প্রদায় তাকে বলেছিল, অহংকার করো না; নিশ্চয় আল্লাহ অহংকারীদেরকে পছন্দ করেন না। আল্লাহ যা তোমাকে দিয়েছেন তার দ্বারা আখিরাতের আবাস অনুসন্ধান করো এবং দুনিয়া হতে তোমার অংশ ভুলে যেয়ো না। যেমনিভাবে আল্লাহ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন তেমনিভাবে তুমিও অনুগ্রহ করো এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না। নিশ্চয় আল্লাহ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীকে ভালোবাসেন না। (সূরা ক্বাসাস- ৭৬, ৭৭)
কারূন উপদেশ শুনে জবাব দিল :
قَالَ اِنَّمَاۤ اُوْتِيْتُهٗ عَلٰى عِلْمٍ عِنْدِيْ
সে বলল, এ সম্পদ আমি আমার জ্ঞানবলে প্রাপ্ত হয়েছি। (সূরা ক্বাসাস- ৭৮)
আল্লাহ তার এ উক্তির জবাব দিয়েছেন :
اَوَلَمْ يَعْلَمْ اَنَّ اللهَ قَدْ اَهْلَكَ مِنْ قَبْلِهٖ مِنَ الْقُرُوْنِ مَنْ هُوَ اَشَدُّ مِنْهُ قُوَّةً وَّاَكْثَرُ جَمْعًاؕ وَلَا يُسْاَلُ عَنْ ذُنُوْبِهِمُ الْمُجْرِمُوْنَ
সে কি জানত না যে, আল্লাহ তার পূর্বে বহু মানবগোষ্ঠীকে ধ্বংস করে দিয়েছেন, যারা তার চেয়ে শক্তিতে ছিল প্রবল এবং জনসংখ্যায় ছিল অধিক? অপরাধীদেরকে কি তাদের অপরাধ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে না?
(সূরা ক্বাসাস- ৭৮)
ব্যাখ্যা : সে মনে করে যে, আমি যা কিছু পেয়েছি নিজের যোগ্যতার বলে পেয়েছি; এটা কোন অনুগ্রহ নয়। যে ব্যক্তি এভাবে নিজেকে বড় পন্ডিত, জ্ঞানী, গুণী ও চতুর বলে দাবী করে বেড়াচ্ছে সে কি জানে না যে, তার চেয়েও বেশি অর্থ, মর্যাদা, শক্তি ও শান-শওকতের অধিকারী লোক ইতোপূর্বে দুনিয়ায় অতিক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। যোগ্যতা ও নৈপূণ্যই যদি পার্থিব উন্নতির রক্ষাকবচ হয়ে থাকে তাহলে যখন তারা ধ্বংস হয়েছিল তখন তাদের এ যোগ্যতাগুলো কোথায় গিয়েছিল? আর যদি কারো পার্থিব উন্নতি লাভ অনিবার্যভাবে এ কথাই প্রমাণ করে যে, আললাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট এবং তিনি তার কর্ম ও গুণাবলি পছন্দ করেন তাহলে তাদের সর্বনাশ হলো কেন?
তার জাঁকজমক অবস্থা দেখে অন্যরাও তার মতো হতে চাইল :
فَخَرَجَ عَلٰى قَوْمِهٖ فِيْ زِيْنَتِهٖؕ قَالَ الَّذِيْنَ يُرِيْدُوْنَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا يَا لَيْتَ لَنَا مِثْلَ مَاۤ اُوْتِيَ قَارُوْنُ اِنَّهٗ لَذُوْ حَظٍّ عَظِيْمٍ
কারূন তার সম্প্রদায়ের সম্মুখে উপস্থিত হয়েছিল জাঁকজমক সহকারে। ফলে যারা পার্থিব জীবন কামনা করত তারা বলল, আহা! কারূনকে যেরূপ দেয়া হয়েছে আমাদেরকেও যদি তা দেয়া হতো! নিশ্চয় সে মহাভাগ্যবান। (সূরা ক্বাসাস- ৭৯)
জ্ঞানীরা বলল, মুমিনের জন্য পরকালের সওয়াবই উত্তম :
وَقَالَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْعِلْمَ وَيْلَكُمْ ثَوَابُ اللهِ خَيْرٌ لِّمَنْ اٰمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًاۚ وَلَا يُلَقَّاهَاۤ اِلَّا الصَّابِرُوْنَ
যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছিল তারা বলল, তোমাদের প্রতি ধিক্কার! যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের জন্য আল্লাহর পুরস্কারই সর্বশ্রেষ্ঠ। আর ধৈর্যশীল ব্যতীত তা কেউ লাভ করতে পারবে না। (সূরা ক্বাসাস- ৮০)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর পুরস্কার কেবল এমন লোকদের জন্য নির্ধারিত, যাদের মধ্যে এতটা ধৈর্য ও দৃঢ়তা থাকে, যার ফলে তারা হালাল পথে অর্থোপার্জন করার জন্য দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হয়। চাই তাতে তাদের ভাগ্যে শুধুমাত্র লবন-ভাতই জুটুক কিংবা তারা কোটিপতি হয়ে যাওয়ার সৌভাগ্য লাভ করুক। সারা দুনিয়ার সুখ ও সুবিধা অর্জিত হওয়ার সুযোগ দেখা দিলেও তারা হারাম পথের দিকে একটুও ঝুঁকে পড়ে না। হারামখোরদের জাঁকজমক অবস্থা দেখে ঈর্ষান্বিত হয় না। তারা ঠান্ডা মাথায় এ কথা অনুধাবন করে যে, ঈমানদারদের জন্য এ চাকচিক্যময় আবর্জনার তুলনায় এমন পবিত্র রিযিকই ভালো, যা আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাকে দান করেছেন।
শেষ পর্যায়ে সে ও তার সবকিছু মাটিতে ধ্বসে গেল :
فَخَسَفْنَا بِهٖ وَبِدَارِهِ الْاَرْضَ فَمَا كَانَ لَهٗ مِنْ فِئَةٍ يَّنْصُرُوْنَهٗ مِنْ دُوْنِ اللهِ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُنْتَصِرِيْنَ
অতঃপর আমি তাকে (কারূনকে) তার প্রাসাদসহ ভূগর্ভে ধ্বসিয়ে দিলাম। তখন তার স্বপক্ষে এমন কোন দলও ছিল না, যারা আল্লাহর শাস্তি হতে তাকে সাহায্য করবে। তাছাড়া সে নিজেও আত্মরক্ষায় সক্ষম ছিল না। (সূরা ক্বাসাস- ৮১)
এ দৃশ্য দেখে তার মর্যাদাকাঙ্খীরা তাদের ভুল বুঝতে পারল :
وَاَصْبَحَ الَّذِيْنَ تَمَنَّوْا مَكَانَهٗ بِالْاَمْسِ يَقُوْلُوْنَ وَيْكَاَنَّ اللهَ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهٖ وَيَقْدِرُۚ لَوْلَاۤ اَنْ مَّنَّ اللهُ عَلَيْنَا لَخَسَفَ بِنَاؕ وَيْكَاَنَّهٗ لَا يُفْلِحُ الْكَافِرُوْنَ
ইতোপূর্বে যারা তার মতো হওয়ার কামনা করেছিল তারা বলতে লাগল, দেখলে তো! আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা তার রিযিক বর্ধিত করেন এবং যার জন্য ইচ্ছা হ্রাস করেন। যদি আল্লাহ আমাদের প্রতি সদয় না হতেন, তবে আমাদেরকেও ভূগর্ভে ধ্বসিয়ে দিতেন। দেখলে তো! কাফিররা সফলকাম হয় না। (সূরা ক্বাসাস- ৮২)
ব্যাখ্যা : যারা মুহাম্মাদ ﷺ এর দাওয়াতের কারণে জাতীয় স্বার্থ বিঘ্নিত হওয়ার ভয় প্রকাশ করেছিল, তারা আসলে ছিল মক্কার বড় বড় মহাজন ও পুঁজিপতি। তারা মনে করেছিল বেশি বেশি করে ধনসম্পদ আহরণ করাই হচ্ছে আসল সত্য। এ উদ্দেশ্য পূর্ণ করতে গিয়ে যে জিনিস থেকেই কিছু ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে তা দূর করতে হবে। কোন অবস্থাতেই তা গ্রহণ করা যেতে পারে না। অন্যদিকে সাধারণ মানুষ ধনসম্পদের এ উঁচু স্তম্ভগুলোকে আকাঙ্ক্ষার দৃষ্টিতে দেখত। তাদের চূড়ান্ত কামনা হতো, যে উচ্চতায় এরা পৌঁছেছে হায়! যদি আমাদেরও সেখানে পৌঁছার সৌভাগ্য হতো! কুরআন নাযিলের পরিবেশে এ যুক্তি বড়ই শক্তিশালী মনে করা হচ্ছিল যে, মুহাম্মাদ ﷺ যে তাওহীদ, আখিরাত ও নৈতিক বিধি-বন্ধনের দাওয়াত দিয়ে যাচ্ছেন তা মেনে নেয়া হলে কুরাইশদের উচ্চমর্যাদার প্রাসাদ ধূলায় লুটিয়ে পড়বে। এ ক্ষেত্রে ব্যবসা বাণিজ্য তো দূরের কথা জীবন-যাপনই কঠিন হয়ে পড়বে। অতঃপর মহান আল্লাহ তা‘আলা কারূনের ধ্বংসের ঘটনা উল্লেখ করে এসব লোকদেরকে সতর্ক করে দিয়েছেন।
اِنَّ قَارُوْنَ كَانَ مِنْ قَوْمِ مُوْسٰى فَبَغٰى عَلَيْهِمْ
কারূন ছিল মূসার সম্প্রদায়ভুক্ত, কিন্তু সে তাদের প্রতি বাড়াবাড়ি করেছিল। (সূরা ক্বাসাস- ৭৬)
আল্লাহ তাকে প্রচুর সম্পদ দিয়েছিলেন :
وَاٰتَيْنَاهُ مِنَ الْكُنُوْزِ مَاۤ اِنَّ مَفَاتِحَهٗ لَتَنُوْٓءُ بِالْعُصْبَةِ اُولِى الْقُوَّةِ
আমি তাকে দান করেছিলাম এমন ধনভান্ডার, যার চাবিগুলো বহন করা একদল শক্তিশালী লোকের পক্ষেও কষ্টসাধ্য ছিল। (সূরা ক্বাসাস- ৭৬)
জাতির লোকেরা তাকে উপদেশ দিল :
اِذْ قَالَ لَهٗ قَوْمُهٗ لَا تَفْرَحْ اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْفَرِحِيْنَ – وَابْتَغِ فِيْمَاۤ اٰتَاكَ اللهُ الدَّارَ الْاٰخِرَةَ وَلَا تَنْسَ نَصِيْبَكَ مِنَ الدُّنْيَا وَاَحْسِنْ كَمَاۤ اَحْسَنَ اللهُ اِلَيْكَ وَلَا تَبْغِ الْفَسَادَ فِى الْاَرْضِؕ اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْمُفْسِدِيْنَ
স্মরণ করো, যখন তার সম্প্রদায় তাকে বলেছিল, অহংকার করো না; নিশ্চয় আল্লাহ অহংকারীদেরকে পছন্দ করেন না। আল্লাহ যা তোমাকে দিয়েছেন তার দ্বারা আখিরাতের আবাস অনুসন্ধান করো এবং দুনিয়া হতে তোমার অংশ ভুলে যেয়ো না। যেমনিভাবে আল্লাহ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন তেমনিভাবে তুমিও অনুগ্রহ করো এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না। নিশ্চয় আল্লাহ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীকে ভালোবাসেন না। (সূরা ক্বাসাস- ৭৬, ৭৭)
কারূন উপদেশ শুনে জবাব দিল :
قَالَ اِنَّمَاۤ اُوْتِيْتُهٗ عَلٰى عِلْمٍ عِنْدِيْ
সে বলল, এ সম্পদ আমি আমার জ্ঞানবলে প্রাপ্ত হয়েছি। (সূরা ক্বাসাস- ৭৮)
আল্লাহ তার এ উক্তির জবাব দিয়েছেন :
اَوَلَمْ يَعْلَمْ اَنَّ اللهَ قَدْ اَهْلَكَ مِنْ قَبْلِهٖ مِنَ الْقُرُوْنِ مَنْ هُوَ اَشَدُّ مِنْهُ قُوَّةً وَّاَكْثَرُ جَمْعًاؕ وَلَا يُسْاَلُ عَنْ ذُنُوْبِهِمُ الْمُجْرِمُوْنَ
সে কি জানত না যে, আল্লাহ তার পূর্বে বহু মানবগোষ্ঠীকে ধ্বংস করে দিয়েছেন, যারা তার চেয়ে শক্তিতে ছিল প্রবল এবং জনসংখ্যায় ছিল অধিক? অপরাধীদেরকে কি তাদের অপরাধ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে না?
(সূরা ক্বাসাস- ৭৮)
ব্যাখ্যা : সে মনে করে যে, আমি যা কিছু পেয়েছি নিজের যোগ্যতার বলে পেয়েছি; এটা কোন অনুগ্রহ নয়। যে ব্যক্তি এভাবে নিজেকে বড় পন্ডিত, জ্ঞানী, গুণী ও চতুর বলে দাবী করে বেড়াচ্ছে সে কি জানে না যে, তার চেয়েও বেশি অর্থ, মর্যাদা, শক্তি ও শান-শওকতের অধিকারী লোক ইতোপূর্বে দুনিয়ায় অতিক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। যোগ্যতা ও নৈপূণ্যই যদি পার্থিব উন্নতির রক্ষাকবচ হয়ে থাকে তাহলে যখন তারা ধ্বংস হয়েছিল তখন তাদের এ যোগ্যতাগুলো কোথায় গিয়েছিল? আর যদি কারো পার্থিব উন্নতি লাভ অনিবার্যভাবে এ কথাই প্রমাণ করে যে, আললাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট এবং তিনি তার কর্ম ও গুণাবলি পছন্দ করেন তাহলে তাদের সর্বনাশ হলো কেন?
তার জাঁকজমক অবস্থা দেখে অন্যরাও তার মতো হতে চাইল :
فَخَرَجَ عَلٰى قَوْمِهٖ فِيْ زِيْنَتِهٖؕ قَالَ الَّذِيْنَ يُرِيْدُوْنَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا يَا لَيْتَ لَنَا مِثْلَ مَاۤ اُوْتِيَ قَارُوْنُ اِنَّهٗ لَذُوْ حَظٍّ عَظِيْمٍ
কারূন তার সম্প্রদায়ের সম্মুখে উপস্থিত হয়েছিল জাঁকজমক সহকারে। ফলে যারা পার্থিব জীবন কামনা করত তারা বলল, আহা! কারূনকে যেরূপ দেয়া হয়েছে আমাদেরকেও যদি তা দেয়া হতো! নিশ্চয় সে মহাভাগ্যবান। (সূরা ক্বাসাস- ৭৯)
জ্ঞানীরা বলল, মুমিনের জন্য পরকালের সওয়াবই উত্তম :
وَقَالَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْعِلْمَ وَيْلَكُمْ ثَوَابُ اللهِ خَيْرٌ لِّمَنْ اٰمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًاۚ وَلَا يُلَقَّاهَاۤ اِلَّا الصَّابِرُوْنَ
যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছিল তারা বলল, তোমাদের প্রতি ধিক্কার! যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের জন্য আল্লাহর পুরস্কারই সর্বশ্রেষ্ঠ। আর ধৈর্যশীল ব্যতীত তা কেউ লাভ করতে পারবে না। (সূরা ক্বাসাস- ৮০)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর পুরস্কার কেবল এমন লোকদের জন্য নির্ধারিত, যাদের মধ্যে এতটা ধৈর্য ও দৃঢ়তা থাকে, যার ফলে তারা হালাল পথে অর্থোপার্জন করার জন্য দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হয়। চাই তাতে তাদের ভাগ্যে শুধুমাত্র লবন-ভাতই জুটুক কিংবা তারা কোটিপতি হয়ে যাওয়ার সৌভাগ্য লাভ করুক। সারা দুনিয়ার সুখ ও সুবিধা অর্জিত হওয়ার সুযোগ দেখা দিলেও তারা হারাম পথের দিকে একটুও ঝুঁকে পড়ে না। হারামখোরদের জাঁকজমক অবস্থা দেখে ঈর্ষান্বিত হয় না। তারা ঠান্ডা মাথায় এ কথা অনুধাবন করে যে, ঈমানদারদের জন্য এ চাকচিক্যময় আবর্জনার তুলনায় এমন পবিত্র রিযিকই ভালো, যা আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাকে দান করেছেন।
শেষ পর্যায়ে সে ও তার সবকিছু মাটিতে ধ্বসে গেল :
فَخَسَفْنَا بِهٖ وَبِدَارِهِ الْاَرْضَ فَمَا كَانَ لَهٗ مِنْ فِئَةٍ يَّنْصُرُوْنَهٗ مِنْ دُوْنِ اللهِ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُنْتَصِرِيْنَ
অতঃপর আমি তাকে (কারূনকে) তার প্রাসাদসহ ভূগর্ভে ধ্বসিয়ে দিলাম। তখন তার স্বপক্ষে এমন কোন দলও ছিল না, যারা আল্লাহর শাস্তি হতে তাকে সাহায্য করবে। তাছাড়া সে নিজেও আত্মরক্ষায় সক্ষম ছিল না। (সূরা ক্বাসাস- ৮১)
এ দৃশ্য দেখে তার মর্যাদাকাঙ্খীরা তাদের ভুল বুঝতে পারল :
وَاَصْبَحَ الَّذِيْنَ تَمَنَّوْا مَكَانَهٗ بِالْاَمْسِ يَقُوْلُوْنَ وَيْكَاَنَّ اللهَ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهٖ وَيَقْدِرُۚ لَوْلَاۤ اَنْ مَّنَّ اللهُ عَلَيْنَا لَخَسَفَ بِنَاؕ وَيْكَاَنَّهٗ لَا يُفْلِحُ الْكَافِرُوْنَ
ইতোপূর্বে যারা তার মতো হওয়ার কামনা করেছিল তারা বলতে লাগল, দেখলে তো! আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা তার রিযিক বর্ধিত করেন এবং যার জন্য ইচ্ছা হ্রাস করেন। যদি আল্লাহ আমাদের প্রতি সদয় না হতেন, তবে আমাদেরকেও ভূগর্ভে ধ্বসিয়ে দিতেন। দেখলে তো! কাফিররা সফলকাম হয় না। (সূরা ক্বাসাস- ৮২)
ব্যাখ্যা : যারা মুহাম্মাদ ﷺ এর দাওয়াতের কারণে জাতীয় স্বার্থ বিঘ্নিত হওয়ার ভয় প্রকাশ করেছিল, তারা আসলে ছিল মক্কার বড় বড় মহাজন ও পুঁজিপতি। তারা মনে করেছিল বেশি বেশি করে ধনসম্পদ আহরণ করাই হচ্ছে আসল সত্য। এ উদ্দেশ্য পূর্ণ করতে গিয়ে যে জিনিস থেকেই কিছু ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে তা দূর করতে হবে। কোন অবস্থাতেই তা গ্রহণ করা যেতে পারে না। অন্যদিকে সাধারণ মানুষ ধনসম্পদের এ উঁচু স্তম্ভগুলোকে আকাঙ্ক্ষার দৃষ্টিতে দেখত। তাদের চূড়ান্ত কামনা হতো, যে উচ্চতায় এরা পৌঁছেছে হায়! যদি আমাদেরও সেখানে পৌঁছার সৌভাগ্য হতো! কুরআন নাযিলের পরিবেশে এ যুক্তি বড়ই শক্তিশালী মনে করা হচ্ছিল যে, মুহাম্মাদ ﷺ যে তাওহীদ, আখিরাত ও নৈতিক বিধি-বন্ধনের দাওয়াত দিয়ে যাচ্ছেন তা মেনে নেয়া হলে কুরাইশদের উচ্চমর্যাদার প্রাসাদ ধূলায় লুটিয়ে পড়বে। এ ক্ষেত্রে ব্যবসা বাণিজ্য তো দূরের কথা জীবন-যাপনই কঠিন হয়ে পড়বে। অতঃপর মহান আল্লাহ তা‘আলা কারূনের ধ্বংসের ঘটনা উল্লেখ করে এসব লোকদেরকে সতর্ক করে দিয়েছেন।
মানুষ সম্পদকে খুবই ভালোবাসে :
وَتُحِبُّوْنَ الْمَالَ حُبًّا جَمًّا
আর তোমরা ধনসম্পদকে প্রাণভরে ভালোবাস। (সূরা ফাজর- ২০)
মানুষ যত সম্পদ পায় আরো বেশি চায় :
وَجَعَلْتُ لَهٗ مَالًا مَّمْدُوْدًا – وَبَنِيْنَ شُهُوْدًا – وَمَهَّدْتُّ لَهٗ تَمْهِيْدًا – ثُمَّ يَطْمَعُ اَنْ اَزِيْدَ
আমি তাকে দান করেছি বিপুল ধনসম্পদ, সাক্ষ্যদানকারী পুত্রগণ এবং তাকে দিয়েছি স্বাচ্ছন্দ্য জীবনের বহু উপকরণ। এরপরও সে কামনা করে, যেন আমি তাকে আরো অধিক দেই। (সূরা মুদ্দাসসির, ১২-১৫)
মানুষ মৃত্যু পর্যন্ত সম্পদ আহরণ করতে চায় :
اَلْهَاكُمُ التَّكَاثُرُ – حَتّٰى زُرْتُمُ الْمَقَابِرَ – كَلَّا سَوْفَ تَعْلَمُوْنَ – ثُمَّ كَلَّا سَوْفَ تَعْلَمُوْنَ – كَلَّا لَوْ تَعْلَمُوْنَ عِلْمَ الْيَقِيْنِ – لَتَرَوُنَّ الْجَحِيْمَ – ثُمَّ لَتَرَوُنَّهَا عَيْنَ الْيَقِيْنِ – ثُمَّ لَتُسْاَلُنَّ يَوْمَئِذٍ عَنِ النَّعِيْمِ
কবরে পৌঁছার আগ পর্যন্ত প্রাচুর্য্যের লালসা তোমাদেরকে গাফেল করে রাখে। সাবধান! অচিরেই তোমরা (এর পরিণাম সম্পর্কে) জানতে পারবে। আবারো সাবধান! অচিরেই তোমরা (এর পরিণাম সম্পর্কে) জানতে পারবে। সাবধান! যদি তোমরা নিশ্চিত জ্ঞানের ভিত্তিতেই জানতে! (তাহলে সাবধান হয়ে যেতে)। অবশ্যই তোমরা জাহান্নামকে দেখতে পাবে। অতঃপর অবশ্যই তোমরা তা স্বচক্ষে দেখতে পাবে, এরপর অবশ্যই সেদিন তোমরা নিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞেসিত হবে। (সূরা তাকাসুর)
মানুষ ধনসম্পদ ও সমত্মান-সমত্মতির কারণে আল্লাহকে ভুলে যায় :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تُلْهِكُمْ اَمْوَالُكُمْ وَلَاۤ اَوْلَادُكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَمَنْ يَّفْعَلْ ذٰلِكَ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ হতে উদাসীন না করে দেয়, যারা এমনটি করবে (উদাসীন হবে) তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরা মুনাফিকূন- ৯)
তিনটি বিষয়কে আটটি জিনিসের উপর প্রাধান্য না দিলে তার ভয়াবহ পরিণতি :
قُلْ اِنْ كَانَ اٰبَآؤُكُمْ وَاَبْنَآؤُكُمْ وَاِخْوَانُكُمْ وَاَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيْرَتُكُمْ وَاَمْوَالُنِ اقْتَرَفْتُمُوْهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَاۤ اَحَبَّ اِلَيْكُمْ مِّنَ اللهِ وَرَسُوْلِهٖ وَجِهَادٍ فِيْ سَبِيْلِهٖ فَتَرَبَّصُوْا حَتّٰى يَاْتِيَ اللهُ بِاَمْرِهٖؕ وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الْفَاسِقِيْنَ
বলো, যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের ভাই, তোমাদের পরিবার-পরিজন ও তোমাদের অর্জিত ধনসম্পদ এবং ব্যবসা-বাণিজ্য- তোমরা যা অচল হয়ে যাওয়ার ভয় কর, তোমাদের বাড়িঘরসমূহ- যা তোমরা (একামত্মভাবে) কামনা কর, (এগুলো) যদি তোমরা আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও তাঁর পথে জিহাদ করার চেয়ে বেশি ভালোবাস, তাহলে তোমরা আল্লাহর (পক্ষ হতে তাঁর আযাবের) ঘোষণা আসা পর্যমত্ম অপেক্ষা করো। (জেনে রেখো) আল্লাহ কখনো ফাসিক সম্প্রদায়কে হেদায়াত করেন না। (সূরা তাওবা- ২৪)
وَتُحِبُّوْنَ الْمَالَ حُبًّا جَمًّا
আর তোমরা ধনসম্পদকে প্রাণভরে ভালোবাস। (সূরা ফাজর- ২০)
মানুষ যত সম্পদ পায় আরো বেশি চায় :
وَجَعَلْتُ لَهٗ مَالًا مَّمْدُوْدًا – وَبَنِيْنَ شُهُوْدًا – وَمَهَّدْتُّ لَهٗ تَمْهِيْدًا – ثُمَّ يَطْمَعُ اَنْ اَزِيْدَ
আমি তাকে দান করেছি বিপুল ধনসম্পদ, সাক্ষ্যদানকারী পুত্রগণ এবং তাকে দিয়েছি স্বাচ্ছন্দ্য জীবনের বহু উপকরণ। এরপরও সে কামনা করে, যেন আমি তাকে আরো অধিক দেই। (সূরা মুদ্দাসসির, ১২-১৫)
মানুষ মৃত্যু পর্যন্ত সম্পদ আহরণ করতে চায় :
اَلْهَاكُمُ التَّكَاثُرُ – حَتّٰى زُرْتُمُ الْمَقَابِرَ – كَلَّا سَوْفَ تَعْلَمُوْنَ – ثُمَّ كَلَّا سَوْفَ تَعْلَمُوْنَ – كَلَّا لَوْ تَعْلَمُوْنَ عِلْمَ الْيَقِيْنِ – لَتَرَوُنَّ الْجَحِيْمَ – ثُمَّ لَتَرَوُنَّهَا عَيْنَ الْيَقِيْنِ – ثُمَّ لَتُسْاَلُنَّ يَوْمَئِذٍ عَنِ النَّعِيْمِ
কবরে পৌঁছার আগ পর্যন্ত প্রাচুর্য্যের লালসা তোমাদেরকে গাফেল করে রাখে। সাবধান! অচিরেই তোমরা (এর পরিণাম সম্পর্কে) জানতে পারবে। আবারো সাবধান! অচিরেই তোমরা (এর পরিণাম সম্পর্কে) জানতে পারবে। সাবধান! যদি তোমরা নিশ্চিত জ্ঞানের ভিত্তিতেই জানতে! (তাহলে সাবধান হয়ে যেতে)। অবশ্যই তোমরা জাহান্নামকে দেখতে পাবে। অতঃপর অবশ্যই তোমরা তা স্বচক্ষে দেখতে পাবে, এরপর অবশ্যই সেদিন তোমরা নিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞেসিত হবে। (সূরা তাকাসুর)
মানুষ ধনসম্পদ ও সমত্মান-সমত্মতির কারণে আল্লাহকে ভুলে যায় :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تُلْهِكُمْ اَمْوَالُكُمْ وَلَاۤ اَوْلَادُكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَمَنْ يَّفْعَلْ ذٰلِكَ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ হতে উদাসীন না করে দেয়, যারা এমনটি করবে (উদাসীন হবে) তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরা মুনাফিকূন- ৯)
তিনটি বিষয়কে আটটি জিনিসের উপর প্রাধান্য না দিলে তার ভয়াবহ পরিণতি :
قُلْ اِنْ كَانَ اٰبَآؤُكُمْ وَاَبْنَآؤُكُمْ وَاِخْوَانُكُمْ وَاَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيْرَتُكُمْ وَاَمْوَالُنِ اقْتَرَفْتُمُوْهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَاۤ اَحَبَّ اِلَيْكُمْ مِّنَ اللهِ وَرَسُوْلِهٖ وَجِهَادٍ فِيْ سَبِيْلِهٖ فَتَرَبَّصُوْا حَتّٰى يَاْتِيَ اللهُ بِاَمْرِهٖؕ وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الْفَاسِقِيْنَ
বলো, যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের ভাই, তোমাদের পরিবার-পরিজন ও তোমাদের অর্জিত ধনসম্পদ এবং ব্যবসা-বাণিজ্য- তোমরা যা অচল হয়ে যাওয়ার ভয় কর, তোমাদের বাড়িঘরসমূহ- যা তোমরা (একামত্মভাবে) কামনা কর, (এগুলো) যদি তোমরা আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও তাঁর পথে জিহাদ করার চেয়ে বেশি ভালোবাস, তাহলে তোমরা আল্লাহর (পক্ষ হতে তাঁর আযাবের) ঘোষণা আসা পর্যমত্ম অপেক্ষা করো। (জেনে রেখো) আল্লাহ কখনো ফাসিক সম্প্রদায়কে হেদায়াত করেন না। (সূরা তাওবা- ২৪)
‘সফলকাম’ শব্দটি কুরআনে বৈষয়িক সফলতার সীমিত অর্থে ব্যবহৃত হয়নি। বরং এর অর্থ এমন ধরনের চিরন্তন সফলতা, যা কোনদিন ব্যর্থতা ও ক্ষতির সম্মুখীন হবে না। পার্থিব জীবনে এ সাফল্যের কোন দিক থাকতে পারে বা নাও থাকতে পারে। হতে পারে একজন গোমরাহীর আহবায়ক দুনিয়ায় আরাম-আয়েশে জীবন-যাপন করছে। তার জীবনে উন্নতি ও অগ্রগতির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কুরআনের পরিভাষায় এটা সাফল্য নয়, বরং দ্ব্যর্থহীন ক্ষতি ও ব্যর্থতা। আবার এও হতে পারে যে, একজন সত্যের আহবায়ক দুনিয়ায় কঠিন বিপদের মুখোমুখি হচ্ছে। দুঃখ-কষ্টের ভয়াবহতা অথবা যালিমদের নির্যাতনের শিকার হয়ে সে দুনিয়ার বুক থেকে বিদায় নিচ্ছে। তার আহবানে কেউ সাড়া দিচ্ছে না। কিন্তু কুরআনের ভাষায় এটা ক্ষতি ও ব্যর্থতা নয় বরং এটাই সফলতা।
আত্মশুদ্ধি লাভ করা :
قَدْ اَفْلَحَ مَنْ تَزَكّٰى – وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهٖ فَصَلّٰى
নিশ্চয় সে সাফল্য লাভ করে, যে পবিত্রতা অবলম্বন করে এবং তার প্রতিপালকের নাম স্মরণ করে ও সালাত কায়েম করে। (সূরা আ‘লা- ১৪, ১৫)
قَدْ اَفْلَحَ مَنْ زَكَّاهَا
যে নিজেকে শুদ্ধ করে, সেই সফলকাম হয়। (সূরা শামস- ৯)
আল্লাহকে ভয় করা :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اصْبِرُوْا وَصَابِرُوْا وَرَابِطُوْا وَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্যধারণ করো ও ধৈর্যধারণে প্রতিযোগিতা করো এবং (লড়াইয়ের জন্য সর্বদা) প্রস্তুত থাকো। আর আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা আলে ইমরান- ২০০)
বেশি বেশি আল্লাহর যিকির করা :
فَاِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانْتَشِرُوْا فِى الْاَرْضِ وَابْتَغُوْا مِنْ فَضْلِ اللهِ وَاذْكُرُوا اللهَ كَثِيْرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
অতঃপর যখন সালাত সমাপ্ত হবে, তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে। অতঃপর আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করবে এবং আল্লাহকে অধিক হারে স্মরণ করবে, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা জুমু‘আ- ১০)
তাওবা করা :
وَتُوْبُوْاۤ اِلَى اللهِ جَمِيْعًا اَيُّهَا الْمُؤْمِنُوْنَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর নিকট তাওবা করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা নূর- ৩১)
فَاَمَّا مَنْ تَابَ وَاٰمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَعَسٰۤى اَنْ يَّكُوْنَ مِنَ الْمُفْلِحِيْنَ
তবে যে ব্যক্তি তাওবা করবে, ঈমান আনবে এবং সৎকর্ম করবে সে সাফল্য অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা ক্বাসাস- ৬৭)
আল্লাহর নিয়ামত স্মরণ করা :
فَاذْكُرُوْاۤ اٰلَآءَ اللهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহকে স্মরণ করো, হয়তো তোমরা সফলকাম হবে। (সূরা আ‘রাফ- ৬৯)
অপবিত্র ও অবৈধ জিনিস গ্রহণ না করা :
قُلْ لَّا يَسْتَوِى الْخَبِيْثُ وَالطَّيِّبُ وَلَوْ اَعْجَبَكَ كَثْرَةُ الْخَبِيْثِۚ فَاتَّقُوا اللهَ يَاۤ اُولِى الْاَلْبَابِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
বলো, অপবিত্র ও পবিত্র সমান নয়; যদিও মন্দের আধিক্য তোমাকে চমৎকৃত করে। সুতরাং হে বোধশক্তিসম্পন্নরা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যেন তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা মায়েদা- ১০০)
সৎকর্ম করা :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا ارْكَعُوْا وَاسْجُدُوْا وَاعْبُدُوْا رَبَّكُمْ وَافْعَلُوا الْخَيْرَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা রুকূ করো, সিজদা করো এবং তোমাদের প্রতিপালকের ইবাদাত করো ও সৎকর্ম করো, যেন তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা হজ্জ- ৭৭)
শয়তানী কাজ থেকে দূরে থাকা :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْاَنْصَابُ وَالْاَزْلَامُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوْهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার দেবী ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর শয়তানের ঘৃণ্য কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা মায়েদা- ৯০)
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করা :
وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيْمًا
যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে, সে মহাসাফল্য লাভ করবে। (সূরা আহযাব- ৭১)
وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَيَخْشَ اللهَ وَيَتَّقْهِ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَآئِزُوْنَ
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর (অবাধ্যতা হতে) সাবধান থাকে, তারাই সফলকাম। (সূরা নূর- ৫২)
আল্লাহর পথে সংগ্রাম করা :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَابْتَغُوْاۤ اِلَيْهِ الْوَسِيْلَةَ وَجَاهِدُوْا فِيْ سَبِيْلِهٖ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, তাঁর নৈকট্য লাভের উপায় সন্ধান করো এবং তাঁর পথে জিহাদ করো, যাতে তোমরা সফলতা লাভ করতে পার। (সূরা মায়েদা- ৩৫)
اَلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَهَاجَرُوْا وَجَاهَدُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْ اَعْظَمُ دَرَجَةً عِنْدَ اللهِؕ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَآئِزُوْنَ
যারা ঈমান আনে, হিজরত করে এবং নিজেদের সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে তারা আল্লাহর নিকট মর্যাদায় সর্বশ্রেষ্ঠ; আর তারাই সফলকাম। (সূরা তাওবা- ২০)
সৎকাজের আদেশ দেয়া এবং অসৎকাজ হতে নিষেধ করা :
وَلْتَكُنْ مِّنْكُمْ اُمَّةٌ يَّدْعُوْنَ اِلَى الْخَيْرِ وَيَاْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِؕ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা জরুরি, যারা মানুষকে কল্যাণের দিকে ডাকবে এবং সৎকাজের আদেশ দেবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই হবে সফলকাম। (সূরা আলে ইমরান- ১০৪)
কুরআনের বিধান মেনে চলা :
فَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا بِهٖ وَعَزَّرُوْهُ وَنَصَرُوْهُ وَاتَّبَعُوا النُّوْرَ الَّذِۤيْ اُنْزِلَ مَعَهٗۤ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
যারা তাঁর (নবীর) প্রতি ঈমান আনয়ন করে, তাঁকে সম্মান করে ও সাহায্য করে এবং যে নূর তাঁর সাথে অবতীর্ণ হয়েছে তার অনুসরণ করে, তারাই সফলকাম। (সূরা আ‘রাফ- ১৫৭)
আল্লাহ ও নবীর কথা মেনে নেয়া :
اِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِيْنَ اِذَا دُعُوْاۤ اِلَى اللهِ وَرَسُوْلِهٖ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ اَنْ يَّقُوْلُوْا سَمِعْنَا وَاَطَعْنَاؕ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
মুমিনদের উক্তি তো এই- যখন তাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেয়ার জন্য আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের দিকে আহবান করা হয় তখন তারা বলে, আমরা শ্রবণ করলাম ও আনুগত্য করলাম। মূলত তারাই সফলকাম। (সূরা নূর- ৫১)
আত্মীয় ও অন্যান্য মানুষের হক আদায় করা :
فَاٰتِ ذَا الْقُرْبٰى حَقَّهٗ وَالْمِسْكِيْنَ وَابْنَ السَّبِيْلِ ذٰلِكَ خَيْرٌ لِّلَّذِيْنَ يُرِيْدُوْنَ وَجْهَ اللهِؗ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
অতএব আত্মীয়স্বজনকে তাদের হক দিয়ে দাও এবং মিসকীন ও মুসাফিরকেও (তাদের হক দিয়ে দাও)। এটা তাদের জন্য উত্তম, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে; আর তারাই সফলকাম। (সূরা রূম- ৩৮)
মনের সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত থাকা :
وَمَنْ يُّوْقَ شُحَّ نَفْسِهٖ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
যারা নিজেদেরকে কৃপণতা হতে মুক্ত করেছে তারাই সফলকাম। (সূরা হাশর- ৯)
তাক্বওয়ার গুণাবলি অর্জন করা :
ذٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ فِيْهِۚ هُدًى لِّلْمُتَّقِيْنَ – اَلَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ – وَالَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكَ وَمَاۤ اُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَۚ وَبِالْاٰخِرَةِ هُمْ يُوْقِنُوْنَ – اُولٰٓئِكَ عَلٰى هُدًى مِّنْ رَّبِّهِمْۗ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
এটা ঐ গ্রন্থ যার মধ্যে কোন সন্দেহ নেই। আর এটা মুত্তাক্বীদের জন্য হেদায়াতস্বরূপ। এরা (মুত্তাক্বীগণ) ঐ সকল লোক, যারা অদৃশ্য বিষয়গুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদেরকে যে জীবনোপকরণ দান করেছি তা হতে ব্যয় করে। আর তারা তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে ও তোমার পূর্বে যা অবতীর্ণ করা হয়েছিল তার প্রতি এবং পরকালের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করে। তারাই তাদের রবের পক্ষ হতে প্রাপ্ত হেদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে এবং তারাই সফলকাম। (সূরা বাক্বারা, ২-৫)
পরকালের সফলতাই চূড়ামত্ম সফলতা :
كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِؕ وَاِنَّمَا تُوَفَّوْنَ اُجُوْرَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِؕ فَمَنْ زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَاُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَؕ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَاۤ اِلَّا مَتَاعُ الْغُرُوْرِ
প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণকারী, অবশ্যই কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে পরিপূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে। অতএব যে ব্যক্তি (জাহান্নামের) আগুন হতে মুক্ত হবে এবং জান্নাতে প্রবিষ্ট হবে, নিশ্চয় সে সফলকাম। (সাবধান) পার্থিব জীবন প্রতারণার সম্পদ ছাড়া আর কিছুই নয়। (সূরা আলে ইমরান- ১৮৫)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ এ দুনিয়ার জীবনে বিভিন্ন কাজের যে ফলাফল দেখা যায় তাকেই যদি কোন ব্যক্তি আসল ও চূড়ান্ত ফলাফল বলে মনে করে এবং তারই ভিত্তিতে সত্য-মিথ্যা ও কল্যাণ-অকল্যাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তাহলে সে মারাত্মক প্রতারণার শিকার হবে। এখানে কারো উপর অনুগ্রহ ও নিয়ামত বর্ষিত হতে থাকলে তা থেকে এ কথা প্রমাণিত হয় না যে, সে সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত আছে এবং আল্লাহর নিকট তার কার্যকলাপ গৃহীত হয়েছে। অনুরূপভাবে এখানে কোন ব্যক্তির উপর বিপদ নেমে এলে এবং সে মহাসংকটে নিক্ষিপ্ত হলে তা থেকে অনিবার্যভাবে ধারণা করা যাবে না যে, সে মিথ্যার উপর দাঁড়িয়ে আছে এবং আল্লাহর নিকট প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ প্রাথমিক পর্যায়ের ফলাফলগুলো চিরন্তন জীবনের চূড়ান্ত ফলাফল থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন হয়। আর এ শেষ ফলাফলই হয় চূড়ান্ত।
যাদের নেকীর পাল্লা ভারী হবে তারাই সফলতা লাভ করবে :
وَالْوَزْنُ يَوْمَئِذِنِ الْحَقُّۚ فَمَنْ ثَقُلَتْ مَوَازِيْنُهٗ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
সেদিন সঠিকভাবে ওজন করা হবে। অতঃপর যাদের পাল্লা ভারী হবে তারাই সফলকাম হবে। (সূরা আ‘রাফ- ৮)
জান্নাত পাওয়া সবচেয়ে বড় সাফল্য :
لَا يَسْتَوِيْۤ اَصْحَابُ النَّارِ وَاَصْحَابُ الْجَنَّةِؕ اَصْحَابُ الْجَنَّةِ هُمُ الْفَآئِزُوْنَ
জাহান্নামের অধিবাসী এবং জান্নাতের অধিবাসীরা সমান নয়। জান্নাতবাসীরাই সফলকাম। (সূরা হাশর- ২০)
يَوْمَ تَرَى الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ يَسْعٰى نُوْرُهُمْ بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَبِاَيْمَانِهِمْ بُشْرَاكُمُ الْيَوْمَ جَنَّاتٌ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَاؕ ذٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ
সেদিন তুমি মুমিন নর-নারীদেরকে তাদের সম্মুখ ভাগে ও ডান পার্শ্বে নূর প্রবাহিত হতে দেখবে। (তাদেরকে বলা হবে) আজ তোমাদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ, যার পাদদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়ে গেছে। সেখানে তোমরা চিরস্থায়ী হবে; আর এটাই মহাসাফল্য। (সূরা হাদীদ- ১২)
আত্মশুদ্ধি লাভ করা :
قَدْ اَفْلَحَ مَنْ تَزَكّٰى – وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهٖ فَصَلّٰى
নিশ্চয় সে সাফল্য লাভ করে, যে পবিত্রতা অবলম্বন করে এবং তার প্রতিপালকের নাম স্মরণ করে ও সালাত কায়েম করে। (সূরা আ‘লা- ১৪, ১৫)
قَدْ اَفْلَحَ مَنْ زَكَّاهَا
যে নিজেকে শুদ্ধ করে, সেই সফলকাম হয়। (সূরা শামস- ৯)
আল্লাহকে ভয় করা :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اصْبِرُوْا وَصَابِرُوْا وَرَابِطُوْا وَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্যধারণ করো ও ধৈর্যধারণে প্রতিযোগিতা করো এবং (লড়াইয়ের জন্য সর্বদা) প্রস্তুত থাকো। আর আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা আলে ইমরান- ২০০)
বেশি বেশি আল্লাহর যিকির করা :
فَاِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانْتَشِرُوْا فِى الْاَرْضِ وَابْتَغُوْا مِنْ فَضْلِ اللهِ وَاذْكُرُوا اللهَ كَثِيْرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
অতঃপর যখন সালাত সমাপ্ত হবে, তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে। অতঃপর আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করবে এবং আল্লাহকে অধিক হারে স্মরণ করবে, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা জুমু‘আ- ১০)
তাওবা করা :
وَتُوْبُوْاۤ اِلَى اللهِ جَمِيْعًا اَيُّهَا الْمُؤْمِنُوْنَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর নিকট তাওবা করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা নূর- ৩১)
فَاَمَّا مَنْ تَابَ وَاٰمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَعَسٰۤى اَنْ يَّكُوْنَ مِنَ الْمُفْلِحِيْنَ
তবে যে ব্যক্তি তাওবা করবে, ঈমান আনবে এবং সৎকর্ম করবে সে সাফল্য অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা ক্বাসাস- ৬৭)
আল্লাহর নিয়ামত স্মরণ করা :
فَاذْكُرُوْاۤ اٰلَآءَ اللهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহকে স্মরণ করো, হয়তো তোমরা সফলকাম হবে। (সূরা আ‘রাফ- ৬৯)
অপবিত্র ও অবৈধ জিনিস গ্রহণ না করা :
قُلْ لَّا يَسْتَوِى الْخَبِيْثُ وَالطَّيِّبُ وَلَوْ اَعْجَبَكَ كَثْرَةُ الْخَبِيْثِۚ فَاتَّقُوا اللهَ يَاۤ اُولِى الْاَلْبَابِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
বলো, অপবিত্র ও পবিত্র সমান নয়; যদিও মন্দের আধিক্য তোমাকে চমৎকৃত করে। সুতরাং হে বোধশক্তিসম্পন্নরা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যেন তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা মায়েদা- ১০০)
সৎকর্ম করা :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا ارْكَعُوْا وَاسْجُدُوْا وَاعْبُدُوْا رَبَّكُمْ وَافْعَلُوا الْخَيْرَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা রুকূ করো, সিজদা করো এবং তোমাদের প্রতিপালকের ইবাদাত করো ও সৎকর্ম করো, যেন তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা হজ্জ- ৭৭)
শয়তানী কাজ থেকে দূরে থাকা :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْاَنْصَابُ وَالْاَزْلَامُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوْهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার দেবী ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর শয়তানের ঘৃণ্য কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা মায়েদা- ৯০)
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করা :
وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيْمًا
যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে, সে মহাসাফল্য লাভ করবে। (সূরা আহযাব- ৭১)
وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَيَخْشَ اللهَ وَيَتَّقْهِ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَآئِزُوْنَ
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর (অবাধ্যতা হতে) সাবধান থাকে, তারাই সফলকাম। (সূরা নূর- ৫২)
আল্লাহর পথে সংগ্রাম করা :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَابْتَغُوْاۤ اِلَيْهِ الْوَسِيْلَةَ وَجَاهِدُوْا فِيْ سَبِيْلِهٖ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, তাঁর নৈকট্য লাভের উপায় সন্ধান করো এবং তাঁর পথে জিহাদ করো, যাতে তোমরা সফলতা লাভ করতে পার। (সূরা মায়েদা- ৩৫)
اَلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَهَاجَرُوْا وَجَاهَدُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْ اَعْظَمُ دَرَجَةً عِنْدَ اللهِؕ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَآئِزُوْنَ
যারা ঈমান আনে, হিজরত করে এবং নিজেদের সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে তারা আল্লাহর নিকট মর্যাদায় সর্বশ্রেষ্ঠ; আর তারাই সফলকাম। (সূরা তাওবা- ২০)
সৎকাজের আদেশ দেয়া এবং অসৎকাজ হতে নিষেধ করা :
وَلْتَكُنْ مِّنْكُمْ اُمَّةٌ يَّدْعُوْنَ اِلَى الْخَيْرِ وَيَاْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِؕ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা জরুরি, যারা মানুষকে কল্যাণের দিকে ডাকবে এবং সৎকাজের আদেশ দেবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই হবে সফলকাম। (সূরা আলে ইমরান- ১০৪)
কুরআনের বিধান মেনে চলা :
فَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا بِهٖ وَعَزَّرُوْهُ وَنَصَرُوْهُ وَاتَّبَعُوا النُّوْرَ الَّذِۤيْ اُنْزِلَ مَعَهٗۤ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
যারা তাঁর (নবীর) প্রতি ঈমান আনয়ন করে, তাঁকে সম্মান করে ও সাহায্য করে এবং যে নূর তাঁর সাথে অবতীর্ণ হয়েছে তার অনুসরণ করে, তারাই সফলকাম। (সূরা আ‘রাফ- ১৫৭)
আল্লাহ ও নবীর কথা মেনে নেয়া :
اِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِيْنَ اِذَا دُعُوْاۤ اِلَى اللهِ وَرَسُوْلِهٖ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ اَنْ يَّقُوْلُوْا سَمِعْنَا وَاَطَعْنَاؕ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
মুমিনদের উক্তি তো এই- যখন তাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেয়ার জন্য আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের দিকে আহবান করা হয় তখন তারা বলে, আমরা শ্রবণ করলাম ও আনুগত্য করলাম। মূলত তারাই সফলকাম। (সূরা নূর- ৫১)
আত্মীয় ও অন্যান্য মানুষের হক আদায় করা :
فَاٰتِ ذَا الْقُرْبٰى حَقَّهٗ وَالْمِسْكِيْنَ وَابْنَ السَّبِيْلِ ذٰلِكَ خَيْرٌ لِّلَّذِيْنَ يُرِيْدُوْنَ وَجْهَ اللهِؗ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
অতএব আত্মীয়স্বজনকে তাদের হক দিয়ে দাও এবং মিসকীন ও মুসাফিরকেও (তাদের হক দিয়ে দাও)। এটা তাদের জন্য উত্তম, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে; আর তারাই সফলকাম। (সূরা রূম- ৩৮)
মনের সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত থাকা :
وَمَنْ يُّوْقَ شُحَّ نَفْسِهٖ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
যারা নিজেদেরকে কৃপণতা হতে মুক্ত করেছে তারাই সফলকাম। (সূরা হাশর- ৯)
তাক্বওয়ার গুণাবলি অর্জন করা :
ذٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ فِيْهِۚ هُدًى لِّلْمُتَّقِيْنَ – اَلَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ – وَالَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكَ وَمَاۤ اُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَۚ وَبِالْاٰخِرَةِ هُمْ يُوْقِنُوْنَ – اُولٰٓئِكَ عَلٰى هُدًى مِّنْ رَّبِّهِمْۗ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
এটা ঐ গ্রন্থ যার মধ্যে কোন সন্দেহ নেই। আর এটা মুত্তাক্বীদের জন্য হেদায়াতস্বরূপ। এরা (মুত্তাক্বীগণ) ঐ সকল লোক, যারা অদৃশ্য বিষয়গুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদেরকে যে জীবনোপকরণ দান করেছি তা হতে ব্যয় করে। আর তারা তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে ও তোমার পূর্বে যা অবতীর্ণ করা হয়েছিল তার প্রতি এবং পরকালের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করে। তারাই তাদের রবের পক্ষ হতে প্রাপ্ত হেদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে এবং তারাই সফলকাম। (সূরা বাক্বারা, ২-৫)
পরকালের সফলতাই চূড়ামত্ম সফলতা :
كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِؕ وَاِنَّمَا تُوَفَّوْنَ اُجُوْرَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِؕ فَمَنْ زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَاُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَؕ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَاۤ اِلَّا مَتَاعُ الْغُرُوْرِ
প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণকারী, অবশ্যই কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে পরিপূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে। অতএব যে ব্যক্তি (জাহান্নামের) আগুন হতে মুক্ত হবে এবং জান্নাতে প্রবিষ্ট হবে, নিশ্চয় সে সফলকাম। (সাবধান) পার্থিব জীবন প্রতারণার সম্পদ ছাড়া আর কিছুই নয়। (সূরা আলে ইমরান- ১৮৫)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ এ দুনিয়ার জীবনে বিভিন্ন কাজের যে ফলাফল দেখা যায় তাকেই যদি কোন ব্যক্তি আসল ও চূড়ান্ত ফলাফল বলে মনে করে এবং তারই ভিত্তিতে সত্য-মিথ্যা ও কল্যাণ-অকল্যাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তাহলে সে মারাত্মক প্রতারণার শিকার হবে। এখানে কারো উপর অনুগ্রহ ও নিয়ামত বর্ষিত হতে থাকলে তা থেকে এ কথা প্রমাণিত হয় না যে, সে সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত আছে এবং আল্লাহর নিকট তার কার্যকলাপ গৃহীত হয়েছে। অনুরূপভাবে এখানে কোন ব্যক্তির উপর বিপদ নেমে এলে এবং সে মহাসংকটে নিক্ষিপ্ত হলে তা থেকে অনিবার্যভাবে ধারণা করা যাবে না যে, সে মিথ্যার উপর দাঁড়িয়ে আছে এবং আল্লাহর নিকট প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ প্রাথমিক পর্যায়ের ফলাফলগুলো চিরন্তন জীবনের চূড়ান্ত ফলাফল থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন হয়। আর এ শেষ ফলাফলই হয় চূড়ান্ত।
যাদের নেকীর পাল্লা ভারী হবে তারাই সফলতা লাভ করবে :
وَالْوَزْنُ يَوْمَئِذِنِ الْحَقُّۚ فَمَنْ ثَقُلَتْ مَوَازِيْنُهٗ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
সেদিন সঠিকভাবে ওজন করা হবে। অতঃপর যাদের পাল্লা ভারী হবে তারাই সফলকাম হবে। (সূরা আ‘রাফ- ৮)
জান্নাত পাওয়া সবচেয়ে বড় সাফল্য :
لَا يَسْتَوِيْۤ اَصْحَابُ النَّارِ وَاَصْحَابُ الْجَنَّةِؕ اَصْحَابُ الْجَنَّةِ هُمُ الْفَآئِزُوْنَ
জাহান্নামের অধিবাসী এবং জান্নাতের অধিবাসীরা সমান নয়। জান্নাতবাসীরাই সফলকাম। (সূরা হাশর- ২০)
يَوْمَ تَرَى الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ يَسْعٰى نُوْرُهُمْ بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَبِاَيْمَانِهِمْ بُشْرَاكُمُ الْيَوْمَ جَنَّاتٌ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَاؕ ذٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ
সেদিন তুমি মুমিন নর-নারীদেরকে তাদের সম্মুখ ভাগে ও ডান পার্শ্বে নূর প্রবাহিত হতে দেখবে। (তাদেরকে বলা হবে) আজ তোমাদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ, যার পাদদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়ে গেছে। সেখানে তোমরা চিরস্থায়ী হবে; আর এটাই মহাসাফল্য। (সূরা হাদীদ- ১২)
যারা আনুগত্যে অটল থাকে না :
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّعْبُدُ اللهَ عَلٰى حَرْفٍۚ فَاِنْ اَصَابَهٗ خَيْرُنِ اطْمَاَنَّ بِهٖۚ وَاِنْ اَصَابَتْهُ فِتْنَةُ نِ انْقَلَبَ عَلٰى وَجْهِهٖۚ خَسِرَ الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةَؕ ذٰلِكَ هُوَ الْخُسْرَانُ الْمُبِيْنُ
মানুষের মধ্যে কেউ কেউ দ্বিধার সাথে আল্লাহর ইবাদাত করে। অতঃপর তার মঙ্গল হলে তাতে তার চিত্ত প্রশামত্ম হয় এবং কোন বিপর্যয় ঘটলে সে তার পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়। সে দুনিয়াতে ও আখিরাতে ক্ষতিগ্রসত্ম হয়; আর এটাই তো সুস্পষ্ট ক্ষতি। (সূরা হজ্জ- ১১)
ব্যাখ্যা : তারা এমন ব্যক্তি যাদের মানসিক গঠন অপরিপক্ক, আকীদা-বিশ্বাস দুর্বল এবং যারা প্রবৃত্তির অনুসারী। তারা ইসলাম গ্রহণ করে দুনিয়াবী স্বার্থ হাসিল করার উদ্দেশ্যে। তাদের ঈমান এ শর্তের সাথে জড়িত যে, তাদের সবধরনের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করে দিতে হবে। অতঃপর যখন আল্লাহ তা‘আলা তাদের কামনা-বাসনা পূর্ণ করে দেন, তখন তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকে এবং তাঁর দ্বীনকে খুবই ভালো মনে করে। কিন্তু যখনই তারা আল্লাহর পথে কোন বিপদাপদ বা ক্ষতির শিকার হয় কিংবা কোন আশা-আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ না হয়, তখনই তারা আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতা, রাসূলের রিসালাত ও দ্বীনের সত্যতা কোনটার উপরই নিশ্চিন্ত থাকে না; বরং তারা তাগুতের প্রতি ঝুঁকে পড়ে।
যারা কাফির :
فَلَمْ يَكُ يَنْفَعُهُمْ اِيْمَانُهُمْ لَمَّا رَاَوْا بَاْسَنَاؕ سُنَّةَ اللهِ الَّتِيْ قَدْ خَلَتْ فِيْ عِبَادِهٖۚ وَخَسِرَ هُنَالِكَ الْكَافِرُوْنَ
যখন তারা আমার শাস্তি প্রত্যক্ষ করল, তখন তাদের ঈমান তাদের কোন উপকারে আসল না। আল্লাহর এই বিধান পূর্ব হতেই তাঁর বান্দাদের মধ্যে চলে আসছে এবং সে ক্ষেত্রে কাফিররা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। (সূরা মু’মিন- ৮৫)
যারা ঈমান আনতে অস্বীকার করে :
وَمَنْ يَّكْفُرْ بِالْاِيْمَانِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهٗؗ وَهُوَ فِى الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
আর যে ব্যক্তি ঈমান প্রত্যাখ্যান করবে, তার কর্ম নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা মায়েদা- ৫)
যারা ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্ম গ্রহণ করে :
وَمَنْ يَّبْتَغِ غَيْرَ الْاِسْلَامِ دِيْنًا فَلَنْ يُّقْبَلَ مِنْهُۚ وَهُوَ فِى الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
আর যে ব্যক্তি ইসলামকে বাদ দিয়ে অন্য কোন জীবনব্যবস্থা তালাশ করবে, তার কাছ থেকে কিছুই কবুল করা হবে না। অতঃপর আখিরাতে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা আলে ইমরান- ৮৫)
যারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করাকে মিথ্যা মনে করে :
قَدْ خَسِرَ الَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِلِقَآءِ اللهِ
যারা আল্লাহর সম্মুখীন হওয়াকে মিথ্যা বলেছে, অবশ্যই তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। (সূরা আন‘আম- ৩১)
যারা আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে না :
اِنَّ الَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ بِالْاٰخِرَةِ زَيَّنَّا لَهُمْ اَعْمَالَهُمْ فَهُمْ يَعْمَهُوْنَ ‐ اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ لَهُمْ سُوْٓءُ الْعَذَابِ وَهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ هُمُ الْاَخْسَرُوْنَ
যারা আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না, আমি তাদের কর্মকে তাদের দৃষ্টিতে শোভন করে দিয়েছি, ফলে তারা বিভ্রামিত্মতে ঘুরে বেড়ায়। এদের জন্য রয়েছে কঠিন শাসিত্ম, আর আখিরাতে তারাই হবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরা নামল- ৪, ৫)
যারা মনে করে যে, পরকালে তার বিপক্ষে কেউ সাক্ষ্য দেবে না :
وَمَا كُنْتُمْ تَسْتَتِرُوْنَ اَنْ يَّشْهَدَ عَلَيْكُمْ سَمْعُكُمْ وَلَاۤ اَبْصَارُكُمْ وَلَا جُلُوْدُكُمْ وَلٰكِنْ ظَنَنْتُمْ اَنَّ اللهَ لَا يَعْلَمُ كَثِيْرًا مِّمَّا تَعْمَلُوْنَ – وَذٰلِكُمْ ظَنُّكُمُ الَّذِيْ ظَنَنْتُمْ بِرَبِّكُمْ اَرْدَاكُمْ فَاَصْبَحْتُمْ مِّنَ الْخَاسِرِيْنَ
তোমরা কোনকিছু গোপন করতে না এ বিশ্বাসে যে, তোমাদের কর্ণ, চক্ষু এবং ত্বক তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে না। উপরন্তু তোমরা মনে করতে যে, তোমরা যা করতে তার অনেক কিছুই আল্লাহ জানেন না। তোমাদের প্রতিপালক সম্বন্ধে তোমাদের এ ধারণাই তোমাদেরকে ধ্বংস করেছে। ফলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছ। (সূরা হা-মীম সাজদা- ২২, ২৩)
যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলে :
وَلَا تَكُوْنَنَّ مِنَ الَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِ اللهِ فَتَكُوْنَ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে প্রত্যাখ্যান করেছে, কখনো তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না; তাহলে তুমিও ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা ইউনুস- ৯৫)
যারা আল্লাহর পথে বাধা দেয় ও বক্রতা সৃষ্টি করে :
اَلَّذِيْنَ يَصُدُّوْنَ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ وَيَبْغُوْنَهَا عِوَجًاؕ وَهُمْ بِالْاٰخِرَةِ هُمْ كَافِرُوْنَ – اُولٰٓئِكَ لَمْ يَكُوْنُوْا مُعْجِزِيْنَ فِى الْاَرْضِ وَمَا كَانَ لَهُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ مِنْ اَوْلِيَآءَۘ يُضَاعَفُ لَهُمُ الْعَذَابُؕ مَا كَانُوْا يَسْتَطِيْعُوْنَ السَّمْعَ وَمَا كَانُوْا يُبْصِرُوْنَ – اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ خَسِرُوْاۤ اَنْفُسَهُمْ وَضَلَّ عَنْهُمْ مَّا كَانُوْا يَفْتَرُوْنَ – لَا جَرَمَ اَنَّهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ هُمُ الْاَخْسَرُوْنَ
যারা আল্লাহর পথে বাধা দেয় এবং এতে বক্রতা অনুসন্ধান করে; তারাই আখিরাতের ব্যাপারে অবিশ্বাসী। তারা পৃথিবীতে আল্লাহকে অপারগ করতে পারেনি এবং আল্লাহ ব্যতীত তাদের অপর কোন অভিভাবকও ছিল না। তাদের শাসিত্ম দ্বিগুণ করা হবে, কারণ তারা শুনার সামর্থ্য রাখত না এবং তারা দেখতেও পারত না। তারা নিজেরাই নিজেদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করল এবং তারা যে অহেতুক কল্পনা করত তা তাদের নিকট হতে উধাও হয়ে গেল। নিঃসন্দেহে তারাই আখিরাতে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রসত্মদের অমত্মর্ভুক্ত হবে। (সূরা হুদ, ১৯-২২)
যারা মন্দকাজ করে এবং সেটাকেই ভালো মনে করে :
قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُمْ بِالْاَخْسَرِيْنَ اَعْمَالًا – اَ لَّذِيْنَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُوْنَ اَنَّهُمْ يُحْسِنُوْنَ صُنْعًا
বলো, আমি কি তোমাদেরকে আমলের দিক থেকে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রসত্মদের সম্পর্কে সংবাদ দেব? তারা হলো, পার্থিব জীবনে যাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেছে; যদিও তারা মনে করে যে, তারা সৎকর্মই করে যাচ্ছে। (সূরা কাহফ- ১০৩, ১০৪)
যারা সম্পর্ক নষ্ট করে এবং জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করে :
اَلَّذِيْنَ يَنْقُضُوْنَ عَهْدَ اللهِ مِنْ ۢبَعْدِ مِيْثَاقِه۪ٖ وَيَقْطَعُوْنَ مَاۤ اَمَرَ اللهُ بِهٖۤ اَنْ يُّوْصَلَ وَيُفْسِدُوْنَ فِى الْاَرْضِؕ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ
যারা আল্লাহর সঙ্গে দৃঢ়ভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে এবং ঐসব সম্পর্ক ছিন্ন করে, যা আল্লাহ অক্ষুণ্ণ রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং যারা পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরা বাক্বারা- ২৭)
যারা ধনসম্পদের মোহে পড়ে আল্লাহকে ভুলে যায় :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تُلْهِكُمْ اَمْوَالُكُمْ وَلَاۤ اَوْلَادُكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللهِۚ وَمَنْ يَّفْعَلْ ذٰلِكَ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ হতে উদাসীন না করে দেয়। যারা এমন করবে (উদাসীন হবে) তারাই ক্ষতিগ্রস্তদের অমত্মর্ভুক্ত হবে । (সূরা মুনাফিকূন- ৯)
যারা শয়তানের সাথে বন্ধুত্ব করে :
وَمَنْ يَّتَّخِذِ الشَّيْطَانَ وَلِيًّا مِّنْ دُوْنِ اللهِ فَقَدْ خَسِرَ خُسْرَانًا مُّبِيْنًا
আর যে ব্যক্তি আল্লাহর পরিবর্তে শয়তানকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করবে, সে স্পষ্টভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (সূরা নিসা- ১১৯)
যারা শয়তানের দলে অংশ নেয় :
اِسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَاَنْسَاهُمْ ذِكْرَ اللهِؕ اُولٰٓئِكَ حِزْبُ الشَّيْطَانِؕ اَ لَاۤ اِنَّ حِزْبَ الشَّيْطَانِ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ
শয়তান তাদের উপর পরিপূর্ণ আধিপত্য বিস্তার লাভ করে নিয়েছে। অতঃপর সে তাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে ভুলিয়ে দিয়েছে। তারাই হলো শয়তানের দল, সাবধান! নিশ্চয় শয়তানের দল ক্ষতিগ্রস্ত হবেই। (সূরা মুজাদালা- ১৯)
যারা কাফিরদের অনুসরণ করে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنْ تُطِيْعُوا الَّذِيْنَ كَفَرُوْا يَرُدُّوْكُمْ عَلٰۤى اَعْقَابِكُمْ فَتَنْقَلِبُوْا خَاسِرِيْنَ
হে মুমিনগণ! যদি তোমরা কাফিরদের অনুসরণ কর, তবে তারা তোমাদেরকে পেছনে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। আর তাতে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা আলে ইমরান- ১৪৯)
যারা বাতিলের প্রতি বিশ্বাস রাখে :
وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا بِالْبَاطِلِ وَكَفَرُوْا بِاللهِ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ
যারা অসত্যের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং আল্লাহকে অস্বীকার করে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরা আনকাবূত- ৫২)
وَيَوْمَ تَقُوْمُ السَّاعَةُ يَوْمَئِذٍ يَّخْسَرُ الْمُبْطِلُوْنَ
যেদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে সেদিন বাতিলপন্থীরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা জাসিয়া- ২৭)
যাদের নেক আমলের পাল্লা হালকা হবে :
وَمَنْ خَفَّتْ مَوَازِيْنُهٗ فَاُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ خَسِرُوْاۤ اَنْفُسَهُمْ فِيْ جَهَنَّمَ خَالِدُوْنَ
যাদের পাল্লা হালকা হবে তারাই তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে, যারা নিজেদেরকে ক্ষতিগ্রসত্ম করেছে; আর তারাই জাহান্নামে চিরস্থায়ী হবে। (সূরা মু’মিনূন- ১০৩)
وَمَنْ خَفَّتْ مَوَازِيْنُهٗ فَاُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ خَسِرُوْاۤ اَنْفُسَهُمْ بِمَا كَانُوْا بِاٰيَاتِنَا يَظْلِمُوْنَ
যাদের পাল্লা হালকা হবে তারাই সেসব লোকদের অন্তর্ভুক্ত হবে, যারা নিজেদের ক্ষতি করেছে; যেহেতু তারা আমার নিদর্শনসমূহকে প্রত্যাখ্যান করত। (সূরা আ‘রাফ- ৯)
যারা পরকালে সব হারাবে :
قُلْ اِنَّ الْخَاسِرِيْنَ الَّذِيْنَ خَسِرُوْاۤ اَنْفُسَهُمْ وَاَهْلِيْهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِؕ اَ لَا ذٰلِكَ هُوَ الْخُسْرَانُ الْمُبِيْنُ
বলো, নিশ্চয় কিয়ামতের দিন তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যারা নিজেদেরকে এবং নিজেদের পরিবারবর্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। সাবধান! এটাই প্রকাশ্য ক্ষতি। (সূরা যুমার- ১৫)
اِنَّ الْخَاسِرِيْنَ الَّذِيْنَ خَسِرُوْاۤ اَنْفُسَهُمْ وَاَهْلِيْهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِؕ اَ لَاۤ اِنَّ الظَّالِمِيْنَ فِيْ عَذَابٍ مُّقِيْمٍ
নিশ্চয় কিয়ামতের দিন তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যারা নিজেদেরকে এবং নিজেদের পরিবারবর্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। সাবধান! নিশ্চয় যালিমরা স্থায়ী আযাবের মধ্যে অবস্থান করবে। (সূরা শূরা- ৪৫)
ব্যাখ্যা : কারো ব্যবসায় খাটানো সমস্ত পুঁজি যদি নষ্ট হয়ে যায় এবং বাজারে তার পাওনাদারের সংখ্যা এত বেড়ে যায় যে, নিজের সবকিছু দিয়েও সে দায়মুক্ত হতে পারবে না, তাহলে এরূপ অবস্থাকেই দেউলিয়াত্ব বলে। এখানে আল্লাহ তা‘আলা কাফির ও মুশরিকদের জন্য এ রূপক ভাষাটিই ব্যবহার করেছেন। মানুষ এ পৃথিবীতে জীবন, আয়ু, জ্ঞানবুদ্ধি, শরীর, শক্তি, যোগ্যতা, উপায়-উপকরণ এবং সুযোগসুবিধা যা কিছু লাভ করেছে তার সমষ্টি এমন একটি পুঁজি, যা সে পার্থিব জীবনের কারবারে খাটায়। কেউ যদি এ পুঁজির সবটাই এই অনুমানের উপর ভিত্তি করে খাটায় যে, ইলাহ্ বলতে কেউ নেই কিংবা অনেক ইলাহ্ আছে; আর সে তাদের বান্দা। তাকে কারো কাছে হিসাব দিতে হবে না, কিংবা হিসাব-নিকাশের সময় অন্য কেউ এসে তাকে রক্ষা করবে, তাহলে এর অর্থ হচ্ছে সে ক্ষতিগ্রস্ত হলো এবং নিজের সবকিছু বিসর্জন দিল। এটা হচ্ছে প্রথম ক্ষতি। দ্বিতীয় ক্ষতি হচ্ছে, এই ভ্রান্ত অনুমানের ভিত্তিতে সে যত কাজ করল, সেসব কাজের ক্ষেত্রে সে নিজেকে সহ দুনিয়ার বহু সৃষ্টির উপর জীবনভর যুলুম করল। তাছাড়া আরো একটি ক্ষতি হচ্ছে, সে নিজেই শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হলো না, বরং নিজের সন্তান-সন্ততি ও আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধুবান্ধবকেও তার ভ্রান্ত শিক্ষার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত করল। এ তিনটি ক্ষতির সমষ্টিকে আল্লাহ তা‘আলা সুস্পষ্ট ক্ষতি বলে আখ্যায়িত করেছেন।
ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায় হলো সূরা আসরের উপর আমল করা :
وَالْعَصْرِ ‐ اِنَّ الْاِنْسَانَ لَفِيْ خُسْرٍ ‐ اِلَّا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ
যুগের কসম, নিশ্চয় মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু তারা নয়, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকাজ করে; আর পরস্পরকে সত্যের তাকীদ করে এবং তাকীদ করে সবরের। (সূরা আসর)
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّعْبُدُ اللهَ عَلٰى حَرْفٍۚ فَاِنْ اَصَابَهٗ خَيْرُنِ اطْمَاَنَّ بِهٖۚ وَاِنْ اَصَابَتْهُ فِتْنَةُ نِ انْقَلَبَ عَلٰى وَجْهِهٖۚ خَسِرَ الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةَؕ ذٰلِكَ هُوَ الْخُسْرَانُ الْمُبِيْنُ
মানুষের মধ্যে কেউ কেউ দ্বিধার সাথে আল্লাহর ইবাদাত করে। অতঃপর তার মঙ্গল হলে তাতে তার চিত্ত প্রশামত্ম হয় এবং কোন বিপর্যয় ঘটলে সে তার পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়। সে দুনিয়াতে ও আখিরাতে ক্ষতিগ্রসত্ম হয়; আর এটাই তো সুস্পষ্ট ক্ষতি। (সূরা হজ্জ- ১১)
ব্যাখ্যা : তারা এমন ব্যক্তি যাদের মানসিক গঠন অপরিপক্ক, আকীদা-বিশ্বাস দুর্বল এবং যারা প্রবৃত্তির অনুসারী। তারা ইসলাম গ্রহণ করে দুনিয়াবী স্বার্থ হাসিল করার উদ্দেশ্যে। তাদের ঈমান এ শর্তের সাথে জড়িত যে, তাদের সবধরনের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করে দিতে হবে। অতঃপর যখন আল্লাহ তা‘আলা তাদের কামনা-বাসনা পূর্ণ করে দেন, তখন তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকে এবং তাঁর দ্বীনকে খুবই ভালো মনে করে। কিন্তু যখনই তারা আল্লাহর পথে কোন বিপদাপদ বা ক্ষতির শিকার হয় কিংবা কোন আশা-আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ না হয়, তখনই তারা আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতা, রাসূলের রিসালাত ও দ্বীনের সত্যতা কোনটার উপরই নিশ্চিন্ত থাকে না; বরং তারা তাগুতের প্রতি ঝুঁকে পড়ে।
যারা কাফির :
فَلَمْ يَكُ يَنْفَعُهُمْ اِيْمَانُهُمْ لَمَّا رَاَوْا بَاْسَنَاؕ سُنَّةَ اللهِ الَّتِيْ قَدْ خَلَتْ فِيْ عِبَادِهٖۚ وَخَسِرَ هُنَالِكَ الْكَافِرُوْنَ
যখন তারা আমার শাস্তি প্রত্যক্ষ করল, তখন তাদের ঈমান তাদের কোন উপকারে আসল না। আল্লাহর এই বিধান পূর্ব হতেই তাঁর বান্দাদের মধ্যে চলে আসছে এবং সে ক্ষেত্রে কাফিররা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। (সূরা মু’মিন- ৮৫)
যারা ঈমান আনতে অস্বীকার করে :
وَمَنْ يَّكْفُرْ بِالْاِيْمَانِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهٗؗ وَهُوَ فِى الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
আর যে ব্যক্তি ঈমান প্রত্যাখ্যান করবে, তার কর্ম নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা মায়েদা- ৫)
যারা ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্ম গ্রহণ করে :
وَمَنْ يَّبْتَغِ غَيْرَ الْاِسْلَامِ دِيْنًا فَلَنْ يُّقْبَلَ مِنْهُۚ وَهُوَ فِى الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
আর যে ব্যক্তি ইসলামকে বাদ দিয়ে অন্য কোন জীবনব্যবস্থা তালাশ করবে, তার কাছ থেকে কিছুই কবুল করা হবে না। অতঃপর আখিরাতে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা আলে ইমরান- ৮৫)
যারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করাকে মিথ্যা মনে করে :
قَدْ خَسِرَ الَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِلِقَآءِ اللهِ
যারা আল্লাহর সম্মুখীন হওয়াকে মিথ্যা বলেছে, অবশ্যই তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। (সূরা আন‘আম- ৩১)
যারা আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে না :
اِنَّ الَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ بِالْاٰخِرَةِ زَيَّنَّا لَهُمْ اَعْمَالَهُمْ فَهُمْ يَعْمَهُوْنَ ‐ اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ لَهُمْ سُوْٓءُ الْعَذَابِ وَهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ هُمُ الْاَخْسَرُوْنَ
যারা আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না, আমি তাদের কর্মকে তাদের দৃষ্টিতে শোভন করে দিয়েছি, ফলে তারা বিভ্রামিত্মতে ঘুরে বেড়ায়। এদের জন্য রয়েছে কঠিন শাসিত্ম, আর আখিরাতে তারাই হবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরা নামল- ৪, ৫)
যারা মনে করে যে, পরকালে তার বিপক্ষে কেউ সাক্ষ্য দেবে না :
وَمَا كُنْتُمْ تَسْتَتِرُوْنَ اَنْ يَّشْهَدَ عَلَيْكُمْ سَمْعُكُمْ وَلَاۤ اَبْصَارُكُمْ وَلَا جُلُوْدُكُمْ وَلٰكِنْ ظَنَنْتُمْ اَنَّ اللهَ لَا يَعْلَمُ كَثِيْرًا مِّمَّا تَعْمَلُوْنَ – وَذٰلِكُمْ ظَنُّكُمُ الَّذِيْ ظَنَنْتُمْ بِرَبِّكُمْ اَرْدَاكُمْ فَاَصْبَحْتُمْ مِّنَ الْخَاسِرِيْنَ
তোমরা কোনকিছু গোপন করতে না এ বিশ্বাসে যে, তোমাদের কর্ণ, চক্ষু এবং ত্বক তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে না। উপরন্তু তোমরা মনে করতে যে, তোমরা যা করতে তার অনেক কিছুই আল্লাহ জানেন না। তোমাদের প্রতিপালক সম্বন্ধে তোমাদের এ ধারণাই তোমাদেরকে ধ্বংস করেছে। ফলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছ। (সূরা হা-মীম সাজদা- ২২, ২৩)
যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলে :
وَلَا تَكُوْنَنَّ مِنَ الَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِ اللهِ فَتَكُوْنَ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে প্রত্যাখ্যান করেছে, কখনো তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না; তাহলে তুমিও ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা ইউনুস- ৯৫)
যারা আল্লাহর পথে বাধা দেয় ও বক্রতা সৃষ্টি করে :
اَلَّذِيْنَ يَصُدُّوْنَ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ وَيَبْغُوْنَهَا عِوَجًاؕ وَهُمْ بِالْاٰخِرَةِ هُمْ كَافِرُوْنَ – اُولٰٓئِكَ لَمْ يَكُوْنُوْا مُعْجِزِيْنَ فِى الْاَرْضِ وَمَا كَانَ لَهُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ مِنْ اَوْلِيَآءَۘ يُضَاعَفُ لَهُمُ الْعَذَابُؕ مَا كَانُوْا يَسْتَطِيْعُوْنَ السَّمْعَ وَمَا كَانُوْا يُبْصِرُوْنَ – اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ خَسِرُوْاۤ اَنْفُسَهُمْ وَضَلَّ عَنْهُمْ مَّا كَانُوْا يَفْتَرُوْنَ – لَا جَرَمَ اَنَّهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ هُمُ الْاَخْسَرُوْنَ
যারা আল্লাহর পথে বাধা দেয় এবং এতে বক্রতা অনুসন্ধান করে; তারাই আখিরাতের ব্যাপারে অবিশ্বাসী। তারা পৃথিবীতে আল্লাহকে অপারগ করতে পারেনি এবং আল্লাহ ব্যতীত তাদের অপর কোন অভিভাবকও ছিল না। তাদের শাসিত্ম দ্বিগুণ করা হবে, কারণ তারা শুনার সামর্থ্য রাখত না এবং তারা দেখতেও পারত না। তারা নিজেরাই নিজেদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করল এবং তারা যে অহেতুক কল্পনা করত তা তাদের নিকট হতে উধাও হয়ে গেল। নিঃসন্দেহে তারাই আখিরাতে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রসত্মদের অমত্মর্ভুক্ত হবে। (সূরা হুদ, ১৯-২২)
যারা মন্দকাজ করে এবং সেটাকেই ভালো মনে করে :
قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُمْ بِالْاَخْسَرِيْنَ اَعْمَالًا – اَ لَّذِيْنَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُوْنَ اَنَّهُمْ يُحْسِنُوْنَ صُنْعًا
বলো, আমি কি তোমাদেরকে আমলের দিক থেকে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রসত্মদের সম্পর্কে সংবাদ দেব? তারা হলো, পার্থিব জীবনে যাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেছে; যদিও তারা মনে করে যে, তারা সৎকর্মই করে যাচ্ছে। (সূরা কাহফ- ১০৩, ১০৪)
যারা সম্পর্ক নষ্ট করে এবং জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করে :
اَلَّذِيْنَ يَنْقُضُوْنَ عَهْدَ اللهِ مِنْ ۢبَعْدِ مِيْثَاقِه۪ٖ وَيَقْطَعُوْنَ مَاۤ اَمَرَ اللهُ بِهٖۤ اَنْ يُّوْصَلَ وَيُفْسِدُوْنَ فِى الْاَرْضِؕ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ
যারা আল্লাহর সঙ্গে দৃঢ়ভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে এবং ঐসব সম্পর্ক ছিন্ন করে, যা আল্লাহ অক্ষুণ্ণ রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং যারা পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরা বাক্বারা- ২৭)
যারা ধনসম্পদের মোহে পড়ে আল্লাহকে ভুলে যায় :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تُلْهِكُمْ اَمْوَالُكُمْ وَلَاۤ اَوْلَادُكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللهِۚ وَمَنْ يَّفْعَلْ ذٰلِكَ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ হতে উদাসীন না করে দেয়। যারা এমন করবে (উদাসীন হবে) তারাই ক্ষতিগ্রস্তদের অমত্মর্ভুক্ত হবে । (সূরা মুনাফিকূন- ৯)
যারা শয়তানের সাথে বন্ধুত্ব করে :
وَمَنْ يَّتَّخِذِ الشَّيْطَانَ وَلِيًّا مِّنْ دُوْنِ اللهِ فَقَدْ خَسِرَ خُسْرَانًا مُّبِيْنًا
আর যে ব্যক্তি আল্লাহর পরিবর্তে শয়তানকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করবে, সে স্পষ্টভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (সূরা নিসা- ১১৯)
যারা শয়তানের দলে অংশ নেয় :
اِسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَاَنْسَاهُمْ ذِكْرَ اللهِؕ اُولٰٓئِكَ حِزْبُ الشَّيْطَانِؕ اَ لَاۤ اِنَّ حِزْبَ الشَّيْطَانِ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ
শয়তান তাদের উপর পরিপূর্ণ আধিপত্য বিস্তার লাভ করে নিয়েছে। অতঃপর সে তাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে ভুলিয়ে দিয়েছে। তারাই হলো শয়তানের দল, সাবধান! নিশ্চয় শয়তানের দল ক্ষতিগ্রস্ত হবেই। (সূরা মুজাদালা- ১৯)
যারা কাফিরদের অনুসরণ করে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنْ تُطِيْعُوا الَّذِيْنَ كَفَرُوْا يَرُدُّوْكُمْ عَلٰۤى اَعْقَابِكُمْ فَتَنْقَلِبُوْا خَاسِرِيْنَ
হে মুমিনগণ! যদি তোমরা কাফিরদের অনুসরণ কর, তবে তারা তোমাদেরকে পেছনে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। আর তাতে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা আলে ইমরান- ১৪৯)
যারা বাতিলের প্রতি বিশ্বাস রাখে :
وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا بِالْبَاطِلِ وَكَفَرُوْا بِاللهِ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ
যারা অসত্যের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং আল্লাহকে অস্বীকার করে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরা আনকাবূত- ৫২)
وَيَوْمَ تَقُوْمُ السَّاعَةُ يَوْمَئِذٍ يَّخْسَرُ الْمُبْطِلُوْنَ
যেদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে সেদিন বাতিলপন্থীরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা জাসিয়া- ২৭)
যাদের নেক আমলের পাল্লা হালকা হবে :
وَمَنْ خَفَّتْ مَوَازِيْنُهٗ فَاُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ خَسِرُوْاۤ اَنْفُسَهُمْ فِيْ جَهَنَّمَ خَالِدُوْنَ
যাদের পাল্লা হালকা হবে তারাই তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে, যারা নিজেদেরকে ক্ষতিগ্রসত্ম করেছে; আর তারাই জাহান্নামে চিরস্থায়ী হবে। (সূরা মু’মিনূন- ১০৩)
وَمَنْ خَفَّتْ مَوَازِيْنُهٗ فَاُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ خَسِرُوْاۤ اَنْفُسَهُمْ بِمَا كَانُوْا بِاٰيَاتِنَا يَظْلِمُوْنَ
যাদের পাল্লা হালকা হবে তারাই সেসব লোকদের অন্তর্ভুক্ত হবে, যারা নিজেদের ক্ষতি করেছে; যেহেতু তারা আমার নিদর্শনসমূহকে প্রত্যাখ্যান করত। (সূরা আ‘রাফ- ৯)
যারা পরকালে সব হারাবে :
قُلْ اِنَّ الْخَاسِرِيْنَ الَّذِيْنَ خَسِرُوْاۤ اَنْفُسَهُمْ وَاَهْلِيْهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِؕ اَ لَا ذٰلِكَ هُوَ الْخُسْرَانُ الْمُبِيْنُ
বলো, নিশ্চয় কিয়ামতের দিন তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যারা নিজেদেরকে এবং নিজেদের পরিবারবর্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। সাবধান! এটাই প্রকাশ্য ক্ষতি। (সূরা যুমার- ১৫)
اِنَّ الْخَاسِرِيْنَ الَّذِيْنَ خَسِرُوْاۤ اَنْفُسَهُمْ وَاَهْلِيْهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِؕ اَ لَاۤ اِنَّ الظَّالِمِيْنَ فِيْ عَذَابٍ مُّقِيْمٍ
নিশ্চয় কিয়ামতের দিন তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যারা নিজেদেরকে এবং নিজেদের পরিবারবর্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। সাবধান! নিশ্চয় যালিমরা স্থায়ী আযাবের মধ্যে অবস্থান করবে। (সূরা শূরা- ৪৫)
ব্যাখ্যা : কারো ব্যবসায় খাটানো সমস্ত পুঁজি যদি নষ্ট হয়ে যায় এবং বাজারে তার পাওনাদারের সংখ্যা এত বেড়ে যায় যে, নিজের সবকিছু দিয়েও সে দায়মুক্ত হতে পারবে না, তাহলে এরূপ অবস্থাকেই দেউলিয়াত্ব বলে। এখানে আল্লাহ তা‘আলা কাফির ও মুশরিকদের জন্য এ রূপক ভাষাটিই ব্যবহার করেছেন। মানুষ এ পৃথিবীতে জীবন, আয়ু, জ্ঞানবুদ্ধি, শরীর, শক্তি, যোগ্যতা, উপায়-উপকরণ এবং সুযোগসুবিধা যা কিছু লাভ করেছে তার সমষ্টি এমন একটি পুঁজি, যা সে পার্থিব জীবনের কারবারে খাটায়। কেউ যদি এ পুঁজির সবটাই এই অনুমানের উপর ভিত্তি করে খাটায় যে, ইলাহ্ বলতে কেউ নেই কিংবা অনেক ইলাহ্ আছে; আর সে তাদের বান্দা। তাকে কারো কাছে হিসাব দিতে হবে না, কিংবা হিসাব-নিকাশের সময় অন্য কেউ এসে তাকে রক্ষা করবে, তাহলে এর অর্থ হচ্ছে সে ক্ষতিগ্রস্ত হলো এবং নিজের সবকিছু বিসর্জন দিল। এটা হচ্ছে প্রথম ক্ষতি। দ্বিতীয় ক্ষতি হচ্ছে, এই ভ্রান্ত অনুমানের ভিত্তিতে সে যত কাজ করল, সেসব কাজের ক্ষেত্রে সে নিজেকে সহ দুনিয়ার বহু সৃষ্টির উপর জীবনভর যুলুম করল। তাছাড়া আরো একটি ক্ষতি হচ্ছে, সে নিজেই শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হলো না, বরং নিজের সন্তান-সন্ততি ও আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধুবান্ধবকেও তার ভ্রান্ত শিক্ষার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত করল। এ তিনটি ক্ষতির সমষ্টিকে আল্লাহ তা‘আলা সুস্পষ্ট ক্ষতি বলে আখ্যায়িত করেছেন।
ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায় হলো সূরা আসরের উপর আমল করা :
وَالْعَصْرِ ‐ اِنَّ الْاِنْسَانَ لَفِيْ خُسْرٍ ‐ اِلَّا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ
যুগের কসম, নিশ্চয় মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু তারা নয়, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকাজ করে; আর পরস্পরকে সত্যের তাকীদ করে এবং তাকীদ করে সবরের। (সূরা আসর)
দুনিয়ার চেয়ে আখিরাত অনেক উত্তম :
اَرَضِيْتُمْ بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا مِنَ الْاٰخِرَةِۚ فَمَا مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا فِى الْاٰخِرَةِ اِلَّا قَلِيْلٌ
তোমরা কি আখিরাতের পরিবর্তে পার্থিব জীবনে সন্তুষ্ট হয়ে আছ? অথচ আখিরাতের তুলনায় পার্থিব জীবনের ভোগের উপকরণ খুবই সামান্য! (সূরা তাওবা- ৩৮)
وَلَدَارُ الْاٰخِرَةِ خَيْرٌؕ وَلَنِعْمَ دَارُ الْمُتَّقِيْنَ
আখিরাতের আবাস আরো উৎকৃষ্ট; মুত্তাক্বীদের আবাসস্থল কতই না উত্তম! (সূরা নাহল- ৩০)
ব্যাখ্যা : আখিরাতের অনন্ত জীবন ও সেখানকার সীমাহীন সাজ সরঞ্জাম দেখার পর মানুষ জানতে পারবে যে, দুনিয়ার সামান্য জীবনকালে ভোগের যে বড় বড় সামগ্রী তাদের করায়ত্ব ছিল, তা আখিরাতের তুলনায় কিছুই নয়। তখন তারা আফসোস করতে থাকবে যে, দুনিয়ার তুচ্ছ ও ক্ষণস্থায়ী লাভের মোহে কেন এ চিরন্তন ও বিপুল পরিমাণ লাভ থেকে নিজেদেরকে বঞ্চিত করে রেখেছিল। দুনিয়ার জীবনের সামগ্রী আখিরাতে কোন কাজে লাগবে না। এখানে তারা যতই ঐশ্বর্য সংগ্রহ করুক না কেন, শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার সাথে সাথেই সবকিছু থেকে হাত গুটিয়ে নিতে হবে। এখানকার জিনিসের যে অংশটুকু আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য কুরবানী করা হবে এবং যে জিনিসের ভালোবাসার উপর আল্লাহ ও তাঁর দ্বীনের ভালোবাসাকে প্রাধান্য দেয়া হবে, একমাত্র সে অংশই সেখানে কাজে লাগবে।
আখিরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন :
وَمَا هٰذِهِ الْحَيَاةُ الدُّنْيَاۤ اِلَّا لَهْوٌ وَّلَعِبٌ وَّاِنَّ الدَّارَ الْاٰخِرَةَ لَهِيَ الْحَيَوَانُ لَوْ كَانُوْا يَعْلَمُوْنَ
এ পার্থিব জীবন ক্রীড়া-কৌতুক ব্যতীত আর কিছুই নয়। নিশ্চয় পরলৌকিক জীবনই প্রকৃত জীবন, যদি তারা জানত! (সূরা আনকাবূত- ৬৪)
ব্যাখ্যা : এখানে আল্লাহ আখিরাতের জন্য اَلدَّارُ (আদদার) বা ঘর শব্দ ব্যবহার করেছেন। এর মাধ্যমে এখানে এ সত্যটি বুঝানোই উদ্দেশ্য যে, এ দুনিয়া মানুষের আসল বাসস্থান নয় বরং এটি নিছক একটি অতিক্রম করার জায়গা এবং একটি মুসাফিরখানা। এখান থেকে মানুষকে অবশ্যই বিদায় নিতে হবে। আসল ঘর হচ্ছে আখিরাতের ঘর। যে ব্যক্তি সেটাকে সুসজ্জিত করার চিন্তা করে সে-ই দূরদৃষ্টির অধিকারী। অন্যদিকে যে ব্যক্তি এ মুসাফিরখানায় নিজের সামান্য কয়েক দিনের অবস্থানস্থলকে সুসজ্জিত করার জন্য কাজ করে এবং আখিরাতের আসল ঘর বিনষ্ট করে ফেলে, তাকে কখনো বুদ্ধিমান বলা যায় না।
আখিরাতের মর্যাদা অনেক বেশি :
وَلَلْاٰخِرَةُ اَكْبَرُ دَرَجَاتٍ وَّاَكْبَرُ تَفْضِيْلًا
নিশ্চয় আখিরাত মর্যাদায় বড় ও গুণে শ্রেষ্ঠ। (সূরা বনী ইসরাঈল- ২১)
আল্লাহ মানুষকে পরকালমুখী করতে চান :
تُرِيْدُوْنَ عَرَضَ الدُّنْيَاۗ وَاللهُ يُرِيْدُ الْاٰخِرَةَؕ وَاللهُ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
তোমরা কামনা কর পার্থিব সম্পদ, আর আল্লাহ কামনা করেন পরকালের কল্যাণ; আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা আনফাল- ৬৭)
মানুষ আখিরাতের চিন্তা ছেড়ে দিয়েছে :
كَلَّا بَلْ تُحِبُّوْنَ الْعَاجِلَةَ – وَتَذَرُوْنَ الْاٰخِرَةَ
কখনো না, বরং তোমরা (দুনিয়াকে) দ্রুত লাভ করাকেই ভালোবাস এবং আখিরাতকে উপেক্ষা কর। (সূরা ক্বিয়ামাহ- ২০, ২১)
অধিকাংশ লোকই আখিরাতকে অস্বীকার করে :
وَاِنَّ كَثِيْرًا مِّنَ النَّاسِ بِلِقَآءِ رَبِّهِمْ لَكَافِرُوْنَ
অনেক মানুষই তাদের প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাতকে অস্বীকার করে। (সূরা রূম- ৮)
তারা আখিরাতের ব্যাপারে উদাসীন :
وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ – يَعْلَمُوْنَ ظَاهِرًا مِّنَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَاۚ وَهُمْ عَنِ الْاٰخِرَةِ هُمْ غَافِلُوْنَ
অধিকাংশ মানুষ (প্রকৃত অবস্থা) জানে না। তারা পার্থিব জীবনের বাহ্যিক অবস্থাটুকুই জানে, কিন্তু তারা পরকাল সর্ম্পকে সম্পূর্ণ উদাসীন। (সূরা রূম- ৬, ৭)
اَرَضِيْتُمْ بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا مِنَ الْاٰخِرَةِۚ فَمَا مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا فِى الْاٰخِرَةِ اِلَّا قَلِيْلٌ
তোমরা কি আখিরাতের পরিবর্তে পার্থিব জীবনে সন্তুষ্ট হয়ে আছ? অথচ আখিরাতের তুলনায় পার্থিব জীবনের ভোগের উপকরণ খুবই সামান্য! (সূরা তাওবা- ৩৮)
وَلَدَارُ الْاٰخِرَةِ خَيْرٌؕ وَلَنِعْمَ دَارُ الْمُتَّقِيْنَ
আখিরাতের আবাস আরো উৎকৃষ্ট; মুত্তাক্বীদের আবাসস্থল কতই না উত্তম! (সূরা নাহল- ৩০)
ব্যাখ্যা : আখিরাতের অনন্ত জীবন ও সেখানকার সীমাহীন সাজ সরঞ্জাম দেখার পর মানুষ জানতে পারবে যে, দুনিয়ার সামান্য জীবনকালে ভোগের যে বড় বড় সামগ্রী তাদের করায়ত্ব ছিল, তা আখিরাতের তুলনায় কিছুই নয়। তখন তারা আফসোস করতে থাকবে যে, দুনিয়ার তুচ্ছ ও ক্ষণস্থায়ী লাভের মোহে কেন এ চিরন্তন ও বিপুল পরিমাণ লাভ থেকে নিজেদেরকে বঞ্চিত করে রেখেছিল। দুনিয়ার জীবনের সামগ্রী আখিরাতে কোন কাজে লাগবে না। এখানে তারা যতই ঐশ্বর্য সংগ্রহ করুক না কেন, শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার সাথে সাথেই সবকিছু থেকে হাত গুটিয়ে নিতে হবে। এখানকার জিনিসের যে অংশটুকু আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য কুরবানী করা হবে এবং যে জিনিসের ভালোবাসার উপর আল্লাহ ও তাঁর দ্বীনের ভালোবাসাকে প্রাধান্য দেয়া হবে, একমাত্র সে অংশই সেখানে কাজে লাগবে।
আখিরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন :
وَمَا هٰذِهِ الْحَيَاةُ الدُّنْيَاۤ اِلَّا لَهْوٌ وَّلَعِبٌ وَّاِنَّ الدَّارَ الْاٰخِرَةَ لَهِيَ الْحَيَوَانُ لَوْ كَانُوْا يَعْلَمُوْنَ
এ পার্থিব জীবন ক্রীড়া-কৌতুক ব্যতীত আর কিছুই নয়। নিশ্চয় পরলৌকিক জীবনই প্রকৃত জীবন, যদি তারা জানত! (সূরা আনকাবূত- ৬৪)
ব্যাখ্যা : এখানে আল্লাহ আখিরাতের জন্য اَلدَّارُ (আদদার) বা ঘর শব্দ ব্যবহার করেছেন। এর মাধ্যমে এখানে এ সত্যটি বুঝানোই উদ্দেশ্য যে, এ দুনিয়া মানুষের আসল বাসস্থান নয় বরং এটি নিছক একটি অতিক্রম করার জায়গা এবং একটি মুসাফিরখানা। এখান থেকে মানুষকে অবশ্যই বিদায় নিতে হবে। আসল ঘর হচ্ছে আখিরাতের ঘর। যে ব্যক্তি সেটাকে সুসজ্জিত করার চিন্তা করে সে-ই দূরদৃষ্টির অধিকারী। অন্যদিকে যে ব্যক্তি এ মুসাফিরখানায় নিজের সামান্য কয়েক দিনের অবস্থানস্থলকে সুসজ্জিত করার জন্য কাজ করে এবং আখিরাতের আসল ঘর বিনষ্ট করে ফেলে, তাকে কখনো বুদ্ধিমান বলা যায় না।
আখিরাতের মর্যাদা অনেক বেশি :
وَلَلْاٰخِرَةُ اَكْبَرُ دَرَجَاتٍ وَّاَكْبَرُ تَفْضِيْلًا
নিশ্চয় আখিরাত মর্যাদায় বড় ও গুণে শ্রেষ্ঠ। (সূরা বনী ইসরাঈল- ২১)
আল্লাহ মানুষকে পরকালমুখী করতে চান :
تُرِيْدُوْنَ عَرَضَ الدُّنْيَاۗ وَاللهُ يُرِيْدُ الْاٰخِرَةَؕ وَاللهُ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
তোমরা কামনা কর পার্থিব সম্পদ, আর আল্লাহ কামনা করেন পরকালের কল্যাণ; আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা আনফাল- ৬৭)
মানুষ আখিরাতের চিন্তা ছেড়ে দিয়েছে :
كَلَّا بَلْ تُحِبُّوْنَ الْعَاجِلَةَ – وَتَذَرُوْنَ الْاٰخِرَةَ
কখনো না, বরং তোমরা (দুনিয়াকে) দ্রুত লাভ করাকেই ভালোবাস এবং আখিরাতকে উপেক্ষা কর। (সূরা ক্বিয়ামাহ- ২০, ২১)
অধিকাংশ লোকই আখিরাতকে অস্বীকার করে :
وَاِنَّ كَثِيْرًا مِّنَ النَّاسِ بِلِقَآءِ رَبِّهِمْ لَكَافِرُوْنَ
অনেক মানুষই তাদের প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাতকে অস্বীকার করে। (সূরা রূম- ৮)
তারা আখিরাতের ব্যাপারে উদাসীন :
وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ – يَعْلَمُوْنَ ظَاهِرًا مِّنَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَاۚ وَهُمْ عَنِ الْاٰخِرَةِ هُمْ غَافِلُوْنَ
অধিকাংশ মানুষ (প্রকৃত অবস্থা) জানে না। তারা পার্থিব জীবনের বাহ্যিক অবস্থাটুকুই জানে, কিন্তু তারা পরকাল সর্ম্পকে সম্পূর্ণ উদাসীন। (সূরা রূম- ৬, ৭)
বিশ্ব সৃষ্টির উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য আখিরাত প্রয়োজন :
وَمَا خَلَقْنَا السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا لَاعِبِيْنَ – مَا خَلَقْنَاهُمَاۤ اِلَّا بِالْحَقِّ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ
আমি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী এবং এতোদুভয়ের মধ্যস্থিত কোনকিছুই খেলার জন্য সৃষ্টি করিনি। আমি এ দু’টি যথাযথ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছি; কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না। (সূরা দুখান- ৩৮, ৩৯)
وَمَا خَلَقْنَا السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَاۤ اِلَّا بِالْحَقِّؕ وَاِنَّ السَّاعَةَ لَاٰتِيَةٌ
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী এবং তাদের অমত্মর্বর্তী কোনকিছুই আমি অযথা সৃষ্টি করিনি; নিশ্চয় কিয়ামতের আগমন ঘটবেই। (সূরা হিজর- ৮৫)
وَمَا خَلَقْنَا السَّمَآءَ وَالْاَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا بَاطِلًاؕ ذٰلِكَ ظَنُّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا فَوَيْلٌ لِّلَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنَ النَّارِ
আর আমি আসমান-জমিন এবং উভয়ের মধ্যে অবস্থিত কোনকিছুই অনর্থক সৃষ্টি করিনি। (আমি এসব অনর্থক সৃষ্টি করেছি) এরূপ ধারণা তো তাদের, যারা কাফির। সুতরাং কাফিরদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের দুর্ভোগ। (সূরা সোয়াদ- ২৭)
ব্যাখ্যা : এ বিশ্বজাহানকে যথার্থ সত্যের ভিত্তিতে সৃষ্টি করা হয়েছে। এটা কোন শিশুর খেলা নয়, বরং এটি একটি দায়িত্বশীল ব্যবস্থাপনা। এর প্রতিটি অণু-পরমাণু এ কথারই সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, একে পরিপূর্ণ প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা সহকারে তৈরি করা হয়েছে। এর প্রত্যেকটি জিনিসের মধ্যে একটি আইন সক্রিয় রয়েছে। দুনিয়ার প্রত্যেকটি জিনিসের পেছনে সক্রিয় নিয়মনীতি উদ্ভাবন করে এবং প্রত্যেকটি বস্তু যে উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে তা অনুসন্ধান করেই মানুষ এখানে এ সবকিছু তৈরি করতে পেরেছে। এখন যে জ্ঞানবান সত্তা প্রজ্ঞার সাথে বিশেষ উদ্দেশ্য সামনে রেখে এ পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং এর মধ্যে মানুষের মতো একটি সৃষ্টিকে সর্বপর্যায়ের বুদ্ধিবৃত্তিক ও শারীরিক শক্তি এবং ইখতিয়ার ও নৈতিক অনুভূতি দিয়ে দুনিয়ার অসংখ্য সাজ-সরঞ্জাম তার হাতে সঁপে দিয়েছেন, তিনি মানুষকে উদ্দেশ্যবিহীন সৃষ্টি করেছেন- এ কথা কীভাবে সঠিক হতে পারে?
হক ও বাতিলপন্থীদেরকে জানার জন্য আখিরাত প্রয়োজন :
وَاَقْسَمُوْا بِاللهِ جَهْدَ اَيْمَانِهِمْ لَا يَبْعَثُ اللهُ مَنْ يَّمُوْتُؕ بَلٰى وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا وَّلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ – لِيُبَيِّنَ لَهُمُ الَّذِيْ يَخْتَلِفُوْنَ فِيْهِ وَلِيَعْلَمَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اَنَّهُمْ كَانُوْا كَاذِبِيْنَ
তারা দৃঢ়তার সাথে আল্লাহর শপথ করে বলে, যার মৃত্যু হয় আল্লাহ তাকে পুনর্জীবিত করবেন না। কেন নয়, (অবশ্যই তা করবেন) তিনি তাঁর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করবেনই। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা অবগত নয়- (তিনি পুনরুত্থিত করবেন) যে বিষয়ে তাদের মতানৈক্য ছিল তা তাদেরকে স্পষ্টভাবে দেখানোর জন্য, যাতে করে কাফিররা জানতে পারে যে, মূলত তারাই ছিল মিথ্যাবাদী। (সূরা নাহল- ৩৮, ৩৯)
পাপ-পুণ্যের পৃথক কর্মফল রয়েছে :
اَفَمَنْ كَانَ مُؤْمِنًا كَمَنْ كَانَ فَاسِقًاؕ لَا يَسْتَوُوْنَ – اَمَّا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فَلَهُمْ جَنَّاتُ الْمَاْوٰىؗ نُزُلًا ۢبِمَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ – وَاَمَّا الَّذِيْنَ فَسَقُوْا فَمَاْوَاهُمُ النَّارُؕ كُلَّمَاۤ اَرَادُوْاۤ اَنْ يَّخْرُجُوْا مِنْهَاۤ اُعِيْدُوْا فِيْهَا وَقِيْلَ لَهُمْ ذُوْقُوْا عَذَابَ النَّارِ الَّذِيْ كُنْتُمْ بِهٖ تُكَذِّبُوْنَ
যে ব্যক্তি ঈমানদার সে কি ঐ ব্যক্তির সমকক্ষ হবে যে পাপাচারী? কখনই তারা সমান হতে পারে না। অতএব যারা বিশ্বাস করেছে এবং সৎকাজ করেছে, তাদের জন্য রয়েছে তাদের কৃতকর্মের প্রতিদানস্বরূপ চিরকালের বাসস্থান জান্নাত। আর যারা পাপকাজ করেছে তাদের বাসস্থান হবে জাহান্নাম। যখনই তারা সেখান থেকে বের হতে চাইবে, তখনই তাদেরকে সেখানে ফিরিয়ে দেয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে, তোমরা জাহান্নামের যে আযাবকে অস্বীকার করতে তা এখন ভোগ করো। (সূরা সাজদা, ১৮-২০)
পাপ-পুণ্যের পৃথক ফলাফলের জন্য আখিরাত প্রয়োজন :
اَمْ نَجْعَلُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ كَالْمُفْسِدِيْنَ فِى الْاَ رْضِؗ اَمْ نَجْعَلُ الْمُتَّقِيْنَ كَالْفُجَّارِ
যারা ঈমান আনয়ন করেছে এবং সৎকাজ করেছে, আমি কি তাদেরকে ঐসব লোকদের সমান করে দেব, যারা পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করে বেড়ায়? অথবা আমি কি মুত্তাক্বীদেরকে গোনাহগারদের সমান করে দেব? (সূরা সোয়াদ- ২৮)
ব্যাখ্যা : এ কথা সুস্পষ্ট যে, যদি আখিরাত না থাকত, আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন প্রকার জবাবদিহি না করা হতো এবং মানুষের সৎকাজের পুরস্কার ও অসৎকাজের শাস্তি না দেয়া হতো, তাহলে এর মাধ্যমে আল্লাহর প্রজ্ঞা ও ইনসাফ অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ত এবং বিশ্বের সমগ্র ব্যবস্থা একটি অরাজক ব্যবস্থায় পরিণত হতো। এ ধারণার ভিত্তিতে বিচার করলে দুনিয়ায় আদৌ সৎকাজের কোন উদ্যোক্তা এবং অসৎকাজ থেকে বিরত রাখার জন্য কোন প্রতিবন্ধকতাই থাকত না। আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্ব যদি এমনি অরাজক ব্যাপার হয়, তাহলে এ পৃথিবীতে যে ব্যক্তি কষ্টভোগ করে নিজে সৎ জীবন-যাপন করে এবং মানুষের সংস্কার সাধনের কাজে আত্মনিয়োগ করে সে বড়ই নির্বোধ। আর যে ব্যক্তি বাড়াবাড়ি করে সবধরনের ফাসিকী ও অশ্লীল কার্যকলাপের মাধ্যমে আননদ উপভোগ করতে থাকে সেই বুদ্ধিমান (নাউযুবিল্লাহ)- এ জাতীয় চিন্তাধারা কখনো সঠিক হতে পারে না।
اَفَنَجْعَلُ الْمُسْلِمِيْنَ كَالْمُجْرِمِيْنَ – مَا لَكُمْ كَيْفَ تَحْكُمُوْنَ
আমি কি মুসলিমদেরকে অপরাধীদের মতো গণ্য করব? তোমাদের কী হয়েছে? কেমন তোমাদের ফায়সালা? (সূরা ক্বালাম- ৩৫, ৩৬)
اَمْ حَسِبَ الَّذِيْنَ اجْتَرَحُوا السَّيِّئَاتِ اَنْ نَّجْعَلَهُمْ كَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ سَوَآءً مَّحْيَاهُمْ وَمَمَاتُهُمْ سَآءَ مَا يَحْكُمُوْنَ
পাপীরা কি মনে করে যে, আমি জীবন ও মৃত্যুর দিক দিয়ে তাদেরকে তাদের মতোই গণ্য করব, যারা ঈমান আনয়ন করে ও সৎকাজ করে? তাদের সিদ্ধান্ত কতই না মন্দ! (সূরা জাসিয়া- ২১)
ব্যাখ্যা : আখিরাত সত্য হওয়ার স্বপক্ষে এটা নৈতিক যুক্তি-প্রমাণ। নৈতিক চরিত্রের ভালো-মন্দ এবং কর্মের মধ্যে সত্য ও মিথ্যার পার্থক্যের অনিবার্য দাবী হলো- ভালো এবং মন্দ লোকের পরিণাম এক হবে না, বরং সৎলোক তার সৎকাজের ভালো প্রতিদান লাভ করবে এবং অসৎলোক তার অসৎকাজের মন্দ ফল লাভ করবে। যদি তা না হয় এবং ভালো ও মন্দের ফলাফল একই রকম হয়, তাহলে ভালো ও মন্দের পার্থক্যই অর্থহীন হয়ে পড়ে এবং আল্লাহর বিরুদ্ধে বেইনসাফীর অভিযোগ আরোপিত হয়। যারা পৃথিবীতে অন্যায়ের পথে চলে তারা তো অবশ্যই চাইবে, যেন কোন প্রকার প্রতিদান ও শাস্তির ব্যবস্থা না থাকে। কিন্তু বিশ্বজাহানের রব আল্লাহর ন্যায়বিচারের নীতির সাথে এটা আদৌ সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় যে, তিনি সৎ ও অসৎ উভয় শ্রেণির মানুষের সাথে একই রকম আচরণ করবেন এবং সৎকর্মশীল ঈমানদার ব্যক্তিগণ পৃথিবীতে কীভাবে জীবন-যাপন করেছে আর কাফির ও ফাসিক ব্যক্তিরা কী বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে তার কিছুই দেখবেন না। এক ব্যক্তি সারা জীবন নিজেকে নৈতিকতার বিধি-বন্ধনে আবদ্ধ রাখল, প্রাপকদের প্রাপ্য দিল, অবৈধ স্বার্থ ও ভোগের উপকরণ থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখল এবং ন্যায় ও সত্যের জন্য নানা রকম ক্ষতি সহ্য করল; আরেক ব্যক্তি সম্ভাব্য সব উপায়ে প্রবৃত্তির কামনা-বাসনা পূর্ণ করল- সে না আল্লাহর অধিকার চিনল, না বান্দার অধিকারে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকল এবং স্বার্থ ও ভোগের উপকরণ যেভাবে সম্ভব আহরণ করল। আল্লাহ এ দু’শ্রেণির মানুষের জীবনের এ পার্থক্য উপেক্ষা করবেন তা কি করে হতে পারে? মৃত্যু পর্যন্ত যাদের জীবন এক রকম হলো না, মৃত্যুর পর তাদের পরিণাম যদি একই রকম হয় তাহলে আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে এর চেয়ে বড় বেইনসাফী আর কী হতে পারে? অথচ আল্লাহ তা‘আলা বেইনসাফী করা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। সুতরাং পরকালে ভালো-মন্দের পরিণাম কখনই এক হবে না এবং হতেও পারে না। সৎলোকেরা যদি তাদের সৎকাজের পুরস্কার না পায় এবং যালিমদেরকে তাদের শাস্তি না দেয়া হয় তাহলে তা যুলুম হিসেবে গণ্য। আল্লাহর ব্যবস্থায় এ ধরনের যুলুম কখনো হতে পারে না। একইভাবে কোন সৎ মানুষকে তার প্রাপ্যের তুলনায় কম পুরস্কার দেয়া কিংবা কোন অসৎ মানুষকে তার প্রাপ্যের তুলনায় অধিক শাস্তি দেয়া- আল্লাহর বিচারে এ ধরনের কোন যুলুমও হতে পারে না।
وَخَلَقَ اللهُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ بِالْحَقِّ وَلِتُجْزٰى كُلُّ نَفْسٍ ۢبِمَا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُوْنَ
আল্লাহ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে, যাতে করে প্রত্যেক ব্যক্তি তার কর্মানুযায়ী ফল পেতে পারে। আর (কিয়ামতের দিন) তাদের প্রতি বিন্দুমাত্র যুলুম করা হবে না। (সূরা জাসিয়া- ২২)
ব্যাখ্যা : এ প্রয়োজনটির ভিত্তিতেই আল্লাহ মানুষকে পুনর্বার সৃষ্টি করবেন। এ অপরিহার্য প্রয়োজন দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করা ছাড়া আর কোন পথেই পূর্ণ হতে পারে না। যারা আল্লাহকে নিজের একমাত্র রব হিসেবে মেনে নিয়ে সৎকাজ করবে, তারা নিজেদের এ যথার্থ কার্যধারার পূর্ণ প্রতিদান লাভ করার অধিকার রাখে। অন্যদিকে যারা সত্য অস্বীকার করে বিরোধী অবস্থানে জীবন-যাপন করবে, তারাও নিজেদের এ ভ্রান্ত কার্যধারার কুফল প্রত্যক্ষ করবে। এ প্রয়োজন যদি পার্থিব জীবনে পূর্ণ না হয়, আর সবাই জানে যে, পূর্ণ হচ্ছে না; তাহলে অবশ্যই এটা পূর্ণ করার জন্য পুনরুজ্জীবন অপরিহার্য হয়ে পড়ে।
اِنَّهٗ يَبْدَاُ الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيْدُهٗ لِيَجْزِيَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ بِالْقِسْطِ
তিনিই প্রথম সৃষ্টিকে অস্তিত্ব দান করেন, অতঃপর তার পুনরাবর্তন ঘটান; যাতে করে তিনি মুমিন ও সৎকর্মপরায়ণদেরকে ন্যায়বিচারের সাথে কর্মফল প্রদান করতে পারেন। (সূরা ইউনুস- ৪)
ব্যাখ্যা : মানুষের এমন তিনটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা তাকে পৃথিবীর অন্যান্য জিনিস থেকে আলাদা করে দেয়। আর তা হলো : (এক) পৃথিবী ও তার পরিবেশের অসংখ্য জিনিস তার বশীভূত করে দেয়া হয়েছে এবং তাকে সেগুলো ব্যবহার করার জন্য ব্যাপক ক্ষমতা দান করা হয়েছে। (দুই) নিজের জীবনের পথ বেছে নেয়ার জন্য তাকে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দেয়া হয়েছে। ঈমান ও কুফরী, আনুগত্য ও বিদ্রোহ এবং সুকৃতি ও দুষ্কৃতির পথের মধ্য থেকে সত্য ও মিথ্যা এবং সঠিক ও বেঠিক যে কোন পথই সে অবলম্বন করতে পারে। (তিন) তার মধ্যে জন্মগতভাবে নৈতিকতার অনুভূতি রেখে দেয়া হয়েছে। এর ভিত্তিতে সে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে যে, সৎকাজ পুরস্কার লাভের এবং অসৎকাজ শাস্তি লাভের যোগ্য হওয়া উচিত। মানুষের নিজের সত্তার মধ্যে এ তিনটি বৈশিষ্ট্য পাওয়ার মাধ্যমে এ কথাই প্রমাণ করে যে, এমন কোন সময় আসা উচিত যখন তাকে দুনিয়ায় যা কিছু দেয়া হয়েছিল তা ব্যবহার করার ক্ষমতাকে সে কীভাবে কাজে লাগিয়েছে? সে সঠিক পথ অবলম্বন করেছে, না ভুলপথ? এসব ঐচ্ছিক কার্যাবলি যাচাই করা হবে এবং সৎকাজের পুরস্কার ও অসৎকাজের জন্য শাস্তি দেয়া হবে। এ কথা সুনিশ্চিত যে, মানুষের জীবনে কার্যাবলি শেষ হওয়ার এবং তার প্রতিক্রিয়া বন্ধ হওয়ার পরই এ সময়টি আসতে পারে, তার আগে আসতে পারে না। তার এ সময়টি অবশ্যই এমন সময়ে আসা উচিত, যখন এক ব্যক্তি বা একটি জাতির নয় বরং সমগ্র মানবজাতির প্রতিক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ কোন ব্যক্তি বা জাতি নিজের কার্যাবলির মাধ্যমে দুনিয়ার বুকে যেসব প্রভাব বিস্তার করে যায়, উক্ত ব্যক্তি বা জাতির মৃত্যুতে তার ধারাবাহিকতা শেষ হয়ে যায় না। তার রেখে যাওয়া ভালো বা মন্দের প্রভাবও তার আমলনামায় লিখিত হয়। এ প্রভাবগুলো যে পর্যন্ত না পুরোপুরি প্রকাশ হয়ে যায় সে পর্যন্ত ইনসাফ অনুযায়ী পুরোপুরি হিসাব-নিকাশ করা এবং পুরোপুরি পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া সম্ভব নয়?
وَمَا خَلَقْنَا السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا لَاعِبِيْنَ – مَا خَلَقْنَاهُمَاۤ اِلَّا بِالْحَقِّ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ
আমি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী এবং এতোদুভয়ের মধ্যস্থিত কোনকিছুই খেলার জন্য সৃষ্টি করিনি। আমি এ দু’টি যথাযথ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছি; কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না। (সূরা দুখান- ৩৮, ৩৯)
وَمَا خَلَقْنَا السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَاۤ اِلَّا بِالْحَقِّؕ وَاِنَّ السَّاعَةَ لَاٰتِيَةٌ
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী এবং তাদের অমত্মর্বর্তী কোনকিছুই আমি অযথা সৃষ্টি করিনি; নিশ্চয় কিয়ামতের আগমন ঘটবেই। (সূরা হিজর- ৮৫)
وَمَا خَلَقْنَا السَّمَآءَ وَالْاَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا بَاطِلًاؕ ذٰلِكَ ظَنُّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا فَوَيْلٌ لِّلَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنَ النَّارِ
আর আমি আসমান-জমিন এবং উভয়ের মধ্যে অবস্থিত কোনকিছুই অনর্থক সৃষ্টি করিনি। (আমি এসব অনর্থক সৃষ্টি করেছি) এরূপ ধারণা তো তাদের, যারা কাফির। সুতরাং কাফিরদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের দুর্ভোগ। (সূরা সোয়াদ- ২৭)
ব্যাখ্যা : এ বিশ্বজাহানকে যথার্থ সত্যের ভিত্তিতে সৃষ্টি করা হয়েছে। এটা কোন শিশুর খেলা নয়, বরং এটি একটি দায়িত্বশীল ব্যবস্থাপনা। এর প্রতিটি অণু-পরমাণু এ কথারই সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, একে পরিপূর্ণ প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা সহকারে তৈরি করা হয়েছে। এর প্রত্যেকটি জিনিসের মধ্যে একটি আইন সক্রিয় রয়েছে। দুনিয়ার প্রত্যেকটি জিনিসের পেছনে সক্রিয় নিয়মনীতি উদ্ভাবন করে এবং প্রত্যেকটি বস্তু যে উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে তা অনুসন্ধান করেই মানুষ এখানে এ সবকিছু তৈরি করতে পেরেছে। এখন যে জ্ঞানবান সত্তা প্রজ্ঞার সাথে বিশেষ উদ্দেশ্য সামনে রেখে এ পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং এর মধ্যে মানুষের মতো একটি সৃষ্টিকে সর্বপর্যায়ের বুদ্ধিবৃত্তিক ও শারীরিক শক্তি এবং ইখতিয়ার ও নৈতিক অনুভূতি দিয়ে দুনিয়ার অসংখ্য সাজ-সরঞ্জাম তার হাতে সঁপে দিয়েছেন, তিনি মানুষকে উদ্দেশ্যবিহীন সৃষ্টি করেছেন- এ কথা কীভাবে সঠিক হতে পারে?
হক ও বাতিলপন্থীদেরকে জানার জন্য আখিরাত প্রয়োজন :
وَاَقْسَمُوْا بِاللهِ جَهْدَ اَيْمَانِهِمْ لَا يَبْعَثُ اللهُ مَنْ يَّمُوْتُؕ بَلٰى وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا وَّلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ – لِيُبَيِّنَ لَهُمُ الَّذِيْ يَخْتَلِفُوْنَ فِيْهِ وَلِيَعْلَمَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اَنَّهُمْ كَانُوْا كَاذِبِيْنَ
তারা দৃঢ়তার সাথে আল্লাহর শপথ করে বলে, যার মৃত্যু হয় আল্লাহ তাকে পুনর্জীবিত করবেন না। কেন নয়, (অবশ্যই তা করবেন) তিনি তাঁর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করবেনই। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা অবগত নয়- (তিনি পুনরুত্থিত করবেন) যে বিষয়ে তাদের মতানৈক্য ছিল তা তাদেরকে স্পষ্টভাবে দেখানোর জন্য, যাতে করে কাফিররা জানতে পারে যে, মূলত তারাই ছিল মিথ্যাবাদী। (সূরা নাহল- ৩৮, ৩৯)
পাপ-পুণ্যের পৃথক কর্মফল রয়েছে :
اَفَمَنْ كَانَ مُؤْمِنًا كَمَنْ كَانَ فَاسِقًاؕ لَا يَسْتَوُوْنَ – اَمَّا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فَلَهُمْ جَنَّاتُ الْمَاْوٰىؗ نُزُلًا ۢبِمَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ – وَاَمَّا الَّذِيْنَ فَسَقُوْا فَمَاْوَاهُمُ النَّارُؕ كُلَّمَاۤ اَرَادُوْاۤ اَنْ يَّخْرُجُوْا مِنْهَاۤ اُعِيْدُوْا فِيْهَا وَقِيْلَ لَهُمْ ذُوْقُوْا عَذَابَ النَّارِ الَّذِيْ كُنْتُمْ بِهٖ تُكَذِّبُوْنَ
যে ব্যক্তি ঈমানদার সে কি ঐ ব্যক্তির সমকক্ষ হবে যে পাপাচারী? কখনই তারা সমান হতে পারে না। অতএব যারা বিশ্বাস করেছে এবং সৎকাজ করেছে, তাদের জন্য রয়েছে তাদের কৃতকর্মের প্রতিদানস্বরূপ চিরকালের বাসস্থান জান্নাত। আর যারা পাপকাজ করেছে তাদের বাসস্থান হবে জাহান্নাম। যখনই তারা সেখান থেকে বের হতে চাইবে, তখনই তাদেরকে সেখানে ফিরিয়ে দেয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে, তোমরা জাহান্নামের যে আযাবকে অস্বীকার করতে তা এখন ভোগ করো। (সূরা সাজদা, ১৮-২০)
পাপ-পুণ্যের পৃথক ফলাফলের জন্য আখিরাত প্রয়োজন :
اَمْ نَجْعَلُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ كَالْمُفْسِدِيْنَ فِى الْاَ رْضِؗ اَمْ نَجْعَلُ الْمُتَّقِيْنَ كَالْفُجَّارِ
যারা ঈমান আনয়ন করেছে এবং সৎকাজ করেছে, আমি কি তাদেরকে ঐসব লোকদের সমান করে দেব, যারা পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করে বেড়ায়? অথবা আমি কি মুত্তাক্বীদেরকে গোনাহগারদের সমান করে দেব? (সূরা সোয়াদ- ২৮)
ব্যাখ্যা : এ কথা সুস্পষ্ট যে, যদি আখিরাত না থাকত, আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন প্রকার জবাবদিহি না করা হতো এবং মানুষের সৎকাজের পুরস্কার ও অসৎকাজের শাস্তি না দেয়া হতো, তাহলে এর মাধ্যমে আল্লাহর প্রজ্ঞা ও ইনসাফ অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ত এবং বিশ্বের সমগ্র ব্যবস্থা একটি অরাজক ব্যবস্থায় পরিণত হতো। এ ধারণার ভিত্তিতে বিচার করলে দুনিয়ায় আদৌ সৎকাজের কোন উদ্যোক্তা এবং অসৎকাজ থেকে বিরত রাখার জন্য কোন প্রতিবন্ধকতাই থাকত না। আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্ব যদি এমনি অরাজক ব্যাপার হয়, তাহলে এ পৃথিবীতে যে ব্যক্তি কষ্টভোগ করে নিজে সৎ জীবন-যাপন করে এবং মানুষের সংস্কার সাধনের কাজে আত্মনিয়োগ করে সে বড়ই নির্বোধ। আর যে ব্যক্তি বাড়াবাড়ি করে সবধরনের ফাসিকী ও অশ্লীল কার্যকলাপের মাধ্যমে আননদ উপভোগ করতে থাকে সেই বুদ্ধিমান (নাউযুবিল্লাহ)- এ জাতীয় চিন্তাধারা কখনো সঠিক হতে পারে না।
اَفَنَجْعَلُ الْمُسْلِمِيْنَ كَالْمُجْرِمِيْنَ – مَا لَكُمْ كَيْفَ تَحْكُمُوْنَ
আমি কি মুসলিমদেরকে অপরাধীদের মতো গণ্য করব? তোমাদের কী হয়েছে? কেমন তোমাদের ফায়সালা? (সূরা ক্বালাম- ৩৫, ৩৬)
اَمْ حَسِبَ الَّذِيْنَ اجْتَرَحُوا السَّيِّئَاتِ اَنْ نَّجْعَلَهُمْ كَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ سَوَآءً مَّحْيَاهُمْ وَمَمَاتُهُمْ سَآءَ مَا يَحْكُمُوْنَ
পাপীরা কি মনে করে যে, আমি জীবন ও মৃত্যুর দিক দিয়ে তাদেরকে তাদের মতোই গণ্য করব, যারা ঈমান আনয়ন করে ও সৎকাজ করে? তাদের সিদ্ধান্ত কতই না মন্দ! (সূরা জাসিয়া- ২১)
ব্যাখ্যা : আখিরাত সত্য হওয়ার স্বপক্ষে এটা নৈতিক যুক্তি-প্রমাণ। নৈতিক চরিত্রের ভালো-মন্দ এবং কর্মের মধ্যে সত্য ও মিথ্যার পার্থক্যের অনিবার্য দাবী হলো- ভালো এবং মন্দ লোকের পরিণাম এক হবে না, বরং সৎলোক তার সৎকাজের ভালো প্রতিদান লাভ করবে এবং অসৎলোক তার অসৎকাজের মন্দ ফল লাভ করবে। যদি তা না হয় এবং ভালো ও মন্দের ফলাফল একই রকম হয়, তাহলে ভালো ও মন্দের পার্থক্যই অর্থহীন হয়ে পড়ে এবং আল্লাহর বিরুদ্ধে বেইনসাফীর অভিযোগ আরোপিত হয়। যারা পৃথিবীতে অন্যায়ের পথে চলে তারা তো অবশ্যই চাইবে, যেন কোন প্রকার প্রতিদান ও শাস্তির ব্যবস্থা না থাকে। কিন্তু বিশ্বজাহানের রব আল্লাহর ন্যায়বিচারের নীতির সাথে এটা আদৌ সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় যে, তিনি সৎ ও অসৎ উভয় শ্রেণির মানুষের সাথে একই রকম আচরণ করবেন এবং সৎকর্মশীল ঈমানদার ব্যক্তিগণ পৃথিবীতে কীভাবে জীবন-যাপন করেছে আর কাফির ও ফাসিক ব্যক্তিরা কী বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে তার কিছুই দেখবেন না। এক ব্যক্তি সারা জীবন নিজেকে নৈতিকতার বিধি-বন্ধনে আবদ্ধ রাখল, প্রাপকদের প্রাপ্য দিল, অবৈধ স্বার্থ ও ভোগের উপকরণ থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখল এবং ন্যায় ও সত্যের জন্য নানা রকম ক্ষতি সহ্য করল; আরেক ব্যক্তি সম্ভাব্য সব উপায়ে প্রবৃত্তির কামনা-বাসনা পূর্ণ করল- সে না আল্লাহর অধিকার চিনল, না বান্দার অধিকারে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকল এবং স্বার্থ ও ভোগের উপকরণ যেভাবে সম্ভব আহরণ করল। আল্লাহ এ দু’শ্রেণির মানুষের জীবনের এ পার্থক্য উপেক্ষা করবেন তা কি করে হতে পারে? মৃত্যু পর্যন্ত যাদের জীবন এক রকম হলো না, মৃত্যুর পর তাদের পরিণাম যদি একই রকম হয় তাহলে আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে এর চেয়ে বড় বেইনসাফী আর কী হতে পারে? অথচ আল্লাহ তা‘আলা বেইনসাফী করা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। সুতরাং পরকালে ভালো-মন্দের পরিণাম কখনই এক হবে না এবং হতেও পারে না। সৎলোকেরা যদি তাদের সৎকাজের পুরস্কার না পায় এবং যালিমদেরকে তাদের শাস্তি না দেয়া হয় তাহলে তা যুলুম হিসেবে গণ্য। আল্লাহর ব্যবস্থায় এ ধরনের যুলুম কখনো হতে পারে না। একইভাবে কোন সৎ মানুষকে তার প্রাপ্যের তুলনায় কম পুরস্কার দেয়া কিংবা কোন অসৎ মানুষকে তার প্রাপ্যের তুলনায় অধিক শাস্তি দেয়া- আল্লাহর বিচারে এ ধরনের কোন যুলুমও হতে পারে না।
وَخَلَقَ اللهُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ بِالْحَقِّ وَلِتُجْزٰى كُلُّ نَفْسٍ ۢبِمَا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُوْنَ
আল্লাহ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে, যাতে করে প্রত্যেক ব্যক্তি তার কর্মানুযায়ী ফল পেতে পারে। আর (কিয়ামতের দিন) তাদের প্রতি বিন্দুমাত্র যুলুম করা হবে না। (সূরা জাসিয়া- ২২)
ব্যাখ্যা : এ প্রয়োজনটির ভিত্তিতেই আল্লাহ মানুষকে পুনর্বার সৃষ্টি করবেন। এ অপরিহার্য প্রয়োজন দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করা ছাড়া আর কোন পথেই পূর্ণ হতে পারে না। যারা আল্লাহকে নিজের একমাত্র রব হিসেবে মেনে নিয়ে সৎকাজ করবে, তারা নিজেদের এ যথার্থ কার্যধারার পূর্ণ প্রতিদান লাভ করার অধিকার রাখে। অন্যদিকে যারা সত্য অস্বীকার করে বিরোধী অবস্থানে জীবন-যাপন করবে, তারাও নিজেদের এ ভ্রান্ত কার্যধারার কুফল প্রত্যক্ষ করবে। এ প্রয়োজন যদি পার্থিব জীবনে পূর্ণ না হয়, আর সবাই জানে যে, পূর্ণ হচ্ছে না; তাহলে অবশ্যই এটা পূর্ণ করার জন্য পুনরুজ্জীবন অপরিহার্য হয়ে পড়ে।
اِنَّهٗ يَبْدَاُ الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيْدُهٗ لِيَجْزِيَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ بِالْقِسْطِ
তিনিই প্রথম সৃষ্টিকে অস্তিত্ব দান করেন, অতঃপর তার পুনরাবর্তন ঘটান; যাতে করে তিনি মুমিন ও সৎকর্মপরায়ণদেরকে ন্যায়বিচারের সাথে কর্মফল প্রদান করতে পারেন। (সূরা ইউনুস- ৪)
ব্যাখ্যা : মানুষের এমন তিনটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা তাকে পৃথিবীর অন্যান্য জিনিস থেকে আলাদা করে দেয়। আর তা হলো : (এক) পৃথিবী ও তার পরিবেশের অসংখ্য জিনিস তার বশীভূত করে দেয়া হয়েছে এবং তাকে সেগুলো ব্যবহার করার জন্য ব্যাপক ক্ষমতা দান করা হয়েছে। (দুই) নিজের জীবনের পথ বেছে নেয়ার জন্য তাকে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দেয়া হয়েছে। ঈমান ও কুফরী, আনুগত্য ও বিদ্রোহ এবং সুকৃতি ও দুষ্কৃতির পথের মধ্য থেকে সত্য ও মিথ্যা এবং সঠিক ও বেঠিক যে কোন পথই সে অবলম্বন করতে পারে। (তিন) তার মধ্যে জন্মগতভাবে নৈতিকতার অনুভূতি রেখে দেয়া হয়েছে। এর ভিত্তিতে সে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে যে, সৎকাজ পুরস্কার লাভের এবং অসৎকাজ শাস্তি লাভের যোগ্য হওয়া উচিত। মানুষের নিজের সত্তার মধ্যে এ তিনটি বৈশিষ্ট্য পাওয়ার মাধ্যমে এ কথাই প্রমাণ করে যে, এমন কোন সময় আসা উচিত যখন তাকে দুনিয়ায় যা কিছু দেয়া হয়েছিল তা ব্যবহার করার ক্ষমতাকে সে কীভাবে কাজে লাগিয়েছে? সে সঠিক পথ অবলম্বন করেছে, না ভুলপথ? এসব ঐচ্ছিক কার্যাবলি যাচাই করা হবে এবং সৎকাজের পুরস্কার ও অসৎকাজের জন্য শাস্তি দেয়া হবে। এ কথা সুনিশ্চিত যে, মানুষের জীবনে কার্যাবলি শেষ হওয়ার এবং তার প্রতিক্রিয়া বন্ধ হওয়ার পরই এ সময়টি আসতে পারে, তার আগে আসতে পারে না। তার এ সময়টি অবশ্যই এমন সময়ে আসা উচিত, যখন এক ব্যক্তি বা একটি জাতির নয় বরং সমগ্র মানবজাতির প্রতিক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ কোন ব্যক্তি বা জাতি নিজের কার্যাবলির মাধ্যমে দুনিয়ার বুকে যেসব প্রভাব বিস্তার করে যায়, উক্ত ব্যক্তি বা জাতির মৃত্যুতে তার ধারাবাহিকতা শেষ হয়ে যায় না। তার রেখে যাওয়া ভালো বা মন্দের প্রভাবও তার আমলনামায় লিখিত হয়। এ প্রভাবগুলো যে পর্যন্ত না পুরোপুরি প্রকাশ হয়ে যায় সে পর্যন্ত ইনসাফ অনুযায়ী পুরোপুরি হিসাব-নিকাশ করা এবং পুরোপুরি পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া সম্ভব নয়?
আখিরাত বিশ্বাসীরা সৎকাজের প্রেরণা লাভ করে :
ذٰلِكُمْ يُوْعَظُ بِهٖ مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِؕ وَمَنْ يَّتَّقِ اللهَ يَجْعَلْ لَّهٗ مَخْرَجًا
এটা দ্বারা তোমাদের মধ্যে যে আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, তাকে উপদেশ দেয়া হয়। আর যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তাকে পথ দেখিয়ে দেন। (সূরা তালাক্ব- ২)
وَاسْتَعِيْنُوْا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِؕ وَاِنَّهَا لَكَبِيْرَةٌ اِلَّا عَلَى الْخَاشِعِيْنَ – اَلَّذِيْنَ يَظُنُّوْنَ اَنَّهُمْ مُّلَاقُوْا رَبِّهِمْ وَاَنَّهُمْ اِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ
তোমরা ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। এ কাজ খুবই কঠিন, তবে বিনয়ীগণ ব্যতীত। (আর বিনয়ী তো তারাই) যারা ধারণা করে যে, নিশ্চয় তারা তাদের প্রতিপালকের সাথে মিলিত হবে এবং তারা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। (সূরা বাক্বারা- ৪৫, ৪৬)
ব্যাখ্যা : আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস ছাড়া অন্য কোন জিনিসই এমন নেই, যা এ দুনিয়ায় মানুষকে সঠিক পথে প্রতিষ্ঠিত রাখার নিশ্চয়তা দিতে পারে। যদি কোন ব্যক্তি এ কথা না মানে যে, মৃত্যুর পর তাকে আবার জীবিত হতে হবে এবং আল্লাহর সামনে নিজের কাজের জন্য জবাবদিহি করতে হবে, তাহলে সে অবশ্যই পথভ্রষ্ট ও বিপথগামী হবে। কারণ যে দায়িত্বানুভূতি মানুষকে সঠিক পথে প্রতিষ্ঠিত রাখে তা তার মধ্যে নেই। তাই শয়তান মানুষকে আখিরাত থেকে গাফিল করে দেয়। এটিই তার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার এবং এর সাহায্যেই সে মানুষকে নিজের ফাঁদে আটকে ফেলে। যে ব্যক্তি শয়তানের এ প্রতারণার জাল ছিন্ন করে বের হয়ে আসে, সে কখনো নিজের আসল ও চিরন্তন জীবনের স্বার্থকে দুনিয়ার সাময়িক জীবনের স্বার্থে কুরবানী করে দিতে রাজি হবে না। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি শয়তানের প্রতারণায় বিভ্রান্ত হয়ে আখিরাতকে অস্বীকার করে বসে অথবা সে ব্যাপারে সন্দিহান হয়ে পড়ে, সে কখনো এ দুনিয়ায় নগদ লাভ থেকে বিরত থাকতে রাজি হবে না। দুনিয়ায় যে ব্যক্তিই পথভ্রষ্ট হয়েছে তার মূল কারণ হচ্ছে, আখিরাতকে অস্বীকার করা বা এ ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করা। আবার যে-ই সঠিক পথ অবলম্বন করেছে তার সঠিক কর্মের ভিত্তি আখিরাতের প্রতি ঈমানের উপরই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
আখিরাত বিশ্বাসীরা ব্যর্থ হবে না :
وَمَنْ اَرَادَ الْاٰخِرَةَ وَسَعٰى لَهَا سَعْيَهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَاُولٰٓئِكَ كَانَ سَعْيُهُمْ مَّشْكُوْرًا
যারা মুমিন হয়ে আখিরাত কামনা করে এবং তার জন্য যথাযথ চেষ্টা করে, তাদের প্রচেষ্টা পুরস্কারযোগ্য।
(সূরা বনী ইসরাঈল- ১৯)
তাদের প্রতিদান বৃদ্ধি পাবে :
مَنْ كَانَ يُرِيْدُ حَرْثَ الْاٰخِرَةِ نَزِدْ لَهٗ فِيْ حَرْثِهٖۚ وَمَنْ كَانَ يُرِيْدُ حَرْثَ الدُّنْيَا نُؤْتِهٖ مِنْهَا وَمَا لَهٗ فِى الْاٰخِرَةِ مِنْ نَّصِيْبٍ
যে ব্যক্তি আখিরাতে ফসল কামনা করে, আমি তার জন্য তার ফসল বৃদ্ধি করে দেই। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার ফসল কামনা করে, আমি তাকে এর থেকেও কিছু দেই। কিন্তু আখিরাতে তার জন্য কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। (সূরা শূরা- ২০)
ব্যাখ্যা : যারা দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ের জন্য কাজ করে, এ আয়াতে তাদেরকে এমন কৃষকের সাথে তুলনা করা হয়েছে, যারা ভূমি প্রস্তুত করা থেকে ফসল প্রস্তুত হওয়া পর্যন্ত ঘাম ঝরায়। আখিরাতের ফসল বপনকারী কৃষক এবং পার্থিব ফসল বপনকারী কৃষকের মধ্যে বিরাট পার্থক্য রয়েছে, তাই আল্লাহ উভয়ের পরিশ্রমের ফলাফলও ভিন্ন রেখেছেন। অথচ এ পৃথিবীই উভয়ের কর্মক্ষেত্র। আখিরাতের ফসল বপনকারী দুনিয়া লাভ করবে না- আল্লাহ তা বলেননি। কম বা বেশি যাই হোক না কেন দুনিয়া তো সে পাবেই। কারণ এখানে আল্লাহর দয়া সবার জন্য সমান এবং তার মধ্যে তারও অংশ আছে। তাই ভালো-মন্দ সবাই এখানে রিযিক পাচ্ছে। কিন্তু আল্লাহ তাকে দুনিয়া লাভের সুসংবাদ দেননি বরং তাকে সুসংবাদ দিয়েছেন এই বলে যে, তার আখিরাতের শস্যক্ষেত্র বৃদ্ধি করা হবে। কেননা সে সেটিই চায় এবং সে সেখানকার পরিণামের চিন্তায় বিভোর। এ শস্যক্ষেত্র বর্ধিত করার অনেকগুলো পন্থা হতে পারে। যেমন- সে যতটা সদুদ্দেশ্য নিয়ে আখিরাতের জন্য নেক আমল করতে থাকবে তাকে ততবেশি নেক আমল করার সুযোগ দেয়া হবে এবং তার হৃদয়-মন নেক কাজের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। যখন সে পবিত্র উদ্দেশ্য অর্জন করার জন্য পবিত্র উপায় অবলম্বন করার সংকল্প করবে, তখন তার জন্য পবিত্র উপায়-উপকরণের দরজাসমূহ খোলা থাকবে। তাছাড়া সবচেয়ে বড় কথা হলো, তার এই পৃথিবীর সামান্য নেকীও আখিরাতে কমপক্ষে দশগুণ বৃদ্ধি করা হবে। আর বেশির তো কোন সীমাই থাকবে না। আল্লাহ যার জন্য চাইবেন হাজার বা লক্ষগুণ বৃদ্ধি করে দেবেন। আর যে আখিরাত চায় না এবং দুনিয়ার জন্যই সবকিছু করে আল্লাহ তাকে তার এই চেষ্টা-সাধনার দু’টি ফলের কথা সুস্পষ্টভাবে শুনিয়ে দিয়েছেন। (এক) সে যত চেষ্টাই করুক না কেন দুনিয়া যতটা অর্জন করতে চায় তা সে পুরোপুরিভাবে পাবে না। বরং তার একটা অংশ পাবে অর্থাৎ আল্লাহ তার জন্য যতটা নির্দিষ্ট করে রেখেছেন ততটা সে পাবে। (দুই) সে যা কিছু পাবে এই দুনিয়াতেই পাবে, আখিরাতে তার কোন অংশ থাকবে না।
পরকালে বিশ্বাসী হওয়া কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে :
فَمَنْ كَانَ يَرْجُوْا لِقَآءَ رَبِّهٖ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَّلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهٖۤ اَحَدًا
যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার প্রতিপালকের ইবাদাতে কাউকে শরীক না করে। (সূরা কাহফ- ১১০)
مَنْ كَانَ يَرْجُوْا لِقَآءَ اللهِ فَاِنَّ اَجَلَ اللهِ لَاٰتٍؕ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ কামনা করে সে জেনে রাখুক যে, আল্লাহর নির্ধারিত কাল আসবেই; তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা আনকাবূত- ৫)
ব্যাখ্যা : যারা আশা রাখে যে, একসময় তাদেরকে আল্লাহর সামনে হাজির হতে হবে এবং নিজের কর্ম অনুযায়ী পুরস্কার বা শাস্তি পেতে হবে। তাদের এ ভুল ধারণায় ডুবে থাকা উচিত নয় যে, তাদের মৃত্যুর সময় অনেক দূরে। তাদের মনে করা উচিত, সে সময় অতি নিকটেই এসে গেছে এবং কাজের অবকাশ শেষ হওয়ারই পথে। তাই নিজের শুভ পরিণামের জন্য তারা যা কিছু করতে চায় করে ফেলুক। দীর্ঘ জীবনকালের ভিত্তিহীন নির্ভরতার উপর ভরসা করে নিজের সংশোধনে বিলম্ব করা উচিত নয়।
ذٰلِكُمْ يُوْعَظُ بِهٖ مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِؕ وَمَنْ يَّتَّقِ اللهَ يَجْعَلْ لَّهٗ مَخْرَجًا
এটা দ্বারা তোমাদের মধ্যে যে আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, তাকে উপদেশ দেয়া হয়। আর যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তাকে পথ দেখিয়ে দেন। (সূরা তালাক্ব- ২)
وَاسْتَعِيْنُوْا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِؕ وَاِنَّهَا لَكَبِيْرَةٌ اِلَّا عَلَى الْخَاشِعِيْنَ – اَلَّذِيْنَ يَظُنُّوْنَ اَنَّهُمْ مُّلَاقُوْا رَبِّهِمْ وَاَنَّهُمْ اِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ
তোমরা ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। এ কাজ খুবই কঠিন, তবে বিনয়ীগণ ব্যতীত। (আর বিনয়ী তো তারাই) যারা ধারণা করে যে, নিশ্চয় তারা তাদের প্রতিপালকের সাথে মিলিত হবে এবং তারা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। (সূরা বাক্বারা- ৪৫, ৪৬)
ব্যাখ্যা : আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস ছাড়া অন্য কোন জিনিসই এমন নেই, যা এ দুনিয়ায় মানুষকে সঠিক পথে প্রতিষ্ঠিত রাখার নিশ্চয়তা দিতে পারে। যদি কোন ব্যক্তি এ কথা না মানে যে, মৃত্যুর পর তাকে আবার জীবিত হতে হবে এবং আল্লাহর সামনে নিজের কাজের জন্য জবাবদিহি করতে হবে, তাহলে সে অবশ্যই পথভ্রষ্ট ও বিপথগামী হবে। কারণ যে দায়িত্বানুভূতি মানুষকে সঠিক পথে প্রতিষ্ঠিত রাখে তা তার মধ্যে নেই। তাই শয়তান মানুষকে আখিরাত থেকে গাফিল করে দেয়। এটিই তার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার এবং এর সাহায্যেই সে মানুষকে নিজের ফাঁদে আটকে ফেলে। যে ব্যক্তি শয়তানের এ প্রতারণার জাল ছিন্ন করে বের হয়ে আসে, সে কখনো নিজের আসল ও চিরন্তন জীবনের স্বার্থকে দুনিয়ার সাময়িক জীবনের স্বার্থে কুরবানী করে দিতে রাজি হবে না। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি শয়তানের প্রতারণায় বিভ্রান্ত হয়ে আখিরাতকে অস্বীকার করে বসে অথবা সে ব্যাপারে সন্দিহান হয়ে পড়ে, সে কখনো এ দুনিয়ায় নগদ লাভ থেকে বিরত থাকতে রাজি হবে না। দুনিয়ায় যে ব্যক্তিই পথভ্রষ্ট হয়েছে তার মূল কারণ হচ্ছে, আখিরাতকে অস্বীকার করা বা এ ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করা। আবার যে-ই সঠিক পথ অবলম্বন করেছে তার সঠিক কর্মের ভিত্তি আখিরাতের প্রতি ঈমানের উপরই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
আখিরাত বিশ্বাসীরা ব্যর্থ হবে না :
وَمَنْ اَرَادَ الْاٰخِرَةَ وَسَعٰى لَهَا سَعْيَهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَاُولٰٓئِكَ كَانَ سَعْيُهُمْ مَّشْكُوْرًا
যারা মুমিন হয়ে আখিরাত কামনা করে এবং তার জন্য যথাযথ চেষ্টা করে, তাদের প্রচেষ্টা পুরস্কারযোগ্য।
(সূরা বনী ইসরাঈল- ১৯)
তাদের প্রতিদান বৃদ্ধি পাবে :
مَنْ كَانَ يُرِيْدُ حَرْثَ الْاٰخِرَةِ نَزِدْ لَهٗ فِيْ حَرْثِهٖۚ وَمَنْ كَانَ يُرِيْدُ حَرْثَ الدُّنْيَا نُؤْتِهٖ مِنْهَا وَمَا لَهٗ فِى الْاٰخِرَةِ مِنْ نَّصِيْبٍ
যে ব্যক্তি আখিরাতে ফসল কামনা করে, আমি তার জন্য তার ফসল বৃদ্ধি করে দেই। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার ফসল কামনা করে, আমি তাকে এর থেকেও কিছু দেই। কিন্তু আখিরাতে তার জন্য কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। (সূরা শূরা- ২০)
ব্যাখ্যা : যারা দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ের জন্য কাজ করে, এ আয়াতে তাদেরকে এমন কৃষকের সাথে তুলনা করা হয়েছে, যারা ভূমি প্রস্তুত করা থেকে ফসল প্রস্তুত হওয়া পর্যন্ত ঘাম ঝরায়। আখিরাতের ফসল বপনকারী কৃষক এবং পার্থিব ফসল বপনকারী কৃষকের মধ্যে বিরাট পার্থক্য রয়েছে, তাই আল্লাহ উভয়ের পরিশ্রমের ফলাফলও ভিন্ন রেখেছেন। অথচ এ পৃথিবীই উভয়ের কর্মক্ষেত্র। আখিরাতের ফসল বপনকারী দুনিয়া লাভ করবে না- আল্লাহ তা বলেননি। কম বা বেশি যাই হোক না কেন দুনিয়া তো সে পাবেই। কারণ এখানে আল্লাহর দয়া সবার জন্য সমান এবং তার মধ্যে তারও অংশ আছে। তাই ভালো-মন্দ সবাই এখানে রিযিক পাচ্ছে। কিন্তু আল্লাহ তাকে দুনিয়া লাভের সুসংবাদ দেননি বরং তাকে সুসংবাদ দিয়েছেন এই বলে যে, তার আখিরাতের শস্যক্ষেত্র বৃদ্ধি করা হবে। কেননা সে সেটিই চায় এবং সে সেখানকার পরিণামের চিন্তায় বিভোর। এ শস্যক্ষেত্র বর্ধিত করার অনেকগুলো পন্থা হতে পারে। যেমন- সে যতটা সদুদ্দেশ্য নিয়ে আখিরাতের জন্য নেক আমল করতে থাকবে তাকে ততবেশি নেক আমল করার সুযোগ দেয়া হবে এবং তার হৃদয়-মন নেক কাজের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। যখন সে পবিত্র উদ্দেশ্য অর্জন করার জন্য পবিত্র উপায় অবলম্বন করার সংকল্প করবে, তখন তার জন্য পবিত্র উপায়-উপকরণের দরজাসমূহ খোলা থাকবে। তাছাড়া সবচেয়ে বড় কথা হলো, তার এই পৃথিবীর সামান্য নেকীও আখিরাতে কমপক্ষে দশগুণ বৃদ্ধি করা হবে। আর বেশির তো কোন সীমাই থাকবে না। আল্লাহ যার জন্য চাইবেন হাজার বা লক্ষগুণ বৃদ্ধি করে দেবেন। আর যে আখিরাত চায় না এবং দুনিয়ার জন্যই সবকিছু করে আল্লাহ তাকে তার এই চেষ্টা-সাধনার দু’টি ফলের কথা সুস্পষ্টভাবে শুনিয়ে দিয়েছেন। (এক) সে যত চেষ্টাই করুক না কেন দুনিয়া যতটা অর্জন করতে চায় তা সে পুরোপুরিভাবে পাবে না। বরং তার একটা অংশ পাবে অর্থাৎ আল্লাহ তার জন্য যতটা নির্দিষ্ট করে রেখেছেন ততটা সে পাবে। (দুই) সে যা কিছু পাবে এই দুনিয়াতেই পাবে, আখিরাতে তার কোন অংশ থাকবে না।
পরকালে বিশ্বাসী হওয়া কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে :
فَمَنْ كَانَ يَرْجُوْا لِقَآءَ رَبِّهٖ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَّلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهٖۤ اَحَدًا
যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার প্রতিপালকের ইবাদাতে কাউকে শরীক না করে। (সূরা কাহফ- ১১০)
مَنْ كَانَ يَرْجُوْا لِقَآءَ اللهِ فَاِنَّ اَجَلَ اللهِ لَاٰتٍؕ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ কামনা করে সে জেনে রাখুক যে, আল্লাহর নির্ধারিত কাল আসবেই; তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা আনকাবূত- ৫)
ব্যাখ্যা : যারা আশা রাখে যে, একসময় তাদেরকে আল্লাহর সামনে হাজির হতে হবে এবং নিজের কর্ম অনুযায়ী পুরস্কার বা শাস্তি পেতে হবে। তাদের এ ভুল ধারণায় ডুবে থাকা উচিত নয় যে, তাদের মৃত্যুর সময় অনেক দূরে। তাদের মনে করা উচিত, সে সময় অতি নিকটেই এসে গেছে এবং কাজের অবকাশ শেষ হওয়ারই পথে। তাই নিজের শুভ পরিণামের জন্য তারা যা কিছু করতে চায় করে ফেলুক। দীর্ঘ জীবনকালের ভিত্তিহীন নির্ভরতার উপর ভরসা করে নিজের সংশোধনে বিলম্ব করা উচিত নয়।
আখিরাত সম্পর্কে মানুষ নানা কথা বলে :
عَمَّ يَتَسَآءَلُوْنَ – عَنِ النَّبَاِ الْعَظِيْمِ – اَلَّذِيْ هُمْ فِيْهِ مُخْتَلِفُوْنَ
তারা পরস্পর কোন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করছে? সে কি মহাসংবাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে, যে বিষয়ে তারা নিজেদের মধ্যে মতভেদ করছে? (সূরা নাবা, ১-৩)
কেউ কেউ সরাসরি আখিরাত অস্বীকার করে :
وَقَالُوْاۤ اِنْ هِيَ اِلَّا حَيَاتُنَا الدُّنْيَا وَمَا نَحْنُ بِمَبْعُوْثِيْنَ
তারা বলে, আমাদের পার্থিব জীবনই একমাত্র জীবন। আর আমরা পুনরুত্থিতও হব না। (সূরা আন‘আম- ২৯)
اِنَّ هٰۤؤُلَآءِ لَيَقُوْلُوْنَ – اِنْ هِيَ اِلَّا مَوْتَتُنَا الْاُوْلٰى وَمَا نَحْنُ بِمُنْشَرِيْنَ
নিশ্চয় তারা বলে থাকে যে, আমাদের প্রথম মৃত্যু ব্যতীত আর কিছুই নেই এবং আমরা আর পুনরুত্থিতও হব না। (সূরা দুখান- ৩৪, ৩৫)
কেউ কিছুটা ধারণা করে মাত্র, কিন্তু নিশ্চিত বিশ্বাস করে না :
وَاِذَا قِيْلَ اِنَّ وَعْدَ اللهِ حَقٌّ وَّالسَّاعَةُ لَا رَيْبَ فِيْهَا قُلْتُمْ مَّا نَدْرِيْ مَا السَّاعَةُ اِنْ نَّظُنُّ اِلَّا ظَنًّا وَّمَا نَحْنُ بِمُسْتَيْقِنِيْنَ
যখন বলা হয়, আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য এবং কিয়ামত হবে এতে কোন সন্দেহ নেই, তখন তোমরা বলে থাক, আমরা জানি না কিয়ামত কী। আমরা মনে করি, এটি একটি ধারণা মাত্র এবং আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত নই। (সূরা জাসিয়া- ৩২)
কেউ ভাবছে যখন দুনিয়া পাচ্ছি, তখন আখিরাতও পাব :
وَمَاۤ اَظُنُّ السَّاعَةَ قَآئِمَةً وَّلَئِنْ رُّدِدْتُّ اِلٰى رَبِّيْ لَاَجِدَنَّ خَيْرًا مِّنْهَا مُنْقَلَبًا
আমি মনে করি না যে, কিয়ামত হবে। আর আমি যদি আমার প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তিত হই, তবে নিশ্চয় আমি এর চেয়ে আরো উৎকৃষ্ট স্থান লাভ করব। (সূরা কাহফ- ৩৬)
কেউ আযাবের ব্যাপারে নিজেরা আইন তৈরি করে নিয়েছে :
وَقَالُوْا لَنْ تَمَسَّنَا النَّارُ اِلَّاۤ اَيَّامًا مَّعْدُوْدَةًؕ قُلْ اَتَّخَذْتُمْ عِنْدَ اللهِ عَهْدًا فَلَنْ يُّخْلِفَ اللهُ عَهْدَهٗۤ اَمْ تَقُوْلُوْنَ عَلَى اللهِ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ
তারা (ইয়াহুদিরা) বলে, নির্ধারিত দিনসমূহ ব্যতীত (জাহান্নামের) অগ্নি আমাদেরকে স্পর্শ করবে না। বলো, তোমরা কি আল্লাহর নিকট হতে অঙ্গীকার নিয়েছ, ফলে আল্লাহ কখনই স্বীয় অঙ্গীকারের ব্যতিক্রম করবেন না? নাকি তোমরা আল্লাহ সম্বন্ধে যা জান না তাই বলছ? (সূরা বাক্বারা- ৮০)
কেউ নাজাতকে জাতীয়তার মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে :
وَقَالُوْا لَنْ يَّدْخُلَ الْجَنَّةَ اِلَّا مَنْ كَانَ هُوْدًا اَوْ نَصَارٰىؕ تِلْكَ اَمَانِيُّهُمْؕ قُلْ هَاتُوْا بُرْهَانَكُمْ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ
তারা বলে, যারা ইয়াহুদি বা খ্রিস্টান হয়েছে তারা ছাড়া আর কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, এটা তাদের বাসনা। বলো, যদি তোমরা সত্যবাদী হও, তবে তোমাদের প্রমাণ উপস্থাপন করো। (সূরা বাক্বারা- ১১১)
কেউ শাফা‘আতের উসিলায় পাড়ি দেয়ার চিন্তা করছে :
وَيَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ مَا لَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنْفَعُهُمْ وَيَقُوْلُوْنَ هٰۤؤُلَآءِ شُفَعَآؤُنَا عِنْدَ اللهِؕ قُلْ اَتُنَبِّئُوْنَ اللهَ بِمَا لَا يَعْلَمُ فِى السَّمَاوَاتِ وَلَا فِى الْاَرْضِؕ سُبْحَانَهٗ وَتَعَالٰى عَمَّا يُشْرِكُوْنَ
তারা আল্লাহ ব্যতীত যার ইবাদাত করে তা তাদের ক্ষতিও করতে পারে না এবং উপকারও করতে পারে না। তারা বলে, এগুলো আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী। বলো, তোমরা কি আল্লাহকে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর এমন কিছুর সংবাদ দেবে, যা তিনি জানেন না? তিনি মহান, পবিত্র এবং তারা যাকে শরীক করে তা হতে তিনি অনেক ঊর্ধ্বে। (সূরা ইউনুস- ১৮)
عَمَّ يَتَسَآءَلُوْنَ – عَنِ النَّبَاِ الْعَظِيْمِ – اَلَّذِيْ هُمْ فِيْهِ مُخْتَلِفُوْنَ
তারা পরস্পর কোন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করছে? সে কি মহাসংবাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে, যে বিষয়ে তারা নিজেদের মধ্যে মতভেদ করছে? (সূরা নাবা, ১-৩)
কেউ কেউ সরাসরি আখিরাত অস্বীকার করে :
وَقَالُوْاۤ اِنْ هِيَ اِلَّا حَيَاتُنَا الدُّنْيَا وَمَا نَحْنُ بِمَبْعُوْثِيْنَ
তারা বলে, আমাদের পার্থিব জীবনই একমাত্র জীবন। আর আমরা পুনরুত্থিতও হব না। (সূরা আন‘আম- ২৯)
اِنَّ هٰۤؤُلَآءِ لَيَقُوْلُوْنَ – اِنْ هِيَ اِلَّا مَوْتَتُنَا الْاُوْلٰى وَمَا نَحْنُ بِمُنْشَرِيْنَ
নিশ্চয় তারা বলে থাকে যে, আমাদের প্রথম মৃত্যু ব্যতীত আর কিছুই নেই এবং আমরা আর পুনরুত্থিতও হব না। (সূরা দুখান- ৩৪, ৩৫)
কেউ কিছুটা ধারণা করে মাত্র, কিন্তু নিশ্চিত বিশ্বাস করে না :
وَاِذَا قِيْلَ اِنَّ وَعْدَ اللهِ حَقٌّ وَّالسَّاعَةُ لَا رَيْبَ فِيْهَا قُلْتُمْ مَّا نَدْرِيْ مَا السَّاعَةُ اِنْ نَّظُنُّ اِلَّا ظَنًّا وَّمَا نَحْنُ بِمُسْتَيْقِنِيْنَ
যখন বলা হয়, আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য এবং কিয়ামত হবে এতে কোন সন্দেহ নেই, তখন তোমরা বলে থাক, আমরা জানি না কিয়ামত কী। আমরা মনে করি, এটি একটি ধারণা মাত্র এবং আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত নই। (সূরা জাসিয়া- ৩২)
কেউ ভাবছে যখন দুনিয়া পাচ্ছি, তখন আখিরাতও পাব :
وَمَاۤ اَظُنُّ السَّاعَةَ قَآئِمَةً وَّلَئِنْ رُّدِدْتُّ اِلٰى رَبِّيْ لَاَجِدَنَّ خَيْرًا مِّنْهَا مُنْقَلَبًا
আমি মনে করি না যে, কিয়ামত হবে। আর আমি যদি আমার প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তিত হই, তবে নিশ্চয় আমি এর চেয়ে আরো উৎকৃষ্ট স্থান লাভ করব। (সূরা কাহফ- ৩৬)
কেউ আযাবের ব্যাপারে নিজেরা আইন তৈরি করে নিয়েছে :
وَقَالُوْا لَنْ تَمَسَّنَا النَّارُ اِلَّاۤ اَيَّامًا مَّعْدُوْدَةًؕ قُلْ اَتَّخَذْتُمْ عِنْدَ اللهِ عَهْدًا فَلَنْ يُّخْلِفَ اللهُ عَهْدَهٗۤ اَمْ تَقُوْلُوْنَ عَلَى اللهِ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ
তারা (ইয়াহুদিরা) বলে, নির্ধারিত দিনসমূহ ব্যতীত (জাহান্নামের) অগ্নি আমাদেরকে স্পর্শ করবে না। বলো, তোমরা কি আল্লাহর নিকট হতে অঙ্গীকার নিয়েছ, ফলে আল্লাহ কখনই স্বীয় অঙ্গীকারের ব্যতিক্রম করবেন না? নাকি তোমরা আল্লাহ সম্বন্ধে যা জান না তাই বলছ? (সূরা বাক্বারা- ৮০)
কেউ নাজাতকে জাতীয়তার মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে :
وَقَالُوْا لَنْ يَّدْخُلَ الْجَنَّةَ اِلَّا مَنْ كَانَ هُوْدًا اَوْ نَصَارٰىؕ تِلْكَ اَمَانِيُّهُمْؕ قُلْ هَاتُوْا بُرْهَانَكُمْ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ
তারা বলে, যারা ইয়াহুদি বা খ্রিস্টান হয়েছে তারা ছাড়া আর কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, এটা তাদের বাসনা। বলো, যদি তোমরা সত্যবাদী হও, তবে তোমাদের প্রমাণ উপস্থাপন করো। (সূরা বাক্বারা- ১১১)
কেউ শাফা‘আতের উসিলায় পাড়ি দেয়ার চিন্তা করছে :
وَيَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ مَا لَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنْفَعُهُمْ وَيَقُوْلُوْنَ هٰۤؤُلَآءِ شُفَعَآؤُنَا عِنْدَ اللهِؕ قُلْ اَتُنَبِّئُوْنَ اللهَ بِمَا لَا يَعْلَمُ فِى السَّمَاوَاتِ وَلَا فِى الْاَرْضِؕ سُبْحَانَهٗ وَتَعَالٰى عَمَّا يُشْرِكُوْنَ
তারা আল্লাহ ব্যতীত যার ইবাদাত করে তা তাদের ক্ষতিও করতে পারে না এবং উপকারও করতে পারে না। তারা বলে, এগুলো আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী। বলো, তোমরা কি আল্লাহকে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর এমন কিছুর সংবাদ দেবে, যা তিনি জানেন না? তিনি মহান, পবিত্র এবং তারা যাকে শরীক করে তা হতে তিনি অনেক ঊর্ধ্বে। (সূরা ইউনুস- ১৮)
আখিরাত অবিশ্বাসীরা যে কোন অপরাধ করতে পারে :
وَيْلٌ لِّلْمُطَفِّفِيْنَ – اَلَّذِيْنَ اِذَا اكْتَالُوْا عَلَى النَّاسِ يَسْتَوْفُوْنَ – وَاِذَا كَالُوْهُمْ اَوْ وَّزَنُوْهُمْ يُخْسِرُوْنَ – اَلَا يَظُنُّ اُولٰٓئِكَ اَنَّهُمْ مَّبْعُوْثُوْنَ – لِيَوْمٍ عَظِيْمٍ – يَوْمَ يَقُوْمُ النَّاسُ لِرَبِّ الْعَالَمِيْنَ
মন্দ পরিণাম তাদের জন্য যারা ওজনে কম দেয়। যারা লোকের নিকট হতে নেয়ার সময় পূর্ণ মাত্রায় গ্রহণ করে এবং যখন তাদের জন্য মাপ অথবা ওজন করে দেয়, তখন কম দেয়। তারা কি চিন্তা করে না যে, তাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে সে মহান দিবসে, যেদিন সমস্ত মানুষ জগতসমূহের প্রতিপালকের সামনে দাঁড়াবে। (সূরা মুতাফফিফীন, ১-৬)
তারা সৎপথ থেকে দূরে সরে যায় :
وَاِنَّ الَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ بِالْاٰخِرَةِ عَنِ الصِّرَاطِ لَنَاكِبُوْنَ
যারা আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না, তারা তো সরল পথ হতে বিচ্যুত। (সূরা মু’মিনূন- ৭৪)
اَفْتَرٰى عَلَى اللهِ كَذِبًا اَمْ بِهٖ جِنَّةٌ ۢبَلِ الَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ بِالْاٰخِرَةِ فِى الْعَذَابِ وَالضَّلَالِ الْبَعِيْدِ
সে কি আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করছে, না তার মস্তিষ্কের বিকৃতি ঘটেছে? বরং যারা পরকালের প্রতি ঈমান রাখে না, মূলত তারাই আযাবে ও মারাত্মক ভ্রান্তিতে রয়েছে। (সূরা সাবা- ৮)
وَمَنْ يَّكْفُرْ بِاللهِ وَمَلَآئِكَتِهٖ وَكُتُبِهٖ وَرُسُلِهٖ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا ۢبَعِيْدًا
যে ব্যক্তি আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ এবং আখিরাতকে অস্বীকার করবে সে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট হয়ে পড়বে। (সূরা নিসা- ১৩৬)
তারা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে যায় :
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِاٰيَاتِ اللهِ وَلِقَآئِهٖۤ اُولٰٓئِكَ يَئِسُوْا مِنْ رَّحْمَتِيْ وَاُولٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
যারা আল্লাহর নিদর্শন ও তাঁর সাক্ষাতকে অস্বীকার করে, তারাই আমার অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়ে যায়। আর তাদের জন্য রয়েছে মর্মান্তিক শাস্তি। (সূরা আনকাবূত- ২৩)
আখিরাত অস্বীকারকারীরা আল্লাহকে অস্বীকার করে :
وَاِنْ تَعْجَبْ فَعَجَبٌ قَوْلُهُمْ اَئِذَا كُنَّا تُرَابًا اَئِنَّا لَفِيْ خَلْقٍ جَدِيْدٍؕ اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِرَبِّهِمْۚ وَاُولٰٓئِكَ الْاَغْلَالُ فِۤيْ اَعْنَاقِهِمْۚ وَاُولٰٓئِكَ اَصْحَابُ النَّارِؕ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
যদি তুমি বিস্মিত হও, তবে বিস্ময়ের বিষয়টি হচ্ছে তাদের কথা- ‘আমরা মাটিতে পরিণত হয়ে যাওয়ার পরও কি নতুন জীবন লাভ করব?’ তারাই তাদের প্রতিপালককে অস্বীকার করে, তাদেরই গলদেশে থাকবে লোহার শৃঙ্খল। আর তারাই জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। (সূরা রা‘দ- ৫)
তারা কুরআন বুঝতে সক্ষম হয় না :
وَاِذَا قَرَاْتَ الْقُرْاٰنَ جَعَلْنَا بَيْنَكَ وَبَيْنَ الَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ بِالْاٰخِرَةِ حِجَابًا مَّسْتُوْرًا – وَجَعَلْنَا عَلٰى قُلُوْبِهِمْ اَكِنَّةً اَنْ يَّفْقَهُوْهُ وَفِۤيْ اٰذَانِهِمْ وَقْرًاؕ وَاِذَا ذَكَرْتَ رَبَّكَ فِى الْقُرْاٰنِ وَحْدَهٗ وَلَّوْا عَلٰۤى اَدْبَارِهِمْ نُفُوْرًا
যখন তুমি কুরআন পাঠ কর, তখন তোমার মাঝে ও যারা আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না তাদের মাঝে এক প্রচ্ছন্ন পর্দা রেখে দেই। আমি তাদের অমত্মরের উপর আবরণ ফেলে দিয়েছি, যেন তারা তা উপলব্ধি করতে না পারে এবং তাদেরকে বধির করে দিয়েছি। ফলে যখন তুমি কুরআন হতে তোমার প্রতিপালকের একত্ববাদ বিষয়ক আয়াত পাঠ কর, তখন তারা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে সরে পড়ে।
(সূরা বনী ইসরাঈল- ৪৫, ৪৬)
ব্যাখ্যা : অসীম ক্ষমতাসম্পন্ন রবের সামনে তোমাদেরকে যে জবাবদিহি করতে হবে, সেদিকে নজর রাখো এবং যে সঠিক আকীদা ও নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী তোমাদেরকে আখিরাতের পরীক্ষায় সফলকাম করবে, তা অবলম্বন করো- এ হচ্ছে কুরআনের দাওয়াত। এখন যে ব্যক্তি আদৌ আখিরাতকেই মেনে নিতে প্রস্তুত নয় এবং এ দুনিয়ার অভিজ্ঞতালব্ধ যাবতীয় বিষয়ের মধ্যেই যার সমস্ত আস্থা ও বিশ্বাস সীমাবদ্ধ, সে কখনো কুরআনের এ দাওয়াতকে গ্রহণ করতে রাজি হবে না। এ আওয়াজ সর্বদা তার কানের পর্দায় আসতে থাকবে, কিন্তু কখনো তার মনোরাজ্যে প্রবেশ করার পথ খুঁজে পাবে না। এটি একটি মনস্তাত্ত্বিক সত্য ব্যাপার। সর্বশক্তিমান আল্লাহ এ সত্যকে এভাবে বর্ণনা করেছেন যে, যে ব্যক্তি আখিরাত মানে না, আমি তার অন্তর ও কান কুরআনের দাওয়াতের জন্য বন্ধ করে দেই। এটি আমার প্রাকৃতিক আইন। আখিরাত অস্বীকারকারীদের উপর এ আইনটি এভাবে প্রবর্তিত হয়।
তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং হেদায়াত পাবে না :
قَدْ خَسِرَ الَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِلِقَآءِ اللهِ وَمَا كَانُوْا مُهْتَدِيْنَ
যারা আল্লাহর সাক্ষাতকে অস্বীকার করেছে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; আর তারা সৎপথপ্রাপ্তও ছিল না। (সূরা ইউনুস- ৪৫)
তারা অন্ধ হয়ে কবর থেকে উঠবে :
وَنَحْشُرُهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلٰى وُجُوْهِهِمْ عُمْيًا وَّبُكْمًا وَّصُمًّاؕ مَاْوَاهُمْ جَهَنَّمُؕ كُلَّمَا خَبَتْ زِدْنَاهُمْ سَعِيْرًا – ذٰلِكَ جَزَآؤُهُمْ بِاَنَّهُمْ كَفَرُوْا بِاٰيَاتِنَا وَقَالُوْاۤ اَئِذَا كُنَّا عِظَامًا وَّرُفَاتًا اَئِنَّا لَمَبْعُوْثُوْنَ خَلْقًا جَدِيْدًا
কিয়ামতের দিন আমি তাদেরকে সমবেত করব তাদের মুখের উপর ভর দিয়ে চলা অবস্থায়- অন্ধ, বোবা ও বধির করে। তাদের আবাসস্থল জাহান্নাম; যখনই তা (জাহান্নামের আগুন) নিস্তেজ হয়ে আসবে, তখনই আমি তাদের জন্য অগ্নিশিখা বৃদ্ধি করে দেব। এটাই তাদের প্রতিফল, কারণ তারা আমার নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করেছিল এবং বলেছিল, আমরা হাড্ডি ও চূর্ণবিচূর্ণ ধূলায় পরিণত হয়ে যাওয়ার পরও কি নতুন সৃষ্টিরূপে পুনরুত্থিত হব? (সূরা বনী ইসরাঈল- ৯৭, ৯৮)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ দুনিয়ায় তারা যে অবস্থায় ছিল তথা সত্যকে দেখতে পেত না, সত্য কথা শুনতে পেত না এবং সত্য কথা বলতও না, কিয়ামতের মাঠেও তাদেরকে ঠিক সেভাবেই উঠানো হবে।
আল্লাহ তাদেরকে ভুলে যাবেন :
فَذُوْقُوْا بِمَا نَسِيْتُمْ لِقَآءَ يَوْمِكُمْ هٰذَاۚ اِنَّا نَسِيْنَاكُمْ وَذُوْقُوْا عَذَابَ الْخُلْدِ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
আজকের এ দিনের সাক্ষাৎ লাভের বিষয়টি ভুলে থাকার কারণে তোমরা শাস্তি ভোগ করো, আজ আমিও তোমাদেরকে ভুলে গেলাম। অতএব তোমরা যা করতে, তার জন্য চিরস্থায়ী শাস্তি ভোগ করতে থাকো।
(সূরা সাজদা- ১৪)
তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম :
وَاَنَّ الَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ بِالْاٰخِرَةِ اَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا اَلِيْمًا
যারা আখিরাতের প্রতি ঈমান আনয়ন করে না, আমি তাদের জন্য মর্মান্তিক শাসিত্ম প্রস্তুত করে রেখেছি।
(সূরা বনী ইসরাঈল- ১০)
وَاَمَّا الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَكَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَا وَلِقَآءِ الْاٰخِرَةِ فَاُولٰٓئِكَ فِى الْعَذَابِ مُحْضَرُوْنَ
যারা কুফরী করেছিল এবং আমার আয়াতসমূহকে ও আখিরাতে আমার সাথে সাক্ষাতের বিষয়কে মিথ্যাপ্রতিপন্ন করেছিল, তাদেরকে আযাবের মধ্যে উপস্থিত করা হবে। (সূরা রূম- ১৬)
اِنَّ الَّذِيْنَ لَا يَرْجُوْنَ لِقَآءَنَا وَرَضُوْا بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَاطْمَاَنُّوْا بِهَا وَالَّذِيْنَ هُمْ عَنْ اٰيَاتِنَا غَافِلُوْنَ – اُولٰٓئِكَ مَاْوَاهُمُ النَّارُ بِمَا كَانُوْا يَكْسِبُوْنَ
নিশ্চয় যারা আমার সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না এবং পার্থিব জীবনেই সন্তুষ্ট হয়, অতঃপর এতেই পরিতৃপ্ত থাকে; আর যারা আমার নিদর্শনাবলি সম্বন্ধে গাফিল, তাদের কৃতকর্মের জন্য তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম। (সূরা ইউনুস- ৭, ৮)
وَيْلٌ لِّلْمُطَفِّفِيْنَ – اَلَّذِيْنَ اِذَا اكْتَالُوْا عَلَى النَّاسِ يَسْتَوْفُوْنَ – وَاِذَا كَالُوْهُمْ اَوْ وَّزَنُوْهُمْ يُخْسِرُوْنَ – اَلَا يَظُنُّ اُولٰٓئِكَ اَنَّهُمْ مَّبْعُوْثُوْنَ – لِيَوْمٍ عَظِيْمٍ – يَوْمَ يَقُوْمُ النَّاسُ لِرَبِّ الْعَالَمِيْنَ
মন্দ পরিণাম তাদের জন্য যারা ওজনে কম দেয়। যারা লোকের নিকট হতে নেয়ার সময় পূর্ণ মাত্রায় গ্রহণ করে এবং যখন তাদের জন্য মাপ অথবা ওজন করে দেয়, তখন কম দেয়। তারা কি চিন্তা করে না যে, তাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে সে মহান দিবসে, যেদিন সমস্ত মানুষ জগতসমূহের প্রতিপালকের সামনে দাঁড়াবে। (সূরা মুতাফফিফীন, ১-৬)
তারা সৎপথ থেকে দূরে সরে যায় :
وَاِنَّ الَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ بِالْاٰخِرَةِ عَنِ الصِّرَاطِ لَنَاكِبُوْنَ
যারা আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না, তারা তো সরল পথ হতে বিচ্যুত। (সূরা মু’মিনূন- ৭৪)
اَفْتَرٰى عَلَى اللهِ كَذِبًا اَمْ بِهٖ جِنَّةٌ ۢبَلِ الَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ بِالْاٰخِرَةِ فِى الْعَذَابِ وَالضَّلَالِ الْبَعِيْدِ
সে কি আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করছে, না তার মস্তিষ্কের বিকৃতি ঘটেছে? বরং যারা পরকালের প্রতি ঈমান রাখে না, মূলত তারাই আযাবে ও মারাত্মক ভ্রান্তিতে রয়েছে। (সূরা সাবা- ৮)
وَمَنْ يَّكْفُرْ بِاللهِ وَمَلَآئِكَتِهٖ وَكُتُبِهٖ وَرُسُلِهٖ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا ۢبَعِيْدًا
যে ব্যক্তি আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ এবং আখিরাতকে অস্বীকার করবে সে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট হয়ে পড়বে। (সূরা নিসা- ১৩৬)
তারা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে যায় :
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِاٰيَاتِ اللهِ وَلِقَآئِهٖۤ اُولٰٓئِكَ يَئِسُوْا مِنْ رَّحْمَتِيْ وَاُولٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
যারা আল্লাহর নিদর্শন ও তাঁর সাক্ষাতকে অস্বীকার করে, তারাই আমার অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়ে যায়। আর তাদের জন্য রয়েছে মর্মান্তিক শাস্তি। (সূরা আনকাবূত- ২৩)
আখিরাত অস্বীকারকারীরা আল্লাহকে অস্বীকার করে :
وَاِنْ تَعْجَبْ فَعَجَبٌ قَوْلُهُمْ اَئِذَا كُنَّا تُرَابًا اَئِنَّا لَفِيْ خَلْقٍ جَدِيْدٍؕ اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِرَبِّهِمْۚ وَاُولٰٓئِكَ الْاَغْلَالُ فِۤيْ اَعْنَاقِهِمْۚ وَاُولٰٓئِكَ اَصْحَابُ النَّارِؕ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
যদি তুমি বিস্মিত হও, তবে বিস্ময়ের বিষয়টি হচ্ছে তাদের কথা- ‘আমরা মাটিতে পরিণত হয়ে যাওয়ার পরও কি নতুন জীবন লাভ করব?’ তারাই তাদের প্রতিপালককে অস্বীকার করে, তাদেরই গলদেশে থাকবে লোহার শৃঙ্খল। আর তারাই জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। (সূরা রা‘দ- ৫)
তারা কুরআন বুঝতে সক্ষম হয় না :
وَاِذَا قَرَاْتَ الْقُرْاٰنَ جَعَلْنَا بَيْنَكَ وَبَيْنَ الَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ بِالْاٰخِرَةِ حِجَابًا مَّسْتُوْرًا – وَجَعَلْنَا عَلٰى قُلُوْبِهِمْ اَكِنَّةً اَنْ يَّفْقَهُوْهُ وَفِۤيْ اٰذَانِهِمْ وَقْرًاؕ وَاِذَا ذَكَرْتَ رَبَّكَ فِى الْقُرْاٰنِ وَحْدَهٗ وَلَّوْا عَلٰۤى اَدْبَارِهِمْ نُفُوْرًا
যখন তুমি কুরআন পাঠ কর, তখন তোমার মাঝে ও যারা আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না তাদের মাঝে এক প্রচ্ছন্ন পর্দা রেখে দেই। আমি তাদের অমত্মরের উপর আবরণ ফেলে দিয়েছি, যেন তারা তা উপলব্ধি করতে না পারে এবং তাদেরকে বধির করে দিয়েছি। ফলে যখন তুমি কুরআন হতে তোমার প্রতিপালকের একত্ববাদ বিষয়ক আয়াত পাঠ কর, তখন তারা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে সরে পড়ে।
(সূরা বনী ইসরাঈল- ৪৫, ৪৬)
ব্যাখ্যা : অসীম ক্ষমতাসম্পন্ন রবের সামনে তোমাদেরকে যে জবাবদিহি করতে হবে, সেদিকে নজর রাখো এবং যে সঠিক আকীদা ও নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী তোমাদেরকে আখিরাতের পরীক্ষায় সফলকাম করবে, তা অবলম্বন করো- এ হচ্ছে কুরআনের দাওয়াত। এখন যে ব্যক্তি আদৌ আখিরাতকেই মেনে নিতে প্রস্তুত নয় এবং এ দুনিয়ার অভিজ্ঞতালব্ধ যাবতীয় বিষয়ের মধ্যেই যার সমস্ত আস্থা ও বিশ্বাস সীমাবদ্ধ, সে কখনো কুরআনের এ দাওয়াতকে গ্রহণ করতে রাজি হবে না। এ আওয়াজ সর্বদা তার কানের পর্দায় আসতে থাকবে, কিন্তু কখনো তার মনোরাজ্যে প্রবেশ করার পথ খুঁজে পাবে না। এটি একটি মনস্তাত্ত্বিক সত্য ব্যাপার। সর্বশক্তিমান আল্লাহ এ সত্যকে এভাবে বর্ণনা করেছেন যে, যে ব্যক্তি আখিরাত মানে না, আমি তার অন্তর ও কান কুরআনের দাওয়াতের জন্য বন্ধ করে দেই। এটি আমার প্রাকৃতিক আইন। আখিরাত অস্বীকারকারীদের উপর এ আইনটি এভাবে প্রবর্তিত হয়।
তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং হেদায়াত পাবে না :
قَدْ خَسِرَ الَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِلِقَآءِ اللهِ وَمَا كَانُوْا مُهْتَدِيْنَ
যারা আল্লাহর সাক্ষাতকে অস্বীকার করেছে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; আর তারা সৎপথপ্রাপ্তও ছিল না। (সূরা ইউনুস- ৪৫)
তারা অন্ধ হয়ে কবর থেকে উঠবে :
وَنَحْشُرُهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلٰى وُجُوْهِهِمْ عُمْيًا وَّبُكْمًا وَّصُمًّاؕ مَاْوَاهُمْ جَهَنَّمُؕ كُلَّمَا خَبَتْ زِدْنَاهُمْ سَعِيْرًا – ذٰلِكَ جَزَآؤُهُمْ بِاَنَّهُمْ كَفَرُوْا بِاٰيَاتِنَا وَقَالُوْاۤ اَئِذَا كُنَّا عِظَامًا وَّرُفَاتًا اَئِنَّا لَمَبْعُوْثُوْنَ خَلْقًا جَدِيْدًا
কিয়ামতের দিন আমি তাদেরকে সমবেত করব তাদের মুখের উপর ভর দিয়ে চলা অবস্থায়- অন্ধ, বোবা ও বধির করে। তাদের আবাসস্থল জাহান্নাম; যখনই তা (জাহান্নামের আগুন) নিস্তেজ হয়ে আসবে, তখনই আমি তাদের জন্য অগ্নিশিখা বৃদ্ধি করে দেব। এটাই তাদের প্রতিফল, কারণ তারা আমার নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করেছিল এবং বলেছিল, আমরা হাড্ডি ও চূর্ণবিচূর্ণ ধূলায় পরিণত হয়ে যাওয়ার পরও কি নতুন সৃষ্টিরূপে পুনরুত্থিত হব? (সূরা বনী ইসরাঈল- ৯৭, ৯৮)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ দুনিয়ায় তারা যে অবস্থায় ছিল তথা সত্যকে দেখতে পেত না, সত্য কথা শুনতে পেত না এবং সত্য কথা বলতও না, কিয়ামতের মাঠেও তাদেরকে ঠিক সেভাবেই উঠানো হবে।
আল্লাহ তাদেরকে ভুলে যাবেন :
فَذُوْقُوْا بِمَا نَسِيْتُمْ لِقَآءَ يَوْمِكُمْ هٰذَاۚ اِنَّا نَسِيْنَاكُمْ وَذُوْقُوْا عَذَابَ الْخُلْدِ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
আজকের এ দিনের সাক্ষাৎ লাভের বিষয়টি ভুলে থাকার কারণে তোমরা শাস্তি ভোগ করো, আজ আমিও তোমাদেরকে ভুলে গেলাম। অতএব তোমরা যা করতে, তার জন্য চিরস্থায়ী শাস্তি ভোগ করতে থাকো।
(সূরা সাজদা- ১৪)
তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম :
وَاَنَّ الَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ بِالْاٰخِرَةِ اَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا اَلِيْمًا
যারা আখিরাতের প্রতি ঈমান আনয়ন করে না, আমি তাদের জন্য মর্মান্তিক শাসিত্ম প্রস্তুত করে রেখেছি।
(সূরা বনী ইসরাঈল- ১০)
وَاَمَّا الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَكَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَا وَلِقَآءِ الْاٰخِرَةِ فَاُولٰٓئِكَ فِى الْعَذَابِ مُحْضَرُوْنَ
যারা কুফরী করেছিল এবং আমার আয়াতসমূহকে ও আখিরাতে আমার সাথে সাক্ষাতের বিষয়কে মিথ্যাপ্রতিপন্ন করেছিল, তাদেরকে আযাবের মধ্যে উপস্থিত করা হবে। (সূরা রূম- ১৬)
اِنَّ الَّذِيْنَ لَا يَرْجُوْنَ لِقَآءَنَا وَرَضُوْا بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَاطْمَاَنُّوْا بِهَا وَالَّذِيْنَ هُمْ عَنْ اٰيَاتِنَا غَافِلُوْنَ – اُولٰٓئِكَ مَاْوَاهُمُ النَّارُ بِمَا كَانُوْا يَكْسِبُوْنَ
নিশ্চয় যারা আমার সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না এবং পার্থিব জীবনেই সন্তুষ্ট হয়, অতঃপর এতেই পরিতৃপ্ত থাকে; আর যারা আমার নিদর্শনাবলি সম্বন্ধে গাফিল, তাদের কৃতকর্মের জন্য তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম। (সূরা ইউনুস- ৭, ৮)
আখিরাত অস্বীকারকারীরা বলে, দেহের সবকিছু পঁচে যায় :
اَئِذَا مِتْنَا وَكُنَّا تُرَابًا وَّعِظَامًا اَئِنَّا لَمَبْعُوْثُوْنَ – اَوَاٰبَآؤُنَا الْاَوَّلُوْنَ
(কাফিররা বলল) আমরা যখন মৃত্যুবরণ করব এবং মাটি ও হাড্ডিতে পরিণত হব, তারপরও কি আমরা পু্নরুত্থিত হব? (তখন) আমাদের পূর্ববর্তীদেরকেও কি (পুনরুত্থিত করা হবে)? (সূরা সাফ্ফাত- ১৬, ১৭)
وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا هَلْ نَدُلُّكُمْ عَلٰى رَجُلٍ يُّنَبِّئُكُمْ اِذَا مُزِّقْتُمْ كُلَّ مُمَزَّقٍ اِنَّكُمْ لَفِيْ خَلْقٍ جَدِيْدٍ
কাফিররা বলে, আমরা কি তোমাদেরকে এমন এক ব্যক্তির সন্ধান দেব, যে তোমাদেরকে সংবাদ দেয় যে, যখন তোমরা সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন বিছিন্ন হয়ে যাবে, তারপর আবার নতুনভাবে জন্ম লাভ করবে? (সূরা সাবা- ৭)
তারা বলে, কোন মৃতকে জীবিত হতে দেখা যায়নি :
اِنَّ هٰۤؤُلَآءِ لَيَقُوْلُوْنَ – اِنْ هِيَ اِلَّا مَوْتَتُنَا الْاُوْلٰى وَمَا نَحْنُ بِمُنْشَرِيْنَ – فَاْتُوْا بِاٰبَآئِنَاۤ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ
নিশ্চয় তারা বলে থাকে যে, আমাদের প্রথম মৃত্যু ব্যতীত আর কিছুই নেই এবং আমরা আর পুনরুত্থিতও হব না। অতএব যদি তোমরা সত্যবাদী হও, তবে আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে উপস্থিত করো। (সূরা দুখান- ৩৪, ৩৫)
এসব ভ্রান্ত ধারণার জবাব :
وَضَرَبَ لَنَا مَثَلًا وَّنَسِيَ خَلْقَهٗؕ قَالَ مَنْ يُّحْيِ الْعِظَامَ وَهِيَ رَمِيْمٌ – قُلْ يُحْيِيْهَا الَّذِيْۤ اَنْشَاَهَاۤ اَوَّلَ مَرَّةٍؕ وَهُوَ بِكُلِّ خَلْقٍ عَلِيْمٌ – اَلَّذِيْ جَعَلَ لَكُمْ مِّنَ الشَّجَرِ الْاَخْضَرِ نَارًا فَاِذَاۤ اَنْتُمْ مِّنْهُ تُوْقِدُوْنَ – اَوَلَيْسَ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ بِقَادِرٍ عَلٰۤى اَنْ يَّخْلُقَ مِثْلَهُمْؕ بَلٰىۗ وَهُوَ الْخَلَّاقُ الْعَلِيْمُ – اِنَّمَاۤ اَمْرُهٗۤ اِذَاۤ اَرَادَ شَيْئًا اَنْ يَّقُوْلَ لَهٗ كُنْ فَيَكُوْنُ – فَسُبْحَانَ الَّذِيْ بِيَدِهٖ مَلَكُوْتُ كُلِّ شَيْءٍ وَّاِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ
সে আমার সম্পর্কে উদাহরণ বর্ণনা করে, অথচ সে নিজের সৃষ্টির কথাই ভুলে যায়। সে বলে, এ হাড়গুলোকে কে জীবিত করবে, যখন তা পঁচে গলে যাবে? বলো, তিনিই এগুলোকে আবার জীবিত করবেন, যিনি তা প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি সর্বপ্রকার সৃষ্টি সম্পর্কে সম্যক অবগত আছেন। যিনি সবুজ গাছ থেকে তোমাদের জন্য আগুন উৎপন্ন করেন, অতঃপর তোমরা তা থেকে আগুন জ্বালাও। যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি এদের অনুরূপ (আরো অন্য কিছু) সৃষ্টি করতে সক্ষম নন? হ্যাঁ, তিনি বিজ্ঞ সৃষ্টিকর্তা। বস্তুত তাঁর সৃষ্টিকার্য এরূপ যে, যখন তিনি কোনকিছু সৃষ্টি করতে ইচ্ছা করেন, তখন তিনি তাকে বলেন, ‘‘হও’’, অমনি তা হয়ে যায়। অতএব তিনি পবিত্র, যাঁর হাতে রয়েছে সর্ববিষয়ের সর্বময় ক্ষমতা এবং তাঁরই নিকট তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে। (সূরা ইয়াসীন, ৭৮-৮৩)
শানে নুযূল : আস ইবনে ওয়ায়িল নামক এক ব্যক্তি একখন্ড পুরাতন হাড়সহ রাসূল ﷺ এর কাছে উপস্থিত হয়ে দু’আঙ্গুল দ্বারা তাকে ঘষে বলল, এমন অবস্থার পরও কি পুনরায় এটা জীবিত হবে? রাসূল ﷺ বললেন, হ্যাঁ- আর তুমি জাহান্নামে প্রবেশ করবে। এ প্রসঙ্গে উক্ত আয়াতটি নাযিল হয়।
(ইবনে কাসীর ৬ষ্ট খন্ড, ৫৯৩; পৃঃ ফতহুল কাদীর ৬ষ্ট খন্ড, ১৮৪ পৃঃ)
কালের বিবর্তনই মৃত্যু নিয়ে আসে- এ ধারণার জবাব :
وَقَالُوْا مَا هِيَ اِلَّا حَيَاتُنَا الدُّنْيَا نَمُوْتُ وَنَحْيَا وَمَا يُهْلِكُنَاۤ اِلَّا الدَّهْرُۚ وَمَا لَهُمْ بِذٰلِكَ مِنْ عِلْمٍۚ اِنْ هُمْ اِلَّا يَظُنُّوْنَ
তারা বলে, আমরা মরি ও বাঁচি পার্থিব জীবনই আমাদের একমাত্র জীবন, কালের আবর্তনই আমাদেরকে ধ্বংস করে। বস্তুত এ ব্যাপারে তাদের কোন জ্ঞান নেই, তারা তো শুধু ধারণার উপর ভিত্তি করেই কথা বলে থাকে। (সূরা জাসিয়া- ২৪)
قُلِ اللهُ يُحْيِيْكُمْ ثُمَّ يُمِيْتُكُمْ ثُمَّ يَجْمَعُكُمْ اِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ لَا رَيْبَ فِيْهِ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ
বলো, আল্লাহই তোমাদেরকে জীবিত করেন ও তোমাদের মৃত্যু ঘটান। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে কিয়ামত দিবসে একত্রিত করবেন, যাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। (সূরা জাসিয়া- ২৬)
মৃত্যুর পর জীবিত হতে হবে না- এ ধারণার জবাব :
وَكَانُوْا يَقُوْلُوْنَ اَئِذَا مِتْنَا وَكُنَّا تُرَابًا وَّعِظَامًا اَئِنَّا لَمَبْعُوْثُوْنَ – اَوَاٰبَآؤُنَا الْاَوَّلُوْنَ – قُلْ اِنَّ الْاَوَّلِيْنَ وَالْاٰخِرِيْنَ لَمَجْمُوْعُوْن ‐ اِلٰى مِيْقَاتِ يَوْمٍ مَّعْلُوْمٍ
তারা বলে থাকে যে, যখন আমরা মৃত্যুবরণ করব এবং মাটি ও হাড্ডিতে পরিণত হব, তবুও কি আমরা পুনরায় উত্থিত হব? (তখন) আমাদের পূর্বপুরুষরাও কি (পুনরুত্থিত হবে)? বলো, অবশ্যই পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সকলেই (পুনরুত্থিত হবে)। সকলকে একটি নির্দিষ্ট দিনের নির্ধারিত সময়ে একত্রিত করা হবে। (সূরা ওয়াক্বিয়া, ৪৭-৫০)
পুনরায় জীবিত করা কঠিন কাজ- এ ধারণার জবাব :
اِنَّا نَحْنُ نُحْيِيْ وَنُمِيْتُ وَاِلَيْنَا الْمَصِيْرُ – يَوْمَ تَشَقَّقُ الْاَرْضُ عَنْهُمْ سِرَاعًاؕ ذٰلِكَ حَشْرٌ عَلَيْنَا يَسِيْرٌ
আমিই জীবিত করি এবং মৃত্যুও ঘটাই; আর সকলেই আমার দিকে ফিরে আসবে। যেদিন পৃথিবী বিদীর্ণ হবে এবং লোকেরা দ্রুতবেগে বের হয়ে আসবে, এই সমবেতকরণ আমার জন্য খুবই সহজ। (সূরা ক্বাফ- ৪৩, ৪৪)
প্রতিটি মৃতদেহের ক্ষুদ্রাংশের জ্ঞানও আল্লাহর রয়েছে :
وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَا تَاْتِيْنَا السَّاعَةُؕ قُلْ بَلٰى وَرَبِّيْ لَتَاْتِيَنَّكُمْ عَالِمِ الْغَيْبِۚ لَا يَعْزُبُ عَنْهُ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ فِى السَّمَاوَاتِ وَلَا فِى الْاَرْضِ وَلَاۤ اَصْغَرُ مِنْ ذٰلِكَ وَلَاۤ اَكْبَرُ اِلَّا فِيْ كِتَابٍ مُّبِيْنٍ
কাফিররা বলে থাকে যে, আমাদের উপর কিয়ামত আসবে না। আপনি বলে দিন, কেন আসবে না? আমার প্রতিপালকের শপথ! অবশ্যই তা তোমাদের উপর আসবে। তিনি অদৃশ্যের বিষয় সম্পর্কে অবহিত। আকাশে ও পৃথিবীতে ক্ষুদ্রতম ও বৃহত্তম এমন অণুপরিমাণ জিনিসও নেই, যা তাঁর জানা নেই। আর এসবই প্রকাশ্য গ্রন্থেহ লিপিবদ্ধ আছে। (সূরা সাবা- ৩)
দুনিয়াতে অস্বীকার করলেও পরকালে সবাই বিশ্বাস করবে :
وَقَالُوْاۤ اِنْ هِيَ اِلَّا حَيَاتُنَا الدُّنْيَا وَمَا نَحْنُ بِمَبْعُوْثِيْنَ – وَلَوْ تَرٰۤى اِذْ وُقِفُوْا عَلٰى رَبِّهِمْؕ قَالَ اَلَيْسَ هٰذَا بِالْحَقِّؕ قَالُوْا بَلٰى وَرَبِّنَاؕ قَالَ فَذُوْقُوا الْعَذَابَ بِمَا كُنْتُمْ تَكْفُرُوْنَ
তারা বলে, আমাদের পার্থিব জীবনই একমাত্র জীবন এবং আমরা পুনরুত্থিতও হব না। তুমি যদি দেখতে, যখন তাদেরকে তাদের প্রতিপালকের সম্মুখে দাঁড় করানো হবে এবং যখন তিনি বলবেন, এটা কি প্রকৃত সত্য নয়? তারা বলবে, আমাদের প্রতিপালকের শপথ! নিশ্চয় সত্য। তিনি বলবেন, তবে তোমরা যে কুফরী করতে এখন তার জন্য শাস্তি ভোগ করো। (সূরা আন‘আম- ২৯, ৩০)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ যদিও আখিরাতের প্রমাণ পেশ করার মতো বহু সাক্ষ্য ও নিদর্শন রয়েছে এবং সেগুলো থেকে গাফিল হওয়ার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই, তবুও এরা নিজেরাই গাফিল থাকছে। অন্যথায় এটা তাদের নিজেদের ভুল। তারা দুনিয়ার জীবনের এ বাহ্যিক পর্দার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বসে রয়েছে। কিন্তু এর পেছনে যা কিছু আসছে সে সম্পর্কে তারা কিছুই জানে না। নতুবা আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদেরকে জানানোর ব্যাপারে কোন ত্রুটি করা হয়নি। দুনিয়াতে এ সত্য অস্বীকার করলেও পরকালে যখন সরাসরি দেখবে তখন আর কেউ তা অস্বীকার করতে পারবে না।
তখন শুধুই আফসোস করতে থাকবে :
قَدْ خَسِرَ الَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِلِقَآءِ اللهِؕ حَتّٰۤى اِذَا جَآءَتْهُمُ السَّاعَةُ بَغْتَةً قَالُوْا يَا حَسْرَتَنَا عَلٰى مَا فَرَّطْنَا فِيْهَا وَهُمْ يَحْمِلُوْنَ اَوْزَارَهُمْ عَلٰى ظُهُوْرِهِمْؕ اَ لَا سَآءَ مَا يَزِرُوْنَ
যারা আল্লাহর সম্মুখীন হওয়াকে মিথ্যা বলেছে, অবশ্যই তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমনকি আকস্মিকভাবে তাদের নিকট যখন কিয়ামত উপস্থিত হবে তখন তারা বলবে, হায় আফসোস! আমরা তো একে অবহেলা করতাম। অতঃপর তারা তাদের পিঠে নিজেদের পাপ বহন করবে। দেখো, তারা যা বহন করবে তা কতই না নিকৃষ্ট! (সূরা আন‘আম- ৩১)
মানুষ আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবেই :
يَاۤ اَيُّهَا الْاِنْسَانُ اِنَّكَ كَادِحٌ اِلٰى رَبِّكَ كَدْحًا فَمُلَاقِيْهِ
হে মানব! তুমি তোমার প্রতিপালকের নিকট পৌঁছার জন্য কঠোর সাধনা করছ। অতএব তাঁর সাক্ষাৎ লাভ ঘটবেই। (সূরা ইনশিক্বাক- ৬)
আল্লাহ সকলের হাশর ঘটাবেন :
وَاِنَّ رَبَّكَ هُوَ يَحْشُرُهُمْ اِنَّهٗ حَكِيْمٌ عَلِيْمٌ
তোমার প্রতিপালকই তাদেরকে সমবেত করবেন; তিনি প্রজ্ঞাময় ও সর্বজ্ঞ। (সূরা হিজর- ২৫)
সকলকে আল্লাহর দিকেই ফিরে যেতে হবে :
وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّكُمْ اِلَيْهِ تُحْشَرُوْنَ
জেনে রেখো! তোমরা সকলেই তাঁর দিকে সমবেত হবে। (সূরা বাক্বারা- ২০৩)
قُلْ هُوَ الَّذِيْ ذَرَاَكُمْ فِى الْاَرْضِ وَاِلَيْهِ تُحْشَرُوْنَ
বলো, তিনিই তোমাদেরকে পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছেন; অতঃপর তোমাদেরকে তাঁরই কাছে একত্রিত করা হবে। (সূরা মুলক- ২৪)
জিন-ইনসান সকলেরই হাশর হবে :
وَيَوْمَ يَحْشُرُهُمْ جَمِيْعًا
সেদিন তিনি তাদের সকলকে একত্র করবেন। (সূরা আন‘আম- ১২৮)
পশু-পাখিরও হাশর হবে :
وَمَا مِنْ دَآبَّةٍ فِى الْاَرْضِ وَلَا طَآئِرٍ يَّطِيْرُ بِجَنَاحَيْهِ اِلَّاۤ اُمَمٌ اَمْثَالُكُمْؕ مَا فَرَّطْنَا فِى الْكِتَابِ مِنْ شَيْءٍ ثُمَّ اِلٰى رَبِّهِمْ يُحْشَرُوْنَ
ভূপৃষ্ঠে বিচরণশীল যত জীব আছে অথবা নিজ ডানার সাহায্যে উড়ে এমন যত পাখী আছে তারা প্রত্যেকেই তোমাদের মতো এক একটি উম্মত। কিতাবে কোনকিছুই আমি বাদ দেইনি। অতঃপর স্বীয় প্রতিপালকের দিকে তাদেরকেও একত্র করা হবে। (সূরা আন‘আম- ৩৮)
শয়তানেরও হাশর হবে :
فَوَرَبِّكَ لَنَحْشُرَنَّهُمْ وَالشَّيَاطِيْنَ ثُمَّ لَنُحْضِرَنَّهُمْ حَوْلَ جَهَنَّمَ جِثِيًّا
সুতরাং শপথ তোমার প্রতিপালকের! আমি তো তাদেরকে এবং শয়তানদেরকে একত্রে সমবেত করবই। তারপর আমি অবশ্যই তাদেরকে নতজানু অবস্থায় জাহান্নামে উপস্থিত করব। (সূরা মারইয়াম- ৬৮)
মুশরিকদের উপাস্যদেরও হাশর হবে :
وَيَوْمَ يَحْشُرُهُمْ وَمَا يَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ فَيَقُوْلُ اَاَنْتُمْ اَضْلَلْتُمْ عِبَادِيْ هٰۤؤُلَآءِ اَمْ هُمْ ضَلُّوا السَّبِيْلَ
যেদিন তিনি তাদেরকে এবং তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদাত করত তাদেরকে একত্র করবেন। সেদিন তিনি জিজ্ঞেস করবেন, তোমরাই কি আমার এ বান্দাদেরকে বিভ্রামত্ম করেছিলে, না তারা নিজেরাই পথভ্রষ্ট হয়েছিল? (সূরা ফুরক্বান- ১৭)
اُحْشُرُوا الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا وَاَزْوَاجَهُمْ وَمَا كَانُوْا يَعْبُدُوْنَ
ফেরেশতাদেরকে বলা হবে- যালিমদেরকে, তাদের সাথিদেরকে এবং তারা যাদের ইবাদাত করত তাদেরকে একত্র করো। (সূরা সাফ্ফাত- ২২)
কাফিরদের হাশর হবে জাহান্নামের দিকে :
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اِلٰى جَهَنَّمَ يُحْشَرُوْنَ
যারা কুফরী করে তাদেরকে জাহান্নামের দিকে সমবেত করা হবে। (সূরা আনফাল- ৩৬)
قُلْ لِّلَّذِيْنَ كَفَرُوْا سَتُغْلَبُوْنَ وَتُحْشَرُوْنَ اِلٰى جَهَنَّمَ وَبِئْسَ الْمِهَادُ
যারা কুফরী করেছে তাদেরকে বলো, অচিরেই তোমরা পরাজিত হবে এবং জাহান্নামে একত্রিত হবে। আর তা কতই না নিকৃষ্ট বাসস্থান! (সূরা আলে ইমরান- ১২)
মুমিনদের হাশর হবে আল্লাহর দিকে :
يَوْمَ نَحْشُرُ الْمُتَّقِيْنَ اِلَى الرَّحْمٰنِ وَفْدًا
সেদিন মুত্তাক্বীদেরকে দয়াময়ের নিকট সম্মানিত মেহমান হিসেবে সমবেত করব। (সূরা মারইয়াম- ৮৫)
اَئِذَا مِتْنَا وَكُنَّا تُرَابًا وَّعِظَامًا اَئِنَّا لَمَبْعُوْثُوْنَ – اَوَاٰبَآؤُنَا الْاَوَّلُوْنَ
(কাফিররা বলল) আমরা যখন মৃত্যুবরণ করব এবং মাটি ও হাড্ডিতে পরিণত হব, তারপরও কি আমরা পু্নরুত্থিত হব? (তখন) আমাদের পূর্ববর্তীদেরকেও কি (পুনরুত্থিত করা হবে)? (সূরা সাফ্ফাত- ১৬, ১৭)
وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا هَلْ نَدُلُّكُمْ عَلٰى رَجُلٍ يُّنَبِّئُكُمْ اِذَا مُزِّقْتُمْ كُلَّ مُمَزَّقٍ اِنَّكُمْ لَفِيْ خَلْقٍ جَدِيْدٍ
কাফিররা বলে, আমরা কি তোমাদেরকে এমন এক ব্যক্তির সন্ধান দেব, যে তোমাদেরকে সংবাদ দেয় যে, যখন তোমরা সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন বিছিন্ন হয়ে যাবে, তারপর আবার নতুনভাবে জন্ম লাভ করবে? (সূরা সাবা- ৭)
তারা বলে, কোন মৃতকে জীবিত হতে দেখা যায়নি :
اِنَّ هٰۤؤُلَآءِ لَيَقُوْلُوْنَ – اِنْ هِيَ اِلَّا مَوْتَتُنَا الْاُوْلٰى وَمَا نَحْنُ بِمُنْشَرِيْنَ – فَاْتُوْا بِاٰبَآئِنَاۤ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ
নিশ্চয় তারা বলে থাকে যে, আমাদের প্রথম মৃত্যু ব্যতীত আর কিছুই নেই এবং আমরা আর পুনরুত্থিতও হব না। অতএব যদি তোমরা সত্যবাদী হও, তবে আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে উপস্থিত করো। (সূরা দুখান- ৩৪, ৩৫)
এসব ভ্রান্ত ধারণার জবাব :
وَضَرَبَ لَنَا مَثَلًا وَّنَسِيَ خَلْقَهٗؕ قَالَ مَنْ يُّحْيِ الْعِظَامَ وَهِيَ رَمِيْمٌ – قُلْ يُحْيِيْهَا الَّذِيْۤ اَنْشَاَهَاۤ اَوَّلَ مَرَّةٍؕ وَهُوَ بِكُلِّ خَلْقٍ عَلِيْمٌ – اَلَّذِيْ جَعَلَ لَكُمْ مِّنَ الشَّجَرِ الْاَخْضَرِ نَارًا فَاِذَاۤ اَنْتُمْ مِّنْهُ تُوْقِدُوْنَ – اَوَلَيْسَ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ بِقَادِرٍ عَلٰۤى اَنْ يَّخْلُقَ مِثْلَهُمْؕ بَلٰىۗ وَهُوَ الْخَلَّاقُ الْعَلِيْمُ – اِنَّمَاۤ اَمْرُهٗۤ اِذَاۤ اَرَادَ شَيْئًا اَنْ يَّقُوْلَ لَهٗ كُنْ فَيَكُوْنُ – فَسُبْحَانَ الَّذِيْ بِيَدِهٖ مَلَكُوْتُ كُلِّ شَيْءٍ وَّاِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ
সে আমার সম্পর্কে উদাহরণ বর্ণনা করে, অথচ সে নিজের সৃষ্টির কথাই ভুলে যায়। সে বলে, এ হাড়গুলোকে কে জীবিত করবে, যখন তা পঁচে গলে যাবে? বলো, তিনিই এগুলোকে আবার জীবিত করবেন, যিনি তা প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি সর্বপ্রকার সৃষ্টি সম্পর্কে সম্যক অবগত আছেন। যিনি সবুজ গাছ থেকে তোমাদের জন্য আগুন উৎপন্ন করেন, অতঃপর তোমরা তা থেকে আগুন জ্বালাও। যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি এদের অনুরূপ (আরো অন্য কিছু) সৃষ্টি করতে সক্ষম নন? হ্যাঁ, তিনি বিজ্ঞ সৃষ্টিকর্তা। বস্তুত তাঁর সৃষ্টিকার্য এরূপ যে, যখন তিনি কোনকিছু সৃষ্টি করতে ইচ্ছা করেন, তখন তিনি তাকে বলেন, ‘‘হও’’, অমনি তা হয়ে যায়। অতএব তিনি পবিত্র, যাঁর হাতে রয়েছে সর্ববিষয়ের সর্বময় ক্ষমতা এবং তাঁরই নিকট তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে। (সূরা ইয়াসীন, ৭৮-৮৩)
শানে নুযূল : আস ইবনে ওয়ায়িল নামক এক ব্যক্তি একখন্ড পুরাতন হাড়সহ রাসূল ﷺ এর কাছে উপস্থিত হয়ে দু’আঙ্গুল দ্বারা তাকে ঘষে বলল, এমন অবস্থার পরও কি পুনরায় এটা জীবিত হবে? রাসূল ﷺ বললেন, হ্যাঁ- আর তুমি জাহান্নামে প্রবেশ করবে। এ প্রসঙ্গে উক্ত আয়াতটি নাযিল হয়।
(ইবনে কাসীর ৬ষ্ট খন্ড, ৫৯৩; পৃঃ ফতহুল কাদীর ৬ষ্ট খন্ড, ১৮৪ পৃঃ)
কালের বিবর্তনই মৃত্যু নিয়ে আসে- এ ধারণার জবাব :
وَقَالُوْا مَا هِيَ اِلَّا حَيَاتُنَا الدُّنْيَا نَمُوْتُ وَنَحْيَا وَمَا يُهْلِكُنَاۤ اِلَّا الدَّهْرُۚ وَمَا لَهُمْ بِذٰلِكَ مِنْ عِلْمٍۚ اِنْ هُمْ اِلَّا يَظُنُّوْنَ
তারা বলে, আমরা মরি ও বাঁচি পার্থিব জীবনই আমাদের একমাত্র জীবন, কালের আবর্তনই আমাদেরকে ধ্বংস করে। বস্তুত এ ব্যাপারে তাদের কোন জ্ঞান নেই, তারা তো শুধু ধারণার উপর ভিত্তি করেই কথা বলে থাকে। (সূরা জাসিয়া- ২৪)
قُلِ اللهُ يُحْيِيْكُمْ ثُمَّ يُمِيْتُكُمْ ثُمَّ يَجْمَعُكُمْ اِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ لَا رَيْبَ فِيْهِ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ
বলো, আল্লাহই তোমাদেরকে জীবিত করেন ও তোমাদের মৃত্যু ঘটান। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে কিয়ামত দিবসে একত্রিত করবেন, যাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। (সূরা জাসিয়া- ২৬)
মৃত্যুর পর জীবিত হতে হবে না- এ ধারণার জবাব :
وَكَانُوْا يَقُوْلُوْنَ اَئِذَا مِتْنَا وَكُنَّا تُرَابًا وَّعِظَامًا اَئِنَّا لَمَبْعُوْثُوْنَ – اَوَاٰبَآؤُنَا الْاَوَّلُوْنَ – قُلْ اِنَّ الْاَوَّلِيْنَ وَالْاٰخِرِيْنَ لَمَجْمُوْعُوْن ‐ اِلٰى مِيْقَاتِ يَوْمٍ مَّعْلُوْمٍ
তারা বলে থাকে যে, যখন আমরা মৃত্যুবরণ করব এবং মাটি ও হাড্ডিতে পরিণত হব, তবুও কি আমরা পুনরায় উত্থিত হব? (তখন) আমাদের পূর্বপুরুষরাও কি (পুনরুত্থিত হবে)? বলো, অবশ্যই পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সকলেই (পুনরুত্থিত হবে)। সকলকে একটি নির্দিষ্ট দিনের নির্ধারিত সময়ে একত্রিত করা হবে। (সূরা ওয়াক্বিয়া, ৪৭-৫০)
পুনরায় জীবিত করা কঠিন কাজ- এ ধারণার জবাব :
اِنَّا نَحْنُ نُحْيِيْ وَنُمِيْتُ وَاِلَيْنَا الْمَصِيْرُ – يَوْمَ تَشَقَّقُ الْاَرْضُ عَنْهُمْ سِرَاعًاؕ ذٰلِكَ حَشْرٌ عَلَيْنَا يَسِيْرٌ
আমিই জীবিত করি এবং মৃত্যুও ঘটাই; আর সকলেই আমার দিকে ফিরে আসবে। যেদিন পৃথিবী বিদীর্ণ হবে এবং লোকেরা দ্রুতবেগে বের হয়ে আসবে, এই সমবেতকরণ আমার জন্য খুবই সহজ। (সূরা ক্বাফ- ৪৩, ৪৪)
প্রতিটি মৃতদেহের ক্ষুদ্রাংশের জ্ঞানও আল্লাহর রয়েছে :
وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَا تَاْتِيْنَا السَّاعَةُؕ قُلْ بَلٰى وَرَبِّيْ لَتَاْتِيَنَّكُمْ عَالِمِ الْغَيْبِۚ لَا يَعْزُبُ عَنْهُ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ فِى السَّمَاوَاتِ وَلَا فِى الْاَرْضِ وَلَاۤ اَصْغَرُ مِنْ ذٰلِكَ وَلَاۤ اَكْبَرُ اِلَّا فِيْ كِتَابٍ مُّبِيْنٍ
কাফিররা বলে থাকে যে, আমাদের উপর কিয়ামত আসবে না। আপনি বলে দিন, কেন আসবে না? আমার প্রতিপালকের শপথ! অবশ্যই তা তোমাদের উপর আসবে। তিনি অদৃশ্যের বিষয় সম্পর্কে অবহিত। আকাশে ও পৃথিবীতে ক্ষুদ্রতম ও বৃহত্তম এমন অণুপরিমাণ জিনিসও নেই, যা তাঁর জানা নেই। আর এসবই প্রকাশ্য গ্রন্থেহ লিপিবদ্ধ আছে। (সূরা সাবা- ৩)
দুনিয়াতে অস্বীকার করলেও পরকালে সবাই বিশ্বাস করবে :
وَقَالُوْاۤ اِنْ هِيَ اِلَّا حَيَاتُنَا الدُّنْيَا وَمَا نَحْنُ بِمَبْعُوْثِيْنَ – وَلَوْ تَرٰۤى اِذْ وُقِفُوْا عَلٰى رَبِّهِمْؕ قَالَ اَلَيْسَ هٰذَا بِالْحَقِّؕ قَالُوْا بَلٰى وَرَبِّنَاؕ قَالَ فَذُوْقُوا الْعَذَابَ بِمَا كُنْتُمْ تَكْفُرُوْنَ
তারা বলে, আমাদের পার্থিব জীবনই একমাত্র জীবন এবং আমরা পুনরুত্থিতও হব না। তুমি যদি দেখতে, যখন তাদেরকে তাদের প্রতিপালকের সম্মুখে দাঁড় করানো হবে এবং যখন তিনি বলবেন, এটা কি প্রকৃত সত্য নয়? তারা বলবে, আমাদের প্রতিপালকের শপথ! নিশ্চয় সত্য। তিনি বলবেন, তবে তোমরা যে কুফরী করতে এখন তার জন্য শাস্তি ভোগ করো। (সূরা আন‘আম- ২৯, ৩০)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ যদিও আখিরাতের প্রমাণ পেশ করার মতো বহু সাক্ষ্য ও নিদর্শন রয়েছে এবং সেগুলো থেকে গাফিল হওয়ার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই, তবুও এরা নিজেরাই গাফিল থাকছে। অন্যথায় এটা তাদের নিজেদের ভুল। তারা দুনিয়ার জীবনের এ বাহ্যিক পর্দার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বসে রয়েছে। কিন্তু এর পেছনে যা কিছু আসছে সে সম্পর্কে তারা কিছুই জানে না। নতুবা আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদেরকে জানানোর ব্যাপারে কোন ত্রুটি করা হয়নি। দুনিয়াতে এ সত্য অস্বীকার করলেও পরকালে যখন সরাসরি দেখবে তখন আর কেউ তা অস্বীকার করতে পারবে না।
তখন শুধুই আফসোস করতে থাকবে :
قَدْ خَسِرَ الَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِلِقَآءِ اللهِؕ حَتّٰۤى اِذَا جَآءَتْهُمُ السَّاعَةُ بَغْتَةً قَالُوْا يَا حَسْرَتَنَا عَلٰى مَا فَرَّطْنَا فِيْهَا وَهُمْ يَحْمِلُوْنَ اَوْزَارَهُمْ عَلٰى ظُهُوْرِهِمْؕ اَ لَا سَآءَ مَا يَزِرُوْنَ
যারা আল্লাহর সম্মুখীন হওয়াকে মিথ্যা বলেছে, অবশ্যই তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমনকি আকস্মিকভাবে তাদের নিকট যখন কিয়ামত উপস্থিত হবে তখন তারা বলবে, হায় আফসোস! আমরা তো একে অবহেলা করতাম। অতঃপর তারা তাদের পিঠে নিজেদের পাপ বহন করবে। দেখো, তারা যা বহন করবে তা কতই না নিকৃষ্ট! (সূরা আন‘আম- ৩১)
মানুষ আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবেই :
يَاۤ اَيُّهَا الْاِنْسَانُ اِنَّكَ كَادِحٌ اِلٰى رَبِّكَ كَدْحًا فَمُلَاقِيْهِ
হে মানব! তুমি তোমার প্রতিপালকের নিকট পৌঁছার জন্য কঠোর সাধনা করছ। অতএব তাঁর সাক্ষাৎ লাভ ঘটবেই। (সূরা ইনশিক্বাক- ৬)
আল্লাহ সকলের হাশর ঘটাবেন :
وَاِنَّ رَبَّكَ هُوَ يَحْشُرُهُمْ اِنَّهٗ حَكِيْمٌ عَلِيْمٌ
তোমার প্রতিপালকই তাদেরকে সমবেত করবেন; তিনি প্রজ্ঞাময় ও সর্বজ্ঞ। (সূরা হিজর- ২৫)
সকলকে আল্লাহর দিকেই ফিরে যেতে হবে :
وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّكُمْ اِلَيْهِ تُحْشَرُوْنَ
জেনে রেখো! তোমরা সকলেই তাঁর দিকে সমবেত হবে। (সূরা বাক্বারা- ২০৩)
قُلْ هُوَ الَّذِيْ ذَرَاَكُمْ فِى الْاَرْضِ وَاِلَيْهِ تُحْشَرُوْنَ
বলো, তিনিই তোমাদেরকে পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছেন; অতঃপর তোমাদেরকে তাঁরই কাছে একত্রিত করা হবে। (সূরা মুলক- ২৪)
জিন-ইনসান সকলেরই হাশর হবে :
وَيَوْمَ يَحْشُرُهُمْ جَمِيْعًا
সেদিন তিনি তাদের সকলকে একত্র করবেন। (সূরা আন‘আম- ১২৮)
পশু-পাখিরও হাশর হবে :
وَمَا مِنْ دَآبَّةٍ فِى الْاَرْضِ وَلَا طَآئِرٍ يَّطِيْرُ بِجَنَاحَيْهِ اِلَّاۤ اُمَمٌ اَمْثَالُكُمْؕ مَا فَرَّطْنَا فِى الْكِتَابِ مِنْ شَيْءٍ ثُمَّ اِلٰى رَبِّهِمْ يُحْشَرُوْنَ
ভূপৃষ্ঠে বিচরণশীল যত জীব আছে অথবা নিজ ডানার সাহায্যে উড়ে এমন যত পাখী আছে তারা প্রত্যেকেই তোমাদের মতো এক একটি উম্মত। কিতাবে কোনকিছুই আমি বাদ দেইনি। অতঃপর স্বীয় প্রতিপালকের দিকে তাদেরকেও একত্র করা হবে। (সূরা আন‘আম- ৩৮)
শয়তানেরও হাশর হবে :
فَوَرَبِّكَ لَنَحْشُرَنَّهُمْ وَالشَّيَاطِيْنَ ثُمَّ لَنُحْضِرَنَّهُمْ حَوْلَ جَهَنَّمَ جِثِيًّا
সুতরাং শপথ তোমার প্রতিপালকের! আমি তো তাদেরকে এবং শয়তানদেরকে একত্রে সমবেত করবই। তারপর আমি অবশ্যই তাদেরকে নতজানু অবস্থায় জাহান্নামে উপস্থিত করব। (সূরা মারইয়াম- ৬৮)
মুশরিকদের উপাস্যদেরও হাশর হবে :
وَيَوْمَ يَحْشُرُهُمْ وَمَا يَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ فَيَقُوْلُ اَاَنْتُمْ اَضْلَلْتُمْ عِبَادِيْ هٰۤؤُلَآءِ اَمْ هُمْ ضَلُّوا السَّبِيْلَ
যেদিন তিনি তাদেরকে এবং তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদাত করত তাদেরকে একত্র করবেন। সেদিন তিনি জিজ্ঞেস করবেন, তোমরাই কি আমার এ বান্দাদেরকে বিভ্রামত্ম করেছিলে, না তারা নিজেরাই পথভ্রষ্ট হয়েছিল? (সূরা ফুরক্বান- ১৭)
اُحْشُرُوا الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا وَاَزْوَاجَهُمْ وَمَا كَانُوْا يَعْبُدُوْنَ
ফেরেশতাদেরকে বলা হবে- যালিমদেরকে, তাদের সাথিদেরকে এবং তারা যাদের ইবাদাত করত তাদেরকে একত্র করো। (সূরা সাফ্ফাত- ২২)
কাফিরদের হাশর হবে জাহান্নামের দিকে :
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اِلٰى جَهَنَّمَ يُحْشَرُوْنَ
যারা কুফরী করে তাদেরকে জাহান্নামের দিকে সমবেত করা হবে। (সূরা আনফাল- ৩৬)
قُلْ لِّلَّذِيْنَ كَفَرُوْا سَتُغْلَبُوْنَ وَتُحْشَرُوْنَ اِلٰى جَهَنَّمَ وَبِئْسَ الْمِهَادُ
যারা কুফরী করেছে তাদেরকে বলো, অচিরেই তোমরা পরাজিত হবে এবং জাহান্নামে একত্রিত হবে। আর তা কতই না নিকৃষ্ট বাসস্থান! (সূরা আলে ইমরান- ১২)
মুমিনদের হাশর হবে আল্লাহর দিকে :
يَوْمَ نَحْشُرُ الْمُتَّقِيْنَ اِلَى الرَّحْمٰنِ وَفْدًا
সেদিন মুত্তাক্বীদেরকে দয়াময়ের নিকট সম্মানিত মেহমান হিসেবে সমবেত করব। (সূরা মারইয়াম- ৮৫)
যিনি আসমান-জমিন সৃষ্টি করেছেন, তিনি পুনরুত্থানও ঘটাতে পারবেন :
اَوَلَمْ يَرَوْا اَنَّ اللهَ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ قَادِرٌ عَلٰۤى اَنْ يَّخْلُقَ مِثْلَهُمْ وَجَعَلَ لَهُمْ اَجَلًا لَّا رَيْبَ فِيْهِؕ فَاَبَى الظَّالِمُوْنَ اِلَّا كُفُوْرًا
তারা কি লক্ষ্য করে না যে, নিশ্চয় আল্লাহ সেই সত্তা, যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। আর তিনি তাদের অনুরূপ (আরো) সৃষ্টি করতে ক্ষমতাবান? তিনি তাদের জন্য স্থির করেছেন এক নির্দিষ্ট কাল, যাতে কোন সন্দেহ নেই। তারপরও সীমালঙ্ঘনকারীরা কুফরী করেই চলেছে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৯৯)
اَوَلَمْ يَرَوْا اَنَّ اللهَ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ وَلَمْ يَعْيَ بِخَلْقِهِنَّ بِقَادِرٍ عَلٰۤى اَنْ يُّحْيِيَ الْمَوْتٰىؕ بَلٰۤى اِنَّهٗ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
তারা কি লক্ষ্য করে না যে, আল্লাহ এমন সত্তা, যিনি জমিন ও আসমান সৃষ্টি করেছেন এবং এসব সৃষ্টিতে তিনি ক্লান্তও হননি। তিনি এমন সত্তা, যিনি মৃতকে জীবিত করার ক্ষমতা রাখেন। নিশ্চয় তিনি সবকিছুর উপর শক্তিশালী। (সূরা আহকাফ- ৩৩)
মানুষ সৃষ্টি করার চেয়ে আসমান-জমিন সৃষ্টি করা অনেক কঠিন :
لَخَلْقُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ اَ كْبَرُ مِنْ خَلْقِ النَّاسِ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ
মানব সৃষ্টির চেয়ে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি অবশ্যই অনেক বড় কাজ; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। (সূরা মু’মিন- ৫৭)
মৃত জমিনকে জীবিত করা পুনর্জীবনের প্রমাণ :
وَاللهُ الَّذِيْۤ اَرْسَلَ الرِّيَاحَ فَتُثِيْرُ سَحَابًا فَسُقْنَاهُ اِلٰى بَلَدٍ مَّيِّتٍ فَاَحْيَيْنَا بِهِ الْاَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَاؕ كَذٰلِكَ النُّشُوْرُ
তিনিই আল্লাহ, যিনি বাতাস প্রেরণ করেন এবং এর দ্বারা মেঘমালাকে পরিচালিত করেন। অতঃপর আমি তা পরিচালিত করি মৃত ভূখন্ডের দিকে, তারপর আমি এর মাধ্যমে মৃত জমিনকে পুনরুজ্জীবিত করে দেই। (সূরা ফাতির- ৯)
وَمِنْ اٰيَاتِهٖۤ اَنَّكَ تَرَى الْاَرْضَ خَاشِعَةً فَاِذَاۤ اَنْزَلْنَا عَلَيْهَا الْمَآءَ اهْتَزَّتْ وَرَبَتْؕ اِنَّ الَّذِيْۤ اَحْيَاهَا لَمُحْيِى الْمَوْتٰىؕ اِنَّهٗ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
তাঁর একটি নিদর্শন এই যে, তুমি ভূমিকে শুষ্ক দেখতে পাও। অতঃপর যখন আমি তাতে বৃষ্টি বর্ষণ করি, তখন তা আন্দোলিত ও ষ্ফীত হয়। যিনি ভূমিকে জীবিত করেন তিনিই মৃতের জীবনদানকারী। তিনি তোমাদের সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৩৯)
فَانْظُرْ اِلٰۤى اَثَارِ رَحْمَةِ اللهِ كَيْفَ يُحْيِى الْاَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَاؕ اِنَّ ذٰلِكَ لَمُحْيِى الْمَوْتٰىۚ وَهُوَعَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
অতএব আল্লাহর রহমতের ফলাফল সম্পর্কে চিন্তা করো। কীভাবে তিনি জমিনকে মৃত্যুর পর আবার জীবিত করেন। নিশ্চয় তিনি মৃতকে জীবনদানকারী এবং তিনিই সবকিছুর উপর সর্বশক্তিমান। (সূরা রূম- ৫০)
وَنَزَّلْنَا مِنَ السَّمَآءِ مَآءً مُّبَارَكًا فَاَنْۢبَتْنَا بِهٖ جَنَّاتٍ وَّحَبَّ الْحَصِيْدِ – وَالنَّخْلَ بَاسِقَاتٍ لَّهَا طَلْعٌ نَّضِيْدٌ – رِزْقًا لِّلْعِبَادِ وَاَحْيَيْنَا بِهٖ بَلْدَةً مَّيْتًاؕ كَذٰلِكَ الْخُرُوْجُ
আমি আকাশ হতে কল্যাণকর বৃষ্টি বর্ষণ করি। অতঃপর এর দ্বারা উদ্যান, পরিপক্ক শস্যরাজি এবং উঁচু উঁচু খেজুর বৃক্ষ সৃষ্টি করি, যাতে রয়েছে গুচ্ছ গুচ্ছ খেজুর। বান্দাদের জীবিকাস্বরূপ; আর আমি বৃষ্টি দ্বারা মৃত ভূমিকে জীবিত করি। মূলত এভাবেই পুনরুত্থান ঘটবে। (সূরা ক্বাফ, ৯-১১)
রাতের ঘুম পুনরুত্থানের একটি প্রমাণ :
وَهُوَ الَّذِيْ يَتَوَفَّاكُمْ بِاللَّيْلِ وَيَعْلَمُ مَا جَرَحْتُمْ بِالنَّهَارِ ثُمَّ يَبْعَثُكُمْ فِيْهِ لِيُقْضٰۤى اَجَلٌ مُّسَمًّى ثُمَّ اِلَيْهِ مَرْجِعُكُمْ ثُمَّ يُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
তিনিই রাতে তোমাদের মৃত্যু ঘটান এবং দিনে তোমরা যা কর তা তিনি জানেন। অতঃপর দিনে তোমাদেরকে তিনি পুনর্জাগরন করেন, যাতে নির্ধারিত কাল পূর্ণ হয়। অবশেষে তাঁর দিকেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন। তোমরা যা কর অচিরেই তিনি তোমাদেরকে সে সম্বন্ধে অবহিত করবেন। (সূরা আন‘আম- ৬০)
যিনি প্রথমে সৃষ্টি করেছেন তিনি পুনরায় সৃষ্টি করতে সক্ষম :
وَهُوَ الَّذِيْ يَبْدَاُ الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيْدُهٗ وَهُوَ اَهْوَنُ عَلَيْهِؕ وَلَهُ الْمَثَلُ الْاَعْلٰى فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِۚ وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
তিনি সৃষ্টির সূচনা করেন, তারপর তিনিই আবার তা সৃষ্টি করবেন এটা তাঁর জন্য খুবই সহজ। আসমান ও জমিনে সর্বোচ্চ মর্যাদা তাঁরই। আর তিনিই প্রতাপশালী ও মহাবিজ্ঞ। (সূরা রূম- ২৭)
আল্লাহ শপথ করেছেন, তিনি পুনরায় জীবিত করবেন :
لَاۤ اُقْسِمُ بِيَوْمِ الْقِيَامَةِ – وَلَاۤ اُقْسِمُ بِالنَّفْسِ اللَّوَّامَةِ – اَيَحْسَبُ الْاِنْسَانُ اَلَّنْ نَّجْمَعَ عِظَامَهُ ‐ بَلٰى قَادِرِيْنَ عَلٰۤى اَنْ نُّسَوِّيَ بَنَانَهٗ
আমি শপথ করছি কিয়ামত দিবসের, আরো শপথ করছি তিরস্কারকারী আত্মার। মানুষ কি মনে করে যে, আমি তার হাড়গুলো কোনক্রমে একত্র করতে পারব না? হ্যাঁ! অবশ্যই আমি তার আঙ্গুলীর অগ্রভাগ পর্যন্ত পুনর্বিন্যস্ত করতে সক্ষম। (সূরা ক্বিয়ামাহ, ১-৪)
এটা আল্লাহর কাছে সহজ ব্যাপার :
اَوَلَمْ يَرَوْا كَيْفَ يُبْدِئُ اللهُ الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيْدُهٗؕ اِنَّ ذٰلِكَ عَلَى اللهِ يَسِيْرٌ
তারা কি লক্ষ্য করে না, কীভাবে আল্লাহ সৃষ্টিকে অস্তিত্ব দান করেন, অতঃপর তা পুনরায় সৃষ্টি করবেন? এটা তো আল্লাহর জন্য খুবই সহজ। (সূরা আনকাবূত- ১৯)
مَا خَلْقُكُمْ وَلَا بَعْثُكُمْ اِلَّا كَنَفْسٍ وَّاحِدَةٍؕ اِنَّ اللهَ سَمِيْعٌ ۢ بَصِيْرٌ
তোমাদের সৃষ্টি ও পুনরুত্থান একটি প্রাণীর সৃষ্টি ও পুনরুত্থানের ন্যায়। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু শুনেন এবং দেখেন। (সূরা লুক্বমান- ২৮)
ব্যাখ্যা : মানবকুল সৃষ্টি এবং তাদের পুনরুজ্জীবনের ব্যাপারটিও ঠিক একই। সৃষ্টির সূচনা থেকে আজ পর্যন্ত যত মানুষ জন্ম নিয়েছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত জন্ম নেবে তাদের সবাইকে তিনি আবার এক মুহূর্তেই সৃষ্টি করতে পারেন। তাঁর সৃষ্টিক্ষমতা একটি মানুষের সৃষ্টিতে এমনভাবে লিপ্ত হয়ে পড়ে না যে, একই সময়ে তিনি অন্য মানুষ সৃষ্টি করতে অপারগ হয়ে পড়েন। একজন মানুষ সৃষ্টি করা বা কোটি কোটি মানুষ সৃষ্টি করা দুটোই তাঁর জন্য সমান।
লাশের কোন অংশ কোথায় আছে আল্লাহ তা জানেন :
قَدْ عَلِمْنَا مَا تَنْقُصُ الْاَرْضُ مِنْهُمْۚ وَعِنْدَنَا كِتَابٌ حَفِيْظٌ
মাটি তাদের কতটুকু ক্ষয় করে তা আমি জানি; আর আমার নিকট সংরক্ষিত একটি কিতাব রয়েছে। (সূরা ক্বাফ- ৪)
ব্যাখ্যা : এ কথা যদি তাদের বিবেকবুদ্ধিতে না ধরে তাহলে তা তাদের বিবেকবুদ্ধির সংকীর্ণতা। তাদের বিবেকবুদ্ধির সংকীর্ণতার কারণে আল্লাহর জ্ঞান ও কুদরতও সংকীর্ণ হতে হবে- তা নয়। এরা মনে করে, সৃষ্টির সূচনাকাল থেকে কিয়ামত পর্যন্ত মৃত্যুবরণকারী অসংখ্য মানুষের দেহের বিভিন্ন অংশ যা মাটিতে মিশে গিয়েছে তা একত্রিত করা কোন ক্রমেই সম্ভব নয়। কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে, ঐসব দেহের একেকটি অংশ যেখানে যে অবস্থায় আছে আল্লাহ তা‘আলা তা সরাসরি জানেন। তাছাড়া আল্লাহর দফতরে তার পূর্ণাঙ্গ রেকর্ডও সংরক্ষণ করা হচ্ছে। একটি ক্ষুদ্র অণুও তা থেকে বাদ পড়ে না। যখন আল্লাহর নির্দেশ হবে তখনই তাঁর ফেরেশতারা উক্ত রেকর্ড দেখে একেকটি অণুকে খুঁজে বের করবে এবং সমস্ত মানুষ যে দেহ নিয়ে দুনিয়াতে কাজ করেছিল সেই দেহ তারা পুনরায় বানিয়ে দেবে। আখিরাতের জীবন যে কেবল দুনিয়ার জীবনের মতো দৈহিক জীবন হবে- তা নয় বরং দুনিয়াতে মানুষের যে দেহ ছিল আখিরাতেও প্রত্যেক মানুষের দেহ হবে।
পুনর্জীবনের ঐতিহাসিক প্রমাণ :
كَذَّبَتْ قَبْلَهُمْ قَوْمُ نُوْحٍ وَّاَصْحَابُ الرَّسِّ وَثَمُوْدُ – وَعَادٌ وَّفِرْعَوْنُ وَاِخْوَانُ لُوْطٍ – وَاَصْحَابُ الْاَيْكَةِ وَقَوْمُ تُبَّعٍؕ كُلٌّ كَذَّبَ الرُّسُلَ فَحَقَّ وَعِيْدِ – اَفَعَيِيْنَا بِالْخَلْقِ الْاَوَّلِؕ بَلْ هُمْ فِيْ لَبْسٍ مِّنْ خَلْقٍ جَدِيْدٍ
তাদের পূর্বেও সত্য প্রত্যাখ্যান করেছিল নূহের সম্প্রদায়, রাস্সের অধিবাসী, সামূদ সম্প্রদায়, আদ সম্প্রদায়, ফিরাউন ও লূতের ভাইয়েরা, আইকাবাসী এবং তুববা সম্প্রদায়; তারা সকলে রাসূলদেরকে মিথ্যাবাদী বলেছিল, ফলে তাদের উপর আমার শাস্তি কার্যকর হয়েছে। আমি কি প্রথমবার সৃষ্টি করেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছি? যার কারণে পুনরায় নতুন সৃষ্টির বিষয়ে তারা সন্দেহ পোষণ করবে! (সূরা ক্বাফ, ১২-১৫)
ব্যাখ্যা : আখিরাতের পক্ষে এটি একটি ঐতিহাসিক যুক্তি। যেভাবেই আখিরাতকে অস্বীকার করা হোক না কেন, তার অনিবার্য ফলস্বরূপ মানুষের নৈতিক চরিত্র নষ্ট হয়ে গেছে। তারা নিজেদেরকে দায়িত্বহীন মনে করে লাগামহীন স্বেচ্ছাচারী হয়ে পড়েছে। তারা যুলুম, বিপর্যয়, ফাসিকী ও অশ্লীল আচরণের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এর ফলে জাতিসমূহ একের পর এক ধ্বংস হচ্ছে। যারা নিছক বস্তুগত উন্নতিকে একটি জাতির সৎ হওয়ার আলামত মনে করে, এখানে তাদের জবাব রয়েছে। এমন উন্নয়নমূলক কাজ পূর্বেও বহু জাতি বিরাট আকারে করেছে। তারপরও কি তোমরা দেখনি যে, সে জাতিগুলো তাদের নিজেদের সভ্যতা-সংস্কৃতি সহকারে ধূলোয় মিশে গেছে এবং তাদের উন্নয়নের আকাশচুম্বী প্রাসাদ ধ্বংস হয়ে গেছে? মূলত সত্যের প্রতি বিশ্বাস ও সৎ চারিত্রিক গুণাবলি ছাড়া নিছক বস্তুগত নির্মাণের কোন মূল্য আল্লাহর কাছে নেই। এ জাতিগুলো যে ধ্বংসের সম্মুখীন হয়েছে এটা তাদের উপর আল্লাহর যুলুম ছিল না বরং তা ছিল তাদের নিজেদের যুলুম। এসব যুলুম তারা নিজেরাই নিজেদের উপর করেছিল। যে ব্যক্তি বা দল নিজে সঠিক চিন্তা করে না এবং অন্যের বুঝিয়ে দেয়ার পরও সঠিক নীতি অবলম্বন করে না, সে নিজেই নিজের অশুভ পরিণামের জন্য দায়ী হয়। এ ব্যাপারে আল্লাহকে দোষারোপ করা যেতে পারে না। আল্লাহ নিজের কিতাব ও নবীগণের মাধ্যমে মানুষকে সত্যের জ্ঞান দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন এবং তাকে এমন বুদ্ধিবৃত্তিক ও তাত্ত্বিক উপকরণাদিও দিয়েছেন, যেগুলো ব্যবহার করে সে সবসময় নবী ও আসমানী কিতাবপ্রদত্ত জ্ঞানের সত্যতা যাচাই করতে পারে। আল্লাহ যদি মানুষকে এ পথনির্দেশনা এবং উপকরণাদি থেকে বঞ্চিত করতেন এবং এতে যদি মানুষ ভুল পথে পরিচালিত হতো, তাহলে নিঃসন্দেহে আল্লাহর বিরুদ্ধে যুলুমের দোষারোপ করার অবকাশ থাকত।
আসহাবে কাহফ পরকালের প্রমাণ :
اَمْ حَسِبْتَ اَنَّ اَصْحَابَ الْكَهْفِ وَالرَّقِيْمِ كَانُوْا مِنْ اٰيَاتِنَا عَجَبًا
তুমি কি মনে কর যে, গুহা ও রাকীমের অধিবাসীরা আমার নিদর্শনাবলির মধ্যে একটি বিস্ময়কর নিদর্শন? (সূরা কাহফ- ৯)
وَكَذٰلِكَ اَعْثَرْنَا عَلَيْهِمْ لِيَعْلَمُوْاۤ اَنَّ وَعْدَ اللهِ حَقٌّ وَّاَنَّ السَّاعَةَ لَا رَيْبَ فِيْهَا
এভাবে আমি মানুষকে তাদের বিষয় জানিয়ে দিলাম, যাতে তারা জ্ঞাত হয় যে, আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য এবং কিয়ামতের ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। (সূরা কাহফ- ২১)
আল্লাহ এক নবীকে সরাসরি পুনর্জীবন দেখিয়েছেন :
اَوْ كَالَّذِيْ مَرَّ عَلٰى قَرْيَةٍ وَّهِيَ خَاوِيَةٌ عَلٰى عُرُوْشِهَاۚ قَالَ اَنّٰى يُحْيِيْ هٰذِهِ اللهُ بَعْدَ مَوْتِهَاۚ فَاَمَاتَهُ اللهُ مِائَةَ عَامٍ ثُمَّ بَعَثَهٗؕ قَالَ كَمْ لَبِثْتَؕ قَالَ لَبِثْتُ يَوْمًا اَوْ بَعْضَ يَوْمٍؕ قَالَ بَلْ لَّبِثْتَ مِائَةَ عَامٍ فَانْظُرْ اِلٰى طَعَامِكَ وَشَرَابِكَ لَمْ يَتَسَنَّهْۚ وَانْظُرْ اِلٰى حِمَارِكَۗ وَلِنَجْعَلَكَ اٰيَةً لِّلنَّاسِ وَانْظُرْ اِلَى الْعِظَامِ كَيْفَ نُنْشِزُهَا ثُمَّ نَكْسُوْهَا لَحْمًاؕ فَلَمَّا تَبَيَّنَ لَهٗ قَالَ اَعْلَمُ اَنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
অথবা ঐ ব্যক্তির মতো, যে কোন এক জনপদ অতিক্রম করছিল, যা থুবড়ে পড়ে আছে। সে বলল, এই নগরের অধিবাসীদের মৃত্যুর পর আল্লাহ কীভাবে জীবিত করবেন? অতঃপর আল্লাহ তাকে একশ’ বছর মৃত রাখলেন। পরে তাকে জীবিত করলেন। আল্লাহ জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এ অবস্থায় কতদিন ছিলে? সে বলল, একদিন অথবা একদিনের কিছু কম সময়। আল্লাহ বললেন, বরং তুমি একশ’ বছর অতিবাহিত করেছ। তোমার খাদ্য ও পানীয়ের দিকে লক্ষ্য করে দেখ, তা বিকৃত হয়নি। অতঃপর তুমি তোমার গাধার দিকেও লক্ষ্য করো। (আমি এটি ঘটিয়েছি, কেননা) আমি তোমাকে মানুষের জন্য নিদর্শনস্বরূপ বানাতে চাই। আর তুমি হাড়গুলোর দিকে লক্ষ্য করো, কীভাবে আমি ওগুলোকে সংযুক্ত করি, তারপর তাকে মাংস দ্বারা আবৃত করি। যখন তার কাছে এটা স্পষ্ট হয়ে গেল তখন সে বলল, আমি জানি আল্লাহ সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। (সূরা বাক্বারা- ২৫৯)
ইবরাহীম (আঃ) কে আল্লাহ পুনর্জীবন দেখিয়েছেন :
وَاِذْ قَالَ اِبْرَاهِيْمُ رَبِّ اَرِنِيْ كَيْفَ تُحْيِى الْمَوْتٰىؕ قَالَ اَوَلَمْ تُؤْمِنْؕ قَالَ بَلٰى وَلٰكِنْ لِّيَطْمَئِنَّ قَلْبِيْؕ قَالَ فَخُذْ اَرْبَعَةً مِّنَ الطَّيْرِ فَصُرْهُنَّ اِلَيْكَ ثُمَّ اجْعَلْ عَلٰى كُلِّ جَبَلٍ مِّنْهُنَّ جُزْءًا ثُمَّ ادْعُهُنَّ يَاْتِيْنَكَ سَعْيًاؕ وَاعْلَمْ اَنَّ اللهَ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
যখন ইবরাহীম বলেছিলেন, হে আমার রব! কীভাবে আপনি মৃতকে জীবিত করেন তা আমাকে দেখান। আল্লাহ বললেন, তুমি কি বিশ্বাস কর না? তিনি বললেন, হ্যাঁ (বিশ্বাস করি) তবে আমার অন্তরের প্রশান্তির জন্য। আল্লাহ বললেন, তাহলে চারটি পাখি ধরো। অতঃপর সেগুলোকে তোমার পোষ মানিয়ে নাও। তারপর তুমি প্রত্যেক পাহাড়ের উপর ওদের এক এক অংশ রাখো; অতঃপর তাদেরকে ডাকো, ওরা তোমার কাছে দৌড়ে আসবে। জেনে রেখো, আল্লাহ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা বাক্বারা- ২৬০)
আল্লাহ তাঁর ওয়াদা বাস্তবায়ন করবেনই :
اَللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَؕ لَيَجْمَعَنَّكُمْ اِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ لَا رَيْبَ فِيْهِؕ وَمَنْ اَصْدَقُ مِنَ اللهِ حَدِيْثًا
আল্লাহ সেই সত্তা, যিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই; তিনি তোমাদেরকে কিয়ামতের দিন একত্র করবেন, এতে কোন সন্দেহ নেই। আল্লাহর চেয়ে অধিক সত্যবাদী আর কে? (সূরা নিসা- ৮৭)
يَوْمَ نَطْوِى السَّمَآءَ كَطَيِّ السِّجِلِّ لِلْكُتُبِؕ كَمَا بَدَاْنَاۤ اَوَّلَ خَلْقٍ نُّعِيْدُهٗؕ وَعْدًا عَلَيْنَاؕ اِنَّا كُنَّا فَاعِلِيْنَ
সেদিন আকাশমন্ডলীকে গুটিয়ে ফেলব, যেভাবে গুটানো হয় লিখিত দফতর। যেভাবে আমি প্রথম সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম, সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করার প্রতিশ্রুতি পালন করা আমার কর্তব্য, আর আমি এটা পালন করবই। (সূরা আম্বিয়া- ১০৪)
মানুষের কৃতকর্মই তার সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য ডেকে আনে :
وَكُلَّ اِنْسَانٍ اَلْزَمْنَاهُ طَآئِرَهٗ فِيْ عُنُقِهٖ وَنُخْرِجُ لَهٗ يَوْمَ الْقِيَامَةِ كِتَابًا يَّلْقَاهُ مَنْشُوْرًا
আমি প্রত্যেক মানুষের ভাগ্য তাদের কাঁধেই ঝুলিয়ে রেখেছি। অতঃপর কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য বের করব এক কিতাব, যা সে পাবে উন্মুক্ত অবস্থায়। (সূরা বনী ইসরাঈল- ১৩)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ প্রত্যেক মানুষের সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য এবং তার পরিণতির ভালো-মন্দের কারণগুলো তার নিজ সত্তার মধ্যেই বিরাজ করছে। নিজের গুণাবলি, চরিত্র, এবং সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা ব্যবহারের মাধ্যমে সে নিজেই নিজেকে সৌভাগ্যের অধিকারী করে, আবার দুর্ভাগ্যেরও অধিকারী করে। নির্বোধ লোকেরা নিজেদের ভাগ্যের ভালো-মন্দের চিহ্নগুলো বাইরে খুঁজে বেড়ায় এবং তারা সবসময় বাহ্যিক কার্যক্রমকেই নিজেদের দুর্ভাগ্যের জন্য দায়ী করে। কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে, তাদের ভালো-মন্দ তাদের নিজেদের গলায়ই ঝুলানো থাকে। নিজেদের কার্যকলাপের প্রতি নজর দিলে তারা পরিষ্কার দেখতে পায় যে, যে জিনিসটি তাদেরকে ধ্বংসের পথে এগিয়ে দিয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত তাদেরকে সর্বহারা করে ছেড়েছে, তা ছিল তাদের নিজেদেরই অসৎ গুণাবলি ও অশুভ সিদ্ধান্ত। বাহির থেকে কোন জিনিস এসে জোরপূর্বক তাদের উপর চেপে বসেনি।
اَوَلَمْ يَرَوْا اَنَّ اللهَ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ قَادِرٌ عَلٰۤى اَنْ يَّخْلُقَ مِثْلَهُمْ وَجَعَلَ لَهُمْ اَجَلًا لَّا رَيْبَ فِيْهِؕ فَاَبَى الظَّالِمُوْنَ اِلَّا كُفُوْرًا
তারা কি লক্ষ্য করে না যে, নিশ্চয় আল্লাহ সেই সত্তা, যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। আর তিনি তাদের অনুরূপ (আরো) সৃষ্টি করতে ক্ষমতাবান? তিনি তাদের জন্য স্থির করেছেন এক নির্দিষ্ট কাল, যাতে কোন সন্দেহ নেই। তারপরও সীমালঙ্ঘনকারীরা কুফরী করেই চলেছে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৯৯)
اَوَلَمْ يَرَوْا اَنَّ اللهَ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ وَلَمْ يَعْيَ بِخَلْقِهِنَّ بِقَادِرٍ عَلٰۤى اَنْ يُّحْيِيَ الْمَوْتٰىؕ بَلٰۤى اِنَّهٗ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
তারা কি লক্ষ্য করে না যে, আল্লাহ এমন সত্তা, যিনি জমিন ও আসমান সৃষ্টি করেছেন এবং এসব সৃষ্টিতে তিনি ক্লান্তও হননি। তিনি এমন সত্তা, যিনি মৃতকে জীবিত করার ক্ষমতা রাখেন। নিশ্চয় তিনি সবকিছুর উপর শক্তিশালী। (সূরা আহকাফ- ৩৩)
মানুষ সৃষ্টি করার চেয়ে আসমান-জমিন সৃষ্টি করা অনেক কঠিন :
لَخَلْقُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ اَ كْبَرُ مِنْ خَلْقِ النَّاسِ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ
মানব সৃষ্টির চেয়ে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি অবশ্যই অনেক বড় কাজ; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। (সূরা মু’মিন- ৫৭)
মৃত জমিনকে জীবিত করা পুনর্জীবনের প্রমাণ :
وَاللهُ الَّذِيْۤ اَرْسَلَ الرِّيَاحَ فَتُثِيْرُ سَحَابًا فَسُقْنَاهُ اِلٰى بَلَدٍ مَّيِّتٍ فَاَحْيَيْنَا بِهِ الْاَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَاؕ كَذٰلِكَ النُّشُوْرُ
তিনিই আল্লাহ, যিনি বাতাস প্রেরণ করেন এবং এর দ্বারা মেঘমালাকে পরিচালিত করেন। অতঃপর আমি তা পরিচালিত করি মৃত ভূখন্ডের দিকে, তারপর আমি এর মাধ্যমে মৃত জমিনকে পুনরুজ্জীবিত করে দেই। (সূরা ফাতির- ৯)
وَمِنْ اٰيَاتِهٖۤ اَنَّكَ تَرَى الْاَرْضَ خَاشِعَةً فَاِذَاۤ اَنْزَلْنَا عَلَيْهَا الْمَآءَ اهْتَزَّتْ وَرَبَتْؕ اِنَّ الَّذِيْۤ اَحْيَاهَا لَمُحْيِى الْمَوْتٰىؕ اِنَّهٗ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
তাঁর একটি নিদর্শন এই যে, তুমি ভূমিকে শুষ্ক দেখতে পাও। অতঃপর যখন আমি তাতে বৃষ্টি বর্ষণ করি, তখন তা আন্দোলিত ও ষ্ফীত হয়। যিনি ভূমিকে জীবিত করেন তিনিই মৃতের জীবনদানকারী। তিনি তোমাদের সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৩৯)
فَانْظُرْ اِلٰۤى اَثَارِ رَحْمَةِ اللهِ كَيْفَ يُحْيِى الْاَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَاؕ اِنَّ ذٰلِكَ لَمُحْيِى الْمَوْتٰىۚ وَهُوَعَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
অতএব আল্লাহর রহমতের ফলাফল সম্পর্কে চিন্তা করো। কীভাবে তিনি জমিনকে মৃত্যুর পর আবার জীবিত করেন। নিশ্চয় তিনি মৃতকে জীবনদানকারী এবং তিনিই সবকিছুর উপর সর্বশক্তিমান। (সূরা রূম- ৫০)
وَنَزَّلْنَا مِنَ السَّمَآءِ مَآءً مُّبَارَكًا فَاَنْۢبَتْنَا بِهٖ جَنَّاتٍ وَّحَبَّ الْحَصِيْدِ – وَالنَّخْلَ بَاسِقَاتٍ لَّهَا طَلْعٌ نَّضِيْدٌ – رِزْقًا لِّلْعِبَادِ وَاَحْيَيْنَا بِهٖ بَلْدَةً مَّيْتًاؕ كَذٰلِكَ الْخُرُوْجُ
আমি আকাশ হতে কল্যাণকর বৃষ্টি বর্ষণ করি। অতঃপর এর দ্বারা উদ্যান, পরিপক্ক শস্যরাজি এবং উঁচু উঁচু খেজুর বৃক্ষ সৃষ্টি করি, যাতে রয়েছে গুচ্ছ গুচ্ছ খেজুর। বান্দাদের জীবিকাস্বরূপ; আর আমি বৃষ্টি দ্বারা মৃত ভূমিকে জীবিত করি। মূলত এভাবেই পুনরুত্থান ঘটবে। (সূরা ক্বাফ, ৯-১১)
রাতের ঘুম পুনরুত্থানের একটি প্রমাণ :
وَهُوَ الَّذِيْ يَتَوَفَّاكُمْ بِاللَّيْلِ وَيَعْلَمُ مَا جَرَحْتُمْ بِالنَّهَارِ ثُمَّ يَبْعَثُكُمْ فِيْهِ لِيُقْضٰۤى اَجَلٌ مُّسَمًّى ثُمَّ اِلَيْهِ مَرْجِعُكُمْ ثُمَّ يُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
তিনিই রাতে তোমাদের মৃত্যু ঘটান এবং দিনে তোমরা যা কর তা তিনি জানেন। অতঃপর দিনে তোমাদেরকে তিনি পুনর্জাগরন করেন, যাতে নির্ধারিত কাল পূর্ণ হয়। অবশেষে তাঁর দিকেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন। তোমরা যা কর অচিরেই তিনি তোমাদেরকে সে সম্বন্ধে অবহিত করবেন। (সূরা আন‘আম- ৬০)
যিনি প্রথমে সৃষ্টি করেছেন তিনি পুনরায় সৃষ্টি করতে সক্ষম :
وَهُوَ الَّذِيْ يَبْدَاُ الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيْدُهٗ وَهُوَ اَهْوَنُ عَلَيْهِؕ وَلَهُ الْمَثَلُ الْاَعْلٰى فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِۚ وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
তিনি সৃষ্টির সূচনা করেন, তারপর তিনিই আবার তা সৃষ্টি করবেন এটা তাঁর জন্য খুবই সহজ। আসমান ও জমিনে সর্বোচ্চ মর্যাদা তাঁরই। আর তিনিই প্রতাপশালী ও মহাবিজ্ঞ। (সূরা রূম- ২৭)
আল্লাহ শপথ করেছেন, তিনি পুনরায় জীবিত করবেন :
لَاۤ اُقْسِمُ بِيَوْمِ الْقِيَامَةِ – وَلَاۤ اُقْسِمُ بِالنَّفْسِ اللَّوَّامَةِ – اَيَحْسَبُ الْاِنْسَانُ اَلَّنْ نَّجْمَعَ عِظَامَهُ ‐ بَلٰى قَادِرِيْنَ عَلٰۤى اَنْ نُّسَوِّيَ بَنَانَهٗ
আমি শপথ করছি কিয়ামত দিবসের, আরো শপথ করছি তিরস্কারকারী আত্মার। মানুষ কি মনে করে যে, আমি তার হাড়গুলো কোনক্রমে একত্র করতে পারব না? হ্যাঁ! অবশ্যই আমি তার আঙ্গুলীর অগ্রভাগ পর্যন্ত পুনর্বিন্যস্ত করতে সক্ষম। (সূরা ক্বিয়ামাহ, ১-৪)
এটা আল্লাহর কাছে সহজ ব্যাপার :
اَوَلَمْ يَرَوْا كَيْفَ يُبْدِئُ اللهُ الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيْدُهٗؕ اِنَّ ذٰلِكَ عَلَى اللهِ يَسِيْرٌ
তারা কি লক্ষ্য করে না, কীভাবে আল্লাহ সৃষ্টিকে অস্তিত্ব দান করেন, অতঃপর তা পুনরায় সৃষ্টি করবেন? এটা তো আল্লাহর জন্য খুবই সহজ। (সূরা আনকাবূত- ১৯)
مَا خَلْقُكُمْ وَلَا بَعْثُكُمْ اِلَّا كَنَفْسٍ وَّاحِدَةٍؕ اِنَّ اللهَ سَمِيْعٌ ۢ بَصِيْرٌ
তোমাদের সৃষ্টি ও পুনরুত্থান একটি প্রাণীর সৃষ্টি ও পুনরুত্থানের ন্যায়। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু শুনেন এবং দেখেন। (সূরা লুক্বমান- ২৮)
ব্যাখ্যা : মানবকুল সৃষ্টি এবং তাদের পুনরুজ্জীবনের ব্যাপারটিও ঠিক একই। সৃষ্টির সূচনা থেকে আজ পর্যন্ত যত মানুষ জন্ম নিয়েছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত জন্ম নেবে তাদের সবাইকে তিনি আবার এক মুহূর্তেই সৃষ্টি করতে পারেন। তাঁর সৃষ্টিক্ষমতা একটি মানুষের সৃষ্টিতে এমনভাবে লিপ্ত হয়ে পড়ে না যে, একই সময়ে তিনি অন্য মানুষ সৃষ্টি করতে অপারগ হয়ে পড়েন। একজন মানুষ সৃষ্টি করা বা কোটি কোটি মানুষ সৃষ্টি করা দুটোই তাঁর জন্য সমান।
লাশের কোন অংশ কোথায় আছে আল্লাহ তা জানেন :
قَدْ عَلِمْنَا مَا تَنْقُصُ الْاَرْضُ مِنْهُمْۚ وَعِنْدَنَا كِتَابٌ حَفِيْظٌ
মাটি তাদের কতটুকু ক্ষয় করে তা আমি জানি; আর আমার নিকট সংরক্ষিত একটি কিতাব রয়েছে। (সূরা ক্বাফ- ৪)
ব্যাখ্যা : এ কথা যদি তাদের বিবেকবুদ্ধিতে না ধরে তাহলে তা তাদের বিবেকবুদ্ধির সংকীর্ণতা। তাদের বিবেকবুদ্ধির সংকীর্ণতার কারণে আল্লাহর জ্ঞান ও কুদরতও সংকীর্ণ হতে হবে- তা নয়। এরা মনে করে, সৃষ্টির সূচনাকাল থেকে কিয়ামত পর্যন্ত মৃত্যুবরণকারী অসংখ্য মানুষের দেহের বিভিন্ন অংশ যা মাটিতে মিশে গিয়েছে তা একত্রিত করা কোন ক্রমেই সম্ভব নয়। কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে, ঐসব দেহের একেকটি অংশ যেখানে যে অবস্থায় আছে আল্লাহ তা‘আলা তা সরাসরি জানেন। তাছাড়া আল্লাহর দফতরে তার পূর্ণাঙ্গ রেকর্ডও সংরক্ষণ করা হচ্ছে। একটি ক্ষুদ্র অণুও তা থেকে বাদ পড়ে না। যখন আল্লাহর নির্দেশ হবে তখনই তাঁর ফেরেশতারা উক্ত রেকর্ড দেখে একেকটি অণুকে খুঁজে বের করবে এবং সমস্ত মানুষ যে দেহ নিয়ে দুনিয়াতে কাজ করেছিল সেই দেহ তারা পুনরায় বানিয়ে দেবে। আখিরাতের জীবন যে কেবল দুনিয়ার জীবনের মতো দৈহিক জীবন হবে- তা নয় বরং দুনিয়াতে মানুষের যে দেহ ছিল আখিরাতেও প্রত্যেক মানুষের দেহ হবে।
পুনর্জীবনের ঐতিহাসিক প্রমাণ :
كَذَّبَتْ قَبْلَهُمْ قَوْمُ نُوْحٍ وَّاَصْحَابُ الرَّسِّ وَثَمُوْدُ – وَعَادٌ وَّفِرْعَوْنُ وَاِخْوَانُ لُوْطٍ – وَاَصْحَابُ الْاَيْكَةِ وَقَوْمُ تُبَّعٍؕ كُلٌّ كَذَّبَ الرُّسُلَ فَحَقَّ وَعِيْدِ – اَفَعَيِيْنَا بِالْخَلْقِ الْاَوَّلِؕ بَلْ هُمْ فِيْ لَبْسٍ مِّنْ خَلْقٍ جَدِيْدٍ
তাদের পূর্বেও সত্য প্রত্যাখ্যান করেছিল নূহের সম্প্রদায়, রাস্সের অধিবাসী, সামূদ সম্প্রদায়, আদ সম্প্রদায়, ফিরাউন ও লূতের ভাইয়েরা, আইকাবাসী এবং তুববা সম্প্রদায়; তারা সকলে রাসূলদেরকে মিথ্যাবাদী বলেছিল, ফলে তাদের উপর আমার শাস্তি কার্যকর হয়েছে। আমি কি প্রথমবার সৃষ্টি করেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছি? যার কারণে পুনরায় নতুন সৃষ্টির বিষয়ে তারা সন্দেহ পোষণ করবে! (সূরা ক্বাফ, ১২-১৫)
ব্যাখ্যা : আখিরাতের পক্ষে এটি একটি ঐতিহাসিক যুক্তি। যেভাবেই আখিরাতকে অস্বীকার করা হোক না কেন, তার অনিবার্য ফলস্বরূপ মানুষের নৈতিক চরিত্র নষ্ট হয়ে গেছে। তারা নিজেদেরকে দায়িত্বহীন মনে করে লাগামহীন স্বেচ্ছাচারী হয়ে পড়েছে। তারা যুলুম, বিপর্যয়, ফাসিকী ও অশ্লীল আচরণের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এর ফলে জাতিসমূহ একের পর এক ধ্বংস হচ্ছে। যারা নিছক বস্তুগত উন্নতিকে একটি জাতির সৎ হওয়ার আলামত মনে করে, এখানে তাদের জবাব রয়েছে। এমন উন্নয়নমূলক কাজ পূর্বেও বহু জাতি বিরাট আকারে করেছে। তারপরও কি তোমরা দেখনি যে, সে জাতিগুলো তাদের নিজেদের সভ্যতা-সংস্কৃতি সহকারে ধূলোয় মিশে গেছে এবং তাদের উন্নয়নের আকাশচুম্বী প্রাসাদ ধ্বংস হয়ে গেছে? মূলত সত্যের প্রতি বিশ্বাস ও সৎ চারিত্রিক গুণাবলি ছাড়া নিছক বস্তুগত নির্মাণের কোন মূল্য আল্লাহর কাছে নেই। এ জাতিগুলো যে ধ্বংসের সম্মুখীন হয়েছে এটা তাদের উপর আল্লাহর যুলুম ছিল না বরং তা ছিল তাদের নিজেদের যুলুম। এসব যুলুম তারা নিজেরাই নিজেদের উপর করেছিল। যে ব্যক্তি বা দল নিজে সঠিক চিন্তা করে না এবং অন্যের বুঝিয়ে দেয়ার পরও সঠিক নীতি অবলম্বন করে না, সে নিজেই নিজের অশুভ পরিণামের জন্য দায়ী হয়। এ ব্যাপারে আল্লাহকে দোষারোপ করা যেতে পারে না। আল্লাহ নিজের কিতাব ও নবীগণের মাধ্যমে মানুষকে সত্যের জ্ঞান দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন এবং তাকে এমন বুদ্ধিবৃত্তিক ও তাত্ত্বিক উপকরণাদিও দিয়েছেন, যেগুলো ব্যবহার করে সে সবসময় নবী ও আসমানী কিতাবপ্রদত্ত জ্ঞানের সত্যতা যাচাই করতে পারে। আল্লাহ যদি মানুষকে এ পথনির্দেশনা এবং উপকরণাদি থেকে বঞ্চিত করতেন এবং এতে যদি মানুষ ভুল পথে পরিচালিত হতো, তাহলে নিঃসন্দেহে আল্লাহর বিরুদ্ধে যুলুমের দোষারোপ করার অবকাশ থাকত।
আসহাবে কাহফ পরকালের প্রমাণ :
اَمْ حَسِبْتَ اَنَّ اَصْحَابَ الْكَهْفِ وَالرَّقِيْمِ كَانُوْا مِنْ اٰيَاتِنَا عَجَبًا
তুমি কি মনে কর যে, গুহা ও রাকীমের অধিবাসীরা আমার নিদর্শনাবলির মধ্যে একটি বিস্ময়কর নিদর্শন? (সূরা কাহফ- ৯)
وَكَذٰلِكَ اَعْثَرْنَا عَلَيْهِمْ لِيَعْلَمُوْاۤ اَنَّ وَعْدَ اللهِ حَقٌّ وَّاَنَّ السَّاعَةَ لَا رَيْبَ فِيْهَا
এভাবে আমি মানুষকে তাদের বিষয় জানিয়ে দিলাম, যাতে তারা জ্ঞাত হয় যে, আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য এবং কিয়ামতের ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। (সূরা কাহফ- ২১)
আল্লাহ এক নবীকে সরাসরি পুনর্জীবন দেখিয়েছেন :
اَوْ كَالَّذِيْ مَرَّ عَلٰى قَرْيَةٍ وَّهِيَ خَاوِيَةٌ عَلٰى عُرُوْشِهَاۚ قَالَ اَنّٰى يُحْيِيْ هٰذِهِ اللهُ بَعْدَ مَوْتِهَاۚ فَاَمَاتَهُ اللهُ مِائَةَ عَامٍ ثُمَّ بَعَثَهٗؕ قَالَ كَمْ لَبِثْتَؕ قَالَ لَبِثْتُ يَوْمًا اَوْ بَعْضَ يَوْمٍؕ قَالَ بَلْ لَّبِثْتَ مِائَةَ عَامٍ فَانْظُرْ اِلٰى طَعَامِكَ وَشَرَابِكَ لَمْ يَتَسَنَّهْۚ وَانْظُرْ اِلٰى حِمَارِكَۗ وَلِنَجْعَلَكَ اٰيَةً لِّلنَّاسِ وَانْظُرْ اِلَى الْعِظَامِ كَيْفَ نُنْشِزُهَا ثُمَّ نَكْسُوْهَا لَحْمًاؕ فَلَمَّا تَبَيَّنَ لَهٗ قَالَ اَعْلَمُ اَنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
অথবা ঐ ব্যক্তির মতো, যে কোন এক জনপদ অতিক্রম করছিল, যা থুবড়ে পড়ে আছে। সে বলল, এই নগরের অধিবাসীদের মৃত্যুর পর আল্লাহ কীভাবে জীবিত করবেন? অতঃপর আল্লাহ তাকে একশ’ বছর মৃত রাখলেন। পরে তাকে জীবিত করলেন। আল্লাহ জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এ অবস্থায় কতদিন ছিলে? সে বলল, একদিন অথবা একদিনের কিছু কম সময়। আল্লাহ বললেন, বরং তুমি একশ’ বছর অতিবাহিত করেছ। তোমার খাদ্য ও পানীয়ের দিকে লক্ষ্য করে দেখ, তা বিকৃত হয়নি। অতঃপর তুমি তোমার গাধার দিকেও লক্ষ্য করো। (আমি এটি ঘটিয়েছি, কেননা) আমি তোমাকে মানুষের জন্য নিদর্শনস্বরূপ বানাতে চাই। আর তুমি হাড়গুলোর দিকে লক্ষ্য করো, কীভাবে আমি ওগুলোকে সংযুক্ত করি, তারপর তাকে মাংস দ্বারা আবৃত করি। যখন তার কাছে এটা স্পষ্ট হয়ে গেল তখন সে বলল, আমি জানি আল্লাহ সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। (সূরা বাক্বারা- ২৫৯)
ইবরাহীম (আঃ) কে আল্লাহ পুনর্জীবন দেখিয়েছেন :
وَاِذْ قَالَ اِبْرَاهِيْمُ رَبِّ اَرِنِيْ كَيْفَ تُحْيِى الْمَوْتٰىؕ قَالَ اَوَلَمْ تُؤْمِنْؕ قَالَ بَلٰى وَلٰكِنْ لِّيَطْمَئِنَّ قَلْبِيْؕ قَالَ فَخُذْ اَرْبَعَةً مِّنَ الطَّيْرِ فَصُرْهُنَّ اِلَيْكَ ثُمَّ اجْعَلْ عَلٰى كُلِّ جَبَلٍ مِّنْهُنَّ جُزْءًا ثُمَّ ادْعُهُنَّ يَاْتِيْنَكَ سَعْيًاؕ وَاعْلَمْ اَنَّ اللهَ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
যখন ইবরাহীম বলেছিলেন, হে আমার রব! কীভাবে আপনি মৃতকে জীবিত করেন তা আমাকে দেখান। আল্লাহ বললেন, তুমি কি বিশ্বাস কর না? তিনি বললেন, হ্যাঁ (বিশ্বাস করি) তবে আমার অন্তরের প্রশান্তির জন্য। আল্লাহ বললেন, তাহলে চারটি পাখি ধরো। অতঃপর সেগুলোকে তোমার পোষ মানিয়ে নাও। তারপর তুমি প্রত্যেক পাহাড়ের উপর ওদের এক এক অংশ রাখো; অতঃপর তাদেরকে ডাকো, ওরা তোমার কাছে দৌড়ে আসবে। জেনে রেখো, আল্লাহ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা বাক্বারা- ২৬০)
আল্লাহ তাঁর ওয়াদা বাস্তবায়ন করবেনই :
اَللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَؕ لَيَجْمَعَنَّكُمْ اِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ لَا رَيْبَ فِيْهِؕ وَمَنْ اَصْدَقُ مِنَ اللهِ حَدِيْثًا
আল্লাহ সেই সত্তা, যিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই; তিনি তোমাদেরকে কিয়ামতের দিন একত্র করবেন, এতে কোন সন্দেহ নেই। আল্লাহর চেয়ে অধিক সত্যবাদী আর কে? (সূরা নিসা- ৮৭)
يَوْمَ نَطْوِى السَّمَآءَ كَطَيِّ السِّجِلِّ لِلْكُتُبِؕ كَمَا بَدَاْنَاۤ اَوَّلَ خَلْقٍ نُّعِيْدُهٗؕ وَعْدًا عَلَيْنَاؕ اِنَّا كُنَّا فَاعِلِيْنَ
সেদিন আকাশমন্ডলীকে গুটিয়ে ফেলব, যেভাবে গুটানো হয় লিখিত দফতর। যেভাবে আমি প্রথম সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম, সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করার প্রতিশ্রুতি পালন করা আমার কর্তব্য, আর আমি এটা পালন করবই। (সূরা আম্বিয়া- ১০৪)
মানুষের কৃতকর্মই তার সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য ডেকে আনে :
وَكُلَّ اِنْسَانٍ اَلْزَمْنَاهُ طَآئِرَهٗ فِيْ عُنُقِهٖ وَنُخْرِجُ لَهٗ يَوْمَ الْقِيَامَةِ كِتَابًا يَّلْقَاهُ مَنْشُوْرًا
আমি প্রত্যেক মানুষের ভাগ্য তাদের কাঁধেই ঝুলিয়ে রেখেছি। অতঃপর কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য বের করব এক কিতাব, যা সে পাবে উন্মুক্ত অবস্থায়। (সূরা বনী ইসরাঈল- ১৩)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ প্রত্যেক মানুষের সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য এবং তার পরিণতির ভালো-মন্দের কারণগুলো তার নিজ সত্তার মধ্যেই বিরাজ করছে। নিজের গুণাবলি, চরিত্র, এবং সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা ব্যবহারের মাধ্যমে সে নিজেই নিজেকে সৌভাগ্যের অধিকারী করে, আবার দুর্ভাগ্যেরও অধিকারী করে। নির্বোধ লোকেরা নিজেদের ভাগ্যের ভালো-মন্দের চিহ্নগুলো বাইরে খুঁজে বেড়ায় এবং তারা সবসময় বাহ্যিক কার্যক্রমকেই নিজেদের দুর্ভাগ্যের জন্য দায়ী করে। কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে, তাদের ভালো-মন্দ তাদের নিজেদের গলায়ই ঝুলানো থাকে। নিজেদের কার্যকলাপের প্রতি নজর দিলে তারা পরিষ্কার দেখতে পায় যে, যে জিনিসটি তাদেরকে ধ্বংসের পথে এগিয়ে দিয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত তাদেরকে সর্বহারা করে ছেড়েছে, তা ছিল তাদের নিজেদেরই অসৎ গুণাবলি ও অশুভ সিদ্ধান্ত। বাহির থেকে কোন জিনিস এসে জোরপূর্বক তাদের উপর চেপে বসেনি।
সবাইকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে :
كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِ
প্রত্যেক আতমা মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণকারী। (সূরা আলে ইমরান- ১৮৫)
মৃত্যুর পর সবাই আল্লাহর দিকে ফিরে যাবে :
كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِ ثُمَّ اِلَيْنَا تُرْجَعُوْنَ
প্রত্যেক আত্মা মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণকারী; অতঃপর তোমরা আমারই নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা আনকাবূত- ৫৭)
মৃত্যু থেকে পালানোর কোন উপায় নেই :
قُلْ لَّنْ يَّنْفَعَكُمُ الْفِرَارُ اِنْ فَرَرْتُمْ مِّنَ الْمَوْتِ اَوِ الْقَتْلِ وَاِذًا لَّا تُمَتَّعُوْنَ اِلَّا قَلِيْلًا
আপনি বলে দিন, তোমরা যদি মৃত্যু অথবা হত্যার ভয়ে পলায়ন কর, তবে সে পলায়ন তোমাদের কোন উপকারে আসবে না; তোমাদেরকে অল্পই ভোগ করতে দেয়া হবে। (সূরা আহযাব- ১৬)
قُلْ اِنَّ الْمَوْتَ الَّذِيْ تَفِرُّوْنَ مِنْهُ فَاِنَّهٗ مُلَاقِيْكُمْ ثُمَّ تُرَدُّوْنَ اِلٰى عَالِمِ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ فَيُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
বলো, তোমরা যে মৃত্যু হতে পলায়ন করো (একদিন) সেই মৃত্যু তোমাদের মুখোমুখি হবেই। অতঃপর তোমাদেরকে উপস্থিত করা হবে অদৃশ্য ও দৃশ্যের জ্ঞানী আল্লাহর নিকট; তখন তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দেবেন যা তোমরা (দুনিয়াতে) করে বেড়াতে। (সূরা জুমু‘আ- ৮)
প্রাচীরের ভেতরে ঢুকলেও মৃত্যু আসবে :
اَيْنَمَا تَكُوْنُوْا يُدْرِكْكُّمُ الْمَوْتُ وَلَوْ كُنْتُمْ فِيْ بُرُوْجٍ مُّشَيَّدَةٍ
তোমরা যেখানেই থাক না কেন মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবেই, এমনকি সুউচ্চ সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান করলেও। (সূরা নিসা- ৭৮)
নবীদেরকেও মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে :
وَمَا جَعَلْنَا لِبَشَرٍ مِّنْ قَبْلِكَ الْخُلْدَؕ اَفَاِنْ مِّتَّ فَهُمُ الْخَالِدُوْنَ
আমি তোমার পূর্বেও কোন মানুষকে অনমত্ম জীবন দান করিনি; সুতরাং তোমার মৃত্যু হলে তারা কি চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে? (সূরা আম্বিয়া- ৩৪)
اِنَّكَ مَيِّتٌ وَّاِنَّهُمْ مَّيِّتُوْنَ ‐ ثُمَّ اِنَّكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عِنْدَ رَبِّكُمْ تَخْتَصِمُوْنَ
নিশ্চয় আপনিও মৃত্যুবরণ করবেন আর তারাও মৃত্যুবরণ করবে। অতঃপর কিয়ামতের দিন তোমরা স্বীয় প্রতিপালকের সামনে বিতর্ক করবে। (সূরা যুমার- ৩০, ৩১)
নির্দিষ্ট সময় এসে গেলে একটুও পেছানো হবে না :
فَاِذَا جَآءَ اَجَلُهُمْ لَا يَسْتَاْخِرُوْنَ سَاعَةً وَّلَا يَسْتَقْدِمُوْنَ
যখন তাদের সময় এসে যায়, তখন তারা এক মুহূর্তও বিলম্ব অথবা ত্বরান্বিত করতে পারে না। (সূরা নাহল- ৬১)
যেকোন বয়সেই মৃত্যু হতে পারে :
وَمِنْكُمْ مَّنْ يُّتَوَفّٰى وَمِنْكُمْ مَّنْ يُّرَدُّ اِلٰۤى اَرْذَلِ الْعُمُرِ لِكَيْلَا يَعْلَمَ مِنْ ۢبَعْدِ عِلْمٍ شَيْئًا
তোমাদের মধ্যে কারো কারো মৃত্যু ঘটানো হয় এবং কাউকে পৌঁছানো হয় হীনতম বয়সে, যার ফলে তারা যা কিছু জানতো সে সম্বন্ধে জ্ঞান থাকে না। (সূরা হজ্জ- ৫)
মৃত্যুর ফেরেশতা জান কবজ করে :
قُلْ يَتَوَفَّاكُمْ مَّلَكُ الْمَوْتِ الَّذِيْ وُكِّلَ بِكُمْ ثُمَّ اِلٰى رَبِّكُمْ تُرْجَعُوْنَ
আপনি বলে দিন, তোমাদের জীবন হরণের দায়িত্বে নিয়োজিত মৃত্যুর ফেরেশতা তোমাদের মৃত্যু ঘটাবে, তারপর তোমাদেরকে তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ফিরিয়ে নেয়া হবে। (সূরা সাজদা- ১১)
নেককারদের মৃত্যুর সময় ফেরেশতারা সালাম জানায় :
اَلَّذِيْنَ تَتَوَفَّاهُمُ الْمَلَآئِكَةُ طَيِّبِيْنَ يَقُوْلُوْنَ سَلَامٌ عَلَيْكُمُ ادْخُلُوا الْجَنَّةَ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
পবিত্র থাকাবস্থায় ফেরেশতারা যাদের মৃত্যু ঘটায় তাদেরকে বলে, তোমাদের প্রতি শান্তি! তোমরা যা করতে তার ফলে জান্নাতে প্রবেশ করো। (সূরা নাহল- ৩২)
কাফিরদের মৃত্যুর সময় ফেরেশতারা প্রহার করে :
وَلَوْ تَرٰۤى اِذْ يَتَوَفَّى الَّذِيْنَ كَفَرُوا الْمَلَآئِكَةُ يَضْرِبُوْنَ وُجُوْهَهُمْ وَاَدْبَارَهُمْۚ وَذُوْقُوْا عَذَابَ الْحَرِيْقِ
তুমি যদি দেখতে পেতে ফেরেশতারা কাফিরদের মুখমন্ডলে ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করে তাদের প্রাণ হরণ করে এবং বলে, তোমরা দহনযন্ত্রণা ভোগ করো। (সূরা আনফাল- ৫০)
মৃত্যুর যন্ত্রণা সত্য :
وَجَاءَتْ سَكْرَةُ الْمَوْتِ بِالْحَقِّؕ ذٰلِكَ مَا كُنْتَ مِنْهُ تَحِيْدُ
মৃত্যুর যন্ত্রণা সত্যই আসবে; এটা সে জিনিস, যা হতে তোমরা অব্যাহতি চাইতে। (সূরা কবাফ- ১৯)
ব্যাখ্যা : মৃত্যুর যন্ত্রণা সেই পরম সূচনাবিন্দু যেখান থেকে দুনিয়ার জীবনে পর্দার আড়ালে লুকানো মহাসত্য উন্মুক্ত হতে আরম্ভ করে। এ সময় মানুষ সেই জগতটিকে স্পষ্ট দেখতে পায়, যার খবর নবী-রাসূলগণ দিয়েছিলেন। তখন সে এ কথাও জানতে পারে যে, আখিরাত পুরোপুরি সত্য। জীবনের এ দ্বিতীয় পর্যায়ে সে সৌভাগ্যবান হিসেবে প্রবেশ করছে, না হতভাগ্য হিসেবে তাও সে জানতে পারে।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুমিন লোকের রূহ কবজ করার পর দু’জন ফেরেশতা এসে তার রূহ আকাশের দিকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। বর্ণনাকারী হাম্মাদ (রহ:) বলেন, আবু হুরায়রা (রাঃ) ঐ রূহের সুগন্ধি এবং মিশ্কের কথা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, তখন আকাশের বাসিন্দারা বলতে থাকে, এক পবিত্র আত্মা পৃথিবী হতে আগমন করেছে। আল্লাহ তোমার প্রতি এবং তোমার আবাদকৃত শরীরের প্রতি করুণা বর্ষণ করুন। তারপর তাকে তার প্রতিপালকের নিকট নিয়ে যায়। অতঃপর তিনি বলেন, তোমরা তাকে তার স্থানে নিয়ে যাও। আর যখন কোন কাফির লোকের রূহ বের হয় তখন আকাশমন্ডলীর অধিবাসীরা বলতে থাকে, এক অপবিত্র আত্মা দুনিয়া হতে এসেছে। অতঃপর বলা হয়, তোমরা তাকে তার স্থানে নিয়ে যাও। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, এ সময় রাসূল ﷺ গায়ে জড়ানো একটি পাতলা কাপড় দ্বারা নিজের নাকটি এভাবে ধরলেন। (সহীহ মুসলিম, হা/৭১১৩)
আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউ মৃত্যুবরণ করে না :
وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ اَنْ تَمُوْتَ اِلَّا بِاِذْنِ اللهِ كِتَابًا مُّؤَجَّلًا
আল্লাহর আদেশে ধার্যকৃত লিপিবদ্ধ নির্দিষ্ট সময় ব্যতীত কেউই মৃত্যুর মুখে পতিত হয় না। (সূরা আলে ইমরান- ১৪৫)
কে কোথায় মারা যাবে কেউ জানে না :
وَمَا تَدْرِيْ نَفْسٌ ۢبِاَيِّ اَرْضٍ تَمُوْتُ
কেউ জানে না কোন স্থানে সে মৃত্যুবরণ করবে। (সূরা লুক্বমান- ৩৪)
মৃত্যু উপস্থিত হলে আর তাওবা কবুল হয় না :
وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِيْنَ يَعْمَلُوْنَ السَّيِّئَاتِۚ حَتّٰۤى اِذَا حَضَرَ اَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ اِنِّي ْتُبْتُ الْاٰنَ وَلَا الَّذِيْنَ يَمُوْتُوْنَ وَهُمْ كُفَّارٌؕ اُولٰٓئِكَ اَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا اَلِيْمًا
তাদের জন্য কোন তাওবা নেই, যারা পাপকাজ করতেই থাকে- এমনকি তাদের কারো নিকট মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন বলে আমি এখন তাওবা করছি। আর তাদেরও কোন তাওবা নেই, যারা কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। এদের জন্য আমি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। (সূরা নিসা- ১৮)
মৃত্যুর মাধ্যমে মানুষের পরীক্ষা হয় :
اَلَّذِيْ خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ اَيُّكُمْ اَحْسَنُ عَمَلًا
তিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে এ পরীক্ষা করার জন্য যে, কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক দিয়ে সর্বোত্তম। (সূরা মুলক- ২)
كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِ
প্রত্যেক আতমা মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণকারী। (সূরা আলে ইমরান- ১৮৫)
মৃত্যুর পর সবাই আল্লাহর দিকে ফিরে যাবে :
كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِ ثُمَّ اِلَيْنَا تُرْجَعُوْنَ
প্রত্যেক আত্মা মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণকারী; অতঃপর তোমরা আমারই নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা আনকাবূত- ৫৭)
মৃত্যু থেকে পালানোর কোন উপায় নেই :
قُلْ لَّنْ يَّنْفَعَكُمُ الْفِرَارُ اِنْ فَرَرْتُمْ مِّنَ الْمَوْتِ اَوِ الْقَتْلِ وَاِذًا لَّا تُمَتَّعُوْنَ اِلَّا قَلِيْلًا
আপনি বলে দিন, তোমরা যদি মৃত্যু অথবা হত্যার ভয়ে পলায়ন কর, তবে সে পলায়ন তোমাদের কোন উপকারে আসবে না; তোমাদেরকে অল্পই ভোগ করতে দেয়া হবে। (সূরা আহযাব- ১৬)
قُلْ اِنَّ الْمَوْتَ الَّذِيْ تَفِرُّوْنَ مِنْهُ فَاِنَّهٗ مُلَاقِيْكُمْ ثُمَّ تُرَدُّوْنَ اِلٰى عَالِمِ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ فَيُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
বলো, তোমরা যে মৃত্যু হতে পলায়ন করো (একদিন) সেই মৃত্যু তোমাদের মুখোমুখি হবেই। অতঃপর তোমাদেরকে উপস্থিত করা হবে অদৃশ্য ও দৃশ্যের জ্ঞানী আল্লাহর নিকট; তখন তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দেবেন যা তোমরা (দুনিয়াতে) করে বেড়াতে। (সূরা জুমু‘আ- ৮)
প্রাচীরের ভেতরে ঢুকলেও মৃত্যু আসবে :
اَيْنَمَا تَكُوْنُوْا يُدْرِكْكُّمُ الْمَوْتُ وَلَوْ كُنْتُمْ فِيْ بُرُوْجٍ مُّشَيَّدَةٍ
তোমরা যেখানেই থাক না কেন মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবেই, এমনকি সুউচ্চ সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান করলেও। (সূরা নিসা- ৭৮)
নবীদেরকেও মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে :
وَمَا جَعَلْنَا لِبَشَرٍ مِّنْ قَبْلِكَ الْخُلْدَؕ اَفَاِنْ مِّتَّ فَهُمُ الْخَالِدُوْنَ
আমি তোমার পূর্বেও কোন মানুষকে অনমত্ম জীবন দান করিনি; সুতরাং তোমার মৃত্যু হলে তারা কি চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে? (সূরা আম্বিয়া- ৩৪)
اِنَّكَ مَيِّتٌ وَّاِنَّهُمْ مَّيِّتُوْنَ ‐ ثُمَّ اِنَّكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عِنْدَ رَبِّكُمْ تَخْتَصِمُوْنَ
নিশ্চয় আপনিও মৃত্যুবরণ করবেন আর তারাও মৃত্যুবরণ করবে। অতঃপর কিয়ামতের দিন তোমরা স্বীয় প্রতিপালকের সামনে বিতর্ক করবে। (সূরা যুমার- ৩০, ৩১)
নির্দিষ্ট সময় এসে গেলে একটুও পেছানো হবে না :
فَاِذَا جَآءَ اَجَلُهُمْ لَا يَسْتَاْخِرُوْنَ سَاعَةً وَّلَا يَسْتَقْدِمُوْنَ
যখন তাদের সময় এসে যায়, তখন তারা এক মুহূর্তও বিলম্ব অথবা ত্বরান্বিত করতে পারে না। (সূরা নাহল- ৬১)
যেকোন বয়সেই মৃত্যু হতে পারে :
وَمِنْكُمْ مَّنْ يُّتَوَفّٰى وَمِنْكُمْ مَّنْ يُّرَدُّ اِلٰۤى اَرْذَلِ الْعُمُرِ لِكَيْلَا يَعْلَمَ مِنْ ۢبَعْدِ عِلْمٍ شَيْئًا
তোমাদের মধ্যে কারো কারো মৃত্যু ঘটানো হয় এবং কাউকে পৌঁছানো হয় হীনতম বয়সে, যার ফলে তারা যা কিছু জানতো সে সম্বন্ধে জ্ঞান থাকে না। (সূরা হজ্জ- ৫)
মৃত্যুর ফেরেশতা জান কবজ করে :
قُلْ يَتَوَفَّاكُمْ مَّلَكُ الْمَوْتِ الَّذِيْ وُكِّلَ بِكُمْ ثُمَّ اِلٰى رَبِّكُمْ تُرْجَعُوْنَ
আপনি বলে দিন, তোমাদের জীবন হরণের দায়িত্বে নিয়োজিত মৃত্যুর ফেরেশতা তোমাদের মৃত্যু ঘটাবে, তারপর তোমাদেরকে তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ফিরিয়ে নেয়া হবে। (সূরা সাজদা- ১১)
নেককারদের মৃত্যুর সময় ফেরেশতারা সালাম জানায় :
اَلَّذِيْنَ تَتَوَفَّاهُمُ الْمَلَآئِكَةُ طَيِّبِيْنَ يَقُوْلُوْنَ سَلَامٌ عَلَيْكُمُ ادْخُلُوا الْجَنَّةَ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
পবিত্র থাকাবস্থায় ফেরেশতারা যাদের মৃত্যু ঘটায় তাদেরকে বলে, তোমাদের প্রতি শান্তি! তোমরা যা করতে তার ফলে জান্নাতে প্রবেশ করো। (সূরা নাহল- ৩২)
কাফিরদের মৃত্যুর সময় ফেরেশতারা প্রহার করে :
وَلَوْ تَرٰۤى اِذْ يَتَوَفَّى الَّذِيْنَ كَفَرُوا الْمَلَآئِكَةُ يَضْرِبُوْنَ وُجُوْهَهُمْ وَاَدْبَارَهُمْۚ وَذُوْقُوْا عَذَابَ الْحَرِيْقِ
তুমি যদি দেখতে পেতে ফেরেশতারা কাফিরদের মুখমন্ডলে ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করে তাদের প্রাণ হরণ করে এবং বলে, তোমরা দহনযন্ত্রণা ভোগ করো। (সূরা আনফাল- ৫০)
মৃত্যুর যন্ত্রণা সত্য :
وَجَاءَتْ سَكْرَةُ الْمَوْتِ بِالْحَقِّؕ ذٰلِكَ مَا كُنْتَ مِنْهُ تَحِيْدُ
মৃত্যুর যন্ত্রণা সত্যই আসবে; এটা সে জিনিস, যা হতে তোমরা অব্যাহতি চাইতে। (সূরা কবাফ- ১৯)
ব্যাখ্যা : মৃত্যুর যন্ত্রণা সেই পরম সূচনাবিন্দু যেখান থেকে দুনিয়ার জীবনে পর্দার আড়ালে লুকানো মহাসত্য উন্মুক্ত হতে আরম্ভ করে। এ সময় মানুষ সেই জগতটিকে স্পষ্ট দেখতে পায়, যার খবর নবী-রাসূলগণ দিয়েছিলেন। তখন সে এ কথাও জানতে পারে যে, আখিরাত পুরোপুরি সত্য। জীবনের এ দ্বিতীয় পর্যায়ে সে সৌভাগ্যবান হিসেবে প্রবেশ করছে, না হতভাগ্য হিসেবে তাও সে জানতে পারে।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুমিন লোকের রূহ কবজ করার পর দু’জন ফেরেশতা এসে তার রূহ আকাশের দিকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। বর্ণনাকারী হাম্মাদ (রহ:) বলেন, আবু হুরায়রা (রাঃ) ঐ রূহের সুগন্ধি এবং মিশ্কের কথা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, তখন আকাশের বাসিন্দারা বলতে থাকে, এক পবিত্র আত্মা পৃথিবী হতে আগমন করেছে। আল্লাহ তোমার প্রতি এবং তোমার আবাদকৃত শরীরের প্রতি করুণা বর্ষণ করুন। তারপর তাকে তার প্রতিপালকের নিকট নিয়ে যায়। অতঃপর তিনি বলেন, তোমরা তাকে তার স্থানে নিয়ে যাও। আর যখন কোন কাফির লোকের রূহ বের হয় তখন আকাশমন্ডলীর অধিবাসীরা বলতে থাকে, এক অপবিত্র আত্মা দুনিয়া হতে এসেছে। অতঃপর বলা হয়, তোমরা তাকে তার স্থানে নিয়ে যাও। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, এ সময় রাসূল ﷺ গায়ে জড়ানো একটি পাতলা কাপড় দ্বারা নিজের নাকটি এভাবে ধরলেন। (সহীহ মুসলিম, হা/৭১১৩)
আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউ মৃত্যুবরণ করে না :
وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ اَنْ تَمُوْتَ اِلَّا بِاِذْنِ اللهِ كِتَابًا مُّؤَجَّلًا
আল্লাহর আদেশে ধার্যকৃত লিপিবদ্ধ নির্দিষ্ট সময় ব্যতীত কেউই মৃত্যুর মুখে পতিত হয় না। (সূরা আলে ইমরান- ১৪৫)
কে কোথায় মারা যাবে কেউ জানে না :
وَمَا تَدْرِيْ نَفْسٌ ۢبِاَيِّ اَرْضٍ تَمُوْتُ
কেউ জানে না কোন স্থানে সে মৃত্যুবরণ করবে। (সূরা লুক্বমান- ৩৪)
মৃত্যু উপস্থিত হলে আর তাওবা কবুল হয় না :
وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِيْنَ يَعْمَلُوْنَ السَّيِّئَاتِۚ حَتّٰۤى اِذَا حَضَرَ اَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ اِنِّي ْتُبْتُ الْاٰنَ وَلَا الَّذِيْنَ يَمُوْتُوْنَ وَهُمْ كُفَّارٌؕ اُولٰٓئِكَ اَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا اَلِيْمًا
তাদের জন্য কোন তাওবা নেই, যারা পাপকাজ করতেই থাকে- এমনকি তাদের কারো নিকট মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন বলে আমি এখন তাওবা করছি। আর তাদেরও কোন তাওবা নেই, যারা কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। এদের জন্য আমি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। (সূরা নিসা- ১৮)
মৃত্যুর মাধ্যমে মানুষের পরীক্ষা হয় :
اَلَّذِيْ خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ اَيُّكُمْ اَحْسَنُ عَمَلًا
তিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে এ পরীক্ষা করার জন্য যে, কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক দিয়ে সর্বোত্তম। (সূরা মুলক- ২)
মৃত্যুর পর কিয়ামত পর্যন্ত সময়কাল হলো আলমে বার্যাখ :
وَمِنْ وَّرَآئِهِمْ بَرْزَخٌ اِلٰى يَوْمِ يُبْعَثُوْنَ
তাদের সম্মুখে আলমে বার্যাখ থাকবে উত্থান দিবস পর্যমত্ম। (সূরা মু’মিনূন- ১০০)
মানুষ মারা যায় কিন্তু আত্মা মরে না :
قِيْلَ ادْخُلِ الْجَنَّةَؕ قَالَ يَا لَيْتَ قَوْمِيْ يَعْلَمُوْنَ
তাকে বলা হলো, জান্নাতে প্রবেশ করো। সে বলল- আহা! যদি আমার সম্প্রদায় জানতে পারত। (সূরা ইয়াসীন- ২৬)
ব্যাখ্যা : যেসব আয়াত থেকে বার্যাখের জীবনের সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় এ আয়াতটি তার অন্যতম। এ থেকে জানা যায় যে, মৃত্যুর পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত সময়কাল চূড়ান্ত অস্তিত্ব বিলুপ্তির যুগ নয়। এ সময় দেহ ছাড়াই প্রাণ জীবিত থাকে, কথা বলে, কথা শোনে, আবেগ-অনুভুতি পোষণ করে, আনন্দ ও দুঃখ অনুভব করে এবং দুনিয়াবাসীদের ব্যাপারেও আগ্রহ অব্যাহত থাকে। যদি এমনটি না হতো, তাহলে মৃত্যুর পর কোন ব্যক্তি কেমন করে তার জাতির জন্য এ আকাঙ্ক্ষা করেন যে, হায়! যদি তারা তাঁর এ শুভ পরিণাম সম্পর্কে জানতে পারত!
মৃত্যুর পর থেকেই আযাব শুরু হয়ে যায় :
اَلَّذِيْنَ تَتَوَفَّاهُمُ الْمَلَآئِكَةُ ظَالِمِيْۤ اَنْفُسِهِمْ۪ فَاَلْقَوُا السَّلَمَ مَا كُنَّا نَعْمَلُ مِنْ سُوْٓءٍؕ بَلٰۤى اِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ ۢبِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ ‐ فَادْخُلُوْاۤ اَبْوَابَ جَهَنَّمَ خَالِدِيْنَ فِيْهَا فَلَبِئْسَ مَثْوَى الْمُتَكَبِّرِيْنَ
নিজেদের প্রতি যুলুম করতে থাকা অবস্থায় ফেরেশতাগণ যাদের মৃত্যু ঘটায়, তারা আত্মসমর্পণ করে বলবে, আমরা কোন মন্দকর্ম করতাম না। (আল্লাহ বলবেন) নিশ্চয় তোমরা যা করতে সে বিষয়ে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত। সুতরাং তোমরা জাহান্নামের দ্বারগুলো দিয়ে প্রবেশ করো, সেথায় তোমরা স্থায়ী হবে। দেখো, অহংকারীদের আবাসস্থল কত নিকৃষ্ট! (সূরা নাহল- ২৮, ২৯)
اَلَّذِيْنَ تَتَوَفَّاهُمُ الْمَلَآئِكَةُ طَيِّبِيْنَ يَقُوْلُوْنَ سَلَامٌ عَلَيْكُمُ ادْخُلُوا الْجَنَّةَ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
পবিত্র থাকা অবস্থায় ফেরেশতাগণ যাদের মৃত্যু ঘটায়। ফেরেশতাগণ তাদেরকে বলে, তোমাদের প্রতি শান্তি! তোমরা যা করতে তার ফলে জান্নাতে প্রবেশ করো। (সূরা নাহল- ৩২)
ব্যাখ্যা : এসব আয়াতে মৃত্যুর পর মুত্তাক্বী ও ফেরেশতাদের যে আলাপ-আলোচনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা কুরআন মাজীদের এমন ধরনের আয়াতের অন্যতম, যেগুলো সুস্পষ্টভাবে কবরের আযাব ও সওয়াবের প্রমাণ পেশ করে। হাদীসে ‘আলমে বারযাখ’- এর জন্য কবর শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। এর অর্থ এমন একটি জগত, যেখানে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে মৃত্যুবরণ করার পর থেকে নিয়ে পরবর্তী পুনরুত্থান লাভ করা পর্যন্ত মানুষের রূহগুলো অবস্থান করবে। মৃত্যুর মাধ্যমে দেহ ও রূহের আলাদা হয়ে যাওয়ার পর রূহ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় না। বরং দুনিয়ার জীবনের অভিজ্ঞতা এবং মানসিক ও নৈতিক উপার্জনের মাধ্যমে যে ব্যক্তিত্ব সৃষ্টি হয়েছিল তাসহ জীবিত থাকে।
মৃত ব্যক্তিকে দাফনের পর তাকে তিনটি প্রশ্ন করা হবে।
১. مَنْ رَّبُّكَ অর্থাৎ তোমার রব কে?
২. وَمَا دِيْنُكَ অর্থাৎ তোমার দ্বীন কী?
৩. وَمَنْ نَّبِيُّكَ অর্থাৎ তোমার নবী কে ছিলেন?
যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে আল্লাহ সত্যের উপর অটল রাখবেন এবং তারা সঠিকভাবে প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারবে। আর যারা কাফির ও মুনাফিক তারা কিছুই বলতে পারবে না। বরং তারা বলবে, হায়! হায়! আমি তো কিছুই জানি না।
وَمِنْ وَّرَآئِهِمْ بَرْزَخٌ اِلٰى يَوْمِ يُبْعَثُوْنَ
তাদের সম্মুখে আলমে বার্যাখ থাকবে উত্থান দিবস পর্যমত্ম। (সূরা মু’মিনূন- ১০০)
মানুষ মারা যায় কিন্তু আত্মা মরে না :
قِيْلَ ادْخُلِ الْجَنَّةَؕ قَالَ يَا لَيْتَ قَوْمِيْ يَعْلَمُوْنَ
তাকে বলা হলো, জান্নাতে প্রবেশ করো। সে বলল- আহা! যদি আমার সম্প্রদায় জানতে পারত। (সূরা ইয়াসীন- ২৬)
ব্যাখ্যা : যেসব আয়াত থেকে বার্যাখের জীবনের সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় এ আয়াতটি তার অন্যতম। এ থেকে জানা যায় যে, মৃত্যুর পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত সময়কাল চূড়ান্ত অস্তিত্ব বিলুপ্তির যুগ নয়। এ সময় দেহ ছাড়াই প্রাণ জীবিত থাকে, কথা বলে, কথা শোনে, আবেগ-অনুভুতি পোষণ করে, আনন্দ ও দুঃখ অনুভব করে এবং দুনিয়াবাসীদের ব্যাপারেও আগ্রহ অব্যাহত থাকে। যদি এমনটি না হতো, তাহলে মৃত্যুর পর কোন ব্যক্তি কেমন করে তার জাতির জন্য এ আকাঙ্ক্ষা করেন যে, হায়! যদি তারা তাঁর এ শুভ পরিণাম সম্পর্কে জানতে পারত!
মৃত্যুর পর থেকেই আযাব শুরু হয়ে যায় :
اَلَّذِيْنَ تَتَوَفَّاهُمُ الْمَلَآئِكَةُ ظَالِمِيْۤ اَنْفُسِهِمْ۪ فَاَلْقَوُا السَّلَمَ مَا كُنَّا نَعْمَلُ مِنْ سُوْٓءٍؕ بَلٰۤى اِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ ۢبِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ ‐ فَادْخُلُوْاۤ اَبْوَابَ جَهَنَّمَ خَالِدِيْنَ فِيْهَا فَلَبِئْسَ مَثْوَى الْمُتَكَبِّرِيْنَ
নিজেদের প্রতি যুলুম করতে থাকা অবস্থায় ফেরেশতাগণ যাদের মৃত্যু ঘটায়, তারা আত্মসমর্পণ করে বলবে, আমরা কোন মন্দকর্ম করতাম না। (আল্লাহ বলবেন) নিশ্চয় তোমরা যা করতে সে বিষয়ে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত। সুতরাং তোমরা জাহান্নামের দ্বারগুলো দিয়ে প্রবেশ করো, সেথায় তোমরা স্থায়ী হবে। দেখো, অহংকারীদের আবাসস্থল কত নিকৃষ্ট! (সূরা নাহল- ২৮, ২৯)
اَلَّذِيْنَ تَتَوَفَّاهُمُ الْمَلَآئِكَةُ طَيِّبِيْنَ يَقُوْلُوْنَ سَلَامٌ عَلَيْكُمُ ادْخُلُوا الْجَنَّةَ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
পবিত্র থাকা অবস্থায় ফেরেশতাগণ যাদের মৃত্যু ঘটায়। ফেরেশতাগণ তাদেরকে বলে, তোমাদের প্রতি শান্তি! তোমরা যা করতে তার ফলে জান্নাতে প্রবেশ করো। (সূরা নাহল- ৩২)
ব্যাখ্যা : এসব আয়াতে মৃত্যুর পর মুত্তাক্বী ও ফেরেশতাদের যে আলাপ-আলোচনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা কুরআন মাজীদের এমন ধরনের আয়াতের অন্যতম, যেগুলো সুস্পষ্টভাবে কবরের আযাব ও সওয়াবের প্রমাণ পেশ করে। হাদীসে ‘আলমে বারযাখ’- এর জন্য কবর শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। এর অর্থ এমন একটি জগত, যেখানে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে মৃত্যুবরণ করার পর থেকে নিয়ে পরবর্তী পুনরুত্থান লাভ করা পর্যন্ত মানুষের রূহগুলো অবস্থান করবে। মৃত্যুর মাধ্যমে দেহ ও রূহের আলাদা হয়ে যাওয়ার পর রূহ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় না। বরং দুনিয়ার জীবনের অভিজ্ঞতা এবং মানসিক ও নৈতিক উপার্জনের মাধ্যমে যে ব্যক্তিত্ব সৃষ্টি হয়েছিল তাসহ জীবিত থাকে।
মৃত ব্যক্তিকে দাফনের পর তাকে তিনটি প্রশ্ন করা হবে।
১. مَنْ رَّبُّكَ অর্থাৎ তোমার রব কে?
২. وَمَا دِيْنُكَ অর্থাৎ তোমার দ্বীন কী?
৩. وَمَنْ نَّبِيُّكَ অর্থাৎ তোমার নবী কে ছিলেন?
যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে আল্লাহ সত্যের উপর অটল রাখবেন এবং তারা সঠিকভাবে প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারবে। আর যারা কাফির ও মুনাফিক তারা কিছুই বলতে পারবে না। বরং তারা বলবে, হায়! হায়! আমি তো কিছুই জানি না।
কিয়ামত অবশ্যই আসবে, এতে কোন সন্দেহ নেই :
اِنَّ السَّاعَةَ لَاٰتِيَةٌ لَّا رَيْبَ فِيْهَاؗ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يُؤْمِنُوْنَ
কিয়ামত অবশ্যই সংঘটিত হবে, এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু অধিকাংশ লোক তা বিশ্বাস করে না। (সূরা মু’মিন- ৫৯)
وَاَنَّ السَّاعَةَ اٰتِيَةٌ لَّا رَيْبَ فِيْهَا وَاَنَّ اللهَ يَبْعَثُ مَنْ فِى الْقُبُوْرِ
কিয়ামত অবশ্যই আসবে, এতে কোন সন্দেহ নেই এবং কবরে যারা আছে অবশ্যই আল্লাহ তাদেরকে উত্থিত করবেন। (সূরা হজ্জ- ৭)
আল্লাহ শপথ করে বলেছেন যে, কিয়ামত আসবেই :
وَالْمُرْسَلَاتِ عُرْفًا – فَالْعَاصِفَاتِ عَصْفًا – وَالنَّاشِرَاتِ نَشْرًا – فَالْفَارِقَاتِ فَرْقًا – فَالْمُلْقِيَاتِ ذِكْرًا – عُذْرًا اَوْ نُذْرًا – اِنَّمَا تُوْعَدُوْنَ لَوَاقِعٌ
শপথ! কল্যাণস্বরূপ প্রেরিত বায়ুর। অতঃপর শপথ! প্রলয়ঙ্কারী ঝড়ের এবং বহনকারী বায়ুর। অতঃপর শপথ! (মেঘপুঞ্জ) বিচ্ছিন্নকারী বায়ুর এবং তার, যে মানুষের অন্তরে তা পৌঁছে দেয় উপদেশ অনুশোচনা বা সতর্কতাস্বরূপ। নিশ্চয় তোমাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হচ্ছে তা অবশ্যই সংঘটিত হবে।
(সূরা মুরসালাত, ১-৭)
কিয়ামতকে প্রতিহত করার শক্তি কারো থাকবে না :
بَلْ تَاْتِيْهِمْ بَغْتَةً فَتَبْهَتُهُمْ فَلَا يَسْتَطِيْعُوْنَ رَدَّهَا وَلَا هُمْ يُنْظَرُوْنَ
বস্তুত সেটা তাদের উপর আসবে অতর্কিতভাবে এবং তাদেরকে হতভম্ব করে দেবে। ফলে তারা সেটা রোধ করতে পারবে না এবং তাদেরকে অবকাশও দেয়া হবে না। (সূরা আম্বিয়া- ৪০)
اَزِفَتِ الْاٰزِفَةُ – لَيْسَ لَهَا مِنْ دُوْنِ اللهِ كَاشِفَةٌ
কিয়ামত আসন্ন, আল্লাহ ছাড়া কেউই এটা প্রকাশ করতে সক্ষম নয়। (সূরা নাজম- ৫৭, ৫৮)
কাফিররা কিয়ামত দিবসকে অস্বীকার করে :
وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَا تَاْتِيْنَا السَّاعَةُؕ قُلْ بَلٰى وَرَبِّيْ لَتَاْتِيَنَّكُمْ
কাফিররা বলে, আমাদের উপর কিয়ামত আসবে না। (তাদেরকে) বলো, হ্যাঁ- আমার প্রতিপালকের শপথ! অবশ্যই তোমাদের উপর কিয়ামত আসবে। (সূরা সাবা- ৩)
بَلْ كَذَّبُوْا بِالسَّاعَةِ وَاَعْتَدْنَا لِمَنْ كَذَّبَ بِالسَّاعَةِ سَعِيْرًا
কিন্তু তারা কিয়ামত দিবসকে অস্বীকার করেছে। আর যারা কিয়ামত দিবসকে অস্বীকার করে তাদের জন্য আমি প্রস্তুত করে রেখেছি জ্বলমত্ম অগ্নি। (সূরা ফুরক্বান- ১১)
তারা কিয়ামতের সময় জানতে চায় :
يَسْاَلُوْنَكَ عَنِ السَّاعَةِ اَيَّانَ مُرْسَاهَا
তারা তোমাকে কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে যে, ওটা কখন সংঘটিত হবে? (সূরা নাযি‘আত- ৪২)
আল্লাহর পক্ষ থেকে এর জবাব :
فِيْمَ اَنْتَ مِنْ ذِكْرَاهَا – اِلٰى رَبِّكَ مُنْتَهَاهَا – اِنَّمَاۤ اَنْتَ مُنْذِرُ مَنْ يَّخْشَاهَا – كَاَنَّهُمْ يَوْمَ يَرَوْنَهَا لَمْ يَلْبَثُوْاۤ اِلَّا عَشِيَّةً اَوْ ضُحَاهَا
এর আলোচনার সাথে তোমার কী সম্পর্ক? এ সংক্রান্ত জ্ঞান তোমার প্রতিপালক পর্যন্তই শেষ। যারা একে ভয় করে তুমি তো কেবল তাদেরই সতর্ককারী। যেদিন তারা এটাকে দেখবে তখন তাদের মনে হবে, যেন তারা (পৃথিবীতে) এক সন্ধ্যা অথবা এক সকালের অধিক সময় অবস্থান করেনি। (সূরা নাযি‘আত, ৪৩-৪৬)
কিয়ামত ঘটে গেলে একে অস্বীকার করার কেউ থাকবে না :
اِذَا وَقَعَتِ الْوَاقِعَةُ – لَيْسَ لِوَقْعَتِهَا كَاذِبَةٌ – خَافِضَةٌ رَّافِعَةٌ
যখন কিয়ামত সংঘটিত হবে, (তখন) একে অস্বীকার করার কেউ থাকবে না। এটা কাউকে করবে নীচু এবং কাউকে করবে সমুন্নত। (সূরা ওয়াক্বিয়া, ১-৩)
কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার সময় সম্পর্কে একমাত্র আল্লাহই জানেন :
وَعِنْدَهٗ عِلْمُ السَّاعَةِۚ وَاِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ
কিয়ামতের জ্ঞান শুধু তাঁরই আছে এবং তোমরা তাঁরই নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা যুখরুফ- ৮৫)
اِنَّ اللهَ عِنْدَهٗ عِلْمُ السَّاعَةِ
নিশ্চয় আল্লাহর কাছে কিয়ামত সম্পর্কে জ্ঞান রয়েছে। (সূরা লুক্বমান- ৩৪)
কিয়ামত কখন হবে- নবীরাও তা জানতেন না :
يَسْاَلُوْنَكَ عَنِ السَّاعَةِ اَيَّانَ مُرْسَاهَاؕ قُلْ اِنَّمَا عِلْمُهَا عِنْدَ رَبِّيْۚ لَا يُجَلِّيْهَا لِوَقْتِهَاۤ اِلَّا هُوَؕ ثَقُلَتْ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِؕ لَا تَاْتِيْكُمْ اِلَّا بَغْتَةًؕ يَسْاَلُوْنَكَ كَاَنَّكَ حَفِيٌّ عَنْهَاؕ قُلْ اِنَّمَا عِلْمُهَا عِنْدَ اللهِ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ
তারা তোমাকে জিজ্ঞেস করে কিয়ামত কখন সংঘটিত হবে? বলো, এ বিষয়ের জ্ঞান শুধুমাত্র আমার প্রতিপালকের কাছেই আছে। তিনিই যথাসময়ে তা প্রকাশ করবেন, তখন সেটা আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে একটি ভয়ংকর ঘটনা ঘটাবে। আকস্মিকভাবেই তা তোমাদের উপর আপতিত হবে। তুমি এ বিষয়ে সবিশেষ অবহিত মনে করে তারা তোমাকে প্রশ্ন করে। বলো, এ বিষয়ের জ্ঞান শুধু আল্লাহর কাছেই রয়েছে, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। (সূরা আ‘রাফ- ১৮৭)
কিয়ামত বেশি দূরে নয় :
وَيَقُوْلُوْنَ مَتٰى هُوَؕ قُلْ عَسٰۤى اَنْ يَّكُوْنَ قَرِيْبًا
তারা বলবে, সেটা কবে? বলো, সম্ভবত তা খুবই নিকটে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৫১)
اِنَّهُمْ يَرَوْنَهٗ بَعِيْدًا – وَنَرَاهُ قَرِيْبًا
তারা ঐ দিনকে অনেক দূরে মনে করে, অথচ আমি তা দেখছি খুবই নিকটে। (সূরা মা‘আরিজ- ৬, ৭)
اِقْتَرَبَ لِلنَّاسِ حِسَابُهُمْ وَهُمْ فِيْ غَفْلَةٍ مُّعْرِضُوْنَ
মানুষের হিসাব-নিকাশের সময় খুবই নিকটে, অথচ তারা উদাসীনতার বশবর্তী হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
(সূরা আম্বিয়া- ১)
মাত্র অল্প কয়েকটি দিনের জন্য অবকাশ দেয়া হচ্ছে :
اِنَّ السَّاعَةَ اٰتِيَةٌ اَكَادُ اُخْفِيْهَا لِتُجْزٰى كُلُّ نَفْسٍ ۢ بِمَا تَسْعٰى
কিয়ামত অবশ্যই আসবে। আমি এটা গোপন রাখতে চাই, যাতে প্রত্যেকেই নিজ কর্মানুযায়ী ফল লাভ করতে পারে। (সূরা ত্বা-হা- ১৫)
কিয়ামতের লক্ষণ প্রকাশ পেয়ে যাচ্ছে :
فَهَلْ يَنْظُرُوْنَ اِلَّا السَّاعَةَ اَنْ تَاْتِيَهُمْ بَغْتَةًۚ فَقَدْ جَآءَ اَشْرَاطُهَاۚ فَاَنّٰى لَهُمْ اِذَا جَآءَتْهُمْ ذِكْرَاهُمْ
তবে এরা কি শুধু কিয়ামতের অপেক্ষায় আছে যে, তা হঠাৎ তাদের উপর এসে পড়ুক? কিয়ামতের লক্ষণগুলো তো এসেই গেছে। (যখন কিয়ামত এসেই যাবে) তখন তাদের নসীহত গ্রহণের কিছু বাকি থাকবে কি? (সূরা মুহাম্মাদ- ১৮)
ভূগর্ভের প্রাণী বেরিয়ে আসবে :
وَاِذَا وَقَعَ الْقَوْلُ عَلَيْهِمْ اَخْرَجْنَا لَهُمْ دَآبَّةً مِّنَ الْاَرْضِ تُكَلِّمُهُمْ اَنَّ النَّاسَ كَانُوْا بِاٰيَاتِنَا لَا يُوْقِنُوْنَ
যখন তাদের নিকট ঘোষিত শাস্তি এসে যাবে, তখন আমি মাটির ভেতর হতে বের করব এক জীব, যা তাদের সঙ্গে কথা বলবে। আর এটা এজন্য যে, মানুষ আমার নিদর্শনের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসী নয়।
(সূরা নামল- ৮২)
ব্যাখ্যা : আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) এর বক্তব্য হচ্ছে, যখন দুনিয়ার বুকে সৎকাজের আদেশ দেয়া ও অসৎকাজ থেকে বিরত রাখার মতো কোন লোক থাকবে না, তখনই এ ঘটনা ঘটবে। নবী ﷺ বলেন, ‘‘সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হবে এবং একদিন দিন-দুপুরে এ জানোয়ার বের হয়ে আসবে।’’ (সহীহ মুসলিম, হা/৪১৭)
একটি প্রাণী এভাবে মানুষের সাথে মানুষের ভাষায় কথা বলা, এটি আল্লাহর অসীম শক্তির একটি নিদর্শন। তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে বাকশক্তি দান করতে পারেন। কিয়ামতের পূর্বে তিনি তো শুধুমাত্র একটি প্রাণীকে বাকশক্তি দান করবেন কিন্তু যখন কিয়ামত কায়েম হয়ে যাবে তখন আল্লাহর আদালতে মানুষের চোখ, কান ও তার গায়ের চামড়া পর্যন্ত কথা বলতে থাকবে।
কিয়ামত হঠাৎ করে আসবে :
اَفَاَمِنُوْاۤ اَنْ تَاْتِيَهُمْ غَاشِيَةٌ مِّنْ عَذَابِ اللهِ اَوْ تَاْتِيَهُمُ السَّاعَةُ بَغْتَةً
তবে কি তারা আল্লাহর সর্বগ্রাসী শাসিত্ম হতে অথবা তাদের অজ্ঞাতসারে কিয়ামতের আকস্মিক উপস্থিতি হতে নিরাপদ? (সূরা ইউসুফ- ১০৭)
وَلَا يَزَالُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا فِيْ مِرْيَةٍ مِّنْهُ حَتّٰى تَاْتِيَهُمُ السَّاعَةُ بَغْتَةً اَوْ يَاْتِيَهُمْ عَذَابُ يَوْمٍ عَقِيْمٍ
যারা কুফরী করেছে তারা তাতে সন্দেহ পোষণ করা হতে বিরত হবে না, যতক্ষণ না তাদের নিকট আকস্মিকভাবে কিয়ামত এসে পড়বে অথবা এসে পড়বে এক বন্ধ্যা দিনের শাসিত্ম। (সূরা হজ্জ- ৫৫)
ব্যাখ্যা : এখানে কিয়ামতের দিনকে বন্ধ্যা বলা হয়েছে, যেহেতু ঐ দিনের পর আর কোন বিচারের দিন আসবে না।
মানুষের অজান্তেই কিয়ামত এসে পড়বে :
فَيَاْتِيَهُمْ بَغْتَةً وَّهُمْ لَا يَشْعُرُوْنَ
ফলে তা তাদের নিকট আকস্মিকভাবে এসে পড়বে, কিন্তু তারা কিছুই বুঝতে পারবে না। (সূরা শু‘আরা- ২০২)
هَلْ يَنْظُرُوْنَ اِلَّا السَّاعَةَ اَنْ تَاْتِيَهُمْ بَغْتَةً وَّهُمْ لَا يَشْعُرُوْنَ
তবে কি তারা তাদের অজ্ঞাতসারে আকস্মিকভাবে কিয়ামত আগমন করারই অপেক্ষা করছে? অথচ (তা অচিরেই এসে যাবে, কিন্তু) তারা অনুধাবন করতে পারবে না। (সূরা যুখরুফ- ৬৬)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ কিয়ামত হঠাৎ সংঘটিত হবে; কিন্তু লোকেরা তা জানতেও পারবে না। এমনকি লোকেরা নিশ্চিন্তে নিজেদের কাজকর্মে ব্যস্ত হয়ে থাকবে এবং তাদের মনে ক্ষুদ্রতম চিন্তাও জাগবে না যে, দুনিয়ার শেষ সময় এসে গেছে। এ অবস্থায় হঠাৎ একটি বিকট শব্দ হবে এবং যে যেখানে থাকবে সে সেখানেই বেহুশ হয়ে যাবে।
চোখের পলকেই তা ঘটে যাবে :
وَمَاۤ اَمْرُ السَّاعَةِ اِلَّا كَلَمْحِ الْبَصَرِ اَوْ هُوَ اَقْرَبُؕ اِنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
কিয়ামতের ব্যাপারটি চক্ষুর পলকের ন্যায়, বরং সেটা তদপেক্ষাও নিকটে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা নাহল- ৭৭)
ব্যাখ্যা : কিয়ামত ধীরে ধীরে সংঘটিত হবে না। তা আসার সময় দূর থেকে কেউ দেখতে পারবে না এবং এর মাঝখানে কেউ নিজেদেরকে সামলে নিয়ে কোন রকম প্রস্তুতি গ্রহণ করার সুযোগও পাবে না। যে কোন দিন যে কোন মুহূর্তে চোখের পলকে বা তার চেয়েও কম সময়ে তা এসে যাবে। কাজেই যার সংশোধন হওয়ার সে যেন অবিলম্বে সংশোধিত হয়ে যায় এবং চূড়ান্ত ফায়সালার সময় দূরে মনে করে পাশ কাটিয়ে না যায়। একটি নিঃশ্বাস সম্পর্কেও কেউ নিশ্চয়তার সাথে এ কথা বলতে পারবে না যে, তার পরের শ্বাস গ্রহণের সুযোগ অবশ্যই হবে।
اِنَّ السَّاعَةَ لَاٰتِيَةٌ لَّا رَيْبَ فِيْهَاؗ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يُؤْمِنُوْنَ
কিয়ামত অবশ্যই সংঘটিত হবে, এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু অধিকাংশ লোক তা বিশ্বাস করে না। (সূরা মু’মিন- ৫৯)
وَاَنَّ السَّاعَةَ اٰتِيَةٌ لَّا رَيْبَ فِيْهَا وَاَنَّ اللهَ يَبْعَثُ مَنْ فِى الْقُبُوْرِ
কিয়ামত অবশ্যই আসবে, এতে কোন সন্দেহ নেই এবং কবরে যারা আছে অবশ্যই আল্লাহ তাদেরকে উত্থিত করবেন। (সূরা হজ্জ- ৭)
আল্লাহ শপথ করে বলেছেন যে, কিয়ামত আসবেই :
وَالْمُرْسَلَاتِ عُرْفًا – فَالْعَاصِفَاتِ عَصْفًا – وَالنَّاشِرَاتِ نَشْرًا – فَالْفَارِقَاتِ فَرْقًا – فَالْمُلْقِيَاتِ ذِكْرًا – عُذْرًا اَوْ نُذْرًا – اِنَّمَا تُوْعَدُوْنَ لَوَاقِعٌ
শপথ! কল্যাণস্বরূপ প্রেরিত বায়ুর। অতঃপর শপথ! প্রলয়ঙ্কারী ঝড়ের এবং বহনকারী বায়ুর। অতঃপর শপথ! (মেঘপুঞ্জ) বিচ্ছিন্নকারী বায়ুর এবং তার, যে মানুষের অন্তরে তা পৌঁছে দেয় উপদেশ অনুশোচনা বা সতর্কতাস্বরূপ। নিশ্চয় তোমাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হচ্ছে তা অবশ্যই সংঘটিত হবে।
(সূরা মুরসালাত, ১-৭)
কিয়ামতকে প্রতিহত করার শক্তি কারো থাকবে না :
بَلْ تَاْتِيْهِمْ بَغْتَةً فَتَبْهَتُهُمْ فَلَا يَسْتَطِيْعُوْنَ رَدَّهَا وَلَا هُمْ يُنْظَرُوْنَ
বস্তুত সেটা তাদের উপর আসবে অতর্কিতভাবে এবং তাদেরকে হতভম্ব করে দেবে। ফলে তারা সেটা রোধ করতে পারবে না এবং তাদেরকে অবকাশও দেয়া হবে না। (সূরা আম্বিয়া- ৪০)
اَزِفَتِ الْاٰزِفَةُ – لَيْسَ لَهَا مِنْ دُوْنِ اللهِ كَاشِفَةٌ
কিয়ামত আসন্ন, আল্লাহ ছাড়া কেউই এটা প্রকাশ করতে সক্ষম নয়। (সূরা নাজম- ৫৭, ৫৮)
কাফিররা কিয়ামত দিবসকে অস্বীকার করে :
وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَا تَاْتِيْنَا السَّاعَةُؕ قُلْ بَلٰى وَرَبِّيْ لَتَاْتِيَنَّكُمْ
কাফিররা বলে, আমাদের উপর কিয়ামত আসবে না। (তাদেরকে) বলো, হ্যাঁ- আমার প্রতিপালকের শপথ! অবশ্যই তোমাদের উপর কিয়ামত আসবে। (সূরা সাবা- ৩)
بَلْ كَذَّبُوْا بِالسَّاعَةِ وَاَعْتَدْنَا لِمَنْ كَذَّبَ بِالسَّاعَةِ سَعِيْرًا
কিন্তু তারা কিয়ামত দিবসকে অস্বীকার করেছে। আর যারা কিয়ামত দিবসকে অস্বীকার করে তাদের জন্য আমি প্রস্তুত করে রেখেছি জ্বলমত্ম অগ্নি। (সূরা ফুরক্বান- ১১)
তারা কিয়ামতের সময় জানতে চায় :
يَسْاَلُوْنَكَ عَنِ السَّاعَةِ اَيَّانَ مُرْسَاهَا
তারা তোমাকে কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে যে, ওটা কখন সংঘটিত হবে? (সূরা নাযি‘আত- ৪২)
আল্লাহর পক্ষ থেকে এর জবাব :
فِيْمَ اَنْتَ مِنْ ذِكْرَاهَا – اِلٰى رَبِّكَ مُنْتَهَاهَا – اِنَّمَاۤ اَنْتَ مُنْذِرُ مَنْ يَّخْشَاهَا – كَاَنَّهُمْ يَوْمَ يَرَوْنَهَا لَمْ يَلْبَثُوْاۤ اِلَّا عَشِيَّةً اَوْ ضُحَاهَا
এর আলোচনার সাথে তোমার কী সম্পর্ক? এ সংক্রান্ত জ্ঞান তোমার প্রতিপালক পর্যন্তই শেষ। যারা একে ভয় করে তুমি তো কেবল তাদেরই সতর্ককারী। যেদিন তারা এটাকে দেখবে তখন তাদের মনে হবে, যেন তারা (পৃথিবীতে) এক সন্ধ্যা অথবা এক সকালের অধিক সময় অবস্থান করেনি। (সূরা নাযি‘আত, ৪৩-৪৬)
কিয়ামত ঘটে গেলে একে অস্বীকার করার কেউ থাকবে না :
اِذَا وَقَعَتِ الْوَاقِعَةُ – لَيْسَ لِوَقْعَتِهَا كَاذِبَةٌ – خَافِضَةٌ رَّافِعَةٌ
যখন কিয়ামত সংঘটিত হবে, (তখন) একে অস্বীকার করার কেউ থাকবে না। এটা কাউকে করবে নীচু এবং কাউকে করবে সমুন্নত। (সূরা ওয়াক্বিয়া, ১-৩)
কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার সময় সম্পর্কে একমাত্র আল্লাহই জানেন :
وَعِنْدَهٗ عِلْمُ السَّاعَةِۚ وَاِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ
কিয়ামতের জ্ঞান শুধু তাঁরই আছে এবং তোমরা তাঁরই নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা যুখরুফ- ৮৫)
اِنَّ اللهَ عِنْدَهٗ عِلْمُ السَّاعَةِ
নিশ্চয় আল্লাহর কাছে কিয়ামত সম্পর্কে জ্ঞান রয়েছে। (সূরা লুক্বমান- ৩৪)
কিয়ামত কখন হবে- নবীরাও তা জানতেন না :
يَسْاَلُوْنَكَ عَنِ السَّاعَةِ اَيَّانَ مُرْسَاهَاؕ قُلْ اِنَّمَا عِلْمُهَا عِنْدَ رَبِّيْۚ لَا يُجَلِّيْهَا لِوَقْتِهَاۤ اِلَّا هُوَؕ ثَقُلَتْ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِؕ لَا تَاْتِيْكُمْ اِلَّا بَغْتَةًؕ يَسْاَلُوْنَكَ كَاَنَّكَ حَفِيٌّ عَنْهَاؕ قُلْ اِنَّمَا عِلْمُهَا عِنْدَ اللهِ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ
তারা তোমাকে জিজ্ঞেস করে কিয়ামত কখন সংঘটিত হবে? বলো, এ বিষয়ের জ্ঞান শুধুমাত্র আমার প্রতিপালকের কাছেই আছে। তিনিই যথাসময়ে তা প্রকাশ করবেন, তখন সেটা আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে একটি ভয়ংকর ঘটনা ঘটাবে। আকস্মিকভাবেই তা তোমাদের উপর আপতিত হবে। তুমি এ বিষয়ে সবিশেষ অবহিত মনে করে তারা তোমাকে প্রশ্ন করে। বলো, এ বিষয়ের জ্ঞান শুধু আল্লাহর কাছেই রয়েছে, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। (সূরা আ‘রাফ- ১৮৭)
কিয়ামত বেশি দূরে নয় :
وَيَقُوْلُوْنَ مَتٰى هُوَؕ قُلْ عَسٰۤى اَنْ يَّكُوْنَ قَرِيْبًا
তারা বলবে, সেটা কবে? বলো, সম্ভবত তা খুবই নিকটে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৫১)
اِنَّهُمْ يَرَوْنَهٗ بَعِيْدًا – وَنَرَاهُ قَرِيْبًا
তারা ঐ দিনকে অনেক দূরে মনে করে, অথচ আমি তা দেখছি খুবই নিকটে। (সূরা মা‘আরিজ- ৬, ৭)
اِقْتَرَبَ لِلنَّاسِ حِسَابُهُمْ وَهُمْ فِيْ غَفْلَةٍ مُّعْرِضُوْنَ
মানুষের হিসাব-নিকাশের সময় খুবই নিকটে, অথচ তারা উদাসীনতার বশবর্তী হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
(সূরা আম্বিয়া- ১)
মাত্র অল্প কয়েকটি দিনের জন্য অবকাশ দেয়া হচ্ছে :
اِنَّ السَّاعَةَ اٰتِيَةٌ اَكَادُ اُخْفِيْهَا لِتُجْزٰى كُلُّ نَفْسٍ ۢ بِمَا تَسْعٰى
কিয়ামত অবশ্যই আসবে। আমি এটা গোপন রাখতে চাই, যাতে প্রত্যেকেই নিজ কর্মানুযায়ী ফল লাভ করতে পারে। (সূরা ত্বা-হা- ১৫)
কিয়ামতের লক্ষণ প্রকাশ পেয়ে যাচ্ছে :
فَهَلْ يَنْظُرُوْنَ اِلَّا السَّاعَةَ اَنْ تَاْتِيَهُمْ بَغْتَةًۚ فَقَدْ جَآءَ اَشْرَاطُهَاۚ فَاَنّٰى لَهُمْ اِذَا جَآءَتْهُمْ ذِكْرَاهُمْ
তবে এরা কি শুধু কিয়ামতের অপেক্ষায় আছে যে, তা হঠাৎ তাদের উপর এসে পড়ুক? কিয়ামতের লক্ষণগুলো তো এসেই গেছে। (যখন কিয়ামত এসেই যাবে) তখন তাদের নসীহত গ্রহণের কিছু বাকি থাকবে কি? (সূরা মুহাম্মাদ- ১৮)
ভূগর্ভের প্রাণী বেরিয়ে আসবে :
وَاِذَا وَقَعَ الْقَوْلُ عَلَيْهِمْ اَخْرَجْنَا لَهُمْ دَآبَّةً مِّنَ الْاَرْضِ تُكَلِّمُهُمْ اَنَّ النَّاسَ كَانُوْا بِاٰيَاتِنَا لَا يُوْقِنُوْنَ
যখন তাদের নিকট ঘোষিত শাস্তি এসে যাবে, তখন আমি মাটির ভেতর হতে বের করব এক জীব, যা তাদের সঙ্গে কথা বলবে। আর এটা এজন্য যে, মানুষ আমার নিদর্শনের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসী নয়।
(সূরা নামল- ৮২)
ব্যাখ্যা : আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) এর বক্তব্য হচ্ছে, যখন দুনিয়ার বুকে সৎকাজের আদেশ দেয়া ও অসৎকাজ থেকে বিরত রাখার মতো কোন লোক থাকবে না, তখনই এ ঘটনা ঘটবে। নবী ﷺ বলেন, ‘‘সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হবে এবং একদিন দিন-দুপুরে এ জানোয়ার বের হয়ে আসবে।’’ (সহীহ মুসলিম, হা/৪১৭)
একটি প্রাণী এভাবে মানুষের সাথে মানুষের ভাষায় কথা বলা, এটি আল্লাহর অসীম শক্তির একটি নিদর্শন। তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে বাকশক্তি দান করতে পারেন। কিয়ামতের পূর্বে তিনি তো শুধুমাত্র একটি প্রাণীকে বাকশক্তি দান করবেন কিন্তু যখন কিয়ামত কায়েম হয়ে যাবে তখন আল্লাহর আদালতে মানুষের চোখ, কান ও তার গায়ের চামড়া পর্যন্ত কথা বলতে থাকবে।
কিয়ামত হঠাৎ করে আসবে :
اَفَاَمِنُوْاۤ اَنْ تَاْتِيَهُمْ غَاشِيَةٌ مِّنْ عَذَابِ اللهِ اَوْ تَاْتِيَهُمُ السَّاعَةُ بَغْتَةً
তবে কি তারা আল্লাহর সর্বগ্রাসী শাসিত্ম হতে অথবা তাদের অজ্ঞাতসারে কিয়ামতের আকস্মিক উপস্থিতি হতে নিরাপদ? (সূরা ইউসুফ- ১০৭)
وَلَا يَزَالُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا فِيْ مِرْيَةٍ مِّنْهُ حَتّٰى تَاْتِيَهُمُ السَّاعَةُ بَغْتَةً اَوْ يَاْتِيَهُمْ عَذَابُ يَوْمٍ عَقِيْمٍ
যারা কুফরী করেছে তারা তাতে সন্দেহ পোষণ করা হতে বিরত হবে না, যতক্ষণ না তাদের নিকট আকস্মিকভাবে কিয়ামত এসে পড়বে অথবা এসে পড়বে এক বন্ধ্যা দিনের শাসিত্ম। (সূরা হজ্জ- ৫৫)
ব্যাখ্যা : এখানে কিয়ামতের দিনকে বন্ধ্যা বলা হয়েছে, যেহেতু ঐ দিনের পর আর কোন বিচারের দিন আসবে না।
মানুষের অজান্তেই কিয়ামত এসে পড়বে :
فَيَاْتِيَهُمْ بَغْتَةً وَّهُمْ لَا يَشْعُرُوْنَ
ফলে তা তাদের নিকট আকস্মিকভাবে এসে পড়বে, কিন্তু তারা কিছুই বুঝতে পারবে না। (সূরা শু‘আরা- ২০২)
هَلْ يَنْظُرُوْنَ اِلَّا السَّاعَةَ اَنْ تَاْتِيَهُمْ بَغْتَةً وَّهُمْ لَا يَشْعُرُوْنَ
তবে কি তারা তাদের অজ্ঞাতসারে আকস্মিকভাবে কিয়ামত আগমন করারই অপেক্ষা করছে? অথচ (তা অচিরেই এসে যাবে, কিন্তু) তারা অনুধাবন করতে পারবে না। (সূরা যুখরুফ- ৬৬)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ কিয়ামত হঠাৎ সংঘটিত হবে; কিন্তু লোকেরা তা জানতেও পারবে না। এমনকি লোকেরা নিশ্চিন্তে নিজেদের কাজকর্মে ব্যস্ত হয়ে থাকবে এবং তাদের মনে ক্ষুদ্রতম চিন্তাও জাগবে না যে, দুনিয়ার শেষ সময় এসে গেছে। এ অবস্থায় হঠাৎ একটি বিকট শব্দ হবে এবং যে যেখানে থাকবে সে সেখানেই বেহুশ হয়ে যাবে।
চোখের পলকেই তা ঘটে যাবে :
وَمَاۤ اَمْرُ السَّاعَةِ اِلَّا كَلَمْحِ الْبَصَرِ اَوْ هُوَ اَقْرَبُؕ اِنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
কিয়ামতের ব্যাপারটি চক্ষুর পলকের ন্যায়, বরং সেটা তদপেক্ষাও নিকটে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা নাহল- ৭৭)
ব্যাখ্যা : কিয়ামত ধীরে ধীরে সংঘটিত হবে না। তা আসার সময় দূর থেকে কেউ দেখতে পারবে না এবং এর মাঝখানে কেউ নিজেদেরকে সামলে নিয়ে কোন রকম প্রস্তুতি গ্রহণ করার সুযোগও পাবে না। যে কোন দিন যে কোন মুহূর্তে চোখের পলকে বা তার চেয়েও কম সময়ে তা এসে যাবে। কাজেই যার সংশোধন হওয়ার সে যেন অবিলম্বে সংশোধিত হয়ে যায় এবং চূড়ান্ত ফায়সালার সময় দূরে মনে করে পাশ কাটিয়ে না যায়। একটি নিঃশ্বাস সম্পর্কেও কেউ নিশ্চয়তার সাথে এ কথা বলতে পারবে না যে, তার পরের শ্বাস গ্রহণের সুযোগ অবশ্যই হবে।
اَلْيَوْمُ الْاٰخِرِ - পরকালের দিন :
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيْ رَسُوْلِ اللهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَنْ كَانَ يَرْجُو اللهَ وَالْيَوْمَ الْاٰخِرَ وَذَكَرَ اللهَ كَثِيْرًا
তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালের দিনকে ভয় করে এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করে, তাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। (সূরা আহযাব- ২১)
يَوْمُ الْبَعْثِ - পুনরুত্থানের দিন :
وَقَالَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْعِلْمَ وَالْاِيْمَانَ لَقَدْ لَبِثْتُمْ فِيْ كِتَابِ اللهِ اِلٰى يَوْمِ الْبَعْثِؗ فَهٰذَا يَوْمُ الْبَعْثِ
যাদেরকে জ্ঞান ও ঈমান দেয়া হয়েছে তারা বলবে, তোমরা তো আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত অবস্থান করেছ, আর এটাই তো সেই পুনরুত্থান দিবস। (সূরা রূম- ৫৬)
يَوْمُ الْحَقِّ - সত্য দিন : ذٰلِكَ الْيَوْمُ الْحَقُّۚ فَمَنْ شَآءَ اتَّخَذَ اِلٰى رَبِّهٖ مَاٰبًا
এটি একটি সত্য দিন। সুতরাং যার ইচ্ছা সে তার প্রতিপালকের কাছে আশ্রয় গ্রহণ করুক। (সূরা নাবা- ৩৯)
يَوْمُ الْمَوْعُوْدِ - প্রতিশ্রুতির দিন : وَالْيَوْمِ الْمَوْعُوْدِ
শপথ প্রতিশ্রুত দিবসের। (সূরা বুরুজ- ২)
يَوْمُ الْحِسَابِ - হিসাবের দিন : وَقَالَ مُوْسٰۤى اِنِّيْ عُذْتُ بِرَبِّيْ وَرَبِّكُمْ مِّنْ كُلِّ مُتَكَبِّرٍ لَّا يُؤْمِنُ بِيَوْمِ الْحِسَابِ
মূসা বললেন, যারা হিসাবের দিনকে বিশ্বাস করে না, সেসব অহংকারী ব্যক্তি হতে আমি আমার ও তোমাদের প্রতিপালকের নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (সূরা মু’মিন- ২৭)
يَوْمُ الْفَصْلِ - সত্য-মিথ্যার পার্থক্যের দিন : هٰذَا يَوْمُ الْفَصْلِ الَّذِيْ كُنْتُمْ بِهٖ تُكَذِّبُوْنَ
বলা হবে, এটাই সেই ফায়সালার দিন, যাকে তোমরা অস্বীকার করতে। (সূরা সাফ্ফাত- ২১)
يَوْمُ الدِّيْنِ - প্রতিদানের দিন : مَالِكِ يَوْمِ الدِّيْنِ
যিনি প্রতিফল দিবসের মালিক। (সূরা ফাতিহা- ৪)
يَوْمُ الْخُرُوْجِ - বের হওয়ার দিন : يَوْمَ يَسْمَعُوْنَ الصَّيْحَةَ بِالْحَقِّ ذٰلِكَ يَوْمُ الْخُرُوْجِ
যেদিন (মানুষ) এক বিকট আওয়াজ শ্রবণ করবে, সেদিনই হচ্ছে (কবর হতে মৃতদের) বের হওয়ার দিন।
(সূরা ক্বাফ- ৪২)
يَوْمُ الْجَمْعِ - একত্রিত হওয়ার দিন :
وَكَذٰلِكَ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ قُرْاٰنًا عَرَبِيًّا لِّتُنْذِرَ اُمَّ الْقُرٰى وَمَنْ حَوْلَهَا وَتُنْذِرَ يَوْمَ الْجَمْعِ لَا رَيْبَ فِيْهِؕ فَرِيْقٌ فِى الْجَنَّةِ وَفَرِيْقٌ فِى السَّعِيْرِ
এভাবে আমি তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করেছি আরবি ভাষায়, যাতে তুমি সতর্ক করতে পার মক্কা ও তার চতুর্দিকের জনগণকে এবং সতর্ক করতে পার সমবেত হওয়ার দিবস সম্পর্কে, যে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। (সেদিন) একদল জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং একদল জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (সূরা শূরা- ৭)
يَوْمَ التَّنَادِ - ফরিয়াদের দিন : وَيَا قَوْمِ اِنِّۤيْ اَخَافُ عَلَيْكُمْ يَوْمَ التَّنَادِ
হে আমার সম্প্রদায়! আমি তোমাদের জন্য ফরিয়াদ দিবসের আশঙ্কা করি। (সূরা মু’মিন- ৩২)
يَوْمُ التَّلَاقِ - পরস্পর সাক্ষাতের দিন :
رَفِيْعُ الدَّرَجَاتِ ذُو الْعَرْشِ يُلْقِى الرُّوْحَ مِنْ اَمْرِهٖ عَلٰى مَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهٖ لِيُنْذِرَ يَوْمَ التَّلَاقِ
তিনি সমুচ্চ মর্যাদার অধিকারী, আরশের অধিপতি। তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা স্বীয় আদেশ সহকারে রূহ (ওহী) প্রেরণ করেন, যাতে করে তিনি সাক্ষাৎ (কিয়ামত) দিবস সম্পর্কে সতর্ক করতে পারেন। (সূরা মু’মিন- ১৫)
يَوْمٌ كَبِيْرٌ - বড় দিন : وَاِنْ تَوَلَّوْا فَاِنِّۤيْ اَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ كَبِيْرٍ
যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে আমি তোমাদের জন্য বড় দিবসের শাস্তির আশঙ্কা পোষণ করি। (সূরা হুদ- ৩)
يَوْمٌ عَظِيْمٌ - মহান দিন : قُلْ اِنِّۤيْ اَخَافُ اِنْ عَصَيْتُ رَبِّيْ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيْمٍ
বলো, আমি যদি আমার প্রতিপালকের অবাধ্যতা করি, তবে আমি ভয় করি এক মহাদিনের শাস্তির। (সূরা আন‘আম- ১৫)
يَوْمٌ اَلِيْمٌ - যন্ত্রণাদায়ক দিন : اَنْ لَّا تَعْبُدُوْاۤ اِلَّا اللهَؕ اِنِّۤيْ اَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ اَلِيْمٍ
তোমরা আল্লাহ ব্যতীত অপর কিছুর ইবাদাত করবে না। নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য এক মর্মান্তিক দিবসের শাসিত্মর আশঙ্কা পোষণ করি। (সূরা হুদ- ২৬)
يَوْمٌ مُّحِيْطٌ - সর্বগ্রাসী দিন : وَاِنِّۤيْ اَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ مُّحِيْطٍ
আমি তোমাদের জন্য আশঙ্কা করছি এক সর্বগ্রাসী দিবসের শাসিত্মর। (সূরা হুদ- ৮৪)
يَوْمُ الْحَسْرَةِ - পরিতাপের দিন :
وَاَنْذِرْهُمْ يَوْمَ الْحَسْرَةِ اِذْ قُضِيَ الْاَمْرُۘ وَهُمْ فِيْ غَفْلَةٍ وَّهُمْ لَا يُؤْمِنُوْنَ
তাদেরকে পরিতাপের দিবস সম্বন্ধে সতর্ক করে দাও, যখন সকল সিদ্ধামত্ম শেষ হয়ে যাবে। অথচ তারা গাফিল এবং অবিশ্বাসী। (সূরা মারইয়াম- ৩৯)
يَوْمُ التَّغَابُنِ - লোকসানের দিন : يَوْمَ يَجْمَعُكُمْ لِيَوْمِ الْجَمْعِ ذٰلِكَ يَوْمُ التَّغَابُنِ
যেদিন তিনি তোমাদেরকে সমবেত করবেন সমাবেশ দিবসে, সেদিন হবে লোকসানের দিন।
(সূরা তাগাবুন- ৯)
يَوْمٌ عَسِرٌ - কঠিন দিন : مُهْطِعِيْنَ اِلَى الدَّاعِؕ يَقُوْلُ الْكَافِرُوْنَ هٰذَا يَوْمٌ عَسِرٌ
তারা আহবানকারীর দিকে ছুটে আসবে; তখন কাফিররা বলবে, এটি একটি কঠিন দিন। (সূরা ক্বামার- ৮)
يَوْمٌ ثَقِيْلٌ - ভারী দিন : اِنَّ هٰۤؤُلَآءِ يُحِبُّوْنَ الْعَاجِلَةَ وَيَذَرُوْنَ وَرَآءَهُمْ يَوْمًا ثَقِيْلًا
নিশ্চয় তারা দ্রুত লাভ করাকে ভালোবাসে এবং তারা পরবর্তী ভারী দিবসকে উপেক্ষা করে চলে। (সূরা দাহর- ২৭)
يَوْمٌ عَبُوْسٌ - বিপদের দিন : اِنَّا نَخَافُ مِنْ رَّبِّنَا يَوْمًا عَبُوْسًا قَمْطَرِيْرًا
আমরা আশঙ্কা করি আমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে এক ভীতিপ্রদ ভয়ঙ্কর দিনের। (সূরা দাহর- ১০)
يَوْمُ الْاٰزِفَةِ - সমাগত দিন :
وَاَنْذِرْهُمْ يَوْمَ الْاٰزِفَةِ اِذِ الْقُلُوْبُ لَدَى الْحَنَاجِرِ كَاظِمِيْنَؕ مَا لِلظَّالِمِيْنَ مِنْ حَمِيْمٍ وَّلَا شَفِيْعٍ يُّطَاعُ
তাদেরকে সতর্ক করে দাও সমাগত দিন (কিয়ামত) সম্পর্কে, তখন দুঃখকষ্টে তাদের প্রাণ কন্ঠনালীর কাছে চলে আসবে। তখন যালিমদের জন্য কোন অন্তরঙ্গ বন্ধু এবং কোন সুপারিশকারী থাকবে না।
(সূরা মু’মিন- ১৮)
يَوْمٌ مَّشْهُوْدٌ - উপস্থিত হওয়ার দিন :
اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّمَنْ خَافَ عَذَابَ الْاٰخِرَةِ ذٰلِكَ يَوْمٌ مَّجْمُوْعٌ لَّهُ النَّاسُ وَذٰلِكَ يَوْمٌ مَّشْهُوْدٌ
যে আখিরাতের শাসিত্মকে ভয় করে এতে তার জন্য রয়েছে নিদর্শন। এটা সেই দিন, যেদিন সমসত্ম মানুষকে একত্র করা হবে। এটা সেই দিন, যেদিন সকলকে উপস্থিত করা হবে। (সূরা হুদ- ১০৩)
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيْ رَسُوْلِ اللهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَنْ كَانَ يَرْجُو اللهَ وَالْيَوْمَ الْاٰخِرَ وَذَكَرَ اللهَ كَثِيْرًا
তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালের দিনকে ভয় করে এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করে, তাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। (সূরা আহযাব- ২১)
يَوْمُ الْبَعْثِ - পুনরুত্থানের দিন :
وَقَالَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْعِلْمَ وَالْاِيْمَانَ لَقَدْ لَبِثْتُمْ فِيْ كِتَابِ اللهِ اِلٰى يَوْمِ الْبَعْثِؗ فَهٰذَا يَوْمُ الْبَعْثِ
যাদেরকে জ্ঞান ও ঈমান দেয়া হয়েছে তারা বলবে, তোমরা তো আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত অবস্থান করেছ, আর এটাই তো সেই পুনরুত্থান দিবস। (সূরা রূম- ৫৬)
يَوْمُ الْحَقِّ - সত্য দিন : ذٰلِكَ الْيَوْمُ الْحَقُّۚ فَمَنْ شَآءَ اتَّخَذَ اِلٰى رَبِّهٖ مَاٰبًا
এটি একটি সত্য দিন। সুতরাং যার ইচ্ছা সে তার প্রতিপালকের কাছে আশ্রয় গ্রহণ করুক। (সূরা নাবা- ৩৯)
يَوْمُ الْمَوْعُوْدِ - প্রতিশ্রুতির দিন : وَالْيَوْمِ الْمَوْعُوْدِ
শপথ প্রতিশ্রুত দিবসের। (সূরা বুরুজ- ২)
يَوْمُ الْحِسَابِ - হিসাবের দিন : وَقَالَ مُوْسٰۤى اِنِّيْ عُذْتُ بِرَبِّيْ وَرَبِّكُمْ مِّنْ كُلِّ مُتَكَبِّرٍ لَّا يُؤْمِنُ بِيَوْمِ الْحِسَابِ
মূসা বললেন, যারা হিসাবের দিনকে বিশ্বাস করে না, সেসব অহংকারী ব্যক্তি হতে আমি আমার ও তোমাদের প্রতিপালকের নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (সূরা মু’মিন- ২৭)
يَوْمُ الْفَصْلِ - সত্য-মিথ্যার পার্থক্যের দিন : هٰذَا يَوْمُ الْفَصْلِ الَّذِيْ كُنْتُمْ بِهٖ تُكَذِّبُوْنَ
বলা হবে, এটাই সেই ফায়সালার দিন, যাকে তোমরা অস্বীকার করতে। (সূরা সাফ্ফাত- ২১)
يَوْمُ الدِّيْنِ - প্রতিদানের দিন : مَالِكِ يَوْمِ الدِّيْنِ
যিনি প্রতিফল দিবসের মালিক। (সূরা ফাতিহা- ৪)
يَوْمُ الْخُرُوْجِ - বের হওয়ার দিন : يَوْمَ يَسْمَعُوْنَ الصَّيْحَةَ بِالْحَقِّ ذٰلِكَ يَوْمُ الْخُرُوْجِ
যেদিন (মানুষ) এক বিকট আওয়াজ শ্রবণ করবে, সেদিনই হচ্ছে (কবর হতে মৃতদের) বের হওয়ার দিন।
(সূরা ক্বাফ- ৪২)
يَوْمُ الْجَمْعِ - একত্রিত হওয়ার দিন :
وَكَذٰلِكَ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ قُرْاٰنًا عَرَبِيًّا لِّتُنْذِرَ اُمَّ الْقُرٰى وَمَنْ حَوْلَهَا وَتُنْذِرَ يَوْمَ الْجَمْعِ لَا رَيْبَ فِيْهِؕ فَرِيْقٌ فِى الْجَنَّةِ وَفَرِيْقٌ فِى السَّعِيْرِ
এভাবে আমি তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করেছি আরবি ভাষায়, যাতে তুমি সতর্ক করতে পার মক্কা ও তার চতুর্দিকের জনগণকে এবং সতর্ক করতে পার সমবেত হওয়ার দিবস সম্পর্কে, যে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। (সেদিন) একদল জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং একদল জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (সূরা শূরা- ৭)
يَوْمَ التَّنَادِ - ফরিয়াদের দিন : وَيَا قَوْمِ اِنِّۤيْ اَخَافُ عَلَيْكُمْ يَوْمَ التَّنَادِ
হে আমার সম্প্রদায়! আমি তোমাদের জন্য ফরিয়াদ দিবসের আশঙ্কা করি। (সূরা মু’মিন- ৩২)
يَوْمُ التَّلَاقِ - পরস্পর সাক্ষাতের দিন :
رَفِيْعُ الدَّرَجَاتِ ذُو الْعَرْشِ يُلْقِى الرُّوْحَ مِنْ اَمْرِهٖ عَلٰى مَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهٖ لِيُنْذِرَ يَوْمَ التَّلَاقِ
তিনি সমুচ্চ মর্যাদার অধিকারী, আরশের অধিপতি। তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা স্বীয় আদেশ সহকারে রূহ (ওহী) প্রেরণ করেন, যাতে করে তিনি সাক্ষাৎ (কিয়ামত) দিবস সম্পর্কে সতর্ক করতে পারেন। (সূরা মু’মিন- ১৫)
يَوْمٌ كَبِيْرٌ - বড় দিন : وَاِنْ تَوَلَّوْا فَاِنِّۤيْ اَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ كَبِيْرٍ
যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে আমি তোমাদের জন্য বড় দিবসের শাস্তির আশঙ্কা পোষণ করি। (সূরা হুদ- ৩)
يَوْمٌ عَظِيْمٌ - মহান দিন : قُلْ اِنِّۤيْ اَخَافُ اِنْ عَصَيْتُ رَبِّيْ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيْمٍ
বলো, আমি যদি আমার প্রতিপালকের অবাধ্যতা করি, তবে আমি ভয় করি এক মহাদিনের শাস্তির। (সূরা আন‘আম- ১৫)
يَوْمٌ اَلِيْمٌ - যন্ত্রণাদায়ক দিন : اَنْ لَّا تَعْبُدُوْاۤ اِلَّا اللهَؕ اِنِّۤيْ اَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ اَلِيْمٍ
তোমরা আল্লাহ ব্যতীত অপর কিছুর ইবাদাত করবে না। নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য এক মর্মান্তিক দিবসের শাসিত্মর আশঙ্কা পোষণ করি। (সূরা হুদ- ২৬)
يَوْمٌ مُّحِيْطٌ - সর্বগ্রাসী দিন : وَاِنِّۤيْ اَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ مُّحِيْطٍ
আমি তোমাদের জন্য আশঙ্কা করছি এক সর্বগ্রাসী দিবসের শাসিত্মর। (সূরা হুদ- ৮৪)
يَوْمُ الْحَسْرَةِ - পরিতাপের দিন :
وَاَنْذِرْهُمْ يَوْمَ الْحَسْرَةِ اِذْ قُضِيَ الْاَمْرُۘ وَهُمْ فِيْ غَفْلَةٍ وَّهُمْ لَا يُؤْمِنُوْنَ
তাদেরকে পরিতাপের দিবস সম্বন্ধে সতর্ক করে দাও, যখন সকল সিদ্ধামত্ম শেষ হয়ে যাবে। অথচ তারা গাফিল এবং অবিশ্বাসী। (সূরা মারইয়াম- ৩৯)
يَوْمُ التَّغَابُنِ - লোকসানের দিন : يَوْمَ يَجْمَعُكُمْ لِيَوْمِ الْجَمْعِ ذٰلِكَ يَوْمُ التَّغَابُنِ
যেদিন তিনি তোমাদেরকে সমবেত করবেন সমাবেশ দিবসে, সেদিন হবে লোকসানের দিন।
(সূরা তাগাবুন- ৯)
يَوْمٌ عَسِرٌ - কঠিন দিন : مُهْطِعِيْنَ اِلَى الدَّاعِؕ يَقُوْلُ الْكَافِرُوْنَ هٰذَا يَوْمٌ عَسِرٌ
তারা আহবানকারীর দিকে ছুটে আসবে; তখন কাফিররা বলবে, এটি একটি কঠিন দিন। (সূরা ক্বামার- ৮)
يَوْمٌ ثَقِيْلٌ - ভারী দিন : اِنَّ هٰۤؤُلَآءِ يُحِبُّوْنَ الْعَاجِلَةَ وَيَذَرُوْنَ وَرَآءَهُمْ يَوْمًا ثَقِيْلًا
নিশ্চয় তারা দ্রুত লাভ করাকে ভালোবাসে এবং তারা পরবর্তী ভারী দিবসকে উপেক্ষা করে চলে। (সূরা দাহর- ২৭)
يَوْمٌ عَبُوْسٌ - বিপদের দিন : اِنَّا نَخَافُ مِنْ رَّبِّنَا يَوْمًا عَبُوْسًا قَمْطَرِيْرًا
আমরা আশঙ্কা করি আমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে এক ভীতিপ্রদ ভয়ঙ্কর দিনের। (সূরা দাহর- ১০)
يَوْمُ الْاٰزِفَةِ - সমাগত দিন :
وَاَنْذِرْهُمْ يَوْمَ الْاٰزِفَةِ اِذِ الْقُلُوْبُ لَدَى الْحَنَاجِرِ كَاظِمِيْنَؕ مَا لِلظَّالِمِيْنَ مِنْ حَمِيْمٍ وَّلَا شَفِيْعٍ يُّطَاعُ
তাদেরকে সতর্ক করে দাও সমাগত দিন (কিয়ামত) সম্পর্কে, তখন দুঃখকষ্টে তাদের প্রাণ কন্ঠনালীর কাছে চলে আসবে। তখন যালিমদের জন্য কোন অন্তরঙ্গ বন্ধু এবং কোন সুপারিশকারী থাকবে না।
(সূরা মু’মিন- ১৮)
يَوْمٌ مَّشْهُوْدٌ - উপস্থিত হওয়ার দিন :
اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّمَنْ خَافَ عَذَابَ الْاٰخِرَةِ ذٰلِكَ يَوْمٌ مَّجْمُوْعٌ لَّهُ النَّاسُ وَذٰلِكَ يَوْمٌ مَّشْهُوْدٌ
যে আখিরাতের শাসিত্মকে ভয় করে এতে তার জন্য রয়েছে নিদর্শন। এটা সেই দিন, যেদিন সমসত্ম মানুষকে একত্র করা হবে। এটা সেই দিন, যেদিন সকলকে উপস্থিত করা হবে। (সূরা হুদ- ১০৩)
সিঙ্গায় ফুৎকারের মাধ্যমে কিয়ামত শুরু হবে :
وَنُفِخَ فِى الصُّوْرِ فَصَعِقَ مَنْ فِى السَّمَاوَاتِ وَمَنْ فِى الْاَرْضِ اِلَّا مَنْ شَآءَ اللهُؕ ثُمَّ نُفِخَ فِيْهِ اُخْرٰى فَاِذَا هُمْ قِيَامٌ يَّنْظُرُوْنَ
শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে, ফলে আল্লাহ যাদেরকে ইচ্ছা করেন তারা ব্যতীত আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সবাই অজ্ঞান হয়ে পড়বে। অতঃপর আবার শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে এবং তৎক্ষণাৎ তারা দন্ডায়মান হয়ে তাকাতে থাকবে। (সূরা যুমার- ৬৮)
ব্যাখ্যা : তিনবার সিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে। প্রথম ফুঁক হবে فَزَعٌ (ফাযা‘উন) তথা ভীতি সৃষ্টিকারী। দ্বিতীয় ফুঁক صَعْقٌ (সা‘আক) তথা সংজ্ঞা লোপকারী বিকট গর্জন। আর তৃতীয় ফুঁক হবে اَلْقِيَامُ لِرَبِّ الْعَالَمِيْنَ (আল কিয়ামু লি-রাবিবল আলামীন) তথা বিশ্ববাসীর প্রতিপালকের সামনে হাজির হওয়ার ফুঁক। প্রথম ফুঁকটি সাধারণ বিভীষিকা সৃষ্টি করবে এবং মানুষ হতভম্ভ হয়ে যাবে। দ্বিতীয় ফুঁকে সবাই মারা যাবে। তৃতীয় ফুঁকের পর সবাই জীবিত হয়ে আল্লাহর সামনে হাজির হবে।
হিংস্র প্রাণীরাও সমবেত হতে থাকবে :
وَاِذَا الْوُحُوْشُ حُشِرَتْ
যখন বন্য পশুগুলোকে একত্র করা হবে। (সূরা তাকভীর- ৫)
দুধের বাচ্চাকেও ভুলে যাবে :
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوْا رَبَّكُمْۚ اِنَّ زَلْزَلَةَ السَّاعَةِ شَيْءٌ عَظِيْمٌ – يَوْمَ تَرَوْنَهَا تَذْهَلُ كُلُّ مُرْضِعَةٍ عَمَّاۤ اَرْضَعَتْ
হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো। নিশ্চয় কিয়ামতের প্রকম্পন এক ভয়ংকর ব্যাপার। যেদিন তোমরা এটা প্রত্যক্ষ করবে, সেদিন প্রত্যেক সত্মন্যদাত্রী তার শিশুকে দুধ পান করাতে ভুলে যাবে। (সূরা হজ্জ- ১, ২)
ব্যাখ্যা : এখানে যে ছবিটি আঁকা হয়েছে সেটি হচ্ছে, প্রথম ফুঁকের পর যখন ভয়ানক কম্পন শুরু হবে তখন লোকেরা এতই ভীত হয়ে যাবে যে, মায়েরা তাদের শিশু-সন্তানদেরকে দুধ পান করা থেকে ফেলে দিয়ে পালাতে থাকবে এবং নিজের সন্তানের কী হলো- এ কথা কারো মনে থাকবে না।
ভয়ে গর্ভবতীর গর্ভপাত হয়ে যাবে :
وَتَضَعُ كُلُّ ذَاتِ حَمْلٍ حَمْلَهَا
প্রত্যেক গর্ভবতী গর্ভপাত করে ফেলবে। (সূরা হজ্জ- ২)
মানুষ মাতাল হয়ে যাবে :
وَتَرَى النَّاسَ سُكَارٰى وَمَا هُمْ بِسُكَارٰى وَلٰكِنَّ عَذَابَ اللهِ شَدِيْدٌ
মানুষকে দেখবে মাতাল অবস্থায়, যদিও তারা মাতাল নয়। বস্তুত আল্লাহর শাসিত্ম খুবই কঠিন। (সূরা হজ্জ- ২)
মূল্যবান জিনিসের দিকেও কোন খেয়াল থাকবে না :
وَاِذَا الْعِشَارُ عُطِّلَتْ
যখন দশ মাসের গর্ভবতী উষ্ট্রী উপেক্ষিত হবে। (সূরা তাকভীর- ৪)
দ্বিতীয় ফুৎকারের সাথে সাথে সবাই মরে যাবে :
مَا يَنْظُرُوْنَ اِلَّا صَيْحَةً وَّاحِدَةً تَاْخُذُهُمْ وَهُمْ يَخِصِّمُوْنَ – فَلَا يَسْتَطِيْعُوْنَ تَوْصِيَةً وَّلَاۤ اِلٰۤى اَهْلِهِمْ يَرْجِعُوْنَ
তারা তো কেবল একটা বিকট শব্দের অপেক্ষায় রয়েছে, যা তাদেরকে পাকড়াও করবে এমন অবস্থায় যে, তারা নিজেদের মধ্যে ঝগড়ায় লিপ্ত থাকবে। তখন তারা অসিয়ত করতেও সক্ষম হবে না এবং নিজ পরিবারের লোকদের কাছে ফিরেও যেতে পারবে না। (সূরা ইয়াসীন- ৪৯, ৫০)
সারা বিশ্ব লন্ডভন্ড হয়ে যাবে :
فَاِذَا نُفِخَ فِى الصُّوْرِ نَفْخَةٌ وَّاحِدَةٌ – وَحُمِلَتِ الْاَرْضُ وَالْجِبَالُ فَدُكَّتَا دَكَّةً وَّاحِدَةً – فَيَوْمَئِذٍ وَّقَعَتِ الْوَاقِعَةُ
যখন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে এবং একটিমাত্র ফুৎকার। তখন পৃথিবী ও পর্বতমালাকে উত্তোলন করা হবে এবং একই ধাক্কায় চূর্ণবিচূর্ণ করে দেয়া হবে। অতঃপর যা সংঘটিত হওয়ার তা সংঘটিত হয়ে যাবে (অর্থাৎ কিয়ামত সংঘটিত হবে)। (সূরা হাক্কাহ, ১৩-১৫)
দিনটি বড়ই কঠিন হবে :
بَلِ السَّاعَةُ مَوْعِدُهُمْ وَالسَّاعَةُ اَدْهٰى وَاَمَرُّ
বরং কিয়ামত হচ্ছে, তাদের (আযাবের জন্য) একটি নির্ধারিত কাল এবং কিয়ামত হবে কঠিনতর ও তিক্তকর। (সূরা ক্বামার- ৪৬)
وَنُفِخَ فِى الصُّوْرِ فَصَعِقَ مَنْ فِى السَّمَاوَاتِ وَمَنْ فِى الْاَرْضِ اِلَّا مَنْ شَآءَ اللهُؕ ثُمَّ نُفِخَ فِيْهِ اُخْرٰى فَاِذَا هُمْ قِيَامٌ يَّنْظُرُوْنَ
শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে, ফলে আল্লাহ যাদেরকে ইচ্ছা করেন তারা ব্যতীত আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সবাই অজ্ঞান হয়ে পড়বে। অতঃপর আবার শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে এবং তৎক্ষণাৎ তারা দন্ডায়মান হয়ে তাকাতে থাকবে। (সূরা যুমার- ৬৮)
ব্যাখ্যা : তিনবার সিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে। প্রথম ফুঁক হবে فَزَعٌ (ফাযা‘উন) তথা ভীতি সৃষ্টিকারী। দ্বিতীয় ফুঁক صَعْقٌ (সা‘আক) তথা সংজ্ঞা লোপকারী বিকট গর্জন। আর তৃতীয় ফুঁক হবে اَلْقِيَامُ لِرَبِّ الْعَالَمِيْنَ (আল কিয়ামু লি-রাবিবল আলামীন) তথা বিশ্ববাসীর প্রতিপালকের সামনে হাজির হওয়ার ফুঁক। প্রথম ফুঁকটি সাধারণ বিভীষিকা সৃষ্টি করবে এবং মানুষ হতভম্ভ হয়ে যাবে। দ্বিতীয় ফুঁকে সবাই মারা যাবে। তৃতীয় ফুঁকের পর সবাই জীবিত হয়ে আল্লাহর সামনে হাজির হবে।
হিংস্র প্রাণীরাও সমবেত হতে থাকবে :
وَاِذَا الْوُحُوْشُ حُشِرَتْ
যখন বন্য পশুগুলোকে একত্র করা হবে। (সূরা তাকভীর- ৫)
দুধের বাচ্চাকেও ভুলে যাবে :
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوْا رَبَّكُمْۚ اِنَّ زَلْزَلَةَ السَّاعَةِ شَيْءٌ عَظِيْمٌ – يَوْمَ تَرَوْنَهَا تَذْهَلُ كُلُّ مُرْضِعَةٍ عَمَّاۤ اَرْضَعَتْ
হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো। নিশ্চয় কিয়ামতের প্রকম্পন এক ভয়ংকর ব্যাপার। যেদিন তোমরা এটা প্রত্যক্ষ করবে, সেদিন প্রত্যেক সত্মন্যদাত্রী তার শিশুকে দুধ পান করাতে ভুলে যাবে। (সূরা হজ্জ- ১, ২)
ব্যাখ্যা : এখানে যে ছবিটি আঁকা হয়েছে সেটি হচ্ছে, প্রথম ফুঁকের পর যখন ভয়ানক কম্পন শুরু হবে তখন লোকেরা এতই ভীত হয়ে যাবে যে, মায়েরা তাদের শিশু-সন্তানদেরকে দুধ পান করা থেকে ফেলে দিয়ে পালাতে থাকবে এবং নিজের সন্তানের কী হলো- এ কথা কারো মনে থাকবে না।
ভয়ে গর্ভবতীর গর্ভপাত হয়ে যাবে :
وَتَضَعُ كُلُّ ذَاتِ حَمْلٍ حَمْلَهَا
প্রত্যেক গর্ভবতী গর্ভপাত করে ফেলবে। (সূরা হজ্জ- ২)
মানুষ মাতাল হয়ে যাবে :
وَتَرَى النَّاسَ سُكَارٰى وَمَا هُمْ بِسُكَارٰى وَلٰكِنَّ عَذَابَ اللهِ شَدِيْدٌ
মানুষকে দেখবে মাতাল অবস্থায়, যদিও তারা মাতাল নয়। বস্তুত আল্লাহর শাসিত্ম খুবই কঠিন। (সূরা হজ্জ- ২)
মূল্যবান জিনিসের দিকেও কোন খেয়াল থাকবে না :
وَاِذَا الْعِشَارُ عُطِّلَتْ
যখন দশ মাসের গর্ভবতী উষ্ট্রী উপেক্ষিত হবে। (সূরা তাকভীর- ৪)
দ্বিতীয় ফুৎকারের সাথে সাথে সবাই মরে যাবে :
مَا يَنْظُرُوْنَ اِلَّا صَيْحَةً وَّاحِدَةً تَاْخُذُهُمْ وَهُمْ يَخِصِّمُوْنَ – فَلَا يَسْتَطِيْعُوْنَ تَوْصِيَةً وَّلَاۤ اِلٰۤى اَهْلِهِمْ يَرْجِعُوْنَ
তারা তো কেবল একটা বিকট শব্দের অপেক্ষায় রয়েছে, যা তাদেরকে পাকড়াও করবে এমন অবস্থায় যে, তারা নিজেদের মধ্যে ঝগড়ায় লিপ্ত থাকবে। তখন তারা অসিয়ত করতেও সক্ষম হবে না এবং নিজ পরিবারের লোকদের কাছে ফিরেও যেতে পারবে না। (সূরা ইয়াসীন- ৪৯, ৫০)
সারা বিশ্ব লন্ডভন্ড হয়ে যাবে :
فَاِذَا نُفِخَ فِى الصُّوْرِ نَفْخَةٌ وَّاحِدَةٌ – وَحُمِلَتِ الْاَرْضُ وَالْجِبَالُ فَدُكَّتَا دَكَّةً وَّاحِدَةً – فَيَوْمَئِذٍ وَّقَعَتِ الْوَاقِعَةُ
যখন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে এবং একটিমাত্র ফুৎকার। তখন পৃথিবী ও পর্বতমালাকে উত্তোলন করা হবে এবং একই ধাক্কায় চূর্ণবিচূর্ণ করে দেয়া হবে। অতঃপর যা সংঘটিত হওয়ার তা সংঘটিত হয়ে যাবে (অর্থাৎ কিয়ামত সংঘটিত হবে)। (সূরা হাক্কাহ, ১৩-১৫)
দিনটি বড়ই কঠিন হবে :
بَلِ السَّاعَةُ مَوْعِدُهُمْ وَالسَّاعَةُ اَدْهٰى وَاَمَرُّ
বরং কিয়ামত হচ্ছে, তাদের (আযাবের জন্য) একটি নির্ধারিত কাল এবং কিয়ামত হবে কঠিনতর ও তিক্তকর। (সূরা ক্বামার- ৪৬)
আসমান ফেটে যাবে :
اِذَا السَّمَآءُ انْفَطَرَتْ
যখন আকাশ ফেটে যাবে। (সূরা ইনফিতার- ১ )
اِذَا السَّمَآءُ انْشَقَّتْ – وَاَذِنَتْ لِرَبِّهَا وَحُقَّتْ
যখন আকাশ ফেটে যাবে এবং (আকাশ) স্বীয় প্রতিপালকের আদেশ পালন করবে; আর এটাই তার উপযুক্ত করণীয়। (সূরা ইনশিক্বাক- ১, ২)
وَاِذَا السَّمَآءُ فُرِجَتْ
যখন আকাশ ছিদ্র করে দেয়া হবে। (সূরা মুরসালাত- ৯)
وَيَوْمَ تَشَقَّقُ السَّمَآءُ بِالْغَمَامِ وَنُزِّلَ الْمَلَآئِكَةُ تَنْزِيْلًا
সেদিন আকাশ মেঘপুঞ্জসহ বিদীর্ণ হবে এবং ফেরেশতাদেরকে নামিয়ে দেয়া হবে। (সূরা ফুরক্বান- ২৫)
আসমান ভেঙ্গে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে :
وَانْشَقَّتِ السَّمَآءُ فَهِيَ يَوْمَئِذٍ وَّاهِيَةٌ
আকাশ চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়বে। (সূরা হাক্কাহ- ১৬)
يَوْمَ تَمُوْرُ السَّمَآءُ مَوْرًا
যেদিন আকাশ প্রবলভাবে আন্দোলিত হবে। (সূরা তূর- ৯)
আসমানে বহু দরজা সৃষ্টি হবে :
وَفُتِحَتِ السَّمَآءُ فَكَانَتْ اَبْوَابًا
আসমান খুলে দেয়া হবে, ফলে তাতে বহু দরজা সৃষ্টি হয়ে যাবে। (সূরা নাবা- ১৯)
আকাশের রং পরিবর্তন হয়ে যাবে :
فَاِذَا انْشَقَّتِ السَّمَآءُ فَكَانَتْ وَرْدَةً كَالدِّهَانِ
যেদিন আকাশ বিদীর্ণ হবে, সেদিন তা লাল চামড়ার মতো রক্তবর্ণ ধারণ করবে। (সূরা আর রহমান- ৩৭)
আল্লাহ আকাশকে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসবেন :
يَوْمَ نَطْوِى السَّمَآءَ كَطَيِّ السِّجِلِّ لِلْكُتُبِؕ كَمَا بَدَاْنَاۤ اَوَّلَ خَلْقٍ نُّعِيْدُهٗؕ وَعْدًا عَلَيْنَاؕ اِنَّا كُنَّا فَاعِلِيْنَ
সেদিন আকাশসমূহকে গুটিয়ে ফেলব, যেভাবে গুটানো হয় লিখিত দফতর। যেভাবে আমি প্রথম সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম, সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করার প্রতিশ্রুতি পালন করা আমার কর্তব্য; আর আমি এটা পালন করবই। (সূরা আম্বিয়া- ১০৪)
وَمَا قَدَرُوا اللهَ حَقَّ قَدْرِهٖ وَالْاَرْضُ جَمِيْعًا قَبْضَتُهٗ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَالسَّماوَاتُ مَطْوِيَّاتٌ ۢبِيَمِيْنِهٖؕ سُبْحَانَهٗ وَتَعَالٰى عَمَّا يُشْرِكُوْنَ
তারা আল্লাহকে যথাযথ সম্মান করে না। কিয়ামতের দিন সমস্ত পৃথিবী থাকবে তাঁর হাতের মুষ্টিতে এবং আকাশমন্ডলী থাকবে ভাঁজকৃত- তাঁর ডান হাতে। অতএব তারা তাঁর সাথে যাকে শরীক করে তিনি তার থেকে অনেক পবিত্র ও মহান। (সূরা যুমার- ৬৭)
اِذَا السَّمَآءُ انْفَطَرَتْ
যখন আকাশ ফেটে যাবে। (সূরা ইনফিতার- ১ )
اِذَا السَّمَآءُ انْشَقَّتْ – وَاَذِنَتْ لِرَبِّهَا وَحُقَّتْ
যখন আকাশ ফেটে যাবে এবং (আকাশ) স্বীয় প্রতিপালকের আদেশ পালন করবে; আর এটাই তার উপযুক্ত করণীয়। (সূরা ইনশিক্বাক- ১, ২)
وَاِذَا السَّمَآءُ فُرِجَتْ
যখন আকাশ ছিদ্র করে দেয়া হবে। (সূরা মুরসালাত- ৯)
وَيَوْمَ تَشَقَّقُ السَّمَآءُ بِالْغَمَامِ وَنُزِّلَ الْمَلَآئِكَةُ تَنْزِيْلًا
সেদিন আকাশ মেঘপুঞ্জসহ বিদীর্ণ হবে এবং ফেরেশতাদেরকে নামিয়ে দেয়া হবে। (সূরা ফুরক্বান- ২৫)
আসমান ভেঙ্গে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে :
وَانْشَقَّتِ السَّمَآءُ فَهِيَ يَوْمَئِذٍ وَّاهِيَةٌ
আকাশ চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়বে। (সূরা হাক্কাহ- ১৬)
يَوْمَ تَمُوْرُ السَّمَآءُ مَوْرًا
যেদিন আকাশ প্রবলভাবে আন্দোলিত হবে। (সূরা তূর- ৯)
আসমানে বহু দরজা সৃষ্টি হবে :
وَفُتِحَتِ السَّمَآءُ فَكَانَتْ اَبْوَابًا
আসমান খুলে দেয়া হবে, ফলে তাতে বহু দরজা সৃষ্টি হয়ে যাবে। (সূরা নাবা- ১৯)
আকাশের রং পরিবর্তন হয়ে যাবে :
فَاِذَا انْشَقَّتِ السَّمَآءُ فَكَانَتْ وَرْدَةً كَالدِّهَانِ
যেদিন আকাশ বিদীর্ণ হবে, সেদিন তা লাল চামড়ার মতো রক্তবর্ণ ধারণ করবে। (সূরা আর রহমান- ৩৭)
আল্লাহ আকাশকে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসবেন :
يَوْمَ نَطْوِى السَّمَآءَ كَطَيِّ السِّجِلِّ لِلْكُتُبِؕ كَمَا بَدَاْنَاۤ اَوَّلَ خَلْقٍ نُّعِيْدُهٗؕ وَعْدًا عَلَيْنَاؕ اِنَّا كُنَّا فَاعِلِيْنَ
সেদিন আকাশসমূহকে গুটিয়ে ফেলব, যেভাবে গুটানো হয় লিখিত দফতর। যেভাবে আমি প্রথম সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম, সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করার প্রতিশ্রুতি পালন করা আমার কর্তব্য; আর আমি এটা পালন করবই। (সূরা আম্বিয়া- ১০৪)
وَمَا قَدَرُوا اللهَ حَقَّ قَدْرِهٖ وَالْاَرْضُ جَمِيْعًا قَبْضَتُهٗ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَالسَّماوَاتُ مَطْوِيَّاتٌ ۢبِيَمِيْنِهٖؕ سُبْحَانَهٗ وَتَعَالٰى عَمَّا يُشْرِكُوْنَ
তারা আল্লাহকে যথাযথ সম্মান করে না। কিয়ামতের দিন সমস্ত পৃথিবী থাকবে তাঁর হাতের মুষ্টিতে এবং আকাশমন্ডলী থাকবে ভাঁজকৃত- তাঁর ডান হাতে। অতএব তারা তাঁর সাথে যাকে শরীক করে তিনি তার থেকে অনেক পবিত্র ও মহান। (সূরা যুমার- ৬৭)
চন্দ্র-সূর্য আলোহীন হয়ে যাবে :
اِذَا الشَّمْسُ كُوِّرَتْ
যখন সূর্যকে আলোহীন করা হবে। (সূরা তাকভীর- ১)
وَخَسَفَ الْقَمَرُ
চাঁদ আলোহীন হয়ে পড়বে। (সূরা ক্বিয়ামাহ- ৮)
চন্দ্র-সূর্য একাকার হয়ে যাবে :
وَجُمِعَ الشَّمْسُ وَالْقَمَرُ
যখন সূর্য ও চন্দ্রকে একত্রিত করা হবে। (সূরা ক্বিয়ামাহ- ৯)
নক্ষত্ররাজি খসে পড়বে :
وَاِذَا النُّجُوْمُ انْكَدَرَتْ
যখন তারকারাজি খসে পড়বে। (সূরা তাকভীর- ২)
وَاِذَا الْكَوَاكِبُ انْتَثَرَتْ
যখন নক্ষত্ররাজী বিক্ষিপ্তভাবে ঝরে পড়বে। (সূরা ইনফিতার- ২)
সেগুলো আলোহীন হয়ে যাবে :
فَاِذَا النُّجُوْمُ طُمِسَتْ
যখন নক্ষত্ররাজির আলো নিভিয়ে দেয়া হবে। (সূরা মুরসালাত – ৮)
اِذَا الشَّمْسُ كُوِّرَتْ
যখন সূর্যকে আলোহীন করা হবে। (সূরা তাকভীর- ১)
وَخَسَفَ الْقَمَرُ
চাঁদ আলোহীন হয়ে পড়বে। (সূরা ক্বিয়ামাহ- ৮)
চন্দ্র-সূর্য একাকার হয়ে যাবে :
وَجُمِعَ الشَّمْسُ وَالْقَمَرُ
যখন সূর্য ও চন্দ্রকে একত্রিত করা হবে। (সূরা ক্বিয়ামাহ- ৯)
নক্ষত্ররাজি খসে পড়বে :
وَاِذَا النُّجُوْمُ انْكَدَرَتْ
যখন তারকারাজি খসে পড়বে। (সূরা তাকভীর- ২)
وَاِذَا الْكَوَاكِبُ انْتَثَرَتْ
যখন নক্ষত্ররাজী বিক্ষিপ্তভাবে ঝরে পড়বে। (সূরা ইনফিতার- ২)
সেগুলো আলোহীন হয়ে যাবে :
فَاِذَا النُّجُوْمُ طُمِسَتْ
যখন নক্ষত্ররাজির আলো নিভিয়ে দেয়া হবে। (সূরা মুরসালাত – ৮)
সেদিন সাগর হবে উত্তাল :
وَاِذَا الْبِحَارُ فُجِّرَتْ
যখন সমুদ্রসমূহকে উত্তাল করা হবে। (সূরা ইনফিতার- ৩)
وَاِذَا الْبِحَارُ فُجِّرَتْ
যখন সমুদ্রসমূহকে উদ্বেলিত করা হবে। (সূরা তাকভীর- ৬)
সেদিন পাহাড় বালুর স্তুপের মতো সংযোগহীন হয়ে যাবে :
يَوْمَ تَرْجُفُ الْاَرْضُ وَالْجِبَالُ وَكَانَتِ الْجِبَالُ كَثِيْبًا مَّهِيْلًا
সেদিন পৃথিবী ও পর্বতমালা প্রকম্পিত হবে এবং পর্বতসমূহ বহমান বালুরাশির ন্যায় হয়ে যাবে। (সূরা মুয্যাম্মিল- ১৪)
সেদিন পাহাড় চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে :
وَبُسَّتِ الْجِبَالُ بَسًّا – فَكَانَتْ هَبَآءً مُّنْۢبَثًّا
সেদিন পর্বতমালা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে, তখন তা উৎক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত হবে। (সূরা ওয়াক্বিয়া- ৫, ৬)
সেদিন পাহাড়কে চলমান করা হবে :
وَاِذَا الْجِبَالُ سُيِّرَتْ
যখন পর্বতসমূহকে চলমান করা হবে। (সূরা তাকভীর- ৩)
وَسُيِّرَتِ الْجِبَالُ فَكَانَتْ سَرَابًا
আর পাহাড়সমূহকে চালিত করা হবে, ফলে সেগুলো হয়ে যাবে মরীচিকা। (সূরা নাবা- ২০)
وَتَرَى الْجِبَالَ تَحْسَبُهَا جَامِدَةً وَّهِيَ تَمُرُّ مَرَّ السَّحَابِ
তুমি পর্বতমালা দেখছ আর মনে করছ যে, তা অচল; অথচ তারা হবে মেঘপুঞ্জের মতো চলমান। (সূরা নামল- ৮৮)
সেদিন পাহাড় ধুনিত তোলার মতো উড়তে থাকবে :
وَتَكُوْنُ الْجِبَالُ كَالْعِهْنِ الْمَنْفُوْشِ
পর্বতমালা হবে ধুনিত রঙ্গীন পশমের মতো। (সূরা ক্বারিয়াহ- ৫)
وَيَسْاَلُوْنَكَ عَنِ الْجِبَالِ فَقُلْ يَنْسِفُهَا رَبِّيْ نَسْفًا – فَيَذَرُهَا قَاعًا صَفْصَفًا
তারা তোমাকে পর্বতসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলো, আমার প্রতিপালক তাদেরকে সমূলে উৎপাটন করে বিক্ষিপ্ত করে দেবেন। অতঃপর তিনি তাকে পরিণত করবেন মসৃণ সমতল ময়দানে।
(সূরা ত্বা-হা- ১০৫, ১০৬)
ব্যাখ্যা : এ পাহাড়গুলো ভেঙ্গে বালুর কণার মতো গুঁড়ো করে দেয়া হবে। ফলে সেগুলো ধূলোমাটির মতো ছড়িয়ে সমগ্র দুনিয়াকে এমন একটি সমতল প্রান্তরে পরিণত করা হবে, যেখানে কোন উঁচু-নিচু, ঢালু বা অসমতল জায়গা থাকবে না। তার অবস্থা এমন একটি পরিষ্কার বিছানার মতো হবে, যাতে সামান্যতমও ভাঁজ থাকবে না।
وَاِذَا الْبِحَارُ فُجِّرَتْ
যখন সমুদ্রসমূহকে উত্তাল করা হবে। (সূরা ইনফিতার- ৩)
وَاِذَا الْبِحَارُ فُجِّرَتْ
যখন সমুদ্রসমূহকে উদ্বেলিত করা হবে। (সূরা তাকভীর- ৬)
সেদিন পাহাড় বালুর স্তুপের মতো সংযোগহীন হয়ে যাবে :
يَوْمَ تَرْجُفُ الْاَرْضُ وَالْجِبَالُ وَكَانَتِ الْجِبَالُ كَثِيْبًا مَّهِيْلًا
সেদিন পৃথিবী ও পর্বতমালা প্রকম্পিত হবে এবং পর্বতসমূহ বহমান বালুরাশির ন্যায় হয়ে যাবে। (সূরা মুয্যাম্মিল- ১৪)
সেদিন পাহাড় চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে :
وَبُسَّتِ الْجِبَالُ بَسًّا – فَكَانَتْ هَبَآءً مُّنْۢبَثًّا
সেদিন পর্বতমালা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে, তখন তা উৎক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত হবে। (সূরা ওয়াক্বিয়া- ৫, ৬)
সেদিন পাহাড়কে চলমান করা হবে :
وَاِذَا الْجِبَالُ سُيِّرَتْ
যখন পর্বতসমূহকে চলমান করা হবে। (সূরা তাকভীর- ৩)
وَسُيِّرَتِ الْجِبَالُ فَكَانَتْ سَرَابًا
আর পাহাড়সমূহকে চালিত করা হবে, ফলে সেগুলো হয়ে যাবে মরীচিকা। (সূরা নাবা- ২০)
وَتَرَى الْجِبَالَ تَحْسَبُهَا جَامِدَةً وَّهِيَ تَمُرُّ مَرَّ السَّحَابِ
তুমি পর্বতমালা দেখছ আর মনে করছ যে, তা অচল; অথচ তারা হবে মেঘপুঞ্জের মতো চলমান। (সূরা নামল- ৮৮)
সেদিন পাহাড় ধুনিত তোলার মতো উড়তে থাকবে :
وَتَكُوْنُ الْجِبَالُ كَالْعِهْنِ الْمَنْفُوْشِ
পর্বতমালা হবে ধুনিত রঙ্গীন পশমের মতো। (সূরা ক্বারিয়াহ- ৫)
وَيَسْاَلُوْنَكَ عَنِ الْجِبَالِ فَقُلْ يَنْسِفُهَا رَبِّيْ نَسْفًا – فَيَذَرُهَا قَاعًا صَفْصَفًا
তারা তোমাকে পর্বতসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলো, আমার প্রতিপালক তাদেরকে সমূলে উৎপাটন করে বিক্ষিপ্ত করে দেবেন। অতঃপর তিনি তাকে পরিণত করবেন মসৃণ সমতল ময়দানে।
(সূরা ত্বা-হা- ১০৫, ১০৬)
ব্যাখ্যা : এ পাহাড়গুলো ভেঙ্গে বালুর কণার মতো গুঁড়ো করে দেয়া হবে। ফলে সেগুলো ধূলোমাটির মতো ছড়িয়ে সমগ্র দুনিয়াকে এমন একটি সমতল প্রান্তরে পরিণত করা হবে, যেখানে কোন উঁচু-নিচু, ঢালু বা অসমতল জায়গা থাকবে না। তার অবস্থা এমন একটি পরিষ্কার বিছানার মতো হবে, যাতে সামান্যতমও ভাঁজ থাকবে না।
পৃথিবীতে কম্পন সৃষ্টি হবে :
اِذَا زُلْزِلَتِ الْاَرْضُ زِلْزَالَهَا
যখন ঝাঁকুনি দিয়ে পৃথিবীকে তার (প্রবল) কম্পনে কম্পিত করা হবে। (সূরা যিলযাল- ১)
يَوْمَ تَرْجُفُ الرَّاجِفَةُ – تَتْبَعُهَا الرَّادِفَةُ
সেদিন কম্পনকারী প্রবলভাবে কম্পিত হবে এবং তাকে অনুসরণ করবে পরবর্তী কম্পন। (সূরা নাযি‘আত- ৬, ৭)
اِذَا رُجَّتِ الْاَرْضُ رَجًّا
যখন পৃথিবী প্রবল কম্পনে প্রকম্পিত হবে। (সূরা ওয়াক্বিয়া- ৪)
পৃথিবী চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে :
كَلَّاۤ اِذَا دُكَّتِ الْاَرْضُ دَكًّا دَكًّا
সাবধান! যখন পৃথিবী চূর্ণবিচূর্ণ হবে। (সূরা ফাজর- ২১)
পৃথিবী বিস্তৃত হবে :
وَاِذَا الْاَرْضُ مُدَّتْ
যখন পৃথিবীকে সম্প্রসারিত করা হবে। (সূরা ইনশিক্বাক- ৩)
নতুন আকাশ ও পৃথিবীর জন্ম হবে :
يَوْمَ تُبَدَّلُ الْاَرْضُ غَيْرَ الْاَرْضِ وَالسَّمَاوَاتُ وَبَرَزُوْا لِلّٰهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ
যেদিন এ পৃথিবী ও আকাশমন্ডলী পরিবর্তিত হয়ে অন্য পৃথিবীতে পরিণত হবে এবং সকল মানুষ আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে, যিনি এক ও পরাক্রমশালী। (সূরা ইবরাহীম- ৪৮)
ব্যাখ্যা : পরকালীন জগতে পৃথিবী নতুন রূপ ধারণ করবে। দুনিয়ার সকল সমুদ্র ভরাট করে, পাহাড়গুলো ভেঙ্গে, উঁচু-নিচু সমান করে, বনজঙ্গল পরিষ্কার করে পুরোপুরি সমান করে দেয়া হবে। এ আকৃতির পৃথিবীর উপর হাশর প্রতিষ্ঠিত হবে এবং আল্লাহ সেখানে আদালত (ন্যায়বিচার) কায়েম করবেন।
পৃথিবীতে কোন উঁচু-নিচু টিলা থাকবে না :
فَيَذَرُهَا قَاعًا صَفْصَفًا – لَا تَرٰى فِيْهَا عِوَجًا وَّلَاۤ اَمْتًا
অতঃপর তিনি তাকে পরিণত করবেন পরিষ্কার সমতল ভূমিতে, যাতে তুমি কোন বক্রতা ও উচ্চতা দেখবে না। (সূরা ত্বা-হা- ১০৬, ১০৭)
وَيَوْمَ نُسَيِّرُ الْجِبَالَ وَتَرَى الْاَرْضَ بَارِزَةً وَّحَشَرْنَاهُمْ فَلَمْ نُغَادِرْ مِنْهُمْ اَحَدًا
যেদিন আমি পর্বতমালাকে সঞ্চালিত করব, তখন পৃথিবীকে তুমি উন্মুক্ত প্রান্তর হিসেবে দেখতে পাবে। সেদিন তাদের সকলকে একত্র করব এবং তাদের কাউকেও অব্যাহতি দেব না। (সূরা কাহফ- ৪৭)
اِذَا زُلْزِلَتِ الْاَرْضُ زِلْزَالَهَا
যখন ঝাঁকুনি দিয়ে পৃথিবীকে তার (প্রবল) কম্পনে কম্পিত করা হবে। (সূরা যিলযাল- ১)
يَوْمَ تَرْجُفُ الرَّاجِفَةُ – تَتْبَعُهَا الرَّادِفَةُ
সেদিন কম্পনকারী প্রবলভাবে কম্পিত হবে এবং তাকে অনুসরণ করবে পরবর্তী কম্পন। (সূরা নাযি‘আত- ৬, ৭)
اِذَا رُجَّتِ الْاَرْضُ رَجًّا
যখন পৃথিবী প্রবল কম্পনে প্রকম্পিত হবে। (সূরা ওয়াক্বিয়া- ৪)
পৃথিবী চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে :
كَلَّاۤ اِذَا دُكَّتِ الْاَرْضُ دَكًّا دَكًّا
সাবধান! যখন পৃথিবী চূর্ণবিচূর্ণ হবে। (সূরা ফাজর- ২১)
পৃথিবী বিস্তৃত হবে :
وَاِذَا الْاَرْضُ مُدَّتْ
যখন পৃথিবীকে সম্প্রসারিত করা হবে। (সূরা ইনশিক্বাক- ৩)
নতুন আকাশ ও পৃথিবীর জন্ম হবে :
يَوْمَ تُبَدَّلُ الْاَرْضُ غَيْرَ الْاَرْضِ وَالسَّمَاوَاتُ وَبَرَزُوْا لِلّٰهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ
যেদিন এ পৃথিবী ও আকাশমন্ডলী পরিবর্তিত হয়ে অন্য পৃথিবীতে পরিণত হবে এবং সকল মানুষ আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে, যিনি এক ও পরাক্রমশালী। (সূরা ইবরাহীম- ৪৮)
ব্যাখ্যা : পরকালীন জগতে পৃথিবী নতুন রূপ ধারণ করবে। দুনিয়ার সকল সমুদ্র ভরাট করে, পাহাড়গুলো ভেঙ্গে, উঁচু-নিচু সমান করে, বনজঙ্গল পরিষ্কার করে পুরোপুরি সমান করে দেয়া হবে। এ আকৃতির পৃথিবীর উপর হাশর প্রতিষ্ঠিত হবে এবং আল্লাহ সেখানে আদালত (ন্যায়বিচার) কায়েম করবেন।
পৃথিবীতে কোন উঁচু-নিচু টিলা থাকবে না :
فَيَذَرُهَا قَاعًا صَفْصَفًا – لَا تَرٰى فِيْهَا عِوَجًا وَّلَاۤ اَمْتًا
অতঃপর তিনি তাকে পরিণত করবেন পরিষ্কার সমতল ভূমিতে, যাতে তুমি কোন বক্রতা ও উচ্চতা দেখবে না। (সূরা ত্বা-হা- ১০৬, ১০৭)
وَيَوْمَ نُسَيِّرُ الْجِبَالَ وَتَرَى الْاَرْضَ بَارِزَةً وَّحَشَرْنَاهُمْ فَلَمْ نُغَادِرْ مِنْهُمْ اَحَدًا
যেদিন আমি পর্বতমালাকে সঞ্চালিত করব, তখন পৃথিবীকে তুমি উন্মুক্ত প্রান্তর হিসেবে দেখতে পাবে। সেদিন তাদের সকলকে একত্র করব এবং তাদের কাউকেও অব্যাহতি দেব না। (সূরা কাহফ- ৪৭)
কিয়াতের দিন দুনিয়ার জীবনের কথা মানুষের মনে পড়বে, কিন্তু দুনিয়াতে তারা কতদিন ছিল এ নিয়ে নানা রকম কথা বলবে।
কেউ বলবে দশ দিন :
يَتَخَافَتُوْنَ بَيْنَهُمْ اِنْ لَّبِثْتُمْ اِلَّا عَشْرًا
সেদিন তারা নিজেদের মধ্যে চুপি চুপি বলাবলি করবে, তোমরা মাত্র দশ দিন অবস্থান করেছিলে। (সূরা ত্বা-হা- ১০৩)
কেউ বলবে একদিন :
نَحْنُ اَعْلَمُ بِمَا يَقُوْلُوْنَ اِذْ يَقُوْلُ اَمْثَلُهُمْ طَرِيْقَةً اِنْ لَّبِثْتُمْ اِلَّا يَوْمًا
তারা কী বলবে তা আমি ভালো করে জানি। তাদের মধ্যে যে অপেক্ষাকৃত সৎপথে ছিল সে বলবে, তোমরা মাত্র একদিন অবস্থান করেছিলে। (সূরা ত্বা-হা- ১০৪)
কেউ বলবে একদিন বা অর্ধদিন :
قَالُوْا لَبِثْنَا يَوْمًا اَوْ بَعْضَ يَوْمٍ فَاسْاَلِ الْعَآدِّيْنَ
তারা বলবে, আমরা অবস্থান করেছিলাম একদিন অথবা দিনের কিছু অংশ; (বিশ্বাস না হলে) গণনাকারীদেরকে জিজ্ঞেস করে দেখো। (সূরা মু’মিনূন- ১১৩)
কেউ বলবে দিনের একটি অংশমাত্র :
وَيَوْمَ يَحْشُرُهُمْ كَاَنْ لَّمْ يَلْبَثُوْاۤ اِلَّا سَاعَةً مِّنَ النَّهَارِ
যেদিন তিনি তাদেরকে একত্র করবেন সেদিন তাদের মনে হবে যে, (দুনিয়াতে) তাদের উপস্থিতি দিবসের মাত্র এক মুহূর্তকাল পর্যন্ত ছিল। (সূরা ইউনুস- ৪৫)
كَاَنَّهُمْ يَوْمَ يَرَوْنَ مَا يُوْعَدُوْنَ لَمْ يَلْبَثُوْاۤ اِلَّا سَاعَةً مِّنْ نَّهَارٍ
যখন তারা ঐ জিনিস দেখতে পাবে, যে বিষয়ে তাদেরকে ভয় দেখানো হচ্ছে তখন তাদের এমন মনে হবে যে, যেন তারা দুনিয়ায় দিনের একটিমাত্র ক্ষণের বেশি ছিল না। (সূরা আহকাফ ৩৫)
وَيَوْمَ تَقُوْمُ السَّاعَةُ يُقْسِمُ الْمُجْرِمُوْنَ مَا لَبِثُوْا غَيْرَ سَاعَةٍ
যেদিন কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে, সেদিন পাপীরা শপথ করে বলবে যে, তারা মুহূর্তকালের বেশি অবস্থান করেনি। (সূরা রূম- ৫৫)
ব্যাখ্যা : কিয়ামতের দিন লোকেরা নিজেদের দুনিয়ার জীবন সম্পর্কে আন্দাজ করে নেবে যে, তা ছিল অতি সামান্য কয়েকটি দিন। মৃত্যুর পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত যে সময়কাল অতিবাহিত হবে সে সম্পর্কেও তাদের প্রায় একই ধরনের অনুমান হবে। দুনিয়ার জীবন সম্বন্ধে তারা এ কথা এজন্য বলবে যে, নিজেদের আশা-আকাঙ্ক্ষার সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থায় একটি চিরন্তন জীবন যখন তাদের সামনে উপস্থিত হবে এবং তারা দেখবে যে, এখানকার জন্য তারা কিছুই করেনি, তখন তারা চরম আক্ষেপ ও হতাশার সাথে নিজেদের দুনিয়ার জীবনের দিকে ফিরে দেখবে এবং দুঃখ করে বলতে থাকবে, হায়! মাত্র দু’দিনের আনন্দ ও ভোগবিলাসের লোভে আমরা চিরকালের জন্য নিজেদের জীবনকে ধ্বংস করলাম।
কেউ বলবে দশ দিন :
يَتَخَافَتُوْنَ بَيْنَهُمْ اِنْ لَّبِثْتُمْ اِلَّا عَشْرًا
সেদিন তারা নিজেদের মধ্যে চুপি চুপি বলাবলি করবে, তোমরা মাত্র দশ দিন অবস্থান করেছিলে। (সূরা ত্বা-হা- ১০৩)
কেউ বলবে একদিন :
نَحْنُ اَعْلَمُ بِمَا يَقُوْلُوْنَ اِذْ يَقُوْلُ اَمْثَلُهُمْ طَرِيْقَةً اِنْ لَّبِثْتُمْ اِلَّا يَوْمًا
তারা কী বলবে তা আমি ভালো করে জানি। তাদের মধ্যে যে অপেক্ষাকৃত সৎপথে ছিল সে বলবে, তোমরা মাত্র একদিন অবস্থান করেছিলে। (সূরা ত্বা-হা- ১০৪)
কেউ বলবে একদিন বা অর্ধদিন :
قَالُوْا لَبِثْنَا يَوْمًا اَوْ بَعْضَ يَوْمٍ فَاسْاَلِ الْعَآدِّيْنَ
তারা বলবে, আমরা অবস্থান করেছিলাম একদিন অথবা দিনের কিছু অংশ; (বিশ্বাস না হলে) গণনাকারীদেরকে জিজ্ঞেস করে দেখো। (সূরা মু’মিনূন- ১১৩)
কেউ বলবে দিনের একটি অংশমাত্র :
وَيَوْمَ يَحْشُرُهُمْ كَاَنْ لَّمْ يَلْبَثُوْاۤ اِلَّا سَاعَةً مِّنَ النَّهَارِ
যেদিন তিনি তাদেরকে একত্র করবেন সেদিন তাদের মনে হবে যে, (দুনিয়াতে) তাদের উপস্থিতি দিবসের মাত্র এক মুহূর্তকাল পর্যন্ত ছিল। (সূরা ইউনুস- ৪৫)
كَاَنَّهُمْ يَوْمَ يَرَوْنَ مَا يُوْعَدُوْنَ لَمْ يَلْبَثُوْاۤ اِلَّا سَاعَةً مِّنْ نَّهَارٍ
যখন তারা ঐ জিনিস দেখতে পাবে, যে বিষয়ে তাদেরকে ভয় দেখানো হচ্ছে তখন তাদের এমন মনে হবে যে, যেন তারা দুনিয়ায় দিনের একটিমাত্র ক্ষণের বেশি ছিল না। (সূরা আহকাফ ৩৫)
وَيَوْمَ تَقُوْمُ السَّاعَةُ يُقْسِمُ الْمُجْرِمُوْنَ مَا لَبِثُوْا غَيْرَ سَاعَةٍ
যেদিন কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে, সেদিন পাপীরা শপথ করে বলবে যে, তারা মুহূর্তকালের বেশি অবস্থান করেনি। (সূরা রূম- ৫৫)
ব্যাখ্যা : কিয়ামতের দিন লোকেরা নিজেদের দুনিয়ার জীবন সম্পর্কে আন্দাজ করে নেবে যে, তা ছিল অতি সামান্য কয়েকটি দিন। মৃত্যুর পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত যে সময়কাল অতিবাহিত হবে সে সম্পর্কেও তাদের প্রায় একই ধরনের অনুমান হবে। দুনিয়ার জীবন সম্বন্ধে তারা এ কথা এজন্য বলবে যে, নিজেদের আশা-আকাঙ্ক্ষার সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থায় একটি চিরন্তন জীবন যখন তাদের সামনে উপস্থিত হবে এবং তারা দেখবে যে, এখানকার জন্য তারা কিছুই করেনি, তখন তারা চরম আক্ষেপ ও হতাশার সাথে নিজেদের দুনিয়ার জীবনের দিকে ফিরে দেখবে এবং দুঃখ করে বলতে থাকবে, হায়! মাত্র দু’দিনের আনন্দ ও ভোগবিলাসের লোভে আমরা চিরকালের জন্য নিজেদের জীবনকে ধ্বংস করলাম।
সেদিন সবাই কবর থেকে উঠবে :
وَاِذَا الْقُبُوْرُ بُعْثِرَتْ
যখন কবরসমূহ উন্মোচন করা হবে। (সূরা ইনফিতার- ৪)
يَوْمَ يَسْمَعُوْنَ الصَّيْحَةَ بِالْحَقِّؕ ذٰلِكَ يَوْمُ الْخُرُوْجِ
যেদিন (মানুষ) এক বিকট আওয়াজ শ্রবণ করবে। আর এটাই হচ্ছে (কবর হতে মৃতদের) বের হওয়ার দিন। (সূরা ক্বাফ- ৪২)
তখন আল্লাহর দিকে ডাক পড়বে :
وَاسْتَمِعْ يَوْمَ يُنَادِ الْمُنَادِ مِنْ مَّكَانٍ قَرِيْبٍ
শ্রবণ করো, যেদিন এক আহবানকারী নিকটবর্তী স্থান হতে আহবান করবে। (সূরা ক্বাফ- ৪১)
اِلٰى رَبِّكَ يَوْمَئِذِنِ الْمَسَاقُ
আজ তোমার প্রতিপালকের নিকট যাওয়ার দিন। (সূরা ক্বিয়ামাহ- ৩০)
ব্যাখ্যা : যে ব্যক্তি যেখানেই মৃত্যুবরণ করবে কিংবা যেখানেই তার মৃত্যু সংঘটিত হয়েছিল সেখানেই তার কাছে আল্লাহর ঘোষকের এ আওয়াজ পৌঁছবে যে, উঠো! এখন তোমার রবের কাছে হিসাব দেয়ার জন্য চলো। এ আওয়াজ হবে এমন যে, ভূপৃষ্ঠের আনাচে-কানাচে যে যেখানেই জীবিত হয়ে উঠবে সে সেখানেই মনে করবে যে, আহবানকারী নিকটেই কোথাও থেকে তাকে আহবান করেছে। একই সময়ে গোটা পৃথিবীর সব জায়গায় সমানভাবে এ আওয়াজ শোনা যাবে।
দেহের সাথে প্রাণ মিলিত হবে :
وَاِذَا النُّفُوْسُ زُوِّجَتْ
যখন প্রাণসমূহকে (দেহে) মিলিত করা হবে। (সূরা তাকভীর- ৭)
মানুষ তাদের রবের দিকে ছুটবে :
وَنُفِخَ فِى الصُّوْرِ فَاِذَا هُمْ مِّنَ الْاَجْدَاثِ اِلٰى رَبِّهِمْ يَنْسِلُوْنَ
শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে এবং তৎক্ষণাৎ তারা কবর থেকে (পুনরুত্থিত হয়ে) নিজের প্রতিপালকের দিকে ছুটে যাবে। (সূরা ইয়াসীন- ৫১)
মানুষ দলে দলে আসবে :
يَوْمَ يُنْفَخُ فِى الصُّوْرِ فَتَاْتُوْنَ اَفْوَاجًا
যেদিন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে, তখন তোমরা দলে দলে আসবে। (সূরা নাবা- ১৮)
يَوْمَئِذٍ يَّصْدُرُ النَّاسُ اَشْتَاتًا لِّيُرَوْا اَعْمَالَهُمْ
সেদিন মানুষ বিভিনণ দলে প্রকাশ পাবে, যাতে তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম দেখানো হয়। (সূরা যিলযাল- ৬)
সবাই হতভম্ব হয়ে পড়বে :
قَالُوْا يَا وَيْلَنَا مَنْ ۢبَعَثَنَا مِنْ مَّرْقَدِنَا هٰذَاٚ مَا وَعَدَ الرَّحْمٰنُ وَصَدَقَ الْمُرْسَلُوْنَ
তারা বলবে, হায় আমাদের দুর্ভোগ! কে আমাদেরকে আমাদের কবর থেকে উঠাল? দয়াময় আল্লাহ তো এরই ওয়াদা দিয়েছিলেন এবং রাসূলগণ সত্যই বলেছিলেন। (সূরা ইয়াসীন- ৫২)
মানুষ দৌড়াতে শুরু করবে :
يَوْمَ يَخْرُجُوْنَ مِنَ الْاَجْدَاثِ سِرَاعًا كَاَنَّهُمْ اِلٰى نُصُبٍ يُّوْفِضُوْنَ
সেদিন তারা দ্রুতবেগে কবর হতে বের হবে। তখন মনে হবে, তারা যেন কোন একটি আস্তানার দিকে ছুটে আসছে। (সূরা মা‘আরিজ- ৪৩)
ফেরেশতারা মানুষকে আল্লাহর দিকে হাঁকিয়ে নেবে :
وَجَآءَتْ كُلُّ نَفْسٍ مَّعَهَا سَآئِقٌ وَّشَهِيْدٌ
সেদিন প্রত্যেক ব্যক্তি উপস্থিত হবে, তার সাথে থাকবে চালক ও সাক্ষী। (সূরা ক্বাফ- ২১)
ব্যাখ্যা : এর দ্বারা সেই দু’জন ফেরেশতাকে বুঝানো হয়েছে, যারা পৃথিবীতে ঐ ব্যক্তির সমস্ত কথা ও কাজের রেকর্ড প্রস্তুত করার কাজে নিযুক্ত ছিল। কিয়ামতের দিন সিঙ্গায় ফুৎকার দেয়ার সাথে সাথে প্রত্যেক মানুষ যখন তার কবর থেকে উঠবে তৎক্ষণাৎ উক্ত ফেরেশতাদ্বয় এসে তাকে নিজেদের তত্ত্বাবধানে নিয়ে নেবে। একজন তাকে আল্লাহ তা‘আলার আদালতের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাবে এবং অন্যজন ‘আমলনামা’ সাথে নিয়ে যাবে।
সবাইকে সমবেত করা হবে :
هٰذَا يَوْمُ الْفَصْلِۚ جَمَعْنَاكُمْ وَالْاَوَّلِيْنَ
এটা চূড়ান্ত ফায়সালার দিন, আমি একত্রিত করেছি তোমাদেরকে এবং পূর্ববর্তীদেরকে। (সূরা মুরসালাত- ৩৮)
قُلْ اِنَّ الْاَوَّلِيْنَ وَالْاٰخِرِيْنَ – لَمَجْمُوْعُوْنَ اِلٰى مِيْقَاتِ يَوْمٍ مَّعْلُوْمٍ
বলো, অবশ্যই পূর্ববর্তীগণ এবং পরবর্তীগণ সকলকে একত্রিত করা হবে একটি নির্ধারিত দিনে নির্ধারিত সময়ে। (সূরা ওয়াক্বিয়া- ৪৯, ৫০)
একে একে সবাই উপস্থিত হবে :
اِنْ كُلُّ مَنْ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ اِلَّاۤ اٰتِى الرَّحْمٰنِ عَبْدًا
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে কেউই এমন নয় যে, সে দয়াময়ের নিকট বান্দা হিসেবে উপস্থিত হবে না। (সূরা মারইয়াম- ৯৩)
যেখানেই থাকবে আল্লাহর কাছে আসবে :
اَيْنَ مَا تَكُوْنُوْا يَاْتِ بِكُمُ اللهُ جَمِيْعًاؕ اِنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
তোমরা যেখানেই থাক না কেন আল্লাহ তোমাদের সকলকে একত্রিত করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে পূর্ণ ক্ষমতাবান। (সূরা বাক্বারা- ১৪৮)
রাসূলদেরকেও উপস্থিত করা হবে :
وَاِذَا الرُّسُلُ اُقِّتَتْ
আর রাসূলগণকেও নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত করা হবে। (সূরা মুরসালাত- ১১)
সবাই আল্লাহর প্রশংসা করবে :
يَوْمَ يَدْعُوْكُمْ فَتَسْتَجِيْبُوْنَ بِحَمْدِهٖ وَتَظُنُّوْنَ اِنْ لَّبِثْتُمْ اِلَّا قَلِيْلًا
যেদিন তিনি তোমাদেরকে আহবান করবেন। অতঃপর তোমরা তাঁর প্রশংসার সাথে তাঁর আহবানে সাড়া দেবে এবং তোমরা মনে করবে যে, তোমরা (পৃথিবীতে) খুব অল্প কালই অবস্থান করেছিলে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৫২)
সবাই কাতারবন্দী হয়ে আল্লাহর সামনে দাঁড়াবে :
وَعُرِضُوْا عَلٰى رَبِّكَ صَفًّاؕ لَقَدْ جِئْتُمُوْنَا كَمَا خَلَقْنَاكُمْ اَوَّلَ مَرَّةٍ
তাদেরকে তোমার প্রতিপালকের নিকট উপস্থিত করা হবে সারিবদ্ধভাবে এবং বলা হবে, তোমাদেরকে প্রথমবার যেভাবে সৃষ্টি করেছিলাম সেভাবেই তোমরা আমার নিকট উপস্থিত হয়েছ। (সূরা কাহফ- ৪৮)
يَوْمَ يَقُوْمُ النَّاسُ لِرَبِّ الْعَالَمِيْنَ
যেদিন সকল মানুষ জগতসমূহের প্রতিপালকের সামনে দাঁড়াবে। (সূরা মুতাফফিফীন- ৬)
সবাই নিরব ও নিস্তব্ধ হয়ে পড়বে :
يَوْمَئِذٍ يَّتَّبِعُوْنَ الدَّاعِيَ لَا عِوَجَ لَهٗ ۚ وَخَشَعَتِ الْاَصْوَاتُ لِلرَّحْمٰنِ فَلَا تَسْمَعُ اِلَّا هَمْسًا
সেদিন তারা আহবানকারীর অনুসরণ করবে, এ ব্যাপারে এদিক-সেদিক করতে পারবে না; তখন দয়াময়ের সম্মুখে সকল শব্দ সত্মব্ধ হয়ে যাবে। সুতরাং মৃদু পদধ্বনি ব্যতীত তুমি কিছুই শুনবে না।
(সূরা ত্বা-হা- ১০৮)
وَعَنَتِ الْوُجُوْهُ لِلْحَيِّ الْقَيُّوْمِ
চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী (আল্লাহর) নিকট সকলকেই নতশির হয়ে উপস্থিত হতে হবে। (সূরা ত্বা-হা- ১১১)
জমিন ভেতরের সবকিছু বের করে দেবে :
وَاِذَا الْاَرْضُ مُدَّتْ – وَاَلْقَتْ مَا فِيْهَا وَتَخَلَّتْ
যখন পৃথিবীকে সম্প্রসারিত করা হবে এবং পৃথিবী তার অভ্যন্তরে যা আছে তা বাইরে নিক্ষেপ করবে; অতঃপর তা খালি হয়ে যাবে। (সূরা ইনশিক্বাক- ৩, ৪)
وَاَخْرَجَتِ الْاَرْضُ اَثْقَالَهَا
যখন পৃথিবী তার বোঝা বের করে দেবে। (সূরা যিলযাল- ২)
পৃথিবী সকল সংবাদ বলে দেবে :
يَوْمَئِذٍ تُحَدِّثُ اَخْبَارَهَا – بِاَنَّ رَبَّكَ اَوْحٰى لَهَا
সেদিন পৃথিবী তার বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে। কারণ, আপনার পালনকর্তা তাকে আদেশ করবেন। (সূরা যিলযাল- ৪, ৫)
কোন জিনিস গোপন থাকবে না :
يَوْمَئِذٍ تُعْرَضُوْنَ لَا تَخْفٰى مِنْكُمْ خَافِيَةٌ
সেদিন তোমাদেরকে উপস্থিত করা হবে, তখন তোমাদের কিছুই গোপন থাকবে না। (সূরা হাক্কাহ- ১৮)
يَوْمَ هُمْ بَارِزُوْنَۚ لَا يَخْفٰى عَلَى اللهِ مِنْهُمْ شَيْءٌؕ لِمَنِ الْمُلْكُ الْيَوْمَؕ لِلّٰهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ
যেদিন তারা (কবর হতে) বের হয়ে পড়বে, তখন আল্লাহর নিকট তাদের কোনকিছুই গোপন থাকবে না। (আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন) আজ কর্তৃতব কার? (উত্তর হবে) এক পরাক্রমশালী আল্লাহর। (সূরা মু’মিন- ১৬)
মানুষের অন্তরের বিষয় প্রকাশ করে দেয়া হবে :
وَحُصِّلَ مَا فِى الصُّدُوْرِ
আর অন্তরে যা আছে, তা প্রকাশ করে দেয়া হবে। (সূরা আদিয়াহ- ১০)
মানুষ অদৃশ্য বিষয়াবলি দেখতে পাবে :
لَقَدْ كُنْتَ فِيْ غَفْلَةٍ مِّنْ هٰذَا فَكَشَفْنَا عَنْكَ غِطَآءَكَ فَبَصَرُكَ الْيَوْمَ حَدِيْدٌ
তুমি এই দিবস সম্বন্ধে গাফিল ছিলে। এখন তোমার সম্মুখ হতে আবরণ সরিয়ে দিয়েছি; সুতরাং আজ তোমার দৃষ্টি খুবই প্রখর। (সূরা ক্বাফ- ২২)
প্রত্যেকেই নিজের অবস্থা বুঝে নেবে :
بَلِ الْاِنْسَانُ عَلٰى نَفْسِهٖ بَصِيْرَةٌ – وَلَوْ اَلْقٰى مَعَاذِيْرَهٗ
বরং মানুষ নিজের সম্বন্ধে ভালো করে জানে, যদিও সে নানা অজুহাত পেশ করে। (সূরা ক্বিয়ামাহ- ১৪, ১৫)
মানুষ তিন দলে বিভক্ত হবে :
وَكُنْتُمْ اَزْوَاجًا ثَلَاثَةً
আর তোমরা তিন শ্রেণিতে বিভক্ত হবে। (সূরা ওয়াক্বিয়া- ৭, ৮)
فَاَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ مَاۤ اَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ
অতঃপর ডান দল (ডান হাতে আমলনামাপ্রাপ্ত দল); কতই না ভাগ্যবান ডান দল। (সূরা ওয়াক্বিয়া- ৮)
وَالسَّابِقُوْنَ السَّابِقُوْنَ
আর অগ্রবর্তীগণ তো অগ্রবর্তীই। (সূরা ওয়াক্বিয়া- ১০)
وَاَصْحَابُ الشِّمَالِ مَاۤ اَصْحَابُ الشِّمَالِ
আর বাম দল (বাম হাতে আমলনামাপ্রাপ্ত দল); কতই না হতভাগা বাম দল! (সূরা ওয়াক্বিয়া- ৪১)
মানুষ হতভম্ব হয়ে পড়বে :
اِذَا زُلْزِلَتِ الْاَرْضُ زِلْزَالَهَا – وَاَخْرَجَتِ الْاَرْضُ اَثْقَالَهَا – وَقَالَ الْاِنْسَانُ مَا لَهَا
যখন পৃথিবী তাঁর কম্পনে প্রকম্পিত হবে এবং সে তাঁর বোঝা বের করে দেবে তখন মানুষ বলবে, এর কী হলো? (সূরা যিলযাল, ১-৩)
মানুষ পতঙ্গের মতো ভিড় জমাবে :
يَوْمَ يَكُوْنُ النَّاسُ كَالْفَرَاشِ الْمَبْثُوْثِ
সেদিন মানুষ বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের মতো হয়ে যাবে। (সূরা ক্বারিয়াহ- ৪)
فَتَوَلَّ عَنْهُمْ يَوْمَ يَدْعُ الدَّاعِ اِلٰى شَيْءٍ نُّكُرٍ – خُشَّعًا اَبْصَارُهُمْ يَخْرُجُوْنَ مِنَ الْاَجْدَاثِ كَاَنَّهُمْ جَرَادٌ مُّنْتَشِرٌ
তুমি তাদেরকে উপেক্ষা করো। যেদিন আহবানকারী এক ভয়াবহ বস্তুর দিকে আহবান করবে, সেদিন তারা অপমানে শঙ্কিত হয়ে কবরসমূহ হতে বের হবে বিক্ষিপ্ত পঙ্গপালের ন্যায়। (সূরা ক্বামার, ৬-৮)
মানুষ পালানোর চেষ্টা করবে :
يَقُوْلُ الْاِنْسَانُ يَوْمَئِذٍ اَيْنَ الْمَفَرُّ – كَلَّا لَا وَزَرَ – اِلٰى رَبِّكَ يَوْمَئِذِنِ الْمُسْتَقَرُّ – يُنَبَّاُ الْاِنْسَانُ يَوْمَئِذٍ ۢبِمَا قَدَّمَ وَاَخَّرَ
সেদিন মানুষ বলবে, আজ পালানোর স্থান কোথায়? কখনো না, কোন আশ্রয়স্থল নেই। সেদিন তোমার প্রতিপালকের নিকটেই দাঁড়াতে হবে। সেদিন মানুষকে অবহিত করা হবে, যা সে অগ্রে পাঠিয়েছে ও পশ্চাতে রেখে গেছে। (সূরা ক্বিয়ামাহ, ১০-১৩)
وَيَا قَوْمِ اِنِّۤيْ اَخَافُ عَلَيْكُمْ يَوْمَ التَّنَادِ – يَوْمَ تُوَلُّوْنَ مُدْبِرِيْنَۚ مَا لَكُمْ مِّنَ اللهِ مِنْ عَاصِمٍ
হে আমার সম্প্রদায়! আমি তোমাদের জন্য ফরিয়াদ দিবসের আশঙ্কা করি। যেদিন তোমরা পশ্চাৎ ফিরে পলায়ন করতে চাইবে, কিন্তু আল্লাহর শাস্তি হতে তোমাদেরকে রক্ষা করার কেউ থাকবে না। (সূরা মু’মিন- ৩২, ৩৩)
সেদিন শিশু বৃদ্ধ হয়ে যাবে :
فَكَيْفَ تَتَّقُوْنَ اِنْ كَفَرْتُمْ يَوْمًا يَّجْعَلُ الْوِلْدَانَ شِيْبًا
অতএব কীভাবে তোমরা বাঁচতে পারবে, যদি তোমরা সেদিনকে অস্বীকার কর, যেদিন কিশোরকে বৃদ্ধ বানানো হবে। (সূরা মুয্যাম্মিল- ১৭)
চক্ষু স্থির হয়ে যাবে :
فَاِذَا بَرِقَ الْبَصَرُ
অতঃপর যখন চক্ষু স্থির হয়ে যাবে। (সূরা ক্বিয়ামাহ- ৭)
وَلَا تَحْسَبَنَّ اللهَ غَافِلًا عَمَّا يَعْمَلُ الظَّالِمُوْنَؕ اِنَّمَا يُؤَخِّرُهُمْ لِيَوْمٍ تَشْخَصُ فِيْهِ الْاَبْصَارُ
তুমি কখনো মনে করো না যে, যালিমরা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ গাফিল। তবে তিনি তাদেরকে সেদিন পর্যমত্ম অবকাশ দেন, যেদিন তাদের চক্ষু স্থির হয়ে যাবে। (সূরা ইবরাহীম- ৪২)
প্রাণ বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হবে :
وَاَنْذِرْهُمْ يَوْمَ الْاٰزِفَةِ اِذِ الْقُلُوْبُ لَدَى الْحَنَاجِرِ كَاظِمِيْنَ
তাদেরকে সতর্ক করে দাও আসন্ন দিন (কিয়ামত) সম্পর্কে, সেদিন দুঃখ-কষ্টে তাদের প্রাণ কণ্ঠাগত হয়ে পড়বে। (সূরা মু’মিন- ১৮)
مُهْطِعِيْنَ مُقْنِعِيْ رُءُوْسِهِمْ لَا يَرْتَدُّ اِلَيْهِمْ طَرْفُهُمْۚ وَاَفْئِدَتُهُمْ هَوَآءٌ
তারা ভীত-বিহবল চিত্তে আকাশের দিকে চেয়ে ছোটাছুটি করতে থাকবে; তখন তারা নিজেদের প্রতিও কোন ভ্রুক্ষেপ করবে না। আর তাদের অমত্মর হবে উদাস। (সূরা ইবরাহীম- ৪৩)
অন্তর কাঁপতে থাকবে :
قُلُوْبٌ يَّوْمَئِذٍ وَّاجِفَةٌ – اَبْصَارُهَا خَاشِعَةٌ
সেদিন হৃদয়সমূহ ভীত থাকবে এবং তাদের দৃষ্টিসমূহ হবে অবনত। (সূরা নাযি‘আত- ৭, ৮)
সবাই নতজানু হয়ে পড়ে থাকবে :
وَتَرٰى كُلَّ اُمَّةٍ جَاثِيَةً كُلُّ اُمَّةٍ تُدْعٰۤى اِلٰى كِتَابِهَاؕ اَلْيَوْمَ تُجْزَوْنَ مَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
প্রত্যেক সম্প্রদায়কে (ভয়ে) নতজানু অবস্থায় দেখতে পাবে। অতঃপর প্রত্যেক সম্প্রদায়কে তার আমলনামার প্রতি আহবান করা হবে- আজ তোমাদেরকে তারই বিনিময় দেয়া হবে, যা তোমরা করতে। (সূরা জাসিয়া- ২৮)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ সেখানে হাশরের ময়দান এবং আল্লাহর আদালতের এমন ভয় সৃষ্টি হবে, যার ফলে বড় বড় অহংকারীদের অহংকারও শেষ হয়ে যাবে। সেখানে সবাই অত্যন্ত বিনয়ের সাথে নতজানু হয়ে থাকবে।
মানুষ জেনে নেবে যে, সে কী নিয়ে এসেছে এবং কী রেখে গেছে :
عَلِمَتْ نَفْسٌ مَّاۤ اَحْضَرَتْ
তখন প্রত্যেক ব্যক্তি জানতে পারবে যে, সে কী নিয়ে এসেছে। (সূরা তাকভীর- ১৪)
عَلِمَتْ نَفْسٌ مَّا قَدَّمَتْ وَاَخَّرَتْ
তখন প্রত্যেকে জেনে নেবে, যা সে পূর্বে প্রেরণ করেছে এবং পশ্চাতে ছেড়ে এসেছে। (সূরা ইনফিতার- ৫)
يُنَبَّاُ الْاِنْسَانُ يَوْمَئِذٍ ۢبِمَا قَدَّمَ وَاَخَّرَ
সেদিন মানুষকে অবহিত করা হবে, যা সে অগ্রে প্রেরণ করেছে ও পশ্চাতে রেখে গেছে। (সূরা ক্বিয়ামাহ- ১৩)
মানুষ তার পাপ-পুণ্য সবই দেখতে পাবে :
فَمَنْ يَّعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَّرَهٗ – وَمَنْ يَّعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَّرَهٗ
কেউ অণুপরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখতে পাবে এবং কেউ অণুপরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে। (সূরা যিলযাল- ৭, ৮)
يَوْمَ تَجِدُ كُلُّ نَفْسٍ مَّا عَمِلَتْ مِنْ خَيْرٍ مُّحْضَرًاۚ وَمَا عَمِلَتْ مِنْ سُوْٓءٍ
প্রত্যেক মানুষ যা ভালো করেছে এবং খারাপ করেছে, কিয়ামতের দিন সবই উপস্থিত পাবে। (সূরা আলে ইমরান- ৩০)
কিয়ামতের দিন মানুষ কোন প্রভাব খাটাতে পারবে না :
فَمَا لَهٗ مِنْ قُوَّةٍ وَّلَا نَاصِرٍ
সেদিন তার কোন শক্তি থাকবে না এবং সাহায্যকারীও থাকবে না। (সূরা তারিক- ১০)
কোন কৌশল কাজে লাগবে না :
فَذَرْهُمْ حَتّٰى يُلَاقُوْا يَوْمَهُمُ الَّذِيْ فِيْهِ يُصْعَقُوْنَ – يَوْمَ لَا يُغْنِيْ عَنْهُمْ كَيْدُهُمْ شَيْئًا وَّلَا هُمْ يُنْصَرُوْنَ
তাদেরকে সেদিন পর্যন্ত উপেক্ষা করে চল, যেদিন তারা ধ্বংসের সম্মুখীন হবে। সেদিন তাদের কৌশল কোন কাজে আসবে না এবং তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না। (সূরা তূর- ৪৫, ৪৬)
কিয়ামতের দিন কেউ কাউকে বাঁচাতে পারবে না :
يَوْمَ لَا تَمْلِكُ نَفْسٌ لِّنَفْسٍ شَيْئًا – وَالْاَمْرُ يَوْمَئِذٍ لِّلّٰهِ
সেদিন কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির জন্য কোন কিছু করার অধিকার রাখবে না; সেদিন সমস্ত কর্তৃত্ব হবে একমাত্র আল্লাহর। (সূরা ইনফিতার- ১৯)
اِنَّ يَوْمَ الْفَصْلِ مِيْقَاتُهُمْ اَجْمَعِيْنَ – يَوْمَ لَا يُغْنِيْ مَوْلًى عَنْ مَّوْلًى شَيْئًا وَّلَا هُمْ يُنْصَرُوْنَ – اِلَّا مَنْ رَّحِمَ اللهُؕ اِنَّهٗ هُوَ الْعَزِيْزُ الرَّحِيْمُ
সকলের জন্য নির্ধারিত রয়েছে বিচার দিবস- যেদিন এক বন্ধু অপর বন্ধুর কোন কাজে আসবে না এবং তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না; তবে আল্লাহ যার প্রতি দয়া করেন (তার কথা ভিন্ন।) নিশ্চয় তিনি পরাক্রমশালী ও পরম দয়ালু। (সূরা দুখান, ৪০-৪২)
সেদিন সকলেই আত্মীয়স্বজন থেকে পলায়ন করবে :
فَاِذَا نُفِخَ فِى الصُّوْرِ فَلَاۤ اَنْسَابَ بَيْنَهُمْ يَوْمَئِذٍ وَّلَا يَتَسَآءَلُوْنَ
যেদিন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে, সেদিন পরস্পরের মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধন থাকবে না এবং একে অপরের খোঁজখবর নেবে না। (সূরা মু’মিনূন- ১০১)
ব্যাখ্যা : এর অর্থ এ নয় যে, পিতা আর পিতা থাকবে না এবং ছেলে ছেলে থাকবে না। বরং এর অর্থ হচ্ছে, সে সময় পিতা ছেলের কোন কাজে লাগবে না এবং ছেলে পিতার কোন কাজে লাগবে না। প্রত্যেকে এমনভাবে নিজের অবস্থার শিকার হবে যে, একজন অন্যজনের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করা তো দূরের কথা কেউ কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করার মতো চেতনাও থাকবে না।
فَاِذَا جَآءَتِ الصَّآخَّةُ – يَوْمَ يَفِرُّ الْمَرْءُ مِنْ اَخِيْهِ – وَاُمِّهٖ وَاَبِيْهِ – وَصَاحِبَتِهٖ وَبَنِيْهِ
যেদিন ঐ বিকট ধ্বনি এসে পড়বে; সেদিন মানুষ নিজের ভাই হতেও পলায়ন করবে এবং তার মাতা, পিতা, স্ত্রী ও সন্তান হতেও (পলায়ন করবে)। (সূরা আবাসা, ৩৩-৩৬)
সবাই আত্মরক্ষার চিন্তায় মগ্ন থাকবে :
لِكُلِّ امْرِئٍ مِّنْهُمْ يَوْمَئِذٍ شَاْنٌ يُّغْنِيْهِ
সেদিন তাদের প্রত্যেকের এমন গুরুতর অবস্থা হবে, যা তাকে সম্পূর্ণরূপে ব্যস্ত করে রাখবে। (সূরা আবাসা- ৩৭)
কেউ কারো পাপের বোঝা বহন করবে না :
وَلَا تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍ اِلَّا عَلَيْهَاؕ وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِّزْرَ اُخْرٰى
প্রত্যেকে স্বীয় কৃতকর্মের জন্য দায়ী এবং কেউ অন্য কারো ভার গ্রহণ করবে না। (সূরা আন‘আম- ১৬৪)
وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِّزْرَ اُخْرٰىؕ وَاِنْ تَدْعُ مُثْقَلَةٌ اِلٰى حِمْلِهَا لَا يُحْمَلْ مِنْهُ شَيْءٌ وَّلَوْ كَانَ ذَا قُرْبٰى
কোন বোঝা বহনকারী অপরের বোঝা বহন করবে না। যদি কোন বোঝা ভারাক্রান্ত ব্যক্তি কাউকে তার বোঝা বহন করতে ডাকে, তবে তা থেকে কিছুই বহন করা হবে না; যদিও সে তার নিকটাত্মীয় হয়। (সূরা ফাতির- ১৮)
ব্যাখ্যা : وِزْرٌ (ভিযরুন) অর্থ বোঝা অর্থাৎ কৃতকর্মের দায়-দায়িত্বের বোঝা। আল্লাহর কাছে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজেই তার কাজের জন্য দায়ী এবং প্রত্যেকের উপর কেবলমাত্র তার নিজের কাজের দায়-দায়িত্ব অর্পিত হয়। এক ব্যক্তির কাজের দায়-দায়িত্বের বোঝা আল্লাহর পক্ষ থেকে অন্য ব্যক্তির ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। কোন ব্যক্তি অন্যের দায়-দায়িত্বের বোঝা নিজের উপর চাপিয়ে নেবে এবং তাকে বাঁচানোর জন্য তার অপরাধে নিজেকে পাকড়াও করাবে- এরও কোন সম্ভাবনা নেই। এ কথা বলার কারণ হচ্ছে, যারা মক্কায় ইসলাম গ্রহণ করেছিল তাদেরকে তাদের মুশরিক আত্মীয়স্বজন ও গোত্রের লোকেরা বলেছিল, তোমরা এই নতুন ধর্মত্যাগ করো এবং নিজেদের বাপ-দাদার ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত হও। এজন্য কোন পাপ হলে আমরা তার বোঝা বহন করব। কিন্তু বাস্তবতা তার উল্টো। তারা এসব কথা বলেছিল আখিরাত সম্পর্কে তাদের সঠিক ধারণা না থাকার কারণে। কেননা যখন কিয়ামত আসবে এবং লোকেরা দেখে নেবে যে, নিজেদের কৃতকর্মের জন্য তারা কোন্ ধরনের পরিণামের সম্মুখীন হতে যাচ্ছে, তখন প্রত্যেকে নিজেকে বাঁচানোর চিন্তা করতে থাকবে। এমতাবস্থায় ভাই ভাই থেকে, পিতা পুত্র থেকে, স্বামী স্ত্রী থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। কেউ কারো সামান্যতম বোঝা নিজের উপর চাপিয়ে নিতে প্রস্তুত হবে না।
কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী থাকবে না :
وَمَا كَانَ لَهُمْ مِّنْ اَوْلِيَآءَ يَنْصُرُوْنَهُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِؕ وَمَنْ يُّضْلِلِ اللهُ فَمَا لَهٗ مِنْ سَبِيْلٍ
সেদিন তাদেরকে সাহায্য করার জন্য আল্লাহ ব্যতীত কোন অভিভাবক থাকবে না; আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার (আত্মরক্ষার) কোন পথ থাকে না। (সূরা শূরা- ৪৬)
সেদিন কোন আশ্রয়স্থলও থাকবে না :
مَا لَكُمْ مِّنْ مَّلْجَاٍ يَّوْمَئِذٍ وَّمَا لَكُمْ مِّنْ نَّكِيْرٍ
সেদিন তোমাদের জন্য কোন আশ্রয়স্থল থাকবে না এবং তোমাদের জন্য কোন প্রতিরোধকারীও থাকবে না। (সূরা শূরা- ৪৭)
কোন বিনিময় ও সুপারিশও কাজে আসবে না :
وَاتَّقُوْا يَوْمًا لَّا تَجْزِيْ نَفْسٌ عَنْ نَّفْسٍ شَيْئًا وَّلَا يُقْبَلُ مِنْهَا عَدْلٌ وَّلَا تَنْفَعُهَا شَفَاعَةٌ وَّلَا هُمْ يُنْصَرُوْنَ
তোমরা এমন এক দিনকে ভয় করো, যেদিন কেউ কারো হতে বিন্দুমাত্র উপকৃত হতে পারবে না এবং কারো নিকট হতে বিনিময়ও গ্রহণ করা হবে না। অতঃপর কারো শাফা‘আত (সুপারিশ) কাজে লাগবে না এবং তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না। (সূরা বাক্বারা- ১২৩)
কিয়ামতের দিন বন্ধু বন্ধুর খবর নেবে না :
وَلَا يَسْاَلُ حَمِيْمٌ حَمِيْمًا
সেদিন কোন বন্ধু কোন অন্তরঙ্গ বন্ধুর খোঁজ নেবে না। (সূরা মা‘আরিজ-১০)
ব্যাখ্যা : বড় বড় অপরাধীদের সকল শক্তি শেষ হয়ে যাবে। ফলে তারা কোন প্রকার প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই জাহান্নামের দিকে এগিয়ে যেতে থাকবে। কোথাও কোথাও তারা ধাক্কা খেতে থাকবে এবং কোন নেতা তাদের উদ্ধার করতে এগিয়ে আসবে না। সেখানে বিশ্ববিজয়ী ও ডিরেক্টরগণও চরম লাঞ্ছনা সহকারে যেতে থাকবে। তাদের শক্তিশালী সেনাদল নিজেরাই তাদেরকে দন্ড দেয়ার জন্য এগিয়ে দেবে। কোথাও কোন ভন্ডপীর জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে; কিন্তু তার মুরীদরা হুজুরের মর্যাদাহানির কথা ভাববে না। কোথাও কোন জাতীয় নেতা বড়ই হীনতার মধ্যে জাহান্নামের পথে যাত্রা করবে; কিন্তু দুনিয়ায় যেসব লোক তার ঝান্ডা উঁচু করে বেড়াতো তারা সবাই তার দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবে। এ অবস্থার চিত্র এঁকে মহান আল্লাহ এ কথা বুঝাতে চান যে, দুনিয়ায় মানুষের যেসব সম্পর্ক আল্লাহর নাফরমানির ভিত্তিতে গড়ে ওঠেছে তা আখিরাতে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে।
মুত্তাক্বীরা ব্যতীত অন্যান্য বন্ধুরা একে অপরের শত্রু হয়ে যাবে :
اَلْاَخِلَّآءُ يَوْمَئِذٍ ۢبَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ اِلَّا الْمُتَّقِيْنَ
সেদিন বন্ধুরা একে অপরের শত্রুতে পরিণত হবে, তবে মুত্তাক্বীরা ব্যতীত। (সূরা যুখরুফ- ৬৭)
ব্যাখ্যা : দুনিয়ার জীবনে সত্য-মিথ্যা নির্বিশেষে যে কোন আকীদার ভিত্তিতে লোকেরা একত্র হতে পারে। কিন্তু মিথ্যা আকীদার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত এ সামাজিক কাঠামো আখিরাতে প্রতিষ্ঠিত থাকবে না। সেখানে পারস্পরিক প্রীতি, ভালোবাসা, আত্মীয়তা এবং সহযোগিতার এমন ধরনের সম্পর্ক বজায় থাকবে, যা দুনিয়ায় সৎকর্মশীলতা ও আল্লাহভীতির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়। কুফর, শিরক এবং ভুল পথের সাথে জড়িত যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে। সকল ভালোবাসা শত্রুতায় পরিণত হবে। সমস্ত শ্রদ্ধা-ভক্তি ঘৃণায় রূপান্তরিত হবে। পিতা-পুত্র, স্বামী-স্ত্রী, নেতা ও তাদের অনুসারীরা পর্যন্ত একে অন্যের উপর লানত বর্ষণ করবে। প্রত্যেকে নিজের গোমরাহীর দায়-দায়িত্ব অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে বলবে, এই যালিম আমাকে ধ্বংস করেছে; কাজেই একে দ্বিগুণ শাস্তি দেয়া হোক।
সেদিন ক্রয়-বিক্রয় কিছুই থাকবে না :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَنْفِقُوْا مِمَّا رَزَقْنَاكُمْ مِّنْ قَبْلِ اَنْ يَّاْتِيَ يَوْمٌ لَّا بَيْعٌ فِيْهِ وَلَا خُلَّةٌ وَّلَا شَفَاعَةٌ
হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দান করেছি তোমরা তা হতে ব্যয় করো, এমন এক দিন আসার আগে যেদিন কোন বেচা-কেনা, বন্ধুত্ব ও সুপারিশ কাজে আসবে না। (সূরা বাক্বারা- ২৫৪)
ব্যাখ্যা : এখানে কুফরী নীতি অবলম্বনকারী বলতে এমনসব লোককে বুঝানো হয়েছে, যারা আল্লাহর হুকুম মেনে চলতে অস্বীকার করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের তুলনায় নিজের ধনসম্পদকে অধিক প্রিয় মনে করে। যারা সে দিনটির উপর আস্থা রাখে না, যে দিনটির আগমনের ভয় দেখানো হয়েছে। এখানে তাদেরকেও বুঝানো হতে পারে, যারা এ ভিত্তিহীন ধারণা পোষণ করে যে, আখিরাতে তারা যে কোনভাবে নাজাত কিনে নিতে সক্ষম হবে এবং বন্ধুত্ব ও সুপারিশের সাহায্যে নিজেদের কার্য উদ্ধার করতে সক্ষম হবে।
মাতাপিতা ও সন্তান-সন্ততি কেউ কারো উপকার করতে পারবে না :
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوْا رَبَّكُمْ وَاخْشَوْا يَوْمًا لَّا يَجْزِيْ وَالِدٌ عَنْ وَّلَدِهٖؗ وَلَا مَوْلُوْدٌ هُوَ جَازٍ عَنْ وَّالِدِهٖ شَيْئًا اِنَّ وَعْدَ اللهِ حَقٌّ
হে মানুষ! তোমরা ভয় করো তোমাদের প্রতিপালককে এবং সেদিনকে, যেদিন পিতা সন্তানের কোন উপকারে আসবে না এবং সন্তানও পিতার কোন উপকারে আসবে না, নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য। (সূরা লুক্বমান- ৩৩)
ব্যাখ্যা : বন্ধু, নেতা, ভন্ডপীর ইত্যাদি সকল সম্পর্কই দূরের। তবে দুনিয়ায় সবচেয়ে নিকটতম সম্পর্ক হচ্ছে সন্তান ও পিতামাতার মধ্যে। কিন্তু সেখানে অবস্থা হবে এরকম যে, যদি পুত্র পাকড়াও হয়, তাহলে পিতা এগিয়ে এ কথা বলবে না যে, তার গোনাহের জন্য আমাকে পাকড়াও করা হোক। অন্যদিকে পিতার দুর্ভোগে পুত্রের এ কথা বলার সাহস হবে না যে, বাবাকে বাঁচিয়ে আমাকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দেয়া হোক। এ অবস্থায় নিকট সম্পর্কহীন ব্যক্তিরা সেখানে পরস্পরের কোন কাজে লাগবে- এ আশা কীভাবে করা যেতে পারে। কাজেই যে ব্যক্তি অপরের জন্য নিজের পরকাল হারায় অথবা অন্যের উপর ভরসা করে পাপের পথ অবলম্বন করে সে গন্ডমূর্খ ছাড়া আর কিছুই নয়।
وَاِذَا الْقُبُوْرُ بُعْثِرَتْ
যখন কবরসমূহ উন্মোচন করা হবে। (সূরা ইনফিতার- ৪)
يَوْمَ يَسْمَعُوْنَ الصَّيْحَةَ بِالْحَقِّؕ ذٰلِكَ يَوْمُ الْخُرُوْجِ
যেদিন (মানুষ) এক বিকট আওয়াজ শ্রবণ করবে। আর এটাই হচ্ছে (কবর হতে মৃতদের) বের হওয়ার দিন। (সূরা ক্বাফ- ৪২)
তখন আল্লাহর দিকে ডাক পড়বে :
وَاسْتَمِعْ يَوْمَ يُنَادِ الْمُنَادِ مِنْ مَّكَانٍ قَرِيْبٍ
শ্রবণ করো, যেদিন এক আহবানকারী নিকটবর্তী স্থান হতে আহবান করবে। (সূরা ক্বাফ- ৪১)
اِلٰى رَبِّكَ يَوْمَئِذِنِ الْمَسَاقُ
আজ তোমার প্রতিপালকের নিকট যাওয়ার দিন। (সূরা ক্বিয়ামাহ- ৩০)
ব্যাখ্যা : যে ব্যক্তি যেখানেই মৃত্যুবরণ করবে কিংবা যেখানেই তার মৃত্যু সংঘটিত হয়েছিল সেখানেই তার কাছে আল্লাহর ঘোষকের এ আওয়াজ পৌঁছবে যে, উঠো! এখন তোমার রবের কাছে হিসাব দেয়ার জন্য চলো। এ আওয়াজ হবে এমন যে, ভূপৃষ্ঠের আনাচে-কানাচে যে যেখানেই জীবিত হয়ে উঠবে সে সেখানেই মনে করবে যে, আহবানকারী নিকটেই কোথাও থেকে তাকে আহবান করেছে। একই সময়ে গোটা পৃথিবীর সব জায়গায় সমানভাবে এ আওয়াজ শোনা যাবে।
দেহের সাথে প্রাণ মিলিত হবে :
وَاِذَا النُّفُوْسُ زُوِّجَتْ
যখন প্রাণসমূহকে (দেহে) মিলিত করা হবে। (সূরা তাকভীর- ৭)
মানুষ তাদের রবের দিকে ছুটবে :
وَنُفِخَ فِى الصُّوْرِ فَاِذَا هُمْ مِّنَ الْاَجْدَاثِ اِلٰى رَبِّهِمْ يَنْسِلُوْنَ
শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে এবং তৎক্ষণাৎ তারা কবর থেকে (পুনরুত্থিত হয়ে) নিজের প্রতিপালকের দিকে ছুটে যাবে। (সূরা ইয়াসীন- ৫১)
মানুষ দলে দলে আসবে :
يَوْمَ يُنْفَخُ فِى الصُّوْرِ فَتَاْتُوْنَ اَفْوَاجًا
যেদিন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে, তখন তোমরা দলে দলে আসবে। (সূরা নাবা- ১৮)
يَوْمَئِذٍ يَّصْدُرُ النَّاسُ اَشْتَاتًا لِّيُرَوْا اَعْمَالَهُمْ
সেদিন মানুষ বিভিনণ দলে প্রকাশ পাবে, যাতে তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম দেখানো হয়। (সূরা যিলযাল- ৬)
সবাই হতভম্ব হয়ে পড়বে :
قَالُوْا يَا وَيْلَنَا مَنْ ۢبَعَثَنَا مِنْ مَّرْقَدِنَا هٰذَاٚ مَا وَعَدَ الرَّحْمٰنُ وَصَدَقَ الْمُرْسَلُوْنَ
তারা বলবে, হায় আমাদের দুর্ভোগ! কে আমাদেরকে আমাদের কবর থেকে উঠাল? দয়াময় আল্লাহ তো এরই ওয়াদা দিয়েছিলেন এবং রাসূলগণ সত্যই বলেছিলেন। (সূরা ইয়াসীন- ৫২)
মানুষ দৌড়াতে শুরু করবে :
يَوْمَ يَخْرُجُوْنَ مِنَ الْاَجْدَاثِ سِرَاعًا كَاَنَّهُمْ اِلٰى نُصُبٍ يُّوْفِضُوْنَ
সেদিন তারা দ্রুতবেগে কবর হতে বের হবে। তখন মনে হবে, তারা যেন কোন একটি আস্তানার দিকে ছুটে আসছে। (সূরা মা‘আরিজ- ৪৩)
ফেরেশতারা মানুষকে আল্লাহর দিকে হাঁকিয়ে নেবে :
وَجَآءَتْ كُلُّ نَفْسٍ مَّعَهَا سَآئِقٌ وَّشَهِيْدٌ
সেদিন প্রত্যেক ব্যক্তি উপস্থিত হবে, তার সাথে থাকবে চালক ও সাক্ষী। (সূরা ক্বাফ- ২১)
ব্যাখ্যা : এর দ্বারা সেই দু’জন ফেরেশতাকে বুঝানো হয়েছে, যারা পৃথিবীতে ঐ ব্যক্তির সমস্ত কথা ও কাজের রেকর্ড প্রস্তুত করার কাজে নিযুক্ত ছিল। কিয়ামতের দিন সিঙ্গায় ফুৎকার দেয়ার সাথে সাথে প্রত্যেক মানুষ যখন তার কবর থেকে উঠবে তৎক্ষণাৎ উক্ত ফেরেশতাদ্বয় এসে তাকে নিজেদের তত্ত্বাবধানে নিয়ে নেবে। একজন তাকে আল্লাহ তা‘আলার আদালতের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাবে এবং অন্যজন ‘আমলনামা’ সাথে নিয়ে যাবে।
সবাইকে সমবেত করা হবে :
هٰذَا يَوْمُ الْفَصْلِۚ جَمَعْنَاكُمْ وَالْاَوَّلِيْنَ
এটা চূড়ান্ত ফায়সালার দিন, আমি একত্রিত করেছি তোমাদেরকে এবং পূর্ববর্তীদেরকে। (সূরা মুরসালাত- ৩৮)
قُلْ اِنَّ الْاَوَّلِيْنَ وَالْاٰخِرِيْنَ – لَمَجْمُوْعُوْنَ اِلٰى مِيْقَاتِ يَوْمٍ مَّعْلُوْمٍ
বলো, অবশ্যই পূর্ববর্তীগণ এবং পরবর্তীগণ সকলকে একত্রিত করা হবে একটি নির্ধারিত দিনে নির্ধারিত সময়ে। (সূরা ওয়াক্বিয়া- ৪৯, ৫০)
একে একে সবাই উপস্থিত হবে :
اِنْ كُلُّ مَنْ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ اِلَّاۤ اٰتِى الرَّحْمٰنِ عَبْدًا
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে কেউই এমন নয় যে, সে দয়াময়ের নিকট বান্দা হিসেবে উপস্থিত হবে না। (সূরা মারইয়াম- ৯৩)
যেখানেই থাকবে আল্লাহর কাছে আসবে :
اَيْنَ مَا تَكُوْنُوْا يَاْتِ بِكُمُ اللهُ جَمِيْعًاؕ اِنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
তোমরা যেখানেই থাক না কেন আল্লাহ তোমাদের সকলকে একত্রিত করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে পূর্ণ ক্ষমতাবান। (সূরা বাক্বারা- ১৪৮)
রাসূলদেরকেও উপস্থিত করা হবে :
وَاِذَا الرُّسُلُ اُقِّتَتْ
আর রাসূলগণকেও নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত করা হবে। (সূরা মুরসালাত- ১১)
সবাই আল্লাহর প্রশংসা করবে :
يَوْمَ يَدْعُوْكُمْ فَتَسْتَجِيْبُوْنَ بِحَمْدِهٖ وَتَظُنُّوْنَ اِنْ لَّبِثْتُمْ اِلَّا قَلِيْلًا
যেদিন তিনি তোমাদেরকে আহবান করবেন। অতঃপর তোমরা তাঁর প্রশংসার সাথে তাঁর আহবানে সাড়া দেবে এবং তোমরা মনে করবে যে, তোমরা (পৃথিবীতে) খুব অল্প কালই অবস্থান করেছিলে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৫২)
সবাই কাতারবন্দী হয়ে আল্লাহর সামনে দাঁড়াবে :
وَعُرِضُوْا عَلٰى رَبِّكَ صَفًّاؕ لَقَدْ جِئْتُمُوْنَا كَمَا خَلَقْنَاكُمْ اَوَّلَ مَرَّةٍ
তাদেরকে তোমার প্রতিপালকের নিকট উপস্থিত করা হবে সারিবদ্ধভাবে এবং বলা হবে, তোমাদেরকে প্রথমবার যেভাবে সৃষ্টি করেছিলাম সেভাবেই তোমরা আমার নিকট উপস্থিত হয়েছ। (সূরা কাহফ- ৪৮)
يَوْمَ يَقُوْمُ النَّاسُ لِرَبِّ الْعَالَمِيْنَ
যেদিন সকল মানুষ জগতসমূহের প্রতিপালকের সামনে দাঁড়াবে। (সূরা মুতাফফিফীন- ৬)
সবাই নিরব ও নিস্তব্ধ হয়ে পড়বে :
يَوْمَئِذٍ يَّتَّبِعُوْنَ الدَّاعِيَ لَا عِوَجَ لَهٗ ۚ وَخَشَعَتِ الْاَصْوَاتُ لِلرَّحْمٰنِ فَلَا تَسْمَعُ اِلَّا هَمْسًا
সেদিন তারা আহবানকারীর অনুসরণ করবে, এ ব্যাপারে এদিক-সেদিক করতে পারবে না; তখন দয়াময়ের সম্মুখে সকল শব্দ সত্মব্ধ হয়ে যাবে। সুতরাং মৃদু পদধ্বনি ব্যতীত তুমি কিছুই শুনবে না।
(সূরা ত্বা-হা- ১০৮)
وَعَنَتِ الْوُجُوْهُ لِلْحَيِّ الْقَيُّوْمِ
চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী (আল্লাহর) নিকট সকলকেই নতশির হয়ে উপস্থিত হতে হবে। (সূরা ত্বা-হা- ১১১)
জমিন ভেতরের সবকিছু বের করে দেবে :
وَاِذَا الْاَرْضُ مُدَّتْ – وَاَلْقَتْ مَا فِيْهَا وَتَخَلَّتْ
যখন পৃথিবীকে সম্প্রসারিত করা হবে এবং পৃথিবী তার অভ্যন্তরে যা আছে তা বাইরে নিক্ষেপ করবে; অতঃপর তা খালি হয়ে যাবে। (সূরা ইনশিক্বাক- ৩, ৪)
وَاَخْرَجَتِ الْاَرْضُ اَثْقَالَهَا
যখন পৃথিবী তার বোঝা বের করে দেবে। (সূরা যিলযাল- ২)
পৃথিবী সকল সংবাদ বলে দেবে :
يَوْمَئِذٍ تُحَدِّثُ اَخْبَارَهَا – بِاَنَّ رَبَّكَ اَوْحٰى لَهَا
সেদিন পৃথিবী তার বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে। কারণ, আপনার পালনকর্তা তাকে আদেশ করবেন। (সূরা যিলযাল- ৪, ৫)
কোন জিনিস গোপন থাকবে না :
يَوْمَئِذٍ تُعْرَضُوْنَ لَا تَخْفٰى مِنْكُمْ خَافِيَةٌ
সেদিন তোমাদেরকে উপস্থিত করা হবে, তখন তোমাদের কিছুই গোপন থাকবে না। (সূরা হাক্কাহ- ১৮)
يَوْمَ هُمْ بَارِزُوْنَۚ لَا يَخْفٰى عَلَى اللهِ مِنْهُمْ شَيْءٌؕ لِمَنِ الْمُلْكُ الْيَوْمَؕ لِلّٰهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ
যেদিন তারা (কবর হতে) বের হয়ে পড়বে, তখন আল্লাহর নিকট তাদের কোনকিছুই গোপন থাকবে না। (আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন) আজ কর্তৃতব কার? (উত্তর হবে) এক পরাক্রমশালী আল্লাহর। (সূরা মু’মিন- ১৬)
মানুষের অন্তরের বিষয় প্রকাশ করে দেয়া হবে :
وَحُصِّلَ مَا فِى الصُّدُوْرِ
আর অন্তরে যা আছে, তা প্রকাশ করে দেয়া হবে। (সূরা আদিয়াহ- ১০)
মানুষ অদৃশ্য বিষয়াবলি দেখতে পাবে :
لَقَدْ كُنْتَ فِيْ غَفْلَةٍ مِّنْ هٰذَا فَكَشَفْنَا عَنْكَ غِطَآءَكَ فَبَصَرُكَ الْيَوْمَ حَدِيْدٌ
তুমি এই দিবস সম্বন্ধে গাফিল ছিলে। এখন তোমার সম্মুখ হতে আবরণ সরিয়ে দিয়েছি; সুতরাং আজ তোমার দৃষ্টি খুবই প্রখর। (সূরা ক্বাফ- ২২)
প্রত্যেকেই নিজের অবস্থা বুঝে নেবে :
بَلِ الْاِنْسَانُ عَلٰى نَفْسِهٖ بَصِيْرَةٌ – وَلَوْ اَلْقٰى مَعَاذِيْرَهٗ
বরং মানুষ নিজের সম্বন্ধে ভালো করে জানে, যদিও সে নানা অজুহাত পেশ করে। (সূরা ক্বিয়ামাহ- ১৪, ১৫)
মানুষ তিন দলে বিভক্ত হবে :
وَكُنْتُمْ اَزْوَاجًا ثَلَاثَةً
আর তোমরা তিন শ্রেণিতে বিভক্ত হবে। (সূরা ওয়াক্বিয়া- ৭, ৮)
فَاَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ مَاۤ اَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ
অতঃপর ডান দল (ডান হাতে আমলনামাপ্রাপ্ত দল); কতই না ভাগ্যবান ডান দল। (সূরা ওয়াক্বিয়া- ৮)
وَالسَّابِقُوْنَ السَّابِقُوْنَ
আর অগ্রবর্তীগণ তো অগ্রবর্তীই। (সূরা ওয়াক্বিয়া- ১০)
وَاَصْحَابُ الشِّمَالِ مَاۤ اَصْحَابُ الشِّمَالِ
আর বাম দল (বাম হাতে আমলনামাপ্রাপ্ত দল); কতই না হতভাগা বাম দল! (সূরা ওয়াক্বিয়া- ৪১)
মানুষ হতভম্ব হয়ে পড়বে :
اِذَا زُلْزِلَتِ الْاَرْضُ زِلْزَالَهَا – وَاَخْرَجَتِ الْاَرْضُ اَثْقَالَهَا – وَقَالَ الْاِنْسَانُ مَا لَهَا
যখন পৃথিবী তাঁর কম্পনে প্রকম্পিত হবে এবং সে তাঁর বোঝা বের করে দেবে তখন মানুষ বলবে, এর কী হলো? (সূরা যিলযাল, ১-৩)
মানুষ পতঙ্গের মতো ভিড় জমাবে :
يَوْمَ يَكُوْنُ النَّاسُ كَالْفَرَاشِ الْمَبْثُوْثِ
সেদিন মানুষ বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের মতো হয়ে যাবে। (সূরা ক্বারিয়াহ- ৪)
فَتَوَلَّ عَنْهُمْ يَوْمَ يَدْعُ الدَّاعِ اِلٰى شَيْءٍ نُّكُرٍ – خُشَّعًا اَبْصَارُهُمْ يَخْرُجُوْنَ مِنَ الْاَجْدَاثِ كَاَنَّهُمْ جَرَادٌ مُّنْتَشِرٌ
তুমি তাদেরকে উপেক্ষা করো। যেদিন আহবানকারী এক ভয়াবহ বস্তুর দিকে আহবান করবে, সেদিন তারা অপমানে শঙ্কিত হয়ে কবরসমূহ হতে বের হবে বিক্ষিপ্ত পঙ্গপালের ন্যায়। (সূরা ক্বামার, ৬-৮)
মানুষ পালানোর চেষ্টা করবে :
يَقُوْلُ الْاِنْسَانُ يَوْمَئِذٍ اَيْنَ الْمَفَرُّ – كَلَّا لَا وَزَرَ – اِلٰى رَبِّكَ يَوْمَئِذِنِ الْمُسْتَقَرُّ – يُنَبَّاُ الْاِنْسَانُ يَوْمَئِذٍ ۢبِمَا قَدَّمَ وَاَخَّرَ
সেদিন মানুষ বলবে, আজ পালানোর স্থান কোথায়? কখনো না, কোন আশ্রয়স্থল নেই। সেদিন তোমার প্রতিপালকের নিকটেই দাঁড়াতে হবে। সেদিন মানুষকে অবহিত করা হবে, যা সে অগ্রে পাঠিয়েছে ও পশ্চাতে রেখে গেছে। (সূরা ক্বিয়ামাহ, ১০-১৩)
وَيَا قَوْمِ اِنِّۤيْ اَخَافُ عَلَيْكُمْ يَوْمَ التَّنَادِ – يَوْمَ تُوَلُّوْنَ مُدْبِرِيْنَۚ مَا لَكُمْ مِّنَ اللهِ مِنْ عَاصِمٍ
হে আমার সম্প্রদায়! আমি তোমাদের জন্য ফরিয়াদ দিবসের আশঙ্কা করি। যেদিন তোমরা পশ্চাৎ ফিরে পলায়ন করতে চাইবে, কিন্তু আল্লাহর শাস্তি হতে তোমাদেরকে রক্ষা করার কেউ থাকবে না। (সূরা মু’মিন- ৩২, ৩৩)
সেদিন শিশু বৃদ্ধ হয়ে যাবে :
فَكَيْفَ تَتَّقُوْنَ اِنْ كَفَرْتُمْ يَوْمًا يَّجْعَلُ الْوِلْدَانَ شِيْبًا
অতএব কীভাবে তোমরা বাঁচতে পারবে, যদি তোমরা সেদিনকে অস্বীকার কর, যেদিন কিশোরকে বৃদ্ধ বানানো হবে। (সূরা মুয্যাম্মিল- ১৭)
চক্ষু স্থির হয়ে যাবে :
فَاِذَا بَرِقَ الْبَصَرُ
অতঃপর যখন চক্ষু স্থির হয়ে যাবে। (সূরা ক্বিয়ামাহ- ৭)
وَلَا تَحْسَبَنَّ اللهَ غَافِلًا عَمَّا يَعْمَلُ الظَّالِمُوْنَؕ اِنَّمَا يُؤَخِّرُهُمْ لِيَوْمٍ تَشْخَصُ فِيْهِ الْاَبْصَارُ
তুমি কখনো মনে করো না যে, যালিমরা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ গাফিল। তবে তিনি তাদেরকে সেদিন পর্যমত্ম অবকাশ দেন, যেদিন তাদের চক্ষু স্থির হয়ে যাবে। (সূরা ইবরাহীম- ৪২)
প্রাণ বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হবে :
وَاَنْذِرْهُمْ يَوْمَ الْاٰزِفَةِ اِذِ الْقُلُوْبُ لَدَى الْحَنَاجِرِ كَاظِمِيْنَ
তাদেরকে সতর্ক করে দাও আসন্ন দিন (কিয়ামত) সম্পর্কে, সেদিন দুঃখ-কষ্টে তাদের প্রাণ কণ্ঠাগত হয়ে পড়বে। (সূরা মু’মিন- ১৮)
مُهْطِعِيْنَ مُقْنِعِيْ رُءُوْسِهِمْ لَا يَرْتَدُّ اِلَيْهِمْ طَرْفُهُمْۚ وَاَفْئِدَتُهُمْ هَوَآءٌ
তারা ভীত-বিহবল চিত্তে আকাশের দিকে চেয়ে ছোটাছুটি করতে থাকবে; তখন তারা নিজেদের প্রতিও কোন ভ্রুক্ষেপ করবে না। আর তাদের অমত্মর হবে উদাস। (সূরা ইবরাহীম- ৪৩)
অন্তর কাঁপতে থাকবে :
قُلُوْبٌ يَّوْمَئِذٍ وَّاجِفَةٌ – اَبْصَارُهَا خَاشِعَةٌ
সেদিন হৃদয়সমূহ ভীত থাকবে এবং তাদের দৃষ্টিসমূহ হবে অবনত। (সূরা নাযি‘আত- ৭, ৮)
সবাই নতজানু হয়ে পড়ে থাকবে :
وَتَرٰى كُلَّ اُمَّةٍ جَاثِيَةً كُلُّ اُمَّةٍ تُدْعٰۤى اِلٰى كِتَابِهَاؕ اَلْيَوْمَ تُجْزَوْنَ مَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
প্রত্যেক সম্প্রদায়কে (ভয়ে) নতজানু অবস্থায় দেখতে পাবে। অতঃপর প্রত্যেক সম্প্রদায়কে তার আমলনামার প্রতি আহবান করা হবে- আজ তোমাদেরকে তারই বিনিময় দেয়া হবে, যা তোমরা করতে। (সূরা জাসিয়া- ২৮)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ সেখানে হাশরের ময়দান এবং আল্লাহর আদালতের এমন ভয় সৃষ্টি হবে, যার ফলে বড় বড় অহংকারীদের অহংকারও শেষ হয়ে যাবে। সেখানে সবাই অত্যন্ত বিনয়ের সাথে নতজানু হয়ে থাকবে।
মানুষ জেনে নেবে যে, সে কী নিয়ে এসেছে এবং কী রেখে গেছে :
عَلِمَتْ نَفْسٌ مَّاۤ اَحْضَرَتْ
তখন প্রত্যেক ব্যক্তি জানতে পারবে যে, সে কী নিয়ে এসেছে। (সূরা তাকভীর- ১৪)
عَلِمَتْ نَفْسٌ مَّا قَدَّمَتْ وَاَخَّرَتْ
তখন প্রত্যেকে জেনে নেবে, যা সে পূর্বে প্রেরণ করেছে এবং পশ্চাতে ছেড়ে এসেছে। (সূরা ইনফিতার- ৫)
يُنَبَّاُ الْاِنْسَانُ يَوْمَئِذٍ ۢبِمَا قَدَّمَ وَاَخَّرَ
সেদিন মানুষকে অবহিত করা হবে, যা সে অগ্রে প্রেরণ করেছে ও পশ্চাতে রেখে গেছে। (সূরা ক্বিয়ামাহ- ১৩)
মানুষ তার পাপ-পুণ্য সবই দেখতে পাবে :
فَمَنْ يَّعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَّرَهٗ – وَمَنْ يَّعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَّرَهٗ
কেউ অণুপরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখতে পাবে এবং কেউ অণুপরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে। (সূরা যিলযাল- ৭, ৮)
يَوْمَ تَجِدُ كُلُّ نَفْسٍ مَّا عَمِلَتْ مِنْ خَيْرٍ مُّحْضَرًاۚ وَمَا عَمِلَتْ مِنْ سُوْٓءٍ
প্রত্যেক মানুষ যা ভালো করেছে এবং খারাপ করেছে, কিয়ামতের দিন সবই উপস্থিত পাবে। (সূরা আলে ইমরান- ৩০)
কিয়ামতের দিন মানুষ কোন প্রভাব খাটাতে পারবে না :
فَمَا لَهٗ مِنْ قُوَّةٍ وَّلَا نَاصِرٍ
সেদিন তার কোন শক্তি থাকবে না এবং সাহায্যকারীও থাকবে না। (সূরা তারিক- ১০)
কোন কৌশল কাজে লাগবে না :
فَذَرْهُمْ حَتّٰى يُلَاقُوْا يَوْمَهُمُ الَّذِيْ فِيْهِ يُصْعَقُوْنَ – يَوْمَ لَا يُغْنِيْ عَنْهُمْ كَيْدُهُمْ شَيْئًا وَّلَا هُمْ يُنْصَرُوْنَ
তাদেরকে সেদিন পর্যন্ত উপেক্ষা করে চল, যেদিন তারা ধ্বংসের সম্মুখীন হবে। সেদিন তাদের কৌশল কোন কাজে আসবে না এবং তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না। (সূরা তূর- ৪৫, ৪৬)
কিয়ামতের দিন কেউ কাউকে বাঁচাতে পারবে না :
يَوْمَ لَا تَمْلِكُ نَفْسٌ لِّنَفْسٍ شَيْئًا – وَالْاَمْرُ يَوْمَئِذٍ لِّلّٰهِ
সেদিন কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির জন্য কোন কিছু করার অধিকার রাখবে না; সেদিন সমস্ত কর্তৃত্ব হবে একমাত্র আল্লাহর। (সূরা ইনফিতার- ১৯)
اِنَّ يَوْمَ الْفَصْلِ مِيْقَاتُهُمْ اَجْمَعِيْنَ – يَوْمَ لَا يُغْنِيْ مَوْلًى عَنْ مَّوْلًى شَيْئًا وَّلَا هُمْ يُنْصَرُوْنَ – اِلَّا مَنْ رَّحِمَ اللهُؕ اِنَّهٗ هُوَ الْعَزِيْزُ الرَّحِيْمُ
সকলের জন্য নির্ধারিত রয়েছে বিচার দিবস- যেদিন এক বন্ধু অপর বন্ধুর কোন কাজে আসবে না এবং তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না; তবে আল্লাহ যার প্রতি দয়া করেন (তার কথা ভিন্ন।) নিশ্চয় তিনি পরাক্রমশালী ও পরম দয়ালু। (সূরা দুখান, ৪০-৪২)
সেদিন সকলেই আত্মীয়স্বজন থেকে পলায়ন করবে :
فَاِذَا نُفِخَ فِى الصُّوْرِ فَلَاۤ اَنْسَابَ بَيْنَهُمْ يَوْمَئِذٍ وَّلَا يَتَسَآءَلُوْنَ
যেদিন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে, সেদিন পরস্পরের মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধন থাকবে না এবং একে অপরের খোঁজখবর নেবে না। (সূরা মু’মিনূন- ১০১)
ব্যাখ্যা : এর অর্থ এ নয় যে, পিতা আর পিতা থাকবে না এবং ছেলে ছেলে থাকবে না। বরং এর অর্থ হচ্ছে, সে সময় পিতা ছেলের কোন কাজে লাগবে না এবং ছেলে পিতার কোন কাজে লাগবে না। প্রত্যেকে এমনভাবে নিজের অবস্থার শিকার হবে যে, একজন অন্যজনের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করা তো দূরের কথা কেউ কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করার মতো চেতনাও থাকবে না।
فَاِذَا جَآءَتِ الصَّآخَّةُ – يَوْمَ يَفِرُّ الْمَرْءُ مِنْ اَخِيْهِ – وَاُمِّهٖ وَاَبِيْهِ – وَصَاحِبَتِهٖ وَبَنِيْهِ
যেদিন ঐ বিকট ধ্বনি এসে পড়বে; সেদিন মানুষ নিজের ভাই হতেও পলায়ন করবে এবং তার মাতা, পিতা, স্ত্রী ও সন্তান হতেও (পলায়ন করবে)। (সূরা আবাসা, ৩৩-৩৬)
সবাই আত্মরক্ষার চিন্তায় মগ্ন থাকবে :
لِكُلِّ امْرِئٍ مِّنْهُمْ يَوْمَئِذٍ شَاْنٌ يُّغْنِيْهِ
সেদিন তাদের প্রত্যেকের এমন গুরুতর অবস্থা হবে, যা তাকে সম্পূর্ণরূপে ব্যস্ত করে রাখবে। (সূরা আবাসা- ৩৭)
কেউ কারো পাপের বোঝা বহন করবে না :
وَلَا تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍ اِلَّا عَلَيْهَاؕ وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِّزْرَ اُخْرٰى
প্রত্যেকে স্বীয় কৃতকর্মের জন্য দায়ী এবং কেউ অন্য কারো ভার গ্রহণ করবে না। (সূরা আন‘আম- ১৬৪)
وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِّزْرَ اُخْرٰىؕ وَاِنْ تَدْعُ مُثْقَلَةٌ اِلٰى حِمْلِهَا لَا يُحْمَلْ مِنْهُ شَيْءٌ وَّلَوْ كَانَ ذَا قُرْبٰى
কোন বোঝা বহনকারী অপরের বোঝা বহন করবে না। যদি কোন বোঝা ভারাক্রান্ত ব্যক্তি কাউকে তার বোঝা বহন করতে ডাকে, তবে তা থেকে কিছুই বহন করা হবে না; যদিও সে তার নিকটাত্মীয় হয়। (সূরা ফাতির- ১৮)
ব্যাখ্যা : وِزْرٌ (ভিযরুন) অর্থ বোঝা অর্থাৎ কৃতকর্মের দায়-দায়িত্বের বোঝা। আল্লাহর কাছে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজেই তার কাজের জন্য দায়ী এবং প্রত্যেকের উপর কেবলমাত্র তার নিজের কাজের দায়-দায়িত্ব অর্পিত হয়। এক ব্যক্তির কাজের দায়-দায়িত্বের বোঝা আল্লাহর পক্ষ থেকে অন্য ব্যক্তির ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। কোন ব্যক্তি অন্যের দায়-দায়িত্বের বোঝা নিজের উপর চাপিয়ে নেবে এবং তাকে বাঁচানোর জন্য তার অপরাধে নিজেকে পাকড়াও করাবে- এরও কোন সম্ভাবনা নেই। এ কথা বলার কারণ হচ্ছে, যারা মক্কায় ইসলাম গ্রহণ করেছিল তাদেরকে তাদের মুশরিক আত্মীয়স্বজন ও গোত্রের লোকেরা বলেছিল, তোমরা এই নতুন ধর্মত্যাগ করো এবং নিজেদের বাপ-দাদার ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত হও। এজন্য কোন পাপ হলে আমরা তার বোঝা বহন করব। কিন্তু বাস্তবতা তার উল্টো। তারা এসব কথা বলেছিল আখিরাত সম্পর্কে তাদের সঠিক ধারণা না থাকার কারণে। কেননা যখন কিয়ামত আসবে এবং লোকেরা দেখে নেবে যে, নিজেদের কৃতকর্মের জন্য তারা কোন্ ধরনের পরিণামের সম্মুখীন হতে যাচ্ছে, তখন প্রত্যেকে নিজেকে বাঁচানোর চিন্তা করতে থাকবে। এমতাবস্থায় ভাই ভাই থেকে, পিতা পুত্র থেকে, স্বামী স্ত্রী থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। কেউ কারো সামান্যতম বোঝা নিজের উপর চাপিয়ে নিতে প্রস্তুত হবে না।
কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী থাকবে না :
وَمَا كَانَ لَهُمْ مِّنْ اَوْلِيَآءَ يَنْصُرُوْنَهُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِؕ وَمَنْ يُّضْلِلِ اللهُ فَمَا لَهٗ مِنْ سَبِيْلٍ
সেদিন তাদেরকে সাহায্য করার জন্য আল্লাহ ব্যতীত কোন অভিভাবক থাকবে না; আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার (আত্মরক্ষার) কোন পথ থাকে না। (সূরা শূরা- ৪৬)
সেদিন কোন আশ্রয়স্থলও থাকবে না :
مَا لَكُمْ مِّنْ مَّلْجَاٍ يَّوْمَئِذٍ وَّمَا لَكُمْ مِّنْ نَّكِيْرٍ
সেদিন তোমাদের জন্য কোন আশ্রয়স্থল থাকবে না এবং তোমাদের জন্য কোন প্রতিরোধকারীও থাকবে না। (সূরা শূরা- ৪৭)
কোন বিনিময় ও সুপারিশও কাজে আসবে না :
وَاتَّقُوْا يَوْمًا لَّا تَجْزِيْ نَفْسٌ عَنْ نَّفْسٍ شَيْئًا وَّلَا يُقْبَلُ مِنْهَا عَدْلٌ وَّلَا تَنْفَعُهَا شَفَاعَةٌ وَّلَا هُمْ يُنْصَرُوْنَ
তোমরা এমন এক দিনকে ভয় করো, যেদিন কেউ কারো হতে বিন্দুমাত্র উপকৃত হতে পারবে না এবং কারো নিকট হতে বিনিময়ও গ্রহণ করা হবে না। অতঃপর কারো শাফা‘আত (সুপারিশ) কাজে লাগবে না এবং তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না। (সূরা বাক্বারা- ১২৩)
কিয়ামতের দিন বন্ধু বন্ধুর খবর নেবে না :
وَلَا يَسْاَلُ حَمِيْمٌ حَمِيْمًا
সেদিন কোন বন্ধু কোন অন্তরঙ্গ বন্ধুর খোঁজ নেবে না। (সূরা মা‘আরিজ-১০)
ব্যাখ্যা : বড় বড় অপরাধীদের সকল শক্তি শেষ হয়ে যাবে। ফলে তারা কোন প্রকার প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই জাহান্নামের দিকে এগিয়ে যেতে থাকবে। কোথাও কোথাও তারা ধাক্কা খেতে থাকবে এবং কোন নেতা তাদের উদ্ধার করতে এগিয়ে আসবে না। সেখানে বিশ্ববিজয়ী ও ডিরেক্টরগণও চরম লাঞ্ছনা সহকারে যেতে থাকবে। তাদের শক্তিশালী সেনাদল নিজেরাই তাদেরকে দন্ড দেয়ার জন্য এগিয়ে দেবে। কোথাও কোন ভন্ডপীর জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে; কিন্তু তার মুরীদরা হুজুরের মর্যাদাহানির কথা ভাববে না। কোথাও কোন জাতীয় নেতা বড়ই হীনতার মধ্যে জাহান্নামের পথে যাত্রা করবে; কিন্তু দুনিয়ায় যেসব লোক তার ঝান্ডা উঁচু করে বেড়াতো তারা সবাই তার দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবে। এ অবস্থার চিত্র এঁকে মহান আল্লাহ এ কথা বুঝাতে চান যে, দুনিয়ায় মানুষের যেসব সম্পর্ক আল্লাহর নাফরমানির ভিত্তিতে গড়ে ওঠেছে তা আখিরাতে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে।
মুত্তাক্বীরা ব্যতীত অন্যান্য বন্ধুরা একে অপরের শত্রু হয়ে যাবে :
اَلْاَخِلَّآءُ يَوْمَئِذٍ ۢبَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ اِلَّا الْمُتَّقِيْنَ
সেদিন বন্ধুরা একে অপরের শত্রুতে পরিণত হবে, তবে মুত্তাক্বীরা ব্যতীত। (সূরা যুখরুফ- ৬৭)
ব্যাখ্যা : দুনিয়ার জীবনে সত্য-মিথ্যা নির্বিশেষে যে কোন আকীদার ভিত্তিতে লোকেরা একত্র হতে পারে। কিন্তু মিথ্যা আকীদার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত এ সামাজিক কাঠামো আখিরাতে প্রতিষ্ঠিত থাকবে না। সেখানে পারস্পরিক প্রীতি, ভালোবাসা, আত্মীয়তা এবং সহযোগিতার এমন ধরনের সম্পর্ক বজায় থাকবে, যা দুনিয়ায় সৎকর্মশীলতা ও আল্লাহভীতির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়। কুফর, শিরক এবং ভুল পথের সাথে জড়িত যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে। সকল ভালোবাসা শত্রুতায় পরিণত হবে। সমস্ত শ্রদ্ধা-ভক্তি ঘৃণায় রূপান্তরিত হবে। পিতা-পুত্র, স্বামী-স্ত্রী, নেতা ও তাদের অনুসারীরা পর্যন্ত একে অন্যের উপর লানত বর্ষণ করবে। প্রত্যেকে নিজের গোমরাহীর দায়-দায়িত্ব অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে বলবে, এই যালিম আমাকে ধ্বংস করেছে; কাজেই একে দ্বিগুণ শাস্তি দেয়া হোক।
সেদিন ক্রয়-বিক্রয় কিছুই থাকবে না :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَنْفِقُوْا مِمَّا رَزَقْنَاكُمْ مِّنْ قَبْلِ اَنْ يَّاْتِيَ يَوْمٌ لَّا بَيْعٌ فِيْهِ وَلَا خُلَّةٌ وَّلَا شَفَاعَةٌ
হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দান করেছি তোমরা তা হতে ব্যয় করো, এমন এক দিন আসার আগে যেদিন কোন বেচা-কেনা, বন্ধুত্ব ও সুপারিশ কাজে আসবে না। (সূরা বাক্বারা- ২৫৪)
ব্যাখ্যা : এখানে কুফরী নীতি অবলম্বনকারী বলতে এমনসব লোককে বুঝানো হয়েছে, যারা আল্লাহর হুকুম মেনে চলতে অস্বীকার করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের তুলনায় নিজের ধনসম্পদকে অধিক প্রিয় মনে করে। যারা সে দিনটির উপর আস্থা রাখে না, যে দিনটির আগমনের ভয় দেখানো হয়েছে। এখানে তাদেরকেও বুঝানো হতে পারে, যারা এ ভিত্তিহীন ধারণা পোষণ করে যে, আখিরাতে তারা যে কোনভাবে নাজাত কিনে নিতে সক্ষম হবে এবং বন্ধুত্ব ও সুপারিশের সাহায্যে নিজেদের কার্য উদ্ধার করতে সক্ষম হবে।
মাতাপিতা ও সন্তান-সন্ততি কেউ কারো উপকার করতে পারবে না :
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوْا رَبَّكُمْ وَاخْشَوْا يَوْمًا لَّا يَجْزِيْ وَالِدٌ عَنْ وَّلَدِهٖؗ وَلَا مَوْلُوْدٌ هُوَ جَازٍ عَنْ وَّالِدِهٖ شَيْئًا اِنَّ وَعْدَ اللهِ حَقٌّ
হে মানুষ! তোমরা ভয় করো তোমাদের প্রতিপালককে এবং সেদিনকে, যেদিন পিতা সন্তানের কোন উপকারে আসবে না এবং সন্তানও পিতার কোন উপকারে আসবে না, নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য। (সূরা লুক্বমান- ৩৩)
ব্যাখ্যা : বন্ধু, নেতা, ভন্ডপীর ইত্যাদি সকল সম্পর্কই দূরের। তবে দুনিয়ায় সবচেয়ে নিকটতম সম্পর্ক হচ্ছে সন্তান ও পিতামাতার মধ্যে। কিন্তু সেখানে অবস্থা হবে এরকম যে, যদি পুত্র পাকড়াও হয়, তাহলে পিতা এগিয়ে এ কথা বলবে না যে, তার গোনাহের জন্য আমাকে পাকড়াও করা হোক। অন্যদিকে পিতার দুর্ভোগে পুত্রের এ কথা বলার সাহস হবে না যে, বাবাকে বাঁচিয়ে আমাকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দেয়া হোক। এ অবস্থায় নিকট সম্পর্কহীন ব্যক্তিরা সেখানে পরস্পরের কোন কাজে লাগবে- এ আশা কীভাবে করা যেতে পারে। কাজেই যে ব্যক্তি অপরের জন্য নিজের পরকাল হারায় অথবা অন্যের উপর ভরসা করে পাপের পথ অবলম্বন করে সে গন্ডমূর্খ ছাড়া আর কিছুই নয়।
তারা উত্তম অবস্থানে থাকবে :
اَصْحَابُ الْجَنَّةِ يَوْمَئِذٍ خَيْرٌ مُّسْتَقَرًّا وَّاَحْسَنُ مَقِيْلًا
সেদিন জান্নাতবাসীদের বাসস্থান হবে উৎকৃষ্ট এবং বিশ্রামস্থল হবে মনোরম। (সূরা ফুরক্বান- ২৪)
তাদের সামনে নূর চমকাবে :
يَوْمَ تَرَى الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ يَسْعٰى نُوْرُهُمْ بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَبِاَيْمَانِهِمْ
সেদিন মুমিন নর-নারীদেরকে দেখবে, তাদের সম্মুখ ভাগে ও ডান পার্শ্বে তাদের জ্যোতি প্রবাহিত হবে।
(সূরা হাদীদ- ১২)
তাদের চেহারা হবে উজ্জ্বল:
وُجُوْهٌ يَّوْمَئِذٍ مُّسْفِرَةٌ – ضَاحِكَةٌ مُّسْتَبْشِرَةٌ
সেদিন অনেক মুখমন্ডল হবে উজ্জ্বল, হাস্যোজ্জল ও প্রফুল্ল। (সূরা আবাসা- ৩৮, ৩৯)
وَاَمَّا الَّذِيْنَ ابْيَضَّتْ وُجُوْهُهُمْ فَفِيْ رَحْمَةِ اللهِؕ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
আর যাদের চেহারা উজ্জ্বল হবে, তারা আল্লাহর রহমতের মধ্যে থাকবে। সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে।
(সূরা আলে ইমরান- ১০৭)
তাদের প্রচেষ্টায় তারা খুশী হবে :
وُجُوْهٌ يَّوْمَئِذٍ نَّاعِمَةٌ ‐ لِسَعْيِهَا رَاضِيَةٌ – فِيْ جَنَّةٍ عَالِيَةٍ
সেদিন বহু মুখমন্ডল আনন্দোজ্জ্বল হবে, নিজেদের কর্মে সাফল্য অর্জনের ব্যাপারে সন্তুষ্ট হওয়ার জন্য। অতঃপর তারা উচ্চমর্যাদার জান্নাতে অবস্থান করবে। (সূরা গাশিয়া, ৮-১০)
ফেরেশতারা জান্নাতের সুসংবাদ নিয়ে হাজির হবে :
اِنَّ الَّذِيْنَ قَالُوْا رَبُّنَا اللهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوْا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَآئِكَةُ اَ لَّا تَخَافُوْا وَلَا تَحْزَنُوْا وَاَبْشِرُوْا بِالْجَنَّةِ الَّتِيْ كُنْتُمْ تُوْعَدُوْنَ – نَحْنُ اَوْلِيَآؤُكُمْ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِى الْاٰخِرَةِۚ وَلَكُمْ فِيْهَا مَا تَشْتَهِيْۤ اَنْفُسُكُمْ وَلَكُمْ فِيْهَا مَا تَدَّعُوْنَ – نُزُلًا مِّنْ غَفُوْرٍ رَّحِيْمٍ
নিশ্চয় যারা বলে, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, অতঃপর এর উপর অবিচল থাকে, তাদের নিকট অবতীর্ণ হয় ফেরেশতা এবং বলে, তোমরা ভীত হয়ো না এবং চিন্তিতও হয়ো না। তোমাদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তার সুসংবাদ পেয়ে আনন্দিত হও। আমরা দুনিয়া ও আখিরাতে তোমাদের বন্ধু, সেখানে তোমরা যা কিছু চাইবে তা পাবে এবং তোমরা যা কিছু আহবান করবে তাও পাবে। এটা হলো ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ হতে আপ্যায়ন। (সূরা হা-মীম সাজদা, ৩০-৩২)
সেদিন তারা প্রকৃত সাফল্য লাভ করবে :
مَنْ يُّصْرَفْ عَنْهُ يَوْمَئِذٍ فَقَدْ رَحِمَهٗؕ وَذٰلِكَ الْفَوْزُ الْمُبِيْنُ
সেদিন যাকে তা (শাস্তি) হতে রক্ষা করা হবে, তিনি তার প্রতি দয়া করবেন। আর এটাই স্পষ্ট সফলতা।
(সূরা আন‘আম- ১৬)
মুমিনরা আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করবে :
وُجُوْهٌ يَّوْمَئِذٍ نَّاضِرَةٌ – اِلٰى رَبِّهَا نَاظِرَةٌ
সেদিন কতক মুখমন্ডল উজ্জ্বল হবে, তারা তাদের প্রতিপালকের দিকে তাকিয়ে থাকবে। (সূরা ক্বিয়ামাহ- ২২, ২৩)
আল্লাহ মুমিনদেরকে তাদের কর্মের প্রতিদান দেবেন :
هٰذَا يَوْمُ يَنْفَعُ الصَّادِقِيْنَ صِدْقُهُمْؕ لَهُمْ جَنَّاتٌ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَاۤ اَبَدًاؕ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ وَرَضُوْا عَنْهُؕ ذٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ
এটা সেই দিন, যেদিন সত্যবাদীরা তাদের সততার জন্য উপকৃত হবে; তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত, যার পাদদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে। সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে; আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট; আর এটাই মহাসাফল্য। (সূরা মায়েদা- ১১৯)
আল্লাহ তাদেরকে সাহায্য করবেন :
اِنَّا لَنَنْصُرُ رُسُلَنَا وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ يَقُوْمُ الْاَشْهَادُ
নিশ্চয় আমি পার্থিব জীবনে আমার রাসূলদেরকে ও মুমিনদেরকে সাহায্য করব এবং যেদিন সাক্ষীগণ দন্ডায়মান হবে (সেদিনও সাহায্য করব)। (সূরা মু’মিন- ৫১)
তারা কাফিরদেরকে নিয়ে হাসবে :
فَالْيَوْمَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مِنَ الْكُفَّارِ يَضْحَكُوْنَ – عَلَى الْاَرَآئِكِ يَنْظُرُوْنَ
আজ মুমিনগণ কাফিরদের নিয়ে উপহাস করছে এবং সুসজ্জিত আসনে বসে তাদেরকে অবলোকন করছে। (সূরা মুতাফফিফীন- ৩৪, ৩৫)
তাড়াতাড়ি ও খুব সহজে তাদের হিসাব শেষ হয়ে যাবে :
فَاَمَّا مَنْ اُوْتِيَ كِتَابَهٗ بِيَمِيْنِهٖ – فَسَوْفَ يُحَاسَبُ حِسَابًا يَّسِيْرًا
অতএব যাকে তার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে, তার হিসাব-নিকাশ অতি সহজে নেয়া হবে। (সূরা ইনশিক্বাক, ৭-৮)
ব্যাখ্যা : যারা আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে দুনিয়ায় জীবন-যাপন করেছে তাদের থেকে কড়া হিসাব নেয়া হবে। অর্থাৎ এমনভাবে হিসাব নেয়া হবে যে, তাদের কোন ভুলভ্রান্তি ও পাপ ÿমা করা হবে না এবং তাদের অপরাধের বিচার না করে এমনি ছেড়ে দেয়া হবে না। বিপরীতপক্ষে যারা আল্লাহর প্রতি বিশ্বস্ত আচরণ করেছে এবং তাঁর প্রতি অনুগত থেকে জীবন-যাপন করেছে তাদের থেকে সহজ হিসাব নেয়া হবে। তাদের বিশ্বস্ততামূলক কার্যক্রমের কারণে তাদের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো ÿমা করে দেয়া হবে।
তাদের কোন ভয় থাকবে না :
وَمَنْ يَّعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَا يَخَافُ ظُلْمًا وَّلَا هَضْمًا
আর যে ব্যক্তি মুমিন থাকাবস্থায় সৎকর্ম করবে, তার প্রতি কোন যুলুমের ভয় থাকবে না এবং তার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ারও কোন আশঙ্কা থাকবে না। (সূরা ত্বা-হা- ১১২)
ব্যাখ্যা : যারা ঈমান ও সৎকাজ নিয়ে আসবে সেখানে তাদের উপর কোন যুলুম করা হবে না। অর্থাৎ তাদেরকে অনর্থক শাস্তি দেয়া হবে না এবং তাদের কার্যাবলি ধ্বংস করে দেয়া হবে- এমন কোন আশঙ্কাও সেখানে থাকবে না।
مَنْ جَآءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهٗ خَيْرٌ مِّنْهَاۚ وَهُمْ مِّنْ فَزَعٍ يَّوْمَئِذٍ اٰمِنُوْنَ
যে সৎকর্ম নিয়ে আসবে, সে তা হতে উত্তম প্রতিফল পাবে এবং সেদিন তারা ভয় হতে নিরাপদ থাকবে।
(সূরা নামল- ৮৯)
اِنَّ الَّذِيْنَ سَبَقَتْ لَهُمْ مِّنَّا الْحُسْنٰۤى اُولٰٓئِكَ عَنْهَا مُبْعَدُوْنَ – لَا يَسْمَعُوْنَ حَسِيْسَهَا وَهُمْ فِيْ مَا اشْتَهَتْ اَنْفُسُهُمْ خَالِدُوْنَ – لَا يَحْزُنُهُمُ الْفَزَعُ الْاَ كْبَرُ وَتَتَلَقَّاهُمُ الْمَلَآئِكَةُ هٰذَا يَوْمُكُمُ الَّذِيْ كُنْتُمْ تُوْعَدُوْنَ
যাদের জন্য আমার নিকট পূর্ব হতে কল্যাণ নির্ধারিত রয়েছে তাদেরকে তা (জাহান্নাম) হতে দূরে রাখা হবে। অতঃপর তারা তার (জাহান্নামের) ক্ষীণতম শব্দও শুনতে পাবে না এবং সেখানে তারা নিজেদের জন্য যা কামনা করবে চিরকাল তাই ভোগ করবে। মহাভীতি তাদেরকে চিন্তিত করবে না এবং ফেরেশতাগণ তাদেরকে অভ্যর্থনা করবে এ বলে- এটা সেই দিন, যার প্রতিশ্রুতি তোমাদেরকে দেয়া হয়েছিল। (সূরা আম্বিয়া, ১০১-১০৩)
মুমিনরা সেদিন লাঞ্ছিত হবে না :
لِلَّذِيْنَ اَحْسَنُوا الْحُسْنٰى وَزِيَادَةٌؕ وَلَا يَرْهَقُ وُجُوْهَهُمْ قَتَرٌ وَّلَا ذِلَّةٌ اُولٰٓئِكَ اَصْحَابُ الْجَنَّةِۚ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
যারা মঙ্গলময় কাজ করে তাদের জন্য রয়েছে মঙ্গল এবং আরো অধিক (মঙ্গল)। কালিমা ও হীনতা তাদের মুখমন্ডলকে আচ্ছন্ন করবে না। তারাই জান্নাতের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে। (সূরা ইউনুস- ২৬)
يَا عِبَادِ لَا خَوْفٌ عَلَيْكُمُ الْيَوْمَ وَلَاۤ اَنْتُمْ تَحْزَنُوْنَ – اَلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا بِاٰيَاتِنَا وَكَانُوْا مُسْلِمِيْنَ – اُدْخُلُوا الْجَنَّةَ اَنْتُمْ وَاَزْوَاجُكُمْ تُحْبَرُوْنَ
হে আমার বান্দাগণ! আজ তোমাদের কোন ভয় নেই এবং তোমরা চিন্তিতও হবে না। তোমরা তো ঐসব লোক, যারা আমার আয়াতসমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিলে এবং আত্মসমর্পণ করেছিলে। সুতরাং আজ তোমরা এবং তোমাদের সহধর্মিনীগণ জান্নাতে প্রবেশ করো, তোমাদেরকে সন্তুষ্ট করা হবে। (সূরা যুখরুফ, ৬৮-৭০)
اَصْحَابُ الْجَنَّةِ يَوْمَئِذٍ خَيْرٌ مُّسْتَقَرًّا وَّاَحْسَنُ مَقِيْلًا
সেদিন জান্নাতবাসীদের বাসস্থান হবে উৎকৃষ্ট এবং বিশ্রামস্থল হবে মনোরম। (সূরা ফুরক্বান- ২৪)
তাদের সামনে নূর চমকাবে :
يَوْمَ تَرَى الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ يَسْعٰى نُوْرُهُمْ بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَبِاَيْمَانِهِمْ
সেদিন মুমিন নর-নারীদেরকে দেখবে, তাদের সম্মুখ ভাগে ও ডান পার্শ্বে তাদের জ্যোতি প্রবাহিত হবে।
(সূরা হাদীদ- ১২)
তাদের চেহারা হবে উজ্জ্বল:
وُجُوْهٌ يَّوْمَئِذٍ مُّسْفِرَةٌ – ضَاحِكَةٌ مُّسْتَبْشِرَةٌ
সেদিন অনেক মুখমন্ডল হবে উজ্জ্বল, হাস্যোজ্জল ও প্রফুল্ল। (সূরা আবাসা- ৩৮, ৩৯)
وَاَمَّا الَّذِيْنَ ابْيَضَّتْ وُجُوْهُهُمْ فَفِيْ رَحْمَةِ اللهِؕ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
আর যাদের চেহারা উজ্জ্বল হবে, তারা আল্লাহর রহমতের মধ্যে থাকবে। সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে।
(সূরা আলে ইমরান- ১০৭)
তাদের প্রচেষ্টায় তারা খুশী হবে :
وُجُوْهٌ يَّوْمَئِذٍ نَّاعِمَةٌ ‐ لِسَعْيِهَا رَاضِيَةٌ – فِيْ جَنَّةٍ عَالِيَةٍ
সেদিন বহু মুখমন্ডল আনন্দোজ্জ্বল হবে, নিজেদের কর্মে সাফল্য অর্জনের ব্যাপারে সন্তুষ্ট হওয়ার জন্য। অতঃপর তারা উচ্চমর্যাদার জান্নাতে অবস্থান করবে। (সূরা গাশিয়া, ৮-১০)
ফেরেশতারা জান্নাতের সুসংবাদ নিয়ে হাজির হবে :
اِنَّ الَّذِيْنَ قَالُوْا رَبُّنَا اللهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوْا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَآئِكَةُ اَ لَّا تَخَافُوْا وَلَا تَحْزَنُوْا وَاَبْشِرُوْا بِالْجَنَّةِ الَّتِيْ كُنْتُمْ تُوْعَدُوْنَ – نَحْنُ اَوْلِيَآؤُكُمْ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِى الْاٰخِرَةِۚ وَلَكُمْ فِيْهَا مَا تَشْتَهِيْۤ اَنْفُسُكُمْ وَلَكُمْ فِيْهَا مَا تَدَّعُوْنَ – نُزُلًا مِّنْ غَفُوْرٍ رَّحِيْمٍ
নিশ্চয় যারা বলে, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, অতঃপর এর উপর অবিচল থাকে, তাদের নিকট অবতীর্ণ হয় ফেরেশতা এবং বলে, তোমরা ভীত হয়ো না এবং চিন্তিতও হয়ো না। তোমাদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তার সুসংবাদ পেয়ে আনন্দিত হও। আমরা দুনিয়া ও আখিরাতে তোমাদের বন্ধু, সেখানে তোমরা যা কিছু চাইবে তা পাবে এবং তোমরা যা কিছু আহবান করবে তাও পাবে। এটা হলো ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ হতে আপ্যায়ন। (সূরা হা-মীম সাজদা, ৩০-৩২)
সেদিন তারা প্রকৃত সাফল্য লাভ করবে :
مَنْ يُّصْرَفْ عَنْهُ يَوْمَئِذٍ فَقَدْ رَحِمَهٗؕ وَذٰلِكَ الْفَوْزُ الْمُبِيْنُ
সেদিন যাকে তা (শাস্তি) হতে রক্ষা করা হবে, তিনি তার প্রতি দয়া করবেন। আর এটাই স্পষ্ট সফলতা।
(সূরা আন‘আম- ১৬)
মুমিনরা আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করবে :
وُجُوْهٌ يَّوْمَئِذٍ نَّاضِرَةٌ – اِلٰى رَبِّهَا نَاظِرَةٌ
সেদিন কতক মুখমন্ডল উজ্জ্বল হবে, তারা তাদের প্রতিপালকের দিকে তাকিয়ে থাকবে। (সূরা ক্বিয়ামাহ- ২২, ২৩)
আল্লাহ মুমিনদেরকে তাদের কর্মের প্রতিদান দেবেন :
هٰذَا يَوْمُ يَنْفَعُ الصَّادِقِيْنَ صِدْقُهُمْؕ لَهُمْ جَنَّاتٌ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَاۤ اَبَدًاؕ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ وَرَضُوْا عَنْهُؕ ذٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ
এটা সেই দিন, যেদিন সত্যবাদীরা তাদের সততার জন্য উপকৃত হবে; তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত, যার পাদদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে। সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে; আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট; আর এটাই মহাসাফল্য। (সূরা মায়েদা- ১১৯)
আল্লাহ তাদেরকে সাহায্য করবেন :
اِنَّا لَنَنْصُرُ رُسُلَنَا وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ يَقُوْمُ الْاَشْهَادُ
নিশ্চয় আমি পার্থিব জীবনে আমার রাসূলদেরকে ও মুমিনদেরকে সাহায্য করব এবং যেদিন সাক্ষীগণ দন্ডায়মান হবে (সেদিনও সাহায্য করব)। (সূরা মু’মিন- ৫১)
তারা কাফিরদেরকে নিয়ে হাসবে :
فَالْيَوْمَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مِنَ الْكُفَّارِ يَضْحَكُوْنَ – عَلَى الْاَرَآئِكِ يَنْظُرُوْنَ
আজ মুমিনগণ কাফিরদের নিয়ে উপহাস করছে এবং সুসজ্জিত আসনে বসে তাদেরকে অবলোকন করছে। (সূরা মুতাফফিফীন- ৩৪, ৩৫)
তাড়াতাড়ি ও খুব সহজে তাদের হিসাব শেষ হয়ে যাবে :
فَاَمَّا مَنْ اُوْتِيَ كِتَابَهٗ بِيَمِيْنِهٖ – فَسَوْفَ يُحَاسَبُ حِسَابًا يَّسِيْرًا
অতএব যাকে তার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে, তার হিসাব-নিকাশ অতি সহজে নেয়া হবে। (সূরা ইনশিক্বাক, ৭-৮)
ব্যাখ্যা : যারা আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে দুনিয়ায় জীবন-যাপন করেছে তাদের থেকে কড়া হিসাব নেয়া হবে। অর্থাৎ এমনভাবে হিসাব নেয়া হবে যে, তাদের কোন ভুলভ্রান্তি ও পাপ ÿমা করা হবে না এবং তাদের অপরাধের বিচার না করে এমনি ছেড়ে দেয়া হবে না। বিপরীতপক্ষে যারা আল্লাহর প্রতি বিশ্বস্ত আচরণ করেছে এবং তাঁর প্রতি অনুগত থেকে জীবন-যাপন করেছে তাদের থেকে সহজ হিসাব নেয়া হবে। তাদের বিশ্বস্ততামূলক কার্যক্রমের কারণে তাদের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো ÿমা করে দেয়া হবে।
তাদের কোন ভয় থাকবে না :
وَمَنْ يَّعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَا يَخَافُ ظُلْمًا وَّلَا هَضْمًا
আর যে ব্যক্তি মুমিন থাকাবস্থায় সৎকর্ম করবে, তার প্রতি কোন যুলুমের ভয় থাকবে না এবং তার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ারও কোন আশঙ্কা থাকবে না। (সূরা ত্বা-হা- ১১২)
ব্যাখ্যা : যারা ঈমান ও সৎকাজ নিয়ে আসবে সেখানে তাদের উপর কোন যুলুম করা হবে না। অর্থাৎ তাদেরকে অনর্থক শাস্তি দেয়া হবে না এবং তাদের কার্যাবলি ধ্বংস করে দেয়া হবে- এমন কোন আশঙ্কাও সেখানে থাকবে না।
مَنْ جَآءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهٗ خَيْرٌ مِّنْهَاۚ وَهُمْ مِّنْ فَزَعٍ يَّوْمَئِذٍ اٰمِنُوْنَ
যে সৎকর্ম নিয়ে আসবে, সে তা হতে উত্তম প্রতিফল পাবে এবং সেদিন তারা ভয় হতে নিরাপদ থাকবে।
(সূরা নামল- ৮৯)
اِنَّ الَّذِيْنَ سَبَقَتْ لَهُمْ مِّنَّا الْحُسْنٰۤى اُولٰٓئِكَ عَنْهَا مُبْعَدُوْنَ – لَا يَسْمَعُوْنَ حَسِيْسَهَا وَهُمْ فِيْ مَا اشْتَهَتْ اَنْفُسُهُمْ خَالِدُوْنَ – لَا يَحْزُنُهُمُ الْفَزَعُ الْاَ كْبَرُ وَتَتَلَقَّاهُمُ الْمَلَآئِكَةُ هٰذَا يَوْمُكُمُ الَّذِيْ كُنْتُمْ تُوْعَدُوْنَ
যাদের জন্য আমার নিকট পূর্ব হতে কল্যাণ নির্ধারিত রয়েছে তাদেরকে তা (জাহান্নাম) হতে দূরে রাখা হবে। অতঃপর তারা তার (জাহান্নামের) ক্ষীণতম শব্দও শুনতে পাবে না এবং সেখানে তারা নিজেদের জন্য যা কামনা করবে চিরকাল তাই ভোগ করবে। মহাভীতি তাদেরকে চিন্তিত করবে না এবং ফেরেশতাগণ তাদেরকে অভ্যর্থনা করবে এ বলে- এটা সেই দিন, যার প্রতিশ্রুতি তোমাদেরকে দেয়া হয়েছিল। (সূরা আম্বিয়া, ১০১-১০৩)
মুমিনরা সেদিন লাঞ্ছিত হবে না :
لِلَّذِيْنَ اَحْسَنُوا الْحُسْنٰى وَزِيَادَةٌؕ وَلَا يَرْهَقُ وُجُوْهَهُمْ قَتَرٌ وَّلَا ذِلَّةٌ اُولٰٓئِكَ اَصْحَابُ الْجَنَّةِۚ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
যারা মঙ্গলময় কাজ করে তাদের জন্য রয়েছে মঙ্গল এবং আরো অধিক (মঙ্গল)। কালিমা ও হীনতা তাদের মুখমন্ডলকে আচ্ছন্ন করবে না। তারাই জান্নাতের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে। (সূরা ইউনুস- ২৬)
يَا عِبَادِ لَا خَوْفٌ عَلَيْكُمُ الْيَوْمَ وَلَاۤ اَنْتُمْ تَحْزَنُوْنَ – اَلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا بِاٰيَاتِنَا وَكَانُوْا مُسْلِمِيْنَ – اُدْخُلُوا الْجَنَّةَ اَنْتُمْ وَاَزْوَاجُكُمْ تُحْبَرُوْنَ
হে আমার বান্দাগণ! আজ তোমাদের কোন ভয় নেই এবং তোমরা চিন্তিতও হবে না। তোমরা তো ঐসব লোক, যারা আমার আয়াতসমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিলে এবং আত্মসমর্পণ করেছিলে। সুতরাং আজ তোমরা এবং তোমাদের সহধর্মিনীগণ জান্নাতে প্রবেশ করো, তোমাদেরকে সন্তুষ্ট করা হবে। (সূরা যুখরুফ, ৬৮-৭০)
কিয়ামতের দিনটি তাদের জন্য বড়ই কঠিন হবে :
مُهْطِعِيْنَ اِلَى الدَّاعِؕ يَقُوْلُ الْكَافِرُوْنَ هٰذَا يَوْمٌ عَسِرٌ
তারা আহবানকারীর দিকে ছুটে আসবে; তখন কাফিররা বলবে, এটি একটি কঠিন দিন। (সূরা ক্বামার- ৮)
فَذٰلِكَ يَوْمَئِذٍ يَّوْمٌ عَسِيْرٌ ‐ عَلَى الْكَافِرِيْنَ غَيْرُ يَسِيْرٍ
সেদিন হবে এক সংকটময় দিন, যা কাফিরদের জন্য সহজ নয়। (সূরা মুদ্দাসসির- ৯, ১০)
তাদের পাপের ফলাফল প্রকাশ পেয়ে যাবে :
وَبَدَا لَهُمْ سَيِّئَاتُ مَا كَسَبُوْا وَحَاقَ بِهِمْ مَّا كَانُوْا بِهٖ يَسْتَهْزِئُوْنَ
তাদের কৃতকর্মের খারাপী তাদের নিকট প্রকাশ হয়ে পড়বে এবং তারা যা নিয়ে ঠাট্রা-বিদ্রূপ করত তা তাদেরকে ঘিরে ফেলবে। (সূরা যুমার- ৪৮)
পাপের চিহ্ন তাদের চেহারায় ফুটে উঠবে :
يُعْرَفُ الْمُجْرِمُوْنَ بِسِيْمَاهُمْ فَيُؤْخَذُ بِالنَّوَاصِيْ وَالْاَقْدَامِ
অপরাধীদেরকে তাদের চেহারার আলামত (চিহ্ন) দ্বারা চেনা যাবে। অতঃপর তাদেরকে পাকড়াও করা হবে কপাল (চুলের ঝুঁটি) ও পা ধরে। (সূরা আর রহমান- ৪১)
কিয়ামতের দিন তাদের চেহারা মলিন হয়ে যাবে :
وَوُجُوْهٌ يَّوْمَئِذٍ عَلَيْهَا غَبَرَةٌ – تَرْهَقُهَا قَتَرَةٌ – اُولٰٓئِكَ هُمُ الْكَفَرَةُ الْفَجَرَةُ
সেদিন অনেক মুখমন্ডল ধূলায় মলিন হয়ে যাবে, সেগুলোকে আচ্ছন্ন করবে কালো বর্ণ। তারাই কাফির ও পাপাচারী। (সূরা আবাসা, ৪০-৪২)
وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ تَرَى الَّذِيْنَ كَذَّبُوْا عَلَى اللهِ وُجُوْهُهُمْ مُّسْوَدَّةٌؕ اَلَيْسَ فِيْ جَهَنَّمَ مَثْوًى لِّلْمُتَكَبِّرِيْنَ
যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে কিয়ামতের দিন তুমি তাদের মুখ কালো দেখতে পাবে; জাহান্নাম কি অহংকারীদের আবাসস্থল নয়? (সূরা যুমার- ৬০)
يَوْمَ تَبْيَضُّ وُجُوْهٌ وَّ تَسْوَدُّ وُجُوْهٌ ۚ فَاَمَّا الَّذِيْنَ اسْوَدَّتْ وُجُوْهُهُمْ اَكَفَرْتُمْ بَعْدَ اِيْمَانِكُمْ فَذُوْقُوا الْعَذَابَ بِمَا كُنْتُمْ تَكْفُرُوْنَ
সেদিন কিছু চেহারা হবে উজ্জ্বল এবং কিছু চেহারা হবে কালো। অতঃপর যাদের চেহারা কালো হবে তাদেরকে বলা হবে, তোমরা কি ঈমান আনার পর কুফরী করেছিলে? সুতরাং তোমরা কুফরী করার কারণে শাস্তি ভোগ করো। (সূরা আলে ইমরান- ১০৬)
وَوُجُوْهٌ يَّوْمَئِذٍ ۢبَاسِرَةٌ – تَظُنُّ اَنْ يُّفْعَلَ بِهَا فَاقِرَةٌ
সেদিন কোন কোন মুখমন্ডল বিবর্ণ হয়ে যাবে এ আশঙ্কায় যে, এক ধ্বংসকারী বিপর্যয় আসন্ন। (সূরা ক্বিয়ামাহ- ২৪, ২৫)
তারা ভীত ও ক্লান্ত হয়ে পড়বে :
هَلْ اَتَاكَ حَدِيْثُ الْغَاشِيَةِ – وُجُوْهٌ يَّوْمَئِذٍ خَاشِعَةٌ – عَامِلَةٌ نَّاصِبَةٌ – تَصْلٰى نَارًا حَامِيَةً
তোমার কাছে কি আচ্ছন্নকারীর (কিয়ামতের) সংবাদ এসেছে? সেদিন বহু মুখমন্ডল ভীত হয়ে পড়বে এবং কর্মক্লান্ত পরিশ্রান্ত হয়ে যাবে। অতঃপর তারা প্রবেশ করবে জ্বলন্ত আগুনে। (সূরা গাশিয়াহ, ১-৪)
তারা ভীত হয়ে পড়বে :
مُهْطِعِيْنَ مُقْنِعِيْ رُءُوْسِهِمْ لَا يَرْتَدُّ اِلَيْهِمْ طَرْفُهُمْۚ وَاَفْئِدَتُهُمْ هَوَآءٌ
তারা ভীত-বিহবল হৃদয়ে আকাশের দিকে চেয়ে ছোটাছুটি করবে, নিজেদের প্রতি কোন দৃষ্টি ফিরবে না এবং তাদের অমত্মর হবে উদাস। (সূরা ইবরাহীম- ৪৩)
وَاقْتَرَبَ الْوَعْدُ الْحَقُّ فَاِذَا هِيَ شَاخِصَةٌ اَبْصَارُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاؕ يَا وَيْلَنَا قَدْ كُنَّا فِيْ غَفْلَةٍ مِّنْ هٰذَا بَلْ كُنَّا ظَالِمِيْنَ
সত্য প্রতিশ্রুতিকাল আসন্ন হলে কাফিরদের চক্ষু স্থির হয়ে যাবে। তারা বলবে, হায় দুর্ভোগ আমাদের! আমরা তো এ বিষয়ে উদাসীন ছিলাম; এমনকি আমরা সীমালঙ্ঘনকারীও ছিলাম। (সূরা আম্বিয়া- ৯৭)
وَيَوْمَ تَقُوْمُ السَّاعَةُ يُبْلِسُ الْمُجْرِمُوْنَ
যেদিন কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে, সেদিন পাপীরা হতাশ হয়ে পড়বে। (সূরা রূম- ১২)
ব্যাখ্যা : اِبْلَاسٌ (ইবলাস) এর অর্থ হচ্ছে চরম হতাশা ও দুঃখ-বেদনার কারণে কোন ব্যক্তির একেবারে হতভম্ভ হয়ে যাওয়া। আশার সমস্ত পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছে দেখে বিস্ময়-বিমূঢ় হয়ে যাওয়া এবং কোন সমর্থন না পাওয়ার কারণে রুদ্ধশ্বাস হওয়া। এ শব্দটি অপরাধীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করলে এ অর্থ হয় যে, তাকে হাতে নাতে পাকড়াও করা হয়েছে। সে পালানোর কোন পথ পাচ্ছে না এবং নিজের পক্ষে সুপারিশ করার জন্য কাউকে উপস্থাপন করার আশাও রাখে না। ফলে তার কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে গেছে এবং সে চরম হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
অপমান তাদেরকে ছেয়ে ফেলবে :
خَاشِعَةً اَبْصَارُهُمْ تَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌؕ ذٰلِكَ الْيَوْمُ الَّذِيْ كَانُوْا يُوْعَدُوْنَ
(সেদিন) তাদের দৃষ্টি অবনত হবে; লাঞ্ছনা তাদেরকে আচ্ছন্ন করে ফেলবে। আর এটাই সেই দিন, যার প্রতিশ্রুতি তাদেরকে দেয়া হয়েছিল। (সূরা মা‘আরিজ- ৪৪)
কিয়ামতের দিন তারা আল্লাহকে সিজদা করতে পারবে না :
يَوْمَ يُكْشَفُ عَنْ سَاقٍ وَّيُدْعَوْنَ اِلَى السُّجُوْدِ فَلَا يَسْتَطِيْعُوْنَ ‐ - خَاشِعَةً اَبْصَارُهُمْ تَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌؕ وَقَدْ كَانُوْا يُدْعَوْنَ اِلَى السُّجُوْدِ وَهُمْ سَالِمُوْنَ
যেদিন হাটুর নিম্নাংশ প্রকাশ করা হবে এবং তাদেরকে আহবান করা হবে সিজদা করার জন্য; কিন্তু তারা তা করতে সক্ষম হবে না। তাদের দৃষ্টি হবে অবনত, অপমানবোধ তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে, অথচ যখন তারা নিরাপদ ছিল তখন তাদেরকে সিজদা করতে আহবান করা হয়েছিল (কিন্তু তারা অমান্য করেছে)। (সূরা ক্বালাম- ৪২, ৪৩)
তারা পালাতে পারবে না, মুহূর্তের মধ্যেই পাকড়াও হবে :
وَلَوْ تَرٰۤى اِذْ فَزِعُوْا فَلَا فَوْتَ وَاُخِذُوْا مِنْ مَّكَانٍ قَرِيْبٍ
তুমি যদি দেখতে, যখন তারা ভীত হয়ে পড়বে এবং পালাতে পারবে না। আর তাদেরকে খুব নিকটবর্তী স্থান থেকেই পাকড়াও করা হবে। (সূরা সাবা- ৫১)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ কিয়ামতের দিন অপরাধীরা এমনভাবে পাকড়াও হবে যেন মনে হবে পাকড়াওকারী কাছেই কোথাও লুকিয়ে ছিল। ফলে সামান্য একটু পালানোর চেষ্টা করার সাথে সাথেই যেন তাকে ধরে ফেলেছে।
তখন ঈমান আনতে চাইবে, কিন্তু কাজ হবে না :
وَقَالُوْاۤ اٰمَنَّا بِهٖۚ وَاَنّٰى لَهُمُ التَّنَاوُشُ مِنْ مَّكَانٍ ۢبَعِيْدٍ – وَقَدْ كَفَرُوْا بِهٖ مِنْ قَبْلُۚ وَيَقْذِفُوْنَ بِالْغَيْبِ مِنْ مَّكَانٍ ۢبَعِيْدٍ – وَحِيْلَ بَيْنَهُمْ وَبَيْنَ مَا يَشْتَهُوْنَ كَمَا فُعِلَ بِاَشْيَاعِهِمْ مِّنْ قَبْلُؕ اِنَّهُمْ كَانُوْا فِيْ شَكٍّ مُّرِيْبٍ
তখন তারা বলবে, আমরা তাঁর প্রতি ঈমান আনলাম। কিন্তু তারা দূরবর্তী স্থান থেকে কীভাবে তা হস্তগত করবে? অথচ আগে থেকেই তারা তাঁকে অস্বীকার করে আসছিল। তারা তো দূরবর্তী স্থান থেকেই অদৃশ্য বিষয়কে মিথ্যা মনে করত। সুতরাং এখন তাদের ও তাদের কাঙ্ক্ষিত জিনিসের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে, যেমন তাদের পূর্ববর্তীদের সাথেও করা হয়েছিল। তারা ছিল সন্দেহের মধ্যে উদ্বেগজনক অবস্থায় নিপতিত। (সূরা সাবা, ৫২-৫৪)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ ঈমান আনার জায়গা ছিল দুনিয়া। সেখান থেকে এখন তারা বহুদূরে চলে এসেছে। আখিরাতের জগতে পৌঁছে যাওয়ার পর এখন আর তাওবা করা ও ঈমান আনার সুযোগ কোথায় পাওয়া যেতে পারে।
সেদিন তাদের কোন আমল কাজে লাগবে না :
وَقَدِمْنَاۤ اِلٰى مَا عَمِلُوْا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَآءً مَّنْثُوْرًا
আমি তাদের কৃতকর্মের প্রতি লক্ষ্য করব, অতঃপর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব। (সূরা ফুরক্বান- ২৩)
কোন সুপারিশকারী পাবে না :
مَا لِلظَّالِمِيْنَ مِنْ حَمِيْمٍ وَّلَا شَفِيْعٍ يُّطَاعُ
যালিমদের কোন অন্তরঙ্গ বন্ধু থাকবে না এবং এমন কোন সুপারিশকারীও থাকবে না, যার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। (সূরা মু’মিন- ১৮)
কোন অজুহাত কাজে আসবে না :
يَوْمَ لَا يَنْفَعُ الظَّالِمِيْنَ مَعْذِرَتُهُمْ وَلَهُمُ اللَّعْنَةُ وَلَهُمْ سُوْٓءُ الدَّارِ
সেদিন যালিমদের আপত্তি কোন উপকারে আসবে না। সুতরাং তাদের জন্য রয়েছে লানত, আর তাদের জন্য রয়েছে নিকৃষ্ট আবাসস্থল। (সূরা মু’মিন- ৫২)
فَيَوْمَئِذٍ لَّا يَنْفَعُ الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا مَعْذِرَتُهُمْ وَلَا هُمْ يُسْتَعْتَبُوْنَ
সেদিন যালিমদের কোন আপত্তিই উপকারে আসবে না এবং তাদেরকে তাওবা করে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের সুযোগও দেয়া হবে না। (সূরা রূম- ৫৭)
কেউ কথা বলার সাহস পাবে না :
هٰذَا يَوْمُ لَا يَنْطِقُوْنَ – وَلَا يُؤْذَنُ لَهُمْ فَيَعْتَذِرُوْنَ
এটা এমন একটি দিন, যেদিন তারা কিছু বলতে পারবে না এবং তাদেরকে ওজর পেশ করারও অনুমতি দেয়া হবে না। (সূরা মুরসালাত- ৩৫, ৩৬)
وَيَوْمَ نَحْشُرُ مِنْ كُلِّ اُمَّةٍ فَوْجًا مِّمَّنْ يُّكَذِّبُ بِاٰيَاتِنَا فَهُمْ يُوْزَعُوْنَ – حَتّٰۤى اِذَا جَآءُوْا قَالَ اَكَذَّبْتُمْ بِاٰيَاتِيْ وَلَمْ تُحِيْطُوْا بِهَا عِلْمًا اَمْ مَّاذَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ – وَوَقَعَ الْقَوْلُ عَلَيْهِمْ بِمَا ظَلَمُوْا فَهُمْ لَا يَنْطِقُوْنَ
সেদিন আমি সমবেত করব প্রত্যেক সম্প্রদায় হতে এক একটি দলকে, যারা আমার নিদর্শনাবলিকে প্রত্যাখ্যান করত। অতঃপর তাদেরকে সারিবদ্ধ করা হবে। যখন তারা সমাগত হবে তখন আল্লাহ তাদেরকে বলবেন, তোমরা কি আমার নিদর্শনাবলিকে প্রত্যাখ্যান করেছিলে, অথচ সে বিষয়ে তোমাদের জ্ঞান ছিল না। বরং তোমরা অন্য কিছু করছিলে? অতঃপর সীমালঙ্ঘনের কারণে তাদের উপর ঘোষিত শাস্তি এসে পড়বে; ফলে তারা কোন কথাই উচ্চারণ করতে পারবে না। (সূরা নামল, ৮৩-৮৫)
সেদিন পাপীরা আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করা থেকে বঞ্চিত হবে :
كَلَّاۤ اِنَّهُمْ عَنْ رَّبِّهِمْ يَوْمَئِذٍ لَّمَحْجُوْبُوْنَ – ثُمَّ اِنَّهُمْ لَصَالُوا الْجَحِيْمِ
কখনো নয়, সেদিন অবশ্যই তারা তাদের প্রতিপালকের দর্শন লাভ হতে বাধাগ্রস্ত হবে। অতঃপর নিশ্চয় তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (সূরা মুতাফফিফীন- ১৫, ১৬)
তারা শাস্তি দেখে ভয় পাবে :
تَرَى الظَّالِمِيْنَ مُشْفِقِيْنَ مِمَّا كَسَبُوْا وَهُوَ وَاقِعٌ ۢبِهِمْ
তুমি যালিমদেরকে তাদের কৃতকর্মের জন্য ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় দেখতে পারবে। অতঃপর এটাই তাদের উপর আপতিত হবে। (সূরা শূরা- ২২)
পাপীরা সেদিন বাঁচাও-বাঁচাও বলতে থাকবে :
يَوْمَ يَرَوْنَ الْمَلَآئِكَةَ لَا بُشْرٰى يَوْمَئِذٍ لِّلْمُجْرِمِيْنَ وَيَقُوْلُوْنَ حِجْرًا مَّحْجُوْرًا
যেদিন তারা ফেরেশতাদেরকে প্রত্যক্ষ করবে, সেদিন অপরাধীদের জন্য কোন সুসংবাদ থাকবে না। তখন তারা বলবে, ‘বাঁচাও-বাঁচাও’। (সূরা ফুরক্বান- ২২)
কিন্তু তাদেরকে রক্ষা করার কেউ থাকবে না :
وَالَّذِيْنَ كَسَبُوا السَّيِّئَاتِ جَزَآءُ سَيِّئَةٍ ۢبِمِثْلِهَا وَتَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌؕ مَا لَهُمْ مِّنَ اللهِ مِنْ عَاصِمٍۚ كَاَنَّمَاۤ اُغْشِيَتْ وُجُوْهُهُمْ قِطَعًا مِّنَ اللَّيْلِ مُظْلِمًاؕ اُولٰٓئِكَ اَصْحَابُ النَّارِۚ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
যারা মন্দকাজ করে তাদের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ এবং তাদেরকে হীনতা আচ্ছন্ন করে ফেলবে; কিন্তু আল্লাহ হতে তাদেরকে রক্ষা করার কেউ থাকবে না। তাদের মুখমন্ডল যেন রাত্রির অন্ধকারে আচ্ছাদিত। তারা জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। (সূরা ইউনুস- ২৭)
উপর ও নিচ উভয় দিক থেকে আযাব আসবে :
يَوْمَ يَغْشَاهُمُ الْعَذَابُ مِنْ فَوْقِهِمْ وَمِنْ تَحْتِ اَرْجُلِهِمْ وَيَقُوْلُ ذُوْقُوْا مَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
সেদিন শাস্তি তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে উপর ও নিচ হতে এবং তিনি বলবেন, তোমরা যা করতে তা আস্বাদন করো। (সূরা আনকাবূত- ৫৫)
পাপীরা সেদিন উপুড় হয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে :
وَمَنْ جَآءَ بِالسَّيِّئَةِ فَكُبَّتْ وُجُوْهُهُمْ فِى النَّارِ ؕ هَلْ تُجْزَوْنَ اِلَّا مَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
যে অসৎকর্ম নিয়ে আসবে, তাকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে এবং তাদেরকে বলা হবে, তোমরা যা করতে তোমাদেরকে তারই প্রতিফল দেয়া হচ্ছে। (সূরা নামল- ৯০)
তাদের হিসাব কঠোর হবে :
وَالَّذِيْنَ لَمْ يَسْتَجِيْبُوْا لَهٗ لَوْ اَنَّ لَهُمْ مَّا فِى الْاَرْضِ جَمِيْعًا وَّمِثْلَهٗ مَعَهٗ لَافْتَدَوْا بِهؕ اُولٰٓئِكَ لَهُمْ سُوْٓءُ الْحِسَابِ وَمَاْوَاهُمْ جَهَنَّمُؕ وَبِئْسَ الْمِهَادُ
যারা তাঁর ডাকে সাড়া দেয়নি, পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবকিছুই যদি তাদের (মালিকানাধীন) থাকত এবং তার সমপরিমাণ আরো (সম্পদ) থাকত, তবুও তারা মুক্তিপণস্বরূপ সবকিছুই দিয়ে দিত। তাদের হিসাব হবে খুবই কঠোর, আর তাদের আবাসস্থল হবে জাহান্নাম; সে আশ্রয়স্থল কতই না নিকৃষ্ট! (সূরা রা‘দ- ১৮)
সেদিন পাপীরা মাটির সাথে মিশে যেতে চাইবে :
يَوْمَئِذٍ يَّوَدُّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَعَصَوُا الرَّسُوْلَ لَوْ تُسَوّٰى بِهِمُ الْاَرْضُؕ وَلَا يَكْتُمُوْنَ اللهَ حَدِيْثًا
যারা কুফরী করেছে এবং রাসূলের অবাধ্য হয়েছে, সেদিন তারা কামনা করবে- যদি তারা মাটির সঙ্গে মিশে যেত! আর তারা আল্লাহ হতে কোন কথাই গোপন করতে পারবে না। (সূরা নিসা- ৪২)
مُهْطِعِيْنَ اِلَى الدَّاعِؕ يَقُوْلُ الْكَافِرُوْنَ هٰذَا يَوْمٌ عَسِرٌ
তারা আহবানকারীর দিকে ছুটে আসবে; তখন কাফিররা বলবে, এটি একটি কঠিন দিন। (সূরা ক্বামার- ৮)
فَذٰلِكَ يَوْمَئِذٍ يَّوْمٌ عَسِيْرٌ ‐ عَلَى الْكَافِرِيْنَ غَيْرُ يَسِيْرٍ
সেদিন হবে এক সংকটময় দিন, যা কাফিরদের জন্য সহজ নয়। (সূরা মুদ্দাসসির- ৯, ১০)
তাদের পাপের ফলাফল প্রকাশ পেয়ে যাবে :
وَبَدَا لَهُمْ سَيِّئَاتُ مَا كَسَبُوْا وَحَاقَ بِهِمْ مَّا كَانُوْا بِهٖ يَسْتَهْزِئُوْنَ
তাদের কৃতকর্মের খারাপী তাদের নিকট প্রকাশ হয়ে পড়বে এবং তারা যা নিয়ে ঠাট্রা-বিদ্রূপ করত তা তাদেরকে ঘিরে ফেলবে। (সূরা যুমার- ৪৮)
পাপের চিহ্ন তাদের চেহারায় ফুটে উঠবে :
يُعْرَفُ الْمُجْرِمُوْنَ بِسِيْمَاهُمْ فَيُؤْخَذُ بِالنَّوَاصِيْ وَالْاَقْدَامِ
অপরাধীদেরকে তাদের চেহারার আলামত (চিহ্ন) দ্বারা চেনা যাবে। অতঃপর তাদেরকে পাকড়াও করা হবে কপাল (চুলের ঝুঁটি) ও পা ধরে। (সূরা আর রহমান- ৪১)
কিয়ামতের দিন তাদের চেহারা মলিন হয়ে যাবে :
وَوُجُوْهٌ يَّوْمَئِذٍ عَلَيْهَا غَبَرَةٌ – تَرْهَقُهَا قَتَرَةٌ – اُولٰٓئِكَ هُمُ الْكَفَرَةُ الْفَجَرَةُ
সেদিন অনেক মুখমন্ডল ধূলায় মলিন হয়ে যাবে, সেগুলোকে আচ্ছন্ন করবে কালো বর্ণ। তারাই কাফির ও পাপাচারী। (সূরা আবাসা, ৪০-৪২)
وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ تَرَى الَّذِيْنَ كَذَّبُوْا عَلَى اللهِ وُجُوْهُهُمْ مُّسْوَدَّةٌؕ اَلَيْسَ فِيْ جَهَنَّمَ مَثْوًى لِّلْمُتَكَبِّرِيْنَ
যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে কিয়ামতের দিন তুমি তাদের মুখ কালো দেখতে পাবে; জাহান্নাম কি অহংকারীদের আবাসস্থল নয়? (সূরা যুমার- ৬০)
يَوْمَ تَبْيَضُّ وُجُوْهٌ وَّ تَسْوَدُّ وُجُوْهٌ ۚ فَاَمَّا الَّذِيْنَ اسْوَدَّتْ وُجُوْهُهُمْ اَكَفَرْتُمْ بَعْدَ اِيْمَانِكُمْ فَذُوْقُوا الْعَذَابَ بِمَا كُنْتُمْ تَكْفُرُوْنَ
সেদিন কিছু চেহারা হবে উজ্জ্বল এবং কিছু চেহারা হবে কালো। অতঃপর যাদের চেহারা কালো হবে তাদেরকে বলা হবে, তোমরা কি ঈমান আনার পর কুফরী করেছিলে? সুতরাং তোমরা কুফরী করার কারণে শাস্তি ভোগ করো। (সূরা আলে ইমরান- ১০৬)
وَوُجُوْهٌ يَّوْمَئِذٍ ۢبَاسِرَةٌ – تَظُنُّ اَنْ يُّفْعَلَ بِهَا فَاقِرَةٌ
সেদিন কোন কোন মুখমন্ডল বিবর্ণ হয়ে যাবে এ আশঙ্কায় যে, এক ধ্বংসকারী বিপর্যয় আসন্ন। (সূরা ক্বিয়ামাহ- ২৪, ২৫)
তারা ভীত ও ক্লান্ত হয়ে পড়বে :
هَلْ اَتَاكَ حَدِيْثُ الْغَاشِيَةِ – وُجُوْهٌ يَّوْمَئِذٍ خَاشِعَةٌ – عَامِلَةٌ نَّاصِبَةٌ – تَصْلٰى نَارًا حَامِيَةً
তোমার কাছে কি আচ্ছন্নকারীর (কিয়ামতের) সংবাদ এসেছে? সেদিন বহু মুখমন্ডল ভীত হয়ে পড়বে এবং কর্মক্লান্ত পরিশ্রান্ত হয়ে যাবে। অতঃপর তারা প্রবেশ করবে জ্বলন্ত আগুনে। (সূরা গাশিয়াহ, ১-৪)
তারা ভীত হয়ে পড়বে :
مُهْطِعِيْنَ مُقْنِعِيْ رُءُوْسِهِمْ لَا يَرْتَدُّ اِلَيْهِمْ طَرْفُهُمْۚ وَاَفْئِدَتُهُمْ هَوَآءٌ
তারা ভীত-বিহবল হৃদয়ে আকাশের দিকে চেয়ে ছোটাছুটি করবে, নিজেদের প্রতি কোন দৃষ্টি ফিরবে না এবং তাদের অমত্মর হবে উদাস। (সূরা ইবরাহীম- ৪৩)
وَاقْتَرَبَ الْوَعْدُ الْحَقُّ فَاِذَا هِيَ شَاخِصَةٌ اَبْصَارُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاؕ يَا وَيْلَنَا قَدْ كُنَّا فِيْ غَفْلَةٍ مِّنْ هٰذَا بَلْ كُنَّا ظَالِمِيْنَ
সত্য প্রতিশ্রুতিকাল আসন্ন হলে কাফিরদের চক্ষু স্থির হয়ে যাবে। তারা বলবে, হায় দুর্ভোগ আমাদের! আমরা তো এ বিষয়ে উদাসীন ছিলাম; এমনকি আমরা সীমালঙ্ঘনকারীও ছিলাম। (সূরা আম্বিয়া- ৯৭)
وَيَوْمَ تَقُوْمُ السَّاعَةُ يُبْلِسُ الْمُجْرِمُوْنَ
যেদিন কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে, সেদিন পাপীরা হতাশ হয়ে পড়বে। (সূরা রূম- ১২)
ব্যাখ্যা : اِبْلَاسٌ (ইবলাস) এর অর্থ হচ্ছে চরম হতাশা ও দুঃখ-বেদনার কারণে কোন ব্যক্তির একেবারে হতভম্ভ হয়ে যাওয়া। আশার সমস্ত পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছে দেখে বিস্ময়-বিমূঢ় হয়ে যাওয়া এবং কোন সমর্থন না পাওয়ার কারণে রুদ্ধশ্বাস হওয়া। এ শব্দটি অপরাধীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করলে এ অর্থ হয় যে, তাকে হাতে নাতে পাকড়াও করা হয়েছে। সে পালানোর কোন পথ পাচ্ছে না এবং নিজের পক্ষে সুপারিশ করার জন্য কাউকে উপস্থাপন করার আশাও রাখে না। ফলে তার কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে গেছে এবং সে চরম হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
অপমান তাদেরকে ছেয়ে ফেলবে :
خَاشِعَةً اَبْصَارُهُمْ تَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌؕ ذٰلِكَ الْيَوْمُ الَّذِيْ كَانُوْا يُوْعَدُوْنَ
(সেদিন) তাদের দৃষ্টি অবনত হবে; লাঞ্ছনা তাদেরকে আচ্ছন্ন করে ফেলবে। আর এটাই সেই দিন, যার প্রতিশ্রুতি তাদেরকে দেয়া হয়েছিল। (সূরা মা‘আরিজ- ৪৪)
কিয়ামতের দিন তারা আল্লাহকে সিজদা করতে পারবে না :
يَوْمَ يُكْشَفُ عَنْ سَاقٍ وَّيُدْعَوْنَ اِلَى السُّجُوْدِ فَلَا يَسْتَطِيْعُوْنَ ‐ - خَاشِعَةً اَبْصَارُهُمْ تَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌؕ وَقَدْ كَانُوْا يُدْعَوْنَ اِلَى السُّجُوْدِ وَهُمْ سَالِمُوْنَ
যেদিন হাটুর নিম্নাংশ প্রকাশ করা হবে এবং তাদেরকে আহবান করা হবে সিজদা করার জন্য; কিন্তু তারা তা করতে সক্ষম হবে না। তাদের দৃষ্টি হবে অবনত, অপমানবোধ তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে, অথচ যখন তারা নিরাপদ ছিল তখন তাদেরকে সিজদা করতে আহবান করা হয়েছিল (কিন্তু তারা অমান্য করেছে)। (সূরা ক্বালাম- ৪২, ৪৩)
তারা পালাতে পারবে না, মুহূর্তের মধ্যেই পাকড়াও হবে :
وَلَوْ تَرٰۤى اِذْ فَزِعُوْا فَلَا فَوْتَ وَاُخِذُوْا مِنْ مَّكَانٍ قَرِيْبٍ
তুমি যদি দেখতে, যখন তারা ভীত হয়ে পড়বে এবং পালাতে পারবে না। আর তাদেরকে খুব নিকটবর্তী স্থান থেকেই পাকড়াও করা হবে। (সূরা সাবা- ৫১)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ কিয়ামতের দিন অপরাধীরা এমনভাবে পাকড়াও হবে যেন মনে হবে পাকড়াওকারী কাছেই কোথাও লুকিয়ে ছিল। ফলে সামান্য একটু পালানোর চেষ্টা করার সাথে সাথেই যেন তাকে ধরে ফেলেছে।
তখন ঈমান আনতে চাইবে, কিন্তু কাজ হবে না :
وَقَالُوْاۤ اٰمَنَّا بِهٖۚ وَاَنّٰى لَهُمُ التَّنَاوُشُ مِنْ مَّكَانٍ ۢبَعِيْدٍ – وَقَدْ كَفَرُوْا بِهٖ مِنْ قَبْلُۚ وَيَقْذِفُوْنَ بِالْغَيْبِ مِنْ مَّكَانٍ ۢبَعِيْدٍ – وَحِيْلَ بَيْنَهُمْ وَبَيْنَ مَا يَشْتَهُوْنَ كَمَا فُعِلَ بِاَشْيَاعِهِمْ مِّنْ قَبْلُؕ اِنَّهُمْ كَانُوْا فِيْ شَكٍّ مُّرِيْبٍ
তখন তারা বলবে, আমরা তাঁর প্রতি ঈমান আনলাম। কিন্তু তারা দূরবর্তী স্থান থেকে কীভাবে তা হস্তগত করবে? অথচ আগে থেকেই তারা তাঁকে অস্বীকার করে আসছিল। তারা তো দূরবর্তী স্থান থেকেই অদৃশ্য বিষয়কে মিথ্যা মনে করত। সুতরাং এখন তাদের ও তাদের কাঙ্ক্ষিত জিনিসের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে, যেমন তাদের পূর্ববর্তীদের সাথেও করা হয়েছিল। তারা ছিল সন্দেহের মধ্যে উদ্বেগজনক অবস্থায় নিপতিত। (সূরা সাবা, ৫২-৫৪)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ ঈমান আনার জায়গা ছিল দুনিয়া। সেখান থেকে এখন তারা বহুদূরে চলে এসেছে। আখিরাতের জগতে পৌঁছে যাওয়ার পর এখন আর তাওবা করা ও ঈমান আনার সুযোগ কোথায় পাওয়া যেতে পারে।
সেদিন তাদের কোন আমল কাজে লাগবে না :
وَقَدِمْنَاۤ اِلٰى مَا عَمِلُوْا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَآءً مَّنْثُوْرًا
আমি তাদের কৃতকর্মের প্রতি লক্ষ্য করব, অতঃপর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব। (সূরা ফুরক্বান- ২৩)
কোন সুপারিশকারী পাবে না :
مَا لِلظَّالِمِيْنَ مِنْ حَمِيْمٍ وَّلَا شَفِيْعٍ يُّطَاعُ
যালিমদের কোন অন্তরঙ্গ বন্ধু থাকবে না এবং এমন কোন সুপারিশকারীও থাকবে না, যার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। (সূরা মু’মিন- ১৮)
কোন অজুহাত কাজে আসবে না :
يَوْمَ لَا يَنْفَعُ الظَّالِمِيْنَ مَعْذِرَتُهُمْ وَلَهُمُ اللَّعْنَةُ وَلَهُمْ سُوْٓءُ الدَّارِ
সেদিন যালিমদের আপত্তি কোন উপকারে আসবে না। সুতরাং তাদের জন্য রয়েছে লানত, আর তাদের জন্য রয়েছে নিকৃষ্ট আবাসস্থল। (সূরা মু’মিন- ৫২)
فَيَوْمَئِذٍ لَّا يَنْفَعُ الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا مَعْذِرَتُهُمْ وَلَا هُمْ يُسْتَعْتَبُوْنَ
সেদিন যালিমদের কোন আপত্তিই উপকারে আসবে না এবং তাদেরকে তাওবা করে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের সুযোগও দেয়া হবে না। (সূরা রূম- ৫৭)
কেউ কথা বলার সাহস পাবে না :
هٰذَا يَوْمُ لَا يَنْطِقُوْنَ – وَلَا يُؤْذَنُ لَهُمْ فَيَعْتَذِرُوْنَ
এটা এমন একটি দিন, যেদিন তারা কিছু বলতে পারবে না এবং তাদেরকে ওজর পেশ করারও অনুমতি দেয়া হবে না। (সূরা মুরসালাত- ৩৫, ৩৬)
وَيَوْمَ نَحْشُرُ مِنْ كُلِّ اُمَّةٍ فَوْجًا مِّمَّنْ يُّكَذِّبُ بِاٰيَاتِنَا فَهُمْ يُوْزَعُوْنَ – حَتّٰۤى اِذَا جَآءُوْا قَالَ اَكَذَّبْتُمْ بِاٰيَاتِيْ وَلَمْ تُحِيْطُوْا بِهَا عِلْمًا اَمْ مَّاذَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ – وَوَقَعَ الْقَوْلُ عَلَيْهِمْ بِمَا ظَلَمُوْا فَهُمْ لَا يَنْطِقُوْنَ
সেদিন আমি সমবেত করব প্রত্যেক সম্প্রদায় হতে এক একটি দলকে, যারা আমার নিদর্শনাবলিকে প্রত্যাখ্যান করত। অতঃপর তাদেরকে সারিবদ্ধ করা হবে। যখন তারা সমাগত হবে তখন আল্লাহ তাদেরকে বলবেন, তোমরা কি আমার নিদর্শনাবলিকে প্রত্যাখ্যান করেছিলে, অথচ সে বিষয়ে তোমাদের জ্ঞান ছিল না। বরং তোমরা অন্য কিছু করছিলে? অতঃপর সীমালঙ্ঘনের কারণে তাদের উপর ঘোষিত শাস্তি এসে পড়বে; ফলে তারা কোন কথাই উচ্চারণ করতে পারবে না। (সূরা নামল, ৮৩-৮৫)
সেদিন পাপীরা আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করা থেকে বঞ্চিত হবে :
كَلَّاۤ اِنَّهُمْ عَنْ رَّبِّهِمْ يَوْمَئِذٍ لَّمَحْجُوْبُوْنَ – ثُمَّ اِنَّهُمْ لَصَالُوا الْجَحِيْمِ
কখনো নয়, সেদিন অবশ্যই তারা তাদের প্রতিপালকের দর্শন লাভ হতে বাধাগ্রস্ত হবে। অতঃপর নিশ্চয় তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (সূরা মুতাফফিফীন- ১৫, ১৬)
তারা শাস্তি দেখে ভয় পাবে :
تَرَى الظَّالِمِيْنَ مُشْفِقِيْنَ مِمَّا كَسَبُوْا وَهُوَ وَاقِعٌ ۢبِهِمْ
তুমি যালিমদেরকে তাদের কৃতকর্মের জন্য ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় দেখতে পারবে। অতঃপর এটাই তাদের উপর আপতিত হবে। (সূরা শূরা- ২২)
পাপীরা সেদিন বাঁচাও-বাঁচাও বলতে থাকবে :
يَوْمَ يَرَوْنَ الْمَلَآئِكَةَ لَا بُشْرٰى يَوْمَئِذٍ لِّلْمُجْرِمِيْنَ وَيَقُوْلُوْنَ حِجْرًا مَّحْجُوْرًا
যেদিন তারা ফেরেশতাদেরকে প্রত্যক্ষ করবে, সেদিন অপরাধীদের জন্য কোন সুসংবাদ থাকবে না। তখন তারা বলবে, ‘বাঁচাও-বাঁচাও’। (সূরা ফুরক্বান- ২২)
কিন্তু তাদেরকে রক্ষা করার কেউ থাকবে না :
وَالَّذِيْنَ كَسَبُوا السَّيِّئَاتِ جَزَآءُ سَيِّئَةٍ ۢبِمِثْلِهَا وَتَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌؕ مَا لَهُمْ مِّنَ اللهِ مِنْ عَاصِمٍۚ كَاَنَّمَاۤ اُغْشِيَتْ وُجُوْهُهُمْ قِطَعًا مِّنَ اللَّيْلِ مُظْلِمًاؕ اُولٰٓئِكَ اَصْحَابُ النَّارِۚ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
যারা মন্দকাজ করে তাদের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ এবং তাদেরকে হীনতা আচ্ছন্ন করে ফেলবে; কিন্তু আল্লাহ হতে তাদেরকে রক্ষা করার কেউ থাকবে না। তাদের মুখমন্ডল যেন রাত্রির অন্ধকারে আচ্ছাদিত। তারা জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। (সূরা ইউনুস- ২৭)
উপর ও নিচ উভয় দিক থেকে আযাব আসবে :
يَوْمَ يَغْشَاهُمُ الْعَذَابُ مِنْ فَوْقِهِمْ وَمِنْ تَحْتِ اَرْجُلِهِمْ وَيَقُوْلُ ذُوْقُوْا مَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
সেদিন শাস্তি তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে উপর ও নিচ হতে এবং তিনি বলবেন, তোমরা যা করতে তা আস্বাদন করো। (সূরা আনকাবূত- ৫৫)
পাপীরা সেদিন উপুড় হয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে :
وَمَنْ جَآءَ بِالسَّيِّئَةِ فَكُبَّتْ وُجُوْهُهُمْ فِى النَّارِ ؕ هَلْ تُجْزَوْنَ اِلَّا مَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
যে অসৎকর্ম নিয়ে আসবে, তাকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে এবং তাদেরকে বলা হবে, তোমরা যা করতে তোমাদেরকে তারই প্রতিফল দেয়া হচ্ছে। (সূরা নামল- ৯০)
তাদের হিসাব কঠোর হবে :
وَالَّذِيْنَ لَمْ يَسْتَجِيْبُوْا لَهٗ لَوْ اَنَّ لَهُمْ مَّا فِى الْاَرْضِ جَمِيْعًا وَّمِثْلَهٗ مَعَهٗ لَافْتَدَوْا بِهؕ اُولٰٓئِكَ لَهُمْ سُوْٓءُ الْحِسَابِ وَمَاْوَاهُمْ جَهَنَّمُؕ وَبِئْسَ الْمِهَادُ
যারা তাঁর ডাকে সাড়া দেয়নি, পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবকিছুই যদি তাদের (মালিকানাধীন) থাকত এবং তার সমপরিমাণ আরো (সম্পদ) থাকত, তবুও তারা মুক্তিপণস্বরূপ সবকিছুই দিয়ে দিত। তাদের হিসাব হবে খুবই কঠোর, আর তাদের আবাসস্থল হবে জাহান্নাম; সে আশ্রয়স্থল কতই না নিকৃষ্ট! (সূরা রা‘দ- ১৮)
সেদিন পাপীরা মাটির সাথে মিশে যেতে চাইবে :
يَوْمَئِذٍ يَّوَدُّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَعَصَوُا الرَّسُوْلَ لَوْ تُسَوّٰى بِهِمُ الْاَرْضُؕ وَلَا يَكْتُمُوْنَ اللهَ حَدِيْثًا
যারা কুফরী করেছে এবং রাসূলের অবাধ্য হয়েছে, সেদিন তারা কামনা করবে- যদি তারা মাটির সঙ্গে মিশে যেত! আর তারা আল্লাহ হতে কোন কথাই গোপন করতে পারবে না। (সূরা নিসা- ৪২)
আল্লাহ তা‘আলা আত্মপ্রকাশ করবেন :
وَجَآءَ رَبُّكَ وَالْمَلَكُ صَفًّا صَفًّا
আপনার পালনকর্তা ও ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধভাবে উপস্থিত হবেন। (সূরা ফাজর- ২২)
ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধভাবে হাজির হবে :
يَوْمَ يَقُوْمُ الرُّوْحُ وَالْمَلَآئِكَةُ صَفًّاؕ لَا يَتَكَلَّمُوْنَ اِلَّا مَنْ اَذِنَ لَهُ الرَّحْمٰنُ وَقَالَ صَوَابًا
সেদিন রূহ (জিবরাঈল) ও ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াবে। অতঃপর দয়াময় (আল্লাহ) যাকে অনুমতি দেবেন সে ব্যতীত অন্য কেউ কথা বলতে পারবে না। অতঃপর সে সঠিক কথা বলবে। (সূরা নাবা- ৩৮)
ফেরেশতারা আরশ বহন করবে :
وَالْمَلَكُ عَلٰۤى اَرْجَآئِهَاؕ وَيَحْمِلُ عَرْشَ رَبِّكَ فَوْقَهُمْ يَوْمَئِذٍ ثَمَانِيَةٌ
ফেরেশতাগণ তাঁর পার্শ্বে থাকবে এবং সেদিন আটজন ফেরেশতা তোমার প্রতিপালকের আরশকে বহন করবে। (সূরা হাক্কাহ- ১৭)
ফেরেশতারা আল্লাহর তাসবীহ পড়তে থাকবে :
وَتَرَى الْمَلَآئِكَةَ حَآفِّيْنَ مِنْ حَوْلِ الْعَرْشِ يُسَبِّحُوْنَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ
ফেরেশতাদেরকে দেখতে পাবে যে, তারা আরশের চারপাশ ঘিরে তাদের প্রতিপালকের প্রশংসা, পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছে। (সূরা যুমার- ৭৫)
সমস্ত পৃথিবী আল্লাহর নূরে আলোকিত হয়ে যাবে :
وَاَشْرَقَتِ الْاَرْضُ بِنُوْرِ رَبِّهَا وَوُضِعَ الْكِتَابُ
সমস্ত পৃথিবী তার প্রতিপালকের নূরে উদ্ভাসিত হবে। অতঃপর আমলনামা পেশ করা হবে। (সূরা যুমার- ৬৯)
নবী ও সাক্ষীদেরকেও উপস্থিত করা হবে :
وَجِيْٓءَ بِالنَّبِيِّيْنَ وَالشُّهَدَآءِ وَقُضِيَ بَيْنَهُمْ بِالْحَقِّ وَهُمْ لَا يُظْلَمُوْنَ
নবী ও সাক্ষীগণকেও হাজির করা হবে এবং সকলের মধ্যে ন্যায়বিচার করা হবে। অতঃপর তাদের প্রতি কোন যুলুম করা হবে না। (সূরা যুমার- ৬৯)
সেদিন বাদশাহী হবে একমাত্র আল্লাহর :
وَلَهُ الْمُلْكُ يَوْمَ يُنْفَخُ فِى الصُّوْرِؕ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِؕ وَهُوَ الْحَكِيْمُ الْخَبِيْرُ
যেদিন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে সেদিনকার কর্তৃত্ব তো তাঁরই। অদৃশ্য ও দৃশ্য সবকিছু সম্বন্ধে তিনি পরিজ্ঞাত; আর তিনিই প্রজ্ঞাময় ও সবিশেষ অবহিত। (সূরা আন‘আম- ৭৩)
اَلْمُلْكُ يَوْمَئِذِنِ الْحَقُّ لِلرَّحْمٰنِ
সেদিনের (কিয়ামতের) কর্তৃত্ব হবে দয়াময় আল্লাহর। (সূরা ফুরক্বান- ২৬)
لِمَنِ الْمُلْكُ الْيَوْمَؕ لِلّٰهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ
(আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন) আজ কর্তৃত্ব কার? এক পরাক্রমশালী আল্লাহরই। (সূরা মু’মিন- ১৬)
ব্যাখ্যা : পৃথিবীতে তো বহু অহংকারী ও ভ্রান্ত লোক নিজেদের বাদশাহী ও শক্তিমত্তার অহংকার করত এবং বহু সংখ্যক নির্বোধরাও তাদের বাদশাহী ও শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করত, তাদের হুকুম পালন করত এমনকি অনেকে তাদেরকেই নিজেদের প্রভু মনে করত; কিন্তু এখন তো তোমাদের কাছে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে গেছে। সুতরাং এখন বলো! প্রকৃতপক্ষে বাদশাহী কার? ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের প্রকৃত মালিক কে? আর কার হুকুমে সবকিছু পরিচালিত হয়? এটা এমন একটা বিষয় যে, কোন ব্যক্তি যদি তা বুঝার চেষ্টা করে তাহলে সে যত বড় বাদশাহ কিংবা মহানায়ক হয়ে থাকুক না কেন ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে এবং তার মন-মগজ থেকে শক্তিমত্তার সমস্ত অহংকার বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
وَجَآءَ رَبُّكَ وَالْمَلَكُ صَفًّا صَفًّا
আপনার পালনকর্তা ও ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধভাবে উপস্থিত হবেন। (সূরা ফাজর- ২২)
ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধভাবে হাজির হবে :
يَوْمَ يَقُوْمُ الرُّوْحُ وَالْمَلَآئِكَةُ صَفًّاؕ لَا يَتَكَلَّمُوْنَ اِلَّا مَنْ اَذِنَ لَهُ الرَّحْمٰنُ وَقَالَ صَوَابًا
সেদিন রূহ (জিবরাঈল) ও ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াবে। অতঃপর দয়াময় (আল্লাহ) যাকে অনুমতি দেবেন সে ব্যতীত অন্য কেউ কথা বলতে পারবে না। অতঃপর সে সঠিক কথা বলবে। (সূরা নাবা- ৩৮)
ফেরেশতারা আরশ বহন করবে :
وَالْمَلَكُ عَلٰۤى اَرْجَآئِهَاؕ وَيَحْمِلُ عَرْشَ رَبِّكَ فَوْقَهُمْ يَوْمَئِذٍ ثَمَانِيَةٌ
ফেরেশতাগণ তাঁর পার্শ্বে থাকবে এবং সেদিন আটজন ফেরেশতা তোমার প্রতিপালকের আরশকে বহন করবে। (সূরা হাক্কাহ- ১৭)
ফেরেশতারা আল্লাহর তাসবীহ পড়তে থাকবে :
وَتَرَى الْمَلَآئِكَةَ حَآفِّيْنَ مِنْ حَوْلِ الْعَرْشِ يُسَبِّحُوْنَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ
ফেরেশতাদেরকে দেখতে পাবে যে, তারা আরশের চারপাশ ঘিরে তাদের প্রতিপালকের প্রশংসা, পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছে। (সূরা যুমার- ৭৫)
সমস্ত পৃথিবী আল্লাহর নূরে আলোকিত হয়ে যাবে :
وَاَشْرَقَتِ الْاَرْضُ بِنُوْرِ رَبِّهَا وَوُضِعَ الْكِتَابُ
সমস্ত পৃথিবী তার প্রতিপালকের নূরে উদ্ভাসিত হবে। অতঃপর আমলনামা পেশ করা হবে। (সূরা যুমার- ৬৯)
নবী ও সাক্ষীদেরকেও উপস্থিত করা হবে :
وَجِيْٓءَ بِالنَّبِيِّيْنَ وَالشُّهَدَآءِ وَقُضِيَ بَيْنَهُمْ بِالْحَقِّ وَهُمْ لَا يُظْلَمُوْنَ
নবী ও সাক্ষীগণকেও হাজির করা হবে এবং সকলের মধ্যে ন্যায়বিচার করা হবে। অতঃপর তাদের প্রতি কোন যুলুম করা হবে না। (সূরা যুমার- ৬৯)
সেদিন বাদশাহী হবে একমাত্র আল্লাহর :
وَلَهُ الْمُلْكُ يَوْمَ يُنْفَخُ فِى الصُّوْرِؕ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِؕ وَهُوَ الْحَكِيْمُ الْخَبِيْرُ
যেদিন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে সেদিনকার কর্তৃত্ব তো তাঁরই। অদৃশ্য ও দৃশ্য সবকিছু সম্বন্ধে তিনি পরিজ্ঞাত; আর তিনিই প্রজ্ঞাময় ও সবিশেষ অবহিত। (সূরা আন‘আম- ৭৩)
اَلْمُلْكُ يَوْمَئِذِنِ الْحَقُّ لِلرَّحْمٰنِ
সেদিনের (কিয়ামতের) কর্তৃত্ব হবে দয়াময় আল্লাহর। (সূরা ফুরক্বান- ২৬)
لِمَنِ الْمُلْكُ الْيَوْمَؕ لِلّٰهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ
(আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন) আজ কর্তৃত্ব কার? এক পরাক্রমশালী আল্লাহরই। (সূরা মু’মিন- ১৬)
ব্যাখ্যা : পৃথিবীতে তো বহু অহংকারী ও ভ্রান্ত লোক নিজেদের বাদশাহী ও শক্তিমত্তার অহংকার করত এবং বহু সংখ্যক নির্বোধরাও তাদের বাদশাহী ও শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করত, তাদের হুকুম পালন করত এমনকি অনেকে তাদেরকেই নিজেদের প্রভু মনে করত; কিন্তু এখন তো তোমাদের কাছে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে গেছে। সুতরাং এখন বলো! প্রকৃতপক্ষে বাদশাহী কার? ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের প্রকৃত মালিক কে? আর কার হুকুমে সবকিছু পরিচালিত হয়? এটা এমন একটা বিষয় যে, কোন ব্যক্তি যদি তা বুঝার চেষ্টা করে তাহলে সে যত বড় বাদশাহ কিংবা মহানায়ক হয়ে থাকুক না কেন ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে এবং তার মন-মগজ থেকে শক্তিমত্তার সমস্ত অহংকার বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
অচিরেই আল্লাহ হিসাবের কাজ শুরু করবেন :
سَنَفْرُغُ لَكُمْ اَيُّهَا الثَّقَلَانِ
হে মানুষ ও জিন! শীঘ্রই আমি তোমাদের প্রতি (হিসাব-নিকাশের জন্য) মনোনিবেশ করব। (সূরা আর রহমান- ৩১)
কোন জিনিসই হিসাবের বাইরে থাকবে না :
يَا بُنَيَّ اِنَّهَاۤ اِنْ تَكُ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِّنْ خَرْدَلٍ فَتَكُنْ فِيْ صَخْرَةٍ اَوْ فِى السَّمَاوَاتِ اَوْ فِى الْاَرْضِ يَاْتِ بِهَا اللهُؕ اِنَّ اللهَ لَطِيْفٌ خَبِيْرٌ
হে আমার ছেলে! কোনকিছু যদি সরিষার বীজের পরিমাণও হয় এবং তা যদি পাথরের ভেতরেও থাকে অথবা আসমানে কিংবা ভূগর্ভে, তবুও তা আল্লাহ উপস্থিত করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সূক্ষ্মদর্শী ও সম্যক অবহিত। (সূরা লুক্বমান- ১৬)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর জ্ঞান ও তাঁর পাকড়াও হতে কেউ বাঁচতে পারে না। পাথরের মধ্যে ছোট্ট একটি কণা তোমার দৃষ্টির অগোচরে থাকতে পারে কিন্তু তাঁর কাছে তা সুস্পষ্ট। আকাশে অবস্থিত একটি ক্ষুদ্রতম কণিকা তোমার থেকে বহু দূরবর্তী হতে পারে, ভূমির গভীরে অবস্থিত কোন জিনিসের প্রতি তোমার দৃষ্টি শেষ হয়ে যেতে পারে; কিন্তু তা আল্লাহর অতি নিকটতর। কাজেই তুমি কোথাও এমন কোন সৎ বা অসৎকাজ করতে পার না, যা আল্লাহর অগোচরে থেকে যায়। তিনি তা জানেন কেবল তা নয় বরং যখন হিসাব-নিকাশের সময় আসবে তখন তিনি তোমাদের প্রত্যেকটি কাজের রেকর্ডও তোমাদের সামনে উপস্থাপন করবেন।
সরিষা পরিমাণ জিনিসেরও হিসাব হবে :
وَنَضَعُ الْمَوَازِيْنَ الْقِسْطَ لِيَوْمِ الْقِيَامَةِ فَلَا تُظْلَمُ نَفْسٌ شَيْئًاؕ وَاِنْ كَانَ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِّنْ خَرْدَلٍ اَتَيْنَا بِهَاؕ وَكَفٰى بِنَا حَاسِبِيْنَ
আমি কিয়ামতের দিন ন্যায়বিচারের মানদন্ড স্থাপন করব, সুতরাং কারো প্রতি কোন অবিচার করা হবে না। অতঃপর কারো কর্ম যদি তিল পরিমাণ ওজনেরও হয়, তবুও তা উপস্থিত করব; (জেনে রেখো) হিসাব গ্রহণকারীরূপে আমিই যথেষ্ট। (সূরা আম্বিয়া- ৪৭)
হিসাবের আওতার বাইরে কেউ যেতে পারবে না :
يَا مَعْشَرَ الْجِنِّ وَالْاِنْسِ اِنِ اسْتَطَعْتُمْ اَنْ تَنْفُذُوْا مِنْ اَقْطَارِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ فَانْفُذُوْاؕ لَا تَنْفُذُوْنَ اِلَّا بِسُلْطَانٍ
হে জিন ও মানবজাতি! আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সীমা হতে যদি তোমরা বের হতে সক্ষম হও, তবে বের হয়ে যাও। কিন্তু (আল্লাহ প্রদত্ত) ক্ষমতা ছাড়া তোমরা তো তা অতিক্রম করতে পারবে না। (সূরা আর রহমান- ৩৩)
প্রশ্ন করার জন্য সবাইকে থামানো হবে :
وَقِفُوْهُمْ اِنَّهُمْ مَّسْئُوْلُوْنَ
আর তাদেরকে থামাও, অবশ্যই তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে। (সূরা সাফ্ফাত- ২৪)
নবীদেরকেও প্রশ্ন করা হবে :
فَلَنَسْاَلَنَّ الَّذِيْنَ اُرْسِلَ اِلَيْهِمْ وَلَنَسْاَلَنَّ الْمُرْسَلِيْنَ
অতঃপর যাদের নিকট রাসূল প্রেরণ করা হয়েছিল, অবশ্যই আমি তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করব এবং রাসূলদেরকেও জিজ্ঞেস করব। (সূরা আ‘রাফ- ৬)
يَوْمَ يَجْمَعُ اللهُ الرُّسُلَ فَيَقُوْلُ مَاذَاۤ اُجِبْتُمْؕ قَالُوْا لَا عِلْمَ لَنَاؕ اِنَّكَ اَنْتَ عَلَّامُ الْغُيُوْبِ
সেদিন আল্লাহ রাসূলগণকে একত্র করবেন এবং জিজ্ঞেস করবেন, তোমরা কী উত্তর পেয়েছিলে? তখন তারা বলবে, এ বিষয়ে আমাদের কোন জ্ঞান নেই; আপনিই তো অদৃশ্য বিষয় সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত। (সূরা মায়েদা- ১০৯)
ব্যাখ্যা : আখিরাতে জিজ্ঞাসাবাদ সরাসরি রিসালাতের ভিত্তিতেই অনুষ্ঠিত হবে। একদিকে নবীদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে, মানব সম্প্রদায়ের কাছে আল্লাহর পয়গাম পৌঁছে দেয়ার জন্য তোমরা কী কী কাজ করেছ? অন্যদিকে যাদের কাছে দাওয়াত পৌঁছে গেছে তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে, এ দাওয়াতের সাথে তোমরা কী ব্যবহার করেছ? যেসব ব্যক্তি ও সম্প্রদায়ের কাছে নবীদের শিক্ষা পৌঁছে গেছে তাদের সম্পর্কে কুরআন স্পষ্টভাবে ঘোষণা করছে যে, তারা নিজেদের কুফরী, ফাসিকী ও নাফরমানির স্বপক্ষে কোন যুক্তি-প্রমাণ পেশ করতে পারবে না। তখন লজ্জায় ও অনুতাপে জাহান্নামের পথে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া কিয়ামতের দিন তাদের জন্য দ্বিতীয় কোন পথ থাকবে না।
সকল নিয়ামতের হিসাব হবে :
ثُمَّ لَتُسْاَلُنَّ يَوْمَئِذٍ عَنِ النَّعِيْمِ
এরপর অবশ্যই সেদিন তোমরা নিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞেসিত হবে। (সূরা তাকাসুর- ৮)
ওয়াদা রক্ষার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হবে :
وَاَوْفُوْا بِالْعَهْدِۚ اِنَّ الْعَهْدَ كَانَ مَسْئُوْلًا
প্রতিশ্রুতি পালন করো; নিশ্চয় প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩৪)
শরীরের অঙ্গ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে :
اِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ اُولٰٓئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُوْلًا
কর্ণ, চক্ষু, হৃদয় তাদের প্রত্যেকটি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩৬)
মানুষ কী কাজ করেছে, তা জিজ্ঞেস করা হবে :
وَلَتُسْاَلُنَّ عَمَّا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
তোমরা যা কর, অবশ্যই তোমাদেরকে সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে। (সূরা নাহল- ৯৩)
কুরআনের উপর আমল করা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে :
وَاِنَّهٗ لَذِكْرٌ لَّكَ وَلِقَوْمِكَۚ وَسَوْفَ تُسْاَلُوْنَ
নিশ্চয় এটা (কুরআন) তোমার ও তোমার সম্প্রদায়ের জন্য উপদেশবাণী, সুতরাং অচিরেই তোমাদেরকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে। (সূরা যুখরুফ- ৪৪)
যে অপরাধী কেবল তাকেই প্রশ্ন করা হবে :
تِلْكَ اُمَّةٌ قَدْ خَلَتْۚ لَهَا مَا كَسَبَتْ وَلَكُمْ مَّا كَسَبْتُمْۚ وَلَا تُسْاَلُوْنَ عَمَّا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
ওরা একটা দল ছিল, যা অতীত হয়ে গেছে। তারা যা অর্জন করেছিল তা তাদের জন্য এবং তোমরা যা অর্জন করেছ, তা তোমাদের জন্য। আর তারা যা করে গেছে তার জন্য তোমরা জিজ্ঞেসিত হবে না। (সূরা বাক্বারা- ১৩৪)
قُلْ لَّا تُسْاَلُوْنَ عَمَّاۤ اَجْرَمْنَا وَلَا نُسْاَلُ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ
বলো, আমরা যে অপরাধ করেছি সেজন্য তোমরা জিজ্ঞেসিত হবে না এবং তোমরা যা কর তার জন্য আমরাও জিজ্ঞেসিত হব না। (সূরা সাবা- ২৫)
سَنَفْرُغُ لَكُمْ اَيُّهَا الثَّقَلَانِ
হে মানুষ ও জিন! শীঘ্রই আমি তোমাদের প্রতি (হিসাব-নিকাশের জন্য) মনোনিবেশ করব। (সূরা আর রহমান- ৩১)
কোন জিনিসই হিসাবের বাইরে থাকবে না :
يَا بُنَيَّ اِنَّهَاۤ اِنْ تَكُ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِّنْ خَرْدَلٍ فَتَكُنْ فِيْ صَخْرَةٍ اَوْ فِى السَّمَاوَاتِ اَوْ فِى الْاَرْضِ يَاْتِ بِهَا اللهُؕ اِنَّ اللهَ لَطِيْفٌ خَبِيْرٌ
হে আমার ছেলে! কোনকিছু যদি সরিষার বীজের পরিমাণও হয় এবং তা যদি পাথরের ভেতরেও থাকে অথবা আসমানে কিংবা ভূগর্ভে, তবুও তা আল্লাহ উপস্থিত করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সূক্ষ্মদর্শী ও সম্যক অবহিত। (সূরা লুক্বমান- ১৬)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর জ্ঞান ও তাঁর পাকড়াও হতে কেউ বাঁচতে পারে না। পাথরের মধ্যে ছোট্ট একটি কণা তোমার দৃষ্টির অগোচরে থাকতে পারে কিন্তু তাঁর কাছে তা সুস্পষ্ট। আকাশে অবস্থিত একটি ক্ষুদ্রতম কণিকা তোমার থেকে বহু দূরবর্তী হতে পারে, ভূমির গভীরে অবস্থিত কোন জিনিসের প্রতি তোমার দৃষ্টি শেষ হয়ে যেতে পারে; কিন্তু তা আল্লাহর অতি নিকটতর। কাজেই তুমি কোথাও এমন কোন সৎ বা অসৎকাজ করতে পার না, যা আল্লাহর অগোচরে থেকে যায়। তিনি তা জানেন কেবল তা নয় বরং যখন হিসাব-নিকাশের সময় আসবে তখন তিনি তোমাদের প্রত্যেকটি কাজের রেকর্ডও তোমাদের সামনে উপস্থাপন করবেন।
সরিষা পরিমাণ জিনিসেরও হিসাব হবে :
وَنَضَعُ الْمَوَازِيْنَ الْقِسْطَ لِيَوْمِ الْقِيَامَةِ فَلَا تُظْلَمُ نَفْسٌ شَيْئًاؕ وَاِنْ كَانَ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِّنْ خَرْدَلٍ اَتَيْنَا بِهَاؕ وَكَفٰى بِنَا حَاسِبِيْنَ
আমি কিয়ামতের দিন ন্যায়বিচারের মানদন্ড স্থাপন করব, সুতরাং কারো প্রতি কোন অবিচার করা হবে না। অতঃপর কারো কর্ম যদি তিল পরিমাণ ওজনেরও হয়, তবুও তা উপস্থিত করব; (জেনে রেখো) হিসাব গ্রহণকারীরূপে আমিই যথেষ্ট। (সূরা আম্বিয়া- ৪৭)
হিসাবের আওতার বাইরে কেউ যেতে পারবে না :
يَا مَعْشَرَ الْجِنِّ وَالْاِنْسِ اِنِ اسْتَطَعْتُمْ اَنْ تَنْفُذُوْا مِنْ اَقْطَارِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ فَانْفُذُوْاؕ لَا تَنْفُذُوْنَ اِلَّا بِسُلْطَانٍ
হে জিন ও মানবজাতি! আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সীমা হতে যদি তোমরা বের হতে সক্ষম হও, তবে বের হয়ে যাও। কিন্তু (আল্লাহ প্রদত্ত) ক্ষমতা ছাড়া তোমরা তো তা অতিক্রম করতে পারবে না। (সূরা আর রহমান- ৩৩)
প্রশ্ন করার জন্য সবাইকে থামানো হবে :
وَقِفُوْهُمْ اِنَّهُمْ مَّسْئُوْلُوْنَ
আর তাদেরকে থামাও, অবশ্যই তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে। (সূরা সাফ্ফাত- ২৪)
নবীদেরকেও প্রশ্ন করা হবে :
فَلَنَسْاَلَنَّ الَّذِيْنَ اُرْسِلَ اِلَيْهِمْ وَلَنَسْاَلَنَّ الْمُرْسَلِيْنَ
অতঃপর যাদের নিকট রাসূল প্রেরণ করা হয়েছিল, অবশ্যই আমি তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করব এবং রাসূলদেরকেও জিজ্ঞেস করব। (সূরা আ‘রাফ- ৬)
يَوْمَ يَجْمَعُ اللهُ الرُّسُلَ فَيَقُوْلُ مَاذَاۤ اُجِبْتُمْؕ قَالُوْا لَا عِلْمَ لَنَاؕ اِنَّكَ اَنْتَ عَلَّامُ الْغُيُوْبِ
সেদিন আল্লাহ রাসূলগণকে একত্র করবেন এবং জিজ্ঞেস করবেন, তোমরা কী উত্তর পেয়েছিলে? তখন তারা বলবে, এ বিষয়ে আমাদের কোন জ্ঞান নেই; আপনিই তো অদৃশ্য বিষয় সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত। (সূরা মায়েদা- ১০৯)
ব্যাখ্যা : আখিরাতে জিজ্ঞাসাবাদ সরাসরি রিসালাতের ভিত্তিতেই অনুষ্ঠিত হবে। একদিকে নবীদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে, মানব সম্প্রদায়ের কাছে আল্লাহর পয়গাম পৌঁছে দেয়ার জন্য তোমরা কী কী কাজ করেছ? অন্যদিকে যাদের কাছে দাওয়াত পৌঁছে গেছে তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে, এ দাওয়াতের সাথে তোমরা কী ব্যবহার করেছ? যেসব ব্যক্তি ও সম্প্রদায়ের কাছে নবীদের শিক্ষা পৌঁছে গেছে তাদের সম্পর্কে কুরআন স্পষ্টভাবে ঘোষণা করছে যে, তারা নিজেদের কুফরী, ফাসিকী ও নাফরমানির স্বপক্ষে কোন যুক্তি-প্রমাণ পেশ করতে পারবে না। তখন লজ্জায় ও অনুতাপে জাহান্নামের পথে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া কিয়ামতের দিন তাদের জন্য দ্বিতীয় কোন পথ থাকবে না।
সকল নিয়ামতের হিসাব হবে :
ثُمَّ لَتُسْاَلُنَّ يَوْمَئِذٍ عَنِ النَّعِيْمِ
এরপর অবশ্যই সেদিন তোমরা নিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞেসিত হবে। (সূরা তাকাসুর- ৮)
ওয়াদা রক্ষার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হবে :
وَاَوْفُوْا بِالْعَهْدِۚ اِنَّ الْعَهْدَ كَانَ مَسْئُوْلًا
প্রতিশ্রুতি পালন করো; নিশ্চয় প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩৪)
শরীরের অঙ্গ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে :
اِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ اُولٰٓئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُوْلًا
কর্ণ, চক্ষু, হৃদয় তাদের প্রত্যেকটি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩৬)
মানুষ কী কাজ করেছে, তা জিজ্ঞেস করা হবে :
وَلَتُسْاَلُنَّ عَمَّا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
তোমরা যা কর, অবশ্যই তোমাদেরকে সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে। (সূরা নাহল- ৯৩)
কুরআনের উপর আমল করা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে :
وَاِنَّهٗ لَذِكْرٌ لَّكَ وَلِقَوْمِكَۚ وَسَوْفَ تُسْاَلُوْنَ
নিশ্চয় এটা (কুরআন) তোমার ও তোমার সম্প্রদায়ের জন্য উপদেশবাণী, সুতরাং অচিরেই তোমাদেরকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে। (সূরা যুখরুফ- ৪৪)
যে অপরাধী কেবল তাকেই প্রশ্ন করা হবে :
تِلْكَ اُمَّةٌ قَدْ خَلَتْۚ لَهَا مَا كَسَبَتْ وَلَكُمْ مَّا كَسَبْتُمْۚ وَلَا تُسْاَلُوْنَ عَمَّا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
ওরা একটা দল ছিল, যা অতীত হয়ে গেছে। তারা যা অর্জন করেছিল তা তাদের জন্য এবং তোমরা যা অর্জন করেছ, তা তোমাদের জন্য। আর তারা যা করে গেছে তার জন্য তোমরা জিজ্ঞেসিত হবে না। (সূরা বাক্বারা- ১৩৪)
قُلْ لَّا تُسْاَلُوْنَ عَمَّاۤ اَجْرَمْنَا وَلَا نُسْاَلُ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ
বলো, আমরা যে অপরাধ করেছি সেজন্য তোমরা জিজ্ঞেসিত হবে না এবং তোমরা যা কর তার জন্য আমরাও জিজ্ঞেসিত হব না। (সূরা সাবা- ২৫)
প্রত্যেক জাতির পক্ষ থেকে সাক্ষী দাঁড় করানো হবে :
وَيَوْمَ نَبْعَثُ فِيْ كُلِّ اُمَّةٍ شَهِيْدًا عَلَيْهِمْ مِّنْ اَنْفُسِهِمْ وَجِئْنَا بِكَ شَهِيْدًا عَلٰى هٰۤؤُلَآءِ
সেদিন আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের মধ্য হতে তাদের বিষয়ে এক একজন সাক্ষী পুনরুত্থিত করব এবং তোমাকেও এদের উপর সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত করব। (সূরা নাহল- ৮৯)
فَكَيْفَ اِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ اُمَّةٍ ۢبِشَهِيْدٍ وَّجِئْنَا بِكَ عَلٰى هٰۤؤُلَآءِ شَهِيْدًا
যখন আমি প্রত্যেক উম্মত হতে একজন করে সাক্ষী উপস্থিত করব এবং তোমাকে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত করব, তখন কী অবস্থা হবে? (সূরা নিসা- ৪১)
ব্যাখ্যা : সাক্ষীরা মানুষের কাজকর্ম সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবে। এসব সাক্ষী কেবল মানুষই হবে তা জরুরি নয়। নবী, আমলনামা, ফেরেশতা, জিন, জীবজন্তু, মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গসমূহ, জমিন, ঘরবাড়ি, দরজা, প্রাচীর, গাছপালা, পাথর সবকিছুই এসব সাক্ষীর অন্তর্ভুক্ত হবে। যে নবী উম্মতকে তাওহীদ ও আল্লাহর আনুগত্যের প্রতি দাওয়াত দিয়েছিলেন, তাদেরকে শিরক ও কুসংস্কার সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন এবং কিয়ামতের ময়দানে জবাবদিহি করার ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছিলেন- তিনি এ মর্মে সাক্ষ্য দেবেন যে, তিনি তাদের কাছে সত্যের বাণী পৌঁছে দিয়েছিলেন। কাজেই তারা যা কিছু করছে তা অজ্ঞতার কারণে নয় বরং জেনে বুঝেই করেছে।
উম্মতে মুহাম্মাদীরাও সাক্ষ্য দেবে :
وَكَذٰلِكَ جَعَلْنَاكُمْ اُمَّةً وَّسَطًا لِّتَكُوْنُوْا شُهَدَآءَ عَلَى النَّاسِ وَيَكُوْنَ الرَّسُوْلُ عَلَيْكُمْ شَهِيْدًا
এভাবে আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থী (ন্যায়পরায়ণ) উম্মত হিসেবে মনোনীত করেছি, যেন তোমরা মানবজাতির জন্য সাক্ষী হও এবং রাসূলও তোমাদের জন্য সাক্ষী হয়। (সূরা বাক্বারা- ১৪৩)
ফেরেশতাও সাক্ষ্য দেবে :
وَجَآءَتْ كُلُّ نَفْسٍ مَّعَهَا سَآئِقٌ وَّشَهِيْدٌ
সেদিন প্রত্যেক ব্যক্তি উপস্থিত হবে, তার সাথে থাকবে চালক ও সাক্ষী। (সূরা ক্বাফ- ২১)
মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গও সাক্ষ্য দেবে :
يَوْمَ تَشْهَدُ عَلَيْهِمْ اَلْسِنَتُهُمْ وَاَيْدِيْهِمْ وَاَرْجُلُهُمْ بِمَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
সেদিন তাদের জিহবা, তাদের হাত ও তাদের পা সমূহ তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। (সূরা নূর- ২৪)
اَلْيَوْمَ نَخْتِمُ عَلٰۤى اَفْوَاهِهِمْ وَتُكَلِّمُنَاۤ اَيْدِيْهِمْ وَتَشْهَدُ اَرْجُلُهُمْ بِمَا كَانُوْا يَكْسِبُوْنَ
আজ আমি তাদের মুখে মোহর মেরে দেব। অতঃপর তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে এবং তারা যা করত সে সম্পর্কে তাদের পা সাক্ষ্য প্রদান করবে। (সূরা ইয়াসীন- ৬৫)
وَيَوْمَ يُحْشَرُ اَعْدَآءُ اللهِ اِلَى النَّارِ فَهُمْ يُوْزَعُوْنَ – حَتّٰۤى اِذَا مَا جَآءُوْهَا شَهِدَ عَلَيْهِمْ سَمْعُهُمْ وَاَبْصَارُهُمْ وَجُلُوْدُهُمْ بِمَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ – وَقَالُوْا لِجُلُوْدِهِمْ لِمَ شَهِدْتُّمْ عَلَيْنَاؕ قَالُوْاۤ اَنْطَقَنَا اللهُ الَّذِيْۤ اَنْطَقَ كُلَّ شَيْءٍ وَّهُوَ خَلَقَكُمْ اَوَّلَ مَرَّةٍ وَّاِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ – وَمَا كُنْتُمْ تَسْتَتِرُوْنَ اَنْ يَّشْهَدَ عَلَيْكُمْ سَمْعُكُمْ وَلَاۤ اَبْصَارُكُمْ وَلَا جُلُوْدُكُمْ وَلٰكِنْ ظَنَنْتُمْ اَنَّ اللهَ لَا يَعْلَمُ كَثِيْرًا مِّمَّا تَعْمَلُوْنَ – وَذٰلِكُمْ ظَنُّكُمُ الَّذِيْ ظَنَنْتُمْ بِرَبِّكُمْ اَرْدَاكُمْ فَاَصْبَحْتُمْ مِّنَ الْخَاسِرِيْنَ
সেদিন আল্লাহর শত্রুদেরকে জাহান্নামের দিকে সমবেত করা হবে। অতঃপর তাদেরকে বিভিন্ন দলে হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। পরিশেষে যখন তারা জাহান্নামের সন্নিকটে পৌঁছবে, তখন তাদের কর্ণ, চক্ষু ও ত্বক (চামড়া) তাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। জাহান্নামীরা তাদের ত্বককে জিজ্ঞেস করবে, তোমরা আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছ কেন? উত্তরে তারা বলবে, আল্লাহ আমাদেরকে বাকশক্তি দিয়েছেন, যিনি সবকিছুকে বাকশক্তি দিয়ে থাকেন। তিনি তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন এবং তোমরা তাঁরই নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে। তোমরা তো কোনকিছুই গোপন করতে না এ বিশ্বাসে যে, তোমাদের কর্ণ, চক্ষু এবং ত্বক তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে না। উপরন্তু তোমরা মনে করতে যে, তোমরা যা করতে তার অনেক কিছুই আল্লাহ জানেন না। মূলত তোমাদের প্রতিপালক সম্বন্ধে তোমাদের এ ধারণাই তোমাদেরকে ধ্বংসের দিকে ফিরিয়ে দিয়েছে। ফলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছ। (সূরা হা-মীম সাজদা, ১৯-২৩)
ব্যাখ্যা : যে অপরাধীরা তাদের অপরাধ মেনে নিতে অস্বীকার করবে, সাক্ষীদের মিথ্যা বলবে এবং আমলনামার নির্ভুলতাও মেনে নেবে না; তাদের ব্যাপারে এ ফায়সালা দেয়া হবে। তখন আল্লাহ তাদেরকে নির্দেশ দেবেন- ঠিক আছে, তোমাদের বাজে কথা বন্ধ করো এবং লক্ষ্য করো, তোমাদের নিজেদের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তোমাদের কৃতকর্মের কী বর্ণনা দেয়। তাই বলা হয়েছে, তাদের হাত, পা, চোখ, কান, জিহবা এবং শরীরের চর্মও সব কাজের পূর্ণ বিবরণ শুনিয়ে দেবে।
জমিন মানুষের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দেবে :
يَوْمَئِذٍ تُحَدِّثُ اَخْبَارَهَا ‐ بِاَنَّ رَبَّكَ اَوْحٰى لَهَا
সেদিন পৃথিবী তার বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে। কেননা, আপনার পালনকর্তা তাকে আদেশ করবেন। (সূরা যিলযাল- ৪, ৫)
ব্যাখ্যা : এ থেকে জানা যায় যে, কিয়ামতের দিন কেবল মানবদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গই সাক্ষ্য দেবে না, বরং যেসব ব্যক্তি অথবা বস্তুর সামনে কাজ করেছিল অথবা যেসব ব্যক্তি অথবা বস্তুর মাধ্যমে কাজ সংঘটিত করেছিল সবকিছুই কথা বলে উঠবে।
পাপীরা নিজেরা নিজেদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে :
يَا مَعْشَرَ الْجِنِّ وَالْاِنْسِ اَلَمْ يَاْتِكُمْ رُسُلٌ مِّنْكُمْ يَقُصُّوْنَ عَلَيْكُمْ اٰيَاتِيْ وَيُنْذِرُوْنَكُمْ لِقَآءَ يَوْمِكُمْ هٰذَا قَالُوْا شَهِدْنَا عَلٰۤى اَنْفُسِنَا وَغَرَّتْهُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا وَشَهِدُوْا عَلٰۤى اَنْفُسِهِمْ اَنَّهُمْ كَانُوْا كَافِرِيْنَ
আমি তাদেরকে বলব, হে জিন ও মানব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্য হতে কি রাসূলগণ তোমাদের কাছে আসেনি, যারা আমার নিদর্শনসমূহ তোমাদের নিকট বর্ণনা করত এবং তোমাদেরকে এ দিনের সম্মুখীন হওয়া সম্বন্ধে সতর্ক করত? তারা বলবে, আমরা আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলাম। বস্তুত পার্থিব জীবন তাদেরকে প্রতারিত করেছিল, আর তারা নিজেদের বিরুদ্ধে এ সাক্ষ্য দেবে যে, তারা কাফির ছিল। (সূরা আন‘আম- ১৩০)
وَيَوْمَ نَبْعَثُ فِيْ كُلِّ اُمَّةٍ شَهِيْدًا عَلَيْهِمْ مِّنْ اَنْفُسِهِمْ وَجِئْنَا بِكَ شَهِيْدًا عَلٰى هٰۤؤُلَآءِ
সেদিন আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের মধ্য হতে তাদের বিষয়ে এক একজন সাক্ষী পুনরুত্থিত করব এবং তোমাকেও এদের উপর সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত করব। (সূরা নাহল- ৮৯)
فَكَيْفَ اِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ اُمَّةٍ ۢبِشَهِيْدٍ وَّجِئْنَا بِكَ عَلٰى هٰۤؤُلَآءِ شَهِيْدًا
যখন আমি প্রত্যেক উম্মত হতে একজন করে সাক্ষী উপস্থিত করব এবং তোমাকে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত করব, তখন কী অবস্থা হবে? (সূরা নিসা- ৪১)
ব্যাখ্যা : সাক্ষীরা মানুষের কাজকর্ম সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবে। এসব সাক্ষী কেবল মানুষই হবে তা জরুরি নয়। নবী, আমলনামা, ফেরেশতা, জিন, জীবজন্তু, মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গসমূহ, জমিন, ঘরবাড়ি, দরজা, প্রাচীর, গাছপালা, পাথর সবকিছুই এসব সাক্ষীর অন্তর্ভুক্ত হবে। যে নবী উম্মতকে তাওহীদ ও আল্লাহর আনুগত্যের প্রতি দাওয়াত দিয়েছিলেন, তাদেরকে শিরক ও কুসংস্কার সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন এবং কিয়ামতের ময়দানে জবাবদিহি করার ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছিলেন- তিনি এ মর্মে সাক্ষ্য দেবেন যে, তিনি তাদের কাছে সত্যের বাণী পৌঁছে দিয়েছিলেন। কাজেই তারা যা কিছু করছে তা অজ্ঞতার কারণে নয় বরং জেনে বুঝেই করেছে।
উম্মতে মুহাম্মাদীরাও সাক্ষ্য দেবে :
وَكَذٰلِكَ جَعَلْنَاكُمْ اُمَّةً وَّسَطًا لِّتَكُوْنُوْا شُهَدَآءَ عَلَى النَّاسِ وَيَكُوْنَ الرَّسُوْلُ عَلَيْكُمْ شَهِيْدًا
এভাবে আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থী (ন্যায়পরায়ণ) উম্মত হিসেবে মনোনীত করেছি, যেন তোমরা মানবজাতির জন্য সাক্ষী হও এবং রাসূলও তোমাদের জন্য সাক্ষী হয়। (সূরা বাক্বারা- ১৪৩)
ফেরেশতাও সাক্ষ্য দেবে :
وَجَآءَتْ كُلُّ نَفْسٍ مَّعَهَا سَآئِقٌ وَّشَهِيْدٌ
সেদিন প্রত্যেক ব্যক্তি উপস্থিত হবে, তার সাথে থাকবে চালক ও সাক্ষী। (সূরা ক্বাফ- ২১)
মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গও সাক্ষ্য দেবে :
يَوْمَ تَشْهَدُ عَلَيْهِمْ اَلْسِنَتُهُمْ وَاَيْدِيْهِمْ وَاَرْجُلُهُمْ بِمَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
সেদিন তাদের জিহবা, তাদের হাত ও তাদের পা সমূহ তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। (সূরা নূর- ২৪)
اَلْيَوْمَ نَخْتِمُ عَلٰۤى اَفْوَاهِهِمْ وَتُكَلِّمُنَاۤ اَيْدِيْهِمْ وَتَشْهَدُ اَرْجُلُهُمْ بِمَا كَانُوْا يَكْسِبُوْنَ
আজ আমি তাদের মুখে মোহর মেরে দেব। অতঃপর তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে এবং তারা যা করত সে সম্পর্কে তাদের পা সাক্ষ্য প্রদান করবে। (সূরা ইয়াসীন- ৬৫)
وَيَوْمَ يُحْشَرُ اَعْدَآءُ اللهِ اِلَى النَّارِ فَهُمْ يُوْزَعُوْنَ – حَتّٰۤى اِذَا مَا جَآءُوْهَا شَهِدَ عَلَيْهِمْ سَمْعُهُمْ وَاَبْصَارُهُمْ وَجُلُوْدُهُمْ بِمَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ – وَقَالُوْا لِجُلُوْدِهِمْ لِمَ شَهِدْتُّمْ عَلَيْنَاؕ قَالُوْاۤ اَنْطَقَنَا اللهُ الَّذِيْۤ اَنْطَقَ كُلَّ شَيْءٍ وَّهُوَ خَلَقَكُمْ اَوَّلَ مَرَّةٍ وَّاِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ – وَمَا كُنْتُمْ تَسْتَتِرُوْنَ اَنْ يَّشْهَدَ عَلَيْكُمْ سَمْعُكُمْ وَلَاۤ اَبْصَارُكُمْ وَلَا جُلُوْدُكُمْ وَلٰكِنْ ظَنَنْتُمْ اَنَّ اللهَ لَا يَعْلَمُ كَثِيْرًا مِّمَّا تَعْمَلُوْنَ – وَذٰلِكُمْ ظَنُّكُمُ الَّذِيْ ظَنَنْتُمْ بِرَبِّكُمْ اَرْدَاكُمْ فَاَصْبَحْتُمْ مِّنَ الْخَاسِرِيْنَ
সেদিন আল্লাহর শত্রুদেরকে জাহান্নামের দিকে সমবেত করা হবে। অতঃপর তাদেরকে বিভিন্ন দলে হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। পরিশেষে যখন তারা জাহান্নামের সন্নিকটে পৌঁছবে, তখন তাদের কর্ণ, চক্ষু ও ত্বক (চামড়া) তাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। জাহান্নামীরা তাদের ত্বককে জিজ্ঞেস করবে, তোমরা আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছ কেন? উত্তরে তারা বলবে, আল্লাহ আমাদেরকে বাকশক্তি দিয়েছেন, যিনি সবকিছুকে বাকশক্তি দিয়ে থাকেন। তিনি তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন এবং তোমরা তাঁরই নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে। তোমরা তো কোনকিছুই গোপন করতে না এ বিশ্বাসে যে, তোমাদের কর্ণ, চক্ষু এবং ত্বক তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে না। উপরন্তু তোমরা মনে করতে যে, তোমরা যা করতে তার অনেক কিছুই আল্লাহ জানেন না। মূলত তোমাদের প্রতিপালক সম্বন্ধে তোমাদের এ ধারণাই তোমাদেরকে ধ্বংসের দিকে ফিরিয়ে দিয়েছে। ফলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছ। (সূরা হা-মীম সাজদা, ১৯-২৩)
ব্যাখ্যা : যে অপরাধীরা তাদের অপরাধ মেনে নিতে অস্বীকার করবে, সাক্ষীদের মিথ্যা বলবে এবং আমলনামার নির্ভুলতাও মেনে নেবে না; তাদের ব্যাপারে এ ফায়সালা দেয়া হবে। তখন আল্লাহ তাদেরকে নির্দেশ দেবেন- ঠিক আছে, তোমাদের বাজে কথা বন্ধ করো এবং লক্ষ্য করো, তোমাদের নিজেদের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তোমাদের কৃতকর্মের কী বর্ণনা দেয়। তাই বলা হয়েছে, তাদের হাত, পা, চোখ, কান, জিহবা এবং শরীরের চর্মও সব কাজের পূর্ণ বিবরণ শুনিয়ে দেবে।
জমিন মানুষের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দেবে :
يَوْمَئِذٍ تُحَدِّثُ اَخْبَارَهَا ‐ بِاَنَّ رَبَّكَ اَوْحٰى لَهَا
সেদিন পৃথিবী তার বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে। কেননা, আপনার পালনকর্তা তাকে আদেশ করবেন। (সূরা যিলযাল- ৪, ৫)
ব্যাখ্যা : এ থেকে জানা যায় যে, কিয়ামতের দিন কেবল মানবদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গই সাক্ষ্য দেবে না, বরং যেসব ব্যক্তি অথবা বস্তুর সামনে কাজ করেছিল অথবা যেসব ব্যক্তি অথবা বস্তুর মাধ্যমে কাজ সংঘটিত করেছিল সবকিছুই কথা বলে উঠবে।
পাপীরা নিজেরা নিজেদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে :
يَا مَعْشَرَ الْجِنِّ وَالْاِنْسِ اَلَمْ يَاْتِكُمْ رُسُلٌ مِّنْكُمْ يَقُصُّوْنَ عَلَيْكُمْ اٰيَاتِيْ وَيُنْذِرُوْنَكُمْ لِقَآءَ يَوْمِكُمْ هٰذَا قَالُوْا شَهِدْنَا عَلٰۤى اَنْفُسِنَا وَغَرَّتْهُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا وَشَهِدُوْا عَلٰۤى اَنْفُسِهِمْ اَنَّهُمْ كَانُوْا كَافِرِيْنَ
আমি তাদেরকে বলব, হে জিন ও মানব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্য হতে কি রাসূলগণ তোমাদের কাছে আসেনি, যারা আমার নিদর্শনসমূহ তোমাদের নিকট বর্ণনা করত এবং তোমাদেরকে এ দিনের সম্মুখীন হওয়া সম্বন্ধে সতর্ক করত? তারা বলবে, আমরা আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলাম। বস্তুত পার্থিব জীবন তাদেরকে প্রতারিত করেছিল, আর তারা নিজেদের বিরুদ্ধে এ সাক্ষ্য দেবে যে, তারা কাফির ছিল। (সূরা আন‘আম- ১৩০)
মানুষের সকল কার্যকলাপ লিখা হচ্ছে :
وَكُلَّ شَيْءٍ اَحْصَيْنَاهُ كِتَابًا
আমি সবকিছুই লিখিতভাবে সংরক্ষণ করে রেখেছি। (সূরা নাবা- ২৯)
ব্যাখ্যা : মানুষের সমস্ত কথা ও কাজ, তাদের সবরকমের উঠাবসা ও চলাফেরা এমনকি তাদের চিন্তা, মনোভাব, সংকল্প ও উদ্দেশ্যাবলির পূর্ণাঙ্গ রেকর্ড আল্লাহ তৈরি করে রেখেছেন। সেই রেকর্ড থেকে কোনকিছুই বাদ যায় না।
সম্মানিত ফেরেশতারা তা লিখছেন :
وَاِنَّ عَلَيْكُمْ لَحَافِظِيْنَ – كِرَامًا كَاتِبِيْنَ – يَعْلَمُوْنَ مَا تَفْعَلُوْنَ
নিশ্চয় তোমাদের উপর নিযুক্ত রয়েছে সংরক্ষকগণ এবং সম্মানিত লেখকগণ। তোমরা যা কর তারা সে সম্পর্কে অবগত আছেন। (সূরা ইনফিতার, ১০-১২)
اِذْ يَتَلَقَّى الْمُتَلَقِّيَانِ عَنِ الْيَمِيْنِ وَعَنِ الشِّمَالِ قَعِيْدٌ
দু’জন গ্রহণকারী (ফেরেশতা) তার ডানে ও বামে বসে তার কর্ম লিপিবদ্ধ করে। (সূরা ক্বাফ- ১৭)
একটি কথাও লেখা থেকে বাদ পড়ে না :
مَا يَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ اِلَّا لَدَيْهِ رَقِيْبٌ عَتِيْدٌ
মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে তা লিপিবদ্ধ করার জন্য অতন্দ্র প্রহরী তার নিকটেই রয়েছে। (সূরা ক্বাফ- ১৮)
ব্যাখ্যা : দু’জন করে ফেরেশতা প্রত্যেক মানুষের জন্য নিয়োজিত আছে, যারা তার প্রত্যেকটি কাজকর্ম লিপিবদ্ধ করছে। কোন কাজ ও কথাই তাদের রেকর্ড থেকে বাদ পড়ে না। আল্লাহর আদালতে যখন মানুষকে পেশ করা হবে তখন কে কী করে এসেছে সে বিষয়ে আল্লাহ নিজ থেকেই অবহিত থাকবেন। তাছাড়া সে বিষয়ে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য এ দু’জন ফেরেশতাও উপস্থিত থাকবেন। তারা তার কাজকর্মের লিখিত প্রমাণাদি এনে সামনে পেশ করবেন। যে পরিবেশে মানুষ অবস্থান করে ও কাজকর্ম করে তাতে চতুর্দিকের প্রতিটি অণু-পরমাণুর উপর তার কণ্ঠস্বর, ছবি ও গতিবিধির ছাপ পড়ে যাচ্ছে। মানুষের নিজ দেহ এবং তার চারপাশের প্রতিটি জিনিস ফেরেশতাদের জন্য টেপ ও ফিল্মস্বরূপ। তারা এসব টেপ ও ফিল্মের উপর প্রতিটি শব্দ এবং প্রতিটি ছবি অতি সূক্ষ্ম ও খুঁটিনাটি বিষয়সহ অবিকল ধারণ করতে পারে। পৃথিবীতে ব্যক্তি যেসব কাজ করত কিয়ামতের দিন তাকে তার নিজ কানে নিজ কণ্ঠস্বরে সেগুলো শুনিয়ে দিতে পারে। তাছাড়া নিজ চোখে তার সকল কর্মকান্ডের এমন ছবি তাকে দেখিয়ে দিতে পারে, যা অস্বীকার করা তার পÿÿ সম্ভব হবে না।
এতে ছোট-বড় সবকিছু লিখা হচ্ছে :
وَكُلُّ شَيْءٍ فَعَلُوْهُ فِى الزُّبُرِ – وَكُلُّ صَغِيْرٍ وَّكَبِيْرٍ مُّسْتَطَرٌ
তাদের সমস্ত কার্যকলাপ আমলনামায় লিখিত আছে, ছোট-বড় সবকিছুই লিপিবদ্ধ। (সূরা ক্বামার- ৫২, ৫৩)
মানুষের গোপন কথা এবং কাজও লেখা হয় :
اَمْ يَحْسَبُوْنَ اَنَّا لَا نَسْمَعُ سِرَّهُمْ وَنَجْوَاهُمْؕ بَلٰى وَرُسُلُنَا لَدَيْهِمْ يَكْتُبُوْنَ
তারা কি মনে করে যে, আমি তাদের গোপন বিষয় ও তাদের কানাকানির খবর রাখি না? হ্যাঁ, অবশ্যই রাখি। আমার ফেরেশতারা তাদের নিকট থেকে সবকিছু লিপিবদ্ধ করে রাখছে। (সূরা যুখরুফ- ৮০)
اِنَّ رُسُلَنَا يَكْتُبُوْنَ مَا تَمْكُرُوْنَ
তোমরা যে অপকৌশল কর অবশ্যই তা আমার ফেরেশতাগণ লিখে রাখে। (সূরা ইউনুস- ২১)
মানুষের কৃতকর্মের প্রতিক্রিয়াও লেখা হয় :
وَنَكْتُبُ مَا قَدَّمُوْا وَاٰثَارَهُمْؕ وَكُلَّ شَيْءٍ اَحْصَيْنَاهُ فِۤيْ اِمَامٍ مُّبِيْنٍ
আমি লিপিবদ্ধ করে রাখি, যা তারা পূর্বে প্রেরণ করে এবং যা তারা পশ্চাতে রেখে যায়। আমি প্রত্যেক বিষয়ই স্পষ্ট কিতাবে সংরক্ষণ করে রেখেছি। (সূরা ইয়াসীন-১২)
ব্যাখ্যা : মানুষের আমলনামায় যা থাকবে তা হলো : (এক) প্রত্যেক ব্যক্তি ভালো-মন্দ যা কিছু করে, তা আল্লাহর দফতরে লিখে নেয়া হয়। (দুই) মৃত্যুর পর নিজের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উপর ও সমগ্র মানবজাতির উপর ভালো-মন্দ যা কিছু রেখে গেছে, সে সবের পূর্ণ রেকর্ডর্র্র্র্র্ ততক্ষণ পর্যন্ত হতে থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত তার তৈরি করা ভালো-মন্দকাজগুলো দুনিয়ায় চলতে থাকবে। আল্লাহ প্রত্যেক ব্যক্তিকে সব অবস্থায় নিজেই সরাসরি দেখছেন এবং তার সমস্ত গতিবিধি ও কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত রয়েছেন। আল্লাহর নিযুক্ত তত্ত্বাবধায়কও প্রত্যেক ব্যক্তির সাথে রয়েছেন এবং তারা তার জীবনের সমস্ত কার্যক্রমের রেকর্ডও সংরক্ষণ করছেন। এমন অকল্পনীয় ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্বের অধীনে থেকে যারা এ কথা মনে করে জীবন যাপন করে যে, তাদেরকে লাগামহীন উটের মতো দুনিয়ায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে এবং তাদের কার্যকলাপের জন্য কারো কাছে জবাবদিহি করতে হবে না- তারা আসলে নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনে।
নেককারদের আমলনামা থাকে ইল্লিয়্যীনে :
كَلَّاۤ اِنَّ كِتَابَ الْاَبْرَارِ لَفِيْ عِلِّيِّيْنَ – وَمَاۤ اَدْرَاكَ مَا عِلِّيُّوْنَ – كِتَابٌ مَّرْقُوْمٌ – يَشْهَدُهُ الْمُقَرَّبُوْنَ
নিশ্চয় পুণ্যবানদের আমলনামা থাকবে ইল্লিয়্যীনে। তুমি কি জান ইল্লিয়্যীন কী? (তা হচ্ছে) লিখিত কিতাব। (আল্লাহর) সান্নিধ্যপ্রাপ্ত ফেরেশতারা তা প্রত্যক্ষ করবে। (সূরা মুতাফফিফীন, ১৮-২১)
পাপীদের আমলনামা থাকে সিজ্জীনে :
كَلَّاۤ اِنَّ كِتَابَ الْفُجَّارِ لَفِيْ سِجِّيْنٍ – وَمَاۤ اَدْرَاكَ مَا سِجِّيْنٌ – كِتَابٌ مَّرْقُوْمٌ
কখনই না, নিশ্চয় পাপাচারীদের আমলনামা থাকবে সিজ্জীনে। সিজ্জীন কী তা কি তুমি জান? তা হচ্ছে লিখিত কিতাব। (সূরা মুতাফফিফীন, ৭-৯)
কিয়ামতের দিন আমলনামা খোলা হবে :
وَاِذَا الصُّحُفُ نُشِرَتْ
যখন আমলনামাসমূহ প্রকাশ করা হবে। (সূরা তাকভীর- ১০)
وَنُخْرِجُ لَهٗ يَوْمَ الْقِيَامَةِ كِتَابًا يَّلْقَاهُ مَنْشُوْرًا
কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য বের করব এক কিতাব, যা সে পাবে উন্মুক্ত অবস্থায়। (সূরা বনী ইসরাঈল- ১৩)
মানুষকে আমলনামার দিকে ডাকা হবে :
كُلُّ اُمَّةٍ تُدْعٰۤى اِلٰى كِتَابِهَاؕ اَلْيَوْمَ تُجْزَوْنَ مَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
প্রত্যেক সম্প্রদায়কে তাদের আমলনামার দিকে আহবান করা হবে। (বলা হবে) আজ তোমাদেরকে তারই বিনিময় দেয়া হবে, যা তোমরা করতে। (সূরা জাসিয়া- ২৮)
আমলনামা সবকিছু সঠিকভাবে তুলে ধরবে :
هٰذَا كِتَابُنَا يَنْطِقُ عَلَيْكُمْ بِالْحَقِّؕ اِنَّا كُنَّا نَسْتَنْسِخُ مَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
এই হলো আমার কিতাব, এটা তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে সঠিকভাবে। তোমরা যা করতে অবশ্যই আমি তা লিপিবদ্ধ করিয়েছিলাম। (সূরা জাসিয়া- ২৯)
ব্যাখ্যা : কলম দিয়ে কাগজের উপর লেখাই লিখে রাখার একমাত্র পদ্ধতি নয়। মানুষের কথা ও কাজ লিপিবদ্ধ করা এবং পুনরায় তা হুবহু পূর্বের মতো করে উপস্থাপনের আরো পদ্ধতি এ পৃথিবীতে মানুষ নিজেই উদ্ভাবন করেছে। ভবিষ্যতে মানুষের করায়ত্ব হবে এরূপ আরো কী কী সম্ভাবনা আছে তা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। কী কী পন্থায় আল্লাহ মানুষের এক একটি কথা ও কর্ম, তার প্রতিটি তৎপরতা, কামনা-বাসনা ও ধ্যান-ধারণার প্রতিটি বিষয় লিপিবদ্ধ করছেন এবং কীভাবে তিনি প্রত্যেক ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও জাতির গোটা জীবনের সকল কর্মকান্ড অবিকল তার সামনে পেশ করবেন তা আল্লাহই ভালো জানেন।
আমলনামা পড়ে মানুষ নিজেই নিজের হিসাব বুঝে ফেলবে :
اِقْرَاْ كِتَابَكَؕ كَفٰى بِنَفْسِكَ الْيَوْمَ عَلَيْكَ حَسِيْبًا
তুমি তোমার কিতাব পাঠ করো, আজ তুমি নিজেই তোমার হিসাব-নিকাশের জন্য যথেষ্ট। (সূরা বনী ইসরাঈল- ১৪)
পাপীরা আমলনামা দেখে ভয় পাবে এবং পরিতাপ করবে :
وَوُضِعَ الْكِتَابُ فَتَرَى الْمُجْرِمِيْنَ مُشْفِقِيْنَ مِمَّا فِيْهِ وَيَقُوْلُوْنَ يَا وَيْلَتَنَا مَالِ هٰذَا الْكِتَابِ لَا يُغَادِرُ صَغِيْرَةً وَّلَا كَبِيْرَةً اِلَّاۤ اَحْصَاهَاۚ وَوَجَدُوْا مَا عَمِلُوْا حَاضِرًاؕ وَلَا يَظْلِمُ رَبُّكَ اَحَدًا
আমলনামা উপস্থিত করা হবে এবং তাতে যা লিপিবদ্ধ আছে তার কারণে অপরাধীদেরকে আতঙ্কগ্রসত্ম অবস্থায় দেখতে পাবে। তারা বলবে, ‘হায় দুর্ভাগ্য আমাদের! এটা কেমন গ্রন্থ! যা ছোট-বড় কোনকিছুই বাদ দেয় না; বরং তা সবকিছুরই হিসাব রেখেছে।’ তারা তাদের কৃতকর্ম সম্মুখে উপস্থিত পাবে; আর তোমার প্রতিপালক কারো উপর যুলুম করবেন না। (সূরা কাহফ- ৪৯)
وَكُلَّ شَيْءٍ اَحْصَيْنَاهُ كِتَابًا
আমি সবকিছুই লিখিতভাবে সংরক্ষণ করে রেখেছি। (সূরা নাবা- ২৯)
ব্যাখ্যা : মানুষের সমস্ত কথা ও কাজ, তাদের সবরকমের উঠাবসা ও চলাফেরা এমনকি তাদের চিন্তা, মনোভাব, সংকল্প ও উদ্দেশ্যাবলির পূর্ণাঙ্গ রেকর্ড আল্লাহ তৈরি করে রেখেছেন। সেই রেকর্ড থেকে কোনকিছুই বাদ যায় না।
সম্মানিত ফেরেশতারা তা লিখছেন :
وَاِنَّ عَلَيْكُمْ لَحَافِظِيْنَ – كِرَامًا كَاتِبِيْنَ – يَعْلَمُوْنَ مَا تَفْعَلُوْنَ
নিশ্চয় তোমাদের উপর নিযুক্ত রয়েছে সংরক্ষকগণ এবং সম্মানিত লেখকগণ। তোমরা যা কর তারা সে সম্পর্কে অবগত আছেন। (সূরা ইনফিতার, ১০-১২)
اِذْ يَتَلَقَّى الْمُتَلَقِّيَانِ عَنِ الْيَمِيْنِ وَعَنِ الشِّمَالِ قَعِيْدٌ
দু’জন গ্রহণকারী (ফেরেশতা) তার ডানে ও বামে বসে তার কর্ম লিপিবদ্ধ করে। (সূরা ক্বাফ- ১৭)
একটি কথাও লেখা থেকে বাদ পড়ে না :
مَا يَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ اِلَّا لَدَيْهِ رَقِيْبٌ عَتِيْدٌ
মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে তা লিপিবদ্ধ করার জন্য অতন্দ্র প্রহরী তার নিকটেই রয়েছে। (সূরা ক্বাফ- ১৮)
ব্যাখ্যা : দু’জন করে ফেরেশতা প্রত্যেক মানুষের জন্য নিয়োজিত আছে, যারা তার প্রত্যেকটি কাজকর্ম লিপিবদ্ধ করছে। কোন কাজ ও কথাই তাদের রেকর্ড থেকে বাদ পড়ে না। আল্লাহর আদালতে যখন মানুষকে পেশ করা হবে তখন কে কী করে এসেছে সে বিষয়ে আল্লাহ নিজ থেকেই অবহিত থাকবেন। তাছাড়া সে বিষয়ে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য এ দু’জন ফেরেশতাও উপস্থিত থাকবেন। তারা তার কাজকর্মের লিখিত প্রমাণাদি এনে সামনে পেশ করবেন। যে পরিবেশে মানুষ অবস্থান করে ও কাজকর্ম করে তাতে চতুর্দিকের প্রতিটি অণু-পরমাণুর উপর তার কণ্ঠস্বর, ছবি ও গতিবিধির ছাপ পড়ে যাচ্ছে। মানুষের নিজ দেহ এবং তার চারপাশের প্রতিটি জিনিস ফেরেশতাদের জন্য টেপ ও ফিল্মস্বরূপ। তারা এসব টেপ ও ফিল্মের উপর প্রতিটি শব্দ এবং প্রতিটি ছবি অতি সূক্ষ্ম ও খুঁটিনাটি বিষয়সহ অবিকল ধারণ করতে পারে। পৃথিবীতে ব্যক্তি যেসব কাজ করত কিয়ামতের দিন তাকে তার নিজ কানে নিজ কণ্ঠস্বরে সেগুলো শুনিয়ে দিতে পারে। তাছাড়া নিজ চোখে তার সকল কর্মকান্ডের এমন ছবি তাকে দেখিয়ে দিতে পারে, যা অস্বীকার করা তার পÿÿ সম্ভব হবে না।
এতে ছোট-বড় সবকিছু লিখা হচ্ছে :
وَكُلُّ شَيْءٍ فَعَلُوْهُ فِى الزُّبُرِ – وَكُلُّ صَغِيْرٍ وَّكَبِيْرٍ مُّسْتَطَرٌ
তাদের সমস্ত কার্যকলাপ আমলনামায় লিখিত আছে, ছোট-বড় সবকিছুই লিপিবদ্ধ। (সূরা ক্বামার- ৫২, ৫৩)
মানুষের গোপন কথা এবং কাজও লেখা হয় :
اَمْ يَحْسَبُوْنَ اَنَّا لَا نَسْمَعُ سِرَّهُمْ وَنَجْوَاهُمْؕ بَلٰى وَرُسُلُنَا لَدَيْهِمْ يَكْتُبُوْنَ
তারা কি মনে করে যে, আমি তাদের গোপন বিষয় ও তাদের কানাকানির খবর রাখি না? হ্যাঁ, অবশ্যই রাখি। আমার ফেরেশতারা তাদের নিকট থেকে সবকিছু লিপিবদ্ধ করে রাখছে। (সূরা যুখরুফ- ৮০)
اِنَّ رُسُلَنَا يَكْتُبُوْنَ مَا تَمْكُرُوْنَ
তোমরা যে অপকৌশল কর অবশ্যই তা আমার ফেরেশতাগণ লিখে রাখে। (সূরা ইউনুস- ২১)
মানুষের কৃতকর্মের প্রতিক্রিয়াও লেখা হয় :
وَنَكْتُبُ مَا قَدَّمُوْا وَاٰثَارَهُمْؕ وَكُلَّ شَيْءٍ اَحْصَيْنَاهُ فِۤيْ اِمَامٍ مُّبِيْنٍ
আমি লিপিবদ্ধ করে রাখি, যা তারা পূর্বে প্রেরণ করে এবং যা তারা পশ্চাতে রেখে যায়। আমি প্রত্যেক বিষয়ই স্পষ্ট কিতাবে সংরক্ষণ করে রেখেছি। (সূরা ইয়াসীন-১২)
ব্যাখ্যা : মানুষের আমলনামায় যা থাকবে তা হলো : (এক) প্রত্যেক ব্যক্তি ভালো-মন্দ যা কিছু করে, তা আল্লাহর দফতরে লিখে নেয়া হয়। (দুই) মৃত্যুর পর নিজের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উপর ও সমগ্র মানবজাতির উপর ভালো-মন্দ যা কিছু রেখে গেছে, সে সবের পূর্ণ রেকর্ডর্র্র্র্র্ ততক্ষণ পর্যন্ত হতে থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত তার তৈরি করা ভালো-মন্দকাজগুলো দুনিয়ায় চলতে থাকবে। আল্লাহ প্রত্যেক ব্যক্তিকে সব অবস্থায় নিজেই সরাসরি দেখছেন এবং তার সমস্ত গতিবিধি ও কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত রয়েছেন। আল্লাহর নিযুক্ত তত্ত্বাবধায়কও প্রত্যেক ব্যক্তির সাথে রয়েছেন এবং তারা তার জীবনের সমস্ত কার্যক্রমের রেকর্ডও সংরক্ষণ করছেন। এমন অকল্পনীয় ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্বের অধীনে থেকে যারা এ কথা মনে করে জীবন যাপন করে যে, তাদেরকে লাগামহীন উটের মতো দুনিয়ায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে এবং তাদের কার্যকলাপের জন্য কারো কাছে জবাবদিহি করতে হবে না- তারা আসলে নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনে।
নেককারদের আমলনামা থাকে ইল্লিয়্যীনে :
كَلَّاۤ اِنَّ كِتَابَ الْاَبْرَارِ لَفِيْ عِلِّيِّيْنَ – وَمَاۤ اَدْرَاكَ مَا عِلِّيُّوْنَ – كِتَابٌ مَّرْقُوْمٌ – يَشْهَدُهُ الْمُقَرَّبُوْنَ
নিশ্চয় পুণ্যবানদের আমলনামা থাকবে ইল্লিয়্যীনে। তুমি কি জান ইল্লিয়্যীন কী? (তা হচ্ছে) লিখিত কিতাব। (আল্লাহর) সান্নিধ্যপ্রাপ্ত ফেরেশতারা তা প্রত্যক্ষ করবে। (সূরা মুতাফফিফীন, ১৮-২১)
পাপীদের আমলনামা থাকে সিজ্জীনে :
كَلَّاۤ اِنَّ كِتَابَ الْفُجَّارِ لَفِيْ سِجِّيْنٍ – وَمَاۤ اَدْرَاكَ مَا سِجِّيْنٌ – كِتَابٌ مَّرْقُوْمٌ
কখনই না, নিশ্চয় পাপাচারীদের আমলনামা থাকবে সিজ্জীনে। সিজ্জীন কী তা কি তুমি জান? তা হচ্ছে লিখিত কিতাব। (সূরা মুতাফফিফীন, ৭-৯)
কিয়ামতের দিন আমলনামা খোলা হবে :
وَاِذَا الصُّحُفُ نُشِرَتْ
যখন আমলনামাসমূহ প্রকাশ করা হবে। (সূরা তাকভীর- ১০)
وَنُخْرِجُ لَهٗ يَوْمَ الْقِيَامَةِ كِتَابًا يَّلْقَاهُ مَنْشُوْرًا
কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য বের করব এক কিতাব, যা সে পাবে উন্মুক্ত অবস্থায়। (সূরা বনী ইসরাঈল- ১৩)
মানুষকে আমলনামার দিকে ডাকা হবে :
كُلُّ اُمَّةٍ تُدْعٰۤى اِلٰى كِتَابِهَاؕ اَلْيَوْمَ تُجْزَوْنَ مَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
প্রত্যেক সম্প্রদায়কে তাদের আমলনামার দিকে আহবান করা হবে। (বলা হবে) আজ তোমাদেরকে তারই বিনিময় দেয়া হবে, যা তোমরা করতে। (সূরা জাসিয়া- ২৮)
আমলনামা সবকিছু সঠিকভাবে তুলে ধরবে :
هٰذَا كِتَابُنَا يَنْطِقُ عَلَيْكُمْ بِالْحَقِّؕ اِنَّا كُنَّا نَسْتَنْسِخُ مَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
এই হলো আমার কিতাব, এটা তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে সঠিকভাবে। তোমরা যা করতে অবশ্যই আমি তা লিপিবদ্ধ করিয়েছিলাম। (সূরা জাসিয়া- ২৯)
ব্যাখ্যা : কলম দিয়ে কাগজের উপর লেখাই লিখে রাখার একমাত্র পদ্ধতি নয়। মানুষের কথা ও কাজ লিপিবদ্ধ করা এবং পুনরায় তা হুবহু পূর্বের মতো করে উপস্থাপনের আরো পদ্ধতি এ পৃথিবীতে মানুষ নিজেই উদ্ভাবন করেছে। ভবিষ্যতে মানুষের করায়ত্ব হবে এরূপ আরো কী কী সম্ভাবনা আছে তা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। কী কী পন্থায় আল্লাহ মানুষের এক একটি কথা ও কর্ম, তার প্রতিটি তৎপরতা, কামনা-বাসনা ও ধ্যান-ধারণার প্রতিটি বিষয় লিপিবদ্ধ করছেন এবং কীভাবে তিনি প্রত্যেক ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও জাতির গোটা জীবনের সকল কর্মকান্ড অবিকল তার সামনে পেশ করবেন তা আল্লাহই ভালো জানেন।
আমলনামা পড়ে মানুষ নিজেই নিজের হিসাব বুঝে ফেলবে :
اِقْرَاْ كِتَابَكَؕ كَفٰى بِنَفْسِكَ الْيَوْمَ عَلَيْكَ حَسِيْبًا
তুমি তোমার কিতাব পাঠ করো, আজ তুমি নিজেই তোমার হিসাব-নিকাশের জন্য যথেষ্ট। (সূরা বনী ইসরাঈল- ১৪)
পাপীরা আমলনামা দেখে ভয় পাবে এবং পরিতাপ করবে :
وَوُضِعَ الْكِتَابُ فَتَرَى الْمُجْرِمِيْنَ مُشْفِقِيْنَ مِمَّا فِيْهِ وَيَقُوْلُوْنَ يَا وَيْلَتَنَا مَالِ هٰذَا الْكِتَابِ لَا يُغَادِرُ صَغِيْرَةً وَّلَا كَبِيْرَةً اِلَّاۤ اَحْصَاهَاۚ وَوَجَدُوْا مَا عَمِلُوْا حَاضِرًاؕ وَلَا يَظْلِمُ رَبُّكَ اَحَدًا
আমলনামা উপস্থিত করা হবে এবং তাতে যা লিপিবদ্ধ আছে তার কারণে অপরাধীদেরকে আতঙ্কগ্রসত্ম অবস্থায় দেখতে পাবে। তারা বলবে, ‘হায় দুর্ভাগ্য আমাদের! এটা কেমন গ্রন্থ! যা ছোট-বড় কোনকিছুই বাদ দেয় না; বরং তা সবকিছুরই হিসাব রেখেছে।’ তারা তাদের কৃতকর্ম সম্মুখে উপস্থিত পাবে; আর তোমার প্রতিপালক কারো উপর যুলুম করবেন না। (সূরা কাহফ- ৪৯)
ডান হাতে আমলনামাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা নিজেদের আমলনামা পাঠ করবে :
يَوْمَ نَدْعُوْا كُلَّ اُنَاسٍ ۢبِاِمَامِهِمْۚ فَمَنْ اُوْتِيَ كِتَابَهٗ بِيَمِيْنِه ٖ فَاُولٰٓئِكَ يَقْرَءُوْنَ كِتَابَهُمْ وَلَا يُظْلَمُوْنَ فَتِيْلًا
সেদিন আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়কে তাদের নেতাসহ আহবান করব। অতঃপর যাদের আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে, তারা তাদের আমলনামা পাঠ করবে। আর তাদের উপর সামান্য পরিমাণও যুলুম করা হবে না। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৭১)
প্রিয়জনকে তাদের আমলনামা দেখাবে :
فَاَمَّا مَنْ اُوْتِيَ كِتَابَهٗ بِيَمِيْنِهٖ فَيَقُوْلُ هَآؤُمُ اقْرَءُوْا كِتَابِيَهْ ‐ اِنِّيْ ظَنَنْتُ اَنِّيْ مُلَاقٍ حِسَابِيَهْ ‐ فَهُوَ فِيْ عِيْشَةٍ رَّاضِيَةٍ – فِيْ جَنَّةٍ عَالِيَةٍ
অতঃপর যার আমলনামা তার ডান হাতে দেয়া হবে সে (খুশীতে লোকজনকে ডেকে) বলবে, তোমরা আমার আমলনামা পড়ে দেখো। আমি জানতাম, অবশ্যই আমাকে একদিন হিসাবের সম্মুখীন হতে হবে। সুতরাং সে সুমহান জান্নাতে সন্তোষজনক জীবন-যাপন করবে। (সূরা হাক্কাহ, ১৯-২২)
তাদের হিসাব হাল্কা হবে :
فَاَمَّا مَنْ اُوْتِيَ كِتَابَهٗ بِيَمِيْنِهٖ – فَسَوْفَ يُحَاسَبُ حِسَابًا يَّسِيْرًا
অতএব যাকে তার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে, তার হিসাব-নিকাশ অতি সহজভাবে নেয়া হবে।
(সূরা ইনশিক্বাক- ৭, ৮)
তারা চরম আনন্দ লাভ করবে :
وَيَنْقَلِبُ اِلٰۤى اَهْلِهٖ مَسْرُوْرًا
অতঃপর সে তার স্বজনদের নিকট আনন্দিত হয়ে ফিরে যাবে। (সূরা ইনশিক্বাক- ৯)
يَوْمَ نَدْعُوْا كُلَّ اُنَاسٍ ۢبِاِمَامِهِمْۚ فَمَنْ اُوْتِيَ كِتَابَهٗ بِيَمِيْنِه ٖ فَاُولٰٓئِكَ يَقْرَءُوْنَ كِتَابَهُمْ وَلَا يُظْلَمُوْنَ فَتِيْلًا
সেদিন আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়কে তাদের নেতাসহ আহবান করব। অতঃপর যাদের আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে, তারা তাদের আমলনামা পাঠ করবে। আর তাদের উপর সামান্য পরিমাণও যুলুম করা হবে না। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৭১)
প্রিয়জনকে তাদের আমলনামা দেখাবে :
فَاَمَّا مَنْ اُوْتِيَ كِتَابَهٗ بِيَمِيْنِهٖ فَيَقُوْلُ هَآؤُمُ اقْرَءُوْا كِتَابِيَهْ ‐ اِنِّيْ ظَنَنْتُ اَنِّيْ مُلَاقٍ حِسَابِيَهْ ‐ فَهُوَ فِيْ عِيْشَةٍ رَّاضِيَةٍ – فِيْ جَنَّةٍ عَالِيَةٍ
অতঃপর যার আমলনামা তার ডান হাতে দেয়া হবে সে (খুশীতে লোকজনকে ডেকে) বলবে, তোমরা আমার আমলনামা পড়ে দেখো। আমি জানতাম, অবশ্যই আমাকে একদিন হিসাবের সম্মুখীন হতে হবে। সুতরাং সে সুমহান জান্নাতে সন্তোষজনক জীবন-যাপন করবে। (সূরা হাক্কাহ, ১৯-২২)
তাদের হিসাব হাল্কা হবে :
فَاَمَّا مَنْ اُوْتِيَ كِتَابَهٗ بِيَمِيْنِهٖ – فَسَوْفَ يُحَاسَبُ حِسَابًا يَّسِيْرًا
অতএব যাকে তার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে, তার হিসাব-নিকাশ অতি সহজভাবে নেয়া হবে।
(সূরা ইনশিক্বাক- ৭, ৮)
তারা চরম আনন্দ লাভ করবে :
وَيَنْقَلِبُ اِلٰۤى اَهْلِهٖ مَسْرُوْرًا
অতঃপর সে তার স্বজনদের নিকট আনন্দিত হয়ে ফিরে যাবে। (সূরা ইনশিক্বাক- ৯)
তারা লজ্জায় মুত্যু কামনা করবে :
وَاَمَّا مَنْ اُوْتِيَ كِتَابَهٗ وَرَآءَ ظَهْرهٖ – فَسَوْفَ يَدْعُوْا ثُبُوْرًا
আর যাকে তার আমলনামা পেছন দিক থেকে দেয়া হবে, অচিরেই সে মৃত্যুকে আহবান করবে।
(সূরা ইনশিক্বাক- ১০, ১১)
তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে :
وَيَصْلٰى سَعِيْرًا – اِنَّهٗ كَانَ فِۤيْ اَهْلِهٖ مَسْرُوْرًا – اِنَّهٗ ظَنَّ اَنْ لَّنْ يَّحُوْرَ
অতঃপর সে জ্বলন্ত অগ্নিতে প্রবেশ করবে। অবশ্য (দুনিয়াতে) সে স্বজনদের মধ্যে আনন্দেই ছিল। যেহেতু সে ভাবত যে, কখনই তাকে (আল্লাহর নিকট) ফিরে যেতে হবে না। (সূরা ইনশিক্বাক, ১২-১৪)
তারা কেবল আফসোস করতে থাকবে :
وَاَمَّا مَنْ اُوْتِيَ كِتَابَهٗ بِشِمَالِهٖ فَيَقُوْلُ يَا لَيْتَنِيْ لَمْ اُوْتَ كِتَابِيَهْ – وَلَمْ اَدْرِ مَا حِسَابِيَهْ – يَا لَيْتَهَا كَانَتِ الْقَاضِيَةَ – مَاۤ اَغْنٰى عَنِّيْ مَالِيَهْ – هَلَكَ عَنِّيْ سُلْطَانِيَهْ
যার আমলনামা তার বাম হাতে দেয়া হবে সে বলবে, হায়! আমাকে যদি আমার আমলনামা না দেয়া হতো এবং আমি যদি আমার হিসাব সম্পর্কে না জানতাম! হায়! মৃত্যু পর্যন্তই যদি আমার শেষ হতো! আমার ধনসম্পদ আমার কোন কাজেই আসল না, আমার ক্ষমতাও বিনাশ হয়ে গেল। (সূরা হাক্কাহ, ২৫-২৯)
وَاَمَّا مَنْ اُوْتِيَ كِتَابَهٗ وَرَآءَ ظَهْرهٖ – فَسَوْفَ يَدْعُوْا ثُبُوْرًا
আর যাকে তার আমলনামা পেছন দিক থেকে দেয়া হবে, অচিরেই সে মৃত্যুকে আহবান করবে।
(সূরা ইনশিক্বাক- ১০, ১১)
তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে :
وَيَصْلٰى سَعِيْرًا – اِنَّهٗ كَانَ فِۤيْ اَهْلِهٖ مَسْرُوْرًا – اِنَّهٗ ظَنَّ اَنْ لَّنْ يَّحُوْرَ
অতঃপর সে জ্বলন্ত অগ্নিতে প্রবেশ করবে। অবশ্য (দুনিয়াতে) সে স্বজনদের মধ্যে আনন্দেই ছিল। যেহেতু সে ভাবত যে, কখনই তাকে (আল্লাহর নিকট) ফিরে যেতে হবে না। (সূরা ইনশিক্বাক, ১২-১৪)
তারা কেবল আফসোস করতে থাকবে :
وَاَمَّا مَنْ اُوْتِيَ كِتَابَهٗ بِشِمَالِهٖ فَيَقُوْلُ يَا لَيْتَنِيْ لَمْ اُوْتَ كِتَابِيَهْ – وَلَمْ اَدْرِ مَا حِسَابِيَهْ – يَا لَيْتَهَا كَانَتِ الْقَاضِيَةَ – مَاۤ اَغْنٰى عَنِّيْ مَالِيَهْ – هَلَكَ عَنِّيْ سُلْطَانِيَهْ
যার আমলনামা তার বাম হাতে দেয়া হবে সে বলবে, হায়! আমাকে যদি আমার আমলনামা না দেয়া হতো এবং আমি যদি আমার হিসাব সম্পর্কে না জানতাম! হায়! মৃত্যু পর্যন্তই যদি আমার শেষ হতো! আমার ধনসম্পদ আমার কোন কাজেই আসল না, আমার ক্ষমতাও বিনাশ হয়ে গেল। (সূরা হাক্কাহ, ২৫-২৯)
সঠিকভাবে আমলের ওজন হবে :
وَنَضَعُ الْمَوَازِيْنَ الْقِسْطَ لِيَوْمِ الْقِيَامَةِ فَلَا تُظْلَمُ نَفْسٌ شَيْئًاؕ وَاِنْ كَانَ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِّنْ خَرْدَلٍ اَتَيْنَا بِهَاؕ وَكَفٰى بِنَا حَاسِبِيْنَ
আর আমি কিয়ামতের দিন ন্যায়বিচারের মানদন্ড স্থাপন করব। সুতরাং কারো প্রতি কোন অবিচার করা হবে না। কারো কর্ম যদি তিল পরিমাণ ওজনেরও হয়, তবুও তা উপস্থিত করব; হিসাব গ্রহণকারীরূপে আমিই যথেষ্ট। (সূরা আম্বিয়া- ৪৭)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর আদালতে এমন দাঁড়িপাল্লা কায়েম হবে, যাতে বস্তু ওজন করার পরিবর্তে মানুষের নৈতিক গুণাবলি, কর্মকান্ড ও তার পাপ-পুণ্য ওজন করা হবে। আর যথাযথ ওজন করার পর নৈতিক দিক দিয়ে কোন ব্যক্তি কোন ধরনের মর্যাদার অধিকারী তা জানিয়ে দেবে। পুণ্যবান হলে কী পরিমাণ পুণ্যবান এবং পাপী হলে কী পরিমাণ পাপী- তা জানিয়ে দেবে। একটি দাঁড়িপাল্লা যেমন দু’টি জিনিসের ওজনের পার্থক্য সঠিকভাবে জানিয়ে দেয়, ঠিক তেমনি আল্লাহর ন্যায়বিচারের দাঁড়িপাল্লাও প্রত্যেক ব্যক্তির জীবনের কাজকর্ম যাচাই করে পুণ্য ও পাপের কোন দিকটি প্রবল তা হুবহু বলে দেবে।
যাদের নেকীর পাল্লা ভারী হবে তারা জান্নাতে যাবে :
فَاَمَّا مَنْ ثَقُلَتْ مَوَازِيْنُهٗ – فَهُوَ فِيْ عِيْشَةٍ رَّاضِيَةٍ
অতএব যার (নেকীর) পাল্লা ভারী হবে, সে সুখী জীবন যাপন করবে। (সূরা ক্বারিয়াহ- ৬, ৭)
তারাই সফলকাম হবে :
وَالْوَزْنُ يَوْمَئِذِنِ الْحَقُّۚ فَمَنْ ثَقُلَتْ مَوَازِيْنُهٗ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
সেদিনের ওজন হবে সঠিক। অতঃপর যাদের (নেকীর) পাল্লা ভারী হবে, তারাই সফলকাম হবে। (সূরা আ‘রাফ- ৮)
ব্যাখ্যা : সেদিন ন্যায়ের দাঁড়িপাল্লায় হক বা সত্য ছাড়া অন্য কোন বস্তুর ওজন থাকবে না। আর ওজন ছাড়াও কোন জিনিস সত্য সাব্যস্ত হবে না। ওজনের পরিপ্রেক্ষিতেই সবকিছুর ফায়সালা হবে। মানুষের জীবনের সমগ্র কার্যাবলি দু’টি অংশে বিভক্ত হবে। একটি সৎকাজ এবং অন্যটি অসৎকাজ। মানুষের জীবনের সকল কার্যাবলির ভালো অংশ যদি তার মন্দ অংশের উপর বিজয় লাভ করে, তবেই আখিরাতে তার সাফল্য লাভ করা সম্ভব হবে। আর যে ব্যক্তির মন্দকাজগুলো তার সমস্ত ভালো কাজকে মূল্যহীন করে দেবে তার অবস্থা হবে সেই দেউলিয়া ব্যবসায়ীর মতো, যার সকল পুঁজি দেনা পরিশোধ করতে করতেই শেষ হয়ে যায়, তারপরও দেনা শেষ হয় না।
فَمَنْ ثَقُلَتْ مَوَازِيْنُهٗ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
যাদের পাল্লা ভারী হবে, তারাই হবে সফলকাম। (সূরা মু’মিনূন- ১০২)
যাদের নেকীর পাল্লা হালকা হবে, তারা জাহান্নামে যাবে :
وَاَمَّا مَنْ خَفَّتْ مَوَازِيْنُهٗ – فَاُمُّهٗ هَاوِيَةٌ – وَمَاۤ اَدْرَاكَ مَا هِيَهْ – نَارٌ حَامِيَةٌ
যার (নেকীর) পাল্লা হালকা হবে, তার ঠিকানা হবে ‘হাবিয়া’। আর আপনি কি জানেন তা কী? তা হচ্ছে প্রজ্বলিত অগ্নি। (সূরা ক্বারিয়াহ, ৮-১১)
তাদেরকে জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে :
وَمَنْ خَفَّتْ مَوَازِيْنُهٗ فَاُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ خَسِرُوْاۤ اَنْفُسَهُمْ فِيْ جَهَنَّمَ خَالِدُوْنَ – تَلْفَحُ وُجُوْهَهُمُ النَّارُ وَهُمْ فِيْهَا كَالِحُوْنَ
যাদের (নেকীর) পাল্লা হালকা হবে, তারাই নিজেদের ক্ষতি করেছে; তারা জাহান্নামে স্থায়ী হবে। অগ্নি তাদের মুখমন্ডল দগ্ধ করবে, সুতরাং সেখানে তারা থাকবে ভয়ংকর চেহারায়। (সূরা মু’মিনূন- ১০৩, ১০৪)
তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে :
وَمَنْ خَفَّتْ مَوَازِيْنُهٗ فَاُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ خَسِرُوْاۤ اَنْفُسَهُمْ بِمَا كَانُوْا بِاٰيَاتِنَا يَظْلِمُوْنَ
আর যাদের (নেকীর) পাল্লা হালকা হবে, তারা তো নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করেছে; যেহেতু তারা আমার নিদর্শনসমূহকে প্রত্যাখ্যান করত। (সূরা আ‘রাফ- ৯)
কাফিরদের আমলের কোন ওজনই থাকবে না :
اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِاٰيَاتِ رَبِّهِمْ وَلِقَآئِهٖ فَحَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْ فَلَا نُقِيْمُ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَزْنًا
তারাই সেসব লোক, যারা তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলি ও তাঁর সাথে তাদের সাক্ষাতের বিষয়টিকে অস্বীকার করে। ফলে তাদের কর্ম নিষ্ফল হয়ে যায়; সুতরাং কিয়ামতের দিন তাদের জন্য ওজনের কোন ব্যবস্থাই রাখব না। (সূরা কাহফ- ১০৫)
وَنَضَعُ الْمَوَازِيْنَ الْقِسْطَ لِيَوْمِ الْقِيَامَةِ فَلَا تُظْلَمُ نَفْسٌ شَيْئًاؕ وَاِنْ كَانَ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِّنْ خَرْدَلٍ اَتَيْنَا بِهَاؕ وَكَفٰى بِنَا حَاسِبِيْنَ
আর আমি কিয়ামতের দিন ন্যায়বিচারের মানদন্ড স্থাপন করব। সুতরাং কারো প্রতি কোন অবিচার করা হবে না। কারো কর্ম যদি তিল পরিমাণ ওজনেরও হয়, তবুও তা উপস্থিত করব; হিসাব গ্রহণকারীরূপে আমিই যথেষ্ট। (সূরা আম্বিয়া- ৪৭)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর আদালতে এমন দাঁড়িপাল্লা কায়েম হবে, যাতে বস্তু ওজন করার পরিবর্তে মানুষের নৈতিক গুণাবলি, কর্মকান্ড ও তার পাপ-পুণ্য ওজন করা হবে। আর যথাযথ ওজন করার পর নৈতিক দিক দিয়ে কোন ব্যক্তি কোন ধরনের মর্যাদার অধিকারী তা জানিয়ে দেবে। পুণ্যবান হলে কী পরিমাণ পুণ্যবান এবং পাপী হলে কী পরিমাণ পাপী- তা জানিয়ে দেবে। একটি দাঁড়িপাল্লা যেমন দু’টি জিনিসের ওজনের পার্থক্য সঠিকভাবে জানিয়ে দেয়, ঠিক তেমনি আল্লাহর ন্যায়বিচারের দাঁড়িপাল্লাও প্রত্যেক ব্যক্তির জীবনের কাজকর্ম যাচাই করে পুণ্য ও পাপের কোন দিকটি প্রবল তা হুবহু বলে দেবে।
যাদের নেকীর পাল্লা ভারী হবে তারা জান্নাতে যাবে :
فَاَمَّا مَنْ ثَقُلَتْ مَوَازِيْنُهٗ – فَهُوَ فِيْ عِيْشَةٍ رَّاضِيَةٍ
অতএব যার (নেকীর) পাল্লা ভারী হবে, সে সুখী জীবন যাপন করবে। (সূরা ক্বারিয়াহ- ৬, ৭)
তারাই সফলকাম হবে :
وَالْوَزْنُ يَوْمَئِذِنِ الْحَقُّۚ فَمَنْ ثَقُلَتْ مَوَازِيْنُهٗ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
সেদিনের ওজন হবে সঠিক। অতঃপর যাদের (নেকীর) পাল্লা ভারী হবে, তারাই সফলকাম হবে। (সূরা আ‘রাফ- ৮)
ব্যাখ্যা : সেদিন ন্যায়ের দাঁড়িপাল্লায় হক বা সত্য ছাড়া অন্য কোন বস্তুর ওজন থাকবে না। আর ওজন ছাড়াও কোন জিনিস সত্য সাব্যস্ত হবে না। ওজনের পরিপ্রেক্ষিতেই সবকিছুর ফায়সালা হবে। মানুষের জীবনের সমগ্র কার্যাবলি দু’টি অংশে বিভক্ত হবে। একটি সৎকাজ এবং অন্যটি অসৎকাজ। মানুষের জীবনের সকল কার্যাবলির ভালো অংশ যদি তার মন্দ অংশের উপর বিজয় লাভ করে, তবেই আখিরাতে তার সাফল্য লাভ করা সম্ভব হবে। আর যে ব্যক্তির মন্দকাজগুলো তার সমস্ত ভালো কাজকে মূল্যহীন করে দেবে তার অবস্থা হবে সেই দেউলিয়া ব্যবসায়ীর মতো, যার সকল পুঁজি দেনা পরিশোধ করতে করতেই শেষ হয়ে যায়, তারপরও দেনা শেষ হয় না।
فَمَنْ ثَقُلَتْ مَوَازِيْنُهٗ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
যাদের পাল্লা ভারী হবে, তারাই হবে সফলকাম। (সূরা মু’মিনূন- ১০২)
যাদের নেকীর পাল্লা হালকা হবে, তারা জাহান্নামে যাবে :
وَاَمَّا مَنْ خَفَّتْ مَوَازِيْنُهٗ – فَاُمُّهٗ هَاوِيَةٌ – وَمَاۤ اَدْرَاكَ مَا هِيَهْ – نَارٌ حَامِيَةٌ
যার (নেকীর) পাল্লা হালকা হবে, তার ঠিকানা হবে ‘হাবিয়া’। আর আপনি কি জানেন তা কী? তা হচ্ছে প্রজ্বলিত অগ্নি। (সূরা ক্বারিয়াহ, ৮-১১)
তাদেরকে জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে :
وَمَنْ خَفَّتْ مَوَازِيْنُهٗ فَاُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ خَسِرُوْاۤ اَنْفُسَهُمْ فِيْ جَهَنَّمَ خَالِدُوْنَ – تَلْفَحُ وُجُوْهَهُمُ النَّارُ وَهُمْ فِيْهَا كَالِحُوْنَ
যাদের (নেকীর) পাল্লা হালকা হবে, তারাই নিজেদের ক্ষতি করেছে; তারা জাহান্নামে স্থায়ী হবে। অগ্নি তাদের মুখমন্ডল দগ্ধ করবে, সুতরাং সেখানে তারা থাকবে ভয়ংকর চেহারায়। (সূরা মু’মিনূন- ১০৩, ১০৪)
তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে :
وَمَنْ خَفَّتْ مَوَازِيْنُهٗ فَاُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ خَسِرُوْاۤ اَنْفُسَهُمْ بِمَا كَانُوْا بِاٰيَاتِنَا يَظْلِمُوْنَ
আর যাদের (নেকীর) পাল্লা হালকা হবে, তারা তো নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করেছে; যেহেতু তারা আমার নিদর্শনসমূহকে প্রত্যাখ্যান করত। (সূরা আ‘রাফ- ৯)
কাফিরদের আমলের কোন ওজনই থাকবে না :
اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِاٰيَاتِ رَبِّهِمْ وَلِقَآئِهٖ فَحَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْ فَلَا نُقِيْمُ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَزْنًا
তারাই সেসব লোক, যারা তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলি ও তাঁর সাথে তাদের সাক্ষাতের বিষয়টিকে অস্বীকার করে। ফলে তাদের কর্ম নিষ্ফল হয়ে যায়; সুতরাং কিয়ামতের দিন তাদের জন্য ওজনের কোন ব্যবস্থাই রাখব না। (সূরা কাহফ- ১০৫)
সেদিন আল্লাহ সকলের মধ্যে ফায়সালা করবেন :
اِنَّ رَبَّكَ هُوَ يَفْصِلُ بَيْنَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِيْمَا كَانُوْا فِيْهِ يَخْتَلِفُوْنَ
তারা যে বিষয়ে পরস্পরের মধ্যে দ্বিমত করত, অবশ্যই আপনার প্রতিপালক কিয়ামতের দিন সে বিষয়ে তাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেবেন। (সূরা সাজদা- ২৫)
اِنَّ رَبَّكَ يَقْضِيْ بَيْنَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِيْمَا كَانُوْا فِيْهِ يَخْتَلِفُوْنَ
তারা যে বিষয়ে পরস্পরের মধ্যে দ্বিমত করত, অবশ্যই আপনার প্রতিপালক কিয়ামতের দিন সে বিষয়ে তাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেবেন। (সূরা জাসিয়া- ১৭)
ব্যাখ্যা : অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বিভিন্ন দলের মধ্যে মীমাংসা করে দেয়ার কথা বলেছেন, যা কিয়ামতের দিন সংঘটিত হবে। অর্থাৎ মানুষের বিভিন্ন দলের মধ্যে আল্লাহ সম্পর্কে যে মতবিরোধ ও বিবাদ রয়েছে, এ দুনিয়ায় তার কোন ফায়সালা হবে না। কিয়ামত পর্যন্ত তাদের মধ্যে বিরোধ লেগেই থাকবে। তার ফায়সালা হবে কিয়ামতের দিন। সেদিন হক বা বাতিলকে পৃথক করে দেয়া হবে; অতঃপর তাদের মধ্যে যারা সত্যপন্থী এবং যারা মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছিল, তাদের মধ্যে চূড়ান্ত মীমাংসা করে দেয়া হবে।
কারো উপর যুলুম করা হবে না :
فَالْيَوْمَ لَا تُظْلَمُ نَفْسٌ شَيْئًا وَّلَا تُجْزَوْنَ اِلَّا مَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
আজ কারো প্রতি কোন অবিচার করা হবে না এবং তোমাদেরকে কেবল তারই প্রতিফল প্রদান করা হবে, যা তোমরা করতে। (সূরা ইয়াসীন- ৫৪)
وَوُفِّيَتْ كُلُّ نَفْسٍ مَّا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُوْنَ
আর প্রত্যেকে যা করেছে তার পুরোপুরি প্রতিদান তাকে দেয়া হবে এবং তাদের উপর কোন অন্যায় করা হবে না। (সূরা আলে ইমরান- ২৫)
اَلْيَوْمَ تُجْزٰى كُلُّ نَفْسٍ ۢبِمَا كَسَبَتْؕ لَا ظُلْمَ الْيَوْمَؕ اِنَّ اللهَ سَرِيْعُ الْحِسَابِ
আজ প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার কৃতকর্মের বিনিময় দিয়ে দেয়া হবে, আজ কারো প্রতি যুলুম করা হবে না। নিশ্চয় আল্লাহ দ্রুত হিসাব সম্পন্নকারী। (সূরা মু’মিন- ১৭)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ কোন ধরনের যুলুমই হবে না। প্রকাশ থাকে যে, প্রতিদানের ক্ষেত্রে যুলুমের কয়েকটি রূপ হতে পারে। (এক) প্রতিদানের অধিকারী ব্যক্তিকে প্রতিদান না দেয়া। (দুই) সে যতটা প্রতিদান লাভের উপযুক্ত হোক না কেন তাকে তার চেয়ে কম দেয়া। (তিন) শাস্তিযোগ্য না হলেও শাস্তি দেয়া। (চার) সে যে শাস্তির উপযুক্ত, তাকে তা না দেয়া। (পাঁচ) যে কম শাস্তির উপযুক্ত তাকে বেশি শাস্তি দেয়া। (ছয়) একজনের অপরাধে অন্যজনকে শাস্তি দেয়া। আল্লাহ তা‘আলার এ বাণীর উদ্দেশ্য হচ্ছে, তাঁর আদালতে এ ধরনের কোন যুলুমই হবে না।
اِنَّ رَبَّكَ هُوَ يَفْصِلُ بَيْنَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِيْمَا كَانُوْا فِيْهِ يَخْتَلِفُوْنَ
তারা যে বিষয়ে পরস্পরের মধ্যে দ্বিমত করত, অবশ্যই আপনার প্রতিপালক কিয়ামতের দিন সে বিষয়ে তাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেবেন। (সূরা সাজদা- ২৫)
اِنَّ رَبَّكَ يَقْضِيْ بَيْنَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِيْمَا كَانُوْا فِيْهِ يَخْتَلِفُوْنَ
তারা যে বিষয়ে পরস্পরের মধ্যে দ্বিমত করত, অবশ্যই আপনার প্রতিপালক কিয়ামতের দিন সে বিষয়ে তাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেবেন। (সূরা জাসিয়া- ১৭)
ব্যাখ্যা : অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বিভিন্ন দলের মধ্যে মীমাংসা করে দেয়ার কথা বলেছেন, যা কিয়ামতের দিন সংঘটিত হবে। অর্থাৎ মানুষের বিভিন্ন দলের মধ্যে আল্লাহ সম্পর্কে যে মতবিরোধ ও বিবাদ রয়েছে, এ দুনিয়ায় তার কোন ফায়সালা হবে না। কিয়ামত পর্যন্ত তাদের মধ্যে বিরোধ লেগেই থাকবে। তার ফায়সালা হবে কিয়ামতের দিন। সেদিন হক বা বাতিলকে পৃথক করে দেয়া হবে; অতঃপর তাদের মধ্যে যারা সত্যপন্থী এবং যারা মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছিল, তাদের মধ্যে চূড়ান্ত মীমাংসা করে দেয়া হবে।
কারো উপর যুলুম করা হবে না :
فَالْيَوْمَ لَا تُظْلَمُ نَفْسٌ شَيْئًا وَّلَا تُجْزَوْنَ اِلَّا مَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
আজ কারো প্রতি কোন অবিচার করা হবে না এবং তোমাদেরকে কেবল তারই প্রতিফল প্রদান করা হবে, যা তোমরা করতে। (সূরা ইয়াসীন- ৫৪)
وَوُفِّيَتْ كُلُّ نَفْسٍ مَّا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُوْنَ
আর প্রত্যেকে যা করেছে তার পুরোপুরি প্রতিদান তাকে দেয়া হবে এবং তাদের উপর কোন অন্যায় করা হবে না। (সূরা আলে ইমরান- ২৫)
اَلْيَوْمَ تُجْزٰى كُلُّ نَفْسٍ ۢبِمَا كَسَبَتْؕ لَا ظُلْمَ الْيَوْمَؕ اِنَّ اللهَ سَرِيْعُ الْحِسَابِ
আজ প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার কৃতকর্মের বিনিময় দিয়ে দেয়া হবে, আজ কারো প্রতি যুলুম করা হবে না। নিশ্চয় আল্লাহ দ্রুত হিসাব সম্পন্নকারী। (সূরা মু’মিন- ১৭)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ কোন ধরনের যুলুমই হবে না। প্রকাশ থাকে যে, প্রতিদানের ক্ষেত্রে যুলুমের কয়েকটি রূপ হতে পারে। (এক) প্রতিদানের অধিকারী ব্যক্তিকে প্রতিদান না দেয়া। (দুই) সে যতটা প্রতিদান লাভের উপযুক্ত হোক না কেন তাকে তার চেয়ে কম দেয়া। (তিন) শাস্তিযোগ্য না হলেও শাস্তি দেয়া। (চার) সে যে শাস্তির উপযুক্ত, তাকে তা না দেয়া। (পাঁচ) যে কম শাস্তির উপযুক্ত তাকে বেশি শাস্তি দেয়া। (ছয়) একজনের অপরাধে অন্যজনকে শাস্তি দেয়া। আল্লাহ তা‘আলার এ বাণীর উদ্দেশ্য হচ্ছে, তাঁর আদালতে এ ধরনের কোন যুলুমই হবে না।
মানুষ বিতর্ক শুরু করবে :
اِنَّكَ مَيِّتٌ وَّاِنَّهُمْ مَّيِّتُوْنَ – ثُمَّ اِنَّكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عِنْدَ رَبِّكُمْ تَخْتَصِمُوْنَ
নিশ্চয় আপনি মৃত্যুবরণ করবেন, আর তারাও মৃত্যুবরণ করবে। অতঃপর কিয়ামতের দিন তারা আপনার প্রতিপালকের সামনে বিতর্ক করবে। (সূরা যুমার- ৩০, ৩১)
মানুষ শয়তানকে দোষারোপ করলে সে অস্বীকার করবে :
قَالَ قَرِيْنُهٗ رَبَّنَا مَاۤ اَطْغَيْتُهٗ وَلٰكِنْ كَانَ فِيْ ضَلَالٍ ۢبَعِيْدٍ
তার সহচর (শয়তান) বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমি তাকে অবাধ্য হতে প্ররোচিত করিনি। বস্তুত সে নিজেই দূরবর্তী ভ্রষ্টতায় পতিত ছিল। (সূরা ক্বাফ- ২৭)
শয়তান পাশ কাটিয়ে জবাব দেবে :
وَقَالَ الشَّيْطَانُ لَمَّا قُضِيَ الْاَمْرُ اِنَّ اللهَ وَعَدَكُمْ وَعْدَ الْحَقِّ وَوَعَدْتُّكُمْ فَاَخْلَفْتُكُمْؕ وَمَا كَانَ لِيَ عَلَيْكُمْ مِّنْ سُلْطَانٍ اِلَّاۤ اَنْ دَعَوْتُكُمْ فَاسْتَجَبْتُمْ لِيْۚ فَلَا تَلُوْمُوْنِيْ وَلُوْمُوْاۤ اَنْفُسَكُمْؕ مَاۤ اَنَاْ بِمُصْرِخِكُمْ وَمَاۤ اَنْتُمْ بِمُصْرِخِيَّؕ اِنِّيْ كَفَرْتُ بِمَاۤ اَشْرَكْتُمُوْنِ مِنْ قَبْلُؕ اِنَّ الظَّالِمِيْنَ لَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
যখন বিচারকার্য সম্পন্ন হবে তখন শয়তান বলবে, আল্লাহ তো তোমাদেরকে সত্য প্রতিশ্রুতিই দিয়েছিলেন এবং আমিও তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, কিন্তু আমি তোমাদেরকে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছি। তোমাদের উপর আমার তো কোন আধিপত্য ছিল না, আমি কেবল তোমাদেরকে আহবান করেছিলাম এবং তোমরা আমার আহবানে সাড়া দিয়েছিলে। সুতরাং তোমরা আমাকে দোষারোপ করো না, তোমরা নিজেরাই নিজেদের প্রতি দোষারোপ করো। আমি তোমাদের উদ্ধারে সাহায্য করতে সক্ষম নই এবং তোমরাও আমাকে উদ্ধারে সাহায্য করতে সক্ষম নও। তোমরা যে পূর্বে আমাকে আল্লাহর শরীক করেছিলে আমি তা অস্বীকার করছি; নিশ্চয় যালিমদের জন্য রয়েছে মর্মান্তিক শাসিত্ম। (সূরা ইবরাহীম- ২২)
তখন পাপীরা আক্ষেপ করবে :
وَمَنْ يَّعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْمٰنِ نُقَيِّضْ لَهٗ شَيْطَانًا فَهُوَ لَهٗ قَرِيْنٌ ‐ وَاِنَّهُمْ لَيَصُدُّوْنَهُمْ عَنِ السَّبِيْلِ وَيَحْسَبُوْنَ اَنَّهُمْ مُّهْتَدُوْنَ – حَتّٰۤى اِذَا جَآءَنَا قَالَ يَا لَيْتَ بَيْنِيْ وَبَيْنَكَ بُعْدَ الْمَشْرِقَيْنِ فَبِئْسَ الْقَرِيْنُ – وَلَنْ يَّنْفَعَكُمُ الْيَوْمَ اِذْ ظَّلَمْتُمْ اَنَّكُمْ فِى الْعَذَابِ مُشْتَرِكُوْنَ
যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ হতে বিমুখ হয়, আমি তার জন্য একজন শয়তান নিয়োজিত করি, অতঃপর সেই হয় তার সহচর। তারাই মানুষকে সৎপথ হতে বিরত রাখে; অথচ মানুষ মনে করে যে, তারা হেদায়াতের উপরই পরিচালিত হচ্ছে। অবশেষে যখন সে আমার নিকট উপস্থিত হবে, তখন সে (শয়তানকে) বলবে, হায়! আমার ও তোমার মধ্যে যদি পূর্ব ও পশ্চিমের (সমপরিমাণ) ব্যবধান থাকত! কতই না নিকৃষ্ট সহচর সে! অতঃপর (বলা হবে) আজ তোমাদের (এই পরিতাপ) কোনই উপকারে আসবে না, যেহেতু তোমরা যুলুম করেছিলে। নিশ্চয় তোমরা সকলেই শাস্তির অংশীদার। (সূরা যুখরুফ, ৩৬-৩৯)
আল্লাহ এ বিতর্ক বন্ধ করে দেবেন :
قَالَ لَا تَخْتَصِمُوْا لَدَيَّ وَقَدْ قَدَّمْتُ اِلَيْكُمْ بِالْوَعِيْدِ – مَا يُبَدَّلُ الْقَوْلُ لَدَيَّ وَمَاۤ اَنَاْ بِظَلَّامٍ لِّلْعَبِيْدِ
(আল্লাহ বলবেন) আমার সামনে ঝগড়া করো না; আমি তোমাদেরকে পূর্বেই সতর্ক করে দিয়েছিলাম। আমার কথার রদ-বদল হয় না; আর আমি আমার বান্দাদের প্রতি অবিচারকারীও নই। (সূরা ক্বাফ- ২৮, ২৯)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ তোমাদের দু’জনকেই আমি সাবধান করে দিয়েছিলাম যে, তোমাদের মধ্যে যে অন্যকে বিভ্রান্ত করবে সে কী শাস্তি পাবে এবং যে বিভ্রান্ত হবে তাকে কী পরিণাম ভোগ করতে হবে। আমার এ সতর্কবাণী সত্ত্বেও তোমরা উভয়েই যখন অপরাধে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত হওনি, তখন এ মুহূর্তে ঝগড়া করে কী লাভ? এখন শাস্তি পেতেই হবে। আমার কাছে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কোন নিয়ম নেই। তোমাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপের যে নির্দেশ আমি দিয়েছি তা এখন প্রত্যাহার করা যাবে না। তাছাড়া বিপথগামী করার ও বিপথগামী হওয়ার শাস্তি আখিরাতে কি হবে সে বিষয়ে আমি পৃথিবীতে যে নিয়মের ঘোষণা দিয়েছিলাম তাও আর পরিবর্তন হবে না।
اِنَّكَ مَيِّتٌ وَّاِنَّهُمْ مَّيِّتُوْنَ – ثُمَّ اِنَّكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عِنْدَ رَبِّكُمْ تَخْتَصِمُوْنَ
নিশ্চয় আপনি মৃত্যুবরণ করবেন, আর তারাও মৃত্যুবরণ করবে। অতঃপর কিয়ামতের দিন তারা আপনার প্রতিপালকের সামনে বিতর্ক করবে। (সূরা যুমার- ৩০, ৩১)
মানুষ শয়তানকে দোষারোপ করলে সে অস্বীকার করবে :
قَالَ قَرِيْنُهٗ رَبَّنَا مَاۤ اَطْغَيْتُهٗ وَلٰكِنْ كَانَ فِيْ ضَلَالٍ ۢبَعِيْدٍ
তার সহচর (শয়তান) বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমি তাকে অবাধ্য হতে প্ররোচিত করিনি। বস্তুত সে নিজেই দূরবর্তী ভ্রষ্টতায় পতিত ছিল। (সূরা ক্বাফ- ২৭)
শয়তান পাশ কাটিয়ে জবাব দেবে :
وَقَالَ الشَّيْطَانُ لَمَّا قُضِيَ الْاَمْرُ اِنَّ اللهَ وَعَدَكُمْ وَعْدَ الْحَقِّ وَوَعَدْتُّكُمْ فَاَخْلَفْتُكُمْؕ وَمَا كَانَ لِيَ عَلَيْكُمْ مِّنْ سُلْطَانٍ اِلَّاۤ اَنْ دَعَوْتُكُمْ فَاسْتَجَبْتُمْ لِيْۚ فَلَا تَلُوْمُوْنِيْ وَلُوْمُوْاۤ اَنْفُسَكُمْؕ مَاۤ اَنَاْ بِمُصْرِخِكُمْ وَمَاۤ اَنْتُمْ بِمُصْرِخِيَّؕ اِنِّيْ كَفَرْتُ بِمَاۤ اَشْرَكْتُمُوْنِ مِنْ قَبْلُؕ اِنَّ الظَّالِمِيْنَ لَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
যখন বিচারকার্য সম্পন্ন হবে তখন শয়তান বলবে, আল্লাহ তো তোমাদেরকে সত্য প্রতিশ্রুতিই দিয়েছিলেন এবং আমিও তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, কিন্তু আমি তোমাদেরকে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছি। তোমাদের উপর আমার তো কোন আধিপত্য ছিল না, আমি কেবল তোমাদেরকে আহবান করেছিলাম এবং তোমরা আমার আহবানে সাড়া দিয়েছিলে। সুতরাং তোমরা আমাকে দোষারোপ করো না, তোমরা নিজেরাই নিজেদের প্রতি দোষারোপ করো। আমি তোমাদের উদ্ধারে সাহায্য করতে সক্ষম নই এবং তোমরাও আমাকে উদ্ধারে সাহায্য করতে সক্ষম নও। তোমরা যে পূর্বে আমাকে আল্লাহর শরীক করেছিলে আমি তা অস্বীকার করছি; নিশ্চয় যালিমদের জন্য রয়েছে মর্মান্তিক শাসিত্ম। (সূরা ইবরাহীম- ২২)
তখন পাপীরা আক্ষেপ করবে :
وَمَنْ يَّعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْمٰنِ نُقَيِّضْ لَهٗ شَيْطَانًا فَهُوَ لَهٗ قَرِيْنٌ ‐ وَاِنَّهُمْ لَيَصُدُّوْنَهُمْ عَنِ السَّبِيْلِ وَيَحْسَبُوْنَ اَنَّهُمْ مُّهْتَدُوْنَ – حَتّٰۤى اِذَا جَآءَنَا قَالَ يَا لَيْتَ بَيْنِيْ وَبَيْنَكَ بُعْدَ الْمَشْرِقَيْنِ فَبِئْسَ الْقَرِيْنُ – وَلَنْ يَّنْفَعَكُمُ الْيَوْمَ اِذْ ظَّلَمْتُمْ اَنَّكُمْ فِى الْعَذَابِ مُشْتَرِكُوْنَ
যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ হতে বিমুখ হয়, আমি তার জন্য একজন শয়তান নিয়োজিত করি, অতঃপর সেই হয় তার সহচর। তারাই মানুষকে সৎপথ হতে বিরত রাখে; অথচ মানুষ মনে করে যে, তারা হেদায়াতের উপরই পরিচালিত হচ্ছে। অবশেষে যখন সে আমার নিকট উপস্থিত হবে, তখন সে (শয়তানকে) বলবে, হায়! আমার ও তোমার মধ্যে যদি পূর্ব ও পশ্চিমের (সমপরিমাণ) ব্যবধান থাকত! কতই না নিকৃষ্ট সহচর সে! অতঃপর (বলা হবে) আজ তোমাদের (এই পরিতাপ) কোনই উপকারে আসবে না, যেহেতু তোমরা যুলুম করেছিলে। নিশ্চয় তোমরা সকলেই শাস্তির অংশীদার। (সূরা যুখরুফ, ৩৬-৩৯)
আল্লাহ এ বিতর্ক বন্ধ করে দেবেন :
قَالَ لَا تَخْتَصِمُوْا لَدَيَّ وَقَدْ قَدَّمْتُ اِلَيْكُمْ بِالْوَعِيْدِ – مَا يُبَدَّلُ الْقَوْلُ لَدَيَّ وَمَاۤ اَنَاْ بِظَلَّامٍ لِّلْعَبِيْدِ
(আল্লাহ বলবেন) আমার সামনে ঝগড়া করো না; আমি তোমাদেরকে পূর্বেই সতর্ক করে দিয়েছিলাম। আমার কথার রদ-বদল হয় না; আর আমি আমার বান্দাদের প্রতি অবিচারকারীও নই। (সূরা ক্বাফ- ২৮, ২৯)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ তোমাদের দু’জনকেই আমি সাবধান করে দিয়েছিলাম যে, তোমাদের মধ্যে যে অন্যকে বিভ্রান্ত করবে সে কী শাস্তি পাবে এবং যে বিভ্রান্ত হবে তাকে কী পরিণাম ভোগ করতে হবে। আমার এ সতর্কবাণী সত্ত্বেও তোমরা উভয়েই যখন অপরাধে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত হওনি, তখন এ মুহূর্তে ঝগড়া করে কী লাভ? এখন শাস্তি পেতেই হবে। আমার কাছে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কোন নিয়ম নেই। তোমাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপের যে নির্দেশ আমি দিয়েছি তা এখন প্রত্যাহার করা যাবে না। তাছাড়া বিপথগামী করার ও বিপথগামী হওয়ার শাস্তি আখিরাতে কি হবে সে বিষয়ে আমি পৃথিবীতে যে নিয়মের ঘোষণা দিয়েছিলাম তাও আর পরিবর্তন হবে না।
নেতা ও অনুসারীদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হবে :
وَلَوْ تَرٰۤى اِذِ الظَّالِمُوْنَ مَوْقُوْفُوْنَ عِنْدَ رَبِّهِمْۚ يَرْجِعُ بَعْضُهُمْ اِلٰى بَعْضِ نِ الْقَوْلَ
তুমি যদি যালিমদেরকে দেখতে যখন তাদেরকে তাদের প্রতিপালকের সামনে দন্ডায়মান করা হবে, তখন তারা পরস্পর বাদ-প্রতিবাদ করতে থাকবে। (সূরা সাবা- ৩১)
অনুসারী :
يَقُوْلُ الَّذِيْنَ اسْتُضْعِفُوْا لِلَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْا لَوْلَاۤ اَنْتُمْ لَكُنَّا مُؤْمِنِيْنَ
দুর্বলরা অহংকারীদেরকে বলবে, তোমরা না থাকলে অবশ্যই আমরা মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। (সূরা সাবা- ৩১)
নেতৃবৃন্দ :
قَالَ الَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْا لِلَّذِيْنَ اسْتُضْعِفُوْاۤ اَنَحْنُ صَدَدْنَاكُمْ عَنِ الْهُدٰى بَعْدَ اِذْ جَآءَكُمْ بَلْ كُنْتُمْ مُّجْرِمِيْنَ
তখন অহংকারীরা দুর্বলদেরকে বলবে, তোমাদের নিকট হেদায়াত আসার পর আমরা কি তোমাদেরকে তা থেকে বিরত করে রেখেছিলাম? বস্তুত তোমরাই ছিলে অপরাধী। (সূরা সাবা- ৩২)
অনুসারী :
وَقَالَ الَّذِيْنَ اسْتُضْعِفُوْا لِلَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْا بَلْ مَكْرُ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ اِذْ تَاْمُرُوْنَنَاۤ اَنْ نَّكْفُرَ بِاللهِ وَنَجْعَلَ لَهٗۤ اَنْدَادًاؕ وَاَسَرُّوا النَّدَامَةَ لَمَّا رَاَوُا الْعَذَابَ
দুর্বলরা অহংকারীদেরকে বলবে, প্রকৃতপক্ষে তোমরাই দিবা-রাত্রি চক্রান্তে লিপ্ত ছিলে, আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলে যেন আমরা আল্লাহকে অমান্য করি এবং তাঁর শরীক স্থাপন করি। অতঃপর যখন তারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে, তখন তারা লজ্জা ঢাকতে থাকবে। (সূরা সাবা- ৩৩)
قَالُوْاۤ اِنَّكُمْ كُنْتُمْ تَاْتُوْنَنَا عَنِ الْيَمِيْنِ
দুর্বলরা সবলদেরকে বলবে, তোমরাই তো আমাদের কাছে ডানদিক থেকে আসতে। (সূরা সাফ্ফাত- ২৮)
ব্যাখ্যা : এখানে ডানকে যদি শক্তি অর্থে নেয়া হয় তাহলে এর অর্থ হবে আমরা দুর্বল ছিলাম, তোমরা আমাদের উপর প্রাধান্য লাভ করেছিলে। আর যদি একে কল্যাণ অর্থে নেয়া হয় তাহলে এর অর্থ হবে তোমরা কল্যাণকামী সেজে আমাদেরকে ধোঁকা দিয়েছ। তোমরা আমাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছিলে যে, যে পথে তোমরা আমাদের চালাচ্ছ এটিই একমাত্র কল্যাণের পথ। আর যদি একে কসম অর্থে গ্রহণ করা হয় তাহলে এর অর্থ হবে তোমরা কসম খেয়ে খেয়ে আমাদের নিশ্চিন্ত করতে যে, তোমরা যা পেশ করেছ তা-ই সত্য।
নেতৃবৃন্দ :
قَالُوْا بَلْ لَّمْ تَكُوْنُوْا مُؤْمِنِيْنَ – وَمَا كَانَ لَنَا عَلَيْكُمْ مِّنْ سُلْطَانٍۚ بَلْ كُنْتُمْ قَوْمًا طَاغِيْنَ – فَحَقَّ عَلَيْنَا قَوْلُ رَبِّنَاۗ اِنَّا لَذَآئِقُوْنَ ‐ فَاَغْوَيْنَاكُمْ اِنَّا كُنَّا غَاوِيْنَ
সবলরা বলবে, বরং তোমরা তো বিশ্বাসীই ছিলে না। আর তোমাদের উপর আমাদের কোন কর্তৃত্বও ছিল না, বরং তোমরা ছিলে সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়। অতএব আমাদের উপর আমাদের প্রতিপালকের কথা প্রমাণ হয়ে গেছে, এখন আমাদেরকে অবশ্যই শাস্তি ভোগ করতে হবে। আমরা তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিলাম, আর আমরা নিজেরাও পথভ্রষ্ট ছিলাম। (সূরা সাফ্ফাত, ২৯-৩২)
ব্যাখ্যা : অতএব নেতা ও অনুসারী এবং গোমরাহ ও গোমরাহকারী উভয়ই একই শাস্তি ভোগ করবে। অর্থাৎ তখন অনুসারীদের এ ওজর মেনে নেয়া হবে না যে, তারা নিজেরা গোমরাহ হয়নি বরং তাদেরকে গোমরাহ করা হয়েছিল। অন্যদিকে নেতাদের এ ওজরও গ্রহণ করা হবে না যে, গোমরাহী লোকেরা নিজেরাই সরল-সত্য পথের প্রত্যাশী ছিল না।
অনুসারী :
وَاِذْ يَتَحَآجُّوْنَ فِى النَّارِ فَيَقُوْلُ الضُّعَفَآءُ لِلَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْاۤ اِنَّا كُنَّا لَكُمْ تَبَعًا فَهَلْ اَنْتُمْ مُّغْنُوْنَ عَنَّا نَصِيْبًا مِّنَ النَّارِ
যখন তারা জাহান্নামে পরস্পর ঝগড়ায় লিপ্ত হবে তখন দুর্বলরা অহংকারীদেরকে বলবে, আমরা তো তোমাদেরই অনুসারী ছিলাম, এখন কি তোমরা আমাদের হতে জাহান্নামের আগুনের কোন অংশ নিবারণ করতে পারবে? (সূরা মু’মিন- ৪৭)
ব্যাখ্যা : তারা এমন কোন আশা নিয়ে এ কথা বলবে না যে, তাদের ঐসব নেতা কিংবা শাসক বা পথপ্রদর্শক প্রকৃতই তাদেরকে আযাব থেকে রক্ষা করতে পারবে বা তা কিছুটা লাঘব করিয়ে দেবে। তখন তাদের কাছে এ সত্য স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, এখানে এসব লোক আমাদের কোন কাজে আসার মতো নয়। তারা তাদেরকে হেয় ও লাঞ্ছিত করার জন্য বলবে, আপনি তো দুনিয়ায় অত্যন্ত ক্ষমতাবলে আমাদের উপর আপনার নেতৃত্ব চালাতেন; এখন এখানে যে বিপদ আমাদের উপর আপতিত হয়েছে তা থেকে আমাদেরকে রক্ষা করুন তো দেখি!
নেতৃবৃন্দ :
قَالَ الَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْاۤ اِنَّا كُلٌّ فِيْهَاۤ اِنَّ اللهَ قَدْ حَكَمَ بَيْنَ الْعِبَادِ
দাম্ভিকরা বলবে, আমরা তো সবাই জাহান্নামে আছি; নিশ্চয় আল্লাহ বান্দাদের ফায়সালা করে ফেলেছেন।
(সূরা মু’মিন- ৪৮)
অনুসারী :
وَبَرَزُوْا لِلّٰهِ جَمِيْعًا فَقَالَ الضُّعَفَآءُ لِلَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْاۤ اِنَّا كُنَّا لَكُمْ تَبَعًا فَهَلْ اَنْتُمْ مُّغْنُوْنَ عَنَّا مِنْ عَذَابِ اللهِ مِنْ شَيْءٍ
সকলে আল্লাহর নিকট উপস্থিত হবে। তখন দুর্বলরা অহংকারীদেরকে বলবে, আমরা তো তোমাদেরই অনুসারী ছিলাম। এখন তোমরা আমাদেরকে আল্লাহর শাসিত্ম হতে কিছুমাত্র রক্ষা করতে পারবে? (সূরা ইবরাহীম- ২১)
নেতৃবৃন্দ :
قَالُوْا لَوْ هَدَانَا اللهُ لَهَدَيْنَاكُمْؕ سَوَآءٌ عَلَيْنَاۤ اَجَزِعْنَاۤ اَمْ صَبَرْنَا مَا لَنَا مِنْ مَّحِيْصٍ
তারা বলবে, আল্লাহ আমাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করলে আমরাও তোমাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করতাম। এখন আমরা ধৈর্যচ্যুত হই অথবা ধৈর্যশীল হই একই কথা; আমাদের কোন নিষ্কৃতি নেই। (সূরা ইবরাহীম- ২১)
অনুসারীরা নেতাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করবে :
وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا رَبَّنَاۤ اَرِنَا الَّذَيْنِ اَضَلَّانَا مِنَ الْجِنِّ وَالْاِنْسِ نَجْعَلْهُمَا تَحْتَ اَقْدَامِنَا لِيَكُوْنَا مِنَ الْاَسْفَلِيْنَ
কাফিররা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! যেসব জিন ও মানব আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল তাদের উভয়কে দেখিয়ে দিন। আমরা তাদের উভয়কে পদদলিত করব, যাতে তারা নিম্ন শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হয়। (সূরা হা-মীম সাজদা- ২৯)
وَقَالُوْا رَبَّنَاۤ اِنَّاۤ اَطَعْنَا سَادَتَنَا وَكُبَرَآءَنَا فَاَضَلُّوْنَا السَّبِيْلَا – رَبَّنَاۤ اٰتِهِمْ ضِعْفَيْنِ مِنَ الْعَذَابِ وَالْعَنْهُمْ لَعْنًا كَبِيْرًا
তারা আরো বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা তো আমাদের নেতা এবং প্রধানদের অনুসরণ করেছিলাম। অতএব তারাই আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল। হে আমাদের প্রতিপালক! তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দিন এবং মহাঅভিশাপ দিন। (সূরা আহযাব- ৬৭, ৬৮)
তাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বিছিন্ন হয়ে যাবে :
اِذْ تَبَرَّاَ الَّذِيْنَ اتُّبِعُوْا مِنَ الَّذِيْنَ اتَّبَعُوْا وَرَاَوُا الْعَذَابَ وَتَقَطَّعَتْ بِهِمُ الْاَسْبَابُ
(তখন কি করুণ অবস্থা হবে) যখন অনুসরণীয় নেতারা অনুসারীদেরকে প্রত্যাখ্যান করবে এবং তারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে ও তাদের সকল সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। (সূরা বাক্বারা- ১৬৬)
অনুসারীরা পরিতাপ করতে থাকবে :
وَقَالَ الَّذِيْنَ اتَّبَعُوْا لَوْ اَنَّ لَنَا كَرَّةً فَنَتَبَرَّاَ مِنْهُمْ كَمَا تَبَرَّءُوْا مِنَّاؕ كَذٰلِكَ يُرِيْهِمُ اللهُ اَعْمَالَهُمْ حَسَرَاتٍ عَلَيْهِمْؕ وَمَا هُمْ بِخَارِجِيْنَ مِنَ النَّارِ
অনুসারীরা বলবে, যদি আমাদের জন্য (দুনিয়াতে) ফিরে যাওয়ার সুযোগ থাকত, তাহলে তারা যেভাবে আমাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছে আমরাও সেভাবে তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করতাম। এভাবে আল্লাহ তাদের কার্যকলাপসমূহ তাদের সামনে দুঃখজনকভাবে প্রদর্শন করবেন, কিন্তু (কোনক্রমেই) তারা জাহান্নাম হতে বের হতে পারবে না। (সূরা বাক্বারা- ১৬৭)
ব্যাখ্যা : অনেক ধোঁকাবাজ ব্যক্তি বা গোষ্ঠি আছে, যারা লোকদেরকে সঠিক দিক থেকে সরিয়ে ভুলের দিকে নিয়ে যায়। এ কারণে লোকদেরকে সম্বোধন করে বলা হয়েছে, তোমরা অন্ধের মতো ধোঁকাবাজ নেতাদের পেছনে কেন চলছ? নিজেদের জ্ঞানবুদ্ধি কাজে লাগিয়ে তোমরা চিন্তা করছ না কেন যে, সত্যের বিপরীতে তোমরা কোন দিকে পরিচালিত হচ্ছ? যারা আজ দুনিয়ায় নিজেদের নেতা ও শাসকদের অন্ধ অনুসারী এবং কোন উপদেশদাতার কথায় কর্ণপাত করতে প্রস্তুত নয়, তারাই যখন প্রকৃত সত্য এবং তাদের নেতারা তাদেরকে কী বুঝাচ্ছিল তা স্বচক্ষে দেখবে আর এ কথা জানতে পারবে যে, এ নেতাদের অনুসরণ তাদেরকে এ পরিণতির সম্মুখীন করেছে, তখন তারা এসব লোকদের বিরুদ্ধে মারমুখো হবে এবং চিৎকার করে বলবে, তোমরাই তো আমাদেরকে বিপথগামী করেছ। আমাদের সমস্ত বিপদের জন্য তোমরাই দায়ী। তোমরা আমাদের পথভ্রষ্ট না করলে আমরা তো আল্লাহ ও রাসূলের কথাই মেনে নিতাম। তখন নেতারা বলবে, আমাদের কাছে এমন কোন শক্তি ছিল না যার সাহায্যে আমরা মাত্র গুটিকয়েক মানুষ তোমাদের মতো কোটি কোটি মানুষকে জোরপূর্বক নিজেদের আনুগত্য করতে বাধ্য করতে পারতাম। যদি তোমরা ঈমান আনতে চাইতে, তাহলে আমাদের নেতৃত্ব ও শাসন কর্তৃত্বের সিংহাসন উল্টে ফেলে দিতে পারতে। তোমরাই তো আমাদের সেনাদল ছিলে। আমাদের শক্তি ও সম্পদের উৎস ছিল তোমাদেরই হাতে। তোমরা নজরানা ও ট্যাক্স না দিলে আমরা চলতে পারতাম না। তোমরা শ্লোগান না দিলে কেউ আমাদের কথা জিজ্ঞেসও করত না। তোমরা আমাদের সৈন্য না হলে একজন মানুষের উপরও আমাদের প্রভাব বিস্তৃত হতে পারত না। এখন এ কথা মেনে নিচ্ছ না কেন যে, আসলে রাসূলগণ তোমাদের সামনে যে পথ পেশ করেছিলেন তোমরা নিজেরাই তার উপর চলতে চাচ্ছিলে না? তোমরা ছিলে নিজেদের স্বার্থ ও প্রবৃত্তির দাস। তোমরা হালাল ও হারামের পরোয়া না করে পার্থিব ভোগবিলাসের প্রত্যাশী ছিলে এবং আমাদের কাছেই তোমরা তার সন্ধান চাচ্ছিলে। তোমরা এমনসব পীরের সন্ধানে ছিলে, যারা তোমাদের পাপ মোচনের দায়িত্ব নিজেদের মাথায় তুলে নিত। তোমরা এমনসব পন্ডিত ও মৌলবীদের সন্ধানে ফিরছিলে, যারা প্রত্যেকটি শিরক ও বিদ‘আত এবং তোমাদের মনের মতো প্রত্যেকটি জিনিসকে প্রকৃত সত্য প্রমাণ করে তোমাদের স্বার্থ উদ্ধার করে দিত। তোমাদের এমনসব জালিয়াতের প্রয়োজন ছিল, যারা আল্লাহর দ্বীনকে পরিবর্তিত করে তোমাদের কামনা অনুযায়ী একটি নতুন দ্বীন তৈরি করে দিতে পারত। তোমাদের এমন নেতার প্রয়োজন ছিল, যারা পরকাল সমৃদ্ধ হোক বা না হোক তার পরোয়া না করে যে কোনভাবেই হোক না কেন তোমাদের দুনিয়াবী স্বার্থ উদ্ধার করে দিতে পারলেই যথেষ্ট হতো। তোমাদের এমনসব শাসকের প্রয়োজন ছিল, যারা নিজেরাই হবে অসচ্চরিত্র ও অবিশ্বস্ত এবং যাদের পৃষ্ঠপোশকতায় তোমরা সবরকমের অসৎকাজ করার অবাধ সুযোগ লাভ করবে। এভাবে আমাদের ও তোমাদের মধ্যে সমান সমান লেনদেন হয়েছিল। এখন তোমরা কেন এ কথা বলছ যে, তোমরা নিরপরাধ আর আমরা জোর করে তোমাদেরকে বিভ্রান্ত করেছিলাম। জনতার জবাব হবে, তোমরা এ দায়িত্বের ক্ষেত্রে আমাদেরকে সমান অংশীদার করছ কেমন করে? তোমাদের কি মনে আছে, তোমরা চালবাজি, প্রতারণা ও মিথ্যা প্রচারণার কেমন মোহময় যাদু সৃষ্টি করে রেখেছিলে এবং রাতদিন আল্লাহর বান্দাদেরকে নিজেদের ফাঁদে আটকানোর জন্য সবধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিলে? তোমরা আমাদের সামনে দুনিয়া পেশ করেছিলে এবং আমরা তার জন্য জীবন দিয়েছিলাম। প্রকৃত ব্যাপারটি তো কেবল এতটুকুতেই সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং তোমরা রাত দিনের প্রতারণা ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আমাদেরকে বোকা বানাচ্ছিলে। তোমাদের প্রত্যেক শিকারী প্রতিদিন একটি নতুন জাল তৈরি করে নানা ছলচাতুরী ও কলাকৌশলের মাধ্যমে আল্লাহর বান্দাদেরকে তাতে ফাঁসিয়ে দিচ্ছিল, এটা ছিল বাস্তব ঘটনা।
পথভ্রষ্টকারী নেতৃবর্গ ও তাদের নির্বোধ অনুসারীদের পরিণতির কথা উল্লেখ করার কারণ হচ্ছে, পূর্ববর্তী নবীদের উম্মতরা যেসব ভুলের শিকার হয়ে বিভ্রান্ত হয়েছিল এবং সঠিক পথ হারিয়ে ফেলেছিল মুসলিমরা যেন সে সম্পর্কে সতর্ক হয়। আর ভুল ও নির্ভুল নেতৃত্ব এবং সঠিক ও বেঠিক নেতৃত্বের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। ভুল ও মিথ্যা নেতৃত্বের পেছনে চলা থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখতে পারে। এসব আয়াত এমনসব লোকের জন্য সতর্কবাণী, যারা দুনিয়ায় চোখ বন্ধ করে অন্যের পেছনে চলে অথবা নিজেদের দুর্বলতাকে প্রমাণ হিসেবে পেশ করে শক্তিশালী যালিমদের আনুগত্য করে। তাদের জানানো হচ্ছে যে, আজ যারা তোমাদের নেতা, কর্মকর্তা ও শাসক হয়ে আছে কিয়ামতের দিন এদের কেউই তোমাদেরকে আল্লাহর আযাব থেকে সামান্যতম নিষ্কৃতি দিতে পারবে না। কাজেই ভেবে দেখো, তোমরা যাদের পেছনে ছুটে যাচ্ছ অথবা যাদের হুকুম মেনে চলছ তারা নিজেরাই কোথায় যাচ্ছে এবং তোমাদের কোথায় নিয়ে যাবে।
وَلَوْ تَرٰۤى اِذِ الظَّالِمُوْنَ مَوْقُوْفُوْنَ عِنْدَ رَبِّهِمْۚ يَرْجِعُ بَعْضُهُمْ اِلٰى بَعْضِ نِ الْقَوْلَ
তুমি যদি যালিমদেরকে দেখতে যখন তাদেরকে তাদের প্রতিপালকের সামনে দন্ডায়মান করা হবে, তখন তারা পরস্পর বাদ-প্রতিবাদ করতে থাকবে। (সূরা সাবা- ৩১)
অনুসারী :
يَقُوْلُ الَّذِيْنَ اسْتُضْعِفُوْا لِلَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْا لَوْلَاۤ اَنْتُمْ لَكُنَّا مُؤْمِنِيْنَ
দুর্বলরা অহংকারীদেরকে বলবে, তোমরা না থাকলে অবশ্যই আমরা মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। (সূরা সাবা- ৩১)
নেতৃবৃন্দ :
قَالَ الَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْا لِلَّذِيْنَ اسْتُضْعِفُوْاۤ اَنَحْنُ صَدَدْنَاكُمْ عَنِ الْهُدٰى بَعْدَ اِذْ جَآءَكُمْ بَلْ كُنْتُمْ مُّجْرِمِيْنَ
তখন অহংকারীরা দুর্বলদেরকে বলবে, তোমাদের নিকট হেদায়াত আসার পর আমরা কি তোমাদেরকে তা থেকে বিরত করে রেখেছিলাম? বস্তুত তোমরাই ছিলে অপরাধী। (সূরা সাবা- ৩২)
অনুসারী :
وَقَالَ الَّذِيْنَ اسْتُضْعِفُوْا لِلَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْا بَلْ مَكْرُ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ اِذْ تَاْمُرُوْنَنَاۤ اَنْ نَّكْفُرَ بِاللهِ وَنَجْعَلَ لَهٗۤ اَنْدَادًاؕ وَاَسَرُّوا النَّدَامَةَ لَمَّا رَاَوُا الْعَذَابَ
দুর্বলরা অহংকারীদেরকে বলবে, প্রকৃতপক্ষে তোমরাই দিবা-রাত্রি চক্রান্তে লিপ্ত ছিলে, আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলে যেন আমরা আল্লাহকে অমান্য করি এবং তাঁর শরীক স্থাপন করি। অতঃপর যখন তারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে, তখন তারা লজ্জা ঢাকতে থাকবে। (সূরা সাবা- ৩৩)
قَالُوْاۤ اِنَّكُمْ كُنْتُمْ تَاْتُوْنَنَا عَنِ الْيَمِيْنِ
দুর্বলরা সবলদেরকে বলবে, তোমরাই তো আমাদের কাছে ডানদিক থেকে আসতে। (সূরা সাফ্ফাত- ২৮)
ব্যাখ্যা : এখানে ডানকে যদি শক্তি অর্থে নেয়া হয় তাহলে এর অর্থ হবে আমরা দুর্বল ছিলাম, তোমরা আমাদের উপর প্রাধান্য লাভ করেছিলে। আর যদি একে কল্যাণ অর্থে নেয়া হয় তাহলে এর অর্থ হবে তোমরা কল্যাণকামী সেজে আমাদেরকে ধোঁকা দিয়েছ। তোমরা আমাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছিলে যে, যে পথে তোমরা আমাদের চালাচ্ছ এটিই একমাত্র কল্যাণের পথ। আর যদি একে কসম অর্থে গ্রহণ করা হয় তাহলে এর অর্থ হবে তোমরা কসম খেয়ে খেয়ে আমাদের নিশ্চিন্ত করতে যে, তোমরা যা পেশ করেছ তা-ই সত্য।
নেতৃবৃন্দ :
قَالُوْا بَلْ لَّمْ تَكُوْنُوْا مُؤْمِنِيْنَ – وَمَا كَانَ لَنَا عَلَيْكُمْ مِّنْ سُلْطَانٍۚ بَلْ كُنْتُمْ قَوْمًا طَاغِيْنَ – فَحَقَّ عَلَيْنَا قَوْلُ رَبِّنَاۗ اِنَّا لَذَآئِقُوْنَ ‐ فَاَغْوَيْنَاكُمْ اِنَّا كُنَّا غَاوِيْنَ
সবলরা বলবে, বরং তোমরা তো বিশ্বাসীই ছিলে না। আর তোমাদের উপর আমাদের কোন কর্তৃত্বও ছিল না, বরং তোমরা ছিলে সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়। অতএব আমাদের উপর আমাদের প্রতিপালকের কথা প্রমাণ হয়ে গেছে, এখন আমাদেরকে অবশ্যই শাস্তি ভোগ করতে হবে। আমরা তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিলাম, আর আমরা নিজেরাও পথভ্রষ্ট ছিলাম। (সূরা সাফ্ফাত, ২৯-৩২)
ব্যাখ্যা : অতএব নেতা ও অনুসারী এবং গোমরাহ ও গোমরাহকারী উভয়ই একই শাস্তি ভোগ করবে। অর্থাৎ তখন অনুসারীদের এ ওজর মেনে নেয়া হবে না যে, তারা নিজেরা গোমরাহ হয়নি বরং তাদেরকে গোমরাহ করা হয়েছিল। অন্যদিকে নেতাদের এ ওজরও গ্রহণ করা হবে না যে, গোমরাহী লোকেরা নিজেরাই সরল-সত্য পথের প্রত্যাশী ছিল না।
অনুসারী :
وَاِذْ يَتَحَآجُّوْنَ فِى النَّارِ فَيَقُوْلُ الضُّعَفَآءُ لِلَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْاۤ اِنَّا كُنَّا لَكُمْ تَبَعًا فَهَلْ اَنْتُمْ مُّغْنُوْنَ عَنَّا نَصِيْبًا مِّنَ النَّارِ
যখন তারা জাহান্নামে পরস্পর ঝগড়ায় লিপ্ত হবে তখন দুর্বলরা অহংকারীদেরকে বলবে, আমরা তো তোমাদেরই অনুসারী ছিলাম, এখন কি তোমরা আমাদের হতে জাহান্নামের আগুনের কোন অংশ নিবারণ করতে পারবে? (সূরা মু’মিন- ৪৭)
ব্যাখ্যা : তারা এমন কোন আশা নিয়ে এ কথা বলবে না যে, তাদের ঐসব নেতা কিংবা শাসক বা পথপ্রদর্শক প্রকৃতই তাদেরকে আযাব থেকে রক্ষা করতে পারবে বা তা কিছুটা লাঘব করিয়ে দেবে। তখন তাদের কাছে এ সত্য স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, এখানে এসব লোক আমাদের কোন কাজে আসার মতো নয়। তারা তাদেরকে হেয় ও লাঞ্ছিত করার জন্য বলবে, আপনি তো দুনিয়ায় অত্যন্ত ক্ষমতাবলে আমাদের উপর আপনার নেতৃত্ব চালাতেন; এখন এখানে যে বিপদ আমাদের উপর আপতিত হয়েছে তা থেকে আমাদেরকে রক্ষা করুন তো দেখি!
নেতৃবৃন্দ :
قَالَ الَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْاۤ اِنَّا كُلٌّ فِيْهَاۤ اِنَّ اللهَ قَدْ حَكَمَ بَيْنَ الْعِبَادِ
দাম্ভিকরা বলবে, আমরা তো সবাই জাহান্নামে আছি; নিশ্চয় আল্লাহ বান্দাদের ফায়সালা করে ফেলেছেন।
(সূরা মু’মিন- ৪৮)
অনুসারী :
وَبَرَزُوْا لِلّٰهِ جَمِيْعًا فَقَالَ الضُّعَفَآءُ لِلَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْاۤ اِنَّا كُنَّا لَكُمْ تَبَعًا فَهَلْ اَنْتُمْ مُّغْنُوْنَ عَنَّا مِنْ عَذَابِ اللهِ مِنْ شَيْءٍ
সকলে আল্লাহর নিকট উপস্থিত হবে। তখন দুর্বলরা অহংকারীদেরকে বলবে, আমরা তো তোমাদেরই অনুসারী ছিলাম। এখন তোমরা আমাদেরকে আল্লাহর শাসিত্ম হতে কিছুমাত্র রক্ষা করতে পারবে? (সূরা ইবরাহীম- ২১)
নেতৃবৃন্দ :
قَالُوْا لَوْ هَدَانَا اللهُ لَهَدَيْنَاكُمْؕ سَوَآءٌ عَلَيْنَاۤ اَجَزِعْنَاۤ اَمْ صَبَرْنَا مَا لَنَا مِنْ مَّحِيْصٍ
তারা বলবে, আল্লাহ আমাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করলে আমরাও তোমাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করতাম। এখন আমরা ধৈর্যচ্যুত হই অথবা ধৈর্যশীল হই একই কথা; আমাদের কোন নিষ্কৃতি নেই। (সূরা ইবরাহীম- ২১)
অনুসারীরা নেতাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করবে :
وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا رَبَّنَاۤ اَرِنَا الَّذَيْنِ اَضَلَّانَا مِنَ الْجِنِّ وَالْاِنْسِ نَجْعَلْهُمَا تَحْتَ اَقْدَامِنَا لِيَكُوْنَا مِنَ الْاَسْفَلِيْنَ
কাফিররা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! যেসব জিন ও মানব আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল তাদের উভয়কে দেখিয়ে দিন। আমরা তাদের উভয়কে পদদলিত করব, যাতে তারা নিম্ন শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হয়। (সূরা হা-মীম সাজদা- ২৯)
وَقَالُوْا رَبَّنَاۤ اِنَّاۤ اَطَعْنَا سَادَتَنَا وَكُبَرَآءَنَا فَاَضَلُّوْنَا السَّبِيْلَا – رَبَّنَاۤ اٰتِهِمْ ضِعْفَيْنِ مِنَ الْعَذَابِ وَالْعَنْهُمْ لَعْنًا كَبِيْرًا
তারা আরো বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা তো আমাদের নেতা এবং প্রধানদের অনুসরণ করেছিলাম। অতএব তারাই আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল। হে আমাদের প্রতিপালক! তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দিন এবং মহাঅভিশাপ দিন। (সূরা আহযাব- ৬৭, ৬৮)
তাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বিছিন্ন হয়ে যাবে :
اِذْ تَبَرَّاَ الَّذِيْنَ اتُّبِعُوْا مِنَ الَّذِيْنَ اتَّبَعُوْا وَرَاَوُا الْعَذَابَ وَتَقَطَّعَتْ بِهِمُ الْاَسْبَابُ
(তখন কি করুণ অবস্থা হবে) যখন অনুসরণীয় নেতারা অনুসারীদেরকে প্রত্যাখ্যান করবে এবং তারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে ও তাদের সকল সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। (সূরা বাক্বারা- ১৬৬)
অনুসারীরা পরিতাপ করতে থাকবে :
وَقَالَ الَّذِيْنَ اتَّبَعُوْا لَوْ اَنَّ لَنَا كَرَّةً فَنَتَبَرَّاَ مِنْهُمْ كَمَا تَبَرَّءُوْا مِنَّاؕ كَذٰلِكَ يُرِيْهِمُ اللهُ اَعْمَالَهُمْ حَسَرَاتٍ عَلَيْهِمْؕ وَمَا هُمْ بِخَارِجِيْنَ مِنَ النَّارِ
অনুসারীরা বলবে, যদি আমাদের জন্য (দুনিয়াতে) ফিরে যাওয়ার সুযোগ থাকত, তাহলে তারা যেভাবে আমাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছে আমরাও সেভাবে তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করতাম। এভাবে আল্লাহ তাদের কার্যকলাপসমূহ তাদের সামনে দুঃখজনকভাবে প্রদর্শন করবেন, কিন্তু (কোনক্রমেই) তারা জাহান্নাম হতে বের হতে পারবে না। (সূরা বাক্বারা- ১৬৭)
ব্যাখ্যা : অনেক ধোঁকাবাজ ব্যক্তি বা গোষ্ঠি আছে, যারা লোকদেরকে সঠিক দিক থেকে সরিয়ে ভুলের দিকে নিয়ে যায়। এ কারণে লোকদেরকে সম্বোধন করে বলা হয়েছে, তোমরা অন্ধের মতো ধোঁকাবাজ নেতাদের পেছনে কেন চলছ? নিজেদের জ্ঞানবুদ্ধি কাজে লাগিয়ে তোমরা চিন্তা করছ না কেন যে, সত্যের বিপরীতে তোমরা কোন দিকে পরিচালিত হচ্ছ? যারা আজ দুনিয়ায় নিজেদের নেতা ও শাসকদের অন্ধ অনুসারী এবং কোন উপদেশদাতার কথায় কর্ণপাত করতে প্রস্তুত নয়, তারাই যখন প্রকৃত সত্য এবং তাদের নেতারা তাদেরকে কী বুঝাচ্ছিল তা স্বচক্ষে দেখবে আর এ কথা জানতে পারবে যে, এ নেতাদের অনুসরণ তাদেরকে এ পরিণতির সম্মুখীন করেছে, তখন তারা এসব লোকদের বিরুদ্ধে মারমুখো হবে এবং চিৎকার করে বলবে, তোমরাই তো আমাদেরকে বিপথগামী করেছ। আমাদের সমস্ত বিপদের জন্য তোমরাই দায়ী। তোমরা আমাদের পথভ্রষ্ট না করলে আমরা তো আল্লাহ ও রাসূলের কথাই মেনে নিতাম। তখন নেতারা বলবে, আমাদের কাছে এমন কোন শক্তি ছিল না যার সাহায্যে আমরা মাত্র গুটিকয়েক মানুষ তোমাদের মতো কোটি কোটি মানুষকে জোরপূর্বক নিজেদের আনুগত্য করতে বাধ্য করতে পারতাম। যদি তোমরা ঈমান আনতে চাইতে, তাহলে আমাদের নেতৃত্ব ও শাসন কর্তৃত্বের সিংহাসন উল্টে ফেলে দিতে পারতে। তোমরাই তো আমাদের সেনাদল ছিলে। আমাদের শক্তি ও সম্পদের উৎস ছিল তোমাদেরই হাতে। তোমরা নজরানা ও ট্যাক্স না দিলে আমরা চলতে পারতাম না। তোমরা শ্লোগান না দিলে কেউ আমাদের কথা জিজ্ঞেসও করত না। তোমরা আমাদের সৈন্য না হলে একজন মানুষের উপরও আমাদের প্রভাব বিস্তৃত হতে পারত না। এখন এ কথা মেনে নিচ্ছ না কেন যে, আসলে রাসূলগণ তোমাদের সামনে যে পথ পেশ করেছিলেন তোমরা নিজেরাই তার উপর চলতে চাচ্ছিলে না? তোমরা ছিলে নিজেদের স্বার্থ ও প্রবৃত্তির দাস। তোমরা হালাল ও হারামের পরোয়া না করে পার্থিব ভোগবিলাসের প্রত্যাশী ছিলে এবং আমাদের কাছেই তোমরা তার সন্ধান চাচ্ছিলে। তোমরা এমনসব পীরের সন্ধানে ছিলে, যারা তোমাদের পাপ মোচনের দায়িত্ব নিজেদের মাথায় তুলে নিত। তোমরা এমনসব পন্ডিত ও মৌলবীদের সন্ধানে ফিরছিলে, যারা প্রত্যেকটি শিরক ও বিদ‘আত এবং তোমাদের মনের মতো প্রত্যেকটি জিনিসকে প্রকৃত সত্য প্রমাণ করে তোমাদের স্বার্থ উদ্ধার করে দিত। তোমাদের এমনসব জালিয়াতের প্রয়োজন ছিল, যারা আল্লাহর দ্বীনকে পরিবর্তিত করে তোমাদের কামনা অনুযায়ী একটি নতুন দ্বীন তৈরি করে দিতে পারত। তোমাদের এমন নেতার প্রয়োজন ছিল, যারা পরকাল সমৃদ্ধ হোক বা না হোক তার পরোয়া না করে যে কোনভাবেই হোক না কেন তোমাদের দুনিয়াবী স্বার্থ উদ্ধার করে দিতে পারলেই যথেষ্ট হতো। তোমাদের এমনসব শাসকের প্রয়োজন ছিল, যারা নিজেরাই হবে অসচ্চরিত্র ও অবিশ্বস্ত এবং যাদের পৃষ্ঠপোশকতায় তোমরা সবরকমের অসৎকাজ করার অবাধ সুযোগ লাভ করবে। এভাবে আমাদের ও তোমাদের মধ্যে সমান সমান লেনদেন হয়েছিল। এখন তোমরা কেন এ কথা বলছ যে, তোমরা নিরপরাধ আর আমরা জোর করে তোমাদেরকে বিভ্রান্ত করেছিলাম। জনতার জবাব হবে, তোমরা এ দায়িত্বের ক্ষেত্রে আমাদেরকে সমান অংশীদার করছ কেমন করে? তোমাদের কি মনে আছে, তোমরা চালবাজি, প্রতারণা ও মিথ্যা প্রচারণার কেমন মোহময় যাদু সৃষ্টি করে রেখেছিলে এবং রাতদিন আল্লাহর বান্দাদেরকে নিজেদের ফাঁদে আটকানোর জন্য সবধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিলে? তোমরা আমাদের সামনে দুনিয়া পেশ করেছিলে এবং আমরা তার জন্য জীবন দিয়েছিলাম। প্রকৃত ব্যাপারটি তো কেবল এতটুকুতেই সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং তোমরা রাত দিনের প্রতারণা ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আমাদেরকে বোকা বানাচ্ছিলে। তোমাদের প্রত্যেক শিকারী প্রতিদিন একটি নতুন জাল তৈরি করে নানা ছলচাতুরী ও কলাকৌশলের মাধ্যমে আল্লাহর বান্দাদেরকে তাতে ফাঁসিয়ে দিচ্ছিল, এটা ছিল বাস্তব ঘটনা।
পথভ্রষ্টকারী নেতৃবর্গ ও তাদের নির্বোধ অনুসারীদের পরিণতির কথা উল্লেখ করার কারণ হচ্ছে, পূর্ববর্তী নবীদের উম্মতরা যেসব ভুলের শিকার হয়ে বিভ্রান্ত হয়েছিল এবং সঠিক পথ হারিয়ে ফেলেছিল মুসলিমরা যেন সে সম্পর্কে সতর্ক হয়। আর ভুল ও নির্ভুল নেতৃত্ব এবং সঠিক ও বেঠিক নেতৃত্বের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। ভুল ও মিথ্যা নেতৃত্বের পেছনে চলা থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখতে পারে। এসব আয়াত এমনসব লোকের জন্য সতর্কবাণী, যারা দুনিয়ায় চোখ বন্ধ করে অন্যের পেছনে চলে অথবা নিজেদের দুর্বলতাকে প্রমাণ হিসেবে পেশ করে শক্তিশালী যালিমদের আনুগত্য করে। তাদের জানানো হচ্ছে যে, আজ যারা তোমাদের নেতা, কর্মকর্তা ও শাসক হয়ে আছে কিয়ামতের দিন এদের কেউই তোমাদেরকে আল্লাহর আযাব থেকে সামান্যতম নিষ্কৃতি দিতে পারবে না। কাজেই ভেবে দেখো, তোমরা যাদের পেছনে ছুটে যাচ্ছ অথবা যাদের হুকুম মেনে চলছ তারা নিজেরাই কোথায় যাচ্ছে এবং তোমাদের কোথায় নিয়ে যাবে।
কাফির ও মুশরিকদের জন্য কোন শাফা‘আতকারী থাকবে না :
مَا لِلظَّالِمِيْنَ مِنْ حَمِيْمٍ وَّلَا شَفِيْعٍ يُّطَاعُ
যালিমদের কোন অন্তরঙ্গ বন্ধু থাকবে না এবং এমন কোন সুপারিশকারীও থাকবে না, যার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। (সূরা মু’মিন- ১৮)
তাদের জন্য শাফা‘আত করলেও লাভ হবে না :
فَمَا تَنْفَعُهُمْ شَفَاعَةُ الشَّافِعِيْنَ
(সে সময়) শাফা‘আতকারীদের শাফা‘আত তাদের কোন কাজে আসবে না। (সূরা মুদ্দাসসির- ৪৮)
মূর্তি ও দেব-দেবী কারো জন্য শাফা‘আত করতে পারবে না :
اَاَتَّخِذُ مِنْ دُوْنِهٖۤ اٰلِهَةً اِنْ يُّرِدْنِ الرَّحْمٰنُ بِضُرٍّ لَّا تُغْنِ عَنِّيْ شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا وَّلَا يُنْقِذُوْنِ
আমি কি আল্লাহকে ছেড়ে অন্য কোন মা‘বুদকে গ্রহণ করব? যদি দয়াময় আল্লাহ আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চান, তবে তাদের সুপারিশ আমার কোন উপকারে আসবে না এবং তারা আমাকে মুক্তও করতে পারবে না। (সূরা ইয়াসীন- ২৩)
আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ কারো জন্য শাফা‘আত করতে পারবে না :
مَنْ ذَا الَّذِيْ يَشْفَعُ عِنْدَهٗۤ اِلَّا بِاِذْنِهٖ
আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত এমন কে আছে, যে তাঁর নিকট সুপারিশ করতে পারে? (সূরা বাক্বারা- ২৫৫)
لَا يَمْلِكُوْنَ الشَّفَاعَةَ اِلَّا مَنِ اتَّخَذَ عِنْدَ الرَّحْمٰنِ عَهْدًا
যে দয়াময়ের নিকট প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছে, সে ব্যতীত অন্য কারো সুপারিশ করার ক্ষমতা থাকবে না।
(সূরা মারইয়াম- ৮৭)
وَلَا تَنْفَعُ الشَّفَاعَةُ عِنْدَهٗۤ اِلَّا لِمَنْ اَذِنَ لَهٗ
আল্লাহর কাছে কারো অনুরোধ উপকারে আসবে না; তবে তিনি যাকে অনুমতি দেবেন সে ব্যতীত। (সূরা সাবা- ২৩)
يَوْمَئِذٍ لَّا تَنْفَعُ الشَّفَاعَةُ اِلَّا مَنْ اَذِنَ لَهُ الرَّحْمٰنُ وَرَضِيَ لَهٗ قَوْلًا
সেদিন দয়াময় যাকে অনুমতি দেবেন এবং যার কথা তিনি পছন্দ করবেন সে ব্যতীত অন্য কারো সুপারিশ কোন কাজে আসবে না। (সূরা ত্বা-হা- ১০৯)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর সমকক্ষ হওয়া, তাঁর মালিকানায় শরীক হওয়া অথবা তাঁর সাহায্যকারী হওয়া তো দূরের কথা সমগ্র বিশ্বে এমন কোন সত্তা নেই, যে আল্লাহর সামনে কারো পক্ষে নিজ ইচ্ছায় সুপারিশ করতে পারবে। অথচ পৃথিবীতে কতক মানুষ এমনও ভুল ধারণা নিয়ে বসে আছে যে, আল্লাহর এমন কিছু প্রিয়জন আছে যাদের সুপারিশ আল্লাহকে মানতেই হবে।
যার ক্ষেত্রে আল্লাহ অনুমতি দেবেন তার জন্যই শাফা‘আত করা হবে :
وَكَمْ مِّنْ مَّلَكٍ فِى السَّمَاوَاتِ لَا تُغْنِيْ شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا اِلَّا مِنْ ۢبَعْدِ اَنْ يَّاْذَنَ اللهُ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيَرْضٰى
আকাশসমূহে অনেক ফেরেশতা রয়েছে। তাদের কোন সুপারিশ কাজে আসবে না, যতক্ষণ না আল্লাহ যাকে ইচ্ছা এবং তিনি যার প্রতি সন্তুষ্ট তাকে অনুমতি না দেন। (সূরা নাজম- ২৬)
ব্যাখ্যা : যে সুপারিশের উপযুক্ত হবে তার পক্ষেই সুপারিশ করা হবে এবং যাকে অনুমতি দেয়া হবে সে-ই সুপারিশ করতে পারবে। যে ব্যক্তি দুনিয়ায় ঈমান এনে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে নিজেকে আল্লাহর ক্ষমার উপযুক্ত বানিয়ে নিয়েছে, একমাত্র তার পক্ষেই সুপারিশ করা হবে। আর যে মুমিন ব্যক্তি বিশেষ মর্যাদার কারণে আল্লাহর পক্ষ থেকে কারো জন্য সুপারিশ করার অনুমতি পাবে, কেবল সে-ই সুপারিশ করতে পারবে। তবে লোকেরা যাদেরকে নিজেদের সুপারিশকারী মনে করে, তাদের সুপারিশ করার ক্ষমতা থাকবে না; বরং আল্লাহ নিজেই যাদেরকে অনুমতি দেবেন একমাত্র তারাই সুপারিশ করার জন্য মুখ খুলতে পারবে। সারা জীবনের কর্ম সম্পর্কে জানার ক্ষমতা কারো নেই। দুনিয়ায় কে কী করত এবং আল্লাহর আদালতে কে কোন ধরনের কার্যাবলি ও দায়িত্বের বোঝা নিয়ে এসেছে তাও কেউ জানে না। অপরদিকে আল্লাহ প্রত্যেকের ভূমিকা ও কর্মকান্ড সম্পর্কে অবগত আছেন। তার অপরাধ অনুযায়ী সে কম না বেশি শাস্তির অধিকারী- এটাও তিনি জানেন। এমতাবস্থায় কেমন করে নবী, ফেরেশতা ও সৎলোকদেরকে তাদের ইচ্ছামতো সুপারিশ করার অবাধ অনুমতি দেয়া হবে? আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করার দরজা বন্ধ হবে না। আল্লাহর সৎ বান্দাদের, যারা দুনিয়ায় মানুষের সাথে সহানুভূতিশীল ব্যবহার করতে অভ্যস্ত ছিলেন তাদেরকে আখিরাতেও সহানুভূতির অধিকার আদায় করার সুযোগ দেয়া হবে। কিন্তু তারা সুপারিশ করার আগে অনুমতি চেয়ে নেবে। যার পক্ষে আল্লাহ তাদেরকে বলার অনুমতি দেবেন একমাত্র তার পক্ষেই তারা সুপারিশ করতে পারবে। আবার সুপারিশ করার শর্ত হবে যে, তা ন্যায়সঙ্গত এবং ন্যায়ভিত্তিক হতে হবে। সেখানে আজেবাজে সুপারিশ করার কোন সুযোগ থাকবে না। এমন হবে না যে, একজন দুনিয়ায় শত-শত ও হাজার-হাজার লোকের অধিকার গ্রাস করে এসেছে; আর এক বুজুর্গ তার পক্ষে এ বলে সুপারিশ করলেন যে, হে আল্লাহ! তাকে পুরস্কৃত করুন, কারণ সে আমার বিশেষ অনুগ্রহভাজন।
مَا لِلظَّالِمِيْنَ مِنْ حَمِيْمٍ وَّلَا شَفِيْعٍ يُّطَاعُ
যালিমদের কোন অন্তরঙ্গ বন্ধু থাকবে না এবং এমন কোন সুপারিশকারীও থাকবে না, যার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। (সূরা মু’মিন- ১৮)
তাদের জন্য শাফা‘আত করলেও লাভ হবে না :
فَمَا تَنْفَعُهُمْ شَفَاعَةُ الشَّافِعِيْنَ
(সে সময়) শাফা‘আতকারীদের শাফা‘আত তাদের কোন কাজে আসবে না। (সূরা মুদ্দাসসির- ৪৮)
মূর্তি ও দেব-দেবী কারো জন্য শাফা‘আত করতে পারবে না :
اَاَتَّخِذُ مِنْ دُوْنِهٖۤ اٰلِهَةً اِنْ يُّرِدْنِ الرَّحْمٰنُ بِضُرٍّ لَّا تُغْنِ عَنِّيْ شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا وَّلَا يُنْقِذُوْنِ
আমি কি আল্লাহকে ছেড়ে অন্য কোন মা‘বুদকে গ্রহণ করব? যদি দয়াময় আল্লাহ আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চান, তবে তাদের সুপারিশ আমার কোন উপকারে আসবে না এবং তারা আমাকে মুক্তও করতে পারবে না। (সূরা ইয়াসীন- ২৩)
আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ কারো জন্য শাফা‘আত করতে পারবে না :
مَنْ ذَا الَّذِيْ يَشْفَعُ عِنْدَهٗۤ اِلَّا بِاِذْنِهٖ
আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত এমন কে আছে, যে তাঁর নিকট সুপারিশ করতে পারে? (সূরা বাক্বারা- ২৫৫)
لَا يَمْلِكُوْنَ الشَّفَاعَةَ اِلَّا مَنِ اتَّخَذَ عِنْدَ الرَّحْمٰنِ عَهْدًا
যে দয়াময়ের নিকট প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছে, সে ব্যতীত অন্য কারো সুপারিশ করার ক্ষমতা থাকবে না।
(সূরা মারইয়াম- ৮৭)
وَلَا تَنْفَعُ الشَّفَاعَةُ عِنْدَهٗۤ اِلَّا لِمَنْ اَذِنَ لَهٗ
আল্লাহর কাছে কারো অনুরোধ উপকারে আসবে না; তবে তিনি যাকে অনুমতি দেবেন সে ব্যতীত। (সূরা সাবা- ২৩)
يَوْمَئِذٍ لَّا تَنْفَعُ الشَّفَاعَةُ اِلَّا مَنْ اَذِنَ لَهُ الرَّحْمٰنُ وَرَضِيَ لَهٗ قَوْلًا
সেদিন দয়াময় যাকে অনুমতি দেবেন এবং যার কথা তিনি পছন্দ করবেন সে ব্যতীত অন্য কারো সুপারিশ কোন কাজে আসবে না। (সূরা ত্বা-হা- ১০৯)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর সমকক্ষ হওয়া, তাঁর মালিকানায় শরীক হওয়া অথবা তাঁর সাহায্যকারী হওয়া তো দূরের কথা সমগ্র বিশ্বে এমন কোন সত্তা নেই, যে আল্লাহর সামনে কারো পক্ষে নিজ ইচ্ছায় সুপারিশ করতে পারবে। অথচ পৃথিবীতে কতক মানুষ এমনও ভুল ধারণা নিয়ে বসে আছে যে, আল্লাহর এমন কিছু প্রিয়জন আছে যাদের সুপারিশ আল্লাহকে মানতেই হবে।
যার ক্ষেত্রে আল্লাহ অনুমতি দেবেন তার জন্যই শাফা‘আত করা হবে :
وَكَمْ مِّنْ مَّلَكٍ فِى السَّمَاوَاتِ لَا تُغْنِيْ شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا اِلَّا مِنْ ۢبَعْدِ اَنْ يَّاْذَنَ اللهُ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيَرْضٰى
আকাশসমূহে অনেক ফেরেশতা রয়েছে। তাদের কোন সুপারিশ কাজে আসবে না, যতক্ষণ না আল্লাহ যাকে ইচ্ছা এবং তিনি যার প্রতি সন্তুষ্ট তাকে অনুমতি না দেন। (সূরা নাজম- ২৬)
ব্যাখ্যা : যে সুপারিশের উপযুক্ত হবে তার পক্ষেই সুপারিশ করা হবে এবং যাকে অনুমতি দেয়া হবে সে-ই সুপারিশ করতে পারবে। যে ব্যক্তি দুনিয়ায় ঈমান এনে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে নিজেকে আল্লাহর ক্ষমার উপযুক্ত বানিয়ে নিয়েছে, একমাত্র তার পক্ষেই সুপারিশ করা হবে। আর যে মুমিন ব্যক্তি বিশেষ মর্যাদার কারণে আল্লাহর পক্ষ থেকে কারো জন্য সুপারিশ করার অনুমতি পাবে, কেবল সে-ই সুপারিশ করতে পারবে। তবে লোকেরা যাদেরকে নিজেদের সুপারিশকারী মনে করে, তাদের সুপারিশ করার ক্ষমতা থাকবে না; বরং আল্লাহ নিজেই যাদেরকে অনুমতি দেবেন একমাত্র তারাই সুপারিশ করার জন্য মুখ খুলতে পারবে। সারা জীবনের কর্ম সম্পর্কে জানার ক্ষমতা কারো নেই। দুনিয়ায় কে কী করত এবং আল্লাহর আদালতে কে কোন ধরনের কার্যাবলি ও দায়িত্বের বোঝা নিয়ে এসেছে তাও কেউ জানে না। অপরদিকে আল্লাহ প্রত্যেকের ভূমিকা ও কর্মকান্ড সম্পর্কে অবগত আছেন। তার অপরাধ অনুযায়ী সে কম না বেশি শাস্তির অধিকারী- এটাও তিনি জানেন। এমতাবস্থায় কেমন করে নবী, ফেরেশতা ও সৎলোকদেরকে তাদের ইচ্ছামতো সুপারিশ করার অবাধ অনুমতি দেয়া হবে? আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করার দরজা বন্ধ হবে না। আল্লাহর সৎ বান্দাদের, যারা দুনিয়ায় মানুষের সাথে সহানুভূতিশীল ব্যবহার করতে অভ্যস্ত ছিলেন তাদেরকে আখিরাতেও সহানুভূতির অধিকার আদায় করার সুযোগ দেয়া হবে। কিন্তু তারা সুপারিশ করার আগে অনুমতি চেয়ে নেবে। যার পক্ষে আল্লাহ তাদেরকে বলার অনুমতি দেবেন একমাত্র তার পক্ষেই তারা সুপারিশ করতে পারবে। আবার সুপারিশ করার শর্ত হবে যে, তা ন্যায়সঙ্গত এবং ন্যায়ভিত্তিক হতে হবে। সেখানে আজেবাজে সুপারিশ করার কোন সুযোগ থাকবে না। এমন হবে না যে, একজন দুনিয়ায় শত-শত ও হাজার-হাজার লোকের অধিকার গ্রাস করে এসেছে; আর এক বুজুর্গ তার পক্ষে এ বলে সুপারিশ করলেন যে, হে আল্লাহ! তাকে পুরস্কৃত করুন, কারণ সে আমার বিশেষ অনুগ্রহভাজন।
অপরাধীরা দুনিয়ার সবকিছুকে বিনিময় হিসেবে দিতে চাইবে :
وَلَوْ اَنَّ لِلَّذِيْنَ ظَلَمُوْا مَا فِى الْاَرْضِ جَمِيْعًا وَّمِثْلَهٗ مَعَهٗ لَافْتَدَوْا بِهٖ مِنْ سُوْٓءِ الْعَذَابِ يَوْمَ الْقِيَامَةِؕ وَبَدَا لَهُمْ مِّنَ اللهِ مَا لَمْ يَكُوْنُوْا يَحْتَسِبُوْنَ
যারা যুলুম করেছে তারা পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ এবং তার সাথে (অনুরূপ) আরো সমপরিমাণ সম্পদ কিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তি হতে পরিত্রাণ লাভের জন্য মুক্তিপণস্বরূপ দিতে প্রস্তুত হবে, (কিন্তু তা গ্রহণ করা হবে না)। আর তাদের জন্য আল্লাহর নিকট হতে এমন কিছু প্রকাশিত হবে, যা তারা ধারণাও করেনি। (সূরা যুমার- ৪৭)
وَلَوْ اَنَّ لِكُلِّ نَفْسٍ ظَلَمَتْ مَا فِى الْاَرْضِ لَافْتَدَتْ بِهٖؕ وَاَسَرُّوا النَّدَامَةَ لَمَّا رَاَوُا الْعَذَابَ
পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা যদি প্রত্যেক সীমালঙ্ঘনকারীর হতো তবে সে মুক্তির বিনিময়ে তা দিয়ে দিত; আর যখন তারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে তখন লজ্জা ঢাকতে থাকবে। (সূরা ইউনুস- ৫৪)
يَوَدُّ الْمُجْرِمُ لَوْ يَفْتَدِيْ مِنْ عَذَابِ يَوْمِئِذٍ ۢبِبَنِيْهِ ‐ وَصَاحِبَتِهٖ وَاَخِيْهِ ‐ وَفَصِيْلَتِهِ الَّتِيْ تُؤْوِيْهِ ‐ وَمَنْ فِى الْاَرْضِ جَمِيْعًا ثُمَّ يُنْجِيْهِ – كَلَّاؕ اِنَّهَا لَظٰى – نَزَّاعَةً لِّلشَّوٰى
অপরাধীরা সেদিনের আযাবের বিনিময়ে তার সন্তান-সন্ততি, স্ত্রী, ভাই, তার গোষ্ঠী যারা তাকে আশ্রয় দিত তাদেরকে এবং পৃথিবীর সকলকে দিতে চাইবে, তবুও সে যেন (এগুলোর বিনিময়ে) মুক্তি পেতে পারে। না, কখনো নয় (সে মুক্তি পাবে না)। সাবধান! নিশ্চয় এটা লেলিহান অগ্নিশিখা, যা মাথা হতে চামড়া খসিয়ে দেবে। (সূরা মা‘আরিজ, ১১-১৬)
কারো কাছ থেকে কোন বিনিময়ই গ্রহণ করা হবে না :
وَاتَّقُوْا يَوْمًا لَّا تَجْزِيْ نَفْسٌ عَنْ نَّفْسٍ شَيْئًا وَّلَا يُقْبَلُ مِنْهَا شَفَاعَةٌ وَّلَا يُؤْخَذُ مِنْهَا عَدْلٌ وَّلَا هُمْ يُنْصَرُوْنَ
তোমরা সেদিনকে ভয় করো, যেদিন কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তি হতে বিন্দুমাত্রও উপকার লাভ করতে পারবে না, কারো কোন সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না, কারো পক্ষ হতে কোন বিনিময় গ্রহণ করা হবে না এবং কেউ কোন সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না। (সূরা বাক্বারা- ৪৮)
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَوْ اَنَّ لَهُمْ مَّا فِى الْاَرْضِ جَمِيْعًا وَّمِثْلَهٗ مَعَهٗ لِيَفْتَدُوْا بِهٖ مِنْ عَذَابِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَا تُقُبِّلَ مِنْهُمْۚ وَلَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
যারা কুফরী করেছে, যদি তাদের কাছে পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ থাকে এবং তার সাথে আরো সমপরিমাণ থাকে এবং এগুলোর বিনিময়ে কিয়ামতের দিন শাস্তি থেকে রেহাই পেতে চায়, তবুও তাদের কাছ থেকে তা গ্রহণ করা হবে না। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরা মায়েদা- ৩৬)
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَمَاتُوْا وَهُمْ كُفَّارٌ فَلَنْ يُّقْبَلَ مِنْ اَحَدِهِمْ مِّلْءُ الْاَرْضِ ذَهَبًا وَّلَوِ افْتَدٰى بِهٖؕ اُولٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ وَّمَا لَهُمْ مِّنْ نَّاصِرِيْنَ
নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে এবং কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে তাদের কাছ থেকে পৃথিবী পরিমাণ স্বর্ণও গ্রহণ করা হবে না, যদিও তারা বিনিময় হিসেবে তা দিতে চায়। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি এবং তাদের কোন সাহায্যকারীও থাকবে না। (সূরা আলে ইমরান- ৯১)
وَلَوْ اَنَّ لِلَّذِيْنَ ظَلَمُوْا مَا فِى الْاَرْضِ جَمِيْعًا وَّمِثْلَهٗ مَعَهٗ لَافْتَدَوْا بِهٖ مِنْ سُوْٓءِ الْعَذَابِ يَوْمَ الْقِيَامَةِؕ وَبَدَا لَهُمْ مِّنَ اللهِ مَا لَمْ يَكُوْنُوْا يَحْتَسِبُوْنَ
যারা যুলুম করেছে তারা পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ এবং তার সাথে (অনুরূপ) আরো সমপরিমাণ সম্পদ কিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তি হতে পরিত্রাণ লাভের জন্য মুক্তিপণস্বরূপ দিতে প্রস্তুত হবে, (কিন্তু তা গ্রহণ করা হবে না)। আর তাদের জন্য আল্লাহর নিকট হতে এমন কিছু প্রকাশিত হবে, যা তারা ধারণাও করেনি। (সূরা যুমার- ৪৭)
وَلَوْ اَنَّ لِكُلِّ نَفْسٍ ظَلَمَتْ مَا فِى الْاَرْضِ لَافْتَدَتْ بِهٖؕ وَاَسَرُّوا النَّدَامَةَ لَمَّا رَاَوُا الْعَذَابَ
পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা যদি প্রত্যেক সীমালঙ্ঘনকারীর হতো তবে সে মুক্তির বিনিময়ে তা দিয়ে দিত; আর যখন তারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে তখন লজ্জা ঢাকতে থাকবে। (সূরা ইউনুস- ৫৪)
يَوَدُّ الْمُجْرِمُ لَوْ يَفْتَدِيْ مِنْ عَذَابِ يَوْمِئِذٍ ۢبِبَنِيْهِ ‐ وَصَاحِبَتِهٖ وَاَخِيْهِ ‐ وَفَصِيْلَتِهِ الَّتِيْ تُؤْوِيْهِ ‐ وَمَنْ فِى الْاَرْضِ جَمِيْعًا ثُمَّ يُنْجِيْهِ – كَلَّاؕ اِنَّهَا لَظٰى – نَزَّاعَةً لِّلشَّوٰى
অপরাধীরা সেদিনের আযাবের বিনিময়ে তার সন্তান-সন্ততি, স্ত্রী, ভাই, তার গোষ্ঠী যারা তাকে আশ্রয় দিত তাদেরকে এবং পৃথিবীর সকলকে দিতে চাইবে, তবুও সে যেন (এগুলোর বিনিময়ে) মুক্তি পেতে পারে। না, কখনো নয় (সে মুক্তি পাবে না)। সাবধান! নিশ্চয় এটা লেলিহান অগ্নিশিখা, যা মাথা হতে চামড়া খসিয়ে দেবে। (সূরা মা‘আরিজ, ১১-১৬)
কারো কাছ থেকে কোন বিনিময়ই গ্রহণ করা হবে না :
وَاتَّقُوْا يَوْمًا لَّا تَجْزِيْ نَفْسٌ عَنْ نَّفْسٍ شَيْئًا وَّلَا يُقْبَلُ مِنْهَا شَفَاعَةٌ وَّلَا يُؤْخَذُ مِنْهَا عَدْلٌ وَّلَا هُمْ يُنْصَرُوْنَ
তোমরা সেদিনকে ভয় করো, যেদিন কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তি হতে বিন্দুমাত্রও উপকার লাভ করতে পারবে না, কারো কোন সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না, কারো পক্ষ হতে কোন বিনিময় গ্রহণ করা হবে না এবং কেউ কোন সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না। (সূরা বাক্বারা- ৪৮)
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَوْ اَنَّ لَهُمْ مَّا فِى الْاَرْضِ جَمِيْعًا وَّمِثْلَهٗ مَعَهٗ لِيَفْتَدُوْا بِهٖ مِنْ عَذَابِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَا تُقُبِّلَ مِنْهُمْۚ وَلَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
যারা কুফরী করেছে, যদি তাদের কাছে পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ থাকে এবং তার সাথে আরো সমপরিমাণ থাকে এবং এগুলোর বিনিময়ে কিয়ামতের দিন শাস্তি থেকে রেহাই পেতে চায়, তবুও তাদের কাছ থেকে তা গ্রহণ করা হবে না। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরা মায়েদা- ৩৬)
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَمَاتُوْا وَهُمْ كُفَّارٌ فَلَنْ يُّقْبَلَ مِنْ اَحَدِهِمْ مِّلْءُ الْاَرْضِ ذَهَبًا وَّلَوِ افْتَدٰى بِهٖؕ اُولٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ وَّمَا لَهُمْ مِّنْ نَّاصِرِيْنَ
নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে এবং কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে তাদের কাছ থেকে পৃথিবী পরিমাণ স্বর্ণও গ্রহণ করা হবে না, যদিও তারা বিনিময় হিসেবে তা দিতে চায়। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি এবং তাদের কোন সাহায্যকারীও থাকবে না। (সূরা আলে ইমরান- ৯১)
কৃতকর্মের স্বাদ ভোগ করতেই হবে :
وَاِنْ تَعْدِلْ كُلَّ عَدْلٍ لَّا يُؤْخَذْ مِنْهَاؕ اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ اُبْسِلُوْا بِمَا كَسَبُوْاۚ لَهُمْ شَرَابٌ مِّنْ حَمِيْمٍ وَّعَذَابٌ اَلِيْمٌ ۢبِمَا كَانُوْا يَكْفُرُوْنَ
(অপরাধীরা) বিনিময় হিসেবে সবকিছু দিতে চাইলেও তা গৃহীত হবে না। এরা নিজেদের কৃতকর্মের জন্যই ধ্বংস হবে; কুফরীর কারণে এদের জন্য রয়েছে উত্তপ্ত পানীয় ও মর্মামিত্মক শাস্তি। (সূরা আন‘আম- ৭০)
فَالْيَوْمَ لَا يُؤْخَذُ مِنْكُمْ فِدْيَةٌ وَّلَا مِنَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاؕ مَاْوَاكُمُ النَّارُؕ هِيَ مَوْلَاكُمْؕ وَبِئْسَ الْمَصِيْرُ
আজ তোমাদের নিকট হতে কোন মুক্তিপণ নেয়া হবে না এবং কাফিরদের নিকট হতেও নয়। জাহান্নামই তোমাদের আবাসস্থল, এটাই তোমাদের চিরসঙ্গী; কতই না নিকৃষ্ট তোমাদের এ প্রত্যাবর্তন! (সূরা হাদীদ- ১৫)
اَفَمَنْ يَّتَّقِيْ بِوَجْهِهٖ سُوْٓءَ الْعَذَابِ يَوْمَ الْقِيَامَةِؕ وَقِيْلَ لِلظَّالِمِيْنَ ذُوْقُوْا مَا كُنْتُمْ تَكْسِبُوْنَ
যে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন নিজের মুখমন্ডল দ্বারা কঠিন আযাব ঠেকাতে চাইবে, (সে কি ঐ ব্যক্তির মতো হবে, যে এরূপ নয়?) আর এসব যালিমদেরকে বলা হবে, তোমরা যা অর্জন করেছিলে তার বিনিময়ে (শাস্তির) স্বাদ গ্রহণ করো। (সূরা যুমার- ২৪)
ব্যাখ্যা : মানুষ মুখমন্ডলের উপর কোন আঘাত তখনই সহ্য করে যখন সে পুরোপুরি অক্ষম ও নিরুপায় হয়ে পড়ে। অন্যথায় যতক্ষণ পর্যন্ত তার মধ্যে প্রতিরোধের সামান্যতম শক্তিও বাকি থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে শরীরের প্রত্যেকটি অংশে আঘাত সহ্য করতে থাকে; কিন্তু তবুও মুখের উপর আঘাত লাগতে দেয় না। তাই এখানে ঐ ব্যক্তির চরম অসহায়ত্বের চিত্রাঙ্কন করা হয়েছে এই বলে যে, সে নিজের মুখে চরম আঘাত সহ্য করবে।
পরিশেষে সবাই জাহান্নামে যাবে :
اُحْشُرُوا الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا وَاَزْوَاجَهُمْ وَمَا كَانُوْا يَعْبُدُوْنَ – مِنْ دُوْنِ اللهِ فَاهْدُوْهُمْ اِلٰى صِرَاطِ الْجَحِيْمِ
(ফেরেশতাদেরকে বলা হবে) যালিমদেরকে ও তাদের সাথিদেরকে এবং তারা আল্লাহ ব্যতীত যাদের ইবাদাত করত তাদেরকে একত্র করো। অতঃপর তাদেরকে জাহান্নামের পথে পরিচালিত করো। (সূরা সাফ্ফাত- ২২, ২৩)
وَقَالَ قَرِيْنُهٗ هٰذَا مَا لَدَيَّ عَتِيْدٌ – اَلْقِيَا فِيْ جَهَنَّمَ كُلَّ كَفَّارٍ عَنِيْدٍ
তার সাথি (ফেরেশতা) বলবে, এই তো আমার নিকট আমলনামা প্রস্তুত। (আদেশ করা হবে) তোমরা উভয়ে প্রত্যেক কাফিরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করো। (সূরা ক্বাফ- ২৩, ২৪)
অপরাধী নেতারা দ্বিগুণ শাস্তি ভোগ করবে :
وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّبِعُوْا سَبِيْلَنَا وَلْنَحْمِلْ خَطَايَاكُمْؕ وَمَا هُمْ بِحَامِلِيْنَ مِنْ خَطَايَاهُمْ مِّنْ شَيْءٍؕ اِنَّهُمْ لَكَاذِبُوْنَ – وَلَيَحْمِلُنَّ اَثْقَالَهُمْ وَاَثْقَالًا مَّعَ اَثْقَالِهِمْ وَلَيُسْاَلُنَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَمَّا كَانُوْا يَفْتَرُوْنَ
কাফিররা মুমিনদেরকে বলে, আমাদের পথ অনুসরণ করো তাহলে আমরা তোমাদের পাপের বোঝা বহন করব। কিন্তু তারা তো তাদের পাপের বোঝা কিছুই বহন করবে না; অবশ্যই তারা মিথ্যাবাদী। তারা নিজেদের ভার বহন করবে এবং নিজেদের বোঝার সাথে আরো কিছু বোঝা। আর তারা যে মিথ্যা উদ্ভাবন করে সে সম্পর্কে কিয়ামত দিবসে অবশ্যই তাদেরকে প্রশ্ন করা হবে। (সূরা আনকাবূত- ১২, ১৩)
وَاِذَا قِيْلَ لَهُمْ مَّاذَاۤ اَنْزَلَ رَبُّكُمْ قَالُوْاۤ اَسَاطِيْرُ الْاَوَّلِيْنَ ‐ لِيَحْمِلُوْاۤ اَوْزَارَهُمْ كَامِلَةً يَّوْمَ الْقِيَامَةِ وَمِنْ اَوْزَارِ الَّذِيْنَ يُضِلُّوْنَهُمْ بِغَيْرِ عِلْمٍؕ اَلَا سَآءَ مَا يَزِرُوْنَ
যখন তাদেরকে বলা হয়, তোমাদের প্রতিপালক কী অবতীর্ণ করেছেন? তখন তারা বলে, পূর্ববর্তীদের উপকথা! ফলে কিয়ামতের দিন তারা তাদের পাপের বোঝা পূর্ণ মাত্রায় বহন করবে এবং তাদেরও পাপের বোঝা বহন করবে- যাদেরকে তারা না জেনে বিভ্রামত্ম করেছে। লক্ষ্য করো, তারা যা বহন করবে তা কতই না নিকৃষ্ট! (সূরা নাহল- ২৪, ২৫)
اَلَّذِيْنَ يَصُدُّوْنَ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ وَيَبْغُوْنَهَا عِوَجًا وَّهُمْ بِالْاٰخِرَةِ هُمْ كَافِرُوْنَ – اُولٰٓئِكَ لَمْ يَكُوْنُوْا مُعْجِزِيْنَ فِى الْاَرْضِ وَمَا كَانَ لَهُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ مِنْ اَوْلِيَآءَ يُضَاعَفُ لَهُمُ الْعَذَابُؕ مَا كَانُوْا يَسْتَطِيْعُوْنَ السَّمْعَ وَمَا كَانُوْا يُبْصِرُوْنَ
যারা আল্লাহর পথে বাধা দেয় এবং এতে বক্রতা অনুসন্ধান করে; তারাই আখিরাতের ব্যাপারে অবিশ্বাসী। তারা পৃথিবীতে আল্লাহকে অপারগ করতে পারেনি এবং আল্লাহ ব্যতীত তাদের অপর কোন অভিভাবক ছিল না। তাদের শাসিত্ম দ্বিগুণ করা হবে, তাদের শুনার সামর্থ্যও ছিল না এবং তারা দেখতেও পারত না। (সূরা হুদ- ১৯, ২০)
ব্যাখ্যা : সৎলোক অথবা অসৎলোক উভয়ই দ্বিগুণ বোঝা বহন করবে। সৎলোক দ্বিগুণ নেকীর বোঝা বহন করবে; আর অসৎলোক দ্বিগুণ পাপের বোঝা বহন করবে। এ ক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না এবং কারো উপর কোন রকম যুলুমও করা হবে না। আর তারা এসব বোঝা বহন করবে তাদের নিজ নিজ আমলের কারণে। রাসূল ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি সঠিক পথের দিকে আহবান জানায় সে তাদের সমান প্রতিদান পাবে, যারা তার আহবানে সাড়া দিয়ে সঠিক পথ অবলম্বন করেছে। এজন্য তাদের প্রতিদানে কোন কমতি করা হবে না। আর যে ব্যক্তি গোমরাহীর দিকে আহবান জানায় সে তাদের সবার সমান গোনাহের ভাগী হবে, যারা তার অনুসরণ করেছে এবং এজন্য তাদের গোনাহের মধ্যে কোন কমতি করা হবে না। (সহীহ মুসলিম, হা/৬৯৮০)
অপরাধীদের কোন অভিযোগ কাজে লাগবে না :
فَيَوْمَئِذٍ لَّا يَنْفَعُ الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا مَعْذِرَتُهُمْ وَلَا هُمْ يُسْتَعْتَبُوْنَ
সেদিন যালিমদের আপত্তি তাদের কোন উপকারে আসবে না এবং তাদেরকে তাওবা করারও সুযোগ দেয়া হবে না। (সূরা রূম- ৫৭)
يَوْمَ لَا يَنْفَعُ الظَّالِمِيْنَ مَعْذِرَتُهُمْ وَلَهُمُ اللَّعْنَةُ وَلَهُمْ سُوْٓءُ الدَّارِ
সেদিন যালিমদের কোন আপত্তিই কোন উপকারে আসবে না। তাদের জন্য রয়েছে লানত এবং তাদের জন্য রয়েছে নিকৃষ্ট আবাসস্থল। (সূরা মু’মিন- ৫২)
তারা নিজেদেরকে ধিক্কার দেবে :
وَقَالُوْا يَا وَيْلَنَا هٰذَا يَوْمُ الدِّيْنِ
আর তারা বলবে, হায় আমাদের দুর্ভাগ্য! এটাই তো বিচারের দিন। (সূরা সাফ্ফাত- ২০)
وَاقْتَرَبَ الْوَعْدُ الْحَقُّ فَاِذَا هِيَ شَاخِصَةٌ اَبْصَارُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاؕ يَا وَيْلَنَا قَدْ كُنَّا فِيْ غَفْلَةٍ مِّنْ هٰذَا بَلْ كُنَّا ظَالِمِيْنَ
সত্য প্রতিশ্রুতিকাল আসন্ন হলে কাফিরদের চক্ষু স্থির হয়ে যাবে। তারা বলবে, হায় দুর্ভোগ আমাদের! আমরা তো এ বিষয়ে উদাসীন ছিলাম; এমনকি আমরা সীমালঙ্ঘনকারীও ছিলাম। (সূরা আম্বিয়া- ৯৭)
অপরাধীরা দুনিয়াতে ফিরে আসতে চাইবে :
وَلَوْ تَرٰۤى اِذِ الْمُجْرِمُوْنَ نَاكِسُوْا رُءُوْسِهِمْ عِنْدَ رَبِّهِمْؕ رَبَّنَاۤ اَبْصَرْنَا وَسَمِعْنَا فَارْجِعْنَا نَعْمَلْ صَالِحًا اِنَّا مُوْقِنُوْنَ
আর যদি আপনি দেখতেন, যখন পাপীরা তাদের প্রতিপালকের সামনে স্বীয় মাথা নীচু করে বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা দেখলাম ও শ্রবণ করলাম। এখন আপনি আমাদেরকে পুনরায় (পৃথিবীতে) প্রেরণ করুন; আমরা নেক কাজ করব। এখন আমরা দৃঢ় বিশ্বাসী হয়েছি। (সূরা সাজদা- ১২)
يَقُوْلُ الَّذِيْنَ نَسُوْهُ مِنْ قَبْلُ قَدْ جَآءَتْ رُسُلُ رَبِّنَا بِالْحَقِّۚ فَهَلْ لَّنَا مِنْ شُفَعَآءَ فَيَشْفَعُوْا لَنَاۤ اَوْ نُرَدُّ فَنَعْمَلَ غَيْرَ الَّذِيْ كُنَّا نَعْمَلُ
সেদিন যারা ইতোপূর্বে তার কথা ভুলে গিয়েছিল তারা বলবে, আমাদের প্রতিপালকের রাসূলগণ তো সত্যবাণীই এনেছিল। এখন আমাদের কি এমন কোন সুপারিশকারী আছে, যে আমাদের জন্য সুপারিশ করবে? অথবা আমাদেরকে কি পুনরায় ফিরে যেতে দেয়া হবে, যেন আমরা পূর্বে যা করতাম তা হতে ভিন্নতর কিছু করতে পারি? (সূরা আ‘রাফ- ৫৩)
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا يُنَادَوْنَ لَمَقْتُ اللهِ اَكْبَرُ مِنْ مَّقْتِكُمْ اَنْفُسَكُمْ اِذْ تُدْعَوْنَ اِلَى الْاِيْمَانِ فَتَكْفُرُوْنَ ‐ قَالُوْا رَبَّنَاۤ اَمَتَّنَا اثْنَتَيْنِ وَاَحْيَيْتَنَا اثْنَتَيْنِ فَاعْتَرَفْنَا بِذُنُوْبِنَا فَهَلْ اِلٰى خُرُوْجٍ مِّنْ سَبِيْلٍ
নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে তাদেরকে আহবান করা হবে। (অতঃপর বলা হবে) নিজেদের প্রতি তোমাদের ক্ষোভ অপেক্ষা আল্লাহর অসন্তুষ্টিই ছিল অনেক বড়। (কেননা) যখন তোমাদেরকে ঈমানের প্রতি আহবান করা হতো তখন তোমরা তা অস্বীকার করতে। তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদেরকে মৃত অবস্থায় দু’বার রেখেছেন এবং দু’বার প্রাণ দিয়েছেন। আমরা আমাদের অপরাধ স্বীকার করছি; এখন বহির্গমণের (নিস্কৃতির জন্য) কোন পথ মিলবে কি? (সূরা মু’মিন- ১০, ১১)
ব্যাখ্যা : কিয়ামতের দিন কাফিররা যখন দেখবে যে, তারা পৃথিবীতে শিরক, নাস্তিকতা, আখিরাতকে অস্বীকৃতি এবং নবী-রাসূলদের বিরোধিতার উপর নিজেদের গোটা জীবনের ভিত্তি স্থাপন করার কারণে চরম অশুভ পরিণামের সম্মুখীন হয়েছে, তখন তারা নিজেদের আঙ্গুল কামড়াতে থাকবে এবং বিরক্ত হয়ে নিজেরাই নিজেদের উপর অভিশাপ দিতে থাকবে। এসময় ফেরেশতারা তাদেরকে ডেকে বলবেন, আজ তোমরা নিজেরাই নিজেদের উপর অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হচ্ছ; অথচ ইতোপূর্বে পৃথিবীতে তোমাদেরকে এ পরিণাম থেকে রক্ষা করার জন্য সৎকর্মশীল লোকেরা সঠিক পথের দিকে আহবান করেছিলেন, কিন্তু তোমরা সে আহবান প্রত্যাখ্যান করতে। তখন আল্লাহর ক্রোধ এর চেয়েও বেশি প্রজ্বলিত হতো। তারা বলবে, এখন আমরা আযাবের মধ্যে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মতো যে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি, আমাদের পক্ষ থেকে অপরাধের স্বীকৃতিকে গ্রহণ করে তা থেকে রক্ষা পাওয়ার কোন সম্ভাবনা আছে কি?
কিন্তু দুনিয়াতে ফিরে আসার কোন সুযোগ থাকবে না :
وَاَنْذِرِ النَّاسَ يَوْمَ يَاْتِيْهِمُ الْعَذَابُ فَيَقُوْلُ الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا رَبَّنَاۤ اَخِّرْنَاۤ اِلٰۤى اَجَلٍ قَرِيْبٍ نُّجِبْ دَعْوَتَكَ وَنَتَّبِعِ الرُّسُلَؕ اَوَلَمْ تَكُوْنُوْاۤ اَقْسَمْتُمْ مِّنْ قَبْلُ مَا لَكُمْ مِّنْ زَوَالٍ
যেদিন তাদের শাসিত্মর আগমন ঘটবে, সেদিন সম্পর্কে তুমি মানুষকে সতর্ক করো। তখন যালিমরা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে কিছু কালের জন্য অবকাশ দাও, আমরা তোমার আহবানে সাড়া দেব এবং রাসূলগণের অনুসরণ করব। (তখন আল্লাহ বলবেন) তোমরা কি পূর্বে শপথ করে বলতে না যে, তোমাদের পতন নেই? (সূরা ইবরাহীম- ৪৪)
بَلْ بَدَا لَهُمْ مَّا كَانُوْا يُخْفُوْنَ مِنْ قَبْلُؕ وَلَوْ رُدُّوْا لَعَادُوْا لِمَا نُهُوْا عَنْهُ وَاِنَّهُمْ لَكَاذِبُوْنَ
বরং পূর্বে তারা যা গোপন করত এখন তা তাদের নিকট প্রকাশ পেয়ে গেছে। এখন তারা প্রত্যাবর্তিত হলেও তাদেরকে যা করতে নিষেধ করা হয়েছিল পুনরায় তারা তাই করবে; নিশ্চয় তারা মিথ্যাবাদী। (সূরা আন‘আম- ২৮)
নবীদের পথ অনুসরণ না করার কারণে অপরাধীরা আফসোস করবে :
وَيَوْمَ يَعَضُّ الظَّالِمُ عَلٰى يَدَيْهِ يَقُوْلُ يَا لَيْتَنِى اتَّخَذْتُ مَعَ الرَّسُوْلِ سَبِيْلًا ‐ يَا وَيْلَتَا لَيْتَنِيْ لَمْ اَتَّخِذْ فُلَانًا خَلِيْلًا – لَقَدْ اَضَلَّنِيْ عَنِ الذِّكْرِ بَعْدَ اِذْ جَآءَنِيْؕ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِلْاِنْسَانِ خَذُوْلًا
সেদিন যালিম ব্যক্তি নিজ হসত্মদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে, হায়! আমি যদি রাসূলের সাথে সৎপথ অবলম্বন করতাম। হায় আমার দুর্ভোগ, আমি যদি অমুককে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করতাম, সে তো আমাকে বিভ্রামত্ম করেছিল আমার নিকট উপদেশ পৌঁছার পর। আর শয়তান মানুষের জন্য মহাপ্রতারক। (সূরা ফুরক্বান, ২৭-২৯)
يَوْمَ تُقَلَّبُ وُجُوْهُهُمْ فِى النَّارِ يَقُوْلُوْنَ يَا لَيْتَنَاۤ اَطَعْنَا اللهَ وَاَطَعْنَا الرَّسُوْلَا – وَقَالُوْا رَبَّنَاۤ اِنَّاۤ اَطَعْنَا سَادَتَنَا وَكُبَرَآءَنَا فَاَضَلُوْنَا السَّبِيْلَا
যেদিন তাদের চেহারা জাহান্নামের আগুনের মধ্যে পরিবর্তন করা হবে, সেদিন তারা বলবে হায়! আমরা যদি আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করতাম! তারা আরো বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা তো আমাদের নেতা ও বড়দের অনুসরণ করেছিলাম। অতএব তারাই আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল। (সূরা আহযাব- ৬৬, ৬৭)
ব্যাখ্যা : দুনিয়ায় আমার নবী ক্রমাগতভাবে তোমাদেরকে বলেছেন যে, দুনিয়ার জীবন নিছক কয়েকটি পরীক্ষার ঘণ্টামাত্র। সুতরাং একেই তোমরা আসল এবং একমাত্র জীবন মনে করো না। আসল জীবন হচ্ছে আখিরাতের জীবন। সেখানে তোমাদেরকে চিরকাল থাকতে হবে। এখানকার সাময়িক লাভ ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের লোভে এমন কাজ করো না, যা আখিরাতের চিরন্তন জীবন ধ্বংস করে দেয়। কিন্তু তখন তো তোমরা তাঁর কথায় কান দাওনি। কাজেই এখন আর অনুশোচনা করে কী লাভ। তখনই ছিল সাবধান হওয়ার উপযুক্ত সময় যখন তোমরা দুনিয়ার কয়েক দিনের জীবনের ভোগবিলাসে মত্ত হয়ে এখানকার চিরন্তন জীবনের লাভ বিসর্জন দিয়ে এসেছ।
وَجِيْٓئَ يَوْمَئِذٍ ۢبِجَهَنَّمَ يَوْمَئِذٍ يَّتَذَكَّرُ الْاِنْسَانُ وَاَنّٰى لَهُ الذِّكْرٰى – يَقُوْلُ يَا لَيْتَنِيْ قَدَّمْتُ لِحَيَاتِيْ
যেদিন জাহান্নামকে আনা হবে, সেদিন মানুষ উপলদ্ধি করবে। কিন্তু এই উপলব্ধি তার কি কোন কাজে আসবে? সে বলবে, হায়! আমার এ জীবনের জন্য আমি যদি কিছু অগ্রীম পাঠাতাম! (সূরা ফাজর- ২৩, ২৪)
وَاِنْ تَعْدِلْ كُلَّ عَدْلٍ لَّا يُؤْخَذْ مِنْهَاؕ اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ اُبْسِلُوْا بِمَا كَسَبُوْاۚ لَهُمْ شَرَابٌ مِّنْ حَمِيْمٍ وَّعَذَابٌ اَلِيْمٌ ۢبِمَا كَانُوْا يَكْفُرُوْنَ
(অপরাধীরা) বিনিময় হিসেবে সবকিছু দিতে চাইলেও তা গৃহীত হবে না। এরা নিজেদের কৃতকর্মের জন্যই ধ্বংস হবে; কুফরীর কারণে এদের জন্য রয়েছে উত্তপ্ত পানীয় ও মর্মামিত্মক শাস্তি। (সূরা আন‘আম- ৭০)
فَالْيَوْمَ لَا يُؤْخَذُ مِنْكُمْ فِدْيَةٌ وَّلَا مِنَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاؕ مَاْوَاكُمُ النَّارُؕ هِيَ مَوْلَاكُمْؕ وَبِئْسَ الْمَصِيْرُ
আজ তোমাদের নিকট হতে কোন মুক্তিপণ নেয়া হবে না এবং কাফিরদের নিকট হতেও নয়। জাহান্নামই তোমাদের আবাসস্থল, এটাই তোমাদের চিরসঙ্গী; কতই না নিকৃষ্ট তোমাদের এ প্রত্যাবর্তন! (সূরা হাদীদ- ১৫)
اَفَمَنْ يَّتَّقِيْ بِوَجْهِهٖ سُوْٓءَ الْعَذَابِ يَوْمَ الْقِيَامَةِؕ وَقِيْلَ لِلظَّالِمِيْنَ ذُوْقُوْا مَا كُنْتُمْ تَكْسِبُوْنَ
যে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন নিজের মুখমন্ডল দ্বারা কঠিন আযাব ঠেকাতে চাইবে, (সে কি ঐ ব্যক্তির মতো হবে, যে এরূপ নয়?) আর এসব যালিমদেরকে বলা হবে, তোমরা যা অর্জন করেছিলে তার বিনিময়ে (শাস্তির) স্বাদ গ্রহণ করো। (সূরা যুমার- ২৪)
ব্যাখ্যা : মানুষ মুখমন্ডলের উপর কোন আঘাত তখনই সহ্য করে যখন সে পুরোপুরি অক্ষম ও নিরুপায় হয়ে পড়ে। অন্যথায় যতক্ষণ পর্যন্ত তার মধ্যে প্রতিরোধের সামান্যতম শক্তিও বাকি থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে শরীরের প্রত্যেকটি অংশে আঘাত সহ্য করতে থাকে; কিন্তু তবুও মুখের উপর আঘাত লাগতে দেয় না। তাই এখানে ঐ ব্যক্তির চরম অসহায়ত্বের চিত্রাঙ্কন করা হয়েছে এই বলে যে, সে নিজের মুখে চরম আঘাত সহ্য করবে।
পরিশেষে সবাই জাহান্নামে যাবে :
اُحْشُرُوا الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا وَاَزْوَاجَهُمْ وَمَا كَانُوْا يَعْبُدُوْنَ – مِنْ دُوْنِ اللهِ فَاهْدُوْهُمْ اِلٰى صِرَاطِ الْجَحِيْمِ
(ফেরেশতাদেরকে বলা হবে) যালিমদেরকে ও তাদের সাথিদেরকে এবং তারা আল্লাহ ব্যতীত যাদের ইবাদাত করত তাদেরকে একত্র করো। অতঃপর তাদেরকে জাহান্নামের পথে পরিচালিত করো। (সূরা সাফ্ফাত- ২২, ২৩)
وَقَالَ قَرِيْنُهٗ هٰذَا مَا لَدَيَّ عَتِيْدٌ – اَلْقِيَا فِيْ جَهَنَّمَ كُلَّ كَفَّارٍ عَنِيْدٍ
তার সাথি (ফেরেশতা) বলবে, এই তো আমার নিকট আমলনামা প্রস্তুত। (আদেশ করা হবে) তোমরা উভয়ে প্রত্যেক কাফিরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করো। (সূরা ক্বাফ- ২৩, ২৪)
অপরাধী নেতারা দ্বিগুণ শাস্তি ভোগ করবে :
وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّبِعُوْا سَبِيْلَنَا وَلْنَحْمِلْ خَطَايَاكُمْؕ وَمَا هُمْ بِحَامِلِيْنَ مِنْ خَطَايَاهُمْ مِّنْ شَيْءٍؕ اِنَّهُمْ لَكَاذِبُوْنَ – وَلَيَحْمِلُنَّ اَثْقَالَهُمْ وَاَثْقَالًا مَّعَ اَثْقَالِهِمْ وَلَيُسْاَلُنَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَمَّا كَانُوْا يَفْتَرُوْنَ
কাফিররা মুমিনদেরকে বলে, আমাদের পথ অনুসরণ করো তাহলে আমরা তোমাদের পাপের বোঝা বহন করব। কিন্তু তারা তো তাদের পাপের বোঝা কিছুই বহন করবে না; অবশ্যই তারা মিথ্যাবাদী। তারা নিজেদের ভার বহন করবে এবং নিজেদের বোঝার সাথে আরো কিছু বোঝা। আর তারা যে মিথ্যা উদ্ভাবন করে সে সম্পর্কে কিয়ামত দিবসে অবশ্যই তাদেরকে প্রশ্ন করা হবে। (সূরা আনকাবূত- ১২, ১৩)
وَاِذَا قِيْلَ لَهُمْ مَّاذَاۤ اَنْزَلَ رَبُّكُمْ قَالُوْاۤ اَسَاطِيْرُ الْاَوَّلِيْنَ ‐ لِيَحْمِلُوْاۤ اَوْزَارَهُمْ كَامِلَةً يَّوْمَ الْقِيَامَةِ وَمِنْ اَوْزَارِ الَّذِيْنَ يُضِلُّوْنَهُمْ بِغَيْرِ عِلْمٍؕ اَلَا سَآءَ مَا يَزِرُوْنَ
যখন তাদেরকে বলা হয়, তোমাদের প্রতিপালক কী অবতীর্ণ করেছেন? তখন তারা বলে, পূর্ববর্তীদের উপকথা! ফলে কিয়ামতের দিন তারা তাদের পাপের বোঝা পূর্ণ মাত্রায় বহন করবে এবং তাদেরও পাপের বোঝা বহন করবে- যাদেরকে তারা না জেনে বিভ্রামত্ম করেছে। লক্ষ্য করো, তারা যা বহন করবে তা কতই না নিকৃষ্ট! (সূরা নাহল- ২৪, ২৫)
اَلَّذِيْنَ يَصُدُّوْنَ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ وَيَبْغُوْنَهَا عِوَجًا وَّهُمْ بِالْاٰخِرَةِ هُمْ كَافِرُوْنَ – اُولٰٓئِكَ لَمْ يَكُوْنُوْا مُعْجِزِيْنَ فِى الْاَرْضِ وَمَا كَانَ لَهُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ مِنْ اَوْلِيَآءَ يُضَاعَفُ لَهُمُ الْعَذَابُؕ مَا كَانُوْا يَسْتَطِيْعُوْنَ السَّمْعَ وَمَا كَانُوْا يُبْصِرُوْنَ
যারা আল্লাহর পথে বাধা দেয় এবং এতে বক্রতা অনুসন্ধান করে; তারাই আখিরাতের ব্যাপারে অবিশ্বাসী। তারা পৃথিবীতে আল্লাহকে অপারগ করতে পারেনি এবং আল্লাহ ব্যতীত তাদের অপর কোন অভিভাবক ছিল না। তাদের শাসিত্ম দ্বিগুণ করা হবে, তাদের শুনার সামর্থ্যও ছিল না এবং তারা দেখতেও পারত না। (সূরা হুদ- ১৯, ২০)
ব্যাখ্যা : সৎলোক অথবা অসৎলোক উভয়ই দ্বিগুণ বোঝা বহন করবে। সৎলোক দ্বিগুণ নেকীর বোঝা বহন করবে; আর অসৎলোক দ্বিগুণ পাপের বোঝা বহন করবে। এ ক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না এবং কারো উপর কোন রকম যুলুমও করা হবে না। আর তারা এসব বোঝা বহন করবে তাদের নিজ নিজ আমলের কারণে। রাসূল ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি সঠিক পথের দিকে আহবান জানায় সে তাদের সমান প্রতিদান পাবে, যারা তার আহবানে সাড়া দিয়ে সঠিক পথ অবলম্বন করেছে। এজন্য তাদের প্রতিদানে কোন কমতি করা হবে না। আর যে ব্যক্তি গোমরাহীর দিকে আহবান জানায় সে তাদের সবার সমান গোনাহের ভাগী হবে, যারা তার অনুসরণ করেছে এবং এজন্য তাদের গোনাহের মধ্যে কোন কমতি করা হবে না। (সহীহ মুসলিম, হা/৬৯৮০)
অপরাধীদের কোন অভিযোগ কাজে লাগবে না :
فَيَوْمَئِذٍ لَّا يَنْفَعُ الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا مَعْذِرَتُهُمْ وَلَا هُمْ يُسْتَعْتَبُوْنَ
সেদিন যালিমদের আপত্তি তাদের কোন উপকারে আসবে না এবং তাদেরকে তাওবা করারও সুযোগ দেয়া হবে না। (সূরা রূম- ৫৭)
يَوْمَ لَا يَنْفَعُ الظَّالِمِيْنَ مَعْذِرَتُهُمْ وَلَهُمُ اللَّعْنَةُ وَلَهُمْ سُوْٓءُ الدَّارِ
সেদিন যালিমদের কোন আপত্তিই কোন উপকারে আসবে না। তাদের জন্য রয়েছে লানত এবং তাদের জন্য রয়েছে নিকৃষ্ট আবাসস্থল। (সূরা মু’মিন- ৫২)
তারা নিজেদেরকে ধিক্কার দেবে :
وَقَالُوْا يَا وَيْلَنَا هٰذَا يَوْمُ الدِّيْنِ
আর তারা বলবে, হায় আমাদের দুর্ভাগ্য! এটাই তো বিচারের দিন। (সূরা সাফ্ফাত- ২০)
وَاقْتَرَبَ الْوَعْدُ الْحَقُّ فَاِذَا هِيَ شَاخِصَةٌ اَبْصَارُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاؕ يَا وَيْلَنَا قَدْ كُنَّا فِيْ غَفْلَةٍ مِّنْ هٰذَا بَلْ كُنَّا ظَالِمِيْنَ
সত্য প্রতিশ্রুতিকাল আসন্ন হলে কাফিরদের চক্ষু স্থির হয়ে যাবে। তারা বলবে, হায় দুর্ভোগ আমাদের! আমরা তো এ বিষয়ে উদাসীন ছিলাম; এমনকি আমরা সীমালঙ্ঘনকারীও ছিলাম। (সূরা আম্বিয়া- ৯৭)
অপরাধীরা দুনিয়াতে ফিরে আসতে চাইবে :
وَلَوْ تَرٰۤى اِذِ الْمُجْرِمُوْنَ نَاكِسُوْا رُءُوْسِهِمْ عِنْدَ رَبِّهِمْؕ رَبَّنَاۤ اَبْصَرْنَا وَسَمِعْنَا فَارْجِعْنَا نَعْمَلْ صَالِحًا اِنَّا مُوْقِنُوْنَ
আর যদি আপনি দেখতেন, যখন পাপীরা তাদের প্রতিপালকের সামনে স্বীয় মাথা নীচু করে বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা দেখলাম ও শ্রবণ করলাম। এখন আপনি আমাদেরকে পুনরায় (পৃথিবীতে) প্রেরণ করুন; আমরা নেক কাজ করব। এখন আমরা দৃঢ় বিশ্বাসী হয়েছি। (সূরা সাজদা- ১২)
يَقُوْلُ الَّذِيْنَ نَسُوْهُ مِنْ قَبْلُ قَدْ جَآءَتْ رُسُلُ رَبِّنَا بِالْحَقِّۚ فَهَلْ لَّنَا مِنْ شُفَعَآءَ فَيَشْفَعُوْا لَنَاۤ اَوْ نُرَدُّ فَنَعْمَلَ غَيْرَ الَّذِيْ كُنَّا نَعْمَلُ
সেদিন যারা ইতোপূর্বে তার কথা ভুলে গিয়েছিল তারা বলবে, আমাদের প্রতিপালকের রাসূলগণ তো সত্যবাণীই এনেছিল। এখন আমাদের কি এমন কোন সুপারিশকারী আছে, যে আমাদের জন্য সুপারিশ করবে? অথবা আমাদেরকে কি পুনরায় ফিরে যেতে দেয়া হবে, যেন আমরা পূর্বে যা করতাম তা হতে ভিন্নতর কিছু করতে পারি? (সূরা আ‘রাফ- ৫৩)
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا يُنَادَوْنَ لَمَقْتُ اللهِ اَكْبَرُ مِنْ مَّقْتِكُمْ اَنْفُسَكُمْ اِذْ تُدْعَوْنَ اِلَى الْاِيْمَانِ فَتَكْفُرُوْنَ ‐ قَالُوْا رَبَّنَاۤ اَمَتَّنَا اثْنَتَيْنِ وَاَحْيَيْتَنَا اثْنَتَيْنِ فَاعْتَرَفْنَا بِذُنُوْبِنَا فَهَلْ اِلٰى خُرُوْجٍ مِّنْ سَبِيْلٍ
নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে তাদেরকে আহবান করা হবে। (অতঃপর বলা হবে) নিজেদের প্রতি তোমাদের ক্ষোভ অপেক্ষা আল্লাহর অসন্তুষ্টিই ছিল অনেক বড়। (কেননা) যখন তোমাদেরকে ঈমানের প্রতি আহবান করা হতো তখন তোমরা তা অস্বীকার করতে। তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদেরকে মৃত অবস্থায় দু’বার রেখেছেন এবং দু’বার প্রাণ দিয়েছেন। আমরা আমাদের অপরাধ স্বীকার করছি; এখন বহির্গমণের (নিস্কৃতির জন্য) কোন পথ মিলবে কি? (সূরা মু’মিন- ১০, ১১)
ব্যাখ্যা : কিয়ামতের দিন কাফিররা যখন দেখবে যে, তারা পৃথিবীতে শিরক, নাস্তিকতা, আখিরাতকে অস্বীকৃতি এবং নবী-রাসূলদের বিরোধিতার উপর নিজেদের গোটা জীবনের ভিত্তি স্থাপন করার কারণে চরম অশুভ পরিণামের সম্মুখীন হয়েছে, তখন তারা নিজেদের আঙ্গুল কামড়াতে থাকবে এবং বিরক্ত হয়ে নিজেরাই নিজেদের উপর অভিশাপ দিতে থাকবে। এসময় ফেরেশতারা তাদেরকে ডেকে বলবেন, আজ তোমরা নিজেরাই নিজেদের উপর অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হচ্ছ; অথচ ইতোপূর্বে পৃথিবীতে তোমাদেরকে এ পরিণাম থেকে রক্ষা করার জন্য সৎকর্মশীল লোকেরা সঠিক পথের দিকে আহবান করেছিলেন, কিন্তু তোমরা সে আহবান প্রত্যাখ্যান করতে। তখন আল্লাহর ক্রোধ এর চেয়েও বেশি প্রজ্বলিত হতো। তারা বলবে, এখন আমরা আযাবের মধ্যে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মতো যে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি, আমাদের পক্ষ থেকে অপরাধের স্বীকৃতিকে গ্রহণ করে তা থেকে রক্ষা পাওয়ার কোন সম্ভাবনা আছে কি?
কিন্তু দুনিয়াতে ফিরে আসার কোন সুযোগ থাকবে না :
وَاَنْذِرِ النَّاسَ يَوْمَ يَاْتِيْهِمُ الْعَذَابُ فَيَقُوْلُ الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا رَبَّنَاۤ اَخِّرْنَاۤ اِلٰۤى اَجَلٍ قَرِيْبٍ نُّجِبْ دَعْوَتَكَ وَنَتَّبِعِ الرُّسُلَؕ اَوَلَمْ تَكُوْنُوْاۤ اَقْسَمْتُمْ مِّنْ قَبْلُ مَا لَكُمْ مِّنْ زَوَالٍ
যেদিন তাদের শাসিত্মর আগমন ঘটবে, সেদিন সম্পর্কে তুমি মানুষকে সতর্ক করো। তখন যালিমরা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে কিছু কালের জন্য অবকাশ দাও, আমরা তোমার আহবানে সাড়া দেব এবং রাসূলগণের অনুসরণ করব। (তখন আল্লাহ বলবেন) তোমরা কি পূর্বে শপথ করে বলতে না যে, তোমাদের পতন নেই? (সূরা ইবরাহীম- ৪৪)
بَلْ بَدَا لَهُمْ مَّا كَانُوْا يُخْفُوْنَ مِنْ قَبْلُؕ وَلَوْ رُدُّوْا لَعَادُوْا لِمَا نُهُوْا عَنْهُ وَاِنَّهُمْ لَكَاذِبُوْنَ
বরং পূর্বে তারা যা গোপন করত এখন তা তাদের নিকট প্রকাশ পেয়ে গেছে। এখন তারা প্রত্যাবর্তিত হলেও তাদেরকে যা করতে নিষেধ করা হয়েছিল পুনরায় তারা তাই করবে; নিশ্চয় তারা মিথ্যাবাদী। (সূরা আন‘আম- ২৮)
নবীদের পথ অনুসরণ না করার কারণে অপরাধীরা আফসোস করবে :
وَيَوْمَ يَعَضُّ الظَّالِمُ عَلٰى يَدَيْهِ يَقُوْلُ يَا لَيْتَنِى اتَّخَذْتُ مَعَ الرَّسُوْلِ سَبِيْلًا ‐ يَا وَيْلَتَا لَيْتَنِيْ لَمْ اَتَّخِذْ فُلَانًا خَلِيْلًا – لَقَدْ اَضَلَّنِيْ عَنِ الذِّكْرِ بَعْدَ اِذْ جَآءَنِيْؕ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِلْاِنْسَانِ خَذُوْلًا
সেদিন যালিম ব্যক্তি নিজ হসত্মদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে, হায়! আমি যদি রাসূলের সাথে সৎপথ অবলম্বন করতাম। হায় আমার দুর্ভোগ, আমি যদি অমুককে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করতাম, সে তো আমাকে বিভ্রামত্ম করেছিল আমার নিকট উপদেশ পৌঁছার পর। আর শয়তান মানুষের জন্য মহাপ্রতারক। (সূরা ফুরক্বান, ২৭-২৯)
يَوْمَ تُقَلَّبُ وُجُوْهُهُمْ فِى النَّارِ يَقُوْلُوْنَ يَا لَيْتَنَاۤ اَطَعْنَا اللهَ وَاَطَعْنَا الرَّسُوْلَا – وَقَالُوْا رَبَّنَاۤ اِنَّاۤ اَطَعْنَا سَادَتَنَا وَكُبَرَآءَنَا فَاَضَلُوْنَا السَّبِيْلَا
যেদিন তাদের চেহারা জাহান্নামের আগুনের মধ্যে পরিবর্তন করা হবে, সেদিন তারা বলবে হায়! আমরা যদি আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করতাম! তারা আরো বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা তো আমাদের নেতা ও বড়দের অনুসরণ করেছিলাম। অতএব তারাই আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল। (সূরা আহযাব- ৬৬, ৬৭)
ব্যাখ্যা : দুনিয়ায় আমার নবী ক্রমাগতভাবে তোমাদেরকে বলেছেন যে, দুনিয়ার জীবন নিছক কয়েকটি পরীক্ষার ঘণ্টামাত্র। সুতরাং একেই তোমরা আসল এবং একমাত্র জীবন মনে করো না। আসল জীবন হচ্ছে আখিরাতের জীবন। সেখানে তোমাদেরকে চিরকাল থাকতে হবে। এখানকার সাময়িক লাভ ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের লোভে এমন কাজ করো না, যা আখিরাতের চিরন্তন জীবন ধ্বংস করে দেয়। কিন্তু তখন তো তোমরা তাঁর কথায় কান দাওনি। কাজেই এখন আর অনুশোচনা করে কী লাভ। তখনই ছিল সাবধান হওয়ার উপযুক্ত সময় যখন তোমরা দুনিয়ার কয়েক দিনের জীবনের ভোগবিলাসে মত্ত হয়ে এখানকার চিরন্তন জীবনের লাভ বিসর্জন দিয়ে এসেছ।
وَجِيْٓئَ يَوْمَئِذٍ ۢبِجَهَنَّمَ يَوْمَئِذٍ يَّتَذَكَّرُ الْاِنْسَانُ وَاَنّٰى لَهُ الذِّكْرٰى – يَقُوْلُ يَا لَيْتَنِيْ قَدَّمْتُ لِحَيَاتِيْ
যেদিন জাহান্নামকে আনা হবে, সেদিন মানুষ উপলদ্ধি করবে। কিন্তু এই উপলব্ধি তার কি কোন কাজে আসবে? সে বলবে, হায়! আমার এ জীবনের জন্য আমি যদি কিছু অগ্রীম পাঠাতাম! (সূরা ফাজর- ২৩, ২৪)
আল্লাহ তা‘আলা হাশরবাসীদেরকে উদ্দেশ্য করে যা বলবেন :
يَا مَعْشَرَ الْجِنِّ وَالْاِنْسِ اَلَمْ يَاْتِكُمْ رُسُلٌ مِّنْكُمْ يَقُصُّوْنَ عَلَيْكُمْ اٰيَاتِيْ وَيُنْذِرُوْنَكُمْ لِقَآءَ يَوْمِكُمْ هٰذَاؕ قَالُوْا شَهِدْنَا عَلٰۤى اَنْفُسِنَا وَغَرَّتْهُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا وَشَهِدُوْا عَلٰۤى اَنْفُسِهِمْ اَنَّهُمْ كَانُوْا كَافِرِيْنَ
হে জিন ও মানব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্য হতে কি রাসূলগণ তোমাদের কাছে আসেনি, যারা আমার নিদর্শনসমূহ তোমাদের নিকট বর্ণনা করত এবং তোমাদেরকে এ দিনের সম্মুখীন হওয়া সম্বন্ধে সতর্ক করত? তারা বলবে, আমরা আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলাম। বস্তুত পার্থিব জীবন তাদেরকে প্রতারিত করেছে। আর তারা নিজেদের বিরুদ্ধে এ সাক্ষ্য দেবে যে, নিশ্চয় তারা কাফির ছিল। (সূরা আন‘আম- ১৩০)
وَلَقَدْ جِئْتُمُوْنَا فُرَادٰى كَمَا خَلَقْنَاكُمْ اَوَّلَ مَرَّةٍ وَّتَرَكْتُمْ مَّا خَوَّلْنَاكُمْ وَرَآءَ ظُهُوْرِكُمْۚ وَمَا نَرٰى مَعَكُمْ شُفَعَآءَكُمُ الَّذِيْنَ زَعَمْتُمْ اَنَّهُمْ فِيْكُمْ شُرَكَآءُؕ لَقَدْ تَّقَطَّعَ بَيْنَكُمْ وَضَلَّ عَنْكُمْ مَّا كُنْتُمْ تَزْعُمُوْنَ
তোমরা তো আমার নিকট নিঃসঙ্গ অবস্থায় এসেছ, যেমনিভাবে আমি তোমাদেরকে প্রথমে সৃষ্টি করেছিলাম। আর তোমাদেরকে যা দিয়েছিলাম তা তোমরা পেছনে ফেলে এসেছ। তোমরা যাদেরকে তোমাদের ব্যাপারে শরীক মনে করতে, তোমাদের সেই সুপারিশকারীদেরকেও তো তোমাদের সাথে দেখছি না। অবশ্যই তোমাদের সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে এবং তোমরা যা ধারণা করেছিলে তাও নিষ্ফল হয়েছে। (সূরা আন‘আম- ৯৪)
فَالْيَوْمَ لَا تُظْلَمُ نَفْسٌ شَيْئًا وَّلَا تُجْزَوْنَ اِلَّا مَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ ‐ اِنَّ اَصْحَابَ الْجَنَّةِ الْيَوْمَ فِيْ شُغُلٍ فَاكِهُوْنَ ‐ هُمْ وَاَزْوَاجُهُمْ فِيْ ظِلَالٍ عَلَى الْاَرَآئِكِ مُتَّكِئُوْنَ ‐ لَهُمْ فِيْهَا فَاكِهَةٌ وَّلَهُمْ مَّا يَدَّعُوْنَ ‐ سَلَامٌ قَوْلًا مِّنْ رَبٍّ رَّحِيْمٍ ‐ وَامْتَازُوا الْيَوْمَ اَيُّهَا الْمُجْرِمُوْنَ ‐ اَلَمْ اَعْهَدْ اِلَيْكُمْ يَا بَنِيْۤ اٰدَمَ اَنْ لَّا تَعْبُدُوا الشَّيْطَانَ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ ‐ وَاَنِ اعْبُدُوْنِيْؕ هٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيْمٌ ‐ وَلَقَدْ اَضَلَّ مِنْكُمْ جِبِلًّا كَثِيْرًاؕ اَفَلَمْ تَكُوْنُوْا تَعْقِلُوْنَ ‐ هٰذِهٖ جَهَنَّمُ الَّتِيْ كُنْتُمْ تُوْعَدُوْنَ ‐ اِصْلَوْهَا الْيَوْمَ بِمَا كُنْتُمْ تَكْفُرُوْنَ
আজ কারো প্রতি কোন অবিচার করা হবে না এবং তোমাদেরকে কেবল তারই প্রতিফল প্রদান করা হবে, যা তোমরা করতে। নিঃসন্দেহে জান্নাতবাসীরা ঐদিন আনন্দে মশগুল থাকবে। তারা এবং তাদের স্ত্রীগণ সুশীতল ছায়াতলে ও সুসজ্জিত আসনে হেলান দিয়ে বসে থাকবে। সেখানে তাদের জন্য থাকবে বিভিন্ন রকম ফলমূল, অতঃপর তারা যা চাইবে তাই পাবে। তাদেরকে বলা হবে, পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে ‘সালাম’। আর বলা হবে, হে অপরাধীরা! আজ তোমরা আলাদা হয়ে যাও। আমি কি তোমাদেরকে সতর্ক করিনি (এ বলে যে), হে বনী আদম! তোমরা শয়তানের উপাসনা করো না, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। তোমরা শুধু আমার ইবাদাত করো, আর এটাই সরলসঠিক পথ। এরপরও সে (শয়তান) তোমাদের মধ্য থেকে বহু লোককে পথভ্রষ্ট করেছে, তারপরও কি তোমরা বুঝবে না? এ তো সেই জাহান্নাম, যার ওয়াদা তোমাদেরকে দেয়া হতো। তোমরা যে কুফরী করতে, সে কারণে আজ তোমরা এতে প্রবেশ করো। (সূরা ইয়াসীন, ৫৪-৬৪)
يَا مَعْشَرَ الْجِنِّ وَالْاِنْسِ اَلَمْ يَاْتِكُمْ رُسُلٌ مِّنْكُمْ يَقُصُّوْنَ عَلَيْكُمْ اٰيَاتِيْ وَيُنْذِرُوْنَكُمْ لِقَآءَ يَوْمِكُمْ هٰذَاؕ قَالُوْا شَهِدْنَا عَلٰۤى اَنْفُسِنَا وَغَرَّتْهُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا وَشَهِدُوْا عَلٰۤى اَنْفُسِهِمْ اَنَّهُمْ كَانُوْا كَافِرِيْنَ
হে জিন ও মানব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্য হতে কি রাসূলগণ তোমাদের কাছে আসেনি, যারা আমার নিদর্শনসমূহ তোমাদের নিকট বর্ণনা করত এবং তোমাদেরকে এ দিনের সম্মুখীন হওয়া সম্বন্ধে সতর্ক করত? তারা বলবে, আমরা আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলাম। বস্তুত পার্থিব জীবন তাদেরকে প্রতারিত করেছে। আর তারা নিজেদের বিরুদ্ধে এ সাক্ষ্য দেবে যে, নিশ্চয় তারা কাফির ছিল। (সূরা আন‘আম- ১৩০)
وَلَقَدْ جِئْتُمُوْنَا فُرَادٰى كَمَا خَلَقْنَاكُمْ اَوَّلَ مَرَّةٍ وَّتَرَكْتُمْ مَّا خَوَّلْنَاكُمْ وَرَآءَ ظُهُوْرِكُمْۚ وَمَا نَرٰى مَعَكُمْ شُفَعَآءَكُمُ الَّذِيْنَ زَعَمْتُمْ اَنَّهُمْ فِيْكُمْ شُرَكَآءُؕ لَقَدْ تَّقَطَّعَ بَيْنَكُمْ وَضَلَّ عَنْكُمْ مَّا كُنْتُمْ تَزْعُمُوْنَ
তোমরা তো আমার নিকট নিঃসঙ্গ অবস্থায় এসেছ, যেমনিভাবে আমি তোমাদেরকে প্রথমে সৃষ্টি করেছিলাম। আর তোমাদেরকে যা দিয়েছিলাম তা তোমরা পেছনে ফেলে এসেছ। তোমরা যাদেরকে তোমাদের ব্যাপারে শরীক মনে করতে, তোমাদের সেই সুপারিশকারীদেরকেও তো তোমাদের সাথে দেখছি না। অবশ্যই তোমাদের সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে এবং তোমরা যা ধারণা করেছিলে তাও নিষ্ফল হয়েছে। (সূরা আন‘আম- ৯৪)
فَالْيَوْمَ لَا تُظْلَمُ نَفْسٌ شَيْئًا وَّلَا تُجْزَوْنَ اِلَّا مَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ ‐ اِنَّ اَصْحَابَ الْجَنَّةِ الْيَوْمَ فِيْ شُغُلٍ فَاكِهُوْنَ ‐ هُمْ وَاَزْوَاجُهُمْ فِيْ ظِلَالٍ عَلَى الْاَرَآئِكِ مُتَّكِئُوْنَ ‐ لَهُمْ فِيْهَا فَاكِهَةٌ وَّلَهُمْ مَّا يَدَّعُوْنَ ‐ سَلَامٌ قَوْلًا مِّنْ رَبٍّ رَّحِيْمٍ ‐ وَامْتَازُوا الْيَوْمَ اَيُّهَا الْمُجْرِمُوْنَ ‐ اَلَمْ اَعْهَدْ اِلَيْكُمْ يَا بَنِيْۤ اٰدَمَ اَنْ لَّا تَعْبُدُوا الشَّيْطَانَ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ ‐ وَاَنِ اعْبُدُوْنِيْؕ هٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيْمٌ ‐ وَلَقَدْ اَضَلَّ مِنْكُمْ جِبِلًّا كَثِيْرًاؕ اَفَلَمْ تَكُوْنُوْا تَعْقِلُوْنَ ‐ هٰذِهٖ جَهَنَّمُ الَّتِيْ كُنْتُمْ تُوْعَدُوْنَ ‐ اِصْلَوْهَا الْيَوْمَ بِمَا كُنْتُمْ تَكْفُرُوْنَ
আজ কারো প্রতি কোন অবিচার করা হবে না এবং তোমাদেরকে কেবল তারই প্রতিফল প্রদান করা হবে, যা তোমরা করতে। নিঃসন্দেহে জান্নাতবাসীরা ঐদিন আনন্দে মশগুল থাকবে। তারা এবং তাদের স্ত্রীগণ সুশীতল ছায়াতলে ও সুসজ্জিত আসনে হেলান দিয়ে বসে থাকবে। সেখানে তাদের জন্য থাকবে বিভিন্ন রকম ফলমূল, অতঃপর তারা যা চাইবে তাই পাবে। তাদেরকে বলা হবে, পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে ‘সালাম’। আর বলা হবে, হে অপরাধীরা! আজ তোমরা আলাদা হয়ে যাও। আমি কি তোমাদেরকে সতর্ক করিনি (এ বলে যে), হে বনী আদম! তোমরা শয়তানের উপাসনা করো না, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। তোমরা শুধু আমার ইবাদাত করো, আর এটাই সরলসঠিক পথ। এরপরও সে (শয়তান) তোমাদের মধ্য থেকে বহু লোককে পথভ্রষ্ট করেছে, তারপরও কি তোমরা বুঝবে না? এ তো সেই জাহান্নাম, যার ওয়াদা তোমাদেরকে দেয়া হতো। তোমরা যে কুফরী করতে, সে কারণে আজ তোমরা এতে প্রবেশ করো। (সূরা ইয়াসীন, ৫৪-৬৪)
জান্নাতবাসী ও জাহান্নামবাসীরা স্ব-স্ব স্থানে অবস্থান নেবে :
اَمَّا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فَلَهُمْ جَنَّاتُ الْمَاْوٰىؗ نُزُلًا ۢبِمَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ ‐ وَاَمَّا الَّذِيْنَ فَسَقُوْا فَمَاْوَاهُمُ النَّارُؕ كُلَّمَاۤ اَرَادُوْاۤ اَنْ يَّخْرُجُوْا مِنْهَاۤ اُعِيْدُوْا فِيْهَا وَقِيْلَ لَهُمْ ذُوْقُوْا عَذَابَ النَّارِ الَّذِيْ كُنْتُمْ بِهٖ تُكَذِّبُوْنَ
অতএব যারা বিশ্বাস করেছে এবং সৎকাজ করেছে, তাদের জন্য রয়েছে তাদের কৃতকর্মের প্রতিদানস্বরূপ চিরকালের বাসস্থান জান্নাত। আর যারা পাপকাজ করেছে, তাদের বাসস্থান হবে জাহান্নাম। যখনই তারা সেখান থেকে বের হতে চাইবে, তখনই তাদেরকে সেথায় ফিরিয়ে দেয়া হবে এবং বলা হবে, তোমরা জাহান্নামের যে আযাবকে মিথ্যারোপ করতে, এখন তা ভোগ করো। (সূরা সাজদা- ১৯, ২০)
يَوْمَ يَاْتِ لَا تَكَلَّمُ نَفْسٌ اِلَّا بِاِذْنِهٖۚ فَمِنْهُمْ شَقِيٌّ وَّسَعِيْدٌ ‐ فَاَمَّا الَّذِيْنَ شَقُوْا فَفِى النَّارِ لَهُمْ فِيْهَا زَفِيْرٌ وَّشَهِيْقٌ ‐ خَالِدِيْنَ فِيْهَا مَا دَامَتِ السَّمَاوَاتُ وَالْاَرْضُ اِلَّا مَا شَآءَ رَبُّكَؕ اِنَّ رَبَّكَ فَعَّالٌ لِّمَا يُرِيْدُ ‐ وَاَمَّا الَّذِيْنَ سُعِدُوْا فَفِى الْجَنَّةِ خَالِدِيْنَ فِيْهَا مَا دَامَتِ السَّمَاوَاتُ وَالْاَرْضُ اِلَّا مَا شَآءَ رَبُّكَؕ عَطَآءً غَيْرَ مَجْذُوْذٍ
যখন সেদিনের আগমন ঘটবে তখন তাঁর (আল্লাহর) অনুমতি ব্যতীত কেউ কথা বলতে পারবে না; তখন তাদের মধ্যে কেউ হবে হতভাগা ও কেউ সৌভাগ্যবান। সুতরাং যারা হতভাগা তারা থাকবে অগ্নিতে, সেখানে তাদের জন্য থাকবে চিৎকার ও আর্তনাদ। অতঃপর সেখানে তারা স্থায়ী হবে, যতদিন না আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী বিদ্যমান থাকবে। তবে যদি তোমার প্রতিপালক অন্য কোন ইচ্ছা পোষণ করেন (তবে ভিন্ন কথা); নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক যা ইচ্ছা তাই করেন। পক্ষামত্মরে যারা ভাগ্যবান তারা থাকবে জান্নাতে। সেথায় তারা স্থায়ী হবে, যতদিন না আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী বিদ্যমান থাকবে; তবে যদি তোমার প্রতিপালক অন্য কোন ইচ্ছা করেন; এটা এক নিরবিচ্ছিন্ন পুরস্কার। (সূরা হুদ, ১০৫-১০৮)
اَمَّا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فَلَهُمْ جَنَّاتُ الْمَاْوٰىؗ نُزُلًا ۢبِمَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ ‐ وَاَمَّا الَّذِيْنَ فَسَقُوْا فَمَاْوَاهُمُ النَّارُؕ كُلَّمَاۤ اَرَادُوْاۤ اَنْ يَّخْرُجُوْا مِنْهَاۤ اُعِيْدُوْا فِيْهَا وَقِيْلَ لَهُمْ ذُوْقُوْا عَذَابَ النَّارِ الَّذِيْ كُنْتُمْ بِهٖ تُكَذِّبُوْنَ
অতএব যারা বিশ্বাস করেছে এবং সৎকাজ করেছে, তাদের জন্য রয়েছে তাদের কৃতকর্মের প্রতিদানস্বরূপ চিরকালের বাসস্থান জান্নাত। আর যারা পাপকাজ করেছে, তাদের বাসস্থান হবে জাহান্নাম। যখনই তারা সেখান থেকে বের হতে চাইবে, তখনই তাদেরকে সেথায় ফিরিয়ে দেয়া হবে এবং বলা হবে, তোমরা জাহান্নামের যে আযাবকে মিথ্যারোপ করতে, এখন তা ভোগ করো। (সূরা সাজদা- ১৯, ২০)
يَوْمَ يَاْتِ لَا تَكَلَّمُ نَفْسٌ اِلَّا بِاِذْنِهٖۚ فَمِنْهُمْ شَقِيٌّ وَّسَعِيْدٌ ‐ فَاَمَّا الَّذِيْنَ شَقُوْا فَفِى النَّارِ لَهُمْ فِيْهَا زَفِيْرٌ وَّشَهِيْقٌ ‐ خَالِدِيْنَ فِيْهَا مَا دَامَتِ السَّمَاوَاتُ وَالْاَرْضُ اِلَّا مَا شَآءَ رَبُّكَؕ اِنَّ رَبَّكَ فَعَّالٌ لِّمَا يُرِيْدُ ‐ وَاَمَّا الَّذِيْنَ سُعِدُوْا فَفِى الْجَنَّةِ خَالِدِيْنَ فِيْهَا مَا دَامَتِ السَّمَاوَاتُ وَالْاَرْضُ اِلَّا مَا شَآءَ رَبُّكَؕ عَطَآءً غَيْرَ مَجْذُوْذٍ
যখন সেদিনের আগমন ঘটবে তখন তাঁর (আল্লাহর) অনুমতি ব্যতীত কেউ কথা বলতে পারবে না; তখন তাদের মধ্যে কেউ হবে হতভাগা ও কেউ সৌভাগ্যবান। সুতরাং যারা হতভাগা তারা থাকবে অগ্নিতে, সেখানে তাদের জন্য থাকবে চিৎকার ও আর্তনাদ। অতঃপর সেখানে তারা স্থায়ী হবে, যতদিন না আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী বিদ্যমান থাকবে। তবে যদি তোমার প্রতিপালক অন্য কোন ইচ্ছা পোষণ করেন (তবে ভিন্ন কথা); নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক যা ইচ্ছা তাই করেন। পক্ষামত্মরে যারা ভাগ্যবান তারা থাকবে জান্নাতে। সেথায় তারা স্থায়ী হবে, যতদিন না আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী বিদ্যমান থাকবে; তবে যদি তোমার প্রতিপালক অন্য কোন ইচ্ছা করেন; এটা এক নিরবিচ্ছিন্ন পুরস্কার। (সূরা হুদ, ১০৫-১০৮)
আল্লাহ কিয়ামতের ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَّا قَدَّمَتْ لِغَدٍۚ وَاتَّقُوا اللهَؕ اِنَّ اللهَ خَبِيْرٌ ۢبِمَا تَعْمَلُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং প্রত্যেকেই ভেবে দেখুক যে, আগামীকালের (কিয়ামতের) জন্য সে কী পাঠিয়েছে। আর আল্লাহকে ভয় করো; তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞাত। (সূরা হাশর- ১৮)
وَاَنْذِرْهُمْ يَوْمَ الْحَسْرَةِ اِذْ قُضِيَ الْاَمْرُۘ وَهُمْ فِيْ غَفْلَةٍ وَّهُمْ لَا يُؤْمِنُوْنَ – اِنَّا نَحْنُ نَرِثُ الْاَرْضَ وَمَنْ عَلَيْهَا وَاِلَيْنَا يُرْجَعُوْنَ
তাদেরকে পরিতাপের দিবস সম্পর্কে সতর্ক করে দাও, যখন সকল সিদ্ধামত্ম হয়ে যাবে; অথচ তখনও তারা থাকবে গাফিল এবং অবিশ্বাসী। নিশ্চয় পৃথিবী ও তার উপর যারা আছে তাদের চূড়ামত্ম মালিকানা আমারই এবং তারা আমারই নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা মারইয়াম- ৩৯, ৪০)
اِنَّاۤ اَنْذَرْنَاكُمْ عَذَابًا قَرِيْبًاۚ يَوْمَ يَنْظُرُ الْمَرْءُ مَا قَدَّمَتْ يَدَاهُ وَيَقُوْلُ الْكَافِرُ يَا لَيْتَنِيْ كُنْتُ تُرَابًا
আমি তো তোমাদেরকে এক আসন্ন আযাবের ভয় প্রদর্শন করলাম। সেদিন মানুষ নিজ হাতে যা আগে পাঠিয়েছিল তা দেখতে পাবে। তখন কাফিররা বলবে, হায় আফসোস! যদি আমরা মাটি হয়ে যেতাম। (সূরা নাবা- ৪০)
সেদিনটি আসার আগে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিতে হবে :
اِسْتَجِيْبُوْا لِرَبِّكُمْ مِّنْ قَبْلِ اَنْ يَّاْتِيَ يَوْمٌ لَّا مَرَدَّ لَهٗ مِنَ اللهِؕ مَا لَكُمْ مِّنْ مَّلْجَاٍ يَّوْمَئِذٍ وَّمَا لَكُمْ مِّنْ نَّكِيْرٍ
তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের আহবানে সাড়া দাও সেই দিবস আসার পূর্বে, যা আল্লাহর বিধানে অপ্রতিরুদ্ধ। সেদিন তোমাদের জন্য কোন আশ্রয়স্থল থাকবে না এবং তোমাদের জন্য কোন প্রতিরোধকারীও থাকবে না। (সূরা শূরা- ৪৭)
وَاَنِيْبُوْاۤ اِلٰى رَبِّكُمْ وَاَسْلِمُوْا لَهٗ مِنْ قَبْلِ اَنْ يَّاْتِيَكُمُ الْعَذَابُ ثُمَّ لَا تُنْصَرُوْنَ
তোমাদের নিকট শাস্তি আসার পূর্বেই তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের অভিমুখী হও এবং তাঁর নিকট আত্মসমর্পণ করো, নতুবা তোমাদেরকে সাহায্য করা হবে না। (সূরা যুমার- ৫৪)
এখনই সৎকর্ম করতে হবে :
قُلْ لِّعِبَادِيَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا يُقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَيُنْفِقُوْا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَّعَلَانِيَةً مِّنْ قَبْلِ اَنْ يَّاْتِيَ يَوْمٌ لَّا بَيْعٌ فِيْهِ وَلَا خِلَالٌ
আমার বান্দাদের মধ্যে যারা মুমিন তাদেরকে বলে দাও, তারা যেন সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যা দিয়েছি তা হতে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে- সেদিন আসার পূর্বে যেদিন কোন ক্রয়-বিক্রয় ও বন্ধুত্ব থাকবে না। (সূরা ইবরাহীম- ৩১)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَنْفِقُوْا مِمَّا رَزَقْنَاكُمْ مِّنْ قَبْلِ اَنْ يَّاْتِيَ يَوْمٌ لَّا بَيْعٌ فِيْهِ وَلَا خُلَّةٌ وَّلَا شَفَاعَةٌؕ وَالْكَافِرُوْنَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দান করেছি তোমরা তা হতে ব্যয় করো এমন এক দিন আসার আগে, যেদিন কোন বেচাকেনা, বন্ধুত্ব এবং সুপারিশ কাজে আসবে না। মূলত কাফিররাই অত্যাচারী। (সূরা বাক্বারা- ২৫৪)
وَاَنْفِقُوْا مِمَّا رَزَقْنَاكُمْ مِّنْ قَبْلِ اَنْ يَّاْتِيَ اَحَدَكُمُ الْمَوْتُ فَيَقُوْلَ رَبِّ لَوْلَاۤ اَخَّرْتَنِيْۤ اِلٰۤى اَجَلٍ قَرِيْبٍ فَاَصَّدَّقَ وَاَكُنْ مِّنَ الصَّالِحِيْنَ
আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তোমরা তা হতে ব্যয় করবে তোমাদের কারো মৃত্যু আসার পূর্বে; (অন্যথায় মৃত্যু আসলে সে বলবে) হে আমার প্রতিপালক! আমাকে আরো কিছুকালের জন্য অবকাশ দাও, তাহলে আমি সাদাকা করব এবং সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হব। (সূরা মুনাফিকূন- ১০)
অবকাশের সময় চলে যাচ্ছে :
اَلَمْ يَاْنِ لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَنْ تَخْشَعَ قُلُوْبُهُمْ لِذِكْرِ اللهِ وَمَا نَزَلَ مِنَ الْحَقِّ وَلَا يَكُوْنُوْا كَالَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلُ فَطَالَ عَلَيْهِمُ الْاَمَدُ فَقَسَتْ قُلُوْبُهُمْؕ وَكَثِيْرٌ مِّنْهُمْ فَاسِقُوْنَ
মুমিন লোকদের জন্য এখনও কি সময় আসেনি যে, তারা আল্লাহর স্মরণে এবং তাদের নিকট যে সত্য অবতীর্ণ হয়েছে তার সম্মুখে তাদের অন্তর অবনত হবে? আর তারা যেন ঐসব পূর্ববর্তীদের মতো না হয়, যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল এবং বহুকাল অতিক্রান্ত হয়ে গেলে যাদের হৃদয় কঠিন হয়ে পড়েছিল। তাদের অধিকাংশই ছিল ফাসিক। (সূরা হাদীদ- ১৬)
মৃত্যু আসার আগেই কুরআনের পথ ধরতে হবে :
وَاتَّبِعُوْاۤ اَحْسَنَ مَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكُمْ مِّنْ رَّبِّكُمْ مِّنْ قَبْلِ اَنْ يَّاْتِيَكُمُ الْعَذَابُ بَغْتَةً وَّاَنْتُمْ لَا تَشْعُرُوْنَ – اَنْ تَقُوْلَ نَفْسٌ يَّا حَسْرَتَا عَلٰى مَا فَرَّطْتُّ فِيْ جَنْۢبِ اللهِ وَاِنْ كُنْتُ لَمِنَ السَّاخِرِيْنَ – اَوْ تَقُوْلَ لَوْ اَنَّ اللهَ هَدَانِيْ لَكُنْتُ مِنَ الْمُتَّقِيْنَ – اَوْ تَقُوْلَ حِيْنَ تَرَى الْعَذَابَ لَوْ اَنَّ لِيْ كَرَّةً فَاَكُوْنَ مِنَ الْمُحْسِنِيْنَ – بَلٰى قَدْ جَآءَتْكَ اٰيَاتِيْ فَكَذَّبْتَ بِهَا وَاسْتَكْبَرْتَ وَكُنْتَ مِنَ الْكَافِرِيْنَ
তোমাদের প্রতি তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে উত্তম যা কিছু অবতীর্ণ করা হয়েছে তার অনুসরণ করো, তোমাদের উপর হঠাৎ করে শাস্তি আসার পূর্বে। অথচ (সে ব্যাপারে) তোমাদের কোন খবরও থাকবে না। এমন যেন না হয় যে, কোন ব্যক্তি বলে হায়! আল্লাহর প্রতি আমার কর্তব্যে আমি যে শৈথিল্য করেছি তার জন্য আফসোস! নিশ্চয় আমি ঠাট্টাকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। অথবা বলে যে, আল্লাহ আমাকে পথপ্রদর্শন করলে অবশ্যই আমি মুত্তাক্বীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম! অথবা শাস্তি প্রত্যক্ষ করে বলে, আহা! যদি একবার পৃথিবীতে আমার প্রত্যাবর্তন ঘটত, তবে আমি সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। (তখন আল্লাহ বলবেন) হ্যাঁ! অবশ্যই আমার নিদর্শন তোমার নিকট এসেছিল, কিন্তু তুমি সেগুলোকে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছিলে ও অহংকার করেছিলে। আর তুমি কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে। (সূরা যুমার, ৫৫-৫৯)
দুনিয়া ও শয়তানের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوْا رَبَّكُمْ وَاخْشَوْا يَوْمًا لَّا يَجْزِيْ وَالِدٌ عَنْ وَّلَدِهٖؗ وَلَا مَوْلُوْدٌ هُوَ جَازٍ عَنْ وَّالِدِهٖ شَيْئًاؕ اِنَّ وَعْدَ اللهِ حَقٌّ فَلَا تَغُرَّنَّكُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا وَلَا يَغُرَّنَّكُمْ بِاللهِ الْغَرُوْرُ
হে মানুষ! তোমরা ভয় করো তোমাদের প্রতিপালককে এবং ভয় করো সেদিনকে, যেদিন পিতা সন্তানের কোন উপকারে আসবে না এবং সন্তানও পিতার কোন উপকারে আসবে না, নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য। সুতরাং দুনিয়ার জীবন যেন কিছুতেই তোমাদেরকে ধোঁকা না দেয় এবং প্রতারক শয়তানও যেন কিছুতেই তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারিত না করে। (সূরা লুক্বমান- ৩৩)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَّا قَدَّمَتْ لِغَدٍۚ وَاتَّقُوا اللهَؕ اِنَّ اللهَ خَبِيْرٌ ۢبِمَا تَعْمَلُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং প্রত্যেকেই ভেবে দেখুক যে, আগামীকালের (কিয়ামতের) জন্য সে কী পাঠিয়েছে। আর আল্লাহকে ভয় করো; তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞাত। (সূরা হাশর- ১৮)
وَاَنْذِرْهُمْ يَوْمَ الْحَسْرَةِ اِذْ قُضِيَ الْاَمْرُۘ وَهُمْ فِيْ غَفْلَةٍ وَّهُمْ لَا يُؤْمِنُوْنَ – اِنَّا نَحْنُ نَرِثُ الْاَرْضَ وَمَنْ عَلَيْهَا وَاِلَيْنَا يُرْجَعُوْنَ
তাদেরকে পরিতাপের দিবস সম্পর্কে সতর্ক করে দাও, যখন সকল সিদ্ধামত্ম হয়ে যাবে; অথচ তখনও তারা থাকবে গাফিল এবং অবিশ্বাসী। নিশ্চয় পৃথিবী ও তার উপর যারা আছে তাদের চূড়ামত্ম মালিকানা আমারই এবং তারা আমারই নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা মারইয়াম- ৩৯, ৪০)
اِنَّاۤ اَنْذَرْنَاكُمْ عَذَابًا قَرِيْبًاۚ يَوْمَ يَنْظُرُ الْمَرْءُ مَا قَدَّمَتْ يَدَاهُ وَيَقُوْلُ الْكَافِرُ يَا لَيْتَنِيْ كُنْتُ تُرَابًا
আমি তো তোমাদেরকে এক আসন্ন আযাবের ভয় প্রদর্শন করলাম। সেদিন মানুষ নিজ হাতে যা আগে পাঠিয়েছিল তা দেখতে পাবে। তখন কাফিররা বলবে, হায় আফসোস! যদি আমরা মাটি হয়ে যেতাম। (সূরা নাবা- ৪০)
সেদিনটি আসার আগে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিতে হবে :
اِسْتَجِيْبُوْا لِرَبِّكُمْ مِّنْ قَبْلِ اَنْ يَّاْتِيَ يَوْمٌ لَّا مَرَدَّ لَهٗ مِنَ اللهِؕ مَا لَكُمْ مِّنْ مَّلْجَاٍ يَّوْمَئِذٍ وَّمَا لَكُمْ مِّنْ نَّكِيْرٍ
তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের আহবানে সাড়া দাও সেই দিবস আসার পূর্বে, যা আল্লাহর বিধানে অপ্রতিরুদ্ধ। সেদিন তোমাদের জন্য কোন আশ্রয়স্থল থাকবে না এবং তোমাদের জন্য কোন প্রতিরোধকারীও থাকবে না। (সূরা শূরা- ৪৭)
وَاَنِيْبُوْاۤ اِلٰى رَبِّكُمْ وَاَسْلِمُوْا لَهٗ مِنْ قَبْلِ اَنْ يَّاْتِيَكُمُ الْعَذَابُ ثُمَّ لَا تُنْصَرُوْنَ
তোমাদের নিকট শাস্তি আসার পূর্বেই তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের অভিমুখী হও এবং তাঁর নিকট আত্মসমর্পণ করো, নতুবা তোমাদেরকে সাহায্য করা হবে না। (সূরা যুমার- ৫৪)
এখনই সৎকর্ম করতে হবে :
قُلْ لِّعِبَادِيَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا يُقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَيُنْفِقُوْا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَّعَلَانِيَةً مِّنْ قَبْلِ اَنْ يَّاْتِيَ يَوْمٌ لَّا بَيْعٌ فِيْهِ وَلَا خِلَالٌ
আমার বান্দাদের মধ্যে যারা মুমিন তাদেরকে বলে দাও, তারা যেন সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যা দিয়েছি তা হতে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে- সেদিন আসার পূর্বে যেদিন কোন ক্রয়-বিক্রয় ও বন্ধুত্ব থাকবে না। (সূরা ইবরাহীম- ৩১)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَنْفِقُوْا مِمَّا رَزَقْنَاكُمْ مِّنْ قَبْلِ اَنْ يَّاْتِيَ يَوْمٌ لَّا بَيْعٌ فِيْهِ وَلَا خُلَّةٌ وَّلَا شَفَاعَةٌؕ وَالْكَافِرُوْنَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দান করেছি তোমরা তা হতে ব্যয় করো এমন এক দিন আসার আগে, যেদিন কোন বেচাকেনা, বন্ধুত্ব এবং সুপারিশ কাজে আসবে না। মূলত কাফিররাই অত্যাচারী। (সূরা বাক্বারা- ২৫৪)
وَاَنْفِقُوْا مِمَّا رَزَقْنَاكُمْ مِّنْ قَبْلِ اَنْ يَّاْتِيَ اَحَدَكُمُ الْمَوْتُ فَيَقُوْلَ رَبِّ لَوْلَاۤ اَخَّرْتَنِيْۤ اِلٰۤى اَجَلٍ قَرِيْبٍ فَاَصَّدَّقَ وَاَكُنْ مِّنَ الصَّالِحِيْنَ
আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তোমরা তা হতে ব্যয় করবে তোমাদের কারো মৃত্যু আসার পূর্বে; (অন্যথায় মৃত্যু আসলে সে বলবে) হে আমার প্রতিপালক! আমাকে আরো কিছুকালের জন্য অবকাশ দাও, তাহলে আমি সাদাকা করব এবং সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হব। (সূরা মুনাফিকূন- ১০)
অবকাশের সময় চলে যাচ্ছে :
اَلَمْ يَاْنِ لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَنْ تَخْشَعَ قُلُوْبُهُمْ لِذِكْرِ اللهِ وَمَا نَزَلَ مِنَ الْحَقِّ وَلَا يَكُوْنُوْا كَالَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلُ فَطَالَ عَلَيْهِمُ الْاَمَدُ فَقَسَتْ قُلُوْبُهُمْؕ وَكَثِيْرٌ مِّنْهُمْ فَاسِقُوْنَ
মুমিন লোকদের জন্য এখনও কি সময় আসেনি যে, তারা আল্লাহর স্মরণে এবং তাদের নিকট যে সত্য অবতীর্ণ হয়েছে তার সম্মুখে তাদের অন্তর অবনত হবে? আর তারা যেন ঐসব পূর্ববর্তীদের মতো না হয়, যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল এবং বহুকাল অতিক্রান্ত হয়ে গেলে যাদের হৃদয় কঠিন হয়ে পড়েছিল। তাদের অধিকাংশই ছিল ফাসিক। (সূরা হাদীদ- ১৬)
মৃত্যু আসার আগেই কুরআনের পথ ধরতে হবে :
وَاتَّبِعُوْاۤ اَحْسَنَ مَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكُمْ مِّنْ رَّبِّكُمْ مِّنْ قَبْلِ اَنْ يَّاْتِيَكُمُ الْعَذَابُ بَغْتَةً وَّاَنْتُمْ لَا تَشْعُرُوْنَ – اَنْ تَقُوْلَ نَفْسٌ يَّا حَسْرَتَا عَلٰى مَا فَرَّطْتُّ فِيْ جَنْۢبِ اللهِ وَاِنْ كُنْتُ لَمِنَ السَّاخِرِيْنَ – اَوْ تَقُوْلَ لَوْ اَنَّ اللهَ هَدَانِيْ لَكُنْتُ مِنَ الْمُتَّقِيْنَ – اَوْ تَقُوْلَ حِيْنَ تَرَى الْعَذَابَ لَوْ اَنَّ لِيْ كَرَّةً فَاَكُوْنَ مِنَ الْمُحْسِنِيْنَ – بَلٰى قَدْ جَآءَتْكَ اٰيَاتِيْ فَكَذَّبْتَ بِهَا وَاسْتَكْبَرْتَ وَكُنْتَ مِنَ الْكَافِرِيْنَ
তোমাদের প্রতি তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে উত্তম যা কিছু অবতীর্ণ করা হয়েছে তার অনুসরণ করো, তোমাদের উপর হঠাৎ করে শাস্তি আসার পূর্বে। অথচ (সে ব্যাপারে) তোমাদের কোন খবরও থাকবে না। এমন যেন না হয় যে, কোন ব্যক্তি বলে হায়! আল্লাহর প্রতি আমার কর্তব্যে আমি যে শৈথিল্য করেছি তার জন্য আফসোস! নিশ্চয় আমি ঠাট্টাকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। অথবা বলে যে, আল্লাহ আমাকে পথপ্রদর্শন করলে অবশ্যই আমি মুত্তাক্বীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম! অথবা শাস্তি প্রত্যক্ষ করে বলে, আহা! যদি একবার পৃথিবীতে আমার প্রত্যাবর্তন ঘটত, তবে আমি সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। (তখন আল্লাহ বলবেন) হ্যাঁ! অবশ্যই আমার নিদর্শন তোমার নিকট এসেছিল, কিন্তু তুমি সেগুলোকে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছিলে ও অহংকার করেছিলে। আর তুমি কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে। (সূরা যুমার, ৫৫-৫৯)
দুনিয়া ও শয়তানের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে :
يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوْا رَبَّكُمْ وَاخْشَوْا يَوْمًا لَّا يَجْزِيْ وَالِدٌ عَنْ وَّلَدِهٖؗ وَلَا مَوْلُوْدٌ هُوَ جَازٍ عَنْ وَّالِدِهٖ شَيْئًاؕ اِنَّ وَعْدَ اللهِ حَقٌّ فَلَا تَغُرَّنَّكُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا وَلَا يَغُرَّنَّكُمْ بِاللهِ الْغَرُوْرُ
হে মানুষ! তোমরা ভয় করো তোমাদের প্রতিপালককে এবং ভয় করো সেদিনকে, যেদিন পিতা সন্তানের কোন উপকারে আসবে না এবং সন্তানও পিতার কোন উপকারে আসবে না, নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য। সুতরাং দুনিয়ার জীবন যেন কিছুতেই তোমাদেরকে ধোঁকা না দেয় এবং প্রতারক শয়তানও যেন কিছুতেই তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারিত না করে। (সূরা লুক্বমান- ৩৩)
জান্নাত দেয়ার জন্য আল্লাহ ওয়াদা দিয়েছেন :
وَعَدَ اللهُ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا
আল্লাহ ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীদেরকে জান্নাতের ওয়াদা দিয়েছেন, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে; সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে। (সূরা তাওবা– ৭২)
আদম ও হাওয়া (আঃ) জান্নাতে অবস্থান করেছিলেন :
وَيَاۤ اٰدَمُ اسْكُنْ اَنْتَ وَزَوْجُكَ الْجَنَّةَ فَكُلَا مِنْ حَيْثُ شِئْتُمَا وَلَا تَقْرَبَا هٰذِهِ الشَّجَرَةَ فَتَكُوْنَا مِنَ الظَّالِمِيْنَ
আল্লাহ বললেন, হে আদম! তুমি এবং তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করো এবং মনের তৃপ্তি সহকারে খাও, তবে ঐ গাছটির নিকটবর্তী হয়ো না। যদি হও তবে যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (সূরা আ‘রাফ- ১৯)
আল্লাহ জান্নাতের বিনিময়ে মুমিনদের জান ও মাল ক্রয় করে নিয়েছেন :
اِنَّ اللهَ اشْتَرٰى مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ اَنْفُسَهُمْ وَاَمْوَالَهُمْ بِاَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَؕ يُقَاتِلُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَيَقْتُلُوْنَ وَ يُقْتَلُوْنَ وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا فِى التَّوْرَاةِ وَالْاِنْجِيْلِ وَالْقُرْاٰنِ وَمَنْ اَوْفٰى بِعَهْدِهٖ مِنَ اللهِ فَاسْتَبْشِرُوْا بِبَيْعِكُمُ الَّذِيْ بَايَعْتُمْ بِهٖؕ وَذٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ
নিশ্চয় আল্লাহ জান্নাতের বিনিময়ে মুমিনদের জান ও মাল ক্রয় করে নিয়েছেন এ মর্মে যে, তারা আল্লাহর পথে লড়াই করবে। সুতরাং তারা (ইসলামের শত্রুদেরকে) হত্যা করবে এবং তারাও নিহত হয়ে শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করবে। আল্লাহর এ ওয়াদা সত্য। তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআন সকল কিতাবেই এ ওয়াদা দেয়া হয়েছে। আর আল্লাহর চেয়ে অধিক ওয়াদা পালনকারী কে আছে? অতএব (হে মানবজাতি!) তোমরা যে আল্লাহর সাথে ক্রয়–বিক্রয়ের চুক্তি করেছ তার জন্য সুসংবাদ গ্রহণ কর। আর এটাই হলো বিরাট সফলতা। (সূরা তাওবা– ১১১)
একদল জান্নাতী হবেই :
فَرِيْقٌ فِى الْجَنَّةِ وَفَرِيْقٌ فِى السَّعِيْرِ
(কিয়ামতের দিন হিসাব-নিকাশের পর) একদল যাবে জান্নাতে, অপর দল যাবে জাহান্নামে। (সূরা শূরা– ৭)
জান্নাতবাসীরাই সফলকাম হবে :
لَا يَسْتَوِيْۤ اَصْحَابُ النَّارِ وَاَصْحَابُ الْجَنَّةِؕ اَصْحَابُ الْجَنَّةِ هُمُ الْفَآئِزُوْنَ
জাহান্নামবাসী ও জান্নাতবাসী সমান হতে পারে না, মূলত জান্নাতবাসীরাই (প্রকৃত) সফলকাম। (সূরা হাশর– ২০)
فَمَنْ زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَاُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَؕ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَاۤ اِلَّا مَتَاعُ الْغُرُوْرِ
সুতরাং যে ব্যক্তি জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে সেই সফলকাম হবে। আর দুনিয়ার জীবনটা কেবল ধোঁকা ছাড়া আর কিছু নয়। (সূরা আলে ইমরানু ১৮৫)
জান্নাত উত্তম বাসস্থান :
اُولٰٓئِكَ يُجْزَوْنَ الْغُرْفَةَ بِمَا صَبَرُوْا وَيُلَقَّوْنَ فِيْهَا تَحِيَّةً وَّسَلَامًا ‐ خَالِدِيْنَ فِيْهَاؕ حَسُنَتْ مُسْتَقَرًّا وَّمُقَامًا
তারা (ভালো গুণাবলির অধিকারী লোকেরা) তাদের সবরের কারণে জান্নাতে ঘরবাড়ি পাবে। সেখানে তাদেরকে স্বাগতম ও সালাম জানানো হবে। সেখানে তারা সর্বদা অবস্থান করবে। এ ঠিকানা ও বাসস্থান কতই না উত্তম। (সূরা ফুরক্বানু ৭৫, ৭৬)
জান্নাতের বিশালতা :
سَابِقُوْاۤ اِلٰى مَغْفِرَةٍ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا كَعَرْضِ السَّمَآءِ وَالْاَرْضِ
তোমরা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তোমাদের প্রতিপালকের মাগফিরাতের দিকে দ্রুত অগ্রসর হও। আর ঐ জান্নাতের দিকে অগ্রসর হও যে জান্নাতের প্রস্থ হলো আকাশ ও পৃথিবীর দূরত্বের সমান। (সূরা হাদীদু ২১)
وَعَدَ اللهُ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا
আল্লাহ ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীদেরকে জান্নাতের ওয়াদা দিয়েছেন, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে; সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে। (সূরা তাওবা– ৭২)
আদম ও হাওয়া (আঃ) জান্নাতে অবস্থান করেছিলেন :
وَيَاۤ اٰدَمُ اسْكُنْ اَنْتَ وَزَوْجُكَ الْجَنَّةَ فَكُلَا مِنْ حَيْثُ شِئْتُمَا وَلَا تَقْرَبَا هٰذِهِ الشَّجَرَةَ فَتَكُوْنَا مِنَ الظَّالِمِيْنَ
আল্লাহ বললেন, হে আদম! তুমি এবং তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করো এবং মনের তৃপ্তি সহকারে খাও, তবে ঐ গাছটির নিকটবর্তী হয়ো না। যদি হও তবে যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (সূরা আ‘রাফ- ১৯)
আল্লাহ জান্নাতের বিনিময়ে মুমিনদের জান ও মাল ক্রয় করে নিয়েছেন :
اِنَّ اللهَ اشْتَرٰى مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ اَنْفُسَهُمْ وَاَمْوَالَهُمْ بِاَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَؕ يُقَاتِلُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَيَقْتُلُوْنَ وَ يُقْتَلُوْنَ وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا فِى التَّوْرَاةِ وَالْاِنْجِيْلِ وَالْقُرْاٰنِ وَمَنْ اَوْفٰى بِعَهْدِهٖ مِنَ اللهِ فَاسْتَبْشِرُوْا بِبَيْعِكُمُ الَّذِيْ بَايَعْتُمْ بِهٖؕ وَذٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ
নিশ্চয় আল্লাহ জান্নাতের বিনিময়ে মুমিনদের জান ও মাল ক্রয় করে নিয়েছেন এ মর্মে যে, তারা আল্লাহর পথে লড়াই করবে। সুতরাং তারা (ইসলামের শত্রুদেরকে) হত্যা করবে এবং তারাও নিহত হয়ে শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করবে। আল্লাহর এ ওয়াদা সত্য। তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআন সকল কিতাবেই এ ওয়াদা দেয়া হয়েছে। আর আল্লাহর চেয়ে অধিক ওয়াদা পালনকারী কে আছে? অতএব (হে মানবজাতি!) তোমরা যে আল্লাহর সাথে ক্রয়–বিক্রয়ের চুক্তি করেছ তার জন্য সুসংবাদ গ্রহণ কর। আর এটাই হলো বিরাট সফলতা। (সূরা তাওবা– ১১১)
একদল জান্নাতী হবেই :
فَرِيْقٌ فِى الْجَنَّةِ وَفَرِيْقٌ فِى السَّعِيْرِ
(কিয়ামতের দিন হিসাব-নিকাশের পর) একদল যাবে জান্নাতে, অপর দল যাবে জাহান্নামে। (সূরা শূরা– ৭)
জান্নাতবাসীরাই সফলকাম হবে :
لَا يَسْتَوِيْۤ اَصْحَابُ النَّارِ وَاَصْحَابُ الْجَنَّةِؕ اَصْحَابُ الْجَنَّةِ هُمُ الْفَآئِزُوْنَ
জাহান্নামবাসী ও জান্নাতবাসী সমান হতে পারে না, মূলত জান্নাতবাসীরাই (প্রকৃত) সফলকাম। (সূরা হাশর– ২০)
فَمَنْ زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَاُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَؕ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَاۤ اِلَّا مَتَاعُ الْغُرُوْرِ
সুতরাং যে ব্যক্তি জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে সেই সফলকাম হবে। আর দুনিয়ার জীবনটা কেবল ধোঁকা ছাড়া আর কিছু নয়। (সূরা আলে ইমরানু ১৮৫)
জান্নাত উত্তম বাসস্থান :
اُولٰٓئِكَ يُجْزَوْنَ الْغُرْفَةَ بِمَا صَبَرُوْا وَيُلَقَّوْنَ فِيْهَا تَحِيَّةً وَّسَلَامًا ‐ خَالِدِيْنَ فِيْهَاؕ حَسُنَتْ مُسْتَقَرًّا وَّمُقَامًا
তারা (ভালো গুণাবলির অধিকারী লোকেরা) তাদের সবরের কারণে জান্নাতে ঘরবাড়ি পাবে। সেখানে তাদেরকে স্বাগতম ও সালাম জানানো হবে। সেখানে তারা সর্বদা অবস্থান করবে। এ ঠিকানা ও বাসস্থান কতই না উত্তম। (সূরা ফুরক্বানু ৭৫, ৭৬)
জান্নাতের বিশালতা :
سَابِقُوْاۤ اِلٰى مَغْفِرَةٍ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا كَعَرْضِ السَّمَآءِ وَالْاَرْضِ
তোমরা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তোমাদের প্রতিপালকের মাগফিরাতের দিকে দ্রুত অগ্রসর হও। আর ঐ জান্নাতের দিকে অগ্রসর হও যে জান্নাতের প্রস্থ হলো আকাশ ও পৃথিবীর দূরত্বের সমান। (সূরা হাদীদু ২১)
কুরআনের মধ্যে আটটি জান্নাতের নাম পাওয়া যায়। যেমন :
১। جَنَّةُ الْفِرْدَوْسِ (জান্নাতুল ফিরদাউস) :
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ كَانَتْ لَهُمْ جَنَّاتُ الْفِرْدَوْسِ نُزُلًا
নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে, তাদের মেহমানদারী হিসেবে রয়েছে জান্নাতুল ফিরদাউস। (সূরা কাহফু ১০৭)
اُولٰٓئِكَ هُمُ الْوَارِثُوْنَ – اَ لَّذِيْنَ يَرِثُوْنَ الْفِرْدَوْسَ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
তারাই তো ঐসব উত্তরাধিকারী, যারা জান্নাতুল ফিরদাউসের উত্তরাধিকারী। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। (সূরা মু’মিনূনু ১০, ১১)
২। جَنَّةُ النَّعِيْمِ (জান্নাতুন নাঈম) :
فَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فِيْ جَنَّاتِ النَّعِيْمِ
যারা ঈমান আনবে এবং নেক আমল করবে, তারা জান্নাতুন নাঈমে বসবাস করবে। (সূরা হজ্জ– ৫৬)
৩। جَنَّةُ الْمَاْوٰى (জান্নাতুল মাওয়া) :
اَمَّا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فَلَهُمْ جَنَّاتُ الْمَاْوٰىؗ نُزُلًا ۢبِمَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
যারা ঈমান আনবে ও সৎকর্ম করবে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতুল মাওয়া তথা বসবাসের উত্তম ঠিকানা। এটা তাদের সৎকর্মের পুরস্কার। (সূরা সাজদা–১৯)
৪। جَنَّةُ الْخُلْدِ (জান্নাতুল খুল্দ) :
قُلْ اَذٰلِكَ خَيْرٌ اَمْ جَنَّةُ الْخُلْدِ الَّتِيْ وُعِدَ الْمُتَّقُوْنَ
বলো, জাহান্নামীদের পরিণাম ভালো, নাকি জান্নাতুল খুল্দ (স্থায়ী জান্নাত) ভালো? যার ওয়াদা মুত্তাক্বীদের জন্য দেয়া হয়েছে। (সূরা ফুরক্বানু ১৫)
৫। جَنَّةُ الْعَدْنٍ (জান্নাতুল আদন) :
جَزَآؤُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ جَنَّاتُ عَدْنٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ
তাদের (সৎকর্মীদের) প্রতিদান তাদের রবের নিকট রয়েছে। আর তা হলো জান্নাতুল আদন, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হবে। (সূরা বায়্যিনাহ– ৮)
৬। دَارُ السَّلامِ (দারুস সালাম) :
لَهُمْ دَارُ السَّلَامِ عِنْدَ رَبِّهِمْ
তাদের (নেক বান্দাদের) জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে দারুস সালাম তথা সুখের ঠিকানা।
(সূরা আন‘আম– ১২৭)
৭। دَارُ الْمُقَامِ (দারুল মুকাম) :
اَلَّذِيْۤ اَحَلَّنَا دَارَ الْمُقَامَةِ مِنْ فَضْلِهٖۚ لَا يَمَسُّنَا فِيْهَا نَصَبٌ وَّلَا يَمَسُّنَا فِيْهَا لُغُوْبٌ
জান্নাতীরা বলবে, সকল প্রশংসা ঐ সত্তার, যিনি তার নিজ অনুগ্রহে আমাদেরকে দারুল মুকাম অর্থাৎ স্থায়ী ঠিকানায় বসবাসের সুযোগ করে দিয়েছেন। এখানে আমরা কোন কষ্ট এবং কোন অনর্থক বিষয়ের সম্মুখীন হব না। (সূরা ফাতির– ৩৫)
৮। دَارُ الْقَرَارِ (দারুল কারার) :
وَاِنَّ الْاٰخِرَةَ هِيَ دَارُ الْقَرَارِ
নিশ্চয় পরকালই হলো দারুল কারার তথা স্থায়ী ঠিকানা। (সূরা মু’মিনু৩৯)
১। جَنَّةُ الْفِرْدَوْسِ (জান্নাতুল ফিরদাউস) :
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ كَانَتْ لَهُمْ جَنَّاتُ الْفِرْدَوْسِ نُزُلًا
নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে, তাদের মেহমানদারী হিসেবে রয়েছে জান্নাতুল ফিরদাউস। (সূরা কাহফু ১০৭)
اُولٰٓئِكَ هُمُ الْوَارِثُوْنَ – اَ لَّذِيْنَ يَرِثُوْنَ الْفِرْدَوْسَ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
তারাই তো ঐসব উত্তরাধিকারী, যারা জান্নাতুল ফিরদাউসের উত্তরাধিকারী। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। (সূরা মু’মিনূনু ১০, ১১)
২। جَنَّةُ النَّعِيْمِ (জান্নাতুন নাঈম) :
فَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فِيْ جَنَّاتِ النَّعِيْمِ
যারা ঈমান আনবে এবং নেক আমল করবে, তারা জান্নাতুন নাঈমে বসবাস করবে। (সূরা হজ্জ– ৫৬)
৩। جَنَّةُ الْمَاْوٰى (জান্নাতুল মাওয়া) :
اَمَّا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فَلَهُمْ جَنَّاتُ الْمَاْوٰىؗ نُزُلًا ۢبِمَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
যারা ঈমান আনবে ও সৎকর্ম করবে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতুল মাওয়া তথা বসবাসের উত্তম ঠিকানা। এটা তাদের সৎকর্মের পুরস্কার। (সূরা সাজদা–১৯)
৪। جَنَّةُ الْخُلْدِ (জান্নাতুল খুল্দ) :
قُلْ اَذٰلِكَ خَيْرٌ اَمْ جَنَّةُ الْخُلْدِ الَّتِيْ وُعِدَ الْمُتَّقُوْنَ
বলো, জাহান্নামীদের পরিণাম ভালো, নাকি জান্নাতুল খুল্দ (স্থায়ী জান্নাত) ভালো? যার ওয়াদা মুত্তাক্বীদের জন্য দেয়া হয়েছে। (সূরা ফুরক্বানু ১৫)
৫। جَنَّةُ الْعَدْنٍ (জান্নাতুল আদন) :
جَزَآؤُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ جَنَّاتُ عَدْنٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ
তাদের (সৎকর্মীদের) প্রতিদান তাদের রবের নিকট রয়েছে। আর তা হলো জান্নাতুল আদন, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হবে। (সূরা বায়্যিনাহ– ৮)
৬। دَارُ السَّلامِ (দারুস সালাম) :
لَهُمْ دَارُ السَّلَامِ عِنْدَ رَبِّهِمْ
তাদের (নেক বান্দাদের) জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে দারুস সালাম তথা সুখের ঠিকানা।
(সূরা আন‘আম– ১২৭)
৭। دَارُ الْمُقَامِ (দারুল মুকাম) :
اَلَّذِيْۤ اَحَلَّنَا دَارَ الْمُقَامَةِ مِنْ فَضْلِهٖۚ لَا يَمَسُّنَا فِيْهَا نَصَبٌ وَّلَا يَمَسُّنَا فِيْهَا لُغُوْبٌ
জান্নাতীরা বলবে, সকল প্রশংসা ঐ সত্তার, যিনি তার নিজ অনুগ্রহে আমাদেরকে দারুল মুকাম অর্থাৎ স্থায়ী ঠিকানায় বসবাসের সুযোগ করে দিয়েছেন। এখানে আমরা কোন কষ্ট এবং কোন অনর্থক বিষয়ের সম্মুখীন হব না। (সূরা ফাতির– ৩৫)
৮। دَارُ الْقَرَارِ (দারুল কারার) :
وَاِنَّ الْاٰخِرَةَ هِيَ دَارُ الْقَرَارِ
নিশ্চয় পরকালই হলো দারুল কারার তথা স্থায়ী ঠিকানা। (সূরা মু’মিনু৩৯)
জান্নাতবাসীদেরকে মনোরম প্রাসাদ দেয়া হবে :
اُولٰٓئِكَ يُجْزَوْنَ الْغُرْفَةَ بِمَا صَبَرُوْا وَيُلَقَّوْنَ فِيْهَا تَحِيَّةً وَّسَلَامًا
তাদের ধৈর্যধারণের কারণে তাদেরকে জান্নাতে ঘর দেয়া হবে। তাদেরকে সেখানে সালাম ও সম্ভাষণ জানানো হবে। (সূরা ফুরক্বানু ৭৫)
وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَنُبَوِّئَنَّهُمْ مِّنَ الْجَنَّةِ غُرَفًا تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَاؕ نِعْمَ اَجْرُ الْعَامِلِيْنَ
যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে, তাদেরকে বসবাসের জন্য জান্নাতে ঘরবাড়ি দান করব, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হবে; সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। সৎকর্মশীলদের প্রতিদান কতই না উত্তম। (সূরা আনকাবূত– ৫৮)
ব্যাখ্যা : غُرْفَةٌ (গুরফাতুন) মানে উঁচু দালান। এ থেকে দুনিয়ায় তৈরিকৃত সর্ববৃহৎ উঁচু উঁচু ও জাঁকজমকপূর্ণ বিল্ডিং তথা দালানগুলোর দৃশ্যই মনের পর্দায় ভেসে উঠে। প্রকৃতপক্ষে দুনিয়ায় মানুষ যতই বৃহদাকার ও উচ্চতম ইমারত তৈরি করুক না কেন এবং মানুষের অবচেতন মনের পর্দায় যতই উঁচু ও বিলাসবহুল ভবনের কথাই ভেসে উঠুক না কেন, জান্নাতের দালানের তুলনায় সেগুলো একেবারেই সামান্যতম। প্রত্যেকেই জান্নাতে তাদের নিজ নিজ বাড়ি চিনতে পারবে। আবু সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল ﷺ বলেছেন, ঐ সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! দুনিয়াতে যেভাবে কেউ তার ঘরবাড়ি চিনে জান্নাতীরা তার চেয়ে ভালো করে তাদের ঘরবাড়ি চিনতে পারবে। (সহীহ বুখারী, হা/২৪৪০)
জান্নাতের গাছের ছায়া হবে অনেক দীর্ঘ :
وَظِلٍّ مَّمْدُوْدٍ
জান্নাতীরা থাকবে দীর্ঘ ছায়ায়। (সূরা ওয়াক্বিয়া– ৩০)
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল ﷺ বলেছেন, জান্নাতের মধ্যে এমন বৃক্ষও রয়েছে, সওয়ারী ব্যক্তি একশ’ বছর পর্যন্ত এর ছায়ায় ভ্রমণ করবে তবুও ছায়া শেষ হবে না। (সহীহ বুখারী, হা/৬৫৫২)
জান্নাতে রয়েছে বাগান :
اِنَّ لِلْمُتَّقِيْنَ مَفَازًا – حَدَآئِقَ وَاَعْنَابًا
নিশ্চয় মুত্তাক্বীদের জন্য রয়েছে অনেক পুরস্কার। (তার মধ্যে রয়েছে) বাগান এবং আঙ্গুর। (সূরা নাবা- ৩১, ৩২)
اِنَّ الْمُتَّقِيْنَ فِيْ جَنَّاتٍ وًّعُيُوْنٍ
অবশ্যই মুত্তাক্বীরা বাগান এবং ঝর্ণার মধ্যে থাকবে। (সূরা যারিয়াত– ১৫)
وَمِنْ دُوْنِهِمَا جَنَّتَانِ – فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ – مُدْهَآمَّتَانِ
এছাড়াও আরো দু’টি বাগান থাকবে, যাতে অধিক গাছপালা থাকার কারণে তা সবুজ বর্ণের হবে এবং সুন্দর পরিবেশ বিরাজ করবে। অতএব হে জিন ও মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামতকে অস্বীকার করবে? (সূরা আর রহমান, ৬২–৬৪)
اُولٰٓئِكَ يُجْزَوْنَ الْغُرْفَةَ بِمَا صَبَرُوْا وَيُلَقَّوْنَ فِيْهَا تَحِيَّةً وَّسَلَامًا
তাদের ধৈর্যধারণের কারণে তাদেরকে জান্নাতে ঘর দেয়া হবে। তাদেরকে সেখানে সালাম ও সম্ভাষণ জানানো হবে। (সূরা ফুরক্বানু ৭৫)
وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَنُبَوِّئَنَّهُمْ مِّنَ الْجَنَّةِ غُرَفًا تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَاؕ نِعْمَ اَجْرُ الْعَامِلِيْنَ
যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে, তাদেরকে বসবাসের জন্য জান্নাতে ঘরবাড়ি দান করব, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হবে; সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। সৎকর্মশীলদের প্রতিদান কতই না উত্তম। (সূরা আনকাবূত– ৫৮)
ব্যাখ্যা : غُرْفَةٌ (গুরফাতুন) মানে উঁচু দালান। এ থেকে দুনিয়ায় তৈরিকৃত সর্ববৃহৎ উঁচু উঁচু ও জাঁকজমকপূর্ণ বিল্ডিং তথা দালানগুলোর দৃশ্যই মনের পর্দায় ভেসে উঠে। প্রকৃতপক্ষে দুনিয়ায় মানুষ যতই বৃহদাকার ও উচ্চতম ইমারত তৈরি করুক না কেন এবং মানুষের অবচেতন মনের পর্দায় যতই উঁচু ও বিলাসবহুল ভবনের কথাই ভেসে উঠুক না কেন, জান্নাতের দালানের তুলনায় সেগুলো একেবারেই সামান্যতম। প্রত্যেকেই জান্নাতে তাদের নিজ নিজ বাড়ি চিনতে পারবে। আবু সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল ﷺ বলেছেন, ঐ সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! দুনিয়াতে যেভাবে কেউ তার ঘরবাড়ি চিনে জান্নাতীরা তার চেয়ে ভালো করে তাদের ঘরবাড়ি চিনতে পারবে। (সহীহ বুখারী, হা/২৪৪০)
জান্নাতের গাছের ছায়া হবে অনেক দীর্ঘ :
وَظِلٍّ مَّمْدُوْدٍ
জান্নাতীরা থাকবে দীর্ঘ ছায়ায়। (সূরা ওয়াক্বিয়া– ৩০)
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল ﷺ বলেছেন, জান্নাতের মধ্যে এমন বৃক্ষও রয়েছে, সওয়ারী ব্যক্তি একশ’ বছর পর্যন্ত এর ছায়ায় ভ্রমণ করবে তবুও ছায়া শেষ হবে না। (সহীহ বুখারী, হা/৬৫৫২)
জান্নাতে রয়েছে বাগান :
اِنَّ لِلْمُتَّقِيْنَ مَفَازًا – حَدَآئِقَ وَاَعْنَابًا
নিশ্চয় মুত্তাক্বীদের জন্য রয়েছে অনেক পুরস্কার। (তার মধ্যে রয়েছে) বাগান এবং আঙ্গুর। (সূরা নাবা- ৩১, ৩২)
اِنَّ الْمُتَّقِيْنَ فِيْ جَنَّاتٍ وًّعُيُوْنٍ
অবশ্যই মুত্তাক্বীরা বাগান এবং ঝর্ণার মধ্যে থাকবে। (সূরা যারিয়াত– ১৫)
وَمِنْ دُوْنِهِمَا جَنَّتَانِ – فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ – مُدْهَآمَّتَانِ
এছাড়াও আরো দু’টি বাগান থাকবে, যাতে অধিক গাছপালা থাকার কারণে তা সবুজ বর্ণের হবে এবং সুন্দর পরিবেশ বিরাজ করবে। অতএব হে জিন ও মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামতকে অস্বীকার করবে? (সূরা আর রহমান, ৬২–৬৪)
জান্নাতে রয়েছে ফলমূল :
لَهُمْ فِيْهَا فَاكِهَةٌ وَّلَهُمْ مَّا يَدَّعُوْنَ
জান্নাতের মধ্যে জান্নাতবাসীদের জন্য রয়েছে নানারকম ফলমূল এবং তাদেরকে যার ওয়াদা দেয়া হয়েছে তাও তারা পাবে। (সূরা ইয়াসীনু ৫৭)
وَفَوَاكِهَ مِمَّا يَشْتَهُوْنَ – كُلُوْا وَاشْرَبُوْا هَنِيْئًا ۢبِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
তাদের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকার ফলমূল জান্নাতে থাকবে। বলা হবে, তোমাদের আমলের বিনিময়ে তৃপ্তিসহকারে খাও এবং পান কর। (সূরা মুরসালাত– ৪২, ৪৩)
مُتَّكِئِيْنَ فِيْهَا يَدْعُوْنَ فِيْهَا بِفَاكِهَةٍ كَثِيْرَةٍ وَّشَرَابٍ
তারা জান্নাতের মধ্যে হেলান দিয়ে বসবে। সেখানে তারা প্রচুর ফলমূল ও পানীয় পরিবেশন করার আদেশ দেবে। (সূরা সোয়াদু ৫১)
ব্যাখ্যা : فَوَاكِهُ (ফাওয়াকিহ) অর্থ ফলমূল। মানুষ ফলমূল সাধারণত ক্ষুধা নিবারণের জন্য খায় না, বরং স্বাদ উপভোগের জন্য খায়। আর জান্নাতের আহার্যাদি খাদ্য হিসেবে নয় বরং স্বাদ উপভোগের জন্যই ব্যবহৃত হবে। সেখানে শরীরের কোন ক্ষয় হবে না এবং ক্ষুধাও অনুভূত হবে না। এজন্য জান্নাতীদের খাদ্য বর্ণনা করতে ‘ফাওয়াকেহ’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
জান্নাতে সবধরনের ফল থাকবে :
وَلَهُمْ فِيْهَا مِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ وَمَغْفِرَةٌ مِّنْ رَّبِّهِمْ
তাদের জন্য জান্নাতে প্রত্যেক প্রকারের ফল রয়েছে। আরো রয়েছে তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে মাগফিরাত। (সূরা মুহাম্মাদু ১৫)
كُلَّمَا رُزِقُوْا مِنْهَا مِنْ ثَمَرَةٍ رِّزْقًا قَالُوْا هٰذَا الَّذِيْ رُزِقْنَا مِنْ قَبْلُ وَاُتُوْا بِهٖ مُتَشَابِهًا
যখনই তাদেরকে কোন ফল দেয়া হবে তখনই তারা বলবে, এসব রিযিক তো আমরা ইতোপূর্বে পেয়েছি। আর তাদেরকে সাদৃশ্যপূর্ণ ফলই দেয়া হবে। (সূরা বাক্বারা– ২৫)
ব্যাখ্যা : জান্নাতের ফল নতুন ও অপরিচিত হবে না। দুনিয়ায় যেসব ফলের সাথে তারা পরিচিত ছিল, সেগুলোর সাথে আকার-আকৃতির মিল থাকবে। তবে এসবের স্বাদ হবে অনেক উন্নত পর্যায়ের। জান্নাতবাসীরা ফলগুলো দেখে চিনতে পারবে, কিন্তু স্বাদের দিক দিয়ে দুনিয়ার ফলের সাথে তুলনাই করা যাবে না।
প্রত্যেক ফল দু’রকম হবে :
فِيْهِمَا مِنْ كُلِّ فَاكِهَةٍ زَوْجَانِ
সেখানে রয়েছে প্রত্যেক প্রকারের ফল, যা দু’রকম স্বাদবিশিষ্ট। (সূরা আর রহমানু ৫২)
ফলসমূহ একেবারে কাছে থাকবে :
وَدَانِيَةً عَلَيْهِمْ ظِلَالُهَا وَذُلِّلَتْ قُطُوْفُهَا تَذْلِيْلًا
গাছের ছায়া তাদের নিকটবর্তী হবে এবং এর ফল তাদের আয়ত্তে এনে দেয়া হবে। (সূরা দাহর– ১৪)
ব্যাখ্যা : দুনিয়ার সব ফল জান্নাতে পাওয়া যাবে, তবে সেসব ফলের স্বাদ হবে ভিন্ন। প্রত্যেক ফলের মধ্যে শুকনো ও তাজা ফল থাকবে। কোন ফলের মধ্যে কাঁটা থাকবে না। আর এগুলো জান্নাতীদের এতো নিকটে থাকবে যে, দাঁড়িয়ে-বসে-শুয়ে যে অবস্থায় চাইবে ফল আনতে পারবে এবং খেতে পারবে।
জান্নাতের ফলের যোগান সবসময় জারী থাকবে :
وَفَاكِهَةٍ كَثِيْرَةٍ – لَا مَقْطُوْعَةٍ وَّلَا مَمْنُوْعَةٍ
(জান্নাতে থাকবে) প্রচুর ফলমূল, যা শেষ হবে না নিষিদ্ধও হবে না। (সূরা ওয়াক্বিয়া– ৩২, ৩৩)
مَثَلُ الْجَنَّةِ الَّتِيْ وُعِدَ الْمُتَّقُوْنَؕ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُؕ اُكُلُهَا دَآئِمٌ وَّظِلُّهَاؕ تِلْكَ عُقْبَى الَّذِيْنَ اتَّقَوْاۗ وَعُقْبَى الْكَافِرِيْنَ النَّارُ
মুত্তাক্বীদের যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তার উপমা এমন যে, তার পাদদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়ে যাবে এবং তার ফলসমূহ ও ছায়া চিরস্থায়ী; এটা মুত্তাক্বীদের কর্মফল। আর কাফিরদের কর্মফল জাহান্নাম। (সূরা রা‘দু ৩৫)
ব্যাখ্যা : যে জিনিস যত পরিমাণে ইচ্ছা, দ্বিধাহীনভাবে জান্নাতের সেবকদেরকে তা আনার নির্দেশ দেয়া হবে এবং তা এনে হাজির করা হবে। দুনিয়াতে কারো কাছেই কোনকিছুর অফুরন্ত ভান্ডার থাকে না এবং ব্যক্তি যা-ই ব্যবহার করে তার মূল্য নিজের পকেট থেকে দিতে হয়। জান্নাতে সম্পদ হবে আল্লাহর; কিন্তু জান্নাতের অধিবাসীদেরকে তা ব্যবহারের জন্য অবাধ অনুমতি দেয়া হবে। কোন জিনিস শেষ হয়ে যাওয়ার বিপদ যেমন থাকবে না, তেমনি বিল আসারও কোন প্রশ্ন থাকবে না।
কুরআনে যেসব ফলের কথা উল্লেখ আছে :
১। কুল/বরই :
فِيْ سِدْرٍ مَّخْضُوْدٍ
জান্নাতীরা থাকবে কাঁটাহীন কুলের মধ্যে। (সূরা ওয়াক্বিয়া– ২৮)
২। কলা :
وَطَلْحٍ مَّنْضُوْدٍ
আর জান্নাতীরা পাবে কাঁদি কাঁদি কলা। (সূরা ওয়াক্বিয়া– ২৯)
৩। খেজুর ও আনার :
فِيْهِمَا فَاكِهَةٌ وَّنَخْلٌ وَّرُمَّانٌ
সেখানে রয়েছে অনেক ফল, খেজুর ও আনার। (সূরা আর রহমানু ৬৮)
৪। আঙ্গুর :
حَدَآئِقَ وَاَعْنَابًا
(মুত্তাক্বীদের জন্য রয়েছে) বাগান এবং আঙ্গুর ফল। (সূরা নাবা– ৩২)
لَهُمْ فِيْهَا فَاكِهَةٌ وَّلَهُمْ مَّا يَدَّعُوْنَ
জান্নাতের মধ্যে জান্নাতবাসীদের জন্য রয়েছে নানারকম ফলমূল এবং তাদেরকে যার ওয়াদা দেয়া হয়েছে তাও তারা পাবে। (সূরা ইয়াসীনু ৫৭)
وَفَوَاكِهَ مِمَّا يَشْتَهُوْنَ – كُلُوْا وَاشْرَبُوْا هَنِيْئًا ۢبِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
তাদের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকার ফলমূল জান্নাতে থাকবে। বলা হবে, তোমাদের আমলের বিনিময়ে তৃপ্তিসহকারে খাও এবং পান কর। (সূরা মুরসালাত– ৪২, ৪৩)
مُتَّكِئِيْنَ فِيْهَا يَدْعُوْنَ فِيْهَا بِفَاكِهَةٍ كَثِيْرَةٍ وَّشَرَابٍ
তারা জান্নাতের মধ্যে হেলান দিয়ে বসবে। সেখানে তারা প্রচুর ফলমূল ও পানীয় পরিবেশন করার আদেশ দেবে। (সূরা সোয়াদু ৫১)
ব্যাখ্যা : فَوَاكِهُ (ফাওয়াকিহ) অর্থ ফলমূল। মানুষ ফলমূল সাধারণত ক্ষুধা নিবারণের জন্য খায় না, বরং স্বাদ উপভোগের জন্য খায়। আর জান্নাতের আহার্যাদি খাদ্য হিসেবে নয় বরং স্বাদ উপভোগের জন্যই ব্যবহৃত হবে। সেখানে শরীরের কোন ক্ষয় হবে না এবং ক্ষুধাও অনুভূত হবে না। এজন্য জান্নাতীদের খাদ্য বর্ণনা করতে ‘ফাওয়াকেহ’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
জান্নাতে সবধরনের ফল থাকবে :
وَلَهُمْ فِيْهَا مِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ وَمَغْفِرَةٌ مِّنْ رَّبِّهِمْ
তাদের জন্য জান্নাতে প্রত্যেক প্রকারের ফল রয়েছে। আরো রয়েছে তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে মাগফিরাত। (সূরা মুহাম্মাদু ১৫)
كُلَّمَا رُزِقُوْا مِنْهَا مِنْ ثَمَرَةٍ رِّزْقًا قَالُوْا هٰذَا الَّذِيْ رُزِقْنَا مِنْ قَبْلُ وَاُتُوْا بِهٖ مُتَشَابِهًا
যখনই তাদেরকে কোন ফল দেয়া হবে তখনই তারা বলবে, এসব রিযিক তো আমরা ইতোপূর্বে পেয়েছি। আর তাদেরকে সাদৃশ্যপূর্ণ ফলই দেয়া হবে। (সূরা বাক্বারা– ২৫)
ব্যাখ্যা : জান্নাতের ফল নতুন ও অপরিচিত হবে না। দুনিয়ায় যেসব ফলের সাথে তারা পরিচিত ছিল, সেগুলোর সাথে আকার-আকৃতির মিল থাকবে। তবে এসবের স্বাদ হবে অনেক উন্নত পর্যায়ের। জান্নাতবাসীরা ফলগুলো দেখে চিনতে পারবে, কিন্তু স্বাদের দিক দিয়ে দুনিয়ার ফলের সাথে তুলনাই করা যাবে না।
প্রত্যেক ফল দু’রকম হবে :
فِيْهِمَا مِنْ كُلِّ فَاكِهَةٍ زَوْجَانِ
সেখানে রয়েছে প্রত্যেক প্রকারের ফল, যা দু’রকম স্বাদবিশিষ্ট। (সূরা আর রহমানু ৫২)
ফলসমূহ একেবারে কাছে থাকবে :
وَدَانِيَةً عَلَيْهِمْ ظِلَالُهَا وَذُلِّلَتْ قُطُوْفُهَا تَذْلِيْلًا
গাছের ছায়া তাদের নিকটবর্তী হবে এবং এর ফল তাদের আয়ত্তে এনে দেয়া হবে। (সূরা দাহর– ১৪)
ব্যাখ্যা : দুনিয়ার সব ফল জান্নাতে পাওয়া যাবে, তবে সেসব ফলের স্বাদ হবে ভিন্ন। প্রত্যেক ফলের মধ্যে শুকনো ও তাজা ফল থাকবে। কোন ফলের মধ্যে কাঁটা থাকবে না। আর এগুলো জান্নাতীদের এতো নিকটে থাকবে যে, দাঁড়িয়ে-বসে-শুয়ে যে অবস্থায় চাইবে ফল আনতে পারবে এবং খেতে পারবে।
জান্নাতের ফলের যোগান সবসময় জারী থাকবে :
وَفَاكِهَةٍ كَثِيْرَةٍ – لَا مَقْطُوْعَةٍ وَّلَا مَمْنُوْعَةٍ
(জান্নাতে থাকবে) প্রচুর ফলমূল, যা শেষ হবে না নিষিদ্ধও হবে না। (সূরা ওয়াক্বিয়া– ৩২, ৩৩)
مَثَلُ الْجَنَّةِ الَّتِيْ وُعِدَ الْمُتَّقُوْنَؕ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُؕ اُكُلُهَا دَآئِمٌ وَّظِلُّهَاؕ تِلْكَ عُقْبَى الَّذِيْنَ اتَّقَوْاۗ وَعُقْبَى الْكَافِرِيْنَ النَّارُ
মুত্তাক্বীদের যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তার উপমা এমন যে, তার পাদদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়ে যাবে এবং তার ফলসমূহ ও ছায়া চিরস্থায়ী; এটা মুত্তাক্বীদের কর্মফল। আর কাফিরদের কর্মফল জাহান্নাম। (সূরা রা‘দু ৩৫)
ব্যাখ্যা : যে জিনিস যত পরিমাণে ইচ্ছা, দ্বিধাহীনভাবে জান্নাতের সেবকদেরকে তা আনার নির্দেশ দেয়া হবে এবং তা এনে হাজির করা হবে। দুনিয়াতে কারো কাছেই কোনকিছুর অফুরন্ত ভান্ডার থাকে না এবং ব্যক্তি যা-ই ব্যবহার করে তার মূল্য নিজের পকেট থেকে দিতে হয়। জান্নাতে সম্পদ হবে আল্লাহর; কিন্তু জান্নাতের অধিবাসীদেরকে তা ব্যবহারের জন্য অবাধ অনুমতি দেয়া হবে। কোন জিনিস শেষ হয়ে যাওয়ার বিপদ যেমন থাকবে না, তেমনি বিল আসারও কোন প্রশ্ন থাকবে না।
কুরআনে যেসব ফলের কথা উল্লেখ আছে :
১। কুল/বরই :
فِيْ سِدْرٍ مَّخْضُوْدٍ
জান্নাতীরা থাকবে কাঁটাহীন কুলের মধ্যে। (সূরা ওয়াক্বিয়া– ২৮)
২। কলা :
وَطَلْحٍ مَّنْضُوْدٍ
আর জান্নাতীরা পাবে কাঁদি কাঁদি কলা। (সূরা ওয়াক্বিয়া– ২৯)
৩। খেজুর ও আনার :
فِيْهِمَا فَاكِهَةٌ وَّنَخْلٌ وَّرُمَّانٌ
সেখানে রয়েছে অনেক ফল, খেজুর ও আনার। (সূরা আর রহমানু ৬৮)
৪। আঙ্গুর :
حَدَآئِقَ وَاَعْنَابًا
(মুত্তাক্বীদের জন্য রয়েছে) বাগান এবং আঙ্গুর ফল। (সূরা নাবা– ৩২)
জান্নাতে পানি, দুধ, শরবত ও মধুর নদী রয়েছে :
مَثَلُ الْجَنَّةِ الَّتِيْ وُعِدَ الْمُتَّقُوْنَؕ فِيْهَاۤ اَنْهَارٌ مِّنْ مَّآءٍ غَيْرِ اٰسِنٍۚ وَاَنْهَارٌ مِّنْ لَّبَنٍ لَّمْ يَتَغَيَّرْ طَعْمُهٗۚ وَاَنْهَارٌ مِّنْ خَمْرٍ لَّذَّةٍ لِّلشَّارِبِيْنَۚ وَاَنْهَارٌ مِّنْ عَسَلٍ مُّصَفًّى
মুত্তাক্বীদেরকে যে জান্নাতের ওয়াদা দেয়া হয়েছে তার পরিচয় হলো- সেখানে আছে পানির নদী, যা (একেবারে) স্বচ্ছ ও পরিষ্কার। (আরো আছে) দুধের নদী, যার স্বাদ কখনো পরিবর্তন হয় না। (আরো আছে) শরবতের নদী, যা পানকারীদের জন্য খুবই সুস্বাদু। (আরো আছে) মধুর নদী, যা খাঁটি ও নির্ভেজাল। (সূরা মুহাম্মাদু ১৫)
ব্যাখ্যা : اٰسِنٌ (আছিনুন) বলা হয় এমন পানিকে, যার স্বাদ ও রং পরিবর্তিত হয়ে গেছে অথবা যার মধ্যে কোনভাবে গন্ধ সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণত পৃথিবীর সমুদ্র ও নদীর পানি ঘোলা হয়ে থাকে। তার সাথে বালু, মাটি এবং মাঝে মধ্যে নানা রকম উদ্ভিদ মিশে যাওয়ার কারণে বর্ণ ও স্বাদ পরিবর্তিত হয়ে যায় এবং তাতে কিছু না কিছু দুর্গন্ধও সৃষ্টি হয়। তাই জান্নাতের নদীসমূহের পানির পরিচয় দেয়া হয়েছে এভাবে যে, তা হবে غَيْرِ اٰسِنٌ অর্থাৎ নির্ভেজাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পানি। তার মধ্যে কোন প্রকার সংমিশ্রণ থাকবে না। জান্নাতের দুধ পশুর ওলান থেকে নির্গত দুধ হবে না। অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা এ দুধ ঝর্ণার আকারে মাটি থেকে বের করে নদীর আকারে প্রবাহিত করবেন। পশুর ওলান থেকে দোহন করে তারপর জান্নাতের নদীসমূহে ঢেলে প্রবাহিত করা হবে এমন নয়। এ কুদরতী দুধের পরিচয়ে বলা হয়েছে, তার স্বাদে কোন পরিবর্তন আসবে না অর্থাৎ পশুর ওলান থেকে নির্গত দুধে যে এক ধরনের গন্ধ থাকে, তার লেশমাত্রও এতে থাকবে না। জান্নাতের শরাব পদদলন বা মাড়ানোর মাধ্যমে নির্গত হবে না অর্থাৎ সে শরাব দুনিয়ার সাধারণ মদের মতো ফল পঁচিয়ে পায়ে মাড়িয়ে নির্গত করা হবে না। বরং এটাও আল্লাহ তা‘আলা ঝর্ণার আকারে সৃষ্টি করবেন এবং নদী-নালার আকারে প্রবাহিত করবেন। এর পরিচয় দিতে গিয়ে আরো বলা হয়েছে, তা হবে পানকারীদের জন্য অত্যন্ত সুস্বাদু। অর্থাৎ তা দুনিয়ার মদের মতো বিকৃত স্বাদ যুক্ত হবে না। দুনিয়ার মদ তো এমন যে, যত বড় অভ্যস্ত মদখোরই তা পান করুক, মুখ বিকৃত না করে পান করতে পারে না। আর তা পান করায় শরীরের কোন ক্ষতিও হবে না এবং বুদ্ধিও লোপ পাবে না। তার কারণে মাথাও ধরবে না কিংবা ব্যক্তির বিবেকও বিকৃত হবে না। সর্বোপরি তা নেশাযুক্ত হবে না, বরং তা শুধু স্বাদ ও আনন্দই দান করবে। জান্নাতের মধু মৌমাছির পেট থেকে নির্গত মধু হবে না। ঐ মধু ঝর্ণা থেকে নির্গত হবে এবং নদী-নালায় প্রবাহিত হবে। সুতরাং তার মধ্যে মোম, মৌচাকের টুকরা এবং মৃত মৌমাছির পা মিশে থাকবে না। বরং তা হবে নির্ভেজাল মধু। জান্নাতের এসব নিয়ামত উল্লেখের পর আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমার কথা উল্লেখ করার দু’টি অর্থ হতে পারে। (এক) এসব নিয়ামতের চেয়ে বড় নিয়ামত হচ্ছে এই যে, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন। (দুই) পৃথিবীতে তাদের দ্বারা যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছিল জান্নাতে তাদের সামনে কখনো তা উল্লেখ করা হবে না। বরং যাতে তারা জান্নাতে দুঃখিত না হয় সেজন্য আল্লাহ তাদের ঐসব ত্রুটি-বিচ্যুতির উপর চিরদিনের জন্য পর্দা টেনে দেবেন।
জান্নাতে রয়েছে ঝর্ণা :
فِيْهَا عَيْنٌ جَارِيَةٌ
আর জান্নাতে রয়েছে প্রবাহিত ঝর্ণা। (সূরা গাশিয়া– ১২)
কুরআনের মধ্যে জান্নাতের বিভিন্ন ঝর্ণার নাম পাওয়া যায় যেমন :
১। كَافُوْرٌ (কাফুর) :
اِنَّ الْاَبْرَارَ يَشْرَبُوْنَ مِنْ كَاْسٍ كَانَ مِزَاجُهَا كَافُوْرًا – عَيْنًا يَّشْرَبُ بِهَا عِبَادُ اللهِ يُفَجِّرُوْنَهَا تَفْجِيْرًا
সৎকর্মশীলরা কাফুর মিশ্রিত পানীয় পান করবে। আর কাফুর হলো একটি বিশেষ ঝর্ণা যা থেকে আল্লাহর নেক বান্দারা পান করবে এবং তাদের ইচ্ছানুযায়ী এগুলোকে প্রবাহিত করবে। (সূরা দাহর– ৫, ৬)
২। وَ سَلْسَبِيْلُ زَنْجَبِيْلُ (যানজাবীল ও সালসাবীল) :
وَيُسْقَوْنَ فِيْهَا كَاْسًا كَانَ مِزَاجُهَا زَنْجَبِيْلًا – عَيْنًا فِيْهَا تُسَمّٰى سَلْسَبِيْلًا
সেখানে তাদেরকে এমন এক (অপূর্ব) পানীয় পান করানো হবে, যার সাথে মেশানো হবে ‘যানজাবীল’ (নামের এক মূল্যবান সুগন্ধ)। তাতে রয়েছে (জান্নাতের) এক (অমিয়) ঝর্ণা, যার নাম রাখা হয়েছে ‘সালসাবীল’। (সূরা দাহর- ১৭, ১৮)
৩। تَسْنِيْمٌ (তাসনীম) :
اِنَّ الْاَبْرَارَ لَفِيْ نَعِيْمٍ – عَلَى الْاَرَآئِكِ يَنْظُرُوْنَ – تَعْرِفُ فِيْ وُجُوْهِهِمْ نَضْرَةَ النَّعِيْمِ – يُسْقَوْنَ مِنْ رَّحِيْقٍ مَّخْتُوْمٍ – خِتَامُهٗ مِسْكٌؕ وَفِيْ ذٰلِكَ فَلْيَتَنَافَسِ الْمُتَنَافِسُوْنَ – وَمِزَاجُهٗ مِنْ تَسْنِيْمٍ – عَيْنًا يَّشْرَبُ بِهَا الْمُقَرَّبُوْنَ
পুণ্যবান বান্দারা নিয়ামতের মধ্যে স্বাচ্ছন্দে থাকবে। তারা উঁচু উঁচু আসনে হেলান দিয়ে বসে একে অপরের প্রতি তাকাবে। তাদের চেহারায় নিয়ামতের উজ্জ্বলতা পরিলক্ষিত হবে। তাদেরকে মোহর করা বিশুদ্ধতম শরবত হতে পান করানো হবে, যার মোহর হবে মিশকের (কস্তুরীর)। এ নিয়ামত লাভ করতে হলে প্রতিযোগীদের প্রতিযোগিতা করা উচিৎ। এ শরবতের মিশ্রণ হবে তাসনীমের। তাসনীম হলো জান্নাতের একটি ঝর্ণা। আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দারা তা হতে পান করবে। (সূরা মুতাফফিফীন, ২২–২৮)
ঝর্ণাসমূহ জান্নাতীদের ইচ্ছামতো প্রবাহিত হবে :
عَيْنًا يَّشْرَبُ بِهَا عِبَادُ اللهِ يُفَجِّرُوْنَهَا تَفْجِيْرًا
এমন ঝর্ণাধারা যা হতে আল্লাহর বান্দাগণ পান করবে। তারা এগুলোকে ইচ্ছামতো প্রবাহিত করতে পারবে। (সূরা দাহর– ৬)
مَثَلُ الْجَنَّةِ الَّتِيْ وُعِدَ الْمُتَّقُوْنَؕ فِيْهَاۤ اَنْهَارٌ مِّنْ مَّآءٍ غَيْرِ اٰسِنٍۚ وَاَنْهَارٌ مِّنْ لَّبَنٍ لَّمْ يَتَغَيَّرْ طَعْمُهٗۚ وَاَنْهَارٌ مِّنْ خَمْرٍ لَّذَّةٍ لِّلشَّارِبِيْنَۚ وَاَنْهَارٌ مِّنْ عَسَلٍ مُّصَفًّى
মুত্তাক্বীদেরকে যে জান্নাতের ওয়াদা দেয়া হয়েছে তার পরিচয় হলো- সেখানে আছে পানির নদী, যা (একেবারে) স্বচ্ছ ও পরিষ্কার। (আরো আছে) দুধের নদী, যার স্বাদ কখনো পরিবর্তন হয় না। (আরো আছে) শরবতের নদী, যা পানকারীদের জন্য খুবই সুস্বাদু। (আরো আছে) মধুর নদী, যা খাঁটি ও নির্ভেজাল। (সূরা মুহাম্মাদু ১৫)
ব্যাখ্যা : اٰسِنٌ (আছিনুন) বলা হয় এমন পানিকে, যার স্বাদ ও রং পরিবর্তিত হয়ে গেছে অথবা যার মধ্যে কোনভাবে গন্ধ সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণত পৃথিবীর সমুদ্র ও নদীর পানি ঘোলা হয়ে থাকে। তার সাথে বালু, মাটি এবং মাঝে মধ্যে নানা রকম উদ্ভিদ মিশে যাওয়ার কারণে বর্ণ ও স্বাদ পরিবর্তিত হয়ে যায় এবং তাতে কিছু না কিছু দুর্গন্ধও সৃষ্টি হয়। তাই জান্নাতের নদীসমূহের পানির পরিচয় দেয়া হয়েছে এভাবে যে, তা হবে غَيْرِ اٰسِنٌ অর্থাৎ নির্ভেজাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পানি। তার মধ্যে কোন প্রকার সংমিশ্রণ থাকবে না। জান্নাতের দুধ পশুর ওলান থেকে নির্গত দুধ হবে না। অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা এ দুধ ঝর্ণার আকারে মাটি থেকে বের করে নদীর আকারে প্রবাহিত করবেন। পশুর ওলান থেকে দোহন করে তারপর জান্নাতের নদীসমূহে ঢেলে প্রবাহিত করা হবে এমন নয়। এ কুদরতী দুধের পরিচয়ে বলা হয়েছে, তার স্বাদে কোন পরিবর্তন আসবে না অর্থাৎ পশুর ওলান থেকে নির্গত দুধে যে এক ধরনের গন্ধ থাকে, তার লেশমাত্রও এতে থাকবে না। জান্নাতের শরাব পদদলন বা মাড়ানোর মাধ্যমে নির্গত হবে না অর্থাৎ সে শরাব দুনিয়ার সাধারণ মদের মতো ফল পঁচিয়ে পায়ে মাড়িয়ে নির্গত করা হবে না। বরং এটাও আল্লাহ তা‘আলা ঝর্ণার আকারে সৃষ্টি করবেন এবং নদী-নালার আকারে প্রবাহিত করবেন। এর পরিচয় দিতে গিয়ে আরো বলা হয়েছে, তা হবে পানকারীদের জন্য অত্যন্ত সুস্বাদু। অর্থাৎ তা দুনিয়ার মদের মতো বিকৃত স্বাদ যুক্ত হবে না। দুনিয়ার মদ তো এমন যে, যত বড় অভ্যস্ত মদখোরই তা পান করুক, মুখ বিকৃত না করে পান করতে পারে না। আর তা পান করায় শরীরের কোন ক্ষতিও হবে না এবং বুদ্ধিও লোপ পাবে না। তার কারণে মাথাও ধরবে না কিংবা ব্যক্তির বিবেকও বিকৃত হবে না। সর্বোপরি তা নেশাযুক্ত হবে না, বরং তা শুধু স্বাদ ও আনন্দই দান করবে। জান্নাতের মধু মৌমাছির পেট থেকে নির্গত মধু হবে না। ঐ মধু ঝর্ণা থেকে নির্গত হবে এবং নদী-নালায় প্রবাহিত হবে। সুতরাং তার মধ্যে মোম, মৌচাকের টুকরা এবং মৃত মৌমাছির পা মিশে থাকবে না। বরং তা হবে নির্ভেজাল মধু। জান্নাতের এসব নিয়ামত উল্লেখের পর আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমার কথা উল্লেখ করার দু’টি অর্থ হতে পারে। (এক) এসব নিয়ামতের চেয়ে বড় নিয়ামত হচ্ছে এই যে, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন। (দুই) পৃথিবীতে তাদের দ্বারা যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছিল জান্নাতে তাদের সামনে কখনো তা উল্লেখ করা হবে না। বরং যাতে তারা জান্নাতে দুঃখিত না হয় সেজন্য আল্লাহ তাদের ঐসব ত্রুটি-বিচ্যুতির উপর চিরদিনের জন্য পর্দা টেনে দেবেন।
জান্নাতে রয়েছে ঝর্ণা :
فِيْهَا عَيْنٌ جَارِيَةٌ
আর জান্নাতে রয়েছে প্রবাহিত ঝর্ণা। (সূরা গাশিয়া– ১২)
কুরআনের মধ্যে জান্নাতের বিভিন্ন ঝর্ণার নাম পাওয়া যায় যেমন :
১। كَافُوْرٌ (কাফুর) :
اِنَّ الْاَبْرَارَ يَشْرَبُوْنَ مِنْ كَاْسٍ كَانَ مِزَاجُهَا كَافُوْرًا – عَيْنًا يَّشْرَبُ بِهَا عِبَادُ اللهِ يُفَجِّرُوْنَهَا تَفْجِيْرًا
সৎকর্মশীলরা কাফুর মিশ্রিত পানীয় পান করবে। আর কাফুর হলো একটি বিশেষ ঝর্ণা যা থেকে আল্লাহর নেক বান্দারা পান করবে এবং তাদের ইচ্ছানুযায়ী এগুলোকে প্রবাহিত করবে। (সূরা দাহর– ৫, ৬)
২। وَ سَلْسَبِيْلُ زَنْجَبِيْلُ (যানজাবীল ও সালসাবীল) :
وَيُسْقَوْنَ فِيْهَا كَاْسًا كَانَ مِزَاجُهَا زَنْجَبِيْلًا – عَيْنًا فِيْهَا تُسَمّٰى سَلْسَبِيْلًا
সেখানে তাদেরকে এমন এক (অপূর্ব) পানীয় পান করানো হবে, যার সাথে মেশানো হবে ‘যানজাবীল’ (নামের এক মূল্যবান সুগন্ধ)। তাতে রয়েছে (জান্নাতের) এক (অমিয়) ঝর্ণা, যার নাম রাখা হয়েছে ‘সালসাবীল’। (সূরা দাহর- ১৭, ১৮)
৩। تَسْنِيْمٌ (তাসনীম) :
اِنَّ الْاَبْرَارَ لَفِيْ نَعِيْمٍ – عَلَى الْاَرَآئِكِ يَنْظُرُوْنَ – تَعْرِفُ فِيْ وُجُوْهِهِمْ نَضْرَةَ النَّعِيْمِ – يُسْقَوْنَ مِنْ رَّحِيْقٍ مَّخْتُوْمٍ – خِتَامُهٗ مِسْكٌؕ وَفِيْ ذٰلِكَ فَلْيَتَنَافَسِ الْمُتَنَافِسُوْنَ – وَمِزَاجُهٗ مِنْ تَسْنِيْمٍ – عَيْنًا يَّشْرَبُ بِهَا الْمُقَرَّبُوْنَ
পুণ্যবান বান্দারা নিয়ামতের মধ্যে স্বাচ্ছন্দে থাকবে। তারা উঁচু উঁচু আসনে হেলান দিয়ে বসে একে অপরের প্রতি তাকাবে। তাদের চেহারায় নিয়ামতের উজ্জ্বলতা পরিলক্ষিত হবে। তাদেরকে মোহর করা বিশুদ্ধতম শরবত হতে পান করানো হবে, যার মোহর হবে মিশকের (কস্তুরীর)। এ নিয়ামত লাভ করতে হলে প্রতিযোগীদের প্রতিযোগিতা করা উচিৎ। এ শরবতের মিশ্রণ হবে তাসনীমের। তাসনীম হলো জান্নাতের একটি ঝর্ণা। আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দারা তা হতে পান করবে। (সূরা মুতাফফিফীন, ২২–২৮)
ঝর্ণাসমূহ জান্নাতীদের ইচ্ছামতো প্রবাহিত হবে :
عَيْنًا يَّشْرَبُ بِهَا عِبَادُ اللهِ يُفَجِّرُوْنَهَا تَفْجِيْرًا
এমন ঝর্ণাধারা যা হতে আল্লাহর বান্দাগণ পান করবে। তারা এগুলোকে ইচ্ছামতো প্রবাহিত করতে পারবে। (সূরা দাহর– ৬)
জান্নাতে রয়েছে পানপাত্র :
يَطُوْفُ عَلَيْهِمْ وِلْدَانٌ مُّخَلَّدُوْنَ – بِاَكْوَابٍ وَّاَبَارِيْقَ وَكَاْسٍ مِّنْ مَّعِيْنٍ
তাদের নিকট দিয়ে পানপাত্র, লুটা ও শরবতের পেয়ালা নিয়ে চিরস্থায়ী বালকরা (সেবকরা) চক্কর দিতে থাকবে। (সূরা ওয়াক্বিয়া– ১৭, ১৮)
وَكَاْسًا دِهَاقًا
আর (জান্নাতীদের জন্য রয়েছে) পরিপূর্ণ পানপাত্র। (সূরা নাবা– ৩৪)
জান্নাতের পাত্র হবে রৌপ্যের :
وَيُطَافُ عَلَيْهِمْ بِاٰنِيَةٍ مِّنْ فِضَّةٍ وَّاَكْوَابٍ كَانَتْ قَوَارِيْرًا
তাদেরকে রৌপ্যের পানপাত্র এবং কাঁচের মতো স্বচ্ছ পানপাত্র দ্বারা পরিবেশন করা হবে। (সূরা দাহর– ১৫)
জান্নাতের প্লেট হবে সোনার :
يُطَافُ عَلَيْهِمْ بِصِحَافٍ مِّنْ ذَهَبٍ وَّاَكْوَابٍ
তাদের নিকট সোনার প্লেট এবং পানপাত্র আনা হবে। (সূরা যুখরুফু ৭১)
জান্নাতে সবকিছু সাজিয়ে রাখা হবে :
وَاَكْوَابٌ مَّوْضُوْعَةٌ
(জান্নাতে প্রস্তুত থাকবে) সুরক্ষিত পাত্রসমূহ (যা থেকে তারা খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করবে)। (সূরা গাশিয়া– ১৪)
يَطُوْفُ عَلَيْهِمْ وِلْدَانٌ مُّخَلَّدُوْنَ – بِاَكْوَابٍ وَّاَبَارِيْقَ وَكَاْسٍ مِّنْ مَّعِيْنٍ
তাদের নিকট দিয়ে পানপাত্র, লুটা ও শরবতের পেয়ালা নিয়ে চিরস্থায়ী বালকরা (সেবকরা) চক্কর দিতে থাকবে। (সূরা ওয়াক্বিয়া– ১৭, ১৮)
وَكَاْسًا دِهَاقًا
আর (জান্নাতীদের জন্য রয়েছে) পরিপূর্ণ পানপাত্র। (সূরা নাবা– ৩৪)
জান্নাতের পাত্র হবে রৌপ্যের :
وَيُطَافُ عَلَيْهِمْ بِاٰنِيَةٍ مِّنْ فِضَّةٍ وَّاَكْوَابٍ كَانَتْ قَوَارِيْرًا
তাদেরকে রৌপ্যের পানপাত্র এবং কাঁচের মতো স্বচ্ছ পানপাত্র দ্বারা পরিবেশন করা হবে। (সূরা দাহর– ১৫)
জান্নাতের প্লেট হবে সোনার :
يُطَافُ عَلَيْهِمْ بِصِحَافٍ مِّنْ ذَهَبٍ وَّاَكْوَابٍ
তাদের নিকট সোনার প্লেট এবং পানপাত্র আনা হবে। (সূরা যুখরুফু ৭১)
জান্নাতে সবকিছু সাজিয়ে রাখা হবে :
وَاَكْوَابٌ مَّوْضُوْعَةٌ
(জান্নাতে প্রস্তুত থাকবে) সুরক্ষিত পাত্রসমূহ (যা থেকে তারা খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করবে)। (সূরা গাশিয়া– ১৪)
জান্নাতের শরবত হবে সাদা এবং খুবই সুস্বাদু :
يُطَافُ عَلَيْهِمْ بِكَاْسٍ مِّنْ مَّعِيْنٍ – بَيْضَآءَ لَذَّةٍ لِّلشَّارِبِيْنَ
তাদের নিকট স্বচ্ছ পানপাত্র পরিবেশন করা হবে। আর তা হবে সাদা এবং পানকারীদের জন্য খুবই সুস্বাদু। (সূরা সাফ্ফাত– ৪৫, ৪৬)
জান্নাতের শরাবে মাথা ব্যথা ও পাগলামী থাকবে না :
يَتَنَازَعُوْنَ فِيْهَا كَاْسًا لَّا لَغْوٌ فِيْهَا وَلَا تَاْثِيْمٌ
তারা এমন শরাব পান করবে, যা পান করলে অনর্থক কথা বলবে না এবং কোন পাপকাজেও লিপ্ত হবে না। (সূরা তূর– ২৩)
لَا يُصَدَّعُوْنَ عَنْهَا وَلَا يُنْزِفُوْنَ
জান্নাতের শরাব পান করার পর মাথা ব্যথা হবে না এবং জ্ঞানও লোপ পাবে না। (সূরা ওয়াক্বিয়া– ১৯)
ব্যাখ্যা : দুনিয়ার শরাবে যে দু’ধরনের খারাপ বৈশিষ্ট্য থাকে জান্নাতের শরাব তা হতে মুক্ত থাকবে। দুনিয়ার শরাবের এক ধরনের বৈশিষ্ট্য হলো, মানুষ তার কাছে আসতেই তার পঁচা দুর্গন্ধ নাকে পৌঁছে যায়। শরাবের স্বাদ মানুষের জিহবাকে তিক্ত ও বিস্বাদ করে দেয়। এরপর গলার নিচে নামার সাথে সাথেই তা পেট চেপে ধরে। তা মাথায় চড়তে থাকে এবং মাথা চক্কর দিতে থাকে। আস্তে আস্তে তা কলিজাকে প্রভাবিত করে এবং মানুষের স্বাস্থ্যের উপর তার খারাপ প্রভাব বিস্তার করে। এসব হচ্ছে শারীরিক ক্ষতি। দ্বিতীয় ধরনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, শরাব পান করে মানুষ তার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। ফলে তার কথায় ও কাজে স্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণ থাকে না, যা সামাজিক ক্ষেত্রে খুবই ত্রুটিপূর্ণ। আর এগুলো হচ্ছে শরাবের মানসিক ক্ষতি। দুনিয়ায় মানুষ কেবলমাত্র আনন্দ লাভের জন্য এসব ক্ষতিকর বস্তু গ্রহণ করে। আল্লাহ বলেন, জান্নাতের শরাবে পূর্ণভাবে আনন্দ লাভ করা যাবে কিন্তু উপরোক্ত দু’ধরনের ক্ষতির কোনটাই সেখানে থাকবে না।
জান্নাতের শরাব হবে বিশুদ্ধ ও পবিত্র :
وَسَقَاهُمْ رَبُّهُمْ شَرَابًا طَهُوْرًا
তাদের প্রতিপালক তাদেরকে পবিত্র ও বিশুদ্ধ শরাব পান করাবেন। (সূরা দাহর– ২১)
يُطَافُ عَلَيْهِمْ بِكَاْسٍ مِّنْ مَّعِيْنٍ – بَيْضَآءَ لَذَّةٍ لِّلشَّارِبِيْنَ
তাদের নিকট স্বচ্ছ পানপাত্র পরিবেশন করা হবে। আর তা হবে সাদা এবং পানকারীদের জন্য খুবই সুস্বাদু। (সূরা সাফ্ফাত– ৪৫, ৪৬)
জান্নাতের শরাবে মাথা ব্যথা ও পাগলামী থাকবে না :
يَتَنَازَعُوْنَ فِيْهَا كَاْسًا لَّا لَغْوٌ فِيْهَا وَلَا تَاْثِيْمٌ
তারা এমন শরাব পান করবে, যা পান করলে অনর্থক কথা বলবে না এবং কোন পাপকাজেও লিপ্ত হবে না। (সূরা তূর– ২৩)
لَا يُصَدَّعُوْنَ عَنْهَا وَلَا يُنْزِفُوْنَ
জান্নাতের শরাব পান করার পর মাথা ব্যথা হবে না এবং জ্ঞানও লোপ পাবে না। (সূরা ওয়াক্বিয়া– ১৯)
ব্যাখ্যা : দুনিয়ার শরাবে যে দু’ধরনের খারাপ বৈশিষ্ট্য থাকে জান্নাতের শরাব তা হতে মুক্ত থাকবে। দুনিয়ার শরাবের এক ধরনের বৈশিষ্ট্য হলো, মানুষ তার কাছে আসতেই তার পঁচা দুর্গন্ধ নাকে পৌঁছে যায়। শরাবের স্বাদ মানুষের জিহবাকে তিক্ত ও বিস্বাদ করে দেয়। এরপর গলার নিচে নামার সাথে সাথেই তা পেট চেপে ধরে। তা মাথায় চড়তে থাকে এবং মাথা চক্কর দিতে থাকে। আস্তে আস্তে তা কলিজাকে প্রভাবিত করে এবং মানুষের স্বাস্থ্যের উপর তার খারাপ প্রভাব বিস্তার করে। এসব হচ্ছে শারীরিক ক্ষতি। দ্বিতীয় ধরনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, শরাব পান করে মানুষ তার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। ফলে তার কথায় ও কাজে স্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণ থাকে না, যা সামাজিক ক্ষেত্রে খুবই ত্রুটিপূর্ণ। আর এগুলো হচ্ছে শরাবের মানসিক ক্ষতি। দুনিয়ায় মানুষ কেবলমাত্র আনন্দ লাভের জন্য এসব ক্ষতিকর বস্তু গ্রহণ করে। আল্লাহ বলেন, জান্নাতের শরাবে পূর্ণভাবে আনন্দ লাভ করা যাবে কিন্তু উপরোক্ত দু’ধরনের ক্ষতির কোনটাই সেখানে থাকবে না।
জান্নাতের শরাব হবে বিশুদ্ধ ও পবিত্র :
وَسَقَاهُمْ رَبُّهُمْ شَرَابًا طَهُوْرًا
তাদের প্রতিপালক তাদেরকে পবিত্র ও বিশুদ্ধ শরাব পান করাবেন। (সূরা দাহর– ২১)
জান্নাতীদেরকে গোশত দেয়া হবে :
وَاَمْدَدْنَاهُمْ بِفَاكِهَةٍ وَّلَحْمٍ مِّمَّا يَشْتَهُوْنَ
আমি তাদেরকে ফলমূল এবং গোশত দেব, যা তারা পছন্দ করবে। (সূরা তূর– ২২)
وَلَحْمِ طَيْرٍ مِّمَّا يَشْتَهُوْنَ
তাদের জন্য তাদের পছন্দমতো পাখির গোশত থাকবে। (সূরা ওয়াক্বিয়া–২১)
জান্নাতের নিয়ামত ভোগ করার জন্য আল্লাহ আদেশ করবেন :
كُلُوْا وَاشْرَبُوْا هَنِيْٓئًا ۢبِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
(হে জান্নাতবাসীরা!) তোমরা তৃপ্তির সাথে খাও এবং পান করো, তোমরা (দুনিয়াতে) যে আমল করেছ তার প্রতিদানস্বরূপ। (সূরা তুর– ১৯)
كُلُوْا وَاشْرَبُوْا هَنِيْٓئًا ۢبِمَاۤ اَسْلَفْتُمْ فِى الْاَيَّامِ الْخَالِيَةِ
(হে জান্নাতবাসীরা!) দুনিয়াতে থাকাবস্থায় তোমরা আমার কাছে যেসব নেক আমল পাঠিয়েছিলে তার প্রতিদানস্বরূপ আজ তৃপ্তির সাথে খাও এবং পান করো। (সূরা হাক্কাহ– ২৪)
وَاَمْدَدْنَاهُمْ بِفَاكِهَةٍ وَّلَحْمٍ مِّمَّا يَشْتَهُوْنَ
আমি তাদেরকে ফলমূল এবং গোশত দেব, যা তারা পছন্দ করবে। (সূরা তূর– ২২)
وَلَحْمِ طَيْرٍ مِّمَّا يَشْتَهُوْنَ
তাদের জন্য তাদের পছন্দমতো পাখির গোশত থাকবে। (সূরা ওয়াক্বিয়া–২১)
জান্নাতের নিয়ামত ভোগ করার জন্য আল্লাহ আদেশ করবেন :
كُلُوْا وَاشْرَبُوْا هَنِيْٓئًا ۢبِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
(হে জান্নাতবাসীরা!) তোমরা তৃপ্তির সাথে খাও এবং পান করো, তোমরা (দুনিয়াতে) যে আমল করেছ তার প্রতিদানস্বরূপ। (সূরা তুর– ১৯)
كُلُوْا وَاشْرَبُوْا هَنِيْٓئًا ۢبِمَاۤ اَسْلَفْتُمْ فِى الْاَيَّامِ الْخَالِيَةِ
(হে জান্নাতবাসীরা!) দুনিয়াতে থাকাবস্থায় তোমরা আমার কাছে যেসব নেক আমল পাঠিয়েছিলে তার প্রতিদানস্বরূপ আজ তৃপ্তির সাথে খাও এবং পান করো। (সূরা হাক্কাহ– ২৪)
জান্নাতের পোশাক হবে রেশমের :
وَلِبَاسُهُمْ فِيْهَا حَرِيْرٌ
সেখানে তাদের জন্য থাকবে রেশমের পোশাক। (সূরা হজ্জ– ২৩)
জান্নাতীদের পোশাকের রং হবে সবুজ :
وَيَلْبَسُوْنَ ثِيَابًا خُضْرًا مِّنْ سُنْدُسٍ وَّاِسْتَبْرَقٍ
তারা চিকন ও মোটা রেশমের সবুজ পোশাক পরিধান করবে। (সূরা কাহফু ৩১)
عَالِيَهُمْ ثِيَابُ سُنْدُسٍ خُضْرٌ وَّاِسْتَبْرَقٌ
তাদের পরিধানে থাকবে সবুজ মিহি রেশম ও মোটা মখমলের পোশাক। (সূরা দাহর– ২১)
জান্নাতের অলংকার হবে স্বর্ণ, রৌপ্য ও মণিমুক্তার :
يُحَلَّوْنَ فِيْهَا مِنْ اَسَاوِرَ مِنْ ذَهَبٍ وَّلُؤْلُؤًا
তাদেরকে স্বর্ণালংকার ও মুক্তা দ্বারা অলংকৃত করা হবে। (হাজ্জ– ২৩)
وَحُلُّوْاۤ اَسَاوِرَ مِنْ فِضَّةٍ
আর তাদেরকে রুপার অলংকার পরানো হবে। (সূরা দাহর– ২১)
ব্যাখ্যা : জান্নাতে সবধরনের অলংকার উপস্থিত থাকবে। যে যেটা ইচ্ছা করবে সে তা পরিধান করতে পারবে। দুনিয়াতে কেবল নারীরাই অলংকার পরে, কিন্তু জান্নাতে নারী–পুরুষ সকলকে অলংকার পরানো হবে। তখন পরিবেশটা এমন হবে যে, পুরুষদের জন্য অলংকার পরিধান করা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাবে এবং এতে তাদের সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পাবে। ওযুর অঙ্গসমূহে অলংকার পরানো হবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূল ﷺ বলেছেন, মুমিন বান্দার (হাত, মুখ ও পা ইত্যাদির) যতটুকু পর্যন্ত ওযুর পানি পৌঁছে, ততটুকু স্থানে তাকে অলংকার পরানো হবে। (সহীহ মুসলিম, হা/৬০৯)
وَلِبَاسُهُمْ فِيْهَا حَرِيْرٌ
সেখানে তাদের জন্য থাকবে রেশমের পোশাক। (সূরা হজ্জ– ২৩)
জান্নাতীদের পোশাকের রং হবে সবুজ :
وَيَلْبَسُوْنَ ثِيَابًا خُضْرًا مِّنْ سُنْدُسٍ وَّاِسْتَبْرَقٍ
তারা চিকন ও মোটা রেশমের সবুজ পোশাক পরিধান করবে। (সূরা কাহফু ৩১)
عَالِيَهُمْ ثِيَابُ سُنْدُسٍ خُضْرٌ وَّاِسْتَبْرَقٌ
তাদের পরিধানে থাকবে সবুজ মিহি রেশম ও মোটা মখমলের পোশাক। (সূরা দাহর– ২১)
জান্নাতের অলংকার হবে স্বর্ণ, রৌপ্য ও মণিমুক্তার :
يُحَلَّوْنَ فِيْهَا مِنْ اَسَاوِرَ مِنْ ذَهَبٍ وَّلُؤْلُؤًا
তাদেরকে স্বর্ণালংকার ও মুক্তা দ্বারা অলংকৃত করা হবে। (হাজ্জ– ২৩)
وَحُلُّوْاۤ اَسَاوِرَ مِنْ فِضَّةٍ
আর তাদেরকে রুপার অলংকার পরানো হবে। (সূরা দাহর– ২১)
ব্যাখ্যা : জান্নাতে সবধরনের অলংকার উপস্থিত থাকবে। যে যেটা ইচ্ছা করবে সে তা পরিধান করতে পারবে। দুনিয়াতে কেবল নারীরাই অলংকার পরে, কিন্তু জান্নাতে নারী–পুরুষ সকলকে অলংকার পরানো হবে। তখন পরিবেশটা এমন হবে যে, পুরুষদের জন্য অলংকার পরিধান করা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাবে এবং এতে তাদের সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পাবে। ওযুর অঙ্গসমূহে অলংকার পরানো হবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূল ﷺ বলেছেন, মুমিন বান্দার (হাত, মুখ ও পা ইত্যাদির) যতটুকু পর্যন্ত ওযুর পানি পৌঁছে, ততটুকু স্থানে তাকে অলংকার পরানো হবে। (সহীহ মুসলিম, হা/৬০৯)
জান্নাতের আসন হবে সোনার তৈরি :
عَلٰى سُرُرٍ مَّوْضُوْنَةٍ – مُتَّكِئِيْنَ عَلَيْهَا مُتَقَابِلِيْنَ
তারা সোনার তৈরি আসনে মুখোমুখি হয়ে বসবে। (সূরা ওয়াক্বিয়া– ১৫, ১৬)
আসনগুলো সারিবদ্ধভাবে সাজানো থাকবে :
مُتَّكِئِيْنَ عَلٰى سُرُرٍ مَّصْفُوْفَةٍ
জান্নাতীরা সারিবদ্ধভাবে সুসজ্জিত আসনসমূহে মুখোমুখি হয়ে হেলান দিয়ে বসবে। (সূরা তূর– ২০)
اِنَّ اَصْحَابَ الْجَنَّةِ الْيَوْمَ فِيْ شُغُلٍ فَاكِهُوْنَ – هُمْ وَاَزْوَاجُهُمْ فِيْ ظِلَالٍ عَلَى الْاَرَآئِكِ مُتَّكِئُوْنَ
নিশ্চয় সেদিন জান্নাতবাসীরা আনন্দে মগ্ন থাকবে। তারা এবং তাদের স্ত্রীরা ছায়ার মধ্যে সুসজ্জিত আসনে হেলান দিয়ে বসবে। (সূরা ইয়াসীনু ৫৫, ৫৬)
ব্যাখ্যা : اَلْاَرَآئِكُ (আল আরাইক) শব্দটি اَرِيْكَةٌ (আরীকাতুন) এর বহুবচন। জান্নাতীদের আসনকে ‘আরীকা’ বলা হয়েছে। ‘আরীকা’ এমন আসনকে বলা হয়, যা খুবই সুসজ্জিত। বরকে বসানোর জন্য বিশেষভাবে সাজানো আসনকেও আরীকা বলা হয়।
জান্নাতে উঁচু মানের বিছানা থাকবে :
فِيْهَا سُرُرٌ مَّرْفُوْعَةٌ
সেখানে রয়েছে সমুন্নত বিছানা। (সূরা গাশিয়া– ১৩)
مُتَّكِئِيْنَ عَلٰى فُرُشٍ ۢبَطَآئِنُهَا مِنْ اِسْتَبْرَقٍ
(সেখানে জান্নাতের অধিবাসীরা) মোটা রেশমের আস্তরবিশিষ্ট বিছানায় হেলান দিয়ে বসবে। (সূরা আর রহমানু ৫৪)
বিছানার কাপড় হবে সবুজ, সুন্দর এবং নকশী করা :
مُتَّكِئِيْنَ عَلٰى رَفْرَفٍ خُضْرٍ وَّعَبْقَرِيٍّ حِسَانٍ
(জান্নাতের অধিবাসীরা) সবুজ নকশী করা, অতি সুন্দর, মূল্যবান বিছানায় হেলান দিয়ে বসবে। (সূরা আর রহমান – ৭৭, ৭৮)
عَلٰى سُرُرٍ مَّوْضُوْنَةٍ – مُتَّكِئِيْنَ عَلَيْهَا مُتَقَابِلِيْنَ
তারা সোনার তৈরি আসনে মুখোমুখি হয়ে বসবে। (সূরা ওয়াক্বিয়া– ১৫, ১৬)
আসনগুলো সারিবদ্ধভাবে সাজানো থাকবে :
مُتَّكِئِيْنَ عَلٰى سُرُرٍ مَّصْفُوْفَةٍ
জান্নাতীরা সারিবদ্ধভাবে সুসজ্জিত আসনসমূহে মুখোমুখি হয়ে হেলান দিয়ে বসবে। (সূরা তূর– ২০)
اِنَّ اَصْحَابَ الْجَنَّةِ الْيَوْمَ فِيْ شُغُلٍ فَاكِهُوْنَ – هُمْ وَاَزْوَاجُهُمْ فِيْ ظِلَالٍ عَلَى الْاَرَآئِكِ مُتَّكِئُوْنَ
নিশ্চয় সেদিন জান্নাতবাসীরা আনন্দে মগ্ন থাকবে। তারা এবং তাদের স্ত্রীরা ছায়ার মধ্যে সুসজ্জিত আসনে হেলান দিয়ে বসবে। (সূরা ইয়াসীনু ৫৫, ৫৬)
ব্যাখ্যা : اَلْاَرَآئِكُ (আল আরাইক) শব্দটি اَرِيْكَةٌ (আরীকাতুন) এর বহুবচন। জান্নাতীদের আসনকে ‘আরীকা’ বলা হয়েছে। ‘আরীকা’ এমন আসনকে বলা হয়, যা খুবই সুসজ্জিত। বরকে বসানোর জন্য বিশেষভাবে সাজানো আসনকেও আরীকা বলা হয়।
জান্নাতে উঁচু মানের বিছানা থাকবে :
فِيْهَا سُرُرٌ مَّرْفُوْعَةٌ
সেখানে রয়েছে সমুন্নত বিছানা। (সূরা গাশিয়া– ১৩)
مُتَّكِئِيْنَ عَلٰى فُرُشٍ ۢبَطَآئِنُهَا مِنْ اِسْتَبْرَقٍ
(সেখানে জান্নাতের অধিবাসীরা) মোটা রেশমের আস্তরবিশিষ্ট বিছানায় হেলান দিয়ে বসবে। (সূরা আর রহমানু ৫৪)
বিছানার কাপড় হবে সবুজ, সুন্দর এবং নকশী করা :
مُتَّكِئِيْنَ عَلٰى رَفْرَفٍ خُضْرٍ وَّعَبْقَرِيٍّ حِسَانٍ
(জান্নাতের অধিবাসীরা) সবুজ নকশী করা, অতি সুন্দর, মূল্যবান বিছানায় হেলান দিয়ে বসবে। (সূরা আর রহমান – ৭৭, ৭৮)
জান্নাতীরা নিজেদের সঙ্গিনী পাবে :
وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ سَنُدْخِلُهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَاۤ اَبَدًاؕ لَهُمْ فِيْهَاۤ اَزْوَاجٌ مُّطَهَّرَةٌؗ وَنُدْخِلُهُمْ ظِلًّا ظَلِيْلًا
যারা ঈমান আনবে এবং সৎকর্ম করবে আমি তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাব, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়ে যাবে। সেখানে তারা অনন্তকাল অবস্থান করবে; তাদের জন্য সেখানে রয়েছে পবিত্র স্ত্রীগণ। আর জান্নাতীদেরকে আমি সুশীতল ছায়ায় প্রবেশ করাব। (সূরা নিসা– ৫৭)
ব্যাখ্যা : زَوْجٌ (যাওজ) এর অর্থ হচ্ছে ‘জোড়া’। এ শব্দটি স্বামী ও স্ত্রী উভয় অর্থে ব্যবহার করা হয়। স্বামীর জন্য স্ত্রী হচ্ছে زَوْجٌ (যাওজ)। আবার স্ত্রীর জন্য স্বামী হচ্ছে زَوْجٌ (যাওজ)। তবে আখিরাতের اَزْوْاجٌ (আযওয়াজ) অর্থাৎ জোড়া হবে পবিত্রতার গুণাবলি সহকারে। যদি দুনিয়ায় কোন সৎকর্মশীল পুরুষের স্ত্রী সৎকর্মশীলা না হয়, তাহলে আখিরাতে তাদের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে সৎকর্মশীল পুরুষটিকে অন্য কোন সৎকর্মশীলা স্ত্রী দান করা হবে। আর যদি দুনিয়ায় কোন স্ত্রী সৎকর্মশীলা হয় এবং তার স্বামী অসৎ হয়, তাহলে আখিরাতে ঐ অসৎ স্বামী থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন করে কোন সৎপুরুষকে তার স্বামী হিসেবে দেয়া হবে। তবে যদি দুনিয়ায় কোন স্বামী-স্ত্রী দু’জনই সৎকর্মশীল হয়, তাহলে আখিরাতেও তাদের সম্পর্ক বহাল থাকবে এবং তাদের এ সম্পর্কটি চিরন্তন ও চিরস্থায়ী সম্পর্কে পরিণত হবে।
হুরদের সাথে জান্নাতীদের বিয়ে হবে :
وَزَوَّجْنَاهُمْ بِحُوْرٍ عِيْنٍ
আমি জান্নাতীদেরকে চক্ষু জুড়ানো হুরদের সঙ্গে জোড়া মিলিয়ে দেব। (সূরা দুখানু ৫৪)
ব্যাখ্যা : حُوْرٌ (হুর) শব্দটি حَوْرَآءُ (হাওরাউ) এর বহুবচন। হুর অর্থ অত্যন্ত সুশ্রী, অনন্যা সুন্দরী মহিলা। আর عِيْنٌ (‘ঈন) শব্দটি عَيْنَآءُ (‘আইনাউ) এর বহুবচন। عِيْنٌ (‘ঈন) বলা হয় বড় বড় এবং প্রশস্ত চক্ষু বিশিষ্ট রমণীদেরকে। জান্নাতী রমণীদের বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ :
১। জান্নাতী নারীরা হবে পবিত্র :
وَلَهُمْ فِيْهَاۤ اَزْوَاجٌ مُّطَهَّرَةٌ وَّهُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
সেখানে তাদের জন্য রয়েছে পবিত্র স্ত্রীগণ; সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। (সূরা বাক্বারা– ২৫)
ব্যাখ্যা : পবিত্র বলতে বাহ্যিক অপবিত্রতা যেমন- ময়লা, প্রস্রাব, পায়খানা, কফ, থুথু, হায়েয, নেফাস ইত্যাদি থেকে তারা পবিত্র হবে। আবার আভ্যন্তরীণ অপবিত্রতা যেমন- হিংসা–বিদ্বেষ, ধোঁকাবাজি, মুনাফিকী, কষ্টদায়ক কথাবার্তা, অপরাধ প্রবণতা ও নাফরমানি ইত্যাদি থেকেও পবিত্র হবে। مُطَهَّرَةٌ (মুতাহ্হারাতুন) দ্বারা তাই বুঝানো হয়েছে।
২। জান্নাতী নারীরা হবে কুমারী ও যুবতী :
اِنَّاۤ اَنْشَاْنَاهُنَّ اِنْشَآءً – فَجَعَلْنَاهُنَّ اَبْكَارًا
আমি তাদেরকে নতুনভাবে সৃষ্টি করেছি এবং তাদেরকে কুমারীরূপেই সৃষ্টি করেছি। (সূরা ওয়াক্বিয়া– ৩৫, ৩৬)
ব্যাখ্যা : اَبْكَارٌ (আবকার) শব্দটি بِكْرٌ (বিকরুন) এর বহুবচন, এর অর্থ কুমারী। যে নারীর এখনও বিয়ে হয়নি বা যার সাথে সহবাস হয়নি তাকে বাকেরা বলা হয়। জান্নাতী নারীরা দুনিয়ার স্ত্রী হোক অথবা হুর হোক তাদের অবস্থা এমন হবে যে, সবসময় তাদেরকে কুমারীই মনে হবে।
৩। তারা হবে সমবয়স্কা :
وَكَوَاعِبَ اَتْرَابًا
মুত্তাক্বীদের জন্য রয়েছে সমবয়স্কা যুবতী। (সূরা নাবা– ৩৩)
ব্যাখ্যা : اَتْرَابٌ (আতরাবুন) শব্দটি تُرْبٌ (তুরবুন) এর বহুবচন। এর অর্থ হলো সমান হওয়া। অর্থাৎ বয়সের দিক থেকে তারা সবাই সমান হবে। আর كَوَاعِبُ (কাওয়াইব) বলা হয় এমন নারীকে যার বুক উঁচু হয়েছে। অর্থাৎ সবেমাত্র সে যৌবনে পদার্পণ করেছে।
৪। তারা হবে সোহাগিনী :
عُرُبًا اَتْرَابًا
তারা হবে সোহাগিণী, সমবয়স্কা। অর্থাৎ তারা সৌন্দর্যশীলা, লাবণ্যময়ী, সোহাগিনী এবং স্বামীর প্রতি আকৃষ্ট। (সূরা ওয়াক্বিয়া– ৩৭)
৫। তারা হবে দৃষ্টি সংরক্ষণকারিণী :
وَعِنْدَهُمْ قَاصِرَاتُ الطَّرْفِ عِيْنٌ
জান্নাতীদের নিকট থাকবে নিজ স্বামীর প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধকারিণী ও আয়তনয়না রমণীগণ। (সূরা সাফ্ফাত– ৪৮)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ তাদের দৃষ্টি কেবল স্বামীদের দিকেই থাকবে এবং স্বামীকে নিয়েই তারা সন্তুষ্ট থাকবে, অন্য কারো প্রতি তাকানোর প্রয়োজন মনে করবে না।
৫। তারা হবে চরিত্রবান :
فِيْهِنَّ خَيْرَاتٌ حِسَانٌ
সেখানে রয়েছে উত্তম চরিত্রের অধিকারিণী সুরক্ষিত হুরগণ। (সূরা আর রহমানু ৭০)
৬। তাদেরকে কেউ স্পর্শ করেনি :
لَمْ يَطْمِثْهُنَّ اِنْسٌ قَبْلَهُمْ وَلَا جَآنٌّ
ইতোপূর্বে কোন জিন ও মানব তাদেরকে স্পর্শ করেনি। (সূরা আর রহমানু ৭৪)
৭। তারা তাঁবুতে সংরক্ষিত থাকবে :
حُوْرٌ مَّقْصُوْرَاتٌ فِى الْخِيَامِ
(জান্নাতে রয়েছে) হুরগণ, তারা তাঁবুর মধ্যে সংরক্ষিত। (সূরা আর রহমানু ৭২)
৮। জান্নাতী নারীদেরকে হিরা, মণিমুক্তা ও ডিমের সাথে তুলনা :
كَاَنَّهُنَّ الْيَاقُوْتُ وَالْمَرْجَانُ
তারা যেন হিরা ও মণিমুক্তা। (সূরা আর রহমানু ৫৮)
كَاَمْثَالِ اللُّؤْلُؤِ الْمَكْنُوْنِ
তারা যেন সংরক্ষিত মণিমুক্তা। (সূরা ওয়াক্বিয়া– ২৩)
كَاَنَّهُنَّ بَيْضٌ مَّكْنُوْنٌ
তারা যেন সংরক্ষিত ডিম। (সূরা সাফফাত– ৪৯)
জান্নাতীরা পরিবার–পরিজনসহ বসবাস করবে :
وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَاتَّبَعَتْهُمْ ذُرِّيَّتُهُمْ بِاِيْمَانٍ اَلْحَقْنَا بِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَمَاۤ اَلَتْنَاهُمْ مِّنْ عَمَلِهِمْ مِّنْ شَيْءٍ
আর যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের সন্তানদের মধ্যেও যারা ঈমানের সাথে তাদের অনুসরণ করেছে, তাদের সবাইকে আমি জান্নাতে একত্রিত করব এবং তাদের আমলের প্রতিদান একটুও কমাব না। (সূরা তূর– ২১)
ব্যাখ্যা : মানুষ পরম সুখশান্তির জন্য আত্মীয়–স্বজনকে কাছে পেতে চায়। তাই আল্লাহ এ ব্যবস্থা করবেন। একই বংশের যারা জান্নাতে যাবে, তাদের মধ্যে হয়তো জান্নাতের স্তরের ভিন্নতা থাকতে পারে। আল্লাহ তা‘আলা যখন তাদেরকে একত্র করবেন, তখন নিচের স্তরে যারা থাকবে তাদেরকে উপরের স্তরের লোকদের সাথে মিলিয়ে দেবেন।
দুনিয়ার স্বামী–স্ত্রীরা জান্নাতেও ঐভাবে থাকবে :
جَنَّاتُ عَدْنٍ يَّدْخُلُونَهَا وَمَنْ صَلَحَ مِنْ اٰبَآئِهِمْ وَاَزْوَاجِهِمْ وَذُرِّيَّاتِهِمْ
সৎকর্মশীল বান্দারা স্থায়ী জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের পিতা–মাতা, স্ত্রী ও সন্তানদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে তারাও তাদের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (সূরা রা‘দু ২৩)
ব্যাখ্যা : দুনিয়ার স্বামী–স্ত্রী উভয়ই যদি নেককার হয়, তবে জান্নাতেও আল্লাহ তাদের মধ্যে মিলন ঘটিয়ে দেবেন। পক্ষান্তরে স্ত্রী জান্নাতী হলে সে জান্নাতে অন্য স্বামী পাবে। আর কেবল স্বামী জান্নাতী হলে সে অন্য স্ত্রী পাবে। আবার কোন মহিলার কয়েকজন স্বামী থাকলে এবং সবাই জান্নাতী হলে, সে যাকে ইচ্ছা বাছাই করে নিতে পারবে। আর সে ঐ স্বামীকে বাছাই করবে, যার আচার–ব্যবহার ভালো ছিল।
وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ سَنُدْخِلُهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَاۤ اَبَدًاؕ لَهُمْ فِيْهَاۤ اَزْوَاجٌ مُّطَهَّرَةٌؗ وَنُدْخِلُهُمْ ظِلًّا ظَلِيْلًا
যারা ঈমান আনবে এবং সৎকর্ম করবে আমি তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাব, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়ে যাবে। সেখানে তারা অনন্তকাল অবস্থান করবে; তাদের জন্য সেখানে রয়েছে পবিত্র স্ত্রীগণ। আর জান্নাতীদেরকে আমি সুশীতল ছায়ায় প্রবেশ করাব। (সূরা নিসা– ৫৭)
ব্যাখ্যা : زَوْجٌ (যাওজ) এর অর্থ হচ্ছে ‘জোড়া’। এ শব্দটি স্বামী ও স্ত্রী উভয় অর্থে ব্যবহার করা হয়। স্বামীর জন্য স্ত্রী হচ্ছে زَوْجٌ (যাওজ)। আবার স্ত্রীর জন্য স্বামী হচ্ছে زَوْجٌ (যাওজ)। তবে আখিরাতের اَزْوْاجٌ (আযওয়াজ) অর্থাৎ জোড়া হবে পবিত্রতার গুণাবলি সহকারে। যদি দুনিয়ায় কোন সৎকর্মশীল পুরুষের স্ত্রী সৎকর্মশীলা না হয়, তাহলে আখিরাতে তাদের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে সৎকর্মশীল পুরুষটিকে অন্য কোন সৎকর্মশীলা স্ত্রী দান করা হবে। আর যদি দুনিয়ায় কোন স্ত্রী সৎকর্মশীলা হয় এবং তার স্বামী অসৎ হয়, তাহলে আখিরাতে ঐ অসৎ স্বামী থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন করে কোন সৎপুরুষকে তার স্বামী হিসেবে দেয়া হবে। তবে যদি দুনিয়ায় কোন স্বামী-স্ত্রী দু’জনই সৎকর্মশীল হয়, তাহলে আখিরাতেও তাদের সম্পর্ক বহাল থাকবে এবং তাদের এ সম্পর্কটি চিরন্তন ও চিরস্থায়ী সম্পর্কে পরিণত হবে।
হুরদের সাথে জান্নাতীদের বিয়ে হবে :
وَزَوَّجْنَاهُمْ بِحُوْرٍ عِيْنٍ
আমি জান্নাতীদেরকে চক্ষু জুড়ানো হুরদের সঙ্গে জোড়া মিলিয়ে দেব। (সূরা দুখানু ৫৪)
ব্যাখ্যা : حُوْرٌ (হুর) শব্দটি حَوْرَآءُ (হাওরাউ) এর বহুবচন। হুর অর্থ অত্যন্ত সুশ্রী, অনন্যা সুন্দরী মহিলা। আর عِيْنٌ (‘ঈন) শব্দটি عَيْنَآءُ (‘আইনাউ) এর বহুবচন। عِيْنٌ (‘ঈন) বলা হয় বড় বড় এবং প্রশস্ত চক্ষু বিশিষ্ট রমণীদেরকে। জান্নাতী রমণীদের বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ :
১। জান্নাতী নারীরা হবে পবিত্র :
وَلَهُمْ فِيْهَاۤ اَزْوَاجٌ مُّطَهَّرَةٌ وَّهُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
সেখানে তাদের জন্য রয়েছে পবিত্র স্ত্রীগণ; সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। (সূরা বাক্বারা– ২৫)
ব্যাখ্যা : পবিত্র বলতে বাহ্যিক অপবিত্রতা যেমন- ময়লা, প্রস্রাব, পায়খানা, কফ, থুথু, হায়েয, নেফাস ইত্যাদি থেকে তারা পবিত্র হবে। আবার আভ্যন্তরীণ অপবিত্রতা যেমন- হিংসা–বিদ্বেষ, ধোঁকাবাজি, মুনাফিকী, কষ্টদায়ক কথাবার্তা, অপরাধ প্রবণতা ও নাফরমানি ইত্যাদি থেকেও পবিত্র হবে। مُطَهَّرَةٌ (মুতাহ্হারাতুন) দ্বারা তাই বুঝানো হয়েছে।
২। জান্নাতী নারীরা হবে কুমারী ও যুবতী :
اِنَّاۤ اَنْشَاْنَاهُنَّ اِنْشَآءً – فَجَعَلْنَاهُنَّ اَبْكَارًا
আমি তাদেরকে নতুনভাবে সৃষ্টি করেছি এবং তাদেরকে কুমারীরূপেই সৃষ্টি করেছি। (সূরা ওয়াক্বিয়া– ৩৫, ৩৬)
ব্যাখ্যা : اَبْكَارٌ (আবকার) শব্দটি بِكْرٌ (বিকরুন) এর বহুবচন, এর অর্থ কুমারী। যে নারীর এখনও বিয়ে হয়নি বা যার সাথে সহবাস হয়নি তাকে বাকেরা বলা হয়। জান্নাতী নারীরা দুনিয়ার স্ত্রী হোক অথবা হুর হোক তাদের অবস্থা এমন হবে যে, সবসময় তাদেরকে কুমারীই মনে হবে।
৩। তারা হবে সমবয়স্কা :
وَكَوَاعِبَ اَتْرَابًا
মুত্তাক্বীদের জন্য রয়েছে সমবয়স্কা যুবতী। (সূরা নাবা– ৩৩)
ব্যাখ্যা : اَتْرَابٌ (আতরাবুন) শব্দটি تُرْبٌ (তুরবুন) এর বহুবচন। এর অর্থ হলো সমান হওয়া। অর্থাৎ বয়সের দিক থেকে তারা সবাই সমান হবে। আর كَوَاعِبُ (কাওয়াইব) বলা হয় এমন নারীকে যার বুক উঁচু হয়েছে। অর্থাৎ সবেমাত্র সে যৌবনে পদার্পণ করেছে।
৪। তারা হবে সোহাগিনী :
عُرُبًا اَتْرَابًا
তারা হবে সোহাগিণী, সমবয়স্কা। অর্থাৎ তারা সৌন্দর্যশীলা, লাবণ্যময়ী, সোহাগিনী এবং স্বামীর প্রতি আকৃষ্ট। (সূরা ওয়াক্বিয়া– ৩৭)
৫। তারা হবে দৃষ্টি সংরক্ষণকারিণী :
وَعِنْدَهُمْ قَاصِرَاتُ الطَّرْفِ عِيْنٌ
জান্নাতীদের নিকট থাকবে নিজ স্বামীর প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধকারিণী ও আয়তনয়না রমণীগণ। (সূরা সাফ্ফাত– ৪৮)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ তাদের দৃষ্টি কেবল স্বামীদের দিকেই থাকবে এবং স্বামীকে নিয়েই তারা সন্তুষ্ট থাকবে, অন্য কারো প্রতি তাকানোর প্রয়োজন মনে করবে না।
৫। তারা হবে চরিত্রবান :
فِيْهِنَّ خَيْرَاتٌ حِسَانٌ
সেখানে রয়েছে উত্তম চরিত্রের অধিকারিণী সুরক্ষিত হুরগণ। (সূরা আর রহমানু ৭০)
৬। তাদেরকে কেউ স্পর্শ করেনি :
لَمْ يَطْمِثْهُنَّ اِنْسٌ قَبْلَهُمْ وَلَا جَآنٌّ
ইতোপূর্বে কোন জিন ও মানব তাদেরকে স্পর্শ করেনি। (সূরা আর রহমানু ৭৪)
৭। তারা তাঁবুতে সংরক্ষিত থাকবে :
حُوْرٌ مَّقْصُوْرَاتٌ فِى الْخِيَامِ
(জান্নাতে রয়েছে) হুরগণ, তারা তাঁবুর মধ্যে সংরক্ষিত। (সূরা আর রহমানু ৭২)
৮। জান্নাতী নারীদেরকে হিরা, মণিমুক্তা ও ডিমের সাথে তুলনা :
كَاَنَّهُنَّ الْيَاقُوْتُ وَالْمَرْجَانُ
তারা যেন হিরা ও মণিমুক্তা। (সূরা আর রহমানু ৫৮)
كَاَمْثَالِ اللُّؤْلُؤِ الْمَكْنُوْنِ
তারা যেন সংরক্ষিত মণিমুক্তা। (সূরা ওয়াক্বিয়া– ২৩)
كَاَنَّهُنَّ بَيْضٌ مَّكْنُوْنٌ
তারা যেন সংরক্ষিত ডিম। (সূরা সাফফাত– ৪৯)
জান্নাতীরা পরিবার–পরিজনসহ বসবাস করবে :
وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَاتَّبَعَتْهُمْ ذُرِّيَّتُهُمْ بِاِيْمَانٍ اَلْحَقْنَا بِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَمَاۤ اَلَتْنَاهُمْ مِّنْ عَمَلِهِمْ مِّنْ شَيْءٍ
আর যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের সন্তানদের মধ্যেও যারা ঈমানের সাথে তাদের অনুসরণ করেছে, তাদের সবাইকে আমি জান্নাতে একত্রিত করব এবং তাদের আমলের প্রতিদান একটুও কমাব না। (সূরা তূর– ২১)
ব্যাখ্যা : মানুষ পরম সুখশান্তির জন্য আত্মীয়–স্বজনকে কাছে পেতে চায়। তাই আল্লাহ এ ব্যবস্থা করবেন। একই বংশের যারা জান্নাতে যাবে, তাদের মধ্যে হয়তো জান্নাতের স্তরের ভিন্নতা থাকতে পারে। আল্লাহ তা‘আলা যখন তাদেরকে একত্র করবেন, তখন নিচের স্তরে যারা থাকবে তাদেরকে উপরের স্তরের লোকদের সাথে মিলিয়ে দেবেন।
দুনিয়ার স্বামী–স্ত্রীরা জান্নাতেও ঐভাবে থাকবে :
جَنَّاتُ عَدْنٍ يَّدْخُلُونَهَا وَمَنْ صَلَحَ مِنْ اٰبَآئِهِمْ وَاَزْوَاجِهِمْ وَذُرِّيَّاتِهِمْ
সৎকর্মশীল বান্দারা স্থায়ী জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের পিতা–মাতা, স্ত্রী ও সন্তানদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে তারাও তাদের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (সূরা রা‘দু ২৩)
ব্যাখ্যা : দুনিয়ার স্বামী–স্ত্রী উভয়ই যদি নেককার হয়, তবে জান্নাতেও আল্লাহ তাদের মধ্যে মিলন ঘটিয়ে দেবেন। পক্ষান্তরে স্ত্রী জান্নাতী হলে সে জান্নাতে অন্য স্বামী পাবে। আর কেবল স্বামী জান্নাতী হলে সে অন্য স্ত্রী পাবে। আবার কোন মহিলার কয়েকজন স্বামী থাকলে এবং সবাই জান্নাতী হলে, সে যাকে ইচ্ছা বাছাই করে নিতে পারবে। আর সে ঐ স্বামীকে বাছাই করবে, যার আচার–ব্যবহার ভালো ছিল।
জান্নাতীদের সেবায় খাদিম নিয়োজিত থাকবে :
يَطُوْفُ عَلَيْهِمْ وِلْدَانٌ مُّخَلَّدُوْنَ
আর তাদের মধ্যে চির কিশোর বালকরা ঘোরাফেরা করবে। (সূরা ওয়াক্বিয়া– ১৭)
ব্যাখ্যা : তারা কখনো মরবে না, বৃদ্ধ হবে না, তাদের জীবনে কোন পরিবর্তনও দেখা দেবে না। চিরদিন তারা বালক ও কিশোর অবস্থায় থাকবে এবং জান্নাতীদের সেবা করবে।
তাদেরকে মুক্তার মতো দেখাবে :
وَيَطُوْفُ عَلَيْهِمْ غِلْمَانٌ لَّهُمْ كَاَنَّهُمْ لُؤْلُؤٌ مَّكْنُوْنٌ
তাদের সেবার জন্য ঐ সকল বালকরা চক্কর দিতে থাকবে, যাদেরকে কেবল তাদের সেবা করার জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে। তারা এত সুন্দর হবে, মনে হবে যেন ঝিনুকের মধ্যে লুকিয়ে থাকা মুক্তা। (সূরা তূর– ২৪)
وَيَطُوْفُ عَلَيْهِمْ وِلْدَانٌ مُّخَلَّدُوْنَۚ اِذَا رَاَيْتَهُمْ حَسِبْتَهُمْ لُؤْلُؤًا مَّنْثُوْرًا
তাদেরকে খাদ্যুপানীয় পরিবেশন করবে চির কিশোর বালকরা। তাদেরকে দেখলে তুমি মনে করবে- যেন ছড়িয়ে থাকা মুক্তা। (সূরা দাহর– ১৯)
ব্যাখ্যা : সূরা তূর–এর মধ্যে গিলমানকে সুরক্ষিত মুক্তার সাথে উপমা দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ সেসব কিশোররা সৌন্দর্য, রূপুলাবণ্য ও পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার দিক দিয়ে ঐ সব মুক্তার ন্যায় হবে, যা সামুদ্রিক ঝিনুকের মধ্যে থাকে; যেগুলোর উপর ময়লা ও ধূলাবালি পড়তে পারে না। আর সূরা দাহার-এর মধ্যে তাদেরকে বিক্ষিপ্ত মুক্তা বলা হয়েছে। অর্থাৎ সেসব কিশোররা বিক্ষিপ্ত মুক্তা সদৃশ হবে। তারা জান্নাতীদের চতুর্দিকে প্রদক্ষিণ করবে এবং তাদের পরিচর্যায় নিয়োজিত থাকবে।
يَطُوْفُ عَلَيْهِمْ وِلْدَانٌ مُّخَلَّدُوْنَ
আর তাদের মধ্যে চির কিশোর বালকরা ঘোরাফেরা করবে। (সূরা ওয়াক্বিয়া– ১৭)
ব্যাখ্যা : তারা কখনো মরবে না, বৃদ্ধ হবে না, তাদের জীবনে কোন পরিবর্তনও দেখা দেবে না। চিরদিন তারা বালক ও কিশোর অবস্থায় থাকবে এবং জান্নাতীদের সেবা করবে।
তাদেরকে মুক্তার মতো দেখাবে :
وَيَطُوْفُ عَلَيْهِمْ غِلْمَانٌ لَّهُمْ كَاَنَّهُمْ لُؤْلُؤٌ مَّكْنُوْنٌ
তাদের সেবার জন্য ঐ সকল বালকরা চক্কর দিতে থাকবে, যাদেরকে কেবল তাদের সেবা করার জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে। তারা এত সুন্দর হবে, মনে হবে যেন ঝিনুকের মধ্যে লুকিয়ে থাকা মুক্তা। (সূরা তূর– ২৪)
وَيَطُوْفُ عَلَيْهِمْ وِلْدَانٌ مُّخَلَّدُوْنَۚ اِذَا رَاَيْتَهُمْ حَسِبْتَهُمْ لُؤْلُؤًا مَّنْثُوْرًا
তাদেরকে খাদ্যুপানীয় পরিবেশন করবে চির কিশোর বালকরা। তাদেরকে দেখলে তুমি মনে করবে- যেন ছড়িয়ে থাকা মুক্তা। (সূরা দাহর– ১৯)
ব্যাখ্যা : সূরা তূর–এর মধ্যে গিলমানকে সুরক্ষিত মুক্তার সাথে উপমা দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ সেসব কিশোররা সৌন্দর্য, রূপুলাবণ্য ও পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার দিক দিয়ে ঐ সব মুক্তার ন্যায় হবে, যা সামুদ্রিক ঝিনুকের মধ্যে থাকে; যেগুলোর উপর ময়লা ও ধূলাবালি পড়তে পারে না। আর সূরা দাহার-এর মধ্যে তাদেরকে বিক্ষিপ্ত মুক্তা বলা হয়েছে। অর্থাৎ সেসব কিশোররা বিক্ষিপ্ত মুক্তা সদৃশ হবে। তারা জান্নাতীদের চতুর্দিকে প্রদক্ষিণ করবে এবং তাদের পরিচর্যায় নিয়োজিত থাকবে।
اَلْمُقَرَّبِيْنَ (মুকার্রাবীন) নৈকট্যপ্রাপ্ত :
فَاَمَّاۤ اِنْ كَانَ مِنَ الْمُقَرَّبِيْنَ – فَرَوْحٌ وَّرَيْحَانٌ وَّجَنَّةُ نَعِيْمٍ
যারা নৈকট্যপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে তারা সুখ, উত্তম রিযিক ও নিয়ামতপূর্ণ জান্নাতে অবস্থান করবে। (সূরা ওয়াক্বিয়া– ৮৮, ৮৯)
اَصْحَابِ الْيَمِيْنِ (আস্হাবুল ইয়ামীন) ডানপন্থী :
وَاَمَّاۤ اِنْ كَانَ مِنْ اَصْحَابِ الْيَمِيْنِ – فَسَلَامٌ لَّكَ مِنْ اَصْحَابِ الْيَمِيْنِ
আর যদি সে ডান পাশের কেউ হয়, তাহলে (তাকে এই বলে অভিনন্দন জানানো হবে) তোমার জন্য রয়েছে (আল্লাহর পক্ষ থেকে) শান্তি (আর শান্তি, কারণ) তুমি তো (ছিলে) ডানপন্থিদেরই (একজন)। (সূরা ওয়াক্বিয়া– ৯০, ৯১)
জান্নাতীদের সামনে নূর চমকাতে থাকবে :
يَوْمَ تَرَى الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ يَسْعٰى نُوْرُهُمْ بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَبِاَيْمَانِهِمْ بُشْرَاكُمُ الْيَوْمَ جَنَّاتٌ
সেদিন তুমি দেখবে ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীদের সামনে ও ডানে তাদের নূর চমকাবে। (তখন তাদেরকে) বলা হবে, আজ তোমরা জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ করো। (সূরা হাদীদু ১২)
জান্নাতকে নিকটবর্তী করা হবে :
وَاُزْلِفَتِ الْجَنَّةُ لِلْمُتَّقِيْنَ غَيْرَ بَعِيْدٍ ‐ هٰذَا مَا تُوْعَدُوْنَ لِكُلِّ اَوَّابٍ حَفِيْظٍ
জান্নাতকে মুত্তাক্বীদের নিকটবর্তী করা হবে, কোন দূরত্ব থাকবে না। বলা হবে, এটা সেই জান্নাত যার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল প্রত্যেক তাওবাকারী ও আল্লাহর বিধানের হেফাজতকারীদের জন্য। (সূরা ক্বাফু ৩১, ৩২)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ তা‘আলার আদালতে কোন ব্যক্তি সম্পর্কে যেই মাত্র ফায়সালা হবে যে, সে মুত্তাক্বী এবং জান্নাতলাভের উপযুক্ত, তৎক্ষণাৎ সে তার সামনে জান্নাতকে বিদ্যমান পাবে। জান্নাত পর্যন্ত পৌঁছার জন্য তাকে কোন দূরত্ব অতিক্রম করতে হবে না। তাকে পায়ে হেঁটে কিংবা কোন বাহনে বসে ভ্রমণ করে সেখানে পৌঁছতে হবে না। তাই ফায়সালার সময় ও জান্নাতে প্রবেশের সময়ের মধ্যে কোন ব্যবধান থাকবে না। একদিকে ফায়সালা হবে অন্যদিকে সে তখনই জান্নাতে প্রবেশ করবে। যেন তাকে জান্নাতে পৌঁছানো হয়নি, জান্নাতকেই উঠিয়ে তার কাছে নিয়ে আসা হয়েছে।
তাদের জন্য জান্নাতের দরজা খোলা থাকবে :
وَاِنَّ لِلْمُتَّقِيْنَ لَحُسْنَ مَاٰبٍ – جَنَّاتِ عَدْنٍ مُّفَتَّحَةً لَّهُمُ الْاَبْوَابُ
মুত্তাক্বীদের জন্য রয়েছে উত্তম ঠিকানা, স্থায়ী জান্নাত। তাদের জন্য জান্নাতের দরজাসমূহ খোলা থাকবে।
(সূরা সোয়াদু ৪৯, ৫০)
ব্যাখ্যা : এর কয়েকটি অর্থ হতে পারে। (এক) এসব জান্নাতে তারা দ্বিধাহীনভাবে ও নিশ্চিন্তে ঘোরাফেরা করবে এবং কোথাও কোন প্রকার বাধার সম্মুখীন হতে হবে না। (দুই) জান্নাতের দরজা খোলার জন্য তাদের কোন প্রচেষ্টা চালানোর প্রয়োজন হবে না বরং শুধুমাত্র তাদের মনে ইচ্ছে জাগার সাথে সাথেই তা খুলে যাবে। (তিন) জান্নাতের ব্যবস্থাপনায় যেসব ফেরেশতা নিযুক্ত থাকবেন তারা জান্নাতের অধিবাসীদেরকে দেখার সাথে সাথেই তাদের জন্য দরজা খুলে দেবে।
আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতে প্রবেশ করার জন্য আদেশ করবেন :
يَاۤ اَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ – اِرْجِعِيْۤ اِلٰى رَبِّكِ رَاضِيَةً مَّرْضِيَّةً – فَادْخُلِيْ فِيْ عِبَادِيْ ‐ وَادْخُلِيْ جَنَّتِيْ
হে প্রশান্ত আত্মা! তুমি তোমার প্রতিপালকের দিকে ফিরে আস এমতাবস্থায় যে, তুমি তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট এবং তিনিও তোমার প্রতি সন্তুষ্ট। অতঃপর তুমি আমার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ করো। (সূরা ফাজর, ২৭–৩০)
يَا عِبَادِ لَا خَوْفٌ عَلَيْكُمُ الْيَوْمَ وَلَاۤ اَنْتُمْ تَحْزَنُوْنَ ‐ اَلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا بِاٰيَاتِنَا وَكَانُوْا مُسْلِمِيْنَ ‐ اُدْخُلُوا الْجَنَّةَ اَنْتُمْ وَاَزْوَاجُكُمْ تُحْبَرُوْنَ
হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা আমার নিদর্শনের প্রতি ঈমান এনেছ এবং আত্মসমর্পণ করেছ আজ তোমাদের কোন ভয় নেই এবং তোমরা চিন্তিতও হবে না। (সুতরাং আজ) তোমরা এবং তোমাদের স্ত্রীরা আনন্দের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করো। (সূরা যুখরুফ, ৬৮–৭০)
فَاَمَّاۤ اِنْ كَانَ مِنَ الْمُقَرَّبِيْنَ – فَرَوْحٌ وَّرَيْحَانٌ وَّجَنَّةُ نَعِيْمٍ
যারা নৈকট্যপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে তারা সুখ, উত্তম রিযিক ও নিয়ামতপূর্ণ জান্নাতে অবস্থান করবে। (সূরা ওয়াক্বিয়া– ৮৮, ৮৯)
اَصْحَابِ الْيَمِيْنِ (আস্হাবুল ইয়ামীন) ডানপন্থী :
وَاَمَّاۤ اِنْ كَانَ مِنْ اَصْحَابِ الْيَمِيْنِ – فَسَلَامٌ لَّكَ مِنْ اَصْحَابِ الْيَمِيْنِ
আর যদি সে ডান পাশের কেউ হয়, তাহলে (তাকে এই বলে অভিনন্দন জানানো হবে) তোমার জন্য রয়েছে (আল্লাহর পক্ষ থেকে) শান্তি (আর শান্তি, কারণ) তুমি তো (ছিলে) ডানপন্থিদেরই (একজন)। (সূরা ওয়াক্বিয়া– ৯০, ৯১)
জান্নাতীদের সামনে নূর চমকাতে থাকবে :
يَوْمَ تَرَى الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ يَسْعٰى نُوْرُهُمْ بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَبِاَيْمَانِهِمْ بُشْرَاكُمُ الْيَوْمَ جَنَّاتٌ
সেদিন তুমি দেখবে ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীদের সামনে ও ডানে তাদের নূর চমকাবে। (তখন তাদেরকে) বলা হবে, আজ তোমরা জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ করো। (সূরা হাদীদু ১২)
জান্নাতকে নিকটবর্তী করা হবে :
وَاُزْلِفَتِ الْجَنَّةُ لِلْمُتَّقِيْنَ غَيْرَ بَعِيْدٍ ‐ هٰذَا مَا تُوْعَدُوْنَ لِكُلِّ اَوَّابٍ حَفِيْظٍ
জান্নাতকে মুত্তাক্বীদের নিকটবর্তী করা হবে, কোন দূরত্ব থাকবে না। বলা হবে, এটা সেই জান্নাত যার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল প্রত্যেক তাওবাকারী ও আল্লাহর বিধানের হেফাজতকারীদের জন্য। (সূরা ক্বাফু ৩১, ৩২)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ তা‘আলার আদালতে কোন ব্যক্তি সম্পর্কে যেই মাত্র ফায়সালা হবে যে, সে মুত্তাক্বী এবং জান্নাতলাভের উপযুক্ত, তৎক্ষণাৎ সে তার সামনে জান্নাতকে বিদ্যমান পাবে। জান্নাত পর্যন্ত পৌঁছার জন্য তাকে কোন দূরত্ব অতিক্রম করতে হবে না। তাকে পায়ে হেঁটে কিংবা কোন বাহনে বসে ভ্রমণ করে সেখানে পৌঁছতে হবে না। তাই ফায়সালার সময় ও জান্নাতে প্রবেশের সময়ের মধ্যে কোন ব্যবধান থাকবে না। একদিকে ফায়সালা হবে অন্যদিকে সে তখনই জান্নাতে প্রবেশ করবে। যেন তাকে জান্নাতে পৌঁছানো হয়নি, জান্নাতকেই উঠিয়ে তার কাছে নিয়ে আসা হয়েছে।
তাদের জন্য জান্নাতের দরজা খোলা থাকবে :
وَاِنَّ لِلْمُتَّقِيْنَ لَحُسْنَ مَاٰبٍ – جَنَّاتِ عَدْنٍ مُّفَتَّحَةً لَّهُمُ الْاَبْوَابُ
মুত্তাক্বীদের জন্য রয়েছে উত্তম ঠিকানা, স্থায়ী জান্নাত। তাদের জন্য জান্নাতের দরজাসমূহ খোলা থাকবে।
(সূরা সোয়াদু ৪৯, ৫০)
ব্যাখ্যা : এর কয়েকটি অর্থ হতে পারে। (এক) এসব জান্নাতে তারা দ্বিধাহীনভাবে ও নিশ্চিন্তে ঘোরাফেরা করবে এবং কোথাও কোন প্রকার বাধার সম্মুখীন হতে হবে না। (দুই) জান্নাতের দরজা খোলার জন্য তাদের কোন প্রচেষ্টা চালানোর প্রয়োজন হবে না বরং শুধুমাত্র তাদের মনে ইচ্ছে জাগার সাথে সাথেই তা খুলে যাবে। (তিন) জান্নাতের ব্যবস্থাপনায় যেসব ফেরেশতা নিযুক্ত থাকবেন তারা জান্নাতের অধিবাসীদেরকে দেখার সাথে সাথেই তাদের জন্য দরজা খুলে দেবে।
আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতে প্রবেশ করার জন্য আদেশ করবেন :
يَاۤ اَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ – اِرْجِعِيْۤ اِلٰى رَبِّكِ رَاضِيَةً مَّرْضِيَّةً – فَادْخُلِيْ فِيْ عِبَادِيْ ‐ وَادْخُلِيْ جَنَّتِيْ
হে প্রশান্ত আত্মা! তুমি তোমার প্রতিপালকের দিকে ফিরে আস এমতাবস্থায় যে, তুমি তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট এবং তিনিও তোমার প্রতি সন্তুষ্ট। অতঃপর তুমি আমার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ করো। (সূরা ফাজর, ২৭–৩০)
يَا عِبَادِ لَا خَوْفٌ عَلَيْكُمُ الْيَوْمَ وَلَاۤ اَنْتُمْ تَحْزَنُوْنَ ‐ اَلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا بِاٰيَاتِنَا وَكَانُوْا مُسْلِمِيْنَ ‐ اُدْخُلُوا الْجَنَّةَ اَنْتُمْ وَاَزْوَاجُكُمْ تُحْبَرُوْنَ
হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা আমার নিদর্শনের প্রতি ঈমান এনেছ এবং আত্মসমর্পণ করেছ আজ তোমাদের কোন ভয় নেই এবং তোমরা চিন্তিতও হবে না। (সুতরাং আজ) তোমরা এবং তোমাদের স্ত্রীরা আনন্দের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করো। (সূরা যুখরুফ, ৬৮–৭০)
ফেরেশতারা জান্নাতীদেরকে সালাম জানাবে :
اَلَّذِيْنَ تَتَوَفَّاهُمُ الْمَلَآئِكَةُ طَيِّبِيْنَ يَقُوْلُوْنَ سَلَامٌ عَلَيْكُمُ ادْخُلُوا الْجَنَّةَ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
ফেরেশতারা পবিত্র অবস্থায় মৃত্যুবরণকারীদেরকে বলবে, তোমাদের প্রতি সালাম। তোমরা দুনিয়াতে যেসব নেক আমল করেছ তার বিনিময়ে আজ জান্নাতে প্রবেশ করো। (সূরা নাহল– ৩২)
ব্যাখ্যা : سَلَامٌ (সালাম) শব্দটিকে যদি নিরাপত্তা অর্থে গ্রহণ করা হয় তাহলে তার অর্থ হবে, সবরকম দুঃখ, দুশ্চিন্তা ও বিপদাপদ থেকে নিরাপদ হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করো। আর যদি শান্তি অর্থে গ্রহণ করা হয় তাহলে অর্থ হবে, এ জান্নাতে এসো! আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাদের পক্ষ থেকে তোমাকে সালাম।
জান্নাতের তত্ত্বাবধায়ক ফেরেশতারাও সালাম জানাবে :
حَتّٰۤى اِذَا جَآءُوْهَا وَفُتِحَتْ اَبْوَابُهَا وَقَالَ لَهُمْ خَزَنَتُهَا سَلَامٌ عَلَيْكُمْ طِبْتُمْ فَادْخُلُوْهَا خَالِدِيْنَ
যখন জান্নাতীরা সেখানে উপস্থিত হবে এবং এর দরজা খুলে দেয়া হবে, তখন তাঁর রক্ষণাবেক্ষণকারী ফেরেশতারা বলবে, হে জান্নাতীরা! তোমাদের প্রতি সালাম। তোমাদের আগমন শুভ হোক। তোমরা চিরস্থায়ীভাবে জান্নাতে প্রবেশ করো। (সূরা যুমার– ৭৩)
আরাফবাসীরাও সালাম জানাবে :
وَعَلَى الْاَعْرَافِ رِجَالٌ يَّعْرِفُوْنَ كُلًّا ۢبِسِيْمَاهُمْۚ وَنَادَوْا اَصْحَابَ الْجَنَّةِ اَنْ سَلَامٌ عَلَيْكُمْ لَمْ يَدْخُلُوْهَا وَهُمْ يَطْمَعُوْنَ
আরাফে (জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যখানে দেয়ালের উপর) কিছু লোক অবস্থান করবে। তাদের সবাইকে তাদের চিহ্ন দ্বারা চিনতে পারবে। তারা জান্নাতবাসীদেরকে ডেকে বলবে, তোমাদের প্রতি সালাম। তারা জান্নাতে প্রবেশ করেনি, তবে প্রবেশের আশা রাখবে। (সূরা আ‘রাফু ৪৬)
ব্যাখ্যা : আরাফবাসীরা হবে এমন একদল লোক, যাদের কর্মকান্ডের ভালো দিক এত বেশি শক্তিশালী হবে না, যার ফলে তারা জান্নাত লাভ করতে সক্ষম হয়। আবার এত বেশি খারাপও হবে না, যার ফলে তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা যেতে পারে। তাই তারা জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে একটি সীমান্ত এলাকায় অবস্থান করবে।
মহান আল্লাহর পক্ষ থেকেও সালাম আসবে :
سَلَامٌ قَوْلًا مِّنْ رَّبٍّ رَّحِيْمٍ
তাদেরকে পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে (স্বাগত জানিয়ে) বলা হবে, (তোমাদের উপর) সালাম (বর্ষিত হোক)। (সূরা ইয়াসীন- ৫৮)
জান্নাতীদের অভ্যর্থনা হবে সালাম :
وَاُدْخِلَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا بِاِذْنِ رَبِّهِمْؕ تَحِيَّتُهُمْ فِيْهَا سَلَامٌ
যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে তাদেরকে প্রবেশ করানো হবে জান্নাতে, যার নিচ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়ে যাবে। সেখানে তারা তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে চিরস্থায়ীভাবে বসবাস করবে। সেখানে তাদের সম্ভাষণ হবে সালাম। (সূরা ইবরাহীম– ২৩)
دَعْوَاهُمْ فِيْهَا سُبْحَانَكَ اللّٰهُمَّ وَتَحِيَّتُهُمْ فِيْهَا سَلَامٌۚ وَاٰخِرُ دَعْوَاهُمْ اَنِ الْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
জান্নাতীদের আহবান হবে সুবহানাকাল্লাহুম্মা অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমরা আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি এবং তাদের অভ্যর্থনা হবে সালাম। আর তাদের শেষ কথা হবে, ‘‘আলহামদু লিল্লাহি রবিবল আলামীন’’ অর্থাৎ সম্পস্ত প্রশংসা সারা বিশ্বের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। (সূরা ইউনুস– ১০)
ব্যাখ্যা : ঈমানদার ব্যক্তি দুনিয়ায় উন্নত চিন্তা এবং নিজের চরিত্র ও কার্যকলাপকে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন করার মাধ্যমে নিজের মধ্যে যে ধরনের উৎকৃষ্টতম ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলবে, দুনিয়ার পরিবেশ থেকে ভিন্নতর জান্নাতের অতি পবিত্র পরিবেশে সেই ব্যক্তিত্ব ও গুণাবলি আরো বেশি উজ্জ্বল হয়ে ভেসে উঠবে। তারা দুনিয়ায় আল্লাহর যে প্রশংসা ও পবিত্রতার কথা বর্ণনা করত, সেখানে সেটিই হবে তাদের সবচেয়ে প্রিয় কাজ। দুনিয়ায় বসবাস করার সময় পরস্পরের শান্তি ও নিরাপত্তা কামনার যে অনুভূতিকে তারা লালন করেছিল সেখানকার পরিবেশেও তাদের সেই অনুভূতিই সক্রিয় থাকবে।
اَلَّذِيْنَ تَتَوَفَّاهُمُ الْمَلَآئِكَةُ طَيِّبِيْنَ يَقُوْلُوْنَ سَلَامٌ عَلَيْكُمُ ادْخُلُوا الْجَنَّةَ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
ফেরেশতারা পবিত্র অবস্থায় মৃত্যুবরণকারীদেরকে বলবে, তোমাদের প্রতি সালাম। তোমরা দুনিয়াতে যেসব নেক আমল করেছ তার বিনিময়ে আজ জান্নাতে প্রবেশ করো। (সূরা নাহল– ৩২)
ব্যাখ্যা : سَلَامٌ (সালাম) শব্দটিকে যদি নিরাপত্তা অর্থে গ্রহণ করা হয় তাহলে তার অর্থ হবে, সবরকম দুঃখ, দুশ্চিন্তা ও বিপদাপদ থেকে নিরাপদ হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করো। আর যদি শান্তি অর্থে গ্রহণ করা হয় তাহলে অর্থ হবে, এ জান্নাতে এসো! আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাদের পক্ষ থেকে তোমাকে সালাম।
জান্নাতের তত্ত্বাবধায়ক ফেরেশতারাও সালাম জানাবে :
حَتّٰۤى اِذَا جَآءُوْهَا وَفُتِحَتْ اَبْوَابُهَا وَقَالَ لَهُمْ خَزَنَتُهَا سَلَامٌ عَلَيْكُمْ طِبْتُمْ فَادْخُلُوْهَا خَالِدِيْنَ
যখন জান্নাতীরা সেখানে উপস্থিত হবে এবং এর দরজা খুলে দেয়া হবে, তখন তাঁর রক্ষণাবেক্ষণকারী ফেরেশতারা বলবে, হে জান্নাতীরা! তোমাদের প্রতি সালাম। তোমাদের আগমন শুভ হোক। তোমরা চিরস্থায়ীভাবে জান্নাতে প্রবেশ করো। (সূরা যুমার– ৭৩)
আরাফবাসীরাও সালাম জানাবে :
وَعَلَى الْاَعْرَافِ رِجَالٌ يَّعْرِفُوْنَ كُلًّا ۢبِسِيْمَاهُمْۚ وَنَادَوْا اَصْحَابَ الْجَنَّةِ اَنْ سَلَامٌ عَلَيْكُمْ لَمْ يَدْخُلُوْهَا وَهُمْ يَطْمَعُوْنَ
আরাফে (জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যখানে দেয়ালের উপর) কিছু লোক অবস্থান করবে। তাদের সবাইকে তাদের চিহ্ন দ্বারা চিনতে পারবে। তারা জান্নাতবাসীদেরকে ডেকে বলবে, তোমাদের প্রতি সালাম। তারা জান্নাতে প্রবেশ করেনি, তবে প্রবেশের আশা রাখবে। (সূরা আ‘রাফু ৪৬)
ব্যাখ্যা : আরাফবাসীরা হবে এমন একদল লোক, যাদের কর্মকান্ডের ভালো দিক এত বেশি শক্তিশালী হবে না, যার ফলে তারা জান্নাত লাভ করতে সক্ষম হয়। আবার এত বেশি খারাপও হবে না, যার ফলে তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা যেতে পারে। তাই তারা জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে একটি সীমান্ত এলাকায় অবস্থান করবে।
মহান আল্লাহর পক্ষ থেকেও সালাম আসবে :
سَلَامٌ قَوْلًا مِّنْ رَّبٍّ رَّحِيْمٍ
তাদেরকে পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে (স্বাগত জানিয়ে) বলা হবে, (তোমাদের উপর) সালাম (বর্ষিত হোক)। (সূরা ইয়াসীন- ৫৮)
জান্নাতীদের অভ্যর্থনা হবে সালাম :
وَاُدْخِلَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا بِاِذْنِ رَبِّهِمْؕ تَحِيَّتُهُمْ فِيْهَا سَلَامٌ
যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে তাদেরকে প্রবেশ করানো হবে জান্নাতে, যার নিচ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়ে যাবে। সেখানে তারা তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে চিরস্থায়ীভাবে বসবাস করবে। সেখানে তাদের সম্ভাষণ হবে সালাম। (সূরা ইবরাহীম– ২৩)
دَعْوَاهُمْ فِيْهَا سُبْحَانَكَ اللّٰهُمَّ وَتَحِيَّتُهُمْ فِيْهَا سَلَامٌۚ وَاٰخِرُ دَعْوَاهُمْ اَنِ الْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
জান্নাতীদের আহবান হবে সুবহানাকাল্লাহুম্মা অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমরা আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি এবং তাদের অভ্যর্থনা হবে সালাম। আর তাদের শেষ কথা হবে, ‘‘আলহামদু লিল্লাহি রবিবল আলামীন’’ অর্থাৎ সম্পস্ত প্রশংসা সারা বিশ্বের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। (সূরা ইউনুস– ১০)
ব্যাখ্যা : ঈমানদার ব্যক্তি দুনিয়ায় উন্নত চিন্তা এবং নিজের চরিত্র ও কার্যকলাপকে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন করার মাধ্যমে নিজের মধ্যে যে ধরনের উৎকৃষ্টতম ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলবে, দুনিয়ার পরিবেশ থেকে ভিন্নতর জান্নাতের অতি পবিত্র পরিবেশে সেই ব্যক্তিত্ব ও গুণাবলি আরো বেশি উজ্জ্বল হয়ে ভেসে উঠবে। তারা দুনিয়ায় আল্লাহর যে প্রশংসা ও পবিত্রতার কথা বর্ণনা করত, সেখানে সেটিই হবে তাদের সবচেয়ে প্রিয় কাজ। দুনিয়ায় বসবাস করার সময় পরস্পরের শান্তি ও নিরাপত্তা কামনার যে অনুভূতিকে তারা লালন করেছিল সেখানকার পরিবেশেও তাদের সেই অনুভূতিই সক্রিয় থাকবে।
জান্নাতীরা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবে :
وَقَالُوا الْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ صَدَقَنَا وَعْدَهٗ وَاَوْرَثَنَا الْاَرْضَ نَتَبَوَّاُ مِنَ الْجَنَّةِ حَيْثُ نَشَآءُۚ فَنِعْمَ اَجْرُ الْعَامِلِيْنَ
জান্নাতীরা বলবে, সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি তাঁর ওয়াদা বাস্তবায়িত করেছেন এবং আমাদেরকে এ ভূমির অধিকারী করেছেন। আমরা জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা বসবাস করব। অতএব সৎকর্মশীলদের প্রতিদান কতই না উত্তম! (সূরা যুমার– ৭৪)
وَقَالُوا الْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ هَدَانَا لِهٰذَا وَمَا كُنَّا لِنَهْتَدِيَ لَوْلَاۤ اَنْ هَدَانَا اللهُۚ لَقَدْ جَآءَتْ رُسُلُ رَبِّنَا بِالْحَقِّؕ وَنُوْدُوْاۤ اَنْ تِلْكُمُ الْجَنَّةُ اُوْرِثْتُمُوْهَا بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
তারা বলতে থাকবে, সকল প্রশংসা ঐ সত্তার জন্য, যিনি আমাদেরকে জান্নাতের পথ দেখিয়েছেন। আল্লাহ আমাদেরকে হেদায়াত না করলে আমরা কখনো হেদায়াত লাভ করতে পারতাম না। আমাদের প্রতিপালকের দূতগণ (আমাদের নিকট) যা নিয়ে এসেছিলেন সবই সত্য। অতঃপর তাদেরকে আহবান করে বলা হবে, এই হলো তোমাদের (জন্য নির্মিত) জান্নাত। তোমাদের নেক আমলের কারণেই তোমরা এর উত্তরাধিকারী হয়েছ। (সূরা আ‘রাফু ৪৩)
জান্নাতীদের কোন দুঃখ-কষ্ট থাকবে না :
وَقَالُوا الْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْۤ اَذْهَبَ عَنَّا الْحَزَنَؕ اِنَّ رَبَّنَا لَغَفُوْرٌ شَكُوْرٌ – اَلَّذِيْۤ اَحَلَّنَا دَارَ الْمُقَامَةِ مِنْ فَضْلِهٖۚ لَا يَمَسُّنَا فِيْهَا نَصَبٌ وَّلَا يَمَسُّنَا فِيْهَا لُغُوْبٌ
জান্নাতবাসীরা বলবে, সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদের সকল চিন্তা–ভাবনা দূর করে দিয়েছেন। নিশ্চয় আমাদের প্রতিপালক অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু। যিনি নিজ অনুগ্রহে আমাদেরকে স্থায়ী জান্নাতে স্থান দিয়েছেন। সেখানে আমাদেরকে কোন কষ্ট স্পর্শ করবে না। আর আমরা কোন অনর্থক বিষয়েরও সম্মুখীন হব না। (সূরা ফাতির– ৩৪, ৩৫)
ব্যাখ্যা : ফেরেশতারা চারদিক থেকে এসে তাদেরকে সালাম করতে থাকবে এবং এই সুখবরও দেবে যে, এখন তোমরা এমন জায়গায় এসেছ যেখানে পরিপূর্ণ শান্তি ও নিরাপত্তা বিরাজমান। এখানে তোমরা সবরকমের বিপদ, কষ্ট, পরিশ্রম, শঙ্কা ও আতঙ্কমুক্ত।
জান্নাতীরা আনন্দে মশগুল থাকবে :
اِنَّ اَصْحَابَ الْجَنَّةِ الْيَوْمَ فِيْ شُغُلٍ فَاكِهُوْنَ
নিশ্চয় জান্নাতীরা আজ আনন্দ ও আরামের মধ্যে থাকবে। (সূরা ইয়াসীনু ৫৫)
জান্নাতীদের চেহারায় নিয়ামতের সজীবতা প্রকাশ পাবে :
تَعْرِفُ فِيْ وُجُوْهِهِمْ نَضْرَةَ النَّعِيْمِ
তুমি জান্নাতীদের চেহারায় দেখতে পাবে নিয়ামতের সজীবতা। (সূরা মুতাফ্ফিফীনু ২৪)
ব্যাখ্যা : মানুষ যখন নিয়ামত পায় তখন তার চেহারা উজ্জ্বল হয়ে যায়। জান্নাতের অফুরন্ত নিয়ামত পাওয়াতে জান্নাতীদের চেহারা উজ্জ্বল দেখাবে। জান্নাতীদের চেহারা পূর্ণিমার চাঁদের মতো উজ্জ্বল হবে । আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূল ﷺ বলেছেন, প্রথমে যে দল জান্নাতে প্রবেশ করবে, তাদের চেহারা হবে পূর্ণিমার চাঁদের মতো উজ্জ্বল। এরপর যারা প্রবেশ করবে তাদের চেহারা আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারকার মতো হবে। (সহীহ বুখারী, হা/৩২৪৬)
জান্নাতীদের মধ্যে হিংসা–বিদ্বেষ থাকবে না :
وَنَزَعْنَا مَا فِيْ صُدُوْرِهِمْ مِّنْ غِلٍّ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهِمُ الْاَنْهَارُ
আমি জান্নাতীদের অন্তর থেকে সকল প্রকার হিংসা–বিদ্বেষ দূর করে দেব। তাদের নিচ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়ে যাবে। (সূরা আ‘রাফু ৪৩)
وَنَزَعْنَا مَا فِيْ صُدُوْرِهِمْ مِّنْ غِلٍّ اِخْوَانًا عَلٰى سُرُرٍ مُّتَقَابِلِيْنَ
আমি জান্নাতীদের অন্তর থেকে সকল প্রকার হিংসা–বিদ্বেষ দূর করে দেব। তারা পরস্পর ভাই–ভাই হিসেবে বসবাস করবে। তারা উঁচু উঁচু আসনে হেলান দিয়ে বসবে। (সূরা হিজর– ৪৭)
ব্যাখ্যা : দুনিয়ার জীবনে এ সৎ লোকদের মধ্যে পারস্পরিক কিছু মনোমালিন্য ও ভুল বুঝাবুঝি থেকে থাকলেও আখিরাতের জীবনে তা সব দূর করে দেয়া হবে। তাদের মন পরস্পরের ব্যাপারে পরিষ্কার হয়ে যাবে। তারা পরস্পর আন্তরিকতাসম্পন্ন অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। দুনিয়াতে অনেক আত্মীয়–স্বজনদের মধ্যেও হিংসা–বিদ্বেষ থাকে এবং ঝগড়া–বিবাদ হয় কিন্তু জান্নাতে এসব থাকবে না। সেখানে সবাই মিলে–মিশে একত্রে আনন্দের সাথে হাসি–খুশিতে বসবাস করবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল ﷺ বলেছেন, সকল জান্নাতী লোকদের অন্তর হবে একই লোকের অন্তরের ন্যায়। তাদের মধ্যে ক্রোধ, হিংসা–বিদ্বেষ কিছুই থাকবে না। (সহীহ বুখারী, হা/৩২৪৬)
জান্নাতীরা পরস্পরের মধ্যে খাদ্য আদানুপ্রদান করবে :
يَتَنَازَعُوْنَ فِيْهَا كَاْسًا لَّا لَغْوٌ فِيْهَا وَلَا تَاْثِيْمٌ
জান্নাতীরা একে অপরের নিকট থেকে পানপাত্র গ্রহণ করবে। যা পান করলে তারা মাতাল হবে না, পাপকাজেও জড়িয়ে পড়বে না। (সূরা তূর– ২৩)
ব্যাখ্যা : জান্নাতীদের মধ্যে পানপাত্র আদানপ্রদান করা, একজন অপরজনকে খাদ্য দেয়া– এটা তাদের চরম ভালোবাসার পরিচায়ক। কেননা বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়–স্বজনদের মধ্যে খাদ্য পরিবেশন এবং একে অন্যের নিকট থেকে খাদ্য গ্রহণের মধ্যে বিশেষ আনন্দ রয়েছে।
وَقَالُوا الْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ صَدَقَنَا وَعْدَهٗ وَاَوْرَثَنَا الْاَرْضَ نَتَبَوَّاُ مِنَ الْجَنَّةِ حَيْثُ نَشَآءُۚ فَنِعْمَ اَجْرُ الْعَامِلِيْنَ
জান্নাতীরা বলবে, সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি তাঁর ওয়াদা বাস্তবায়িত করেছেন এবং আমাদেরকে এ ভূমির অধিকারী করেছেন। আমরা জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা বসবাস করব। অতএব সৎকর্মশীলদের প্রতিদান কতই না উত্তম! (সূরা যুমার– ৭৪)
وَقَالُوا الْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ هَدَانَا لِهٰذَا وَمَا كُنَّا لِنَهْتَدِيَ لَوْلَاۤ اَنْ هَدَانَا اللهُۚ لَقَدْ جَآءَتْ رُسُلُ رَبِّنَا بِالْحَقِّؕ وَنُوْدُوْاۤ اَنْ تِلْكُمُ الْجَنَّةُ اُوْرِثْتُمُوْهَا بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
তারা বলতে থাকবে, সকল প্রশংসা ঐ সত্তার জন্য, যিনি আমাদেরকে জান্নাতের পথ দেখিয়েছেন। আল্লাহ আমাদেরকে হেদায়াত না করলে আমরা কখনো হেদায়াত লাভ করতে পারতাম না। আমাদের প্রতিপালকের দূতগণ (আমাদের নিকট) যা নিয়ে এসেছিলেন সবই সত্য। অতঃপর তাদেরকে আহবান করে বলা হবে, এই হলো তোমাদের (জন্য নির্মিত) জান্নাত। তোমাদের নেক আমলের কারণেই তোমরা এর উত্তরাধিকারী হয়েছ। (সূরা আ‘রাফু ৪৩)
জান্নাতীদের কোন দুঃখ-কষ্ট থাকবে না :
وَقَالُوا الْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْۤ اَذْهَبَ عَنَّا الْحَزَنَؕ اِنَّ رَبَّنَا لَغَفُوْرٌ شَكُوْرٌ – اَلَّذِيْۤ اَحَلَّنَا دَارَ الْمُقَامَةِ مِنْ فَضْلِهٖۚ لَا يَمَسُّنَا فِيْهَا نَصَبٌ وَّلَا يَمَسُّنَا فِيْهَا لُغُوْبٌ
জান্নাতবাসীরা বলবে, সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদের সকল চিন্তা–ভাবনা দূর করে দিয়েছেন। নিশ্চয় আমাদের প্রতিপালক অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু। যিনি নিজ অনুগ্রহে আমাদেরকে স্থায়ী জান্নাতে স্থান দিয়েছেন। সেখানে আমাদেরকে কোন কষ্ট স্পর্শ করবে না। আর আমরা কোন অনর্থক বিষয়েরও সম্মুখীন হব না। (সূরা ফাতির– ৩৪, ৩৫)
ব্যাখ্যা : ফেরেশতারা চারদিক থেকে এসে তাদেরকে সালাম করতে থাকবে এবং এই সুখবরও দেবে যে, এখন তোমরা এমন জায়গায় এসেছ যেখানে পরিপূর্ণ শান্তি ও নিরাপত্তা বিরাজমান। এখানে তোমরা সবরকমের বিপদ, কষ্ট, পরিশ্রম, শঙ্কা ও আতঙ্কমুক্ত।
জান্নাতীরা আনন্দে মশগুল থাকবে :
اِنَّ اَصْحَابَ الْجَنَّةِ الْيَوْمَ فِيْ شُغُلٍ فَاكِهُوْنَ
নিশ্চয় জান্নাতীরা আজ আনন্দ ও আরামের মধ্যে থাকবে। (সূরা ইয়াসীনু ৫৫)
জান্নাতীদের চেহারায় নিয়ামতের সজীবতা প্রকাশ পাবে :
تَعْرِفُ فِيْ وُجُوْهِهِمْ نَضْرَةَ النَّعِيْمِ
তুমি জান্নাতীদের চেহারায় দেখতে পাবে নিয়ামতের সজীবতা। (সূরা মুতাফ্ফিফীনু ২৪)
ব্যাখ্যা : মানুষ যখন নিয়ামত পায় তখন তার চেহারা উজ্জ্বল হয়ে যায়। জান্নাতের অফুরন্ত নিয়ামত পাওয়াতে জান্নাতীদের চেহারা উজ্জ্বল দেখাবে। জান্নাতীদের চেহারা পূর্ণিমার চাঁদের মতো উজ্জ্বল হবে । আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূল ﷺ বলেছেন, প্রথমে যে দল জান্নাতে প্রবেশ করবে, তাদের চেহারা হবে পূর্ণিমার চাঁদের মতো উজ্জ্বল। এরপর যারা প্রবেশ করবে তাদের চেহারা আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারকার মতো হবে। (সহীহ বুখারী, হা/৩২৪৬)
জান্নাতীদের মধ্যে হিংসা–বিদ্বেষ থাকবে না :
وَنَزَعْنَا مَا فِيْ صُدُوْرِهِمْ مِّنْ غِلٍّ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهِمُ الْاَنْهَارُ
আমি জান্নাতীদের অন্তর থেকে সকল প্রকার হিংসা–বিদ্বেষ দূর করে দেব। তাদের নিচ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়ে যাবে। (সূরা আ‘রাফু ৪৩)
وَنَزَعْنَا مَا فِيْ صُدُوْرِهِمْ مِّنْ غِلٍّ اِخْوَانًا عَلٰى سُرُرٍ مُّتَقَابِلِيْنَ
আমি জান্নাতীদের অন্তর থেকে সকল প্রকার হিংসা–বিদ্বেষ দূর করে দেব। তারা পরস্পর ভাই–ভাই হিসেবে বসবাস করবে। তারা উঁচু উঁচু আসনে হেলান দিয়ে বসবে। (সূরা হিজর– ৪৭)
ব্যাখ্যা : দুনিয়ার জীবনে এ সৎ লোকদের মধ্যে পারস্পরিক কিছু মনোমালিন্য ও ভুল বুঝাবুঝি থেকে থাকলেও আখিরাতের জীবনে তা সব দূর করে দেয়া হবে। তাদের মন পরস্পরের ব্যাপারে পরিষ্কার হয়ে যাবে। তারা পরস্পর আন্তরিকতাসম্পন্ন অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। দুনিয়াতে অনেক আত্মীয়–স্বজনদের মধ্যেও হিংসা–বিদ্বেষ থাকে এবং ঝগড়া–বিবাদ হয় কিন্তু জান্নাতে এসব থাকবে না। সেখানে সবাই মিলে–মিশে একত্রে আনন্দের সাথে হাসি–খুশিতে বসবাস করবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল ﷺ বলেছেন, সকল জান্নাতী লোকদের অন্তর হবে একই লোকের অন্তরের ন্যায়। তাদের মধ্যে ক্রোধ, হিংসা–বিদ্বেষ কিছুই থাকবে না। (সহীহ বুখারী, হা/৩২৪৬)
জান্নাতীরা পরস্পরের মধ্যে খাদ্য আদানুপ্রদান করবে :
يَتَنَازَعُوْنَ فِيْهَا كَاْسًا لَّا لَغْوٌ فِيْهَا وَلَا تَاْثِيْمٌ
জান্নাতীরা একে অপরের নিকট থেকে পানপাত্র গ্রহণ করবে। যা পান করলে তারা মাতাল হবে না, পাপকাজেও জড়িয়ে পড়বে না। (সূরা তূর– ২৩)
ব্যাখ্যা : জান্নাতীদের মধ্যে পানপাত্র আদানপ্রদান করা, একজন অপরজনকে খাদ্য দেয়া– এটা তাদের চরম ভালোবাসার পরিচায়ক। কেননা বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়–স্বজনদের মধ্যে খাদ্য পরিবেশন এবং একে অন্যের নিকট থেকে খাদ্য গ্রহণের মধ্যে বিশেষ আনন্দ রয়েছে।
জান্নাতীরা দুনিয়ার জীবন সম্পর্কে আলোচনা করবে :
وَاَقْبَلَ بَعْضُهُمْ عَلٰى بَعْضٍ يَّتَسَآءَلُوْنَ – قَالُوْاۤ اِنَّا كُنَّا قَبْلُ فِۤيْ اَهْلِنَا مُشْفِقِيْنَ – فَمَنَّ اللهُ عَلَيْنَا وَوَقَانَا عَذَابَ السَّمُوْمِ – اِنَّا كُنَّا مِنْ قَبْلُ نَدْعُوْهُؕ اِنَّهٗ هُوَ الْبَرُّ الرَّحِيْمُ
জান্নাতীরা একে অন্যের মুখোমুখি হয়ে বলাবলি করবে, দুনিয়ায় থাকতে আমরা খুবই ভীত ছিলাম (যে, জান্নাত পাব কি না)। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের প্রতি দয়া করেছেন এবং জাহান্নামের জ্বলন্ত আগুন থেকে মুক্তি দিয়েছেন। ইতোপূর্বে দুনিয়ায় আমরা আল্লাহকে ডাকতাম এবং তাঁর ইবাদাত করতাম। নিশ্চয় আল্লাহ অতি সৌজন্যপরায়ণ এবং মেহেরবান। (সূরা তূর, ২৫–২৮)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ আমরা সেখানে বিলাসিতায় ডুবে গাফলতির জীবন-যাপন করিনি। সেখানে সবসময়ই আমাদের আশঙ্কা থাকত যে, কখন যেন আমাদের দ্বারা এমন কোন কাজ হয়ে যায়, যে কারণে আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে পাকড়াও করবেন। এখানে বিশেষ করে নিজের পরিবারের লোকদের মধ্যে ভয়ে ভয়ে জীবন-যাপন করার কথা উল্লেখ করার কারণ এই যে, মানুষ বেশির ভাগ যে জন্য গোনাহে লিপ্ত হয় তা হচ্ছে তার সন্তান-সন্ততির আরাম-আয়েশের ব্যবস্থা করা এবং তাদের দুনিয়া নির্মাণের চিন্তা। এজন্য সে হারাম উপার্জন করে, অন্যদের অধিকার লুণ্ঠন করে এবং নানা রকম অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে। এ কারণে জান্নাতের বাসিন্দারা পরস্পর বলবে, যে জিনিসটি আমাদেরকে মন্দ পরিণাম থেকে রক্ষা করেছে তা হচ্ছে, আমাদের মধ্যে নিজেদের সন্তান-সন্ততির ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করার চিন্তা এতটা প্রবল ছিল না, যার দ্বারা আমাদের আখিরাত বরবাদ হয়ে যাবে। আর নিজেদের সন্তানদেরকেও আমরা এমন পথে নিয়ে যাব, যা তাদেরকে আল্লাহর আযাবের উপযোগী বানিয়ে দেবে।
জান্নাতীরা জাহান্নামীদের সঙ্গেও কথা বলবে :
فَاَقْبَلَ بَعْضُهُمْ عَلٰى بَعْضٍ يَّتَسَآءَلُوْنَ ‐ قَالَ قَآئِلٌ مِّنْهُمْ اِنِّيْ كَانَ لِىْ قَرِيْنٌ – يَقُوْلُ اَئِنَّكَ لَمِنَ الْمُصَدِّقِيْنَ – اَئِذَا مِتْنَا وَكُنَّا تُرَابًا وَّعِظَامًا اَئِنَّا لَمَدِيْنُوْنَ – قَالَ هَلْ اَنْتُمْ مُّطَّلِعُوْنَ – فَاطَّلَعَ فَرَاٰهُ فِيْ سَوَآءِ الْجَحِيْمِ – قَالَ تَاللهِ اِنْ كِدْتَّ لَتُرْدِيْنِ – وَلَوْلَا نِعْمَةُ رَبِّيْ لَكُنْتُ مِنَ الْمُحْضَرِيْنَ
জান্নাতীরা একে অপরের মুখোমুখি হয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। তাদের মধ্যে একজন বলবে, দুনিয়াতে আমার একজন বন্ধু ছিল। সে আমাকে বলত, তুমি কি এ কথা বিশ্বাস কর যে, আমরা যখন মরে যাব এবং আমাদের শরীর ও হাড় পচে গলে মাটির সাথে মিশে যাবে, তারপরও কি আমরা জীবিত হব এবং হিসাব দেব? (তখন আল্লাহ বলবেন) তোমরা কি তাকে দেখতে চাও? তখন সে উঁকি মেরে তাকে দেখতে পাবে যে, সে জাহান্নামের মধ্যখানে পড়ে আছে। (তাকে আযাবে দেখে) সে বলবে, আল্লাহর কসম! (দুনিয়াতে) তুমি তো আমাকে ধ্বংসের দিকেই ঠেলে দিয়েছিলে। যদি (আমার উপর) আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ না থাকত, তাহলে আমিও (তোমার মতো) আযাবে গ্রেফতার হতাম। (সূরা সাফ্ফাত, ৫০–৫৭)
وَنَادٰۤى اَصْحَابُ الْجَنَّةِ اَصْحَابَ النَّارِ اَنْ قَدْ وَجَدْنَا مَا وَعَدَنَا رَبُّنَا حَقًّا فَهَلْ وَجَدْتُّمْ مَّا وَعَدَ رَبُّكُمْ حَقًّاؕ قَالُوْا نَعَمْۚ فَاَذَّنَ مُؤَذِّنٌ ۢ بَيْنَهُمْ اَنْ لَّعْنَةُ اللهِ عَلَى الظَّالِمِيْنَ
জান্নাতীরা জাহান্নামীদেরকে ডেকে বলবে, আল্লাহ আমাদেরকে জান্নাত দানের যে ওয়াদা দিয়েছিলেন, তা আমরা পেয়েছি। অতএব তোমাদের ব্যাপারে আল্লাহ জাহান্নামের যে ওয়াদা দিয়েছিলেন, তা কি তোমরা সঠিকভাবে পেয়েছ? তারা বলবে, হ্যাঁ পেয়েছি। তখন একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করবেন, যালিমদের উপর আল্লাহর অভিশাপ। (সূরা আ‘রাফু ৪৪)
وَاَقْبَلَ بَعْضُهُمْ عَلٰى بَعْضٍ يَّتَسَآءَلُوْنَ – قَالُوْاۤ اِنَّا كُنَّا قَبْلُ فِۤيْ اَهْلِنَا مُشْفِقِيْنَ – فَمَنَّ اللهُ عَلَيْنَا وَوَقَانَا عَذَابَ السَّمُوْمِ – اِنَّا كُنَّا مِنْ قَبْلُ نَدْعُوْهُؕ اِنَّهٗ هُوَ الْبَرُّ الرَّحِيْمُ
জান্নাতীরা একে অন্যের মুখোমুখি হয়ে বলাবলি করবে, দুনিয়ায় থাকতে আমরা খুবই ভীত ছিলাম (যে, জান্নাত পাব কি না)। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের প্রতি দয়া করেছেন এবং জাহান্নামের জ্বলন্ত আগুন থেকে মুক্তি দিয়েছেন। ইতোপূর্বে দুনিয়ায় আমরা আল্লাহকে ডাকতাম এবং তাঁর ইবাদাত করতাম। নিশ্চয় আল্লাহ অতি সৌজন্যপরায়ণ এবং মেহেরবান। (সূরা তূর, ২৫–২৮)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ আমরা সেখানে বিলাসিতায় ডুবে গাফলতির জীবন-যাপন করিনি। সেখানে সবসময়ই আমাদের আশঙ্কা থাকত যে, কখন যেন আমাদের দ্বারা এমন কোন কাজ হয়ে যায়, যে কারণে আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে পাকড়াও করবেন। এখানে বিশেষ করে নিজের পরিবারের লোকদের মধ্যে ভয়ে ভয়ে জীবন-যাপন করার কথা উল্লেখ করার কারণ এই যে, মানুষ বেশির ভাগ যে জন্য গোনাহে লিপ্ত হয় তা হচ্ছে তার সন্তান-সন্ততির আরাম-আয়েশের ব্যবস্থা করা এবং তাদের দুনিয়া নির্মাণের চিন্তা। এজন্য সে হারাম উপার্জন করে, অন্যদের অধিকার লুণ্ঠন করে এবং নানা রকম অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে। এ কারণে জান্নাতের বাসিন্দারা পরস্পর বলবে, যে জিনিসটি আমাদেরকে মন্দ পরিণাম থেকে রক্ষা করেছে তা হচ্ছে, আমাদের মধ্যে নিজেদের সন্তান-সন্ততির ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করার চিন্তা এতটা প্রবল ছিল না, যার দ্বারা আমাদের আখিরাত বরবাদ হয়ে যাবে। আর নিজেদের সন্তানদেরকেও আমরা এমন পথে নিয়ে যাব, যা তাদেরকে আল্লাহর আযাবের উপযোগী বানিয়ে দেবে।
জান্নাতীরা জাহান্নামীদের সঙ্গেও কথা বলবে :
فَاَقْبَلَ بَعْضُهُمْ عَلٰى بَعْضٍ يَّتَسَآءَلُوْنَ ‐ قَالَ قَآئِلٌ مِّنْهُمْ اِنِّيْ كَانَ لِىْ قَرِيْنٌ – يَقُوْلُ اَئِنَّكَ لَمِنَ الْمُصَدِّقِيْنَ – اَئِذَا مِتْنَا وَكُنَّا تُرَابًا وَّعِظَامًا اَئِنَّا لَمَدِيْنُوْنَ – قَالَ هَلْ اَنْتُمْ مُّطَّلِعُوْنَ – فَاطَّلَعَ فَرَاٰهُ فِيْ سَوَآءِ الْجَحِيْمِ – قَالَ تَاللهِ اِنْ كِدْتَّ لَتُرْدِيْنِ – وَلَوْلَا نِعْمَةُ رَبِّيْ لَكُنْتُ مِنَ الْمُحْضَرِيْنَ
জান্নাতীরা একে অপরের মুখোমুখি হয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। তাদের মধ্যে একজন বলবে, দুনিয়াতে আমার একজন বন্ধু ছিল। সে আমাকে বলত, তুমি কি এ কথা বিশ্বাস কর যে, আমরা যখন মরে যাব এবং আমাদের শরীর ও হাড় পচে গলে মাটির সাথে মিশে যাবে, তারপরও কি আমরা জীবিত হব এবং হিসাব দেব? (তখন আল্লাহ বলবেন) তোমরা কি তাকে দেখতে চাও? তখন সে উঁকি মেরে তাকে দেখতে পাবে যে, সে জাহান্নামের মধ্যখানে পড়ে আছে। (তাকে আযাবে দেখে) সে বলবে, আল্লাহর কসম! (দুনিয়াতে) তুমি তো আমাকে ধ্বংসের দিকেই ঠেলে দিয়েছিলে। যদি (আমার উপর) আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ না থাকত, তাহলে আমিও (তোমার মতো) আযাবে গ্রেফতার হতাম। (সূরা সাফ্ফাত, ৫০–৫৭)
وَنَادٰۤى اَصْحَابُ الْجَنَّةِ اَصْحَابَ النَّارِ اَنْ قَدْ وَجَدْنَا مَا وَعَدَنَا رَبُّنَا حَقًّا فَهَلْ وَجَدْتُّمْ مَّا وَعَدَ رَبُّكُمْ حَقًّاؕ قَالُوْا نَعَمْۚ فَاَذَّنَ مُؤَذِّنٌ ۢ بَيْنَهُمْ اَنْ لَّعْنَةُ اللهِ عَلَى الظَّالِمِيْنَ
জান্নাতীরা জাহান্নামীদেরকে ডেকে বলবে, আল্লাহ আমাদেরকে জান্নাত দানের যে ওয়াদা দিয়েছিলেন, তা আমরা পেয়েছি। অতএব তোমাদের ব্যাপারে আল্লাহ জাহান্নামের যে ওয়াদা দিয়েছিলেন, তা কি তোমরা সঠিকভাবে পেয়েছ? তারা বলবে, হ্যাঁ পেয়েছি। তখন একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করবেন, যালিমদের উপর আল্লাহর অভিশাপ। (সূরা আ‘রাফু ৪৪)
জান্নাতীরা আল্লাহর সকল নিয়ামত গ্রহণ করবে :
اِنَّ الْمُتَّقِيْنَ فِيْ جَنَّاتٍ وَّعُيُوْنٍ – اٰخِذِيْنَ ماۤ اٰتَاهُمْ رَبُّهُمْؕ اِنَّهُمْ كَانُوْا قَبْلَ ذٰلِكَ مُحْسِنِيْنَ
নিশ্চয় মুত্তাক্বীরা থাকবে বাগান ও ঝর্ণার মধ্যে। আল্লাহ তাদেরকে যেসকল নিয়ামত দান করবেন, তারা এর সবই গ্রহণ করবে। কারণ তারা ছিল ইতোপূর্বে (দুনিয়াতে থাকতে) সৎকর্মপরায়ণ লোকদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা যারিয়াত– ১৫, ১৬)
মন যা চাইবে সবই জান্নাতে পাওয়া যাবে :
وَلَكُمْ فِيْهَا مَا تَشْتَهِيْۤ اَنْفُسُكُمْ وَلَكُمْ فِيْهَا مَا تَدَّعُوْنَ
(হে মুমিনগণ!) তাতে (জান্নাতে) তোমাদের মন যা চাইবে সবই দেয়া হবে এবং তাও দেয়া হবে, যা দেয়ার জন্য তোমাদের সাথে ওয়াদা করা হয়েছে। (সূরা হা-মীম সাজদা– ৩১)
وَفِيْهَا مَا تَشْتَهِيْهِ الْاَنْفُسُ وَتَلَذُّ الْاَعْيُنُ
সেখানে (জান্নাতে) মন যা চাইবে এবং নয়ন যাতে তৃপ্ত হবে, সবই পাওয়া যাবে। (সূরা যুখরুফু ৭১)
لَهُمْ مَّا يَشَآءُوْنَ عِنْدَ رَبِّهِمْؕ ذٰلِكَ جَزَآءُ الْمُحْسِنِيْنَ
সৎকর্মশীলরা যা চাইবে সবই তাদের প্রতিপালকের নিকট পাবে। এটাই হবে নেক আমলকারীদের প্রতিদান। (সূরা যুমার– ৩৪)
ব্যাখ্যা : এ হচ্ছে জান্নাতের আসল পরিচয়। সেখানে মানুষ যা চাইবে তা-ই পাবে। তার ইচ্ছার বিরোধী কোনকিছুই সেখানে হবে না। দুনিয়ায় কোন বিখ্যাত ব্যক্তি, কোন ক্ষমতাধর নেতা এবং কোন বিশাল রাজ্যের বাদশাহও কোন দিন এ নিয়ামত লাভ করেনি। দুনিয়ায় এ ধরনের নিয়ামত লাভের কোন সম্ভাবনাই নেই। কিন্তু জান্নাতের প্রত্যেক অধিবাসীই সেখানে আনন্দ ও উপভোগের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। জান্নাতের সবকিছু হবে তার ইচ্ছা ও পছন্দ অনুযায়ী। তার প্রত্যেকটি আশা সফল হবে, প্রত্যেকটি কামনা ও বাসনা পূর্ণতা লাভ করবে এবং প্রত্যেকটি ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত হবে।
জান্নাতের রিযিক কখনো শেষ হবে না :
اِنَّ هٰذَا لَرِزْقُنَا مَا لَهٗ مِنْ نَّفَادٍ
এসব হলো আমার দেয়া রিযিক, এগুলো কখনো শেষ হবে না। (সূরা সোয়াদু ৫৪)
জান্নাত থেকে কেউ বের হতে চাইবে না :
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ كَانَتْ لَهُمْ جَنَّاتُ الْفِرْدَوْسِ نُزُلًا – خَالِدِيْنَ فِيْهَا لَا يَبْغُوْنَ عَنْهَا حِوَلًا
নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতুল ফিরদাউস, আল্লাহর পক্ষ থেকে উপঢৌকনস্বরূপ। সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে; আর তারা কখনো জান্নাত থেকে বের হয়ে অন্য কোথাও যাওয়ার বাসনা করবে না। (সূরা কাহফু ১০৭, ১০৮)
لَا يَمَسُّهُمْ فِيْهَا نَصَبٌ وَّمَا هُمْ مِّنْهَا بِمُخْرَجِيْنَ
জান্নাতীদেরকে কোন কষ্ট স্পর্শ করবে না এবং তারা সেখান থেকে কখনো বেরও হবে না। (সূরা হিজর– ৪৮)
জান্নাতে দুঃখ–কষ্টের কিছুই থাকবে না :
لَا يَمَسُّنَا فِيْهَا نَصَبٌ وَّلَا يَمَسُّنَا فِيْهَا لُغُوْبٌ
(জান্নাতীরা বলবে) সেখানে আমাদেরকে কোন কষ্ট স্পর্শ করবে না। আর আমরা সেখানে কোন অনর্থক বিষয়েরও সম্মুখীন হব না। (সূরা ফাতির– ৩৫)
গরম ও ঠান্ডা কোনটাই থাকবে না :
مُتَّكِئِيْنَ فِيْهَا عَلَى الْاَرَآئِكِ لَا يَرَوْنَ فِيْهَا شَمْسًا وَّ لَا زَمْهَرِيْرًا
(জান্নাতীরা নিজ নিজ) আসনে হেলান দিয়ে বসা থাকবে। তারা কখনো সূর্যের তাপ অনুভব করবে না এবং অতি ঠান্ডাতেও কষ্ট পাবে না। (সূরা দাহর– ১৩)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ জান্নাতের আবহাওয়া হবে স্বাভাবিক, যা অতি ঠান্ডাও নয় এবং অতি গরমও নয়।
জান্নাতে অনর্থক বা পাপাচারমূলক কথা শোনা যাবে না :
لَا تَسْمَعُ فِيْهَا لَاغِيَةً
সেখানে তুমি কোন অর্থহীন কথা শুনতে পাবে না। (সূরা গাশিয়া– ১১)
لَا يَسْمَعُوْنَ فِيْهَا لَغْوًا وَّلَا تَاْثِيْمًا – اِلَّا قِيْلًا سَلَامًا سَلَامًا
জান্নাতীরা সেখানে কোন অনর্থক এবং পাপের কথা শুনতে পাবে না। তারা শুনতে পাবে কেবল সালাম, সালাম (শান্তি আর শান্তি)। (সূরা ওয়াক্বিয়া, ২৫, ২৬)
জান্নাতে মিথ্যা কথা শোনা যাবে না :
لَا يَسْمَعُوْنَ فِيْهَا لَغْوًا وَّلَا كِذَّابًا
জান্নাতীরা সেখানে কোন বাজে কথা বা মিথ্যা কথা শুনতে পাবে না। (সূরা নাবা– ৩৫)
জান্নাতীরা জাহান্নামের গর্জন শুনতে পাবে না :
لَا يَسْمَعُوْنَ حَسِيْسَهَاۚ وَهُمْ فِيْ مَا اشْتَهَتْ اَنْفُسُهُمْ خَالِدُوْنَ
তারা জাহান্নামের গর্জন শুনতে পাবে না। তারা স্থায়ীভাবে নিজেদের মনের চাহিদানুযায়ী জান্নাতের নিয়ামত ভোগ করবে। (সূরা আম্বিয়া– ১০২)
اِنَّ الْمُتَّقِيْنَ فِيْ جَنَّاتٍ وَّعُيُوْنٍ – اٰخِذِيْنَ ماۤ اٰتَاهُمْ رَبُّهُمْؕ اِنَّهُمْ كَانُوْا قَبْلَ ذٰلِكَ مُحْسِنِيْنَ
নিশ্চয় মুত্তাক্বীরা থাকবে বাগান ও ঝর্ণার মধ্যে। আল্লাহ তাদেরকে যেসকল নিয়ামত দান করবেন, তারা এর সবই গ্রহণ করবে। কারণ তারা ছিল ইতোপূর্বে (দুনিয়াতে থাকতে) সৎকর্মপরায়ণ লোকদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা যারিয়াত– ১৫, ১৬)
মন যা চাইবে সবই জান্নাতে পাওয়া যাবে :
وَلَكُمْ فِيْهَا مَا تَشْتَهِيْۤ اَنْفُسُكُمْ وَلَكُمْ فِيْهَا مَا تَدَّعُوْنَ
(হে মুমিনগণ!) তাতে (জান্নাতে) তোমাদের মন যা চাইবে সবই দেয়া হবে এবং তাও দেয়া হবে, যা দেয়ার জন্য তোমাদের সাথে ওয়াদা করা হয়েছে। (সূরা হা-মীম সাজদা– ৩১)
وَفِيْهَا مَا تَشْتَهِيْهِ الْاَنْفُسُ وَتَلَذُّ الْاَعْيُنُ
সেখানে (জান্নাতে) মন যা চাইবে এবং নয়ন যাতে তৃপ্ত হবে, সবই পাওয়া যাবে। (সূরা যুখরুফু ৭১)
لَهُمْ مَّا يَشَآءُوْنَ عِنْدَ رَبِّهِمْؕ ذٰلِكَ جَزَآءُ الْمُحْسِنِيْنَ
সৎকর্মশীলরা যা চাইবে সবই তাদের প্রতিপালকের নিকট পাবে। এটাই হবে নেক আমলকারীদের প্রতিদান। (সূরা যুমার– ৩৪)
ব্যাখ্যা : এ হচ্ছে জান্নাতের আসল পরিচয়। সেখানে মানুষ যা চাইবে তা-ই পাবে। তার ইচ্ছার বিরোধী কোনকিছুই সেখানে হবে না। দুনিয়ায় কোন বিখ্যাত ব্যক্তি, কোন ক্ষমতাধর নেতা এবং কোন বিশাল রাজ্যের বাদশাহও কোন দিন এ নিয়ামত লাভ করেনি। দুনিয়ায় এ ধরনের নিয়ামত লাভের কোন সম্ভাবনাই নেই। কিন্তু জান্নাতের প্রত্যেক অধিবাসীই সেখানে আনন্দ ও উপভোগের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। জান্নাতের সবকিছু হবে তার ইচ্ছা ও পছন্দ অনুযায়ী। তার প্রত্যেকটি আশা সফল হবে, প্রত্যেকটি কামনা ও বাসনা পূর্ণতা লাভ করবে এবং প্রত্যেকটি ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত হবে।
জান্নাতের রিযিক কখনো শেষ হবে না :
اِنَّ هٰذَا لَرِزْقُنَا مَا لَهٗ مِنْ نَّفَادٍ
এসব হলো আমার দেয়া রিযিক, এগুলো কখনো শেষ হবে না। (সূরা সোয়াদু ৫৪)
জান্নাত থেকে কেউ বের হতে চাইবে না :
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ كَانَتْ لَهُمْ جَنَّاتُ الْفِرْدَوْسِ نُزُلًا – خَالِدِيْنَ فِيْهَا لَا يَبْغُوْنَ عَنْهَا حِوَلًا
নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতুল ফিরদাউস, আল্লাহর পক্ষ থেকে উপঢৌকনস্বরূপ। সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে; আর তারা কখনো জান্নাত থেকে বের হয়ে অন্য কোথাও যাওয়ার বাসনা করবে না। (সূরা কাহফু ১০৭, ১০৮)
لَا يَمَسُّهُمْ فِيْهَا نَصَبٌ وَّمَا هُمْ مِّنْهَا بِمُخْرَجِيْنَ
জান্নাতীদেরকে কোন কষ্ট স্পর্শ করবে না এবং তারা সেখান থেকে কখনো বেরও হবে না। (সূরা হিজর– ৪৮)
জান্নাতে দুঃখ–কষ্টের কিছুই থাকবে না :
لَا يَمَسُّنَا فِيْهَا نَصَبٌ وَّلَا يَمَسُّنَا فِيْهَا لُغُوْبٌ
(জান্নাতীরা বলবে) সেখানে আমাদেরকে কোন কষ্ট স্পর্শ করবে না। আর আমরা সেখানে কোন অনর্থক বিষয়েরও সম্মুখীন হব না। (সূরা ফাতির– ৩৫)
গরম ও ঠান্ডা কোনটাই থাকবে না :
مُتَّكِئِيْنَ فِيْهَا عَلَى الْاَرَآئِكِ لَا يَرَوْنَ فِيْهَا شَمْسًا وَّ لَا زَمْهَرِيْرًا
(জান্নাতীরা নিজ নিজ) আসনে হেলান দিয়ে বসা থাকবে। তারা কখনো সূর্যের তাপ অনুভব করবে না এবং অতি ঠান্ডাতেও কষ্ট পাবে না। (সূরা দাহর– ১৩)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ জান্নাতের আবহাওয়া হবে স্বাভাবিক, যা অতি ঠান্ডাও নয় এবং অতি গরমও নয়।
জান্নাতে অনর্থক বা পাপাচারমূলক কথা শোনা যাবে না :
لَا تَسْمَعُ فِيْهَا لَاغِيَةً
সেখানে তুমি কোন অর্থহীন কথা শুনতে পাবে না। (সূরা গাশিয়া– ১১)
لَا يَسْمَعُوْنَ فِيْهَا لَغْوًا وَّلَا تَاْثِيْمًا – اِلَّا قِيْلًا سَلَامًا سَلَامًا
জান্নাতীরা সেখানে কোন অনর্থক এবং পাপের কথা শুনতে পাবে না। তারা শুনতে পাবে কেবল সালাম, সালাম (শান্তি আর শান্তি)। (সূরা ওয়াক্বিয়া, ২৫, ২৬)
জান্নাতে মিথ্যা কথা শোনা যাবে না :
لَا يَسْمَعُوْنَ فِيْهَا لَغْوًا وَّلَا كِذَّابًا
জান্নাতীরা সেখানে কোন বাজে কথা বা মিথ্যা কথা শুনতে পাবে না। (সূরা নাবা– ৩৫)
জান্নাতীরা জাহান্নামের গর্জন শুনতে পাবে না :
لَا يَسْمَعُوْنَ حَسِيْسَهَاۚ وَهُمْ فِيْ مَا اشْتَهَتْ اَنْفُسُهُمْ خَالِدُوْنَ
তারা জাহান্নামের গর্জন শুনতে পাবে না। তারা স্থায়ীভাবে নিজেদের মনের চাহিদানুযায়ী জান্নাতের নিয়ামত ভোগ করবে। (সূরা আম্বিয়া– ১০২)
জান্নাতে কারো মৃত্যু হবে না :
لَا يَذُوْقُوْنَ فِيْهَا الْمَوْتَ اِلَّا الْمَوْتَةَ الْاُوْلٰىۚ وَوَقَاهُمْ عَذَابَ الْجَحِيْمِ
প্রথম মৃত্যু ছাড়া (যা দুনিয়াতেই এসে গেছে) সেখানে তাদের আর কোন মৃত্যুর স্বাদ ভোগ করতে হবে না। আর আল্লাহ তাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করবেন। (সূরা দুখানু ৫৬)
اَفَمَا نَحْنُ بِمَيِّتِيْنَ – اِلَّا مَوْتَتَنَا الْاُوْلٰى وَمَا نَحْنُ بِمُعَذَّبِيْنَ
(জান্নাতীরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলতে থাকবে) আমাদের প্রথম মৃত্যু ছাড়া আর কি কোন মৃত্যু নেই? আমাদের কি কোন আযাবও নেই? (সূরা সাফ্ফাত- ৫৮, ৫৯)
জান্নাতীরা চিরকাল জান্নাতে অবস্থান করবে :
وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ يُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে আল্লাহ তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার নিচ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়ে যাবে। আর তারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে। (সূরা নিসা– ১৩)
ব্যাখ্যা : জান্নাতীদের স্থায়িত্ব বর্ণনার ক্ষেত্রে এ আয়াতের ন্যায় اَلْخُلُوْدُ (আল খুলূদ) শব্দটি কুরআনের প্রায় ৩৭ জায়গায় ব্যবহার করা হয়েছে। কোন কোন জায়গায় اَلْخُلُوْدُ এর সাথে اَبَدًا (আবাদান) শব্দেরও উল্লেখ আছে। এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, জান্নাতীরা স্থায়ীভাবে অনন্তকাল জান্নাতে বসবাস করবে।
لَا يَذُوْقُوْنَ فِيْهَا الْمَوْتَ اِلَّا الْمَوْتَةَ الْاُوْلٰىۚ وَوَقَاهُمْ عَذَابَ الْجَحِيْمِ
প্রথম মৃত্যু ছাড়া (যা দুনিয়াতেই এসে গেছে) সেখানে তাদের আর কোন মৃত্যুর স্বাদ ভোগ করতে হবে না। আর আল্লাহ তাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করবেন। (সূরা দুখানু ৫৬)
اَفَمَا نَحْنُ بِمَيِّتِيْنَ – اِلَّا مَوْتَتَنَا الْاُوْلٰى وَمَا نَحْنُ بِمُعَذَّبِيْنَ
(জান্নাতীরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলতে থাকবে) আমাদের প্রথম মৃত্যু ছাড়া আর কি কোন মৃত্যু নেই? আমাদের কি কোন আযাবও নেই? (সূরা সাফ্ফাত- ৫৮, ৫৯)
জান্নাতীরা চিরকাল জান্নাতে অবস্থান করবে :
وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ يُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে আল্লাহ তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার নিচ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়ে যাবে। আর তারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে। (সূরা নিসা– ১৩)
ব্যাখ্যা : জান্নাতীদের স্থায়িত্ব বর্ণনার ক্ষেত্রে এ আয়াতের ন্যায় اَلْخُلُوْدُ (আল খুলূদ) শব্দটি কুরআনের প্রায় ৩৭ জায়গায় ব্যবহার করা হয়েছে। কোন কোন জায়গায় اَلْخُلُوْدُ এর সাথে اَبَدًا (আবাদান) শব্দেরও উল্লেখ আছে। এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, জান্নাতীরা স্থায়ীভাবে অনন্তকাল জান্নাতে বসবাস করবে।
জান্নাতীরা জান্নাতের মধ্যে আল্লাহর দর্শন লাভ করবে :
وُجُوْهٌ يَّوْمَئِذٍ نَّاضِرَةٌ – اِلٰى رَبِّهَا نَاظِرَةٌ
সেদিন অনেক চেহারা হাস্যোজ্জ্বল হবে। তারা তাদের প্রতিপালকের দিকে চেয়ে থাকবে। (সূরা ক্বিয়ামাহ– ২২, ২৩)
لَهُمْ مَّا يَشَآءُوْنَ فِيْهَا وَلَدَيْنَا مَزِيْدٌ
জান্নাতীরা সেখানে যা ইচ্ছা তাই পাবে। আর আমার কাছে আরো অতিরিক্ত রয়েছে (আর তা হলো আল্লাহর দর্শন)। (সূরা ক্বাফু ৩৫)
জান্নাতীদের প্রতি থাকবে আল্লাহর সন্তুষ্টি :
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ اُولٰٓئِكَ هُمْ خَيْرُ الْبَرِيَّةِ – جَزَآؤُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ جَنَّاتُ عَدْنٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَاۤ اَبَدًاؕ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ وَرَضُوْا عَنْهُؕ ذٰلِكَ لِمَنْ خَشِيَ رَبَّهٗ
যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে তারাই সৃষ্টির মধ্যে শ্রেষ্ঠ। তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের কাছে প্রতিদান হিসেবে রয়েছে চিরস্থায়ী জান্নাত, যার নিচ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়ে যাবে; আর সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট আর তারাও আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট। এটা তাদের জন্য, যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে। (সূরা বায়্যিনাহ– ৭, ৮)
وَرِضْوَانٌ مِّنَ اللهِ اَكْبَرُ ذٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ
আল্লাহর সন্তুষ্টিই হলো সবচেয়ে বড় (নিয়ামত); আর এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় সফলতা। (সূরা তাওবা– ৭২)
وُجُوْهٌ يَّوْمَئِذٍ نَّاضِرَةٌ – اِلٰى رَبِّهَا نَاظِرَةٌ
সেদিন অনেক চেহারা হাস্যোজ্জ্বল হবে। তারা তাদের প্রতিপালকের দিকে চেয়ে থাকবে। (সূরা ক্বিয়ামাহ– ২২, ২৩)
لَهُمْ مَّا يَشَآءُوْنَ فِيْهَا وَلَدَيْنَا مَزِيْدٌ
জান্নাতীরা সেখানে যা ইচ্ছা তাই পাবে। আর আমার কাছে আরো অতিরিক্ত রয়েছে (আর তা হলো আল্লাহর দর্শন)। (সূরা ক্বাফু ৩৫)
জান্নাতীদের প্রতি থাকবে আল্লাহর সন্তুষ্টি :
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ اُولٰٓئِكَ هُمْ خَيْرُ الْبَرِيَّةِ – جَزَآؤُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ جَنَّاتُ عَدْنٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَاۤ اَبَدًاؕ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ وَرَضُوْا عَنْهُؕ ذٰلِكَ لِمَنْ خَشِيَ رَبَّهٗ
যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে তারাই সৃষ্টির মধ্যে শ্রেষ্ঠ। তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের কাছে প্রতিদান হিসেবে রয়েছে চিরস্থায়ী জান্নাত, যার নিচ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়ে যাবে; আর সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট আর তারাও আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট। এটা তাদের জন্য, যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে। (সূরা বায়্যিনাহ– ৭, ৮)
وَرِضْوَانٌ مِّنَ اللهِ اَكْبَرُ ذٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ
আল্লাহর সন্তুষ্টিই হলো সবচেয়ে বড় (নিয়ামত); আর এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় সফলতা। (সূরা তাওবা– ৭২)
জান্নাতীদের গুণাবলি সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলার বাণী :
وَعِبَادُ الرَّحْمٰنِ الَّذِيْنَ يَمْشُوْنَ عَلَى الْاَرْضِ هَوْنًا وَّاِذَا خَاطَبَهُمُ الْجَاهِلُوْنَ قَالُوْا سَلَامًا – وَالَّذِيْنَ يَبِيْتُوْنَ لِرَبِّهِمْ سُجَّدًا وَّقِيَامًا – وَالَّذِيْنَ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا اصْرِفْ عَنَّا عَذَابَ جَهَنَّمَ اِنَّ عَذَابَهَا كَانَ غَرَامًا – اِنَّهَا سَآءَتْ مُسْتَقَرًّا وَّمُقَامًا – وَالَّذِيْنَ اِذَاۤ اَنْفَقُوْا لَمْ يُسْرِفُوْا وَلَمْ يَقْتُرُوْا وَكَانَ بَيْنَ ذٰلِكَ قَوَامًا – وَالَّذِيْنَ لَا يَدْعُوْنَ مَعَ اللهِ اِلٰهًا اٰخَرَ وَلَا يَقْتُلُوْنَ النَّفْسَ الَّتِيْ حَرَّمَ اللهُ اِلَّا بِالْحَقِّ وَلَا يَزْنُوْنَ وَمَنْ يَّفْعَلْ ذٰلِكَ يَلْقَ اَثَامًا – يُضَاعَفْ لَهُ الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيَخْلُدْ فِيْهٖ مُهَانًا – اِلَّا مَنْ تَابَ وَاٰمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَاُولٰٓئِكَ يُبَدِّلُ اللهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍؕ وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا – وَمَنْ تَابَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَاِنَّهٗ يَتُوْبُ اِلَى اللهِ مَتَابًا – وَالَّذِيْنَ لَا يَشْهَدُوْنَ الزُّوْرَ وَاِذَا مَرُّوْا بِاللَّغْوِ مَرُّوْا كِرَامًا – وَالَّذِيْنَ اِذَا ذُكِّرُوْا بِاٰيَاتِ رَبِّهِمْ لَمْ يَخِرُّوْا عَلَيْهَا صُمًّا وَّعُمْيَانًا – وَالَّذِيْنَ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ اَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ اَعْيُنٍ وَّاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِيْنَ اِمَامًا – اُولٰٓئِكَ يُجْزَوْنَ الْغُرْفَةَ بِمَا صَبَرُوْا وَيُلَقَّوْنَ فِيْهَا تَحِيَّةً وَّسَلَامًا – خَالِدِيْنَ فِيْهَا حَسُنَتْ مُسْتَقَرًّا وَّمُقَامًا
রহমানের বান্দা (জান্নাতী) তো তারাই, যারা পৃথিবীতে বিনয়ের সাথে চলাফেরা করে। যখন অজ্ঞ ব্যক্তিরা তাদেরকে সম্বোধন করে তখন তারা বলে, সালাম। যারা তাদের প্রতিপালকের জন্য সিজদারত ও দন্ডায়মান অবস্থায় রাত্রিযাপন করে। যারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে দূরে রাখুন, কেননা এর শাস্তি ভীষণ যন্ত্রণাদায়ক। (জেনে রেখো) অবশ্যই জাহান্নাম আশ্রয়স্থল ও বাসস্থানের জন্য খুবই নিকৃষ্ট। (রহমানের বান্দাদের আরো বৈশিষ্ট্য হচ্ছে) যখন তারা ব্যয় করে, তখন অপচয় করে না এবং কৃপণতাও করে না; বরং তারা মধ্যমপন্থা অবলম্বন করে। যারা আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্যকে ডাকে না। যারা ন্যায়সঙ্গত কারণ ছাড়া আল্লাহ যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন তাকে হত্যা করে না এবং যারা ব্যভিচার করে না। যে এরূপ করবে সে কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হবেই। কিয়ামতের দিন তার শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে এবং সেখানে সে অনন্তকাল অপদস্থ হতে থাকবে। তবে তারা নয় যারা তাওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে; আল্লাহ এমন ব্যক্তির গোনাহসমূহকে নেকী দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। (কেননা) আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু। আর যে তাওবা করে এবং নেক কাজ করে, সে তো প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর দিকেই প্রত্যাবর্তন করে। (রহমানের বান্দাদের আরো বৈশিষ্ট্য হচ্ছে) যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না। যারা অনর্থক বিষয়ের সম্মুখীন হলে সম্মানের সাথে তা পরিহার করে। যাদেরকে তাদের প্রতিপালকের আয়াত স্মরণ করিয়ে দিলে বধির ও অন্ধের মতো আচরণ করে না এবং যারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তান দান করুন, যাদেরকে দেখলে আমাদের চোখ জুড়ায়। আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাক্বীদের ইমাম বানিয়ে দিন। এ সকল লোকদেরকে তাদের ধৈর্যের কারণে সুউচ্চ কক্ষ দেয়া হবে এবং তাদেরকে সেখানে সম্ভাষণ জানানো হবে অভিবাদন ও সালাম সহকারে; সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। আর তা কতই না উত্তম আশ্রয়স্থল ও সুন্দর আবাসস্থল!
(সূরা ফুরক্বান, ৬৩–৭৬)
ব্যাখ্যা : তারা কোন লোকের সাথে অশালীন আচরণ করে না এবং দোষারোপের জবাবে দোষারোপ করে না। তারা প্রত্যেক বেহুদাপনার জবাবে বেহুদাপনায় লিপ্ত হয় না। বরং যারাই তাদের সাথে এসব আচরণ করে, তাদেরকে সালাম দিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে চলে যায়। তাদের রাত আরাম-আয়েশে, নাচ-গানে, খেলতামাশায়, আড্ডাবাজী ও চুরি-চামারিতে অতিবাহিত হয় না। তারা জাহেলিয়াতের এসব পরিচিত খারাপ কাজগুলোর পরিবর্তে সমাজে এমনসব লোকদের মতো সৎকর্ম সম্পাদন করে, যাদের রাত কাটে আল্লাহর দরবারে দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে দু‘আ ও ইবাদাত করার মধ্য দিয়ে। ইবাদাত তাদের মধ্যে কোন অহংকারের জন্ম দেয় না। অধিক ইবাদাতের ফলে আগুন তাদেরকে স্পর্শ করতে পারবে না- এ ধরনের আত্মগর্বও তাদের মনে সৃষ্টি হয় না। বরং নিজেদের সমস্ত সৎকাজ ও ইবাদাত থাকা সত্ত্বেও তারা এ ভয়ে কাঁপতে থাকে যে, এসব আমল কবুল হলো কি না? আবার তারা আমলের বিনিময়ে জান্নাত ক্রয় করে নেয়ার অহংকারও করে না। বরং তারা নিজেদের মানবিক দুর্বলতার কথা চিন্তা করে সর্বদা আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহের উপর ভরসা করে। তাদের অবস্থা এ নয় যে, আরাম-আয়েশ, বিলাসিতা, মদ-জুয়া, বন্ধুবান্ধব, মেলা ও বিয়ে-শাদীর পেছনে অথবা নিজেদের সামর্থ্যের চেয়ে অনেক বেশি করে নিজেকে উপস্থাপনের জন্য খাবার-দাবার, পোশাক-পরিচ্ছদ, বাড়ি-গাড়ি, সাজ-গোজ ইত্যাদির পেছনে অঢেল সম্পদ ব্যয় করে চলে। আবার তারা এমন অর্থলোভীর মতোও নয় যে, যারা প্রতিটি পয়সা গুণে গুণে জমা রাখে; যারা নিজেও ভালোভাবে খায় না, নিজের সামর্থ্যানুযায়ী নিজের ছেলে-মেয়ে ও পরিবার-পরিজনের প্রয়োজনও সঠিকভাবে পূর্ণ করে না এবং কোন ভালো কাজে প্রাণ খুলে কোনকিছু ব্যয়ও করে না। বরং তারা ভারসাম্য রক্ষা করে চলে, যা আল্লাহর প্রকৃত সৎ বান্দাদের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
তারা কোন মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না। এমন কোন জিনিসকে প্রকৃত ঘটনা হিসেবে গণ্য করে না, যাকে তারা সত্য বলে জানে না। তারা দাঁড়িয়ে মিথ্যাচার দেখে না এবং তা দেখার সংকল্পও করে না। তারা এমন লোক নয়, যারা আল্লাহর আয়াত শুনে একটুও নড়ে না। বরং তারা এর দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়। সংশ্লিষ্ট আয়াতগুলোতে যেসব নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তারা তা মেনে চলে। যা ফরয করা হয়েছে, তা অবশ্যই পালন করে। যে কাজের নিন্দা করা হয়েছে, তা থেকে বিরত থাকে। যে আযাবের ভয় দেখানো হয়েছে, তার কল্পনা করতেই তাদের হৃদয় কেঁপে ওঠে। তারা দু‘আ করার সময় কেবল নিজের জন্য দু‘আ করে না পরিবারের সকলের জন্যও দু‘আ করে। তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! তাদেরকে ঈমান ও সৎকাজের তাওফীক দান করো এবং পরিচ্ছন্ন চারিত্রিক গুণাবলির অধিকারী করো। কারণ একজন মুমিন তার স্ত্রী ও সন্তানদের দৈহিক সৌন্দর্য ও আরাম-আয়েশ থেকে নয়, বরং সদাচার ও সচ্চরিত্রতা থেকেই মানসিক প্রশান্তি লাভ করে। দুনিয়ায় যারা তার কাছে সবচেয়ে প্রিয়, তাদেরকে জাহান্নামের ইন্ধনে পরিণত হতে দেখার চেয়ে বেশি কষ্টকর বিষয় আর কী হতে পারে? তারা এমন লোক, যারা ধন-দৌলত ও মাহাত্ম্যের ক্ষেত্রে নয় বরং আল্লাহভীতি ও সৎকর্মশীলতার ক্ষেত্রে পরস্পরের অগ্রবর্তী হওয়ার চেষ্টা করে।
قَدْ اَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ – اَ لَّذِيْنَ هُمْ فِيْ صَلَاتِهِمْ خَاشِعُوْنَ – وَالَّذِيْنَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُوْنَ – وَالَّذِيْنَ هُمْ لِلزَّكَاةِ فَاعِلُوْنَ – وَالَّذِيْنَ هُمْ لِفُرُوْجِهِمْ حَافِظُوْنَ – اِلَّا عَلٰۤى اَزْوَاجِهِمْ اَوْ مَا مَلَكَتْ اَيْمَانُهُمْ فَاِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُوْمِيْنَ – فَمَنِ ابْتَغٰى وَرَآءَ ذٰلِكَ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْعَادُوْنَ – وَالَّذِيْنَ هُمْ لِاَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُوْنَ – وَالَّذِيْنَ هُمْ عَلٰى صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُوْنَ – اُولٰٓئِكَ هُمُ الْوَارِثُوْنَ – اَ لَّذِيْنَ يَرِثُوْنَ الْفِرْدَوْسَ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
অবশ্যই ঐ সকল ঈমানদারগণ সফলতা লাভ করবে, যারা বিনয়ের সাথে নিজেদের সালাত আদায় করে, যারা অনর্থক বিষয় থেকে দূরে থাকে, যারা সঠিকভাবে যাকাত দিয়ে থাকে এবং যারা নিজেদের লজ্জাস্থানকে হেফাজত করে, তবে তাদের স্ত্রী অথবা মালিকানাভুক্ত দাসীদের ব্যতীত; (কেননা) এতে তারা তিরস্কৃত হবে না। আর যারা এদেরকে বাদ দিয়ে অন্য (কাউকে) কামনা করে, তারাই সীমালঙ্ঘনকারী। (আর তারাও সফলতা লাভ করবে) যারা নিজেদের আমানত ও অঙ্গীকার রক্ষা করে এবং যারা নিজেদের সালাতের হেফাজত করে- তারাই হবে উত্তরাধিকারী। তারা জান্নাতুল ফিরদাউসের উত্তরাধিকারী হবে, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। (সূরা মু’মিনূন, ১–১১)
اَلَّذِيْنَ يُوْفُوْنَ بِعَهْدِ اللهِ وَلَا يَنْقُضُوْنَ الْمِيْثَاقَ – وَالَّذِيْنَ يَصِلُوْنَ مَاۤ اَمَرَ اللهُ بِهٖۤ اَنْ يُّوْصَلَ وَيَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ وَيَخَافُوْنَ سُوْٓءَ الْحِسَابِ – وَالَّذِيْنَ صَبَرُوا ابْتِغَآءَ وَجْهِ رَبِّهِمْ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاَنْفَقُوْا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَّعَلَانِيَةً وَّيَدْرَءُوْنَ بِالْحَسَنَةِ السَّيِّئَةَ اُولٰٓئِكَ لَهُمْ عُقْبَى الدَّارِ – جَنَّاتُ عَدْنٍ يَّدْخُلُوْنَهَا وَمَنْ صَلَحَ مِنْ اٰبَآئِهِمْ وَاَزْوَاجِهِمْ وَذُرِّيَّاتِهِمْ وَالْمَلَآئِكَةُ يَدْخُلُوْنَ عَلَيْهِمْ مِّنْ كُلِّ بَابٍ – سَلَامٌ عَلَيْكُمْ بِمَا صَبَرْتُمْ فَنِعْمَ عُقْبَى الدَّارِ
যারা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করে, যারা চুক্তি ভঙ্গ করে না এবং যারা সেসব সম্পর্ক ঠিক রাখে, যা ঠিক রাখার জন্য আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন। আর যারা নিজ প্রতিপালককে এবং কঠিন হিসাবকে ভয় করে, যারা তাদের প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের আশায় ধৈর্যধারণ করে, যারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে, যারা আমার দেয়া রিযিক হতে গোপনে ও প্রকাশ্যে দান করে, যারা ভালো দিয়ে মন্দকে দূরীভূত করে- তাদের জন্যই রয়েছে শুভ পরিণাম। (আর তা হচ্ছে) চিরস্থায়ী জান্নাত; সেখানে তারা প্রবেশ করবে এবং তাদের মাতা-পিতা, স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে তারাও। আর প্রত্যেক দরজা দিয়ে তাদের নিকট ফেরেশতারা প্রবেশ করবে। তারা বলবে, তোমাদের উপর সালাম (শান্তি বর্ষিত হোক)। কেননা তোমরা ধৈর্যধারণ করেছিলে। (অতএব লক্ষ করো) পরকালের এ গৃহ কতই না উত্তম!
(সূরা রা‘দ, ২০–২৪)
জান্নাতীদের আরো পরিচয় হচ্ছে :
اَلَّذِيْنَ هُمْ عَلٰى صَلَاتِهِمْ دَآئِمُوْنَ – وَالَّذِيْنَ فِۤيْ اَمْوَالِهِمْ حَقٌّ مَّعْلُوْمٌ – لِلسَّآئِلِ وَالْمَحْرُوْمِ – وَالَّذِيْنَ يُصَدِّقُوْنَ بِيَوْمِ الدِّيْنِ – وَالَّذِيْنَ هُمْ مِّنْ عَذَابِ رَبِّهِمْ مُّشْفِقُوْنَ – اِنَّ عَذَابَ رَبِّهِمْ غَيْرُ مَاْمُوْنٍ – وَالَّذِيْنَ هُمْ لِفُرُوْجِهِمْ حَافِظُوْنَ – اِلَّا عَلٰۤى اَزْوَاجِهِمْ اَوْ مَا مَلَكَتْ اَيْمَانُهُمْ فَاِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُوْمِيْنَ – فَمَنِ ابْتَغٰى وَرَآءَ ذٰلِكَ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْعَادُوْنَ – وَالَّذِيْنَ هُمْ لِاَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُوْنَ – وَالَّذِيْنَ هُمْ بِشَهَادَاتِهِمْ قَآئِمُوْنَ وَالَّذِيْنَ هُمْ عَلٰى صَلَاتِهِمْ يُحَافِظُوْنَ – اُولٰٓئِكَ فِيْ جَنَّاتٍ مُّكْرَمُوْنَ
যারা নিজেদের সালাতে সর্বদা কায়েম থাকে। (যারা মনে করে) তাদের নিজেদের সম্পদে ভিক্ষুক ও বঞ্চিতদের হক রয়েছে। যারা কিয়ামতের দিনকে সত্য বলে বিশ্বাস করে। যারা তাদের প্রতিপালকের শাস্তি সম্পর্কে ভীত–সন্ত্রস্ত, (প্রকৃতপক্ষে) তাদের প্রতিপালকের শাস্তি থেকে নির্ভয় হওয়া যায় না। যারা তাদের স্ত্রী অথবা মালিকানাভুক্ত দাসী ব্যতীত নিজেদের লজ্জাস্থানকে হেফাজত করে, কেননা এতে তারা তিরস্কৃত হবে না। যারা এদেরকে বাদ দিয়ে অন্যকে কামনা করে তারাই সীমালঙ্ঘনকারী হবে। যারা নিজেদের আমানত এবং ওয়াদা রক্ষা করে। যারা যথাযথভাবে সাক্ষ্য প্রদান করে। আর যারা নিজেদের সালাতের প্রতি যত্নবান- তারা সম্মানের সাথে জান্নাতে অবস্থান করবে। (সূরা মা‘আরিজ, ২৩–৩৫)
জান্নাতী বান্দারা চার প্রকার :
وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَالرَّسُوْلَ فَاُولٰٓئِكَ مَعَ الَّذِيْنَ اَنْعَمَ اللهُ عَلَيْهِمْ مِّنَ النَّبِيِّيْنَ وَالصِّدِّيْقِيْنَ وَالشُّهَدَآءِ وَالصَّالِحِيْنَۚ وَحَسُنَ اُولٰٓئِكَ رَفِيْقًا
যারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে তারা সকলেই নবী, সিদ্দীক, শহীদ ও সালেহীনদের অন্তর্ভুক্ত; যারা নিয়ামতপ্রাপ্তদের সাথে থাকবে এবং তারাই একে অপরের উত্তম সঙ্গী হবে। (সূরা নিসা– ৬৯)
ব্যাখ্যা : সিদ্দিকীন : যারা আল্লাহর সকল বিধিবিধান মেনে চলেন এবং সৎকর্মে অগ্রগামী থাকেন। তাদেরকে আউলিয়াও বলা হয়।
শুহাদা : যারা আল্লাহর পথে শাহাদাতবরণ করেন।
সালেহীন : যারা ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নাতে মুয়াক্কাদার উপর আমল করেন এবং সকল প্রকার কবীরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকেন, তারা হলেন সাধারণ মুসলিম।
জান্নাতীদের আরো গুণ হচ্ছে- দ্বীনের হেফাজত করা :
وَاُزْلِفَتِ الْجَنَّةُ لِلْمُتَّقِيْنَ غَيْرَ بَعِيْدٍ – هٰذَا مَا تُوْعَدُوْنَ لِكُلِّ اَوَّابٍ حَفِيْظٍ – مَنْ خَشِيَ الرَّحْمٰنَ بِالْغَيْبِ وَجَآءَ بِقَلْبٍ مُّنِيْبٍ – اُدْخُلُوْهَا بِسَلَامٍؕ ذٰلِكَ يَوْمُ الْخُلُوْدِ
জান্নাতকে নিকটবর্তী করা হবে মুত্তাক্বীদের জন্য, দূরত্বহীনভাবে। (বলা হবে) এ হলো সেই জান্নাত, যার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল প্রত্যেক আল্লাহ অভিমুখী ও হেফাজতকারীদের জন্য। যারা না দেখে দয়াময় (আল্লাহ) কে ভয় করে এবং (আল্লাহ) অভিমুখী অন্তর নিয়ে উপস্থিত হয়। (তাদেরকে বলা হবে) তোমরা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করো, এটা হলো চিরকাল অবস্থানের দিন। (সূরা ক্বাফ, ৩১–৩৪)
ব্যাখ্যা : اَوَّابٌ (আওয়াব) শব্দটি ব্যাপক অর্থবহ। এর অর্থ এমন ব্যক্তি যে নাফরমানি এবং প্রবৃত্তি চরিতার্থ করার পথ পরিহার করে আনুগত্য এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের পথ অবলম্বন করেছে। আল্লাহর পছন্দ নয় এমন প্রতিটি জিনিস পরিত্যাগ করে এবং আল্লাহ যা পছন্দ করেন তা গ্রহণ করে। আনুগত্যের পথ থেকে পা সামান্য বিচ্যুত হলেই সে বিচলিত হয়ে পড়ে এবং তাওবা করে আনুগত্যের পথে ফিরে আসে। যে অধিক মাত্রায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজের সমস্ত ব্যাপারে তাঁর স্মরণাপন্ন হয়।
حَفِيْظٌ (হাফিয) শব্দটির অর্থ রক্ষাকারী। এর দ্বারা এমন লোককে বুঝানো হয়েছে, যে আল্লাহ নির্ধারিত সীমারেখা তথা তাঁর ফরয এবং হারামসমূহ রক্ষা করে। যে আল্লাহর পক্ষ থেকে তার উপর আরোপিত অধিকারসমূহ সংরক্ষণ করে। ঈমান এনে তার রবের সাথে যে চুক্তি ও অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয়েছে তা রক্ষা করে। যে তার শক্তি, শ্রম ও সাধনার পাহারাদারী করে, যাতে এসবের কোনটি ভ্রান্ত কাজে নষ্ট না হয়। যে তাওবা করে তা রক্ষা করে। যে সর্বাবস্থায় আত্মসমালোচনা করতে থাকে যে, সে তার কথা ও কাজে কোথাও তার রবের নাফরমানি করছে কি না। সে কোথাও পরম দয়ালু আল্লাহর দেখা পেত না, তা সত্ত্বেও তাঁর নাফরমানি করতে ভয় পায়। প্রকাশ্যে দৃষ্টিগোচর হয় এমনসব শক্তি ও সত্তার তুলনায় তার মনে অদেখা রহমানের ভয় অধিক প্রবল ছিল। তিনি ‘রহমান’ বা দয়ালু এ কথা জানা সত্ত্বেও তাঁর রহমতের ভরসায় সে গোনাহের কাজে লিপ্ত হয়নি, বরং সবসময়ই তাঁর অসন্তুষ্টিকে ভয় পেয়েছে। শুধু শাস্তির আশঙ্কায় মুমিন বান্দার অন্তরে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি হয় না। বরং আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব, বড়ত্ব ও মর্যাদার অনুভূতি সবসময় তার মনে এক ভয়ানক ভীতিভাব জাগিয়ে রাখে।
مُنِيْبٌ (মুনীব) শব্দটির অর্থ একদিকে মুখ করা এবং বার বার সেদিকেই ফিরে যাওয়া। قَلْبٌ مُّنِيْبٌ (ক্বালবুম মুনীব) অর্থ এমন হৃদয়, যা সব দিক থেকে এক আল্লাহর দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। অতঃপর সারা জীবন তার উপর যে পরিস্থিতিই আসুক না কেন তাঁর দিকেই ফিরে এসেছে। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর কাছে প্রকৃত সম্মানের অধিকারী সে ব্যক্তি যে শুধু মুখে নয় বরং পূর্ণ নিষ্ঠার সাথে সরল মনে তাঁর একান্ত আপনজন হয়ে যায়। যে গুণাবলি থাকলে কোন ব্যক্তি জান্নাত লাভের উপযুক্ত হয় এসব আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা সে গুণাবলি বর্ণনা করেছেন। ঐগুলো হচ্ছে, (১) তাক্বওয়া, (২) আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন, (৩) আল্লাহর পথে নিজের সম্পর্কের স্বযত্ন পাহারাদারী, (৪) আল্লাহকে না দেখে এবং তাঁর ক্ষমা পরায়ণতায় বিশ্বাসী হয়েও তাঁকে ভয় করা এবং (৫) অনুরক্ত মন নিয়ে আল্লাহর কাছে পৌঁছা অর্থাৎ মৃত্যু পর্যন্ত অনুরক্ত আচরণ করে যাওয়া।
জানুমাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করা :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا هَلْ اَدُلُّكُمْ عَلٰى تِجَارَةٍ تُنْجِيْكُمْ مِّنْ عَذَابٍ اَلِيْمٍ – تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَرَسُوْلِه وَتُجَاهِدُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ بِاَمْوَالِكُمْ وَاَنْفُسِكُمْؕ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ – يَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ وَيُدْخِلْكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِيْ جَنَّاتِ عَدْنٍؕ ذٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ
হে ঈমানদারগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি ব্যবসার কথা বলে দেব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দেবে? আর তা হলো, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনবে এবং নিজেদের সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা জানতে। এর ফলে আল্লাহ তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়ে যাবে। সেটা স্থায়ী জান্নাত, যাতে রয়েছে উত্তম বাসস্থান। আর এটাই বিরাট সফলতা। (সূরা সাফ, ১০–১২)
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করা :
وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ يُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَاؕ وَذٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ
যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে, তিনি তাকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত থাকবে। সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে। আর এটাই মহাসাফল্য। (সূরা নিসা– ১৩)
দ্বীনের উপর অটল থাকা :
اِنَّ الَّذِيْنَ قَالُوْا رَبُّنَا اللهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوْا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَآئِكَةُ اَلَّا تَخَافُوْا وَلَا تَحْزَنُوْا وَاَبْشِرُوْا بِالْجَنَّةِ الَّتِيْ كُنْتُمْ تُوْعَدُوْنَ
যারা বলে– আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, অতঃপর এ কথার উপর অনড় থাকে; নিশ্চয় তাদের নিকট ফেরেশতা নাযিল হয়ে বলে, তোমরা ভয় করো না এবং কোন চিন্তাও করো না। তোমরা সেই জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ করো, যার ওয়াদা তোমাদেরকে দেয়া হয়েছিল। (সূরা হা-মীম সাজদা– ৩০)
ব্যাখ্যা : পরকালীন জীবনে তারা জান্নাত লাভ করবে। কারণ তারা পার্থিব জীবনে সত্য পথে চলেছে। জীবনের প্রতিটি বিভাগে, প্রতিটি ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক বিষয়ে তারা সত্য ও ন্যায়নিষ্ঠ পথ অবলম্বন করেছে এবং বাতিলের পথ পরিহার করেছে। সঠিক পথের উপর দৃঢ়তা এবং অন্যায় পথ থেকে দূরে থাকার শক্তি তাদের রবের পক্ষ থেকে তারা লাভ করেছে। তাদের রব তাদেরকে ঈমানের কারণে এ সুযোগ দেন। এগুলো এমন ঈমানের ফল নয়, যার অর্থ হয় নিছক বিশ্বাস করা; বরং এমন ঈমানের ফল, যা চরিত্র ও কর্মকান্ডের পরিচালক শক্তিতে শক্তিশালী হয়ে কর্ম ও চরিত্রে নেকীর প্রকাশ ঘটে। যে ব্যক্তি ঈমান এনেও বেঈমানের মতো জীবন-যাপন করে সে আল্লাহর উপর ঈমান আনয়নের পর সৎকর্মশীল হয়ে জীবন যাপনকারীর মতো পুরস্কার পাওয়ার আশা করতে পারে না। তারা আল্লাহকে রব বলে ঘোষণা করে থেমে যায়নি এবং তার সাথে অন্য কাউকে রব হিসেবেও গ্রহণ করেনি, আর এর সাথে কোন ভ্রান্ত আকীদার সংমিশ্রণও ঘটায়নি। বরং এ আকীদা পোষণ করার পর সারা জীবন তার উপর প্রতিষ্ঠিত থেকেছে, তার পরিপন্থী অন্য সকল আকীদা প্রত্যাখান করেছে এবং নিজের কর্মজীবনে তাওহীদের দাবীসমূহও পূরণ করেছে।
মুত্তাক্বী হওয়া :
اُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِيْنَ
আর তা (জান্নাত) প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে মুত্তাক্বীদের জন্য। (সূরা আলে ইমরানু ১৩৩)
اِنَّ الْمُتَّقِيْنَ فِيْ ظِلَالٍ وَّعُيُوْنٍ
নিশ্চয় মুত্তাক্বীরা থাকবে ছায়া ও ঝর্ণাবহুল স্থানে। (সূরা মুরসালাত– ৪১)
আল্লাহর সামনে হাজির হওয়াকে ভয় করা :
وَلِمَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهٖ جَنَّتَانِ – فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ
আর যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের সামনে উপস্থিত হওয়াকে ভয় করে, তার জন্য রয়েছে দু’টি জান্নাত। অতএব হে জিন ও মানব! তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? (সূরা আর রহমান- ৪৬, ৪৭)
না দেখে আল্লাহকে ভয় করা :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَيْبِ لَهُمْ مَّغْفِرَةٌ وَّاَجْرٌ كَبِيْرٌ
নিশ্চয় যারা তাদের প্রতিপালককে না দেখে ভয় করে, তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার। (সূরা মুলক– ১২)
ধৈর্যধারণ করা :
وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَنُبَوِّئَنَّهُمْ مِّنَ الْجَنَّةِ غُرَفًا تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَاؕ نِعْمَ اَجْرُ الْعَامِلِيْنَ – اَلَّذِيْنَ صَبَرُوْا وَعَلٰى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ
যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, নিশ্চয় আমি তাদেরকে জান্নাতের সুউচ্চ প্রাসাদসমূহে স্থান দেব, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হবে; সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। আর তা সৎকর্মশীলদের জন্য কতই না উত্তম পুরস্কার, যারা ধৈর্যধারণ করে এবং স্বীয় প্রতিপালকের উপর ভরসা করে। (সূরা আনকাবূত– ৫৮, ৫৯)
সৎকর্ম করা :
وَمَنْ يَّعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ مِنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَاُولٰٓئِكَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ وَلَا يُظْلَمُوْنَ نَقِيْرًا
পুরুষ অথবা নারীর মধ্যে ঈমানদার অবস্থায় যে কেউ সৎকাজ করবে, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি অণুপরিমাণও যুলুম করা হবে না। (সূরা নিসা– ১২৪)
শেষ রাত্রে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করা ও ক্ষমাপ্রার্থনা করা :
اِنَّ الْمُتَّقِيْنَ فِيْ جَنَّاتٍ وَّعُيُوْنٍ – اٰخِذِيْنَ ماۤ اٰتَاهُمْ رَبُّهُمْ اِنَّهُمْ كَانُوْا قَبْلَ ذٰلِكَ مُحْسِنِيْنَ – كَانُوْا قَلِيْلًا مِّنَ اللَّيْلِ مَا يَهْجَعُوْنَ – وَبِالْاَسْحَارِ هُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ
নিশ্চয় মুত্তাক্বীরা থাকবে জান্নাতে ও ঝর্ণাসমূহের মধ্যে। তারা (আনন্দের সাথে) গ্রহণ করতে থাকবে, যা তাদের প্রতিপালক তাদেরকে দান করবেন। কেননা তারা ইতোপূর্বে নেককার ছিল। তারা রাত্রির খুব কম অংশই নিদ্রা যেত এবং রাতের শেষ প্রহরে (আল্লাহর কাছে) ক্ষমাপ্রার্থনা করত। (সূরা যারিয়াত, ১৫–১৮)
ব্যাখ্যা : তারা শুধু শুয়ে শুয়ে সারারাত কাটিয়ে দিত না বরং রাতের প্রারম্ভে, মধ্যভাগে বা শেষভাগে কম হোক বা বেশি হোক কিছু সময় জেগে আল্লাহর ইবাদাত করে কাটাত। যারা তাদের রাতসমূহ পাপ ও অশ্লীল কাজকর্মে কাটায় এবং তারপরও মাগফিরাত প্রার্থনা করার চিন্তাটুকু তাদের মনে জাগে না, এরা তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। এদের অবস্থা ছিল এই যে, তারা রাতের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আল্লাহর ইবাদাতে ব্যয় করত এবং এরপরেও রাতের শেষাংশে আপন প্রভুর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করত। هُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ (তারা ক্ষমাপ্রার্থনা করে) কথাটির মধ্যে এ বিষয়েও একটি ইঙ্গিত আছে যে, তাদের জন্য এ আচরণই শোভনীয় ছিল। তারাই ছিল আল্লাহর দাসত্বের এরূপ পরাকাষ্ঠা দেখানোর যোগ্য। যারা গোনাহ করার পরও গর্ব করে চলে, সে নির্লজ্জ পাপীদের আচরণ এরূপ হতে পারত না।
সবসময় দান খয়রাত করা :
اَلَّذِيْنَ يُنْفِقُوْنَ اَمْوَالَهُمْ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ سِرًّا وَّعَلَانِيَةً فَلَهُمْ اَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْۚ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ
যারা রাতে ও দিনে, গোপনে এবং প্রকাশ্যে তাদের মাল খরচ করে। তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে প্রতিদান। আর তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না। (সূরা বাক্বারা– ২৭৪)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর বান্দাদের সাথে তাদের আচরণ ছিল এই যে, আল্লাহ তাদেরকে যা কিছুই দান করেছিলেন তাতে তারা কেবল নিজেদের অধিকার আছে বলে মনে করত না; বরং তাদের মধ্যে এ অনুভূতিও ছিল যে, তাদের সম্পদে আল্লাহর এমন প্রত্যেক বান্দার অধিকার আছে, যারা তাদের সাহায্যের মুখাপেক্ষী। ফলে যে ইয়াতীম শিশু অসহায় হয়ে পড়েছে, যে বিধবার কোন আশ্রয় নেই, যে অক্ষম ব্যক্তি নিজের রোজগারের জন্য চেষ্টা করতে পারে না, যে ব্যক্তি বেকার ও কর্মহীন হয়ে পড়েছে কিংবা যার উপার্জন প্রয়োজন পূরণে যথেষ্ট হচ্ছে না, যে ব্যক্তি কোন দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে এবং নিজে নিজের ক্ষতিপূরণে সক্ষম নয়, মোটকথা যে অভাবী ব্যক্তির অবস্থা তার নজরে পড়েছে সে তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে গেছে।
تَتَجَافٰى جُنُوْبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَّطَمَعًاؗ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ
তাদের দেহ বিছানা থেকে আলাদা হয়ে থাকে, তারা তাদের প্রতিপালককে আহবান করতে থাকে ভয় ও আশায় এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে। (সূরা সাজদা– ১৬)
ধৈর্যশীল, সত্যবাদী এবং বিনয়ী হওয়া :
لِلَّذِيْنَ اتَّقَوْا عِنْدَ رَبِّهِمْ جَنَّاتٌ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا وَاَزْوَاجٌ مُّطَهَّرَةٌ وَّرِضْوَانٌ مِّنَ اللهِؕ وَاللهُ بَصِيْرٌ ۢبِالْعِبَادِ – اَلَّذِيْنَ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَاۤ اِنَّنَاۤ اٰمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ – اَلصَّابِرِيْنَ وَالصَّادِقِيْنَ وَالْقَانِتِيْنَ وَالْمُنْفِقِيْنَ وَالْمُسْتَغْفِرِيْنَ بِالْاَسْحَارِ
মুত্তাক্বীদের জন্য তাদের রবের নিকট রয়েছে এমন জান্নাত, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়ে যাবে; সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। তাদের জন্য রয়েছে পবিত্র স্ত্রীগণ এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ব্যাপারে দৃষ্টিদানকারী। (এ লোকদের গুণাবলি হচ্ছে) তারা বলে, হে আমাদের রব! আমরা ঈমান এনেছি। অতএব আমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দিন এবং আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন। তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, বিনয়ী, দানকারী এবং শেষ রাত্রে ক্ষমা প্রার্থনাকারী। (সূরা আলে ইমরান, ১৫–১৭)
রাগ দমন করা ও মানুষের ভুল ক্ষমা করে দেয়া :
اُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِيْنَ – اَلَّذِيْنَ يُنْفِقُوْنَ فِى السَّرَّآءِ وَالضَّرَّآءِ وَالْكَاظِمِيْنَ الْغَيْظَ وَالْعَافِيْنَ عَنِ النَّاسِؕ وَاللهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِيْنَ
জান্নাত প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে মুত্তাক্বীদের জন্য, যারা খরচ করে সচ্ছল–অসচ্ছল উভয় অবস্থায়; তারা রাগ দমনকারী ও মানুষের দোষ ক্ষমাকারী। আর আল্লাহ সদ্ব্যবহারকারীদেরকে ভালোবাসেন।
(সূরা আলে ইমরানু ১৩৩, ১৩৪)
কবীরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা :
اِنْ تَجْتَنِبُوْا كَبَآئِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَنُدْخِلْكُمْ مُّدْخَلًا كَرِيْمًا
যদি তোমরা কবীরা গোনাহসমূহ থেকে দূরে থাক, যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে, তবে আমি তোমাদের সগীরা গোনাহগুলো ক্ষমা করে দেব এবং তোমাদেরকে সম্মানজনক স্থানে প্রবেশ করাব। (সূরা নিসা– ৩১)
অহংকার না করা :
تِلْكَ الدَّارُ الْاٰخِرَةُ نَجْعَلُهَا لِلَّذِيْنَ لَا يُرِيْدُوْنَ عُلُوًّا فِى الْاَرْضِ وَلَا فَسَادًاؕ وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِيْنَ
এটা আখিরাতের আবাস যা আমি নির্ধারিত করি তাদের জন্য, যারা এ পৃথিবীতে উগ্রতা প্রকাশ করে না এবং বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায় না। আর শুভ পরিণাম মুত্তাক্বীদের জন্য। (সূরা ক্বাসাস– ৮৩)
কু–প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে বিরত থাকা :
وَاَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّه وَنَهَى النَّفْسَ عَنِ الْهَوٰى – فَاِنَّ الْجَنَّةَ هِيَ الْمَاْوٰى
যে ব্যক্তি নিজ প্রতিপালকের সম্মুখে দন্ডায়মান হওয়ার ভয় করে এবং নিজেকে কু–প্রবৃত্তি থেকে বিরত রাখে তার বাসস্থান হবে জান্নাত। (সূরা নাযি‘আত– ৪১)
وَعِبَادُ الرَّحْمٰنِ الَّذِيْنَ يَمْشُوْنَ عَلَى الْاَرْضِ هَوْنًا وَّاِذَا خَاطَبَهُمُ الْجَاهِلُوْنَ قَالُوْا سَلَامًا – وَالَّذِيْنَ يَبِيْتُوْنَ لِرَبِّهِمْ سُجَّدًا وَّقِيَامًا – وَالَّذِيْنَ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا اصْرِفْ عَنَّا عَذَابَ جَهَنَّمَ اِنَّ عَذَابَهَا كَانَ غَرَامًا – اِنَّهَا سَآءَتْ مُسْتَقَرًّا وَّمُقَامًا – وَالَّذِيْنَ اِذَاۤ اَنْفَقُوْا لَمْ يُسْرِفُوْا وَلَمْ يَقْتُرُوْا وَكَانَ بَيْنَ ذٰلِكَ قَوَامًا – وَالَّذِيْنَ لَا يَدْعُوْنَ مَعَ اللهِ اِلٰهًا اٰخَرَ وَلَا يَقْتُلُوْنَ النَّفْسَ الَّتِيْ حَرَّمَ اللهُ اِلَّا بِالْحَقِّ وَلَا يَزْنُوْنَ وَمَنْ يَّفْعَلْ ذٰلِكَ يَلْقَ اَثَامًا – يُضَاعَفْ لَهُ الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيَخْلُدْ فِيْهٖ مُهَانًا – اِلَّا مَنْ تَابَ وَاٰمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَاُولٰٓئِكَ يُبَدِّلُ اللهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍؕ وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا – وَمَنْ تَابَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَاِنَّهٗ يَتُوْبُ اِلَى اللهِ مَتَابًا – وَالَّذِيْنَ لَا يَشْهَدُوْنَ الزُّوْرَ وَاِذَا مَرُّوْا بِاللَّغْوِ مَرُّوْا كِرَامًا – وَالَّذِيْنَ اِذَا ذُكِّرُوْا بِاٰيَاتِ رَبِّهِمْ لَمْ يَخِرُّوْا عَلَيْهَا صُمًّا وَّعُمْيَانًا – وَالَّذِيْنَ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ اَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ اَعْيُنٍ وَّاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِيْنَ اِمَامًا – اُولٰٓئِكَ يُجْزَوْنَ الْغُرْفَةَ بِمَا صَبَرُوْا وَيُلَقَّوْنَ فِيْهَا تَحِيَّةً وَّسَلَامًا – خَالِدِيْنَ فِيْهَا حَسُنَتْ مُسْتَقَرًّا وَّمُقَامًا
রহমানের বান্দা (জান্নাতী) তো তারাই, যারা পৃথিবীতে বিনয়ের সাথে চলাফেরা করে। যখন অজ্ঞ ব্যক্তিরা তাদেরকে সম্বোধন করে তখন তারা বলে, সালাম। যারা তাদের প্রতিপালকের জন্য সিজদারত ও দন্ডায়মান অবস্থায় রাত্রিযাপন করে। যারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে দূরে রাখুন, কেননা এর শাস্তি ভীষণ যন্ত্রণাদায়ক। (জেনে রেখো) অবশ্যই জাহান্নাম আশ্রয়স্থল ও বাসস্থানের জন্য খুবই নিকৃষ্ট। (রহমানের বান্দাদের আরো বৈশিষ্ট্য হচ্ছে) যখন তারা ব্যয় করে, তখন অপচয় করে না এবং কৃপণতাও করে না; বরং তারা মধ্যমপন্থা অবলম্বন করে। যারা আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্যকে ডাকে না। যারা ন্যায়সঙ্গত কারণ ছাড়া আল্লাহ যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন তাকে হত্যা করে না এবং যারা ব্যভিচার করে না। যে এরূপ করবে সে কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হবেই। কিয়ামতের দিন তার শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে এবং সেখানে সে অনন্তকাল অপদস্থ হতে থাকবে। তবে তারা নয় যারা তাওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে; আল্লাহ এমন ব্যক্তির গোনাহসমূহকে নেকী দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। (কেননা) আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু। আর যে তাওবা করে এবং নেক কাজ করে, সে তো প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর দিকেই প্রত্যাবর্তন করে। (রহমানের বান্দাদের আরো বৈশিষ্ট্য হচ্ছে) যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না। যারা অনর্থক বিষয়ের সম্মুখীন হলে সম্মানের সাথে তা পরিহার করে। যাদেরকে তাদের প্রতিপালকের আয়াত স্মরণ করিয়ে দিলে বধির ও অন্ধের মতো আচরণ করে না এবং যারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তান দান করুন, যাদেরকে দেখলে আমাদের চোখ জুড়ায়। আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাক্বীদের ইমাম বানিয়ে দিন। এ সকল লোকদেরকে তাদের ধৈর্যের কারণে সুউচ্চ কক্ষ দেয়া হবে এবং তাদেরকে সেখানে সম্ভাষণ জানানো হবে অভিবাদন ও সালাম সহকারে; সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। আর তা কতই না উত্তম আশ্রয়স্থল ও সুন্দর আবাসস্থল!
(সূরা ফুরক্বান, ৬৩–৭৬)
ব্যাখ্যা : তারা কোন লোকের সাথে অশালীন আচরণ করে না এবং দোষারোপের জবাবে দোষারোপ করে না। তারা প্রত্যেক বেহুদাপনার জবাবে বেহুদাপনায় লিপ্ত হয় না। বরং যারাই তাদের সাথে এসব আচরণ করে, তাদেরকে সালাম দিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে চলে যায়। তাদের রাত আরাম-আয়েশে, নাচ-গানে, খেলতামাশায়, আড্ডাবাজী ও চুরি-চামারিতে অতিবাহিত হয় না। তারা জাহেলিয়াতের এসব পরিচিত খারাপ কাজগুলোর পরিবর্তে সমাজে এমনসব লোকদের মতো সৎকর্ম সম্পাদন করে, যাদের রাত কাটে আল্লাহর দরবারে দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে দু‘আ ও ইবাদাত করার মধ্য দিয়ে। ইবাদাত তাদের মধ্যে কোন অহংকারের জন্ম দেয় না। অধিক ইবাদাতের ফলে আগুন তাদেরকে স্পর্শ করতে পারবে না- এ ধরনের আত্মগর্বও তাদের মনে সৃষ্টি হয় না। বরং নিজেদের সমস্ত সৎকাজ ও ইবাদাত থাকা সত্ত্বেও তারা এ ভয়ে কাঁপতে থাকে যে, এসব আমল কবুল হলো কি না? আবার তারা আমলের বিনিময়ে জান্নাত ক্রয় করে নেয়ার অহংকারও করে না। বরং তারা নিজেদের মানবিক দুর্বলতার কথা চিন্তা করে সর্বদা আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহের উপর ভরসা করে। তাদের অবস্থা এ নয় যে, আরাম-আয়েশ, বিলাসিতা, মদ-জুয়া, বন্ধুবান্ধব, মেলা ও বিয়ে-শাদীর পেছনে অথবা নিজেদের সামর্থ্যের চেয়ে অনেক বেশি করে নিজেকে উপস্থাপনের জন্য খাবার-দাবার, পোশাক-পরিচ্ছদ, বাড়ি-গাড়ি, সাজ-গোজ ইত্যাদির পেছনে অঢেল সম্পদ ব্যয় করে চলে। আবার তারা এমন অর্থলোভীর মতোও নয় যে, যারা প্রতিটি পয়সা গুণে গুণে জমা রাখে; যারা নিজেও ভালোভাবে খায় না, নিজের সামর্থ্যানুযায়ী নিজের ছেলে-মেয়ে ও পরিবার-পরিজনের প্রয়োজনও সঠিকভাবে পূর্ণ করে না এবং কোন ভালো কাজে প্রাণ খুলে কোনকিছু ব্যয়ও করে না। বরং তারা ভারসাম্য রক্ষা করে চলে, যা আল্লাহর প্রকৃত সৎ বান্দাদের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
তারা কোন মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না। এমন কোন জিনিসকে প্রকৃত ঘটনা হিসেবে গণ্য করে না, যাকে তারা সত্য বলে জানে না। তারা দাঁড়িয়ে মিথ্যাচার দেখে না এবং তা দেখার সংকল্পও করে না। তারা এমন লোক নয়, যারা আল্লাহর আয়াত শুনে একটুও নড়ে না। বরং তারা এর দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়। সংশ্লিষ্ট আয়াতগুলোতে যেসব নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তারা তা মেনে চলে। যা ফরয করা হয়েছে, তা অবশ্যই পালন করে। যে কাজের নিন্দা করা হয়েছে, তা থেকে বিরত থাকে। যে আযাবের ভয় দেখানো হয়েছে, তার কল্পনা করতেই তাদের হৃদয় কেঁপে ওঠে। তারা দু‘আ করার সময় কেবল নিজের জন্য দু‘আ করে না পরিবারের সকলের জন্যও দু‘আ করে। তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! তাদেরকে ঈমান ও সৎকাজের তাওফীক দান করো এবং পরিচ্ছন্ন চারিত্রিক গুণাবলির অধিকারী করো। কারণ একজন মুমিন তার স্ত্রী ও সন্তানদের দৈহিক সৌন্দর্য ও আরাম-আয়েশ থেকে নয়, বরং সদাচার ও সচ্চরিত্রতা থেকেই মানসিক প্রশান্তি লাভ করে। দুনিয়ায় যারা তার কাছে সবচেয়ে প্রিয়, তাদেরকে জাহান্নামের ইন্ধনে পরিণত হতে দেখার চেয়ে বেশি কষ্টকর বিষয় আর কী হতে পারে? তারা এমন লোক, যারা ধন-দৌলত ও মাহাত্ম্যের ক্ষেত্রে নয় বরং আল্লাহভীতি ও সৎকর্মশীলতার ক্ষেত্রে পরস্পরের অগ্রবর্তী হওয়ার চেষ্টা করে।
قَدْ اَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ – اَ لَّذِيْنَ هُمْ فِيْ صَلَاتِهِمْ خَاشِعُوْنَ – وَالَّذِيْنَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُوْنَ – وَالَّذِيْنَ هُمْ لِلزَّكَاةِ فَاعِلُوْنَ – وَالَّذِيْنَ هُمْ لِفُرُوْجِهِمْ حَافِظُوْنَ – اِلَّا عَلٰۤى اَزْوَاجِهِمْ اَوْ مَا مَلَكَتْ اَيْمَانُهُمْ فَاِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُوْمِيْنَ – فَمَنِ ابْتَغٰى وَرَآءَ ذٰلِكَ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْعَادُوْنَ – وَالَّذِيْنَ هُمْ لِاَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُوْنَ – وَالَّذِيْنَ هُمْ عَلٰى صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُوْنَ – اُولٰٓئِكَ هُمُ الْوَارِثُوْنَ – اَ لَّذِيْنَ يَرِثُوْنَ الْفِرْدَوْسَ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
অবশ্যই ঐ সকল ঈমানদারগণ সফলতা লাভ করবে, যারা বিনয়ের সাথে নিজেদের সালাত আদায় করে, যারা অনর্থক বিষয় থেকে দূরে থাকে, যারা সঠিকভাবে যাকাত দিয়ে থাকে এবং যারা নিজেদের লজ্জাস্থানকে হেফাজত করে, তবে তাদের স্ত্রী অথবা মালিকানাভুক্ত দাসীদের ব্যতীত; (কেননা) এতে তারা তিরস্কৃত হবে না। আর যারা এদেরকে বাদ দিয়ে অন্য (কাউকে) কামনা করে, তারাই সীমালঙ্ঘনকারী। (আর তারাও সফলতা লাভ করবে) যারা নিজেদের আমানত ও অঙ্গীকার রক্ষা করে এবং যারা নিজেদের সালাতের হেফাজত করে- তারাই হবে উত্তরাধিকারী। তারা জান্নাতুল ফিরদাউসের উত্তরাধিকারী হবে, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। (সূরা মু’মিনূন, ১–১১)
اَلَّذِيْنَ يُوْفُوْنَ بِعَهْدِ اللهِ وَلَا يَنْقُضُوْنَ الْمِيْثَاقَ – وَالَّذِيْنَ يَصِلُوْنَ مَاۤ اَمَرَ اللهُ بِهٖۤ اَنْ يُّوْصَلَ وَيَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ وَيَخَافُوْنَ سُوْٓءَ الْحِسَابِ – وَالَّذِيْنَ صَبَرُوا ابْتِغَآءَ وَجْهِ رَبِّهِمْ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاَنْفَقُوْا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَّعَلَانِيَةً وَّيَدْرَءُوْنَ بِالْحَسَنَةِ السَّيِّئَةَ اُولٰٓئِكَ لَهُمْ عُقْبَى الدَّارِ – جَنَّاتُ عَدْنٍ يَّدْخُلُوْنَهَا وَمَنْ صَلَحَ مِنْ اٰبَآئِهِمْ وَاَزْوَاجِهِمْ وَذُرِّيَّاتِهِمْ وَالْمَلَآئِكَةُ يَدْخُلُوْنَ عَلَيْهِمْ مِّنْ كُلِّ بَابٍ – سَلَامٌ عَلَيْكُمْ بِمَا صَبَرْتُمْ فَنِعْمَ عُقْبَى الدَّارِ
যারা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করে, যারা চুক্তি ভঙ্গ করে না এবং যারা সেসব সম্পর্ক ঠিক রাখে, যা ঠিক রাখার জন্য আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন। আর যারা নিজ প্রতিপালককে এবং কঠিন হিসাবকে ভয় করে, যারা তাদের প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের আশায় ধৈর্যধারণ করে, যারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে, যারা আমার দেয়া রিযিক হতে গোপনে ও প্রকাশ্যে দান করে, যারা ভালো দিয়ে মন্দকে দূরীভূত করে- তাদের জন্যই রয়েছে শুভ পরিণাম। (আর তা হচ্ছে) চিরস্থায়ী জান্নাত; সেখানে তারা প্রবেশ করবে এবং তাদের মাতা-পিতা, স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে তারাও। আর প্রত্যেক দরজা দিয়ে তাদের নিকট ফেরেশতারা প্রবেশ করবে। তারা বলবে, তোমাদের উপর সালাম (শান্তি বর্ষিত হোক)। কেননা তোমরা ধৈর্যধারণ করেছিলে। (অতএব লক্ষ করো) পরকালের এ গৃহ কতই না উত্তম!
(সূরা রা‘দ, ২০–২৪)
জান্নাতীদের আরো পরিচয় হচ্ছে :
اَلَّذِيْنَ هُمْ عَلٰى صَلَاتِهِمْ دَآئِمُوْنَ – وَالَّذِيْنَ فِۤيْ اَمْوَالِهِمْ حَقٌّ مَّعْلُوْمٌ – لِلسَّآئِلِ وَالْمَحْرُوْمِ – وَالَّذِيْنَ يُصَدِّقُوْنَ بِيَوْمِ الدِّيْنِ – وَالَّذِيْنَ هُمْ مِّنْ عَذَابِ رَبِّهِمْ مُّشْفِقُوْنَ – اِنَّ عَذَابَ رَبِّهِمْ غَيْرُ مَاْمُوْنٍ – وَالَّذِيْنَ هُمْ لِفُرُوْجِهِمْ حَافِظُوْنَ – اِلَّا عَلٰۤى اَزْوَاجِهِمْ اَوْ مَا مَلَكَتْ اَيْمَانُهُمْ فَاِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُوْمِيْنَ – فَمَنِ ابْتَغٰى وَرَآءَ ذٰلِكَ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْعَادُوْنَ – وَالَّذِيْنَ هُمْ لِاَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُوْنَ – وَالَّذِيْنَ هُمْ بِشَهَادَاتِهِمْ قَآئِمُوْنَ وَالَّذِيْنَ هُمْ عَلٰى صَلَاتِهِمْ يُحَافِظُوْنَ – اُولٰٓئِكَ فِيْ جَنَّاتٍ مُّكْرَمُوْنَ
যারা নিজেদের সালাতে সর্বদা কায়েম থাকে। (যারা মনে করে) তাদের নিজেদের সম্পদে ভিক্ষুক ও বঞ্চিতদের হক রয়েছে। যারা কিয়ামতের দিনকে সত্য বলে বিশ্বাস করে। যারা তাদের প্রতিপালকের শাস্তি সম্পর্কে ভীত–সন্ত্রস্ত, (প্রকৃতপক্ষে) তাদের প্রতিপালকের শাস্তি থেকে নির্ভয় হওয়া যায় না। যারা তাদের স্ত্রী অথবা মালিকানাভুক্ত দাসী ব্যতীত নিজেদের লজ্জাস্থানকে হেফাজত করে, কেননা এতে তারা তিরস্কৃত হবে না। যারা এদেরকে বাদ দিয়ে অন্যকে কামনা করে তারাই সীমালঙ্ঘনকারী হবে। যারা নিজেদের আমানত এবং ওয়াদা রক্ষা করে। যারা যথাযথভাবে সাক্ষ্য প্রদান করে। আর যারা নিজেদের সালাতের প্রতি যত্নবান- তারা সম্মানের সাথে জান্নাতে অবস্থান করবে। (সূরা মা‘আরিজ, ২৩–৩৫)
জান্নাতী বান্দারা চার প্রকার :
وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَالرَّسُوْلَ فَاُولٰٓئِكَ مَعَ الَّذِيْنَ اَنْعَمَ اللهُ عَلَيْهِمْ مِّنَ النَّبِيِّيْنَ وَالصِّدِّيْقِيْنَ وَالشُّهَدَآءِ وَالصَّالِحِيْنَۚ وَحَسُنَ اُولٰٓئِكَ رَفِيْقًا
যারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে তারা সকলেই নবী, সিদ্দীক, শহীদ ও সালেহীনদের অন্তর্ভুক্ত; যারা নিয়ামতপ্রাপ্তদের সাথে থাকবে এবং তারাই একে অপরের উত্তম সঙ্গী হবে। (সূরা নিসা– ৬৯)
ব্যাখ্যা : সিদ্দিকীন : যারা আল্লাহর সকল বিধিবিধান মেনে চলেন এবং সৎকর্মে অগ্রগামী থাকেন। তাদেরকে আউলিয়াও বলা হয়।
শুহাদা : যারা আল্লাহর পথে শাহাদাতবরণ করেন।
সালেহীন : যারা ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নাতে মুয়াক্কাদার উপর আমল করেন এবং সকল প্রকার কবীরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকেন, তারা হলেন সাধারণ মুসলিম।
জান্নাতীদের আরো গুণ হচ্ছে- দ্বীনের হেফাজত করা :
وَاُزْلِفَتِ الْجَنَّةُ لِلْمُتَّقِيْنَ غَيْرَ بَعِيْدٍ – هٰذَا مَا تُوْعَدُوْنَ لِكُلِّ اَوَّابٍ حَفِيْظٍ – مَنْ خَشِيَ الرَّحْمٰنَ بِالْغَيْبِ وَجَآءَ بِقَلْبٍ مُّنِيْبٍ – اُدْخُلُوْهَا بِسَلَامٍؕ ذٰلِكَ يَوْمُ الْخُلُوْدِ
জান্নাতকে নিকটবর্তী করা হবে মুত্তাক্বীদের জন্য, দূরত্বহীনভাবে। (বলা হবে) এ হলো সেই জান্নাত, যার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল প্রত্যেক আল্লাহ অভিমুখী ও হেফাজতকারীদের জন্য। যারা না দেখে দয়াময় (আল্লাহ) কে ভয় করে এবং (আল্লাহ) অভিমুখী অন্তর নিয়ে উপস্থিত হয়। (তাদেরকে বলা হবে) তোমরা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করো, এটা হলো চিরকাল অবস্থানের দিন। (সূরা ক্বাফ, ৩১–৩৪)
ব্যাখ্যা : اَوَّابٌ (আওয়াব) শব্দটি ব্যাপক অর্থবহ। এর অর্থ এমন ব্যক্তি যে নাফরমানি এবং প্রবৃত্তি চরিতার্থ করার পথ পরিহার করে আনুগত্য এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের পথ অবলম্বন করেছে। আল্লাহর পছন্দ নয় এমন প্রতিটি জিনিস পরিত্যাগ করে এবং আল্লাহ যা পছন্দ করেন তা গ্রহণ করে। আনুগত্যের পথ থেকে পা সামান্য বিচ্যুত হলেই সে বিচলিত হয়ে পড়ে এবং তাওবা করে আনুগত্যের পথে ফিরে আসে। যে অধিক মাত্রায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজের সমস্ত ব্যাপারে তাঁর স্মরণাপন্ন হয়।
حَفِيْظٌ (হাফিয) শব্দটির অর্থ রক্ষাকারী। এর দ্বারা এমন লোককে বুঝানো হয়েছে, যে আল্লাহ নির্ধারিত সীমারেখা তথা তাঁর ফরয এবং হারামসমূহ রক্ষা করে। যে আল্লাহর পক্ষ থেকে তার উপর আরোপিত অধিকারসমূহ সংরক্ষণ করে। ঈমান এনে তার রবের সাথে যে চুক্তি ও অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয়েছে তা রক্ষা করে। যে তার শক্তি, শ্রম ও সাধনার পাহারাদারী করে, যাতে এসবের কোনটি ভ্রান্ত কাজে নষ্ট না হয়। যে তাওবা করে তা রক্ষা করে। যে সর্বাবস্থায় আত্মসমালোচনা করতে থাকে যে, সে তার কথা ও কাজে কোথাও তার রবের নাফরমানি করছে কি না। সে কোথাও পরম দয়ালু আল্লাহর দেখা পেত না, তা সত্ত্বেও তাঁর নাফরমানি করতে ভয় পায়। প্রকাশ্যে দৃষ্টিগোচর হয় এমনসব শক্তি ও সত্তার তুলনায় তার মনে অদেখা রহমানের ভয় অধিক প্রবল ছিল। তিনি ‘রহমান’ বা দয়ালু এ কথা জানা সত্ত্বেও তাঁর রহমতের ভরসায় সে গোনাহের কাজে লিপ্ত হয়নি, বরং সবসময়ই তাঁর অসন্তুষ্টিকে ভয় পেয়েছে। শুধু শাস্তির আশঙ্কায় মুমিন বান্দার অন্তরে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি হয় না। বরং আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব, বড়ত্ব ও মর্যাদার অনুভূতি সবসময় তার মনে এক ভয়ানক ভীতিভাব জাগিয়ে রাখে।
مُنِيْبٌ (মুনীব) শব্দটির অর্থ একদিকে মুখ করা এবং বার বার সেদিকেই ফিরে যাওয়া। قَلْبٌ مُّنِيْبٌ (ক্বালবুম মুনীব) অর্থ এমন হৃদয়, যা সব দিক থেকে এক আল্লাহর দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। অতঃপর সারা জীবন তার উপর যে পরিস্থিতিই আসুক না কেন তাঁর দিকেই ফিরে এসেছে। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর কাছে প্রকৃত সম্মানের অধিকারী সে ব্যক্তি যে শুধু মুখে নয় বরং পূর্ণ নিষ্ঠার সাথে সরল মনে তাঁর একান্ত আপনজন হয়ে যায়। যে গুণাবলি থাকলে কোন ব্যক্তি জান্নাত লাভের উপযুক্ত হয় এসব আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা সে গুণাবলি বর্ণনা করেছেন। ঐগুলো হচ্ছে, (১) তাক্বওয়া, (২) আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন, (৩) আল্লাহর পথে নিজের সম্পর্কের স্বযত্ন পাহারাদারী, (৪) আল্লাহকে না দেখে এবং তাঁর ক্ষমা পরায়ণতায় বিশ্বাসী হয়েও তাঁকে ভয় করা এবং (৫) অনুরক্ত মন নিয়ে আল্লাহর কাছে পৌঁছা অর্থাৎ মৃত্যু পর্যন্ত অনুরক্ত আচরণ করে যাওয়া।
জানুমাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করা :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا هَلْ اَدُلُّكُمْ عَلٰى تِجَارَةٍ تُنْجِيْكُمْ مِّنْ عَذَابٍ اَلِيْمٍ – تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَرَسُوْلِه وَتُجَاهِدُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ بِاَمْوَالِكُمْ وَاَنْفُسِكُمْؕ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ – يَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ وَيُدْخِلْكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِيْ جَنَّاتِ عَدْنٍؕ ذٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ
হে ঈমানদারগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি ব্যবসার কথা বলে দেব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দেবে? আর তা হলো, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনবে এবং নিজেদের সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা জানতে। এর ফলে আল্লাহ তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়ে যাবে। সেটা স্থায়ী জান্নাত, যাতে রয়েছে উত্তম বাসস্থান। আর এটাই বিরাট সফলতা। (সূরা সাফ, ১০–১২)
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করা :
وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ يُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَاؕ وَذٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ
যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে, তিনি তাকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত থাকবে। সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে। আর এটাই মহাসাফল্য। (সূরা নিসা– ১৩)
দ্বীনের উপর অটল থাকা :
اِنَّ الَّذِيْنَ قَالُوْا رَبُّنَا اللهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوْا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَآئِكَةُ اَلَّا تَخَافُوْا وَلَا تَحْزَنُوْا وَاَبْشِرُوْا بِالْجَنَّةِ الَّتِيْ كُنْتُمْ تُوْعَدُوْنَ
যারা বলে– আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, অতঃপর এ কথার উপর অনড় থাকে; নিশ্চয় তাদের নিকট ফেরেশতা নাযিল হয়ে বলে, তোমরা ভয় করো না এবং কোন চিন্তাও করো না। তোমরা সেই জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ করো, যার ওয়াদা তোমাদেরকে দেয়া হয়েছিল। (সূরা হা-মীম সাজদা– ৩০)
ব্যাখ্যা : পরকালীন জীবনে তারা জান্নাত লাভ করবে। কারণ তারা পার্থিব জীবনে সত্য পথে চলেছে। জীবনের প্রতিটি বিভাগে, প্রতিটি ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক বিষয়ে তারা সত্য ও ন্যায়নিষ্ঠ পথ অবলম্বন করেছে এবং বাতিলের পথ পরিহার করেছে। সঠিক পথের উপর দৃঢ়তা এবং অন্যায় পথ থেকে দূরে থাকার শক্তি তাদের রবের পক্ষ থেকে তারা লাভ করেছে। তাদের রব তাদেরকে ঈমানের কারণে এ সুযোগ দেন। এগুলো এমন ঈমানের ফল নয়, যার অর্থ হয় নিছক বিশ্বাস করা; বরং এমন ঈমানের ফল, যা চরিত্র ও কর্মকান্ডের পরিচালক শক্তিতে শক্তিশালী হয়ে কর্ম ও চরিত্রে নেকীর প্রকাশ ঘটে। যে ব্যক্তি ঈমান এনেও বেঈমানের মতো জীবন-যাপন করে সে আল্লাহর উপর ঈমান আনয়নের পর সৎকর্মশীল হয়ে জীবন যাপনকারীর মতো পুরস্কার পাওয়ার আশা করতে পারে না। তারা আল্লাহকে রব বলে ঘোষণা করে থেমে যায়নি এবং তার সাথে অন্য কাউকে রব হিসেবেও গ্রহণ করেনি, আর এর সাথে কোন ভ্রান্ত আকীদার সংমিশ্রণও ঘটায়নি। বরং এ আকীদা পোষণ করার পর সারা জীবন তার উপর প্রতিষ্ঠিত থেকেছে, তার পরিপন্থী অন্য সকল আকীদা প্রত্যাখান করেছে এবং নিজের কর্মজীবনে তাওহীদের দাবীসমূহও পূরণ করেছে।
মুত্তাক্বী হওয়া :
اُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِيْنَ
আর তা (জান্নাত) প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে মুত্তাক্বীদের জন্য। (সূরা আলে ইমরানু ১৩৩)
اِنَّ الْمُتَّقِيْنَ فِيْ ظِلَالٍ وَّعُيُوْنٍ
নিশ্চয় মুত্তাক্বীরা থাকবে ছায়া ও ঝর্ণাবহুল স্থানে। (সূরা মুরসালাত– ৪১)
আল্লাহর সামনে হাজির হওয়াকে ভয় করা :
وَلِمَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهٖ جَنَّتَانِ – فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ
আর যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের সামনে উপস্থিত হওয়াকে ভয় করে, তার জন্য রয়েছে দু’টি জান্নাত। অতএব হে জিন ও মানব! তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? (সূরা আর রহমান- ৪৬, ৪৭)
না দেখে আল্লাহকে ভয় করা :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَيْبِ لَهُمْ مَّغْفِرَةٌ وَّاَجْرٌ كَبِيْرٌ
নিশ্চয় যারা তাদের প্রতিপালককে না দেখে ভয় করে, তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার। (সূরা মুলক– ১২)
ধৈর্যধারণ করা :
وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَنُبَوِّئَنَّهُمْ مِّنَ الْجَنَّةِ غُرَفًا تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَاؕ نِعْمَ اَجْرُ الْعَامِلِيْنَ – اَلَّذِيْنَ صَبَرُوْا وَعَلٰى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ
যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, নিশ্চয় আমি তাদেরকে জান্নাতের সুউচ্চ প্রাসাদসমূহে স্থান দেব, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হবে; সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। আর তা সৎকর্মশীলদের জন্য কতই না উত্তম পুরস্কার, যারা ধৈর্যধারণ করে এবং স্বীয় প্রতিপালকের উপর ভরসা করে। (সূরা আনকাবূত– ৫৮, ৫৯)
সৎকর্ম করা :
وَمَنْ يَّعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ مِنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَاُولٰٓئِكَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ وَلَا يُظْلَمُوْنَ نَقِيْرًا
পুরুষ অথবা নারীর মধ্যে ঈমানদার অবস্থায় যে কেউ সৎকাজ করবে, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি অণুপরিমাণও যুলুম করা হবে না। (সূরা নিসা– ১২৪)
শেষ রাত্রে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করা ও ক্ষমাপ্রার্থনা করা :
اِنَّ الْمُتَّقِيْنَ فِيْ جَنَّاتٍ وَّعُيُوْنٍ – اٰخِذِيْنَ ماۤ اٰتَاهُمْ رَبُّهُمْ اِنَّهُمْ كَانُوْا قَبْلَ ذٰلِكَ مُحْسِنِيْنَ – كَانُوْا قَلِيْلًا مِّنَ اللَّيْلِ مَا يَهْجَعُوْنَ – وَبِالْاَسْحَارِ هُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ
নিশ্চয় মুত্তাক্বীরা থাকবে জান্নাতে ও ঝর্ণাসমূহের মধ্যে। তারা (আনন্দের সাথে) গ্রহণ করতে থাকবে, যা তাদের প্রতিপালক তাদেরকে দান করবেন। কেননা তারা ইতোপূর্বে নেককার ছিল। তারা রাত্রির খুব কম অংশই নিদ্রা যেত এবং রাতের শেষ প্রহরে (আল্লাহর কাছে) ক্ষমাপ্রার্থনা করত। (সূরা যারিয়াত, ১৫–১৮)
ব্যাখ্যা : তারা শুধু শুয়ে শুয়ে সারারাত কাটিয়ে দিত না বরং রাতের প্রারম্ভে, মধ্যভাগে বা শেষভাগে কম হোক বা বেশি হোক কিছু সময় জেগে আল্লাহর ইবাদাত করে কাটাত। যারা তাদের রাতসমূহ পাপ ও অশ্লীল কাজকর্মে কাটায় এবং তারপরও মাগফিরাত প্রার্থনা করার চিন্তাটুকু তাদের মনে জাগে না, এরা তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। এদের অবস্থা ছিল এই যে, তারা রাতের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আল্লাহর ইবাদাতে ব্যয় করত এবং এরপরেও রাতের শেষাংশে আপন প্রভুর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করত। هُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ (তারা ক্ষমাপ্রার্থনা করে) কথাটির মধ্যে এ বিষয়েও একটি ইঙ্গিত আছে যে, তাদের জন্য এ আচরণই শোভনীয় ছিল। তারাই ছিল আল্লাহর দাসত্বের এরূপ পরাকাষ্ঠা দেখানোর যোগ্য। যারা গোনাহ করার পরও গর্ব করে চলে, সে নির্লজ্জ পাপীদের আচরণ এরূপ হতে পারত না।
সবসময় দান খয়রাত করা :
اَلَّذِيْنَ يُنْفِقُوْنَ اَمْوَالَهُمْ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ سِرًّا وَّعَلَانِيَةً فَلَهُمْ اَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْۚ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ
যারা রাতে ও দিনে, গোপনে এবং প্রকাশ্যে তাদের মাল খরচ করে। তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে প্রতিদান। আর তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না। (সূরা বাক্বারা– ২৭৪)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর বান্দাদের সাথে তাদের আচরণ ছিল এই যে, আল্লাহ তাদেরকে যা কিছুই দান করেছিলেন তাতে তারা কেবল নিজেদের অধিকার আছে বলে মনে করত না; বরং তাদের মধ্যে এ অনুভূতিও ছিল যে, তাদের সম্পদে আল্লাহর এমন প্রত্যেক বান্দার অধিকার আছে, যারা তাদের সাহায্যের মুখাপেক্ষী। ফলে যে ইয়াতীম শিশু অসহায় হয়ে পড়েছে, যে বিধবার কোন আশ্রয় নেই, যে অক্ষম ব্যক্তি নিজের রোজগারের জন্য চেষ্টা করতে পারে না, যে ব্যক্তি বেকার ও কর্মহীন হয়ে পড়েছে কিংবা যার উপার্জন প্রয়োজন পূরণে যথেষ্ট হচ্ছে না, যে ব্যক্তি কোন দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে এবং নিজে নিজের ক্ষতিপূরণে সক্ষম নয়, মোটকথা যে অভাবী ব্যক্তির অবস্থা তার নজরে পড়েছে সে তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে গেছে।
تَتَجَافٰى جُنُوْبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَّطَمَعًاؗ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ
তাদের দেহ বিছানা থেকে আলাদা হয়ে থাকে, তারা তাদের প্রতিপালককে আহবান করতে থাকে ভয় ও আশায় এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে। (সূরা সাজদা– ১৬)
ধৈর্যশীল, সত্যবাদী এবং বিনয়ী হওয়া :
لِلَّذِيْنَ اتَّقَوْا عِنْدَ رَبِّهِمْ جَنَّاتٌ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا وَاَزْوَاجٌ مُّطَهَّرَةٌ وَّرِضْوَانٌ مِّنَ اللهِؕ وَاللهُ بَصِيْرٌ ۢبِالْعِبَادِ – اَلَّذِيْنَ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَاۤ اِنَّنَاۤ اٰمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ – اَلصَّابِرِيْنَ وَالصَّادِقِيْنَ وَالْقَانِتِيْنَ وَالْمُنْفِقِيْنَ وَالْمُسْتَغْفِرِيْنَ بِالْاَسْحَارِ
মুত্তাক্বীদের জন্য তাদের রবের নিকট রয়েছে এমন জান্নাত, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়ে যাবে; সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। তাদের জন্য রয়েছে পবিত্র স্ত্রীগণ এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ব্যাপারে দৃষ্টিদানকারী। (এ লোকদের গুণাবলি হচ্ছে) তারা বলে, হে আমাদের রব! আমরা ঈমান এনেছি। অতএব আমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দিন এবং আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন। তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, বিনয়ী, দানকারী এবং শেষ রাত্রে ক্ষমা প্রার্থনাকারী। (সূরা আলে ইমরান, ১৫–১৭)
রাগ দমন করা ও মানুষের ভুল ক্ষমা করে দেয়া :
اُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِيْنَ – اَلَّذِيْنَ يُنْفِقُوْنَ فِى السَّرَّآءِ وَالضَّرَّآءِ وَالْكَاظِمِيْنَ الْغَيْظَ وَالْعَافِيْنَ عَنِ النَّاسِؕ وَاللهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِيْنَ
জান্নাত প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে মুত্তাক্বীদের জন্য, যারা খরচ করে সচ্ছল–অসচ্ছল উভয় অবস্থায়; তারা রাগ দমনকারী ও মানুষের দোষ ক্ষমাকারী। আর আল্লাহ সদ্ব্যবহারকারীদেরকে ভালোবাসেন।
(সূরা আলে ইমরানু ১৩৩, ১৩৪)
কবীরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা :
اِنْ تَجْتَنِبُوْا كَبَآئِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَنُدْخِلْكُمْ مُّدْخَلًا كَرِيْمًا
যদি তোমরা কবীরা গোনাহসমূহ থেকে দূরে থাক, যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে, তবে আমি তোমাদের সগীরা গোনাহগুলো ক্ষমা করে দেব এবং তোমাদেরকে সম্মানজনক স্থানে প্রবেশ করাব। (সূরা নিসা– ৩১)
অহংকার না করা :
تِلْكَ الدَّارُ الْاٰخِرَةُ نَجْعَلُهَا لِلَّذِيْنَ لَا يُرِيْدُوْنَ عُلُوًّا فِى الْاَرْضِ وَلَا فَسَادًاؕ وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِيْنَ
এটা আখিরাতের আবাস যা আমি নির্ধারিত করি তাদের জন্য, যারা এ পৃথিবীতে উগ্রতা প্রকাশ করে না এবং বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায় না। আর শুভ পরিণাম মুত্তাক্বীদের জন্য। (সূরা ক্বাসাস– ৮৩)
কু–প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে বিরত থাকা :
وَاَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّه وَنَهَى النَّفْسَ عَنِ الْهَوٰى – فَاِنَّ الْجَنَّةَ هِيَ الْمَاْوٰى
যে ব্যক্তি নিজ প্রতিপালকের সম্মুখে দন্ডায়মান হওয়ার ভয় করে এবং নিজেকে কু–প্রবৃত্তি থেকে বিরত রাখে তার বাসস্থান হবে জান্নাত। (সূরা নাযি‘আত– ৪১)
জাহান্নাম হলো নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল :
وَلِلَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِرَبِّهِمْ عَذَابُ جَهَنَّمَؕ وَبِئْسَ الْمَصِيْرُ
যারা তাদের প্রতিপালকের সাথে কুফরী করে, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আযাব। আর সে প্রত্যাবর্তন কতই না নিকৃষ্ট! (সূরা মুলক– ৬)
জাহান্নামে প্রাচীর থাকবে :
اِنَّاۤ اَعْتَدْنَا لِلظَّالِمِيْنَ نَارًا اَحَاطَ بِهِمْ سُرَادِقُهَاؕ وَاِنْ يَّسْتَغِيْثُوْا يُغَاثُوْا بِمَآءٍ كَالْمُهْلِ
অপরাধীদের জন্য আমি আগুন তৈরি করে রেখেছি। এর প্রাচীর তাদেরকে ঘিরে রাখবে। আর তারা যখন পানি প্রার্থনা করবে, তখন তাদেরকে গলিত ধাতুর ন্যায় পানি দেয়া হবে। (সূরা কাহফু ২৯)
জাহান্নামে লোহার হাতুড়ি থাকবে :
وَلَهُمْ مَّقَامِعُ مِنْ حَدِيْدٍ ‐ كُلَّمَاۤ اَرَادُوْاۤ اَنْ يَّخْرُجُوْا مِنْهَا مِنْ غَمٍّ اُعِيْدُوْا فِيْهَاۗ وَذُوْقُوْا عَذَابَ الْحَرِيْقِ
তাদের জন্য লৌহ নির্মিত গদা (মুগুর) থাকবে, যখনই তারা জাহান্নামের যন্ত্রণা থেকে বের হতে চাইবে তখনই তাদেরকে তাতে ফিরিয়ে দেয়া হবে এবং বলা হবে, দহন যন্ত্রণার স্বাদ গ্রহণ করো। (সূরা হজ্জ– ২১, ২২)
وَلِلَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِرَبِّهِمْ عَذَابُ جَهَنَّمَؕ وَبِئْسَ الْمَصِيْرُ
যারা তাদের প্রতিপালকের সাথে কুফরী করে, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আযাব। আর সে প্রত্যাবর্তন কতই না নিকৃষ্ট! (সূরা মুলক– ৬)
জাহান্নামে প্রাচীর থাকবে :
اِنَّاۤ اَعْتَدْنَا لِلظَّالِمِيْنَ نَارًا اَحَاطَ بِهِمْ سُرَادِقُهَاؕ وَاِنْ يَّسْتَغِيْثُوْا يُغَاثُوْا بِمَآءٍ كَالْمُهْلِ
অপরাধীদের জন্য আমি আগুন তৈরি করে রেখেছি। এর প্রাচীর তাদেরকে ঘিরে রাখবে। আর তারা যখন পানি প্রার্থনা করবে, তখন তাদেরকে গলিত ধাতুর ন্যায় পানি দেয়া হবে। (সূরা কাহফু ২৯)
জাহান্নামে লোহার হাতুড়ি থাকবে :
وَلَهُمْ مَّقَامِعُ مِنْ حَدِيْدٍ ‐ كُلَّمَاۤ اَرَادُوْاۤ اَنْ يَّخْرُجُوْا مِنْهَا مِنْ غَمٍّ اُعِيْدُوْا فِيْهَاۗ وَذُوْقُوْا عَذَابَ الْحَرِيْقِ
তাদের জন্য লৌহ নির্মিত গদা (মুগুর) থাকবে, যখনই তারা জাহান্নামের যন্ত্রণা থেকে বের হতে চাইবে তখনই তাদেরকে তাতে ফিরিয়ে দেয়া হবে এবং বলা হবে, দহন যন্ত্রণার স্বাদ গ্রহণ করো। (সূরা হজ্জ– ২১, ২২)
জাহান্নামে রয়েছে ফেরেশতা :
عَلَيْهَا تِسْعَةَ عَشَرَ
আর জাহান্নামে রয়েছে ১৯ জন (ফেরেশতা)। (সূরা মুদ্দাস্সির– ৩০)
ফেরেশতাদের একজন মালিক :
وَنَادَوْا يَا مَالِكُ لِيَقْضِ عَلَيْنَا رَبُّكَؕ قَالَ اِنَّكُمْ مَّاكِثُوْنَ
জাহান্নামীরা ডাকবে, হে মালিক! আল্লাহকে বলো, তিনি যেন আমাদের মৃত্যু দিয়ে দেন। উত্তরে আল্লাহ বলবেন, তোমরা চিরকাল জাহান্নামে থাকবে। (সূরা যুখরুফু ৭৭)
একজন খাযিন :
وَقَالَ الَّذِيْنَ فِى النَّارِ لِخَزَنَةِ جَهَنَّمَ ادْعُوْا رَبَّكُمْ يُخَفِّفْ عَنَّا يَوْمًا مِّنَ الْعَذَابِ
জাহান্নামীরা খাযিন ফেরেশতাকে ডেকে বলবে, আল্লাহর নিকট দু‘আ করুন তিনি যেন আমাদের আযাবকে অন্তত একটি দিনের জন্য হালকা করেন। (সূরা মু’মিনু ৪৯)
জাহান্নামের ফেরেশতাদের বৈশিষ্ট্য :
عَلَيْهَا مَلَآئِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَّا يَعْصُوْنَ اللهَ مَاۤ اَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُوْنَ مَا يُؤْمَرُوْنَ
জাহান্নামে রয়েছে এমন ফেরেশতা, যারা নির্মম স্বভাব ও কঠোর হৃদয়ের অধিকারী। তারা আল্লাহর নির্দেশের বিপরীত কিছুই করে না। আর তাদেরকে যে নির্দেশ দেয়া হয়, তারা তা-ই পালন করে থাকে। (সূরা তাহরীম– ৬)
عَلَيْهَا تِسْعَةَ عَشَرَ
আর জাহান্নামে রয়েছে ১৯ জন (ফেরেশতা)। (সূরা মুদ্দাস্সির– ৩০)
ফেরেশতাদের একজন মালিক :
وَنَادَوْا يَا مَالِكُ لِيَقْضِ عَلَيْنَا رَبُّكَؕ قَالَ اِنَّكُمْ مَّاكِثُوْنَ
জাহান্নামীরা ডাকবে, হে মালিক! আল্লাহকে বলো, তিনি যেন আমাদের মৃত্যু দিয়ে দেন। উত্তরে আল্লাহ বলবেন, তোমরা চিরকাল জাহান্নামে থাকবে। (সূরা যুখরুফু ৭৭)
একজন খাযিন :
وَقَالَ الَّذِيْنَ فِى النَّارِ لِخَزَنَةِ جَهَنَّمَ ادْعُوْا رَبَّكُمْ يُخَفِّفْ عَنَّا يَوْمًا مِّنَ الْعَذَابِ
জাহান্নামীরা খাযিন ফেরেশতাকে ডেকে বলবে, আল্লাহর নিকট দু‘আ করুন তিনি যেন আমাদের আযাবকে অন্তত একটি দিনের জন্য হালকা করেন। (সূরা মু’মিনু ৪৯)
জাহান্নামের ফেরেশতাদের বৈশিষ্ট্য :
عَلَيْهَا مَلَآئِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَّا يَعْصُوْنَ اللهَ مَاۤ اَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُوْنَ مَا يُؤْمَرُوْنَ
জাহান্নামে রয়েছে এমন ফেরেশতা, যারা নির্মম স্বভাব ও কঠোর হৃদয়ের অধিকারী। তারা আল্লাহর নির্দেশের বিপরীত কিছুই করে না। আর তাদেরকে যে নির্দেশ দেয়া হয়, তারা তা-ই পালন করে থাকে। (সূরা তাহরীম– ৬)
সাউদ :
سَاُرْهِقُهٗ صَعُوْدًا
আমি তাকে (কাফিরকে) ‘সাউদ’ (পাহাড়ে) চড়াব। (সূরা মুদ্দাস্সির– ১৭)
গাই :
فَخَلَفَ مِنْ ۢبَعْدِهِمْ خَلْفٌ اَضَاعُوا الصَّلَاةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا
তাদের পরে এমন লোকের আবির্ভাব হয়েছে, যারা সালাতকে নষ্ট করেছে এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে। অচিরেই তারা জাহান্নামের ‘গাই’ নামক গর্তে প্রবেশ করবে। (সূরা মারইয়াম– ৫৯)
ওয়াইল :
وَيْلٌ لِّكُلِّ هُمَزَةٍ لُّمَزَةٍ
যারা সামনে এবং পশ্চাতে মানুষের দোষ বর্ণনা করে তাদের জন্য ‘ওয়াইল’ (জাহান্নামের গর্ত) নির্ধারিত রয়েছে। (সূরা হুমাযাহ– ১)
জাহান্নামের স্তর সাতটি :
وَاِنَّ جَهَنَّمَ لَمَوْعِدُهُمْ اَجْمَعِيْنَ – لَهَا سَبْعَةُ اَبْوَابٍ لِّكُلِّ بَابٍ مِّنْهُمْ جُزْءٌ مَّقْسُوْمٌ
তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে জাহান্নাম। এর সাতটি দরজা আছে। প্রত্যেক দরজার জন্য তাদের একেক দল চিহ্নিত রয়েছে। (সূরা হিজর– ৪৩)
ব্যাখ্যা : জাহান্নামের সাতটি স্তর আছে। আর প্রত্যেক স্তরের জন্য পৃথক পৃথক দরজা আছে। যেসব গোমরাহী ও গোনাহের পথ পাড়ি দিয়ে মানুষ নিজের জন্য জাহান্নামের দরজা খুলে নেয়, সেগুলোর প্রেক্ষিতে জাহান্নামের এ দরজাগুলো নির্ধারিত হয়েছে। যেমন কেউ নাস্তিক্যবাদের পথ পাড়ি দিয়ে জাহান্নামের দিকে যায়। কেউ যায় শিরকের পথ পাড়ি দিয়ে, কেউ মুনাফিকীর পথ ধরে, কেউ প্রবৃত্তিপূজা, কেউ অশ্লীলতা ও ফাসিকী, কেউ যুলুম-নিপীড়ন এবং কেউ ভ্রষ্টতা ও কুফরীর প্রচার ও প্রতিষ্ঠার পথ পাড়ি দিয়ে। আবার কেউ সত্যপথের সৈনিকদের বিরোধিতা করে জাহান্নামের দিকে চলে যায়।
মুনাফিকরা জাহান্নামের সবচেয়ে নিম্নস্তরে অবস্থান করবে :
اِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ فِى الدَّرْكِ الْاَسْفَلِ مِنَ النَّارِ
নিশ্চয় মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বাপেক্ষা নিম্নস্তরে অবস্থান করবে। (সূরা নিসা– ১৪৫)
কুরআনে জাহান্নামের সাতটি স্তরের নাম রয়েছে :
১। জাহান্নাম :
اِنَّ جَهَنَّمَ كَانَتْ مِرْصَادًا – لِلطَّاغِيْنَ مَاٰبًا
নিশ্চয় জাহান্নাম সীমালঙ্ঘনকারীদের বাসস্থান হিসেবে অপেক্ষায় রয়েছে। (সূরা নাবা– ২১, ২২)
২। লাযা :
كَلَّاۤ اِنَّهَا لَظٰى – نَزَّاعَةً لِّلشَّوٰى
সাবধান! অপরাধীদের জন্য রয়েছে লাযা (অ গ্নশিখা), যা চামড়াকে খসিয়ে দেবে। (সূরা মা‘আরিজ– ১৫, ১৬)
৩। হুতামাহ :
كَلَّا لَيُنْۢبَذَنَّ فِى الْحُطَمَةِ – وَمَاۤ اَدْرَاكَ مَا الْحُطَمَةُ – نَارُ اللهِ الْمُوْقَدَةُ
অবশ্যই সে হুতামায় নিক্ষিপ্ত হবে। আপনি কি জানেন হুতামাহ কী? তা হচ্ছে আল্লাহর জ্বলন্ত আগুন। (সূরা হুমাযাহ, ৪–৬)
৪। জাহীম :
اِنَّ لَدَيْنَاۤ اَنْكَالًا وَّجَحِيْمًا
নিশ্চয় আমার কাছে রয়েছে অপরাধীদের জন্য শিকল এবং জাহীম নামক অগ্নিকুন্ড। (সূরা মুয্যাম্মিল– ১২)
৫। সাঈর :
: اِنَّاۤ اَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِيْنَ سَلَاسِلَاْ وَاَغْلَالًا وَّسَعِيْرًا
নিশ্চয় আমি কাফিরদের জন্য নির্মাণ করে রেখেছি শিকল, বেড়ি এবং সাঈর অর্থাৎ জাহান্নাম। (সূরা দাহর– ৪)
৬। সাকার :
سَاُصْلِيْهِ سَقَرَ – وَمَاۤ اَدْرَاكَ مَا سَقَرُ – لَا تُبْقِيْ وَلَا تَذَرُ – لَوَّاحَةٌ لِّلْبَشَرِ
অচিরেই আমি তাকে সাকারে প্রবেশ করাব। আপনি কি জানেন সাকার কী? যা বাকিও রাখবে না আবার ছাড়বেও না। মানুষের চামড়া ঝলসে দেবে। (সূরা মুদ্দাস্সির, ২৬–২৯)
৭। হাভিয়া :
وَاَمَّا مَنْ خَفَّتْ مَوَازِيْنُهٗ – فَاُمُّهٗ هَاوِيَةٌ ‐ وَمَاۤ اَدْرَاكَ مَا هِيَهْ – نَارٌ حَامِيَةٌ
যার নেক আমলের পাল্লা হালকা হবে তার ঠিকানা হবে হাভিয়া। আপনি কি জানেন হাভিয়া কী? সেটা হলো জ্বলন্ত আগুন। (সূরা ক্বারিয়াহ, ৮–১১)
سَاُرْهِقُهٗ صَعُوْدًا
আমি তাকে (কাফিরকে) ‘সাউদ’ (পাহাড়ে) চড়াব। (সূরা মুদ্দাস্সির– ১৭)
গাই :
فَخَلَفَ مِنْ ۢبَعْدِهِمْ خَلْفٌ اَضَاعُوا الصَّلَاةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا
তাদের পরে এমন লোকের আবির্ভাব হয়েছে, যারা সালাতকে নষ্ট করেছে এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে। অচিরেই তারা জাহান্নামের ‘গাই’ নামক গর্তে প্রবেশ করবে। (সূরা মারইয়াম– ৫৯)
ওয়াইল :
وَيْلٌ لِّكُلِّ هُمَزَةٍ لُّمَزَةٍ
যারা সামনে এবং পশ্চাতে মানুষের দোষ বর্ণনা করে তাদের জন্য ‘ওয়াইল’ (জাহান্নামের গর্ত) নির্ধারিত রয়েছে। (সূরা হুমাযাহ– ১)
জাহান্নামের স্তর সাতটি :
وَاِنَّ جَهَنَّمَ لَمَوْعِدُهُمْ اَجْمَعِيْنَ – لَهَا سَبْعَةُ اَبْوَابٍ لِّكُلِّ بَابٍ مِّنْهُمْ جُزْءٌ مَّقْسُوْمٌ
তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে জাহান্নাম। এর সাতটি দরজা আছে। প্রত্যেক দরজার জন্য তাদের একেক দল চিহ্নিত রয়েছে। (সূরা হিজর– ৪৩)
ব্যাখ্যা : জাহান্নামের সাতটি স্তর আছে। আর প্রত্যেক স্তরের জন্য পৃথক পৃথক দরজা আছে। যেসব গোমরাহী ও গোনাহের পথ পাড়ি দিয়ে মানুষ নিজের জন্য জাহান্নামের দরজা খুলে নেয়, সেগুলোর প্রেক্ষিতে জাহান্নামের এ দরজাগুলো নির্ধারিত হয়েছে। যেমন কেউ নাস্তিক্যবাদের পথ পাড়ি দিয়ে জাহান্নামের দিকে যায়। কেউ যায় শিরকের পথ পাড়ি দিয়ে, কেউ মুনাফিকীর পথ ধরে, কেউ প্রবৃত্তিপূজা, কেউ অশ্লীলতা ও ফাসিকী, কেউ যুলুম-নিপীড়ন এবং কেউ ভ্রষ্টতা ও কুফরীর প্রচার ও প্রতিষ্ঠার পথ পাড়ি দিয়ে। আবার কেউ সত্যপথের সৈনিকদের বিরোধিতা করে জাহান্নামের দিকে চলে যায়।
মুনাফিকরা জাহান্নামের সবচেয়ে নিম্নস্তরে অবস্থান করবে :
اِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ فِى الدَّرْكِ الْاَسْفَلِ مِنَ النَّارِ
নিশ্চয় মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বাপেক্ষা নিম্নস্তরে অবস্থান করবে। (সূরা নিসা– ১৪৫)
কুরআনে জাহান্নামের সাতটি স্তরের নাম রয়েছে :
১। জাহান্নাম :
اِنَّ جَهَنَّمَ كَانَتْ مِرْصَادًا – لِلطَّاغِيْنَ مَاٰبًا
নিশ্চয় জাহান্নাম সীমালঙ্ঘনকারীদের বাসস্থান হিসেবে অপেক্ষায় রয়েছে। (সূরা নাবা– ২১, ২২)
২। লাযা :
كَلَّاۤ اِنَّهَا لَظٰى – نَزَّاعَةً لِّلشَّوٰى
সাবধান! অপরাধীদের জন্য রয়েছে লাযা (অ গ্নশিখা), যা চামড়াকে খসিয়ে দেবে। (সূরা মা‘আরিজ– ১৫, ১৬)
৩। হুতামাহ :
كَلَّا لَيُنْۢبَذَنَّ فِى الْحُطَمَةِ – وَمَاۤ اَدْرَاكَ مَا الْحُطَمَةُ – نَارُ اللهِ الْمُوْقَدَةُ
অবশ্যই সে হুতামায় নিক্ষিপ্ত হবে। আপনি কি জানেন হুতামাহ কী? তা হচ্ছে আল্লাহর জ্বলন্ত আগুন। (সূরা হুমাযাহ, ৪–৬)
৪। জাহীম :
اِنَّ لَدَيْنَاۤ اَنْكَالًا وَّجَحِيْمًا
নিশ্চয় আমার কাছে রয়েছে অপরাধীদের জন্য শিকল এবং জাহীম নামক অগ্নিকুন্ড। (সূরা মুয্যাম্মিল– ১২)
৫। সাঈর :
: اِنَّاۤ اَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِيْنَ سَلَاسِلَاْ وَاَغْلَالًا وَّسَعِيْرًا
নিশ্চয় আমি কাফিরদের জন্য নির্মাণ করে রেখেছি শিকল, বেড়ি এবং সাঈর অর্থাৎ জাহান্নাম। (সূরা দাহর– ৪)
৬। সাকার :
سَاُصْلِيْهِ سَقَرَ – وَمَاۤ اَدْرَاكَ مَا سَقَرُ – لَا تُبْقِيْ وَلَا تَذَرُ – لَوَّاحَةٌ لِّلْبَشَرِ
অচিরেই আমি তাকে সাকারে প্রবেশ করাব। আপনি কি জানেন সাকার কী? যা বাকিও রাখবে না আবার ছাড়বেও না। মানুষের চামড়া ঝলসে দেবে। (সূরা মুদ্দাস্সির, ২৬–২৯)
৭। হাভিয়া :
وَاَمَّا مَنْ خَفَّتْ مَوَازِيْنُهٗ – فَاُمُّهٗ هَاوِيَةٌ ‐ وَمَاۤ اَدْرَاكَ مَا هِيَهْ – نَارٌ حَامِيَةٌ
যার নেক আমলের পাল্লা হালকা হবে তার ঠিকানা হবে হাভিয়া। আপনি কি জানেন হাভিয়া কী? সেটা হলো জ্বলন্ত আগুন। (সূরা ক্বারিয়াহ, ৮–১১)
জাহান্নামের আযাব অপমানজনক :
اِنَّ الَّذِيْنَ يُؤْذُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ لَعَنَهُمُ اللهُ فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ وَاَعَدَّ لَهُمْ عَذَابًا مُّهِيْنًا
নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদের প্রতি দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশাপ দেন। আর তিনি তাদের জন্য অপমানজনক শাস্তি তৈরি করে রেখেছেন। (সূরা আহযাব– ৫৭)
وَلَعَذَابُ الْاٰخِرَةِ اَخْزٰى وَهُمْ لَا يُنْصَرُوْنَ
আর পরকালের আযাব খুবই লাঞ্ছনাদায়ক। তখন পাপীদেরকে কোন সাহায্যও করা হবে না। (সূরা হা-মীম সাজদা– ১৬)
সেই আযাব যন্ত্রণাদায়ক :
وَالظَّالِمِيْنَ اَعَدَّ لَهُمْ عَذَابًا اَلِيْمًا
আর আল্লাহ যালিমদের জন্য কষ্টদায়ক শাস্তি নির্ধারণ করে রেখেছেন। (সূরা দাহর– ৩১)
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِاٰيَاتِ رَبِّهِمْ لَهُمْ عَذَابٌ مِّنْ رِّجْزٍ اَلِيْمٌ
আর যারা তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনকে অস্বীকার করবে, তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরা জাসিয়া– ১১)
সেই আযাব উত্তপ্ত আগুনের :
وَلَهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ عَذَابُ النَّارِ
পাপীদের জন্য পরকালে আগুনের আযাব রয়েছে। (সূরা হাশর– ৩)
اِنَّ الَّذِيْنَ فَتَنُوا الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ ثُمَّ لَمْ يَتُوْبُوْا فَلَهُمْ عَذَابُ جَهَنَّمَ وَلَهُمْ عَذَابُ الْحَرِيْقِ
যারা মুমিন নর–নারীকে কষ্ট দেয় তারপরও তাওবা করে না, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের উত্তপ্ত আযাব। (সূরা বুরুজ– ১০)
সে আযাব হবে কঠিন ও সর্বনাশকারী :
فَلَنُنَبِّئَنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِمَا عَمِلُوْاؗ وَلَنُذِيْقَنَّهُمْ مِّنْ عَذَابٍ غَلِيْظٍ
আমি কাফিরদেরকে তাদের কৃতকর্মের ফলাফল অবহিত করব। অতঃপর তাদেরকে কঠিন শাস্তি আস্বাদন করাব। (সূরা হা–মীম সিজদা– ৫০)
وَالَّذِيْنَ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا اصْرِفْ عَنَّا عَذَابَ جَهَنَّمَ اِنَّ عَذَابَهَا كَانَ غَرَامًا
আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা, যারা দু‘আ করে- হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে বাঁচান। নিশ্চয় এর আযাব সর্বনাশকারী। (সূরা ফুরক্বানু ৪৫)
সে আযাব বিরাট আকারের :
وَمَنْ يَّظْلِمْ مِّنْكُمْ نُذِقْهُ عَذَابًا كَبِيْرًا
তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অত্যাচার করবে, আমি তাকে বড় আকারের আযাবের স্বাদ ভোগ করাব। (সূরা ফুরক্বানু ১৯)
وَمَنْ يَّقْتُلْ مُؤْمِنًا مُّتَعَمِّدًا فَجَزَآؤُهٗ جَهَنَّمُ خَالِدًا فِيْهَا وَغَضِبَ اللهُ عَلَيْهِ وَلَعَنَهٗ وَاَعَدَّ لَهٗ عَذَابًا عَظِيْمًا
যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে কোন মুমিনকে হত্যা করবে, তার শাস্তি হবে চিরস্থায়ী জাহান্নাম। তার প্রতি রয়েছে আল্লাহর গযব ও লানত। আর তিনি তার জন্য তৈরি করে রেখেছেন বিরাট আকারের শাস্তি। (সূরা নিসা– ৯৩)
সে আযাব অপেক্ষায় আছে :
اِنَّ جَهَنَّمَ كَانَتْ مِرْصَادًا – لِلطَّاغِيْنَ مَاٰبًا
সীমালঙ্ঘনকারী ও অবাধ্যদের বাসস্থান হিসেবে জাহান্নাম ওঁৎ পেতে অপেক্ষা করছে। (সূরা নাবা– ২১, ২২)
ব্যাখ্যা : শিকার ধরার উপযোগী করে যে জায়গাটিকে গোপন ঘাটি হিসেবে তৈরি করা হয় এবং অজ্ঞাতসারে শিকার সেখানে চলে এসে তার মধ্যে আটকে যায় তাকেই বলে ফাঁদ। জাহান্নামের ক্ষেত্রে এ শব্দটি ব্যবহার করার কারণ হচ্ছে, আল্লাহর বিরুদ্ধে যারা বিদ্রোহাত্মক ভূমিকা অবলম্বন করে তারা জাহান্নামের ভয়ে ভীত না হয়ে দুনিয়ায় এ মনে করে লাফালাফি করে বেড়াচ্ছে যে, আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্ব তাদের জন্য একটি ঢালাও বিচরণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে, এখানে তাদের পাকড়াও হওয়ার কোন আশঙ্কা নেই। কিন্তু জাহান্নাম তাদের জন্য এমন একটি গোপন ফাঁদ, যেখানে তারা আকস্মিকভাবে আটকা পড়ে যাবে এবং সেখান থেকে বের হওয়ার কোন উপায় থাকবে না।
সে আযাব অতি নিকটে :
اِنَّاۤ اَنْذَرْنَاكُمْ عَذَابًا قَرِيْبًا
আমি তোমাদেরকে নিকটবর্তী আযাবের ভয় দেখাচ্ছি। (সূরা নাবা– ৪০)
আল্লাহর শাস্তি খুবই শক্ত ও কঠিন :
اِلَّا مَنْ تَوَلّٰى وَكَفَرَ – فَيُعَذِّبُهُ اللهُ الْعَذَابَ الْاَكْبَرَ
যে কুফরী করবে এবং মুখ ফিরিয়ে নেবে, আল্লাহ তাকে বড় ধরনের শাস্তি দেবেন। (সূরা গাশিয়া– ২৩, ২৪)
اِنَّ بَطْشَ رَبِّكَ لَشَدِيْدٌ
নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালকের পাকড়াও খুবই শক্ত। (সূরা বুরুজ– ১২)
وَتَرَى النَّاسَ سُكَارٰى وَمَا هُمْ بِسُكَارٰى وَلٰكِنَّ عَذَابَ اللهِ شَدِيْدٌ
কিয়ামতের দিন তুমি মানুষকে মাতাল অবস্থায় দেখবে, আসলে তারা মাতাল নয়; বরং আল্লাহর আযাব বড়ই কঠিন। (সূরা হজ্জ– ২)
فَيَوْمَئِذٍ لَّا يُعَذِّبُ عَذَابَهٗۤ اَحَدٌ – وَلَا يُوْثِقُ وَثَاقَهٗۤ اَحَدٌ
সেদিন আল্লাহর আযাবের ন্যায় আযাব কেউ দিতে পারবে না, আর তাঁর বাঁধনের মতো বাঁধনও কেউ দিতে পারবে না। (সূরা ফাজর– ২৫, ২৬)
জাহান্নামের আযাব হবে চিরস্থায়ী :
اَلَاۤ اِنَّ الظَّالِمِيْنَ فِيْ عَذَابٍ مُّقِيْمٍ
সাবধান! যালিমরা স্থায়ী আযাবের মধ্যে থাকবে। (সূরা শূরা– ৪৫)
لَابِثِيْنَ فِيْهَاۤ اَحْقَابًا
জাহান্নামীরা অনন্তকাল জাহান্নামের মধ্যে অবস্থান করবে। (সূরা নাবা–২৩)
وَمَنْ يَّعْصِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَيَتَعَدَّ حُدُوْدَهٗ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيْهَا
যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানি করবে এবং ইসলামের ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করবে আল্লাহ তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন, সেখানে সে চিরদিন থাকবে। (সূরা নিসা– ১৪)
اِنَّ الَّذِيْنَ يُؤْذُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ لَعَنَهُمُ اللهُ فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ وَاَعَدَّ لَهُمْ عَذَابًا مُّهِيْنًا
নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদের প্রতি দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশাপ দেন। আর তিনি তাদের জন্য অপমানজনক শাস্তি তৈরি করে রেখেছেন। (সূরা আহযাব– ৫৭)
وَلَعَذَابُ الْاٰخِرَةِ اَخْزٰى وَهُمْ لَا يُنْصَرُوْنَ
আর পরকালের আযাব খুবই লাঞ্ছনাদায়ক। তখন পাপীদেরকে কোন সাহায্যও করা হবে না। (সূরা হা-মীম সাজদা– ১৬)
সেই আযাব যন্ত্রণাদায়ক :
وَالظَّالِمِيْنَ اَعَدَّ لَهُمْ عَذَابًا اَلِيْمًا
আর আল্লাহ যালিমদের জন্য কষ্টদায়ক শাস্তি নির্ধারণ করে রেখেছেন। (সূরা দাহর– ৩১)
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِاٰيَاتِ رَبِّهِمْ لَهُمْ عَذَابٌ مِّنْ رِّجْزٍ اَلِيْمٌ
আর যারা তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনকে অস্বীকার করবে, তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরা জাসিয়া– ১১)
সেই আযাব উত্তপ্ত আগুনের :
وَلَهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ عَذَابُ النَّارِ
পাপীদের জন্য পরকালে আগুনের আযাব রয়েছে। (সূরা হাশর– ৩)
اِنَّ الَّذِيْنَ فَتَنُوا الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ ثُمَّ لَمْ يَتُوْبُوْا فَلَهُمْ عَذَابُ جَهَنَّمَ وَلَهُمْ عَذَابُ الْحَرِيْقِ
যারা মুমিন নর–নারীকে কষ্ট দেয় তারপরও তাওবা করে না, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের উত্তপ্ত আযাব। (সূরা বুরুজ– ১০)
সে আযাব হবে কঠিন ও সর্বনাশকারী :
فَلَنُنَبِّئَنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِمَا عَمِلُوْاؗ وَلَنُذِيْقَنَّهُمْ مِّنْ عَذَابٍ غَلِيْظٍ
আমি কাফিরদেরকে তাদের কৃতকর্মের ফলাফল অবহিত করব। অতঃপর তাদেরকে কঠিন শাস্তি আস্বাদন করাব। (সূরা হা–মীম সিজদা– ৫০)
وَالَّذِيْنَ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا اصْرِفْ عَنَّا عَذَابَ جَهَنَّمَ اِنَّ عَذَابَهَا كَانَ غَرَامًا
আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা, যারা দু‘আ করে- হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে বাঁচান। নিশ্চয় এর আযাব সর্বনাশকারী। (সূরা ফুরক্বানু ৪৫)
সে আযাব বিরাট আকারের :
وَمَنْ يَّظْلِمْ مِّنْكُمْ نُذِقْهُ عَذَابًا كَبِيْرًا
তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অত্যাচার করবে, আমি তাকে বড় আকারের আযাবের স্বাদ ভোগ করাব। (সূরা ফুরক্বানু ১৯)
وَمَنْ يَّقْتُلْ مُؤْمِنًا مُّتَعَمِّدًا فَجَزَآؤُهٗ جَهَنَّمُ خَالِدًا فِيْهَا وَغَضِبَ اللهُ عَلَيْهِ وَلَعَنَهٗ وَاَعَدَّ لَهٗ عَذَابًا عَظِيْمًا
যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে কোন মুমিনকে হত্যা করবে, তার শাস্তি হবে চিরস্থায়ী জাহান্নাম। তার প্রতি রয়েছে আল্লাহর গযব ও লানত। আর তিনি তার জন্য তৈরি করে রেখেছেন বিরাট আকারের শাস্তি। (সূরা নিসা– ৯৩)
সে আযাব অপেক্ষায় আছে :
اِنَّ جَهَنَّمَ كَانَتْ مِرْصَادًا – لِلطَّاغِيْنَ مَاٰبًا
সীমালঙ্ঘনকারী ও অবাধ্যদের বাসস্থান হিসেবে জাহান্নাম ওঁৎ পেতে অপেক্ষা করছে। (সূরা নাবা– ২১, ২২)
ব্যাখ্যা : শিকার ধরার উপযোগী করে যে জায়গাটিকে গোপন ঘাটি হিসেবে তৈরি করা হয় এবং অজ্ঞাতসারে শিকার সেখানে চলে এসে তার মধ্যে আটকে যায় তাকেই বলে ফাঁদ। জাহান্নামের ক্ষেত্রে এ শব্দটি ব্যবহার করার কারণ হচ্ছে, আল্লাহর বিরুদ্ধে যারা বিদ্রোহাত্মক ভূমিকা অবলম্বন করে তারা জাহান্নামের ভয়ে ভীত না হয়ে দুনিয়ায় এ মনে করে লাফালাফি করে বেড়াচ্ছে যে, আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্ব তাদের জন্য একটি ঢালাও বিচরণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে, এখানে তাদের পাকড়াও হওয়ার কোন আশঙ্কা নেই। কিন্তু জাহান্নাম তাদের জন্য এমন একটি গোপন ফাঁদ, যেখানে তারা আকস্মিকভাবে আটকা পড়ে যাবে এবং সেখান থেকে বের হওয়ার কোন উপায় থাকবে না।
সে আযাব অতি নিকটে :
اِنَّاۤ اَنْذَرْنَاكُمْ عَذَابًا قَرِيْبًا
আমি তোমাদেরকে নিকটবর্তী আযাবের ভয় দেখাচ্ছি। (সূরা নাবা– ৪০)
আল্লাহর শাস্তি খুবই শক্ত ও কঠিন :
اِلَّا مَنْ تَوَلّٰى وَكَفَرَ – فَيُعَذِّبُهُ اللهُ الْعَذَابَ الْاَكْبَرَ
যে কুফরী করবে এবং মুখ ফিরিয়ে নেবে, আল্লাহ তাকে বড় ধরনের শাস্তি দেবেন। (সূরা গাশিয়া– ২৩, ২৪)
اِنَّ بَطْشَ رَبِّكَ لَشَدِيْدٌ
নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালকের পাকড়াও খুবই শক্ত। (সূরা বুরুজ– ১২)
وَتَرَى النَّاسَ سُكَارٰى وَمَا هُمْ بِسُكَارٰى وَلٰكِنَّ عَذَابَ اللهِ شَدِيْدٌ
কিয়ামতের দিন তুমি মানুষকে মাতাল অবস্থায় দেখবে, আসলে তারা মাতাল নয়; বরং আল্লাহর আযাব বড়ই কঠিন। (সূরা হজ্জ– ২)
فَيَوْمَئِذٍ لَّا يُعَذِّبُ عَذَابَهٗۤ اَحَدٌ – وَلَا يُوْثِقُ وَثَاقَهٗۤ اَحَدٌ
সেদিন আল্লাহর আযাবের ন্যায় আযাব কেউ দিতে পারবে না, আর তাঁর বাঁধনের মতো বাঁধনও কেউ দিতে পারবে না। (সূরা ফাজর– ২৫, ২৬)
জাহান্নামের আযাব হবে চিরস্থায়ী :
اَلَاۤ اِنَّ الظَّالِمِيْنَ فِيْ عَذَابٍ مُّقِيْمٍ
সাবধান! যালিমরা স্থায়ী আযাবের মধ্যে থাকবে। (সূরা শূরা– ৪৫)
لَابِثِيْنَ فِيْهَاۤ اَحْقَابًا
জাহান্নামীরা অনন্তকাল জাহান্নামের মধ্যে অবস্থান করবে। (সূরা নাবা–২৩)
وَمَنْ يَّعْصِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَيَتَعَدَّ حُدُوْدَهٗ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيْهَا
যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানি করবে এবং ইসলামের ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করবে আল্লাহ তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন, সেখানে সে চিরদিন থাকবে। (সূরা নিসা– ১৪)
জাহান্নামের ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর :
فَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِيْ وَقُوْدُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ اُعِدَّتْ لِلْكَافِرِيْنَ
তোমরা সেই জাহান্নামকে ভয় করো, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। এটা তৈরি করা হয়েছে কাফিরদের জন্য। (সূরা বাক্বারা– ২৪)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا قُوْاۤ اَنْفُسَكُمْ وَاَهْلِيْكُمْ نَارًا وَّقُوْدُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার–পরিজনকে জাহান্নামের সেই আগুন থেকে রক্ষা করো, যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর। (সূরা তাহরীম– ৬)
কাফিররাও জাহান্নামের ইন্ধন হবে :
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَنْ تُغْنِيَ عَنْهُمْ اَمْوَالُهُمْ وَلَاۤ اَوْلَادُهُمْ مِّنَ اللهِ شَيْئًاؕ وَ اُولٰٓئِكَ هُمْ وَقُوْدُ النَّارِ
নিশ্চয় যারা কুফরী করে, তাদের ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততি আল্লাহর নিকট কোন কাজে আসবে না। আর তারাই হচ্ছে জাহান্নামের জ্বালানী। (সূরা আলে ইমরানু ১০)
অবাধ্য জিনেরাও জাহান্নামের ইন্ধন হবে :
وَاَمَّا الْقَاسِطُوْنَ فَكَانُوْا لِجَهَنَّمَ حَطَبًا
যারা সীমালঙ্ঘনকারী জিন, তারা জাহান্নামের জ্বালানী হবে। (সূরা জিনু ১৫)
মূর্তিপূজক ও তাদের মূর্তিসমূহও জাহান্নামের ইন্ধন হবে :
اِنَّكُمْ وَمَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ حَصَبُ جَهَنَّمَؕ اَنْتُمْ لَهَا وَارِدُوْنَ
নিঃসন্দেহে তোমরা এবং আল্লাহকে ছেড়ে তোমরা যেসব দেবতার পূজা করেছ সবাই জাহান্নামের জ্বালানী হবে। তোমরা সবাই তাতে প্রবেশ করবে। (সূরা আম্বিয়া– ৯৮)
فَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِيْ وَقُوْدُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ اُعِدَّتْ لِلْكَافِرِيْنَ
তোমরা সেই জাহান্নামকে ভয় করো, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। এটা তৈরি করা হয়েছে কাফিরদের জন্য। (সূরা বাক্বারা– ২৪)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا قُوْاۤ اَنْفُسَكُمْ وَاَهْلِيْكُمْ نَارًا وَّقُوْدُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার–পরিজনকে জাহান্নামের সেই আগুন থেকে রক্ষা করো, যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর। (সূরা তাহরীম– ৬)
কাফিররাও জাহান্নামের ইন্ধন হবে :
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَنْ تُغْنِيَ عَنْهُمْ اَمْوَالُهُمْ وَلَاۤ اَوْلَادُهُمْ مِّنَ اللهِ شَيْئًاؕ وَ اُولٰٓئِكَ هُمْ وَقُوْدُ النَّارِ
নিশ্চয় যারা কুফরী করে, তাদের ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততি আল্লাহর নিকট কোন কাজে আসবে না। আর তারাই হচ্ছে জাহান্নামের জ্বালানী। (সূরা আলে ইমরানু ১০)
অবাধ্য জিনেরাও জাহান্নামের ইন্ধন হবে :
وَاَمَّا الْقَاسِطُوْنَ فَكَانُوْا لِجَهَنَّمَ حَطَبًا
যারা সীমালঙ্ঘনকারী জিন, তারা জাহান্নামের জ্বালানী হবে। (সূরা জিনু ১৫)
মূর্তিপূজক ও তাদের মূর্তিসমূহও জাহান্নামের ইন্ধন হবে :
اِنَّكُمْ وَمَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ حَصَبُ جَهَنَّمَؕ اَنْتُمْ لَهَا وَارِدُوْنَ
নিঃসন্দেহে তোমরা এবং আল্লাহকে ছেড়ে তোমরা যেসব দেবতার পূজা করেছ সবাই জাহান্নামের জ্বালানী হবে। তোমরা সবাই তাতে প্রবেশ করবে। (সূরা আম্বিয়া– ৯৮)
জাহান্নামের আগুনের শক্তি অনেক বেশি :
قُلْ نَارُ جَهَنَّمَ اَشَدُّ حَرًّا لَّوْ كَانُوْا يَفْقَهُوْنَ
(হে নবী!) আপনি বলুন! জাহান্নামের আগুন অত্যাধিক গরম। যদি লোকেরা বুঝতে পারত!’’ (সূরা তাওবা– ৮১)
ব্যাখ্যা : আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল ﷺ বলেছেন, তোমাদের ব্যবহৃত আগুন জাহান্নামের আগুনের সত্তর ভাগের এক ভাগ। সাহাবারা বললেন, জ্বালানোর জন্য তো এ আগুনই যথেষ্ট। নবী ﷺ বললেন, হ্যাঁ, তা সত্ত্বেও পৃথিবীর আগুনের চেয়ে জাহান্নামের আগুন ৬৯ গুণ শক্তিশালী। (সহীহ বুখারী, হা/৩২৬৫)
সেই আগুন শিখাবিশিষ্ট :
سَيَصْلٰى نَارًا ذَاتَ لَهَبٍ
অচিরেই সে প্রবেশ করবে শিখা বিশিষ্ট আগুনে। (সূরা লাহাব– ০৩)
لَهُمْ مِّنْ فَوْقِهِمْ ظُلَلٌ مِّنَ النَّارِ وَمِنْ تَحْتِهِمْ ظُلَلٌؕ ذٰلِكَ يُخَوِّفُ اللهُ بِه عِبَادَهؕٗ يَا عِبَادِ فَاتَّقُوْنِ
জাহান্নামীদের জন্য উপর ও নিচ উভয় দিক থেকে রয়েছে আগুনের লেলিহান শিখা। আল্লাহ তার বান্দাদেরকে এ ব্যাপারে সতর্ক করছেন। হে আমার বান্দারা! তোমরা আমাকে ভয় করো। (সূরা যুমার– ১৬)
সে আগুন জ্বলন্ত :
فَاَنْذَرْتُكُمْ نَارًا تَلَظّٰى
আমি তোমাদেরকে প্রজ্বলিত আগুনের ভয় দেখাচ্ছি। (সূরা লাইল– ১৪)
সে আগুন ভয়াবহ :
اَلَّذِيْ يَصْلَى النَّارَ الْكُبْرٰى
সে প্রবেশ করবে মহা অগ্নিতে। (সূরা আলা– ১২)
সে আগুন উত্তপ্ত :
تَصْلٰى نَارًا حَامِيَةً
সে প্রবেশ করবে উত্তপ্ত আগুনে। (সূরা গাশিয়া– ৪)
সে আগুন বেষ্টনীতে আবদ্ধ :
عَلَيْهِمْ نَارٌ مُّؤْصَدَةٌ
জাহান্নামীদের জন্য রয়েছে আবদ্ধ আগুন। (সূরা বালাদু ২০)
সে আগুন দেহের সকল অঙ্গে পৌঁছবে :
تَلْفَحُ وُجُوْهَهُمُ النَّارُ وَهُمْ فِيْهَا كَالِحُوْنَ
আগুন তাদের চেহারা দগ্ধ করবে এবং সেখানে তারা বিকৃত অবস্থায় থাকবে। (সূরা মু’মিনূনু ১০৪)
اَلَّتِيْ تَطَّلِعُ عَلَى الْاَفْئِدَةِ – اِنَّهَا عَلَيْهِمْ مُّؤْصَدَةٌ – فِيْ عَمَدٍ مُّمَدَّدَةٍ
জাহানণামের আগুন মানুষের হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছবে। এ আগুনে তাদেরকে বেঁধে দেয়া হবে লম্বা লম্বা খুঁটিতে। (সূরা হুমাযাহ, ৭–৯)
হৃদয় পর্যন্ত জ্বালাবে এজন্য যে, মানুষ মরবে না; তাই তার শরীরের সবকিছু জ্বলবে। কিন্তু দুনিয়াতে মানুষের গোশত পুড়ার আগেই মানুষ মারা যায়।
সেই আগুন কেউ সরাতে পারবে না :
لَوْ يَعْلَمُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا حِيْنَ لَا يَكُفُّوْنَ عَنْ وُّجُوْهِهِمُ النَّارَ وَلَا عَنْ ظُهُوْرِهِمْ وَلَا هُمْ يُنْصَرُوْنَ
কাফিররা যদি সেই সময়ের কথা জানত যখন তারা তাদের মুখমন্ডল এবং পিঠ থেকে আগুন সরাতে পারবে না, এমনকি তাদেরকে কোন প্রকার সাহায্যও করা হবে না (তাহলে তারা কুফরী করত না)। (সূরা আম্বিয়া– ৩৯)
যতবার চামড়া জ্বলবে ততবার নতুন করে তৈরি করা হবে :
كُلَّمَا نَضِجَتْ جُلُوْدُهُمْ بَدَّلْنَاهُمْ جُلُوْدًا غَيْرَهَا لِيَذُوْقُوا الْعَذَابَ
যখন তাদের চামড়া একবার পুড়ে যাবে, তখন আমি তাদের শরীরে আবার নতুন চামড়া লাগিয়ে দেব– যাতে তারা আযাবের স্বাদ (পরিপূর্ণভাবে) ভোগ করতে পারে। (সূরা নিসা– ৫৬)
যতবার অগ্নিশিখা স্থিমিত হবে ততবারই আরো বাড়িয়ে দেয়া হবে :
كُلَّمَا خَبَتْ زِدْنَاهُمْ سَعِيْرًا
এ আগুন যতবার কমতে থাকবে, ততবারই তাকে জ্বালিয়ে দেয়া হবে। (সূরা বনী ইসরাইল– ৯৭)
قُلْ نَارُ جَهَنَّمَ اَشَدُّ حَرًّا لَّوْ كَانُوْا يَفْقَهُوْنَ
(হে নবী!) আপনি বলুন! জাহান্নামের আগুন অত্যাধিক গরম। যদি লোকেরা বুঝতে পারত!’’ (সূরা তাওবা– ৮১)
ব্যাখ্যা : আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল ﷺ বলেছেন, তোমাদের ব্যবহৃত আগুন জাহান্নামের আগুনের সত্তর ভাগের এক ভাগ। সাহাবারা বললেন, জ্বালানোর জন্য তো এ আগুনই যথেষ্ট। নবী ﷺ বললেন, হ্যাঁ, তা সত্ত্বেও পৃথিবীর আগুনের চেয়ে জাহান্নামের আগুন ৬৯ গুণ শক্তিশালী। (সহীহ বুখারী, হা/৩২৬৫)
সেই আগুন শিখাবিশিষ্ট :
سَيَصْلٰى نَارًا ذَاتَ لَهَبٍ
অচিরেই সে প্রবেশ করবে শিখা বিশিষ্ট আগুনে। (সূরা লাহাব– ০৩)
لَهُمْ مِّنْ فَوْقِهِمْ ظُلَلٌ مِّنَ النَّارِ وَمِنْ تَحْتِهِمْ ظُلَلٌؕ ذٰلِكَ يُخَوِّفُ اللهُ بِه عِبَادَهؕٗ يَا عِبَادِ فَاتَّقُوْنِ
জাহান্নামীদের জন্য উপর ও নিচ উভয় দিক থেকে রয়েছে আগুনের লেলিহান শিখা। আল্লাহ তার বান্দাদেরকে এ ব্যাপারে সতর্ক করছেন। হে আমার বান্দারা! তোমরা আমাকে ভয় করো। (সূরা যুমার– ১৬)
সে আগুন জ্বলন্ত :
فَاَنْذَرْتُكُمْ نَارًا تَلَظّٰى
আমি তোমাদেরকে প্রজ্বলিত আগুনের ভয় দেখাচ্ছি। (সূরা লাইল– ১৪)
সে আগুন ভয়াবহ :
اَلَّذِيْ يَصْلَى النَّارَ الْكُبْرٰى
সে প্রবেশ করবে মহা অগ্নিতে। (সূরা আলা– ১২)
সে আগুন উত্তপ্ত :
تَصْلٰى نَارًا حَامِيَةً
সে প্রবেশ করবে উত্তপ্ত আগুনে। (সূরা গাশিয়া– ৪)
সে আগুন বেষ্টনীতে আবদ্ধ :
عَلَيْهِمْ نَارٌ مُّؤْصَدَةٌ
জাহান্নামীদের জন্য রয়েছে আবদ্ধ আগুন। (সূরা বালাদু ২০)
সে আগুন দেহের সকল অঙ্গে পৌঁছবে :
تَلْفَحُ وُجُوْهَهُمُ النَّارُ وَهُمْ فِيْهَا كَالِحُوْنَ
আগুন তাদের চেহারা দগ্ধ করবে এবং সেখানে তারা বিকৃত অবস্থায় থাকবে। (সূরা মু’মিনূনু ১০৪)
اَلَّتِيْ تَطَّلِعُ عَلَى الْاَفْئِدَةِ – اِنَّهَا عَلَيْهِمْ مُّؤْصَدَةٌ – فِيْ عَمَدٍ مُّمَدَّدَةٍ
জাহানণামের আগুন মানুষের হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছবে। এ আগুনে তাদেরকে বেঁধে দেয়া হবে লম্বা লম্বা খুঁটিতে। (সূরা হুমাযাহ, ৭–৯)
হৃদয় পর্যন্ত জ্বালাবে এজন্য যে, মানুষ মরবে না; তাই তার শরীরের সবকিছু জ্বলবে। কিন্তু দুনিয়াতে মানুষের গোশত পুড়ার আগেই মানুষ মারা যায়।
সেই আগুন কেউ সরাতে পারবে না :
لَوْ يَعْلَمُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا حِيْنَ لَا يَكُفُّوْنَ عَنْ وُّجُوْهِهِمُ النَّارَ وَلَا عَنْ ظُهُوْرِهِمْ وَلَا هُمْ يُنْصَرُوْنَ
কাফিররা যদি সেই সময়ের কথা জানত যখন তারা তাদের মুখমন্ডল এবং পিঠ থেকে আগুন সরাতে পারবে না, এমনকি তাদেরকে কোন প্রকার সাহায্যও করা হবে না (তাহলে তারা কুফরী করত না)। (সূরা আম্বিয়া– ৩৯)
যতবার চামড়া জ্বলবে ততবার নতুন করে তৈরি করা হবে :
كُلَّمَا نَضِجَتْ جُلُوْدُهُمْ بَدَّلْنَاهُمْ جُلُوْدًا غَيْرَهَا لِيَذُوْقُوا الْعَذَابَ
যখন তাদের চামড়া একবার পুড়ে যাবে, তখন আমি তাদের শরীরে আবার নতুন চামড়া লাগিয়ে দেব– যাতে তারা আযাবের স্বাদ (পরিপূর্ণভাবে) ভোগ করতে পারে। (সূরা নিসা– ৫৬)
যতবার অগ্নিশিখা স্থিমিত হবে ততবারই আরো বাড়িয়ে দেয়া হবে :
كُلَّمَا خَبَتْ زِدْنَاهُمْ سَعِيْرًا
এ আগুন যতবার কমতে থাকবে, ততবারই তাকে জ্বালিয়ে দেয়া হবে। (সূরা বনী ইসরাইল– ৯৭)
মাথায় গরম পানি ঢালা হবে :
خُذُوْهُ فَاعْتِلُوْهُ اِلٰى سَوَآءِ الْجَحِيْمِ – ثُمَّ صُبُّوْا فَوْقَ رَاْسِه مِنْ عَذَابِ الْحَمِيْمِ
(আল্লাহ ফেরেশতাদেরকে বলবে) তাকে (জাহান্নামীকে) ধরো। অতঃপর তাকে জাহান্নামের মধ্যখানে নিক্ষেপ করো, তারপর তার মাথায় গরম পানি ঢালো। (সূরা দুখানু ৪৭, ৪৮)
يُصَبُّ مِنْ فَوْقِ رُءُوْسِهِمُ الْحَمِيْمُ – يُصْهَرُ بِه مَا فِيْ بُطُوْنِهِمْ وَالْجُلُوْدُ
তাদের মাথায় গরম পানি ঢালা হবে। এটা তাদের পেটে যা আছে তা এবং শরীরের চামড়া ঝলসে দেবে। (সূরা হজ্জ– ১৯, ২০)
আলকাতরার পোশাক পরানো হবে :
سَرَابِيْلُهُمْ مِّنْ قَطِرَانٍ وَّتَغْشٰى وُجُوْهَهُمُ النَّارُ
জাহান্নামীদেরকে আলকাতরার পোশাক পরানো হবে এবং আগুন তাদের মুখমন্ডল আচ্ছন্ন করে ফেলবে। (অর্থাৎ সম্পূর্ণ শরীরে আলকাতরার প্রলেপ দেয়া হবে, যাতে দ্রুত আগুন লাগতে পারে)। (সূরা ইবরাহীম– ৫০)
আগুনের পোশাক পরানো হবে :
فَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا قُطِّعَتْ لَهُمْ ثِيَابٌ مِّنْ نَّارٍ
কাফিরদের জন্য আগুনের পোশাক তৈরি করে রাখা হয়েছে। (সূরা হজ্জ– ১৯)
خُذُوْهُ فَاعْتِلُوْهُ اِلٰى سَوَآءِ الْجَحِيْمِ – ثُمَّ صُبُّوْا فَوْقَ رَاْسِه مِنْ عَذَابِ الْحَمِيْمِ
(আল্লাহ ফেরেশতাদেরকে বলবে) তাকে (জাহান্নামীকে) ধরো। অতঃপর তাকে জাহান্নামের মধ্যখানে নিক্ষেপ করো, তারপর তার মাথায় গরম পানি ঢালো। (সূরা দুখানু ৪৭, ৪৮)
يُصَبُّ مِنْ فَوْقِ رُءُوْسِهِمُ الْحَمِيْمُ – يُصْهَرُ بِه مَا فِيْ بُطُوْنِهِمْ وَالْجُلُوْدُ
তাদের মাথায় গরম পানি ঢালা হবে। এটা তাদের পেটে যা আছে তা এবং শরীরের চামড়া ঝলসে দেবে। (সূরা হজ্জ– ১৯, ২০)
আলকাতরার পোশাক পরানো হবে :
سَرَابِيْلُهُمْ مِّنْ قَطِرَانٍ وَّتَغْشٰى وُجُوْهَهُمُ النَّارُ
জাহান্নামীদেরকে আলকাতরার পোশাক পরানো হবে এবং আগুন তাদের মুখমন্ডল আচ্ছন্ন করে ফেলবে। (অর্থাৎ সম্পূর্ণ শরীরে আলকাতরার প্রলেপ দেয়া হবে, যাতে দ্রুত আগুন লাগতে পারে)। (সূরা ইবরাহীম– ৫০)
আগুনের পোশাক পরানো হবে :
فَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا قُطِّعَتْ لَهُمْ ثِيَابٌ مِّنْ نَّارٍ
কাফিরদের জন্য আগুনের পোশাক তৈরি করে রাখা হয়েছে। (সূরা হজ্জ– ১৯)
زَقُّوْمٌ (যাক্কুম ) :
اِنَّ شَجَرَةَ الزَّقُّوْمِ – طَعَامُ الْاَثِيْمِ – كَالْمُهْلِۚ يَغْلِيْ فِى الْبُطُوْنِ – كَغَلْيِ الْحَمِيْمِ
যাক্কুম বৃক্ষ হবে পাপীর খাদ্য, ওটা গলিত তামার ন্যায়; ফুটন্ত পানির মতো তা পেটের মধ্যে ফুটতে থাকবে। (সূরা দুখান, ৪৩–৪৬)
ثُمَّ اِنَّكُمْ اَيُّهَا الضَّآلُّوْنَ الْمُكَذِّبُوْنَ – لَاٰكِلُوْنَ مِنْ شَجَرٍ مِّنْ زَقُّوْمٍ – فَمَالِئُوْنَ مِنْهَا الْبُطُوْنَ
অতঃপর হে বিভ্রান্ত মিথ্যাবাদীরা! তোমরা অবশ্যই আহার করবে যাক্কুম বৃক্ষ থেকে, এর দ্বারা তোমাদের পেট ভরবে। (সূরা ওয়াক্বিয়া, ৫১–৫৩)
اِنَّهَا شَجَرَةٌ تَخْرُجُ فِۤيْ اَصْلِ الْجَحِيْمِ
নিশ্চয় এটি এমন একটি গাছ, যা জাহান্নামের তলদেশ হতে বের হয়। (সূরা সাফ্ফাত– ৬৪)
ব্যাখ্যা : زَقُّوْمٌ (যাক্কুম) এক ধরনের গাছ। এর স্বাদ হয় তিক্ত, গন্ধ হয় বিরক্তিকর এবং ভাঙলে এর মধ্য থেকে এক ধরনের দুধের মতো পদার্থ বের হয়, যা গায়ে লাগলে গা ফুলে ওঠে ও ফোস্কা পড়ে যায়।
ضَرِيْعٌ (যারী) :
لَيْسَ لَهُمْ طَعَامٌ اِلَّا مِنْ ضَرِيْعٍ – لَا يُسْمِنُ وَلَا يُغْنِيْ مِنْ جُوْعٍ
জাহান্নামীদের খাদ্য হবে যারী। এটা তাদেরকে হৃষ্ট–পুষ্ট করবে না এবং তাদের ক্ষুধাও মেটাতে পারবে না। (সূরা গাশিয়া– ৬, ৭)
তাফসীরবিদগণ বলেন, যারী হলো কাঁটাযুক্ত এক ধরনের ঘাস। এর মধ্যে বিষ জাতীয় পদার্থ থাকে। হিজাজের অঞ্চলে এটা হয়। এর দুর্গন্ধ এত বেশি যে, কোন জীব এটার ধারে কাছেও যায় না। এটা খাওয়ামাত্র প্রাণী মারা যায়। জাহান্নামীদেরকে এ ধরনের খাদ্য দেয়া হবে, যা খুবই তিতা হবে, আগুনের চেয়ে গরম হবে এবং মৃত লাশের চেয়েও অধিক দুর্গন্ধযুক্ত হবে। আর জাহান্নামীরা নিরুপায় হয়ে এসব খাবে, কিন্তু এতে তাদের দেহের পুষ্টি যোগানো তো দূরের কথা তাদের পেটের ক্ষুধাও মিটবে না।
غِسْلِيْنٌ (গিসলিন) :
فَلَيْسَ لَهُ الْيَوْمَ هَاهُنَا حَمِيْمٌ – وَلَا طَعَامٌ اِلَّا مِنْ غِسْلِيْنٍ – لَا يَاْكُلُهٗۤ اِلَّا الْخَاطِئُوْنَ
সেখানে জাহান্নামীদের জন্য কোন অন্তরঙ্গ বন্ধু থাকবে না এবং তাদের খাদ্য হবে গিসলিন। কেবল পাপিষ্ঠ লোকেরাই এটা খাবে। (সূরা হাক্কাহ, ৩৫–৩৭)
ব্যাখ্যা : জাহান্নামীদের মলমূত্র জমা হওয়ার স্থানকে ‘গিসলিন’ বলা হয়। তারা যখন পেটের ক্ষুধায় ছটফট করতে থাকবে তখন তাদেরকে ঐ জায়গা হতে খেতে বলা হবে।
এসব খাদ্য গলায় আটকে যাবে :
اِنَّ لَدَيْنَاۤ اَنْكَالًا وَّجَحِيْمًا – وَطَعَامًا ذَا غُصَّةٍ وَّعَذَابًا اَلِيْمًا
নিশ্চয় আমার কাছে রয়েছে শৃঙ্খল ও প্রজ্বলিত আগুন, আরো আছে গলায় বিদ্ধ হয় এমন খাদ্য এবং যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরা মুয্যাম্মিল- ১২, ১৩)
ব্যাখ্যা : আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বললেন, طَعَامٌ ذَا غُصَّةٍ একটি কাঁটার নাম, যা এমনভাবে গলায় বিদ্ধ হবে যে, তা বের হবে না আবার গলার নিচেও নামবে না। (মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৩৮৬৭)
اِنَّ شَجَرَةَ الزَّقُّوْمِ – طَعَامُ الْاَثِيْمِ – كَالْمُهْلِۚ يَغْلِيْ فِى الْبُطُوْنِ – كَغَلْيِ الْحَمِيْمِ
যাক্কুম বৃক্ষ হবে পাপীর খাদ্য, ওটা গলিত তামার ন্যায়; ফুটন্ত পানির মতো তা পেটের মধ্যে ফুটতে থাকবে। (সূরা দুখান, ৪৩–৪৬)
ثُمَّ اِنَّكُمْ اَيُّهَا الضَّآلُّوْنَ الْمُكَذِّبُوْنَ – لَاٰكِلُوْنَ مِنْ شَجَرٍ مِّنْ زَقُّوْمٍ – فَمَالِئُوْنَ مِنْهَا الْبُطُوْنَ
অতঃপর হে বিভ্রান্ত মিথ্যাবাদীরা! তোমরা অবশ্যই আহার করবে যাক্কুম বৃক্ষ থেকে, এর দ্বারা তোমাদের পেট ভরবে। (সূরা ওয়াক্বিয়া, ৫১–৫৩)
اِنَّهَا شَجَرَةٌ تَخْرُجُ فِۤيْ اَصْلِ الْجَحِيْمِ
নিশ্চয় এটি এমন একটি গাছ, যা জাহান্নামের তলদেশ হতে বের হয়। (সূরা সাফ্ফাত– ৬৪)
ব্যাখ্যা : زَقُّوْمٌ (যাক্কুম) এক ধরনের গাছ। এর স্বাদ হয় তিক্ত, গন্ধ হয় বিরক্তিকর এবং ভাঙলে এর মধ্য থেকে এক ধরনের দুধের মতো পদার্থ বের হয়, যা গায়ে লাগলে গা ফুলে ওঠে ও ফোস্কা পড়ে যায়।
ضَرِيْعٌ (যারী) :
لَيْسَ لَهُمْ طَعَامٌ اِلَّا مِنْ ضَرِيْعٍ – لَا يُسْمِنُ وَلَا يُغْنِيْ مِنْ جُوْعٍ
জাহান্নামীদের খাদ্য হবে যারী। এটা তাদেরকে হৃষ্ট–পুষ্ট করবে না এবং তাদের ক্ষুধাও মেটাতে পারবে না। (সূরা গাশিয়া– ৬, ৭)
তাফসীরবিদগণ বলেন, যারী হলো কাঁটাযুক্ত এক ধরনের ঘাস। এর মধ্যে বিষ জাতীয় পদার্থ থাকে। হিজাজের অঞ্চলে এটা হয়। এর দুর্গন্ধ এত বেশি যে, কোন জীব এটার ধারে কাছেও যায় না। এটা খাওয়ামাত্র প্রাণী মারা যায়। জাহান্নামীদেরকে এ ধরনের খাদ্য দেয়া হবে, যা খুবই তিতা হবে, আগুনের চেয়ে গরম হবে এবং মৃত লাশের চেয়েও অধিক দুর্গন্ধযুক্ত হবে। আর জাহান্নামীরা নিরুপায় হয়ে এসব খাবে, কিন্তু এতে তাদের দেহের পুষ্টি যোগানো তো দূরের কথা তাদের পেটের ক্ষুধাও মিটবে না।
غِسْلِيْنٌ (গিসলিন) :
فَلَيْسَ لَهُ الْيَوْمَ هَاهُنَا حَمِيْمٌ – وَلَا طَعَامٌ اِلَّا مِنْ غِسْلِيْنٍ – لَا يَاْكُلُهٗۤ اِلَّا الْخَاطِئُوْنَ
সেখানে জাহান্নামীদের জন্য কোন অন্তরঙ্গ বন্ধু থাকবে না এবং তাদের খাদ্য হবে গিসলিন। কেবল পাপিষ্ঠ লোকেরাই এটা খাবে। (সূরা হাক্কাহ, ৩৫–৩৭)
ব্যাখ্যা : জাহান্নামীদের মলমূত্র জমা হওয়ার স্থানকে ‘গিসলিন’ বলা হয়। তারা যখন পেটের ক্ষুধায় ছটফট করতে থাকবে তখন তাদেরকে ঐ জায়গা হতে খেতে বলা হবে।
এসব খাদ্য গলায় আটকে যাবে :
اِنَّ لَدَيْنَاۤ اَنْكَالًا وَّجَحِيْمًا – وَطَعَامًا ذَا غُصَّةٍ وَّعَذَابًا اَلِيْمًا
নিশ্চয় আমার কাছে রয়েছে শৃঙ্খল ও প্রজ্বলিত আগুন, আরো আছে গলায় বিদ্ধ হয় এমন খাদ্য এবং যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরা মুয্যাম্মিল- ১২, ১৩)
ব্যাখ্যা : আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বললেন, طَعَامٌ ذَا غُصَّةٍ একটি কাঁটার নাম, যা এমনভাবে গলায় বিদ্ধ হবে যে, তা বের হবে না আবার গলার নিচেও নামবে না। (মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৩৮৬৭)
حَمِيْمٌ (হামীম) ফুটন্ত পানি :
وَسُقُوْا مَآءً حَمِيْمًا فَقَطَّعَ اَمْعَآءَهُمْ
তাদেরকে পান করতে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি, যা তাদের নাড়িভুঁড়ি লন্ডভন্ড করে দেবে। (সূরা মুহাম্মাদু ১৫)
تُسْقٰى مِنْ عَيْنٍ اٰنِيَةٍ
তাদেরকে ফুটন্ত ঝর্ণা থেকে পান করতে দেয়া হবে। (সূরা গাশিয়া– ৫)
غَسَّاقٌ (গাস্সাক) পুঁজ ও ক্ষত নিঃসৃত স্রাব :
لَا يَذُوْقُوْنَ فِيْهَا بَرْدًا وَّلَا شَرَابًا – اِلَّا حَمِيْمًا وَّغَسَّاقًا
সেখানে তারা কোন শীতল বস্তু ও পানীয় উপভোগ করবে না, কেবল ফুটন্ত পানি ও পুঁজের স্বাদ গ্রহণ করবে। (সূরা নাবা- ২৪, ২৫)
ব্যাখ্যা : গাস্সাক ( غَسَّاقٌ ) এর অর্থ হয়, পুঁজ, রক্ত, পুঁজ মেশানো রক্ত বা চোখ ও গায়ের চামড়া থেকে নির্গত রস, যা কঠোর দৈহিক নির্যাতনের ফলে বের হয়। এছাড়াও এ শব্দটি ভীষণ দুর্গন্ধ ও পঁচে গিয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এমন জিনিসের জন্যও ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
مَآءٌ كَالْمُهْلِ (মাউন কাল মুহ্ল) গলিত ধাতুর ন্যায় পানি :
وَاِنْ يَّسْتَغِيْثُوْا يُغَاثُوْا بِمَآءٍ كَالْمُهْلِ يَشْوِى الْوُجُوْهَؕ بِئْسَ الشَّرَابُ وَسَآءَتْ مُرْتَفَقًا
তারা পানি চাইলে গলিত ধাতুর ন্যায় পানি সরবরাহ করা হবে, যা তাদের মুখমন্ডল ঝলসে দেবে। আর এটা কত নিকৃষ্ট পানিয়! জাহান্নাম স্থান হিসেবে কতই না নিকৃষ্ট!’’ (সূরা কাহফু ২৯)
مَآءٌ صَدِْيدٌ (মাউন ছাদীদ) পুঁজ নিঃসৃত পানি :
وَيُسْقٰى مِنْ مَّآءٍ صَدِيْدٍ – يَتَجَرَّعُهٗ وَلَا يَكَادُ يُسِيْغُهٗ
জাহান্নামীদেরকে গলিত পুঁজ পান করানো হবে, যা সে অতি কষ্টে গলধঃকরণ করবে এবং তা গলধঃকরণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। (সূরা ইবরাহীম– ১৬, ১৭)
وَسُقُوْا مَآءً حَمِيْمًا فَقَطَّعَ اَمْعَآءَهُمْ
তাদেরকে পান করতে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি, যা তাদের নাড়িভুঁড়ি লন্ডভন্ড করে দেবে। (সূরা মুহাম্মাদু ১৫)
تُسْقٰى مِنْ عَيْنٍ اٰنِيَةٍ
তাদেরকে ফুটন্ত ঝর্ণা থেকে পান করতে দেয়া হবে। (সূরা গাশিয়া– ৫)
غَسَّاقٌ (গাস্সাক) পুঁজ ও ক্ষত নিঃসৃত স্রাব :
لَا يَذُوْقُوْنَ فِيْهَا بَرْدًا وَّلَا شَرَابًا – اِلَّا حَمِيْمًا وَّغَسَّاقًا
সেখানে তারা কোন শীতল বস্তু ও পানীয় উপভোগ করবে না, কেবল ফুটন্ত পানি ও পুঁজের স্বাদ গ্রহণ করবে। (সূরা নাবা- ২৪, ২৫)
ব্যাখ্যা : গাস্সাক ( غَسَّاقٌ ) এর অর্থ হয়, পুঁজ, রক্ত, পুঁজ মেশানো রক্ত বা চোখ ও গায়ের চামড়া থেকে নির্গত রস, যা কঠোর দৈহিক নির্যাতনের ফলে বের হয়। এছাড়াও এ শব্দটি ভীষণ দুর্গন্ধ ও পঁচে গিয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এমন জিনিসের জন্যও ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
مَآءٌ كَالْمُهْلِ (মাউন কাল মুহ্ল) গলিত ধাতুর ন্যায় পানি :
وَاِنْ يَّسْتَغِيْثُوْا يُغَاثُوْا بِمَآءٍ كَالْمُهْلِ يَشْوِى الْوُجُوْهَؕ بِئْسَ الشَّرَابُ وَسَآءَتْ مُرْتَفَقًا
তারা পানি চাইলে গলিত ধাতুর ন্যায় পানি সরবরাহ করা হবে, যা তাদের মুখমন্ডল ঝলসে দেবে। আর এটা কত নিকৃষ্ট পানিয়! জাহান্নাম স্থান হিসেবে কতই না নিকৃষ্ট!’’ (সূরা কাহফু ২৯)
مَآءٌ صَدِْيدٌ (মাউন ছাদীদ) পুঁজ নিঃসৃত পানি :
وَيُسْقٰى مِنْ مَّآءٍ صَدِيْدٍ – يَتَجَرَّعُهٗ وَلَا يَكَادُ يُسِيْغُهٗ
জাহান্নামীদেরকে গলিত পুঁজ পান করানো হবে, যা সে অতি কষ্টে গলধঃকরণ করবে এবং তা গলধঃকরণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। (সূরা ইবরাহীম– ১৬, ১৭)
জাহান্নামীদের গলায় বেড়ি ও শিকল পরানো হবে :
اِنَّاۤ اَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِيْنَ سَلَاسِلَاْ وَاَغْلَالًا وَّسَعِيْرًا
আমি কাফিরদের জন্য তৈরি করে রেখেছি শৃঙ্খল, বেড়ি ও আগুন। (সূরা দাহর– ৪)
اَلَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِالْكِتَابِ وَبِمَاۤ اَرْسَلْنَا بِه رُسُلَنَا فَسَوْفَ يَعْلَمُوْنَ – اِذِ الْاَغْلَالُ فِۤيْ اَعْنَاقِهِمْ وَالسَّلَاسِلُؕ يُسْحَبُوْنَ – فِى الْحَمِيْمِ ثُمَّ فِى النَّارِ يُسْجَرُوْنَ
যারা কিতাব এবং যা দিয়ে আমি রাসূলকে পাঠিয়েছি তা অস্বীকার করে, তারা শীঘ্রই জানতে পারবে। যখন তাদের গলদেশে বেড়ি ও শৃঙ্খল থাকবে। তাদেরকে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে ফুটন্ত পানিতে, অতঃপর তাদেরকে অগ্নিতে দগ্ধ করা হবে। (সূরা মু’মিন, ৭০–৭২)
خُذُوْهُ فَغُلُّوْهُ – ثُمَّ الْجَحِيْمَ صَلُّوْهُ – ثُمَّ فِيْ سِلْسِلَةٍ ذَرْعُهَا سَبْعُوْنَ ذِرَاعًا فَاسْلُكُوْهُ
(ফেরেশতাদেরকে বলা হবে) জাহান্নামীদেরকে পাকড়াও করো এবং গলদেশে বেড়ি পরিয়ে দাও। অতঃপর জাহান্নামে নিক্ষেপ করো। অতঃপর তাকে সত্তর গজ দীর্ঘ জিঞ্জিরে বেঁধে ফেলো। (সূরা হাক্কাহ, ৩০–৩২)
জাহান্নামের গর্জন :
اِذَاۤ اُلْقُوْا فِيْهَا سَمِعُوْا لَهَا شَهِيْقًا وَّهِيَ تَفُوْرُ
যখন জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে ফেলা হবে, তখন তারা তার গর্জন ও চিৎকার শুনতে পাবে। তখন জাহান্নাম উৎলাতে থাকবে। (সূরা মুলক– ৭)
اِذَا رَاَتْهُمْ مِّنْ مَّكَانٍ ۢۢبَعِيْدٍ سَمِعُوْا لَهَا تَغَيُّظًا وَّزَفِيْرًا
জাহান্নাম যখন দূর থেকে জাহান্নামীদেরকে দেখতে পাবে, তখন তারা তার রাগজনিত গর্জন শুনতে পাবে। (সূরা ফুরক্বানু ১২)
জাহান্নামের রাগ :
تَكَادُ تَمَيَّزُ مِنَ الْغَيْظِ
মনে হবে যেন জাহান্নাম রাগের কারণে ফেটে পড়বে। (সূরা মুলক– ৮)
وَاِذَاۤ اُلْقُوْا مِنْهَا مَكَانًا ضَيِّقًا مُّقَرَّنِيْنَ دَعَوْا هُنَالِكَ ثُبُوْرًا
যখন জাহান্নামীদেরকে শিকল দ্বারা হাত–পা বেঁধে কোন সংকীর্ণ স্থানে ফেলা হবে, তখন তারা নিজেদের ধ্বংস কামনা করবে। (সূরা ফুরক্বানু ১৩)
অপরাধীরা জাহান্নাম দেখতে পাবে :
وَرَاَى الْمُجْرِمُوْنَ النَّارَ فَظَنُّوْاۤ اَنَّهُمْ مُّوَاقِعُوْهَا وَلَمْ يَجِدُوْا عَنْهَا مَصْرِفًا
পাপীরা যখন জাহান্নাম দেখতে পাবে তখন তারা ধারণা করবে যে, তারা তাতে নিক্ষিপ্ত হবে। কিন্তু তারা জাহান্নাম থেকে বাঁচার কোন উপায় খুঁজে পাবে না। (সূরা কাহফু ৫৩)
لَتَرَوُنَّ الْجَحِيْمَ – ثُمَّ لَتَرَوُنَّهَا عَيْنَ الْيَقِيْنِ
অবশ্যই তোমরা জাহান্নাম দেখতে পাবে। অতঃপর তা দেখতে পাবে স্বচক্ষে। (সূরা তাকাছুর– ৬, ৭)
তখন সকলেই জাহান্নামের কথা বিশ্বাস করবে :
وَلَوْ تَرٰۤى اِذْ وُقِفُوْا عَلٰى رَبِّهِمْؕ قَالَ اَلَيْسَ هٰذَا بِالْحَقِّؕ قَالُوْا بَلٰى وَرَبِّنَا
তুমি যদি সে সময়ের অবস্থা জানতে, যখন পাপীদেরকে তাদের প্রতিপালকের সামনে উপস্থিত করা হবে। তখন আল্লাহ বলবেন, এ আযাব কি সত্য নয়? তারা সকলে বলবে, আমাদের রবের কসম! এ আযাব সত্য। (সূরা আন‘আম– ৩০)
اِنَّاۤ اَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِيْنَ سَلَاسِلَاْ وَاَغْلَالًا وَّسَعِيْرًا
আমি কাফিরদের জন্য তৈরি করে রেখেছি শৃঙ্খল, বেড়ি ও আগুন। (সূরা দাহর– ৪)
اَلَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِالْكِتَابِ وَبِمَاۤ اَرْسَلْنَا بِه رُسُلَنَا فَسَوْفَ يَعْلَمُوْنَ – اِذِ الْاَغْلَالُ فِۤيْ اَعْنَاقِهِمْ وَالسَّلَاسِلُؕ يُسْحَبُوْنَ – فِى الْحَمِيْمِ ثُمَّ فِى النَّارِ يُسْجَرُوْنَ
যারা কিতাব এবং যা দিয়ে আমি রাসূলকে পাঠিয়েছি তা অস্বীকার করে, তারা শীঘ্রই জানতে পারবে। যখন তাদের গলদেশে বেড়ি ও শৃঙ্খল থাকবে। তাদেরকে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে ফুটন্ত পানিতে, অতঃপর তাদেরকে অগ্নিতে দগ্ধ করা হবে। (সূরা মু’মিন, ৭০–৭২)
خُذُوْهُ فَغُلُّوْهُ – ثُمَّ الْجَحِيْمَ صَلُّوْهُ – ثُمَّ فِيْ سِلْسِلَةٍ ذَرْعُهَا سَبْعُوْنَ ذِرَاعًا فَاسْلُكُوْهُ
(ফেরেশতাদেরকে বলা হবে) জাহান্নামীদেরকে পাকড়াও করো এবং গলদেশে বেড়ি পরিয়ে দাও। অতঃপর জাহান্নামে নিক্ষেপ করো। অতঃপর তাকে সত্তর গজ দীর্ঘ জিঞ্জিরে বেঁধে ফেলো। (সূরা হাক্কাহ, ৩০–৩২)
জাহান্নামের গর্জন :
اِذَاۤ اُلْقُوْا فِيْهَا سَمِعُوْا لَهَا شَهِيْقًا وَّهِيَ تَفُوْرُ
যখন জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে ফেলা হবে, তখন তারা তার গর্জন ও চিৎকার শুনতে পাবে। তখন জাহান্নাম উৎলাতে থাকবে। (সূরা মুলক– ৭)
اِذَا رَاَتْهُمْ مِّنْ مَّكَانٍ ۢۢبَعِيْدٍ سَمِعُوْا لَهَا تَغَيُّظًا وَّزَفِيْرًا
জাহান্নাম যখন দূর থেকে জাহান্নামীদেরকে দেখতে পাবে, তখন তারা তার রাগজনিত গর্জন শুনতে পাবে। (সূরা ফুরক্বানু ১২)
জাহান্নামের রাগ :
تَكَادُ تَمَيَّزُ مِنَ الْغَيْظِ
মনে হবে যেন জাহান্নাম রাগের কারণে ফেটে পড়বে। (সূরা মুলক– ৮)
وَاِذَاۤ اُلْقُوْا مِنْهَا مَكَانًا ضَيِّقًا مُّقَرَّنِيْنَ دَعَوْا هُنَالِكَ ثُبُوْرًا
যখন জাহান্নামীদেরকে শিকল দ্বারা হাত–পা বেঁধে কোন সংকীর্ণ স্থানে ফেলা হবে, তখন তারা নিজেদের ধ্বংস কামনা করবে। (সূরা ফুরক্বানু ১৩)
অপরাধীরা জাহান্নাম দেখতে পাবে :
وَرَاَى الْمُجْرِمُوْنَ النَّارَ فَظَنُّوْاۤ اَنَّهُمْ مُّوَاقِعُوْهَا وَلَمْ يَجِدُوْا عَنْهَا مَصْرِفًا
পাপীরা যখন জাহান্নাম দেখতে পাবে তখন তারা ধারণা করবে যে, তারা তাতে নিক্ষিপ্ত হবে। কিন্তু তারা জাহান্নাম থেকে বাঁচার কোন উপায় খুঁজে পাবে না। (সূরা কাহফু ৫৩)
لَتَرَوُنَّ الْجَحِيْمَ – ثُمَّ لَتَرَوُنَّهَا عَيْنَ الْيَقِيْنِ
অবশ্যই তোমরা জাহান্নাম দেখতে পাবে। অতঃপর তা দেখতে পাবে স্বচক্ষে। (সূরা তাকাছুর– ৬, ৭)
তখন সকলেই জাহান্নামের কথা বিশ্বাস করবে :
وَلَوْ تَرٰۤى اِذْ وُقِفُوْا عَلٰى رَبِّهِمْؕ قَالَ اَلَيْسَ هٰذَا بِالْحَقِّؕ قَالُوْا بَلٰى وَرَبِّنَا
তুমি যদি সে সময়ের অবস্থা জানতে, যখন পাপীদেরকে তাদের প্রতিপালকের সামনে উপস্থিত করা হবে। তখন আল্লাহ বলবেন, এ আযাব কি সত্য নয়? তারা সকলে বলবে, আমাদের রবের কসম! এ আযাব সত্য। (সূরা আন‘আম– ৩০)
জাহান্নামীদেরকে ধাক্কা মেরে জাহান্নামের দিকে নেয়া হবে :
يَوْمَ يُدَعُّوْنَ اِلٰى نَارِ جَهَنَّمَ دَعًّا – هٰذِهِ النَّارُ الَّتِيْ كُنْتُمْ بِهَا تُكَذِّبُوْنَ
অপরাধীদেরকে জাহান্নামের দিকে ধাক্কা মেরে নেয়া হবে আর বলা হবে, এ হলো সেই আগুন যাকে তোমরা মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে। (সূরা তূর- ১৩, ১৪)
وَنَسُوْقُ الْمُجْرِمِيْنَ اِلٰى جَهَنَّمَ وِرْدًا
আমি পাপীদেরকে পিপাসার্ত অবস্থায় জাহান্নামের দিকে হাঁকিয়ে নেব। (সূরা মারইয়াম– ৮৬)
وَمَنْ كَفَرَ فَاُمَتِّعُهٗ قَلِيْلًا ثُمَّ اَضْطَرُّهٗۤ اِلٰى عَذَابِ النَّارِؕ وَبِئْسَ الْمَصِيْرُ
যারা কুফরী করে তাদেরকে আমি দুনিয়াতে কিছু ভোগের সামগ্রী দিয়ে থাকি। পরে তাদেরকে জাহান্নামের আযাবের দিকে টেনে–হেঁচড়ে নিয়ে যাব। এ প্রত্যাবর্তন কতই না নিকৃষ্ট! (সূরা বাক্বারা– ১২৬)
وَسِيْقَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اِلٰى جَهَنَّمَ زُمَرًاؕ حَتّٰۤى اِذَا جَآءُوْهَا فُتِحَتْ اَبْوَابُهَا وَقَالَ لَهُمْ خَزَنَتُهَاۤ اَلَمْ يَاْتِكُمْ رُسُلٌ مِّنْكُمْ يَتْلُوْنَ عَلَيْكُمْ اٰيَاتِ رَبِّكُمْ وَيُنْذِرُوْنَكُمْ لِقَآءَ يَوْمِكُمْ هٰذَاؕ قَالُوْا بَلٰى وَلٰكِنْ حَقَّتْ كَلِمَةُ الْعَذَابِ عَلَى الْكَافِرِيْنَ
কাফিরদেরকে দলে দলে জাহান্নামের দিকে তাড়িয়ে নেয়া হবে; এমনকি যখন তারা জাহান্নামের কাছে পৌঁছবে তখন তার দরজাগুলো খুলে দেয়া হবে এবং জাহান্নামের রক্ষীরা তাদেরকে প্রশ্ন করবে, তোমাদের কাছে কি তোমাদের মধ্য হতে কোন রাসূল আসেননি? যারা তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের আয়াতসমূহ পাঠ করে শুনাতেন এবং তোমাদেরকে এ দিনের আগমন সম্পর্কে সতর্ক করতেন? তারা বলবে- হ্যাঁ, অবশ্যই এসেছিলেন। তবে কাফিরদের উপর আযাবের কথা সাব্যস্ত হয়ে গেছে। (সূরা যুমার– ৭১)
অপমানের কারণে পার্শ্ব চোখে তাকাবে :
وَتَرَاهُمْ يُعْرَضُونَ عَلَيْهَا خَاشِعِيْنَ مِنَ الذُّلِّ يَنْظُرُوْنَ مِنْ طَرْفٍ خَفِيٍّ
তুমি তাদেরকে দেখতে পাবে যে, তাদেরকে জাহান্নামের সামনে উপস্থিত করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় তারা অপমানে অবনত অবস্থায় গোপনে পার্শ্ব চোখে তাকাচ্ছে। (সূরা শূরা- ৪৫)
ব্যাখ্যা : মানুষের স্বভাব হচ্ছে, যখন কোন ভয়ানক দৃশ্য তার সামনে থাকে এবং সে বুঝতে পারে যে, চোখের সামনে যা দেখা যাচ্ছে খুব শীঘ্রই সে তার কবলে পড়তে যাচ্ছে, তখন প্রথমেই ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। এরপরও যদি রেহাই না পায় তখন দেখার চেষ্টা করে বিপদটা কেমন এবং এখনো তার থেকে কত দূরে আছে। কিন্তু মাথা উঁচু করে ভালোভাবে দেখার সাহস তার থাকে না। তাই সে বার বার একটু একটু করে চোখ খুলে বাঁকা দৃষ্টিতে দেখে এবং ভয়ে আবার চোখ বন্ধ করে নেয়। এ আয়াতে জাহান্নামের দিকে অগ্রসরমান লোকদের এ ধরনের অবস্থায়ই চিহ্নিত করা হয়েছে।
লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে :
ثُمَّ جَعَلْنَا لَهٗ جَهَنَّمَۚ يَصْلَاهَا مَذْمُوْمًا مَّدْحُوْرًا
আমি অবাধ্যদের জন্য জাহান্নাম তৈরি করে রেখেছি। তারা সেখানে লাঞ্ছিত ও অপমানিত অবস্থায় প্রবেশ করবে। (সূরা বনী ইসরাইল– ১৮)
اِنَّ الَّذِيْنَ يَسْتَكْبِرُوْنَ عَنْ عِبَادَتِيْ سَيَدْخُلُوْنَ جَهَنَّمَ دَاخِرِيْنَ
যারা অহংকার করে আমার ইবাদাত থেকে দূরে থাকে, তারা অপমানিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (সূরা মু’মিনু ৬০)
চুল ও পা ধরে জাহান্নামে ফেলা হবে :
يُعْرَفُ الْمُجْرِمُوْنَ بِسِيْمَاهُمْ فَيُؤْخَذُ بِالنَّوَاصِيْ وَالْاَقْدَامِ
পাপীদেরকে তাদের চিহ্ন দেখে চেনা যাবে। আর তাদের মাথার চুল ও পা ধরে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (সূরা আর রহমানু ৪১)
উপুড় করে জাহান্নামের দিকে টেনে নেয়া হবে :
يَوْمَ يُسْحَبُوْنَ فِى النَّارِ عَلٰى وُجُوْهِهِمْؕ ذُوْقُوْا مَسَّ سَقَرَ
সেদিন তাদের চেহারা নিচ দিকে দিয়ে (উপুড় করে) জাহান্নামের দিকে টেনে নেয়া হবে আর বলা হবে জাহান্নামের স্বাদ ভোগ করো। (সূরা ক্বামার– ৪৮)
اَلْقِيَا فِيْ جَهَنَّمَ كُلَّ كَفَّارٍ عَنِيْدٍ – مَنَّاعٍ لِّلْخَيْرِ مُعْتَدٍ مُّرِيْبٍ
প্রত্যেক অবাধ্য কাফিরদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করো, যারা ভালো কাজে বাধা দেয়, সীমালঙ্ঘন করে এবং সন্দেহ পোষণ করে। (সূরা ক্বাফু ২৪, ২৫)
সকল কাফির ও মুনাফিককে জাহান্নামে একত্রিত করা হবে :
اِنَّ اللهَ جَامِعُ الْمُنَافِقِيْنَ وَالْكَافِرِيْنَ فِيْ جَهَنَّمَ جَمِيْعًا
আললাহ সকল কাফির ও মুনাফিককে জাহান্নামে সমবেত করবেন। (সূরা নিসা– ১৪০)
শয়তানকেও জাহান্নামে উপস্থিত করা হবে :
فَوَرَبِّكَ لَنَحْشُرَنَّهُمْ وَالشَّيَاطِيْنَ ثُمَّ لَنُحْضِرَنَّهُمْ حَوْلَ جَهَنَّمَ جِثِيًّا
তোমার রবের শপথ! আমি তাদেরকে এবং শয়তানদেরকে সমবেত করে নতজানু অবস্থায় জাহান্নামের সামনে উপস্থিত করব। (সূরা মারইয়াম– ৬৮)
সকলকে পুলসিরাত পার হতে হবে :
وَاِنْ مِّنْكُمْ اِلَّا وَارِدُهَاۚ كَانَ عَلٰى رَبِّكَ حَتْمًا مَّقْضِيًّا
(জাহান্নামে তোমাদের মধ্যে) এমন একজনও থাকবে না, যাকে এর (পুলসিরাতের) উপর দিয়ে অতিক্রম করতে হবে না। এটা তোমার প্রতিপালকের অনিবার্য সিদ্ধান্ত। (সূরা মারইয়াম– ৭১)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ বলেন, জাহান্নামের উপর পুলসিরাত কায়েম হবে। তখন রাসূলদের মধ্যে আমিই সর্বপ্রথম আমার উম্মতকে নিয়ে এটা পার হব। সেদিন রাসূলগণ ছাড়া অন্য কেউ কথা বলতে পারবে না। সেদিন রাসূলদের কথা হবে, হে আল্লাহ! নিরাপদ রাখুন! নিরাপদ রাখুন! (সহীহ বুখারী, হা/৮০৬)
জাহান্নামীদের চেহারায় অন্ধকার বিরাজ করবে :
وَالَّذِيْنَ كَسَبُوا السَّيِّئَاتِ جَزَآءُ سَيِّئَةٍ ۢبِمِثْلِهَا وَتَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌؕ مَا لَهُمْ مِّنَ اللهِ مِنْ عَاصِمٍۚ كَاَنَّمَاۤ اُغْشِيَتْ وُجُوْهُهُمْ قِطَعًا مِّنَ اللَّيْلِ مُظْلِمًاؕ اُولٰٓئِكَ اَصْحَابُ النَّارِۚ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
যারা পাপ অর্জন করবে তারা পাপের পরিমাণ অনুযায়ী শাস্তি ভোগ করবে। অপমান তাদের উপর চেপে বসবে। আল্লাহ ছাড়া তাদের কোন রক্ষাকারী থাকবে না। তাদের অবস্থা এমন হবে, যেন অন্ধকার রাতের একটি অংশ তাদের চেহারা আবৃত করে ফেলেছে। তারাই হচ্ছে জাহান্নামের অধিবাসী, তারা চিরকাল সেখানে থাকবে। (সূরা ইউনুস– ২৭)
জাহান্নাম ভর্তি হবে না :
يَوْمَ نَقُوْلُ لِجَهَنَّمَ هَلِ امْتَلَاْتِ وَتَقُوْلُ هَلْ مِنْ مَّزِيْدٍ
সেদিন আমি জাহান্নামকে বলব, তুমি কি ভর্তি হয়েছ? সে বলবে, আরো আছে কি? (সূরা ক্বাফু ৩০)
ব্যাখ্যা : এর দু’টি অর্থ হতে পারে। একটি হচ্ছে, এখন আমার মধ্যে আর অধিক মানুষের স্থান নেই। অপরটি হচ্ছে, আরো যত অপরাধী আছে তাদের নিয়ে আসুন। প্রথম অর্থ গ্রহণ করলে এ কথা থেকে এ ধারণা পাওয়া যায় যে, অপরাধীদেরকে এমন গাদাগাদি করে জাহান্নামে রাখা হবে যে, সেখানে একটি সুঁচ পরিমাণ স্থানও আর অবশিষ্ট থাকবে না। তাই জাহান্নামকে যখন জিজ্ঞেস করা হবে, তোমার উদর কি পূর্ণ হয়েছে? তখন সে বিব্রত হয়ে জবাব দেবে- এখনো কি আরো মানুষ আছে? দ্বিতীয় অর্থ গ্রহণ করলে এরূপ ধারণা সৃষ্টি হয় যে, সে সময় জাহান্নাম অপরাধীদের প্রতি এমন ভীষণভাবে রুষ্ট থাকবে যে, সে আরো কেউ আছে কি- এভাবে চাইতে থাকবে এবং সেদিন যেন কোন অপরাধী মুক্তি না পায় তা-ই কামনা করবে। আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, জাহান্নামের মধ্যে যত লোকই নিক্ষিপ্ত হবে ততই বলবে আরো চাই, আরো চাই। এমনকি আল্লাহ তা‘আলা তাঁর পা জাহান্নামের মুখে রাখবেন। এতে এক অংশ অপর অংশের সাথে মিশে যাবে। তখন জাহান্নাম বলবে, হে আল্লাহ! আপনার ইজ্জতের কসম, যথেষ্ট হয়েছে। (সহীহ বুখারী, হা/৪৮৪৯)
একের পর এক জাহান্নামে প্রবেশ করতে থাকবে :
اُدْخُلُوْا فِۤيْ اُمَمٍ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِكُمْ مِّنَ الْجِنِّ وَالْاِنْسِ فِى النَّارِ
আল্লাহ বলবেন, তোমরা ওদের সাথে প্রবেশ করো, জিন ও মানুষের মধ্যে যারা তোমাদের আগে জাহান্নামে প্রবেশ করেছে। (সূরা আ‘রাফু ৩৮)
ব্যাখ্যা : সর্বাবস্থায় প্রত্যেকটি দল কোন না কোন দলের পূর্ববর্তী বা পরবর্তী দল ছিল। কোন পূর্ববর্তী দল যদি বিপথগামী চিন্তা ও কর্ম রেখে গিয়ে থাকে, তাহলে পরবর্তীদের পথভ্রষ্ট হওয়ার কিছু দায়দায়িত্ব তাদের উপরও বর্তায়। তাই বলা হয়েছে, প্রত্যেকের জন্য দ্বিগুণ শাস্তিই রয়েছে। একটি শাস্তি হচ্ছে, নিজে ভুলপথ অবলম্বনের এবং অপরটি অন্যদেরকে ভুলপথ দেখানোর।
يَوْمَ يُدَعُّوْنَ اِلٰى نَارِ جَهَنَّمَ دَعًّا – هٰذِهِ النَّارُ الَّتِيْ كُنْتُمْ بِهَا تُكَذِّبُوْنَ
অপরাধীদেরকে জাহান্নামের দিকে ধাক্কা মেরে নেয়া হবে আর বলা হবে, এ হলো সেই আগুন যাকে তোমরা মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে। (সূরা তূর- ১৩, ১৪)
وَنَسُوْقُ الْمُجْرِمِيْنَ اِلٰى جَهَنَّمَ وِرْدًا
আমি পাপীদেরকে পিপাসার্ত অবস্থায় জাহান্নামের দিকে হাঁকিয়ে নেব। (সূরা মারইয়াম– ৮৬)
وَمَنْ كَفَرَ فَاُمَتِّعُهٗ قَلِيْلًا ثُمَّ اَضْطَرُّهٗۤ اِلٰى عَذَابِ النَّارِؕ وَبِئْسَ الْمَصِيْرُ
যারা কুফরী করে তাদেরকে আমি দুনিয়াতে কিছু ভোগের সামগ্রী দিয়ে থাকি। পরে তাদেরকে জাহান্নামের আযাবের দিকে টেনে–হেঁচড়ে নিয়ে যাব। এ প্রত্যাবর্তন কতই না নিকৃষ্ট! (সূরা বাক্বারা– ১২৬)
وَسِيْقَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اِلٰى جَهَنَّمَ زُمَرًاؕ حَتّٰۤى اِذَا جَآءُوْهَا فُتِحَتْ اَبْوَابُهَا وَقَالَ لَهُمْ خَزَنَتُهَاۤ اَلَمْ يَاْتِكُمْ رُسُلٌ مِّنْكُمْ يَتْلُوْنَ عَلَيْكُمْ اٰيَاتِ رَبِّكُمْ وَيُنْذِرُوْنَكُمْ لِقَآءَ يَوْمِكُمْ هٰذَاؕ قَالُوْا بَلٰى وَلٰكِنْ حَقَّتْ كَلِمَةُ الْعَذَابِ عَلَى الْكَافِرِيْنَ
কাফিরদেরকে দলে দলে জাহান্নামের দিকে তাড়িয়ে নেয়া হবে; এমনকি যখন তারা জাহান্নামের কাছে পৌঁছবে তখন তার দরজাগুলো খুলে দেয়া হবে এবং জাহান্নামের রক্ষীরা তাদেরকে প্রশ্ন করবে, তোমাদের কাছে কি তোমাদের মধ্য হতে কোন রাসূল আসেননি? যারা তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের আয়াতসমূহ পাঠ করে শুনাতেন এবং তোমাদেরকে এ দিনের আগমন সম্পর্কে সতর্ক করতেন? তারা বলবে- হ্যাঁ, অবশ্যই এসেছিলেন। তবে কাফিরদের উপর আযাবের কথা সাব্যস্ত হয়ে গেছে। (সূরা যুমার– ৭১)
অপমানের কারণে পার্শ্ব চোখে তাকাবে :
وَتَرَاهُمْ يُعْرَضُونَ عَلَيْهَا خَاشِعِيْنَ مِنَ الذُّلِّ يَنْظُرُوْنَ مِنْ طَرْفٍ خَفِيٍّ
তুমি তাদেরকে দেখতে পাবে যে, তাদেরকে জাহান্নামের সামনে উপস্থিত করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় তারা অপমানে অবনত অবস্থায় গোপনে পার্শ্ব চোখে তাকাচ্ছে। (সূরা শূরা- ৪৫)
ব্যাখ্যা : মানুষের স্বভাব হচ্ছে, যখন কোন ভয়ানক দৃশ্য তার সামনে থাকে এবং সে বুঝতে পারে যে, চোখের সামনে যা দেখা যাচ্ছে খুব শীঘ্রই সে তার কবলে পড়তে যাচ্ছে, তখন প্রথমেই ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। এরপরও যদি রেহাই না পায় তখন দেখার চেষ্টা করে বিপদটা কেমন এবং এখনো তার থেকে কত দূরে আছে। কিন্তু মাথা উঁচু করে ভালোভাবে দেখার সাহস তার থাকে না। তাই সে বার বার একটু একটু করে চোখ খুলে বাঁকা দৃষ্টিতে দেখে এবং ভয়ে আবার চোখ বন্ধ করে নেয়। এ আয়াতে জাহান্নামের দিকে অগ্রসরমান লোকদের এ ধরনের অবস্থায়ই চিহ্নিত করা হয়েছে।
লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে :
ثُمَّ جَعَلْنَا لَهٗ جَهَنَّمَۚ يَصْلَاهَا مَذْمُوْمًا مَّدْحُوْرًا
আমি অবাধ্যদের জন্য জাহান্নাম তৈরি করে রেখেছি। তারা সেখানে লাঞ্ছিত ও অপমানিত অবস্থায় প্রবেশ করবে। (সূরা বনী ইসরাইল– ১৮)
اِنَّ الَّذِيْنَ يَسْتَكْبِرُوْنَ عَنْ عِبَادَتِيْ سَيَدْخُلُوْنَ جَهَنَّمَ دَاخِرِيْنَ
যারা অহংকার করে আমার ইবাদাত থেকে দূরে থাকে, তারা অপমানিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (সূরা মু’মিনু ৬০)
চুল ও পা ধরে জাহান্নামে ফেলা হবে :
يُعْرَفُ الْمُجْرِمُوْنَ بِسِيْمَاهُمْ فَيُؤْخَذُ بِالنَّوَاصِيْ وَالْاَقْدَامِ
পাপীদেরকে তাদের চিহ্ন দেখে চেনা যাবে। আর তাদের মাথার চুল ও পা ধরে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (সূরা আর রহমানু ৪১)
উপুড় করে জাহান্নামের দিকে টেনে নেয়া হবে :
يَوْمَ يُسْحَبُوْنَ فِى النَّارِ عَلٰى وُجُوْهِهِمْؕ ذُوْقُوْا مَسَّ سَقَرَ
সেদিন তাদের চেহারা নিচ দিকে দিয়ে (উপুড় করে) জাহান্নামের দিকে টেনে নেয়া হবে আর বলা হবে জাহান্নামের স্বাদ ভোগ করো। (সূরা ক্বামার– ৪৮)
اَلْقِيَا فِيْ جَهَنَّمَ كُلَّ كَفَّارٍ عَنِيْدٍ – مَنَّاعٍ لِّلْخَيْرِ مُعْتَدٍ مُّرِيْبٍ
প্রত্যেক অবাধ্য কাফিরদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করো, যারা ভালো কাজে বাধা দেয়, সীমালঙ্ঘন করে এবং সন্দেহ পোষণ করে। (সূরা ক্বাফু ২৪, ২৫)
সকল কাফির ও মুনাফিককে জাহান্নামে একত্রিত করা হবে :
اِنَّ اللهَ جَامِعُ الْمُنَافِقِيْنَ وَالْكَافِرِيْنَ فِيْ جَهَنَّمَ جَمِيْعًا
আললাহ সকল কাফির ও মুনাফিককে জাহান্নামে সমবেত করবেন। (সূরা নিসা– ১৪০)
শয়তানকেও জাহান্নামে উপস্থিত করা হবে :
فَوَرَبِّكَ لَنَحْشُرَنَّهُمْ وَالشَّيَاطِيْنَ ثُمَّ لَنُحْضِرَنَّهُمْ حَوْلَ جَهَنَّمَ جِثِيًّا
তোমার রবের শপথ! আমি তাদেরকে এবং শয়তানদেরকে সমবেত করে নতজানু অবস্থায় জাহান্নামের সামনে উপস্থিত করব। (সূরা মারইয়াম– ৬৮)
সকলকে পুলসিরাত পার হতে হবে :
وَاِنْ مِّنْكُمْ اِلَّا وَارِدُهَاۚ كَانَ عَلٰى رَبِّكَ حَتْمًا مَّقْضِيًّا
(জাহান্নামে তোমাদের মধ্যে) এমন একজনও থাকবে না, যাকে এর (পুলসিরাতের) উপর দিয়ে অতিক্রম করতে হবে না। এটা তোমার প্রতিপালকের অনিবার্য সিদ্ধান্ত। (সূরা মারইয়াম– ৭১)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ বলেন, জাহান্নামের উপর পুলসিরাত কায়েম হবে। তখন রাসূলদের মধ্যে আমিই সর্বপ্রথম আমার উম্মতকে নিয়ে এটা পার হব। সেদিন রাসূলগণ ছাড়া অন্য কেউ কথা বলতে পারবে না। সেদিন রাসূলদের কথা হবে, হে আল্লাহ! নিরাপদ রাখুন! নিরাপদ রাখুন! (সহীহ বুখারী, হা/৮০৬)
জাহান্নামীদের চেহারায় অন্ধকার বিরাজ করবে :
وَالَّذِيْنَ كَسَبُوا السَّيِّئَاتِ جَزَآءُ سَيِّئَةٍ ۢبِمِثْلِهَا وَتَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌؕ مَا لَهُمْ مِّنَ اللهِ مِنْ عَاصِمٍۚ كَاَنَّمَاۤ اُغْشِيَتْ وُجُوْهُهُمْ قِطَعًا مِّنَ اللَّيْلِ مُظْلِمًاؕ اُولٰٓئِكَ اَصْحَابُ النَّارِۚ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
যারা পাপ অর্জন করবে তারা পাপের পরিমাণ অনুযায়ী শাস্তি ভোগ করবে। অপমান তাদের উপর চেপে বসবে। আল্লাহ ছাড়া তাদের কোন রক্ষাকারী থাকবে না। তাদের অবস্থা এমন হবে, যেন অন্ধকার রাতের একটি অংশ তাদের চেহারা আবৃত করে ফেলেছে। তারাই হচ্ছে জাহান্নামের অধিবাসী, তারা চিরকাল সেখানে থাকবে। (সূরা ইউনুস– ২৭)
জাহান্নাম ভর্তি হবে না :
يَوْمَ نَقُوْلُ لِجَهَنَّمَ هَلِ امْتَلَاْتِ وَتَقُوْلُ هَلْ مِنْ مَّزِيْدٍ
সেদিন আমি জাহান্নামকে বলব, তুমি কি ভর্তি হয়েছ? সে বলবে, আরো আছে কি? (সূরা ক্বাফু ৩০)
ব্যাখ্যা : এর দু’টি অর্থ হতে পারে। একটি হচ্ছে, এখন আমার মধ্যে আর অধিক মানুষের স্থান নেই। অপরটি হচ্ছে, আরো যত অপরাধী আছে তাদের নিয়ে আসুন। প্রথম অর্থ গ্রহণ করলে এ কথা থেকে এ ধারণা পাওয়া যায় যে, অপরাধীদেরকে এমন গাদাগাদি করে জাহান্নামে রাখা হবে যে, সেখানে একটি সুঁচ পরিমাণ স্থানও আর অবশিষ্ট থাকবে না। তাই জাহান্নামকে যখন জিজ্ঞেস করা হবে, তোমার উদর কি পূর্ণ হয়েছে? তখন সে বিব্রত হয়ে জবাব দেবে- এখনো কি আরো মানুষ আছে? দ্বিতীয় অর্থ গ্রহণ করলে এরূপ ধারণা সৃষ্টি হয় যে, সে সময় জাহান্নাম অপরাধীদের প্রতি এমন ভীষণভাবে রুষ্ট থাকবে যে, সে আরো কেউ আছে কি- এভাবে চাইতে থাকবে এবং সেদিন যেন কোন অপরাধী মুক্তি না পায় তা-ই কামনা করবে। আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, জাহান্নামের মধ্যে যত লোকই নিক্ষিপ্ত হবে ততই বলবে আরো চাই, আরো চাই। এমনকি আল্লাহ তা‘আলা তাঁর পা জাহান্নামের মুখে রাখবেন। এতে এক অংশ অপর অংশের সাথে মিশে যাবে। তখন জাহান্নাম বলবে, হে আল্লাহ! আপনার ইজ্জতের কসম, যথেষ্ট হয়েছে। (সহীহ বুখারী, হা/৪৮৪৯)
একের পর এক জাহান্নামে প্রবেশ করতে থাকবে :
اُدْخُلُوْا فِۤيْ اُمَمٍ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِكُمْ مِّنَ الْجِنِّ وَالْاِنْسِ فِى النَّارِ
আল্লাহ বলবেন, তোমরা ওদের সাথে প্রবেশ করো, জিন ও মানুষের মধ্যে যারা তোমাদের আগে জাহান্নামে প্রবেশ করেছে। (সূরা আ‘রাফু ৩৮)
ব্যাখ্যা : সর্বাবস্থায় প্রত্যেকটি দল কোন না কোন দলের পূর্ববর্তী বা পরবর্তী দল ছিল। কোন পূর্ববর্তী দল যদি বিপথগামী চিন্তা ও কর্ম রেখে গিয়ে থাকে, তাহলে পরবর্তীদের পথভ্রষ্ট হওয়ার কিছু দায়দায়িত্ব তাদের উপরও বর্তায়। তাই বলা হয়েছে, প্রত্যেকের জন্য দ্বিগুণ শাস্তিই রয়েছে। একটি শাস্তি হচ্ছে, নিজে ভুলপথ অবলম্বনের এবং অপরটি অন্যদেরকে ভুলপথ দেখানোর।
জাহান্নামীরা একদল অপর দলকে ধিক্কার দেবে :
هٰذَا فَوْجٌ مُّقْتَحِمٌ مَّعَكُمْۚ لَا مَرْحَبًا ۢبِهِمْ اِنَّهُمْ ؕ صَالُوا النَّارِ – قَالُوْا بَلْ اَنْتُمْ لَا مَرْحَبًا ۢبِكُمْؕ اَنْتُمْ قَدَّمْتُمُوْهُ لَنَاۚ فَبِئْسَ الْقَرَارُ
(একদল বলবে) এ হচ্ছে এমন একটি দল, যারা তোমাদের সাথে (জাহান্নামে) প্রবেশ করার জন্য আসছে। (তাদের উপর আল্লাহর লানত) তাদের জন্য কোন ধন্যবাদ নেই। আর অপরদল বলবে, বরং তোমাদের জন্যও কোন ধন্যবাদ নেই। তোমরাই আমাদেরকে এ জাহান্নামের পথ দেখিয়েছিলে। আর জাহান্নামের এ বাসস্থান কতই না নিকৃষ্ট! (সূরা সোয়াদু ৫৯, ৬০)
পরবর্তীরা পূর্ববর্তীদেরকে দেখে অভিশাপ দেবে :
كُلَّمَا دَخَلَتْ اُمَّةٌ لَّعَنَتْ اُخْتَهَا
যখনই কোন দল (জাহান্নামে) প্রবেশ করবে, তখনই পূর্ববর্তীরা তাদেরকে অভিশাপ দেবে। (সূরা আ‘রাফু ৩৮)
পরবর্তীরা পূর্ববর্তীদের জন্য দ্বিগুণ শাস্তির দাবি করবে :
قَالُوْا رَبَّنَا مَنْ قَدَّمَ لَنَا هٰذَا فَزِدْهُ عَذَابًا ضِعْفًا فِى النَّارِ
তারা বলবে, হে আল্লাহ! যারা আমাদেরকে এ জাহান্নামের পথ দেখিয়েছে, তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দিন।
(সূরা সোয়াদু ৬১)
বস্তুত সকলের জন্যই দ্বিগুণ শাস্তি হবে :
حَتّٰۤى اِذَاۤ اِدَّارَكُوْا فِيْهَا جَمِيْعًا قَالَتْ اُخْرَاهُمْ لِاُوْلَاهُمْ رَبَّنَا هٰۤؤُلَآءِ اَضَلُّوْنَا فَاٰتِهِمْ عَذَابًا ضِعْفًا مِّنَ النَّارِ قَالَ لِكُلٍّ ضِعْفٌ وَّلٰكِنْ لَّا تَعْلَمُوْنَ
যখন সবাই জাহান্নামে একত্রিত হবে, তখন পরবর্তীরা পূর্ববর্তীদেরকে বলবে, হে আল্লাহ! তারা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে। সুতরাং তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দিন। তখন তিনি বলবেন, প্রত্যেকের জন্যই দ্বিগুণ শাস্তি রয়েছে; কিন্তু তোমরা তা জান না। (সূরা আ‘রাফু ৩৮)
জাহান্নামীরা বিতর্কে লিপ্ত হবে :
وَلَوْ تَرٰۤى اِذِ الظَّالِمُوْنَ مَوْقُوْفُوْنَ عِنْدَ رَبِّهِمْۚ يَرْجِعُ بَعْضُهُمْ اِلٰى بَعْضِنِ الْقَوْلَۚ يَقُوْلُ الَّذِيْنَ اسْتُضْعِفُوْا لِلَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْا لَوْلَاۤ اَنْتُمْ لَكُنَّا مُؤْمِنِيْنَ – قَالَ الَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْا لِلَّذِيْنَ اسْتُضْعِفُوْاۤ اَنَحْنُ صَدَدْنَاكُمْ عَنِ الْهُدٰى بَعْدَ اِذْ جَآءَكُمْ بَلْ كُنْتُمْ مُّجْرِمِيْنَ – وَقَالَ الَّذِيْنَ اسْتُضْعِفُوْا لِلَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْا بَلْ مَكْرُ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ اِذْ تَاْمُرُوْنَنَاۤ اَنْ نَّكْفُرَ بِاللهِ وَنَجْعَلَ لَهٗۤ اَنْدَادًاؕ وَاَسَرُّوا النَّدَامَةَ لَمَّا رَاَوُا الْعَذَابَؕ وَجَعَلْنَا الْاَغْلَالَ فِۤيْ اَعْنَاقِ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاؕ هَلْ يُجْزَوْنَ اِلَّا مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
তুমি যদি দেখতে তখনকার অবস্থা, যখন যালিমরা আল্লাহর নিকট উপস্থিত হবে তখন একদল অপর দলের সাথে কথা কাটাকাটিতে লিপ্ত হবে। দুর্বলরা সবলদেরকে বলবে, তোমরা যদি না হতে (বিভ্রান্ত না করতে) তবে আমরা ঈমানদার হয়ে যেতাম। এ কথা শুনে নেতারা দুর্বলদেরকে বলবে, আল্লাহর পক্ষ থেকে হেদায়াতের বাণী তোমাদের কাছে পৌঁছার পর আমরা কি তোমাদেরকে তা থেকে বিরত রেখেছিলাম? আসলে তোমরাই অপরাধী ছিলে। এ কথা শুনে অনুসারীরা নেতাদেরকে বলবে, তোমরা রাত–দিন এ চক্রান্তে লিপ্ত ছিলে যে, আমরা কুফরীতে লিপ্ত হই এবং আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন করি। বস্তুত তারা যখন আযাব দেখবে তখন নিজেদের অপমান ঢাকতে থাকবে আর আমি কাফিরদের ঘাড়ে বেড়ি পরিয়ে দেব। এসব তাদের কুকর্মের ফলাফল। (সূরা সাবা, ৩১–৩৩)
اِنَّ ذٰلِكَ لَحَقٌّ تَخَاصُمُ اَهْلِ النَّارِ
জাহান্নামীদের এসব বিতর্ক সত্য, তারা এটা করবেই। (সূরা সোয়াদু ৬৪)
هٰذَا فَوْجٌ مُّقْتَحِمٌ مَّعَكُمْۚ لَا مَرْحَبًا ۢبِهِمْ اِنَّهُمْ ؕ صَالُوا النَّارِ – قَالُوْا بَلْ اَنْتُمْ لَا مَرْحَبًا ۢبِكُمْؕ اَنْتُمْ قَدَّمْتُمُوْهُ لَنَاۚ فَبِئْسَ الْقَرَارُ
(একদল বলবে) এ হচ্ছে এমন একটি দল, যারা তোমাদের সাথে (জাহান্নামে) প্রবেশ করার জন্য আসছে। (তাদের উপর আল্লাহর লানত) তাদের জন্য কোন ধন্যবাদ নেই। আর অপরদল বলবে, বরং তোমাদের জন্যও কোন ধন্যবাদ নেই। তোমরাই আমাদেরকে এ জাহান্নামের পথ দেখিয়েছিলে। আর জাহান্নামের এ বাসস্থান কতই না নিকৃষ্ট! (সূরা সোয়াদু ৫৯, ৬০)
পরবর্তীরা পূর্ববর্তীদেরকে দেখে অভিশাপ দেবে :
كُلَّمَا دَخَلَتْ اُمَّةٌ لَّعَنَتْ اُخْتَهَا
যখনই কোন দল (জাহান্নামে) প্রবেশ করবে, তখনই পূর্ববর্তীরা তাদেরকে অভিশাপ দেবে। (সূরা আ‘রাফু ৩৮)
পরবর্তীরা পূর্ববর্তীদের জন্য দ্বিগুণ শাস্তির দাবি করবে :
قَالُوْا رَبَّنَا مَنْ قَدَّمَ لَنَا هٰذَا فَزِدْهُ عَذَابًا ضِعْفًا فِى النَّارِ
তারা বলবে, হে আল্লাহ! যারা আমাদেরকে এ জাহান্নামের পথ দেখিয়েছে, তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দিন।
(সূরা সোয়াদু ৬১)
বস্তুত সকলের জন্যই দ্বিগুণ শাস্তি হবে :
حَتّٰۤى اِذَاۤ اِدَّارَكُوْا فِيْهَا جَمِيْعًا قَالَتْ اُخْرَاهُمْ لِاُوْلَاهُمْ رَبَّنَا هٰۤؤُلَآءِ اَضَلُّوْنَا فَاٰتِهِمْ عَذَابًا ضِعْفًا مِّنَ النَّارِ قَالَ لِكُلٍّ ضِعْفٌ وَّلٰكِنْ لَّا تَعْلَمُوْنَ
যখন সবাই জাহান্নামে একত্রিত হবে, তখন পরবর্তীরা পূর্ববর্তীদেরকে বলবে, হে আল্লাহ! তারা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে। সুতরাং তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দিন। তখন তিনি বলবেন, প্রত্যেকের জন্যই দ্বিগুণ শাস্তি রয়েছে; কিন্তু তোমরা তা জান না। (সূরা আ‘রাফু ৩৮)
জাহান্নামীরা বিতর্কে লিপ্ত হবে :
وَلَوْ تَرٰۤى اِذِ الظَّالِمُوْنَ مَوْقُوْفُوْنَ عِنْدَ رَبِّهِمْۚ يَرْجِعُ بَعْضُهُمْ اِلٰى بَعْضِنِ الْقَوْلَۚ يَقُوْلُ الَّذِيْنَ اسْتُضْعِفُوْا لِلَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْا لَوْلَاۤ اَنْتُمْ لَكُنَّا مُؤْمِنِيْنَ – قَالَ الَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْا لِلَّذِيْنَ اسْتُضْعِفُوْاۤ اَنَحْنُ صَدَدْنَاكُمْ عَنِ الْهُدٰى بَعْدَ اِذْ جَآءَكُمْ بَلْ كُنْتُمْ مُّجْرِمِيْنَ – وَقَالَ الَّذِيْنَ اسْتُضْعِفُوْا لِلَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْا بَلْ مَكْرُ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ اِذْ تَاْمُرُوْنَنَاۤ اَنْ نَّكْفُرَ بِاللهِ وَنَجْعَلَ لَهٗۤ اَنْدَادًاؕ وَاَسَرُّوا النَّدَامَةَ لَمَّا رَاَوُا الْعَذَابَؕ وَجَعَلْنَا الْاَغْلَالَ فِۤيْ اَعْنَاقِ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاؕ هَلْ يُجْزَوْنَ اِلَّا مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
তুমি যদি দেখতে তখনকার অবস্থা, যখন যালিমরা আল্লাহর নিকট উপস্থিত হবে তখন একদল অপর দলের সাথে কথা কাটাকাটিতে লিপ্ত হবে। দুর্বলরা সবলদেরকে বলবে, তোমরা যদি না হতে (বিভ্রান্ত না করতে) তবে আমরা ঈমানদার হয়ে যেতাম। এ কথা শুনে নেতারা দুর্বলদেরকে বলবে, আল্লাহর পক্ষ থেকে হেদায়াতের বাণী তোমাদের কাছে পৌঁছার পর আমরা কি তোমাদেরকে তা থেকে বিরত রেখেছিলাম? আসলে তোমরাই অপরাধী ছিলে। এ কথা শুনে অনুসারীরা নেতাদেরকে বলবে, তোমরা রাত–দিন এ চক্রান্তে লিপ্ত ছিলে যে, আমরা কুফরীতে লিপ্ত হই এবং আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন করি। বস্তুত তারা যখন আযাব দেখবে তখন নিজেদের অপমান ঢাকতে থাকবে আর আমি কাফিরদের ঘাড়ে বেড়ি পরিয়ে দেব। এসব তাদের কুকর্মের ফলাফল। (সূরা সাবা, ৩১–৩৩)
اِنَّ ذٰلِكَ لَحَقٌّ تَخَاصُمُ اَهْلِ النَّارِ
জাহান্নামীদের এসব বিতর্ক সত্য, তারা এটা করবেই। (সূরা সোয়াদু ৬৪)
অনুসারীরা নেতাদের কাছে সাহায্য চাইবে :
وَاِذْ يَتَحَآجُّوْنَ فِى النَّارِ فَيَقُوْلُ الضُّعَفَآءُ لِلَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْاۤ اِنَّا كُنَّا لَكُمْ تَبَعًا فَهَلْ اَنْتُمْ مُّغْنُوْنَ عَنَّا نَصِيْبًا مِّنَ النَّارِ – قَالَ الَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْاۤ اِنَّا كُلٌّ فِيْهَاۤ اِنَّ اللهَ قَدْ حَكَمَ بَيْنَ الْعِبَادِ
যখন জাহান্নামীরা বিতর্কে লিপ্ত হবে, তখন অনুসারীরা নেতাদেরকে বলবে, আমরা তো দুনিয়াতে তোমাদের অনুসরণ করেছিলাম। এখন তোমরা আমাদের উপর অর্পিত জাহান্নামের আযাব কিছুটা হলেও সরাতে পারবে কি? নেতারা উত্তরে বলবে, আমাদের সকলকেই জাহান্নামে জ্বলতে হবে। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে চূড়ান্ত ফায়সালা করে দিয়েছেন। (সূরা মু’মিনু ৪৭, ৪৮)
সেখানে কেউ কারো দায়িত্ব নেবে না :
وَبَرَزُوْا لِلّٰهِ جَمِيْعًا فَقَالَ الضُّعَفَآءُ لِلَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْاۤ اِنَّا كُنَّا لَكُمْ تَبَعًا فَهَلْ اَنْتُمْ مُّغْنُوْنَ عَنَّا مِنْ عَذَابِ اللهِ مِنْ شَيْءٍ قَالُوْا لَوْ هَدَانَا اللهُ لَهَدَيْنَاكُمْؕ سَوَآءٌ عَلَيْنَاۤ اَجَزِعْنَاۤ اَمْ صَبَرْنَا مَا لَنَا مِنْ مَّحِيْصٍ
সকলেই আল্লাহর সামনে হাজির হবে। তখন দুর্বলরা নেতাদের কাছে আবেদন করবে, আমরা দুনিয়াতে তোমাদের অনুসারী ছিলাম। অতএব আজ আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের উপর যে আযাব এসেছে তা আমাদের হতে একটু সরাতে পার কি? তখন নেতারা বলবে, আল্লাহ যদি আমাদেরকে পথ দেখাতেন তবে আমরাও তোমাদেরকে পথ দেখাতাম। এখন আমরা হা–হুতাশ করি আর সবর করি আমাদেরকে রক্ষা করার কেউ নেই। (সূরা ইবরাহীম– ২১)
তারা মুমিনদেরকে জাহান্নামে দেখতে পাবে না :
وَقَالُوْا مَا لَنَا لَا نَرٰى رِجَالًا كُنَّا نَعُدُّهُمْ مِّنَ الْاَشْرَارِ – اَتَّخَذْنَاهُمْ سِخْرِيًّا اَمْ زَاغَتْ عَنْهُمُ الْاَبْصَارُ
তারা আরো বলবে, আমাদের কী হলো? আমরা যেসব লোককে খারাপ বলে গণ্য করতাম তাদেরকে (জাহান্নামে) দেখতে পাচ্ছি না কেন? তবে কি আমরা তাদেরকে অযথা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতাম, না তাদের ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টিভ্রম ঘটেছে। (সূরা সোয়াদ- ৬২, ৬৩)
ব্যাখ্যা : এখানে এমনসব মুমিনের কথা বলা হয়েছে, যাদেরকে কাফিররা দুনিয়ায় খারাপ মনে করত। এর অর্থ হচ্ছে, তারা অবাক হয়ে চারদিকে দেখতে থাকবে এবং ভাবতে থাকবে যে, এ জাহান্নামে তো আমরা ও আমাদের নেতারা সবাই; কিন্তু দুনিয়ায় আমরা যাদের দুর্নাম করতাম এবং আল্লাহ, রাসূল ও আখিরাতের কথা বলার কারণে আমাদের মজলিসে যাদেরকে বিদ্রূপ করা হতো তাদের নাম নিশানাও তো এখানে কোথাও দেখা যাচ্ছে না।
জাহান্নামীরা জান্নাতীদের কাছে খাদ্য চাইবে কিন্তু পাবে না :
وَنَادٰۤى اَصْحَابُ النَّارِ اَصْحَابَ الْجَنَّةِ اَنْ اَفِيْضُوْا عَلَيْنَا مِنَ الْمَآءِ اَوْ مِمَّا رَزَقَكُمُ اللهُؕ قَالُوْاۤ اِنَّ اللهَ حَرَّمَهُمَا عَلَى الْكَافِرِيْنَ – اَلَّذِيْنَ اتَّخَذُوْا دِيْنَهُمْ لَهْوًا وَّلَعِبًا وَّغَرَّتْهُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَاۚ فَالْيَوْمَ نَنْسَاهُمْ كَمَا نَسُوْا لِقَآءَ يَوْمِهِمْ هٰذَا وَمَا كَانُوْا بِاٰيَاتِنَا يَجْحَدُوْنَ
জাহান্নামীরা জান্নাতবাসীদেরকে ডেকে বলবে, আমাদেরকে একটু পানি দাও অথবা আল্লাহ তোমাদেরকে যে রিযিক দিয়েছেন তা হতে আমাদেরকে কিছু দাও। তখন জান্নাতবাসীরা বলবে, আল্লাহ জান্নাতের পানীয় এবং খাদ্য কাফিরদের জন্য হারাম করে দিয়েছেন। যারা (দুনিয়াতে) তাদের দ্বীনকে তামাশা ও খেলার বিষয় বানিয়েছিল এবং দুনিয়ার ভোগবিলাস তাদেরকে ধোঁকায় ফেলে রেখেছিল। সুতরাং আজ আমি তাদেরকে ভুলে যাব; কারণ তারা এ দিনকে ভুলে গিয়েছিল এবং তারা আমার আয়াতসমূহকে নিয়ে বিতর্ক করত। (সূরা আ‘রাফু ৫০, ৫১)
জান্নাতীরা জাহান্নামীদেরকে নিয়ে উপহাস করবে :
فَالْيَوْمَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مِنَ الْكُفَّارِ يَضْحَكُوْنَ
আজ ঈমানদারগণ কাফিরদেরকে নিয়ে উপহাস করছে । (সূরা মুতাফফিফীনু ৩৪)
وَاِذْ يَتَحَآجُّوْنَ فِى النَّارِ فَيَقُوْلُ الضُّعَفَآءُ لِلَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْاۤ اِنَّا كُنَّا لَكُمْ تَبَعًا فَهَلْ اَنْتُمْ مُّغْنُوْنَ عَنَّا نَصِيْبًا مِّنَ النَّارِ – قَالَ الَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْاۤ اِنَّا كُلٌّ فِيْهَاۤ اِنَّ اللهَ قَدْ حَكَمَ بَيْنَ الْعِبَادِ
যখন জাহান্নামীরা বিতর্কে লিপ্ত হবে, তখন অনুসারীরা নেতাদেরকে বলবে, আমরা তো দুনিয়াতে তোমাদের অনুসরণ করেছিলাম। এখন তোমরা আমাদের উপর অর্পিত জাহান্নামের আযাব কিছুটা হলেও সরাতে পারবে কি? নেতারা উত্তরে বলবে, আমাদের সকলকেই জাহান্নামে জ্বলতে হবে। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে চূড়ান্ত ফায়সালা করে দিয়েছেন। (সূরা মু’মিনু ৪৭, ৪৮)
সেখানে কেউ কারো দায়িত্ব নেবে না :
وَبَرَزُوْا لِلّٰهِ جَمِيْعًا فَقَالَ الضُّعَفَآءُ لِلَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْاۤ اِنَّا كُنَّا لَكُمْ تَبَعًا فَهَلْ اَنْتُمْ مُّغْنُوْنَ عَنَّا مِنْ عَذَابِ اللهِ مِنْ شَيْءٍ قَالُوْا لَوْ هَدَانَا اللهُ لَهَدَيْنَاكُمْؕ سَوَآءٌ عَلَيْنَاۤ اَجَزِعْنَاۤ اَمْ صَبَرْنَا مَا لَنَا مِنْ مَّحِيْصٍ
সকলেই আল্লাহর সামনে হাজির হবে। তখন দুর্বলরা নেতাদের কাছে আবেদন করবে, আমরা দুনিয়াতে তোমাদের অনুসারী ছিলাম। অতএব আজ আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের উপর যে আযাব এসেছে তা আমাদের হতে একটু সরাতে পার কি? তখন নেতারা বলবে, আল্লাহ যদি আমাদেরকে পথ দেখাতেন তবে আমরাও তোমাদেরকে পথ দেখাতাম। এখন আমরা হা–হুতাশ করি আর সবর করি আমাদেরকে রক্ষা করার কেউ নেই। (সূরা ইবরাহীম– ২১)
তারা মুমিনদেরকে জাহান্নামে দেখতে পাবে না :
وَقَالُوْا مَا لَنَا لَا نَرٰى رِجَالًا كُنَّا نَعُدُّهُمْ مِّنَ الْاَشْرَارِ – اَتَّخَذْنَاهُمْ سِخْرِيًّا اَمْ زَاغَتْ عَنْهُمُ الْاَبْصَارُ
তারা আরো বলবে, আমাদের কী হলো? আমরা যেসব লোককে খারাপ বলে গণ্য করতাম তাদেরকে (জাহান্নামে) দেখতে পাচ্ছি না কেন? তবে কি আমরা তাদেরকে অযথা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতাম, না তাদের ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টিভ্রম ঘটেছে। (সূরা সোয়াদ- ৬২, ৬৩)
ব্যাখ্যা : এখানে এমনসব মুমিনের কথা বলা হয়েছে, যাদেরকে কাফিররা দুনিয়ায় খারাপ মনে করত। এর অর্থ হচ্ছে, তারা অবাক হয়ে চারদিকে দেখতে থাকবে এবং ভাবতে থাকবে যে, এ জাহান্নামে তো আমরা ও আমাদের নেতারা সবাই; কিন্তু দুনিয়ায় আমরা যাদের দুর্নাম করতাম এবং আল্লাহ, রাসূল ও আখিরাতের কথা বলার কারণে আমাদের মজলিসে যাদেরকে বিদ্রূপ করা হতো তাদের নাম নিশানাও তো এখানে কোথাও দেখা যাচ্ছে না।
জাহান্নামীরা জান্নাতীদের কাছে খাদ্য চাইবে কিন্তু পাবে না :
وَنَادٰۤى اَصْحَابُ النَّارِ اَصْحَابَ الْجَنَّةِ اَنْ اَفِيْضُوْا عَلَيْنَا مِنَ الْمَآءِ اَوْ مِمَّا رَزَقَكُمُ اللهُؕ قَالُوْاۤ اِنَّ اللهَ حَرَّمَهُمَا عَلَى الْكَافِرِيْنَ – اَلَّذِيْنَ اتَّخَذُوْا دِيْنَهُمْ لَهْوًا وَّلَعِبًا وَّغَرَّتْهُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَاۚ فَالْيَوْمَ نَنْسَاهُمْ كَمَا نَسُوْا لِقَآءَ يَوْمِهِمْ هٰذَا وَمَا كَانُوْا بِاٰيَاتِنَا يَجْحَدُوْنَ
জাহান্নামীরা জান্নাতবাসীদেরকে ডেকে বলবে, আমাদেরকে একটু পানি দাও অথবা আল্লাহ তোমাদেরকে যে রিযিক দিয়েছেন তা হতে আমাদেরকে কিছু দাও। তখন জান্নাতবাসীরা বলবে, আল্লাহ জান্নাতের পানীয় এবং খাদ্য কাফিরদের জন্য হারাম করে দিয়েছেন। যারা (দুনিয়াতে) তাদের দ্বীনকে তামাশা ও খেলার বিষয় বানিয়েছিল এবং দুনিয়ার ভোগবিলাস তাদেরকে ধোঁকায় ফেলে রেখেছিল। সুতরাং আজ আমি তাদেরকে ভুলে যাব; কারণ তারা এ দিনকে ভুলে গিয়েছিল এবং তারা আমার আয়াতসমূহকে নিয়ে বিতর্ক করত। (সূরা আ‘রাফু ৫০, ৫১)
জান্নাতীরা জাহান্নামীদেরকে নিয়ে উপহাস করবে :
فَالْيَوْمَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مِنَ الْكُفَّارِ يَضْحَكُوْنَ
আজ ঈমানদারগণ কাফিরদেরকে নিয়ে উপহাস করছে । (সূরা মুতাফফিফীনু ৩৪)
শাস্তি হালকা করার জন্য জাহান্নামীদের প্রার্থনা :
وَقَالَ الَّذِيْنَ فِى النَّارِ لِخَزَنَةِ جَهَنَّمَ ادْعُوْا رَبَّكُمْ يُخَفِّفْ عَنَّا يَوْمًا مِّنَ الْعَذَابِ – قَالُوْاۤ اَوَلَمْ تَكُ تَاْتِيْكُمْ رُسُلُكُمْ بِالْبَيِّنَاتِؕ قَالُوْا بَلٰىؕ قَالُوْا فَادْعُوْاۚ وَمَا دُعَآءُ الْكَافِرِيْنَ اِلَّا فِيْ ضَلَالٍ
তারা জাহান্নামের দারওয়ান ফেরেশতাকে বলবে, তোমার প্রতিপালকের নিকট দু‘আ করো; যাতে অন্তত একদিনের জন্য আমাদের আযাবটাকে একটু হালকা করেন। ফেরেশতা বলবে, তোমাদের নিকট কি আল্লাহর রাসূলগণ স্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে আসেননি? তারা বলবে, হ্যাঁ- এসেছিলেন। ফেরেশতা বলবে, তাহলে এখন তোমরা নিজেরাই দু‘আ করো। আর কাফিরদের দু‘আ কোন কাজে আসবে না। (সূরা মু’মিনু ৪৯, ৫০)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ ঘটনা যখন এই যে, রাসূল তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলি নিয়ে এসেছিলেন। আর তোমরা তাঁর কথা মানতে অস্বীকার করেছিলে, যার সাজাপ্রাপ্ত হয়ে এখানে এসেছ। এখন আমাদের পক্ষে তোমাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার কাছে দু‘আ করা কোন ক্রমেই সম্ভব নয়। এ অবস্থায় তোমরা নিজেরা দু‘আ করতে চাইলে করে দেখো। তবে আমরা তোমাদেরকে প্রথমেই এ কথা বলে দিতে চাই যে, যারা তোমাদের মতো কুফরী করে এখানে এসেছে, তাদের দু‘আ করা একেবারেই নিরর্থক।
তারা মৃত্যু কামনা করবে :
وَنَادَوْا يَا مَالِكُ لِيَقْضِ عَلَيْنَا رَبُّكَؕ قَالَ اِنَّكُمْ مَّاكِثُوْنَ
তারা মালেক ফেরেশতাকে ডেকে বলবে, হে মালেক! আল্লাহকে বলুন, তিনি যেন আমাদের মৃত্যু দিয়ে দেন। ফেরেশতা উত্তর দেবে, তোমরা চিরদিন জাহান্নামে পড়ে থাকবে। (সূরা যুখরুফু ৭৮)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ আমি তোমাদের সামনে প্রকৃত সত্য সুস্পষ্ট করে দিয়েছিলাম। কিন্তু তোমরা ছিলে সত্যের পরিবর্তে কিচ্ছা-কাহিনীর ভক্ত এবং সত্য ছিল তোমাদের কাছে অত্যন্ত অপছন্দনীয়। এখন নিজেদের এই নির্বুদ্ধিতামূলক পছন্দের পরিণাম দেখে অস্থির হয়ে উঠছ কেন?
জাহান্নামে কারো মৃত্যু হবে না :
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَهُمْ نَارُ جَهَنَّمَۚ لَا يُقْضٰى عَلَيْهِمْ فَيَمُوْتُوْا وَلَا يُخَفَّفُ عَنْهُمْ مِّنْ عَذَابِهَاؕ كَذٰلِكَ نَجْزِيْ كُلَّ كَفُوْرٍ
তাদের ব্যাপারে এমন কোন ফায়সালা করা হবে না যে, তারা মরে যাবে; অন্যদিকে আযাবও হালকা করা হবে না। অনুরূপভাবে আমি প্রত্যেক কাফিরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। (সূরা ফাতির– ৩৬)
اِنَّهٗ مَنْ يَّاْتِ رَبَّهٗ مُجْرِمًا فَاِنَّ لَهٗ جَهَنَّمَؕ لَا يَمُوْتُ فِيْهَا وَلَا يَحْيٰى
যে কেউ পাপী হয়ে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে তার জন্য রয়েছে জাহান্নাম। সেখানে সে মরবেও না– বাঁচবেও না। (সূরা ত্বা-হা– ৭৪)
وَيَاْتِيْهِ الْمَوْتُ مِنْ كُلِّ مَكَانٍ وَّمَا هُوَ بِمَيِّتٍ
তার নিকট চতুর্দিক থেকে মৃত্যু আসবে, কিন্তু সে মরবে না। (সূরা ইবরাহীম– ১৭)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ জীবন ও মৃত্যুর মাঝখানে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকবে। পুরোপুরি মৃত্যু হবে না, আবার পুরোপুরি জীবনও থাকবে না। যার ফলে তার কষ্ট ও বিপদের শেষ হবে না এবং জীবনের কোন আনন্দও লাভ করবে না। তাই মরতে চাইবে কিন্তু মরতে পারবে না। কুরআনে জাহান্নামের আযাবের যে বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে এ অবস্থাটি হচ্ছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভয়াবহ। এর কল্পনায়ও হৃদয় কেঁপে ওঠে।
ধৈর্য ধরেও কোন লাভ হবে না :
اِصْلَوْهَا فَاصْبِرُوْاۤ اَوْ لَا تَصْبِرُوْاۚ سَوَآءٌ عَلَيْكُمْؕ اِنَّمَا تُجْزَوْنَ مَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
(জাহান্নামীদেরকে বলা হবে) তোমরা এতে প্রবেশ করো। এখন তোমরা ধৈর্যধারণ কর আর না কর উভয়ই সমান। তোমাদেরকে তোমাদের কর্মফল ভোগ করতেই হবে। (সূরা তূর– ১৬)
নিজেরা নিজেদের ধ্বংস কামনা করবে :
وَاِذَاۤ اُلْقُوْا مِنْهَا مَكَانًا ضَيِّقًا مُّقَرَّنِيْنَ دَعَوْا هُنَالِكَ ثُبُوْرًا
যখনই তারা জাহান্নামের কোন সংকীর্ণ স্থানে হাত–পা বাঁধা অবস্থায় নিক্ষিপ্ত হবে, তখন তারা নিজেদের দুর্ভোগ কামনা করবে। (সূরা ফুরক্বান- ১৩)
জাহান্নাম থেকে বের হতে চাইবে কিন্তু পারবে না :
يُرِيْدُوْنَ اَنْ يَّخْرُجُوْا مِنَ النَّارِ وَمَا هُمْ بِخَارِجِيْنَ مِنْهَاؗ وَلَهُمْ عَذَابٌ مُّقِيْمٌ
জাহান্নামীরা জাহান্নাম থেকে বের হতে চাইবে কিন্তু তারা কখনই বের হতে পারবে না। তাদের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী আযাব। (সূরা মায়েদা– ৩৭)
وَاَمَّا الَّذِيْنَ فَسَقُوْا فَمَاْوَاهُمُ النَّارُؕ كُلَّمَاۤ اَرَادُوْاۤ اَنْ يَّخْرُجُوْا مِنْهَاۤ اُعِيْدُوْا فِيْهَا وَقِيْلَ لَهُمْ ذُوْقُوْا عَذَابَ النَّارِ الَّذِيْ كُنْتُمْ بِه تُكَذِّبُوْنَ
যারা পাপী তাদের ঠিকানা হলো জাহান্নাম। যখনই তারা সেখান থেকে বের হতে চাইবে, তখনই আবার তাদেরকে জাহান্নামের দিকে ফিরিয়ে দেয়া হবে। আর তাদেরকে বলা হবে, তোমরা সেই আযাবের স্বাদ ভোগ করতে থাকো যে আযাবকে মিথ্যা মনে করে বিশ্বাস করনি। (সূরা সাজদা– ২০)
জাহান্নামীদের চিৎকার ও আহাজারী :
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَهُمْ نَارُ جَهَنَّمَۚ لَا يُقْضٰى عَلَيْهِمْ فَيَمُوْتُوْا وَلَا يُخَفَّفُ عَنْهُمْ مِّنْ عَذَابِهَاؕ كَذٰلِكَ نَجْزِيْ كُلَّ كَفُوْرٍ – وَهُمْ يَصْطَرِخُوْنَ فِيْهَاۚ رَبَّنَاۤ اَخْرِجْنَا نَعْمَلْ صَالِحًا غَيْرَ الَّذِيْ كُنَّا نَعْمَلُؕ اَوَلَمْ نُعَمِّرْكُمْ مَّا يَتَذَكَّرُ فِيْهِ مَنْ تَذَكَّرَ وَجَآءَكُمُ النَّذِيْرُؕ فَذُوْقُوْا فَمَا لِلظَّالِمِيْنَ مِنْ نَّصِيْرٍ
যারা কুফরী করেছে তাদের জন্য থাকবে জাহান্নামের আগুন, তাদের জন্য মৃত্যুর ফায়সালা হবে না আবার তাদের শাস্তিও হালকা করা হবে না। প্রত্যেক কাফিরকে আমি এভাবেই শাস্তি দেব। জাহান্নামে তারা চিৎকার দিতে থাকবে আর বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করুন। আগে যা পাপ করেছি এবার তা করব না। আল্লাহ বলবেন, আমি তোমাদেরকে যে জীবন দিয়েছিলাম তাই যথেষ্ট ছিল, আর তোমাদের কাছে ভীতি প্রদর্শনকারীও এসেছিল। অতএব তোমরা শাস্তি ভোগ করো। আর যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই। (সূরা ফাতির– ৩৬, ৩৭)
فَاَمَّا الَّذِيْنَ شَقُوْا فَفِى النَّارِ لَهُمْ فِيْهَا زَفِيْرٌ وَّشَهِيْقٌ
যারা হতভাগা তারা জাহান্নামের অগ্নিতে জ্বলতে থাকবে। সেখানে তারা সর্বদা চিৎকার ও আর্তনাদ করতে থাকবে। (সূরা হুদু ১০৬)
وَقَالَ الَّذِيْنَ فِى النَّارِ لِخَزَنَةِ جَهَنَّمَ ادْعُوْا رَبَّكُمْ يُخَفِّفْ عَنَّا يَوْمًا مِّنَ الْعَذَابِ – قَالُوْاۤ اَوَلَمْ تَكُ تَاْتِيْكُمْ رُسُلُكُمْ بِالْبَيِّنَاتِؕ قَالُوْا بَلٰىؕ قَالُوْا فَادْعُوْاۚ وَمَا دُعَآءُ الْكَافِرِيْنَ اِلَّا فِيْ ضَلَالٍ
তারা জাহান্নামের দারওয়ান ফেরেশতাকে বলবে, তোমার প্রতিপালকের নিকট দু‘আ করো; যাতে অন্তত একদিনের জন্য আমাদের আযাবটাকে একটু হালকা করেন। ফেরেশতা বলবে, তোমাদের নিকট কি আল্লাহর রাসূলগণ স্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে আসেননি? তারা বলবে, হ্যাঁ- এসেছিলেন। ফেরেশতা বলবে, তাহলে এখন তোমরা নিজেরাই দু‘আ করো। আর কাফিরদের দু‘আ কোন কাজে আসবে না। (সূরা মু’মিনু ৪৯, ৫০)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ ঘটনা যখন এই যে, রাসূল তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলি নিয়ে এসেছিলেন। আর তোমরা তাঁর কথা মানতে অস্বীকার করেছিলে, যার সাজাপ্রাপ্ত হয়ে এখানে এসেছ। এখন আমাদের পক্ষে তোমাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার কাছে দু‘আ করা কোন ক্রমেই সম্ভব নয়। এ অবস্থায় তোমরা নিজেরা দু‘আ করতে চাইলে করে দেখো। তবে আমরা তোমাদেরকে প্রথমেই এ কথা বলে দিতে চাই যে, যারা তোমাদের মতো কুফরী করে এখানে এসেছে, তাদের দু‘আ করা একেবারেই নিরর্থক।
তারা মৃত্যু কামনা করবে :
وَنَادَوْا يَا مَالِكُ لِيَقْضِ عَلَيْنَا رَبُّكَؕ قَالَ اِنَّكُمْ مَّاكِثُوْنَ
তারা মালেক ফেরেশতাকে ডেকে বলবে, হে মালেক! আল্লাহকে বলুন, তিনি যেন আমাদের মৃত্যু দিয়ে দেন। ফেরেশতা উত্তর দেবে, তোমরা চিরদিন জাহান্নামে পড়ে থাকবে। (সূরা যুখরুফু ৭৮)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ আমি তোমাদের সামনে প্রকৃত সত্য সুস্পষ্ট করে দিয়েছিলাম। কিন্তু তোমরা ছিলে সত্যের পরিবর্তে কিচ্ছা-কাহিনীর ভক্ত এবং সত্য ছিল তোমাদের কাছে অত্যন্ত অপছন্দনীয়। এখন নিজেদের এই নির্বুদ্ধিতামূলক পছন্দের পরিণাম দেখে অস্থির হয়ে উঠছ কেন?
জাহান্নামে কারো মৃত্যু হবে না :
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَهُمْ نَارُ جَهَنَّمَۚ لَا يُقْضٰى عَلَيْهِمْ فَيَمُوْتُوْا وَلَا يُخَفَّفُ عَنْهُمْ مِّنْ عَذَابِهَاؕ كَذٰلِكَ نَجْزِيْ كُلَّ كَفُوْرٍ
তাদের ব্যাপারে এমন কোন ফায়সালা করা হবে না যে, তারা মরে যাবে; অন্যদিকে আযাবও হালকা করা হবে না। অনুরূপভাবে আমি প্রত্যেক কাফিরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। (সূরা ফাতির– ৩৬)
اِنَّهٗ مَنْ يَّاْتِ رَبَّهٗ مُجْرِمًا فَاِنَّ لَهٗ جَهَنَّمَؕ لَا يَمُوْتُ فِيْهَا وَلَا يَحْيٰى
যে কেউ পাপী হয়ে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে তার জন্য রয়েছে জাহান্নাম। সেখানে সে মরবেও না– বাঁচবেও না। (সূরা ত্বা-হা– ৭৪)
وَيَاْتِيْهِ الْمَوْتُ مِنْ كُلِّ مَكَانٍ وَّمَا هُوَ بِمَيِّتٍ
তার নিকট চতুর্দিক থেকে মৃত্যু আসবে, কিন্তু সে মরবে না। (সূরা ইবরাহীম– ১৭)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ জীবন ও মৃত্যুর মাঝখানে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকবে। পুরোপুরি মৃত্যু হবে না, আবার পুরোপুরি জীবনও থাকবে না। যার ফলে তার কষ্ট ও বিপদের শেষ হবে না এবং জীবনের কোন আনন্দও লাভ করবে না। তাই মরতে চাইবে কিন্তু মরতে পারবে না। কুরআনে জাহান্নামের আযাবের যে বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে এ অবস্থাটি হচ্ছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভয়াবহ। এর কল্পনায়ও হৃদয় কেঁপে ওঠে।
ধৈর্য ধরেও কোন লাভ হবে না :
اِصْلَوْهَا فَاصْبِرُوْاۤ اَوْ لَا تَصْبِرُوْاۚ سَوَآءٌ عَلَيْكُمْؕ اِنَّمَا تُجْزَوْنَ مَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
(জাহান্নামীদেরকে বলা হবে) তোমরা এতে প্রবেশ করো। এখন তোমরা ধৈর্যধারণ কর আর না কর উভয়ই সমান। তোমাদেরকে তোমাদের কর্মফল ভোগ করতেই হবে। (সূরা তূর– ১৬)
নিজেরা নিজেদের ধ্বংস কামনা করবে :
وَاِذَاۤ اُلْقُوْا مِنْهَا مَكَانًا ضَيِّقًا مُّقَرَّنِيْنَ دَعَوْا هُنَالِكَ ثُبُوْرًا
যখনই তারা জাহান্নামের কোন সংকীর্ণ স্থানে হাত–পা বাঁধা অবস্থায় নিক্ষিপ্ত হবে, তখন তারা নিজেদের দুর্ভোগ কামনা করবে। (সূরা ফুরক্বান- ১৩)
জাহান্নাম থেকে বের হতে চাইবে কিন্তু পারবে না :
يُرِيْدُوْنَ اَنْ يَّخْرُجُوْا مِنَ النَّارِ وَمَا هُمْ بِخَارِجِيْنَ مِنْهَاؗ وَلَهُمْ عَذَابٌ مُّقِيْمٌ
জাহান্নামীরা জাহান্নাম থেকে বের হতে চাইবে কিন্তু তারা কখনই বের হতে পারবে না। তাদের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী আযাব। (সূরা মায়েদা– ৩৭)
وَاَمَّا الَّذِيْنَ فَسَقُوْا فَمَاْوَاهُمُ النَّارُؕ كُلَّمَاۤ اَرَادُوْاۤ اَنْ يَّخْرُجُوْا مِنْهَاۤ اُعِيْدُوْا فِيْهَا وَقِيْلَ لَهُمْ ذُوْقُوْا عَذَابَ النَّارِ الَّذِيْ كُنْتُمْ بِه تُكَذِّبُوْنَ
যারা পাপী তাদের ঠিকানা হলো জাহান্নাম। যখনই তারা সেখান থেকে বের হতে চাইবে, তখনই আবার তাদেরকে জাহান্নামের দিকে ফিরিয়ে দেয়া হবে। আর তাদেরকে বলা হবে, তোমরা সেই আযাবের স্বাদ ভোগ করতে থাকো যে আযাবকে মিথ্যা মনে করে বিশ্বাস করনি। (সূরা সাজদা– ২০)
জাহান্নামীদের চিৎকার ও আহাজারী :
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَهُمْ نَارُ جَهَنَّمَۚ لَا يُقْضٰى عَلَيْهِمْ فَيَمُوْتُوْا وَلَا يُخَفَّفُ عَنْهُمْ مِّنْ عَذَابِهَاؕ كَذٰلِكَ نَجْزِيْ كُلَّ كَفُوْرٍ – وَهُمْ يَصْطَرِخُوْنَ فِيْهَاۚ رَبَّنَاۤ اَخْرِجْنَا نَعْمَلْ صَالِحًا غَيْرَ الَّذِيْ كُنَّا نَعْمَلُؕ اَوَلَمْ نُعَمِّرْكُمْ مَّا يَتَذَكَّرُ فِيْهِ مَنْ تَذَكَّرَ وَجَآءَكُمُ النَّذِيْرُؕ فَذُوْقُوْا فَمَا لِلظَّالِمِيْنَ مِنْ نَّصِيْرٍ
যারা কুফরী করেছে তাদের জন্য থাকবে জাহান্নামের আগুন, তাদের জন্য মৃত্যুর ফায়সালা হবে না আবার তাদের শাস্তিও হালকা করা হবে না। প্রত্যেক কাফিরকে আমি এভাবেই শাস্তি দেব। জাহান্নামে তারা চিৎকার দিতে থাকবে আর বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করুন। আগে যা পাপ করেছি এবার তা করব না। আল্লাহ বলবেন, আমি তোমাদেরকে যে জীবন দিয়েছিলাম তাই যথেষ্ট ছিল, আর তোমাদের কাছে ভীতি প্রদর্শনকারীও এসেছিল। অতএব তোমরা শাস্তি ভোগ করো। আর যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই। (সূরা ফাতির– ৩৬, ৩৭)
فَاَمَّا الَّذِيْنَ شَقُوْا فَفِى النَّارِ لَهُمْ فِيْهَا زَفِيْرٌ وَّشَهِيْقٌ
যারা হতভাগা তারা জাহান্নামের অগ্নিতে জ্বলতে থাকবে। সেখানে তারা সর্বদা চিৎকার ও আর্তনাদ করতে থাকবে। (সূরা হুদু ১০৬)
সঠিক জিনিস না বুঝা :
وَلَقَدْ ذَرَاْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيْرًا مِّنَ الْجِنِّ وَالْاِنْسِؗ لَهُمْ قُلُوْبٌ لَّا يَفْقَهُوْنَ بِهَاؗ وَلَهُمْ اَعْيُنٌ لَّا يُبْصِرُوْنَ بِهَاؗ وَلَهُمْ اٰذَانٌ لَّا يَسْمَعُوْنَ بِهَاؕ اُولٰٓئِكَ كَالْاَنْعَامِ بَلْ هُمْ اَضَلُّؕ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْغَافِلُوْنَ
আমি জাহান্নামের জন্য এমন অনেক জিন ও মানুষ তৈরি করেছি, যাদের হৃদয় আছে কিন্তু তা দিয়ে তারা বুঝে না, তাদের চোখ আছে কিন্তু তা দিয়ে তারা দেখে না এবং তাদের কান আছে কিন্তু তা দিয়ে তারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মতো; বরং তার চেয়েও পথভ্রষ্ট, তারাই উদাসীন। (সূরা আ‘রাফু ১৭৯)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ মানুষকে জ্ঞানুবুদ্ধি, চোখ, কান ইত্যাদি দিয়েছেন, যেন মানুষ এগুলো কাজে লাগিয়ে ভালো–মন্দ যাচাই করে সঠিক পথে জীবন পরিচালনা করে। কিন্তু যারা এগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার না করে পশুর মতো জীবন-যাপন করে, তারাই জাহান্নামে যাবে।
পাপ করা :
وَالَّذِيْنَ كَسَبُوا السَّيِّئَاتِ جَزَآءُ سَيِّئَةٍ ۢبِمِثْلِهَا وَتَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌؕ مَا لَهُمْ مِّنَ اللهِ مِنْ عَاصِمٍ
যারা পাপ করবে তারা তাদের পাপের সমপরিমাণ শাস্তি ভোগ করবে। তাদেরকে লাঞ্ছনা ঘিরে ফেলবে। আর তাদের রক্ষাকারী কেউ থাকবে না। (সূরা ইউনুছ– ২৭)
কুফরী করা :
وَلِلَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِرَبِّهِمْ عَذَابُ جَهَنَّمَؕ وَبِئْسَ الْمَصِيْرُ
যারা তাদের প্রতিপালকের সাথে কুফরী করেছে, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি। আর কতই না জঘন্য তাদের প্রত্যাবর্তনস্থল। (সূরা মুলক– ৬)
اِنَّاۤ اَعْتَدْنَا جَهَنَّمَ لِلْكَافِرِيْنَ نُزُلًا
আমি কাফিরদের বসবাসের জন্য জাহান্নাম তৈরি করে রেখেছি। (সূরা কাহফু ১০২)
আল্লাহর নিদর্শনাবলিকে অস্বীকার করা :
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَكَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَاۤ اُولٰٓئِكَ اَصْحَابُ النَّارِۚ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
যারা কুফরী করে এবং আমার নিদর্শনাবলিকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, তারা জাহান্নামের অধিবাসী। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। (সূরা বাক্বারা– ৩৯)
পরকাল বিশ্বাস না করা :
وَاَنَّ الَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ بِالْاٰخِرَةِ اَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا اَلِيْمًا
যারা পরকালের প্রতি ঈমান রাখে না, তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
(সূরা বনী ইসরাঈল– ১০)
وَاَعْتَدْنَا لِمَنْ كَذَّبَ بِالسَّاعَةِ سَعِيْرًا
যারা কিয়ামতকে অবিশ্বাস করে আমি তাদের জন্য জ্বলন্ত অগ্নি তৈরি করে রেখেছি। (সূরা ফুরক্বানু ১১)
ব্যাখ্যা : পরকালীন জীবনের ধারণা অস্বীকার করার অনিবার্য ও নিশ্চিত ফল জাহান্নাম। কারণ এ ধারণা অস্বীকার করে মানুষ এমনসব অসৎকাজ করে যেগুলোর শাস্তি জাহান্নাম ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না। যারা নিজেদেরকে দায়িত্বশীল এবং জবাবদিহি করতে হবে বলে মনে করে না, তাদের জীবন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। তারা দুনিয়ায় বসবাস করে লাগামহীন উটের মতো। তারা অত্যন্ত নিকৃষ্ট পর্যায়ের চারিত্রিক গুণাবলির অধিকারী হয়। পৃথিবীকে যুলুম, নির্যাতন, বিপর্যয়, বিশৃঙ্খলা, ফাসিকী ও অশ্লীল জীবন চর্চায় ভরে দেয়। ফলে তারা জাহান্নামের শাস্তি ভোগের যোগ্যতা অর্জন করে।
আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করাকে অস্বীকার করা :
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِاٰيَاتِ اللهِ وَلِقَآئِهۤ اُولٰٓئِكَ يَئِسُوْا مِنْ رَّحْمَتِيْ وَ اُولٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
আর যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে ও তার সাক্ষাতকে অস্বীকার করে, তারাই আমার রহমত থেকে নিরাশ হয়। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরা আন্কাবুত– ২৩)
ব্যাখ্যা : তাদের জাহান্নামের ভয়াবহ আযাব ভোগ করার কারণ হচ্ছে- প্রথমত, দুনিয়ায় তারা এ মনে করে জীবন-যাপন করত যে, আল্লাহর সামনে হাজির হয়ে নিজেদের আমলের হিসাব পেশ করার সময় কখনো আসবে না। দ্বিতীয়ত, আল্লাহ নবীদের মাধ্যমে তাদের হেদায়াতের জন্য যেসব আয়াত পাঠিয়েছিলেন সেগুলো মেনে নিতে তারা সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করে এবং সেগুলোকে মিথ্যা বলে প্রত্যাখ্যান করে।
শিরক করা :
اِنَّهٗ مَنْ يُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَاْوَاهُ النَّارُؕ وَمَا لِلظَّالِمِيْنَ مِنْ اَنْصَارٍ
যে আল্লাহর সাথে শরীক করে আল্লাহ অবশ্যই তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন। (ফলে) তার আবাস হবে জাহান্নাম। আর যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। (সূরা মায়েদা– ৭২)
নিজেকে উপাস্য দাবী করা :
وَمَنْ يَّقُلْ مِنْهُمْ اِنِّۤيْ اِلٰهٌ مِّنْ دُوْنِه فَذٰلِكَ نَجْزِيْهِ جَهَنَّمَؕ كَذٰلِكَ نَجْزِى الظَّالِمِيْنَ
আর তাদের মধ্য হতে যে বলবে, ‘‘আল্লাহ ব্যতীত আমিই উপাস্য’’ তাকে আমি জাহান্নামের শাস্তি দেব। এভাবেই আমি অত্যাচারীদেরকে শাস্তি দিয়ে থাকি। (সূরা আম্বিয়া– ২৯)
মুনাফিকী করা :
اِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ فِى الدَّرْكِ الْاَسْفَلِ مِنَ النَّارِؕ وَلَنْ تَجِدَ لَهُمْ نَصِيْرًا
মুনাফিকরা জাহান্নামের নিম্নস্তরে থাকবে এবং তাদের জন্য তুমি কখনো কোন সাহায্যকারী পাবে না। (সূরা নিসা– ১৪৫)
وَعَدَ اللهُ الْمُنَافِقِيْنَ وَالْمُنَافِقَاتِ وَالْكُفَّارَ نَارَ جَهَنَّمَ خَالِدِيْنَ فِيْهَاؕ هِيَ حَسْبُهُمْۚ وَلَعَنَهُمُ اللهُۚ وَلَهُمْ عَذَابٌ مُّقِيْمٌ
আল্লাহ মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারী এবং কাফিরদের সাথে জাহান্নামের আগুনের অঙ্গীকার করেছেন। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে; আর সেটাই তাদের জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন এবং তাদের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী শাস্তি। (সূরা তাওবা– ৬৮)
ফাসিকী করা :
وَاَمَّا الَّذِيْنَ فَسَقُوْا فَمَاْوَاهُمُ النَّارُؕ كُلَّمَاۤ اَرَادُوْاۤ اَنْ يَّخْرُجُوْا مِنْهَاۤ اُعِيْدُوْا فِيْهَا وَقِيْلَ لَهُمْ ذُوْقُوْا عَذَابَ النَّارِ الَّذِيْ كُنْتُمْ بِهٖ تُكَذِّبُوْنَ
যারা ফাসিক (পাপাচারী) তাদের বাসস্থান হবে জাহান্নাম। যখনই তারা সেখান থেকে বের হতে চাইবে, তখনই তাদেরকে সেখানে ফিরিয়ে দেয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে, জাহান্নামের সেই আযাব ভোগ করো, যা তোমরা মিথ্যা মনে করতে। (সূরা সাজদা– ২০)
নবীর আদেশ অমান্য করা :
فَلْيَحْذَرِ الَّذِيْنَ يُخَالِفُوْنَ عَنْ اَمْرِه ۤ اَنْ تُصِيْبَهُمْ فِتْنَةٌ اَوْ يُصِيْبَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
যারা তাঁর (নবীর) আদেশের বিরোধিতা করে তারা যেন সাবধান হয় যে, তাদের উপর বিপর্যয় পতিত হবে অথবা তাদেরকে বেদনাদায়ক শাস্তি গ্রাস করবে। (সূরা নূর– ৬৩)
আল্লাহর বিধান নিয়ে ঠাট্টা–বিদ্রূপ করা :
وَمَاْوَاكُمُ النَّارُ وَمَا لَكُمْ مِّنْ نَّاصِرِيْنَ ‐ ذٰلِكُمْ بِاَنَّكُمُ اتَّخَذْتُمْ اٰيَاتِ اللهِ هُزُوًا وَّغَرَّتْكُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَاۚ فَالْيَوْمَ لَا يُخْرَجُوْنَ مِنْهَا وَلَا هُمْ يُسْتَعْتَبُوْنَ
তোমাদের ঠিকানা হলো জাহান্নাম; আর তোমাদের কোন সাহায্যকারীও নেই, কারণ তোমরা আল্লাহর আয়াতসমূহকে ঠাট্টা–বিদ্রূপের বস্তু বানিয়েছিলে এবং পার্থিব জীবন তোমাদেরকে ধোঁকায় ফেলে রেখেছিল। সুতরাং আজ তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে না এবং তাওবা করারও সুযোগ দেয়া হবে না। (সূরা জাসিয়া– ৩৪, ৩৫)
দুনিয়ার ভোগবিলাসে ডুবে থাকা :
وَيَوْمَ يُعْرَضُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا عَلَى النَّارِؕ اَذْهَبْتُمْ طَيِّبَاتِكُمْ فِيْ حَيَاتِكُمُ الدُّنْيَا وَاسْتَمْتَعْتُمْ بِهَاۚ فَالْيَوْمَ تُجْزَوْنَ عَذَابَ الْهُوْنِ بِمَا كُنْتُمْ تَسْتَكْبِرُوْنَ فِى الْاَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَبِمَا كُنْتُمْ تَفْسُقُوْنَ
যেদিন কাফিরদেরকে জাহান্নামের কাছে উপস্থিত করা হবে (সেদিন তাদেরকে বলা হবে) তোমরা তো তোমাদের পার্থিব জীবনে তোমাদের সুখ–সম্ভার নিঃশেষ করে ফেলেছ এবং তা খুব উপভোগ করেছ। অতএব আজ তোমাদেরকে অপমানজনক শাস্তি দেয়া হবে, কারণ তোমরা পৃথিবীতে অযথা অহংকার করতে এবং পাপাচার করতে। (সূরা আহকাফু ২০)
اِنَّ الَّذِيْنَ لَا يَرْجُوْنَ لِقَآءَنَا وَرَضُوْا بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَاطْمَاَنُّوْا بِهَا وَالَّذِيْنَ هُمْ عَنْ اٰيَاتِنَا غَافِلُوْنَ ‐ اُولٰٓئِكَ مَاْوَاهُمُ النَّارُ بِمَا كَانُوا يَكْسِبُوْنَ
নিশ্চয় যারা আমার সাক্ষাৎ লাভের আশা রাখে না এবং দুনিয়ার জীবন নিয়েই সন্তুষ্ট রয়েছে এবং তাতেই প্রশান্তি অনুভব করে, আর যারা আমার নিদর্শনসমূহের ব্যাপারে উদাসীন, তাদের কৃতকর্মের ফলে তাদের আশ্রয়স্থল হবে জাহান্নাম। (সূরা ইউনুছ– ৭, ৮)
বেশি বেশি পাওয়ার চিন্তায় মগ্ন থাকা :
اَلْهَاكُمُ التَّكَاثُرُ – حَتّٰى زُرْتُمُ الْمَقَابِرَ – كَلَّا سَوْفَ تَعْلَمُوْنَ – ثُمَّ كَلَّا سَوْفَ تَعْلَمُوْنَ – كَلَّا لَوْ تَعْلَمُوْنَ عِلْمَ الْيَقِيْنِ – لَتَرَوُنَّ الْجَحِيْمَ – ثُمَّ لَتَرَوُنَّهَا عَيْنَ الْيَقِيْنِ – ثُمَّ لَتُسْاَلُنَّ يَوْمَئِذٍ عَنِ النَّعِيْمِ
একে অপর থেকে বেশি পাওয়ার ধান্দা তোমাদেরকে ভুলের মধ্যে ফেলে রেখেছে। এমনকি (এ চিন্তা নিয়েই) তোমরা কবরে পৌঁছে যাও। কখনো নয়! অচিরেই তোমরা জানতে পারবে। আবার শোনো, কখনো নয়! অচিরেই তোমরা জানতে পারবে। কখনো নয়! যদি তোমরা বিশ্বাসযোগ্য জ্ঞানের ভিত্তিতে (এ চালচলনের কুফল) জানতে পারতে, (তাহলে এভাবে চলতে না)। অবশ্যই তোমরা জাহান্নাম দেখতে পাবে। অতঃপর তোমরা তা সরাসরি দেখতে পাবে, যা একীনে পরিণত হয়। সেদিন তোমাদেরকে সকল নিয়ামত সম্পর্কে অবশ্যই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। (সূরা তাকাছুর)
পাপ বিস্তার হওয়াকে পছন্দ করা :
اِنَّ الَّذِيْنَ يُحِبُّوْنَ اَنْ تَشِيْعَ الْفَاحِشَةُ فِى الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ وَاللهُ يَعْلَمُ وَاَنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ
অবশ্যই যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারদের মধ্যে অশ্লীলতার বিস্তার হোক, তাদের জন্য রয়েছে ইহকাল ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না। (সূরা নূর– ১৯)
অবাধ্যতা করা এবং সীমালঙ্ঘন করা :
وَمَنْ يَّعْصِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَيَتَعَدَّ حُدُوْدَهٗ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيْهَا۪ وَلَهٗ عَذَابٌ مُّهِيْنٌ
আর যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করবে এবং সীমালঙ্ঘন করবে, তিনি তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। সেখানে সে চিরকাল অবস্থান করবে। আর তার জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি। (সূরা নিসা– ১৪)
ব্যাখ্যা : যারা আনুগত্যের সীমানা পেরিয়ে আল্লাহর রাজ্যে স্বেচ্ছাচারী মনোভাব ও আচরণ গ্রহণ করে, যারা আল্লাহর ক্ষমতার মধ্যে থেকেও নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের দাপট দেখায় এবং যারা মানুষের অধিকারে হস্তক্ষেপ করে, তারা সবাই বিদ্রোহী বলে গণ্য হয়।
মুমিনদেরকে নিয়ে হাসি–তামাশা করা :
اَلَّذِيْنَ يَلْمِزُوْنَ الْمُطَّوِّعِيْنَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ فِى الصَّدَقَاتِ وَالَّذِيْنَ لَا يَجِدُوْنَ اِلَّا جُهْدَهُمْ فَيَسْخَرُوْنَ مِنْهُمْؕ سَخِرَ اللهُ مِنْهُمْؗ وَلَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
ঈমানদারদের মধ্যে যারা স্বেচ্ছায় সাদাকা দেয় এবং যারা নিজেদের পরিশ্রমলব্ধ জিনিস ব্যতীত খরচ করার মতো কিছুই পায় না, যারা তাদেরকে দোষারূপ করে এবং উপহাস করে, আল্লাহ তাদেরকে উপহাস করেন। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরা তাওবা– ৭৯)
মুমিনদেরকে কষ্ট দেয়া :
اِنَّ الَّذِيْنَ فَتَنُوا الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ ثُمَّ لَمْ يَتُوْبُوْا فَلَهُمْ عَذَابُ جَهَنَّمَ وَلَهُمْ عَذَابُ الْحَرِيْقِ
নিশ্চয় যারা মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে কষ্ট দেয়; তারপরও তাওবা করে না, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি এবং তাদের জন্য আরো আছে আগুনে পুড়ার শাস্তি। (সূরা বুরুজ– ১০)
মুমিনদের পথ ছেড়ে অন্যদের পথে চলা :
وَمَنْ يُّشَاقِقِ الرَّسُوْلَ مِنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدٰى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيْلِ الْمُؤْمِنِيْنَ نُوَلِّهٖ مَا تَوَلّٰى وَنُصْلِهٖ جَهَنَّمَؕ وَسَآءَتْ مَصِيْرًا
কারো নিকট সৎপথ প্রকাশিত হওয়ার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ব্যতীত অন্য পথ অনুসরণ করে, তবে সে যেদিকে যায় আমি তাকে সেদিকেই ফিরিয়ে দেব এবং তাকে জাহান্নামে পৌঁছাব। আর জাহান্নাম কতই না নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল!’’ (সূরা নিসা– ১১৫)
জেনে শুনে দ্বীনি ইলিম গোপন করা :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَكْتُمُوْنَ مَاۤ اَنْزَلْنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدٰى مِنْ ۢ بَعْدِ مَا بَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِى الْكِتَابِ اُولٰٓئِكَ يَلْعَنُهُمُ اللهُ وَيَلْعَنُهُمُ اللَّاعِنُوْنَ
আমি যেসব উজ্জ্বল নিদর্শন ও হেদায়াত নাযিল করেছি যারা সেগুলোকে মানুষের নিকট প্রকাশ করার পরও গোপন করে, আল্লাহ তাদেরকে লানত করেন এবং লানতকারীগণও তাদেরকে লানত করে থাকে। (সূরা বাক্বারা– ১৫৯)
কুরআনের অপব্যাখ্যা করা :
اِنَّ الَّذِيْنَ يُلْحِدُوْنَ فِۤيْ اٰيَاتِنَا لَا يَخْفَوْنَ عَلَيْنَاؕ اَفَمَنْ يُّلْقٰى فِى النَّارِ خَيْرٌ اَمْ مَّنْ يَّاْتِۤيْ اٰمِنًا يَّوْمَ الْقِيَامَةِؕ اِعْمَلُوْا مَا شِئْتُمْ اِنَّهٗ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
নিশ্চয় যারা আমার আয়াতসমূহ সম্বন্ধে বক্রতা অবলম্বন করে, তারা আমার কাছে গোপন নয়। যে ব্যক্তি দোযখে নিক্ষিপ্ত হবে সে উত্তম, না ঐ ব্যক্তি উত্তম যে কিয়ামতের দিন নিরাপদে আগমন করবে? তোমরা যা ইচ্ছা (আমল) করো। নিশ্চয় তোমরা যা কর তিনি তা দেখেন। (সূরা হা–মীম সিজদা– ৪০)
কুরআন প্রচারে গোলমাল সৃষ্টি করা :
وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَا تَسْمَعُوْا لِهٰذَا الْقُرْاٰنِ وَالْغَوْا فِيْهِ لَعَلَّكُمْ تَغْلِبُوْنَ – فَلَنُذِيْقَنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا عَذَابًا شَدِيْدًا وَّلَنَجْزِيَنَّهُمْ اَسْوَاَ الَّذِيْ كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
কাফিররা বলে, তোমরা এ কুরআন শ্রবণ করো না এবং এতে গোলমাল সৃষ্টি করো। এতে আশা করা যায় তোমরা জয়লাভ করতে পারবে। সুতরাং আমি কাফিরদেরকে কঠিন আযাবের স্বাদ ভোগ করাব এবং তাদের কুকর্মের প্রতিদান দেব। (সূরা হা–মীম সিজদা– ২৬, ২৭)
কুরআনের বাণী শুনে আমল না করা :
وَاِذَا تُتْلٰى عَلَيْهِ اٰيَاتُنَا وَلّٰى مُسْتَكْبِرًا كَاَنْ لَّمْ يَسْمَعْهَا كَاَنَّ فِۤيْ اُذُنَيْهِ وَقْرًاۚ فَبَشِّرْهُ بِعَذَابٍ اَلِيْمٍ
যখন তার কাছে আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন সে অহংকার করে এমনভাবে মুখ ফিরিয়ে নেয়, যেন সে শুনতেই পায়নি, যেন তার কর্ণদ্বয়ের মধ্যে ছিপি রয়েছে। অতএব তাকে বেদনাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দিন। (সূরা লুক্বমানু ৭)
وَالَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَا وَاسْتَكْبَرُوْا عَنْهَاۤ اُولٰٓئِكَ اَصْحَابُ النَّارِۚ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
যারা আল্লাহর আয়াতকে মিথ্যা বলে এবং অহংকারবশত তা অমান্য করে তারা জাহান্নামের অধিবাসী, চিরকাল তারা সেখানে থাকবে। (সূরা আ‘রাফু ৩৬)
আল্লাহর বিধান কিছু মানা এবং কিছু না মানা :
اَفَتُؤْمِنُوْنَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُوْنَ بِبَعْضٍۚ فَمَا جَزَآءُ مَنْ يَّفْعَلُ ذٰلِكَ مِنْكُمْ اِلَّا خِزْيٌ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَاۚ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّوْنَ اِلٰۤى اَشَدِّ الْعَذَابِؕ وَمَا اللهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ – اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ اشْتَرَوُا الْحَيَاةَ الدُّنْيَا بِالْاٰخِرَةِ فَلَا يُخَفَّفُ عَنْهُمُ الْعَذَابُ وَلَا هُمْ يُنْصَرُوْنَ
তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশ স্বীকার কর এবং কিছু অংশ অস্বীকার কর? অতএব তোমাদের মধ্যে যারা এরূপ করবে তাদের পার্থিব জীবনে দুর্গতি ব্যতীত কিছুই নেই এবং কিয়ামতের দিন তারা কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হবে; আর তোমরা যা করছ সে ব্যাপারে আল্লাহ অমনোযোগী নন। তারাই পরকালের বিনিময়ে পার্থিব জীবন ক্রয় করেছে, অতএব তাদের শাস্তি হালকা করা হবে না এবং তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না। (সূরা বাক্বারা– ৮৫, ৮৬)
সালাত আদায় না করা :
كُلُّ نَفْسٍ ۢبِمَا كَسَبَتْ رَهِيْنَةٌ – اِلَّاۤ اَصْحَابَ الْيَمِيْنِ – فِيْ جَنَّاتٍ يَتَسَآءَلُوْنَ – عَنِ الْمُجْرِمِيْنَ – مَا سَلَكَكُمْ فِيْ سَقَرَ – قَالُوْا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّيْنَ – وَلَمْ نَكُ نُطْعِمُ الْمِسْكِيْنَ – وَكُنَّا نَخُوْضُ مَعَ الْخَآئِضِيْنَ – وَكُنَّا نُكَذِّبُ بِيَوْمِ الدِّيْنِ – حَتّٰۤى اَتَانَا الْيَقِيْنُ
প্রত্যেক মানুষ তার কৃতকর্মের জন্য বন্দী হয়ে থাকবে। তবে ডানপন্থীরা এর ব্যতিক্রম, তারা জান্নাতে থাকবে এবং জাহান্নামীদেরকে জিজ্ঞেস করবে, কোন্ জিনিস তোমাদেরকে জাহান্নামে পৌঁছাল? তারা উত্তরে বলবে, আমরা সালাত আদায়কারী ছিলাম না। আমরা মিসকীনদেরকে খাবার দিতাম না। আমরা সমালোচকদের সাথে সমালোচনা করতাম। আর আমরা কিয়ামতের দিনকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতাম; এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত আমরা এভাবেই ছিলাম। (এসব কারণে আমাদেরকে আজ জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হচ্ছে)। (সূরা মুদ্দাসসির, ৩৮–৪৭)
যাকাত না দেয়া :
وَالَّذِيْنَ يَكْنِزُوْنَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنْفِقُوْنَهَا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ اَلِيْمٍ – يَوْمَ يُحْمٰى عَلَيْهَا فِيْ نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوٰى بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوْبُهُمْ وَظُهُوْرُهُمْؕ هٰذَا مَا كَنَزْتُمْ لِاَنْفُسِكُمْ فَذُوْقُوْا مَا كُنْتُمْ تَكْنِزُوْنَ
যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে খরচ করে না, তাদেরকে আপনি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। সেদিন এ সম্পদ জাহান্নামের আগুনে গরম করা হবে এবং তা দিয়ে দাগ দেয়া হবে তাদের কপালে, পাঁজরে এবং পিঠে। অতঃপর (বলা হবে) এগুলো হলো সেই সম্পদ, যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা করে রেখেছিলে। সুতরাং তোমরা যা জমা করে রাখতে, তার স্বাদ গ্রহণ করো। (সূরা তাওবা– ৩৪, ৩৫)
কৃপণতা করা :
اَلَّذِيْنَ يَبْخَلُوْنَ وَيَاْمُرُوْنَ النَّاسَ بِالْبُخْلِ وَيَكْتُمُوْنَ ماۤ اٰتَاهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٖؕ وَاَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِيْنَ عَذَابًا مُّهِيْنًا
যারা কৃপণতা করে ও মানুষকে কৃপণতার নির্দেশ দেয় এবং আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে যা দিয়েছেন তা গোপন করে, এসব কাফিরদের জন্য আমি লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। (সূরা নিসা– ৩৭)
জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করা :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا لَقِيْتُمُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا زَحْفًا فَلَا تُوَلُّوْهُمُ الْاَدْبَارَ – وَمَنْ يُّوَلِّهِمْ يَوْمَئِذٍ دُبُرَهٗۤ اِلَّا مُتَحَرِّفًا لِّقِتَالٍ اَوْ مُتَحَيِّزًا اِلٰى فِئَةٍ فَقَدْ بَآءَ بِغَضَبٍ مِّنَ اللهِ وَمَاْوَاهُ جَهَنَّمُؕ وَبِئْسَ الْمَصِيْرُ
হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা কাফিরদের মুখোমুখি হও, তখন তোমরা পিছু ফিরে যেও না। আর সেদিন যে ব্যক্তি যুদ্ধ কৌশল বা স্বীয় বাহিনীর কেন্দ্রস্থলে স্থান করে নেয়া ব্যতীত (অন্য কোন কারণে) পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে, সে আল্লাহর গযবে পতিত হবে। তার আশ্রয়স্থল হবে জাহান্নাম। আর জাহান্নাম কতই না নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল। (সূরা আনফাল– ১৫, ১৬)
সতী নারীদের প্রতি অপবাদ দেয়া :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَرْمُوْنَ الْمُحْصَنَاتِ الْغَافِلَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ لُعِنُوْا فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ۪ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيْمٌ
অবশ্যই যারা সৎ, নিরীহ ও সরলমনা ঈমানদার নারীদের প্রতি অপবাদ দেয়, তারা দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত; তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি। (সূরা নূর– ২৩)
মানুষের নিন্দা করা ও তাদেরকে লজ্জা দেয়া :
وَيْلٌ لِّكُلِّ هُمَزَةٍ لُّمَزَةٍ – اَلَّذِيْ جَمَعَ مَالًا وَّعَدَّدَهٗ – يَحْسَبُ اَنَّ مَالَهٗۤ اَخْلَدَهٗ – كَلَّا لَيُنْۢبَذَنَّ فِى الْحُطَمَةِ – وَمَاۤ اَدْرَاكَ مَا الْحُطَمَةُ – نَارُ اللهِ الْمُوْقَدَةُ – اَ لَّتِيْ تَطَّلِعُ عَلَى الْاَفْئِدَةِ – اِنَّهَا عَلَيْهِمْ مُّؤْصَدَةٌ – فِيْ عَمَدٍ مُّمَدَّدَةٍ
ধ্বংস তাদের জন্য, যারা সামনা–সামনি ধিক্কার দেয় এবং পেছনে নিন্দা করে বেড়ায়। যে মাল জমা করে এবং তা গুনে গুনে রাখে। সে মনে করে তার সম্পদ তাকে চিরস্থায়ী করে রাখবে। কখনো নয়! অবশ্যই তাকে ফেলা হবে হুতামায়। তুমি কি জান হুতামা কী? সেটা আল্লাহর জ্বলন্ত আগুন, যা অন্তর পর্যন্ত পৌঁছবে। নিশ্চয় (এ আগুনকে) তাদের উপর আবদ্ধ করে দেয়া হবে। তারা উঁচু উঁচু স্তম্ভে বাঁধা থাকবে। (সূরা হুমাযাহ)
অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা করা :
وَمَنْ يَّقْتُلْ مُؤْمِنًا مُّتَعَمِّدًا فَجَزَآؤُهٗ جَهَنَّمُ خَالِدًا فِيْهَا وَغَضِبَ اللهُ عَلَيْهِ وَلَعَنَهٗ وَاَعَدَّ لَهٗ عَذَابًا عَظِيْمًا
যে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুমিনকে হত্যা করবে, তার শাস্তি জাহান্নাম; সেখানে সে চিরকাল থাকবে। তার প্রতি আল্লাহ রাগান্বিত হন, তাকে লানত করেন এবং তার জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন মহাশাস্তি। (সূরা নিসা– ৯৩)
সৎকাজের আদেশ দানকারীকে হত্যা করা :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَكْفُرُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِ وَيَقْتُلُوْنَ النَّبِيِّيْنَ بِغَيْرِ حَقٍ وَّيَقْتُلُوْنَ الَّذِيْنَ يَاْمُرُوْنَ بِالْقِسْطِ مِنَ النَّاسِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ اَلِيْمٍ
নিশ্চয় যারা আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করে এবং অন্যায়ভাবে নবীদেরকে হত্যা করে, আর মানুষের মধ্যে যারা ইনসাফের নির্দেশ দেয় তাদেরকেও হত্যা করে, তুমি তাদের সবাইকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও। (সূরা আলে ইমরানু ২১)
যিনা করা :
وَالَّذِيْنَ لَا يَدْعُوْنَ مَعَ اللهِ اِلٰهًا اٰخَرَ وَلَا يَقْتُلُوْنَ النَّفْسَ الَّتِيْ حَرَّمَ اللهُ اِِلَّا بِالْحَقِّ وَلَا يَزْنُوْنَؕ وَمَنْ يَّفْعَلْ ذٰلِكَ يَلْقَ اَثَامًا ‐ يُضَاعَفْ لَهُ الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيَخْلُدْ فِيْهٖ مُهَانًا
তারা আল্লাহর সাথে কোন ইলাহকে ডাকে না। আল্লাহ যার হত্যা নিষেধ করেছেন, যথার্থ কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যারা এসব করবে তারা অপরাধী হবে। কিয়ামতের দিন তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দেয়া হবে এবং সেখানে সে স্থায়ী হবে হীন অবস্থায়। (সূরা ফুরক্বানু ৬৮, ৬৯)
অত্যাচার করা :
وَمَنْ يَّظْلِمْ مِّنْكُمْ نُذِقْهُ عَذَابًا كَبِيْرًا
তোমাদের মধ্যে যে অত্যাচার করবে আমি তাকে মহাশাস্তি ভোগ করাব। (সূরা ফুরক্বানু১৯)
অন্যায়ভাবে অপরের মাল খাওয়া :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَاْكُلُوْاۤ اَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ اِلَّاۤ اَنْ تَكُوْنَ تِجَارَةً عَنْ تَرَاضٍ مِّنْكُمْ وَلَا تَقْتُلُوْاۤ اَنْفُسَكُمْؕ اِنَّ اللهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيْمًا – وَمَنْ يَّفْعَلْ ذٰلِكَ عُدْوَانًا وَّظُلْمًا فَسَوْفَ نُصْلِيْهِ نَارًا
হে মুমিনগণ! তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ গ্রাস করো না, তবে তোমাদের পরস্পরের সম্মতিতে ব্যবসা করা বৈধ। আর তোমরা একে অপরকে (অন্যায়ভাবে) হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। আর যে কেউ সীমালঙ্ঘন করে অন্যায়ভাবে তা করবে, তাকে আমি জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ করব। (সূরা নিসা- ২৯, ৩০)
ইয়াতীমের মাল আত্মসাৎ করা :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَاْكُلُوْنَ اَمْوَالَ الْيَتَامٰى ظُلْمًا اِنَّمَا يَاْكُلُوْنَ فِيْ بُطُوْنِهِمْ نَارًاؕ وَسَيَصْلَوْنَ سَعِيْرًا
নিশ্চয় যারা অন্যায়ভাবে ইয়াতীমের সম্পদ খায়, তারা তাদের পেটে কেবল আগুনই ভর্তি করে। আর অচিরেই তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (সূরা নিসা– ১০)
সুদ খাওয়া :
اَلَّذِيْنَ يَاْكُلُوْنَ الرِّبَا لَا يَقُوْمُوْنَ اِلَّا كَمَا يَقُوْمُ الَّذِيْ يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّؕ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ قَالُوْاۤ اِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ الرِّبَا وَاَحَلَّ اللهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَاؕ فَمَنْ جَآءَهٗ مَوْعِظَةٌ مِّنْ رَّبِّه فَانْتَهٰى فَلَهٗ مَا سَلَفَ وَاَمْرُهٗۤ اِلَى اللهِؕ وَمَنْ عَادَ فَاُولٰٓئِكَ اَصْحَابُ النَّارِۚ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
যারা সুদ খায় তারা (হাশরের মাঠে) ঐ ব্যক্তির ন্যায় উঠবে, যাকে শয়তান স্পর্শ দ্বারা দিশেহারা করে দেয়। এটা এজন্য যে তারা বলে, বেচাকেনা তো সুদের মতোই অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন আর সুদকে হারাম করেছেন। সুতরাং যার কাছে তার রবের পক্ষ থেকে উপদেশ আসবে অতঃপর সে সুদ খাওয়া থেকে বিরত থাকবে, তবে অতীতে যা হয়েছে তা তার এবং তার ব্যাপারে ফায়সালা করার দায়িত্ব আল্লাহর। আর যারা (উপদেশ শুনার পরেও) সুদের লেনদেন করবে তারা জাহান্নামের অধিবাসী। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। (সূরা বাক্বারা– ২৭৫)
অহংকার করা :
وَاَمَّا الَّذِيْنَ اسْتَنْكَفُوْا وَاسْتَكْبَرُوْا فَيُعَذِّبُهُمْ عَذَابًا اَلِيْمًا وَّلَا يَجِدُوْنَ لَهُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ وَلِيًّا وَّلَا نَصِيْرًا
যারা আল্লাহর ইবাদাত করতে লজ্জাবোধ করেছে এবং অহংকার করেছে, তিনি তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেবেন। তারা আল্লাহ ব্যতীত নিজেদের জন্য কোন বন্ধু ও সাহায্যকারী পাবে না। (সূরা নিসা– ১৭৩)
মিথ্যা কথা বলা :
فَوَيْلٌ يَّوْمَئِذٍ لِّلْمُكَذِّبِيْنَ
কিয়ামতের দিন মিথ্যাবাদীদের জন্য রয়েছে ধ্বংস। (সূরা তূর– ১১)
ব্যাখ্যা : রাসূল ﷺ বলেছেন, নিশ্চয় মিথ্যা পাপের পথ খুলে দেয় আর পাপ জাহান্নামের পথ খুলে দেয়। আর যখন কোন ব্যক্তি মিথ্যা বলতেই থাকে, তখন সে আল্লাহর কাছে মিথ্যুক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যায়। (সহীহ বুখারী, হা/৬০৯৪)
শয়তানের পথে চলা :
اَلَمْ اَعْهَدْ اِلَيْكُمْ يَا بَنِيْۤ اٰدَمَ اَنْ لَّا تَعْبُدُوا الشَّيْطَانَۚ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ – وَاَنِ اعْبُدُوْنِيْؕ هٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيْمٌ – وَلَقَدْ اَضَلَّ مِنْكُمْ جِبِلًّا كَثِيْرًاؕ اَفَلَمْ تَكُوْنُوْا تَعْقِلُوْنَ – هٰذِه جَهَنَّمُ الَّتِيْ كُنْتُمْ تُوْعَدُوْنَ – اِصْلَوْهَا الْيَوْمَ بِمَا كُنْتُمْ تَكْفُرُوْنَ
আল্লাহ বলেন, হে আদম সন্তান! আমি কি তোমাদেরকে এ প্রতিশ্রুতি দেইনি যে, তোমরা শয়তানের উপাসনা করো না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। আর তোমরা শুধু আমারই ইবাদাত করো, এটাই সঠিক পথ। শয়তান তোমাদের অনেককেই বিভ্রান্ত করেছে, তোমরা কি তা বুঝ না? এ হলো সেই জাহান্নাম, যার ওয়াদা তোমাদেরকে দেয়া হয়েছে। তোমাদের কুফরির কারণে আজ তোমরা তাতে প্রবেশ করো। (সূরা ইয়াসীন, ৬০–৬৪)
وَلَقَدْ ذَرَاْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيْرًا مِّنَ الْجِنِّ وَالْاِنْسِؗ لَهُمْ قُلُوْبٌ لَّا يَفْقَهُوْنَ بِهَاؗ وَلَهُمْ اَعْيُنٌ لَّا يُبْصِرُوْنَ بِهَاؗ وَلَهُمْ اٰذَانٌ لَّا يَسْمَعُوْنَ بِهَاؕ اُولٰٓئِكَ كَالْاَنْعَامِ بَلْ هُمْ اَضَلُّؕ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْغَافِلُوْنَ
আমি জাহান্নামের জন্য এমন অনেক জিন ও মানুষ তৈরি করেছি, যাদের হৃদয় আছে কিন্তু তা দিয়ে তারা বুঝে না, তাদের চোখ আছে কিন্তু তা দিয়ে তারা দেখে না এবং তাদের কান আছে কিন্তু তা দিয়ে তারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মতো; বরং তার চেয়েও পথভ্রষ্ট, তারাই উদাসীন। (সূরা আ‘রাফু ১৭৯)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ মানুষকে জ্ঞানুবুদ্ধি, চোখ, কান ইত্যাদি দিয়েছেন, যেন মানুষ এগুলো কাজে লাগিয়ে ভালো–মন্দ যাচাই করে সঠিক পথে জীবন পরিচালনা করে। কিন্তু যারা এগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার না করে পশুর মতো জীবন-যাপন করে, তারাই জাহান্নামে যাবে।
পাপ করা :
وَالَّذِيْنَ كَسَبُوا السَّيِّئَاتِ جَزَآءُ سَيِّئَةٍ ۢبِمِثْلِهَا وَتَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌؕ مَا لَهُمْ مِّنَ اللهِ مِنْ عَاصِمٍ
যারা পাপ করবে তারা তাদের পাপের সমপরিমাণ শাস্তি ভোগ করবে। তাদেরকে লাঞ্ছনা ঘিরে ফেলবে। আর তাদের রক্ষাকারী কেউ থাকবে না। (সূরা ইউনুছ– ২৭)
কুফরী করা :
وَلِلَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِرَبِّهِمْ عَذَابُ جَهَنَّمَؕ وَبِئْسَ الْمَصِيْرُ
যারা তাদের প্রতিপালকের সাথে কুফরী করেছে, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি। আর কতই না জঘন্য তাদের প্রত্যাবর্তনস্থল। (সূরা মুলক– ৬)
اِنَّاۤ اَعْتَدْنَا جَهَنَّمَ لِلْكَافِرِيْنَ نُزُلًا
আমি কাফিরদের বসবাসের জন্য জাহান্নাম তৈরি করে রেখেছি। (সূরা কাহফু ১০২)
আল্লাহর নিদর্শনাবলিকে অস্বীকার করা :
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَكَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَاۤ اُولٰٓئِكَ اَصْحَابُ النَّارِۚ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
যারা কুফরী করে এবং আমার নিদর্শনাবলিকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, তারা জাহান্নামের অধিবাসী। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। (সূরা বাক্বারা– ৩৯)
পরকাল বিশ্বাস না করা :
وَاَنَّ الَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ بِالْاٰخِرَةِ اَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا اَلِيْمًا
যারা পরকালের প্রতি ঈমান রাখে না, তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
(সূরা বনী ইসরাঈল– ১০)
وَاَعْتَدْنَا لِمَنْ كَذَّبَ بِالسَّاعَةِ سَعِيْرًا
যারা কিয়ামতকে অবিশ্বাস করে আমি তাদের জন্য জ্বলন্ত অগ্নি তৈরি করে রেখেছি। (সূরা ফুরক্বানু ১১)
ব্যাখ্যা : পরকালীন জীবনের ধারণা অস্বীকার করার অনিবার্য ও নিশ্চিত ফল জাহান্নাম। কারণ এ ধারণা অস্বীকার করে মানুষ এমনসব অসৎকাজ করে যেগুলোর শাস্তি জাহান্নাম ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না। যারা নিজেদেরকে দায়িত্বশীল এবং জবাবদিহি করতে হবে বলে মনে করে না, তাদের জীবন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। তারা দুনিয়ায় বসবাস করে লাগামহীন উটের মতো। তারা অত্যন্ত নিকৃষ্ট পর্যায়ের চারিত্রিক গুণাবলির অধিকারী হয়। পৃথিবীকে যুলুম, নির্যাতন, বিপর্যয়, বিশৃঙ্খলা, ফাসিকী ও অশ্লীল জীবন চর্চায় ভরে দেয়। ফলে তারা জাহান্নামের শাস্তি ভোগের যোগ্যতা অর্জন করে।
আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করাকে অস্বীকার করা :
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِاٰيَاتِ اللهِ وَلِقَآئِهۤ اُولٰٓئِكَ يَئِسُوْا مِنْ رَّحْمَتِيْ وَ اُولٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
আর যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে ও তার সাক্ষাতকে অস্বীকার করে, তারাই আমার রহমত থেকে নিরাশ হয়। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরা আন্কাবুত– ২৩)
ব্যাখ্যা : তাদের জাহান্নামের ভয়াবহ আযাব ভোগ করার কারণ হচ্ছে- প্রথমত, দুনিয়ায় তারা এ মনে করে জীবন-যাপন করত যে, আল্লাহর সামনে হাজির হয়ে নিজেদের আমলের হিসাব পেশ করার সময় কখনো আসবে না। দ্বিতীয়ত, আল্লাহ নবীদের মাধ্যমে তাদের হেদায়াতের জন্য যেসব আয়াত পাঠিয়েছিলেন সেগুলো মেনে নিতে তারা সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করে এবং সেগুলোকে মিথ্যা বলে প্রত্যাখ্যান করে।
শিরক করা :
اِنَّهٗ مَنْ يُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَاْوَاهُ النَّارُؕ وَمَا لِلظَّالِمِيْنَ مِنْ اَنْصَارٍ
যে আল্লাহর সাথে শরীক করে আল্লাহ অবশ্যই তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন। (ফলে) তার আবাস হবে জাহান্নাম। আর যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। (সূরা মায়েদা– ৭২)
নিজেকে উপাস্য দাবী করা :
وَمَنْ يَّقُلْ مِنْهُمْ اِنِّۤيْ اِلٰهٌ مِّنْ دُوْنِه فَذٰلِكَ نَجْزِيْهِ جَهَنَّمَؕ كَذٰلِكَ نَجْزِى الظَّالِمِيْنَ
আর তাদের মধ্য হতে যে বলবে, ‘‘আল্লাহ ব্যতীত আমিই উপাস্য’’ তাকে আমি জাহান্নামের শাস্তি দেব। এভাবেই আমি অত্যাচারীদেরকে শাস্তি দিয়ে থাকি। (সূরা আম্বিয়া– ২৯)
মুনাফিকী করা :
اِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ فِى الدَّرْكِ الْاَسْفَلِ مِنَ النَّارِؕ وَلَنْ تَجِدَ لَهُمْ نَصِيْرًا
মুনাফিকরা জাহান্নামের নিম্নস্তরে থাকবে এবং তাদের জন্য তুমি কখনো কোন সাহায্যকারী পাবে না। (সূরা নিসা– ১৪৫)
وَعَدَ اللهُ الْمُنَافِقِيْنَ وَالْمُنَافِقَاتِ وَالْكُفَّارَ نَارَ جَهَنَّمَ خَالِدِيْنَ فِيْهَاؕ هِيَ حَسْبُهُمْۚ وَلَعَنَهُمُ اللهُۚ وَلَهُمْ عَذَابٌ مُّقِيْمٌ
আল্লাহ মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারী এবং কাফিরদের সাথে জাহান্নামের আগুনের অঙ্গীকার করেছেন। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে; আর সেটাই তাদের জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন এবং তাদের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী শাস্তি। (সূরা তাওবা– ৬৮)
ফাসিকী করা :
وَاَمَّا الَّذِيْنَ فَسَقُوْا فَمَاْوَاهُمُ النَّارُؕ كُلَّمَاۤ اَرَادُوْاۤ اَنْ يَّخْرُجُوْا مِنْهَاۤ اُعِيْدُوْا فِيْهَا وَقِيْلَ لَهُمْ ذُوْقُوْا عَذَابَ النَّارِ الَّذِيْ كُنْتُمْ بِهٖ تُكَذِّبُوْنَ
যারা ফাসিক (পাপাচারী) তাদের বাসস্থান হবে জাহান্নাম। যখনই তারা সেখান থেকে বের হতে চাইবে, তখনই তাদেরকে সেখানে ফিরিয়ে দেয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে, জাহান্নামের সেই আযাব ভোগ করো, যা তোমরা মিথ্যা মনে করতে। (সূরা সাজদা– ২০)
নবীর আদেশ অমান্য করা :
فَلْيَحْذَرِ الَّذِيْنَ يُخَالِفُوْنَ عَنْ اَمْرِه ۤ اَنْ تُصِيْبَهُمْ فِتْنَةٌ اَوْ يُصِيْبَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
যারা তাঁর (নবীর) আদেশের বিরোধিতা করে তারা যেন সাবধান হয় যে, তাদের উপর বিপর্যয় পতিত হবে অথবা তাদেরকে বেদনাদায়ক শাস্তি গ্রাস করবে। (সূরা নূর– ৬৩)
আল্লাহর বিধান নিয়ে ঠাট্টা–বিদ্রূপ করা :
وَمَاْوَاكُمُ النَّارُ وَمَا لَكُمْ مِّنْ نَّاصِرِيْنَ ‐ ذٰلِكُمْ بِاَنَّكُمُ اتَّخَذْتُمْ اٰيَاتِ اللهِ هُزُوًا وَّغَرَّتْكُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَاۚ فَالْيَوْمَ لَا يُخْرَجُوْنَ مِنْهَا وَلَا هُمْ يُسْتَعْتَبُوْنَ
তোমাদের ঠিকানা হলো জাহান্নাম; আর তোমাদের কোন সাহায্যকারীও নেই, কারণ তোমরা আল্লাহর আয়াতসমূহকে ঠাট্টা–বিদ্রূপের বস্তু বানিয়েছিলে এবং পার্থিব জীবন তোমাদেরকে ধোঁকায় ফেলে রেখেছিল। সুতরাং আজ তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে না এবং তাওবা করারও সুযোগ দেয়া হবে না। (সূরা জাসিয়া– ৩৪, ৩৫)
দুনিয়ার ভোগবিলাসে ডুবে থাকা :
وَيَوْمَ يُعْرَضُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا عَلَى النَّارِؕ اَذْهَبْتُمْ طَيِّبَاتِكُمْ فِيْ حَيَاتِكُمُ الدُّنْيَا وَاسْتَمْتَعْتُمْ بِهَاۚ فَالْيَوْمَ تُجْزَوْنَ عَذَابَ الْهُوْنِ بِمَا كُنْتُمْ تَسْتَكْبِرُوْنَ فِى الْاَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَبِمَا كُنْتُمْ تَفْسُقُوْنَ
যেদিন কাফিরদেরকে জাহান্নামের কাছে উপস্থিত করা হবে (সেদিন তাদেরকে বলা হবে) তোমরা তো তোমাদের পার্থিব জীবনে তোমাদের সুখ–সম্ভার নিঃশেষ করে ফেলেছ এবং তা খুব উপভোগ করেছ। অতএব আজ তোমাদেরকে অপমানজনক শাস্তি দেয়া হবে, কারণ তোমরা পৃথিবীতে অযথা অহংকার করতে এবং পাপাচার করতে। (সূরা আহকাফু ২০)
اِنَّ الَّذِيْنَ لَا يَرْجُوْنَ لِقَآءَنَا وَرَضُوْا بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَاطْمَاَنُّوْا بِهَا وَالَّذِيْنَ هُمْ عَنْ اٰيَاتِنَا غَافِلُوْنَ ‐ اُولٰٓئِكَ مَاْوَاهُمُ النَّارُ بِمَا كَانُوا يَكْسِبُوْنَ
নিশ্চয় যারা আমার সাক্ষাৎ লাভের আশা রাখে না এবং দুনিয়ার জীবন নিয়েই সন্তুষ্ট রয়েছে এবং তাতেই প্রশান্তি অনুভব করে, আর যারা আমার নিদর্শনসমূহের ব্যাপারে উদাসীন, তাদের কৃতকর্মের ফলে তাদের আশ্রয়স্থল হবে জাহান্নাম। (সূরা ইউনুছ– ৭, ৮)
বেশি বেশি পাওয়ার চিন্তায় মগ্ন থাকা :
اَلْهَاكُمُ التَّكَاثُرُ – حَتّٰى زُرْتُمُ الْمَقَابِرَ – كَلَّا سَوْفَ تَعْلَمُوْنَ – ثُمَّ كَلَّا سَوْفَ تَعْلَمُوْنَ – كَلَّا لَوْ تَعْلَمُوْنَ عِلْمَ الْيَقِيْنِ – لَتَرَوُنَّ الْجَحِيْمَ – ثُمَّ لَتَرَوُنَّهَا عَيْنَ الْيَقِيْنِ – ثُمَّ لَتُسْاَلُنَّ يَوْمَئِذٍ عَنِ النَّعِيْمِ
একে অপর থেকে বেশি পাওয়ার ধান্দা তোমাদেরকে ভুলের মধ্যে ফেলে রেখেছে। এমনকি (এ চিন্তা নিয়েই) তোমরা কবরে পৌঁছে যাও। কখনো নয়! অচিরেই তোমরা জানতে পারবে। আবার শোনো, কখনো নয়! অচিরেই তোমরা জানতে পারবে। কখনো নয়! যদি তোমরা বিশ্বাসযোগ্য জ্ঞানের ভিত্তিতে (এ চালচলনের কুফল) জানতে পারতে, (তাহলে এভাবে চলতে না)। অবশ্যই তোমরা জাহান্নাম দেখতে পাবে। অতঃপর তোমরা তা সরাসরি দেখতে পাবে, যা একীনে পরিণত হয়। সেদিন তোমাদেরকে সকল নিয়ামত সম্পর্কে অবশ্যই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। (সূরা তাকাছুর)
পাপ বিস্তার হওয়াকে পছন্দ করা :
اِنَّ الَّذِيْنَ يُحِبُّوْنَ اَنْ تَشِيْعَ الْفَاحِشَةُ فِى الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ وَاللهُ يَعْلَمُ وَاَنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ
অবশ্যই যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারদের মধ্যে অশ্লীলতার বিস্তার হোক, তাদের জন্য রয়েছে ইহকাল ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না। (সূরা নূর– ১৯)
অবাধ্যতা করা এবং সীমালঙ্ঘন করা :
وَمَنْ يَّعْصِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَيَتَعَدَّ حُدُوْدَهٗ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيْهَا۪ وَلَهٗ عَذَابٌ مُّهِيْنٌ
আর যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করবে এবং সীমালঙ্ঘন করবে, তিনি তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। সেখানে সে চিরকাল অবস্থান করবে। আর তার জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি। (সূরা নিসা– ১৪)
ব্যাখ্যা : যারা আনুগত্যের সীমানা পেরিয়ে আল্লাহর রাজ্যে স্বেচ্ছাচারী মনোভাব ও আচরণ গ্রহণ করে, যারা আল্লাহর ক্ষমতার মধ্যে থেকেও নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের দাপট দেখায় এবং যারা মানুষের অধিকারে হস্তক্ষেপ করে, তারা সবাই বিদ্রোহী বলে গণ্য হয়।
মুমিনদেরকে নিয়ে হাসি–তামাশা করা :
اَلَّذِيْنَ يَلْمِزُوْنَ الْمُطَّوِّعِيْنَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ فِى الصَّدَقَاتِ وَالَّذِيْنَ لَا يَجِدُوْنَ اِلَّا جُهْدَهُمْ فَيَسْخَرُوْنَ مِنْهُمْؕ سَخِرَ اللهُ مِنْهُمْؗ وَلَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
ঈমানদারদের মধ্যে যারা স্বেচ্ছায় সাদাকা দেয় এবং যারা নিজেদের পরিশ্রমলব্ধ জিনিস ব্যতীত খরচ করার মতো কিছুই পায় না, যারা তাদেরকে দোষারূপ করে এবং উপহাস করে, আল্লাহ তাদেরকে উপহাস করেন। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরা তাওবা– ৭৯)
মুমিনদেরকে কষ্ট দেয়া :
اِنَّ الَّذِيْنَ فَتَنُوا الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ ثُمَّ لَمْ يَتُوْبُوْا فَلَهُمْ عَذَابُ جَهَنَّمَ وَلَهُمْ عَذَابُ الْحَرِيْقِ
নিশ্চয় যারা মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে কষ্ট দেয়; তারপরও তাওবা করে না, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি এবং তাদের জন্য আরো আছে আগুনে পুড়ার শাস্তি। (সূরা বুরুজ– ১০)
মুমিনদের পথ ছেড়ে অন্যদের পথে চলা :
وَمَنْ يُّشَاقِقِ الرَّسُوْلَ مِنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدٰى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيْلِ الْمُؤْمِنِيْنَ نُوَلِّهٖ مَا تَوَلّٰى وَنُصْلِهٖ جَهَنَّمَؕ وَسَآءَتْ مَصِيْرًا
কারো নিকট সৎপথ প্রকাশিত হওয়ার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ব্যতীত অন্য পথ অনুসরণ করে, তবে সে যেদিকে যায় আমি তাকে সেদিকেই ফিরিয়ে দেব এবং তাকে জাহান্নামে পৌঁছাব। আর জাহান্নাম কতই না নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল!’’ (সূরা নিসা– ১১৫)
জেনে শুনে দ্বীনি ইলিম গোপন করা :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَكْتُمُوْنَ مَاۤ اَنْزَلْنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدٰى مِنْ ۢ بَعْدِ مَا بَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِى الْكِتَابِ اُولٰٓئِكَ يَلْعَنُهُمُ اللهُ وَيَلْعَنُهُمُ اللَّاعِنُوْنَ
আমি যেসব উজ্জ্বল নিদর্শন ও হেদায়াত নাযিল করেছি যারা সেগুলোকে মানুষের নিকট প্রকাশ করার পরও গোপন করে, আল্লাহ তাদেরকে লানত করেন এবং লানতকারীগণও তাদেরকে লানত করে থাকে। (সূরা বাক্বারা– ১৫৯)
কুরআনের অপব্যাখ্যা করা :
اِنَّ الَّذِيْنَ يُلْحِدُوْنَ فِۤيْ اٰيَاتِنَا لَا يَخْفَوْنَ عَلَيْنَاؕ اَفَمَنْ يُّلْقٰى فِى النَّارِ خَيْرٌ اَمْ مَّنْ يَّاْتِۤيْ اٰمِنًا يَّوْمَ الْقِيَامَةِؕ اِعْمَلُوْا مَا شِئْتُمْ اِنَّهٗ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
নিশ্চয় যারা আমার আয়াতসমূহ সম্বন্ধে বক্রতা অবলম্বন করে, তারা আমার কাছে গোপন নয়। যে ব্যক্তি দোযখে নিক্ষিপ্ত হবে সে উত্তম, না ঐ ব্যক্তি উত্তম যে কিয়ামতের দিন নিরাপদে আগমন করবে? তোমরা যা ইচ্ছা (আমল) করো। নিশ্চয় তোমরা যা কর তিনি তা দেখেন। (সূরা হা–মীম সিজদা– ৪০)
কুরআন প্রচারে গোলমাল সৃষ্টি করা :
وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَا تَسْمَعُوْا لِهٰذَا الْقُرْاٰنِ وَالْغَوْا فِيْهِ لَعَلَّكُمْ تَغْلِبُوْنَ – فَلَنُذِيْقَنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا عَذَابًا شَدِيْدًا وَّلَنَجْزِيَنَّهُمْ اَسْوَاَ الَّذِيْ كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
কাফিররা বলে, তোমরা এ কুরআন শ্রবণ করো না এবং এতে গোলমাল সৃষ্টি করো। এতে আশা করা যায় তোমরা জয়লাভ করতে পারবে। সুতরাং আমি কাফিরদেরকে কঠিন আযাবের স্বাদ ভোগ করাব এবং তাদের কুকর্মের প্রতিদান দেব। (সূরা হা–মীম সিজদা– ২৬, ২৭)
কুরআনের বাণী শুনে আমল না করা :
وَاِذَا تُتْلٰى عَلَيْهِ اٰيَاتُنَا وَلّٰى مُسْتَكْبِرًا كَاَنْ لَّمْ يَسْمَعْهَا كَاَنَّ فِۤيْ اُذُنَيْهِ وَقْرًاۚ فَبَشِّرْهُ بِعَذَابٍ اَلِيْمٍ
যখন তার কাছে আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন সে অহংকার করে এমনভাবে মুখ ফিরিয়ে নেয়, যেন সে শুনতেই পায়নি, যেন তার কর্ণদ্বয়ের মধ্যে ছিপি রয়েছে। অতএব তাকে বেদনাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দিন। (সূরা লুক্বমানু ৭)
وَالَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَا وَاسْتَكْبَرُوْا عَنْهَاۤ اُولٰٓئِكَ اَصْحَابُ النَّارِۚ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
যারা আল্লাহর আয়াতকে মিথ্যা বলে এবং অহংকারবশত তা অমান্য করে তারা জাহান্নামের অধিবাসী, চিরকাল তারা সেখানে থাকবে। (সূরা আ‘রাফু ৩৬)
আল্লাহর বিধান কিছু মানা এবং কিছু না মানা :
اَفَتُؤْمِنُوْنَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُوْنَ بِبَعْضٍۚ فَمَا جَزَآءُ مَنْ يَّفْعَلُ ذٰلِكَ مِنْكُمْ اِلَّا خِزْيٌ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَاۚ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّوْنَ اِلٰۤى اَشَدِّ الْعَذَابِؕ وَمَا اللهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ – اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ اشْتَرَوُا الْحَيَاةَ الدُّنْيَا بِالْاٰخِرَةِ فَلَا يُخَفَّفُ عَنْهُمُ الْعَذَابُ وَلَا هُمْ يُنْصَرُوْنَ
তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশ স্বীকার কর এবং কিছু অংশ অস্বীকার কর? অতএব তোমাদের মধ্যে যারা এরূপ করবে তাদের পার্থিব জীবনে দুর্গতি ব্যতীত কিছুই নেই এবং কিয়ামতের দিন তারা কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হবে; আর তোমরা যা করছ সে ব্যাপারে আল্লাহ অমনোযোগী নন। তারাই পরকালের বিনিময়ে পার্থিব জীবন ক্রয় করেছে, অতএব তাদের শাস্তি হালকা করা হবে না এবং তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না। (সূরা বাক্বারা– ৮৫, ৮৬)
সালাত আদায় না করা :
كُلُّ نَفْسٍ ۢبِمَا كَسَبَتْ رَهِيْنَةٌ – اِلَّاۤ اَصْحَابَ الْيَمِيْنِ – فِيْ جَنَّاتٍ يَتَسَآءَلُوْنَ – عَنِ الْمُجْرِمِيْنَ – مَا سَلَكَكُمْ فِيْ سَقَرَ – قَالُوْا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّيْنَ – وَلَمْ نَكُ نُطْعِمُ الْمِسْكِيْنَ – وَكُنَّا نَخُوْضُ مَعَ الْخَآئِضِيْنَ – وَكُنَّا نُكَذِّبُ بِيَوْمِ الدِّيْنِ – حَتّٰۤى اَتَانَا الْيَقِيْنُ
প্রত্যেক মানুষ তার কৃতকর্মের জন্য বন্দী হয়ে থাকবে। তবে ডানপন্থীরা এর ব্যতিক্রম, তারা জান্নাতে থাকবে এবং জাহান্নামীদেরকে জিজ্ঞেস করবে, কোন্ জিনিস তোমাদেরকে জাহান্নামে পৌঁছাল? তারা উত্তরে বলবে, আমরা সালাত আদায়কারী ছিলাম না। আমরা মিসকীনদেরকে খাবার দিতাম না। আমরা সমালোচকদের সাথে সমালোচনা করতাম। আর আমরা কিয়ামতের দিনকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতাম; এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত আমরা এভাবেই ছিলাম। (এসব কারণে আমাদেরকে আজ জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হচ্ছে)। (সূরা মুদ্দাসসির, ৩৮–৪৭)
যাকাত না দেয়া :
وَالَّذِيْنَ يَكْنِزُوْنَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنْفِقُوْنَهَا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ اَلِيْمٍ – يَوْمَ يُحْمٰى عَلَيْهَا فِيْ نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوٰى بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوْبُهُمْ وَظُهُوْرُهُمْؕ هٰذَا مَا كَنَزْتُمْ لِاَنْفُسِكُمْ فَذُوْقُوْا مَا كُنْتُمْ تَكْنِزُوْنَ
যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে খরচ করে না, তাদেরকে আপনি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। সেদিন এ সম্পদ জাহান্নামের আগুনে গরম করা হবে এবং তা দিয়ে দাগ দেয়া হবে তাদের কপালে, পাঁজরে এবং পিঠে। অতঃপর (বলা হবে) এগুলো হলো সেই সম্পদ, যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা করে রেখেছিলে। সুতরাং তোমরা যা জমা করে রাখতে, তার স্বাদ গ্রহণ করো। (সূরা তাওবা– ৩৪, ৩৫)
কৃপণতা করা :
اَلَّذِيْنَ يَبْخَلُوْنَ وَيَاْمُرُوْنَ النَّاسَ بِالْبُخْلِ وَيَكْتُمُوْنَ ماۤ اٰتَاهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٖؕ وَاَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِيْنَ عَذَابًا مُّهِيْنًا
যারা কৃপণতা করে ও মানুষকে কৃপণতার নির্দেশ দেয় এবং আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে যা দিয়েছেন তা গোপন করে, এসব কাফিরদের জন্য আমি লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। (সূরা নিসা– ৩৭)
জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করা :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا لَقِيْتُمُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا زَحْفًا فَلَا تُوَلُّوْهُمُ الْاَدْبَارَ – وَمَنْ يُّوَلِّهِمْ يَوْمَئِذٍ دُبُرَهٗۤ اِلَّا مُتَحَرِّفًا لِّقِتَالٍ اَوْ مُتَحَيِّزًا اِلٰى فِئَةٍ فَقَدْ بَآءَ بِغَضَبٍ مِّنَ اللهِ وَمَاْوَاهُ جَهَنَّمُؕ وَبِئْسَ الْمَصِيْرُ
হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা কাফিরদের মুখোমুখি হও, তখন তোমরা পিছু ফিরে যেও না। আর সেদিন যে ব্যক্তি যুদ্ধ কৌশল বা স্বীয় বাহিনীর কেন্দ্রস্থলে স্থান করে নেয়া ব্যতীত (অন্য কোন কারণে) পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে, সে আল্লাহর গযবে পতিত হবে। তার আশ্রয়স্থল হবে জাহান্নাম। আর জাহান্নাম কতই না নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল। (সূরা আনফাল– ১৫, ১৬)
সতী নারীদের প্রতি অপবাদ দেয়া :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَرْمُوْنَ الْمُحْصَنَاتِ الْغَافِلَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ لُعِنُوْا فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ۪ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيْمٌ
অবশ্যই যারা সৎ, নিরীহ ও সরলমনা ঈমানদার নারীদের প্রতি অপবাদ দেয়, তারা দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত; তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি। (সূরা নূর– ২৩)
মানুষের নিন্দা করা ও তাদেরকে লজ্জা দেয়া :
وَيْلٌ لِّكُلِّ هُمَزَةٍ لُّمَزَةٍ – اَلَّذِيْ جَمَعَ مَالًا وَّعَدَّدَهٗ – يَحْسَبُ اَنَّ مَالَهٗۤ اَخْلَدَهٗ – كَلَّا لَيُنْۢبَذَنَّ فِى الْحُطَمَةِ – وَمَاۤ اَدْرَاكَ مَا الْحُطَمَةُ – نَارُ اللهِ الْمُوْقَدَةُ – اَ لَّتِيْ تَطَّلِعُ عَلَى الْاَفْئِدَةِ – اِنَّهَا عَلَيْهِمْ مُّؤْصَدَةٌ – فِيْ عَمَدٍ مُّمَدَّدَةٍ
ধ্বংস তাদের জন্য, যারা সামনা–সামনি ধিক্কার দেয় এবং পেছনে নিন্দা করে বেড়ায়। যে মাল জমা করে এবং তা গুনে গুনে রাখে। সে মনে করে তার সম্পদ তাকে চিরস্থায়ী করে রাখবে। কখনো নয়! অবশ্যই তাকে ফেলা হবে হুতামায়। তুমি কি জান হুতামা কী? সেটা আল্লাহর জ্বলন্ত আগুন, যা অন্তর পর্যন্ত পৌঁছবে। নিশ্চয় (এ আগুনকে) তাদের উপর আবদ্ধ করে দেয়া হবে। তারা উঁচু উঁচু স্তম্ভে বাঁধা থাকবে। (সূরা হুমাযাহ)
অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা করা :
وَمَنْ يَّقْتُلْ مُؤْمِنًا مُّتَعَمِّدًا فَجَزَآؤُهٗ جَهَنَّمُ خَالِدًا فِيْهَا وَغَضِبَ اللهُ عَلَيْهِ وَلَعَنَهٗ وَاَعَدَّ لَهٗ عَذَابًا عَظِيْمًا
যে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুমিনকে হত্যা করবে, তার শাস্তি জাহান্নাম; সেখানে সে চিরকাল থাকবে। তার প্রতি আল্লাহ রাগান্বিত হন, তাকে লানত করেন এবং তার জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন মহাশাস্তি। (সূরা নিসা– ৯৩)
সৎকাজের আদেশ দানকারীকে হত্যা করা :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَكْفُرُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِ وَيَقْتُلُوْنَ النَّبِيِّيْنَ بِغَيْرِ حَقٍ وَّيَقْتُلُوْنَ الَّذِيْنَ يَاْمُرُوْنَ بِالْقِسْطِ مِنَ النَّاسِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ اَلِيْمٍ
নিশ্চয় যারা আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করে এবং অন্যায়ভাবে নবীদেরকে হত্যা করে, আর মানুষের মধ্যে যারা ইনসাফের নির্দেশ দেয় তাদেরকেও হত্যা করে, তুমি তাদের সবাইকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও। (সূরা আলে ইমরানু ২১)
যিনা করা :
وَالَّذِيْنَ لَا يَدْعُوْنَ مَعَ اللهِ اِلٰهًا اٰخَرَ وَلَا يَقْتُلُوْنَ النَّفْسَ الَّتِيْ حَرَّمَ اللهُ اِِلَّا بِالْحَقِّ وَلَا يَزْنُوْنَؕ وَمَنْ يَّفْعَلْ ذٰلِكَ يَلْقَ اَثَامًا ‐ يُضَاعَفْ لَهُ الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيَخْلُدْ فِيْهٖ مُهَانًا
তারা আল্লাহর সাথে কোন ইলাহকে ডাকে না। আল্লাহ যার হত্যা নিষেধ করেছেন, যথার্থ কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যারা এসব করবে তারা অপরাধী হবে। কিয়ামতের দিন তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দেয়া হবে এবং সেখানে সে স্থায়ী হবে হীন অবস্থায়। (সূরা ফুরক্বানু ৬৮, ৬৯)
অত্যাচার করা :
وَمَنْ يَّظْلِمْ مِّنْكُمْ نُذِقْهُ عَذَابًا كَبِيْرًا
তোমাদের মধ্যে যে অত্যাচার করবে আমি তাকে মহাশাস্তি ভোগ করাব। (সূরা ফুরক্বানু১৯)
অন্যায়ভাবে অপরের মাল খাওয়া :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَاْكُلُوْاۤ اَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ اِلَّاۤ اَنْ تَكُوْنَ تِجَارَةً عَنْ تَرَاضٍ مِّنْكُمْ وَلَا تَقْتُلُوْاۤ اَنْفُسَكُمْؕ اِنَّ اللهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيْمًا – وَمَنْ يَّفْعَلْ ذٰلِكَ عُدْوَانًا وَّظُلْمًا فَسَوْفَ نُصْلِيْهِ نَارًا
হে মুমিনগণ! তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ গ্রাস করো না, তবে তোমাদের পরস্পরের সম্মতিতে ব্যবসা করা বৈধ। আর তোমরা একে অপরকে (অন্যায়ভাবে) হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। আর যে কেউ সীমালঙ্ঘন করে অন্যায়ভাবে তা করবে, তাকে আমি জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ করব। (সূরা নিসা- ২৯, ৩০)
ইয়াতীমের মাল আত্মসাৎ করা :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَاْكُلُوْنَ اَمْوَالَ الْيَتَامٰى ظُلْمًا اِنَّمَا يَاْكُلُوْنَ فِيْ بُطُوْنِهِمْ نَارًاؕ وَسَيَصْلَوْنَ سَعِيْرًا
নিশ্চয় যারা অন্যায়ভাবে ইয়াতীমের সম্পদ খায়, তারা তাদের পেটে কেবল আগুনই ভর্তি করে। আর অচিরেই তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (সূরা নিসা– ১০)
সুদ খাওয়া :
اَلَّذِيْنَ يَاْكُلُوْنَ الرِّبَا لَا يَقُوْمُوْنَ اِلَّا كَمَا يَقُوْمُ الَّذِيْ يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّؕ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ قَالُوْاۤ اِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ الرِّبَا وَاَحَلَّ اللهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَاؕ فَمَنْ جَآءَهٗ مَوْعِظَةٌ مِّنْ رَّبِّه فَانْتَهٰى فَلَهٗ مَا سَلَفَ وَاَمْرُهٗۤ اِلَى اللهِؕ وَمَنْ عَادَ فَاُولٰٓئِكَ اَصْحَابُ النَّارِۚ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
যারা সুদ খায় তারা (হাশরের মাঠে) ঐ ব্যক্তির ন্যায় উঠবে, যাকে শয়তান স্পর্শ দ্বারা দিশেহারা করে দেয়। এটা এজন্য যে তারা বলে, বেচাকেনা তো সুদের মতোই অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন আর সুদকে হারাম করেছেন। সুতরাং যার কাছে তার রবের পক্ষ থেকে উপদেশ আসবে অতঃপর সে সুদ খাওয়া থেকে বিরত থাকবে, তবে অতীতে যা হয়েছে তা তার এবং তার ব্যাপারে ফায়সালা করার দায়িত্ব আল্লাহর। আর যারা (উপদেশ শুনার পরেও) সুদের লেনদেন করবে তারা জাহান্নামের অধিবাসী। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। (সূরা বাক্বারা– ২৭৫)
অহংকার করা :
وَاَمَّا الَّذِيْنَ اسْتَنْكَفُوْا وَاسْتَكْبَرُوْا فَيُعَذِّبُهُمْ عَذَابًا اَلِيْمًا وَّلَا يَجِدُوْنَ لَهُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ وَلِيًّا وَّلَا نَصِيْرًا
যারা আল্লাহর ইবাদাত করতে লজ্জাবোধ করেছে এবং অহংকার করেছে, তিনি তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেবেন। তারা আল্লাহ ব্যতীত নিজেদের জন্য কোন বন্ধু ও সাহায্যকারী পাবে না। (সূরা নিসা– ১৭৩)
মিথ্যা কথা বলা :
فَوَيْلٌ يَّوْمَئِذٍ لِّلْمُكَذِّبِيْنَ
কিয়ামতের দিন মিথ্যাবাদীদের জন্য রয়েছে ধ্বংস। (সূরা তূর– ১১)
ব্যাখ্যা : রাসূল ﷺ বলেছেন, নিশ্চয় মিথ্যা পাপের পথ খুলে দেয় আর পাপ জাহান্নামের পথ খুলে দেয়। আর যখন কোন ব্যক্তি মিথ্যা বলতেই থাকে, তখন সে আল্লাহর কাছে মিথ্যুক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যায়। (সহীহ বুখারী, হা/৬০৯৪)
শয়তানের পথে চলা :
اَلَمْ اَعْهَدْ اِلَيْكُمْ يَا بَنِيْۤ اٰدَمَ اَنْ لَّا تَعْبُدُوا الشَّيْطَانَۚ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ – وَاَنِ اعْبُدُوْنِيْؕ هٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيْمٌ – وَلَقَدْ اَضَلَّ مِنْكُمْ جِبِلًّا كَثِيْرًاؕ اَفَلَمْ تَكُوْنُوْا تَعْقِلُوْنَ – هٰذِه جَهَنَّمُ الَّتِيْ كُنْتُمْ تُوْعَدُوْنَ – اِصْلَوْهَا الْيَوْمَ بِمَا كُنْتُمْ تَكْفُرُوْنَ
আল্লাহ বলেন, হে আদম সন্তান! আমি কি তোমাদেরকে এ প্রতিশ্রুতি দেইনি যে, তোমরা শয়তানের উপাসনা করো না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। আর তোমরা শুধু আমারই ইবাদাত করো, এটাই সঠিক পথ। শয়তান তোমাদের অনেককেই বিভ্রান্ত করেছে, তোমরা কি তা বুঝ না? এ হলো সেই জাহান্নাম, যার ওয়াদা তোমাদেরকে দেয়া হয়েছে। তোমাদের কুফরির কারণে আজ তোমরা তাতে প্রবেশ করো। (সূরা ইয়াসীন, ৬০–৬৪)
আল্লাহ অনেক জাতি সৃষ্টি করেছেন :
ثُمَّ اَنْشَأْنَا مِنْ ۢبَعْدِهِمْ قُرُوْنًا اٰخَرِيْنَ
অতঃপর তাদের পরে আমি বহু জাতি সৃষ্টি করেছি। (সূরা মু’মিনূন- ৪২)
প্রত্যেক জাতিকে পরীক্ষায় ফেলা হয়েছে :
وَلَقَدْ اَرْسَلْنَاۤ اِلٰۤى اُمَمٍ مِّنْ قَبْلِكَ فَاَخَذْنَاهُمْ بِالْبَأْسَآءِ وَالضَّرَّآءِ لَعَلَّهُمْ يَتَضَرَّعُوْنَ
তোমার পূর্বেও আমি বহু জাতির নিকট রাসূল প্রেরণ করেছি, অতঃপর তাদেরকে অর্থসংকট ও দুঃখ-কষ্ট দ্বারা পাকড়াও করেছি, যাতে তারা বিনয়ী হয়। (সূরা আন‘আম- ৪২)
তাদেরকে প্রাচুর্যের পরীক্ষায় ফেলা হয় :
فَلَمَّا نَسُوْا مَا ذُكِّرُوْا بِه فَتَحْنَا عَلَيْهِمْ اَبْوَابَ كُلِّ شَيْءٍؕ حَتّٰۤى اِذَا فَرِحُوْا بِمَاۤ اُوْتُوْاۤ اَخَذْنَاهُمْ بَغْتَةً فَاِذَا هُمْ مُّبْلِسُوْنَ
তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল যখন তারা তা ভুলে গেল, তখন আমি তাদের জন্য সবকিছুর দ্বার উন্মুক্ত করে দিলাম; অবশেষে তাদেরকে যা দেয়া হলো যখন তারা তাতে উল্লাসিত হলো। অতঃপর হঠাৎ তাদেরকে পাকড়াও করলাম, ফলে তারা নিরাশ হলো। (সূরা আন‘আম- ৪৪)
আল্লাহ তাদেরকে সৎপথে ফিরে আসার জন্য সুযোগ দিয়েছিলেন :
وَمَاۤ اَرْسَلْنَا فِيْ قَرْيَةٍ مِّنْ نَّبِيٍّ اِلَّاۤ اَخَذْنَاۤ اَهْلَهَا بِالْبَأْسَآءِ وَالضَّرَّآءِ لَعَلَّهُمْ يَضَّرَّعُوْنَ
আমি যদি কোন জনপদে নবী পাঠাই তবে (প্রথমে) তার অধিবাসীদেরকে অর্থসংকট ও দুঃখ-কষ্ট দ্বারা আক্রান্ত করি, যাতে তারা কাকুতি-মিনতি করে। (সূরা আ‘রাফ- ৯৪)
এরপরও তারা বিনম্র হয়নি :
فَلَوْلَاۤ اِذْ جَآءَهُمْ بَأْسُنَا تَضَرَّعُوْا وَلٰكِنْ قَسَتْ قُلُوْبُهُمْ وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
অতঃপর যখন আমার শাস্তি তাদের উপর এসে গেল, তখন তারা কেন বিনীত হলো না? বরং তাদের হৃদয়সমূহ আরো কঠিন হয়ে গিয়েছিল এবং তারা যা করছিল শয়তান তা তাদের দৃষ্টিতে শোভন করে দিয়েছিল। (সূরা আন‘আম- ৪৩)
প্রত্যেক জনপদেই বড় বড় অপরাধী বিদ্যমান ছিল :
وَكَذٰلِكَ جَعَلْنَا فِيْ كُلِّ قَرْيَةٍ اَكَابِرَ مُجْرِمِيْهَا لِيَمْكُرُوْا فِيْهَا
এভাবে আমি প্রত্যেক জনপদে তার অপরাধীদের প্রধানকে সেখানে চক্রান্ত করার অবকাশ দিয়েছিলাম।
(সূরা আন‘আম- ১২৩)
তারা বিলাসিতায় ডুবে গিয়েছিল :
فَلَوْلَا كَانَ مِنَ الْقُرُوْنِ مِنْ قَبْلِكُمْ اُولُوْا بَقِيَّةٍ يَّنْهَوْنَ عَنِ الْفَسَادِ فِى الْاَرْضِ اِلَّا قَلِيْلًا مِّمَّنْ اَنْجَيْنَا مِنْهُمْۚ وَاتَّبَعَ الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا مَاۤ اُتْرِفُوْا فِيْهِ وَكَانُوْا مُجْرِمِيْنَ
তোমাদের পূর্বযুগে আমি যাদেরকে রক্ষা করেছিলাম তাদের মধ্যে অল্প কতক ব্যতীত এমন কোন সৎলোক ছিল না, যারা পৃথিবীতে বিপর্যয় ঘটাতে নিষেধ করত। আর যারা যুলুম করেছে তারা ঐ বিষয়েরই অনুসরণ করত, যাতে তারা সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য পেত; আর তারা ছিল অপরাধীদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা হুদ- ১১৬)
প্রত্যেক জাতির মধ্যেই নবী এসেছিলেন :
وَلِكُلِّ اُمَّةٍ رَّسُوْلٌۚ فَاِذَا جَآءَ رَسُوْلُهُمْ قُضِيَ بَيْنَهُمْ بِالْقِسْطِ وَهُمْ لَا يُظْلَمُوْنَ
প্রত্যেক জাতির জন্যই নির্দিষ্ট রয়েছে একজন রাসূল। অতঃপর যখনই তাদের রাসূল আগমন করেছে তখনই তাদের মাঝে ন্যায়বিচারের সাথে মীমাংসা হয়েছে। আর এতে তাদের প্রতি কোন যুলুম করা হয়নি। (সূরা ইউনুস- ৪৭)
সকলেই নবীদেরকে মিথ্যারোপ করেছে :
وَاِنْ يُّكَذِّبُوْكَ فَقَدْ كَذَّبَتْ قَبْلَهُمْ قَوْمُ نُوْحٍ وَّعَادٌ وَّثَمُوْدُ ‐ - وَقَوْمُ اِبْرَاهِيْمَ وَقَوْمُ لُوْطٍ
লোকেরা যদি তোমাকে অস্বীকার করে, তবে তাদের পূর্বে তো নূহ্, আদ, সামূদ, ইবরাহীম ও লূতের সম্প্রদায়রাও অস্বীকার করেছিল। (সূরা হজ্জ- ৪২, ৪৩)
তারা নবীদের কথা না মেনে শয়তানের অনুসরণ করেছে :
تَاللهِ لَقَدْ اَرْسَلْنَاۤ اِلٰۤى اُمَمٍ مِّنْ قَبْلِكَ فَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ اَعْمَالَهُمْ فَهُوَ وَلِيُّهُمُ الْيَوْمَ وَلَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
শপথ আল্লাহর! আমি তোমার পূর্বেও বহু জাতির নিকট রাসূল প্রেরণ করেছি। কিন্তু শয়তান ঐসব জাতির কার্যকলাপ তাদের দৃষ্টিতে সুশোভিত করে দিয়েছিল; সুতরাং আজ সে-ই তাদের অভিভাবক। আর তাদের জন্য রয়েছে মর্মান্তিক শাস্তি। (সূরা নাহল- ৬৩)
আল্লাহ নবীদেরকে সান্ত্বনা দিতেন :
وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِرُسُلِهِمْ لَنُخْرِجَنَّكُمْ مِّنْ اَرْضِنَاۤ اَوْ لَتَعُوْدُنَّ فِيْ مِلَّتِنَاؕ فَاَوْحٰۤى اِلَيْهِمْ رَبُّهُمْ لَنُهْلِكَنَّ الظَّالِمِيْنَ
কাফিররা তাদের রাসূলদেরকে বলেছিল, অবশ্যই আমরা তোমাদেরকে আমাদের দেশ হতে বহিষ্কার করব অথবা তোমাদেরকে আমাদের ধর্মে ফিরে আসতেই হবে। অতঃপর রাসূলদেরকে তাদের প্রতিপালক ওহী প্রেরণ করলেন যে, অবশ্যই আমি যালিমদেরকে বিনাশ করব। (সূরা ইবরাহীম- ১৩)
ধনীরাই বেশি বিরোধিতা করত :
وَمَاۤ اَرْسَلْنَا فِيْ قَرْيَةٍ مِّنْ نَّذِيْرٍ اِلَّا قَالَ مُتْرَفُوْهَاۤ اِنَّا بِمَاۤ اُرْسِلْتُمْ بِه كَافِرُوْنَ
যখনই আমি কোন জনপদে সতর্ককারী প্রেরণ করেছি, তখনই তার বিত্তশালীরা বলেছে, তোমরা যে বিষয় নিয়ে প্রেরিত হয়েছ আমরা তা প্রত্যাখ্যান করি। (সূরা সাবা- ৩৪)
ব্যাখ্যা : প্রত্যেক যুগে সচ্ছল লোকেরাই নবী-রাসূলদের বিরোধিতায় অগ্রগামী ছিল এবং এরাই প্রতিষ্ঠিত জাহেলিয়াতকে টিকিয়ে রাখার প্রচেষ্টায় তৎপর ছিল। এর মূল কারণ হচ্ছে, সুখী ও সচ্ছল শ্রেণির লোকেরা কোন নতুন আদর্শ দেখে প্রথম দৃষ্টিতেই মনে করে, এটা প্রতিষ্ঠিত হলে তাদের নেতৃত্ব হাতছাড়া হয়ে যাবে এবং তাদের নিষিদ্ধ কাজ করার স্বাধীনতাও বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এ কথা কুরআন মাজীদের বহুস্থানে বর্ণনা করা হয়েছে।
ثُمَّ اَنْشَأْنَا مِنْ ۢبَعْدِهِمْ قُرُوْنًا اٰخَرِيْنَ
অতঃপর তাদের পরে আমি বহু জাতি সৃষ্টি করেছি। (সূরা মু’মিনূন- ৪২)
প্রত্যেক জাতিকে পরীক্ষায় ফেলা হয়েছে :
وَلَقَدْ اَرْسَلْنَاۤ اِلٰۤى اُمَمٍ مِّنْ قَبْلِكَ فَاَخَذْنَاهُمْ بِالْبَأْسَآءِ وَالضَّرَّآءِ لَعَلَّهُمْ يَتَضَرَّعُوْنَ
তোমার পূর্বেও আমি বহু জাতির নিকট রাসূল প্রেরণ করেছি, অতঃপর তাদেরকে অর্থসংকট ও দুঃখ-কষ্ট দ্বারা পাকড়াও করেছি, যাতে তারা বিনয়ী হয়। (সূরা আন‘আম- ৪২)
তাদেরকে প্রাচুর্যের পরীক্ষায় ফেলা হয় :
فَلَمَّا نَسُوْا مَا ذُكِّرُوْا بِه فَتَحْنَا عَلَيْهِمْ اَبْوَابَ كُلِّ شَيْءٍؕ حَتّٰۤى اِذَا فَرِحُوْا بِمَاۤ اُوْتُوْاۤ اَخَذْنَاهُمْ بَغْتَةً فَاِذَا هُمْ مُّبْلِسُوْنَ
তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল যখন তারা তা ভুলে গেল, তখন আমি তাদের জন্য সবকিছুর দ্বার উন্মুক্ত করে দিলাম; অবশেষে তাদেরকে যা দেয়া হলো যখন তারা তাতে উল্লাসিত হলো। অতঃপর হঠাৎ তাদেরকে পাকড়াও করলাম, ফলে তারা নিরাশ হলো। (সূরা আন‘আম- ৪৪)
আল্লাহ তাদেরকে সৎপথে ফিরে আসার জন্য সুযোগ দিয়েছিলেন :
وَمَاۤ اَرْسَلْنَا فِيْ قَرْيَةٍ مِّنْ نَّبِيٍّ اِلَّاۤ اَخَذْنَاۤ اَهْلَهَا بِالْبَأْسَآءِ وَالضَّرَّآءِ لَعَلَّهُمْ يَضَّرَّعُوْنَ
আমি যদি কোন জনপদে নবী পাঠাই তবে (প্রথমে) তার অধিবাসীদেরকে অর্থসংকট ও দুঃখ-কষ্ট দ্বারা আক্রান্ত করি, যাতে তারা কাকুতি-মিনতি করে। (সূরা আ‘রাফ- ৯৪)
এরপরও তারা বিনম্র হয়নি :
فَلَوْلَاۤ اِذْ جَآءَهُمْ بَأْسُنَا تَضَرَّعُوْا وَلٰكِنْ قَسَتْ قُلُوْبُهُمْ وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
অতঃপর যখন আমার শাস্তি তাদের উপর এসে গেল, তখন তারা কেন বিনীত হলো না? বরং তাদের হৃদয়সমূহ আরো কঠিন হয়ে গিয়েছিল এবং তারা যা করছিল শয়তান তা তাদের দৃষ্টিতে শোভন করে দিয়েছিল। (সূরা আন‘আম- ৪৩)
প্রত্যেক জনপদেই বড় বড় অপরাধী বিদ্যমান ছিল :
وَكَذٰلِكَ جَعَلْنَا فِيْ كُلِّ قَرْيَةٍ اَكَابِرَ مُجْرِمِيْهَا لِيَمْكُرُوْا فِيْهَا
এভাবে আমি প্রত্যেক জনপদে তার অপরাধীদের প্রধানকে সেখানে চক্রান্ত করার অবকাশ দিয়েছিলাম।
(সূরা আন‘আম- ১২৩)
তারা বিলাসিতায় ডুবে গিয়েছিল :
فَلَوْلَا كَانَ مِنَ الْقُرُوْنِ مِنْ قَبْلِكُمْ اُولُوْا بَقِيَّةٍ يَّنْهَوْنَ عَنِ الْفَسَادِ فِى الْاَرْضِ اِلَّا قَلِيْلًا مِّمَّنْ اَنْجَيْنَا مِنْهُمْۚ وَاتَّبَعَ الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا مَاۤ اُتْرِفُوْا فِيْهِ وَكَانُوْا مُجْرِمِيْنَ
তোমাদের পূর্বযুগে আমি যাদেরকে রক্ষা করেছিলাম তাদের মধ্যে অল্প কতক ব্যতীত এমন কোন সৎলোক ছিল না, যারা পৃথিবীতে বিপর্যয় ঘটাতে নিষেধ করত। আর যারা যুলুম করেছে তারা ঐ বিষয়েরই অনুসরণ করত, যাতে তারা সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য পেত; আর তারা ছিল অপরাধীদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা হুদ- ১১৬)
প্রত্যেক জাতির মধ্যেই নবী এসেছিলেন :
وَلِكُلِّ اُمَّةٍ رَّسُوْلٌۚ فَاِذَا جَآءَ رَسُوْلُهُمْ قُضِيَ بَيْنَهُمْ بِالْقِسْطِ وَهُمْ لَا يُظْلَمُوْنَ
প্রত্যেক জাতির জন্যই নির্দিষ্ট রয়েছে একজন রাসূল। অতঃপর যখনই তাদের রাসূল আগমন করেছে তখনই তাদের মাঝে ন্যায়বিচারের সাথে মীমাংসা হয়েছে। আর এতে তাদের প্রতি কোন যুলুম করা হয়নি। (সূরা ইউনুস- ৪৭)
সকলেই নবীদেরকে মিথ্যারোপ করেছে :
وَاِنْ يُّكَذِّبُوْكَ فَقَدْ كَذَّبَتْ قَبْلَهُمْ قَوْمُ نُوْحٍ وَّعَادٌ وَّثَمُوْدُ ‐ - وَقَوْمُ اِبْرَاهِيْمَ وَقَوْمُ لُوْطٍ
লোকেরা যদি তোমাকে অস্বীকার করে, তবে তাদের পূর্বে তো নূহ্, আদ, সামূদ, ইবরাহীম ও লূতের সম্প্রদায়রাও অস্বীকার করেছিল। (সূরা হজ্জ- ৪২, ৪৩)
তারা নবীদের কথা না মেনে শয়তানের অনুসরণ করেছে :
تَاللهِ لَقَدْ اَرْسَلْنَاۤ اِلٰۤى اُمَمٍ مِّنْ قَبْلِكَ فَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ اَعْمَالَهُمْ فَهُوَ وَلِيُّهُمُ الْيَوْمَ وَلَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
শপথ আল্লাহর! আমি তোমার পূর্বেও বহু জাতির নিকট রাসূল প্রেরণ করেছি। কিন্তু শয়তান ঐসব জাতির কার্যকলাপ তাদের দৃষ্টিতে সুশোভিত করে দিয়েছিল; সুতরাং আজ সে-ই তাদের অভিভাবক। আর তাদের জন্য রয়েছে মর্মান্তিক শাস্তি। (সূরা নাহল- ৬৩)
আল্লাহ নবীদেরকে সান্ত্বনা দিতেন :
وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِرُسُلِهِمْ لَنُخْرِجَنَّكُمْ مِّنْ اَرْضِنَاۤ اَوْ لَتَعُوْدُنَّ فِيْ مِلَّتِنَاؕ فَاَوْحٰۤى اِلَيْهِمْ رَبُّهُمْ لَنُهْلِكَنَّ الظَّالِمِيْنَ
কাফিররা তাদের রাসূলদেরকে বলেছিল, অবশ্যই আমরা তোমাদেরকে আমাদের দেশ হতে বহিষ্কার করব অথবা তোমাদেরকে আমাদের ধর্মে ফিরে আসতেই হবে। অতঃপর রাসূলদেরকে তাদের প্রতিপালক ওহী প্রেরণ করলেন যে, অবশ্যই আমি যালিমদেরকে বিনাশ করব। (সূরা ইবরাহীম- ১৩)
ধনীরাই বেশি বিরোধিতা করত :
وَمَاۤ اَرْسَلْنَا فِيْ قَرْيَةٍ مِّنْ نَّذِيْرٍ اِلَّا قَالَ مُتْرَفُوْهَاۤ اِنَّا بِمَاۤ اُرْسِلْتُمْ بِه كَافِرُوْنَ
যখনই আমি কোন জনপদে সতর্ককারী প্রেরণ করেছি, তখনই তার বিত্তশালীরা বলেছে, তোমরা যে বিষয় নিয়ে প্রেরিত হয়েছ আমরা তা প্রত্যাখ্যান করি। (সূরা সাবা- ৩৪)
ব্যাখ্যা : প্রত্যেক যুগে সচ্ছল লোকেরাই নবী-রাসূলদের বিরোধিতায় অগ্রগামী ছিল এবং এরাই প্রতিষ্ঠিত জাহেলিয়াতকে টিকিয়ে রাখার প্রচেষ্টায় তৎপর ছিল। এর মূল কারণ হচ্ছে, সুখী ও সচ্ছল শ্রেণির লোকেরা কোন নতুন আদর্শ দেখে প্রথম দৃষ্টিতেই মনে করে, এটা প্রতিষ্ঠিত হলে তাদের নেতৃত্ব হাতছাড়া হয়ে যাবে এবং তাদের নিষিদ্ধ কাজ করার স্বাধীনতাও বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এ কথা কুরআন মাজীদের বহুস্থানে বর্ণনা করা হয়েছে।
প্রত্যেক জাতিরই একটি নির্দিষ্ট সময় থাকে :
وَلِكُلِّ اُمَّةٍ اَجَلٌۚ فَاِذَا جَآءَ اَجَلُهُمْ لَا يَسْتَأْخِرُوْنَ سَاعَةً وَّلَا يَسْتَقْدِمُوْنَ
প্রত্যেক জাতিরই একটি নির্দিষ্ট সময় আছে। যখন তাদের সময় আসবে, তখন তারা মুহূর্তকাল সময়টুকুও দেরি করতে পারবে না এবং তাড়াহুড়াও করতে পারবে না। (সূরা আ‘রাফ- ৩৪)
সময় শেষে কেউই টিকে থাকতে পারেনি :
وَمَاۤ اَهْلَكْنَا مِنْ قَرْيَةٍ اِلَّا وَلَهَا كِتَابٌ مَّعْلُوْمٌ – مَا تَسْبِقُ مِنْ اُمَّةٍ اَجَلَهَا وَمَا يَسْتَأْخِرُوْنَ
আমি যে কোন জনপদকে ধ্বংস করেছি তার জন্য ছিল একটি নির্দিষ্ট লিপিবদ্ধ কাল। কোন জাতি তার নির্দিষ্ট কালকে ত্বরান্বিত করতে পারে না এবং বিলম্বিতও করতে পারে না। (সূরা হিজর- ৪, ৫)
পরিশেষে তারা কেবল পরিতাপই করেছে :
قَالُوْا يَا وَيْلَنَاۤ اِنَّا كُنَّا ظَالِمِيْنَ – - فَمَا زَالَتْ تِّلْكَ دَعْوَاهُمْ حَتّٰى جَعَلْنَاهُمْ حَصِيْدًا خَامِدِيْنَ
তারা বলল, ‘হায় আমাদের দুর্ভোগ! নিশ্চয় আমরা ছিলাম যালিমদের অন্তর্ভুক্ত। অতঃপর তাদের এ আর্তনাদ চলতে থাকে, শেষ পর্যন্ত আমি তাদেরকে কর্তিত শস্য ও নিভে যাওয়া আগুনের মতো করে দিলাম (অর্থাৎ তাদেরকে গুরুত্বহীন করে দিলাম)। (সূরা আম্বিয়া- ১৪, ১৫)
فَمَا كَانَ دَعْوَاهُمْ اِذْ جَآءَهُمْ بَأْسُنَاۤ اِلَّاۤ اَنْ قَالُوْاۤ اِنَّا كُنَّا ظَالِمِيْنَ
অতঃপর যখন আমার শাস্তি তাদের উপর পতিত হয়েছিল, তখন তাদের কথা শুধু এটাই ছিল যে, নিশ্চয় আমরা যালিমদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। (সূরা আ‘রাফ- ৫)
ব্যাখ্যা : সংশোধনের সময় অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর কারো সচেতন হওয়া এবং নিজের ভুল স্বীকার করা অর্থহীন। যে ব্যক্তি বা জাতি গাফলতিতে লিপ্ত ও ভোগের নেশায় মত্ত হয়ে স্বেচ্ছাচারী জীবন যাপনের মধ্য দিয়ে আল্লাহর দেয়া সুযোগ হারিয়ে বসে এবং আল্লাহ তাদেরকে পাকড়াও করার পর যারা সচেতন হয় তাদের চেয়ে বড় মূর্খ আর কেউ নেই। আল্লাহ একবার কাউকে পাকড়াও করার পর তার আর মুক্তি লাভের কোন পথই থাকে না। মানবজাতির ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা হাজার বার ঘটেছে। এ ক্ষেত্রে মানুষ বার বার একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করে আসছে। সচেতন হওয়ার জন্য সে শেষ মুহূর্তেরই অপেক্ষা করতে থাকে, যখন আক্ষেপ করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না।
তারা হঠাৎ করে ধ্বংসের মুখোমুখি হয়েছে :
وَكَمْ مِّنْ قَرْيَةٍ اَهْلَكْنَاهَا فَجَآءَهَا بَأْسُنَا بَيَاتًا اَوْ هُمْ قَآئِلُوْنَ
আমি কত জনপদকে ধ্বংস করেছি! আমার শাস্তি তাদের উপর পতিত হয়েছিল রাতে অথবা দ্বিপ্রহরে, যখন তারা বিশ্রামরত অবস্থায় ছিল। (সূরা আ‘রাফ- ৪)
তারা তাদের বাড়িঘরসহ ধ্বংস হয়েছে :
قَدْ مَكَرَ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَاَتَى اللهُ بُنْيَانَهُمْ مِنَ الْقَوَاعِدِ فَخَرَّ عَلَيْهِمُ السَّقْفُ مِنْ فَوْقِهِمْ وَاَتَاهُمُ الْعَذَابُ مِنْ حَيْثُ لَا يَشْعُرُوْنَ
তাদের পূর্ববর্তীগণও চক্রান্ত করেছিল, ফলে আল্লাহ তাদের ইমারতের ভিত্তিমূলে আঘাত করেছিলেন, এতে ইমারতের ছাদ তাদের উপর ধসে পড়ল। আর তাদের প্রতি এমন দিক হতে শাস্তি আসল, যা ছিল তাদের ধারণাতীত। (সূরা নাহল- ২৬)
তাদের ঘরবাড়ি জনশূণ্য হয়ে পড়ে থাকল :
فَكَاَيِّنْ مِّنْ قَرْيَةٍ اَهْلَكْنَاهَا وَهِيَ ظَالِمَةٌ فَهِيَ خَاوِيَةٌ عَلٰى عُرُوْشِهَا وَبِئْرٍ مُّعَطَّلَةٍ وَّقَصْرٍ مَّشِيْدٍ
আমি ধ্বংস করেছি কত জনপদ, যেগুলোর বাসিন্দারা ছিল যালিম। এসব জনপদ তাদের ঘরের ছাদসহ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল এবং কত কূপ ও কত সুদৃঢ় প্রাসাদও পরিত্যক্ত হয়েছিল। (সূরা হজ্জ- ৪৫)
অনেক শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও তারা ধ্বংস হয়েছে :
اَوَلَمْ يَسِيْرُوْا فِى الْاَرْضِ فَيَنْظُرُوْا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الَّذِيْنَ كَانُوْا مِنْ قَبْلِهِمْؕ كَانُوْا هُمْ اَشَدَّ مِنْهُمْ قُوَّةً وَّاٰثَارًا فِى الْاَرْضِ فَاَخَذَهُمُ اللهُ بِذُنُوْبِهِمْؕ وَمَا كَانَ لَهُمْ مِّنَ اللهِ مِنْ وَّاقٍ
তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করে না? করলে দেখত যে, তাদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কি হয়েছিল। পৃথিবীতে তারা ছিল এদের অপেক্ষা শক্তিতে এবং কীর্তিতে প্রবল। অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে তাদের অপরাধের জন্য শাস্তি দিয়েছিলেন; আর তাদেরকে আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচানোর জন্য কেউ ছিল না।
(সূরা মু’মিন- ২১)
তাদের কোন সাহায্যকারী পাওয়া যায়নি :
وَكَاَيِّنْ مِّنْ قَرْيَةٍ هِيَ اَشَدُّ قُوَّةً مِّنْ قَرْيَتِكَ الَّتِيْۤ اَخْرَجَتْكَۚ اَهْلَكْنَاهُمْ فَلَا نَاصِرَ لَهُمْ
(হে রাসূল!) তারা আপনাকে আপনার যে এলাকা থেকে বের করে দিয়েছে এর চেয়ে শক্তিশালী কত এলাকা বিলীন হয়ে গেছে। আমি তাদেরকে এমনভাবে ধ্বংস করে দিয়েছি যে, তাদেরকে সাহায্য করার মতো কেউ ছিল না। (সূরা মুহাম্মাদ- ১৩)
তাদের ধনসম্পদ কোন কাজে আসেনি :
اَفَلَمْ يَسِيْرُوْا فِى الْاَرْضِ فَيَنْظُرُوْا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْؕ كَانُوْاۤ اَكْثَرَ مِنْهُمْ وَاَشَدَّ قُوَّةً وَّاٰثَارًا فِى الْاَرْضِ فَمَاۤ اَغْنٰى عَنْهُمْ مَّا كَانُوْا يَكْسِبُوْنَ
তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করেনি ও দেখেনি যে, তাদের পূর্ববর্তীদের কী পরিণাম হয়েছিল? পৃথিবীতে তারা ছিল এদের অপেক্ষা সংখ্যায় অধিক এবং শক্তিতে ও কীর্তিতে অধিক প্রবল। তারপরও তারা যা করত তা তাদের কোন কাজে আসেনি। (সূরা মু’মিন- ৮২)
তাদের ধ্বংসাবশেষ এখনো আছে :
وَعَادًا وَّثَمُوْدَاْ وَقَدْ تَّبَيَّنَ لَكُمْ مِّنْ مَّسَاكِنِهِمْ وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ اَعْمَالَهُمْ فَصَدَّهُمْ عَنِ السَّبِيْلِ وَكَانُوْا مُسْتَبْصِرِيْنَ
আমি আদ ও সামূদ জাতিকে ধ্বংস করেছিলাম, তাদের বাড়িঘরই তোমাদের জন্য এর সুস্পষ্ট প্রমাণ। শয়তান তাদের কাজকে তাদের দৃষ্টিতে শোভন করে দিয়েছিল এবং তাদেরকে সৎপথ অবলম্বনে বাধা দিয়েছিল, যদিও তারা ছিল বিচক্ষণ। (সূরা আনকাবূত- ৩৮)
এভাবে যালিমদের শিকড় কেটে দেয়া হয়েছে :
فَقُطِعَ دَابِرُ الْقَوْمِ الَّذِيْنَ ظَلَمُوْاؕ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
অতঃপর যালিম সম্প্রদায়ের মূলোচ্ছেদ করা হলো; সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক। (সূরা আন‘আম- ৪৫)
তাদের ধ্বংসের বিষয়টি কাহিনীতে পরিণত হয়েছে :
ثُمَّ اَرْسَلْنَا رُسُلَنَا تَتْرٰىؕ كُلَّ مَا جَآءَ اُمَّةً رَّسُوْلُهَا كَذَّبُوْهُ فَاَتْبَعْنَا بَعْضَهُمْ بَعْضًا وَّجَعَلْنَاهُمْ اَحَادِيْثَۚ فَبُعْدًا لِّقَوْمٍ لَّا يُؤْمِنُوْنَ
অতঃপর আমি একের পর এক আমার রাসূল প্রেরণ করেছি। যখনই কোন জাতির নিকট তার রাসূল এসেছে তখনই তারা তাকে মিথ্যাবাদী বলেছে। অতঃপর আমি তাদেরকে একের পর এক ধ্বংস করলাম এবং তাদেরকে কাহিনীর বিষয় হিসেবে নির্ধারণ করে দিলাম। কাজেই যে জাতি ঈমান আনয়ন করে না, তারা ধ্বংস হোক। (সূরা মু’মিনূন- ৪৪)
বিভিন্ন জাতিকে বিভিন্নভাবে ধ্বংস করা হয়েছে :
فَكُلًّا اَخَذْنَا بِذَنْۢبِه ۚ فَمِنْهُمْ مَّنْ اَرْسَلْنَا عَلَيْهِ حَاصِبًاۚ وَمِنْهُمْ مَّنْ اَخَذَتْهُ الصَّيْحَةُۚ وَمِنْهُمْ مَّنْ خَسَفْنَا بِهِ الْاَرْضَۚ وَمِنْهُمْ مَّنْ اَغْرَقْنَاۚ وَمَا كَانَ اللهُ لِيَظْلِمَهُمْ وَلٰكِنْ كَانُوْاۤ اَنْفُسَهُمْ يَظْلِمُوْنَ
তাদের প্রত্যেককেই আমি তার অপরাধের জন্য শাস্তি দিয়েছিলাম, তাদের কারো প্রতি প্রেরণ করেছি প্রস্তরসহ প্রবল বাতাস, তাদের কাউকে আঘাত করেছিল বিকট শব্দ, কাউকে আমি দাবিয়ে দিয়েছিলাম জমিনে, আবার কাউকে নিমজ্জিত করেছিলাম পানিতে। আল্লাহ তাদের প্রতি কোন যুলুম করেননি, তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি যুলুম করেছিল। (সূরা আনকাবূত- ৪০)
পরকালের শাস্তি আরো কঠোর হবে :
كَذَّبَ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَاَتَاهُمُ الْعَذَابُ مِنْ حَيْثُ لَا يَشْعُرُوْنَ – فَاَذَاقَهُمُ اللهُ الْخِزْيَ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَاۚ وَلَعَذَابُ الاٰخِرَةِ اَكْبَرُۘ لَوْ كَانُوْا يَعْلَمُوْنَ
তাদের পূর্ববর্তীরাও অস্বীকার করেছিল, ফলে তাদের উপর এমনভাবে আযাব এসেছিল যা তারা ভাবতেও পারেনি। অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে পার্থিব জীবনেই অপমানের স্বাদ ভোগ করালেন, আর পরকালের শাস্তি তো আরো কঠিন। (কতই না ভালো হতো) যদি তারা জানত! (সূরা যুমার- ২৫, ২৬)
নবীদের সাথে শত্রুতা করে কেউই টিকে থাকতে পারেনি :
وَاِنْ كَادُوْا لَيَسْتَفِزُّوْنَكَ مِنَ الْاَرْضِ لِيُخْرِجُوْكَ مِنْهَا وَاِذًا لَّا يَلْبَثُوْنَ خِلَافَكَ اِلَّا قَلِيْلًا – سُنَّةَ مَنْ قَدْ اَرْسَلْنَا قَبْلَكَ مِنْ رُّسُلِنَا وَلَا تَجِدُ لِسُنَّتِنَا تَحْوِيْلًا
তারা তোমাকে দেশ হতে উৎখাত করার চূড়ান্ত চেষ্টা করেছিল, যাতে করে তারা তোমাকে সেখান থেকে বহিষ্কার করতে পারে। (আর যদি তারা তোমাকে বহিষ্কার করেই ফেলত) তাহলে তোমার পর তারাও সেখানে অল্পকাল টিকে থাকতে পারত। আমার রাসূলগণের মধ্যে তোমার পূর্বে যাদেরকে পাঠিয়েছিলাম তাদের ক্ষেত্রেও ছিল এরূপ নিয়ম। আর তুমি আমার নিয়মের কোন পরিবর্তন পাবে না। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৭৬, ৭৭)
ধ্বংসপ্রাপ্ত কয়েকটি জাতির নাম :
كَذَّبَتْ قَبْلَهُمْ قَوْمُ نُوْحٍ وَّعَادٌ وَّفِرْعَوْنُ ذُو الْاَوْتَادِ – وَثَمُوْدُ وَقَوْمُ لُوْطٍ وَّاَصْحَابُ الْاَيْكَةِؕ اُوْلٰٓئِكَ الْاَحْزَابُ – اِنْ كُلٌّ اِلَّا كَذَّبَ الرُّسُلَ فَحَقَّ عِقَابِ
এদের পূর্বেও রাসূলদেরকে অস্বীকার করেছিল নূহ, আদ এবং বহু পেরেকের মালিক ফিরাউনের সম্প্রদায়। আরো অস্বীকার করেছিল সামূদ, লূতের সম্প্রদায় ও আইকার অধিবাসীরা। তারা ছিল বিশাল বাহিনী। এরা প্রত্যেকেই রাসূলদেরকে অস্বীকার করেছিল। সুতরাং আমার শাস্তি (তাদের উপর) বাস্তবায়িত হয়েছিল। (সূরা সোয়াদ, ১২-১৪)
সমৃদ্ধশালীদের পাপই ছিল জনপদ ধ্বংসের বড় কারণ :
وَاِذَاۤ اَرَدْنَاۤ اَنْ نُّهْلِكَ قَرْيَةً اَمَرْنَا مُتْرَفِيْهَا فَفَسَقُوْا فِيْهَا فَحَقَّ عَلَيْهَا الْقَوْلُ فَدَمَّرْنَاهَا تَدْمِيْرًا
যখন আমি কোন জনপদ ধ্বংস করতে চাই, তখন তার সমৃদ্ধশালী ব্যক্তিদেরকে সৎকর্ম করতে আদেশ করি, কিন্তু তারা সেথায় অসৎকর্ম করে। ফলে তার প্রতি দন্ডাদেশ দেয়াটা ন্যায়সঙ্গত হয়ে যায়; অতঃপর আমি তাদেরকে সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত করে দেই। (সূরা বনী ইসরাঈল- ১৬)
ব্যাখ্যা : ধ্বংস করার সংকল্পের অর্থ এ নয় যে, আল্লাহ বিনা কারণেই কোন নিরপরাধ জনবসতি ধ্বংস করার ইচ্ছা করেন। বরং এর অর্থ হচ্ছে, যখন কোন জনবসতি অসৎ পথে এগিয়ে যেতে থাকে, তখন আল্লাহ তাকে ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন। এ আয়াতে যে সত্যটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে সেটি হচ্ছে, একটি সমাজের সচ্ছল ও সম্পদশালী লোকদের বিকৃতিই শেষ পর্যন্ত তাদেরকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। যখন কোন জাতির ধ্বংস হওয়ার সময় হয়, তখন তার ধনাঢ্য ও ক্ষমতাশীলরা ফাসিকী ও নৈতিকতা বিরোধী কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। তারা যুলুম-নির্যাতন ও দুষ্কর্মে গা ভাসিয়ে দেয়। শেষ পর্যন্ত এ বিপর্যয়টি সমগ্র জাতিকে ধ্বংস করে। কাজেই ক্ষমতার লাগাম এবং অর্থনৈতিক সম্পদের চাবিকাঠি যাতে হীনমনা ও দুশ্চরিত্র ধনীদের হাতে চলে না যায় সেদিকে নজর রাখা উচিত। বর্তমান সমাজব্যবস্থায় এরই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। তাই এ অবস্থার পরিবর্তন না আনা হলে জাতি ধ্বংসের মুখোমুখি হবে- এতে কোন সন্দেহ নেই।
পুণ্যবান হলে কোন জাতিই ধ্বংস হতো না :
وَمَا كَانَ رَبُّكَ لِيُهْلِكَ الْقُرٰى بِظُلْمٍ وَّاَهْلُهَا مُصْلِحُوْنَ
তোমার প্রতিপালক এমন নন যে, তিনি অন্যায়ভাবে কোন জনপদ ধ্বংস করবেন, অথচ তার অধিবাসীরা পুণ্যবান। (সূরা হুদ- ১১৭)
অতীতের ইতিহাসে বিরাট শিক্ষা রয়েছে :
قُلْ سِيْرُوْا فِى الْاَرْضِ فَانْظُرُوْا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلُؕ كَانَ اَكْثَرُهُمْ مُّشْرِكِيْنَ
বলো, তোমরা দুনিয়াতে ভ্রমণ করো এবং লক্ষ্য করো, পূর্ববর্তীদের পরিণাম কেমন (ভয়াবহ) হয়েছিল। তাদের অধিকাংশই ছিল মুশরিক। (সূরা রূম- ৪২)
কোন জাতিই দুনিয়ায় আর ফিরে আসবে না :
وَحَرَامٌ عَلٰى قَرْيَةٍ اَهْلَكْنَاهَاۤ اَنَّهُمْ لَا يَرْجِعُوْنَ
আমি যেসব জনপদকে ধ্বংস করেছি তার সম্পর্কে এটা নিষিদ্ধ করা হয়েছে যে, তারা আবার ফিরে আসবে। (সূরা আম্বিয়া- ৯৫)
কিয়ামতের আগে সকল জনপদ ধ্বংস হবে :
وَاِنْ مِّنْ قَرْيَةٍ اِلَّا نَحْنُ مُهْلِكُوْهَا قَبْلَ يَوْمِ الْقِيَامَةِ اَوْ مُعَذِّبُوْهَا عَذَابًا شَدِيْدًاؕ كَانَ ذٰلِكَ فِى الْكِتَابِ مَسْطُوْرًا
এমন কোন জনপদ নেই, যা আমি কিয়ামতের দিনের পূর্বে ধ্বংস করব না অথবা যাকে কঠোর শাস্তি দেব না, এটা তো কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৫৮)
পরিশেষে সবাই আল্লাহর দিকে ফিরে যাবে :
وَكَاَيِّنْ مِّنْ قَرْيَةٍ اَمْلَيْتُ لَهَا وَهِيَ ظَالِمَةٌ ثُمَّ اَخَذْتُهَاۚ وَاِليَّ الْمَصِيْرُ
আমি অবকাশ দিয়েছি কত জনপদকে যখন তারা ছিল যালিম, অতঃপর তাদেরকে শাস্তি দিয়েছি। আর শেষ প্রত্যাবর্তন তো আমার নিকটেই। (সূরা হজ্জ- ৪৮)
وَلِكُلِّ اُمَّةٍ اَجَلٌۚ فَاِذَا جَآءَ اَجَلُهُمْ لَا يَسْتَأْخِرُوْنَ سَاعَةً وَّلَا يَسْتَقْدِمُوْنَ
প্রত্যেক জাতিরই একটি নির্দিষ্ট সময় আছে। যখন তাদের সময় আসবে, তখন তারা মুহূর্তকাল সময়টুকুও দেরি করতে পারবে না এবং তাড়াহুড়াও করতে পারবে না। (সূরা আ‘রাফ- ৩৪)
সময় শেষে কেউই টিকে থাকতে পারেনি :
وَمَاۤ اَهْلَكْنَا مِنْ قَرْيَةٍ اِلَّا وَلَهَا كِتَابٌ مَّعْلُوْمٌ – مَا تَسْبِقُ مِنْ اُمَّةٍ اَجَلَهَا وَمَا يَسْتَأْخِرُوْنَ
আমি যে কোন জনপদকে ধ্বংস করেছি তার জন্য ছিল একটি নির্দিষ্ট লিপিবদ্ধ কাল। কোন জাতি তার নির্দিষ্ট কালকে ত্বরান্বিত করতে পারে না এবং বিলম্বিতও করতে পারে না। (সূরা হিজর- ৪, ৫)
পরিশেষে তারা কেবল পরিতাপই করেছে :
قَالُوْا يَا وَيْلَنَاۤ اِنَّا كُنَّا ظَالِمِيْنَ – - فَمَا زَالَتْ تِّلْكَ دَعْوَاهُمْ حَتّٰى جَعَلْنَاهُمْ حَصِيْدًا خَامِدِيْنَ
তারা বলল, ‘হায় আমাদের দুর্ভোগ! নিশ্চয় আমরা ছিলাম যালিমদের অন্তর্ভুক্ত। অতঃপর তাদের এ আর্তনাদ চলতে থাকে, শেষ পর্যন্ত আমি তাদেরকে কর্তিত শস্য ও নিভে যাওয়া আগুনের মতো করে দিলাম (অর্থাৎ তাদেরকে গুরুত্বহীন করে দিলাম)। (সূরা আম্বিয়া- ১৪, ১৫)
فَمَا كَانَ دَعْوَاهُمْ اِذْ جَآءَهُمْ بَأْسُنَاۤ اِلَّاۤ اَنْ قَالُوْاۤ اِنَّا كُنَّا ظَالِمِيْنَ
অতঃপর যখন আমার শাস্তি তাদের উপর পতিত হয়েছিল, তখন তাদের কথা শুধু এটাই ছিল যে, নিশ্চয় আমরা যালিমদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। (সূরা আ‘রাফ- ৫)
ব্যাখ্যা : সংশোধনের সময় অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর কারো সচেতন হওয়া এবং নিজের ভুল স্বীকার করা অর্থহীন। যে ব্যক্তি বা জাতি গাফলতিতে লিপ্ত ও ভোগের নেশায় মত্ত হয়ে স্বেচ্ছাচারী জীবন যাপনের মধ্য দিয়ে আল্লাহর দেয়া সুযোগ হারিয়ে বসে এবং আল্লাহ তাদেরকে পাকড়াও করার পর যারা সচেতন হয় তাদের চেয়ে বড় মূর্খ আর কেউ নেই। আল্লাহ একবার কাউকে পাকড়াও করার পর তার আর মুক্তি লাভের কোন পথই থাকে না। মানবজাতির ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা হাজার বার ঘটেছে। এ ক্ষেত্রে মানুষ বার বার একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করে আসছে। সচেতন হওয়ার জন্য সে শেষ মুহূর্তেরই অপেক্ষা করতে থাকে, যখন আক্ষেপ করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না।
তারা হঠাৎ করে ধ্বংসের মুখোমুখি হয়েছে :
وَكَمْ مِّنْ قَرْيَةٍ اَهْلَكْنَاهَا فَجَآءَهَا بَأْسُنَا بَيَاتًا اَوْ هُمْ قَآئِلُوْنَ
আমি কত জনপদকে ধ্বংস করেছি! আমার শাস্তি তাদের উপর পতিত হয়েছিল রাতে অথবা দ্বিপ্রহরে, যখন তারা বিশ্রামরত অবস্থায় ছিল। (সূরা আ‘রাফ- ৪)
তারা তাদের বাড়িঘরসহ ধ্বংস হয়েছে :
قَدْ مَكَرَ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَاَتَى اللهُ بُنْيَانَهُمْ مِنَ الْقَوَاعِدِ فَخَرَّ عَلَيْهِمُ السَّقْفُ مِنْ فَوْقِهِمْ وَاَتَاهُمُ الْعَذَابُ مِنْ حَيْثُ لَا يَشْعُرُوْنَ
তাদের পূর্ববর্তীগণও চক্রান্ত করেছিল, ফলে আল্লাহ তাদের ইমারতের ভিত্তিমূলে আঘাত করেছিলেন, এতে ইমারতের ছাদ তাদের উপর ধসে পড়ল। আর তাদের প্রতি এমন দিক হতে শাস্তি আসল, যা ছিল তাদের ধারণাতীত। (সূরা নাহল- ২৬)
তাদের ঘরবাড়ি জনশূণ্য হয়ে পড়ে থাকল :
فَكَاَيِّنْ مِّنْ قَرْيَةٍ اَهْلَكْنَاهَا وَهِيَ ظَالِمَةٌ فَهِيَ خَاوِيَةٌ عَلٰى عُرُوْشِهَا وَبِئْرٍ مُّعَطَّلَةٍ وَّقَصْرٍ مَّشِيْدٍ
আমি ধ্বংস করেছি কত জনপদ, যেগুলোর বাসিন্দারা ছিল যালিম। এসব জনপদ তাদের ঘরের ছাদসহ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল এবং কত কূপ ও কত সুদৃঢ় প্রাসাদও পরিত্যক্ত হয়েছিল। (সূরা হজ্জ- ৪৫)
অনেক শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও তারা ধ্বংস হয়েছে :
اَوَلَمْ يَسِيْرُوْا فِى الْاَرْضِ فَيَنْظُرُوْا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الَّذِيْنَ كَانُوْا مِنْ قَبْلِهِمْؕ كَانُوْا هُمْ اَشَدَّ مِنْهُمْ قُوَّةً وَّاٰثَارًا فِى الْاَرْضِ فَاَخَذَهُمُ اللهُ بِذُنُوْبِهِمْؕ وَمَا كَانَ لَهُمْ مِّنَ اللهِ مِنْ وَّاقٍ
তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করে না? করলে দেখত যে, তাদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কি হয়েছিল। পৃথিবীতে তারা ছিল এদের অপেক্ষা শক্তিতে এবং কীর্তিতে প্রবল। অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে তাদের অপরাধের জন্য শাস্তি দিয়েছিলেন; আর তাদেরকে আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচানোর জন্য কেউ ছিল না।
(সূরা মু’মিন- ২১)
তাদের কোন সাহায্যকারী পাওয়া যায়নি :
وَكَاَيِّنْ مِّنْ قَرْيَةٍ هِيَ اَشَدُّ قُوَّةً مِّنْ قَرْيَتِكَ الَّتِيْۤ اَخْرَجَتْكَۚ اَهْلَكْنَاهُمْ فَلَا نَاصِرَ لَهُمْ
(হে রাসূল!) তারা আপনাকে আপনার যে এলাকা থেকে বের করে দিয়েছে এর চেয়ে শক্তিশালী কত এলাকা বিলীন হয়ে গেছে। আমি তাদেরকে এমনভাবে ধ্বংস করে দিয়েছি যে, তাদেরকে সাহায্য করার মতো কেউ ছিল না। (সূরা মুহাম্মাদ- ১৩)
তাদের ধনসম্পদ কোন কাজে আসেনি :
اَفَلَمْ يَسِيْرُوْا فِى الْاَرْضِ فَيَنْظُرُوْا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْؕ كَانُوْاۤ اَكْثَرَ مِنْهُمْ وَاَشَدَّ قُوَّةً وَّاٰثَارًا فِى الْاَرْضِ فَمَاۤ اَغْنٰى عَنْهُمْ مَّا كَانُوْا يَكْسِبُوْنَ
তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করেনি ও দেখেনি যে, তাদের পূর্ববর্তীদের কী পরিণাম হয়েছিল? পৃথিবীতে তারা ছিল এদের অপেক্ষা সংখ্যায় অধিক এবং শক্তিতে ও কীর্তিতে অধিক প্রবল। তারপরও তারা যা করত তা তাদের কোন কাজে আসেনি। (সূরা মু’মিন- ৮২)
তাদের ধ্বংসাবশেষ এখনো আছে :
وَعَادًا وَّثَمُوْدَاْ وَقَدْ تَّبَيَّنَ لَكُمْ مِّنْ مَّسَاكِنِهِمْ وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ اَعْمَالَهُمْ فَصَدَّهُمْ عَنِ السَّبِيْلِ وَكَانُوْا مُسْتَبْصِرِيْنَ
আমি আদ ও সামূদ জাতিকে ধ্বংস করেছিলাম, তাদের বাড়িঘরই তোমাদের জন্য এর সুস্পষ্ট প্রমাণ। শয়তান তাদের কাজকে তাদের দৃষ্টিতে শোভন করে দিয়েছিল এবং তাদেরকে সৎপথ অবলম্বনে বাধা দিয়েছিল, যদিও তারা ছিল বিচক্ষণ। (সূরা আনকাবূত- ৩৮)
এভাবে যালিমদের শিকড় কেটে দেয়া হয়েছে :
فَقُطِعَ دَابِرُ الْقَوْمِ الَّذِيْنَ ظَلَمُوْاؕ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
অতঃপর যালিম সম্প্রদায়ের মূলোচ্ছেদ করা হলো; সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক। (সূরা আন‘আম- ৪৫)
তাদের ধ্বংসের বিষয়টি কাহিনীতে পরিণত হয়েছে :
ثُمَّ اَرْسَلْنَا رُسُلَنَا تَتْرٰىؕ كُلَّ مَا جَآءَ اُمَّةً رَّسُوْلُهَا كَذَّبُوْهُ فَاَتْبَعْنَا بَعْضَهُمْ بَعْضًا وَّجَعَلْنَاهُمْ اَحَادِيْثَۚ فَبُعْدًا لِّقَوْمٍ لَّا يُؤْمِنُوْنَ
অতঃপর আমি একের পর এক আমার রাসূল প্রেরণ করেছি। যখনই কোন জাতির নিকট তার রাসূল এসেছে তখনই তারা তাকে মিথ্যাবাদী বলেছে। অতঃপর আমি তাদেরকে একের পর এক ধ্বংস করলাম এবং তাদেরকে কাহিনীর বিষয় হিসেবে নির্ধারণ করে দিলাম। কাজেই যে জাতি ঈমান আনয়ন করে না, তারা ধ্বংস হোক। (সূরা মু’মিনূন- ৪৪)
বিভিন্ন জাতিকে বিভিন্নভাবে ধ্বংস করা হয়েছে :
فَكُلًّا اَخَذْنَا بِذَنْۢبِه ۚ فَمِنْهُمْ مَّنْ اَرْسَلْنَا عَلَيْهِ حَاصِبًاۚ وَمِنْهُمْ مَّنْ اَخَذَتْهُ الصَّيْحَةُۚ وَمِنْهُمْ مَّنْ خَسَفْنَا بِهِ الْاَرْضَۚ وَمِنْهُمْ مَّنْ اَغْرَقْنَاۚ وَمَا كَانَ اللهُ لِيَظْلِمَهُمْ وَلٰكِنْ كَانُوْاۤ اَنْفُسَهُمْ يَظْلِمُوْنَ
তাদের প্রত্যেককেই আমি তার অপরাধের জন্য শাস্তি দিয়েছিলাম, তাদের কারো প্রতি প্রেরণ করেছি প্রস্তরসহ প্রবল বাতাস, তাদের কাউকে আঘাত করেছিল বিকট শব্দ, কাউকে আমি দাবিয়ে দিয়েছিলাম জমিনে, আবার কাউকে নিমজ্জিত করেছিলাম পানিতে। আল্লাহ তাদের প্রতি কোন যুলুম করেননি, তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি যুলুম করেছিল। (সূরা আনকাবূত- ৪০)
পরকালের শাস্তি আরো কঠোর হবে :
كَذَّبَ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَاَتَاهُمُ الْعَذَابُ مِنْ حَيْثُ لَا يَشْعُرُوْنَ – فَاَذَاقَهُمُ اللهُ الْخِزْيَ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَاۚ وَلَعَذَابُ الاٰخِرَةِ اَكْبَرُۘ لَوْ كَانُوْا يَعْلَمُوْنَ
তাদের পূর্ববর্তীরাও অস্বীকার করেছিল, ফলে তাদের উপর এমনভাবে আযাব এসেছিল যা তারা ভাবতেও পারেনি। অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে পার্থিব জীবনেই অপমানের স্বাদ ভোগ করালেন, আর পরকালের শাস্তি তো আরো কঠিন। (কতই না ভালো হতো) যদি তারা জানত! (সূরা যুমার- ২৫, ২৬)
নবীদের সাথে শত্রুতা করে কেউই টিকে থাকতে পারেনি :
وَاِنْ كَادُوْا لَيَسْتَفِزُّوْنَكَ مِنَ الْاَرْضِ لِيُخْرِجُوْكَ مِنْهَا وَاِذًا لَّا يَلْبَثُوْنَ خِلَافَكَ اِلَّا قَلِيْلًا – سُنَّةَ مَنْ قَدْ اَرْسَلْنَا قَبْلَكَ مِنْ رُّسُلِنَا وَلَا تَجِدُ لِسُنَّتِنَا تَحْوِيْلًا
তারা তোমাকে দেশ হতে উৎখাত করার চূড়ান্ত চেষ্টা করেছিল, যাতে করে তারা তোমাকে সেখান থেকে বহিষ্কার করতে পারে। (আর যদি তারা তোমাকে বহিষ্কার করেই ফেলত) তাহলে তোমার পর তারাও সেখানে অল্পকাল টিকে থাকতে পারত। আমার রাসূলগণের মধ্যে তোমার পূর্বে যাদেরকে পাঠিয়েছিলাম তাদের ক্ষেত্রেও ছিল এরূপ নিয়ম। আর তুমি আমার নিয়মের কোন পরিবর্তন পাবে না। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৭৬, ৭৭)
ধ্বংসপ্রাপ্ত কয়েকটি জাতির নাম :
كَذَّبَتْ قَبْلَهُمْ قَوْمُ نُوْحٍ وَّعَادٌ وَّفِرْعَوْنُ ذُو الْاَوْتَادِ – وَثَمُوْدُ وَقَوْمُ لُوْطٍ وَّاَصْحَابُ الْاَيْكَةِؕ اُوْلٰٓئِكَ الْاَحْزَابُ – اِنْ كُلٌّ اِلَّا كَذَّبَ الرُّسُلَ فَحَقَّ عِقَابِ
এদের পূর্বেও রাসূলদেরকে অস্বীকার করেছিল নূহ, আদ এবং বহু পেরেকের মালিক ফিরাউনের সম্প্রদায়। আরো অস্বীকার করেছিল সামূদ, লূতের সম্প্রদায় ও আইকার অধিবাসীরা। তারা ছিল বিশাল বাহিনী। এরা প্রত্যেকেই রাসূলদেরকে অস্বীকার করেছিল। সুতরাং আমার শাস্তি (তাদের উপর) বাস্তবায়িত হয়েছিল। (সূরা সোয়াদ, ১২-১৪)
সমৃদ্ধশালীদের পাপই ছিল জনপদ ধ্বংসের বড় কারণ :
وَاِذَاۤ اَرَدْنَاۤ اَنْ نُّهْلِكَ قَرْيَةً اَمَرْنَا مُتْرَفِيْهَا فَفَسَقُوْا فِيْهَا فَحَقَّ عَلَيْهَا الْقَوْلُ فَدَمَّرْنَاهَا تَدْمِيْرًا
যখন আমি কোন জনপদ ধ্বংস করতে চাই, তখন তার সমৃদ্ধশালী ব্যক্তিদেরকে সৎকর্ম করতে আদেশ করি, কিন্তু তারা সেথায় অসৎকর্ম করে। ফলে তার প্রতি দন্ডাদেশ দেয়াটা ন্যায়সঙ্গত হয়ে যায়; অতঃপর আমি তাদেরকে সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত করে দেই। (সূরা বনী ইসরাঈল- ১৬)
ব্যাখ্যা : ধ্বংস করার সংকল্পের অর্থ এ নয় যে, আল্লাহ বিনা কারণেই কোন নিরপরাধ জনবসতি ধ্বংস করার ইচ্ছা করেন। বরং এর অর্থ হচ্ছে, যখন কোন জনবসতি অসৎ পথে এগিয়ে যেতে থাকে, তখন আল্লাহ তাকে ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন। এ আয়াতে যে সত্যটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে সেটি হচ্ছে, একটি সমাজের সচ্ছল ও সম্পদশালী লোকদের বিকৃতিই শেষ পর্যন্ত তাদেরকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। যখন কোন জাতির ধ্বংস হওয়ার সময় হয়, তখন তার ধনাঢ্য ও ক্ষমতাশীলরা ফাসিকী ও নৈতিকতা বিরোধী কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। তারা যুলুম-নির্যাতন ও দুষ্কর্মে গা ভাসিয়ে দেয়। শেষ পর্যন্ত এ বিপর্যয়টি সমগ্র জাতিকে ধ্বংস করে। কাজেই ক্ষমতার লাগাম এবং অর্থনৈতিক সম্পদের চাবিকাঠি যাতে হীনমনা ও দুশ্চরিত্র ধনীদের হাতে চলে না যায় সেদিকে নজর রাখা উচিত। বর্তমান সমাজব্যবস্থায় এরই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। তাই এ অবস্থার পরিবর্তন না আনা হলে জাতি ধ্বংসের মুখোমুখি হবে- এতে কোন সন্দেহ নেই।
পুণ্যবান হলে কোন জাতিই ধ্বংস হতো না :
وَمَا كَانَ رَبُّكَ لِيُهْلِكَ الْقُرٰى بِظُلْمٍ وَّاَهْلُهَا مُصْلِحُوْنَ
তোমার প্রতিপালক এমন নন যে, তিনি অন্যায়ভাবে কোন জনপদ ধ্বংস করবেন, অথচ তার অধিবাসীরা পুণ্যবান। (সূরা হুদ- ১১৭)
অতীতের ইতিহাসে বিরাট শিক্ষা রয়েছে :
قُلْ سِيْرُوْا فِى الْاَرْضِ فَانْظُرُوْا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلُؕ كَانَ اَكْثَرُهُمْ مُّشْرِكِيْنَ
বলো, তোমরা দুনিয়াতে ভ্রমণ করো এবং লক্ষ্য করো, পূর্ববর্তীদের পরিণাম কেমন (ভয়াবহ) হয়েছিল। তাদের অধিকাংশই ছিল মুশরিক। (সূরা রূম- ৪২)
কোন জাতিই দুনিয়ায় আর ফিরে আসবে না :
وَحَرَامٌ عَلٰى قَرْيَةٍ اَهْلَكْنَاهَاۤ اَنَّهُمْ لَا يَرْجِعُوْنَ
আমি যেসব জনপদকে ধ্বংস করেছি তার সম্পর্কে এটা নিষিদ্ধ করা হয়েছে যে, তারা আবার ফিরে আসবে। (সূরা আম্বিয়া- ৯৫)
কিয়ামতের আগে সকল জনপদ ধ্বংস হবে :
وَاِنْ مِّنْ قَرْيَةٍ اِلَّا نَحْنُ مُهْلِكُوْهَا قَبْلَ يَوْمِ الْقِيَامَةِ اَوْ مُعَذِّبُوْهَا عَذَابًا شَدِيْدًاؕ كَانَ ذٰلِكَ فِى الْكِتَابِ مَسْطُوْرًا
এমন কোন জনপদ নেই, যা আমি কিয়ামতের দিনের পূর্বে ধ্বংস করব না অথবা যাকে কঠোর শাস্তি দেব না, এটা তো কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৫৮)
পরিশেষে সবাই আল্লাহর দিকে ফিরে যাবে :
وَكَاَيِّنْ مِّنْ قَرْيَةٍ اَمْلَيْتُ لَهَا وَهِيَ ظَالِمَةٌ ثُمَّ اَخَذْتُهَاۚ وَاِليَّ الْمَصِيْرُ
আমি অবকাশ দিয়েছি কত জনপদকে যখন তারা ছিল যালিম, অতঃপর তাদেরকে শাস্তি দিয়েছি। আর শেষ প্রত্যাবর্তন তো আমার নিকটেই। (সূরা হজ্জ- ৪৮)
আল্লাহ এ জাতিকে সৃষ্টি করলেন :
ثُمَّ اَنْشَأْنَا مِنْ ۢبَعْدِهِمْ قَرْنًا اٰخَرِيْنَ
অতঃপর তাদের পরে অন্য এক সম্প্রদায় সৃষ্টি করেছিলাম। (সূরা মু’মিনূন- ৩১)
তাদের নবীগণ তাদের কাছে দাওয়াত নিয়ে আসলেন :
فَاَرْسَلْنَا فِيْهِمْ رَسُوْلًا مِّنْهُمْ اَنِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرُهٗؕ اَفَلَا تَتَّقُوْنَ
তাদেরই একজনকে তাদের নিকট রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছিলাম। সে তাদেরকে বলেছিল, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো, তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ্ নেই, তবুও কি তোমরা সাবধান হবে না? (সূরা মু’মিনূন- ৩২)
জাতির সম্পদশালীরা নবীদেরকে অবহেলা করল :
وَقَالَ الْمَلَاُ مِنْ قَوْمِهِ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَكَذَّبُوْا بِلِقَآءِ الْاٰخِرَةِ وَاَتْرَفْنَاهُمْ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا مَا هٰذَاۤ اِلَّا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يَأْكُلُ مِمَّا تَأْكُلُوْنَ مِنْهُ وَيَشْرَبُ مِمَّا تَشْرَبُوْنَ
তার সম্প্রদায়ের প্রধানগণ, যারা কুফরী করেছিল ও আখিরাতের সাক্ষাতকে অস্বীকার করেছিল এবং যাদেরকে আমি পার্থিব জীবনে প্রচুর ভোগ-সম্ভার দিয়েছিলাম, তারা বলেছিল, এ তো তোমাদের মতোই একজন মানুষ, তোমরা যা আহার কর, সে তা-ই আহার করে এবং তোমরা যা পান কর, সেও তা-ই পান করে। (সূরা মু’মিনূন- ৩৩)
নবীর অনুসরণ থেকে জাতিকে বিরত রাখল :
وَلَئِنْ اَطَعْتُمْ بَشَرًا مِّثْلَكُمْ اِنَّكُمْ اِذًا لَّخَاسِرُوْنَ
যদি তোমরা তোমাদেরই মতো একজন মানুষের আনুগত্য করো, তবে অবশ্যই তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (সূরা মু’মিনূন- ৩৪)
মৃত্যুর পরবর্তী জীবনকে অস্বীকার করল :
اَيَعِدُكُمْ اَنَّكُمْ اِذَا مِتُّمْ وَكُنْتُمْ تُرَابًا وَّعِظَامًا اَنَّكُمْ مُّخْرَجُوْنَ – هَيْهَاتَ هَيْهَاتَ لِمَا تُوْعَدُوْنَ
সে কি তোমাদেরকে এ প্রতিশ্রুতিই দেয় যে, তোমাদের মৃত্যু হলে এবং তোমরা মাটি ও হাড্ডিতে পরিণত হলেও তোমাদেরকে পুনরায় জীবিত করা হবে? তোমাদেরকে যে বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তা অসম্ভব। (সূরা মু’মিনূন- ৩৫, ৩৬)
তারা দুনিয়ার জীবনকেই শেষ জীবন মনে করল :
اِنْ هِيَ اِلَّا حَيَاتُنَا الدُّنْيَا نَمُوْتُ وَنَحْيَا وَمَا نَحْنُ بِمَبْعُوْثِيْنَ
একমাত্র পার্থিব জীবনই আমাদের জীবন, আমরা জীবিত থাকি অথবা মৃত্যুবরণ করি তা এখানেই; আর আমরা কখনো উত্থিত হব না। (সূরা মু’মিনূন- ৩৭)
নবীর প্রতি মিথ্যা অপবাদ দিল :
اِنْ هُوَ اِلَّا رَجُلُ نِ افْتَرٰى عَلَى اللهِ كَذِبًا وَّمَا نَحْنُ لَهٗ بِمُؤْمِنِيْنَ
(তারা বলল) সে তো এমন ব্যক্তি যে আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন করেছে; আর আমরা তো তাকে বিশ্বাস করি না। (সূরা মু’মিনূন- ৩৮)
নবী আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করলেন :
قَالَ رَبِّ انْصُرْنِيْ بِمَا كَذَّبُوْنِ
নবী বললেন, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে সাহায্য করো, কারণ তারা আমাকে মিথ্যারোপ করেছে। (সূরা মু’মিনূন- ৩৯)
আল্লাহ সতর্কবাণী জানিয়ে দিলেন :
قَالَ عَمَّا قَلِيْلٍ لَّيُصْبِحُنَّ نَادِمِيْنَ
তিনি (আল্লাহ) বললেন, অচিরেই তারা অনুতপ্ত হবে। (সূরা মু’মিনূন- ৪০)
মুহূর্তের মধ্যে সবাই ধ্বংস হয়ে গেল :
فَاَخَذَتْهُمُ الصَّيْحَةُ بِالْحَقِّ فَجَعَلْنَاهُمْ غُثَآءً فَبُعْدًا لِّلْقَوْمِ الظَّالِمِيْنَ
অতঃপর সত্য সত্যই এক বিকট আওয়াজ তাদেরকে আঘাত করল এবং আমি তাদেরকে আবর্জনার মতো করে দিলাম। সুতরাং ধ্বংস হয়ে গেল যালিম সম্প্রদায়। (সূরা মু’মিনূন- ৪১)
ثُمَّ اَنْشَأْنَا مِنْ ۢبَعْدِهِمْ قَرْنًا اٰخَرِيْنَ
অতঃপর তাদের পরে অন্য এক সম্প্রদায় সৃষ্টি করেছিলাম। (সূরা মু’মিনূন- ৩১)
তাদের নবীগণ তাদের কাছে দাওয়াত নিয়ে আসলেন :
فَاَرْسَلْنَا فِيْهِمْ رَسُوْلًا مِّنْهُمْ اَنِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرُهٗؕ اَفَلَا تَتَّقُوْنَ
তাদেরই একজনকে তাদের নিকট রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছিলাম। সে তাদেরকে বলেছিল, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো, তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ্ নেই, তবুও কি তোমরা সাবধান হবে না? (সূরা মু’মিনূন- ৩২)
জাতির সম্পদশালীরা নবীদেরকে অবহেলা করল :
وَقَالَ الْمَلَاُ مِنْ قَوْمِهِ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَكَذَّبُوْا بِلِقَآءِ الْاٰخِرَةِ وَاَتْرَفْنَاهُمْ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا مَا هٰذَاۤ اِلَّا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يَأْكُلُ مِمَّا تَأْكُلُوْنَ مِنْهُ وَيَشْرَبُ مِمَّا تَشْرَبُوْنَ
তার সম্প্রদায়ের প্রধানগণ, যারা কুফরী করেছিল ও আখিরাতের সাক্ষাতকে অস্বীকার করেছিল এবং যাদেরকে আমি পার্থিব জীবনে প্রচুর ভোগ-সম্ভার দিয়েছিলাম, তারা বলেছিল, এ তো তোমাদের মতোই একজন মানুষ, তোমরা যা আহার কর, সে তা-ই আহার করে এবং তোমরা যা পান কর, সেও তা-ই পান করে। (সূরা মু’মিনূন- ৩৩)
নবীর অনুসরণ থেকে জাতিকে বিরত রাখল :
وَلَئِنْ اَطَعْتُمْ بَشَرًا مِّثْلَكُمْ اِنَّكُمْ اِذًا لَّخَاسِرُوْنَ
যদি তোমরা তোমাদেরই মতো একজন মানুষের আনুগত্য করো, তবে অবশ্যই তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (সূরা মু’মিনূন- ৩৪)
মৃত্যুর পরবর্তী জীবনকে অস্বীকার করল :
اَيَعِدُكُمْ اَنَّكُمْ اِذَا مِتُّمْ وَكُنْتُمْ تُرَابًا وَّعِظَامًا اَنَّكُمْ مُّخْرَجُوْنَ – هَيْهَاتَ هَيْهَاتَ لِمَا تُوْعَدُوْنَ
সে কি তোমাদেরকে এ প্রতিশ্রুতিই দেয় যে, তোমাদের মৃত্যু হলে এবং তোমরা মাটি ও হাড্ডিতে পরিণত হলেও তোমাদেরকে পুনরায় জীবিত করা হবে? তোমাদেরকে যে বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তা অসম্ভব। (সূরা মু’মিনূন- ৩৫, ৩৬)
তারা দুনিয়ার জীবনকেই শেষ জীবন মনে করল :
اِنْ هِيَ اِلَّا حَيَاتُنَا الدُّنْيَا نَمُوْتُ وَنَحْيَا وَمَا نَحْنُ بِمَبْعُوْثِيْنَ
একমাত্র পার্থিব জীবনই আমাদের জীবন, আমরা জীবিত থাকি অথবা মৃত্যুবরণ করি তা এখানেই; আর আমরা কখনো উত্থিত হব না। (সূরা মু’মিনূন- ৩৭)
নবীর প্রতি মিথ্যা অপবাদ দিল :
اِنْ هُوَ اِلَّا رَجُلُ نِ افْتَرٰى عَلَى اللهِ كَذِبًا وَّمَا نَحْنُ لَهٗ بِمُؤْمِنِيْنَ
(তারা বলল) সে তো এমন ব্যক্তি যে আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন করেছে; আর আমরা তো তাকে বিশ্বাস করি না। (সূরা মু’মিনূন- ৩৮)
নবী আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করলেন :
قَالَ رَبِّ انْصُرْنِيْ بِمَا كَذَّبُوْنِ
নবী বললেন, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে সাহায্য করো, কারণ তারা আমাকে মিথ্যারোপ করেছে। (সূরা মু’মিনূন- ৩৯)
আল্লাহ সতর্কবাণী জানিয়ে দিলেন :
قَالَ عَمَّا قَلِيْلٍ لَّيُصْبِحُنَّ نَادِمِيْنَ
তিনি (আল্লাহ) বললেন, অচিরেই তারা অনুতপ্ত হবে। (সূরা মু’মিনূন- ৪০)
মুহূর্তের মধ্যে সবাই ধ্বংস হয়ে গেল :
فَاَخَذَتْهُمُ الصَّيْحَةُ بِالْحَقِّ فَجَعَلْنَاهُمْ غُثَآءً فَبُعْدًا لِّلْقَوْمِ الظَّالِمِيْنَ
অতঃপর সত্য সত্যই এক বিকট আওয়াজ তাদেরকে আঘাত করল এবং আমি তাদেরকে আবর্জনার মতো করে দিলাম। সুতরাং ধ্বংস হয়ে গেল যালিম সম্প্রদায়। (সূরা মু’মিনূন- ৪১)
‘সাবা’ হচ্ছে দক্ষিণ আরবের একটি বৃহৎ জাতির নাম। কয়েকটি বড় বড় গোত্রের সমন্বয়ে এ জাতিটি গড়ে উঠেছিল। এ জাতির আবাসভূমি ছিল আরবের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে, যা বর্তমানে ইয়ামান নামে পরিচিত। এর উত্থানকাল শুরু হয় খৃষ্টপূর্ব ১১০০ বছর থেকে। দাউদ ও সুলায়মান (আঃ) এর যুগে একটি ধনাঢ্য ও সম্পদশালী জাতি হিসেবে সারা দুনিয়ায় এ জাতির নাম ছড়িয়ে পড়ে। শুরুতে তারা ছিল একটি সূর্য উপাসক জাতি। তারপর যখন তাদের রাণী সুলায়মান (আঃ) এর হাতে ইসলাম গ্রহণ করে, তখন তাদের বেশির ভাগ লোক মুসলিম হয়ে যায়। কিন্তু পরে আবার তাদের মাঝে শিরক ও মূর্তিপূজা প্রবল হয়ে উঠে।
তাদের জনপদ ছিল বাগানে ভরপুর :
لَقَدْ كَانَ لِسَبَإٍ فِيْ مَسْكَنِهِمْ اٰيَةٌۚ جَنَّتَانِ عَنْ يَّمِيْنٍ وَّشِمَالٍؕ كُلُوْا مِنْ رِّزْقِ رَبِّكُمْ وَاشْكُرُوْا لَهٗؕ بَلْدَةٌ طَيِّبَةٌ وَّرَبٌّ غَفُوْرٌ
সাবার জন্য তাদের বাসভূমিগুলো ছিল এক দৃষ্টান্ত। দু’টি বাগান- একটি ডানদিকে, অন্যটি বামদিকে। (তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল) তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের প্রদত্ত রিযিক হতে ভক্ষণ করো এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। তাদের সেই শহরটি ছিল উত্তম শহর; আর তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল প্রতিপালক। (সূরা সাবা- ১৫)
আল্লাহ তাদের সফরের নিরাপত্তা দিয়েছিলেন :
وَجَعَلْنَا بَيْنَهُمْ وَبَيْنَ الْقُرَى الَّتِيْ بَارَكْنَا فِيْهَا قُرًى ظَاهِرَةً وَّقَدَّرْنَا فِيْهَا السَّيْرَؕ سِيْرُوْا فِيْهَا لَيَالِيَ وَاَيَّامًا اٰمِنِيْنَ
তাদের জনপদ এবং সেসব জনপদ যেথায় আমি বরকত দিয়ে রেখেছিলাম, সেগুলোর মধ্যবর্তী স্থানে বহু দৃশ্যমান জনপদ আবাদ করে রেখেছিলাম এবং সেসব জনপদে ভ্রমণের যথাযথ ব্যবস্থাও করে রেখেছিলাম। (তাদেরকে বলেছিলাম) তোমরা এসব জনপদে রাতে ও দিনে নিরাপদে ভ্রমণ করো। (সূরা সাবা- ১৮)
তাদের অধিকাংশই শয়তানের অনুসরণ করল :
وَلَقَدْ صَدَّقَ عَلَيْهِمْ اِبْلِيْسُ ظَنَّهٗ فَاتَّبَعُوْهُ اِلَّا فَرِيْقًا مِّنَ الْمُؤْمِنِيْنَ
ইবলিস বাস্তবিকই তাদের ব্যাপারে তার অনুমান সত্যে পরিণত করল, ফলে মুমিনদের একটি দল ব্যতীত সবাই তার আনুগত্য করল। (সূরা সাবা- ২০)
তারা নিজেদের উপর অবিচার করল :
فَقَالُوْا رَبَّنَا بَاعِدْ بَيْنَ اَسْفَارِنَا وَظَلَمُوْاۤ اَنْفُسَهُمْ فَجَعَلْنَاهُمْ اَحَادِيْثَ وَمَزَّقْنَاهُمْ كُلَّ مُمَزَّقٍ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّكُلِّ صَبَّارٍ شَكُوْرٍ
কিন্তু তারা বলেছিল, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের ভ্রমণের পরিসর বাড়িয়ে দিন। তারা তো নিজেদের প্রতি যুলুম করেছিল। ফলে আমি তাদেরকে ইতিহাসে পরিণত করে দিলাম এবং সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন-ভিন্ন করে দিলাম। নিশ্চয় এতে রয়েছে দৃষ্টান্ত প্রত্যেক ধৈর্যশীল ও কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য। (সূরা সাবা- ১৯)
পরে বন্যা দিয়ে আল্লাহ তাদের সবকিছু ধ্বংস করে দিলেন :
فَاَعْرَضُوْا فَاَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ سَيْلَ الْعَرِمِ وَبَدَّلْنَاهُمْ بِجَنَّتَيْهِمْ جَنَّتَيْنِ ذَوَاتَيْ اُكُلٍ خَمْطٍ وَّاَثْلٍ وَّشَيْءٍ مِّنْ سِدْرٍ قَلِيْلٍ
অতঃপর তারা নির্দেশ অমান্য করল। ফলে আমি তাদের উপর বাঁধভাঙ্গা বন্যা প্রবাহিত করলাম এবং তাদের উদ্যানগুলোকে পরিবর্তন করে দিলাম। আর এমন দু’টি উদ্যান যাতে রয়ে গেল বিস্বাদযুক্ত ফলমূল, ঝাউ গাছ, আর সামান্য কুলগাছ। (সূরা সাবা- ১৬)
এটা ছিল তাদের কুফরীর পরিণাম :
ذٰلِكَ جَزَيْنَاهُمْ بِمَا كَفَرُوْاؕ وَهَلْ نُجَازِيْۤ اِلَّا الْكَفُوْرَ
আমি তাদেরকে এ শাস্তি দিয়েছিলাম তাদের অকৃতজ্ঞতার দরুন। আর আমি অকৃতজ্ঞদের ছাড়া এমন শাস্তি অন্য কাউকে দেই না। (সূরা সাবা- ১৭)
তাদের জনপদ ছিল বাগানে ভরপুর :
لَقَدْ كَانَ لِسَبَإٍ فِيْ مَسْكَنِهِمْ اٰيَةٌۚ جَنَّتَانِ عَنْ يَّمِيْنٍ وَّشِمَالٍؕ كُلُوْا مِنْ رِّزْقِ رَبِّكُمْ وَاشْكُرُوْا لَهٗؕ بَلْدَةٌ طَيِّبَةٌ وَّرَبٌّ غَفُوْرٌ
সাবার জন্য তাদের বাসভূমিগুলো ছিল এক দৃষ্টান্ত। দু’টি বাগান- একটি ডানদিকে, অন্যটি বামদিকে। (তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল) তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের প্রদত্ত রিযিক হতে ভক্ষণ করো এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। তাদের সেই শহরটি ছিল উত্তম শহর; আর তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল প্রতিপালক। (সূরা সাবা- ১৫)
আল্লাহ তাদের সফরের নিরাপত্তা দিয়েছিলেন :
وَجَعَلْنَا بَيْنَهُمْ وَبَيْنَ الْقُرَى الَّتِيْ بَارَكْنَا فِيْهَا قُرًى ظَاهِرَةً وَّقَدَّرْنَا فِيْهَا السَّيْرَؕ سِيْرُوْا فِيْهَا لَيَالِيَ وَاَيَّامًا اٰمِنِيْنَ
তাদের জনপদ এবং সেসব জনপদ যেথায় আমি বরকত দিয়ে রেখেছিলাম, সেগুলোর মধ্যবর্তী স্থানে বহু দৃশ্যমান জনপদ আবাদ করে রেখেছিলাম এবং সেসব জনপদে ভ্রমণের যথাযথ ব্যবস্থাও করে রেখেছিলাম। (তাদেরকে বলেছিলাম) তোমরা এসব জনপদে রাতে ও দিনে নিরাপদে ভ্রমণ করো। (সূরা সাবা- ১৮)
তাদের অধিকাংশই শয়তানের অনুসরণ করল :
وَلَقَدْ صَدَّقَ عَلَيْهِمْ اِبْلِيْسُ ظَنَّهٗ فَاتَّبَعُوْهُ اِلَّا فَرِيْقًا مِّنَ الْمُؤْمِنِيْنَ
ইবলিস বাস্তবিকই তাদের ব্যাপারে তার অনুমান সত্যে পরিণত করল, ফলে মুমিনদের একটি দল ব্যতীত সবাই তার আনুগত্য করল। (সূরা সাবা- ২০)
তারা নিজেদের উপর অবিচার করল :
فَقَالُوْا رَبَّنَا بَاعِدْ بَيْنَ اَسْفَارِنَا وَظَلَمُوْاۤ اَنْفُسَهُمْ فَجَعَلْنَاهُمْ اَحَادِيْثَ وَمَزَّقْنَاهُمْ كُلَّ مُمَزَّقٍ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّكُلِّ صَبَّارٍ شَكُوْرٍ
কিন্তু তারা বলেছিল, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের ভ্রমণের পরিসর বাড়িয়ে দিন। তারা তো নিজেদের প্রতি যুলুম করেছিল। ফলে আমি তাদেরকে ইতিহাসে পরিণত করে দিলাম এবং সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন-ভিন্ন করে দিলাম। নিশ্চয় এতে রয়েছে দৃষ্টান্ত প্রত্যেক ধৈর্যশীল ও কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য। (সূরা সাবা- ১৯)
পরে বন্যা দিয়ে আল্লাহ তাদের সবকিছু ধ্বংস করে দিলেন :
فَاَعْرَضُوْا فَاَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ سَيْلَ الْعَرِمِ وَبَدَّلْنَاهُمْ بِجَنَّتَيْهِمْ جَنَّتَيْنِ ذَوَاتَيْ اُكُلٍ خَمْطٍ وَّاَثْلٍ وَّشَيْءٍ مِّنْ سِدْرٍ قَلِيْلٍ
অতঃপর তারা নির্দেশ অমান্য করল। ফলে আমি তাদের উপর বাঁধভাঙ্গা বন্যা প্রবাহিত করলাম এবং তাদের উদ্যানগুলোকে পরিবর্তন করে দিলাম। আর এমন দু’টি উদ্যান যাতে রয়ে গেল বিস্বাদযুক্ত ফলমূল, ঝাউ গাছ, আর সামান্য কুলগাছ। (সূরা সাবা- ১৬)
এটা ছিল তাদের কুফরীর পরিণাম :
ذٰلِكَ جَزَيْنَاهُمْ بِمَا كَفَرُوْاؕ وَهَلْ نُجَازِيْۤ اِلَّا الْكَفُوْرَ
আমি তাদেরকে এ শাস্তি দিয়েছিলাম তাদের অকৃতজ্ঞতার দরুন। আর আমি অকৃতজ্ঞদের ছাড়া এমন শাস্তি অন্য কাউকে দেই না। (সূরা সাবা- ১৭)
আল্লাহ তাদের নিকট তিনজন নবী পাঠালেন :
وَاضْرِبْ لَهُمْ مَّثَلًا اَصْحَابَ الْقَرْيَةِۘ اِذْ جَآءَهَا الْمُرْسَلُوْنَ – اِذْ اَرْسَلْنَاۤ اِلَيْهِمُ اثْنَيْنِ فَكَذَّبُوْهُمَا فَعَزَّزْنَا بِثَالِثٍ فَقَالُوْاۤ اِنَّاۤ اِلَيْكُمْ مُّرْسَلُوْنَ
আপনি দৃষ্টান্তস্বরূপ তাদের কাছে এক জনপদবাসীর ঘটনা বর্ণনা করুন, যখন তাদের কাছে কয়েকজন রাসূল এসেছিলেন। যখন আমি তাদের কাছে দু’জন রাসূল প্রেরণ করেছিলাম, তখন তারা তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল। অতঃপর আমি তৃতীয়জন দ্বারা তাদেরকে শক্তিশালী করলাম। তারা সবাই বললেন, আমরা তোমাদের নিকট প্রেরিত রাসূল। (সূরা ইয়াসীন- ১৩, ১৪)
তারা নবীদেরকে মিথ্যাবাদী আখ্যায়িত করল :
قَالُوْا مَاۤ اَنْتُمْ اِلَّا بَشَرٌ مِّثْلُنَا وَمَاۤ اَنْزَلَ الرَّحْمٰنُ مِنْ شَيْءٍ اِنْ اَنْتُمْ اِلَّا تَكْذِبُوْنَ
তারা বলল, তোমরা তো আমাদের মতোই মানুষ, দয়াময় আল্লাহ তো কিছুই নাযিল করেননি। তোমরা শুধু মিথ্যাই বলে যাচ্ছ। (সূরা ইয়াসীন- ১৫)
নবীরা নিজেদের সত্যতার দাবী করলেন :
قَالُوْا رَبُّنَا يَعْلَمُ اِنَّاۤ اِلَيْكُمْ لَمُرْسَلُوْنَ – وَمَا عَلَيْنَاۤ اِلَّا الْبَلَاغُ الْمُبِيْنُ
রাসূলগণ বললেন, আমাদের প্রতিপালক জানেন, অবশ্যই আমরা তোমাদের প্রতি প্রেরিত হয়েছি। আর আমাদের দায়িত্ব কেবল স্পষ্টরূপে প্রচার করা। (সূরা ইয়াসীন- ১৬, ১৭)
জাতির লোকেরা শাস্তির হুমকি দিল :
قَالُوْاۤ اِنَّا تَطَيَّرْنَا بِكُمْۚ لَئِنْ لَّمْ تَنْتَهُوْا لَنَرْجُمَنَّكُمْ وَلَيَمَسَّنَّكُمْ مِّنَّا عَذَابٌ اَلِيْمٌ
তারা বলল, আমরা তোমাদেরকে কুলক্ষণ মনে করি, যদি তোমরা বিরত না হও তাহলে আমরা তোমাদেরকে পাথর মেরে ধ্বংস করে ফেলব এবং আমাদের পক্ষ থেকে তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি স্পর্শ করবে। (সূরা ইয়াসীন- ১৮)
নবীরা পুনরায় তাদেরকে বুঝালেন :
قَالُوْا طَآئِرُكُمْ مَّعَكُمْؕ اَئِنْ ذُكِّرْتُمْؕ بَلْ اَنْتُمْ قَوْمٌ مُّسْرِفُوْنَ
রাসূলগণ বললেন, তোমাদের অশুভ লক্ষণ তোমাদের সাথেই সংযুক্ত। তোমরা কি এটাকে অশুভ মনে করছ? বরং তোমরা তো এক সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায় মাত্র। (সূরা ইয়াসীন- ১৯)
এবার এক মুমিন ব্যক্তি দৌড়ে আসলেন :
وَجَآءَ مِنْ اَقْصَى الْمَدِيْنَةِ رَجُلٌ يَّسْعٰى قَالَ يَا قَوْمِ اتَّبِعُوا الْمُرْسَلِيْنَ
অতঃপর শহরের দূরপ্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি দৌড়ে এসে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা রাসূলদের অনুসরণ করো। (সূরা ইয়াসীন- ২০)
তিনি জাতিকে নবীদের কথা মানতে বললেন :
اِتَّبِعُوْا مَنْ لَّا يَسْاَلُكُمْ اَجْرًا وَّهُمْ مُّهْتَدُوْنَ
তোমরা তাদের অনুসরণ করো, যারা তোমাদের কাছে বিনিময় চায় না এবং তারা নিজেরাও রয়েছে সৎপথে। (সূরা ইয়াসীন- ২১)
তাওহীদের পক্ষে যুক্তি পেশ করলেন :
وَمَا لِيَ لَاۤ اَعْبُدُ الَّذِيْ فَطَرَنِيْ وَاِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ
আমার কী হয়েছে যে, আমি তাঁর ইবাদাত করব না, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন? অথচ তোমাদেরকে তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে। (সূরা ইয়াসীন- ২২)
ব্যাখ্যা : এ বাক্যটিতে সত্য প্রচারের সর্বোত্তম কৌশলের সমাবেশ ঘটানো হয়েছে। প্রথমাংশে তিনি বলেছেন, স্রষ্টার ইবাদাত করা প্রকৃতির দাবীর নামান্তর। অযৌক্তিক কথা যদি কিছু থাকে, তাহলে যারা মানুষ সৃষ্টি করেনি মানুষ তাদের উপাসনা করবে- এটাই অযৌক্তিক এবং যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন মানুষ তাঁর দাসত্ব করবে- এটা যৌক্তিক। দ্বিতীয়াংশে তিনি নিজের জাতির লোকদের মধ্যে এ অনুভূতি সৃষ্টি করেছেন যে, তোমাদের একদিন তো মরতেই হবে, তাহলে আল্লাহর দাসত্ব করতে তোমাদের আপত্তি কোথায়?
শিরকের অসারতা প্রমাণ করলেন :
اَاَتَّخِذُ مِنْ دُوْنِه ۤ اٰلِهَةً اِنْ يُّرِدْنِ الرَّحْمٰنُ بِضُرٍّ لَّا تُغْنِ عَنِّيْ شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا وَّلَا يُنْقِذُوْنِ – اِنِّۤيْ اِذًا لَّفِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ
আমি কি আল্লাহকে ছেড়ে অন্য কাউকে উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করব? যদি দয়াময় আল্লাহ আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চান, তবে তাদের সুপারিশ আমার কোন উপকারে আসবে না এবং তারা আমাকে মুক্তও করতে পারবে না। যদি আমি এরূপ করি, তবে তো আমি স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে পতিত হব। (সূরা ইয়াসীন- ২৩, ২৪)
প্রকাশ্যে নিজের ঈমানের ঘোষণা দিলেন :
اِنِّۤيْ اٰمَنْتُ بِرَبِّكُمْ فَاسْمَعُوْنِ
আমি তো তোমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান এনেছি, অতএব তোমরা আমার কথা শুনো। (সূরা ইয়াসীন- ২৫)
ব্যাখ্যা : এ বাক্যে সত্য প্রচারের একটি সূক্ষ্ম কৌশল বলে দেয়া হয়েছে। সে ব্যক্তি তাদের অনুভূতিকে এভাবে সজাগ করেন যে, আমি যে রবের প্রতি ঈমান এনেছি তিনি কেবল আমারই রব নন বরং তোমাদেরও রব। তাঁর প্রতি ঈমান এনে আমি ভুল করিনি বরং ঈমান না এনে তোমরাই ভুল করছ।
পরে তিনি শহীদ হলেন এবং জান্নাতবাসী হলেন :
قِيْلَ ادْخُلِ الْجَنَّةَؕ قَالَ يَا لَيْتَ قَوْمِيْ يَعْلَمُوْنَ
তাকে বলা হলো, ‘‘জান্নাতে প্রবেশ করো।’’ সে বলল, আহা! যদি আমার সম্প্রদায় জানতে পারত।
(সূরা ইয়াসীন- ২৬)
ব্যাখ্যা : এটি সেই মুমিন ব্যক্তির উন্নত নৈতিক মানসিকতার একটি শ্রেষ্ঠতম আদর্শ, যারা তার হত্যাকর্ম সংঘটিত করেছিল তাদের বিরুদ্ধে তার মনে কোন ক্রোধ ও প্রতিশোধের স্পৃহা ছিল না। তিনি আল্লাহর কাছে তাদের জন্য কোন বদ্দু‘আ করেননি। বরং তিনি তাদের কল্যাণ কামনা করে চলেছেন। মৃত্যুর পর তার মনে যদি কোন আকাঙ্ক্ষা জন্মে থাকে, তাহলে তা ছিল কেবলমাত্র এতটুকু যে, হায়! আমার জাতি যদি আমার মৃত্যু থেকেও শিক্ষা নিয়ে সঠিক পথ অবলম্বন করত!
তিনি জাতির জন্য আফসোস করলেন :
قِيْلَ ادْخُلِ الْجَنَّةَ ؕ قَالَ يَا لَيْتَ قَوْمِيْ يَعْلَمُوْنَ – بِمَا غَفَرَ لِيْ رَبِّيْ وَجَعَلَنِيْ مِنَ الْمُكْرَمِيْنَ
তাকে বলা হলো, জান্নাতে প্রবেশ করো। সে বলল আহা! যদি আমার সম্প্রদায় জানতে পারত যে, আমার প্রতিপালক কেন আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং আমাকে সম্মানিত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। (সূরা ইয়াসীন- ২৬, ২৭)
এ জাতিকে ধ্বংস করার জন্য কোন বাহিনীর প্রয়োজন হয়নি :
وَمَاۤ اَنْزَلْنَا عَلٰى قَوْمِه مِنْ ۢبَعْدِه مِنْ جُنْدٍ مِّنَ السَّمَآءِ وَمَا كُنَّا مُنْزِلِيْنَ
এরপর আমি তার সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আকাশ হতে আর কোন বাহিনী প্রেরণ করিনি এবং প্রেরণের প্রয়োজনও ছিল না। (সূরা ইয়াসীন- ২৮)
একটি বিকট আওয়াজ তাদেরকে শেষ করে দিল :
اِنْ كَانَتْ اِلَّا صَيْحَةً وَّاحِدَةً فَاِذَا هُمْ خَامِدُوْنَ
তা ছিল কেবল একটি মহাগর্জন, ফলে সাথে সাথে তারা নিথর ও স্থির হয়ে গেল। (সূরা ইয়াসীন- ২৯)
আফসোস এসব লোকদের জন্য :
يَا حَسْرَةً عَلَى الْعِبَادِۚ مَا يَأْتِيْهِمْ مِّنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا كَانُوْا بِه يَسْتَهْزِئُوْنَ
আফসোস! সেসব বান্দাদের জন্য, যাদের কাছে এমন কোন রাসূল আসেনি, যাকে নিয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেনি। (সূরা ইয়াসীন- ৩০) হেদায়াত
وَاضْرِبْ لَهُمْ مَّثَلًا اَصْحَابَ الْقَرْيَةِۘ اِذْ جَآءَهَا الْمُرْسَلُوْنَ – اِذْ اَرْسَلْنَاۤ اِلَيْهِمُ اثْنَيْنِ فَكَذَّبُوْهُمَا فَعَزَّزْنَا بِثَالِثٍ فَقَالُوْاۤ اِنَّاۤ اِلَيْكُمْ مُّرْسَلُوْنَ
আপনি দৃষ্টান্তস্বরূপ তাদের কাছে এক জনপদবাসীর ঘটনা বর্ণনা করুন, যখন তাদের কাছে কয়েকজন রাসূল এসেছিলেন। যখন আমি তাদের কাছে দু’জন রাসূল প্রেরণ করেছিলাম, তখন তারা তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল। অতঃপর আমি তৃতীয়জন দ্বারা তাদেরকে শক্তিশালী করলাম। তারা সবাই বললেন, আমরা তোমাদের নিকট প্রেরিত রাসূল। (সূরা ইয়াসীন- ১৩, ১৪)
তারা নবীদেরকে মিথ্যাবাদী আখ্যায়িত করল :
قَالُوْا مَاۤ اَنْتُمْ اِلَّا بَشَرٌ مِّثْلُنَا وَمَاۤ اَنْزَلَ الرَّحْمٰنُ مِنْ شَيْءٍ اِنْ اَنْتُمْ اِلَّا تَكْذِبُوْنَ
তারা বলল, তোমরা তো আমাদের মতোই মানুষ, দয়াময় আল্লাহ তো কিছুই নাযিল করেননি। তোমরা শুধু মিথ্যাই বলে যাচ্ছ। (সূরা ইয়াসীন- ১৫)
নবীরা নিজেদের সত্যতার দাবী করলেন :
قَالُوْا رَبُّنَا يَعْلَمُ اِنَّاۤ اِلَيْكُمْ لَمُرْسَلُوْنَ – وَمَا عَلَيْنَاۤ اِلَّا الْبَلَاغُ الْمُبِيْنُ
রাসূলগণ বললেন, আমাদের প্রতিপালক জানেন, অবশ্যই আমরা তোমাদের প্রতি প্রেরিত হয়েছি। আর আমাদের দায়িত্ব কেবল স্পষ্টরূপে প্রচার করা। (সূরা ইয়াসীন- ১৬, ১৭)
জাতির লোকেরা শাস্তির হুমকি দিল :
قَالُوْاۤ اِنَّا تَطَيَّرْنَا بِكُمْۚ لَئِنْ لَّمْ تَنْتَهُوْا لَنَرْجُمَنَّكُمْ وَلَيَمَسَّنَّكُمْ مِّنَّا عَذَابٌ اَلِيْمٌ
তারা বলল, আমরা তোমাদেরকে কুলক্ষণ মনে করি, যদি তোমরা বিরত না হও তাহলে আমরা তোমাদেরকে পাথর মেরে ধ্বংস করে ফেলব এবং আমাদের পক্ষ থেকে তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি স্পর্শ করবে। (সূরা ইয়াসীন- ১৮)
নবীরা পুনরায় তাদেরকে বুঝালেন :
قَالُوْا طَآئِرُكُمْ مَّعَكُمْؕ اَئِنْ ذُكِّرْتُمْؕ بَلْ اَنْتُمْ قَوْمٌ مُّسْرِفُوْنَ
রাসূলগণ বললেন, তোমাদের অশুভ লক্ষণ তোমাদের সাথেই সংযুক্ত। তোমরা কি এটাকে অশুভ মনে করছ? বরং তোমরা তো এক সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায় মাত্র। (সূরা ইয়াসীন- ১৯)
এবার এক মুমিন ব্যক্তি দৌড়ে আসলেন :
وَجَآءَ مِنْ اَقْصَى الْمَدِيْنَةِ رَجُلٌ يَّسْعٰى قَالَ يَا قَوْمِ اتَّبِعُوا الْمُرْسَلِيْنَ
অতঃপর শহরের দূরপ্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি দৌড়ে এসে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা রাসূলদের অনুসরণ করো। (সূরা ইয়াসীন- ২০)
তিনি জাতিকে নবীদের কথা মানতে বললেন :
اِتَّبِعُوْا مَنْ لَّا يَسْاَلُكُمْ اَجْرًا وَّهُمْ مُّهْتَدُوْنَ
তোমরা তাদের অনুসরণ করো, যারা তোমাদের কাছে বিনিময় চায় না এবং তারা নিজেরাও রয়েছে সৎপথে। (সূরা ইয়াসীন- ২১)
তাওহীদের পক্ষে যুক্তি পেশ করলেন :
وَمَا لِيَ لَاۤ اَعْبُدُ الَّذِيْ فَطَرَنِيْ وَاِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ
আমার কী হয়েছে যে, আমি তাঁর ইবাদাত করব না, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন? অথচ তোমাদেরকে তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে। (সূরা ইয়াসীন- ২২)
ব্যাখ্যা : এ বাক্যটিতে সত্য প্রচারের সর্বোত্তম কৌশলের সমাবেশ ঘটানো হয়েছে। প্রথমাংশে তিনি বলেছেন, স্রষ্টার ইবাদাত করা প্রকৃতির দাবীর নামান্তর। অযৌক্তিক কথা যদি কিছু থাকে, তাহলে যারা মানুষ সৃষ্টি করেনি মানুষ তাদের উপাসনা করবে- এটাই অযৌক্তিক এবং যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন মানুষ তাঁর দাসত্ব করবে- এটা যৌক্তিক। দ্বিতীয়াংশে তিনি নিজের জাতির লোকদের মধ্যে এ অনুভূতি সৃষ্টি করেছেন যে, তোমাদের একদিন তো মরতেই হবে, তাহলে আল্লাহর দাসত্ব করতে তোমাদের আপত্তি কোথায়?
শিরকের অসারতা প্রমাণ করলেন :
اَاَتَّخِذُ مِنْ دُوْنِه ۤ اٰلِهَةً اِنْ يُّرِدْنِ الرَّحْمٰنُ بِضُرٍّ لَّا تُغْنِ عَنِّيْ شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا وَّلَا يُنْقِذُوْنِ – اِنِّۤيْ اِذًا لَّفِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ
আমি কি আল্লাহকে ছেড়ে অন্য কাউকে উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করব? যদি দয়াময় আল্লাহ আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চান, তবে তাদের সুপারিশ আমার কোন উপকারে আসবে না এবং তারা আমাকে মুক্তও করতে পারবে না। যদি আমি এরূপ করি, তবে তো আমি স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে পতিত হব। (সূরা ইয়াসীন- ২৩, ২৪)
প্রকাশ্যে নিজের ঈমানের ঘোষণা দিলেন :
اِنِّۤيْ اٰمَنْتُ بِرَبِّكُمْ فَاسْمَعُوْنِ
আমি তো তোমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান এনেছি, অতএব তোমরা আমার কথা শুনো। (সূরা ইয়াসীন- ২৫)
ব্যাখ্যা : এ বাক্যে সত্য প্রচারের একটি সূক্ষ্ম কৌশল বলে দেয়া হয়েছে। সে ব্যক্তি তাদের অনুভূতিকে এভাবে সজাগ করেন যে, আমি যে রবের প্রতি ঈমান এনেছি তিনি কেবল আমারই রব নন বরং তোমাদেরও রব। তাঁর প্রতি ঈমান এনে আমি ভুল করিনি বরং ঈমান না এনে তোমরাই ভুল করছ।
পরে তিনি শহীদ হলেন এবং জান্নাতবাসী হলেন :
قِيْلَ ادْخُلِ الْجَنَّةَؕ قَالَ يَا لَيْتَ قَوْمِيْ يَعْلَمُوْنَ
তাকে বলা হলো, ‘‘জান্নাতে প্রবেশ করো।’’ সে বলল, আহা! যদি আমার সম্প্রদায় জানতে পারত।
(সূরা ইয়াসীন- ২৬)
ব্যাখ্যা : এটি সেই মুমিন ব্যক্তির উন্নত নৈতিক মানসিকতার একটি শ্রেষ্ঠতম আদর্শ, যারা তার হত্যাকর্ম সংঘটিত করেছিল তাদের বিরুদ্ধে তার মনে কোন ক্রোধ ও প্রতিশোধের স্পৃহা ছিল না। তিনি আল্লাহর কাছে তাদের জন্য কোন বদ্দু‘আ করেননি। বরং তিনি তাদের কল্যাণ কামনা করে চলেছেন। মৃত্যুর পর তার মনে যদি কোন আকাঙ্ক্ষা জন্মে থাকে, তাহলে তা ছিল কেবলমাত্র এতটুকু যে, হায়! আমার জাতি যদি আমার মৃত্যু থেকেও শিক্ষা নিয়ে সঠিক পথ অবলম্বন করত!
তিনি জাতির জন্য আফসোস করলেন :
قِيْلَ ادْخُلِ الْجَنَّةَ ؕ قَالَ يَا لَيْتَ قَوْمِيْ يَعْلَمُوْنَ – بِمَا غَفَرَ لِيْ رَبِّيْ وَجَعَلَنِيْ مِنَ الْمُكْرَمِيْنَ
তাকে বলা হলো, জান্নাতে প্রবেশ করো। সে বলল আহা! যদি আমার সম্প্রদায় জানতে পারত যে, আমার প্রতিপালক কেন আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং আমাকে সম্মানিত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। (সূরা ইয়াসীন- ২৬, ২৭)
এ জাতিকে ধ্বংস করার জন্য কোন বাহিনীর প্রয়োজন হয়নি :
وَمَاۤ اَنْزَلْنَا عَلٰى قَوْمِه مِنْ ۢبَعْدِه مِنْ جُنْدٍ مِّنَ السَّمَآءِ وَمَا كُنَّا مُنْزِلِيْنَ
এরপর আমি তার সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আকাশ হতে আর কোন বাহিনী প্রেরণ করিনি এবং প্রেরণের প্রয়োজনও ছিল না। (সূরা ইয়াসীন- ২৮)
একটি বিকট আওয়াজ তাদেরকে শেষ করে দিল :
اِنْ كَانَتْ اِلَّا صَيْحَةً وَّاحِدَةً فَاِذَا هُمْ خَامِدُوْنَ
তা ছিল কেবল একটি মহাগর্জন, ফলে সাথে সাথে তারা নিথর ও স্থির হয়ে গেল। (সূরা ইয়াসীন- ২৯)
আফসোস এসব লোকদের জন্য :
يَا حَسْرَةً عَلَى الْعِبَادِۚ مَا يَأْتِيْهِمْ مِّنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا كَانُوْا بِه يَسْتَهْزِئُوْنَ
আফসোস! সেসব বান্দাদের জন্য, যাদের কাছে এমন কোন রাসূল আসেনি, যাকে নিয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেনি। (সূরা ইয়াসীন- ৩০) হেদায়াত
মুহাম্মাদ ﷺ এর জন্মের কাছাকাছি সময়ে ইয়ামানের বাদশাহ আবরাহা কা‘বাঘর ধ্বংস করার জন্য ষাট হাজার সৈন্য নিয়ে মক্কা আক্রমণ করে। আল্লাহ এ বাহিনীকে নজিরবিহীনভাবে ধ্বংস করেছেন। সূরা ফীলে তাদের ধ্বংসের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে।
اَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِاَصْحَابِ الْفِيْلِ – اَلَمْ يَجْعَلْ كَيْدَهُمْ فِيْ تَضْلِيْلٍ – وَاَرْسَلَ عَلَيْهِمْ طَيْرًا اَبَابِيْلَ – تَرْمِيْهِمْ بِحِجَارَةٍ مِّنْ سِجِّيْلٍ – فَجَعَلَهُمْ كَعَصْفٍ مَّأْكُوْلٍ
তুমি কি দেখনি, তোমার মালিক (কা‘বা ধ্বংসের জন্য আগত) হাতিওয়ালাদের সাথে কেমন ব্যবহার করেছেন? তিনি কি (সে সময়) তাদের যাবতীয় ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেননি? তিনি তাদের উপর (ঝাঁকে-ঝাঁকে) আবাবীল পাখি পাঠিয়েছেন। তারা তাদের (এ সুসজ্জিত বাহিনীর) উপর পাথরের টুকরো নিক্ষেপ করছিল। অতঃপর তিনি তাদেরকে (জন্তু-জানোয়ারের) চর্বিত ঘাস-পাতার মতো করে দিলেন। (সূরা ফীল)
اَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِاَصْحَابِ الْفِيْلِ – اَلَمْ يَجْعَلْ كَيْدَهُمْ فِيْ تَضْلِيْلٍ – وَاَرْسَلَ عَلَيْهِمْ طَيْرًا اَبَابِيْلَ – تَرْمِيْهِمْ بِحِجَارَةٍ مِّنْ سِجِّيْلٍ – فَجَعَلَهُمْ كَعَصْفٍ مَّأْكُوْلٍ
তুমি কি দেখনি, তোমার মালিক (কা‘বা ধ্বংসের জন্য আগত) হাতিওয়ালাদের সাথে কেমন ব্যবহার করেছেন? তিনি কি (সে সময়) তাদের যাবতীয় ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেননি? তিনি তাদের উপর (ঝাঁকে-ঝাঁকে) আবাবীল পাখি পাঠিয়েছেন। তারা তাদের (এ সুসজ্জিত বাহিনীর) উপর পাথরের টুকরো নিক্ষেপ করছিল। অতঃপর তিনি তাদেরকে (জন্তু-জানোয়ারের) চর্বিত ঘাস-পাতার মতো করে দিলেন। (সূরা ফীল)
আল্লাহ তাদের প্রতি নিয়ামতের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেছেন :
وَتَمَّتْ كَلِمَتُ رَبِّكَ الْحُسْنٰى عَلٰى بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ بِمَا صَبَرُوْا
বনী ইসরাঈল সম্পর্কে তোমার প্রতিপালকের বাণী সত্যে পরিণত হয়েছে, যেহেতু তারা ধৈর্যধারণ করেছিল। (সূরা আ‘রাফ- ১৩৭)
তাদেরকে ফিরাউনের আযাব থেকে মুক্তি দিয়েছেন :
وَاِذْ نَجَّيْنَاكُمْ مِّنْ اٰلِ فِرْعَوْنَ يَسُوْمُوْنَكُمْ سُوْٓءَ الْعَذَابِ يُذَبِّحُوْنَ اَبْنَآءَكُمْ وَيَسْتَحْيُوْنَ نِسَآءَكُمْؕ وَفِيْ ذٰلِكُمْ بَلَآءٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ عَظِيْمٌ
স্মরণ করো, যখন আমি তোমাদেরকে ফিরাউনের সম্প্রদায় হতে মুক্ত করেছিলাম। তারা তোমাদেরকে কঠোর শাস্তি প্রদান করত ও তোমাদের পুত্রদেরকে যবেহ করত এবং কন্যাদেরকে জীবিত রাখত। এতে তোমাদের জন্য তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে নিহিত ছিল মহাপরীক্ষা। (সূরা বাক্বারা- ৪৯)
বিশ্বের অন্যান্য জাতির উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন :
يَا بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ اذْكُرُوْا نِعْمَتِيَ الَّتِيْۤ اَنْعَمْتُ عَلَيْكُمْ وَاَنِّي ْفَضَّلْتُكُمْ عَلَى الْعَالَمِيْنَ
হে বনী ইসরাঈল! আমি তোমাদেরকে যে নিয়ামত দান করেছি তা স্মরণ করো। নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে সমগ্র পৃথিবীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। (সূরা বাক্বারা- ৪৭)
মেঘমালা দিয়ে ছায়া দিয়েছেন এবং মান্না ও সালওয়া দান করেছেন :
وَظَلَّلْنَا عَلَيْهِمُ الْغَمَامَ وَاَنْزَلْنَا عَلَيْهِمُ الْمَنَّ وَالسَّلْوٰىؕ كُلُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْؕ وَمَا ظَلَمُوْنَا وَلٰكِنْ كَانُوْاۤ اَنْفُسَهُمْ يَظْلِمُوْنَ
মেঘ দ্বারা তাদের উপর ছায়া বিস্তার করেছিলাম, তাদের নিকট মান্না ও সালওয়া পাঠিয়েছিলাম এবং বলেছিলাম, তোমাদেরকে পবিত্র রিযিক হতে যা দিয়েছি তোমরা তা হতে আহার করো। আসলে তারা আমার প্রতি কোন যুলুম করেনি, বরং তারা নিজেদের প্রতিই যুলুম করেছিল। (সূরা বাক্বারা- ৫৭)
পাথর থেকে পানির ঝর্ণা সৃষ্টি করেছেন :
وَاِذِ اسْتَسْقٰى مُوْسٰى لِقَوْمِهٖ فَقُلْنَا اضْرِبْ بِّعَصَاكَ الْحَجَرَؕ فَانْفَجَرَتْ مِنْهُ اثْنَتَا عَشْرَةَ عَيْنًا قَدْ عَلِمَ كُلُّ اُنَاسٍ مَّشْرَبَهُمْؕ كُلُوْا وَاشْرَبُوْا مِنْ رِّزْقِ اللهِ وَلَا تَعْثَوْا فِى الْاَرْضِ مُفْسِدِيْنَ
যখন মূসা স্বীয় সম্প্রদায়ের জন্য পানি প্রার্থনা করেছিলেন তখন আমি বলেছিলাম, তুমি স্বীয় লাঠি দ্বারা পাথরে আঘাত করো। অতঃপর তা হতে বারটি ঝর্ণা প্রবাহিত হলো এবং প্রত্যেকেই স্ব-স্ব ঘাট চিনে নিল। (তারপর বলা হলো) তোমরা আল্লাহর রিযিক হতে খাও এবং পান করো। আর পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টিকারী হিসেবে বিচরণ করো না। (সূরা বাক্বারা- ৬০)
তাদের তাওবা কবুল করেছেন :
وَاِذْ قَالَ مُوْسٰى لِقَوْمِهٖ يَا قَوْمِ اِنَّكُمْ ظَلَمْتُمْ اَنْفُسَكُمْ بِاتِّخَاذِكُمُ الْعِجْلَ فَتُوْبُوْاۤ اِلٰى بَارِئِكُمْ فَاقْتُلُوْاۤ اَنْفُسَكُمْؕ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ عِنْدَ بَارِئِكُمْؕ فَتَابَ عَلَيْكُمْؕ اِنَّهٗ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ
যখন মূসা স্বীয় সম্প্রদায়কে বললেন, হে আমার সম্প্রদায়! নিশ্চয় তোমরা গো-বৎসকে (ইবাদাতের জন্য) গ্রহণ করে তোমাদের নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছ। অতএব তোমরা তোমাদের সৃষ্টিকর্তার নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করো এবং পরস্পর পরস্পরকে হত্যা করো; তোমাদের জন্য তোমাদের সৃষ্টিকর্তার নিকট এটাই কল্যাণকর। অতঃপর তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করেছিলেন, নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল ও করুণাময়। (সূরা বাক্বারা- ৫৪)
তাদের জন্য আসমানী কিতাব প্রেরণ করেছেন :
وَلَقَدْ اٰتَيْنَا بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ الْكِتَابَ وَالْحُكْمَ وَالنُّبُوَّةَ وَرَزَقْنَاهُمْ مِّنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلَى الْعَالَمِيْنَ
আমি তো বনী ইসরাঈলকে কিতাব (তাওরাত), রাজত্ব ও নবুওয়াত দান করেছিলাম। আর তাদেরকে দান করেছিলাম উত্তম রিযিক এবং তাদেরকে বিশ্বজগতের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছিলাম। (সূরা জাসিয়া- ১৬)
তাদের বংশে অনেক নবীর জন্ম হয়েছে :
وَاِذْ قَالَ مُوْسٰى لِقَوْمِهٖ يَا قَوْمِ اذْكُرُوْا نِعْمَةَ اللهِ عَلَيْكُمْ اِذْ جَعَلَ فِيْكُمْ اَنْۢبِيَآءَ وَجَعَلَكُمْ مُّلُوْكًاۗ وَاٰتَاكُمْ مَّا لَمْ يُؤْتِ اَحَدًا مِّنَ الْعَالَمِيْنَ
স্মরণ করো, যখন মূসা তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহকে স্মরণ করো, যখন তিনি তোমাদের মধ্য হতে নবী প্রেরণ করেছিলেন এবং তোমাদেরকে শাসক হিসেবে মনোনীত করেছিলেন। আর যা তিনি বিশ্বজগতের কাউকে দেননি, তা তোমাদেরকে দিয়েছিলেন। (সূরা মায়েদা- ২০)
وَتَمَّتْ كَلِمَتُ رَبِّكَ الْحُسْنٰى عَلٰى بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ بِمَا صَبَرُوْا
বনী ইসরাঈল সম্পর্কে তোমার প্রতিপালকের বাণী সত্যে পরিণত হয়েছে, যেহেতু তারা ধৈর্যধারণ করেছিল। (সূরা আ‘রাফ- ১৩৭)
তাদেরকে ফিরাউনের আযাব থেকে মুক্তি দিয়েছেন :
وَاِذْ نَجَّيْنَاكُمْ مِّنْ اٰلِ فِرْعَوْنَ يَسُوْمُوْنَكُمْ سُوْٓءَ الْعَذَابِ يُذَبِّحُوْنَ اَبْنَآءَكُمْ وَيَسْتَحْيُوْنَ نِسَآءَكُمْؕ وَفِيْ ذٰلِكُمْ بَلَآءٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ عَظِيْمٌ
স্মরণ করো, যখন আমি তোমাদেরকে ফিরাউনের সম্প্রদায় হতে মুক্ত করেছিলাম। তারা তোমাদেরকে কঠোর শাস্তি প্রদান করত ও তোমাদের পুত্রদেরকে যবেহ করত এবং কন্যাদেরকে জীবিত রাখত। এতে তোমাদের জন্য তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে নিহিত ছিল মহাপরীক্ষা। (সূরা বাক্বারা- ৪৯)
বিশ্বের অন্যান্য জাতির উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন :
يَا بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ اذْكُرُوْا نِعْمَتِيَ الَّتِيْۤ اَنْعَمْتُ عَلَيْكُمْ وَاَنِّي ْفَضَّلْتُكُمْ عَلَى الْعَالَمِيْنَ
হে বনী ইসরাঈল! আমি তোমাদেরকে যে নিয়ামত দান করেছি তা স্মরণ করো। নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে সমগ্র পৃথিবীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। (সূরা বাক্বারা- ৪৭)
মেঘমালা দিয়ে ছায়া দিয়েছেন এবং মান্না ও সালওয়া দান করেছেন :
وَظَلَّلْنَا عَلَيْهِمُ الْغَمَامَ وَاَنْزَلْنَا عَلَيْهِمُ الْمَنَّ وَالسَّلْوٰىؕ كُلُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْؕ وَمَا ظَلَمُوْنَا وَلٰكِنْ كَانُوْاۤ اَنْفُسَهُمْ يَظْلِمُوْنَ
মেঘ দ্বারা তাদের উপর ছায়া বিস্তার করেছিলাম, তাদের নিকট মান্না ও সালওয়া পাঠিয়েছিলাম এবং বলেছিলাম, তোমাদেরকে পবিত্র রিযিক হতে যা দিয়েছি তোমরা তা হতে আহার করো। আসলে তারা আমার প্রতি কোন যুলুম করেনি, বরং তারা নিজেদের প্রতিই যুলুম করেছিল। (সূরা বাক্বারা- ৫৭)
পাথর থেকে পানির ঝর্ণা সৃষ্টি করেছেন :
وَاِذِ اسْتَسْقٰى مُوْسٰى لِقَوْمِهٖ فَقُلْنَا اضْرِبْ بِّعَصَاكَ الْحَجَرَؕ فَانْفَجَرَتْ مِنْهُ اثْنَتَا عَشْرَةَ عَيْنًا قَدْ عَلِمَ كُلُّ اُنَاسٍ مَّشْرَبَهُمْؕ كُلُوْا وَاشْرَبُوْا مِنْ رِّزْقِ اللهِ وَلَا تَعْثَوْا فِى الْاَرْضِ مُفْسِدِيْنَ
যখন মূসা স্বীয় সম্প্রদায়ের জন্য পানি প্রার্থনা করেছিলেন তখন আমি বলেছিলাম, তুমি স্বীয় লাঠি দ্বারা পাথরে আঘাত করো। অতঃপর তা হতে বারটি ঝর্ণা প্রবাহিত হলো এবং প্রত্যেকেই স্ব-স্ব ঘাট চিনে নিল। (তারপর বলা হলো) তোমরা আল্লাহর রিযিক হতে খাও এবং পান করো। আর পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টিকারী হিসেবে বিচরণ করো না। (সূরা বাক্বারা- ৬০)
তাদের তাওবা কবুল করেছেন :
وَاِذْ قَالَ مُوْسٰى لِقَوْمِهٖ يَا قَوْمِ اِنَّكُمْ ظَلَمْتُمْ اَنْفُسَكُمْ بِاتِّخَاذِكُمُ الْعِجْلَ فَتُوْبُوْاۤ اِلٰى بَارِئِكُمْ فَاقْتُلُوْاۤ اَنْفُسَكُمْؕ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ عِنْدَ بَارِئِكُمْؕ فَتَابَ عَلَيْكُمْؕ اِنَّهٗ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ
যখন মূসা স্বীয় সম্প্রদায়কে বললেন, হে আমার সম্প্রদায়! নিশ্চয় তোমরা গো-বৎসকে (ইবাদাতের জন্য) গ্রহণ করে তোমাদের নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছ। অতএব তোমরা তোমাদের সৃষ্টিকর্তার নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করো এবং পরস্পর পরস্পরকে হত্যা করো; তোমাদের জন্য তোমাদের সৃষ্টিকর্তার নিকট এটাই কল্যাণকর। অতঃপর তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করেছিলেন, নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল ও করুণাময়। (সূরা বাক্বারা- ৫৪)
তাদের জন্য আসমানী কিতাব প্রেরণ করেছেন :
وَلَقَدْ اٰتَيْنَا بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ الْكِتَابَ وَالْحُكْمَ وَالنُّبُوَّةَ وَرَزَقْنَاهُمْ مِّنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلَى الْعَالَمِيْنَ
আমি তো বনী ইসরাঈলকে কিতাব (তাওরাত), রাজত্ব ও নবুওয়াত দান করেছিলাম। আর তাদেরকে দান করেছিলাম উত্তম রিযিক এবং তাদেরকে বিশ্বজগতের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছিলাম। (সূরা জাসিয়া- ১৬)
তাদের বংশে অনেক নবীর জন্ম হয়েছে :
وَاِذْ قَالَ مُوْسٰى لِقَوْمِهٖ يَا قَوْمِ اذْكُرُوْا نِعْمَةَ اللهِ عَلَيْكُمْ اِذْ جَعَلَ فِيْكُمْ اَنْۢبِيَآءَ وَجَعَلَكُمْ مُّلُوْكًاۗ وَاٰتَاكُمْ مَّا لَمْ يُؤْتِ اَحَدًا مِّنَ الْعَالَمِيْنَ
স্মরণ করো, যখন মূসা তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহকে স্মরণ করো, যখন তিনি তোমাদের মধ্য হতে নবী প্রেরণ করেছিলেন এবং তোমাদেরকে শাসক হিসেবে মনোনীত করেছিলেন। আর যা তিনি বিশ্বজগতের কাউকে দেননি, তা তোমাদেরকে দিয়েছিলেন। (সূরা মায়েদা- ২০)
আমার নিয়ামতকে স্মরণ করো :
يَا بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ اذْكُرُوْا نِعْمَتِيَ الَّتِيْۤ اَنْعَمْتُ عَلَيْكُمْ وَاَنِّيْ فَضَّلْتُكُمْ عَلَى الْعَالَمِيْنَ
হে বনী ইসরাঈল! আমি তোমাদেরকে যে নিয়ামত দান করেছি তা স্মরণ করো; নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে বিশ্ববাসীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। (সূরা বাক্বারা- ১২২)
অঙ্গীকার পূর্ণ করো এবং আমাকেই ভয় করো :
يَا بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ اذْكُرُوْا نِعْمَتِيَ الَّتِيْۤ اَنْعَمْتُ عَلَيْكُمْ وَاَوْفُوْا بِعَهْدِۤيْ اُوْفِ بِعَهْدِكُمْۚ وَاِيَّايَ فَارْهَبُوْنِ
হে বনী ইসরাঈল! আমি তোমাদেরকে যে নিয়ামত দান করেছি তা স্মরণ করো, তবে আমিও তোমাদের অঙ্গীকার পূর্ণ করব; আর তোমরা শুধু আমাকেই ভয় করো। (সূরা বাক্বারা- ৪০)
আমার কিতাবের বিধান মেনে চলো :
وَاِذْ اَخَذْنَا مِيْثَاقَكُمْ وَرَفَعْنَا فَوْقَكُمُ الطُّوْرَؕ خُذُوْا مَاۤ اٰتَيْنَاكُمْ بِقُوَّةٍ وَّاذْكُرُوْا مَا فِيْهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ
(স্মরণ করো) যখন আমি তোমাদের থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম এবং তোমাদের মাথার উপর তূর পর্বত উত্তোলন করে বলেছিলাম যে, আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি (কিতাব) তা দৃঢ়চিত্তে গ্রহণ করো এবং এতে যা আছে তা স্মরণ করো, যাতে তোমরা নিষ্কৃতি পেতে পার। (সূরা বাক্বারা- ৬৩)
কিয়ামতের দিনকে ভয় করো :
وَاتَّقُوْا يَوْمًا لَّا تَجْزِيْ نَفْسٌ عَنْ نَّفْسٍ شَيْئًا وَّلَا يُقْبَلُ مِنْهَا عَدْلٌ وَّلَا تَنْفَعُهَا شَفَاعَةٌ وَّلَا هُمْ يُنْصَرُوْنَ
আর তোমরা এমন এক দিনকে ভয় করো, যেদিন কেউ কারো হতে বিন্দুমাত্র উপকৃত হতে পারবে না, কারো নিকট হতে কোন প্রকার বিনিময়ও গ্রহণ করা হবে না, কারো শাফা‘আত (সুপারিশ) কাজে লাগবে না এবং তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না। (সূরা বাক্বারা- ১২৩)
নর হত্যা থেকে বিরত থাকো :
مِنْ اَجْلِ ذٰلِكَۚ كَتَبْنَا عَلٰى بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ اَنَّهٗ مَنْ قَتَلَ نَفْسًا ۢبِغَيْرِ نَفْسٍ اَوْ فَسَادٍ فِى الْاَرْضِ فَكَاَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِيْعًاؕ وَمَنْ اَحْيَاهَا فَكَاَنَّمَاۤ اَحْيَا النَّاسَ جَمِيْعًا
এ কারণেই আমি বনী ইসরাঈলের উপর নির্ধারণ করে দিয়েছি যে, যে ব্যক্তি অপর কোন ব্যক্তিকে প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ কিংবা দুনিয়ায় ফাসাদ সৃষ্টি করার কারণ ব্যতীত অন্য কোন কারণে হত্যা করল সে যেন দুনিয়ার সব মানুষকেই হত্যা করল। আর যে ব্যক্তি কারো প্রাণ বাঁচাল, সে যেন সকল মানুষেরই জীবন বাঁচাল। (সূরা মায়েদা- ৩২)
একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করতে হবে :
وَاِذْ اَخَذْنَا مِيْثَاقَ بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ لَا تَعْبُدُوْنَ اِلَّا اللهَ
(স্মরণ করো) যখন আমি বনী ইসরাঈল হতে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো ইবাদাত করবে না। (সূরা বাক্বারা- ৮৩)
মাতা-পিতা ও আত্মীয়স্বজনদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে :
وَبِالْوَالِدَيْنِ اِحْسَانًا وَّذِى الْقُرْبٰى وَالْيَتَامٰى وَالْمَسَاكِيْنِ
(আমি আরো শপথ নিয়েছিলাম যে) পিতা-মাতা, আত্মীয়স্বজন, ইয়াতীম ও মিসকীনদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে। (সূরা বাক্বারা- ৮৩)
মানুষের সাথে উত্তম কথা বলতে হবে :
وَقُوْلُوْا لِلنَّاسِ حُسْنًا
আর তোমরা মানুষের সাথে উত্তমভাবে কথা বলবে। (সূরা বাক্বারা- ৮৩)
নামায প্রতিষ্ঠা করতে হবে ও যাকাত প্রদান করতে হবে :
وَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَ
তোমরা নামায প্রতিষ্ঠা করবে ও যাকাত প্রদান করবে। (সূরা বাক্বারা- ৮৩)
পরস্পর রক্তপাত করা যাবে না:
وَاِذْ اَخَذْنَا مِيْثَاقَكُمْ لَا تَسْفِكُوْنَ دِمَآءَكُمْ
স্মরণ করো, যখন আমি তোমাদের থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করছিলাম যে, তোমরা পরস্পর রক্তপাত করবে না। (সূরা বাক্বারা- ৮৪)
মানুষকে তাদের বাড়ি থেকে বহিষ্কার করা যাবে না :
وَلَا تُخْرِجُوْنَ اَنْفُسَكُمْ مِّنْ دِيَارِكُمْ ثُمَّ اَقْرَرْتُمْ وَاَنْتُمْ تَشْهَدُوْنَ
(এও অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে) স্বীয় বাসস্থান হতে আপন ব্যক্তিদেরকে বহিষ্কার করবে না, অতঃপর তোমরা তাতে স্বীকৃতি দিয়েছিলে। আর এ বিষয়ে তোমরাই সাক্ষী ছিলে। (সূরা বাক্বারা- ৮৪)
অল্প লোক ছাড়া কেউ অঙ্গীকার পূর্ণ করেনি :
ثُمَّ تَوَلَّيْتُمْ اِلَّا قَلِيْلًا مِّنْكُمْ وَاَنْتُمْ مُّعْرِضُوْنَ
তারপর তোমাদের মধ্য হতে অল্প সংখ্যক ব্যতীত তোমরা সকলেই বিমুখ হয়ে গিয়েছিলে; যেহেতু তোমরা ছিলে অগ্রাহ্যকারী। (সূরা বাক্বারা- ৮৩)
يَا بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ اذْكُرُوْا نِعْمَتِيَ الَّتِيْۤ اَنْعَمْتُ عَلَيْكُمْ وَاَنِّيْ فَضَّلْتُكُمْ عَلَى الْعَالَمِيْنَ
হে বনী ইসরাঈল! আমি তোমাদেরকে যে নিয়ামত দান করেছি তা স্মরণ করো; নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে বিশ্ববাসীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। (সূরা বাক্বারা- ১২২)
অঙ্গীকার পূর্ণ করো এবং আমাকেই ভয় করো :
يَا بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ اذْكُرُوْا نِعْمَتِيَ الَّتِيْۤ اَنْعَمْتُ عَلَيْكُمْ وَاَوْفُوْا بِعَهْدِۤيْ اُوْفِ بِعَهْدِكُمْۚ وَاِيَّايَ فَارْهَبُوْنِ
হে বনী ইসরাঈল! আমি তোমাদেরকে যে নিয়ামত দান করেছি তা স্মরণ করো, তবে আমিও তোমাদের অঙ্গীকার পূর্ণ করব; আর তোমরা শুধু আমাকেই ভয় করো। (সূরা বাক্বারা- ৪০)
আমার কিতাবের বিধান মেনে চলো :
وَاِذْ اَخَذْنَا مِيْثَاقَكُمْ وَرَفَعْنَا فَوْقَكُمُ الطُّوْرَؕ خُذُوْا مَاۤ اٰتَيْنَاكُمْ بِقُوَّةٍ وَّاذْكُرُوْا مَا فِيْهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ
(স্মরণ করো) যখন আমি তোমাদের থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম এবং তোমাদের মাথার উপর তূর পর্বত উত্তোলন করে বলেছিলাম যে, আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি (কিতাব) তা দৃঢ়চিত্তে গ্রহণ করো এবং এতে যা আছে তা স্মরণ করো, যাতে তোমরা নিষ্কৃতি পেতে পার। (সূরা বাক্বারা- ৬৩)
কিয়ামতের দিনকে ভয় করো :
وَاتَّقُوْا يَوْمًا لَّا تَجْزِيْ نَفْسٌ عَنْ نَّفْسٍ شَيْئًا وَّلَا يُقْبَلُ مِنْهَا عَدْلٌ وَّلَا تَنْفَعُهَا شَفَاعَةٌ وَّلَا هُمْ يُنْصَرُوْنَ
আর তোমরা এমন এক দিনকে ভয় করো, যেদিন কেউ কারো হতে বিন্দুমাত্র উপকৃত হতে পারবে না, কারো নিকট হতে কোন প্রকার বিনিময়ও গ্রহণ করা হবে না, কারো শাফা‘আত (সুপারিশ) কাজে লাগবে না এবং তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না। (সূরা বাক্বারা- ১২৩)
নর হত্যা থেকে বিরত থাকো :
مِنْ اَجْلِ ذٰلِكَۚ كَتَبْنَا عَلٰى بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ اَنَّهٗ مَنْ قَتَلَ نَفْسًا ۢبِغَيْرِ نَفْسٍ اَوْ فَسَادٍ فِى الْاَرْضِ فَكَاَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِيْعًاؕ وَمَنْ اَحْيَاهَا فَكَاَنَّمَاۤ اَحْيَا النَّاسَ جَمِيْعًا
এ কারণেই আমি বনী ইসরাঈলের উপর নির্ধারণ করে দিয়েছি যে, যে ব্যক্তি অপর কোন ব্যক্তিকে প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ কিংবা দুনিয়ায় ফাসাদ সৃষ্টি করার কারণ ব্যতীত অন্য কোন কারণে হত্যা করল সে যেন দুনিয়ার সব মানুষকেই হত্যা করল। আর যে ব্যক্তি কারো প্রাণ বাঁচাল, সে যেন সকল মানুষেরই জীবন বাঁচাল। (সূরা মায়েদা- ৩২)
একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করতে হবে :
وَاِذْ اَخَذْنَا مِيْثَاقَ بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ لَا تَعْبُدُوْنَ اِلَّا اللهَ
(স্মরণ করো) যখন আমি বনী ইসরাঈল হতে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো ইবাদাত করবে না। (সূরা বাক্বারা- ৮৩)
মাতা-পিতা ও আত্মীয়স্বজনদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে :
وَبِالْوَالِدَيْنِ اِحْسَانًا وَّذِى الْقُرْبٰى وَالْيَتَامٰى وَالْمَسَاكِيْنِ
(আমি আরো শপথ নিয়েছিলাম যে) পিতা-মাতা, আত্মীয়স্বজন, ইয়াতীম ও মিসকীনদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে। (সূরা বাক্বারা- ৮৩)
মানুষের সাথে উত্তম কথা বলতে হবে :
وَقُوْلُوْا لِلنَّاسِ حُسْنًا
আর তোমরা মানুষের সাথে উত্তমভাবে কথা বলবে। (সূরা বাক্বারা- ৮৩)
নামায প্রতিষ্ঠা করতে হবে ও যাকাত প্রদান করতে হবে :
وَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَ
তোমরা নামায প্রতিষ্ঠা করবে ও যাকাত প্রদান করবে। (সূরা বাক্বারা- ৮৩)
পরস্পর রক্তপাত করা যাবে না:
وَاِذْ اَخَذْنَا مِيْثَاقَكُمْ لَا تَسْفِكُوْنَ دِمَآءَكُمْ
স্মরণ করো, যখন আমি তোমাদের থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করছিলাম যে, তোমরা পরস্পর রক্তপাত করবে না। (সূরা বাক্বারা- ৮৪)
মানুষকে তাদের বাড়ি থেকে বহিষ্কার করা যাবে না :
وَلَا تُخْرِجُوْنَ اَنْفُسَكُمْ مِّنْ دِيَارِكُمْ ثُمَّ اَقْرَرْتُمْ وَاَنْتُمْ تَشْهَدُوْنَ
(এও অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে) স্বীয় বাসস্থান হতে আপন ব্যক্তিদেরকে বহিষ্কার করবে না, অতঃপর তোমরা তাতে স্বীকৃতি দিয়েছিলে। আর এ বিষয়ে তোমরাই সাক্ষী ছিলে। (সূরা বাক্বারা- ৮৪)
অল্প লোক ছাড়া কেউ অঙ্গীকার পূর্ণ করেনি :
ثُمَّ تَوَلَّيْتُمْ اِلَّا قَلِيْلًا مِّنْكُمْ وَاَنْتُمْ مُّعْرِضُوْنَ
তারপর তোমাদের মধ্য হতে অল্প সংখ্যক ব্যতীত তোমরা সকলেই বিমুখ হয়ে গিয়েছিলে; যেহেতু তোমরা ছিলে অগ্রাহ্যকারী। (সূরা বাক্বারা- ৮৩)
আহলে কিতাবের মধ্যে কিছু লোক রয়েছে ঈমানদার :
وَاِنَّ مِنْ اَهْلِ الْكِتَابِ لَمَنْ يُّؤْمِنُ بِاللّٰهِ وَمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكُمْ وَمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْهِمْ خَاشِعِيْنَ لِلّٰهِ لَا يَشْتَرُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِ ثَمَنًا قَلِيْلًا
নিশ্চয় আহলে কিতাবের মধ্যে এরূপ লোকও রয়েছে, যারা আল্লাহর প্রতি এবং তোমাদের প্রতি যা নাযিল হয়েছে সেগুলোকে এমনভাবে বিশ্বাস স্থাপন করে, যেরকমভাবে বিশ্বাস স্থাপন করে তাদের নিজেদের উপর যা নাযিল হয়েছিল তার উপর। আর তারা আল্লাহর ব্যাপারে একনিষ্ঠ ও বিনয়ী, তারা অল্প মূল্যে আল্লাহর আয়াতসমূহকে বিক্রি করে না। (সূরা আলে ইমরান- ১৯৯)
তারা সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত :
لَيْسُوْا سَوَآءًؕ مِنْ اَهْلِ الْكِتَابِ اُمَّةٌ قَآئِمَةٌ يَّتْلُوْنَ اٰيَاتِ اللهِ اٰنَآءَ اللَّيْلِ وَهُمْ يَسْجُدُوْنَ
তারা সবাই সমান নয়, আহলে কিতাবদের মধ্যে একটি দল রয়েছে যারা সত্য ও ন্যায়ের উপর অটল। তারা রাতের বেলা আল্লাহর আয়াত তিলাওয়াত করে এবং সিজদা করে। (সূরা আলে ইমরান- ১১৩)
তারা আমনত রক্ষা করে :
وَمِنْ اَهْلِ الْكِتَابِ مَنْ اِنْ تَاْمَنْهُ بِقِنْطَارٍ يُّؤَدِّه ۤ اِلَيْكَۚ وَمِنْهُمْ مَّنْ اِنْ تَاْمَنْهُ بِدِيْنَارٍلَّا يُؤَدِّه ۤ اِلَيْكَ اِلَّا مَا دُمْتَ عَلَيْهِ قَآئِمًاؕ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ قَالُوْا لَيْسَ عَلَيْنَا فِى الْاُمِّيِّيْنَ سَبِيْلٌۚ وَيَقُوْلُوْنَ عَلَى اللهِ الْكَذِبَ وَهُمْ يَعْلَمُوْنَ
আহলে কিতাবের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে যে, যদি তুমি তাদের কাছে অঢেল ধনসম্পদও আমানত রাখ, তবে তা তোমাকে ফিরিয়ে দেবে। আবার তাদের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে যে, তাদের কাছে একটি দিনার আমানত রাখলেও তারা তার পেছনে লেগে না থাকলে তা ফিরিয়ে দেয় না। এটা এজন্য যে, তারা বলে- আমাদের উপর মূর্খদের ব্যাপারে কোন বাধ্যবাধকতা নেই। এভাবেই তারা আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা বলে বেড়ায়, অথচ তারা তা জানে। (সূরা আলে ইমরান- ৭৫)
তারা কুরআনকে বিশ্বাস করে :
وَالَّذِيْنَ اٰتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَعْلَمُوْنَ اَنَّهٗ مُنَزَّلٌ مِّنْ رَّبِّكَ بِالْحَقِّ فَلَا تَكُوْنَنَّ مِنَ الْمُمْتَرِيْنَ
আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছি তারা জানে যে, তা তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে সত্যসহ অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তুমি সন্দেহকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সূরা আন‘আম- ১১৪)
وَاِنَّ مِنْ اَهْلِ الْكِتَابِ لَمَنْ يُّؤْمِنُ بِاللّٰهِ وَمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكُمْ وَمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْهِمْ خَاشِعِيْنَ لِلّٰهِ لَا يَشْتَرُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِ ثَمَنًا قَلِيْلًا
নিশ্চয় আহলে কিতাবের মধ্যে এরূপ লোকও রয়েছে, যারা আল্লাহর প্রতি এবং তোমাদের প্রতি যা নাযিল হয়েছে সেগুলোকে এমনভাবে বিশ্বাস স্থাপন করে, যেরকমভাবে বিশ্বাস স্থাপন করে তাদের নিজেদের উপর যা নাযিল হয়েছিল তার উপর। আর তারা আল্লাহর ব্যাপারে একনিষ্ঠ ও বিনয়ী, তারা অল্প মূল্যে আল্লাহর আয়াতসমূহকে বিক্রি করে না। (সূরা আলে ইমরান- ১৯৯)
তারা সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত :
لَيْسُوْا سَوَآءًؕ مِنْ اَهْلِ الْكِتَابِ اُمَّةٌ قَآئِمَةٌ يَّتْلُوْنَ اٰيَاتِ اللهِ اٰنَآءَ اللَّيْلِ وَهُمْ يَسْجُدُوْنَ
তারা সবাই সমান নয়, আহলে কিতাবদের মধ্যে একটি দল রয়েছে যারা সত্য ও ন্যায়ের উপর অটল। তারা রাতের বেলা আল্লাহর আয়াত তিলাওয়াত করে এবং সিজদা করে। (সূরা আলে ইমরান- ১১৩)
তারা আমনত রক্ষা করে :
وَمِنْ اَهْلِ الْكِتَابِ مَنْ اِنْ تَاْمَنْهُ بِقِنْطَارٍ يُّؤَدِّه ۤ اِلَيْكَۚ وَمِنْهُمْ مَّنْ اِنْ تَاْمَنْهُ بِدِيْنَارٍلَّا يُؤَدِّه ۤ اِلَيْكَ اِلَّا مَا دُمْتَ عَلَيْهِ قَآئِمًاؕ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ قَالُوْا لَيْسَ عَلَيْنَا فِى الْاُمِّيِّيْنَ سَبِيْلٌۚ وَيَقُوْلُوْنَ عَلَى اللهِ الْكَذِبَ وَهُمْ يَعْلَمُوْنَ
আহলে কিতাবের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে যে, যদি তুমি তাদের কাছে অঢেল ধনসম্পদও আমানত রাখ, তবে তা তোমাকে ফিরিয়ে দেবে। আবার তাদের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে যে, তাদের কাছে একটি দিনার আমানত রাখলেও তারা তার পেছনে লেগে না থাকলে তা ফিরিয়ে দেয় না। এটা এজন্য যে, তারা বলে- আমাদের উপর মূর্খদের ব্যাপারে কোন বাধ্যবাধকতা নেই। এভাবেই তারা আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা বলে বেড়ায়, অথচ তারা তা জানে। (সূরা আলে ইমরান- ৭৫)
তারা কুরআনকে বিশ্বাস করে :
وَالَّذِيْنَ اٰتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَعْلَمُوْنَ اَنَّهٗ مُنَزَّلٌ مِّنْ رَّبِّكَ بِالْحَقِّ فَلَا تَكُوْنَنَّ مِنَ الْمُمْتَرِيْنَ
আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছি তারা জানে যে, তা তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে সত্যসহ অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তুমি সন্দেহকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সূরা আন‘আম- ১১৪)
তাদের একদল আল্লাহর কিতাবকে গুরুত্ব দেয় না :
وَلَمَّا جَآءَهُمْ رَسُوْلٌ مِّنْ عِنْدِ اللهِ مُصَدِّقٌ لِّمَا مَعَهُمْ نَبَذَ فَرِيْقٌ مِّنَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَۗ كِتَابَ اللهِ وَرَآءَ ظُهُوْرِهِمْ كَاَنَّهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ
যখন আল্লাহর নিকট হতে তাদের নিকট যা আছে তার সত্যায়নকারী রাসূল তাদের নিকট আগমন করল, তখন যাদেরকে গ্রন্থ দেয়া হয়েছে তাদের একদল আল্লাহর গ্রন্থকে নিজেদের পশ্চাতে নিক্ষেপ করে দিল, যেন তারা কিছুই জানে না। (সূরা বাক্বারা- ১০১)
তারা মুসলিমদের কিবলাকে মেনে নিতে চায় না :
وَلَئِنْ اَتَيْتَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ بِكُلِّ اٰيَةٍ مَّا تَبِعُوْا قِبْلَتَكَۚ وَمَاۤ اَنْتَ بِتَابِعٍ قِبْلَتَهُمْۚ وَمَا بَعْضُهُمْ بِتَابِعٍ قِبْلَةَ بَعْضٍ
যাদেরকে কিতাব প্রদান করা হয়েছে তাদের নিকট যদি তুমি সকল নিদর্শন আনয়ন কর, তবুও তারা তোমার কিবলাকে গ্রহণ করবে না এবং তুমিও তাদের কিবলাকে গ্রহণ করতে পার না। কেননা তারা পরস্পর একে অপরের কিবলার অনুসারী। (সূরা বাক্বারা- ১৪৫)
তারা মুহাম্মাদ ﷺ কে চেনা সত্ত্বেও বিশ্বাস করেনি :
اَلَّذِيْنَ اٰتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَعْرِفُوْنَهٗ كَمَا يَعْرِفُوْنَ اَبْنَآءَهُمُ الَّذِيْنَ خَسِرُوْاۤ اَنْفُسَهُمْ فَهُمْ لَا يُؤْمِنُوْنَ
আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছি তারা তাকে সেরূপ চেনে, যেরূপ চেনে তাদের সন্তানদেরকে। যারা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করেছে, অথচ তারা ঈমান আনয়ন করছে না। (সূরা আন‘আম- ২০)
তারা আযান নিয়ে ঠাট্টা করে :
وَاِذَا نَادَيْتُمْ اِلَى الصَّلَاةِ اتَّخَذُوْهَا هُزُوًا وَّلَعِبًاؕ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ قَوْمٌ لَّا يَعْقِلُوْنَ
তোমরা যখন সালাতের জন্য আহবান কর তখন তারা তাকে হাসি-তামাশা ও ক্রীড়ার বস্তু হিসেবে গ্রহণ করে। এটা এজন্য যে, তারা এমন এক সম্প্রদায় যাদের কোন বোধশক্তি নেই। (সূরা মায়েদা- ৫৮)
মুসলিমদেরকে দ্বীন থেকে ফিরিয়ে দিতে চায় :
وَدَّ كَثِيْرٌ مِّنْ اَهْلِ الْكِتَابِ لَوْ يَرُدُّوْنَكُمْ مِّنْ ۢبَعْدِ اِيْمَانِكُمْ كُفَّارًاۚ حَسَدًا مِّنْ عِنْدِ اَنْفُسِهِمْ مِّنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْحَقُّۚ فَاعْفُوْا وَاصْفَحُوْا حَتّٰى يَاْتِيَ اللهُ بِاَمْرِه ؕ اِنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
আহলে কিতাবের অনেকে তাদের প্রতি সত্য প্রকাশিত হওয়ার পরও তারা তাদের অন্তর্নিহিত বিদ্বেষের কারণে তোমাদেরকে ঈমান আনার পরে মুরতাদ বানাতে ইচ্ছে করে। সুতরাং আল্লাহর নির্দেশ না আসা পর্যন্ত তোমরা (তাদেরকে) ক্ষমা করো ও উপেক্ষা করতে থাকো, নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। (সূরা বাক্বারা- ১০৯)
ব্যাখ্যা : এখানে মুসলিমদেরকে উপদেশ দিয়ে বলা হয়েছে যে, তাদের হিংসা ও বিদ্বেষ দেখে উত্তেজিত হয়ো না। নিজের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলো না। তাদের সাথে তর্ক-বিতর্ক করে নিজের মূল্যবান সময় ও মর্যাদা নষ্ট করো না। বরং ধৈর্যধারণ করে তাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে থাকো। আর লক্ষ্য করো যে, আল্লাহ তাদের সাথে কি ব্যবহার করেন। অনর্থক কাজে নিজের শক্তি ক্ষয় না করে আল্লাহর যিকির ও সৎকাজে সময় ব্যয় করো। এগুলোই আল্লাহর কাছে কাজে লাগবে। আল্লাহর কাছে ঐ অনর্থক কাজগুলোর কোন মূল্য নেই।
তারা মুসলিমদেরকে পথভ্রষ্ট করতে চেষ্টা করে :
وَدَّتْ طَّآئِفَةٌ مِّنْ اَهْلِ الْكِتَابِ لَوْ يُضِلُّوْنَكُمْؕ وَمَا يُضِلُّوْنَ اِلَّاۤ اَنْفُسَهُمْ وَمَا يَشْعُرُوْنَ
আহলে কিতাবের একদল তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট করতে চায়; কিন্তু তারা নিজেদেরকে ব্যতীত অন্য কাউকে পথভ্রষ্ট করে না। অথচ (তারা) তা অনুভব করে না। (সূরা আলে ইমরান- ৬৯)
তারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে চালবাজি করে :
وَقَالَتْ طَّآئِفَةٌ مِّنْ اَهْلِ الْكِتَابِ اٰمِنُوْا بِالَّذِيْۤ اُنْزِلَ عَلَى الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَجْهَ النَّهَارِ وَاكْفُرُوْاۤ اٰخِرَهٗ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُوْنَ
আহলে কিতাবের একদল বলে, ঈমানদারদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে দিনের প্রথমভাগে তা বিশ্বাস করো এবং দিনের শেষভাগে তা অস্বীকার করো, যাতে করে তারা ইসলাম থেকে ফিরে আসে। (সূরা আলে ইমরান- ৭২)
ব্যাখ্যা : খায়বারের কতিপয় ইয়াহুদি পরস্পর পরামর্শ করল যে, দিনের প্রথমভাগে কুরআনের প্রতি ঈমান এনে সন্ধ্যাকালে ফিরে যাও এবং প্রচার করো যে, তাওরাতে শেষ নবী সম্পর্কে যেসব নিদর্শন দেখেছি, মুহাম্মাদের মধ্যে তা নেই। এ কারণেই আমরা ইসলাম গ্রহণ করেও ত্যাগ করেছি। এ ষড়যন্ত্রের ফলে মুসলিমরা মনে করবে, এরাও সত্য কিতাবেরই অনুসারী। হয়তো আমাদের ধর্মে প্রবেশ করে এমন কোন ভুল পেয়েছে, যার কারণে তারা এ ধর্ম ত্যাগ করেছে। ফলে তারা হয়তো ইসলাম ত্যাগ করে ইয়াহুদি হয়ে যাবে। তখন আল্লাহ তা‘আলা নবী ﷺ কে তাদের এ ষড়যন্ত্রের কথা জানিয়ে এ আয়াতটি নাযিল করেন।
তারা মুসলিমদেরকে কষ্ট দেয় :
لَتُبْلَوُنَّ فِۤيْ اَمْوَالِكُمْ وَاَنْفُسِكُمْ وَلَتَسْمَعُنَّ مِنَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَمِنَ الَّذِيْنَ اَشْرَكُوْاۤ اَذًى كَثِيْرًاؕ وَاِنْ تَصْبِرُوْا وَتَتَّقُوْا فَاِنَّ ذٰلِكَ مِنْ عَزْمِ الْاُمُوْرِ
অবশ্যই তোমরা তোমাদের ধনসম্পদ ও তোমাদের জীবনসমূহের দ্বারা পরীক্ষিত হবে এবং তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে ও যারা শিরক করেছে, তাদের নিকট হতে তোমাদেরকে বহু দুঃখজনক বাক্য শুনতে হবে। অতএব যদি তোমরা ধৈর্যধারণ কর ও সংযমী হও, তবে অবশ্যই এটা সুদৃঢ় কার্যাবলির অন্তর্গত হবে। (সূরা আলে ইমরান- ১৮৬)
তারা জাহান্নামে যাবে :
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنْ اَهْلِ الْكِتَابِ وَالْمُشْرِكِيْنَ فِي ْنَارِ جَهَنَّمَ خَالِدِيْنَ فِيْهَاؕ اُوْلٰٓئِكَ هُمْ شَرُّ الْبَرِيَّةِ
আহলে কিতাব ও মুশরিকদের মধ্যে যারা কাফির, তারা জাহান্নামের আগুনে স্থায়ীভাবে থাকবে; আর তারাই সৃষ্টির সবচেয়ে অধম। (সূরা বায়্যিনাহ- ৬)
وَلَمَّا جَآءَهُمْ رَسُوْلٌ مِّنْ عِنْدِ اللهِ مُصَدِّقٌ لِّمَا مَعَهُمْ نَبَذَ فَرِيْقٌ مِّنَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَۗ كِتَابَ اللهِ وَرَآءَ ظُهُوْرِهِمْ كَاَنَّهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ
যখন আল্লাহর নিকট হতে তাদের নিকট যা আছে তার সত্যায়নকারী রাসূল তাদের নিকট আগমন করল, তখন যাদেরকে গ্রন্থ দেয়া হয়েছে তাদের একদল আল্লাহর গ্রন্থকে নিজেদের পশ্চাতে নিক্ষেপ করে দিল, যেন তারা কিছুই জানে না। (সূরা বাক্বারা- ১০১)
তারা মুসলিমদের কিবলাকে মেনে নিতে চায় না :
وَلَئِنْ اَتَيْتَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ بِكُلِّ اٰيَةٍ مَّا تَبِعُوْا قِبْلَتَكَۚ وَمَاۤ اَنْتَ بِتَابِعٍ قِبْلَتَهُمْۚ وَمَا بَعْضُهُمْ بِتَابِعٍ قِبْلَةَ بَعْضٍ
যাদেরকে কিতাব প্রদান করা হয়েছে তাদের নিকট যদি তুমি সকল নিদর্শন আনয়ন কর, তবুও তারা তোমার কিবলাকে গ্রহণ করবে না এবং তুমিও তাদের কিবলাকে গ্রহণ করতে পার না। কেননা তারা পরস্পর একে অপরের কিবলার অনুসারী। (সূরা বাক্বারা- ১৪৫)
তারা মুহাম্মাদ ﷺ কে চেনা সত্ত্বেও বিশ্বাস করেনি :
اَلَّذِيْنَ اٰتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَعْرِفُوْنَهٗ كَمَا يَعْرِفُوْنَ اَبْنَآءَهُمُ الَّذِيْنَ خَسِرُوْاۤ اَنْفُسَهُمْ فَهُمْ لَا يُؤْمِنُوْنَ
আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছি তারা তাকে সেরূপ চেনে, যেরূপ চেনে তাদের সন্তানদেরকে। যারা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করেছে, অথচ তারা ঈমান আনয়ন করছে না। (সূরা আন‘আম- ২০)
তারা আযান নিয়ে ঠাট্টা করে :
وَاِذَا نَادَيْتُمْ اِلَى الصَّلَاةِ اتَّخَذُوْهَا هُزُوًا وَّلَعِبًاؕ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ قَوْمٌ لَّا يَعْقِلُوْنَ
তোমরা যখন সালাতের জন্য আহবান কর তখন তারা তাকে হাসি-তামাশা ও ক্রীড়ার বস্তু হিসেবে গ্রহণ করে। এটা এজন্য যে, তারা এমন এক সম্প্রদায় যাদের কোন বোধশক্তি নেই। (সূরা মায়েদা- ৫৮)
মুসলিমদেরকে দ্বীন থেকে ফিরিয়ে দিতে চায় :
وَدَّ كَثِيْرٌ مِّنْ اَهْلِ الْكِتَابِ لَوْ يَرُدُّوْنَكُمْ مِّنْ ۢبَعْدِ اِيْمَانِكُمْ كُفَّارًاۚ حَسَدًا مِّنْ عِنْدِ اَنْفُسِهِمْ مِّنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْحَقُّۚ فَاعْفُوْا وَاصْفَحُوْا حَتّٰى يَاْتِيَ اللهُ بِاَمْرِه ؕ اِنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
আহলে কিতাবের অনেকে তাদের প্রতি সত্য প্রকাশিত হওয়ার পরও তারা তাদের অন্তর্নিহিত বিদ্বেষের কারণে তোমাদেরকে ঈমান আনার পরে মুরতাদ বানাতে ইচ্ছে করে। সুতরাং আল্লাহর নির্দেশ না আসা পর্যন্ত তোমরা (তাদেরকে) ক্ষমা করো ও উপেক্ষা করতে থাকো, নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। (সূরা বাক্বারা- ১০৯)
ব্যাখ্যা : এখানে মুসলিমদেরকে উপদেশ দিয়ে বলা হয়েছে যে, তাদের হিংসা ও বিদ্বেষ দেখে উত্তেজিত হয়ো না। নিজের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলো না। তাদের সাথে তর্ক-বিতর্ক করে নিজের মূল্যবান সময় ও মর্যাদা নষ্ট করো না। বরং ধৈর্যধারণ করে তাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে থাকো। আর লক্ষ্য করো যে, আল্লাহ তাদের সাথে কি ব্যবহার করেন। অনর্থক কাজে নিজের শক্তি ক্ষয় না করে আল্লাহর যিকির ও সৎকাজে সময় ব্যয় করো। এগুলোই আল্লাহর কাছে কাজে লাগবে। আল্লাহর কাছে ঐ অনর্থক কাজগুলোর কোন মূল্য নেই।
তারা মুসলিমদেরকে পথভ্রষ্ট করতে চেষ্টা করে :
وَدَّتْ طَّآئِفَةٌ مِّنْ اَهْلِ الْكِتَابِ لَوْ يُضِلُّوْنَكُمْؕ وَمَا يُضِلُّوْنَ اِلَّاۤ اَنْفُسَهُمْ وَمَا يَشْعُرُوْنَ
আহলে কিতাবের একদল তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট করতে চায়; কিন্তু তারা নিজেদেরকে ব্যতীত অন্য কাউকে পথভ্রষ্ট করে না। অথচ (তারা) তা অনুভব করে না। (সূরা আলে ইমরান- ৬৯)
তারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে চালবাজি করে :
وَقَالَتْ طَّآئِفَةٌ مِّنْ اَهْلِ الْكِتَابِ اٰمِنُوْا بِالَّذِيْۤ اُنْزِلَ عَلَى الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَجْهَ النَّهَارِ وَاكْفُرُوْاۤ اٰخِرَهٗ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُوْنَ
আহলে কিতাবের একদল বলে, ঈমানদারদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে দিনের প্রথমভাগে তা বিশ্বাস করো এবং দিনের শেষভাগে তা অস্বীকার করো, যাতে করে তারা ইসলাম থেকে ফিরে আসে। (সূরা আলে ইমরান- ৭২)
ব্যাখ্যা : খায়বারের কতিপয় ইয়াহুদি পরস্পর পরামর্শ করল যে, দিনের প্রথমভাগে কুরআনের প্রতি ঈমান এনে সন্ধ্যাকালে ফিরে যাও এবং প্রচার করো যে, তাওরাতে শেষ নবী সম্পর্কে যেসব নিদর্শন দেখেছি, মুহাম্মাদের মধ্যে তা নেই। এ কারণেই আমরা ইসলাম গ্রহণ করেও ত্যাগ করেছি। এ ষড়যন্ত্রের ফলে মুসলিমরা মনে করবে, এরাও সত্য কিতাবেরই অনুসারী। হয়তো আমাদের ধর্মে প্রবেশ করে এমন কোন ভুল পেয়েছে, যার কারণে তারা এ ধর্ম ত্যাগ করেছে। ফলে তারা হয়তো ইসলাম ত্যাগ করে ইয়াহুদি হয়ে যাবে। তখন আল্লাহ তা‘আলা নবী ﷺ কে তাদের এ ষড়যন্ত্রের কথা জানিয়ে এ আয়াতটি নাযিল করেন।
তারা মুসলিমদেরকে কষ্ট দেয় :
لَتُبْلَوُنَّ فِۤيْ اَمْوَالِكُمْ وَاَنْفُسِكُمْ وَلَتَسْمَعُنَّ مِنَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَمِنَ الَّذِيْنَ اَشْرَكُوْاۤ اَذًى كَثِيْرًاؕ وَاِنْ تَصْبِرُوْا وَتَتَّقُوْا فَاِنَّ ذٰلِكَ مِنْ عَزْمِ الْاُمُوْرِ
অবশ্যই তোমরা তোমাদের ধনসম্পদ ও তোমাদের জীবনসমূহের দ্বারা পরীক্ষিত হবে এবং তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে ও যারা শিরক করেছে, তাদের নিকট হতে তোমাদেরকে বহু দুঃখজনক বাক্য শুনতে হবে। অতএব যদি তোমরা ধৈর্যধারণ কর ও সংযমী হও, তবে অবশ্যই এটা সুদৃঢ় কার্যাবলির অন্তর্গত হবে। (সূরা আলে ইমরান- ১৮৬)
তারা জাহান্নামে যাবে :
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنْ اَهْلِ الْكِتَابِ وَالْمُشْرِكِيْنَ فِي ْنَارِ جَهَنَّمَ خَالِدِيْنَ فِيْهَاؕ اُوْلٰٓئِكَ هُمْ شَرُّ الْبَرِيَّةِ
আহলে কিতাব ও মুশরিকদের মধ্যে যারা কাফির, তারা জাহান্নামের আগুনে স্থায়ীভাবে থাকবে; আর তারাই সৃষ্টির সবচেয়ে অধম। (সূরা বায়্যিনাহ- ৬)
তাদের অনুসরণ করা যাবে না :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنْ تُطِيْعُوْا فَرِيْقًا مِّنَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ يَرُدُّوْكُمْ بَعْدَ اِيْمَانِكُمْ كَافِرِيْنَ – وَكَيْفَ تَكْفُرُوْنَ وَاَنْتُمْ تُتْلٰى عَلَيْكُمْ اٰيَاتُ اللهِ وَفِيْكُمْ رَسُوْلُهٗ وَمَنْ يَّعْتَصِمْ بِاللهِ فَقَدْ هُدِيَ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি কিতাবধারীদের কোন দলের অনুসরণ কর, তাহলে ঈমান আনার পর তারা তোমাদেরকে কাফির বানিয়ে দেবে। আর কীভাবে তোমরা আল্লাহর সাথে কুফরী করবে অথচ আল্লাহর আয়াতসমূহ তোমাদের সামনে পাঠ করা হচ্ছে এবং তোমাদের মধ্যে তাঁর রাসূলও বিদ্যমান রয়েছে। আর যে ব্যক্তিই আল্লাহকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরবে, অবশ্যই সে সৎপথে পরিচালিত হবে।
(সূরা আলে ইমরান- ১০০, ১০১)
তাদেরকে বন্ধু বানানো যাবে না :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوا الَّذِيْنَ اتَّخَذُوْا دِيْنَكُمْ هُزُوًا وَّلَعِبًا مِّنَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَالْكُفَّارَ اَوْلِيَآءَۚ وَاتَّقُوا اللهَ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
হে মুমিনগণ! তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে যারা তোমাদের দ্বীনকে হাসি-তামাশা ও ক্রীড়ার বস্তু হিসেবে গ্রহণ করে তোমরা তাদেরকে ও কাফিরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। যদি তোমরা মুমিন হও, তবে আল্লাহকে ভয় করো। (সূরা মায়েদা- ৫৭)
তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে :
هَاۤ اَنْتُمْ اُولَآءِ تُحِبُّوْنَهُمْ وَلَا يُحِبُّوْنَكُمْ وَتُؤْمِنُوْنَ بِالْكِتَابِ كُلِّه ۚ وَاِذَا لَقُوْكُمْ قَالُوْاۤ اٰمَنَّاۗ وَاِذَا خَلَوْا عَضُّوْا عَلَيْكُمُ الْاَنَامِلَ مِنَ الْغَيْظِؕ قُلْ مُوْتُوْا بِغَيْظِكُمْؕ اِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ ۢبِذَاتِ الصُّدُوْرِ
তোমরা তো এমনই যে, তোমরা তাদেরকে ভালোবাস, কিন্তু তারা তোমাদেরকে ভালোবাসে না। আর তোমরা (পূর্ববর্তী) সকল কিতাবের উপর ঈমান রাখ। যখন তারা তোমাদের সাথে মিলিত হয় তখন তারা বলে, আমরা তো ঈমান এনেছি। আর যখন তারা আলাদা হয়ে যায়, তখন তারা তোমাদের উপর রাগের কারণে নিজেদের আঙ্গুলের অগ্রভাগ কামড়াতে থাকে। তাদেরকে বলে দাও, তোমরা তোমাদের ক্রোধের মধ্যে মৃত্যুবরণ করো। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের অন্তরের বিষয় সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত আছেন।
(সূরা আলে ইমরান- ১১৯)
আহলে কিতাবকে দাওয়াত দিতে হবে :
قُلْ يَاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْا اِلٰى كَلِمَةٍ سَوَآءٍ ۢبَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ اَلَّا نَعْبُدَ اِلَّا اللهَ وَلَا نُشْرِكَ بِه شَيْئًا وَّلَا يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا اَرْبَابًا مِّنْ دُوْنِ اللهِؕ فَاِنْ تَوَلَّوْا فَقُوْلُوا اشْهَدُوْا بِاَنَّا مُسْلِمُوْنَ
বলো, হে আহলে কিতাব! তোমরা এমন একটি কালিমার দিকে এসো, যা তোমাদের এবং আমাদের মধ্যে সমান। আর তা হলো, আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করব না এবং তাঁর সাথে কোনকিছুকে শরীক স্থাপন করব না; আর আমাদের কেউ অপর কাউকে রব হিসেবে গ্রহণ করবে না। এরপরও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে বলে দাও, তোমরা সাক্ষী থাকো যে, আমরা মুসলিম। (সূরা আলে ইমরান- ৬৪)
قُلْ يَاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ لِمَ تَكْفُرُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِۗ وَاللهُ شَهِيْدٌ عَلٰى مَا تَعْمَلُوْنَ
বলো, হে আহলে কিতাব! কেন তোমরা আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করছ? অথচ তোমরা যা কিছু করছ আল্লাহ তার উপর সাক্ষী রয়েছেন। (সূরা আলে ইমরান- ৯৮)
يَاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ لِمَ تَلْبِسُوْنَ الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ وَتَكْتُمُوْنَ الْحَقَّ وَاَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
হে আহলে কিতাব! কেন তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করছ এবং সত্যকে গোপন করছ? অথচ তোমরা (সত্যকে) জান। (সূরা আলে ইমরান- ৭১)
قُلْ يَاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ لِمَ تَصُدُّوْنَ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ مَنْ اٰمَنَ تَبْغُوْنَهَا عِوَجًا وَّاَنْتُمْ شُهَدَآءُ وَمَا اللهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ
বলো, হে আহলে কিতাব! তোমরা বক্রতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ঈমানদারদেরকে কেন আল্লাহর পথে (কাজ করতে) বাধা দিচ্ছ? অথচ তোমরাই তো এর সত্যতার সাক্ষ্যদানকারী। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সে ব্যাপারে গাফিল নন। (সূরা আলে ইমরান- ৯৯)
তারা ঈমান আনলে জান্নাতবাসী হবে :
وَلَوْ اَنَّ اَهْلَ الْكِتَابِ اٰمَنُوْا وَاتَّقَوْا لَكَفَّرْنَا عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْ وَلَاَدْخَلْنَاهُمْ جَنَّاتِ النَّعِيْمِ
কিতাবধারীরা যদি ঈমান আনত ও ভয় করত, তাহলে অবশ্যই আমি তাদের দোষগুলোকে ক্ষমা করে দিতাম এবং তাদেরকে সুখময় জান্নাতে প্রবেশ করাতাম। (সূরা মায়েদা- ৬৫)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنْ تُطِيْعُوْا فَرِيْقًا مِّنَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ يَرُدُّوْكُمْ بَعْدَ اِيْمَانِكُمْ كَافِرِيْنَ – وَكَيْفَ تَكْفُرُوْنَ وَاَنْتُمْ تُتْلٰى عَلَيْكُمْ اٰيَاتُ اللهِ وَفِيْكُمْ رَسُوْلُهٗ وَمَنْ يَّعْتَصِمْ بِاللهِ فَقَدْ هُدِيَ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি কিতাবধারীদের কোন দলের অনুসরণ কর, তাহলে ঈমান আনার পর তারা তোমাদেরকে কাফির বানিয়ে দেবে। আর কীভাবে তোমরা আল্লাহর সাথে কুফরী করবে অথচ আল্লাহর আয়াতসমূহ তোমাদের সামনে পাঠ করা হচ্ছে এবং তোমাদের মধ্যে তাঁর রাসূলও বিদ্যমান রয়েছে। আর যে ব্যক্তিই আল্লাহকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরবে, অবশ্যই সে সৎপথে পরিচালিত হবে।
(সূরা আলে ইমরান- ১০০, ১০১)
তাদেরকে বন্ধু বানানো যাবে না :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوا الَّذِيْنَ اتَّخَذُوْا دِيْنَكُمْ هُزُوًا وَّلَعِبًا مِّنَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَالْكُفَّارَ اَوْلِيَآءَۚ وَاتَّقُوا اللهَ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
হে মুমিনগণ! তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে যারা তোমাদের দ্বীনকে হাসি-তামাশা ও ক্রীড়ার বস্তু হিসেবে গ্রহণ করে তোমরা তাদেরকে ও কাফিরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। যদি তোমরা মুমিন হও, তবে আল্লাহকে ভয় করো। (সূরা মায়েদা- ৫৭)
তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে :
هَاۤ اَنْتُمْ اُولَآءِ تُحِبُّوْنَهُمْ وَلَا يُحِبُّوْنَكُمْ وَتُؤْمِنُوْنَ بِالْكِتَابِ كُلِّه ۚ وَاِذَا لَقُوْكُمْ قَالُوْاۤ اٰمَنَّاۗ وَاِذَا خَلَوْا عَضُّوْا عَلَيْكُمُ الْاَنَامِلَ مِنَ الْغَيْظِؕ قُلْ مُوْتُوْا بِغَيْظِكُمْؕ اِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ ۢبِذَاتِ الصُّدُوْرِ
তোমরা তো এমনই যে, তোমরা তাদেরকে ভালোবাস, কিন্তু তারা তোমাদেরকে ভালোবাসে না। আর তোমরা (পূর্ববর্তী) সকল কিতাবের উপর ঈমান রাখ। যখন তারা তোমাদের সাথে মিলিত হয় তখন তারা বলে, আমরা তো ঈমান এনেছি। আর যখন তারা আলাদা হয়ে যায়, তখন তারা তোমাদের উপর রাগের কারণে নিজেদের আঙ্গুলের অগ্রভাগ কামড়াতে থাকে। তাদেরকে বলে দাও, তোমরা তোমাদের ক্রোধের মধ্যে মৃত্যুবরণ করো। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের অন্তরের বিষয় সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত আছেন।
(সূরা আলে ইমরান- ১১৯)
আহলে কিতাবকে দাওয়াত দিতে হবে :
قُلْ يَاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْا اِلٰى كَلِمَةٍ سَوَآءٍ ۢبَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ اَلَّا نَعْبُدَ اِلَّا اللهَ وَلَا نُشْرِكَ بِه شَيْئًا وَّلَا يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا اَرْبَابًا مِّنْ دُوْنِ اللهِؕ فَاِنْ تَوَلَّوْا فَقُوْلُوا اشْهَدُوْا بِاَنَّا مُسْلِمُوْنَ
বলো, হে আহলে কিতাব! তোমরা এমন একটি কালিমার দিকে এসো, যা তোমাদের এবং আমাদের মধ্যে সমান। আর তা হলো, আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করব না এবং তাঁর সাথে কোনকিছুকে শরীক স্থাপন করব না; আর আমাদের কেউ অপর কাউকে রব হিসেবে গ্রহণ করবে না। এরপরও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে বলে দাও, তোমরা সাক্ষী থাকো যে, আমরা মুসলিম। (সূরা আলে ইমরান- ৬৪)
قُلْ يَاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ لِمَ تَكْفُرُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِۗ وَاللهُ شَهِيْدٌ عَلٰى مَا تَعْمَلُوْنَ
বলো, হে আহলে কিতাব! কেন তোমরা আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করছ? অথচ তোমরা যা কিছু করছ আল্লাহ তার উপর সাক্ষী রয়েছেন। (সূরা আলে ইমরান- ৯৮)
يَاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ لِمَ تَلْبِسُوْنَ الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ وَتَكْتُمُوْنَ الْحَقَّ وَاَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
হে আহলে কিতাব! কেন তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করছ এবং সত্যকে গোপন করছ? অথচ তোমরা (সত্যকে) জান। (সূরা আলে ইমরান- ৭১)
قُلْ يَاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ لِمَ تَصُدُّوْنَ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ مَنْ اٰمَنَ تَبْغُوْنَهَا عِوَجًا وَّاَنْتُمْ شُهَدَآءُ وَمَا اللهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ
বলো, হে আহলে কিতাব! তোমরা বক্রতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ঈমানদারদেরকে কেন আল্লাহর পথে (কাজ করতে) বাধা দিচ্ছ? অথচ তোমরাই তো এর সত্যতার সাক্ষ্যদানকারী। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সে ব্যাপারে গাফিল নন। (সূরা আলে ইমরান- ৯৯)
তারা ঈমান আনলে জান্নাতবাসী হবে :
وَلَوْ اَنَّ اَهْلَ الْكِتَابِ اٰمَنُوْا وَاتَّقَوْا لَكَفَّرْنَا عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْ وَلَاَدْخَلْنَاهُمْ جَنَّاتِ النَّعِيْمِ
কিতাবধারীরা যদি ঈমান আনত ও ভয় করত, তাহলে অবশ্যই আমি তাদের দোষগুলোকে ক্ষমা করে দিতাম এবং তাদেরকে সুখময় জান্নাতে প্রবেশ করাতাম। (সূরা মায়েদা- ৬৫)
ইয়াহুদিরা উযাইর (আঃ) কে আল্লাহর পুত্র মনে করত :
وَقَالَتِ الْيَهُوْدُ عُزَيْرُنِ ابْنُ اللهِ
ইয়াহুদিরা বলে, উযাইর আল্লাহর পুত্র। (সূরা তাওবা- ৩০)
ব্যাখ্যা : উযাইর (আঃ) এর অপর নাম হলো ‘আয্রা’। ইয়াহুদিরা তাঁকে নিজেদের ধর্মের মুজাদ্দিদ বা সংস্কারক মনে করত। ইসরাঈলী বর্ণনা অনুযায়ী সুলায়মান (আঃ) এর পরে বনী ইসরাঈলদের উপর যে কঠিন দুর্যোগ নেমে আসে তার ফলে বেবিলনের বন্দি জীবন যাপন ইসরাঈলী জনগণকে তাদের শরীয়াত ও ঐতিহ্যের সাথে অপরিচিত করে দিয়েছিল। অবশেষে উযাইর (আঃ) এ শরীয়াতকে পুনরুজ্জীবিত করেন। এ কারণেই বনী ইসরাঈলরা তাকে অত্যাধিক ভক্তি করত। কোন কোন লোক তাঁকে আল্লাহর পুত্র পর্যন্ত মনে করত। নাউযুবিল্লাহ
তারা আল্লাহকে কৃপণ মনে করে :
وَقَالَتِ الْيَهُوْدُ يَدُ اللهِ مَغْلُوْلَةٌؕ غُلَّتْ اَيْدِيْهِمْ وَلُعِنُوْا بِمَا قَالُوْا بَلْ يَدَاهُ مَبْسُوْطَتَانِ يُنْفِقُ كَيْفَ يَشَآءُ
ইয়াহুদিরা বলে, আল্লাহর হাত রুদ্ধ। বস্তুত তাদের হাতই রুদ্ধ এবং তারা যা বলে সেজন্য তারা অভিশপ্ত। আর আল্লাহর উভয় হাতই প্রসারিত; সুতরাং তিনি যেভাবে ইচ্ছা দান করেন। (সূরা মায়েদা- ৬৪)
তারা বলে আল্লাহ ফকির হয়ে গেছেন :
لَقَدْ سَمِعَ اللهُ قَوْلَ الَّذِيْنَ قَالُوْاۤ اِنَّ اللهَ فَقِيْرٌ وَّنَحْنُ اَغْنِيَآءُ سَنَكْتُبُ مَا قَالُوْا وَقَتْلَهُمُ الْاَنْۢبِيَآءَ بِغَيْرِ حَقٍّۚ وَنَقُوْلُ ذُوْقُوْا عَذَابَ الْحَرِيْقِ
অবশ্যই আল্লাহ তাদের কথা শ্রবণ করেছেন যারা বলে, আল্লাহ দরিদ্র এবং আমরা ধনী। তারা যা বলেছে এবং অন্যায়ভাবে যেসব নবীদেরকে হত্যা করেছে, অচিরেই আমি এসবকিছুই লিপিবদ্ধ করব এবং তাদেরকে বলব, তোমরা প্রদাহকারী শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করো। (সূরা আলে ইমরান- ১৮১)
শানে নুযূল : ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘‘এমন ব্যক্তি কে আছে যে আল্লাহকে কারযে হাসানা প্রদান করবে’’- আয়াতটি নাযিল হলে ইয়াহুদিরা নবী ﷺ এর খেদমতে এসে বলল, হে মুহাম্মাদ! আপনার আল্লাহ কি দরিদ্র হয়ে পড়েছেন যে, বান্দার নিকট ভিক্ষা চাচ্ছেন? তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতটি নাযিল করেন।
তারা নিজেদেরকে হেদায়াতের উৎস মনে করে :
وَقَالُوْا كُوْنُوْا هُوْدًا اَوْ نَصَارٰى تَهْتَدُوْاؕ قُلْ بَلْ مِلَّةَ اِبْرَاهِيْمَ حَنِيْفًاؕ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
তারা বলে, তোমরা ইয়াহুদি অথবা খ্রিস্টান হয়ে যাও, তবেই হেদায়াত পাবে। বলো, বরং আমরাই ইবরাহীমের সুদৃঢ় মিল্লাতের অনুসরণ করি, আর তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। (সূরা বাক্বারা- ১৩৫)
তারা নিজেদেরকে আল্লাহর প্রিয় পাত্র বলে মনে করে :
وَقَالَتِ الْيَهُوْدُ وَالنَّصَارٰى نَحْنُ اَبْنَآءُ اللهِ وَاَحِبَّآؤُهٗؕ قُلْ فَلِمَ يُعَذِّبُكُمْ بِذُنُوْبِكُمْؕ بَلْ اَنْتُمْ بَشَرٌ مِّمَّنْ خَلَقَؕ يَغْفِرُ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيُعَذِّبُ مَنْ يَّشَآءُ
ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানরা বলে থাকে, আমরা আল্লাহর পুত্র ও তাঁর প্রিয়। (হে নবী!) বলো, তবে কেন তিনি তোমাদের পাপের জন্য তোমাদেরকে শাস্তি দেন? বরং তোমরা তাদের মতোই সাধারণ মানুষ, যাদেরকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করেন এবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেন। (সূরা মায়েদা- ১৮)
ব্যাখ্যা : ইয়াহুদিরা একমাত্র ইয়াহুদি গোষ্ঠীকেই পরকালীন মুক্তির অধিকারী মনে করত। এ আয়াতে এ ধারণার প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। তারা এ ভুল ধারণা পোষণ করত যে, তাদের সাথে আল্লাহর কোন বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে- যা অন্য মানুষের সাথে নেই। কাজেই তাদের দলের সাথে যে-ই সম্পর্ক রাখবে তার আকীদা-বিশ্বাস, আমল-আখলাক যাই হোক না কেন সে নাজাত লাভ করবে। আর তাদের দলের বাইরের সমগ্র মানবজাতি কেবল জাহান্নামের ইন্ধন হওয়ার জন্যই সৃষ্টি হয়েছে। এ ভুল ধারণা দূর করার জন্য বলা হচ্ছে, আল্লাহর কাছে তোমাদের দল ও গোত্র বিভক্তিই আসল কথা নয় বরং সেখানে একমাত্র নির্ভরযোগ্য বিষয় হচ্ছে, তোমাদের ঈমান ও সৎকাজ। যে ব্যক্তি এগুলো নিয়ে আল্লাহর সামনে হাযির হবে, সে তার রবের কাছ থেকে প্রতিদান লাভ করবে। আল্লাহ সেখানে ফায়সালা করবেন মানুষের গুণাবলির ভিত্তিতে, জনসংখ্যার ভিত্তিতে নয়।
তারা নিজেদেরকে জান্নাতী বলে দাবী করে :
وَقَالُوْا لَنْ يَّدْخُلَ الْجَنَّةَ اِلَّا مَنْ كَانَ هُوْدًا اَوْ نَصَارٰىؕ تِلْكَ اَمَانِيُّهُمْؕ قُلْ هَاتُوْا بُرْهَانَكُمْ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ
তারা বলে, যারা ইয়াহুদি বা খ্রিস্টান, তারা ছাড়া আর কেউ-ই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, এটা তাদের আকাঙ্ক্ষা। বলো, যদি তোমরা সত্যবাদী হও, তবে তোমাদের প্রমাণ উপস্থিত করো। (সূরা বাক্বারা- ১১১)
তারা নিজেদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত মনে করে :
ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ قَالُوْا لَنْ تَمَسَّنَا النَّارُ اِلَّاۤ اَيَّامًا مَّعْدُوْدَاتٍ۪ وَغَرَّهُمْ فِيْ دِيْنِهِمْ مَّا كَانُوْا يَفْتَرُوْنَ
এটা এজন্য যে, তারা বলে, কয়েকটি নির্দিষ্ট দিন ছাড়া আগুন আমাদেরকে স্পর্শ করবে না। এভাবে তারা মনগড়া যা তৈরি করেছিল, তা তাদেরকে দ্বীনের ব্যাপারে ধোঁকায় ফেলে দিয়েছে। (সূরা আলে ইমরান- ২৪)
ব্যাখ্যা : তারা নিজেদেরকে আল্লাহর প্রিয়পাত্র মনে করে। কেননা তাদের মনে এ ভুল ধারণা বদ্ধমূল হয়ে গেছে যে, তারা যা কিছুই করুক না কেন জান্নাত তাদের নামে লিখে দেয়া হয়েছে, তারা অমুকের সন্তান, অমুকের উম্মত, অমুকের মুরীদ এবং অমুকের হাতে হাত রেখেছে, কাজেই জাহান্নামের আগুনের কোন ক্ষমতাই নেই তাদেরকে স্পর্শ করার। আর যদিও তাদেরকে কখনো জাহান্নামে দেয়া হয়, তাহলে তা হবে মাত্র কয়েক দিনের জন্য। গোনাহের যে দাগগুলো তাদের গায়ে লেগে গেছে সেগুলো মুছে ফেলে সেখান থেকে তাদেরকে সোজা জান্নাতে পাঠিয়ে দেয়া হবে। এ ধরনের চিন্তাধারা তাদেরকে এমনি নির্ভিক বানিয়ে দিয়েছিল, যার ফলে তারা নিশ্চিন্তে কঠিন থেকে কঠিনতর অপরাধ করে যেত, নিকৃষ্টতম গোনাহের কাজ করত, প্রকাশ্যে সত্যের বিরোধিতা করত; কিন্তু কখনো তাদের মনে সামান্যতম আল্লাহর ভয়ও জাগত না।
وَقَالُوْا لَنْ تَمَسَّنَا النَّارُ اِلَّاۤ اَيَّامًا مَّعْدُوْدَةًؕ قُلْ اَتَّخَذْتُمْ عِنْدَ اللهِ عَهْدًا فَلَنْ يُّخْلِفَ اللهُ عَهْدَهٗۤ اَمْ تَقُوْلُوْنَ عَلَى اللهِ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ
তারা বলে, নির্ধারিত কিছু দিন ব্যতীত (জাহান্নামের) অগ্নি আমাদেরকে স্পর্শ করবে না। বলো, তোমরা কি আল্লাহর নিকট হতে অঙ্গীকার নিয়েছ, ফলে আল্লাহ কখনই স্বীয় অঙ্গীকারের বিপরীত করবেন না? নাকি আল্লাহ সম্বন্ধে যা জান না, তাই বলছ? (সূরা বাক্বারা- ৮০)
তারা যাদুমন্ত্র ও তাগুতের উপর বিশ্বাস রাখত :
اَلَمْ تَرَ اِلَى الَّذِيْنَ اُوْتُوْا نَصِيْبًا مِّنَ الْكِتَابِ يُؤْمِنُوْنَ بِالْجِبْتِ وَالطَّاغُوْتِ وَيَقُوْلُوْنَ لِلَّذِيْنَ كَفَرُوْا هٰۤؤُلَآءِ اَهْدٰى مِنَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا سَبِيْلًا
তুমি কি তাদেরকে দেখনি যাদেরকে কিতাবের একাংশ দেয়া হয়েছিল, তারা যাদুমন্ত্র ও তাগুতের প্রতি ঈমান রাখত? আর তারা কাফিরদের সম্বন্ধে বলত, এদের পথই মুমিনদের চেয়ে বেশি উৎকৃষ্ট। (সূরা নিসা- ৫১)
ব্যাখ্যা : جِبْتٌ (জিব্ত) অর্থ অসত্য, অমূলক, ভিত্তিহীন ও অকল্যাণকর বস্তু ইত্যাদি। ইসলামের পরিভাষায় যাদু-টোনা, ভাগ্য গণনা, তন্ত্রমন্ত্র এসব কুসংস্কার ও অন্যান্য যাবতীয় কাল্পনিক ও বানোয়াট কথা ও ক্রিয়াকর্মকে জিব্ত বলা হয়েছে। অনুমানভিত্তিক সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য চিহ্নিত করার বিভিন্ন পদ্ধতিও জিব্ত এর অন্তর্ভুক্ত।
তারা ভুল আকিদা-বিশ্বাস থেকে ফিরতে চায় না :
وَقَالُوْا قُلُوْبُنَا غُلْفٌؕ بَلْ لَّعَنَهُمُ اللهُ بِكُفْرِهِمْ فَقَلِيْلًا مَّا يُؤْمِنُوْنَ
তারা বলে, আমাদের হৃদয় আচ্ছাদিত। বরং তাদের অবিশ্বাসের কারণে আল্লাহ তাদেরকে অভিসম্পাত করেছেন। ফলে তারা অতি অল্প সংখ্যকই ঈমান এনে থাকে। (সূরা বাক্বারা- ৮৮)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ আমাদের আকীদা-বিশ্বাস ও চিন্তা-চেতনা এতই পাকাপোক্ত যে, তোমরা যা কিছুই বল না কেন, আমাদের মনে তা কোন প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। যেসব লোকের মন-মস্তিষ্ক মূর্খতার বিদ্বেষে আচ্ছন্ন থাকে, তারাই এ ধরনের কথা বলে। উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া আকীদা-বিশ্বাস ও চিন্তার ভুল বলিষ্ঠ দলীল ও যুক্তির মাধ্যমে প্রমাণিত হওয়ার পরও তার উপর অবিচল থাকার চেয়ে বড় অন্যায় মানুষের আর কী হতে পারে?
তারা আখিরাতের বিনিময়ে দুনিয়ার সুযোগ লাভ করে :
اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ اشْتَرَوُا الْحَيَاةَ الدُّنْيَا بِالْاٰخِرَةِؗ فَلَا يُخَفَّفُ عَنْهُمُ الْعَذَابُ وَلَا هُمْ يُنْصَرُوْنَ
এরাই পরকালের বিনিময়ে পার্থিব জীবন ক্রয় করে নিয়েছে, অতএব তাদের দন্ড হালকা করা হবে না এবং তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না। (সূরা বাক্বারা- ৮৬)
তারা বিশ্বাসঘাতকতা করে :
وَلَا تَزَالُ تَطَّلِعُ عَلٰى خَآئِنَةٍ مِّنْهُمْ اِلَّا قَلِيْلًا مِّنْهُمْ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاصْفَحْؕ اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِيْنَ
(হে নবী) তুমি সর্বদা অল্প সংখ্যক ব্যতীত তাদের সকলকেই বিশ্বাসঘাতক হিসেবে দেখতে পাবে। সুতরাং তাদেরকে ক্ষমা করো এবং উপেক্ষা করো; নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্ম পরায়ণদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা মায়েদা- ১৩)
ব্যাখ্যা : এর একটি অর্থ হচ্ছে, এরা গোয়েন্দা হয়ে আসে। এরা নবী ﷺ ও মুসলিমদের মজলিসে ঘোরাফেরা করে। কোন গোপন কথা কানে আসলে তা মুসলিমদের শত্রুদের কাছে পৌঁছে দেয়। দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, এরা দোষারোপ ও নিন্দা করার জন্য তথ্য সংগ্রহ করে বেড়ায়। যেসব লোক সরাসরি নবী ﷺ ও মুসলিমদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি তাদের মধ্যে ভুল ধারণা সৃষ্টি করে। নবী ও ইসলাম সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার কাজে লিপ্ত হয়।
তারা তাওরাতের বিধান অমান্য করত :
اَلَمْ تَرَ اِلَى الَّذِيْنَ اُوْتُوْا نَصِيْبًا مِّنَ الْكِتَابِ يُدْعَوْنَ اِلٰى كِتَابِ اللهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ يَتَوَلّٰى فَرِيْقٌ مِّنْهُمْ وَهُمْ مُّعْرِضُوْنَ
আপনি কি তাদের ব্যাপারে লক্ষ্য করেছেন, যাদেরকে কিতাবের কিছু অংশ দেয়া হয়েছিল? তাদেরকে আল্লাহর কিতাবের দিকে ডাকা হয়েছিল, যাতে করে এটা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেয়। তারপরও তাদের একদল (এ থেকে) মুখ ফিরিয়ে নিল; মূলত তারাই অমান্যকারী। (সূরা আলে ইমরান- ২৩)
وَكَيْفَ يُحَكِّمُوْنَكَ وَعِنْدَهُمُ التَّوْرَاةُ فِيْهَا حُكْمُ اللهِ ثُمَّ يَتَوَلَّوْنَ مِنْ ۢبَعْدِ ذٰلِكَؕ وَمَاۤ اُولٰٓئِكَ بِالْمُؤْمِنِيْنَ
তারা কীভাবে আপনার উপর বিচার-ফায়সালার ভার অর্পণ করবে, অথচ তাদের কাছে রয়েছে তাওরাত? তাতে রয়েছে আল্লাহর নির্দেশ। তারপরও যারা পেছনে মুখ ফিরিয়ে নেয়; তারা কখনো মুমিন নয়। (সূরা মায়েদা- ৪৩)
তাদের মূর্খরা ধারণার উপর পরিচালিত হতো :
وَمِنْهُمْ اُمِّيُّوْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ الْكِتَابَ اِلَّاۤ اَمَانِيَّ وَاِنْ هُمْ اِلَّا يَظُنُّوْنَ
তাদের মধ্যে অনেক অশিক্ষিত লোক আছে, যারা প্রবৃত্তি ব্যতীত কোন গ্রন্থ সম্পর্কে অবগত নয়। আর তারা কেবল ধারণা করে থাকে। (সূরা বাক্বারা- ৭৮)
ব্যাখ্যা : তাদের জনগণের অবস্থা এমন ছিল যে, আল্লাহর কিতাবের কোন জ্ঞানই তাদের ছিল না। আল্লাহ তাঁর কিতাবে দ্বীনের কী কী মূলনীতি বর্ণনা করেছেন, শরীয়াত ও নৈতিকতার কী বিধান দিয়েছেন তার কিছুই তারা জানত না। এ জ্ঞান না থাকার কারণে তারা নিজেদের ইচ্ছা, আশা-আকাঙ্ক্ষা ও কল্পনানুসারে বিভিন্ন মনগড়া কথাকে দ্বীন মনে করত এবং এরই ভিত্তিতে গড়ে ওঠা মিথ্যা আশা বুকে নিয়ে জীবন ধারণ করত।
ইসমাঈলী বংশে জন্ম হওয়াতে মুহাম্মাদ ﷺ -কে মানত না :
اَمْ يَحْسُدُوْنَ النَّاسَ عَلٰى مَاۤ اٰتَاهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٖۚ فَقَدْ اٰتَيْنَاۤ اٰلَ اِبْرَاهِيْمَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَاٰتَيْنَاهُمْ مُّلْكًا عَظِيْمًا
তারা নাকি অন্যান্য মানব সন্তানদের ব্যাপারে বিদ্বেষ পোষণ করে, যাদেরকে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহ দান করেছেন। অথচ আমি তো ইবরাহীমের বংশধরকেও কিতাব ও হেকমত প্রদান করেছিলাম এবং তাদেরকে বিশাল রাজত্ব দান করেছিলাম। (সূরা নিসা- ৫৪)
তারা নবী ﷺ এর সাথে খারাপ আচরণ করত :
وَيَقُوْلُوْنَ سَمِعْنَا وَعَصَيْنَا وَاسْمَعْ غَيْرَ مُسْمَعٍ وَّرَاعِنَا لَيًّا ۢبِاَلْسِنَتِهِمْ وَطَعْنًا فِى الدِّيْنِؕ وَلَوْ اَنَّهُمْ قَالُوْا سَمِعْنَا وَاَطَعْنَا وَاسْمَعْ وَانْظُرْنَا لَكَانَ خَيْرًا لَّهُمْ وَاَقْوَمَ وَلٰكِنْ لَّعَنَهُمُ اللهُ بِكُفْرِهِمْ فَلَا يُؤْمِنُوْنَ اِلَّا قَلِيْلًا
তারা বলে, আমরা শ্রবণ করলাম ও অমান্য করলাম। তারা শুনেও না শুনার ভান করে এবং দ্বীনের প্রতি তাচ্ছিল্য করার উদ্দেশ্যে নিজেদের জিহবাকে কুঞ্চিত করে বলে, ‘রাইনা’। কিন্তু তারা যদি বলত, শ্রবণ করলাম ও আনুগত্য করলাম অথবা শ্রবণ করুন ও আমাদের প্রতি লক্ষ্য করুন, তবে এটাই তাদের জন্য ভালো হতো এবং সঙ্গতিপূর্ণ হতো। কিন্তু তাদের কুফরীর জন্য আল্লাহ তাদেরকে লানত করেছেন। ফলে তাদের অল্প সংখ্যকই ঈমান আনয়ন করে থাকে। (সূরা নিসা- ৪৬)
কোন বিপদ আসলে নবী ﷺ এর উপর দোষ চাপাত :
وَاِنْ تُصِبْهُمْ حَسَنَةٌ يَّقُوْلُوْا هٰذِهٖ مِنْ عِنْدِ اللهِۚ وَاِنْ تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌ يَّقُوْلُوْا هٰذِهٖ مِنْ عِنْدِكَؕ قُلْ كُلٌّ مِّنْ عِنْدِ اللهِؕ فَمَالِ هٰۤؤُلَآءِ الْقَوْمِ لَا يَكَادُوْنَ يَفْقَهُوْنَ حَدِيْثًا
যদি তাদের উপর কোন কল্যাণ পতিত হয় তবে তারা বলে, এটা আল্লাহর নিকট হতে। আর যদি তাদের উপর কোন অকল্যাণ পতিত হয় তবে তারা বলে, এটা তোমার নিকট হতে। (তাদেরকে) বলো, সবকিছুই আল্লাহর নিকট হতে। এ সম্প্রদায়ের কী হলো যে, এরা একেবারেই কোন কথা বুঝে না। (সূরা নিসা- ৭৮)
নবী ﷺ এর ফায়সালা তাদের পক্ষে হলে মানত নতুবা অমান্য করত :
يُحَرِّفُوْنَ الْكَلِمَ مِنْ ۢبَعْدِ مَوَاضِعِهٖۚ يَقُوْلُوْنَ اِنْ اُوْتِيْتُمْ هٰذَا فَخُذُوْهُ وَاِنْ لَّمْ تُؤْتَوْهُ فَاحْذَرُوْا
তারা আল্লাহর কালামকে তার সঠিক স্থান হতে বিচ্যুত করে বলত যে, এ নবী যদি তোমাদেরকে এরকম ফায়সালা দেন, তবে তোমরা তা গ্রহণ করবে। আর যদি এর বিপরীত কোন ফায়সালা দেন তাহলে একে এড়িয়ে যাবে। (সূরা মায়েদা- ৪১)
ব্যাখ্যা : তাওরাতের যেসব বিধান তাদের মনপূত নয়, সেগুলোর মধ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে রদবদল করে। শব্দের অর্থ পরিবর্তন করে সেখান থেকে নিজেদের ইচ্ছামতো বিধান তৈরি করে। একদা খায়বারের কোন ইয়াহুদি পরিবারের দু’জন বিবাহিত পুরুষ ও নারী যিনা করল। তাওরাতে এর শাস্তি ‘‘হত্যা’’। তারা মদিনায় এসে রাসূল ﷺ কে জিজ্ঞেস করল, আপনার নিকট এর বিধান কী? তিনি বললেন, ‘‘হত্যা’’। তারা বলল, তাওরাতের বিধান তো এরূপ নয়। বরং ৪০ বেত এবং মুখে কালি মেখে গাধার পিঠে চড়িয়ে শহরে ঘুরানো। জিবরাঈল (আঃ) এসে রাসূল ﷺ কে বললেন, এরা মিথ্যা কথা বলছে। আপনি ইয়াহুদি আলিম ইবনে সুরিয়াকে জিজ্ঞেস করুন। তাকে জিজ্ঞেস করা হলে সে বলল, তাওরাতেও মৃত্যু দন্ডেরই বিধান রয়েছে। অতঃপর রাসূল ﷺ রায় দিলেন, উভয়কে মসজিদের পাশে পাথর মেরে হত্যা করা হোক। তখন এ পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত আয়াতটি নাযিল হয়।
নবী ﷺ কে মানার ক্ষেত্রে মিথ্যা শর্ত জুড়ে দিত :
اَلَّذِيْنَ قَالُوْاۤ اِنَّ اللهَ عَهِدَ اِلَيْنَاۤ اَلَّا نُؤْمِنَ لِرَسُوْلٍ حَتّٰى يَاْتِيَنَا بِقُرْبَانٍ تَاْكُلُهُ النَّارُ قُلْ قَدْ جَآءَكُمْ رُسُلٌ مِّنْ قَبْلِيْ بِالْبَيِّنَاتِ وَبِالَّذِيْ قُلْتُمْ فَلِمَ قَتَلْتُمُوْهُمْ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ
যারা বলে, স্বয়ং আল্লাহই তো আমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন- যেন আমরা কোন রাসূলের উপর ঈমান না আনি, যতক্ষণ না সে আমাদের জন্য এমন একটা কুরবানী এনে হাযির করবে, যাকে গায়েব থেকে আসা এক আগুন এসে খেয়ে ফেলবে। হে মুহাম্মাদ! তুমি তাদেরকে বলে দাও, হ্যাঁ! আমার আগেও তোমাদের কাছে অনেক নবী-রাসূল এসেছে। তারা সবাই উজ্জল নিদর্শন নিয়েই এসেছিল। তোমরা আজ যে কথা বলছ, (ইতোপূর্বে) তাও তো তারা নিয়ে এসেছিল। তা সত্ত্বেও তোমরা তাদেরকে হত্যা করলে কেন? যদি তোমরা এতই সত্যবাদী হয়ে থাক। (সূরা আলে ইমরান- ১৮৩)
কুরআনকে মানতে অস্বীকার করত :
وَاِذَا قِيْلَ لَهُمْ اٰمِنُوْا بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ قَالُوْا نُؤْمِنُ بِمَاۤ اُنْزِلَ عَلَيْنَا وَيَكْفُرُوْنَ بِمَا وَرَآءَهٗۗ وَهُوَ الْحَقُّ مُصَدِّقًا لِّمَا مَعَهُمْ
যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তার উপর ঈমান আনয়ন করো। তখন তারা বলে, যা আমাদের প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে আমরা তার প্রতি ঈমান এনেছি; এছাড়া যা রয়েছে তা তারা অবিশ্বাস করে। অথচ এটা সত্য যে, তাদের সাথে যা রয়েছে এটা (কুরআন) তারই সত্যায়নকারী। (সূরা বাক্বারা- ৯১)
وَلَمَّا جَآءَهُمْ كِتَابٌ مِّنْ عِنْدِ اللهِ مُصَدِّقٌ لِّمَا مَعَهُمْ وَكَانُوْا مِنْ قَبْلُ يَسْتَفْتِحُوْنَ عَلَى الَّذِيْنَ كَفَرُوْاۚ فَلَمَّا جَآءَهُمْ مَّا عَرَفُوْا كَفَرُوْا بِهٖ فَلَعْنَةُ اللهِ عَلَى الْكَافِرِيْنَ
যখন আল্লাহর পক্ষ হতে তাদের নিকট যা আছে তার সত্যতার সমর্থক গ্রন্থ (কুরআন) উপস্থিত হলো, যদিও তারা ইতোপূর্বে কাফিরদের বিরুদ্ধে এর সাহায্যে বিজয় প্রার্থনা করত। অতঃপর যখন তাদের নিকট সেই পরিচিত কিতাব আসল, তখন তারা তাকে অস্বীকার করল। সুতরাং এরকম কাফিরদের উপর আল্লাহর লানত বর্ষিত হোক। (সূরা বাক্বারা- ৮৯)
ব্যাখ্যা : মদিনায় আসার পর নবী ﷺ সর্বপ্রথম ইয়াহুদিদের সাথে সৎ প্রতিবেশী সুলভ জীবন যাপন করার জন্য পারস্পরিক সাহায্য সহযোগিতার চুক্তি করেছিলেন। তাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য তিনি নিজের সামর্থ্যানুযায়ী পূর্ণ প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। তাছাড়া ধর্মীয় দিক দিয়েও তিনি ইয়াহুদিদেরকে মুশরিকদের তুলনায় নিজের অনেক কাছের মনে করতেন। প্রত্যেক ব্যাপারেই তিনি মুশরিকদের মুকাবিলায় আহলে কিতাবের মতকে অগ্রাধিকার দিতেন। কিন্তু নবী ﷺ নির্ভেজাল তাওহীদ ও সচ্চরিত্র নীতি সংক্রান্ত যেসব কথা প্রচার করছিলেন, গোমরাহীর বিরুদ্ধে যে সমালোচনা করছিলেন এবং ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য যে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছিলেন, ইয়াহুদি উলামা ও মাশায়েখরা তা একটুও পছন্দ করত না। এ নতুন আন্দোলন যাতে কোনভাবেই সাফল্য লাভ করতে না পারে, সেজন্য তারা অনবরত ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছিল।
তারা তাদের আলিমদেরকে প্রভু মনে করত :
اِتَّخَذُوْاۤ اَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ اَرْبَابًا مِّنْ دُوْنِ اللهِ وَالْمَسِيْحَ ابْنَ مَرْيَمَۚ وَمَاۤ اُمِرُوْاۤ اِلَّا لِيَعْبُدُوْاۤ اِلٰهًا وَّاحِدًاۚ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ سُبْحَانَهٗ عَمَّا يُشْرِكُوْنَ
তারা আল্লাহ ব্যতীত তাদের আলিম ও সংসারবিরাগীদেরকে তাদের প্রভু হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং মারইয়ামের পুত্র মাসীহকেও। অথচ তারা এক ইলাহের ইবাদাত করার জন্যই আদিষ্ট হয়েছিল। (কেননা) তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই। তারা যাকে শরীক করে তা হতে তিনি কতই না পবিত্র।
(সূরা তাওবা- ৩১)
ব্যাখ্যা : আদী ইবনে হাতেম ছিলেন খ্রিস্টান। ইসলাম গ্রহণ করার সময় তিনি নবী ﷺ কে কয়েকটি প্রশ্ন করেন। এর মধ্যে একটি ছিল, কুরআনের এ আয়াতটিতে আমাদের বিরুদ্ধে আমাদের উলামা ও দরবেশদেরকে উপাস্য বানিয়ে নেয়ার যে দোষারোপ করা হয়েছে তার প্রকৃত তাৎপর্য কী? জবাবে নবী ﷺ বলেন, তারা যেগুলোকে হারাম বলত তোমরাও সেগুলোকে হারাম বলে মেনে নিতে, এ কথা কি সত্য নয়? জবাবে আদী বলেন, হ্যাঁ। রাসূল ﷺ বলেন, এটিই হচ্ছে তাদেরকে প্রভু বানিয়ে নেয়া। সনদ ছাড়াই যারা মানব জীবনের জন্য জায়েয ও নাজায়েযের সীমানা নির্ধারণ করে, তারা নিজেদের ধারণা মতে নিজেরাই আল্লাহর মর্যাদায় সমাসীন হয়। আর যারা শরীয়াতের বিধান রচনার অধিকার তাদের জন্য স্বীকার করে নেয়, মূলত তারা তাদেরকে প্রভুতে পরিণত করে।
وَقَالَتِ الْيَهُوْدُ عُزَيْرُنِ ابْنُ اللهِ
ইয়াহুদিরা বলে, উযাইর আল্লাহর পুত্র। (সূরা তাওবা- ৩০)
ব্যাখ্যা : উযাইর (আঃ) এর অপর নাম হলো ‘আয্রা’। ইয়াহুদিরা তাঁকে নিজেদের ধর্মের মুজাদ্দিদ বা সংস্কারক মনে করত। ইসরাঈলী বর্ণনা অনুযায়ী সুলায়মান (আঃ) এর পরে বনী ইসরাঈলদের উপর যে কঠিন দুর্যোগ নেমে আসে তার ফলে বেবিলনের বন্দি জীবন যাপন ইসরাঈলী জনগণকে তাদের শরীয়াত ও ঐতিহ্যের সাথে অপরিচিত করে দিয়েছিল। অবশেষে উযাইর (আঃ) এ শরীয়াতকে পুনরুজ্জীবিত করেন। এ কারণেই বনী ইসরাঈলরা তাকে অত্যাধিক ভক্তি করত। কোন কোন লোক তাঁকে আল্লাহর পুত্র পর্যন্ত মনে করত। নাউযুবিল্লাহ
তারা আল্লাহকে কৃপণ মনে করে :
وَقَالَتِ الْيَهُوْدُ يَدُ اللهِ مَغْلُوْلَةٌؕ غُلَّتْ اَيْدِيْهِمْ وَلُعِنُوْا بِمَا قَالُوْا بَلْ يَدَاهُ مَبْسُوْطَتَانِ يُنْفِقُ كَيْفَ يَشَآءُ
ইয়াহুদিরা বলে, আল্লাহর হাত রুদ্ধ। বস্তুত তাদের হাতই রুদ্ধ এবং তারা যা বলে সেজন্য তারা অভিশপ্ত। আর আল্লাহর উভয় হাতই প্রসারিত; সুতরাং তিনি যেভাবে ইচ্ছা দান করেন। (সূরা মায়েদা- ৬৪)
তারা বলে আল্লাহ ফকির হয়ে গেছেন :
لَقَدْ سَمِعَ اللهُ قَوْلَ الَّذِيْنَ قَالُوْاۤ اِنَّ اللهَ فَقِيْرٌ وَّنَحْنُ اَغْنِيَآءُ سَنَكْتُبُ مَا قَالُوْا وَقَتْلَهُمُ الْاَنْۢبِيَآءَ بِغَيْرِ حَقٍّۚ وَنَقُوْلُ ذُوْقُوْا عَذَابَ الْحَرِيْقِ
অবশ্যই আল্লাহ তাদের কথা শ্রবণ করেছেন যারা বলে, আল্লাহ দরিদ্র এবং আমরা ধনী। তারা যা বলেছে এবং অন্যায়ভাবে যেসব নবীদেরকে হত্যা করেছে, অচিরেই আমি এসবকিছুই লিপিবদ্ধ করব এবং তাদেরকে বলব, তোমরা প্রদাহকারী শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করো। (সূরা আলে ইমরান- ১৮১)
শানে নুযূল : ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘‘এমন ব্যক্তি কে আছে যে আল্লাহকে কারযে হাসানা প্রদান করবে’’- আয়াতটি নাযিল হলে ইয়াহুদিরা নবী ﷺ এর খেদমতে এসে বলল, হে মুহাম্মাদ! আপনার আল্লাহ কি দরিদ্র হয়ে পড়েছেন যে, বান্দার নিকট ভিক্ষা চাচ্ছেন? তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতটি নাযিল করেন।
তারা নিজেদেরকে হেদায়াতের উৎস মনে করে :
وَقَالُوْا كُوْنُوْا هُوْدًا اَوْ نَصَارٰى تَهْتَدُوْاؕ قُلْ بَلْ مِلَّةَ اِبْرَاهِيْمَ حَنِيْفًاؕ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
তারা বলে, তোমরা ইয়াহুদি অথবা খ্রিস্টান হয়ে যাও, তবেই হেদায়াত পাবে। বলো, বরং আমরাই ইবরাহীমের সুদৃঢ় মিল্লাতের অনুসরণ করি, আর তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। (সূরা বাক্বারা- ১৩৫)
তারা নিজেদেরকে আল্লাহর প্রিয় পাত্র বলে মনে করে :
وَقَالَتِ الْيَهُوْدُ وَالنَّصَارٰى نَحْنُ اَبْنَآءُ اللهِ وَاَحِبَّآؤُهٗؕ قُلْ فَلِمَ يُعَذِّبُكُمْ بِذُنُوْبِكُمْؕ بَلْ اَنْتُمْ بَشَرٌ مِّمَّنْ خَلَقَؕ يَغْفِرُ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيُعَذِّبُ مَنْ يَّشَآءُ
ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানরা বলে থাকে, আমরা আল্লাহর পুত্র ও তাঁর প্রিয়। (হে নবী!) বলো, তবে কেন তিনি তোমাদের পাপের জন্য তোমাদেরকে শাস্তি দেন? বরং তোমরা তাদের মতোই সাধারণ মানুষ, যাদেরকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করেন এবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেন। (সূরা মায়েদা- ১৮)
ব্যাখ্যা : ইয়াহুদিরা একমাত্র ইয়াহুদি গোষ্ঠীকেই পরকালীন মুক্তির অধিকারী মনে করত। এ আয়াতে এ ধারণার প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। তারা এ ভুল ধারণা পোষণ করত যে, তাদের সাথে আল্লাহর কোন বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে- যা অন্য মানুষের সাথে নেই। কাজেই তাদের দলের সাথে যে-ই সম্পর্ক রাখবে তার আকীদা-বিশ্বাস, আমল-আখলাক যাই হোক না কেন সে নাজাত লাভ করবে। আর তাদের দলের বাইরের সমগ্র মানবজাতি কেবল জাহান্নামের ইন্ধন হওয়ার জন্যই সৃষ্টি হয়েছে। এ ভুল ধারণা দূর করার জন্য বলা হচ্ছে, আল্লাহর কাছে তোমাদের দল ও গোত্র বিভক্তিই আসল কথা নয় বরং সেখানে একমাত্র নির্ভরযোগ্য বিষয় হচ্ছে, তোমাদের ঈমান ও সৎকাজ। যে ব্যক্তি এগুলো নিয়ে আল্লাহর সামনে হাযির হবে, সে তার রবের কাছ থেকে প্রতিদান লাভ করবে। আল্লাহ সেখানে ফায়সালা করবেন মানুষের গুণাবলির ভিত্তিতে, জনসংখ্যার ভিত্তিতে নয়।
তারা নিজেদেরকে জান্নাতী বলে দাবী করে :
وَقَالُوْا لَنْ يَّدْخُلَ الْجَنَّةَ اِلَّا مَنْ كَانَ هُوْدًا اَوْ نَصَارٰىؕ تِلْكَ اَمَانِيُّهُمْؕ قُلْ هَاتُوْا بُرْهَانَكُمْ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ
তারা বলে, যারা ইয়াহুদি বা খ্রিস্টান, তারা ছাড়া আর কেউ-ই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, এটা তাদের আকাঙ্ক্ষা। বলো, যদি তোমরা সত্যবাদী হও, তবে তোমাদের প্রমাণ উপস্থিত করো। (সূরা বাক্বারা- ১১১)
তারা নিজেদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত মনে করে :
ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ قَالُوْا لَنْ تَمَسَّنَا النَّارُ اِلَّاۤ اَيَّامًا مَّعْدُوْدَاتٍ۪ وَغَرَّهُمْ فِيْ دِيْنِهِمْ مَّا كَانُوْا يَفْتَرُوْنَ
এটা এজন্য যে, তারা বলে, কয়েকটি নির্দিষ্ট দিন ছাড়া আগুন আমাদেরকে স্পর্শ করবে না। এভাবে তারা মনগড়া যা তৈরি করেছিল, তা তাদেরকে দ্বীনের ব্যাপারে ধোঁকায় ফেলে দিয়েছে। (সূরা আলে ইমরান- ২৪)
ব্যাখ্যা : তারা নিজেদেরকে আল্লাহর প্রিয়পাত্র মনে করে। কেননা তাদের মনে এ ভুল ধারণা বদ্ধমূল হয়ে গেছে যে, তারা যা কিছুই করুক না কেন জান্নাত তাদের নামে লিখে দেয়া হয়েছে, তারা অমুকের সন্তান, অমুকের উম্মত, অমুকের মুরীদ এবং অমুকের হাতে হাত রেখেছে, কাজেই জাহান্নামের আগুনের কোন ক্ষমতাই নেই তাদেরকে স্পর্শ করার। আর যদিও তাদেরকে কখনো জাহান্নামে দেয়া হয়, তাহলে তা হবে মাত্র কয়েক দিনের জন্য। গোনাহের যে দাগগুলো তাদের গায়ে লেগে গেছে সেগুলো মুছে ফেলে সেখান থেকে তাদেরকে সোজা জান্নাতে পাঠিয়ে দেয়া হবে। এ ধরনের চিন্তাধারা তাদেরকে এমনি নির্ভিক বানিয়ে দিয়েছিল, যার ফলে তারা নিশ্চিন্তে কঠিন থেকে কঠিনতর অপরাধ করে যেত, নিকৃষ্টতম গোনাহের কাজ করত, প্রকাশ্যে সত্যের বিরোধিতা করত; কিন্তু কখনো তাদের মনে সামান্যতম আল্লাহর ভয়ও জাগত না।
وَقَالُوْا لَنْ تَمَسَّنَا النَّارُ اِلَّاۤ اَيَّامًا مَّعْدُوْدَةًؕ قُلْ اَتَّخَذْتُمْ عِنْدَ اللهِ عَهْدًا فَلَنْ يُّخْلِفَ اللهُ عَهْدَهٗۤ اَمْ تَقُوْلُوْنَ عَلَى اللهِ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ
তারা বলে, নির্ধারিত কিছু দিন ব্যতীত (জাহান্নামের) অগ্নি আমাদেরকে স্পর্শ করবে না। বলো, তোমরা কি আল্লাহর নিকট হতে অঙ্গীকার নিয়েছ, ফলে আল্লাহ কখনই স্বীয় অঙ্গীকারের বিপরীত করবেন না? নাকি আল্লাহ সম্বন্ধে যা জান না, তাই বলছ? (সূরা বাক্বারা- ৮০)
তারা যাদুমন্ত্র ও তাগুতের উপর বিশ্বাস রাখত :
اَلَمْ تَرَ اِلَى الَّذِيْنَ اُوْتُوْا نَصِيْبًا مِّنَ الْكِتَابِ يُؤْمِنُوْنَ بِالْجِبْتِ وَالطَّاغُوْتِ وَيَقُوْلُوْنَ لِلَّذِيْنَ كَفَرُوْا هٰۤؤُلَآءِ اَهْدٰى مِنَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا سَبِيْلًا
তুমি কি তাদেরকে দেখনি যাদেরকে কিতাবের একাংশ দেয়া হয়েছিল, তারা যাদুমন্ত্র ও তাগুতের প্রতি ঈমান রাখত? আর তারা কাফিরদের সম্বন্ধে বলত, এদের পথই মুমিনদের চেয়ে বেশি উৎকৃষ্ট। (সূরা নিসা- ৫১)
ব্যাখ্যা : جِبْتٌ (জিব্ত) অর্থ অসত্য, অমূলক, ভিত্তিহীন ও অকল্যাণকর বস্তু ইত্যাদি। ইসলামের পরিভাষায় যাদু-টোনা, ভাগ্য গণনা, তন্ত্রমন্ত্র এসব কুসংস্কার ও অন্যান্য যাবতীয় কাল্পনিক ও বানোয়াট কথা ও ক্রিয়াকর্মকে জিব্ত বলা হয়েছে। অনুমানভিত্তিক সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য চিহ্নিত করার বিভিন্ন পদ্ধতিও জিব্ত এর অন্তর্ভুক্ত।
তারা ভুল আকিদা-বিশ্বাস থেকে ফিরতে চায় না :
وَقَالُوْا قُلُوْبُنَا غُلْفٌؕ بَلْ لَّعَنَهُمُ اللهُ بِكُفْرِهِمْ فَقَلِيْلًا مَّا يُؤْمِنُوْنَ
তারা বলে, আমাদের হৃদয় আচ্ছাদিত। বরং তাদের অবিশ্বাসের কারণে আল্লাহ তাদেরকে অভিসম্পাত করেছেন। ফলে তারা অতি অল্প সংখ্যকই ঈমান এনে থাকে। (সূরা বাক্বারা- ৮৮)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ আমাদের আকীদা-বিশ্বাস ও চিন্তা-চেতনা এতই পাকাপোক্ত যে, তোমরা যা কিছুই বল না কেন, আমাদের মনে তা কোন প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। যেসব লোকের মন-মস্তিষ্ক মূর্খতার বিদ্বেষে আচ্ছন্ন থাকে, তারাই এ ধরনের কথা বলে। উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া আকীদা-বিশ্বাস ও চিন্তার ভুল বলিষ্ঠ দলীল ও যুক্তির মাধ্যমে প্রমাণিত হওয়ার পরও তার উপর অবিচল থাকার চেয়ে বড় অন্যায় মানুষের আর কী হতে পারে?
তারা আখিরাতের বিনিময়ে দুনিয়ার সুযোগ লাভ করে :
اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ اشْتَرَوُا الْحَيَاةَ الدُّنْيَا بِالْاٰخِرَةِؗ فَلَا يُخَفَّفُ عَنْهُمُ الْعَذَابُ وَلَا هُمْ يُنْصَرُوْنَ
এরাই পরকালের বিনিময়ে পার্থিব জীবন ক্রয় করে নিয়েছে, অতএব তাদের দন্ড হালকা করা হবে না এবং তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না। (সূরা বাক্বারা- ৮৬)
তারা বিশ্বাসঘাতকতা করে :
وَلَا تَزَالُ تَطَّلِعُ عَلٰى خَآئِنَةٍ مِّنْهُمْ اِلَّا قَلِيْلًا مِّنْهُمْ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاصْفَحْؕ اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِيْنَ
(হে নবী) তুমি সর্বদা অল্প সংখ্যক ব্যতীত তাদের সকলকেই বিশ্বাসঘাতক হিসেবে দেখতে পাবে। সুতরাং তাদেরকে ক্ষমা করো এবং উপেক্ষা করো; নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্ম পরায়ণদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা মায়েদা- ১৩)
ব্যাখ্যা : এর একটি অর্থ হচ্ছে, এরা গোয়েন্দা হয়ে আসে। এরা নবী ﷺ ও মুসলিমদের মজলিসে ঘোরাফেরা করে। কোন গোপন কথা কানে আসলে তা মুসলিমদের শত্রুদের কাছে পৌঁছে দেয়। দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, এরা দোষারোপ ও নিন্দা করার জন্য তথ্য সংগ্রহ করে বেড়ায়। যেসব লোক সরাসরি নবী ﷺ ও মুসলিমদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি তাদের মধ্যে ভুল ধারণা সৃষ্টি করে। নবী ও ইসলাম সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার কাজে লিপ্ত হয়।
তারা তাওরাতের বিধান অমান্য করত :
اَلَمْ تَرَ اِلَى الَّذِيْنَ اُوْتُوْا نَصِيْبًا مِّنَ الْكِتَابِ يُدْعَوْنَ اِلٰى كِتَابِ اللهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ يَتَوَلّٰى فَرِيْقٌ مِّنْهُمْ وَهُمْ مُّعْرِضُوْنَ
আপনি কি তাদের ব্যাপারে লক্ষ্য করেছেন, যাদেরকে কিতাবের কিছু অংশ দেয়া হয়েছিল? তাদেরকে আল্লাহর কিতাবের দিকে ডাকা হয়েছিল, যাতে করে এটা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেয়। তারপরও তাদের একদল (এ থেকে) মুখ ফিরিয়ে নিল; মূলত তারাই অমান্যকারী। (সূরা আলে ইমরান- ২৩)
وَكَيْفَ يُحَكِّمُوْنَكَ وَعِنْدَهُمُ التَّوْرَاةُ فِيْهَا حُكْمُ اللهِ ثُمَّ يَتَوَلَّوْنَ مِنْ ۢبَعْدِ ذٰلِكَؕ وَمَاۤ اُولٰٓئِكَ بِالْمُؤْمِنِيْنَ
তারা কীভাবে আপনার উপর বিচার-ফায়সালার ভার অর্পণ করবে, অথচ তাদের কাছে রয়েছে তাওরাত? তাতে রয়েছে আল্লাহর নির্দেশ। তারপরও যারা পেছনে মুখ ফিরিয়ে নেয়; তারা কখনো মুমিন নয়। (সূরা মায়েদা- ৪৩)
তাদের মূর্খরা ধারণার উপর পরিচালিত হতো :
وَمِنْهُمْ اُمِّيُّوْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ الْكِتَابَ اِلَّاۤ اَمَانِيَّ وَاِنْ هُمْ اِلَّا يَظُنُّوْنَ
তাদের মধ্যে অনেক অশিক্ষিত লোক আছে, যারা প্রবৃত্তি ব্যতীত কোন গ্রন্থ সম্পর্কে অবগত নয়। আর তারা কেবল ধারণা করে থাকে। (সূরা বাক্বারা- ৭৮)
ব্যাখ্যা : তাদের জনগণের অবস্থা এমন ছিল যে, আল্লাহর কিতাবের কোন জ্ঞানই তাদের ছিল না। আল্লাহ তাঁর কিতাবে দ্বীনের কী কী মূলনীতি বর্ণনা করেছেন, শরীয়াত ও নৈতিকতার কী বিধান দিয়েছেন তার কিছুই তারা জানত না। এ জ্ঞান না থাকার কারণে তারা নিজেদের ইচ্ছা, আশা-আকাঙ্ক্ষা ও কল্পনানুসারে বিভিন্ন মনগড়া কথাকে দ্বীন মনে করত এবং এরই ভিত্তিতে গড়ে ওঠা মিথ্যা আশা বুকে নিয়ে জীবন ধারণ করত।
ইসমাঈলী বংশে জন্ম হওয়াতে মুহাম্মাদ ﷺ -কে মানত না :
اَمْ يَحْسُدُوْنَ النَّاسَ عَلٰى مَاۤ اٰتَاهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٖۚ فَقَدْ اٰتَيْنَاۤ اٰلَ اِبْرَاهِيْمَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَاٰتَيْنَاهُمْ مُّلْكًا عَظِيْمًا
তারা নাকি অন্যান্য মানব সন্তানদের ব্যাপারে বিদ্বেষ পোষণ করে, যাদেরকে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহ দান করেছেন। অথচ আমি তো ইবরাহীমের বংশধরকেও কিতাব ও হেকমত প্রদান করেছিলাম এবং তাদেরকে বিশাল রাজত্ব দান করেছিলাম। (সূরা নিসা- ৫৪)
তারা নবী ﷺ এর সাথে খারাপ আচরণ করত :
وَيَقُوْلُوْنَ سَمِعْنَا وَعَصَيْنَا وَاسْمَعْ غَيْرَ مُسْمَعٍ وَّرَاعِنَا لَيًّا ۢبِاَلْسِنَتِهِمْ وَطَعْنًا فِى الدِّيْنِؕ وَلَوْ اَنَّهُمْ قَالُوْا سَمِعْنَا وَاَطَعْنَا وَاسْمَعْ وَانْظُرْنَا لَكَانَ خَيْرًا لَّهُمْ وَاَقْوَمَ وَلٰكِنْ لَّعَنَهُمُ اللهُ بِكُفْرِهِمْ فَلَا يُؤْمِنُوْنَ اِلَّا قَلِيْلًا
তারা বলে, আমরা শ্রবণ করলাম ও অমান্য করলাম। তারা শুনেও না শুনার ভান করে এবং দ্বীনের প্রতি তাচ্ছিল্য করার উদ্দেশ্যে নিজেদের জিহবাকে কুঞ্চিত করে বলে, ‘রাইনা’। কিন্তু তারা যদি বলত, শ্রবণ করলাম ও আনুগত্য করলাম অথবা শ্রবণ করুন ও আমাদের প্রতি লক্ষ্য করুন, তবে এটাই তাদের জন্য ভালো হতো এবং সঙ্গতিপূর্ণ হতো। কিন্তু তাদের কুফরীর জন্য আল্লাহ তাদেরকে লানত করেছেন। ফলে তাদের অল্প সংখ্যকই ঈমান আনয়ন করে থাকে। (সূরা নিসা- ৪৬)
কোন বিপদ আসলে নবী ﷺ এর উপর দোষ চাপাত :
وَاِنْ تُصِبْهُمْ حَسَنَةٌ يَّقُوْلُوْا هٰذِهٖ مِنْ عِنْدِ اللهِۚ وَاِنْ تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌ يَّقُوْلُوْا هٰذِهٖ مِنْ عِنْدِكَؕ قُلْ كُلٌّ مِّنْ عِنْدِ اللهِؕ فَمَالِ هٰۤؤُلَآءِ الْقَوْمِ لَا يَكَادُوْنَ يَفْقَهُوْنَ حَدِيْثًا
যদি তাদের উপর কোন কল্যাণ পতিত হয় তবে তারা বলে, এটা আল্লাহর নিকট হতে। আর যদি তাদের উপর কোন অকল্যাণ পতিত হয় তবে তারা বলে, এটা তোমার নিকট হতে। (তাদেরকে) বলো, সবকিছুই আল্লাহর নিকট হতে। এ সম্প্রদায়ের কী হলো যে, এরা একেবারেই কোন কথা বুঝে না। (সূরা নিসা- ৭৮)
নবী ﷺ এর ফায়সালা তাদের পক্ষে হলে মানত নতুবা অমান্য করত :
يُحَرِّفُوْنَ الْكَلِمَ مِنْ ۢبَعْدِ مَوَاضِعِهٖۚ يَقُوْلُوْنَ اِنْ اُوْتِيْتُمْ هٰذَا فَخُذُوْهُ وَاِنْ لَّمْ تُؤْتَوْهُ فَاحْذَرُوْا
তারা আল্লাহর কালামকে তার সঠিক স্থান হতে বিচ্যুত করে বলত যে, এ নবী যদি তোমাদেরকে এরকম ফায়সালা দেন, তবে তোমরা তা গ্রহণ করবে। আর যদি এর বিপরীত কোন ফায়সালা দেন তাহলে একে এড়িয়ে যাবে। (সূরা মায়েদা- ৪১)
ব্যাখ্যা : তাওরাতের যেসব বিধান তাদের মনপূত নয়, সেগুলোর মধ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে রদবদল করে। শব্দের অর্থ পরিবর্তন করে সেখান থেকে নিজেদের ইচ্ছামতো বিধান তৈরি করে। একদা খায়বারের কোন ইয়াহুদি পরিবারের দু’জন বিবাহিত পুরুষ ও নারী যিনা করল। তাওরাতে এর শাস্তি ‘‘হত্যা’’। তারা মদিনায় এসে রাসূল ﷺ কে জিজ্ঞেস করল, আপনার নিকট এর বিধান কী? তিনি বললেন, ‘‘হত্যা’’। তারা বলল, তাওরাতের বিধান তো এরূপ নয়। বরং ৪০ বেত এবং মুখে কালি মেখে গাধার পিঠে চড়িয়ে শহরে ঘুরানো। জিবরাঈল (আঃ) এসে রাসূল ﷺ কে বললেন, এরা মিথ্যা কথা বলছে। আপনি ইয়াহুদি আলিম ইবনে সুরিয়াকে জিজ্ঞেস করুন। তাকে জিজ্ঞেস করা হলে সে বলল, তাওরাতেও মৃত্যু দন্ডেরই বিধান রয়েছে। অতঃপর রাসূল ﷺ রায় দিলেন, উভয়কে মসজিদের পাশে পাথর মেরে হত্যা করা হোক। তখন এ পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত আয়াতটি নাযিল হয়।
নবী ﷺ কে মানার ক্ষেত্রে মিথ্যা শর্ত জুড়ে দিত :
اَلَّذِيْنَ قَالُوْاۤ اِنَّ اللهَ عَهِدَ اِلَيْنَاۤ اَلَّا نُؤْمِنَ لِرَسُوْلٍ حَتّٰى يَاْتِيَنَا بِقُرْبَانٍ تَاْكُلُهُ النَّارُ قُلْ قَدْ جَآءَكُمْ رُسُلٌ مِّنْ قَبْلِيْ بِالْبَيِّنَاتِ وَبِالَّذِيْ قُلْتُمْ فَلِمَ قَتَلْتُمُوْهُمْ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ
যারা বলে, স্বয়ং আল্লাহই তো আমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন- যেন আমরা কোন রাসূলের উপর ঈমান না আনি, যতক্ষণ না সে আমাদের জন্য এমন একটা কুরবানী এনে হাযির করবে, যাকে গায়েব থেকে আসা এক আগুন এসে খেয়ে ফেলবে। হে মুহাম্মাদ! তুমি তাদেরকে বলে দাও, হ্যাঁ! আমার আগেও তোমাদের কাছে অনেক নবী-রাসূল এসেছে। তারা সবাই উজ্জল নিদর্শন নিয়েই এসেছিল। তোমরা আজ যে কথা বলছ, (ইতোপূর্বে) তাও তো তারা নিয়ে এসেছিল। তা সত্ত্বেও তোমরা তাদেরকে হত্যা করলে কেন? যদি তোমরা এতই সত্যবাদী হয়ে থাক। (সূরা আলে ইমরান- ১৮৩)
কুরআনকে মানতে অস্বীকার করত :
وَاِذَا قِيْلَ لَهُمْ اٰمِنُوْا بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ قَالُوْا نُؤْمِنُ بِمَاۤ اُنْزِلَ عَلَيْنَا وَيَكْفُرُوْنَ بِمَا وَرَآءَهٗۗ وَهُوَ الْحَقُّ مُصَدِّقًا لِّمَا مَعَهُمْ
যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তার উপর ঈমান আনয়ন করো। তখন তারা বলে, যা আমাদের প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে আমরা তার প্রতি ঈমান এনেছি; এছাড়া যা রয়েছে তা তারা অবিশ্বাস করে। অথচ এটা সত্য যে, তাদের সাথে যা রয়েছে এটা (কুরআন) তারই সত্যায়নকারী। (সূরা বাক্বারা- ৯১)
وَلَمَّا جَآءَهُمْ كِتَابٌ مِّنْ عِنْدِ اللهِ مُصَدِّقٌ لِّمَا مَعَهُمْ وَكَانُوْا مِنْ قَبْلُ يَسْتَفْتِحُوْنَ عَلَى الَّذِيْنَ كَفَرُوْاۚ فَلَمَّا جَآءَهُمْ مَّا عَرَفُوْا كَفَرُوْا بِهٖ فَلَعْنَةُ اللهِ عَلَى الْكَافِرِيْنَ
যখন আল্লাহর পক্ষ হতে তাদের নিকট যা আছে তার সত্যতার সমর্থক গ্রন্থ (কুরআন) উপস্থিত হলো, যদিও তারা ইতোপূর্বে কাফিরদের বিরুদ্ধে এর সাহায্যে বিজয় প্রার্থনা করত। অতঃপর যখন তাদের নিকট সেই পরিচিত কিতাব আসল, তখন তারা তাকে অস্বীকার করল। সুতরাং এরকম কাফিরদের উপর আল্লাহর লানত বর্ষিত হোক। (সূরা বাক্বারা- ৮৯)
ব্যাখ্যা : মদিনায় আসার পর নবী ﷺ সর্বপ্রথম ইয়াহুদিদের সাথে সৎ প্রতিবেশী সুলভ জীবন যাপন করার জন্য পারস্পরিক সাহায্য সহযোগিতার চুক্তি করেছিলেন। তাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য তিনি নিজের সামর্থ্যানুযায়ী পূর্ণ প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। তাছাড়া ধর্মীয় দিক দিয়েও তিনি ইয়াহুদিদেরকে মুশরিকদের তুলনায় নিজের অনেক কাছের মনে করতেন। প্রত্যেক ব্যাপারেই তিনি মুশরিকদের মুকাবিলায় আহলে কিতাবের মতকে অগ্রাধিকার দিতেন। কিন্তু নবী ﷺ নির্ভেজাল তাওহীদ ও সচ্চরিত্র নীতি সংক্রান্ত যেসব কথা প্রচার করছিলেন, গোমরাহীর বিরুদ্ধে যে সমালোচনা করছিলেন এবং ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য যে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছিলেন, ইয়াহুদি উলামা ও মাশায়েখরা তা একটুও পছন্দ করত না। এ নতুন আন্দোলন যাতে কোনভাবেই সাফল্য লাভ করতে না পারে, সেজন্য তারা অনবরত ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছিল।
তারা তাদের আলিমদেরকে প্রভু মনে করত :
اِتَّخَذُوْاۤ اَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ اَرْبَابًا مِّنْ دُوْنِ اللهِ وَالْمَسِيْحَ ابْنَ مَرْيَمَۚ وَمَاۤ اُمِرُوْاۤ اِلَّا لِيَعْبُدُوْاۤ اِلٰهًا وَّاحِدًاۚ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ سُبْحَانَهٗ عَمَّا يُشْرِكُوْنَ
তারা আল্লাহ ব্যতীত তাদের আলিম ও সংসারবিরাগীদেরকে তাদের প্রভু হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং মারইয়ামের পুত্র মাসীহকেও। অথচ তারা এক ইলাহের ইবাদাত করার জন্যই আদিষ্ট হয়েছিল। (কেননা) তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই। তারা যাকে শরীক করে তা হতে তিনি কতই না পবিত্র।
(সূরা তাওবা- ৩১)
ব্যাখ্যা : আদী ইবনে হাতেম ছিলেন খ্রিস্টান। ইসলাম গ্রহণ করার সময় তিনি নবী ﷺ কে কয়েকটি প্রশ্ন করেন। এর মধ্যে একটি ছিল, কুরআনের এ আয়াতটিতে আমাদের বিরুদ্ধে আমাদের উলামা ও দরবেশদেরকে উপাস্য বানিয়ে নেয়ার যে দোষারোপ করা হয়েছে তার প্রকৃত তাৎপর্য কী? জবাবে নবী ﷺ বলেন, তারা যেগুলোকে হারাম বলত তোমরাও সেগুলোকে হারাম বলে মেনে নিতে, এ কথা কি সত্য নয়? জবাবে আদী বলেন, হ্যাঁ। রাসূল ﷺ বলেন, এটিই হচ্ছে তাদেরকে প্রভু বানিয়ে নেয়া। সনদ ছাড়াই যারা মানব জীবনের জন্য জায়েয ও নাজায়েযের সীমানা নির্ধারণ করে, তারা নিজেদের ধারণা মতে নিজেরাই আল্লাহর মর্যাদায় সমাসীন হয়। আর যারা শরীয়াতের বিধান রচনার অধিকার তাদের জন্য স্বীকার করে নেয়, মূলত তারা তাদেরকে প্রভুতে পরিণত করে।
তাদের আলিমরা পাপকাজে বাধা দিত না :
وَتَرٰى كَثِيْرًا مِّنْهُمْ يُسَارِعُوْنَ فِى الْاِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاَكْلِهِمُ السُّحْتَؕ لَبِئْسَ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ – لَوْلَا يَنْهَاهُمُ الرَّبَّانِيُّوْنَ وَالْاَحْبَارُ عَنْ قَوْلِهِمُ الْاِثْمَ وَاَكْلِهِمُ السُّحْتَؕ لَبِئْسَ مَا كَانُوْا يَصْنَعُوْنَ
আর তুমি তাদের মধ্যে এমন অসংখ্য লোক দেখবে, যারা পাপ, যুলুম ও হারাম ভক্ষণে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত রয়েছে; তারা যা করে তা কতই না নিকৃষ্ট। তাদের আল্লাহওয়ালা ও আলিমরা যদি তাদেরকে খারাপ কথা বলতে ও অবৈধ ভক্ষণ করা হতে নিষেধ করত! তারা যা করে তা কতই না নিকৃষ্ট। (সূরা মায়েদা- ৬২, ৬৩)
তারা আল্লাহর কালামকে বিকৃত করত :
اَفَتَطْمَعُوْنَ اَنْ يُّؤْمِنُوْا لَكُمْ وَقَدْ كَانَ فَرِيْقٌ مِّنْهُمْ يَسْمَعُوْنَ كَلَامَ اللهِ ثُمَّ يُحَرِّفُوْنَهٗ مِنْ ۢبَعْدِ مَا عَقَلُوْهُ وَهُمْ يَعْلَمُوْنَ
তোমরা কি আশা কর যে, তোমাদের কথায় তারা ঈমান আনয়ন করবে? অথচ তাদের মধ্যে এমন কতক লোক গত হয়ে গেছে, যারা আল্লাহর কালাম শুনত। অতঃপর তারা তা বুঝার পর স্বজ্ঞানে বিকৃত করে ফেলত। (সূরা বাক্বারা- ৭৫)
مِنَ الَّذِيْنَ هَادُوْا يُحَرِّفُوْنَ الْكَلِمَ عَنْ مَّوَاضِعِهٖ
ইয়াহুদিদের মধ্যে কিছু লোক রয়েছে, যারা (আল্লাহর) বাক্যসমূহ স্থানচ্যুত করে বিকৃত করে থাকে।
(সূরা নিসা- ৪৬)
ব্যাখ্যা : তাহরীফ এর তিনটি অর্থ হয়।
(এক) তারা আল্লাহর কিতাবের শব্দের মধ্যে পরিবর্তন ঘটায়।
(দুই) তারা নিজেদের মনগড়া ব্যাখ্যার সাহায্যে কিতাবের আয়াতের অর্থের মধ্যে পরিবর্তন আনে।
(তিন) তারা মুহাম্মাদ ﷺ ও তাঁর অনুসারীদের সাহচর্যে এসে তাদের কথা শোনে। কিন্তু সেখান থেকে ফিরে গিয়ে নিজেদের শয়তানী দুষ্টবুদ্ধির দ্বারা পরিচালিত হয়ে তাকে ভিন্ন রূপ দিয়ে লোকদের সামনে প্রকাশ করে। এভাবে তারা নবী ও তাঁর অনুসারীদের দুর্নাম করে এবং তাদের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে সাধারণ মানুষকে ইসলামী দাওয়াত থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চায়।
তাদের আলিমরা নিজেরাই বিধান তৈরি করত :
فَوَيْلٌ لِّلَّذِيْنَ يَكْتُبُوْنَ الْكِتَابَ بِاَيْدِيْهِمْۗ ثُمَّ يَقُوْلُوْنَ هٰذَا مِنْ عِنْدِ اللهِ
আফসোস তাদের জন্য যারা স্বহস্তে পুস্তক রচনা করে। অতঃপর তারা বলে, এগুলো হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ শরীয়াতের বিধান। (সূরা বাক্বারা- ৭৯)
ব্যাখ্যা : তাদের আলিমদের সম্পর্কে বলা হচ্ছে, তারা নিজেদের ইচ্ছা ও পার্থিব স্বার্থ অনুযায়ী আল্লাহর কালামের অর্থ করত এবং মনগড়া ব্যাখ্যা করত। সাধারণ মানুষের সামনে সেগুলোকে তারা এমনভাবে পেশ করেছে, যেন সেগুলো সবই আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল হয়েছে। ফলে প্রত্যেক আইন শাস্ত্রবিদের উদ্ভাবিত আইন আল্লাহর বাণীর মর্যাদা লাভ করত। ইয়াহুদি আলিমরা শরীয়াতের ছোট ছোট বিধি-নিষেধ পালনের উপর বেশি গুরুত্ব দিত। তাদের সমস্ত সময় এসব ছোটখাটো বিধানের পর্যালোচনা ও যাচাই বাছাইয়ে অতিবাহিত হতো। তাদের মনীষীরা এ খুঁটিনাটি বিধানগুলো ইজতিহাদের মাধ্যমে বের করত। কিন্তু তাদের দৃষ্টিতে ‘শিরক’ ছিল একটি হালকা ও ছোট গোনাহ। তাই এ গোনাহটির হাত থেকে বাঁচার জন্য তারা কোন প্রকার চেষ্টা করত না এবং নিজেদের জাতিকে মুশরিকী কার্যকলাপ থেকে বাঁচানোর জন্য কোন উদ্যোগও গ্রহণ করত না। ফলে মুশরিকদের সাথে বন্ধুত্ব এবং তাদের সাহায্য সহযোগিতাও তাদের কাছে ক্ষতিকর মনে হতো না।
তারা আল্লাহর সাক্ষ্য গোপন করত :
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ كَتَمَ شَهَادَةً عِنْدَهٗ مِنَ اللهِ
যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট হতে প্রাপ্ত সাক্ষ্যসমূহ গোপন করে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে?
(সূরা বাক্বারা- ১৪০)
ব্যাখ্যা : এখানে ইয়াহুদি ও খ্রিস্টান আলিমদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে। তারা নিজেরাও এ সত্যটি জানত যে, ইয়াহুদিবাদ ও খ্রিষ্টবাদ সে সময় যে বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিরাজ করছিল, তা অনেক পরবর্তী কালের সৃষ্টি। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা জনগণকে এ ভুল ধারণা দিয়ে আসছিল যে, নবীদের অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার দীর্ঘকাল পর তাদের মনীষীরা যে সমস্ত আকীদা-বিশ্বাস, রীতিনীতি ও ইজতিহাদী নিয়মকানুন রচনা করেছে, সেগুলোর আনুগত্যের মধ্যেই মানুষের কল্যাণ ও মুক্তি নিহিত রয়েছে। তাদের আলিমদেরকে যখন জিজ্ঞেস করা হতো, তোমাদের এ কথাই যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে ইবরাহীম, ইসহাক, ইয়াকূব ও অন্যান্য নবীগণ তোমাদের এ সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে কোন সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন? তখন তারা এর জবাব এড়িয়ে যেত।
তারা কিতাবের কিছু অংশ মানত এবং কিছু অংশ মানত না :
اَفَتُؤْمِنُوْنَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُوْنَ بِبَعْضٍ
তবে কি তোমরা গ্রন্থের একাংশকে বিশ্বাস কর ও অপর অংশকে অবিশ্বাস কর? (সূরা বাক্বারা- ৮৫)
তারা আল্লাহর কিতাবের শিক্ষাকে ভুলে গিয়েছিল :
يُّحَرِّفُوْنَ الْكَلِمَ عَنْ مَّوَاضِعِهٖ وَنَسُوْا حَظًّا مِّمَّا ذُكِّرُوْا بِهٖ
তারা আল্লাহর কালামকে তার নির্দিষ্ট অর্থ থেকে সরিয়ে নিয়ে বিকৃত করেছিল এবং তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল তার একাংশকে ভুলে গিয়েছিল। (সূরা মায়েদা- ১৩)
তারা হারাম খেতে অভ্যস্ত ছিল :
سَمَّاعُوْنَ لِلْكَذِبِ اَكَّالُوْنَ لِلسُّحْتِ
তারা মিথ্যা শুনতে অভ্যস্ত এবং হারাম খেতে অত্যন্ত আসক্ত। (সূরা মায়েদা- ৪২)
তারা দুনিয়ালোভী হয়ে গিয়েছিল :
فَخَلَفَ مِنْ ۢبَعْدِهِمْ خَلْفٌ وَّرِثُوا الْكِتَابَ يَاْخُذُوْنَ عَرَضَ هٰذَا الْاَدْنٰى وَيَقُوْلُوْنَ سَيُغْفَرُ لَنَاۚ وَاِنْ يَّاْتِهِمْ عَرَضٌ مِّثْلُهٗ يَاْخُذُوْهُؕ اَلَمْ يُؤْخَذْ عَلَيْهِمْ مِّيْثَاقُ الْكِتَابِ اَنْ لَّا يَقُوْلُوْا عَلَى اللهِ اِلَّا الْحَقَّ وَدَرَسُوْا مَا فِيْهِؕ وَالدَّارُ الْاٰخِرَةُ خَيْرٌ لِّلَّذِيْنَ يَتَّقُوْنَؕ اَفَلَا تَعْقِلُوْنَ
অতঃপর তাদের অযোগ্য উত্তরসূরীরা একের পর এক এই জমিনে ক্ষমতার অধিকারী হয়ে আল্লাহর কিতাবেরও উত্তরাধীকারী হয়ে পড়ে। তারা এ দুনিয়ার ধনসম্পদ করায়ত্ত করে নেয়। অপরদিকে তারা মূর্খের মতো বলত, অচিরেই আমাদেরকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। কিন্তু যদি নিকৃষ্ট মানের কোন পার্থিব স্বার্থ তাদের কাছে এসে পড়ে, তখন তারা সাথে সাথেই তা হস্তগত করে নেয়। তাদের থেকে কি এ অঙ্গীকার নেয়া হয়নি যে, তারা আল্লাহ সম্বন্ধে সত্য ব্যতীত কিছুই বলবে না? তাতে যা আছে তারা তো তা অধ্যয়নও করেছে। তবে যারা তাক্বওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য পরকালের আবাসই শ্রেষ্ঠ, তোমরা কি এটা অনুধাবন কর না? (সূরা আ‘রাফ- ১৬৯)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ তারা কেবল নিজেরা আল্লাহর পথ থেকে সরে গিয়ে ক্ষান্ত হয়নি, বরং তারা একই সাথে এত বড় দুঃসাহসিক অপরাধ প্রবণতায় লিপ্ত হয়ে পড়েছে যে, দুনিয়ায় আল্লাহর বান্দাদেরকে পথভ্রষ্ট করার জন্য যতগুলো আন্দোলন দানা বেঁধে উঠেছে তাদের অধিকাংশের পেছনে তাদেরকে সক্রিয় দেখা গেছে। সত্যের দিকে আহবান করার জন্য যে আন্দোলনই শুরু হয়েছে তার বিরুদ্ধে তারাই সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ এই দুর্ভাগা জাতিটির কাছে আল্লাহর কিতাব আছে এবং তারাও নবীদের উত্তরাধিকারী। প্রকাশ্যে আল্লাহর সাথে শত্রুতা করা এবং আল্লাহর আনুগত্য ব্যবস্থাকে মিটিয়ে দেয়ার সংকল্পের ভিত্তিতে দুনিয়ার বুকে প্রথম আল্লাহদ্রোহী জীবনবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অপরাধও এই আহলে কিতাব দ্বারা সংঘটিত হয়েছিল। এই ইয়াহুদি জাতিই ছিল এর উদ্যোক্তা, প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক।
وَتَرٰى كَثِيْرًا مِّنْهُمْ يُسَارِعُوْنَ فِى الْاِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاَكْلِهِمُ السُّحْتَؕ لَبِئْسَ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ – لَوْلَا يَنْهَاهُمُ الرَّبَّانِيُّوْنَ وَالْاَحْبَارُ عَنْ قَوْلِهِمُ الْاِثْمَ وَاَكْلِهِمُ السُّحْتَؕ لَبِئْسَ مَا كَانُوْا يَصْنَعُوْنَ
আর তুমি তাদের মধ্যে এমন অসংখ্য লোক দেখবে, যারা পাপ, যুলুম ও হারাম ভক্ষণে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত রয়েছে; তারা যা করে তা কতই না নিকৃষ্ট। তাদের আল্লাহওয়ালা ও আলিমরা যদি তাদেরকে খারাপ কথা বলতে ও অবৈধ ভক্ষণ করা হতে নিষেধ করত! তারা যা করে তা কতই না নিকৃষ্ট। (সূরা মায়েদা- ৬২, ৬৩)
তারা আল্লাহর কালামকে বিকৃত করত :
اَفَتَطْمَعُوْنَ اَنْ يُّؤْمِنُوْا لَكُمْ وَقَدْ كَانَ فَرِيْقٌ مِّنْهُمْ يَسْمَعُوْنَ كَلَامَ اللهِ ثُمَّ يُحَرِّفُوْنَهٗ مِنْ ۢبَعْدِ مَا عَقَلُوْهُ وَهُمْ يَعْلَمُوْنَ
তোমরা কি আশা কর যে, তোমাদের কথায় তারা ঈমান আনয়ন করবে? অথচ তাদের মধ্যে এমন কতক লোক গত হয়ে গেছে, যারা আল্লাহর কালাম শুনত। অতঃপর তারা তা বুঝার পর স্বজ্ঞানে বিকৃত করে ফেলত। (সূরা বাক্বারা- ৭৫)
مِنَ الَّذِيْنَ هَادُوْا يُحَرِّفُوْنَ الْكَلِمَ عَنْ مَّوَاضِعِهٖ
ইয়াহুদিদের মধ্যে কিছু লোক রয়েছে, যারা (আল্লাহর) বাক্যসমূহ স্থানচ্যুত করে বিকৃত করে থাকে।
(সূরা নিসা- ৪৬)
ব্যাখ্যা : তাহরীফ এর তিনটি অর্থ হয়।
(এক) তারা আল্লাহর কিতাবের শব্দের মধ্যে পরিবর্তন ঘটায়।
(দুই) তারা নিজেদের মনগড়া ব্যাখ্যার সাহায্যে কিতাবের আয়াতের অর্থের মধ্যে পরিবর্তন আনে।
(তিন) তারা মুহাম্মাদ ﷺ ও তাঁর অনুসারীদের সাহচর্যে এসে তাদের কথা শোনে। কিন্তু সেখান থেকে ফিরে গিয়ে নিজেদের শয়তানী দুষ্টবুদ্ধির দ্বারা পরিচালিত হয়ে তাকে ভিন্ন রূপ দিয়ে লোকদের সামনে প্রকাশ করে। এভাবে তারা নবী ও তাঁর অনুসারীদের দুর্নাম করে এবং তাদের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে সাধারণ মানুষকে ইসলামী দাওয়াত থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চায়।
তাদের আলিমরা নিজেরাই বিধান তৈরি করত :
فَوَيْلٌ لِّلَّذِيْنَ يَكْتُبُوْنَ الْكِتَابَ بِاَيْدِيْهِمْۗ ثُمَّ يَقُوْلُوْنَ هٰذَا مِنْ عِنْدِ اللهِ
আফসোস তাদের জন্য যারা স্বহস্তে পুস্তক রচনা করে। অতঃপর তারা বলে, এগুলো হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ শরীয়াতের বিধান। (সূরা বাক্বারা- ৭৯)
ব্যাখ্যা : তাদের আলিমদের সম্পর্কে বলা হচ্ছে, তারা নিজেদের ইচ্ছা ও পার্থিব স্বার্থ অনুযায়ী আল্লাহর কালামের অর্থ করত এবং মনগড়া ব্যাখ্যা করত। সাধারণ মানুষের সামনে সেগুলোকে তারা এমনভাবে পেশ করেছে, যেন সেগুলো সবই আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল হয়েছে। ফলে প্রত্যেক আইন শাস্ত্রবিদের উদ্ভাবিত আইন আল্লাহর বাণীর মর্যাদা লাভ করত। ইয়াহুদি আলিমরা শরীয়াতের ছোট ছোট বিধি-নিষেধ পালনের উপর বেশি গুরুত্ব দিত। তাদের সমস্ত সময় এসব ছোটখাটো বিধানের পর্যালোচনা ও যাচাই বাছাইয়ে অতিবাহিত হতো। তাদের মনীষীরা এ খুঁটিনাটি বিধানগুলো ইজতিহাদের মাধ্যমে বের করত। কিন্তু তাদের দৃষ্টিতে ‘শিরক’ ছিল একটি হালকা ও ছোট গোনাহ। তাই এ গোনাহটির হাত থেকে বাঁচার জন্য তারা কোন প্রকার চেষ্টা করত না এবং নিজেদের জাতিকে মুশরিকী কার্যকলাপ থেকে বাঁচানোর জন্য কোন উদ্যোগও গ্রহণ করত না। ফলে মুশরিকদের সাথে বন্ধুত্ব এবং তাদের সাহায্য সহযোগিতাও তাদের কাছে ক্ষতিকর মনে হতো না।
তারা আল্লাহর সাক্ষ্য গোপন করত :
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ كَتَمَ شَهَادَةً عِنْدَهٗ مِنَ اللهِ
যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট হতে প্রাপ্ত সাক্ষ্যসমূহ গোপন করে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে?
(সূরা বাক্বারা- ১৪০)
ব্যাখ্যা : এখানে ইয়াহুদি ও খ্রিস্টান আলিমদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে। তারা নিজেরাও এ সত্যটি জানত যে, ইয়াহুদিবাদ ও খ্রিষ্টবাদ সে সময় যে বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিরাজ করছিল, তা অনেক পরবর্তী কালের সৃষ্টি। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা জনগণকে এ ভুল ধারণা দিয়ে আসছিল যে, নবীদের অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার দীর্ঘকাল পর তাদের মনীষীরা যে সমস্ত আকীদা-বিশ্বাস, রীতিনীতি ও ইজতিহাদী নিয়মকানুন রচনা করেছে, সেগুলোর আনুগত্যের মধ্যেই মানুষের কল্যাণ ও মুক্তি নিহিত রয়েছে। তাদের আলিমদেরকে যখন জিজ্ঞেস করা হতো, তোমাদের এ কথাই যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে ইবরাহীম, ইসহাক, ইয়াকূব ও অন্যান্য নবীগণ তোমাদের এ সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে কোন সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন? তখন তারা এর জবাব এড়িয়ে যেত।
তারা কিতাবের কিছু অংশ মানত এবং কিছু অংশ মানত না :
اَفَتُؤْمِنُوْنَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُوْنَ بِبَعْضٍ
তবে কি তোমরা গ্রন্থের একাংশকে বিশ্বাস কর ও অপর অংশকে অবিশ্বাস কর? (সূরা বাক্বারা- ৮৫)
তারা আল্লাহর কিতাবের শিক্ষাকে ভুলে গিয়েছিল :
يُّحَرِّفُوْنَ الْكَلِمَ عَنْ مَّوَاضِعِهٖ وَنَسُوْا حَظًّا مِّمَّا ذُكِّرُوْا بِهٖ
তারা আল্লাহর কালামকে তার নির্দিষ্ট অর্থ থেকে সরিয়ে নিয়ে বিকৃত করেছিল এবং তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল তার একাংশকে ভুলে গিয়েছিল। (সূরা মায়েদা- ১৩)
তারা হারাম খেতে অভ্যস্ত ছিল :
سَمَّاعُوْنَ لِلْكَذِبِ اَكَّالُوْنَ لِلسُّحْتِ
তারা মিথ্যা শুনতে অভ্যস্ত এবং হারাম খেতে অত্যন্ত আসক্ত। (সূরা মায়েদা- ৪২)
তারা দুনিয়ালোভী হয়ে গিয়েছিল :
فَخَلَفَ مِنْ ۢبَعْدِهِمْ خَلْفٌ وَّرِثُوا الْكِتَابَ يَاْخُذُوْنَ عَرَضَ هٰذَا الْاَدْنٰى وَيَقُوْلُوْنَ سَيُغْفَرُ لَنَاۚ وَاِنْ يَّاْتِهِمْ عَرَضٌ مِّثْلُهٗ يَاْخُذُوْهُؕ اَلَمْ يُؤْخَذْ عَلَيْهِمْ مِّيْثَاقُ الْكِتَابِ اَنْ لَّا يَقُوْلُوْا عَلَى اللهِ اِلَّا الْحَقَّ وَدَرَسُوْا مَا فِيْهِؕ وَالدَّارُ الْاٰخِرَةُ خَيْرٌ لِّلَّذِيْنَ يَتَّقُوْنَؕ اَفَلَا تَعْقِلُوْنَ
অতঃপর তাদের অযোগ্য উত্তরসূরীরা একের পর এক এই জমিনে ক্ষমতার অধিকারী হয়ে আল্লাহর কিতাবেরও উত্তরাধীকারী হয়ে পড়ে। তারা এ দুনিয়ার ধনসম্পদ করায়ত্ত করে নেয়। অপরদিকে তারা মূর্খের মতো বলত, অচিরেই আমাদেরকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। কিন্তু যদি নিকৃষ্ট মানের কোন পার্থিব স্বার্থ তাদের কাছে এসে পড়ে, তখন তারা সাথে সাথেই তা হস্তগত করে নেয়। তাদের থেকে কি এ অঙ্গীকার নেয়া হয়নি যে, তারা আল্লাহ সম্বন্ধে সত্য ব্যতীত কিছুই বলবে না? তাতে যা আছে তারা তো তা অধ্যয়নও করেছে। তবে যারা তাক্বওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য পরকালের আবাসই শ্রেষ্ঠ, তোমরা কি এটা অনুধাবন কর না? (সূরা আ‘রাফ- ১৬৯)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ তারা কেবল নিজেরা আল্লাহর পথ থেকে সরে গিয়ে ক্ষান্ত হয়নি, বরং তারা একই সাথে এত বড় দুঃসাহসিক অপরাধ প্রবণতায় লিপ্ত হয়ে পড়েছে যে, দুনিয়ায় আল্লাহর বান্দাদেরকে পথভ্রষ্ট করার জন্য যতগুলো আন্দোলন দানা বেঁধে উঠেছে তাদের অধিকাংশের পেছনে তাদেরকে সক্রিয় দেখা গেছে। সত্যের দিকে আহবান করার জন্য যে আন্দোলনই শুরু হয়েছে তার বিরুদ্ধে তারাই সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ এই দুর্ভাগা জাতিটির কাছে আল্লাহর কিতাব আছে এবং তারাও নবীদের উত্তরাধিকারী। প্রকাশ্যে আল্লাহর সাথে শত্রুতা করা এবং আল্লাহর আনুগত্য ব্যবস্থাকে মিটিয়ে দেয়ার সংকল্পের ভিত্তিতে দুনিয়ার বুকে প্রথম আল্লাহদ্রোহী জীবনবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অপরাধও এই আহলে কিতাব দ্বারা সংঘটিত হয়েছিল। এই ইয়াহুদি জাতিই ছিল এর উদ্যোক্তা, প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক।
তাদের উপর কিছু খাদ্য হারাম করে দেয়া হয়:
فَبِظُلْمٍ مِّنَ الَّذِيْنَ هَادُوْا حَرَّمْنَا عَلَيْهِمْ طَيِّبَاتٍ اُحِلَّتْ لَهُمْ وَبِصَدِّهِمْ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ كَثِيْرًا
ইয়াহুদিদের বাড়াবাড়ি ও সীমালঙ্ঘনমূলক আচরণের কারণে এমন অনেক পবিত্র জিনিসও আমি তাদের জন্য হারাম করে দিয়েছিলাম, যা তাদের জন্য আগে হালাল ছিল। এটা এজন্য যে, এরা অনেক মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে বিরত রেখেছে। (সূরা নিসা- ১৬০)
وَعَلَى الَّذِيْنَ هَادُوْا حَرَّمْنَا كُلَّ ذِيْ ظُفُرٍۚ وَمِنَ الْبَقَرِ وَالْغَنَمِ حَرَّمْنَا عَلَيْهِمْ شُحُوْمَهُمَاۤ اِلَّا مَا حَمَلَتْ ظُهُوْرُهُمَاۤ اَوِ الْحَوَايَاۤ اَوْ مَا اخْتَلَطَ بِعَظْمٍؕ ذٰلِكَ جَزَيْنَاهُمْ بِبَغْيِهِمْؗ وَاِنَّا لَصَادِقُوْنَ
আমি ইয়াহুদিদের জন্য নখযুক্ত সমস্ত পশু হারাম করে দিয়েছিলাম এবং গরু ও ছাগলের চর্বিও তাদের জন্য হারাম করে দিয়েছিলাম, তবে এগুলোর পৃষ্ঠের অথবা অন্ত্রের কিংবা অস্থিসংলগ্ন চর্বি ব্যতীত। তাদের অবাধ্যতার কারণে তাদেরকে এ প্রতিফল দিয়েছিলাম; নিশ্চয় আমি সত্যবাদী। (সূরা আন‘আম- ১৪৬)
ব্যাখ্যা : বনী ইসরাঈলদের উপর এমনসব প্রাণী হারাম করে দেয়া হয়, যেগুলোর নখ রয়েছে। তাছাড়া গরু ও ছাগলের চর্বিও তাদের উপর হারাম করে দেয়া হয়। এগুলো তাদের জন্য এক প্রকার শাস্তি। কেননা কোন ব্যক্তি বা জনসমষ্টির জীবন যাপনের ক্ষেত্র সংকীর্ণ করে দেয়াটা মূলত তার জন্য একটি শাস্তি ছাড়া আর কিছুই নয়।
তাদের জন্য প্রস্তুত রয়েছে মর্মান্তিক শাস্তি :
وَاَخْذِهِمُ الرِّبَا وَقَدْ نُهُوْا عَنْهُ وَاَكْلِهِمْ اَمْوَالَ النَّاسِ بِالْبَاطِلِؕ وَاَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِيْنَ مِنْهُمْ عَذَابًا اَلِيْمًا
তারা সুদ গ্রহণ করত, অথচ তাদেরকে তা থেকে সুস্পষ্টভাবে নিষেধ করা হয়েছিল এবং তারা অন্যের ধনসম্পদ অন্যায়ভাবে (ধোঁকা ও প্রতারণার মাধ্যমে) গ্রাস করে নিত। সুতরাং আমি এসব কাফিরদের জন্য মর্মান্তিক শাস্তি নির্দিষ্ট করে রেখেছি। (সূরা নিসা- ১৬১)
তারা দুনিয়া ও আখিরাতে শাস্তির উপযুক্ত :
وَلَوْلَاۤ اَنْ كَتَبَ اللهُ عَلَيْهِمُ الْجَلَآءَ لَعَذَّبَهُمْ فِى الدُّنْيَاؕ وَلَهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ عَذَابُ النَّارِ ‐ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ شَآقُّوا اللهَ وَرَسُوْلَهٗۚ وَمَنْ يُّشَآقِّ اللهَ فَاِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
আল্লাহ তাদের নির্বাসনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করলেও তাদেরকে দুনিয়াতেই (অন্য) শাস্তি প্রদান করতেন; আর পরকালে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আযাব। এটা এজন্য যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করেছিল; আর যে-ই আল্লাহর সাথে বিরুদ্ধাচরণ করবে, তবে (সে জেনে রাখুক) নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি দানে খুবই কঠোর। (সূরা হাশর- ৩, ৪)
তাদের পরিণাম খুবই খারাপ হয়েছে :
قُلْ هَلْ اُنَبِّئُكُمْ بِشَرٍّ مِّنْ ذٰلِكَ مَثُوْبَةً عِنْدَ اللهِؕ مَنْ لَّعَنَهُ اللهُ وَغَضِبَ عَلَيْهِ وَجَعَلَ مِنْهُمُ الْقِرَدَةَ وَالْخَنَازِيْرَ وَعَبَدَ الطَّاغُوْتَؕ اُولٰٓئِكَ شَرٌّ مَّكَانًا وَّاَضَلُّ عَنْ سَوَآءِ السَّبِيْلِ
বলো, আমি কি তোমাদেরকে এর চেয়ে নিকৃষ্ট পরিণামের সংবাদ দেব, যা আল্লাহর নিকট আছে? যাকে আল্লাহ লানত করেছেন, যার উপর তিনি রাগান্বিত হয়েছেন, যাদের কতককে বানর ও কতককে শূকরে রূপান্তরিত করেছেন এবং যারা তাগুতের ইবাদাত করে। এরাই মর্যাদার দিক থেকে সবচেয়ে নিকৃষ্ট এবং সরল পথ হতে সর্বাধিক বিচ্যুত। (সূরা মায়েদা- ৬০)
তাদের প্রতি আল্লাহর লানত :
اُولٰٓئِكَ جَزَآؤُهُمْ اَنَّ عَلَيْهِمْ لَعْنَةَ اللهِ وَالْمَلَآئِكَةِ وَالنَّاسِ اَجْمَعِيْنَ
তাদের পরিণতি হচ্ছে, তাদের উপর আল্লাহ, ফেরেশতা এবং সকল মানুষের লানত। (সূরা আলে ইমরান- ৮৭)
দুনিয়ায় তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনা :
لَهُمْ فِى الدُّنْيَا خِزْيٌ وَّلَهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ
দুনিয়ায় তাদের জন্য রয়েছে অপমান এবং পরকালে রয়েছে মহাশাস্তি। (সূরা মায়েদা- ৪১)
তারা আল্লাহর গযবের শিকার হয়েছে :
فَبَآءُوْا بِغَضَبٍ عَلٰى غَضَبٍؕ وَلِلْكَافِرِيْنَ عَذَابٌ مُّهِيْنٌ
অতঃপর তারা ক্ষোভের উপর ক্ষোভে পতিত হয়েছে; আর কাফিরদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি।
(সূরা বাক্বারা- ৯০)
তারা কিয়ামত পর্যন্ত দুনিয়ার শাস্তি পেতে থাকবে :
وَاِذْ تَاَذَّنَ رَبُّكَ لَيَبْعَثَنَّ عَلَيْهِمْ اِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَنْ يَّسُوْمُهُمْ سُوْٓءَ الْعَذَابِؕ اِنَّ رَبَّكَ لَسَرِيْعُ الْعِقَابِۚ وَاِنَّهٗ لَغَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
স্মরণ করো, যখন তোমার প্রতিপালক ঘোষণা করেন যে, তিনি কিয়ামত পর্যন্ত তাদের উপর এমন লোকদেরকে প্রেরণ করবেন, যারা তাদেরকে কঠিন শাস্তি দিতে থাকবে। নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক শাস্তিদানে খুবই তৎপর, (অপরদিকে) তিনি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা আ‘রাফ- ১৬৭)
তারা জাহান্নামে যাবে :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَكْفُرُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِ وَيَقْتُلُوْنَ النَّبِيِّيْنَ بِغَيْرِ حَقٍّ وَّيَقْتُلُوْنَ الَّذِيْنَ يَاْمُرُوْنَ بِالْقِسْطِ مِنَ النَّاسِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ اَلِيْمٍ
নিশ্চয় যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে এবং অন্যায়ভাবে নবীদেরকে হত্যা করেছে, আরো হত্যা করেছে তাদেরকে যারা ইনসাফের নির্দেশ দেয়। তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ শুনিয়ে দাও। (সূরা আলে ইমরান- ২১)
তাদের দৃষ্টান্ত গাধার সাথে :
مَثَلُ الَّذِيْنَ حُمِّلُوا التَّوْرَاةَ ثُمَّ لَمْ يَحْمِلُوْهَا كَمَثَلِ الْحِمَارِ يَحْمِلُ اَسْفَارًاؕ بِئْسَ مَثَلُ الْقَوْمِ الَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِ اللهِؕ وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
যাদেরকে তাওরাতের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল অথচ তারা তা বহন করেনি, তাদের দৃষ্টান্ত কিতাবসমূহ বহনকারী গাধার ন্যায়। কতই না নিকৃষ্ট সেই সম্প্রদায়ের দৃষ্টান্ত, যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। আর আল্লাহ অত্যাচারী সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (সূরা জুমু‘আ- ৫)
তারা মুসলিমদের চরম শত্রু :
لَتَجِدَنَّ اَشَدَّ النَّاسِ عَدَاوَةً لِّلَّذِيْنَ اٰمَنُوا الْيَهُوْدَ وَالَّذِيْنَ اَشْرَكُوْاۚ وَلَتَجِدَنَّ اَقْرَبَهُمْ مَّوَدَّةً لِّلَّذِيْنَ اٰمَنُوا الَّذِيْنَ قَالُوْاۤ اِنَّا نَصَارٰىؕ ذٰلِكَ بِاَنَّ مِنْهُمْ قِسِّيْسِيْنَ وَرُهْبَانًا وَّاَنَّهُمْ لَا يَسْتَكْبِرُوْنَ
অবশ্য মানুষের মধ্যে মুমিনদের প্রতি শত্রুতায় ইয়াহুদি ও মুশরিকদেরকেই সর্বাধিক উগ্র হিসেবে দেখতে পাবে এবং যারা বলে ‘আমরা খ্রিস্টান’ (তাদেরকেও উগ্র হিসেবে দেখতে পাবে)। তবে মানুষের মধ্যে তাদেরকেই (খ্রিস্টানদেরকেই) তুমি মুমিনদের নিকটতর বন্ধু হিসেবে দেখতে পাবে, কেননা তাদের মধ্যে অনেক আলিম ও সংসারবিরাগী আছে, যারা অহংকার করে না। (সূরা মায়েদা- ৮২)
তাদেরকে বন্ধু বানানো যাবে না :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُوْدَ وَالنَّصَارٰۤى اَوْلِيَآءَۘ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍؕ وَمَنْ يَّتَوَلَّهُمْ مِّنْكُمْ فَاِنَّهٗ مِنْهُمْؕ اِنَّ اللهَ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। কেননা, তারা নিজেরাই একে অপরের বন্ধু। (এরপরও) তোমাদের মধ্য থেকে যারা তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে, সে তাদেরই একজন বলে গণ্য হবে। নিশ্চয় আল্লাহ যালিমদেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না।
(সূরা মায়েদা- ৫১)
فَبِظُلْمٍ مِّنَ الَّذِيْنَ هَادُوْا حَرَّمْنَا عَلَيْهِمْ طَيِّبَاتٍ اُحِلَّتْ لَهُمْ وَبِصَدِّهِمْ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ كَثِيْرًا
ইয়াহুদিদের বাড়াবাড়ি ও সীমালঙ্ঘনমূলক আচরণের কারণে এমন অনেক পবিত্র জিনিসও আমি তাদের জন্য হারাম করে দিয়েছিলাম, যা তাদের জন্য আগে হালাল ছিল। এটা এজন্য যে, এরা অনেক মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে বিরত রেখেছে। (সূরা নিসা- ১৬০)
وَعَلَى الَّذِيْنَ هَادُوْا حَرَّمْنَا كُلَّ ذِيْ ظُفُرٍۚ وَمِنَ الْبَقَرِ وَالْغَنَمِ حَرَّمْنَا عَلَيْهِمْ شُحُوْمَهُمَاۤ اِلَّا مَا حَمَلَتْ ظُهُوْرُهُمَاۤ اَوِ الْحَوَايَاۤ اَوْ مَا اخْتَلَطَ بِعَظْمٍؕ ذٰلِكَ جَزَيْنَاهُمْ بِبَغْيِهِمْؗ وَاِنَّا لَصَادِقُوْنَ
আমি ইয়াহুদিদের জন্য নখযুক্ত সমস্ত পশু হারাম করে দিয়েছিলাম এবং গরু ও ছাগলের চর্বিও তাদের জন্য হারাম করে দিয়েছিলাম, তবে এগুলোর পৃষ্ঠের অথবা অন্ত্রের কিংবা অস্থিসংলগ্ন চর্বি ব্যতীত। তাদের অবাধ্যতার কারণে তাদেরকে এ প্রতিফল দিয়েছিলাম; নিশ্চয় আমি সত্যবাদী। (সূরা আন‘আম- ১৪৬)
ব্যাখ্যা : বনী ইসরাঈলদের উপর এমনসব প্রাণী হারাম করে দেয়া হয়, যেগুলোর নখ রয়েছে। তাছাড়া গরু ও ছাগলের চর্বিও তাদের উপর হারাম করে দেয়া হয়। এগুলো তাদের জন্য এক প্রকার শাস্তি। কেননা কোন ব্যক্তি বা জনসমষ্টির জীবন যাপনের ক্ষেত্র সংকীর্ণ করে দেয়াটা মূলত তার জন্য একটি শাস্তি ছাড়া আর কিছুই নয়।
তাদের জন্য প্রস্তুত রয়েছে মর্মান্তিক শাস্তি :
وَاَخْذِهِمُ الرِّبَا وَقَدْ نُهُوْا عَنْهُ وَاَكْلِهِمْ اَمْوَالَ النَّاسِ بِالْبَاطِلِؕ وَاَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِيْنَ مِنْهُمْ عَذَابًا اَلِيْمًا
তারা সুদ গ্রহণ করত, অথচ তাদেরকে তা থেকে সুস্পষ্টভাবে নিষেধ করা হয়েছিল এবং তারা অন্যের ধনসম্পদ অন্যায়ভাবে (ধোঁকা ও প্রতারণার মাধ্যমে) গ্রাস করে নিত। সুতরাং আমি এসব কাফিরদের জন্য মর্মান্তিক শাস্তি নির্দিষ্ট করে রেখেছি। (সূরা নিসা- ১৬১)
তারা দুনিয়া ও আখিরাতে শাস্তির উপযুক্ত :
وَلَوْلَاۤ اَنْ كَتَبَ اللهُ عَلَيْهِمُ الْجَلَآءَ لَعَذَّبَهُمْ فِى الدُّنْيَاؕ وَلَهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ عَذَابُ النَّارِ ‐ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ شَآقُّوا اللهَ وَرَسُوْلَهٗۚ وَمَنْ يُّشَآقِّ اللهَ فَاِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
আল্লাহ তাদের নির্বাসনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করলেও তাদেরকে দুনিয়াতেই (অন্য) শাস্তি প্রদান করতেন; আর পরকালে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আযাব। এটা এজন্য যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করেছিল; আর যে-ই আল্লাহর সাথে বিরুদ্ধাচরণ করবে, তবে (সে জেনে রাখুক) নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি দানে খুবই কঠোর। (সূরা হাশর- ৩, ৪)
তাদের পরিণাম খুবই খারাপ হয়েছে :
قُلْ هَلْ اُنَبِّئُكُمْ بِشَرٍّ مِّنْ ذٰلِكَ مَثُوْبَةً عِنْدَ اللهِؕ مَنْ لَّعَنَهُ اللهُ وَغَضِبَ عَلَيْهِ وَجَعَلَ مِنْهُمُ الْقِرَدَةَ وَالْخَنَازِيْرَ وَعَبَدَ الطَّاغُوْتَؕ اُولٰٓئِكَ شَرٌّ مَّكَانًا وَّاَضَلُّ عَنْ سَوَآءِ السَّبِيْلِ
বলো, আমি কি তোমাদেরকে এর চেয়ে নিকৃষ্ট পরিণামের সংবাদ দেব, যা আল্লাহর নিকট আছে? যাকে আল্লাহ লানত করেছেন, যার উপর তিনি রাগান্বিত হয়েছেন, যাদের কতককে বানর ও কতককে শূকরে রূপান্তরিত করেছেন এবং যারা তাগুতের ইবাদাত করে। এরাই মর্যাদার দিক থেকে সবচেয়ে নিকৃষ্ট এবং সরল পথ হতে সর্বাধিক বিচ্যুত। (সূরা মায়েদা- ৬০)
তাদের প্রতি আল্লাহর লানত :
اُولٰٓئِكَ جَزَآؤُهُمْ اَنَّ عَلَيْهِمْ لَعْنَةَ اللهِ وَالْمَلَآئِكَةِ وَالنَّاسِ اَجْمَعِيْنَ
তাদের পরিণতি হচ্ছে, তাদের উপর আল্লাহ, ফেরেশতা এবং সকল মানুষের লানত। (সূরা আলে ইমরান- ৮৭)
দুনিয়ায় তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনা :
لَهُمْ فِى الدُّنْيَا خِزْيٌ وَّلَهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ
দুনিয়ায় তাদের জন্য রয়েছে অপমান এবং পরকালে রয়েছে মহাশাস্তি। (সূরা মায়েদা- ৪১)
তারা আল্লাহর গযবের শিকার হয়েছে :
فَبَآءُوْا بِغَضَبٍ عَلٰى غَضَبٍؕ وَلِلْكَافِرِيْنَ عَذَابٌ مُّهِيْنٌ
অতঃপর তারা ক্ষোভের উপর ক্ষোভে পতিত হয়েছে; আর কাফিরদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি।
(সূরা বাক্বারা- ৯০)
তারা কিয়ামত পর্যন্ত দুনিয়ার শাস্তি পেতে থাকবে :
وَاِذْ تَاَذَّنَ رَبُّكَ لَيَبْعَثَنَّ عَلَيْهِمْ اِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَنْ يَّسُوْمُهُمْ سُوْٓءَ الْعَذَابِؕ اِنَّ رَبَّكَ لَسَرِيْعُ الْعِقَابِۚ وَاِنَّهٗ لَغَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
স্মরণ করো, যখন তোমার প্রতিপালক ঘোষণা করেন যে, তিনি কিয়ামত পর্যন্ত তাদের উপর এমন লোকদেরকে প্রেরণ করবেন, যারা তাদেরকে কঠিন শাস্তি দিতে থাকবে। নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক শাস্তিদানে খুবই তৎপর, (অপরদিকে) তিনি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা আ‘রাফ- ১৬৭)
তারা জাহান্নামে যাবে :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَكْفُرُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِ وَيَقْتُلُوْنَ النَّبِيِّيْنَ بِغَيْرِ حَقٍّ وَّيَقْتُلُوْنَ الَّذِيْنَ يَاْمُرُوْنَ بِالْقِسْطِ مِنَ النَّاسِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ اَلِيْمٍ
নিশ্চয় যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে এবং অন্যায়ভাবে নবীদেরকে হত্যা করেছে, আরো হত্যা করেছে তাদেরকে যারা ইনসাফের নির্দেশ দেয়। তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ শুনিয়ে দাও। (সূরা আলে ইমরান- ২১)
তাদের দৃষ্টান্ত গাধার সাথে :
مَثَلُ الَّذِيْنَ حُمِّلُوا التَّوْرَاةَ ثُمَّ لَمْ يَحْمِلُوْهَا كَمَثَلِ الْحِمَارِ يَحْمِلُ اَسْفَارًاؕ بِئْسَ مَثَلُ الْقَوْمِ الَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِ اللهِؕ وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
যাদেরকে তাওরাতের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল অথচ তারা তা বহন করেনি, তাদের দৃষ্টান্ত কিতাবসমূহ বহনকারী গাধার ন্যায়। কতই না নিকৃষ্ট সেই সম্প্রদায়ের দৃষ্টান্ত, যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। আর আল্লাহ অত্যাচারী সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (সূরা জুমু‘আ- ৫)
তারা মুসলিমদের চরম শত্রু :
لَتَجِدَنَّ اَشَدَّ النَّاسِ عَدَاوَةً لِّلَّذِيْنَ اٰمَنُوا الْيَهُوْدَ وَالَّذِيْنَ اَشْرَكُوْاۚ وَلَتَجِدَنَّ اَقْرَبَهُمْ مَّوَدَّةً لِّلَّذِيْنَ اٰمَنُوا الَّذِيْنَ قَالُوْاۤ اِنَّا نَصَارٰىؕ ذٰلِكَ بِاَنَّ مِنْهُمْ قِسِّيْسِيْنَ وَرُهْبَانًا وَّاَنَّهُمْ لَا يَسْتَكْبِرُوْنَ
অবশ্য মানুষের মধ্যে মুমিনদের প্রতি শত্রুতায় ইয়াহুদি ও মুশরিকদেরকেই সর্বাধিক উগ্র হিসেবে দেখতে পাবে এবং যারা বলে ‘আমরা খ্রিস্টান’ (তাদেরকেও উগ্র হিসেবে দেখতে পাবে)। তবে মানুষের মধ্যে তাদেরকেই (খ্রিস্টানদেরকেই) তুমি মুমিনদের নিকটতর বন্ধু হিসেবে দেখতে পাবে, কেননা তাদের মধ্যে অনেক আলিম ও সংসারবিরাগী আছে, যারা অহংকার করে না। (সূরা মায়েদা- ৮২)
তাদেরকে বন্ধু বানানো যাবে না :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُوْدَ وَالنَّصَارٰۤى اَوْلِيَآءَۘ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍؕ وَمَنْ يَّتَوَلَّهُمْ مِّنْكُمْ فَاِنَّهٗ مِنْهُمْؕ اِنَّ اللهَ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। কেননা, তারা নিজেরাই একে অপরের বন্ধু। (এরপরও) তোমাদের মধ্য থেকে যারা তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে, সে তাদেরই একজন বলে গণ্য হবে। নিশ্চয় আল্লাহ যালিমদেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না।
(সূরা মায়েদা- ৫১)
‘বৈরাগ্যবাদ’ খ্রিস্টানরাই আবিষ্কার করেছিল :
وَرَهْبَانِيَّةَنِ ابْتَدَعُوْهَا مَا كَتَبْنَاهَا عَلَيْهِمْ اِلَّا ابْتِغَآءَ رِضْوَانِ اللهِ فَمَا رَعَوْهَا حَقَّ رِعَايَتِهَا
সন্ন্যাসবাদ (সংসারত্যাগী) তো তারা নিজেরাই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য প্রবর্তন করে নিয়েছিল। অথচ আমি তাদেরকে এর বিধান দেইনি, কিন্তু এটাও তারা যথাযথভাবে পালন করেনি। (সূরা হাদীদ- ২৭)
তারা ইঞ্জিলের উপদেশ ভুলে গিয়েছিল :
وَمِنَ الَّذِيْنَ قَالُوْاۤ اِنَّا نَصَارٰۤى اَخَذْنَا مِيْثَاقَهُمْ فَنَسُوْا حَظًّا مِّمَّا ذُكِّرُوْا بِه
যারা বলে, ‘আমরা খ্রিস্টান’, তাদেরও অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম; কিন্তু তারা যে উপদেশপ্রাপ্ত হয়েছিল তার একাংশ ভুলে গিয়েছে। (সূরা মায়েদা- ১৪)
অথচ আল্লাহ এটা অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন :
وَلْيَحْكُمْ اَهْلُ الْاِنْجِيْلِ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فِيْهِؕ وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ
আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন ইঞ্জিলের অনুসারীরা যেন সে অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করে। আর আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন সে অনুযায়ী যারা বিচার-ফায়সালা করে না, তারা ফাসিক। (সূরা মায়েদা- ৪৭)
তারা নিজেদেরকে আল্লাহর প্রিয় মনে করত :
وَقَالَتِ الْيَهُوْدُ وَالنَّصَارٰى نَحْنُ اَبْنَآءُ اللهِ وَاَحِبَّآؤُهٗؕ قُلْ فَلِمَ يُعَذِّبُكُمْ بِذُنُوْبِكُمْؕ بَلْ اَنْتُمْ بَشَرٌ مِّمَّنْ خَلَقَؕ يَغْفِرُ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيُعَذِّبُ مَنْ يَّشَآءُؕ وَلِلّٰهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَاؗ وَاِلَيْهِ الْمَصِيْرُ
ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানরা বলে, আমরা আল্লাহর পুত্র ও তার প্রিয়পাত্র। বলো, তবে কেন তিনি তোমাদের পাপের জন্য তোমাদেরকে শাস্তি দেন? বরং তোমরা তাদেরই মতো মানুষ, যাদেরকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন এবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেন, আসমান ও জমিন এর মধ্যে যা কিছু আছে তার সার্বভৌমত্ব আল্লাহরই; আর প্রত্যাবর্তন তো তাঁরই দিকে। (সূরা মায়েদা- ১৮)
তারা ঈসা (আঃ) সম্পর্কে মতভেদে লিপ্ত রয়েছে :
فَاخْتَلَفَ الْاَحْزَابُ مِنْ ۢبَيْنِهِمْۚ فَوَيْلٌ لِّلَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنْ مَّشْهَدِ يَوْمٍ عَظِيْمٍ
অতঃপর (খ্রিস্টানদের) দলগুলো নিজেদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি করল, সুতরাং দুর্ভোগ কাফিরদের জন্য মহাদিবস আগমনকালে। (সূরা মারইয়াম- ৩৭)
তারা তিন উপাস্যে বিশ্বাস করে :
لَقَدْ كَفَرَ الَّذِيْنَ قَالُوْاۤ اِنَّ اللهَ ثَالِثُ ثَلَاثَةٍۚ وَمَا مِنْ اِلٰهٍ اِلَّاۤ اِلٰهٌ وَّاحِدٌؕ وَاِنْ لَّمْ يَنْتَهُوْا عَمَّا يَقُوْلُوْنَ لَيَمَسَّنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنْهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
যারা বলে, ‘আল্লাহ তিনের মধ্যে একজন’ তারা কুফরী করেছে। (কেননা) এক ইলাহ্ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই। তারা যা বলে তা হতে বিরত না হলে, তাদের মধ্যে যারা কুফরী করেছে তাদের উপর অবশ্যই যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি অবতীর্ণ হবে। (সূরা মায়েদা- ৭৩)
তাদের কেউ কেউ ঈসা (আঃ)-কে আল্লাহর পুত্র মনে করত :
وَقَالَتِ الْيَهُوْدُ عُزَيْرُنِ ابْنُ اللهِ وَقَالَتِ النَّصَارَى الْمَسِيْحُ ابْنُ اللهِؕ ذٰلِكَ قَوْلُهُمْ بِاَفْوَاهِهِمْۚ يُضَاهِئُوْنَ قَوْلَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنْ قَبْلُؕ قَاتَلَهُمُ اللهُۚ اَنّٰى يُؤْفَكُوْنَ
ইয়াহুদিরা বলে, ‘উযায়ের আল্লাহর পুত্র’ এবং খ্রিস্টানরা বলে, ‘মাসীহ আল্লাহর পুত্র’- এগুলো তাদের মুখের কথা। পূর্বে যারা কুফরী করেছিল, তারা তাদের মতোই কথা বলে। আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করুন। হায় আফসোস! তাদেরকে কোন দিকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে! (সূরা তাওবা- ৩০)
আবার কেউ কেউ ঈসা (আঃ)-কেই আল্লাহ মনে করত :
لَقَدْ كَفَرَ الَّذِيْنَ قَالُوْاۤ اِنَّ اللهَ هُوَ الْمَسِيْحُ ابْنُ مَرْيَمَ
যারা কুফরী করে তারা বলে থাকে, মারইয়ামের ছেলে মাসীহই আল্লাহ। (সূরা মায়েদা- ১৭)
অথচ ঈসা (আঃ) তাদেরকে শিরক করতে নিষেধ করেছেন :
وَقَالَ الْمَسِيْحُ يَا بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ اعْبُدُوا اللهَ رَبِّيْ وَرَبَّكُمْؕ اِنَّهٗ مَنْ يُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَاْوَاهُ النَّارُؕ وَمَا لِلظَّالِمِيْنَ مِنْ اَنْصَارٍ
মাসীহ বলেছিল, হে বনী ইসরাঈল! তোমরা আমার ও তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহর ইবাদাত করো। কেননা যারা আল্লাহর সাথে শিরক করবে আল্লাহ তাদের জন্য জান্নাতকে হারাম করে দিয়েছেন; তাদের স্থায়ী আবাসস্থল হচ্ছে জাহান্নাম। আর যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। (সূরা মায়েদা- ৭২)
খ্রিস্টানদেরকে যেভাবে দাওয়াত দিতে হবে :
يَاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ لَا تَغْلُوْا فِيْ دِيْنِكُمْ وَلَا تَقُوْلُوْا عَلَى اللهِ اِلَّا الْحَقَّؕ اِنَّمَا الْمَسِيْحُ عِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَ رَسُوْلُ اللهِ وَكَلِمَتُهٗۚ اَلْقَاهَاۤ اِلٰى مَرْيَمَ وَرُوْحٌ مِّنْهُؗ فَاٰمِنُوْا بِاللهِ وَرُسُلِه وَلَا تَقُوْلُوْا ثَلَاثَةٌؕ اِنْتَهُوْا خَيْرًا لَّكُمْؕ اِنَّمَا اللهُ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ سُبْحَانَهٗۤ اَنْ يَّكُوْنَ لَهٗ وَلَدٌۘ لَهٗ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَرْضِؕ وَكَفٰى بِاللهِ وَكِيْلًا
হে আহলে কিতাব! তোমরা নিজেদের দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না এবং ঈসার ঘটনা নিয়ে আল্লাহ সম্পর্কে সত্য ছাড়া কোনকিছুই (মিথ্যা) বলো না। আর সে সত্য কথা হচ্ছে এই যে, মারইয়ামের পুত্র মাসীহ ছিলেন আল্লাহর রাসূল ও তার এমন এক বাণী- যা তিনি মারইয়ামের উপর প্রেরণ করেছেন। আর সে ছিল আল্লাহর কাছ থেকে পাঠানো এক রূহ। অতএব হে আহলে কিতাব! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনয়ন করো এবং কখনো এটা বলো না যে, উপাস্যের সংখ্যা তিন। তোমরা এ জঘন্য মিথ্যা থেকে বেঁচে থাকো, আর এটাই তোমাদের জন্য উত্তম। নিশ্চয় আল্লাহ একক উপাস্য, তিনি এ থেকে অনেক পবিত্র যে, তাঁর কোন সন্তান থাকবে। আকাশ ও জমিনের সব মালিকানাই তাঁর, আর অভিভাবক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। (সূরা নিসা- ১৭১)
وَرَهْبَانِيَّةَنِ ابْتَدَعُوْهَا مَا كَتَبْنَاهَا عَلَيْهِمْ اِلَّا ابْتِغَآءَ رِضْوَانِ اللهِ فَمَا رَعَوْهَا حَقَّ رِعَايَتِهَا
সন্ন্যাসবাদ (সংসারত্যাগী) তো তারা নিজেরাই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য প্রবর্তন করে নিয়েছিল। অথচ আমি তাদেরকে এর বিধান দেইনি, কিন্তু এটাও তারা যথাযথভাবে পালন করেনি। (সূরা হাদীদ- ২৭)
তারা ইঞ্জিলের উপদেশ ভুলে গিয়েছিল :
وَمِنَ الَّذِيْنَ قَالُوْاۤ اِنَّا نَصَارٰۤى اَخَذْنَا مِيْثَاقَهُمْ فَنَسُوْا حَظًّا مِّمَّا ذُكِّرُوْا بِه
যারা বলে, ‘আমরা খ্রিস্টান’, তাদেরও অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম; কিন্তু তারা যে উপদেশপ্রাপ্ত হয়েছিল তার একাংশ ভুলে গিয়েছে। (সূরা মায়েদা- ১৪)
অথচ আল্লাহ এটা অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন :
وَلْيَحْكُمْ اَهْلُ الْاِنْجِيْلِ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فِيْهِؕ وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ
আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন ইঞ্জিলের অনুসারীরা যেন সে অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করে। আর আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন সে অনুযায়ী যারা বিচার-ফায়সালা করে না, তারা ফাসিক। (সূরা মায়েদা- ৪৭)
তারা নিজেদেরকে আল্লাহর প্রিয় মনে করত :
وَقَالَتِ الْيَهُوْدُ وَالنَّصَارٰى نَحْنُ اَبْنَآءُ اللهِ وَاَحِبَّآؤُهٗؕ قُلْ فَلِمَ يُعَذِّبُكُمْ بِذُنُوْبِكُمْؕ بَلْ اَنْتُمْ بَشَرٌ مِّمَّنْ خَلَقَؕ يَغْفِرُ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيُعَذِّبُ مَنْ يَّشَآءُؕ وَلِلّٰهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَاؗ وَاِلَيْهِ الْمَصِيْرُ
ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানরা বলে, আমরা আল্লাহর পুত্র ও তার প্রিয়পাত্র। বলো, তবে কেন তিনি তোমাদের পাপের জন্য তোমাদেরকে শাস্তি দেন? বরং তোমরা তাদেরই মতো মানুষ, যাদেরকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন এবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেন, আসমান ও জমিন এর মধ্যে যা কিছু আছে তার সার্বভৌমত্ব আল্লাহরই; আর প্রত্যাবর্তন তো তাঁরই দিকে। (সূরা মায়েদা- ১৮)
তারা ঈসা (আঃ) সম্পর্কে মতভেদে লিপ্ত রয়েছে :
فَاخْتَلَفَ الْاَحْزَابُ مِنْ ۢبَيْنِهِمْۚ فَوَيْلٌ لِّلَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنْ مَّشْهَدِ يَوْمٍ عَظِيْمٍ
অতঃপর (খ্রিস্টানদের) দলগুলো নিজেদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি করল, সুতরাং দুর্ভোগ কাফিরদের জন্য মহাদিবস আগমনকালে। (সূরা মারইয়াম- ৩৭)
তারা তিন উপাস্যে বিশ্বাস করে :
لَقَدْ كَفَرَ الَّذِيْنَ قَالُوْاۤ اِنَّ اللهَ ثَالِثُ ثَلَاثَةٍۚ وَمَا مِنْ اِلٰهٍ اِلَّاۤ اِلٰهٌ وَّاحِدٌؕ وَاِنْ لَّمْ يَنْتَهُوْا عَمَّا يَقُوْلُوْنَ لَيَمَسَّنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنْهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
যারা বলে, ‘আল্লাহ তিনের মধ্যে একজন’ তারা কুফরী করেছে। (কেননা) এক ইলাহ্ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই। তারা যা বলে তা হতে বিরত না হলে, তাদের মধ্যে যারা কুফরী করেছে তাদের উপর অবশ্যই যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি অবতীর্ণ হবে। (সূরা মায়েদা- ৭৩)
তাদের কেউ কেউ ঈসা (আঃ)-কে আল্লাহর পুত্র মনে করত :
وَقَالَتِ الْيَهُوْدُ عُزَيْرُنِ ابْنُ اللهِ وَقَالَتِ النَّصَارَى الْمَسِيْحُ ابْنُ اللهِؕ ذٰلِكَ قَوْلُهُمْ بِاَفْوَاهِهِمْۚ يُضَاهِئُوْنَ قَوْلَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنْ قَبْلُؕ قَاتَلَهُمُ اللهُۚ اَنّٰى يُؤْفَكُوْنَ
ইয়াহুদিরা বলে, ‘উযায়ের আল্লাহর পুত্র’ এবং খ্রিস্টানরা বলে, ‘মাসীহ আল্লাহর পুত্র’- এগুলো তাদের মুখের কথা। পূর্বে যারা কুফরী করেছিল, তারা তাদের মতোই কথা বলে। আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করুন। হায় আফসোস! তাদেরকে কোন দিকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে! (সূরা তাওবা- ৩০)
আবার কেউ কেউ ঈসা (আঃ)-কেই আল্লাহ মনে করত :
لَقَدْ كَفَرَ الَّذِيْنَ قَالُوْاۤ اِنَّ اللهَ هُوَ الْمَسِيْحُ ابْنُ مَرْيَمَ
যারা কুফরী করে তারা বলে থাকে, মারইয়ামের ছেলে মাসীহই আল্লাহ। (সূরা মায়েদা- ১৭)
অথচ ঈসা (আঃ) তাদেরকে শিরক করতে নিষেধ করেছেন :
وَقَالَ الْمَسِيْحُ يَا بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ اعْبُدُوا اللهَ رَبِّيْ وَرَبَّكُمْؕ اِنَّهٗ مَنْ يُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَاْوَاهُ النَّارُؕ وَمَا لِلظَّالِمِيْنَ مِنْ اَنْصَارٍ
মাসীহ বলেছিল, হে বনী ইসরাঈল! তোমরা আমার ও তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহর ইবাদাত করো। কেননা যারা আল্লাহর সাথে শিরক করবে আল্লাহ তাদের জন্য জান্নাতকে হারাম করে দিয়েছেন; তাদের স্থায়ী আবাসস্থল হচ্ছে জাহান্নাম। আর যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। (সূরা মায়েদা- ৭২)
খ্রিস্টানদেরকে যেভাবে দাওয়াত দিতে হবে :
يَاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ لَا تَغْلُوْا فِيْ دِيْنِكُمْ وَلَا تَقُوْلُوْا عَلَى اللهِ اِلَّا الْحَقَّؕ اِنَّمَا الْمَسِيْحُ عِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَ رَسُوْلُ اللهِ وَكَلِمَتُهٗۚ اَلْقَاهَاۤ اِلٰى مَرْيَمَ وَرُوْحٌ مِّنْهُؗ فَاٰمِنُوْا بِاللهِ وَرُسُلِه وَلَا تَقُوْلُوْا ثَلَاثَةٌؕ اِنْتَهُوْا خَيْرًا لَّكُمْؕ اِنَّمَا اللهُ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ سُبْحَانَهٗۤ اَنْ يَّكُوْنَ لَهٗ وَلَدٌۘ لَهٗ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَرْضِؕ وَكَفٰى بِاللهِ وَكِيْلًا
হে আহলে কিতাব! তোমরা নিজেদের দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না এবং ঈসার ঘটনা নিয়ে আল্লাহ সম্পর্কে সত্য ছাড়া কোনকিছুই (মিথ্যা) বলো না। আর সে সত্য কথা হচ্ছে এই যে, মারইয়ামের পুত্র মাসীহ ছিলেন আল্লাহর রাসূল ও তার এমন এক বাণী- যা তিনি মারইয়ামের উপর প্রেরণ করেছেন। আর সে ছিল আল্লাহর কাছ থেকে পাঠানো এক রূহ। অতএব হে আহলে কিতাব! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনয়ন করো এবং কখনো এটা বলো না যে, উপাস্যের সংখ্যা তিন। তোমরা এ জঘন্য মিথ্যা থেকে বেঁচে থাকো, আর এটাই তোমাদের জন্য উত্তম। নিশ্চয় আল্লাহ একক উপাস্য, তিনি এ থেকে অনেক পবিত্র যে, তাঁর কোন সন্তান থাকবে। আকাশ ও জমিনের সব মালিকানাই তাঁর, আর অভিভাবক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। (সূরা নিসা- ১৭১)
نَبِىٌّ (নাবিয়্যুন) শব্দটি نَبَاٌ (নাবাউন) শব্দ থেকে গঠিত। এর একাধিক অর্থ রয়েছে- (এক) সংবাদ, বার্তা, খবর ইত্যাদি। এ অর্থের দিক দিয়ে নবী অর্থ সংবাদদাতা ও খবরদাতা। (দুই) উন্নত মর্যাদা ও সুউচ্চ অবস্থান। (তিন) পথ বা রাস্তা। নবীদেরকে এজন্য নবী বলা হয়েছে যে, তাঁরা হচ্ছেন আল্লাহকে পাওয়ার বা আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছার পথ বা মাধ্যম। তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে মর্যাদাসম্পন্ন খবর প্রদানকারী। আর رَسُوْلٌ (রাসূল) শব্দের আভিধানিক অর্থ, দূত বা বার্তাবাহক। কুরআনে এ শব্দটি এমনসব ফেরেশতার জন্যও ব্যবহার করা হয়েছে- যাদেরকে আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ কাজে নিযুক্ত করা হয়েছে। মূলত এমনসব মানুষকে রাসূল বলা হয়, যাদেরকে আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির কাছে নিজের বাণী পৌঁছানোর জন্য নিযুক্ত করেন। رَسُوْلٌ (রাসূল) শব্দটি নবীর তুলনায় একটু ভিন্ন অর্থ বহন করে। রাসূল শব্দটি এমনসব নবীর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে, যাদেরকে সাধারণ নবীদের তুলনায় বেশি শুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছিল।
মানুষকে সুসংবাদ দেয়া ও ভয় দেখানো :
وَمَا نُرْسِلُ الْمُرْسَلِيْنَ اِلَّا مُبَشِّرِيْنَ وَمُنْذِرِيْنَۚ فَمَنْ اٰمَنَ وَاَصْلَحَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ
আমি রাসূলগণকে শুধুমাত্র সুসংবাদবাহী ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করি। সুতরাং যে ব্যক্তি ঈমান আনবে ও নিজেকে সংশোধন করে নেবে, তার কোন ভয় নেই এবং সে দুঃখিতও হবে না। (সূরা আন‘আম– ৪৮)
মানুষের অভিযোগ করার কোন সুযোগ না রাখা :
رُسُلًا مُّبَشِّرِيْنَ وَمُنْذِرِيْنَ لِئَلَّا يَكُوْنَ لِلنَّاسِ عَلَى اللهِ حُجَّةٌ ۢبَعْدَ الرُّسُلِؕ وَكَانَ اللهُ عَزِيْزًا حَكِيْمًا
সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী রাসূল প্রেরণ করেছি, যেন রাসূল আসার পর আল্লাহর বিরুদ্ধে মানুষের কোন অভিযোগ না থাকে। আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা– ১৬৫)
নবী-রাসূল পাঠানো না হলে অভিযোগ করার সুযোগ থাকত :
وَلَوْ اَنَّاۤ اَهْلَكْنَاهُمْ بِعَذَابٍ مِّنْ قَبْلِهٖ لَقَالُوْا رَبَّنَا لَوْلَاۤ اَرْسَلْتَ اِلَيْنَا رَسُوْلًا فَنَتَّبِعَ اٰيَاتِكَ مِنْ قَبْلِ اَنْ نَّذِلَّ وَنَخْزٰى
যদি আমি এর আগেই তাদেরকে শাস্তি দ্বারা ধ্বংস করতাম, তবে তারা অবশ্যই বলত, হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদের নিকট একজন রাসূল পাঠালে না কেন? তাহলে আমরা লাঞ্ছিত ও অপমানিত হওয়ার পূর্বেই তোমার আয়াতসমূহ মেনে চলতাম। (সূরা ত্বা–হা– ১৩৪)
ব্যাখ্যা : শেষ বিচারের দিন কোন অপরাধী আল্লাহর কাছে এ অজুহাত পেশ করতে পারবে না যে, সে জানত না অথবা আল্লাহ তাকে প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করার জন্য কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। কেননা আল্লাহ এ ব্যাপারে তাদের মুখ বন্ধ করে দেয়ার জন্যই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গোত্রে বা জাতিতে নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছেন, যাদের কাছে প্রয়োজনানুসারে ওহী নাযিল হতো। তাদের পথনির্দেশনার জন্য কিতাবও নাযিল করেছিলেন। এসব নবী ও রাসূল সেসব কিতাব ও ওহীর মাধ্যমে মানুষদেরকে আল্লাহর পথে আহবান করেছেন। তারা তাদের নিকট সত্যের জ্ঞান পৌঁছে দিয়েছেন। তাঁরা দুনিয়া থেকে বিদায় নিলেও তাদের উপর অবতীর্ণ কিতাবসমূহ রেখে গেছেন। ফলে তাদের অনুপস্থিতিতেও সেসব কিতাব দ্বারা সত্য পথ গ্রহণের সুযোগ ছিল। এরপরও যদি কোন ব্যক্তি গোমরাহ হয়, তাহলে সেজন্য সে নিজেই অভিযুক্ত হবে। কারণ তার কাছে সত্যের বাণী পৌঁছেছিল; কিন্তু সে তা গ্রহণ করেনি। সুতরাং এখন তাদের এসব অজুহাত গ্রহণযোগ্য নয়। তাছাড়া কিয়ামতের দিন সেসব লোকও অভিযুক্ত হবে, যারা সত্য ও সঠিক পথ সম্পর্কে জানত, কিন্তু আল্লাহর বান্দাদেরকে গোমরাহীতে লিপ্ত দেখেও তাদেরকে সৎপথের সন্ধান দেয়নি।
আযাব দেয়ার পূর্বে দাওয়াত পৌঁছে দেয়া :
وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِيْنَ حَتّٰى نَبْعَثَ رَسُوْلًا
আমি রাসূল না পাঠানো পর্যন্ত কাউকে শাস্তি দেই না। (সূরা বনী ইসরাঈল– ১৫)
وَمَا كَانَ رَبُّكَ مُهْلِكَ الْقُرٰى حَتّٰى يَبْعَثَ فِۤيْ اُمِّهَا رَسُوْلًا يَّتْلُوْا عَلَيْهِمْ اٰيَاتِنَاۚ وَمَا كُنَّا مُهْلِكِى الْقُرٰۤى اِلَّا وَاَهْلُهَا ظَالِمُوْنَ
তোমার প্রতিপালক কোন জনপদকেই ধ্বংস করেন না, যতক্ষণ না তার (জনপদের) কেন্দ্রস্থলে এমন কোন নবী না পাঠান, যিনি তাদের নিকট আমার আয়াতসমূহ পাঠ করেন। আর আমি কোন জনপদ ধ্বংস করি না, যতক্ষণ না সেখানকার অধিবাসীরা অত্যাচারী হয়ে যায়। (সূরা ক্বাসাস– ৫৯)
রাসূল পাঠানোর তিনটি বিশেষ উদ্দেশ্য :
رَبَّنَا وَابْعَثْ فِيْهِمْ رَسُوْلًا مِّنْهُمْ يَتْلُوْا عَلَيْهِمْ اٰيَاتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُزَكِّيْهِمْؕ اِنَّكَ اَنْتَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
হে আমাদের রব! তাদেরই মধ্য হতে এমন একজন রাসূল প্রেরণ করুন, যিনি তাদেরকে আপনার আয়াতসমূহ পাঠ করে শুনাবেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দান করবেন এবং তাদেরকে পবিত্র করবেন। নিশ্চয় আপনি মহাপরাক্রমশালী ও পরম কৌশলী। (সূরা বাক্বারা– ১২৯)
وَمَا نُرْسِلُ الْمُرْسَلِيْنَ اِلَّا مُبَشِّرِيْنَ وَمُنْذِرِيْنَۚ فَمَنْ اٰمَنَ وَاَصْلَحَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ
আমি রাসূলগণকে শুধুমাত্র সুসংবাদবাহী ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করি। সুতরাং যে ব্যক্তি ঈমান আনবে ও নিজেকে সংশোধন করে নেবে, তার কোন ভয় নেই এবং সে দুঃখিতও হবে না। (সূরা আন‘আম– ৪৮)
মানুষের অভিযোগ করার কোন সুযোগ না রাখা :
رُسُلًا مُّبَشِّرِيْنَ وَمُنْذِرِيْنَ لِئَلَّا يَكُوْنَ لِلنَّاسِ عَلَى اللهِ حُجَّةٌ ۢبَعْدَ الرُّسُلِؕ وَكَانَ اللهُ عَزِيْزًا حَكِيْمًا
সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী রাসূল প্রেরণ করেছি, যেন রাসূল আসার পর আল্লাহর বিরুদ্ধে মানুষের কোন অভিযোগ না থাকে। আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা– ১৬৫)
নবী-রাসূল পাঠানো না হলে অভিযোগ করার সুযোগ থাকত :
وَلَوْ اَنَّاۤ اَهْلَكْنَاهُمْ بِعَذَابٍ مِّنْ قَبْلِهٖ لَقَالُوْا رَبَّنَا لَوْلَاۤ اَرْسَلْتَ اِلَيْنَا رَسُوْلًا فَنَتَّبِعَ اٰيَاتِكَ مِنْ قَبْلِ اَنْ نَّذِلَّ وَنَخْزٰى
যদি আমি এর আগেই তাদেরকে শাস্তি দ্বারা ধ্বংস করতাম, তবে তারা অবশ্যই বলত, হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদের নিকট একজন রাসূল পাঠালে না কেন? তাহলে আমরা লাঞ্ছিত ও অপমানিত হওয়ার পূর্বেই তোমার আয়াতসমূহ মেনে চলতাম। (সূরা ত্বা–হা– ১৩৪)
ব্যাখ্যা : শেষ বিচারের দিন কোন অপরাধী আল্লাহর কাছে এ অজুহাত পেশ করতে পারবে না যে, সে জানত না অথবা আল্লাহ তাকে প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করার জন্য কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। কেননা আল্লাহ এ ব্যাপারে তাদের মুখ বন্ধ করে দেয়ার জন্যই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গোত্রে বা জাতিতে নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছেন, যাদের কাছে প্রয়োজনানুসারে ওহী নাযিল হতো। তাদের পথনির্দেশনার জন্য কিতাবও নাযিল করেছিলেন। এসব নবী ও রাসূল সেসব কিতাব ও ওহীর মাধ্যমে মানুষদেরকে আল্লাহর পথে আহবান করেছেন। তারা তাদের নিকট সত্যের জ্ঞান পৌঁছে দিয়েছেন। তাঁরা দুনিয়া থেকে বিদায় নিলেও তাদের উপর অবতীর্ণ কিতাবসমূহ রেখে গেছেন। ফলে তাদের অনুপস্থিতিতেও সেসব কিতাব দ্বারা সত্য পথ গ্রহণের সুযোগ ছিল। এরপরও যদি কোন ব্যক্তি গোমরাহ হয়, তাহলে সেজন্য সে নিজেই অভিযুক্ত হবে। কারণ তার কাছে সত্যের বাণী পৌঁছেছিল; কিন্তু সে তা গ্রহণ করেনি। সুতরাং এখন তাদের এসব অজুহাত গ্রহণযোগ্য নয়। তাছাড়া কিয়ামতের দিন সেসব লোকও অভিযুক্ত হবে, যারা সত্য ও সঠিক পথ সম্পর্কে জানত, কিন্তু আল্লাহর বান্দাদেরকে গোমরাহীতে লিপ্ত দেখেও তাদেরকে সৎপথের সন্ধান দেয়নি।
আযাব দেয়ার পূর্বে দাওয়াত পৌঁছে দেয়া :
وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِيْنَ حَتّٰى نَبْعَثَ رَسُوْلًا
আমি রাসূল না পাঠানো পর্যন্ত কাউকে শাস্তি দেই না। (সূরা বনী ইসরাঈল– ১৫)
وَمَا كَانَ رَبُّكَ مُهْلِكَ الْقُرٰى حَتّٰى يَبْعَثَ فِۤيْ اُمِّهَا رَسُوْلًا يَّتْلُوْا عَلَيْهِمْ اٰيَاتِنَاۚ وَمَا كُنَّا مُهْلِكِى الْقُرٰۤى اِلَّا وَاَهْلُهَا ظَالِمُوْنَ
তোমার প্রতিপালক কোন জনপদকেই ধ্বংস করেন না, যতক্ষণ না তার (জনপদের) কেন্দ্রস্থলে এমন কোন নবী না পাঠান, যিনি তাদের নিকট আমার আয়াতসমূহ পাঠ করেন। আর আমি কোন জনপদ ধ্বংস করি না, যতক্ষণ না সেখানকার অধিবাসীরা অত্যাচারী হয়ে যায়। (সূরা ক্বাসাস– ৫৯)
রাসূল পাঠানোর তিনটি বিশেষ উদ্দেশ্য :
رَبَّنَا وَابْعَثْ فِيْهِمْ رَسُوْلًا مِّنْهُمْ يَتْلُوْا عَلَيْهِمْ اٰيَاتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُزَكِّيْهِمْؕ اِنَّكَ اَنْتَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
হে আমাদের রব! তাদেরই মধ্য হতে এমন একজন রাসূল প্রেরণ করুন, যিনি তাদেরকে আপনার আয়াতসমূহ পাঠ করে শুনাবেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দান করবেন এবং তাদেরকে পবিত্র করবেন। নিশ্চয় আপনি মহাপরাক্রমশালী ও পরম কৌশলী। (সূরা বাক্বারা– ১২৯)
আল্লাহ নবী-রাসূলগণকে কিতাব দিয়ে পাঠিয়েছেন :
اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ اٰتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ وَالْحُكْمَ وَالنُّبُوَّةَ
আমি তাদেরকে কিতাব, কর্তৃত্ব ও নবুওয়াত দান করেছি। (সূরা আন‘আম– ৮৯)
তাদেরকে মু‘জিযাও দেয়া হয়েছে :
ثُمَّ بَعَثْنَا مِنْ ۢبَعْدِهٖ رُسُلًا اِلٰى قَوْمِهِمْ فَجَآءُوْهُمْ بِالْبَيِّنَاتِ
তাঁর {নূহ (আঃ) এর} পর আমি রাসূলগণকে তাদের সম্প্রদায়ের নিকট প্রেরণ করেছি, তারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ এসেছিল। (সূরা ইউনুস– ৭৪)
নবী-রাসূলগণকে ন্যায়ের মানদন্ডসহ পাঠানো হয়েছে :
لَقَدْ اَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنَاتِ وَاَنْزَلْنَا مَعَهُمُ الْكِتَابَ وَالْمِيْزَانَ لِيَقُوْمَ النَّاسُ بِالْقِسْطِ
নিশ্চয় আমি আমার রাসূলদেরকে প্রেরণ করেছি স্পষ্ট প্রমাণসহ এবং তাদের সঙ্গে দিয়েছি কিতাব ও ন্যায়ের মানদন্ড, যাতে মানুষ ইনসাফের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারে। (সূরা হাদীদু ২৫)
প্রত্যেক রাসূলকেই তার স্বজাতির ভাষায় পাঠানো হয়েছে :
وَمَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهٖ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ
আমি প্রত্যেক রাসূলকেই তার স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি, যাতে তারা তাদের নিকট স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিতে পারে। (সূরা ইবরাহীম– ৪)
রাসূল নির্বাচন করা আল্লাহর কাজ :
اَللهُ يَصْطَفِيْ مِنَ الْمَلَآئِكَةِ رُسُلًا وَّمِنَ النَّاسِؕ اِنَّ اللهَ سَمِيْعٌ ۢۢبَصِيْرٌ
আল্লাহ ফেরেশতাদের মধ্য হতে বার্তাবাহক মনোনীত করেন এবং মানুষের মধ্য হতেও রাসূল নির্বাচন করেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। (সূরা হজ্জ– ৭৫)
اَللهُ اَعْلَمُ حَيْثُ يَجْعَلُ رِسَالَتَهٗ
আল্লাহ তাঁর রিসালাতের ভার কার উপর অর্পণ করবেন তা তিনিই ভালো জানেন। (সূরা আন‘আম– ১২৪)
اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ اٰتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ وَالْحُكْمَ وَالنُّبُوَّةَ
আমি তাদেরকে কিতাব, কর্তৃত্ব ও নবুওয়াত দান করেছি। (সূরা আন‘আম– ৮৯)
তাদেরকে মু‘জিযাও দেয়া হয়েছে :
ثُمَّ بَعَثْنَا مِنْ ۢبَعْدِهٖ رُسُلًا اِلٰى قَوْمِهِمْ فَجَآءُوْهُمْ بِالْبَيِّنَاتِ
তাঁর {নূহ (আঃ) এর} পর আমি রাসূলগণকে তাদের সম্প্রদায়ের নিকট প্রেরণ করেছি, তারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ এসেছিল। (সূরা ইউনুস– ৭৪)
নবী-রাসূলগণকে ন্যায়ের মানদন্ডসহ পাঠানো হয়েছে :
لَقَدْ اَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنَاتِ وَاَنْزَلْنَا مَعَهُمُ الْكِتَابَ وَالْمِيْزَانَ لِيَقُوْمَ النَّاسُ بِالْقِسْطِ
নিশ্চয় আমি আমার রাসূলদেরকে প্রেরণ করেছি স্পষ্ট প্রমাণসহ এবং তাদের সঙ্গে দিয়েছি কিতাব ও ন্যায়ের মানদন্ড, যাতে মানুষ ইনসাফের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারে। (সূরা হাদীদু ২৫)
প্রত্যেক রাসূলকেই তার স্বজাতির ভাষায় পাঠানো হয়েছে :
وَمَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهٖ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ
আমি প্রত্যেক রাসূলকেই তার স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি, যাতে তারা তাদের নিকট স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিতে পারে। (সূরা ইবরাহীম– ৪)
রাসূল নির্বাচন করা আল্লাহর কাজ :
اَللهُ يَصْطَفِيْ مِنَ الْمَلَآئِكَةِ رُسُلًا وَّمِنَ النَّاسِؕ اِنَّ اللهَ سَمِيْعٌ ۢۢبَصِيْرٌ
আল্লাহ ফেরেশতাদের মধ্য হতে বার্তাবাহক মনোনীত করেন এবং মানুষের মধ্য হতেও রাসূল নির্বাচন করেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। (সূরা হজ্জ– ৭৫)
اَللهُ اَعْلَمُ حَيْثُ يَجْعَلُ رِسَالَتَهٗ
আল্লাহ তাঁর রিসালাতের ভার কার উপর অর্পণ করবেন তা তিনিই ভালো জানেন। (সূরা আন‘আম– ১২৪)
নবী-রাসূলগণ ছিলেন আল্লাহর নির্বাচিত বান্দা :
وَاِنَّهُمْ عِنْدَنَا لَمِنَ الْمُصْطَفَيْنَ الْاَخْيَارِ
আর তারা আমার কাছে মনোনীত ও সর্বোত্তম বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা সোয়াদু ৪৭)
আল্লাহ প্রত্যেককে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন :
وَاِسْمَاعِيْلَ وَالْيَسَعَ وَيُوْنُسَ وَلُوْطًاؕ وَكُلًّا فَضَّلْنَا عَلَى الْعَالَمِيْنَ
ইসমাঈল, আল–ইয়াসা‘আ, ইউনুস ও লূত প্রত্যেককেই সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম এবং প্রত্যেককেই বিশ্বজগতের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছিলাম। (সূরা আন‘আম– ৮৬)
তাদের একজনকে অপরজনের উপর মর্যাদা দেয়া হয়েছে :
تِلْكَ الرُّسُلُ فَضَّلْنَا بَعْضَهُمْ عَلٰى بَعْضٍ مِّنْهُمْ مَّنْ كَلَّمَ اللهُ وَرَفَعَ بَعْضَهُمْ دَرَجَاتٍ
এসব রাসূল, যাদের কাউকে কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। তাদের মধ্যে কারো সাথে আল্লাহ কথা বলেছেন এবং কারো মর্যাদাকে সমুন্নত করেছেন। (সূরা বাক্বারা– ২৫৩)
وَلَقَدْ فَضَّلْنَا بَعْضَ النَّبِيِّيْنَ عَلٰى بَعْضٍ
আমি একেকজন নবীকে একেকজন নবীর উপর মর্যাদা দান করেছি। (সূরা বনী ইসরাঈল– ৫৫)
সকল নবী-রাসূলই হেদায়াতপ্রাপ্ত ছিলেন :
كُلًّا هَدَيْنَا وَنُوْحًا هَدَيْنَا مِنْ قَبْلُ
তাদের প্রত্যেককে সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম। এর পূর্বে নূহকেও সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম।
(সূরা আন‘আম– ৮৪)
সকল নবী-রাসূলই সৎ ছিলেন :
وَزَكَرِيَّا وَيَحْيٰى وَعِيْسٰى وَاِلْيَاسَؕ كُلٌّ مِّنَ الصَّالِحِيْنَ
আর আমি যাকারিয়া, ইয়াহিয়া, ঈসা এবং ইলয়াসকেও সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম। এরা সকলেই ছিল সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা আন‘আম– ৮৫)
وَاِنَّهُمْ عِنْدَنَا لَمِنَ الْمُصْطَفَيْنَ الْاَخْيَارِ
আর তারা আমার কাছে মনোনীত ও সর্বোত্তম বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা সোয়াদু ৪৭)
আল্লাহ প্রত্যেককে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন :
وَاِسْمَاعِيْلَ وَالْيَسَعَ وَيُوْنُسَ وَلُوْطًاؕ وَكُلًّا فَضَّلْنَا عَلَى الْعَالَمِيْنَ
ইসমাঈল, আল–ইয়াসা‘আ, ইউনুস ও লূত প্রত্যেককেই সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম এবং প্রত্যেককেই বিশ্বজগতের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছিলাম। (সূরা আন‘আম– ৮৬)
তাদের একজনকে অপরজনের উপর মর্যাদা দেয়া হয়েছে :
تِلْكَ الرُّسُلُ فَضَّلْنَا بَعْضَهُمْ عَلٰى بَعْضٍ مِّنْهُمْ مَّنْ كَلَّمَ اللهُ وَرَفَعَ بَعْضَهُمْ دَرَجَاتٍ
এসব রাসূল, যাদের কাউকে কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। তাদের মধ্যে কারো সাথে আল্লাহ কথা বলেছেন এবং কারো মর্যাদাকে সমুন্নত করেছেন। (সূরা বাক্বারা– ২৫৩)
وَلَقَدْ فَضَّلْنَا بَعْضَ النَّبِيِّيْنَ عَلٰى بَعْضٍ
আমি একেকজন নবীকে একেকজন নবীর উপর মর্যাদা দান করেছি। (সূরা বনী ইসরাঈল– ৫৫)
সকল নবী-রাসূলই হেদায়াতপ্রাপ্ত ছিলেন :
كُلًّا هَدَيْنَا وَنُوْحًا هَدَيْنَا مِنْ قَبْلُ
তাদের প্রত্যেককে সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম। এর পূর্বে নূহকেও সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম।
(সূরা আন‘আম– ৮৪)
সকল নবী-রাসূলই সৎ ছিলেন :
وَزَكَرِيَّا وَيَحْيٰى وَعِيْسٰى وَاِلْيَاسَؕ كُلٌّ مِّنَ الصَّالِحِيْنَ
আর আমি যাকারিয়া, ইয়াহিয়া, ঈসা এবং ইলয়াসকেও সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম। এরা সকলেই ছিল সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা আন‘আম– ৮৫)
সকল নবী-রাসূলই মানুষ ছিলেন :
قَالَتْ لَهُمْ رُسُلُهُمْ اِنْ نَّحْنُ اِلَّا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ وَلٰكِنَّ اللهَ يَمُنُّ عَلٰى مَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهٖ
তাদের রাসূলগণ তাদেরকে বলত, আমরা তো তোমাদের মতোই মানুষ। তবে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তাকে অনুগ্রহ করেন। (সূরা ইবরাহীম– ১১)
সকল নবী-রাসূল পুরুষ ছিলেন :
وَمَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ اِلَّا رِجَالًا نُّوْحِيْۤ اِلَيْهِمْ فَاسْاَلُوْاۤ اَهْلَ الذِّكْرِ اِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ
আমি তোমার পূর্বে যত নবীর প্রতি ওহী প্রেরণ করেছিলাম তারা সবাই পুরুষ ছিলেন। তোমরা যদি না জান তবে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস করে নাও। (সূরা নাহল– ৪৩)
তারা খাবার খেতেন এবং বাজারেও যেতেন :
وَمَاۤ اَرْسَلْنَا قَبْلَكَ مِنَ الْمُرْسَلِيْنَ اِلَّاۤ اِنَّهُمْ لَيَأْكُلُوْنَ الطَّعَامَ وَيَمْشُوْنَ فِى الْاَسْوَاقِ
তোমার পূর্বে আমি যেসব রাসূল প্রেরণ করেছি, তারা সকলেই তো আহার করত ও হাট–বাজারে চলাফেরা করত। (সূরা ফুরক্বানু ২০)
নবী-রাসূলগণের কেউই চিরস্থায়ী ছিলেন না :
وَمَا جَعَلْنَاهُمْ جَسَدً ا لَّا يَأْكُلُوْنَ الطَّعَامَ وَمَا كَانُوْا خَالِدِيْنَ
আমি তাদেরকে এমন দেহবিশিষ্ট করিনি, যারা আহার্য গ্রহণ করত না এবং তারা চিরস্থায়ীও ছিল না। (সূরা আম্বিয়া– ৮)
তাদের সবার স্ত্রী–পুত্র ছিল :
وَلَقَدْ اَرْسَلْنَا رُسُلًا مِّنْ قَبْلِكَ وَجَعَلْنَا لَهُمْ اَزْوَاجًا وَّذُرِّيَّةً
আমি তো তোমার পূর্বে অনেক রাসূল প্রেরণ করেছিলাম এবং তাদেরকে স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিও দান করেছিলাম। (সূরা রা‘দু ৩৮)
নবী-রাসূলগণ ভালো কাজে এগিয়ে থাকতেন :
اِنَّهُمْ كَانُوْا يُسَارِعُوْنَ فِى الْخَيْرَاتِ
তারা সৎকর্মে (একে অন্যের সাথে) প্রতিযোগিতা করত। (সূরা আম্বিয়া– ৯০)
তারা আল্লাহকে ডাকতেন :
وَيَدْعُوْنَنَا رَغَبًا وَّرَهَبًا وَّكَانُوْا لَنَا خَاشِعِيْنَ
তারা আমাকে আশা ও ভীতির সাথে ডাকত। আর তারা ছিল আমার অনুগত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা আম্বিয়া– ৯০)
তারা আল্লাহর বাণী শুনে সিজদায় লুটিয়ে পড়তেন :
اِذَا تُتْلٰى عَلَيْهِمْ اٰيَاتُ الرَّحْمٰنِ خَرُّوْا سُجَّدًا وَّ بُكِيًّا
যখন তাদের নিকট দয়াময়ের আয়াত তিলাওয়াত করা হয়, তখন তারা ক্রন্দনরত অবস্থায় সিজদায় লুটিয়ে পড়ে। (সূরা মারইয়াম– ৫৮)
পরকালের স্মরণ ছিল তাদের বিশেষ গুণ :
اِنَّاۤ اَخْلَصْنَاهُمْ بِخَالِصَةٍ ذِكْرَى الدَّارِ
আমি তো তাদেরকে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করেছিলাম এক বিশেষ গুণে, আর তা হলো আখিরাতের স্মরণ। (সূরা সোয়াদু ৪৬)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ তাঁদের যাবতীয় সাফল্যের মূল কারণ ছিল এই যে, তাঁদের মধ্যে বৈষয়িক স্বার্থলাভের আকাঙ্ক্ষার সামান্যতম গন্ধও ছিল না। তাদের সমস্ত চিন্তা ও প্রচেষ্টা ছিল আখিরাতের জন্য। তাঁরা নিজেরাও আখিরাতের কথা স্মরণ করতেন এবং অন্যদেরকেও স্মরণ করিয়ে দিতেন। তাই আল্লাহ তাঁদেরকে মর্যাদা দান করেছেন। বৈষয়িক স্বার্থ চিন্তায় লিপ্ত লোকদের ভাগ্যে কখনো এটা ঘটেনি।
সকল নবী-রাসূল ধৈর্যশীল ছিলেন :
وَاِسْمَاعِيْلَ وَاِدْرِيْسَ وَذَا الْكِفْلِؕ كُلٌّ مِّنَ الصَّابِرِيْنَ
(স্মরণ করো) ইসমাঈল, ইদরীস ও যুলকিফ্ল-এর কথা, তাদের প্রত্যেকেই ছিল ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা আম্বিয়া– ৮৫)
তারা শক্তিশালী ও বিচক্ষণ ছিলেন :
وَاذْكُرْ عِبَادَنَاۤ اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَ اُولِى الْاَيْدِيْ وَالْاَبْصَارِ
স্মরণ করো, আমার বান্দা ইবরাহীম, ইসহাক ও ইয়াকূবের কথা; তারা ছিলেন কর্মশক্তিসম্পন্ন ও সূক্ষ্মদর্শী। (সূরা সোয়াদু ৪৫)
ব্যাখ্যা : اُولِى الْاَيْدِىْ وَالْاَبْصَارِ (হস্তধারী ও দৃষ্টিধারীগণ) এখানে হাত অর্থ শক্তি ও সামর্থ্য। আর নবীগণকে শক্তি ও সামর্থ্যের অধিকারী বলার অর্থ হচ্ছে, তাঁরা অত্যন্ত সক্রিয় ছিলেন। তাঁরা আল্লাহর আনুগত্যকারী ও গোনাহ থেকে সংরক্ষিত থাকার প্রচন্ড শক্তির অধিকারী ছিলেন। দুনিয়ায় আল্লাহর কালিমা প্রতিষ্ঠা করার জন্য তাঁরা ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। আর দৃষ্টি অর্থ অন্তর্দৃষ্টি। তাঁরা সত্যদর্শী ও সূক্ষ্ম সত্যদ্রষ্টা ছিলেন। দুনিয়ায় তাঁরা চোখ বন্ধ করে চলতেন না। বরং চোখ খুলে জ্ঞান ও তাত্ত্বিক পর্যবেক্ষণের পূর্ণ আলোতে সঠিক ও সোজা পথ দেখে চলতেন। এ শব্দগুলোর মধ্যে এ দিকে একটি সূক্ষ্ম ইংগিত করা হয়েছে যে, দুষ্কৃতিকারী ও পথভ্রষ্টরা আসলে এ ধরনের হাত ও চোখ উভয়টি থেকে বঞ্চিত। আসলে যারা আল্লাহর পথে কাজ করে তারাই হস্তধারী এবং যারা সত্যের আলো ও মিথ্যার অন্ধকারের মধ্যে পার্থক্য করে তারাই দৃষ্টির অধিকারী।
সকল নবী-রাসূলের আকীদা–বিশ্বাস এক ছিল :
وَاِنَّ هٰذِهٖۤ اُمَّتُكُمْ اُمَّةً وَّاحِدَةً وَّاَنَاْ رَبُّكُمْ فَاتَّقُوْنِ
তোমাদের এ জাতি তো একই জাতি এবং আমিই তোমাদের প্রতিপালক। অতএব আমাকেই ভয় করো।
(সূরা মু’মিনূনু ৫২)
সকল নবী-রাসূলের দাওয়াতের মূল বিষয় ছিল তাওহীদ :
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِيْ كُلِّ اُمَّةٍ رَّسُوْلًا اَنِ اعْبُدُوا اللهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوْتَ
নিশ্চয় আমি প্রত্যেক জাতির নিকট রাসূল পাঠিয়েছি এ নির্দেশ দিয়ে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো ও তাগুতকে বর্জন করো। (সূরা নাহল– ৩৬)
وَمَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا نُوْحِيْۤ اِلَيْهِ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَاْ فَاعْبُدُوْنِ
আমি তোমার পূর্বে এমন কোন রাসূল প্রেরণ করিনি, যার প্রতি এ ওহী পাঠাইনি যে, আমি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই। সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদাত করো। (সূরা আম্বিয়া– ২৫)
তারা আল্লাহর হুকুম ছাড়া মু‘জিযা দেখাতে পারতেন না :
وَمَا كَانَ لِرَسُوْلٍ اَنْ يَّأْتِيَ بِاٰيَةٍ اِلَّا بِاِذْنِ اللهِ لِكُلِّ اَجَلٍ كِتَابٌ
আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত কোন নিদর্শন উপস্থিত করা কোন রাসূলের পক্ষে সম্ভব নয়। প্রত্যেক বিষয়ের নির্ধারিত সময় লিপিবদ্ধ রয়েছে। (সূরা রা‘দু ৩৮)
وَمَا كَانَ لِرَسُوْلٍ اَنْ يَّأْتِيَ بِاٰيَةٍ اِلَّا بِاِذْنِ اللهِ
আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোন নিদর্শন উপস্থিত করা কোন রাসূলের পক্ষে সম্ভব নয়। (সূরা মু’মিনু ৭৮)
কোন নবীই নিজেকে উপাস্য বলে দাবী করেননি :
مَا كَانَ لِبَشَرٍ اَنْ يُّؤْتِيَهُ اللهُ الْكِتَابَ وَالْحُكْمَ وَالنُّبُوَّةَ ثُمَّ يَقُوْلَ لِلنَّاسِ كُوْنُوْا عِبَادًا لِّيْ مِنْ دُوْنِ اللهِ وَلٰكِنْ كُوْنُوْا رَبَّانِيِّيْنَ بِمَا كُنْتُمْ تُعَلِّمُوْنَ الْكِتَابَ وَبِمَا كُنْتُمْ تَدْرُسُوْنَ ‐ وَلَا يَأْمُرَكُمْ اَنْ تَتَّخِذُوا الْمَلَآئِكَةَ وَالنَّبِيِّيْنَ اَرْبَابًا اَيَأْمُرُكُمْ بِالْكُفْرِ بَعْدَ اِذْ اَنْتُمْ مُّسْلِمُوْنَ
কোন মানুষের জন্য এটা সমীচিন নয় যে, আল্লাহ তাকে কিতাব, জ্ঞান ও নবুওয়াত দান করবেন। অতঃপর সে লোকদেরকে বলবে, তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে আমার ইবাদাতকারী হয়ে যাও। বরং সে বলবে, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের বান্দা হয়ে যাও। এ কারণে যে, তোমরা কিতাবের জ্ঞান শিক্ষা দিচ্ছ এবং তা পাঠ করছ। আর সে তোমাদেরকে এ নির্দেশও দেয় না যে, তোমরা ফেরেশতা এবং নবীদেরকে উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করো। সে কি তোমাদেরকে মুসলিম হওয়ার পর কুফরীর নির্দেশ দেয়?
(সূরা আলে ইমরানু ৭৯, ৮০)
নবীরা শিরক করলে তাদেরও আমল নষ্ট হয়ে যেত :
وَلَوْ اَشْرَكُوْا لَحَبِطَ عَنْهُمْ مَّا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
তারা যদি শিরক করত, তবে তাদের কৃতকর্মও নিষ্ফল হয়ে যেত। (সূরা আন‘আম– ৮৮)
আল্লাহ নবীদের থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন :
وَاِذْ اَخَذْنَا مِنَ النَّبِيِّيْنَ مِيْثَاقَهُمْ وَمِنْكَ وَمِنْ نُّوْحٍ وَّاِبْرَاهِيْمَ وَمُوْسٰى وَعِيْسَى ابْنِ مَرْيَمَ۪ وَاَخَذْنَا مِنْهُمْ مِّيْثَاقًا غَلِيْظًا
স্মরণ করো, যখন আমি প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলাম (আমার বিধান অন্যের নিকট পৌঁছানোর ব্যাপারে) নবীদের কাছ থেকে এবং আপনার কাছ থেকে, নূহ, ইবরাহীম ও ঈসা ইবনে মারইয়ামের কাছ থেকে। আর তাদের কাছ থেকে গ্রহণ করেছিলাম অতি দৃঢ় অঙ্গীকার। (সূরা আহযাব– ৭)
ব্যাখ্যা : প্রত্যেক নবীর কাছ থেকেই অঙ্গীকার নেয়া হয়েছে। আর যে অঙ্গীকার নবীর কাছ থেকে নেয়া হয়েছে তা অনিবার্যভাবে তাঁর অনুসারীদের উপরও আরোপিত হয়ে যায়। অঙ্গীকারটি হচ্ছে, তোমাদেরকে যে দ্বীনের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার কাজে নিযুক্ত করা হয়েছে সে একই দ্বীনের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব দিয়ে আমার পক্ষ থেকে যে নবীকে পাঠানো হবে, তাকে তোমাদের সহযোগিতা করতে হবে। তাঁর প্রতি কোন হিংসা-বিদ্বেষ করবে না। সত্যের বিরোধিতা করবে না। যখন যেখানে যে ব্যক্তিকেই আমার পক্ষ থেকে সত্যের পতাকা উত্তোলনের দায়িত্ব দেয়া হবে, সেখানেই তাঁর পতাকাতলে সমবেত হবে।
তারা যে কাজের আদেশ দিতেন তা নিজেরাও পালন করতেন :
وَمَاۤ اُرِيْدُ اَنْ اُخَالِفَكُمْ اِلٰى مَاۤ اَنْهَاكُمْ عَنْهُؕ اِنْ اُرِيْدُ اِلَّا الْاِصْلَاحَ مَا اسْتَطَعْتُ
আমি তোমাদেরকে যা হতে নিষেধ করি আমি নিজে তা করতে ইচ্ছা করি না। আমি তো আমার সাধ্যমতো সংস্কারই করতে চাই। (সূরা হুদু ৮৮)
নবীগণও হালাল খাওয়ার জন্য আদিষ্ট ছিলেন :
يَاۤ اَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوْا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوْا صَالِحًاؕ اِنِّيْ بِمَا تَعْمَلُوْنَ عَلِيْمٌ
হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু হতে আহার করো ও সৎকর্ম করো; আর তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আমি ভালোভাবে অবগত। (সূরা মু’মিনূনু ৫১)
তারা আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করতেন না :
اَلَّذِيْنَ يُبَلِّغُوْنَ رِسَالَاتِ اللهِ وَيَخْشَوْنَهٗ وَلَا يَخْشَوْنَ اَحَدًا اِلَّا اللهَ
তারা আল্লাহর বাণী প্রচার করতেন এবং তাঁকে ভয় করতেন। আর তারা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় করতেন না। (সূরা আহযাব– ৩৯)
প্রত্যেক জাতির মধ্যে নবী এসেছেন :
وَلِكُلِّ اُمَّةٍ رَّسُوْلٌۚ فَاِذَا جَآءَ رَسُوْلُهُمْ قُضِيَ بَيْنَهُمْ بِالْقِسْطِ وَهُمْ لَا يُظْلَمُوْنَ
প্রত্যেক জাতির জন্য রয়েছে একজন রাসূল। অতঃপর যখনই তাদের নিকট তাদের রাসূল এসেছে, তখনই তাদের মাঝে ন্যায়বিচারের সাথে মীমাংসা করা হয়েছে এবং তাদের প্রতি কোন যুলুম করা হয়নি। (সূরা ইউনুস– ৪৭)
وَلِكُلِّ قَوْمٍ هَادٍ
প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে পথ প্রদর্শক। (সূরা রা‘দু ৭)
وَاِنْ مِّنْ اُمَّةٍ اِلَّا خَلَا فِيْهَا نَذِيْرٌ
এমন কোন উম্মত নেই, যাদের মধ্যে কোন সতর্ককারী অতিবাহিত হয়নি। (সূরা ফাতির– ২৪)
قَالَتْ لَهُمْ رُسُلُهُمْ اِنْ نَّحْنُ اِلَّا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ وَلٰكِنَّ اللهَ يَمُنُّ عَلٰى مَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهٖ
তাদের রাসূলগণ তাদেরকে বলত, আমরা তো তোমাদের মতোই মানুষ। তবে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তাকে অনুগ্রহ করেন। (সূরা ইবরাহীম– ১১)
সকল নবী-রাসূল পুরুষ ছিলেন :
وَمَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ اِلَّا رِجَالًا نُّوْحِيْۤ اِلَيْهِمْ فَاسْاَلُوْاۤ اَهْلَ الذِّكْرِ اِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ
আমি তোমার পূর্বে যত নবীর প্রতি ওহী প্রেরণ করেছিলাম তারা সবাই পুরুষ ছিলেন। তোমরা যদি না জান তবে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস করে নাও। (সূরা নাহল– ৪৩)
তারা খাবার খেতেন এবং বাজারেও যেতেন :
وَمَاۤ اَرْسَلْنَا قَبْلَكَ مِنَ الْمُرْسَلِيْنَ اِلَّاۤ اِنَّهُمْ لَيَأْكُلُوْنَ الطَّعَامَ وَيَمْشُوْنَ فِى الْاَسْوَاقِ
তোমার পূর্বে আমি যেসব রাসূল প্রেরণ করেছি, তারা সকলেই তো আহার করত ও হাট–বাজারে চলাফেরা করত। (সূরা ফুরক্বানু ২০)
নবী-রাসূলগণের কেউই চিরস্থায়ী ছিলেন না :
وَمَا جَعَلْنَاهُمْ جَسَدً ا لَّا يَأْكُلُوْنَ الطَّعَامَ وَمَا كَانُوْا خَالِدِيْنَ
আমি তাদেরকে এমন দেহবিশিষ্ট করিনি, যারা আহার্য গ্রহণ করত না এবং তারা চিরস্থায়ীও ছিল না। (সূরা আম্বিয়া– ৮)
তাদের সবার স্ত্রী–পুত্র ছিল :
وَلَقَدْ اَرْسَلْنَا رُسُلًا مِّنْ قَبْلِكَ وَجَعَلْنَا لَهُمْ اَزْوَاجًا وَّذُرِّيَّةً
আমি তো তোমার পূর্বে অনেক রাসূল প্রেরণ করেছিলাম এবং তাদেরকে স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিও দান করেছিলাম। (সূরা রা‘দু ৩৮)
নবী-রাসূলগণ ভালো কাজে এগিয়ে থাকতেন :
اِنَّهُمْ كَانُوْا يُسَارِعُوْنَ فِى الْخَيْرَاتِ
তারা সৎকর্মে (একে অন্যের সাথে) প্রতিযোগিতা করত। (সূরা আম্বিয়া– ৯০)
তারা আল্লাহকে ডাকতেন :
وَيَدْعُوْنَنَا رَغَبًا وَّرَهَبًا وَّكَانُوْا لَنَا خَاشِعِيْنَ
তারা আমাকে আশা ও ভীতির সাথে ডাকত। আর তারা ছিল আমার অনুগত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা আম্বিয়া– ৯০)
তারা আল্লাহর বাণী শুনে সিজদায় লুটিয়ে পড়তেন :
اِذَا تُتْلٰى عَلَيْهِمْ اٰيَاتُ الرَّحْمٰنِ خَرُّوْا سُجَّدًا وَّ بُكِيًّا
যখন তাদের নিকট দয়াময়ের আয়াত তিলাওয়াত করা হয়, তখন তারা ক্রন্দনরত অবস্থায় সিজদায় লুটিয়ে পড়ে। (সূরা মারইয়াম– ৫৮)
পরকালের স্মরণ ছিল তাদের বিশেষ গুণ :
اِنَّاۤ اَخْلَصْنَاهُمْ بِخَالِصَةٍ ذِكْرَى الدَّارِ
আমি তো তাদেরকে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করেছিলাম এক বিশেষ গুণে, আর তা হলো আখিরাতের স্মরণ। (সূরা সোয়াদু ৪৬)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ তাঁদের যাবতীয় সাফল্যের মূল কারণ ছিল এই যে, তাঁদের মধ্যে বৈষয়িক স্বার্থলাভের আকাঙ্ক্ষার সামান্যতম গন্ধও ছিল না। তাদের সমস্ত চিন্তা ও প্রচেষ্টা ছিল আখিরাতের জন্য। তাঁরা নিজেরাও আখিরাতের কথা স্মরণ করতেন এবং অন্যদেরকেও স্মরণ করিয়ে দিতেন। তাই আল্লাহ তাঁদেরকে মর্যাদা দান করেছেন। বৈষয়িক স্বার্থ চিন্তায় লিপ্ত লোকদের ভাগ্যে কখনো এটা ঘটেনি।
সকল নবী-রাসূল ধৈর্যশীল ছিলেন :
وَاِسْمَاعِيْلَ وَاِدْرِيْسَ وَذَا الْكِفْلِؕ كُلٌّ مِّنَ الصَّابِرِيْنَ
(স্মরণ করো) ইসমাঈল, ইদরীস ও যুলকিফ্ল-এর কথা, তাদের প্রত্যেকেই ছিল ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা আম্বিয়া– ৮৫)
তারা শক্তিশালী ও বিচক্ষণ ছিলেন :
وَاذْكُرْ عِبَادَنَاۤ اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَ اُولِى الْاَيْدِيْ وَالْاَبْصَارِ
স্মরণ করো, আমার বান্দা ইবরাহীম, ইসহাক ও ইয়াকূবের কথা; তারা ছিলেন কর্মশক্তিসম্পন্ন ও সূক্ষ্মদর্শী। (সূরা সোয়াদু ৪৫)
ব্যাখ্যা : اُولِى الْاَيْدِىْ وَالْاَبْصَارِ (হস্তধারী ও দৃষ্টিধারীগণ) এখানে হাত অর্থ শক্তি ও সামর্থ্য। আর নবীগণকে শক্তি ও সামর্থ্যের অধিকারী বলার অর্থ হচ্ছে, তাঁরা অত্যন্ত সক্রিয় ছিলেন। তাঁরা আল্লাহর আনুগত্যকারী ও গোনাহ থেকে সংরক্ষিত থাকার প্রচন্ড শক্তির অধিকারী ছিলেন। দুনিয়ায় আল্লাহর কালিমা প্রতিষ্ঠা করার জন্য তাঁরা ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। আর দৃষ্টি অর্থ অন্তর্দৃষ্টি। তাঁরা সত্যদর্শী ও সূক্ষ্ম সত্যদ্রষ্টা ছিলেন। দুনিয়ায় তাঁরা চোখ বন্ধ করে চলতেন না। বরং চোখ খুলে জ্ঞান ও তাত্ত্বিক পর্যবেক্ষণের পূর্ণ আলোতে সঠিক ও সোজা পথ দেখে চলতেন। এ শব্দগুলোর মধ্যে এ দিকে একটি সূক্ষ্ম ইংগিত করা হয়েছে যে, দুষ্কৃতিকারী ও পথভ্রষ্টরা আসলে এ ধরনের হাত ও চোখ উভয়টি থেকে বঞ্চিত। আসলে যারা আল্লাহর পথে কাজ করে তারাই হস্তধারী এবং যারা সত্যের আলো ও মিথ্যার অন্ধকারের মধ্যে পার্থক্য করে তারাই দৃষ্টির অধিকারী।
সকল নবী-রাসূলের আকীদা–বিশ্বাস এক ছিল :
وَاِنَّ هٰذِهٖۤ اُمَّتُكُمْ اُمَّةً وَّاحِدَةً وَّاَنَاْ رَبُّكُمْ فَاتَّقُوْنِ
তোমাদের এ জাতি তো একই জাতি এবং আমিই তোমাদের প্রতিপালক। অতএব আমাকেই ভয় করো।
(সূরা মু’মিনূনু ৫২)
সকল নবী-রাসূলের দাওয়াতের মূল বিষয় ছিল তাওহীদ :
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِيْ كُلِّ اُمَّةٍ رَّسُوْلًا اَنِ اعْبُدُوا اللهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوْتَ
নিশ্চয় আমি প্রত্যেক জাতির নিকট রাসূল পাঠিয়েছি এ নির্দেশ দিয়ে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো ও তাগুতকে বর্জন করো। (সূরা নাহল– ৩৬)
وَمَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا نُوْحِيْۤ اِلَيْهِ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَاْ فَاعْبُدُوْنِ
আমি তোমার পূর্বে এমন কোন রাসূল প্রেরণ করিনি, যার প্রতি এ ওহী পাঠাইনি যে, আমি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই। সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদাত করো। (সূরা আম্বিয়া– ২৫)
তারা আল্লাহর হুকুম ছাড়া মু‘জিযা দেখাতে পারতেন না :
وَمَا كَانَ لِرَسُوْلٍ اَنْ يَّأْتِيَ بِاٰيَةٍ اِلَّا بِاِذْنِ اللهِ لِكُلِّ اَجَلٍ كِتَابٌ
আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত কোন নিদর্শন উপস্থিত করা কোন রাসূলের পক্ষে সম্ভব নয়। প্রত্যেক বিষয়ের নির্ধারিত সময় লিপিবদ্ধ রয়েছে। (সূরা রা‘দু ৩৮)
وَمَا كَانَ لِرَسُوْلٍ اَنْ يَّأْتِيَ بِاٰيَةٍ اِلَّا بِاِذْنِ اللهِ
আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোন নিদর্শন উপস্থিত করা কোন রাসূলের পক্ষে সম্ভব নয়। (সূরা মু’মিনু ৭৮)
কোন নবীই নিজেকে উপাস্য বলে দাবী করেননি :
مَا كَانَ لِبَشَرٍ اَنْ يُّؤْتِيَهُ اللهُ الْكِتَابَ وَالْحُكْمَ وَالنُّبُوَّةَ ثُمَّ يَقُوْلَ لِلنَّاسِ كُوْنُوْا عِبَادًا لِّيْ مِنْ دُوْنِ اللهِ وَلٰكِنْ كُوْنُوْا رَبَّانِيِّيْنَ بِمَا كُنْتُمْ تُعَلِّمُوْنَ الْكِتَابَ وَبِمَا كُنْتُمْ تَدْرُسُوْنَ ‐ وَلَا يَأْمُرَكُمْ اَنْ تَتَّخِذُوا الْمَلَآئِكَةَ وَالنَّبِيِّيْنَ اَرْبَابًا اَيَأْمُرُكُمْ بِالْكُفْرِ بَعْدَ اِذْ اَنْتُمْ مُّسْلِمُوْنَ
কোন মানুষের জন্য এটা সমীচিন নয় যে, আল্লাহ তাকে কিতাব, জ্ঞান ও নবুওয়াত দান করবেন। অতঃপর সে লোকদেরকে বলবে, তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে আমার ইবাদাতকারী হয়ে যাও। বরং সে বলবে, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের বান্দা হয়ে যাও। এ কারণে যে, তোমরা কিতাবের জ্ঞান শিক্ষা দিচ্ছ এবং তা পাঠ করছ। আর সে তোমাদেরকে এ নির্দেশও দেয় না যে, তোমরা ফেরেশতা এবং নবীদেরকে উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করো। সে কি তোমাদেরকে মুসলিম হওয়ার পর কুফরীর নির্দেশ দেয়?
(সূরা আলে ইমরানু ৭৯, ৮০)
নবীরা শিরক করলে তাদেরও আমল নষ্ট হয়ে যেত :
وَلَوْ اَشْرَكُوْا لَحَبِطَ عَنْهُمْ مَّا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
তারা যদি শিরক করত, তবে তাদের কৃতকর্মও নিষ্ফল হয়ে যেত। (সূরা আন‘আম– ৮৮)
আল্লাহ নবীদের থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন :
وَاِذْ اَخَذْنَا مِنَ النَّبِيِّيْنَ مِيْثَاقَهُمْ وَمِنْكَ وَمِنْ نُّوْحٍ وَّاِبْرَاهِيْمَ وَمُوْسٰى وَعِيْسَى ابْنِ مَرْيَمَ۪ وَاَخَذْنَا مِنْهُمْ مِّيْثَاقًا غَلِيْظًا
স্মরণ করো, যখন আমি প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলাম (আমার বিধান অন্যের নিকট পৌঁছানোর ব্যাপারে) নবীদের কাছ থেকে এবং আপনার কাছ থেকে, নূহ, ইবরাহীম ও ঈসা ইবনে মারইয়ামের কাছ থেকে। আর তাদের কাছ থেকে গ্রহণ করেছিলাম অতি দৃঢ় অঙ্গীকার। (সূরা আহযাব– ৭)
ব্যাখ্যা : প্রত্যেক নবীর কাছ থেকেই অঙ্গীকার নেয়া হয়েছে। আর যে অঙ্গীকার নবীর কাছ থেকে নেয়া হয়েছে তা অনিবার্যভাবে তাঁর অনুসারীদের উপরও আরোপিত হয়ে যায়। অঙ্গীকারটি হচ্ছে, তোমাদেরকে যে দ্বীনের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার কাজে নিযুক্ত করা হয়েছে সে একই দ্বীনের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব দিয়ে আমার পক্ষ থেকে যে নবীকে পাঠানো হবে, তাকে তোমাদের সহযোগিতা করতে হবে। তাঁর প্রতি কোন হিংসা-বিদ্বেষ করবে না। সত্যের বিরোধিতা করবে না। যখন যেখানে যে ব্যক্তিকেই আমার পক্ষ থেকে সত্যের পতাকা উত্তোলনের দায়িত্ব দেয়া হবে, সেখানেই তাঁর পতাকাতলে সমবেত হবে।
তারা যে কাজের আদেশ দিতেন তা নিজেরাও পালন করতেন :
وَمَاۤ اُرِيْدُ اَنْ اُخَالِفَكُمْ اِلٰى مَاۤ اَنْهَاكُمْ عَنْهُؕ اِنْ اُرِيْدُ اِلَّا الْاِصْلَاحَ مَا اسْتَطَعْتُ
আমি তোমাদেরকে যা হতে নিষেধ করি আমি নিজে তা করতে ইচ্ছা করি না। আমি তো আমার সাধ্যমতো সংস্কারই করতে চাই। (সূরা হুদু ৮৮)
নবীগণও হালাল খাওয়ার জন্য আদিষ্ট ছিলেন :
يَاۤ اَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوْا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوْا صَالِحًاؕ اِنِّيْ بِمَا تَعْمَلُوْنَ عَلِيْمٌ
হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু হতে আহার করো ও সৎকর্ম করো; আর তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আমি ভালোভাবে অবগত। (সূরা মু’মিনূনু ৫১)
তারা আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করতেন না :
اَلَّذِيْنَ يُبَلِّغُوْنَ رِسَالَاتِ اللهِ وَيَخْشَوْنَهٗ وَلَا يَخْشَوْنَ اَحَدًا اِلَّا اللهَ
তারা আল্লাহর বাণী প্রচার করতেন এবং তাঁকে ভয় করতেন। আর তারা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় করতেন না। (সূরা আহযাব– ৩৯)
প্রত্যেক জাতির মধ্যে নবী এসেছেন :
وَلِكُلِّ اُمَّةٍ رَّسُوْلٌۚ فَاِذَا جَآءَ رَسُوْلُهُمْ قُضِيَ بَيْنَهُمْ بِالْقِسْطِ وَهُمْ لَا يُظْلَمُوْنَ
প্রত্যেক জাতির জন্য রয়েছে একজন রাসূল। অতঃপর যখনই তাদের নিকট তাদের রাসূল এসেছে, তখনই তাদের মাঝে ন্যায়বিচারের সাথে মীমাংসা করা হয়েছে এবং তাদের প্রতি কোন যুলুম করা হয়নি। (সূরা ইউনুস– ৪৭)
وَلِكُلِّ قَوْمٍ هَادٍ
প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে পথ প্রদর্শক। (সূরা রা‘দু ৭)
وَاِنْ مِّنْ اُمَّةٍ اِلَّا خَلَا فِيْهَا نَذِيْرٌ
এমন কোন উম্মত নেই, যাদের মধ্যে কোন সতর্ককারী অতিবাহিত হয়নি। (সূরা ফাতির– ২৪)
সকল রাসূলকেই কষ্ট দেয়া হয়েছে :
وَلَقَدْ كُذِّبَتْ رُسُلٌ مِّنْ قَبْلِكَ فَصَبَرُوْا عَلٰى مَا كُذِّبُوْا وَاُوْذُوْا حَتّٰۤى اَتَاهُمْ نَصْرُنَا
অবশ্যই তোমার পূর্বেও অনেক রাসূলকে মিথ্যাবাদী বলা হয়েছিল, কিন্তু তাদেরকে মিথ্যাবাদী বলা ও কষ্ট দেয়া সত্ত্বেও তারা ধৈর্যধারণ করেছিল যে পর্যন্ত না আমার সাহায্য তাদের নিকট এসেছে। (সূরা আন‘আম– ৩৪)
প্রত্যেক নবীরই শত্রু ছিল :
وَكَذٰلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا شَيَاطِيْنَ الْاِنْسِ وَالْجِنِّ يُوْحِيْ بَعْضُهُمْ اِلٰى بَعْضٍ زُخْرُفَ الْقَوْلِ غُرُوْرًا
এভাবে আমি মানুষ ও জিনের মধ্যে শয়তানদেরকে প্রত্যেক নবীর শত্রু বানিয়ে দিয়েছি। তারা প্রতারণার উদ্দেশ্যে একে অন্যকে চমকপ্রদ কথা দ্বারা প্ররোচিত করে। (সূরা আন‘আম– ১১২)
وَكَذٰلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا مِّنَ الْمُجْرِمِيْنَ
এভাবেই আমি প্রত্যেক নবীর জন্য অপরাধীদেরকে শত্রু বানিয়ে দিয়েছি। (সূরা ফুরক্বানু ৩১)
প্রত্যেক নবীর সাথেই বিদ্রূপ করা হয়েছে :
وَكَمْ اَرْسَلْنَا مِنْ نَّبِيٍّ فِى الْاَوَّلِيْنَ ‐ وَمَا يَأْتِيْهِمْ مِّنْ نَّبِيٍّ اِلَّا كَانُوْا بِه يَسْتَهْزِئُوْنَ
পূর্ববর্তীদের নিকট আমি অনেক নবী প্রেরণ করেছিলাম। তাদের নিকট এমন কোন নবী আসেনি, যার সাথে তারা ঠাট্টা–বিদ্রূপ করেনি। (সূরা যুখরুফু ৬, ৭)
وَلَقَدْ اَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ فِيْ شِيَعِ الْاَوَّلِيْنَ ‐ وَمَا يَأْتِيْهِمْ مِّنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا كَانُوْا بِهٖ يَسْتَهْزِئُوْنَ
তোমার পূর্বে আমি পূর্ববর্তী অনেক সম্প্রদায়ের নিকট রাসূল প্রেরণ করেছি। তাদের নিকট এমন কোন রাসূল আসেনি, যার সাথে তারা ঠাট্টা–বিদ্রূপ করত না। (সূরা হিজর– ১০, ১১)
وَلَقَدِ اسْتُهْزِئَ بِرُسُلٍ مِّنْ قَبْلِكَ فَاَمْلَيْتُ لِلَّذِيْنَ كَفَرُوْا ثُمَّ اَخَذْتُهُمْ فَكَيْفَ كَانَ عِقَابِ
তোমার পূর্বেও অনেক রাসূলকে ঠাট্টা–বিদ্রূপ করা হয়েছে। অতঃপর যারা কুফরী করেছে তাদেরকে আমি কিছুকালের জন্য অবকাশ দিয়েছিলাম এবং আমি তাদেরকে কঠোর শাস্তি দিয়েছিলাম, কেমন ছিল আমার শাস্তি! (সূরা রা‘দু ৩২)
يَا حَسْرَةً عَلَى الْعِبَادِۚ مَا يَأْتِيْهِمْ مِّنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا كَانُوْا بِهٖ يَسْتَهْزِئُوْنَ
আফসোস! সেসব বান্দাদের জন্য, যাদের কাছে কখনো এমন কোন রাসূল আসেনি, যাকে নিয়ে তারা ঠাট্টা–বিদ্রূপ করেনি। (সূরা ইয়াসীনু ৩০)
জাতির লোকেরা রাসূলদের কথা মানতে অস্বীকার করত :
اَلَمْ يَأْتِكُمْ نَبَاُ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ قَوْمِ نُوْحٍ وَّعَادٍ وَّثَمُوْدَؕ وَالَّذِيْنَ مِنْ ۢبَعْدِهِمْؕ لَا يَعْلَمُهُمْ اِلَّا اللهُؕ جَآءَتْهُمْ رُسُلُهُمْ بِالْبَيِّنَاتِ فَرَدُّوْاۤ اَيْدِيَهُمْ فِۤيْ اَفْوَاهِهِمْ وَقَالُوْاۤ اِنَّا كَفَرْنَا بِمَاۤ اُرْسِلْتُمْ بِهٖ وَاِنَّا لَفِيْ شَكٍّ مِّمَّا تَدْعُوْنَنَاۤ اِلَيْهِ مُرِيْبٍ
তোমাদের নিকট কি পূর্ববর্তীদের সংবাদ আসেনি, নূহ, আদ, সামূদ এবং তাদের পরবর্তী সম্প্রদায়ের? তাদের বিষয় সম্পর্কে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ জানে না। তাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শনসহ তাদের রাসূলগণ এসেছিল, তারা তাদের নিজের হাত তাদের মুখে রাখত (নবীদেরকে কথা বলতে বাধা দিত) এবং বলত, তোমরা যা নিয়ে প্রেরিত হয়েছ অবশ্যই আমরা তা অস্বীকার করি এবং তোমরা যে বিষয়ে আমাদেরকে আহবান করছ, নিশ্চয় আমরা সে বিষয়ে সন্দেহে রয়েছি। (সূরা ইবরাহীম– ৯)
ধনীরাই আগে অস্বীকার করেছে :
وَمَاۤ اَرْسَلْنَا فِيْ قَرْيَةٍ مِّنْ نَّذِيْرٍ اِلَّا قَالَ مُتْرَفُوْهَاۤ اِنَّا بِمَاۤ اُرْسِلْتُمْ بِهٖ كَافِرُوْنَ
যখনই আমি কোন জনপদে সতর্ককারী প্রেরণ করেছি তখনই তার বিত্তশালী অধিবাসীরা বলেছে, তোমরা যে বিষয়সহ প্রেরিত হয়েছ আমরা তা অস্বীকার করি। (সূরা সাবা– ৩৪)
তারা নবীদের মিশনকে ধ্বংস করার অপচেষ্টা করেছে :
وَمَا نُرْسِلُ الْمُرْسَلِيْنَ اِلَّا مُبَشِّرِيْنَ وَمُنْذِرِيْنَۚ وَيُجَادِلُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِالْبَاطِلِ لِيُدْحِضُوْا بِهِ الْحَقَّ وَاتَّخَذُوْاۤ اٰيَاتِيْ وَمَاۤ اُنْذِرُوْا هُزُوًا
আমি রাসূলদেরকে কেবল সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবেই পাঠিয়ে থাকি। কিন্তু যারা কুফরী করেছে তারা মিথ্যা যুক্তি পেশ করে বিতর্ক করেছে, যাতে করে তারা সত্যকে ব্যর্থ করে দিতে পারে। আর তারা আমার আয়াতসমূহকে এবং যে বিষয়ে তাদেরকে (জাহান্নাম থেকে) সতর্ক করা হয়েছিল, তাকে বিদ্রূপের বিষয়ে পরিণত করে নিয়েছে। (সূরা কাহফু ৫৬)
জাতির লোকেরা নবীদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে :
كُلَّ مَا جَآءَ اُمَّةً رَّسُوْلُهَا كَذَّبُوْهُ
যখনই কোন জাতির নিকট তার রাসূল এসেছে, তখনই তারা তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে।
(সূরা মু’মিনূনু ৪৪)
নবীদের বিরোধিতায় সকল যুগে একই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে :
كَذٰلِكَ مَاۤ اَتَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ مِّنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا قَالُوْا سَاحِرٌ اَوْ مَجْنُوْنٌ ‐ اَتَوَاصَوْا بِهٖۚ بَلْ هُمْ قَوْمٌ طَاغُوْنَ
এভাবে তাদের পূর্ববর্তীদের নিকট যখনই কোন রাসূল এসেছে, তারা বলেছে- তুমি তো এক যাদুকর অথবা উন্মাদ। তারা কি একে অপরকে এ উপদেশই দিয়ে এসেছে? বস্তুত তারা এক সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়। (সূরা যারিয়াত- ৫২, ৫৩)
ব্যাখ্যা : হাজার হাজার বছর ধরে প্রতিটি যুগে বিভিন্ন দেশ ও জাতির লোকেরা নবী-রাসূলদের দাওয়াতের মুকাবিলায় একই আচরণ করেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে একই রকমের কথা বলার কারণ এ নয় যে, একটি সম্মেলন করে আগের ও পরের সমস্ত মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যখনই কোন নবী এসে দাওয়াত পেশ করবে তখনই তাঁকে এ জবাব দিতে হবে। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে যে, তাহলে তাদের আচরণের এ সাদৃশ্য এবং একই প্রকৃতির জবাবের ক্রমাগত পৃনরাবৃত্তি কেন? এর একমাত্র জবাব এই যে, অবাধ্যতা ও সীমালঙ্ঘন এদের সাধারণ বৈশিষ্ট্য। তাছাড়া এ আচরণের আর কোন কারণ নেই। প্রত্যেক যুগের অজ্ঞ লোকেরাই যেহেতু আল্লাহর দাসত্ব ও জিজ্ঞাসাবাদ সম্পর্কে বেপরোয়া হয়ে পৃথিবীতে লাগামহীন পশুর মতো জীবন যাপন করতে আগ্রহী। তাই যিনিই তাদেরকে আল্লাহর দাসত্ব ও আল্লাহভীতিমূলক জীবন যাপনের আহবান জানিয়েছেন তাঁকেই তারা একই জবাব দিয়েছে। এ আয়াত থেকে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ সত্যের উপর আলোকপাত করা যায়। সেটি হচ্ছে, হেদায়াত ও গোমরাহী, নেক কাজ ও বদ কাজ, যুলুম ও ন্যায়বিচার এবং এ ধরনের আরো অনেক কাজকর্মের যেসব প্রবণতা মানুষের মধ্যে বিদ্যমান থাকে, উপায়-উপকরণের উন্নতির কারণে বাহ্যত তার রূপ-প্রকৃতি যত ভিন্ন হোক না কেন প্রত্যেক যুগে একইভাবে তার বহির্প্রকাশ ঘটে। আজকের মানুষ ট্যাংক, বিমান ও বোমার সাহায্যে যুদ্ধ করছে আর প্রাচীন যুগের মানুষ লাঠি ও পাথরের সাহায্যে লড়াই করেছে; কিন্তু যে মৌলিক কারণে মানুষে মানুষে লড়াই বাধে, তাতে চুল পরিমাণও পার্থক্য আসেনি।
তারা রাসূলদেরকে তাড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছে :
وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِرُسُلِهِمْ لَنُخْرِجَنَّكُمْ مِّنْ اَرْضِنَاۤ اَوْ لَتَعُوْدُنَّ فِيْ مِلَّتِنَاؕ فَاَوْحٰۤى اِلَيْهِمْ رَبُّهُمْ لَنُهْلِكَنَّ الظَّالِمِيْنَ
কাফিররা তাদের রাসূলদেরকে বলেছিল, অবশ্যই আমরা তোমাদেরকে আমাদের দেশ হতে বহিষ্কার করব, নতুবা তোমাদেরকে আমাদের ধর্মে ফিরে আসতেই হবে। অতঃপর তাদের প্রতিপালক রাসূলদেরকে ওহী প্রেরণ করলেন- যালিমদেরকে আমি অবশ্যই ধ্বংস করব। (সূরা ইবরাহীম– ১৩)
জাতির লোকেরা রাসূলদেরকে গ্রেফতার করার চেষ্টা করেছে :
كَذَّبَتْ قَبْلَهُمْ قَوْمُ نُوْحٍ وَّالْاَحْزَابُ مِنْ ۢبَعْدِهِمْ۪ وَهَمَّتْ كُلُّ اُمَّةٍ ۢبِرَسُوْلِهِمْ لِيَأْخُذُوْهُ وَجَادَلُوْا بِالْبَاطِلِ لِيُدْحِضُوْا بِهِ الْحَقَّ فَاَخَذْتُهُمْ فَكَيْفَ كَانَ عِقَابِ
তাদের পূর্বে নূহের সম্প্রদায় এবং তাদের পরে অন্যান্য দলও মিথ্যারোপ করেছিল। প্রত্যেক সম্প্রদায় নিজ নিজ রাসূলকে গ্রেফতার করার চক্রান্ত করেছিল এবং তারা বাজে তর্কে লিপ্ত হয়েছিল, যাতে করে তারা এর দ্বারা সত্যকে নষ্ট করে দিতে পারে। ফলে আমি তাদেরকে পাকড়াও করলাম। সুতরাং কেমন ছিল আমার শাস্তি! (সূরা মু’মিনু ৫)
অনেক নবীকে হত্যা করা হয়েছে :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَكْفُرُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِ وَيَقْتُلُوْنَ النَّبِيِّيْنَ بِغَيْرِ حَقٍ وَّيَقْتُلُوْنَ الَّذِيْنَ يَأْمُرُوْنَ بِالْقِسْطِ مِنَ النَّاسِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ اَلِيْمٍ
নিশ্চয় যারা আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করেছে, অন্যায়ভাবে নবীদেরকে হত্যা করেছে এবং যারা ইনসাফের নির্দেশ দেয়, তাদেরকেও হত্যা করেছে। তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও। (সূরা আলে ইমরানু ২১)
وَضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ الْمَسْكَنَةُ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ كَانُوْا يَكْفُرُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِ وَيَقْتُلُوْنَ الْاَنْۢبِيَآءَ بِغَيْرِ حَقٍّ
তাদের উপর দারিদ্রের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। কারণ তারা আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করেছে এবং নবীদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে। (সূরা আলে ইমরানু ১১২)
ব্যাখ্যা : বনী ইসরাঈলরা তাদের নবীদের সাথে যেসব খারাপ আচরণ করেছিল, তা তাদের ইতিহাস গ্রন্থে বিস্তারিতভাবে উল্লেখিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বাইবেলের কয়েকটি ঘটনা এখানে উদ্ধৃত হলো।
(এক) সুলায়মান (আঃ) এর পর ইসরাঈলী সাম্রাজ্য জেরুজালেমের ইয়াহুদিয়া এবং সামারিয়ার ইয়াহুদিয়া এ দু’টি রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে যায়। তাদের মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহ চলতে থাকে। অবশেষে ইয়াহুদিয়া রাষ্ট্র নিজের ভাইদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য দামেস্কের আরমী রাষ্ট্রের সাহায্য প্রার্থনা করে। এতে আল্লাহর হুকুমে হানানী নবী ইয়াহুদিয়া রাষ্ট্রের শাসক ‘আসা’-কে কঠোরভাবে সতর্ক করে দেন। কিন্তু ‘আসা’ এই সতর্কবাণী গ্রহণ করার পরিবর্তে আল্লাহর নবীকে কারারুদ্ধ করে। (২ বংশাবলি, ১৭ অধ্যায়, ৭-১০ শ্লোক)
(দুই) ইলয়াস (আঃ) যখন বা’ল দেবতার পূজার জন্য ইয়াহুদিদের তিরস্কার করেন এবং তাওহীদের দাওয়াত দিতে থাকেন, তখন সামারিয়ার ইসরাঈলী রাজা ‘আখিয়াব’ নিজের মুশরিক স্ত্রীর প্ররোচনায় নবীর প্রাণনাশের সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় মেতে ওঠে। ফলে নবীকে সিনাই উপদ্বীপের পর্বতাঞ্চলে আশ্রয় নিতে হয়। এ সময় ইলয়াস (আঃ) এভাবে দু‘আ করেন, ‘‘হে আল্লাহ! বনী ইসরাঈল তোমার সাথে কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে। তলোয়ারের সাহায্যে তোমার নবীদেরকে হত্যা করেছে এবং একমাত্র আমিই বেঁচে আছি। তাই তারা আমার প্রাণনাশের চেষ্টা করছে।’’ (১ রাজাবলি, ১৭ অধ্যায়, ১-১০ শ্লোক)
(তিন) সত্য ভাষণ দেয়ার অপরাধে ‘মিকাইয়াহ’ নামে একজন নবীকে ইসরাঈলী শাসক আখিয়াব কারারুদ্ধ করে। সে হুকুম দেয় যে, এ ব্যক্তিকে বিপদের খাদ্য খাওয়াও এবং বিপদের পানি পান করাও।
(১ রাজাবলি, ২২ অধ্যায়, ২৬-২৭ শ্লোক)
(চার) যখন ইয়াহুদিয়া রাষ্ট্রে প্রকাশ্যে মূর্তিপূজা ও ব্যভিচার চলতে থাকে এবং যাকারিয়া (আঃ) এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হন, তখন ইয়াহুদি রাজা ইউআসের নির্দেশে তাকে মূল হাইকেলে সুলায়মানীতে ‘মাকদিস’ ও ‘যবেহ ক্ষেত্র’- এর মাঝখানে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করা হয়। (২ বংশাবলি, ২৪ অধ্যায়, ২১ শ্লোক)
(পাঁচ) যখন আশুরিয়াদের হাতে সামারিয়াদের ইসরাঈলী রাষ্ট্রের পতন হয় এবং জেরুজালেমের ইয়াহুদি রাষ্ট্র মহাধ্বংসের সম্মুখীন হয়, তখন ‘ইয়ারমিয়াহ’ নবী নিজের জাতির পতনে আর্তনাদ করে ওঠেন। তিনি পথে-ঘাটে, অলিতে-গলিতে নিজের জাতিকে সম্বোধন করে বলতে থাকেন, ‘‘সতর্ক হও, নিজেদেরকে সংশোধন করো, অন্যথায় তোমাদের পরিণাম সামারিয়া জাতির চেয়েও ভয়াবহ হবে।’’ কিন্তু জাতির পক্ষ থেকে এ সতর্কবাণীর বিরূপ উত্তর আসে। চারদিক থেকে তাঁর উপর প্রবল বৃষ্টিধারার মতো অভিশাপ ও গালি-গালাজ বর্ষিত হতে থাকে। তাঁকে মারধর করা হয়, কারারুদ্ধ করা হয়। ক্ষুধা ও পিপাসায় শুকিয়ে মেরে ফেলার জন্য রশি দিয়ে বেঁধে কর্দমাক্ত কূয়ার মধ্যে ঝুলিয়ে রাখা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা এবং বিদেশী শত্রুর সাথে আতাত করার অভিযোগ আনা হয়।
(যিরমিয়, ১৫ অধ্যায়, ১০ শ্লোক; ১৮ অধ্যায়, ২০-২৩ শ্লোক; ২০ অধ্যায়, ১-১৮ শ্লোক; ৩৬-৪০ অধ্যায়)
(ছয়) ‘আমুস’ নামক একজন নবী সামারিয়ার ইসরাঈলী রাষ্ট্রের ভ্রষ্টতা ও ব্যভিচারের সামালোচনা করেন এবং এর পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করে দেন। তখন তাঁকে চুড়ান্ত পত্র দিয়ে বলে দেয়া হয়, এদেশ থেকে বের হয়ে যাও এবং বাইরে গিয়ে নিজের নবুওয়াত প্রচার করো। (আমুস, ৭ অধ্যায়, ১০-১৩ শ্লোক)
(সাত) ইয়াহিয়া (আঃ) যখন ইয়াহুদি শাসক হিরোডিয়াসের দরবারে প্রকাশ্যে অনুষ্ঠিত ব্যভিচার ও নৈতিকতা বিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান, তখন প্রথমে তাঁকে কারারুদ্ধ করা হয়। তারপর বাদশাহ নিজের প্রেমিকার নির্দেশানুসারে জাতির সবচেয়ে সৎ ও ন্যায়নিষ্ঠ এ ব্যক্তিটির শিরচ্ছেদ করে। কর্তিত মস্তক একটি থালায় করে নিয়ে বাদশাহ তার প্রেমিকাকে উপহার দেয়। (মার্ক, ৬ অধ্যায়, ১৭-১৯ শ্লোক)
(আট) ঈসা (আঃ) এর বিরুদ্ধে বনী ইসরাঈলের আলিমসমাজ ও জাতীয় নেতৃবৃন্দের ক্রোধ উদ্দীপিত হয়। কারণ তিনি তাদের পাপকাজ ও লোক দেখানো সৎকাজের সমালোচনা করতেন। তাদেরকে ঈমান ও সৎকাজের দিকে আহবান জানাতেন। এসব কারণে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা তৈরি করা হয়। রোমান আদালত তাঁকে প্রাণদন্ড দানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অতঃপর একদিন যখন রোমান শাসক পীলাতীস ইয়াহুদিদের বলল, আজ ঈদের দিন। আমি তোমাদের স্বার্থে ঈসা ও বারাববা ডাকাতের মধ্য থেকে একজনকে মুক্তি দিতে চাই। আমি কাকে মুক্তি দেব? ইয়াহুদিরা সমস্বরে বলল, আপনি বারাববাকে মুক্তি দিন এবং ঈসাকে ফাঁসি দিন। (মথি, ২৭ অধ্যায়, ২০-২৬ শ্লোক)
এ হচ্ছে ইয়াহুদি জাতির অপরাধমূলক কর্মকান্ডের কয়েকটি উদাহরণ। কুরআনের উল্লেখিত আয়াতগুলোতে সংক্ষেপে এদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। বলা বাহুল্য, যে জাতি নিজেদের ফাসিক ও দুশ্চরিত্র লোকদেরকে নেতৃত্বের আসনে বসাতে এবং সৎ ও উন্নত চরিত্রের অধিকারী লোকদেরকে কারাগারে স্থান দিতে চায়, আল্লাহ তাদের উপর অভিশাপ বর্ষণ না করলে আর কাদের উপর অভিশাপ বর্ষণ করবেন?
নবীরা মানুষ হওয়াতে লোকেরা ঈমান আনতে দ্বিধা করত :
وَمَا مَنَعَ النَّاسَ اَنْ يُّؤْمِنُوْاۤ اِذْ جَآءَهُمُ الْهُدٰۤى اِلَّاۤ اَنْ قَالُوْاۤ اَبَعَثَ اللهُ بَشَرًا رَّسُوْلًا ‐ قُلْ ﻝ لَّوْ كَانَ فِى الْاَرْضِ مَلَآئِكَةٌ يَّمْشُوْنَ مُطْمَئِنِّيْنَ لَنَزَّلْنَا عَلَيْهِمْ مِّنَ السَّمَآءِ مَلَكًا رَّسُوْلًا
যখনই মানুষের নিকট (আল্লাহর কাছ থেকে) হেদায়াত এসেছে, তখনই তাদের ঈমান আনতে কোন জিনিস বাধা দেয়নি, তবে তারা শুধু এ কথাই বলেছে- আল্লাহ কি (আমাদের মতোই) একজন মানুষকে রাসূল করে পাঠিয়েছেন? (হে নবী!) তুমি বলে দাও, যদি এ পৃথিবীতে ফেরেশতাগণ বসবাস করত এবং তারা নিশ্চিন্তে চলাফেরা করত, তাহলে অবশ্যই আমি আকাশ থেকে ফেরেশতাকে রাসূল করে পাঠাতাম।
(সূরা বনী ইসরাঈল– ৯৪, ৯৫)
নবীরা জাতির লোকদেরকে বুঝাতেন :
قَالَتْ رُسُلُهُمْ اَفِى اللهِ شَكٌّ فَاطِرِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِؕ يَدْعُوْكُمْ لِيَغْفِرَ لَكُمْ مِّنْ ذُنُوْبِكُمْ وَيُؤَخِّرَكُمْ اِلٰۤى اَجَلٍ مُّسَمًّى
তাদের রাসূলগণ বলেছিল, আল্লাহ সম্বন্ধে কি কোন সন্দেহ আছে, যিনি আসমান ও জমিনের সৃষ্টিকর্তা? তিনি তোমাদেরকে আহবান করেন তোমাদের পাপ মার্জনা করার জন্য এবং তোমাদেরকে নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত অবকাশ দেয়ার জন্য। (সূরা ইবরাহীম– ১০)
قَالَتْ لَهُمْ رُسُلُهُمْ اِنْ نَّحْنُ اِلَّا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ وَلٰكِنَّ اللهَ يَمُنُّ عَلٰى مَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهٖؕ وَمَا كَانَ لَنَاۤ اَنْ نَّأْتِيَكُمْ بِسُلْطَانٍ اِلَّا بِاِذْنِ اللهِؕ وَعَلَى اللهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُوْنَ
তাদের রাসূলগণ তাদেরকে বলত, আমরা তোমাদের মতোই মানুষ, কিন্তু আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা অনুগ্রহ করেন। আমরা আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোন প্রমাণ উপস্থিত করতে সক্ষম নই। আর আল্লাহর উপরই মুমিনগণের নির্ভর করা উচিত। (সূরা ইবরাহীম– ১১)
লোকেরা নবীদের কথার পাল্টা জবাব দিত :
قَالُوْاۤ اِنْ اَنْتُمْ اِلَّا بَشَرٌ مِّثْلُنَاؕ تُرِيْدُوْنَ اَنْ تَصُدُّوْنَا عَمَّا كَانَ يَعْبُدُ اٰبَآؤُنَا فَأْتُوْنَا بِسُلْطَانٍ مُّبِيْنٍ
তারা বলত, তোমরা তো আমাদের মতোই মানুষ। আমাদের পিতৃপুরুষগণ যাদের ইবাদাত করত তোমরা তাদের ইবাদাত হতে আমাদেরকে বিরত রাখতে চাও। অতএব তোমরা আমাদের নিকট কোন অকাট্য প্রমাণ উপস্থিত করো। (সূরা ইবরাহীম– ১০)
নবীগণ ধৈর্যধারণ করতেন :
وَمَا لَنَاۤ اَ لَّا نَتَوَكَّلَ عَلَى اللهِ وَقَدْ هَدَانَا سُبُلَنَا وَلَنَصْبِرَنَّ عَلٰى مَاۤ اٰذَيْتُمُوْنَا وَعَلَى اللهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُتَوَكِّلُوْنَ
আমরা কেন আল্লাহর উপর নির্ভর করব না? তিনিই তো আমাদেরকে পথপ্রদর্শন করেছেন। তোমরা আমাদেরকে যে কষ্ট দিচ্ছ আমরা তাতে অবশ্যই ধৈর্যধারণ করব। আর নির্ভরকারীদের উচিত, আল্লাহর উপরই নির্ভর করা। (সূরা ইবরাহীম– ১২)
নবীদেরকে মিথ্যারোপ করায় তারা ধ্বংস হয়েছে :
ثُمَّ اَرْسَلْنَا رُسُلَنَا تَتْرٰى كُلَّمَا جَآءَ اُمَّةً رَّسُوْلُهَا كَذَّبُوْهُ فَاَتْبَعْنَا بَعْضَهُمْ بَعْضًا وَّجَعَلْنَاهُمْ اَحَادِيْثَ فَبُعْدًا لِّقَوْمٍ لَّا يُؤْمِنُوْنَ
অতঃপর আমি একের পর এক আমার রাসূল প্রেরণ করেছি। যখনই কোন জাতির নিকট তার রাসূল এসেছে তখনই তারা তাকে মিথ্যাবাদী বলেছে। অতঃপর আমি তাদের একের পর এক ধ্বংস করেছি এবং তাদেরকে (পরবর্তীদের জন্য) কাহিনীর বিষয়বস্তু বানিয়ে দিয়েছি। সুতরাং ধ্বংস অবিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য। (সূরা মু’মিনূনু ৪৪)
কিয়ামতের দিন সকল নবী ও তাদের উম্মতকে প্রশ্ন করা হবে :
فَلَنَسْاَلَنَّ الَّذِيْنَ اُرْسِلَ اِلَيْهِمْ وَلَنَسْاَلَنَّ الْمُرْسَلِيْنَ
অতঃপর যাদের নিকট রাসূল প্রেরণ করা হয়েছিল, তাদেরকে তো আমি জিজ্ঞেস করবই এবং রাসূলদেরকেও জিজ্ঞেস করব। (সূরা আ‘রাফু ৬)
সকল রাসূলের কথা কুরআনে আলোচনা করা হয়নি :
وَرُسُلًا قَدْ قَصَصْنَاهُمْ عَلَيْكَ مِنْ قَبْلُ وَرُسُلًا لَّمْ نَقْصُصْهُمْ عَلَيْكَ
অনেক রাসূল (প্রেরণ করেছি) যাদের কথা পূর্বে আমি তোমাকে বর্ণনা করেছি এবং আরো অনেক রাসূল (প্রেরণ করেছি) যাদের কথা তোমাকে বর্ণনা করিনি। (সূরা নিসা– ১৬৪)
وَلَقَدْ اَرْسَلْنَا رُسُلًا مِّنْ قَبْلِكَ مِنْهُمْ مَّنْ قَصَصْنَا عَلَيْكَ وَمِنْهُمْ مَّنْ لَّمْ نَقْصُصْ عَلَيْكَ
আমি তো তোমার পূর্বে অনেক রাসূল প্রেরণ করেছিলাম, তাদের কারো কথা তোমার নিকট বর্ণনা করেছি এবং কারো কথা তোমার নিকট বর্ণনা করিনি। (সূরা মু’মিনু ৭৮)
وَلَقَدْ كُذِّبَتْ رُسُلٌ مِّنْ قَبْلِكَ فَصَبَرُوْا عَلٰى مَا كُذِّبُوْا وَاُوْذُوْا حَتّٰۤى اَتَاهُمْ نَصْرُنَا
অবশ্যই তোমার পূর্বেও অনেক রাসূলকে মিথ্যাবাদী বলা হয়েছিল, কিন্তু তাদেরকে মিথ্যাবাদী বলা ও কষ্ট দেয়া সত্ত্বেও তারা ধৈর্যধারণ করেছিল যে পর্যন্ত না আমার সাহায্য তাদের নিকট এসেছে। (সূরা আন‘আম– ৩৪)
প্রত্যেক নবীরই শত্রু ছিল :
وَكَذٰلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا شَيَاطِيْنَ الْاِنْسِ وَالْجِنِّ يُوْحِيْ بَعْضُهُمْ اِلٰى بَعْضٍ زُخْرُفَ الْقَوْلِ غُرُوْرًا
এভাবে আমি মানুষ ও জিনের মধ্যে শয়তানদেরকে প্রত্যেক নবীর শত্রু বানিয়ে দিয়েছি। তারা প্রতারণার উদ্দেশ্যে একে অন্যকে চমকপ্রদ কথা দ্বারা প্ররোচিত করে। (সূরা আন‘আম– ১১২)
وَكَذٰلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا مِّنَ الْمُجْرِمِيْنَ
এভাবেই আমি প্রত্যেক নবীর জন্য অপরাধীদেরকে শত্রু বানিয়ে দিয়েছি। (সূরা ফুরক্বানু ৩১)
প্রত্যেক নবীর সাথেই বিদ্রূপ করা হয়েছে :
وَكَمْ اَرْسَلْنَا مِنْ نَّبِيٍّ فِى الْاَوَّلِيْنَ ‐ وَمَا يَأْتِيْهِمْ مِّنْ نَّبِيٍّ اِلَّا كَانُوْا بِه يَسْتَهْزِئُوْنَ
পূর্ববর্তীদের নিকট আমি অনেক নবী প্রেরণ করেছিলাম। তাদের নিকট এমন কোন নবী আসেনি, যার সাথে তারা ঠাট্টা–বিদ্রূপ করেনি। (সূরা যুখরুফু ৬, ৭)
وَلَقَدْ اَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ فِيْ شِيَعِ الْاَوَّلِيْنَ ‐ وَمَا يَأْتِيْهِمْ مِّنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا كَانُوْا بِهٖ يَسْتَهْزِئُوْنَ
তোমার পূর্বে আমি পূর্ববর্তী অনেক সম্প্রদায়ের নিকট রাসূল প্রেরণ করেছি। তাদের নিকট এমন কোন রাসূল আসেনি, যার সাথে তারা ঠাট্টা–বিদ্রূপ করত না। (সূরা হিজর– ১০, ১১)
وَلَقَدِ اسْتُهْزِئَ بِرُسُلٍ مِّنْ قَبْلِكَ فَاَمْلَيْتُ لِلَّذِيْنَ كَفَرُوْا ثُمَّ اَخَذْتُهُمْ فَكَيْفَ كَانَ عِقَابِ
তোমার পূর্বেও অনেক রাসূলকে ঠাট্টা–বিদ্রূপ করা হয়েছে। অতঃপর যারা কুফরী করেছে তাদেরকে আমি কিছুকালের জন্য অবকাশ দিয়েছিলাম এবং আমি তাদেরকে কঠোর শাস্তি দিয়েছিলাম, কেমন ছিল আমার শাস্তি! (সূরা রা‘দু ৩২)
يَا حَسْرَةً عَلَى الْعِبَادِۚ مَا يَأْتِيْهِمْ مِّنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا كَانُوْا بِهٖ يَسْتَهْزِئُوْنَ
আফসোস! সেসব বান্দাদের জন্য, যাদের কাছে কখনো এমন কোন রাসূল আসেনি, যাকে নিয়ে তারা ঠাট্টা–বিদ্রূপ করেনি। (সূরা ইয়াসীনু ৩০)
জাতির লোকেরা রাসূলদের কথা মানতে অস্বীকার করত :
اَلَمْ يَأْتِكُمْ نَبَاُ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ قَوْمِ نُوْحٍ وَّعَادٍ وَّثَمُوْدَؕ وَالَّذِيْنَ مِنْ ۢبَعْدِهِمْؕ لَا يَعْلَمُهُمْ اِلَّا اللهُؕ جَآءَتْهُمْ رُسُلُهُمْ بِالْبَيِّنَاتِ فَرَدُّوْاۤ اَيْدِيَهُمْ فِۤيْ اَفْوَاهِهِمْ وَقَالُوْاۤ اِنَّا كَفَرْنَا بِمَاۤ اُرْسِلْتُمْ بِهٖ وَاِنَّا لَفِيْ شَكٍّ مِّمَّا تَدْعُوْنَنَاۤ اِلَيْهِ مُرِيْبٍ
তোমাদের নিকট কি পূর্ববর্তীদের সংবাদ আসেনি, নূহ, আদ, সামূদ এবং তাদের পরবর্তী সম্প্রদায়ের? তাদের বিষয় সম্পর্কে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ জানে না। তাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শনসহ তাদের রাসূলগণ এসেছিল, তারা তাদের নিজের হাত তাদের মুখে রাখত (নবীদেরকে কথা বলতে বাধা দিত) এবং বলত, তোমরা যা নিয়ে প্রেরিত হয়েছ অবশ্যই আমরা তা অস্বীকার করি এবং তোমরা যে বিষয়ে আমাদেরকে আহবান করছ, নিশ্চয় আমরা সে বিষয়ে সন্দেহে রয়েছি। (সূরা ইবরাহীম– ৯)
ধনীরাই আগে অস্বীকার করেছে :
وَمَاۤ اَرْسَلْنَا فِيْ قَرْيَةٍ مِّنْ نَّذِيْرٍ اِلَّا قَالَ مُتْرَفُوْهَاۤ اِنَّا بِمَاۤ اُرْسِلْتُمْ بِهٖ كَافِرُوْنَ
যখনই আমি কোন জনপদে সতর্ককারী প্রেরণ করেছি তখনই তার বিত্তশালী অধিবাসীরা বলেছে, তোমরা যে বিষয়সহ প্রেরিত হয়েছ আমরা তা অস্বীকার করি। (সূরা সাবা– ৩৪)
তারা নবীদের মিশনকে ধ্বংস করার অপচেষ্টা করেছে :
وَمَا نُرْسِلُ الْمُرْسَلِيْنَ اِلَّا مُبَشِّرِيْنَ وَمُنْذِرِيْنَۚ وَيُجَادِلُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِالْبَاطِلِ لِيُدْحِضُوْا بِهِ الْحَقَّ وَاتَّخَذُوْاۤ اٰيَاتِيْ وَمَاۤ اُنْذِرُوْا هُزُوًا
আমি রাসূলদেরকে কেবল সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবেই পাঠিয়ে থাকি। কিন্তু যারা কুফরী করেছে তারা মিথ্যা যুক্তি পেশ করে বিতর্ক করেছে, যাতে করে তারা সত্যকে ব্যর্থ করে দিতে পারে। আর তারা আমার আয়াতসমূহকে এবং যে বিষয়ে তাদেরকে (জাহান্নাম থেকে) সতর্ক করা হয়েছিল, তাকে বিদ্রূপের বিষয়ে পরিণত করে নিয়েছে। (সূরা কাহফু ৫৬)
জাতির লোকেরা নবীদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে :
كُلَّ مَا جَآءَ اُمَّةً رَّسُوْلُهَا كَذَّبُوْهُ
যখনই কোন জাতির নিকট তার রাসূল এসেছে, তখনই তারা তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে।
(সূরা মু’মিনূনু ৪৪)
নবীদের বিরোধিতায় সকল যুগে একই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে :
كَذٰلِكَ مَاۤ اَتَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ مِّنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا قَالُوْا سَاحِرٌ اَوْ مَجْنُوْنٌ ‐ اَتَوَاصَوْا بِهٖۚ بَلْ هُمْ قَوْمٌ طَاغُوْنَ
এভাবে তাদের পূর্ববর্তীদের নিকট যখনই কোন রাসূল এসেছে, তারা বলেছে- তুমি তো এক যাদুকর অথবা উন্মাদ। তারা কি একে অপরকে এ উপদেশই দিয়ে এসেছে? বস্তুত তারা এক সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়। (সূরা যারিয়াত- ৫২, ৫৩)
ব্যাখ্যা : হাজার হাজার বছর ধরে প্রতিটি যুগে বিভিন্ন দেশ ও জাতির লোকেরা নবী-রাসূলদের দাওয়াতের মুকাবিলায় একই আচরণ করেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে একই রকমের কথা বলার কারণ এ নয় যে, একটি সম্মেলন করে আগের ও পরের সমস্ত মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যখনই কোন নবী এসে দাওয়াত পেশ করবে তখনই তাঁকে এ জবাব দিতে হবে। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে যে, তাহলে তাদের আচরণের এ সাদৃশ্য এবং একই প্রকৃতির জবাবের ক্রমাগত পৃনরাবৃত্তি কেন? এর একমাত্র জবাব এই যে, অবাধ্যতা ও সীমালঙ্ঘন এদের সাধারণ বৈশিষ্ট্য। তাছাড়া এ আচরণের আর কোন কারণ নেই। প্রত্যেক যুগের অজ্ঞ লোকেরাই যেহেতু আল্লাহর দাসত্ব ও জিজ্ঞাসাবাদ সম্পর্কে বেপরোয়া হয়ে পৃথিবীতে লাগামহীন পশুর মতো জীবন যাপন করতে আগ্রহী। তাই যিনিই তাদেরকে আল্লাহর দাসত্ব ও আল্লাহভীতিমূলক জীবন যাপনের আহবান জানিয়েছেন তাঁকেই তারা একই জবাব দিয়েছে। এ আয়াত থেকে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ সত্যের উপর আলোকপাত করা যায়। সেটি হচ্ছে, হেদায়াত ও গোমরাহী, নেক কাজ ও বদ কাজ, যুলুম ও ন্যায়বিচার এবং এ ধরনের আরো অনেক কাজকর্মের যেসব প্রবণতা মানুষের মধ্যে বিদ্যমান থাকে, উপায়-উপকরণের উন্নতির কারণে বাহ্যত তার রূপ-প্রকৃতি যত ভিন্ন হোক না কেন প্রত্যেক যুগে একইভাবে তার বহির্প্রকাশ ঘটে। আজকের মানুষ ট্যাংক, বিমান ও বোমার সাহায্যে যুদ্ধ করছে আর প্রাচীন যুগের মানুষ লাঠি ও পাথরের সাহায্যে লড়াই করেছে; কিন্তু যে মৌলিক কারণে মানুষে মানুষে লড়াই বাধে, তাতে চুল পরিমাণও পার্থক্য আসেনি।
তারা রাসূলদেরকে তাড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছে :
وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِرُسُلِهِمْ لَنُخْرِجَنَّكُمْ مِّنْ اَرْضِنَاۤ اَوْ لَتَعُوْدُنَّ فِيْ مِلَّتِنَاؕ فَاَوْحٰۤى اِلَيْهِمْ رَبُّهُمْ لَنُهْلِكَنَّ الظَّالِمِيْنَ
কাফিররা তাদের রাসূলদেরকে বলেছিল, অবশ্যই আমরা তোমাদেরকে আমাদের দেশ হতে বহিষ্কার করব, নতুবা তোমাদেরকে আমাদের ধর্মে ফিরে আসতেই হবে। অতঃপর তাদের প্রতিপালক রাসূলদেরকে ওহী প্রেরণ করলেন- যালিমদেরকে আমি অবশ্যই ধ্বংস করব। (সূরা ইবরাহীম– ১৩)
জাতির লোকেরা রাসূলদেরকে গ্রেফতার করার চেষ্টা করেছে :
كَذَّبَتْ قَبْلَهُمْ قَوْمُ نُوْحٍ وَّالْاَحْزَابُ مِنْ ۢبَعْدِهِمْ۪ وَهَمَّتْ كُلُّ اُمَّةٍ ۢبِرَسُوْلِهِمْ لِيَأْخُذُوْهُ وَجَادَلُوْا بِالْبَاطِلِ لِيُدْحِضُوْا بِهِ الْحَقَّ فَاَخَذْتُهُمْ فَكَيْفَ كَانَ عِقَابِ
তাদের পূর্বে নূহের সম্প্রদায় এবং তাদের পরে অন্যান্য দলও মিথ্যারোপ করেছিল। প্রত্যেক সম্প্রদায় নিজ নিজ রাসূলকে গ্রেফতার করার চক্রান্ত করেছিল এবং তারা বাজে তর্কে লিপ্ত হয়েছিল, যাতে করে তারা এর দ্বারা সত্যকে নষ্ট করে দিতে পারে। ফলে আমি তাদেরকে পাকড়াও করলাম। সুতরাং কেমন ছিল আমার শাস্তি! (সূরা মু’মিনু ৫)
অনেক নবীকে হত্যা করা হয়েছে :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَكْفُرُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِ وَيَقْتُلُوْنَ النَّبِيِّيْنَ بِغَيْرِ حَقٍ وَّيَقْتُلُوْنَ الَّذِيْنَ يَأْمُرُوْنَ بِالْقِسْطِ مِنَ النَّاسِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ اَلِيْمٍ
নিশ্চয় যারা আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করেছে, অন্যায়ভাবে নবীদেরকে হত্যা করেছে এবং যারা ইনসাফের নির্দেশ দেয়, তাদেরকেও হত্যা করেছে। তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও। (সূরা আলে ইমরানু ২১)
وَضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ الْمَسْكَنَةُ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ كَانُوْا يَكْفُرُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِ وَيَقْتُلُوْنَ الْاَنْۢبِيَآءَ بِغَيْرِ حَقٍّ
তাদের উপর দারিদ্রের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। কারণ তারা আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করেছে এবং নবীদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে। (সূরা আলে ইমরানু ১১২)
ব্যাখ্যা : বনী ইসরাঈলরা তাদের নবীদের সাথে যেসব খারাপ আচরণ করেছিল, তা তাদের ইতিহাস গ্রন্থে বিস্তারিতভাবে উল্লেখিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বাইবেলের কয়েকটি ঘটনা এখানে উদ্ধৃত হলো।
(এক) সুলায়মান (আঃ) এর পর ইসরাঈলী সাম্রাজ্য জেরুজালেমের ইয়াহুদিয়া এবং সামারিয়ার ইয়াহুদিয়া এ দু’টি রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে যায়। তাদের মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহ চলতে থাকে। অবশেষে ইয়াহুদিয়া রাষ্ট্র নিজের ভাইদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য দামেস্কের আরমী রাষ্ট্রের সাহায্য প্রার্থনা করে। এতে আল্লাহর হুকুমে হানানী নবী ইয়াহুদিয়া রাষ্ট্রের শাসক ‘আসা’-কে কঠোরভাবে সতর্ক করে দেন। কিন্তু ‘আসা’ এই সতর্কবাণী গ্রহণ করার পরিবর্তে আল্লাহর নবীকে কারারুদ্ধ করে। (২ বংশাবলি, ১৭ অধ্যায়, ৭-১০ শ্লোক)
(দুই) ইলয়াস (আঃ) যখন বা’ল দেবতার পূজার জন্য ইয়াহুদিদের তিরস্কার করেন এবং তাওহীদের দাওয়াত দিতে থাকেন, তখন সামারিয়ার ইসরাঈলী রাজা ‘আখিয়াব’ নিজের মুশরিক স্ত্রীর প্ররোচনায় নবীর প্রাণনাশের সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় মেতে ওঠে। ফলে নবীকে সিনাই উপদ্বীপের পর্বতাঞ্চলে আশ্রয় নিতে হয়। এ সময় ইলয়াস (আঃ) এভাবে দু‘আ করেন, ‘‘হে আল্লাহ! বনী ইসরাঈল তোমার সাথে কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে। তলোয়ারের সাহায্যে তোমার নবীদেরকে হত্যা করেছে এবং একমাত্র আমিই বেঁচে আছি। তাই তারা আমার প্রাণনাশের চেষ্টা করছে।’’ (১ রাজাবলি, ১৭ অধ্যায়, ১-১০ শ্লোক)
(তিন) সত্য ভাষণ দেয়ার অপরাধে ‘মিকাইয়াহ’ নামে একজন নবীকে ইসরাঈলী শাসক আখিয়াব কারারুদ্ধ করে। সে হুকুম দেয় যে, এ ব্যক্তিকে বিপদের খাদ্য খাওয়াও এবং বিপদের পানি পান করাও।
(১ রাজাবলি, ২২ অধ্যায়, ২৬-২৭ শ্লোক)
(চার) যখন ইয়াহুদিয়া রাষ্ট্রে প্রকাশ্যে মূর্তিপূজা ও ব্যভিচার চলতে থাকে এবং যাকারিয়া (আঃ) এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হন, তখন ইয়াহুদি রাজা ইউআসের নির্দেশে তাকে মূল হাইকেলে সুলায়মানীতে ‘মাকদিস’ ও ‘যবেহ ক্ষেত্র’- এর মাঝখানে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করা হয়। (২ বংশাবলি, ২৪ অধ্যায়, ২১ শ্লোক)
(পাঁচ) যখন আশুরিয়াদের হাতে সামারিয়াদের ইসরাঈলী রাষ্ট্রের পতন হয় এবং জেরুজালেমের ইয়াহুদি রাষ্ট্র মহাধ্বংসের সম্মুখীন হয়, তখন ‘ইয়ারমিয়াহ’ নবী নিজের জাতির পতনে আর্তনাদ করে ওঠেন। তিনি পথে-ঘাটে, অলিতে-গলিতে নিজের জাতিকে সম্বোধন করে বলতে থাকেন, ‘‘সতর্ক হও, নিজেদেরকে সংশোধন করো, অন্যথায় তোমাদের পরিণাম সামারিয়া জাতির চেয়েও ভয়াবহ হবে।’’ কিন্তু জাতির পক্ষ থেকে এ সতর্কবাণীর বিরূপ উত্তর আসে। চারদিক থেকে তাঁর উপর প্রবল বৃষ্টিধারার মতো অভিশাপ ও গালি-গালাজ বর্ষিত হতে থাকে। তাঁকে মারধর করা হয়, কারারুদ্ধ করা হয়। ক্ষুধা ও পিপাসায় শুকিয়ে মেরে ফেলার জন্য রশি দিয়ে বেঁধে কর্দমাক্ত কূয়ার মধ্যে ঝুলিয়ে রাখা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা এবং বিদেশী শত্রুর সাথে আতাত করার অভিযোগ আনা হয়।
(যিরমিয়, ১৫ অধ্যায়, ১০ শ্লোক; ১৮ অধ্যায়, ২০-২৩ শ্লোক; ২০ অধ্যায়, ১-১৮ শ্লোক; ৩৬-৪০ অধ্যায়)
(ছয়) ‘আমুস’ নামক একজন নবী সামারিয়ার ইসরাঈলী রাষ্ট্রের ভ্রষ্টতা ও ব্যভিচারের সামালোচনা করেন এবং এর পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করে দেন। তখন তাঁকে চুড়ান্ত পত্র দিয়ে বলে দেয়া হয়, এদেশ থেকে বের হয়ে যাও এবং বাইরে গিয়ে নিজের নবুওয়াত প্রচার করো। (আমুস, ৭ অধ্যায়, ১০-১৩ শ্লোক)
(সাত) ইয়াহিয়া (আঃ) যখন ইয়াহুদি শাসক হিরোডিয়াসের দরবারে প্রকাশ্যে অনুষ্ঠিত ব্যভিচার ও নৈতিকতা বিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান, তখন প্রথমে তাঁকে কারারুদ্ধ করা হয়। তারপর বাদশাহ নিজের প্রেমিকার নির্দেশানুসারে জাতির সবচেয়ে সৎ ও ন্যায়নিষ্ঠ এ ব্যক্তিটির শিরচ্ছেদ করে। কর্তিত মস্তক একটি থালায় করে নিয়ে বাদশাহ তার প্রেমিকাকে উপহার দেয়। (মার্ক, ৬ অধ্যায়, ১৭-১৯ শ্লোক)
(আট) ঈসা (আঃ) এর বিরুদ্ধে বনী ইসরাঈলের আলিমসমাজ ও জাতীয় নেতৃবৃন্দের ক্রোধ উদ্দীপিত হয়। কারণ তিনি তাদের পাপকাজ ও লোক দেখানো সৎকাজের সমালোচনা করতেন। তাদেরকে ঈমান ও সৎকাজের দিকে আহবান জানাতেন। এসব কারণে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা তৈরি করা হয়। রোমান আদালত তাঁকে প্রাণদন্ড দানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অতঃপর একদিন যখন রোমান শাসক পীলাতীস ইয়াহুদিদের বলল, আজ ঈদের দিন। আমি তোমাদের স্বার্থে ঈসা ও বারাববা ডাকাতের মধ্য থেকে একজনকে মুক্তি দিতে চাই। আমি কাকে মুক্তি দেব? ইয়াহুদিরা সমস্বরে বলল, আপনি বারাববাকে মুক্তি দিন এবং ঈসাকে ফাঁসি দিন। (মথি, ২৭ অধ্যায়, ২০-২৬ শ্লোক)
এ হচ্ছে ইয়াহুদি জাতির অপরাধমূলক কর্মকান্ডের কয়েকটি উদাহরণ। কুরআনের উল্লেখিত আয়াতগুলোতে সংক্ষেপে এদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। বলা বাহুল্য, যে জাতি নিজেদের ফাসিক ও দুশ্চরিত্র লোকদেরকে নেতৃত্বের আসনে বসাতে এবং সৎ ও উন্নত চরিত্রের অধিকারী লোকদেরকে কারাগারে স্থান দিতে চায়, আল্লাহ তাদের উপর অভিশাপ বর্ষণ না করলে আর কাদের উপর অভিশাপ বর্ষণ করবেন?
নবীরা মানুষ হওয়াতে লোকেরা ঈমান আনতে দ্বিধা করত :
وَمَا مَنَعَ النَّاسَ اَنْ يُّؤْمِنُوْاۤ اِذْ جَآءَهُمُ الْهُدٰۤى اِلَّاۤ اَنْ قَالُوْاۤ اَبَعَثَ اللهُ بَشَرًا رَّسُوْلًا ‐ قُلْ ﻝ لَّوْ كَانَ فِى الْاَرْضِ مَلَآئِكَةٌ يَّمْشُوْنَ مُطْمَئِنِّيْنَ لَنَزَّلْنَا عَلَيْهِمْ مِّنَ السَّمَآءِ مَلَكًا رَّسُوْلًا
যখনই মানুষের নিকট (আল্লাহর কাছ থেকে) হেদায়াত এসেছে, তখনই তাদের ঈমান আনতে কোন জিনিস বাধা দেয়নি, তবে তারা শুধু এ কথাই বলেছে- আল্লাহ কি (আমাদের মতোই) একজন মানুষকে রাসূল করে পাঠিয়েছেন? (হে নবী!) তুমি বলে দাও, যদি এ পৃথিবীতে ফেরেশতাগণ বসবাস করত এবং তারা নিশ্চিন্তে চলাফেরা করত, তাহলে অবশ্যই আমি আকাশ থেকে ফেরেশতাকে রাসূল করে পাঠাতাম।
(সূরা বনী ইসরাঈল– ৯৪, ৯৫)
নবীরা জাতির লোকদেরকে বুঝাতেন :
قَالَتْ رُسُلُهُمْ اَفِى اللهِ شَكٌّ فَاطِرِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِؕ يَدْعُوْكُمْ لِيَغْفِرَ لَكُمْ مِّنْ ذُنُوْبِكُمْ وَيُؤَخِّرَكُمْ اِلٰۤى اَجَلٍ مُّسَمًّى
তাদের রাসূলগণ বলেছিল, আল্লাহ সম্বন্ধে কি কোন সন্দেহ আছে, যিনি আসমান ও জমিনের সৃষ্টিকর্তা? তিনি তোমাদেরকে আহবান করেন তোমাদের পাপ মার্জনা করার জন্য এবং তোমাদেরকে নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত অবকাশ দেয়ার জন্য। (সূরা ইবরাহীম– ১০)
قَالَتْ لَهُمْ رُسُلُهُمْ اِنْ نَّحْنُ اِلَّا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ وَلٰكِنَّ اللهَ يَمُنُّ عَلٰى مَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهٖؕ وَمَا كَانَ لَنَاۤ اَنْ نَّأْتِيَكُمْ بِسُلْطَانٍ اِلَّا بِاِذْنِ اللهِؕ وَعَلَى اللهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُوْنَ
তাদের রাসূলগণ তাদেরকে বলত, আমরা তোমাদের মতোই মানুষ, কিন্তু আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা অনুগ্রহ করেন। আমরা আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোন প্রমাণ উপস্থিত করতে সক্ষম নই। আর আল্লাহর উপরই মুমিনগণের নির্ভর করা উচিত। (সূরা ইবরাহীম– ১১)
লোকেরা নবীদের কথার পাল্টা জবাব দিত :
قَالُوْاۤ اِنْ اَنْتُمْ اِلَّا بَشَرٌ مِّثْلُنَاؕ تُرِيْدُوْنَ اَنْ تَصُدُّوْنَا عَمَّا كَانَ يَعْبُدُ اٰبَآؤُنَا فَأْتُوْنَا بِسُلْطَانٍ مُّبِيْنٍ
তারা বলত, তোমরা তো আমাদের মতোই মানুষ। আমাদের পিতৃপুরুষগণ যাদের ইবাদাত করত তোমরা তাদের ইবাদাত হতে আমাদেরকে বিরত রাখতে চাও। অতএব তোমরা আমাদের নিকট কোন অকাট্য প্রমাণ উপস্থিত করো। (সূরা ইবরাহীম– ১০)
নবীগণ ধৈর্যধারণ করতেন :
وَمَا لَنَاۤ اَ لَّا نَتَوَكَّلَ عَلَى اللهِ وَقَدْ هَدَانَا سُبُلَنَا وَلَنَصْبِرَنَّ عَلٰى مَاۤ اٰذَيْتُمُوْنَا وَعَلَى اللهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُتَوَكِّلُوْنَ
আমরা কেন আল্লাহর উপর নির্ভর করব না? তিনিই তো আমাদেরকে পথপ্রদর্শন করেছেন। তোমরা আমাদেরকে যে কষ্ট দিচ্ছ আমরা তাতে অবশ্যই ধৈর্যধারণ করব। আর নির্ভরকারীদের উচিত, আল্লাহর উপরই নির্ভর করা। (সূরা ইবরাহীম– ১২)
নবীদেরকে মিথ্যারোপ করায় তারা ধ্বংস হয়েছে :
ثُمَّ اَرْسَلْنَا رُسُلَنَا تَتْرٰى كُلَّمَا جَآءَ اُمَّةً رَّسُوْلُهَا كَذَّبُوْهُ فَاَتْبَعْنَا بَعْضَهُمْ بَعْضًا وَّجَعَلْنَاهُمْ اَحَادِيْثَ فَبُعْدًا لِّقَوْمٍ لَّا يُؤْمِنُوْنَ
অতঃপর আমি একের পর এক আমার রাসূল প্রেরণ করেছি। যখনই কোন জাতির নিকট তার রাসূল এসেছে তখনই তারা তাকে মিথ্যাবাদী বলেছে। অতঃপর আমি তাদের একের পর এক ধ্বংস করেছি এবং তাদেরকে (পরবর্তীদের জন্য) কাহিনীর বিষয়বস্তু বানিয়ে দিয়েছি। সুতরাং ধ্বংস অবিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য। (সূরা মু’মিনূনু ৪৪)
কিয়ামতের দিন সকল নবী ও তাদের উম্মতকে প্রশ্ন করা হবে :
فَلَنَسْاَلَنَّ الَّذِيْنَ اُرْسِلَ اِلَيْهِمْ وَلَنَسْاَلَنَّ الْمُرْسَلِيْنَ
অতঃপর যাদের নিকট রাসূল প্রেরণ করা হয়েছিল, তাদেরকে তো আমি জিজ্ঞেস করবই এবং রাসূলদেরকেও জিজ্ঞেস করব। (সূরা আ‘রাফু ৬)
সকল রাসূলের কথা কুরআনে আলোচনা করা হয়নি :
وَرُسُلًا قَدْ قَصَصْنَاهُمْ عَلَيْكَ مِنْ قَبْلُ وَرُسُلًا لَّمْ نَقْصُصْهُمْ عَلَيْكَ
অনেক রাসূল (প্রেরণ করেছি) যাদের কথা পূর্বে আমি তোমাকে বর্ণনা করেছি এবং আরো অনেক রাসূল (প্রেরণ করেছি) যাদের কথা তোমাকে বর্ণনা করিনি। (সূরা নিসা– ১৬৪)
وَلَقَدْ اَرْسَلْنَا رُسُلًا مِّنْ قَبْلِكَ مِنْهُمْ مَّنْ قَصَصْنَا عَلَيْكَ وَمِنْهُمْ مَّنْ لَّمْ نَقْصُصْ عَلَيْكَ
আমি তো তোমার পূর্বে অনেক রাসূল প্রেরণ করেছিলাম, তাদের কারো কথা তোমার নিকট বর্ণনা করেছি এবং কারো কথা তোমার নিকট বর্ণনা করিনি। (সূরা মু’মিনু ৭৮)
সকল নবীর প্রতি ঈমান আনা জরুরি :
لَيْسَ الْبِرَّ اَنْ تُوَلُّوْا وُجُوْهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلٰكِنَّ الْبِرَّ مَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَالْمَلَآئِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّيْنَ
তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল পূর্ব অথবা পশ্চিম দিকে ঘুরাও, তাতে কোন পুণ্য নেই। বরং পুণ্য রয়েছে সে ব্যক্তির জন্য, যে আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতাগণ, কিতাব ও নবীগণের প্রতি ঈমান আনয়ন করে। (সূরা বাক্বারা– ১৭৭)
রাসূলগণের মধ্যে পার্থক্য করা যাবে না :
اٰمَنَ الرَّسُوْلُ بِمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْهِ مِنْ رَّبِّهٖ وَالْمُؤْمِنُوْنَ كُلٌّ اٰمَنَ بِاللهِ وَمَلَآئِكَتِهٖ وَكُتُبِهٖ وَرُسُلِهٖ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ اَحَدٍ مِّنْ رُّسُلِهٖ
রাসূল ও ঈমানদারগণ বিশ্বাস স্থাপন করেছে, যা তার রবের পক্ষ থেকে নাযিল হয়েছে। তারা প্রত্যেকেই আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা, তাঁর কিতাবসমূহ এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান এনেছে। (তারা বলে) আমরা তাঁর রাসূলদের মধ্যে কোন পার্থক্য করি না। (সূরা বাক্বারা– ২৮৫)
রাসূলগণের মধ্যে পার্থক্য করা কুফরী :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَكْفُرُوْنَ بِاللهِ وَرُسُلِهٖ وَيُرِيْدُوْنَ اَنْ يُّفَرِّقُوْا بَيْنَ اللهِ وَرُسُلِهٖ وَيَقُوْلُوْنَ نُؤْمِنُ بِبَعْضٍ وَّنَكْفُرُ بِبَعْضٍ وَّيُرِيْدُوْنَ اَنْ يَّتَّخِذُوْا بَيْنَ ذٰلِكَ سَبِيْلًا ‐ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْكَافِرُوْنَ حَقًّاۚ وَاَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِيْنَ عَذَابًا مُّهِيْنًا
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলদেরকে অস্বীকার করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলদের মধ্যে ঈমানের ব্যাপারে তারতম্য করতে চায় এবং বলে, আমরা কতককে বিশ্বাস করি ও কতককে অস্বীকার করি। এভাবে তারা মধ্যবর্তী কোন পথ অবলম্বন করতে চায়, প্রকৃতপক্ষে এরাই কাফির। আর কাফিরদের জন্য আমি লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। (সূরা নিসা– ১৫০, ১৫১)
নবীদের পথ অনুসরণ করার নির্দেশ :
اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ هَدَى اللهُ فَبِهُدَاهُمُ اقْتَدِهْ
আল্লাহ তাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করেছেন, সুতরাং তুমি তাদের পথ অনুসরণ করো। (সূরা আন‘আম– ৯০)
নবীদের আনুগত্য করার জন্যই তাদেরকে পাঠানো হয় :
وَمَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا لِيُطَاعَ بِاِذْنِ اللهِ
আমি রাসূলদেরকে এ উদ্দেশ্যেই প্রেরণ করেছি যে, আল্লাহর নির্দেশানুসারে তাদের আনুগত্য করা হবে।
(সূরা নিসা– ৬৪)
পূর্ববর্তী নবীদের ইতিহাস মুহাম্মাদ ﷺ কে জানানোর উদ্দেশ্যে :
وَكُلًّا نَّقُصُّ عَلَيْكَ مِنْ اَنْۢبَآءِ الرُّسُلِ مَا نُثَبِّتُ بِهٖ فُؤَادَكَۚ وَجَآءَكَ فِيْ هٰذِهِ الْحَقُّ وَمَوْعِظَةٌ وَّذِكْرٰى لِلْمُؤْمِنِيْنَ
রাসূলদের ঐ সকল বৃত্তান্ত আমি তোমার নিকট বর্ণনা করছি, যা দ্বারা আমি তোমার অন্তরকে দৃঢ় করি। আর এ কারণেই তোমার নিকট সত্য এবং মুমিনদের জন্য উপদেশ ও নসিহত এসেছে। (সূরা হুদু ১২০)
ব্যাখ্যা : কুরআনে আলোচিত নবীদের জীবনী থেকে আমরা যে মৌলিক শিক্ষা পাই তা হলো : (এক) পূর্বের সকল নবীই মানুষ ছিলেন, তাঁরা কোন অভিনব সৃষ্টি ছিলেন না। ইতিহাসে এটা কোন নতুন ঘটনা নয়। (দুই) আজ মুহাম্মাদ ﷺ যে কাজ করছেন পূর্বের নবীগণও একই কাজ করতে এসেছিলেন। এটিই ছিল তাদের জীবনের উদ্দেশ্য ও শিক্ষা। (তিন) নবীদের সঙ্গে আল্লাহ বিশেষ ব্যবহার করেন ও বিশেষ সম্পর্ক রাখেন। তাঁরা বড় বড় বিপদের মধ্য দিয়েও সামনে এগিয়ে চলেন। বছরের পর বছর বিপদের মুখোমুখি হতে থাকেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁরা আল্লাহর সাহায্য ও সহায়তা লাভ করেন। তিনি তাঁদের প্রতি নিজের রহমত ও অনুগ্রহ বর্ষণ করেন। তাঁদের দু‘আ কবুল করেন ও কষ্ট দূর করেন। তাঁদের বিরোধীদেরকে পরাজিত করেন এবং অলৌকিক পদ্ধতিতে সাহায্য করেন।
নবীদের কাহিনী শোনানোর লক্ষ্য দু’টি। (এক) এগুলো মুমিনদেরকে শোনানো হয়েছে, যাতে তারা হতাশ না হয়ে পড়ে এবং সংকটের কঠিন মুহূর্তেও ধৈর্য ও দৃঢ়তার সাথে সত্য ও ন্যায়ের ঝান্ডা উঁচু করে রাখে এবং আল্লাহর উপর এ আস্থা রাখে যে, শেষ পর্যন্ত তাঁর সাহায্য আসবেই। অতঃপর তিনি যালিমদেরকে লাঞ্ছিত করবেন এবং সত্যের ঝান্ডা উঁচু করে দেবেন। (দুই) এগুলো এমন যালিমদেরকেও শুনানো হয়েছে, যারা তাদের ধারণা অনুযায়ী ইসলামী আন্দোলনকে সমূলে উচ্ছেদ করে দেয়ার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় নিয়োজিত। তাদেরকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, তোমরা আল্লাহর সংযম ও সহিষ্ণুতার ভুল অর্থ গ্রহণ করেছ। তোমাদের যদি এখন পর্যন্ত সীমালঙ্ঘন করার জন্য অবকাশ দেয়া হয়ে থাকে তাহলে এ কথা মনে করো না যে, এখানে কোন ইনসাফকারী শক্তিই নেই যার ফলে এ ভূখন্ডে লাগামহীনভাবে যা ইচ্ছে তাই করে যেতে পারবে। এ বিভ্রান্তিত তোমাদেরকে এমন পরিণতির সম্মুখীন করবে, ইতোপূর্বে অতীতের জাতিগুলোকে যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল।
لَيْسَ الْبِرَّ اَنْ تُوَلُّوْا وُجُوْهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلٰكِنَّ الْبِرَّ مَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَالْمَلَآئِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّيْنَ
তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল পূর্ব অথবা পশ্চিম দিকে ঘুরাও, তাতে কোন পুণ্য নেই। বরং পুণ্য রয়েছে সে ব্যক্তির জন্য, যে আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতাগণ, কিতাব ও নবীগণের প্রতি ঈমান আনয়ন করে। (সূরা বাক্বারা– ১৭৭)
রাসূলগণের মধ্যে পার্থক্য করা যাবে না :
اٰمَنَ الرَّسُوْلُ بِمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْهِ مِنْ رَّبِّهٖ وَالْمُؤْمِنُوْنَ كُلٌّ اٰمَنَ بِاللهِ وَمَلَآئِكَتِهٖ وَكُتُبِهٖ وَرُسُلِهٖ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ اَحَدٍ مِّنْ رُّسُلِهٖ
রাসূল ও ঈমানদারগণ বিশ্বাস স্থাপন করেছে, যা তার রবের পক্ষ থেকে নাযিল হয়েছে। তারা প্রত্যেকেই আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা, তাঁর কিতাবসমূহ এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান এনেছে। (তারা বলে) আমরা তাঁর রাসূলদের মধ্যে কোন পার্থক্য করি না। (সূরা বাক্বারা– ২৮৫)
রাসূলগণের মধ্যে পার্থক্য করা কুফরী :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَكْفُرُوْنَ بِاللهِ وَرُسُلِهٖ وَيُرِيْدُوْنَ اَنْ يُّفَرِّقُوْا بَيْنَ اللهِ وَرُسُلِهٖ وَيَقُوْلُوْنَ نُؤْمِنُ بِبَعْضٍ وَّنَكْفُرُ بِبَعْضٍ وَّيُرِيْدُوْنَ اَنْ يَّتَّخِذُوْا بَيْنَ ذٰلِكَ سَبِيْلًا ‐ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْكَافِرُوْنَ حَقًّاۚ وَاَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِيْنَ عَذَابًا مُّهِيْنًا
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলদেরকে অস্বীকার করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলদের মধ্যে ঈমানের ব্যাপারে তারতম্য করতে চায় এবং বলে, আমরা কতককে বিশ্বাস করি ও কতককে অস্বীকার করি। এভাবে তারা মধ্যবর্তী কোন পথ অবলম্বন করতে চায়, প্রকৃতপক্ষে এরাই কাফির। আর কাফিরদের জন্য আমি লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। (সূরা নিসা– ১৫০, ১৫১)
নবীদের পথ অনুসরণ করার নির্দেশ :
اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ هَدَى اللهُ فَبِهُدَاهُمُ اقْتَدِهْ
আল্লাহ তাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করেছেন, সুতরাং তুমি তাদের পথ অনুসরণ করো। (সূরা আন‘আম– ৯০)
নবীদের আনুগত্য করার জন্যই তাদেরকে পাঠানো হয় :
وَمَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا لِيُطَاعَ بِاِذْنِ اللهِ
আমি রাসূলদেরকে এ উদ্দেশ্যেই প্রেরণ করেছি যে, আল্লাহর নির্দেশানুসারে তাদের আনুগত্য করা হবে।
(সূরা নিসা– ৬৪)
পূর্ববর্তী নবীদের ইতিহাস মুহাম্মাদ ﷺ কে জানানোর উদ্দেশ্যে :
وَكُلًّا نَّقُصُّ عَلَيْكَ مِنْ اَنْۢبَآءِ الرُّسُلِ مَا نُثَبِّتُ بِهٖ فُؤَادَكَۚ وَجَآءَكَ فِيْ هٰذِهِ الْحَقُّ وَمَوْعِظَةٌ وَّذِكْرٰى لِلْمُؤْمِنِيْنَ
রাসূলদের ঐ সকল বৃত্তান্ত আমি তোমার নিকট বর্ণনা করছি, যা দ্বারা আমি তোমার অন্তরকে দৃঢ় করি। আর এ কারণেই তোমার নিকট সত্য এবং মুমিনদের জন্য উপদেশ ও নসিহত এসেছে। (সূরা হুদু ১২০)
ব্যাখ্যা : কুরআনে আলোচিত নবীদের জীবনী থেকে আমরা যে মৌলিক শিক্ষা পাই তা হলো : (এক) পূর্বের সকল নবীই মানুষ ছিলেন, তাঁরা কোন অভিনব সৃষ্টি ছিলেন না। ইতিহাসে এটা কোন নতুন ঘটনা নয়। (দুই) আজ মুহাম্মাদ ﷺ যে কাজ করছেন পূর্বের নবীগণও একই কাজ করতে এসেছিলেন। এটিই ছিল তাদের জীবনের উদ্দেশ্য ও শিক্ষা। (তিন) নবীদের সঙ্গে আল্লাহ বিশেষ ব্যবহার করেন ও বিশেষ সম্পর্ক রাখেন। তাঁরা বড় বড় বিপদের মধ্য দিয়েও সামনে এগিয়ে চলেন। বছরের পর বছর বিপদের মুখোমুখি হতে থাকেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁরা আল্লাহর সাহায্য ও সহায়তা লাভ করেন। তিনি তাঁদের প্রতি নিজের রহমত ও অনুগ্রহ বর্ষণ করেন। তাঁদের দু‘আ কবুল করেন ও কষ্ট দূর করেন। তাঁদের বিরোধীদেরকে পরাজিত করেন এবং অলৌকিক পদ্ধতিতে সাহায্য করেন।
নবীদের কাহিনী শোনানোর লক্ষ্য দু’টি। (এক) এগুলো মুমিনদেরকে শোনানো হয়েছে, যাতে তারা হতাশ না হয়ে পড়ে এবং সংকটের কঠিন মুহূর্তেও ধৈর্য ও দৃঢ়তার সাথে সত্য ও ন্যায়ের ঝান্ডা উঁচু করে রাখে এবং আল্লাহর উপর এ আস্থা রাখে যে, শেষ পর্যন্ত তাঁর সাহায্য আসবেই। অতঃপর তিনি যালিমদেরকে লাঞ্ছিত করবেন এবং সত্যের ঝান্ডা উঁচু করে দেবেন। (দুই) এগুলো এমন যালিমদেরকেও শুনানো হয়েছে, যারা তাদের ধারণা অনুযায়ী ইসলামী আন্দোলনকে সমূলে উচ্ছেদ করে দেয়ার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় নিয়োজিত। তাদেরকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, তোমরা আল্লাহর সংযম ও সহিষ্ণুতার ভুল অর্থ গ্রহণ করেছ। তোমাদের যদি এখন পর্যন্ত সীমালঙ্ঘন করার জন্য অবকাশ দেয়া হয়ে থাকে তাহলে এ কথা মনে করো না যে, এখানে কোন ইনসাফকারী শক্তিই নেই যার ফলে এ ভূখন্ডে লাগামহীনভাবে যা ইচ্ছে তাই করে যেতে পারবে। এ বিভ্রান্তিত তোমাদেরকে এমন পরিণতির সম্মুখীন করবে, ইতোপূর্বে অতীতের জাতিগুলোকে যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল।
কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা‘আলা ২৫ জন নবীর নাম উল্লেখ করেছেন। এদের মধ্যে কয়েক জনের জীবনী বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আবার কয়েক জনের শুধু দাওয়াতী কার্যক্রম, জাতির বিরোধিতা ও ধ্বংসের কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে। আবার কয়েক জনের ক্ষেত্রে তেমন কোন আলোচনা করা হয়নি। কেবল নবীদের সারিতে তাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আগমনের ধারাবাহিকতা অনুযায়ী কুরআন মাজীদে উল্লেখিত ২৫ জন নবীর জীবনী সামনে বর্ণনা করা হলো।
আদম (আঃ) মানবজাতির আদি পিতা। মানবজাতির বংশবিস্তার তাঁর থেকেই শুরু হয়। তিনিই ছিলেন বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম মানব ও প্রথম নবী। আল্লাহ তা‘আলা তাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেন। তারপর তার পাঁজর থেকে তার সহধর্মিণী হাওয়া (আঃ) কে সৃষ্টি করেন। অতঃপর তাদের উভয়কেই জান্নাতে বসবাস করার অনুমতি দেন। পরে শয়তানের কুমন্ত্রণায় নিষিদ্ধ ফল ভক্ষণের ফলে উভয়ই পৃথিবীতে অবতরণ করেন।
আদম (আঃ) মানবজাতির আদি পিতা। মানবজাতির বংশবিস্তার তাঁর থেকেই শুরু হয়। তিনিই ছিলেন বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম মানব ও প্রথম নবী। আল্লাহ তা‘আলা তাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেন। তারপর তার পাঁজর থেকে তার সহধর্মিণী হাওয়া (আঃ) কে সৃষ্টি করেন। অতঃপর তাদের উভয়কেই জান্নাতে বসবাস করার অনুমতি দেন। পরে শয়তানের কুমন্ত্রণায় নিষিদ্ধ ফল ভক্ষণের ফলে উভয়ই পৃথিবীতে অবতরণ করেন।
আদম (আঃ) কে সৃষ্টির পূর্বে ফেরেশতাদের সাথে আলোচনা :
وَاِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَآئِكَةِ اِنِّيْ خَالِقٌ ۢ بَشَرًا مِّنْ صَلْصَالٍ مِّنْ حَمَإٍ مَّسْنُوْنٍ
স্মরণ করো, যখন তোমার প্রতিপালক ফেরেশতাদেরকে বললেন, আমি গন্ধযুক্ত ঠনঠনে শুকনো মাটি হতে মানুষ সৃষ্টি করব। (সূরা হিজর– ২৮)
ফেরেশতাদের আপত্তি :
وَاِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَآئِكَةِ اِنِّيْ جَاعِلٌ فِى الْاَرْضِ خَلِيْفَةًؕ قَالُوْاۤ اَتَجْعَلُ فِيْهَا مَنْ يُّفْسِدُ فِيْهَا وَيَسْفِكُ الدِّمَآءَ وَنَحْنُ نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَ
স্মরণ করো, যখন তোমার রব ফেরেশতাদেরকে বললেন, নিশ্চয় আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি পাঠাব। তখন তারা বলল, আপনি কি এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন, যারা সেখানে বিবাদ সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত করবে? অথচ আমরাই তো আপনার প্রশংসা জ্ঞাপন করি এবং আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করি। (সূরা বাক্বারা– ৩০)
আল্লাহর জবাব :
قَالَ اِنِّۤيْ اَعْلَمُ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ
তিনি বললেন, নিশ্চয় আমি যে বিষয়ে জ্ঞান রাখি, তোমরা তা জান না। (সূরা বাক্বারা– ৩০)
আল্লাহ আদম (আঃ) কে সব জিনিসের নাম শিক্ষা দিলেন :
وَعَلَّمَ اٰدَمَ الْاَسْمَآءَ كُلَّهَا ثُمَّ عَرَضَهُمْ عَلَى الْمَلَآئِكَةِ فَقَالَ اَنْۢبِئُوْنِيْ بِاَسْمَآءِ هٰۤؤُلَآءِ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ ‐ قَالُوْا سُبْحَانَكَ لَا عِلْمَ لَنَاۤ اِلَّا مَا عَلَّمْتَنَاؕ اِنَّكَ اَنْتَ الْعَلِيْمُ الْحَكِيْمُ
তিনি আদমকে সব জিনিসের নাম শিখিয়ে দিলেন, অতঃপর তা ফেরেশতাদের সামনে উপস্থিত করলেন এবং বললেন, যদি তোমরা সত্যবাদী হও, তবে আমাকে এসব বস্তুর নাম বলে দাও। তারা বলেছিল, আমরা আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। আপনি আমাদেরকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তাছাড়া আমাদের কোন জ্ঞান নেই, নিশ্চয় আপনি মহাজ্ঞানী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা বাক্বারা– ৩১, ৩২)
ফেরেশতাদের উপর আদম (আঃ) কে সম্মান দিলেন :
قَالَ يَاۤ اٰدَمُ اَنْۢبِئْهُمْ بِاَسْمَآئِهِمْۚ فَلَمَّاۤ اَنْۢبَاَهُمْ بِاَسْمَآئِهِمْ قَالَ اَلَمْ اَقُلْ لَّكُمْ اِنِّۤيْ اَعْلَمُ غَيْبَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَاَعْلَمُ مَا تُبْدُوْنَ وَمَا كُنْتُمْ تَكْتُمُوْنَ
আল্লাহ বললেন, হে আদম! তুমি তাদেরকে ঐসব বস্তুর নাম জানিয়ে দাও। অতঃপর যখন তিনি তাদেরকে ঐগুলোর নামসমূহ জানিয়ে দিলেন তখন বললেন, আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, নিশ্চয় আমি আকাশসমূহ ও জমিনের অদৃশ্য বিষয়াবলি সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত আছি? (তাছাড়া) তোমরা যা প্রকাশ কর এবং যা গোপন কর, তাও আমি জানি। (সূরা বাক্বারা– ৩৩)
ফেরেশতারা আদম (আঃ) কে সিজদা করল :
فَسَجَدَ الْمَلَآئِكَةُ كُلُّهُمْ اَجْمَعُوْنَ
অতঃপর সকল ফেরেশতাই একত্রে {আদম (আঃ) কে} সিজদা করল। (সূরা সোয়াদু ৭৩)
ইবলিস আদম (আঃ) কে সিজদা করতে অস্বীকার করায় কাফির হয়ে গেল :
وَاِذْ قُلْنَا لِلْمَلَآئِكَةِ اسْجُدُوْا لِاٰدَمَ فَسَجَدُوْاۤ اِلَّاۤ اِبْلِيْسَؕ اَبٰى وَاسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِيْنَ
(স্মরণ করো) যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বলেছিলাম, তোমরা আদমকে সিজদা করো, তখন ইবলিস ব্যতীত সকলে সিজদা করেছিল। সে অস্বীকার করল ও অহংকার করল, ফলে সে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল। (সূরা বাক্বারা– ৩৪)
আল্লাহ ইবলিসকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলেন :
قَالَ يَاۤ اِبْلِيْسُ مَا مَنَعَكَ اَنْ تَسْجُدَ لِمَا خَلَقْتُ بِيَدَيَّؕ اَسْتَكْبَرْتَ اَمْ كُنْتَ مِنَ الْعَالِيْنَ
আল্লাহ বললেন, হে ইবলিস! আমি যাকে নিজের হাতে সৃষ্টি করেছি, তাকে সিজদা করতে তোমাকে কিসে বাধা দিল? তুমি অহংকার করলে, নাকি তুমি শ্রেষ্ঠ মর্যাদাশীলদের একজন? (সূরা সোয়াদু ৭৫)
ইবলিস যুক্তি খাটিয়ে উত্তর দিল :
قَالَ اَنَاْ خَيْرٌ مِّنْهُ خَلَقْتَنِيْ مِنْ نَّارٍ وَّخَلَقْتَهٗ مِنْ طِيْنٍ
সে বলল, আমি তার চেয়ে উত্তম; তুমি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছ এবং তাকে মাটি থেকে। (সূরা আ‘রাফু ১২)
وَاِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَآئِكَةِ اِنِّيْ خَالِقٌ ۢ بَشَرًا مِّنْ صَلْصَالٍ مِّنْ حَمَإٍ مَّسْنُوْنٍ
স্মরণ করো, যখন তোমার প্রতিপালক ফেরেশতাদেরকে বললেন, আমি গন্ধযুক্ত ঠনঠনে শুকনো মাটি হতে মানুষ সৃষ্টি করব। (সূরা হিজর– ২৮)
ফেরেশতাদের আপত্তি :
وَاِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَآئِكَةِ اِنِّيْ جَاعِلٌ فِى الْاَرْضِ خَلِيْفَةًؕ قَالُوْاۤ اَتَجْعَلُ فِيْهَا مَنْ يُّفْسِدُ فِيْهَا وَيَسْفِكُ الدِّمَآءَ وَنَحْنُ نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَ
স্মরণ করো, যখন তোমার রব ফেরেশতাদেরকে বললেন, নিশ্চয় আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি পাঠাব। তখন তারা বলল, আপনি কি এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন, যারা সেখানে বিবাদ সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত করবে? অথচ আমরাই তো আপনার প্রশংসা জ্ঞাপন করি এবং আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করি। (সূরা বাক্বারা– ৩০)
আল্লাহর জবাব :
قَالَ اِنِّۤيْ اَعْلَمُ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ
তিনি বললেন, নিশ্চয় আমি যে বিষয়ে জ্ঞান রাখি, তোমরা তা জান না। (সূরা বাক্বারা– ৩০)
আল্লাহ আদম (আঃ) কে সব জিনিসের নাম শিক্ষা দিলেন :
وَعَلَّمَ اٰدَمَ الْاَسْمَآءَ كُلَّهَا ثُمَّ عَرَضَهُمْ عَلَى الْمَلَآئِكَةِ فَقَالَ اَنْۢبِئُوْنِيْ بِاَسْمَآءِ هٰۤؤُلَآءِ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ ‐ قَالُوْا سُبْحَانَكَ لَا عِلْمَ لَنَاۤ اِلَّا مَا عَلَّمْتَنَاؕ اِنَّكَ اَنْتَ الْعَلِيْمُ الْحَكِيْمُ
তিনি আদমকে সব জিনিসের নাম শিখিয়ে দিলেন, অতঃপর তা ফেরেশতাদের সামনে উপস্থিত করলেন এবং বললেন, যদি তোমরা সত্যবাদী হও, তবে আমাকে এসব বস্তুর নাম বলে দাও। তারা বলেছিল, আমরা আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। আপনি আমাদেরকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তাছাড়া আমাদের কোন জ্ঞান নেই, নিশ্চয় আপনি মহাজ্ঞানী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা বাক্বারা– ৩১, ৩২)
ফেরেশতাদের উপর আদম (আঃ) কে সম্মান দিলেন :
قَالَ يَاۤ اٰدَمُ اَنْۢبِئْهُمْ بِاَسْمَآئِهِمْۚ فَلَمَّاۤ اَنْۢبَاَهُمْ بِاَسْمَآئِهِمْ قَالَ اَلَمْ اَقُلْ لَّكُمْ اِنِّۤيْ اَعْلَمُ غَيْبَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَاَعْلَمُ مَا تُبْدُوْنَ وَمَا كُنْتُمْ تَكْتُمُوْنَ
আল্লাহ বললেন, হে আদম! তুমি তাদেরকে ঐসব বস্তুর নাম জানিয়ে দাও। অতঃপর যখন তিনি তাদেরকে ঐগুলোর নামসমূহ জানিয়ে দিলেন তখন বললেন, আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, নিশ্চয় আমি আকাশসমূহ ও জমিনের অদৃশ্য বিষয়াবলি সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত আছি? (তাছাড়া) তোমরা যা প্রকাশ কর এবং যা গোপন কর, তাও আমি জানি। (সূরা বাক্বারা– ৩৩)
ফেরেশতারা আদম (আঃ) কে সিজদা করল :
فَسَجَدَ الْمَلَآئِكَةُ كُلُّهُمْ اَجْمَعُوْنَ
অতঃপর সকল ফেরেশতাই একত্রে {আদম (আঃ) কে} সিজদা করল। (সূরা সোয়াদু ৭৩)
ইবলিস আদম (আঃ) কে সিজদা করতে অস্বীকার করায় কাফির হয়ে গেল :
وَاِذْ قُلْنَا لِلْمَلَآئِكَةِ اسْجُدُوْا لِاٰدَمَ فَسَجَدُوْاۤ اِلَّاۤ اِبْلِيْسَؕ اَبٰى وَاسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِيْنَ
(স্মরণ করো) যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বলেছিলাম, তোমরা আদমকে সিজদা করো, তখন ইবলিস ব্যতীত সকলে সিজদা করেছিল। সে অস্বীকার করল ও অহংকার করল, ফলে সে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল। (সূরা বাক্বারা– ৩৪)
আল্লাহ ইবলিসকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলেন :
قَالَ يَاۤ اِبْلِيْسُ مَا مَنَعَكَ اَنْ تَسْجُدَ لِمَا خَلَقْتُ بِيَدَيَّؕ اَسْتَكْبَرْتَ اَمْ كُنْتَ مِنَ الْعَالِيْنَ
আল্লাহ বললেন, হে ইবলিস! আমি যাকে নিজের হাতে সৃষ্টি করেছি, তাকে সিজদা করতে তোমাকে কিসে বাধা দিল? তুমি অহংকার করলে, নাকি তুমি শ্রেষ্ঠ মর্যাদাশীলদের একজন? (সূরা সোয়াদু ৭৫)
ইবলিস যুক্তি খাটিয়ে উত্তর দিল :
قَالَ اَنَاْ خَيْرٌ مِّنْهُ خَلَقْتَنِيْ مِنْ نَّارٍ وَّخَلَقْتَهٗ مِنْ طِيْنٍ
সে বলল, আমি তার চেয়ে উত্তম; তুমি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছ এবং তাকে মাটি থেকে। (সূরা আ‘রাফু ১২)
আল্লাহ আদম (আঃ) কে স্ত্রীসহ জান্নাতে বসবাস করতে দিলেন :
وَقُلْنَا يَاۤ اٰدَمُ اسْكُنْ اَنْتَ وَزَوْجُكَ الْجَنَّةَ وَكُلَا مِنْهَا رَغَدًا حَيْثُ شِئْتُمَا
আমি বললাম, হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করো এবং তা হতে যা ইচ্ছা স্বাচ্ছন্দে আহার করো। (সূরা বাক্বারা– ৩৫)
وَيَاۤ اَدَمُ اسْكُنْ اَنْتَ وَزَوْجُكَ الْجَنَّةَ فَكُلَا مِنْ حَيْثُ شِئْتُمَا
হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করো এবং সেখান থেকে যা ইচ্ছে খাও। (সূরা আ‘রাফ- ১৯)
ব্যাখ্যা : পৃথিবীতে খলীফা নিযুক্ত করে পাঠানোর আগে মানসিক প্রবণতা যাচাই করার উদ্দেশ্যে আদম ও হাওয়া (আঃ) কে পরীক্ষা করার জন্য জান্নাতে রাখা হয়। আসলে জান্নাতকে পরীক্ষাগৃহ করার উদ্দেশ্য ছিল মানুষকে এ কথা বুঝিয়ে দেয়া যে, মর্যাদার প্রেক্ষিতে তোমাদের জন্য জান্নাতই উপযুক্ত স্থান। কিন্তু শয়তানের প্রলোভনে পড়ে যদি তোমরা আল্লাহর নাফরমানির পথে এগিয়ে যেতে থাক, তাহলে যেভাবে শুরুতে তোমরা এ থেকে বঞ্চিত হয়েছিলে তেমনিভাবে শেষেও বঞ্চিত হবে। তোমাদের সেই হারানো আবাসস্থলটিকে পুনরুদ্ধার করতে হলে অবশ্যই তোমাদের সেই শত্রুর মুকাবিলা করতে হবে, যে তোমাদেরকে আল্লাহর হুকুম মেনে চলার পথ থেকে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।
জান্নাতের গুণাগুণ বলে দিলেন :
اِنَّ لَكَ اَ لَّا تَجُوْعَ فِيْهَا وَلَا تَعْرٰى ‐ وَاَنَّكَ لَا تَظْمَاُ فِيْهَا وَلَا تَضْحٰى
তোমার জন্য এটাই রইল যে, তুমি জান্নাতে ক্ষুধার্ত হবে না এবং নগ্নও হবে না। সেখানে তুমি পিপাসার্ত হবে না এবং রৌদ্রের কষ্টও অনুভব করবে না। (সূরা ত্বা–হা– ১১৮, ১১৯)
তবে একটি গাছের নিকট যেতে নিষেধ করলেন :
وَلَا تَقْرَبَا هٰذِهِ الشَّجَرَةَ فَتَكُوْنَا مِنَ الظَّالِمِيْنَ
কিন্তু ঐ বৃক্ষের নিকটবর্তী হয়ো না, তাহলে তোমরা অত্যাচারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (সূরা বাক্বারা– ৩৫)
শয়তান সম্পর্কেও সতর্ক করে দিলেন :
فَقُلْنَا يَاۤ اٰدَمُ اِنَّ هٰذَا عَدُوٌّ لَّكَ وَلِزَوْجِكَ فَلَا يُخْرِجَنَّكُمَا مِنَ الْجَنَّةِ فَتَشْقٰى
অতঃপর আমি বললাম, হে আদম! নিশ্চয় এ তোমার ও তোমার স্ত্রীর শত্রু। সুতরাং সে যেন কিছুতেই তোমাদেরকে জান্নাত হতে বের করে না দেয়, নতুবা তোমরা খুবই দুঃখ-কষ্টে পতিত হবে। (সূরা ত্বা–হা– ১১৭)
ব্যাখ্যা : মানুষের শত্রু শয়তান এবং শয়তানের শত্রু মানুষ। ‘‘শয়তান মানুষের শত্রু’’- এ কথা সুস্পষ্ট। কারণ সে মানুষকে আল্লাহর হুকুম পালনের পথ থেকে সরিয়ে রেখে ধ্বংসের পথে পরিচালিত করে। কিন্তু ‘‘শয়তানের শত্রু মানুষ’’- এ কথার অর্থ হলো, আসলে শয়তানের প্রতি শত্রুতার মনোভাব পোষণ করাই মানবতার দাবী। কিন্তু কুপ্রবৃত্তির কামনা-বাসনার সামনে শয়তান যেসব প্রলোভন এনে উপস্থিত করে মানুষ সেগুলো দ্বারা প্রতারিত হয়ে তাকে নিজের বন্ধু ভেবে বসে।
শয়তান আদম ও হাওয়াকে কুমন্ত্রণা দিল :
فَوَسْوَسَ اِلَيْهِ الشَّيْطَانُ قَالَ يَاۤ اٰدَمُ هَلْ اَدُلُّكَ عَلٰى شَجَرَةِ الْخُلْدِ وَمُلْكٍ لَّا يَبْلٰى ‐ فَاَكَلَا مِنْهَا فَبَدَتْ لَهُمَا سَوْاٰتُهُمَا وَطَفِقَا يَخْصِفَانِ عَلَيْهِمَا مِنْ وَّرَقِ الْجَنَّةِ وَعَصٰۤى اٰدَمُ رَبَّهٗ فَغَوٰى
অতঃপর শয়তান তাকে কুমন্ত্রণা দিল। সে বলল, হে আদম! আমি কি তোমাকে বলে দেব অনন্ত জীবন দানকারী বৃক্ষের কথা ও এমন রাজত্বের কথা, যার কখনো পতন হবে না? অতঃপর তারা উভয়ে সেটা ভক্ষণ করল; (ফলে) সাথে সাথে তাদের লজ্জাস্থান তাদের নিকট প্রকাশ হয়ে গেল এবং তারা জান্নাতের পাতা দ্বারা নিজেদেরকে আবৃত করতে লাগল। আদম তার প্রতিপালকের হুকুম অমান্য করল, ফলে সে পথভ্রষ্ট হয়ে গেল। (সূরা ত্বা–হা– ১২০, ১২১)
وَقَاسَمَهُمَاۤ اِنِّيْ لَكُمَا لَمِنَ النَّاصِحِيْنَ ‐ فَدَلَّاهُمَا بِغُرُوْرٍ فَلَمَّا ذَاقَا الشَّجَرَةَ بَدَتْ لَهُمَا سَوْاٰتُهُمَا وَطَفِقَا يَخْصِفَانِ عَلَيْهِمَا مِنْ وَّرَقِ الْجَنَّةِ
সে (শয়তান) তাদের উভয়ের নিকট শপথ করে বলল, আমি তো তোমাদের কল্যাণকামীদের একজন। এভাবে সে তাদেরকে তার প্রতারণার জালে আটকে ফেলল। তারপর যখন তারা সে বৃক্ষের ফলের স্বাদ গ্রহণ করল, তখন তাদের লজ্জাস্থান তাদের নিকট প্রকাশ হয়ে পড়ল এবং তারা নিজেদেরকে জান্নাতের পাতা দ্বারা আবৃত করতে লাগল। (সূরা আ‘রাফু ২১)
আল্লাহর হুকুম আর মানা হলো না :
وَلَقَدْ عَهِدْنَاۤ اِلٰۤى اٰدَمَ مِنْ قَبْلُ فَنَسِيَ وَلَمْ نَجِدْ لَهٗ عَزْمًا
আমি তো ইতোপূর্বেই আদমের প্রতি নির্দেশ দান করেছিলাম, কিন্তু সে তা ভুলে গিয়েছিল; আমি তার সংকল্পে দৃঢ়তা পাইনি। (সূরা ত্বা–হা- ১১৫)
فَاَكَلَا مِنْهَا فَبَدَتْ لَهُمَا سَوْاٰتُهُمَا وَطَفِقَا يَخْصِفَانِ عَلَيْهِمَا مِنْ وَّرَقِ الْجَنَّةِؗ وَعَصٰۤى اٰدَمُ رَبَّهٗ فَغَوٰى
অতঃপর তারা উভয়ে সেটা হতে ভক্ষণ করল। তখন তাদের লজ্জাস্থান তাদের নিকট প্রকাশ হয়ে পড়ল এবং তারা জান্নাতের (গাছের) পাতা দ্বারা নিজেদেরকে আবৃত করতে লাগল। আদম তার প্রতিপালকের হুকুম অমান্য করল, ফলে সে ভুলের মধ্যে পতিত হলো। (সূরা ত্বা–হা- ১২১)
ব্যাখ্যা : এ নির্দেশ অমান্য করা অহংকারের ভিত্তিতে ছিল না বরং গাফলতি এবং ইচ্ছার দুর্বলতার কারণে ছিল। তিনি এ ধরনের সংকল্পের ভিত্তিতে আল্লাহর হুকুম অমান্য করেননি যে, আমি আল্লাহর পরোয়া করতে যাব কেন? বরং তিনি আল্লাহর হুকুম মনে রাখার চেষ্টা করেননি। আল্লাহ তাকে কী বুঝিয়ে ছিলেন, তা তিনি ভুলে গিয়েছিলেন। তার ইচ্ছাশক্তি খুব বেশি মজবুত ছিল না। ফলে শয়তান যখন তাকে প্ররোচিত করতে এলো তখন তিনি আল্লাহর সকর্তবাণী স্মরণ করতে পারেননি এবং শয়তানের প্রদত্ত লালসার মুকাবিলা করতে সক্ষম হননি। কিন্তু আল্লাহ তাকে বহিষ্কার করেননি। আনুগত্যের প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে যেখানে তিনি পড়ে গিয়েছিলেন, সেখান থেকে উঠিয়ে তাকে আবার নিজের কাছে ডেকে নিলেন এবং নিজের খেদমতের জন্য বাছাই করলেন।
আল্লাহ আদম ও হাওয়াকে সতর্ক করলেন :
وَنَادَاهُمَا رَبُّهُمَاۤ اَلَمْ اَنْهَكُمَا عَنْ تِلْكُمَا الشَّجَرَةِ وَاَقُلْ لَّكُمَاۤ اِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمَا عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ
তখন তাদের প্রতিপালক তাদেরকে সম্বোধন করে বললেন, আমি কি তোমাদেরকে এ বৃক্ষের নিকটবর্তী হতে বারণ করিনি এবং আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, নিশ্চয় শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু? (সূরা আ‘রাফু ২২)
আদম (আঃ) তাওবার দু‘আ শিখলেন :
فَتَلَقّٰۤى اٰدَمُ مِنْ رَّبِّهٖ كَلِمَاتٍ فَتَابَ عَلَيْهِؕ اِنَّهٗ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ
আদম তাঁর রবের পক্ষ থেকে কিছু বাক্য শিক্ষা করল (যার দ্বারা সে তাওবা করল), অতঃপর আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করলেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল ও পরম করুণাময়। (সূরা বাক্বারা– ৩৭)
আদম ও হাওয়া নিচের দু‘আ পড়ে তাওবা করলেন :
قَالَا رَبَّنَا ظَلَمْنَاۤ اَنْفُسَنَا وَاِنْ لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُوْنَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
তারা বলল, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছি, যদি তুমি আমাদেরকে ক্ষমা না কর এবং দয়া না কর, তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব। (সূরা আ‘রাফু ২৩)
আল্লাহ তাওবা কবুল করলেন :
ثُمَّ اجْتَبَاهُ رَبُّهٗ فَتَابَ عَلَيْهِ وَهَدٰى
এরপর তার প্রতিপালক তাকে মনোনীত করলেন, অতঃপর তার তাওবা কবুল করলেন এবং তাকে পথনির্দেশ করলেন। (সূরা ত্বা–হা– ১২২)
وَقُلْنَا يَاۤ اٰدَمُ اسْكُنْ اَنْتَ وَزَوْجُكَ الْجَنَّةَ وَكُلَا مِنْهَا رَغَدًا حَيْثُ شِئْتُمَا
আমি বললাম, হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করো এবং তা হতে যা ইচ্ছা স্বাচ্ছন্দে আহার করো। (সূরা বাক্বারা– ৩৫)
وَيَاۤ اَدَمُ اسْكُنْ اَنْتَ وَزَوْجُكَ الْجَنَّةَ فَكُلَا مِنْ حَيْثُ شِئْتُمَا
হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করো এবং সেখান থেকে যা ইচ্ছে খাও। (সূরা আ‘রাফ- ১৯)
ব্যাখ্যা : পৃথিবীতে খলীফা নিযুক্ত করে পাঠানোর আগে মানসিক প্রবণতা যাচাই করার উদ্দেশ্যে আদম ও হাওয়া (আঃ) কে পরীক্ষা করার জন্য জান্নাতে রাখা হয়। আসলে জান্নাতকে পরীক্ষাগৃহ করার উদ্দেশ্য ছিল মানুষকে এ কথা বুঝিয়ে দেয়া যে, মর্যাদার প্রেক্ষিতে তোমাদের জন্য জান্নাতই উপযুক্ত স্থান। কিন্তু শয়তানের প্রলোভনে পড়ে যদি তোমরা আল্লাহর নাফরমানির পথে এগিয়ে যেতে থাক, তাহলে যেভাবে শুরুতে তোমরা এ থেকে বঞ্চিত হয়েছিলে তেমনিভাবে শেষেও বঞ্চিত হবে। তোমাদের সেই হারানো আবাসস্থলটিকে পুনরুদ্ধার করতে হলে অবশ্যই তোমাদের সেই শত্রুর মুকাবিলা করতে হবে, যে তোমাদেরকে আল্লাহর হুকুম মেনে চলার পথ থেকে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।
জান্নাতের গুণাগুণ বলে দিলেন :
اِنَّ لَكَ اَ لَّا تَجُوْعَ فِيْهَا وَلَا تَعْرٰى ‐ وَاَنَّكَ لَا تَظْمَاُ فِيْهَا وَلَا تَضْحٰى
তোমার জন্য এটাই রইল যে, তুমি জান্নাতে ক্ষুধার্ত হবে না এবং নগ্নও হবে না। সেখানে তুমি পিপাসার্ত হবে না এবং রৌদ্রের কষ্টও অনুভব করবে না। (সূরা ত্বা–হা– ১১৮, ১১৯)
তবে একটি গাছের নিকট যেতে নিষেধ করলেন :
وَلَا تَقْرَبَا هٰذِهِ الشَّجَرَةَ فَتَكُوْنَا مِنَ الظَّالِمِيْنَ
কিন্তু ঐ বৃক্ষের নিকটবর্তী হয়ো না, তাহলে তোমরা অত্যাচারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (সূরা বাক্বারা– ৩৫)
শয়তান সম্পর্কেও সতর্ক করে দিলেন :
فَقُلْنَا يَاۤ اٰدَمُ اِنَّ هٰذَا عَدُوٌّ لَّكَ وَلِزَوْجِكَ فَلَا يُخْرِجَنَّكُمَا مِنَ الْجَنَّةِ فَتَشْقٰى
অতঃপর আমি বললাম, হে আদম! নিশ্চয় এ তোমার ও তোমার স্ত্রীর শত্রু। সুতরাং সে যেন কিছুতেই তোমাদেরকে জান্নাত হতে বের করে না দেয়, নতুবা তোমরা খুবই দুঃখ-কষ্টে পতিত হবে। (সূরা ত্বা–হা– ১১৭)
ব্যাখ্যা : মানুষের শত্রু শয়তান এবং শয়তানের শত্রু মানুষ। ‘‘শয়তান মানুষের শত্রু’’- এ কথা সুস্পষ্ট। কারণ সে মানুষকে আল্লাহর হুকুম পালনের পথ থেকে সরিয়ে রেখে ধ্বংসের পথে পরিচালিত করে। কিন্তু ‘‘শয়তানের শত্রু মানুষ’’- এ কথার অর্থ হলো, আসলে শয়তানের প্রতি শত্রুতার মনোভাব পোষণ করাই মানবতার দাবী। কিন্তু কুপ্রবৃত্তির কামনা-বাসনার সামনে শয়তান যেসব প্রলোভন এনে উপস্থিত করে মানুষ সেগুলো দ্বারা প্রতারিত হয়ে তাকে নিজের বন্ধু ভেবে বসে।
শয়তান আদম ও হাওয়াকে কুমন্ত্রণা দিল :
فَوَسْوَسَ اِلَيْهِ الشَّيْطَانُ قَالَ يَاۤ اٰدَمُ هَلْ اَدُلُّكَ عَلٰى شَجَرَةِ الْخُلْدِ وَمُلْكٍ لَّا يَبْلٰى ‐ فَاَكَلَا مِنْهَا فَبَدَتْ لَهُمَا سَوْاٰتُهُمَا وَطَفِقَا يَخْصِفَانِ عَلَيْهِمَا مِنْ وَّرَقِ الْجَنَّةِ وَعَصٰۤى اٰدَمُ رَبَّهٗ فَغَوٰى
অতঃপর শয়তান তাকে কুমন্ত্রণা দিল। সে বলল, হে আদম! আমি কি তোমাকে বলে দেব অনন্ত জীবন দানকারী বৃক্ষের কথা ও এমন রাজত্বের কথা, যার কখনো পতন হবে না? অতঃপর তারা উভয়ে সেটা ভক্ষণ করল; (ফলে) সাথে সাথে তাদের লজ্জাস্থান তাদের নিকট প্রকাশ হয়ে গেল এবং তারা জান্নাতের পাতা দ্বারা নিজেদেরকে আবৃত করতে লাগল। আদম তার প্রতিপালকের হুকুম অমান্য করল, ফলে সে পথভ্রষ্ট হয়ে গেল। (সূরা ত্বা–হা– ১২০, ১২১)
وَقَاسَمَهُمَاۤ اِنِّيْ لَكُمَا لَمِنَ النَّاصِحِيْنَ ‐ فَدَلَّاهُمَا بِغُرُوْرٍ فَلَمَّا ذَاقَا الشَّجَرَةَ بَدَتْ لَهُمَا سَوْاٰتُهُمَا وَطَفِقَا يَخْصِفَانِ عَلَيْهِمَا مِنْ وَّرَقِ الْجَنَّةِ
সে (শয়তান) তাদের উভয়ের নিকট শপথ করে বলল, আমি তো তোমাদের কল্যাণকামীদের একজন। এভাবে সে তাদেরকে তার প্রতারণার জালে আটকে ফেলল। তারপর যখন তারা সে বৃক্ষের ফলের স্বাদ গ্রহণ করল, তখন তাদের লজ্জাস্থান তাদের নিকট প্রকাশ হয়ে পড়ল এবং তারা নিজেদেরকে জান্নাতের পাতা দ্বারা আবৃত করতে লাগল। (সূরা আ‘রাফু ২১)
আল্লাহর হুকুম আর মানা হলো না :
وَلَقَدْ عَهِدْنَاۤ اِلٰۤى اٰدَمَ مِنْ قَبْلُ فَنَسِيَ وَلَمْ نَجِدْ لَهٗ عَزْمًا
আমি তো ইতোপূর্বেই আদমের প্রতি নির্দেশ দান করেছিলাম, কিন্তু সে তা ভুলে গিয়েছিল; আমি তার সংকল্পে দৃঢ়তা পাইনি। (সূরা ত্বা–হা- ১১৫)
فَاَكَلَا مِنْهَا فَبَدَتْ لَهُمَا سَوْاٰتُهُمَا وَطَفِقَا يَخْصِفَانِ عَلَيْهِمَا مِنْ وَّرَقِ الْجَنَّةِؗ وَعَصٰۤى اٰدَمُ رَبَّهٗ فَغَوٰى
অতঃপর তারা উভয়ে সেটা হতে ভক্ষণ করল। তখন তাদের লজ্জাস্থান তাদের নিকট প্রকাশ হয়ে পড়ল এবং তারা জান্নাতের (গাছের) পাতা দ্বারা নিজেদেরকে আবৃত করতে লাগল। আদম তার প্রতিপালকের হুকুম অমান্য করল, ফলে সে ভুলের মধ্যে পতিত হলো। (সূরা ত্বা–হা- ১২১)
ব্যাখ্যা : এ নির্দেশ অমান্য করা অহংকারের ভিত্তিতে ছিল না বরং গাফলতি এবং ইচ্ছার দুর্বলতার কারণে ছিল। তিনি এ ধরনের সংকল্পের ভিত্তিতে আল্লাহর হুকুম অমান্য করেননি যে, আমি আল্লাহর পরোয়া করতে যাব কেন? বরং তিনি আল্লাহর হুকুম মনে রাখার চেষ্টা করেননি। আল্লাহ তাকে কী বুঝিয়ে ছিলেন, তা তিনি ভুলে গিয়েছিলেন। তার ইচ্ছাশক্তি খুব বেশি মজবুত ছিল না। ফলে শয়তান যখন তাকে প্ররোচিত করতে এলো তখন তিনি আল্লাহর সকর্তবাণী স্মরণ করতে পারেননি এবং শয়তানের প্রদত্ত লালসার মুকাবিলা করতে সক্ষম হননি। কিন্তু আল্লাহ তাকে বহিষ্কার করেননি। আনুগত্যের প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে যেখানে তিনি পড়ে গিয়েছিলেন, সেখান থেকে উঠিয়ে তাকে আবার নিজের কাছে ডেকে নিলেন এবং নিজের খেদমতের জন্য বাছাই করলেন।
আল্লাহ আদম ও হাওয়াকে সতর্ক করলেন :
وَنَادَاهُمَا رَبُّهُمَاۤ اَلَمْ اَنْهَكُمَا عَنْ تِلْكُمَا الشَّجَرَةِ وَاَقُلْ لَّكُمَاۤ اِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمَا عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ
তখন তাদের প্রতিপালক তাদেরকে সম্বোধন করে বললেন, আমি কি তোমাদেরকে এ বৃক্ষের নিকটবর্তী হতে বারণ করিনি এবং আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, নিশ্চয় শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু? (সূরা আ‘রাফু ২২)
আদম (আঃ) তাওবার দু‘আ শিখলেন :
فَتَلَقّٰۤى اٰدَمُ مِنْ رَّبِّهٖ كَلِمَاتٍ فَتَابَ عَلَيْهِؕ اِنَّهٗ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ
আদম তাঁর রবের পক্ষ থেকে কিছু বাক্য শিক্ষা করল (যার দ্বারা সে তাওবা করল), অতঃপর আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করলেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল ও পরম করুণাময়। (সূরা বাক্বারা– ৩৭)
আদম ও হাওয়া নিচের দু‘আ পড়ে তাওবা করলেন :
قَالَا رَبَّنَا ظَلَمْنَاۤ اَنْفُسَنَا وَاِنْ لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُوْنَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
তারা বলল, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছি, যদি তুমি আমাদেরকে ক্ষমা না কর এবং দয়া না কর, তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব। (সূরা আ‘রাফু ২৩)
আল্লাহ তাওবা কবুল করলেন :
ثُمَّ اجْتَبَاهُ رَبُّهٗ فَتَابَ عَلَيْهِ وَهَدٰى
এরপর তার প্রতিপালক তাকে মনোনীত করলেন, অতঃপর তার তাওবা কবুল করলেন এবং তাকে পথনির্দেশ করলেন। (সূরা ত্বা–হা– ১২২)
আল্লাহ সবাইকে পৃথিবীতে নামিয়ে দিলেন :
قَالَ اهْبِطَا مِنْهَا جَمِيْعًا ۢبَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ
তিনি বললেন, তোমরা উভয়ে একসঙ্গে জানণাত হতে নেমে যাও। তোমরা পরস্পর পরস্পরের শত্রু। (সূরা ত্বা–হা– ১২৩)
পৃথিবীতে জীবন যাপনের ব্যবস্থা করে দিলেন :
قَالَ اهْبِطُوْا بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّۚ وَلَكُمْ فِى الْاَرْضِ مُسْتَقَرٌّ وَّمَتَاعٌ اِلٰى حِيْنٍ
তিনি বললেন, তোমরা নেমে যাও, তোমরা একে অন্যের শত্রু। আর পৃথিবীতে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তোমাদের বসবাস ও জীবিকা রইল। (সূরা আ‘রাফু ২৪)
জীবন, মরণ ও কবর পৃথিবীতেই হবে :
قَالَ فِيْهَا تَحْيَوْنَ وَفِيْهَا تَمُوْتُوْنَ وَمِنْهَا تُخْرَجُوْنَ
তিনি বললেন, সেখানেই তোমরা জীবন যাপন করবে, সেখানেই তোমাদের মৃত্যু হবে এবং সেখান থেকেই তোমাদেরকে আবার বের করা হবে। (সূরা আ‘রাফু ২৫)
এখান থেকেই আল্লাহ আবার সবাইকে উঠাবেন :
مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ وَفِيْهَا نُعِيْدُكُمْ وَمِنْهَا نُخْرِجُكُمْ تَارَةً اُخْرٰى
আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি মাটি হতে। অতঃপর তাতেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে দেব এবং তোমাদেরকে সেখান থেকেই পুনর্বার বের করে আনব। (সূরা ত্বা–হা– ৫৫)
আল্লাহ শয়তানকেও জান্নাত থেকে বের করে দিলেন :
قَالَ فَاخْرُجْ مِنْهَا فَاِنَّكَ رَجِيْمٌ
তিনি বললেন, এখান হতে বের হয়ে যাও; নিশ্চয় তুমি অভিশপ্ত। (সূরা হিজর– ৩৪)
শয়তানের উপর অভিশাপ দিলেন :
وَاِنَّ عَلَيْكَ اللَّعْنَةَ اِلٰى يَوْمِ الدِّيْنِ
আর কর্মফল দিবস পর্যন্ত অবশ্যই তোমার প্রতি রইল অভিশাপ। (সূরা হিজর– ৩৫)
وَاِنَّ عَلَيْكَ لَعْنَتِيْۤ اِلٰى يَوْمِ الدِّيْنِ
কিয়ামত দিবস পর্যন্ত তোমার প্রতি আমার অভিশাপ রইল। (সূরা সোয়াদু ৭৮)
সে আল্লাহর কাছে সুযোগ চাইল :
قَالَ رَبِّ فَاَنْظِرْنِۤيْ اِلٰى يَوْمِ يُبْعَثُوْنَ
সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে কিয়ামত দিবস পর্যন্ত অবকাশ দিন। (সূরা সোয়াদ- ৭৯)
আল্লাহ তাকে কিয়ামত পর্যন্ত সুযোগ দিলেন :
قَالَ فَاِنَّكَ مِنَ الْمُنْظَرِيْنَ ‐ اِلٰى يَوْمِ الْوَقْتِ الْمَعْلُوْمِ
আল্লাহ বললেন, যাদেরকে অবকাশ দেয়া হয়েছে তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হলে, নির্ধারিত সময় উপস্থিত হওয়ার দিন পর্যন্ত। (সূরা হিজর–৩৭, ৩৮; সূরা সোয়াদু ৮০, ৮১)
আদম (আঃ) ছিলেন আল্লাহর নির্বাচিত বান্দা :
اِنَّ اللهَ اصْطَفٰۤى اٰدَمَ وَنُوْحًا وَّ اٰلَ اِبْرَاهِيْمَ وَاٰلَ عِمْرَانَ عَلَى الْعَالَمِيْنَ
নিশ্চয় আল্লাহ আদম, নূহ, ইবরাহীমের বংশধর এবং ইমরানের বংশধরকে বিশ্ববাসীর জন্য মনোনীত করেছেন। (সূরা আলে ইমরানু ৩৩)
আল্লাহ আদম (আঃ) এর সন্তানদের থেকে তাওহীদের অঙ্গীকার নিয়েছেন :
وَاِذْ اَخَذَ رَبُّكَ مِنْ ۢبَنِيْۤ اٰدَمَ مِنْ ظُهُوْرِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَاَشْهَدَهُمْ عَلٰۤى اَنْفُسِهِمْ اَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ قَالُوْا بَلٰى شَهِدْنَاۤ اَنْ تَقُوْلُوْا يَوْمَ الْقِيَامَةِ اِنَّا كُنَّا عَنْ هٰذَا غَافِلِيْنَ ‐ اَوْ تَقُوْلُوْاۤ اِنَّمَاۤ اَشْرَكَ اٰبَآؤُنَا مِنْ قَبْلُ وَكُنَّا ذُرِّيَّةً مِّنْ ۢبَعْدِهِمْ اَفَتُهْلِكُنَا بِمَا فَعَلَ الْمُبْطِلُوْنَ ‐ وَكَذٰلِكَ نُفَصِّلُ الْاٰيَاتِ وَلَعَلَّهُمْ يَرْجِعُوْنَ
স্মরণ করো, যখন তোমার প্রতিপালক আদম সন্তানের পৃষ্ঠদেশ হতে তার বংশধরকে বের করেন এবং তাদের নিজেদের সম্বন্ধে স্বীকারোক্তি গ্রহণ করেন এবং বলেন, আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই? তারা বললেন, হ্যাঁ! অবশ্যই আমরা সাক্ষী রইলাম। এটা এজন্য যে, তোমরা যেন কিয়ামতের দিন না বলতে পার, আমরা তো এ বিষয়ে গাফিল ছিলাম। কিংবা তোমরা যেন না বলো, ইতোপূর্বে আমাদের পূর্বপুরুষরাই তো শিরক করেছে। আর আমরা তো তাদের পরবর্তী বংশধর; তবে কি পথভ্রষ্টদের কৃতকর্মের জন্য তুমি আমাদেরকে ধ্বংস করবে? এভাবে আমি নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করি, যাতে তারা প্রত্যাবর্তন করে। (সূরা আ‘রাফ, ১৭২–১৭৪)
আদম ও হাওয়াকে পৃথিবীতে নামিয়ে দেয়ার সময় আল্লাহর উপদেশ :
قُلْنَا اهْبِطُوْا مِنْهَا جَمِيْعًاۚ فَاِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ مِّنِّيْ هُدًى فَمَنْ تَبِعَ هُدَايَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ
আমি বললাম, তোমরা সবাই এখান থেকে (জান্নাত থেকে) নিচে নেমে যাও। পরে আমার পক্ষ হতে তোমাদের নিকট হেদায়াত উপস্থিত হলে যারা আমার হেদায়াতের অনুসরণ করবে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না। (সূরা বাক্বারা– ৩৮)
এ উপদেশ না মানলে পরিণতি খুবই খারাপ হবে :
قَالَ اهْبِطَا مِنْهَا جَمِيْعًا ۢبَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّۚ فَاِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ مِّنِّيْ هُدًى فَمَنِ اتَّبَعَ هُدَايَ فَلَا يَضِلُّ وَلَا يَشْقٰى ‐ وَمَنْ اَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِيْ فَاِنَّ لَهٗ مَعِيْشَةً ضَنْكًا وَّنَحْشُرُهٗ يَوْمَ الْقِيَامَةِ اَعْمٰى ‐ قَالَ رَبِّ لِمَ حَشَرْتَنِيْۤ اَعْمٰى وَقَدْ كُنْتُ بَصِيْرًا ‐ قَالَ كَذٰلِكَ اَتَتْكَ اٰيَاتُنَا فَنَسِيْتَهَا وَكَذٰلِكَ الْيَوْمَ تُنْسٰى ‐ وَكَذٰلِكَ نَجْزِيْ مَنْ اَسْرَفَ وَلَمْ يُؤْمِنْ ۢبِاٰيَاتِ رَبِّهٖؕ وَلَعَذَابُ الْاٰخِرَةِ اَشَدُّ وَاَبْقٰى
তিনি বললেন, তোমরা উভয়ে একসঙ্গে জান্নাত হতে নেমে যাও। তোমরা পরস্পর পরস্পরের শত্রু। পরে আমার পক্ষ হতে তোমাদের নিকট সৎপথের নির্দেশ আসলে যে আমার পথ অনুসরণ করবে, সে বিপথগামী হবে না ও দুঃখ–কষ্টও পাবে না। আর যে আমার স্মরণ হতে বিমুখ থাকবে, তার জীবন যাপন হবে সংকুচিত এবং আমি তাকে কিয়ামতের দিন উত্থিত করব অন্ধ অবস্থায়। সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! কেন আমাকে অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করলে? আমি তো চাক্ষুষ্মান ছিলাম। তিনি বলবেন, এভাবেই তোমার নিকট আমার নিদর্শনাবলি এসেছিল, কিন্তু তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে। সুতরাং সেভাবে আজও তোমাকে ভুলে যাওয়া হয়েছে। এভাবেই আমি প্রতিফল দেই তাকে, যে বাড়াবাড়ি করে ও তার প্রতিপালকের নিদর্শনাবলির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না। আর পরকালের শাস্তি তো খুবই কঠিনতর ও অধিক স্থায়ী। (সূরা ত্বা–হা, ১২৩–১২৭)
ব্যাখ্যা : এ কাহিনীর মাধ্যমে সুস্পষ্ট করে তুলে ধরা হয়েছে যে, মানুষের একমাত্র মুক্তির পথ হচ্ছে আল্লাহর আনুগত্য করা। এ পথ পরিহার করে যে পথেই চলবে, তা হবে শয়তানের পথ। আর শয়তানের সকল পথই চলে গেছে জাহান্নামের দিকে। এখানে আরো বুঝানো হয়েছে যে, মানুষ নিজেরাই নিজেদের ভুলের জন্য দায়ী। এ ক্ষেত্রে শয়তানের ভূমিকা এ থেকে বেশি কিছু নয় যে, সে দুনিয়ার বাহ্যিক জীবনোপকরণের সাহায্যে ধোঁকা দিয়ে মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার চেষ্টা করে। তার ধোঁকায় পড়ে যাওয়া মানুষের নিজেদের ভুল। এর কোন দায়-দায়িত্ব অন্য কারো উপর বর্তাবে না।
قَالَ اهْبِطَا مِنْهَا جَمِيْعًا ۢبَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ
তিনি বললেন, তোমরা উভয়ে একসঙ্গে জানণাত হতে নেমে যাও। তোমরা পরস্পর পরস্পরের শত্রু। (সূরা ত্বা–হা– ১২৩)
পৃথিবীতে জীবন যাপনের ব্যবস্থা করে দিলেন :
قَالَ اهْبِطُوْا بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّۚ وَلَكُمْ فِى الْاَرْضِ مُسْتَقَرٌّ وَّمَتَاعٌ اِلٰى حِيْنٍ
তিনি বললেন, তোমরা নেমে যাও, তোমরা একে অন্যের শত্রু। আর পৃথিবীতে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তোমাদের বসবাস ও জীবিকা রইল। (সূরা আ‘রাফু ২৪)
জীবন, মরণ ও কবর পৃথিবীতেই হবে :
قَالَ فِيْهَا تَحْيَوْنَ وَفِيْهَا تَمُوْتُوْنَ وَمِنْهَا تُخْرَجُوْنَ
তিনি বললেন, সেখানেই তোমরা জীবন যাপন করবে, সেখানেই তোমাদের মৃত্যু হবে এবং সেখান থেকেই তোমাদেরকে আবার বের করা হবে। (সূরা আ‘রাফু ২৫)
এখান থেকেই আল্লাহ আবার সবাইকে উঠাবেন :
مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ وَفِيْهَا نُعِيْدُكُمْ وَمِنْهَا نُخْرِجُكُمْ تَارَةً اُخْرٰى
আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি মাটি হতে। অতঃপর তাতেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে দেব এবং তোমাদেরকে সেখান থেকেই পুনর্বার বের করে আনব। (সূরা ত্বা–হা– ৫৫)
আল্লাহ শয়তানকেও জান্নাত থেকে বের করে দিলেন :
قَالَ فَاخْرُجْ مِنْهَا فَاِنَّكَ رَجِيْمٌ
তিনি বললেন, এখান হতে বের হয়ে যাও; নিশ্চয় তুমি অভিশপ্ত। (সূরা হিজর– ৩৪)
শয়তানের উপর অভিশাপ দিলেন :
وَاِنَّ عَلَيْكَ اللَّعْنَةَ اِلٰى يَوْمِ الدِّيْنِ
আর কর্মফল দিবস পর্যন্ত অবশ্যই তোমার প্রতি রইল অভিশাপ। (সূরা হিজর– ৩৫)
وَاِنَّ عَلَيْكَ لَعْنَتِيْۤ اِلٰى يَوْمِ الدِّيْنِ
কিয়ামত দিবস পর্যন্ত তোমার প্রতি আমার অভিশাপ রইল। (সূরা সোয়াদু ৭৮)
সে আল্লাহর কাছে সুযোগ চাইল :
قَالَ رَبِّ فَاَنْظِرْنِۤيْ اِلٰى يَوْمِ يُبْعَثُوْنَ
সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে কিয়ামত দিবস পর্যন্ত অবকাশ দিন। (সূরা সোয়াদ- ৭৯)
আল্লাহ তাকে কিয়ামত পর্যন্ত সুযোগ দিলেন :
قَالَ فَاِنَّكَ مِنَ الْمُنْظَرِيْنَ ‐ اِلٰى يَوْمِ الْوَقْتِ الْمَعْلُوْمِ
আল্লাহ বললেন, যাদেরকে অবকাশ দেয়া হয়েছে তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হলে, নির্ধারিত সময় উপস্থিত হওয়ার দিন পর্যন্ত। (সূরা হিজর–৩৭, ৩৮; সূরা সোয়াদু ৮০, ৮১)
আদম (আঃ) ছিলেন আল্লাহর নির্বাচিত বান্দা :
اِنَّ اللهَ اصْطَفٰۤى اٰدَمَ وَنُوْحًا وَّ اٰلَ اِبْرَاهِيْمَ وَاٰلَ عِمْرَانَ عَلَى الْعَالَمِيْنَ
নিশ্চয় আল্লাহ আদম, নূহ, ইবরাহীমের বংশধর এবং ইমরানের বংশধরকে বিশ্ববাসীর জন্য মনোনীত করেছেন। (সূরা আলে ইমরানু ৩৩)
আল্লাহ আদম (আঃ) এর সন্তানদের থেকে তাওহীদের অঙ্গীকার নিয়েছেন :
وَاِذْ اَخَذَ رَبُّكَ مِنْ ۢبَنِيْۤ اٰدَمَ مِنْ ظُهُوْرِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَاَشْهَدَهُمْ عَلٰۤى اَنْفُسِهِمْ اَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ قَالُوْا بَلٰى شَهِدْنَاۤ اَنْ تَقُوْلُوْا يَوْمَ الْقِيَامَةِ اِنَّا كُنَّا عَنْ هٰذَا غَافِلِيْنَ ‐ اَوْ تَقُوْلُوْاۤ اِنَّمَاۤ اَشْرَكَ اٰبَآؤُنَا مِنْ قَبْلُ وَكُنَّا ذُرِّيَّةً مِّنْ ۢبَعْدِهِمْ اَفَتُهْلِكُنَا بِمَا فَعَلَ الْمُبْطِلُوْنَ ‐ وَكَذٰلِكَ نُفَصِّلُ الْاٰيَاتِ وَلَعَلَّهُمْ يَرْجِعُوْنَ
স্মরণ করো, যখন তোমার প্রতিপালক আদম সন্তানের পৃষ্ঠদেশ হতে তার বংশধরকে বের করেন এবং তাদের নিজেদের সম্বন্ধে স্বীকারোক্তি গ্রহণ করেন এবং বলেন, আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই? তারা বললেন, হ্যাঁ! অবশ্যই আমরা সাক্ষী রইলাম। এটা এজন্য যে, তোমরা যেন কিয়ামতের দিন না বলতে পার, আমরা তো এ বিষয়ে গাফিল ছিলাম। কিংবা তোমরা যেন না বলো, ইতোপূর্বে আমাদের পূর্বপুরুষরাই তো শিরক করেছে। আর আমরা তো তাদের পরবর্তী বংশধর; তবে কি পথভ্রষ্টদের কৃতকর্মের জন্য তুমি আমাদেরকে ধ্বংস করবে? এভাবে আমি নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করি, যাতে তারা প্রত্যাবর্তন করে। (সূরা আ‘রাফ, ১৭২–১৭৪)
আদম ও হাওয়াকে পৃথিবীতে নামিয়ে দেয়ার সময় আল্লাহর উপদেশ :
قُلْنَا اهْبِطُوْا مِنْهَا جَمِيْعًاۚ فَاِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ مِّنِّيْ هُدًى فَمَنْ تَبِعَ هُدَايَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ
আমি বললাম, তোমরা সবাই এখান থেকে (জান্নাত থেকে) নিচে নেমে যাও। পরে আমার পক্ষ হতে তোমাদের নিকট হেদায়াত উপস্থিত হলে যারা আমার হেদায়াতের অনুসরণ করবে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না। (সূরা বাক্বারা– ৩৮)
এ উপদেশ না মানলে পরিণতি খুবই খারাপ হবে :
قَالَ اهْبِطَا مِنْهَا جَمِيْعًا ۢبَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّۚ فَاِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ مِّنِّيْ هُدًى فَمَنِ اتَّبَعَ هُدَايَ فَلَا يَضِلُّ وَلَا يَشْقٰى ‐ وَمَنْ اَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِيْ فَاِنَّ لَهٗ مَعِيْشَةً ضَنْكًا وَّنَحْشُرُهٗ يَوْمَ الْقِيَامَةِ اَعْمٰى ‐ قَالَ رَبِّ لِمَ حَشَرْتَنِيْۤ اَعْمٰى وَقَدْ كُنْتُ بَصِيْرًا ‐ قَالَ كَذٰلِكَ اَتَتْكَ اٰيَاتُنَا فَنَسِيْتَهَا وَكَذٰلِكَ الْيَوْمَ تُنْسٰى ‐ وَكَذٰلِكَ نَجْزِيْ مَنْ اَسْرَفَ وَلَمْ يُؤْمِنْ ۢبِاٰيَاتِ رَبِّهٖؕ وَلَعَذَابُ الْاٰخِرَةِ اَشَدُّ وَاَبْقٰى
তিনি বললেন, তোমরা উভয়ে একসঙ্গে জান্নাত হতে নেমে যাও। তোমরা পরস্পর পরস্পরের শত্রু। পরে আমার পক্ষ হতে তোমাদের নিকট সৎপথের নির্দেশ আসলে যে আমার পথ অনুসরণ করবে, সে বিপথগামী হবে না ও দুঃখ–কষ্টও পাবে না। আর যে আমার স্মরণ হতে বিমুখ থাকবে, তার জীবন যাপন হবে সংকুচিত এবং আমি তাকে কিয়ামতের দিন উত্থিত করব অন্ধ অবস্থায়। সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! কেন আমাকে অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করলে? আমি তো চাক্ষুষ্মান ছিলাম। তিনি বলবেন, এভাবেই তোমার নিকট আমার নিদর্শনাবলি এসেছিল, কিন্তু তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে। সুতরাং সেভাবে আজও তোমাকে ভুলে যাওয়া হয়েছে। এভাবেই আমি প্রতিফল দেই তাকে, যে বাড়াবাড়ি করে ও তার প্রতিপালকের নিদর্শনাবলির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না। আর পরকালের শাস্তি তো খুবই কঠিনতর ও অধিক স্থায়ী। (সূরা ত্বা–হা, ১২৩–১২৭)
ব্যাখ্যা : এ কাহিনীর মাধ্যমে সুস্পষ্ট করে তুলে ধরা হয়েছে যে, মানুষের একমাত্র মুক্তির পথ হচ্ছে আল্লাহর আনুগত্য করা। এ পথ পরিহার করে যে পথেই চলবে, তা হবে শয়তানের পথ। আর শয়তানের সকল পথই চলে গেছে জাহান্নামের দিকে। এখানে আরো বুঝানো হয়েছে যে, মানুষ নিজেরাই নিজেদের ভুলের জন্য দায়ী। এ ক্ষেত্রে শয়তানের ভূমিকা এ থেকে বেশি কিছু নয় যে, সে দুনিয়ার বাহ্যিক জীবনোপকরণের সাহায্যে ধোঁকা দিয়ে মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার চেষ্টা করে। তার ধোঁকায় পড়ে যাওয়া মানুষের নিজেদের ভুল। এর কোন দায়-দায়িত্ব অন্য কারো উপর বর্তাবে না।
নূহ (আঃ) কে আল্লাহ তা‘আলা ইরাকের মূছেল নগরীতে রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছিলেন। তিনি সাড়ে নয়শ’ বছর বয়স পেয়েছিলেন। পঞ্চাশ বছর বয়সে নুওয়াত পান এবং অবশিষ্ট নয়শত বছর দাওয়াতী কার্যক্রম চালিয়ে যান। তাঁর এই দীর্ঘ বয়সপ্রাপ্ত হওয়াটা ছিল আল্লাহর পক্ষ হতে একটি মু‘জিযা। কেননা আদম (আঃ) এর পর থেকে অন্য কেউ এত দীর্ঘ বয়সপ্রাপ্ত হয়নি। কিন্তু তাঁর দাওয়াতে খুব অল্প সংখ্যক লোকই সাড়া দিয়েছিল। এ সুদীর্ঘ দাওয়াতী জীবনে তিনি যেমন কখনো চেষ্টায় কোন ত্রুটি করেননি, তেমনি কখনো নিরাশও হননি। সম্প্রদায়ের পক্ষ হতে নানাবিধ নির্যাতনের সম্মুখীন হয়েও তিনি ধৈর্যধারণ করতেন। নূহ (আঃ) এর চারজন পুত্র ছিল। যাদের নাম ছিল- সাম, হাম, ইয়াফিছ ও ইয়াম অথবা কেনান। এদের মধ্যে প্রথম তিন জনই ঈমান এনেছিলেন, কিন্তু শেষোক্ত জন ঈমান আনতে অস্বীকার করেছিল। যার কারণে নূহ (আঃ) এর যুগে সংগঠিত মহাপ্লাবনের সময় অন্যান্য কাফিরদের সাথে সেও ভেসে যায়। যেহেতু এ প্লাবনের পর বিশ্বে আর কোন মানুষ জীবিত ছিল না এবং পরবর্তী বংশধারা নূহ (আঃ) থেকেই শুরু হয়েছিল, তাই তিনি দ্বিতীয় আদম অথবা মানবজাতির দ্বিতীয় পিতা হিসেবেও পরিচিত।
নূহ (আঃ) এর জাতি ছিল ফাসিক :
وَقَوْمَ نُوْحٍ مِّنْ قَبْلُؕ اِنَّهُمْ كَانُوْا قَوْمًا فَاسِقِيْنَ
ইতোপূর্বে নূহের সম্প্রদায়কে (ধ্বংস করেছিলাম), নিশ্চয় তারা ছিল ফাসিক সম্প্রদায়। (সূরা যারিয়াত– ৪৬)
তারা ছিল যালিম ও বিদ্রোহী :
وَقَوْمَ نُوْحٍ مِّنْ قَبْلُ اِنَّهُمْ كَانُوْا هُمْ اَظْلَمَ وَاَطْغٰى
আর এদের পূর্বে নূহের সম্প্রদায়কেও (ধ্বংস করেছিলাম)। কেননা তারা ছিল অতিশয় যালিম ও অবাধ্য।
(সূরা নাজম– ৫২)
তারা ছিল সত্যের ব্যাপারে অন্ধ :
اِنَّهُمْ كَانُوْا قَوْمًا عَمِيْنَ
তারা তো ছিল এক অন্ধ সম্প্রদায়। (সূরা আ‘রাফু ৬৪)
তারা ছিল খারাপ জাতি :
اِنَّهُمْ كَانُوْا قَوْمَ سَوْءٍ فَاَغْرَقْنَاهُمْ اَجْمَعِيْنَ
নিশ্চয় তারা ছিল এক মন্দ সম্প্রদায়। এজন্য তাদের সকলকেই আমি নিমজ্জিত করেছিলাম। (সূরা আম্বিয়া– ৭৭)
তারা নবীকে মিথ্যুক মনে করত :
فَقَالَ الْمَلَاُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنْ قَوْمِهٖ مَا نَرَاكَ اِلَّا بَشَرًا مِّثْلَنَا وَمَا نَرَاكَ اتَّبَعَكَ اِلَّا الَّذِيْنَ هُمْ اَرَاذِلُنَا بَادِيَ الرَّأْيِ وَمَا نَرٰى لَكُمْ عَلَيْنَا مِنْ فَضْلٍ ۢبَلْ نَظُنُّكُمْ كَاذِبِيْنَ
তার সম্প্রদায়ের প্রধান কাফিররা বলল, আমরা তো তোমাকে আমাদের মতো মানুষ ব্যতীত কিছু দেখছি না। আমরা তো দেখছি, তারাই তোমার অনুসরণ করছে, যারা আমাদের মধ্যে বাহ্যিক দৃষ্টিতেই অধম। তাছাড়া আমরা আমাদের উপর তোমাদের কোন শ্রেষ্ঠত্ব দেখছি না, বরং আমরা তোমাদেরকে মিথ্যাবাদী মনে করি। (সূরা হুদু ২৭)
তারা ছিল অজ্ঞ সম্প্রদায় :
وَلٰكِنِّيْۤ اَرَاكُمْ قَوْمًا تَجْهَلُوْنَ
আমি তো দেখছি তোমরা এক অজ্ঞ সম্প্রদায়। (সূরা হুদু ২৯)
তারা দাওয়াত শুনলে পলায়ন করত :
فَلَمْ يَزِدْهُمْ دُعَآئِىْۤ اِلَّا فِرَارًا
কিন্তু আমার আহবান তাদের দূরে সরে থাকার প্রবণতাকেই আরো বৃদ্ধি করত। (সূরা নূহ– ৬)
তারা কানে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিত :
وَاِنِّيْ كُلَّمَا دَعَوْتُهُمْ لِتَغْفِرَ لَهُمْ جَعَلُوْاۤ اَصَابِعَهُمْ فِۤيْ اٰذَانِهِمْ وَاسْتَغْشَوْا ثِيَابَهُمْ وَاَصَرُّوْا وَاسْتَكْبَرُوا اسْتِكْبَارًا
যখনই আমি তাদেরকে আহবান করি, যাতে আপনি তাদেরকে ক্ষমা করেন, তখনই তারা কানে আঙ্গুল দেয় এবং নিজেদেরকে বস্ত্রাবৃত করে ও জেদ করতে থাকে। আর তারা অতিশয় অহংকার প্রকাশ করে।
(সূরা নূহ– ৭)
তারা ষড়যন্ত্র করত :
وَمَكَرُوْا مَكْرًا كُبَّارًا
আর তারা ভয়ানক ষড়যন্ত্র করেছে। (সূরা নূহ– ২২)
তারা পাপের মধ্যে ডুবে থাকত :
مِمَّا خَطِيْٓئَاتِهِمْ اُغْرِقُوْا فَاُدْخِلُوْا نَارًا فَلَمْ يَجِدُوْا لَهُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ اَنْصَارًا
তাদের অপরাধের জন্য তাদেরকে নিমজ্জিত করা হয়েছে এবং পরে তাদেরকে প্রবেশ করানো হয়েছে জাহান্নামে। অতঃপর তারা আল্লাহর মুকাবিলায় সাহায্যকারী হিসেবে কাউকে পায়নি। (সূরা নূহ– ২৫)
তারা দেব–দেবীর পূজা ছাড়তে চাইত না :
وَقَالُوْا لَا تَذَرُنَّ اٰلِهَتَكُمْ وَلَا تَذَرُنَّ وَدًّا وَّلَا سُوَاعًا وَّلَا يَغُوْثَ وَيَعُوْقَ وَنَسْرًا
তারা (একে অপরকে) বলেছে, তোমরা কখনো তোমাদের উপাস্যগুলোকে এবং ওয়াদ, সুওয়াআ, ইয়াগুস, ইয়াউক ও নাসরকে পরিত্যাগ করো না। (সূরা নূহ– ২৩)
وَقَوْمَ نُوْحٍ مِّنْ قَبْلُؕ اِنَّهُمْ كَانُوْا قَوْمًا فَاسِقِيْنَ
ইতোপূর্বে নূহের সম্প্রদায়কে (ধ্বংস করেছিলাম), নিশ্চয় তারা ছিল ফাসিক সম্প্রদায়। (সূরা যারিয়াত– ৪৬)
তারা ছিল যালিম ও বিদ্রোহী :
وَقَوْمَ نُوْحٍ مِّنْ قَبْلُ اِنَّهُمْ كَانُوْا هُمْ اَظْلَمَ وَاَطْغٰى
আর এদের পূর্বে নূহের সম্প্রদায়কেও (ধ্বংস করেছিলাম)। কেননা তারা ছিল অতিশয় যালিম ও অবাধ্য।
(সূরা নাজম– ৫২)
তারা ছিল সত্যের ব্যাপারে অন্ধ :
اِنَّهُمْ كَانُوْا قَوْمًا عَمِيْنَ
তারা তো ছিল এক অন্ধ সম্প্রদায়। (সূরা আ‘রাফু ৬৪)
তারা ছিল খারাপ জাতি :
اِنَّهُمْ كَانُوْا قَوْمَ سَوْءٍ فَاَغْرَقْنَاهُمْ اَجْمَعِيْنَ
নিশ্চয় তারা ছিল এক মন্দ সম্প্রদায়। এজন্য তাদের সকলকেই আমি নিমজ্জিত করেছিলাম। (সূরা আম্বিয়া– ৭৭)
তারা নবীকে মিথ্যুক মনে করত :
فَقَالَ الْمَلَاُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنْ قَوْمِهٖ مَا نَرَاكَ اِلَّا بَشَرًا مِّثْلَنَا وَمَا نَرَاكَ اتَّبَعَكَ اِلَّا الَّذِيْنَ هُمْ اَرَاذِلُنَا بَادِيَ الرَّأْيِ وَمَا نَرٰى لَكُمْ عَلَيْنَا مِنْ فَضْلٍ ۢبَلْ نَظُنُّكُمْ كَاذِبِيْنَ
তার সম্প্রদায়ের প্রধান কাফিররা বলল, আমরা তো তোমাকে আমাদের মতো মানুষ ব্যতীত কিছু দেখছি না। আমরা তো দেখছি, তারাই তোমার অনুসরণ করছে, যারা আমাদের মধ্যে বাহ্যিক দৃষ্টিতেই অধম। তাছাড়া আমরা আমাদের উপর তোমাদের কোন শ্রেষ্ঠত্ব দেখছি না, বরং আমরা তোমাদেরকে মিথ্যাবাদী মনে করি। (সূরা হুদু ২৭)
তারা ছিল অজ্ঞ সম্প্রদায় :
وَلٰكِنِّيْۤ اَرَاكُمْ قَوْمًا تَجْهَلُوْنَ
আমি তো দেখছি তোমরা এক অজ্ঞ সম্প্রদায়। (সূরা হুদু ২৯)
তারা দাওয়াত শুনলে পলায়ন করত :
فَلَمْ يَزِدْهُمْ دُعَآئِىْۤ اِلَّا فِرَارًا
কিন্তু আমার আহবান তাদের দূরে সরে থাকার প্রবণতাকেই আরো বৃদ্ধি করত। (সূরা নূহ– ৬)
তারা কানে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিত :
وَاِنِّيْ كُلَّمَا دَعَوْتُهُمْ لِتَغْفِرَ لَهُمْ جَعَلُوْاۤ اَصَابِعَهُمْ فِۤيْ اٰذَانِهِمْ وَاسْتَغْشَوْا ثِيَابَهُمْ وَاَصَرُّوْا وَاسْتَكْبَرُوا اسْتِكْبَارًا
যখনই আমি তাদেরকে আহবান করি, যাতে আপনি তাদেরকে ক্ষমা করেন, তখনই তারা কানে আঙ্গুল দেয় এবং নিজেদেরকে বস্ত্রাবৃত করে ও জেদ করতে থাকে। আর তারা অতিশয় অহংকার প্রকাশ করে।
(সূরা নূহ– ৭)
তারা ষড়যন্ত্র করত :
وَمَكَرُوْا مَكْرًا كُبَّارًا
আর তারা ভয়ানক ষড়যন্ত্র করেছে। (সূরা নূহ– ২২)
তারা পাপের মধ্যে ডুবে থাকত :
مِمَّا خَطِيْٓئَاتِهِمْ اُغْرِقُوْا فَاُدْخِلُوْا نَارًا فَلَمْ يَجِدُوْا لَهُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ اَنْصَارًا
তাদের অপরাধের জন্য তাদেরকে নিমজ্জিত করা হয়েছে এবং পরে তাদেরকে প্রবেশ করানো হয়েছে জাহান্নামে। অতঃপর তারা আল্লাহর মুকাবিলায় সাহায্যকারী হিসেবে কাউকে পায়নি। (সূরা নূহ– ২৫)
তারা দেব–দেবীর পূজা ছাড়তে চাইত না :
وَقَالُوْا لَا تَذَرُنَّ اٰلِهَتَكُمْ وَلَا تَذَرُنَّ وَدًّا وَّلَا سُوَاعًا وَّلَا يَغُوْثَ وَيَعُوْقَ وَنَسْرًا
তারা (একে অপরকে) বলেছে, তোমরা কখনো তোমাদের উপাস্যগুলোকে এবং ওয়াদ, সুওয়াআ, ইয়াগুস, ইয়াউক ও নাসরকে পরিত্যাগ করো না। (সূরা নূহ– ২৩)
জাতিকে সতর্ক করার জন্য আল্লাহর নির্দেশ :
اِنَّاۤ اَرْسَلْنَا نُوْحًا اِلٰى قَوْمِهٖۤ اَنْ اَنْذِرْ قَوْمَكَ مِنْ قَبْلِ اَنْ يَّأْتِيَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
আমি নূহকে তাঁর জাতির কাছে প্রেরণ করেছিলাম (এ নির্দেশসহ) যে, তুমি তোমার সম্প্রদায়কে তাদের প্রতি আযাব আসার পূর্বে সতর্ক করো। (সূরা নূহ– ১)
নূহ (আঃ) জাতিকে সাবধান করলেন :
قَالَ يَا قَوْمِ اِنِّيْ لَكُمْ نَذِيْرٌ مُّبِيْنٌ
তিনি বলেছিলেন, হে আমার জাতি! নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য একজন স্পষ্ট সতর্ককারী। (সূরা নূহ– ২)
وَلَقَدْ اَرْسَلْنَا نُوْحًا اِلٰى قَوْمِهٖۤ اِنِّيْ لَكُمْ نَذِيْرٌ مُّبِيْنٌ
আমি তো নূহকে তার সম্প্রদায়ের নিকট পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, অবশ্যই আমি তোমাদের জন্য একজন প্রকাশ্য সতর্ককারী। (সূরা হুদু ২৫)
জাতিকে এক আল্লাহর ইবাদাত করার নির্দেশ দিলেন :
لَقَدْ اَرْسَلْنَا نُوْحًا اِلٰى قَوْمِهٖ فَقَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرُهٗؕ اِنِّۤيْ اَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيْمٍ
আমি নূহকে তার সম্প্রদায়ের নিকট প্রেরণ করেছিলাম। অতঃপর সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো, তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ্ নেই। আমি তোমাদের জন্য মহাদিনের শাস্তির আশঙ্কা করছি। (সূরা আ‘রাফু ৫৯)
আল্লাহকে ভয় করার নির্দেশ দিলেন :
فَاتَّقُوا اللهَ وَاَطِيْعُوْنِ
অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো। (সূরা শু‘আরা– ১০৮)
اَنِ اعْبُدُوا اللهَ وَاتَّقُوْهُ وَاَطِيْعُوْنِ
তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো ও তাঁকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো। (সূরা নূহ– ৩)
اِذْ قَالَ لَهُمْ اَخُوْهُمْ نُوْحٌ اَ لَا تَتَّقُوْنَ
যখন তাদের ভাই নূহ তাদেরকে বলল, তোমরা কি সাবধান হবে না? (সূরা শু‘আরা– ১০৬)
আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে বললেন :
فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوْا رَبَّكُمْ اِنَّهٗ كَانَ غَفَّارًا
অতঃপর আমি বলেছি, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করো, নিশ্চয় তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। (সূরা নূহ– ১০)
নূহ (আঃ) জাতির কাছে কোন বিনিময় চাইতেন না :
وَمَاۤ اَسْاَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ اَجْرٍؕ اِنْ اَجْرِيَ اِلَّا عَلٰى رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
আমি এর জন্য তোমাদের নিকট কোন প্রতিদান চাই না, আমার পুরস্কার তো জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকটই রয়েছে। (সূরা শু‘আরা– ১০৯)
فَاِنْ تَوَلَّيْتُمْ فَمَا سَاَلْتُكُمْ مِّنْ اَجْرٍؕ اِنْ اَجْرِيَ اِلَّا عَلَى اللهِ وَاُمِرْتُ اَنْ اَكُوْنَ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ
অতএব যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নিতে চাও তবে (জেনে রেখো) আমি তোমাদের নিকট কোন পারিশ্রমিক চাই না, আমার পারিশ্রমিক আল্লাহর নিকট; আমি তো কেবল আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হতেই আদিষ্ট হয়েছি। (সূরা ইউনুস– ৭২)
اِنَّاۤ اَرْسَلْنَا نُوْحًا اِلٰى قَوْمِهٖۤ اَنْ اَنْذِرْ قَوْمَكَ مِنْ قَبْلِ اَنْ يَّأْتِيَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
আমি নূহকে তাঁর জাতির কাছে প্রেরণ করেছিলাম (এ নির্দেশসহ) যে, তুমি তোমার সম্প্রদায়কে তাদের প্রতি আযাব আসার পূর্বে সতর্ক করো। (সূরা নূহ– ১)
নূহ (আঃ) জাতিকে সাবধান করলেন :
قَالَ يَا قَوْمِ اِنِّيْ لَكُمْ نَذِيْرٌ مُّبِيْنٌ
তিনি বলেছিলেন, হে আমার জাতি! নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য একজন স্পষ্ট সতর্ককারী। (সূরা নূহ– ২)
وَلَقَدْ اَرْسَلْنَا نُوْحًا اِلٰى قَوْمِهٖۤ اِنِّيْ لَكُمْ نَذِيْرٌ مُّبِيْنٌ
আমি তো নূহকে তার সম্প্রদায়ের নিকট পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, অবশ্যই আমি তোমাদের জন্য একজন প্রকাশ্য সতর্ককারী। (সূরা হুদু ২৫)
জাতিকে এক আল্লাহর ইবাদাত করার নির্দেশ দিলেন :
لَقَدْ اَرْسَلْنَا نُوْحًا اِلٰى قَوْمِهٖ فَقَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرُهٗؕ اِنِّۤيْ اَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيْمٍ
আমি নূহকে তার সম্প্রদায়ের নিকট প্রেরণ করেছিলাম। অতঃপর সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো, তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ্ নেই। আমি তোমাদের জন্য মহাদিনের শাস্তির আশঙ্কা করছি। (সূরা আ‘রাফু ৫৯)
আল্লাহকে ভয় করার নির্দেশ দিলেন :
فَاتَّقُوا اللهَ وَاَطِيْعُوْنِ
অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো। (সূরা শু‘আরা– ১০৮)
اَنِ اعْبُدُوا اللهَ وَاتَّقُوْهُ وَاَطِيْعُوْنِ
তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো ও তাঁকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো। (সূরা নূহ– ৩)
اِذْ قَالَ لَهُمْ اَخُوْهُمْ نُوْحٌ اَ لَا تَتَّقُوْنَ
যখন তাদের ভাই নূহ তাদেরকে বলল, তোমরা কি সাবধান হবে না? (সূরা শু‘আরা– ১০৬)
আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে বললেন :
فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوْا رَبَّكُمْ اِنَّهٗ كَانَ غَفَّارًا
অতঃপর আমি বলেছি, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করো, নিশ্চয় তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। (সূরা নূহ– ১০)
নূহ (আঃ) জাতির কাছে কোন বিনিময় চাইতেন না :
وَمَاۤ اَسْاَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ اَجْرٍؕ اِنْ اَجْرِيَ اِلَّا عَلٰى رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
আমি এর জন্য তোমাদের নিকট কোন প্রতিদান চাই না, আমার পুরস্কার তো জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকটই রয়েছে। (সূরা শু‘আরা– ১০৯)
فَاِنْ تَوَلَّيْتُمْ فَمَا سَاَلْتُكُمْ مِّنْ اَجْرٍؕ اِنْ اَجْرِيَ اِلَّا عَلَى اللهِ وَاُمِرْتُ اَنْ اَكُوْنَ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ
অতএব যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নিতে চাও তবে (জেনে রেখো) আমি তোমাদের নিকট কোন পারিশ্রমিক চাই না, আমার পারিশ্রমিক আল্লাহর নিকট; আমি তো কেবল আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হতেই আদিষ্ট হয়েছি। (সূরা ইউনুস– ৭২)
তারা নবীকে পথভ্রষ্ট মনে করত :
قَالَ الْمَلَاُ مِنْ قَوْمِهٖۤ اِنَّا لَنَرَاكَ فِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ
তার সম্প্রদায়ের প্রধানগণ বলেছিল, আমরা তো তোমাকে স্পষ্ট ভ্রান্তিতে দেখতে পাচ্ছি। (সূরা আ‘রাফু ৬০)
তারা নবীকে পাগল বলত :
اِنْ هُوَ اِلَّا رَجُلٌ ۢبِهٖ جِنَّةٌ
এ তো এমন লোক, যাকে পাগলামী পেয়ে বসেছে। (সূরা মু’মিনূনু ২৫)
كَذَّبَتْ قَبْلَهُمْ قَوْمُ نُوْحٍ فَكَذَّبُوْا عَبْدَنَا وَقَالُوْا مَجْنُوْنٌ وَّازْدُجِرَ
এদের পূর্বে নূহের জাতিও মিথ্যারোপ করেছিল। তারা আমার বান্দার প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল এবং বলেছিল, এ তো এক পাগল। অতঃপর তারা তাকে ধমকেছিল। (সূরা ক্বামার– ৯)
তারা নবীকে দোষারোপ করল :
فَقَالَ الْمَلَاُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنْ قَوْمِهٖ مَا هٰذَاۤ اِلَّا بَشَرٌ يُّرِيْدُ اَنْ يَّتَفَضَّلَ عَلَيْكُمْؕ وَلَوْ شَآءَ اللهُ لَاَنْزَلَ مَلَآئِكَةً
তার সম্প্রদায়ের প্রধানগণ, যারা কুফরী করেছিল তারা বলল, এ তো তোমাদের মতোই একজন মানুষ। সে তোমাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করতে চাচ্ছে। যদি আল্লাহ (প্রকৃতপক্ষে কোন রাসূল প্রেরণ করতে) ইচ্ছা করতেন, তবে ফেরেশতাদেরকেই পাঠাতেন। (সূরা মমিনুন – ২৪)
তারা বলল, আমাদের পূর্বপুরুষ থেকে এসব শুনিনি :
مَا سَمِعْنَا بِهٰذَا فِۤيْ اٰبَآئِنَا الْاَوَّلِيْنَ
আমাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে যে এরূপ ঘটেছে, তা তো আমরা শুনিনি। (সূরা মু’মিনূনু ২৪)
গরীব লোকেরা তোমার অনুসরণ করে :
قَالُوْاۤ اَنُؤْمِنُ لَكَ وَاتَّبَعَكَ الْاَرْذَلُوْنَ
তারা বলল, আমরা কি তোমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করব, অথচ নীচু শ্রেণির লোকেরা তোমার অনুসরণ করছে? (সূরা শু‘আরা– ১১১)
فَقَالَ الْمَلَاُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنْ قَوْمِهٖ مَا نَرَاكَ اِلَّا بَشَرًا مِّثْلَنَا وَمَا نَرَاكَ اتَّبَعَكَ اِلَّا الَّذِيْنَ هُمْ اَرَاذِلُنَا بَادِيَ الرَّأْيِۚ وَمَا نَرٰى لَكُمْ عَلَيْنَا مِنْ فَضْلٍ ۢبَلْ نَظُنُّكُمْ كَاذِبِيْنَ
তাঁর সম্প্রদায়ের প্রধানরা, যারা ছিল কাফির তারা বলল, আমরা তো তোমাকে আমাদের মতো মানুষ ব্যতীত অন্য কিছুই মনে করি না। আমরা তো দেখতে পাচ্ছি যে, তোমার অনুসরণ করছে তারাই, যারা আমাদের মধ্যে বাহ্যিক দৃষ্টিতে অধম। আর আমরা আমাদের উপর তোমাদের কোন শ্রেষ্ঠত্ব দেখতে পাচ্ছি না, বরং আমরা তোমাদেরকে মিথ্যাবাদী মনে করি। (সূরা হুদু ২৭)
তারা বলল, পারলে আযাব এনে দেখাও :
قَالُوْا يَا نُوْحُ قَدْ جَادَلْتَنَا فَاَكْثَرْتَ جِدَالَنَا فَأْتِنَا بِمَا تَعِدُنَاۤ اِنْ كُنْتَ مِنَ الصَّادِقِيْنَ
তারা বলল, হে নূহ! তুমি তো আমাদের সাথে অতি মাত্রায় বিতর্ক করছ। সুতরাং তুমি সত্যবাদী হলে আমাদেরকে যার ভয় দেখাচ্ছ তা নিয়ে আসো। (সূরা হুদু ৩২)
জাতির লোকেরা নবীকে হত্যার হুমকি দিল :
قَالُوْا لَئِنْ لَّمْ تَنْتَهِ يَا نُوْحُ لَتَكُوْنَنَّ مِنَ الْمَرْجُوْمِيْنَ
তারা বলল, হে নূহ! তুমি যদি নিবৃত্ত না হও, তবে অবশ্যই তুমি প্রস্তরাঘাতে নিহতদের মধ্যে শামিল হবে। (সূরা শু‘আরা– ১১৬)
قَالَ الْمَلَاُ مِنْ قَوْمِهٖۤ اِنَّا لَنَرَاكَ فِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ
তার সম্প্রদায়ের প্রধানগণ বলেছিল, আমরা তো তোমাকে স্পষ্ট ভ্রান্তিতে দেখতে পাচ্ছি। (সূরা আ‘রাফু ৬০)
তারা নবীকে পাগল বলত :
اِنْ هُوَ اِلَّا رَجُلٌ ۢبِهٖ جِنَّةٌ
এ তো এমন লোক, যাকে পাগলামী পেয়ে বসেছে। (সূরা মু’মিনূনু ২৫)
كَذَّبَتْ قَبْلَهُمْ قَوْمُ نُوْحٍ فَكَذَّبُوْا عَبْدَنَا وَقَالُوْا مَجْنُوْنٌ وَّازْدُجِرَ
এদের পূর্বে নূহের জাতিও মিথ্যারোপ করেছিল। তারা আমার বান্দার প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল এবং বলেছিল, এ তো এক পাগল। অতঃপর তারা তাকে ধমকেছিল। (সূরা ক্বামার– ৯)
তারা নবীকে দোষারোপ করল :
فَقَالَ الْمَلَاُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنْ قَوْمِهٖ مَا هٰذَاۤ اِلَّا بَشَرٌ يُّرِيْدُ اَنْ يَّتَفَضَّلَ عَلَيْكُمْؕ وَلَوْ شَآءَ اللهُ لَاَنْزَلَ مَلَآئِكَةً
তার সম্প্রদায়ের প্রধানগণ, যারা কুফরী করেছিল তারা বলল, এ তো তোমাদের মতোই একজন মানুষ। সে তোমাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করতে চাচ্ছে। যদি আল্লাহ (প্রকৃতপক্ষে কোন রাসূল প্রেরণ করতে) ইচ্ছা করতেন, তবে ফেরেশতাদেরকেই পাঠাতেন। (সূরা মমিনুন – ২৪)
তারা বলল, আমাদের পূর্বপুরুষ থেকে এসব শুনিনি :
مَا سَمِعْنَا بِهٰذَا فِۤيْ اٰبَآئِنَا الْاَوَّلِيْنَ
আমাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে যে এরূপ ঘটেছে, তা তো আমরা শুনিনি। (সূরা মু’মিনূনু ২৪)
গরীব লোকেরা তোমার অনুসরণ করে :
قَالُوْاۤ اَنُؤْمِنُ لَكَ وَاتَّبَعَكَ الْاَرْذَلُوْنَ
তারা বলল, আমরা কি তোমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করব, অথচ নীচু শ্রেণির লোকেরা তোমার অনুসরণ করছে? (সূরা শু‘আরা– ১১১)
فَقَالَ الْمَلَاُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنْ قَوْمِهٖ مَا نَرَاكَ اِلَّا بَشَرًا مِّثْلَنَا وَمَا نَرَاكَ اتَّبَعَكَ اِلَّا الَّذِيْنَ هُمْ اَرَاذِلُنَا بَادِيَ الرَّأْيِۚ وَمَا نَرٰى لَكُمْ عَلَيْنَا مِنْ فَضْلٍ ۢبَلْ نَظُنُّكُمْ كَاذِبِيْنَ
তাঁর সম্প্রদায়ের প্রধানরা, যারা ছিল কাফির তারা বলল, আমরা তো তোমাকে আমাদের মতো মানুষ ব্যতীত অন্য কিছুই মনে করি না। আমরা তো দেখতে পাচ্ছি যে, তোমার অনুসরণ করছে তারাই, যারা আমাদের মধ্যে বাহ্যিক দৃষ্টিতে অধম। আর আমরা আমাদের উপর তোমাদের কোন শ্রেষ্ঠত্ব দেখতে পাচ্ছি না, বরং আমরা তোমাদেরকে মিথ্যাবাদী মনে করি। (সূরা হুদু ২৭)
তারা বলল, পারলে আযাব এনে দেখাও :
قَالُوْا يَا نُوْحُ قَدْ جَادَلْتَنَا فَاَكْثَرْتَ جِدَالَنَا فَأْتِنَا بِمَا تَعِدُنَاۤ اِنْ كُنْتَ مِنَ الصَّادِقِيْنَ
তারা বলল, হে নূহ! তুমি তো আমাদের সাথে অতি মাত্রায় বিতর্ক করছ। সুতরাং তুমি সত্যবাদী হলে আমাদেরকে যার ভয় দেখাচ্ছ তা নিয়ে আসো। (সূরা হুদু ৩২)
জাতির লোকেরা নবীকে হত্যার হুমকি দিল :
قَالُوْا لَئِنْ لَّمْ تَنْتَهِ يَا نُوْحُ لَتَكُوْنَنَّ مِنَ الْمَرْجُوْمِيْنَ
তারা বলল, হে নূহ! তুমি যদি নিবৃত্ত না হও, তবে অবশ্যই তুমি প্রস্তরাঘাতে নিহতদের মধ্যে শামিল হবে। (সূরা শু‘আরা– ১১৬)
নবী বললেন, আমি গোমরাহ নই বরং রাসূল :
قَالَ يَا قَوْمِ لَيْسَ بِيْ ضَلَالَةٌ وَّلٰكِنِّيْ رَسُوْلٌ مِّنْ رَّبِّ الْعَالَمِيْنَ
সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! আমার মধ্যে কোন ভ্রান্তি নেই; বরং আমি জগতসমূহের প্রতিপালকের (পক্ষ হতে প্রেরিত) রাসূল। (সূরা আ‘রাফু ৬১)
اِنِّيْ لَكُمْ رَسُوْلٌ اَمِيْنٌ
নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য এক বিশ্বস্ত রাসূল। (সূরা শু‘আরা– ১০৭)
আমি কেবল আমার রবের বাণী প্রচার করছি :
اُبَلِّغُكُمْ رِسَالَاتِ رَبِّيْ وَاَنْصَحُ لَكُمْ وَاَعْلَمُ مِنَ اللهِ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ
আমার প্রতিপালকের বাণী আমি তোমাদের নিকট পৌঁছে দিচ্ছি এবং তোমাদেরকে সদুপদেশ দিচ্ছি। আর আমি আল্লাহর পক্ষ হতে যা জানি তোমরা তা জান না। (সূরা আ‘রাফু ৬২)
اَوَعَجِبْتُمْ اَنْ جَآءَكُمْ ذِكْرٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ عَلٰى رَجُلٍ مِّنْكُمْ لِيُنْذِرَكُمْ وَلِتَتَّقُوْا وَلَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ
তোমরা কি বিস্ময় বোধ করছ যে, তোমাদেরই একজনের মাধ্যমে তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে তোমাদের নিকট উপদেশ এসেছে, যাতে সে তোমাদেরকে সতর্ক করে। আর যাতে তোমরা সাবধান হও এবং অনুগ্রহ লাভ করো। (সূরা আ‘রাফু ৬৩)
আমি অবাস্তব কথা বলি না :
وَلَاۤ اَقُوْلُ لَكُمْ عِنْدِيْ خَزَآئِنُ اللهِ وَلَاۤ اَعْلَمُ الْغَيْبَ وَلَاۤ اَقُوْلُ اِنِّيْ مَلَكٌ وَّلَاۤ اَقُوْلُ لِلَّذِيْنَ تَزْدَرِيْۤ اَعْيُنُكُمْ لَنْ يُّؤْتِيَهُمُ اللهُ خَيْرًا ‐ اَللهُ اَعْلَمُ بِمَا فِۤيْ اَنْفُسِهِمْ اِنِّۤيْ اِذًا لَّمِنَ الظَّالِمِيْنَ
আমি তোমাদেরকে বলি না যে, আমার নিকট আল্লাহর ধনভান্ডার আছে। আর আমি অদৃশ্য বিষয় সম্বন্ধেও অবগত নই। আমি এটাও বলি না যে, আমি একজন ফেরেশতা। যারা তোমাদের দৃষ্টিতে হেয় প্রতিপন্ন হয় তাদের সম্বন্ধে আমি বলি না যে, আল্লাহ তাদেরকে কখনই মঙ্গল দান করবেন না; তাদের অন্তরে যা আছে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবগত। নতুবা আমি অবশ্যই যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হব। (সূরা হুদু ৩১)
তোমাদের মঙ্গল আমার ইচ্ছাধীন নয় :
وَلَا يَنْفَعُكُمْ نُصْحِيْۤ اِنْ اَرَدْتُّ اَنْ اَنْصَحَ لَكُمْ اِنْ كَانَ اللهُ يُرِيْدُ اَنْ يُّغْوِيَكُمْ ؕ هُوَ رَبُّكُمْ وَاِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ
আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিতে চাইলেও আমার উপদেশ তোমাদের উপকারে আসবে না, যদি আল্লাহ তোমাদেরকে বিভ্রান্ত করতে চান। তিনিই তোমাদের প্রতিপালক এবং তোমাদেরকে তাঁরই নিকট প্রত্যাবর্তন করতে হবে। (সূরা হুদু ৩৪)
আমি তোমাদেরকে বাধ্য করি না :
قَالَ يَا قَوْمِ اَرَاَيْتُمْ اِنْ كُنْتُ عَلٰى بَيِّنَةٍ مِّنْ رَّبِّيْ وَاٰتَانِيْ رَحْمَةً مِّنْ عِنْدِهٖ فَعُمِّيَتُ عَلَيْكُمْؕ اَنُلْزِمُكُمُوْهَا وَاَنْتُمْ لَهَا كَارِهُوْنَ
সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা কি দেখনা যে, আমি যদি আমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে প্রেরিত স্পষ্ট নিদর্শনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকি এবং যদি তাঁর পক্ষ হতে আমার নিকট কোন অনুগ্রহ আসে। আর তা যদি তোমাদের থেকে গোপন হয়, তবে আমি কি এ বিষয়ে তোমাদেরকে বাধ্য করতে পারি, যখন তোমরা তা অপছন্দ কর? (সূরা হুদু ২৮)
আমি মুমিনদেরকে তাড়াতে পারি না :
وَمَاۤ اَنَاْ بِطَارِدِ الْمُؤْمِنِيْنَ
মুমিনদেরকে তাড়িয়ে দেয়া আমার কাজ নয়। (সূরা শু‘আরা– ১১৪)
وَمَاۤ اَنَاْ بِطَارِدِ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاؕ اِنَّهُمْ مُّلَاقُوْا رَبِّهِمْ وَلٰكِنِّيْۤ اَرَاكُمْ قَوْمًا تَجْهَلُوْنَ ‐ وَيَا قَوْمِ مَنْ يَّنْصُرُنِيْ مِنَ اللهِ اِنْ طَرَدْتُّهُمْؕ اَفَلَا تَذَكَّرُوْنَ
মুমিনদেরকে তাড়িয়ে দেয়া আমার কাজ নয়। তারা নিশ্চিতভাবে তাদের প্রতিপালকের সাক্ষাৎ লাভ করবে। কিন্তু আমি তো দেখছি তোমরা এক অজ্ঞ সম্প্রদায়। হে আমার সম্প্রদায়! আমি যদি তাদেরকে তাড়িয়ে দেই, তবে আল্লাহ হতে আমাকে কে রক্ষা করবে? তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না? (সূরা হুদু ২৯, ৩০)
আমার সাথিদের হিসাব আল্লাহর উপর ন্যস্ত :
قَالَ وَمَا عِلْمِيْ بِمَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ ‐ اِنْ حِسَابُهُمْ اِلَّا عَلٰى رَبِّيْ لَوْ تَشْعُرُوْنَ
নূহ বলল, তারা কী করত তা আমার জানা নেই। তাদের হিসাব গ্রহণ করা তো আমার প্রতিপালকেরই কাজ; যদি তোমরা বুঝতে! (সূরা শু‘আরা– ১১২, ১১৩)
নবী বললেন, তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করো :
مَا لَكُمْ لَا تَرْجُوْنَ لِلّٰهِ وَقَارًا
তোমাদের কী হয়েছে যে, তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করতে চাচ্ছ না? (সূরা নূহ– ১৩)
তিনিই তোমাদের সৃষ্টিকর্তা :
وَقَدْ خَلَقَكُمْ اَطْوَارًا
অথচ তিনিই তোমাদেরকে পর্যায়ক্রমে সৃষ্টি করেছেন। (সূরা নূহ– ১৪)
তিনিই আকাশ তৈরি করেছেন :
اَلَمْ تَرَوْا كَيْفَ خَلَقَ اللهُ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ طِبَاقًا
তোমরা কি লক্ষ্য করনি যে, আল্লাহ কীভাবে সাত আসমানকে স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন? (সূরা নূহ– ১৫)
তিনিই চন্দ্র–সূর্য সৃষ্টি করেছেন :
وَجَعَلَ الْقَمَرَ فِيْهِنَّ نُوْرًا وَّجَعَلَ الشَّمْسَ سِرَاجًا
অতঃপর তিনি সেখানে চাঁদকে আলো ও সূর্যকে প্রদীপরূপে স্থাপন করেছেন। (সূরা নূহ– ১৬)
তিনি তোমাদেরকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন :
وَاللهُ اَنْۢبَتَكُمْ مِّنَ الْاَرْضِ نَبَاتًا
আল্লাহ তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মাটি হতে। (সূরা নূহ– ১৭)
মৃত্যুর পর আবার তোমাদেরকে উঠাবেন :
ثُمَّ يُعِيْدُكُمْ فِيْهَا وَيُخْرِجُكُمْ اِخْرَاجًا
অতঃপর তিনি তোমাদেরকে তাতে ফিরিয়ে নেবেন এবং পরে পুনরায় বের করবেন। (সূরা নূহ – ১৮)
তিনি জমিন সৃষ্টি করেছেন :
وَاللهُ جَعَلَ لَكُمُ الْاَرْضَ بِسَاطًا
আল্লাহ তোমাদের জন্য ভূমিকে বিস্তৃত করে দিয়েছেন। (সূরা নূহ– ১৯)
আল্লাহর বিধান মানলে তোমাদের পাপ ক্ষমা করা হবে :
يَغْفِرْ لَكُمْ مِّنْ ذُنُوْبِكُمْ وَيُؤَخِّرْكُمْ اِلٰۤى اَجَلٍ مُّسَمًّىؕ اِنَّ اَجَلَ اللهِ اِذَا جَآءَ لَا يُؤَخَّرُ لَوْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
তিনি তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন এবং তিনি তোমাদেরকে অবকাশ দেবেন এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত। নিশ্চয় আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সময় উপস্থিত হলে তা বিলম্বিত হয় না, যদি তোমরা এটা জানতে! (সূরা নূহ– ৪)
বৃষ্টিপাত হবে :
يُرْسِلِ السَّمَآءَ عَلَيْكُمْ مِّدْرَارًا
তিনি তোমাদের জন্য আকাশ হতে প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন। (সূরা নূহ– ১১)
তোমরা আরো অনেক নিয়ামত পাবে :
وَيُمْدِدْكُمْ بِاَمْوَالٍ وَّبَنِيْنَ وَيَجْعَلْ لَّكُمْ جَنَّاتٍ وَّيَجْعَلْ لَّكُمْ اَنْهَارًا
তিনি তোমাদেরকে সমৃদ্ধ করবেন ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে। আর তোমাদের জন্য বাগানসমূহ তৈরি করবেন এবং প্রবাহিত করবেন নদী–নালা। (সূরা নূহ– ১২)
قَالَ يَا قَوْمِ لَيْسَ بِيْ ضَلَالَةٌ وَّلٰكِنِّيْ رَسُوْلٌ مِّنْ رَّبِّ الْعَالَمِيْنَ
সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! আমার মধ্যে কোন ভ্রান্তি নেই; বরং আমি জগতসমূহের প্রতিপালকের (পক্ষ হতে প্রেরিত) রাসূল। (সূরা আ‘রাফু ৬১)
اِنِّيْ لَكُمْ رَسُوْلٌ اَمِيْنٌ
নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য এক বিশ্বস্ত রাসূল। (সূরা শু‘আরা– ১০৭)
আমি কেবল আমার রবের বাণী প্রচার করছি :
اُبَلِّغُكُمْ رِسَالَاتِ رَبِّيْ وَاَنْصَحُ لَكُمْ وَاَعْلَمُ مِنَ اللهِ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ
আমার প্রতিপালকের বাণী আমি তোমাদের নিকট পৌঁছে দিচ্ছি এবং তোমাদেরকে সদুপদেশ দিচ্ছি। আর আমি আল্লাহর পক্ষ হতে যা জানি তোমরা তা জান না। (সূরা আ‘রাফু ৬২)
اَوَعَجِبْتُمْ اَنْ جَآءَكُمْ ذِكْرٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ عَلٰى رَجُلٍ مِّنْكُمْ لِيُنْذِرَكُمْ وَلِتَتَّقُوْا وَلَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ
তোমরা কি বিস্ময় বোধ করছ যে, তোমাদেরই একজনের মাধ্যমে তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে তোমাদের নিকট উপদেশ এসেছে, যাতে সে তোমাদেরকে সতর্ক করে। আর যাতে তোমরা সাবধান হও এবং অনুগ্রহ লাভ করো। (সূরা আ‘রাফু ৬৩)
আমি অবাস্তব কথা বলি না :
وَلَاۤ اَقُوْلُ لَكُمْ عِنْدِيْ خَزَآئِنُ اللهِ وَلَاۤ اَعْلَمُ الْغَيْبَ وَلَاۤ اَقُوْلُ اِنِّيْ مَلَكٌ وَّلَاۤ اَقُوْلُ لِلَّذِيْنَ تَزْدَرِيْۤ اَعْيُنُكُمْ لَنْ يُّؤْتِيَهُمُ اللهُ خَيْرًا ‐ اَللهُ اَعْلَمُ بِمَا فِۤيْ اَنْفُسِهِمْ اِنِّۤيْ اِذًا لَّمِنَ الظَّالِمِيْنَ
আমি তোমাদেরকে বলি না যে, আমার নিকট আল্লাহর ধনভান্ডার আছে। আর আমি অদৃশ্য বিষয় সম্বন্ধেও অবগত নই। আমি এটাও বলি না যে, আমি একজন ফেরেশতা। যারা তোমাদের দৃষ্টিতে হেয় প্রতিপন্ন হয় তাদের সম্বন্ধে আমি বলি না যে, আল্লাহ তাদেরকে কখনই মঙ্গল দান করবেন না; তাদের অন্তরে যা আছে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবগত। নতুবা আমি অবশ্যই যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হব। (সূরা হুদু ৩১)
তোমাদের মঙ্গল আমার ইচ্ছাধীন নয় :
وَلَا يَنْفَعُكُمْ نُصْحِيْۤ اِنْ اَرَدْتُّ اَنْ اَنْصَحَ لَكُمْ اِنْ كَانَ اللهُ يُرِيْدُ اَنْ يُّغْوِيَكُمْ ؕ هُوَ رَبُّكُمْ وَاِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ
আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিতে চাইলেও আমার উপদেশ তোমাদের উপকারে আসবে না, যদি আল্লাহ তোমাদেরকে বিভ্রান্ত করতে চান। তিনিই তোমাদের প্রতিপালক এবং তোমাদেরকে তাঁরই নিকট প্রত্যাবর্তন করতে হবে। (সূরা হুদু ৩৪)
আমি তোমাদেরকে বাধ্য করি না :
قَالَ يَا قَوْمِ اَرَاَيْتُمْ اِنْ كُنْتُ عَلٰى بَيِّنَةٍ مِّنْ رَّبِّيْ وَاٰتَانِيْ رَحْمَةً مِّنْ عِنْدِهٖ فَعُمِّيَتُ عَلَيْكُمْؕ اَنُلْزِمُكُمُوْهَا وَاَنْتُمْ لَهَا كَارِهُوْنَ
সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা কি দেখনা যে, আমি যদি আমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে প্রেরিত স্পষ্ট নিদর্শনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকি এবং যদি তাঁর পক্ষ হতে আমার নিকট কোন অনুগ্রহ আসে। আর তা যদি তোমাদের থেকে গোপন হয়, তবে আমি কি এ বিষয়ে তোমাদেরকে বাধ্য করতে পারি, যখন তোমরা তা অপছন্দ কর? (সূরা হুদু ২৮)
আমি মুমিনদেরকে তাড়াতে পারি না :
وَمَاۤ اَنَاْ بِطَارِدِ الْمُؤْمِنِيْنَ
মুমিনদেরকে তাড়িয়ে দেয়া আমার কাজ নয়। (সূরা শু‘আরা– ১১৪)
وَمَاۤ اَنَاْ بِطَارِدِ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاؕ اِنَّهُمْ مُّلَاقُوْا رَبِّهِمْ وَلٰكِنِّيْۤ اَرَاكُمْ قَوْمًا تَجْهَلُوْنَ ‐ وَيَا قَوْمِ مَنْ يَّنْصُرُنِيْ مِنَ اللهِ اِنْ طَرَدْتُّهُمْؕ اَفَلَا تَذَكَّرُوْنَ
মুমিনদেরকে তাড়িয়ে দেয়া আমার কাজ নয়। তারা নিশ্চিতভাবে তাদের প্রতিপালকের সাক্ষাৎ লাভ করবে। কিন্তু আমি তো দেখছি তোমরা এক অজ্ঞ সম্প্রদায়। হে আমার সম্প্রদায়! আমি যদি তাদেরকে তাড়িয়ে দেই, তবে আল্লাহ হতে আমাকে কে রক্ষা করবে? তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না? (সূরা হুদু ২৯, ৩০)
আমার সাথিদের হিসাব আল্লাহর উপর ন্যস্ত :
قَالَ وَمَا عِلْمِيْ بِمَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ ‐ اِنْ حِسَابُهُمْ اِلَّا عَلٰى رَبِّيْ لَوْ تَشْعُرُوْنَ
নূহ বলল, তারা কী করত তা আমার জানা নেই। তাদের হিসাব গ্রহণ করা তো আমার প্রতিপালকেরই কাজ; যদি তোমরা বুঝতে! (সূরা শু‘আরা– ১১২, ১১৩)
নবী বললেন, তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করো :
مَا لَكُمْ لَا تَرْجُوْنَ لِلّٰهِ وَقَارًا
তোমাদের কী হয়েছে যে, তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করতে চাচ্ছ না? (সূরা নূহ– ১৩)
তিনিই তোমাদের সৃষ্টিকর্তা :
وَقَدْ خَلَقَكُمْ اَطْوَارًا
অথচ তিনিই তোমাদেরকে পর্যায়ক্রমে সৃষ্টি করেছেন। (সূরা নূহ– ১৪)
তিনিই আকাশ তৈরি করেছেন :
اَلَمْ تَرَوْا كَيْفَ خَلَقَ اللهُ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ طِبَاقًا
তোমরা কি লক্ষ্য করনি যে, আল্লাহ কীভাবে সাত আসমানকে স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন? (সূরা নূহ– ১৫)
তিনিই চন্দ্র–সূর্য সৃষ্টি করেছেন :
وَجَعَلَ الْقَمَرَ فِيْهِنَّ نُوْرًا وَّجَعَلَ الشَّمْسَ سِرَاجًا
অতঃপর তিনি সেখানে চাঁদকে আলো ও সূর্যকে প্রদীপরূপে স্থাপন করেছেন। (সূরা নূহ– ১৬)
তিনি তোমাদেরকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন :
وَاللهُ اَنْۢبَتَكُمْ مِّنَ الْاَرْضِ نَبَاتًا
আল্লাহ তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মাটি হতে। (সূরা নূহ– ১৭)
মৃত্যুর পর আবার তোমাদেরকে উঠাবেন :
ثُمَّ يُعِيْدُكُمْ فِيْهَا وَيُخْرِجُكُمْ اِخْرَاجًا
অতঃপর তিনি তোমাদেরকে তাতে ফিরিয়ে নেবেন এবং পরে পুনরায় বের করবেন। (সূরা নূহ – ১৮)
তিনি জমিন সৃষ্টি করেছেন :
وَاللهُ جَعَلَ لَكُمُ الْاَرْضَ بِسَاطًا
আল্লাহ তোমাদের জন্য ভূমিকে বিস্তৃত করে দিয়েছেন। (সূরা নূহ– ১৯)
আল্লাহর বিধান মানলে তোমাদের পাপ ক্ষমা করা হবে :
يَغْفِرْ لَكُمْ مِّنْ ذُنُوْبِكُمْ وَيُؤَخِّرْكُمْ اِلٰۤى اَجَلٍ مُّسَمًّىؕ اِنَّ اَجَلَ اللهِ اِذَا جَآءَ لَا يُؤَخَّرُ لَوْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
তিনি তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন এবং তিনি তোমাদেরকে অবকাশ দেবেন এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত। নিশ্চয় আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সময় উপস্থিত হলে তা বিলম্বিত হয় না, যদি তোমরা এটা জানতে! (সূরা নূহ– ৪)
বৃষ্টিপাত হবে :
يُرْسِلِ السَّمَآءَ عَلَيْكُمْ مِّدْرَارًا
তিনি তোমাদের জন্য আকাশ হতে প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন। (সূরা নূহ– ১১)
তোমরা আরো অনেক নিয়ামত পাবে :
وَيُمْدِدْكُمْ بِاَمْوَالٍ وَّبَنِيْنَ وَيَجْعَلْ لَّكُمْ جَنَّاتٍ وَّيَجْعَلْ لَّكُمْ اَنْهَارًا
তিনি তোমাদেরকে সমৃদ্ধ করবেন ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে। আর তোমাদের জন্য বাগানসমূহ তৈরি করবেন এবং প্রবাহিত করবেন নদী–নালা। (সূরা নূহ– ১২)
নূহ (আঃ) আযাবের ভয় দেখালেন :
اَنْ لَّا تَعْبُدُوْاۤ اِلَّا اللهَؕ اِنِّۤيْ اَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ اَلِيْمٍ
যেন তোমরা আল্লাহ ব্যতীত অপর কিছুর ইবাদাত না কর। আমি তো তোমাদের জন্য এক মর্মান্তিক দিবসের শাস্তির আশঙ্কা করি। (সূরা হুদু ২৬)
لَقَدْ اَرْسَلْنَا نُوْحًا اِلٰى قَوْمِهٖ فَقَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرُهٗؕ اِنِّۤيْ اَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيْمٍ
আমি নূহকে তাঁর সম্প্রদায়ের নিকট প্রেরণ করেছিলাম। অতঃপর সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো, তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ্ নেই। আমি তোমাদের জন্য এক মহাদিনের শাস্তির আশঙ্কা করছি। (সূরা আ‘রাফু ৫৯)
জাতিকে সতর্কবাণী শুনিয়ে দিলেন :
فَسَوْفَ تَعْلَمُوْنَ مَنْ يَّأْتِيْهِ عَذَابٌ يُّخْزِيْهِ وَيَحِلُّ عَلَيْهِ عَذَابٌ مُّقِيْمٌ
অচিরেই তোমরা জানতে পারবে যে, কার উপর আসবে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি। আর কার উপর পতিত হবে স্থায়ী শাস্তি। (সূরা হুদু ৩৯)
জাতির প্রতি চ্যালেঞ্জ করলেন :
وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَاَ نُوْحٍ اِذْ قَالَ لِقَوْمِهٖ يَا قَوْمِ اِنْ كَانَ كَبُرَ عَلَيْكُمْ مَّقَامِيْ وَتَذْكِيْرِيْ بِاٰيَاتِ اللهِ فَعَلَى اللهِ تَوَكَّلْتُ فَاَجْمِعُوْاۤ اَمْرَكُمْ وَشُرَكَآءَكُمْ ثُمَّ لَا يَكُنْ اَمْرُكُمْ عَلَيْكُمْ غُمَّةً ثُمَّ اقْضُوْاۤ اِلَيَّ وَلَا تُنْظِرُوْنِ
তাদেরকে নূহের বৃত্তান্ত শুনাও। সে তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! আমার অবস্থান এবং আল্লাহর নিদর্শন দ্বারা আমার উপদেশ দান তোমাদের নিকট যদি দুঃসহ হয়, তবে আমি আল্লাহর উপরই নির্ভর করি। তোমরা যাদেরকে শরীক স্থাপন করেছ তাদেরকে সহ তোমাদের কর্তব্য স্থির করে নাও, যাতে করে কর্তব্য বিষয়ে তোমাদের কোন সংশয় না থাকে। অতঃপর আমার সম্বন্ধে তোমাদের কর্ম নিষ্পন্ন করে ফেল এবং আমাকে অবকাশ দিয়ো না। (সূরা ইউনুস– ৭১)
তিনি রাত–দিন সবসময় দাওয়াত দিলেন :
قَالَ رَبِّ اِنِّيْ دَعَوْتُ قَوْمِيْ لَيْلًا وَّنَهَارًا
তিনি বলেছিলেন, হে আমার প্রতিপালক! আমি তো আমার সম্প্রদায়কে রাতে ও দিনে (সবসময়) দাওয়াত দিয়েছি। (সূরা নূহ– ৫)
প্রকাশ্যে দাওয়াত দিলেন :
ثُمَّ اِنِّيْ دَعَوْتُهُمْ جِهَارًا
অতঃপর আমি তাদেরকে আহবান করেছি সুউচ্চ স্বরে। (সূরা নূহ– ৮)
গোপনেও দাওয়াত দিলেন :
ثُمَّ اِنِّۤيْ اَعْلَنْتُ لَهُمْ وَاَسْرَرْتُ لَهُمْ اِسْرَارًا
পরে আমি তাদেরকে প্রকাশ্যে এবং অতি গোপনে উপদেশ দিয়েছি। (সূরা নূহ– ৯)
তিনি তাদের মধ্যে ছিলেন সাড়ে নয়শ’ বৎসর :
وَلَقَدْ اَرْسَلْنَا نُوْحًا اِلٰى قَوْمِهٖ فَلَبِثَ فِيْهِمْ اَلْفَ سَنَةٍ اِلَّا خَمْسِيْنَ عَامًا
আমি তো নূহকে তার সম্প্রদায়ের নিকট প্রেরণ করেছিলাম। সে তাদের মধ্যে অবস্থান করেছিল পঞ্চাশ কম এক হাজার বছর। (সূরা আনকাবূত– ১৪)
কিন্তু অতি অল্পই ঈমান এনেছে :
وَمَاۤ اٰمَنَ مَعَهٗۤ اِلَّا قَلِيْلٌ
তার সঙ্গে ঈমান এনেছিল অল্প কয়েকজন মাত্র। (সূরা হুদু ৪০)
নবীর স্ত্রীও ঈমান আনেনি :
ضَرَبَ اللهُ مَثَلًا لِّلَّذِيْنَ كَفَرُوا امْرَاَةَ نُوْحٍ وَّامْرَاَةَ لُوْطٍ كَانَتَا تَحْتَ عَبْدَيْنِ مِنْ عِبَادِنَا صَالِحَيْنِ فَخَانَتَاهُمَا فَلَمْ يُغْنِيَا عَنْهُمَا مِنَ اللهِ شَيْئًا وَّقِيْلَ ادْخُلَا النَّارَ مَعَ الدَّاخِلِيْنَ
আল্লাহ কাফিরদের জন্য নূহ ও লূতের স্ত্রীদের দৃষ্টান্ত উপস্থিত করেছেন। তারা ছিল আমার বান্দাদের মধ্যে দু’জন সৎকর্মপরায়ণ বান্দার অধীন। কিন্তু তারা তাদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, ফলে নূহ ও লূত তাদেরকে আল্লাহর শাস্তি হতে রক্ষা করতে পারল না। তাদেরকে বলা হলো, জাহান্নামে প্রবেশকারীদের সাথে তোমরাও তাতে প্রবেশ করো। (সূরা তাহরীম– ১০)
তাঁর সম্প্রদায় তাকে মিথ্যারোপ করল :
كَذَّبَتْ قَوْمُ نُوْحِ نِ الْمُرْسَلِيْنَ
নূহের সম্প্রদায় রাসূলগণের প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল। (সূরা শু‘আরা– ১০৫)
তারা নবীর কথা মানতে অস্বীকার করল :
قَالَ نُوْحٌ رَّبِّ اِنَّهُمْ عَصَوْنِيْ وَاتَّبَعُوْا مَنْ لَّمْ يَزِدْهُ مَالُهٗ وَوَلَدُهٗۤ اِلَّا خَسَارًا
নূহ বলেছিলেন, হে আমার প্রতিপালক! তারা তো আমাকে অমান্য করেছে এবং এমন লোকের অনুসরণ করেছে, যার ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তার ক্ষতি ব্যতীত আর কিছুই বৃদ্ধি করেনি। (সূরা নূহ– ২১)
اَنْ لَّا تَعْبُدُوْاۤ اِلَّا اللهَؕ اِنِّۤيْ اَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ اَلِيْمٍ
যেন তোমরা আল্লাহ ব্যতীত অপর কিছুর ইবাদাত না কর। আমি তো তোমাদের জন্য এক মর্মান্তিক দিবসের শাস্তির আশঙ্কা করি। (সূরা হুদু ২৬)
لَقَدْ اَرْسَلْنَا نُوْحًا اِلٰى قَوْمِهٖ فَقَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرُهٗؕ اِنِّۤيْ اَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيْمٍ
আমি নূহকে তাঁর সম্প্রদায়ের নিকট প্রেরণ করেছিলাম। অতঃপর সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো, তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ্ নেই। আমি তোমাদের জন্য এক মহাদিনের শাস্তির আশঙ্কা করছি। (সূরা আ‘রাফু ৫৯)
জাতিকে সতর্কবাণী শুনিয়ে দিলেন :
فَسَوْفَ تَعْلَمُوْنَ مَنْ يَّأْتِيْهِ عَذَابٌ يُّخْزِيْهِ وَيَحِلُّ عَلَيْهِ عَذَابٌ مُّقِيْمٌ
অচিরেই তোমরা জানতে পারবে যে, কার উপর আসবে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি। আর কার উপর পতিত হবে স্থায়ী শাস্তি। (সূরা হুদু ৩৯)
জাতির প্রতি চ্যালেঞ্জ করলেন :
وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَاَ نُوْحٍ اِذْ قَالَ لِقَوْمِهٖ يَا قَوْمِ اِنْ كَانَ كَبُرَ عَلَيْكُمْ مَّقَامِيْ وَتَذْكِيْرِيْ بِاٰيَاتِ اللهِ فَعَلَى اللهِ تَوَكَّلْتُ فَاَجْمِعُوْاۤ اَمْرَكُمْ وَشُرَكَآءَكُمْ ثُمَّ لَا يَكُنْ اَمْرُكُمْ عَلَيْكُمْ غُمَّةً ثُمَّ اقْضُوْاۤ اِلَيَّ وَلَا تُنْظِرُوْنِ
তাদেরকে নূহের বৃত্তান্ত শুনাও। সে তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! আমার অবস্থান এবং আল্লাহর নিদর্শন দ্বারা আমার উপদেশ দান তোমাদের নিকট যদি দুঃসহ হয়, তবে আমি আল্লাহর উপরই নির্ভর করি। তোমরা যাদেরকে শরীক স্থাপন করেছ তাদেরকে সহ তোমাদের কর্তব্য স্থির করে নাও, যাতে করে কর্তব্য বিষয়ে তোমাদের কোন সংশয় না থাকে। অতঃপর আমার সম্বন্ধে তোমাদের কর্ম নিষ্পন্ন করে ফেল এবং আমাকে অবকাশ দিয়ো না। (সূরা ইউনুস– ৭১)
তিনি রাত–দিন সবসময় দাওয়াত দিলেন :
قَالَ رَبِّ اِنِّيْ دَعَوْتُ قَوْمِيْ لَيْلًا وَّنَهَارًا
তিনি বলেছিলেন, হে আমার প্রতিপালক! আমি তো আমার সম্প্রদায়কে রাতে ও দিনে (সবসময়) দাওয়াত দিয়েছি। (সূরা নূহ– ৫)
প্রকাশ্যে দাওয়াত দিলেন :
ثُمَّ اِنِّيْ دَعَوْتُهُمْ جِهَارًا
অতঃপর আমি তাদেরকে আহবান করেছি সুউচ্চ স্বরে। (সূরা নূহ– ৮)
গোপনেও দাওয়াত দিলেন :
ثُمَّ اِنِّۤيْ اَعْلَنْتُ لَهُمْ وَاَسْرَرْتُ لَهُمْ اِسْرَارًا
পরে আমি তাদেরকে প্রকাশ্যে এবং অতি গোপনে উপদেশ দিয়েছি। (সূরা নূহ– ৯)
তিনি তাদের মধ্যে ছিলেন সাড়ে নয়শ’ বৎসর :
وَلَقَدْ اَرْسَلْنَا نُوْحًا اِلٰى قَوْمِهٖ فَلَبِثَ فِيْهِمْ اَلْفَ سَنَةٍ اِلَّا خَمْسِيْنَ عَامًا
আমি তো নূহকে তার সম্প্রদায়ের নিকট প্রেরণ করেছিলাম। সে তাদের মধ্যে অবস্থান করেছিল পঞ্চাশ কম এক হাজার বছর। (সূরা আনকাবূত– ১৪)
কিন্তু অতি অল্পই ঈমান এনেছে :
وَمَاۤ اٰمَنَ مَعَهٗۤ اِلَّا قَلِيْلٌ
তার সঙ্গে ঈমান এনেছিল অল্প কয়েকজন মাত্র। (সূরা হুদু ৪০)
নবীর স্ত্রীও ঈমান আনেনি :
ضَرَبَ اللهُ مَثَلًا لِّلَّذِيْنَ كَفَرُوا امْرَاَةَ نُوْحٍ وَّامْرَاَةَ لُوْطٍ كَانَتَا تَحْتَ عَبْدَيْنِ مِنْ عِبَادِنَا صَالِحَيْنِ فَخَانَتَاهُمَا فَلَمْ يُغْنِيَا عَنْهُمَا مِنَ اللهِ شَيْئًا وَّقِيْلَ ادْخُلَا النَّارَ مَعَ الدَّاخِلِيْنَ
আল্লাহ কাফিরদের জন্য নূহ ও লূতের স্ত্রীদের দৃষ্টান্ত উপস্থিত করেছেন। তারা ছিল আমার বান্দাদের মধ্যে দু’জন সৎকর্মপরায়ণ বান্দার অধীন। কিন্তু তারা তাদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, ফলে নূহ ও লূত তাদেরকে আল্লাহর শাস্তি হতে রক্ষা করতে পারল না। তাদেরকে বলা হলো, জাহান্নামে প্রবেশকারীদের সাথে তোমরাও তাতে প্রবেশ করো। (সূরা তাহরীম– ১০)
তাঁর সম্প্রদায় তাকে মিথ্যারোপ করল :
كَذَّبَتْ قَوْمُ نُوْحِ نِ الْمُرْسَلِيْنَ
নূহের সম্প্রদায় রাসূলগণের প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল। (সূরা শু‘আরা– ১০৫)
তারা নবীর কথা মানতে অস্বীকার করল :
قَالَ نُوْحٌ رَّبِّ اِنَّهُمْ عَصَوْنِيْ وَاتَّبَعُوْا مَنْ لَّمْ يَزِدْهُ مَالُهٗ وَوَلَدُهٗۤ اِلَّا خَسَارًا
নূহ বলেছিলেন, হে আমার প্রতিপালক! তারা তো আমাকে অমান্য করেছে এবং এমন লোকের অনুসরণ করেছে, যার ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তার ক্ষতি ব্যতীত আর কিছুই বৃদ্ধি করেনি। (সূরা নূহ– ২১)
নূহ (আঃ) আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইলেন :
قَالَ رَبِّ انْصُرْنِيْ بِمَا كَذَّبُوْنِ
নূহ বলেছিল, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে সাহায্য করো, কারণ তারা আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। (সূরা মু’মিনূনু ২৬)
فَدَعَا رَبَّهٗۤ اَنِّيْ مَغْلُوْبٌ فَانْتَصِرْ
তখন সে তাঁর প্রতিপালককে আহবান করে বলেছিল, আমি তো পরাজিত হয়ে গেছি। অতএব তুমি আমাকে সাহায্য করো। (সূরা ক্বামার– ১০)
চূড়ান্ত ফায়সালার জন্য দু‘আ করলেন :
فَافْتَحْ بَيْنِيْ وَبَيْنَهُمْ فَتْحًا وَّنَجِّنِيْ وَمَنْ مَّعِيَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ
সুতরাং তুমি আমার ও তাদের মধ্যে স্পষ্ট মীমাংসা করে দাও এবং আমাকে ও আমার সাথে যেসব মুমিন রয়েছে, তাদেরকে রক্ষা করো। (সূরা শু‘আরা– ১১৮)
আল্লাহ তাকে সান্ত্বনা দিলেন :
وَاُوْحِيَ اِلٰى نُوْحٍ اَنَّهٗ لَنْ يُّؤْمِنَ مِنْ قَوْمِكَ اِلَّا مَنْ قَدْ اٰمَنَ فَلَا تَبْتَئِسْ بِمَا كَانُوْا يَفْعَلُوْنَ
নূহের প্রতি প্রত্যাদেশ হয়েছিল যে, যারা ঈমান এনেছে তারা ব্যতীত তোমার সম্প্রদায়ের অন্য কেউ কখনো ঈমান আনবে না। সুতরাং তারা যা করে সেজন্য তুমি দুঃখিত হয়ো না। (সূরা হুদু ৩৬)
নবী কাফিরদের জন্য বদ্দু‘আ করলেন :
وَقَالَ نُوْحٌ رَّبِّ لَا تَذَرْ عَلَى الْاَرْضِ مِنَ الْكَافِرِيْنَ دَيَّارًا
নূহ আরো বলেছিলেন, হে আমার প্রতিপালক! পৃথিবীতে কাফিরদের মধ্য হতে কোন গৃহবাসীকে ছেড়ে দেবেন না। (সূরা নূহ– ২৬)
মুমিনদের জন্য ক্ষমা চাইলেন :
رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَلِوَالِدَيَّ وَلِمَنْ دَخَلَ بَيْتِيَ مُؤْمِنًا وَّلِلْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِؕ وَلَا تَزِدِ الظَّالِمِيْنَ اِلَّا تَبَارًا
হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে, আমার পিতা–মাতাকে এবং যারা মুমিন হয়ে আমার ঘরে প্রবেশ করেছে তাদেরকে এবং মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে ক্ষমা করুন। আর যালিমদের জন্য ধ্বংস ছাড়া অন্য কিছু বৃদ্ধি করবেন না। (সূরা নূহ– ২৮)
قَالَ رَبِّ انْصُرْنِيْ بِمَا كَذَّبُوْنِ
নূহ বলেছিল, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে সাহায্য করো, কারণ তারা আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। (সূরা মু’মিনূনু ২৬)
فَدَعَا رَبَّهٗۤ اَنِّيْ مَغْلُوْبٌ فَانْتَصِرْ
তখন সে তাঁর প্রতিপালককে আহবান করে বলেছিল, আমি তো পরাজিত হয়ে গেছি। অতএব তুমি আমাকে সাহায্য করো। (সূরা ক্বামার– ১০)
চূড়ান্ত ফায়সালার জন্য দু‘আ করলেন :
فَافْتَحْ بَيْنِيْ وَبَيْنَهُمْ فَتْحًا وَّنَجِّنِيْ وَمَنْ مَّعِيَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ
সুতরাং তুমি আমার ও তাদের মধ্যে স্পষ্ট মীমাংসা করে দাও এবং আমাকে ও আমার সাথে যেসব মুমিন রয়েছে, তাদেরকে রক্ষা করো। (সূরা শু‘আরা– ১১৮)
আল্লাহ তাকে সান্ত্বনা দিলেন :
وَاُوْحِيَ اِلٰى نُوْحٍ اَنَّهٗ لَنْ يُّؤْمِنَ مِنْ قَوْمِكَ اِلَّا مَنْ قَدْ اٰمَنَ فَلَا تَبْتَئِسْ بِمَا كَانُوْا يَفْعَلُوْنَ
নূহের প্রতি প্রত্যাদেশ হয়েছিল যে, যারা ঈমান এনেছে তারা ব্যতীত তোমার সম্প্রদায়ের অন্য কেউ কখনো ঈমান আনবে না। সুতরাং তারা যা করে সেজন্য তুমি দুঃখিত হয়ো না। (সূরা হুদু ৩৬)
নবী কাফিরদের জন্য বদ্দু‘আ করলেন :
وَقَالَ نُوْحٌ رَّبِّ لَا تَذَرْ عَلَى الْاَرْضِ مِنَ الْكَافِرِيْنَ دَيَّارًا
নূহ আরো বলেছিলেন, হে আমার প্রতিপালক! পৃথিবীতে কাফিরদের মধ্য হতে কোন গৃহবাসীকে ছেড়ে দেবেন না। (সূরা নূহ– ২৬)
মুমিনদের জন্য ক্ষমা চাইলেন :
رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَلِوَالِدَيَّ وَلِمَنْ دَخَلَ بَيْتِيَ مُؤْمِنًا وَّلِلْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِؕ وَلَا تَزِدِ الظَّالِمِيْنَ اِلَّا تَبَارًا
হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে, আমার পিতা–মাতাকে এবং যারা মুমিন হয়ে আমার ঘরে প্রবেশ করেছে তাদেরকে এবং মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে ক্ষমা করুন। আর যালিমদের জন্য ধ্বংস ছাড়া অন্য কিছু বৃদ্ধি করবেন না। (সূরা নূহ– ২৮)
আল্লাহ নৌকা তৈরির আদেশ দিলেন :
وَاصْنَعِ الْفُلْكَ بِاَعْيُنِنَا وَوَحْيِنَا وَلَا تُخَاطِبْنِيْ فِى الَّذِيْنَ ظَلَمُوْاۚ اِنَّهُمْ مُّغْرَقُوْنَ
তুমি আমার চোখের সামনে ও আমার প্রত্যাদেশ অনুযায়ী নৌকা নির্মাণ করো এবং যারা সীমালঙ্ঘন করেছে তাদের সম্পর্কে তুমি আমাকে কিছু বলো না। নিশ্চয় তারা নিমজ্জিত হবে। (সূরা হুদু ৩৭)
فَاَوْحَيْنَاۤ اِلَيْهِ اَنِ اصْنَعِ الْفُلْكَ بِاَعْيُنِنَا وَوَحْيِنَا
অতঃপর আমি তার নিকট ওহী পাঠালাম যে, তুমি আমার চোখের সামনে আমার ওহী অনুযায়ী নৌযান নির্মাণ করো। (সূরা মু’মিনূনু ২৭)
নৌকা তৈরির সময় লোকেরা উপহাস করত :
وَيَصْنَعُ الْفُلْكَ وَكُلَّمَا مَرَّ عَلَيْهِ مَلَأٌ مِّنْ قَوْمِهٖ سَخِرُوْا مِنْهُؕ قَالَ اِنْ تَسْخَرُوْا مِنَّا فَاِنَّا نَسْخَرُ مِنْكُمْ كَمَا تَسْخَرُوْنَ
অতঃপর সে নৌকা নির্মাণ করতে লাগল। ফলে যখনই তার সম্প্রদায়ের প্রধানরা তার নিকট দিয়ে যেত, তাকে উপহাস করত। তখন সে বলত, তোমরা যদি আমাকে উপহাস কর তবে আমরাও তোমাদেরকে উপহাস করব, যেমনিভাবে তোমরা আমাকে উপহাস করছ। (সূরা হুদু ৩৮)
আকাশ হতে পানি নামতে লাগল :
فَفَتَحْنَاۤ اَبْوَابَ السَّمَآءِ بِمَآءٍ مُّنْهَمِرٍ
তখন আমি আকাশের দুয়ার প্রবল বৃষ্টির দ্বারা উন্মুক্ত করে দেই। (সূরা ক্বামার– ১১)
জমিন ফেটেও পানি উঠতে লাগল :
وَفَجَّرْنَا الْاَرْضَ عُيُوْنًا فَالْتَقَى الْمَآءُ عَلٰۤى اَمْرٍ قَدْ قُدِرَ
অতঃপর আমি ভূমি হতে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত করলাম, ফলে পরিকল্পনানুসারে সকল পানি এক সাথে মিলিত হলো। (সূরা ক্বামার– ১২)
প্রত্যেক জীবের এক এক জোড়া করে নৌকায় উঠাতে বললেন :
فَاِذَا جَآءَ اَمْرُنَا وَفَارَ التَّنُّوْرُ فَاسْلُكْ فِيْهَا مِنْ كُلٍّ زَوْجَيْنِ اثْنَيْنِ وَاَهْلَكَ اِلَّا مَنْ سَبَقَ عَلَيْهِ الْقَوْلُ مِنْهُمْ
অতঃপর যখন আমার আদেশ আসবে ও চুলা উথলিয়ে উঠবে, তখন প্রত্যেক জীবের এক এক জোড়াকে, তোমার পরিবার-পরিজনকে এবং যাদের বিরুদ্ধে পূর্বে সিদ্ধান্ত হয়েছে তাদেরকে বাদ দিয়ে বাকি সকলকে তাতে উঠিয়ে নিও। (সূরা মু’মিনূনু ২৭)
আল্লাহ ঈমানদারদেরকে নৌকায় উঠাতে বললেন :
حَتّٰۤى اِذَا جَآءَ اَمْرُنَا وَفَارَ التَّنُّوْرُ قُلْنَا احْمِلْ فِيْهَا مِنْ كُلٍّ زَوْجَيْنِ اثْنَيْنِ وَاَهْلَكَ اِلَّا مَنْ سَبَقَ عَلَيْهِ الْقَوْلُ وَمَنْ اٰمَنَ وَمَاۤ اٰمَنَ مَعَهٗۤ اِلَّا قَلِيْلٌ
অবশেষে যখন আমার আদেশ এসে গেল এবং উনান উথলিয়ে উঠল তখন আমি বললাম, এতে প্রত্যেক জাতির দু’টি করে (প্রাণী) উঠিয়ে নাও এবং যাদের বিরুদ্ধে পূর্বসিদ্ধান্ত হয়েছে তারা ব্যতীত তোমার পরিবার–পরিজনকে ও যারা ঈমান এনেছে তাদেরকেও উঠিয়ে নাও। আর অল্প কয়েকজন ব্যতীত তার সঙ্গে আর কেউ ঈমান আনয়ন করেনি। (সূরা হুদু ৪০)
যালিমদের ব্যাপারে সুপারিশ করতে নিষেধ করলেন :
وَلَا تُخَاطِبْنِيْ فِى الَّذِيْنَ ظَلَمُوْاۚ اِنَّهُمْ مُّغْرَقُوْنَ
যারা যুলুম করেছে, তাদের ব্যাপারে তুমি আমাকে কোন আবেদন করো না। অবশ্যই তারা নিমজ্জিত হবে। (সূরা মু’মিনূনু ২৭)
নূহ (আঃ) নৌকায় উঠলেন :
وَحَمَلْنَاهُ عَلٰى ذَاتِ اَلْوَاحٍ وَّدُسُرٍ
অতঃপর নূহকে আরোহণ করালাম কাঠ ও পেরেক নির্মিত এক নৌযানে। (সূরা ক্বামার– ১৩)
নৌকায় উঠে দু‘আ পড়লেন :
وَقَالَ ارْكَبُوْا فِيْهَا بِسْمِ اللهِ مَجْرٖىهَا وَمُرْسَاهَاؕ اِنَّ رَبِّيْ لَغَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
সে বলল, তোমরা এতে আরোহণ করো, আল্লাহর নামে এটার গতি ও স্থিতি। নিশ্চয় আমার প্রতিপালক ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা হুদু ৪১)
فَاِذَا اسْتَوَيْتَ اَنْتَ وَمَنْ مَّعَكَ عَلَى الْفُلْكِ فَقُلِ الْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ نَجَّانَا مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِيْنَ ‐ وَقُلْ رَّبِّ اَنْزِلْنِيْ مُنْزَلًا مُّبَارَكًا وَّاَنْتَ خَيْرُ الْمُنْزِلِيْنَ
যখন তুমি ও তোমার সাথিরা নৌযানে আসন গ্রহণ করবে তখন বলবে, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি আমাদেরকে যালিম সম্প্রদায় হতে উদ্ধার করেছেন। আরো বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে এমনভাবে অবতরণ করাও, যা হবে খুবই কল্যাণকর; আর তুমিই তো সর্বোত্তমভাবে অবতরণ করিয়ে থাক। (সূরা মু’মিনূনু ২৮, ২৯)
নৌকা চলতে লাগল :
وَهِيَ تَجْرِيْ بِهِمْ فِيْ مَوْجٍ كَالْجِبَالِ
পর্বতসম তরঙ্গের মধ্য দিয়ে এটা (নৌকা) তাদেরকে নিয়ে চলল। (সূরা হুদু ৪২)
নৌকা জুদী পাহাড়ে গিয়ে থামল :
وَاسْتَوَتْ عَلَى الْجُوْدِيِّ وَقِيْلَ بُعْدًا لِّلْقَوْمِ الظَّالِمِيْنَ
নৌকা জুদী পর্বতের উপর স্থির হলো এবং বলা হলো, যালিম সম্প্রদায় ধ্বংস হোক। (সূরা হুদু ৪৪)
নৌকা থেকে নামার নির্দেশ দেয়া হলো :
قِيْلَ يَا نُوْحُ اهْبِطْ بِسَلَامٍ مِّنَّا وَبَرَكَاتٍ عَلَيْكَ وَعَلٰۤى اُمَمٍ مِّمَّنْ مَّعَكَؕ وَاُمَمٌ سَنُمَتِّعُهُمْ ثُمَّ يَمَسُّهُمْ مِّنَّا عَذَابٌ اَلِيْمٌ
বলা হলো, হে নূহ! আমার পক্ষ হতে তোমার প্রতি এবং যেসব সম্প্রদায় তোমার সাথে আছে তাদের প্রতি শান্তি ও কল্যাণসহ অবতরণ করো। অপর সম্প্রদায়সমূহকে আমি (আবার) জীবনের (যাবতীয়) উপকরণ প্রদান করব, (তবে নাফরমানির জন্য) তাদেরকে আমার পক্ষ হতে মর্মান্তিক শাস্তিও স্পর্শ করবে। (সূরা হুদ– ৪৮)
বন্যা থামানো হলো :
وَقِيْلَ يَاۤ اَرْضُ ابْلَعِيْ مَآءَكِ وَيَا سَمَآءُ اَقْلِعِيْ وَغِيْضَ الْمَآءُ وَقُضِيَ الْاَمْرُ
এরপর বলা হলো, হে পৃথিবী! তুমি তোমার পানি গ্রাস করে নাও এবং হে আকাশ! ক্ষান্ত হও। এরপর বন্যা প্রশমিত হলো এবং কার্য সমাপ্ত হলো। (সূরা হুদু ৪৪)
আল্লাহ নবীকে মুক্তি দিলেন :
فَاَنْجَيْنَاهُ وَمَنْ مَّعَهٗ فِى الْفُلْكِ الْمَشْحُوْنِ
অতঃপর আমি তাঁকে ও তাঁর সঙ্গে যারা ছিল তাদেরকে বোঝাই নৌযানের মাধ্যমে রক্ষা করলাম। (সূরা শু‘আরা– ১১৯)
وَنَجَّيْنَاهُ وَاَهْلَهٗ مِنَ الْكَرْبِ الْعَظِيْمِ
আর আমি তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে মহাবিপদ থেকে রক্ষা করেছিলাম। (সূরা সাফ্ফাত– ৭৬)
فَنَجَّيْنَاهُ وَمَنْ مَّعَهٗ فِى الْفُلْكِ وَجَعَلْنَاهُمْ خَلَآئِفَ
অতঃপর আমি তাকে ও তার সঙ্গে যারা নৌকাতে ছিল তাদেরকে উদ্ধার করলাম এবং তাদেরকে (তাদের পূর্ববর্তীদের) স্থলাভিষিক্ত করলাম। (সূরা ইউনুস– ৭৩)
এভাবেই আল্লাহ সৎকর্মশীলদেরকে রক্ষা করে থাকেন :
اِنَّا كَذٰلِكَ نَجْزِى الْمُحْسِنِيْنَ
এভাবে আমি খাঁটি বান্দাদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি। (সূরা সাফ্ফাত– ৮০)
وَاصْنَعِ الْفُلْكَ بِاَعْيُنِنَا وَوَحْيِنَا وَلَا تُخَاطِبْنِيْ فِى الَّذِيْنَ ظَلَمُوْاۚ اِنَّهُمْ مُّغْرَقُوْنَ
তুমি আমার চোখের সামনে ও আমার প্রত্যাদেশ অনুযায়ী নৌকা নির্মাণ করো এবং যারা সীমালঙ্ঘন করেছে তাদের সম্পর্কে তুমি আমাকে কিছু বলো না। নিশ্চয় তারা নিমজ্জিত হবে। (সূরা হুদু ৩৭)
فَاَوْحَيْنَاۤ اِلَيْهِ اَنِ اصْنَعِ الْفُلْكَ بِاَعْيُنِنَا وَوَحْيِنَا
অতঃপর আমি তার নিকট ওহী পাঠালাম যে, তুমি আমার চোখের সামনে আমার ওহী অনুযায়ী নৌযান নির্মাণ করো। (সূরা মু’মিনূনু ২৭)
নৌকা তৈরির সময় লোকেরা উপহাস করত :
وَيَصْنَعُ الْفُلْكَ وَكُلَّمَا مَرَّ عَلَيْهِ مَلَأٌ مِّنْ قَوْمِهٖ سَخِرُوْا مِنْهُؕ قَالَ اِنْ تَسْخَرُوْا مِنَّا فَاِنَّا نَسْخَرُ مِنْكُمْ كَمَا تَسْخَرُوْنَ
অতঃপর সে নৌকা নির্মাণ করতে লাগল। ফলে যখনই তার সম্প্রদায়ের প্রধানরা তার নিকট দিয়ে যেত, তাকে উপহাস করত। তখন সে বলত, তোমরা যদি আমাকে উপহাস কর তবে আমরাও তোমাদেরকে উপহাস করব, যেমনিভাবে তোমরা আমাকে উপহাস করছ। (সূরা হুদু ৩৮)
আকাশ হতে পানি নামতে লাগল :
فَفَتَحْنَاۤ اَبْوَابَ السَّمَآءِ بِمَآءٍ مُّنْهَمِرٍ
তখন আমি আকাশের দুয়ার প্রবল বৃষ্টির দ্বারা উন্মুক্ত করে দেই। (সূরা ক্বামার– ১১)
জমিন ফেটেও পানি উঠতে লাগল :
وَفَجَّرْنَا الْاَرْضَ عُيُوْنًا فَالْتَقَى الْمَآءُ عَلٰۤى اَمْرٍ قَدْ قُدِرَ
অতঃপর আমি ভূমি হতে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত করলাম, ফলে পরিকল্পনানুসারে সকল পানি এক সাথে মিলিত হলো। (সূরা ক্বামার– ১২)
প্রত্যেক জীবের এক এক জোড়া করে নৌকায় উঠাতে বললেন :
فَاِذَا جَآءَ اَمْرُنَا وَفَارَ التَّنُّوْرُ فَاسْلُكْ فِيْهَا مِنْ كُلٍّ زَوْجَيْنِ اثْنَيْنِ وَاَهْلَكَ اِلَّا مَنْ سَبَقَ عَلَيْهِ الْقَوْلُ مِنْهُمْ
অতঃপর যখন আমার আদেশ আসবে ও চুলা উথলিয়ে উঠবে, তখন প্রত্যেক জীবের এক এক জোড়াকে, তোমার পরিবার-পরিজনকে এবং যাদের বিরুদ্ধে পূর্বে সিদ্ধান্ত হয়েছে তাদেরকে বাদ দিয়ে বাকি সকলকে তাতে উঠিয়ে নিও। (সূরা মু’মিনূনু ২৭)
আল্লাহ ঈমানদারদেরকে নৌকায় উঠাতে বললেন :
حَتّٰۤى اِذَا جَآءَ اَمْرُنَا وَفَارَ التَّنُّوْرُ قُلْنَا احْمِلْ فِيْهَا مِنْ كُلٍّ زَوْجَيْنِ اثْنَيْنِ وَاَهْلَكَ اِلَّا مَنْ سَبَقَ عَلَيْهِ الْقَوْلُ وَمَنْ اٰمَنَ وَمَاۤ اٰمَنَ مَعَهٗۤ اِلَّا قَلِيْلٌ
অবশেষে যখন আমার আদেশ এসে গেল এবং উনান উথলিয়ে উঠল তখন আমি বললাম, এতে প্রত্যেক জাতির দু’টি করে (প্রাণী) উঠিয়ে নাও এবং যাদের বিরুদ্ধে পূর্বসিদ্ধান্ত হয়েছে তারা ব্যতীত তোমার পরিবার–পরিজনকে ও যারা ঈমান এনেছে তাদেরকেও উঠিয়ে নাও। আর অল্প কয়েকজন ব্যতীত তার সঙ্গে আর কেউ ঈমান আনয়ন করেনি। (সূরা হুদু ৪০)
যালিমদের ব্যাপারে সুপারিশ করতে নিষেধ করলেন :
وَلَا تُخَاطِبْنِيْ فِى الَّذِيْنَ ظَلَمُوْاۚ اِنَّهُمْ مُّغْرَقُوْنَ
যারা যুলুম করেছে, তাদের ব্যাপারে তুমি আমাকে কোন আবেদন করো না। অবশ্যই তারা নিমজ্জিত হবে। (সূরা মু’মিনূনু ২৭)
নূহ (আঃ) নৌকায় উঠলেন :
وَحَمَلْنَاهُ عَلٰى ذَاتِ اَلْوَاحٍ وَّدُسُرٍ
অতঃপর নূহকে আরোহণ করালাম কাঠ ও পেরেক নির্মিত এক নৌযানে। (সূরা ক্বামার– ১৩)
নৌকায় উঠে দু‘আ পড়লেন :
وَقَالَ ارْكَبُوْا فِيْهَا بِسْمِ اللهِ مَجْرٖىهَا وَمُرْسَاهَاؕ اِنَّ رَبِّيْ لَغَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
সে বলল, তোমরা এতে আরোহণ করো, আল্লাহর নামে এটার গতি ও স্থিতি। নিশ্চয় আমার প্রতিপালক ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা হুদু ৪১)
فَاِذَا اسْتَوَيْتَ اَنْتَ وَمَنْ مَّعَكَ عَلَى الْفُلْكِ فَقُلِ الْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ نَجَّانَا مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِيْنَ ‐ وَقُلْ رَّبِّ اَنْزِلْنِيْ مُنْزَلًا مُّبَارَكًا وَّاَنْتَ خَيْرُ الْمُنْزِلِيْنَ
যখন তুমি ও তোমার সাথিরা নৌযানে আসন গ্রহণ করবে তখন বলবে, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি আমাদেরকে যালিম সম্প্রদায় হতে উদ্ধার করেছেন। আরো বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে এমনভাবে অবতরণ করাও, যা হবে খুবই কল্যাণকর; আর তুমিই তো সর্বোত্তমভাবে অবতরণ করিয়ে থাক। (সূরা মু’মিনূনু ২৮, ২৯)
নৌকা চলতে লাগল :
وَهِيَ تَجْرِيْ بِهِمْ فِيْ مَوْجٍ كَالْجِبَالِ
পর্বতসম তরঙ্গের মধ্য দিয়ে এটা (নৌকা) তাদেরকে নিয়ে চলল। (সূরা হুদু ৪২)
নৌকা জুদী পাহাড়ে গিয়ে থামল :
وَاسْتَوَتْ عَلَى الْجُوْدِيِّ وَقِيْلَ بُعْدًا لِّلْقَوْمِ الظَّالِمِيْنَ
নৌকা জুদী পর্বতের উপর স্থির হলো এবং বলা হলো, যালিম সম্প্রদায় ধ্বংস হোক। (সূরা হুদু ৪৪)
নৌকা থেকে নামার নির্দেশ দেয়া হলো :
قِيْلَ يَا نُوْحُ اهْبِطْ بِسَلَامٍ مِّنَّا وَبَرَكَاتٍ عَلَيْكَ وَعَلٰۤى اُمَمٍ مِّمَّنْ مَّعَكَؕ وَاُمَمٌ سَنُمَتِّعُهُمْ ثُمَّ يَمَسُّهُمْ مِّنَّا عَذَابٌ اَلِيْمٌ
বলা হলো, হে নূহ! আমার পক্ষ হতে তোমার প্রতি এবং যেসব সম্প্রদায় তোমার সাথে আছে তাদের প্রতি শান্তি ও কল্যাণসহ অবতরণ করো। অপর সম্প্রদায়সমূহকে আমি (আবার) জীবনের (যাবতীয়) উপকরণ প্রদান করব, (তবে নাফরমানির জন্য) তাদেরকে আমার পক্ষ হতে মর্মান্তিক শাস্তিও স্পর্শ করবে। (সূরা হুদ– ৪৮)
বন্যা থামানো হলো :
وَقِيْلَ يَاۤ اَرْضُ ابْلَعِيْ مَآءَكِ وَيَا سَمَآءُ اَقْلِعِيْ وَغِيْضَ الْمَآءُ وَقُضِيَ الْاَمْرُ
এরপর বলা হলো, হে পৃথিবী! তুমি তোমার পানি গ্রাস করে নাও এবং হে আকাশ! ক্ষান্ত হও। এরপর বন্যা প্রশমিত হলো এবং কার্য সমাপ্ত হলো। (সূরা হুদু ৪৪)
আল্লাহ নবীকে মুক্তি দিলেন :
فَاَنْجَيْنَاهُ وَمَنْ مَّعَهٗ فِى الْفُلْكِ الْمَشْحُوْنِ
অতঃপর আমি তাঁকে ও তাঁর সঙ্গে যারা ছিল তাদেরকে বোঝাই নৌযানের মাধ্যমে রক্ষা করলাম। (সূরা শু‘আরা– ১১৯)
وَنَجَّيْنَاهُ وَاَهْلَهٗ مِنَ الْكَرْبِ الْعَظِيْمِ
আর আমি তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে মহাবিপদ থেকে রক্ষা করেছিলাম। (সূরা সাফ্ফাত– ৭৬)
فَنَجَّيْنَاهُ وَمَنْ مَّعَهٗ فِى الْفُلْكِ وَجَعَلْنَاهُمْ خَلَآئِفَ
অতঃপর আমি তাকে ও তার সঙ্গে যারা নৌকাতে ছিল তাদেরকে উদ্ধার করলাম এবং তাদেরকে (তাদের পূর্ববর্তীদের) স্থলাভিষিক্ত করলাম। (সূরা ইউনুস– ৭৩)
এভাবেই আল্লাহ সৎকর্মশীলদেরকে রক্ষা করে থাকেন :
اِنَّا كَذٰلِكَ نَجْزِى الْمُحْسِنِيْنَ
এভাবে আমি খাঁটি বান্দাদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি। (সূরা সাফ্ফাত– ৮০)
বন্যা তাদেরকে গ্রাস করল :
ثُمَّ اَغْرَقْنَا الْاٰخَرِيْنَ
অতঃপর আমি অপরাপর লোকদেরকে নিমজ্জিত করে দিলাম। (সূরা সাফ্ফাত– ৮২)
তাদেরকে ডুবিয়ে ধ্বংস করে দেয়া হলো :
وَنَصَرْنَاهُ مِنَ الْقَوْمِ الَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَاؕ اِنَّهُمْ كَانُوْا قَوْمَ سَوْءٍ فَاَغْرَقْنَاهُمْ اَجْمَعِيْنَ
আমি তাকে সাহায্য করেছিলাম সে সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে, যারা আমার নিদর্শনাবলিকে অস্বীকার করেছিল; নিশ্চয় তারা ছিল এক মন্দ সম্প্রদায়। ফলে তাদের সকলকেই আমি নিমজ্জিত করেছিলাম। (সূরা আম্বিয়া– ৭৭)
وَاَغْرَقْنَا الَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَاۚ فَانْظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُنْذَرِيْنَ
যারা আমার নিদর্শনাবলিকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, তাদেরকে নিমজ্জিত করেছিলাম। সুতরাং দেখো, যাদেরকে সতর্ক করা হয়েছিল তাদের পরিণাম কী হয়েছিল? (সূরা ইউনুস– ৭৩)
وَاَغْرَقْنَا الَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَاۚ اِنَّهُمْ كَانُوْا قَوْمًا عَمِيْنَ
আর যারা আমার নিদর্শনসমূহকে মিথ্যারোপ করেছে, তাদেরকে আমি (পানিতে) ডুবিয়ে দিয়েছিলাম। মূলত তারা ছিল (গোঁড়াপন্থী ও) অন্ধ সম্প্রদায়। (সূরা আ‘রাফু ৬৪)
তারা জাহান্নামী হয়ে মরল এবং কোন সাহায্যকারীও খুঁজে পেল না :
مِمَّا خَطِيْٓئَاتِهِمْ اُغْرِقُوْا فَاُدْخِلُوْا نَارًا فَلَمْ يَجِدُوْا لَهُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ اَنْصَارًا
তাদের অপরাধের জন্য তাদেরকে নিমজ্জিত করা হয়েছে। অতঃপর তাদেরকে প্রবেশ করানো হয়েছে জাহান্নামে। তখন তারা আল্লাহর বিরুদ্ধে সাহায্যকারী হিসেবে কাউকে পায়নি। (সূরা নূহ– ২৫)
এ আযাবের ধরণ ছিল ভয়ানক :
فَكَيْفَ كَانَ عَذَابِيْ وَنُذُرِ
সুতরাং (বলো) কেমন ছিল আমার আযাব ও সতর্কবাণী। (সূরা ক্বামার– ১৬)
নবী তার ছেলেকে নৌকায় উঠতে বলেছিলেন :
وَنَادٰى نُوْحُ نِ ابْنَهٗ وَكَانَ فِيْ مَعْزِلٍ يَّا بُنَيَّ ارْكَبْ مَّعَنَا وَلَا تَكُنْ مَّعَ الْكَافِرِيْنَ
নূহ তার পুত্রকে আহবান করল, এমতাবস্থায় সে আলাদা হয়ে গিয়েছিল। হে আমার পুত্র! আমাদের সঙ্গে আরোহণ করো এবং কাফিরদের সঙ্গী হয়ো না। (সূরা হুদু ৪২)
কিন্তু সে পাহাড়ে উঠে বাঁচতে চাইল :
قَالَ سَاٰوِيْۤ اِلٰى جَبَلٍ يَّعْصِمُنِيْ مِنَ الْمَآءِ
সে বলল, আমি এমন এক পর্বতে আশ্রয় নেব, যা আমাকে পলাবন হতে রক্ষা করবে। (সূরা হুদু ৪৩)
নবী বললেন, তোমাকে কেউ বাঁচাতে পারবে না :
قَالَ لَا عَاصِمَ الْيَوْمَ مِنْ اَمْرِ اللهِ اِلَّا مَنْ رَّحِمَ
সে বলল, আজ আল্লাহর সিদ্ধান্ত থেকে রক্ষা করার কেউ নেই, তবে যাকে আল্লাহ দয়া করবেন সে ব্যতীত। (সূরা হুদু ৪৩)
ছেলের ব্যাপারে আল্লাহর নিকট সুপারিশ করলেন :
وَنَادٰى نُوْحٌ رَّبَّهٗ فَقَالَ رَبِّ اِنَّ ابْنِيْ مِنْ اَهْلِيْ وَاِنَّ وَعْدَكَ الْحَقُّ وَاَنْتَ اَحْكَمُ الْحَاكِمِيْنَ
নূহ তার প্রতিপালককে সম্বোধন করে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমার পুত্র আমার পরিবারভুক্ত এবং আপনার প্রতিশ্রুতি সত্য। আর আপনি তো বিচারকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিচারক। (সূরা হুদু ৪৫)
আল্লাহ নবীকে সতর্ক করে দিলেন :
قَالَ يَا نُوْحُ اِنَّهٗ لَيْسَ مِنْ اَهْلِكَ اِنَّهٗ عَمَلٌ غَيْرُ صَالِحٍ فَلَا تَسْاَلْنِ مَا لَيْسَ لَكَ بِهٖ عِلْمٌ اِنِّۤيْ اَعِظُكَ اَنْ تَكُوْنَ مِنَ الْجَاهِلِيْنَ
তিনি বললেন, হে নূহ! সে তো তোমার পরিবারভুক্ত নয়। নিশ্চয় সে অসৎকর্মপরায়ণ। সুতরাং যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই, সে বিষয়ে আমাকে অনুরোধ করো না। আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি, তুমি যেন অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত না হও। (সূরা হুদু ৪৬)
নবী আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলেন :
قَالَ رَبِّ اِنِّۤيْ اَعُوْذُ بِكَ اَنْ اَسْاَلَكَ مَا لَيْسَ لِيْ بِهٖ عِلْمٌؕ وَاِلَّا تَغْفِرْ لِيْ وَتَرْحَمْنِيْۤ اَكُنْ مِّنَ الْخَاسِرِيْنَ
সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! যে বিষয়ে আমার জ্ঞান নেই সে বিষয়ে আপনার কাছে অনুরোধ করা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। আপনি যদি আমাকে ক্ষমা না করেন এবং আমাকে দয়া না করেন, তবে আমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব। (সূরা হুদু ৪৭)
নবীর ছেলে সেখানেই ডুবে মরল :
وَحَالَ بَيْنَهُمَا الْمَوْجُ فَكَانَ مِنَ الْمُغْرَقِيْنَ
এরপর তরঙ্গ তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে দিল এবং সে নিমজ্জিতদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল। (সূরা হুদু ৪৩)
ثُمَّ اَغْرَقْنَا الْاٰخَرِيْنَ
অতঃপর আমি অপরাপর লোকদেরকে নিমজ্জিত করে দিলাম। (সূরা সাফ্ফাত– ৮২)
তাদেরকে ডুবিয়ে ধ্বংস করে দেয়া হলো :
وَنَصَرْنَاهُ مِنَ الْقَوْمِ الَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَاؕ اِنَّهُمْ كَانُوْا قَوْمَ سَوْءٍ فَاَغْرَقْنَاهُمْ اَجْمَعِيْنَ
আমি তাকে সাহায্য করেছিলাম সে সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে, যারা আমার নিদর্শনাবলিকে অস্বীকার করেছিল; নিশ্চয় তারা ছিল এক মন্দ সম্প্রদায়। ফলে তাদের সকলকেই আমি নিমজ্জিত করেছিলাম। (সূরা আম্বিয়া– ৭৭)
وَاَغْرَقْنَا الَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَاۚ فَانْظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُنْذَرِيْنَ
যারা আমার নিদর্শনাবলিকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, তাদেরকে নিমজ্জিত করেছিলাম। সুতরাং দেখো, যাদেরকে সতর্ক করা হয়েছিল তাদের পরিণাম কী হয়েছিল? (সূরা ইউনুস– ৭৩)
وَاَغْرَقْنَا الَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَاۚ اِنَّهُمْ كَانُوْا قَوْمًا عَمِيْنَ
আর যারা আমার নিদর্শনসমূহকে মিথ্যারোপ করেছে, তাদেরকে আমি (পানিতে) ডুবিয়ে দিয়েছিলাম। মূলত তারা ছিল (গোঁড়াপন্থী ও) অন্ধ সম্প্রদায়। (সূরা আ‘রাফু ৬৪)
তারা জাহান্নামী হয়ে মরল এবং কোন সাহায্যকারীও খুঁজে পেল না :
مِمَّا خَطِيْٓئَاتِهِمْ اُغْرِقُوْا فَاُدْخِلُوْا نَارًا فَلَمْ يَجِدُوْا لَهُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ اَنْصَارًا
তাদের অপরাধের জন্য তাদেরকে নিমজ্জিত করা হয়েছে। অতঃপর তাদেরকে প্রবেশ করানো হয়েছে জাহান্নামে। তখন তারা আল্লাহর বিরুদ্ধে সাহায্যকারী হিসেবে কাউকে পায়নি। (সূরা নূহ– ২৫)
এ আযাবের ধরণ ছিল ভয়ানক :
فَكَيْفَ كَانَ عَذَابِيْ وَنُذُرِ
সুতরাং (বলো) কেমন ছিল আমার আযাব ও সতর্কবাণী। (সূরা ক্বামার– ১৬)
নবী তার ছেলেকে নৌকায় উঠতে বলেছিলেন :
وَنَادٰى نُوْحُ نِ ابْنَهٗ وَكَانَ فِيْ مَعْزِلٍ يَّا بُنَيَّ ارْكَبْ مَّعَنَا وَلَا تَكُنْ مَّعَ الْكَافِرِيْنَ
নূহ তার পুত্রকে আহবান করল, এমতাবস্থায় সে আলাদা হয়ে গিয়েছিল। হে আমার পুত্র! আমাদের সঙ্গে আরোহণ করো এবং কাফিরদের সঙ্গী হয়ো না। (সূরা হুদু ৪২)
কিন্তু সে পাহাড়ে উঠে বাঁচতে চাইল :
قَالَ سَاٰوِيْۤ اِلٰى جَبَلٍ يَّعْصِمُنِيْ مِنَ الْمَآءِ
সে বলল, আমি এমন এক পর্বতে আশ্রয় নেব, যা আমাকে পলাবন হতে রক্ষা করবে। (সূরা হুদু ৪৩)
নবী বললেন, তোমাকে কেউ বাঁচাতে পারবে না :
قَالَ لَا عَاصِمَ الْيَوْمَ مِنْ اَمْرِ اللهِ اِلَّا مَنْ رَّحِمَ
সে বলল, আজ আল্লাহর সিদ্ধান্ত থেকে রক্ষা করার কেউ নেই, তবে যাকে আল্লাহ দয়া করবেন সে ব্যতীত। (সূরা হুদু ৪৩)
ছেলের ব্যাপারে আল্লাহর নিকট সুপারিশ করলেন :
وَنَادٰى نُوْحٌ رَّبَّهٗ فَقَالَ رَبِّ اِنَّ ابْنِيْ مِنْ اَهْلِيْ وَاِنَّ وَعْدَكَ الْحَقُّ وَاَنْتَ اَحْكَمُ الْحَاكِمِيْنَ
নূহ তার প্রতিপালককে সম্বোধন করে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমার পুত্র আমার পরিবারভুক্ত এবং আপনার প্রতিশ্রুতি সত্য। আর আপনি তো বিচারকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিচারক। (সূরা হুদু ৪৫)
আল্লাহ নবীকে সতর্ক করে দিলেন :
قَالَ يَا نُوْحُ اِنَّهٗ لَيْسَ مِنْ اَهْلِكَ اِنَّهٗ عَمَلٌ غَيْرُ صَالِحٍ فَلَا تَسْاَلْنِ مَا لَيْسَ لَكَ بِهٖ عِلْمٌ اِنِّۤيْ اَعِظُكَ اَنْ تَكُوْنَ مِنَ الْجَاهِلِيْنَ
তিনি বললেন, হে নূহ! সে তো তোমার পরিবারভুক্ত নয়। নিশ্চয় সে অসৎকর্মপরায়ণ। সুতরাং যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই, সে বিষয়ে আমাকে অনুরোধ করো না। আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি, তুমি যেন অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত না হও। (সূরা হুদু ৪৬)
নবী আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলেন :
قَالَ رَبِّ اِنِّۤيْ اَعُوْذُ بِكَ اَنْ اَسْاَلَكَ مَا لَيْسَ لِيْ بِهٖ عِلْمٌؕ وَاِلَّا تَغْفِرْ لِيْ وَتَرْحَمْنِيْۤ اَكُنْ مِّنَ الْخَاسِرِيْنَ
সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! যে বিষয়ে আমার জ্ঞান নেই সে বিষয়ে আপনার কাছে অনুরোধ করা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। আপনি যদি আমাকে ক্ষমা না করেন এবং আমাকে দয়া না করেন, তবে আমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব। (সূরা হুদু ৪৭)
নবীর ছেলে সেখানেই ডুবে মরল :
وَحَالَ بَيْنَهُمَا الْمَوْجُ فَكَانَ مِنَ الْمُغْرَقِيْنَ
এরপর তরঙ্গ তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে দিল এবং সে নিমজ্জিতদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল। (সূরা হুদু ৪৩)
এ ঘটনায় নিদর্শন রয়েছে :
فَاَنْجَيْنَاهُ وَاَصْحَابَ السَّفِيْنَةِ وَجَعَلْنَاهَاۤ اٰيَةً لِّلْعَالَمِيْنَ
অতঃপর আমি তাকে এবং যারা নৌকাতে আরোহণ করেছিল তাদেরকে রক্ষা করলাম। আর এটাকে বিশ্ববাসীর জন্য একটি নিদর্শন বানিয়ে দিলাম। (সূরা আনকাবূত– ১৫)
اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةًؕ وَمَا كَانَ اَكْثَرُهُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
নিশ্চয় এতে রয়েছে নিদর্শন, কিন্তু তাদের অধিকাংশই এতে বিশ্বাসী নয়। (সূরা শু‘আরা– ১২১)
اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰٰيَاتٍ وَّاِنْ كُنَّا لَمُبْتَلِيْنَ
নিশ্চয় এতে রয়েছে নিদর্শন, আর আমি তাদেরকে পরীক্ষা করেছিলাম। (সূরা মু’মিনূনু ৩০)
وَقَوْمَ نُوْحٍ لَّمَّا كَذَّبُوا الرُّسُلَ اَغْرَقْنَاهُمْ وَجَعَلْنَاهُمْ لِلنَّاسِ اٰيَةً
আর নূহের সম্প্রদায়কেও (ধ্বংস করেছিলাম)। যখন তারা রাসূলদের প্রতি মিথ্যারোপ করল, তখন আমি তাদেরকে নিমজ্জিত করলাম এবং তাদেরকে মানবজাতির জন্য নিদর্শনস্বরূপ করে রাখলাম। (সূরা ফুরক্বানু ৩৭)
এ ঘটনায় রয়েছে অনেক উপদেশ :
اِنَّا لَمَّا طَغَى الْمَآءُ حَمَلْنَاكُمْ فِى الْجَارِيَةِ ‐ لِنَجْعَلَهَا لَكُمْ تَذْكِرَةً وَّتَعِيَهَاۤ اُذُنٌ وَّاعِيَةٌ
যখন পানি (নির্দিষ্ট) সীমা অতিক্রম করল, তখন আমি তোমাদেরকে (বাঁচানোর জন্য) নৌকায় উঠিয়ে নিয়েছিলাম। যেন আমি এটাকে তোমাদের জন্য একটি শিক্ষামূলক ঘটনা বানিয়ে রাখতে পারি। তাছাড়া উৎসাহী কানগুলোও যেন এ বিষয়টা (পরবর্তী মানুষদের জন্য) স্মরণ রাখতে পারে। (সূরা হাক্কাহ– ১১, ১২)
উপদেশ গ্রহণ করার মতো কেউ আছে কি? :
وَلَقَدْ تَّرَكْنَاهَاۤ اٰيَةً فَهَلْ مِنْ مُّدَّكِرٍ
আমি এটাকে নিদর্শনরূপে রেখে দিয়েছি; অতএব উপদেশ গ্রহণকারী হিসেবে কেউ আছে কি? (সূরা ক্বামার– ১৫)
এ নৌকাবাসী থেকেই পরবর্তী প্রজন্মের সূচনা :
ذُرِّيَّةَ مَنْ حَمَلْنَا مَعَ نُوْحٍؕ اِنَّهٗ كَانَ عَبْدًا شَكُوْرًا
(তোমরা তো) তাদের বংশধর! যাদেরকে আমি নূহের সাথে আরোহণ করিয়েছিলাম। নিশ্চয় সে ছিল পরম কৃতজ্ঞ বান্দা! (সূরা বনী ইসরাঈল– ৩)
وَجَعَلْنَا ذُرِّيَّتَهٗ هُمُ الْبَاقِيْنَ
আর আমি তার বংশধরদেরকেই অবশিষ্ট রাখলাম। (সূরা সাফ্ফাত– ৭৭)
নূহ (আঃ) এর ইতিহাস স্মরণীয় :
وَتَرَكْنَا عَلَيْهِ فِى الْاٰخِرِيْنَ
আর আমি তার জন্য ভবিষ্যৎ বংশধরদের মধ্যে (এ ইতিহাস) রেখে দিলাম। (সূরা সাফ্ফাত– ৭৮)
নূহ (আঃ) এর ঘটনা প্রচারের নির্দেশ :
وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَاَ نُوْحٍ
তাদেরকে নূহের বৃত্তান্ত বর্ণনা করে শুনাও। (সূরা ইউনুস– ৭১)
নূহ (আঃ) এর প্রতি সালাম :
سَلَامٌ عَلٰى نُوْحٍ فِى الْعَالَمِيْنَ
বিশ্ববাসীদের মধ্যে নূহের প্রতি ‘সালাম’। (সূরা সাফ্ফাত– ৭৯)
فَاَنْجَيْنَاهُ وَاَصْحَابَ السَّفِيْنَةِ وَجَعَلْنَاهَاۤ اٰيَةً لِّلْعَالَمِيْنَ
অতঃপর আমি তাকে এবং যারা নৌকাতে আরোহণ করেছিল তাদেরকে রক্ষা করলাম। আর এটাকে বিশ্ববাসীর জন্য একটি নিদর্শন বানিয়ে দিলাম। (সূরা আনকাবূত– ১৫)
اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةًؕ وَمَا كَانَ اَكْثَرُهُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
নিশ্চয় এতে রয়েছে নিদর্শন, কিন্তু তাদের অধিকাংশই এতে বিশ্বাসী নয়। (সূরা শু‘আরা– ১২১)
اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰٰيَاتٍ وَّاِنْ كُنَّا لَمُبْتَلِيْنَ
নিশ্চয় এতে রয়েছে নিদর্শন, আর আমি তাদেরকে পরীক্ষা করেছিলাম। (সূরা মু’মিনূনু ৩০)
وَقَوْمَ نُوْحٍ لَّمَّا كَذَّبُوا الرُّسُلَ اَغْرَقْنَاهُمْ وَجَعَلْنَاهُمْ لِلنَّاسِ اٰيَةً
আর নূহের সম্প্রদায়কেও (ধ্বংস করেছিলাম)। যখন তারা রাসূলদের প্রতি মিথ্যারোপ করল, তখন আমি তাদেরকে নিমজ্জিত করলাম এবং তাদেরকে মানবজাতির জন্য নিদর্শনস্বরূপ করে রাখলাম। (সূরা ফুরক্বানু ৩৭)
এ ঘটনায় রয়েছে অনেক উপদেশ :
اِنَّا لَمَّا طَغَى الْمَآءُ حَمَلْنَاكُمْ فِى الْجَارِيَةِ ‐ لِنَجْعَلَهَا لَكُمْ تَذْكِرَةً وَّتَعِيَهَاۤ اُذُنٌ وَّاعِيَةٌ
যখন পানি (নির্দিষ্ট) সীমা অতিক্রম করল, তখন আমি তোমাদেরকে (বাঁচানোর জন্য) নৌকায় উঠিয়ে নিয়েছিলাম। যেন আমি এটাকে তোমাদের জন্য একটি শিক্ষামূলক ঘটনা বানিয়ে রাখতে পারি। তাছাড়া উৎসাহী কানগুলোও যেন এ বিষয়টা (পরবর্তী মানুষদের জন্য) স্মরণ রাখতে পারে। (সূরা হাক্কাহ– ১১, ১২)
উপদেশ গ্রহণ করার মতো কেউ আছে কি? :
وَلَقَدْ تَّرَكْنَاهَاۤ اٰيَةً فَهَلْ مِنْ مُّدَّكِرٍ
আমি এটাকে নিদর্শনরূপে রেখে দিয়েছি; অতএব উপদেশ গ্রহণকারী হিসেবে কেউ আছে কি? (সূরা ক্বামার– ১৫)
এ নৌকাবাসী থেকেই পরবর্তী প্রজন্মের সূচনা :
ذُرِّيَّةَ مَنْ حَمَلْنَا مَعَ نُوْحٍؕ اِنَّهٗ كَانَ عَبْدًا شَكُوْرًا
(তোমরা তো) তাদের বংশধর! যাদেরকে আমি নূহের সাথে আরোহণ করিয়েছিলাম। নিশ্চয় সে ছিল পরম কৃতজ্ঞ বান্দা! (সূরা বনী ইসরাঈল– ৩)
وَجَعَلْنَا ذُرِّيَّتَهٗ هُمُ الْبَاقِيْنَ
আর আমি তার বংশধরদেরকেই অবশিষ্ট রাখলাম। (সূরা সাফ্ফাত– ৭৭)
নূহ (আঃ) এর ইতিহাস স্মরণীয় :
وَتَرَكْنَا عَلَيْهِ فِى الْاٰخِرِيْنَ
আর আমি তার জন্য ভবিষ্যৎ বংশধরদের মধ্যে (এ ইতিহাস) রেখে দিলাম। (সূরা সাফ্ফাত– ৭৮)
নূহ (আঃ) এর ঘটনা প্রচারের নির্দেশ :
وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَاَ نُوْحٍ
তাদেরকে নূহের বৃত্তান্ত বর্ণনা করে শুনাও। (সূরা ইউনুস– ৭১)
নূহ (আঃ) এর প্রতি সালাম :
سَلَامٌ عَلٰى نُوْحٍ فِى الْعَالَمِيْنَ
বিশ্ববাসীদের মধ্যে নূহের প্রতি ‘সালাম’। (সূরা সাফ্ফাত– ৭৯)
ইদ্রীস (আঃ) ছিলেন একজন নবী। বাইবেলে তাকে ‘ইনক’ নামে উল্লেখ করা হয়েছে। কুরআন ও হাদীসে তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে কোনকিছু আলোচনা করা হয়নি। বর্তমানে তিনি ৪র্থ আসমানে অবস্থান করছেন। মি‘রাজের রাত্রিতে রাসূল ﷺ তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করেন। বর্ণিত আছে যে, ইদ্রীস (আঃ) হলেন প্রথম মানব, যাঁকে মু‘জিযা হিসেবে জ্যোতির্বিজ্ঞান ও অংকবিজ্ঞান দান করা হয়েছিল। তিনিই সর্বপ্রথম মানব, যিনি আল্লাহর ইলহামের মাধ্যমে কলমের সাহায্যে লিখন পদ্ধতি ও বস্ত্র সেলাই শিল্পের সূচনা করেন। তাঁর পূর্বে মানুষ সাধারণত পোশাক হিসেবে জীবজন্তুর চামড়া ব্যবহার করত। ওজন ও পরিমাপের পদ্ধতি তিনিই সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেন এবং লোহা দ্বারা অস্ত্র-শস্ত্র তৈরির পদ্ধতি আবিষ্কার ও তার ব্যবহার তাঁর আমল থেকেই শুরু হয়।
ইদ্রীস (আঃ) ছিলেন একজন সৎ নবী :
وَاذْكُرْ فِى الْكِتَابِ اِدْرِيْسَؗ اِنَّهٗ كَانَ صِدِّيْقًا نَّبِيًّا
এ কিতাবে ইদ্রীসের কথা স্মরণ করো, সে ছিল একজন সত্যনিষ্ঠ ব্যক্তি ও নবী। (সূরা মারইয়াম– ৫৬)
তিনি ধৈর্যশীল নবী ছিলেন :
وَاِسْمَاعِيْلَ وَاِدْرِيْسَ وَذَا الْكِفْلِؕ كُلٌّ مِّنَ الصَّابِرِيْنَ
স্মরণ করো, ইসমাঈল, ইদ্রীস ও যুলকিফল–এর কথা, তারা প্রত্যেকেই ছিল ধৈর্যশীল। (সূরা আম্বিয়া– ৮৫)
আল্লাহ তাকে উচ্চমর্যাদা দান করেছিলেন :
وَرَفَعْنَاهُ مَكَانًا عَلِيًّا
আমি তাকে উন্নীত করেছিলাম উচ্চমর্যাদায়। (সূরা মারইয়াম– ৫৭)
ইদ্রীস (আঃ) ছিলেন একজন সৎ নবী :
وَاذْكُرْ فِى الْكِتَابِ اِدْرِيْسَؗ اِنَّهٗ كَانَ صِدِّيْقًا نَّبِيًّا
এ কিতাবে ইদ্রীসের কথা স্মরণ করো, সে ছিল একজন সত্যনিষ্ঠ ব্যক্তি ও নবী। (সূরা মারইয়াম– ৫৬)
তিনি ধৈর্যশীল নবী ছিলেন :
وَاِسْمَاعِيْلَ وَاِدْرِيْسَ وَذَا الْكِفْلِؕ كُلٌّ مِّنَ الصَّابِرِيْنَ
স্মরণ করো, ইসমাঈল, ইদ্রীস ও যুলকিফল–এর কথা, তারা প্রত্যেকেই ছিল ধৈর্যশীল। (সূরা আম্বিয়া– ৮৫)
আল্লাহ তাকে উচ্চমর্যাদা দান করেছিলেন :
وَرَفَعْنَاهُ مَكَانًا عَلِيًّا
আমি তাকে উন্নীত করেছিলাম উচ্চমর্যাদায়। (সূরা মারইয়াম– ৫৭)
হুদ (আঃ) শক্তিশালী আদ জাতির প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন। তাদের বসতি ছিল আম্মান থেকে শুরু করে হাযরামাউত ও ইয়ামান পর্যন্ত। তাদের গোত্র ছিল ১৩টি। আল্লাহ তা‘আলা এ জাতিকে অসংখ্য নিয়ামত দান করেছিলেন। কিন্তু তারা বিলাসিতায় মত্ত হয়ে সবকিছু ভুলে গিয়েছিল; এমনকি নূহ (আঃ) এর সর্বগ্রাসী মহাপ্লাবনের কথাও ভুলে গিয়েছিল। ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাদের হেদায়াতের জন্য তাদের মধ্য হতে হুদ (আঃ) কে নবী হিসেবে প্রেরণ করেন। কিন্তু তাঁর কওম তাঁকে প্রত্যাখ্যান করে এবং তাঁকে পাগল হিসেবে সাব্যস্ত করে। ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দানের মাধ্যমে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেন এবং হুদ (আঃ) ও তাঁর ঈমানদার সাথিদেরকে রক্ষা করেন। অতঃপর তিনি মক্কায় চলে যান এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন।
হুদ (আঃ) ছিলেন আদ জাতির নবী :
وَاِلٰى عَادٍ اَخَاهُمْ هُوْدًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرُهٗۤ اَفَلَا تَتَّقُوْنَ
আমি আদ জাতির নিকট তাদের ভাই হুদকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো, তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই। তোমরা কি সাবধান হবে না? (সূরা আ‘রাফু ৬৫)
তারা ছিল আহকাফের অধিবাসী :
وَاذْكُرْ اَخَا عَادٍؕ اِذْ اَنْذَرَ قَوْمَهٗ بِالْاَحْقَافِ
এদেরকে আদ জাতির ভাই (হুদ) এর কাহিনী স্মরণ করিয়ে দাও, যখন তিনি আহকাফে তাঁর কওমকে সাবধান করেছিলেন। (সূরা আহকাফু ২১)
নূহ (আঃ) এর পরেই তাদের উত্থান হয়েছিল :
وَاذْكُرُوْاۤ اِذْ جَعَلَكُمْ خُلَفَآءَ مِنْ ۢبَعْدِ قَوْمِ نُوْحٍ
স্মরণ করো, আল্লাহ তোমাদেরকে নূহের সম্প্রদায়ের পরে তাদের স্থলাভিষিক্ত করেছেন। (সূরা আ‘রাফু ৬৯)
তারা নজিরবিহীন জাতি ছিল :
اَلَّتِيْ لَمْ يُخْلَقْ مِثْلُهَا فِى الْبِلَادِ
(শক্তি ও সাহসের দিক থেকে) যাদের সমান সারা বিশ্বের শহরসমূহে আর কাউকে সৃষ্টি করা হয়নি। (সূরা ফাজর– ৮)
তারা বলিষ্ঠ ও স্বাস্থ্যবান ছিল :
وَزَادَكُمْ فِى الْخَلْقِ بَسْطَةً فَاذْكُرُوْاۤ اٰلَآءَ اللهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
তোমাদেরকে দৈহিক গঠনে অধিকতর হৃষ্টপুষ্ট ও বলিষ্ঠ করেছেন। সুতরাং তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহকে স্মরণ করো, হয়তো তোমরা সফলকাম হবে। (সূরা আ‘রাফু ৬৯)
وَاِلٰى عَادٍ اَخَاهُمْ هُوْدًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرُهٗۤ اَفَلَا تَتَّقُوْنَ
আমি আদ জাতির নিকট তাদের ভাই হুদকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো, তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই। তোমরা কি সাবধান হবে না? (সূরা আ‘রাফু ৬৫)
তারা ছিল আহকাফের অধিবাসী :
وَاذْكُرْ اَخَا عَادٍؕ اِذْ اَنْذَرَ قَوْمَهٗ بِالْاَحْقَافِ
এদেরকে আদ জাতির ভাই (হুদ) এর কাহিনী স্মরণ করিয়ে দাও, যখন তিনি আহকাফে তাঁর কওমকে সাবধান করেছিলেন। (সূরা আহকাফু ২১)
নূহ (আঃ) এর পরেই তাদের উত্থান হয়েছিল :
وَاذْكُرُوْاۤ اِذْ جَعَلَكُمْ خُلَفَآءَ مِنْ ۢبَعْدِ قَوْمِ نُوْحٍ
স্মরণ করো, আল্লাহ তোমাদেরকে নূহের সম্প্রদায়ের পরে তাদের স্থলাভিষিক্ত করেছেন। (সূরা আ‘রাফু ৬৯)
তারা নজিরবিহীন জাতি ছিল :
اَلَّتِيْ لَمْ يُخْلَقْ مِثْلُهَا فِى الْبِلَادِ
(শক্তি ও সাহসের দিক থেকে) যাদের সমান সারা বিশ্বের শহরসমূহে আর কাউকে সৃষ্টি করা হয়নি। (সূরা ফাজর– ৮)
তারা বলিষ্ঠ ও স্বাস্থ্যবান ছিল :
وَزَادَكُمْ فِى الْخَلْقِ بَسْطَةً فَاذْكُرُوْاۤ اٰلَآءَ اللهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
তোমাদেরকে দৈহিক গঠনে অধিকতর হৃষ্টপুষ্ট ও বলিষ্ঠ করেছেন। সুতরাং তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহকে স্মরণ করো, হয়তো তোমরা সফলকাম হবে। (সূরা আ‘রাফু ৬৯)
তারা নবীদেরকে মানত না :
اِذْ جَآءَتْهُمُ الرُّسُلُ مِنْ ۢ بَيْنِ اَيْدِيْهِمْ وَمِنْ خَلْفِهِمْ اَلَّا تَعْبُدُوْاۤ اِلَّا اللهَؕ قَالُوْا لَوْ شَآءَ رَبُّنَا لَاَنْزَلَ مَلَآئِكَةً فَاِنَّا بِمَاۤ اُرْسِلْتُمْ بِهٖ كَافِرُوْنَ
যখন তাদের নিকট রাসূলগণ এসেছিলেন তাদের সম্মুখ ও পশ্চাৎ হতে (এ কথা বলেছিলেন যে) তোমরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো ইবাদাত করো না। তখন তারা বলেছিল, আমাদের প্রতিপালকের এরূপ ইচ্ছা হলে তিনি অবশ্যই ফেরেশতা পাঠাতেন। তুমি যা কিছুসহ প্রেরিত হয়েছ, নিশ্চয় আমরা তা প্রত্যাখ্যান করছি। (সূরা হা–মীম সিজদা– ১৪)
তারা শক্তির গর্ব করত :
فَاَمَّا عَادٌ فَاسْتَكْبَرُوْا فِى الْاَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَقَالُوْا مَنْ اَشَدُّ مِنَّا قُوَّةًؕ اَوَلَمْ يَرَوْا اَنَّ اللهَ الَّذِيْ خَلَقَهُمْ هُوَ اَشَدُّ مِنْهُمْ قُوَّةً وَّكَانُوْا بِاٰيَاتِنَا يَجْحَدُوْنَ
আদ সম্প্রদায়ের ব্যাপার এই যে, তারা পৃথিবীতে অযথা দম্ভ করত এবং বলত, আমাদের অপেক্ষা শক্তিশালী আর কে আছে? তবে তারা কি লক্ষ্য করেনি যে, নিশ্চয় আল্লাহ, যিনি তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তিনি তাদের অপেক্ষা অনেক শক্তিশালী? অথচ তারা আমার নিদর্শনাবলিকে অস্বীকার করত। (সূরা হা–মীম সিজদা– ১৫)
আদ জাতি প্রবলভাবে আক্রমণ চালাত :
وَاِذَا بَطَشْتُمْ بَطَشْتُمْ جَبَّارِيْنَ
আর যখন তোমরা আঘাত হানতে, তখন কঠোরভাবে আঘাত হানতে। (সূরা শু‘আরা– ১৩০)
তারা উঁচু জায়গায় অনর্থক স্তম্ভ নির্মাণ করত :
اَتَبْنُوْنَ بِكُلِّ رِيْعٍ اٰيَةً تَعْبَثُوْنَ ‐ وَتَتَّخِذُوْنَ مَصَانِعَ لَعَلَّكُمْ تَخْلُدُوْنَ
তোমরা কি প্রতিটি উঁচু স্থানে নিরর্থকভাবে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করছ? তোমরা প্রাসাদ নির্মাণ করছ এ মনে করে যে, তোমরা চিরস্থায়ী হবে। (সূরা শু‘আরা– ১২৮, ১২৯)
তারা স্বৈরাচারী শাসকের আদেশ মানত :
وَتِلْكَ عَادٌ جَحَدُوْا بِاٰيَاتِ رَبِّهِمْ وَعَصَوْا رُسُلَهٗ وَاتَّبَعُوْاۤ اَمْرَ كُلِّ جَبَّارٍ عَنِيْدٍ
ওরাই আদ জাতি, যারা তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করেছিল এবং তাঁর রাসূলদেরকে অমান্য করেছিল। আর তারা প্রত্যেক উদ্ধত স্বৈরাচারীর নির্দেশ অনুসরণ করেছিল। (সূরা হুদু ৫৯)
তারা শিরক করত :
قَالُوْاۤ اَجِئْتَنَا لِنَعْبُدَ اللهَ وَحْدَهٗ وَنَذَرَ مَا كَانَ يَعْبُدُ اٰبَآؤُنَاۚ فَأْتِنَا بِمَا تَعِدُنَاۤ اِنْ كُنْتَ مِنَ الصَّادِقِيْنَ
তারা বলল, তুমি কি আমাদের নিকট এ উদ্দেশ্যে এসেছ যে, আমরা যেন এক আল্লাহর ইবাদাত করি এবং আমাদের পূর্বপুরুষরা যার ইবাদাত করত তা বর্জন করি? সুতরাং তুমি সত্যবাদী হলে আমাদেরকে যার ভয় দেখাচ্ছ তা নিয়ে আসো। (সূরা আ‘রাফু ৭০)
তারা কিয়ামতের প্রতি বিশ্বাসী ছিল না :
كَذَّبَتْ ثَمُوْدُ وَعَادٌ ۢبِالْقَارِعَةِ
আদ ও সামূদ সম্প্রদায় মহাপ্রলয়কে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল। (সূরা হাক্কাহ– ৪)
اِذْ جَآءَتْهُمُ الرُّسُلُ مِنْ ۢ بَيْنِ اَيْدِيْهِمْ وَمِنْ خَلْفِهِمْ اَلَّا تَعْبُدُوْاۤ اِلَّا اللهَؕ قَالُوْا لَوْ شَآءَ رَبُّنَا لَاَنْزَلَ مَلَآئِكَةً فَاِنَّا بِمَاۤ اُرْسِلْتُمْ بِهٖ كَافِرُوْنَ
যখন তাদের নিকট রাসূলগণ এসেছিলেন তাদের সম্মুখ ও পশ্চাৎ হতে (এ কথা বলেছিলেন যে) তোমরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো ইবাদাত করো না। তখন তারা বলেছিল, আমাদের প্রতিপালকের এরূপ ইচ্ছা হলে তিনি অবশ্যই ফেরেশতা পাঠাতেন। তুমি যা কিছুসহ প্রেরিত হয়েছ, নিশ্চয় আমরা তা প্রত্যাখ্যান করছি। (সূরা হা–মীম সিজদা– ১৪)
তারা শক্তির গর্ব করত :
فَاَمَّا عَادٌ فَاسْتَكْبَرُوْا فِى الْاَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَقَالُوْا مَنْ اَشَدُّ مِنَّا قُوَّةًؕ اَوَلَمْ يَرَوْا اَنَّ اللهَ الَّذِيْ خَلَقَهُمْ هُوَ اَشَدُّ مِنْهُمْ قُوَّةً وَّكَانُوْا بِاٰيَاتِنَا يَجْحَدُوْنَ
আদ সম্প্রদায়ের ব্যাপার এই যে, তারা পৃথিবীতে অযথা দম্ভ করত এবং বলত, আমাদের অপেক্ষা শক্তিশালী আর কে আছে? তবে তারা কি লক্ষ্য করেনি যে, নিশ্চয় আল্লাহ, যিনি তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তিনি তাদের অপেক্ষা অনেক শক্তিশালী? অথচ তারা আমার নিদর্শনাবলিকে অস্বীকার করত। (সূরা হা–মীম সিজদা– ১৫)
আদ জাতি প্রবলভাবে আক্রমণ চালাত :
وَاِذَا بَطَشْتُمْ بَطَشْتُمْ جَبَّارِيْنَ
আর যখন তোমরা আঘাত হানতে, তখন কঠোরভাবে আঘাত হানতে। (সূরা শু‘আরা– ১৩০)
তারা উঁচু জায়গায় অনর্থক স্তম্ভ নির্মাণ করত :
اَتَبْنُوْنَ بِكُلِّ رِيْعٍ اٰيَةً تَعْبَثُوْنَ ‐ وَتَتَّخِذُوْنَ مَصَانِعَ لَعَلَّكُمْ تَخْلُدُوْنَ
তোমরা কি প্রতিটি উঁচু স্থানে নিরর্থকভাবে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করছ? তোমরা প্রাসাদ নির্মাণ করছ এ মনে করে যে, তোমরা চিরস্থায়ী হবে। (সূরা শু‘আরা– ১২৮, ১২৯)
তারা স্বৈরাচারী শাসকের আদেশ মানত :
وَتِلْكَ عَادٌ جَحَدُوْا بِاٰيَاتِ رَبِّهِمْ وَعَصَوْا رُسُلَهٗ وَاتَّبَعُوْاۤ اَمْرَ كُلِّ جَبَّارٍ عَنِيْدٍ
ওরাই আদ জাতি, যারা তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করেছিল এবং তাঁর রাসূলদেরকে অমান্য করেছিল। আর তারা প্রত্যেক উদ্ধত স্বৈরাচারীর নির্দেশ অনুসরণ করেছিল। (সূরা হুদু ৫৯)
তারা শিরক করত :
قَالُوْاۤ اَجِئْتَنَا لِنَعْبُدَ اللهَ وَحْدَهٗ وَنَذَرَ مَا كَانَ يَعْبُدُ اٰبَآؤُنَاۚ فَأْتِنَا بِمَا تَعِدُنَاۤ اِنْ كُنْتَ مِنَ الصَّادِقِيْنَ
তারা বলল, তুমি কি আমাদের নিকট এ উদ্দেশ্যে এসেছ যে, আমরা যেন এক আল্লাহর ইবাদাত করি এবং আমাদের পূর্বপুরুষরা যার ইবাদাত করত তা বর্জন করি? সুতরাং তুমি সত্যবাদী হলে আমাদেরকে যার ভয় দেখাচ্ছ তা নিয়ে আসো। (সূরা আ‘রাফু ৭০)
তারা কিয়ামতের প্রতি বিশ্বাসী ছিল না :
كَذَّبَتْ ثَمُوْدُ وَعَادٌ ۢبِالْقَارِعَةِ
আদ ও সামূদ সম্প্রদায় মহাপ্রলয়কে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল। (সূরা হাক্কাহ– ৪)
হুদ (আঃ) জাতিকে তাওহীদের দাওয়াত দিলেন :
وَاِلٰى عَادٍ اَخَاهُمْ هُوْدًاؕ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرُهٗؕ اِنْ اَنْتُمْ اِلَّا مُفْتَرُوْنَ
আদ জাতির নিকট তাদের ভাই হুদকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো। তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ্ নেই। তোমরা তো (আল্লাহর ব্যাপারে) মিথ্যা রচনাকারী ছাড়া আর কিছুই নও। (সূরা হুদু ৫০)
জাতির প্রধানগণ নবীকে নির্বোধ বলল :
قَالَ الْمَلَاُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنْ قَوْمِهٖۤ اِنَّا لَنَرَاكَ فِيْ سَفَاهَةٍ وَّاِنَّا لَنَظُنُّكَ مِنَ الْكَاذِبِيْنَ
তার সম্প্রদায়ের প্রধানদের মধ্যে যারা কুফরী করেছিল তারা বলেছিল, আমরা তো দেখছি তুমি একজন নির্বোধ। নিশ্চয় আমরা তোমাকে মিথ্যাবাদী মনে করি। (সূরা আ‘রাফু ৬৬)
তারা নবীকে বলল, তোমাকে পাগলামীতে পেয়েছে :
اِنْ نَّقُوْلُ اِلَّا اعْتَرَاكَ بَعْضُ اٰلِهَتِنَا بِسُوْٓءٍ
আমরা তো এটাই বলি যে, আমাদের উপাস্যদের মধ্যে কেউ তোমাকে অশুভ দ্বারা আক্রান্ত করেছে। (সূরা হুদু ৫৪)
তুমি তাওহীদের দাওয়াত নিয়ে কেন এসেছ?
قَالُوْاۤ اَجِئْتَنَا لِتَأْفِكَنَا عَنْ اٰلِهَتِنَا
তারা বলল, তুমি কি আমাদের মা‘বুদদের থেকে আমাদেরকে ফিরিয়ে রাখার জন্য এসেছ? (সূরা আহকাফু ২২)
قَالُوْاۤ اَجِئْتَنَا لِنَعْبُدَ اللهَ وَحْدَهٗ وَنَذَرَ مَا كَانَ يَعْبُدُ اٰبَآؤُنَا
তারা বলল, তুমি কি আমাদের নিকট এ উদ্দেশ্যে এসেছ যে, আমরা যেন এক আল্লাহর ইবাদাত করি এবং আমাদের পূর্বপুরুষগণ যার ইবাদাত করত তা বর্জন করি? (সূরা আ‘রাফু ৭০)
তারা নবীকে বলল, তোমার উপদেশের দরকার নেই :
قَالُوْا سَوَآءٌ عَلَيْنَاۤ اَوَعَظْتَ اَمْ لَمْ تَكُنْ مِّنَ الْوَاعِظِيْنَ ‐ اِنْ هٰذَاۤ اِلَّا خُلُقُ الْاَوَّلِيْنَ
তারা বলল, তুমি উপদেশ দাও অথবা না দাও, উভয়ই আমাদের জন্য সমান। নিশ্চয় এটা পূর্ববর্তীদেরই স্বভাব। (সূরা শু‘আরা– ১৩৬, ১৩৭)
আমরা তোমাকে মানব না :
قَالُوْا يَا هُوْدُ مَا جِئْتَنَا بِبَيِّنَةٍ وَّمَا نَحْنُ بِتَارِكِيْۤ اٰلِهَتِنَا عَنْ قَوْلِكَ وَمَا نَحْنُ لَكَ بِمُؤْمِنِيْنَ
তারা বলল, হে হুদ! তুমি আমাদের নিকট কোন স্পষ্ট প্রমাণ আনয়ন করনি। তোমার কথায় আমরা আমাদের উপাস্যদেরকে পরিত্যাগ করার লোক নই। আর আমরা তোমার প্রতি বিশ্বাসীও নই। (সূরা হুদ ৫৩)
তারা আযাব চেয়ে বসল :
فَأْتِنَا بِمَا تَعِدُنَاۤ اِنْ كُنْتَ مِنَ الصَّادِقِيْنَ
সুতরাং তুমি সত্যবাদী হলে আমাদেরকে যার ভয় দেখাচ্ছ তা নিয়ে এসো। (সূরা আ‘রাফু ৭০)
فَأْتِنَا بِمَا تَعِدُنَاۤ اِنْ كُنْتَ مِنَ الصَّادِقِيْنَ
তুমি যদি সত্যবাদী হয়ে থাক, তাহলে তুমি যে আযাবের ভয় দেখাচ্ছ তা নিয়ে এসো। (সূরা আহকাফু ২২)
وَاِلٰى عَادٍ اَخَاهُمْ هُوْدًاؕ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرُهٗؕ اِنْ اَنْتُمْ اِلَّا مُفْتَرُوْنَ
আদ জাতির নিকট তাদের ভাই হুদকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো। তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ্ নেই। তোমরা তো (আল্লাহর ব্যাপারে) মিথ্যা রচনাকারী ছাড়া আর কিছুই নও। (সূরা হুদু ৫০)
জাতির প্রধানগণ নবীকে নির্বোধ বলল :
قَالَ الْمَلَاُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنْ قَوْمِهٖۤ اِنَّا لَنَرَاكَ فِيْ سَفَاهَةٍ وَّاِنَّا لَنَظُنُّكَ مِنَ الْكَاذِبِيْنَ
তার সম্প্রদায়ের প্রধানদের মধ্যে যারা কুফরী করেছিল তারা বলেছিল, আমরা তো দেখছি তুমি একজন নির্বোধ। নিশ্চয় আমরা তোমাকে মিথ্যাবাদী মনে করি। (সূরা আ‘রাফু ৬৬)
তারা নবীকে বলল, তোমাকে পাগলামীতে পেয়েছে :
اِنْ نَّقُوْلُ اِلَّا اعْتَرَاكَ بَعْضُ اٰلِهَتِنَا بِسُوْٓءٍ
আমরা তো এটাই বলি যে, আমাদের উপাস্যদের মধ্যে কেউ তোমাকে অশুভ দ্বারা আক্রান্ত করেছে। (সূরা হুদু ৫৪)
তুমি তাওহীদের দাওয়াত নিয়ে কেন এসেছ?
قَالُوْاۤ اَجِئْتَنَا لِتَأْفِكَنَا عَنْ اٰلِهَتِنَا
তারা বলল, তুমি কি আমাদের মা‘বুদদের থেকে আমাদেরকে ফিরিয়ে রাখার জন্য এসেছ? (সূরা আহকাফু ২২)
قَالُوْاۤ اَجِئْتَنَا لِنَعْبُدَ اللهَ وَحْدَهٗ وَنَذَرَ مَا كَانَ يَعْبُدُ اٰبَآؤُنَا
তারা বলল, তুমি কি আমাদের নিকট এ উদ্দেশ্যে এসেছ যে, আমরা যেন এক আল্লাহর ইবাদাত করি এবং আমাদের পূর্বপুরুষগণ যার ইবাদাত করত তা বর্জন করি? (সূরা আ‘রাফু ৭০)
তারা নবীকে বলল, তোমার উপদেশের দরকার নেই :
قَالُوْا سَوَآءٌ عَلَيْنَاۤ اَوَعَظْتَ اَمْ لَمْ تَكُنْ مِّنَ الْوَاعِظِيْنَ ‐ اِنْ هٰذَاۤ اِلَّا خُلُقُ الْاَوَّلِيْنَ
তারা বলল, তুমি উপদেশ দাও অথবা না দাও, উভয়ই আমাদের জন্য সমান। নিশ্চয় এটা পূর্ববর্তীদেরই স্বভাব। (সূরা শু‘আরা– ১৩৬, ১৩৭)
আমরা তোমাকে মানব না :
قَالُوْا يَا هُوْدُ مَا جِئْتَنَا بِبَيِّنَةٍ وَّمَا نَحْنُ بِتَارِكِيْۤ اٰلِهَتِنَا عَنْ قَوْلِكَ وَمَا نَحْنُ لَكَ بِمُؤْمِنِيْنَ
তারা বলল, হে হুদ! তুমি আমাদের নিকট কোন স্পষ্ট প্রমাণ আনয়ন করনি। তোমার কথায় আমরা আমাদের উপাস্যদেরকে পরিত্যাগ করার লোক নই। আর আমরা তোমার প্রতি বিশ্বাসীও নই। (সূরা হুদ ৫৩)
তারা আযাব চেয়ে বসল :
فَأْتِنَا بِمَا تَعِدُنَاۤ اِنْ كُنْتَ مِنَ الصَّادِقِيْنَ
সুতরাং তুমি সত্যবাদী হলে আমাদেরকে যার ভয় দেখাচ্ছ তা নিয়ে এসো। (সূরা আ‘রাফু ৭০)
فَأْتِنَا بِمَا تَعِدُنَاۤ اِنْ كُنْتَ مِنَ الصَّادِقِيْنَ
তুমি যদি সত্যবাদী হয়ে থাক, তাহলে তুমি যে আযাবের ভয় দেখাচ্ছ তা নিয়ে এসো। (সূরা আহকাফু ২২)
নবী বললেন, আমি নির্বোধ নই :
قَالَ يَا قَوْمِ لَيْسَ بِيْ سَفَاهَةٌ وَّلٰكِنِّيْ رَسُوْلٌ مِّنْ رَّبِّ الْعَالَمِيْنَ
সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! আমি নির্বোধ নই, বরং আমি জগতসমূহের প্রতিপালকের প্রেরিত রাসূল।
(সূরা আ‘রাফু ৬৭)
আমি তোমাদের রাসূল :
اِنِّيْ لَكُمْ رَسُوْلٌ اَمِيْنٌ
আমি তো তোমাদের জন্য এক বিশ্বস্ত রাসূল। (সূরা শু‘আরা– ১২৫)
আমি তোমাদের হিতাকাঙ্খী :
اُبَلِّغُكُمْ رِسَالَاتِ رَبِّيْ وَاَنَاْ لَكُمْ نَاصِحٌ اَمِيْنٌ
আমি আমার প্রতিপালকের বাণী তোমাদের নিকট পৌঁছে দিচ্ছি। নিশ্চয় আমি তোমাদের বিশ্বস্ত শুভাকাঙ্ক্ষী। (সূরা আ‘রাফ – ৬৮)
তোমরা আল্লাহকে ভয় করো ও আমার অনুসরণ করো :
فَاتَّقُوا اللهَ وَاَطِيْعُوْنِ
অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো। (সূরা শু‘আরা– ১২৬)
আমি তোমাদের নিকট কোন পারিশ্রমিক চাই না :
وَمَاۤ اَسْاَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ اَجْرٍۚ اِنْ اَجْرِيَ اِلَّا عَلٰى رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
আমি তোমাদের নিকট এর জন্য কোন প্রতিদান চাই না, আমার পুরস্কার তো জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট। (সূরা শু‘আরা– ১২৭)
يَا قَوْمِ لَاۤ اَسْاَلُكُمْ عَلَيْهِ اَجْرًاؕ اِنْ اَجْرِيَ اِلَّا عَلَى الَّذِيْ فَطَرَنِيْؕ اَفَلَا تَعْقِلُوْنَ
হে আমার সম্প্রদায়! আমি এর পরিবর্তে তোমাদের নিকট পারিশ্রমিক চাই না। আমার পারিশ্রমিক তাঁরই নিকট (সংরক্ষিত) আছে, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। তবুও কি তোমরা অনুধাবন করবে না? (সূরা হুদু ৫১)
আমি শিরক থেকে মুক্ত :
وَاشْهَدُوْاۤ اَنِّيْ بَرِيْٓءٌ مِّمَّا تُشْرِكُوْنَ
তোমরাও সাক্ষী হও যে, নিশ্চয় আমি তা হতে মুক্ত, যাকে তোমরা তাঁর সাথে শরীক কর। (সূরা হুদু ৫৪)
আযাব সম্পর্কে আমার জ্ঞান নেই :
قَالَ اِنَّمَا الْعِلْمُ عِنْدَ اللهِؗ وَاُبَلِّغُكُمْ مَّاۤ اُرْسِلْتُ بِهٖ وَلٰكِنِّيْۤ اَرَاكُمْ قَوْمًا تَجْهَلُوْنَ
তিনি বললেন, এ বিষয়ে ইলিম তো কেবল আল্লাহর কাছেই রয়েছে। আমি তো শুধু ঐ বাণী তোমাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি, যা দিয়ে আমাকে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু আমি দেখছি, তোমরা এক অজ্ঞ সম্প্রদায়। (সূরা আহকাফু ২৩)
তোমরা আল্লাহর নিয়ামতের কথা স্মরণ করো :
فَاذْكُرُوْاۤ اٰلَآءَ اللهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা আ‘রাফু ৬৯)
وَاتَّقُوا الَّذِيْۤ اَمَدَّكُمْ بِمَا تَعْلَمُوْنَ ‐ اَمَدَّكُمْ بِاَنْعَامٍ وَّبَنِيْنَ ‐ وَجَنّٰةٍ وَّعُيُوْنَ
তোমরা তাঁকে ভয় করো, যিনি তোমাদেরকে এমন কিছু দান করেছেন, যে সম্পর্কে তোমরা অবগত আছ। তিনি তোমাদেরকে দান করেছেন চতুষ্পদ জন্তু ও সন্তান-সন্ততি, উদ্যান ও ঝর্ণাধারা। (সূরা শু‘আরা, ১৩২–১৩৪)
তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করো :
وَيَا قَوْمِ اسْتَغْفِرُوْا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوْبُوْاۤ اِلَيْهِ يُرْسِلِ السَّمَآءَ عَلَيْكُمْ مِّدْرَارًا وَّيَزِدْكُمْ قُوَّةً اِلٰى قُوَّتِكُمْ وَلَا تَتَوَلَّوْا مُجْرِمِيْنَ
হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করো এবং তাঁর দিকেই ফিরে আসো। তিনি আকাশ হতে তোমাদের জন্য প্রচুর বারি বর্ষণ করবেন। তিনি তোমাদেরকে আরো শক্তি দিয়ে তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করবেন, কিন্তু তোমরা অপরাধী হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না। (সূরা হুদু ৫২)
নবী আযাবের ভয় দেখালেন :
اِنِّۤيْ اَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيْمٍ
আমি তোমাদের ব্যাপারে এক ভয়ানক আযাবের দিনের আশঙ্কাবোধ করছি। (সূরা আ‘রাফ- ৫৯)
নবীর চ্যালেঞ্জ ঘোষণা :
فَكِيْدُوْنِيْ جَمِيْعًا ثُمَّ لَا تُنْظِرُوْنِ ‐ اِنِّيْ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ رَبِّيْ وَرَبِّكُمْؕ مَا مِنْ دَآبَّةٍ اِلَّا هُوَ اٰخِذٌ ۢبِنَاصِيَتِهَاؕ اِنَّ رَبِّيْ عَلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
তোমরা সকলে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করো এবং আমাকে অবকাশ দিয়ো না। আমি আমার ও তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহর উপর নির্ভর করি। এমন কোন জীবজন্তু নেই, যে তাঁর পূর্ণ আয়ত্তাধীন নয়। নিশ্চয় আমার প্রতিপালক সরল পথেই রয়েছেন। (সূরা হুদু ৫৫, ৫৬)
কঠোর সতর্কবাণী শোনালেন :
فَاِنْ تَوَلَّوْا فَقَدْ اَبْلَغْتُكُمْ مَّاۤ اُرْسِلْتُ بِهٖۤ اِلَيْكُمْؕ وَيَسْتَخْلِفُ رَبِّيْ قَوْمًا غَيْرَكُمْۚ وَلَا تَضُرُّوْنَهٗ شَيْئًاؕ اِنَّ رَبِّيْ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ حَفِيْظٌ
অতঃপর তোমরা যদি মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে আমি যা নিয়ে তোমাদের নিকট প্রেরিত হয়েছি আমি তো তা তোমাদের নিকট পৌঁছে দিয়েছিই। (যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও) আমার প্রতিপালক তোমাদের থেকে ভিন্ন কোন সম্প্রদায়কে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন এবং তোমরা তাঁর কোন ক্ষতিসাধন করতে পারবে না। নিশ্চয় আমার প্রতিপালক সবকিছুর রক্ষণাবেক্ষণকারী। (সূরা হুদু ৫৭)
قَالَ قَدْ وَقَعَ عَلَيْكُمْ مِّنْ رَّبِّكُمْ رِجْسٌ وَّغَضَبٌؕ اَتُجَادِلُوْنَنِيْ فِۤيْ اَسْمَآءٍ سَمَّيْتُمُوْهَاۤ اَنْتُمْ وَاٰبَآؤُكُمْ مَّا نَزَّلَ اللهُ بِهَا مِنْ سُلْطَانٍؕ فَانْتَظِرُوْاۤ اِنِّيْ مَعَكُمْ مِّنَ الْمُنْتَظِرِيْنَ
সে বলল, তোমাদের প্রতিপালকের শাস্তি ও ক্রোধ তো তোমাদের জন্য নির্ধারিত হয়ে আছে। তবে কি তোমরা আমার সাথে এমন কতকগুলো নাম সম্বন্ধে বিতর্কে লিপ্ত হতে চাও, যা তোমরা ও তোমাদের পূর্বপুরুষরা বানিয়ে নিয়েছ এবং যে সম্বন্ধে আল্লাহ কোন প্রমাণ দান করেননি। সুতরাং তোমরা প্রতীক্ষা করো এবং আমিও তোমাদের সাথে প্রতীক্ষা করছি। (সূরা আ‘রাফু ৭১)
قَالَ يَا قَوْمِ لَيْسَ بِيْ سَفَاهَةٌ وَّلٰكِنِّيْ رَسُوْلٌ مِّنْ رَّبِّ الْعَالَمِيْنَ
সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! আমি নির্বোধ নই, বরং আমি জগতসমূহের প্রতিপালকের প্রেরিত রাসূল।
(সূরা আ‘রাফু ৬৭)
আমি তোমাদের রাসূল :
اِنِّيْ لَكُمْ رَسُوْلٌ اَمِيْنٌ
আমি তো তোমাদের জন্য এক বিশ্বস্ত রাসূল। (সূরা শু‘আরা– ১২৫)
আমি তোমাদের হিতাকাঙ্খী :
اُبَلِّغُكُمْ رِسَالَاتِ رَبِّيْ وَاَنَاْ لَكُمْ نَاصِحٌ اَمِيْنٌ
আমি আমার প্রতিপালকের বাণী তোমাদের নিকট পৌঁছে দিচ্ছি। নিশ্চয় আমি তোমাদের বিশ্বস্ত শুভাকাঙ্ক্ষী। (সূরা আ‘রাফ – ৬৮)
তোমরা আল্লাহকে ভয় করো ও আমার অনুসরণ করো :
فَاتَّقُوا اللهَ وَاَطِيْعُوْنِ
অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো। (সূরা শু‘আরা– ১২৬)
আমি তোমাদের নিকট কোন পারিশ্রমিক চাই না :
وَمَاۤ اَسْاَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ اَجْرٍۚ اِنْ اَجْرِيَ اِلَّا عَلٰى رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
আমি তোমাদের নিকট এর জন্য কোন প্রতিদান চাই না, আমার পুরস্কার তো জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট। (সূরা শু‘আরা– ১২৭)
يَا قَوْمِ لَاۤ اَسْاَلُكُمْ عَلَيْهِ اَجْرًاؕ اِنْ اَجْرِيَ اِلَّا عَلَى الَّذِيْ فَطَرَنِيْؕ اَفَلَا تَعْقِلُوْنَ
হে আমার সম্প্রদায়! আমি এর পরিবর্তে তোমাদের নিকট পারিশ্রমিক চাই না। আমার পারিশ্রমিক তাঁরই নিকট (সংরক্ষিত) আছে, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। তবুও কি তোমরা অনুধাবন করবে না? (সূরা হুদু ৫১)
আমি শিরক থেকে মুক্ত :
وَاشْهَدُوْاۤ اَنِّيْ بَرِيْٓءٌ مِّمَّا تُشْرِكُوْنَ
তোমরাও সাক্ষী হও যে, নিশ্চয় আমি তা হতে মুক্ত, যাকে তোমরা তাঁর সাথে শরীক কর। (সূরা হুদু ৫৪)
আযাব সম্পর্কে আমার জ্ঞান নেই :
قَالَ اِنَّمَا الْعِلْمُ عِنْدَ اللهِؗ وَاُبَلِّغُكُمْ مَّاۤ اُرْسِلْتُ بِهٖ وَلٰكِنِّيْۤ اَرَاكُمْ قَوْمًا تَجْهَلُوْنَ
তিনি বললেন, এ বিষয়ে ইলিম তো কেবল আল্লাহর কাছেই রয়েছে। আমি তো শুধু ঐ বাণী তোমাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি, যা দিয়ে আমাকে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু আমি দেখছি, তোমরা এক অজ্ঞ সম্প্রদায়। (সূরা আহকাফু ২৩)
তোমরা আল্লাহর নিয়ামতের কথা স্মরণ করো :
فَاذْكُرُوْاۤ اٰلَآءَ اللهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা আ‘রাফু ৬৯)
وَاتَّقُوا الَّذِيْۤ اَمَدَّكُمْ بِمَا تَعْلَمُوْنَ ‐ اَمَدَّكُمْ بِاَنْعَامٍ وَّبَنِيْنَ ‐ وَجَنّٰةٍ وَّعُيُوْنَ
তোমরা তাঁকে ভয় করো, যিনি তোমাদেরকে এমন কিছু দান করেছেন, যে সম্পর্কে তোমরা অবগত আছ। তিনি তোমাদেরকে দান করেছেন চতুষ্পদ জন্তু ও সন্তান-সন্ততি, উদ্যান ও ঝর্ণাধারা। (সূরা শু‘আরা, ১৩২–১৩৪)
তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করো :
وَيَا قَوْمِ اسْتَغْفِرُوْا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوْبُوْاۤ اِلَيْهِ يُرْسِلِ السَّمَآءَ عَلَيْكُمْ مِّدْرَارًا وَّيَزِدْكُمْ قُوَّةً اِلٰى قُوَّتِكُمْ وَلَا تَتَوَلَّوْا مُجْرِمِيْنَ
হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করো এবং তাঁর দিকেই ফিরে আসো। তিনি আকাশ হতে তোমাদের জন্য প্রচুর বারি বর্ষণ করবেন। তিনি তোমাদেরকে আরো শক্তি দিয়ে তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করবেন, কিন্তু তোমরা অপরাধী হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না। (সূরা হুদু ৫২)
নবী আযাবের ভয় দেখালেন :
اِنِّۤيْ اَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيْمٍ
আমি তোমাদের ব্যাপারে এক ভয়ানক আযাবের দিনের আশঙ্কাবোধ করছি। (সূরা আ‘রাফ- ৫৯)
নবীর চ্যালেঞ্জ ঘোষণা :
فَكِيْدُوْنِيْ جَمِيْعًا ثُمَّ لَا تُنْظِرُوْنِ ‐ اِنِّيْ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ رَبِّيْ وَرَبِّكُمْؕ مَا مِنْ دَآبَّةٍ اِلَّا هُوَ اٰخِذٌ ۢبِنَاصِيَتِهَاؕ اِنَّ رَبِّيْ عَلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
তোমরা সকলে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করো এবং আমাকে অবকাশ দিয়ো না। আমি আমার ও তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহর উপর নির্ভর করি। এমন কোন জীবজন্তু নেই, যে তাঁর পূর্ণ আয়ত্তাধীন নয়। নিশ্চয় আমার প্রতিপালক সরল পথেই রয়েছেন। (সূরা হুদু ৫৫, ৫৬)
কঠোর সতর্কবাণী শোনালেন :
فَاِنْ تَوَلَّوْا فَقَدْ اَبْلَغْتُكُمْ مَّاۤ اُرْسِلْتُ بِهٖۤ اِلَيْكُمْؕ وَيَسْتَخْلِفُ رَبِّيْ قَوْمًا غَيْرَكُمْۚ وَلَا تَضُرُّوْنَهٗ شَيْئًاؕ اِنَّ رَبِّيْ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ حَفِيْظٌ
অতঃপর তোমরা যদি মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে আমি যা নিয়ে তোমাদের নিকট প্রেরিত হয়েছি আমি তো তা তোমাদের নিকট পৌঁছে দিয়েছিই। (যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও) আমার প্রতিপালক তোমাদের থেকে ভিন্ন কোন সম্প্রদায়কে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন এবং তোমরা তাঁর কোন ক্ষতিসাধন করতে পারবে না। নিশ্চয় আমার প্রতিপালক সবকিছুর রক্ষণাবেক্ষণকারী। (সূরা হুদু ৫৭)
قَالَ قَدْ وَقَعَ عَلَيْكُمْ مِّنْ رَّبِّكُمْ رِجْسٌ وَّغَضَبٌؕ اَتُجَادِلُوْنَنِيْ فِۤيْ اَسْمَآءٍ سَمَّيْتُمُوْهَاۤ اَنْتُمْ وَاٰبَآؤُكُمْ مَّا نَزَّلَ اللهُ بِهَا مِنْ سُلْطَانٍؕ فَانْتَظِرُوْاۤ اِنِّيْ مَعَكُمْ مِّنَ الْمُنْتَظِرِيْنَ
সে বলল, তোমাদের প্রতিপালকের শাস্তি ও ক্রোধ তো তোমাদের জন্য নির্ধারিত হয়ে আছে। তবে কি তোমরা আমার সাথে এমন কতকগুলো নাম সম্বন্ধে বিতর্কে লিপ্ত হতে চাও, যা তোমরা ও তোমাদের পূর্বপুরুষরা বানিয়ে নিয়েছ এবং যে সম্বন্ধে আল্লাহ কোন প্রমাণ দান করেননি। সুতরাং তোমরা প্রতীক্ষা করো এবং আমিও তোমাদের সাথে প্রতীক্ষা করছি। (সূরা আ‘রাফু ৭১)
জাতির লোকেরা রাসূলকে অস্বীকার করল :
كَذَّبَتْ عَادُنِ الْمُرْسَلِيْنَ
আদ সম্প্রদায় রাসূলদেরকে অস্বীকার করেছিল। (সূরা শু‘আরা– ১২৩)
এজন্য তাদের উপর অভিশাপ আসল :
وَاُتْبِعُوْا فِيْ هٰذِهِ الدُّنْيَا لَعْنَةً وَّيَوْمَ الْقِيَامَةِ
এ দুনিয়ায় তাদেরকে অভিশপ্ত করা হয়েছিল। আর তারা কিয়ামতের দিনও অভিশপ্ত হবে। (সূরা হুদু ৬০)
আল্লাহ বাতাস পাঠালেন :
اِنَّاۤ اَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ رِيْحًا صَرْصَرًا فِيْ يَوْمِ نَحْسٍ مُّسْتَمِرٍّ
আমি তাদের উপর প্রেরণ করেছিলাম ক্রমাগত প্রবাহমান প্রচন্ডগতিসম্পন্ন বায়ু, (যা অবতীর্ণ হয়েছিল) দূর্ভোগের দিন। (সূরা ক্বামার– ১৯)
وَفِيْ عَادٍ اِذْ اَرْسَلْنَا عَلَيْهِمُ الرِّيْحَ الْعَقِيْمَ
(নিদর্শন রয়েছে) আদ জাতির ঘটনায়, যখন আমি তাদের বিরুদ্ধে অকল্যাণকর বাতাস প্রেরণ করেছিলাম। (সূরা যারিয়াত – ৪১)
এ বাতাসকে লোকেরা মেঘ মনে করেছিল :
فَلَمَّا رَاَوْهُ عَارِضًا مُّسْتَقْبِلَ اَوْدِيَتِهِمْ قَالُوْا هٰذَا عَارِضٌ مُّمْطِرُنَاؕ بَلْ هُوَ مَا اسْتَعْجَلْتُمْ بِهٖؕ رِيْحٌ فِيْهَا عَذَابٌ اَلِيْمٌ
তারপর যখন তারা আযাবকে তাদের এলাকার দিকে আসতে দেখল, তখন তারা বলতে লাগল, এটা তো মেঘ যা আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করবে। না, তা নয় বরং এটা ঐ জিনিস যার জন্য তোমরা তাড়াহুড়া করছিলে। এটা এমন বাতাস, যার ভেতর রয়েছে কষ্টদায়ক আযাব। (সূরা আহকাফু ২৪)
এ বাতাস এক সপ্তাহ স্থায়ী ছিল :
سَخَّرَهَا عَلَيْهِمْ سَبْعَ لَيَالٍ وَّثَمَانِيَةَ اَيَّامٍ حُسُوْمًا
যা তিনি তাদের উপর প্রবাহিত করেছিলেন বিরামহীনভাবে সাত রাত ও আট দিন। (সূরা হাক্কাহ– ৭)
বাতাস সবকিছুকে নিশ্চিহ্ন করে দিল :
تُدَمِّرُ كُلَّ شَيْءٍ ۢبِاَمْرِ رَبِّهَا فَاَصْبَحُوْا لَا يُرٰۤى اِلَّا مَسَاكِنُهُمْؕ كَذٰلِكَ نَجْزِى الْقَوْمَ الْمُجْرِمِيْنَ
তার রবের হুকুমে সে প্রত্যেক জিনিসকে ধ্বংস করে দেবে। শেষ পর্যন্ত তাদের এ অবস্থা হলো যে, তাদের থাকার জায়গাটুকু ছাড়া আর কিছুই দেখা যায়নি। এভাবেই আমি অপরাধীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। (সূরা আহকাফু ২৫)
প্রচন্ড ঘূর্ণিঝড় তাদেরকে ধ্বংস করল :
وَاَمَّا عَادٌ فَاُهْلِكُوْا بِرِيْحٍ صَرْصَرٍ عَاتِيَةٍ
আর আদ সম্প্রদায়, তাদেরকে ধ্বংস করা হয়েছিল এক প্রচন্ড ঘূর্ণিঝড় দ্বারা। (সূরা হাক্কাহ– ৬)
তাদের অস্তিত্ব বাকী থাকল না :
فَهَلْ تَرٰى لَهُمْ مِّنْ ۢبَاقِيَةٍ
তুমি কি তাদের কাউকে অবশিষ্ট পাচ্ছ? (সূরা হাক্কাহ– ৮)
তারা আবর্জনার মতো জমিনে পড়ে থাকল :
فَتَرَى الْقَوْمَ فِيْهَا صَرْعٰى كَاَنَّهُمْ اَعْجَازُ نَخْلٍ خَاوِيَةٍ
তুমি (উপস্থিত থাকলে) সেই সম্প্রদায়কে দেখতে যে, তারা খেজুর কান্ডের ন্যায় সেখানে পড়ে আছে। (সূরা হাক্কাহ– ৭)
تَنْزِعُ النَّاسَ كَاَنَّهُمْ اَعْجَازُ نَخْلٍ مُّنْقَعِرٍ
তা মানুষকে উৎখাত করেছিল উৎপাটিত খেজুরকান্ডের ন্যায়। (সূরা ক্বামার– ২০)
অপরাধীদের পরিণতি এমনই হয় :
كَذٰلِكَ نَجْزِى الْقَوْمَ الْمُجْرِمِيْنَ
এভাবেই আমি অপরাধীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। (সূরা আহকাফু ২৫)
তারা যা অর্জন করেছিল তাতে কোন লাভ হয়নি :
وَلَقَدْ مَكَّنَّاهُمْ فِيْمَاۤ اِنْ مَّكَّنَّاكُمْ فِيْهِ وَجَعَلْنَا لَهُمْ سَمْعًا وَّاَبْصَارًا وَّاَفْئِدَةً فَمَاۤ اَغْنٰى عَنْهُمْ سَمْعُهُمْ وَلَاۤ اَبْصَارُهُمْ وَلَاۤ اَفْئِدَتُهُمْ مِّنْ شَيْءٍ اِذْ كَانُوْا يَجْحَدُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِ وَحَاقَ بِهِمْ مَّا كَانُوْا بِهٖ يَسْتَهْزِئُوْنَ
আমি তাদেরকে এমন সবকিছু দান করেছিলাম, যা তোমাদেরকে দান করিনি। আমি তাদেরকে কান, চোখ ও হৃদয় দিয়েছিলাম, কিন্তু তাদের শোনার, দেখার ও বুঝার (এ শক্তিগুলো) কোন কাজে আসল না। কারণ তারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছিল। তারা যা নিয়ে ঠাট্টা–বিদ্রূপ করত, তাই তাদেরকে ঘিরে ফেলল। (সূরা আহকাফু ২৬)
এটা ছিল দুনিয়ার আযাব :
فَاَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ رِيْحًا صَرْصَرًا فِۤيْ اَيَّامٍ نَّحِسَاتٍ لِّنُذِيْقَهُمْ عَذَابَ الْخِزْيِ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا
অতঃপর আমি তাদেরকে পার্থিব জীবনে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি আস্বাদন করানোর জন্য তাদের বিরুদ্ধে এক অশুভ দিনে প্রেরণ করেছিলাম এক প্রচন্ড ঘূর্ণিঝড়। (সূরা হা–মীম সিজদা– ১৬)
পরকালের আযাব আরো লাঞ্ছনাদায়ক :
وَلَعَذَابُ الْاٰخِرَةِ اَخْزٰى وَهُمْ لَا يُنْصَرُوْنَ
আর পরকালের শাস্তি তো অধিকতর লাঞ্ছনাদায়ক এবং তাদেরকে কোন সাহায্যও করা হবে না।
(সূরা হা–মীম সিজদা– ১৬)
আল্লাহ নবী ও ঈমানদারদেরকে বাঁচালেন :
وَلَمَّا جَآءَ اَمْرُنَا نَجَّيْنَا هُوْدًا وَّالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَعَهٗ بِرَحْمَةٍ مِّنَّاۚ وَنَجَّيْنَاهُمْ مِّنْ عَذَابٍ غَلِيْظٍ
যখন আমার নির্দেশ এসে গেল, তখন আমি হুদ ও তার সঙ্গে যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে আমার অনুগ্রহে রক্ষা করলাম এবং তাদেরকে কঠিন শাস্তি হতে রক্ষা করলাম। (সূরা হুদু ৫৮)
فَاَنْجَيْنَاهُ وَالَّذِيْنَ مَعَهٗ بِرَحْمَةٍ مِّنَّا وَقَطَعْنَا دَابِرَ الَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَا وَمَا كَانُوْا مُؤْمِنِيْنَ
অতঃপর আমি তাঁকে ও তাঁর সঙ্গীদেরকে আমার অনুগ্রহে উদ্ধার করেছিলাম। আর যারা আমার নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করেছিল এবং যারা মুমিন ছিল না, তাদেরকে নির্মূল করেছিলাম। (সূরা আ‘রাফু ৭২)
এ আযাব ছিল খুবই কঠিন ও ভয়াবহ :
كَذَّبَتْ عَادٌ فَكَيْفَ كَانَ عَذَابِيْ وَنُذُرِ
আদ সম্প্রদায় মিথ্যা মনে করেছিল, ফলে কতই না কঠোর হয়েছিল আমার আযাব ও সতর্কবাণী! (সূরা ক্বামার– ১৮)
اَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِعَادٍ ‐ اِرَمَ ذَاتِ الْعِمَادِ ‐ اَلَّتِيْ لَمْ يُخْلَقْ مِثْلُهَا فِى الْبِلَادِ
আপনি কি লক্ষ্য করেননি, আপনার পালনকর্তা আদ বংশের ইরাম গোত্রের সাথে কী আচরণ করেছিলেন। যাদের দৈহিক গঠন স্তম্ভ ও খুঁটির ন্যায় দীর্ঘ ছিল এবং যাদের সমান (শক্তি ও বলবীর্যে) সারা বিশ্বের শহরসমূহে কোন লোক সৃষ্টি করা হয়নি। (সূরা ফাজর, ৬–৮)
এ ঘটনায় নিদর্শন রয়েছে :
فَكَذَّبُوْهُ فَاَهْلَكْنَاهُمْؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةًؕ وَمَا كَانَ اَكْثَرُهُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
অতঃপর তারা তাকে প্রত্যাখ্যান করল, ফলে আমি তাদেরকে ধ্বংস করলাম। নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে, কিন্তু তাদের অধিকাংশই এর প্রতি বিশ্বাসী নয়। (সূরা শু‘আরা– ১৩৯)
كَذَّبَتْ عَادُنِ الْمُرْسَلِيْنَ
আদ সম্প্রদায় রাসূলদেরকে অস্বীকার করেছিল। (সূরা শু‘আরা– ১২৩)
এজন্য তাদের উপর অভিশাপ আসল :
وَاُتْبِعُوْا فِيْ هٰذِهِ الدُّنْيَا لَعْنَةً وَّيَوْمَ الْقِيَامَةِ
এ দুনিয়ায় তাদেরকে অভিশপ্ত করা হয়েছিল। আর তারা কিয়ামতের দিনও অভিশপ্ত হবে। (সূরা হুদু ৬০)
আল্লাহ বাতাস পাঠালেন :
اِنَّاۤ اَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ رِيْحًا صَرْصَرًا فِيْ يَوْمِ نَحْسٍ مُّسْتَمِرٍّ
আমি তাদের উপর প্রেরণ করেছিলাম ক্রমাগত প্রবাহমান প্রচন্ডগতিসম্পন্ন বায়ু, (যা অবতীর্ণ হয়েছিল) দূর্ভোগের দিন। (সূরা ক্বামার– ১৯)
وَفِيْ عَادٍ اِذْ اَرْسَلْنَا عَلَيْهِمُ الرِّيْحَ الْعَقِيْمَ
(নিদর্শন রয়েছে) আদ জাতির ঘটনায়, যখন আমি তাদের বিরুদ্ধে অকল্যাণকর বাতাস প্রেরণ করেছিলাম। (সূরা যারিয়াত – ৪১)
এ বাতাসকে লোকেরা মেঘ মনে করেছিল :
فَلَمَّا رَاَوْهُ عَارِضًا مُّسْتَقْبِلَ اَوْدِيَتِهِمْ قَالُوْا هٰذَا عَارِضٌ مُّمْطِرُنَاؕ بَلْ هُوَ مَا اسْتَعْجَلْتُمْ بِهٖؕ رِيْحٌ فِيْهَا عَذَابٌ اَلِيْمٌ
তারপর যখন তারা আযাবকে তাদের এলাকার দিকে আসতে দেখল, তখন তারা বলতে লাগল, এটা তো মেঘ যা আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করবে। না, তা নয় বরং এটা ঐ জিনিস যার জন্য তোমরা তাড়াহুড়া করছিলে। এটা এমন বাতাস, যার ভেতর রয়েছে কষ্টদায়ক আযাব। (সূরা আহকাফু ২৪)
এ বাতাস এক সপ্তাহ স্থায়ী ছিল :
سَخَّرَهَا عَلَيْهِمْ سَبْعَ لَيَالٍ وَّثَمَانِيَةَ اَيَّامٍ حُسُوْمًا
যা তিনি তাদের উপর প্রবাহিত করেছিলেন বিরামহীনভাবে সাত রাত ও আট দিন। (সূরা হাক্কাহ– ৭)
বাতাস সবকিছুকে নিশ্চিহ্ন করে দিল :
تُدَمِّرُ كُلَّ شَيْءٍ ۢبِاَمْرِ رَبِّهَا فَاَصْبَحُوْا لَا يُرٰۤى اِلَّا مَسَاكِنُهُمْؕ كَذٰلِكَ نَجْزِى الْقَوْمَ الْمُجْرِمِيْنَ
তার রবের হুকুমে সে প্রত্যেক জিনিসকে ধ্বংস করে দেবে। শেষ পর্যন্ত তাদের এ অবস্থা হলো যে, তাদের থাকার জায়গাটুকু ছাড়া আর কিছুই দেখা যায়নি। এভাবেই আমি অপরাধীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। (সূরা আহকাফু ২৫)
প্রচন্ড ঘূর্ণিঝড় তাদেরকে ধ্বংস করল :
وَاَمَّا عَادٌ فَاُهْلِكُوْا بِرِيْحٍ صَرْصَرٍ عَاتِيَةٍ
আর আদ সম্প্রদায়, তাদেরকে ধ্বংস করা হয়েছিল এক প্রচন্ড ঘূর্ণিঝড় দ্বারা। (সূরা হাক্কাহ– ৬)
তাদের অস্তিত্ব বাকী থাকল না :
فَهَلْ تَرٰى لَهُمْ مِّنْ ۢبَاقِيَةٍ
তুমি কি তাদের কাউকে অবশিষ্ট পাচ্ছ? (সূরা হাক্কাহ– ৮)
তারা আবর্জনার মতো জমিনে পড়ে থাকল :
فَتَرَى الْقَوْمَ فِيْهَا صَرْعٰى كَاَنَّهُمْ اَعْجَازُ نَخْلٍ خَاوِيَةٍ
তুমি (উপস্থিত থাকলে) সেই সম্প্রদায়কে দেখতে যে, তারা খেজুর কান্ডের ন্যায় সেখানে পড়ে আছে। (সূরা হাক্কাহ– ৭)
تَنْزِعُ النَّاسَ كَاَنَّهُمْ اَعْجَازُ نَخْلٍ مُّنْقَعِرٍ
তা মানুষকে উৎখাত করেছিল উৎপাটিত খেজুরকান্ডের ন্যায়। (সূরা ক্বামার– ২০)
অপরাধীদের পরিণতি এমনই হয় :
كَذٰلِكَ نَجْزِى الْقَوْمَ الْمُجْرِمِيْنَ
এভাবেই আমি অপরাধীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। (সূরা আহকাফু ২৫)
তারা যা অর্জন করেছিল তাতে কোন লাভ হয়নি :
وَلَقَدْ مَكَّنَّاهُمْ فِيْمَاۤ اِنْ مَّكَّنَّاكُمْ فِيْهِ وَجَعَلْنَا لَهُمْ سَمْعًا وَّاَبْصَارًا وَّاَفْئِدَةً فَمَاۤ اَغْنٰى عَنْهُمْ سَمْعُهُمْ وَلَاۤ اَبْصَارُهُمْ وَلَاۤ اَفْئِدَتُهُمْ مِّنْ شَيْءٍ اِذْ كَانُوْا يَجْحَدُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِ وَحَاقَ بِهِمْ مَّا كَانُوْا بِهٖ يَسْتَهْزِئُوْنَ
আমি তাদেরকে এমন সবকিছু দান করেছিলাম, যা তোমাদেরকে দান করিনি। আমি তাদেরকে কান, চোখ ও হৃদয় দিয়েছিলাম, কিন্তু তাদের শোনার, দেখার ও বুঝার (এ শক্তিগুলো) কোন কাজে আসল না। কারণ তারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছিল। তারা যা নিয়ে ঠাট্টা–বিদ্রূপ করত, তাই তাদেরকে ঘিরে ফেলল। (সূরা আহকাফু ২৬)
এটা ছিল দুনিয়ার আযাব :
فَاَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ رِيْحًا صَرْصَرًا فِۤيْ اَيَّامٍ نَّحِسَاتٍ لِّنُذِيْقَهُمْ عَذَابَ الْخِزْيِ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا
অতঃপর আমি তাদেরকে পার্থিব জীবনে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি আস্বাদন করানোর জন্য তাদের বিরুদ্ধে এক অশুভ দিনে প্রেরণ করেছিলাম এক প্রচন্ড ঘূর্ণিঝড়। (সূরা হা–মীম সিজদা– ১৬)
পরকালের আযাব আরো লাঞ্ছনাদায়ক :
وَلَعَذَابُ الْاٰخِرَةِ اَخْزٰى وَهُمْ لَا يُنْصَرُوْنَ
আর পরকালের শাস্তি তো অধিকতর লাঞ্ছনাদায়ক এবং তাদেরকে কোন সাহায্যও করা হবে না।
(সূরা হা–মীম সিজদা– ১৬)
আল্লাহ নবী ও ঈমানদারদেরকে বাঁচালেন :
وَلَمَّا جَآءَ اَمْرُنَا نَجَّيْنَا هُوْدًا وَّالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَعَهٗ بِرَحْمَةٍ مِّنَّاۚ وَنَجَّيْنَاهُمْ مِّنْ عَذَابٍ غَلِيْظٍ
যখন আমার নির্দেশ এসে গেল, তখন আমি হুদ ও তার সঙ্গে যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে আমার অনুগ্রহে রক্ষা করলাম এবং তাদেরকে কঠিন শাস্তি হতে রক্ষা করলাম। (সূরা হুদু ৫৮)
فَاَنْجَيْنَاهُ وَالَّذِيْنَ مَعَهٗ بِرَحْمَةٍ مِّنَّا وَقَطَعْنَا دَابِرَ الَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَا وَمَا كَانُوْا مُؤْمِنِيْنَ
অতঃপর আমি তাঁকে ও তাঁর সঙ্গীদেরকে আমার অনুগ্রহে উদ্ধার করেছিলাম। আর যারা আমার নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করেছিল এবং যারা মুমিন ছিল না, তাদেরকে নির্মূল করেছিলাম। (সূরা আ‘রাফু ৭২)
এ আযাব ছিল খুবই কঠিন ও ভয়াবহ :
كَذَّبَتْ عَادٌ فَكَيْفَ كَانَ عَذَابِيْ وَنُذُرِ
আদ সম্প্রদায় মিথ্যা মনে করেছিল, ফলে কতই না কঠোর হয়েছিল আমার আযাব ও সতর্কবাণী! (সূরা ক্বামার– ১৮)
اَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِعَادٍ ‐ اِرَمَ ذَاتِ الْعِمَادِ ‐ اَلَّتِيْ لَمْ يُخْلَقْ مِثْلُهَا فِى الْبِلَادِ
আপনি কি লক্ষ্য করেননি, আপনার পালনকর্তা আদ বংশের ইরাম গোত্রের সাথে কী আচরণ করেছিলেন। যাদের দৈহিক গঠন স্তম্ভ ও খুঁটির ন্যায় দীর্ঘ ছিল এবং যাদের সমান (শক্তি ও বলবীর্যে) সারা বিশ্বের শহরসমূহে কোন লোক সৃষ্টি করা হয়নি। (সূরা ফাজর, ৬–৮)
এ ঘটনায় নিদর্শন রয়েছে :
فَكَذَّبُوْهُ فَاَهْلَكْنَاهُمْؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةًؕ وَمَا كَانَ اَكْثَرُهُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
অতঃপর তারা তাকে প্রত্যাখ্যান করল, ফলে আমি তাদেরকে ধ্বংস করলাম। নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে, কিন্তু তাদের অধিকাংশই এর প্রতি বিশ্বাসী নয়। (সূরা শু‘আরা– ১৩৯)
আদ জাতির ধ্বংসের প্রায় ৫০০ বছর পর সালেহ (আঃ) সামূদ জাতির প্রতি নবী হিসেবে প্রেরিত হন। আদ ও সামূদ জাতি একই দাদা ‘ইরাম’-এর দু’টি বংশধারার নাম। সামূদ জাতি আরবের উত্তর পশ্চিম এলাকায় বসবাস করত। তাদের প্রধান শহরের নাম ছিল হিজর, যা শামদেশ অর্থাৎ সিরিয়ার অন্তর্ভুক্ত ছিল। বর্তমানে একে সাধারণভাবে ‘মাদায়েনে সালেহ’ বলা হয়ে থাকে। আদ জাতির ধ্বংসের পর সামূদ জাতি তাদের স্থলাভিষিক্ত হয়। তারাও আদ জাতির মতো শক্তিশালী ও বীরের জাতি ছিল। তারা প্রস্তর খোদাই ও স্থাপত্যবিদ্যায় খুবই পারদর্শী ছিল। সমতল ভূমিতে বিশালকায় অট্টালিকা নির্মাণ ছাড়াও পর্বত খোদাই করে তারা নানা ধরনের প্রকোষ্ঠ নির্মাণ করত। তাদের স্থাপত্যের নিদর্শনাবলি আজও বিদ্যমান রয়েছে। এগুলোর গায়ে ইরামী ও সামূদী বর্ণমালার শিলালিপি খোদিত রয়েছে। অভিশপ্ত অঞ্চল হওয়ার কারণে এলাকাটি আজও পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। কেউ সেখানে বসবাস করে না। পথভোলা জাতিকে সালেহ (আঃ) সর্বপ্রথম তাওহীদের দাওয়াত দিলেন। তিনি তাদেরকে মূর্তিপূজাসহ যাবতীয় শিরক ও কুসংস্কার ত্যাগ করে এক আল্লাহর ইবাদাত ও তাঁর প্রেরিত বিধানসমূহের প্রতি আনুগত্যের আহবান জানালেন। তিনি যৌবনকালে নবুয়াতপ্রাপ্ত হন। তখন থেকে বার্ধক্যকাল অবধি স্বীয় কওমকে দাওয়াত দিতে থাকেন। কওমের দুর্বল শ্রেণির লোকেরা তাঁর উপর ঈমান আনলেও শক্তিশালী ও নেতৃস্থানীয় লোকেরা তাঁকে অস্বীকার করে।
সালেহ (আঃ) সামূদ জাতির নবী ছিলেন :
وَاِلٰى ثَمُوْدَ اَخَاهُمْ صَالِحًا
আমি সামূদ জাতির নিকট তাদের ভাই সালেহকে পাঠিয়েছিলাম। (সূরা হুদু ৬১)
তারা ছিল হিজর এলাকার অধিবাসী :
وَلَقَدْ كَذَّبَ اَصْحَابُ الْحِجْرِ الْمُرْسَلِيْنَ
হিজরবাসীরাও রাসূলদের প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল। (সূরা হিজর– ৮০)
তারা পাহাড় কেটে গৃহ নির্মাণ করত :
وَكَانُوْا يَنْحِتُوْنَ مِنَ الْجِبَالِ بُيُوْتًا اٰمِنِيْنَ
তারা নিরাপদে বসবাসের জন্য পাহাড় কেটে গৃহ নির্মাণ করত। (সূরা হিজর– ৮২)
وَتَنْحِتُوْنَ مِنَ الْجِبَالِ بُيُوْتًا فَارِهِيْنَ
তোমরা তো নৈপুণ্যের সাথে পাহাড় কেটে গৃহ নির্মাণ করছ। (সূরা শু‘আরা– ১৪৯)
তারা কিয়ামতকে অস্বীকার করত :
كَذَّبَتْ ثَمُوْدُ وَعَادٌ ۢبِالْقَارِعَةِ
আদ ও সামূদ সম্প্রদায় মহাপ্রলয়কে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল। (সূরা হাক্কাহ– ৪)
তারা ছিল বিদ্রোহী সম্প্রদায় :
كَذَّبَتْ ثَمُوْدُ بِطَغْوَاهَا
সামূদ সম্প্রদায় অবাধ্যতাবশত মিথ্যারোপ করেছিল। (সূরা শামস– ১১)
তারা নিদর্শনসমূহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিত :
وَاٰتَيْنَاهُمْ اٰيَاتِنَا فَكَانُوْا عَنْهَا مُعْرِضِيْنَ
আমি তাদেরকে আমার নিদর্শন দান করেছিলাম, কিন্তু তারা তা উপেক্ষা করেছিল। (সূরা হিজর– ৮১)
তাদের শহরে নয়জন পাপী নেতা ছিল :
وَكَانَ فِى الْمَدِيْنَةِ تِسْعَةُ رَهْطٍ يُّفْسِدُوْنَ فِى الْاَرْضِ وَلَا يُصْلِحُوْنَ
সে শহরে ছিল এমন নয়জন ব্যক্তি, যারা দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়াত; কিন্তু সৎকর্ম করত না। (সূরা নামল– ৪৮)
তারা গোমরাহীকে পছন্দ করত :
وَاَمَّا ثَمُوْدُ فَهَدَيْنَاهُمْ فَاسْتَحَبُّوا الْعَمٰى عَلَى الْهُدٰى
আর সামূদ সম্প্রদায়ের ব্যাপার এই যে, আমি তাদেরকে পথনির্দেশ করেছিলাম, কিন্তু তারা সৎপথের পরিবর্তে অন্ধত্ব (ভ্রান্তপথ) অবলম্বন করেছিল। (সূরা হা–মীম সিজদা– ১৭)
وَاِلٰى ثَمُوْدَ اَخَاهُمْ صَالِحًا
আমি সামূদ জাতির নিকট তাদের ভাই সালেহকে পাঠিয়েছিলাম। (সূরা হুদু ৬১)
তারা ছিল হিজর এলাকার অধিবাসী :
وَلَقَدْ كَذَّبَ اَصْحَابُ الْحِجْرِ الْمُرْسَلِيْنَ
হিজরবাসীরাও রাসূলদের প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল। (সূরা হিজর– ৮০)
তারা পাহাড় কেটে গৃহ নির্মাণ করত :
وَكَانُوْا يَنْحِتُوْنَ مِنَ الْجِبَالِ بُيُوْتًا اٰمِنِيْنَ
তারা নিরাপদে বসবাসের জন্য পাহাড় কেটে গৃহ নির্মাণ করত। (সূরা হিজর– ৮২)
وَتَنْحِتُوْنَ مِنَ الْجِبَالِ بُيُوْتًا فَارِهِيْنَ
তোমরা তো নৈপুণ্যের সাথে পাহাড় কেটে গৃহ নির্মাণ করছ। (সূরা শু‘আরা– ১৪৯)
তারা কিয়ামতকে অস্বীকার করত :
كَذَّبَتْ ثَمُوْدُ وَعَادٌ ۢبِالْقَارِعَةِ
আদ ও সামূদ সম্প্রদায় মহাপ্রলয়কে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল। (সূরা হাক্কাহ– ৪)
তারা ছিল বিদ্রোহী সম্প্রদায় :
كَذَّبَتْ ثَمُوْدُ بِطَغْوَاهَا
সামূদ সম্প্রদায় অবাধ্যতাবশত মিথ্যারোপ করেছিল। (সূরা শামস– ১১)
তারা নিদর্শনসমূহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিত :
وَاٰتَيْنَاهُمْ اٰيَاتِنَا فَكَانُوْا عَنْهَا مُعْرِضِيْنَ
আমি তাদেরকে আমার নিদর্শন দান করেছিলাম, কিন্তু তারা তা উপেক্ষা করেছিল। (সূরা হিজর– ৮১)
তাদের শহরে নয়জন পাপী নেতা ছিল :
وَكَانَ فِى الْمَدِيْنَةِ تِسْعَةُ رَهْطٍ يُّفْسِدُوْنَ فِى الْاَرْضِ وَلَا يُصْلِحُوْنَ
সে শহরে ছিল এমন নয়জন ব্যক্তি, যারা দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়াত; কিন্তু সৎকর্ম করত না। (সূরা নামল– ৪৮)
তারা গোমরাহীকে পছন্দ করত :
وَاَمَّا ثَمُوْدُ فَهَدَيْنَاهُمْ فَاسْتَحَبُّوا الْعَمٰى عَلَى الْهُدٰى
আর সামূদ সম্প্রদায়ের ব্যাপার এই যে, আমি তাদেরকে পথনির্দেশ করেছিলাম, কিন্তু তারা সৎপথের পরিবর্তে অন্ধত্ব (ভ্রান্তপথ) অবলম্বন করেছিল। (সূরা হা–মীম সিজদা– ১৭)
নবী তাদেরকে বললেন, আমি তোমাদের রাসূল :
اِنِّيْ لَكُمْ رَسُوْلٌ اَمِيْنٌ
আমি তো তোমাদের জন্য এক বিশ্বস্ত রাসূল। (সূরা শু‘আরা– ১৪৩)
আমি তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাই না :
وَمَاۤ اَسْاَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ اَجْرٍۚ اِنْ اَجْرِيَ اِلَّا عَلٰى رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
আমি তোমাদের নিকট এর জন্য কোন প্রতিদান চাই না, আমার পুরস্কার তো জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকটই রয়েছে। (সূরা শু‘আরা– ১৪৫)
তোমরা আল্লাহকে ভয় করো :
فَاتَّقُوا اللهَ وَاَطِيْعُوْنِ
তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো। (সূরা শু‘আরা– ১৫০)
এক আল্লাহর ইবাদাত করো :
وَاِلٰى ثَمُوْدَ اَخَاهُمْ صَالِحًاۘ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرُهٗ
সামূদ জাতির নিকট তাদের ভাই সালেহকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো। তিনি ব্যতীত তোমাদের জন্য কোন ইলাহ্ নেই। (সূরা আ‘রাফু ৭৩)
আল্লাহর নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো :
وَاِلٰى ثَمُوْدَ اَخَاهُمْ صَالِحًاۘ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرُهٗؕ هُوَ اَنْشَاَكُمْ مِّنَ الْاَرْضِ وَاسْتَعْمَرَكُمْ فِيْهَا
আমি সামূদ জাতির নিকট তাদের ভাই সালেহকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো, তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ্ নেই। তিনি তোমাদেরকে মাটি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদেরকে তাতে বাসস্থান দান করেছেন। (সূরা হুদু ৬১)
তার কাছে তাওবা করো :
فَاسْتَغْفِرُوْهُ ثُمَّ تُوْبُوْاۤ اِلَيْهِؕ اِنَّ رَبِّيْ قَرِيْبٌ مُّجِيْبٌ
সুতরাং তোমরা তাঁর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করো এবং তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করো। নিশ্চয় আমার প্রতিপালক অতি নিকটবর্তী এবং তিনি আহবানে সাড়া দেন। (সূরা হুদু ৬১)
জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করো না :
وَاذْكُرُوْاۤ اِذْ جَعَلَكُمْ خُلَفَآءَ مِنْ ۢبَعْدِ عَادٍ وَّبَوَّاَكُمْ فِى الْاَرْضِ تَتَّخِذُوْنَ مِنْ سُهُوْلِهَا قُصُوْرًا وَّتَنْحِتُوْنَ الْجِبَالَ بُيُوْتًاۚ فَاذْكُرُوْاۤ اٰلَآءَ اللهِ وَلَا تَعْثَوْا فِى الْاَرْضِ مُفْسِدِيْنَ
স্মরণ করো, আদ জাতির পর তিনি তোমাদেরকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করেছেন। তিনি তোমাদেরকে পৃথিবীতে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন যে, তোমরা সমতল ভূমিতে প্রাসাদ নির্মাণ ও পাহাড় কেটে বাসগৃহ নির্মাণ করতে পারছ। সুতরাং তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহকে স্মরণ করো এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়িও না। (সূরা আ‘রাফু ৭৪)
পাপীদের অনুসরণ করো না :
وَلَا تُطِيْعُوْاۤ اَمْرَ الْمُسْرِفِيْنَ - اَلَّذِيْنَ يُفْسِدُوْنَ فِى الْاَرْضِ وَلَا يُصْلِحُوْنَ
আর সীমালঙ্ঘনকারীদের আদেশ মান্য করো না, যারা পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে ও শান্তি স্থাপন করে না। (সূরা শু‘আরা– ১৫১, ১৫২)
اِنِّيْ لَكُمْ رَسُوْلٌ اَمِيْنٌ
আমি তো তোমাদের জন্য এক বিশ্বস্ত রাসূল। (সূরা শু‘আরা– ১৪৩)
আমি তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাই না :
وَمَاۤ اَسْاَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ اَجْرٍۚ اِنْ اَجْرِيَ اِلَّا عَلٰى رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
আমি তোমাদের নিকট এর জন্য কোন প্রতিদান চাই না, আমার পুরস্কার তো জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকটই রয়েছে। (সূরা শু‘আরা– ১৪৫)
তোমরা আল্লাহকে ভয় করো :
فَاتَّقُوا اللهَ وَاَطِيْعُوْنِ
তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো। (সূরা শু‘আরা– ১৫০)
এক আল্লাহর ইবাদাত করো :
وَاِلٰى ثَمُوْدَ اَخَاهُمْ صَالِحًاۘ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرُهٗ
সামূদ জাতির নিকট তাদের ভাই সালেহকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো। তিনি ব্যতীত তোমাদের জন্য কোন ইলাহ্ নেই। (সূরা আ‘রাফু ৭৩)
আল্লাহর নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো :
وَاِلٰى ثَمُوْدَ اَخَاهُمْ صَالِحًاۘ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرُهٗؕ هُوَ اَنْشَاَكُمْ مِّنَ الْاَرْضِ وَاسْتَعْمَرَكُمْ فِيْهَا
আমি সামূদ জাতির নিকট তাদের ভাই সালেহকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো, তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ্ নেই। তিনি তোমাদেরকে মাটি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদেরকে তাতে বাসস্থান দান করেছেন। (সূরা হুদু ৬১)
তার কাছে তাওবা করো :
فَاسْتَغْفِرُوْهُ ثُمَّ تُوْبُوْاۤ اِلَيْهِؕ اِنَّ رَبِّيْ قَرِيْبٌ مُّجِيْبٌ
সুতরাং তোমরা তাঁর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করো এবং তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করো। নিশ্চয় আমার প্রতিপালক অতি নিকটবর্তী এবং তিনি আহবানে সাড়া দেন। (সূরা হুদু ৬১)
জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করো না :
وَاذْكُرُوْاۤ اِذْ جَعَلَكُمْ خُلَفَآءَ مِنْ ۢبَعْدِ عَادٍ وَّبَوَّاَكُمْ فِى الْاَرْضِ تَتَّخِذُوْنَ مِنْ سُهُوْلِهَا قُصُوْرًا وَّتَنْحِتُوْنَ الْجِبَالَ بُيُوْتًاۚ فَاذْكُرُوْاۤ اٰلَآءَ اللهِ وَلَا تَعْثَوْا فِى الْاَرْضِ مُفْسِدِيْنَ
স্মরণ করো, আদ জাতির পর তিনি তোমাদেরকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করেছেন। তিনি তোমাদেরকে পৃথিবীতে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন যে, তোমরা সমতল ভূমিতে প্রাসাদ নির্মাণ ও পাহাড় কেটে বাসগৃহ নির্মাণ করতে পারছ। সুতরাং তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহকে স্মরণ করো এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়িও না। (সূরা আ‘রাফু ৭৪)
পাপীদের অনুসরণ করো না :
وَلَا تُطِيْعُوْاۤ اَمْرَ الْمُسْرِفِيْنَ - اَلَّذِيْنَ يُفْسِدُوْنَ فِى الْاَرْضِ وَلَا يُصْلِحُوْنَ
আর সীমালঙ্ঘনকারীদের আদেশ মান্য করো না, যারা পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে ও শান্তি স্থাপন করে না। (সূরা শু‘আরা– ১৫১, ১৫২)
জাতির লোকেরা বলল, তুমি আমাদের আস্থা নষ্ট করেছ :
قَالُوْا يَا صَالِحُ قَدْ كُنْتَ فِيْنَا مَرْجُوًّا قَبْلَ هٰذَاۤ اَتَنْهَانَاۤ اَنْ نَّعْبُدَ مَا يَعْبُدُ اٰبَآؤُنَا
তারা বলল, হে সালেহ! এর পূর্বে তুমি ছিলে আমাদের বিশ্বস্ত। তুমি কি আমাদেরকে তাদের ইবাদাত করতে নিষেধ করছ, যাদের ইবাদাত করত আমাদের পিতৃপুরুষরা? (সূরা হুদু ৬২)
وَاِنَّنَا لَفِيْ شَكٍّ مِّمَّا تَدْعُوْنَاۤ اِلَيْهِ مُرِيْبٍ
অবশ্যই আমরা সে বিষয়ে বিভ্রান্তিকর সন্দেহের মধ্যে রয়েছি, যার প্রতি তুমি আমাদেরকে আহবান করছ।
(সূরা হুদু ৬২)
তারা নবীকে যাদুগ্রস্ত বলল :
قَالُوْاۤ اِنَّمَاۤ اَنْتَ مِنَ الْمُسَحَّرِيْنَ
তারা বলল, নিশ্চয় তুমি যাদুগ্রস্ত হয়েছ। (সূরা শু‘আরা– ১৫৩)
নবীকে কুলক্ষণ মনে করল :
قَالُوا اطَّيَّرْنَا بِكَ وَبِمَنْ مَّعَكَؕ قَالَ طَآئِرُكُمْ عِنْدَ اللهِ بَلْ اَنْتُمْ قَوْمٌ تُفْتَنُوْنَ
তারা বলল, তোমাকে ও তোমার সঙ্গে যারা আছে তাদেরকে আমরা অমঙ্গলের কারণ মনে করি। সালেহ বলল, তোমাদের ভালো-মন্দ আল্লাহর ইখতিয়ারে। বস্তুত তোমরা এমন এক সম্প্রদায়, যাদেরকে পরীক্ষা করা হচ্ছে। (সূরা নামল– ৪৭)
নবীকে নিয়ে উপহাস করল :
فَقَالُوْاۤ اَبَشَرًا مِّنَّا وَاحِدًا نَّتَّبِعُهٗۤ اِنَّاۤ اِذًا لَّفِيْ ضَلَالٍ وَّسُعُرٍ
তারা বলেছিল, আমরা কি আমাদেরই এক ব্যক্তির অনুসরণ করব? তবে তো আমরা বিপথগামী এবং বিবেকহীন হিসেবে গণ্য হব। (সূরা ক্বামার– ২৪)
তারা নবীকে মিথ্যারোপ করল :
اَاُلْقِيَ الذِّكْرُ عَلَيْهِ مِنْ ۢبَيْنِنَا بَلْ هُوَ كَذَّابٌ اَشِرٌ
আমাদের মধ্যে কি ওর প্রতিই ওহী হয়েছে? বরং সে তো একজন মিথ্যাবাদী ও দাম্ভিক। (সূরা ক্বামার– ২৫)
নিদর্শন দেখাতে বলল :
مَاۤ اَنْتَ اِلَّا بَشَرٌ مِّثْلُنَاۚ فَأْتِ بِاٰيَةٍ اِنْ كُنْتَ مِنَ الصَّادِقِيْنَ
তুমি তো আমাদের মতোই একজন মানুষ। অতএব তুমি যদি সত্যবাদী হয়ে থাক, তবে একটি নিদর্শন উপস্থিত করো। (সূরা শু‘আরা– ১৫৪)
তারা আযাব চেয়ে বসল :
وَقَالُوْا يَا صَالِحُ ائْتِنَا بِمَا تَعِدُنَاۤ اِنْ كُنْتَ مِنَ الْمُرْسَلِيْنَ
তারা বলল, হে সালেহ! যদি তুমি সত্য সত্যই রাসূল হয়ে থাক, তবে আমাদেরকে যে শাস্তির ভয় দেখাচ্ছ তা নিয়ে আসো। (সূরা আ‘রাফু ৭৭)
قَالُوْا يَا صَالِحُ قَدْ كُنْتَ فِيْنَا مَرْجُوًّا قَبْلَ هٰذَاۤ اَتَنْهَانَاۤ اَنْ نَّعْبُدَ مَا يَعْبُدُ اٰبَآؤُنَا
তারা বলল, হে সালেহ! এর পূর্বে তুমি ছিলে আমাদের বিশ্বস্ত। তুমি কি আমাদেরকে তাদের ইবাদাত করতে নিষেধ করছ, যাদের ইবাদাত করত আমাদের পিতৃপুরুষরা? (সূরা হুদু ৬২)
وَاِنَّنَا لَفِيْ شَكٍّ مِّمَّا تَدْعُوْنَاۤ اِلَيْهِ مُرِيْبٍ
অবশ্যই আমরা সে বিষয়ে বিভ্রান্তিকর সন্দেহের মধ্যে রয়েছি, যার প্রতি তুমি আমাদেরকে আহবান করছ।
(সূরা হুদু ৬২)
তারা নবীকে যাদুগ্রস্ত বলল :
قَالُوْاۤ اِنَّمَاۤ اَنْتَ مِنَ الْمُسَحَّرِيْنَ
তারা বলল, নিশ্চয় তুমি যাদুগ্রস্ত হয়েছ। (সূরা শু‘আরা– ১৫৩)
নবীকে কুলক্ষণ মনে করল :
قَالُوا اطَّيَّرْنَا بِكَ وَبِمَنْ مَّعَكَؕ قَالَ طَآئِرُكُمْ عِنْدَ اللهِ بَلْ اَنْتُمْ قَوْمٌ تُفْتَنُوْنَ
তারা বলল, তোমাকে ও তোমার সঙ্গে যারা আছে তাদেরকে আমরা অমঙ্গলের কারণ মনে করি। সালেহ বলল, তোমাদের ভালো-মন্দ আল্লাহর ইখতিয়ারে। বস্তুত তোমরা এমন এক সম্প্রদায়, যাদেরকে পরীক্ষা করা হচ্ছে। (সূরা নামল– ৪৭)
নবীকে নিয়ে উপহাস করল :
فَقَالُوْاۤ اَبَشَرًا مِّنَّا وَاحِدًا نَّتَّبِعُهٗۤ اِنَّاۤ اِذًا لَّفِيْ ضَلَالٍ وَّسُعُرٍ
তারা বলেছিল, আমরা কি আমাদেরই এক ব্যক্তির অনুসরণ করব? তবে তো আমরা বিপথগামী এবং বিবেকহীন হিসেবে গণ্য হব। (সূরা ক্বামার– ২৪)
তারা নবীকে মিথ্যারোপ করল :
اَاُلْقِيَ الذِّكْرُ عَلَيْهِ مِنْ ۢبَيْنِنَا بَلْ هُوَ كَذَّابٌ اَشِرٌ
আমাদের মধ্যে কি ওর প্রতিই ওহী হয়েছে? বরং সে তো একজন মিথ্যাবাদী ও দাম্ভিক। (সূরা ক্বামার– ২৫)
নিদর্শন দেখাতে বলল :
مَاۤ اَنْتَ اِلَّا بَشَرٌ مِّثْلُنَاۚ فَأْتِ بِاٰيَةٍ اِنْ كُنْتَ مِنَ الصَّادِقِيْنَ
তুমি তো আমাদের মতোই একজন মানুষ। অতএব তুমি যদি সত্যবাদী হয়ে থাক, তবে একটি নিদর্শন উপস্থিত করো। (সূরা শু‘আরা– ১৫৪)
তারা আযাব চেয়ে বসল :
وَقَالُوْا يَا صَالِحُ ائْتِنَا بِمَا تَعِدُنَاۤ اِنْ كُنْتَ مِنَ الْمُرْسَلِيْنَ
তারা বলল, হে সালেহ! যদি তুমি সত্য সত্যই রাসূল হয়ে থাক, তবে আমাদেরকে যে শাস্তির ভয় দেখাচ্ছ তা নিয়ে আসো। (সূরা আ‘রাফু ৭৭)
নবী জাতিকে ভালোভাবে বুঝালেন :
قَالَ يَا قَوْمِ اَرَاَيْتُمْ اِنْ كُنْتُ عَلٰى بَيِّنَةٍ مِّنْ رَّبِّيْ وَاٰتَانِيْ مِنْهُ رَحْمَةً فَمَنْ يَّنْصُرُنِيْ مِنَ اللهِ اِنْ عَصَيْتُهٗ فَمَا تَزِيْدُوْنَنِيْ غَيْرَ تَخْسِيْرٍ
সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা কি ভেবে দেখেছ যে, আমি যদি আমার প্রতিপালকের প্রেরিত স্পষ্ট প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকি এবং তিনি যদি আমাকে তাঁর নিজ অনুগ্রহ হতে কোনকিছু দান করেন; তথাপিও যদি আমি তাঁর অবাধ্যতা করি, তবে আল্লাহর শাস্তি হতে আমাকে কে রক্ষা করবে? সুতরাং তোমরা তো কেবল আমার ক্ষতিই বাড়িয়ে দিচ্ছ। (সূরা হুদু ৬৩)
অস্থায়ী দুনিয়ার বাস্তবতা বুঝালেন :
اَتُتْرَكُوْنَ فِيْ مَا هَاهُنَاۤ اٰمِنِيْنَ ‐ فِيْ جَنَّاتٍ وَّعُيُوْنٍ ‐ وَزُرُوْعٍ وَّنَخْلٍ طَلْعُهَا هَضِيْمٌ ‐ وَتَنْحِتُوْنَ مِنَ الْجِبَالِ بُيُوْتًا فَارِهِيْنَ
তোমাদেরকে কি নিরাপদ অবস্থায় ছেড়ে রাখা হবে, উদ্যান, ঝর্ণাধারা, শস্যক্ষেত্রে এবং কোমল গুচ্ছবিশিষ্ট খেজুর বাগানে যা কিছু আছে তাতে? তোমরা তো নৈপুণ্যের সাথে পাহাড় কেটে গৃহ নির্মাণ করছ।
(সুরা শু‘আরা, ১৪৬–১৪৯)
আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনার আহবান জানালেন :
قَالَ يَا قَوْمِ لِمَ تَسْتَعْجِلُوْنَ بِالسَّيِّئَةِ قَبْلَ الْحَسَنَةِۚ لَوْلَا تَسْتَغْفِرُوْنَ اللهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ
সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা কেন কল্যাণের পূর্বে অকল্যাণ ত্বরান্বিত করতে চাচ্ছ? কেন তোমরা আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করছ না, যাতে তোমরা অনুগ্রহভাজন হতে পার? (সূরা নামল– ৪৬)
উষ্ট্রীর মু‘জিযা দেখালেন :
وَيَا قَوْمِ هٰذِهٖ نَاقَةُ اللهِ لَكُمْ اٰيَةً فَذَرُوْهَا تَأْكُلْ فِۤيْ اَرْضِ اللهِ
হে আমার সম্প্রদায়! এটা তোমাদের জন্য নিদর্শনস্বরূপ আল্লাহর উষ্ট্রী। সুতরাং একে আল্লাহর জমিনে বিচরণ করে খেতে দাও। (সূরা হুদু ৬৪)
একে কষ্ট দিতে নিষেধ করলেন :
وَلَا تَمَسُّوْهَا بِسُوْٓءٍ فَيَأْخُذَكُمْ عَذَابٌ قَرِيْبٌ
তোমরা একে কোন কষ্ট দিয়ো না, নতুবা এক নিকটবর্তী আযাব তোমাদের উপর আপতিত হবে। (সূরা হুদ ৬৪)
وَلَا تَمَسُّوْهَا بِسُوْٓءٍ فَيَأْخُذَكُمْ عَذَابُ يَوْمٍ عَظِيْمٍ
সেটার কোন অনিষ্ট সাধন করো না; নতুবা মহাদিবসের শাস্তি তোমাদের উপর পতিত হবে। (সূরা শু‘আরা– ১৫৬)
قَدْ جَآءَتْكُمْ بَيِّنَةٌ مِّنْ رَّبِّكُمْؕ هٰذِهٖ نَاقَةُ اللهِ لَكُمْ اٰيَةً فَذَرُوْهَا تَأْكُلْ فِۤيْ اَرْضِ اللهِ وَلَا تَمَسُّوْهَا بِسُوْٓءٍ فَيَأْخُذَكُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
তোমাদের নিকট তোমাদের প্রতিপালক হতে স্পষ্ট নিদর্শন এসেছে। আল্লাহর এ উষ্ট্রী তোমাদের জন্য একটি নিদর্শন। এটাকে আল্লাহর জমিনে চড়ে খেতে দাও এবং একে কোন কষ্ট দিয়ো না, নতুবা তোমাদের উপর মর্মান্তিক শাস্তি পতিত হবে। (সূরা আ‘রাফু ৭৩)
পানি পানের পালা নির্ধারণ করে দিলেন :
قَالَ هٰذِهٖ نَاقَةٌ لَّهَا شِرْبٌ وَّلَكُمْ شِرْبُ يَوْمٍ مَّعْلُوْمٍ
সালেহ বলল, এটি একটি উষ্ট্রী, এটার জন্য রয়েছে পানি পানের পালা এবং তোমাদের জন্য রয়েছে নির্ধারিত দিনে পানি পানের পালা। (সূরা শু‘আরা– ১৫৫)
وَنَبِّئْهُمْ اَنَّ الْمَآءَ قِسْمَةٌ ۢبَيْنَهُمْۚ كُلُّ شِرْبٍ مُّحْتَضَرٌ
তুমি তাদেরকে জানিয়ে দাও যে, তাদের মধ্যে (ও উষ্ট্রের মধ্যে) পানি বণ্টন করা হবে এবং প্রত্যেকের পানি পানের পালা আসবে। (সূরা ক্বামার– ২৮)
قَالَ يَا قَوْمِ اَرَاَيْتُمْ اِنْ كُنْتُ عَلٰى بَيِّنَةٍ مِّنْ رَّبِّيْ وَاٰتَانِيْ مِنْهُ رَحْمَةً فَمَنْ يَّنْصُرُنِيْ مِنَ اللهِ اِنْ عَصَيْتُهٗ فَمَا تَزِيْدُوْنَنِيْ غَيْرَ تَخْسِيْرٍ
সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা কি ভেবে দেখেছ যে, আমি যদি আমার প্রতিপালকের প্রেরিত স্পষ্ট প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকি এবং তিনি যদি আমাকে তাঁর নিজ অনুগ্রহ হতে কোনকিছু দান করেন; তথাপিও যদি আমি তাঁর অবাধ্যতা করি, তবে আল্লাহর শাস্তি হতে আমাকে কে রক্ষা করবে? সুতরাং তোমরা তো কেবল আমার ক্ষতিই বাড়িয়ে দিচ্ছ। (সূরা হুদু ৬৩)
অস্থায়ী দুনিয়ার বাস্তবতা বুঝালেন :
اَتُتْرَكُوْنَ فِيْ مَا هَاهُنَاۤ اٰمِنِيْنَ ‐ فِيْ جَنَّاتٍ وَّعُيُوْنٍ ‐ وَزُرُوْعٍ وَّنَخْلٍ طَلْعُهَا هَضِيْمٌ ‐ وَتَنْحِتُوْنَ مِنَ الْجِبَالِ بُيُوْتًا فَارِهِيْنَ
তোমাদেরকে কি নিরাপদ অবস্থায় ছেড়ে রাখা হবে, উদ্যান, ঝর্ণাধারা, শস্যক্ষেত্রে এবং কোমল গুচ্ছবিশিষ্ট খেজুর বাগানে যা কিছু আছে তাতে? তোমরা তো নৈপুণ্যের সাথে পাহাড় কেটে গৃহ নির্মাণ করছ।
(সুরা শু‘আরা, ১৪৬–১৪৯)
আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনার আহবান জানালেন :
قَالَ يَا قَوْمِ لِمَ تَسْتَعْجِلُوْنَ بِالسَّيِّئَةِ قَبْلَ الْحَسَنَةِۚ لَوْلَا تَسْتَغْفِرُوْنَ اللهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ
সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা কেন কল্যাণের পূর্বে অকল্যাণ ত্বরান্বিত করতে চাচ্ছ? কেন তোমরা আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করছ না, যাতে তোমরা অনুগ্রহভাজন হতে পার? (সূরা নামল– ৪৬)
উষ্ট্রীর মু‘জিযা দেখালেন :
وَيَا قَوْمِ هٰذِهٖ نَاقَةُ اللهِ لَكُمْ اٰيَةً فَذَرُوْهَا تَأْكُلْ فِۤيْ اَرْضِ اللهِ
হে আমার সম্প্রদায়! এটা তোমাদের জন্য নিদর্শনস্বরূপ আল্লাহর উষ্ট্রী। সুতরাং একে আল্লাহর জমিনে বিচরণ করে খেতে দাও। (সূরা হুদু ৬৪)
একে কষ্ট দিতে নিষেধ করলেন :
وَلَا تَمَسُّوْهَا بِسُوْٓءٍ فَيَأْخُذَكُمْ عَذَابٌ قَرِيْبٌ
তোমরা একে কোন কষ্ট দিয়ো না, নতুবা এক নিকটবর্তী আযাব তোমাদের উপর আপতিত হবে। (সূরা হুদ ৬৪)
وَلَا تَمَسُّوْهَا بِسُوْٓءٍ فَيَأْخُذَكُمْ عَذَابُ يَوْمٍ عَظِيْمٍ
সেটার কোন অনিষ্ট সাধন করো না; নতুবা মহাদিবসের শাস্তি তোমাদের উপর পতিত হবে। (সূরা শু‘আরা– ১৫৬)
قَدْ جَآءَتْكُمْ بَيِّنَةٌ مِّنْ رَّبِّكُمْؕ هٰذِهٖ نَاقَةُ اللهِ لَكُمْ اٰيَةً فَذَرُوْهَا تَأْكُلْ فِۤيْ اَرْضِ اللهِ وَلَا تَمَسُّوْهَا بِسُوْٓءٍ فَيَأْخُذَكُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
তোমাদের নিকট তোমাদের প্রতিপালক হতে স্পষ্ট নিদর্শন এসেছে। আল্লাহর এ উষ্ট্রী তোমাদের জন্য একটি নিদর্শন। এটাকে আল্লাহর জমিনে চড়ে খেতে দাও এবং একে কোন কষ্ট দিয়ো না, নতুবা তোমাদের উপর মর্মান্তিক শাস্তি পতিত হবে। (সূরা আ‘রাফু ৭৩)
পানি পানের পালা নির্ধারণ করে দিলেন :
قَالَ هٰذِهٖ نَاقَةٌ لَّهَا شِرْبٌ وَّلَكُمْ شِرْبُ يَوْمٍ مَّعْلُوْمٍ
সালেহ বলল, এটি একটি উষ্ট্রী, এটার জন্য রয়েছে পানি পানের পালা এবং তোমাদের জন্য রয়েছে নির্ধারিত দিনে পানি পানের পালা। (সূরা শু‘আরা– ১৫৫)
وَنَبِّئْهُمْ اَنَّ الْمَآءَ قِسْمَةٌ ۢبَيْنَهُمْۚ كُلُّ شِرْبٍ مُّحْتَضَرٌ
তুমি তাদেরকে জানিয়ে দাও যে, তাদের মধ্যে (ও উষ্ট্রের মধ্যে) পানি বণ্টন করা হবে এবং প্রত্যেকের পানি পানের পালা আসবে। (সূরা ক্বামার– ২৮)
তারা বিতর্কে লিপ্ত হয়ে গেল :
وَلَقَدْ اَرْسَلْنَاۤ اِلٰى ثَمُوْدَ اَخَاهُمْ صَالِحًا اَنِ اعْبُدُوا اللهَ فَاِذَا هُمْ فَرِيْقَانِ يَخْتَصِمُوْنَ
আমি অবশ্যই সামূদ সম্প্রদায়ের নিকট তাদের ভাই সালেহকে পাঠিয়েছিলাম এ আদেশসহ যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো। কিন্তু তারা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে বিতর্কে লিপ্ত হয়ে যায়। (সূরা নামল– ৪৫)
কিছু লোক ঈমান আনল :
قَالَ الْمَلَاُ الَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْا مِنْ قَوْمِهٖ لِلَّذِيْنَ اسْتُضْعِفُوْا لِمَنْ اٰمَنَ مِنْهُمْ اَتَعْلَمُوْنَ اَنَّ صَالِحًا مُّرْسَلٌ مِّنْ رَّبِّهٖؕ قَالُوْاۤ اِنَّا بِمَاۤ اُرْسِلَ بِهٖ مُؤْمِنُوْنَ
তার সম্প্রদায়ের দাম্ভিক প্রধানরা যেসব ঈমানদারদেরকে দুর্বল মনে করত সেসব ঈমানদারদেরকে বলেছিল, তোমরা কি জান যে, সালেহ তার প্রতিপালকের পক্ষ হতে প্রেরিত? তখন তারা বলল, তার প্রতি যে বাণী প্রেরিত হয়েছে আমরা তাতে বিশ্বাসী। (সূরা আ‘রাফু ৭৫)
সমাজের প্রধানরা সরাসরি অস্বীকার করল :
قَالَ الَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْاۤ اِنَّا بِالَّذِيْۤ اٰمَنْتُمْ بِهٖ كَافِرُوْنَ
তখন অহংকারীরা বলল, তোমরা যা বিশ্বাস কর আমরা তা অবিশ্বাস করি। (সূরা আ‘রাফু ৭৬)
তাদের অধিকাংশই ঈমান আনেনি :
وَمَا كَانَ اَكْثَرُهُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
তাদের অধিকাংশই মুমিন নয়। (সূরা শু‘আরা– ১৫৮)
তারা সতর্কবাণী অস্বীকার করল :
كَذَّبَتْ ثَمُوْدُ بِالنُّذُرِ
সামূদ সম্প্রদায় সতর্কবাণীসমূহকে মিথ্যাপ্রতিপন্ন করেছিল। (সূরা ক্বামার– ২৩)
নবীকে হত্যা করার জন্য গোপন চক্রান্ত করল :
قَالُوْا تَقَاسَمُوْا بِاللهِ لَنُبَيِّتَنَّهٗ وَاَهْلَهٗ ثُمَّ لَنَقُوْلَنَّ لِوَلِيِّهٖ مَا شَهِدْنَا مَهْلِكَ اَهْلِهٖ وَاِنَّا لَصَادِقُوْنَ ‐ وَمَكَرُوْا مَكْرًا وَّمَكَرْنَا مَكْرًا وَّهُمْ لَا يَشْعُرُوْنَ
তারা বলল, তোমরা আল্লাহর নামে (এ মর্মে) শপথ গ্রহণ করো যে, আমরা রাত্রিকালে তাঁকে ও তাঁর পরিবার–পরিজনকে আক্রমণ করব। অতঃপর তার অভিভাবককে বলব, তার পরিবার–পরিজনের হত্যার ব্যাপারে আমরা সাক্ষী নই। নিশ্চয় আমরা সত্যবাদী। তারা কৌশল অবলম্বন করেছিল এবং আমিও এক কৌশল অবলম্বন করলাম, কিন্তু তারা তা বুঝতে পারেনি। (সূরা নামল– ৪৯, ৫০)
নবী উষ্ট্রীকে প্রহার করতে নিষেধ করলেন :
فَقَالَ لَهُمْ رَسُوْلُ اللهِ نَاقَةَ اللهِ وَسُقْيَاهَا
অতঃপর আল্লাহর রাসূল তাদেরকে বলেছিলেন, আল্লাহর উষ্ট্রী ও তাকে পানি পান করানোর ব্যাপারে সতর্ক থাকো। (সূরা শামস– ১৩)
কিন্তু তারা উষ্ট্রীর প্রতি যুলুম করল :
وَاٰتَيْنَا ثَمُوْدَ النَّاقَةَ مُبْصِرَةً فَظَلَمُوْا بِهَاؕ وَمَا نُرْسِلُ بِالْاٰيَاتِ اِلَّا تَخْوِيْفًا
আমি শিক্ষাপ্রদ নিদর্শনস্বরূপ সামূদ জাতিকে উষ্ট্রী দান করেছিলাম। অতঃপর তারা সেটার প্রতি যুলুম করেছিল। আমি তো কেবল ভীতি প্রদর্শনের জন্যই এসব নিদর্শন প্রেরণ করে থাকি। (সূরা বনী ইসরাঈল– ৫৯)
একজন উষ্ট্রীকে হত্যা করার জন্য দায়িত্ব নিল :
فَنَادَوْا صَاحِبَهُمْ فَتَعَاطٰى فَعَقَرَ
অতঃপর তারা তাদের এক সঙ্গীকে আহবান করল, সে ওটাকে (উষ্ট্রীকে) ধরে হত্যা করল। (সূরা ক্বামার– ২৯)
اِذِ انْۢبَعَثَ اَشْقَاهَا
যখন তাদের সর্বাধিক হতভাগ্য ব্যক্তি তৎপর হয়ে উঠেছিল। (সূরা শামস– ১২)
তারা উষ্ট্রীকে হত্যা করে অনুতপ্ত হলো :
فَعَقَرُوْهَا فَاَصْبَحُوْا نَادِمِيْنَ
কিন্তু তারা সেটাকে হত্যা করল; অতঃপর পরিণামে তারা অনুতপ্ত হলো। (সূরা শু‘আরা– ১৫৭)
আল্লাহ নবীকে সান্ত্বনা দিলেন :
سَيَعْلَمُوْنَ غَدًا مَّنِ الْكَذَّابُ الْاَشِرُ ‐ اِنَّا مُرْسِلُوا النَّاقَةِ فِتْنَةً لَّهُمْ فَارْتَقِبْهُمْ وَاصْطَبِرْ
আগামীকাল তারা জানবে যে, কে মিথ্যাবাদী ও দাম্ভিক। আমি তাদের পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছি এক উষ্ট্রী। অতএব (হে সালেহ!) তুমি তাদের আচরণ লক্ষ্য করো এবং ধৈর্যশীল হও। (সূরা ক্বামার- ২৬, ২৭)
নবীর শেষ কথা :
فَتَوَلّٰى عَنْهُمْ وَقَالَ يَا قَوْمِ لَقَدْ اَبْلَغْتُكُمْ رِسَالَةَ رَبِّيْ وَنَصَحْتُ لَكُمْ وَلٰكِنْ لَّا تُحِّبُوْنَ النَّاصِحِيْنَ
অতঃপর তিনি (সালেহ) তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং বললেন, হে আমার সম্প্রদায়! আমি আমার প্রতিপালকের পয়গাম তোমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। আর আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিয়েছি, কিন্তু তোমরা তো উপদেশ দাতাদেরকে পছন্দ কর না। (সূরা আ‘রাফু ৭৯)
وَلَقَدْ اَرْسَلْنَاۤ اِلٰى ثَمُوْدَ اَخَاهُمْ صَالِحًا اَنِ اعْبُدُوا اللهَ فَاِذَا هُمْ فَرِيْقَانِ يَخْتَصِمُوْنَ
আমি অবশ্যই সামূদ সম্প্রদায়ের নিকট তাদের ভাই সালেহকে পাঠিয়েছিলাম এ আদেশসহ যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো। কিন্তু তারা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে বিতর্কে লিপ্ত হয়ে যায়। (সূরা নামল– ৪৫)
কিছু লোক ঈমান আনল :
قَالَ الْمَلَاُ الَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْا مِنْ قَوْمِهٖ لِلَّذِيْنَ اسْتُضْعِفُوْا لِمَنْ اٰمَنَ مِنْهُمْ اَتَعْلَمُوْنَ اَنَّ صَالِحًا مُّرْسَلٌ مِّنْ رَّبِّهٖؕ قَالُوْاۤ اِنَّا بِمَاۤ اُرْسِلَ بِهٖ مُؤْمِنُوْنَ
তার সম্প্রদায়ের দাম্ভিক প্রধানরা যেসব ঈমানদারদেরকে দুর্বল মনে করত সেসব ঈমানদারদেরকে বলেছিল, তোমরা কি জান যে, সালেহ তার প্রতিপালকের পক্ষ হতে প্রেরিত? তখন তারা বলল, তার প্রতি যে বাণী প্রেরিত হয়েছে আমরা তাতে বিশ্বাসী। (সূরা আ‘রাফু ৭৫)
সমাজের প্রধানরা সরাসরি অস্বীকার করল :
قَالَ الَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْاۤ اِنَّا بِالَّذِيْۤ اٰمَنْتُمْ بِهٖ كَافِرُوْنَ
তখন অহংকারীরা বলল, তোমরা যা বিশ্বাস কর আমরা তা অবিশ্বাস করি। (সূরা আ‘রাফু ৭৬)
তাদের অধিকাংশই ঈমান আনেনি :
وَمَا كَانَ اَكْثَرُهُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
তাদের অধিকাংশই মুমিন নয়। (সূরা শু‘আরা– ১৫৮)
তারা সতর্কবাণী অস্বীকার করল :
كَذَّبَتْ ثَمُوْدُ بِالنُّذُرِ
সামূদ সম্প্রদায় সতর্কবাণীসমূহকে মিথ্যাপ্রতিপন্ন করেছিল। (সূরা ক্বামার– ২৩)
নবীকে হত্যা করার জন্য গোপন চক্রান্ত করল :
قَالُوْا تَقَاسَمُوْا بِاللهِ لَنُبَيِّتَنَّهٗ وَاَهْلَهٗ ثُمَّ لَنَقُوْلَنَّ لِوَلِيِّهٖ مَا شَهِدْنَا مَهْلِكَ اَهْلِهٖ وَاِنَّا لَصَادِقُوْنَ ‐ وَمَكَرُوْا مَكْرًا وَّمَكَرْنَا مَكْرًا وَّهُمْ لَا يَشْعُرُوْنَ
তারা বলল, তোমরা আল্লাহর নামে (এ মর্মে) শপথ গ্রহণ করো যে, আমরা রাত্রিকালে তাঁকে ও তাঁর পরিবার–পরিজনকে আক্রমণ করব। অতঃপর তার অভিভাবককে বলব, তার পরিবার–পরিজনের হত্যার ব্যাপারে আমরা সাক্ষী নই। নিশ্চয় আমরা সত্যবাদী। তারা কৌশল অবলম্বন করেছিল এবং আমিও এক কৌশল অবলম্বন করলাম, কিন্তু তারা তা বুঝতে পারেনি। (সূরা নামল– ৪৯, ৫০)
নবী উষ্ট্রীকে প্রহার করতে নিষেধ করলেন :
فَقَالَ لَهُمْ رَسُوْلُ اللهِ نَاقَةَ اللهِ وَسُقْيَاهَا
অতঃপর আল্লাহর রাসূল তাদেরকে বলেছিলেন, আল্লাহর উষ্ট্রী ও তাকে পানি পান করানোর ব্যাপারে সতর্ক থাকো। (সূরা শামস– ১৩)
কিন্তু তারা উষ্ট্রীর প্রতি যুলুম করল :
وَاٰتَيْنَا ثَمُوْدَ النَّاقَةَ مُبْصِرَةً فَظَلَمُوْا بِهَاؕ وَمَا نُرْسِلُ بِالْاٰيَاتِ اِلَّا تَخْوِيْفًا
আমি শিক্ষাপ্রদ নিদর্শনস্বরূপ সামূদ জাতিকে উষ্ট্রী দান করেছিলাম। অতঃপর তারা সেটার প্রতি যুলুম করেছিল। আমি তো কেবল ভীতি প্রদর্শনের জন্যই এসব নিদর্শন প্রেরণ করে থাকি। (সূরা বনী ইসরাঈল– ৫৯)
একজন উষ্ট্রীকে হত্যা করার জন্য দায়িত্ব নিল :
فَنَادَوْا صَاحِبَهُمْ فَتَعَاطٰى فَعَقَرَ
অতঃপর তারা তাদের এক সঙ্গীকে আহবান করল, সে ওটাকে (উষ্ট্রীকে) ধরে হত্যা করল। (সূরা ক্বামার– ২৯)
اِذِ انْۢبَعَثَ اَشْقَاهَا
যখন তাদের সর্বাধিক হতভাগ্য ব্যক্তি তৎপর হয়ে উঠেছিল। (সূরা শামস– ১২)
তারা উষ্ট্রীকে হত্যা করে অনুতপ্ত হলো :
فَعَقَرُوْهَا فَاَصْبَحُوْا نَادِمِيْنَ
কিন্তু তারা সেটাকে হত্যা করল; অতঃপর পরিণামে তারা অনুতপ্ত হলো। (সূরা শু‘আরা– ১৫৭)
আল্লাহ নবীকে সান্ত্বনা দিলেন :
سَيَعْلَمُوْنَ غَدًا مَّنِ الْكَذَّابُ الْاَشِرُ ‐ اِنَّا مُرْسِلُوا النَّاقَةِ فِتْنَةً لَّهُمْ فَارْتَقِبْهُمْ وَاصْطَبِرْ
আগামীকাল তারা জানবে যে, কে মিথ্যাবাদী ও দাম্ভিক। আমি তাদের পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছি এক উষ্ট্রী। অতএব (হে সালেহ!) তুমি তাদের আচরণ লক্ষ্য করো এবং ধৈর্যশীল হও। (সূরা ক্বামার- ২৬, ২৭)
নবীর শেষ কথা :
فَتَوَلّٰى عَنْهُمْ وَقَالَ يَا قَوْمِ لَقَدْ اَبْلَغْتُكُمْ رِسَالَةَ رَبِّيْ وَنَصَحْتُ لَكُمْ وَلٰكِنْ لَّا تُحِّبُوْنَ النَّاصِحِيْنَ
অতঃপর তিনি (সালেহ) তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং বললেন, হে আমার সম্প্রদায়! আমি আমার প্রতিপালকের পয়গাম তোমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। আর আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিয়েছি, কিন্তু তোমরা তো উপদেশ দাতাদেরকে পছন্দ কর না। (সূরা আ‘রাফু ৭৯)
তাদেরকে তিন দিন সময় দেয়া হয়েছিল :
فَقَالَ تَمَتَّعُوْا فِيْ دَارِكُمْ ثَلَاثَةَ اَيَّامٍؕ ذٰلِكَ وَعْدٌ غَيْرُ مَكْذُوْبٍ
সে বলল, তোমরা তোমাদের গৃহে তিন দিন জীবন উপভোগ করে নাও। এটি একটি প্রতিশ্রুতি, যা কখনো মিথ্যা হওয়ার মতো নয়। (সূরা হুদু ৬৫)
এরপর তাদের উপর আযাব এসে গেল :
فَعَتَوْا عَنْ اَمْرِ رَبِّهِمْ فَاَخَذَتْهُمُ الصَّاعِقَةُ وَهُمْ يَنْظُرُوْنَ
কিন্তু তারা তাদের প্রতিপালকের আদেশ অমান্য করল; ফলে তাদের প্রতি বজ্রাঘাত হলো। আর তারা শুধু তা দেখছিল। (সূরা যারিয়াত– ৪৪)
তা ছিল প্রচন্ড ভূমিকম্প ও প্রচন্ড বিস্ফোরণ :
فَاَخَذَتْهُمُ الرَّجْفَةُ فَاَصْبَحُوْا فِيْ دَارِهِمْ جَاثِمِيْنَ
সুতরাং তাদেরকে একটি প্রলয়ংকারী ভূমিকম্প এসে গ্রাস করে নিল, ফলে তারা নিজেদের গৃহের মধ্যেই (মৃত অবস্থায়) উপুড় হয়ে পড়ে থাকল। (সূরা আ‘রাফু ৭৮)
وَاَخَذَ الَّذِيْنَ ظَلَمُوا الصَّيْحَةُ فَاَصْبَحُوْا فِيْ دِيَارِهِمْ جَاثِمِيْنَ
অতঃপর যারা সীমালঙ্ঘন করেছিল তাদেরকে এক প্রচন্ড ধ্বনি এসে আঘাত করল, ফলে তারা নিজ নিজ গৃহে নতজানু অবস্থায় শেষ হয়ে গেল। (সূরা হুদু ৬৭)
فَاَمَّا ثَمُوْدُ فَاُهْلِكُوْا بِالطَّاغِيَةِ
অতঃপর সামূদ সম্প্রদায়, তাদেরকে ধ্বংস করা হয়েছিল এক ভয়ঙ্কর আওয়াজ দ্বারা। (সূরা হাক্কাহ– ৫)
আযাব তাদেরকে সকালে পাকড়াও করল :
فَاَخَذَتْهُمُ الصَّيْحَةُ مُصْبِحِيْنَ
অতঃপর এক প্রভাতে বিকট আওয়াজ তাদেরকে আঘাত করল। (সূরা হিজর– ৮৩)
তারা আবর্জনায় পরিণত হলো :
اِنَّاۤ اَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ صَيْحَةً وَّاحِدَةً فَكَانُوْا كَهَشِيْمِ الْمُحْتَظِرِ
আমি তাদের উপর ছেড়েছি এক বিকট আওয়াজ, ফলে তারা হয়ে গেল খোয়াড় মালিকদের খন্ডিত ভূষির ন্যায়। (সূরা ক্বামার– ৩১)
তাদের ঘরবাড়ি খালি হয়ে গেল :
فَتِلْكَ بُيُوْتُهُمْ خَاوِيَةً ۢبِمَا ظَلَمُوْاۤ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّعْلَمُوْنَ
এ তো তাদের ঘরবাড়ি, যা তাদের সীমালঙ্ঘনের কারণে জনশূন্য অবস্থায় পড়ে আছে। নিশ্চয় এতে জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা নামল– ৫২)
وَاَنَّهٗۤ اَهْلَكَ عَادَانِ الْاُوْلٰى ‐ وَثَمُوْدَ فَمَاۤ اَبْقٰى
তিনিই প্রথম আদ সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছিলেন এবং সামূদ সম্প্রদায়কেও বাকী রাখেননি। (সূরা নাজম– ৫০, ৫১)
তাদেরকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হলো :
فَكَذَّبُوْهُ فَعَقَرُوْهَا۪ فَدَمْدَمَ عَلَيْهِمْ رَبُّهُمْ بِذَنْۢبِهِمْ فَسَوَّاهَا ‐ وَلَا يَخَافُ عُقْبَاهَا
অতঃপর তারা তাঁর প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল এবং উষ্ট্রীর পা কর্তন করে দিয়েছিল। তাদের পাপের কারণে তাদের পালনকর্তা তাদের উপর ধ্বংস নাযিল করে একাকার করে দিলেন। আল্লাহ তা‘আলা এই ধ্বংসের কোন বিরূপ পরিণতির আশঙ্কা করেন না। (সূরা শামস- ১৪, ১৫)
তাদের প্রাসাদ কোন কাজে লাগেনি :
فَمَاۤ اَغْنٰى عَنْهُمْ مَّا كَانُوْا يَكْسِبُوْنَ
সুতরাং তারা যা অর্জন করত, তা তাদের কোন কাজে আসেনি। (সূরা হিজর– ৮৪)
কুফরীর কারণে তাদের এ অবস্থা হয়েছে :
كَاَنْ لَّمْ يَغْنَوْا فِيْهَاؕ اَ لَاۤ اِنَّ ثَمُوْدَ كَفَرُوْا رَبَّهُمْؕ اَ لَا بُعْدًا لِّثَمُوْدَ
(তাদের জনপদ এমন হয়ে গিয়েছিল যে, মনে হচ্ছিল) যেন তারা সেথায় কখনো বসবাস করেনি। জেনে রেখো! নিশ্চয় সামূদ সম্প্রদায় তাদের প্রতিপালককে অস্বীকার করেছিল। জেনে রেখো, ধ্বংসই হলো সামূদ সম্প্রদায়ের পরিণাম। (সূরা হুদু ৬৮)
فَقَالَ تَمَتَّعُوْا فِيْ دَارِكُمْ ثَلَاثَةَ اَيَّامٍؕ ذٰلِكَ وَعْدٌ غَيْرُ مَكْذُوْبٍ
সে বলল, তোমরা তোমাদের গৃহে তিন দিন জীবন উপভোগ করে নাও। এটি একটি প্রতিশ্রুতি, যা কখনো মিথ্যা হওয়ার মতো নয়। (সূরা হুদু ৬৫)
এরপর তাদের উপর আযাব এসে গেল :
فَعَتَوْا عَنْ اَمْرِ رَبِّهِمْ فَاَخَذَتْهُمُ الصَّاعِقَةُ وَهُمْ يَنْظُرُوْنَ
কিন্তু তারা তাদের প্রতিপালকের আদেশ অমান্য করল; ফলে তাদের প্রতি বজ্রাঘাত হলো। আর তারা শুধু তা দেখছিল। (সূরা যারিয়াত– ৪৪)
তা ছিল প্রচন্ড ভূমিকম্প ও প্রচন্ড বিস্ফোরণ :
فَاَخَذَتْهُمُ الرَّجْفَةُ فَاَصْبَحُوْا فِيْ دَارِهِمْ جَاثِمِيْنَ
সুতরাং তাদেরকে একটি প্রলয়ংকারী ভূমিকম্প এসে গ্রাস করে নিল, ফলে তারা নিজেদের গৃহের মধ্যেই (মৃত অবস্থায়) উপুড় হয়ে পড়ে থাকল। (সূরা আ‘রাফু ৭৮)
وَاَخَذَ الَّذِيْنَ ظَلَمُوا الصَّيْحَةُ فَاَصْبَحُوْا فِيْ دِيَارِهِمْ جَاثِمِيْنَ
অতঃপর যারা সীমালঙ্ঘন করেছিল তাদেরকে এক প্রচন্ড ধ্বনি এসে আঘাত করল, ফলে তারা নিজ নিজ গৃহে নতজানু অবস্থায় শেষ হয়ে গেল। (সূরা হুদু ৬৭)
فَاَمَّا ثَمُوْدُ فَاُهْلِكُوْا بِالطَّاغِيَةِ
অতঃপর সামূদ সম্প্রদায়, তাদেরকে ধ্বংস করা হয়েছিল এক ভয়ঙ্কর আওয়াজ দ্বারা। (সূরা হাক্কাহ– ৫)
আযাব তাদেরকে সকালে পাকড়াও করল :
فَاَخَذَتْهُمُ الصَّيْحَةُ مُصْبِحِيْنَ
অতঃপর এক প্রভাতে বিকট আওয়াজ তাদেরকে আঘাত করল। (সূরা হিজর– ৮৩)
তারা আবর্জনায় পরিণত হলো :
اِنَّاۤ اَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ صَيْحَةً وَّاحِدَةً فَكَانُوْا كَهَشِيْمِ الْمُحْتَظِرِ
আমি তাদের উপর ছেড়েছি এক বিকট আওয়াজ, ফলে তারা হয়ে গেল খোয়াড় মালিকদের খন্ডিত ভূষির ন্যায়। (সূরা ক্বামার– ৩১)
তাদের ঘরবাড়ি খালি হয়ে গেল :
فَتِلْكَ بُيُوْتُهُمْ خَاوِيَةً ۢبِمَا ظَلَمُوْاۤ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّعْلَمُوْنَ
এ তো তাদের ঘরবাড়ি, যা তাদের সীমালঙ্ঘনের কারণে জনশূন্য অবস্থায় পড়ে আছে। নিশ্চয় এতে জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা নামল– ৫২)
وَاَنَّهٗۤ اَهْلَكَ عَادَانِ الْاُوْلٰى ‐ وَثَمُوْدَ فَمَاۤ اَبْقٰى
তিনিই প্রথম আদ সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছিলেন এবং সামূদ সম্প্রদায়কেও বাকী রাখেননি। (সূরা নাজম– ৫০, ৫১)
তাদেরকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হলো :
فَكَذَّبُوْهُ فَعَقَرُوْهَا۪ فَدَمْدَمَ عَلَيْهِمْ رَبُّهُمْ بِذَنْۢبِهِمْ فَسَوَّاهَا ‐ وَلَا يَخَافُ عُقْبَاهَا
অতঃপর তারা তাঁর প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল এবং উষ্ট্রীর পা কর্তন করে দিয়েছিল। তাদের পাপের কারণে তাদের পালনকর্তা তাদের উপর ধ্বংস নাযিল করে একাকার করে দিলেন। আল্লাহ তা‘আলা এই ধ্বংসের কোন বিরূপ পরিণতির আশঙ্কা করেন না। (সূরা শামস- ১৪, ১৫)
তাদের প্রাসাদ কোন কাজে লাগেনি :
فَمَاۤ اَغْنٰى عَنْهُمْ مَّا كَانُوْا يَكْسِبُوْنَ
সুতরাং তারা যা অর্জন করত, তা তাদের কোন কাজে আসেনি। (সূরা হিজর– ৮৪)
কুফরীর কারণে তাদের এ অবস্থা হয়েছে :
كَاَنْ لَّمْ يَغْنَوْا فِيْهَاؕ اَ لَاۤ اِنَّ ثَمُوْدَ كَفَرُوْا رَبَّهُمْؕ اَ لَا بُعْدًا لِّثَمُوْدَ
(তাদের জনপদ এমন হয়ে গিয়েছিল যে, মনে হচ্ছিল) যেন তারা সেথায় কখনো বসবাস করেনি। জেনে রেখো! নিশ্চয় সামূদ সম্প্রদায় তাদের প্রতিপালককে অস্বীকার করেছিল। জেনে রেখো, ধ্বংসই হলো সামূদ সম্প্রদায়ের পরিণাম। (সূরা হুদু ৬৮)
আল্লাহ নবী ও মুমিনদেরকে বাঁচালেন :
فَلَمَّا جَآءَ اَمْرُنَا نَجَّيْنَا صَالِحًا وَّالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَعَهٗ بِرَحْمَةٍ مِّنَّا وَمِنْ خِزْيِ يَوْمِئِذٍؕ اِنَّ رَبَّكَ هُوَ الْقَوِيُّ الْعَزِيْزُ
যখন আমার নির্দেশ আসল তখন আমি সালেহ ও তাঁর সঙ্গে যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে আমার অনুগ্রহে রক্ষা করলাম এবং রক্ষা করলাম সে দিনের লাঞ্ছনা হতে। নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক শক্তিমান ও পরাক্রমশালী। (সূরা হুদু ৬৬)
وَاَنْجَيْنَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَكَانُوْا يَتَّقُوْنَ
আর যারা ঈমান আনয়ন করেছিল, আমি তাদেরকে উদ্ধার করি। কেননা তারা তাক্বওয়া অবলম্বন করত।
(সূরা নামল– ৫৩)
সামূদ জাতির ইতিহাস জানতে হবে :
هَلْ اَتَاكَ حَدِيْثُ الْجُنُوْدِ ‐ فِرْعَوْنَ وَثَمُوْدَ
তোমার নিকট কি সৈন্যবাহিনীর খবর পৌঁছেছে? ফিরাউন ও সামূদের? (সূরা বুরুজ– ১৭, ১৮)
এ ঘটনায় উপদেশ রয়েছে :
فَتِلْكَ بُيُوْتُهُمْ خَاوِيَةً ۢبِمَا ظَلَمُوْاؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّعْلَمُوْنَ
এই তো তাদের ঘরবাড়ি, সীমালঙ্ঘনের ফলে তা জনশূন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছে। নিশ্চয় এতে জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা নামল– ৫২)
فَاَخَذَهُمُ الْعَذَابُؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةًؕ وَمَا كَانَ اَكْثَرُهُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
অতঃপর শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করল। অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে, কিন্তু তাদের অধিকাংশই মুমিন নয়।
(সূরা শু‘আরা– ১৫৮)
فَلَمَّا جَآءَ اَمْرُنَا نَجَّيْنَا صَالِحًا وَّالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَعَهٗ بِرَحْمَةٍ مِّنَّا وَمِنْ خِزْيِ يَوْمِئِذٍؕ اِنَّ رَبَّكَ هُوَ الْقَوِيُّ الْعَزِيْزُ
যখন আমার নির্দেশ আসল তখন আমি সালেহ ও তাঁর সঙ্গে যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে আমার অনুগ্রহে রক্ষা করলাম এবং রক্ষা করলাম সে দিনের লাঞ্ছনা হতে। নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক শক্তিমান ও পরাক্রমশালী। (সূরা হুদু ৬৬)
وَاَنْجَيْنَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَكَانُوْا يَتَّقُوْنَ
আর যারা ঈমান আনয়ন করেছিল, আমি তাদেরকে উদ্ধার করি। কেননা তারা তাক্বওয়া অবলম্বন করত।
(সূরা নামল– ৫৩)
সামূদ জাতির ইতিহাস জানতে হবে :
هَلْ اَتَاكَ حَدِيْثُ الْجُنُوْدِ ‐ فِرْعَوْنَ وَثَمُوْدَ
তোমার নিকট কি সৈন্যবাহিনীর খবর পৌঁছেছে? ফিরাউন ও সামূদের? (সূরা বুরুজ– ১৭, ১৮)
এ ঘটনায় উপদেশ রয়েছে :
فَتِلْكَ بُيُوْتُهُمْ خَاوِيَةً ۢبِمَا ظَلَمُوْاؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّعْلَمُوْنَ
এই তো তাদের ঘরবাড়ি, সীমালঙ্ঘনের ফলে তা জনশূন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছে। নিশ্চয় এতে জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা নামল– ৫২)
فَاَخَذَهُمُ الْعَذَابُؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةًؕ وَمَا كَانَ اَكْثَرُهُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
অতঃপর শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করল। অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে, কিন্তু তাদের অধিকাংশই মুমিন নয়।
(সূরা শু‘আরা– ১৫৮)
ইবরাহীম (আঃ) পশ্চিম ইরাকের বসরার নিকটবর্তী ‘বাবেল’ শহরে খ্রিষ্টপূর্ব ২১৬০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিল ততকালীন শাসক নমরুদের মন্ত্রী, যার নাম ছিল আযর। সারা এবং হাজেরা নামে তাঁর দু’জন স্ত্রী ছিল। স্ত্রী সারার ঘর থেকে জন্ম নেন ইসহাক (আঃ), যার বংশধর বনী ইসরাঈল নামে পরিচিত। আর হাজেরার ঘর থেকে জন্ম নেন ইসমাঈল (আঃ), যার বংশধারা থেকে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদ ﷺ এর আগমন ঘটে। ইবরাহীম (আঃ) ছিলেন মুসলিম জাতির পিতা। কেননা আদম (আঃ) হতে ইবরাহীম (আঃ) পর্যন্ত ১০/১২ জন নবী ছাড়া শেষনবী মুহাম্মাদ ﷺ পর্যন্ত প্রায় সকলেই ছিলেন ইবরাহীম (আঃ) এর বংশধর। তিনি গোটা জীবন সত্য ধর্মের দাওয়াত দিয়ে যান। আল্লাহ তাঁকে অনেক কঠিন কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন করেন এবং তিনি প্রত্যেকটি পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হন। ফলে তিনি খলীলুল্লাহ উপাধী লাভ করেন।
ইবরাহীম (আঃ) ছিলেন মুমিন বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত :
اِنَّهٗ مِنْ عِبَادِنَا الْمُؤْمِنِيْنَ
নিশ্চয় তিনি ছিলেন আমার মুমিন বান্দাদের একজন। (সূরা সাফ্ফাত– ১১১)
তিনি ছিলেন সত্যনিষ্ঠ নবী :
وَاذْكُرْ فِى الْكِتَابِ اِبْرَاهِيْمَؕ اِنَّهٗ كَانَ صِدِيّقًا نَّبِيًّا
স্মরণ করো, এ কিতাবে উল্লেখিত ইবরাহীমের কথা। সে ছিল সত্যনিষ্ঠ নবী। (সূরা মারইয়াম– ৪১)
তিনি ছিলেন কৃতজ্ঞ বান্দা :
شَاكِرًا لِّاَنْعُمِهٖؕ اِجْتَبَاهُ وَهَدَاهُ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
তিনি ছিলেন আল্লাহর অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞ। আল্লাহ তাকে মনোনীত করেছিলেন এবং তাকে পরিচালিত করেছিলেন সরল পথে। (সূরা নাহল– ১২১)
ইবরাহীম (আঃ) ছিলেন আল্লাহ অভিমুখী :
اِنَّ اِبْرَاهِيْمَ لَحَلِيْمٌ اَوَّاهٌ مُّنِيْبٌ
নিশ্চয় ইবরাহীম ছিলেন সহনশীল, কোমল হৃদয় এবং আল্লাহ অভিমুখী। (সূরা হুদু ৭৫)
ব্যাখ্যা : اَوَّاهٌ (আওওয়াহুন) এমন ব্যক্তিকে বলা হয়, যে কান্নাকাটি করে, ভয় পায় ও আক্ষেপ করে। আর حَلِيْمٌ (হালীম) এমন ব্যক্তিকে বলা হয়, যে নিজের মেজায সংযত রাখে; রাগে, শত্রুতায় ও বিরোধিতায় বেসামাল আচরণ করে না এবং অন্যদিকে ভালোবাসা, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ক্ষেত্রে সীমা অতিক্রম করে যায় না।
আল্লাহ তাকে জ্ঞানবুদ্ধি দান করেছিলেন :
وَلَقَدْ اٰتَيْنَاۤ اِبْرَاهِيْمَ رُشْدَهٗ مِنْ قَبْلُ وَكُنَّا بِهٖ عَالِمِيْنَ
আমি তো ইতোপূর্বে ইবরাহীমকে সৎপথের জ্ঞান দান করেছিলাম এবং আমি তার সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত ছিলাম। (সূরা আম্বিয়া– ৫১)
ব্যাখ্যা : رُشْدٌ (রুশ্দ) এর অর্থ হচ্ছে, সঠিক ও বেঠিকের মধ্যে পার্থক্য করে সঠিক পথ অবলম্বন করা এবং বেঠিক পথ থেকে দূরে সরে যাওয়া। ‘রুশ্দ’ শব্দটি কেবলমাত্র সত্যনিষ্ঠা নয় বরং এমন সত্যজ্ঞানের ভাব প্রকাশ করে, যা সঠিক চিন্তা ও ভারসাম্যপূর্ণ বুদ্ধি ব্যবহারের ফলশ্রুতিতে হয়ে থাকে।
ইবরাহীম (আঃ) ছিলেন আল্লাহর বন্ধু :
وَاتَّخَذَ اللهُ اِبْرَاهِيْمَ خَلِيْلًا
আর আল্লাহ ইবরাহীমকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছেন। (সূরা নিসা– ১২৫)
তিনি আল্লাহর আদেশের অনুগত ছিলেন :
اِذْ قَالَ لَهٗ رَبُّهٗۤ اَسْلِمْ قَالَ اَسْلَمْتُ لِرَبِّ الْعَالَمِيْنَ
যখন তাঁর প্রতিপালক তাঁকে বললেন, তুমি আত্মসমর্পণ করো; তখন তিনি বলেছিলেন, আমি বিশ্বজগতের প্রতিপালকের নিকট আত্মসমর্পণ করলাম। (সূরা বাক্বারা– ১৩১)
ইবরাহীম (আঃ) ছিলেন আল্লাহর নির্বাচিত বান্দা :
وَمَنْ يَّرْغَبُ عَنْ مِّلَّةِ اِبْرَاهِيْمَ اِلَّا مَنْ سَفِهَ نَفْسَهٗؕ وَلَقَدِ اصْطَفَيْنَاهُ فِى الدُّنْيَاۚ وَاِنَّهٗ فِى الْاٰخِرَةِ لَمِنَ الصَّالِحِيْنَ
যে নিজেকে নির্বোধ বানিয়ে নিয়েছে সে ব্যতীত কে ইবরাহীমের ধর্ম হতে বিমুখ হবে। নিশ্চয় আমি তাকে এ পৃথিবীতে মনোনীত করেছিলাম, নিশ্চয় সে পরকালে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা বাক্বারা– ১৩০)
তাঁর অন্তর ছিল বিশুদ্ধ ও নিষ্কলুষ :
اِذْ جَآءَ رَبَّهٗ بِقَلْبٍ سَلِيْمٍ
স্মরণ করো, যখন তিনি বিশুদ্ধচিত্তে তার প্রতিপালকের নিকট উপস্থিত হয়েছিলেন। (সূরা সাফ্ফাত– ৮৪)
اِنَّ اِبْرَاهِيْمَ لَاَوَّاهٌ حَلِيْمٌ
নিশ্চয় ইবরাহীম ছিলেন কোমল হৃদয় ও সহনশীলতার অধিকারী। (সূরা তাওবা– ১১৪)
তিনি সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন :
وَاِذِ ابْتَلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ رَبُّهٗ بِكَلِمَاتٍ فَاَتَمَّهُنَّ
স্মরণ করো, যখন তোমার প্রতিপালক ইবরাহীমকে কতিপয় বাক্য দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, অতঃপর তিনি তা পূর্ণ করেছিলেন। (সূরা বাক্বারা– ১২৪)
আল্লাহ তাঁকে জাতির নেতৃত্ব দান করেছিলেন :
قَالَ اِنِّيْ جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ اِمَامًاؕ قَالَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِيْؕ قَالَ لَا يَنَالُ عَهْدِى الظَّالِمِيْنَ
আল্লাহ বললেন, নিশ্চয় আমি তোমাকে মানবমন্ডলীর নেতা বানাব। তখন তিনি বলেছিলেন, আমার বংশধরগণ হতেও (নেতা বানাবেন)। আল্লাহ বললেন, আমার অঙ্গীকার অত্যাচারীদের প্রতি প্রযোজ্য হবে না। (সূরা বাক্বারা– ১২৪)
তিনি ইয়াহুদি বা নাসারা ছিলেন না :
اَمْ تَقُوْلُوْنَ اِنَّ اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ وَاِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَ وَالْاَسْبَاطَ كَانُوْا هُوْدًا اَوْ نَصَارٰىؕ قُلْ اَاَنْتُمْ اَعْلَمُ اَمِ اللهُ
তোমরা কি বলছ যে, ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব ও তাদের বংশধর ইয়াহুদি কিংবা খ্রিস্টান ছিলেন? বলো, তোমরাই বেশি জান নাকি আল্লাহ? (সূরা বাক্বারা– ১৪০)
তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ মুসলিম :
مَا كَانَ اِبْرَاهِيْمُ يَهُوْدِيًّا وَّلَا نَصْرَانِيًّا وَّلٰكِنْ كَانَ حَنِيْفًا مُّسْلِمًا
ইবরাহীম ইয়াহুদি বা নাসারা কিছুই ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ মুসলিম। (সূরা আলে ইমরানু ৬৭)
তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না :
قُلْ صَدَقَ اللهُ فَاتَّبِعُوْا مِلَّةَ اِبْرَاهِيْمَ حَنِيْفًاؕ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
বলো, আল্লাহ সত্য বলেছেন। সুতরাং তোমরা একনিষ্ঠভাবে ইবরাহীমের মিল্লাতের অনুসরণ করো। আর তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। (সূরা আলে ইমরানু ৯৫)
তিনি ছিলেন মুসলিম জাতির পিতা :
مِلَّةَ اَبِيْكُمْ اِبْرَاهِيْمَؕ هُوَ سَمَّاكُمُ الْمُسْلِمِيْنَ مِنْ قَبْلُ وَفِيْ هٰذَا
এটা তোমাদের পিতা ইবরাহীমের মিল্লাত। তিনি পূর্বে তোমাদের নামকরণ করেছেন ‘মুসলিম’ এবং এ কিতাবেও। (সূরা হজ্জ– ৭৮)
তিনি একাই এক উম্মতের দায়িত্ব পালন করেন :
اِنَّ اِبْرَاهِيْمَ كَانَ اُمَّةً قَانِتًا لِّلّٰهِ حَنِيْفًاؕ وَلَمْ يَكُ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
ইবরাহীম ছিলেন এক ‘ উম্মত’, আল্লাহর অনুগত, একনিষ্ঠ এবং তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না।
(সূরা নাহল– ১২০)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ তিনি একাই ছিলেন একটি উম্মতের সমান। যখন দুনিয়ায় কোন মুসলিম ছিল না তখন একদিকে তিনি একাই ছিলেন ইসলামের পতাকাবাহী, অন্যদিকে সারা দুনিয়ার মানুষ ছিল কুফরীর পতাকাবাহী। আল্লাহর এ একক বান্দা তখন এমন কাজ করেন, যা করার জন্য একটি উম্মতের প্রয়োজন ছিল।
তাঁর বংশে অনেক নবী জন্ম লাভ করেছেন :
وَلَقَدْ اَرْسَلْنَا نُوْحًا وَّاِبْرَاهِيْمَ وَجَعَلْنَا فِيْ ذُرِّيَّتِهِمَا النُّبُوَّةَ وَالْكِتَابَ فَمِنْهُمْ مُّهْتَدٍۚ وَكَثِيْرٌ مِّنْهُمْ فَاسِقُوْنَ
আমি নূহ ও ইবরাহীমকে (রাসূলরূপে) প্রেরণ করেছিলাম এবং আমি তাদের দু’জনের বংশে নবুওয়াত ও কিতাবের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। কিন্তু তাদের (বংশধরের) খুব অল্পই সৎপথ অবলম্বন করেছিল এবং অধিকাংশই ছিল ফাসিক। (সূরা হাদীদু ২৬)
ইবরাহীম (আঃ) এর বংশে নবুওয়াত ও রাজত্ব দেয়া হয়েছে :
اَمْ يَحْسُدُوْنَ النَّاسَ عَلٰى مَاۤ اٰتَاهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٖۚ فَقَدْ اٰتَيْنَاۤ اٰلَ اِبْرَاهِيْمَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَاٰتَيْنَاهُمْ مُّلْكًا عَظِيْمًا
অথবা আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে যা দিয়েছেন সেজন্য কি তারা তাদের সাথে ঈর্ষা করে? আমি ইবরাহীমের বংশধরকেও তো কিতাব ও হেকমত প্রদান করেছিলাম এবং তাদেরকে বিশাল রাজত্ব দান করেছিলাম। (সূরা নিসা– ৫৪)
ইবরাহীম (আঃ) এর ঘনিষ্ঠ লোক উম্মতে মুহাম্মাদী :
اِنَّ اَوْلَى النَّاسِ بِاِبْرَاهِيْمَ لَلَّذِيْنَ اتَّبَعُوْهُ وَهٰذَا النَّبِيُّ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَاللهُ وَلِيُّ الْمُؤْمِنِيْنَ
মানুষের মধ্যে ইবরাহীমের নিকট সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে তারা, যারা তার অনুসরণ করেছে এবং এই নবী ও ঈমানদারগণ। আর আল্লাহ মুমিনদের বন্ধু। (সূরা আলে ইমরানু ৬৮)
اِنَّهٗ مِنْ عِبَادِنَا الْمُؤْمِنِيْنَ
নিশ্চয় তিনি ছিলেন আমার মুমিন বান্দাদের একজন। (সূরা সাফ্ফাত– ১১১)
তিনি ছিলেন সত্যনিষ্ঠ নবী :
وَاذْكُرْ فِى الْكِتَابِ اِبْرَاهِيْمَؕ اِنَّهٗ كَانَ صِدِيّقًا نَّبِيًّا
স্মরণ করো, এ কিতাবে উল্লেখিত ইবরাহীমের কথা। সে ছিল সত্যনিষ্ঠ নবী। (সূরা মারইয়াম– ৪১)
তিনি ছিলেন কৃতজ্ঞ বান্দা :
شَاكِرًا لِّاَنْعُمِهٖؕ اِجْتَبَاهُ وَهَدَاهُ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
তিনি ছিলেন আল্লাহর অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞ। আল্লাহ তাকে মনোনীত করেছিলেন এবং তাকে পরিচালিত করেছিলেন সরল পথে। (সূরা নাহল– ১২১)
ইবরাহীম (আঃ) ছিলেন আল্লাহ অভিমুখী :
اِنَّ اِبْرَاهِيْمَ لَحَلِيْمٌ اَوَّاهٌ مُّنِيْبٌ
নিশ্চয় ইবরাহীম ছিলেন সহনশীল, কোমল হৃদয় এবং আল্লাহ অভিমুখী। (সূরা হুদু ৭৫)
ব্যাখ্যা : اَوَّاهٌ (আওওয়াহুন) এমন ব্যক্তিকে বলা হয়, যে কান্নাকাটি করে, ভয় পায় ও আক্ষেপ করে। আর حَلِيْمٌ (হালীম) এমন ব্যক্তিকে বলা হয়, যে নিজের মেজায সংযত রাখে; রাগে, শত্রুতায় ও বিরোধিতায় বেসামাল আচরণ করে না এবং অন্যদিকে ভালোবাসা, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ক্ষেত্রে সীমা অতিক্রম করে যায় না।
আল্লাহ তাকে জ্ঞানবুদ্ধি দান করেছিলেন :
وَلَقَدْ اٰتَيْنَاۤ اِبْرَاهِيْمَ رُشْدَهٗ مِنْ قَبْلُ وَكُنَّا بِهٖ عَالِمِيْنَ
আমি তো ইতোপূর্বে ইবরাহীমকে সৎপথের জ্ঞান দান করেছিলাম এবং আমি তার সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত ছিলাম। (সূরা আম্বিয়া– ৫১)
ব্যাখ্যা : رُشْدٌ (রুশ্দ) এর অর্থ হচ্ছে, সঠিক ও বেঠিকের মধ্যে পার্থক্য করে সঠিক পথ অবলম্বন করা এবং বেঠিক পথ থেকে দূরে সরে যাওয়া। ‘রুশ্দ’ শব্দটি কেবলমাত্র সত্যনিষ্ঠা নয় বরং এমন সত্যজ্ঞানের ভাব প্রকাশ করে, যা সঠিক চিন্তা ও ভারসাম্যপূর্ণ বুদ্ধি ব্যবহারের ফলশ্রুতিতে হয়ে থাকে।
ইবরাহীম (আঃ) ছিলেন আল্লাহর বন্ধু :
وَاتَّخَذَ اللهُ اِبْرَاهِيْمَ خَلِيْلًا
আর আল্লাহ ইবরাহীমকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছেন। (সূরা নিসা– ১২৫)
তিনি আল্লাহর আদেশের অনুগত ছিলেন :
اِذْ قَالَ لَهٗ رَبُّهٗۤ اَسْلِمْ قَالَ اَسْلَمْتُ لِرَبِّ الْعَالَمِيْنَ
যখন তাঁর প্রতিপালক তাঁকে বললেন, তুমি আত্মসমর্পণ করো; তখন তিনি বলেছিলেন, আমি বিশ্বজগতের প্রতিপালকের নিকট আত্মসমর্পণ করলাম। (সূরা বাক্বারা– ১৩১)
ইবরাহীম (আঃ) ছিলেন আল্লাহর নির্বাচিত বান্দা :
وَمَنْ يَّرْغَبُ عَنْ مِّلَّةِ اِبْرَاهِيْمَ اِلَّا مَنْ سَفِهَ نَفْسَهٗؕ وَلَقَدِ اصْطَفَيْنَاهُ فِى الدُّنْيَاۚ وَاِنَّهٗ فِى الْاٰخِرَةِ لَمِنَ الصَّالِحِيْنَ
যে নিজেকে নির্বোধ বানিয়ে নিয়েছে সে ব্যতীত কে ইবরাহীমের ধর্ম হতে বিমুখ হবে। নিশ্চয় আমি তাকে এ পৃথিবীতে মনোনীত করেছিলাম, নিশ্চয় সে পরকালে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা বাক্বারা– ১৩০)
তাঁর অন্তর ছিল বিশুদ্ধ ও নিষ্কলুষ :
اِذْ جَآءَ رَبَّهٗ بِقَلْبٍ سَلِيْمٍ
স্মরণ করো, যখন তিনি বিশুদ্ধচিত্তে তার প্রতিপালকের নিকট উপস্থিত হয়েছিলেন। (সূরা সাফ্ফাত– ৮৪)
اِنَّ اِبْرَاهِيْمَ لَاَوَّاهٌ حَلِيْمٌ
নিশ্চয় ইবরাহীম ছিলেন কোমল হৃদয় ও সহনশীলতার অধিকারী। (সূরা তাওবা– ১১৪)
তিনি সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন :
وَاِذِ ابْتَلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ رَبُّهٗ بِكَلِمَاتٍ فَاَتَمَّهُنَّ
স্মরণ করো, যখন তোমার প্রতিপালক ইবরাহীমকে কতিপয় বাক্য দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, অতঃপর তিনি তা পূর্ণ করেছিলেন। (সূরা বাক্বারা– ১২৪)
আল্লাহ তাঁকে জাতির নেতৃত্ব দান করেছিলেন :
قَالَ اِنِّيْ جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ اِمَامًاؕ قَالَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِيْؕ قَالَ لَا يَنَالُ عَهْدِى الظَّالِمِيْنَ
আল্লাহ বললেন, নিশ্চয় আমি তোমাকে মানবমন্ডলীর নেতা বানাব। তখন তিনি বলেছিলেন, আমার বংশধরগণ হতেও (নেতা বানাবেন)। আল্লাহ বললেন, আমার অঙ্গীকার অত্যাচারীদের প্রতি প্রযোজ্য হবে না। (সূরা বাক্বারা– ১২৪)
তিনি ইয়াহুদি বা নাসারা ছিলেন না :
اَمْ تَقُوْلُوْنَ اِنَّ اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ وَاِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَ وَالْاَسْبَاطَ كَانُوْا هُوْدًا اَوْ نَصَارٰىؕ قُلْ اَاَنْتُمْ اَعْلَمُ اَمِ اللهُ
তোমরা কি বলছ যে, ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব ও তাদের বংশধর ইয়াহুদি কিংবা খ্রিস্টান ছিলেন? বলো, তোমরাই বেশি জান নাকি আল্লাহ? (সূরা বাক্বারা– ১৪০)
তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ মুসলিম :
مَا كَانَ اِبْرَاهِيْمُ يَهُوْدِيًّا وَّلَا نَصْرَانِيًّا وَّلٰكِنْ كَانَ حَنِيْفًا مُّسْلِمًا
ইবরাহীম ইয়াহুদি বা নাসারা কিছুই ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ মুসলিম। (সূরা আলে ইমরানু ৬৭)
তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না :
قُلْ صَدَقَ اللهُ فَاتَّبِعُوْا مِلَّةَ اِبْرَاهِيْمَ حَنِيْفًاؕ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
বলো, আল্লাহ সত্য বলেছেন। সুতরাং তোমরা একনিষ্ঠভাবে ইবরাহীমের মিল্লাতের অনুসরণ করো। আর তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। (সূরা আলে ইমরানু ৯৫)
তিনি ছিলেন মুসলিম জাতির পিতা :
مِلَّةَ اَبِيْكُمْ اِبْرَاهِيْمَؕ هُوَ سَمَّاكُمُ الْمُسْلِمِيْنَ مِنْ قَبْلُ وَفِيْ هٰذَا
এটা তোমাদের পিতা ইবরাহীমের মিল্লাত। তিনি পূর্বে তোমাদের নামকরণ করেছেন ‘মুসলিম’ এবং এ কিতাবেও। (সূরা হজ্জ– ৭৮)
তিনি একাই এক উম্মতের দায়িত্ব পালন করেন :
اِنَّ اِبْرَاهِيْمَ كَانَ اُمَّةً قَانِتًا لِّلّٰهِ حَنِيْفًاؕ وَلَمْ يَكُ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
ইবরাহীম ছিলেন এক ‘ উম্মত’, আল্লাহর অনুগত, একনিষ্ঠ এবং তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না।
(সূরা নাহল– ১২০)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ তিনি একাই ছিলেন একটি উম্মতের সমান। যখন দুনিয়ায় কোন মুসলিম ছিল না তখন একদিকে তিনি একাই ছিলেন ইসলামের পতাকাবাহী, অন্যদিকে সারা দুনিয়ার মানুষ ছিল কুফরীর পতাকাবাহী। আল্লাহর এ একক বান্দা তখন এমন কাজ করেন, যা করার জন্য একটি উম্মতের প্রয়োজন ছিল।
তাঁর বংশে অনেক নবী জন্ম লাভ করেছেন :
وَلَقَدْ اَرْسَلْنَا نُوْحًا وَّاِبْرَاهِيْمَ وَجَعَلْنَا فِيْ ذُرِّيَّتِهِمَا النُّبُوَّةَ وَالْكِتَابَ فَمِنْهُمْ مُّهْتَدٍۚ وَكَثِيْرٌ مِّنْهُمْ فَاسِقُوْنَ
আমি নূহ ও ইবরাহীমকে (রাসূলরূপে) প্রেরণ করেছিলাম এবং আমি তাদের দু’জনের বংশে নবুওয়াত ও কিতাবের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। কিন্তু তাদের (বংশধরের) খুব অল্পই সৎপথ অবলম্বন করেছিল এবং অধিকাংশই ছিল ফাসিক। (সূরা হাদীদু ২৬)
ইবরাহীম (আঃ) এর বংশে নবুওয়াত ও রাজত্ব দেয়া হয়েছে :
اَمْ يَحْسُدُوْنَ النَّاسَ عَلٰى مَاۤ اٰتَاهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٖۚ فَقَدْ اٰتَيْنَاۤ اٰلَ اِبْرَاهِيْمَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَاٰتَيْنَاهُمْ مُّلْكًا عَظِيْمًا
অথবা আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে যা দিয়েছেন সেজন্য কি তারা তাদের সাথে ঈর্ষা করে? আমি ইবরাহীমের বংশধরকেও তো কিতাব ও হেকমত প্রদান করেছিলাম এবং তাদেরকে বিশাল রাজত্ব দান করেছিলাম। (সূরা নিসা– ৫৪)
ইবরাহীম (আঃ) এর ঘনিষ্ঠ লোক উম্মতে মুহাম্মাদী :
اِنَّ اَوْلَى النَّاسِ بِاِبْرَاهِيْمَ لَلَّذِيْنَ اتَّبَعُوْهُ وَهٰذَا النَّبِيُّ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَاللهُ وَلِيُّ الْمُؤْمِنِيْنَ
মানুষের মধ্যে ইবরাহীমের নিকট সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে তারা, যারা তার অনুসরণ করেছে এবং এই নবী ও ঈমানদারগণ। আর আল্লাহ মুমিনদের বন্ধু। (সূরা আলে ইমরানু ৬৮)
ইবরাহীম (আঃ) কা‘বাঘর নির্মাণ করেছেন :
وَاِذْ يَرْفَعُ اِبْرَاهِيْمُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَاِسْمَاعِيْلُؕ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّاؕ اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
যখন ইবরাহীম ও ইসমাঈল কা‘বার ভিত্তি উঁচু করেছিলেন, (তখন বললেন) হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পক্ষ হতে এটা কবুল করুন, নিশ্চয় আপনি অতি শ্রবণকারী ও মহাজ্ঞানী। (সূরা বাক্বারা– ১২৭)
আল্লাহ কা‘বাঘরের স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছেন :
وَاِذْ بَوَّأْنَا لِاِبْرَاهِيْمَ مَكَانَ الْبَيْتِ اَ لَّا تُشْرِكْ بِيْ شَيْئًا وَّطَهِّرْ بَيْتِيَ لِلطَّآئِفِيْنَ وَالْقَآئِمِيْنَ وَالرُّكَّعِ السُّجُوْدِ
স্মরণ করো, যখন আমি ইবরাহীমের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম সে গৃহের স্থান। তখন বলেছিলাম, আমার সাথে কোন শরীক স্থির করিও না এবং আমার গৃহকে তাদের জন্য পবিত্র রাখো, যারা তাওয়াফ করে এবং সালাতে দাঁড়ায়, রুকূ করে ও সিজদা করে। (সূরা হজ্জ– ২৬)
সেখানেই মাকামে ইবরাহীম অবস্থিত :
اِنَّ اَوَّلَ بَيْتٍ وُّضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِيْ بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَّهُدًى لِّلْعَالَمِيْنَ ‐ فِيْهِ اٰيَاتٌ ۢبَيِّنَاتٌ مَّقَامُ اِبْرَاهِيْمَۚ وَمَنْ دَخَلَهٗ كَانَ اٰمِنًا
নিশ্চয় মানুষের জন্য সর্বপ্রথম নির্মিত ঘর মক্কায় অবস্থিত, যা বরকতময় এবং বিশ্ববাসীর জন্য পথপ্রদর্শনকারী। সেখানে রয়েছে স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ (এর মধ্যে একটি হচ্ছে) মাকামে ইবরাহীম। আর যে ব্যক্তি তাতে (মক্কায়) প্রবেশ করবে, সে নিরাপদ হয়ে যায়। (সূরা আলে ইমরানু ৯৬, ৯৭)
আল্লাহ মাকামে ইবরাহীমে সালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন :
وَاتَّخِذُوْا مِنْ مَّقَامِ اِبْرَاهِيْمَ مُصَلّٰى
তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থান হিসেবে গ্রহণ করো। (সূরা বাক্বারা– ১২৫)
ইবরাহীম (আঃ) বিশ্ব মানবকে হজ্জের দাওয়াত দেন :
وَاَذِّنْ فِى النَّاسِ بِالْحَجِّ يَأْتُوْكَ رِجَالًا وَّعَلٰى كُلِّ ضَامِرٍ يَّأْتِيْنَ مِنْ كُلِّ فَجٍّ عَمِيْقٍ
আর মানুষের নিকট হজ্জের ঘোষণা দাও, তারা তোমার নিকট আসবে পায়ে হেঁটে ও সর্বপ্রকার (পথক্লান্ত) উষ্ট্রের পিঠে আরোহন করে বহু দূরের পথ অতিক্রম করে। (সূরা হজ্জ– ২৭)
وَاِذْ يَرْفَعُ اِبْرَاهِيْمُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَاِسْمَاعِيْلُؕ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّاؕ اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
যখন ইবরাহীম ও ইসমাঈল কা‘বার ভিত্তি উঁচু করেছিলেন, (তখন বললেন) হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পক্ষ হতে এটা কবুল করুন, নিশ্চয় আপনি অতি শ্রবণকারী ও মহাজ্ঞানী। (সূরা বাক্বারা– ১২৭)
আল্লাহ কা‘বাঘরের স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছেন :
وَاِذْ بَوَّأْنَا لِاِبْرَاهِيْمَ مَكَانَ الْبَيْتِ اَ لَّا تُشْرِكْ بِيْ شَيْئًا وَّطَهِّرْ بَيْتِيَ لِلطَّآئِفِيْنَ وَالْقَآئِمِيْنَ وَالرُّكَّعِ السُّجُوْدِ
স্মরণ করো, যখন আমি ইবরাহীমের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম সে গৃহের স্থান। তখন বলেছিলাম, আমার সাথে কোন শরীক স্থির করিও না এবং আমার গৃহকে তাদের জন্য পবিত্র রাখো, যারা তাওয়াফ করে এবং সালাতে দাঁড়ায়, রুকূ করে ও সিজদা করে। (সূরা হজ্জ– ২৬)
সেখানেই মাকামে ইবরাহীম অবস্থিত :
اِنَّ اَوَّلَ بَيْتٍ وُّضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِيْ بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَّهُدًى لِّلْعَالَمِيْنَ ‐ فِيْهِ اٰيَاتٌ ۢبَيِّنَاتٌ مَّقَامُ اِبْرَاهِيْمَۚ وَمَنْ دَخَلَهٗ كَانَ اٰمِنًا
নিশ্চয় মানুষের জন্য সর্বপ্রথম নির্মিত ঘর মক্কায় অবস্থিত, যা বরকতময় এবং বিশ্ববাসীর জন্য পথপ্রদর্শনকারী। সেখানে রয়েছে স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ (এর মধ্যে একটি হচ্ছে) মাকামে ইবরাহীম। আর যে ব্যক্তি তাতে (মক্কায়) প্রবেশ করবে, সে নিরাপদ হয়ে যায়। (সূরা আলে ইমরানু ৯৬, ৯৭)
আল্লাহ মাকামে ইবরাহীমে সালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন :
وَاتَّخِذُوْا مِنْ مَّقَامِ اِبْرَاهِيْمَ مُصَلّٰى
তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থান হিসেবে গ্রহণ করো। (সূরা বাক্বারা– ১২৫)
ইবরাহীম (আঃ) বিশ্ব মানবকে হজ্জের দাওয়াত দেন :
وَاَذِّنْ فِى النَّاسِ بِالْحَجِّ يَأْتُوْكَ رِجَالًا وَّعَلٰى كُلِّ ضَامِرٍ يَّأْتِيْنَ مِنْ كُلِّ فَجٍّ عَمِيْقٍ
আর মানুষের নিকট হজ্জের ঘোষণা দাও, তারা তোমার নিকট আসবে পায়ে হেঁটে ও সর্বপ্রকার (পথক্লান্ত) উষ্ট্রের পিঠে আরোহন করে বহু দূরের পথ অতিক্রম করে। (সূরা হজ্জ– ২৭)
আল্লাহ তাঁকে সৃষ্টিজগতের রহস্য দেখালেন :
وَكَذٰلِكَ نُرِيْۤ اِبْرَاهِيْمَ مَلَكُوْتَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَلِيَكُوْنَ مِنَ الْمُوْقِنِيْنَ
এভাবেই আমি ইবরাহীমকে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর পরিচালনা ব্যবস্থা দেখাই, যাতে সে দৃঢ় বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। (সূরা আন‘আম ৭৫)
রাতে তারকা দেখে ভাবলেন এটাই আমার রব :
فَلَمَّا جَنَّ عَلَيْهِ اللَّيْلُ رَاٰى كَوْكَبًاۚ قَالَ هٰذَا رَبِّيْۚ فَلَمَّاۤ اَفَلَ قَالَ لَاۤ اُحِبُّ الْاٰفِلِيْنَ
অতঃপর যখন রাতের অন্ধকার তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলল তখন সে নক্ষত্র দেখে বলল, এটাই আমার প্রতিপালক। কিন্তু যখন তা অস্তমিত হয় গেল তখন বলল, যা অস্তমিত হয় তা আমি পছন্দ করি না। (সূরা আন‘আম– ৭৬)
আবার চন্দ্র দেখে ভাবলেন এটাই রব :
فَلَمَّا رَاَى الْقَمَرَ بَازِغًا قَالَ هٰذَا رَبِّيْ
অতঃপর যখন সে চাঁদ সমুজ্জ্বলরূপে উদয় হতে দেখল তখন বলল, এটাই আমার প্রতিপালক। (সূরা আন‘আম– ৭৭)
চন্দ্রও ডুবে যাওয়ায় তাঁর মন স্থির হলো না :
فَلَمَّاۤ اَفَلَ قَالَ لَئِنْ لَّمْ يَهْدِنِيْ رَبِّيْ لَاَكُوْنَنَّ مِنَ الْقَوْمِ الضَّآلِّيْنَ
যখন তা–ও অস্তমিত হয়ে গেল তখন সে বলল, আমার প্রতিপালক আমাকে সৎপথ প্রদর্শন না করলে অবশ্যই আমি পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব। (সূরা আন‘আম– ৭৭)
এবার সূর্যকে বড় দেখে তাকেই রব মনে করলেন :
فَلَمَّا رَاَى الشَّمْسَ بَازِغَةً قَالَ هٰذَا رَبِّيْ هٰذَاۤ اَكْبَرُ
অতঃপর যখন সে সূর্যকে দীপ্তিমানরূপে উদয় হতে দেখল তখন বলল, এটাই আমার প্রতিপালক, এটা সবচেয়ে বড়। (সূরা আন‘আম– ৭৮)
এটাও ডুবে যাওয়ায় সকল সৃষ্ট জিনিস থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন :
فَلَمَّاۤ اَفَلَتْ قَالَ يَا قَوْمِ اِنِّيْ بَرِيْٓءٌ مِّمَّا تُشْرِكُوْنَ
যখন এটাও অস্তমিত হলো তখন সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা যাকে প্রতিপালকের সাথে শরীক কর তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। (সূরা আন‘আম– ৭৮)
পরিশেষে আল্লাহকেই ‘রব’ হিসেবে স্থির করলেন :
اِنِّيْ وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِيْ فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ حَنِيْفًا وَّمَاۤ اَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
আমি একনিষ্ঠভাবে তাঁর দিকেই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছি, যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। (সূরা আন‘আম– ৭৯)
وَكَذٰلِكَ نُرِيْۤ اِبْرَاهِيْمَ مَلَكُوْتَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَلِيَكُوْنَ مِنَ الْمُوْقِنِيْنَ
এভাবেই আমি ইবরাহীমকে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর পরিচালনা ব্যবস্থা দেখাই, যাতে সে দৃঢ় বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। (সূরা আন‘আম ৭৫)
রাতে তারকা দেখে ভাবলেন এটাই আমার রব :
فَلَمَّا جَنَّ عَلَيْهِ اللَّيْلُ رَاٰى كَوْكَبًاۚ قَالَ هٰذَا رَبِّيْۚ فَلَمَّاۤ اَفَلَ قَالَ لَاۤ اُحِبُّ الْاٰفِلِيْنَ
অতঃপর যখন রাতের অন্ধকার তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলল তখন সে নক্ষত্র দেখে বলল, এটাই আমার প্রতিপালক। কিন্তু যখন তা অস্তমিত হয় গেল তখন বলল, যা অস্তমিত হয় তা আমি পছন্দ করি না। (সূরা আন‘আম– ৭৬)
আবার চন্দ্র দেখে ভাবলেন এটাই রব :
فَلَمَّا رَاَى الْقَمَرَ بَازِغًا قَالَ هٰذَا رَبِّيْ
অতঃপর যখন সে চাঁদ সমুজ্জ্বলরূপে উদয় হতে দেখল তখন বলল, এটাই আমার প্রতিপালক। (সূরা আন‘আম– ৭৭)
চন্দ্রও ডুবে যাওয়ায় তাঁর মন স্থির হলো না :
فَلَمَّاۤ اَفَلَ قَالَ لَئِنْ لَّمْ يَهْدِنِيْ رَبِّيْ لَاَكُوْنَنَّ مِنَ الْقَوْمِ الضَّآلِّيْنَ
যখন তা–ও অস্তমিত হয়ে গেল তখন সে বলল, আমার প্রতিপালক আমাকে সৎপথ প্রদর্শন না করলে অবশ্যই আমি পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব। (সূরা আন‘আম– ৭৭)
এবার সূর্যকে বড় দেখে তাকেই রব মনে করলেন :
فَلَمَّا رَاَى الشَّمْسَ بَازِغَةً قَالَ هٰذَا رَبِّيْ هٰذَاۤ اَكْبَرُ
অতঃপর যখন সে সূর্যকে দীপ্তিমানরূপে উদয় হতে দেখল তখন বলল, এটাই আমার প্রতিপালক, এটা সবচেয়ে বড়। (সূরা আন‘আম– ৭৮)
এটাও ডুবে যাওয়ায় সকল সৃষ্ট জিনিস থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন :
فَلَمَّاۤ اَفَلَتْ قَالَ يَا قَوْمِ اِنِّيْ بَرِيْٓءٌ مِّمَّا تُشْرِكُوْنَ
যখন এটাও অস্তমিত হলো তখন সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা যাকে প্রতিপালকের সাথে শরীক কর তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। (সূরা আন‘আম– ৭৮)
পরিশেষে আল্লাহকেই ‘রব’ হিসেবে স্থির করলেন :
اِنِّيْ وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِيْ فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ حَنِيْفًا وَّمَاۤ اَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
আমি একনিষ্ঠভাবে তাঁর দিকেই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছি, যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। (সূরা আন‘আম– ৭৯)
ইবরাহীম (আঃ) বিশ্বাস করতেন সৃষ্টিকর্তাই হেদায়াতের মালিক :
اَلَّذِيْ خَلَقَنِيْ فَهُوَ يَهْدِيْنِ
যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, তিনিই আমাকে পথপ্রদর্শন করবেন। (সূরা শু‘আরা– ৭৮)
وَاِذْ قَالَ اِبْرَاهِيْمُ لِاَبِيْهِ وَقَوْمِهٖۤ اِنَّنِيْ بَرَآءٌ مِّمَّا تَعْبُدُوْنَ ‐ اِلَّا الَّذِيْ فَطَرَنِيْ فَاِنَّهٗ سَيَهْدِيْنِ
স্মরণ করো, যখন ইবরাহীম তার পিতা ও সম্প্রদায়কে বলেছিলেন, তোমরা যাদের ইবাদাত কর তাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। তবে আমার সম্পর্ক শুধুমাত্র তাঁরই সাথে, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। অচিরেই তিনিই আমাকে হেদায়াত দান করবেন। (সূরা যুখরুফু ২৬, ২৭)
আল্লাহ প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সবই জানেন :
رَبَّنَاۤ اِنَّكَ تَعْلَمُ مَا نُخْفِيْ وَمَا نُعْلِنُ وَمَا يَخْفٰى عَلَى اللهِ مِنْ شَيْءٍ فِى الْاَرْضِ وَلَا فِى السَّمَآءِ
হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি তো জান যা আমরা গোপন করি ও যা প্রকাশ করি। আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর কোনকিছুই আল্লাহর নিকট গোপন থাকে না। (সূরা ইবরাহীম– ৩৮)
আল্লাহই খাওয়ান ও পান করান :
وَالَّذِيْ هُوَ يُطْعِمُنِيْ وَيَسْقِيْنِ
তিনিই আমাকে আহার্য ও পানীয় দান করেন। (সূরা শু‘আরা– ৭৯)
তিনিই রোগ থেকে মুক্তি দেন :
وَاِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِيْنِ
আর রোগাক্রান্ত হলে তিনিই আমাকে রোগমুক্ত করেন। (সূরা শু‘আরা– ৮০)
তিনিই বান্দার পাপ মোচন করেন :
وَالَّذِيْۤ اَطْمَعُ اَنْ يَّغْفِرَ لِيْ خَطِيْٓئَتِيْ يَوْمَ الدِّيْنِ
আশা করি, তিনি কিয়ামত দিবসে আমার অপরাধ মার্জনা করে দেবেন। (সূরা শু‘আরা– ৮২)
তিনিই মৃত্যু দেন ও জীবিত করেন :
وَالَّذِي يُمِيْتُنِيْ ثُمَّ يُحْيِيْنِ
আর তিনিই আমার মৃত্যু ঘটাবেন, অতঃপর পুনর্জীবিত করবেন। (সূরা শু‘আরা– ৮১)
যার অন্তর বিশুদ্ধ সেই পরকালে বাঁচতে পারবে :
يَوْمَ لَا يَنْفَعُ مَالٌ وَّلَا بَنُوْنَ ‐ اِلَّا مَنْ اَتَى اللهَ بِقَلْبٍ سَلِيْمٍ
সেদিন ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোন কাজে আসবে না। সেদিন উপকৃত হবে কেবল সে, যে আল্লাহর নিকট বিশুদ্ধ অন্তর নিয়ে আগমন করবে। (সূরা শু‘আরা– ৮৮, ৮৯)
আল্লাহ সম্পর্কে নমরুদের সাথে বিতর্ক :
اَلَمْ تَرَ اِلَى الَّذِيْ حَآجَّ اِبْرَاهِيْمَ فِيْ رَبِّهٖۤ اَنْ اٰتَاهُ اللهُ الْمُلْكَۘ اِذْ قَالَ اِبْرَاهِيْمُ رَبِّيَ الَّذِيْ يُحْيِيْ وَيُمِيْتُ قَالَ اَنَاْ اُحْيِيْ وَاُمِيْتُؕ قَالَ اِبْرَاهِيْمُ فَاِنَّ اللهَ يَأْتِيْ بِالشَّمْسِ مِنَ الْمَشْرِقِ فَأْتِ بِهَا مِنَ الْمَغْرِبِ فَبُهِتَ الَّذِيْ كَفَرَؕ وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
আপনি কি তার দিকে লক্ষ্য করেননি, যে ইবরাহীমের সাথে তাঁর রব সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিল? এজন্য যে, তাঁকে আল্লাহ রাজত্ব দান করেছিলেন। যখন ইবরাহীম বলেছিলেন, আমার রব তো তিনি যিনি জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান। তখন সে বলেছিল, আমিই জীবন এবং মৃত্যু দিয়ে থাকি। এবার ইবরাহীম বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ সূর্যকে পূর্ব দিকে উদিত করেন। সুতরাং তুমি সেটাকে পশ্চিম দিক থেকে উদয় করে নিয়ে আসো। অতঃপর সে অবিশ্বাসী হতভম্ব হয়ে গেল। আর আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে পথপ্রদর্শন করেন না। (সূরা বাক্বারা– ২৫৮)
মৃতকে জীবিত করণের প্রত্যক্ষ দর্শন :
وَاِذْ قَالَ اِبْرَاهِيْمُ رَبِّ اَرِنِيْ كَيْفَ تُحْيِى الْمَوْتٰىؕ قَالَ اَوَلَمْ تُؤْمِنْؕ قَالَ بَلٰى وَلٰكِنْ لِّيَطْمَئِنَّ قَلْبِيْؕ قَالَ فَخُذْ اَرْبَعَةً مِّنَ الطَّيْرِ فَصُرْهُنَّ اِلَيْكَ ثُمَّ اجْعَلْ عَلٰى كُلِّ جَبَلٍ مِّنْهُنَّ جُزْءًا ثُمَّ ادْعُهُنَّ يَأْتِيْنَكَ سَعْيًاؕ وَاعْلَمْ اَنَّ اللهَ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
স্মরণ করো, যখন ইবরাহীম বলেছিলেন, হে আমার রব! কীভাবে আপনি মৃতকে জীবিত করেন তা আমাকে দেখান। আল্লাহ বললেন, তুমি কি বিশ্বাস কর না? তিনি বললেন হ্যাঁ (বিশ্বাস করি), তবে আমার অন্তরের প্রশান্তির জন্য। আল্লাহ বললেন, তাহলে চারটি পাখি ধরো এবং সেগুলোকে তোমার পোষ মানিয়ে নাও। তারপর তুমি (সেগুলোকে যবেহ করে) প্রত্যেক পাহাড়ের উপর ওদের এক এক অংশ রাখো। অতঃপর তাদেরকে ডাকো, ওরা তোমার কাছে দৌড়ে আসবে। জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা বাক্বারা– ২৬০)
اَلَّذِيْ خَلَقَنِيْ فَهُوَ يَهْدِيْنِ
যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, তিনিই আমাকে পথপ্রদর্শন করবেন। (সূরা শু‘আরা– ৭৮)
وَاِذْ قَالَ اِبْرَاهِيْمُ لِاَبِيْهِ وَقَوْمِهٖۤ اِنَّنِيْ بَرَآءٌ مِّمَّا تَعْبُدُوْنَ ‐ اِلَّا الَّذِيْ فَطَرَنِيْ فَاِنَّهٗ سَيَهْدِيْنِ
স্মরণ করো, যখন ইবরাহীম তার পিতা ও সম্প্রদায়কে বলেছিলেন, তোমরা যাদের ইবাদাত কর তাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। তবে আমার সম্পর্ক শুধুমাত্র তাঁরই সাথে, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। অচিরেই তিনিই আমাকে হেদায়াত দান করবেন। (সূরা যুখরুফু ২৬, ২৭)
আল্লাহ প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সবই জানেন :
رَبَّنَاۤ اِنَّكَ تَعْلَمُ مَا نُخْفِيْ وَمَا نُعْلِنُ وَمَا يَخْفٰى عَلَى اللهِ مِنْ شَيْءٍ فِى الْاَرْضِ وَلَا فِى السَّمَآءِ
হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি তো জান যা আমরা গোপন করি ও যা প্রকাশ করি। আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর কোনকিছুই আল্লাহর নিকট গোপন থাকে না। (সূরা ইবরাহীম– ৩৮)
আল্লাহই খাওয়ান ও পান করান :
وَالَّذِيْ هُوَ يُطْعِمُنِيْ وَيَسْقِيْنِ
তিনিই আমাকে আহার্য ও পানীয় দান করেন। (সূরা শু‘আরা– ৭৯)
তিনিই রোগ থেকে মুক্তি দেন :
وَاِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِيْنِ
আর রোগাক্রান্ত হলে তিনিই আমাকে রোগমুক্ত করেন। (সূরা শু‘আরা– ৮০)
তিনিই বান্দার পাপ মোচন করেন :
وَالَّذِيْۤ اَطْمَعُ اَنْ يَّغْفِرَ لِيْ خَطِيْٓئَتِيْ يَوْمَ الدِّيْنِ
আশা করি, তিনি কিয়ামত দিবসে আমার অপরাধ মার্জনা করে দেবেন। (সূরা শু‘আরা– ৮২)
তিনিই মৃত্যু দেন ও জীবিত করেন :
وَالَّذِي يُمِيْتُنِيْ ثُمَّ يُحْيِيْنِ
আর তিনিই আমার মৃত্যু ঘটাবেন, অতঃপর পুনর্জীবিত করবেন। (সূরা শু‘আরা– ৮১)
যার অন্তর বিশুদ্ধ সেই পরকালে বাঁচতে পারবে :
يَوْمَ لَا يَنْفَعُ مَالٌ وَّلَا بَنُوْنَ ‐ اِلَّا مَنْ اَتَى اللهَ بِقَلْبٍ سَلِيْمٍ
সেদিন ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোন কাজে আসবে না। সেদিন উপকৃত হবে কেবল সে, যে আল্লাহর নিকট বিশুদ্ধ অন্তর নিয়ে আগমন করবে। (সূরা শু‘আরা– ৮৮, ৮৯)
আল্লাহ সম্পর্কে নমরুদের সাথে বিতর্ক :
اَلَمْ تَرَ اِلَى الَّذِيْ حَآجَّ اِبْرَاهِيْمَ فِيْ رَبِّهٖۤ اَنْ اٰتَاهُ اللهُ الْمُلْكَۘ اِذْ قَالَ اِبْرَاهِيْمُ رَبِّيَ الَّذِيْ يُحْيِيْ وَيُمِيْتُ قَالَ اَنَاْ اُحْيِيْ وَاُمِيْتُؕ قَالَ اِبْرَاهِيْمُ فَاِنَّ اللهَ يَأْتِيْ بِالشَّمْسِ مِنَ الْمَشْرِقِ فَأْتِ بِهَا مِنَ الْمَغْرِبِ فَبُهِتَ الَّذِيْ كَفَرَؕ وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
আপনি কি তার দিকে লক্ষ্য করেননি, যে ইবরাহীমের সাথে তাঁর রব সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিল? এজন্য যে, তাঁকে আল্লাহ রাজত্ব দান করেছিলেন। যখন ইবরাহীম বলেছিলেন, আমার রব তো তিনি যিনি জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান। তখন সে বলেছিল, আমিই জীবন এবং মৃত্যু দিয়ে থাকি। এবার ইবরাহীম বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ সূর্যকে পূর্ব দিকে উদিত করেন। সুতরাং তুমি সেটাকে পশ্চিম দিক থেকে উদয় করে নিয়ে আসো। অতঃপর সে অবিশ্বাসী হতভম্ব হয়ে গেল। আর আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে পথপ্রদর্শন করেন না। (সূরা বাক্বারা– ২৫৮)
মৃতকে জীবিত করণের প্রত্যক্ষ দর্শন :
وَاِذْ قَالَ اِبْرَاهِيْمُ رَبِّ اَرِنِيْ كَيْفَ تُحْيِى الْمَوْتٰىؕ قَالَ اَوَلَمْ تُؤْمِنْؕ قَالَ بَلٰى وَلٰكِنْ لِّيَطْمَئِنَّ قَلْبِيْؕ قَالَ فَخُذْ اَرْبَعَةً مِّنَ الطَّيْرِ فَصُرْهُنَّ اِلَيْكَ ثُمَّ اجْعَلْ عَلٰى كُلِّ جَبَلٍ مِّنْهُنَّ جُزْءًا ثُمَّ ادْعُهُنَّ يَأْتِيْنَكَ سَعْيًاؕ وَاعْلَمْ اَنَّ اللهَ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
স্মরণ করো, যখন ইবরাহীম বলেছিলেন, হে আমার রব! কীভাবে আপনি মৃতকে জীবিত করেন তা আমাকে দেখান। আল্লাহ বললেন, তুমি কি বিশ্বাস কর না? তিনি বললেন হ্যাঁ (বিশ্বাস করি), তবে আমার অন্তরের প্রশান্তির জন্য। আল্লাহ বললেন, তাহলে চারটি পাখি ধরো এবং সেগুলোকে তোমার পোষ মানিয়ে নাও। তারপর তুমি (সেগুলোকে যবেহ করে) প্রত্যেক পাহাড়ের উপর ওদের এক এক অংশ রাখো। অতঃপর তাদেরকে ডাকো, ওরা তোমার কাছে দৌড়ে আসবে। জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা বাক্বারা– ২৬০)
জ্ঞানী ও সৎ বান্দা হওয়ার দু‘আ :
رَبِّ هَبْ لِيْ حُكْمًا وَّاَلْحِقْنِيْ بِالصَّالِحِيْنَ
হে আমার প্রতিপালক! আমাকে জ্ঞান দান করো এবং সৎকর্মপরায়ণদের মধ্যে শামিল করো। (সূরা শু‘আরা– ৮৩)
দুনিয়ায় খ্যাতি রেখে যাওয়ার দু‘আ :
وَاجْعَلْ لِّيْ لِسَانَ صِدْقٍ فِى الْاٰخِرِيْنَ
আমাকে পরবর্তীদের মধ্যে সত্যভাষী হিসেবে রেখে দিন। (সূরা শু‘আরা– ৮৪)
জান্নাতবাসী হওয়ার জন্য দু‘আ :
وَاجْعَلْنِيْ مِنْ وَّرَثَةِ جَنَّةِ النَّعِيْمِ
আমাকে সুখময় জান্নাতের অধিকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন। (সূরা শু‘আরা– ৮৫)
কিয়ামতের দিন অপমান থেকে বাঁচার দু‘আ :
وَلَا تُخْزِنِيْ يَوْمَ يُبْعَثُوْنَ
(হে আমার প্রতিপালক) পুনরুত্থান দিবসে আমাকে লাঞ্ছিত করো না। (সূরা শু‘আরা- ৮৭)
মাতা-পিতা ও সকল মুমিনের জন্য দু‘আ :
رَبَّنَا اغْفِرْ لِيْ وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ يَوْمَ يَقُوْمُ الْحِسَابُ
হে আমাদের প্রতিপালক! যেদিন হিসাব অনুষ্ঠিত হবে সেদিন আমাকে, আমার পিতা–মাতাকে এবং মুমিনদেরকে ক্ষমা করে দিয়ো। (সূরা ইবরাহীম– ৪১)
নেক সন্তান লাভের জন্য দু‘আ :
رَبِّ هَبْ لِيْ مِنَ الصَّالِحِيْنَ
হে আমার প্রতিপালক! আমাকে একটি নেক সন্তান দান করো। (সূরা সাফ্ফাত– ১০০)
সালাত প্রতিষ্ঠার তাওফীক লাভের দু‘আ :
رَبِّ اجْعَلْنِيْ مُقِيْمَ الصَّلَاةِ وَمِنْ ذُرِّيَّتِيْۗ رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَآءِ
হে আমার প্রতিপালক! আমাকে সালাত কায়েমকারী হিসেবে মনোনীত করো এবং আমার বংশধরদের মধ্য হতেও। হে আমাদের প্রতিপালক! আমার প্রার্থনা কবুল করো। (সূরা ইবরাহীম– ৪০)
শিরক থেকে বাঁচার দু‘আ :
وَاِذْ قَالَ اِبْرَاهِيْمُ رَبِّ اجْعَلْ هٰذَا الْبَلَدَ اٰمِنًا وَّاجْنُبْنِيْ وَبَنِيَّ اَنْ نَّعْبُدَ الْاَصْنَامَ
(স্মরণ করো) যখন ইবরাহীম বলেছিল, হে আমার প্রতিপালক! এ নগরীকে নিরাপদ করে দাও এবং আমাকে ও আমার পুত্রদেরকে প্রতিমা পূজা হতে দূরে রাখো। (সূরা ইবরাহীম– ৩৫)
মক্কার দিকে মানুষের মন আকৃষ্ট হওয়ার দু‘আ :
رَبَّنَاۤ اِنِّۤيْ اَسْكَنْتُ مِنْ ذُرِّيَّتِيْ بِوَادٍ غَيْرِ ذِيْ زَرْعٍ عِنْدَ بَيْتِكَ الْمُحَرَّمِ رَبَّنَا لِيُقِيْمُوا الصَّلَاةَ فَاجْعَلْ اَفْئِدَةً مِّنَ النَّاسِ تَهْوِيْۤ اِلَيْهِمْ
হে আমাদের প্রতিপালক! আমি আমার বংশধরদের কতককে বসবাস করালাম অনুর্বর উপত্যকায় তোমার পবিত্র গৃহের নিকট। হে আমাদের প্রতিপালক! এজন্য যে, তারা যেন সালাত কায়েম করে। অতএব তুমি কিছু লোকের অন্তর তাদের প্রতি অনুরাগী করে দাও। (সূরা ইবরাহীম– ৩৭)
মক্কায় ফল সরবরাহের দু‘আ :
وَارْزُقْهُمْ مِّنَ الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَشْكُرُوْنَ
আর ফল–ফলাদি দ্বারা তাদের রিযিকের ব্যবস্থা করো, যাতে তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। (সূরা ইবরাহীম– ৩৭)
কা‘বা নির্মাণের সময় দু‘আ :
رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّاؕ اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পক্ষ হতে এটা কবুল করুন, নিশ্চয় আপনি অতি শ্রবণকারী ও মহাজ্ঞানী। (সূরা বাক্বারা– ১২৭)
বংশধর দ্বীনদার হওয়ার জন্য দু‘আ :
رَبَّنَا وَاجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِنَاۤ اُمَّةً مُّسْلِمَةً لَّكَ۪ وَاَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبْ عَلَيْنَاۚ اِنَّكَ اَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ
হে আমাদের রব! আমাদের উভয়কে আপনার অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধরদের মধ্য হতেও আপনার অনুগত একদল লোক সৃষ্টি করুন। আর আমাদেরকে ইবাদাতের আহকাম বলে দিন এবং আমাদের প্রতি ক্ষমাশীল হোন। নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল ও করুণাময়। (সূরা বাক্বারা– ১২৮)
শেষ নবী আগমনের জন্য দু‘আ :
رَبَّنَا وَابْعَثْ فِيْهِمْ رَسُوْلًا مِّنْهُمْ يَتْلُوْا عَلَيْهِمْ اٰيَاتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُزَكِّيْهِمْؕ اِنَّكَ اَنْتَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
হে আমাদের রব! সে দলে তাদেরই মধ্য হতে এমন একজন রাসূল প্রেরণ করুন, যিনি তাদেরকে আপনার আয়াতসমূহ পাঠ করে শুনাবে এবং তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দেবে ও তাদেরকে পবিত্র করবে। নিশ্চয় আপনি মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা বাক্বারা– ১২৯)
رَبِّ هَبْ لِيْ حُكْمًا وَّاَلْحِقْنِيْ بِالصَّالِحِيْنَ
হে আমার প্রতিপালক! আমাকে জ্ঞান দান করো এবং সৎকর্মপরায়ণদের মধ্যে শামিল করো। (সূরা শু‘আরা– ৮৩)
দুনিয়ায় খ্যাতি রেখে যাওয়ার দু‘আ :
وَاجْعَلْ لِّيْ لِسَانَ صِدْقٍ فِى الْاٰخِرِيْنَ
আমাকে পরবর্তীদের মধ্যে সত্যভাষী হিসেবে রেখে দিন। (সূরা শু‘আরা– ৮৪)
জান্নাতবাসী হওয়ার জন্য দু‘আ :
وَاجْعَلْنِيْ مِنْ وَّرَثَةِ جَنَّةِ النَّعِيْمِ
আমাকে সুখময় জান্নাতের অধিকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন। (সূরা শু‘আরা– ৮৫)
কিয়ামতের দিন অপমান থেকে বাঁচার দু‘আ :
وَلَا تُخْزِنِيْ يَوْمَ يُبْعَثُوْنَ
(হে আমার প্রতিপালক) পুনরুত্থান দিবসে আমাকে লাঞ্ছিত করো না। (সূরা শু‘আরা- ৮৭)
মাতা-পিতা ও সকল মুমিনের জন্য দু‘আ :
رَبَّنَا اغْفِرْ لِيْ وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ يَوْمَ يَقُوْمُ الْحِسَابُ
হে আমাদের প্রতিপালক! যেদিন হিসাব অনুষ্ঠিত হবে সেদিন আমাকে, আমার পিতা–মাতাকে এবং মুমিনদেরকে ক্ষমা করে দিয়ো। (সূরা ইবরাহীম– ৪১)
নেক সন্তান লাভের জন্য দু‘আ :
رَبِّ هَبْ لِيْ مِنَ الصَّالِحِيْنَ
হে আমার প্রতিপালক! আমাকে একটি নেক সন্তান দান করো। (সূরা সাফ্ফাত– ১০০)
সালাত প্রতিষ্ঠার তাওফীক লাভের দু‘আ :
رَبِّ اجْعَلْنِيْ مُقِيْمَ الصَّلَاةِ وَمِنْ ذُرِّيَّتِيْۗ رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَآءِ
হে আমার প্রতিপালক! আমাকে সালাত কায়েমকারী হিসেবে মনোনীত করো এবং আমার বংশধরদের মধ্য হতেও। হে আমাদের প্রতিপালক! আমার প্রার্থনা কবুল করো। (সূরা ইবরাহীম– ৪০)
শিরক থেকে বাঁচার দু‘আ :
وَاِذْ قَالَ اِبْرَاهِيْمُ رَبِّ اجْعَلْ هٰذَا الْبَلَدَ اٰمِنًا وَّاجْنُبْنِيْ وَبَنِيَّ اَنْ نَّعْبُدَ الْاَصْنَامَ
(স্মরণ করো) যখন ইবরাহীম বলেছিল, হে আমার প্রতিপালক! এ নগরীকে নিরাপদ করে দাও এবং আমাকে ও আমার পুত্রদেরকে প্রতিমা পূজা হতে দূরে রাখো। (সূরা ইবরাহীম– ৩৫)
মক্কার দিকে মানুষের মন আকৃষ্ট হওয়ার দু‘আ :
رَبَّنَاۤ اِنِّۤيْ اَسْكَنْتُ مِنْ ذُرِّيَّتِيْ بِوَادٍ غَيْرِ ذِيْ زَرْعٍ عِنْدَ بَيْتِكَ الْمُحَرَّمِ رَبَّنَا لِيُقِيْمُوا الصَّلَاةَ فَاجْعَلْ اَفْئِدَةً مِّنَ النَّاسِ تَهْوِيْۤ اِلَيْهِمْ
হে আমাদের প্রতিপালক! আমি আমার বংশধরদের কতককে বসবাস করালাম অনুর্বর উপত্যকায় তোমার পবিত্র গৃহের নিকট। হে আমাদের প্রতিপালক! এজন্য যে, তারা যেন সালাত কায়েম করে। অতএব তুমি কিছু লোকের অন্তর তাদের প্রতি অনুরাগী করে দাও। (সূরা ইবরাহীম– ৩৭)
মক্কায় ফল সরবরাহের দু‘আ :
وَارْزُقْهُمْ مِّنَ الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَشْكُرُوْنَ
আর ফল–ফলাদি দ্বারা তাদের রিযিকের ব্যবস্থা করো, যাতে তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। (সূরা ইবরাহীম– ৩৭)
কা‘বা নির্মাণের সময় দু‘আ :
رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّاؕ اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পক্ষ হতে এটা কবুল করুন, নিশ্চয় আপনি অতি শ্রবণকারী ও মহাজ্ঞানী। (সূরা বাক্বারা– ১২৭)
বংশধর দ্বীনদার হওয়ার জন্য দু‘আ :
رَبَّنَا وَاجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِنَاۤ اُمَّةً مُّسْلِمَةً لَّكَ۪ وَاَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبْ عَلَيْنَاۚ اِنَّكَ اَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ
হে আমাদের রব! আমাদের উভয়কে আপনার অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধরদের মধ্য হতেও আপনার অনুগত একদল লোক সৃষ্টি করুন। আর আমাদেরকে ইবাদাতের আহকাম বলে দিন এবং আমাদের প্রতি ক্ষমাশীল হোন। নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল ও করুণাময়। (সূরা বাক্বারা– ১২৮)
শেষ নবী আগমনের জন্য দু‘আ :
رَبَّنَا وَابْعَثْ فِيْهِمْ رَسُوْلًا مِّنْهُمْ يَتْلُوْا عَلَيْهِمْ اٰيَاتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُزَكِّيْهِمْؕ اِنَّكَ اَنْتَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
হে আমাদের রব! সে দলে তাদেরই মধ্য হতে এমন একজন রাসূল প্রেরণ করুন, যিনি তাদেরকে আপনার আয়াতসমূহ পাঠ করে শুনাবে এবং তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দেবে ও তাদেরকে পবিত্র করবে। নিশ্চয় আপনি মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা বাক্বারা– ১২৯)
মেহমান হিসেবে কয়েকজন ফেরেশতা আগমন করেন :
وَنَبِّئْهُمْ عَنْ ضَيْفِ اِبْرَاهِيْمَ
আর তাদেরকে ইবরাহীমের অতিথিদের সম্পর্কে সংবাদ প্রদান করো। (সূরা হিজর– ৫১)
هَلْ اَتَاكَ حَدِيْثُ ضَيْفِ اِبْرَاهِيْمَ الْمُكْرَمِيْنَ
হে নবী! তোমার নিকট ইবরাহীমের সম্মানিত মেহমানদের কাহিনী পৌঁছেছে কি? (সূরা যারিয়াত– ২৪)
তাঁরা ইবরাহীম (আঃ) কে সালাম দিলেন :
اِذْ دَخَلُوْا عَلَيْهِ فَقَالُوْا سَلَامًاؕ قَالَ اِنَّا مِنْكُمْ وَجِلُوْنَ
যখন তারা তার নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, ‘সালাম’, তখন তিনি বলেছিলেন, আমরা তোমাদের আগমনে আতঙ্কিত। (সূরা হিজর– ৫২)
ইবরাহীম (আঃ) সালামের জওয়াব দিলেন :
وَلَقَدْ جَآءَتْ رُسُلُنَاۤ اِبْرَاهِيْمَ بِالْبُشْرٰى قَالُوْا سَلَامًا قَالَ سَلَامٌ
আমার দূতগণ সুসংবাদ নিয়ে ইবরাহীমের নিকট আসল। তারা বলল, ‘সালাম’। সেও বলল, ‘সালাম।’ (সূরা হুদু ৬৯)
তিনি মেহমানদারীর জন্য একটি ভূনা করা বাছুর নিয়ে আসলেন :
فَمَا لَبِثَ اَنْ جَآءَ بِعِجْلٍ حَنِيْذٍ
সে অবিলম্বে এক কাবাবকৃত গো–বৎস নিয়ে আসল। (সূরা হুদু ৬৯)
فَرَاغَ اِلٰۤى اَهْلِهٖ فَجَآءَ بِعِجْلٍ سَمِيْنٍ ‐ فَقَرَّبَهٗۤاِلَيْهِمْ قَالَ اَ لَا تَأْكُلُوْنَ
অতঃপর ইবরাহীম তাঁর স্ত্রীর নিকট গেলেন এবং একটি গরুর বাছুরের ভাজা গোশত নিয়ে আসলেন। তা তাদের সামনে রাখলেন এবং বললেন, আপনারা খাচ্ছেন না কেন? (সূরা যারিয়াত– ২৬, ২৭)
ফেরেশতারা না খাওয়াতে তিনি ভয় পেয়ে গেলেন :
فَاَوْجَسَ مِنْهُمْ خِيْفَةً
এতে তিনি তাদের সম্পর্কে মনে মনে ভয় পেয়ে গেলেন। (সূরা যারিয়াত– ২৮)
فَلَمَّا رَاٰۤى اَيْدِيَهُمْ لَا تَصِلُ اِلَيْهِ نَكِرَهُمْ وَاَوْجَسَ مِنْهُمْ خِيْفَةً
সে যখন দেখল, তাদের হাত সেটার দিকে প্রসারিত হচ্ছে না, তখন তাদেরকে অবাঞ্ছিত মনে করল এবং তাদের সম্বন্ধে তার মনে ভীতি সঞ্চার হলো। (সূরা হুদু ৭০)
ফেরেশতারা তাকে আশ্বস্ত করলেন :
قَالُوْا لَا تَخَفْ اِنَّاۤ اُرْسِلْنَاۤ اِلٰى قَوْمِ لُوْطٍ
তারা বলল, ভয় করো না; আমরা তো লূতের সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেরিত হয়েছি। (সূরা হুদু ৭০)
তাদের আগমনের কারণ বর্ণনা করলেন :
قَالُوْاۤ اِنَّاۤ اُرْسِلْنَاۤ اِلٰى قَوْمٍ مُّجْرِمِيْنَ ‐ لِنُرْسِلَ عَلَيْهِمْ حِجَارَةً مِّنْ طِيْنٍ ‐ مُسَوَّمَةً عِنْدَ رَبِّكَ لِلْمُسْرِفِيْنَ
তাঁরা বললেন, আমাদেরকে এক অপরাধী সম্প্রদায়ের (লূত জাতির) নিকট পাঠানো হয়েছে। তাদের উপর মাটির শক্ত কঙ্কর নিক্ষেপ করার জন্য, যা তোমার প্রতিপালকের নিকট সীমালঙ্ঘনকারীদের জন্য চিহ্নিত। (সূরা যারিয়াত, ৩২–৩৪)
তারা ইসহাক (আঃ) জন্মের সুসংবাদ দিলেন :
قَالُوْا لَا تَوْجَلْ اِنَّا نُبَشِّرُكَ بِغُلَامٍ عَلِيْمٍ
তারা বলল, ভয় করো না, আমরা তোমাকে এক জ্ঞানী পুত্রের সুসংবাদ দিচ্ছি। (সূরা হিজর– ৫৩)
ইবরাহীম (আঃ) বললেন, আমি তো এখন বৃদ্ধ :
قَالَ اَبَشَّرْتُمُوْنِيْ عَلٰۤى اَنْ مَّسَّنِيَ الْكِبَرُ فَبِمَ تُبَشِّرُوْنَ
সে বলল, আমি বৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও তোমরা কি আমাকে সুসংবাদ দিচ্ছ? (মূলত) তোমরা কী বিষয়ে সুসংবাদ দিচ্ছ (তা বুঝিয়ে বলো)? (সূরা হিজর– ৫৪)
ফেরেশতারা বললেন, আপনি হতাশ হবেন না :
قَالُوْا بَشَّرْنَاكَ بِالْحَقِّ فَلَا تَكُنْ مِّنَ الْقَانِطِيْنَ ‐ قَالَ وَمَنْ يَّقْنَطُ مِنْ رَّحْمَةِ رَبِّهٖۤ اِلَّا الضَّآلُّوْنَ
তারা বলল, আমরা সত্য সংবাদ দিচ্ছি; সুতরাং আপনি হতাশ হবেন না। সে বলল, যারা পথভ্রষ্ট তারা ব্যতীত আর কে তার প্রতিপালকের অনুগ্রহ হতে হতাশ হতে পারে? (সূরা হিজর– ৫৫, ৫৬)
স্ত্রীকেও এ সুসংবাদ দেয়া হলো :
وَامْرَاَتُهٗ قَآئِمَةٌ فَضَحِكَتْ فَبَشَّرْنَاهَا بِاِسْحَاقَ وَمِنْ وَّرَآءِ اِسْحَاقَ يَعْقُوْبَ
অতঃপর তার স্ত্রী দাঁড়ানো এবং সে হেসে ফেলল। অতঃপর আমি তাকে ইসহাক ও ইসহাকের পরবর্তীতে ইয়াকূবের সুসংবাদ দিলাম। (সূরা হুদু ৭১)
ইবরাহীম (আঃ) এর স্ত্রীও অবাক হলেন :
قَالَتْ يَا وَيْلَتَاۤ اَ اَلِدُ وَاَنَاْ عَجُوْزٌ وَّهٰذَا بَعْلِيْ شَيْخًاؕ اِنَّ هٰذَا لَشَيْءٌ عَجِيْبٌ
সে বলল, কি আশ্চর্য! আমি সন্তানের জননী হব! অথচ আমি বৃদ্ধা ও আমার স্বামী বৃদ্ধ। নিশ্চয় এটা এক আশ্চর্যের ব্যাপার। (সূরা হুদু ৭২)
ফেরেশতারা বললেন, অবাক হওয়ার কিছু নেই :
قَالُوْاۤ اَتَعْجَبِيْنَ مِنْ اَمْرِ اللهِ رَحْمَتُ اللهِ وَبَرَكَاتُهٗ عَلَيْكُمْ اَهْلَ الْبَيْتِؕ اِنَّهٗ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ
তারা বলল, আল্লাহর কাজে তুমি বিস্ময় বোধ করছ? হে পরিবারবর্গ! তোমাদের প্রতি রয়েছে আল্লাহর অনুগ্রহ ও কল্যাণ। নিশ্চয় তিনি প্রশংসীত ও সম্মানীত। (সূরা হুদু ৭৩)
এটা তো আল্লাহর ইচ্ছার ব্যাপার :
قَالُوْا كَذٰلِكِ قَالَ رَبُّكِؕ اِنَّهٗ هُوَ الْحَكِيْمُ الْعَلِيْمُ
তারা বললেন, তোমার প্রতিপালক এরকমই বলেছেন। নিশ্চয় তিনি প্রজ্ঞাবান ও সর্বজ্ঞ। (সূরা যারিয়াত– ৩০)
وَنَبِّئْهُمْ عَنْ ضَيْفِ اِبْرَاهِيْمَ
আর তাদেরকে ইবরাহীমের অতিথিদের সম্পর্কে সংবাদ প্রদান করো। (সূরা হিজর– ৫১)
هَلْ اَتَاكَ حَدِيْثُ ضَيْفِ اِبْرَاهِيْمَ الْمُكْرَمِيْنَ
হে নবী! তোমার নিকট ইবরাহীমের সম্মানিত মেহমানদের কাহিনী পৌঁছেছে কি? (সূরা যারিয়াত– ২৪)
তাঁরা ইবরাহীম (আঃ) কে সালাম দিলেন :
اِذْ دَخَلُوْا عَلَيْهِ فَقَالُوْا سَلَامًاؕ قَالَ اِنَّا مِنْكُمْ وَجِلُوْنَ
যখন তারা তার নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, ‘সালাম’, তখন তিনি বলেছিলেন, আমরা তোমাদের আগমনে আতঙ্কিত। (সূরা হিজর– ৫২)
ইবরাহীম (আঃ) সালামের জওয়াব দিলেন :
وَلَقَدْ جَآءَتْ رُسُلُنَاۤ اِبْرَاهِيْمَ بِالْبُشْرٰى قَالُوْا سَلَامًا قَالَ سَلَامٌ
আমার দূতগণ সুসংবাদ নিয়ে ইবরাহীমের নিকট আসল। তারা বলল, ‘সালাম’। সেও বলল, ‘সালাম।’ (সূরা হুদু ৬৯)
তিনি মেহমানদারীর জন্য একটি ভূনা করা বাছুর নিয়ে আসলেন :
فَمَا لَبِثَ اَنْ جَآءَ بِعِجْلٍ حَنِيْذٍ
সে অবিলম্বে এক কাবাবকৃত গো–বৎস নিয়ে আসল। (সূরা হুদু ৬৯)
فَرَاغَ اِلٰۤى اَهْلِهٖ فَجَآءَ بِعِجْلٍ سَمِيْنٍ ‐ فَقَرَّبَهٗۤاِلَيْهِمْ قَالَ اَ لَا تَأْكُلُوْنَ
অতঃপর ইবরাহীম তাঁর স্ত্রীর নিকট গেলেন এবং একটি গরুর বাছুরের ভাজা গোশত নিয়ে আসলেন। তা তাদের সামনে রাখলেন এবং বললেন, আপনারা খাচ্ছেন না কেন? (সূরা যারিয়াত– ২৬, ২৭)
ফেরেশতারা না খাওয়াতে তিনি ভয় পেয়ে গেলেন :
فَاَوْجَسَ مِنْهُمْ خِيْفَةً
এতে তিনি তাদের সম্পর্কে মনে মনে ভয় পেয়ে গেলেন। (সূরা যারিয়াত– ২৮)
فَلَمَّا رَاٰۤى اَيْدِيَهُمْ لَا تَصِلُ اِلَيْهِ نَكِرَهُمْ وَاَوْجَسَ مِنْهُمْ خِيْفَةً
সে যখন দেখল, তাদের হাত সেটার দিকে প্রসারিত হচ্ছে না, তখন তাদেরকে অবাঞ্ছিত মনে করল এবং তাদের সম্বন্ধে তার মনে ভীতি সঞ্চার হলো। (সূরা হুদু ৭০)
ফেরেশতারা তাকে আশ্বস্ত করলেন :
قَالُوْا لَا تَخَفْ اِنَّاۤ اُرْسِلْنَاۤ اِلٰى قَوْمِ لُوْطٍ
তারা বলল, ভয় করো না; আমরা তো লূতের সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেরিত হয়েছি। (সূরা হুদু ৭০)
তাদের আগমনের কারণ বর্ণনা করলেন :
قَالُوْاۤ اِنَّاۤ اُرْسِلْنَاۤ اِلٰى قَوْمٍ مُّجْرِمِيْنَ ‐ لِنُرْسِلَ عَلَيْهِمْ حِجَارَةً مِّنْ طِيْنٍ ‐ مُسَوَّمَةً عِنْدَ رَبِّكَ لِلْمُسْرِفِيْنَ
তাঁরা বললেন, আমাদেরকে এক অপরাধী সম্প্রদায়ের (লূত জাতির) নিকট পাঠানো হয়েছে। তাদের উপর মাটির শক্ত কঙ্কর নিক্ষেপ করার জন্য, যা তোমার প্রতিপালকের নিকট সীমালঙ্ঘনকারীদের জন্য চিহ্নিত। (সূরা যারিয়াত, ৩২–৩৪)
তারা ইসহাক (আঃ) জন্মের সুসংবাদ দিলেন :
قَالُوْا لَا تَوْجَلْ اِنَّا نُبَشِّرُكَ بِغُلَامٍ عَلِيْمٍ
তারা বলল, ভয় করো না, আমরা তোমাকে এক জ্ঞানী পুত্রের সুসংবাদ দিচ্ছি। (সূরা হিজর– ৫৩)
ইবরাহীম (আঃ) বললেন, আমি তো এখন বৃদ্ধ :
قَالَ اَبَشَّرْتُمُوْنِيْ عَلٰۤى اَنْ مَّسَّنِيَ الْكِبَرُ فَبِمَ تُبَشِّرُوْنَ
সে বলল, আমি বৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও তোমরা কি আমাকে সুসংবাদ দিচ্ছ? (মূলত) তোমরা কী বিষয়ে সুসংবাদ দিচ্ছ (তা বুঝিয়ে বলো)? (সূরা হিজর– ৫৪)
ফেরেশতারা বললেন, আপনি হতাশ হবেন না :
قَالُوْا بَشَّرْنَاكَ بِالْحَقِّ فَلَا تَكُنْ مِّنَ الْقَانِطِيْنَ ‐ قَالَ وَمَنْ يَّقْنَطُ مِنْ رَّحْمَةِ رَبِّهٖۤ اِلَّا الضَّآلُّوْنَ
তারা বলল, আমরা সত্য সংবাদ দিচ্ছি; সুতরাং আপনি হতাশ হবেন না। সে বলল, যারা পথভ্রষ্ট তারা ব্যতীত আর কে তার প্রতিপালকের অনুগ্রহ হতে হতাশ হতে পারে? (সূরা হিজর– ৫৫, ৫৬)
স্ত্রীকেও এ সুসংবাদ দেয়া হলো :
وَامْرَاَتُهٗ قَآئِمَةٌ فَضَحِكَتْ فَبَشَّرْنَاهَا بِاِسْحَاقَ وَمِنْ وَّرَآءِ اِسْحَاقَ يَعْقُوْبَ
অতঃপর তার স্ত্রী দাঁড়ানো এবং সে হেসে ফেলল। অতঃপর আমি তাকে ইসহাক ও ইসহাকের পরবর্তীতে ইয়াকূবের সুসংবাদ দিলাম। (সূরা হুদু ৭১)
ইবরাহীম (আঃ) এর স্ত্রীও অবাক হলেন :
قَالَتْ يَا وَيْلَتَاۤ اَ اَلِدُ وَاَنَاْ عَجُوْزٌ وَّهٰذَا بَعْلِيْ شَيْخًاؕ اِنَّ هٰذَا لَشَيْءٌ عَجِيْبٌ
সে বলল, কি আশ্চর্য! আমি সন্তানের জননী হব! অথচ আমি বৃদ্ধা ও আমার স্বামী বৃদ্ধ। নিশ্চয় এটা এক আশ্চর্যের ব্যাপার। (সূরা হুদু ৭২)
ফেরেশতারা বললেন, অবাক হওয়ার কিছু নেই :
قَالُوْاۤ اَتَعْجَبِيْنَ مِنْ اَمْرِ اللهِ رَحْمَتُ اللهِ وَبَرَكَاتُهٗ عَلَيْكُمْ اَهْلَ الْبَيْتِؕ اِنَّهٗ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ
তারা বলল, আল্লাহর কাজে তুমি বিস্ময় বোধ করছ? হে পরিবারবর্গ! তোমাদের প্রতি রয়েছে আল্লাহর অনুগ্রহ ও কল্যাণ। নিশ্চয় তিনি প্রশংসীত ও সম্মানীত। (সূরা হুদু ৭৩)
এটা তো আল্লাহর ইচ্ছার ব্যাপার :
قَالُوْا كَذٰلِكِ قَالَ رَبُّكِؕ اِنَّهٗ هُوَ الْحَكِيْمُ الْعَلِيْمُ
তারা বললেন, তোমার প্রতিপালক এরকমই বলেছেন। নিশ্চয় তিনি প্রজ্ঞাবান ও সর্বজ্ঞ। (সূরা যারিয়াত– ৩০)
তিনি মূর্তি ভাঙ্গবেন বলে আগেই জানিয়ে দেন :
وَتَاللهِ لَاَكِيْدَنَّ اَصْنَامَكُمْ بَعْدَ اَنْ تُوَلُّوْا مُدْبِرِيْنَ
শপথ আল্লাহর, তোমরা চলে গেলে আমি তোমাদের মূর্তিগুলো সম্বন্ধে অবশ্যই কৌশল অবলম্বন করব।
(সূরা আম্বিয়া– ৫৭)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ যদি তোমরা আমার কথাগুলো যুক্তির সাহায্যে বুঝতে অপারগ হও, তাহলে আমি তোমাদেরকে কার্যত দেখিয়ে দেব যে, এরা একেবারেই অসহায়। নিজেদেরকে রক্ষা করার মতো সামান্যতম ক্ষমতাটুকুও এদের নেই; সুতরাং এদেরকে ইলাহ্ হিসেবে গ্রহণ করা ঠিক নয়।
ইবরাহীম (আঃ) মুশরিকদের সাথে মেলায় যাননি :
فَنَظَرَ نَظْرَةً فِى النُّجُوْمِ ‐ فَقَالَ اِنِّيْ سَقِيْمٌ ‐ فَتَوَلَّوْا عَنْهُ مُدْبِرِيْنَ
অতঃপর ইবরাহীম একবার তারকার দিকে তাকালেন। তিনি বললেন, আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। অতঃপর তারা তাকে রেখে চলে গেল। (সূরা সাফ্ফাত, ৮৮-৯০)
ব্যাখ্যা : মিথ্যা বলা তাঁর উদ্দেশ্য ছিল না, বরং তিনি বিরোধীদেরকে একটি প্রমাণ দেখাতে চাচ্ছিলেন। যাতে করে তারা নিজেরাই এ কথা স্বীকার করে নেয় যে, এসব উপাস্যরা একেবারেই অসহায় এবং এদের দ্বারা কোন উপকারই আশা করা যায় না। এ ধরনের পরিস্থিতিতে যদি কোন ব্যক্তি প্রমাণ উপস্থাপনের জন্য বাস্তবতা বিরোধী কোন কথা বলে, তবে তাকে মিথ্যুক বলা যায় না। কারণ মিথ্যা বলার নিয়তে সে এমন কথা বলে না এবং তার বিরোধীরাও একে মিথ্যা মনে করে না।
তিনি মূর্তির নিকট গিয়ে দু’টি প্রশ্ন করলেন :
فَرَاغَ اِلٰۤى اٰلِهَتِهِمْ فَقَالَ اَ لَا تَأْكُلُوْنَ ‐ مَا لَكُمْ لَا تَنْطِقُوْنَ
তারপর তিনি তাদের মূর্তিগুলোর নিকট গেলেন এবং বললেন, তোমরা খাচ্ছ না কেন? তোমাদের কি হলো, তোমরা কথা বলছ না কেন? (সূরা সাফ্ফাত– ৯১, ৯২)
ডান হাত দিয়ে মূর্তির উপর আঘাত করলেন :
فَرَاغَ عَلَيْهِمْ ضَرْبًا ۢبِالْيَمِيْنِ
অতঃপর তিনি তাদের উপর ডান হাতে স্বজোরে আঘাত করলেন। (সূরা সাফ্ফাত–৯৩)
প্রধান মূর্তিটি ছাড়া সবগুলো ভেঙ্গে ফেললেন :
فَجَعَلَهُمْ جُذَاذًا اِلَّا كَبِيْرًا لَّهُمْ لَعَلَّهُمْ اِلَيْهِ يَرْجِعُوْنَ
অতঃপর সে প্রধানটি ব্যতীত সকল মূর্তিগুলোকে চূর্ণ–বিচূর্ণ করে দিল, যেন তারা তার দিকে ফিরে আসে।
(সূরা আম্বিয়া– ৫৮)
তারা বলল, এ কাজ কে করল?
قَالُوْا مَنْ فَعَلَ هٰذَا بِاٰلِهَتِنَاۤ اِنَّهٗ لَمِنَ الظَّالِمِيْنَ
তারা বলল, আমাদের উপাস্যগুলোকে কে এমন করল? নিশ্চয় সে সীমালঙ্ঘনকারী। (সূরা আম্বিয়া– ৫৯)
কেউ কেউ ইবরাহীম (আঃ) এর কথা বলল :
قَالُوْا سَمِعْنَا فَتًى يَّذْكُرُهُمْ يُقَالُ لَهٗۤ اِبْرَاهِيْمُ
কেউ কেউ বলল, এক যুবককে তাদের সমালোচনা করতে শুনেছি, তাকে ইবরাহীম নামে ডাকা হয়। (সূরা আম্বিয়া– ৬০)
তারা ইবরাহীম (আঃ) কে লোকসম্মুখে উপস্থিত করল :
قَالُوْا فَأْتُوْا بِهٖ عَلٰۤى اَعْيُنِ النَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَشْهَدُوْنَ
তারা বলল, তাকে লোকসম্মুখে উপস্থিত করো, যেন তারা প্রত্যক্ষ করতে পারে। (সূরা আম্বিয়া– ৬১)
তিনি এ সময়ও দাওয়াত দিলেন :
قَالَ اَتَعْبُدُوْنَ مَا تَنْحِتُوْنَ ‐ وَاللهُ خَلَقَكُمْ وَمَا تَعْمَلُوْنَ
ইবরাহীম বললেন, তোমরা কি তাদেরই উপাসনা কর, যাদেরকে তোমরা নিজেরা নির্মাণ করেছ? অথচ আল্লাহই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমরা যা কর তাও (তিনি সৃষ্টি করেছেন)। (সূরা সাফ্ফাত– ৯৫, ৯৬)
তারা ইবরাহীম (আঃ) এর জবানবন্দী নিল :
قَالُوْاۤ اَ اَنْتَ فَعَلْتَ هٰذَا بِاٰلِهَتِنَا يَاۤ اِبْرَاهِيْمُ
তারা বলল, হে ইবরাহীম! তুমিই কি আমাদের উপাস্যগুলোকে এমন করেছ? (সূরা আম্বিয়া– ৬২)
তিনি কৌশল খাঁটিয়ে উত্তর দিলেন :
قَالَ بَلْ فَعَلَهٗ ۗ كَبِيْرُهُمْ هٰذَا فَاسْاَلُوْهُمْ اِنْ كَانُوْا يَنْطِقُوْنَ
সে বলল, বরং এই তো এদের প্রধান। সে–ই তো এসব করেছে, এদেরকে জিজ্ঞেস করো- যদি এরা কথা বলতে পারে। (সূরা আম্বিয়া– ৬৩)
নবী তাদের সামনে যুক্তি পেশ করলেন :
قَالَ اَفَتَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ مَا لَا يَنْفَعُكُمْ شَيْئًا وَّلَا يَضُرُّكُمْ
ইবরাহীম বলল, তবে কি তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর ইবাদাত কর, যা তোমাদের কোন উপকার করতে পারে না এবং ক্ষতিও করতে পারে না? (সূরা আম্বিয়া– ৬৬)
তাদের কিছুটা বুঝে আসল :
فَرَجَعُوْاۤ اِلٰۤى اَنْفُسِهِمْ فَقَالُوْاۤ اِنَّكُمْ اَنْتُمُ الظَّالِمُوْنَ
তখন তারা মনে মনে চিন্তা করে দেখল এবং একে অপরকে বলতে লাগল, তোমরাই তো সীমালঙ্ঘনকারী। (সূরা আম্বিয়া– ৬৪)
পরে আবার তাদের মতামত ঘুরে গেল :
ثُمَّ نُكِسُوْا عَلٰى رُءُوْسِهِمْۚ لَقَدْ عَلِمْتَ مَا هٰۤؤُلَآءِ يَنْطِقُوْنَ
অতঃপর তাদের মস্তক অবনত হয়ে গেল এবং তারা বলল, তুমি তো জানই যে, এরা কথা বলতে পারে না। (সূরা আম্বিয়া– ৬৫)
ব্যাখ্যা : ইবরাহীম (আঃ) এর জবাব শুনে প্রথমেই তারা মনে মনে ভাবল, প্রকৃতপক্ষে তারা নিজেরাই যালিম। কেননা তারা এতই অসহায় ও অক্ষম দেবতাদেরকে নিজেদের ইলাহ্ বানিয়ে নিয়েছে, যারা তাদের উপর কি ঘটেছে এবং কে তাদেরকে ভেঙ্গেছে- এ কথাও নিজ মুখে বলতে পারে না। যারা নিজেরাই নিজেদেরকে বাঁচাতে পারে না, তারা কীভাবে তাদের উপাসকদেরকে বাঁচাবে। কিন্তু এরপরও তাদের উপর জিদ ও মূর্খতা চড়াও হয়ে গেল; ফলে তাদের মস্তিষ্ক সঠিক চিন্তা করতে করতে হঠাৎ উল্টো চিন্তা করতে আরম্ভ করল।
ইবরাহীম (আঃ) তাদেরকে ধিক্কার দিলেন :
اُفٍّ لَّكُمْ وَلِمَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِؕ اَفَلَا تَعْقِلُوْنَ
ধিক তোমাদেরকে এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের ইবাদাত কর তাদেরকে, তবুও কি তোমরা অনুধাবন করবে না? (সূরা আম্বিয়া– ৬৭)
তারা তাকে জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করল :
قَالُوا ابْنُوْا لَهٗ بُنْيَانًا فَاَلْقُوْهُ فِى الْجَحِيْمِ
তারা বলল, এর জন্য একটি অগ্নিকুন্ড নির্মাণ করো এবং তাকে সে জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করো।
(সূরা সাফ্ফাত– ৯৭)
আল্লাহ আগুনকে ঠান্ডা করে দিলেন :
قُلْنَا يَا نَارُ كُوْنِيْ بَرْدًا وَّسَلَامًا عَلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ
আমি বললাম, হে অগ্নি! তুমি ইবরাহীমের জন্য শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও। (সূরা আম্বিয়া– ৬৯)
তাকে আগুন থেকে রক্ষা করলেন :
فَمَا كَانَ جَوَابَ قَوْمِهٖۤ اِلَّاۤ اَنْ قَالُوا اقْتُلُوْهُ اَوْ حَرِّقُوْهُ فَاَنْجَاهُ اللهُ مِنَ النَّارِؕ اِنَّ فِي ْذٰلِكَ لَاٰٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ
উত্তরে ইবরাহীমের সম্প্রদায় শুধু এ বলল, একে হত্যা করো অথবা অগ্নিদগ্ধ করো। কিন্তু আল্লাহ তাকে অগ্নি হতে রক্ষা করলেন। এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য। (সূরা আনকাবূত– ২৪)
তারা ইবরাহীম (আঃ) এর কোন ক্ষতি করতে পারল না :
وَاَرَادُوْا بِهٖ كَيْدًا فَجَعَلْنَاهُمُ الْاَخْسَرِيْنَ
তারা তার সাথে চক্রান্ত করার ইচ্ছা করেছিল, কিন্তু আমি তাদেরকেই সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত করে দিলাম।
(সূরা আম্বিয়া– ৭০)
তাদের সকল চক্রান্ত ব্যর্থ হলো :
فَاَرَادُوْا بِهٖ كَيْدًا فَجَعَلْنَاهُمُ الْاَسْفَلِيْنَ
মূলত তারা তার বিরুদ্ধে বিরাট চক্রান্তের সংকল্প করেছিল, কিন্তু আমি তাদেরকে পরাজিত করে দিলাম।
(সূরা সাফ্ফাত– ৯৮)
এই ঘটনায় মুমিনদের জন্য রয়েছে শিক্ষা:
اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ
এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য। (সূরা আনকাবূত– ২৪)
ব্যাখ্যা : এ ঘটনাটি বর্ণনা করার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, কুরাইশদেরকে এ ব্যাপারে সতর্ক করে দেয়া যে, তোমরা যে ইবরাহীম (আঃ) এর সন্তান হওয়ার গর্ব করে থাক, তাঁর নীতি তো তা ছিল না যা তোমরা অবলম্বন করেছ; বরং মুহাম্মাদ ﷺ যে নীতি অবলম্বন করেছেন সেটিই ছিল ইবরাহীম (আঃ) এর নীতি। এখন যদি তোমরা তাঁকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এ ধরনের চক্রান্ত কর যা ইবরাহীম (আঃ) এর জাতি তাঁর বিরুদ্ধে করেছিল, তাহলে শেষ পর্যন্ত তোমরাই হেয় প্রতিপন্ন হবে। মুহাম্মাদ ﷺ কে হেয় প্রতিপন্ন করার ক্ষমতা তোমাদের নেই।
وَتَاللهِ لَاَكِيْدَنَّ اَصْنَامَكُمْ بَعْدَ اَنْ تُوَلُّوْا مُدْبِرِيْنَ
শপথ আল্লাহর, তোমরা চলে গেলে আমি তোমাদের মূর্তিগুলো সম্বন্ধে অবশ্যই কৌশল অবলম্বন করব।
(সূরা আম্বিয়া– ৫৭)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ যদি তোমরা আমার কথাগুলো যুক্তির সাহায্যে বুঝতে অপারগ হও, তাহলে আমি তোমাদেরকে কার্যত দেখিয়ে দেব যে, এরা একেবারেই অসহায়। নিজেদেরকে রক্ষা করার মতো সামান্যতম ক্ষমতাটুকুও এদের নেই; সুতরাং এদেরকে ইলাহ্ হিসেবে গ্রহণ করা ঠিক নয়।
ইবরাহীম (আঃ) মুশরিকদের সাথে মেলায় যাননি :
فَنَظَرَ نَظْرَةً فِى النُّجُوْمِ ‐ فَقَالَ اِنِّيْ سَقِيْمٌ ‐ فَتَوَلَّوْا عَنْهُ مُدْبِرِيْنَ
অতঃপর ইবরাহীম একবার তারকার দিকে তাকালেন। তিনি বললেন, আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। অতঃপর তারা তাকে রেখে চলে গেল। (সূরা সাফ্ফাত, ৮৮-৯০)
ব্যাখ্যা : মিথ্যা বলা তাঁর উদ্দেশ্য ছিল না, বরং তিনি বিরোধীদেরকে একটি প্রমাণ দেখাতে চাচ্ছিলেন। যাতে করে তারা নিজেরাই এ কথা স্বীকার করে নেয় যে, এসব উপাস্যরা একেবারেই অসহায় এবং এদের দ্বারা কোন উপকারই আশা করা যায় না। এ ধরনের পরিস্থিতিতে যদি কোন ব্যক্তি প্রমাণ উপস্থাপনের জন্য বাস্তবতা বিরোধী কোন কথা বলে, তবে তাকে মিথ্যুক বলা যায় না। কারণ মিথ্যা বলার নিয়তে সে এমন কথা বলে না এবং তার বিরোধীরাও একে মিথ্যা মনে করে না।
তিনি মূর্তির নিকট গিয়ে দু’টি প্রশ্ন করলেন :
فَرَاغَ اِلٰۤى اٰلِهَتِهِمْ فَقَالَ اَ لَا تَأْكُلُوْنَ ‐ مَا لَكُمْ لَا تَنْطِقُوْنَ
তারপর তিনি তাদের মূর্তিগুলোর নিকট গেলেন এবং বললেন, তোমরা খাচ্ছ না কেন? তোমাদের কি হলো, তোমরা কথা বলছ না কেন? (সূরা সাফ্ফাত– ৯১, ৯২)
ডান হাত দিয়ে মূর্তির উপর আঘাত করলেন :
فَرَاغَ عَلَيْهِمْ ضَرْبًا ۢبِالْيَمِيْنِ
অতঃপর তিনি তাদের উপর ডান হাতে স্বজোরে আঘাত করলেন। (সূরা সাফ্ফাত–৯৩)
প্রধান মূর্তিটি ছাড়া সবগুলো ভেঙ্গে ফেললেন :
فَجَعَلَهُمْ جُذَاذًا اِلَّا كَبِيْرًا لَّهُمْ لَعَلَّهُمْ اِلَيْهِ يَرْجِعُوْنَ
অতঃপর সে প্রধানটি ব্যতীত সকল মূর্তিগুলোকে চূর্ণ–বিচূর্ণ করে দিল, যেন তারা তার দিকে ফিরে আসে।
(সূরা আম্বিয়া– ৫৮)
তারা বলল, এ কাজ কে করল?
قَالُوْا مَنْ فَعَلَ هٰذَا بِاٰلِهَتِنَاۤ اِنَّهٗ لَمِنَ الظَّالِمِيْنَ
তারা বলল, আমাদের উপাস্যগুলোকে কে এমন করল? নিশ্চয় সে সীমালঙ্ঘনকারী। (সূরা আম্বিয়া– ৫৯)
কেউ কেউ ইবরাহীম (আঃ) এর কথা বলল :
قَالُوْا سَمِعْنَا فَتًى يَّذْكُرُهُمْ يُقَالُ لَهٗۤ اِبْرَاهِيْمُ
কেউ কেউ বলল, এক যুবককে তাদের সমালোচনা করতে শুনেছি, তাকে ইবরাহীম নামে ডাকা হয়। (সূরা আম্বিয়া– ৬০)
তারা ইবরাহীম (আঃ) কে লোকসম্মুখে উপস্থিত করল :
قَالُوْا فَأْتُوْا بِهٖ عَلٰۤى اَعْيُنِ النَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَشْهَدُوْنَ
তারা বলল, তাকে লোকসম্মুখে উপস্থিত করো, যেন তারা প্রত্যক্ষ করতে পারে। (সূরা আম্বিয়া– ৬১)
তিনি এ সময়ও দাওয়াত দিলেন :
قَالَ اَتَعْبُدُوْنَ مَا تَنْحِتُوْنَ ‐ وَاللهُ خَلَقَكُمْ وَمَا تَعْمَلُوْنَ
ইবরাহীম বললেন, তোমরা কি তাদেরই উপাসনা কর, যাদেরকে তোমরা নিজেরা নির্মাণ করেছ? অথচ আল্লাহই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমরা যা কর তাও (তিনি সৃষ্টি করেছেন)। (সূরা সাফ্ফাত– ৯৫, ৯৬)
তারা ইবরাহীম (আঃ) এর জবানবন্দী নিল :
قَالُوْاۤ اَ اَنْتَ فَعَلْتَ هٰذَا بِاٰلِهَتِنَا يَاۤ اِبْرَاهِيْمُ
তারা বলল, হে ইবরাহীম! তুমিই কি আমাদের উপাস্যগুলোকে এমন করেছ? (সূরা আম্বিয়া– ৬২)
তিনি কৌশল খাঁটিয়ে উত্তর দিলেন :
قَالَ بَلْ فَعَلَهٗ ۗ كَبِيْرُهُمْ هٰذَا فَاسْاَلُوْهُمْ اِنْ كَانُوْا يَنْطِقُوْنَ
সে বলল, বরং এই তো এদের প্রধান। সে–ই তো এসব করেছে, এদেরকে জিজ্ঞেস করো- যদি এরা কথা বলতে পারে। (সূরা আম্বিয়া– ৬৩)
নবী তাদের সামনে যুক্তি পেশ করলেন :
قَالَ اَفَتَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ مَا لَا يَنْفَعُكُمْ شَيْئًا وَّلَا يَضُرُّكُمْ
ইবরাহীম বলল, তবে কি তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর ইবাদাত কর, যা তোমাদের কোন উপকার করতে পারে না এবং ক্ষতিও করতে পারে না? (সূরা আম্বিয়া– ৬৬)
তাদের কিছুটা বুঝে আসল :
فَرَجَعُوْاۤ اِلٰۤى اَنْفُسِهِمْ فَقَالُوْاۤ اِنَّكُمْ اَنْتُمُ الظَّالِمُوْنَ
তখন তারা মনে মনে চিন্তা করে দেখল এবং একে অপরকে বলতে লাগল, তোমরাই তো সীমালঙ্ঘনকারী। (সূরা আম্বিয়া– ৬৪)
পরে আবার তাদের মতামত ঘুরে গেল :
ثُمَّ نُكِسُوْا عَلٰى رُءُوْسِهِمْۚ لَقَدْ عَلِمْتَ مَا هٰۤؤُلَآءِ يَنْطِقُوْنَ
অতঃপর তাদের মস্তক অবনত হয়ে গেল এবং তারা বলল, তুমি তো জানই যে, এরা কথা বলতে পারে না। (সূরা আম্বিয়া– ৬৫)
ব্যাখ্যা : ইবরাহীম (আঃ) এর জবাব শুনে প্রথমেই তারা মনে মনে ভাবল, প্রকৃতপক্ষে তারা নিজেরাই যালিম। কেননা তারা এতই অসহায় ও অক্ষম দেবতাদেরকে নিজেদের ইলাহ্ বানিয়ে নিয়েছে, যারা তাদের উপর কি ঘটেছে এবং কে তাদেরকে ভেঙ্গেছে- এ কথাও নিজ মুখে বলতে পারে না। যারা নিজেরাই নিজেদেরকে বাঁচাতে পারে না, তারা কীভাবে তাদের উপাসকদেরকে বাঁচাবে। কিন্তু এরপরও তাদের উপর জিদ ও মূর্খতা চড়াও হয়ে গেল; ফলে তাদের মস্তিষ্ক সঠিক চিন্তা করতে করতে হঠাৎ উল্টো চিন্তা করতে আরম্ভ করল।
ইবরাহীম (আঃ) তাদেরকে ধিক্কার দিলেন :
اُفٍّ لَّكُمْ وَلِمَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِؕ اَفَلَا تَعْقِلُوْنَ
ধিক তোমাদেরকে এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের ইবাদাত কর তাদেরকে, তবুও কি তোমরা অনুধাবন করবে না? (সূরা আম্বিয়া– ৬৭)
তারা তাকে জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করল :
قَالُوا ابْنُوْا لَهٗ بُنْيَانًا فَاَلْقُوْهُ فِى الْجَحِيْمِ
তারা বলল, এর জন্য একটি অগ্নিকুন্ড নির্মাণ করো এবং তাকে সে জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করো।
(সূরা সাফ্ফাত– ৯৭)
আল্লাহ আগুনকে ঠান্ডা করে দিলেন :
قُلْنَا يَا نَارُ كُوْنِيْ بَرْدًا وَّسَلَامًا عَلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ
আমি বললাম, হে অগ্নি! তুমি ইবরাহীমের জন্য শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও। (সূরা আম্বিয়া– ৬৯)
তাকে আগুন থেকে রক্ষা করলেন :
فَمَا كَانَ جَوَابَ قَوْمِهٖۤ اِلَّاۤ اَنْ قَالُوا اقْتُلُوْهُ اَوْ حَرِّقُوْهُ فَاَنْجَاهُ اللهُ مِنَ النَّارِؕ اِنَّ فِي ْذٰلِكَ لَاٰٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ
উত্তরে ইবরাহীমের সম্প্রদায় শুধু এ বলল, একে হত্যা করো অথবা অগ্নিদগ্ধ করো। কিন্তু আল্লাহ তাকে অগ্নি হতে রক্ষা করলেন। এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য। (সূরা আনকাবূত– ২৪)
তারা ইবরাহীম (আঃ) এর কোন ক্ষতি করতে পারল না :
وَاَرَادُوْا بِهٖ كَيْدًا فَجَعَلْنَاهُمُ الْاَخْسَرِيْنَ
তারা তার সাথে চক্রান্ত করার ইচ্ছা করেছিল, কিন্তু আমি তাদেরকেই সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত করে দিলাম।
(সূরা আম্বিয়া– ৭০)
তাদের সকল চক্রান্ত ব্যর্থ হলো :
فَاَرَادُوْا بِهٖ كَيْدًا فَجَعَلْنَاهُمُ الْاَسْفَلِيْنَ
মূলত তারা তার বিরুদ্ধে বিরাট চক্রান্তের সংকল্প করেছিল, কিন্তু আমি তাদেরকে পরাজিত করে দিলাম।
(সূরা সাফ্ফাত– ৯৮)
এই ঘটনায় মুমিনদের জন্য রয়েছে শিক্ষা:
اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ
এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য। (সূরা আনকাবূত– ২৪)
ব্যাখ্যা : এ ঘটনাটি বর্ণনা করার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, কুরাইশদেরকে এ ব্যাপারে সতর্ক করে দেয়া যে, তোমরা যে ইবরাহীম (আঃ) এর সন্তান হওয়ার গর্ব করে থাক, তাঁর নীতি তো তা ছিল না যা তোমরা অবলম্বন করেছ; বরং মুহাম্মাদ ﷺ যে নীতি অবলম্বন করেছেন সেটিই ছিল ইবরাহীম (আঃ) এর নীতি। এখন যদি তোমরা তাঁকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এ ধরনের চক্রান্ত কর যা ইবরাহীম (আঃ) এর জাতি তাঁর বিরুদ্ধে করেছিল, তাহলে শেষ পর্যন্ত তোমরাই হেয় প্রতিপন্ন হবে। মুহাম্মাদ ﷺ কে হেয় প্রতিপন্ন করার ক্ষমতা তোমাদের নেই।
ইবরাহীম (আঃ) এর জাতি মূর্তিপূজায় লিপ্ত ছিল :
اِذْ قَالَ لِاَبِيْهِ وَقَوْمِهٖ مَا تَعْبُدُوْنَ ‐ قَالُوْا نَعْبُدُ اَصْنَامًا فَنَظَلُّ لَهَا عَاكِفِيْنَ
সে যখন তার পিতা ও তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, তোমরা কিসের ইবাদাত কর? তারা বলল, আমরা মূর্তির পূজা করি এবং আমরা সর্বদা তা আঁকড়ে ধরে থাকি। (সূরা শু‘আরা– ৭০, ৭১)
তাদের পূর্বপুরুষরাও তাই করত :
قَالُوْا وَجَدْنَاۤ اٰبَآءَنَا لَهَا عَابِدِيْنَ
তারা বলল, আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদেরকেও এদের পূজারত অবস্থায় পেয়েছি। (সূরা আম্বিয়া– ৫৩)
তিনি মূর্তিপূজার বিরোধিতা করলেন :
قَالَ اَفَرَاَيْتُمْ مَّا كُنْتُمْ تَعْبُدُوْنَ ‐ اَنْتُمْ وَاٰبَآؤُكُمُ الْاَقْدَمُوْنَ ‐ فَاِنَّهُمْ عَدُوٌّ لِّۤيْ اِلَّا رَبَّ الْعَالَمِيْنَ
সে বলল, তোমরা কি ভেবে দেখেছ যে, তোমরা এবং তোমাদের পিতৃপুরুষরা কিসের পূজা করছ? তারা সকলেই আমার শত্রু, তবে জগতসমূহের প্রতিপালক ব্যতীত। (সূরা শু‘আরা, ৭৫–৭৭)
তিনি নির্ভীকচিত্তে জাতিকে বুঝালেন :
وَكَيْفَ اَخَافُ مَاۤ اَشْرَكْتُمْ وَلَا تَخَافُوْنَ اَنَّكُمْ اَشْرَكْتُمْ بِاللهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهٖ عَلَيْكُمْ سُلْطَانًاؕ فَاَيُّ الْفَرِيْقَيْنِ اَحَقُّ بِالْاَمْنِۚ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَلَمْ يَلْبِسُوْاۤ اِيْمَانَهُمْ بِظُلْمٍ اُولٰٓئِكَ لَهُمُ الْاَمْنُ وَهُمْ مُّهْتَدُوْنَ
তোমরা যাকে আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন কর, আমি তাকে কীভাবে ভয় করব? অথচ তোমরা আল্লাহর শরীক করতে ভয় কর না, যে বিষয়ে তিনি তোমাদেরকে কোন সনদ দেননি। সুতরাং যদি তোমরা জান তবে বলো, দু’দলের মধ্যে কোন্ দল নিরাপত্তা লাভের বেশি হকদার। যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের ঈমানকে যুলুম (শিরক) দ্বারা কলুষিত করেনি- নিরাপত্তা কেবল তাদের জন্যই এবং তারাই সৎপথপ্রাপ্ত। (সূরা আন‘আম– ৮১, ৮২)
এক আল্লাহর ইবাদাতের দিকে আহবান জানালেন :
وَاِبْرَاهِيْمَ اِذْ قَالَ لِقَوْمِهِ اعْبُدُوا اللهَ وَاتَّقُوْهُ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
স্মরণ করো, যখন ইবরাহীম তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো এবং তাঁকে ভয় করো, এটাই তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা জানতে! (সূরা আনকাবূত– ১৬)
তিনি মুশরিকদেরকে ত্যাগ করলেন :
قَدْ كَانَتْ لَكُمْ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِۤيْ اِبْرَاهِيْمَ وَالَّذِيْنَ مَعَهٗۚ اِذْ قَالُوْا لِقَوْمِهِمْ اِنَّا بُرَآٰءُ مِنْكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِؗ كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَآءُ اَبَدًا حَتّٰى تُؤْمِنُوْا بِاللهِ وَحْدَهٗ
তোমাদের জন্য ইবরাহীম ও তার অনুসারীদের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। তাঁরা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিল, তোমাদের সাথে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদাত কর তার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদেরকে অবিশ্বাস করি। তোমাদের মধ্যে ও আমাদের মধ্যে চিরকালের জন্য শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হলো, যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। (সূরা মুমতাহিনা– ৪)
اِذْ قَالَ لِاَبِيْهِ وَقَوْمِهٖ مَا تَعْبُدُوْنَ ‐ قَالُوْا نَعْبُدُ اَصْنَامًا فَنَظَلُّ لَهَا عَاكِفِيْنَ
সে যখন তার পিতা ও তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, তোমরা কিসের ইবাদাত কর? তারা বলল, আমরা মূর্তির পূজা করি এবং আমরা সর্বদা তা আঁকড়ে ধরে থাকি। (সূরা শু‘আরা– ৭০, ৭১)
তাদের পূর্বপুরুষরাও তাই করত :
قَالُوْا وَجَدْنَاۤ اٰبَآءَنَا لَهَا عَابِدِيْنَ
তারা বলল, আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদেরকেও এদের পূজারত অবস্থায় পেয়েছি। (সূরা আম্বিয়া– ৫৩)
তিনি মূর্তিপূজার বিরোধিতা করলেন :
قَالَ اَفَرَاَيْتُمْ مَّا كُنْتُمْ تَعْبُدُوْنَ ‐ اَنْتُمْ وَاٰبَآؤُكُمُ الْاَقْدَمُوْنَ ‐ فَاِنَّهُمْ عَدُوٌّ لِّۤيْ اِلَّا رَبَّ الْعَالَمِيْنَ
সে বলল, তোমরা কি ভেবে দেখেছ যে, তোমরা এবং তোমাদের পিতৃপুরুষরা কিসের পূজা করছ? তারা সকলেই আমার শত্রু, তবে জগতসমূহের প্রতিপালক ব্যতীত। (সূরা শু‘আরা, ৭৫–৭৭)
তিনি নির্ভীকচিত্তে জাতিকে বুঝালেন :
وَكَيْفَ اَخَافُ مَاۤ اَشْرَكْتُمْ وَلَا تَخَافُوْنَ اَنَّكُمْ اَشْرَكْتُمْ بِاللهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهٖ عَلَيْكُمْ سُلْطَانًاؕ فَاَيُّ الْفَرِيْقَيْنِ اَحَقُّ بِالْاَمْنِۚ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ ‐ اَ لَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَلَمْ يَلْبِسُوْاۤ اِيْمَانَهُمْ بِظُلْمٍ اُولٰٓئِكَ لَهُمُ الْاَمْنُ وَهُمْ مُّهْتَدُوْنَ
তোমরা যাকে আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন কর, আমি তাকে কীভাবে ভয় করব? অথচ তোমরা আল্লাহর শরীক করতে ভয় কর না, যে বিষয়ে তিনি তোমাদেরকে কোন সনদ দেননি। সুতরাং যদি তোমরা জান তবে বলো, দু’দলের মধ্যে কোন্ দল নিরাপত্তা লাভের বেশি হকদার। যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের ঈমানকে যুলুম (শিরক) দ্বারা কলুষিত করেনি- নিরাপত্তা কেবল তাদের জন্যই এবং তারাই সৎপথপ্রাপ্ত। (সূরা আন‘আম– ৮১, ৮২)
এক আল্লাহর ইবাদাতের দিকে আহবান জানালেন :
وَاِبْرَاهِيْمَ اِذْ قَالَ لِقَوْمِهِ اعْبُدُوا اللهَ وَاتَّقُوْهُ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
স্মরণ করো, যখন ইবরাহীম তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো এবং তাঁকে ভয় করো, এটাই তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা জানতে! (সূরা আনকাবূত– ১৬)
তিনি মুশরিকদেরকে ত্যাগ করলেন :
قَدْ كَانَتْ لَكُمْ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِۤيْ اِبْرَاهِيْمَ وَالَّذِيْنَ مَعَهٗۚ اِذْ قَالُوْا لِقَوْمِهِمْ اِنَّا بُرَآٰءُ مِنْكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِؗ كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَآءُ اَبَدًا حَتّٰى تُؤْمِنُوْا بِاللهِ وَحْدَهٗ
তোমাদের জন্য ইবরাহীম ও তার অনুসারীদের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। তাঁরা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিল, তোমাদের সাথে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদাত কর তার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদেরকে অবিশ্বাস করি। তোমাদের মধ্যে ও আমাদের মধ্যে চিরকালের জন্য শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হলো, যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। (সূরা মুমতাহিনা– ৪)
তিনি বললেন, তোমাদের মূর্তির বৈশিষ্ট্য কী?
اِذْ قَالَ لِاَبِيْهِ وَقَوْمِهٖ مَا هٰذِهِ التَّمَاثِيْلُ الَّتِيْۤ اَنْتُمْ لَهَا عَاكِفُوْنَ
যখন সে তার পিতা ও তার সম্প্রদায়কে বলল, এ মূর্তিগুলো কী (বৈশিষ্ট্যের অধিকারী), তোমরা যাদের পূজা করছ? (সূরা আম্বিয়া– ৫২)
اِذْ قَالَ لِاَبِيْهِ وَقَوْمِهٖ مَاذَا تَعْبُدُوْنَ
যখন তিনি তার পিতা ও তার সম্প্রদায়কে বললেন, তোমরা কিসের উপাসনা করছ? (সূরা সাফ্ফাত– ৮৫)
اِنَّمَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ اَوْثَانًا وَّتَخْلُقُوْنَ اِفْكًا
নিশ্চয় তোমরা তো আল্লাহকে বাদ দিয়ে মূর্তির পূজা করে থাক এবং মিথ্যা উদ্ভাবন কর। (সূরা আনকাবূত– ১৭)
এসব মূর্তি কি কোন লাভ-ক্ষতির ক্ষমতা রাখে?
اَوْ يَنْفَعُوْنَكُمْ اَوْ يَضُرُّوْنَ
অথবা তারা কি তোমাদের কোন উপকার কিংবা অপকার করতে পারে? (সূরা শু‘আরা– ৭৩)
এসব মূর্তি কি ডাক শুনতে পায়?
قَالَ هَلْ يَسْمَعُوْنَكُمْ اِذْ تَدْعُوْنَ
সে বলল, তোমরা প্রার্থনা করলে তারা কি শুনতে পায়? (সূরা শু‘আরা– ৭২)
ওরা কি তোমাদেরকে রিযিক দিতে পারে?
اِنَّمَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ اَوْثَانًا وَّتَخْلُقُوْنَ اِفْكًاؕ اِنَّ الَّذِيْنَ تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ لَا يَمْلِكُوْنَ لَكُمْ رِزْقًا
তোমরা তো আল্লাহ ব্যতীত কেবল মূর্তিপূজা করছ এবং মিথ্যা উদ্ভাবন করছ। তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদের উপাসনা কর, তারা তোমাদের জীবনোপকরণ প্রদান করতে সক্ষম নয়। (সূরা আনকাবূত– ১৭)
বিশ্বের প্রতিপালক সম্পর্কে তোমাদের ধারণা কী?
فَمَا ظَنُّكُمْ بِرَبِّ الْعَالَمِيْنَ
তবে সারা বিশ্বের প্রতিপালক সম্পর্কে তোমাদের ধারণা কী? (সূরা সাফ্ফাত– ৮৭)
এ সকল যুক্তি আল্লাহই শিক্ষা দিয়েছেন :
وَتِلْكَ حُجَّتُنَاۤ اٰتَيْنَاهَاۤ اِبْرَاهِيْمَ عَلٰى قَوْمِهٖ نَرْفَعُ دَرَجَاتٍ مَّنْ نَّشَآءُ اِنَّ رَبَّكَ حَكِيْمٌ عَلِيْمٌ
এটা আমার দলীল–প্রমাণ, যা ইবরাহীমকে তার সম্প্রদায়ের মুকাবিলা করার জন্য দিয়েছিলাম; আর আমি যাকে ইচ্ছা মর্যাদায় উন্নীত করি। নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক প্রজ্ঞাময় ও সর্বজ্ঞ। (সূরা আন‘আম– ৮৩)
اِذْ قَالَ لِاَبِيْهِ وَقَوْمِهٖ مَا هٰذِهِ التَّمَاثِيْلُ الَّتِيْۤ اَنْتُمْ لَهَا عَاكِفُوْنَ
যখন সে তার পিতা ও তার সম্প্রদায়কে বলল, এ মূর্তিগুলো কী (বৈশিষ্ট্যের অধিকারী), তোমরা যাদের পূজা করছ? (সূরা আম্বিয়া– ৫২)
اِذْ قَالَ لِاَبِيْهِ وَقَوْمِهٖ مَاذَا تَعْبُدُوْنَ
যখন তিনি তার পিতা ও তার সম্প্রদায়কে বললেন, তোমরা কিসের উপাসনা করছ? (সূরা সাফ্ফাত– ৮৫)
اِنَّمَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ اَوْثَانًا وَّتَخْلُقُوْنَ اِفْكًا
নিশ্চয় তোমরা তো আল্লাহকে বাদ দিয়ে মূর্তির পূজা করে থাক এবং মিথ্যা উদ্ভাবন কর। (সূরা আনকাবূত– ১৭)
এসব মূর্তি কি কোন লাভ-ক্ষতির ক্ষমতা রাখে?
اَوْ يَنْفَعُوْنَكُمْ اَوْ يَضُرُّوْنَ
অথবা তারা কি তোমাদের কোন উপকার কিংবা অপকার করতে পারে? (সূরা শু‘আরা– ৭৩)
এসব মূর্তি কি ডাক শুনতে পায়?
قَالَ هَلْ يَسْمَعُوْنَكُمْ اِذْ تَدْعُوْنَ
সে বলল, তোমরা প্রার্থনা করলে তারা কি শুনতে পায়? (সূরা শু‘আরা– ৭২)
ওরা কি তোমাদেরকে রিযিক দিতে পারে?
اِنَّمَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ اَوْثَانًا وَّتَخْلُقُوْنَ اِفْكًاؕ اِنَّ الَّذِيْنَ تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ لَا يَمْلِكُوْنَ لَكُمْ رِزْقًا
তোমরা তো আল্লাহ ব্যতীত কেবল মূর্তিপূজা করছ এবং মিথ্যা উদ্ভাবন করছ। তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদের উপাসনা কর, তারা তোমাদের জীবনোপকরণ প্রদান করতে সক্ষম নয়। (সূরা আনকাবূত– ১৭)
বিশ্বের প্রতিপালক সম্পর্কে তোমাদের ধারণা কী?
فَمَا ظَنُّكُمْ بِرَبِّ الْعَالَمِيْنَ
তবে সারা বিশ্বের প্রতিপালক সম্পর্কে তোমাদের ধারণা কী? (সূরা সাফ্ফাত– ৮৭)
এ সকল যুক্তি আল্লাহই শিক্ষা দিয়েছেন :
وَتِلْكَ حُجَّتُنَاۤ اٰتَيْنَاهَاۤ اِبْرَاهِيْمَ عَلٰى قَوْمِهٖ نَرْفَعُ دَرَجَاتٍ مَّنْ نَّشَآءُ اِنَّ رَبَّكَ حَكِيْمٌ عَلِيْمٌ
এটা আমার দলীল–প্রমাণ, যা ইবরাহীমকে তার সম্প্রদায়ের মুকাবিলা করার জন্য দিয়েছিলাম; আর আমি যাকে ইচ্ছা মর্যাদায় উন্নীত করি। নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক প্রজ্ঞাময় ও সর্বজ্ঞ। (সূরা আন‘আম– ৮৩)
ইবরাহীম (আঃ) পিতাকেও দ্বীনের দাওয়াত দিলেন :
اِذْ قَالَ لِاَبِيْهِ يَاۤ اَبَتِ لِمَ تَعْبُدُ مَا لَا يَسْمَعُ وَلَا يُبْصِرُ وَلَا يُغْنِيْ عَنْكَ شَيْئًا
স্মরণ করো, যখন সে তার পিতাকে বলল, হে আমার পিতা! আপনি কেন তার ইবাদাত করেন যে কোনকিছু শুনতে পায় না, দেখতে পায় না ও আপনার কোন উপকারও করতে পারে না? (সূরা মারইয়াম– ৪২)
তার পিতা আযর নামে পরিচিত ছিল :
وَاِذْ قَالَ اِبْرَاهِيْمُ لِاَبِيْهِ اٰزَرَ اَتَتَّخِذُ اَصْنَامًا اٰلِهَةًۚ اِنِّۤيْ اَرَاكَ وَقَوْمَكَ فِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ
স্মরণ করো, ইবরাহীম তার পিতা আযরকে বলেছিল, তুমি কি মূর্তিকে ইলাহ্ হিসেবে গ্রহণ কর? আমি তো আপনাকে ও আপনার সম্প্রদায়কে স্পষ্ট ভ্রান্তিতে দেখতে পাচ্ছি। (সূরা আন‘আম– ৭৪)
হৃদয়ের আবেগ উজাড় করে পিতাকে বুঝালেন :
يَاۤ اَبَتِ اِنِّيْ قَدْ جَآءَنِيْ مِنَ الْعِلْمِ مَا لَمْ يَأْتِكَ فَاتَّبِعْنِيْۤ اَهْدِكَ صِرَاطًا سَوِيًّا ‐ يَاۤ اَبَتِ لَا تَعْبُدِ الشَّيْطَانَؕ اِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلرَّحْمٰنِ عَصِيًّا ‐ يَاۤ اَبَتِ اِنِّۤيْ اَخَافُ اَنْ يَّمَسَّكَ عَذَابٌ مِّنَ الرَّحْمٰنِ فَتَكُوْنَ لِلشَّيْطَانِ وَلِيًّا
(সে তার পিতাকে বলল) হে আমার পিতা! আমার নিকট এমন জ্ঞান এসেছে, যা তোমার নিকট আসেনি। সুতরাং আমার অনুসরণ করো, আমি তোমাকে সঠিক পথ দেখাব। হে আমার পিতা! শয়তানের ইবাদাত করো না, নিশ্চয় শয়তান দয়ালু আল্লাহর অবাধ্য। হে আমার পিতা! আমি আশঙ্কা করি যে, দয়াময়ের শাস্তি তোমাকে স্পর্শ করবে, তখনও তুমি শয়তানের বন্ধু হিসেবে গণ্য হবে। (সূরা মারইয়াম, ৪৩–৪৫)
পিতাও তাকে হত্যার হুমকি দিল :
قَالَ اَرَاغِبٌ اَنْتَ عَنْ اٰلِهَتِيْ يَاۤ اِبْرَاهِيْمُۚ لَئِنْ لَّمْ تَنْتَهِ لَاَرْجُمَنَّكَ وَاهْجُرْنِيْ مَلِيًّا
পিতা বলল, হে ইবরাহীম! তুমি কি আমার দেব–দেবী হতে বিমুখ? যদি তুমি বিরত না হও, তবে আমি প্রস্তরাঘাতে তোমার প্রাণ নাশ করবই। তুমি চিরদিনের জন্য আমার নিকট হতে দূর হয়ে যাও। (সূরা মারইয়াম– ৪৬)
পিতার জন্য ক্ষমা চাওয়ার ওয়াদা করেছিলেন :
قَالَ سَلَامٌ عَلَيْكَۚ سَاَسْتَغْفِرُ لَكَ رَبِّيْ ؕ اِنَّهٗ كَانَ بِيْ حَفِيًّا
ইবরাহীম বলল, তোমার প্রতি সালাম। আমি আমার প্রতিপালকের নিকট তোমার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করব। নিশ্চয় তিনি আমার প্রতি অতিশয় অনুগ্রহশীল। (সূরা মারইয়াম– ৪৭)
তিনি ওয়াদা পূর্ণ করেছিলেন :
وَاغْفِرْ لِاَبِۤيْ اِنَّهٗ كَانَ مِنَ الضَّآلِّيْنَ
(হে আমার প্রতিপালক) আমার পিতাকে ক্ষমা করো, তিনি তো পথভ্রষ্টদের শামিল ছিলেন। (সূরা শু‘আরা– ৮৬)
পিতা মুশরিক থাকায় দু‘আ কবুল হয়নি :
وَمَا كَانَ اسْتِغْفَارُ اِبْرَاهِيْمَ لِاَبِيْهِ اِلَّا عَنْ مَّوْعِدَةٍ وَّعَدَهَاۤ اِيَّاهُۚ فَلَمَّا تَبَيَّنَ لَهٗۤ اَنَّهٗ عَدُوٌّ لِّلّٰهِ تَبَرَّاَ مِنْهُؕ اِنَّ اِبْرَاهِيْمَ لَاَوَّاهٌ حَلِيْمٌ
শুধুমাত্র প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করার জন্য ইবরাহীম তার পিতার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করেছিল। অতঃপর যখন তা তার নিকট সুস্পষ্ট হয়ে গেল যে, সে আল্লাহর শত্রু তখন ইবরাহীম তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে দিল। নিশ্চয় ইবরাহীম কোমল হৃদয়ের অধিকারী ও সহনশলী। (সূরা তাওবা– ১১৪)
কেবলমাত্র ভাতিজা লূত–ই ঈমান এনেছিলেন :
فَاٰ مَنَ لَهٗ لُوْطٌ
অতঃপর লূত তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করল। (সূরা আনকাবূত– ২৬)
اِذْ قَالَ لِاَبِيْهِ يَاۤ اَبَتِ لِمَ تَعْبُدُ مَا لَا يَسْمَعُ وَلَا يُبْصِرُ وَلَا يُغْنِيْ عَنْكَ شَيْئًا
স্মরণ করো, যখন সে তার পিতাকে বলল, হে আমার পিতা! আপনি কেন তার ইবাদাত করেন যে কোনকিছু শুনতে পায় না, দেখতে পায় না ও আপনার কোন উপকারও করতে পারে না? (সূরা মারইয়াম– ৪২)
তার পিতা আযর নামে পরিচিত ছিল :
وَاِذْ قَالَ اِبْرَاهِيْمُ لِاَبِيْهِ اٰزَرَ اَتَتَّخِذُ اَصْنَامًا اٰلِهَةًۚ اِنِّۤيْ اَرَاكَ وَقَوْمَكَ فِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ
স্মরণ করো, ইবরাহীম তার পিতা আযরকে বলেছিল, তুমি কি মূর্তিকে ইলাহ্ হিসেবে গ্রহণ কর? আমি তো আপনাকে ও আপনার সম্প্রদায়কে স্পষ্ট ভ্রান্তিতে দেখতে পাচ্ছি। (সূরা আন‘আম– ৭৪)
হৃদয়ের আবেগ উজাড় করে পিতাকে বুঝালেন :
يَاۤ اَبَتِ اِنِّيْ قَدْ جَآءَنِيْ مِنَ الْعِلْمِ مَا لَمْ يَأْتِكَ فَاتَّبِعْنِيْۤ اَهْدِكَ صِرَاطًا سَوِيًّا ‐ يَاۤ اَبَتِ لَا تَعْبُدِ الشَّيْطَانَؕ اِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلرَّحْمٰنِ عَصِيًّا ‐ يَاۤ اَبَتِ اِنِّۤيْ اَخَافُ اَنْ يَّمَسَّكَ عَذَابٌ مِّنَ الرَّحْمٰنِ فَتَكُوْنَ لِلشَّيْطَانِ وَلِيًّا
(সে তার পিতাকে বলল) হে আমার পিতা! আমার নিকট এমন জ্ঞান এসেছে, যা তোমার নিকট আসেনি। সুতরাং আমার অনুসরণ করো, আমি তোমাকে সঠিক পথ দেখাব। হে আমার পিতা! শয়তানের ইবাদাত করো না, নিশ্চয় শয়তান দয়ালু আল্লাহর অবাধ্য। হে আমার পিতা! আমি আশঙ্কা করি যে, দয়াময়ের শাস্তি তোমাকে স্পর্শ করবে, তখনও তুমি শয়তানের বন্ধু হিসেবে গণ্য হবে। (সূরা মারইয়াম, ৪৩–৪৫)
পিতাও তাকে হত্যার হুমকি দিল :
قَالَ اَرَاغِبٌ اَنْتَ عَنْ اٰلِهَتِيْ يَاۤ اِبْرَاهِيْمُۚ لَئِنْ لَّمْ تَنْتَهِ لَاَرْجُمَنَّكَ وَاهْجُرْنِيْ مَلِيًّا
পিতা বলল, হে ইবরাহীম! তুমি কি আমার দেব–দেবী হতে বিমুখ? যদি তুমি বিরত না হও, তবে আমি প্রস্তরাঘাতে তোমার প্রাণ নাশ করবই। তুমি চিরদিনের জন্য আমার নিকট হতে দূর হয়ে যাও। (সূরা মারইয়াম– ৪৬)
পিতার জন্য ক্ষমা চাওয়ার ওয়াদা করেছিলেন :
قَالَ سَلَامٌ عَلَيْكَۚ سَاَسْتَغْفِرُ لَكَ رَبِّيْ ؕ اِنَّهٗ كَانَ بِيْ حَفِيًّا
ইবরাহীম বলল, তোমার প্রতি সালাম। আমি আমার প্রতিপালকের নিকট তোমার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করব। নিশ্চয় তিনি আমার প্রতি অতিশয় অনুগ্রহশীল। (সূরা মারইয়াম– ৪৭)
তিনি ওয়াদা পূর্ণ করেছিলেন :
وَاغْفِرْ لِاَبِۤيْ اِنَّهٗ كَانَ مِنَ الضَّآلِّيْنَ
(হে আমার প্রতিপালক) আমার পিতাকে ক্ষমা করো, তিনি তো পথভ্রষ্টদের শামিল ছিলেন। (সূরা শু‘আরা– ৮৬)
পিতা মুশরিক থাকায় দু‘আ কবুল হয়নি :
وَمَا كَانَ اسْتِغْفَارُ اِبْرَاهِيْمَ لِاَبِيْهِ اِلَّا عَنْ مَّوْعِدَةٍ وَّعَدَهَاۤ اِيَّاهُۚ فَلَمَّا تَبَيَّنَ لَهٗۤ اَنَّهٗ عَدُوٌّ لِّلّٰهِ تَبَرَّاَ مِنْهُؕ اِنَّ اِبْرَاهِيْمَ لَاَوَّاهٌ حَلِيْمٌ
শুধুমাত্র প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করার জন্য ইবরাহীম তার পিতার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করেছিল। অতঃপর যখন তা তার নিকট সুস্পষ্ট হয়ে গেল যে, সে আল্লাহর শত্রু তখন ইবরাহীম তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে দিল। নিশ্চয় ইবরাহীম কোমল হৃদয়ের অধিকারী ও সহনশলী। (সূরা তাওবা– ১১৪)
কেবলমাত্র ভাতিজা লূত–ই ঈমান এনেছিলেন :
فَاٰ مَنَ لَهٗ لُوْطٌ
অতঃপর লূত তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করল। (সূরা আনকাবূত– ২৬)
ইবরাহীম (আঃ) আল্লাহর উদ্দেশ্যে হিজরত করলেন :
وَقَالَ اِنِّيْ مُهَاجِرٌ اِلٰى رَبِّيْؕ اِنَّهٗ هُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
ইবরাহীম বলল, আমি আমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে দেশ ত্যাগ করছি। নিশ্চয় তিনি মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা আনকাবূত– ২৬)
وَنَجَّيْنَاهُ وَلُوْطًا اِلَى الْاَرْضِ الَّتِيْ بَارَكْنَا فِيْهَا لِلْعَالَمِيْنَ
আমি তাকে ও লূতকে উদ্ধার করে সে দেশে নিয়ে গেলাম, যেখানে আমি বিশ্ববাসীর জন্য কল্যাণ রেখে দিয়েছি। (সূরা আম্বিয়া– ৭১)
হিজরত করার সময় যা বললেন :
وَاَعْتَزِلُكُمْ وَمَا تَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ وَاَدْعُوْا رَبِّيْؕ عَسٰۤى اَلَّاۤ اَكُوْنَ بِدُعَآءِ رَبِّيْ شَقِيًّا
আমি তোমাদের হতে ও তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদের ইবাদাত করো তাদের হতে পৃথক হয়ে যাচ্ছি। আমি আমার প্রতিপালককে আহবান করি; আশা করি, আমার প্রতিপালককে আহবান করে আমি ব্যর্থ হব না। (সূরা মারইয়াম– ৪৮)
وَقَالَ اِنِّيْ ذَاهِبٌ اِلٰى رَبِّيْ سَيَهْدِيْنِ
ইবরাহীম বললেন, আমি আমার প্রতিপালকের দিকে চললাম, তিনিই আমাকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবেন।
(সূরা সাফ্ফাত– ৯৯)
ব্যাখ্যা : এর অর্থ হচ্ছে, আমি আল্লাহর জন্য বের হয়ে পড়েছি। কারণ আমি নিজেকে আল্লাহর কাছে সোপর্দ করেছি, ফলে আমার জাতি আমার শত্রু হয়ে গেছে। নয়তো আমার ও তাদের মধ্যে পার্থিব কোন ঝগড়া ছিল না। তাছাড়া দুনিয়ায় আমার যাওয়ার মতো কোন ঠিকানাও নেই। সমগ্র দেহ-প্রাণকে তাকদীরের হাতে ছেড়ে দিয়ে একমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা করে বের হয়েছি। তিনি যেদিকে নিয়ে যাবেন সেদিকেই চলে যাব।
হিজরতের পর আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ :
فَلَمَّا اعْتَزَلَهُمْ وَمَا يَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ وَهَبْنَا لَهٗۤ اِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَؕ وَكُلًّا جَعَلْنَا نَبِيًّا ‐ وَوَهَبْنَا لَهُمْ مِّنْ رَّحْمَتِنَا وَجَعَلْنَا لَهُمْ لِسَانَ صِدْقٍ عَلِيًّا
অতঃপর সে যখন তাদের ও আল্লাহ ব্যতীত তারা যাদের ইবাদাত করত তাদের হতে পৃথক হয়ে গেল, তখন আমি তাকে ইসহাক ও ইয়াকূবকে দান করলাম। আর প্রত্যেককেই নবী হিসেবে মনোনীত করলাম। আর আমি তাদেরকে আমার অনুগ্রহ দান করলাম ও তাদের নাম–যশ সমুচ্চ করলাম।
(সূরা মারইয়াম– ৪৯, ৫০)
দুনিয়া ও আখিরাতে তাকে কল্যাণ দেয়া হয়েছে :
وَاٰتَيْنَاهُ فِى الدُّنْيَا حَسَنَةًؕ وَاِنَّهٗ فِى الْاٰخِرَةِ لَمِنَ الصَّالِحِيْنَ
আমি তাকে দুনিয়ায় মঙ্গল দান করেছিলাম এবং আখিরাতেও (মঙ্গল দান করেছিলাম), নিশ্চয় সে সৎকর্মপরায়ণদের অন্যতম। (সূরা নাহল– ১২২)
ইবরাহীম (আঃ) এর ইতিহাস স্মরণীয় :
وَاذْكُرْ فِى الْكِتَابِ اِبْرَاهِيْمَ اِنَّهٗ كَانَ صِدِّيْقًا نَّبِيًّا
স্মরণ করো, এ কিতাবে উল্লেখিত ইবরাহীমের কথা; সে ছিল সত্যনিষ্ঠ নবী। (সূরা মারইয়াম– ৪১)
وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ اِبْرَاهِيْمَ
তাদের নিকট ইবরাহীমের বৃত্তান্ত বর্ণনা করো। (সূরা শু‘আরা – ৬৯)
তার জীবনীতে অনেক শিক্ষা রয়েছে :
اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةًؕ وَمَا كَانَ اَكْثَرُهُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে, কিন্তু তাদের অধিকাংশই মুমিন নয়। (সূরা শু‘আরা– ১০৩)
ইবরাহীম (আঃ) এর প্রতি সালাম :
سَلَامٌ عَلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ
‘সালাম’ বর্ষিত হোক ইবরাহীমের উপর। (সূরা সাফ্ফাত– ১০৯)
وَقَالَ اِنِّيْ مُهَاجِرٌ اِلٰى رَبِّيْؕ اِنَّهٗ هُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
ইবরাহীম বলল, আমি আমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে দেশ ত্যাগ করছি। নিশ্চয় তিনি মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা আনকাবূত– ২৬)
وَنَجَّيْنَاهُ وَلُوْطًا اِلَى الْاَرْضِ الَّتِيْ بَارَكْنَا فِيْهَا لِلْعَالَمِيْنَ
আমি তাকে ও লূতকে উদ্ধার করে সে দেশে নিয়ে গেলাম, যেখানে আমি বিশ্ববাসীর জন্য কল্যাণ রেখে দিয়েছি। (সূরা আম্বিয়া– ৭১)
হিজরত করার সময় যা বললেন :
وَاَعْتَزِلُكُمْ وَمَا تَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ وَاَدْعُوْا رَبِّيْؕ عَسٰۤى اَلَّاۤ اَكُوْنَ بِدُعَآءِ رَبِّيْ شَقِيًّا
আমি তোমাদের হতে ও তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদের ইবাদাত করো তাদের হতে পৃথক হয়ে যাচ্ছি। আমি আমার প্রতিপালককে আহবান করি; আশা করি, আমার প্রতিপালককে আহবান করে আমি ব্যর্থ হব না। (সূরা মারইয়াম– ৪৮)
وَقَالَ اِنِّيْ ذَاهِبٌ اِلٰى رَبِّيْ سَيَهْدِيْنِ
ইবরাহীম বললেন, আমি আমার প্রতিপালকের দিকে চললাম, তিনিই আমাকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবেন।
(সূরা সাফ্ফাত– ৯৯)
ব্যাখ্যা : এর অর্থ হচ্ছে, আমি আল্লাহর জন্য বের হয়ে পড়েছি। কারণ আমি নিজেকে আল্লাহর কাছে সোপর্দ করেছি, ফলে আমার জাতি আমার শত্রু হয়ে গেছে। নয়তো আমার ও তাদের মধ্যে পার্থিব কোন ঝগড়া ছিল না। তাছাড়া দুনিয়ায় আমার যাওয়ার মতো কোন ঠিকানাও নেই। সমগ্র দেহ-প্রাণকে তাকদীরের হাতে ছেড়ে দিয়ে একমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা করে বের হয়েছি। তিনি যেদিকে নিয়ে যাবেন সেদিকেই চলে যাব।
হিজরতের পর আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ :
فَلَمَّا اعْتَزَلَهُمْ وَمَا يَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ وَهَبْنَا لَهٗۤ اِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَؕ وَكُلًّا جَعَلْنَا نَبِيًّا ‐ وَوَهَبْنَا لَهُمْ مِّنْ رَّحْمَتِنَا وَجَعَلْنَا لَهُمْ لِسَانَ صِدْقٍ عَلِيًّا
অতঃপর সে যখন তাদের ও আল্লাহ ব্যতীত তারা যাদের ইবাদাত করত তাদের হতে পৃথক হয়ে গেল, তখন আমি তাকে ইসহাক ও ইয়াকূবকে দান করলাম। আর প্রত্যেককেই নবী হিসেবে মনোনীত করলাম। আর আমি তাদেরকে আমার অনুগ্রহ দান করলাম ও তাদের নাম–যশ সমুচ্চ করলাম।
(সূরা মারইয়াম– ৪৯, ৫০)
দুনিয়া ও আখিরাতে তাকে কল্যাণ দেয়া হয়েছে :
وَاٰتَيْنَاهُ فِى الدُّنْيَا حَسَنَةًؕ وَاِنَّهٗ فِى الْاٰخِرَةِ لَمِنَ الصَّالِحِيْنَ
আমি তাকে দুনিয়ায় মঙ্গল দান করেছিলাম এবং আখিরাতেও (মঙ্গল দান করেছিলাম), নিশ্চয় সে সৎকর্মপরায়ণদের অন্যতম। (সূরা নাহল– ১২২)
ইবরাহীম (আঃ) এর ইতিহাস স্মরণীয় :
وَاذْكُرْ فِى الْكِتَابِ اِبْرَاهِيْمَ اِنَّهٗ كَانَ صِدِّيْقًا نَّبِيًّا
স্মরণ করো, এ কিতাবে উল্লেখিত ইবরাহীমের কথা; সে ছিল সত্যনিষ্ঠ নবী। (সূরা মারইয়াম– ৪১)
وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ اِبْرَاهِيْمَ
তাদের নিকট ইবরাহীমের বৃত্তান্ত বর্ণনা করো। (সূরা শু‘আরা – ৬৯)
তার জীবনীতে অনেক শিক্ষা রয়েছে :
اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةًؕ وَمَا كَانَ اَكْثَرُهُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে, কিন্তু তাদের অধিকাংশই মুমিন নয়। (সূরা শু‘আরা– ১০৩)
ইবরাহীম (আঃ) এর প্রতি সালাম :
سَلَامٌ عَلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ
‘সালাম’ বর্ষিত হোক ইবরাহীমের উপর। (সূরা সাফ্ফাত– ১০৯)
লূত (আঃ) ছিলেন ইবরাহীম (আঃ) এর ভাতিজা। চাচার সাথে তিনিও জন্মভূমি বাবেল শহর থেকে হিজরত করে বায়তুল মুকাদ্দাসের অদূরে কেনানে চলে আসেন। আল্লাহ তা‘আলা লূত (আঃ) কে নবুওয়াত দান করেন এবং কেনান থেকে অল্প দূরে জর্ডান ও বায়তুল মুকাদ্দাসের মধ্যবর্তী ‘সাদূম’ অঞ্চলের অধিবাসীদের পথপ্রদর্শনের জন্য প্রেরণ করেন। এ এলাকায় সাদূম, আমূরা, দূমা, সাবাহ ও সাওয়াহ নামে বড় বড় পাঁচটি শহর ছিল। কুরআন মাজীদ বিভিন্ন স্থানে এদের সমষ্টিকে ‘‘মু’তাফেকাহ’’ শব্দে বর্ণনা করেছে। যার অর্থ জনপদ উল্টানো শহরগুলো। এ পাঁচটি শহরের মধ্যে সাদূম ছিল সবচেয়ে বড় এবং সাদূমকেই রাজধানী মনে করা হতো। লূত (আঃ) এখানেই অবস্থান করতেন। এখানকার ভূমি ছিল উর্বর ও শস্য-শ্যামল। এখানে সর্বপ্রকার শস্য ও ফলের প্রাচুর্যতা ছিল।
লূত (আঃ) রাসূলদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন :
وَاِنَّ لُوْطًا لَّمِنَ الْمُرْسَلِيْنَ
নিশ্চয় লূত ছিলেন রাসূলদের মধ্যে অন্যতম। (সূরা সাফ্ফাত– ১৩৩)
আল্লাহ তাকে জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দান করেছিলেন :
وَلُوْطًا اٰتَيْنَاهُ حُكْمًا وَّعِلْمًا
আর আমি লূতকে দান করেছিলাম প্রজ্ঞা ও জ্ঞান। (সূরা আম্বিয়া– ৭৪)
আল্লাহ লূত (আঃ) এর প্রতি দয়া করেছেন :
وَاَدْخَلْنَاهُ فِيْ رَحْمَتِنَاؕ اِنَّهٗ مِنَ الصَّالِحِيْنَ
আমি তাকে আমার অনুগ্রহভাজন করেছিলাম, নিশ্চয় সে ছিল সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা আম্বিয়া– ৭৫)
তিনি ইবরাহীমের প্রতি ঈমান এনেছিলেন :
فَاٰمَنَ لَهٗ لُوْطٌ
লূত তার (ইবরাহীমের) প্রতি ঈমান আনয়ন করল। (সূরা আনকাবূত– ২৬)
وَاِنَّ لُوْطًا لَّمِنَ الْمُرْسَلِيْنَ
নিশ্চয় লূত ছিলেন রাসূলদের মধ্যে অন্যতম। (সূরা সাফ্ফাত– ১৩৩)
আল্লাহ তাকে জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দান করেছিলেন :
وَلُوْطًا اٰتَيْنَاهُ حُكْمًا وَّعِلْمًا
আর আমি লূতকে দান করেছিলাম প্রজ্ঞা ও জ্ঞান। (সূরা আম্বিয়া– ৭৪)
আল্লাহ লূত (আঃ) এর প্রতি দয়া করেছেন :
وَاَدْخَلْنَاهُ فِيْ رَحْمَتِنَاؕ اِنَّهٗ مِنَ الصَّالِحِيْنَ
আমি তাকে আমার অনুগ্রহভাজন করেছিলাম, নিশ্চয় সে ছিল সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা আম্বিয়া– ৭৫)
তিনি ইবরাহীমের প্রতি ঈমান এনেছিলেন :
فَاٰمَنَ لَهٗ لُوْطٌ
লূত তার (ইবরাহীমের) প্রতি ঈমান আনয়ন করল। (সূরা আনকাবূত– ২৬)
তারা পাপকাজে লিপ্ত থাকত :
وَمِنْ قَبْلُ كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ السَّيِّئَاتِ
পূর্ব হতে তারা কুকর্মে লিপ্ত ছিল। (সূরা হুদু ৭৮)
وَلُوْطًا اٰتَيْنَاهُ حُكْمًا وَّعِلْمًا وَّنَجَّيْنَاهُ مِنَ الْقَرْيَةِ الَّتِيْ كَانَتْ تَعْمَلُ الْخَبَآئِثَ
আর আমি লূতকে দিয়েছিলাম প্রজ্ঞা ও জ্ঞান এবং তাকে উদ্ধার করেছিলাম এমন এক জনপদ হতে, যার অধিবাসীরা অশ্লীল কর্মে লিপ্ত ছিল। (সূরা আম্বিয়া– ৭৪)
তারা ছিল সীমালঙ্ঘনকারী :
بَلْ اَنْتُمْ قَوْمٌ مُّسْرِفُوْنَ
প্রকৃতপক্ষে তোমরা হচ্ছ সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়। (সূরা আ‘রাফু ৮১)
তারা ছিল ফাসিক সম্প্রদায় :
اِنَّهُمْ كَانُوْا قَوْمَ سَوْءٍ فَاسِقِيْنَ
তারা ছিল মন্দ ও ফাসিক সম্প্রদায়। (সূরা আম্বিয়া– ৭৪)
তারা রাহাজানি করত :
اَئِنَّكُمْ لَتَأْتُوْنَ الرِّجَالَ وَتَقْطَعُوْنَ السَّبِيْلَ
তোমরাই তো পুরুষের সাথে মিলিত হচ্ছ এবং তোমরাই রাহাজানি করে থাক। (সূরা আনকাবূত– ২৯)
তারা পুরুষে–পুরুষে যিনা করত :
اِنَّكُمْ لَتَأْتُوْنَ الرِّجَالَ شَهْوَةً مِّنْ دُوْنِ النِّسَآءِ
তোমরা তো স্ত্রীলোকদের বাদ দিয়ে পুরুষদের সাথে নিজেদের যৌন ইচ্ছা নিবারণ করে নিচ্ছ। (সূরা আ‘রাফু ৮১)
তারা জনসমক্ষে এ কুকর্ম করত :
وَتَأْتُوْنَ فِيْ نَادِيْكُمُ الْمُنْكَرَ
তোমরাই তো নিজেদের মজলিসে প্রকাশ্যে ঘৃণ্য কর্ম করে থাক। (সূরা আনকাবূত– ২৯)
তাদের আগে কেউ এ কাজ করত না :
وَلُوْطًا اِذْ قَالَ لِقَوْمِهٖۤ اَتَأْتُوْنَ الْفَاحِشَةَ مَا سَبَقَكُمْ بِهَا مِنْ اَحَدٍ مِّنَ الْعَالَمِيْنَ
স্মরণ করো, যখন লূত তাঁর সম্প্রদায়কে বলেছিলেন- তোমরা এমন অশ্লীল ও কুকর্মে লিপ্ত রয়েছ, যা তোমাদের পূর্বে বিশ্বে আর কেউই করেনি। (সূরা আ‘রাফু ৮০)
وَمِنْ قَبْلُ كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ السَّيِّئَاتِ
পূর্ব হতে তারা কুকর্মে লিপ্ত ছিল। (সূরা হুদু ৭৮)
وَلُوْطًا اٰتَيْنَاهُ حُكْمًا وَّعِلْمًا وَّنَجَّيْنَاهُ مِنَ الْقَرْيَةِ الَّتِيْ كَانَتْ تَعْمَلُ الْخَبَآئِثَ
আর আমি লূতকে দিয়েছিলাম প্রজ্ঞা ও জ্ঞান এবং তাকে উদ্ধার করেছিলাম এমন এক জনপদ হতে, যার অধিবাসীরা অশ্লীল কর্মে লিপ্ত ছিল। (সূরা আম্বিয়া– ৭৪)
তারা ছিল সীমালঙ্ঘনকারী :
بَلْ اَنْتُمْ قَوْمٌ مُّسْرِفُوْنَ
প্রকৃতপক্ষে তোমরা হচ্ছ সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়। (সূরা আ‘রাফু ৮১)
তারা ছিল ফাসিক সম্প্রদায় :
اِنَّهُمْ كَانُوْا قَوْمَ سَوْءٍ فَاسِقِيْنَ
তারা ছিল মন্দ ও ফাসিক সম্প্রদায়। (সূরা আম্বিয়া– ৭৪)
তারা রাহাজানি করত :
اَئِنَّكُمْ لَتَأْتُوْنَ الرِّجَالَ وَتَقْطَعُوْنَ السَّبِيْلَ
তোমরাই তো পুরুষের সাথে মিলিত হচ্ছ এবং তোমরাই রাহাজানি করে থাক। (সূরা আনকাবূত– ২৯)
তারা পুরুষে–পুরুষে যিনা করত :
اِنَّكُمْ لَتَأْتُوْنَ الرِّجَالَ شَهْوَةً مِّنْ دُوْنِ النِّسَآءِ
তোমরা তো স্ত্রীলোকদের বাদ দিয়ে পুরুষদের সাথে নিজেদের যৌন ইচ্ছা নিবারণ করে নিচ্ছ। (সূরা আ‘রাফু ৮১)
তারা জনসমক্ষে এ কুকর্ম করত :
وَتَأْتُوْنَ فِيْ نَادِيْكُمُ الْمُنْكَرَ
তোমরাই তো নিজেদের মজলিসে প্রকাশ্যে ঘৃণ্য কর্ম করে থাক। (সূরা আনকাবূত– ২৯)
তাদের আগে কেউ এ কাজ করত না :
وَلُوْطًا اِذْ قَالَ لِقَوْمِهٖۤ اَتَأْتُوْنَ الْفَاحِشَةَ مَا سَبَقَكُمْ بِهَا مِنْ اَحَدٍ مِّنَ الْعَالَمِيْنَ
স্মরণ করো, যখন লূত তাঁর সম্প্রদায়কে বলেছিলেন- তোমরা এমন অশ্লীল ও কুকর্মে লিপ্ত রয়েছ, যা তোমাদের পূর্বে বিশ্বে আর কেউই করেনি। (সূরা আ‘রাফু ৮০)
নবী জাতিকে বুঝালেন :
وَلُوْطًا اِذْ قَالَ لِقَوْمِهٖۤ اَتَأْتُوْنَ الْفَاحِشَةَ وَاَنْتُمْ تُبْصِرُوْنَ
স্মরণ করো, যখন লূত তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, তোমরা জেনে–শুনে কেন অশ্লীল কাজে লিপ্ত হচ্ছ?
(সূরা নামল– ৫৪)
তাদের বোকামী ধরিয়ে দিলেন :
اَئِنَّكُمْ لَتَأْتُوْنَ الرِّجَالَ شَهْوَةً مِّنْ دُوْنِ النِّسَآءِؕ بَلْ اَنْتُمْ قَوْمٌ تَجْهَلُوْنَ
তোমরা কি কামতৃপ্তির জন্য নারীকে ছেড়ে পুরুষদের সাথে মিলিত হচ্ছ? বরং তোমরা তো এক অজ্ঞ সম্প্রদায়। (সূরা নামল– ৫৫)
আল্লাহকে ভয় করার আহবান জানালেন :
اِذْ قَالَ لَهُمْ اَخُوْهُمْ لُوْطٌ اَ لَا تَتَّقُوْنَ ‐ اِنِّيْ لَكُمْ رَسُوْلٌ اَمِيْنٌ
যখন তাদের ভাই লূত তাদেরকে বলল, তোমরা কি (আল্লাহকে) ভয় করবে না? আমি তো তোমাদের জন্য এক বিশ্বস্ত রাসূল। (সূরা শু‘আরা– ১৬১, ১৬২)
فَاتَّقُوا اللهَ وَاَطِيْعُوْنِ
সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো। (সূরা শু‘আরা– ১৬৩)
নবী তার নিঃস্বার্থতার কথা জানালেন :
وَمَاۤ اَسْاَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ اَجْرٍۚ اِنْ اَجْرِيَ اِلَّا عَلٰى رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
আমি এটার জন্য তোমাদের নিকট কোন প্রতিদান চাই না, আমার পুরস্কার তো জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকটই রয়েছে। (সূরা শু‘আরা– ১৬৪)
তিনি তাদের কুকর্মকে ঘৃণা করলেন :
قَالَ اِنِّيْ لِعَمَلِكُمْ مِّنَ الْقَالِيْنَ
সে (লূত) বলল, আমি তোমাদের এ কর্মকে ঘৃণা করি। (সূরা শু‘আরা– ১৬৮)
তিনি জাতিকে বিবাহ করার প্রস্তাব দিলেন :
اَتَأْتُوْنَ الذُّكْرَانَ مِنَ الْعَالَمِيْنَ ‐ وَتَذَرُوْنَ مَا خَلَقَ لَكُمْ رَبُّكُمْ مِّنْ اَزْوَاجِكُمْ بَلْ اَنْتُمْ قَوْمٌ عَادُوْنَ
বিশ্বজগতের মধ্যে তো তোমরাই পুরুষের সাথে মিলিত হও এবং তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্য যেসব স্ত্রীদেরকে সৃষ্টি করেছেন তাদেরকে বর্জন করে থাক। বরং তোমরা তো এক সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়। (সূরা শু‘আরা- ১৬৫, ১৬৬)
قَالَ هٰۤؤُلَآءِ بَنَاتِۤيْ اِنْ كُنْتُمْ فَاعِلِيْنَ
সে (লূত) বলল, একান্তই যদি তোমরা কিছু করতে চাও তবে আমার এ কন্যাগণ রয়েছে (তাদেরকে বিবাহ করে নাও)। (সূরা হিজর– ৭১)
তারা নবীর কথা মানল না :
قَالُوْا لَقَدْ عَلِمْتَ مَا لَنَا فِيْ بَنَاتِكَ مِنْ حَقٍّۚ وَاِنَّكَ لَتَعْلَمُ مَا نُرِيْدُ
তারা বলল, তুমি তো জান, তোমার কন্যাদেরকে আমাদের কোন প্রয়োজন নেই, আমরা কী চাই তা তো তুমি জানই। (সূরা হুদু ৭৯)
নবী বললেন, তোমরা আমাকে অপমান করো না :
وَجَآءَهٗ قَوْمُهٗ يُهْرَعُوْنَ اِلَيْهِؕ وَمِنْ قَبْلُ كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ السَّيِّئَاتِؕ قَالَ يَا قَوْمِ هٰۤؤُلَآءِ بَنَاتِيْ هُنَّ اَطْهَرُ لَكُمْ فَاتَّقُوا اللهَ وَلَا تُخْزُوْنِ فِيْ ضَيْفِيْؕ اَلَيْسَ مِنْكُمْ رَجُلٌ رَّشِيْدٌ
তার সম্প্রদায় তার নিকট দ্রুত ছুটে আসল। আর ইতোপূর্বেও তারা কুকর্মে লিপ্ত ছিল। অতঃপর সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! এরা আমার কন্যা এবং তোমাদের জন্য এরা পবিত্র। সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার মেহমানদের ব্যাপারে আমাকে হেয় করো না। তোমাদের মধ্যে কি কোন ভালো মানুষ নেই? (সূরা হুদু ৭৮)
قَالَ اِنَّ هٰۤؤُلَآءِ ضَيْفِيْ فَلَا تَفْضَحُوْنِ ‐ وَاتَّقُوا اللهَ وَلَا تُخْزُوْنِ
সে বলল, এরা আমার অতিথি। সুতরাং তোমরা আমাকে লাঞ্ছিত করো না। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমাকে হেয় করো না। (সূরা হিজর- ৬৮, ৬৯)
وَلُوْطًا اِذْ قَالَ لِقَوْمِهٖۤ اَتَأْتُوْنَ الْفَاحِشَةَ وَاَنْتُمْ تُبْصِرُوْنَ
স্মরণ করো, যখন লূত তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, তোমরা জেনে–শুনে কেন অশ্লীল কাজে লিপ্ত হচ্ছ?
(সূরা নামল– ৫৪)
তাদের বোকামী ধরিয়ে দিলেন :
اَئِنَّكُمْ لَتَأْتُوْنَ الرِّجَالَ شَهْوَةً مِّنْ دُوْنِ النِّسَآءِؕ بَلْ اَنْتُمْ قَوْمٌ تَجْهَلُوْنَ
তোমরা কি কামতৃপ্তির জন্য নারীকে ছেড়ে পুরুষদের সাথে মিলিত হচ্ছ? বরং তোমরা তো এক অজ্ঞ সম্প্রদায়। (সূরা নামল– ৫৫)
আল্লাহকে ভয় করার আহবান জানালেন :
اِذْ قَالَ لَهُمْ اَخُوْهُمْ لُوْطٌ اَ لَا تَتَّقُوْنَ ‐ اِنِّيْ لَكُمْ رَسُوْلٌ اَمِيْنٌ
যখন তাদের ভাই লূত তাদেরকে বলল, তোমরা কি (আল্লাহকে) ভয় করবে না? আমি তো তোমাদের জন্য এক বিশ্বস্ত রাসূল। (সূরা শু‘আরা– ১৬১, ১৬২)
فَاتَّقُوا اللهَ وَاَطِيْعُوْنِ
সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো। (সূরা শু‘আরা– ১৬৩)
নবী তার নিঃস্বার্থতার কথা জানালেন :
وَمَاۤ اَسْاَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ اَجْرٍۚ اِنْ اَجْرِيَ اِلَّا عَلٰى رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
আমি এটার জন্য তোমাদের নিকট কোন প্রতিদান চাই না, আমার পুরস্কার তো জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকটই রয়েছে। (সূরা শু‘আরা– ১৬৪)
তিনি তাদের কুকর্মকে ঘৃণা করলেন :
قَالَ اِنِّيْ لِعَمَلِكُمْ مِّنَ الْقَالِيْنَ
সে (লূত) বলল, আমি তোমাদের এ কর্মকে ঘৃণা করি। (সূরা শু‘আরা– ১৬৮)
তিনি জাতিকে বিবাহ করার প্রস্তাব দিলেন :
اَتَأْتُوْنَ الذُّكْرَانَ مِنَ الْعَالَمِيْنَ ‐ وَتَذَرُوْنَ مَا خَلَقَ لَكُمْ رَبُّكُمْ مِّنْ اَزْوَاجِكُمْ بَلْ اَنْتُمْ قَوْمٌ عَادُوْنَ
বিশ্বজগতের মধ্যে তো তোমরাই পুরুষের সাথে মিলিত হও এবং তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্য যেসব স্ত্রীদেরকে সৃষ্টি করেছেন তাদেরকে বর্জন করে থাক। বরং তোমরা তো এক সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়। (সূরা শু‘আরা- ১৬৫, ১৬৬)
قَالَ هٰۤؤُلَآءِ بَنَاتِۤيْ اِنْ كُنْتُمْ فَاعِلِيْنَ
সে (লূত) বলল, একান্তই যদি তোমরা কিছু করতে চাও তবে আমার এ কন্যাগণ রয়েছে (তাদেরকে বিবাহ করে নাও)। (সূরা হিজর– ৭১)
তারা নবীর কথা মানল না :
قَالُوْا لَقَدْ عَلِمْتَ مَا لَنَا فِيْ بَنَاتِكَ مِنْ حَقٍّۚ وَاِنَّكَ لَتَعْلَمُ مَا نُرِيْدُ
তারা বলল, তুমি তো জান, তোমার কন্যাদেরকে আমাদের কোন প্রয়োজন নেই, আমরা কী চাই তা তো তুমি জানই। (সূরা হুদু ৭৯)
নবী বললেন, তোমরা আমাকে অপমান করো না :
وَجَآءَهٗ قَوْمُهٗ يُهْرَعُوْنَ اِلَيْهِؕ وَمِنْ قَبْلُ كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ السَّيِّئَاتِؕ قَالَ يَا قَوْمِ هٰۤؤُلَآءِ بَنَاتِيْ هُنَّ اَطْهَرُ لَكُمْ فَاتَّقُوا اللهَ وَلَا تُخْزُوْنِ فِيْ ضَيْفِيْؕ اَلَيْسَ مِنْكُمْ رَجُلٌ رَّشِيْدٌ
তার সম্প্রদায় তার নিকট দ্রুত ছুটে আসল। আর ইতোপূর্বেও তারা কুকর্মে লিপ্ত ছিল। অতঃপর সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! এরা আমার কন্যা এবং তোমাদের জন্য এরা পবিত্র। সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার মেহমানদের ব্যাপারে আমাকে হেয় করো না। তোমাদের মধ্যে কি কোন ভালো মানুষ নেই? (সূরা হুদু ৭৮)
قَالَ اِنَّ هٰۤؤُلَآءِ ضَيْفِيْ فَلَا تَفْضَحُوْنِ ‐ وَاتَّقُوا اللهَ وَلَا تُخْزُوْنِ
সে বলল, এরা আমার অতিথি। সুতরাং তোমরা আমাকে লাঞ্ছিত করো না। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমাকে হেয় করো না। (সূরা হিজর- ৬৮, ৬৯)
তারা নবীর পরিবারকে নির্বাসিত করতে চাইল :
وَمَا كَانَ جَوَابَ قَوْمِهٖۤ اِلَّاۤ اَنْ قَالُوْاۤ اَخْرِجُوْهُمْ مِّنْ قَرْيَتِكُمْۚ اِنَّهُمْ اُنَاسٌ يَّتَطَهَّرُوْنَ
কিন্তু তার জাতির লোকদের এটা ছাড়া আর কোন উত্তরই ছিল না যে, এদেরকে তোমাদের জনপদ থেকে বের করে দাও। এরা নিজেদেরকে বড় পবিত্র লোক বলে প্রকাশ করছে। (সূরা আ‘রাফু ৮২)
নবীকে তাড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিল :
قَالُوْا لَئِنْ لَّمْ تَنْتَهِ يَا لُوْطُ لَتَكُوْنَنَّ مِنَ الْمُخْرَجِيْنَ
তারা বলল, হে লূত! তুমি যদি নিবৃত্ত না হও, তবে অবশ্যই তুমি নির্বাসিত হবে। (সূরা শু‘আরা– ১৬৭)
তাদের অধিকাংশই ঈমান আনেনি :
وَمَا كَانَ اَكْثَرُهُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
কিন্তু তাদের অধিকাংশই মুমিন নয়। (সূরা শু‘আরা– ১৭৪)
লূত (আঃ) এর স্ত্রীও ঈমান আনেনি :
ضَرَبَ اللهُ مَثَلًا لِّلَّذِيْنَ كَفَرُوا امْرَاَتَ نُوْحٍ وَّامْرَاَتَ لُوْطٍؕ كَانَتَا تَحْتَ عَبْدَيْنِ مِنْ عِبَادِنَا صَالِحَيْنِ فَخَانَتَاهُمَا فَلَمْ يُغْنِيَا عَنْهُمَا مِنَ اللهِ شَيْئًا وَّقِيْلَ ادْخُلَا النَّارَ مَعَ الدَّاخِلِيْنَ
আল্লাহ কাফিরদের জন্য নূহ ও লূতের স্ত্রীদের দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন। তারা ছিল আমার বান্দাদের মধ্যে দু’জন সৎকর্মপরায়ণ বান্দার অধীন। কিন্তু তারা তাদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, ফলে নূহ ও লূতও তাদেরকে আল্লাহর শাস্তি হতে রক্ষা করতে পারলেন না। অতঃপর তাদেরকে বলা হলো, জাহান্নামে প্রবেশকারীদের সাথে তোমরাও তাতে প্রবেশ করো। (সূরা তাহরীম– ১০)
মাত্র একটি পরিবার মুসলিম ছিল :
فَمَا وَجَدْنَا فِيْهَا غَيْرَ بَيْتٍ مِّنَ الْمُسْلِمِيْنَ
আর আমি সেখানে একটি পরিবার (লূত আঃ এর পরিবার) ব্যতীত অন্য কাউকে মুসলিম হিসেবে পাইনি।
(সূরা যারিয়াত– ৩৬)
তারা নবীর সতর্কবাণী অস্বীকার করল :
كَذَّبَتْ قَوْمُ لُوْطٍ ۢبِالنُّذُرِ
লূত সম্প্রদায় সতর্ককারীদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল। (সূরা ক্বামার– ৩৩)
كَذَّبَتْ قَوْمُ لُوْطِنِ الْمُرْسَلِيْنَ
লূতের সম্প্রদায় রাসূলগণকে অস্বীকার করেছিল। (সূরা শু‘আরা– ১৬০)
তারা শাস্তির ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করল :
وَلَقَدْ اَنْذَرَهُمْ بَطْشَتَنَا فَتَمَارَوْا بِالنُّذُرِ
তিনি (লূত) আমার শক্ত পাকড়াও হতে তাদেরকে সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু তারা সতর্কবাণী সম্বন্ধে বিতর্ক শুরু করে দিল। (সূরা ক্বামার– ৩৬)
তারা আযাব চেয়ে বসল :
فَمَا كَانَ جَوَابَ قَوْمِهٖۤ اِلَّاۤ اَنْ قَالُوا ائْتِنَا بِعَذَابِ اللهِ اِنْ كُنْتَ مِنَ الصَّادِقِيْنَ
উত্তরে তার সম্প্রদায় শুধু এ বলল, যদি তুমি সত্যবাদী হও তবে আমাদের উপর আল্লাহর শাস্তি আনয়ন করো। (সূরা আনকাবূত– ২৯)
وَمَا كَانَ جَوَابَ قَوْمِهٖۤ اِلَّاۤ اَنْ قَالُوْاۤ اَخْرِجُوْهُمْ مِّنْ قَرْيَتِكُمْۚ اِنَّهُمْ اُنَاسٌ يَّتَطَهَّرُوْنَ
কিন্তু তার জাতির লোকদের এটা ছাড়া আর কোন উত্তরই ছিল না যে, এদেরকে তোমাদের জনপদ থেকে বের করে দাও। এরা নিজেদেরকে বড় পবিত্র লোক বলে প্রকাশ করছে। (সূরা আ‘রাফু ৮২)
নবীকে তাড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিল :
قَالُوْا لَئِنْ لَّمْ تَنْتَهِ يَا لُوْطُ لَتَكُوْنَنَّ مِنَ الْمُخْرَجِيْنَ
তারা বলল, হে লূত! তুমি যদি নিবৃত্ত না হও, তবে অবশ্যই তুমি নির্বাসিত হবে। (সূরা শু‘আরা– ১৬৭)
তাদের অধিকাংশই ঈমান আনেনি :
وَمَا كَانَ اَكْثَرُهُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
কিন্তু তাদের অধিকাংশই মুমিন নয়। (সূরা শু‘আরা– ১৭৪)
লূত (আঃ) এর স্ত্রীও ঈমান আনেনি :
ضَرَبَ اللهُ مَثَلًا لِّلَّذِيْنَ كَفَرُوا امْرَاَتَ نُوْحٍ وَّامْرَاَتَ لُوْطٍؕ كَانَتَا تَحْتَ عَبْدَيْنِ مِنْ عِبَادِنَا صَالِحَيْنِ فَخَانَتَاهُمَا فَلَمْ يُغْنِيَا عَنْهُمَا مِنَ اللهِ شَيْئًا وَّقِيْلَ ادْخُلَا النَّارَ مَعَ الدَّاخِلِيْنَ
আল্লাহ কাফিরদের জন্য নূহ ও লূতের স্ত্রীদের দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন। তারা ছিল আমার বান্দাদের মধ্যে দু’জন সৎকর্মপরায়ণ বান্দার অধীন। কিন্তু তারা তাদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, ফলে নূহ ও লূতও তাদেরকে আল্লাহর শাস্তি হতে রক্ষা করতে পারলেন না। অতঃপর তাদেরকে বলা হলো, জাহান্নামে প্রবেশকারীদের সাথে তোমরাও তাতে প্রবেশ করো। (সূরা তাহরীম– ১০)
মাত্র একটি পরিবার মুসলিম ছিল :
فَمَا وَجَدْنَا فِيْهَا غَيْرَ بَيْتٍ مِّنَ الْمُسْلِمِيْنَ
আর আমি সেখানে একটি পরিবার (লূত আঃ এর পরিবার) ব্যতীত অন্য কাউকে মুসলিম হিসেবে পাইনি।
(সূরা যারিয়াত– ৩৬)
তারা নবীর সতর্কবাণী অস্বীকার করল :
كَذَّبَتْ قَوْمُ لُوْطٍ ۢبِالنُّذُرِ
লূত সম্প্রদায় সতর্ককারীদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল। (সূরা ক্বামার– ৩৩)
كَذَّبَتْ قَوْمُ لُوْطِنِ الْمُرْسَلِيْنَ
লূতের সম্প্রদায় রাসূলগণকে অস্বীকার করেছিল। (সূরা শু‘আরা– ১৬০)
তারা শাস্তির ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করল :
وَلَقَدْ اَنْذَرَهُمْ بَطْشَتَنَا فَتَمَارَوْا بِالنُّذُرِ
তিনি (লূত) আমার শক্ত পাকড়াও হতে তাদেরকে সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু তারা সতর্কবাণী সম্বন্ধে বিতর্ক শুরু করে দিল। (সূরা ক্বামার– ৩৬)
তারা আযাব চেয়ে বসল :
فَمَا كَانَ جَوَابَ قَوْمِهٖۤ اِلَّاۤ اَنْ قَالُوا ائْتِنَا بِعَذَابِ اللهِ اِنْ كُنْتَ مِنَ الصَّادِقِيْنَ
উত্তরে তার সম্প্রদায় শুধু এ বলল, যদি তুমি সত্যবাদী হও তবে আমাদের উপর আল্লাহর শাস্তি আনয়ন করো। (সূরা আনকাবূত– ২৯)
নবী আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ করলেন :
قَالَ رَبِّ انْصُرْنِيْ عَلَى الْقَوْمِ الْمُفْسِدِيْنَ
সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! বিপর্যয় সৃষ্টিকারী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাকে সাহায্য করুন। (সূরা আনকাবূত– ৩০)
رَبِّ نَجِّنِيْ وَاَهْلِيْ مِمَّا يَعْمَلُوْنَ
হে আমার প্রতিপালক! আমাকে এবং আমার পরিবার–পরিজনকে তারা যা করে তা হতে রক্ষা করুন। (সূরা শু‘আরা– ১৬৯)
নবী আশ্রয় খুঁজতে লাগলেন :
قَالَ لَوْ اَنَّ لِيْ بِكُمْ قُوَّةً اَوْ اٰوِيْۤ اِلٰى رُكْنٍ شَدِيْدٍ
সে বলল, যদি তোমাদের উপর আমার কোন শক্তি থাকত অথবা যদি আমি কোন সুদৃঢ় স্তম্ভের মধ্যে আশ্রয় নিতে পারতাম! (সূরা হুদু ৮০)
ফেরেশতারা তাকে সান্ত্বনা দিলেন :
قَالُوْا يَا لُوْطُ اِنَّا رُسُلُ رَبِّكَ لَنْ يَّصِلُوْاۤ اِلَيْكَ فَاَسْرِ بِاَهْلِكَ بِقِطْعٍ مِّنَ اللَّيْلِ وَلَا يَلْتَفِتْ مِنْكُمْ اَحَدٌ اِلَّا امْرَاَتَكَؕ اِنَّهٗ مُصِيْبُهَا مَاۤ اَصَابَهُمْؕ اِنَّ مَوْعِدَهُمُ الصُّبْحُؕ اَلَيْسَ الصُّبْحُ بِقَرِيْبٍ
তারা বলল, হে লূত! নিশ্চয় আমরা তোমার প্রতিপালকের প্রেরিত ফেরেশতা। তারা কখনই তোমার নিকট পৌঁছতে পারবে না। সুতরাং তুমি রাত্রির কোন এক সময়ে তোমার স্ত্রী ব্যতীত তোমার পরিবারবর্গসহ বের হয়ে পড় এবং তোমাদের কেউ পেছন ফিরে তাকাবে না। নিশ্চয় তাদের যা ঘটবে, তারও (তার স্ত্রীর) তাই ঘটবে। নিশ্চয় প্রভাত তাদের জন্য নির্ধারিত সময়। প্রভাত কি নিকটবর্তী নয়? (সূরা হুদু ৮১)
ফেরেশতাদের আগমনে লূত (আঃ) চিন্তিত হয়ে পড়লেন :
وَلَمَّاۤ اَنْ جَآءَتْ رُسُلُنَا لُوْطًا سِيْٓءَ بِهِمْ وَضَاقَ بِهِمْ ذَرْعًا وَّقَالُوْا لَا تَخَفْ وَلَا تَحْزَنْ اِنَّا مُنَجُّوْكَ وَاَهْلَكَ اِلَّا امْرَاَتَكَ كَانَتْ مِنَ الْغَابِرِيْنَ
যখন আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ লূতের নিকট আসল, তখন তাদের জন্য সে চিন্তিত হয়ে পড়ল এবং নিজেকে তাদের থেকে রক্ষায় অক্ষম মনে করল। তারা বলল, ভয় করো না এবং দুঃখও করো না। আমরা তোমাকে ও তোমার পরিজনকে রক্ষা করব, কিন্তু তোমার স্ত্রী ব্যতীত। নিশ্চয় সে পশ্চাতে অবস্থানকারীদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা আনকাবূত– ৩৩)
وَلَمَّا جَآءَتْ رُسُلُنَا لُوْطًا سِيْٓءَ بِهِمْ وَضَاقَ بِهِمْ ذَرْعًا وَّقَالَ هٰذَا يَوْمٌ عَصِيْبٌ
যখন আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ লূতের নিকট আসল তখন তাদের আগমনে সে বিষণ্ণ হয়ে গেল এবং নিজেকে তাদের থেকে রক্ষায় অক্ষম মনে করল। ফলে সে বলে ফেলল, এটা একটি সঙ্কটপূর্ণ দিন! (সূরা হুদু ৭৭)
ফেরেশতারা আযাবের সংবাদ নিয়ে আগমন করেছিলেন :
قَالُوْا بَلْ جِئْنَاكَ بِمَا كَانُوْا فِيْهِ يَمْتَرُوْنَ ‐ وَاَتَيْنَاكَ بِالْحَقِّ وَاِنَّا لَصَادِقُوْنَ
তারা বলল, তারা যে বিষয়ে সন্দেহের মধ্যে ছিল আমরা তোমার নিকট তাই নিয়ে এসেছি। আমরা তোমার নিকট সত্য সংবাদ নিয়ে এসেছি। নিশ্চয় আমরা সত্যবাদী। (সূরা হিজর– ৬৩, ৬৪)
اِنَّا مُنْزِلُوْنَ عَلٰۤى اَهْلِ هٰذِهِ الْقَرْيَةِ رِجْزًا مِّنَ السَّمَآءِ بِمَا كَانُوْا يَفْسُقُوْنَ
আমরা এ জনপদবাসীর উপর আকাশ হতে শাস্তি নাযিল করব, কারণ তারা পাপাচারে লিপ্ত ছিল।
(সূরা আনকাবূত– ৩৪)
পরের দিন সকালেই আযাব তাদেরকে গ্রাস করে ফেলল :
وَقَضَيْنَاۤ اِلَيْهِ ذٰلِكَ الْاَمْرَ اَنَّ دَابِرَ هٰۤؤُلَآءِ مَقْطُوْعٌ مُّصْبِحِيْنَ
আমি তাকে এ বিষয়ে ফায়সালা জানিয়ে দিলাম যে, প্রত্যুষে তাদেরকে স্বমূলে বিনাশ করে দেয়া হবে। (সূরা হিজর– ৬৬)
فَلَمَّا جَآءَ اَمْرُنَا جَعَلْنَا عَالِيَهَا سَافِلَهَا وَاَمْطَرْنَا عَلَيْهَا حِجَارَةً مِّنْ سِجِّيْلٍ مَّنْضُوْدٍ
অতঃপর যখন আমার আদেশ এসে গেল, তখন আমি জনপদকে উল্টিয়ে দিলাম এবং তাদের উপর ক্রমাগত প্রস্তর কঙ্কর বর্ষণ করলাম। (সূরা হুদু ৮২)
অপরাধীদের শাস্তি কাছেই থাকে :
مُسَوَّمَةً عِنْدَ رَبِّكَؕ وَمَا هِيَ مِنَ الظَّالِمِيْنَ بِبَعِيْدٍ
(আল্লাহর আযাব) যা তোমার প্রতিপালকের নিকট চিহ্নিত এবং যা যালিমদের থেকে দূরে নয়। (সূরা হুদু ৮৩)
قَالَ رَبِّ انْصُرْنِيْ عَلَى الْقَوْمِ الْمُفْسِدِيْنَ
সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! বিপর্যয় সৃষ্টিকারী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাকে সাহায্য করুন। (সূরা আনকাবূত– ৩০)
رَبِّ نَجِّنِيْ وَاَهْلِيْ مِمَّا يَعْمَلُوْنَ
হে আমার প্রতিপালক! আমাকে এবং আমার পরিবার–পরিজনকে তারা যা করে তা হতে রক্ষা করুন। (সূরা শু‘আরা– ১৬৯)
নবী আশ্রয় খুঁজতে লাগলেন :
قَالَ لَوْ اَنَّ لِيْ بِكُمْ قُوَّةً اَوْ اٰوِيْۤ اِلٰى رُكْنٍ شَدِيْدٍ
সে বলল, যদি তোমাদের উপর আমার কোন শক্তি থাকত অথবা যদি আমি কোন সুদৃঢ় স্তম্ভের মধ্যে আশ্রয় নিতে পারতাম! (সূরা হুদু ৮০)
ফেরেশতারা তাকে সান্ত্বনা দিলেন :
قَالُوْا يَا لُوْطُ اِنَّا رُسُلُ رَبِّكَ لَنْ يَّصِلُوْاۤ اِلَيْكَ فَاَسْرِ بِاَهْلِكَ بِقِطْعٍ مِّنَ اللَّيْلِ وَلَا يَلْتَفِتْ مِنْكُمْ اَحَدٌ اِلَّا امْرَاَتَكَؕ اِنَّهٗ مُصِيْبُهَا مَاۤ اَصَابَهُمْؕ اِنَّ مَوْعِدَهُمُ الصُّبْحُؕ اَلَيْسَ الصُّبْحُ بِقَرِيْبٍ
তারা বলল, হে লূত! নিশ্চয় আমরা তোমার প্রতিপালকের প্রেরিত ফেরেশতা। তারা কখনই তোমার নিকট পৌঁছতে পারবে না। সুতরাং তুমি রাত্রির কোন এক সময়ে তোমার স্ত্রী ব্যতীত তোমার পরিবারবর্গসহ বের হয়ে পড় এবং তোমাদের কেউ পেছন ফিরে তাকাবে না। নিশ্চয় তাদের যা ঘটবে, তারও (তার স্ত্রীর) তাই ঘটবে। নিশ্চয় প্রভাত তাদের জন্য নির্ধারিত সময়। প্রভাত কি নিকটবর্তী নয়? (সূরা হুদু ৮১)
ফেরেশতাদের আগমনে লূত (আঃ) চিন্তিত হয়ে পড়লেন :
وَلَمَّاۤ اَنْ جَآءَتْ رُسُلُنَا لُوْطًا سِيْٓءَ بِهِمْ وَضَاقَ بِهِمْ ذَرْعًا وَّقَالُوْا لَا تَخَفْ وَلَا تَحْزَنْ اِنَّا مُنَجُّوْكَ وَاَهْلَكَ اِلَّا امْرَاَتَكَ كَانَتْ مِنَ الْغَابِرِيْنَ
যখন আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ লূতের নিকট আসল, তখন তাদের জন্য সে চিন্তিত হয়ে পড়ল এবং নিজেকে তাদের থেকে রক্ষায় অক্ষম মনে করল। তারা বলল, ভয় করো না এবং দুঃখও করো না। আমরা তোমাকে ও তোমার পরিজনকে রক্ষা করব, কিন্তু তোমার স্ত্রী ব্যতীত। নিশ্চয় সে পশ্চাতে অবস্থানকারীদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা আনকাবূত– ৩৩)
وَلَمَّا جَآءَتْ رُسُلُنَا لُوْطًا سِيْٓءَ بِهِمْ وَضَاقَ بِهِمْ ذَرْعًا وَّقَالَ هٰذَا يَوْمٌ عَصِيْبٌ
যখন আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ লূতের নিকট আসল তখন তাদের আগমনে সে বিষণ্ণ হয়ে গেল এবং নিজেকে তাদের থেকে রক্ষায় অক্ষম মনে করল। ফলে সে বলে ফেলল, এটা একটি সঙ্কটপূর্ণ দিন! (সূরা হুদু ৭৭)
ফেরেশতারা আযাবের সংবাদ নিয়ে আগমন করেছিলেন :
قَالُوْا بَلْ جِئْنَاكَ بِمَا كَانُوْا فِيْهِ يَمْتَرُوْنَ ‐ وَاَتَيْنَاكَ بِالْحَقِّ وَاِنَّا لَصَادِقُوْنَ
তারা বলল, তারা যে বিষয়ে সন্দেহের মধ্যে ছিল আমরা তোমার নিকট তাই নিয়ে এসেছি। আমরা তোমার নিকট সত্য সংবাদ নিয়ে এসেছি। নিশ্চয় আমরা সত্যবাদী। (সূরা হিজর– ৬৩, ৬৪)
اِنَّا مُنْزِلُوْنَ عَلٰۤى اَهْلِ هٰذِهِ الْقَرْيَةِ رِجْزًا مِّنَ السَّمَآءِ بِمَا كَانُوْا يَفْسُقُوْنَ
আমরা এ জনপদবাসীর উপর আকাশ হতে শাস্তি নাযিল করব, কারণ তারা পাপাচারে লিপ্ত ছিল।
(সূরা আনকাবূত– ৩৪)
পরের দিন সকালেই আযাব তাদেরকে গ্রাস করে ফেলল :
وَقَضَيْنَاۤ اِلَيْهِ ذٰلِكَ الْاَمْرَ اَنَّ دَابِرَ هٰۤؤُلَآءِ مَقْطُوْعٌ مُّصْبِحِيْنَ
আমি তাকে এ বিষয়ে ফায়সালা জানিয়ে দিলাম যে, প্রত্যুষে তাদেরকে স্বমূলে বিনাশ করে দেয়া হবে। (সূরা হিজর– ৬৬)
فَلَمَّا جَآءَ اَمْرُنَا جَعَلْنَا عَالِيَهَا سَافِلَهَا وَاَمْطَرْنَا عَلَيْهَا حِجَارَةً مِّنْ سِجِّيْلٍ مَّنْضُوْدٍ
অতঃপর যখন আমার আদেশ এসে গেল, তখন আমি জনপদকে উল্টিয়ে দিলাম এবং তাদের উপর ক্রমাগত প্রস্তর কঙ্কর বর্ষণ করলাম। (সূরা হুদু ৮২)
অপরাধীদের শাস্তি কাছেই থাকে :
مُسَوَّمَةً عِنْدَ رَبِّكَؕ وَمَا هِيَ مِنَ الظَّالِمِيْنَ بِبَعِيْدٍ
(আল্লাহর আযাব) যা তোমার প্রতিপালকের নিকট চিহ্নিত এবং যা যালিমদের থেকে দূরে নয়। (সূরা হুদু ৮৩)
আল্লাহ নবীকে হিজরত করতে বললেন :
فَاَسْرِ بِاَهْلِكَ بِقِطْعٍ مِّنَ اللَّيْلِ وَلَا يَلْتَفِتْ مِنْكُمْ اَحَدٌ اِلَّا امْرَاَتَكَؕ اِنَّهٗ مُصِيْبُهَا مَاۤ اَصَابَهُمْ
সুতরাং তুমি রাত্রির কোন এক সময়ে তোমার স্ত্রী ব্যতীত তোমার পরিবারবর্গসহ বের হয়ে পড় এবং তোমাদের কেউ পেছন ফিরে তাকাবে না। নিশ্চয় তাদের যা ঘটবে তারও (তোমার স্ত্রীরও) তাই ঘটবে। (সূরা হুদু ৮১)
فَاَسْرِ بِاَهْلِكَ بِقِطْعٍ مِّنَ اللَّيْلِ وَاتَّبِعْ اَدْبَارَهُمْ وَلَا يَلْتَفِتْ مِنْكُمْ اَحَدٌ وَّامْضُوْا حَيْثُ تُؤْمَرُوْنَ
সুতরাং তুমি রাত্রির কোন এক সময়ে তোমার পরিবারবর্গসহ বের হয়ে যাও এবং তুমি তাদের (ফেরেশতাদের) পেছনে পেছনে চল। অতঃপর তোমাদের কেউ যেন পেছনের দিকে না তাকায় এবং তোমাদেরকে যেখানে যেতে বলা হচ্ছে তোমরা সেখানে চলে যাও। (সূরা হিজর– ৬৫)
আল্লাহ নবীকে বাঁচালেন :
اِذْ نَجَّيْنَاهُ وَاَهْلَهٗۤ اَجْمَعِيْنَ ‐ اِلَّا عَجُوْزًا فِى الْغَابِرِيْنَ ‐ ثُمَّ دَمَّرْنَا الْاٰخَرِيْنَ
স্মরণ করো, যখন আমি রক্ষা করেছিলাম তাকে ও তার পরিবারের সবাইকে। কিমুত এক বৃদ্ধাকে ছাড়া, সে পেছনে অবস্থানকারীদের সাথে থেকে গিয়েছিল। অতঃপর আমি অন্যদেরকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিলাম। (সূরা সাফ্ফাত, ১৩৪-১৩৬)
فَاَنْجَيْنَاهُ وَاَهْلَهٗۤ اِلَّا امْرَاَتَهٗؗ كَانَتْ مِنَ الْغَابِرِيْنَ
পরিশেষে, আমি লূত ও তার পরিবারের লোকদেরকে শাস্তি হতে রক্ষা করেছিলাম, তবে তার স্ত্রী ব্যতীত। সে ছিল ধ্বংসপ্রাপ্ত লোকদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা আ‘রাফু ৮৩)
মুমিনদেরকেও বাঁচানো হলো :
فَاَخْرَجْنَا مَنْ كَانَ فِيْهَا مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ
অতঃপর সেখানে যেসব মুমিন ছিল আমি তাদেরকে বের করে নিলাম। (সূরা যারিয়াত– ৩৫)
এটা ছিল আল্লাহর অনুগ্রহ :
نِعْمَةً مِّنْ عِنْدِنَاؕ كَذٰلِكَ نَجْزِيْ مَنْ شَكَرَ
এটা আমার বিশেষ অনুগ্রহ; যারা কৃতজ্ঞ এভাবেই আমি তাদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি। (সূরা ক্বামার– ৩৫)
فَاَسْرِ بِاَهْلِكَ بِقِطْعٍ مِّنَ اللَّيْلِ وَلَا يَلْتَفِتْ مِنْكُمْ اَحَدٌ اِلَّا امْرَاَتَكَؕ اِنَّهٗ مُصِيْبُهَا مَاۤ اَصَابَهُمْ
সুতরাং তুমি রাত্রির কোন এক সময়ে তোমার স্ত্রী ব্যতীত তোমার পরিবারবর্গসহ বের হয়ে পড় এবং তোমাদের কেউ পেছন ফিরে তাকাবে না। নিশ্চয় তাদের যা ঘটবে তারও (তোমার স্ত্রীরও) তাই ঘটবে। (সূরা হুদু ৮১)
فَاَسْرِ بِاَهْلِكَ بِقِطْعٍ مِّنَ اللَّيْلِ وَاتَّبِعْ اَدْبَارَهُمْ وَلَا يَلْتَفِتْ مِنْكُمْ اَحَدٌ وَّامْضُوْا حَيْثُ تُؤْمَرُوْنَ
সুতরাং তুমি রাত্রির কোন এক সময়ে তোমার পরিবারবর্গসহ বের হয়ে যাও এবং তুমি তাদের (ফেরেশতাদের) পেছনে পেছনে চল। অতঃপর তোমাদের কেউ যেন পেছনের দিকে না তাকায় এবং তোমাদেরকে যেখানে যেতে বলা হচ্ছে তোমরা সেখানে চলে যাও। (সূরা হিজর– ৬৫)
আল্লাহ নবীকে বাঁচালেন :
اِذْ نَجَّيْنَاهُ وَاَهْلَهٗۤ اَجْمَعِيْنَ ‐ اِلَّا عَجُوْزًا فِى الْغَابِرِيْنَ ‐ ثُمَّ دَمَّرْنَا الْاٰخَرِيْنَ
স্মরণ করো, যখন আমি রক্ষা করেছিলাম তাকে ও তার পরিবারের সবাইকে। কিমুত এক বৃদ্ধাকে ছাড়া, সে পেছনে অবস্থানকারীদের সাথে থেকে গিয়েছিল। অতঃপর আমি অন্যদেরকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিলাম। (সূরা সাফ্ফাত, ১৩৪-১৩৬)
فَاَنْجَيْنَاهُ وَاَهْلَهٗۤ اِلَّا امْرَاَتَهٗؗ كَانَتْ مِنَ الْغَابِرِيْنَ
পরিশেষে, আমি লূত ও তার পরিবারের লোকদেরকে শাস্তি হতে রক্ষা করেছিলাম, তবে তার স্ত্রী ব্যতীত। সে ছিল ধ্বংসপ্রাপ্ত লোকদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা আ‘রাফু ৮৩)
মুমিনদেরকেও বাঁচানো হলো :
فَاَخْرَجْنَا مَنْ كَانَ فِيْهَا مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ
অতঃপর সেখানে যেসব মুমিন ছিল আমি তাদেরকে বের করে নিলাম। (সূরা যারিয়াত– ৩৫)
এটা ছিল আল্লাহর অনুগ্রহ :
نِعْمَةً مِّنْ عِنْدِنَاؕ كَذٰلِكَ نَجْزِيْ مَنْ شَكَرَ
এটা আমার বিশেষ অনুগ্রহ; যারা কৃতজ্ঞ এভাবেই আমি তাদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি। (সূরা ক্বামার– ৩৫)
আকাশ থেকে গযব আসল :
وَلَقَدْ صَبَّحَهُمْ بُكْرَةً عَذَابٌ مُّسْتَقِرٌّ
প্রত্যুষে বিরামহীন আযাব তাদেরকে আঘাত করল। (সূরা ক্বামার– ৩৮)
পাথর বর্ষণকারী বাতাস আসল :
اِنَّاۤ اَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ حَاصِبًا
আমি তাদের উপর প্রেরণ করেছিলাম প্রস্তর বর্ষণকারী প্রবল বাতাস। (সূরা ক্বামার– ৩৪)
তাদেরকে একটি বিকট আওয়াজ আঘাত করল :
فَاَخَذَتْهُمُ الصَّيْحَةُ مُشْرِقِيْنَ
অতঃপর সূর্যোদয়ের সময় এক বিকট আওয়াজ তাদেরকে আঘাত করল। (সূরা হিজর– ৭৩)
তাদের উপর পাথর নিক্ষেপ করা হলো :
لِنُرْسِلَ عَلَيْهِمْ حِجَارَةً مِّنْ طِيْنٍ ‐ مُسَوَّمَةً عِنْدَ رَبِّكَ لِلْمُسْرِفِيْنَ
যাতে করে আমি তাদের উপর মাটির শক্ত কঙ্কর নিক্ষেপ করতে পারি। যা তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে সীমালঙ্ঘনকারীদের জন্য নির্ধারিত। (সূরা যারিয়াত– ৩৩, ৩৪)
তা বৃষ্টির মতো পড়তে লাগল :
فَلَمَّا جَآءَ اَمْرُنَا جَعَلْنَا عَالِيَهَا سَافِلَهَا وَاَمْطَرْنَا عَلَيْهَا حِجَارَةً مِّنْ سِجِّيْلٍ مَّنْضُوْدٍ
অতঃপর যখন আমার আদেশ এসে গেল, তখন আমি জনপদকে উল্টে দিলাম এবং তাদের উপর ক্রমাগতভাবে প্রস্তর কঙ্কর বর্ষণ করতে থাকলাম। (সূরা হুদ- ৮২)
وَاَمْطَرْنَا عَلَيْهِمْ مَّطَرًاۚ فَسَآءَ مَطَرُ الْمُنْذَرِيْنَ
তাদের উপর ভয়ংকর বৃষ্টি বর্ষণ করেছিলাম, ভীতি প্রদর্শিতদের জন্য এ বর্ষণ কতই না নিকৃষ্ট। (সূরা নামল– ৫৮)
তাদের বসতি উল্টে দেয়া হলো :
فَجَعَلْنَا عَالِيَهَا سَافِلَهَا
আর আমি জনপদকে উল্টে উপর–নীচ করে দিলাম। (সূরা হিজর– ৭৪)
এটা রাস্তার পাশেই অবস্থিত :
وَاِنَّهَا لَبِسَبِيْلٍ مُّقِيْمٍ
সেটা তো লোক চলাচলের পথের পার্শ্বেই বিদ্যমান। (সূরা হিজর– ৭৬)
তাদের এলাকায় নিদর্শন রয়েছে :
وَلَقَدْ تَّرَكْنَا مِنْهَاۤ اٰيَةً ۢبَيِّنَةً لِّقَوْمٍ يَّعْقِلُوْنَ
আর আমি তাতে বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য স্পষ্ট নিদর্শন রেখে দিয়েছি। (সূরা আনকাবূত– ৩৫)
তাদের পরিণাম লক্ষ্যণীয় :
فَانْظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُجْرِمِيْنَ
অপরাধীদের পরিণাম কী হয়েছিল তা লক্ষ্য করো। (সূরা আ‘রাফু ৮৪)
وَاِنَّكُمْ لَتَمُرُّوْنَ عَلَيْهِمْ مُّصْبِحِيْنَ ‐ وَبِاللَّيْلِؕ اَفَلَا تَعْقِلُوْنَ
তোমরা তো তাদের ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়িঘরের উপর দিয়ে যাতায়াত কর- ভোর বেলায় এবং রাত্রিকালেও; তবুও কি তোমরা অনুধাবন করতে পার না? (সূরা সাফ্ফাত– ১৩৭, ১৩৮)
জ্ঞানীরাই এসব থেকে উপকৃত হয় :
اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّلْمُتَوَسِّمِيْنَ
অবশ্যই এতে পর্যবেক্ষণশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য নিদর্শন রয়েছে। (সূরা হিজর– ৭৫)
اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّلْمُؤْمِنِيْنَ
অবশ্যই এতে মুমিনদের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা হিজর– ৭৭)
وَلَقَدْ صَبَّحَهُمْ بُكْرَةً عَذَابٌ مُّسْتَقِرٌّ
প্রত্যুষে বিরামহীন আযাব তাদেরকে আঘাত করল। (সূরা ক্বামার– ৩৮)
পাথর বর্ষণকারী বাতাস আসল :
اِنَّاۤ اَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ حَاصِبًا
আমি তাদের উপর প্রেরণ করেছিলাম প্রস্তর বর্ষণকারী প্রবল বাতাস। (সূরা ক্বামার– ৩৪)
তাদেরকে একটি বিকট আওয়াজ আঘাত করল :
فَاَخَذَتْهُمُ الصَّيْحَةُ مُشْرِقِيْنَ
অতঃপর সূর্যোদয়ের সময় এক বিকট আওয়াজ তাদেরকে আঘাত করল। (সূরা হিজর– ৭৩)
তাদের উপর পাথর নিক্ষেপ করা হলো :
لِنُرْسِلَ عَلَيْهِمْ حِجَارَةً مِّنْ طِيْنٍ ‐ مُسَوَّمَةً عِنْدَ رَبِّكَ لِلْمُسْرِفِيْنَ
যাতে করে আমি তাদের উপর মাটির শক্ত কঙ্কর নিক্ষেপ করতে পারি। যা তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে সীমালঙ্ঘনকারীদের জন্য নির্ধারিত। (সূরা যারিয়াত– ৩৩, ৩৪)
তা বৃষ্টির মতো পড়তে লাগল :
فَلَمَّا جَآءَ اَمْرُنَا جَعَلْنَا عَالِيَهَا سَافِلَهَا وَاَمْطَرْنَا عَلَيْهَا حِجَارَةً مِّنْ سِجِّيْلٍ مَّنْضُوْدٍ
অতঃপর যখন আমার আদেশ এসে গেল, তখন আমি জনপদকে উল্টে দিলাম এবং তাদের উপর ক্রমাগতভাবে প্রস্তর কঙ্কর বর্ষণ করতে থাকলাম। (সূরা হুদ- ৮২)
وَاَمْطَرْنَا عَلَيْهِمْ مَّطَرًاۚ فَسَآءَ مَطَرُ الْمُنْذَرِيْنَ
তাদের উপর ভয়ংকর বৃষ্টি বর্ষণ করেছিলাম, ভীতি প্রদর্শিতদের জন্য এ বর্ষণ কতই না নিকৃষ্ট। (সূরা নামল– ৫৮)
তাদের বসতি উল্টে দেয়া হলো :
فَجَعَلْنَا عَالِيَهَا سَافِلَهَا
আর আমি জনপদকে উল্টে উপর–নীচ করে দিলাম। (সূরা হিজর– ৭৪)
এটা রাস্তার পাশেই অবস্থিত :
وَاِنَّهَا لَبِسَبِيْلٍ مُّقِيْمٍ
সেটা তো লোক চলাচলের পথের পার্শ্বেই বিদ্যমান। (সূরা হিজর– ৭৬)
তাদের এলাকায় নিদর্শন রয়েছে :
وَلَقَدْ تَّرَكْنَا مِنْهَاۤ اٰيَةً ۢبَيِّنَةً لِّقَوْمٍ يَّعْقِلُوْنَ
আর আমি তাতে বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য স্পষ্ট নিদর্শন রেখে দিয়েছি। (সূরা আনকাবূত– ৩৫)
তাদের পরিণাম লক্ষ্যণীয় :
فَانْظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُجْرِمِيْنَ
অপরাধীদের পরিণাম কী হয়েছিল তা লক্ষ্য করো। (সূরা আ‘রাফু ৮৪)
وَاِنَّكُمْ لَتَمُرُّوْنَ عَلَيْهِمْ مُّصْبِحِيْنَ ‐ وَبِاللَّيْلِؕ اَفَلَا تَعْقِلُوْنَ
তোমরা তো তাদের ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়িঘরের উপর দিয়ে যাতায়াত কর- ভোর বেলায় এবং রাত্রিকালেও; তবুও কি তোমরা অনুধাবন করতে পার না? (সূরা সাফ্ফাত– ১৩৭, ১৩৮)
জ্ঞানীরাই এসব থেকে উপকৃত হয় :
اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّلْمُتَوَسِّمِيْنَ
অবশ্যই এতে পর্যবেক্ষণশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য নিদর্শন রয়েছে। (সূরা হিজর– ৭৫)
اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّلْمُؤْمِنِيْنَ
অবশ্যই এতে মুমিনদের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা হিজর– ৭৭)
ইসমাঈল (আঃ) ছিলেন ইবরাহীম (আঃ) এর জ্যেষ্ঠ পুত্র এবং হাজেরার গর্ভজাত একমাত্র সন্তান। ইবরাহীম (আঃ) এর বয়স যখন ৮৬ বৎসর তখন তিনি জন্মগ্রহণ করেন। শিশু বয়সে তাঁকে ও তাঁর মাকে ইবরাহীম (আঃ) আল্লাহর নির্দেশে মক্কার নির্জন ভূমিতে রেখে আসেন। সেখানে ইবরাহীম (আঃ) এর দু‘আর বরকতে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহে যমযম কূপ সৃষ্টি হয়। অতঃপর ইয়ামানের ব্যবসায়ী কাফেলা বনু জুরহুম গোত্র কর্তৃক মা হাজেরার আবেদনক্রমে সেখানে আবাদ শুরু হয়। ১৪ বছর বয়সে আল্লাহর হুকুমে মক্কার অনতিদূরে মিনা প্রান্তরে সংঘটিত হয় বিশ্ব ইতিহাসের বিস্ময়কর ত্যাগ ও কুরবানীর ঘটনা। এরপর পিতা-পুত্র মিলে কা‘বাঘর নির্মাণ করেন। ইসমাঈল (আঃ) স্পষ্ট ভাষায় আরবি বলতেন। তিনি ৪০ বছর বয়সে নবুওয়াত লাভ করেন এবং সেখানে বসবাসরত বনু জুরহুম গোত্রে দাওয়াত প্রচার করেন। তিনি ১৩৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন এবং মা হাজেরার পাশে কবরস্থ হন।
সৎ সন্তানের জন্য ইবরাহীম (আঃ) এর দু‘আ :
رَبِّ هَبْ لِيْ مِنَ الصَّالِحِيْنَ
হে আমার প্রতিপালক! আমাকে একটি সৎ সন্তান দান করুন। (সূরা সাফ্ফাত– ১০০)
আল্লাহ ইবরাহীম (আঃ) কে পুত্রসন্তানের সুসংবাদ দিলেন :
فَبَشَّرْنَاهُ بِغُلَامٍ حَلِيْمٍ
অতঃপর আমি তাকে একটি ধৈর্যশীল পুত্রের সুসংবাদ দিলাম। (সূরা সাফ্ফাত– ১০১)
বৃদ্ধ বয়সে সন্তান পেয়ে ইবরাহীম (আঃ) আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলেন :
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ وَهَبَ لِيْ عَلَى الْكِبَرِ اِسْمَاعِيْلَ وَاِسْحَاقَؕ اِنَّ رَبِّيْ لَسَمِيْعُ الدُّعَآءِ
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি আমাকে আমার বার্ধক্যে ইসমাঈল ও ইসহাককে দান করেছেন। নিশ্চয় আমার প্রতিপালক প্রার্থনা শ্রবণকারী। (সূরা ইবরাহীম– ৩৯)
رَبِّ هَبْ لِيْ مِنَ الصَّالِحِيْنَ
হে আমার প্রতিপালক! আমাকে একটি সৎ সন্তান দান করুন। (সূরা সাফ্ফাত– ১০০)
আল্লাহ ইবরাহীম (আঃ) কে পুত্রসন্তানের সুসংবাদ দিলেন :
فَبَشَّرْنَاهُ بِغُلَامٍ حَلِيْمٍ
অতঃপর আমি তাকে একটি ধৈর্যশীল পুত্রের সুসংবাদ দিলাম। (সূরা সাফ্ফাত– ১০১)
বৃদ্ধ বয়সে সন্তান পেয়ে ইবরাহীম (আঃ) আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলেন :
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ وَهَبَ لِيْ عَلَى الْكِبَرِ اِسْمَاعِيْلَ وَاِسْحَاقَؕ اِنَّ رَبِّيْ لَسَمِيْعُ الدُّعَآءِ
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি আমাকে আমার বার্ধক্যে ইসমাঈল ও ইসহাককে দান করেছেন। নিশ্চয় আমার প্রতিপালক প্রার্থনা শ্রবণকারী। (সূরা ইবরাহীম– ৩৯)
পিতা ইসমাঈল (আঃ) কে স্বপ্নের কথা জানালেন :
فَلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ السَّعْيَ قَالَ يَا بُنَيَّ اِنِّۤيْ اَرٰى فِى المَنَامِ اَنِّۤي اَذْبَحُكَ فَانْظُرْ مَاذَا تَرٰى
তারপর সে যখন তার পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হলো তখন ইবরাহীম বললেন, হে বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে যবেহ করছি; এখন তুমি বলো, তোমার মতামত কী? (সূরা সাফ্ফাত– ১০২)
ইসমাঈল (আঃ) সাহসী উত্তর দিলেন :
قَالَ يَاۤ اَبَتِ افْعَلْ مَا تُؤْمَرُؗ سَتَجِدُنِۤيْ اِنْ شَآءَ اللهُ مَعَ الصَّابِرِيْنَ
সে বলল, হে আমার বাবা! আপনাকে যে আদেশ করা হয়েছে তা পূর্ণ করুন। ইন্শাআল্লাহ, আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যেই পাবেন। (সূরা সাফ্ফাত– ১০২)
পিতা ইসমাঈল (আঃ) কে কুরবানী করার প্রস্তুতি নিলেন :
فَلَمَّاۤ اَسْلَمَا وَتَلَّهٗ لِلْجَبِيْنِ
অতঃপর যখন তারা উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করলেন এবং পিতা পুত্রকে কাত করে শোয়ালেন। (সূরা সাফ্ফাত– ১০৩)
এ প্রস্তুতিতেই আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়ে ইসমাঈল (আঃ) কে বাঁচিয়ে দিলেন :
وَنَادَيْنَاهُ اَنْ يَّاۤ اِبْرَاهِيْمُ ‐ قَدْ صَدَّقْتَ الرُّؤْيَاۚ اِنَّا كَذٰلِكَ نَجْزِى الْمُحْسِنِيْنَ
তখন আমি তাকে ডেকে বললাম, হে ইবরাহীম! তুমি তো স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করেছ। এভাবেই আমি খাঁটি বান্দাদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি। (সূরা সাফ্ফাত– ১০৪, ৪০৫)
আল্লাহ ইসমাঈল (আঃ) এর পরিবর্তে অন্য একটি জন্তু পাঠিয়ে দিলেন :
وَفَدَيْنَاهُ بِذِبْحٍ عَظِيْمٍ ‐ وَتَرَكْنَا عَلَيْهِ فِى الْاٰخِرِيْنَ
আমি তাকে মুক্ত করলাম এক মহান যবেহের বিনিময়ে। আর আমি তার জন্য এ বিষয়টি ভবিষ্যৎ বংশধরদের মধ্যে কায়েম রাখলাম। (সূরা সাফ্ফাত– ১০৭, ১০৮)
এটা ছিল বড় ধরনের পরীক্ষা :
اِنَّ هٰذَا لَهُوَ الْبَلَاءُ الْمُبِيْنُ
নিশ্চয় এটা ছিল এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা। (সূরা সাফ্ফাত– ১০৬)
فَلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ السَّعْيَ قَالَ يَا بُنَيَّ اِنِّۤيْ اَرٰى فِى المَنَامِ اَنِّۤي اَذْبَحُكَ فَانْظُرْ مَاذَا تَرٰى
তারপর সে যখন তার পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হলো তখন ইবরাহীম বললেন, হে বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে যবেহ করছি; এখন তুমি বলো, তোমার মতামত কী? (সূরা সাফ্ফাত– ১০২)
ইসমাঈল (আঃ) সাহসী উত্তর দিলেন :
قَالَ يَاۤ اَبَتِ افْعَلْ مَا تُؤْمَرُؗ سَتَجِدُنِۤيْ اِنْ شَآءَ اللهُ مَعَ الصَّابِرِيْنَ
সে বলল, হে আমার বাবা! আপনাকে যে আদেশ করা হয়েছে তা পূর্ণ করুন। ইন্শাআল্লাহ, আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যেই পাবেন। (সূরা সাফ্ফাত– ১০২)
পিতা ইসমাঈল (আঃ) কে কুরবানী করার প্রস্তুতি নিলেন :
فَلَمَّاۤ اَسْلَمَا وَتَلَّهٗ لِلْجَبِيْنِ
অতঃপর যখন তারা উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করলেন এবং পিতা পুত্রকে কাত করে শোয়ালেন। (সূরা সাফ্ফাত– ১০৩)
এ প্রস্তুতিতেই আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়ে ইসমাঈল (আঃ) কে বাঁচিয়ে দিলেন :
وَنَادَيْنَاهُ اَنْ يَّاۤ اِبْرَاهِيْمُ ‐ قَدْ صَدَّقْتَ الرُّؤْيَاۚ اِنَّا كَذٰلِكَ نَجْزِى الْمُحْسِنِيْنَ
তখন আমি তাকে ডেকে বললাম, হে ইবরাহীম! তুমি তো স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করেছ। এভাবেই আমি খাঁটি বান্দাদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি। (সূরা সাফ্ফাত– ১০৪, ৪০৫)
আল্লাহ ইসমাঈল (আঃ) এর পরিবর্তে অন্য একটি জন্তু পাঠিয়ে দিলেন :
وَفَدَيْنَاهُ بِذِبْحٍ عَظِيْمٍ ‐ وَتَرَكْنَا عَلَيْهِ فِى الْاٰخِرِيْنَ
আমি তাকে মুক্ত করলাম এক মহান যবেহের বিনিময়ে। আর আমি তার জন্য এ বিষয়টি ভবিষ্যৎ বংশধরদের মধ্যে কায়েম রাখলাম। (সূরা সাফ্ফাত– ১০৭, ১০৮)
এটা ছিল বড় ধরনের পরীক্ষা :
اِنَّ هٰذَا لَهُوَ الْبَلَاءُ الْمُبِيْنُ
নিশ্চয় এটা ছিল এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা। (সূরা সাফ্ফাত– ১০৬)
ইসমাঈল (আঃ) ছিলেন ধৈর্যশীল নবীদের একজন :
وَاِسْمَاعِيْلَ وَاِدْرِيْسَ وَذَا الْكِفْلِؕ كُلٌّ مِّنَ الصَّابِرِيْنَ
স্মরণ করো, ইসমাঈল, ইদ্রীস ও যুলকিফল–এর কথা, তাদের প্রত্যেকেই ছিল ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা আম্বিয়া– ৮৫)
আল্লাহ তার কাছে ওহী পাঠিয়েছিলেন :
وَاَوْحَيْنَاۤ اِلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ وَاِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَ
আমি ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব এর নিকটও ওহী প্রেরণ করেছিলাম। (সূরা নিসা– ১৬৩)
তিনি ছিলেন মর্যাদাবান ব্যক্তিত্বের অধিকারী :
وَاِسْمَاعِيْلَ وَالْيَسَعَ وَيُوْنُسَ وَلُوْطًا وَّكُلًّا فَضَّلْنَا عَلَى الْعَالَمِيْنَ
ইসমাঈল, আল–ইয়াসা, ইউনুস ও লূত প্রত্যেককেই সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম এবং প্রত্যেককেই বিশ্বজগতের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছিলাম। (সূরা আন‘আম– ৮৬)
তিনি ছিলেন ওয়াদা পালনকারী:
وَاذْكُرْ فِى الْكِتَابِ اِسْمَاعِيْلَؗ اِنَّهٗ كَانَ صَادِقَ الْوَعْدِ وَكَانَ رَسُوْلًا نَّبِيًّا
স্মরণ করো, এ কিতাবে ইসমাঈলের কথা। সে ছিল প্রতিশ্রুতি পালনে সত্যাশ্রয়ী এবং সে ছিল রাসূল ও নবী। (সূরা মারইয়াম– ৫৪)
তিনি তার পরিবারকে সালাত ও যাকাতের আদেশ দিতেন :
وَكَانَ يَأْمُرُ اَهْلَهٗ بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ۪ وَكَانَ عِنْدَ رَبِّهٖ مَرْضِيًّا
সে তার পরিবারবর্গকে সালাত ও যাকাতের নির্দেশ দিত। আর সে ছিল তার প্রতিপালকের সন্তোষভাজন।
(সূরা মারইয়াম– ৫৫)
ইসমাঈল (আঃ) কা‘বাঘর নির্মাণে অংশগ্রহণ করেন :
وَاِذْ يَرْفَعُ اِبْرَاهِيْمُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَاِسْمَاعِيْلُؕ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّاؕ اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
যখন ইবরাহীম ও ইসমাঈল কা‘বার ভিত্তি উঁচু করছিলেন, (তখন বলেন) হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পক্ষ হতে এটা কবুল করুন, নিশ্চয় আপনি মহা শ্রবণকারী ও মহাজ্ঞানী। (সূরা বাক্বারা– ১২৭)
তিনি মসজিদের পবিত্রতা রক্ষার দায়িত্ব পালন করেছেন :
وَعَهِدْنَاۤ اِلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ اَنْ طَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّآئِفِيْنَ وَالْعَاكِفِيْنَ وَالرُّكَّعِ السُّجُوْدِ
আমি ইবরাহীম ও ইসমাঈলের নিকট এ অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, তোমরা আমার ঘরকে তাওয়াফকারী, ই‘তিকাফকারী, রুকূকারী এবং সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রেখো। (সূরা বাক্বারা– ১২৫)
ইসমাঈল (আঃ) এর ইতিহাস স্মরণীয় :
وَاذْكُرْ اِسْمَاعِيْلَ وَالْيَسَعَ وَذَا الْكِفْلِؕ وَكُلٌّ مِّنَ الْاَخْيَارِ
স্মরণ করো, ইসমাঈল, আল–ইয়াসা ও যুলকিফলের কথা, তারা প্রত্যেকেই ছিল শ্রেষ্ঠ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।
(সূরা সোয়াদু ৪৮)
وَاِسْمَاعِيْلَ وَاِدْرِيْسَ وَذَا الْكِفْلِؕ كُلٌّ مِّنَ الصَّابِرِيْنَ
স্মরণ করো, ইসমাঈল, ইদ্রীস ও যুলকিফল–এর কথা, তাদের প্রত্যেকেই ছিল ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা আম্বিয়া– ৮৫)
আল্লাহ তার কাছে ওহী পাঠিয়েছিলেন :
وَاَوْحَيْنَاۤ اِلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ وَاِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَ
আমি ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব এর নিকটও ওহী প্রেরণ করেছিলাম। (সূরা নিসা– ১৬৩)
তিনি ছিলেন মর্যাদাবান ব্যক্তিত্বের অধিকারী :
وَاِسْمَاعِيْلَ وَالْيَسَعَ وَيُوْنُسَ وَلُوْطًا وَّكُلًّا فَضَّلْنَا عَلَى الْعَالَمِيْنَ
ইসমাঈল, আল–ইয়াসা, ইউনুস ও লূত প্রত্যেককেই সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম এবং প্রত্যেককেই বিশ্বজগতের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছিলাম। (সূরা আন‘আম– ৮৬)
তিনি ছিলেন ওয়াদা পালনকারী:
وَاذْكُرْ فِى الْكِتَابِ اِسْمَاعِيْلَؗ اِنَّهٗ كَانَ صَادِقَ الْوَعْدِ وَكَانَ رَسُوْلًا نَّبِيًّا
স্মরণ করো, এ কিতাবে ইসমাঈলের কথা। সে ছিল প্রতিশ্রুতি পালনে সত্যাশ্রয়ী এবং সে ছিল রাসূল ও নবী। (সূরা মারইয়াম– ৫৪)
তিনি তার পরিবারকে সালাত ও যাকাতের আদেশ দিতেন :
وَكَانَ يَأْمُرُ اَهْلَهٗ بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ۪ وَكَانَ عِنْدَ رَبِّهٖ مَرْضِيًّا
সে তার পরিবারবর্গকে সালাত ও যাকাতের নির্দেশ দিত। আর সে ছিল তার প্রতিপালকের সন্তোষভাজন।
(সূরা মারইয়াম– ৫৫)
ইসমাঈল (আঃ) কা‘বাঘর নির্মাণে অংশগ্রহণ করেন :
وَاِذْ يَرْفَعُ اِبْرَاهِيْمُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَاِسْمَاعِيْلُؕ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّاؕ اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
যখন ইবরাহীম ও ইসমাঈল কা‘বার ভিত্তি উঁচু করছিলেন, (তখন বলেন) হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পক্ষ হতে এটা কবুল করুন, নিশ্চয় আপনি মহা শ্রবণকারী ও মহাজ্ঞানী। (সূরা বাক্বারা– ১২৭)
তিনি মসজিদের পবিত্রতা রক্ষার দায়িত্ব পালন করেছেন :
وَعَهِدْنَاۤ اِلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ اَنْ طَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّآئِفِيْنَ وَالْعَاكِفِيْنَ وَالرُّكَّعِ السُّجُوْدِ
আমি ইবরাহীম ও ইসমাঈলের নিকট এ অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, তোমরা আমার ঘরকে তাওয়াফকারী, ই‘তিকাফকারী, রুকূকারী এবং সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রেখো। (সূরা বাক্বারা– ১২৫)
ইসমাঈল (আঃ) এর ইতিহাস স্মরণীয় :
وَاذْكُرْ اِسْمَاعِيْلَ وَالْيَسَعَ وَذَا الْكِفْلِؕ وَكُلٌّ مِّنَ الْاَخْيَارِ
স্মরণ করো, ইসমাঈল, আল–ইয়াসা ও যুলকিফলের কথা, তারা প্রত্যেকেই ছিল শ্রেষ্ঠ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।
(সূরা সোয়াদু ৪৮)
ইসহাক (আঃ) ছিলেন ইবরাহীম (আঃ) এর প্রথম স্ত্রী সারার গর্ভজাত একমাত্র পুত্র। তিনি ছিলেন ইসমাঈল (আঃ) এর চৌদ্দ বছরের ছোট। এ সময় ইবরাহীম (আঃ) এর বয়স ছিল ১০০ বছর। আল্লাহ তা‘আলা ইসমাঈল (আঃ) কে দিয়ে যেমন মক্কার জনপদকে তাওহীদের আলোকে উদ্ভাসিত করেছিলেন, তেমনি ইসহাক (আঃ) কে নবুওয়াত দান করে তার মাধ্যমে শামের বিস্তীর্ণ এলাকা আবাদ করেছিলেন। ইবরাহীম (আঃ) এর জীবদ্দশায় পুত্র ইসহাককে রাফকা বিনতে বাতওয়াঈল এর সাথে বিবাহ দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনিও ছিলেন বন্ধ্যা। পরে ইবরাহীম (আঃ) এর বিশেষ দু‘আর বরকতে তিনি সন্তান লাভ করেন এবং তাঁর গর্ভে ঈছ ও ইয়াকূব নামে পরপর দু’টি পুত্রসন্তান জন্ম লাভ করে। তার মধ্যে ইয়াকূব নবী হন। পরে ইয়াকূবের বংশধর হিসেবে বনী ইসরাঈলের হাজার হাজার নবী পৃথিবীকে তাওহীদের আলোকে আলোকিত করেন। ইসহাক (আঃ) ১৮০ বছর বয়স পান। তিনি কেনানে মৃত্যুবরণ করেন এবং পুত্র ঈছ ও ইয়াকূবের মাধ্যমে হেবরনে পিতা ইবরাহীমের কবরের পাশে সমাহিত হন। স্থানটি বর্তমানে ‘আল খালীল’ নামে পরিচিত।
ইসহাক (আঃ) এর মাকে জন্মের সুসংবাদ প্রদান :
وَامْرَاَتُهٗ قَآئِمَةٌ فَضَحِكَتْ فَبَشَّرْنَاهَا بِاِسْحَاقَ وَمِنْ وَّرَآءِ اِسْحَاقَ يَعْقُوْبَ
আর তার স্ত্রী দন্ডায়মান হলো এবং হেসে ফেলল। অতঃপর আমি তাকে ইসহাক ও ইসহাকের পরবর্তীতে ইয়াকূবের সুসংবাদ দান করলাম। (সূরা হুদু ৭১)
পিতাকে জন্মের সুসংবাদ প্রদান :
وَبَشَّرْنَاهُ بِاِسْحَاقَ نَبِيًّا مِّنَ الصَّالِحِيْنَ
আমি তাকে ইসহাকের সুসংবাদ দান করলাম, তিনি ছিলেন একজন নবী ও সৎলোক। (সূরা সাফ্ফাত– ১১২)
বৃদ্ধ বয়সে ইবরাহীম (আঃ) এর ঔরসে তার জন্ম হয় :
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ وَهَبَ لِيْ عَلَى الْكِبَرِ اِسْمَاعِيْلَ وَاِسْحَاقَؕ اِنَّ رَبِّيْ لَسَمِيْعُ الدُّعَآءِ
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাকে আমার বার্ধক্যে ইসমাঈল ও ইসহাককে দান করেছেন। নিশ্চয় আমার প্রতিপালক প্রার্থনা শুনে থাকেন। (সূরা ইবরাহীম– ৩৯)
আল্লাহ ইসহাক (আঃ) কে নবী বানিয়েছেন :
فَلَمَّا اعْتَزَلَهُمْ وَمَا يَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ وَهَبْنَا لَهٗۤ اِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَؕ وَكُلًّا جَعَلْنَا نَبِيًّا
অতঃপর সে যখন তাদের হতে ও তারা আল্লাহ ব্যতীত যাদের ইবাদাত করত সেসব হতে পৃথক হয়ে গেল, তখন আমি তাকে দান করলাম ইসহাক ও ইয়াকূবকে এবং প্রত্যেককে নবী হিসেবে মনোনীত করলাম। (সূরা মারইয়াম– ৪৯)
ইসহাক (আঃ) এর প্রতি আল্লাহ ওহী নাযিল করেছেন :
اِنَّاۤ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ كَمَاۤ اَوْحَيْنَاۤ اِلٰى نُوْحٍ وَّالنَّبِيِّيْنَ مِنْ ۢبَعْدِهٖ وَاَوْحَيْنَاۤ اِلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ وَاِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَ وَالْاَسْبَاطِ وَعِيْسٰى وَاَيُّوْبَ وَيُوْنُسَ وَهَارُوْنَ وَسُلَيْمَانَ وَاٰتَيْنَا دَاوُوْدَ زَبُوْرًا
আমি তো তোমার নিকট ওহী প্রেরণ করেছি যেমন নূহ ও তার পরবর্তী নবীগণের নিকট ওহী প্রেরণ করেছিলাম। ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব ও তার বংশধরগণ, ঈসা, আইয়ূব, ইউনুস, হারূন ও সুলায়মানের নিকটও ওহী প্রেরণ করেছিলাম এবং দাউদকে যাবূর দিয়েছিলাম। (সূরা নিসা– ১৬৩)
ইসহাক (আঃ) সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন :
وَوَهَبْنَا لَهٗۤ اِسْحَاقَؕ وَيَعْقُوْبَ نَافِلَةًؕ وَكُلًّا جَعَلْنَا صَالِحِيْنَ
আমি ইবরাহীমকে দান করেছিলাম ইসহাক এবং পৌত্র ইয়াকূবকে। তারা প্রত্যেকেই ছিল সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা আম্বিয়া– ৭২)
وَوَهَبْنَا لَهٗۤ اِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَؕ كُلًّا هَدَيْنَا
আর আমি তাকে দান করেছিলাম ইসহাক ও ইয়াকূবকে, এদের প্রত্যেককে সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম। (সূরা আন‘আম– ৮৪)
আল্লাহ ইসহাক (আঃ) কে বরকতময় করেছেন :
وَبَارَكْنَا عَلَيْهِ وَعَلٰۤى اِسْحَاقَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِهِمَا مُحْسِنٌ وَّظَالِمٌ لِّنَفْسِهٖ مُبِيْنٌ
আর আমি তাকে বরকত দান করেছিলাম এবং ইসহাককেও। তাদের বংশধরদের মধ্যে কতক ছিল সৎলোক এবং কতক ছিল নিজেদের উপর প্রকাশ্য অত্যাচারী। (সূরা সাফ্ফাত– ১১৩)
ইসহাক (আঃ) এর ইতিহাস স্মরণীয় :
وَاذْكُرْ عِبَادَنَاۤ اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَ اُولِى الْاَيْدِيْ وَالْاَبْصَارِ
স্মরণ করো, আমার বান্দা ইবরাহীম, ইসহাক ও ইয়াকূবের কথা, তারা ছিল কর্মশক্তি ও জ্ঞানশক্তিসম্পন্ন।
(সূরা সোয়াদু ৪৫)
ইসহাক (আঃ) এর মাকে জন্মের সুসংবাদ প্রদান :
وَامْرَاَتُهٗ قَآئِمَةٌ فَضَحِكَتْ فَبَشَّرْنَاهَا بِاِسْحَاقَ وَمِنْ وَّرَآءِ اِسْحَاقَ يَعْقُوْبَ
আর তার স্ত্রী দন্ডায়মান হলো এবং হেসে ফেলল। অতঃপর আমি তাকে ইসহাক ও ইসহাকের পরবর্তীতে ইয়াকূবের সুসংবাদ দান করলাম। (সূরা হুদু ৭১)
পিতাকে জন্মের সুসংবাদ প্রদান :
وَبَشَّرْنَاهُ بِاِسْحَاقَ نَبِيًّا مِّنَ الصَّالِحِيْنَ
আমি তাকে ইসহাকের সুসংবাদ দান করলাম, তিনি ছিলেন একজন নবী ও সৎলোক। (সূরা সাফ্ফাত– ১১২)
বৃদ্ধ বয়সে ইবরাহীম (আঃ) এর ঔরসে তার জন্ম হয় :
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ وَهَبَ لِيْ عَلَى الْكِبَرِ اِسْمَاعِيْلَ وَاِسْحَاقَؕ اِنَّ رَبِّيْ لَسَمِيْعُ الدُّعَآءِ
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাকে আমার বার্ধক্যে ইসমাঈল ও ইসহাককে দান করেছেন। নিশ্চয় আমার প্রতিপালক প্রার্থনা শুনে থাকেন। (সূরা ইবরাহীম– ৩৯)
আল্লাহ ইসহাক (আঃ) কে নবী বানিয়েছেন :
فَلَمَّا اعْتَزَلَهُمْ وَمَا يَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ وَهَبْنَا لَهٗۤ اِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَؕ وَكُلًّا جَعَلْنَا نَبِيًّا
অতঃপর সে যখন তাদের হতে ও তারা আল্লাহ ব্যতীত যাদের ইবাদাত করত সেসব হতে পৃথক হয়ে গেল, তখন আমি তাকে দান করলাম ইসহাক ও ইয়াকূবকে এবং প্রত্যেককে নবী হিসেবে মনোনীত করলাম। (সূরা মারইয়াম– ৪৯)
ইসহাক (আঃ) এর প্রতি আল্লাহ ওহী নাযিল করেছেন :
اِنَّاۤ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ كَمَاۤ اَوْحَيْنَاۤ اِلٰى نُوْحٍ وَّالنَّبِيِّيْنَ مِنْ ۢبَعْدِهٖ وَاَوْحَيْنَاۤ اِلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ وَاِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَ وَالْاَسْبَاطِ وَعِيْسٰى وَاَيُّوْبَ وَيُوْنُسَ وَهَارُوْنَ وَسُلَيْمَانَ وَاٰتَيْنَا دَاوُوْدَ زَبُوْرًا
আমি তো তোমার নিকট ওহী প্রেরণ করেছি যেমন নূহ ও তার পরবর্তী নবীগণের নিকট ওহী প্রেরণ করেছিলাম। ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব ও তার বংশধরগণ, ঈসা, আইয়ূব, ইউনুস, হারূন ও সুলায়মানের নিকটও ওহী প্রেরণ করেছিলাম এবং দাউদকে যাবূর দিয়েছিলাম। (সূরা নিসা– ১৬৩)
ইসহাক (আঃ) সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন :
وَوَهَبْنَا لَهٗۤ اِسْحَاقَؕ وَيَعْقُوْبَ نَافِلَةًؕ وَكُلًّا جَعَلْنَا صَالِحِيْنَ
আমি ইবরাহীমকে দান করেছিলাম ইসহাক এবং পৌত্র ইয়াকূবকে। তারা প্রত্যেকেই ছিল সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা আম্বিয়া– ৭২)
وَوَهَبْنَا لَهٗۤ اِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَؕ كُلًّا هَدَيْنَا
আর আমি তাকে দান করেছিলাম ইসহাক ও ইয়াকূবকে, এদের প্রত্যেককে সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম। (সূরা আন‘আম– ৮৪)
আল্লাহ ইসহাক (আঃ) কে বরকতময় করেছেন :
وَبَارَكْنَا عَلَيْهِ وَعَلٰۤى اِسْحَاقَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِهِمَا مُحْسِنٌ وَّظَالِمٌ لِّنَفْسِهٖ مُبِيْنٌ
আর আমি তাকে বরকত দান করেছিলাম এবং ইসহাককেও। তাদের বংশধরদের মধ্যে কতক ছিল সৎলোক এবং কতক ছিল নিজেদের উপর প্রকাশ্য অত্যাচারী। (সূরা সাফ্ফাত– ১১৩)
ইসহাক (আঃ) এর ইতিহাস স্মরণীয় :
وَاذْكُرْ عِبَادَنَاۤ اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَ اُولِى الْاَيْدِيْ وَالْاَبْصَارِ
স্মরণ করো, আমার বান্দা ইবরাহীম, ইসহাক ও ইয়াকূবের কথা, তারা ছিল কর্মশক্তি ও জ্ঞানশক্তিসম্পন্ন।
(সূরা সোয়াদু ৪৫)
ইয়াকূব (আঃ) ইবরাহীম (আঃ) এর কনিষ্ঠ পুত্র ইসহাক (আঃ) এর ছোট ছেলে। তাঁর অপর নাম ইসরাঈল, যার অর্থ আল্লাহর দাস। তিনি মামাতো বোন লাইলা ও রাহেলাকে বিবাহ করেন। ইবরাহীমী শরীয়াতে দু’বোন একত্রে বিবাহ করা জায়েয ছিল। পরে এটা নিষিদ্ধ করা হয়। তাঁর প্রথম স্ত্রীর গর্ভ থেকে ১০ জন এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর গর্ভ হতে ২ জন সর্বমোট ১২ জন পুত্র জন্মগ্রহণ করে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বংশেই নবীদের সিলসিলা চালু করে দেন এবং তাঁর বংশধরকে বনী ইসরাঈল নামে পরিচিত করে দেন। তিনি কেনান থেকে ফিলিস্তীন পর্যন্ত এলাকাতে দাওয়াতী কাজ করেন। ১৪৭ বছর বয়সে তিনি মিসরে মৃত্যুবরণ করেন এবং হেবরনে দাদা ইবরাহীম ও পিতা ইসহাক (আঃ) এর কবরের পাশে সমাধিস্থ হন।
ইয়াকূব (আঃ) সৎকর্মী নবী ছিলেন :
وَوَهَبْنَا لَهٗۤ اِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَ نَافِلَةً وَّكُلًّا جَعَلْنَا صَالِحِيْنَ
আমি ইবরাহীমকে দান করেছিলাম ইসহাক এবং পৌত্র ইয়াকূবকে। আর প্রত্যেককেই করেছিলাম সৎকর্মপরায়ণ। (সূরা আম্বিয়া– ৭২)
আল্লাহ তাকে সৎপথ দেখিয়েছিলেন :
وَوَهَبْنَا لَهٗۤ اِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَؕ كُلًّا هَدَيْنَا
আমি তাকে দান করেছিলাম ইসহাক ও ইয়াকূবকে, এদের প্রত্যেককে সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম।
(সূরা আন‘আম– ৮৪)
ইয়াকূব (আঃ) খুব জ্ঞানী ছিলেন :
وَاِنَّهٗ لَذُوْ عِلْمٍ لِّمَا عَلَّمْنَاهُ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ
নিশ্চয় সে জ্ঞানী ছিল, কারণ আমি তাকে শিক্ষা দিয়েছিলাম। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এটা অবগত নয়।
(সূরা ইউসুফু ৬৮)
সন্তানদের প্রতি ইয়াকূব (আঃ) এর অসিয়ত :
وَوَصّٰى بِهَاۤ اِبْرَاهِيْمُ بَنِيْهِ وَيَعْقُوْبُؕ يَا بَنِيَّ اِنَّ اللهَ اصْطَفٰى لَكُمُ الدِّيْنَ فَلَا تَمُوْتُنَّ اِلَّا وَاَنْتُمْ مُّسْلِمُوْنَ
আর ইবরাহীম ও ইয়াকূব এ ব্যাপারে (তথা ইসলামকে জীবনব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করার জন্য) স্বীয় সন্তানদেরকে সদুপদেশ প্রদান করেছিল। হে আমার বংশধর! নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের জন্য এই দ্বীন (জীবনব্যবস্থা) মনোনীত করেছেন। অতএব তোমরা মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। (সূরা বাক্বারা– ১৩২)
মৃত্যুর সময় সন্তানদের নিকট ইয়াকূব (আঃ) এর প্রশ্ন :
اِذْ حَضَرَ يَعْقُوْبَ الْمَوْتُ اِذْ قَالَ لِبَنِيْهِ مَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ ۢبَعْدِيْ
যখন ইয়াকূবের মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন তিনি নিজ পুত্রদেরকে বলেছিলেন, আমার পরে তোমরা কোন জিনিসের ইবাদাত করবে? (সূরা বাক্বারা– ১৩৩)
সন্তানদের সন্তোষজনক উত্তর :
قَالُوْا نَعْبُدُ اِلٰهَكَ وَاِلٰهَ اٰبَآئِكَ اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ وَاِسْحَاقَ اِلٰهًا وَّاحِدًاۚ وَنَحْنُ لَهٗ مُسْلِمُوْنَ
সন্তানরা বলেছিল, আমরা আপনার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাকের ইলাহের ইবাদাত করব। তিনি একক উপাস্য এবং আমরা তাঁরই অনুগত থাকব। (সূরা বাক্বারা– ১৩৩)
ইয়াকূব (আঃ) এর ইতিহাস স্মরণীয় :
وَاذْكُرْ عِبَادَنَاۤ اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَ اُولِى الْاَيْدِيْ وَالْاَبْصَارِ
স্মরণ করো, আমার বান্দা ইবরাহীম, ইসহাক ও ইয়াকূবের কথা। তারা ছিলেন কর্মশক্তি ও জ্ঞানশক্তিসম্পন্ন। (সূরা সোয়াদু ৪৫)
ইয়াকূব (আঃ) সৎকর্মী নবী ছিলেন :
وَوَهَبْنَا لَهٗۤ اِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَ نَافِلَةً وَّكُلًّا جَعَلْنَا صَالِحِيْنَ
আমি ইবরাহীমকে দান করেছিলাম ইসহাক এবং পৌত্র ইয়াকূবকে। আর প্রত্যেককেই করেছিলাম সৎকর্মপরায়ণ। (সূরা আম্বিয়া– ৭২)
আল্লাহ তাকে সৎপথ দেখিয়েছিলেন :
وَوَهَبْنَا لَهٗۤ اِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَؕ كُلًّا هَدَيْنَا
আমি তাকে দান করেছিলাম ইসহাক ও ইয়াকূবকে, এদের প্রত্যেককে সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম।
(সূরা আন‘আম– ৮৪)
ইয়াকূব (আঃ) খুব জ্ঞানী ছিলেন :
وَاِنَّهٗ لَذُوْ عِلْمٍ لِّمَا عَلَّمْنَاهُ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ
নিশ্চয় সে জ্ঞানী ছিল, কারণ আমি তাকে শিক্ষা দিয়েছিলাম। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এটা অবগত নয়।
(সূরা ইউসুফু ৬৮)
সন্তানদের প্রতি ইয়াকূব (আঃ) এর অসিয়ত :
وَوَصّٰى بِهَاۤ اِبْرَاهِيْمُ بَنِيْهِ وَيَعْقُوْبُؕ يَا بَنِيَّ اِنَّ اللهَ اصْطَفٰى لَكُمُ الدِّيْنَ فَلَا تَمُوْتُنَّ اِلَّا وَاَنْتُمْ مُّسْلِمُوْنَ
আর ইবরাহীম ও ইয়াকূব এ ব্যাপারে (তথা ইসলামকে জীবনব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করার জন্য) স্বীয় সন্তানদেরকে সদুপদেশ প্রদান করেছিল। হে আমার বংশধর! নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের জন্য এই দ্বীন (জীবনব্যবস্থা) মনোনীত করেছেন। অতএব তোমরা মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। (সূরা বাক্বারা– ১৩২)
মৃত্যুর সময় সন্তানদের নিকট ইয়াকূব (আঃ) এর প্রশ্ন :
اِذْ حَضَرَ يَعْقُوْبَ الْمَوْتُ اِذْ قَالَ لِبَنِيْهِ مَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ ۢبَعْدِيْ
যখন ইয়াকূবের মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন তিনি নিজ পুত্রদেরকে বলেছিলেন, আমার পরে তোমরা কোন জিনিসের ইবাদাত করবে? (সূরা বাক্বারা– ১৩৩)
সন্তানদের সন্তোষজনক উত্তর :
قَالُوْا نَعْبُدُ اِلٰهَكَ وَاِلٰهَ اٰبَآئِكَ اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ وَاِسْحَاقَ اِلٰهًا وَّاحِدًاۚ وَنَحْنُ لَهٗ مُسْلِمُوْنَ
সন্তানরা বলেছিল, আমরা আপনার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাকের ইলাহের ইবাদাত করব। তিনি একক উপাস্য এবং আমরা তাঁরই অনুগত থাকব। (সূরা বাক্বারা– ১৩৩)
ইয়াকূব (আঃ) এর ইতিহাস স্মরণীয় :
وَاذْكُرْ عِبَادَنَاۤ اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَ اُولِى الْاَيْدِيْ وَالْاَبْصَارِ
স্মরণ করো, আমার বান্দা ইবরাহীম, ইসহাক ও ইয়াকূবের কথা। তারা ছিলেন কর্মশক্তি ও জ্ঞানশক্তিসম্পন্ন। (সূরা সোয়াদু ৪৫)
ইউসুফ (আঃ) ছিলেন ইয়াকূব (আঃ) এর দ্বিতীয় স্ত্রীর প্রথম পুত্র। ইয়াকূব (আঃ) এর ১২ জন পুত্রের মধ্যে কেবল ইউসুফ (আঃ)-ই নবী হয়েছিলেন। আর নবীগণের মধ্যে তিনিই হলেন একমাত্র নবী, যার সম্পূর্ণ কাহিনী একটিমাত্র সূরায় ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। সূরা ইউসুফের ৩নং আয়াত থেকে ১০১নং আয়াত পর্যন্ত সর্বমোট ৯৯টি আয়াতে তার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। কুরআনে তাঁর জীবন কাহিনীকে اَحْسَنُ الْقَصَصِ তথা সুন্দরতম কাহিনী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তিনি পিতার মতোই ইবরাহীমী শরীয়াত প্রচার করতেন। তিনি সর্বপ্রথম জেলখানার কয়েদীদের দাওয়াত দানের মাধ্যমে নিজের দাওয়াতী কার্যক্রম শুরু করেন। তিনি মিসরে মৃত্যুবরণ করেন।
ইউসুফ (আঃ) এর ঘটনায় অনেক শিক্ষা রয়েছে :
لَقَدْ كَانَ فِيْ قَصَصِهِمْ عِبْرَةٌ لِّاُولِى الْاَلْبَابِ
তাদের বৃত্তান্তে বোধশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য রয়েছে শিক্ষা। (সূরা ইউসুফু ১১১)
لَقَدْ كَانَ فِيْ يُوْسُفَ وَاِخْوَتِهٖۤ اٰيَاتٌ لِّلسَّآئِلِيْنَ
ইউসুফ এবং তার ভ্রাতাদের ঘটনায় জিজ্ঞাসুদের জন্য অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে। (সূরা ইউসুফু ৭)
ইউসুফ (আঃ) এর কাহিনী সবচেয়ে সুন্দর :
نَحْنُ نَقُصُّ عَلَيْكَ اَحْسَنَ الْقَصَصِ بِمَاۤ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ هٰذَا الْقُرْاٰنَۗ وَاِنْ كُنْتَ مِنْ قَبْلِهٖ لَمِنَ الْغَافِلِيْنَ
ওহীর মাধ্যমে তোমার নিকট এ কুরআন প্রেরণ করে আমি তোমার নিকট এক উত্তম কাহিনী বর্ণনা করছি। যদিও এটার পূর্বে তুমি ছিলে অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা ইউসুফু ৩)
ইউসুফ (আঃ) ছিলেন আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা :
اِنَّهٗ مِنْ عِبَادِنَا الْمُخْلَصِيْنَ
সে ছিল আমার বিশুদ্ধচিত্ত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা ইউসুফু ২৪)
لَقَدْ كَانَ فِيْ قَصَصِهِمْ عِبْرَةٌ لِّاُولِى الْاَلْبَابِ
তাদের বৃত্তান্তে বোধশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য রয়েছে শিক্ষা। (সূরা ইউসুফু ১১১)
لَقَدْ كَانَ فِيْ يُوْسُفَ وَاِخْوَتِهٖۤ اٰيَاتٌ لِّلسَّآئِلِيْنَ
ইউসুফ এবং তার ভ্রাতাদের ঘটনায় জিজ্ঞাসুদের জন্য অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে। (সূরা ইউসুফু ৭)
ইউসুফ (আঃ) এর কাহিনী সবচেয়ে সুন্দর :
نَحْنُ نَقُصُّ عَلَيْكَ اَحْسَنَ الْقَصَصِ بِمَاۤ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ هٰذَا الْقُرْاٰنَۗ وَاِنْ كُنْتَ مِنْ قَبْلِهٖ لَمِنَ الْغَافِلِيْنَ
ওহীর মাধ্যমে তোমার নিকট এ কুরআন প্রেরণ করে আমি তোমার নিকট এক উত্তম কাহিনী বর্ণনা করছি। যদিও এটার পূর্বে তুমি ছিলে অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা ইউসুফু ৩)
ইউসুফ (আঃ) ছিলেন আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা :
اِنَّهٗ مِنْ عِبَادِنَا الْمُخْلَصِيْنَ
সে ছিল আমার বিশুদ্ধচিত্ত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা ইউসুফু ২৪)
ইউসুফ (আঃ) একটি স্বপ্ন দেখে পিতার কাছে বর্ণনা করলেন :
اِذْ قَالَ يُوْسُفُ لِاَبِيْهِ يَاۤ اَبَتِ اِنِّيْ رَاَيْتُ اَحَدَ عَشَرَ كَوْكَبًا وَّالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ رَاَيْتُهُمْ لِىْ سَاجِدِيْنَ
স্মরণ করো, যখন ইউসুফ তার পিতাকে বলেছিল, হে আমার পিতা! নিশ্চয় আমি এগারটি নক্ষত্র, সূর্য ও চন্দ্রকে দেখেছি। আর আমি তাদেরকে দেখেছি আমার প্রতি সিজদাবনত অবস্থায়। (সূরা ইউসুফু ৪)
পিতা স্বপ্ন গোপন রাখতে বললেন :
قَالَ يَا بُنَيَّ لَا تَقْصُصْ رُؤْيَاكَ عَلٰۤى اِخْوَتِكَ فَيَكِيْدُوْا لَكَ كَيْدًاؕ اِنَّ الشَّيْطَانَ لِلْاِنْسَانِ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ
সে বলল, হে বৎস! তোমার স্বপ্নের বৃত্তান্ত তোমার ভাইদের কাছে বর্ণনা করো না। তাহলে তারা তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবে। নিশ্চয় শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা ইউসুফু ৫)
পিতা ছেলেকে সুখবর শুনালেন :
وَكَذٰلِكَ يَجْتَبِيْكَ رَبُّكَ وَيُعَلِّمُكَ مِنْ تَأْوِيْلِ الْاَحَادِيْثِ وَيُتِمُّ نِعْمَتَهٗ عَلَيْكَ وَعَلٰۤى اٰلِ يَعْقُوْبَ كَمَاۤ اَتَمَّهَا عَلٰۤى اَبَوَيْكَ مِنْ قَبْلُ اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْحَاقَؕ اِنَّ رَبَّكَ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ
এভাবে তোমার প্রতিপালক তোমাকে মনোনীত করবেন এবং তোমাকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিক্ষা দেবেন। অতঃপর তিনি তোমার প্রতি ও ইয়াকূবের পরিবার–পরিজনের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ পূর্ণ করবেন, যেভাবে তিনি তা পূর্বেও পূর্ণ করেছিলেন তোমার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম ও ইসহাকের প্রতি। নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা ইউসুফ – ৬)
اِذْ قَالَ يُوْسُفُ لِاَبِيْهِ يَاۤ اَبَتِ اِنِّيْ رَاَيْتُ اَحَدَ عَشَرَ كَوْكَبًا وَّالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ رَاَيْتُهُمْ لِىْ سَاجِدِيْنَ
স্মরণ করো, যখন ইউসুফ তার পিতাকে বলেছিল, হে আমার পিতা! নিশ্চয় আমি এগারটি নক্ষত্র, সূর্য ও চন্দ্রকে দেখেছি। আর আমি তাদেরকে দেখেছি আমার প্রতি সিজদাবনত অবস্থায়। (সূরা ইউসুফু ৪)
পিতা স্বপ্ন গোপন রাখতে বললেন :
قَالَ يَا بُنَيَّ لَا تَقْصُصْ رُؤْيَاكَ عَلٰۤى اِخْوَتِكَ فَيَكِيْدُوْا لَكَ كَيْدًاؕ اِنَّ الشَّيْطَانَ لِلْاِنْسَانِ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ
সে বলল, হে বৎস! তোমার স্বপ্নের বৃত্তান্ত তোমার ভাইদের কাছে বর্ণনা করো না। তাহলে তারা তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবে। নিশ্চয় শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা ইউসুফু ৫)
পিতা ছেলেকে সুখবর শুনালেন :
وَكَذٰلِكَ يَجْتَبِيْكَ رَبُّكَ وَيُعَلِّمُكَ مِنْ تَأْوِيْلِ الْاَحَادِيْثِ وَيُتِمُّ نِعْمَتَهٗ عَلَيْكَ وَعَلٰۤى اٰلِ يَعْقُوْبَ كَمَاۤ اَتَمَّهَا عَلٰۤى اَبَوَيْكَ مِنْ قَبْلُ اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْحَاقَؕ اِنَّ رَبَّكَ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ
এভাবে তোমার প্রতিপালক তোমাকে মনোনীত করবেন এবং তোমাকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিক্ষা দেবেন। অতঃপর তিনি তোমার প্রতি ও ইয়াকূবের পরিবার–পরিজনের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ পূর্ণ করবেন, যেভাবে তিনি তা পূর্বেও পূর্ণ করেছিলেন তোমার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম ও ইসহাকের প্রতি। নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা ইউসুফ – ৬)
ভাইয়েরা ইউসুফ (আঃ) এর সাথে হিংসা শুরু করল :
اِذْ قَالُوْا لَيُوْسُفُ وَاَخُوْهُ اَحَبُّ اِلٰۤى اَبِيْنَا مِنَّا وَنَحْنُ عُصْبَةٌ اِنَّ اَبَانَا لَفِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ
স্মরণ করো, যখন তারা বলেছিল, আমাদের পিতার নিকট ইউসুফ এবং তার ভাই-ই আমাদের চেয়ে অধিক প্রিয়, অথচ আমরা একটি সুসংহত দল। নিশ্চয় আমাদের পিতা স্পষ্ট বিভ্রান্তিতেই রয়েছে। (সূরা ইউসুফু ৮)
তারা ইউসুফ (আঃ) কে হত্যা করার পরিকল্পনা করল :
اُقْتُلُوْا يُوْسُفَ اَوِ اطْرَحُوْهُ اَرْضًا يَّخْلُ لَكُمْ وَجْهُ اَبِيْكُمْ وَتَكُوْنُوْا مِنْ ۢ بَعْدِهٖ قَوْمًا صَالِحِيْنَ
তোমরা ইউসুফকে হত্যা করো অথবা তাকে কোন স্থানে ফেলে এসো, ফলে তোমাদের পিতার দৃষ্টি শুধু তোমাদের প্রতিই নিবিষ্ট হবে। তারপর তোমরা সৎ লোকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (সূরা ইউসুফু ৯)
একজন তাকে কূপে ফেলে দিতে বলল :
قَالَ قَآئِلٌ مِّنْهُمْ لَا تَقْتُلُوْا يُوْسُفَ وَاَلْقُوْهُ فِيْ غَيَابَةِ الْجُبِّ يَلْتَقِطْهُ بَعْضُ السَّيَّارَةِ اِنْ كُنْتُمْ فَاعِلِيْنَ
তাদের মধ্যে একজন বলল, তোমরা ইউসুফকে হত্যা করো না, বরং তাকে কোন কূপের গভীরে নিক্ষেপ করে আসো। অতঃপর যদি কোন যাত্রীদলের সাক্ষাৎ হয়, তবে তারা তাকে তুলে নিয়ে যাবে। (সূরা ইউসুফু ১০)
ভাইয়েরা পিতাকে বুঝিয়ে ইউসুফ (আঃ) কে সাথে নিতে চাইল :
قَالُوْا يَاۤ اَبَانَا مَا لَكَ لَا تَأْمَنَّا عَلٰى يُوْسُفَ وَاِنَّا لَهٗ لَنَاصِحُوْنَ ‐ اَرْسِلْهُ مَعَنَا غَدًا يَّرْتَعْ وَيَلْعَبْ وَاِنَّا لَهٗ لَحَافِظُوْنَ
তারা বলল, হে আমাদের পিতা! ইউসুফের ব্যাপারে তুমি আমাদেরকে বিশ্বাস করছ না কেন, অথচ আমরা তার শুভাকাঙ্ক্ষী? আগামীকাল তুমি তাকে আমাদের সঙ্গে প্রেরণ করো, সে তৃপ্তি সহকারে খাবে ও খেলাধুলা করবে। আমরা অবশ্যই তার রক্ষণাবেক্ষণ করব। (সূরা ইউসুফু ১১, ১২)
কিন্তু বাবা এতে রাজি হলেন না :
قَالَ اِنِّيْ لَيَحْزُنُنِيْۤ اَنْ تَذْهَبُوْا بِهٖ وَاَخَافُ اَنْ يَّأْكُلَهُ الذِّئْبُ وَاَنْتُمْ عَنْهُ غَافِلُوْنَ
তিনি বললেন, নিশ্চয় এটা আমাকে চিন্তিত করবে যে, তোমরা তাকে নিয়ে যাবে এবং আমি আশঙ্কা করি যে, তাকে নেকড়ে বাঘ খেয়ে ফেলবে। আর তোমরা তার প্রতি অমনোযোগী থাকবে। (সূরা ইউসুফু ১৩)
তারা ইউসুফকে জোর করে নিয়ে গেল :
قَالُوْا لَئِنْ اَكَلَهُ الذِّئْبُ وَنَحْنُ عُصْبَةٌ اِنَّاۤ اِذًا لَّخَاسِرُوْنَ
তারা বলল, আমরা একটি সুসংহত দল হওয়া সত্ত্বেও যদি নেকড়ে বাঘ তাকে খেয়ে ফেলে, তবে তো আমরা ক্ষতিগ্রস্তই হব। (সূরা ইউসুফু ১৪)
اِذْ قَالُوْا لَيُوْسُفُ وَاَخُوْهُ اَحَبُّ اِلٰۤى اَبِيْنَا مِنَّا وَنَحْنُ عُصْبَةٌ اِنَّ اَبَانَا لَفِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ
স্মরণ করো, যখন তারা বলেছিল, আমাদের পিতার নিকট ইউসুফ এবং তার ভাই-ই আমাদের চেয়ে অধিক প্রিয়, অথচ আমরা একটি সুসংহত দল। নিশ্চয় আমাদের পিতা স্পষ্ট বিভ্রান্তিতেই রয়েছে। (সূরা ইউসুফু ৮)
তারা ইউসুফ (আঃ) কে হত্যা করার পরিকল্পনা করল :
اُقْتُلُوْا يُوْسُفَ اَوِ اطْرَحُوْهُ اَرْضًا يَّخْلُ لَكُمْ وَجْهُ اَبِيْكُمْ وَتَكُوْنُوْا مِنْ ۢ بَعْدِهٖ قَوْمًا صَالِحِيْنَ
তোমরা ইউসুফকে হত্যা করো অথবা তাকে কোন স্থানে ফেলে এসো, ফলে তোমাদের পিতার দৃষ্টি শুধু তোমাদের প্রতিই নিবিষ্ট হবে। তারপর তোমরা সৎ লোকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (সূরা ইউসুফু ৯)
একজন তাকে কূপে ফেলে দিতে বলল :
قَالَ قَآئِلٌ مِّنْهُمْ لَا تَقْتُلُوْا يُوْسُفَ وَاَلْقُوْهُ فِيْ غَيَابَةِ الْجُبِّ يَلْتَقِطْهُ بَعْضُ السَّيَّارَةِ اِنْ كُنْتُمْ فَاعِلِيْنَ
তাদের মধ্যে একজন বলল, তোমরা ইউসুফকে হত্যা করো না, বরং তাকে কোন কূপের গভীরে নিক্ষেপ করে আসো। অতঃপর যদি কোন যাত্রীদলের সাক্ষাৎ হয়, তবে তারা তাকে তুলে নিয়ে যাবে। (সূরা ইউসুফু ১০)
ভাইয়েরা পিতাকে বুঝিয়ে ইউসুফ (আঃ) কে সাথে নিতে চাইল :
قَالُوْا يَاۤ اَبَانَا مَا لَكَ لَا تَأْمَنَّا عَلٰى يُوْسُفَ وَاِنَّا لَهٗ لَنَاصِحُوْنَ ‐ اَرْسِلْهُ مَعَنَا غَدًا يَّرْتَعْ وَيَلْعَبْ وَاِنَّا لَهٗ لَحَافِظُوْنَ
তারা বলল, হে আমাদের পিতা! ইউসুফের ব্যাপারে তুমি আমাদেরকে বিশ্বাস করছ না কেন, অথচ আমরা তার শুভাকাঙ্ক্ষী? আগামীকাল তুমি তাকে আমাদের সঙ্গে প্রেরণ করো, সে তৃপ্তি সহকারে খাবে ও খেলাধুলা করবে। আমরা অবশ্যই তার রক্ষণাবেক্ষণ করব। (সূরা ইউসুফু ১১, ১২)
কিন্তু বাবা এতে রাজি হলেন না :
قَالَ اِنِّيْ لَيَحْزُنُنِيْۤ اَنْ تَذْهَبُوْا بِهٖ وَاَخَافُ اَنْ يَّأْكُلَهُ الذِّئْبُ وَاَنْتُمْ عَنْهُ غَافِلُوْنَ
তিনি বললেন, নিশ্চয় এটা আমাকে চিন্তিত করবে যে, তোমরা তাকে নিয়ে যাবে এবং আমি আশঙ্কা করি যে, তাকে নেকড়ে বাঘ খেয়ে ফেলবে। আর তোমরা তার প্রতি অমনোযোগী থাকবে। (সূরা ইউসুফু ১৩)
তারা ইউসুফকে জোর করে নিয়ে গেল :
قَالُوْا لَئِنْ اَكَلَهُ الذِّئْبُ وَنَحْنُ عُصْبَةٌ اِنَّاۤ اِذًا لَّخَاسِرُوْنَ
তারা বলল, আমরা একটি সুসংহত দল হওয়া সত্ত্বেও যদি নেকড়ে বাঘ তাকে খেয়ে ফেলে, তবে তো আমরা ক্ষতিগ্রস্তই হব। (সূরা ইউসুফু ১৪)
ভাইয়েরা ইউসুফ (আঃ) কে একটি কূপে ফেলে দিল :
فَلَمَّا ذَهَبُوْا بِهٖ وَاَجْمَعُوْاۤ اَنْ يَّجْعَلُوْهُ فِيْ غَيَابَةِ الْجُبِّ
অতঃপর তারা তাকে নিয়ে গেল এবং তাকে কূপের গভীরে নিক্ষেপ করতে একমত হলো। (সূরা ইউসুফু ১৫)
আল্লাহ ইউসুফ (আঃ) কে সান্ত্বনা দিলেন :
وَاَوْحَيْنَاۤ اِلَيْهِ لَتُنَبِّئَنَّهُمْ بِاَمْرِهِمْ هٰذَا وَهُمْ لَا يَشْعُرُوْنَ
এমতাবস্থায় আমি তাকে জানিয়ে দিলাম, তুমি তাদেরকে তাদের এ কর্মের কথা অবশ্যই বলে দেবে, যখন তারা তোমাকে চিনবে না। (সূরা ইউসুফু ১৫)
ভাইয়েরা বাবার কাছে এসে মিথ্যা কথা বলল :
وَجَآءُوْاۤ اَبَاهُمْ عِشَآءً يَّبْكُوْنَ ‐ قَالُوْا يَاۤ اَبَانَاۤ اِنَّا ذَهَبْنَا نَسْتَبِقُ وَتَرَكْنَا يُوْسُفَ عِنْدَ مَتَاعِنَا فَاَكَلَهُ الذِّئْبُۚ وَمَاۤ اَنْتَ بِمُؤْمِنٍ لَّنَا وَلَوْ كُنَّا صَادِقِيْنَ
তারা রাত্রির প্রথম প্রহরে কাঁদতে কাঁদতে তাদের পিতার নিকট আসল। তারা বলল, হে আমাদের পিতা! আমরা দৌড়ের প্রতিযোগিতা করছিলাম এবং ইউসুফকে আমাদের মালপত্রের নিকট রেখে গিয়েছিলাম। অতঃপর নেকড়ে বাঘ তাকে খেয়ে ফেলেছে; কিন্তু তুমি তো আমাদেরকে বিশ্বাস করবে না, যদিও আমরা সত্যবাদী হয়ে থাকি। (সূরা ইউসুফু ১৬, ১৭)
তারা ইউসুফ (আঃ) এর জামায় রক্ত লেপন করে নিয়ে আসল :
وَجَآءُوْا عَلٰى قَمِيْصِهٖ بِدَمٍ كَذِبٍ
তারা তার জামায় মিথ্যা রক্ত লেপন করে এনেছিল। (সূরা ইউসুফু ১৮)
পিতা আসল কথা বলে দিলেন এবং সবর করলেন:
قَالَ بَلْ سَوَّلَتْ لَكُمْ اَنْفُسُكُمْ اَمْرًاؕ فَصَبْرٌ جَمِيْلٌؕ وَاللهُ الْمُسْتَعَانُ عَلٰى مَا تَصِفُوْنَ
তিনি বললেন, না বরং তোমরা নিজেরা তোমাদের জন্য একটি কাহিনী সাজিয়ে নিয়েছ। সুতরাং (এখন আমার জন্য) পূর্ণ ধৈর্যধারণ করাই শ্রেয়, তোমরা যা বলছ সে বিষয়ে একমাত্র আল্লাহই আমার সাহায্যস্থল। (সূরা ইউসুফু ১৮)
فَلَمَّا ذَهَبُوْا بِهٖ وَاَجْمَعُوْاۤ اَنْ يَّجْعَلُوْهُ فِيْ غَيَابَةِ الْجُبِّ
অতঃপর তারা তাকে নিয়ে গেল এবং তাকে কূপের গভীরে নিক্ষেপ করতে একমত হলো। (সূরা ইউসুফু ১৫)
আল্লাহ ইউসুফ (আঃ) কে সান্ত্বনা দিলেন :
وَاَوْحَيْنَاۤ اِلَيْهِ لَتُنَبِّئَنَّهُمْ بِاَمْرِهِمْ هٰذَا وَهُمْ لَا يَشْعُرُوْنَ
এমতাবস্থায় আমি তাকে জানিয়ে দিলাম, তুমি তাদেরকে তাদের এ কর্মের কথা অবশ্যই বলে দেবে, যখন তারা তোমাকে চিনবে না। (সূরা ইউসুফু ১৫)
ভাইয়েরা বাবার কাছে এসে মিথ্যা কথা বলল :
وَجَآءُوْاۤ اَبَاهُمْ عِشَآءً يَّبْكُوْنَ ‐ قَالُوْا يَاۤ اَبَانَاۤ اِنَّا ذَهَبْنَا نَسْتَبِقُ وَتَرَكْنَا يُوْسُفَ عِنْدَ مَتَاعِنَا فَاَكَلَهُ الذِّئْبُۚ وَمَاۤ اَنْتَ بِمُؤْمِنٍ لَّنَا وَلَوْ كُنَّا صَادِقِيْنَ
তারা রাত্রির প্রথম প্রহরে কাঁদতে কাঁদতে তাদের পিতার নিকট আসল। তারা বলল, হে আমাদের পিতা! আমরা দৌড়ের প্রতিযোগিতা করছিলাম এবং ইউসুফকে আমাদের মালপত্রের নিকট রেখে গিয়েছিলাম। অতঃপর নেকড়ে বাঘ তাকে খেয়ে ফেলেছে; কিন্তু তুমি তো আমাদেরকে বিশ্বাস করবে না, যদিও আমরা সত্যবাদী হয়ে থাকি। (সূরা ইউসুফু ১৬, ১৭)
তারা ইউসুফ (আঃ) এর জামায় রক্ত লেপন করে নিয়ে আসল :
وَجَآءُوْا عَلٰى قَمِيْصِهٖ بِدَمٍ كَذِبٍ
তারা তার জামায় মিথ্যা রক্ত লেপন করে এনেছিল। (সূরা ইউসুফু ১৮)
পিতা আসল কথা বলে দিলেন এবং সবর করলেন:
قَالَ بَلْ سَوَّلَتْ لَكُمْ اَنْفُسُكُمْ اَمْرًاؕ فَصَبْرٌ جَمِيْلٌؕ وَاللهُ الْمُسْتَعَانُ عَلٰى مَا تَصِفُوْنَ
তিনি বললেন, না বরং তোমরা নিজেরা তোমাদের জন্য একটি কাহিনী সাজিয়ে নিয়েছ। সুতরাং (এখন আমার জন্য) পূর্ণ ধৈর্যধারণ করাই শ্রেয়, তোমরা যা বলছ সে বিষয়ে একমাত্র আল্লাহই আমার সাহায্যস্থল। (সূরা ইউসুফু ১৮)
একটি কাফেলা ইউসুফ (আঃ) কে উঠাল :
وَجَآءَتْ سَيَّارَةٌ فَاَرْسَلُوْا وَارِدَهُمْ فَاَدْلٰى دَلْوَهٗؕ قَالَ يَا بُشْرٰى هٰذَا غُلَامٌؕ وَاَسَرُّوْهُ بِضَاعَةًؕ وَاللهُ عَلِيْمٌ ۢبِمَا يَعْمَلُوْنَ
এক যাত্রীদল আগমন করল। অতঃপর তারা তাদের পানি সংগ্রাহককে প্রেরণ করল। সে তার পানির বালতি নামিয়ে দিল। সে বলে উঠল, কী সুখবর! এ যে এক কিশোর! অতঃপর তারা তাকে পণ্যরূপে লুকিয়ে রাখল। তারা যা করেছিল সে বিষয়ে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত ছিলেন। (সূরা ইউসুফু ১৯)
তারা তাকে অল্প দামে বিক্রি করে দিল :
وَشَرَوْهُ بِثَمَنٍ ۢبَخْسٍ دَرَاهِمَ مَعْدُوْدَةٍۚ وَكَانُوْا فِيْهِ مِنَ الزَّاهِدِيْنَ
তারা তাকে বিক্রয় করল স্বল্প মূল্যে এবং মাত্র কয়েক দিরহামের বিনিময়ে। আর তারা ছিল তার ব্যাপারে নির্লোভ। (সূরা ইউসুফু ২০)
মিসরের বাদশা তাকে কিনে নিলেন :
وَقَالَ الَّذِى اشْتَرَاهُ مِنْ مِّصْرَ لِامْرَاَتِهٖۤ اَكْرِمِيْ مَثْوَاهُ عَسٰۤى اَنْ يَّنْفَعَنَاۤ اَوْ نَتَّخِذَهٗ وَلَدًا
মিসরের যে ব্যক্তি তাকে ক্রয় করেছিল, সে তার স্ত্রীকে বলল, তার থাকার সম্মানজনক ব্যবস্থা করো। সম্ভবত সে আমাদের উপকারে আসবে অথবা আমরা তাকে পুত্র হিসেবে গ্রহণ করব। (সূরা ইউসুফু ২১)
তখন থেকেই ইউসুফ (আঃ) এর উন্নতি শুরু হলো :
وَكَذٰلِكَ مَكَّنَّا لِيُوْسُفَ فِى الْاَرْضِؗ وَلِنُعَلِّمَهٗ مِنْ تَأْوِيْلِ الْاَحَادِيْثِؕ وَاللهُ غَالِبٌ عَلٰۤى اَمْرِهٖ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ
এভাবে আমি ইউসুফকে সে দেশে প্রতিষ্ঠিত করলাম তাকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিক্ষা দেয়ার জন্য। আর আল্লাহ তাঁর কার্য সম্পাদনে অপ্রতিরুদ্ধ; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। (সূরা ইউসুফু ২১)
আল্লাহ ইউসুফ (আঃ) এর জ্ঞান বৃদ্ধি করে দিলেন :
وَلَمَّا بَلَغَ اَشُدَّهٗۤ اٰتَيْنَاهُ حُكْمًا وَّعِلْمًاؕ وَكَذٰلِكَ نَجْزِى الْمُحْسِنِيْنَ
সে যখন পূর্ণ যৌবনে উপনীত হলো, তখন আমি তাকে হেকমত ও জ্ঞান দান করলাম। এভাবেই আমি সৎকর্মপরায়ণদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি। (সূরা ইউসুফু ২২)
وَجَآءَتْ سَيَّارَةٌ فَاَرْسَلُوْا وَارِدَهُمْ فَاَدْلٰى دَلْوَهٗؕ قَالَ يَا بُشْرٰى هٰذَا غُلَامٌؕ وَاَسَرُّوْهُ بِضَاعَةًؕ وَاللهُ عَلِيْمٌ ۢبِمَا يَعْمَلُوْنَ
এক যাত্রীদল আগমন করল। অতঃপর তারা তাদের পানি সংগ্রাহককে প্রেরণ করল। সে তার পানির বালতি নামিয়ে দিল। সে বলে উঠল, কী সুখবর! এ যে এক কিশোর! অতঃপর তারা তাকে পণ্যরূপে লুকিয়ে রাখল। তারা যা করেছিল সে বিষয়ে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত ছিলেন। (সূরা ইউসুফু ১৯)
তারা তাকে অল্প দামে বিক্রি করে দিল :
وَشَرَوْهُ بِثَمَنٍ ۢبَخْسٍ دَرَاهِمَ مَعْدُوْدَةٍۚ وَكَانُوْا فِيْهِ مِنَ الزَّاهِدِيْنَ
তারা তাকে বিক্রয় করল স্বল্প মূল্যে এবং মাত্র কয়েক দিরহামের বিনিময়ে। আর তারা ছিল তার ব্যাপারে নির্লোভ। (সূরা ইউসুফু ২০)
মিসরের বাদশা তাকে কিনে নিলেন :
وَقَالَ الَّذِى اشْتَرَاهُ مِنْ مِّصْرَ لِامْرَاَتِهٖۤ اَكْرِمِيْ مَثْوَاهُ عَسٰۤى اَنْ يَّنْفَعَنَاۤ اَوْ نَتَّخِذَهٗ وَلَدًا
মিসরের যে ব্যক্তি তাকে ক্রয় করেছিল, সে তার স্ত্রীকে বলল, তার থাকার সম্মানজনক ব্যবস্থা করো। সম্ভবত সে আমাদের উপকারে আসবে অথবা আমরা তাকে পুত্র হিসেবে গ্রহণ করব। (সূরা ইউসুফু ২১)
তখন থেকেই ইউসুফ (আঃ) এর উন্নতি শুরু হলো :
وَكَذٰلِكَ مَكَّنَّا لِيُوْسُفَ فِى الْاَرْضِؗ وَلِنُعَلِّمَهٗ مِنْ تَأْوِيْلِ الْاَحَادِيْثِؕ وَاللهُ غَالِبٌ عَلٰۤى اَمْرِهٖ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ
এভাবে আমি ইউসুফকে সে দেশে প্রতিষ্ঠিত করলাম তাকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিক্ষা দেয়ার জন্য। আর আল্লাহ তাঁর কার্য সম্পাদনে অপ্রতিরুদ্ধ; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। (সূরা ইউসুফু ২১)
আল্লাহ ইউসুফ (আঃ) এর জ্ঞান বৃদ্ধি করে দিলেন :
وَلَمَّا بَلَغَ اَشُدَّهٗۤ اٰتَيْنَاهُ حُكْمًا وَّعِلْمًاؕ وَكَذٰلِكَ نَجْزِى الْمُحْسِنِيْنَ
সে যখন পূর্ণ যৌবনে উপনীত হলো, তখন আমি তাকে হেকমত ও জ্ঞান দান করলাম। এভাবেই আমি সৎকর্মপরায়ণদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি। (সূরা ইউসুফু ২২)
বাদশাহর স্ত্রী ইউসুফ (আঃ) কে খারাপ কাজে লিপ্ত করতে চাইল :
وَرَاوَدَتْهُ الَّتِيْ هُوَ فِيْ بَيْتِهَا عَنْ نَّفْسِهٖ وَغَلَّقَتِ الْاَبْوَابَ وَقَالَتْ هَيْتَ لَكَ
সে যে স্ত্রীলোকের গৃহে ছিল, সে তা হতে অসৎকর্ম কামনা করল এবং দরজাগুলো বন্ধ করে দিয়ে বলল, আসো। (সূরা ইউসুফু ২৩)
ইউসুফ (আঃ) আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইলেন :
قَالَ مَعَاذَ اللهِ اِنَّهٗ رَبِّۤيْ اَحْسَنَ مَثْوَايَؕ اِنَّهٗ لَا يُفْلِحُ الظَّالِمُوْنَ
সে বলল, আমি আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করছি, নিশ্চয় তিনি আমার প্রতিপালক। তিনি আমার থাকার জন্য সুন্দর ব্যবস্থা করেছেন। নিশ্চয় সীমালঙ্ঘনকারীরা সফলকাম হয় না। (সূরা ইউসুফু ২৩)
আল্লাহ তাকে পাপ থেকে বাঁচালেন :
وَلَقَدْ هَمَّتْ بِهٖ وَهَمَّ بِهَا ۚ لَوْلَاۤ اَنْ رَّاٰ بُرْهَانَ رَبِّهٖؕ كَذٰلِكَ لِنَصْرِفَ عَنْهُ السُّوْٓءَ وَالْفَحْشَآءَؕ اِنَّهٗ مِنْ عِبَادِنَا الْمُخْلَصِيْنَ
সে রমণী তার প্রতি আসক্ত হয়েছিল এবং সেও তার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ত, যদি সে তার প্রতিপালকের নিদর্শন প্রত্যক্ষ না করত। এভাবেই আমি তাকে নিদর্শন দেখিয়েছিলাম, যাতে করে তাকে মন্দকর্ম ও অশ্লীলতা হতে বিরত রাখতে পারি। নিশ্চয় সে ছিল আমার বিশুদ্ধচিত্ত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা ইউসুফু ২৪)
মহিলা দরজার পাশে তার স্বামীকে দেখতে পেল :
وَاسْتَبَقَا الْبَابَ وَقَدَّتْ قَمِيْصَهٗ مِنْ دُبُرٍ وَّاَلْفَيَا سَيِّدَهَا لَدَى الْبَابِ
তারা উভয়ে দৌড়ে দরজার দিকে গেল এবং স্ত্রীলোকটি পেছন হতে তার জামা ছিঁড়ে ফেলল। অতঃপর তারা স্ত্রীলোকটির স্বামীকে দরজার নিকট পেল। (সূরা ইউসুফু ২৫)
মহিলা ইউসুফ (আঃ) এর উপর দোষ চাপিয়ে দিল :
قَالَتْ مَا جَزَآءُ مَنْ اَرَادَ بِاَهْلِكَ سُوْٓءًا اِلَّاۤ اَنْ يُّسْجَنَ اَوْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
স্ত্রীলোকটি বলল, যে তোমার পরিবারের সাথে কুকর্ম কামনা করে, তার জন্য কারাগারে প্রেরণ অথবা অন্য কোন মর্মান্তিক শাস্তি ব্যতীত আর কী দন্ড হতে পারে? (সূরা ইউসুফু ২৫)
ইউসুফ (আঃ) আসল কথা বলে দিলেন :
قَالَ هِيَ رَاوَدَتْنِيْ عَنْ نَّفْسِيْ
ইউসুফ বলল, সে–ই আমার হতে অসৎকর্ম কামনা করেছিল। (সূরা ইউসুফু ২৬)
পরিশেষে জুলায়খা দোষী সাব্যস্ত হলো :
وَشَهِدَ شَاهِدٌ مِّنْ اَهْلِهَاۚ اِنْ كَانَ قَمِيْصُهٗ قُدَّ مِنْ قُبُلٍ فَصَدَقَتْ وَهُوَ مِنَ الْكَاذِبِيْنَ ‐ وَاِنْ كَانَ قَمِيْصُهٗ قُدَّ مِنْ دُبُرٍ فَكَذَبَتْ وَهُوْ مِنَ الصَّادِقِيْنَ ‐ فَلَمَّا رَاٰى قَمِيْصَهٗ قُدَّ مِنْ دُبُرٍ قَالَ اِنَّهٗ مِنْ كَيْدِكُنَّؕ اِنَّ كَيْدَكُنَّ عَظِيْمٌ
অতঃপর স্ত্রীলোকটির পরিবারের একজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিল, যদি তার জামা সম্মুখ দিক হতে ছিন্ন করা হয়ে থাকে, তবে স্ত্রীলোকটি সত্য কথা বলেছে এবং পুরুষটি মিথ্যাবাদী। আর যদি তার জামা পেছন দিক হতে ছিন্ন করা হয়ে থাকে, তবে স্ত্রীলোকটি মিথ্যা বলেছে এবং পুরুষটি সত্যবাদী। গৃহস্বামী যখন দেখল যে, তার জামা পেছন দিক হতে ছিন্ন করা হয়েছে তখন সে বলল, নিশ্চয় এটা তোমাদের ছলনামাত্র, নিশ্চয় তোমাদের ছলনা খুবই মারাত্মক। (সূরা ইউসুফ, ২৬–২৮)
স্বামী দু’জনকে উপদেশ দিলেন :
يُوْسُفُ اَعْرِضْ عَنْ هٰذَا وَاسْتَغْفِرِيْ لِذَنْۢبِكِۚ اِنَّكِ كُنْتِ مِنَ الْخَاطِئِيْنَ
হে ইউসুফ! তুমি এটা উপেক্ষা করো। আর হে নারী! তুমি তোমার অপরাধের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করো; নিশ্চয় তুমি অপরাধীদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা ইউসুফু ২৯)
এ খবর শুনে শহরের মহিলারা জুলায়খার নিন্দা করল :
وَقَالَ نِسْوَةٌ فِى الْمَدِيْنَةِ امْرَاَةُ الْعَزِيْزِ تُرَاوِدُ فَتَاهَا عَنْ نَّفْسِهٖۚ قَدْ شَغَفَهَا حُبًّاؕ اِنَّا لَنَرَاهَا فِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ
নগরে কতিপয় নারী বলল, আযীযের স্ত্রী তার যুবক দাস হতে অসৎকর্ম কামনা করেছে, প্রেম তাকে উন্মত্ত করে দিয়েছে; আমরা তো তাকে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে দেখতে পাচ্ছি। (সূরা ইউসুফু ৩০)
সে শহরের মহিলাদেরকে দাওয়াত দিল ও ফল কাটার জন্য ছুরি দিল :
فَلَمَّا سَمِعَتْ بِمَكْرِهِنَّ اَرْسَلَتْ اِلَيْهِنَّ وَاَعْتَدَتْ لَهُنَّ مُتَّكَأً وَّاٰتَتْ كُلَّ وَاحِدَةٍ مِّنْهُنَّ سِكِّيْنًا
যখন স্ত্রীলোকটি তাদের ষড়যন্ত্রের কথা শুনল, তখন সে তাদেরকে ডেকে পাঠাল। আর তাদের জন্য আসন প্রস্তুত করল এবং তাদের প্রত্যেককে একটি করে ছুরি দিল। (সূরা ইউসুফু ৩১)
ইউসুফ (আঃ) কে দেখে তারা অবাক হয়ে নিজেদের হাত কেটে ফেলল :
وَقَالَتِ اخْرُجْ عَلَيْهِنَّۚ فَلَمَّا رَاَيْنَهٗۤ اَكْبَرْنَهٗ وَقَطَّعْنَ اَيْدِيَهُنَّؗ وَقُلْنَ حَاشَ لِلّٰهِ مَا هٰذَا بَشَرًاؕ اِنْ هٰذَاۤ اِلَّا مَلَكٌ كَرِيْمٌ
স্ত্রীলোকটি ইউসুফকে বলল, তাদের সম্মুখে বের হও। অতঃপর তারা যখন তাকে দেখল, তখন তারা অভিভূত হলো এবং নিজেদের হাত কেটে ফেলল। তারা বলল, অদ্ভুত আল্লাহর মাহাত্ম্য! এ তো মানুষ নয়, এ তো এক সম্মানিত ফেরেশতা। (সূরা ইউসুফু ৩১)
জুলায়খা এভাবে নিন্দার জবাব দিল ও তার দোষ স্বীকার করল :
قَالَتْ فَذٰلِكُنَّ الَّذِيْ لُمْتُنَّنِيْ فِيْهِؕ وَلَقَدْ رَاوَدْتُّهٗ عَنْ نَّفْسِهٖ فَاسْتَعْصَمَ
সে বলল, এ–ই সে যার সম্বন্ধে তোমরা আমার নিন্দা করেছ। আমি তো তা হতে অসৎকর্ম কামনা করেছি, কিন্তু সে নিজেকে পবিত্র রেখেছে। (সূরা ইউসুফু ৩২)
وَرَاوَدَتْهُ الَّتِيْ هُوَ فِيْ بَيْتِهَا عَنْ نَّفْسِهٖ وَغَلَّقَتِ الْاَبْوَابَ وَقَالَتْ هَيْتَ لَكَ
সে যে স্ত্রীলোকের গৃহে ছিল, সে তা হতে অসৎকর্ম কামনা করল এবং দরজাগুলো বন্ধ করে দিয়ে বলল, আসো। (সূরা ইউসুফু ২৩)
ইউসুফ (আঃ) আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইলেন :
قَالَ مَعَاذَ اللهِ اِنَّهٗ رَبِّۤيْ اَحْسَنَ مَثْوَايَؕ اِنَّهٗ لَا يُفْلِحُ الظَّالِمُوْنَ
সে বলল, আমি আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করছি, নিশ্চয় তিনি আমার প্রতিপালক। তিনি আমার থাকার জন্য সুন্দর ব্যবস্থা করেছেন। নিশ্চয় সীমালঙ্ঘনকারীরা সফলকাম হয় না। (সূরা ইউসুফু ২৩)
আল্লাহ তাকে পাপ থেকে বাঁচালেন :
وَلَقَدْ هَمَّتْ بِهٖ وَهَمَّ بِهَا ۚ لَوْلَاۤ اَنْ رَّاٰ بُرْهَانَ رَبِّهٖؕ كَذٰلِكَ لِنَصْرِفَ عَنْهُ السُّوْٓءَ وَالْفَحْشَآءَؕ اِنَّهٗ مِنْ عِبَادِنَا الْمُخْلَصِيْنَ
সে রমণী তার প্রতি আসক্ত হয়েছিল এবং সেও তার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ত, যদি সে তার প্রতিপালকের নিদর্শন প্রত্যক্ষ না করত। এভাবেই আমি তাকে নিদর্শন দেখিয়েছিলাম, যাতে করে তাকে মন্দকর্ম ও অশ্লীলতা হতে বিরত রাখতে পারি। নিশ্চয় সে ছিল আমার বিশুদ্ধচিত্ত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা ইউসুফু ২৪)
মহিলা দরজার পাশে তার স্বামীকে দেখতে পেল :
وَاسْتَبَقَا الْبَابَ وَقَدَّتْ قَمِيْصَهٗ مِنْ دُبُرٍ وَّاَلْفَيَا سَيِّدَهَا لَدَى الْبَابِ
তারা উভয়ে দৌড়ে দরজার দিকে গেল এবং স্ত্রীলোকটি পেছন হতে তার জামা ছিঁড়ে ফেলল। অতঃপর তারা স্ত্রীলোকটির স্বামীকে দরজার নিকট পেল। (সূরা ইউসুফু ২৫)
মহিলা ইউসুফ (আঃ) এর উপর দোষ চাপিয়ে দিল :
قَالَتْ مَا جَزَآءُ مَنْ اَرَادَ بِاَهْلِكَ سُوْٓءًا اِلَّاۤ اَنْ يُّسْجَنَ اَوْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
স্ত্রীলোকটি বলল, যে তোমার পরিবারের সাথে কুকর্ম কামনা করে, তার জন্য কারাগারে প্রেরণ অথবা অন্য কোন মর্মান্তিক শাস্তি ব্যতীত আর কী দন্ড হতে পারে? (সূরা ইউসুফু ২৫)
ইউসুফ (আঃ) আসল কথা বলে দিলেন :
قَالَ هِيَ رَاوَدَتْنِيْ عَنْ نَّفْسِيْ
ইউসুফ বলল, সে–ই আমার হতে অসৎকর্ম কামনা করেছিল। (সূরা ইউসুফু ২৬)
পরিশেষে জুলায়খা দোষী সাব্যস্ত হলো :
وَشَهِدَ شَاهِدٌ مِّنْ اَهْلِهَاۚ اِنْ كَانَ قَمِيْصُهٗ قُدَّ مِنْ قُبُلٍ فَصَدَقَتْ وَهُوَ مِنَ الْكَاذِبِيْنَ ‐ وَاِنْ كَانَ قَمِيْصُهٗ قُدَّ مِنْ دُبُرٍ فَكَذَبَتْ وَهُوْ مِنَ الصَّادِقِيْنَ ‐ فَلَمَّا رَاٰى قَمِيْصَهٗ قُدَّ مِنْ دُبُرٍ قَالَ اِنَّهٗ مِنْ كَيْدِكُنَّؕ اِنَّ كَيْدَكُنَّ عَظِيْمٌ
অতঃপর স্ত্রীলোকটির পরিবারের একজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিল, যদি তার জামা সম্মুখ দিক হতে ছিন্ন করা হয়ে থাকে, তবে স্ত্রীলোকটি সত্য কথা বলেছে এবং পুরুষটি মিথ্যাবাদী। আর যদি তার জামা পেছন দিক হতে ছিন্ন করা হয়ে থাকে, তবে স্ত্রীলোকটি মিথ্যা বলেছে এবং পুরুষটি সত্যবাদী। গৃহস্বামী যখন দেখল যে, তার জামা পেছন দিক হতে ছিন্ন করা হয়েছে তখন সে বলল, নিশ্চয় এটা তোমাদের ছলনামাত্র, নিশ্চয় তোমাদের ছলনা খুবই মারাত্মক। (সূরা ইউসুফ, ২৬–২৮)
স্বামী দু’জনকে উপদেশ দিলেন :
يُوْسُفُ اَعْرِضْ عَنْ هٰذَا وَاسْتَغْفِرِيْ لِذَنْۢبِكِۚ اِنَّكِ كُنْتِ مِنَ الْخَاطِئِيْنَ
হে ইউসুফ! তুমি এটা উপেক্ষা করো। আর হে নারী! তুমি তোমার অপরাধের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করো; নিশ্চয় তুমি অপরাধীদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা ইউসুফু ২৯)
এ খবর শুনে শহরের মহিলারা জুলায়খার নিন্দা করল :
وَقَالَ نِسْوَةٌ فِى الْمَدِيْنَةِ امْرَاَةُ الْعَزِيْزِ تُرَاوِدُ فَتَاهَا عَنْ نَّفْسِهٖۚ قَدْ شَغَفَهَا حُبًّاؕ اِنَّا لَنَرَاهَا فِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ
নগরে কতিপয় নারী বলল, আযীযের স্ত্রী তার যুবক দাস হতে অসৎকর্ম কামনা করেছে, প্রেম তাকে উন্মত্ত করে দিয়েছে; আমরা তো তাকে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে দেখতে পাচ্ছি। (সূরা ইউসুফু ৩০)
সে শহরের মহিলাদেরকে দাওয়াত দিল ও ফল কাটার জন্য ছুরি দিল :
فَلَمَّا سَمِعَتْ بِمَكْرِهِنَّ اَرْسَلَتْ اِلَيْهِنَّ وَاَعْتَدَتْ لَهُنَّ مُتَّكَأً وَّاٰتَتْ كُلَّ وَاحِدَةٍ مِّنْهُنَّ سِكِّيْنًا
যখন স্ত্রীলোকটি তাদের ষড়যন্ত্রের কথা শুনল, তখন সে তাদেরকে ডেকে পাঠাল। আর তাদের জন্য আসন প্রস্তুত করল এবং তাদের প্রত্যেককে একটি করে ছুরি দিল। (সূরা ইউসুফু ৩১)
ইউসুফ (আঃ) কে দেখে তারা অবাক হয়ে নিজেদের হাত কেটে ফেলল :
وَقَالَتِ اخْرُجْ عَلَيْهِنَّۚ فَلَمَّا رَاَيْنَهٗۤ اَكْبَرْنَهٗ وَقَطَّعْنَ اَيْدِيَهُنَّؗ وَقُلْنَ حَاشَ لِلّٰهِ مَا هٰذَا بَشَرًاؕ اِنْ هٰذَاۤ اِلَّا مَلَكٌ كَرِيْمٌ
স্ত্রীলোকটি ইউসুফকে বলল, তাদের সম্মুখে বের হও। অতঃপর তারা যখন তাকে দেখল, তখন তারা অভিভূত হলো এবং নিজেদের হাত কেটে ফেলল। তারা বলল, অদ্ভুত আল্লাহর মাহাত্ম্য! এ তো মানুষ নয়, এ তো এক সম্মানিত ফেরেশতা। (সূরা ইউসুফু ৩১)
জুলায়খা এভাবে নিন্দার জবাব দিল ও তার দোষ স্বীকার করল :
قَالَتْ فَذٰلِكُنَّ الَّذِيْ لُمْتُنَّنِيْ فِيْهِؕ وَلَقَدْ رَاوَدْتُّهٗ عَنْ نَّفْسِهٖ فَاسْتَعْصَمَ
সে বলল, এ–ই সে যার সম্বন্ধে তোমরা আমার নিন্দা করেছ। আমি তো তা হতে অসৎকর্ম কামনা করেছি, কিন্তু সে নিজেকে পবিত্র রেখেছে। (সূরা ইউসুফু ৩২)
জুলায়খা ইউসুফ (আঃ) কে কারাগারে পাঠানোর হুমকি দিল :
وَلَئِنْ لَّمْ يَفْعَلْ مَاۤ اٰمُرُهٗ لَيُسْجَنَنَّ وَلَيَكُوْنًا مِّنَ الصَّاغِرِيْنَ
আমি তাকে যা আদেশ করেছি সে যদি তা না করে, তবে সে কারারুদ্ধ হবেই এবং সে হীনদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা ইউসুফু ৩২)
ইউসুফ (আঃ) পাপে না জড়িয়ে কারাগারকে বরণ করে নিলেন :
قَالَ رَبِّ السِّجْنُ اَحَبُّ اِلَيَّ مِمَّا يَدْعُوْنَنِيْۤ اِلَيْهِۚ وَاِلَّا تَصْرِفْ عَنِّيْ كَيْدَهُنَّ اَصْبُ اِلَيْهِنَّ وَاَكُنْ مِّنَ الْجَاهِلِيْنَ
ইউসুফ বলল, হে আমার প্রতিপালক! এ নারীগণ আমাকে যার প্রতি আহবান করছে তার চেয়ে কারাগার আমার নিকট অধিক প্রিয়। আপনি যদি তাদের ছলনা হতে আমাকে রক্ষা না করেন, তবে আমি তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ব এবং অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব। (সূরা ইউসুফু ৩৩)
আল্লাহ তাকে পাপ থেকে বাঁচালেন :
فَاسْتَجَابَ لَهٗ رَبُّهٗ فَصَرَفَ عَنْهُ كَيْدَهُنَّؕ اِنَّهٗ هُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
অতঃপর তার প্রতিপালক তার আহবানে সাড়া দিলেন এবং তাকে তাদের ছলনা হতে রক্ষা করলেন। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা ইউসুফু ৩৪)
ব্যাখ্যা : উনিশ/বিশ বছরের এক সুন্দর যুবক। বলিষ্ঠ ও সুঠাম দেহী। আত্মীয়স্বজন থেকে বিচ্ছিন্ন প্রবাস জীবন, দেশান্তর ও দাসত্বের পর্যায় অতিক্রম করার পর ভাগ্য তাকে রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তির বাড়িতে টেনে এনেছে। এখানে এ বাড়ির যে বেগম সাহেবার সাথে সকাল-বিকাল উঠাবসা করতে হয়, প্রথমে সে-ই তার পেছনে লাগে। তারপর সারা শহরের অভিজাত পরিবারের মেয়েরা তার প্রেমে হাবুডুবু খেতে থাকে। তার ভাবাবেগকে উসকিয়ে দেয়ার এবং তার ধার্মিকতাকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করার জন্য সবধরনের কৌশল অবলম্বন করতে থাকে। পাপের অসংখ্য দরজা তার অপেক্ষায় খোলা আছে। এ অবস্থায় নজীরবিহীন পরহেযগারীর দৃষ্টান্ত স্থাপনের পরও তাঁর মনে কখনো এ মর্মে অহমিকা জাগেনি যে, বাহ! কত মজবুত আমার চরিত্র। এতো সুন্দরী ও যুবতী মেয়েরা আমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে, কিন্তু এরপরও আমার পদস্খলন হয়নি। বরং এর পরিবর্তে তিনি নিজের মানবিক দুর্বলতার কথা চিন্তা করে ভয়ে কেঁপে উঠেছেন এবং অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে আল্লাহর কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন জানিয়ে বলেছেন, হে আমার রব! আমি একজন দুর্বল মানুষ। তুমি আমাকে সহায়তা দান করো এবং আমাকে বাঁচাও। যার ফলে জেলখানার ভেতরে বাইরে সবাই জানত, এ ব্যক্তি কোন অপরাধী নয় বরং একজন অত্যন্ত সদাচারী পুরুষ। কঠিন পরীক্ষায় তিনি নিজের আল্লাহভীতি ও আল্লাহর হুকুম মেনে চলার প্রমাণ পেশ করেছেন। এ কারণে শুধু কয়েদীরাই তাঁকে শ্রদ্ধার চোখে দেখত না বরং কারাগারের পরিচালক এবং কর্মচারীরাও তাঁকে শ্রদ্ধা করত।
ইউসুফ (আঃ) কে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হলো :
ثُمَّ بَدَا لَهُمْ مِّنْ ۢبَعْدِ مَا رَاَوُا الْاٰيَاتِ لَيَسْجُنُنَّهٗ حَتّٰى حِيْنٍ
নিদর্শনাবলি দেখার পর তাদের মনে হলো যে, তাকে কিছু কালের জন্য কারারুদ্ধ করতেই হবে। (সূরা ইউসুফু ৩৫)
ব্যাখ্যা : কাউকে ইনসাফের শর্তানুযায়ী আদালতে অপরাধী প্রমাণ না করেই খেয়ালখুশীমতো গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া অত্যাচারী শাসকদের পুরাতন রীতি। এ ব্যাপারে আজকের শয়তানরাও চার হাজার বছর আগের শয়তানদের থেকে ভিন্ন নয়। তারা প্রত্যেকটি অন্যায় কাজের জন্য প্রথমে একটি আইন তৈরি করে নেয় এবং নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য মানুষের উপর যুলুম অত্যাচার চালায় আর দুনিয়াবাসীকে বুঝানোর চেষ্টা করে যে, তার কারণে শুধু নিজের নয় বরং দেশ ও জাতির জন্যও ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। তারা শুধু যালিমই নয়, সেই সাথে মিথ্যুক ও নির্লজ্জও বটে।
কারাগারে দু’জন যুবক ইউসুফ (আঃ) এর কাছে স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানতে চাইল :
وَدَخَلَ مَعَهُ السِّجْنَ فَتَيَانِؕ قَالَ اَحَدُهُمَاۤ اِنِّۤيْ اَرَانِۤيْ اَعْصِرُ خَمْرًاۚ وَقَالَ الْاٰخَرُ اِنِّۤيْ اَرَانِۤيْ اَحْمِلُ فَوْقَ رَأْسِيْ خُبْزًا تَأْكُلُ الطَّيْرُ مِنْهُؕ نَبِّئْنَا بِتَأْوِيْلِهٖۚ اِنَّا نَرَاكَ مِنَ الْمُحْسِنِيْنَ
তার সাথে আরো দু’জন যুবক কারাগারে প্রবেশ করল। তাদের একজন বলল, আমি স্বপ্নে দেখলাম, আমি আঙ্গুর নিংড়িয়ে রস বের করছি। আর অপরজন বলল, আমি স্বপ্নে দেখলাম, আমি আমার মাথার উপর রুটি বহন করছি এবং পাখী তা হতে খাচ্ছে। আমাদেরকে তুমি এটার তাৎপর্য জানিয়ে দাও, আমরা তো তোমাকে সৎকর্মপরায়ণ হিসেবেই দেখছি। (সূরা ইউসুফু ৩৬)
তিনি স্বপ্নের ব্যাখ্যা বলার আশ্বাস দিলেন :
قَالَ لَا يَأْتِيْكُمَا طَعَامٌ تُرْزَقَانِهٖۤ اِلَّا نَبَّأْتُكُمَا بِتَأْوِيْلِهٖ قَبْلَ اَنْ يَّأْتِيَكُمَاؕ ذٰلِكُمَا مِمَّا عَلَّمَنِيْ رَبِّيْ
ইউসুফ বলল, তোমাদেরকে যে খাদ্য দেয়া হয় তা আসার পূর্বে আমি তোমাদেরকে স্বপ্নের তাৎপর্য জানিয়ে দেব। আমি তোমাদেরকে যা বলব তা আমার প্রতিপালক আমাকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তা হতেই বলব। (সূরা ইউসুফু ৩৭)
وَلَئِنْ لَّمْ يَفْعَلْ مَاۤ اٰمُرُهٗ لَيُسْجَنَنَّ وَلَيَكُوْنًا مِّنَ الصَّاغِرِيْنَ
আমি তাকে যা আদেশ করেছি সে যদি তা না করে, তবে সে কারারুদ্ধ হবেই এবং সে হীনদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা ইউসুফু ৩২)
ইউসুফ (আঃ) পাপে না জড়িয়ে কারাগারকে বরণ করে নিলেন :
قَالَ رَبِّ السِّجْنُ اَحَبُّ اِلَيَّ مِمَّا يَدْعُوْنَنِيْۤ اِلَيْهِۚ وَاِلَّا تَصْرِفْ عَنِّيْ كَيْدَهُنَّ اَصْبُ اِلَيْهِنَّ وَاَكُنْ مِّنَ الْجَاهِلِيْنَ
ইউসুফ বলল, হে আমার প্রতিপালক! এ নারীগণ আমাকে যার প্রতি আহবান করছে তার চেয়ে কারাগার আমার নিকট অধিক প্রিয়। আপনি যদি তাদের ছলনা হতে আমাকে রক্ষা না করেন, তবে আমি তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ব এবং অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব। (সূরা ইউসুফু ৩৩)
আল্লাহ তাকে পাপ থেকে বাঁচালেন :
فَاسْتَجَابَ لَهٗ رَبُّهٗ فَصَرَفَ عَنْهُ كَيْدَهُنَّؕ اِنَّهٗ هُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
অতঃপর তার প্রতিপালক তার আহবানে সাড়া দিলেন এবং তাকে তাদের ছলনা হতে রক্ষা করলেন। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা ইউসুফু ৩৪)
ব্যাখ্যা : উনিশ/বিশ বছরের এক সুন্দর যুবক। বলিষ্ঠ ও সুঠাম দেহী। আত্মীয়স্বজন থেকে বিচ্ছিন্ন প্রবাস জীবন, দেশান্তর ও দাসত্বের পর্যায় অতিক্রম করার পর ভাগ্য তাকে রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তির বাড়িতে টেনে এনেছে। এখানে এ বাড়ির যে বেগম সাহেবার সাথে সকাল-বিকাল উঠাবসা করতে হয়, প্রথমে সে-ই তার পেছনে লাগে। তারপর সারা শহরের অভিজাত পরিবারের মেয়েরা তার প্রেমে হাবুডুবু খেতে থাকে। তার ভাবাবেগকে উসকিয়ে দেয়ার এবং তার ধার্মিকতাকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করার জন্য সবধরনের কৌশল অবলম্বন করতে থাকে। পাপের অসংখ্য দরজা তার অপেক্ষায় খোলা আছে। এ অবস্থায় নজীরবিহীন পরহেযগারীর দৃষ্টান্ত স্থাপনের পরও তাঁর মনে কখনো এ মর্মে অহমিকা জাগেনি যে, বাহ! কত মজবুত আমার চরিত্র। এতো সুন্দরী ও যুবতী মেয়েরা আমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে, কিন্তু এরপরও আমার পদস্খলন হয়নি। বরং এর পরিবর্তে তিনি নিজের মানবিক দুর্বলতার কথা চিন্তা করে ভয়ে কেঁপে উঠেছেন এবং অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে আল্লাহর কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন জানিয়ে বলেছেন, হে আমার রব! আমি একজন দুর্বল মানুষ। তুমি আমাকে সহায়তা দান করো এবং আমাকে বাঁচাও। যার ফলে জেলখানার ভেতরে বাইরে সবাই জানত, এ ব্যক্তি কোন অপরাধী নয় বরং একজন অত্যন্ত সদাচারী পুরুষ। কঠিন পরীক্ষায় তিনি নিজের আল্লাহভীতি ও আল্লাহর হুকুম মেনে চলার প্রমাণ পেশ করেছেন। এ কারণে শুধু কয়েদীরাই তাঁকে শ্রদ্ধার চোখে দেখত না বরং কারাগারের পরিচালক এবং কর্মচারীরাও তাঁকে শ্রদ্ধা করত।
ইউসুফ (আঃ) কে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হলো :
ثُمَّ بَدَا لَهُمْ مِّنْ ۢبَعْدِ مَا رَاَوُا الْاٰيَاتِ لَيَسْجُنُنَّهٗ حَتّٰى حِيْنٍ
নিদর্শনাবলি দেখার পর তাদের মনে হলো যে, তাকে কিছু কালের জন্য কারারুদ্ধ করতেই হবে। (সূরা ইউসুফু ৩৫)
ব্যাখ্যা : কাউকে ইনসাফের শর্তানুযায়ী আদালতে অপরাধী প্রমাণ না করেই খেয়ালখুশীমতো গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া অত্যাচারী শাসকদের পুরাতন রীতি। এ ব্যাপারে আজকের শয়তানরাও চার হাজার বছর আগের শয়তানদের থেকে ভিন্ন নয়। তারা প্রত্যেকটি অন্যায় কাজের জন্য প্রথমে একটি আইন তৈরি করে নেয় এবং নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য মানুষের উপর যুলুম অত্যাচার চালায় আর দুনিয়াবাসীকে বুঝানোর চেষ্টা করে যে, তার কারণে শুধু নিজের নয় বরং দেশ ও জাতির জন্যও ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। তারা শুধু যালিমই নয়, সেই সাথে মিথ্যুক ও নির্লজ্জও বটে।
কারাগারে দু’জন যুবক ইউসুফ (আঃ) এর কাছে স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানতে চাইল :
وَدَخَلَ مَعَهُ السِّجْنَ فَتَيَانِؕ قَالَ اَحَدُهُمَاۤ اِنِّۤيْ اَرَانِۤيْ اَعْصِرُ خَمْرًاۚ وَقَالَ الْاٰخَرُ اِنِّۤيْ اَرَانِۤيْ اَحْمِلُ فَوْقَ رَأْسِيْ خُبْزًا تَأْكُلُ الطَّيْرُ مِنْهُؕ نَبِّئْنَا بِتَأْوِيْلِهٖۚ اِنَّا نَرَاكَ مِنَ الْمُحْسِنِيْنَ
তার সাথে আরো দু’জন যুবক কারাগারে প্রবেশ করল। তাদের একজন বলল, আমি স্বপ্নে দেখলাম, আমি আঙ্গুর নিংড়িয়ে রস বের করছি। আর অপরজন বলল, আমি স্বপ্নে দেখলাম, আমি আমার মাথার উপর রুটি বহন করছি এবং পাখী তা হতে খাচ্ছে। আমাদেরকে তুমি এটার তাৎপর্য জানিয়ে দাও, আমরা তো তোমাকে সৎকর্মপরায়ণ হিসেবেই দেখছি। (সূরা ইউসুফু ৩৬)
তিনি স্বপ্নের ব্যাখ্যা বলার আশ্বাস দিলেন :
قَالَ لَا يَأْتِيْكُمَا طَعَامٌ تُرْزَقَانِهٖۤ اِلَّا نَبَّأْتُكُمَا بِتَأْوِيْلِهٖ قَبْلَ اَنْ يَّأْتِيَكُمَاؕ ذٰلِكُمَا مِمَّا عَلَّمَنِيْ رَبِّيْ
ইউসুফ বলল, তোমাদেরকে যে খাদ্য দেয়া হয় তা আসার পূর্বে আমি তোমাদেরকে স্বপ্নের তাৎপর্য জানিয়ে দেব। আমি তোমাদেরকে যা বলব তা আমার প্রতিপালক আমাকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তা হতেই বলব। (সূরা ইউসুফু ৩৭)
এ সুযোগে ইউসুফ (আঃ) দাওয়াতী কাজ শুরু করলেন :
اِنِّيْ تَرَكْتُ مِلَّةَ قَوْمٍ لَّا يُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَهُمْ بِالْاٰخِرَةِ هُمْ كَافِرُوْنَ
নিশ্চয় আমি ঐ সম্প্রদায়কে বর্জন করেছি, যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে না ও আখিরাতের ব্যাপারে অবিশ্বাসী। (সূরা ইউসুফু ৩৭)
শিরকের বিরুদ্ধে কথা বললেন :
وَاتَّبَعْتُ مِلَّةَ اٰبَآئِىْۤ اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَؕ مَا كَانَ لَنَاۤ اَنْ نُّشْرِكَ بِاللهِ مِنْ شَيْءٍؕ ذٰلِكَ مِنْ فَضْلِ اللهِ عَلَيْنَا وَعَلَى النَّاسِ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَشْكُرُوْنَ ‐ يَا صَاحِبَيِ السِّجْنِ اَاَرْبَابٌ مُّتَفَرِّقُوْنَ خَيْرٌ اَمِ اللهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ
আমি আমার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম, ইসহাক এবং ইয়াকূবের মতবাদ অনুসরণ করি। আল্লাহর সাথে কোন বস্তুকে শরীক করা আমাদের কাজ নয়। এটা আমাদের ও সমস্ত মানুষের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। হে কারাসঙ্গীদ্বয়! ভিন্ন ভিন্ন বহু প্রতিপালক শ্রেয়, না পরাক্রমশালী এক আল্লাহ? (সূরা ইউসুফু ৩৮, ৩৯)
মূর্তিপূজার কঠোর নিন্দা করলেন :
مَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖۤ اِلَّاۤ اَسْمَآءً سَمَّيْتُمُوْهَاۤ اَنْتُمْ وَاٰبَآؤُكُمْ مَّاۤ اَنْزَلَ اللهُ بِهَا مِنْ سُلْطَانٍ
তাঁকে ছেড়ে তোমরা কেবল কতকগুলো নামের ইবাদাত করছ, যে নামগুলো তোমাদের পিতৃপুরুষ ও তোমরা রেখেছ; এগুলোর কোন প্রমাণ আল্লাহ পাঠাননি। (সূরা ইউসুফু ৪০)
দ্বীনের মূলকথা বলে দিলেন :
اِنِ الْحُكْمُ اِلَّا لِلّٰهِؕ اَمَرَ اَ لَّا تَعْبُدُوْاۤ اِلَّاۤ اِيَّاهُ ؕ ذٰلِكَ الدِّيْنُ الْقَيِّمُ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ
বিধান দেয়ার অধিকার কেবল আল্লাহরই। তিনি আদেশ দিয়েছেন কেবল তাঁকে ব্যতীত অন্য কারো ইবাদাত না করতে। এটাই শাশ্বত দ্বীন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। (সূরা ইউসুফু ৪০)
এবার স্বপ্নের ব্যাখ্যা বললেন :
يَا صَاحِبَيِ السِّجْنِ اَمَّاۤ اَحَدُكُمَا فَيَسْقِيْ رَبَّهٗ خَمْرًاۚ وَاَمَّا الْاٰخَرُ فَيُصْلَبُ فَتَأْكُلُ الطَّيْرُ مِنْ رَّأْسِهٖؕ قُضِيَ الْاَمْرُ الَّذِيْ فِيْهِ تَسْتَفْتِيَانِ
হে কারাসঙ্গীদ্বয়! তোমাদের দু’জনের একজন তার প্রভুকে মদ্য পান করাবে এবং অপরজন শূলবিদ্ধ হবে। অতঃপর তার মস্তক হতে পাখী আহার করবে। যে বিষয়ে তোমরা জানতে চেয়েছ তার সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। (সূরা ইউসুফু ৪১)
মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তির নিকট একটি আবেদন করলেন :
وَقَالَ لِلَّذِيْ ظَنَّ اَنَّهٗ نَاجٍ مِّنْهُمَا اذْكُرْنِيْ عِنْدَ رَبِّكَ
ইউসুফ তাদের মধ্যে যে মুক্তি পাবে মনে করল তাকে বলল, তোমার প্রভুর নিকট আমার কথা বলো। (সূরা ইউসুফু ৪২)
কিন্তু শয়তান তাকে ভুলিয়ে দেয় :
فَاَنْسَاهُ الشَّيْطَانُ ذِكْرَ رَبِّهٖ فَلَبِثَ فِى السِّجْنِ بِضْعَ سِنِيْنَ
কিন্তু শয়তান তাকে তার প্রভুর নিকট উপস্থাপনের বিষয়টি ভুলিয়ে দিল। অতঃপর ইউসুফ কয়েক বৎসর কারাগারে থেকে গেল। (সূরা ইউসুফু ৪২)
اِنِّيْ تَرَكْتُ مِلَّةَ قَوْمٍ لَّا يُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَهُمْ بِالْاٰخِرَةِ هُمْ كَافِرُوْنَ
নিশ্চয় আমি ঐ সম্প্রদায়কে বর্জন করেছি, যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে না ও আখিরাতের ব্যাপারে অবিশ্বাসী। (সূরা ইউসুফু ৩৭)
শিরকের বিরুদ্ধে কথা বললেন :
وَاتَّبَعْتُ مِلَّةَ اٰبَآئِىْۤ اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَؕ مَا كَانَ لَنَاۤ اَنْ نُّشْرِكَ بِاللهِ مِنْ شَيْءٍؕ ذٰلِكَ مِنْ فَضْلِ اللهِ عَلَيْنَا وَعَلَى النَّاسِ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَشْكُرُوْنَ ‐ يَا صَاحِبَيِ السِّجْنِ اَاَرْبَابٌ مُّتَفَرِّقُوْنَ خَيْرٌ اَمِ اللهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ
আমি আমার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম, ইসহাক এবং ইয়াকূবের মতবাদ অনুসরণ করি। আল্লাহর সাথে কোন বস্তুকে শরীক করা আমাদের কাজ নয়। এটা আমাদের ও সমস্ত মানুষের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। হে কারাসঙ্গীদ্বয়! ভিন্ন ভিন্ন বহু প্রতিপালক শ্রেয়, না পরাক্রমশালী এক আল্লাহ? (সূরা ইউসুফু ৩৮, ৩৯)
মূর্তিপূজার কঠোর নিন্দা করলেন :
مَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖۤ اِلَّاۤ اَسْمَآءً سَمَّيْتُمُوْهَاۤ اَنْتُمْ وَاٰبَآؤُكُمْ مَّاۤ اَنْزَلَ اللهُ بِهَا مِنْ سُلْطَانٍ
তাঁকে ছেড়ে তোমরা কেবল কতকগুলো নামের ইবাদাত করছ, যে নামগুলো তোমাদের পিতৃপুরুষ ও তোমরা রেখেছ; এগুলোর কোন প্রমাণ আল্লাহ পাঠাননি। (সূরা ইউসুফু ৪০)
দ্বীনের মূলকথা বলে দিলেন :
اِنِ الْحُكْمُ اِلَّا لِلّٰهِؕ اَمَرَ اَ لَّا تَعْبُدُوْاۤ اِلَّاۤ اِيَّاهُ ؕ ذٰلِكَ الدِّيْنُ الْقَيِّمُ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ
বিধান দেয়ার অধিকার কেবল আল্লাহরই। তিনি আদেশ দিয়েছেন কেবল তাঁকে ব্যতীত অন্য কারো ইবাদাত না করতে। এটাই শাশ্বত দ্বীন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। (সূরা ইউসুফু ৪০)
এবার স্বপ্নের ব্যাখ্যা বললেন :
يَا صَاحِبَيِ السِّجْنِ اَمَّاۤ اَحَدُكُمَا فَيَسْقِيْ رَبَّهٗ خَمْرًاۚ وَاَمَّا الْاٰخَرُ فَيُصْلَبُ فَتَأْكُلُ الطَّيْرُ مِنْ رَّأْسِهٖؕ قُضِيَ الْاَمْرُ الَّذِيْ فِيْهِ تَسْتَفْتِيَانِ
হে কারাসঙ্গীদ্বয়! তোমাদের দু’জনের একজন তার প্রভুকে মদ্য পান করাবে এবং অপরজন শূলবিদ্ধ হবে। অতঃপর তার মস্তক হতে পাখী আহার করবে। যে বিষয়ে তোমরা জানতে চেয়েছ তার সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। (সূরা ইউসুফু ৪১)
মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তির নিকট একটি আবেদন করলেন :
وَقَالَ لِلَّذِيْ ظَنَّ اَنَّهٗ نَاجٍ مِّنْهُمَا اذْكُرْنِيْ عِنْدَ رَبِّكَ
ইউসুফ তাদের মধ্যে যে মুক্তি পাবে মনে করল তাকে বলল, তোমার প্রভুর নিকট আমার কথা বলো। (সূরা ইউসুফু ৪২)
কিন্তু শয়তান তাকে ভুলিয়ে দেয় :
فَاَنْسَاهُ الشَّيْطَانُ ذِكْرَ رَبِّهٖ فَلَبِثَ فِى السِّجْنِ بِضْعَ سِنِيْنَ
কিন্তু শয়তান তাকে তার প্রভুর নিকট উপস্থাপনের বিষয়টি ভুলিয়ে দিল। অতঃপর ইউসুফ কয়েক বৎসর কারাগারে থেকে গেল। (সূরা ইউসুফু ৪২)
বাদশাহ একটি স্বপ্ন দেখলেন :
وَقَالَ الْمَلِكُ اِنِّۤيْ اَرٰى سَبْعَ بَقَرَاتٍ سِمَانٍ يَّأْكُلُهُنَّ سَبْعٌ عِجَافٌ وَّسَبْعَ سُنْۢبُلَاتٍ خُضْرٍ وَّاُخَرَ يَابِسَاتٍ
রাজা বলল, আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, সাতটি জীর্ণশীর্ণ গাভী সাতটি হৃষ্টপুষ্ট গাভীকে ভক্ষণ করছে এবং সাতটি সবুজ শীষ ও অপর সাতটি শুষ্ক শীষ। (সূরা ইউসুফু ৪৩)
পরিষদবৃন্দের নিকট এর ব্যাখ্যা চাইলেন :
يَاۤ اَيُّهَا الْمَلَاُ اَفْتُوْنِيْ فِيْ رُؤْيَايَ اِنْ كُنْتُمْ لِلرُّؤْيَا تَعْبُرُوْنَ
হে সভাসদবৃন্দ! যদি তোমরা স্বপ্নের ব্যাখ্যা করতে পার, তবে আমার স্বপ্ন সম্বন্ধে অভিমত দাও। (সূরা ইউসুফু ৪৩)
তারা ব্যাখ্যা দিতে পারল না :
قَالُوْاۤ اَضْغَاثُ اَحْلَامٍۚ وَمَا نَحْنُ بِتَأْوِيْلِ الْاَحْلَامِ بِعَالِمِيْنَ
তারা বলল, এটা অর্থহীন স্বপ্ন; আর আমরা এরূপ স্বপ্ন ব্যাখ্যায় অভিজ্ঞ নই। (সূরা ইউসুফু ৪৪)
মুক্তিপ্রাপ্ত লোকটি ইউসুফ (আঃ) এর কথা বলল :
وَقَالَ الَّذِيْ نَجَا مِنْهُمَا وَادَّكَرَ بَعْدَ اُمَّةٍ اَنَا اُنَبِّئُكُمْ بِتَأْوِيْلِهٖ فَاَرْسِلُوْنِ
দু’জন কারারুদ্ধের মধ্যে যে মুক্তি পেয়েছিল দীর্ঘকাল পরে তার স্মরণ হলো। অতঃপর সে বলল, আমি তোমাদেরকে এটার তাৎপর্য জানিয়ে দেব। সুতরাং তোমরা আমাকে পাঠাও। (সূরা ইউসুফু ৪৫)
সে ইউসুফ (আঃ) এর নিকট গিয়ে ব্যাখ্যা জানতে চাইল :
يُوْسُفُ اَيُّهَا الصِّدِّيْقُ اَفْتِنَا فِيْ سَبْعِ بَقَرَاتٍ سِمَانٍ يَّأْكُلُهُنَّ سَبْعٌ عِجَافٌ وَّسَبْعِ سُنْۢبُلَاتٍ خُضْرٍ وَّاُخَرَ يَابِسَاتٍ لَّعَلِّيْۤ اَرْجِعُ اِلَى النَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَعْلَمُوْنَ
সে বলল, হে ইউসুফ! হে সত্যবাদী! সাতটি জীর্ণশীর্ণ গাভী সাতটি হৃষ্টপুষ্ট গাভীকে ভক্ষণ করছে এবং সাতটি সবুজ শীষ ও অপর সাতটি শুষ্ক শীষ সম্বন্ধে তুমি আমাদেরকে ব্যাখ্যা দাও, যেন আমি লোকদের নিকট ফিরে গিয়ে তা জানিয়ে দিতে পারি। (সূরা ইউসুফু ৪৬)
ইউসুফ (আঃ) স্বপ্নের ব্যাখ্যা বলে দিলেন :
قَالَ تَزْرَعُوْنَ سَبْعَ سِنِيْنَ دَاَبًاۚ فَمَا حَصَدْتُّمْ فَذَرُوْهُ فِيْ سُنْۢبُلِهٖۤ اِلَّا قَلِيْلًا مِّمَّا تَأْكُلُوْنَ ‐ ثُمَّ يَأْتِيْ مِنْ ۢبَعْدِ ذٰلِكَ سَبْعٌ شِدَادٌ يَّأْكُلْنَ مَا قَدَّمْتُمْ لَهُنَّ اِلَّا قَلِيْلًا مِّمَّا تُحْصِنُوْنَ ‐ ثُمَّ يَأْتِيْ مِنْ ۢبَعْدِ ذٰلِكَ عَامٌ فِيْهِ يُغَاثُ النَّاسُ وَفِيْهِ يَعْصِرُوْنَ
ইউসুফ বলল, তোমরা একাধারে সাত বৎসর চাষাবাদ করবে, অতঃপর তোমরা যে শস্য কর্তন করবে তা হতে যে সামান্য পরিমাণ ভক্ষণ করবে, তা ব্যতীত সমস্ত শীষ সমবেত করে রেখে দেবে। এরপর আসবে সাতটি কঠিন বৎসর- এ সাত বৎসর যা পূর্বে সঞ্চয় করে রাখবে লোকেরা তা খাবে, কেবল সামান্য কিছু যা তোমরা সংরক্ষণ করবে তা ব্যতীত। অতঃপর আসবে এক বৎসর, সে বৎসর মানুষের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে এবং সে বৎসর মানুষ প্রচুর ফলের রস নিংড়াবে। (সূরা ইউসুফ, ৪৭–৪৯)
وَقَالَ الْمَلِكُ اِنِّۤيْ اَرٰى سَبْعَ بَقَرَاتٍ سِمَانٍ يَّأْكُلُهُنَّ سَبْعٌ عِجَافٌ وَّسَبْعَ سُنْۢبُلَاتٍ خُضْرٍ وَّاُخَرَ يَابِسَاتٍ
রাজা বলল, আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, সাতটি জীর্ণশীর্ণ গাভী সাতটি হৃষ্টপুষ্ট গাভীকে ভক্ষণ করছে এবং সাতটি সবুজ শীষ ও অপর সাতটি শুষ্ক শীষ। (সূরা ইউসুফু ৪৩)
পরিষদবৃন্দের নিকট এর ব্যাখ্যা চাইলেন :
يَاۤ اَيُّهَا الْمَلَاُ اَفْتُوْنِيْ فِيْ رُؤْيَايَ اِنْ كُنْتُمْ لِلرُّؤْيَا تَعْبُرُوْنَ
হে সভাসদবৃন্দ! যদি তোমরা স্বপ্নের ব্যাখ্যা করতে পার, তবে আমার স্বপ্ন সম্বন্ধে অভিমত দাও। (সূরা ইউসুফু ৪৩)
তারা ব্যাখ্যা দিতে পারল না :
قَالُوْاۤ اَضْغَاثُ اَحْلَامٍۚ وَمَا نَحْنُ بِتَأْوِيْلِ الْاَحْلَامِ بِعَالِمِيْنَ
তারা বলল, এটা অর্থহীন স্বপ্ন; আর আমরা এরূপ স্বপ্ন ব্যাখ্যায় অভিজ্ঞ নই। (সূরা ইউসুফু ৪৪)
মুক্তিপ্রাপ্ত লোকটি ইউসুফ (আঃ) এর কথা বলল :
وَقَالَ الَّذِيْ نَجَا مِنْهُمَا وَادَّكَرَ بَعْدَ اُمَّةٍ اَنَا اُنَبِّئُكُمْ بِتَأْوِيْلِهٖ فَاَرْسِلُوْنِ
দু’জন কারারুদ্ধের মধ্যে যে মুক্তি পেয়েছিল দীর্ঘকাল পরে তার স্মরণ হলো। অতঃপর সে বলল, আমি তোমাদেরকে এটার তাৎপর্য জানিয়ে দেব। সুতরাং তোমরা আমাকে পাঠাও। (সূরা ইউসুফু ৪৫)
সে ইউসুফ (আঃ) এর নিকট গিয়ে ব্যাখ্যা জানতে চাইল :
يُوْسُفُ اَيُّهَا الصِّدِّيْقُ اَفْتِنَا فِيْ سَبْعِ بَقَرَاتٍ سِمَانٍ يَّأْكُلُهُنَّ سَبْعٌ عِجَافٌ وَّسَبْعِ سُنْۢبُلَاتٍ خُضْرٍ وَّاُخَرَ يَابِسَاتٍ لَّعَلِّيْۤ اَرْجِعُ اِلَى النَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَعْلَمُوْنَ
সে বলল, হে ইউসুফ! হে সত্যবাদী! সাতটি জীর্ণশীর্ণ গাভী সাতটি হৃষ্টপুষ্ট গাভীকে ভক্ষণ করছে এবং সাতটি সবুজ শীষ ও অপর সাতটি শুষ্ক শীষ সম্বন্ধে তুমি আমাদেরকে ব্যাখ্যা দাও, যেন আমি লোকদের নিকট ফিরে গিয়ে তা জানিয়ে দিতে পারি। (সূরা ইউসুফু ৪৬)
ইউসুফ (আঃ) স্বপ্নের ব্যাখ্যা বলে দিলেন :
قَالَ تَزْرَعُوْنَ سَبْعَ سِنِيْنَ دَاَبًاۚ فَمَا حَصَدْتُّمْ فَذَرُوْهُ فِيْ سُنْۢبُلِهٖۤ اِلَّا قَلِيْلًا مِّمَّا تَأْكُلُوْنَ ‐ ثُمَّ يَأْتِيْ مِنْ ۢبَعْدِ ذٰلِكَ سَبْعٌ شِدَادٌ يَّأْكُلْنَ مَا قَدَّمْتُمْ لَهُنَّ اِلَّا قَلِيْلًا مِّمَّا تُحْصِنُوْنَ ‐ ثُمَّ يَأْتِيْ مِنْ ۢبَعْدِ ذٰلِكَ عَامٌ فِيْهِ يُغَاثُ النَّاسُ وَفِيْهِ يَعْصِرُوْنَ
ইউসুফ বলল, তোমরা একাধারে সাত বৎসর চাষাবাদ করবে, অতঃপর তোমরা যে শস্য কর্তন করবে তা হতে যে সামান্য পরিমাণ ভক্ষণ করবে, তা ব্যতীত সমস্ত শীষ সমবেত করে রেখে দেবে। এরপর আসবে সাতটি কঠিন বৎসর- এ সাত বৎসর যা পূর্বে সঞ্চয় করে রাখবে লোকেরা তা খাবে, কেবল সামান্য কিছু যা তোমরা সংরক্ষণ করবে তা ব্যতীত। অতঃপর আসবে এক বৎসর, সে বৎসর মানুষের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে এবং সে বৎসর মানুষ প্রচুর ফলের রস নিংড়াবে। (সূরা ইউসুফ, ৪৭–৪৯)
বাদশাহ ইউসুফ (আঃ) কে জেল থেকে আনতে বললেন :
وَقَالَ الْمَلِكُ ائْتُوْنِيْ بِهٖ
বাদশাহ বলল, তোমরা ইউসুফকে আমার নিকট নিয়ে এসো। (সূরা ইউসুফু৫০)
ইউসুফ (আঃ) মহিলাদের কর্মকান্ডের ব্যাপারে তদন্ত চাইলেন :
فَلَمَّا جَآءَهُ الرَّسُوْلُ قَالَ ارْجِعْ اِلٰى رَبِّكَ فَاسْاَ لْهُ مَا بَالُ النِّسْوَةِ الّٰتِىْ قَطَّعْنَ اَيْدِيَهُنَّؕ اِنَّ رَبِّيْ بِكَيْدِهِنَّ عَلِيْمٌ
যখন দূত তার নিকট উপস্থিত হলো তখন সে বলল, তুমি তোমার প্রভুর নিকট ফিরে যাও এবং তাকে জিজ্ঞেস করো, যে নারীগণ হাত কেটে ফেলেছিল তাদের অবস্থা কি! নিশ্চয় আমার প্রতিপালক তাদের ছলনা সম্পর্কে সম্যক অবগত। (সূরা ইউসুফু ৫০)
বাদশাহ তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন :
قَالَ مَا خَطْبُكُنَّ اِذْ رَاوَدْتُّنَّ يُوْسُفَ عَنْ نَّفْسِهٖؕ قُلْنَ حَاشَ لِلّٰهِ مَا عَلِمْنَا عَلَيْهِ مِنْ سُوْٓءٍ
বাদশাহ নারীদেরকে বললেন, যখন তোমরা ইউসুফ হতে অসৎকর্ম কামনা করেছিলে, তখন তোমাদের কী হয়েছিল? তারা বলল, অদ্ভুত আল্লাহর মাহাত্ম্য! আমরা তার মধ্যে কোন দোষ দেখিনি। (সূরা ইউসুফু ৫১)
এবার জুলায়খাই আসল কথা বলে দিল :
قَالَتِ امْرَاَةُ الْعَزِيْزِ الْاٰنَ حَصْحَصَ الْحَقُّؗ اَنَا رَاوَدْتُّهٗ عَنْ نَّفْسِهٖ وَاِنَّهٗ لَمِنَ الصَّادِقِيْنَ
আযীযের স্ত্রী বলল, এখন সত্য প্রকাশ হলো, আমিই তাকে ফুসলিয়েছিলাম। নিশ্চয় সে সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত।
(সূরা ইউসুফু ৫১)
এর মাধ্যমে নিজের সত্যতা প্রমাণ করাই ছিল ইউসুফ (আঃ) এর লক্ষ্য :
ذٰلِكَ لِيَعْلَمَ اَنِّيْ لَمْ اَخُنْهُ بِالْغَيْبِ وَاَنَّ اللهَ لَا يَهْدِيْ كَيْدَ الْخَآئِنِيْنَ
এটা এজন্য যে, যেন সে জানতে পারে যে, তার অনুপস্থিতিতে আমি তার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করিনি; নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্বাসঘাতকদের ষড়যন্ত্র সফল করেন না। (সূরা ইউসুফু ৫২)
আল্লাহর অনুগ্রহেই পাপ থেকে বাঁচা যায় :
وَمَاۤ اُبَرِّئُ نَفْسِيْۚ اِنَّ النَّفْسَ لَاَمَّارَةٌ ۢبِالسُّوْٓءِ اِلَّا مَا رَحِمَ رَبِّيْؕ اِنَّ رَبِّيْ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
সে বলল, আমি নিজেকে নির্দোষ মনে করি না, মানুষের মন অবশ্যই মন্দকর্ম প্রবণ। কিন্তু সে নয়, যার প্রতি আমার প্রতিপালক দয়া করেন। নিশ্চয় আমার প্রতিপালক অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা ইউসুফু ৫৩)
বাদশাহ ইউসুফ (&আঃ) কে কাছে আনলেন এবং তাকে সম্মান ও নিরাপত্তা দিলেন :
وَقَالَ الْمَلِكُ ائْتُوْنِيْ بِهٖۤ اَسْتَخْلِصْهُ لِنَفْسِيْۚ فَلَمَّا كَلَّمَهٗ قَالَ اِنَّكَ الْيَوْمَ لَدَيْنَا مَكِيْنٌ اَمِيْنٌ
বাদশাহ বলল, ইউসুফকে আমার নিকট নিয়ে এসো, আমি তাকে আমার একান্ত সহচর হিসেবে নিযুক্ত করব। অতঃপর রাজা যখন তার সাথে কথা বলল তখন রাজা বলল, আজ তুমি আমাদের নিকট মর্যাদাশীল ও বিশ্বাসভাজন। (সূরা ইউসুফু ৫৪)
ইউসুফ (আঃ) কে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দেয়া হলো :
قَالَ اجْعَلْنِيْ عَلٰى خَزَآئِنِ الْاَرْضِۚ اِنِّيْ حَفِيظٌ عَلِيْمٌ
ইউসুফ বলল, আমাকে দেশের ধনভান্ডারের উপর কর্তৃত্ব প্রদান করুন। নিশ্চয় আমি উত্তম রক্ষক ও সুবিজ্ঞ। (সূরা ইউসুফু ৫৫)
এভাবে আল্লাহ তাকে প্রতিষ্ঠিত করলেন :
وَكَذٰلِكَ مَكَّنَّا لِيُوْسُفَ فِى الْاَرْضِۚ يَتَبَوَّاُ مِنْهَا حَيْثُ يَشَآءُ
এভাবে ইউসুফকে আমি সে দেশে প্রতিষ্ঠিত করলাম; সে তথায় যেখানে ইচ্ছা অবস্থান করতে পারত।
(সূরা ইউসুফু ৫৬)
وَقَالَ الْمَلِكُ ائْتُوْنِيْ بِهٖ
বাদশাহ বলল, তোমরা ইউসুফকে আমার নিকট নিয়ে এসো। (সূরা ইউসুফু৫০)
ইউসুফ (আঃ) মহিলাদের কর্মকান্ডের ব্যাপারে তদন্ত চাইলেন :
فَلَمَّا جَآءَهُ الرَّسُوْلُ قَالَ ارْجِعْ اِلٰى رَبِّكَ فَاسْاَ لْهُ مَا بَالُ النِّسْوَةِ الّٰتِىْ قَطَّعْنَ اَيْدِيَهُنَّؕ اِنَّ رَبِّيْ بِكَيْدِهِنَّ عَلِيْمٌ
যখন দূত তার নিকট উপস্থিত হলো তখন সে বলল, তুমি তোমার প্রভুর নিকট ফিরে যাও এবং তাকে জিজ্ঞেস করো, যে নারীগণ হাত কেটে ফেলেছিল তাদের অবস্থা কি! নিশ্চয় আমার প্রতিপালক তাদের ছলনা সম্পর্কে সম্যক অবগত। (সূরা ইউসুফু ৫০)
বাদশাহ তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন :
قَالَ مَا خَطْبُكُنَّ اِذْ رَاوَدْتُّنَّ يُوْسُفَ عَنْ نَّفْسِهٖؕ قُلْنَ حَاشَ لِلّٰهِ مَا عَلِمْنَا عَلَيْهِ مِنْ سُوْٓءٍ
বাদশাহ নারীদেরকে বললেন, যখন তোমরা ইউসুফ হতে অসৎকর্ম কামনা করেছিলে, তখন তোমাদের কী হয়েছিল? তারা বলল, অদ্ভুত আল্লাহর মাহাত্ম্য! আমরা তার মধ্যে কোন দোষ দেখিনি। (সূরা ইউসুফু ৫১)
এবার জুলায়খাই আসল কথা বলে দিল :
قَالَتِ امْرَاَةُ الْعَزِيْزِ الْاٰنَ حَصْحَصَ الْحَقُّؗ اَنَا رَاوَدْتُّهٗ عَنْ نَّفْسِهٖ وَاِنَّهٗ لَمِنَ الصَّادِقِيْنَ
আযীযের স্ত্রী বলল, এখন সত্য প্রকাশ হলো, আমিই তাকে ফুসলিয়েছিলাম। নিশ্চয় সে সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত।
(সূরা ইউসুফু ৫১)
এর মাধ্যমে নিজের সত্যতা প্রমাণ করাই ছিল ইউসুফ (আঃ) এর লক্ষ্য :
ذٰلِكَ لِيَعْلَمَ اَنِّيْ لَمْ اَخُنْهُ بِالْغَيْبِ وَاَنَّ اللهَ لَا يَهْدِيْ كَيْدَ الْخَآئِنِيْنَ
এটা এজন্য যে, যেন সে জানতে পারে যে, তার অনুপস্থিতিতে আমি তার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করিনি; নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্বাসঘাতকদের ষড়যন্ত্র সফল করেন না। (সূরা ইউসুফু ৫২)
আল্লাহর অনুগ্রহেই পাপ থেকে বাঁচা যায় :
وَمَاۤ اُبَرِّئُ نَفْسِيْۚ اِنَّ النَّفْسَ لَاَمَّارَةٌ ۢبِالسُّوْٓءِ اِلَّا مَا رَحِمَ رَبِّيْؕ اِنَّ رَبِّيْ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
সে বলল, আমি নিজেকে নির্দোষ মনে করি না, মানুষের মন অবশ্যই মন্দকর্ম প্রবণ। কিন্তু সে নয়, যার প্রতি আমার প্রতিপালক দয়া করেন। নিশ্চয় আমার প্রতিপালক অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা ইউসুফু ৫৩)
বাদশাহ ইউসুফ (&আঃ) কে কাছে আনলেন এবং তাকে সম্মান ও নিরাপত্তা দিলেন :
وَقَالَ الْمَلِكُ ائْتُوْنِيْ بِهٖۤ اَسْتَخْلِصْهُ لِنَفْسِيْۚ فَلَمَّا كَلَّمَهٗ قَالَ اِنَّكَ الْيَوْمَ لَدَيْنَا مَكِيْنٌ اَمِيْنٌ
বাদশাহ বলল, ইউসুফকে আমার নিকট নিয়ে এসো, আমি তাকে আমার একান্ত সহচর হিসেবে নিযুক্ত করব। অতঃপর রাজা যখন তার সাথে কথা বলল তখন রাজা বলল, আজ তুমি আমাদের নিকট মর্যাদাশীল ও বিশ্বাসভাজন। (সূরা ইউসুফু ৫৪)
ইউসুফ (আঃ) কে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দেয়া হলো :
قَالَ اجْعَلْنِيْ عَلٰى خَزَآئِنِ الْاَرْضِۚ اِنِّيْ حَفِيظٌ عَلِيْمٌ
ইউসুফ বলল, আমাকে দেশের ধনভান্ডারের উপর কর্তৃত্ব প্রদান করুন। নিশ্চয় আমি উত্তম রক্ষক ও সুবিজ্ঞ। (সূরা ইউসুফু ৫৫)
এভাবে আল্লাহ তাকে প্রতিষ্ঠিত করলেন :
وَكَذٰلِكَ مَكَّنَّا لِيُوْسُفَ فِى الْاَرْضِۚ يَتَبَوَّاُ مِنْهَا حَيْثُ يَشَآءُ
এভাবে ইউসুফকে আমি সে দেশে প্রতিষ্ঠিত করলাম; সে তথায় যেখানে ইচ্ছা অবস্থান করতে পারত।
(সূরা ইউসুফু ৫৬)
অনেক দিন পর ভাইদের সাথে সাক্ষাৎ হলো :
وَجَآءَ اِخْوَةُ يُوْسُفَ فَدَخَلُوْا عَلَيْهِ فَعَرَفَهُمْ وَهُمْ لَهٗ مُنْكِرُوْنَ
অতঃপর ইউসুফের ভাইয়েরা আসল এবং তার নিকট উপস্থিত হলো। সে তাদেরকে চিনল, কিন্তু তারা তাকে চিনতে পারল না। (সূরা ইউসুফু ৫৮)
ইউসুফ (আঃ) পরবর্তীতে তাদের ছোট ভাইকে সাথে আনতে বললেন :
وَلَمَّا جَهَّزَهُمْ بِجَهَازِهِمْ قَالَ ائْتُوْنِيْ بِاَخٍ لَّكُمْ مِّنْ اَبِيْكُمْۚ اَلَا تَرَوْنَ اَنِّى اُوْفِى الْكَيْلَ وَاَنَاْ خَيْرُ الْمُنْزِلِيْنَ ‐ فَاِنْ لَّمْ تَأْتُوْنِيْ بِهٖ فَلَا كَيْلَ لَكُمْ عِنْدِيْ وَلَا تَقْرَبُوْنِ
সে যখন তাদের সামগ্রীর ব্যবস্থা করে দিল তখন বলল, তোমরা আমার নিকট তোমাদের বৈমাত্রেয় ভাইটিকে নিয়ে এসো। তোমরা কি দেখছ না যে, আমি মাপে পূর্ণ মাত্রায় দেই এবং আমি উত্তম অতিথিপরায়ণ। কিন্তু তোমরা যদি তাকে আমার নিকট নিয়ে না আস, তবে আমার নিকট তোমাদের জন্য কোন বরাদ্দ থাকবে না এবং তোমরা আমার নিকটবর্তীও হতে পারবে না। (সূরা ইউসুফু ৫৯, ৬০)
ভাইয়েরা বেনইয়ামিনকে আনার আশ্বাস দিল :
قَالُوْا سَنُرَاوِدُ عَنْهُ اَبَاهُ وَاِنَّا لَفَاعِلُوْنَ
তারা বলল, তার বিষয়ে আমরা তার পিতাকে রাজি করার চেষ্টা করব এবং নিশ্চয় আমরা এটা করব।
(সূরা ইউসুফু ৬১)
ইউসুফ (আঃ) গোপনে খাদ্যের মূল্য ফেরত দিলেন :
وَقَالَ لِفِتْيَانِهِ اجْعَلُوْا بِضَاعَتَهُمْ فِيْ رِحَالِهِمْ لَعَلَّهُمْ يَعْرِفُوْنَهَاۤ اِذَا انْقَلَبُوْاۤ اِلٰۤى اَهْلِهِمْ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُوْنَ
ইউসুফ তার কর্মচারীদেরকে বলল, তারা যে পণ্যমূল্য দিয়েছে তা তাদের মালপত্রের মধ্যে রেখে দাও, যাতে স্বজনদের নিকট প্রত্যাবর্তনের পর তারা তা চিনতে পারে। তাহলে তারা পুনরায় আসতে পারে। (সূরা ইউসুফু ৬২)
ভাইয়েরা বাড়িতে এসে পিতাকে বুঝাল :
فَلَمَّا رَجَعُوْاۤ اِلٰۤى اَبِيْهِمْ قَالُوْا يَاۤ اَبَانَا مُنِعَ مِنَّا الْكَيْلُ فَاَرْسِلْ مَعَنَاۤ اَخَانَا نَكْتَلْ وَاِنَّا لَهٗ لَحَافِظُوْنَ
অতঃপর তারা যখন তাদের পিতার নিকট ফিরে আসল তখন তারা বলল, হে আমাদের পিতা! আমাদের জন্য বরাদ্দ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সুতরাং আমাদের ভাইকে আমাদের সাথে পাঠিয়ে দিন, যাতে আমরা রসদ পেতে পারি। অবশ্যই আমরা তার রক্ষণাবেক্ষণ করব। (সূরা ইউসুফু ৬৩)
পিতা ইউসুফের ব্যাপারটি স্মরণ করিয়ে দিলেন :
قَالَ هَلْ اٰمَنُكُمْ عَلَيْهِ اِلَّا كَمَاۤ اَمِنْتُكُمْ عَلٰۤى اَخِيْهِ مِنْ قَبْلُؕ فَاللهُ خَيْرٌ حَافِظًا۪ وَهُوَ اَرْحَمُ الرَّاحِمِيْنَ
সে বলল, আমি কি তোমাদেরকে তার সম্পর্কে সেরূপ বিশ্বাস করব, যেরূপ আমি ইতোপূর্বে তার ভাই সম্পর্কে তোমাদেরকে বিশবাস করেছিলাম? রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ এবং তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু। (সূরা ইউসুফু ৬৪)
তারা বার বার পিতাকে বুঝাতে চেষ্টা করল :
وَلَمَّا فَتَحُوْا مَتَاعَهُمْ وَجَدُوْا بِضَاعَتَهُمْ رُدَّتْ اِلَيْهِمْؕ قَالُوْا يَاۤ اَبَانَا مَا نَبْغِيْؕ هٰذِهٖ بِضَاعَتُنَا رُدَّتْ اِلَيْنَاۚ وَنَمِيْرُ اَهْلَنَا وَنَحْفَظُ اَخَانَا وَنَزْدَادُ كَيْلَ بَعِيْرٍؕ ذٰلِكَ كَيْلٌ يَّسِيْرٌ
যখন তারা তাদের মালপত্র খুলল তখন তারা দেখতে পেল যে, তাদের পণ্যমূল্য তাদেরকে ফেরত দেয়া হয়েছে। তখন তারা বলল, হে আমাদের পিতা! আমরা আর কী প্রত্যাশা করতে পারি? এটা আমাদের প্রদত্ত পণ্যমূল্য, যা আমাদেরকে ফেরত দেয়া হয়েছে। পুনরায় আমরা আমাদের পরিবারবর্গকে খাদ্য সামগ্রী এনে দেব এবং আমরা আমাদের ভাইদের রক্ষণাবেক্ষণ করব। তাছাড়া আমরা অতিরিক্ত আরো এক উষ্ট্র বোঝাই পণ্য পাব; যা এনেছি তা পরিমাণে অল্প। (সূরা ইউসুফু ৬৫)
পিতা প্রতিশ্রুতি নিয়ে রাজী হয়ে গেলেন :
قَالَ لَنْ اُرْسِلَهٗ مَعَكُمْ حَتّٰى تُؤْتُوْنِ مَوْثِقًا مِّنَ اللهِ لَتَأْتُنَّنِيْ بِهٖۤ اِلَّاۤ اَنْ يُّحَاطَ بِكُمْۚ فَلَمَّاۤ اٰتَوْهُ مَوْثِقَهُمْ قَالَ اللهُ عَلٰى مَا نَقُوْلُ وَكِيْلٌ
পিতা বলল, আমি তাকে কখনই তোমাদের সাথে পাঠাব না যতক্ষণ না তোমরা আল্লাহর নামে অঙ্গীকার করো যে, তোমরা তাকে আমার নিকট নিয়ে আসবেই, অবশ্য যদি তোমরা একান্ত অসহায় হয়ে না পড়। অতঃপর যখন তারা তার নিকট প্রতিজ্ঞা করল তখন সে বলল, আমরা যে বিষয়ে কথা বলছি আল্লাহ তার কর্মবিধায়ক। (সূরা ইউসুফু ৬৬)
পথ চলার ব্যাপারে উপদেশ দিলেন :
وَقَالَ يَا بَنِيَّ لَا تَدْخُلُوْا مِنْ ۢبَابٍ وَّاحِدٍ وَّادْخُلُوْا مِنْ اَبْوَابٍ مُّتَفَرِّقَةٍؕ وَمَاۤ اُغْنِيْ عَنْكُمْ مِّنَ اللهِ مِنْ شَيْءٍؕ اِنِ الْحُكْمُ اِلَّا لِلّٰهِؕ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُۚ وَعَلَيْهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُتَوَكِّلُوْنَ
সে বলল, হে আমার পুত্রগণ! তোমরা এক দ্বার দিয়ে প্রবেশ করবে না, ভিন্ন ভিন্ন দ্বার দিয়ে প্রবেশ করবে। আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধে আমি তোমাদের জন্য কিছুই করতে পারি না। বিধান দেয়ার ক্ষমতা আল্লাহরই, সুতরাং আমি তাঁর উপরই নির্ভর করি। আর যারা নির্ভর করতে চায় তারা আল্লাহর উপরই নির্ভর করুক। (সূরা ইউসুফু ৬৭)
ব্যাখ্যা : ইউসুফ (আঃ) এর পর তার ভাইকে পাঠানোর সময় ইয়াকূব (আঃ) এর মন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। যদিও আল্লাহর প্রতি তাঁর আস্থা ছিল এবং ধৈর্য ও আত্মসমর্পণের দিক দিয়েও তাঁর স্থান ছিল উঁচু, তবুও নিজের সাধ্যমতো সতর্কতা অবলম্বন করার ক্ষেত্রে কোন প্রকার ত্রুটি করেননি। তিনি সে সময়ের রাজনৈতিক অবস্থার কথা চিন্তা করেই সকল ভাইকে এক দরজা দিয়ে মিসরের রাজধানীতে প্রবেশ না করার সতর্কতামূলক এ উপদেশটি দিয়েছিলেন। ইয়াকূব (আঃ) এর মনে আশঙ্কা জেগেছিল যে, এ দুর্ভিক্ষের দিনে যদি তারা দলবদ্ধ হয়ে সেখানে প্রবেশ করে তাহলে হয়তো তাদেরকে সন্দেহভাজন মনে করা হবে এবং ধারণা করা হবে, এখানে তারা লুটপাট করতে এসেছে। ইয়াকূব (আঃ) কৌশল ও আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীলতার মধ্যে এক যথাযথ ভারসাম্য স্থাপন করেছেন। তদানীন্তন রাজনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষিতে যে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা অবলম্বন করার প্রয়োজন অনুভূত হয় তা অবলম্বন করার জন্য তাদেরকে নির্দেশ দেন, যাতে নিজেদের সাধ্যমতো ব্যবস্থাপনার মধ্যে এমন কোন ত্রুটি না থাকে, যার ফলে তারা গ্রেফতার হয়ে যেতে পারে। কিন্তু অন্যদিকে প্রতি মুহূর্তে এ কথা তাঁর সামনে আসছে এবং তিনি বার বার এ কথাও প্রকাশ করেন যে, আল্লাহর ইচ্ছা বাস্তবায়নের পথে কোন মানবীয় কৌশল বাধা সৃষ্টি করতে পারে না। আল্লাহর হেফাজতই আসল হেফাজত এবং নিজের কৌশল ও ব্যবস্থাপনার উপর ভরসা না করে আল্লাহর অনুগ্রহের উপর ভরসা করা উচিত। এ কথাটিই অধিকাংশ লোক জানে না। তারা আল্লাহর প্রতি নির্ভরতা থেকে বিমুখ হয়ে কৌশল ও ব্যবস্থা অবলম্বনকে সবকিছু মনে করে বসে।
আল্লাহ ইয়াকূব (আঃ) কে অনেক জ্ঞান দিয়েছিলেন :
وَلَمَّا دَخَلُوْا مِنْ حَيْثُ اَمَرَهُمْ اَبُوْهُمْؕ مَا كَانَ يُغْنِيْ عَنْهُمْ مِّنَ اللهِ مِنْ شَيْءٍ اِلَّا حَاجَةً فِيْ نَفْسِ يَعْقُوْبَ قَضَاهَاؕ وَاِنَّهٗ لَذُوْ عِلْمٍ لِّمَا عَلَّمْنَاهُ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ
যখন তারা তাদের পিতা যেভাবে আদেশ করেছিল সেভাবেই প্রবেশ করল, তখন আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধে তা তাদের কোন কাজে আসল না। ইয়াকূব কেবল তার মনের একটি অভিপ্রায় পূর্ণ করেছিল। নিশ্চয় সে জ্ঞানী ছিল, কারণ আমিই তো তাকে শিক্ষা দিয়েছিলাম। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। (সূরা ইউসুফু ৬৮)
وَجَآءَ اِخْوَةُ يُوْسُفَ فَدَخَلُوْا عَلَيْهِ فَعَرَفَهُمْ وَهُمْ لَهٗ مُنْكِرُوْنَ
অতঃপর ইউসুফের ভাইয়েরা আসল এবং তার নিকট উপস্থিত হলো। সে তাদেরকে চিনল, কিন্তু তারা তাকে চিনতে পারল না। (সূরা ইউসুফু ৫৮)
ইউসুফ (আঃ) পরবর্তীতে তাদের ছোট ভাইকে সাথে আনতে বললেন :
وَلَمَّا جَهَّزَهُمْ بِجَهَازِهِمْ قَالَ ائْتُوْنِيْ بِاَخٍ لَّكُمْ مِّنْ اَبِيْكُمْۚ اَلَا تَرَوْنَ اَنِّى اُوْفِى الْكَيْلَ وَاَنَاْ خَيْرُ الْمُنْزِلِيْنَ ‐ فَاِنْ لَّمْ تَأْتُوْنِيْ بِهٖ فَلَا كَيْلَ لَكُمْ عِنْدِيْ وَلَا تَقْرَبُوْنِ
সে যখন তাদের সামগ্রীর ব্যবস্থা করে দিল তখন বলল, তোমরা আমার নিকট তোমাদের বৈমাত্রেয় ভাইটিকে নিয়ে এসো। তোমরা কি দেখছ না যে, আমি মাপে পূর্ণ মাত্রায় দেই এবং আমি উত্তম অতিথিপরায়ণ। কিন্তু তোমরা যদি তাকে আমার নিকট নিয়ে না আস, তবে আমার নিকট তোমাদের জন্য কোন বরাদ্দ থাকবে না এবং তোমরা আমার নিকটবর্তীও হতে পারবে না। (সূরা ইউসুফু ৫৯, ৬০)
ভাইয়েরা বেনইয়ামিনকে আনার আশ্বাস দিল :
قَالُوْا سَنُرَاوِدُ عَنْهُ اَبَاهُ وَاِنَّا لَفَاعِلُوْنَ
তারা বলল, তার বিষয়ে আমরা তার পিতাকে রাজি করার চেষ্টা করব এবং নিশ্চয় আমরা এটা করব।
(সূরা ইউসুফু ৬১)
ইউসুফ (আঃ) গোপনে খাদ্যের মূল্য ফেরত দিলেন :
وَقَالَ لِفِتْيَانِهِ اجْعَلُوْا بِضَاعَتَهُمْ فِيْ رِحَالِهِمْ لَعَلَّهُمْ يَعْرِفُوْنَهَاۤ اِذَا انْقَلَبُوْاۤ اِلٰۤى اَهْلِهِمْ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُوْنَ
ইউসুফ তার কর্মচারীদেরকে বলল, তারা যে পণ্যমূল্য দিয়েছে তা তাদের মালপত্রের মধ্যে রেখে দাও, যাতে স্বজনদের নিকট প্রত্যাবর্তনের পর তারা তা চিনতে পারে। তাহলে তারা পুনরায় আসতে পারে। (সূরা ইউসুফু ৬২)
ভাইয়েরা বাড়িতে এসে পিতাকে বুঝাল :
فَلَمَّا رَجَعُوْاۤ اِلٰۤى اَبِيْهِمْ قَالُوْا يَاۤ اَبَانَا مُنِعَ مِنَّا الْكَيْلُ فَاَرْسِلْ مَعَنَاۤ اَخَانَا نَكْتَلْ وَاِنَّا لَهٗ لَحَافِظُوْنَ
অতঃপর তারা যখন তাদের পিতার নিকট ফিরে আসল তখন তারা বলল, হে আমাদের পিতা! আমাদের জন্য বরাদ্দ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সুতরাং আমাদের ভাইকে আমাদের সাথে পাঠিয়ে দিন, যাতে আমরা রসদ পেতে পারি। অবশ্যই আমরা তার রক্ষণাবেক্ষণ করব। (সূরা ইউসুফু ৬৩)
পিতা ইউসুফের ব্যাপারটি স্মরণ করিয়ে দিলেন :
قَالَ هَلْ اٰمَنُكُمْ عَلَيْهِ اِلَّا كَمَاۤ اَمِنْتُكُمْ عَلٰۤى اَخِيْهِ مِنْ قَبْلُؕ فَاللهُ خَيْرٌ حَافِظًا۪ وَهُوَ اَرْحَمُ الرَّاحِمِيْنَ
সে বলল, আমি কি তোমাদেরকে তার সম্পর্কে সেরূপ বিশ্বাস করব, যেরূপ আমি ইতোপূর্বে তার ভাই সম্পর্কে তোমাদেরকে বিশবাস করেছিলাম? রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ এবং তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু। (সূরা ইউসুফু ৬৪)
তারা বার বার পিতাকে বুঝাতে চেষ্টা করল :
وَلَمَّا فَتَحُوْا مَتَاعَهُمْ وَجَدُوْا بِضَاعَتَهُمْ رُدَّتْ اِلَيْهِمْؕ قَالُوْا يَاۤ اَبَانَا مَا نَبْغِيْؕ هٰذِهٖ بِضَاعَتُنَا رُدَّتْ اِلَيْنَاۚ وَنَمِيْرُ اَهْلَنَا وَنَحْفَظُ اَخَانَا وَنَزْدَادُ كَيْلَ بَعِيْرٍؕ ذٰلِكَ كَيْلٌ يَّسِيْرٌ
যখন তারা তাদের মালপত্র খুলল তখন তারা দেখতে পেল যে, তাদের পণ্যমূল্য তাদেরকে ফেরত দেয়া হয়েছে। তখন তারা বলল, হে আমাদের পিতা! আমরা আর কী প্রত্যাশা করতে পারি? এটা আমাদের প্রদত্ত পণ্যমূল্য, যা আমাদেরকে ফেরত দেয়া হয়েছে। পুনরায় আমরা আমাদের পরিবারবর্গকে খাদ্য সামগ্রী এনে দেব এবং আমরা আমাদের ভাইদের রক্ষণাবেক্ষণ করব। তাছাড়া আমরা অতিরিক্ত আরো এক উষ্ট্র বোঝাই পণ্য পাব; যা এনেছি তা পরিমাণে অল্প। (সূরা ইউসুফু ৬৫)
পিতা প্রতিশ্রুতি নিয়ে রাজী হয়ে গেলেন :
قَالَ لَنْ اُرْسِلَهٗ مَعَكُمْ حَتّٰى تُؤْتُوْنِ مَوْثِقًا مِّنَ اللهِ لَتَأْتُنَّنِيْ بِهٖۤ اِلَّاۤ اَنْ يُّحَاطَ بِكُمْۚ فَلَمَّاۤ اٰتَوْهُ مَوْثِقَهُمْ قَالَ اللهُ عَلٰى مَا نَقُوْلُ وَكِيْلٌ
পিতা বলল, আমি তাকে কখনই তোমাদের সাথে পাঠাব না যতক্ষণ না তোমরা আল্লাহর নামে অঙ্গীকার করো যে, তোমরা তাকে আমার নিকট নিয়ে আসবেই, অবশ্য যদি তোমরা একান্ত অসহায় হয়ে না পড়। অতঃপর যখন তারা তার নিকট প্রতিজ্ঞা করল তখন সে বলল, আমরা যে বিষয়ে কথা বলছি আল্লাহ তার কর্মবিধায়ক। (সূরা ইউসুফু ৬৬)
পথ চলার ব্যাপারে উপদেশ দিলেন :
وَقَالَ يَا بَنِيَّ لَا تَدْخُلُوْا مِنْ ۢبَابٍ وَّاحِدٍ وَّادْخُلُوْا مِنْ اَبْوَابٍ مُّتَفَرِّقَةٍؕ وَمَاۤ اُغْنِيْ عَنْكُمْ مِّنَ اللهِ مِنْ شَيْءٍؕ اِنِ الْحُكْمُ اِلَّا لِلّٰهِؕ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُۚ وَعَلَيْهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُتَوَكِّلُوْنَ
সে বলল, হে আমার পুত্রগণ! তোমরা এক দ্বার দিয়ে প্রবেশ করবে না, ভিন্ন ভিন্ন দ্বার দিয়ে প্রবেশ করবে। আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধে আমি তোমাদের জন্য কিছুই করতে পারি না। বিধান দেয়ার ক্ষমতা আল্লাহরই, সুতরাং আমি তাঁর উপরই নির্ভর করি। আর যারা নির্ভর করতে চায় তারা আল্লাহর উপরই নির্ভর করুক। (সূরা ইউসুফু ৬৭)
ব্যাখ্যা : ইউসুফ (আঃ) এর পর তার ভাইকে পাঠানোর সময় ইয়াকূব (আঃ) এর মন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। যদিও আল্লাহর প্রতি তাঁর আস্থা ছিল এবং ধৈর্য ও আত্মসমর্পণের দিক দিয়েও তাঁর স্থান ছিল উঁচু, তবুও নিজের সাধ্যমতো সতর্কতা অবলম্বন করার ক্ষেত্রে কোন প্রকার ত্রুটি করেননি। তিনি সে সময়ের রাজনৈতিক অবস্থার কথা চিন্তা করেই সকল ভাইকে এক দরজা দিয়ে মিসরের রাজধানীতে প্রবেশ না করার সতর্কতামূলক এ উপদেশটি দিয়েছিলেন। ইয়াকূব (আঃ) এর মনে আশঙ্কা জেগেছিল যে, এ দুর্ভিক্ষের দিনে যদি তারা দলবদ্ধ হয়ে সেখানে প্রবেশ করে তাহলে হয়তো তাদেরকে সন্দেহভাজন মনে করা হবে এবং ধারণা করা হবে, এখানে তারা লুটপাট করতে এসেছে। ইয়াকূব (আঃ) কৌশল ও আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীলতার মধ্যে এক যথাযথ ভারসাম্য স্থাপন করেছেন। তদানীন্তন রাজনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষিতে যে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা অবলম্বন করার প্রয়োজন অনুভূত হয় তা অবলম্বন করার জন্য তাদেরকে নির্দেশ দেন, যাতে নিজেদের সাধ্যমতো ব্যবস্থাপনার মধ্যে এমন কোন ত্রুটি না থাকে, যার ফলে তারা গ্রেফতার হয়ে যেতে পারে। কিন্তু অন্যদিকে প্রতি মুহূর্তে এ কথা তাঁর সামনে আসছে এবং তিনি বার বার এ কথাও প্রকাশ করেন যে, আল্লাহর ইচ্ছা বাস্তবায়নের পথে কোন মানবীয় কৌশল বাধা সৃষ্টি করতে পারে না। আল্লাহর হেফাজতই আসল হেফাজত এবং নিজের কৌশল ও ব্যবস্থাপনার উপর ভরসা না করে আল্লাহর অনুগ্রহের উপর ভরসা করা উচিত। এ কথাটিই অধিকাংশ লোক জানে না। তারা আল্লাহর প্রতি নির্ভরতা থেকে বিমুখ হয়ে কৌশল ও ব্যবস্থা অবলম্বনকে সবকিছু মনে করে বসে।
আল্লাহ ইয়াকূব (আঃ) কে অনেক জ্ঞান দিয়েছিলেন :
وَلَمَّا دَخَلُوْا مِنْ حَيْثُ اَمَرَهُمْ اَبُوْهُمْؕ مَا كَانَ يُغْنِيْ عَنْهُمْ مِّنَ اللهِ مِنْ شَيْءٍ اِلَّا حَاجَةً فِيْ نَفْسِ يَعْقُوْبَ قَضَاهَاؕ وَاِنَّهٗ لَذُوْ عِلْمٍ لِّمَا عَلَّمْنَاهُ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ
যখন তারা তাদের পিতা যেভাবে আদেশ করেছিল সেভাবেই প্রবেশ করল, তখন আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধে তা তাদের কোন কাজে আসল না। ইয়াকূব কেবল তার মনের একটি অভিপ্রায় পূর্ণ করেছিল। নিশ্চয় সে জ্ঞানী ছিল, কারণ আমিই তো তাকে শিক্ষা দিয়েছিলাম। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। (সূরা ইউসুফু ৬৮)
ইউসুফ (আঃ) ভাইকে কাছে নিলেন এবং সান্ত্বনা দিলেন :
وَلَمَّا دَخَلُوْا عَلٰى يُوْسُفَ اٰوٰۤى اِلَيْهِ اَخَاهُ قَالَ اِنِّۤيْ اَنَاْ اَخُوْكَ فَلَا تَبْتَئِسْ بِمَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
যখন তারা ইউসুফের সম্মুখে উপস্থিত হলো, তখন ইউসুফ তার সহোদরকে নিজের কাছে রাখল এবং বলল, নিশ্চয় আমিই তোমার সহোদর, সুতরাং তারা যা করত তার জন্য দুঃখ করো না। (সূরা ইউসুফু ৬৯)
তিনি ভাইকে রেখে দেয়ার একটি কৌশল বের করলেন :
فَلَمَّا جَهَّزَهُمْ بِجَهَازِهِمْ جَعَلَ السِّقَايَةَ فِيْ رَحْلِ اَخِيْهِ ثُمَّ اَذَّنَ مُؤَذِّنٌ اَيَّتُهَا الْعِيْرُ اِنَّكُمْ لَسَارِقُوْنَ
অতঃপর সে যখন তাদের সামগ্রীর ব্যবস্থা করে দিল, তখন সে তার সহোদরের মালপত্রের মধ্যে একটি পানপাত্র রেখে দিল। অতঃপর এক আহবায়ক চিৎকার করে বলল, হে যাত্রীদল! নিশ্চয় তোমরা চোর। (সূরা ইউসুফু ৭০)
চুরির সূত্র ধরে সবাইকে আটকালেন :
قَالُوْا وَاَقْبَلُوْا عَلَيْهِمْ مَّاذَا تَفْقِدُوْنَ ‐ قَالُوْا نَفْقِدُ صُوَاعَ الْمَلِكِ وَلِمَنْ جَآءَ بِهٖ حِمْلُ بَعِيْرٍ وَّاَنَاْ بِهٖ زَعِيْمٌ
তারা তাদের দিকে চেয়ে বলল, তোমরা কী হারিয়েছ? তারা বলল, আমরা রাজার পানপাত্র হারিয়ে ফেলেছি। যে তা এনে দেবে সে এক উষ্ট্র বোঝাই মাল পাবে এবং আমি তার জামিন। (সূরা ইউসুফু ৭১, ৭২)
তারা বলল, আমরা চুরি করিনি :
قَالُوْا تَاللهِ لَقَدْ عَلِمْتُمْ مَّا جِئْنَا لِنُفْسِدَ فِى الْاَرْضِ وَمَا كُنَّا سَارِقِيْنَ
তারা বলল, আল্লাহর শপথ! তোমরা তো জান আমরা এ দেশে দুষ্কৃতি করতে আসিনি এবং আমরা চোরও নই। (সূরা ইউসুফু ৭৩)
বলা হলো, ধরা পড়লে কী হবে?
قَالُوْا فَمَا جَزَآؤُهٗۤ اِنْ كُنْتُمْ كَاذِبِيْنَ
তারা বলল, যদি তোমরা মিথ্যাবাদী হও, তবে তার শাস্তি কী? (সূরা ইউসুফু ৭৪)
তারা বলল, চোরকে রেখে দেবেন :
قَالُوْا جَزَآؤُهٗ مَنْ وُّجِدَ فِيْ رَحْلِهٖ فَهُوَ جَزَآؤُهٗؕ كَذٰلِكَ نَجْزِى الظَّالِمِيْنَ
তারা বলল, এর শাস্তি যার মালপত্রের মধ্যে পাত্রটি পাওয়া যাবে, সেই তার বিনিময়। এভাবে আমরা সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে শাস্তি দিয়ে থাকি। (সূরা ইউসুফু ৭৫)
ইউসুফ (আঃ) ভাইকে রাখার সুযোগ পেয়ে গেলেন :
فَبَدَاَ بِاَوْعِيَتِهِمْ قَبْلَ وِعَآءِ اَخِيْهِ ثُمَّ اسْتَخْرَجَهَا مِنْ وِّعَآءِ اَخِيْهِؕ كَذٰلِكَ كِدْنَا لِيُوْسُفَؕ مَا كَانَ لِيَأْخُذَ اَخَاهُ فِيْ دِيْنِ الْمَلِكِ اِلَّاۤ اَنْ يَّشَآءَ اللهُؕ نَرْفَعُ دَرَجَاتٍ مَّنْ نَّشَآءُؕ وَفَوْقَ كُلِّ ذِيْ عِلْمٍ عَلِيْمٌ
অতঃপর সে তার সহোদরের মালপত্র তল্লাশির পূর্বে তাদের মালপত্র তল্লাশি করতে লাগল, পরে তার সহোদরের মালপত্রের মধ্য হতে পাত্রটি বের করল। এভাবে আমি ইউসুফের জন্য কৌশল বানিয়ে দিয়েছিলাম। রাজার আইনে তার সহোদরকে সে আটক করতে পারত না, তবে আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত। আমি যাকে ইচ্ছা মর্যাদায় উন্নীত করি। প্রত্যেক জ্ঞানবান ব্যক্তির উপর রয়েছে সর্বজ্ঞানী। (সূরা ইউসুফু ৭৬)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ ইউসুফ (আঃ) নিজের একটি ব্যক্তিগত ব্যাপারে মিসরের বাদশাহর আইন কার্যকর করবেন, এটা তাঁর নবুওয়াতের মর্যাদার সাথে সামঞ্জস্যশীল ছিল না। ভাইকে আটকে রাখার ক্ষেত্রে তিনি মিসরের বাদশার আইন প্রয়োগ করেননি। তিনি ভাইকে আটক করতে পারতেন ঠিকই তবে এজন্য তাঁকে মিসরের বাদশাহর দন্ডবিধির আশ্রয় নিতে হতো। কিন্তু এটা ছিল তাঁর নবুওয়াতের মর্যাদা বিরোধী। কারণ তিনি ইসলাম বিরোধী আইনের জায়গায় ইসলামী শরীয়াতের আইন প্রয়োগ করার উদ্দেশ্যেই দেশের শাসন ক্ষমতা হাতে নিয়েছিলেন। ইউসুফ (আঃ) এর ভাইদের কাছে চোরের শাস্তি কী হতে পারে তা জিজ্ঞেস করা হলো এবং তারা এজন্য ইবরাহীমী শরীয়াতের আইন বর্ণনা করল। এ আইন অনুযায়ী চোরের শাস্তি ছিল, যার সম্পদ সে চুরি করেছে তাকে তার দাসত্ব করতে হবে।
এবার ভাইয়েরা ইউসুফ (আঃ) এর উপর অভিযোগ আনল :
قَالُوْاۤ اِنْ يَّسْرِقْ فَقَدْ سَرَقَ اَخٌ لَّهٗ مِنْ قَبْلُۚ فَاَسَرَّهَا يُوْسُفُ فِيْ نَفْسِهٖ وَلَمْ يُبْدِهَا لَهُمْۚ قَالَ اَنْتُمْ شَرٌّ مَّكَانًاۚ وَاللهُ اَعْلَمُ بِمَا تَصِفُوْنَ
তারা বলল, সে যদি চুরি করে থাকে তবে তার সহোদরও তো পূর্বে চুরি করেছিল। কিন্তু ইউসুফ প্রকৃত ব্যাপারটি নিজের মনে গোপন রাখল এবং তাদের নিকট প্রকাশ করল না। সে মনে মনে বলল, তোমাদের অবস্থান তো আরো নিকৃষ্টতম; আর তোমরা যা বলছ আল্লাহ সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত। (সূরা ইউসুফু ৭৭)
তারা ভাইকে নেয়ার সুপারিশ শুরু করল :
قَالُوْا يَاۤ اَيُّهَا الْعَزِيْزُ اِنَّ لَهٗۤ اَبًا شَيْخًا كَبِيْرًا فَخُذْ اَحَدَنَا مَكَانَهٗۚ اِنَّا نَرَاكَ مِنَ الْمُحْسِنِيْنَ
তারা বলল, হে আযীয! এর পিতা তো অতিশয় বৃদ্ধ, সুতরাং এর স্থলে আপনি আমাদের একজনকে রেখে দিন। আমরা তো আপনাকে মহানুভব ব্যক্তিদের একজন মনে করি। (সূরা ইউসুফু ৭৮)
ইউসুফ (আঃ) ভাইকে দিতে অস্বীকার করলেন :
قَالَ مَعَاذَ اللهِ اَنْ نَّأْخُذَ اِلَّا مَنْ وَّجَدْنَا مَتَاعَنَا عِنْدَهٗۤ اِنَّاۤ اِذًا لَّظَالِمُوْنَ
সে বলল, যার নিকট আমরা আমাদের মাল পেয়েছি, তাকে ছাড়া অন্য কাউকে গ্রহণ করা হতে আমরা আল্লাহর আশ্রয় নিচ্ছি। নতুবা অবশ্যই আমরা সীমালঙ্ঘনকারী হয়ে যাব। (সূরা ইউসুফু ৭৯)
ব্যাখ্যা : যখন কোন মজলুমকে যালিমের হাত থেকে বাঁচানোর অথবা কোন বড় ধরনের যুলুমের প্রতিরোধ করার জন্য প্রকৃত ঘটনার বিপরীত কথা বলা বা সত্য বিরোধী বাহানাবাজি করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না, তখন এ অবস্থায় একজন আল্লাহভীরু ব্যক্তি এমন কৌশল অবলম্বন করার চেষ্টা করবে, যার ফলে প্রকৃত সত্যকে গোপন করে দুষ্কৃতিকে রোধ করা যেতে পারে- এমনটি করা শরীয়াত ও নৈতিকতার দৃষ্টিতে বৈধ। তবে এখানে শর্ত থাকবে যে, নিছক স্বার্থোদ্ধার করার জন্য এমনটি করা যাবে না বরং কোন বড় ধরনের দুষ্কৃতি দূর করাই হবে এর উদ্দেশ্য।
ভাইয়েরা নিরাশ হয়ে পরামর্শে বসল :
فَلَمَّا اسْتَيْئَسُوْا مِنْهُ خَلَصُوْا نَجِيًّا
যখন তারা তার নিকট হতে সম্পূর্ণ নিরাশ হলো, তখন তারা নির্জনে গিয়ে পরামর্শ করতে লাগল। (সূরা ইউসুফু ৮০)
বড় ভাই বাবার ওয়াদা মনে করিয়ে দিল :
قَالَ كَبِيْرُهُمْ اَلَمْ تَعْلَمُوْاۤ اَنَّ اَبَاكُمْ قَدْ اَخَذَ عَلَيْكُمْ مَّوْثِقًا مِّنَ اللهِ وَمِنْ قَبْلُ مَا فَرَّطْتُّمْ فِيْ يُوْسُفَۚ فَلَنْ اَبْرَحَ الْاَرْضَ حَتّٰى يَأْذَنَ لِيْ اَبِيْۚ اَوْ يَحْكُمَ اللهُ لِيْ وَهُوَ خَيْرُ الْحَاكِمِيْنَ
তাদের বড়জন বলল, তোমরা কি জান না যে, তোমাদের পিতা তোমাদের নিকট হতে আল্লাহর নামে অঙ্গীকার নিয়েছেন; আর পূর্বেও তো তোমরা ইউসুফের ব্যাপারে ত্রুটি করেছিলে। সুতরাং আমি কিছুতেই এ দেশ ত্যাগ করব না, যতক্ষণ না আমার পিতা আমাকে অনুমতি দেন অথবা আল্লাহ আমার জন্য কোন ব্যবস্থা করে দেন। কেননা তিনিই শ্রেষ্ঠ বিচারক। (সূরা ইউসুফু ৮০)
وَلَمَّا دَخَلُوْا عَلٰى يُوْسُفَ اٰوٰۤى اِلَيْهِ اَخَاهُ قَالَ اِنِّۤيْ اَنَاْ اَخُوْكَ فَلَا تَبْتَئِسْ بِمَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
যখন তারা ইউসুফের সম্মুখে উপস্থিত হলো, তখন ইউসুফ তার সহোদরকে নিজের কাছে রাখল এবং বলল, নিশ্চয় আমিই তোমার সহোদর, সুতরাং তারা যা করত তার জন্য দুঃখ করো না। (সূরা ইউসুফু ৬৯)
তিনি ভাইকে রেখে দেয়ার একটি কৌশল বের করলেন :
فَلَمَّا جَهَّزَهُمْ بِجَهَازِهِمْ جَعَلَ السِّقَايَةَ فِيْ رَحْلِ اَخِيْهِ ثُمَّ اَذَّنَ مُؤَذِّنٌ اَيَّتُهَا الْعِيْرُ اِنَّكُمْ لَسَارِقُوْنَ
অতঃপর সে যখন তাদের সামগ্রীর ব্যবস্থা করে দিল, তখন সে তার সহোদরের মালপত্রের মধ্যে একটি পানপাত্র রেখে দিল। অতঃপর এক আহবায়ক চিৎকার করে বলল, হে যাত্রীদল! নিশ্চয় তোমরা চোর। (সূরা ইউসুফু ৭০)
চুরির সূত্র ধরে সবাইকে আটকালেন :
قَالُوْا وَاَقْبَلُوْا عَلَيْهِمْ مَّاذَا تَفْقِدُوْنَ ‐ قَالُوْا نَفْقِدُ صُوَاعَ الْمَلِكِ وَلِمَنْ جَآءَ بِهٖ حِمْلُ بَعِيْرٍ وَّاَنَاْ بِهٖ زَعِيْمٌ
তারা তাদের দিকে চেয়ে বলল, তোমরা কী হারিয়েছ? তারা বলল, আমরা রাজার পানপাত্র হারিয়ে ফেলেছি। যে তা এনে দেবে সে এক উষ্ট্র বোঝাই মাল পাবে এবং আমি তার জামিন। (সূরা ইউসুফু ৭১, ৭২)
তারা বলল, আমরা চুরি করিনি :
قَالُوْا تَاللهِ لَقَدْ عَلِمْتُمْ مَّا جِئْنَا لِنُفْسِدَ فِى الْاَرْضِ وَمَا كُنَّا سَارِقِيْنَ
তারা বলল, আল্লাহর শপথ! তোমরা তো জান আমরা এ দেশে দুষ্কৃতি করতে আসিনি এবং আমরা চোরও নই। (সূরা ইউসুফু ৭৩)
বলা হলো, ধরা পড়লে কী হবে?
قَالُوْا فَمَا جَزَآؤُهٗۤ اِنْ كُنْتُمْ كَاذِبِيْنَ
তারা বলল, যদি তোমরা মিথ্যাবাদী হও, তবে তার শাস্তি কী? (সূরা ইউসুফু ৭৪)
তারা বলল, চোরকে রেখে দেবেন :
قَالُوْا جَزَآؤُهٗ مَنْ وُّجِدَ فِيْ رَحْلِهٖ فَهُوَ جَزَآؤُهٗؕ كَذٰلِكَ نَجْزِى الظَّالِمِيْنَ
তারা বলল, এর শাস্তি যার মালপত্রের মধ্যে পাত্রটি পাওয়া যাবে, সেই তার বিনিময়। এভাবে আমরা সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে শাস্তি দিয়ে থাকি। (সূরা ইউসুফু ৭৫)
ইউসুফ (আঃ) ভাইকে রাখার সুযোগ পেয়ে গেলেন :
فَبَدَاَ بِاَوْعِيَتِهِمْ قَبْلَ وِعَآءِ اَخِيْهِ ثُمَّ اسْتَخْرَجَهَا مِنْ وِّعَآءِ اَخِيْهِؕ كَذٰلِكَ كِدْنَا لِيُوْسُفَؕ مَا كَانَ لِيَأْخُذَ اَخَاهُ فِيْ دِيْنِ الْمَلِكِ اِلَّاۤ اَنْ يَّشَآءَ اللهُؕ نَرْفَعُ دَرَجَاتٍ مَّنْ نَّشَآءُؕ وَفَوْقَ كُلِّ ذِيْ عِلْمٍ عَلِيْمٌ
অতঃপর সে তার সহোদরের মালপত্র তল্লাশির পূর্বে তাদের মালপত্র তল্লাশি করতে লাগল, পরে তার সহোদরের মালপত্রের মধ্য হতে পাত্রটি বের করল। এভাবে আমি ইউসুফের জন্য কৌশল বানিয়ে দিয়েছিলাম। রাজার আইনে তার সহোদরকে সে আটক করতে পারত না, তবে আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত। আমি যাকে ইচ্ছা মর্যাদায় উন্নীত করি। প্রত্যেক জ্ঞানবান ব্যক্তির উপর রয়েছে সর্বজ্ঞানী। (সূরা ইউসুফু ৭৬)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ ইউসুফ (আঃ) নিজের একটি ব্যক্তিগত ব্যাপারে মিসরের বাদশাহর আইন কার্যকর করবেন, এটা তাঁর নবুওয়াতের মর্যাদার সাথে সামঞ্জস্যশীল ছিল না। ভাইকে আটকে রাখার ক্ষেত্রে তিনি মিসরের বাদশার আইন প্রয়োগ করেননি। তিনি ভাইকে আটক করতে পারতেন ঠিকই তবে এজন্য তাঁকে মিসরের বাদশাহর দন্ডবিধির আশ্রয় নিতে হতো। কিন্তু এটা ছিল তাঁর নবুওয়াতের মর্যাদা বিরোধী। কারণ তিনি ইসলাম বিরোধী আইনের জায়গায় ইসলামী শরীয়াতের আইন প্রয়োগ করার উদ্দেশ্যেই দেশের শাসন ক্ষমতা হাতে নিয়েছিলেন। ইউসুফ (আঃ) এর ভাইদের কাছে চোরের শাস্তি কী হতে পারে তা জিজ্ঞেস করা হলো এবং তারা এজন্য ইবরাহীমী শরীয়াতের আইন বর্ণনা করল। এ আইন অনুযায়ী চোরের শাস্তি ছিল, যার সম্পদ সে চুরি করেছে তাকে তার দাসত্ব করতে হবে।
এবার ভাইয়েরা ইউসুফ (আঃ) এর উপর অভিযোগ আনল :
قَالُوْاۤ اِنْ يَّسْرِقْ فَقَدْ سَرَقَ اَخٌ لَّهٗ مِنْ قَبْلُۚ فَاَسَرَّهَا يُوْسُفُ فِيْ نَفْسِهٖ وَلَمْ يُبْدِهَا لَهُمْۚ قَالَ اَنْتُمْ شَرٌّ مَّكَانًاۚ وَاللهُ اَعْلَمُ بِمَا تَصِفُوْنَ
তারা বলল, সে যদি চুরি করে থাকে তবে তার সহোদরও তো পূর্বে চুরি করেছিল। কিন্তু ইউসুফ প্রকৃত ব্যাপারটি নিজের মনে গোপন রাখল এবং তাদের নিকট প্রকাশ করল না। সে মনে মনে বলল, তোমাদের অবস্থান তো আরো নিকৃষ্টতম; আর তোমরা যা বলছ আল্লাহ সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত। (সূরা ইউসুফু ৭৭)
তারা ভাইকে নেয়ার সুপারিশ শুরু করল :
قَالُوْا يَاۤ اَيُّهَا الْعَزِيْزُ اِنَّ لَهٗۤ اَبًا شَيْخًا كَبِيْرًا فَخُذْ اَحَدَنَا مَكَانَهٗۚ اِنَّا نَرَاكَ مِنَ الْمُحْسِنِيْنَ
তারা বলল, হে আযীয! এর পিতা তো অতিশয় বৃদ্ধ, সুতরাং এর স্থলে আপনি আমাদের একজনকে রেখে দিন। আমরা তো আপনাকে মহানুভব ব্যক্তিদের একজন মনে করি। (সূরা ইউসুফু ৭৮)
ইউসুফ (আঃ) ভাইকে দিতে অস্বীকার করলেন :
قَالَ مَعَاذَ اللهِ اَنْ نَّأْخُذَ اِلَّا مَنْ وَّجَدْنَا مَتَاعَنَا عِنْدَهٗۤ اِنَّاۤ اِذًا لَّظَالِمُوْنَ
সে বলল, যার নিকট আমরা আমাদের মাল পেয়েছি, তাকে ছাড়া অন্য কাউকে গ্রহণ করা হতে আমরা আল্লাহর আশ্রয় নিচ্ছি। নতুবা অবশ্যই আমরা সীমালঙ্ঘনকারী হয়ে যাব। (সূরা ইউসুফু ৭৯)
ব্যাখ্যা : যখন কোন মজলুমকে যালিমের হাত থেকে বাঁচানোর অথবা কোন বড় ধরনের যুলুমের প্রতিরোধ করার জন্য প্রকৃত ঘটনার বিপরীত কথা বলা বা সত্য বিরোধী বাহানাবাজি করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না, তখন এ অবস্থায় একজন আল্লাহভীরু ব্যক্তি এমন কৌশল অবলম্বন করার চেষ্টা করবে, যার ফলে প্রকৃত সত্যকে গোপন করে দুষ্কৃতিকে রোধ করা যেতে পারে- এমনটি করা শরীয়াত ও নৈতিকতার দৃষ্টিতে বৈধ। তবে এখানে শর্ত থাকবে যে, নিছক স্বার্থোদ্ধার করার জন্য এমনটি করা যাবে না বরং কোন বড় ধরনের দুষ্কৃতি দূর করাই হবে এর উদ্দেশ্য।
ভাইয়েরা নিরাশ হয়ে পরামর্শে বসল :
فَلَمَّا اسْتَيْئَسُوْا مِنْهُ خَلَصُوْا نَجِيًّا
যখন তারা তার নিকট হতে সম্পূর্ণ নিরাশ হলো, তখন তারা নির্জনে গিয়ে পরামর্শ করতে লাগল। (সূরা ইউসুফু ৮০)
বড় ভাই বাবার ওয়াদা মনে করিয়ে দিল :
قَالَ كَبِيْرُهُمْ اَلَمْ تَعْلَمُوْاۤ اَنَّ اَبَاكُمْ قَدْ اَخَذَ عَلَيْكُمْ مَّوْثِقًا مِّنَ اللهِ وَمِنْ قَبْلُ مَا فَرَّطْتُّمْ فِيْ يُوْسُفَۚ فَلَنْ اَبْرَحَ الْاَرْضَ حَتّٰى يَأْذَنَ لِيْ اَبِيْۚ اَوْ يَحْكُمَ اللهُ لِيْ وَهُوَ خَيْرُ الْحَاكِمِيْنَ
তাদের বড়জন বলল, তোমরা কি জান না যে, তোমাদের পিতা তোমাদের নিকট হতে আল্লাহর নামে অঙ্গীকার নিয়েছেন; আর পূর্বেও তো তোমরা ইউসুফের ব্যাপারে ত্রুটি করেছিলে। সুতরাং আমি কিছুতেই এ দেশ ত্যাগ করব না, যতক্ষণ না আমার পিতা আমাকে অনুমতি দেন অথবা আল্লাহ আমার জন্য কোন ব্যবস্থা করে দেন। কেননা তিনিই শ্রেষ্ঠ বিচারক। (সূরা ইউসুফু ৮০)
বড় ভাই অন্য ভাইদেরকে এ সংবাদসহ পাঠাল :
اِرْجِعُوْاۤ اِلٰۤى اَبِيْكُمْ فَقُوْلُوْا يَاۤ اَبَانَاۤ اِنَّ ابْنَكَ سَرَقَۚ وَمَا شَهِدْنَاۤ اِلَّا بِمَا عَلِمْنَا وَمَا كُنَّا لِلْغَيْبِ حَافِظِيْنَ
তোমরা তোমাদের পিতার নিকট ফিরে যাও এবং বলো, হে আমাদের পিতা! আপনার পুত্র তো চুরি করেছে। আমরা যা জানি এটা তারই প্রত্যক্ষ বিবরণমাত্র। আর অজানা ব্যাপারে আমরা সংরক্ষণকারী নই। (সূরা ইউসুফু ৮১)
তারা প্রমাণসহ বিষয়টি জানাল :
وَاسْاَلِ الْقَرْيَةَ الَّتِيْ كُنَّا فِيْهَا وَالْعِيْرَ الَّتِيْۤ اَقْبَلْنَا فِيْهَاؕ وَاِنَّا لَصَادِقُوْنَ
আমরা যে জনপদে ছিলাম তার অধিবাসীদেরকে জিজ্ঞেস করুন এবং যে যাত্রীদলের সাথে আমরা এসেছি তাদেরকেও (জিজ্ঞেস করুন)। অবশ্যই আমরা সত্য বলছি। (সূরা ইউসুফু ৮২)
বাবা ধৈর্যধারণ করে আল্লাহর দিকে চেয়ে থাকলেন :
قَالَ بَلْ سَوَّلَتْ لَكُمْ اَنْفُسُكُمْ اَمْرًاؕ فَصَبْرٌ جَمِيْلٌؕ عَسَى اللهُ اَنْ يَّأْتِيَنِيْ بِهِمْ جَمِيْعًاؕ اِنَّهٗ هُوَ الْعَلِيْمُ الْحَكِيْمُ
সে বলল, না বরং তোমরা নিজেরা তোমাদের জন্য একটি কাহিনী সাজিয়ে নিয়েছ। সুতরাং আমার জন্য পূর্ণ ধৈর্যই শ্রেয়। হয়তো আল্লাহ তাদেরকে একসঙ্গে আমার নিকট এনে দেবেন। নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা ইউসুফু ৮৩)
দুঃখের কান্নায় তার চোখ সাদা হয়ে গেল :
وَتَوَلّٰى عَنْهُمْ وَقَالَ يَاۤ اَسَفٰى عَلٰى يُوْسُفَ وَابْيَضَّتْ عَيْنَاهُ مِنَ الْحُزْنِ فَهُوَ كَظِيْمٌ
সে তাদের হতে মুখ ফিরিয়ে নিল এবং বলল, আফসোস ইউসুফের জন্য। অতঃপর শোকে তার চক্ষুদ্বয় সাদা হয়ে গিয়েছিল এবং সে ছিল অসহনীয় মনোকষ্টে ক্লিষ্ট। (সূরা ইউসুফু ৮৪)
ছেলেরা বলল, আপনি তো শেষ হয়ে যাবেন :
قَالُوْا تَاللهِ تَفْتَاُ تَذْكُرُ يُوْسُفَ حَتّٰى تَكُوْنَ حَرَضًا اَوْ تَكُوْنَ مِنَ الْهَالِكِيْنَ
তারা বলল, আল্লাহর শপথ! আপনি তো ইউসুফের কথা সদা স্মরণ করতে থাকবেন, এমনকি আপনি মুমূর্ষ হয়ে পড়বেন অথবা মৃত্যুবরণ করবেন। (সূরা ইউসুফু ৮৫)
তিনি মনের দুঃখ আল্লাহর কাছে পেশ করলেন :
قَالَ اِنَّمَاۤ اَشْكُوْا بَثِّيْ وَحُزْنِۤيْ اِلَى اللهِ وَاَعْلَمُ مِنَ اللهِ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ
সে বলল, আমি আমার অসহনীয় বেদনা ও দুঃখ শুধুমাত্র আল্লাহর নিকট নিবেদন করছি। আর আমি আল্লাহর নিকট হতে যা জানি, তোমরা তা জান না। (সূরা ইউসুফু ৮৬)
ছেলেদেরকে ইউসুফের খোঁজে পাঠালেন :
يَا بَنِيَّ اذْهَبُوْا فَتَحَسَّسُوْا مِنْ يُّوْسُفَ وَاَخِيْهِ وَلَا تَيْئَسُوْا مِنْ رَّوْحِ اللهِؕ اِنَّهٗ لَا يَيْئَسُ مِنْ رَّوْحِ اللهِ اِلَّا الْقَوْمُ الْكَافِرُوْنَ
হে আমার পুত্রগণ! তোমরা যাও, ইউসুফ ও তার সহোদরের অনুসন্ধান করো এবং আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়ো না। কারণ আল্লাহর রহমত হতে কাফির সম্প্রদায় ব্যতীত কেউই নিরাশ হয় না। (সূরা ইউসুফু ৮৭)
اِرْجِعُوْاۤ اِلٰۤى اَبِيْكُمْ فَقُوْلُوْا يَاۤ اَبَانَاۤ اِنَّ ابْنَكَ سَرَقَۚ وَمَا شَهِدْنَاۤ اِلَّا بِمَا عَلِمْنَا وَمَا كُنَّا لِلْغَيْبِ حَافِظِيْنَ
তোমরা তোমাদের পিতার নিকট ফিরে যাও এবং বলো, হে আমাদের পিতা! আপনার পুত্র তো চুরি করেছে। আমরা যা জানি এটা তারই প্রত্যক্ষ বিবরণমাত্র। আর অজানা ব্যাপারে আমরা সংরক্ষণকারী নই। (সূরা ইউসুফু ৮১)
তারা প্রমাণসহ বিষয়টি জানাল :
وَاسْاَلِ الْقَرْيَةَ الَّتِيْ كُنَّا فِيْهَا وَالْعِيْرَ الَّتِيْۤ اَقْبَلْنَا فِيْهَاؕ وَاِنَّا لَصَادِقُوْنَ
আমরা যে জনপদে ছিলাম তার অধিবাসীদেরকে জিজ্ঞেস করুন এবং যে যাত্রীদলের সাথে আমরা এসেছি তাদেরকেও (জিজ্ঞেস করুন)। অবশ্যই আমরা সত্য বলছি। (সূরা ইউসুফু ৮২)
বাবা ধৈর্যধারণ করে আল্লাহর দিকে চেয়ে থাকলেন :
قَالَ بَلْ سَوَّلَتْ لَكُمْ اَنْفُسُكُمْ اَمْرًاؕ فَصَبْرٌ جَمِيْلٌؕ عَسَى اللهُ اَنْ يَّأْتِيَنِيْ بِهِمْ جَمِيْعًاؕ اِنَّهٗ هُوَ الْعَلِيْمُ الْحَكِيْمُ
সে বলল, না বরং তোমরা নিজেরা তোমাদের জন্য একটি কাহিনী সাজিয়ে নিয়েছ। সুতরাং আমার জন্য পূর্ণ ধৈর্যই শ্রেয়। হয়তো আল্লাহ তাদেরকে একসঙ্গে আমার নিকট এনে দেবেন। নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা ইউসুফু ৮৩)
দুঃখের কান্নায় তার চোখ সাদা হয়ে গেল :
وَتَوَلّٰى عَنْهُمْ وَقَالَ يَاۤ اَسَفٰى عَلٰى يُوْسُفَ وَابْيَضَّتْ عَيْنَاهُ مِنَ الْحُزْنِ فَهُوَ كَظِيْمٌ
সে তাদের হতে মুখ ফিরিয়ে নিল এবং বলল, আফসোস ইউসুফের জন্য। অতঃপর শোকে তার চক্ষুদ্বয় সাদা হয়ে গিয়েছিল এবং সে ছিল অসহনীয় মনোকষ্টে ক্লিষ্ট। (সূরা ইউসুফু ৮৪)
ছেলেরা বলল, আপনি তো শেষ হয়ে যাবেন :
قَالُوْا تَاللهِ تَفْتَاُ تَذْكُرُ يُوْسُفَ حَتّٰى تَكُوْنَ حَرَضًا اَوْ تَكُوْنَ مِنَ الْهَالِكِيْنَ
তারা বলল, আল্লাহর শপথ! আপনি তো ইউসুফের কথা সদা স্মরণ করতে থাকবেন, এমনকি আপনি মুমূর্ষ হয়ে পড়বেন অথবা মৃত্যুবরণ করবেন। (সূরা ইউসুফু ৮৫)
তিনি মনের দুঃখ আল্লাহর কাছে পেশ করলেন :
قَالَ اِنَّمَاۤ اَشْكُوْا بَثِّيْ وَحُزْنِۤيْ اِلَى اللهِ وَاَعْلَمُ مِنَ اللهِ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ
সে বলল, আমি আমার অসহনীয় বেদনা ও দুঃখ শুধুমাত্র আল্লাহর নিকট নিবেদন করছি। আর আমি আল্লাহর নিকট হতে যা জানি, তোমরা তা জান না। (সূরা ইউসুফু ৮৬)
ছেলেদেরকে ইউসুফের খোঁজে পাঠালেন :
يَا بَنِيَّ اذْهَبُوْا فَتَحَسَّسُوْا مِنْ يُّوْسُفَ وَاَخِيْهِ وَلَا تَيْئَسُوْا مِنْ رَّوْحِ اللهِؕ اِنَّهٗ لَا يَيْئَسُ مِنْ رَّوْحِ اللهِ اِلَّا الْقَوْمُ الْكَافِرُوْنَ
হে আমার পুত্রগণ! তোমরা যাও, ইউসুফ ও তার সহোদরের অনুসন্ধান করো এবং আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়ো না। কারণ আল্লাহর রহমত হতে কাফির সম্প্রদায় ব্যতীত কেউই নিরাশ হয় না। (সূরা ইউসুফু ৮৭)
ভাইয়েরা এসে পুনরায় খাদ্য চাইল :
فَلَمَّا دَخَلُوْا عَلَيْهِ قَالُوْا يَاۤ اَيُّهَا الْعَزِيْزُ مَسَّنَا وَاَهْلَنَا الضُّرُّ وَجِئْنَا بِبِضَاعَةٍ مُّزْجَاةٍ فَاَوْفِ لَنَا الْكَيْلَ وَتَصَدَّقْ عَلَيْنَاؕ اِنَّ اللهَ يَجْزِى الْمُتَصَدِّقِيْنَ
যখন তারা তার নিকট উপস্থিত হলো তখন বলল, হে আযীয! আমরা ও আমাদের পরিবার–পরিজন বিপন্ন হয়ে পড়েছি এবং আমরা তুচ্ছ পুঁজি নিয়ে এসেছি। আপনি আমাদের রসদ পূর্ণ মাত্রায় দিন এবং আমাদেরকে দান করুন। নিশ্চয় আল্লাহ দাতাদেরকে পুরস্কৃত করে থাকেন। (সূরা ইউসুফু ৮৮)
এবার ইউসুফ অতীতের ইতিহাস বললেন :
قَالَ هَلْ عَلِمْتُمْ مَّا فَعَلْتُمْ بِيُوْسُفَ وَاَخِيْهِ اِذْ اَنْتُمْ جَاهِلُوْنَ
সে বলল, তোমরা কি জান, তোমরা ইউসুফ ও তার সহোদরের প্রতি কিরূপ আচরণ করেছিলে, যখন তোমরা অজ্ঞ ছিলে? (সূরা ইউসুফু ৮৯)
নিজের পরিচয় ও উন্নতির কথা তাদেরকে জানিয়ে দিলেন :
قَالُوْاۤ اَئِنَّكَ لَاَنْتَ يُوْسُفُؕ قَالَ اَنَاْ يُوْسُفُ وَهٰذَاۤ اَخِيْؗ قَدْ مَنَّ اللهُ عَلَيْنَاؕ اِنَّهٗ مَنْ يَّتَّقِ وَيَصْبِرْ فَاِنَّ اللهَ لَا يُضِيْعُ اَجْرَ الْمُحْسِنِيْنَ
তারা বলল, তবে কি তুমিই ইউসুফ? সে বলল, আমিই ইউসুফ এবং এ আমার সহোদর। আল্লাহ আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। নিশ্চয় যে ব্যক্তি মুত্তাক্বী এবং ধৈর্যশীল, আল্লাহ এমন সৎকর্মপরায়ণদের শ্রমফল নষ্ট করেন না। (সূরা ইউসুফু ৯০)
ভাইয়েরা লজ্জিত হয়ে ভুল স্বীকার করল :
قَالُوْا تَاللهِ لَقَدْاٰ ثَرَكَ اللهُ عَلَيْنَا وَاِنْ كُنَّا لَخَاطِئِيْنَ
তারা বলল, আল্লাহর শপথ! নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে আমাদের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন। নিশ্চয় আমরা অপরাধীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। (সূরা ইউসুফু ৯১)
ইউসুফ (আঃ) প্রতিশোধ না নিয়ে সবাইকে ক্ষমা করে দিলেন :
قَالَ لَا تَثْرِيْبَ عَلَيْكُمُ الْيَوْمَؕ يَغْفِرُ اللهُ لَكُمْؗ وَهُوَ اَرْحَمُ الرَّاحِمِيْنَ
সে বলল, তোমাদের বিরুদ্ধে আজ আমার কোন অভিযোগ নেই। আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করুন এবং তিনিই শ্রেষ্ঠ দয়ালু। (সূরা ইউসুফু ৯২)
পরিবারকে নিয়ে আসার জন্য জামাসহ ভাইদেরকে পাঠালেন :
اِذْهَبُوْا بِقَمِيْصِيْ هٰذَا فَاَلْقُوْهُ عَلٰى وَجْهِ اَبِيْ يَأْتِ بَصِيْرًاۚ وَأْتُوْنِيْ بِاَهْلِكُمْ اَجْمَعِيْنَ
তোমরা আমার এ জামাটি নিয়ে যাও এবং এটা আমার পিতার মুখমন্ডলের উপর রেখে দিয়ো। ফলে তিনি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন। আর তোমাদের পরিবারের সকলকেই আমার নিকট নিয়ে এসো। (সূরা ইউসুফু ৯৩)
এদিকে পিতা ইউসুফের ঘ্রাণ পেয়ে গেলেন :
وَلَمَّا فَصَلَتِ الْعِيْرُ قَالَ اَبُوْهُمْ اِنِّيْ لَاَجِدُ رِيْحَ يُوْسُفَ لَوْلَاۤ اَنْ تُفَنِّدُوْنِ
অতঃপর যাত্রীদল যখন বের হয়ে পড়ল তখন তাদের পিতা বলল, তোমরা যদি আমাকে ভুল না বুঝ তবে বলি, আমি ইউসুফের ঘ্রাণ পাচ্ছি। (সূরা ইউসুফু ৯৪)
লোকেরা এটাকে পাগলামী বলতে লাগল :
قَالُوْا تَاللهِ اِنَّكَ لَفِيْ ضَلَالِكَ الْقَدِيْمِ
তারা বলল, আল্লাহর শপথ! আপনি তো আপনার পূর্বের বিভ্রান্তিতেই রয়েছেন। (সূরা ইউসুফু ৯৫)
জামাটি নিক্ষেপ করতেই তার দৃষ্টি ফিরে এলো :
فَلَمَّاۤ اَنْ جَآءَ الْبَشِيْرُ اَلْقَاهُ عَلٰى وَجْهِهٖ فَارْتَدَّ بَصِيْرًاۚ قَالَ اَلَمْ اَقُلْ لَّكُمْۚ اِنِّۤيْ اَعْلَمُ مِنَ اللهِ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ
অতঃপর যখন সুসংবাদদাতা উপস্থিত হলো এবং তার মুখমন্ডলের উপর জামাটি রাখল, তখন সে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেল। সে বলল, আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, আমি আল্লাহর নিকট হতে যা জানি তোমরা তা জান না? (সূরা ইউসুফু ৯৬)
ছেলেরা ভুল স্বীকার করল ও ক্ষমা চাইল :
قَالُوْا يَاۤ اَبَانَا اسْتَغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَاۤ اِنَّا كُنَّا خَاطِئِيْنَ
তারা বলল, হে আমাদের পিতা! আমাদের পাপের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করুন। নিশ্চয় আমরা অপরাধী। (সূরা ইউসুফু ৯৭)
পিতা সবার জন্য দু‘আ করলেন :
قَالَ سَوْفَ اَسْتَغْفِرُ لَكُمْ رَبِّيْؕ اِنَّهٗ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ
সে বলল, অচিরেই আমি আমার প্রতিপালকের নিকট তোমাদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করব। নিশ্চয় তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা ইউসুফু ৯৮)
فَلَمَّا دَخَلُوْا عَلَيْهِ قَالُوْا يَاۤ اَيُّهَا الْعَزِيْزُ مَسَّنَا وَاَهْلَنَا الضُّرُّ وَجِئْنَا بِبِضَاعَةٍ مُّزْجَاةٍ فَاَوْفِ لَنَا الْكَيْلَ وَتَصَدَّقْ عَلَيْنَاؕ اِنَّ اللهَ يَجْزِى الْمُتَصَدِّقِيْنَ
যখন তারা তার নিকট উপস্থিত হলো তখন বলল, হে আযীয! আমরা ও আমাদের পরিবার–পরিজন বিপন্ন হয়ে পড়েছি এবং আমরা তুচ্ছ পুঁজি নিয়ে এসেছি। আপনি আমাদের রসদ পূর্ণ মাত্রায় দিন এবং আমাদেরকে দান করুন। নিশ্চয় আল্লাহ দাতাদেরকে পুরস্কৃত করে থাকেন। (সূরা ইউসুফু ৮৮)
এবার ইউসুফ অতীতের ইতিহাস বললেন :
قَالَ هَلْ عَلِمْتُمْ مَّا فَعَلْتُمْ بِيُوْسُفَ وَاَخِيْهِ اِذْ اَنْتُمْ جَاهِلُوْنَ
সে বলল, তোমরা কি জান, তোমরা ইউসুফ ও তার সহোদরের প্রতি কিরূপ আচরণ করেছিলে, যখন তোমরা অজ্ঞ ছিলে? (সূরা ইউসুফু ৮৯)
নিজের পরিচয় ও উন্নতির কথা তাদেরকে জানিয়ে দিলেন :
قَالُوْاۤ اَئِنَّكَ لَاَنْتَ يُوْسُفُؕ قَالَ اَنَاْ يُوْسُفُ وَهٰذَاۤ اَخِيْؗ قَدْ مَنَّ اللهُ عَلَيْنَاؕ اِنَّهٗ مَنْ يَّتَّقِ وَيَصْبِرْ فَاِنَّ اللهَ لَا يُضِيْعُ اَجْرَ الْمُحْسِنِيْنَ
তারা বলল, তবে কি তুমিই ইউসুফ? সে বলল, আমিই ইউসুফ এবং এ আমার সহোদর। আল্লাহ আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। নিশ্চয় যে ব্যক্তি মুত্তাক্বী এবং ধৈর্যশীল, আল্লাহ এমন সৎকর্মপরায়ণদের শ্রমফল নষ্ট করেন না। (সূরা ইউসুফু ৯০)
ভাইয়েরা লজ্জিত হয়ে ভুল স্বীকার করল :
قَالُوْا تَاللهِ لَقَدْاٰ ثَرَكَ اللهُ عَلَيْنَا وَاِنْ كُنَّا لَخَاطِئِيْنَ
তারা বলল, আল্লাহর শপথ! নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে আমাদের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন। নিশ্চয় আমরা অপরাধীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। (সূরা ইউসুফু ৯১)
ইউসুফ (আঃ) প্রতিশোধ না নিয়ে সবাইকে ক্ষমা করে দিলেন :
قَالَ لَا تَثْرِيْبَ عَلَيْكُمُ الْيَوْمَؕ يَغْفِرُ اللهُ لَكُمْؗ وَهُوَ اَرْحَمُ الرَّاحِمِيْنَ
সে বলল, তোমাদের বিরুদ্ধে আজ আমার কোন অভিযোগ নেই। আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করুন এবং তিনিই শ্রেষ্ঠ দয়ালু। (সূরা ইউসুফু ৯২)
পরিবারকে নিয়ে আসার জন্য জামাসহ ভাইদেরকে পাঠালেন :
اِذْهَبُوْا بِقَمِيْصِيْ هٰذَا فَاَلْقُوْهُ عَلٰى وَجْهِ اَبِيْ يَأْتِ بَصِيْرًاۚ وَأْتُوْنِيْ بِاَهْلِكُمْ اَجْمَعِيْنَ
তোমরা আমার এ জামাটি নিয়ে যাও এবং এটা আমার পিতার মুখমন্ডলের উপর রেখে দিয়ো। ফলে তিনি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন। আর তোমাদের পরিবারের সকলকেই আমার নিকট নিয়ে এসো। (সূরা ইউসুফু ৯৩)
এদিকে পিতা ইউসুফের ঘ্রাণ পেয়ে গেলেন :
وَلَمَّا فَصَلَتِ الْعِيْرُ قَالَ اَبُوْهُمْ اِنِّيْ لَاَجِدُ رِيْحَ يُوْسُفَ لَوْلَاۤ اَنْ تُفَنِّدُوْنِ
অতঃপর যাত্রীদল যখন বের হয়ে পড়ল তখন তাদের পিতা বলল, তোমরা যদি আমাকে ভুল না বুঝ তবে বলি, আমি ইউসুফের ঘ্রাণ পাচ্ছি। (সূরা ইউসুফু ৯৪)
লোকেরা এটাকে পাগলামী বলতে লাগল :
قَالُوْا تَاللهِ اِنَّكَ لَفِيْ ضَلَالِكَ الْقَدِيْمِ
তারা বলল, আল্লাহর শপথ! আপনি তো আপনার পূর্বের বিভ্রান্তিতেই রয়েছেন। (সূরা ইউসুফু ৯৫)
জামাটি নিক্ষেপ করতেই তার দৃষ্টি ফিরে এলো :
فَلَمَّاۤ اَنْ جَآءَ الْبَشِيْرُ اَلْقَاهُ عَلٰى وَجْهِهٖ فَارْتَدَّ بَصِيْرًاۚ قَالَ اَلَمْ اَقُلْ لَّكُمْۚ اِنِّۤيْ اَعْلَمُ مِنَ اللهِ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ
অতঃপর যখন সুসংবাদদাতা উপস্থিত হলো এবং তার মুখমন্ডলের উপর জামাটি রাখল, তখন সে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেল। সে বলল, আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, আমি আল্লাহর নিকট হতে যা জানি তোমরা তা জান না? (সূরা ইউসুফু ৯৬)
ছেলেরা ভুল স্বীকার করল ও ক্ষমা চাইল :
قَالُوْا يَاۤ اَبَانَا اسْتَغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَاۤ اِنَّا كُنَّا خَاطِئِيْنَ
তারা বলল, হে আমাদের পিতা! আমাদের পাপের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করুন। নিশ্চয় আমরা অপরাধী। (সূরা ইউসুফু ৯৭)
পিতা সবার জন্য দু‘আ করলেন :
قَالَ سَوْفَ اَسْتَغْفِرُ لَكُمْ رَبِّيْؕ اِنَّهٗ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ
সে বলল, অচিরেই আমি আমার প্রতিপালকের নিকট তোমাদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করব। নিশ্চয় তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা ইউসুফু ৯৮)
এবার সবাই ইউসুফ (আঃ) এর কাছে আসল :
فَلَمَّا دَخَلُوْا عَلٰى يُوْسُفَ اٰوٰۤى اِلَيْهِ اَبَوَيْهِ وَقَالَ ادْخُلُوْا مِصْرَ اِنْ شَآءَ اللهُ اٰمِنِيْنَ
অতঃপর যখন তারা ইউসুফের নিকট উপস্থিত হলো, তখন সে তার পিতা–মাতাকে আলিঙ্গন করল এবং বলল, আল্লাহর ইচ্ছায় আপনারা নিরাপদে মিসরে প্রবেশ করুন। (সূরা ইউসুফু ৯৯)
তিনি পিতামাতাকে সিংহাসনে বসালেন তখন সবাই সিজদায় ঝুঁকে পড়ল:
وَرَفَعَ اَبَوَيْهِ عَلَى الْعَرْشِ وَخَرُّوْا لَهٗ سُجَّدًا
আর ইউসুফ তার মাতাপিতাকে উচ্চাসনে বসাল এবং তারা সকলে তার সম্মানে সিজদায় লুটিয়ে পড়ল।
(সূরা ইউসুফু ১০০)
এটাই ছিল ইউসুফ (আঃ) এর স্বপ্নের তাবীর :
وَقَالَ يَاۤ اَبَتِ هٰذَا تَأْوِيْلُ رُؤْيَايَ مِنْ قَبْلُؗ قَدْ جَعَلَهَا رَبِّيْ حَقًّاؕ وَقَدْ اَحْسَنَ بِۤيْ اِذْ اَخْرَجَنِيْ مِنَ السِّجْنِ وَجَآءَ بِكُمْ مِّنَ الْبَدْوِ مِنْ ۢبَعْدِ اَنْ نَّزَغَ الشَّيْطَانُ بَيْنِيْ وَبَيْنَ اِخْوَتِۤيْ اِنَّ رَبِّيْ لَطِيْفٌ لِّمَا يَشَآءُؕ اِنَّهٗ هُوَ الْعَلِيْمُ الْحَكِيْمُ
সে বলল, হে আমার পিতা! এটাই আমার পূর্বের স্বপ্নের ব্যাখ্যা। আমার প্রতিপালক সেটা সত্যে পরিণত করেছেন এবং তিনি আমাকে কারাগার হতে মুক্ত করেছেন। শয়তান আমার ও আমার ভাইদের সম্পর্ক নষ্ট করার পরও আপনাদেরকে মরুভূমি অঞ্চল হতে এখানে এনে দিয়ে আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। আমার প্রতিপালক যা ইচ্ছা নিপুণতার সাথে তা পূর্ণ করেন। নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা ইউসুফু ১০০)
ইউসুফ (আঃ) এ সকল নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করলেন :
رَبِّ قَدْ اٰتَيْتَنِيْ مِنَ الْمُلْكِ وَعَلَّمْتَنِيْ مِنْ تَأْوِيْلِ الْاَحَادِيْثِۚ فَاطِرَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ اَنْتَ وَلِيِّيْ فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِۚ تَوَفَّنِيْ مُسْلِمًا وَّاَلْحِقْنِيْ بِالصَّالِحِيْنَ
হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে রাজ্য দান করেছ এবং স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিক্ষা দিয়েছ। হে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর স্রষ্টা! তুমিই ইহলোক ও পরলোকে আমার অভিভাবক। তুমি আমাকে মুসলিম হিসেবে মৃত্যু দাও এবং আমাকে সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত করো। (সূরা ইউসুফু ১০১)
এ ঘটনা ওহীর মাধ্যমে এসেছে :
ذٰلِكَ مِنْ اَنْۢبَآءِ الْغَيْبِ نُوْحِيْهِ اِلَيْكَۚ وَمَا كُنْتَ لَدَيْهِمْ اِذْ اَجْمَعُوْاۤ اَمْرَهُمْ وَهُمْ يَمْكُرُوْنَ
এটা অদৃশ্যলোকের সংবাদ, যা তোমাকে আমি ওহী দ্বারা অবহিত করছি। ষড়যন্ত্রকালে যখন তারা একমত হলো, তখন তুমি তাদের সঙ্গে ছিলে না। (সূরা ইউসুফু ১০২)
এ কাহিনী মিথ্যা বা বানোয়াট নয় :
لَقَدْ كَانَ فِيْ قَصَصِهِمْ عِبْرَةٌ لِّاُولِى الْاَلْبَابِؕ مَا كَانَ حَدِيْثًا يُّفْتَرٰى وَلٰكِنْ تَصْدِيْقَ الَّذِيْ بَيْنَ يَدَيْهِ وَتَفْصِيْلَ كُلِّ شَيْءٍ وَّهُدًى وَّرَحْمَةً لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ
তাদের বৃত্তান্তে বোধশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য আছে শিক্ষা। এটা এমন এক বাণী, যা মিথ্যা রচনা নয়। কিন্তু মু’মিনদের জন্য এটা পূর্বগ্রন্থে যা আছে তার সমর্থন এবং সমসত্ম কিছুর বিশদ বিবরণ, হেদায়াত ও রহমত। (সূরা ইউসুফু ১১১)
فَلَمَّا دَخَلُوْا عَلٰى يُوْسُفَ اٰوٰۤى اِلَيْهِ اَبَوَيْهِ وَقَالَ ادْخُلُوْا مِصْرَ اِنْ شَآءَ اللهُ اٰمِنِيْنَ
অতঃপর যখন তারা ইউসুফের নিকট উপস্থিত হলো, তখন সে তার পিতা–মাতাকে আলিঙ্গন করল এবং বলল, আল্লাহর ইচ্ছায় আপনারা নিরাপদে মিসরে প্রবেশ করুন। (সূরা ইউসুফু ৯৯)
তিনি পিতামাতাকে সিংহাসনে বসালেন তখন সবাই সিজদায় ঝুঁকে পড়ল:
وَرَفَعَ اَبَوَيْهِ عَلَى الْعَرْشِ وَخَرُّوْا لَهٗ سُجَّدًا
আর ইউসুফ তার মাতাপিতাকে উচ্চাসনে বসাল এবং তারা সকলে তার সম্মানে সিজদায় লুটিয়ে পড়ল।
(সূরা ইউসুফু ১০০)
এটাই ছিল ইউসুফ (আঃ) এর স্বপ্নের তাবীর :
وَقَالَ يَاۤ اَبَتِ هٰذَا تَأْوِيْلُ رُؤْيَايَ مِنْ قَبْلُؗ قَدْ جَعَلَهَا رَبِّيْ حَقًّاؕ وَقَدْ اَحْسَنَ بِۤيْ اِذْ اَخْرَجَنِيْ مِنَ السِّجْنِ وَجَآءَ بِكُمْ مِّنَ الْبَدْوِ مِنْ ۢبَعْدِ اَنْ نَّزَغَ الشَّيْطَانُ بَيْنِيْ وَبَيْنَ اِخْوَتِۤيْ اِنَّ رَبِّيْ لَطِيْفٌ لِّمَا يَشَآءُؕ اِنَّهٗ هُوَ الْعَلِيْمُ الْحَكِيْمُ
সে বলল, হে আমার পিতা! এটাই আমার পূর্বের স্বপ্নের ব্যাখ্যা। আমার প্রতিপালক সেটা সত্যে পরিণত করেছেন এবং তিনি আমাকে কারাগার হতে মুক্ত করেছেন। শয়তান আমার ও আমার ভাইদের সম্পর্ক নষ্ট করার পরও আপনাদেরকে মরুভূমি অঞ্চল হতে এখানে এনে দিয়ে আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। আমার প্রতিপালক যা ইচ্ছা নিপুণতার সাথে তা পূর্ণ করেন। নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা ইউসুফু ১০০)
ইউসুফ (আঃ) এ সকল নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করলেন :
رَبِّ قَدْ اٰتَيْتَنِيْ مِنَ الْمُلْكِ وَعَلَّمْتَنِيْ مِنْ تَأْوِيْلِ الْاَحَادِيْثِۚ فَاطِرَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ اَنْتَ وَلِيِّيْ فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِۚ تَوَفَّنِيْ مُسْلِمًا وَّاَلْحِقْنِيْ بِالصَّالِحِيْنَ
হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে রাজ্য দান করেছ এবং স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিক্ষা দিয়েছ। হে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর স্রষ্টা! তুমিই ইহলোক ও পরলোকে আমার অভিভাবক। তুমি আমাকে মুসলিম হিসেবে মৃত্যু দাও এবং আমাকে সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত করো। (সূরা ইউসুফু ১০১)
এ ঘটনা ওহীর মাধ্যমে এসেছে :
ذٰلِكَ مِنْ اَنْۢبَآءِ الْغَيْبِ نُوْحِيْهِ اِلَيْكَۚ وَمَا كُنْتَ لَدَيْهِمْ اِذْ اَجْمَعُوْاۤ اَمْرَهُمْ وَهُمْ يَمْكُرُوْنَ
এটা অদৃশ্যলোকের সংবাদ, যা তোমাকে আমি ওহী দ্বারা অবহিত করছি। ষড়যন্ত্রকালে যখন তারা একমত হলো, তখন তুমি তাদের সঙ্গে ছিলে না। (সূরা ইউসুফু ১০২)
এ কাহিনী মিথ্যা বা বানোয়াট নয় :
لَقَدْ كَانَ فِيْ قَصَصِهِمْ عِبْرَةٌ لِّاُولِى الْاَلْبَابِؕ مَا كَانَ حَدِيْثًا يُّفْتَرٰى وَلٰكِنْ تَصْدِيْقَ الَّذِيْ بَيْنَ يَدَيْهِ وَتَفْصِيْلَ كُلِّ شَيْءٍ وَّهُدًى وَّرَحْمَةً لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ
তাদের বৃত্তান্তে বোধশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য আছে শিক্ষা। এটা এমন এক বাণী, যা মিথ্যা রচনা নয়। কিন্তু মু’মিনদের জন্য এটা পূর্বগ্রন্থে যা আছে তার সমর্থন এবং সমসত্ম কিছুর বিশদ বিবরণ, হেদায়াত ও রহমত। (সূরা ইউসুফু ১১১)
আইয়ূব (আঃ) ছিলেন ইসহাক (আঃ) এর বড় ছেলে ঈছ এর নাতী। তাঁর স্ত্রী লায়লা (যিনি রহিমা নামে পরিচিত) ছিলেন ইউসুফ (আঃ) নাতনী। তাঁর জনপদ ছিল ‘হূরান’ অঞ্চলের ‘বাছানিয়া’ এলাকা, যা ফিলিস্তীনের দক্ষিণ সীমান্ত বরাবর দামেষ্ক ও আযরূ‘আত-এর মধ্যবর্তী এলাকায় অবস্থিত। তিনি ৭০ বছর বয়সে আল্লাহর পক্ষ হতে কঠিন পরীক্ষায় পতিত হন। তবে এতে তিনি পরিপূর্ণভাবে সফলতা অর্জন করেন।
আইয়ূব (আঃ) ইবরাহীম (আঃ) এর বংশ থেকে আগমন করেছেন :
وَمِنْ ذُرِّيَّتِهٖ دَاوُوْدَ وَسُلَيْمَانَ وَاَيُّوْبَ
দাউদ, সুলায়মান ও আইয়ূব ইবরাহীমের বংশধর। (সূরা আন‘আম– ৮৪)
আল্লাহ আইয়ূব (আঃ) এর প্রতি ওহী পাঠিয়েছেন :
وَاَوْحَيْنَاۤ اِلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ وَاِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَ وَالْاَسْبَاطِ وَعِيْسٰى وَاَيُّوْبَ
আমি ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব ও তার বংশধর, ঈসা ও আইয়ূবের নিকটও ওহী প্রেরণ করেছিলাম। (সূরা নিসা– ১৬৩)
তিনি রুগ্ন অবস্থায় আল্লাহকে ডাকতে থাকেন :
وَاَيُّوْبَ اِذْ نَادٰى رَبَّهٗۤ اَنِّيْ مَسَّنِيَ الضُّرُّ وَاَنْتَ اَرْحَمُ الرَّاحِمِيْنَ
স্মরণ করো, যখন আইয়ূব তার প্রতিপালককে আহবান করে বলেছিল, আমি দুঃখ–কষ্টে পতিত হয়েছি, আর তুমিই তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু! (সূরা আম্বিয়া– ৮৩)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ তা‘আলা আইয়ূব (আঃ) কে পরীক্ষা করার জন্য একটি রোগে আক্রান্ত করেন। অধিকাংশ আলিমদের মতে তিনি কঠিন চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। বাইবেলে উল্লেখ রয়েছে যে, তাঁর সারা শরীর ফোঁড়ায় ভরে গিয়েছিল।
وَاذْكُرْ عَبْدَنَاۤ اَيُّوْبَ اِذْ نَادٰى رَبَّهٗۤ اَنِّيْ مَسَّنِيَ الشَّيْطَانُ بِنُصْبٍ وَّعَذَابٍ
স্মরণ করো, আমার বান্দা আইয়ূবের কথা। যখন সে তার প্রতিপালককে আহবান করে বলেছিল, নিশ্চয় শয়তান আমাকে যন্ত্রণা ও কষ্টে ফেলেছে। (সূরা সোয়াদু ৪১)
ব্যাখ্যা : এর অর্থ এ নয় যে, শয়তান আমাকে অসুস্থ করে দিয়েছে এবং আমাকে বিপদে ফেলে দিয়েছে। বরং এর অর্থ হচ্ছে, রোগের প্রচন্ডতা, ধনসম্পদের বিনাশ এবং আত্মীয়স্বজনদের মুখ ফিরিয়ে নেয়ার কারণে আমি যে কষ্ট ও যন্ত্রণার মধ্যে নিক্ষিপ্ত হয়েছি তার চেয়ে বড় কষ্ট ও যন্ত্রণা আমার জন্য এই যে, শয়তান তার প্ররোচনার মাধ্যমে আমাকে বিপদগ্রস্ত করেছে। এ অবস্থায় সে আমাকে আমার রব থেকে হতাশ করার চেষ্টা করে, আমাকে আমার রবের প্রতি অকৃতজ্ঞ করতে চায় এবং আমি যাতে অধৈর্য হয়ে উঠি সে প্রচেষ্টায় রত থাকে।
আল্লাহ তাকে একটি ঝর্ণা দান করলেন :
اُرْكُضْ بِرِجْلِكَۚ هٰذَا مُغْتَسَلٌ ۢبَارِدٌ وَّشَرَابٌ
(আমি আদেশ করলাম) তুমি পা দিয়ে মাটিতে আঘাত করো। (অতঃপর আঘাত করতেই একটি ঝর্ণা উৎপন্ন হলো; আর) এ হলো সুশীতল গোসলের পানি এবং পানীয়। (সূরা সোয়াদু ৪২)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ আল্লাহর হুকুমে মাটিতে পায়ের আঘাত করতেই একটি পানির ঝর্ণা প্রবাহিত হলো। এর পানি পান করা এবং এ পানিতে গোসল করা ছিল আইয়ূব (আঃ) এর জন্য তাঁর রোগের চিকিৎসা।
এভাবে তাকে রোগমুক্ত করেন :
فَاسْتَجَبْنَا لَهٗ فَكَشَفْنَا مَا بِه مِنْ ضُرٍّ
অতঃপর আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম এবং তার দুঃখ–কষ্ট দূরীভূত করে দিলাম। (সূরা আম্বিয়া– ৮৪)
তিনি খুবই ধৈর্যশীল বান্দা ছিলেন :
اِنَّا وَجَدْنَاهُ صَابِرًاؕ نِعْمَ الْعَبْدُؕ اِنَّهٗۤ اَوَّابٌ
অবশ্যই আমি তাকে ধৈর্যশীল হিসেবেই পেয়েছি। তিনি ছিলেন কতই না উত্তম বান্দা! নিশ্চয় তিনি ছিলেন আল্লাহ অভিমুখী। (সূরা সোয়াদু ৪৪)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর নেক বান্দারা যখন বিপদ ও কঠিন সংকটের মুখোমুখি হন তখন তারা তাদের রবের কাছে অভিযোগ করেন না; বরং ধৈর্য সহকারে সে পরীক্ষাকে মেনে নেন এবং তাতে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য তাঁর কাছেই সাহায্য চান। কিছুকাল আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার পর যদি বিপদ দূর না হয় তাহলে তাঁর থেকে নিরাশ হয়ে অন্যদের দরবারে হাত পাতার পদ্ধতি অবলম্বন করেন না। কেননা তারা ভালো করেই জানেন যে, যা কিছু পাওয়ার আল্লাহর কাছ থেকেই পাওয়া যাবে। তাই বিপদ যতই দীর্ঘ হোক না কেন তারা তাঁরই করুণাপ্রার্থী হন। এজন্য তারা এমন দান ও করুণা লাভে ধন্য হন যার দৃষ্টান্ত আইয়ূব (আঃ) এর জীবনে পাওয়া যায়। এমনকি যদি তারা কখনো অস্থির হয়ে কোন প্রকার নৈতিক দ্বিধাদ্বন্দ্বের শিকার হন, তাহলেও আল্লাহ তাদেরকে চিন্তামুক্ত করার জন্য একটি পথ বের করে দেন। যেমন আইয়ূব (আঃ) এর জন্য বের করে দিয়েছিলেন।
আল্লাহ পুনরায় পরিবার-পরিজনকে তার সাথে মিলিয়ে দিলেন :
وَوَهَبْنَا لَهٗۤ اَهْلَهٗ وَمِثْلَهُمْ مَّعَهُمْ رَحْمَةً مِّنَّا وَذِكْرٰى لِاُولِى الْاَلْبَابِ
আমি তাকে তার পরিবার–পরিজন দান করলাম, তার সঙ্গে তাদের আরো সমপরিমাণ। যা ছিল আমার পক্ষ থেকে রহমত এবং জ্ঞানীদের জন্য উপদেশস্বরূপ। (সূরা সোয়াদু ৪৩)
فَاسْتَجَبْنَا لَهٗ فَكَشَفْنَا مَا بِهٖ مِنْ ضُرٍّ وَّاٰتَيْنَاهُ اَهْلَهٗ وَمِثْلَهُمْ مَّعَهُمْ رَحْمَةً مِّنْ عِنْدِنَا وَذِكْرٰى لِلْعَابِدِيْنَ
তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম, তার দুঃখ–কষ্ট দূরীভূত করে দিলাম, তাকে তার পরিবার–পরিজন ফিরিয়ে দিলাম এবং তাদের মতো তাদের সঙ্গে আমার আরো বিশেষ রহমত দান করলাম। যা ছিল ইবাদাতকারীদের জন্য উপদেশস্বরূপ। (সূরা আম্বিয়া– ৮৪)
ব্যাখ্যা : রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর আইয়ূব (আঃ) এর স্ত্রী ছাড়া আর সবাই তাঁর সঙ্গ ত্যাগ করেছিল এমনকি সন্তানরাও তাঁর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। এ দিকে ইংগিত করেই আল্লাহ বলছেন, যখন আমি তার রোগ নিরাময় করলাম, তখন তার পরিবারবর্গ তার কাছে ফিরে এলো। তারপর আমি তাঁকে আরো সন্তান দান করলাম। একজন বুদ্ধিমানের জন্য এর মধ্যে এ শিক্ষা রয়েছে যে, ভালো অবস্থায় আল্লাহকে ভুলে গিয়ে তার বিদ্রোহী হওয়া উচিত নয় এবং খারাপ অবস্থায় আল্লাহ থেকে নিরাশ হওয়াও উচিত নয়। তাকদীরের ভালো-মন্দ সরাসরি এক আল্লাহর ক্ষমতার আওতাধীন। তিনি চাইলে মানুষের সবচেয়ে ভালো অবস্থাকে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় পরিবর্তিত করে দিতে পারেন। আবার চাইলে সবচেয়ে খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে তাকে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় পৌঁছিয়ে দিতে পারেন। তাই বুদ্ধিমান ব্যক্তির সকল অবস্থায় আল্লাহর উপর ভরসা এবং তাঁর প্রতি পুরোপুরি নির্ভর করা উচিত।
আইয়ূব (আঃ) ইবরাহীম (আঃ) এর বংশ থেকে আগমন করেছেন :
وَمِنْ ذُرِّيَّتِهٖ دَاوُوْدَ وَسُلَيْمَانَ وَاَيُّوْبَ
দাউদ, সুলায়মান ও আইয়ূব ইবরাহীমের বংশধর। (সূরা আন‘আম– ৮৪)
আল্লাহ আইয়ূব (আঃ) এর প্রতি ওহী পাঠিয়েছেন :
وَاَوْحَيْنَاۤ اِلٰۤى اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ وَاِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَ وَالْاَسْبَاطِ وَعِيْسٰى وَاَيُّوْبَ
আমি ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব ও তার বংশধর, ঈসা ও আইয়ূবের নিকটও ওহী প্রেরণ করেছিলাম। (সূরা নিসা– ১৬৩)
তিনি রুগ্ন অবস্থায় আল্লাহকে ডাকতে থাকেন :
وَاَيُّوْبَ اِذْ نَادٰى رَبَّهٗۤ اَنِّيْ مَسَّنِيَ الضُّرُّ وَاَنْتَ اَرْحَمُ الرَّاحِمِيْنَ
স্মরণ করো, যখন আইয়ূব তার প্রতিপালককে আহবান করে বলেছিল, আমি দুঃখ–কষ্টে পতিত হয়েছি, আর তুমিই তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু! (সূরা আম্বিয়া– ৮৩)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ তা‘আলা আইয়ূব (আঃ) কে পরীক্ষা করার জন্য একটি রোগে আক্রান্ত করেন। অধিকাংশ আলিমদের মতে তিনি কঠিন চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। বাইবেলে উল্লেখ রয়েছে যে, তাঁর সারা শরীর ফোঁড়ায় ভরে গিয়েছিল।
وَاذْكُرْ عَبْدَنَاۤ اَيُّوْبَ اِذْ نَادٰى رَبَّهٗۤ اَنِّيْ مَسَّنِيَ الشَّيْطَانُ بِنُصْبٍ وَّعَذَابٍ
স্মরণ করো, আমার বান্দা আইয়ূবের কথা। যখন সে তার প্রতিপালককে আহবান করে বলেছিল, নিশ্চয় শয়তান আমাকে যন্ত্রণা ও কষ্টে ফেলেছে। (সূরা সোয়াদু ৪১)
ব্যাখ্যা : এর অর্থ এ নয় যে, শয়তান আমাকে অসুস্থ করে দিয়েছে এবং আমাকে বিপদে ফেলে দিয়েছে। বরং এর অর্থ হচ্ছে, রোগের প্রচন্ডতা, ধনসম্পদের বিনাশ এবং আত্মীয়স্বজনদের মুখ ফিরিয়ে নেয়ার কারণে আমি যে কষ্ট ও যন্ত্রণার মধ্যে নিক্ষিপ্ত হয়েছি তার চেয়ে বড় কষ্ট ও যন্ত্রণা আমার জন্য এই যে, শয়তান তার প্ররোচনার মাধ্যমে আমাকে বিপদগ্রস্ত করেছে। এ অবস্থায় সে আমাকে আমার রব থেকে হতাশ করার চেষ্টা করে, আমাকে আমার রবের প্রতি অকৃতজ্ঞ করতে চায় এবং আমি যাতে অধৈর্য হয়ে উঠি সে প্রচেষ্টায় রত থাকে।
আল্লাহ তাকে একটি ঝর্ণা দান করলেন :
اُرْكُضْ بِرِجْلِكَۚ هٰذَا مُغْتَسَلٌ ۢبَارِدٌ وَّشَرَابٌ
(আমি আদেশ করলাম) তুমি পা দিয়ে মাটিতে আঘাত করো। (অতঃপর আঘাত করতেই একটি ঝর্ণা উৎপন্ন হলো; আর) এ হলো সুশীতল গোসলের পানি এবং পানীয়। (সূরা সোয়াদু ৪২)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ আল্লাহর হুকুমে মাটিতে পায়ের আঘাত করতেই একটি পানির ঝর্ণা প্রবাহিত হলো। এর পানি পান করা এবং এ পানিতে গোসল করা ছিল আইয়ূব (আঃ) এর জন্য তাঁর রোগের চিকিৎসা।
এভাবে তাকে রোগমুক্ত করেন :
فَاسْتَجَبْنَا لَهٗ فَكَشَفْنَا مَا بِه مِنْ ضُرٍّ
অতঃপর আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম এবং তার দুঃখ–কষ্ট দূরীভূত করে দিলাম। (সূরা আম্বিয়া– ৮৪)
তিনি খুবই ধৈর্যশীল বান্দা ছিলেন :
اِنَّا وَجَدْنَاهُ صَابِرًاؕ نِعْمَ الْعَبْدُؕ اِنَّهٗۤ اَوَّابٌ
অবশ্যই আমি তাকে ধৈর্যশীল হিসেবেই পেয়েছি। তিনি ছিলেন কতই না উত্তম বান্দা! নিশ্চয় তিনি ছিলেন আল্লাহ অভিমুখী। (সূরা সোয়াদু ৪৪)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর নেক বান্দারা যখন বিপদ ও কঠিন সংকটের মুখোমুখি হন তখন তারা তাদের রবের কাছে অভিযোগ করেন না; বরং ধৈর্য সহকারে সে পরীক্ষাকে মেনে নেন এবং তাতে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য তাঁর কাছেই সাহায্য চান। কিছুকাল আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার পর যদি বিপদ দূর না হয় তাহলে তাঁর থেকে নিরাশ হয়ে অন্যদের দরবারে হাত পাতার পদ্ধতি অবলম্বন করেন না। কেননা তারা ভালো করেই জানেন যে, যা কিছু পাওয়ার আল্লাহর কাছ থেকেই পাওয়া যাবে। তাই বিপদ যতই দীর্ঘ হোক না কেন তারা তাঁরই করুণাপ্রার্থী হন। এজন্য তারা এমন দান ও করুণা লাভে ধন্য হন যার দৃষ্টান্ত আইয়ূব (আঃ) এর জীবনে পাওয়া যায়। এমনকি যদি তারা কখনো অস্থির হয়ে কোন প্রকার নৈতিক দ্বিধাদ্বন্দ্বের শিকার হন, তাহলেও আল্লাহ তাদেরকে চিন্তামুক্ত করার জন্য একটি পথ বের করে দেন। যেমন আইয়ূব (আঃ) এর জন্য বের করে দিয়েছিলেন।
আল্লাহ পুনরায় পরিবার-পরিজনকে তার সাথে মিলিয়ে দিলেন :
وَوَهَبْنَا لَهٗۤ اَهْلَهٗ وَمِثْلَهُمْ مَّعَهُمْ رَحْمَةً مِّنَّا وَذِكْرٰى لِاُولِى الْاَلْبَابِ
আমি তাকে তার পরিবার–পরিজন দান করলাম, তার সঙ্গে তাদের আরো সমপরিমাণ। যা ছিল আমার পক্ষ থেকে রহমত এবং জ্ঞানীদের জন্য উপদেশস্বরূপ। (সূরা সোয়াদু ৪৩)
فَاسْتَجَبْنَا لَهٗ فَكَشَفْنَا مَا بِهٖ مِنْ ضُرٍّ وَّاٰتَيْنَاهُ اَهْلَهٗ وَمِثْلَهُمْ مَّعَهُمْ رَحْمَةً مِّنْ عِنْدِنَا وَذِكْرٰى لِلْعَابِدِيْنَ
তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম, তার দুঃখ–কষ্ট দূরীভূত করে দিলাম, তাকে তার পরিবার–পরিজন ফিরিয়ে দিলাম এবং তাদের মতো তাদের সঙ্গে আমার আরো বিশেষ রহমত দান করলাম। যা ছিল ইবাদাতকারীদের জন্য উপদেশস্বরূপ। (সূরা আম্বিয়া– ৮৪)
ব্যাখ্যা : রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর আইয়ূব (আঃ) এর স্ত্রী ছাড়া আর সবাই তাঁর সঙ্গ ত্যাগ করেছিল এমনকি সন্তানরাও তাঁর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। এ দিকে ইংগিত করেই আল্লাহ বলছেন, যখন আমি তার রোগ নিরাময় করলাম, তখন তার পরিবারবর্গ তার কাছে ফিরে এলো। তারপর আমি তাঁকে আরো সন্তান দান করলাম। একজন বুদ্ধিমানের জন্য এর মধ্যে এ শিক্ষা রয়েছে যে, ভালো অবস্থায় আল্লাহকে ভুলে গিয়ে তার বিদ্রোহী হওয়া উচিত নয় এবং খারাপ অবস্থায় আল্লাহ থেকে নিরাশ হওয়াও উচিত নয়। তাকদীরের ভালো-মন্দ সরাসরি এক আল্লাহর ক্ষমতার আওতাধীন। তিনি চাইলে মানুষের সবচেয়ে ভালো অবস্থাকে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় পরিবর্তিত করে দিতে পারেন। আবার চাইলে সবচেয়ে খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে তাকে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় পৌঁছিয়ে দিতে পারেন। তাই বুদ্ধিমান ব্যক্তির সকল অবস্থায় আল্লাহর উপর ভরসা এবং তাঁর প্রতি পুরোপুরি নির্ভর করা উচিত।
লূত জাতির ধ্বংসের কিছুকাল পর মাদইয়ান জাতির প্রতি শুয়াইব (আঃ) প্রেরিত হন। চমৎকার বাগ্মিতার কারণে তিনি ‘খাত্বীবুল আম্বিয়া’ (নবীগণের মধ্যে বাগ্মী) নামে খ্যাত ছিলেন। ধ্বংসপ্রাপ্ত বিগত জাতিগুলোর বড় বড় কিছু অন্যায় কর্ম ছিল, যার জন্য সেখানে নবী প্রেরিত হয়েছিলেন। শুয়াইব (আঃ) এর জাতিরও তেমনি মারাত্মক কয়েকটি অন্যায় কর্ম ছিল, যে জন্য তাদের নিকট তাঁকে প্রেরণ করা হয়।
শুয়াইব (আঃ) আইকাবাসীদের নবী ছিলেন :
كَذَّبَ اَصْحَابُ الْاَيْكَةِ الْمُرْسَلِيْنَ
আইকাবাসীরা রাসূলগণকে অস্বীকার করেছিল। (সূরা শু‘আরা– ১৭৬)
আইকাবাসীরা যালিম ছিল :
وَاِنْ كَانَ اَصْحَابُ الْاَيْكَةِ لَظَالِمِيْنَ
আর আইকাবাসীরাও ছিল সীমালঙ্ঘনকারী। (সূরা হিজর– ৭৮)
তারা ওজনে কম দিত :
وَلَا تَبْخَسُوا النَّاسَ اَشْيَآءَهُمْ وَلَا تَعْثَوْا فِى الْاَرْضِ مُفْسِدِيْنَ
লোকদেরকে তাদের প্রাপ্য বস্তু কম দেবে না এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় ঘটাবে না। (সূরা শু‘আরা- ১৮৩)
শুয়াইব (আঃ) তাদেরকে দ্বীনের দাওয়াত দেন :
اِذْ قَالَ لَهُمْ شُعَيْبٌ اَ لَا تَتَّقُوْنَ
যখন শুয়াইব তাদেরকে বলেছিল, তোমরা কি (আল্লাহকে) ভয় করবে না? (সূরা শু‘আরা– ১৭৭)
নিজের নবী হওয়ার কথা ঘোষণা করেন :
اِنِّيْ لَكُمْ رَسُوْلٌ اَمِيْنٌ
আমি তোমাদের জন্য এক বিশ্বস্ত রাসূল। (সূরা শু‘আরা– ১৭৮)
তাকে অনুসরণ করার নির্দেশ দেন :
فَاتَّقُوا اللهَ وَاَطِيْعُوْنِ
সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় করো ও আমার আনুগত্য করো। (সূরা শু‘আরা– ১৭৯)
নিঃস্বার্থতার কথা ঘোষণা করেন :
وَمَاۤ اَسْاَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ اَجْرٍۚ اِنْ اَجْرِيَ اِلَّا عَلٰى رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
আমি তোমাদের নিকট এর জন্য কোন প্রতিদান চাই না। আমার পুরস্কার তো জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকটই। (সূরা শু‘আরা– ১৮০)
সঠিকভাবে ওজন করতে বলেন :
اَوْفُوا الْكَيْلَ وَلَا تَكُوْنُوْا مِنَ الْمُخْسِرِيْنَ ‐ وَزِنُوْا بِالْقِسْطَاسِ الْمُسْتَقِيْمِ
আর তোমরা মাপে পূর্ণমাত্রায় প্রদান করবে। যারা মাপে ঘাটতি করে তোমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না, ওজন করবে সঠিক দাঁড়িপাল্লায়। (সূরা শু‘আরা- ১৮১, ১৮২)
তাক্বওয়া অর্জনের নির্দেশ দেন :
وَاتَّقُوا الَّذِيْ خَلَقَكُمْ وَالْجِبِلَّةَ الْاَوَّلِيْنَ
আর তাঁকে ভয় করো যিনি তোমাদেরকে ও তোমাদের পূর্বে যারা গত হয়ে গেছে, তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। (সূরা শু‘আরা– ১৮৪)
كَذَّبَ اَصْحَابُ الْاَيْكَةِ الْمُرْسَلِيْنَ
আইকাবাসীরা রাসূলগণকে অস্বীকার করেছিল। (সূরা শু‘আরা– ১৭৬)
আইকাবাসীরা যালিম ছিল :
وَاِنْ كَانَ اَصْحَابُ الْاَيْكَةِ لَظَالِمِيْنَ
আর আইকাবাসীরাও ছিল সীমালঙ্ঘনকারী। (সূরা হিজর– ৭৮)
তারা ওজনে কম দিত :
وَلَا تَبْخَسُوا النَّاسَ اَشْيَآءَهُمْ وَلَا تَعْثَوْا فِى الْاَرْضِ مُفْسِدِيْنَ
লোকদেরকে তাদের প্রাপ্য বস্তু কম দেবে না এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় ঘটাবে না। (সূরা শু‘আরা- ১৮৩)
শুয়াইব (আঃ) তাদেরকে দ্বীনের দাওয়াত দেন :
اِذْ قَالَ لَهُمْ شُعَيْبٌ اَ لَا تَتَّقُوْنَ
যখন শুয়াইব তাদেরকে বলেছিল, তোমরা কি (আল্লাহকে) ভয় করবে না? (সূরা শু‘আরা– ১৭৭)
নিজের নবী হওয়ার কথা ঘোষণা করেন :
اِنِّيْ لَكُمْ رَسُوْلٌ اَمِيْنٌ
আমি তোমাদের জন্য এক বিশ্বস্ত রাসূল। (সূরা শু‘আরা– ১৭৮)
তাকে অনুসরণ করার নির্দেশ দেন :
فَاتَّقُوا اللهَ وَاَطِيْعُوْنِ
সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় করো ও আমার আনুগত্য করো। (সূরা শু‘আরা– ১৭৯)
নিঃস্বার্থতার কথা ঘোষণা করেন :
وَمَاۤ اَسْاَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ اَجْرٍۚ اِنْ اَجْرِيَ اِلَّا عَلٰى رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
আমি তোমাদের নিকট এর জন্য কোন প্রতিদান চাই না। আমার পুরস্কার তো জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকটই। (সূরা শু‘আরা– ১৮০)
সঠিকভাবে ওজন করতে বলেন :
اَوْفُوا الْكَيْلَ وَلَا تَكُوْنُوْا مِنَ الْمُخْسِرِيْنَ ‐ وَزِنُوْا بِالْقِسْطَاسِ الْمُسْتَقِيْمِ
আর তোমরা মাপে পূর্ণমাত্রায় প্রদান করবে। যারা মাপে ঘাটতি করে তোমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না, ওজন করবে সঠিক দাঁড়িপাল্লায়। (সূরা শু‘আরা- ১৮১, ১৮২)
তাক্বওয়া অর্জনের নির্দেশ দেন :
وَاتَّقُوا الَّذِيْ خَلَقَكُمْ وَالْجِبِلَّةَ الْاَوَّلِيْنَ
আর তাঁকে ভয় করো যিনি তোমাদেরকে ও তোমাদের পূর্বে যারা গত হয়ে গেছে, তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। (সূরা শু‘আরা– ১৮৪)
তারা নবীকে যাদুগ্রস্ত বলে দাবী করল :
قَالُوْاۤ اِنَّمَاۤ اَنْتَ مِنَ الْمُسَحَّرِيْنَ
তারা বলল, নিশ্চয় তুমি যাদুগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা শু‘আরা– ১৮৫)
নবীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল :
وَمَاۤ اَنْتَ اِلَّا بَشَرٌمِّثْلُنَا وَاِنْ نَّظُنُّكَ لَمِنَ الْكَاذِبِيْنَ
তুমি আমাদের মতোই একজন মানুষ। সুতরাং আমরা মনে করি, তুমি মিথ্যাবাদীদের অন্যতম। (সূরা শু‘আরা– ১৮৬)
তারা আযাব চেয়ে বসল :
فَاَسْقِطْ عَلَيْنَا كِسَفًا مِّنَ السَّمَآءِ اِنْ كُنْتَ مِنَ الصَّادِقِيْنَ
তুমি যদি সত্যবাদী হও তবে আকাশের এক খন্ড আমাদের উপর ফেলে দেখাও। (সূরা শু‘আরা- ১৮৭)
নবী আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করলেন :
قَالَ رَبِّۤيْ اَعْلَمُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ
সে বলল, তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আমার প্রতিপালক ভালোভাবেই অবগত আছেন। (সূরা শু‘আরা– ১৮৮)
আল্লাহ তাদের থেকে প্রতিশোধ নিলেন :
فَانْتَقَمْنَا مِنْهُمْۘ وَاِنَّهُمَا لَبِاِمَامٍ مُّبِيْنٍ
সুতরাং আমি তাদের থেকে প্রতিশোধ নিলাম; অবশ্য উভয়টিই প্রকাশ্য পথের পার্শ্বে অবস্থিত। (সূরা হিজর– ৭৯)
আযাব তাদেরকে ধ্বংস করে দিল :
فَكَذَّبُوْهُ فَاَخَذَهُمْ عَذَابُ يَوْمِ الظُّلَّةِؕ اِنَّهٗ كَانَ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيْمٍ
অতঃপর তারা তাকে প্রত্যাখ্যান করল, পরে তাদেরকে এক মেঘাচ্ছন্ন দিবসের শাস্তি গ্রাস করে ফেলল। নিশ্চয় এটা ছিল এক ভীষণ দিবসের শাস্তি। (সূরা শু‘আরা– ১৮৯)
এ ঘটনায় রয়েছে অনেক শিক্ষা :
اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةًؕ وَمَا كَانَ اَكْثَرُهُمْ مُّؤْمِنِيْنَ ‐ وَاِنَّ رَبَّكَ لَهُوَ الْعَزِيْزُ الرَّحِيْمُ
নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে, কিন্তু তাদের অধিকাংশই মুমিন নয়। নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক মহাপরাক্রমশালী ও পরম দয়ালু। (সূরা শু‘আরা– ১৯০, ১৯১)
قَالُوْاۤ اِنَّمَاۤ اَنْتَ مِنَ الْمُسَحَّرِيْنَ
তারা বলল, নিশ্চয় তুমি যাদুগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা শু‘আরা– ১৮৫)
নবীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল :
وَمَاۤ اَنْتَ اِلَّا بَشَرٌمِّثْلُنَا وَاِنْ نَّظُنُّكَ لَمِنَ الْكَاذِبِيْنَ
তুমি আমাদের মতোই একজন মানুষ। সুতরাং আমরা মনে করি, তুমি মিথ্যাবাদীদের অন্যতম। (সূরা শু‘আরা– ১৮৬)
তারা আযাব চেয়ে বসল :
فَاَسْقِطْ عَلَيْنَا كِسَفًا مِّنَ السَّمَآءِ اِنْ كُنْتَ مِنَ الصَّادِقِيْنَ
তুমি যদি সত্যবাদী হও তবে আকাশের এক খন্ড আমাদের উপর ফেলে দেখাও। (সূরা শু‘আরা- ১৮৭)
নবী আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করলেন :
قَالَ رَبِّۤيْ اَعْلَمُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ
সে বলল, তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আমার প্রতিপালক ভালোভাবেই অবগত আছেন। (সূরা শু‘আরা– ১৮৮)
আল্লাহ তাদের থেকে প্রতিশোধ নিলেন :
فَانْتَقَمْنَا مِنْهُمْۘ وَاِنَّهُمَا لَبِاِمَامٍ مُّبِيْنٍ
সুতরাং আমি তাদের থেকে প্রতিশোধ নিলাম; অবশ্য উভয়টিই প্রকাশ্য পথের পার্শ্বে অবস্থিত। (সূরা হিজর– ৭৯)
আযাব তাদেরকে ধ্বংস করে দিল :
فَكَذَّبُوْهُ فَاَخَذَهُمْ عَذَابُ يَوْمِ الظُّلَّةِؕ اِنَّهٗ كَانَ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيْمٍ
অতঃপর তারা তাকে প্রত্যাখ্যান করল, পরে তাদেরকে এক মেঘাচ্ছন্ন দিবসের শাস্তি গ্রাস করে ফেলল। নিশ্চয় এটা ছিল এক ভীষণ দিবসের শাস্তি। (সূরা শু‘আরা– ১৮৯)
এ ঘটনায় রয়েছে অনেক শিক্ষা :
اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةًؕ وَمَا كَانَ اَكْثَرُهُمْ مُّؤْمِنِيْنَ ‐ وَاِنَّ رَبَّكَ لَهُوَ الْعَزِيْزُ الرَّحِيْمُ
নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে, কিন্তু তাদের অধিকাংশই মুমিন নয়। নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক মহাপরাক্রমশালী ও পরম দয়ালু। (সূরা শু‘আরা– ১৯০, ১৯১)
শুয়াইব (আঃ) মাদইয়ানবাসীদেরও নবী ছিলেন। তারা শিরকে লিপ্ত ছিল, ওজনে কম দিত, জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করত, পথেঘাটে ছিনতাই করত এবং দ্বীনের পথে বাধা দিত।
নবী তাদেরকে দ্বীনের দাওয়াত দিলেন :
وَاِلٰى مَدْيَنَ اَخَاهُمْ شُعَيْبًاؕ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرُهٗؕ قَدْ جَآءَتْكُمْ بَيِّنَةٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ فَاَوْفُوا الْكَيْلَ وَالْمِيْزَانَ وَلَا تَبْخَسُوا النَّاسَ اَشْيَآءَهُمْ وَلَا تُفْسِدُوْا فِى الْاَرْضِ بَعْدَ اِصْلَاحِهَاؕ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
আমি মাদইয়ানবাসীদের কাছে তাদেরই ভাই শুয়াইবকে পাঠিয়েছিলাম। অতঃপর সে তার স্বজাতিকে সম্বোধন করে বলেছিল, হে আমার জাতি! তোমরা (শিরক বর্জন করে) একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন সত্য উপাস্য নেই। তোমাদের প্রভুর পক্ষ হতে তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট দলীল এসে গেছে। সুতরাং তোমরা ওজন ও পরিমাপ পূর্ণ মাত্রায় দেবে, মানুষকে তাদের প্রাপ্য বস্তু কম দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না এবং দুনিয়ায় শান্তি–শৃঙ্খলা স্থাপনের পর ঝগড়া–ফাসাদ ও বিপর্যয় ঘটাবে না। যদি তোমরা প্রকৃতপক্ষে ঈমানদার হয়ে থাক, তবে এ পথই তোমাদের জন্য কল্যাণকর। (সূরা আ‘রাফু ৮৫)
وَاِلٰى مَدْيَنَ اَخَاهُمْ شُعَيْبًا ؕ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرُهٗؕ وَلَا تَنْقُصُوا الْمِكْيَالَ وَالْمِيْزَانَ اِنِّۤيْ اَرَاكُمْ بِخَيْرٍ وَّاِنِّۤيْ اَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ مُّحِيْطٍ
মাদইয়ানবাসীদের নিকট তাদের ভাই শুয়াইবকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো, তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ্ নেই, মাপে ও ওজনে কম দিয়ো না। আমি তো তোমাদেরকে সমৃদ্ধশালী হিসেবেই দেখতে পাচ্ছি। আর আমি তোমাদের জন্য এক সর্বগ্রাসী দিবসের শাস্তির আশঙ্কা করছি। (সূরা হুদু ৮৪)
নবী নরম ভাষায় বুঝালেন :
قَالَ يَا قَوْمِ اَرَاَيْتُمْ اِنْ كُنْتُ عَلٰى بَيِّنَةٍ مِّنْ رَّبِّيْ وَرَزَقَنِيْ مِنْهُ رِزْقًا حَسَنًاؕ وَمَاۤ اُرِيْدُ اَنْ اُخَالِفَكُمْ اِلٰى مَاۤ اَنْهَاكُمْ عَنْهُؕ اِنْ اُرِيْدُ اِلَّا الْاِصْلَاحَ مَا اسْتَطَعْتُؕ وَمَا تَوْفِيْقِيْۤ اِلَّا بِاللهِؕ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَاِلَيْهِ اُنِيْبُ
তিনি বললেন, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা কি ভেবে দেখেছ যে, আমি যদি আমার প্রতিপালক প্রেরিত স্পষ্ট প্রমাণে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকি এবং তিনি যদি তাঁর নিকট হতে আমাকে উৎকৃষ্ট জীবনোপকরণ দান করে থাকেন (তবে কী করে আমি আমার কর্তব্য হতে বিরত থাকব?) আমি তোমাদেরকে যা নিষেধ করি আমি নিজে তা করতে ইচ্ছা করি না। আমি তো আমার সাধ্যমতো সংস্কার করতে চাই। আমার কার্যসাধন তো আল্লাহরই সাহায্যে; আমি তাঁরই উপর নির্ভর করি এবং আমি তাঁরই অভিমুখী। (সূরা হুদু ৮৮)
জাতিকে আল্লাহর নিয়ামতের কথা স্মরণ করতে বললেন :
وَلَا تَقْعُدُوْا بِكُلِّ صِرَاطٍ تُوْعِدُوْنَ وَتَصُدُّوْنَ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ مَنْ اٰمَنَ بِهٖ وَتَبْغُوْنَهَا عِوَجًاۚ وَاذْكُرُوْاۤ اِذْ كُنْتُمْ قَلِيْلًا فَكَثَّرَكُمْ۪ وَانْظُرُوْا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُفْسِدِيْنَ
আর তোমরা প্রতিটি পথে এ উদ্দেশ্যে বসে থেকো না যে, ঈমানদার লোকদেরকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করবে ও (মানুষকে) আল্লাহর পথ হতে বিরত রাখবে এবং সহজসরল পথকে ছেড়ে দিয়ে বক্রতা অন্বেষণে ব্যস্ত থাকবে। আর তোমরা (ঐ অবস্থাটির কথা) স্মরণ করো, যখন তোমরা সংখ্যায় স্বল্প ছিলে, অতঃপর তিনি (আল্লাহ) তোমাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করে দিলেন। আর বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণতি কী হয়েছিল তা লক্ষ্য করো। (সূরা আ‘রাফু ৮৬)
আল্লাহর কাছে তাওবা করার নির্দেশ দিলেন :
وَاسْتَغْفِرُوْا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوْبُوْاۤ اِلَيْهِؕ اِنَّ رَبِّيْ رَحِيْمٌ وَّدُوْدٌ
তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করো ও তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন করো। নিশ্চয় আমার প্রতিপালক পরম দয়ালু ও প্রেমময়। (সূরা হুদু ৯০)
আল্লাহর ব্যাপারে জাতিকে সতর্ক করলেন :
قَالَ يَا قَوْمِ اَرَهْطِيْۤ اَعَزُّ عَلَيْكُمْ مِّنَ اللهِؕ وَاتَّخَذْتُمُوْهُ وَرَآءَكُمْ ظِهْرِيًّاؕ اِنَّ رَبِّيْ بِمَا تَعْمَلُوْنَ مُحِيْطٌ
সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমাদের নিকট কি আমার স্বজনবর্গ আল্লাহ অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী? অথচ তোমরা তাঁকে সম্পূর্ণ পশ্চাতে ফেলে রেখেছ। (জেনে রেখো) তোমরা যা কর আমার প্রতিপালক অবশ্যই তা পরিবেষ্টন করে আছেন। (সূরা হুদু ৯২)
আখিরাতের ব্যাপারে সতর্ক করলেন :
وَاِلٰى مَدْيَنَ اَخَاهُمْ شُعَيْبًاؕ فَقَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ وَارْجُوا الْيَوْمَ الْاٰخِرَ وَلَا تَعْثَوْا فِى الْاَرْضِ مُفْسِدِيْنَ
আমি মাদইয়ানবাসীদের প্রতি তাদের ভাই শুয়াইবকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো, শেষ দিবসকে ভয় করো এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না। (সূরা আনকাবূত– ৩৬)
পূর্ববর্তীদের পরিণামের কথা জানালেন :
وَيَا قَوْمِ لَا يَجْرِمَنَّكُمْ شِقَاقِۤيْ اَنْ يُّصِيْبَكُمْ مِّثْلُ مَاۤ اَصَابَ قَوْمَ نُوْحٍ اَوْ قَوْمَ هُوْدٍ اَوْ قَوْمَ صَالِحٍؕ وَمَا قَوْمُ لُوْطٍ مِّنْكُمْ بِبَعِيْدٍ
হে আমার সম্প্রদায়। আমার সাথে বিরোধ যেন কিছুতেই তোমাদেরকে এমন অপরাধ না করায় যাতে তোমাদের উপর অনুরূপ বিপদ পতিত হবে, যা পতিত হয়েছিল নূহের সম্প্রদায়ের উপর অথবা হুদের সম্প্রদায়ের উপর কিংবা সালেহের সম্প্রদায়ের উপর। আর লূতের সম্প্রদায় তো তোমাদের হতে দূরে নয়। (সূরা হুদু ৮৯)
নবী তাদেরকে দ্বীনের দাওয়াত দিলেন :
وَاِلٰى مَدْيَنَ اَخَاهُمْ شُعَيْبًاؕ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرُهٗؕ قَدْ جَآءَتْكُمْ بَيِّنَةٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ فَاَوْفُوا الْكَيْلَ وَالْمِيْزَانَ وَلَا تَبْخَسُوا النَّاسَ اَشْيَآءَهُمْ وَلَا تُفْسِدُوْا فِى الْاَرْضِ بَعْدَ اِصْلَاحِهَاؕ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
আমি মাদইয়ানবাসীদের কাছে তাদেরই ভাই শুয়াইবকে পাঠিয়েছিলাম। অতঃপর সে তার স্বজাতিকে সম্বোধন করে বলেছিল, হে আমার জাতি! তোমরা (শিরক বর্জন করে) একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন সত্য উপাস্য নেই। তোমাদের প্রভুর পক্ষ হতে তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট দলীল এসে গেছে। সুতরাং তোমরা ওজন ও পরিমাপ পূর্ণ মাত্রায় দেবে, মানুষকে তাদের প্রাপ্য বস্তু কম দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না এবং দুনিয়ায় শান্তি–শৃঙ্খলা স্থাপনের পর ঝগড়া–ফাসাদ ও বিপর্যয় ঘটাবে না। যদি তোমরা প্রকৃতপক্ষে ঈমানদার হয়ে থাক, তবে এ পথই তোমাদের জন্য কল্যাণকর। (সূরা আ‘রাফু ৮৫)
وَاِلٰى مَدْيَنَ اَخَاهُمْ شُعَيْبًا ؕ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرُهٗؕ وَلَا تَنْقُصُوا الْمِكْيَالَ وَالْمِيْزَانَ اِنِّۤيْ اَرَاكُمْ بِخَيْرٍ وَّاِنِّۤيْ اَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ مُّحِيْطٍ
মাদইয়ানবাসীদের নিকট তাদের ভাই শুয়াইবকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো, তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ্ নেই, মাপে ও ওজনে কম দিয়ো না। আমি তো তোমাদেরকে সমৃদ্ধশালী হিসেবেই দেখতে পাচ্ছি। আর আমি তোমাদের জন্য এক সর্বগ্রাসী দিবসের শাস্তির আশঙ্কা করছি। (সূরা হুদু ৮৪)
নবী নরম ভাষায় বুঝালেন :
قَالَ يَا قَوْمِ اَرَاَيْتُمْ اِنْ كُنْتُ عَلٰى بَيِّنَةٍ مِّنْ رَّبِّيْ وَرَزَقَنِيْ مِنْهُ رِزْقًا حَسَنًاؕ وَمَاۤ اُرِيْدُ اَنْ اُخَالِفَكُمْ اِلٰى مَاۤ اَنْهَاكُمْ عَنْهُؕ اِنْ اُرِيْدُ اِلَّا الْاِصْلَاحَ مَا اسْتَطَعْتُؕ وَمَا تَوْفِيْقِيْۤ اِلَّا بِاللهِؕ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَاِلَيْهِ اُنِيْبُ
তিনি বললেন, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা কি ভেবে দেখেছ যে, আমি যদি আমার প্রতিপালক প্রেরিত স্পষ্ট প্রমাণে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকি এবং তিনি যদি তাঁর নিকট হতে আমাকে উৎকৃষ্ট জীবনোপকরণ দান করে থাকেন (তবে কী করে আমি আমার কর্তব্য হতে বিরত থাকব?) আমি তোমাদেরকে যা নিষেধ করি আমি নিজে তা করতে ইচ্ছা করি না। আমি তো আমার সাধ্যমতো সংস্কার করতে চাই। আমার কার্যসাধন তো আল্লাহরই সাহায্যে; আমি তাঁরই উপর নির্ভর করি এবং আমি তাঁরই অভিমুখী। (সূরা হুদু ৮৮)
জাতিকে আল্লাহর নিয়ামতের কথা স্মরণ করতে বললেন :
وَلَا تَقْعُدُوْا بِكُلِّ صِرَاطٍ تُوْعِدُوْنَ وَتَصُدُّوْنَ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ مَنْ اٰمَنَ بِهٖ وَتَبْغُوْنَهَا عِوَجًاۚ وَاذْكُرُوْاۤ اِذْ كُنْتُمْ قَلِيْلًا فَكَثَّرَكُمْ۪ وَانْظُرُوْا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُفْسِدِيْنَ
আর তোমরা প্রতিটি পথে এ উদ্দেশ্যে বসে থেকো না যে, ঈমানদার লোকদেরকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করবে ও (মানুষকে) আল্লাহর পথ হতে বিরত রাখবে এবং সহজসরল পথকে ছেড়ে দিয়ে বক্রতা অন্বেষণে ব্যস্ত থাকবে। আর তোমরা (ঐ অবস্থাটির কথা) স্মরণ করো, যখন তোমরা সংখ্যায় স্বল্প ছিলে, অতঃপর তিনি (আল্লাহ) তোমাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করে দিলেন। আর বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণতি কী হয়েছিল তা লক্ষ্য করো। (সূরা আ‘রাফু ৮৬)
আল্লাহর কাছে তাওবা করার নির্দেশ দিলেন :
وَاسْتَغْفِرُوْا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوْبُوْاۤ اِلَيْهِؕ اِنَّ رَبِّيْ رَحِيْمٌ وَّدُوْدٌ
তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করো ও তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন করো। নিশ্চয় আমার প্রতিপালক পরম দয়ালু ও প্রেমময়। (সূরা হুদু ৯০)
আল্লাহর ব্যাপারে জাতিকে সতর্ক করলেন :
قَالَ يَا قَوْمِ اَرَهْطِيْۤ اَعَزُّ عَلَيْكُمْ مِّنَ اللهِؕ وَاتَّخَذْتُمُوْهُ وَرَآءَكُمْ ظِهْرِيًّاؕ اِنَّ رَبِّيْ بِمَا تَعْمَلُوْنَ مُحِيْطٌ
সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমাদের নিকট কি আমার স্বজনবর্গ আল্লাহ অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী? অথচ তোমরা তাঁকে সম্পূর্ণ পশ্চাতে ফেলে রেখেছ। (জেনে রেখো) তোমরা যা কর আমার প্রতিপালক অবশ্যই তা পরিবেষ্টন করে আছেন। (সূরা হুদু ৯২)
আখিরাতের ব্যাপারে সতর্ক করলেন :
وَاِلٰى مَدْيَنَ اَخَاهُمْ شُعَيْبًاؕ فَقَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ وَارْجُوا الْيَوْمَ الْاٰخِرَ وَلَا تَعْثَوْا فِى الْاَرْضِ مُفْسِدِيْنَ
আমি মাদইয়ানবাসীদের প্রতি তাদের ভাই শুয়াইবকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো, শেষ দিবসকে ভয় করো এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না। (সূরা আনকাবূত– ৩৬)
পূর্ববর্তীদের পরিণামের কথা জানালেন :
وَيَا قَوْمِ لَا يَجْرِمَنَّكُمْ شِقَاقِۤيْ اَنْ يُّصِيْبَكُمْ مِّثْلُ مَاۤ اَصَابَ قَوْمَ نُوْحٍ اَوْ قَوْمَ هُوْدٍ اَوْ قَوْمَ صَالِحٍؕ وَمَا قَوْمُ لُوْطٍ مِّنْكُمْ بِبَعِيْدٍ
হে আমার সম্প্রদায়। আমার সাথে বিরোধ যেন কিছুতেই তোমাদেরকে এমন অপরাধ না করায় যাতে তোমাদের উপর অনুরূপ বিপদ পতিত হবে, যা পতিত হয়েছিল নূহের সম্প্রদায়ের উপর অথবা হুদের সম্প্রদায়ের উপর কিংবা সালেহের সম্প্রদায়ের উপর। আর লূতের সম্প্রদায় তো তোমাদের হতে দূরে নয়। (সূরা হুদু ৮৯)
নবীর সৎকর্ম নিয়ে তারা উপহাস করত :
قَالُوْا يَا شُعَيْبُ اَصَلَاتُكَ تَأْمُرُكَ اَنْ نَّتْرُكَ مَا يَعْبُدُاٰبَآؤُنَاۤ اَوْ اَنْ نَّفْعَلَ فِۤيْ اَمْوَالِنَا مَا نَشَآءُؕ اِنَّكَ لَاَنْتَ الْحَلِيْمُ الرَّشِيْدُ
তারা বলল, হে শুয়াইব! তোমার সালাত কি তোমাকে নির্দেশ দেয় যে, আমাদের পিতৃপুরুষরা যার ইবাদাত করত আমাদেরকে তা বর্জন করতে হবে অথবা আমরা আমাদের ধনসম্পদ সম্পর্কে যা করি তাও (বর্জন করতে হবে)? তুমি তো সত্যি খুবই সহিষ্ণু ও সৎপথপ্রাপ্ত। (সূরা হুদু ৮৭)
তারা জাতিকেও ঈমান আনতে বাধা দিত :
وَقَالَ الْمَلَاُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنْ قَوْمِهٖ لَئِنِ اتَّبَعْتُمْ شُعَيْبًا اِنَّكُمْ اِذًا لَّخَاسِرُوْنَ
তার সম্প্রদায়ের অবিশ্বাসী প্রধানগণ বলল, তোমরা যদি শুয়াইবকে অনুসরণ কর তবে অবশ্যই তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবে। (সূরা আ‘রাফু ৯০)
নবীকে পাথর মেরে হত্যার ভয় দেখাল :
قَالُوْا يَا شُعَيْبُ مَا نَفْقَهُ كَثِيْرًا مِّمَّا تَقُوْلُ وَاِنَّا لَنَرَاكَ فِيْنَا ضَعِيْفًاۚ وَلَوْلَا رَهْطُكَ لَرَجَمْنَاكَؗ وَمَاۤ اَنْتَ عَلَيْنَا بِعَزِيْزٍ
তারা বলল, হে শুয়াইব! তুমি যা বলে থাক তার অনেকাংশই আমরা বুঝি না। তাছাড়া আমরা তো আমাদের মধ্যে তোমাকে দুর্বল হিসেবেই দেখছি। তোমার স্বজনবর্গ না থাকলে আমরা তোমাকে পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করতাম। আর তুমি আমাদের উপর শক্তিশালী নও। (সূরা হুদু ৯১)
ব্যাখ্যা : তাদের মানসিক কাঠামো এত বেশি বেঁকে গিয়েছিল যে, শুয়াইব (আঃ) এর সহজসরল কথাবার্তা তাদের মধ্যে প্রবেশ করত না। তবে এ কথা ঠিক যে, যারা অন্ধপ্রীতি ও একগুঁয়েমির নীতি অবলম্বন করে অথবা কোন বিশেষ চিন্তাধারার উপর অনড় থাকে, তারা প্রথমত এমন কোন কথা শুনতেই চায় না যা তাদের চিন্তাধারা থেকে ভিন্নতর। আর যদি কখনো শুনেই থাকে, তাহলে কথাটা সঠিক কি না তা একটুও চিন্তা করে দেখে না।
নবীকে তাড়ানোর হুমকি দিল :
قَالَ الْمَلَاُ الَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْا مِنْ قَوْمِهٖ لَنُخْرِجَنَّكَ يَا شُعَيْبُ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَعَكَ مِنْ قَرْيَتِنَاۤ اَوْ لَتَعُوْدُنَّ فِيْ مِلَّتِنَاؕ قَالَ اَوَلَوْ كُنَّا كَارِهِيْنَ
তার সম্প্রদায়ের দাম্ভিক প্রধানরা বলল, হে শুয়াইব! আমরা তোমাকে ও তোমার সাথে যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে আমাদের জনপদ হতে বহিষ্কার করবই, অন্যথায় তোমাদেরকে আমাদের ধর্মাদর্শে ফিরে আসতে হবে। সে বলল, যদিও আমরা তা ঘৃণা করি তবুও? (সূরা আ‘রাফু ৮৮)
নবী সত্যের উপর অটল থাকলেন :
قَدِ افْتَرَيْنَا عَلَى اللهِ كَذِبًا اِنْ عُدْنَا فِيْ مِلَّتِكُمْ بَعْدَ اِذْ نَجَّانَا اللهُ مِنْهَاؕ وَمَا يَكُوْنُ لَنَاۤ اَنْ نَّعُوْدَ فِيْهَاۤ اِلَّاۤ اَنْ يَّشَآءَ اللهُ رَبُّنَاؕ وَسِعَ رَبُّنَا كُلَّ شَيْءٍ عِلْمًاؕ عَلَى اللهِ تَوَكَّلْنَا
তোমাদের ধর্মাদর্শ হতে আল্লাহ আমাদেরকে উদ্ধার করার পর যদি আমরা তাতে ফিরে যাই, তাহলে তো আমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপই করে ফেলব। অতএব আমাদের প্রতিপালক ইচ্ছা না করলে তাতে ফিরে যাওয়া আমাদের জন্য সমীচিন নয়। আমাদের প্রতিপালক সর্ববিষয়ে জ্ঞানবান, সুতরাং আমরা আল্লাহর উপরই নির্ভর করি। (সূরা আ‘রাফু ৮৯)
قَالُوْا يَا شُعَيْبُ اَصَلَاتُكَ تَأْمُرُكَ اَنْ نَّتْرُكَ مَا يَعْبُدُاٰبَآؤُنَاۤ اَوْ اَنْ نَّفْعَلَ فِۤيْ اَمْوَالِنَا مَا نَشَآءُؕ اِنَّكَ لَاَنْتَ الْحَلِيْمُ الرَّشِيْدُ
তারা বলল, হে শুয়াইব! তোমার সালাত কি তোমাকে নির্দেশ দেয় যে, আমাদের পিতৃপুরুষরা যার ইবাদাত করত আমাদেরকে তা বর্জন করতে হবে অথবা আমরা আমাদের ধনসম্পদ সম্পর্কে যা করি তাও (বর্জন করতে হবে)? তুমি তো সত্যি খুবই সহিষ্ণু ও সৎপথপ্রাপ্ত। (সূরা হুদু ৮৭)
তারা জাতিকেও ঈমান আনতে বাধা দিত :
وَقَالَ الْمَلَاُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنْ قَوْمِهٖ لَئِنِ اتَّبَعْتُمْ شُعَيْبًا اِنَّكُمْ اِذًا لَّخَاسِرُوْنَ
তার সম্প্রদায়ের অবিশ্বাসী প্রধানগণ বলল, তোমরা যদি শুয়াইবকে অনুসরণ কর তবে অবশ্যই তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবে। (সূরা আ‘রাফু ৯০)
নবীকে পাথর মেরে হত্যার ভয় দেখাল :
قَالُوْا يَا شُعَيْبُ مَا نَفْقَهُ كَثِيْرًا مِّمَّا تَقُوْلُ وَاِنَّا لَنَرَاكَ فِيْنَا ضَعِيْفًاۚ وَلَوْلَا رَهْطُكَ لَرَجَمْنَاكَؗ وَمَاۤ اَنْتَ عَلَيْنَا بِعَزِيْزٍ
তারা বলল, হে শুয়াইব! তুমি যা বলে থাক তার অনেকাংশই আমরা বুঝি না। তাছাড়া আমরা তো আমাদের মধ্যে তোমাকে দুর্বল হিসেবেই দেখছি। তোমার স্বজনবর্গ না থাকলে আমরা তোমাকে পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করতাম। আর তুমি আমাদের উপর শক্তিশালী নও। (সূরা হুদু ৯১)
ব্যাখ্যা : তাদের মানসিক কাঠামো এত বেশি বেঁকে গিয়েছিল যে, শুয়াইব (আঃ) এর সহজসরল কথাবার্তা তাদের মধ্যে প্রবেশ করত না। তবে এ কথা ঠিক যে, যারা অন্ধপ্রীতি ও একগুঁয়েমির নীতি অবলম্বন করে অথবা কোন বিশেষ চিন্তাধারার উপর অনড় থাকে, তারা প্রথমত এমন কোন কথা শুনতেই চায় না যা তাদের চিন্তাধারা থেকে ভিন্নতর। আর যদি কখনো শুনেই থাকে, তাহলে কথাটা সঠিক কি না তা একটুও চিন্তা করে দেখে না।
নবীকে তাড়ানোর হুমকি দিল :
قَالَ الْمَلَاُ الَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْا مِنْ قَوْمِهٖ لَنُخْرِجَنَّكَ يَا شُعَيْبُ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَعَكَ مِنْ قَرْيَتِنَاۤ اَوْ لَتَعُوْدُنَّ فِيْ مِلَّتِنَاؕ قَالَ اَوَلَوْ كُنَّا كَارِهِيْنَ
তার সম্প্রদায়ের দাম্ভিক প্রধানরা বলল, হে শুয়াইব! আমরা তোমাকে ও তোমার সাথে যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে আমাদের জনপদ হতে বহিষ্কার করবই, অন্যথায় তোমাদেরকে আমাদের ধর্মাদর্শে ফিরে আসতে হবে। সে বলল, যদিও আমরা তা ঘৃণা করি তবুও? (সূরা আ‘রাফু ৮৮)
নবী সত্যের উপর অটল থাকলেন :
قَدِ افْتَرَيْنَا عَلَى اللهِ كَذِبًا اِنْ عُدْنَا فِيْ مِلَّتِكُمْ بَعْدَ اِذْ نَجَّانَا اللهُ مِنْهَاؕ وَمَا يَكُوْنُ لَنَاۤ اَنْ نَّعُوْدَ فِيْهَاۤ اِلَّاۤ اَنْ يَّشَآءَ اللهُ رَبُّنَاؕ وَسِعَ رَبُّنَا كُلَّ شَيْءٍ عِلْمًاؕ عَلَى اللهِ تَوَكَّلْنَا
তোমাদের ধর্মাদর্শ হতে আল্লাহ আমাদেরকে উদ্ধার করার পর যদি আমরা তাতে ফিরে যাই, তাহলে তো আমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপই করে ফেলব। অতএব আমাদের প্রতিপালক ইচ্ছা না করলে তাতে ফিরে যাওয়া আমাদের জন্য সমীচিন নয়। আমাদের প্রতিপালক সর্ববিষয়ে জ্ঞানবান, সুতরাং আমরা আল্লাহর উপরই নির্ভর করি। (সূরা আ‘রাফু ৮৯)
নবী আল্লাহর কাছে চূড়ান্ত ফায়সালার জন্য দু‘আ করলেন :
رَبَّنَا افْتَحْ بَيْنَنَا وَبَيْنَ قَوْمِنَا بِالْحَقِّ وَاَنْتَ خَيْرُ الْفَاتِحِيْنَ
হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের ও আমাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে ন্যায্যভাবে মীমাংসা করে দাও, তুমিই তো শ্রেষ্ঠ মীমাংসাকারী। (সূরা আ‘রাফু ৮৯)
তিনি আল্লাহর ফায়সালার অপেক্ষায় থাকলেন :
وَاِنْ كَانَ طَآئِفَةٌ مِّنْكُمْ اٰمَنُوْا بِالَّذِيْۤ اُرْسِلْتُ بِهٖ وَطَآئِفَةٌ لَّمْ يُؤْمِنُوْا فَاصْبِرُوْا حَتّٰى يَحْكُمَ اللهُ بَيْنَنَاۚ وَهُوَ خَيْرُ الْحَاكِمِيْنَ
(আল্লাহর পক্ষ হতে) আমার নিকট যা প্রেরিত হয়েছে তা যদি তোমাদের কোন দল বিশ্বাস করে এবং কোন দল অবিশ্বাস করে, তবে ধৈর্যধারণ করো- যতক্ষণ না আল্লাহ আমাদের মধ্যে চূড়ান্ত ফায়সালা করে দেন। আর তিনিই উত্তম ফায়সালাকারী। (সূরা আ‘রাফু ৮৭)
তাদেরকে ভূমিকম্প পাকড়াও করল :
فَكَذَّبُوْهُ فَاَخَذَتْهُمُ الرَّجْفَةُ فَاَصْبَحُوْا فِيْ دَارِهِمْ جَاثِمِيْنَ
কিন্তু তারা তার প্রতি মিথ্যারোপ করল, অতঃপর তারা ভূমিকম্প দ্বারা আক্রান্ত হলো। ফলে তারা নিজ নিজ গৃহে নতজানু অবস্থায় শেষ হয়ে গেল। (সূরা আনকাবূত– ৩৭)
فَاَخَذَتْهُمُ الرَّجْفَةُ فَاَصْبَحُوْا فِيْ دَارِهِمْ جَاثِمِيْنَ
অতঃপর তারা ভূমিকম্প দ্বারা আক্রান্ত হলো, ফলে তাদের প্রভাত হলো নিজ নিজ গৃহে অধঃমুখে পতিত অবস্থায়। (সূরা আ‘রাফু ৯১)
প্রচন্ড আওয়াজ তাদেরকে আঘাত করল :
وَاَخَذَتِ الَّذِيْنَ ظَلَمُوا الصَّيْحَةُ فَاَصْبَحُوْا فِيْ دِيَارِهِمْ جَاثِمِيْنَ
অতঃপর যারা সীমালঙ্ঘন করেছিল তাদেরকে এক বিকট আওয়াজ আঘাত করল, ফলে তারা নিজ নিজ গৃহে নতজানু অবস্থায় পড়ে রইল। (সূরা হুদু ৯৪)
তারা সামূদ জাতির ন্যায় অভিশপ্ত হলো :
كَاَنْ لَّمْ يَغْنَوْا فِيْهَاؕ اَ لَا بُعْدًا لِّمَدْيَنَ كَمَا بَعِدَتْ ثَمُوْدُ
(ধ্বংস হওয়ার পর দেখলে মনে হবে) যেন তারা সেখানে কখনো বসবাস করেনি। জেনে রেখো! ধ্বংসই ছিল মাদইয়ানবাসীদের আসল পরিণাম, যেভাবে ধ্বংস হয়েছিল সামূদ সম্প্রদায়। (সূরা হুদু ৯৫)
নবী ও ঈমানদারদেরকে বাঁচানো হলো :
وَلَمَّا جَآءَ اَمْرُنَا نَجَّيْنَا شُعَيْبًا وَّالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَعَهٗ بِرَحْمَةٍ مِّنَّا
যখন আমার নির্দেশ এসে গেল, তখন আমি শুয়াইব ও তার সঙ্গে যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে আমার অনুগ্রহে রক্ষা করেছিলাম। (সূরা হুদু ৯৪)
জাতির উদ্দেশ্যে নবীর শেষ কথা :
فَتَوَلّٰى عَنْهُمْ وَقَالَ يَا قَوْمِ لَقَدْ اَبْلَغْتُكُمْ رِسَالَاتِ رَبِّيْ وَنَصَحْتُ لَكُمْۚ فَكَيْفَ اٰسٰى عَلٰى قَوْمٍ كَافِرِيْنَ
সে তাদের হতে মুখ ফিরিয়ে নিল এবং বলল, হে আমার সম্প্রদায়! আমি তো তোমাদেরকে আমার প্রতিপালকের বাণী পৌঁছে দিয়েছি এবং তোমাদেরকে উপদেশ দান করেছি, সুতরাং আমি কাফির সম্প্রদায়ের জন্য কী করে আক্ষেপ করতে পারি? (সূরা আ‘রাফু ৯৩)
رَبَّنَا افْتَحْ بَيْنَنَا وَبَيْنَ قَوْمِنَا بِالْحَقِّ وَاَنْتَ خَيْرُ الْفَاتِحِيْنَ
হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের ও আমাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে ন্যায্যভাবে মীমাংসা করে দাও, তুমিই তো শ্রেষ্ঠ মীমাংসাকারী। (সূরা আ‘রাফু ৮৯)
তিনি আল্লাহর ফায়সালার অপেক্ষায় থাকলেন :
وَاِنْ كَانَ طَآئِفَةٌ مِّنْكُمْ اٰمَنُوْا بِالَّذِيْۤ اُرْسِلْتُ بِهٖ وَطَآئِفَةٌ لَّمْ يُؤْمِنُوْا فَاصْبِرُوْا حَتّٰى يَحْكُمَ اللهُ بَيْنَنَاۚ وَهُوَ خَيْرُ الْحَاكِمِيْنَ
(আল্লাহর পক্ষ হতে) আমার নিকট যা প্রেরিত হয়েছে তা যদি তোমাদের কোন দল বিশ্বাস করে এবং কোন দল অবিশ্বাস করে, তবে ধৈর্যধারণ করো- যতক্ষণ না আল্লাহ আমাদের মধ্যে চূড়ান্ত ফায়সালা করে দেন। আর তিনিই উত্তম ফায়সালাকারী। (সূরা আ‘রাফু ৮৭)
তাদেরকে ভূমিকম্প পাকড়াও করল :
فَكَذَّبُوْهُ فَاَخَذَتْهُمُ الرَّجْفَةُ فَاَصْبَحُوْا فِيْ دَارِهِمْ جَاثِمِيْنَ
কিন্তু তারা তার প্রতি মিথ্যারোপ করল, অতঃপর তারা ভূমিকম্প দ্বারা আক্রান্ত হলো। ফলে তারা নিজ নিজ গৃহে নতজানু অবস্থায় শেষ হয়ে গেল। (সূরা আনকাবূত– ৩৭)
فَاَخَذَتْهُمُ الرَّجْفَةُ فَاَصْبَحُوْا فِيْ دَارِهِمْ جَاثِمِيْنَ
অতঃপর তারা ভূমিকম্প দ্বারা আক্রান্ত হলো, ফলে তাদের প্রভাত হলো নিজ নিজ গৃহে অধঃমুখে পতিত অবস্থায়। (সূরা আ‘রাফু ৯১)
প্রচন্ড আওয়াজ তাদেরকে আঘাত করল :
وَاَخَذَتِ الَّذِيْنَ ظَلَمُوا الصَّيْحَةُ فَاَصْبَحُوْا فِيْ دِيَارِهِمْ جَاثِمِيْنَ
অতঃপর যারা সীমালঙ্ঘন করেছিল তাদেরকে এক বিকট আওয়াজ আঘাত করল, ফলে তারা নিজ নিজ গৃহে নতজানু অবস্থায় পড়ে রইল। (সূরা হুদু ৯৪)
তারা সামূদ জাতির ন্যায় অভিশপ্ত হলো :
كَاَنْ لَّمْ يَغْنَوْا فِيْهَاؕ اَ لَا بُعْدًا لِّمَدْيَنَ كَمَا بَعِدَتْ ثَمُوْدُ
(ধ্বংস হওয়ার পর দেখলে মনে হবে) যেন তারা সেখানে কখনো বসবাস করেনি। জেনে রেখো! ধ্বংসই ছিল মাদইয়ানবাসীদের আসল পরিণাম, যেভাবে ধ্বংস হয়েছিল সামূদ সম্প্রদায়। (সূরা হুদু ৯৫)
নবী ও ঈমানদারদেরকে বাঁচানো হলো :
وَلَمَّا جَآءَ اَمْرُنَا نَجَّيْنَا شُعَيْبًا وَّالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَعَهٗ بِرَحْمَةٍ مِّنَّا
যখন আমার নির্দেশ এসে গেল, তখন আমি শুয়াইব ও তার সঙ্গে যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে আমার অনুগ্রহে রক্ষা করেছিলাম। (সূরা হুদু ৯৪)
জাতির উদ্দেশ্যে নবীর শেষ কথা :
فَتَوَلّٰى عَنْهُمْ وَقَالَ يَا قَوْمِ لَقَدْ اَبْلَغْتُكُمْ رِسَالَاتِ رَبِّيْ وَنَصَحْتُ لَكُمْۚ فَكَيْفَ اٰسٰى عَلٰى قَوْمٍ كَافِرِيْنَ
সে তাদের হতে মুখ ফিরিয়ে নিল এবং বলল, হে আমার সম্প্রদায়! আমি তো তোমাদেরকে আমার প্রতিপালকের বাণী পৌঁছে দিয়েছি এবং তোমাদেরকে উপদেশ দান করেছি, সুতরাং আমি কাফির সম্প্রদায়ের জন্য কী করে আক্ষেপ করতে পারি? (সূরা আ‘রাফু ৯৩)
মূসা (আঃ) ছিলেন বনী ইসরাঈলদের উপর প্রেরিত নবী ও রাসূল। হারূন (আঃ) ছিলেন তার ভাই। তাদের পিতার নাম ইমরান। প্রাচীন সভ্যতার লীলাভূমি বর্তমান মিসরেই তারা জন্মগ্রহণ করেন। মূসা (আঃ) বনী ইসরাঈলের চিরশত্রু তৎকালীন মিসর সম্রাটের ঘরেই লালিত-পালিত হন। অতঃপর ৪০ বছর বয়সে তুয়া নামক উপত্যকায় নবুওয়াতপ্রাপ্ত হন। তারপর তূর পবর্তে তাওরাত কিতাব লাভ করেন। কুরআন মাজীদে তাঁর অলৌকিকভাবে বেঁচে থাকা, সম্মানজনকভাবে লালন-পালন, কৈশোর ও যৌবনের নানা ঘটনা, হিজরত, বিবাহ, দেশে প্রত্যাবর্তন, ফিরাউনের সাথে সংঘাত ও সংগ্রাম ইত্যাদি নিখুঁতভাবে বর্ণিত হয়েছে।
আল্লাহ যা কিছু করতে চান সেজন্য তিনি সবার অলক্ষ্যে তার উপায়-উপকরণ সংগ্রহ করে দেন। যার হাতে শেষ পর্যন্ত ফিরাউনের রাজত্বের অবসান ঘটবে, তাকে আল্লাহ ফিরাউনের গৃহেই প্রতিপালনের ব্যবস্থা করেন। ফিরাউন জানতেও পারেনি যে, সে কাকে প্রতিপালন করছে। সেই আল্লাহর ইচ্ছার সাথে কে লড়াই করতে পারে এবং তাঁর মুকাবিলায় কার কৌশল সফল হতে পারে? আল্লাহ যদি কোন বান্দার দ্বারা কোন কাজ করিয়ে নিতে চান, তবে কোন সেনাবাহিনী ও সাজ-সরঞ্জাম ছাড়াই তার উত্থান ঘটতে পারে। এতে অপর কারো সাহায্যের প্রয়োজন হয় না। বাহ্যত তার কাছে কোন শক্তির বহর নাও থাকতে পারে। কিন্তু বড় বড় সেনাদল ও সাজ-সরঞ্জামের অধিকারীরাও তার মুকাবিলায় সফল হতে পারে না।
মূসা ও হারূন (আঃ) এর উপর সালাম :
سَلَامٌ عَلٰى مُوْسٰى وَهَارُوْنَ
‘সালাম’ বর্ষিত হোক মূসা ও হারূনের উপর। (সূরা সাফফাত- ১২০)
তারা মুমিন বান্দা ছিলেন :
اِنَّهُمَا مِنْ عِبَادِنَا الْمُؤْمِنِيْنَ
নিশ্চয় তারা উভয়ে ছিলেন আমার মুমিন বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা সাফফাত– ১২২)
আল্লাহ মূসা (আঃ) ও হারূন (আঃ) এর প্রতি অনুগ্রহ করেছেন :
وَلَقَدْ مَنَنَّا عَلٰى مُوْسٰى وَهَارُوْنَ
আর আমি মূসা ও হারূনের প্রতি অনুগ্রহ করেছিলাম। (সূরা সাফফাত– ১১৪)
আল্লাহ তাদেরকে সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছেন :
وَاٰتَيْنَاهُمَا الْكِتَابَ الْمُسْتَبِيْنَ ‐ وَهَدَيْنَاهُمَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيْمَ
আমি তাদের উভয়কে সুস্পষ্ট কিতাব দান করেছিলাম এবং তাদের উভয়কে সরল–সঠিক পথে পরিচালিত করেছিলাম। (সূরা সাফফাত– ১১৭, ১১৮)
পরবর্তীদের মধ্যে তাদের খ্যাতি রেখে দিয়েছেন :
وَتَرَكْنَا عَلَيْهِمَا فِى الْاٰخِرِيْنَ
আর আমি তাদের উভয়কে পরবর্তীদের জন্য স্মরণীয় করে রাখলাম। (সূরা সাফফাত– ১১৯)
সৎকর্মশীলদের ফল এভাবেই দেয়া হয় :
اِنَّا كَذٰلِكَ نَجْزِى الْمُحْسِنِيْنَ
এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদের প্রতিদান দিয়ে থাকি। (সূরা সাফফাত– ১২১)
আল্লাহ যা কিছু করতে চান সেজন্য তিনি সবার অলক্ষ্যে তার উপায়-উপকরণ সংগ্রহ করে দেন। যার হাতে শেষ পর্যন্ত ফিরাউনের রাজত্বের অবসান ঘটবে, তাকে আল্লাহ ফিরাউনের গৃহেই প্রতিপালনের ব্যবস্থা করেন। ফিরাউন জানতেও পারেনি যে, সে কাকে প্রতিপালন করছে। সেই আল্লাহর ইচ্ছার সাথে কে লড়াই করতে পারে এবং তাঁর মুকাবিলায় কার কৌশল সফল হতে পারে? আল্লাহ যদি কোন বান্দার দ্বারা কোন কাজ করিয়ে নিতে চান, তবে কোন সেনাবাহিনী ও সাজ-সরঞ্জাম ছাড়াই তার উত্থান ঘটতে পারে। এতে অপর কারো সাহায্যের প্রয়োজন হয় না। বাহ্যত তার কাছে কোন শক্তির বহর নাও থাকতে পারে। কিন্তু বড় বড় সেনাদল ও সাজ-সরঞ্জামের অধিকারীরাও তার মুকাবিলায় সফল হতে পারে না।
মূসা ও হারূন (আঃ) এর উপর সালাম :
سَلَامٌ عَلٰى مُوْسٰى وَهَارُوْنَ
‘সালাম’ বর্ষিত হোক মূসা ও হারূনের উপর। (সূরা সাফফাত- ১২০)
তারা মুমিন বান্দা ছিলেন :
اِنَّهُمَا مِنْ عِبَادِنَا الْمُؤْمِنِيْنَ
নিশ্চয় তারা উভয়ে ছিলেন আমার মুমিন বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা সাফফাত– ১২২)
আল্লাহ মূসা (আঃ) ও হারূন (আঃ) এর প্রতি অনুগ্রহ করেছেন :
وَلَقَدْ مَنَنَّا عَلٰى مُوْسٰى وَهَارُوْنَ
আর আমি মূসা ও হারূনের প্রতি অনুগ্রহ করেছিলাম। (সূরা সাফফাত– ১১৪)
আল্লাহ তাদেরকে সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছেন :
وَاٰتَيْنَاهُمَا الْكِتَابَ الْمُسْتَبِيْنَ ‐ وَهَدَيْنَاهُمَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيْمَ
আমি তাদের উভয়কে সুস্পষ্ট কিতাব দান করেছিলাম এবং তাদের উভয়কে সরল–সঠিক পথে পরিচালিত করেছিলাম। (সূরা সাফফাত– ১১৭, ১১৮)
পরবর্তীদের মধ্যে তাদের খ্যাতি রেখে দিয়েছেন :
وَتَرَكْنَا عَلَيْهِمَا فِى الْاٰخِرِيْنَ
আর আমি তাদের উভয়কে পরবর্তীদের জন্য স্মরণীয় করে রাখলাম। (সূরা সাফফাত– ১১৯)
সৎকর্মশীলদের ফল এভাবেই দেয়া হয় :
اِنَّا كَذٰلِكَ نَجْزِى الْمُحْسِنِيْنَ
এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদের প্রতিদান দিয়ে থাকি। (সূরা সাফফাত– ১২১)
আল্লাহ মূসা (আঃ) এর ইতিহাস যথাযথভাবে বর্ণনা করেছেন :
نَتْلُوْا عَلَيْكَ مِنْ نَّبَأِ مُوْسٰى وَفِرْعَوْنَ بِالْحَقِّ لِقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ
আমি তোমার নিকট মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য মূসা ও ফিরাউনের কিছু বৃত্তান্ত যথাযথভাবে বর্ণনা করছি। (সূরা ক্বাসাস– ৩)
আল্লাহ মূসা (আঃ) এর সাথে কথা বলেছেন :
وَكَلَّمَ اللهُ مُوْسٰى تَكْلِيْمًا
আর আল্লাহ মূসার সঙ্গে বাক্যালাপ করেছিলেন। (সূরা নিসা– ১৬৪)
আল্লাহ তাকে নৈকট্য দান করেছিলেন :
وَنَادَيْنَاهُ مِنْ جَانِبِ الطُّوْرِ الْاَيْمَنِ وَقَرَّبْنَاهُ نَجِيًّا
তাকে আমি আহবান করেছিলাম তূর পর্বতের দক্ষিণ দিক হতে এবং আমি অন্তরঙ্গ আলাপে নৈকট্য দান করেছিলাম। (সূরা মারইয়াম– ৫২)
মূসা (আঃ) আল্লাহর কাছে সম্মানিত ছিলেন :
وَكَانَ عِنْدَ اللهِ وَجِيْهًا
আর তিনি ছিলেন আল্লাহর কাছে খুবই সম্মানিত (নবী)। (সূরা আহযাব– ৬৯)
তিনি ছিলেন আল্লাহর বাছাইকৃত বান্দা :
وَاذْكُرْ فِى الْكِتَابِ مُوْسٰىؗ اِنَّهٗ كَانَ مُخْلَصًا وَّكَانَ رَسُوْلًا نَّبِيًّا
স্মরণ করো, এ কিতাবে মূসার কথা, সে ছিল বিশেষ মনোনীত এবং সে ছিল নবী ও রাসূল। (সূরা মারইয়াম– ৫১)
আল্লাহ তাকে কাজের জন্য তৈরি করেছেন :
وَاصْطَنَعْتُكَ لِنَفْسِيْ
আমি তোমাকে আমার নিজের জন্য প্রস্তুত করে নিয়েছি। (সূরা ত্বা–হা– ৪১)
نَتْلُوْا عَلَيْكَ مِنْ نَّبَأِ مُوْسٰى وَفِرْعَوْنَ بِالْحَقِّ لِقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ
আমি তোমার নিকট মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য মূসা ও ফিরাউনের কিছু বৃত্তান্ত যথাযথভাবে বর্ণনা করছি। (সূরা ক্বাসাস– ৩)
আল্লাহ মূসা (আঃ) এর সাথে কথা বলেছেন :
وَكَلَّمَ اللهُ مُوْسٰى تَكْلِيْمًا
আর আল্লাহ মূসার সঙ্গে বাক্যালাপ করেছিলেন। (সূরা নিসা– ১৬৪)
আল্লাহ তাকে নৈকট্য দান করেছিলেন :
وَنَادَيْنَاهُ مِنْ جَانِبِ الطُّوْرِ الْاَيْمَنِ وَقَرَّبْنَاهُ نَجِيًّا
তাকে আমি আহবান করেছিলাম তূর পর্বতের দক্ষিণ দিক হতে এবং আমি অন্তরঙ্গ আলাপে নৈকট্য দান করেছিলাম। (সূরা মারইয়াম– ৫২)
মূসা (আঃ) আল্লাহর কাছে সম্মানিত ছিলেন :
وَكَانَ عِنْدَ اللهِ وَجِيْهًا
আর তিনি ছিলেন আল্লাহর কাছে খুবই সম্মানিত (নবী)। (সূরা আহযাব– ৬৯)
তিনি ছিলেন আল্লাহর বাছাইকৃত বান্দা :
وَاذْكُرْ فِى الْكِتَابِ مُوْسٰىؗ اِنَّهٗ كَانَ مُخْلَصًا وَّكَانَ رَسُوْلًا نَّبِيًّا
স্মরণ করো, এ কিতাবে মূসার কথা, সে ছিল বিশেষ মনোনীত এবং সে ছিল নবী ও রাসূল। (সূরা মারইয়াম– ৫১)
আল্লাহ তাকে কাজের জন্য তৈরি করেছেন :
وَاصْطَنَعْتُكَ لِنَفْسِيْ
আমি তোমাকে আমার নিজের জন্য প্রস্তুত করে নিয়েছি। (সূরা ত্বা–হা– ৪১)
মূসা (আঃ) আল্লাহর তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত হন:
وَاَلْقَيْتُ عَلَيْكَ مَحَبَّةً مِّنِّيْۚۚ وَلِتُصْنَعَ عَلٰى عَيْنِيْ
আমি আমার নিকট হতে তোমার উপর ভালোবাসা ঢেলে দিয়েছিলাম, যাতে তুমি আমার তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত হও। (সূরা ত্বা–হা– ৩৯)
মূসা (আঃ) ছোটকালেই আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করেন :
وَلَقَدْ مَنَنَّا عَلَيْكَ مَرَّةً اُخْرٰى
আমি তো তোমার প্রতি আরো একবার অনুগ্রহ করেছিলাম। (সূরা ত্বা–হা– ৩৭)
জন্মের পর তার মাকে আল্লাহ উপদেশ দিলেন :
اِذْ اَوْحَيْنَاۤ اِلٰۤى اُمِّكَ مَا يُوْحٰى
যখন আমি তোমার মাকে যা জানানোর তা জানিয়ে দিয়েছিলাম। (সূরা ত্বা–হা ৩৮)
বুকের দুধ খাওয়ানোর নির্দেশ দিলেন :
وَاَوْحَيْنَاۤ اِلٰۤى اُمِّ مُوْسٰۤى اَنْ اَرْضِعِيْهِ
আর আমি মূসার মাকে ওহী করলাম যে, শিশুটিকে স্তন্য দান করতে থাকো। (সূরা ক্বাসাস– ৭)
সন্তানকে সাগরে ভাসিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিলেন :
فَاِذَا خِفْتِ عَلَيْهِ فَاَلْقِيْهِ فِى الْيَمِّ وَلَا تَخَافِيْ وَلَا تَحْزَنِيْۚ اِنَّا رَآدُّوْهُ اِلَيْكِ وَجَاعِلُوْهُ مِنَ الْمُرْسَلِيْنَ
যখন তুমি তার সম্পর্কে কোন আশঙ্কা করবে, তখন তাকে সাগরে নিক্ষেপ করে দেবে। অতঃপর কোন ভয় করবে না এবং কোন দুঃখও করবে না। অবশ্যই আমি তাকে তোমার নিকট ফিরিয়ে দেব এবং তাকে রাসূলদের মধ্যে একজন রাসূল হিসেবে মনোনীত করব। (সূরা ক্বাসাস– ৭)
اَنِ اقْذِفِيْهِ فِى التَّابُوْتِ فَاقْذِفِيْهِ فِى الْيَمِّ فَلْيُلْقِهِ الْيَمُّ بِالسَّاحِلِ يَأْخُذْهُ عَدُوٌّ لِّيْ وَعَدُوٌّ لَّهٗ
তুমি তাকে সিন্দুকের মধ্যে রেখে দাও এবং তা সাগরে ভাসিয়ে দাও। অতঃপর সাগর তাকে তীরে ঠেলে দেবে এবং আমার শত্রু ও তার শত্রু তাকে নিয়ে যাবে। (সূরা ত্বা–হা– ৩৯)
সাগরে ফেলার পর মা অস্থির হয়ে পড়েন :
وَاَصْبَحَ فُؤَادُ اُمِّ مُوْسٰى فَارِغًاؕ اِنْ كَادَتْ لَتُبْدِيْ بِهٖ لَوْلَاۤ اَنْ رَّبَطْنَا عَلٰى قَلْبِهَا لِتَكُوْنَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ
মূসার মায়ের মন অস্থির হয়ে পড়েছিল। সুতরাং তাকে আস্থাশীল করার জন্য আমি তার মনকে দৃঢ় করে না দিলে সে তার পরিচয় প্রকাশ করে দিত। (সূরা ক্বাসাস– ১০)
দেখাশুনার জন্য মা মূসা (আঃ) এর বোনকে পাঠালেন :
وَقَالَتْ لِاُخْتِهٖ قُصِّيْهِؗ فَبَصُرَتْ بِهٖ عَنْ جُنُبٍ وَّهُمْ لَا يَشْعُرُوْنَ
সে মূসার বোনকে বলল, এর পেছনে পেছনে যাও। অতঃপর সে তাদের অজ্ঞাতসারে দূর হতে তাকে দেখছিল। (সূরা ক্বাসাস– ১১)
ফিরাউনের পরিবার তাকে সাগর থেকে উঠিয়ে নিল :
فَالْتَقَطَهٗۤ اٰلُ فِرْعَوْنَ لِيَكُوْنَ لَهُمْ عَدُوًّا وَّحَزَنًا
অতঃপর ফিরাউনের লোকজন তাকে উঠিয়ে নিল, যাতে করে সে তাদের শত্রু ও দুঃখের কারণ হতে পারে। (সূরা ক্বাসাস– ৮)
ফিরাউনের স্ত্রী মূসা (আঃ) কে লালনুপালনের প্রস্তাব দিলেন :
وَقَالَتِ امْرَاَتُ فِرْعَوْنَ قُرَّتُ عَيْنٍ لِّيْ وَلَكَؕ لَا تَقْتُلُوْهُۗ عَسٰۤى اَنْ يَّنْفَعَنَاۤ اَوْ نَتَّخِذَهٗ وَلَدًا وَّهُمْ لَا يَشْعُرُوْنَ
অতঃপর ফিরাউনের স্ত্রী বলল, এ শিশু আমার ও তোমার জন্য চক্ষু শীতলকারী। সুতরাং তাকে হত্যা করো না, সে আমাদের উপকারে আসতে পারে অথবা আমরা তাকে সন্তান হিসেবেও গ্রহণ করতে পারি। প্রকৃতপক্ষে তারা এর পরিণাম বুঝতে পারেনি। (সূরা ক্বাসাস– ৯)
মূসা (আঃ) অন্য কোন মহিলার দুধ পান করতেন না :
وَحَرَّمْنَا عَلَيْهِ الْمَرَاضِعَ مِنْ قَبْلُ
আগে থেকেই আমি ধাত্রীর স্তন্যপানে তাকে বিরত রেখেছিলাম। (সূরা ক্বাসাস– ১২)
মূসা (আঃ) এর বোন পরিচয় গোপন রেখে মাতার সন্ধান দিল :
فَقَالَتْ هَلْ اَدُلُّكُمْ عَلٰۤى اَهْلِ بَيْتٍ يَّكْفُلُوْنَهٗ لَكُمْ وَهُمْ لَهٗ نَاصِحُوْنَ
মূসার বোন বলল, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক পরিবারের সন্ধান দেব, যারা তোমাদের হয়ে একে লালনুপালন করবে এবং এর মঙ্গলকামী হবে? (সূরা ক্বাসাস– ১২)
আল্লাহ মূসা (আঃ) কে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিলেন :
فَرَجَعْنَاكَ اِلٰۤى اُمِّكَ كَيْ تَقَرَّ عَيْنُهَا وَلَا تَحْزَنَ
অতঃপর আমি তোমাকে তোমার মায়ের নিকট ফিরিয়ে দিলাম, যাতে তার চক্ষু শীতল হয় এবং চিন্তিতও না হয়। (সূরা ত্বা–হা– ৪০)
এতে তার মায়ের মনও শান্ত হলো :
فَرَدَدْنَاهُ اِلٰۤى اُمِّهٖ كَيْ تَقَرَّ عَيْنُهَا وَلَا تَحْزَنَ وَلِتَعْلَمَ اَنَّ وَعْدَ اللهِ حَقٌّ وَّلٰكِنَّ اَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ
অতঃপর আমি তাকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিলাম, যাতে তার চোখ জুড়ায় এবং সে যেন কোন দুঃখ না করে। আর যাতে করে সে বুঝতে পারে যে, আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য; কিন্তু অধিকাংশ মানুষই তা জানে না। (সূরা ক্বাসাস– ১৩)
وَاَلْقَيْتُ عَلَيْكَ مَحَبَّةً مِّنِّيْۚۚ وَلِتُصْنَعَ عَلٰى عَيْنِيْ
আমি আমার নিকট হতে তোমার উপর ভালোবাসা ঢেলে দিয়েছিলাম, যাতে তুমি আমার তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত হও। (সূরা ত্বা–হা– ৩৯)
মূসা (আঃ) ছোটকালেই আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করেন :
وَلَقَدْ مَنَنَّا عَلَيْكَ مَرَّةً اُخْرٰى
আমি তো তোমার প্রতি আরো একবার অনুগ্রহ করেছিলাম। (সূরা ত্বা–হা– ৩৭)
জন্মের পর তার মাকে আল্লাহ উপদেশ দিলেন :
اِذْ اَوْحَيْنَاۤ اِلٰۤى اُمِّكَ مَا يُوْحٰى
যখন আমি তোমার মাকে যা জানানোর তা জানিয়ে দিয়েছিলাম। (সূরা ত্বা–হা ৩৮)
বুকের দুধ খাওয়ানোর নির্দেশ দিলেন :
وَاَوْحَيْنَاۤ اِلٰۤى اُمِّ مُوْسٰۤى اَنْ اَرْضِعِيْهِ
আর আমি মূসার মাকে ওহী করলাম যে, শিশুটিকে স্তন্য দান করতে থাকো। (সূরা ক্বাসাস– ৭)
সন্তানকে সাগরে ভাসিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিলেন :
فَاِذَا خِفْتِ عَلَيْهِ فَاَلْقِيْهِ فِى الْيَمِّ وَلَا تَخَافِيْ وَلَا تَحْزَنِيْۚ اِنَّا رَآدُّوْهُ اِلَيْكِ وَجَاعِلُوْهُ مِنَ الْمُرْسَلِيْنَ
যখন তুমি তার সম্পর্কে কোন আশঙ্কা করবে, তখন তাকে সাগরে নিক্ষেপ করে দেবে। অতঃপর কোন ভয় করবে না এবং কোন দুঃখও করবে না। অবশ্যই আমি তাকে তোমার নিকট ফিরিয়ে দেব এবং তাকে রাসূলদের মধ্যে একজন রাসূল হিসেবে মনোনীত করব। (সূরা ক্বাসাস– ৭)
اَنِ اقْذِفِيْهِ فِى التَّابُوْتِ فَاقْذِفِيْهِ فِى الْيَمِّ فَلْيُلْقِهِ الْيَمُّ بِالسَّاحِلِ يَأْخُذْهُ عَدُوٌّ لِّيْ وَعَدُوٌّ لَّهٗ
তুমি তাকে সিন্দুকের মধ্যে রেখে দাও এবং তা সাগরে ভাসিয়ে দাও। অতঃপর সাগর তাকে তীরে ঠেলে দেবে এবং আমার শত্রু ও তার শত্রু তাকে নিয়ে যাবে। (সূরা ত্বা–হা– ৩৯)
সাগরে ফেলার পর মা অস্থির হয়ে পড়েন :
وَاَصْبَحَ فُؤَادُ اُمِّ مُوْسٰى فَارِغًاؕ اِنْ كَادَتْ لَتُبْدِيْ بِهٖ لَوْلَاۤ اَنْ رَّبَطْنَا عَلٰى قَلْبِهَا لِتَكُوْنَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ
মূসার মায়ের মন অস্থির হয়ে পড়েছিল। সুতরাং তাকে আস্থাশীল করার জন্য আমি তার মনকে দৃঢ় করে না দিলে সে তার পরিচয় প্রকাশ করে দিত। (সূরা ক্বাসাস– ১০)
দেখাশুনার জন্য মা মূসা (আঃ) এর বোনকে পাঠালেন :
وَقَالَتْ لِاُخْتِهٖ قُصِّيْهِؗ فَبَصُرَتْ بِهٖ عَنْ جُنُبٍ وَّهُمْ لَا يَشْعُرُوْنَ
সে মূসার বোনকে বলল, এর পেছনে পেছনে যাও। অতঃপর সে তাদের অজ্ঞাতসারে দূর হতে তাকে দেখছিল। (সূরা ক্বাসাস– ১১)
ফিরাউনের পরিবার তাকে সাগর থেকে উঠিয়ে নিল :
فَالْتَقَطَهٗۤ اٰلُ فِرْعَوْنَ لِيَكُوْنَ لَهُمْ عَدُوًّا وَّحَزَنًا
অতঃপর ফিরাউনের লোকজন তাকে উঠিয়ে নিল, যাতে করে সে তাদের শত্রু ও দুঃখের কারণ হতে পারে। (সূরা ক্বাসাস– ৮)
ফিরাউনের স্ত্রী মূসা (আঃ) কে লালনুপালনের প্রস্তাব দিলেন :
وَقَالَتِ امْرَاَتُ فِرْعَوْنَ قُرَّتُ عَيْنٍ لِّيْ وَلَكَؕ لَا تَقْتُلُوْهُۗ عَسٰۤى اَنْ يَّنْفَعَنَاۤ اَوْ نَتَّخِذَهٗ وَلَدًا وَّهُمْ لَا يَشْعُرُوْنَ
অতঃপর ফিরাউনের স্ত্রী বলল, এ শিশু আমার ও তোমার জন্য চক্ষু শীতলকারী। সুতরাং তাকে হত্যা করো না, সে আমাদের উপকারে আসতে পারে অথবা আমরা তাকে সন্তান হিসেবেও গ্রহণ করতে পারি। প্রকৃতপক্ষে তারা এর পরিণাম বুঝতে পারেনি। (সূরা ক্বাসাস– ৯)
মূসা (আঃ) অন্য কোন মহিলার দুধ পান করতেন না :
وَحَرَّمْنَا عَلَيْهِ الْمَرَاضِعَ مِنْ قَبْلُ
আগে থেকেই আমি ধাত্রীর স্তন্যপানে তাকে বিরত রেখেছিলাম। (সূরা ক্বাসাস– ১২)
মূসা (আঃ) এর বোন পরিচয় গোপন রেখে মাতার সন্ধান দিল :
فَقَالَتْ هَلْ اَدُلُّكُمْ عَلٰۤى اَهْلِ بَيْتٍ يَّكْفُلُوْنَهٗ لَكُمْ وَهُمْ لَهٗ نَاصِحُوْنَ
মূসার বোন বলল, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক পরিবারের সন্ধান দেব, যারা তোমাদের হয়ে একে লালনুপালন করবে এবং এর মঙ্গলকামী হবে? (সূরা ক্বাসাস– ১২)
আল্লাহ মূসা (আঃ) কে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিলেন :
فَرَجَعْنَاكَ اِلٰۤى اُمِّكَ كَيْ تَقَرَّ عَيْنُهَا وَلَا تَحْزَنَ
অতঃপর আমি তোমাকে তোমার মায়ের নিকট ফিরিয়ে দিলাম, যাতে তার চক্ষু শীতল হয় এবং চিন্তিতও না হয়। (সূরা ত্বা–হা– ৪০)
এতে তার মায়ের মনও শান্ত হলো :
فَرَدَدْنَاهُ اِلٰۤى اُمِّهٖ كَيْ تَقَرَّ عَيْنُهَا وَلَا تَحْزَنَ وَلِتَعْلَمَ اَنَّ وَعْدَ اللهِ حَقٌّ وَّلٰكِنَّ اَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ
অতঃপর আমি তাকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিলাম, যাতে তার চোখ জুড়ায় এবং সে যেন কোন দুঃখ না করে। আর যাতে করে সে বুঝতে পারে যে, আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য; কিন্তু অধিকাংশ মানুষই তা জানে না। (সূরা ক্বাসাস– ১৩)
বড় হলে আল্লাহ মূসা (আঃ) কে জ্ঞানুবুদ্ধি দিলেন :
وَلَمَّا بَلَغَ اَشُدَّهٗ وَاسْتَوٰۤى اٰتَيْنَاهُ حُكْمًا وَّعِلْمًا
যখন মূসা পূর্ণ যৌবনে ও পরিণত বয়সে উপনীত হলো, তখন আমি তাকে হেকমত ও জ্ঞান দান করলাম। (সূরা ক্বাসাস– ১৪)
ব্যাখ্যা : ‘হুকুম’ অর্থ হিকমত, বুদ্ধিমত্তা, বিচক্ষণতা ও বিচারবুদ্ধি। আর জ্ঞান বলতে বুঝানো হয়েছে দ্বীনী ও দুনিয়াবী উভয় ধরনের তত্ত্বজ্ঞান। কারণ নিজের পিতামাতার সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত রাখার কারণে তিনি নিজের বাপ-দাদা তথা ইউসুফ, ইয়াকূব ও ইসহাক (আঃ) এর শিক্ষার সাথে পরিচিত হতে পেরেছিলেন। আবার ততকালীন বাদশাহর পরিবারে রাজপুত্র হিসেবে প্রতিপালিত হওয়ার কারণে সমকালীন মিসরবাসীদের মধ্যে প্রচলিত জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
একদিন শহরে দু’টি লোককে লড়াই করতে দেখলেন :
وَدَخَلَ الْمَدِيْنَةَ عَلٰى حِيْنِ غَفْلَةٍ مِّنْ اَهْلِهَا فَوَجَدَ فِيْهَا رَجُلَيْنِ يَقْتَتِلَانِؗ هٰذَا مِنْ شِيْعَتِهٖ وَهٰذَا مِنْ عَدُوِّهٖ
সে নগরীতে প্রবেশ করল, যখন এর অধিবাসীরা ছিল অসতর্ক। সেখানে সে দু’জন লোককে সংঘর্ষে লিপ্ত অবস্থায় দেখতে পেল। তাদের একজন ছিল তার নিজ দলের এবং অপরজন ছিল তার শত্রুদলের। (সূরা ক্বাসাস– ১৫)
মূসা (আঃ) এর দলের লোকটি তার কাছে সাহায্য চাইল :
فَاسْتَغَاثَهُ الَّذِيْ مِنْ شِيْعَتِهٖ عَلَى الَّذِيْ مِنْ عَدُوِّهٖ
মূসার দলের লোকটি তার শত্রুর বিরুদ্ধে সাহায্য প্রার্থনা করল। (সূরা ক্বাসাস– ১৫)
মূসা (আঃ) শত্রুপক্ষের লোকটিকে ঘুষি মারলে সে মারা গেল :
فَوَكَزَهٗ مُوْسٰى فَقَضٰى عَلَيْهِؗ قَالَ هٰذَا مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِؕ اِنَّهٗ عَدُوٌّ مُّضِلٌّ مُّبِيْنٌ
তখন মূসা তাকে একটি ঘুষি মারল, ফলে সে নিহত হলো। অতঃপর মূসা বলল, এটা শয়তানের কাজ। নিশ্চয় সে প্রকাশ্য শত্রু ও বিভ্রান্তকারী। (সূরা ক্বাসাস– ১৫)
মূসা (আঃ) আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলেন :
قَالَ رَبِّ اِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ فَاغْفِرْ لِيْ
সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমি তো আমার নিজের প্রতি যুলুম করে ফেলেছি, সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দাও। (সূরা ক্বাসাস– ১৬)
আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন :
فَغَفَرَ لَهٗؕ اِنَّهٗ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ
অতঃপর তিনি তাকে ক্ষমা করে দিলেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা ক্বাসাস– ১৬)
মূসা (আঃ) কে চিন্তা থেকে মুক্তি দিলেন :
وَقَتَلْتَ نَفْسًا فَنَجَّيْنَاكَ مِنَ الْغَمِّ
তুমি এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলে, কিন্তু আমি তোমাকে সে দুশ্চিন্তা হতে মুক্তি দিয়েছি। (সূরা ত্বা–হা– ৪০)
মূসা (আঃ) পাপীর সাহায্য না করার সিদ্ধান্ত নিলেন :
قَالَ رَبِّ بِمَاۤ اَنْعَمْتَ عَلَيَّ فَلَنْ اَكُوْنَ ظَهِيْرًا لِّلْمُجْرِمِيْنَ
সে (মূসা) বলল, হে আমার প্রতিপালক! যেহেতু তুমি আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছ, সুতরাং আমি কখনো অপরাধীদের সাহায্যকারী হব না। (সূরা ক্বাসাস– ১৭)
পরের দিন আবার ঐ ঘটনা ঘটল :
فَاَصْبَحَ فِى المَدِيْنَةِ خَآئِفًا يَّتَرَقَّبُ فَاِذَا الَّذِى اسْتَنْصَرَهٗ بِالْاَمْسِ يَسْتَصْرِخُهٗ
অতঃপর ভীত ও সতর্ক অবস্থায় সে নগরীতে তার প্রভাত হলো। হঠাৎ সে শুনতে পেল আগের দিন যে ব্যক্তি তার সাহায্য চেয়েছিল, আজও সে সাহায্যের জন্য চিৎকার করছে। (সূরা ক্বাসাস– ১৮)
তিনি ইসরাঈলী লোকটির নিন্দা করলেন :
قَالَ لَهٗ مُوْسٰۤى اِنَّكَ لَغَوِيٌّ مُّبِيْنٌ
মূসা তাকে বলল, তুমি তো স্পষ্টই একজন বিভ্রান্ত ব্যক্তি। (সূরা ক্বাসাস– ১৮)
সে মূসাকে উপদেশ দিল :
فَلَمَّاۤ اَنْ اَرَادَ اَنْ يَّبْطِشَ بِالَّذِيْ هُوَ عَدُوٌّ لَّهُمَا قَالَ يَا مُوْسٰۤى اَتُرِيْدُ اَنْ تَقْتُلَنِيْ كَمَا قَتَلْتَ نَفْسًا ۢبِالْاَمْسِۗ اِنْ تُرِيْدُ اِلَّاۤ اَنْ تَكُوْنَ جَبَّارًا فِى الْاَرْضِ وَمَا تُرِيْدُ اَنْ تَكُوْنَ مِنَ الْمُصْلِحِيْنَ
অতঃপর মূসা যখন উভয়ের শত্রুকে ধরতে উদ্যত হলো, তখন সে ব্যক্তি বলে উঠল, হে মূসা! তুমি গতকাল যেমন এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছ, সেভাবে আমাকেও কি হত্যা করতে চাইছ? তুমি কি পৃথিবীতে স্বেচ্ছাচারী হতে চাও এবং শান্তি স্থাপনকারী হতে চাও না? (সূরা ক্বাসাস– ১৯)
وَلَمَّا بَلَغَ اَشُدَّهٗ وَاسْتَوٰۤى اٰتَيْنَاهُ حُكْمًا وَّعِلْمًا
যখন মূসা পূর্ণ যৌবনে ও পরিণত বয়সে উপনীত হলো, তখন আমি তাকে হেকমত ও জ্ঞান দান করলাম। (সূরা ক্বাসাস– ১৪)
ব্যাখ্যা : ‘হুকুম’ অর্থ হিকমত, বুদ্ধিমত্তা, বিচক্ষণতা ও বিচারবুদ্ধি। আর জ্ঞান বলতে বুঝানো হয়েছে দ্বীনী ও দুনিয়াবী উভয় ধরনের তত্ত্বজ্ঞান। কারণ নিজের পিতামাতার সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত রাখার কারণে তিনি নিজের বাপ-দাদা তথা ইউসুফ, ইয়াকূব ও ইসহাক (আঃ) এর শিক্ষার সাথে পরিচিত হতে পেরেছিলেন। আবার ততকালীন বাদশাহর পরিবারে রাজপুত্র হিসেবে প্রতিপালিত হওয়ার কারণে সমকালীন মিসরবাসীদের মধ্যে প্রচলিত জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
একদিন শহরে দু’টি লোককে লড়াই করতে দেখলেন :
وَدَخَلَ الْمَدِيْنَةَ عَلٰى حِيْنِ غَفْلَةٍ مِّنْ اَهْلِهَا فَوَجَدَ فِيْهَا رَجُلَيْنِ يَقْتَتِلَانِؗ هٰذَا مِنْ شِيْعَتِهٖ وَهٰذَا مِنْ عَدُوِّهٖ
সে নগরীতে প্রবেশ করল, যখন এর অধিবাসীরা ছিল অসতর্ক। সেখানে সে দু’জন লোককে সংঘর্ষে লিপ্ত অবস্থায় দেখতে পেল। তাদের একজন ছিল তার নিজ দলের এবং অপরজন ছিল তার শত্রুদলের। (সূরা ক্বাসাস– ১৫)
মূসা (আঃ) এর দলের লোকটি তার কাছে সাহায্য চাইল :
فَاسْتَغَاثَهُ الَّذِيْ مِنْ شِيْعَتِهٖ عَلَى الَّذِيْ مِنْ عَدُوِّهٖ
মূসার দলের লোকটি তার শত্রুর বিরুদ্ধে সাহায্য প্রার্থনা করল। (সূরা ক্বাসাস– ১৫)
মূসা (আঃ) শত্রুপক্ষের লোকটিকে ঘুষি মারলে সে মারা গেল :
فَوَكَزَهٗ مُوْسٰى فَقَضٰى عَلَيْهِؗ قَالَ هٰذَا مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِؕ اِنَّهٗ عَدُوٌّ مُّضِلٌّ مُّبِيْنٌ
তখন মূসা তাকে একটি ঘুষি মারল, ফলে সে নিহত হলো। অতঃপর মূসা বলল, এটা শয়তানের কাজ। নিশ্চয় সে প্রকাশ্য শত্রু ও বিভ্রান্তকারী। (সূরা ক্বাসাস– ১৫)
মূসা (আঃ) আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলেন :
قَالَ رَبِّ اِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ فَاغْفِرْ لِيْ
সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমি তো আমার নিজের প্রতি যুলুম করে ফেলেছি, সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দাও। (সূরা ক্বাসাস– ১৬)
আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন :
فَغَفَرَ لَهٗؕ اِنَّهٗ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ
অতঃপর তিনি তাকে ক্ষমা করে দিলেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা ক্বাসাস– ১৬)
মূসা (আঃ) কে চিন্তা থেকে মুক্তি দিলেন :
وَقَتَلْتَ نَفْسًا فَنَجَّيْنَاكَ مِنَ الْغَمِّ
তুমি এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলে, কিন্তু আমি তোমাকে সে দুশ্চিন্তা হতে মুক্তি দিয়েছি। (সূরা ত্বা–হা– ৪০)
মূসা (আঃ) পাপীর সাহায্য না করার সিদ্ধান্ত নিলেন :
قَالَ رَبِّ بِمَاۤ اَنْعَمْتَ عَلَيَّ فَلَنْ اَكُوْنَ ظَهِيْرًا لِّلْمُجْرِمِيْنَ
সে (মূসা) বলল, হে আমার প্রতিপালক! যেহেতু তুমি আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছ, সুতরাং আমি কখনো অপরাধীদের সাহায্যকারী হব না। (সূরা ক্বাসাস– ১৭)
পরের দিন আবার ঐ ঘটনা ঘটল :
فَاَصْبَحَ فِى المَدِيْنَةِ خَآئِفًا يَّتَرَقَّبُ فَاِذَا الَّذِى اسْتَنْصَرَهٗ بِالْاَمْسِ يَسْتَصْرِخُهٗ
অতঃপর ভীত ও সতর্ক অবস্থায় সে নগরীতে তার প্রভাত হলো। হঠাৎ সে শুনতে পেল আগের দিন যে ব্যক্তি তার সাহায্য চেয়েছিল, আজও সে সাহায্যের জন্য চিৎকার করছে। (সূরা ক্বাসাস– ১৮)
তিনি ইসরাঈলী লোকটির নিন্দা করলেন :
قَالَ لَهٗ مُوْسٰۤى اِنَّكَ لَغَوِيٌّ مُّبِيْنٌ
মূসা তাকে বলল, তুমি তো স্পষ্টই একজন বিভ্রান্ত ব্যক্তি। (সূরা ক্বাসাস– ১৮)
সে মূসাকে উপদেশ দিল :
فَلَمَّاۤ اَنْ اَرَادَ اَنْ يَّبْطِشَ بِالَّذِيْ هُوَ عَدُوٌّ لَّهُمَا قَالَ يَا مُوْسٰۤى اَتُرِيْدُ اَنْ تَقْتُلَنِيْ كَمَا قَتَلْتَ نَفْسًا ۢبِالْاَمْسِۗ اِنْ تُرِيْدُ اِلَّاۤ اَنْ تَكُوْنَ جَبَّارًا فِى الْاَرْضِ وَمَا تُرِيْدُ اَنْ تَكُوْنَ مِنَ الْمُصْلِحِيْنَ
অতঃপর মূসা যখন উভয়ের শত্রুকে ধরতে উদ্যত হলো, তখন সে ব্যক্তি বলে উঠল, হে মূসা! তুমি গতকাল যেমন এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছ, সেভাবে আমাকেও কি হত্যা করতে চাইছ? তুমি কি পৃথিবীতে স্বেচ্ছাচারী হতে চাও এবং শান্তি স্থাপনকারী হতে চাও না? (সূরা ক্বাসাস– ১৯)
এক মুমিন ব্যক্তি মূসা (আঃ) কে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের সংবাদ শুনাল :
وَجَآءَ رَجُلٌ مِّنْ اَقْصَى الْمَدِيْنَةِ يَسْعٰىؗ قَالَ يَا مُوْسٰۤى اِنَّ الْمَلَاَ يَأْتَمِرُوْنَ بِكَ لِيَقْتُلُوْكَ
নগরীর দূর প্রান্ত হতে এক ব্যক্তি ছুটে এসে বলল, হে মূসা! পরিষদবর্গ তোমাকে হত্যা করার পরামর্শ করছে। (সূরা ক্বাসাস– ২০)
সে মূসা (আঃ) কে হিজরতের পরামর্শ দিল :
فَاخْرُجْ اِنِّيْ لَكَ مِنَ النَّاصِحِيْنَ
সুতরাং তুমি বাইরে চলে যাও; নিশ্চয় আমি তোমার মঙ্গলকামী। (সূরা ক্বাসাস– ২০)
মূসা (আঃ) দু‘আ করতে করতে বেরিয়ে পড়লেন :
فَخَرَجَ مِنْهَا خَآئِفًا يَّتَرَقَّبُؗ قَالَ رَبِّ نَجِّنِيْ مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِيْنَ
অতঃপর সে ভীত ও সতর্ক অবস্থায় সেখান থেকে বের হয়ে পড়ল এবং বলল, হে আমার প্রতিপালক! যালিম সম্প্রদায় হতে আমাকে রক্ষা করো। (সূরা ক্বাসাস– ২১)
তিনি আল্লাহর উপর ভরসা করে মাদইয়ানের দিকে রওয়ানা হলেন :
وَلَمَّا تَوَجَّهَ تِلْقَآءَ مَدْيَنَ قَالَ عَسٰى رَبِّۤيْ اَنْ يَّهْدِيَنِيْ سَوَآءَ السَّبِيْلِ
যখন মূসা মাদইয়ানের অভিমুখে যাত্রা শুরু করল তখন বলল, আশা করি আমার প্রতিপালক আমাকে সরল পথপ্রদর্শন করবেন। (সূরা ক্বাসাস– ২২)
পথিমধ্যে একটি কূপে পশুকে পানি খাওয়াতে দেখলেন :
وَلَمَّا وَرَدَ مَآءَ مَدْيَنَ وَجَدَ عَلَيْهِ اُمَّةً مِّنَ النَّاسِ يَسْقُوْنَ
যখন সে মাদইয়ানের কূপের নিকট পৌঁছল তখন দেখল যে, একদল লোক তাদের পশুগুলোকে পানি পান করাচ্ছে। (সূরা ক্বাসাস– ২৩)
দু’জন মেয়েকে অসহায় দেখতে পেয়ে তাদের সমস্যা জানতে চাইলেন :
وَوَجَدَ مِنْ دُوْنِهِمُ امْرَاَتَيْنِ تَذُوْدَانِۚ قَالَ مَا خَطْبُكُمَاؕ قَالَتَا لَا نَسْقِيْ حَتّٰى يُصْدِرَ الرِّعَآءُ وَاَبُوْنَا شَيْخٌ كَبِيْرٌ
(মূসা দেখতে পেল যে) তাদের পেছনে দু’জন নারী তাদের পশুগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করছে। তখন মূসা বলল, তোমাদের সমস্যা কী? তারা বলল, আমরা আমাদের পশুগুলোকে পানি পান করাতে পারি না, যতক্ষণ না রাখালরা তাদের পশুগুলোকে নিয়ে সরে যায়। তাছাড়া আমাদের পিতা খুবই বৃদ্ধ। (সূরা ক্বাসাস– ২৩)
তিনি তাদের পশুকে পানি পান করিয়ে দু‘আ করলেন :
فَسَقٰى لَهُمَا ثُمَّ تَوَلّٰۤى اِلَى الظِّلِّ فَقَالَ رَبِّ اِنِّيْ لِمَاۤ اَنْزَلْتَ اِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ فَقِيْرٌ
অতঃপর মূসা তাদের পক্ষ থেকে পশুগুলোকে পানি পান করিয়ে দিল। তারপর সে ছায়ার নিচে আশ্রয় গ্রহণ করে বলল, হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ করবে অবশ্যই আমি তার মুখাপেক্ষী। (সূরা ক্বাসাস– ২৪)
মেয়েদের একজন এসে মূসা (আঃ) কে তাদের বাড়িতে নিয়ে গেল :
فَجَآءَتْهُ اِحْدَاهُمَا تَمْشِيْ عَلَى اسْتِحْيَآءٍؗ قَالَتْ اِنَّ اَبِيْ يَدْعُوْكَ لِيَجْزِيَكَ اَجْرَ مَا سَقَيْتَ لَنَا
তখন নারীদ্বয়ের একজন লাজুক অবস্থায় পায়ে হেঁটে তার নিকট আসল এবং বলল, আমাদের পশুগুলোকে পানি পান করানোর পারিশ্রমিক দেয়ার জন্য আমার পিতা আপনাকে আমন্ত্রণ করেছেন। (সূরা ক্বাসাস– ২৫)
মেয়েদের পিতা মূসা (আঃ) এর ঘটনা শুনে তাকে সান্ত্বনা দিলেন :
فَلَمَّا جَآءَهٗ وَقَصَّ عَلَيْهِ الْقَصَصَ قَالَ لَا تَخَفْ نَجَوْتَ مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِيْنَ
অতঃপর মূসা তার নিকট এসে সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করলে সে বলল, ভয় করো না। তুমি তো যালিম সম্প্রদায়ের কবল থেকে বেঁচে গেছ। (সূরা ক্বাসাস– ২৫)
وَجَآءَ رَجُلٌ مِّنْ اَقْصَى الْمَدِيْنَةِ يَسْعٰىؗ قَالَ يَا مُوْسٰۤى اِنَّ الْمَلَاَ يَأْتَمِرُوْنَ بِكَ لِيَقْتُلُوْكَ
নগরীর দূর প্রান্ত হতে এক ব্যক্তি ছুটে এসে বলল, হে মূসা! পরিষদবর্গ তোমাকে হত্যা করার পরামর্শ করছে। (সূরা ক্বাসাস– ২০)
সে মূসা (আঃ) কে হিজরতের পরামর্শ দিল :
فَاخْرُجْ اِنِّيْ لَكَ مِنَ النَّاصِحِيْنَ
সুতরাং তুমি বাইরে চলে যাও; নিশ্চয় আমি তোমার মঙ্গলকামী। (সূরা ক্বাসাস– ২০)
মূসা (আঃ) দু‘আ করতে করতে বেরিয়ে পড়লেন :
فَخَرَجَ مِنْهَا خَآئِفًا يَّتَرَقَّبُؗ قَالَ رَبِّ نَجِّنِيْ مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِيْنَ
অতঃপর সে ভীত ও সতর্ক অবস্থায় সেখান থেকে বের হয়ে পড়ল এবং বলল, হে আমার প্রতিপালক! যালিম সম্প্রদায় হতে আমাকে রক্ষা করো। (সূরা ক্বাসাস– ২১)
তিনি আল্লাহর উপর ভরসা করে মাদইয়ানের দিকে রওয়ানা হলেন :
وَلَمَّا تَوَجَّهَ تِلْقَآءَ مَدْيَنَ قَالَ عَسٰى رَبِّۤيْ اَنْ يَّهْدِيَنِيْ سَوَآءَ السَّبِيْلِ
যখন মূসা মাদইয়ানের অভিমুখে যাত্রা শুরু করল তখন বলল, আশা করি আমার প্রতিপালক আমাকে সরল পথপ্রদর্শন করবেন। (সূরা ক্বাসাস– ২২)
পথিমধ্যে একটি কূপে পশুকে পানি খাওয়াতে দেখলেন :
وَلَمَّا وَرَدَ مَآءَ مَدْيَنَ وَجَدَ عَلَيْهِ اُمَّةً مِّنَ النَّاسِ يَسْقُوْنَ
যখন সে মাদইয়ানের কূপের নিকট পৌঁছল তখন দেখল যে, একদল লোক তাদের পশুগুলোকে পানি পান করাচ্ছে। (সূরা ক্বাসাস– ২৩)
দু’জন মেয়েকে অসহায় দেখতে পেয়ে তাদের সমস্যা জানতে চাইলেন :
وَوَجَدَ مِنْ دُوْنِهِمُ امْرَاَتَيْنِ تَذُوْدَانِۚ قَالَ مَا خَطْبُكُمَاؕ قَالَتَا لَا نَسْقِيْ حَتّٰى يُصْدِرَ الرِّعَآءُ وَاَبُوْنَا شَيْخٌ كَبِيْرٌ
(মূসা দেখতে পেল যে) তাদের পেছনে দু’জন নারী তাদের পশুগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করছে। তখন মূসা বলল, তোমাদের সমস্যা কী? তারা বলল, আমরা আমাদের পশুগুলোকে পানি পান করাতে পারি না, যতক্ষণ না রাখালরা তাদের পশুগুলোকে নিয়ে সরে যায়। তাছাড়া আমাদের পিতা খুবই বৃদ্ধ। (সূরা ক্বাসাস– ২৩)
তিনি তাদের পশুকে পানি পান করিয়ে দু‘আ করলেন :
فَسَقٰى لَهُمَا ثُمَّ تَوَلّٰۤى اِلَى الظِّلِّ فَقَالَ رَبِّ اِنِّيْ لِمَاۤ اَنْزَلْتَ اِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ فَقِيْرٌ
অতঃপর মূসা তাদের পক্ষ থেকে পশুগুলোকে পানি পান করিয়ে দিল। তারপর সে ছায়ার নিচে আশ্রয় গ্রহণ করে বলল, হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ করবে অবশ্যই আমি তার মুখাপেক্ষী। (সূরা ক্বাসাস– ২৪)
মেয়েদের একজন এসে মূসা (আঃ) কে তাদের বাড়িতে নিয়ে গেল :
فَجَآءَتْهُ اِحْدَاهُمَا تَمْشِيْ عَلَى اسْتِحْيَآءٍؗ قَالَتْ اِنَّ اَبِيْ يَدْعُوْكَ لِيَجْزِيَكَ اَجْرَ مَا سَقَيْتَ لَنَا
তখন নারীদ্বয়ের একজন লাজুক অবস্থায় পায়ে হেঁটে তার নিকট আসল এবং বলল, আমাদের পশুগুলোকে পানি পান করানোর পারিশ্রমিক দেয়ার জন্য আমার পিতা আপনাকে আমন্ত্রণ করেছেন। (সূরা ক্বাসাস– ২৫)
মেয়েদের পিতা মূসা (আঃ) এর ঘটনা শুনে তাকে সান্ত্বনা দিলেন :
فَلَمَّا جَآءَهٗ وَقَصَّ عَلَيْهِ الْقَصَصَ قَالَ لَا تَخَفْ نَجَوْتَ مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِيْنَ
অতঃপর মূসা তার নিকট এসে সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করলে সে বলল, ভয় করো না। তুমি তো যালিম সম্প্রদায়ের কবল থেকে বেঁচে গেছ। (সূরা ক্বাসাস– ২৫)
এক বোন মূসা (আঃ) কে কর্মচারী হিসেবে রাখার আবেদন করল :
قَالَتْ اِحْدَاهُمَا يَاۤ اَبَتِ اسْتَأْجِرْهُ
তাদের একজন বলল, হে পিতা! তুমি তাকে মজুর নিযুক্ত করো। (সূরা ক্বাসাস– ২৬)
সে মূসা (আঃ) এর যোগ্যতা বর্ণনা করল :
اِنَّ خَيْرَ مَنِ اسْتَأْجَرْتَ الْقَوِيُّ الْاَمِيْنُ
তোমার মজুর হিসেবে উত্তম হবে সে ব্যক্তি, যে শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত। (সূরা ক্বাসাস– ২৬)
পিতা একটি শর্ত সাপেক্ষে একজন মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন :
قَالَ اِنِّۤيْ اُرِيْدُ اَنْ اُنْكِحَكَ اِحْدَى ابْنَتَيَّ هَاتَيْنِ عَلٰۤى اَنْ تَأْجُرَنِيْ ثَمَانِيَ حِجَجٍۚ فَاِنْ اَتْمَمْتَ عَشْرًا فَمِنْ عِنْدِكَۚ وَمَاۤ اُرِيْدُ اَنْ اَشُقَّ عَلَيْكَؕ سَتَجِدُنِۤيْ اِنْ شَآءَ اللهُ مِنَ الصَّالِحِيْنَ
সে (মূসাকে) বলল, আমি আমার এ কন্যাদ্বয়ের একজনকে তোমার সঙ্গে বিবাহ দিতে চাই। তবে এ শর্তে যে, তুমি আট বৎসর আমার কাজ করবে। আর যদি তুমি দশ বৎসর পূর্ণ কর, তবে তা তোমার ইচ্ছা। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তুমি আমাকে সদাচারী হিসেবেই পাবে। (সূরা ক্বাসাস– ২৭)
মূসা (আঃ) এতে রাজী হয়ে গেলেন :
قَالَ ذٰلِكَ بَيْنِيْ وَبَيْنَكَؕ اَيَّمَا الْاَجَلَيْنِ قَضَيْتُ فَلَا عُدْوَانَ عَلَيَّؕ وَاللهُ عَلٰى مَا نَقُوْلُ وَكِيْلٌ
মূসা বলল, আমার ও আপনার মধ্যে এ চুক্তিই রইল। এ দু’টি মেয়াদের কোন একটি আমি পূর্ণ করলে আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকবে না। আমরা যে বিষয়ে কথা বলছি আল্লাহ তার সাক্ষী। (সূরা ক্বাসাস– ২৮)
তিনি কয়েক বছর শ্বশুর বাড়িতে থাকলেন :
فَلَبِثْتَ سِنِيْنَ فِۤيْ اَهْلِ مَدْيَنَ ثُمَّ جِئْتَ عَلٰى قَدَرٍ يَّا مُوْسٰى
অতঃপর তুমি কয়েক বৎসর মাদইয়ানবাসীদের মধ্যে ছিলে। হে মূসা! এরপর তুমি নির্ধারিত সময়ে (তোমার সম্প্রদায়ের কাছে) উপস্থিত হলে। (সূরা ত্বা–হা– ৪০)
মূসা (আঃ) এর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন :
فَلَمَّا قَضٰى مُوْسَى الْاَجَلَ وَسَارَ بِاَهْلِهٖۤ اٰنَسَ مِنْ جَانِبِ الطُّوْرِ نَارًاۚ قَالَ لِاَهْلِهِ امْكُثُوْاۤ اِنِّۤيْ اٰنَسْتُ نَارًا لَّعَلِّيْۤ اٰتِيْكُمْ مِّنْهَا بِخَبَرٍ اَوْ جَذْوَةٍ مِّنَ النَّارِ لَعَلَّكُمْ تَصْطَلُوْنَ
অতঃপর যখন মূসা তার মেয়াদ পূর্ণ করে স্বপরিবারে যাত্রা শুরু করল, তখন সে তূর পর্বতের দিকে আগুন দেখতে পেল। সে তার পরিবারবর্গকে বলল, তোমরা অপেক্ষা করো, আমি আগুন দেখতে পাচ্ছি। সম্ভবত আমি সেখান হতে তোমাদের জন্য কোন খবর আনতে পারব অথবা একখন্ড জ্বলন্ত কাঠ আনতে পারব, যাতে তোমরা আগুন পোহাতে পার। (সূরা ক্বাসাস– ২৯)
قَالَتْ اِحْدَاهُمَا يَاۤ اَبَتِ اسْتَأْجِرْهُ
তাদের একজন বলল, হে পিতা! তুমি তাকে মজুর নিযুক্ত করো। (সূরা ক্বাসাস– ২৬)
সে মূসা (আঃ) এর যোগ্যতা বর্ণনা করল :
اِنَّ خَيْرَ مَنِ اسْتَأْجَرْتَ الْقَوِيُّ الْاَمِيْنُ
তোমার মজুর হিসেবে উত্তম হবে সে ব্যক্তি, যে শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত। (সূরা ক্বাসাস– ২৬)
পিতা একটি শর্ত সাপেক্ষে একজন মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন :
قَالَ اِنِّۤيْ اُرِيْدُ اَنْ اُنْكِحَكَ اِحْدَى ابْنَتَيَّ هَاتَيْنِ عَلٰۤى اَنْ تَأْجُرَنِيْ ثَمَانِيَ حِجَجٍۚ فَاِنْ اَتْمَمْتَ عَشْرًا فَمِنْ عِنْدِكَۚ وَمَاۤ اُرِيْدُ اَنْ اَشُقَّ عَلَيْكَؕ سَتَجِدُنِۤيْ اِنْ شَآءَ اللهُ مِنَ الصَّالِحِيْنَ
সে (মূসাকে) বলল, আমি আমার এ কন্যাদ্বয়ের একজনকে তোমার সঙ্গে বিবাহ দিতে চাই। তবে এ শর্তে যে, তুমি আট বৎসর আমার কাজ করবে। আর যদি তুমি দশ বৎসর পূর্ণ কর, তবে তা তোমার ইচ্ছা। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তুমি আমাকে সদাচারী হিসেবেই পাবে। (সূরা ক্বাসাস– ২৭)
মূসা (আঃ) এতে রাজী হয়ে গেলেন :
قَالَ ذٰلِكَ بَيْنِيْ وَبَيْنَكَؕ اَيَّمَا الْاَجَلَيْنِ قَضَيْتُ فَلَا عُدْوَانَ عَلَيَّؕ وَاللهُ عَلٰى مَا نَقُوْلُ وَكِيْلٌ
মূসা বলল, আমার ও আপনার মধ্যে এ চুক্তিই রইল। এ দু’টি মেয়াদের কোন একটি আমি পূর্ণ করলে আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকবে না। আমরা যে বিষয়ে কথা বলছি আল্লাহ তার সাক্ষী। (সূরা ক্বাসাস– ২৮)
তিনি কয়েক বছর শ্বশুর বাড়িতে থাকলেন :
فَلَبِثْتَ سِنِيْنَ فِۤيْ اَهْلِ مَدْيَنَ ثُمَّ جِئْتَ عَلٰى قَدَرٍ يَّا مُوْسٰى
অতঃপর তুমি কয়েক বৎসর মাদইয়ানবাসীদের মধ্যে ছিলে। হে মূসা! এরপর তুমি নির্ধারিত সময়ে (তোমার সম্প্রদায়ের কাছে) উপস্থিত হলে। (সূরা ত্বা–হা– ৪০)
মূসা (আঃ) এর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন :
فَلَمَّا قَضٰى مُوْسَى الْاَجَلَ وَسَارَ بِاَهْلِهٖۤ اٰنَسَ مِنْ جَانِبِ الطُّوْرِ نَارًاۚ قَالَ لِاَهْلِهِ امْكُثُوْاۤ اِنِّۤيْ اٰنَسْتُ نَارًا لَّعَلِّيْۤ اٰتِيْكُمْ مِّنْهَا بِخَبَرٍ اَوْ جَذْوَةٍ مِّنَ النَّارِ لَعَلَّكُمْ تَصْطَلُوْنَ
অতঃপর যখন মূসা তার মেয়াদ পূর্ণ করে স্বপরিবারে যাত্রা শুরু করল, তখন সে তূর পর্বতের দিকে আগুন দেখতে পেল। সে তার পরিবারবর্গকে বলল, তোমরা অপেক্ষা করো, আমি আগুন দেখতে পাচ্ছি। সম্ভবত আমি সেখান হতে তোমাদের জন্য কোন খবর আনতে পারব অথবা একখন্ড জ্বলন্ত কাঠ আনতে পারব, যাতে তোমরা আগুন পোহাতে পার। (সূরা ক্বাসাস– ২৯)
মূসা (আঃ) তূর পাহাড়ের দিকে আগুন দেখতে পেলেন :
اِذْ قَالَ مُوْسٰى لِاَهْلِهٖۤ اِنِّۤيْ اٰنَسْتُ نَارًاؕ سَاٰتِيْكُمْ مِّنْهَا بِخَبَرٍ اَوْ اٰتِيْكُمْ بِشِهَابٍ قَبَسٍ لَّعَلَّكُمْ تَصْطَلُوْنَ
স্মরণ করো, যখন মূসা তার পরিবারবর্গকে বলেছিল, আমি আগুন দেখতে পাচ্ছি। শীঘ্রই আমি তা হতে তোমাদের জন্য কোন খবর নিয়ে আসব অথবা তোমাদের জন্য জ্বলন্ত আঙ্গার নিয়ে আসব, যাতে তোমরা আগুন পোহাতে পার। (সূরা নামল- ৭)
পরিবারকে থামিয়ে আগুন আনতে গেলেন :
اِذْ رَاٰى نَارًا فَقَالَ لِاَهْلِهِ امْكُثُوْاۤ اِنِّۤيْ اٰنَسْتُ نَارًا لَّعَلِّيْۤ اٰتِيْكُمْ مِّنْهَا بِقَبَسٍ اَوْ اَجِدُ عَلَى النَّارِ هُدًى
যখন সে আগুন দেখতে পেল তখন তার পরিবারবর্গকে বলল, তোমরা এখানে থাকো; আমি আগুন দেখতে পাচ্ছি। সম্ভবত আমি তোমাদের জন্য তা হতে কিছু জ্বলন্ত আঙ্গার আনতে পারব অথবা আমি আগুনের নিকট কোন পথনির্দেশ পাব। (সূরা ত্বা–হা– ১০)
সেখানে এক গাছ থেকে আওয়াজ আসল :
فَلَمَّاۤ اَتَاهَا نُوْدِيَ مِنْ شَاطِئِ الْوَادِ الْاَيْمَنِ فِى الْبُقْعَةِ الْمُبَارَكَةِ مِنَ الشَّجَرَةِ اَنْ يَّا مُوْسٰۤى اِنِّۤيْ اَنَا اللهُ رَبُّ الْعَالَمِيْنَ
যখন মূসা আগুনের নিকট পৌঁছল তখন উপত্যকার দক্ষিণ পার্শ্বে পবিত্র ভূমিতে অবস্থিত এক বৃক্ষের দিক হতে তাকে আহবান করে বলা হলো, হে মূসা! আমিই আল্লাহ, জগতসমূহের প্রতিপালক। (সূরা ক্বাসাস– ৩০)
ব্যাখ্যা : কোন বিরাট জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান করে এবং আকাশ ও পৃথিবীতে কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণার মাধ্যমে কাউকে নবুওয়াত দান করা হয় না। মূসা (আঃ) সিনাই পাহাড়ের নিঝুম উপত্যকার পাশ দিয়ে চলার সময় নবুওয়াত লাভ করেন। অথচ তিনি কীভাবে তা লাভ করেন এবং সেখানে কী ঘটেছিল তা কেউ জানতে পারল না। মূসা (আঃ) নিজেও এক সেকেন্ড আগে জানতেন না যে, তিনি কী জিনিস পেতে যাচ্ছেন। যাচ্ছিলেন আগুন আনতে, কিন্তু পেয়ে গেলেন নবুওয়াত।
আল্লাহ মূসা (আঃ) কে ডাক দিয়ে জুতা খোলার নির্দেশ দিলেন :
فَلَمَّاۤ اَتَاهَا نُوْدِيَ يَا مُوْسٰى ‐ اِنِّۤيْ اَنَاْ رَبُّكَ فَاخْلَعْ نَعْلَيْكَۚ اِنَّكَ بِالْوَادِ الْمُقَدَّسِ طُوًى
অতঃপর যখন সে আগুনের নিকট আসল তখন আহবান করে বলা হলো, হে মূসা! আমিই তোমার প্রতিপালক। অতএব তোমার জুতা খুলে ফেলো, কারণ তুমি পবিত্র ‘তুয়া’ উপত্যকায় রয়েছ। (সূরা ত্বা-হা– ১১, ১২)
ওহীর বাণী মনোযোগ দিয়ে শুনতে বললেন :
وَاَنَا اخْتَرْتُكَ فَاسْتَمِعْ لِمَا يُوْحٰى
আমি তোমাকে (রাসূল হিসেবে) মনোনীত করেছি। অতএব যা ওহী প্রেরণ করা হচ্ছে তুমি তা মনোযোগের সাথে শ্রবণ করো। (সূরা ত্বা–হা– ১৩)
আল্লাহ নিজের পরিচয় উপস্থাপন করলেন :
فَلَمَّا جَآءَهَا نُوْدِيَ اَنْ ۢ بُوْرِكَ مَنْ فِى النَّارِ وَمَنْ حَوْلَهَاؕ وَسُبْحَانَ اللهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ‐ يَا مُوْسٰۤى اِنَّهٗۤ اَنَا اللهُ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
অতঃপর সে যখন তার নিকট আসল তখন ঘোষণা করা হলো যে, ধন্য যারা আছে এ আলোর মধ্যে এবং যারা আছে এর আশপাশে, জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ পবিত্র ও মহিমান্বিত। হে মূসা! আমিই আল্লাহ, (আমি) মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা নামল- ৮, ৯)
শুধুমাত্র তাঁর ইবাদাত করা এবং সালাত আদায় করার নির্দেশ দিলেন :
اِنَّنِيْۤ اَنَا اللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَاْ فَاعْبُدْنِيْ وَاَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِيْ
আমিই আল্লাহ, আমি ব্যতীত সত্য কোন ইলাহ্ নেই। অতএব আমার ইবাদাত করো এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম করো। (সূরা ত্বা–হা– ১৪)
আখিরাতের সঠিক ধারণা দিলেন :
اِنَّ السَّاعَةَ اٰتِيَةٌ اَكَادُ اُخْفِيْهَا لِتُجْزٰى كُلُّ نَفْسٍ ۢبِمَا تَسْعٰى
কিয়ামত অবশ্যই আসবে, আমি এটা গোপন রাখতে চাই যেন প্রত্যেকেই নিজ নিজ কর্মানুযায়ী ফল লাভ করতে পারে। (সূরা ত্বা–হা– ১৫)
পরকালকে না ভুলার জন্য সতর্ক করলেন :
فَلَا يَصُدَّنَّكَ عَنْهَا مَنْ لَّا يُؤْمِنُ بِهَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ فَتَرْدٰى
সুতরাং যে ব্যক্তি কিয়ামত দিবসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না ও নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, সে যেন তোমাকে তাতে বিশ্বাস স্থাপন করতে নিবৃত্ত না করে, অন্যথায় তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে। (সূরা ত্বা–হা– ১৬)
মূসা (আঃ) এর লাঠি সম্পর্কে আল্লাহ প্রশ্ন করলেন :
وَمَا تِلْكَ بِيَمِيْنِكَ يَا مُوْسٰى
হে মূসা! তোমার ডান হাতে ওটা কী? (সূরা ত্বা–হা– ১৭)
তিনি দীর্ঘ উত্তর দিলেন :
قَالَ هِيَ عَصَايَۚ اَتَوَكَّاُ عَلَيْهَا وَاَهُشُّ بِهَا عَلٰى غَنَمِيْ وَلِيَ فِيْهَا مَاٰرِبُ اُخْرٰى
সে বলল, এটা আমার লাঠি। আমি এতে ভর দেই এবং তা দ্বারা আঘাত করে আমি আমার মেষপালের জন্য গাছের পাতা ফেলে থাকি। তাছাড়া এটা আমার অন্যান্য কাজেও লাগে। (সূরা ত্বা–হা– ১৮)
আল্লাহ মূসা (আঃ) কে তাওরাত কিতাব দিয়েছিলেন :
وَلَقَدْ اٰتَيْنَا مُوْسَى الْكِتَابَ
আমি তো মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম। (সূরা ফুরক্বানু ৩৫)
এ কিতাব ছিল হেদায়াত ও নূর :
قُلْ مَنْ اَنْزَلَ الْكِتَابَ الَّذِيْ جَآءَ بِهٖ مُوْسٰى نُوْرًا وَّهُدًى لِّلنَّاسِ
বলো, কে নাযিল করেছেন মূসার আনীত কিতাব, যা ছিল মানুষের জন্য আলো ও পথনির্দেশ? (সূরা আন‘আম– ৯১)
وَاٰتَيْنَا مُوْسَى الْكِتَابَ وَجَعَلْنَاهُ هُدًى لِّبَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ اَلَّا تَتَّخِذُوْا مِنْ دُوْنِيْ وَكِيْلًا
আমি মূসাকে কিতাব প্রদান করেছিলাম ও তাকে বনী ইসরাঈলের জন্য পথনির্দেশক হিসেবে নির্বাচন করেছিলাম। আমি আদেশ করেছিলাম, তোমরা আমাকে ব্যতীত অপর কাউকে কর্মবিধায়ক হিসেবে গ্রহণ করো না। (সূরা বনী ইসরাঈল– ২)
এটা ছিল তাদের জন্য রহমতস্বরূপ :
وَمِنْ قَبْلِهٖ كِتَابُ مُوْسٰۤى اِمَامًا وَّرَحْمَةً
ইতোপূর্বে মূসার কিতাব ছিল পথপ্রদর্শক ও অনুগ্রহস্বরূপ। (সূরা হুদু ১৭)
এটা ছিল মুত্তাক্বীদের জন্য উপদেশস্বরূপ :
وَلَقَدْ اٰتَيْنَا مُوْسٰى وَهَارُوْنَ الْفُرْقَانَ وَضِيَآءً وَّذِكْرًا لِّلْمُتَّقِيْنَ
আমি তো মূসা ও হারূনকে ফুরক্বান দান করেছিলাম, যা ছিল মুত্তাক্বীদের জন্য জ্যোতি ও উপদেশস্বরূপ।
(সূরা আম্বিয়া– ৪৮)
মূসা (আঃ) এর কিতাবের কিছু বিষয় কুরআনে রয়েছে :
اَمْ لَمْ يُنَبَّأْ بِمَا فِيْ صُحُفِ مُوْسٰى ‐ وَاِبْرَاهِيْمَ الَّذِيْ وَفّٰى ‐ اَلَّا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِّزْرَ اُخْرٰى ‐ وَاَنْ لَّيْسَ لِلْاِنْسَانِ اِلَّا مَا سَعٰى ‐ وَاَنَّ سَعْيَهٗ سَوْفَ يُرٰى ‐ ثُمَّ يُجْزَاهُ الْجَزَآءَ الْاَوْفٰى ‐ وَاَنَّ اِلٰى رَبِّكَ الْمُنْتَهٰى ‐ وَاَنَّهٗ هُوَ اَضْحَكَ وَاَبْكٰى ‐ وَاَنَّهٗ هُوَ اَمَاتَ وَاَحْيَا ‐ وَاَنَّهٗ خَلَقَ الزَّوْجَيْنِ الذَّكَرَ وَالْاُنْثٰى ‐ مِنْ نُّطْفَةٍ اِذَا تُمْنٰى ‐ وَاَنَّ عَلَيْهِ النَّشْاَةَ الْاُخْرٰى
মূসা এবং ইবরাহীমের কিতাবে যা আছে তাকে কি তা অবগত করা হয়নি? যিনি (স্বীয়) অঙ্গীকার পূর্ণ করেছিলেন? তা এই যে, অবশ্যই কোন বহনকারী অপরের বোঝা বহন করবে না, মানুষ তাই পায় যা সে চেষ্টা করে। অচিরেই তার কর্ম দেখানো হবে এবং তাকে পূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে। নিশ্চয় সবকিছুর সমাপ্তি তোমার প্রতিপালকের নিকট। তিনিই হাসান, তিনিই কাঁদান; তিনিই মৃত্যু দান করেন এবং তিনিই জীবন দান করেন। তিনিই নিক্ষিপ্ত শুক্রবিন্দু হতে জোড়ায় জোড়ায় পুরুষ ও নারী সৃষ্টি করেন। আর পুনরায় জীবিত করার দায়িত্বও তাঁরই। (সূরা নাজম, ৩৬–৪৭)
قَدْ اَفْلَحَ مَنْ تَزَكّٰى ‐ وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهٖ فَصَلّٰى ‐ بَلْ تُؤْثِرُوْنَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا ‐ وَالْاٰخِرَةُ خَيْرٌ وَّاَبْقٰى ‐ اِنَّ هٰذَا لَفِى الصُّحُفِ الْاُوْلٰى ‐ صُحُفِ اِبْرَاهِيْمَ وَمُوْسٰى
নিশ্চয় যে পবিত্রতা অবলম্বন করে, সে সাফল্য লাভ করে। অতঃপর সে তার প্রতিপালকের নাম স্মরণ করে এবং সালাত কায়েম করে। কিন্তু তোমরা পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাক। অথচ আখিরাতের জীবনই উত্তম ও চিরস্থায়ী। নিশ্চয় এটা পূর্ববর্তী কিতাবসমূহে বর্ণিত হয়েছে, (বিশেষত) ইবরাহীম ও মূসার কিতাবসমূহে। (সূরা আলা, ১৪–১৯)
اِذْ قَالَ مُوْسٰى لِاَهْلِهٖۤ اِنِّۤيْ اٰنَسْتُ نَارًاؕ سَاٰتِيْكُمْ مِّنْهَا بِخَبَرٍ اَوْ اٰتِيْكُمْ بِشِهَابٍ قَبَسٍ لَّعَلَّكُمْ تَصْطَلُوْنَ
স্মরণ করো, যখন মূসা তার পরিবারবর্গকে বলেছিল, আমি আগুন দেখতে পাচ্ছি। শীঘ্রই আমি তা হতে তোমাদের জন্য কোন খবর নিয়ে আসব অথবা তোমাদের জন্য জ্বলন্ত আঙ্গার নিয়ে আসব, যাতে তোমরা আগুন পোহাতে পার। (সূরা নামল- ৭)
পরিবারকে থামিয়ে আগুন আনতে গেলেন :
اِذْ رَاٰى نَارًا فَقَالَ لِاَهْلِهِ امْكُثُوْاۤ اِنِّۤيْ اٰنَسْتُ نَارًا لَّعَلِّيْۤ اٰتِيْكُمْ مِّنْهَا بِقَبَسٍ اَوْ اَجِدُ عَلَى النَّارِ هُدًى
যখন সে আগুন দেখতে পেল তখন তার পরিবারবর্গকে বলল, তোমরা এখানে থাকো; আমি আগুন দেখতে পাচ্ছি। সম্ভবত আমি তোমাদের জন্য তা হতে কিছু জ্বলন্ত আঙ্গার আনতে পারব অথবা আমি আগুনের নিকট কোন পথনির্দেশ পাব। (সূরা ত্বা–হা– ১০)
সেখানে এক গাছ থেকে আওয়াজ আসল :
فَلَمَّاۤ اَتَاهَا نُوْدِيَ مِنْ شَاطِئِ الْوَادِ الْاَيْمَنِ فِى الْبُقْعَةِ الْمُبَارَكَةِ مِنَ الشَّجَرَةِ اَنْ يَّا مُوْسٰۤى اِنِّۤيْ اَنَا اللهُ رَبُّ الْعَالَمِيْنَ
যখন মূসা আগুনের নিকট পৌঁছল তখন উপত্যকার দক্ষিণ পার্শ্বে পবিত্র ভূমিতে অবস্থিত এক বৃক্ষের দিক হতে তাকে আহবান করে বলা হলো, হে মূসা! আমিই আল্লাহ, জগতসমূহের প্রতিপালক। (সূরা ক্বাসাস– ৩০)
ব্যাখ্যা : কোন বিরাট জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান করে এবং আকাশ ও পৃথিবীতে কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণার মাধ্যমে কাউকে নবুওয়াত দান করা হয় না। মূসা (আঃ) সিনাই পাহাড়ের নিঝুম উপত্যকার পাশ দিয়ে চলার সময় নবুওয়াত লাভ করেন। অথচ তিনি কীভাবে তা লাভ করেন এবং সেখানে কী ঘটেছিল তা কেউ জানতে পারল না। মূসা (আঃ) নিজেও এক সেকেন্ড আগে জানতেন না যে, তিনি কী জিনিস পেতে যাচ্ছেন। যাচ্ছিলেন আগুন আনতে, কিন্তু পেয়ে গেলেন নবুওয়াত।
আল্লাহ মূসা (আঃ) কে ডাক দিয়ে জুতা খোলার নির্দেশ দিলেন :
فَلَمَّاۤ اَتَاهَا نُوْدِيَ يَا مُوْسٰى ‐ اِنِّۤيْ اَنَاْ رَبُّكَ فَاخْلَعْ نَعْلَيْكَۚ اِنَّكَ بِالْوَادِ الْمُقَدَّسِ طُوًى
অতঃপর যখন সে আগুনের নিকট আসল তখন আহবান করে বলা হলো, হে মূসা! আমিই তোমার প্রতিপালক। অতএব তোমার জুতা খুলে ফেলো, কারণ তুমি পবিত্র ‘তুয়া’ উপত্যকায় রয়েছ। (সূরা ত্বা-হা– ১১, ১২)
ওহীর বাণী মনোযোগ দিয়ে শুনতে বললেন :
وَاَنَا اخْتَرْتُكَ فَاسْتَمِعْ لِمَا يُوْحٰى
আমি তোমাকে (রাসূল হিসেবে) মনোনীত করেছি। অতএব যা ওহী প্রেরণ করা হচ্ছে তুমি তা মনোযোগের সাথে শ্রবণ করো। (সূরা ত্বা–হা– ১৩)
আল্লাহ নিজের পরিচয় উপস্থাপন করলেন :
فَلَمَّا جَآءَهَا نُوْدِيَ اَنْ ۢ بُوْرِكَ مَنْ فِى النَّارِ وَمَنْ حَوْلَهَاؕ وَسُبْحَانَ اللهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ‐ يَا مُوْسٰۤى اِنَّهٗۤ اَنَا اللهُ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
অতঃপর সে যখন তার নিকট আসল তখন ঘোষণা করা হলো যে, ধন্য যারা আছে এ আলোর মধ্যে এবং যারা আছে এর আশপাশে, জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ পবিত্র ও মহিমান্বিত। হে মূসা! আমিই আল্লাহ, (আমি) মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা নামল- ৮, ৯)
শুধুমাত্র তাঁর ইবাদাত করা এবং সালাত আদায় করার নির্দেশ দিলেন :
اِنَّنِيْۤ اَنَا اللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَاْ فَاعْبُدْنِيْ وَاَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِيْ
আমিই আল্লাহ, আমি ব্যতীত সত্য কোন ইলাহ্ নেই। অতএব আমার ইবাদাত করো এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম করো। (সূরা ত্বা–হা– ১৪)
আখিরাতের সঠিক ধারণা দিলেন :
اِنَّ السَّاعَةَ اٰتِيَةٌ اَكَادُ اُخْفِيْهَا لِتُجْزٰى كُلُّ نَفْسٍ ۢبِمَا تَسْعٰى
কিয়ামত অবশ্যই আসবে, আমি এটা গোপন রাখতে চাই যেন প্রত্যেকেই নিজ নিজ কর্মানুযায়ী ফল লাভ করতে পারে। (সূরা ত্বা–হা– ১৫)
পরকালকে না ভুলার জন্য সতর্ক করলেন :
فَلَا يَصُدَّنَّكَ عَنْهَا مَنْ لَّا يُؤْمِنُ بِهَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ فَتَرْدٰى
সুতরাং যে ব্যক্তি কিয়ামত দিবসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না ও নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, সে যেন তোমাকে তাতে বিশ্বাস স্থাপন করতে নিবৃত্ত না করে, অন্যথায় তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে। (সূরা ত্বা–হা– ১৬)
মূসা (আঃ) এর লাঠি সম্পর্কে আল্লাহ প্রশ্ন করলেন :
وَمَا تِلْكَ بِيَمِيْنِكَ يَا مُوْسٰى
হে মূসা! তোমার ডান হাতে ওটা কী? (সূরা ত্বা–হা– ১৭)
তিনি দীর্ঘ উত্তর দিলেন :
قَالَ هِيَ عَصَايَۚ اَتَوَكَّاُ عَلَيْهَا وَاَهُشُّ بِهَا عَلٰى غَنَمِيْ وَلِيَ فِيْهَا مَاٰرِبُ اُخْرٰى
সে বলল, এটা আমার লাঠি। আমি এতে ভর দেই এবং তা দ্বারা আঘাত করে আমি আমার মেষপালের জন্য গাছের পাতা ফেলে থাকি। তাছাড়া এটা আমার অন্যান্য কাজেও লাগে। (সূরা ত্বা–হা– ১৮)
আল্লাহ মূসা (আঃ) কে তাওরাত কিতাব দিয়েছিলেন :
وَلَقَدْ اٰتَيْنَا مُوْسَى الْكِتَابَ
আমি তো মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম। (সূরা ফুরক্বানু ৩৫)
এ কিতাব ছিল হেদায়াত ও নূর :
قُلْ مَنْ اَنْزَلَ الْكِتَابَ الَّذِيْ جَآءَ بِهٖ مُوْسٰى نُوْرًا وَّهُدًى لِّلنَّاسِ
বলো, কে নাযিল করেছেন মূসার আনীত কিতাব, যা ছিল মানুষের জন্য আলো ও পথনির্দেশ? (সূরা আন‘আম– ৯১)
وَاٰتَيْنَا مُوْسَى الْكِتَابَ وَجَعَلْنَاهُ هُدًى لِّبَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ اَلَّا تَتَّخِذُوْا مِنْ دُوْنِيْ وَكِيْلًا
আমি মূসাকে কিতাব প্রদান করেছিলাম ও তাকে বনী ইসরাঈলের জন্য পথনির্দেশক হিসেবে নির্বাচন করেছিলাম। আমি আদেশ করেছিলাম, তোমরা আমাকে ব্যতীত অপর কাউকে কর্মবিধায়ক হিসেবে গ্রহণ করো না। (সূরা বনী ইসরাঈল– ২)
এটা ছিল তাদের জন্য রহমতস্বরূপ :
وَمِنْ قَبْلِهٖ كِتَابُ مُوْسٰۤى اِمَامًا وَّرَحْمَةً
ইতোপূর্বে মূসার কিতাব ছিল পথপ্রদর্শক ও অনুগ্রহস্বরূপ। (সূরা হুদু ১৭)
এটা ছিল মুত্তাক্বীদের জন্য উপদেশস্বরূপ :
وَلَقَدْ اٰتَيْنَا مُوْسٰى وَهَارُوْنَ الْفُرْقَانَ وَضِيَآءً وَّذِكْرًا لِّلْمُتَّقِيْنَ
আমি তো মূসা ও হারূনকে ফুরক্বান দান করেছিলাম, যা ছিল মুত্তাক্বীদের জন্য জ্যোতি ও উপদেশস্বরূপ।
(সূরা আম্বিয়া– ৪৮)
মূসা (আঃ) এর কিতাবের কিছু বিষয় কুরআনে রয়েছে :
اَمْ لَمْ يُنَبَّأْ بِمَا فِيْ صُحُفِ مُوْسٰى ‐ وَاِبْرَاهِيْمَ الَّذِيْ وَفّٰى ‐ اَلَّا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِّزْرَ اُخْرٰى ‐ وَاَنْ لَّيْسَ لِلْاِنْسَانِ اِلَّا مَا سَعٰى ‐ وَاَنَّ سَعْيَهٗ سَوْفَ يُرٰى ‐ ثُمَّ يُجْزَاهُ الْجَزَآءَ الْاَوْفٰى ‐ وَاَنَّ اِلٰى رَبِّكَ الْمُنْتَهٰى ‐ وَاَنَّهٗ هُوَ اَضْحَكَ وَاَبْكٰى ‐ وَاَنَّهٗ هُوَ اَمَاتَ وَاَحْيَا ‐ وَاَنَّهٗ خَلَقَ الزَّوْجَيْنِ الذَّكَرَ وَالْاُنْثٰى ‐ مِنْ نُّطْفَةٍ اِذَا تُمْنٰى ‐ وَاَنَّ عَلَيْهِ النَّشْاَةَ الْاُخْرٰى
মূসা এবং ইবরাহীমের কিতাবে যা আছে তাকে কি তা অবগত করা হয়নি? যিনি (স্বীয়) অঙ্গীকার পূর্ণ করেছিলেন? তা এই যে, অবশ্যই কোন বহনকারী অপরের বোঝা বহন করবে না, মানুষ তাই পায় যা সে চেষ্টা করে। অচিরেই তার কর্ম দেখানো হবে এবং তাকে পূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে। নিশ্চয় সবকিছুর সমাপ্তি তোমার প্রতিপালকের নিকট। তিনিই হাসান, তিনিই কাঁদান; তিনিই মৃত্যু দান করেন এবং তিনিই জীবন দান করেন। তিনিই নিক্ষিপ্ত শুক্রবিন্দু হতে জোড়ায় জোড়ায় পুরুষ ও নারী সৃষ্টি করেন। আর পুনরায় জীবিত করার দায়িত্বও তাঁরই। (সূরা নাজম, ৩৬–৪৭)
قَدْ اَفْلَحَ مَنْ تَزَكّٰى ‐ وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهٖ فَصَلّٰى ‐ بَلْ تُؤْثِرُوْنَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا ‐ وَالْاٰخِرَةُ خَيْرٌ وَّاَبْقٰى ‐ اِنَّ هٰذَا لَفِى الصُّحُفِ الْاُوْلٰى ‐ صُحُفِ اِبْرَاهِيْمَ وَمُوْسٰى
নিশ্চয় যে পবিত্রতা অবলম্বন করে, সে সাফল্য লাভ করে। অতঃপর সে তার প্রতিপালকের নাম স্মরণ করে এবং সালাত কায়েম করে। কিন্তু তোমরা পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাক। অথচ আখিরাতের জীবনই উত্তম ও চিরস্থায়ী। নিশ্চয় এটা পূর্ববর্তী কিতাবসমূহে বর্ণিত হয়েছে, (বিশেষত) ইবরাহীম ও মূসার কিতাবসমূহে। (সূরা আলা, ১৪–১৯)
আল্লাহ মূসা (আঃ) কে নয়টি নিদর্শন দিয়েছেন :
وَلَقَدْ اٰتَيْنَا مُوْسٰى تِسْعَ اٰيَاتٍ ۢبَيِّنَاتٍ فَاسْاَلْ بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ اِذْ جَآءَهُمْ فَقَالَ لَهٗ فِرْعَوْنُ اِنِّيْ لَاَظُنُّكَ يَا مُوْسٰى مَسْحُوْرًا
তুমি বনী ইসরাঈলকে জিজ্ঞেস করে দেখো, আমি মূসাকে নয়টি স্পষ্ট নিদর্শন দিয়েছিলাম। যখন সে তাদের নিকট এসেছিল ফিরাউন তাকে বলেছিল, হে মূসা! আমি মনে করি তুমি যাদুগ্রস্ত। (সূরা বনী ইসরাঈল– ১০১)
একটি অপরটির চেয়ে আরো বড় ছিল :
وَمَا نُرِيْهِمْ مِّنْ اٰيَةٍ اِلَّا هِيَ اَكْبَرُ مِنْ اُخْتِهَا
আমি তাদেরকে এমন কোন নিদর্শন দেখাইনি, যা তার অনুরূপ নিদর্শনের চেয়ে শ্রেষ্ঠ নয়। (সূরা যুখরুফু ৪৮)
১. হাতের লাঠি সাপে পরিণত হওয়া :
قَالَ اَلْقِهَا يَا مُوْسٰى ‐ فَاَلْقَاهَا فَاِذَا هِيَ حَيَّةٌ تَسْعٰى
আল্লাহ বললেন, হে মূসা! তুমি এটা (লাঠি) নিক্ষেপ করো। ফলে সে তা নিক্ষেপ করল এবং সঙ্গে সঙ্গে তা একটি সাপে পরিণত হয়ে ছুটতে লাগল। (সূরা ত্বা–হা– ১৯, ২০)
২. বগল থেকে হাত বের করলে উজ্জ্বল হওয়া :
وَاضْمُمْ يَدَكَ اِلٰى جَنَاحِكَ تَخْرُجْ بَيْضَآءَ مِنْ غَيْرِ سُوْٓءٍ اٰيَةً اُخْرٰى
তোমার হাত তোমার বগলে রাখো, এটা বের হয়ে আসবে নির্মল উজ্জ্বল হয়ে, যা আরো একটি নিদর্শন। (সূরা ত্বা–হা– ২২)
৩. যাদুকরদের পরাভূত করা :
فَاَلْقٰى مُوْسٰى عَصَاهُ فَاِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُوْنَ
অতঃপর মূসা তার লাঠি নিক্ষেপ করলেন, সহসা তা তাদের অলীক সৃষ্টিগুলোকে গ্রাস করতে লাগল। (সূরা শু‘আরা– ৪৫)
৪. সারা দেশে দুর্ভিক্ষ হওয়া :
وَلَقَدْ اَخَذْنَاۤ اٰلَ فِرْعَوْنَ بِالسِّنِيْنَ وَنَقْصٍ مِّنَ الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُوْنَ
আমি তো ফিরাউনের অনুসারীদেরকে দুর্ভিক্ষ ও ফল–ফসলের ক্ষতির দ্বারা আক্রান্ত করেছিলাম, যাতে তারা অনুধাবন করে। (সূরা আ‘রাফু ১৩০)
৫. প্লাবন, ৬. পঙ্গপাল, ৭. উকুন, ৮. ব্যাঙ ও ৯. রক্ত :
فَاَرْسَلْنَا عَلَيْهِمُ الطُّوْفَانَ وَالْجَرَادَ وَالْقُمَّلَ وَالضَّفَادِعَ وَالدَّمَ اٰيَاتٍ مُّفَصَّلَاتٍ
অতঃপর আমি তাদেরকে প্লাবন, পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ ও রক্ত দ্বারা কষ্ট দিয়েছিলাম, যা ছিল স্পষ্ট নিদর্শন। (সূরা আ‘রাফু ১৩৩)
وَلَقَدْ اٰتَيْنَا مُوْسٰى تِسْعَ اٰيَاتٍ ۢبَيِّنَاتٍ فَاسْاَلْ بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ اِذْ جَآءَهُمْ فَقَالَ لَهٗ فِرْعَوْنُ اِنِّيْ لَاَظُنُّكَ يَا مُوْسٰى مَسْحُوْرًا
তুমি বনী ইসরাঈলকে জিজ্ঞেস করে দেখো, আমি মূসাকে নয়টি স্পষ্ট নিদর্শন দিয়েছিলাম। যখন সে তাদের নিকট এসেছিল ফিরাউন তাকে বলেছিল, হে মূসা! আমি মনে করি তুমি যাদুগ্রস্ত। (সূরা বনী ইসরাঈল– ১০১)
একটি অপরটির চেয়ে আরো বড় ছিল :
وَمَا نُرِيْهِمْ مِّنْ اٰيَةٍ اِلَّا هِيَ اَكْبَرُ مِنْ اُخْتِهَا
আমি তাদেরকে এমন কোন নিদর্শন দেখাইনি, যা তার অনুরূপ নিদর্শনের চেয়ে শ্রেষ্ঠ নয়। (সূরা যুখরুফু ৪৮)
১. হাতের লাঠি সাপে পরিণত হওয়া :
قَالَ اَلْقِهَا يَا مُوْسٰى ‐ فَاَلْقَاهَا فَاِذَا هِيَ حَيَّةٌ تَسْعٰى
আল্লাহ বললেন, হে মূসা! তুমি এটা (লাঠি) নিক্ষেপ করো। ফলে সে তা নিক্ষেপ করল এবং সঙ্গে সঙ্গে তা একটি সাপে পরিণত হয়ে ছুটতে লাগল। (সূরা ত্বা–হা– ১৯, ২০)
২. বগল থেকে হাত বের করলে উজ্জ্বল হওয়া :
وَاضْمُمْ يَدَكَ اِلٰى جَنَاحِكَ تَخْرُجْ بَيْضَآءَ مِنْ غَيْرِ سُوْٓءٍ اٰيَةً اُخْرٰى
তোমার হাত তোমার বগলে রাখো, এটা বের হয়ে আসবে নির্মল উজ্জ্বল হয়ে, যা আরো একটি নিদর্শন। (সূরা ত্বা–হা– ২২)
৩. যাদুকরদের পরাভূত করা :
فَاَلْقٰى مُوْسٰى عَصَاهُ فَاِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُوْنَ
অতঃপর মূসা তার লাঠি নিক্ষেপ করলেন, সহসা তা তাদের অলীক সৃষ্টিগুলোকে গ্রাস করতে লাগল। (সূরা শু‘আরা– ৪৫)
৪. সারা দেশে দুর্ভিক্ষ হওয়া :
وَلَقَدْ اَخَذْنَاۤ اٰلَ فِرْعَوْنَ بِالسِّنِيْنَ وَنَقْصٍ مِّنَ الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُوْنَ
আমি তো ফিরাউনের অনুসারীদেরকে দুর্ভিক্ষ ও ফল–ফসলের ক্ষতির দ্বারা আক্রান্ত করেছিলাম, যাতে তারা অনুধাবন করে। (সূরা আ‘রাফু ১৩০)
৫. প্লাবন, ৬. পঙ্গপাল, ৭. উকুন, ৮. ব্যাঙ ও ৯. রক্ত :
فَاَرْسَلْنَا عَلَيْهِمُ الطُّوْفَانَ وَالْجَرَادَ وَالْقُمَّلَ وَالضَّفَادِعَ وَالدَّمَ اٰيَاتٍ مُّفَصَّلَاتٍ
অতঃপর আমি তাদেরকে প্লাবন, পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ ও রক্ত দ্বারা কষ্ট দিয়েছিলাম, যা ছিল স্পষ্ট নিদর্শন। (সূরা আ‘রাফু ১৩৩)
আল্লাহ তাকে হাতের লাঠি মাটিতে ফেলে দিতে বললেন :
قَالَ اَلْقِهَا يَا مُوْسٰى
আল্লাহ বললেন, হে মূসা! তুমি তা নিক্ষেপ করো। (সূরা ত্বা–হা– ১৯)
সাথে সাথে এটা সাপ হয়ে গেল :
فَاَلْقَاهَا فَاِذَا هِيَ حَيَّةٌ تَسْعٰى
অতঃপর সে তা নিক্ষেপ করল এবং সঙ্গে সঙ্গে তা সাপে পরিণত হয়ে ছুটতে লাগল। (সূরা ত্বা–হা– ২০)
মূসা (আঃ) ভয় পেলে আল্লাহ তাকে সাহস দিলেন :
وَاَنْ اَلْقِ عَصَاكَؕ فَلَمَّا رَاٰهَا تَهْتَزُّ كَاَنَّهَا جَآنٌّ وَّلّٰى مُدْبِرًا وَّلَمْ يُعَقِّبْؕ يَا مُوْسٰۤى اَقْبِلْ وَلَا تَخَفْ اِنَّكَ مِنَ الْاٰمِنِيْنَ
(বলা হলো) তুমি তোমার লাঠি নিক্ষেপ করো। অতঃপর যখন সে তাকে সাপের মতো ছোটাছুটি করতে দেখল তখন পেছন দিকে ছুটতে লাগল এবং ফিরে তাকাল না। ফলে তাকে বলা হলো, হে মূসা! সম্মুখে আসো, ভয় করো না; নিশ্চয় তুমি নিরাপদ। (সূরা ক্বাসাস– ৩১)
وَاَلْقِ عَصَاكَؕ فَلَمَّا رَاٰهَا تَهْتَزُّ كَاَنَّهَا جَآنٌّ وَّلّٰى مُدْبِرًا وَّلَمْ يُعَقِّبْؕ يَا مُوْسٰى لَا تَخَفْ اِنِّيْ لَا يَخَافُ لَدَيَّ الْمُرْسَلُوْنَ
তুমি তোমার লাঠি নিক্ষেপ করো। অতঃপর যখন সে তাকে সর্পের ন্যায় ছুটাছুটি করতে দেখল, তখন সে পেছনের দিকে ছুটতে লাগল এবং ফিরেও তাকাল না। অতঃপর বলা হলো, হে মূসা! ভীত হয়ো না। নিশ্চয় আমার সান্নিধ্যে রাসূলগণ ভয় পায় না। (সূরা নামল- ১০)
আল্লাহ মূসা (আঃ) কে সাপটি ধরতে বললেন :
قَالَ خُذْهَا وَلَا تَخَفْ سَنُعِيْدُهَا سِيْرَتَهَا الْاُوْلٰى
তিনি বললেন, তুমি এটাকে ধরো এবং ভয় করো না। আমি এটাকে তার পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দেব।
(সূরা ত্বা–হা– ২১)
বগলের মধ্যে হাত রাখতে বললেন :
وَاَدْخِلْ يَدَكَ فِيْ جَيْبِكَ تَخْرُجْ بَيْضَآءَ مِنْ غَيْرِ سُوْٓءٍ
আর তোমার হাত তোমার বগলে রাখো। ফলে এটা বের হয়ে আসবে শুভ্র-নির্মল অবস্থায়। (সূরা নামল- ১২)
اُسْلُكْ يَدَكَ فِيْ جَيْبِكَ تَخْرُجْ بَيْضَآءَ مِنْ غَيْرِ سُوْٓءٍ وَّاضْمُمْ اِلَيْكَ جَنَاحَكَ مِنَ الرَّهْبِ
তোমার হাত তোমার বগলে রাখো। ফলে তা বের হয়ে আসবে শুভ্র–সমুজ্জ্বল নির্দোষ হয়ে। আর ভয় দূর করার জন্য তোমার হস্তদ্বয় নিজের দিকে চেপে ধরো। (সূরা ক্বাসাস– ৩২)
ফিরাউনের মুকাবিলার জন্য এ মু‘জিযা দেয়া হলো :
فَذَانِكَ بُرْهَانَانِ مِنْ رَّبِّكَ اِلٰى فِرْعَوْنَ وَمَلَئِهٖؕ اِنَّهُمْ كَانُوْا قَوْمًا فَاسِقِيْنَ
এ দু’টি তোমার প্রতিপালকের পÿ হতে ফিরাউন ও তার পরিষদবর্গের জন্য স্পষ্ট প্রদত্ত প্রমাণ। কিন্তু তারা তো সত্যত্যাগী সম্প্রদায়। (সূরা ক্বাসাস– ৩২)
فِيْ تِسْعِ اٰيَاتٍ اِلٰى فِرْعَوْنَ وَقَوْمِهٖؕ اِنَّهُمْ كَانُوْا قَوْمًا فَاسِقِيْنَ
এটা ফিরাউন ও তার সম্প্রদায়ের নিকট আনীত নয়টি নিদর্শনের অন্তর্গত। কিন্তু তারা তো সত্যত্যাগী সম্প্রদায়। (সূরা নামল- ১২)
قَالَ اَلْقِهَا يَا مُوْسٰى
আল্লাহ বললেন, হে মূসা! তুমি তা নিক্ষেপ করো। (সূরা ত্বা–হা– ১৯)
সাথে সাথে এটা সাপ হয়ে গেল :
فَاَلْقَاهَا فَاِذَا هِيَ حَيَّةٌ تَسْعٰى
অতঃপর সে তা নিক্ষেপ করল এবং সঙ্গে সঙ্গে তা সাপে পরিণত হয়ে ছুটতে লাগল। (সূরা ত্বা–হা– ২০)
মূসা (আঃ) ভয় পেলে আল্লাহ তাকে সাহস দিলেন :
وَاَنْ اَلْقِ عَصَاكَؕ فَلَمَّا رَاٰهَا تَهْتَزُّ كَاَنَّهَا جَآنٌّ وَّلّٰى مُدْبِرًا وَّلَمْ يُعَقِّبْؕ يَا مُوْسٰۤى اَقْبِلْ وَلَا تَخَفْ اِنَّكَ مِنَ الْاٰمِنِيْنَ
(বলা হলো) তুমি তোমার লাঠি নিক্ষেপ করো। অতঃপর যখন সে তাকে সাপের মতো ছোটাছুটি করতে দেখল তখন পেছন দিকে ছুটতে লাগল এবং ফিরে তাকাল না। ফলে তাকে বলা হলো, হে মূসা! সম্মুখে আসো, ভয় করো না; নিশ্চয় তুমি নিরাপদ। (সূরা ক্বাসাস– ৩১)
وَاَلْقِ عَصَاكَؕ فَلَمَّا رَاٰهَا تَهْتَزُّ كَاَنَّهَا جَآنٌّ وَّلّٰى مُدْبِرًا وَّلَمْ يُعَقِّبْؕ يَا مُوْسٰى لَا تَخَفْ اِنِّيْ لَا يَخَافُ لَدَيَّ الْمُرْسَلُوْنَ
তুমি তোমার লাঠি নিক্ষেপ করো। অতঃপর যখন সে তাকে সর্পের ন্যায় ছুটাছুটি করতে দেখল, তখন সে পেছনের দিকে ছুটতে লাগল এবং ফিরেও তাকাল না। অতঃপর বলা হলো, হে মূসা! ভীত হয়ো না। নিশ্চয় আমার সান্নিধ্যে রাসূলগণ ভয় পায় না। (সূরা নামল- ১০)
আল্লাহ মূসা (আঃ) কে সাপটি ধরতে বললেন :
قَالَ خُذْهَا وَلَا تَخَفْ سَنُعِيْدُهَا سِيْرَتَهَا الْاُوْلٰى
তিনি বললেন, তুমি এটাকে ধরো এবং ভয় করো না। আমি এটাকে তার পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দেব।
(সূরা ত্বা–হা– ২১)
বগলের মধ্যে হাত রাখতে বললেন :
وَاَدْخِلْ يَدَكَ فِيْ جَيْبِكَ تَخْرُجْ بَيْضَآءَ مِنْ غَيْرِ سُوْٓءٍ
আর তোমার হাত তোমার বগলে রাখো। ফলে এটা বের হয়ে আসবে শুভ্র-নির্মল অবস্থায়। (সূরা নামল- ১২)
اُسْلُكْ يَدَكَ فِيْ جَيْبِكَ تَخْرُجْ بَيْضَآءَ مِنْ غَيْرِ سُوْٓءٍ وَّاضْمُمْ اِلَيْكَ جَنَاحَكَ مِنَ الرَّهْبِ
তোমার হাত তোমার বগলে রাখো। ফলে তা বের হয়ে আসবে শুভ্র–সমুজ্জ্বল নির্দোষ হয়ে। আর ভয় দূর করার জন্য তোমার হস্তদ্বয় নিজের দিকে চেপে ধরো। (সূরা ক্বাসাস– ৩২)
ফিরাউনের মুকাবিলার জন্য এ মু‘জিযা দেয়া হলো :
فَذَانِكَ بُرْهَانَانِ مِنْ رَّبِّكَ اِلٰى فِرْعَوْنَ وَمَلَئِهٖؕ اِنَّهُمْ كَانُوْا قَوْمًا فَاسِقِيْنَ
এ দু’টি তোমার প্রতিপালকের পÿ হতে ফিরাউন ও তার পরিষদবর্গের জন্য স্পষ্ট প্রদত্ত প্রমাণ। কিন্তু তারা তো সত্যত্যাগী সম্প্রদায়। (সূরা ক্বাসাস– ৩২)
فِيْ تِسْعِ اٰيَاتٍ اِلٰى فِرْعَوْنَ وَقَوْمِهٖؕ اِنَّهُمْ كَانُوْا قَوْمًا فَاسِقِيْنَ
এটা ফিরাউন ও তার সম্প্রদায়ের নিকট আনীত নয়টি নিদর্শনের অন্তর্গত। কিন্তু তারা তো সত্যত্যাগী সম্প্রদায়। (সূরা নামল- ১২)
আল্লাহ মূসা (আঃ) কে ডাক দিলেন :
هَلْ اَتَاكَ حَدِيْثُ مُوْسٰى ‐ اِذْ نَادَاهُ رَبُّهٗ بِالْوَادِ الْمُقَدَّسِ طُوًى
(হে মুহাম্মাদ) তোমার নিকট মূসার কাহিনী পৌঁছেছে কি? যখন তার প্রতিপালক তাকে পবিত্র তুয়া উপত্যকায় আহবান করেছিলেন। (সূরা নাযি‘আত- ১৫, ১৬)
তাকে ফিরাউনের কাছে যেতে বললেন :
اِذْهَبْ اِلٰى فِرْعَوْنَ اِنَّهٗ طَغٰى
ফিরাউনের নিকট যাও; নিশ্চয় সে সীমালঙ্ঘন করেছে। (সূরা ত্বা–হা– ২৪)
وَاِذْ نَادٰى رَبُّكَ مُوْسٰۤى اَنِ ائْتِ الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ ‐ قَوْمَ فِرْعَوْنَؕ اَ لَا يَتَّقُوْنَ
স্মরণ করো, যখন তোমার প্রতিপালক মূসাকে ডেকে বললেন, তুমি যালিম সম্প্রদায়ের নিকট যাও। (অর্থাৎ) ফিরাউনের সম্প্রদায়ের নিকট, তারা কি ভয় করে না? (সূরা শু‘আরা– ১০, ১১)
هَلْ اَتَاكَ حَدِيْثُ مُوْسٰى ‐ اِذْ نَادَاهُ رَبُّهٗ بِالْوَادِ الْمُقَدَّسِ طُوًى
(হে মুহাম্মাদ) তোমার নিকট মূসার কাহিনী পৌঁছেছে কি? যখন তার প্রতিপালক তাকে পবিত্র তুয়া উপত্যকায় আহবান করেছিলেন। (সূরা নাযি‘আত- ১৫, ১৬)
তাকে ফিরাউনের কাছে যেতে বললেন :
اِذْهَبْ اِلٰى فِرْعَوْنَ اِنَّهٗ طَغٰى
ফিরাউনের নিকট যাও; নিশ্চয় সে সীমালঙ্ঘন করেছে। (সূরা ত্বা–হা– ২৪)
وَاِذْ نَادٰى رَبُّكَ مُوْسٰۤى اَنِ ائْتِ الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ ‐ قَوْمَ فِرْعَوْنَؕ اَ لَا يَتَّقُوْنَ
স্মরণ করো, যখন তোমার প্রতিপালক মূসাকে ডেকে বললেন, তুমি যালিম সম্প্রদায়ের নিকট যাও। (অর্থাৎ) ফিরাউনের সম্প্রদায়ের নিকট, তারা কি ভয় করে না? (সূরা শু‘আরা– ১০, ১১)
মূসা (আঃ) হারূন (আঃ) কে তার সহযোগী করার জন্য প্রার্থনা করলেন :
وَاَخِيْ هَارُوْنُ هُوَ اَفْصَحُ مِنِّيْ لِسَانًا فَاَرْسِلْهُ مَعِيَ رِدْءًا يُّصَدِّقُنِيْؗ اِنِّۤيْ اَخَافُ اَنْ يُّكَذِّبُوْنِ
আমার ভাই হারূন আমার থেকে ভালো করে কথা বলতে পারে। অতএব তাকে আমার সাহায্যকারী হিসেবে প্রেরণ করুন, সে আমাকে সমর্থন করবে। আর আমি আশঙ্কা করি তারা আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে। (সূরা ক্বাসাস– ৩৪)
وَاجْعَلْ لِّيْ وَزِيْرًا مِّنْ اَهْلِيْ ‐ هَارُوْنَ اَخِيْ ‐ اُشْدُدْ بِهٖۤ اَزْرِيْ ‐ وَاَشْرِكْهُ فِۤيْ اَمْرِيْ ‐ كَيْ نُسَبِّحَكَ كَثِيْرًا ‐ وَنَذْكُرَكَ كَثِيْرًا ‐ اِنَّكَ كُنْتَ بِنَا بَصِيْرًا
আমার জন্য আমার স্বজনবর্গের মধ্য হতে একজনকে সাহায্যকারী হিসেবে মনোনীত করো, (অর্থাৎ) আমার ভাই হারূনকে। অতঃপর তা দ্বারা আমার শক্তি সুদৃঢ় করো ও তাকে আমার কর্মে শরীক করো, যাতে আমরা প্রচুর পরিমাণে তোমার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতে পারি এবং তোমাকে অধিক স্মরণ করতে পারি। নিশ্চয় তুমি আমাদের সম্যক দ্রষ্টা। (সূরা ত্বা–হা, ২৯-৩৫)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ আমার মনে এ মহান দায়িত্ব বহন করার মতো দৃঢ়তা সৃষ্টি করে দাও। আমার উৎসাহ-উদ্দীপনা বাড়িয়ে দাও। যেহেতু মূসা (আঃ) এর উপর অনেক বড় একটি কাজের দায়িত্ব সোপর্দ করা হচ্ছিল, যা বহন করার জন্য দূরন্ত সাহসের প্রয়োজন। তাই তিনি দু‘আ করেন, আমাকে এমন ধৈর্য, দৃঢ়তা ও সহনশীলতা দান করো, যা এ কাজের জন্য প্রয়োজন। মূসা (আঃ) নিজের মধ্যে বাগ্মীতার অভাব লক্ষ্য করতে পেরেছিলেন। ফলে তাঁর মনে এ আশঙ্কা জেগেছিল যে, নবুওয়াতের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যদি কখনো তাঁর বক্তৃতা দেয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়, তাহলে তা বাধা হয়ে দাঁড়াবে। তাই তিনি দু‘আ করেন, হে আল্লাহ! আমার জিহবার জড়তা দূর করে দাও, যাতে আমি লোকদেরকে নিজের কথা ভালোভাবে বুঝাতে পারি। এর অর্থ তিনি তোতলা ছিলেন- তা নয়। রাসূলগণ সবসময় এমন ধরনের লোক হয়েছেন, যাঁরা চেহারা, ব্যক্তিত্ব ও যোগ্যতার দিক দিয়ে ছিলেন সর্বোত্তম। যাদের ভেতর ও বাহিরের প্রতিটি দিক মানুষকে প্রভাবিত করেছে। কোন রাসূলকে এমন কোন দোষ সহকারে পাঠানো হয়নি, যে কারণে তিনি লোকদের মধ্যে হাস্যকর ব্যক্তিতে পরিণত হন অথবা লোকেরা তাকে হেয় প্রতিপন্ন করে।
মূসা (আঃ) এর দু‘আ আল্লাহ কবুল করলেন :
قَالَ قَدْ اُوْتِيْتَ سُؤْلَكَ يَا مُوْسٰى
তিনি বললেন, হে মূসা! তুমি যা চেয়েছ তা তোমাকে দেয়া হলো। (সূরা ত্বা–হা– ৩৬)
قَالَ سَنَشُدُّ عَضُدَكَ بِاَخِيْكَ وَنَجْعَلُ لَكُمَا سُلْطَانًا فَلَا يَصِلُوْنَ اِلَيْكُمَاۚ بِاٰيَاتِنَاۚ اَنْتُمَا وَمَنِ اتَّبَعَكُمَا الْغَالِبُوْنَ
আল্লাহ বললেন, আমি তোমার ভাইয়ের দ্বারা তোমার বাহু শক্তিশালী করব এবং তোমাদের উভয়কে প্রাধান্য দান করব। ফলে তারা তোমাদের নিকট পৌঁছতে পারবে না। অতঃপর তোমরা এবং তোমাদের অনুসারীরা আমার নিদর্শনের বলে তাদের উপর বিজয়ী হবে। (সূরা ক্বাসাস– ৩৫)
আল্লাহ হারূন (আঃ) কে নবী হিসেবে নির্বাচন করলেন :
وَوَهَبْنَا لَهٗ مِنْ رَّحْمَتِنَاۤ اَخَاهُ هَارُوْنَ نَبِيًّا
আমি নিজ অনুগ্রহে তার ভাই হারূনকে নবী হিসেবে মনোনীত করলাম। (সূরা মারইয়াম– ৫৩)
وَلَقَدْ اٰتَيْنَا مُوْسَى الْكِتَابَ وَجَعَلْنَا مَعَهٗۤ اَخَاهُ هَارُوْنَ وَزِيْرًا
আমি তো মূসাকে কিতাব দান করেছিলাম এবং তার সাথে তার ভাই হারূনকে সাহায্যকারী হিসেবে মনোনীত করেছিলাম। (সূরা ফুরক্বানু ৩৫)
وَاَخِيْ هَارُوْنُ هُوَ اَفْصَحُ مِنِّيْ لِسَانًا فَاَرْسِلْهُ مَعِيَ رِدْءًا يُّصَدِّقُنِيْؗ اِنِّۤيْ اَخَافُ اَنْ يُّكَذِّبُوْنِ
আমার ভাই হারূন আমার থেকে ভালো করে কথা বলতে পারে। অতএব তাকে আমার সাহায্যকারী হিসেবে প্রেরণ করুন, সে আমাকে সমর্থন করবে। আর আমি আশঙ্কা করি তারা আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে। (সূরা ক্বাসাস– ৩৪)
وَاجْعَلْ لِّيْ وَزِيْرًا مِّنْ اَهْلِيْ ‐ هَارُوْنَ اَخِيْ ‐ اُشْدُدْ بِهٖۤ اَزْرِيْ ‐ وَاَشْرِكْهُ فِۤيْ اَمْرِيْ ‐ كَيْ نُسَبِّحَكَ كَثِيْرًا ‐ وَنَذْكُرَكَ كَثِيْرًا ‐ اِنَّكَ كُنْتَ بِنَا بَصِيْرًا
আমার জন্য আমার স্বজনবর্গের মধ্য হতে একজনকে সাহায্যকারী হিসেবে মনোনীত করো, (অর্থাৎ) আমার ভাই হারূনকে। অতঃপর তা দ্বারা আমার শক্তি সুদৃঢ় করো ও তাকে আমার কর্মে শরীক করো, যাতে আমরা প্রচুর পরিমাণে তোমার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতে পারি এবং তোমাকে অধিক স্মরণ করতে পারি। নিশ্চয় তুমি আমাদের সম্যক দ্রষ্টা। (সূরা ত্বা–হা, ২৯-৩৫)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ আমার মনে এ মহান দায়িত্ব বহন করার মতো দৃঢ়তা সৃষ্টি করে দাও। আমার উৎসাহ-উদ্দীপনা বাড়িয়ে দাও। যেহেতু মূসা (আঃ) এর উপর অনেক বড় একটি কাজের দায়িত্ব সোপর্দ করা হচ্ছিল, যা বহন করার জন্য দূরন্ত সাহসের প্রয়োজন। তাই তিনি দু‘আ করেন, আমাকে এমন ধৈর্য, দৃঢ়তা ও সহনশীলতা দান করো, যা এ কাজের জন্য প্রয়োজন। মূসা (আঃ) নিজের মধ্যে বাগ্মীতার অভাব লক্ষ্য করতে পেরেছিলেন। ফলে তাঁর মনে এ আশঙ্কা জেগেছিল যে, নবুওয়াতের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যদি কখনো তাঁর বক্তৃতা দেয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়, তাহলে তা বাধা হয়ে দাঁড়াবে। তাই তিনি দু‘আ করেন, হে আল্লাহ! আমার জিহবার জড়তা দূর করে দাও, যাতে আমি লোকদেরকে নিজের কথা ভালোভাবে বুঝাতে পারি। এর অর্থ তিনি তোতলা ছিলেন- তা নয়। রাসূলগণ সবসময় এমন ধরনের লোক হয়েছেন, যাঁরা চেহারা, ব্যক্তিত্ব ও যোগ্যতার দিক দিয়ে ছিলেন সর্বোত্তম। যাদের ভেতর ও বাহিরের প্রতিটি দিক মানুষকে প্রভাবিত করেছে। কোন রাসূলকে এমন কোন দোষ সহকারে পাঠানো হয়নি, যে কারণে তিনি লোকদের মধ্যে হাস্যকর ব্যক্তিতে পরিণত হন অথবা লোকেরা তাকে হেয় প্রতিপন্ন করে।
মূসা (আঃ) এর দু‘আ আল্লাহ কবুল করলেন :
قَالَ قَدْ اُوْتِيْتَ سُؤْلَكَ يَا مُوْسٰى
তিনি বললেন, হে মূসা! তুমি যা চেয়েছ তা তোমাকে দেয়া হলো। (সূরা ত্বা–হা– ৩৬)
قَالَ سَنَشُدُّ عَضُدَكَ بِاَخِيْكَ وَنَجْعَلُ لَكُمَا سُلْطَانًا فَلَا يَصِلُوْنَ اِلَيْكُمَاۚ بِاٰيَاتِنَاۚ اَنْتُمَا وَمَنِ اتَّبَعَكُمَا الْغَالِبُوْنَ
আল্লাহ বললেন, আমি তোমার ভাইয়ের দ্বারা তোমার বাহু শক্তিশালী করব এবং তোমাদের উভয়কে প্রাধান্য দান করব। ফলে তারা তোমাদের নিকট পৌঁছতে পারবে না। অতঃপর তোমরা এবং তোমাদের অনুসারীরা আমার নিদর্শনের বলে তাদের উপর বিজয়ী হবে। (সূরা ক্বাসাস– ৩৫)
আল্লাহ হারূন (আঃ) কে নবী হিসেবে নির্বাচন করলেন :
وَوَهَبْنَا لَهٗ مِنْ رَّحْمَتِنَاۤ اَخَاهُ هَارُوْنَ نَبِيًّا
আমি নিজ অনুগ্রহে তার ভাই হারূনকে নবী হিসেবে মনোনীত করলাম। (সূরা মারইয়াম– ৫৩)
وَلَقَدْ اٰتَيْنَا مُوْسَى الْكِتَابَ وَجَعَلْنَا مَعَهٗۤ اَخَاهُ هَارُوْنَ وَزِيْرًا
আমি তো মূসাকে কিতাব দান করেছিলাম এবং তার সাথে তার ভাই হারূনকে সাহায্যকারী হিসেবে মনোনীত করেছিলাম। (সূরা ফুরক্বানু ৩৫)
ফিরাউন ছিল সীমালঙ্ঘনকারী :
وَاِنَّ فِرْعَوْنَ لَعَالٍ فِى الْاَرْضِۚ وَاِنَّهٗ لَمِنَ الْمُسْرِفِيْنَ
বস্তুত (আল্লাহর) জমিনে ফিরাউন ছিল প্রভাবশালী। নিশ্চয় সে সীমালঙ্ঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা ইউনুস– ৮৩)
সে ছিল ফাসাদ সৃষ্টিকারী ও জাতির উপর নির্যাতনকরী :
اِنَّ فِرْعَوْنَ عَلَا فِى الْاَرْضِ وَجَعَلَ اَهْلَهَا شِيَعًا يَّسْتَضْعِفُ طَآئِفَةً مِّنْهُمْ يُذَبِّحُ اَبْنَآءَهُمْ وَيَسْتَحْيِيْ نِسَآءَهُمْؕ اِنَّهٗ كَانَ مِنَ الْمُفْسِدِيْنَ
নিশ্চয় ফিরাউন জমিনে প্রভাবশালী হয়েছিল উঠেছিল এবং সেখানকার অধিবাসীবৃন্দকে বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত করে তাদের একটি শ্রেণিকে হীনবল করে দিয়েছিল। সে তাদের পুত্রদেরকে হত্যা করত এবং নারীদেরকে জীবিত রাখত। নিশ্চয় সে ছিল বিপর্যয় সৃষ্টিকারী। (সূরা ক্বাসাস– ৪)
ফিরাউন মুসলিমদের পুত্রসন্তানদেরকে হত্যা করত :
قَالَ سَنُقَتِّلُ اَبْنَآءَهُمْ وَنَسْتَحْيِيْ نِسَآءَهُمْۚ وَاِنَّا فَوْقَهُمْ قَاهِرُوْنَ
সে বলল, আমরা তাদের পুত্রদেরকে হত্যা করব এবং তাদের নারীদেরকে জীবিত রাখব। আমরা তো তাদের উপর প্রবল। (সূরা আ‘রাফু ১২৭)
সে তার জাতিকে ভ্রষ্ট করেছে :
وَاَضَلَّ فِرْعَوْنُ قَوْمَهٗ وَمَا هَدٰى
আর ফিরাউন তার সম্প্রদায়কে পথভ্রষ্ট করেছিল এবং সৎপথ দেখায়নি। (সূরা ত্বা–হা– ৭৯)
সে নিজেকে নবীর চেয়ে উত্তম মনে করত :
اَمْ اَنَاْ خَيْرٌ مِّنْ هٰذَا الَّذِيْ هُوَ مَهِيْنٌ وَّلَا يَكَادُ يُبِيْنُ
আমি তো এই ব্যক্তি হতে শ্রেষ্ঠ, যে হীন এবং যে স্পষ্টভাবে কথাও বলতে পারে না। (সূরা যুখরুফু ৫২)
ধনী না হওয়াতে নবীকে দোষারোপ করত :
فَلَوْلَاۤ اُلْقِيَ عَلَيْهِ اَسْوِرَةٌ مِّنْ ذَهَبٍ اَوْ جَآءَ مَعَهُ الْمَلَآئِكَةُ مُقْتَرِنِيْنَ
(তিনি যদি নবী হতেন তবে) কেন তাকে স্বর্ণবালা দেয়া হলো না অথবা তার সাথে কেন ফেরেশতারা দলবদ্ধভাবে আগমন করল না। (সূরা যুখরুফু ৫৩)
সে নবীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল ও অমান্য করল :
فَكَذَّبَ وَعَصٰى
কিন্তু সে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল এবং অবাধ্য হলো। (সূরা নাযি‘আত– ২১)
দাওয়াত না মেনে পিছনে ফিরে গেল :
ثُمَّ اَدْبَرَ يَسْعٰى
অতঃপর সে পেছনে ফিরে পূর্বের কর্মে সচেষ্ট হলো। (সূরা নাযি‘আত– ২২)
ফিরাউন নিজেকে বড় রব বলে দাবী করল :
فَحَشَرَ فَنَادٰى ‐ فَقَالَ اَنَاْ رَبُّكُمُ الْاَعْلٰى
সে সকলকে সমবেত করল এবং ঘোষণা করল যে, আমিই তোমাদের সর্বোচ্চ প্রতিপালক। (সূরা নাযি‘আত– ২৩, ২৪)
নিজেকে উপাস্য মনে করল :
وَقَالَ فِرْعَوْنُ يَاۤ اَيُّهَا الْمَلَأُ مَا عَلِمْتُ لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرِيْ فَاَوْقِدْ لِيْ يَا هَامَانُ عَلَى الطِّيْنِ فَاجْعَلْ لِّيْ صَرْحًا لَّعَلِّيْۤ اَطَّلِعُ اِلٰۤى اِلٰهِ مُوْسٰى وَاِنِّيْ لَاَظُنُّهٗ مِنَ الْكَاذِبِيْنَ
ফিরাউন বলল, হে পরিষদবর্গ! আমি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ্ আছে বলে আমি তো জানি না। হে হামান! তুমি আমার জন্য ইট পোড়াও এবং একটি সুউচ্চ প্রাসাদ নির্মাণ করো, যাতে আমি তাতে উঠে মূসার ইলাহকে দেখতে পারি। তবে আমি মনে করি যে, অবশ্যই সে মিথ্যাবাদী। (সূরা ক্বাসাস– ৩৮)
ফিরাউন নিজের ক্ষমতার জন্য গর্ব করত :
فَتَوَلّٰى بِرُكْنِهٖ وَقَالَ سَاحِرٌ اَوْ مَجْنُوْنٌ
তখন সে ক্ষমতার দম্ভে মুখ ফিরিয়ে নিল এবং বলল (এ ব্যক্তি) এক যাদুকর অথবা উন্মাদ। (সূরা যারিয়াত– ৩৯)
রাজত্বের বড়াই করত :
وَنَادٰى فِرْعَوْنُ فِيْ قَوْمِهٖ قَالَ يَا قَوْمِ اَلَيْسَ لِيْ مُلْكُ مِصْرَ وَهٰذِهِ الْاَنْهَارُ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِيْۚ اَفَلَا تُبْصِرُوْنَ
ফিরাউন তার সম্প্রদায়ের মধ্যে এ ঘোষণা করল যে, হে আমার সম্প্রদায়! মিসরের বাদশাহী কি আমার নয়? এ নদীগুলো আমার পাদদেশে প্রবাহিত, তোমরা কি তা দেখ না? (সূরা যুখরুফু ৫১)
সে তার জাতিকে দাস বানিয়ে রেখেছিল :
فَقَالُوْاۤ اَنُؤْمِنُ لِبَشَرَيْنِ مِثْلِنَا وَقَوْمُهُمَا لَنَا عَابِدُوْنَ
তারা বলল, আমরা কি এমন দু’ব্যক্তির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করব, যারা আমাদেরই মতো (মানুষ) এবং যাদের সম্প্রদায় আমাদের দাসত্ব করে? (সূরা মু’মিনূনু ৪৭)
ফিরাউনের ভয়ে তারা মূসা (আঃ) এর উপর ঈমান আনেনি :
فَمَاۤ اٰمَنَ لِمُوْسٰۤى اِلَّا ذُرِّيَّةٌ مِّنْ قَوْمِهٖ عَلىٰ خَوْفٍ مِّنْ فِرْعَوْنَ وَمَلَئِهِمْ اَنْ يَّفْتِنَهُمْ
ফিরাউন ও তার পরিষদবর্গের নির্যাতনের ভয়ে মূসার সম্প্রদায়ের একদল ব্যতীত আর কেউ তার উপর ঈমান আনেনি। (সূরা ইউনুস– ৮৩)
তারা ফিরাউনের আদেশ মেনে চলত :
وَلَقَدْ اَرْسَلْنَا مُوْسٰى بِاٰيَاتِنَا وَسُلْطَانٍ مُّبِيْنٍ ‐ اِلٰى فِرْعَوْنَ وَمَلَئِهٖ فَاتَّبَعُوْاۤ اَمْرَ فِرْعَوْنَ
আমি তো মূসাকে আমার নিদর্শনাবলি ও স্পষ্ট প্রমাণ সহকারে ফিরাউন ও তার প্রধানদের নিকট প্রেরণ করেছিলাম। কিন্তু তারা ফিরাউনের কার্যকলাপের অনুসরণ করল। (সূরা হুদু ৯৬, ৯৭)
অথচ ফিরাউনের কার্যকলাপ সঠিক ছিল না :
وَمَاۤ اَمْرُ فِرْعَوْنَ بِرَشِيْدٍ
ফিরাউনের কার্যকলাপ সঠিক ছিল না। (সূরা হুদু ৯৭)
ফিরাউনের জাতি ছিল অপরাধী :
ثُمَّ بَعَثْنَا مِنْ ۢبَعْدِهِمْ مُّوْسٰى وَهَارُوْنَ اِلٰى فِرْعَوْنَ وَمَلَئِهٖ بِاٰيَاتِنَا فَاسْتَكْبَرُوْا وَكَانُوْا قَوْمًا مُّجْرِمِيْنَ
তারপর মূসা ও হারূনকে আমার নিদর্শনসহ ফিরাউন ও তার পরিষদবর্গের নিকট প্রেরণ করি। কিন্তু তারা অহংকার করেছিল এবং তারা ছিল অপরাধী সম্প্রদায়। (সূরা ইউনুস– ৭৫)
তারা ছিল কীলকের অধিকারী :
وَفِرْعَوْنَ ذِى الْاَوْتَادِ
বহু কীলকের অধিপতি ফিরাউন। (সূরা ফাজ্র– ১০)
كَذَّبَتْ قَبْلَهُمْ قَوْمُ نُوْحٍ وَّعَادٌ وَّفِرْعَوْنُ ذُو الْاَوْتَادِ
তাদের পূর্বেও রাসূলদেরকে অস্বীকার করেছিল নূহের সম্প্রদায়, আদ এবং বহু কীলকের মালিক ফিরাউন। (সূরা সোয়াদু ১২)
ব্যাখ্যা : ফিরাউনের জন্য ذِى الْاَوْتَادِ (যিল আওতাদ) তথা কীলক বা পেরেক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। যেহেতু তার ক্ষমতা এতই মজবুত ছিল, যেন জমিনে পেরেক পোঁতা রয়েছে। তার বিপুলসংখ্যক সৈন্য যেখানেই অবস্থান করত সেখানের চারদিকে কেবল তাঁবুর খুঁটিই দেখা যেত। আবার পেরেক বলতে মিসরের পিরামিডও বুঝানো যেতে পারে। কেননা এগুলো জমিনের মধ্যে পেরেকের মতো গাঁথা রয়েছে।
তারা অহংকার করত :
ثُمَّ اَرْسَلْنَا مُوْسٰى وَاَخَاهُ هَارُوْنَ بِاٰيَاتِنَا وَسُلْطَانٍ مُّبِيْنٍ ‐ اِلٰى فِرْعَوْنَ وَمَلَئِهٖ فَاسْتَكْبَرُوْا وَكَانُوْا قَوْمًا عَالِيْنَ
অতঃপর আমি আমার নিদর্শন ও সুস্পষ্ট প্রমাণসহ মূসা ও তার ভাই হারূনকে ফিরাউন ও তার পরিষদবর্গের নিকট পাঠালাম। কিন্তু তারা অহংকার করল; কেননা তারা ছিল ঔদ্ধত্য সম্প্রদায়।
(সূরা মু’মিনূনু ৪৫, ৪৬)
وَلَقَدْ جَآءَهُمْ مُّوْسٰى بِالْبَيِّنَاتِ فَاسْتَكْبَرُوْا فِى الْاَرْضِ وَمَا كَانُوْا سَابِقِيْنَ
মূসা তাদের নিকট সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ এসেছিল। কিন্তু তারা পৃথিবীতে অহংকার করেই চলল, ফলে তারা আমার শাস্তি এড়াতে পারেনি। (সূরা আনকাবূত– ৩৯)
তারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাতকে বিশ্বাস করত না :
وَاسْتَكْبَرَ هُوَ وَجُنُوْدُهٗ فِى الْاَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَظَنُّوْاۤ اَنَّهُمْ اِلَيْنَا لَا يُرْجَعُوْنَ
ফিরাউন ও তার বাহিনী পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে অহংকার করেছিল। তারা মনে করেছিল যে, তারা আমার নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে না। (সূরা ক্বাসাস– ৩৯)
তারা ছিল যালিম সম্প্রদায় :
وَاَغْرَقْنَاۤ اٰلَ فِرْعَوْنَ وَكُلٌّ كَانُوْا ظَالِمِيْنَ
আমি ফিরাউনের সম্প্রদায়কে নিমজ্জিত করেছি। আর তারা সকলেই ছিল যালিম। (সূরা আনফাল– ৫৪)
তারা ছিল ফাসিক সম্প্রদায় :
فَاسْتَخَفَّ قَوْمَهٗ فَاَطَاعُوْهُؕ اِنَّهُمْ كَانُوْا قَوْمًا فَاسِقِيْنَ
এভাবে সে তার সম্প্রদায়কে হতভম্ব করে দিল, ফলে তারা তার কথা মেনে নিল। নিশ্চয় তারা ছিল এক ফাসিক সম্প্রদায়। (সূরা যুখরুফু ৫৪)
তারা পৃথিবীতে সীমালঙ্ঘন করত :
اَلَّذِيْنَ طَغَوْا فِى الْبِلَادِ
তারা দেশে সীমালঙ্ঘন করেছিল। (সূরা ফাজ্র– ১১)
তারা বহু বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে :
فَاَكْثَرُوْا فِيْهَا الْفَسَادَ
অতঃপর সেখানে তারা ব্যাপক অশান্তি সৃষ্টি করেছিল। (সূরা ফাজ্র– ১২)
তাদের নেতারা জাতিকে জাহান্নামের দিকে পথ দেখাত :
وَجَعَلْنَاهُمْ اَئِمَّةً يَّدْعُوْنَ اِلَى النَّارِۚ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ لَا يُنْصَرُوْنَ
তাদেরকে আমি নেতা বানিয়েছিলাম। কিন্তু তারা লোকদেরকে জাহান্নামের দিকে আহবান করত। সুতরাং কিয়ামতের দিন তাদেরকে সাহায্য করা হবে না। (সূরা ক্বাসাস– ৪১)
তারা আল্লাহর নিদর্শনাবলিকে অস্বীকার করত :
كَدَأْبِ اٰلِ فِرْعَوْنَ وَالَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْؕ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَاۚ فَاَخَذَهُمُ اللهُ بِذُنُوْبِهِمْؕ وَاللهُ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
যেমন আচরণ করেছিল ফিরাউনের বংশধর এবং তাদের পূর্ববর্তীরা, তারা আমার নিদর্শনাবলিকে মিথ্যারোপ করেছিল। ফলে আল্লাহ তাদের অপরাধের কারণে তাদেরকে পাকড়াও করলেন। আর আল্লাহ শাস্তি দানে খুবই কঠোর। (সূরা আলে ইমরানু ১১)
তারা সকল নিদর্শনকে মিথ্যারোপ করল :
وَلَقَدْ جَآءَ اٰلَ فِرْعَوْنَ النُّذُرُ ‐ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَا كُلِّهَا فَاَخَذْنَاهُمْ اَخْذَ عَزِيْزٍ مُّقْتَدِرٍ
ফিরাউন সম্প্রদায়ের নিকটও সতর্কবাণী এসেছিল, কিন্তু তারা আমার সকল নিদর্শন মিথ্যা প্রতিপন্ন করল। ফলে পরাক্রমশালী ও সর্বশক্তিমান হিসেবে আমি তাদেরকে কঠিন শাস্তি প্রদান করলাম। (সূরা ক্বামার– ৪১, ৪২)
وَاِنَّ فِرْعَوْنَ لَعَالٍ فِى الْاَرْضِۚ وَاِنَّهٗ لَمِنَ الْمُسْرِفِيْنَ
বস্তুত (আল্লাহর) জমিনে ফিরাউন ছিল প্রভাবশালী। নিশ্চয় সে সীমালঙ্ঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা ইউনুস– ৮৩)
সে ছিল ফাসাদ সৃষ্টিকারী ও জাতির উপর নির্যাতনকরী :
اِنَّ فِرْعَوْنَ عَلَا فِى الْاَرْضِ وَجَعَلَ اَهْلَهَا شِيَعًا يَّسْتَضْعِفُ طَآئِفَةً مِّنْهُمْ يُذَبِّحُ اَبْنَآءَهُمْ وَيَسْتَحْيِيْ نِسَآءَهُمْؕ اِنَّهٗ كَانَ مِنَ الْمُفْسِدِيْنَ
নিশ্চয় ফিরাউন জমিনে প্রভাবশালী হয়েছিল উঠেছিল এবং সেখানকার অধিবাসীবৃন্দকে বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত করে তাদের একটি শ্রেণিকে হীনবল করে দিয়েছিল। সে তাদের পুত্রদেরকে হত্যা করত এবং নারীদেরকে জীবিত রাখত। নিশ্চয় সে ছিল বিপর্যয় সৃষ্টিকারী। (সূরা ক্বাসাস– ৪)
ফিরাউন মুসলিমদের পুত্রসন্তানদেরকে হত্যা করত :
قَالَ سَنُقَتِّلُ اَبْنَآءَهُمْ وَنَسْتَحْيِيْ نِسَآءَهُمْۚ وَاِنَّا فَوْقَهُمْ قَاهِرُوْنَ
সে বলল, আমরা তাদের পুত্রদেরকে হত্যা করব এবং তাদের নারীদেরকে জীবিত রাখব। আমরা তো তাদের উপর প্রবল। (সূরা আ‘রাফু ১২৭)
সে তার জাতিকে ভ্রষ্ট করেছে :
وَاَضَلَّ فِرْعَوْنُ قَوْمَهٗ وَمَا هَدٰى
আর ফিরাউন তার সম্প্রদায়কে পথভ্রষ্ট করেছিল এবং সৎপথ দেখায়নি। (সূরা ত্বা–হা– ৭৯)
সে নিজেকে নবীর চেয়ে উত্তম মনে করত :
اَمْ اَنَاْ خَيْرٌ مِّنْ هٰذَا الَّذِيْ هُوَ مَهِيْنٌ وَّلَا يَكَادُ يُبِيْنُ
আমি তো এই ব্যক্তি হতে শ্রেষ্ঠ, যে হীন এবং যে স্পষ্টভাবে কথাও বলতে পারে না। (সূরা যুখরুফু ৫২)
ধনী না হওয়াতে নবীকে দোষারোপ করত :
فَلَوْلَاۤ اُلْقِيَ عَلَيْهِ اَسْوِرَةٌ مِّنْ ذَهَبٍ اَوْ جَآءَ مَعَهُ الْمَلَآئِكَةُ مُقْتَرِنِيْنَ
(তিনি যদি নবী হতেন তবে) কেন তাকে স্বর্ণবালা দেয়া হলো না অথবা তার সাথে কেন ফেরেশতারা দলবদ্ধভাবে আগমন করল না। (সূরা যুখরুফু ৫৩)
সে নবীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল ও অমান্য করল :
فَكَذَّبَ وَعَصٰى
কিন্তু সে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল এবং অবাধ্য হলো। (সূরা নাযি‘আত– ২১)
দাওয়াত না মেনে পিছনে ফিরে গেল :
ثُمَّ اَدْبَرَ يَسْعٰى
অতঃপর সে পেছনে ফিরে পূর্বের কর্মে সচেষ্ট হলো। (সূরা নাযি‘আত– ২২)
ফিরাউন নিজেকে বড় রব বলে দাবী করল :
فَحَشَرَ فَنَادٰى ‐ فَقَالَ اَنَاْ رَبُّكُمُ الْاَعْلٰى
সে সকলকে সমবেত করল এবং ঘোষণা করল যে, আমিই তোমাদের সর্বোচ্চ প্রতিপালক। (সূরা নাযি‘আত– ২৩, ২৪)
নিজেকে উপাস্য মনে করল :
وَقَالَ فِرْعَوْنُ يَاۤ اَيُّهَا الْمَلَأُ مَا عَلِمْتُ لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرِيْ فَاَوْقِدْ لِيْ يَا هَامَانُ عَلَى الطِّيْنِ فَاجْعَلْ لِّيْ صَرْحًا لَّعَلِّيْۤ اَطَّلِعُ اِلٰۤى اِلٰهِ مُوْسٰى وَاِنِّيْ لَاَظُنُّهٗ مِنَ الْكَاذِبِيْنَ
ফিরাউন বলল, হে পরিষদবর্গ! আমি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ্ আছে বলে আমি তো জানি না। হে হামান! তুমি আমার জন্য ইট পোড়াও এবং একটি সুউচ্চ প্রাসাদ নির্মাণ করো, যাতে আমি তাতে উঠে মূসার ইলাহকে দেখতে পারি। তবে আমি মনে করি যে, অবশ্যই সে মিথ্যাবাদী। (সূরা ক্বাসাস– ৩৮)
ফিরাউন নিজের ক্ষমতার জন্য গর্ব করত :
فَتَوَلّٰى بِرُكْنِهٖ وَقَالَ سَاحِرٌ اَوْ مَجْنُوْنٌ
তখন সে ক্ষমতার দম্ভে মুখ ফিরিয়ে নিল এবং বলল (এ ব্যক্তি) এক যাদুকর অথবা উন্মাদ। (সূরা যারিয়াত– ৩৯)
রাজত্বের বড়াই করত :
وَنَادٰى فِرْعَوْنُ فِيْ قَوْمِهٖ قَالَ يَا قَوْمِ اَلَيْسَ لِيْ مُلْكُ مِصْرَ وَهٰذِهِ الْاَنْهَارُ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِيْۚ اَفَلَا تُبْصِرُوْنَ
ফিরাউন তার সম্প্রদায়ের মধ্যে এ ঘোষণা করল যে, হে আমার সম্প্রদায়! মিসরের বাদশাহী কি আমার নয়? এ নদীগুলো আমার পাদদেশে প্রবাহিত, তোমরা কি তা দেখ না? (সূরা যুখরুফু ৫১)
সে তার জাতিকে দাস বানিয়ে রেখেছিল :
فَقَالُوْاۤ اَنُؤْمِنُ لِبَشَرَيْنِ مِثْلِنَا وَقَوْمُهُمَا لَنَا عَابِدُوْنَ
তারা বলল, আমরা কি এমন দু’ব্যক্তির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করব, যারা আমাদেরই মতো (মানুষ) এবং যাদের সম্প্রদায় আমাদের দাসত্ব করে? (সূরা মু’মিনূনু ৪৭)
ফিরাউনের ভয়ে তারা মূসা (আঃ) এর উপর ঈমান আনেনি :
فَمَاۤ اٰمَنَ لِمُوْسٰۤى اِلَّا ذُرِّيَّةٌ مِّنْ قَوْمِهٖ عَلىٰ خَوْفٍ مِّنْ فِرْعَوْنَ وَمَلَئِهِمْ اَنْ يَّفْتِنَهُمْ
ফিরাউন ও তার পরিষদবর্গের নির্যাতনের ভয়ে মূসার সম্প্রদায়ের একদল ব্যতীত আর কেউ তার উপর ঈমান আনেনি। (সূরা ইউনুস– ৮৩)
তারা ফিরাউনের আদেশ মেনে চলত :
وَلَقَدْ اَرْسَلْنَا مُوْسٰى بِاٰيَاتِنَا وَسُلْطَانٍ مُّبِيْنٍ ‐ اِلٰى فِرْعَوْنَ وَمَلَئِهٖ فَاتَّبَعُوْاۤ اَمْرَ فِرْعَوْنَ
আমি তো মূসাকে আমার নিদর্শনাবলি ও স্পষ্ট প্রমাণ সহকারে ফিরাউন ও তার প্রধানদের নিকট প্রেরণ করেছিলাম। কিন্তু তারা ফিরাউনের কার্যকলাপের অনুসরণ করল। (সূরা হুদু ৯৬, ৯৭)
অথচ ফিরাউনের কার্যকলাপ সঠিক ছিল না :
وَمَاۤ اَمْرُ فِرْعَوْنَ بِرَشِيْدٍ
ফিরাউনের কার্যকলাপ সঠিক ছিল না। (সূরা হুদু ৯৭)
ফিরাউনের জাতি ছিল অপরাধী :
ثُمَّ بَعَثْنَا مِنْ ۢبَعْدِهِمْ مُّوْسٰى وَهَارُوْنَ اِلٰى فِرْعَوْنَ وَمَلَئِهٖ بِاٰيَاتِنَا فَاسْتَكْبَرُوْا وَكَانُوْا قَوْمًا مُّجْرِمِيْنَ
তারপর মূসা ও হারূনকে আমার নিদর্শনসহ ফিরাউন ও তার পরিষদবর্গের নিকট প্রেরণ করি। কিন্তু তারা অহংকার করেছিল এবং তারা ছিল অপরাধী সম্প্রদায়। (সূরা ইউনুস– ৭৫)
তারা ছিল কীলকের অধিকারী :
وَفِرْعَوْنَ ذِى الْاَوْتَادِ
বহু কীলকের অধিপতি ফিরাউন। (সূরা ফাজ্র– ১০)
كَذَّبَتْ قَبْلَهُمْ قَوْمُ نُوْحٍ وَّعَادٌ وَّفِرْعَوْنُ ذُو الْاَوْتَادِ
তাদের পূর্বেও রাসূলদেরকে অস্বীকার করেছিল নূহের সম্প্রদায়, আদ এবং বহু কীলকের মালিক ফিরাউন। (সূরা সোয়াদু ১২)
ব্যাখ্যা : ফিরাউনের জন্য ذِى الْاَوْتَادِ (যিল আওতাদ) তথা কীলক বা পেরেক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। যেহেতু তার ক্ষমতা এতই মজবুত ছিল, যেন জমিনে পেরেক পোঁতা রয়েছে। তার বিপুলসংখ্যক সৈন্য যেখানেই অবস্থান করত সেখানের চারদিকে কেবল তাঁবুর খুঁটিই দেখা যেত। আবার পেরেক বলতে মিসরের পিরামিডও বুঝানো যেতে পারে। কেননা এগুলো জমিনের মধ্যে পেরেকের মতো গাঁথা রয়েছে।
তারা অহংকার করত :
ثُمَّ اَرْسَلْنَا مُوْسٰى وَاَخَاهُ هَارُوْنَ بِاٰيَاتِنَا وَسُلْطَانٍ مُّبِيْنٍ ‐ اِلٰى فِرْعَوْنَ وَمَلَئِهٖ فَاسْتَكْبَرُوْا وَكَانُوْا قَوْمًا عَالِيْنَ
অতঃপর আমি আমার নিদর্শন ও সুস্পষ্ট প্রমাণসহ মূসা ও তার ভাই হারূনকে ফিরাউন ও তার পরিষদবর্গের নিকট পাঠালাম। কিন্তু তারা অহংকার করল; কেননা তারা ছিল ঔদ্ধত্য সম্প্রদায়।
(সূরা মু’মিনূনু ৪৫, ৪৬)
وَلَقَدْ جَآءَهُمْ مُّوْسٰى بِالْبَيِّنَاتِ فَاسْتَكْبَرُوْا فِى الْاَرْضِ وَمَا كَانُوْا سَابِقِيْنَ
মূসা তাদের নিকট সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ এসেছিল। কিন্তু তারা পৃথিবীতে অহংকার করেই চলল, ফলে তারা আমার শাস্তি এড়াতে পারেনি। (সূরা আনকাবূত– ৩৯)
তারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাতকে বিশ্বাস করত না :
وَاسْتَكْبَرَ هُوَ وَجُنُوْدُهٗ فِى الْاَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَظَنُّوْاۤ اَنَّهُمْ اِلَيْنَا لَا يُرْجَعُوْنَ
ফিরাউন ও তার বাহিনী পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে অহংকার করেছিল। তারা মনে করেছিল যে, তারা আমার নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে না। (সূরা ক্বাসাস– ৩৯)
তারা ছিল যালিম সম্প্রদায় :
وَاَغْرَقْنَاۤ اٰلَ فِرْعَوْنَ وَكُلٌّ كَانُوْا ظَالِمِيْنَ
আমি ফিরাউনের সম্প্রদায়কে নিমজ্জিত করেছি। আর তারা সকলেই ছিল যালিম। (সূরা আনফাল– ৫৪)
তারা ছিল ফাসিক সম্প্রদায় :
فَاسْتَخَفَّ قَوْمَهٗ فَاَطَاعُوْهُؕ اِنَّهُمْ كَانُوْا قَوْمًا فَاسِقِيْنَ
এভাবে সে তার সম্প্রদায়কে হতভম্ব করে দিল, ফলে তারা তার কথা মেনে নিল। নিশ্চয় তারা ছিল এক ফাসিক সম্প্রদায়। (সূরা যুখরুফু ৫৪)
তারা পৃথিবীতে সীমালঙ্ঘন করত :
اَلَّذِيْنَ طَغَوْا فِى الْبِلَادِ
তারা দেশে সীমালঙ্ঘন করেছিল। (সূরা ফাজ্র– ১১)
তারা বহু বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে :
فَاَكْثَرُوْا فِيْهَا الْفَسَادَ
অতঃপর সেখানে তারা ব্যাপক অশান্তি সৃষ্টি করেছিল। (সূরা ফাজ্র– ১২)
তাদের নেতারা জাতিকে জাহান্নামের দিকে পথ দেখাত :
وَجَعَلْنَاهُمْ اَئِمَّةً يَّدْعُوْنَ اِلَى النَّارِۚ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ لَا يُنْصَرُوْنَ
তাদেরকে আমি নেতা বানিয়েছিলাম। কিন্তু তারা লোকদেরকে জাহান্নামের দিকে আহবান করত। সুতরাং কিয়ামতের দিন তাদেরকে সাহায্য করা হবে না। (সূরা ক্বাসাস– ৪১)
তারা আল্লাহর নিদর্শনাবলিকে অস্বীকার করত :
كَدَأْبِ اٰلِ فِرْعَوْنَ وَالَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْؕ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَاۚ فَاَخَذَهُمُ اللهُ بِذُنُوْبِهِمْؕ وَاللهُ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
যেমন আচরণ করেছিল ফিরাউনের বংশধর এবং তাদের পূর্ববর্তীরা, তারা আমার নিদর্শনাবলিকে মিথ্যারোপ করেছিল। ফলে আল্লাহ তাদের অপরাধের কারণে তাদেরকে পাকড়াও করলেন। আর আল্লাহ শাস্তি দানে খুবই কঠোর। (সূরা আলে ইমরানু ১১)
তারা সকল নিদর্শনকে মিথ্যারোপ করল :
وَلَقَدْ جَآءَ اٰلَ فِرْعَوْنَ النُّذُرُ ‐ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَا كُلِّهَا فَاَخَذْنَاهُمْ اَخْذَ عَزِيْزٍ مُّقْتَدِرٍ
ফিরাউন সম্প্রদায়ের নিকটও সতর্কবাণী এসেছিল, কিন্তু তারা আমার সকল নিদর্শন মিথ্যা প্রতিপন্ন করল। ফলে পরাক্রমশালী ও সর্বশক্তিমান হিসেবে আমি তাদেরকে কঠিন শাস্তি প্রদান করলাম। (সূরা ক্বামার– ৪১, ৪২)
দু’জনকেই ফিরাউনের নিকট পাঠানো হলো :
اِذْهَبَاۤ اِلٰى فِرْعَوْنَ اِنَّهٗ طَغٰى
তোমরা উভয়ে ফিরাউনের নিকট যাও, নিশ্চয় সে সীমালঙ্ঘন করেছে। (সূরা ত্বা–হা– ৪৩)
যাওয়ার সময় আল্লাহকে স্মরণ করার আদেশ দেয়া হলো :
اِذْهَبْ اَنْتَ وَاَخُوْكَ بِاٰيَاتِيْ وَلَا تَنِيَا فِيْ ذِكْرِيْ
তুমি ও তোমার ভাই আমার নিদর্শনসহ যাও এবং আমার স্মরণে শৈথিল্যতা অবলম্বন করো না। (সূরা ত্বা–হা– ৪২)
তারা ফিরাউনের বাড়াবাড়ির ভয় করলেন :
قَالَا رَبَّنَاۤ اِنَّنَا نَخَافُ اَنْ يَّفْرُطَ عَلَيْنَاۤ اَوْ اَنْ يَّطْغٰى
তারা বলল, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আশঙ্কা করি যে, সে আমাদের উপর বাড়াবাড়ি করবে অথবা অন্যায় আচরণের মাধ্যমে সীমালঙ্ঘন করবে। (সূরা ত্বা–হা– ৪৫)
মূসা (আঃ) নিজের প্রাণের ভয় করলেন :
قَالَ رَبِّ اِنِّيْ قَتَلْتُ مِنْهُمْ نَفْسًا فَاَخَافُ اَنْ يَّقْتُلُوْنِ
মূসা বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমি তো তাদের একজনকে হত্যা করেছি। ফলে আমি আশঙ্কা করছি যে, তারা আমাকে হত্যা করবে। (সূরা ক্বাসাস– ৩৩)
আল্লাহ তাদেরকে সাহস দিলেন :
قَالَ كَلَّاۚ فَاذْهَبَا بِاٰيَاتِنَاۤ اِنَّا مَعَكُمْ مُّسْتَمِعُوْنَ
আল্লাহ বললেন, না কখনই নয়, অতএব তোমরা উভয়ে আমার নিদর্শনসহ যাও, আমি তো শ্রবণকারী হিসেবে তোমাদের সাথেই রয়েছি। (সূরা শু‘আরা– ১৫)
قَالَ لَا تَخَافَاۤ اِنَّنِيْ مَعَكُمَاۤ اَسْمَعُ وَاَرٰى
তিনি বললেন, তোমরা ভয় করো না, আমি তো তোমাদের সঙ্গে আছি। আমি সবকিছু শুনি ও দেখি। (সূরা ত্বা–হা– ৪৬)
اِذْهَبَاۤ اِلٰى فِرْعَوْنَ اِنَّهٗ طَغٰى
তোমরা উভয়ে ফিরাউনের নিকট যাও, নিশ্চয় সে সীমালঙ্ঘন করেছে। (সূরা ত্বা–হা– ৪৩)
যাওয়ার সময় আল্লাহকে স্মরণ করার আদেশ দেয়া হলো :
اِذْهَبْ اَنْتَ وَاَخُوْكَ بِاٰيَاتِيْ وَلَا تَنِيَا فِيْ ذِكْرِيْ
তুমি ও তোমার ভাই আমার নিদর্শনসহ যাও এবং আমার স্মরণে শৈথিল্যতা অবলম্বন করো না। (সূরা ত্বা–হা– ৪২)
তারা ফিরাউনের বাড়াবাড়ির ভয় করলেন :
قَالَا رَبَّنَاۤ اِنَّنَا نَخَافُ اَنْ يَّفْرُطَ عَلَيْنَاۤ اَوْ اَنْ يَّطْغٰى
তারা বলল, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আশঙ্কা করি যে, সে আমাদের উপর বাড়াবাড়ি করবে অথবা অন্যায় আচরণের মাধ্যমে সীমালঙ্ঘন করবে। (সূরা ত্বা–হা– ৪৫)
মূসা (আঃ) নিজের প্রাণের ভয় করলেন :
قَالَ رَبِّ اِنِّيْ قَتَلْتُ مِنْهُمْ نَفْسًا فَاَخَافُ اَنْ يَّقْتُلُوْنِ
মূসা বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমি তো তাদের একজনকে হত্যা করেছি। ফলে আমি আশঙ্কা করছি যে, তারা আমাকে হত্যা করবে। (সূরা ক্বাসাস– ৩৩)
আল্লাহ তাদেরকে সাহস দিলেন :
قَالَ كَلَّاۚ فَاذْهَبَا بِاٰيَاتِنَاۤ اِنَّا مَعَكُمْ مُّسْتَمِعُوْنَ
আল্লাহ বললেন, না কখনই নয়, অতএব তোমরা উভয়ে আমার নিদর্শনসহ যাও, আমি তো শ্রবণকারী হিসেবে তোমাদের সাথেই রয়েছি। (সূরা শু‘আরা– ১৫)
قَالَ لَا تَخَافَاۤ اِنَّنِيْ مَعَكُمَاۤ اَسْمَعُ وَاَرٰى
তিনি বললেন, তোমরা ভয় করো না, আমি তো তোমাদের সঙ্গে আছি। আমি সবকিছু শুনি ও দেখি। (সূরা ত্বা–হা– ৪৬)
আল্লাহ ফিরাউনকে দাওয়াত দিতে নির্দেশ দিলেন :
فَأْتِيَا فِرْعَوْنَ فَقُوْلَاۤ اِنَّا رَسُوْلُ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
তোমরা উভয়ে ফিরাউনের নিকট যাও এবং বলো, আমরা জগতসমূহের প্রতিপালকের রাসূল। (সূরা শু‘আরা– ১৬)
নরম ভাষায় বুঝানোর আদেশ দিলেন :
فَقُوْلَا لَهٗ قَوْلًا لَّيِّنًا لَّعَلَّهٗ يَتَذَكَّرُ اَوْ يَخْشٰى
তোমরা তার সাথে নম্র কথা বলবে, হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভয় করবে। (সূরা ত্বা–হা– ৪৪)
ব্যাখ্যা : মানুষ দু’ভাবে সঠিক পথে আসে। (এক) সে নিজে বিচার-বিশ্লেষণ করে বুঝে, শুনে ও উপদেশবাণীতে উদ্বুদ্ধ হয়ে সঠিক পথ অবলম্বন করে। (দুই) অশুভ পরিণামের ভয়ে সোজা হয়ে যায়।
মূসা (আঃ) বললেন, আমি তোমাদের জন্য প্রেরিত রাসূল :
وَلَقَدْ اَرْسَلْنَا مُوْسٰى بِاٰيَاتِنَاۤ اِلٰى فِرْعَوْنَ وَمَلَئِهٖ فَقَالَ اِنِّيْ رَسُوْلُ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
আমি মূসাকে আমার নিদর্শনাবলিসহ ফিরাউন ও তার পরিষদবর্গের নিকট পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, অবশ্যই আমি জগতসমূহের প্রতিপালকের রাসূল। (সূরা যুখরুফু ৪৬)
আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রমাণ নিয়ে এসেছি :
وَاَنْ لَّا تَعْلُوْا عَلَى اللهِؕ اِنِّۤيْ اٰتِيْكُمْ بِسُلْطَانٍ مُّبِيْنٍ
তোমরা আল্লাহর বিরুদ্ধে উদ্ধত হয়ো না, আমি তো তোমাদের নিকট উপস্থিত করেছি স্পষ্ট প্রমাণ। (সূরা দুখানু ১৯)
তুমি কি পবিত্র হবে?
فَقُلْ هَلْ لَّكَ اِلٰۤى اَنْ تَزَكّٰى
অতঃপর (তাকে) বলো, তুমি কি পবিত্র হতে চাও? (সূরা নাযি‘আত– ১৮)
আমি তোমাকে তোমার রবের পথ দেখাব :
وَاَهْدِيَكَ اِلٰى رَبِّكَ فَتَخْشٰى
আমি তোমাকে তোমার প্রতিপালকের দিকে পথ দেখাব, যাতে তুমি তাঁকে ভয় কর। (সূরা নাযি‘আত– ১৯)
বনী ইসরাঈলকে আমার কাছে পাঠাও :
اَنْ اَدُّوْاۤ اِلَيَّ عِبَادَ اللهِؕ اِنِّيْ لَكُمْ رَسُوْلٌ اَمِيْنٌ
তিনি বলেছিলেন, আল্লাহর বান্দাদেরকে আমার নিকট সমর্পণ করো। নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য এক বিশ্বস্ত রাসূল। (সূরা দুখানু ১৮)
اَنْ اَرْسِلْ مَعَنَا بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ
বনী ইসরাঈলকে আমাদের সাথে যেতে দাও। (সূরা শু‘আরা– ১৭)
তাদেরকে দাসত্ব থেকে মুক্ত করো :
فَأْتِيَاهُ فَقُوْلَاۤ اِنَّا رَسُوْلَا رَبِّكَ فَاَرْسِلْ مَعَنَا بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ وَلَا تُعَذِّبْهُمْؕ قَدْ جِئْنَاكَ بِاٰيَةٍ مِّنْ رَّبِّكَؕ وَالسَّلَامُ عَلٰى مَنِ اتَّبَعَ الْهُدٰى
সুতরাং তোমরা তার নিকট যাও এবং বলো, আমরা তোমার প্রতিপালকের রাসূল। সুতরাং আমাদের সাথে বনী ইসরাঈলকে যেতে দাও এবং তাদেরকে কষ্ট দিয়ো না। আমরা তো তোমার প্রতিপালকের পÿ হতে তোমার নিকট এসেছি এক নিদর্শন নিয়ে। আর শান্তি তাদের প্রতি, যারা সৎপথ অনুসরণ করে।
(সূরা ত্বা–হা– ৪৭)
নবী আল্লাহর আযাব সম্পর্কে সতর্ক করলেন :
اِنَّا قَدْ اُوْحِيَ اِلَيْنَاۤ اَنَّ الْعَذَابَ عَلٰى مَنْ كَذَّبَ وَتَوَلّٰى
আমাদের প্রতি ওহী প্রেরণ করা হয়েছে যে, নিশ্চয় শাস্তি তার জন্য যে মিথ্যারোপ করে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়। (সূরা ত্বা–হা– ৪৮)
فَأْتِيَا فِرْعَوْنَ فَقُوْلَاۤ اِنَّا رَسُوْلُ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
তোমরা উভয়ে ফিরাউনের নিকট যাও এবং বলো, আমরা জগতসমূহের প্রতিপালকের রাসূল। (সূরা শু‘আরা– ১৬)
নরম ভাষায় বুঝানোর আদেশ দিলেন :
فَقُوْلَا لَهٗ قَوْلًا لَّيِّنًا لَّعَلَّهٗ يَتَذَكَّرُ اَوْ يَخْشٰى
তোমরা তার সাথে নম্র কথা বলবে, হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভয় করবে। (সূরা ত্বা–হা– ৪৪)
ব্যাখ্যা : মানুষ দু’ভাবে সঠিক পথে আসে। (এক) সে নিজে বিচার-বিশ্লেষণ করে বুঝে, শুনে ও উপদেশবাণীতে উদ্বুদ্ধ হয়ে সঠিক পথ অবলম্বন করে। (দুই) অশুভ পরিণামের ভয়ে সোজা হয়ে যায়।
মূসা (আঃ) বললেন, আমি তোমাদের জন্য প্রেরিত রাসূল :
وَلَقَدْ اَرْسَلْنَا مُوْسٰى بِاٰيَاتِنَاۤ اِلٰى فِرْعَوْنَ وَمَلَئِهٖ فَقَالَ اِنِّيْ رَسُوْلُ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
আমি মূসাকে আমার নিদর্শনাবলিসহ ফিরাউন ও তার পরিষদবর্গের নিকট পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, অবশ্যই আমি জগতসমূহের প্রতিপালকের রাসূল। (সূরা যুখরুফু ৪৬)
আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রমাণ নিয়ে এসেছি :
وَاَنْ لَّا تَعْلُوْا عَلَى اللهِؕ اِنِّۤيْ اٰتِيْكُمْ بِسُلْطَانٍ مُّبِيْنٍ
তোমরা আল্লাহর বিরুদ্ধে উদ্ধত হয়ো না, আমি তো তোমাদের নিকট উপস্থিত করেছি স্পষ্ট প্রমাণ। (সূরা দুখানু ১৯)
তুমি কি পবিত্র হবে?
فَقُلْ هَلْ لَّكَ اِلٰۤى اَنْ تَزَكّٰى
অতঃপর (তাকে) বলো, তুমি কি পবিত্র হতে চাও? (সূরা নাযি‘আত– ১৮)
আমি তোমাকে তোমার রবের পথ দেখাব :
وَاَهْدِيَكَ اِلٰى رَبِّكَ فَتَخْشٰى
আমি তোমাকে তোমার প্রতিপালকের দিকে পথ দেখাব, যাতে তুমি তাঁকে ভয় কর। (সূরা নাযি‘আত– ১৯)
বনী ইসরাঈলকে আমার কাছে পাঠাও :
اَنْ اَدُّوْاۤ اِلَيَّ عِبَادَ اللهِؕ اِنِّيْ لَكُمْ رَسُوْلٌ اَمِيْنٌ
তিনি বলেছিলেন, আল্লাহর বান্দাদেরকে আমার নিকট সমর্পণ করো। নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য এক বিশ্বস্ত রাসূল। (সূরা দুখানু ১৮)
اَنْ اَرْسِلْ مَعَنَا بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ
বনী ইসরাঈলকে আমাদের সাথে যেতে দাও। (সূরা শু‘আরা– ১৭)
তাদেরকে দাসত্ব থেকে মুক্ত করো :
فَأْتِيَاهُ فَقُوْلَاۤ اِنَّا رَسُوْلَا رَبِّكَ فَاَرْسِلْ مَعَنَا بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ وَلَا تُعَذِّبْهُمْؕ قَدْ جِئْنَاكَ بِاٰيَةٍ مِّنْ رَّبِّكَؕ وَالسَّلَامُ عَلٰى مَنِ اتَّبَعَ الْهُدٰى
সুতরাং তোমরা তার নিকট যাও এবং বলো, আমরা তোমার প্রতিপালকের রাসূল। সুতরাং আমাদের সাথে বনী ইসরাঈলকে যেতে দাও এবং তাদেরকে কষ্ট দিয়ো না। আমরা তো তোমার প্রতিপালকের পÿ হতে তোমার নিকট এসেছি এক নিদর্শন নিয়ে। আর শান্তি তাদের প্রতি, যারা সৎপথ অনুসরণ করে।
(সূরা ত্বা–হা– ৪৭)
নবী আল্লাহর আযাব সম্পর্কে সতর্ক করলেন :
اِنَّا قَدْ اُوْحِيَ اِلَيْنَاۤ اَنَّ الْعَذَابَ عَلٰى مَنْ كَذَّبَ وَتَوَلّٰى
আমাদের প্রতি ওহী প্রেরণ করা হয়েছে যে, নিশ্চয় শাস্তি তার জন্য যে মিথ্যারোপ করে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়। (সূরা ত্বা–হা– ৪৮)
ফিরাউন বলল, তুমি যাদুগ্রস্ত :
فَقَالَ لَهٗ فِرْعَوْنُ اِنِّيْ لَاَظُنُّكَ يَا مُوْسٰى مَسْحُوْرًا
ফিরাউন তাকে বলেছিল, হে মূসা! আমি মনে করি তুমি তো যাদুগ্রস্ত। (সূরা বনী ইসরাঈল– ১০১)
মূসা (আঃ) এর উত্তর :
قَالَ لَقَدْ عَلِمْتَ مَاۤ اَنْزَلَ هٰۤؤُلَآءِ اِلَّا رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ بَصَآئِرَۚ وَاِنِّيْ لَاَظُنُّكَ يَا فِرْعَوْنُ مَثْبُوْرًا
মূসা বলল, তুমি অবশ্যই অবগত আছ যে, এসব স্পষ্ট নিদর্শন প্রত্যক্ষ প্রমাণস্বরূপ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর প্রতিপালকই অবতীর্ণ করেছেন। হে ফিরাউন! আমি তো দেখছি তোমার ধ্বংস আসন্ন! (সূরা বনী ইসরাঈল– ১০২)
ফিরাউনের প্রশ্ন :
قَالَ فَمَنْ رَّبُّكُمَا يَا مُوْسٰى
ফিরাউন বলল, হে মূসা! তোমাদের প্রতিপালক কে? (সূরা ত্বা–হা– ৪৯)
মূসা (আঃ) এর উত্তর :
قَالَ رَبُّنَا الَّذِيْۤ اَعْطٰى كُلَّ شَيْءٍ خَلْقَهٗ ثُمَّ هَدٰى
মূসা বলল, আমাদের প্রতিপালক তিনি, যিনি প্রত্যেক বস্তুকে তার আকৃতি দান করেছেন, অতঃপর পথনির্দেশ করেছেন। (সূরা ত্বা–হা– ৫০)
ফিরাউনের দ্বিতীয় প্রশ্ন :
قَالَ فَمَا بَالُ الْقُرُوْنِ الْاُوْلٰى
ফিরাউন বলল, তাহলে অতীত যুগের লোকদের অবস্থা কী? (সূরা ত্বা–হা– ৫১)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ আমাদের বাপ-দাদাদের মধ্যে যারা বংশানুক্রমে বিভিন্ন প্রভুর উপাসনা করেছে তারা সবাই কি পথভ্রষ্ট ছিল? তারা সবাই কি শাস্তিযোগ্য ছিল? তারা সবাই কি বুদ্ধিভ্রষ্ট ছিল? আমাদের সকল বুজুর্গ কি পথভ্রষ্ট ছিল? তারা কি কিছুই বুঝেননি? সত্যপন্থীদের সত্য প্রচারের বিরুদ্ধে এ জাতীয় অস্ত্রসমূহ সর্বদা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আর মুর্খদের ক্ষেত্রে এটা বড়ই প্রভাবশালী প্রমাণিত হয়েছে। যে সময় কুরআনের আয়াতগুলো নাযিল হয় সে সময় মক্কায় নবী ﷺ এর দাওয়াতকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য সবচেয়ে বেশি এ অস্ত্রটিকেই কাজে লাগানো হয়েছিল।
মূসা (আঃ) এর উত্তর :
قَالَ عِلْمُهَا عِنْدَ رَبِّيْ فِيْ كِتَابٍۚ لَا يَضِلُّ رَبِّيْ وَلَا يَنْسٰى
মূসা বলল, এর জ্ঞান আমার প্রতিপালকের নিকট কিতাবে রয়েছে। আর আমার প্রতিপালক ভুল করেন না এবং ভুলেও যান না। (সূরা ত্বা–হা– ৫২)
ব্যাখ্যা : তারা নিজেদের কাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে পৌঁছে গেছে। তাদের কাজের পেছনে নিহিত অন্তরের ইচ্ছাসমূহ জানার কোন উপায় নেই। কাজেই আল্লাহ তাদেরকে কীভাবে শাস্তি দেবেন? তাদের সমস্ত রেকর্ড আল্লাহর কাছে সংরক্ষিত আছে। আল্লাহই জানেন তাদের সাথে কী ব্যবহার করতে হবে। তাদের ভূমিকা কী ছিল এবং তাদের পরিণাম কী হবে। সুতরাং আমাদেরও চিন্তা করা উচিত যে, আমাদের ভূমিকা কী এবং আমরা কোন ধরনের পরিণামের সম্মুখীন হব।
ফিরাউন নবীকে শৈশবের কথা স্মরণ করিয়ে খোঁটা দিল :
قَالَ اَلَمْ نُرَبِّكَ فِيْنَا وَلِيْدًا وَّلَبِثْتَ فِيْنَا مِنْ عُمُرِكَ سِنِيْنَ
ফিরাউন বলল, আমরা কি তোমাকে শৈশবে আমাদের মধ্যে লালনুপালন করিনি? আর তুমি তো তোমার জীবনের বহু বৎসর আমাদের মধ্যে কাটিয়েছ। (সূরা শু‘আরা– ১৮)
মূসা (আঃ) বললেন, তা ছিল তোমাদের যুলুমের কারণে :
وَتِلْكَ نِعْمَةٌ تَمُنُّهَا عَلَيَّ اَنْ عَبَّدْتَّ بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ
আমার প্রতি তোমার যে অনুগ্রহের কথা উল্লেখ করেছ, তা তো এই যে, তুমি বনী ইসরাঈলকে দাসে পরিণত করেছিলে। (সূরা শু‘আরা– ২২)
ফিরাউন বলল, তুমি আমাদের এক লোককে হত্যা করেছ :
وَفَعَلْتَ فَعْلَتَكَ الَّتِيْ فَعَلْتَ وَاَنْتَ مِنَ الْكَافِرِيْنَ
তুমি তো তোমার কর্ম যা করার তা করে ফেলেছ, সুতরাং তুমি অকৃতজ্ঞ। (সূরা শু‘আরা– ১৯)
মূসা (আঃ) বললেন, এ কাজটি ভুলক্রমে সংঘটিত হয়েছে :
قَالَ فَعَلْتُهَاۤ اِذًا وَّاَنَاْ مِنَ الضَّآلِّيْنَ ‐ فَفَرَرْتُ مِنْكُمْ لَمَّا خِفْتُكُمْ فَوَهَبَ لِيْ رَبِّيْ حُكْمًا وَّجَعَلَنِيْ مِنَ الْمُرْسَلِيْنَ
মূসা বলল, আমি তো এটা তখন করেছিলাম, যখন আমি অসতর্ক অবস্থায় ছিলাম। অতঃপর আমি যখন তোমাদের ভয়ে ভীত হলাম, তখন আমি তোমাদের নিকট হতে পালিয়ে গিয়েছিলাম। অতঃপর আমার প্রতিপালক আমাকে জ্ঞান দান করেছেন এবং আমাকে রাসূল হিসেবে মনোনীত করেছেন। (সূরা শু‘আরা– ২০, ২১)
ফিরাউন বলল, রাববুল আলামীন কে?
قَالَ فِرْعَوْنُ وَمَا رَبُّ الْعَالَمِيْنَ
ফিরাউন বলল, জগতসমূহের প্রতিপালক আবার কী? (সূরা শু‘আরা– ২৩)
মূসা (আঃ) এর উত্তর :
قَالَ رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَاۤ اِنْ كُنْتُمْ مُّوْقِنِيْنَ
মূসা বলল, তিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী এবং তাদের মধ্যবর্তী যা কিছু আছে সবকিছুর প্রতিপালক; যদি তোমরা নিশ্চিত বিশ্বাসী হও। (সূরা শু‘আরা– ২৪)
ফিরাউন কথাটি হালকা করল :
قَالَ لِمَنْ حَوْلَهٗۤ اَلَا تَسْتَمِعُوْنَ
ফিরাউন তার পরিষদবর্গকে লক্ষ্য করে বলল, তোমরা শুনছ তো! (সূরা শু‘আরা– ২৫)
মূসা (আঃ) আরো বললেন :
قَالَ رَبُّكُمْ وَرَبُّ اٰبَآئِكُمُ الْاَوَّلِيْنَ
মূসা বলল, তিনি তোমাদের প্রতিপালক এবং তোমাদের পূর্বপুরুষদেরও প্রতিপালক। (সূরা শু‘আরা– ২৬)
ফিরাউন বলল, এ ব্যক্তি একেবারে পাগল :
قَالَ اِنَّ رَسُوْلَكُمُ الَّذِيْۤ اُرْسِلَ اِلَيْكُمْ لَمَجْنُوْنٌ
ফিরাউন বলল, নিশ্চয় তোমাদের প্রতি প্রেরিত তোমাদের রাসূল একজন পাগল। (সূরা শু‘আরা- ৭)
মূসা (আঃ) বললেন, বুদ্ধি থাকলে আমার কথা বুঝবে :
قَالَ رَبُّ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَمَا بَيْنَهُمَاؕ اِنْ كُنْتُمْ تَعْقِلُوْنَ
মূসা বলল, তিনি পূর্ব ও পশ্চিমের এবং তাদের মধ্যবর্তী সবকিছুর প্রতিপালক, যদি তোমরা বুঝতে। (সূরা শু‘আরা– ২৮)
ফিরাউন বলল, তুমি যা বলছ তা ইতোপূর্বে শুনিনি :
فَلَمَّا جَآءَهُمْ مُّوْسٰى بِاٰيَاتِنَا بَيِّنَاتٍ قَالُوْا مَا هٰذَاۤ اِلَّا سِحْرٌ مُّفْتَرًى وَّمَا سَمِعْنَا بِهٰذَا فِۤيْ اٰبَآئِنَا الْاَوَّلِيْنَ
যখন মূসা তাদের নিকট আমার সুস্পষ্ট নিদর্শনগুলো নিয়ে আসল তখন তারা বলল, এটা তো অলীক ইন্দ্রজাল মাত্র। আমাদের পূর্বপুরুষদের থেকে কখনো এরূপ কথা শুনিনি। (সূরা ক্বাসাস– ৩৬)
মূসা (আঃ) বললেন, আল্লাহই জানেন- কে হেদায়াত নিয়ে এসেছে :
وَقَالَ مُوْسٰى رَبِّۤيْ اَعْلَمُ بِمَنْ جَآءَ بِالْهُدٰى مِنْ عِنْدِهٖ وَمَنْ تَكُوْنُ لَهٗ عَاقِبَةُ الدَّارِؕ اِنَّهٗ لَا يُفْلِحُ الظَّالِمُوْنَ
মূসা বলল, কে তাঁর নিকট হতে পথনির্দেশ এনেছে এবং আখিরাতে কার পরিণাম শুভ হবে তা আমার প্রতিপালক সম্যক অবগত। তবে যালিমরা কখনো সফলকাম হতে পারবে না। (সূরা ক্বাসাস– ৩৭)
ফিরাউন নবীকে হুমকি দিল :
قَالَ لَئِنِ اتَّخَذْتَ اِلٰهًا غَيْرِيْ لَاَجْعَلَنَّكَ مِنَ الْمَسْجُوْنِيْنَ
ফিরাউন বলল, তুমি যদি আমার পরিবর্তে অন্য কাউকে ইলাহ্ হিসেবে গ্রহণ কর, তবে অবশ্যই আমি তোমাকে কারারুদ্ধ করব। (সূরা শু‘আরা– ২৯)
মূসা (আঃ) বললেন, নিদর্শন দেখালেও কি এমন হবে?
قَالَ اَوَلَوْ جِئْتُكَ بِشَيْءٍ مُّبِيْنٍ
মূসা বলল, আমি যদি তোমার নিকট কোন স্পষ্ট নিদর্শন আনয়ন করি তবুও? (সূরা শু‘আরা– ৩০)
ফিরাউন বলল, নিদর্শন দেখাও :
قَالَ اِنْ كُنْتَ جِئْتَ بِاٰيَةٍ فَأْتِ بِهَاۤ اِنْ كُنْتَ مِنَ الصَّادِقِيْنَ
ফিরাউন বলল, যদি তুমি কোন নিদর্শন এনে থাক, তবে তুমি সত্যবাদী হলে তা পেশ করো। (সূরা আ‘রাফু ১০৬)
মূসা (আঃ) লাঠি ও হাতের মু‘জিযা দেখালেন :
فَاَلْقٰى عَصَاهُ فَاِذَا هِيَ ثُعْبَانٌ مُّبِيْنٌ ‐ وَنَزَعَ يَدَهٗ فَاِذَا هِيَ بَيْضَآءُ لِلنَّاظِرِيْنَ
অতঃপর মূসা তার লাঠি নিক্ষেপ করলে তৎক্ষণাৎ সেটা স্পষ্ট অজগরে পরিণত হলো। আর যখনই মূসা তার হাত বের করল তৎক্ষণাৎ তা দর্শকদের দৃষ্টিতে শুভ্র উজ্জ্বল হয়ে প্রকাশ পেল। (সূরা শু‘আরা– ৩২, ৩৩)
ফিরাউন বলল, এসব যাদু ছাড়া আর কিছু নয় :
فَلَمَّا جَآءَتْهُمْ اٰيَاتُنَا مُبْصِرَةً قَالُوْا هٰذَا سِحْرٌ مُّبِيْنٌ
অতঃপর যখন তাদের নিকট আমার স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ এসে গেল তখন তারা বলল, এটা তো সুস্পষ্ট যাদু। (সূরা নামল- ১৩)
মূসা (আঃ) বললেন, সত্যকে যাদু বলছ কেন?
قَالَ مُوْسٰۤى اَتَقُوْلُوْنَ لِلْحَقِّ لَمَّا جَآءَكُمْ اَسِحْرٌ هٰذَاؕ وَلَا يُفْلِحُ السَّاحِرُوْنَ
মূসা বলল, যখন সত্য তোমাদের নিকট আসল তখন তার সম্পর্কে তোমরা এরূপ উক্তি করছ কেন? এটা কি যাদু? আর যাদুকররা তো সফলকাম হয় না। (সূরা ইউনুস– ৭৭)
ফিরাউন বলল, তোমরা কি পৃথিবীতে বড় হতে চাও?
قَالُوْاۤ اَجِئْتَنَا لِتَلْفِتَنَا عَمَّا وَجَدْنَا عَلَيْهِ اٰبَآءَنَا وَتَكُوْنَ لَكُمَا الْكِبْرِيَآءُ فِى الْاَرْضِؕ وَمَا نَحْنُ لَكُمَا بِمُؤْمِنِيْنَ
তারা বলল, আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে যাতে পেয়েছি তুমি কি তা হতে আমাদেরকে বিচ্যুত করার জন্য আমাদের নিকট এসেছ, নাকি যাতে করে জমিনে তোমাদের দু’জনের প্রতিপত্তি হয় সেজন্য? আমরা তোমাদের প্রতি বিশ্বাসী নই। (সূরা ইউনুস– ৭৮)
মূসা (আঃ) বললেন, আমি সত্য ছাড়া কিছুই বলি না :
وَقَالَ مُوْسٰى يَا فِرْعَوْنُ اِنِّيْ رَسُوْلٌ مِّنْ رَّبِّ الْعَالَمِيْنَ ‐ حَقِيْقٌ عَلٰۤى اَنْ لَّاۤ اَقُوْلَ عَلَى اللهِ اِلَّا الْحَقَّؕ قَدْ جِئْتُكُمْ بِبَيِّنَةٍ مِّنْ رَّبِّكُمْ فَاَرْسِلْ مَعِيَ بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ
মূসা বলল, হে ফিরাউন! আমি তো জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট হতে প্রেরিত। এটা স্থির নিশ্চিত যে, আমি আল্লাহ সম্বন্ধে সত্য ব্যতীত কিছুই বলি না। আমি তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে স্পষ্ট প্রমাণ তোমাদের নিকট নিয়ে এসেছি। সুতরাং বনী ইসরাঈলকে তুমি আমার সাথে যেতে দাও।
(সূরা আ‘রাফু ১০৪, ১০৫)
فَقَالَ لَهٗ فِرْعَوْنُ اِنِّيْ لَاَظُنُّكَ يَا مُوْسٰى مَسْحُوْرًا
ফিরাউন তাকে বলেছিল, হে মূসা! আমি মনে করি তুমি তো যাদুগ্রস্ত। (সূরা বনী ইসরাঈল– ১০১)
মূসা (আঃ) এর উত্তর :
قَالَ لَقَدْ عَلِمْتَ مَاۤ اَنْزَلَ هٰۤؤُلَآءِ اِلَّا رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ بَصَآئِرَۚ وَاِنِّيْ لَاَظُنُّكَ يَا فِرْعَوْنُ مَثْبُوْرًا
মূসা বলল, তুমি অবশ্যই অবগত আছ যে, এসব স্পষ্ট নিদর্শন প্রত্যক্ষ প্রমাণস্বরূপ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর প্রতিপালকই অবতীর্ণ করেছেন। হে ফিরাউন! আমি তো দেখছি তোমার ধ্বংস আসন্ন! (সূরা বনী ইসরাঈল– ১০২)
ফিরাউনের প্রশ্ন :
قَالَ فَمَنْ رَّبُّكُمَا يَا مُوْسٰى
ফিরাউন বলল, হে মূসা! তোমাদের প্রতিপালক কে? (সূরা ত্বা–হা– ৪৯)
মূসা (আঃ) এর উত্তর :
قَالَ رَبُّنَا الَّذِيْۤ اَعْطٰى كُلَّ شَيْءٍ خَلْقَهٗ ثُمَّ هَدٰى
মূসা বলল, আমাদের প্রতিপালক তিনি, যিনি প্রত্যেক বস্তুকে তার আকৃতি দান করেছেন, অতঃপর পথনির্দেশ করেছেন। (সূরা ত্বা–হা– ৫০)
ফিরাউনের দ্বিতীয় প্রশ্ন :
قَالَ فَمَا بَالُ الْقُرُوْنِ الْاُوْلٰى
ফিরাউন বলল, তাহলে অতীত যুগের লোকদের অবস্থা কী? (সূরা ত্বা–হা– ৫১)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ আমাদের বাপ-দাদাদের মধ্যে যারা বংশানুক্রমে বিভিন্ন প্রভুর উপাসনা করেছে তারা সবাই কি পথভ্রষ্ট ছিল? তারা সবাই কি শাস্তিযোগ্য ছিল? তারা সবাই কি বুদ্ধিভ্রষ্ট ছিল? আমাদের সকল বুজুর্গ কি পথভ্রষ্ট ছিল? তারা কি কিছুই বুঝেননি? সত্যপন্থীদের সত্য প্রচারের বিরুদ্ধে এ জাতীয় অস্ত্রসমূহ সর্বদা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আর মুর্খদের ক্ষেত্রে এটা বড়ই প্রভাবশালী প্রমাণিত হয়েছে। যে সময় কুরআনের আয়াতগুলো নাযিল হয় সে সময় মক্কায় নবী ﷺ এর দাওয়াতকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য সবচেয়ে বেশি এ অস্ত্রটিকেই কাজে লাগানো হয়েছিল।
মূসা (আঃ) এর উত্তর :
قَالَ عِلْمُهَا عِنْدَ رَبِّيْ فِيْ كِتَابٍۚ لَا يَضِلُّ رَبِّيْ وَلَا يَنْسٰى
মূসা বলল, এর জ্ঞান আমার প্রতিপালকের নিকট কিতাবে রয়েছে। আর আমার প্রতিপালক ভুল করেন না এবং ভুলেও যান না। (সূরা ত্বা–হা– ৫২)
ব্যাখ্যা : তারা নিজেদের কাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে পৌঁছে গেছে। তাদের কাজের পেছনে নিহিত অন্তরের ইচ্ছাসমূহ জানার কোন উপায় নেই। কাজেই আল্লাহ তাদেরকে কীভাবে শাস্তি দেবেন? তাদের সমস্ত রেকর্ড আল্লাহর কাছে সংরক্ষিত আছে। আল্লাহই জানেন তাদের সাথে কী ব্যবহার করতে হবে। তাদের ভূমিকা কী ছিল এবং তাদের পরিণাম কী হবে। সুতরাং আমাদেরও চিন্তা করা উচিত যে, আমাদের ভূমিকা কী এবং আমরা কোন ধরনের পরিণামের সম্মুখীন হব।
ফিরাউন নবীকে শৈশবের কথা স্মরণ করিয়ে খোঁটা দিল :
قَالَ اَلَمْ نُرَبِّكَ فِيْنَا وَلِيْدًا وَّلَبِثْتَ فِيْنَا مِنْ عُمُرِكَ سِنِيْنَ
ফিরাউন বলল, আমরা কি তোমাকে শৈশবে আমাদের মধ্যে লালনুপালন করিনি? আর তুমি তো তোমার জীবনের বহু বৎসর আমাদের মধ্যে কাটিয়েছ। (সূরা শু‘আরা– ১৮)
মূসা (আঃ) বললেন, তা ছিল তোমাদের যুলুমের কারণে :
وَتِلْكَ نِعْمَةٌ تَمُنُّهَا عَلَيَّ اَنْ عَبَّدْتَّ بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ
আমার প্রতি তোমার যে অনুগ্রহের কথা উল্লেখ করেছ, তা তো এই যে, তুমি বনী ইসরাঈলকে দাসে পরিণত করেছিলে। (সূরা শু‘আরা– ২২)
ফিরাউন বলল, তুমি আমাদের এক লোককে হত্যা করেছ :
وَفَعَلْتَ فَعْلَتَكَ الَّتِيْ فَعَلْتَ وَاَنْتَ مِنَ الْكَافِرِيْنَ
তুমি তো তোমার কর্ম যা করার তা করে ফেলেছ, সুতরাং তুমি অকৃতজ্ঞ। (সূরা শু‘আরা– ১৯)
মূসা (আঃ) বললেন, এ কাজটি ভুলক্রমে সংঘটিত হয়েছে :
قَالَ فَعَلْتُهَاۤ اِذًا وَّاَنَاْ مِنَ الضَّآلِّيْنَ ‐ فَفَرَرْتُ مِنْكُمْ لَمَّا خِفْتُكُمْ فَوَهَبَ لِيْ رَبِّيْ حُكْمًا وَّجَعَلَنِيْ مِنَ الْمُرْسَلِيْنَ
মূসা বলল, আমি তো এটা তখন করেছিলাম, যখন আমি অসতর্ক অবস্থায় ছিলাম। অতঃপর আমি যখন তোমাদের ভয়ে ভীত হলাম, তখন আমি তোমাদের নিকট হতে পালিয়ে গিয়েছিলাম। অতঃপর আমার প্রতিপালক আমাকে জ্ঞান দান করেছেন এবং আমাকে রাসূল হিসেবে মনোনীত করেছেন। (সূরা শু‘আরা– ২০, ২১)
ফিরাউন বলল, রাববুল আলামীন কে?
قَالَ فِرْعَوْنُ وَمَا رَبُّ الْعَالَمِيْنَ
ফিরাউন বলল, জগতসমূহের প্রতিপালক আবার কী? (সূরা শু‘আরা– ২৩)
মূসা (আঃ) এর উত্তর :
قَالَ رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَاۤ اِنْ كُنْتُمْ مُّوْقِنِيْنَ
মূসা বলল, তিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী এবং তাদের মধ্যবর্তী যা কিছু আছে সবকিছুর প্রতিপালক; যদি তোমরা নিশ্চিত বিশ্বাসী হও। (সূরা শু‘আরা– ২৪)
ফিরাউন কথাটি হালকা করল :
قَالَ لِمَنْ حَوْلَهٗۤ اَلَا تَسْتَمِعُوْنَ
ফিরাউন তার পরিষদবর্গকে লক্ষ্য করে বলল, তোমরা শুনছ তো! (সূরা শু‘আরা– ২৫)
মূসা (আঃ) আরো বললেন :
قَالَ رَبُّكُمْ وَرَبُّ اٰبَآئِكُمُ الْاَوَّلِيْنَ
মূসা বলল, তিনি তোমাদের প্রতিপালক এবং তোমাদের পূর্বপুরুষদেরও প্রতিপালক। (সূরা শু‘আরা– ২৬)
ফিরাউন বলল, এ ব্যক্তি একেবারে পাগল :
قَالَ اِنَّ رَسُوْلَكُمُ الَّذِيْۤ اُرْسِلَ اِلَيْكُمْ لَمَجْنُوْنٌ
ফিরাউন বলল, নিশ্চয় তোমাদের প্রতি প্রেরিত তোমাদের রাসূল একজন পাগল। (সূরা শু‘আরা- ৭)
মূসা (আঃ) বললেন, বুদ্ধি থাকলে আমার কথা বুঝবে :
قَالَ رَبُّ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَمَا بَيْنَهُمَاؕ اِنْ كُنْتُمْ تَعْقِلُوْنَ
মূসা বলল, তিনি পূর্ব ও পশ্চিমের এবং তাদের মধ্যবর্তী সবকিছুর প্রতিপালক, যদি তোমরা বুঝতে। (সূরা শু‘আরা– ২৮)
ফিরাউন বলল, তুমি যা বলছ তা ইতোপূর্বে শুনিনি :
فَلَمَّا جَآءَهُمْ مُّوْسٰى بِاٰيَاتِنَا بَيِّنَاتٍ قَالُوْا مَا هٰذَاۤ اِلَّا سِحْرٌ مُّفْتَرًى وَّمَا سَمِعْنَا بِهٰذَا فِۤيْ اٰبَآئِنَا الْاَوَّلِيْنَ
যখন মূসা তাদের নিকট আমার সুস্পষ্ট নিদর্শনগুলো নিয়ে আসল তখন তারা বলল, এটা তো অলীক ইন্দ্রজাল মাত্র। আমাদের পূর্বপুরুষদের থেকে কখনো এরূপ কথা শুনিনি। (সূরা ক্বাসাস– ৩৬)
মূসা (আঃ) বললেন, আল্লাহই জানেন- কে হেদায়াত নিয়ে এসেছে :
وَقَالَ مُوْسٰى رَبِّۤيْ اَعْلَمُ بِمَنْ جَآءَ بِالْهُدٰى مِنْ عِنْدِهٖ وَمَنْ تَكُوْنُ لَهٗ عَاقِبَةُ الدَّارِؕ اِنَّهٗ لَا يُفْلِحُ الظَّالِمُوْنَ
মূসা বলল, কে তাঁর নিকট হতে পথনির্দেশ এনেছে এবং আখিরাতে কার পরিণাম শুভ হবে তা আমার প্রতিপালক সম্যক অবগত। তবে যালিমরা কখনো সফলকাম হতে পারবে না। (সূরা ক্বাসাস– ৩৭)
ফিরাউন নবীকে হুমকি দিল :
قَالَ لَئِنِ اتَّخَذْتَ اِلٰهًا غَيْرِيْ لَاَجْعَلَنَّكَ مِنَ الْمَسْجُوْنِيْنَ
ফিরাউন বলল, তুমি যদি আমার পরিবর্তে অন্য কাউকে ইলাহ্ হিসেবে গ্রহণ কর, তবে অবশ্যই আমি তোমাকে কারারুদ্ধ করব। (সূরা শু‘আরা– ২৯)
মূসা (আঃ) বললেন, নিদর্শন দেখালেও কি এমন হবে?
قَالَ اَوَلَوْ جِئْتُكَ بِشَيْءٍ مُّبِيْنٍ
মূসা বলল, আমি যদি তোমার নিকট কোন স্পষ্ট নিদর্শন আনয়ন করি তবুও? (সূরা শু‘আরা– ৩০)
ফিরাউন বলল, নিদর্শন দেখাও :
قَالَ اِنْ كُنْتَ جِئْتَ بِاٰيَةٍ فَأْتِ بِهَاۤ اِنْ كُنْتَ مِنَ الصَّادِقِيْنَ
ফিরাউন বলল, যদি তুমি কোন নিদর্শন এনে থাক, তবে তুমি সত্যবাদী হলে তা পেশ করো। (সূরা আ‘রাফু ১০৬)
মূসা (আঃ) লাঠি ও হাতের মু‘জিযা দেখালেন :
فَاَلْقٰى عَصَاهُ فَاِذَا هِيَ ثُعْبَانٌ مُّبِيْنٌ ‐ وَنَزَعَ يَدَهٗ فَاِذَا هِيَ بَيْضَآءُ لِلنَّاظِرِيْنَ
অতঃপর মূসা তার লাঠি নিক্ষেপ করলে তৎক্ষণাৎ সেটা স্পষ্ট অজগরে পরিণত হলো। আর যখনই মূসা তার হাত বের করল তৎক্ষণাৎ তা দর্শকদের দৃষ্টিতে শুভ্র উজ্জ্বল হয়ে প্রকাশ পেল। (সূরা শু‘আরা– ৩২, ৩৩)
ফিরাউন বলল, এসব যাদু ছাড়া আর কিছু নয় :
فَلَمَّا جَآءَتْهُمْ اٰيَاتُنَا مُبْصِرَةً قَالُوْا هٰذَا سِحْرٌ مُّبِيْنٌ
অতঃপর যখন তাদের নিকট আমার স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ এসে গেল তখন তারা বলল, এটা তো সুস্পষ্ট যাদু। (সূরা নামল- ১৩)
মূসা (আঃ) বললেন, সত্যকে যাদু বলছ কেন?
قَالَ مُوْسٰۤى اَتَقُوْلُوْنَ لِلْحَقِّ لَمَّا جَآءَكُمْ اَسِحْرٌ هٰذَاؕ وَلَا يُفْلِحُ السَّاحِرُوْنَ
মূসা বলল, যখন সত্য তোমাদের নিকট আসল তখন তার সম্পর্কে তোমরা এরূপ উক্তি করছ কেন? এটা কি যাদু? আর যাদুকররা তো সফলকাম হয় না। (সূরা ইউনুস– ৭৭)
ফিরাউন বলল, তোমরা কি পৃথিবীতে বড় হতে চাও?
قَالُوْاۤ اَجِئْتَنَا لِتَلْفِتَنَا عَمَّا وَجَدْنَا عَلَيْهِ اٰبَآءَنَا وَتَكُوْنَ لَكُمَا الْكِبْرِيَآءُ فِى الْاَرْضِؕ وَمَا نَحْنُ لَكُمَا بِمُؤْمِنِيْنَ
তারা বলল, আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে যাতে পেয়েছি তুমি কি তা হতে আমাদেরকে বিচ্যুত করার জন্য আমাদের নিকট এসেছ, নাকি যাতে করে জমিনে তোমাদের দু’জনের প্রতিপত্তি হয় সেজন্য? আমরা তোমাদের প্রতি বিশ্বাসী নই। (সূরা ইউনুস– ৭৮)
মূসা (আঃ) বললেন, আমি সত্য ছাড়া কিছুই বলি না :
وَقَالَ مُوْسٰى يَا فِرْعَوْنُ اِنِّيْ رَسُوْلٌ مِّنْ رَّبِّ الْعَالَمِيْنَ ‐ حَقِيْقٌ عَلٰۤى اَنْ لَّاۤ اَقُوْلَ عَلَى اللهِ اِلَّا الْحَقَّؕ قَدْ جِئْتُكُمْ بِبَيِّنَةٍ مِّنْ رَّبِّكُمْ فَاَرْسِلْ مَعِيَ بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ
মূসা বলল, হে ফিরাউন! আমি তো জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট হতে প্রেরিত। এটা স্থির নিশ্চিত যে, আমি আল্লাহ সম্বন্ধে সত্য ব্যতীত কিছুই বলি না। আমি তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে স্পষ্ট প্রমাণ তোমাদের নিকট নিয়ে এসেছি। সুতরাং বনী ইসরাঈলকে তুমি আমার সাথে যেতে দাও।
(সূরা আ‘রাফু ১০৪, ১০৫)
ফিরাউন তার পরিষদবর্গকে বলল, এ নবী যাদুকর :
قَالَ لِلْمَلَاِ حَوْلَهٗۤ اِنَّ هٰذَا لَسَاحِرٌ عَلِيْمٌ
ফিরাউন তার পরিষদবর্গকে বলল, এ তো এক সুদক্ষ যাদুকর। (সূরা শু‘আরা– ৩৪)
সে তাদের সাথে পরামর্শ করল :
قَالَ الْمَلَاُ مِنْ قَوْمِ فِرْعَوْنَ اِنَّ هٰذَا لَسَاحِرٌ عَلِيْمٌ ‐ يُرِيْدُ اَنْ يُّخْرِجَكُمْ مِّنْ اَرْضِكُمْۚ فَمَاذَا تَأْمُرُوْنَ
ফিরাউন সম্প্রদায়ের প্রধানগণ বলল, এ তো একজন সুদক্ষ যাদুকর, সে তোমাদেরকে তোমাদের দেশ হতে বহিষ্কৃত করতে চায়; এখন তোমরা কী পরামর্শ দাও? (সূরা আ‘রাফ- ১০৯, ১১০)
তারা যাদুর প্রতিযোগিতার পরামর্শ দিল :
قَالُوْاۤ اَرْجِهْ وَاَخَاهُ وَاَرْسِلْ فِى الْمَدَآئِنِ حَاشِرِيْنَ ‐ يَأْتُوْكَ بِكُلِّ سَاحِرٍ عَلِيْمٍ
তারা বলল, তাকে ও তার ভাইকে সামান্য পরিমাণ অবকাশ দাও এবং নগরে নগরে সমবেতকারী পাঠাও, যেন তারা তোমার নিকট প্রতিটি সুদক্ষ যাদুকরকে উপস্থিত করে। (সূরা আ‘রাফু ১১১, ১১২)
মূসা (আঃ) মু‘জিযাকে যাদু মনে করার পরিণাম জানিয়ে দিলেন :
قَالَ لَهُمْ مُّوْسٰى وَيْلَكُمْ لَا تَفْتَرُوْا عَلَى اللهِ كَذِبًا فَيُسْحِتَكُمْ بِعَذَابٍۚ وَقَدْ خَابَ مَنِ افْتَرٰى
মূসা তাদেরকে বলল, দুর্ভোগ তোমাদের! তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করো না। অন্যথায় তিনি তোমাদেরকে শাস্তি দ্বারা সমূলে ধ্বংস করে দেবেন। তাছাড়া (ইতোপূর্বে) যে মিথ্যা উদ্ভাবন করেছে সেই ব্যর্থ হয়েছে। (সূরা ত্বা–হা– ৬১)
এতে কেউ কেউ পিছপা হয়ে গেল :
فَتَنَازَعُوْاۤ اَمْرَهُمْ بَيْنَهُمْ وَاَسَرُّوا النَّجْوٰى
তারা নিজেদের মধ্যে নিজেদের কর্ম সম্বন্ধে বিতর্ক করল এবং গোপনে পরামর্শ করল। (সূরা ত্বা–হা– ৬২)
চরমপন্থিরা মূসা (আঃ) এর উপর মিথ্যারোপ করল :
قَالُوْاۤ اِنْ هٰذَانِ لَسَاحِرَانِ يُرِيْدَانِ اَنْ يُّخْرِجَاكُمْ مِّنْ اَرْضِكُمْ بِسِحْرِهِمَا وَيَذْهَبَا بِطَرِيْقَتِكُمُ الْمُثْلٰى
তারা বলল, অবশ্যই এ দু’জন যাদুকর, তারা চায় তাদের যাদু দ্বারা তোমাদেরকে তোমাদের দেশ হতে বহিষ্কৃত করতে এবং তোমাদের উৎকৃষ্ট জীবনব্যবস্থা ধ্বংস করে দিতে। (সূরা ত্বা–হা– ৬৩)
ব্যাখ্যা : মূসা (আঃ) এর বিজয় দেশের কর্তৃত্ব ক্ষমতা তোমাদের হস্তচ্যুত হওয়া এবং তোমাদের আদর্শ জীবন যাপন পদ্ধতির অপমৃত্যুর নামান্তর। তারা দেশের প্রভাবশালী শ্রেণিকে ভয় দেখাচ্ছিল এই বলে যে, মূসা (আঃ) যদি দেশের কর্তৃত্ব লাভ করতে পারে তাহলে তোমাদের এ শিল্প, চারুকলা, মোহময় সংস্কৃতি এবং তোমাদের নারী স্বাধীনতাসহ সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে, যেগুলো ছাড়া জীবনের সুখ ও আনন্দ উপভোগই করা যায় না।
তারা প্রতিযোগিতার দিকে এগিয়ে আসল :
فَاَجْمِعُوْا كَيْدَكُمْ ثُمَّ ائْتُوْا صَفًّاۚ وَقَدْ اَفْلَحَ الْيَوْمَ مَنِ اسْتَعْلٰى
অতএব তোমরা তোমাদের যাদুক্রিয়া সঙ্ঘবদ্ধ করো এবং সারিবদ্ধ হয়ে উপস্থিত হও। অতঃপর আজ যে বিজয়ী হবে সেই সফলকাম হবে। (সূরা ত্বা–হা– ৬৪)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ এদের মুকাবিলায় একটি ঐক্যবদ্ধ দল গঠন করো। নতুবা এ সময় যদি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক বিবাদ দেখা দেয় এবং প্রতিযোগিতার মুহূর্তে সাধারণ জনতার সামনে তোমাদের মধ্যে কানাকানি ও ইতস্তত ভাব চলতে থাকে, তাহলে এখনই তোমাদের পরাজয় বহন করতে হবে।
ফিরাউন দক্ষ যাদুকরদেরকে আনতে বলল :
وَقَالَ فِرْعَوْنُ ائْتُوْنِيْ بِكُلِّ سَاحِرٍ عَلِيْمٍ
ফিরাউন বলল, তোমরা আমার নিকট সকল সুদক্ষ যাদুকরকে নিয়ে এসো। (সূরা ইউনুস– ৭৯)
যাদুকরদের একত্র করা হলো :
فَجُمِعَ السَّحَرَةُ لِمِيْقَاتِ يَوْمٍ مَّعْلُوْمٍ
অতঃপর এক নির্ধারিত দিনে নির্দিষ্ট সময়ে যাদুকরদেরকে একত্র করা হলো। (সূরা শু‘আরা– ৩৮)
ফিরাউন সব কৌশল ঠিক করে মুকাবিলায় আসল :
فَتَوَلّٰى فِرْعَوْنُ فَجَمَعَ كَيْدَهٗ ثُمَّ اَتٰى
অতঃপর ফিরাউন উঠে গেল এবং পরে তার কৌশলসমূহ একত্র করল, তারপর আসল। (সূরা ত্বা–হা– ৬০)
যাদুকররা পুরস্কার দাবী করল :
وَجَآءَ السَّحَرَةُ فِرْعَوْنَ قَالُوْاۤ اِنَّ لَنَا لَاَجْرًا اِنْ كُنَّا نَحْنُ الْغَالِبِيْنَ
যাদুকররা ফিরাউনের নিকট এসে বলল, আমরা যদি বিজয়ী হই তবে আমাদের জন্য পুরস্কার থাকবে তো? (সূরা আ‘রাফু ১১৩)
ফিরাউন আরো অতিরিক্ত লোভ দেখাল :
قَالَ نَعَمْ وَاِنَّكُمْ لَمِنَ الْمُقَرَّبِيْنَ
সে বলল, হ্যাঁ! অবশ্যই তোমরা আমার সান্নিধ্যপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা আ‘রাফু ১১৪)
ফিরাউন মূসা (আঃ) কে সময় ও স্থান ঠিক করতে বলল :
فَلَنَأْتِيَنَّكَ بِسِحْرٍ مِّثْلِهٖ فَاجْعَلْ بَيْنَنَا وَبَيْنَكَ مَوْعِدًا لَّا نُخْلِفُهٗ نَحْنُ وَلَاۤ اَنْتَ مَكَانًا سُوًى
আমরাও অবশ্যই তোমার নিকট অনুরূপ যাদু উপস্থিত করব। সুতরাং আমাদের ও তোমার মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সময় এবং একটি মধ্যবর্তী স্থান নির্ধারণ করো, যার ব্যতিক্রম আমরাও করব না এবং তুমিও করবে না। (সূরা ত্বা–হা– ৫৮)
তিনি মেলার দিন সকাল বেলা সময় ঠিক করলেন :
قَالَ مَوْعِدُكُمْ يَوْمُ الزِّيْنَةِ وَاَنْ يُّحْشَرَ النَّاسُ ضُحًى
মূসা বলল, তোমাদের নির্ধারিত সময় উৎসবের দিন এবং যেদিন পূর্বাহ্নে জনগণকে সমবেত করা হবে। (সূরা ত্বা–হা– ৫৯)
সমাবেশে মানুষকেও দাওয়াত দেয়া হলো :
وَقِيْلَ لِلنَّاسِ هَلْ اَنْتُمْ مُّجْتَمِعُوْنَ ‐ لَعَلَّنَا نَتَّبِعُ السَّحَرَةَ اِنْ كَانُوْا هُمُ الْغَالِبِيْنَ
আর লোকদেরকে বলা হলো, তোমরাও সমবেত হচ্ছ তো? যেন আমরা যাদুকরদের অনুসরণ করতে পারি, যদি তারা বিজয়ী হয়। (সূরা শু‘আরা– ৩৯, ৪০)
যাদুকররা বলল, কে আগে নিক্ষেপ করবে?
قَالُوْا يَا مُوْسٰۤى اِمَّاۤ اَنْ تُلْقِيَ وَاِمَّاۤ اَنْ نَّكُوْنَ نَحْنُ الْمُلْقِيْنَ
তারা বলল, হে মূসা! তুমিই নিক্ষেপ করবে, নাকি আমরাই নিক্ষেপ করব? (সূরা আ‘রাফু ১১৫)
قَالُوْا يَا مُوسٰۤى اِمَّاۤ اَنْ تُلْقِيَ وَاِمَّاۤ اَنْ نَّكُوْنَ اَوَّلَ مَنْ اَلْقٰى
তারা বলল, হে মূসা! তুমিই আগে নিক্ষেপ করবে, নাকি আমরাই আগে নিক্ষেপ করব? (সূরা ত্বা–হা– ৬৫)
মূসা (আঃ) বললেন, তোমরা যা জান তা আগে নিক্ষেপ করো :
فَلَمَّا جَآءَ السَّحَرَةُ قَالَ لَهُمْ مُّوْسٰۤى اَلْقُوْا مَاۤ اَنْتُمْ مُّلْقُوْنَ
অতঃপর যখন যাদুকররা আসল তখন মূসা তাদেরকে বলল, তোমাদের যা নিক্ষেপ করার নিক্ষেপ করে নাও। (সূরা ইউনুস– ৮০)
আল্লাহ তোমাদের এসব ব্যর্থ করে দেবেন :
فَلَمَّاۤ اَلْقَوْا قَالَ مُوْسٰى مَا جِئْتُمْ بِهِ السِّحْرُ اِنَّ اللهَ سَيُبْطِلُهٗۤ اِنَّ اللهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِيْنَ
অতঃপর যখন তারা নিক্ষেপ করল তখন মূসা বলল, তোমরা যা এনেছ তা যাদু। নিশ্চয় আল্লাহ তা ব্যর্থ করে দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহ অশান্তি সৃষ্টিকারীদের কর্মকে স্বার্থক করেন না। (সূরা ইউনুস– ৮১)
আল্লাহ সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করে ছাড়বেন :
وَيُحِقُّ اللهُ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهٖ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُوْنَ
অপরাধীরা অপ্রীতিকর মনে করলেও আল্লাহ তাঁর বাণী অনুযায়ী সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করবেন। (সূরা ইউনুস– ৮২)
যাদুকররা দড়ি ও লাঠি নিক্ষেপ করল :
فَاَلْقَوْا حِبَالَهُمْ وَعِصِيَّهُمْ
অতঃপর তারা তাদের রশি ও লাঠি নিক্ষেপ করল। (সূরা শু‘আরা– ৪৪)
বিজয়ী হবে বলে তারা শপথ করল :
وَقَالُوْا بِعِزَّةِ فِرْعَوْنَ اِنَّا لَنَحْنُ الْغَالِبُوْنَ
তারা বলল, ফিরাউনের শপথ আমরাই বিজয়ী হব। (সূরা শু‘আরা– ৪৪)
তারা লোকদেরকে ভীত করে দিল :
فَلَمَّاۤ اَلْقَوْا سَحَرُوْاۤ اَعْيُنَ النَّاسِ وَاسْتَرْهَبُوْهُمْ وَجَآءُوْا بِسِحْرٍ عَظِيْمٍ
যখন তারা নিক্ষেপ করল তখন তারা লোকের চোখে যাদু করল এবং তাদেরকে আতংকিত করে দিল। আর তারা এক বড় আকারের যাদু দেখাল। (সূরা আ‘রাফু ১১৬)
মূসা (আঃ) মনে করলেন এগুলো নড়ছে :
قَالَ بَلْ اَلْقُوْا فَإِذَا حِبَالُهُمْ وَعِصِيُّهُمْ يُخَيَّلُ اِلَيْهِ مِنْ سِحْرِهِمْ اَنَّهَا تَسْعٰى
তিনি বললেন, বরং তোমরাই নিক্ষেপ করো। অতঃপর তাদের যাদুর প্রভাবে আকস্মাৎ মূসার মনে হলো, তাদের দড়ি ও লাঠিগুলো ছুটাছুটি করছে। (সূরা ত্বা–হা– ৬৬)
এতে তিনি ভয় পেয়ে গেলেন :
فَاَوْجَسَ فِيْ نَفْسِهٖ خِيْفَةً مُّوْسٰى
মূসা তার অন্তরে কিছু ভীতি অনুভব করল। (সূরা ত্বা–হা– ৬৭)
আল্লাহ তাকে সাহস দিলেন :
قُلْنَا لَا تَخَفْ اِنَّكَ اَنْتَ الْاَعْلٰى
আমি বললাম, ভয় করো না- তুমিই বিজয়ী হবে। (সূরা ত্বা–হা– ৬৮)
আল্লাহ মূসা (আঃ) কে লাঠি নিক্ষেপ করতে বললেন :
وَاَوْحَيْنَاۤ اِلٰى مُوْسٰۤى اَنْ اَلْقِ عَصَاكَ
অতঃপর আমি মূসার প্রতি প্রত্যাদেশ করলাম যে, তুমিও তোমার লাঠি নিক্ষেপ করো। (সূরা আ‘রাফু ১১৭)
নিক্ষেপ করার পর লাঠি তাদের সবকিছু গ্রাস করে ফেলল :
فَاَلْقٰى مُوْسٰى عَصَاهُ فَاِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُوْنَ
অতঃপর মূসা তার লাঠি নিক্ষেপ করলেন, সহসা তা তাদের অলীক সৃষ্টিগুলোকে গ্রাস করতে লাগল। (সূরা শু‘আরা– ৪৫)
এতে সত্য প্রমাণিত হয়ে গেল :
فَوَقَعَ الْحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
ফলে সত্য প্রতিষ্ঠিত হলো এবং তারা যা করছিল তা মিথ্যা প্রতিপন্ন হলো। (সূরা আ‘রাফু ১১৮)
ফিরাউনের দল পরাজিত ও লাঞ্ছিত হলো :
فَغُلِبُوْا هُنَالِكَ وَانْقَلَبُوْا صَاغِرِيْنَ
সেখানে তারা পরাভূত হলো ও লাঞ্ছিত হলো। (সূরা আ‘রাফু ১১৯)
قَالَ لِلْمَلَاِ حَوْلَهٗۤ اِنَّ هٰذَا لَسَاحِرٌ عَلِيْمٌ
ফিরাউন তার পরিষদবর্গকে বলল, এ তো এক সুদক্ষ যাদুকর। (সূরা শু‘আরা– ৩৪)
সে তাদের সাথে পরামর্শ করল :
قَالَ الْمَلَاُ مِنْ قَوْمِ فِرْعَوْنَ اِنَّ هٰذَا لَسَاحِرٌ عَلِيْمٌ ‐ يُرِيْدُ اَنْ يُّخْرِجَكُمْ مِّنْ اَرْضِكُمْۚ فَمَاذَا تَأْمُرُوْنَ
ফিরাউন সম্প্রদায়ের প্রধানগণ বলল, এ তো একজন সুদক্ষ যাদুকর, সে তোমাদেরকে তোমাদের দেশ হতে বহিষ্কৃত করতে চায়; এখন তোমরা কী পরামর্শ দাও? (সূরা আ‘রাফ- ১০৯, ১১০)
তারা যাদুর প্রতিযোগিতার পরামর্শ দিল :
قَالُوْاۤ اَرْجِهْ وَاَخَاهُ وَاَرْسِلْ فِى الْمَدَآئِنِ حَاشِرِيْنَ ‐ يَأْتُوْكَ بِكُلِّ سَاحِرٍ عَلِيْمٍ
তারা বলল, তাকে ও তার ভাইকে সামান্য পরিমাণ অবকাশ দাও এবং নগরে নগরে সমবেতকারী পাঠাও, যেন তারা তোমার নিকট প্রতিটি সুদক্ষ যাদুকরকে উপস্থিত করে। (সূরা আ‘রাফু ১১১, ১১২)
মূসা (আঃ) মু‘জিযাকে যাদু মনে করার পরিণাম জানিয়ে দিলেন :
قَالَ لَهُمْ مُّوْسٰى وَيْلَكُمْ لَا تَفْتَرُوْا عَلَى اللهِ كَذِبًا فَيُسْحِتَكُمْ بِعَذَابٍۚ وَقَدْ خَابَ مَنِ افْتَرٰى
মূসা তাদেরকে বলল, দুর্ভোগ তোমাদের! তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করো না। অন্যথায় তিনি তোমাদেরকে শাস্তি দ্বারা সমূলে ধ্বংস করে দেবেন। তাছাড়া (ইতোপূর্বে) যে মিথ্যা উদ্ভাবন করেছে সেই ব্যর্থ হয়েছে। (সূরা ত্বা–হা– ৬১)
এতে কেউ কেউ পিছপা হয়ে গেল :
فَتَنَازَعُوْاۤ اَمْرَهُمْ بَيْنَهُمْ وَاَسَرُّوا النَّجْوٰى
তারা নিজেদের মধ্যে নিজেদের কর্ম সম্বন্ধে বিতর্ক করল এবং গোপনে পরামর্শ করল। (সূরা ত্বা–হা– ৬২)
চরমপন্থিরা মূসা (আঃ) এর উপর মিথ্যারোপ করল :
قَالُوْاۤ اِنْ هٰذَانِ لَسَاحِرَانِ يُرِيْدَانِ اَنْ يُّخْرِجَاكُمْ مِّنْ اَرْضِكُمْ بِسِحْرِهِمَا وَيَذْهَبَا بِطَرِيْقَتِكُمُ الْمُثْلٰى
তারা বলল, অবশ্যই এ দু’জন যাদুকর, তারা চায় তাদের যাদু দ্বারা তোমাদেরকে তোমাদের দেশ হতে বহিষ্কৃত করতে এবং তোমাদের উৎকৃষ্ট জীবনব্যবস্থা ধ্বংস করে দিতে। (সূরা ত্বা–হা– ৬৩)
ব্যাখ্যা : মূসা (আঃ) এর বিজয় দেশের কর্তৃত্ব ক্ষমতা তোমাদের হস্তচ্যুত হওয়া এবং তোমাদের আদর্শ জীবন যাপন পদ্ধতির অপমৃত্যুর নামান্তর। তারা দেশের প্রভাবশালী শ্রেণিকে ভয় দেখাচ্ছিল এই বলে যে, মূসা (আঃ) যদি দেশের কর্তৃত্ব লাভ করতে পারে তাহলে তোমাদের এ শিল্প, চারুকলা, মোহময় সংস্কৃতি এবং তোমাদের নারী স্বাধীনতাসহ সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে, যেগুলো ছাড়া জীবনের সুখ ও আনন্দ উপভোগই করা যায় না।
তারা প্রতিযোগিতার দিকে এগিয়ে আসল :
فَاَجْمِعُوْا كَيْدَكُمْ ثُمَّ ائْتُوْا صَفًّاۚ وَقَدْ اَفْلَحَ الْيَوْمَ مَنِ اسْتَعْلٰى
অতএব তোমরা তোমাদের যাদুক্রিয়া সঙ্ঘবদ্ধ করো এবং সারিবদ্ধ হয়ে উপস্থিত হও। অতঃপর আজ যে বিজয়ী হবে সেই সফলকাম হবে। (সূরা ত্বা–হা– ৬৪)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ এদের মুকাবিলায় একটি ঐক্যবদ্ধ দল গঠন করো। নতুবা এ সময় যদি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক বিবাদ দেখা দেয় এবং প্রতিযোগিতার মুহূর্তে সাধারণ জনতার সামনে তোমাদের মধ্যে কানাকানি ও ইতস্তত ভাব চলতে থাকে, তাহলে এখনই তোমাদের পরাজয় বহন করতে হবে।
ফিরাউন দক্ষ যাদুকরদেরকে আনতে বলল :
وَقَالَ فِرْعَوْنُ ائْتُوْنِيْ بِكُلِّ سَاحِرٍ عَلِيْمٍ
ফিরাউন বলল, তোমরা আমার নিকট সকল সুদক্ষ যাদুকরকে নিয়ে এসো। (সূরা ইউনুস– ৭৯)
যাদুকরদের একত্র করা হলো :
فَجُمِعَ السَّحَرَةُ لِمِيْقَاتِ يَوْمٍ مَّعْلُوْمٍ
অতঃপর এক নির্ধারিত দিনে নির্দিষ্ট সময়ে যাদুকরদেরকে একত্র করা হলো। (সূরা শু‘আরা– ৩৮)
ফিরাউন সব কৌশল ঠিক করে মুকাবিলায় আসল :
فَتَوَلّٰى فِرْعَوْنُ فَجَمَعَ كَيْدَهٗ ثُمَّ اَتٰى
অতঃপর ফিরাউন উঠে গেল এবং পরে তার কৌশলসমূহ একত্র করল, তারপর আসল। (সূরা ত্বা–হা– ৬০)
যাদুকররা পুরস্কার দাবী করল :
وَجَآءَ السَّحَرَةُ فِرْعَوْنَ قَالُوْاۤ اِنَّ لَنَا لَاَجْرًا اِنْ كُنَّا نَحْنُ الْغَالِبِيْنَ
যাদুকররা ফিরাউনের নিকট এসে বলল, আমরা যদি বিজয়ী হই তবে আমাদের জন্য পুরস্কার থাকবে তো? (সূরা আ‘রাফু ১১৩)
ফিরাউন আরো অতিরিক্ত লোভ দেখাল :
قَالَ نَعَمْ وَاِنَّكُمْ لَمِنَ الْمُقَرَّبِيْنَ
সে বলল, হ্যাঁ! অবশ্যই তোমরা আমার সান্নিধ্যপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা আ‘রাফু ১১৪)
ফিরাউন মূসা (আঃ) কে সময় ও স্থান ঠিক করতে বলল :
فَلَنَأْتِيَنَّكَ بِسِحْرٍ مِّثْلِهٖ فَاجْعَلْ بَيْنَنَا وَبَيْنَكَ مَوْعِدًا لَّا نُخْلِفُهٗ نَحْنُ وَلَاۤ اَنْتَ مَكَانًا سُوًى
আমরাও অবশ্যই তোমার নিকট অনুরূপ যাদু উপস্থিত করব। সুতরাং আমাদের ও তোমার মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সময় এবং একটি মধ্যবর্তী স্থান নির্ধারণ করো, যার ব্যতিক্রম আমরাও করব না এবং তুমিও করবে না। (সূরা ত্বা–হা– ৫৮)
তিনি মেলার দিন সকাল বেলা সময় ঠিক করলেন :
قَالَ مَوْعِدُكُمْ يَوْمُ الزِّيْنَةِ وَاَنْ يُّحْشَرَ النَّاسُ ضُحًى
মূসা বলল, তোমাদের নির্ধারিত সময় উৎসবের দিন এবং যেদিন পূর্বাহ্নে জনগণকে সমবেত করা হবে। (সূরা ত্বা–হা– ৫৯)
সমাবেশে মানুষকেও দাওয়াত দেয়া হলো :
وَقِيْلَ لِلنَّاسِ هَلْ اَنْتُمْ مُّجْتَمِعُوْنَ ‐ لَعَلَّنَا نَتَّبِعُ السَّحَرَةَ اِنْ كَانُوْا هُمُ الْغَالِبِيْنَ
আর লোকদেরকে বলা হলো, তোমরাও সমবেত হচ্ছ তো? যেন আমরা যাদুকরদের অনুসরণ করতে পারি, যদি তারা বিজয়ী হয়। (সূরা শু‘আরা– ৩৯, ৪০)
যাদুকররা বলল, কে আগে নিক্ষেপ করবে?
قَالُوْا يَا مُوْسٰۤى اِمَّاۤ اَنْ تُلْقِيَ وَاِمَّاۤ اَنْ نَّكُوْنَ نَحْنُ الْمُلْقِيْنَ
তারা বলল, হে মূসা! তুমিই নিক্ষেপ করবে, নাকি আমরাই নিক্ষেপ করব? (সূরা আ‘রাফু ১১৫)
قَالُوْا يَا مُوسٰۤى اِمَّاۤ اَنْ تُلْقِيَ وَاِمَّاۤ اَنْ نَّكُوْنَ اَوَّلَ مَنْ اَلْقٰى
তারা বলল, হে মূসা! তুমিই আগে নিক্ষেপ করবে, নাকি আমরাই আগে নিক্ষেপ করব? (সূরা ত্বা–হা– ৬৫)
মূসা (আঃ) বললেন, তোমরা যা জান তা আগে নিক্ষেপ করো :
فَلَمَّا جَآءَ السَّحَرَةُ قَالَ لَهُمْ مُّوْسٰۤى اَلْقُوْا مَاۤ اَنْتُمْ مُّلْقُوْنَ
অতঃপর যখন যাদুকররা আসল তখন মূসা তাদেরকে বলল, তোমাদের যা নিক্ষেপ করার নিক্ষেপ করে নাও। (সূরা ইউনুস– ৮০)
আল্লাহ তোমাদের এসব ব্যর্থ করে দেবেন :
فَلَمَّاۤ اَلْقَوْا قَالَ مُوْسٰى مَا جِئْتُمْ بِهِ السِّحْرُ اِنَّ اللهَ سَيُبْطِلُهٗۤ اِنَّ اللهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِيْنَ
অতঃপর যখন তারা নিক্ষেপ করল তখন মূসা বলল, তোমরা যা এনেছ তা যাদু। নিশ্চয় আল্লাহ তা ব্যর্থ করে দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহ অশান্তি সৃষ্টিকারীদের কর্মকে স্বার্থক করেন না। (সূরা ইউনুস– ৮১)
আল্লাহ সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করে ছাড়বেন :
وَيُحِقُّ اللهُ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهٖ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُوْنَ
অপরাধীরা অপ্রীতিকর মনে করলেও আল্লাহ তাঁর বাণী অনুযায়ী সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করবেন। (সূরা ইউনুস– ৮২)
যাদুকররা দড়ি ও লাঠি নিক্ষেপ করল :
فَاَلْقَوْا حِبَالَهُمْ وَعِصِيَّهُمْ
অতঃপর তারা তাদের রশি ও লাঠি নিক্ষেপ করল। (সূরা শু‘আরা– ৪৪)
বিজয়ী হবে বলে তারা শপথ করল :
وَقَالُوْا بِعِزَّةِ فِرْعَوْنَ اِنَّا لَنَحْنُ الْغَالِبُوْنَ
তারা বলল, ফিরাউনের শপথ আমরাই বিজয়ী হব। (সূরা শু‘আরা– ৪৪)
তারা লোকদেরকে ভীত করে দিল :
فَلَمَّاۤ اَلْقَوْا سَحَرُوْاۤ اَعْيُنَ النَّاسِ وَاسْتَرْهَبُوْهُمْ وَجَآءُوْا بِسِحْرٍ عَظِيْمٍ
যখন তারা নিক্ষেপ করল তখন তারা লোকের চোখে যাদু করল এবং তাদেরকে আতংকিত করে দিল। আর তারা এক বড় আকারের যাদু দেখাল। (সূরা আ‘রাফু ১১৬)
মূসা (আঃ) মনে করলেন এগুলো নড়ছে :
قَالَ بَلْ اَلْقُوْا فَإِذَا حِبَالُهُمْ وَعِصِيُّهُمْ يُخَيَّلُ اِلَيْهِ مِنْ سِحْرِهِمْ اَنَّهَا تَسْعٰى
তিনি বললেন, বরং তোমরাই নিক্ষেপ করো। অতঃপর তাদের যাদুর প্রভাবে আকস্মাৎ মূসার মনে হলো, তাদের দড়ি ও লাঠিগুলো ছুটাছুটি করছে। (সূরা ত্বা–হা– ৬৬)
এতে তিনি ভয় পেয়ে গেলেন :
فَاَوْجَسَ فِيْ نَفْسِهٖ خِيْفَةً مُّوْسٰى
মূসা তার অন্তরে কিছু ভীতি অনুভব করল। (সূরা ত্বা–হা– ৬৭)
আল্লাহ তাকে সাহস দিলেন :
قُلْنَا لَا تَخَفْ اِنَّكَ اَنْتَ الْاَعْلٰى
আমি বললাম, ভয় করো না- তুমিই বিজয়ী হবে। (সূরা ত্বা–হা– ৬৮)
আল্লাহ মূসা (আঃ) কে লাঠি নিক্ষেপ করতে বললেন :
وَاَوْحَيْنَاۤ اِلٰى مُوْسٰۤى اَنْ اَلْقِ عَصَاكَ
অতঃপর আমি মূসার প্রতি প্রত্যাদেশ করলাম যে, তুমিও তোমার লাঠি নিক্ষেপ করো। (সূরা আ‘রাফু ১১৭)
নিক্ষেপ করার পর লাঠি তাদের সবকিছু গ্রাস করে ফেলল :
فَاَلْقٰى مُوْسٰى عَصَاهُ فَاِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُوْنَ
অতঃপর মূসা তার লাঠি নিক্ষেপ করলেন, সহসা তা তাদের অলীক সৃষ্টিগুলোকে গ্রাস করতে লাগল। (সূরা শু‘আরা– ৪৫)
এতে সত্য প্রমাণিত হয়ে গেল :
فَوَقَعَ الْحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
ফলে সত্য প্রতিষ্ঠিত হলো এবং তারা যা করছিল তা মিথ্যা প্রতিপন্ন হলো। (সূরা আ‘রাফু ১১৮)
ফিরাউনের দল পরাজিত ও লাঞ্ছিত হলো :
فَغُلِبُوْا هُنَالِكَ وَانْقَلَبُوْا صَاغِرِيْنَ
সেখানে তারা পরাভূত হলো ও লাঞ্ছিত হলো। (সূরা আ‘রাফু ১১৯)
যাদুকররা সিজদায় লুটিয়ে পড়ল :
فَاُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِيْنَ
তখন যাদুকররা সিজদাবনত হয়ে পড়ল। (সূরা শু‘আরা– ৪৬)
فَاُلْقِيَ السَّحَرَةُ سُجَّدًا قَالُوْاۤ اٰمَنَّا بِرَبِّ هَارُوْنَ وَمُوْسٰى
অতঃপর যাদুকররা সিজদাবনত হয়ে গেল এবং বলল, আমরা হারূন ও মূসার প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনয়ন করলাম। (সূরা ত্বা–হা– ৭০)
তারা প্রকাশ্যে ঈমানের ঘোষণা দিল :
قَالُوْاۤ اٰمَنَّا بِرَبِّ الْعَالَمِيْنَ ‐ رَبِّ مُوْسٰى وَهَارُوْنَ
তারা বলল, আমরা জগতসমূহের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনলাম, যিনি মূসা ও হারূনেরও প্রতিপালক। (সূরা আ‘রাফু ১২১, ১২২)
ফিরাউন তাদেরকে ধমক দিল এবং শাস্তির হুমকি দিল :
قَالَ اٰمَنْتُمْ لَهٗ قَبْلَ اَنْ اٰذَنَ لَكُمْؕ اِنَّهٗ لَكَبِيْرُكُمُ الَّذِيْ عَلَّمَكُمُ السِّحْرَۚ فَلَاُقَطِّعَنَّ اَيْدِيَكُمْ وَاَرْجُلَكُمْ مِّنْ خِلَافٍ وَّلَاُصَلِّبَنَّكُمْ فِيْ جُذُوْعِ النَّخْلِؗ وَلَتَعْلَمُنَّ اَيُّنَاۤ اَشَدُّ عَذَابًا وَّاَبْقٰى
ফিরাউন বলল, (কী হলো!) আমি তোমাদেরকে অনুমতি দেয়ার পূর্বেই তোমরা মূসার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে ফেললে? দেখছি, সে তো তোমাদের প্রধান, সে তোমাদেরকে যাদু শিক্ষা দিয়েছে। সুতরাং অবশ্যই আমি তোমাদের হাত-পা বিপরীত দিক হতে কর্তন করব এবং আমি তোমাদেরকে খেজুর বৃক্ষের কান্ডে শূলবিদ্ধ করব। অতঃপর তোমরা অবশ্যই জানতে পারবে যে, আমাদের মধ্যে কার শাস্তি কঠোরতর ও অধিক স্থায়ী। (সূরা ত্বা–হা– ৭১)
قَالَ اٰمَنْتُمْ لَهٗ قَبْلَ اَنْ اٰذَنَ لَكُمْۚ اِنَّهٗ لَكَبِيْرُكُمُ الَّذِيْ عَلَّمَكُمُ السِّحْرَۚ فَلَسَوْفَ تَعْلَمُوْنَؕ لَاُقَطِّعَنَّ اَيْدِيَكُمْ وَاَرْجُلَكُمْ مِّنْ خِلَافٍ وَّلَأُصَلِّبَنَّكُمْ اَجْمَعِيْنَ
ফিরাউন বলল, কী! আমি অনুমতি দেয়ার পূর্বেই তোমরা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করলে? (আমি বুঝতে পারছি, আসলে) সেই হচ্ছে তোমাদের প্রধান, যে তোমাদেরকে যাদু শিক্ষা দিয়েছে। অতি শীঘ্রই তোমরা এর পরিণাম সম্পর্কে জানতে পারবে। আমি অবশ্যই তোমাদের হাত-পা বিপরীত দিক হতে কর্তন করব এবং তোমাদের সকলকে শূলবিদ্ধ করবই। (সূরা শু‘আরা– ৪৯)
قَالَ فِرْعَوْنُ اٰمَنْتُمْ بِهٖ قَبْلَ اَنْ اٰذَنَ لَكُمْ اِنَّ هٰذَا لَمَكْرٌ مَّكَرْتُمُوْهُ فِى الْمَدِيْنَةِ لِتُخْرِجُوْا مِنْهَاۤ اَهْلَهَاۚ فَسَوْفَ تَعْلَمُوْنَ ‐ لَاُقَطِّعَنَّ اَيْدِيْكُمْ وَاَرْجُلَكُمْ مِّنْ خِلَافٍ ثُمَّ لَاُصَلِّبَنَّكُمْ اَجْمَعِيْنَ
ফিরাউন বলল, আমি তোমাদেরকে অনুমতি দেয়ার পূর্বেই তোমরা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করে ফেললে? এটা তো এক চক্রান্ত, তোমরা স্বজ্ঞানে এ চক্রান্ত করেছ নগরবাসীদেরকে তা হতে বহিষ্কারের জন্য। শীঘ্রই তোমরা এর পরিণাম সম্পর্কে জানতে পারবে। অবশ্যই আমি তোমাদের হাত-পা বিপরীত দিক হতে কর্তন করব, অতঃপর তোমাদের সকলকে শূলবিদ্ধ করব। (সূরা আ‘রাফ, ১২৩, ১২৪)
এতে তারা কোন পরোয়া করল না :
قَالُوْا لَا ضَيْرَۚ اِنَّاۤ اِلٰى رَبِّنَا مُنْقَلِبُوْنَ
তারা বলল, কোন ক্ষতি নেই, আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তন করব। (সূরা শু‘আরা– ৫০)
তারা আল্লাহর উপর ভরসা করল :
اِنَّا نَطْمَعُ اَنْ يَّغْفِرَ لَنَا رَبُّنَا خَطَايَانَاۤ اَنْ كُنَّاۤ اَوَّلَ الْمُؤْمِنِيْنَ
আমরা আশা করি যে, আমাদের প্রতিপালক আমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। কেননা আমরা মুমিনদের মধ্যে অগ্রগামী। (সূরা শু‘আরা– ৫১)
قَالُوْاۤ اِنَّاۤ اِلٰى رَبِّنَا مُنْقَلِبُوْنَ
তারা বলল, অবশ্যই আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তন করব। (সূরা আ‘রাফু ১২৫)
তারা আল্লাহর মাগফিরাত লাভের আশা করল :
اِنَّاۤ اٰمَنَّا بِرَبِّنَا لِيَغْفِرَ لَنَا خَطَايَانَا وَمَاۤ اَكْرَهْتَنَا عَلَيْهِ مِنَ السِّحْرِؕ وَاللهُ خَيْرٌ وَّاَبْقٰى
নিশ্চয় আমরা আমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান এনেছি, যাতে তিনি আমাদের অপরাধসমূহকে ক্ষমা করে দেন এবং তুমি আমাদেরকে যে যাদু করতে বাধ্য করেছ (তাও ক্ষমা করে দেন)। আর আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ ও চিরস্থায়ী। (সূরা ত্বা–হা– ৭৩)
তারা ফিরাউনের কাজকে নিন্দা জানাল :
وَمَا تَنْقِمُ مِنَّاۤ اِلَّاۤ اَنْ اٰمَنَّا بِاٰيَاتِ رَبِّنَا لَمَّا جَآءَتْنَا
তুমি তো আমাদেরকে শাস্তি দিচ্ছ শুধু এজন্য যে, আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিদর্শনের প্রতি ঈমান এনেছি, যখন তা আমাদের নিকট এসেছে। (সূরা আ‘রাফু ১২৬)
তারা মুসলিম অবস্থায় মৃত্যু লাভের দু‘আ করল :
رَبَّنَاۤ اَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَّتَوَفَّنَا مُسْلِمِيْنَ
হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে ধৈর্য দান করো এবং মুসলিম অবস্থায় মৃত্যু দান করো। (সূরা আ‘রাফু ১২৬)
তারা জীবন বাজি রেখে ঈমানের উপর অটল থাকার ঘোষণা দিল :
قَالُوْا لَنْ نُّؤْثِرَكَ عَلٰى مَا جَآءَنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالَّذِيْ فَطَرَنَا فَاقْضِ مَاۤ اَنْتَ قَاضٍؕ اِنَّمَا تَقْضِيْ هٰذِهِ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا
তারা বলল, আমাদের নিকট যে স্পষ্ট নিদর্শন এসেছে তার উপর এবং যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর উপর আমরা তোমাকে কিছুতেই প্রাধান্য দেব না। সুতরাং তুমি যা করতে চাও করো। তুমি তো কেবল এ পার্থিব জীবনের উপরই কর্তৃত্ব লাভ করতে পার। (সূরা ত্বা–হা– ৭২)
فَاُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِيْنَ
তখন যাদুকররা সিজদাবনত হয়ে পড়ল। (সূরা শু‘আরা– ৪৬)
فَاُلْقِيَ السَّحَرَةُ سُجَّدًا قَالُوْاۤ اٰمَنَّا بِرَبِّ هَارُوْنَ وَمُوْسٰى
অতঃপর যাদুকররা সিজদাবনত হয়ে গেল এবং বলল, আমরা হারূন ও মূসার প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনয়ন করলাম। (সূরা ত্বা–হা– ৭০)
তারা প্রকাশ্যে ঈমানের ঘোষণা দিল :
قَالُوْاۤ اٰمَنَّا بِرَبِّ الْعَالَمِيْنَ ‐ رَبِّ مُوْسٰى وَهَارُوْنَ
তারা বলল, আমরা জগতসমূহের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনলাম, যিনি মূসা ও হারূনেরও প্রতিপালক। (সূরা আ‘রাফু ১২১, ১২২)
ফিরাউন তাদেরকে ধমক দিল এবং শাস্তির হুমকি দিল :
قَالَ اٰمَنْتُمْ لَهٗ قَبْلَ اَنْ اٰذَنَ لَكُمْؕ اِنَّهٗ لَكَبِيْرُكُمُ الَّذِيْ عَلَّمَكُمُ السِّحْرَۚ فَلَاُقَطِّعَنَّ اَيْدِيَكُمْ وَاَرْجُلَكُمْ مِّنْ خِلَافٍ وَّلَاُصَلِّبَنَّكُمْ فِيْ جُذُوْعِ النَّخْلِؗ وَلَتَعْلَمُنَّ اَيُّنَاۤ اَشَدُّ عَذَابًا وَّاَبْقٰى
ফিরাউন বলল, (কী হলো!) আমি তোমাদেরকে অনুমতি দেয়ার পূর্বেই তোমরা মূসার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে ফেললে? দেখছি, সে তো তোমাদের প্রধান, সে তোমাদেরকে যাদু শিক্ষা দিয়েছে। সুতরাং অবশ্যই আমি তোমাদের হাত-পা বিপরীত দিক হতে কর্তন করব এবং আমি তোমাদেরকে খেজুর বৃক্ষের কান্ডে শূলবিদ্ধ করব। অতঃপর তোমরা অবশ্যই জানতে পারবে যে, আমাদের মধ্যে কার শাস্তি কঠোরতর ও অধিক স্থায়ী। (সূরা ত্বা–হা– ৭১)
قَالَ اٰمَنْتُمْ لَهٗ قَبْلَ اَنْ اٰذَنَ لَكُمْۚ اِنَّهٗ لَكَبِيْرُكُمُ الَّذِيْ عَلَّمَكُمُ السِّحْرَۚ فَلَسَوْفَ تَعْلَمُوْنَؕ لَاُقَطِّعَنَّ اَيْدِيَكُمْ وَاَرْجُلَكُمْ مِّنْ خِلَافٍ وَّلَأُصَلِّبَنَّكُمْ اَجْمَعِيْنَ
ফিরাউন বলল, কী! আমি অনুমতি দেয়ার পূর্বেই তোমরা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করলে? (আমি বুঝতে পারছি, আসলে) সেই হচ্ছে তোমাদের প্রধান, যে তোমাদেরকে যাদু শিক্ষা দিয়েছে। অতি শীঘ্রই তোমরা এর পরিণাম সম্পর্কে জানতে পারবে। আমি অবশ্যই তোমাদের হাত-পা বিপরীত দিক হতে কর্তন করব এবং তোমাদের সকলকে শূলবিদ্ধ করবই। (সূরা শু‘আরা– ৪৯)
قَالَ فِرْعَوْنُ اٰمَنْتُمْ بِهٖ قَبْلَ اَنْ اٰذَنَ لَكُمْ اِنَّ هٰذَا لَمَكْرٌ مَّكَرْتُمُوْهُ فِى الْمَدِيْنَةِ لِتُخْرِجُوْا مِنْهَاۤ اَهْلَهَاۚ فَسَوْفَ تَعْلَمُوْنَ ‐ لَاُقَطِّعَنَّ اَيْدِيْكُمْ وَاَرْجُلَكُمْ مِّنْ خِلَافٍ ثُمَّ لَاُصَلِّبَنَّكُمْ اَجْمَعِيْنَ
ফিরাউন বলল, আমি তোমাদেরকে অনুমতি দেয়ার পূর্বেই তোমরা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করে ফেললে? এটা তো এক চক্রান্ত, তোমরা স্বজ্ঞানে এ চক্রান্ত করেছ নগরবাসীদেরকে তা হতে বহিষ্কারের জন্য। শীঘ্রই তোমরা এর পরিণাম সম্পর্কে জানতে পারবে। অবশ্যই আমি তোমাদের হাত-পা বিপরীত দিক হতে কর্তন করব, অতঃপর তোমাদের সকলকে শূলবিদ্ধ করব। (সূরা আ‘রাফ, ১২৩, ১২৪)
এতে তারা কোন পরোয়া করল না :
قَالُوْا لَا ضَيْرَۚ اِنَّاۤ اِلٰى رَبِّنَا مُنْقَلِبُوْنَ
তারা বলল, কোন ক্ষতি নেই, আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তন করব। (সূরা শু‘আরা– ৫০)
তারা আল্লাহর উপর ভরসা করল :
اِنَّا نَطْمَعُ اَنْ يَّغْفِرَ لَنَا رَبُّنَا خَطَايَانَاۤ اَنْ كُنَّاۤ اَوَّلَ الْمُؤْمِنِيْنَ
আমরা আশা করি যে, আমাদের প্রতিপালক আমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। কেননা আমরা মুমিনদের মধ্যে অগ্রগামী। (সূরা শু‘আরা– ৫১)
قَالُوْاۤ اِنَّاۤ اِلٰى رَبِّنَا مُنْقَلِبُوْنَ
তারা বলল, অবশ্যই আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তন করব। (সূরা আ‘রাফু ১২৫)
তারা আল্লাহর মাগফিরাত লাভের আশা করল :
اِنَّاۤ اٰمَنَّا بِرَبِّنَا لِيَغْفِرَ لَنَا خَطَايَانَا وَمَاۤ اَكْرَهْتَنَا عَلَيْهِ مِنَ السِّحْرِؕ وَاللهُ خَيْرٌ وَّاَبْقٰى
নিশ্চয় আমরা আমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান এনেছি, যাতে তিনি আমাদের অপরাধসমূহকে ক্ষমা করে দেন এবং তুমি আমাদেরকে যে যাদু করতে বাধ্য করেছ (তাও ক্ষমা করে দেন)। আর আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ ও চিরস্থায়ী। (সূরা ত্বা–হা– ৭৩)
তারা ফিরাউনের কাজকে নিন্দা জানাল :
وَمَا تَنْقِمُ مِنَّاۤ اِلَّاۤ اَنْ اٰمَنَّا بِاٰيَاتِ رَبِّنَا لَمَّا جَآءَتْنَا
তুমি তো আমাদেরকে শাস্তি দিচ্ছ শুধু এজন্য যে, আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিদর্শনের প্রতি ঈমান এনেছি, যখন তা আমাদের নিকট এসেছে। (সূরা আ‘রাফু ১২৬)
তারা মুসলিম অবস্থায় মৃত্যু লাভের দু‘আ করল :
رَبَّنَاۤ اَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَّتَوَفَّنَا مُسْلِمِيْنَ
হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে ধৈর্য দান করো এবং মুসলিম অবস্থায় মৃত্যু দান করো। (সূরা আ‘রাফু ১২৬)
তারা জীবন বাজি রেখে ঈমানের উপর অটল থাকার ঘোষণা দিল :
قَالُوْا لَنْ نُّؤْثِرَكَ عَلٰى مَا جَآءَنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالَّذِيْ فَطَرَنَا فَاقْضِ مَاۤ اَنْتَ قَاضٍؕ اِنَّمَا تَقْضِيْ هٰذِهِ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا
তারা বলল, আমাদের নিকট যে স্পষ্ট নিদর্শন এসেছে তার উপর এবং যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর উপর আমরা তোমাকে কিছুতেই প্রাধান্য দেব না। সুতরাং তুমি যা করতে চাও করো। তুমি তো কেবল এ পার্থিব জীবনের উপরই কর্তৃত্ব লাভ করতে পার। (সূরা ত্বা–হা– ৭২)
ফিরাউন মুসলিমদের উপর নির্যাতন শুরু করল :
وَقَالَ الْمَلَاُ مِنْ قَوْمِ فِرْعَوْنَ اَتَذَرُ مُوْسٰى وَقَوْمَهٗ لِيُفْسِدُوْا فِى الْاَرْضِ وَيَذَرَكَ وَاٰلِهَتَكَؕ قَالَ سَنُقَتِّلُ اَبْنَآءَهُمْ وَنَسْتَحْيِيْ نِسَآءَهُمْۚ وَاِنَّا فَوْقَهُمْ قَاهِرُوْنَ
ফিরাউনের সম্প্রদায়ের প্রধানগণ বলল, আপনি কি মূসাকে ও তার সম্প্রদায়কে রাজ্যে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে এবং আপনাকে ও আপনার দেবতাদেরকে বর্জন করতে দেবেন? সে বলল, আমরা তাদের পুত্রদেরকে হত্যা করব এবং তাদের নারীদেরকে জীবিত রাখব। নিশ্চয় আমরা তাদের উপর ক্ষমতাবান।
(সূরা আ‘রাফু ১২৭)
সে মুসলিম শিশুদেরকে হত্যা করার নির্দেশ দিল :
قَالُوا اقْتُلُوْاۤ اَبْنَآءَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَعَهٗ وَاسْتَحْيُوْا نِسَآءَهُمْؕ وَمَا كَيْدُ الْكَافِرِيْنَ اِلَّا فِيْ ضَلَالٍ
তারা বলল, যারা মূসার উপর ঈমান এনেছে, তাদের পুত্রসন্তানদেরকে হত্যা করো এবং তাদের নারীদেরকে জীবিত রাখো, কিন্তু কাফিরদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হবেই। (সূরা মু’মিনু ২৫)
মুসলিমদেরকে কুলক্ষণ মনে করতে লাগল :
فَاِذَا جَآءَتْهُمُ الْحَسَنَةُ قَالُوْا لَنَا هٰذِهٖۚ وَاِنْ تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌ يَّطَّيَّرُوْا بِمُوْسٰى وَمَنْ مَّعَهٗؕ اَلَاۤ اِنَّمَا طَآئِرُهُمْ عِنْدَ اللهِ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ
যখন তাদের কোন কল্যাণ হতো তখন তারা বলত, এটা আমাদের প্রাপ্য। আর যখন কোন অকল্যাণ হতো, তখন তারা মূসা ও তার সঙ্গীদেরকে কুলক্ষণ হিসেবে গণ্য করত। (মূলত) তাদের অকল্যাণ আল্লাহর নিয়ন্ত্রণাধীন, কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না। (সূরা আ‘রাফু ১৩১)
মুসলিমরা মূসা (আঃ) এর কাছে অভিযোগ করল :
قَالُوْاۤ اُوْذِيْنَا مِنْ قَبْلِ اَنْ تَأْتِيَنَا وَمِنْ ۢ بَعْدِ مَا جِئْتَنَا
তারা বলল, তুমি আমাদের নিকট আসার পূর্বে আমরা নির্যাতিত হয়েছি এবং তুমি আসার পরেও।
(সূরা আ‘রাফু ১২৯)
মূসা (আঃ) জাতিকে সান্ত্বনা দিলেন :
قَالَ عَسٰى رَبُّكُمْ اَنْ يُّهْلِكَ عَدُوَّكُمْ وَيَسْتَخْلِفَكُمْ فِى الْاَرْضِ فَيَنْظُرَ كَيْفَ تَعْمَلُوْنَ
সে বলল, শীঘ্রই তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের শত্রুদেরকে ধ্বংস করবেন এবং তোমাদেরকে জমিনে তাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন। অতঃপর তোমরা কী কর তা তিনি লক্ষ্য করবেন। (সূরা আ‘রাফু ১২৯)
তিনি জাতিকে ধৈর্যধারণ করতে বললেন :
قَالَ مُوْسٰى لِقَوْمِهِ اسْتَعِيْنُوْا بِاللهِ وَاصْبِرُوْاۚ اِنَّ الْاَرْضَ لِلّٰهِ يُوْرِثُهَا مَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِه ؕ وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِيْنَ
মূসা তার সম্প্রদায়কে বলল, আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করো এবং ধৈর্যধারণ করো, জমিন তো আল্লাহরই। তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তার উত্তরাধিকারী করেন। আর শুভ পরিণাম মুত্তাক্বীদের জন্য। (সূরা আ‘রাফু ১২৮)
আল্লাহর উপর ভরসা করার নির্দেশ দিলেন :
وَقَالَ مُوْسٰى يَا قَوْمِ اِنْ كُنْتُمْ اٰمَنْتُمْ بِاللهِ فَعَلَيْهِ تَوَكَّلُوْاۤ اِنْ كُنْتُمْ مُّسْلِمِيْنَ
মূসা বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনে থাক এবং তোমরা আত্মসমর্পণকারী হও, তবে তাঁরই উপর নির্ভর করো। (সূরা ইউনুস– ৮৪)
তারা মুক্তি পাওয়ার জন্য দু‘আ করল :
فَقَالُوْا عَلَى اللهِ تَوَكَّلْنَاۚ رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا فِتْنَةً لِّلْقَوْمِ الظَّالِمِيْنَ ‐ وَنَجِّنَا بِرَحْمَتِكَ مِنَ الْقَوْمِ الْكَافِرِيْنَ
অতঃপর তারা বলল, আমরা আল্লাহর উপর নির্ভর করলাম। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে যালিম সম্প্রদায়ের উৎপীড়নের পাত্র বানিয়ে দিয়ো না এবং আমাদেরকে তোমার অনুগ্রহে কাফির সম্প্রদায় হতে রক্ষা করো। (সূরা ইউনুস– ৮৫, ৮৬)
ফিরাউনের স্ত্রীও আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইল :
وَضَرَبَ اللهُ مَثَلًا لِّلَّذِيْنَ اٰمَنُوا امْرَاَتَ فِرْعَوْنَۘ اِذْ قَالَتْ رَبِّ ابْنِ لِيْ عِنْدَكَ بَيْتًا فِى الْجَنَّةِ وَنَجِّنِيْ مِنْ فِرْعَوْنَ وَعَمَلِه وَنَجِّنِيْ مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِيْنَ
আল্লাহ মুমিনদের জন্য উপস্থিত করেছেন ফিরাউনের স্ত্রীর দৃষ্টান্ত। যিনি প্রার্থনা করেছিলেন, হে আমার প্রতিপালক! আপনার নিকট জান্নাতে আমার জন্য একটি গৃহ নির্মাণ করুন এবং আমাকে ফিরাউন ও তার দুষ্কৃতি হতে উদ্ধার করুন। আর আমাকে উদ্ধার করুন যালিম সম্প্রদায় হতে। (সূরা তাহরীম- ১১)
নবী ও তার সাথিদেরকে উৎখাত করতে চাইল :
فَاَرَادَ اَنْ يَّسْتَفِزَّهُمْ مِّنَ الْاَرْضِ فَاَغْرَقْنَاهُ وَمَنْ مَّعَهٗ جَمِيْعًا
অতঃপর ফিরাউন তাদেরকে দেশ হতে উচ্ছেদ করার সংকল্প করল। ফলে আমি ফিরাউন ও তার সাথিদের সকলকে নিমজ্জিত করলাম। (সূরা বনী ইসরাঈল– ১০৩)
ফিরাউন মূসা (আঃ) কে হত্যা করার চেষ্টা করল :
وَقَالَ فِرْعَوْنُ ذَرُوْنِۤيْ اَقْتُلْ مُوْسٰى وَلْيَدْعُ رَبَّهٗۚ اِنِّۤيْ اَخَافُ اَنْ يُّبَدِّلَ دِيْنَكُمْ اَوْ اَنْ يُّظْهِرَ فِى الْاَرْضِ الْفَسَادَ
ফিরাউন বলল, আমাকে ছেড়ে দাও আমি মূসাকে হত্যা করি এবং সে তার প্রতিপালককে ডাকুক। আমি আশঙ্কা করি যে, সে তোমাদের দ্বীনকে পরিবর্তন করে ফেলবে অথবা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। (সূরা মু’মিনু ২৬)
ব্যাখ্যা : ফিরাউন বলল, আমি তার পক্ষ থেকে তোমাদের দ্বীন পরিবর্তনের আশঙ্কা করছি। তার কর্মতৎপরতার ফলে দেশে অবশ্যই বিপর্যয় দেখা দেবে। তাই সে মৃত্যুদন্ড লাভের মতো কোন অপরাধ না করলেও শুধু দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার খাতিরে তাকে হত্যা করা প্রয়োজন। সে ব্যক্তির ব্যক্তিসত্তা আইন শৃঙ্খলার জন্য সত্যিই বিপজ্জনক কি না- তা দেখার প্রয়োজন নেই। সরকার যদি এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয় যে, এ লোকটি বিপজ্জনক তাহলে বিপজ্জনক হিসেবেই মেনে নিতে হবে এবং এজন্য ঐ ব্যক্তির শিরোচ্ছেদ করা যাবে।
এ স্থানে দ্বীন পাল্টে দেয়ার অর্থ ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে। এখানে দ্বীন অর্থ শাসনব্যবস্থা। ফিরাউন ও তার বংশের চূড়ান্ত ক্ষমতার ভিত্তিতে ধর্ম, রাজনীতি ও অর্থনীতির যে ব্যবস্থা মিসরে চলছিল তা ছিল তৎকালে ঐ দেশের ‘দ্বীন’। আর ফিরাউন মূসা (আঃ) এর আন্দোলনের কারণে এ দ্বীন পাল্টে যাওয়ার আশঙ্কা করছিল। কিন্তু প্রত্যেক যুগের কুচক্রী শাসকদের মতো সেও এ কথা বলছে না যে, আমার হাত থেকে ক্ষমতা চলে যাওয়ার আশঙ্কা করছি। তাই আমি মূসাকে হত্যা করতে চাই। বরং পরিস্থিতিকে সে এভাবে পেশ করছে যে, হে জনগণ! বিপদ আমার নয় বরং তোমাদের। কারণ মূসার আন্দোলন যদি সফল হয়, তাহলে তোমাদের দ্বীন বদলে যাবে। আমার নিজের জন্য কোন চিন্তা নেই। বরং আমি তোমাদের চিন্তায় নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছি এই ভেবে যে, আমার ক্ষমতার ছায়া থেকে বঞ্চিত হলে তোমাদের কী অবস্থা হবে। তাই যার দ্বারা তোমাদের উপর থেকে এ ছায়া উঠে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে তাকে হত্যা করা প্রয়োজন। কারণ সে দেশ ও জাতি উভয়ের শত্রু।
নবী আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করলেন :
وَقَالَ مُوْسٰۤى اِنِّيْ عُذْتُ بِرَبِّيْ وَرَبِّكُمْ مِّنْ كُلِّ مُتَكَبِّرٍ لَّا يُؤْمِنُ بِيَوْمِ الْحِسَابِ
মূসা বলল, যারা হিসাব দিবসের প্রতি বিশ্বাস করে না, সেসব অহংকারী ব্যক্তি হতে আমি আমার ও তোমাদের প্রতিপালকের আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (সূরা মু’মিনু ২৭)
ব্যাখ্যা : মূসা (আঃ) এর কথায় স্পষ্ট প্রকাশ পাচ্ছে যে, ফিরাউনের হুমকি তাঁর মনে সামান্যতম ভীতিভাবও সৃষ্টি করতে পারেনি। তিনি আল্লাহর উপর নির্ভর করে তার হুমকির জবাব তার মুখের উপরেই দিয়ে দিয়েছেন। যে পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে কুরআন মাজীদে এ ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে তা থেকে স্বাভাবিকভাবে এ কথা প্রকাশ পায় যে, হিসাবের দিন সম্পর্কে বেপরোয়া হয়ে যেসব যালিমরা মুহাম্মাদ ﷺ কে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করছিল তাদের জন্যও সে একই জবাব। তাছাড়া আজও যারা ইসলামী নেতৃবৃন্দকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে তাদের ক্ষেত্রেও এ জবাব।
وَقَالَ الْمَلَاُ مِنْ قَوْمِ فِرْعَوْنَ اَتَذَرُ مُوْسٰى وَقَوْمَهٗ لِيُفْسِدُوْا فِى الْاَرْضِ وَيَذَرَكَ وَاٰلِهَتَكَؕ قَالَ سَنُقَتِّلُ اَبْنَآءَهُمْ وَنَسْتَحْيِيْ نِسَآءَهُمْۚ وَاِنَّا فَوْقَهُمْ قَاهِرُوْنَ
ফিরাউনের সম্প্রদায়ের প্রধানগণ বলল, আপনি কি মূসাকে ও তার সম্প্রদায়কে রাজ্যে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে এবং আপনাকে ও আপনার দেবতাদেরকে বর্জন করতে দেবেন? সে বলল, আমরা তাদের পুত্রদেরকে হত্যা করব এবং তাদের নারীদেরকে জীবিত রাখব। নিশ্চয় আমরা তাদের উপর ক্ষমতাবান।
(সূরা আ‘রাফু ১২৭)
সে মুসলিম শিশুদেরকে হত্যা করার নির্দেশ দিল :
قَالُوا اقْتُلُوْاۤ اَبْنَآءَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَعَهٗ وَاسْتَحْيُوْا نِسَآءَهُمْؕ وَمَا كَيْدُ الْكَافِرِيْنَ اِلَّا فِيْ ضَلَالٍ
তারা বলল, যারা মূসার উপর ঈমান এনেছে, তাদের পুত্রসন্তানদেরকে হত্যা করো এবং তাদের নারীদেরকে জীবিত রাখো, কিন্তু কাফিরদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হবেই। (সূরা মু’মিনু ২৫)
মুসলিমদেরকে কুলক্ষণ মনে করতে লাগল :
فَاِذَا جَآءَتْهُمُ الْحَسَنَةُ قَالُوْا لَنَا هٰذِهٖۚ وَاِنْ تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌ يَّطَّيَّرُوْا بِمُوْسٰى وَمَنْ مَّعَهٗؕ اَلَاۤ اِنَّمَا طَآئِرُهُمْ عِنْدَ اللهِ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ
যখন তাদের কোন কল্যাণ হতো তখন তারা বলত, এটা আমাদের প্রাপ্য। আর যখন কোন অকল্যাণ হতো, তখন তারা মূসা ও তার সঙ্গীদেরকে কুলক্ষণ হিসেবে গণ্য করত। (মূলত) তাদের অকল্যাণ আল্লাহর নিয়ন্ত্রণাধীন, কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না। (সূরা আ‘রাফু ১৩১)
মুসলিমরা মূসা (আঃ) এর কাছে অভিযোগ করল :
قَالُوْاۤ اُوْذِيْنَا مِنْ قَبْلِ اَنْ تَأْتِيَنَا وَمِنْ ۢ بَعْدِ مَا جِئْتَنَا
তারা বলল, তুমি আমাদের নিকট আসার পূর্বে আমরা নির্যাতিত হয়েছি এবং তুমি আসার পরেও।
(সূরা আ‘রাফু ১২৯)
মূসা (আঃ) জাতিকে সান্ত্বনা দিলেন :
قَالَ عَسٰى رَبُّكُمْ اَنْ يُّهْلِكَ عَدُوَّكُمْ وَيَسْتَخْلِفَكُمْ فِى الْاَرْضِ فَيَنْظُرَ كَيْفَ تَعْمَلُوْنَ
সে বলল, শীঘ্রই তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের শত্রুদেরকে ধ্বংস করবেন এবং তোমাদেরকে জমিনে তাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন। অতঃপর তোমরা কী কর তা তিনি লক্ষ্য করবেন। (সূরা আ‘রাফু ১২৯)
তিনি জাতিকে ধৈর্যধারণ করতে বললেন :
قَالَ مُوْسٰى لِقَوْمِهِ اسْتَعِيْنُوْا بِاللهِ وَاصْبِرُوْاۚ اِنَّ الْاَرْضَ لِلّٰهِ يُوْرِثُهَا مَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِه ؕ وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِيْنَ
মূসা তার সম্প্রদায়কে বলল, আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করো এবং ধৈর্যধারণ করো, জমিন তো আল্লাহরই। তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তার উত্তরাধিকারী করেন। আর শুভ পরিণাম মুত্তাক্বীদের জন্য। (সূরা আ‘রাফু ১২৮)
আল্লাহর উপর ভরসা করার নির্দেশ দিলেন :
وَقَالَ مُوْسٰى يَا قَوْمِ اِنْ كُنْتُمْ اٰمَنْتُمْ بِاللهِ فَعَلَيْهِ تَوَكَّلُوْاۤ اِنْ كُنْتُمْ مُّسْلِمِيْنَ
মূসা বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনে থাক এবং তোমরা আত্মসমর্পণকারী হও, তবে তাঁরই উপর নির্ভর করো। (সূরা ইউনুস– ৮৪)
তারা মুক্তি পাওয়ার জন্য দু‘আ করল :
فَقَالُوْا عَلَى اللهِ تَوَكَّلْنَاۚ رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا فِتْنَةً لِّلْقَوْمِ الظَّالِمِيْنَ ‐ وَنَجِّنَا بِرَحْمَتِكَ مِنَ الْقَوْمِ الْكَافِرِيْنَ
অতঃপর তারা বলল, আমরা আল্লাহর উপর নির্ভর করলাম। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে যালিম সম্প্রদায়ের উৎপীড়নের পাত্র বানিয়ে দিয়ো না এবং আমাদেরকে তোমার অনুগ্রহে কাফির সম্প্রদায় হতে রক্ষা করো। (সূরা ইউনুস– ৮৫, ৮৬)
ফিরাউনের স্ত্রীও আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইল :
وَضَرَبَ اللهُ مَثَلًا لِّلَّذِيْنَ اٰمَنُوا امْرَاَتَ فِرْعَوْنَۘ اِذْ قَالَتْ رَبِّ ابْنِ لِيْ عِنْدَكَ بَيْتًا فِى الْجَنَّةِ وَنَجِّنِيْ مِنْ فِرْعَوْنَ وَعَمَلِه وَنَجِّنِيْ مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِيْنَ
আল্লাহ মুমিনদের জন্য উপস্থিত করেছেন ফিরাউনের স্ত্রীর দৃষ্টান্ত। যিনি প্রার্থনা করেছিলেন, হে আমার প্রতিপালক! আপনার নিকট জান্নাতে আমার জন্য একটি গৃহ নির্মাণ করুন এবং আমাকে ফিরাউন ও তার দুষ্কৃতি হতে উদ্ধার করুন। আর আমাকে উদ্ধার করুন যালিম সম্প্রদায় হতে। (সূরা তাহরীম- ১১)
নবী ও তার সাথিদেরকে উৎখাত করতে চাইল :
فَاَرَادَ اَنْ يَّسْتَفِزَّهُمْ مِّنَ الْاَرْضِ فَاَغْرَقْنَاهُ وَمَنْ مَّعَهٗ جَمِيْعًا
অতঃপর ফিরাউন তাদেরকে দেশ হতে উচ্ছেদ করার সংকল্প করল। ফলে আমি ফিরাউন ও তার সাথিদের সকলকে নিমজ্জিত করলাম। (সূরা বনী ইসরাঈল– ১০৩)
ফিরাউন মূসা (আঃ) কে হত্যা করার চেষ্টা করল :
وَقَالَ فِرْعَوْنُ ذَرُوْنِۤيْ اَقْتُلْ مُوْسٰى وَلْيَدْعُ رَبَّهٗۚ اِنِّۤيْ اَخَافُ اَنْ يُّبَدِّلَ دِيْنَكُمْ اَوْ اَنْ يُّظْهِرَ فِى الْاَرْضِ الْفَسَادَ
ফিরাউন বলল, আমাকে ছেড়ে দাও আমি মূসাকে হত্যা করি এবং সে তার প্রতিপালককে ডাকুক। আমি আশঙ্কা করি যে, সে তোমাদের দ্বীনকে পরিবর্তন করে ফেলবে অথবা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। (সূরা মু’মিনু ২৬)
ব্যাখ্যা : ফিরাউন বলল, আমি তার পক্ষ থেকে তোমাদের দ্বীন পরিবর্তনের আশঙ্কা করছি। তার কর্মতৎপরতার ফলে দেশে অবশ্যই বিপর্যয় দেখা দেবে। তাই সে মৃত্যুদন্ড লাভের মতো কোন অপরাধ না করলেও শুধু দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার খাতিরে তাকে হত্যা করা প্রয়োজন। সে ব্যক্তির ব্যক্তিসত্তা আইন শৃঙ্খলার জন্য সত্যিই বিপজ্জনক কি না- তা দেখার প্রয়োজন নেই। সরকার যদি এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয় যে, এ লোকটি বিপজ্জনক তাহলে বিপজ্জনক হিসেবেই মেনে নিতে হবে এবং এজন্য ঐ ব্যক্তির শিরোচ্ছেদ করা যাবে।
এ স্থানে দ্বীন পাল্টে দেয়ার অর্থ ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে। এখানে দ্বীন অর্থ শাসনব্যবস্থা। ফিরাউন ও তার বংশের চূড়ান্ত ক্ষমতার ভিত্তিতে ধর্ম, রাজনীতি ও অর্থনীতির যে ব্যবস্থা মিসরে চলছিল তা ছিল তৎকালে ঐ দেশের ‘দ্বীন’। আর ফিরাউন মূসা (আঃ) এর আন্দোলনের কারণে এ দ্বীন পাল্টে যাওয়ার আশঙ্কা করছিল। কিন্তু প্রত্যেক যুগের কুচক্রী শাসকদের মতো সেও এ কথা বলছে না যে, আমার হাত থেকে ক্ষমতা চলে যাওয়ার আশঙ্কা করছি। তাই আমি মূসাকে হত্যা করতে চাই। বরং পরিস্থিতিকে সে এভাবে পেশ করছে যে, হে জনগণ! বিপদ আমার নয় বরং তোমাদের। কারণ মূসার আন্দোলন যদি সফল হয়, তাহলে তোমাদের দ্বীন বদলে যাবে। আমার নিজের জন্য কোন চিন্তা নেই। বরং আমি তোমাদের চিন্তায় নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছি এই ভেবে যে, আমার ক্ষমতার ছায়া থেকে বঞ্চিত হলে তোমাদের কী অবস্থা হবে। তাই যার দ্বারা তোমাদের উপর থেকে এ ছায়া উঠে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে তাকে হত্যা করা প্রয়োজন। কারণ সে দেশ ও জাতি উভয়ের শত্রু।
নবী আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করলেন :
وَقَالَ مُوْسٰۤى اِنِّيْ عُذْتُ بِرَبِّيْ وَرَبِّكُمْ مِّنْ كُلِّ مُتَكَبِّرٍ لَّا يُؤْمِنُ بِيَوْمِ الْحِسَابِ
মূসা বলল, যারা হিসাব দিবসের প্রতি বিশ্বাস করে না, সেসব অহংকারী ব্যক্তি হতে আমি আমার ও তোমাদের প্রতিপালকের আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (সূরা মু’মিনু ২৭)
ব্যাখ্যা : মূসা (আঃ) এর কথায় স্পষ্ট প্রকাশ পাচ্ছে যে, ফিরাউনের হুমকি তাঁর মনে সামান্যতম ভীতিভাবও সৃষ্টি করতে পারেনি। তিনি আল্লাহর উপর নির্ভর করে তার হুমকির জবাব তার মুখের উপরেই দিয়ে দিয়েছেন। যে পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে কুরআন মাজীদে এ ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে তা থেকে স্বাভাবিকভাবে এ কথা প্রকাশ পায় যে, হিসাবের দিন সম্পর্কে বেপরোয়া হয়ে যেসব যালিমরা মুহাম্মাদ ﷺ কে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করছিল তাদের জন্যও সে একই জবাব। তাছাড়া আজও যারা ইসলামী নেতৃবৃন্দকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে তাদের ক্ষেত্রেও এ জবাব।
সে মূসা (আঃ) কে হত্যা করতে নিষেধ করল :
وَقَالَ رَجُلٌ مُّؤْمِنٌۗ مِنْ اٰلِ فِرْعَوْنَ يَكْتُمُ اِيْمَانَهٗۤ اَتَقْتُلُوْنَ رَجُلًا اَنْ يَّقُوْلَ رَبِّيَ اللهُ وَقَدْ جَآءَكُمْ بِالْبَيِّنَاتِ مِنْ رَّبِّكُمْ
ফিরাউন বংশের এক ব্যক্তি যে মুমিন ছিল এবং নিজের ঈমান গোপন রাখত সে বলল, তোমরা কি ঐ ব্যক্তিকে এজন্য হত্যা করবে যে, সে বলে- আমার প্রতিপালক আল্লাহ? অথচ সে তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে সুস্পষ্ট প্রমাণসহ তোমাদের নিকট এসেছে। (সূরা মু’মিনু ২৮)
সে জাতিকে আযাবের ভয় দেখাল :
وَاِنْ يَّكُ كَاذِبًا فَعَلَيْهِ كَذِبُهٗۚ وَاِنْ يَّكُ صَادِقًا يُّصِبْكُمْ بَعْضُ الَّذِيْ يَعِدُكُمْؕ اِنَّ اللهَ لَا يَهْدِيْ مَنْ هُوَ مُسْرِفٌ كَذَّابٌ
যদি সে মিথ্যাবাদী হয়, তবে তার মিথ্যার প্রতিফল সে ভোগ করবে। আর যদি সে সত্যবাদী হয়, তবে সে তোমাদেরকে যে শাস্তির কথা বলে তার কিছু অংশ তোমাদের উপর আপতিত হবেই। আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারী ও মিথ্যাবাদীকে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (সূরা মু’মিনু ২৮)
পার্থিব ক্ষমতার বাস্তবতা তুলে ধরল :
يَا قَوْمِ لَكُمُ الْمُلْكُ الْيَوْمَ ظَاهِرِيْنَ فِى الْاَرْضِؗ فَمَنْ يَّنْصُرُنَا مِنْ ۢبَأْسِ اللهِ اِنْ جَآءَنَا
হে আমার সম্প্রদায়! আজকের কর্তৃত্ব তোমাদের হাতে, পৃথিবীতে এখন তোমরাই প্রবল। কিন্তু আমাদের উপর আল্লাহর শাস্তি এসে পড়লে কে আমাদেরকে সাহায্য করবে? (সূরা মু’মিনু ২৯)
ফিরাউন নিজের সিদ্ধান্তকেই সঠিক মনে করল :
قَالَ فِرْعَوْنُ مَاۤ اُرِيْكُمْ اِلَّا مَاۤ اَرٰى وَمَاۤ اَهْدِيْكُمْ اِلَّا سَبِيْلَ الرَّشَادِ
ফিরাউন বলল, আমি যা বুঝি তোমাদেরকে তা–ই বলছি। আমি তোমাদেরকে সৎপথই দেখিয়ে থাকি।
(সূরা মু’মিনু ২৯)
মুমিন লোকটি পূর্বের ইতিহাস মনে করিয়ে দিল :
وَقَالَ الَّذِيْۤ اٰمَنَ يَا قَوْمِ اِنِّۤيْ اَخَافُ عَلَيْكُمْ مِّثْلَ يَوْمِ الْاَحْزَابِ ‐ مِثْلَ دَأْبِ قَوْمِ نُوْحٍ وَّعَادٍ وَّثَمُوْدَ وَالَّذِيْنَ مِنْ ۢبَعْدِهِمْ
মুমিন ব্যক্তিটি বলল, হে আমার সম্প্রদায়! আমি তোমাদের জন্য পূর্ববর্তী সম্প্রদায়সমূহের শাস্তির দিনের অনুরূপ আশঙ্কা করি। যেমন নূহ (আঃ) এর সম্প্রদায়, আদ, সামূদ এবং তাদের পরবর্তীদের ক্ষেত্রে ঘটেছিল। (সূরা মু’মিনু ৩০, ৩১)
কিয়ামত দিবসের ভয় দেখাল :
وَيَا قَوْمِ اِنِّۤيْ اَخَافُ عَلَيْكُمْ يَوْمَ التَّنَادِ ‐ يَوْمَ تُوَلُّوْنَ مُدْبِرِيْنَۚ مَا لَكُمْ مِّنَ اللهِ مِنْ عَاصِمٍؕ وَمَنْ يُّضْلِلِ اللهُ فَمَا لَهٗ مِنْ هَادٍ
হে আমার সম্প্রদায়! আমি তোমাদের জন্য ফরিয়াদ (কিয়ামত) দিবসের আশঙ্কা করি। যেদিন তোমরা পশ্চাৎ ফিরে পলায়ন করতে চাইবে, কিন্তু আল্লাহর শাস্তি হতে তোমাদেরকে রক্ষা করার মতো কেউ থাকবে না। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার কোন পথপ্রদর্শক নেই। (সূরা মু’মিনু ৩২, ৩৩)
ইউসুফ (আঃ) এর কথা স্মরণ করিয়ে দিল :
وَلَقَدْ جَآءَكُمْ يُوْسُفُ مِنْ قَبْلُ بِالْبَيِّنَاتِ فَمَا زِلْتُمْ فِيْ شَكٍّ مِّمَّا جَآءَكُمْ بِه ۚ حَتّٰۤى اِذَا هَلَكَ قُلْتُمْ لَنْ يَّبْعَثَ اللهُ مِنْ ۢبَعْدِه رَسُوْلًا ؕ كَذٰلِكَ يُضِلُّ اللهُ مَنْ هُوَ مُسْرِفٌ مُّرْتَابٌ
ইতোপূর্বেও তোমাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শন সহকারে ইউসুফ (আঃ) এসেছিলেন, কিন্তু সে যা নিয়ে এসেছিল তোমরা তাতে বার বার সন্দেহ পোষণ করতে। পরিশেষে যখন তাঁর মৃত্যু হলো তখন তোমরা বলেছিলে, এরপর আল্লাহ আর কখনো কাউকে রাসূল হিসেবে প্রেরণ করবেন না। এভাবে আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারী ও সন্দেহ পোষণকারীদেরকে বিভ্রান্ত করেন। (সূরা মু’মিনু ৩৪)
আল্লাহর বিরুদ্ধে বিতর্কে লিপ্ত হওয়ার পরিণাম জানানো হলো :
اَلَّذِيْنَ يُجَادِلُوْنَ فِۤيْ اٰيَاتِ اللهِ بِغَيْرِ سُلْطَانٍ اَتَاهُمْؕ كَبُرَ مَقْتًا عِنْدَ اللهِ وَعِنْدَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاؕ كَذٰلِكَ يَطْبَعُ اللهُ عَلٰى كُلِّ قَلْبِ مُتَكَبِّرٍ جَبَّارٍ
যারা নিজেদের নিকট কোন দলীল প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও আল্লাহর নিদর্শন সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত হয়, (তাদের এ কর্ম) আল্লাহ এবং মুমিনদের নিকট অতিশয় ঘৃণিত। এভাবে আল্লাহ প্রত্যেক অহংকারী ও স্বৈরাচারী ব্যক্তির হৃদয়ে মোহর মেরে দেন। (সূরা মু’মিনু ৩৫)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ বিনা কারণে কারো মনে মোহর লাগিয়ে দেয়া হয় না। যার মধ্যে অহংকার ও স্বেচ্ছাচারিতা সৃষ্টি হয় লানতের এ মোহর কেবল তার মনেই লাগানো হয়। ‘তাকাববুর’ অর্থ ব্যক্তির মিথ্যা অহংকার, যার কারণে ন্যায় ও সত্যের সামনে মাথা নত করাকে সে তার মর্যাদার চেয়ে নীচু কাজ বলে মনে করে। স্বেচ্ছাচারিতা অর্থ আল্লাহর সৃষ্টির উপর যুলুম করা। এ যুলুমের অবাধ লাইসেন্স লাভের জন্য ব্যক্তি আল্লাহর শরীয়াতের বাধ্যবাধকতা মেনে নেয়া থেকে দূরে থাকে।
ফিরাউন হামানকে প্রাসাদ নির্মাণের নির্দেশ দিল :
وَقَالَ فِرْعَوْنُ يَا هَامَانُ ابْنِ لِيْ صَرْحًا لَّعَلِّيْۤ اَبْلُغُ الْاَسْبَابَ
ফিরাউন বলল, হে হামান! আমার জন্য তুমি এক সুউচ্চ প্রাসাদ নির্মাণ করো, যাতে আমি (মূসার প্রভুকে দেখার) মাধ্যম পাই। (সূরা মু’মিনু ৩৬)
সে মূসা (আঃ) এর প্রতিপালককে দেখার দুঃসাহস করল :
اَسْبَابَ السَّمَاوَاتِ فَاَطَّلِعَ اِلٰۤى اِلٰهِ مُوْسٰى وَاِنِّيْ لَاَظُنُّهٗ كَاذِبًاؕ وَكَذٰلِكَ زُيِّنَ لِفِرْعَوْنَ سُوْٓءُ عَمَلِه وَصُدَّ عَنِ السَّبِيْلِؕ وَمَا كَيْدُ فِرْعَوْنَ اِلَّا فِيْ تَبَابٍ
যা (প্রাসাদটি) হবে আকাশে উঠার মাধ্যম, যাতে করে আমি মূসার ইলাহকে দেখতে পাই। আমি তো তাকে মিথ্যাবাদী মনে করি। এভাবেই ফিরাউনের নিকট তার মন্দ কর্মগুলোকে শোভনীয় করা হয়েছিল এবং তাকে সরল পথ হতে প্রতিহত করা হয়েছিল। অতঃপর ফিরাউনের ষড়যন্ত্র সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছিল। (সূরা মু’মিনু ৩৭)
মুমিন লোকটি জাতিকে তার অনুসরণের দাওয়াত দিল :
وَقَالَ الَّذِيْۤ اٰمَنَ يَا قَوْمِ اتَّبِعُوْنِ اَهْدِكُمْ سَبِيْلَ الرَّشَادِ
যে ব্যক্তি ঈমান এনেছিল সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আমার অনুসরণ করো, আমি তোমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করব। (সূরা মু’মিনু ৩৮)
সে পার্থিব জীবনের বাস্তবতা তুলে ধরল :
يَا قَوْمِ اِنَّمَا هٰذِهِ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا مَتَاعٌؗ وَاِنَّ الْاٰخِرَةَ هِيَ دَارُ الْقَرَارِ
হে আমার সম্প্রদায়! নিশ্চয় পার্থিব জীবন (অস্থায়ী) উপভোগের বস্তু মাত্র। আর আখিরাতই হচ্ছে চিরস্থায়ী আবাস। (সূরা মু’মিনু ৩৯)
সে জান্নাতের ফযীলত বর্ণনা করল :
مَنْ عَمِلَ سَيِّئَةً فَلَا يُجْزٰۤى اِلَّا مِثْلَهَاۚ وَمَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَاُولٰٓئِكَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ يُرْزَقُوْنَ فِيْهَا بِغَيْرِ حِسَابٍ
যে ব্যক্তি মন্দ আমল করবে, সে শুধু তার অনুরূপ শাস্তি পাবে। আর পুরুষ কিংবা নারীদের মধ্যে যারা মুমিন হয়ে সৎ আমল করে, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। অতঃপর সেখানে তারা অসংখ্য রিযিকপ্রাপ্ত হবে। (সূরা মু’মিনু ৪০)
হৃদয়ের আবেগ দিয়ে বুঝাতে চেষ্ট করল :
وَيَا قَوْمِ مَا لِۤيْ اَدْعُوْكُمْ اِلَى النَّجَاةِ وَتَدْعُوْنَنِيْۤ اِلَى النَّارِ
হে আমার সম্প্রদায়! এ কেমন কথা! আমি তোমাদেরকে আহবান করছি মুক্তির দিকে, আর তোমরা আমাকে আহবান করছ জাহান্নামের দিকে। (সূরা মু’মিনু ৪১)
মুমিন লোকটি জাতির ভুল তুলে ধরল :
تَدْعُوْنَنِيْ لِاَكْفُرَ بِاللهِ وَاُشْرِكَ بِه مَا لَيْسَ لِيْ بِه عِلْمٌؗ وَاَنَاْ اَدْعُوْكُمْ اِلَى الْعَزِيْزِ الْغَفَّارِ
তোমরা কি আমাকে আল্লাহকে অস্বীকার করা এবং তাঁর সাথে শরীক স্থাপন করার দিকে আহবান করছ, যা সম্পর্কে আমার কোন জ্ঞান নেই? পক্ষান্তরে আমি তোমাদেরকে আহবান করছি মহাপরাক্রমশালী ও ক্ষমাশীল আল্লাহর দিকে। (সূরা মু’মিনু ৪২)
সে শিরকের অসারতা প্রমাণ করল :
لَا جَرَمَ اَنَّمَا تَدْعُوْنَنِيْۤ اِلَيْهِ لَيْسَ لَهٗ دَعْوَةٌ فِى الدُّنْيَا وَلَا فِى الْاٰخِرَةِ وَاَنَّ مَرَدَّنَاۤ اِلَى اللهِ وَاَنَّ الْمُسْرِفِيْنَ هُمْ اَصْحَابُ النَّارِ
নিশ্চয় তোমরা আমাকে ডাকছ এমন একজনের দিকে, যে দুনিয়া ও আখিরাতে কোথাও আহবানযোগ্য নয়। বস্তুত আমাদের প্রত্যাবর্তন তো আল্লাহরই নিকট। নিশ্চয় সীমালঙ্ঘনকারীরাই জাহান্নামের অধিবাসী। (সূরা মু’মিনু ৪৩)
অবশেষে সে আল্লাহর উপর ভরসা করল :
فَسَتَذْكُرُوْنَ مَاۤ اَقُوْلُ لَكُمْؕ وَاُفَوِّضُ اَمْرِيْۤ اِلَى اللهِؕ اِنَّ اللهَ بَصِيْرٌ ۢبِالْعِبَادِ
সুতরাং আমি তোমাদেরকে যা বলছি, তোমরা তা অচিরেই স্মরণ করবে এবং আমি আমার বিষয়টি আল্লাহর নিকট সমর্পণ করছি। নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখেন। (সূরা মু’মিনু ৪৪)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতাংশ থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, এ কথা বলার সময় উক্ত মুমিন ব্যক্তির দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে, এ সত্য বলার অপরাধে সে ফিরাউনের গোটা রাজশক্তির রোষানলে পড়বে এবং তাকে শুধু তার সম্মান ও মর্যাদা হারাতে হবে তাই নয়, জীবনের আশাও ছেড়ে দিতে হবে।
আল্লাহ তাকে জাতির ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করলেন :
فَوَقَاهُ اللهُ سَيِّئَاتِ مَا مَكَرُوْا وَحَاقَ بِاٰلِ فِرْعَوْنَ سُوْٓءُ الْعَذَابِ
অতঃপর আল্লাহ তাকে তাদের ষড়যন্ত্রের অনিষ্ট হতে রক্ষা করলেন। আর ফিরাউন সম্প্রদায়ের উপর পতিত হলো কঠিন আযাব। (সূরা মু’মিনু ৪৫)
ব্যাখ্যা : এ থেকে জানা যায়, ফিরাউনের সাম্রাজ্যে সে ব্যক্তি এতটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিল যে, ভরা মজলিসে ফিরাউনের মুখের উপরে এ ধরনের সত্য কথা বলা সত্ত্বেও তাকে প্রকাশ্যে শাস্তি দেয়ার সাহস হয়নি। এ কারণে তাকে হত্যা করার জন্য ফিরাউন ও তার সহযোগীদের গোপনে ষড়যন্ত্র করতে হয়েছিল। কিন্তু আল্লাহ সে ষড়যন্ত্র বাস্তবায়িত হতে দেননি।
وَقَالَ رَجُلٌ مُّؤْمِنٌۗ مِنْ اٰلِ فِرْعَوْنَ يَكْتُمُ اِيْمَانَهٗۤ اَتَقْتُلُوْنَ رَجُلًا اَنْ يَّقُوْلَ رَبِّيَ اللهُ وَقَدْ جَآءَكُمْ بِالْبَيِّنَاتِ مِنْ رَّبِّكُمْ
ফিরাউন বংশের এক ব্যক্তি যে মুমিন ছিল এবং নিজের ঈমান গোপন রাখত সে বলল, তোমরা কি ঐ ব্যক্তিকে এজন্য হত্যা করবে যে, সে বলে- আমার প্রতিপালক আল্লাহ? অথচ সে তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে সুস্পষ্ট প্রমাণসহ তোমাদের নিকট এসেছে। (সূরা মু’মিনু ২৮)
সে জাতিকে আযাবের ভয় দেখাল :
وَاِنْ يَّكُ كَاذِبًا فَعَلَيْهِ كَذِبُهٗۚ وَاِنْ يَّكُ صَادِقًا يُّصِبْكُمْ بَعْضُ الَّذِيْ يَعِدُكُمْؕ اِنَّ اللهَ لَا يَهْدِيْ مَنْ هُوَ مُسْرِفٌ كَذَّابٌ
যদি সে মিথ্যাবাদী হয়, তবে তার মিথ্যার প্রতিফল সে ভোগ করবে। আর যদি সে সত্যবাদী হয়, তবে সে তোমাদেরকে যে শাস্তির কথা বলে তার কিছু অংশ তোমাদের উপর আপতিত হবেই। আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারী ও মিথ্যাবাদীকে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (সূরা মু’মিনু ২৮)
পার্থিব ক্ষমতার বাস্তবতা তুলে ধরল :
يَا قَوْمِ لَكُمُ الْمُلْكُ الْيَوْمَ ظَاهِرِيْنَ فِى الْاَرْضِؗ فَمَنْ يَّنْصُرُنَا مِنْ ۢبَأْسِ اللهِ اِنْ جَآءَنَا
হে আমার সম্প্রদায়! আজকের কর্তৃত্ব তোমাদের হাতে, পৃথিবীতে এখন তোমরাই প্রবল। কিন্তু আমাদের উপর আল্লাহর শাস্তি এসে পড়লে কে আমাদেরকে সাহায্য করবে? (সূরা মু’মিনু ২৯)
ফিরাউন নিজের সিদ্ধান্তকেই সঠিক মনে করল :
قَالَ فِرْعَوْنُ مَاۤ اُرِيْكُمْ اِلَّا مَاۤ اَرٰى وَمَاۤ اَهْدِيْكُمْ اِلَّا سَبِيْلَ الرَّشَادِ
ফিরাউন বলল, আমি যা বুঝি তোমাদেরকে তা–ই বলছি। আমি তোমাদেরকে সৎপথই দেখিয়ে থাকি।
(সূরা মু’মিনু ২৯)
মুমিন লোকটি পূর্বের ইতিহাস মনে করিয়ে দিল :
وَقَالَ الَّذِيْۤ اٰمَنَ يَا قَوْمِ اِنِّۤيْ اَخَافُ عَلَيْكُمْ مِّثْلَ يَوْمِ الْاَحْزَابِ ‐ مِثْلَ دَأْبِ قَوْمِ نُوْحٍ وَّعَادٍ وَّثَمُوْدَ وَالَّذِيْنَ مِنْ ۢبَعْدِهِمْ
মুমিন ব্যক্তিটি বলল, হে আমার সম্প্রদায়! আমি তোমাদের জন্য পূর্ববর্তী সম্প্রদায়সমূহের শাস্তির দিনের অনুরূপ আশঙ্কা করি। যেমন নূহ (আঃ) এর সম্প্রদায়, আদ, সামূদ এবং তাদের পরবর্তীদের ক্ষেত্রে ঘটেছিল। (সূরা মু’মিনু ৩০, ৩১)
কিয়ামত দিবসের ভয় দেখাল :
وَيَا قَوْمِ اِنِّۤيْ اَخَافُ عَلَيْكُمْ يَوْمَ التَّنَادِ ‐ يَوْمَ تُوَلُّوْنَ مُدْبِرِيْنَۚ مَا لَكُمْ مِّنَ اللهِ مِنْ عَاصِمٍؕ وَمَنْ يُّضْلِلِ اللهُ فَمَا لَهٗ مِنْ هَادٍ
হে আমার সম্প্রদায়! আমি তোমাদের জন্য ফরিয়াদ (কিয়ামত) দিবসের আশঙ্কা করি। যেদিন তোমরা পশ্চাৎ ফিরে পলায়ন করতে চাইবে, কিন্তু আল্লাহর শাস্তি হতে তোমাদেরকে রক্ষা করার মতো কেউ থাকবে না। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার কোন পথপ্রদর্শক নেই। (সূরা মু’মিনু ৩২, ৩৩)
ইউসুফ (আঃ) এর কথা স্মরণ করিয়ে দিল :
وَلَقَدْ جَآءَكُمْ يُوْسُفُ مِنْ قَبْلُ بِالْبَيِّنَاتِ فَمَا زِلْتُمْ فِيْ شَكٍّ مِّمَّا جَآءَكُمْ بِه ۚ حَتّٰۤى اِذَا هَلَكَ قُلْتُمْ لَنْ يَّبْعَثَ اللهُ مِنْ ۢبَعْدِه رَسُوْلًا ؕ كَذٰلِكَ يُضِلُّ اللهُ مَنْ هُوَ مُسْرِفٌ مُّرْتَابٌ
ইতোপূর্বেও তোমাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শন সহকারে ইউসুফ (আঃ) এসেছিলেন, কিন্তু সে যা নিয়ে এসেছিল তোমরা তাতে বার বার সন্দেহ পোষণ করতে। পরিশেষে যখন তাঁর মৃত্যু হলো তখন তোমরা বলেছিলে, এরপর আল্লাহ আর কখনো কাউকে রাসূল হিসেবে প্রেরণ করবেন না। এভাবে আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারী ও সন্দেহ পোষণকারীদেরকে বিভ্রান্ত করেন। (সূরা মু’মিনু ৩৪)
আল্লাহর বিরুদ্ধে বিতর্কে লিপ্ত হওয়ার পরিণাম জানানো হলো :
اَلَّذِيْنَ يُجَادِلُوْنَ فِۤيْ اٰيَاتِ اللهِ بِغَيْرِ سُلْطَانٍ اَتَاهُمْؕ كَبُرَ مَقْتًا عِنْدَ اللهِ وَعِنْدَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاؕ كَذٰلِكَ يَطْبَعُ اللهُ عَلٰى كُلِّ قَلْبِ مُتَكَبِّرٍ جَبَّارٍ
যারা নিজেদের নিকট কোন দলীল প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও আল্লাহর নিদর্শন সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত হয়, (তাদের এ কর্ম) আল্লাহ এবং মুমিনদের নিকট অতিশয় ঘৃণিত। এভাবে আল্লাহ প্রত্যেক অহংকারী ও স্বৈরাচারী ব্যক্তির হৃদয়ে মোহর মেরে দেন। (সূরা মু’মিনু ৩৫)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ বিনা কারণে কারো মনে মোহর লাগিয়ে দেয়া হয় না। যার মধ্যে অহংকার ও স্বেচ্ছাচারিতা সৃষ্টি হয় লানতের এ মোহর কেবল তার মনেই লাগানো হয়। ‘তাকাববুর’ অর্থ ব্যক্তির মিথ্যা অহংকার, যার কারণে ন্যায় ও সত্যের সামনে মাথা নত করাকে সে তার মর্যাদার চেয়ে নীচু কাজ বলে মনে করে। স্বেচ্ছাচারিতা অর্থ আল্লাহর সৃষ্টির উপর যুলুম করা। এ যুলুমের অবাধ লাইসেন্স লাভের জন্য ব্যক্তি আল্লাহর শরীয়াতের বাধ্যবাধকতা মেনে নেয়া থেকে দূরে থাকে।
ফিরাউন হামানকে প্রাসাদ নির্মাণের নির্দেশ দিল :
وَقَالَ فِرْعَوْنُ يَا هَامَانُ ابْنِ لِيْ صَرْحًا لَّعَلِّيْۤ اَبْلُغُ الْاَسْبَابَ
ফিরাউন বলল, হে হামান! আমার জন্য তুমি এক সুউচ্চ প্রাসাদ নির্মাণ করো, যাতে আমি (মূসার প্রভুকে দেখার) মাধ্যম পাই। (সূরা মু’মিনু ৩৬)
সে মূসা (আঃ) এর প্রতিপালককে দেখার দুঃসাহস করল :
اَسْبَابَ السَّمَاوَاتِ فَاَطَّلِعَ اِلٰۤى اِلٰهِ مُوْسٰى وَاِنِّيْ لَاَظُنُّهٗ كَاذِبًاؕ وَكَذٰلِكَ زُيِّنَ لِفِرْعَوْنَ سُوْٓءُ عَمَلِه وَصُدَّ عَنِ السَّبِيْلِؕ وَمَا كَيْدُ فِرْعَوْنَ اِلَّا فِيْ تَبَابٍ
যা (প্রাসাদটি) হবে আকাশে উঠার মাধ্যম, যাতে করে আমি মূসার ইলাহকে দেখতে পাই। আমি তো তাকে মিথ্যাবাদী মনে করি। এভাবেই ফিরাউনের নিকট তার মন্দ কর্মগুলোকে শোভনীয় করা হয়েছিল এবং তাকে সরল পথ হতে প্রতিহত করা হয়েছিল। অতঃপর ফিরাউনের ষড়যন্ত্র সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছিল। (সূরা মু’মিনু ৩৭)
মুমিন লোকটি জাতিকে তার অনুসরণের দাওয়াত দিল :
وَقَالَ الَّذِيْۤ اٰمَنَ يَا قَوْمِ اتَّبِعُوْنِ اَهْدِكُمْ سَبِيْلَ الرَّشَادِ
যে ব্যক্তি ঈমান এনেছিল সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আমার অনুসরণ করো, আমি তোমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করব। (সূরা মু’মিনু ৩৮)
সে পার্থিব জীবনের বাস্তবতা তুলে ধরল :
يَا قَوْمِ اِنَّمَا هٰذِهِ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا مَتَاعٌؗ وَاِنَّ الْاٰخِرَةَ هِيَ دَارُ الْقَرَارِ
হে আমার সম্প্রদায়! নিশ্চয় পার্থিব জীবন (অস্থায়ী) উপভোগের বস্তু মাত্র। আর আখিরাতই হচ্ছে চিরস্থায়ী আবাস। (সূরা মু’মিনু ৩৯)
সে জান্নাতের ফযীলত বর্ণনা করল :
مَنْ عَمِلَ سَيِّئَةً فَلَا يُجْزٰۤى اِلَّا مِثْلَهَاۚ وَمَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَاُولٰٓئِكَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ يُرْزَقُوْنَ فِيْهَا بِغَيْرِ حِسَابٍ
যে ব্যক্তি মন্দ আমল করবে, সে শুধু তার অনুরূপ শাস্তি পাবে। আর পুরুষ কিংবা নারীদের মধ্যে যারা মুমিন হয়ে সৎ আমল করে, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। অতঃপর সেখানে তারা অসংখ্য রিযিকপ্রাপ্ত হবে। (সূরা মু’মিনু ৪০)
হৃদয়ের আবেগ দিয়ে বুঝাতে চেষ্ট করল :
وَيَا قَوْمِ مَا لِۤيْ اَدْعُوْكُمْ اِلَى النَّجَاةِ وَتَدْعُوْنَنِيْۤ اِلَى النَّارِ
হে আমার সম্প্রদায়! এ কেমন কথা! আমি তোমাদেরকে আহবান করছি মুক্তির দিকে, আর তোমরা আমাকে আহবান করছ জাহান্নামের দিকে। (সূরা মু’মিনু ৪১)
মুমিন লোকটি জাতির ভুল তুলে ধরল :
تَدْعُوْنَنِيْ لِاَكْفُرَ بِاللهِ وَاُشْرِكَ بِه مَا لَيْسَ لِيْ بِه عِلْمٌؗ وَاَنَاْ اَدْعُوْكُمْ اِلَى الْعَزِيْزِ الْغَفَّارِ
তোমরা কি আমাকে আল্লাহকে অস্বীকার করা এবং তাঁর সাথে শরীক স্থাপন করার দিকে আহবান করছ, যা সম্পর্কে আমার কোন জ্ঞান নেই? পক্ষান্তরে আমি তোমাদেরকে আহবান করছি মহাপরাক্রমশালী ও ক্ষমাশীল আল্লাহর দিকে। (সূরা মু’মিনু ৪২)
সে শিরকের অসারতা প্রমাণ করল :
لَا جَرَمَ اَنَّمَا تَدْعُوْنَنِيْۤ اِلَيْهِ لَيْسَ لَهٗ دَعْوَةٌ فِى الدُّنْيَا وَلَا فِى الْاٰخِرَةِ وَاَنَّ مَرَدَّنَاۤ اِلَى اللهِ وَاَنَّ الْمُسْرِفِيْنَ هُمْ اَصْحَابُ النَّارِ
নিশ্চয় তোমরা আমাকে ডাকছ এমন একজনের দিকে, যে দুনিয়া ও আখিরাতে কোথাও আহবানযোগ্য নয়। বস্তুত আমাদের প্রত্যাবর্তন তো আল্লাহরই নিকট। নিশ্চয় সীমালঙ্ঘনকারীরাই জাহান্নামের অধিবাসী। (সূরা মু’মিনু ৪৩)
অবশেষে সে আল্লাহর উপর ভরসা করল :
فَسَتَذْكُرُوْنَ مَاۤ اَقُوْلُ لَكُمْؕ وَاُفَوِّضُ اَمْرِيْۤ اِلَى اللهِؕ اِنَّ اللهَ بَصِيْرٌ ۢبِالْعِبَادِ
সুতরাং আমি তোমাদেরকে যা বলছি, তোমরা তা অচিরেই স্মরণ করবে এবং আমি আমার বিষয়টি আল্লাহর নিকট সমর্পণ করছি। নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখেন। (সূরা মু’মিনু ৪৪)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতাংশ থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, এ কথা বলার সময় উক্ত মুমিন ব্যক্তির দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে, এ সত্য বলার অপরাধে সে ফিরাউনের গোটা রাজশক্তির রোষানলে পড়বে এবং তাকে শুধু তার সম্মান ও মর্যাদা হারাতে হবে তাই নয়, জীবনের আশাও ছেড়ে দিতে হবে।
আল্লাহ তাকে জাতির ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করলেন :
فَوَقَاهُ اللهُ سَيِّئَاتِ مَا مَكَرُوْا وَحَاقَ بِاٰلِ فِرْعَوْنَ سُوْٓءُ الْعَذَابِ
অতঃপর আল্লাহ তাকে তাদের ষড়যন্ত্রের অনিষ্ট হতে রক্ষা করলেন। আর ফিরাউন সম্প্রদায়ের উপর পতিত হলো কঠিন আযাব। (সূরা মু’মিনু ৪৫)
ব্যাখ্যা : এ থেকে জানা যায়, ফিরাউনের সাম্রাজ্যে সে ব্যক্তি এতটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিল যে, ভরা মজলিসে ফিরাউনের মুখের উপরে এ ধরনের সত্য কথা বলা সত্ত্বেও তাকে প্রকাশ্যে শাস্তি দেয়ার সাহস হয়নি। এ কারণে তাকে হত্যা করার জন্য ফিরাউন ও তার সহযোগীদের গোপনে ষড়যন্ত্র করতে হয়েছিল। কিন্তু আল্লাহ সে ষড়যন্ত্র বাস্তবায়িত হতে দেননি।
মূসা (আঃ) আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করলেন :
فَدَعَا رَبَّهٗۤ اَنَّ هٰۤؤُلَآءِ قَوْمٌ مُّجْرِمُوْنَ
অতঃপর মূসা তাঁর প্রতিপালকের নিকট দু‘আ করলেন, নিশ্চয় এরা অপরাধী সম্প্রদায়। (সূরা দুখানু ২২)
ফিরাউনের বিরুদ্ধে বদ্দু‘আ করলেন :
وَقَالَ مُوْسٰى رَبَّنَاۤ اِنَّكَ اٰتَيْتَ فِرْعَوْنَ وَمَلَاَهٗ زِيْنَةً وَّاَمْوَالًا فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا رَبَّنَا لِيُضِلُّوْا عَنْ سَبِيْلِكَۚ رَبَّنَا اطْمِسْ عَلٰۤى اَمْوَالِهِمْ وَاشْدُدْ عَلٰى قُلُوْبِهِمْ فَلَا يُؤْمِنُوْا حَتّٰى يَرَوُا الْعَذَابَ الْاَلِيْمَ
মূসা বলল, হে আমাদের প্রতিপালক, তুমি তো ফিরাউন ও তার পরিষদবর্গকে পার্থিব জীবনে চাকচিক্য ও সম্পদ দান করেছ। হে আমাদের প্রতিপালক! যার কারণে তারা মানুষকে তোমার পথ হতে ভ্রষ্ট করে। হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের সম্পদ বিনষ্ট করে দাও এবং তাদের হৃদয় কঠিন করে দাও। তারা তো মর্মান্তিক শাস্তি প্রত্যক্ষ না করা পর্যন্ত ঈমান আনবে না। (সূরা ইউনুস– ৮৮)
আল্লাহ তার দু‘আ কবুল করলেন :
قَالَ قَدْ اُجِيْبَتْ دَّعْوَتُكُمَا فَاسْتَقِيْمَا وَلَا تَتَّبِعَآنِّ سَبِيْلَ الَّذِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ
তিনি বললেন, তোমাদের দু’জনের দু‘আ কবুল করা হলো, সুতরাং তোমরা দৃঢ় থাকো এবং অজ্ঞদের পথ অনুসরণ করো না। (সূরা ইউনুস– ৮৯)
আল্লাহ ঈমানদারদেরকে সাথে নিয়ে হিজরত করার নির্দেশ দিলেন :
فَاَسْرِ بِعِبَادِيْ لَيْلًا اِنَّكُمْ مُّتَّبَعُوْنَ
আমি বলেছিলাম, তুমি আমার বান্দাদেরকে নিয়ে রাতে বের হয়ে পড়। নিশ্চয় তোমাদেরকে পেছন থেকে ধাওয়া করা হবে। (সূরা দুখানু ২৩)
ফিরাউন মূসা (আঃ) এর বিরুদ্ধে সৈন্য সংগ্রহ করল :
فَاَرْسَلَ فِرْعَوْنُ فِى الْمَدَآئِنِ حَاشِرِيْنَ ‐ اِنَّ هٰۤؤُلَآءِ لَشِرْذِمَةٌ قَلِيْلُوْنَ ‐ وَاِنَّهُمْ لَنَا لَغَآئِظُوْنَ ‐ وَاِنَّا لَجَمِيْعٌ حَاذِرُوْنَ
অতঃপর ফিরাউন শহরে শহরে সংগ্রাহক পাঠিয়ে দিল। (এ বলে যে) নিশ্চয় এরা একটি ক্ষুদ্র দল, তারা আমাদেরকে ক্রোধান্বিত করেছে। আর আমরা সকলেই একটি সতর্ককারী দল। (সূরা শু‘আরা, ৫৩–৫৬)
আল্লাহ তাদেরকে তাদের ধনসম্পদ হতে বের করে আনলেন :
فَاَخْرَجْنَاهُمْ مِّنْ جَنَّاتٍ وَّعُيُوْنٍ ‐ وَكُنُوْزٍ وَّمَقَامٍ كَرِيْمٍ
ফলে আমি তাদেরকে বহিষ্কৃত করলাম তাদের উদ্যানরাজি ও ঝর্ণাসমূহ হতে এবং ধনভান্ডার ও সম্মানজনক বাসস্থান হতে। (সূরা শু‘আরা– ৫৭, ৫৮)
মূসা (আঃ) এর অনুসারীরা ভয় পেয়ে গেলেন :
فَاَتْبَعُوْهُمْ مُّشْرِقِيْنَ ‐ فَلَمَّا تَرَآءَى الْجَمْعَانِ قَالَ اَصْحَابُ مُوْسٰۤى اِنَّا لَمُدْرَكُوْنَ
সূর্যোদয়কালে তারা তাদের পশ্চাতে অনুসরণ করল। অতঃপর যখন দু’দল পরস্পরকে দেখতে পেল, তখন মূসার সাথিরা বলল, আমরা তো ধরা পড়ে গেলাম! (সূরা শু‘আরা– ৬০, ৬১)
মূসা (আঃ) তাদেরকে সাহস যোগালেন :
قَالَ كَلَّاۚ اِنَّ مَعِيَ رَبِّيْ سَيَهْدِيْنِ
মূসা বলল, কখনই নয়! আমার প্রতিপালক আমার সঙ্গে রয়েছেন, অতি শীঘ্রই তিনি আমাকে পথনির্দেশ করবেন। (সূরা শু‘আরা– ৬২)
আল্লাহ তাদেরকে ভয় করতে নিষেধ করলেন :
وَلَقَدْ اَوْحَيْنَاۤ اِلٰى مُوْسٰۤى اَنْ اَسْرِ بِعِبَادِيْ فَاضْرِبْ لَهُمْ طَرِيْقًا فِى الْبَحْرِ يَبَسًا لَّا تَخَافُ دَرَكًا وَّلَا تَخْشٰى
আমি অবশ্যই মূসার প্রতি ওহী করেছিলাম এ মর্মে যে, আমার বান্দাদেরকে নিয়ে রাতে বের হয়ে যাও এবং তাদের জন্য সমুদ্রের মধ্য দিয়ে এক শুষ্ক পথ নির্মাণ করো। আর তুমি এ আশঙ্কা করো না যে, পেছন হতে এসে তারা তোমাকে ধরে ফেলবে। অতঃপর তুমি অন্য কোন ভয়ও করো না। (সূরা ত্বা–হা– ৭৭)
মূসা (আঃ) কে লাঠি দিয়ে সাগরে আঘাত করতে বললেন :
فَاَوْحَيْنَاۤ اِلٰى مُوْسٰۤى اَنِ اضْرِبْ بِّعَصَاكَ الْبَحْرَؕ فَانْفَلَقَ فَكَانَ كُلُّ فِرْقٍ كَالطَّوْدِ الْعَظِيْمِ
অতঃপর মূসার প্রতি ওহী করলাম যে, তোমার লাঠি দ্বারা সমুদ্রে আঘাত করো। ফলে তা বিভক্ত হয়ে গেল এবং প্রত্যেক ভাগ বিশাল বিশাল পবর্তের মতো রূপ নিল। (সূরা শু‘আরা– ৬৩)
মূসা (আঃ) ও তার সাথিদের উদ্ধার করা হলো :
وَاَنْجَيْنَا مُوْسٰى وَمَنْ مَّعَهٗۤ اَجْمَعِيْنَ
অতঃপর আমি উদ্ধার করলাম মূসা ও তার সাথিদের সকলকে। (সূরা শু‘আরা– ৬৫)
বনী ইসরাঈলরা সমুদ্র পার হয়ে গেল :
وَجَاوَزْنَا بِبَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ الْبَحْرَ
আর আমি বনী ইসরাঈলকে সমুদ্র পার করালাম। (সূরা ইউনুস– ৯০)
فَدَعَا رَبَّهٗۤ اَنَّ هٰۤؤُلَآءِ قَوْمٌ مُّجْرِمُوْنَ
অতঃপর মূসা তাঁর প্রতিপালকের নিকট দু‘আ করলেন, নিশ্চয় এরা অপরাধী সম্প্রদায়। (সূরা দুখানু ২২)
ফিরাউনের বিরুদ্ধে বদ্দু‘আ করলেন :
وَقَالَ مُوْسٰى رَبَّنَاۤ اِنَّكَ اٰتَيْتَ فِرْعَوْنَ وَمَلَاَهٗ زِيْنَةً وَّاَمْوَالًا فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا رَبَّنَا لِيُضِلُّوْا عَنْ سَبِيْلِكَۚ رَبَّنَا اطْمِسْ عَلٰۤى اَمْوَالِهِمْ وَاشْدُدْ عَلٰى قُلُوْبِهِمْ فَلَا يُؤْمِنُوْا حَتّٰى يَرَوُا الْعَذَابَ الْاَلِيْمَ
মূসা বলল, হে আমাদের প্রতিপালক, তুমি তো ফিরাউন ও তার পরিষদবর্গকে পার্থিব জীবনে চাকচিক্য ও সম্পদ দান করেছ। হে আমাদের প্রতিপালক! যার কারণে তারা মানুষকে তোমার পথ হতে ভ্রষ্ট করে। হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের সম্পদ বিনষ্ট করে দাও এবং তাদের হৃদয় কঠিন করে দাও। তারা তো মর্মান্তিক শাস্তি প্রত্যক্ষ না করা পর্যন্ত ঈমান আনবে না। (সূরা ইউনুস– ৮৮)
আল্লাহ তার দু‘আ কবুল করলেন :
قَالَ قَدْ اُجِيْبَتْ دَّعْوَتُكُمَا فَاسْتَقِيْمَا وَلَا تَتَّبِعَآنِّ سَبِيْلَ الَّذِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ
তিনি বললেন, তোমাদের দু’জনের দু‘আ কবুল করা হলো, সুতরাং তোমরা দৃঢ় থাকো এবং অজ্ঞদের পথ অনুসরণ করো না। (সূরা ইউনুস– ৮৯)
আল্লাহ ঈমানদারদেরকে সাথে নিয়ে হিজরত করার নির্দেশ দিলেন :
فَاَسْرِ بِعِبَادِيْ لَيْلًا اِنَّكُمْ مُّتَّبَعُوْنَ
আমি বলেছিলাম, তুমি আমার বান্দাদেরকে নিয়ে রাতে বের হয়ে পড়। নিশ্চয় তোমাদেরকে পেছন থেকে ধাওয়া করা হবে। (সূরা দুখানু ২৩)
ফিরাউন মূসা (আঃ) এর বিরুদ্ধে সৈন্য সংগ্রহ করল :
فَاَرْسَلَ فِرْعَوْنُ فِى الْمَدَآئِنِ حَاشِرِيْنَ ‐ اِنَّ هٰۤؤُلَآءِ لَشِرْذِمَةٌ قَلِيْلُوْنَ ‐ وَاِنَّهُمْ لَنَا لَغَآئِظُوْنَ ‐ وَاِنَّا لَجَمِيْعٌ حَاذِرُوْنَ
অতঃপর ফিরাউন শহরে শহরে সংগ্রাহক পাঠিয়ে দিল। (এ বলে যে) নিশ্চয় এরা একটি ক্ষুদ্র দল, তারা আমাদেরকে ক্রোধান্বিত করেছে। আর আমরা সকলেই একটি সতর্ককারী দল। (সূরা শু‘আরা, ৫৩–৫৬)
আল্লাহ তাদেরকে তাদের ধনসম্পদ হতে বের করে আনলেন :
فَاَخْرَجْنَاهُمْ مِّنْ جَنَّاتٍ وَّعُيُوْنٍ ‐ وَكُنُوْزٍ وَّمَقَامٍ كَرِيْمٍ
ফলে আমি তাদেরকে বহিষ্কৃত করলাম তাদের উদ্যানরাজি ও ঝর্ণাসমূহ হতে এবং ধনভান্ডার ও সম্মানজনক বাসস্থান হতে। (সূরা শু‘আরা– ৫৭, ৫৮)
মূসা (আঃ) এর অনুসারীরা ভয় পেয়ে গেলেন :
فَاَتْبَعُوْهُمْ مُّشْرِقِيْنَ ‐ فَلَمَّا تَرَآءَى الْجَمْعَانِ قَالَ اَصْحَابُ مُوْسٰۤى اِنَّا لَمُدْرَكُوْنَ
সূর্যোদয়কালে তারা তাদের পশ্চাতে অনুসরণ করল। অতঃপর যখন দু’দল পরস্পরকে দেখতে পেল, তখন মূসার সাথিরা বলল, আমরা তো ধরা পড়ে গেলাম! (সূরা শু‘আরা– ৬০, ৬১)
মূসা (আঃ) তাদেরকে সাহস যোগালেন :
قَالَ كَلَّاۚ اِنَّ مَعِيَ رَبِّيْ سَيَهْدِيْنِ
মূসা বলল, কখনই নয়! আমার প্রতিপালক আমার সঙ্গে রয়েছেন, অতি শীঘ্রই তিনি আমাকে পথনির্দেশ করবেন। (সূরা শু‘আরা– ৬২)
আল্লাহ তাদেরকে ভয় করতে নিষেধ করলেন :
وَلَقَدْ اَوْحَيْنَاۤ اِلٰى مُوْسٰۤى اَنْ اَسْرِ بِعِبَادِيْ فَاضْرِبْ لَهُمْ طَرِيْقًا فِى الْبَحْرِ يَبَسًا لَّا تَخَافُ دَرَكًا وَّلَا تَخْشٰى
আমি অবশ্যই মূসার প্রতি ওহী করেছিলাম এ মর্মে যে, আমার বান্দাদেরকে নিয়ে রাতে বের হয়ে যাও এবং তাদের জন্য সমুদ্রের মধ্য দিয়ে এক শুষ্ক পথ নির্মাণ করো। আর তুমি এ আশঙ্কা করো না যে, পেছন হতে এসে তারা তোমাকে ধরে ফেলবে। অতঃপর তুমি অন্য কোন ভয়ও করো না। (সূরা ত্বা–হা– ৭৭)
মূসা (আঃ) কে লাঠি দিয়ে সাগরে আঘাত করতে বললেন :
فَاَوْحَيْنَاۤ اِلٰى مُوْسٰۤى اَنِ اضْرِبْ بِّعَصَاكَ الْبَحْرَؕ فَانْفَلَقَ فَكَانَ كُلُّ فِرْقٍ كَالطَّوْدِ الْعَظِيْمِ
অতঃপর মূসার প্রতি ওহী করলাম যে, তোমার লাঠি দ্বারা সমুদ্রে আঘাত করো। ফলে তা বিভক্ত হয়ে গেল এবং প্রত্যেক ভাগ বিশাল বিশাল পবর্তের মতো রূপ নিল। (সূরা শু‘আরা– ৬৩)
মূসা (আঃ) ও তার সাথিদের উদ্ধার করা হলো :
وَاَنْجَيْنَا مُوْسٰى وَمَنْ مَّعَهٗۤ اَجْمَعِيْنَ
অতঃপর আমি উদ্ধার করলাম মূসা ও তার সাথিদের সকলকে। (সূরা শু‘আরা– ৬৫)
বনী ইসরাঈলরা সমুদ্র পার হয়ে গেল :
وَجَاوَزْنَا بِبَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ الْبَحْرَ
আর আমি বনী ইসরাঈলকে সমুদ্র পার করালাম। (সূরা ইউনুস– ৯০)
সমুদ্রকে স্থির রাখা হলো :
وَاتْرُكِ الْبَحْرَ رَهْوًاؕ اِنَّهُمْ جُنْدٌ مُّغْرَقُوْنَ
সমুদ্রকে স্থির থাকতে দাও, কেননা তারা এমন এক বাহিনী যারা নিমজ্জিত হবেই। (সূরা দুখানু ২৪)
ফিরাউন তার দল নিয়ে নদীতে নামল :
وَاَزْلَفْنَا ثَمَّ الْاٰخَرِيْنَ
অতঃপর আমি অপর দলটিকে সেথায় উপনীত করলাম। (সূরা শু‘আরা– ৬৪)
পানিতে ডুবার সময় ফিরাউন ঈমান আনল :
حَتّٰۤى اِذَاۤ اَدْرَكَهُ الْغَرَقُ قَالَ اٰمَنْتُ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا الَّذِيْۤ اٰمَنَتْ بِه بَنُوْاۤ اِسْرَآئِيْلَ وَاَنَاْ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ
পরিশেষে যখন সে নিমজ্জিত হলো তখন বলল, বনী ইসরাঈলরা যাতে ঈমান আনয়ন করেছে আমিও তাতে ঈমান আনয়ন করলাম। নিশ্চয় তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই। আর আমি আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা ইউনুস– ৯০)
আল্লাহ বললেন, এখন কি টনক নড়েছে?
آٰلْاٰنَ وَقَدْ عَصَيْتَ قَبْلُ وَكُنْتَ مِنَ الْمُفْسِدِيْنَ
এখন! ইতোপূর্বে তুমি তো অমান্য করেছ এবং তুমি অশান্তি সৃষ্টিকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে। (সূরা ইউনুস– ৯১)
ফিরাউনের দল ডুবে মরল :
فَانْتَقَمْنَا مِنْهُمْ فَاَغْرَقْنَاهُمْ فِى الْيَمِّ بِاَنَّهُمْ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَا وَكَانُوْا عَنْهَا غَافِلِيْنَ
সুতরাং আমি তাদেরকে শাস্তি দিয়েছি এবং তাদেরকে অতল সমুদ্রে নিমজ্জিত করেছি। কারণ তারা আমার নিদর্শনকে অস্বীকার করত এবং এ সম্বন্ধে তারা ছিল গাফিল। (সূরা আ‘রাফু ১৩৬)
ثُمَّ اَغْرَقْنَا الْاٰخَرِيْنَ
অতঃপর অপর দলটিকে নিমজ্জিত করলাম। (সূরা শু‘আরা– ৬৬)
فَاَتْبَعَهُمْ فِرْعَوْنُ بِجُنُوْدِه فَغَشِيَهُمْ مِّنَ الْيَمِّ مَا غَشِيَهُمْ
অতঃপর ফিরাউন তার সৈন্যসামন্ত নিয়ে তাদের পিছু নিল। আর সমুদ্র তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে ডুবিয়ে দিল। (সূরা ত্বা–হা– ৭৮)
আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দিলেন :
فَلَمَّاۤ اٰسَفُوْنَا انْتَقَمْنَا مِنْهُمْ فَاَغْرَقْنَاهُمْ اَجْمَعِيْنَ
যখন তারা আমাকে ক্রোধান্বিত করল, তখন আমি তাদেরকে শাস্তি দিলাম এবং তাদের সবাইকে নিমজ্জিত করলাম। (সূরা যুখরুফু ৫৫)
فَصَبَّ عَلَيْهِمْ رَبُّكَ سَوْطَ عَذَابٍ
অতঃপর আপনার পালনকর্তা তাদেরকে শাস্তির কশাঘাত করলেন। (সূরা ফাজর– ১৩)
তাকে কঠোরভাবে পাকড়াও করলেন :
فَعَصٰى فِرْعَوْنُ الرَّسُوْلَ فَاَخَذْنَاهُ اَخْذًا وَّبِيْلًا
ফিরাউন রাসূলকে অমান্য করেছিল, ফলে আমি তাকে কঠোরভাবে পাকড়াও করেছিলাম। (সূরা মুয্যাম্মিল– ১৬)
وَجَآءَ فِرْعَوْنُ وَمَنْ قَبْلَهٗ وَالْمُؤْتَفِكَاتُ بِالْخَاطِئَةِ ‐ فَعَصَوْا رَسُوْلَ رَبِّهِمْ فَاَخَذَهُمْ اَخْذَةً رَّابِيَةً
ফিরাউন ও তার পূর্ববর্তীরা এবং উল্টে যাওয়া বস্তিবাসীরা (লূত সম্প্রদায়) গুরুতর পাপকাজে লিপ্ত ছিল। তারা তাদের প্রতিপালকের রাসূলকে অমান্য করেছিল, ফলে তিনি তাদেরকে কঠোরভাবে পাকড়াও করলেন। (সূরা হাক্কাহ– ৯, ১০)
সে উভয় জগতের আযাবে গ্রেফতার হলো :
فَاَخَذَهُ اللهُ نَكَالَ الْاٰخِرَةِ وَالْاُوْلٰى
অতঃপর আল্লাহ তাকে পরকালের ও ইহকালের আযাব দ্বারা পাকড়াও করলেন। (সূরা নাযি‘আত– ২৫)
তাদের তৈরি করা সবকিছু ধ্বংস হলো :
وَدَمَّرْنَا مَا كَانَ يَصْنَعُ فِرْعَوْنُ وَقَوْمُهٗ وَمَا كَانُوْا يَعْرِشُوْنَ
আর ফিরাউন ও তার সম্প্রদায়রা যেসব (শিল্প ও প্রাসাদ) নির্মাণ করেছিল, তা ধ্বংস করে দেই। (সূরা আ‘রাফু ১৩৭)
তাদের বাগবাগিচা বিফলে গেল :
كَمْ تَرَكُوْا مِنْ جَنَّاتٍ وَّعُيُوْنٍ ‐ وَزُرُوْعٍ وَّمَقَامٍ كَرِيْمٍ ‐ وَنَعْمَةٍ كَانُوْا فِيْهَا فَاكِهِيْنَ
তারা ছেড়ে গিয়েছিল কত উদ্যান ও কত ঝর্ণাধারা, কত শস্যক্ষেত্র ও সুরম্য প্রাসাদ এবং কতই না বিলাসবহুল উপকরণ, যা তাদেরকে আনন্দ দিত! (সূরা দুখান, ২৫–২৭)
তারা লাঞ্ছিত হয়ে মারা গেল :
فَاَخَذْنَاهُ وَجُنُوْدَهٗ فَنَبَذْنَاهُمْ فِى الْيَمِّ وَهُوَ مُلِيْمٌ
সুতরাং আমি তাকে ও তার সৈন্যবাহিনীকে পাকড়াও করলাম এবং তাদেরকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করলাম; ফলে সে তিরস্কৃত হলো। (সূরা যারিয়াত– ৪০)
তাদের দরদী কাউকে পাওয়া গেল না :
فَمَا بَكَتْ عَلَيْهِمُ السَّمَآءُ وَالْاَرْضُ وَمَا كَانُوْا مُنْظَرِيْنَ
অতঃপর আকাশ এবং পৃথিবী কেউই তাদের জন্য অশ্রুপাত করেনি এবং তাদেরকে অবকাশও দেয়া হয়নি। (সূরা দুখানু ২৯)
এখন তারা বারযাখের শাস্তি ভোগ করছে :
وَحَاقَ بِاٰلِ فِرْعَوْنَ سُوْٓءُ الْعَذَابِ ‐ اَلنَّارُ يُعْرَضُوْنَ عَلَيْهَا غُدُوًّا وَّعَشِيًّا
আর ফিরাউনের সম্প্রদায়কে নিকৃষ্ট শাস্তি পরিবেষ্টন করল। সকাল–সন্ধ্যায় তাদেরকে উপস্থিত করা হয় আগুনের সম্মুখে। (সূরা মু’মিনু ৪৫)
কিয়ামতের দিন তারা ঘৃণিত হবে :
وَاَتْبَعْنَاهُمْ فِيْ هٰذِهِ الدُّنْيَا لَعْنَةًۚ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ هُمْ مِّنَ الْمَقْبُوْحِيْنَ
এ পৃথিবীতে আমি তাদের সাথে লাগিয়ে দিয়েছি অভিশাপ এবং কিয়ামতের দিন তারা ঘৃণিতদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা ক্বাসাস– ৪২)
তারা কঠিন আযাবে নিক্ষিপ্ত হবে :
وَيَوْمَ تَقُوْمُ السَّاعَةُ اَدْخِلُوْاۤ اٰلَ فِرْعَوْنَ اَشَدَّ الْعَذَابِ
আর যেদিন কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে, সেদিন (বলা হবে) ফিরাউন সম্প্রদায়কে আরো কঠিন শাস্তিতে নিক্ষেপ করো। (সূরা মু’মিনু ৪৬)
ফিরাউন নেতৃত্ব দিয়ে জাতিকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে :
يَقْدُمُ قَوْمَهٗ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَاَوْرَدَهُمُ النَّارَؕ وَبِئْسَ الْوِرْدُ الْمَوْرُوْدُ
সে কিয়ামতের দিন তার সম্প্রদায়ের অগ্রভাগে থাকবে এবং সে তাদেরকে নিয়ে অগ্নিতে প্রবেশ করবে। আর তাদের প্রবেশস্থল কতই না নিকৃষ্ট! (সূরা হুদু ৯৮)
وَاتْرُكِ الْبَحْرَ رَهْوًاؕ اِنَّهُمْ جُنْدٌ مُّغْرَقُوْنَ
সমুদ্রকে স্থির থাকতে দাও, কেননা তারা এমন এক বাহিনী যারা নিমজ্জিত হবেই। (সূরা দুখানু ২৪)
ফিরাউন তার দল নিয়ে নদীতে নামল :
وَاَزْلَفْنَا ثَمَّ الْاٰخَرِيْنَ
অতঃপর আমি অপর দলটিকে সেথায় উপনীত করলাম। (সূরা শু‘আরা– ৬৪)
পানিতে ডুবার সময় ফিরাউন ঈমান আনল :
حَتّٰۤى اِذَاۤ اَدْرَكَهُ الْغَرَقُ قَالَ اٰمَنْتُ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا الَّذِيْۤ اٰمَنَتْ بِه بَنُوْاۤ اِسْرَآئِيْلَ وَاَنَاْ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ
পরিশেষে যখন সে নিমজ্জিত হলো তখন বলল, বনী ইসরাঈলরা যাতে ঈমান আনয়ন করেছে আমিও তাতে ঈমান আনয়ন করলাম। নিশ্চয় তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই। আর আমি আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা ইউনুস– ৯০)
আল্লাহ বললেন, এখন কি টনক নড়েছে?
آٰلْاٰنَ وَقَدْ عَصَيْتَ قَبْلُ وَكُنْتَ مِنَ الْمُفْسِدِيْنَ
এখন! ইতোপূর্বে তুমি তো অমান্য করেছ এবং তুমি অশান্তি সৃষ্টিকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে। (সূরা ইউনুস– ৯১)
ফিরাউনের দল ডুবে মরল :
فَانْتَقَمْنَا مِنْهُمْ فَاَغْرَقْنَاهُمْ فِى الْيَمِّ بِاَنَّهُمْ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَا وَكَانُوْا عَنْهَا غَافِلِيْنَ
সুতরাং আমি তাদেরকে শাস্তি দিয়েছি এবং তাদেরকে অতল সমুদ্রে নিমজ্জিত করেছি। কারণ তারা আমার নিদর্শনকে অস্বীকার করত এবং এ সম্বন্ধে তারা ছিল গাফিল। (সূরা আ‘রাফু ১৩৬)
ثُمَّ اَغْرَقْنَا الْاٰخَرِيْنَ
অতঃপর অপর দলটিকে নিমজ্জিত করলাম। (সূরা শু‘আরা– ৬৬)
فَاَتْبَعَهُمْ فِرْعَوْنُ بِجُنُوْدِه فَغَشِيَهُمْ مِّنَ الْيَمِّ مَا غَشِيَهُمْ
অতঃপর ফিরাউন তার সৈন্যসামন্ত নিয়ে তাদের পিছু নিল। আর সমুদ্র তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে ডুবিয়ে দিল। (সূরা ত্বা–হা– ৭৮)
আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দিলেন :
فَلَمَّاۤ اٰسَفُوْنَا انْتَقَمْنَا مِنْهُمْ فَاَغْرَقْنَاهُمْ اَجْمَعِيْنَ
যখন তারা আমাকে ক্রোধান্বিত করল, তখন আমি তাদেরকে শাস্তি দিলাম এবং তাদের সবাইকে নিমজ্জিত করলাম। (সূরা যুখরুফু ৫৫)
فَصَبَّ عَلَيْهِمْ رَبُّكَ سَوْطَ عَذَابٍ
অতঃপর আপনার পালনকর্তা তাদেরকে শাস্তির কশাঘাত করলেন। (সূরা ফাজর– ১৩)
তাকে কঠোরভাবে পাকড়াও করলেন :
فَعَصٰى فِرْعَوْنُ الرَّسُوْلَ فَاَخَذْنَاهُ اَخْذًا وَّبِيْلًا
ফিরাউন রাসূলকে অমান্য করেছিল, ফলে আমি তাকে কঠোরভাবে পাকড়াও করেছিলাম। (সূরা মুয্যাম্মিল– ১৬)
وَجَآءَ فِرْعَوْنُ وَمَنْ قَبْلَهٗ وَالْمُؤْتَفِكَاتُ بِالْخَاطِئَةِ ‐ فَعَصَوْا رَسُوْلَ رَبِّهِمْ فَاَخَذَهُمْ اَخْذَةً رَّابِيَةً
ফিরাউন ও তার পূর্ববর্তীরা এবং উল্টে যাওয়া বস্তিবাসীরা (লূত সম্প্রদায়) গুরুতর পাপকাজে লিপ্ত ছিল। তারা তাদের প্রতিপালকের রাসূলকে অমান্য করেছিল, ফলে তিনি তাদেরকে কঠোরভাবে পাকড়াও করলেন। (সূরা হাক্কাহ– ৯, ১০)
সে উভয় জগতের আযাবে গ্রেফতার হলো :
فَاَخَذَهُ اللهُ نَكَالَ الْاٰخِرَةِ وَالْاُوْلٰى
অতঃপর আল্লাহ তাকে পরকালের ও ইহকালের আযাব দ্বারা পাকড়াও করলেন। (সূরা নাযি‘আত– ২৫)
তাদের তৈরি করা সবকিছু ধ্বংস হলো :
وَدَمَّرْنَا مَا كَانَ يَصْنَعُ فِرْعَوْنُ وَقَوْمُهٗ وَمَا كَانُوْا يَعْرِشُوْنَ
আর ফিরাউন ও তার সম্প্রদায়রা যেসব (শিল্প ও প্রাসাদ) নির্মাণ করেছিল, তা ধ্বংস করে দেই। (সূরা আ‘রাফু ১৩৭)
তাদের বাগবাগিচা বিফলে গেল :
كَمْ تَرَكُوْا مِنْ جَنَّاتٍ وَّعُيُوْنٍ ‐ وَزُرُوْعٍ وَّمَقَامٍ كَرِيْمٍ ‐ وَنَعْمَةٍ كَانُوْا فِيْهَا فَاكِهِيْنَ
তারা ছেড়ে গিয়েছিল কত উদ্যান ও কত ঝর্ণাধারা, কত শস্যক্ষেত্র ও সুরম্য প্রাসাদ এবং কতই না বিলাসবহুল উপকরণ, যা তাদেরকে আনন্দ দিত! (সূরা দুখান, ২৫–২৭)
তারা লাঞ্ছিত হয়ে মারা গেল :
فَاَخَذْنَاهُ وَجُنُوْدَهٗ فَنَبَذْنَاهُمْ فِى الْيَمِّ وَهُوَ مُلِيْمٌ
সুতরাং আমি তাকে ও তার সৈন্যবাহিনীকে পাকড়াও করলাম এবং তাদেরকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করলাম; ফলে সে তিরস্কৃত হলো। (সূরা যারিয়াত– ৪০)
তাদের দরদী কাউকে পাওয়া গেল না :
فَمَا بَكَتْ عَلَيْهِمُ السَّمَآءُ وَالْاَرْضُ وَمَا كَانُوْا مُنْظَرِيْنَ
অতঃপর আকাশ এবং পৃথিবী কেউই তাদের জন্য অশ্রুপাত করেনি এবং তাদেরকে অবকাশও দেয়া হয়নি। (সূরা দুখানু ২৯)
এখন তারা বারযাখের শাস্তি ভোগ করছে :
وَحَاقَ بِاٰلِ فِرْعَوْنَ سُوْٓءُ الْعَذَابِ ‐ اَلنَّارُ يُعْرَضُوْنَ عَلَيْهَا غُدُوًّا وَّعَشِيًّا
আর ফিরাউনের সম্প্রদায়কে নিকৃষ্ট শাস্তি পরিবেষ্টন করল। সকাল–সন্ধ্যায় তাদেরকে উপস্থিত করা হয় আগুনের সম্মুখে। (সূরা মু’মিনু ৪৫)
কিয়ামতের দিন তারা ঘৃণিত হবে :
وَاَتْبَعْنَاهُمْ فِيْ هٰذِهِ الدُّنْيَا لَعْنَةًۚ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ هُمْ مِّنَ الْمَقْبُوْحِيْنَ
এ পৃথিবীতে আমি তাদের সাথে লাগিয়ে দিয়েছি অভিশাপ এবং কিয়ামতের দিন তারা ঘৃণিতদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা ক্বাসাস– ৪২)
তারা কঠিন আযাবে নিক্ষিপ্ত হবে :
وَيَوْمَ تَقُوْمُ السَّاعَةُ اَدْخِلُوْاۤ اٰلَ فِرْعَوْنَ اَشَدَّ الْعَذَابِ
আর যেদিন কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে, সেদিন (বলা হবে) ফিরাউন সম্প্রদায়কে আরো কঠিন শাস্তিতে নিক্ষেপ করো। (সূরা মু’মিনু ৪৬)
ফিরাউন নেতৃত্ব দিয়ে জাতিকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে :
يَقْدُمُ قَوْمَهٗ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَاَوْرَدَهُمُ النَّارَؕ وَبِئْسَ الْوِرْدُ الْمَوْرُوْدُ
সে কিয়ামতের দিন তার সম্প্রদায়ের অগ্রভাগে থাকবে এবং সে তাদেরকে নিয়ে অগ্নিতে প্রবেশ করবে। আর তাদের প্রবেশস্থল কতই না নিকৃষ্ট! (সূরা হুদু ৯৮)
শিক্ষার উদ্দেশ্যে আল্লাহ তার লাশ সংরক্ষণ করেছেন :
فَالْيَوْمَ نُنَجِّيْكَ بِبَدَنِكَ لِتَكُوْنَ لِمَنْ خَلْفَكَ اٰيَةًؕ وَاِنَّ كَثِيْرًا مِّنَ النَّاسِ عَنْ اٰيَاتِنَا لَغَافِلُوْنَ
আজ আমি তোমার দেহটি রক্ষা করব, যাতে তুমি তোমার পরবর্তীদের জন্য নিদর্শন হয়ে থাক। নিশ্চয় মানুষের মধ্যে অনেকে আমার নিদর্শন সম্বন্ধে গাফিল। (সূরা ইউনুস– ৯২)
মূসা (আঃ) ও ফিরাউনের কাহিনীতে নিদর্শন রয়েছে :
وَفِيْ مُوْسٰۤى اِذْ اَرْسَلْنَاهُ اِلٰى فِرْعَوْنَ بِسُلْطَانٍ مُّبِيْنٍ
(নিদর্শন রেখেছি) মূসার কাহিনীতেও, যখন আমি তাকে স্পষ্ট প্রমাণসহ ফিরাউনের কাছে পাঠালাম। (সূরা যারিয়াত– ৩৮)
اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةًؕ وَمَا كَانَ اَكْثَرُهُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে, কিন্তু তাদের অধিকাংশই এ ব্যাপারে মুমিন নয়। (সূরা শু‘আরা– ৬৭)
اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَعِبْرَةً لِّمَنْ يَّخْشٰى
অবশ্যই এতে উপদেশ রয়েছে তার জন্য, যে ভয় করে। (সূরা নাযি‘আত– ২৬)
পরবর্তীদের জন্য এটি একটি দৃষ্টান্ত :
فَجَعَلْنَاهُمْ سَلَفًا وَّمَثَلًا لِّلْاٰخِرِيْنَ
অতঃপর পরবর্তীদের জন্য আমি তাদেরকে করে রাখলাম অতীত ইতিহাস ও দৃষ্টান্তস্বরূপ। (সূরা যুখরুফু ৫৬)
তাদের পরিণতি নিয়ে চিন্তা করার আহবান :
فَاَخَذْنَاهُ وَجُنُوْدَهٗ فَنَبَذْنَاهُمْ فِى الْيَمِّۚ فَانْظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الظَّالِمِيْنَ
অতএব আমি তাকে ও তার বাহিনীকে পাকড়াও করলাম এবং তাদেরকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করলাম। সুতরাং লক্ষ্য করো, যালিমদের পরিণাম কীরূপ হয়ে থাকে। (সূরা ক্বাসাস– ৪০)
আল্লাহর উদ্দেশ্য ছিল দুর্বলদেরকে অনুগ্রহ করা :
وَنُرِيْدُ اَنْ نَّمُنَّ عَلَى الَّذِيْنَ اسْتُضْعِفُوْا فِى الْاَرْضِ وَنَجْعَلَهُمْ اَئِمَّةً وَّنَجْعَلَهُمُ الْوَارِثِيْنَ ‐ وَنُمَكِّنَ لَهُمْ فِى الْاَرْضِ وَنُرِيَ فِرْعَوْنَ وَهَامَانَ وَجُنُوْدَهُمَا مِنْهُمْ مَّا كَانُوْا يَحْذَرُوْنَ
আমি ইচ্ছা করলাম যে, সে দেশে যাদেরকে হীনবল করা হয়েছিল তাদের প্রতি অনুগ্রহ করব এবং তাদেরকে নেতৃত্ব দান করব। আর তাদেরকে উত্তরাধিকারী বানাব এবং তাদেরকে দেশে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করব। আর ফিরাউন, হামান ও তাদের বাহিনীকে তা দেখিয়ে দেব, যা তাদের নিকট তারা আশঙ্কা করত। (সূরা ক্বাসাস– ৫, ৬)
فَالْيَوْمَ نُنَجِّيْكَ بِبَدَنِكَ لِتَكُوْنَ لِمَنْ خَلْفَكَ اٰيَةًؕ وَاِنَّ كَثِيْرًا مِّنَ النَّاسِ عَنْ اٰيَاتِنَا لَغَافِلُوْنَ
আজ আমি তোমার দেহটি রক্ষা করব, যাতে তুমি তোমার পরবর্তীদের জন্য নিদর্শন হয়ে থাক। নিশ্চয় মানুষের মধ্যে অনেকে আমার নিদর্শন সম্বন্ধে গাফিল। (সূরা ইউনুস– ৯২)
মূসা (আঃ) ও ফিরাউনের কাহিনীতে নিদর্শন রয়েছে :
وَفِيْ مُوْسٰۤى اِذْ اَرْسَلْنَاهُ اِلٰى فِرْعَوْنَ بِسُلْطَانٍ مُّبِيْنٍ
(নিদর্শন রেখেছি) মূসার কাহিনীতেও, যখন আমি তাকে স্পষ্ট প্রমাণসহ ফিরাউনের কাছে পাঠালাম। (সূরা যারিয়াত– ৩৮)
اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةًؕ وَمَا كَانَ اَكْثَرُهُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে, কিন্তু তাদের অধিকাংশই এ ব্যাপারে মুমিন নয়। (সূরা শু‘আরা– ৬৭)
اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَعِبْرَةً لِّمَنْ يَّخْشٰى
অবশ্যই এতে উপদেশ রয়েছে তার জন্য, যে ভয় করে। (সূরা নাযি‘আত– ২৬)
পরবর্তীদের জন্য এটি একটি দৃষ্টান্ত :
فَجَعَلْنَاهُمْ سَلَفًا وَّمَثَلًا لِّلْاٰخِرِيْنَ
অতঃপর পরবর্তীদের জন্য আমি তাদেরকে করে রাখলাম অতীত ইতিহাস ও দৃষ্টান্তস্বরূপ। (সূরা যুখরুফু ৫৬)
তাদের পরিণতি নিয়ে চিন্তা করার আহবান :
فَاَخَذْنَاهُ وَجُنُوْدَهٗ فَنَبَذْنَاهُمْ فِى الْيَمِّۚ فَانْظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الظَّالِمِيْنَ
অতএব আমি তাকে ও তার বাহিনীকে পাকড়াও করলাম এবং তাদেরকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করলাম। সুতরাং লক্ষ্য করো, যালিমদের পরিণাম কীরূপ হয়ে থাকে। (সূরা ক্বাসাস– ৪০)
আল্লাহর উদ্দেশ্য ছিল দুর্বলদেরকে অনুগ্রহ করা :
وَنُرِيْدُ اَنْ نَّمُنَّ عَلَى الَّذِيْنَ اسْتُضْعِفُوْا فِى الْاَرْضِ وَنَجْعَلَهُمْ اَئِمَّةً وَّنَجْعَلَهُمُ الْوَارِثِيْنَ ‐ وَنُمَكِّنَ لَهُمْ فِى الْاَرْضِ وَنُرِيَ فِرْعَوْنَ وَهَامَانَ وَجُنُوْدَهُمَا مِنْهُمْ مَّا كَانُوْا يَحْذَرُوْنَ
আমি ইচ্ছা করলাম যে, সে দেশে যাদেরকে হীনবল করা হয়েছিল তাদের প্রতি অনুগ্রহ করব এবং তাদেরকে নেতৃত্ব দান করব। আর তাদেরকে উত্তরাধিকারী বানাব এবং তাদেরকে দেশে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করব। আর ফিরাউন, হামান ও তাদের বাহিনীকে তা দেখিয়ে দেব, যা তাদের নিকট তারা আশঙ্কা করত। (সূরা ক্বাসাস– ৫, ৬)
কাফির ও মুমিন উভয় দলকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সত্য সম্পর্কে সজাগ করাই এ ঘটনার মূল উদ্দেশ্য। সে সত্যটি হচ্ছে, দুনিয়ায় যা কিছু ঘটে মানুষের স্থূলদৃষ্টি তা থেকে ভিন্ন ফলাফল গ্রহণ করে। কারণ আল্লাহ যে উদ্দেশ্য ও কল্যাণকে সামনে রেখে কাজ করেন, তা মানুষের জানা থাকে না। মানুষ প্রতিনিয়ত দেখছে- যালিমরা উন্নতি লাভ করছে, আর নিরাপরাধরা কষ্ট ও সংকটের মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে। নাফরমানদের প্রতি অপরিমিত অনুগ্রহ বর্ষিত হচ্ছে, আর আনুগত্যশীলদের উপর বিপদের পাহাড় ভেঙ্গে পড়ছে। অসৎ লোকেরা আরামে জীবন-যাপন করছে, আর সৎ লোকেরা দূরাবস্থার মধ্যে অমানবিক জীবন-যাপন করছে। লোকেরা এর রহস্য না জানার কারণে সাধারণভাবে তাদের মনে বিভ্রান্তি দেখা দেয়। কাফির ও যালিমরা এ থেকে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছে যায় যে, এ দুনিয়াটা একটা অরাজকতার মুল্লুক। এখানে যার যা ইচ্ছা করতে পারে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা বা তার থেকে কৈফিয়ত নেয়ার মতো কেউ নেই। এ ধরনের ঘটনাবলি দেখে মুমিনরা মনমরা হয়ে পড়ে এবং অনেক সময় কঠিন পরীক্ষাকালে তার ঈমানের ভিতও নড়ে যায়। এমতাবস্থায় মহান আল্লাহ মূসা (আঃ) কে বাহ্যিক ঘটনার বিপরীতে কেমন রহস্য লুকিয়ে থাকে, তা এক ঝলক দেখিয়ে দিয়েছিলেন। যাতে করে ঘটনার বাহ্যিক দিকসমূহ তার অভ্যন্তর থেকে কেমন ভিন্নতর হয়, তা তিনি জানতে পারেন।
মূসা (আঃ) খাদিমকে সফরের কথা জানালেন :
وَاِذْ قَالَ مُوْسٰى لِفَتَاهُ لَاۤ اَبْرَحُ حَتّٰۤى اَبْلُغَ مَجْمَعَ الْبَحْرَيْنِ اَوْ اَمْضِيَ حُقُبًا
স্মরণ করো, যখন মূসা তার সাথিকে বলেছিল, দু’সমুদ্রের সঙ্গমস্থলে না পৌঁছা পর্যন্ত আমি থামব না অথবা আমি যুগ যুগ ধরে চলতে থাকব। (সূরা কাহফু ৬০)
দু’সমুদ্রের মিলনস্থলে পৌঁছলে সাথে থাকা মাছটির কথা ভুলে যান :
فَلَمَّا بَلَغَا مَجْمَعَ بَيْنِهِمَا نَسِيَا حُوْتَهُمَا فَاتَّخَذَ سَبِيْلَهٗ فِى الْبَحْرِ سَرَبًا
যখন তারা উভয়ে দু’সমুদ্রের মিলনস্থলে পৌঁছল, তখন তারা নিজেদের মাছটির কথা ভুলে গেল। অতঃপর তা সুড়ঙ্গের মতো নিজের পথ করে সমুদ্রে নেমে গেল। (সূরা কাহফু ৬১)
কিছুক্ষণ চলার পর নাস্তা চাইলেন :
فَلَمَّا جَاوَزَا قَالَ لِفَتَاهُ اٰتِنَا غَدَآءَنَاؗ لَقَدْ لَقِيْنَا مِنْ سَفَرِنَا هٰذَا نَصَبًا
যখন তারা আরো অগ্রসর হলো মূসা তার সাথিকে বলল, আমাদের নাস্তা আনো। আমরা তো আমাদের এ সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। (সূরা কাহফু ৬২)
খাদেম বলল, মাছটি চলে গেছে :
قَالَ اَرَاَيْتَ اِذْ اَوَيْنَاۤ اِلَى الصَّخْرَةِ فَاِنِّيْ نَسِيْتُ الْحُوْتَ وَمَاۤ اَنْسَانِيْهُ اِلَّا الشَّيْطَانُ اَنْ اَذْكُرَهٗۚ وَاتَّخَذَ سَبِيْلَهٗ فِى الْبَحْرِۗ عَجَبًا
সে বলল, আপনি কি লক্ষ্য করেছেন, আমরা যখন শিলাখন্ডে বিশ্রাম করছিলাম তখন আমি মৎস্যের কথা ভুলে গিয়েছিলাম? শয়তানই সেটার কথা বলতে আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল। মৎস্যটি আশ্চর্যজনকভাবে সমুদ্রে নিজের পথ করে নিল। (সূরা কাহফু ৬৩)
তারা আবার সেখানে ফিরে আসলেন :
قَالَ ذٰلِكَ مَا كُنَّا نَبْغِۗ فَارْتَدَّا عَلٰۤى اٰثَارِهِمَا قَصَصًا
মূসা বলল, আমরা তো সে স্থানটিরই অনুসন্ধান করছিলাম। অতঃপর তারা নিজেদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চলল। (সূরা কাহফু ৬৪)
ফিরে আসার পর খিজির (আঃ) এর সাথে দেখা হলো :
فَوَجَدَا عَبْدًا مِّنْ عِبَادِنَاۤ اٰتَيْنَاهُ رَحْمَةً مِّنْ عِنْدِنَا وَعَلَّمْنَاهُ مِنْ لَّدُنَّا عِلْمًا
অতঃপর তারা আমার বান্দাদের মধ্যে একজনের সাক্ষাৎ পেল, যাকে আমি আমার পÿ হতে অনুগ্রহ দান করেছিলাম ও আমার পÿ হতে এক বিশেষ জ্ঞানের শিক্ষা দান করেছিলাম। (সূরা কাহফু ৬৫)
মূসা (আঃ) তার কাছ থেকে জ্ঞান শিখতে চাইলেন :
قَالَ لَهٗ مُوْسٰى هَلْ اَتَّبِعُكَ عَلٰۤى اَنْ تُعَلِّمَنِ مِمَّا عُلِّمْتَ رُشْدًا
মূসা তাকে বলল, সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে তা হতে আমাকে শিক্ষা দেবেন, এ শর্তে আমি কি আপনার অনুসরণ করব? (সূরা কাহফু ৬৬)
খিজির (আঃ) বললেন, আপনি ধৈর্যধারণ করতে পারবেন না :
قَالَ اِنَّكَ لَنْ تَسْتَطِيْعَ مَعِيَ صَبْرًا ‐ وَكَيْفَ تَصْبِرُ عَلٰى مَا لَمْ تُحِطْ بِهٖ خُبْرًا
সে বলল, আপনি কিছুতেই আমার সঙ্গে ধৈর্যধারণ করে থাকতে পারবেন না। যে বিষয় আপনার জ্ঞানায়ত্ত নয়, সে বিষয়ে আপনি কি করে ধৈর্যধারণ করবেন? (সূরা কাহফু ৬৭, ৬৮)
মূসা (আঃ) ধৈর্যধারণ করার আশ্বাস দিলেন :
قَالَ سَتَجِدُنِۤيْ اِنْ شَآءَ اللهُ صَابِرًا وَّلَاۤ اَعْصِيْ لَكَ اَمْرًا
মূসা বলল, আল্লাহ চাইলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীল হিসেবেই পাবেন এবং আপনার কোন আদেশ আমি অমান্য করব না। (সূরা কাহফু ৬৯)
খিজির (আঃ) একটি শর্তে রাজি হলেন :
قَالَ فَاِنِ اتَّبَعْتَنِيْ فَلَا تَسْاَلْنِيْ عَنْ شَيْءٍ حَتّٰۤى اُحْدِثَ لَكَ مِنْهُ ذِكْرًا
সে বলল, আপনি যদি আমার অনুসরণ করতেই চান, তবে কোন বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করবেন না, যতক্ষণ না আমি সে সম্বন্ধে আপনাকে কিছু বলি। (সূরা কাহফু ৭০)
দু’জন একটি নৌকায় চড়লে খিজির (আঃ) তা ছিদ্র করে দিলেন :
فَانْطَلَقَا حَتّٰۤى اِذَا رَكِبَا فِى السَّفِيْنَةِ خَرَقَهَا
অতঃপর উভয়ে চলতে লাগল, পরে যখন তারা নৌকায় আরোহণ করল তখন সে সেটা বিদীর্ণ করে দিল।
(সূরা কাহফু ৭১)
মূসা (আঃ) ধৈর্যধারণ করতে পারলেন না :
قَالَ اَخَرَقْتَهَا لِتُغْرِقَ اَهْلَهَاۚ لَقَدْ جِئْتَ شَيْئًا اِمْرًا
মূসা বলল, আপনি কি আরোহীদেরকে নিমজ্জিত করে দেয়ার জন্য সেটা বিদীর্ণ করলেন? আপনি তো এক গুরুতর অন্যায় কাজ করলেন! (সূরা কাহফু ৭১)
খিজির (আঃ) শর্ত ভঙ্গের অভিযোগ করলেন :
قَالَ اَلَمْ اَقُلْ اِنَّكَ لَنْ تَسْتَطِيْعَ مَعِيَ صَبْرًا
সে বলল, আমি কি বলিনি যে, আপনি আমার সঙ্গে কিছুতেই ধৈর্যধারণ করতে পারবেন না? (সূরা কাহফু ৭২)
মূসা (আঃ) ভুলের ওজর পেশ করলেন :
قَالَ لَا تُؤَاخِذْنِيْ بِمَا نَسِيْتُ وَلَا تُرْهِقْنِيْ مِنْ اَمْرِيْ عُسْرًا
মূসা বলল, আমার ভুলের জন্য আমাকে অপরাধী করবেন না এবং আমার ব্যাপারে অত্যাধিক কঠোরতা অবলম্বন করবেন না। (সূরা কাহফু ৭৩)
পরে খিজির (আঃ) এক বালককে হত্যা করলেন :
فَانْطَلَقَا حَتّٰۤى اِذَا لَقِيَا غُلَامًا فَقَتَلَهٗ
অতঃপর উভয়ে চলতে লাগল, এমনকি তাদের সাথে এক বালকের সাক্ষাৎ হলো এবং সে তাকে হত্যা করল। (সূরা কাহফু ৭৪)
এতেও মূসা (আঃ) কথা না বলে পারলেন না :
قَالَ اَقَتَلْتَ نَفْسًا زَكِيَّةً ۢبِغَيْرِ نَفْسٍؕ لَقَدْ جِئْتَ شَيْئًا نُّكْرًا
তখন মূসা বলল, আপনি কি হত্যা করার মতো অপরাধ ছাড়াই এক নিষ্পাপ জীবনকে হত্যা করে ফেললেন? আপনি তো এক গুরুতর অন্যায় কাজ করলেন। (সূরা কাহফু ৭৪)
খিজির (আঃ) এবারও অভিযোগ করলেন :
قَالَ اَلَمْ اَقُلْ لَّكَ اِنَّكَ لَنْ تَسْتَطِيْعَ مَعِيَ صَبْرًا
সে বলল, আমি কি আপনাকে বলিনি যে, আপনি আমার সঙ্গে কিছুতেই ধৈর্যধারণ করতে পারবেন না? (সূরা কাহফু ৭৫)
মূসা (আঃ) শেষবারের মতো ওজর পেশ করলেন :
قَالَ اِنْ سَاَلْتُكَ عَنْ شَيْءٍ ۢ بَعْدَهَا فَلَا تُصَاحِبْنِيْۚ قَدْ بَلَغْتَ مِنْ لَّدُنِّيْ عُذْرًا
মূসা বলল, এরপরও যদি আমি আপনাকে কোন বিষয়ে জিজ্ঞেস করি, তবে আপনি আমাকে সঙ্গে রাখবেন না; আমার ওজর–আপত্তি চূড়ান্ত হয়ে গেছে। (সূরা কাহফু ৭৬)
সামনে গিয়ে এক গ্রামবাসীর কাছে খাবার চাইলেন, কিন্তু তারা দিল না :
فَانْطَلَقَا حَتّٰۤى اِذَاۤ اَتَيَاۤ اَهْلَ قَرْيَةِنِ اسْتَطْعَمَاۤ اَهْلَهَا فَاَبَوْا اَنْ يُّضَيِّفُوْهُمَا
অতঃপর উভয়ে চলতে লাগল, এমনকি তারা এক জনপদের অধিবাসীদের নিকট পৌঁছে তাদের নিকট খাদ্য চাইল; কিন্তু তারা তাদের মেহমানদারী করতে অস্বীকার করল। (সূরা কাহফু ৭৭)
খিজির (আঃ) তাদের একটি দেয়াল ঠিক করে দিলেন :
فَوَجَدَا فِيْهَا جِدَارًا يُّرِيْدُ اَنْ يَّنْقَضَّ فَاَقَامَهٗ
অতঃপর সেখানে তারা এক প্রাচীর দেখতে পেল, যা ছিল ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম। অতঃপর সে তা সুদৃঢ় করে দিল। (সূরা কাহফ- ৭৭)
মূসা (আঃ) এবারও কথা বলে ফেললেন :
قَالَ لَوْ شِئْتَ لَاتَّخَذْتَ عَلَيْهِ اَجْرًا
মূসা বলল, আপনি তো ইচ্ছা করলে এর জন্য পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে পারতেন। (সূরা কাহফু ৭৭)
খিজির (আঃ) বললেন, এখন আমাদের বিচ্ছেদের সময় হয়েছে :
قَالَ هٰذَا فِرَاقُ بَيْنِيْ وَبَيْنِكَۚ سَاُنَبِّئُكَ بِتَأْوِيْلِ مَا لَمْ تَسْتَطِعْ عَّلَيْهِ صَبْرًا
সে বলল, এখানেই আপনার এবং আমার মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হলো। অতএব যে বিষয়ে আপনি ধৈর্যধারণ করতে পারেননি আমি তার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করছি। (সূরা কাহফু ৭৮)
মূসা (আঃ) খাদিমকে সফরের কথা জানালেন :
وَاِذْ قَالَ مُوْسٰى لِفَتَاهُ لَاۤ اَبْرَحُ حَتّٰۤى اَبْلُغَ مَجْمَعَ الْبَحْرَيْنِ اَوْ اَمْضِيَ حُقُبًا
স্মরণ করো, যখন মূসা তার সাথিকে বলেছিল, দু’সমুদ্রের সঙ্গমস্থলে না পৌঁছা পর্যন্ত আমি থামব না অথবা আমি যুগ যুগ ধরে চলতে থাকব। (সূরা কাহফু ৬০)
দু’সমুদ্রের মিলনস্থলে পৌঁছলে সাথে থাকা মাছটির কথা ভুলে যান :
فَلَمَّا بَلَغَا مَجْمَعَ بَيْنِهِمَا نَسِيَا حُوْتَهُمَا فَاتَّخَذَ سَبِيْلَهٗ فِى الْبَحْرِ سَرَبًا
যখন তারা উভয়ে দু’সমুদ্রের মিলনস্থলে পৌঁছল, তখন তারা নিজেদের মাছটির কথা ভুলে গেল। অতঃপর তা সুড়ঙ্গের মতো নিজের পথ করে সমুদ্রে নেমে গেল। (সূরা কাহফু ৬১)
কিছুক্ষণ চলার পর নাস্তা চাইলেন :
فَلَمَّا جَاوَزَا قَالَ لِفَتَاهُ اٰتِنَا غَدَآءَنَاؗ لَقَدْ لَقِيْنَا مِنْ سَفَرِنَا هٰذَا نَصَبًا
যখন তারা আরো অগ্রসর হলো মূসা তার সাথিকে বলল, আমাদের নাস্তা আনো। আমরা তো আমাদের এ সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। (সূরা কাহফু ৬২)
খাদেম বলল, মাছটি চলে গেছে :
قَالَ اَرَاَيْتَ اِذْ اَوَيْنَاۤ اِلَى الصَّخْرَةِ فَاِنِّيْ نَسِيْتُ الْحُوْتَ وَمَاۤ اَنْسَانِيْهُ اِلَّا الشَّيْطَانُ اَنْ اَذْكُرَهٗۚ وَاتَّخَذَ سَبِيْلَهٗ فِى الْبَحْرِۗ عَجَبًا
সে বলল, আপনি কি লক্ষ্য করেছেন, আমরা যখন শিলাখন্ডে বিশ্রাম করছিলাম তখন আমি মৎস্যের কথা ভুলে গিয়েছিলাম? শয়তানই সেটার কথা বলতে আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল। মৎস্যটি আশ্চর্যজনকভাবে সমুদ্রে নিজের পথ করে নিল। (সূরা কাহফু ৬৩)
তারা আবার সেখানে ফিরে আসলেন :
قَالَ ذٰلِكَ مَا كُنَّا نَبْغِۗ فَارْتَدَّا عَلٰۤى اٰثَارِهِمَا قَصَصًا
মূসা বলল, আমরা তো সে স্থানটিরই অনুসন্ধান করছিলাম। অতঃপর তারা নিজেদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চলল। (সূরা কাহফু ৬৪)
ফিরে আসার পর খিজির (আঃ) এর সাথে দেখা হলো :
فَوَجَدَا عَبْدًا مِّنْ عِبَادِنَاۤ اٰتَيْنَاهُ رَحْمَةً مِّنْ عِنْدِنَا وَعَلَّمْنَاهُ مِنْ لَّدُنَّا عِلْمًا
অতঃপর তারা আমার বান্দাদের মধ্যে একজনের সাক্ষাৎ পেল, যাকে আমি আমার পÿ হতে অনুগ্রহ দান করেছিলাম ও আমার পÿ হতে এক বিশেষ জ্ঞানের শিক্ষা দান করেছিলাম। (সূরা কাহফু ৬৫)
মূসা (আঃ) তার কাছ থেকে জ্ঞান শিখতে চাইলেন :
قَالَ لَهٗ مُوْسٰى هَلْ اَتَّبِعُكَ عَلٰۤى اَنْ تُعَلِّمَنِ مِمَّا عُلِّمْتَ رُشْدًا
মূসা তাকে বলল, সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে তা হতে আমাকে শিক্ষা দেবেন, এ শর্তে আমি কি আপনার অনুসরণ করব? (সূরা কাহফু ৬৬)
খিজির (আঃ) বললেন, আপনি ধৈর্যধারণ করতে পারবেন না :
قَالَ اِنَّكَ لَنْ تَسْتَطِيْعَ مَعِيَ صَبْرًا ‐ وَكَيْفَ تَصْبِرُ عَلٰى مَا لَمْ تُحِطْ بِهٖ خُبْرًا
সে বলল, আপনি কিছুতেই আমার সঙ্গে ধৈর্যধারণ করে থাকতে পারবেন না। যে বিষয় আপনার জ্ঞানায়ত্ত নয়, সে বিষয়ে আপনি কি করে ধৈর্যধারণ করবেন? (সূরা কাহফু ৬৭, ৬৮)
মূসা (আঃ) ধৈর্যধারণ করার আশ্বাস দিলেন :
قَالَ سَتَجِدُنِۤيْ اِنْ شَآءَ اللهُ صَابِرًا وَّلَاۤ اَعْصِيْ لَكَ اَمْرًا
মূসা বলল, আল্লাহ চাইলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীল হিসেবেই পাবেন এবং আপনার কোন আদেশ আমি অমান্য করব না। (সূরা কাহফু ৬৯)
খিজির (আঃ) একটি শর্তে রাজি হলেন :
قَالَ فَاِنِ اتَّبَعْتَنِيْ فَلَا تَسْاَلْنِيْ عَنْ شَيْءٍ حَتّٰۤى اُحْدِثَ لَكَ مِنْهُ ذِكْرًا
সে বলল, আপনি যদি আমার অনুসরণ করতেই চান, তবে কোন বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করবেন না, যতক্ষণ না আমি সে সম্বন্ধে আপনাকে কিছু বলি। (সূরা কাহফু ৭০)
দু’জন একটি নৌকায় চড়লে খিজির (আঃ) তা ছিদ্র করে দিলেন :
فَانْطَلَقَا حَتّٰۤى اِذَا رَكِبَا فِى السَّفِيْنَةِ خَرَقَهَا
অতঃপর উভয়ে চলতে লাগল, পরে যখন তারা নৌকায় আরোহণ করল তখন সে সেটা বিদীর্ণ করে দিল।
(সূরা কাহফু ৭১)
মূসা (আঃ) ধৈর্যধারণ করতে পারলেন না :
قَالَ اَخَرَقْتَهَا لِتُغْرِقَ اَهْلَهَاۚ لَقَدْ جِئْتَ شَيْئًا اِمْرًا
মূসা বলল, আপনি কি আরোহীদেরকে নিমজ্জিত করে দেয়ার জন্য সেটা বিদীর্ণ করলেন? আপনি তো এক গুরুতর অন্যায় কাজ করলেন! (সূরা কাহফু ৭১)
খিজির (আঃ) শর্ত ভঙ্গের অভিযোগ করলেন :
قَالَ اَلَمْ اَقُلْ اِنَّكَ لَنْ تَسْتَطِيْعَ مَعِيَ صَبْرًا
সে বলল, আমি কি বলিনি যে, আপনি আমার সঙ্গে কিছুতেই ধৈর্যধারণ করতে পারবেন না? (সূরা কাহফু ৭২)
মূসা (আঃ) ভুলের ওজর পেশ করলেন :
قَالَ لَا تُؤَاخِذْنِيْ بِمَا نَسِيْتُ وَلَا تُرْهِقْنِيْ مِنْ اَمْرِيْ عُسْرًا
মূসা বলল, আমার ভুলের জন্য আমাকে অপরাধী করবেন না এবং আমার ব্যাপারে অত্যাধিক কঠোরতা অবলম্বন করবেন না। (সূরা কাহফু ৭৩)
পরে খিজির (আঃ) এক বালককে হত্যা করলেন :
فَانْطَلَقَا حَتّٰۤى اِذَا لَقِيَا غُلَامًا فَقَتَلَهٗ
অতঃপর উভয়ে চলতে লাগল, এমনকি তাদের সাথে এক বালকের সাক্ষাৎ হলো এবং সে তাকে হত্যা করল। (সূরা কাহফু ৭৪)
এতেও মূসা (আঃ) কথা না বলে পারলেন না :
قَالَ اَقَتَلْتَ نَفْسًا زَكِيَّةً ۢبِغَيْرِ نَفْسٍؕ لَقَدْ جِئْتَ شَيْئًا نُّكْرًا
তখন মূসা বলল, আপনি কি হত্যা করার মতো অপরাধ ছাড়াই এক নিষ্পাপ জীবনকে হত্যা করে ফেললেন? আপনি তো এক গুরুতর অন্যায় কাজ করলেন। (সূরা কাহফু ৭৪)
খিজির (আঃ) এবারও অভিযোগ করলেন :
قَالَ اَلَمْ اَقُلْ لَّكَ اِنَّكَ لَنْ تَسْتَطِيْعَ مَعِيَ صَبْرًا
সে বলল, আমি কি আপনাকে বলিনি যে, আপনি আমার সঙ্গে কিছুতেই ধৈর্যধারণ করতে পারবেন না? (সূরা কাহফু ৭৫)
মূসা (আঃ) শেষবারের মতো ওজর পেশ করলেন :
قَالَ اِنْ سَاَلْتُكَ عَنْ شَيْءٍ ۢ بَعْدَهَا فَلَا تُصَاحِبْنِيْۚ قَدْ بَلَغْتَ مِنْ لَّدُنِّيْ عُذْرًا
মূসা বলল, এরপরও যদি আমি আপনাকে কোন বিষয়ে জিজ্ঞেস করি, তবে আপনি আমাকে সঙ্গে রাখবেন না; আমার ওজর–আপত্তি চূড়ান্ত হয়ে গেছে। (সূরা কাহফু ৭৬)
সামনে গিয়ে এক গ্রামবাসীর কাছে খাবার চাইলেন, কিন্তু তারা দিল না :
فَانْطَلَقَا حَتّٰۤى اِذَاۤ اَتَيَاۤ اَهْلَ قَرْيَةِنِ اسْتَطْعَمَاۤ اَهْلَهَا فَاَبَوْا اَنْ يُّضَيِّفُوْهُمَا
অতঃপর উভয়ে চলতে লাগল, এমনকি তারা এক জনপদের অধিবাসীদের নিকট পৌঁছে তাদের নিকট খাদ্য চাইল; কিন্তু তারা তাদের মেহমানদারী করতে অস্বীকার করল। (সূরা কাহফু ৭৭)
খিজির (আঃ) তাদের একটি দেয়াল ঠিক করে দিলেন :
فَوَجَدَا فِيْهَا جِدَارًا يُّرِيْدُ اَنْ يَّنْقَضَّ فَاَقَامَهٗ
অতঃপর সেখানে তারা এক প্রাচীর দেখতে পেল, যা ছিল ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম। অতঃপর সে তা সুদৃঢ় করে দিল। (সূরা কাহফ- ৭৭)
মূসা (আঃ) এবারও কথা বলে ফেললেন :
قَالَ لَوْ شِئْتَ لَاتَّخَذْتَ عَلَيْهِ اَجْرًا
মূসা বলল, আপনি তো ইচ্ছা করলে এর জন্য পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে পারতেন। (সূরা কাহফু ৭৭)
খিজির (আঃ) বললেন, এখন আমাদের বিচ্ছেদের সময় হয়েছে :
قَالَ هٰذَا فِرَاقُ بَيْنِيْ وَبَيْنِكَۚ سَاُنَبِّئُكَ بِتَأْوِيْلِ مَا لَمْ تَسْتَطِعْ عَّلَيْهِ صَبْرًا
সে বলল, এখানেই আপনার এবং আমার মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হলো। অতএব যে বিষয়ে আপনি ধৈর্যধারণ করতে পারেননি আমি তার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করছি। (সূরা কাহফু ৭৮)
নৌকা ছিদ্র করেছিলেন গরীবদের সাহায্যার্থে :
اَمَّا السَّفِيْنَةُ فَكَانَتْ لِمَسَاكِيْنَ يَعْمَلُوْنَ فِى الْبَحْرِ فَاَرَدْتُّ اَنْ اَعِيْبَهَا وَكَانَ وَرَآءَهُمْ مَّلِكٌ يَّأْخُذُ كُلَّ سَفِيْنَةٍ غَصْبًا
নৌকাটি ছিল কতিপয় দরিদ্র ব্যক্তির, তারা সমুদ্রে জীবিকা অন্বেষণ করত। আর তাই আমি নৌকাটিকে ত্রুটিযুক্ত করতে ইচ্ছা করলাম। কারণ তাদের পেছনেই ছিল এক রাজা, যে বল প্রয়োগ করে সকল নৌকা ছিনিয়ে নিত। (সূরা কাহফু ৭৯)
বালককে হত্যা করেছিলেন মুমিনদের সাহায্যার্থে :
وَاَمَّا الْغُلَامُ فَكَانَ اَبَوَاهُ مُؤْمِنَيْنِ فَخَشِيْنَاۤ اَنْ يُّرْهِقَهُمَا طُغْيَانًا وَّكُفْرًا ‐ فَاَرَدْنَاۤ اَنْ يُّبْدِلَهُمَا رَبُّهُمَا خَيْرًا مِّنْهُ زَكَاةً وَّاَقْرَبَ رُحْمًا
আর কিশোরটির বিষয় হচ্ছে, তার পিতা–মাতা ছিল মুমিন। আমি আশঙ্কা করলাম যে, সে বিদ্রোহাচরণ ও কুফরীর দ্বারা তাদেরকে বিব্রত করবে। অতঃপর আমি চাইলাম যে, তাদের প্রতিপালক যেন তাদেরকে এর পরিবর্তে এমন এক সন্তান দান করেন, যে হবে পবিত্রতায় মহত্তর ও ভক্তি–ভালোবাসায় ঘনিষ্ঠতর। (সূরা কাহফু ৮০, ৮১)
দেয়াল ঠিক করেছিলেন ইয়াতীমদের সাহায্যার্থে :
وَاَمَّا الْجِدَارُ فَكَانَ لِغُلَامَيْنِ يَتِيْمَيْنِ فِى الْمَدِيْنَةِ وَكَانَ تَحْتَهٗ كَنْزٌ لَّهُمَا وَكَانَ اَبُوْهُمَا صَالِحًاۚ فَاَرَادَ رَبُّكَ اَنْ يَّبْلُغَاۤ اَشُدَّهُمَا وَيَسْتَخْرِجَا كَنْزَهُمَاۗ رَحْمَةً مِّنْ رَّبِّكَۚ وَمَا فَعَلْتُهٗ عَنْ اَمْرِيْؕ ذٰلِكَ تَأْوِيْلُ مَا لَمْ تَسْطِعْ عَّلَيْهِ صَبْرًا
আর ঐ প্রাচীরটি ছিল নগরবাসীর মধ্যে দু’জন ইয়াতীম কিশোরের, যার নিচে আছে তাদের গুপ্তধন এবং যাদের পিতা ছিল সৎকর্মপরায়ণ। সুতরাং আপনার প্রতিপালক দয়াপরবশ হয়ে ইচ্ছা করলেন যে, তারা প্রাপ্তবয়স্ক হোক এবং তাদের ধনভান্ডার উদ্ধার করুক। আমি নিজ হতে কিছু করিনি; আপনি যে বিষয়ে ধৈর্যধারণে অপারগ হয়েছিলেন, এটাই তার ব্যাখ্যা। (সূরা কাহফু ৮২)
اَمَّا السَّفِيْنَةُ فَكَانَتْ لِمَسَاكِيْنَ يَعْمَلُوْنَ فِى الْبَحْرِ فَاَرَدْتُّ اَنْ اَعِيْبَهَا وَكَانَ وَرَآءَهُمْ مَّلِكٌ يَّأْخُذُ كُلَّ سَفِيْنَةٍ غَصْبًا
নৌকাটি ছিল কতিপয় দরিদ্র ব্যক্তির, তারা সমুদ্রে জীবিকা অন্বেষণ করত। আর তাই আমি নৌকাটিকে ত্রুটিযুক্ত করতে ইচ্ছা করলাম। কারণ তাদের পেছনেই ছিল এক রাজা, যে বল প্রয়োগ করে সকল নৌকা ছিনিয়ে নিত। (সূরা কাহফু ৭৯)
বালককে হত্যা করেছিলেন মুমিনদের সাহায্যার্থে :
وَاَمَّا الْغُلَامُ فَكَانَ اَبَوَاهُ مُؤْمِنَيْنِ فَخَشِيْنَاۤ اَنْ يُّرْهِقَهُمَا طُغْيَانًا وَّكُفْرًا ‐ فَاَرَدْنَاۤ اَنْ يُّبْدِلَهُمَا رَبُّهُمَا خَيْرًا مِّنْهُ زَكَاةً وَّاَقْرَبَ رُحْمًا
আর কিশোরটির বিষয় হচ্ছে, তার পিতা–মাতা ছিল মুমিন। আমি আশঙ্কা করলাম যে, সে বিদ্রোহাচরণ ও কুফরীর দ্বারা তাদেরকে বিব্রত করবে। অতঃপর আমি চাইলাম যে, তাদের প্রতিপালক যেন তাদেরকে এর পরিবর্তে এমন এক সন্তান দান করেন, যে হবে পবিত্রতায় মহত্তর ও ভক্তি–ভালোবাসায় ঘনিষ্ঠতর। (সূরা কাহফু ৮০, ৮১)
দেয়াল ঠিক করেছিলেন ইয়াতীমদের সাহায্যার্থে :
وَاَمَّا الْجِدَارُ فَكَانَ لِغُلَامَيْنِ يَتِيْمَيْنِ فِى الْمَدِيْنَةِ وَكَانَ تَحْتَهٗ كَنْزٌ لَّهُمَا وَكَانَ اَبُوْهُمَا صَالِحًاۚ فَاَرَادَ رَبُّكَ اَنْ يَّبْلُغَاۤ اَشُدَّهُمَا وَيَسْتَخْرِجَا كَنْزَهُمَاۗ رَحْمَةً مِّنْ رَّبِّكَۚ وَمَا فَعَلْتُهٗ عَنْ اَمْرِيْؕ ذٰلِكَ تَأْوِيْلُ مَا لَمْ تَسْطِعْ عَّلَيْهِ صَبْرًا
আর ঐ প্রাচীরটি ছিল নগরবাসীর মধ্যে দু’জন ইয়াতীম কিশোরের, যার নিচে আছে তাদের গুপ্তধন এবং যাদের পিতা ছিল সৎকর্মপরায়ণ। সুতরাং আপনার প্রতিপালক দয়াপরবশ হয়ে ইচ্ছা করলেন যে, তারা প্রাপ্তবয়স্ক হোক এবং তাদের ধনভান্ডার উদ্ধার করুক। আমি নিজ হতে কিছু করিনি; আপনি যে বিষয়ে ধৈর্যধারণে অপারগ হয়েছিলেন, এটাই তার ব্যাখ্যা। (সূরা কাহফু ৮২)
আল্লাহ মূসা (আঃ) কে চল্লিশ দিনের জন্য সিনাই পর্বতে ডাকলেন :
وَوَاعَدْنَا مُوْسٰى ثَلَاثِيْنَ لَيْلَةً وَّاَتْمَمْنَاهَا بِعَشْرٍ فَتَمَّ مِيْقَاتُ رَبِّهٖۤ اَرْبَعِيْنَ لَيْلَةً
স্মরণ করো, যখন আমি মূসার জন্য ত্রিশ রাত্রি নির্ধারিত করি এবং আরো দশ দ্বারা তা পূর্ণ করি। অতঃপর যখন তার প্রতিপালকের নির্ধারিত চল্লিশ রাত্রি পূর্ণ হয়। (সূরা আ‘রাফু ১৪২)
মূসা (আঃ) হারূন (আঃ) কে খালিফা বানিয়ে চলে গেলেন :
وَقَالَ مُوْسٰى لِاَخِيْهِ هَارُوْنَ اخْلُفْنِيْ فِيْ قَوْمِيْ وَاَصْلِحْ وَلَا تَتَّبِعْ سَبِيْلَ الْمُفْسِدِيْنَ
মূসা তার ভাই হারূনকে বলল, আমার অনুপস্থিতিতে আমার সম্প্রদায়ের মধ্যে তুমি আমার প্রতিনিধিত্ব করবে, সংশোধন করবে এবং বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পথ অনুসরণ করবে না। (সূরা আ‘রাফু ১৪২)
মূসা (আঃ) আল্লাহকে দেখার আবেদন জানালেন কিন্তু তা সম্ভব হয়নি :
وَلَمَّا جَآءَ مُوْسٰى لِمِيْقَاتِنَا وَكَلَّمَهٗ رَبُّهٗ قَالَ رَبِّ اَرِنِۤيْ اَنْظُرْ اِلَيْكَؕ قَالَ لَنْ تَرَانِيْ وَلٰكِنِ انْظُرْ اِلَى الْجَبَلِ فَاِنِ اسْتَقَرَّ مَكَانَهٗ فَسَوْفَ تَرَانِيْۚ فَلَمَّا تَجَلّٰى رَبُّهٗ لِلْجَبَلِ جَعَلَهٗ دَكًّا وَّخَرَّ مُوْسٰى صَعِقًاۚ فَلَمَّاۤ اَفَاقَ قَالَ سُبْحَانَكَ تُبْتُ اِلَيْكَ وَاَنَاْ اَوَّلُ الْمُؤْمِنِيْنَ
স্মরণ করো, যখন মূসা আমার নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হলো এবং তার প্রতিপালক তার সাথে কথা বললেন। তখন সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে দর্শন দাও, আমি তোমাকে দেখব। তিনি বললেন, তুমি আমাকে কখনই দেখতে পাবে না। বরং তুমি পাহাড়ের প্রতি লক্ষ্য করো, তা স্বস্থানে স্থির থাকলে তুমি আমাকে দেখতে পাবে। অতঃপর যখন তার প্রতিপালক পাহাড়ে জ্যোতি প্রকাশ করলেন, তখন তা পাহাড়কে চূর্ণ–বিচূর্ণ করে দিল এবং মূসা অজ্ঞান হয়ে পড়ল। যখন সে জ্ঞান ফিরে পেল তখন বলল, আমি তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করছি, আমি অনুতপ্ত হয়ে তোমার কাছেই প্রত্যাবর্তন করলাম এবং মুমিনদের মধ্যে আমিই প্রথম। (সূরা আ‘রাফু ১৪৩)
আল্লাহ তাকে ব্যাখ্যা সম্বলিত কিতাব দিলেন :
وَكَتَبْنَا لَهٗ فِى الْاَلْوَاحِ مِنْ كُلِّ شَيْءٍۚ مَوْعِظَةً وَّتَفْصِيْلًا لِّكُلِّ شَيْءٍۚ فَخُذْهَا بِقُوَّةٍ وَّأْمُرْ قَوْمَكَ يَأْخُذُوْا بِاَحْسَنِهَاؕ سَاُرِيْكُمْ دَارَ الْفَاسِقِيْنَ
আমি তার জন্য সর্ববিষয়ে উপদেশ ও সকল বিষয়ের স্পষ্ট ব্যাখ্যা ফলকে লিখিয়ে দিয়েছি। সুতরাং এগুলো শক্তভাবে আঁকড়ে ধরো এবং তোমার সম্প্রদায়কে তা হতে যা উত্তম তা গ্রহণ করতে নির্দেশ দাও। অতি শীঘ্রই আমি তোমাদেরকে সত্যত্যাগীদের বাসস্থান দেখিয়ে দেব। (সূরা আ‘রাফু ১৪৫)
আগে চলে যাওয়াতে আল্লাহ কৈফিয়ত চাইলেন :
وَمَاۤ اَعْجَلَكَ عَنْ قَوْمِكَ يَا مُوْسٰى
হে মূসা! কিসে তোমাকে তোমার সম্প্রদায়কে পশ্চাতে ফেলে তাড়াতাড়ি করতে বাধ্য করল? (সূরা ত্বা-হা– ৮৩)
মূসা (আঃ) উত্তরে বললেন :
قَالَ هُمْ اُولَآءِ عَلٰۤى اَثَرِيْ وَعَجِلْتُ اِلَيْكَ رَبِّ لِتَرْضٰى
সে বলল, তারা তো আমার পশ্চাতে। হে আমার প্রতিপালক! আমি তাড়াতাড়ি তোমার নিকট আসলাম, যাতে তুমি সন্তুষ্ট হও। (সূরা ত্বা–হা– ৮৪)
আল্লাহ বললেন, সামেরী বিপদ ঘটিয়েছে :
قَالَ فَاِنَّا قَدْ فَتَنَّا قَوْمَكَ مِنْ ۢ بَعْدِكَ وَاَضَلَّهُمُ السَّامِرِيُّ
তিনি বললেন, আমি তো তোমার চলে আসার পর তোমার সম্প্রদায়কে পরীক্ষায় ফেলেছি। ফলে সামেরী তাদেরকে পথভ্রষ্ট করে দেয়। (সূরা ত্বা–হা– ৮৫)
মূসা (আঃ) এর জাতি গো–বৎসের পূজা শুরু করে দিল :
وَاِذْ وَاعَدْنَا مُوْسٰۤى اَرْبَعِيْنَ لَيْلَةً ثُمَّ اتَّخَذْتُمُ الْعِجْلَ مِنْ ۢ بَعْدِه
যখন আমি মূসার সঙ্গে চল্লিশ রাত্রির অঙ্গীকার করেছিলাম, তারপর তোমরা গো–বৎসকে (উপাস্য হিসেবে) গ্রহণ করে নিয়েছিলে। (সূরা বাক্বারা– ৫১)
وَاتَّخَذَ قَوْمُ مُوْسٰى مِنْ ۢ بَعْدِه مِنْ حُلِيِّهِمْ عِجْلًا جَسَدًا لَّهٗ خُوَارٌؕ اَلَمْ يَرَوْا اَنَّهٗ لَا يُكَلِّمُهُمْ وَلَا يَهْدِيْهِمْ سَبِيْلًا ۘ اِتَّخَذُوْهُ وَكَانُوْا ظَالِمِيْنَ
মূসার সম্প্রদায় তার অনুপস্থিতিতে নিজেদের অলংকার দ্বারা এক অবয়ব দিয়ে গো–বৎস বানাল, যা ‘হাম্বা’ করে শব্দ করত। কিন্তু তারা কি দেখল না যে, তা তাদের সাথে কথা বলে না ও তাদেরকে পথও দেখায় না? অতঃপর তারা তাকে উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করল; আর তারা ছিল যালিম। (সূরা আ‘রাফু ১৪৮)
সামেরী তাদেরকে মিথ্যা উপাস্য বানিয়ে দিল :
فَاَخْرَجَ لَهُمْ عِجْلًا جَسَدًا لَّهٗ خُوَارٌ فَقَالُوْا هٰذَاۤ اِلٰهُكُمْ وَاِلٰهُ مُوْسٰىۚ فَنَسِيَ
অতঃপর সে তাদের জন্য এক গো–বৎস তৈরি করল। (তা ছিল) এক অবয়ব, যা ‘হাম্বা’ করে শব্দ করত। তারা বলল, এটা তোমাদের ইলাহ্ এবং মূসারও ইলাহ, কিন্তু মূসা ভুলে গিয়েছে। (সূরা ত্বা–হা– ৮৮)
কিন্তু তারা বিবেক খাটাতে পারেনি :
اَفَلَا يَرَوْنَ اَ لَّا يَرْجِعُ اِلَيْهِمْ قَوْلًا وَّلَا يَمْلِكُ لَهُمْ ضَرًّا وَّلَا نَفْعًا
তবে কি তারা ভেবে দেখে না যে, তা তাদের কথায় সাড়া দেয় না এবং তাদের কোন ক্ষতি অথবা উপকার করার ক্ষমতা রাখে না? (সূরা ত্বা–হা– ৮৯)
হারূন (আঃ) তাদেরকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন :
وَلَقَدْ قَالَ لَهُمْ هَارُوْنُ مِنْ قَبْلُ يَا قَوْمِ اِنَّمَا فُتِنْتُمْ بِه ۚ وَاِنَّ رَبَّكُمُ الرَّحْمٰنُ فَاتَّبِعُوْنِيْ وَاَطِيْعُوْاۤ اَمْرِيْ
হারূন তাদেরকে পূর্বেই বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! এটা দ্বারা তো কেবল তোমাদেরকে পরীক্ষায় ফেলা হয়েছে। নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক খুবই দয়াময়, সুতরাং তোমরা আমার অনুসরণ করো এবং আমার আদেশ মেনে চলো। (সূরা ত্বা–হা– ৯০)
তারপরও তারা বাছুর পূজা ছাড়েনি :
قَالُوْا لَنْ نَّبْرَحَ عَلَيْهِ عَاكِفِيْنَ حَتّٰى يَرْجِعَ اِلَيْنَا مُوْسٰى
তারা বলেছিল, আমাদের নিকট মূসা ফিরে না আসা পর্যন্ত কিছুতেই আমরা এর পূজা হতে বিরত হব না।
(সূরা ত্বা–হা– ৯১)
মূসা (আঃ) ফিরে এসে জাতিকে শাসালেন :
فَرَجَعَ مُوْسٰۤى اِلٰى قَوْمِه غَضْبَانَ اَسِفًاۚ قَالَ يَا قَوْمِ اَلَمْ يَعِدْكُمْ رَبُّكُمْ وَعْدًا حَسَنًاؕ اَفَطَالَ عَلَيْكُمُ الْعَهْدُ اَمْ اَرَدْتُّمْ اَنْ يَّحِلَّ عَلَيْكُمْ غَضَبٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ فَاَخْلَفْتُمْ مَّوْعِدِيْ
অতঃপর মূসা তার সম্প্রদায়ের নিকট ক্ষুদ্ধ হয়ে ফিরে গেল এবং বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমাদের প্রতিপালক কি তোমাদেরকে এক উত্তম প্রতিশ্রুতি দেননি? তবে কি প্রতিশ্রুতিকাল তোমাদের নিকট সুদীর্ঘ হয়েছে? নাকি তোমরা চেয়েছ যে, তোমাদের প্রতি তোমাদের প্রতিপালকের ক্রোধ পতিত হোক, যে কারণে তোমরা আমার প্রতি প্রদত্ত অঙ্গীকার ভঙ্গ করলে? (সূরা ত্বা–হা– ৮৬)
وَلَمَّا رَجَعَ مُوْسٰۤى اِلٰى قَوْمِه غَضْبَانَ اَسِفًا قَالَ بِئْسَمَا خَلَفْتُمُوْنِيْ مِنْ ۢبَعْدِيْۚ اَعَجِلْتُمْ اَمْرَ رَبِّكُمْ
মূসা যখন ক্রুদ্ধ ও ক্ষুব্ধ হয়ে স্বীয় সম্প্রদায়ের নিকট প্রত্যাবর্তন করল তখন বলল, আমার অনুপস্থিতিতে তোমরা আমার কতই না নিকৃষ্ট প্রতিনিধিত্ব করেছ! তোমাদের প্রতিপালকের আদেশের পূর্বেই তোমরা ত্বরান্বিত করলে? (সূরা আ‘রাফু ১৫০)
তারা বাস্তব ওজর পেশ করল :
قَالُوْا مَاۤ اَخْلَفْنَا مَوْعِدَكَ بِمَلْكِنَا وَلٰكِنَّا حُمِّلْنَاۤ اَوْزَارًا مِّنْ زِيْنَةِ الْقَوْمِ فَقَذَفْنَاهَا فَكَذٰلِكَ اَلْقَى السَّامِرِيُّ
তারা বলল, আমরা তোমার প্রতি প্রদত্ত অঙ্গীকার স্বেচ্ছায় ভঙ্গ করিনি, তবে আমাদের উপর লোকদের অলংকারের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল। আর আমরা সেটা অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করি, অনুরূপভাবে সামেরীও নিক্ষেপ করে। (সূরা ত্বা–হা– ৮৭)
মূসা ফলক ছুড়ে মেরে ভাইয়ের দিকে অগ্রসর হলেন :
قَالَ يَا هَارُوْنُ مَا مَنَعَكَ اِذْ رَاَيْتَهُمْ ضَلُّوْا ‐ اَ لَّا تَتَّبِعَنِؕ اَفَعَصَيْتَ اَمْرِيْ
মূসা বলল, হে হারূন! তুমি যখন দেখলে তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে তখন আমার অনুসরণ করা হতে কিসে তোমাকে নিবৃত্ত করল? তবে কি তুমি আমার আদেশ অমান্য করলে? (সূরা ত্বা–হা– ৯২, ৯৩)
وَاَلْقَى الْاَلْوَاحَ وَاَخَذَ بِرَأْسِ اَخِيْهِ يَجُرُّهٗۤ اِلَيْهِ
অতঃপর সে ফলকগুলো ফেলে দিল এবং স্বীয় ভ্রাতাকে চুলে ধরে নিজের দিকে টেনে আনল।
(সূরা আ‘রাফু ১৫০)
হারূন (আঃ) বিনয়ের সাথে প্রকৃত ব্যাপারটি তুলে ধরলেন :
قَالَ يَبْنَؤُمَّ لَا تَأْخُذْ بِلِحْيَتِيْ وَلَا بِرَأْسِيْۤ اِنِّيْ خَشِيْتُ اَنْ تَقُوْلَ فَرَّقْتَ بَيْنَ بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ وَلَمْ تَرْقُبْ قَوْلِيْ
হারূন বলল, হে আমার সহোদর! আমার দাড়ি ও কেশ ধরো না। আমি আশঙ্কা করেছিলাম যে, তুমি বলবে, তুমিই বনী ইসরাঈলদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছ এবং আমার কথা পালনে যত্নবান হওনি। (সূরা ত্বা–হা– ৯৪)
اِنَّ الْقَوْمَ اسْتَضْعَفُوْنِيْ وَكَادُوْا يَقْتُلُوْنَنِيْؗ فَلَا تُشْمِتْ بِيَ الْاَعْدَآءَ وَلَا تَجْعَلْنِيْ مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِيْنَ
লোকেরা তো আমাকে দুর্বল মনে করেছিল এবং আমাকে প্রায় হত্যাই করে ফেলেছিল। তুমি আমার সাথে এমন করো না, যাতে শত্রুরা আনন্দিত হয় এবং আমাকে যালিমদের অন্তর্ভুক্ত করো না। (সূরা আ‘রাফু ১৫০)
মূসা (আঃ) সামেরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন :
قَالَ فَمَا خَطْبُكَ يَا سَامِرِيُّ
মূসা বলল, হে সামেরী! তোমার ব্যাপার কী? (সূরা ত্বা–হা– ৯৫)
সে প্রতারণামূলক উত্তর দিল :
قَالَ بَصُرْتُ بِمَا لَمْ يَبْصُرُوْا بِه فَقَبَضْتُ قَبْضَةً مِّنْ اَثَرِ الرَّسُوْلِ فَنَبَذْتُهَا وَكَذٰلِكَ سَوَّلَتْ لِيْ نَفْسِيْ
সে বলল, আমি দেখেছিলাম যা তারা দেখেনি। অতঃপর আমি সে দূতের পদচিহ্ন হতে একমুষ্টি (মাটি) নিয়েছিলাম এবং আমি তা নিক্ষেপ করেছিলাম। আমার মন আমার জন্য এরূপ করাটা শোভন করে দিয়েছিল। (সূরা ত্বা–হা– ৯৬)
সামেরী দুনিয়া ও আখিরাতের আযাবে গ্রেফতার হলো :
قَالَ فَاذْهَبْ فَاِنَّ لَكَ فِى الْحَيَاةِ اَنْ تَقُوْلَ لَا مِسَاسَ۪ وَاِنَّ لَكَ مَوْعِدًا لَّنْ تُخْلَفَهٗ
মূসা বলল, দূর হও! তোমার জীবদ্দশায় তোমার জন্য এটাই রইল যে, তুমি শুধু বলবে, আমাকে কেউ স্পর্শ করো না। আর তোমার জন্য রইল এক নির্দিষ্টকাল (পরকালের আযাব), যা তোমার ক্ষেত্রে কখনো ব্যতিক্রম হবে না। (সূরা ত্বা–হা– ৯৭)
নবী তার মূর্তিকে জ্বালিয়ে ভষ্মিভূত করে দিলেন :
وَانْظُرْ اِلٰۤى اِلٰهِكَ الَّذِيْ ظَلْتَ عَلَيْهِ عَاكِفًاؕ لَنُحَرِّقَنَّهٗ ثُمَّ لَنَنْسِفَنَّهٗ فِى الْيَمِّ نَسْفًا
তুমি তোমার সে ইলাহের প্রতি লক্ষ্য করো, যার পূজায় তুমি রত ছিলে। অবশ্যই আমরা তাকে জ্বালিয়ে দেব, অতঃপর তাকে বিক্ষিপ্ত করে সাগরে নিক্ষেপ করব। (সূরা ত্বা–হা– ৯৭)
আল্লাহকে মা‘বুদ বলে ঘোষণা করলেন :
اِنَّمَاۤ اِلٰهُكُمُ اللهُ الَّذِيْ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ وَسِعَ كُلَّ شَيْءٍ عِلْمًا
তোমাদের ইলাহ্ তো কেবল আল্লাহই, যিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই, তাঁর জ্ঞান সর্ববিষয়ে ব্যাপ্ত। (সূরা ত্বা–হা– ৯৮)
জাতি ভুল বুঝতে পেরে তাওবা করল :
وَلَمَّا سُقِطَ فِۤيْ اَيْدِيْهِمْ وَرَاَوْا اَنَّهُمْ قَدْ ضَلُّوْا قَالُوْا لَئِنْ لَّمْ يَرْحَمْنَا رَبُّنَا وَيَغْفِرْ لَنَا لَنَكُوْنَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
অতঃপর যখন তারা অনুতপ্ত হলো ও বুঝতে পারল যে, তারা বিপথগামী হয়ে গেছে তখন তারা বলল, আমাদের প্রতিপালক যদি আমাদের প্রতি দয়া না করেন ও আমাদেরকে ক্ষমা না করেন, তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব। (সূরা আ‘রাফু ১৪৯)
নবী নিজের ও ভাইয়ের জন্য মাগফিরাত কামনা করলেন :
قَالَ رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَلِاَخِيْ وَاَدْخِلْنَا فِيْ رَحْمَتِكَؗ وَاَنْتَ اَرْحَمُ الرَّاحِمِيْنَ
মূসা বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ও আমার ভাইকে ক্ষমা করো এবং আমাদেরকে তোমার রহমতের মধ্যে দাখিল করো; তুমিই তো শ্রেষ্ঠ দয়ালু। (সূরা আ‘রাফু ১৫১)
যারা বাছুর পূজায় লিপ্ত ছিল তারা লাঞ্ছিত হয়েছে :
اِنَّ الَّذِيْنَ اتَّخَذُوا الْعِجْلَ سَيَنَالُهُمْ غَضَبٌ مِّنْ رَّبِّهِمْ وَذِلَّةٌ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَاؕ وَكَذٰلِكَ نَجْزِى الْمُفْتَرِيْنَ
যারা গো–বৎসকে উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করেছে পার্থিব জীবনে তাদের উপর তাদের প্রতিপালকের ক্রোধ ও লাঞ্ছনা পতিত হবেই। এভাবেই আমি মিথ্যা রচনাকারীদেরকে প্রতিফল দিয়ে থাকি। (সূরা আ‘রাফু ১৫২)
রাগ প্রশমিত হলে নবী ফলকগুলো তুলে নিলেন :
وَلَمَّا سَكَتَ عَنْ مُّوْسَى الْغَضَبُ اَخَذَ الْاَلْوَاحَۚ وَفِيْ نُسْخَتِهَا هُدًى وَّرَحْمَةٌ لِّلَّذِيْنَ هُمْ لِرَبِّهِمْ يَرْهَبُوْنَ
যখন মূসার ক্রোধ প্রশমিত হলো, তখন সে (তাওরাতের) ফলকগুলো তুলে নিল। তার পাতায় হেদায়াত ও রহমত (সম্বলিত কথাবার্তা লিখিত) ছিল- এমনসব লোকদের জন্য, যারা তাদের রবকে ভয় করে। (সূরা আ‘রাফু ১৫৪)
ক্ষমাপ্রার্থনা করার জন্য ৭০ জনকে নিয়ে সিনাই পাহাড়ে গেলেন :
وَاخْتَارَ مُوْسٰى قَوْمَهٗ سَبْعِيْنَ رَجُلًا لِّمِيْقَاتِنَا
মূসা স্বীয় সম্প্রদায় হতে সত্তরজন লোককে আমার নির্ধারিত স্থানে সমবেত হওয়ার জন্য মনোনীত করল।
(সূরা আ‘রাফু ১৫৫)
সেখানে ভূমিকম্পে আক্রান্ত হলে মূসা (আঃ) দু‘আ করলেন :
فَلَمَّاۤ اَخَذَتْهُمُ الرَّجْفَةُ قَالَ رَبِّ لَوْ شِئْتَ اَهْلَكْتَهُمْ مِّنْ قَبْلُ وَاِيَّايَؕ اَتُهْلِكُنَا بِمَا فَعَلَ السُّفَهَآءُ مِنَّاۚ اِنْ هِيَ اِلَّا فِتْنَتُكَؕ تُضِلُّ بِهَا مَنْ تَشَآءُ وَتَهْدِيْ مَنْ تَشَآءُؕ اَنْتَ وَلِيُّنَا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَاَنْتَ خَيْرُ الْغَافِرِيْنَ
যখন তারা ভূমিকম্প দ্বারা আক্রান্ত হলো তখন মূসা বলল, হে আমার প্রতিপালক! তুমি ইচ্ছা করলে পূর্বেই তো তাদেরকে এবং আমাকে ধ্বংস করতে পারতে! আমাদের মধ্যে যারা নির্বোধ, তারা যা করেছে সেজন্য কি তুমি আমাদেরকে ধ্বংস করবে? এটা তো শুধু তোমার পরীক্ষা, যার দ্বারা তুমি যাকে ইচ্ছা বিপথগামী কর এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত কর। তুমিই তো আমাদের অভিভাবক, সুতরাং আমাদেরকে ক্ষমা করো ও আমাদের প্রতি দয়া করো; ক্ষমাশীলদের মধ্যে তুমিই তো শ্রেষ্ঠ। (সূরা আ‘রাফু ১৫৫)
وَوَاعَدْنَا مُوْسٰى ثَلَاثِيْنَ لَيْلَةً وَّاَتْمَمْنَاهَا بِعَشْرٍ فَتَمَّ مِيْقَاتُ رَبِّهٖۤ اَرْبَعِيْنَ لَيْلَةً
স্মরণ করো, যখন আমি মূসার জন্য ত্রিশ রাত্রি নির্ধারিত করি এবং আরো দশ দ্বারা তা পূর্ণ করি। অতঃপর যখন তার প্রতিপালকের নির্ধারিত চল্লিশ রাত্রি পূর্ণ হয়। (সূরা আ‘রাফু ১৪২)
মূসা (আঃ) হারূন (আঃ) কে খালিফা বানিয়ে চলে গেলেন :
وَقَالَ مُوْسٰى لِاَخِيْهِ هَارُوْنَ اخْلُفْنِيْ فِيْ قَوْمِيْ وَاَصْلِحْ وَلَا تَتَّبِعْ سَبِيْلَ الْمُفْسِدِيْنَ
মূসা তার ভাই হারূনকে বলল, আমার অনুপস্থিতিতে আমার সম্প্রদায়ের মধ্যে তুমি আমার প্রতিনিধিত্ব করবে, সংশোধন করবে এবং বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পথ অনুসরণ করবে না। (সূরা আ‘রাফু ১৪২)
মূসা (আঃ) আল্লাহকে দেখার আবেদন জানালেন কিন্তু তা সম্ভব হয়নি :
وَلَمَّا جَآءَ مُوْسٰى لِمِيْقَاتِنَا وَكَلَّمَهٗ رَبُّهٗ قَالَ رَبِّ اَرِنِۤيْ اَنْظُرْ اِلَيْكَؕ قَالَ لَنْ تَرَانِيْ وَلٰكِنِ انْظُرْ اِلَى الْجَبَلِ فَاِنِ اسْتَقَرَّ مَكَانَهٗ فَسَوْفَ تَرَانِيْۚ فَلَمَّا تَجَلّٰى رَبُّهٗ لِلْجَبَلِ جَعَلَهٗ دَكًّا وَّخَرَّ مُوْسٰى صَعِقًاۚ فَلَمَّاۤ اَفَاقَ قَالَ سُبْحَانَكَ تُبْتُ اِلَيْكَ وَاَنَاْ اَوَّلُ الْمُؤْمِنِيْنَ
স্মরণ করো, যখন মূসা আমার নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হলো এবং তার প্রতিপালক তার সাথে কথা বললেন। তখন সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে দর্শন দাও, আমি তোমাকে দেখব। তিনি বললেন, তুমি আমাকে কখনই দেখতে পাবে না। বরং তুমি পাহাড়ের প্রতি লক্ষ্য করো, তা স্বস্থানে স্থির থাকলে তুমি আমাকে দেখতে পাবে। অতঃপর যখন তার প্রতিপালক পাহাড়ে জ্যোতি প্রকাশ করলেন, তখন তা পাহাড়কে চূর্ণ–বিচূর্ণ করে দিল এবং মূসা অজ্ঞান হয়ে পড়ল। যখন সে জ্ঞান ফিরে পেল তখন বলল, আমি তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করছি, আমি অনুতপ্ত হয়ে তোমার কাছেই প্রত্যাবর্তন করলাম এবং মুমিনদের মধ্যে আমিই প্রথম। (সূরা আ‘রাফু ১৪৩)
আল্লাহ তাকে ব্যাখ্যা সম্বলিত কিতাব দিলেন :
وَكَتَبْنَا لَهٗ فِى الْاَلْوَاحِ مِنْ كُلِّ شَيْءٍۚ مَوْعِظَةً وَّتَفْصِيْلًا لِّكُلِّ شَيْءٍۚ فَخُذْهَا بِقُوَّةٍ وَّأْمُرْ قَوْمَكَ يَأْخُذُوْا بِاَحْسَنِهَاؕ سَاُرِيْكُمْ دَارَ الْفَاسِقِيْنَ
আমি তার জন্য সর্ববিষয়ে উপদেশ ও সকল বিষয়ের স্পষ্ট ব্যাখ্যা ফলকে লিখিয়ে দিয়েছি। সুতরাং এগুলো শক্তভাবে আঁকড়ে ধরো এবং তোমার সম্প্রদায়কে তা হতে যা উত্তম তা গ্রহণ করতে নির্দেশ দাও। অতি শীঘ্রই আমি তোমাদেরকে সত্যত্যাগীদের বাসস্থান দেখিয়ে দেব। (সূরা আ‘রাফু ১৪৫)
আগে চলে যাওয়াতে আল্লাহ কৈফিয়ত চাইলেন :
وَمَاۤ اَعْجَلَكَ عَنْ قَوْمِكَ يَا مُوْسٰى
হে মূসা! কিসে তোমাকে তোমার সম্প্রদায়কে পশ্চাতে ফেলে তাড়াতাড়ি করতে বাধ্য করল? (সূরা ত্বা-হা– ৮৩)
মূসা (আঃ) উত্তরে বললেন :
قَالَ هُمْ اُولَآءِ عَلٰۤى اَثَرِيْ وَعَجِلْتُ اِلَيْكَ رَبِّ لِتَرْضٰى
সে বলল, তারা তো আমার পশ্চাতে। হে আমার প্রতিপালক! আমি তাড়াতাড়ি তোমার নিকট আসলাম, যাতে তুমি সন্তুষ্ট হও। (সূরা ত্বা–হা– ৮৪)
আল্লাহ বললেন, সামেরী বিপদ ঘটিয়েছে :
قَالَ فَاِنَّا قَدْ فَتَنَّا قَوْمَكَ مِنْ ۢ بَعْدِكَ وَاَضَلَّهُمُ السَّامِرِيُّ
তিনি বললেন, আমি তো তোমার চলে আসার পর তোমার সম্প্রদায়কে পরীক্ষায় ফেলেছি। ফলে সামেরী তাদেরকে পথভ্রষ্ট করে দেয়। (সূরা ত্বা–হা– ৮৫)
মূসা (আঃ) এর জাতি গো–বৎসের পূজা শুরু করে দিল :
وَاِذْ وَاعَدْنَا مُوْسٰۤى اَرْبَعِيْنَ لَيْلَةً ثُمَّ اتَّخَذْتُمُ الْعِجْلَ مِنْ ۢ بَعْدِه
যখন আমি মূসার সঙ্গে চল্লিশ রাত্রির অঙ্গীকার করেছিলাম, তারপর তোমরা গো–বৎসকে (উপাস্য হিসেবে) গ্রহণ করে নিয়েছিলে। (সূরা বাক্বারা– ৫১)
وَاتَّخَذَ قَوْمُ مُوْسٰى مِنْ ۢ بَعْدِه مِنْ حُلِيِّهِمْ عِجْلًا جَسَدًا لَّهٗ خُوَارٌؕ اَلَمْ يَرَوْا اَنَّهٗ لَا يُكَلِّمُهُمْ وَلَا يَهْدِيْهِمْ سَبِيْلًا ۘ اِتَّخَذُوْهُ وَكَانُوْا ظَالِمِيْنَ
মূসার সম্প্রদায় তার অনুপস্থিতিতে নিজেদের অলংকার দ্বারা এক অবয়ব দিয়ে গো–বৎস বানাল, যা ‘হাম্বা’ করে শব্দ করত। কিন্তু তারা কি দেখল না যে, তা তাদের সাথে কথা বলে না ও তাদেরকে পথও দেখায় না? অতঃপর তারা তাকে উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করল; আর তারা ছিল যালিম। (সূরা আ‘রাফু ১৪৮)
সামেরী তাদেরকে মিথ্যা উপাস্য বানিয়ে দিল :
فَاَخْرَجَ لَهُمْ عِجْلًا جَسَدًا لَّهٗ خُوَارٌ فَقَالُوْا هٰذَاۤ اِلٰهُكُمْ وَاِلٰهُ مُوْسٰىۚ فَنَسِيَ
অতঃপর সে তাদের জন্য এক গো–বৎস তৈরি করল। (তা ছিল) এক অবয়ব, যা ‘হাম্বা’ করে শব্দ করত। তারা বলল, এটা তোমাদের ইলাহ্ এবং মূসারও ইলাহ, কিন্তু মূসা ভুলে গিয়েছে। (সূরা ত্বা–হা– ৮৮)
কিন্তু তারা বিবেক খাটাতে পারেনি :
اَفَلَا يَرَوْنَ اَ لَّا يَرْجِعُ اِلَيْهِمْ قَوْلًا وَّلَا يَمْلِكُ لَهُمْ ضَرًّا وَّلَا نَفْعًا
তবে কি তারা ভেবে দেখে না যে, তা তাদের কথায় সাড়া দেয় না এবং তাদের কোন ক্ষতি অথবা উপকার করার ক্ষমতা রাখে না? (সূরা ত্বা–হা– ৮৯)
হারূন (আঃ) তাদেরকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন :
وَلَقَدْ قَالَ لَهُمْ هَارُوْنُ مِنْ قَبْلُ يَا قَوْمِ اِنَّمَا فُتِنْتُمْ بِه ۚ وَاِنَّ رَبَّكُمُ الرَّحْمٰنُ فَاتَّبِعُوْنِيْ وَاَطِيْعُوْاۤ اَمْرِيْ
হারূন তাদেরকে পূর্বেই বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! এটা দ্বারা তো কেবল তোমাদেরকে পরীক্ষায় ফেলা হয়েছে। নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক খুবই দয়াময়, সুতরাং তোমরা আমার অনুসরণ করো এবং আমার আদেশ মেনে চলো। (সূরা ত্বা–হা– ৯০)
তারপরও তারা বাছুর পূজা ছাড়েনি :
قَالُوْا لَنْ نَّبْرَحَ عَلَيْهِ عَاكِفِيْنَ حَتّٰى يَرْجِعَ اِلَيْنَا مُوْسٰى
তারা বলেছিল, আমাদের নিকট মূসা ফিরে না আসা পর্যন্ত কিছুতেই আমরা এর পূজা হতে বিরত হব না।
(সূরা ত্বা–হা– ৯১)
মূসা (আঃ) ফিরে এসে জাতিকে শাসালেন :
فَرَجَعَ مُوْسٰۤى اِلٰى قَوْمِه غَضْبَانَ اَسِفًاۚ قَالَ يَا قَوْمِ اَلَمْ يَعِدْكُمْ رَبُّكُمْ وَعْدًا حَسَنًاؕ اَفَطَالَ عَلَيْكُمُ الْعَهْدُ اَمْ اَرَدْتُّمْ اَنْ يَّحِلَّ عَلَيْكُمْ غَضَبٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ فَاَخْلَفْتُمْ مَّوْعِدِيْ
অতঃপর মূসা তার সম্প্রদায়ের নিকট ক্ষুদ্ধ হয়ে ফিরে গেল এবং বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমাদের প্রতিপালক কি তোমাদেরকে এক উত্তম প্রতিশ্রুতি দেননি? তবে কি প্রতিশ্রুতিকাল তোমাদের নিকট সুদীর্ঘ হয়েছে? নাকি তোমরা চেয়েছ যে, তোমাদের প্রতি তোমাদের প্রতিপালকের ক্রোধ পতিত হোক, যে কারণে তোমরা আমার প্রতি প্রদত্ত অঙ্গীকার ভঙ্গ করলে? (সূরা ত্বা–হা– ৮৬)
وَلَمَّا رَجَعَ مُوْسٰۤى اِلٰى قَوْمِه غَضْبَانَ اَسِفًا قَالَ بِئْسَمَا خَلَفْتُمُوْنِيْ مِنْ ۢبَعْدِيْۚ اَعَجِلْتُمْ اَمْرَ رَبِّكُمْ
মূসা যখন ক্রুদ্ধ ও ক্ষুব্ধ হয়ে স্বীয় সম্প্রদায়ের নিকট প্রত্যাবর্তন করল তখন বলল, আমার অনুপস্থিতিতে তোমরা আমার কতই না নিকৃষ্ট প্রতিনিধিত্ব করেছ! তোমাদের প্রতিপালকের আদেশের পূর্বেই তোমরা ত্বরান্বিত করলে? (সূরা আ‘রাফু ১৫০)
তারা বাস্তব ওজর পেশ করল :
قَالُوْا مَاۤ اَخْلَفْنَا مَوْعِدَكَ بِمَلْكِنَا وَلٰكِنَّا حُمِّلْنَاۤ اَوْزَارًا مِّنْ زِيْنَةِ الْقَوْمِ فَقَذَفْنَاهَا فَكَذٰلِكَ اَلْقَى السَّامِرِيُّ
তারা বলল, আমরা তোমার প্রতি প্রদত্ত অঙ্গীকার স্বেচ্ছায় ভঙ্গ করিনি, তবে আমাদের উপর লোকদের অলংকারের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল। আর আমরা সেটা অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করি, অনুরূপভাবে সামেরীও নিক্ষেপ করে। (সূরা ত্বা–হা– ৮৭)
মূসা ফলক ছুড়ে মেরে ভাইয়ের দিকে অগ্রসর হলেন :
قَالَ يَا هَارُوْنُ مَا مَنَعَكَ اِذْ رَاَيْتَهُمْ ضَلُّوْا ‐ اَ لَّا تَتَّبِعَنِؕ اَفَعَصَيْتَ اَمْرِيْ
মূসা বলল, হে হারূন! তুমি যখন দেখলে তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে তখন আমার অনুসরণ করা হতে কিসে তোমাকে নিবৃত্ত করল? তবে কি তুমি আমার আদেশ অমান্য করলে? (সূরা ত্বা–হা– ৯২, ৯৩)
وَاَلْقَى الْاَلْوَاحَ وَاَخَذَ بِرَأْسِ اَخِيْهِ يَجُرُّهٗۤ اِلَيْهِ
অতঃপর সে ফলকগুলো ফেলে দিল এবং স্বীয় ভ্রাতাকে চুলে ধরে নিজের দিকে টেনে আনল।
(সূরা আ‘রাফু ১৫০)
হারূন (আঃ) বিনয়ের সাথে প্রকৃত ব্যাপারটি তুলে ধরলেন :
قَالَ يَبْنَؤُمَّ لَا تَأْخُذْ بِلِحْيَتِيْ وَلَا بِرَأْسِيْۤ اِنِّيْ خَشِيْتُ اَنْ تَقُوْلَ فَرَّقْتَ بَيْنَ بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ وَلَمْ تَرْقُبْ قَوْلِيْ
হারূন বলল, হে আমার সহোদর! আমার দাড়ি ও কেশ ধরো না। আমি আশঙ্কা করেছিলাম যে, তুমি বলবে, তুমিই বনী ইসরাঈলদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছ এবং আমার কথা পালনে যত্নবান হওনি। (সূরা ত্বা–হা– ৯৪)
اِنَّ الْقَوْمَ اسْتَضْعَفُوْنِيْ وَكَادُوْا يَقْتُلُوْنَنِيْؗ فَلَا تُشْمِتْ بِيَ الْاَعْدَآءَ وَلَا تَجْعَلْنِيْ مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِيْنَ
লোকেরা তো আমাকে দুর্বল মনে করেছিল এবং আমাকে প্রায় হত্যাই করে ফেলেছিল। তুমি আমার সাথে এমন করো না, যাতে শত্রুরা আনন্দিত হয় এবং আমাকে যালিমদের অন্তর্ভুক্ত করো না। (সূরা আ‘রাফু ১৫০)
মূসা (আঃ) সামেরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন :
قَالَ فَمَا خَطْبُكَ يَا سَامِرِيُّ
মূসা বলল, হে সামেরী! তোমার ব্যাপার কী? (সূরা ত্বা–হা– ৯৫)
সে প্রতারণামূলক উত্তর দিল :
قَالَ بَصُرْتُ بِمَا لَمْ يَبْصُرُوْا بِه فَقَبَضْتُ قَبْضَةً مِّنْ اَثَرِ الرَّسُوْلِ فَنَبَذْتُهَا وَكَذٰلِكَ سَوَّلَتْ لِيْ نَفْسِيْ
সে বলল, আমি দেখেছিলাম যা তারা দেখেনি। অতঃপর আমি সে দূতের পদচিহ্ন হতে একমুষ্টি (মাটি) নিয়েছিলাম এবং আমি তা নিক্ষেপ করেছিলাম। আমার মন আমার জন্য এরূপ করাটা শোভন করে দিয়েছিল। (সূরা ত্বা–হা– ৯৬)
সামেরী দুনিয়া ও আখিরাতের আযাবে গ্রেফতার হলো :
قَالَ فَاذْهَبْ فَاِنَّ لَكَ فِى الْحَيَاةِ اَنْ تَقُوْلَ لَا مِسَاسَ۪ وَاِنَّ لَكَ مَوْعِدًا لَّنْ تُخْلَفَهٗ
মূসা বলল, দূর হও! তোমার জীবদ্দশায় তোমার জন্য এটাই রইল যে, তুমি শুধু বলবে, আমাকে কেউ স্পর্শ করো না। আর তোমার জন্য রইল এক নির্দিষ্টকাল (পরকালের আযাব), যা তোমার ক্ষেত্রে কখনো ব্যতিক্রম হবে না। (সূরা ত্বা–হা– ৯৭)
নবী তার মূর্তিকে জ্বালিয়ে ভষ্মিভূত করে দিলেন :
وَانْظُرْ اِلٰۤى اِلٰهِكَ الَّذِيْ ظَلْتَ عَلَيْهِ عَاكِفًاؕ لَنُحَرِّقَنَّهٗ ثُمَّ لَنَنْسِفَنَّهٗ فِى الْيَمِّ نَسْفًا
তুমি তোমার সে ইলাহের প্রতি লক্ষ্য করো, যার পূজায় তুমি রত ছিলে। অবশ্যই আমরা তাকে জ্বালিয়ে দেব, অতঃপর তাকে বিক্ষিপ্ত করে সাগরে নিক্ষেপ করব। (সূরা ত্বা–হা– ৯৭)
আল্লাহকে মা‘বুদ বলে ঘোষণা করলেন :
اِنَّمَاۤ اِلٰهُكُمُ اللهُ الَّذِيْ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ وَسِعَ كُلَّ شَيْءٍ عِلْمًا
তোমাদের ইলাহ্ তো কেবল আল্লাহই, যিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই, তাঁর জ্ঞান সর্ববিষয়ে ব্যাপ্ত। (সূরা ত্বা–হা– ৯৮)
জাতি ভুল বুঝতে পেরে তাওবা করল :
وَلَمَّا سُقِطَ فِۤيْ اَيْدِيْهِمْ وَرَاَوْا اَنَّهُمْ قَدْ ضَلُّوْا قَالُوْا لَئِنْ لَّمْ يَرْحَمْنَا رَبُّنَا وَيَغْفِرْ لَنَا لَنَكُوْنَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
অতঃপর যখন তারা অনুতপ্ত হলো ও বুঝতে পারল যে, তারা বিপথগামী হয়ে গেছে তখন তারা বলল, আমাদের প্রতিপালক যদি আমাদের প্রতি দয়া না করেন ও আমাদেরকে ক্ষমা না করেন, তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব। (সূরা আ‘রাফু ১৪৯)
নবী নিজের ও ভাইয়ের জন্য মাগফিরাত কামনা করলেন :
قَالَ رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَلِاَخِيْ وَاَدْخِلْنَا فِيْ رَحْمَتِكَؗ وَاَنْتَ اَرْحَمُ الرَّاحِمِيْنَ
মূসা বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ও আমার ভাইকে ক্ষমা করো এবং আমাদেরকে তোমার রহমতের মধ্যে দাখিল করো; তুমিই তো শ্রেষ্ঠ দয়ালু। (সূরা আ‘রাফু ১৫১)
যারা বাছুর পূজায় লিপ্ত ছিল তারা লাঞ্ছিত হয়েছে :
اِنَّ الَّذِيْنَ اتَّخَذُوا الْعِجْلَ سَيَنَالُهُمْ غَضَبٌ مِّنْ رَّبِّهِمْ وَذِلَّةٌ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَاؕ وَكَذٰلِكَ نَجْزِى الْمُفْتَرِيْنَ
যারা গো–বৎসকে উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করেছে পার্থিব জীবনে তাদের উপর তাদের প্রতিপালকের ক্রোধ ও লাঞ্ছনা পতিত হবেই। এভাবেই আমি মিথ্যা রচনাকারীদেরকে প্রতিফল দিয়ে থাকি। (সূরা আ‘রাফু ১৫২)
রাগ প্রশমিত হলে নবী ফলকগুলো তুলে নিলেন :
وَلَمَّا سَكَتَ عَنْ مُّوْسَى الْغَضَبُ اَخَذَ الْاَلْوَاحَۚ وَفِيْ نُسْخَتِهَا هُدًى وَّرَحْمَةٌ لِّلَّذِيْنَ هُمْ لِرَبِّهِمْ يَرْهَبُوْنَ
যখন মূসার ক্রোধ প্রশমিত হলো, তখন সে (তাওরাতের) ফলকগুলো তুলে নিল। তার পাতায় হেদায়াত ও রহমত (সম্বলিত কথাবার্তা লিখিত) ছিল- এমনসব লোকদের জন্য, যারা তাদের রবকে ভয় করে। (সূরা আ‘রাফু ১৫৪)
ক্ষমাপ্রার্থনা করার জন্য ৭০ জনকে নিয়ে সিনাই পাহাড়ে গেলেন :
وَاخْتَارَ مُوْسٰى قَوْمَهٗ سَبْعِيْنَ رَجُلًا لِّمِيْقَاتِنَا
মূসা স্বীয় সম্প্রদায় হতে সত্তরজন লোককে আমার নির্ধারিত স্থানে সমবেত হওয়ার জন্য মনোনীত করল।
(সূরা আ‘রাফু ১৫৫)
সেখানে ভূমিকম্পে আক্রান্ত হলে মূসা (আঃ) দু‘আ করলেন :
فَلَمَّاۤ اَخَذَتْهُمُ الرَّجْفَةُ قَالَ رَبِّ لَوْ شِئْتَ اَهْلَكْتَهُمْ مِّنْ قَبْلُ وَاِيَّايَؕ اَتُهْلِكُنَا بِمَا فَعَلَ السُّفَهَآءُ مِنَّاۚ اِنْ هِيَ اِلَّا فِتْنَتُكَؕ تُضِلُّ بِهَا مَنْ تَشَآءُ وَتَهْدِيْ مَنْ تَشَآءُؕ اَنْتَ وَلِيُّنَا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَاَنْتَ خَيْرُ الْغَافِرِيْنَ
যখন তারা ভূমিকম্প দ্বারা আক্রান্ত হলো তখন মূসা বলল, হে আমার প্রতিপালক! তুমি ইচ্ছা করলে পূর্বেই তো তাদেরকে এবং আমাকে ধ্বংস করতে পারতে! আমাদের মধ্যে যারা নির্বোধ, তারা যা করেছে সেজন্য কি তুমি আমাদেরকে ধ্বংস করবে? এটা তো শুধু তোমার পরীক্ষা, যার দ্বারা তুমি যাকে ইচ্ছা বিপথগামী কর এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত কর। তুমিই তো আমাদের অভিভাবক, সুতরাং আমাদেরকে ক্ষমা করো ও আমাদের প্রতি দয়া করো; ক্ষমাশীলদের মধ্যে তুমিই তো শ্রেষ্ঠ। (সূরা আ‘রাফু ১৫৫)
সাগর পার হয়েই তারা মূর্তি বানিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেয় :
وَجَاوَزْنَا بِبَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ الْبَحْرَ فَاَتَوْا عَلٰى قَوْمٍ يَّعْكُفُوْنَ عَلٰۤى اَصْنَامٍ لَّهُمْۚ قَالُوْا يَا مُوْسَى اجْعَلْ لَّنَاۤ اِلٰهًا كَمَا لَهُمْ اٰلِهَةٌؕ قَالَ اِنَّكُمْ قَوْمٌ تَجْهَلُوْنَ
আমি বনী ইসরাঈলকে সমুদ্র পার করিয়ে দেই, অতঃপর তারা প্রতিমা পূজায় রত এক জাতির নিকট উপস্থিত হয়। তারা বলল, হে মূসা! তাদের দেবতার ন্যায় আমাদের জন্যও এক দেবতা বানিয়ে দাও। সে বলল, তোমরা তো এক মূর্খ সম্প্রদায়। (সূরা আ‘রাফু ১৩৮)
নবী আপত্তি জানালেন :
قَالَ اَغَيْرَ اللهِ اَبْغِيْكُمْ اِلٰهًا وَّهُوَ فَضَّلَكُمْ عَلَى الْعَالَمِيْن
সে আরো বলল, আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের জন্য আমি কি অন্য ইলাহ্ অনুসন্ধান করব? অথচ তিনি তোমাদেরকে বিশ্বজগতের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন? (সূরা আ‘রাফু ১৪০)
তারা আল্লাহকে প্রকাশ্যে দেখার দাবী জানাল :
وَاِذْ قُلْتُمْ يَا مُوْسٰى لَنْ نُّؤْمِنَ لَكَ حَتّٰى نَرَى اللهَ جَهْرَةً فَاَخَذَتْكُمُ الصَّاعِقَةُ وَاَنْتُمْ تَنْظُرُوْنَ
(স্মরণ করো) যখন তোমরা বলেছিলে, হে মূসা! আমরা আল্লাহকে প্রকাশ্যে না দেখা পর্যন্ত তোমাকে বিশ্বাস করব না। তখন বিদ্যুৎ (বজ্র) তোমাদেরকে আক্রমণ করেছিল ও তোমরা তা প্রত্যক্ষ করেছিলে। (সূরা বাক্বারা– ৫৫)
তারা আসমানী খাদ্য পরিবর্তনের আবেদন জানাল :
وَاِذْ قُلْتُمْ يَا مُوْسٰى لَنْ نَّصْبِرَ عَلٰى طَعَامٍ وَّاحِدٍ فَادْعُ لَنَا رَبَّكَ يُخْرِجْ لَنَا مِمَّا تُنْۢبِتُ الْاَرْضُ مِنْ ۢبَقْلِهَا وَقِثَّآئِهَا وَفُوْمِهَا وَعَدَسِهَا وَبَصَلِهَاؕ قَالَ اَتَسْتَبْدِلُوْنَ الَّذِيْ هُوَ اَدْنٰى بِالَّذِيْ هُوَ خَيْرٌؕ اِهْبِطُوْا مِصْرًا فَاِنَّ لَكُمْ مَّا سَاَلْتُمْؕ وَضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ الذِّلَّةُ وَالْمَسْكَنَةُۗ وَبَآءُوْا بِغَضَبٍ مِّنَ اللهِؕ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ كَانُوْا يَكْفُرُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِ وَيَقْتُلُوْنَ النَّبِيّيْنَ بِغَيْرِ الْحَقِّؕ ذٰلِكَ بِمَا عَصَوْا وَّكَانُوْا يَعْتَدُوْنَ
যখন তোমরা বলেছিলে, হে মূসা! আমরা একই প্রকার খাদ্যে ধৈর্যধারণ করতে পারি না। অতএব তুমি আমাদের জন্য তোমার রবের নিকট প্রার্থনা করো, যেন তিনি জমিন যা উৎপন্ন করে তা হতে শাক–সবজি, কাঁকুড়, গম, মসুর এবং পেঁয়াজ উৎপাদন করেন। অতঃপর সে বলেছিল, যা উৎকৃষ্ট তোমরা কি তার সঙ্গে যা নিকৃষ্ট তার বিনিময় করতে চাও? সুতরাং তোমরা কোন নগরে উপনীত হও, ফলে যা চেয়েছ তা পাবে। অতঃপর তাদের উপর লানত ও দরিদ্রতা নিপতিত হলো এবং তারা আল্লাহর ক্রোধে পতিত হলো। এটা এজন্য যে, নিশ্চয় তারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করত এবং নবীগণকে অন্যায়ভাবে হত্যা করত। আর এ কারণেও যে, তারা অবাধ্যাচরণ করেছিল এবং সীমালঙ্ঘন করেছিল। (সূরা বাক্বারা– ৬১)
وَجَاوَزْنَا بِبَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ الْبَحْرَ فَاَتَوْا عَلٰى قَوْمٍ يَّعْكُفُوْنَ عَلٰۤى اَصْنَامٍ لَّهُمْۚ قَالُوْا يَا مُوْسَى اجْعَلْ لَّنَاۤ اِلٰهًا كَمَا لَهُمْ اٰلِهَةٌؕ قَالَ اِنَّكُمْ قَوْمٌ تَجْهَلُوْنَ
আমি বনী ইসরাঈলকে সমুদ্র পার করিয়ে দেই, অতঃপর তারা প্রতিমা পূজায় রত এক জাতির নিকট উপস্থিত হয়। তারা বলল, হে মূসা! তাদের দেবতার ন্যায় আমাদের জন্যও এক দেবতা বানিয়ে দাও। সে বলল, তোমরা তো এক মূর্খ সম্প্রদায়। (সূরা আ‘রাফু ১৩৮)
নবী আপত্তি জানালেন :
قَالَ اَغَيْرَ اللهِ اَبْغِيْكُمْ اِلٰهًا وَّهُوَ فَضَّلَكُمْ عَلَى الْعَالَمِيْن
সে আরো বলল, আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের জন্য আমি কি অন্য ইলাহ্ অনুসন্ধান করব? অথচ তিনি তোমাদেরকে বিশ্বজগতের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন? (সূরা আ‘রাফু ১৪০)
তারা আল্লাহকে প্রকাশ্যে দেখার দাবী জানাল :
وَاِذْ قُلْتُمْ يَا مُوْسٰى لَنْ نُّؤْمِنَ لَكَ حَتّٰى نَرَى اللهَ جَهْرَةً فَاَخَذَتْكُمُ الصَّاعِقَةُ وَاَنْتُمْ تَنْظُرُوْنَ
(স্মরণ করো) যখন তোমরা বলেছিলে, হে মূসা! আমরা আল্লাহকে প্রকাশ্যে না দেখা পর্যন্ত তোমাকে বিশ্বাস করব না। তখন বিদ্যুৎ (বজ্র) তোমাদেরকে আক্রমণ করেছিল ও তোমরা তা প্রত্যক্ষ করেছিলে। (সূরা বাক্বারা– ৫৫)
তারা আসমানী খাদ্য পরিবর্তনের আবেদন জানাল :
وَاِذْ قُلْتُمْ يَا مُوْسٰى لَنْ نَّصْبِرَ عَلٰى طَعَامٍ وَّاحِدٍ فَادْعُ لَنَا رَبَّكَ يُخْرِجْ لَنَا مِمَّا تُنْۢبِتُ الْاَرْضُ مِنْ ۢبَقْلِهَا وَقِثَّآئِهَا وَفُوْمِهَا وَعَدَسِهَا وَبَصَلِهَاؕ قَالَ اَتَسْتَبْدِلُوْنَ الَّذِيْ هُوَ اَدْنٰى بِالَّذِيْ هُوَ خَيْرٌؕ اِهْبِطُوْا مِصْرًا فَاِنَّ لَكُمْ مَّا سَاَلْتُمْؕ وَضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ الذِّلَّةُ وَالْمَسْكَنَةُۗ وَبَآءُوْا بِغَضَبٍ مِّنَ اللهِؕ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ كَانُوْا يَكْفُرُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِ وَيَقْتُلُوْنَ النَّبِيّيْنَ بِغَيْرِ الْحَقِّؕ ذٰلِكَ بِمَا عَصَوْا وَّكَانُوْا يَعْتَدُوْنَ
যখন তোমরা বলেছিলে, হে মূসা! আমরা একই প্রকার খাদ্যে ধৈর্যধারণ করতে পারি না। অতএব তুমি আমাদের জন্য তোমার রবের নিকট প্রার্থনা করো, যেন তিনি জমিন যা উৎপন্ন করে তা হতে শাক–সবজি, কাঁকুড়, গম, মসুর এবং পেঁয়াজ উৎপাদন করেন। অতঃপর সে বলেছিল, যা উৎকৃষ্ট তোমরা কি তার সঙ্গে যা নিকৃষ্ট তার বিনিময় করতে চাও? সুতরাং তোমরা কোন নগরে উপনীত হও, ফলে যা চেয়েছ তা পাবে। অতঃপর তাদের উপর লানত ও দরিদ্রতা নিপতিত হলো এবং তারা আল্লাহর ক্রোধে পতিত হলো। এটা এজন্য যে, নিশ্চয় তারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করত এবং নবীগণকে অন্যায়ভাবে হত্যা করত। আর এ কারণেও যে, তারা অবাধ্যাচরণ করেছিল এবং সীমালঙ্ঘন করেছিল। (সূরা বাক্বারা– ৬১)
আল্লাহর নিয়ামতের কথা স্মরণ করো :
وَاِذْ قَالَ مُوْسٰى لِقَوْمِه يَا قَوْمِ اذْكُرُوْا نِعْمَةَ اللهِ عَلَيْكُمْ اِذْ جَعَلَ فِيْكُمْ اَنْۢبِيَآءَ وَجَعَلَكُمْ مُّلُوْكًاۗ وَاٰتَاكُمْ مَّا لَمْ يُؤْتِ اَحَدًا مِّنَ الْعَالَمِيْنَ
স্মরণ করো, যখন মূসা তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহকে স্মরণ করো। যখন তিনি তোমাদের মধ্য হতে নবী মনোনীত করেছিলেন এবং তোমাদেরকে রাজত্ব দিয়েছিলেন। আর তিনি তোমাদেরকে এমন কিছু দিয়েছিলেন, যা বিশ্বজগতে কাউকে দেননি। (সূরা মায়েদা– ২০)
وَاِذْ قَالَ مُوْسٰى لِقَوْمِهِ اذْكُرُوْا نِعْمَةَ اللهِ عَلَيْكُمْ اِذْ اَنْجَاكُمْ مِّنْ اٰلِ فِرْعَوْنَ يَسُوْمُوْنَكُمْ سُوْٓءَ الْعَذَابِ وَيُذَبِّحُوْنَ اَبْنَآءَكُمْ وَيَسْتَحْيُوْنَ نِسَآءَكُمْؕ وَفِيْ ذٰلِكُمْ بَلَآءٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ عَظِيْمٌ
স্মরণ করো, যখন মূসা তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করো। যখন তিনি তোমাদেরকে ফিরাউনের সম্প্রদায়ের কবল হতে রক্ষা করেছিলেন, যারা তোমাদেরকে নিকৃষ্ট শাস্তি দিত, তোমাদের পুত্রদেরকে যবেহ করত ও তোমাদের নারীদেরকে জীবিত রাখত। আর এতে ছিল তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে এক মহাপরীক্ষা। (সূরা ইবরাহীম– ৬)
বাছুর পূজার অপরাধের জন্য তাওবা করো :
وَاِذْ قَالَ مُوْسٰى لِقَوْمِه يَا قَوْمِ اِنَّكُمْ ظَلَمْتُمْ اَنْفُسَكُمْ بِاتِّخَاذِكُمُ الْعِجْلَ فَتُوْبُوْاۤ اِلٰى بَارِئِكُمْ فَاقْتُلُوْاۤ اَنْفُسَكُمْؕ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ عِنْدَ بَارِئِكُمْؕ فَتَابَ عَلَيْكُمْؕ اِنَّهٗ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ
যখন মূসা স্বীয় সম্প্রদায়কে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! নিশ্চয় তোমরা গো–বৎসকে (ইবাদাতের জন্য) গ্রহণ করে তোমাদের নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছ। অতএব তোমরা তোমাদের সৃষ্টিকর্তার নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করো এবং তোমরা পরস্পর পরস্পরকে হত্যা করো। তোমাদের সৃষ্টিকর্তার নিকট এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, অতঃপর তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করেছিলেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল ও করুণাময়। (সূরা বাক্বারা– ৫৪)
তোমাদের রবের সতর্কবাণীকে স্মরণ করো :
وَاِذْ تَاَذَّنَ رَبُّكُمْ لَئِنْ شَكَرْتُمْ لَاَزِيْدَنَّكُمْ وَلَئِنْ كَفَرْتُمْ اِنَّ عَذَابِيْ لَشَدِيْدٌ
স্মরণ করো, যখন তোমাদের প্রতিপালক ঘোষণা করেন, যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও, তবে অবশ্যই তোমাদেরকে অধিক বৃদ্ধি করে দেব। আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, তবে নিশ্চয় আমার শাস্তি অনেক কঠোর। (সূরা ইবরাহীম– ৭)
وَاِذْ قَالَ مُوْسٰى لِقَوْمِه يَا قَوْمِ اذْكُرُوْا نِعْمَةَ اللهِ عَلَيْكُمْ اِذْ جَعَلَ فِيْكُمْ اَنْۢبِيَآءَ وَجَعَلَكُمْ مُّلُوْكًاۗ وَاٰتَاكُمْ مَّا لَمْ يُؤْتِ اَحَدًا مِّنَ الْعَالَمِيْنَ
স্মরণ করো, যখন মূসা তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহকে স্মরণ করো। যখন তিনি তোমাদের মধ্য হতে নবী মনোনীত করেছিলেন এবং তোমাদেরকে রাজত্ব দিয়েছিলেন। আর তিনি তোমাদেরকে এমন কিছু দিয়েছিলেন, যা বিশ্বজগতে কাউকে দেননি। (সূরা মায়েদা– ২০)
وَاِذْ قَالَ مُوْسٰى لِقَوْمِهِ اذْكُرُوْا نِعْمَةَ اللهِ عَلَيْكُمْ اِذْ اَنْجَاكُمْ مِّنْ اٰلِ فِرْعَوْنَ يَسُوْمُوْنَكُمْ سُوْٓءَ الْعَذَابِ وَيُذَبِّحُوْنَ اَبْنَآءَكُمْ وَيَسْتَحْيُوْنَ نِسَآءَكُمْؕ وَفِيْ ذٰلِكُمْ بَلَآءٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ عَظِيْمٌ
স্মরণ করো, যখন মূসা তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করো। যখন তিনি তোমাদেরকে ফিরাউনের সম্প্রদায়ের কবল হতে রক্ষা করেছিলেন, যারা তোমাদেরকে নিকৃষ্ট শাস্তি দিত, তোমাদের পুত্রদেরকে যবেহ করত ও তোমাদের নারীদেরকে জীবিত রাখত। আর এতে ছিল তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে এক মহাপরীক্ষা। (সূরা ইবরাহীম– ৬)
বাছুর পূজার অপরাধের জন্য তাওবা করো :
وَاِذْ قَالَ مُوْسٰى لِقَوْمِه يَا قَوْمِ اِنَّكُمْ ظَلَمْتُمْ اَنْفُسَكُمْ بِاتِّخَاذِكُمُ الْعِجْلَ فَتُوْبُوْاۤ اِلٰى بَارِئِكُمْ فَاقْتُلُوْاۤ اَنْفُسَكُمْؕ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ عِنْدَ بَارِئِكُمْؕ فَتَابَ عَلَيْكُمْؕ اِنَّهٗ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ
যখন মূসা স্বীয় সম্প্রদায়কে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! নিশ্চয় তোমরা গো–বৎসকে (ইবাদাতের জন্য) গ্রহণ করে তোমাদের নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছ। অতএব তোমরা তোমাদের সৃষ্টিকর্তার নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করো এবং তোমরা পরস্পর পরস্পরকে হত্যা করো। তোমাদের সৃষ্টিকর্তার নিকট এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, অতঃপর তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করেছিলেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল ও করুণাময়। (সূরা বাক্বারা– ৫৪)
তোমাদের রবের সতর্কবাণীকে স্মরণ করো :
وَاِذْ تَاَذَّنَ رَبُّكُمْ لَئِنْ شَكَرْتُمْ لَاَزِيْدَنَّكُمْ وَلَئِنْ كَفَرْتُمْ اِنَّ عَذَابِيْ لَشَدِيْدٌ
স্মরণ করো, যখন তোমাদের প্রতিপালক ঘোষণা করেন, যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও, তবে অবশ্যই তোমাদেরকে অধিক বৃদ্ধি করে দেব। আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, তবে নিশ্চয় আমার শাস্তি অনেক কঠোর। (সূরা ইবরাহীম– ৭)
এক নিহত লোকের হত্যাকারী নিয়ে বিতর্ক হয় :
وَاِذْ قَتَلْتُمْ نَفْسًا فَادَّارَأْتُمْ فِيْهَاؕ وَاللهُ مُخْرِجٌ مَّا كُنْتُمْ تَكْتُمُوْنَ
স্মরণ করো, যখন তোমরা এক ব্যক্তিকে হত্যা করার পর সে বিষয়ে বিরোধ করেছিলে। আর তোমরা যা গোপন করেছিলে, আল্লাহ তা প্রকাশকারী। (সূরা বাক্বারা– ৭২)
মূসা (আঃ) জাতিকে একটি গাভী যবেহ করার নির্দেশ দিলেন :
وَاِذْ قَالَ مُوْسٰى لِقَوْمِه ۤ اِنَّ اللهَ يَأْمُرُكُمْ اَنْ تَذْبَحُوْا بَقَرَةًؕ قَالُوْاۤ اَتَتَّخِذُنَا هُزُوًاؕ قَالَ اَعُوْذُ بِاللهِ اَنْ اَكُوْنَ مِنَ الْجَاهِلِيْنَ
স্মরণ করো, যখন মূসা নিজ সম্প্রদায়কে বলেছিল, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ করেছেন যে, তোমরা একটি গরু যবেহ করো। তখন তারা বলেছিল, তুমি কি আমাদের সাথে উপহাস করছ? সে বলেছিল, আমি মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (সূরা বাক্বারা– ৬৭)
তারা গাভীর বিবরণ জানতে চাইলে নবী তা বলে দেন :
قَالُوا ادْعُ لَنَا رَبَّكَ يُبَيِّنْ لَّنَا مَا هِيَؕ قَالَ اِنَّهٗ يَقُوْلُ اِنَّهَا بَقَرَةٌ لَّا فَارِضٌ وَّلَا بِكْرٌؕ عَوَانٌ ۢبَيْنَ ذٰلِكَؕ فَافْعَلُوْا مَا تُؤْمَرُوْنَ
তারা বলেছিল, তুমি আমাদের জন্য তোমার প্রতিপালকের নিকট প্রার্থনা করো যে, তিনি যেন আমাদেরকে সেটা কী কী গুণ বিশিষ্ট হবে তা বলে দেন। তখন সে বলেছিল, তিনি (আল্লাহ) বলেছেন যে, নিশ্চয় সেই গরু বৃদ্ধ নয় এবং শাবকও নয়; বরং এ দু’য়ের মধ্যবর্তী। অতএব তোমাদেরকে যেরূপ আদেশ করা হয়েছে, তা করে ফেল। (সূরা বাক্বারা– ৬৮)
আবার তারা এর রং সম্পর্কে প্রশ্ন করল :
قَالُوا ادْعُ لَنَا رَبَّكَ يُبَيِّنْ لَّنَا مَا لَوْنُهَاؕ قَالَ اِنَّهٗ يَقُوْلُ اِنَّهَا بَقَرَةٌ صَفْرَآءُ فَاقِعٌ لَّوْنُهَا تَسُرُّ النَّاظِرِيْنَ
তারা বলেছিল, তুমি আমাদের জন্য তোমার রবের নিকট প্রার্থনা করো যে, তিনি যেন এর বর্ণ সম্পর্কে আমাদেরকে বর্ণনা করে দেন। তখন সে বলেছিল, আল্লাহ বলেছেন যে, নিশ্চয় গরুর বর্ণ গাঢ় ও পীত হতে হবে, যা দর্শকদের জন্য আনন্দদায়ক। (সূরা বাক্বারা– ৬৯)
পুনরায় গাভীর পরিপূর্ণ পরিচয় চাইল :
قَالُوا ادْعُ لَنَا رَبَّكَ يُبَيِّنْ لَّنَا مَا هِيَ اِنَّ الْبَقَرَ تَشَابَهَ عَلَيْنَاؕ وَاِنَّاۤ اِنْ شَآءَ اللهُ لَمُهْتَدُوْنَ
তারা বলেছিল, তুমি আমাদের জন্য তোমার প্রতিপালকের নিকট প্রার্থনা করো যে, তিনি যেন ওটা কিরূপ তা আমাদের জন্য বর্ণনা করেন। কেননা আমাদের নিকট সকল গরু একই ধরনের; আল্লাহ ইচ্ছা করলে আমরা সুপথগামী হব। (সূরা বাক্বারা– ৭০)
নবী ভালোভাবে বুঝিয়ে দিলেন, এবার তারা তা যবেহ করল :
قَالَ اِنَّهٗ يَقُوْلُ اِنَّهَا بَقَرَةٌ لَّا ذَلُوْلٌ تُثِيْرُ الْاَرْضَ وَلَا تَسْقِى الْحَرْثَۚ مُسَلَّمَةٌ لَّا شِيَةَ فِيْهَاؕ قَالُوا الْاٰنَ جِئْتَ بِالْحَقِّؕ فَذَبَحُوْهَا وَمَا كَادُوْا يَفْعَلُوْنَ
সে বলেছিল, নিশ্চয় তিনি বলেছেন যে, তা এমন গরু যা জমি চাষে বা ক্ষেতে পানি সেচের জন্য ব্যবহৃত হয়নি; বরং তা সুস্থ ও নিখুঁত। তখন তারা বলেছিল, এতক্ষণে তুমি সত্যটা প্রকাশ করেছ। অতঃপর তারা তা যবেহ করল, যা তাদের করার ইচ্ছা ছিল না। (সূরা বাক্বারা– ৭১)
গাভীর গোশত দ্বারা আঘাত করলে নিহত ব্যক্তি হত্যাকারীর নাম বলে দেয় :
فَقُلْنَا اضْرِبُوْهُ بِبَعْضِهَاؕ كَذٰلِكَ يُحْيِى اللهُ الْمَوْتٰى وَيُرِيْكُمْ اٰيَاتِه لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُوْنَ
অতঃপর আমি বলেছিলাম, এর (গাভীর) কিছু অংশ দ্বারা তাকে (মৃতকে) আঘাত করো। এভাবে আল্লাহ মৃতকে জীবিত করেন এবং স্বীয় নিদর্শনসমূহকে প্রদর্শন করেন, যাতে তোমরা হৃদয়ঙ্গম করতে পার।
(সূরা বাক্বারা– ৭৩)
وَاِذْ قَتَلْتُمْ نَفْسًا فَادَّارَأْتُمْ فِيْهَاؕ وَاللهُ مُخْرِجٌ مَّا كُنْتُمْ تَكْتُمُوْنَ
স্মরণ করো, যখন তোমরা এক ব্যক্তিকে হত্যা করার পর সে বিষয়ে বিরোধ করেছিলে। আর তোমরা যা গোপন করেছিলে, আল্লাহ তা প্রকাশকারী। (সূরা বাক্বারা– ৭২)
মূসা (আঃ) জাতিকে একটি গাভী যবেহ করার নির্দেশ দিলেন :
وَاِذْ قَالَ مُوْسٰى لِقَوْمِه ۤ اِنَّ اللهَ يَأْمُرُكُمْ اَنْ تَذْبَحُوْا بَقَرَةًؕ قَالُوْاۤ اَتَتَّخِذُنَا هُزُوًاؕ قَالَ اَعُوْذُ بِاللهِ اَنْ اَكُوْنَ مِنَ الْجَاهِلِيْنَ
স্মরণ করো, যখন মূসা নিজ সম্প্রদায়কে বলেছিল, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ করেছেন যে, তোমরা একটি গরু যবেহ করো। তখন তারা বলেছিল, তুমি কি আমাদের সাথে উপহাস করছ? সে বলেছিল, আমি মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (সূরা বাক্বারা– ৬৭)
তারা গাভীর বিবরণ জানতে চাইলে নবী তা বলে দেন :
قَالُوا ادْعُ لَنَا رَبَّكَ يُبَيِّنْ لَّنَا مَا هِيَؕ قَالَ اِنَّهٗ يَقُوْلُ اِنَّهَا بَقَرَةٌ لَّا فَارِضٌ وَّلَا بِكْرٌؕ عَوَانٌ ۢبَيْنَ ذٰلِكَؕ فَافْعَلُوْا مَا تُؤْمَرُوْنَ
তারা বলেছিল, তুমি আমাদের জন্য তোমার প্রতিপালকের নিকট প্রার্থনা করো যে, তিনি যেন আমাদেরকে সেটা কী কী গুণ বিশিষ্ট হবে তা বলে দেন। তখন সে বলেছিল, তিনি (আল্লাহ) বলেছেন যে, নিশ্চয় সেই গরু বৃদ্ধ নয় এবং শাবকও নয়; বরং এ দু’য়ের মধ্যবর্তী। অতএব তোমাদেরকে যেরূপ আদেশ করা হয়েছে, তা করে ফেল। (সূরা বাক্বারা– ৬৮)
আবার তারা এর রং সম্পর্কে প্রশ্ন করল :
قَالُوا ادْعُ لَنَا رَبَّكَ يُبَيِّنْ لَّنَا مَا لَوْنُهَاؕ قَالَ اِنَّهٗ يَقُوْلُ اِنَّهَا بَقَرَةٌ صَفْرَآءُ فَاقِعٌ لَّوْنُهَا تَسُرُّ النَّاظِرِيْنَ
তারা বলেছিল, তুমি আমাদের জন্য তোমার রবের নিকট প্রার্থনা করো যে, তিনি যেন এর বর্ণ সম্পর্কে আমাদেরকে বর্ণনা করে দেন। তখন সে বলেছিল, আল্লাহ বলেছেন যে, নিশ্চয় গরুর বর্ণ গাঢ় ও পীত হতে হবে, যা দর্শকদের জন্য আনন্দদায়ক। (সূরা বাক্বারা– ৬৯)
পুনরায় গাভীর পরিপূর্ণ পরিচয় চাইল :
قَالُوا ادْعُ لَنَا رَبَّكَ يُبَيِّنْ لَّنَا مَا هِيَ اِنَّ الْبَقَرَ تَشَابَهَ عَلَيْنَاؕ وَاِنَّاۤ اِنْ شَآءَ اللهُ لَمُهْتَدُوْنَ
তারা বলেছিল, তুমি আমাদের জন্য তোমার প্রতিপালকের নিকট প্রার্থনা করো যে, তিনি যেন ওটা কিরূপ তা আমাদের জন্য বর্ণনা করেন। কেননা আমাদের নিকট সকল গরু একই ধরনের; আল্লাহ ইচ্ছা করলে আমরা সুপথগামী হব। (সূরা বাক্বারা– ৭০)
নবী ভালোভাবে বুঝিয়ে দিলেন, এবার তারা তা যবেহ করল :
قَالَ اِنَّهٗ يَقُوْلُ اِنَّهَا بَقَرَةٌ لَّا ذَلُوْلٌ تُثِيْرُ الْاَرْضَ وَلَا تَسْقِى الْحَرْثَۚ مُسَلَّمَةٌ لَّا شِيَةَ فِيْهَاؕ قَالُوا الْاٰنَ جِئْتَ بِالْحَقِّؕ فَذَبَحُوْهَا وَمَا كَادُوْا يَفْعَلُوْنَ
সে বলেছিল, নিশ্চয় তিনি বলেছেন যে, তা এমন গরু যা জমি চাষে বা ক্ষেতে পানি সেচের জন্য ব্যবহৃত হয়নি; বরং তা সুস্থ ও নিখুঁত। তখন তারা বলেছিল, এতক্ষণে তুমি সত্যটা প্রকাশ করেছ। অতঃপর তারা তা যবেহ করল, যা তাদের করার ইচ্ছা ছিল না। (সূরা বাক্বারা– ৭১)
গাভীর গোশত দ্বারা আঘাত করলে নিহত ব্যক্তি হত্যাকারীর নাম বলে দেয় :
فَقُلْنَا اضْرِبُوْهُ بِبَعْضِهَاؕ كَذٰلِكَ يُحْيِى اللهُ الْمَوْتٰى وَيُرِيْكُمْ اٰيَاتِه لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُوْنَ
অতঃপর আমি বলেছিলাম, এর (গাভীর) কিছু অংশ দ্বারা তাকে (মৃতকে) আঘাত করো। এভাবে আল্লাহ মৃতকে জীবিত করেন এবং স্বীয় নিদর্শনসমূহকে প্রদর্শন করেন, যাতে তোমরা হৃদয়ঙ্গম করতে পার।
(সূরা বাক্বারা– ৭৩)
মূসা (আঃ) জাতিকে ফিলিস্তিন বিজয় করতে বললেন :
يَا قَوْمِ ادْخُلُوا الْاَرْضَ الْمُقَدَّسَةَ الَّتِيْ كَتَبَ اللهُ لَكُمْ وَلَا تَرْتَدُّوْا عَلٰۤى اَدْبَارِكُمْ فَتَنْقَلِبُوْا خَاسِرِيْنَ
হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহ তোমাদের জন্য যে পবিত্র ভূমি নির্দিষ্ট করেছেন তোমরা তাতে প্রবেশ করো এবং পেছনে ফিরে যেও না, নতুবা তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবে। (সূরা মায়েদা– ২১)
এতে তারা কাপুরুষতার পরিচয় দিল :
قَالُوْا يَا مُوْسٰۤى اِنَّ فِيْهَا قَوْمًا جَبَّارِيْنَۗ وَاِنَّا لَنْ نَّدْخُلَهَا حَتّٰى يَخْرُجُوْا مِنْهَا فَاِنْ يَّخْرُجُوْا مِنْهَاۚ فَاِنَّا دَاخِلُوْنَ
তারা বলল, হে মূসা! সেখানে রয়েছে এক প্রতাপশালী সম্প্রদায়। আমরা কখনো সেখানে প্রবেশ করব না যে পর্যন্ত না তারা সেখান থেকে বের হয়ে যায়। যদি তারা সেখান থেকে বের হয়ে যায়, তবে অবশ্যই আমরা প্রবেশ করব। (সূরা মায়েদা– ২২)
কিন্তু তাদের দু’জন জাতিকে উৎসাহিত করল :
قَالَ رَجُلَانِ مِنَ الَّذِيْنَ يَخَافُوْنَ اَنْعَمَ اللهُ عَلَيْهِمَا ادْخُلُوْا عَلَيْهِمُ الْبَابَۚ فَاِذَا دَخَلْتُمُوْهُ فَاِنَّكُمْ غَالِبُوْنَۚ وَعَلَى اللهِ فَتَوَكَّلُوْاۤ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
যারা ভয় করত তাদের মধ্য থেকে দু’ব্যক্তি যাদের উপর আল্লাহ দয়া করেছিলেন তারা বলল, তোমরা তাদের উপর হামলা করে দরজা দিয়ে প্রবেশ করো। যখনই তোমরা সেখানে প্রবেশ করবে, তখনই তোমরা বিজয়ী হবে। আর তোমরা আল্লাহর উপরই নির্ভর করো; যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক। (সূরা মায়েদা– ২৩)
তারা নবীর সাথে দৃষ্টতামূলক জবাব দিল :
قَالُوْا يَا مُوْسٰۤى اِنَّا لَنْ نَّدْخُلَهَاۤ اَبَدًا مَّا دَامُوْا فِيْهَا فَاذْهَبْ اَنْتَ وَرَبُّكَ فَقَاتِلَاۤ اِنَّا هَاهُنَا قَاعِدُوْنَ
তারা বলল, হে মূসা! আমরা কখনো সেখানে প্রবেশ করব না, যতক্ষণ তারা সেখানে থাকবে। অতএব আপনি ও আপনার প্রতিপালক যান এবং আপনারা দু’জন লড়াই করুন, আমরা এখানেই বসে রইলাম। (সূরা মায়েদা– ২৪)
নবী আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করলেন :
قَالَ رَبِّ اِنِّيْ لَاۤ اَمْلِكُ اِلَّا نَفْسِيْ وَاَخِيْ فَافْرُقْ بَيْنَنَا وَبَيْنَ الْقَوْمِ الْفَاسِقِيْنَ
মূসা বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমার ও আমার ভাই ছাড়া অন্য কারো উপর আমার আধিপত্য নেই। সুতরাং তুমি আমাদের ও ফাসিক জাতির মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ করে দাও। (সূরা মায়েদা– ২৫)
আল্লাহ চল্লিশ বছরের জন্য তা হারাম করে দিলেন :
قَالَ فَاِنَّهَا مُحَرَّمَةٌ عَلَيْهِمْ اَرْبَعِيْنَ سَنَةًۚ يَتِيْهُوْنَ فِى الْاَرْضِؕ فَلَا تَأْسَ عَلَى الْقَوْمِ الْفَاسِقِيْنَ
আল্লাহ বললেন, তাদের জন্য এ দেশ চল্লিশ বছর পর্যন্ত অবৈধ করা হলো, তারা যাযাবরের মতো দুনিয়াতে ঘুরে বেড়াবে। অতএব ফাসিক সম্প্রদায়ের জন্য আফসোস করো না। (সূরা মায়েদা– ২৬)
يَا قَوْمِ ادْخُلُوا الْاَرْضَ الْمُقَدَّسَةَ الَّتِيْ كَتَبَ اللهُ لَكُمْ وَلَا تَرْتَدُّوْا عَلٰۤى اَدْبَارِكُمْ فَتَنْقَلِبُوْا خَاسِرِيْنَ
হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহ তোমাদের জন্য যে পবিত্র ভূমি নির্দিষ্ট করেছেন তোমরা তাতে প্রবেশ করো এবং পেছনে ফিরে যেও না, নতুবা তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবে। (সূরা মায়েদা– ২১)
এতে তারা কাপুরুষতার পরিচয় দিল :
قَالُوْا يَا مُوْسٰۤى اِنَّ فِيْهَا قَوْمًا جَبَّارِيْنَۗ وَاِنَّا لَنْ نَّدْخُلَهَا حَتّٰى يَخْرُجُوْا مِنْهَا فَاِنْ يَّخْرُجُوْا مِنْهَاۚ فَاِنَّا دَاخِلُوْنَ
তারা বলল, হে মূসা! সেখানে রয়েছে এক প্রতাপশালী সম্প্রদায়। আমরা কখনো সেখানে প্রবেশ করব না যে পর্যন্ত না তারা সেখান থেকে বের হয়ে যায়। যদি তারা সেখান থেকে বের হয়ে যায়, তবে অবশ্যই আমরা প্রবেশ করব। (সূরা মায়েদা– ২২)
কিন্তু তাদের দু’জন জাতিকে উৎসাহিত করল :
قَالَ رَجُلَانِ مِنَ الَّذِيْنَ يَخَافُوْنَ اَنْعَمَ اللهُ عَلَيْهِمَا ادْخُلُوْا عَلَيْهِمُ الْبَابَۚ فَاِذَا دَخَلْتُمُوْهُ فَاِنَّكُمْ غَالِبُوْنَۚ وَعَلَى اللهِ فَتَوَكَّلُوْاۤ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
যারা ভয় করত তাদের মধ্য থেকে দু’ব্যক্তি যাদের উপর আল্লাহ দয়া করেছিলেন তারা বলল, তোমরা তাদের উপর হামলা করে দরজা দিয়ে প্রবেশ করো। যখনই তোমরা সেখানে প্রবেশ করবে, তখনই তোমরা বিজয়ী হবে। আর তোমরা আল্লাহর উপরই নির্ভর করো; যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক। (সূরা মায়েদা– ২৩)
তারা নবীর সাথে দৃষ্টতামূলক জবাব দিল :
قَالُوْا يَا مُوْسٰۤى اِنَّا لَنْ نَّدْخُلَهَاۤ اَبَدًا مَّا دَامُوْا فِيْهَا فَاذْهَبْ اَنْتَ وَرَبُّكَ فَقَاتِلَاۤ اِنَّا هَاهُنَا قَاعِدُوْنَ
তারা বলল, হে মূসা! আমরা কখনো সেখানে প্রবেশ করব না, যতক্ষণ তারা সেখানে থাকবে। অতএব আপনি ও আপনার প্রতিপালক যান এবং আপনারা দু’জন লড়াই করুন, আমরা এখানেই বসে রইলাম। (সূরা মায়েদা– ২৪)
নবী আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করলেন :
قَالَ رَبِّ اِنِّيْ لَاۤ اَمْلِكُ اِلَّا نَفْسِيْ وَاَخِيْ فَافْرُقْ بَيْنَنَا وَبَيْنَ الْقَوْمِ الْفَاسِقِيْنَ
মূসা বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমার ও আমার ভাই ছাড়া অন্য কারো উপর আমার আধিপত্য নেই। সুতরাং তুমি আমাদের ও ফাসিক জাতির মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ করে দাও। (সূরা মায়েদা– ২৫)
আল্লাহ চল্লিশ বছরের জন্য তা হারাম করে দিলেন :
قَالَ فَاِنَّهَا مُحَرَّمَةٌ عَلَيْهِمْ اَرْبَعِيْنَ سَنَةًۚ يَتِيْهُوْنَ فِى الْاَرْضِؕ فَلَا تَأْسَ عَلَى الْقَوْمِ الْفَاسِقِيْنَ
আল্লাহ বললেন, তাদের জন্য এ দেশ চল্লিশ বছর পর্যন্ত অবৈধ করা হলো, তারা যাযাবরের মতো দুনিয়াতে ঘুরে বেড়াবে। অতএব ফাসিক সম্প্রদায়ের জন্য আফসোস করো না। (সূরা মায়েদা– ২৬)
তারা তাদের নবীকে নেতা নিযুক্ত করার নির্দেশ দিল :
اَلَمْ تَرَ اِلَى الْمَلَاِ مِنْ ۢبَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ مِنْ ۢبَعْدِ مُوْسٰىۘ اِذْ قَالُوْا لِنَبِيٍّ لَّهُمُ ابْعَثْ لَنَا مَلِكًا نُّقَاتِلْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ
মূসার পরের ইসরাঈল বংশীয় নেতাদের প্রতি কি আপনি লক্ষ্য করেননি? যখন তারা তাদের নবীকে বলেছিল, আমাদের জন্য একজন বাদশাহ নিযুক্ত করুন, আমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করব। (সূরা বাক্বারা– ২৪৬)
নবী তাদের দুর্বলতার কথা প্রকাশ করলেন :
قَالَ هَلْ عَسَيْتُمْ اِنْ كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ اَ لَّا تُقَاتِلُوْا
তিনি বললেন, তোমাদের জন্য কি সম্ভবপর নয় যে, যখন তোমাদের উপর যুদ্ধ ফরয করা হবে, তখন তোমরা যুদ্ধ করা থেকে বিরত থাকবে? (সূরা বাক্বারা– ২৪৬)
তারা আবার যুদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিল :
قَالُوْا وَمَا لَنَاۤ اَ لَّا نُقَاتِلَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَقَدْ اُخْرِجْنَا مِنْ دِيَارِنَا وَاَبْنَآئِنَا
তারা বলল, আমরা কেন আল্লাহর পথে যুদ্ধ করব না? অথচ আমরা আমাদের সন্তান ও বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত হয়েছি। (সূরা বাক্বারা– ২৪৬)
পরে অল্প কয়েকজন ছাড়া কেউই সাহস করল না :
فَلَمَّا كُتِبَ عَلَيْهِمُ الْقِتَالُ تَوَلَّوْا اِلَّا قَلِيْلًا مِّنْهُمْؕ وَاللهُ عَلِيْمٌ ۢبِالظَّالِمِيْنَ
অতঃপর যখন তাদের উপর যুদ্ধ ফরয করা হলো, তখন তাদের অল্প কিছু লোক ছাড়া সবাই মুখ ফিরিয়ে নিল। আর আল্লাহ যালিমদের ব্যাপারে ভালোভাবেই অবগত আছেন। (সূরা বাক্বারা– ২৪৬)
তালূতকে নেতা নিযুক্ত করা হলে তারা অভিযোগ তুলতে লাগল :
وَقَالَ لَهُمْ نَبِيُّهُمْ اِنَّ اللهَ قَدْ بَعَثَ لَكُمْ طَالُوْتَ مَلِكًاؕ قَالُوْاۤ اَنّٰى يَكُوْنُ لَهُ الْمُلْكُ عَلَيْنَا وَنَحْنُ اَحَقُّ بِالْمُلْكِ مِنْهُ وَلَمْ يُؤْتَ سَعَةً مِّنَ الْمَالِ
তাদের নবী তাদেরকে বললেন, আল্লাহ অবশ্যই তালূতকে তোমাদের জন্য বাদশাহ নিযুক্ত করেছেন। তখন তারা বলল, আমাদের উপর কীভাবে তার বাদশাহী হতে পারে? নিশ্চয় বাদশাহীর ব্যাপারে তার চেয়ে আমরাই অধিক হকদার। আর তাকে তো অধিক মালও দেয়া হয়নি (যার মাধ্যমে সে বাদশাহী করবে)। (সূরা বাক্বারা- ২৪৭)
নবী তাদের এ অভিযোগের উত্তর দিলেন :
قَالَ اِنَّ اللهَ اصْطَفَاهُ عَلَيْكُمْ وَزَادَهٗ بَسْطَةً فِى الْعِلْمِ وَالْجِسْمِؕ وَاللهُ يُؤْتِيْ مُلْكَهٗ مَنْ يَّشَآءُؕ وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ
নবী বললেন, আল্লাহ তোমাদের জন্য তাকেই মনোনীত করেছেন এবং জ্ঞান ও দৈহিক শক্তিতে প্রচুর প্রবৃদ্ধি দান করেছেন। আর আল্লাহ যাকে চান তাকেই তার রাজত্ব দিয়ে থাকেন। নিশ্চয় আল্লাহ প্রশস্ত ও সর্বজ্ঞানী। (সূরা বাক্বারা– ২৪৭)
তালূতের পক্ষে নিদর্শন উপস্থিত করলেন :
وَقَالَ لَهُمْ نَبِيُّهُمْ اِنَّ اٰيَةَ مُلْكِه ۤ اَنْ يَّأْتِيَكُمُ التَّابُوْتُ فِيْهِ سَكِيْنَةٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَبَقِيَّةٌ مِّمَّا تَرَكَ اٰلُ مُوْسٰى وَاٰلُ هَارُوْنَ تَحْمِلُهُ الْمَلَآئِكَةُؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
তাদের নবী তাদেরকে বললেন, তার রাজত্বের নিদর্শন এই যে, তোমাদের নিকট একটি সিন্দুক আসবে, যাতে থাকবে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে শান্তি এবং মূসা ও হারূনের পরিবারের রেখে যাওয়া কিছু আসবাবপত্র। ফেরেশতারা এটা বহন করে আনবে। আর এতে তোমাদের জন্য রয়েছে নিদর্শন, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক। (সূরা বাক্বারা– ২৪৮)
তাদেরকে রাস্তায় পিপাসা দ্বারা পরীক্ষা করা হলো :
فَلَمَّا فَصَلَ طَالُوْتُ بِالْجُنُوْدِ قَالَ اِنَّ اللهَ مُبْتَلِيْكُمْ بِنَهَرٍۚ فَمَنْ شَرِبَ مِنْهُ فَلَيْسَ مِنِّيْ وَمَنْ لَّمْ يَطْعَمْهُ فَاِنَّهٗ مِنِّيْۘ اِلَّا مَنِ اغْتَرَفَ غُرْفَةً ۢبِيَدِه ۚ فَشَرِبُوْا مِنْهُ اِلَّا قَلِيْلًا مِّنْهُمْ
অতঃপর যখন তালূত সৈন্যদেরকে নিয়ে বের হলেন তখন বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে একটি নদী দ্বারা পরীক্ষা করবেন। যে ব্যক্তি তা থেকে পান করবে, সে আমার দলভুক্ত থাকবে না। আর যে তা থেকে খাবে না, সে আমার দলে থাকবে। তবে যে তার হাতের এক অঞ্জুলী নেবে (তাতে অসুবিধা নেই); কিন্তু তাদের অল্প সংখ্যক লোক ব্যতীত সবাই নদীর পানি পান করে ফেলল। (সূরা বাক্বারা– ২৪৯)
অনেকে সাহস হারিয়ে ফেললেও আল্লাহ প্রেমিরা অগ্রসর হলো :
فَلَمَّا جَاوَزَهٗ هُوَ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَعَهٗ قَالُوْا لَا طَاقَةَ لَنَا الْيَوْمَ بِجَالُوْتَ وَجُنُوْدِه قَالَ الَّذِيْنَ يَظُنُّوْنَ اَنَّهُمْ مُّلَاقُوا اللهِ كَمْ مِّنْ فِئَةٍ قَلِيْلَةٍ غَلَبَتْ فِئَةً كَثِيْرَةً ۢبِاِذْنِ اللهِ وَاللهُ مَعَ الصَّابِرِيْنَ
অতঃপর যখন তিনি ও তার সাথিরা নদী অতিক্রম করলেন তখন তারা বললেন, আজ জালূত এবং তার সৈন্যদের সাথে মুকাবিলা করার সামর্থ্য আমাদের নেই। কিন্তু যারা বিশ্বাস করত যে, আল্লাহর সাথে তাদের সাক্ষাৎ করতে হবে তারা বলল, আল্লাহর হুকুমে কত ছোট দল বড় দলকে পরাজিত করেছে। আর আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথেই রয়েছেন। (সূরা বাক্বারা– ২৪৯)
তারা সামনে অগ্রসর হয়ে দু‘আ করল :
وَلَمَّا بَرَزُوْا لِجَالُوْتَ وَجُنُوْدِه قَالُوْا رَبَّنَاۤ اَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَّثَبِّتْ اَقْدَامَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِيْنَ
যখন তারা জালূত ও তার সৈন্যদের মুখোমুখি হলো তখন তারা বলতে লাগল, হে আমাদের রব! আমাদের পরিপূর্ণ ধৈর্যধারণ করার ক্ষমতা দান করুন এবং আমাদের পাসমূহকে অবিচল রাখুন। আর কাফির সম্প্রদায়ের উপর আমাদেরকে সাহায্য করুন। (সূরা বাক্বারা– ২৫০)
তারা আক্রমণ চালাল এবং বিজয়ী হলো :
فَهَزَمُوْهُمْ بِاِذْنِ اللهِ وَقَتَلَ دَاوُوْدُ جَالُوْتَ وَاٰتَاهُ اللهُ الْمُلْكَ وَالْحِكْمَةَ وَعَلَّمَهٗ مِمَّا يَشَآءُ
অতঃপর তারা আল্লাহর ইচ্ছায় জালূতের সৈন্যদেরকে পরাজিত করল এবং দাউদ জালূতকে নিহত করল। ফলে আল্লাহ তাকে রাজত্ব ও প্রজ্ঞা দান করলেন এবং তাকে স্বীয় ইচ্ছানুযায়ী শিক্ষা দান করলেন।
(সূরা বাক্বারা– ২৫১)
اَلَمْ تَرَ اِلَى الْمَلَاِ مِنْ ۢبَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ مِنْ ۢبَعْدِ مُوْسٰىۘ اِذْ قَالُوْا لِنَبِيٍّ لَّهُمُ ابْعَثْ لَنَا مَلِكًا نُّقَاتِلْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ
মূসার পরের ইসরাঈল বংশীয় নেতাদের প্রতি কি আপনি লক্ষ্য করেননি? যখন তারা তাদের নবীকে বলেছিল, আমাদের জন্য একজন বাদশাহ নিযুক্ত করুন, আমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করব। (সূরা বাক্বারা– ২৪৬)
নবী তাদের দুর্বলতার কথা প্রকাশ করলেন :
قَالَ هَلْ عَسَيْتُمْ اِنْ كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ اَ لَّا تُقَاتِلُوْا
তিনি বললেন, তোমাদের জন্য কি সম্ভবপর নয় যে, যখন তোমাদের উপর যুদ্ধ ফরয করা হবে, তখন তোমরা যুদ্ধ করা থেকে বিরত থাকবে? (সূরা বাক্বারা– ২৪৬)
তারা আবার যুদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিল :
قَالُوْا وَمَا لَنَاۤ اَ لَّا نُقَاتِلَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَقَدْ اُخْرِجْنَا مِنْ دِيَارِنَا وَاَبْنَآئِنَا
তারা বলল, আমরা কেন আল্লাহর পথে যুদ্ধ করব না? অথচ আমরা আমাদের সন্তান ও বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত হয়েছি। (সূরা বাক্বারা– ২৪৬)
পরে অল্প কয়েকজন ছাড়া কেউই সাহস করল না :
فَلَمَّا كُتِبَ عَلَيْهِمُ الْقِتَالُ تَوَلَّوْا اِلَّا قَلِيْلًا مِّنْهُمْؕ وَاللهُ عَلِيْمٌ ۢبِالظَّالِمِيْنَ
অতঃপর যখন তাদের উপর যুদ্ধ ফরয করা হলো, তখন তাদের অল্প কিছু লোক ছাড়া সবাই মুখ ফিরিয়ে নিল। আর আল্লাহ যালিমদের ব্যাপারে ভালোভাবেই অবগত আছেন। (সূরা বাক্বারা– ২৪৬)
তালূতকে নেতা নিযুক্ত করা হলে তারা অভিযোগ তুলতে লাগল :
وَقَالَ لَهُمْ نَبِيُّهُمْ اِنَّ اللهَ قَدْ بَعَثَ لَكُمْ طَالُوْتَ مَلِكًاؕ قَالُوْاۤ اَنّٰى يَكُوْنُ لَهُ الْمُلْكُ عَلَيْنَا وَنَحْنُ اَحَقُّ بِالْمُلْكِ مِنْهُ وَلَمْ يُؤْتَ سَعَةً مِّنَ الْمَالِ
তাদের নবী তাদেরকে বললেন, আল্লাহ অবশ্যই তালূতকে তোমাদের জন্য বাদশাহ নিযুক্ত করেছেন। তখন তারা বলল, আমাদের উপর কীভাবে তার বাদশাহী হতে পারে? নিশ্চয় বাদশাহীর ব্যাপারে তার চেয়ে আমরাই অধিক হকদার। আর তাকে তো অধিক মালও দেয়া হয়নি (যার মাধ্যমে সে বাদশাহী করবে)। (সূরা বাক্বারা- ২৪৭)
নবী তাদের এ অভিযোগের উত্তর দিলেন :
قَالَ اِنَّ اللهَ اصْطَفَاهُ عَلَيْكُمْ وَزَادَهٗ بَسْطَةً فِى الْعِلْمِ وَالْجِسْمِؕ وَاللهُ يُؤْتِيْ مُلْكَهٗ مَنْ يَّشَآءُؕ وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ
নবী বললেন, আল্লাহ তোমাদের জন্য তাকেই মনোনীত করেছেন এবং জ্ঞান ও দৈহিক শক্তিতে প্রচুর প্রবৃদ্ধি দান করেছেন। আর আল্লাহ যাকে চান তাকেই তার রাজত্ব দিয়ে থাকেন। নিশ্চয় আল্লাহ প্রশস্ত ও সর্বজ্ঞানী। (সূরা বাক্বারা– ২৪৭)
তালূতের পক্ষে নিদর্শন উপস্থিত করলেন :
وَقَالَ لَهُمْ نَبِيُّهُمْ اِنَّ اٰيَةَ مُلْكِه ۤ اَنْ يَّأْتِيَكُمُ التَّابُوْتُ فِيْهِ سَكِيْنَةٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَبَقِيَّةٌ مِّمَّا تَرَكَ اٰلُ مُوْسٰى وَاٰلُ هَارُوْنَ تَحْمِلُهُ الْمَلَآئِكَةُؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
তাদের নবী তাদেরকে বললেন, তার রাজত্বের নিদর্শন এই যে, তোমাদের নিকট একটি সিন্দুক আসবে, যাতে থাকবে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে শান্তি এবং মূসা ও হারূনের পরিবারের রেখে যাওয়া কিছু আসবাবপত্র। ফেরেশতারা এটা বহন করে আনবে। আর এতে তোমাদের জন্য রয়েছে নিদর্শন, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক। (সূরা বাক্বারা– ২৪৮)
তাদেরকে রাস্তায় পিপাসা দ্বারা পরীক্ষা করা হলো :
فَلَمَّا فَصَلَ طَالُوْتُ بِالْجُنُوْدِ قَالَ اِنَّ اللهَ مُبْتَلِيْكُمْ بِنَهَرٍۚ فَمَنْ شَرِبَ مِنْهُ فَلَيْسَ مِنِّيْ وَمَنْ لَّمْ يَطْعَمْهُ فَاِنَّهٗ مِنِّيْۘ اِلَّا مَنِ اغْتَرَفَ غُرْفَةً ۢبِيَدِه ۚ فَشَرِبُوْا مِنْهُ اِلَّا قَلِيْلًا مِّنْهُمْ
অতঃপর যখন তালূত সৈন্যদেরকে নিয়ে বের হলেন তখন বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে একটি নদী দ্বারা পরীক্ষা করবেন। যে ব্যক্তি তা থেকে পান করবে, সে আমার দলভুক্ত থাকবে না। আর যে তা থেকে খাবে না, সে আমার দলে থাকবে। তবে যে তার হাতের এক অঞ্জুলী নেবে (তাতে অসুবিধা নেই); কিন্তু তাদের অল্প সংখ্যক লোক ব্যতীত সবাই নদীর পানি পান করে ফেলল। (সূরা বাক্বারা– ২৪৯)
অনেকে সাহস হারিয়ে ফেললেও আল্লাহ প্রেমিরা অগ্রসর হলো :
فَلَمَّا جَاوَزَهٗ هُوَ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَعَهٗ قَالُوْا لَا طَاقَةَ لَنَا الْيَوْمَ بِجَالُوْتَ وَجُنُوْدِه قَالَ الَّذِيْنَ يَظُنُّوْنَ اَنَّهُمْ مُّلَاقُوا اللهِ كَمْ مِّنْ فِئَةٍ قَلِيْلَةٍ غَلَبَتْ فِئَةً كَثِيْرَةً ۢبِاِذْنِ اللهِ وَاللهُ مَعَ الصَّابِرِيْنَ
অতঃপর যখন তিনি ও তার সাথিরা নদী অতিক্রম করলেন তখন তারা বললেন, আজ জালূত এবং তার সৈন্যদের সাথে মুকাবিলা করার সামর্থ্য আমাদের নেই। কিন্তু যারা বিশ্বাস করত যে, আল্লাহর সাথে তাদের সাক্ষাৎ করতে হবে তারা বলল, আল্লাহর হুকুমে কত ছোট দল বড় দলকে পরাজিত করেছে। আর আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথেই রয়েছেন। (সূরা বাক্বারা– ২৪৯)
তারা সামনে অগ্রসর হয়ে দু‘আ করল :
وَلَمَّا بَرَزُوْا لِجَالُوْتَ وَجُنُوْدِه قَالُوْا رَبَّنَاۤ اَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَّثَبِّتْ اَقْدَامَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِيْنَ
যখন তারা জালূত ও তার সৈন্যদের মুখোমুখি হলো তখন তারা বলতে লাগল, হে আমাদের রব! আমাদের পরিপূর্ণ ধৈর্যধারণ করার ক্ষমতা দান করুন এবং আমাদের পাসমূহকে অবিচল রাখুন। আর কাফির সম্প্রদায়ের উপর আমাদেরকে সাহায্য করুন। (সূরা বাক্বারা– ২৫০)
তারা আক্রমণ চালাল এবং বিজয়ী হলো :
فَهَزَمُوْهُمْ بِاِذْنِ اللهِ وَقَتَلَ دَاوُوْدُ جَالُوْتَ وَاٰتَاهُ اللهُ الْمُلْكَ وَالْحِكْمَةَ وَعَلَّمَهٗ مِمَّا يَشَآءُ
অতঃপর তারা আল্লাহর ইচ্ছায় জালূতের সৈন্যদেরকে পরাজিত করল এবং দাউদ জালূতকে নিহত করল। ফলে আল্লাহ তাকে রাজত্ব ও প্রজ্ঞা দান করলেন এবং তাকে স্বীয় ইচ্ছানুযায়ী শিক্ষা দান করলেন।
(সূরা বাক্বারা– ২৫১)
ইউনুস (আঃ) ইরাকের মূছেল নগরীর নিকটবর্তী নীনাওয়া জনপদের অধিবাসীদের প্রতি প্রেরিত হন। তাঁর পিতার নাম ছিল মাত্তা। কুরআন মাজীদে ইউনুস (আঃ) কে কখনো যুন-নূন আবার কখনো সাহেবুল হূত নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তবে এ দু’টি শব্দের অর্থ হচ্ছে, মাছওয়ালা। একটি বিশেষ ঘটনার প্রেক্ষিতে তিনি উক্ত নামে পরিচিত হন।
ইউনুস (আঃ) ছিলেন নবীদের মধ্যে একজন :
وَاِنَّ يُوْنُسَ لَمِنَ الْمُرْسَلِيْنَ
আর ইউনুসও ছিলেন রাসূলদের মধ্যে অন্যতম। (সূরা সাফ্ফাত– ১৩৯)
আল্লাহ তাঁকে উচ্চমর্যাদা দান করেছিলেন :
وَيُوْنُسَ وَلُوْطًاؕ وَكُلًّا فَضَّلْنَا عَلَى الْعَالَمِيْنَ
ইউনুস ও লূত প্রত্যেককেই (আমি সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম) এবং প্রত্যেককেই বিশ্বজগতের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছিলাম। (সূরা আন‘আম– ৮৬)
ইউনুস (আঃ) জাতির নিকট থেকে বেরিয়ে যান :
وَذَا النُّوْنِ اِذْ ذَّهَبَ مُغَاضِبًا فَظَنَّ اَنْ لَّنْ نَّقْدِرَ عَلَيْهِ
স্মরণ করো, যুন–নূনুএর কথা, যখন সে ক্রোধভরে বের হয়ে গিয়েছিল এবং মনে করেছিল আমি তার জন্য শাস্তি নির্ধারণ করব না। (সূরা আম্বিয়া– ৮৭)
বোঝাই করা একটি নৌকায় আরোহণ করেন :
اِذْ اَبَقَ اِلَى الْفُلْكِ الْمَشْحُوْنِ ‐ فَسَاهَمَ فَكَانَ مِنَ الْمُدْحَضِيْنَ
যখন তিনি পালিয়ে বোঝাই নৌযানে গিয়ে পৌঁছলেন। অতঃপর তিনি লটারীতে শরীক হলেন এবং অপরাধী সাব্যস্ত হলেন। (সূরা সাফ্ফাত– ১৪০, ১৪১)
ব্যাখ্যা : ইউনুস (আঃ) আল্লাহর পক্ষ হতে আযাব নাযিল হওয়ার সংবাদ পেয়ে আল্লাহর অনুমতি ছাড়াই বেরিয়ে পড়েন। পথিমধ্যে একটি নৌকায় উঠেন। কিন্তু যে নৌকাটিতে তিনি আরোহন করেছিলেন তা নদীতে আটকে যায়। তখন নৌকার আরোহীদের মধ্যে লটারী হয়। উক্ত লটারীতে ইউনুস (আঃ) এর নাম উঠে। ফলে তাকে নদীতে ফেলে দেয়া হয়। অতঃপর একটি মাছ তাকে গিলে ফেলে।
ইউনুস (আঃ) অনেক দিন মাছের পেটে ছিলেন :
فَالْتَقَمَهُ الْحُوْتُ وَهُوَ مُلِيْمٌ
তারপর একটি মাছ তাকে গিলে ফেলল, তখন তিনি নিজেকে তিরস্কার করতে লাগলেন। (সূরা সাফ্ফাত– ১৪২)
তিনি এ তাসবীহ পাঠের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে তাওবা করেন :
لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنْتَ سُبْحَانَكَ اِنِّيْ كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْنَ
তুমি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই; তুমি পবিত্র ও মহান! নিশ্চয় আমি সীমালঙ্ঘনকারী। (সূরা আম্বিয়া– ৮৭)
আল্লাহ তার তাওবা কবুল করেন :
فَاجْتَبَاهُ رَبُّهٗ فَجَعَلَهٗ مِنَ الصَّالِحِيْنَ
পরিশেষে, তার রব তাকে মনোনীত করলেন এবং তাকে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত করে দিলেন।
(সূরা ক্বালাম– ৫০)
আল্লাহ ইউনুস (আঃ) কে বিপদ থেকে মুক্তি দিলেন :
فَاسْتَجَبْنَا لَهٗ وَنَجَّيْنَاهُ مِنَ الْغَمِّؕ وَكَذٰلِكَ نُنْجِى الْمُؤْمِنِيْنَ
তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম এবং দুশ্চিন্তা হতে মুক্তি দিয়েছিলাম। আর এভাবেই আমি মুমিনদেরকে উদ্ধার করে থাকি। (সূরা আম্বিয়া– ৮৮)
মাছের পেট থেকে আল্লাহ তাকে বের করলেন :
فَنَبَذْنَاهُ بِالْعَرَآءِ وَهُوَ سَقِيْمٌ ‐ وَاَنْۢبَتْنَا عَلَيْهِ شَجَرَةً مِّنْ يَّقْطِيْنٍ
অতঃপর আমি তাকে নিক্ষেপ করলাম এক ময়দানে, তখন তিনি অসুস্থ ছিলেন। আর আমি উৎপন্ন করলাম তার উপর এক লাউ গাছ। (সূরা সাফ্ফাত– ১৪৫)
তাওবা না করলে তাকে মাছের পেটেই থাকতে হতো :
فَلَوْلَاۤ اَنَّهٗ كَانَ مِنَ الْمُسَبِّحِيْنَ ‐ لَلَبِثَ فِيْ بَطْنِهٖۤ اِلٰى يَوْمِ يُبْعَثُوْنَ
সুতরাং তিনি যদি তাসবীহ পাঠকারী না হতেন, তবে অবশ্যই কিয়ামত পর্যন্ত মাছের পেটে থেকে যেতেন। (সূরা সাফ্ফাত– ১৪৩, ১৪৪)
ইউনুস (আঃ) লোকদেরকে দ্বীনের দাওয়াত দিলেন :
وَاَرْسَلْنَاهُ اِلٰى مِائَةِ اَلْفٍ اَوْ يَزِيْدُوْنَ
আমি তাকে রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছিলাম এক লক্ষ বা তার চেয়ে বেশি লোকের প্রতি।
(সূরা সাফ্ফাত– ১৪৭)
লোকেরা তার দাওয়াত কবুল করল :
فَاٰمَنُوْا فَمَتَّعْنَاهُمْ اِلٰى حِيْنٍ
তারা ঈমান এনেছিল, ফলে আমি তাদেরকে এক নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত জীবনোপভোগ করার সুযোগ দিয়েছিলাম। (সূরা সাফ্ফাত– ১৪৮)
فَلَوْلَا كَانَتْ قَرْيَةٌ اٰمَنَتْ فَنَفَعَهَاۤ اِيْمَانُهَاۤ اِلَّا قَوْمَ يُوْنُسَ
তবে ইউনুসের সম্প্রদায় ব্যতীত কোন জনপদবাসী কেন এমন হলো না, যারা ঈমান আনত এবং তাদের ঈমান তাদের উপকারে আসত? (সূরা ইউনুস– ৯৮)
ফলে তারা আযাব থেকে রেহাই পেল :
لَمَّاۤ اٰمَنُوْا كَشَفْنَا عَنْهُمْ عَذَابَ الْخِزْيِ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَمَتَّعْنَاهُمْ اِلٰى حِيْنٍ
যখন তারা ঈমান আনল, তখন আমি তাদের হতে পার্থিব জীবনের অপমানজনক শাস্তি দূর করলাম এবং তাদেরকে কিছু কালের জন্য জীবনোপভোগ করার সুযোগ দিলাম। (সূরা ইউনুস– ৯৮)
ইউনুস (আঃ) ছিলেন নবীদের মধ্যে একজন :
وَاِنَّ يُوْنُسَ لَمِنَ الْمُرْسَلِيْنَ
আর ইউনুসও ছিলেন রাসূলদের মধ্যে অন্যতম। (সূরা সাফ্ফাত– ১৩৯)
আল্লাহ তাঁকে উচ্চমর্যাদা দান করেছিলেন :
وَيُوْنُسَ وَلُوْطًاؕ وَكُلًّا فَضَّلْنَا عَلَى الْعَالَمِيْنَ
ইউনুস ও লূত প্রত্যেককেই (আমি সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম) এবং প্রত্যেককেই বিশ্বজগতের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছিলাম। (সূরা আন‘আম– ৮৬)
ইউনুস (আঃ) জাতির নিকট থেকে বেরিয়ে যান :
وَذَا النُّوْنِ اِذْ ذَّهَبَ مُغَاضِبًا فَظَنَّ اَنْ لَّنْ نَّقْدِرَ عَلَيْهِ
স্মরণ করো, যুন–নূনুএর কথা, যখন সে ক্রোধভরে বের হয়ে গিয়েছিল এবং মনে করেছিল আমি তার জন্য শাস্তি নির্ধারণ করব না। (সূরা আম্বিয়া– ৮৭)
বোঝাই করা একটি নৌকায় আরোহণ করেন :
اِذْ اَبَقَ اِلَى الْفُلْكِ الْمَشْحُوْنِ ‐ فَسَاهَمَ فَكَانَ مِنَ الْمُدْحَضِيْنَ
যখন তিনি পালিয়ে বোঝাই নৌযানে গিয়ে পৌঁছলেন। অতঃপর তিনি লটারীতে শরীক হলেন এবং অপরাধী সাব্যস্ত হলেন। (সূরা সাফ্ফাত– ১৪০, ১৪১)
ব্যাখ্যা : ইউনুস (আঃ) আল্লাহর পক্ষ হতে আযাব নাযিল হওয়ার সংবাদ পেয়ে আল্লাহর অনুমতি ছাড়াই বেরিয়ে পড়েন। পথিমধ্যে একটি নৌকায় উঠেন। কিন্তু যে নৌকাটিতে তিনি আরোহন করেছিলেন তা নদীতে আটকে যায়। তখন নৌকার আরোহীদের মধ্যে লটারী হয়। উক্ত লটারীতে ইউনুস (আঃ) এর নাম উঠে। ফলে তাকে নদীতে ফেলে দেয়া হয়। অতঃপর একটি মাছ তাকে গিলে ফেলে।
ইউনুস (আঃ) অনেক দিন মাছের পেটে ছিলেন :
فَالْتَقَمَهُ الْحُوْتُ وَهُوَ مُلِيْمٌ
তারপর একটি মাছ তাকে গিলে ফেলল, তখন তিনি নিজেকে তিরস্কার করতে লাগলেন। (সূরা সাফ্ফাত– ১৪২)
তিনি এ তাসবীহ পাঠের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে তাওবা করেন :
لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنْتَ سُبْحَانَكَ اِنِّيْ كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْنَ
তুমি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই; তুমি পবিত্র ও মহান! নিশ্চয় আমি সীমালঙ্ঘনকারী। (সূরা আম্বিয়া– ৮৭)
আল্লাহ তার তাওবা কবুল করেন :
فَاجْتَبَاهُ رَبُّهٗ فَجَعَلَهٗ مِنَ الصَّالِحِيْنَ
পরিশেষে, তার রব তাকে মনোনীত করলেন এবং তাকে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত করে দিলেন।
(সূরা ক্বালাম– ৫০)
আল্লাহ ইউনুস (আঃ) কে বিপদ থেকে মুক্তি দিলেন :
فَاسْتَجَبْنَا لَهٗ وَنَجَّيْنَاهُ مِنَ الْغَمِّؕ وَكَذٰلِكَ نُنْجِى الْمُؤْمِنِيْنَ
তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম এবং দুশ্চিন্তা হতে মুক্তি দিয়েছিলাম। আর এভাবেই আমি মুমিনদেরকে উদ্ধার করে থাকি। (সূরা আম্বিয়া– ৮৮)
মাছের পেট থেকে আল্লাহ তাকে বের করলেন :
فَنَبَذْنَاهُ بِالْعَرَآءِ وَهُوَ سَقِيْمٌ ‐ وَاَنْۢبَتْنَا عَلَيْهِ شَجَرَةً مِّنْ يَّقْطِيْنٍ
অতঃপর আমি তাকে নিক্ষেপ করলাম এক ময়দানে, তখন তিনি অসুস্থ ছিলেন। আর আমি উৎপন্ন করলাম তার উপর এক লাউ গাছ। (সূরা সাফ্ফাত– ১৪৫)
তাওবা না করলে তাকে মাছের পেটেই থাকতে হতো :
فَلَوْلَاۤ اَنَّهٗ كَانَ مِنَ الْمُسَبِّحِيْنَ ‐ لَلَبِثَ فِيْ بَطْنِهٖۤ اِلٰى يَوْمِ يُبْعَثُوْنَ
সুতরাং তিনি যদি তাসবীহ পাঠকারী না হতেন, তবে অবশ্যই কিয়ামত পর্যন্ত মাছের পেটে থেকে যেতেন। (সূরা সাফ্ফাত– ১৪৩, ১৪৪)
ইউনুস (আঃ) লোকদেরকে দ্বীনের দাওয়াত দিলেন :
وَاَرْسَلْنَاهُ اِلٰى مِائَةِ اَلْفٍ اَوْ يَزِيْدُوْنَ
আমি তাকে রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছিলাম এক লক্ষ বা তার চেয়ে বেশি লোকের প্রতি।
(সূরা সাফ্ফাত– ১৪৭)
লোকেরা তার দাওয়াত কবুল করল :
فَاٰمَنُوْا فَمَتَّعْنَاهُمْ اِلٰى حِيْنٍ
তারা ঈমান এনেছিল, ফলে আমি তাদেরকে এক নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত জীবনোপভোগ করার সুযোগ দিয়েছিলাম। (সূরা সাফ্ফাত– ১৪৮)
فَلَوْلَا كَانَتْ قَرْيَةٌ اٰمَنَتْ فَنَفَعَهَاۤ اِيْمَانُهَاۤ اِلَّا قَوْمَ يُوْنُسَ
তবে ইউনুসের সম্প্রদায় ব্যতীত কোন জনপদবাসী কেন এমন হলো না, যারা ঈমান আনত এবং তাদের ঈমান তাদের উপকারে আসত? (সূরা ইউনুস– ৯৮)
ফলে তারা আযাব থেকে রেহাই পেল :
لَمَّاۤ اٰمَنُوْا كَشَفْنَا عَنْهُمْ عَذَابَ الْخِزْيِ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَمَتَّعْنَاهُمْ اِلٰى حِيْنٍ
যখন তারা ঈমান আনল, তখন আমি তাদের হতে পার্থিব জীবনের অপমানজনক শাস্তি দূর করলাম এবং তাদেরকে কিছু কালের জন্য জীবনোপভোগ করার সুযোগ দিলাম। (সূরা ইউনুস– ৯৮)
দাউদ (আঃ) ছিলেন বিপুল শক্তি ও রাষ্ট্রক্ষমতার অধিকারী। বর্তমান ফিলিস্তীনসহ সমগ্র ইরাক ও শাম (সিরিয়া) এলাকায় ছিল তাঁর রাজত্ব। দাউদ (আঃ) ছিলেন সবচেয়ে সুন্দর কণ্ঠস্বরের অধিকারী। তাঁর উপর যাবূর কিতাব অবতীর্ণ হয়। আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য লোহাকে মমের মতো ব্যবহার করার মু‘জিযা দান করেন। তাছাড়া তিনি দৈহিক শক্তিমত্তা এবং জ্ঞান ও প্রজ্ঞাতেও ছিলেন অদ্বিতীয়। তিনি তালূতের সেনা সদস্য ও অত্যচারী শাসক জালূতকে হত্যা করার মাধ্যমে সর্বপ্রথম লোক সম্মুখে পরিচিতি লাভ করেন। পরে নবুওয়াতের ধারা অনুযায়ী ৪০ বছর বয়সে তিনি নবুওয়াত লাভ করেন।
দাউদ (আঃ) কে আল্লাহ যাবূর কিতাব দিয়েছিলেন :
وَاٰتَيْنَا دَاوُوْدَ زَبُوْرًا
আমি দাউদকে যাবূর দান করেছিলাম। (সূরা বনী ইসরাঈল– ৫৫)
তিনি জ্ঞানী ও স্পষ্টভাষী ছিলেন :
وَشَدَدْنَا مُلْكَهٗ وَاٰتَيْنَاهُ الْحِكْمَةَ وَفَصْلَ الْخِطَابِ
আর আমি তার রাজত্বকে সুদৃঢ় করেছিলাম এবং তাকে হেকমত ও কথাবার্তায় উত্তম সিদ্ধান্ত দানের যোগ্যতা দান করেছিলাম। (সূরা সোয়াদু ২০)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ তাঁর বক্তব্য জটিল ও অস্পষ্ট হতো না। সমগ্র ভাষণ শোনার পর শ্রোতা এ কথা বলতে পারত না যে, তিনি কী বলতে চান তা বোধগম্য নয়। বরং তিনি যে বিষয়ে কথা বলতেন তার সমস্ত মূল কথাগুলো পরিষ্কারভাবে তুলে ধরতেন এবং মূল বিষয়টি যথাযথভাবে নির্ধারণ করে দিয়ে তার দ্ব্যর্থহীন জবাব দিয়ে দিতেন। কোন ব্যক্তি জ্ঞান, বুদ্ধি, প্রজ্ঞা, বিচার-বিবেচনা ও বাক-চাতূর্যের উচ্চতম পর্যায়ে অবস্থান না করলে এ যোগ্যতা অর্জন করতে পারে না।
দাউদ (আঃ) খুবই শক্তিশালী ও আল্লাহ অভিমুখী ছিলেন :
وَاذْكُرْ عَبْدَنَا دَاوُوْدَ ذَا الْاَيْدِۚ اِنَّهٗۤ اَوَّابٌ
স্মরণ করো, আমার বান্দা দাউদের কথা, যিনি ছিলেন খুবই শক্তিশালী এবং অতিশয় আল্লাহ অভিমুখী। (সূরা সোয়াদু ১৭)
তিনি যুদ্ধের ময়দানে জালূতকে হত্যা করেন :
فَهَزَمُوْهُمْ بِاِذْنِ اللهِ وَقَتَلَ دَاوُوْدُ جَالُوْتَ
অতঃপর আল্লাহর ইচ্ছায় তারা তাদেরকে (জালূতের সৈন্যদেরকে) পরাজিত করল এবং দাউদ জালূতকে নিহত করল। (সূরা বাক্বারা– ২৫১)
ব্যাখ্যা : দাউদ (আঃ) এ সময় ছিলেন একজন কম বয়সী যুবক। ঘটনাক্রমে তালূতের সেনাবাহিনীতে তিনি এমন এক সময় উপস্থিত হয়েছিলেন, যখন ফিলিস্তিনী সেনাদলের জবরদস্ত পালোয়ান জালূত (জুলিয়েট) বনী ইসরাঈলী সেনাদলকে প্রত্যক্ষ মুকাবিলায় আসার জন্য আহবান জানাচ্ছিল। কিন্তু তখন ইসরাঈলদের মধ্য থেকে একজনও তার সাথে মুকাবিলা করার জন্য এগিয়ে যাচ্ছিল না। এ অবস্থা দেখে দাউদ (আঃ) নির্ভয়ে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং জালূতকে হত্যা করলেন। এ ঘটনায় তিনি বনী ইসরাঈলদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠলেন।
আল্লাহ তাকে রাজত্ব ও বিচক্ষণতা দান করেছিলেন :
وَاٰتَاهُ اللهُ الْمُلْكَ وَالْحِكْمَةَ وَعَلَّمَهٗ مِمَّا يَشَآءُ
আল্লাহ দাউদকে রাজত্ব ও প্রজ্ঞা দান করলেন এবং তাকে ইচ্ছানুযায়ী শিক্ষা দান করলেন। (সূরা বাক্বারা– ২৫১)
দাউদ (আঃ) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আদিষ্ট হয়েছিলেন :
يَا دَاوُوْدُ اِنَّا جَعَلْنَاكَ خَلِيْفَةً فِى الْاَرْضِ فَاحْكُمْ بَيْنَ النَّاسِ بِالْحَقِّ وَلَا تَتَّبِعِ الْهَوٰى فَيُضِلَّكَ عَنْ سَبِيْلِ اللهِؕ اِنَّ الَّذِيْنَ يَضِلُّوْنَ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيْدٌ ۢبِمَا نَسُوْا يَوْمَ الْحِسَابِ
হে দাউদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত করেছি। অতএব তুমি মানুষের মধ্যে ন্যায়ভাবে বিচার–মীমাংসা করতে থাকো এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। কেননা তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে দেবে। নিশ্চয় যারা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয়, তাদের জন্য রয়েছে ভীষণ শাস্তি, হিসাবের দিন ভুলে যাওয়ার কারণে। (সূরা সোয়াদু ২৬)
দাউদ (আঃ) এর জীবনী স্মরণীয় :
وَاذْكُرْ عَبْدَنَا دَاوُوْدَ ذَا الْاَيْدِۚ اِنَّهٗۤ اَوَّابٌ
স্মরণ করুন, আমার বান্দা দাউদের কথা, যিনি ছিলেন খুব শক্তিশালী এবং যিনি ছিলেন অতিশয় আল্লাহ অভিমুখী। (সূরা সোয়াদু ১৭)
দাউদ (আঃ) কে আল্লাহ যাবূর কিতাব দিয়েছিলেন :
وَاٰتَيْنَا دَاوُوْدَ زَبُوْرًا
আমি দাউদকে যাবূর দান করেছিলাম। (সূরা বনী ইসরাঈল– ৫৫)
তিনি জ্ঞানী ও স্পষ্টভাষী ছিলেন :
وَشَدَدْنَا مُلْكَهٗ وَاٰتَيْنَاهُ الْحِكْمَةَ وَفَصْلَ الْخِطَابِ
আর আমি তার রাজত্বকে সুদৃঢ় করেছিলাম এবং তাকে হেকমত ও কথাবার্তায় উত্তম সিদ্ধান্ত দানের যোগ্যতা দান করেছিলাম। (সূরা সোয়াদু ২০)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ তাঁর বক্তব্য জটিল ও অস্পষ্ট হতো না। সমগ্র ভাষণ শোনার পর শ্রোতা এ কথা বলতে পারত না যে, তিনি কী বলতে চান তা বোধগম্য নয়। বরং তিনি যে বিষয়ে কথা বলতেন তার সমস্ত মূল কথাগুলো পরিষ্কারভাবে তুলে ধরতেন এবং মূল বিষয়টি যথাযথভাবে নির্ধারণ করে দিয়ে তার দ্ব্যর্থহীন জবাব দিয়ে দিতেন। কোন ব্যক্তি জ্ঞান, বুদ্ধি, প্রজ্ঞা, বিচার-বিবেচনা ও বাক-চাতূর্যের উচ্চতম পর্যায়ে অবস্থান না করলে এ যোগ্যতা অর্জন করতে পারে না।
দাউদ (আঃ) খুবই শক্তিশালী ও আল্লাহ অভিমুখী ছিলেন :
وَاذْكُرْ عَبْدَنَا دَاوُوْدَ ذَا الْاَيْدِۚ اِنَّهٗۤ اَوَّابٌ
স্মরণ করো, আমার বান্দা দাউদের কথা, যিনি ছিলেন খুবই শক্তিশালী এবং অতিশয় আল্লাহ অভিমুখী। (সূরা সোয়াদু ১৭)
তিনি যুদ্ধের ময়দানে জালূতকে হত্যা করেন :
فَهَزَمُوْهُمْ بِاِذْنِ اللهِ وَقَتَلَ دَاوُوْدُ جَالُوْتَ
অতঃপর আল্লাহর ইচ্ছায় তারা তাদেরকে (জালূতের সৈন্যদেরকে) পরাজিত করল এবং দাউদ জালূতকে নিহত করল। (সূরা বাক্বারা– ২৫১)
ব্যাখ্যা : দাউদ (আঃ) এ সময় ছিলেন একজন কম বয়সী যুবক। ঘটনাক্রমে তালূতের সেনাবাহিনীতে তিনি এমন এক সময় উপস্থিত হয়েছিলেন, যখন ফিলিস্তিনী সেনাদলের জবরদস্ত পালোয়ান জালূত (জুলিয়েট) বনী ইসরাঈলী সেনাদলকে প্রত্যক্ষ মুকাবিলায় আসার জন্য আহবান জানাচ্ছিল। কিন্তু তখন ইসরাঈলদের মধ্য থেকে একজনও তার সাথে মুকাবিলা করার জন্য এগিয়ে যাচ্ছিল না। এ অবস্থা দেখে দাউদ (আঃ) নির্ভয়ে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং জালূতকে হত্যা করলেন। এ ঘটনায় তিনি বনী ইসরাঈলদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠলেন।
আল্লাহ তাকে রাজত্ব ও বিচক্ষণতা দান করেছিলেন :
وَاٰتَاهُ اللهُ الْمُلْكَ وَالْحِكْمَةَ وَعَلَّمَهٗ مِمَّا يَشَآءُ
আল্লাহ দাউদকে রাজত্ব ও প্রজ্ঞা দান করলেন এবং তাকে ইচ্ছানুযায়ী শিক্ষা দান করলেন। (সূরা বাক্বারা– ২৫১)
দাউদ (আঃ) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আদিষ্ট হয়েছিলেন :
يَا دَاوُوْدُ اِنَّا جَعَلْنَاكَ خَلِيْفَةً فِى الْاَرْضِ فَاحْكُمْ بَيْنَ النَّاسِ بِالْحَقِّ وَلَا تَتَّبِعِ الْهَوٰى فَيُضِلَّكَ عَنْ سَبِيْلِ اللهِؕ اِنَّ الَّذِيْنَ يَضِلُّوْنَ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيْدٌ ۢبِمَا نَسُوْا يَوْمَ الْحِسَابِ
হে দাউদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত করেছি। অতএব তুমি মানুষের মধ্যে ন্যায়ভাবে বিচার–মীমাংসা করতে থাকো এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। কেননা তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে দেবে। নিশ্চয় যারা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয়, তাদের জন্য রয়েছে ভীষণ শাস্তি, হিসাবের দিন ভুলে যাওয়ার কারণে। (সূরা সোয়াদু ২৬)
দাউদ (আঃ) এর জীবনী স্মরণীয় :
وَاذْكُرْ عَبْدَنَا دَاوُوْدَ ذَا الْاَيْدِۚ اِنَّهٗۤ اَوَّابٌ
স্মরণ করুন, আমার বান্দা দাউদের কথা, যিনি ছিলেন খুব শক্তিশালী এবং যিনি ছিলেন অতিশয় আল্লাহ অভিমুখী। (সূরা সোয়াদু ১৭)
আল্লাহ দাউদ (আঃ) এর জন্য লোহাকে নরম করে দিয়েছিলেন :
وَاَلَنَّا لَهُ الْحَدِيْدَ
আমি তার জন্য লৌহকে নরম করে দিয়েছিলাম। (সূরা সাবা– ১০)
তিনি লোহা দিয়ে যুদ্ধের বর্ম তৈরি করতেন :
اَنِ اعْمَلْ سَابِغَاتٍ وَّقَدِّرْ فِى السَّرْدِ وَاعْمَلُوْا صَالِحًاؕ اِنِّيْ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
(আমি দাউদকে বলেছিলাম) পূর্ণ মাপের বর্ম নির্মাণ করো এবং সংযোজনকালে পরিমাণ ঠিক রেখো, আর তোমরা সবাই সৎকাজ করো। নিশ্চয় তোমরা যা কর, আমি তা প্রত্যক্ষ করি। (সূরা সাবা– ১১)
পাহাড় ও পাখী দাউদ (আঃ) এর অনুগত ছিল :
وَسَخَّرْنَا مَعَ دَاوُوْدَ الْجِبَالَ يُسَبِّحْنَ وَالطَّيْرَؕ وَكُنَّا فَاعِلِيْنَ
আমি পর্বত ও বিহঙ্গকুলকে দাউদের অধীন করে দিয়েছিলাম, তারা তার সাথে আমার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করত; আর আমিই ছিলাম এসবের কর্তা। (সূরা আম্বিয়া– ৭৯)
দাউদ (আঃ) এর সাথে এগুলোও আল্লাহর গুণগান করত :
وَلَقَدْ اٰتَيْنَا دَاوُوْدَ مِنَّا فَضْلًا يَّا جِبَالُ اَوِّبِيْ مَعَهٗ وَالطَّيْرَ
আমি দাউদকে আমার পক্ষ থেকে অনুগ্রহ দান করেছিলাম। (বলেছিলাম) হে পাহাড়–পর্বত! তোমরা দাউদের সাথে আমার পবিত্রতা ঘোষণা করো এবং পাখীগুলোকেও (এমন আদেশ দিয়েছিলাম)। (সূরা সাবা– ১০)
اِنَّا سَخَّرْنَا الْجِبَالَ مَعَهٗ يُسَبِّحْنَ بِالْعَشِيِّ وَالْاِشْرَاقِ ‐ وَالطَّيْرَ مَحْشُوْرَةًؕ كُلٌّ لَّهٗۤ اَوَّابٌ
আমি পাহাড়গুলোকে অনুগত করে দিয়েছিলাম, তারা তার সাথে সকাল–সন্ধ্যায় আমার তাসবীহ পাঠ করত এবং পাখীদেরকেও, যারা তার কাছে একত্রিত হতো। আর তারা সকলেই ছিল তাঁর অভিমুখী।
(সূরা সোয়াদু ১৮, ১৯)
وَاَلَنَّا لَهُ الْحَدِيْدَ
আমি তার জন্য লৌহকে নরম করে দিয়েছিলাম। (সূরা সাবা– ১০)
তিনি লোহা দিয়ে যুদ্ধের বর্ম তৈরি করতেন :
اَنِ اعْمَلْ سَابِغَاتٍ وَّقَدِّرْ فِى السَّرْدِ وَاعْمَلُوْا صَالِحًاؕ اِنِّيْ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
(আমি দাউদকে বলেছিলাম) পূর্ণ মাপের বর্ম নির্মাণ করো এবং সংযোজনকালে পরিমাণ ঠিক রেখো, আর তোমরা সবাই সৎকাজ করো। নিশ্চয় তোমরা যা কর, আমি তা প্রত্যক্ষ করি। (সূরা সাবা– ১১)
পাহাড় ও পাখী দাউদ (আঃ) এর অনুগত ছিল :
وَسَخَّرْنَا مَعَ دَاوُوْدَ الْجِبَالَ يُسَبِّحْنَ وَالطَّيْرَؕ وَكُنَّا فَاعِلِيْنَ
আমি পর্বত ও বিহঙ্গকুলকে দাউদের অধীন করে দিয়েছিলাম, তারা তার সাথে আমার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করত; আর আমিই ছিলাম এসবের কর্তা। (সূরা আম্বিয়া– ৭৯)
দাউদ (আঃ) এর সাথে এগুলোও আল্লাহর গুণগান করত :
وَلَقَدْ اٰتَيْنَا دَاوُوْدَ مِنَّا فَضْلًا يَّا جِبَالُ اَوِّبِيْ مَعَهٗ وَالطَّيْرَ
আমি দাউদকে আমার পক্ষ থেকে অনুগ্রহ দান করেছিলাম। (বলেছিলাম) হে পাহাড়–পর্বত! তোমরা দাউদের সাথে আমার পবিত্রতা ঘোষণা করো এবং পাখীগুলোকেও (এমন আদেশ দিয়েছিলাম)। (সূরা সাবা– ১০)
اِنَّا سَخَّرْنَا الْجِبَالَ مَعَهٗ يُسَبِّحْنَ بِالْعَشِيِّ وَالْاِشْرَاقِ ‐ وَالطَّيْرَ مَحْشُوْرَةًؕ كُلٌّ لَّهٗۤ اَوَّابٌ
আমি পাহাড়গুলোকে অনুগত করে দিয়েছিলাম, তারা তার সাথে সকাল–সন্ধ্যায় আমার তাসবীহ পাঠ করত এবং পাখীদেরকেও, যারা তার কাছে একত্রিত হতো। আর তারা সকলেই ছিল তাঁর অভিমুখী।
(সূরা সোয়াদু ১৮, ১৯)
দাউদ (আঃ) এর ঘরে নবী সুলায়মান (আঃ) এর জন্ম হয় :
وَوَهَبْنَا لِدَاوُوْدَ سُلَيْمَانَ نِعْمَ الْعَبْدُ اِنَّهٗۤ اَوَّابٌ
আমি দাউদকে দান করেছি সুলায়মান। তিনি ছিলেন অতি উত্তম বান্দা। নিশ্চয় তিনি ছিলেন অত্যন্ত আল্লাহ অভিমুখী। (সূরা সোয়াদু ৩০)
আল্লাহ তার প্রতি অসংখ্য অনুগ্রহ করেছেন :
وَلَقَدْاٰتَيْنَا دَاوُوْدَ مِنَّا فَضْلًا
আর আমি দাউদকে আমার পক্ষ থেকে বিশেষ অনুগ্রহ দান করেছিলাম। (সূরা সাবা– ১০)
ব্যাখ্যা : এখানে বিশেষ অনুগ্রহ বলতে দাউদ (আঃ) কে রাজত্ব প্রদানের বিষয়টি বুঝানো হয়েছে। দাউদ (আঃ) এর নেতৃত্বে ইতিহাসে প্রথমবার এমন একটি আল্লাহর অনুগত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যার সীমানা আকাবা উপসাগর থেকে ফুরাত নদীর পশ্চিম উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এসব অনুগ্রহের সাথে সাথে আল্লাহ তাঁকে আরো দান করেন জ্ঞান, প্রজ্ঞা, বুদ্ধিমত্তা, ইনসাফ, ন্যায়নিষ্ঠা, আল্লাহভীতি ও তাঁর প্রতি আনুগত্যশীলতা।
আল্লাহ তাকে শুকরিয়া আদায়ের নির্দেশ দেন :
اِعْمَلُوْاۤ اٰلَ دَاوُوْدَ شُكْرًاؕ وَقَلِيْلٌ مِّنْ عِبَادِيَ الشَّكُوْرُ
হে দাউদের পরিবার! কৃতজ্ঞতার সাথে কাজ করে যাও। আমার বান্দার মধ্যে খুব অল্পই কৃতজ্ঞ।
(সূরা সাবা– ১৩)
দাউদ (আঃ) আল্লাহর নিকট শুকরিয়া আদায় করেন :
وَلَقَدْاٰتَيْنَا دَاوُوْدَ وَسُلَيْمَانَ عِلْمًا وَّقَالَا الْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ فَضَّلَنَا عَلٰى كَثِيْرٍ مِّنْ عِبَادِهِ الْمُؤْمِنِيْنَ
আমি অবশ্যই দাউদ ও সুলায়মানকে জ্ঞান দান করেছিলাম। তারা উভয়ে বলেছিল, সকল প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমাদেরকে তার বহু মুমিন বান্দার উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। (সূরা নামল– ১৫)
পরকালে তার জন্য রয়েছে শুভ পরিণাম :
وَاِنَّ لَهٗ عِنْدَنَا لَزُلْفٰى وَحُسْنَ مَاٰبٍ
নিশ্চয় তার জন্য আমার কাছে (নৈকট্য লাভের) মর্যাদা এবং উত্তম বাসস্থানের ব্যবস্থা রয়েছে।
(সূরা সোয়াদু ২৫)
وَوَهَبْنَا لِدَاوُوْدَ سُلَيْمَانَ نِعْمَ الْعَبْدُ اِنَّهٗۤ اَوَّابٌ
আমি দাউদকে দান করেছি সুলায়মান। তিনি ছিলেন অতি উত্তম বান্দা। নিশ্চয় তিনি ছিলেন অত্যন্ত আল্লাহ অভিমুখী। (সূরা সোয়াদু ৩০)
আল্লাহ তার প্রতি অসংখ্য অনুগ্রহ করেছেন :
وَلَقَدْاٰتَيْنَا دَاوُوْدَ مِنَّا فَضْلًا
আর আমি দাউদকে আমার পক্ষ থেকে বিশেষ অনুগ্রহ দান করেছিলাম। (সূরা সাবা– ১০)
ব্যাখ্যা : এখানে বিশেষ অনুগ্রহ বলতে দাউদ (আঃ) কে রাজত্ব প্রদানের বিষয়টি বুঝানো হয়েছে। দাউদ (আঃ) এর নেতৃত্বে ইতিহাসে প্রথমবার এমন একটি আল্লাহর অনুগত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যার সীমানা আকাবা উপসাগর থেকে ফুরাত নদীর পশ্চিম উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এসব অনুগ্রহের সাথে সাথে আল্লাহ তাঁকে আরো দান করেন জ্ঞান, প্রজ্ঞা, বুদ্ধিমত্তা, ইনসাফ, ন্যায়নিষ্ঠা, আল্লাহভীতি ও তাঁর প্রতি আনুগত্যশীলতা।
আল্লাহ তাকে শুকরিয়া আদায়ের নির্দেশ দেন :
اِعْمَلُوْاۤ اٰلَ دَاوُوْدَ شُكْرًاؕ وَقَلِيْلٌ مِّنْ عِبَادِيَ الشَّكُوْرُ
হে দাউদের পরিবার! কৃতজ্ঞতার সাথে কাজ করে যাও। আমার বান্দার মধ্যে খুব অল্পই কৃতজ্ঞ।
(সূরা সাবা– ১৩)
দাউদ (আঃ) আল্লাহর নিকট শুকরিয়া আদায় করেন :
وَلَقَدْاٰتَيْنَا دَاوُوْدَ وَسُلَيْمَانَ عِلْمًا وَّقَالَا الْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ فَضَّلَنَا عَلٰى كَثِيْرٍ مِّنْ عِبَادِهِ الْمُؤْمِنِيْنَ
আমি অবশ্যই দাউদ ও সুলায়মানকে জ্ঞান দান করেছিলাম। তারা উভয়ে বলেছিল, সকল প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমাদেরকে তার বহু মুমিন বান্দার উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। (সূরা নামল– ১৫)
পরকালে তার জন্য রয়েছে শুভ পরিণাম :
وَاِنَّ لَهٗ عِنْدَنَا لَزُلْفٰى وَحُسْنَ مَاٰبٍ
নিশ্চয় তার জন্য আমার কাছে (নৈকট্য লাভের) মর্যাদা এবং উত্তম বাসস্থানের ব্যবস্থা রয়েছে।
(সূরা সোয়াদু ২৫)
দু’জন মামলাকারী দাউদ (আঃ) এর নিকট আসল :
وَهَلْ اَتَاكَ نَبَاُ الْخَصْمِ اِذْ تَسَوَّرُوا الْمِحْرَابَ
আপনার কাছে ঝগড়াকারী লোকদের সংবাদ পৌঁছেছে কি? যখন তারা ইবাদাতখানার দেয়াল টপকাল।
(সূরা সোয়াদু ২১)
দেয়াল বেয়ে আসাতে দাউদ (আঃ) ভয় পেলেন :
اِذْ دَخَلُوْا عَلٰى دَاوُوْدَ فَفَزِعَ مِنْهُمْ قَالُوْا لَا تَخَفْ
যখন তারা দাউদের কাছে পৌঁছল, তখন তিনি তাদেরকে দেখে ভীত হয়ে পড়লেন। তারা বলল, আপনি ভয় পাবেন না। (সূরা সোয়াদু ২২)
তারা বলল, আমরা বিচারপ্রার্থী :
خَصْمَانِ بَغٰى بَعْضُنَا عَلٰى بَعْضٍ فَاحْكُمْ بَيْنَنَا بِالْحَقِّ وَلَا تُشْطِطْ وَاهْدِنَاۤ اِلٰى سَوَآءِ الصِّرَاطِ
(আমরা) বিবাদমান দু’টি পক্ষ, একে অপরের প্রতি বাড়াবাড়ি করেছি। অতএব আমাদের মধ্যে ন্যায়ভাবে বিচার করে দিন এবং (আপনি আমাদের মাঝে) অবিচার করবেন না। আর আপনি আমাদেরকে সঠিক পথপদর্শন করুন। (সূরা সোয়াদু ২২)
বাদী তার মামলা পেশ করল :
اِنَّ هٰذَاۤ اَخِيْ لَهٗ تِسْعٌ وَّتِسْعُوْنَ نَعْجَةً وَّلِيَ نَعْجَةٌ وَّاحِدَةٌ فَقَالَ اَكْفِلْنِيْهَا وَعَزَّنِيْ فِى الْخِطَابِ
এ লোকটি আমার ভাই, তার আছে নিরানববইটি দুম্বা রয়েছে। আর আমার রয়েছে একটি দুম্বা। এরপরও সে বলে এটাও আমাকে দিয়ে দাও এবং কথায় কথায় সে আমার উপর জোর দেখায়। (সূরা সোয়াদু ২৩)
দাউদ (আঃ) বিচারের রায় দিলেন :
قَالَ لَقَدْ ظَلَمَكَ بِسُؤَالِ نَعْجَتِكَ اِلٰى نِعَاجِهٖؕ وَاِنَّ كَثِيْرًا مِّنَ الْخُلَطَآءِ لَيَبْغِيْ بَعْضُهُمْ عَلٰى بَعْضٍ اِلَّا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَقَلِيْلٌ مَّا هُمْ
দাউদ বললেন, তোমার দুম্বাটিকে তার দুম্বাগুলোর সাথে সংযুক্ত করতে চেয়ে অবশ্যই সে তোমার প্রতি অত্যাচার করেছে। আর অধিকাংশ শরীকই একে অন্যের উপর অন্যায় আচরণ করে থাকে, তবে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করে থাকে তারা নয়, অবশ্য এরূপ লোক খুবই বিরল। (সূরা সোয়াদু ২৪)
দাউদ (আঃ) রহস্য বুঝতে পেরে ক্ষমা চাইলেন :
وَظَنَّ دَاوُوْدُ اَنَّمَا فَتَنَّاهُ فَاسْتَغْفَرَ رَبَّهٗ وَخَرَّ رَاكِعًا وَّاَنَابْ
অতঃপর দাউদ বুঝতে পারলেন যে, আমি তাকে পরীক্ষা করেছি। অতএব তিনি তার প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা চাইলেন এবং সিজদায় লুটিয়ে পড়লেন ও তাঁর অভিমুখী হলেন। (সূরা সোয়াদ – ২৪)
আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন :
فَغَفَرْنَا لَهٗ ذٰلِكَؕ وَاِنَّ لَهٗ عِنْدَنَا لَزُلْفٰى وَحُسْنَ مَاٰبٍ
আমি তাঁর ত্রুটি ক্ষমা করে দিলাম। আর তার জন্য রয়েছে আমার কাছে (নৈকট্য লাভের) মর্যাদা এবং উত্তম বাসস্থান। (সূরা সোয়াদু ২৫)
ব্যাখ্যা : দাউদ (আঃ) উরিয়ার (অথবা এ ব্যক্তির যে নাম থেকে থাকুক) কাছে নিছক নিজের মনের এ আকাঙ্ক্ষা পেশ করেছিলেন যে, সে যেন নিজের স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেয়। যে কোন উপায়ে দাউদ (আঃ) ঐ ভদ্রমহিলার গুণাবলি জানতে পেরেছিলেন। তাঁর মনে আকাঙ্ক্ষা জেগেছিল এ ধরনের যোগ্যতাসম্পন্ন মহিলার পক্ষে একজন সাধারণ অফিসারের স্ত্রী হয়ে থাকার পরিবর্তে রাজরাণী হওয়া উচিত। আর যেহেতু এ আকাঙ্ক্ষা একজন সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে পেশ করা হয়নি বরং একজন ক্ষমতাধর শাসক এবং দ্বীনী গৌরব ও মর্যাদার অধিকারী ব্যক্তির পক্ষ থেকে এক প্রজার সামনে প্রকাশ করা হচ্ছিল, তাই এ ব্যক্তি কোন প্রকার বাহ্যিক শক্তি প্রয়োগ ছাড়াই তা গ্রহণ করে নেয়ার ব্যাপারে নিজেকে বাধ্য মনে করেছিলেন। এ অবস্থায় দাউদ (আঃ) এর আহবানে সাড়া দেয়ার জন্য তার উদ্যোগ নেয়ার পূর্বেই জাতির দু’জন সৎলোক আকস্মিকভাবে দাউদ (আঃ) এর কাছে গেল এবং একটি কাল্পনিক মামলার আকারে এ বিষয়টি তাঁর সামনে পেশ করল। কাজেই মামলার বিবরণ শুনে তিনি নিজের ফায়সালা শুনিয়ে দিলেন। কিন্তু মুখ থেকে ফায়সালার শব্দগুলো বের হওয়ার সাথে সাথেই স্বীয় বিবেক তাঁকে সতর্ক করে দিল যে, এটি একটি রূপক আকারে তাঁর ও ঐ ব্যক্তির বিষয়ের সাথে মিলে যায় এবং যে কাজটিকে তিনি যুলুম হিসেবে গণ্য করেছেন তাঁর ও ঐ ব্যক্তির বিষয়ে তার প্রকাশ ঘটছে। এ অনুভূতি মনের মধ্যে সৃষ্টি হওয়ার সাথে সাথেই তিনি আল্লাহর কাছে সিজদায় পড়ে গেলেন ও তাওবা করলেন এবং নিজের ঐ কাজটি থেকেও বিরত হলেন।
কুরআন মাজীদে এ ঘটনাটি দু’টি উদ্দেশ্যে বর্ণনা করা হয়েছে। প্রথম উদ্দেশ্যটি হলো, নবী ﷺ কে ধৈর্যধারণ করার উপদেশ দেয়া। এ উদ্দেশ্যে তাঁকে সম্বোধন করে বলা হয়েছে, এরা তোমার বিরুদ্ধে যা কিছু বলে সে ব্যাপারে ধৈর্যধারণ করো এবং আমার বান্দা দাউদের কথা স্মরণ করো। দ্বিতীয় উদ্দেশ্যটি হলো, কাফিরদেরকে এ কথা জানিয়ে দেয়া যে, তোমরা সব রকমের হিসাব-নিকাশের শঙ্কামুক্ত হয়ে দুনিয়ায় নানা রকম বাড়াবাড়ি করে যেতে থাকো। তবে জেনে রেখো, তোমরা যে সত্তার অধীনে এসব কাজ করে যাচ্ছ তিনি হিসাব-নিকাশ না নিয়ে কাউকে ছাড়বেন না। এমনকি যেসব বান্দা তাঁর অত্যন্ত প্রিয় ও নৈকট্যলাভকারী হয় তারাও যদি কখনো সামান্যতম ভুল-ভ্রান্তি করে ফেলেন, তাহলে তিনি তাদেরকেও কঠিন জবাবদিহিতার সম্মুখীন করবেন।
وَهَلْ اَتَاكَ نَبَاُ الْخَصْمِ اِذْ تَسَوَّرُوا الْمِحْرَابَ
আপনার কাছে ঝগড়াকারী লোকদের সংবাদ পৌঁছেছে কি? যখন তারা ইবাদাতখানার দেয়াল টপকাল।
(সূরা সোয়াদু ২১)
দেয়াল বেয়ে আসাতে দাউদ (আঃ) ভয় পেলেন :
اِذْ دَخَلُوْا عَلٰى دَاوُوْدَ فَفَزِعَ مِنْهُمْ قَالُوْا لَا تَخَفْ
যখন তারা দাউদের কাছে পৌঁছল, তখন তিনি তাদেরকে দেখে ভীত হয়ে পড়লেন। তারা বলল, আপনি ভয় পাবেন না। (সূরা সোয়াদু ২২)
তারা বলল, আমরা বিচারপ্রার্থী :
خَصْمَانِ بَغٰى بَعْضُنَا عَلٰى بَعْضٍ فَاحْكُمْ بَيْنَنَا بِالْحَقِّ وَلَا تُشْطِطْ وَاهْدِنَاۤ اِلٰى سَوَآءِ الصِّرَاطِ
(আমরা) বিবাদমান দু’টি পক্ষ, একে অপরের প্রতি বাড়াবাড়ি করেছি। অতএব আমাদের মধ্যে ন্যায়ভাবে বিচার করে দিন এবং (আপনি আমাদের মাঝে) অবিচার করবেন না। আর আপনি আমাদেরকে সঠিক পথপদর্শন করুন। (সূরা সোয়াদু ২২)
বাদী তার মামলা পেশ করল :
اِنَّ هٰذَاۤ اَخِيْ لَهٗ تِسْعٌ وَّتِسْعُوْنَ نَعْجَةً وَّلِيَ نَعْجَةٌ وَّاحِدَةٌ فَقَالَ اَكْفِلْنِيْهَا وَعَزَّنِيْ فِى الْخِطَابِ
এ লোকটি আমার ভাই, তার আছে নিরানববইটি দুম্বা রয়েছে। আর আমার রয়েছে একটি দুম্বা। এরপরও সে বলে এটাও আমাকে দিয়ে দাও এবং কথায় কথায় সে আমার উপর জোর দেখায়। (সূরা সোয়াদু ২৩)
দাউদ (আঃ) বিচারের রায় দিলেন :
قَالَ لَقَدْ ظَلَمَكَ بِسُؤَالِ نَعْجَتِكَ اِلٰى نِعَاجِهٖؕ وَاِنَّ كَثِيْرًا مِّنَ الْخُلَطَآءِ لَيَبْغِيْ بَعْضُهُمْ عَلٰى بَعْضٍ اِلَّا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَقَلِيْلٌ مَّا هُمْ
দাউদ বললেন, তোমার দুম্বাটিকে তার দুম্বাগুলোর সাথে সংযুক্ত করতে চেয়ে অবশ্যই সে তোমার প্রতি অত্যাচার করেছে। আর অধিকাংশ শরীকই একে অন্যের উপর অন্যায় আচরণ করে থাকে, তবে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করে থাকে তারা নয়, অবশ্য এরূপ লোক খুবই বিরল। (সূরা সোয়াদু ২৪)
দাউদ (আঃ) রহস্য বুঝতে পেরে ক্ষমা চাইলেন :
وَظَنَّ دَاوُوْدُ اَنَّمَا فَتَنَّاهُ فَاسْتَغْفَرَ رَبَّهٗ وَخَرَّ رَاكِعًا وَّاَنَابْ
অতঃপর দাউদ বুঝতে পারলেন যে, আমি তাকে পরীক্ষা করেছি। অতএব তিনি তার প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা চাইলেন এবং সিজদায় লুটিয়ে পড়লেন ও তাঁর অভিমুখী হলেন। (সূরা সোয়াদ – ২৪)
আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন :
فَغَفَرْنَا لَهٗ ذٰلِكَؕ وَاِنَّ لَهٗ عِنْدَنَا لَزُلْفٰى وَحُسْنَ مَاٰبٍ
আমি তাঁর ত্রুটি ক্ষমা করে দিলাম। আর তার জন্য রয়েছে আমার কাছে (নৈকট্য লাভের) মর্যাদা এবং উত্তম বাসস্থান। (সূরা সোয়াদু ২৫)
ব্যাখ্যা : দাউদ (আঃ) উরিয়ার (অথবা এ ব্যক্তির যে নাম থেকে থাকুক) কাছে নিছক নিজের মনের এ আকাঙ্ক্ষা পেশ করেছিলেন যে, সে যেন নিজের স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেয়। যে কোন উপায়ে দাউদ (আঃ) ঐ ভদ্রমহিলার গুণাবলি জানতে পেরেছিলেন। তাঁর মনে আকাঙ্ক্ষা জেগেছিল এ ধরনের যোগ্যতাসম্পন্ন মহিলার পক্ষে একজন সাধারণ অফিসারের স্ত্রী হয়ে থাকার পরিবর্তে রাজরাণী হওয়া উচিত। আর যেহেতু এ আকাঙ্ক্ষা একজন সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে পেশ করা হয়নি বরং একজন ক্ষমতাধর শাসক এবং দ্বীনী গৌরব ও মর্যাদার অধিকারী ব্যক্তির পক্ষ থেকে এক প্রজার সামনে প্রকাশ করা হচ্ছিল, তাই এ ব্যক্তি কোন প্রকার বাহ্যিক শক্তি প্রয়োগ ছাড়াই তা গ্রহণ করে নেয়ার ব্যাপারে নিজেকে বাধ্য মনে করেছিলেন। এ অবস্থায় দাউদ (আঃ) এর আহবানে সাড়া দেয়ার জন্য তার উদ্যোগ নেয়ার পূর্বেই জাতির দু’জন সৎলোক আকস্মিকভাবে দাউদ (আঃ) এর কাছে গেল এবং একটি কাল্পনিক মামলার আকারে এ বিষয়টি তাঁর সামনে পেশ করল। কাজেই মামলার বিবরণ শুনে তিনি নিজের ফায়সালা শুনিয়ে দিলেন। কিন্তু মুখ থেকে ফায়সালার শব্দগুলো বের হওয়ার সাথে সাথেই স্বীয় বিবেক তাঁকে সতর্ক করে দিল যে, এটি একটি রূপক আকারে তাঁর ও ঐ ব্যক্তির বিষয়ের সাথে মিলে যায় এবং যে কাজটিকে তিনি যুলুম হিসেবে গণ্য করেছেন তাঁর ও ঐ ব্যক্তির বিষয়ে তার প্রকাশ ঘটছে। এ অনুভূতি মনের মধ্যে সৃষ্টি হওয়ার সাথে সাথেই তিনি আল্লাহর কাছে সিজদায় পড়ে গেলেন ও তাওবা করলেন এবং নিজের ঐ কাজটি থেকেও বিরত হলেন।
কুরআন মাজীদে এ ঘটনাটি দু’টি উদ্দেশ্যে বর্ণনা করা হয়েছে। প্রথম উদ্দেশ্যটি হলো, নবী ﷺ কে ধৈর্যধারণ করার উপদেশ দেয়া। এ উদ্দেশ্যে তাঁকে সম্বোধন করে বলা হয়েছে, এরা তোমার বিরুদ্ধে যা কিছু বলে সে ব্যাপারে ধৈর্যধারণ করো এবং আমার বান্দা দাউদের কথা স্মরণ করো। দ্বিতীয় উদ্দেশ্যটি হলো, কাফিরদেরকে এ কথা জানিয়ে দেয়া যে, তোমরা সব রকমের হিসাব-নিকাশের শঙ্কামুক্ত হয়ে দুনিয়ায় নানা রকম বাড়াবাড়ি করে যেতে থাকো। তবে জেনে রেখো, তোমরা যে সত্তার অধীনে এসব কাজ করে যাচ্ছ তিনি হিসাব-নিকাশ না নিয়ে কাউকে ছাড়বেন না। এমনকি যেসব বান্দা তাঁর অত্যন্ত প্রিয় ও নৈকট্যলাভকারী হয় তারাও যদি কখনো সামান্যতম ভুল-ভ্রান্তি করে ফেলেন, তাহলে তিনি তাদেরকেও কঠিন জবাবদিহিতার সম্মুখীন করবেন।
সুলাইমান (আঃ) ছিলেন দাউদ (আঃ) এর সুযোগ্য পুত্র। দাউদ (আঃ) এর ১৯ জন সন্তানের মধ্যে একমাত্র সুলায়মান (আঃ) ই পিতার নবুওয়াত ও শাসন ক্ষমতার স্থলাভিষিক্ত হন। তিনি ১৩ বছর বয়সে রাজকার্য হাতে নেন এবং শাসনের চতুর্থ বছরে বায়তুল মুকাদ্দাসের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। বনী ইসরাঈলের নবীদের মধ্যে তিনি এবং তাঁর পিতাই ছিলেন সবচেয়ে বেশি ঐশ্বর্যবান। আল্লাহ তাঁকে গভীর প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টি দান করেছিলেন। আর মু‘জিযা হিসেবে তাঁকে পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীর ভাষা বুঝার ক্ষমতা দিয়েছিলেন। ফলে তিনি একমাত্র শাসক হিসেবে মানুষের পাশাপাশি সারা বিশ্বের সকল প্রাণীর উপরও রাজত্ব করেন।
সুলায়মান (আঃ) হলেন দাউদ (আঃ) এর পুত্র :
وَوَهَبْنَا لِدَاوُوْدَ سُلَيْمَانَ
আর আমি দাউদকে দান করেছি সুলায়মান। (সূরা সোয়াদু ৩০)
তিনি পিতার উত্তরাধিকারী হন :
وَوَرِثَ سُلَيْمَانُ دَاوُوْدَ
আর সুলায়মান দাউদের উত্তরাধিকারী হয়েছিলেন। (সূরা নামল– ১৬)
আল্লাহ তাকে জ্ঞান দান করেছিলেন :
وَلَقَدْ اٰتَيْنَا دَاوُوْدَ وَسُلَيْمَانَ عِلْمًا
অবশ্যই আমি দাউদ ও সুলায়মানকে জ্ঞান দান করেছিলাম। (সূরা নামল– ১৫)
সুলায়মান (আঃ) রাজত্বের জন্য আল্লাহর কাছে দু‘আ করেন :
قَالَ رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَهَبْ لِيْ مُلْكًا لَّا يَنْۢبَغِيْ لِاَحَدٍ مِّنْ ۢبَعْدِيْۚ اِنَّكَ اَنْتَ الْوَهَّابُ
তিনি প্রার্থনা করলেন, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমাকে এমন রাজত্ব দান করুন, যা আমার পরে আর কারো ভাগ্যে না জোটে। নিশ্চয় আপনি মহান দাতা। (সূরা সোয়াদু ৩৫)
রাজ্য পরিচালনার জন্য আল্লাহ তাকে সবকিছু দিয়েছেন :
وَقَالَ يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ عُلِّمْنَا مَنْطِقَ الطَّيْرِ وَاُوْتِيْنَا مِنْ كُلِّ شَيْءٍؕ اِنَّ هٰذَا لَهُوَ الْفَضْلُ الْمُبِيْنُ
সে বলেছিল, হে মানুষ! আমাকে বিহঙ্গকুলের ভাষা শিক্ষা দেয়া হয়েছে এবং আমাকে সকল কিছু দেয়া হয়েছে, নিশ্চয় এটা সুস্পষ্ট অনুগ্রহ। (সূরা নামল– ১৬)
ব্যাখ্যা : বান্দার অহংকার আল্লাহর কাছে যতবেশি অপছন্দনীয়, তার বিনয় প্রকাশ তাঁর কাছে ততবেশি পছন্দনীয়। বান্দা যদি অপরাধ করে এবং সতর্ক করার কারণে উল্টো আরো বেশি বাড়াবাড়ি করে, তাহলে এর পরিণাম খুবই খারাপ হয়। পক্ষান্তরে বান্দার যদি সামান্য পদস্খলন হয়ে যায় এবং সে তাওবা করে তার রবের সামনে মাথা নত করে, তাহলে তার প্রতি অনুগ্রহ বর্ষিত হয়। সুতরাং সুলায়মান (আঃ) বিনয় প্রকাশের সাথে সাথে ক্ষমাপ্রার্থনা করার পর যে দু‘আ করেছিলেন আল্লাহ তা অক্ষরে অক্ষরে পূরণ করেন এবং বাস্তবে তাঁকে এমন একটি রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব দান করেন, যা তাঁর পূর্বে কেউ লাভ করেনি; এমনকি তাঁর পরে আজও পর্যন্ত কাউকে দেয়া হয়নি। বায়ু নিয়ন্ত্রণ ও জিনদের উপর কর্তৃত্ব এ দু’টি এমন ধরনের অসাধারণ শক্তি, যা মানবজাতির ইতিহাসে একমাত্র সুলায়মান (আঃ) কেই দান করা হয়েছে। অন্য কাউকে এর কোন অংশ দেয়া হয়নি।
আল্লাহ সুলায়মান (আঃ) কে পরীক্ষায় ফেলেছেন :
وَلَقَدْ فَتَنَّا سُلَيْمَانَ وَاَلْقَيْنَا عَلٰى كُرْسِيِّهٖ جَسَدًا ثُمَّ اَنَابَ
আমি তো সুলায়মানকে পরীক্ষা করেছিলাম এবং তার সিংহাসনের উপর একটি দেহ রেখে দিয়েছিলাম। অতঃপর সে আল্লাহ অভিমুখী হলো। (সূরা সোয়াদু ৩৪)
তিনি লাঠিতে ভর দেয়া অবস্থায় মারা যান :
فَلَمَّا قَضَيْنَا عَلَيْهِ الْمَوْتَ مَا دَلَّهُمْ عَلٰى مَوْتِهٖۤ اِلَّا دَآبَّةُ الْاَرْضِ تَأْكُلُ مِنْسَاَتَهٗۚ فَلَمَّا خَرَّ تَبَيَّنَتِ الْجِنُّ اَنْ لَّوْ كَانُوْا يَعْلَمُوْنَ الْغَيْبَ مَا لَبِثُوْا فِى الْعَذَابِ الْمُهِيْنِ
অতঃপর যখন আমি তার প্রতি মৃত্যুর নির্দেশ দিলাম, তখন ঘূণ কীট ছাড়া কোনকিছুই তাদেরকে তার মৃত্যুর বিষয়ে অবগত করেনি, যারা তার লাঠি খেয়ে যাচ্ছিল। যখন তিনি পড়ে গেলেন, তখন জিনেরা বুঝতে পারল যে, যদি তারা অদৃশ্যের বিষয় জানত তবে তারা এ লাঞ্ছিত কষ্টে অবস্থান করত না। (সূরা সাবা– ১৪)
وَوَهَبْنَا لِدَاوُوْدَ سُلَيْمَانَ
আর আমি দাউদকে দান করেছি সুলায়মান। (সূরা সোয়াদু ৩০)
তিনি পিতার উত্তরাধিকারী হন :
وَوَرِثَ سُلَيْمَانُ دَاوُوْدَ
আর সুলায়মান দাউদের উত্তরাধিকারী হয়েছিলেন। (সূরা নামল– ১৬)
আল্লাহ তাকে জ্ঞান দান করেছিলেন :
وَلَقَدْ اٰتَيْنَا دَاوُوْدَ وَسُلَيْمَانَ عِلْمًا
অবশ্যই আমি দাউদ ও সুলায়মানকে জ্ঞান দান করেছিলাম। (সূরা নামল– ১৫)
সুলায়মান (আঃ) রাজত্বের জন্য আল্লাহর কাছে দু‘আ করেন :
قَالَ رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَهَبْ لِيْ مُلْكًا لَّا يَنْۢبَغِيْ لِاَحَدٍ مِّنْ ۢبَعْدِيْۚ اِنَّكَ اَنْتَ الْوَهَّابُ
তিনি প্রার্থনা করলেন, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমাকে এমন রাজত্ব দান করুন, যা আমার পরে আর কারো ভাগ্যে না জোটে। নিশ্চয় আপনি মহান দাতা। (সূরা সোয়াদু ৩৫)
রাজ্য পরিচালনার জন্য আল্লাহ তাকে সবকিছু দিয়েছেন :
وَقَالَ يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ عُلِّمْنَا مَنْطِقَ الطَّيْرِ وَاُوْتِيْنَا مِنْ كُلِّ شَيْءٍؕ اِنَّ هٰذَا لَهُوَ الْفَضْلُ الْمُبِيْنُ
সে বলেছিল, হে মানুষ! আমাকে বিহঙ্গকুলের ভাষা শিক্ষা দেয়া হয়েছে এবং আমাকে সকল কিছু দেয়া হয়েছে, নিশ্চয় এটা সুস্পষ্ট অনুগ্রহ। (সূরা নামল– ১৬)
ব্যাখ্যা : বান্দার অহংকার আল্লাহর কাছে যতবেশি অপছন্দনীয়, তার বিনয় প্রকাশ তাঁর কাছে ততবেশি পছন্দনীয়। বান্দা যদি অপরাধ করে এবং সতর্ক করার কারণে উল্টো আরো বেশি বাড়াবাড়ি করে, তাহলে এর পরিণাম খুবই খারাপ হয়। পক্ষান্তরে বান্দার যদি সামান্য পদস্খলন হয়ে যায় এবং সে তাওবা করে তার রবের সামনে মাথা নত করে, তাহলে তার প্রতি অনুগ্রহ বর্ষিত হয়। সুতরাং সুলায়মান (আঃ) বিনয় প্রকাশের সাথে সাথে ক্ষমাপ্রার্থনা করার পর যে দু‘আ করেছিলেন আল্লাহ তা অক্ষরে অক্ষরে পূরণ করেন এবং বাস্তবে তাঁকে এমন একটি রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব দান করেন, যা তাঁর পূর্বে কেউ লাভ করেনি; এমনকি তাঁর পরে আজও পর্যন্ত কাউকে দেয়া হয়নি। বায়ু নিয়ন্ত্রণ ও জিনদের উপর কর্তৃত্ব এ দু’টি এমন ধরনের অসাধারণ শক্তি, যা মানবজাতির ইতিহাসে একমাত্র সুলায়মান (আঃ) কেই দান করা হয়েছে। অন্য কাউকে এর কোন অংশ দেয়া হয়নি।
আল্লাহ সুলায়মান (আঃ) কে পরীক্ষায় ফেলেছেন :
وَلَقَدْ فَتَنَّا سُلَيْمَانَ وَاَلْقَيْنَا عَلٰى كُرْسِيِّهٖ جَسَدًا ثُمَّ اَنَابَ
আমি তো সুলায়মানকে পরীক্ষা করেছিলাম এবং তার সিংহাসনের উপর একটি দেহ রেখে দিয়েছিলাম। অতঃপর সে আল্লাহ অভিমুখী হলো। (সূরা সোয়াদু ৩৪)
তিনি লাঠিতে ভর দেয়া অবস্থায় মারা যান :
فَلَمَّا قَضَيْنَا عَلَيْهِ الْمَوْتَ مَا دَلَّهُمْ عَلٰى مَوْتِهٖۤ اِلَّا دَآبَّةُ الْاَرْضِ تَأْكُلُ مِنْسَاَتَهٗۚ فَلَمَّا خَرَّ تَبَيَّنَتِ الْجِنُّ اَنْ لَّوْ كَانُوْا يَعْلَمُوْنَ الْغَيْبَ مَا لَبِثُوْا فِى الْعَذَابِ الْمُهِيْنِ
অতঃপর যখন আমি তার প্রতি মৃত্যুর নির্দেশ দিলাম, তখন ঘূণ কীট ছাড়া কোনকিছুই তাদেরকে তার মৃত্যুর বিষয়ে অবগত করেনি, যারা তার লাঠি খেয়ে যাচ্ছিল। যখন তিনি পড়ে গেলেন, তখন জিনেরা বুঝতে পারল যে, যদি তারা অদৃশ্যের বিষয় জানত তবে তারা এ লাঞ্ছিত কষ্টে অবস্থান করত না। (সূরা সাবা– ১৪)
সুলায়মান (আঃ) পশু–পাখীর ভাষা বুঝতেন :
وَقَالَ يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ عُلِّمْنَا مَنْطِقَ الطَّيْرِ
সুলায়মান বলেছিল, হে মানুষ! আমাকে বিহঙ্গকুলের ভাষা শিক্ষা দেয়া হয়েছে। (সূরা নামল– ১৬)
বাতাসকে তার অধীন করে দেয়া হয়েছিল :
فَسَخَّرْنَا لَهُ الرِّيْحَ تَجْرِيْ بِاَمْرِهٖ رُخَآءً حَيْثُ اَصَابَ
তখন আমি বাতাসকে তার অধীন করে দিলাম, যা তার নির্দেশে যেখানে ইচ্ছা সেখানে মৃদু গতিতে প্রবাহিত হতো। (সূরা সোয়াদু ৩৬)
وَلِسُلَيْمَانَ الرِّيْحَ عَاصِفَةً تَجْرِيْ بِاَمْرِهٖۤ اِلَى الْاَرْضِ الَّتِيْ بَارَكْنَا فِيْهَاؕ وَكُنَّا بِكُلِّ شَيْءٍ عَالِمِيْنَ
আর আমি প্রবল বাতাসকে সুলায়মানের বশীভূত করে দিয়েছিলাম, যা তার আদেশক্রমে ঐ ভূমির দিকে প্রবাহিত হতো, যেখানে আমি কল্যাণ রেখেছি। আর আমি প্রত্যেক বিষয় সম্পর্কে সম্যক অবগত। (সূরা আম্বিয়া– ৮১)
তিনি একদিনে দুই মাস দূরত্বের পথ অতিক্রম করতেন :
وَلِسُلَيْمَانَ الرِّيْحَ غُدُوُّهَا شَهْرٌ وَّرَوَاحُهَا شَهْرٌ
আমি বাতাসকে সুলায়মানের অনুগত করে দিয়েছিলাম, যা সকালে এক মাসের পথ এবং বিকালে এক মাসের পথ অতিক্রম করত। (সূরা সাবা– ১২)
তাকে গলিত তামার ঝর্ণা দেয়া হয়েছিল :
وَاَسَلْنَا لَهٗ عَيْنَ الْقِطْرِ
আর আমি তার জন্য গলিত তামার ঝর্ণা প্রবাহিত করে দিয়েছিলাম। (সূরা সাবা– ১২)
জিনেরা সুলায়মান (আঃ) এর কর্মচারী ছিল :
وَمِنَ الْجِنِّ مَنْ يَّعْمَلُ بَيْنَ يَدَيْهِ بِاِذْنِ رَبِّهٖؕ وَمَنْ يَّزِغْ مِنْهُمْ عَنْ اَمْرِنَا نُذِقْهُ مِنْ عَذَابِ السَّعِيْرِ
কিছু সংখ্যক জিন তাঁর সামনে তাঁর প্রতিপালকের নির্দেশে কাজ করত। তাদের মধ্য থেকে যে আমার আদেশ অমান্য করে বক্র পথে যাবে, তাকে আমি জাহান্নামের আযাব ভোগ করাব। (সূরা সাবা– ১২)
তারা বিভিন্ন জিনিস তৈরি করত :
يَعْمَلُوْنَ لَهٗ مَا يَشَآءُ مِنْ مَّحَارِيْبَ وَتَمَاثِيْلَ وَجِفَانٍ كَالْجَوَابِ وَقُدُوْرٍ رَّاسِيَاتٍ
তারা (জিনেরা) সুলায়মানের জন্য সেসব বস্তু নির্মাণ করত, যা তিনি ইচ্ছা করতেন। যেমন বড় বড় অট্টালিকা, মূর্তি, চৌবাচ্চার ন্যায় বড় বড় পাত্র এবং চুল্লির উপর দৃঢ়ভাবে স্থাপিত বড় ডেগসমূহ। (সূরা সাবা– ১৩)
ব্যাখ্যা : تَمَاثِيْلُ (তামাসীল) শব্দটির উপর ভিত্তি করে কুরআনের দৃষ্টিতে মানুষ ও পশুর ছবি হালাল এ বিধান দেয়া যেতে পারে না। বিপুল সংখ্যক শক্তিশালী সনদযুক্ত হাদীস থেকে এ কথা প্রমাণিত যে, নবী ﷺ প্রাণীজাতীয় যে কোন জিনিসের মূর্তি বা ছবি নির্মাণ ও সংরক্ষণকে চূড়ান্তভাবে হারাম ঘোষণা করেছেন।
এছাড়াও তারা ডুবুরীর কাজ করত :
وَمِنَ الشَّيَاطِيْنِ مَنْ يَّغُوْصُوْنَ لَهٗ وَيَعْمَلُوْنَ عَمَلًا دُوْنَ ذٰلِكَۚ وَكُنَّا لَهُمْ حَافِظِيْنَ
কতক শয়তান তার জন্য ডুবুরীর কাজ করত, এটা ব্যতীত অন্যান্য কাজও করত। আর আমি ছিলাম তাদের রক্ষাকারী। (সূরা আম্বিয়া– ৮২)
وَالشَّيَاطِيْنَ كُلَّ بَنَّآءٍ وَّغَوَّاصٍ
আর শয়তানদেরকেও অধীন করে দিয়েছিলাম, যারা ছিল ইমারত নির্মাণকারী ও ডুবুরী। (সূরা সোয়াদু ৩৭)
সুলায়মান (আঃ) দুষ্ট জিনকে আটক রাখতেন :
وَاٰخَرِيْنَ مُقَرَّنِيْنَ فِى الْاَصْفَادِ
আরো অনেক (জিন) ছিল, যারা শৃঙ্খলে আবদ্ধ থাকত। (সূরা সোয়াদু ৩৮)
وَقَالَ يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ عُلِّمْنَا مَنْطِقَ الطَّيْرِ
সুলায়মান বলেছিল, হে মানুষ! আমাকে বিহঙ্গকুলের ভাষা শিক্ষা দেয়া হয়েছে। (সূরা নামল– ১৬)
বাতাসকে তার অধীন করে দেয়া হয়েছিল :
فَسَخَّرْنَا لَهُ الرِّيْحَ تَجْرِيْ بِاَمْرِهٖ رُخَآءً حَيْثُ اَصَابَ
তখন আমি বাতাসকে তার অধীন করে দিলাম, যা তার নির্দেশে যেখানে ইচ্ছা সেখানে মৃদু গতিতে প্রবাহিত হতো। (সূরা সোয়াদু ৩৬)
وَلِسُلَيْمَانَ الرِّيْحَ عَاصِفَةً تَجْرِيْ بِاَمْرِهٖۤ اِلَى الْاَرْضِ الَّتِيْ بَارَكْنَا فِيْهَاؕ وَكُنَّا بِكُلِّ شَيْءٍ عَالِمِيْنَ
আর আমি প্রবল বাতাসকে সুলায়মানের বশীভূত করে দিয়েছিলাম, যা তার আদেশক্রমে ঐ ভূমির দিকে প্রবাহিত হতো, যেখানে আমি কল্যাণ রেখেছি। আর আমি প্রত্যেক বিষয় সম্পর্কে সম্যক অবগত। (সূরা আম্বিয়া– ৮১)
তিনি একদিনে দুই মাস দূরত্বের পথ অতিক্রম করতেন :
وَلِسُلَيْمَانَ الرِّيْحَ غُدُوُّهَا شَهْرٌ وَّرَوَاحُهَا شَهْرٌ
আমি বাতাসকে সুলায়মানের অনুগত করে দিয়েছিলাম, যা সকালে এক মাসের পথ এবং বিকালে এক মাসের পথ অতিক্রম করত। (সূরা সাবা– ১২)
তাকে গলিত তামার ঝর্ণা দেয়া হয়েছিল :
وَاَسَلْنَا لَهٗ عَيْنَ الْقِطْرِ
আর আমি তার জন্য গলিত তামার ঝর্ণা প্রবাহিত করে দিয়েছিলাম। (সূরা সাবা– ১২)
জিনেরা সুলায়মান (আঃ) এর কর্মচারী ছিল :
وَمِنَ الْجِنِّ مَنْ يَّعْمَلُ بَيْنَ يَدَيْهِ بِاِذْنِ رَبِّهٖؕ وَمَنْ يَّزِغْ مِنْهُمْ عَنْ اَمْرِنَا نُذِقْهُ مِنْ عَذَابِ السَّعِيْرِ
কিছু সংখ্যক জিন তাঁর সামনে তাঁর প্রতিপালকের নির্দেশে কাজ করত। তাদের মধ্য থেকে যে আমার আদেশ অমান্য করে বক্র পথে যাবে, তাকে আমি জাহান্নামের আযাব ভোগ করাব। (সূরা সাবা– ১২)
তারা বিভিন্ন জিনিস তৈরি করত :
يَعْمَلُوْنَ لَهٗ مَا يَشَآءُ مِنْ مَّحَارِيْبَ وَتَمَاثِيْلَ وَجِفَانٍ كَالْجَوَابِ وَقُدُوْرٍ رَّاسِيَاتٍ
তারা (জিনেরা) সুলায়মানের জন্য সেসব বস্তু নির্মাণ করত, যা তিনি ইচ্ছা করতেন। যেমন বড় বড় অট্টালিকা, মূর্তি, চৌবাচ্চার ন্যায় বড় বড় পাত্র এবং চুল্লির উপর দৃঢ়ভাবে স্থাপিত বড় ডেগসমূহ। (সূরা সাবা– ১৩)
ব্যাখ্যা : تَمَاثِيْلُ (তামাসীল) শব্দটির উপর ভিত্তি করে কুরআনের দৃষ্টিতে মানুষ ও পশুর ছবি হালাল এ বিধান দেয়া যেতে পারে না। বিপুল সংখ্যক শক্তিশালী সনদযুক্ত হাদীস থেকে এ কথা প্রমাণিত যে, নবী ﷺ প্রাণীজাতীয় যে কোন জিনিসের মূর্তি বা ছবি নির্মাণ ও সংরক্ষণকে চূড়ান্তভাবে হারাম ঘোষণা করেছেন।
এছাড়াও তারা ডুবুরীর কাজ করত :
وَمِنَ الشَّيَاطِيْنِ مَنْ يَّغُوْصُوْنَ لَهٗ وَيَعْمَلُوْنَ عَمَلًا دُوْنَ ذٰلِكَۚ وَكُنَّا لَهُمْ حَافِظِيْنَ
কতক শয়তান তার জন্য ডুবুরীর কাজ করত, এটা ব্যতীত অন্যান্য কাজও করত। আর আমি ছিলাম তাদের রক্ষাকারী। (সূরা আম্বিয়া– ৮২)
وَالشَّيَاطِيْنَ كُلَّ بَنَّآءٍ وَّغَوَّاصٍ
আর শয়তানদেরকেও অধীন করে দিয়েছিলাম, যারা ছিল ইমারত নির্মাণকারী ও ডুবুরী। (সূরা সোয়াদু ৩৭)
সুলায়মান (আঃ) দুষ্ট জিনকে আটক রাখতেন :
وَاٰخَرِيْنَ مُقَرَّنِيْنَ فِى الْاَصْفَادِ
আরো অনেক (জিন) ছিল, যারা শৃঙ্খলে আবদ্ধ থাকত। (সূরা সোয়াদু ৩৮)
আল্লাহ তাকে অনেক নিয়ামত দান করেছেন :
هٰذَا عَطَآؤُنَا فَامْنُنْ اَوْ اَمْسِكْ بِغَيْرِ حِسَابٍ
এগুলো আমার অনুগ্রহ, অতএব তুমি কাউকে দান কর কিংবা নিজের জন্য রাখ, সেজন্য তোমাকে জবাবদিহি করতে হবে না। (সূরা সোয়াদু ৩৯)
এক বিচারে পিতার চেয়ে উত্তম রায় দেন :
وَدَاوُوْدَ وَسُلَيْمَانَ اِذْ يَحْكُمَانِ فِى الْحَرْثِ اِذْ نَفَشَتْ فِيْهِ غَنَمُ الْقَوْمِۚ وَكُنَّا لِحُكْمِهِمْ شَاهِدِيْنَ ‐ فَفَهَّمْنَاهَا سُلَيْمَانَۚ وَكُلًّا اٰتَيْنَا حُكْمًا وَّعِلْمًا
স্মরণ করো, দাউদ ও সুলায়মানের কথা, যখন তারা শস্যক্ষেত্র সম্পর্কে বিচার করছিল। যখন রাত্রিকালে কোন সম্প্রদায়ের মেষ তাতে (ঐ শস্যক্ষেত্রে) প্রবেশ করেছিল; আর আমি তাদের বিচার প্রত্যক্ষ করছিলাম। অতঃপর আমি সুলায়মানকে এ বিষয়ের মীমাংসা বুঝিয়ে দিয়েছিলাম এবং তাদের প্রত্যেককে দিয়েছিলাম প্রজ্ঞা ও জ্ঞান। (সূরা আম্বিয়া– ৭৮, ৭৯)
ব্যাখ্যা : এ ঘটনার বিবরণ হলো : একদা দু’জন লোক দাউদ (আঃ) এর কাছে উপস্থিত হয়। তাদের একজন ছিল ছাগলপালের মালিক ও অপরজন ছিল শস্যক্ষেতের মালিক। শস্যক্ষেতের মালিক ছাগলপালের মালিকের বিরুদ্ধে দাবী করল যে, তার ছাগলপাল রাত্রিকালে আমার শস্যক্ষেত বিনষ্ট করে দিয়েছে। দাউদ (আঃ) ঘটনার বিবরণ শুনে রায় দিলেন যে, ছাগলপালের মালিক তার সমস্ত ছাগল শস্যক্ষেতের মালিককে অর্পন করুক। এ রায় শুনে সুলায়মান (আঃ) বললেন, আমি রায় দিলে তা ভিন্নরূপ হতো এবং উভয়ের জন্য কল্যাণকর হতো। দাউদ (আঃ) বললেন, এ রায় থেকে উত্তম রায়টা কী? সুলায়মান (আঃ) বললেন, আপনি ছাগলপাল শস্যক্ষেতের মালিককে দিয়ে দেন। সে এগুলোর দুধ, পশম ইত্যাদি দ্বারা উপকার লাভ করুক এবং শস্যক্ষেত ছাগলপালের মালিককে অর্পণ করুন। সে তাতে চাষাবাদ করে শস্য উৎপন্ন করুক। যখন শস্যক্ষেত ছাগলপালের বিনষ্ট করার পূর্বের অবস্থায় পৌঁছে যাবে, তখন তা তার মালিককে এবং ছাগলপাল ছাগলের মালিককে প্রত্যর্পণ করুন। দাউদ (আঃ) বললেন, এটা খুবই উত্তম রায়। সুতরাং এ রায়ই কার্যকর করা হবে। (মুস্তাদরাকে হাকীম, হা/৪১৩৮; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/২০৮৬২)
তিনি আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করেন :
وَقَالَ رَبِّ اَوْزِعْنِيْۤ اَنْ اَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِيْۤ اَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلٰى وَالِدَيَّ وَاَنْ اَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضَاهُ وَاَدْخِلْنِيْ بِرَحْمَتِكَ فِيْ عِبَادِكَ الصَّالِحِيْنَ
সুলায়মান বলল, হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে সামর্থ্য দান করো, যাতে আমি তোমার প্রতি ঐ নিয়ামতের উপর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি, যা তুমি আমার প্রতি ও আমার পিতা–মাতার প্রতি দান করেছ এবং যাতে আমি সৎকাজ করতে পারি, যা তুমি পছন্দ কর। আর আমাকে তোমার অনুগ্রহে তোমার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করো। (সূরা নামল– ১৯)
ব্যাখ্যা : এর প্রকৃত অর্থ হলো, ‘‘হে আমার রব! তুমি আমাকে যে বিরাট শক্তি ও যোগ্যতা দান করেছ তা থেকে যদি আমি সামান্য গাফিল হয়ে যাই, তাহলে আমি দাসত্বের সীমানা থেকে বের হয়ে যাব। সুতরাং হে আমার মালিক! তুমি আমাকে নিয়ন্ত্রণে রাখো, যাতে আমি অনুগ্রহ অস্বীকারকারীর পরিবর্তে অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী হতে পারি।
পরকালে তার জন্য রয়েছে শুভ পরিণাম :
وَاِنَّ لَهٗ عِنْدَنَا لَزُلْفٰى وَحُسْنَ مَاٰبٍ
নিশ্চয় তার জন্য আমার কাছে রয়েছে (নৈকট্য লাভের) মর্যাদা ও উত্তম ঠিকানা। (সূরা সোয়াদু ৪০)
ঘোড়া সম্পর্কিত ঘটনা :
وَوَهَبْنَا لِدَاوُوْدَ سُلَيْمَانَؕ نِعْمَ الْعَبْدُؕ اِنَّهٗۤ اَوَّابٌ ‐ اِذْ عُرِضَ عَلَيْهِ بِالْعَشِيِّ الصَّافِنَاتُ الْجِيَادُ ‐ فَقَالَ اِنِّۤيْ اَحْبَبْتُ حُبَّ الْخَيْرِ عَنْ ذِكْرِ رَبِّيْۚ حَتّٰى تَوَارَتْ بِالْحِجَابِ ‐ رُدُّوْهَا عَلَيَّؕ فَطَفِقَ مَسْحًا ۢبِالسُّوْقِ وَالْاَعْنَاقِ
আর আমি দাউদকে দান করেছিলাম সুলায়মান। সে ছিল অতি উত্তম বান্দা। নিশ্চয় সে ছিল আল্লাহ অভিমুখী। যখন এক সন্ধ্যায় তার সামনে উৎকৃষ্ট ঘোড়ার পাল পেশ করা হলো তখন সে বলল, আমি তো আমার প্রতিপালকের স্মরণ থেকে উদাসীন হয়ে সম্পদের মোহে মশগুল হয়ে পড়েছি, এমনকি সূর্য পর্দার আড়ালে চলে গেছে। অতএব এগুলোকে আবার আমার সামনে নিয়ে আসো। তারপর সে সেগুলোর পা ও গলদেশসমূহে (স্নেহের) হাত বুলিয়ে দিল। (সূরা সোয়াদ, ৩০–৩৩)
পিঁপড়া সংক্রান্ত ঘটনা :
وَحُشِرَ لِسُلَيْمَانَ جُنُوْدُهٗ مِنَ الْجِنِّ وَالْاِنْسِ وَالطَّيْرِ فَهُمْ يُوْزَعُوْنَ ‐ حَتّٰۤى اِذَاۤ اَتَوْا عَلٰى وَادِ النَّمْلِ قَالَتْ نَمْلَةٌ يَّاۤ اَيُّهَا النَّمْلُ ادْخُلُوْا مَسَاكِنَكُمْۚ لَا يَحْطِمَنَّكُمْ سُلَيْمَانُ وَجُنُوْدُهٗ وَهُمْ لَا يَشْعُرُوْنَ ‐ فَتَبَسَّمَ ضَاحِكًا مِّنْ قَوْلِهَا وَقَالَ رَبِّ اَوْزِعْنِيْۤ اَنْ اَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِيْۤ اَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلٰى وَالِدَيَّ وَاَنْ اَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضَاهُ وَاَدْخِلْنِيْ بِرَحْمَتِكَ فِي عِبَادِكَ الصَّالِحِيْنَ
সুলায়মানের সম্মুখে সমবেত করা হলো তার বাহিনী- জিন, মানুষ ও বিহঙ্গকুলকে এবং তাদেরকে বিন্যস্ত করা হলো বিভিন্ন দলে। যখন তারা পিপীলিকা অধ্যুষিত উপত্যকায় পৌঁছল তখন এক পিপীলিকা বলল, হে পিপীলিকা বাহিনী! তোমরা তোমাদের গৃহে প্রবেশ করো, যেন সুলায়মান এবং তার বাহিনী তাদের অজ্ঞাতসারে তোমাদেরকে পদতলে পিষে না ফেলে। সুলায়মান তার উক্তিতে মৃদু হাসল এবং বলল, হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে সামর্থ্য দান করো, যাতে আমি তোমার প্রতি ঐ নিয়ামতের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি, যা তুমি আমার প্রতি ও আমার পিতা–মাতার প্রতি দান করেছ এবং যাতে করে আমি সৎকর্ম করতে পারি, যা তুমি পছন্দ কর। আর তোমার অনুগ্রহে আমাকে তোমার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করো। (সূরা নামল, ১৭–১৯)
هٰذَا عَطَآؤُنَا فَامْنُنْ اَوْ اَمْسِكْ بِغَيْرِ حِسَابٍ
এগুলো আমার অনুগ্রহ, অতএব তুমি কাউকে দান কর কিংবা নিজের জন্য রাখ, সেজন্য তোমাকে জবাবদিহি করতে হবে না। (সূরা সোয়াদু ৩৯)
এক বিচারে পিতার চেয়ে উত্তম রায় দেন :
وَدَاوُوْدَ وَسُلَيْمَانَ اِذْ يَحْكُمَانِ فِى الْحَرْثِ اِذْ نَفَشَتْ فِيْهِ غَنَمُ الْقَوْمِۚ وَكُنَّا لِحُكْمِهِمْ شَاهِدِيْنَ ‐ فَفَهَّمْنَاهَا سُلَيْمَانَۚ وَكُلًّا اٰتَيْنَا حُكْمًا وَّعِلْمًا
স্মরণ করো, দাউদ ও সুলায়মানের কথা, যখন তারা শস্যক্ষেত্র সম্পর্কে বিচার করছিল। যখন রাত্রিকালে কোন সম্প্রদায়ের মেষ তাতে (ঐ শস্যক্ষেত্রে) প্রবেশ করেছিল; আর আমি তাদের বিচার প্রত্যক্ষ করছিলাম। অতঃপর আমি সুলায়মানকে এ বিষয়ের মীমাংসা বুঝিয়ে দিয়েছিলাম এবং তাদের প্রত্যেককে দিয়েছিলাম প্রজ্ঞা ও জ্ঞান। (সূরা আম্বিয়া– ৭৮, ৭৯)
ব্যাখ্যা : এ ঘটনার বিবরণ হলো : একদা দু’জন লোক দাউদ (আঃ) এর কাছে উপস্থিত হয়। তাদের একজন ছিল ছাগলপালের মালিক ও অপরজন ছিল শস্যক্ষেতের মালিক। শস্যক্ষেতের মালিক ছাগলপালের মালিকের বিরুদ্ধে দাবী করল যে, তার ছাগলপাল রাত্রিকালে আমার শস্যক্ষেত বিনষ্ট করে দিয়েছে। দাউদ (আঃ) ঘটনার বিবরণ শুনে রায় দিলেন যে, ছাগলপালের মালিক তার সমস্ত ছাগল শস্যক্ষেতের মালিককে অর্পন করুক। এ রায় শুনে সুলায়মান (আঃ) বললেন, আমি রায় দিলে তা ভিন্নরূপ হতো এবং উভয়ের জন্য কল্যাণকর হতো। দাউদ (আঃ) বললেন, এ রায় থেকে উত্তম রায়টা কী? সুলায়মান (আঃ) বললেন, আপনি ছাগলপাল শস্যক্ষেতের মালিককে দিয়ে দেন। সে এগুলোর দুধ, পশম ইত্যাদি দ্বারা উপকার লাভ করুক এবং শস্যক্ষেত ছাগলপালের মালিককে অর্পণ করুন। সে তাতে চাষাবাদ করে শস্য উৎপন্ন করুক। যখন শস্যক্ষেত ছাগলপালের বিনষ্ট করার পূর্বের অবস্থায় পৌঁছে যাবে, তখন তা তার মালিককে এবং ছাগলপাল ছাগলের মালিককে প্রত্যর্পণ করুন। দাউদ (আঃ) বললেন, এটা খুবই উত্তম রায়। সুতরাং এ রায়ই কার্যকর করা হবে। (মুস্তাদরাকে হাকীম, হা/৪১৩৮; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/২০৮৬২)
তিনি আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করেন :
وَقَالَ رَبِّ اَوْزِعْنِيْۤ اَنْ اَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِيْۤ اَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلٰى وَالِدَيَّ وَاَنْ اَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضَاهُ وَاَدْخِلْنِيْ بِرَحْمَتِكَ فِيْ عِبَادِكَ الصَّالِحِيْنَ
সুলায়মান বলল, হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে সামর্থ্য দান করো, যাতে আমি তোমার প্রতি ঐ নিয়ামতের উপর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি, যা তুমি আমার প্রতি ও আমার পিতা–মাতার প্রতি দান করেছ এবং যাতে আমি সৎকাজ করতে পারি, যা তুমি পছন্দ কর। আর আমাকে তোমার অনুগ্রহে তোমার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করো। (সূরা নামল– ১৯)
ব্যাখ্যা : এর প্রকৃত অর্থ হলো, ‘‘হে আমার রব! তুমি আমাকে যে বিরাট শক্তি ও যোগ্যতা দান করেছ তা থেকে যদি আমি সামান্য গাফিল হয়ে যাই, তাহলে আমি দাসত্বের সীমানা থেকে বের হয়ে যাব। সুতরাং হে আমার মালিক! তুমি আমাকে নিয়ন্ত্রণে রাখো, যাতে আমি অনুগ্রহ অস্বীকারকারীর পরিবর্তে অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী হতে পারি।
পরকালে তার জন্য রয়েছে শুভ পরিণাম :
وَاِنَّ لَهٗ عِنْدَنَا لَزُلْفٰى وَحُسْنَ مَاٰبٍ
নিশ্চয় তার জন্য আমার কাছে রয়েছে (নৈকট্য লাভের) মর্যাদা ও উত্তম ঠিকানা। (সূরা সোয়াদু ৪০)
ঘোড়া সম্পর্কিত ঘটনা :
وَوَهَبْنَا لِدَاوُوْدَ سُلَيْمَانَؕ نِعْمَ الْعَبْدُؕ اِنَّهٗۤ اَوَّابٌ ‐ اِذْ عُرِضَ عَلَيْهِ بِالْعَشِيِّ الصَّافِنَاتُ الْجِيَادُ ‐ فَقَالَ اِنِّۤيْ اَحْبَبْتُ حُبَّ الْخَيْرِ عَنْ ذِكْرِ رَبِّيْۚ حَتّٰى تَوَارَتْ بِالْحِجَابِ ‐ رُدُّوْهَا عَلَيَّؕ فَطَفِقَ مَسْحًا ۢبِالسُّوْقِ وَالْاَعْنَاقِ
আর আমি দাউদকে দান করেছিলাম সুলায়মান। সে ছিল অতি উত্তম বান্দা। নিশ্চয় সে ছিল আল্লাহ অভিমুখী। যখন এক সন্ধ্যায় তার সামনে উৎকৃষ্ট ঘোড়ার পাল পেশ করা হলো তখন সে বলল, আমি তো আমার প্রতিপালকের স্মরণ থেকে উদাসীন হয়ে সম্পদের মোহে মশগুল হয়ে পড়েছি, এমনকি সূর্য পর্দার আড়ালে চলে গেছে। অতএব এগুলোকে আবার আমার সামনে নিয়ে আসো। তারপর সে সেগুলোর পা ও গলদেশসমূহে (স্নেহের) হাত বুলিয়ে দিল। (সূরা সোয়াদ, ৩০–৩৩)
পিঁপড়া সংক্রান্ত ঘটনা :
وَحُشِرَ لِسُلَيْمَانَ جُنُوْدُهٗ مِنَ الْجِنِّ وَالْاِنْسِ وَالطَّيْرِ فَهُمْ يُوْزَعُوْنَ ‐ حَتّٰۤى اِذَاۤ اَتَوْا عَلٰى وَادِ النَّمْلِ قَالَتْ نَمْلَةٌ يَّاۤ اَيُّهَا النَّمْلُ ادْخُلُوْا مَسَاكِنَكُمْۚ لَا يَحْطِمَنَّكُمْ سُلَيْمَانُ وَجُنُوْدُهٗ وَهُمْ لَا يَشْعُرُوْنَ ‐ فَتَبَسَّمَ ضَاحِكًا مِّنْ قَوْلِهَا وَقَالَ رَبِّ اَوْزِعْنِيْۤ اَنْ اَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِيْۤ اَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلٰى وَالِدَيَّ وَاَنْ اَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضَاهُ وَاَدْخِلْنِيْ بِرَحْمَتِكَ فِي عِبَادِكَ الصَّالِحِيْنَ
সুলায়মানের সম্মুখে সমবেত করা হলো তার বাহিনী- জিন, মানুষ ও বিহঙ্গকুলকে এবং তাদেরকে বিন্যস্ত করা হলো বিভিন্ন দলে। যখন তারা পিপীলিকা অধ্যুষিত উপত্যকায় পৌঁছল তখন এক পিপীলিকা বলল, হে পিপীলিকা বাহিনী! তোমরা তোমাদের গৃহে প্রবেশ করো, যেন সুলায়মান এবং তার বাহিনী তাদের অজ্ঞাতসারে তোমাদেরকে পদতলে পিষে না ফেলে। সুলায়মান তার উক্তিতে মৃদু হাসল এবং বলল, হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে সামর্থ্য দান করো, যাতে আমি তোমার প্রতি ঐ নিয়ামতের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি, যা তুমি আমার প্রতি ও আমার পিতা–মাতার প্রতি দান করেছ এবং যাতে করে আমি সৎকর্ম করতে পারি, যা তুমি পছন্দ কর। আর তোমার অনুগ্রহে আমাকে তোমার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করো। (সূরা নামল, ১৭–১৯)
একদিন হুদহুদ পাখী নিখোঁজ হয়ে যায় :
وَتَفَقَّدَ الطَّيْرَ فَقَالَ مَا لِيَ لَاۤ اَرَى الْهُدْهُدَۖ اَمْ كَانَ مِنَ الْغَآئِبِيْنَ ‐ لَاُعَذِّبَنَّهٗ عَذَابًا شَدِيْدًا اَوْ لَاَذْبَحَنَّهٗۤ اَوْ لَيَأْتِيَنِّيْ بِسُلْطَانٍ مُّبِيْنٍ
সুলায়মান বিহঙ্গদলের সন্ধান নিল এবং বলল, ব্যাপার কী- হুদহুদকে দেখছি না কেন! সে অনুপস্থিত নাকি? সে উপযুক্ত কারণ না দেখালে আমি অবশ্যই তাকে কঠিন শাস্তি দেব অথবা যবেহ করব। (সূরা নামল– ২০, ২১)
কিছুক্ষণের মধ্যেই সে সাবা থেকে একটি খবর নিয়ে এলো :
فَمَكَثَ غَيْرَ بَعِيْدٍ فَقَالَ اَحَطْتُّ بِمَا لَمْ تُحِطْ بِهٖ وَجِئْتُكَ مِنْ سَبَإٍ ۢبِنَبَإٍ يَّقِيْنٍ
অনতিবিলম্বে হুদহুদ এসে পড়ল এবং বলল, আপনি যা অবগত নন আমি তা অবগত হয়েছি এবং ‘সাবা’ হতে দৃঢ় সংবাদ নিয়ে এসেছি। (সূরা নামল– ২২)
সে সুলায়মান (আঃ) কে রাণী বিলকিসের অবস্থা শুনাল :
اِنِّيْ وَجَدْتُّ امْرَاَةً تَمْلِكُهُمْ وَاُوْتِيَتْ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ وَّلَهَا عَرْشٌ عَظِيْمٌ ‐ وَجَدْتُّهَا وَقَوْمَهَا يَسْجُدُوْنَ لِلشَّمْسِ مِنْ دُوْنِ اللهِ وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ اَعْمَالَهُمْ فَصَدَّهُمْ عَنِ السَّبِيْلِ فَهُمْ لَا يَهْتَدُوْنَ
আমি তো এক নারীকে দেখলাম, যে তাদের (প্রজাদের) উপর রাজত্ব করছে এবং তাকে সবকিছুই দেয়া হয়েছে। আর তার এক বিরাট সিংহাসন রয়েছে। আমি তাকে ও তার সম্প্রদায়কে দেখলাম যে, তারা আল্লাহর পরিবর্তে সূর্যকে সিজদা করছে। আর শয়তান তাদের কার্যাবলি তাদের নিকট সুশোভীত করে দিয়েছে এবং তাদেরকে সৎপথ হতে নিবৃত্ত করে রেখেছে, ফলে তারা সৎপথ গ্রহণ করে না। (সূরা নামল– ২৩, ২৪)
সাবার লোকেরা আল্লাহকে সিজদা করত না :
اَلَّا يَسْجُدُوْا لِلّٰهِ الَّذِيْ يُخْرِجُ الْخَبْءَ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَيَعْلَمُ مَا تُخْفُوْنَ وَمَا تُعْلِنُوْنَ ‐ اَللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ
(শয়তান বাধা দিয়ে রেখেছে এজন্য যে) যাতে তারা আল্লাহকে সিজদা করতে না পারে, যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর লুকায়িত বস্তুকে প্রকাশ করে দেন। তিনি জানেন, যা তোমরা গোপন কর এবং যা তোমরা ব্যক্ত কর। আল্লাহ সেই সত্তা, যিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই, তিনি মহান আরশের অধিপতি। (সূরা নামল– ২৫, ২৬)
সুলায়মান (আঃ) হুদহুদ পাখীর সংবাদ যাচাই করতে লাগলেন :
قَالَ سَنَنْظُرُ اَصَدَقْتَ اَمْ كُنْتَ مِنَ الْكَاذِبِيْنَ
সুলায়মান বলল, আমি দেখব তুমি কি সত্য বলেছ, নাকি তুমি মিথ্যাবাদী? (সূরা নামল– ২৭)
সুলায়মান (আঃ) বিলকিসের নিকট একটি চিঠি পাঠালেন :
اِذْهَبْ بِّكِتَابِيْ هٰذَا فَاَلْقِهْ اِلَيْهِمْ ثُمَّ تَوَلَّ عَنْهُمْ فَانْظُرْ مَاذَا يَرْجِعُوْنَ
তুমি আমার এ পত্র নিয়ে যাও এবং তাদের নিকট অর্পণ করো। অতঃপর তাদের নিকট হতে সরে থাকো এবং লক্ষ্য করো যে, তাদের প্রতিক্রিয়া কী? (সূরা নামল– ২৮)
চিঠি পেয়ে বিলকিস তার পরিষদবর্গকে তা জানাল :
قَالَتْ يَاۤ اَيُّهَا الْمَلَاُ اِنِّۤيْ اُلْقِيَ اِلَيَّ كِتَابٌ كَرِيْمٌ
সে (নারী) বলল, হে পরিষদবর্গ! আমাকে এক সম্মানিত পত্র দেয়া হয়েছে। (সূরা নামল– ২৯)
চিঠির মধ্যে যা লেখা ছিল :
اِنَّهٗ مِنْ سُلَيْمَانَ وَاِنَّهٗ بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ اَلَّا تَعْلُوْا عَلَيَّ وَأْتُوْنِيْ مُسْلِمِيْنَ
নিশ্চয় এটা সুলায়মানের নিকট হতে আগত এবং এটা পরম করুণাময় ও অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করা হয়েছে। (এতে লেখা আছে) সাবধান! তোমরা আমাকে অমান্য করো না এবং আনুগত্য স্বীকার করে আমার নিকট উপস্থিত হও। (সূরা নামল– ৩০, ৩১)
বিলকিস তার পরিষদবর্গের কাছে পরামর্শ চাইল :
قَالَتْ يَاۤ اَيُّهَا الْمَلَاُ اَفْتُوْنِيْ فِۤيْ اَمْرِيْۚ مَا كُنْتُ قَاطِعَةً اَمْرًا حَتّٰى تَشْهَدُوْنِ
সে (নারী) বলল, হে পরিষদবর্গ! আমার এ সমস্যায় তোমাদের অভিমত দাও। কারণ আমি কোন ব্যাপারে তোমাদের উপস্থিতি ব্যতীত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি না। (সূরা নামল– ৩২)
তারা নেত্রীকেই সিদ্ধান্ত নিতে বলল :
قَالُوْا نَحْنُ اُولُوْا قُوَّةٍ وَّاُولُوْا بَأْسٍ شَدِيْدٍ وَّالْاَمْرُ اِلَيْكِ فَانْظُرِيْ مَاذَا تَأْمُرِيْنَ
তারা বলল, আমরা তো শক্তিশালী ও কঠোর যোদ্ধা। তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা আপনারই, কী আদেশ করবেন তা আপনি ভেবে দেখুন। (সূরা নামল– ৩৩)
বিলকিস জবাব দিল :
قَالَتْ اِنَّ الْمُلُوْكَ اِذَا دَخَلُوْا قَرْيَةً اَفْسَدُوْهَا وَجَعَلُوْاۤ اَعِزَّةَ اَهْلِهَاۤ اَذِلَّةًۚ وَكَذٰلِكَ يَفْعَلُوْنَ
সে বলল, রাজা–বাদশাহরা যখন কোন জনপদে প্রবেশ করে তখন তাকে বিপর্যস্ত করে দেয় এবং সেখানকার মর্যাদাবান ব্যক্তিদেরকে অপদস্থ করে, এরাও এরূপই করবে। (সূরা নামল– ৩৪)
বিলকিস পরীক্ষাস্বরূপ সুলায়মান (আঃ) কে হাদিয়া পাঠাল :
وَاِنِّيْ مُرْسِلَةٌ اِلَيْهِمْ بِهَدِيَّةٍ فَنَاظِرَةٌ ۢبِمَ يَرْجِعُ الْمُرْسَلُوْنَ
আমি তাদের নিকট উপঢৌকন পাঠাচ্ছি। দেখি, দূতেরা কী নিয়ে ফিরি আসে। (সূরা নামল- ৩৫)
সুলায়মান (আঃ) তার হাদিয়া গ্রহণ করেননি :
فَلَمَّا جَآءَ سُلَيْمَانَ قَالَ اَتُمِدُّوْنَنِ بِمَالٍؗ فَمَاۤ اٰتَانِيَ اللهُ خَيْرٌ مِّمَّاۤ اٰتَاكُمْۚ بَلْ اَنْتُمْ بِهَدِيَّتِكُمْ تَفْرَحُوْنَ
দূত সুলায়মানের নিকট আসলে সুলায়মান বলল, তোমরা কি আমাকে ধনসম্পদ দিয়ে সাহায্য করবে? আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছেন তা তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তা হতে উৎকৃষ্ট, অথচ তোমরা তোমাদের উপঢৌকন নিয়ে উৎফুল্ল বোধ কর। (সূরা নামল– ৩৬)
ব্যাখ্যা : অহংকার ও দাম্ভীকতার প্রকাশ এ কাজের উদ্দেশ্য নয়। আসল বক্তব্য হচ্ছে, তোমাদের অর্থ-সম্পদ আমার লক্ষ্য নয়; বরং তোমরা ঈমান আনো, এটাই আমার কাম্য। অথবা কমপক্ষে যে জিনিস আমি চাই তা হচ্ছে, তোমরা একটি সৎ জীবন ও রাষ্ট্রব্যবস্থার অনুসারী হয়ে যাও। এ দু’টি জিনিসের মধ্যে কোন একটিও যদি তোমরা না চাও, তাহলে ধনসম্পদের উপঢৌকন গ্রহণ করে তোমাদেরকে এ শিরক ও বিপর্যয় সৃষ্টিকারী নোংরা জীবনব্যবস্থায় স্বাধীনভাবে ছেড়ে দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তোমাদের সম্পদের তুলনায় আমার রব আমাকে যা কিছু দিয়েছেন তা অনেক বেশি। কাজেই তোমাদের সম্পদের প্রতি আমার লোভাতুর হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
সুলায়মান (আঃ) ঐ দূতকে সতর্কবাণীসহ পাঠিয়ে দিলেন :
اِرْجِعْ اِلَيْهِمْ فَلَنَأْتِيَنَّهُمْ بِجُنُوْدٍ لَّا قِبَلَ لَهُمْ بِهَا وَلَنُخْرِجَنَّهُمْ مِّنْهَاۤ اَذِلَّةً وَّهُمْ صَاغِرُوْنَ
তুমি তাদের নিকট ফিরে যাও, আমি অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে এক সৈন্যবাহিনী নিয়ে আসব, যার মুকাবিলা করার শক্তি তাদের নেই। আমি অবশ্যই তাদেরকে সেখান থেকে লাঞ্ছিতভাবে বহিষ্কার করব; (পরিণামে) তারা সবাই অপমানিত হবে। (সূরা নামল– ৩৭)
সুলায়মান (আঃ) তাঁর পরিষদবর্গকে রাণীর সিংহাসন উঠিয়ে আনতে বললেন :
قَالَ يَاۤ اَيُّهَا الْمَلَأُ اَ يُّكُمْ يَأْتِيْنِيْ بِعَرْشِهَا قَبْلَ اَنْ يَّأْتُوْنِيْ مُسْلِمِيْنَ
সুলায়মান বললেন, হে আমার পরিষদবর্গ! তারা আত্মসমর্পণ করে আমার নিকট আসার পূর্বে তোমাদের মধ্যে কে তার সিংহাসন আমার নিকট নিয়ে আসতে পারবে? (সূরা নামল– ৩৮)
এক জিন তা আনার দায়িত্ব নিল :
قَالَ عِفْرِيْتٌ مِّنَ الْجِنِّ اَنَاْ اٰتِيْكَ بِهٖ قَبْلَ اَنْ تَقُوْمَ مِنْ مَّقَامِكَۚ وَاِنِّيْ عَلَيْهِ لَقَوِيٌّ اَمِيْنٌ
এক শক্তিশালী জিন বলল, আপনি আপনার স্থান হতে উঠার পূর্বেই আমি সেটা এনে দেব এবং এ ব্যাপারে আমি অবশ্যই বিশ্বস্ত ক্ষমতাবান। (সূরা নামল– ৩৯)
যার নিকট কিতাবের জ্ঞান ছিল সে মুহূর্তেই তা এনে দিল :
قَالَ الَّذِيْ عِنْدَهٗ عِلْمٌ مِّنَ الْكِتَابِ اَنَاْ اٰتِيْكَ بِهٖ قَبْلَ اَنْ يَّرْتَدَّ اِلَيْكَ طَرْفُكَؕ فَلَمَّا رَاٰهُ مُسْتَقِرًّا عِنْدَهٗ قَالَ هٰذَا مِنْ فَضْلِ رَبِّيْ لِيَبْلُوَنِۤيْ اَاَشْكُرُ اَمْ اَكْفُرُؕ وَمَنْ شَكَرَ فَاِنَّمَا يَشْكُرُ لِنَفْسِهٖۚ وَمَنْ كَفَرَ فَاِنَّ رَبِّيْ غَنِيٌّ كَرِيْمٌ
যার নিকট কিতাবের জ্ঞান ছিল, সে বলল, আপনি চক্ষুর পলক ফেলার পূর্বেই আমি সেটা আপনাকে এনে দেব। অতঃপর সুলায়মান যখন সেটা সম্মুখে রক্ষিত অবস্থায় দেখল তখন বলল, এটা আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ, যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা করতে পারেন যে, আমি কৃতজ্ঞ না অকৃতজ্ঞ? যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে তো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে নিজেরই কল্যাণের জন্য এবং যে অকৃতজ্ঞ সে জেনে রাখুক যে, আমার প্রতিপালক অভাবমুক্ত ও মহানুভব। (সূরা নামল– ৪০)
সুলায়মান (আঃ) এটাকে একটু পরিবর্তন করলেন :
قَالَ نَكِّرُوْا لَهَا عَرْشَهَا نَنْظُرْ اَتَهْتَدِيْۤ اَمْ تَكُوْنُ مِنَ الَّذِيْنَ لَا يَهْتَدُوْنَ
সুলায়মান বলল, তার সিংহাসনের আকৃতি অপরিচিত করে বদলিয়ে দাও। দেখি সে সঠিক দিশা পায়, নাকি সে বিভ্রান্তদের শামিল হয়। (সূরা নামল– ৪১)
বিলকিস আত্মসমর্পণ করে উপস্থিত হলো :
فَلَمَّا جَآءَتْ قِيْلَ اَهٰكَذَا عَرْشُكِؕ قَالَتْ كَاَنَّهٗ هُوَۚ وَاُوْتِيْنَا الْعِلْمَ مِنْ قَبْلِهَا وَكُنَّا مُسْلِمِيْنَ
অতঃপর যখন সে আসল তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, তোমার সিংহাসন কি এরূপই? সে বলল, এটা তো সেটাই। ইতোপূর্বেই আমাদেরকে প্রকৃত জ্ঞান দান করা হয়েছে এবং আমরা আত্মসমর্পণও করেছি। (সূরা নামল– ৪২)
কাফির সমাজে থাকায় সে মুসলিম হতে পারেনি :
وَصَدَّهَا مَا كَانَتْ تَّعْبُدُ مِنْ دُوْنِ اللهِؕ اِنَّهَا كَانَتْ مِنْ قَوْمٍ كَافِرِيْنَ
আল্লাহর পরিবর্তে সে যার পূজা করত, তাই তাকে সত্য হতে নিবৃত্ত করেছে। সে ছিল কাফির সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা নামল– ৪৩)
ব্যাখ্যা : এ বাক্যাংশটি আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর অবস্থান সুস্পষ্ট করার জন্য বলা হয়েছে। অর্থাৎ তাঁর মধ্যে কোন জিদ ও একগুঁয়েমী ছিল না। শুধুমাত্র কাফির জাতির মধ্যে জন্ম নেয়ার কারণেই তিনি তখন পর্যন্ত কাফির ছিলেন। সচেতন বুদ্ধিবৃত্তির অধিকারী হওয়ার পর থেকেই যে জিনিসের সামনে সিজদানবত হওয়ার অভ্যাস তার মধ্যে গড়ে উঠেছিল সেটিই ছিল তার প্রথম প্রতিবন্ধক। সুলায়মান (আঃ) এর মুখোমুখি হওয়ার পর যখন তার চোখ খুলে গেল তখন এ প্রতিবন্ধকতা দূর হতে দেরি হয়নি।
তাকে প্রাসাদে নিয়ে যাওয়া হলো ও মু‘জিযা দেখানো হলো :
قِيْلَ لَهَا ادْخُلِى الصَّرْحَۚ فَلَمَّا رَاَتْهُ حَسِبَتْهُ لُجَّةً وَّكَشَفَتْ عَنْ سَاقَيْهَاؕ قَالَ اِنَّهٗ صَرْحٌ مُّمَرَّدٌ مِّنْ قَوَارِيْرَ
তাকে বলা হলো, এ প্রাসাদে প্রবেশ করো। অতঃপর যখন সে সেটা দেখল, তখন সে তাকে এক গভীর জলাশয় মনে করল এবং সে তার পায়ের গোছা খুলে ফেলল। সুলায়মান বলল, এটা তো স্বচ্ছ কাঁচমন্ডিত প্রাসাদ। (সূরা নামল– ৪৪)
অবশেষে বিলকিস ইসলাম গ্রহণ করল :
قَالَتْ رَبِّ اِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ وَاَسْلَمْتُ مَعَ سُلَيْمَانَ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমি তো নিজের প্রতি যুলুম করেছিলাম। সুতরাং আমি সুলায়মানের সাথে জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করলাম। (সূরা নামল– ৪৪)
ব্যাখ্যা : সাবার রাণী ছিল আরবের ইতিহাসে বিপুল খ্যাতিমান ধনাঢ্য জাতির শাসক। একজন মানুষকে অহংকারে মত্ত করার জন্য যেসব উপকরণের প্রয়োজন তা সবই তার কাছে ছিল। যেসব জিনিসের জোরে একজন মানুষ অহংকারী হতে পারে তা কুরাইশ সরদারদের তুলনায় হাজার গুণ বেশি তার আয়ত্তাধীন ছিল। তাছাড়া সে ছিল একটি মুশরিক জাতির অন্তর্ভুক্ত। পিতৃপুরুষের অনুসরণের জন্য এবং নিজের জাতির মধ্যে নিজের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত রাখার উদ্দেশ্যেও তার পক্ষে শিরক ত্যাগ করে তাওহীদের পথ অবলম্বন করা সাধারণ একজন মুশরিকের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন ছিল। কিন্তু যখনই তার সামনে সত্য সুস্পষ্ট হয়ে গেল তখনই সে সত্যকে গ্রহণ করে নিলো। কারণ তার মধ্যে যে ভ্রষ্টতা ও বিভ্রান্তি ছিল তা নিছক একটি শিরকী পরিবেশে বসবাস করার ফলেই সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু তার বিবেক আল্লাহর সামনে জবাবদিহিতার অনুভূতি থেকে শূন্য ছিল না।
وَتَفَقَّدَ الطَّيْرَ فَقَالَ مَا لِيَ لَاۤ اَرَى الْهُدْهُدَۖ اَمْ كَانَ مِنَ الْغَآئِبِيْنَ ‐ لَاُعَذِّبَنَّهٗ عَذَابًا شَدِيْدًا اَوْ لَاَذْبَحَنَّهٗۤ اَوْ لَيَأْتِيَنِّيْ بِسُلْطَانٍ مُّبِيْنٍ
সুলায়মান বিহঙ্গদলের সন্ধান নিল এবং বলল, ব্যাপার কী- হুদহুদকে দেখছি না কেন! সে অনুপস্থিত নাকি? সে উপযুক্ত কারণ না দেখালে আমি অবশ্যই তাকে কঠিন শাস্তি দেব অথবা যবেহ করব। (সূরা নামল– ২০, ২১)
কিছুক্ষণের মধ্যেই সে সাবা থেকে একটি খবর নিয়ে এলো :
فَمَكَثَ غَيْرَ بَعِيْدٍ فَقَالَ اَحَطْتُّ بِمَا لَمْ تُحِطْ بِهٖ وَجِئْتُكَ مِنْ سَبَإٍ ۢبِنَبَإٍ يَّقِيْنٍ
অনতিবিলম্বে হুদহুদ এসে পড়ল এবং বলল, আপনি যা অবগত নন আমি তা অবগত হয়েছি এবং ‘সাবা’ হতে দৃঢ় সংবাদ নিয়ে এসেছি। (সূরা নামল– ২২)
সে সুলায়মান (আঃ) কে রাণী বিলকিসের অবস্থা শুনাল :
اِنِّيْ وَجَدْتُّ امْرَاَةً تَمْلِكُهُمْ وَاُوْتِيَتْ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ وَّلَهَا عَرْشٌ عَظِيْمٌ ‐ وَجَدْتُّهَا وَقَوْمَهَا يَسْجُدُوْنَ لِلشَّمْسِ مِنْ دُوْنِ اللهِ وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ اَعْمَالَهُمْ فَصَدَّهُمْ عَنِ السَّبِيْلِ فَهُمْ لَا يَهْتَدُوْنَ
আমি তো এক নারীকে দেখলাম, যে তাদের (প্রজাদের) উপর রাজত্ব করছে এবং তাকে সবকিছুই দেয়া হয়েছে। আর তার এক বিরাট সিংহাসন রয়েছে। আমি তাকে ও তার সম্প্রদায়কে দেখলাম যে, তারা আল্লাহর পরিবর্তে সূর্যকে সিজদা করছে। আর শয়তান তাদের কার্যাবলি তাদের নিকট সুশোভীত করে দিয়েছে এবং তাদেরকে সৎপথ হতে নিবৃত্ত করে রেখেছে, ফলে তারা সৎপথ গ্রহণ করে না। (সূরা নামল– ২৩, ২৪)
সাবার লোকেরা আল্লাহকে সিজদা করত না :
اَلَّا يَسْجُدُوْا لِلّٰهِ الَّذِيْ يُخْرِجُ الْخَبْءَ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَيَعْلَمُ مَا تُخْفُوْنَ وَمَا تُعْلِنُوْنَ ‐ اَللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ
(শয়তান বাধা দিয়ে রেখেছে এজন্য যে) যাতে তারা আল্লাহকে সিজদা করতে না পারে, যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর লুকায়িত বস্তুকে প্রকাশ করে দেন। তিনি জানেন, যা তোমরা গোপন কর এবং যা তোমরা ব্যক্ত কর। আল্লাহ সেই সত্তা, যিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই, তিনি মহান আরশের অধিপতি। (সূরা নামল– ২৫, ২৬)
সুলায়মান (আঃ) হুদহুদ পাখীর সংবাদ যাচাই করতে লাগলেন :
قَالَ سَنَنْظُرُ اَصَدَقْتَ اَمْ كُنْتَ مِنَ الْكَاذِبِيْنَ
সুলায়মান বলল, আমি দেখব তুমি কি সত্য বলেছ, নাকি তুমি মিথ্যাবাদী? (সূরা নামল– ২৭)
সুলায়মান (আঃ) বিলকিসের নিকট একটি চিঠি পাঠালেন :
اِذْهَبْ بِّكِتَابِيْ هٰذَا فَاَلْقِهْ اِلَيْهِمْ ثُمَّ تَوَلَّ عَنْهُمْ فَانْظُرْ مَاذَا يَرْجِعُوْنَ
তুমি আমার এ পত্র নিয়ে যাও এবং তাদের নিকট অর্পণ করো। অতঃপর তাদের নিকট হতে সরে থাকো এবং লক্ষ্য করো যে, তাদের প্রতিক্রিয়া কী? (সূরা নামল– ২৮)
চিঠি পেয়ে বিলকিস তার পরিষদবর্গকে তা জানাল :
قَالَتْ يَاۤ اَيُّهَا الْمَلَاُ اِنِّۤيْ اُلْقِيَ اِلَيَّ كِتَابٌ كَرِيْمٌ
সে (নারী) বলল, হে পরিষদবর্গ! আমাকে এক সম্মানিত পত্র দেয়া হয়েছে। (সূরা নামল– ২৯)
চিঠির মধ্যে যা লেখা ছিল :
اِنَّهٗ مِنْ سُلَيْمَانَ وَاِنَّهٗ بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ اَلَّا تَعْلُوْا عَلَيَّ وَأْتُوْنِيْ مُسْلِمِيْنَ
নিশ্চয় এটা সুলায়মানের নিকট হতে আগত এবং এটা পরম করুণাময় ও অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করা হয়েছে। (এতে লেখা আছে) সাবধান! তোমরা আমাকে অমান্য করো না এবং আনুগত্য স্বীকার করে আমার নিকট উপস্থিত হও। (সূরা নামল– ৩০, ৩১)
বিলকিস তার পরিষদবর্গের কাছে পরামর্শ চাইল :
قَالَتْ يَاۤ اَيُّهَا الْمَلَاُ اَفْتُوْنِيْ فِۤيْ اَمْرِيْۚ مَا كُنْتُ قَاطِعَةً اَمْرًا حَتّٰى تَشْهَدُوْنِ
সে (নারী) বলল, হে পরিষদবর্গ! আমার এ সমস্যায় তোমাদের অভিমত দাও। কারণ আমি কোন ব্যাপারে তোমাদের উপস্থিতি ব্যতীত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি না। (সূরা নামল– ৩২)
তারা নেত্রীকেই সিদ্ধান্ত নিতে বলল :
قَالُوْا نَحْنُ اُولُوْا قُوَّةٍ وَّاُولُوْا بَأْسٍ شَدِيْدٍ وَّالْاَمْرُ اِلَيْكِ فَانْظُرِيْ مَاذَا تَأْمُرِيْنَ
তারা বলল, আমরা তো শক্তিশালী ও কঠোর যোদ্ধা। তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা আপনারই, কী আদেশ করবেন তা আপনি ভেবে দেখুন। (সূরা নামল– ৩৩)
বিলকিস জবাব দিল :
قَالَتْ اِنَّ الْمُلُوْكَ اِذَا دَخَلُوْا قَرْيَةً اَفْسَدُوْهَا وَجَعَلُوْاۤ اَعِزَّةَ اَهْلِهَاۤ اَذِلَّةًۚ وَكَذٰلِكَ يَفْعَلُوْنَ
সে বলল, রাজা–বাদশাহরা যখন কোন জনপদে প্রবেশ করে তখন তাকে বিপর্যস্ত করে দেয় এবং সেখানকার মর্যাদাবান ব্যক্তিদেরকে অপদস্থ করে, এরাও এরূপই করবে। (সূরা নামল– ৩৪)
বিলকিস পরীক্ষাস্বরূপ সুলায়মান (আঃ) কে হাদিয়া পাঠাল :
وَاِنِّيْ مُرْسِلَةٌ اِلَيْهِمْ بِهَدِيَّةٍ فَنَاظِرَةٌ ۢبِمَ يَرْجِعُ الْمُرْسَلُوْنَ
আমি তাদের নিকট উপঢৌকন পাঠাচ্ছি। দেখি, দূতেরা কী নিয়ে ফিরি আসে। (সূরা নামল- ৩৫)
সুলায়মান (আঃ) তার হাদিয়া গ্রহণ করেননি :
فَلَمَّا جَآءَ سُلَيْمَانَ قَالَ اَتُمِدُّوْنَنِ بِمَالٍؗ فَمَاۤ اٰتَانِيَ اللهُ خَيْرٌ مِّمَّاۤ اٰتَاكُمْۚ بَلْ اَنْتُمْ بِهَدِيَّتِكُمْ تَفْرَحُوْنَ
দূত সুলায়মানের নিকট আসলে সুলায়মান বলল, তোমরা কি আমাকে ধনসম্পদ দিয়ে সাহায্য করবে? আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছেন তা তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তা হতে উৎকৃষ্ট, অথচ তোমরা তোমাদের উপঢৌকন নিয়ে উৎফুল্ল বোধ কর। (সূরা নামল– ৩৬)
ব্যাখ্যা : অহংকার ও দাম্ভীকতার প্রকাশ এ কাজের উদ্দেশ্য নয়। আসল বক্তব্য হচ্ছে, তোমাদের অর্থ-সম্পদ আমার লক্ষ্য নয়; বরং তোমরা ঈমান আনো, এটাই আমার কাম্য। অথবা কমপক্ষে যে জিনিস আমি চাই তা হচ্ছে, তোমরা একটি সৎ জীবন ও রাষ্ট্রব্যবস্থার অনুসারী হয়ে যাও। এ দু’টি জিনিসের মধ্যে কোন একটিও যদি তোমরা না চাও, তাহলে ধনসম্পদের উপঢৌকন গ্রহণ করে তোমাদেরকে এ শিরক ও বিপর্যয় সৃষ্টিকারী নোংরা জীবনব্যবস্থায় স্বাধীনভাবে ছেড়ে দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তোমাদের সম্পদের তুলনায় আমার রব আমাকে যা কিছু দিয়েছেন তা অনেক বেশি। কাজেই তোমাদের সম্পদের প্রতি আমার লোভাতুর হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
সুলায়মান (আঃ) ঐ দূতকে সতর্কবাণীসহ পাঠিয়ে দিলেন :
اِرْجِعْ اِلَيْهِمْ فَلَنَأْتِيَنَّهُمْ بِجُنُوْدٍ لَّا قِبَلَ لَهُمْ بِهَا وَلَنُخْرِجَنَّهُمْ مِّنْهَاۤ اَذِلَّةً وَّهُمْ صَاغِرُوْنَ
তুমি তাদের নিকট ফিরে যাও, আমি অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে এক সৈন্যবাহিনী নিয়ে আসব, যার মুকাবিলা করার শক্তি তাদের নেই। আমি অবশ্যই তাদেরকে সেখান থেকে লাঞ্ছিতভাবে বহিষ্কার করব; (পরিণামে) তারা সবাই অপমানিত হবে। (সূরা নামল– ৩৭)
সুলায়মান (আঃ) তাঁর পরিষদবর্গকে রাণীর সিংহাসন উঠিয়ে আনতে বললেন :
قَالَ يَاۤ اَيُّهَا الْمَلَأُ اَ يُّكُمْ يَأْتِيْنِيْ بِعَرْشِهَا قَبْلَ اَنْ يَّأْتُوْنِيْ مُسْلِمِيْنَ
সুলায়মান বললেন, হে আমার পরিষদবর্গ! তারা আত্মসমর্পণ করে আমার নিকট আসার পূর্বে তোমাদের মধ্যে কে তার সিংহাসন আমার নিকট নিয়ে আসতে পারবে? (সূরা নামল– ৩৮)
এক জিন তা আনার দায়িত্ব নিল :
قَالَ عِفْرِيْتٌ مِّنَ الْجِنِّ اَنَاْ اٰتِيْكَ بِهٖ قَبْلَ اَنْ تَقُوْمَ مِنْ مَّقَامِكَۚ وَاِنِّيْ عَلَيْهِ لَقَوِيٌّ اَمِيْنٌ
এক শক্তিশালী জিন বলল, আপনি আপনার স্থান হতে উঠার পূর্বেই আমি সেটা এনে দেব এবং এ ব্যাপারে আমি অবশ্যই বিশ্বস্ত ক্ষমতাবান। (সূরা নামল– ৩৯)
যার নিকট কিতাবের জ্ঞান ছিল সে মুহূর্তেই তা এনে দিল :
قَالَ الَّذِيْ عِنْدَهٗ عِلْمٌ مِّنَ الْكِتَابِ اَنَاْ اٰتِيْكَ بِهٖ قَبْلَ اَنْ يَّرْتَدَّ اِلَيْكَ طَرْفُكَؕ فَلَمَّا رَاٰهُ مُسْتَقِرًّا عِنْدَهٗ قَالَ هٰذَا مِنْ فَضْلِ رَبِّيْ لِيَبْلُوَنِۤيْ اَاَشْكُرُ اَمْ اَكْفُرُؕ وَمَنْ شَكَرَ فَاِنَّمَا يَشْكُرُ لِنَفْسِهٖۚ وَمَنْ كَفَرَ فَاِنَّ رَبِّيْ غَنِيٌّ كَرِيْمٌ
যার নিকট কিতাবের জ্ঞান ছিল, সে বলল, আপনি চক্ষুর পলক ফেলার পূর্বেই আমি সেটা আপনাকে এনে দেব। অতঃপর সুলায়মান যখন সেটা সম্মুখে রক্ষিত অবস্থায় দেখল তখন বলল, এটা আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ, যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা করতে পারেন যে, আমি কৃতজ্ঞ না অকৃতজ্ঞ? যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে তো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে নিজেরই কল্যাণের জন্য এবং যে অকৃতজ্ঞ সে জেনে রাখুক যে, আমার প্রতিপালক অভাবমুক্ত ও মহানুভব। (সূরা নামল– ৪০)
সুলায়মান (আঃ) এটাকে একটু পরিবর্তন করলেন :
قَالَ نَكِّرُوْا لَهَا عَرْشَهَا نَنْظُرْ اَتَهْتَدِيْۤ اَمْ تَكُوْنُ مِنَ الَّذِيْنَ لَا يَهْتَدُوْنَ
সুলায়মান বলল, তার সিংহাসনের আকৃতি অপরিচিত করে বদলিয়ে দাও। দেখি সে সঠিক দিশা পায়, নাকি সে বিভ্রান্তদের শামিল হয়। (সূরা নামল– ৪১)
বিলকিস আত্মসমর্পণ করে উপস্থিত হলো :
فَلَمَّا جَآءَتْ قِيْلَ اَهٰكَذَا عَرْشُكِؕ قَالَتْ كَاَنَّهٗ هُوَۚ وَاُوْتِيْنَا الْعِلْمَ مِنْ قَبْلِهَا وَكُنَّا مُسْلِمِيْنَ
অতঃপর যখন সে আসল তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, তোমার সিংহাসন কি এরূপই? সে বলল, এটা তো সেটাই। ইতোপূর্বেই আমাদেরকে প্রকৃত জ্ঞান দান করা হয়েছে এবং আমরা আত্মসমর্পণও করেছি। (সূরা নামল– ৪২)
কাফির সমাজে থাকায় সে মুসলিম হতে পারেনি :
وَصَدَّهَا مَا كَانَتْ تَّعْبُدُ مِنْ دُوْنِ اللهِؕ اِنَّهَا كَانَتْ مِنْ قَوْمٍ كَافِرِيْنَ
আল্লাহর পরিবর্তে সে যার পূজা করত, তাই তাকে সত্য হতে নিবৃত্ত করেছে। সে ছিল কাফির সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা নামল– ৪৩)
ব্যাখ্যা : এ বাক্যাংশটি আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর অবস্থান সুস্পষ্ট করার জন্য বলা হয়েছে। অর্থাৎ তাঁর মধ্যে কোন জিদ ও একগুঁয়েমী ছিল না। শুধুমাত্র কাফির জাতির মধ্যে জন্ম নেয়ার কারণেই তিনি তখন পর্যন্ত কাফির ছিলেন। সচেতন বুদ্ধিবৃত্তির অধিকারী হওয়ার পর থেকেই যে জিনিসের সামনে সিজদানবত হওয়ার অভ্যাস তার মধ্যে গড়ে উঠেছিল সেটিই ছিল তার প্রথম প্রতিবন্ধক। সুলায়মান (আঃ) এর মুখোমুখি হওয়ার পর যখন তার চোখ খুলে গেল তখন এ প্রতিবন্ধকতা দূর হতে দেরি হয়নি।
তাকে প্রাসাদে নিয়ে যাওয়া হলো ও মু‘জিযা দেখানো হলো :
قِيْلَ لَهَا ادْخُلِى الصَّرْحَۚ فَلَمَّا رَاَتْهُ حَسِبَتْهُ لُجَّةً وَّكَشَفَتْ عَنْ سَاقَيْهَاؕ قَالَ اِنَّهٗ صَرْحٌ مُّمَرَّدٌ مِّنْ قَوَارِيْرَ
তাকে বলা হলো, এ প্রাসাদে প্রবেশ করো। অতঃপর যখন সে সেটা দেখল, তখন সে তাকে এক গভীর জলাশয় মনে করল এবং সে তার পায়ের গোছা খুলে ফেলল। সুলায়মান বলল, এটা তো স্বচ্ছ কাঁচমন্ডিত প্রাসাদ। (সূরা নামল– ৪৪)
অবশেষে বিলকিস ইসলাম গ্রহণ করল :
قَالَتْ رَبِّ اِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ وَاَسْلَمْتُ مَعَ سُلَيْمَانَ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমি তো নিজের প্রতি যুলুম করেছিলাম। সুতরাং আমি সুলায়মানের সাথে জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করলাম। (সূরা নামল– ৪৪)
ব্যাখ্যা : সাবার রাণী ছিল আরবের ইতিহাসে বিপুল খ্যাতিমান ধনাঢ্য জাতির শাসক। একজন মানুষকে অহংকারে মত্ত করার জন্য যেসব উপকরণের প্রয়োজন তা সবই তার কাছে ছিল। যেসব জিনিসের জোরে একজন মানুষ অহংকারী হতে পারে তা কুরাইশ সরদারদের তুলনায় হাজার গুণ বেশি তার আয়ত্তাধীন ছিল। তাছাড়া সে ছিল একটি মুশরিক জাতির অন্তর্ভুক্ত। পিতৃপুরুষের অনুসরণের জন্য এবং নিজের জাতির মধ্যে নিজের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত রাখার উদ্দেশ্যেও তার পক্ষে শিরক ত্যাগ করে তাওহীদের পথ অবলম্বন করা সাধারণ একজন মুশরিকের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন ছিল। কিন্তু যখনই তার সামনে সত্য সুস্পষ্ট হয়ে গেল তখনই সে সত্যকে গ্রহণ করে নিলো। কারণ তার মধ্যে যে ভ্রষ্টতা ও বিভ্রান্তি ছিল তা নিছক একটি শিরকী পরিবেশে বসবাস করার ফলেই সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু তার বিবেক আল্লাহর সামনে জবাবদিহিতার অনুভূতি থেকে শূন্য ছিল না।
ইলয়াস (আঃ) বনী ইসরাঈলের নবীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। কুরআন মাজীদে মাত্র দু’জায়গায় তাঁর আলোচনা এসেছে। তিনি ছিলেন জিলআদ-এর অধিবাসী। প্রাচীনকালে জিলআদ বলা হতো বর্তমান জর্দান রাষ্ট্রের উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলোর সমন্বয়ে গঠিত ইয়ারমুক নদীর দক্ষিণে অবস্থিত এলাকাকে। ইলয়াস (আঃ) সুমেরীয় রাজবংশের আহাব ও আহাযিয়া রাজাদের সময় দামেস্কের পশ্চিমে বা‘লাবাক্কা অঞ্চলের বনী ইসরাঈলদের নিকট প্রেরিত হয়েছিলেন। এ সময় তারা বা‘আল নামক মূর্তির পূজায় লিপ্ত হয়ে পড়েছিল। ইলয়াস (আঃ) তাদেরকে এ থেকে নিবৃত্ত করার জন্য দাওয়াত পেশ করেন। কিন্তু প্রথমে তিনি সর্বত্রই প্রত্যাখ্যাত হন। তারপর এক সময় মু’জিযা পেশ করেন এবং এতে কিছুটা সফলতা লাভ করেন। ইসরাঈলী শাসক আখিয়াব ও তাঁর স্ত্রী তাঁকে বার বার হত্যা করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।
ইলয়াস (আঃ) ছিলেন নবীগণের মধ্যে একজন :
وَاِنَّ اِلْيَاسَ لَمِنَ الْمُرْسَلِيْنَ
আর নিঃসন্দেহে ইলয়াসও ছিলেন রাসূলদের মধ্যে অন্যতম। (সূরা সাফ্ফাত– ১২৩)
তিনি ছিলেন সৎ বান্দা :
وَزَكَرِيَّا وَيَحْيٰى وَعِيْسٰى وَاِلْيَاسَؕ كُلٌّ مِّنَ الصَّالِحِيْنَ
যাকারিয়া, ইয়াহিয়া, ঈসা এবং ইলয়াসকেও (সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম)। এরা সকলেই ছিল সৎ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা আন‘আম– ৮৫)
اِنَّهٗ مِنْ عِبَادِنَا الْمُؤْمِنِيْنَ
নিশ্চয় তিনি ছিলেন আমার মুমিন বান্দাদের একজন। (সূরা সাফ্ফাত– ১৩২)
তিনি জাতিকে আল্লাহর ভয় দেখালেন :
اِذْ قَالَ لِقَوْمِهٖۤ اَلَا تَتَّقُوْنَ
(স্মরণ করো) যখন তিনি তার সম্প্রদায়কে বলেছিলেন, তোমরা কি আল্লাহকে ভয় কর না? (সূরা সাফ্ফাত– ১২৪)
বা‘আল মূর্তির পূজা করতে নিষেধ করলেন :
اَتَدْعُوْنَ بَعْلًا وَّتَذَرُوْنَ اَحْسَنَ الْخَالِقِيْنَ ‐ اَللهَ رَبَّكُمْ وَرَبَّ اٰبَآئِكُمُ الْاَوَّلِيْنَ
তোমরা কি বা‘আল দেবতার পূজা করবে এবং সর্বশ্রেষ্ট সৃষ্টিকর্তাকে পরিত্যাগ করবে? অথচ আল্লাহ তোমাদের প্রতিপালক এবং তোমাদের পূর্বপুরুষদেরও প্রতিপালক? (সূরা সাফ্ফাত– ১২৫, ১২৬)
ব্যাখ্যা : بَعْلٌ (বা‘আল) এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে প্রভু, সরদার ও মালিক ইত্যাদি। প্রাচীনকালে সিরিয়ার বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠী এ শব্দটিকে উপাস্য ও প্রভু অর্থে ব্যবহার করত। তারা একটি বিশেষ দেবতাকে بَعْلٌ (বা‘আল) নামে চিহ্নিত করে রেখেছিল। সে সময় ইসরাঈলীদের মধ্যে বা‘আল পূজা খুব বেশি প্রচলিত ছিল। বাইবেলের বর্ণনা মতে তাদের একটি জনপদে প্রকাশ্যে بَعْلٌ (বা‘আল) এর মূর্তি নির্মাণ করা হয়েছিল এবং সেখানে বলিদান করা হতো।
কিন্তু জাতির লোকেরা তাঁর কথা অস্বীকার করল :
فَكَذَّبُوْهُ فَاِنَّهُمْ لَمُحْضَرُوْنَ ‐ اِلَّا عِبَادَ اللهِ الْمُخْلَصِيْنَ
অবশেষে তারা তাঁকে অস্বীকার করল। সুতরাং তাদেরকে অবশ্যই শাস্তির মধ্যে উপস্থিত করা হবে। তবে যারা আল্লাহর খাঁটি বান্দা তারা নয়। (সূরা সাফ্ফাত– ১২৭, ১২৮)
ইলয়াস (আঃ) এর প্রতি সালাম :
سَلَامٌ عَلٰۤى اِلْيَاسِيْنَ ‐ اِنَّا كَذٰلِكَ نَجْزِى الْمُحْسِنِيْنَ
সালাম বর্ষিত হোক ইলয়াসের উপর। আমি তো এমনিভাবেই সৎ লোকদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি।
(সূরা সাফ্ফাত– ১৩০, ১৩১)
ইলয়াস (আঃ) ছিলেন নবীগণের মধ্যে একজন :
وَاِنَّ اِلْيَاسَ لَمِنَ الْمُرْسَلِيْنَ
আর নিঃসন্দেহে ইলয়াসও ছিলেন রাসূলদের মধ্যে অন্যতম। (সূরা সাফ্ফাত– ১২৩)
তিনি ছিলেন সৎ বান্দা :
وَزَكَرِيَّا وَيَحْيٰى وَعِيْسٰى وَاِلْيَاسَؕ كُلٌّ مِّنَ الصَّالِحِيْنَ
যাকারিয়া, ইয়াহিয়া, ঈসা এবং ইলয়াসকেও (সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম)। এরা সকলেই ছিল সৎ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা আন‘আম– ৮৫)
اِنَّهٗ مِنْ عِبَادِنَا الْمُؤْمِنِيْنَ
নিশ্চয় তিনি ছিলেন আমার মুমিন বান্দাদের একজন। (সূরা সাফ্ফাত– ১৩২)
তিনি জাতিকে আল্লাহর ভয় দেখালেন :
اِذْ قَالَ لِقَوْمِهٖۤ اَلَا تَتَّقُوْنَ
(স্মরণ করো) যখন তিনি তার সম্প্রদায়কে বলেছিলেন, তোমরা কি আল্লাহকে ভয় কর না? (সূরা সাফ্ফাত– ১২৪)
বা‘আল মূর্তির পূজা করতে নিষেধ করলেন :
اَتَدْعُوْنَ بَعْلًا وَّتَذَرُوْنَ اَحْسَنَ الْخَالِقِيْنَ ‐ اَللهَ رَبَّكُمْ وَرَبَّ اٰبَآئِكُمُ الْاَوَّلِيْنَ
তোমরা কি বা‘আল দেবতার পূজা করবে এবং সর্বশ্রেষ্ট সৃষ্টিকর্তাকে পরিত্যাগ করবে? অথচ আল্লাহ তোমাদের প্রতিপালক এবং তোমাদের পূর্বপুরুষদেরও প্রতিপালক? (সূরা সাফ্ফাত– ১২৫, ১২৬)
ব্যাখ্যা : بَعْلٌ (বা‘আল) এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে প্রভু, সরদার ও মালিক ইত্যাদি। প্রাচীনকালে সিরিয়ার বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠী এ শব্দটিকে উপাস্য ও প্রভু অর্থে ব্যবহার করত। তারা একটি বিশেষ দেবতাকে بَعْلٌ (বা‘আল) নামে চিহ্নিত করে রেখেছিল। সে সময় ইসরাঈলীদের মধ্যে বা‘আল পূজা খুব বেশি প্রচলিত ছিল। বাইবেলের বর্ণনা মতে তাদের একটি জনপদে প্রকাশ্যে بَعْلٌ (বা‘আল) এর মূর্তি নির্মাণ করা হয়েছিল এবং সেখানে বলিদান করা হতো।
কিন্তু জাতির লোকেরা তাঁর কথা অস্বীকার করল :
فَكَذَّبُوْهُ فَاِنَّهُمْ لَمُحْضَرُوْنَ ‐ اِلَّا عِبَادَ اللهِ الْمُخْلَصِيْنَ
অবশেষে তারা তাঁকে অস্বীকার করল। সুতরাং তাদেরকে অবশ্যই শাস্তির মধ্যে উপস্থিত করা হবে। তবে যারা আল্লাহর খাঁটি বান্দা তারা নয়। (সূরা সাফ্ফাত– ১২৭, ১২৮)
ইলয়াস (আঃ) এর প্রতি সালাম :
سَلَامٌ عَلٰۤى اِلْيَاسِيْنَ ‐ اِنَّا كَذٰلِكَ نَجْزِى الْمُحْسِنِيْنَ
সালাম বর্ষিত হোক ইলয়াসের উপর। আমি তো এমনিভাবেই সৎ লোকদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি।
(সূরা সাফ্ফাত– ১৩০, ১৩১)
আল ইয়াসা (আঃ) ছিলেন ইফরাম ইবনে ইউসুফ ইবনে ইয়াকূব- এর বংশধর। তিনি ছিলেন ইলয়াস (আঃ) এর চাচাতো ভাই এবং তাঁর নায়েব বা প্রতিনিধি। আল্লাহ তা‘আলা ইলয়াস (আঃ) কে উঠিয়ে নেয়ার পর বনী ইসরাঈলকে পথপদর্শনের জন্য আল ইয়াসা (আঃ) কে নবুওয়াত দান করেন। তিনি ইলয়াস (আঃ) এর শরীয়াত অনুযায়ী ফিলিস্তীন অঞ্চলের জনগণকে হেদায়াতের পথে পরিচালিত করেন এবং তাওহীদের দাওয়াত অব্যাহত রাখেন। বাইবেলে তাঁর বিস্তারিত অবস্থা বর্ণিত হয়েছে। সেখানে তাঁর নাম ইলিশা ইবনে সাবিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কুরআন মাজীদে তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত কোনকিছু আলোচনা করা হয়নি। দু’জায়গায় শুধু তাঁর নামটি উল্লেখ রয়েছে।
আল ইয়াসা (আঃ) ছিলেন নবীদের একজন :
وَالْيَسَعَ وَيُوْنُسَ وَلُوْطًاؕ وَكُلًّا فَضَّلْنَا عَلَى الْعَالَمِيْنَ
আল ইয়াসা, ইউনুস ও লূত প্রত্যেককেই (সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম) এবং প্রত্যেককেই বিশ্বজগতের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছিলাম। (সূরা আন‘আম– ৮৬)
وَاذْكُرْ اِسْمَاعِيْلَ وَالْيَسَعَ وَذَا الْكِفْلِؕ وَكُلٌّ مِّنَ الْاَخْيَارِ
স্মরণ করো, ইসমাঈল, আল ইয়াসা ও যুলকিফলের কথা, তারা প্রত্যেকেই ছিল শ্রেষ্ঠ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।
(সূরা সোয়াদু ৪৮)
আল ইয়াসা (আঃ) ছিলেন নবীদের একজন :
وَالْيَسَعَ وَيُوْنُسَ وَلُوْطًاؕ وَكُلًّا فَضَّلْنَا عَلَى الْعَالَمِيْنَ
আল ইয়াসা, ইউনুস ও লূত প্রত্যেককেই (সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম) এবং প্রত্যেককেই বিশ্বজগতের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছিলাম। (সূরা আন‘আম– ৮৬)
وَاذْكُرْ اِسْمَاعِيْلَ وَالْيَسَعَ وَذَا الْكِفْلِؕ وَكُلٌّ مِّنَ الْاَخْيَارِ
স্মরণ করো, ইসমাঈল, আল ইয়াসা ও যুলকিফলের কথা, তারা প্রত্যেকেই ছিল শ্রেষ্ঠ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।
(সূরা সোয়াদু ৪৮)
কুরআনে মাত্র দু’জায়গায় তাঁর কথা বলা হয়েছে। তবে কোন জায়গায়ই বিস্তারিত আলোচনা করা হয়নি; কেবল নবীদের কথা বর্ণনা প্রসঙ্গে তাঁর নাম নেয়া হয়েছে। তিনি ছিলেন বনী ইসরাঈলের নেতৃস্থানীয় নবীদের একজন। তিনি জর্দান নদীর উপকূলে ‘আবেল মেহুলা’ এর অধিবাসী ছিলেন। যুলকিফল অর্থ দায়িত্ব বহনকারী। যেহেতু তিনি আল ইয়াসা (আঃ) এর আহবানে সাড়া দিয়ে নিজেই দাওয়াতের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তাই তাঁকে যুলকিফল বলা হয়। যুলকিফল (আঃ) একজন উদার হৃদয়ের অধিকারী নবী ছিলেন। তিনি প্রাথমিকভাবে আল ইয়াসা (আঃ) এর স্থলাভিষিক্ত হিসেবে দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করে যান। পরবর্তীতে আল্লাহ তা‘আলা তাকে নবুওয়াত দান করেন।
আল্লাহ তার নাম নবীদের সারীতে উল্লেখ করেছেন :
وَاِسْمَاعِيْلَ وَاِدْرِيْسَ وَذَا الْكِفْلِ كُلٌّ مِّنَ الصَّابِرِيْنَ
স্মরণ করো, ইসমাঈল, ইদ্রীস ও যুলকিফল এর কথা, তাদের প্রত্যেকেই ছিল ধৈর্যশীল। (সূরা আম্বিয়া– ৮৫)
তাকে স্মরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন :
وَاذْكُرْ اِسْمَاعِيْلَ وَالْيَسَعَ وَذَا الْكِفْلِؕ وَكُلٌّ مِّنَ الْاَخْيَارِ
স্মরণ করো, ইসমাঈল, আল ইয়াসা ও যুলকিফল এর কথা, তারা প্রত্যেকেই ছিল শ্রেষ্ঠ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।
(সূরা সোয়াদু ৪৮)
আল্লাহ তার নাম নবীদের সারীতে উল্লেখ করেছেন :
وَاِسْمَاعِيْلَ وَاِدْرِيْسَ وَذَا الْكِفْلِ كُلٌّ مِّنَ الصَّابِرِيْنَ
স্মরণ করো, ইসমাঈল, ইদ্রীস ও যুলকিফল এর কথা, তাদের প্রত্যেকেই ছিল ধৈর্যশীল। (সূরা আম্বিয়া– ৮৫)
তাকে স্মরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন :
وَاذْكُرْ اِسْمَاعِيْلَ وَالْيَسَعَ وَذَا الْكِفْلِؕ وَكُلٌّ مِّنَ الْاَخْيَارِ
স্মরণ করো, ইসমাঈল, আল ইয়াসা ও যুলকিফল এর কথা, তারা প্রত্যেকেই ছিল শ্রেষ্ঠ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।
(সূরা সোয়াদু ৪৮)
যাকারিয়া (আঃ) ছিলেন ইয়াহিয়া (আঃ) এর পিতা এবং মারইয়াম (আঃ) এর লালন-পালনকারী। আর ইয়াহিয়া (আঃ) ছিলেন পরবর্তী নবী ও মারইয়াম (আঃ) এর পুত্র ঈসা (আঃ) এর খালাতো ভাই। তারা বায়তুল মুকাদ্দাসের সন্নিকটে বসবাস করতেন এবং সেখানেই বনী ইসরাঈলদেরকে দাওয়াত দিয়ে যান। যাকারিয়া (আঃ) সন্তানহীন ছিলেন। এমতাবস্থায় তাঁর স্ত্রীও বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন এবং তিনি সন্তান জন্মদানে অক্ষম হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি নিজের দু‘আর বদৌলতে ও আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহে এ অবস্থাতেও ইয়াহিয়া (আঃ) কে জন্মদান করেন। আর এ সন্তানের নাম আল্লাহ নিজেই রাখেন, যে নাম ইতোপূর্বে আর কারো জন্য রাখা হয়নি। আল্লাহ তা‘আলা ইয়াহিয়া (আঃ) কে ছোটকাল থেকেই বিশেষ প্রজ্ঞা, কোমলতা, তাক্বওয়া, পিতামাতার আনুগত্য ইত্যাদি বিশেষ গুণাবলি দান করেছিলেন। তিনি বনী ইসরাঈলকে দ্বীনের দাওয়াত দিতেন।
যাকারিয়া (আঃ) ছিলেন নবীদের মধ্যে একজন :
وَزَكَرِيَّا وَيَحْيٰى وَعِيْسٰى وَاِلْيَاسَ كُلٌّ مِّنَ الصَّالِحِيْنَ
আর যাকারিয়া, ইয়াইহয়া, ঈসা এবং ইলয়াসকেও (সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম)। আর এরা সকলেই ছিল নেককারদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা আন‘আম– ৮৫)
তিনি মারইয়াম (আঃ) এর তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন :
فَتَقَبَّلَهَا رَبُّهَا بِقَبُوْلٍ حَسَنٍ وَّاَنْۢبَتَهَا نَبَاتًا حَسَنًا وَّكَفَّلَهَا زَكَرِيًّا
অতঃপর তার রব মারইয়ামকে উত্তমভাবে কবুল করলেন এবং তাকে ভালোভাবে লালন-পালনের ব্যবস্থা করলেন। আর যাকারিয়াকে তার অভিভাবকের দায়িত্ব দিলেন। (সূরা আলে ইমরানু ৩৭)
বৃদ্ধ বয়সে আল্লাহর নিকট সন্তান পাওয়ার জন্য দু‘আ করলেন :
ذِكْرُ رَحْمَتِ رَبِّكَ عَبْدَهٗ زَكَرِيًّا ‐ اِذْ نَادٰى رَبَّهٗ نِدَآءً خَفِيًّا ‐ قَالَ رَبِّ اِنِّيْ وَهَنَ الْعَظْمُ مِنِّيْ وَاشْتَعَلَ الرَّأْسُ شَيْبًا وَّلَمْ اَكُنْ ۢبِدُعَآئِكَ رَبِّ شَقِيًّا ‐ وَاِنِّيْ خِفْتُ الْمَوَالِيَ مِنْ وَّرَآئِيْ وَكَانَتِ امْرَاَتِيْ عَاقِرًا فَهَبْ لِيْ مِنْ لَّدُنْكَ وَلِيًّا ‐ يَرِثُنِيْ وَيَرِثُ مِنْ اٰلِ يَعْقُوْبَۗ وَاجْعَلْهُ رَبِّ رَضِيًّا
এটা তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে তাঁর বান্দা যাকারিয়ার প্রতি অনুগ্রহের বিবরণ। যখন সে একনিষ্ঠভাবে তার প্রতিপালককে আহবান করেছিল এবং বলেছিল, হে আমার রব! আমার হাঁড় দুর্বল হয়ে গেছে, বার্ধক্যে আমার মস্তক শুভ্রোজ্জ্বল হয়ে গেছে। আর তোমাকে আহবান করে আমি কখনো ব্যর্থ হইনি। আমি আমার পর আমার স্বগোত্রীয়দের সম্পর্কে (বিভ্রান্ত হয়ে যাওয়ার) আশঙ্কা করছি। আর আমার স্ত্রীও বন্ধ্যা। সুতরাং তুমি তোমার পক্ষ হতে আমাকে একজন উত্তরাধিকারী দান করো, যে আমার ও ইয়াকূবের বংশের উত্তরাধিকারী হবে। হে আমার প্রতিপালক! তুমি তাকে সন্তোষভাজন বানিয়ে দাও। (সূরা মারইয়াম, ২– ৬)
وَزَكَرِيَّاۤ اِذْ نَادٰى رَبَّهٗ رَبِّ لَا تَذَرْنِيْ فَرْدًا وَّاَنْتَ خَيْرُ الْوَارِثِيْنَ
স্মরণ করো, যখন যাকারিয়া তার প্রতিপালককে আহবান করে বলেছিল, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে একা রেখে দিয়ো না, তুমি তো শ্রেষ্ঠ উত্তরাধিকারী। (সূরা আম্বিয়া– ৮৯)
هُنَالِكَ دَعَا زَكَرِيًّا رَبَّهٗۚ قَالَ رَبِّ هَبْ لِيْ مِنْ لَّدُنْكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةًۚ اِنَّكَ سَمِيْعُ الدُّعَآءِ
সেখানেই যাকারিয়া তার রবকে ডেকে বললেন, হে আমার রব! আপনার পক্ষ থেকে আমাকে একটি পবিত্র সন্তান দান করুন। নিশ্চয় আপনি দু‘আ শ্রবণকারী। (সূরা আলে ইমরানু ৩৮)
আল্লাহ তার দু‘আ কবুল করলেন :
فَاسْتَجَبْنَا لَهٗ وَوَهَبْنَا لَهٗ يَحْيٰى وَاَصْلَحْنَا لَهٗ زَوْجَهٗ
অতঃপর আমি তার আহবানে সাড়া দিয়েছিলাম এবং তাকে দান করেছিলাম ইয়াহিয়া; এজন্য তার স্ত্রীকেও যোগ্যতাসম্পন্ন করেছিলাম। (সূরা আম্বিয়া– ৯০)
ফেরেশতা তাকে সন্তান জন্মের সুসংবাদ দিলেন :
فَنَادَتْهُ الْمَلَآئِكَةُ وَهُوَ قَآئِمٌ يُّصَلِّيْ فِى الْمِحْرَابِ اَنَّ اللهَ يُبَشِّرُكَ بِيَحْيٰى مُصَدِّقًا ۢبِكَلِمَةٍ مِّنَ اللهِ وَسَيِّدًا وَّحَصُوْرًا وَّنَبِيًّا مِّنَ الصَّالِحِيْنَ
অতঃপর তিনি মেহরাবে নামাযরত অবস্থায় থাকাকালে ফেরেশতারা তাকে ডেকে বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ আপনাকে ইয়াহিয়ার সুসংবাদ দিচ্ছেন। তিনি হবেন আল্লাহর বাণীর সত্যায়নকারী, নেতা, প্রবৃত্তি দমনকারী এবং পুণ্যবান নবীদের একজন। (সূরা আলে ইমরানু ৩৯)
يَا زَكَرِيَّاۤ اِنَّا نُبَشِّرُكَ بِغُلَامِنِ اسْمُهٗ يَحْيٰى لَمْ نَجْعَلْ لَّهٗ مِنْ قَبْلُ سَمِيًّا
তিনি বললেন, হে যাকারিয়া! আমি তোমাকে এক পুত্রের সুসংবাদ দিচ্ছি। তার নাম হবে ইয়াহিয়া, ইতোপূর্বে এ নামে আমি আর কারো নামকরণ করিনি। (সূরা মারইয়াম– ৭)
স্ত্রী বন্ধ্যা হওয়াতে তিনি আল্লাহর নিকট অভিযোগ পেশ করলেন :
قَالَ رَبِّ اَنّٰى يَكُوْنُ لِيْ غُلَامٌ وَّكَانَتِ امْرَاَتِىْ عَاقِرًا وَّقَدْ بَلَغْتُ مِنَ الْكِبَرِ عِتِيًّا
সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমার পুত্র হবে? অথচ আমার স্ত্রী বন্ধ্যা এবং আমিও বার্ধক্যের শেষ সীমায় উপনীত। (সূরা মারইয়াম– ৮)
قَالَ رَبِّ اَنّٰى يَكُوْنُ لِىْ غُلَامٌ وَّقَدْ بَلَغَنِيَ الْكِبَرُ وَامْرَاَتِيْ عَاقِرٌ
তিনি বললেন, হে আমার রব! আমার সন্তান হবে? অথচ আমি বার্ধক্যে উপনীত হয়ে গেছি এবং আমার স্ত্রীও বন্ধ্যা। (সূরা আলে ইমরানু ৪০)
তাকে বলা হলো, এটা আল্লাহর পক্ষে সম্ভব :
قَالَ كَذٰلِكَ اللهُ يَفْعَلُ مَا يَشَآءُ
আল্লাহ বললেন, এভাবেই হবে। আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। (সূরা আলে ইমরানু ৪০)
قَالَ كَذٰلِكَۚ قَالَ رَبُّكَ هُوَ عَلَيَّ هَيِّنٌ وَّقَدْ خَلَقْتُكَ مِنْ قَبْلُ وَلَمْ تَكُ شَيْئًا
তিনি বললেন, এভাবেই হবে। তোমার প্রতিপালক বলেছেন, এটা আমার জন্য সহজ ব্যাপার। আমি তো ইতোপূর্বে তোমাকেও সৃষ্টি করেছি, যখন তুমি কিছুই ছিলে না। (সূরা মারইয়াম– ৯)
যাকারিয়া (আঃ) আল্লাহর কাছে নিদর্শন প্রার্থনা করলেন :
قَالَ رَبِّ اجْعَلْ لِّۤيْ اٰيَةً
যাকারিয়া বললেন, হে আমার রব! আমাকে কোন নিদর্শন দান করুন। (সূরা আলে ইমরানু ৪১)
আল্লাহ তাকে নিদর্শন দিলেন :
قَالَ اٰيَتُكَ اَلَّا تُكَلِّمَ النَّاسَ ثَلَاثَةَ اَيَّامٍ اِلَّا رَمْزًا
আল্লাহ বললেন, তোমার নিদর্শন এই যে, তুমি তিন দিন পর্যন্ত ইঙ্গিত ছাড়া মানুষের সাথে কোন কথা বলতে পারবে না। (সূরা আলে ইমরানু ৪১)
قَال َاٰيَتُكَ اَلَّا تُكَلِّمَ النَّاسَ ثَلَاثَ لَيَالٍ سَوِيًّا
আল্লাহ বললেন, তোমার নিদর্শন এই যে, তুমি সুস্থ থাকা সত্ত্বেও কারো সাথে তিন রাত পর্যন্ত বাক্যালাপ করতে পারবে না। (সূরা মারইয়াম– ১০)
আল্লাহ তাকে তাসবীহ পাঠের আদেশ দিলেন :
وَاذْكُرْ رَّبَّكَ كَثِيْرًا وَّسَبِّحْ بِالْعَشِيِّ وَالْاِبْكَارِ
আর বেশি বেশি করে তোমার রবের যিকির করো এবং সকাল–সন্ধ্যায় তার পবিত্রতা বর্ণনা করো।
(সূরা আলে ইমরানু ৪১)
যাকারিয়া (আঃ) নিজ জাতিকেও তাসবীহ পাঠের আদেশ দিলেন :
فَخَرَجَ عَلٰى قَوْمِهٖ مِنَ الْمِحْرَابِ فَاَوْحٰۤى اِلَيْهِمْ اَنْ سَبِّحُوْا بُكْرَةً وَّعَشِيًّا
অতঃপর সে কক্ষ হতে বের হয়ে তার সম্প্রদায়ের নিকট আসল এবং ইঙ্গিতে তাদেরকে সকাল–সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতে বলল। (সূরা মারইয়াম– ১১)
যাকারিয়া (আঃ) ছিলেন নবীদের মধ্যে একজন :
وَزَكَرِيَّا وَيَحْيٰى وَعِيْسٰى وَاِلْيَاسَ كُلٌّ مِّنَ الصَّالِحِيْنَ
আর যাকারিয়া, ইয়াইহয়া, ঈসা এবং ইলয়াসকেও (সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম)। আর এরা সকলেই ছিল নেককারদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা আন‘আম– ৮৫)
তিনি মারইয়াম (আঃ) এর তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন :
فَتَقَبَّلَهَا رَبُّهَا بِقَبُوْلٍ حَسَنٍ وَّاَنْۢبَتَهَا نَبَاتًا حَسَنًا وَّكَفَّلَهَا زَكَرِيًّا
অতঃপর তার রব মারইয়ামকে উত্তমভাবে কবুল করলেন এবং তাকে ভালোভাবে লালন-পালনের ব্যবস্থা করলেন। আর যাকারিয়াকে তার অভিভাবকের দায়িত্ব দিলেন। (সূরা আলে ইমরানু ৩৭)
বৃদ্ধ বয়সে আল্লাহর নিকট সন্তান পাওয়ার জন্য দু‘আ করলেন :
ذِكْرُ رَحْمَتِ رَبِّكَ عَبْدَهٗ زَكَرِيًّا ‐ اِذْ نَادٰى رَبَّهٗ نِدَآءً خَفِيًّا ‐ قَالَ رَبِّ اِنِّيْ وَهَنَ الْعَظْمُ مِنِّيْ وَاشْتَعَلَ الرَّأْسُ شَيْبًا وَّلَمْ اَكُنْ ۢبِدُعَآئِكَ رَبِّ شَقِيًّا ‐ وَاِنِّيْ خِفْتُ الْمَوَالِيَ مِنْ وَّرَآئِيْ وَكَانَتِ امْرَاَتِيْ عَاقِرًا فَهَبْ لِيْ مِنْ لَّدُنْكَ وَلِيًّا ‐ يَرِثُنِيْ وَيَرِثُ مِنْ اٰلِ يَعْقُوْبَۗ وَاجْعَلْهُ رَبِّ رَضِيًّا
এটা তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে তাঁর বান্দা যাকারিয়ার প্রতি অনুগ্রহের বিবরণ। যখন সে একনিষ্ঠভাবে তার প্রতিপালককে আহবান করেছিল এবং বলেছিল, হে আমার রব! আমার হাঁড় দুর্বল হয়ে গেছে, বার্ধক্যে আমার মস্তক শুভ্রোজ্জ্বল হয়ে গেছে। আর তোমাকে আহবান করে আমি কখনো ব্যর্থ হইনি। আমি আমার পর আমার স্বগোত্রীয়দের সম্পর্কে (বিভ্রান্ত হয়ে যাওয়ার) আশঙ্কা করছি। আর আমার স্ত্রীও বন্ধ্যা। সুতরাং তুমি তোমার পক্ষ হতে আমাকে একজন উত্তরাধিকারী দান করো, যে আমার ও ইয়াকূবের বংশের উত্তরাধিকারী হবে। হে আমার প্রতিপালক! তুমি তাকে সন্তোষভাজন বানিয়ে দাও। (সূরা মারইয়াম, ২– ৬)
وَزَكَرِيَّاۤ اِذْ نَادٰى رَبَّهٗ رَبِّ لَا تَذَرْنِيْ فَرْدًا وَّاَنْتَ خَيْرُ الْوَارِثِيْنَ
স্মরণ করো, যখন যাকারিয়া তার প্রতিপালককে আহবান করে বলেছিল, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে একা রেখে দিয়ো না, তুমি তো শ্রেষ্ঠ উত্তরাধিকারী। (সূরা আম্বিয়া– ৮৯)
هُنَالِكَ دَعَا زَكَرِيًّا رَبَّهٗۚ قَالَ رَبِّ هَبْ لِيْ مِنْ لَّدُنْكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةًۚ اِنَّكَ سَمِيْعُ الدُّعَآءِ
সেখানেই যাকারিয়া তার রবকে ডেকে বললেন, হে আমার রব! আপনার পক্ষ থেকে আমাকে একটি পবিত্র সন্তান দান করুন। নিশ্চয় আপনি দু‘আ শ্রবণকারী। (সূরা আলে ইমরানু ৩৮)
আল্লাহ তার দু‘আ কবুল করলেন :
فَاسْتَجَبْنَا لَهٗ وَوَهَبْنَا لَهٗ يَحْيٰى وَاَصْلَحْنَا لَهٗ زَوْجَهٗ
অতঃপর আমি তার আহবানে সাড়া দিয়েছিলাম এবং তাকে দান করেছিলাম ইয়াহিয়া; এজন্য তার স্ত্রীকেও যোগ্যতাসম্পন্ন করেছিলাম। (সূরা আম্বিয়া– ৯০)
ফেরেশতা তাকে সন্তান জন্মের সুসংবাদ দিলেন :
فَنَادَتْهُ الْمَلَآئِكَةُ وَهُوَ قَآئِمٌ يُّصَلِّيْ فِى الْمِحْرَابِ اَنَّ اللهَ يُبَشِّرُكَ بِيَحْيٰى مُصَدِّقًا ۢبِكَلِمَةٍ مِّنَ اللهِ وَسَيِّدًا وَّحَصُوْرًا وَّنَبِيًّا مِّنَ الصَّالِحِيْنَ
অতঃপর তিনি মেহরাবে নামাযরত অবস্থায় থাকাকালে ফেরেশতারা তাকে ডেকে বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ আপনাকে ইয়াহিয়ার সুসংবাদ দিচ্ছেন। তিনি হবেন আল্লাহর বাণীর সত্যায়নকারী, নেতা, প্রবৃত্তি দমনকারী এবং পুণ্যবান নবীদের একজন। (সূরা আলে ইমরানু ৩৯)
يَا زَكَرِيَّاۤ اِنَّا نُبَشِّرُكَ بِغُلَامِنِ اسْمُهٗ يَحْيٰى لَمْ نَجْعَلْ لَّهٗ مِنْ قَبْلُ سَمِيًّا
তিনি বললেন, হে যাকারিয়া! আমি তোমাকে এক পুত্রের সুসংবাদ দিচ্ছি। তার নাম হবে ইয়াহিয়া, ইতোপূর্বে এ নামে আমি আর কারো নামকরণ করিনি। (সূরা মারইয়াম– ৭)
স্ত্রী বন্ধ্যা হওয়াতে তিনি আল্লাহর নিকট অভিযোগ পেশ করলেন :
قَالَ رَبِّ اَنّٰى يَكُوْنُ لِيْ غُلَامٌ وَّكَانَتِ امْرَاَتِىْ عَاقِرًا وَّقَدْ بَلَغْتُ مِنَ الْكِبَرِ عِتِيًّا
সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমার পুত্র হবে? অথচ আমার স্ত্রী বন্ধ্যা এবং আমিও বার্ধক্যের শেষ সীমায় উপনীত। (সূরা মারইয়াম– ৮)
قَالَ رَبِّ اَنّٰى يَكُوْنُ لِىْ غُلَامٌ وَّقَدْ بَلَغَنِيَ الْكِبَرُ وَامْرَاَتِيْ عَاقِرٌ
তিনি বললেন, হে আমার রব! আমার সন্তান হবে? অথচ আমি বার্ধক্যে উপনীত হয়ে গেছি এবং আমার স্ত্রীও বন্ধ্যা। (সূরা আলে ইমরানু ৪০)
তাকে বলা হলো, এটা আল্লাহর পক্ষে সম্ভব :
قَالَ كَذٰلِكَ اللهُ يَفْعَلُ مَا يَشَآءُ
আল্লাহ বললেন, এভাবেই হবে। আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। (সূরা আলে ইমরানু ৪০)
قَالَ كَذٰلِكَۚ قَالَ رَبُّكَ هُوَ عَلَيَّ هَيِّنٌ وَّقَدْ خَلَقْتُكَ مِنْ قَبْلُ وَلَمْ تَكُ شَيْئًا
তিনি বললেন, এভাবেই হবে। তোমার প্রতিপালক বলেছেন, এটা আমার জন্য সহজ ব্যাপার। আমি তো ইতোপূর্বে তোমাকেও সৃষ্টি করেছি, যখন তুমি কিছুই ছিলে না। (সূরা মারইয়াম– ৯)
যাকারিয়া (আঃ) আল্লাহর কাছে নিদর্শন প্রার্থনা করলেন :
قَالَ رَبِّ اجْعَلْ لِّۤيْ اٰيَةً
যাকারিয়া বললেন, হে আমার রব! আমাকে কোন নিদর্শন দান করুন। (সূরা আলে ইমরানু ৪১)
আল্লাহ তাকে নিদর্শন দিলেন :
قَالَ اٰيَتُكَ اَلَّا تُكَلِّمَ النَّاسَ ثَلَاثَةَ اَيَّامٍ اِلَّا رَمْزًا
আল্লাহ বললেন, তোমার নিদর্শন এই যে, তুমি তিন দিন পর্যন্ত ইঙ্গিত ছাড়া মানুষের সাথে কোন কথা বলতে পারবে না। (সূরা আলে ইমরানু ৪১)
قَال َاٰيَتُكَ اَلَّا تُكَلِّمَ النَّاسَ ثَلَاثَ لَيَالٍ سَوِيًّا
আল্লাহ বললেন, তোমার নিদর্শন এই যে, তুমি সুস্থ থাকা সত্ত্বেও কারো সাথে তিন রাত পর্যন্ত বাক্যালাপ করতে পারবে না। (সূরা মারইয়াম– ১০)
আল্লাহ তাকে তাসবীহ পাঠের আদেশ দিলেন :
وَاذْكُرْ رَّبَّكَ كَثِيْرًا وَّسَبِّحْ بِالْعَشِيِّ وَالْاِبْكَارِ
আর বেশি বেশি করে তোমার রবের যিকির করো এবং সকাল–সন্ধ্যায় তার পবিত্রতা বর্ণনা করো।
(সূরা আলে ইমরানু ৪১)
যাকারিয়া (আঃ) নিজ জাতিকেও তাসবীহ পাঠের আদেশ দিলেন :
فَخَرَجَ عَلٰى قَوْمِهٖ مِنَ الْمِحْرَابِ فَاَوْحٰۤى اِلَيْهِمْ اَنْ سَبِّحُوْا بُكْرَةً وَّعَشِيًّا
অতঃপর সে কক্ষ হতে বের হয়ে তার সম্প্রদায়ের নিকট আসল এবং ইঙ্গিতে তাদেরকে সকাল–সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতে বলল। (সূরা মারইয়াম– ১১)
ইয়াহিয়া (আঃ) নবীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন :
وَيَحْيٰى وَعِيْسٰى وَاِلْيَاسَ كُلٌّ مِّنَ الصَّالِحِيْنَ
আর ইয়াহিয়া, ঈসা এবং ইলয়াসকেও (সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম)। আর এরা সকলেই ছিল নেককারদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা আন‘আম– ৮৫)
যাকারিয়া (আঃ) এর ঘরে তার জন্ম হয় :
فَاسْتَجَبْنَا لَهٗ وَوَهَبْنَا لَهٗ يَحْيٰى
অতঃপর আমি তার আহবানে সাড়া দিয়েছিলাম এবং তাকে দান করেছিলাম ইয়াহিয়া। (সূরা আম্বিয়া– ৯০)
ফেরেশতারা তার জন্মের সুসংবাদ দিয়েছিলেন :
فَنَادَتْهُ الْمَلَآئِكَةُ وَهُوَ قَآئِمٌ يُّصَلِّىْ فِى الْمِحْرَابِ اَنَّ اللهَ يُبَشِّرُكَ بِيَحْيٰى
অতঃপর মেহরাবে নামাযরত অবস্থায় ফেরেশতারা তাকে ডেকে বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে ইয়াহিয়ার সুসংবাদ দিচ্ছেন। (সূরা আলে ইমরানু ৩৯)
আল্লাহ ইয়াহিয়া (আঃ) এর নাম নির্ধারণ করেন :
يَا زَكَرِيَّا اِنَّا نُبَشِّرُكَ بِغُلَامِ نِ اسْمُهٗ يَحْيٰى لَمْ نَجْعَلْ لَّهٗ مِنْ قَبْلُ سَمِيًّا
তিনি বললেন, হে যাকারিয়া! আমি তোমাকে এক পুত্রের সুসংবাদ দিচ্ছি। তার নাম হবে ইয়াহিয়া, ইতোপূর্বে এ নামে আমি আর কারো নামকরণ করিনি। (সূরা মারইয়াম– ৭)
আল্লাহ তাকে কিতাব প্রদান করেন :
يَا يَحْيٰى خُذِ الْكِتَابَ بِقُوَّةٍؕ وَ اٰتَيْنَاهُ الْحُكْمَ صَبِيًّا
হে ইয়াহিয়া! এ কিতাব দৃঢ়তার সাথে গ্রহণ করো। আর আমি তাকে শৈশবেই জ্ঞান দান করেছিলাম ।
(সূরা মারইয়াম– ১২)
ইয়াহিয়া (আঃ) সংযমী ছিলেন :
مُصَدِّقًا ۢبِكَلِمَةٍ مِّنَ اللهِ وَسَيِّدًا وَّحَصُوْرًا وَّنَبِيًّا مِّنَ الصَّالِحِيْنَ
তিনি হবেন আল্লাহর বাণীর সত্যায়নকারী, নেতা, প্রবৃত্তি দমনকারী এবং পুণ্যবান নবীদের একজন।
(সূরা আলে ইমরানু ৩৯)
তিনি ছিলেন কোমল, পবিত্র ও পরহেযগার :
وَحَنَانًا مِّنْ لَّدُنَّا وَزَكَاةً ؕ وَكَانَ تَقِيًّا
আমার পক্ষ হতে তাকে হৃদয়ের কোমলতা ও পবিত্রতা (দান করেছিলাম)। আর সে ছিল মুত্তাক্বী।
(সূরা মারইয়াম– ১৩)
ব্যাখ্যা : حَنَانٌ (হানানুন) শব্দের অর্থ মমতা। অর্থাৎ একজন মায়ের মনে নিজের সন্তানের জন্য যে চূড়ান্ত পর্যায়ের স্নেহশীলতা থাকে- যার ভিত্তিতে সে শিশুর কষ্টে অস্থির হয়ে পড়ে, আল্লাহর বান্দাদের জন্য ইয়াহিয়া (আঃ) এর মনেও এ ধরনের স্নেহ-মমতা সৃষ্টি হয়েছিল।
ইয়াহিয়া (আঃ) ছিলেন সদাচারী এবং পাপমুক্ত :
وَبَرًّا ۢبِوَالِدَيْهِ وَلَمْ يَكُنْ جَبَّارًا عَصِيًّا
তিনি ছিলেন পিতা–মাতার অনুগত, কিন্তু উদ্ধত ও অবাধ্য ছিল না। (সূরা মারইয়াম– ১৪)
ইয়াহিয়া (আঃ) এর প্রতি সালাম বর্ষিত হোক :
وَسَلَامٌ عَلَيْهِ يَوْمَ وُلِدَ وَيَوْمَ يَمُوْتُ وَيَوْمَ يُبْعَثُ حَيًّا
তার প্রতি শান্তি, যেদিন তিনি জন্ম লাভ করেন, যেদিন তার মৃত্যু হবে এবং যেদিন তিনি জীবিত অবস্থায় উত্থিত হবেন। (সূরা মারইয়াম– ১৫)
وَيَحْيٰى وَعِيْسٰى وَاِلْيَاسَ كُلٌّ مِّنَ الصَّالِحِيْنَ
আর ইয়াহিয়া, ঈসা এবং ইলয়াসকেও (সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম)। আর এরা সকলেই ছিল নেককারদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা আন‘আম– ৮৫)
যাকারিয়া (আঃ) এর ঘরে তার জন্ম হয় :
فَاسْتَجَبْنَا لَهٗ وَوَهَبْنَا لَهٗ يَحْيٰى
অতঃপর আমি তার আহবানে সাড়া দিয়েছিলাম এবং তাকে দান করেছিলাম ইয়াহিয়া। (সূরা আম্বিয়া– ৯০)
ফেরেশতারা তার জন্মের সুসংবাদ দিয়েছিলেন :
فَنَادَتْهُ الْمَلَآئِكَةُ وَهُوَ قَآئِمٌ يُّصَلِّىْ فِى الْمِحْرَابِ اَنَّ اللهَ يُبَشِّرُكَ بِيَحْيٰى
অতঃপর মেহরাবে নামাযরত অবস্থায় ফেরেশতারা তাকে ডেকে বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে ইয়াহিয়ার সুসংবাদ দিচ্ছেন। (সূরা আলে ইমরানু ৩৯)
আল্লাহ ইয়াহিয়া (আঃ) এর নাম নির্ধারণ করেন :
يَا زَكَرِيَّا اِنَّا نُبَشِّرُكَ بِغُلَامِ نِ اسْمُهٗ يَحْيٰى لَمْ نَجْعَلْ لَّهٗ مِنْ قَبْلُ سَمِيًّا
তিনি বললেন, হে যাকারিয়া! আমি তোমাকে এক পুত্রের সুসংবাদ দিচ্ছি। তার নাম হবে ইয়াহিয়া, ইতোপূর্বে এ নামে আমি আর কারো নামকরণ করিনি। (সূরা মারইয়াম– ৭)
আল্লাহ তাকে কিতাব প্রদান করেন :
يَا يَحْيٰى خُذِ الْكِتَابَ بِقُوَّةٍؕ وَ اٰتَيْنَاهُ الْحُكْمَ صَبِيًّا
হে ইয়াহিয়া! এ কিতাব দৃঢ়তার সাথে গ্রহণ করো। আর আমি তাকে শৈশবেই জ্ঞান দান করেছিলাম ।
(সূরা মারইয়াম– ১২)
ইয়াহিয়া (আঃ) সংযমী ছিলেন :
مُصَدِّقًا ۢبِكَلِمَةٍ مِّنَ اللهِ وَسَيِّدًا وَّحَصُوْرًا وَّنَبِيًّا مِّنَ الصَّالِحِيْنَ
তিনি হবেন আল্লাহর বাণীর সত্যায়নকারী, নেতা, প্রবৃত্তি দমনকারী এবং পুণ্যবান নবীদের একজন।
(সূরা আলে ইমরানু ৩৯)
তিনি ছিলেন কোমল, পবিত্র ও পরহেযগার :
وَحَنَانًا مِّنْ لَّدُنَّا وَزَكَاةً ؕ وَكَانَ تَقِيًّا
আমার পক্ষ হতে তাকে হৃদয়ের কোমলতা ও পবিত্রতা (দান করেছিলাম)। আর সে ছিল মুত্তাক্বী।
(সূরা মারইয়াম– ১৩)
ব্যাখ্যা : حَنَانٌ (হানানুন) শব্দের অর্থ মমতা। অর্থাৎ একজন মায়ের মনে নিজের সন্তানের জন্য যে চূড়ান্ত পর্যায়ের স্নেহশীলতা থাকে- যার ভিত্তিতে সে শিশুর কষ্টে অস্থির হয়ে পড়ে, আল্লাহর বান্দাদের জন্য ইয়াহিয়া (আঃ) এর মনেও এ ধরনের স্নেহ-মমতা সৃষ্টি হয়েছিল।
ইয়াহিয়া (আঃ) ছিলেন সদাচারী এবং পাপমুক্ত :
وَبَرًّا ۢبِوَالِدَيْهِ وَلَمْ يَكُنْ جَبَّارًا عَصِيًّا
তিনি ছিলেন পিতা–মাতার অনুগত, কিন্তু উদ্ধত ও অবাধ্য ছিল না। (সূরা মারইয়াম– ১৪)
ইয়াহিয়া (আঃ) এর প্রতি সালাম বর্ষিত হোক :
وَسَلَامٌ عَلَيْهِ يَوْمَ وُلِدَ وَيَوْمَ يَمُوْتُ وَيَوْمَ يُبْعَثُ حَيًّا
তার প্রতি শান্তি, যেদিন তিনি জন্ম লাভ করেন, যেদিন তার মৃত্যু হবে এবং যেদিন তিনি জীবিত অবস্থায় উত্থিত হবেন। (সূরা মারইয়াম– ১৫)
ঈসা (আঃ) ছিলেন বনী ইসরাঈল বংশের সর্বশেষ নবী ও রাসূল। তাঁর পর হতে শেষনবী মুহাম্মাদ ﷺ পর্যন্ত আর কোন নবীর আগমন ঘটেনি। তাঁর উপর আসমানী কিতাব ইঞ্জিল নাযিল হয়েছিল। কুরআন মাজীদে তিনি ঈসা আল মাসীহ্ ও ইবনে মারইয়াম নামে উল্লেখিত হয়েছেন। তিনি ছিলেন ইয়াহিয়া (আঃ) এর খালা মারইয়াম (আঃ) এর একমাত্র সন্তান। আদম (আঃ) এর পর তিনিই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি কোন পিতা ছাড়াই জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্ম ও মৃত্যু উভয়ই অলৌকিকতায় পরিপূর্ণ। স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলাই তাঁর নাম রেখেছিলেন। তিনি শয়তানের অনিষ্ট হতে মুক্ত ছিলেন। তিনি মাতৃকোলেই বাকশক্তি লাভ করেছিলেন এবং এ সময়ই ভবিষ্যতে তাঁর নবুওয়াত লাভের কথা ঘোষণা করেন। তিনি শেষ নবী আহমাদ (মুহাম্মাদ) এর আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন।
যখনই তিনি দাওয়াতী কাজ শুরু করেন, তখনই জাতি তাঁর বিরোধিতা শুরু করে এবং তাঁর দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে। তবে হাতেগুণা কয়েকজন লোক তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছিল, যাদেরকে কুরআন মাজীদে হাওয়ারী নামে সম্বোধন করা হয়েছে। অবশেষে তাঁর জাতি তাঁর দাওয়াতে বিরক্ত হয়ে তৎকালীন রোম সম্রাটের নির্দেশে তাঁকে হত্যার জন্য তাঁর বাড়ি ঘেরাও করে এবং একজন ব্যক্তিকে তাঁর গৃহে প্রবেশ করায়। এদিকে আল্লাহ তা‘আলা তাকে নিজ অনুগ্রহে আসমানে উঠিয়ে নেন এবং গৃহে প্রবেশকারী উক্ত ব্যক্তিকে ঈসা (আঃ) এর আকৃতি দান করেন। ফলে লোকেরা তাকেই ঈসা (আঃ) মনে করে শূলে চড়িয়ে হত্যা করে। কিন্তু পরবর্তীতে বনী ইসরাঈলদের মাঝে এ বিষয়ে মতভেদ ঘটে। তবে কুরআন মাজীদ তাঁর আসমানে উঠিয়ে নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে দেয়। কিয়ামতের পূর্বে তিনি আবার মুহাম্মাদ ﷺ এর উম্মত হিসেবে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হবেন এবং দাজ্জালকে হত্যা করবেন। অতঃপর পৃথিবীর সমস্ত মানুষকে ইসলামী পতাকাতলে নিয়ে আসবেন। তারপর যথাসময় মৃত্যুবরণ করবেন।
যখনই তিনি দাওয়াতী কাজ শুরু করেন, তখনই জাতি তাঁর বিরোধিতা শুরু করে এবং তাঁর দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে। তবে হাতেগুণা কয়েকজন লোক তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছিল, যাদেরকে কুরআন মাজীদে হাওয়ারী নামে সম্বোধন করা হয়েছে। অবশেষে তাঁর জাতি তাঁর দাওয়াতে বিরক্ত হয়ে তৎকালীন রোম সম্রাটের নির্দেশে তাঁকে হত্যার জন্য তাঁর বাড়ি ঘেরাও করে এবং একজন ব্যক্তিকে তাঁর গৃহে প্রবেশ করায়। এদিকে আল্লাহ তা‘আলা তাকে নিজ অনুগ্রহে আসমানে উঠিয়ে নেন এবং গৃহে প্রবেশকারী উক্ত ব্যক্তিকে ঈসা (আঃ) এর আকৃতি দান করেন। ফলে লোকেরা তাকেই ঈসা (আঃ) মনে করে শূলে চড়িয়ে হত্যা করে। কিন্তু পরবর্তীতে বনী ইসরাঈলদের মাঝে এ বিষয়ে মতভেদ ঘটে। তবে কুরআন মাজীদ তাঁর আসমানে উঠিয়ে নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে দেয়। কিয়ামতের পূর্বে তিনি আবার মুহাম্মাদ ﷺ এর উম্মত হিসেবে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হবেন এবং দাজ্জালকে হত্যা করবেন। অতঃপর পৃথিবীর সমস্ত মানুষকে ইসলামী পতাকাতলে নিয়ে আসবেন। তারপর যথাসময় মৃত্যুবরণ করবেন।
মারইয়াম (আঃ) এর মা তাকে মান্নত করেছিলেন :
اِذْ قَالَتِ امْرَاَتُ عِمْرَانَ رَبِّ اِنِّيْ نَذَرْتُ لَكَ مَا فِيْ بَطْنِيْ مُحَرَّرًا فَتَقَبَّلْ مِنِّيْۤ اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
স্মরণ করো, যখন ইমরানের স্ত্রী বলেছিল, হে আমার রব! আমার গর্ভের সন্তানকে আপনার জন্য মান্নত করলাম। সুতরাং আপনি আমার পক্ষ থেকে তা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি শ্রবণকারী ও মহাজ্ঞানী।
(সূরা আলে ইমরানু ৩৫)
জন্মের পর শয়তান থেকে বাঁচানোর দু‘আ করেন :
فَلَمَّا وَضَعَتْهَا قَالَتْ رَبِّ اِنِّيْ وَضَعْتُهَاۤ اُنْثٰىؕ وَاللهُ اَعْلَمُ بِمَا وَضَعَتْؕ وَلَيْسَ الذَّكَرُ كَالْاُنْثٰىؕ وَاِنِّيْ سَمَّيْتُهَا مَرْيَمَ وَاِنِّۤيْ اُعِيْذُهَا بِكَ وَذُرِّيَّتَهَا مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ
অতঃপর যখন তিনি (মারইয়ামের মাতা) তাকে প্রসব করলেন তখন বললেন, হে আমার রব! আমি এক কন্যাসন্তান প্রসব করেছি। আর সে যা প্রসব করেছে আল্লাহ সে সম্পর্কে অধিক অবগত। তাছাড়া পুরুষরা মহিলাদের মতো নয়। আমিই তার নাম রেখেছি মারইয়াম এবং আমি তাকে ও তার বংশধরকে বিতাড়িত শয়তান থেকে আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (সূরা আলে ইমরানু ৩৬)
আল্লাহ তার মায়ের দু‘আ কবুল করলেন :
فَتَقَبَّلَهَا رَبُّهَا بِقَبُوْلٍ حَسَنٍ وَّاَنْۢبَتَهَا نَبَاتًا حَسَنًا
অতঃপর তার রব মারইয়ামকে উত্তমভাবে কবুল করলেন এবং তাকে ভালোভাবে লালন-পালনের ব্যবস্থা করলেন। (সূরা আলে ইমরানু ৩৭)
পরে তিনি যাকারিয়া (আঃ) এর তত্ত্বাবধানে বড় হলেন :
وَكَفَّلَهَا زَكَرِيَّا
আর যাকারিয়াকে তার অভিভাবকের দায়িত্ব দিলেন। (সূরা আলে ইমরানু ৩৭)
তিনি অলৌকিকভাবে খাদ্য পেতেন :
كُلَّمَا دَخَلَ عَلَيْهَا زَكَرِيَّا الْمِحْرَابَ وَجَدَ عِنْدَهَا رِزْقًاۚ قَالَ يَا مَرْيَمُ اَنّٰى لَكِ هٰذَاؕ قَالَتْ هُوَ مِنْ عِنْدِ اللهِؕ اِنَّ اللهَ يَرْزُقُ مَنْ يَّشَآءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ
যখনই যাকারিয়া মারইয়ামের কক্ষে প্রবেশ করতেন তখনই তার কাছে রিযিক দেখতে পেতেন। তিনি প্রশ্ন করতেন, হে মারইয়াম! তোমার কাছে এসব কোথা থেকে আসে? তিনি জবাব দিতেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে। নিশ্চয় আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে অগণিত রিযিক দান করেন। (সূরা আলে ইমরানু ৩৭)
তিনি ছিলেন বিশ্বের মধ্যে একজন নির্বাচিত মহিলা :
وَاِذْ قَالَتِ الْمَلَآئِكَةُ يَا مَرْيَمُ اِنَّ اللهَ اصْطَفَاكِ وَطَهَّرَكِ وَاصْطَفَاكِ عَلٰى نِسَآءِ الْعَالَمِيْنَ
(স্মরণ করো) যখন ফেরেশতারা বলেছিলেন, হে মারইয়াম! নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে মনোনীত করেছেন এবং তোমাকে পবিত্র করেছেন। আর তোমাকে বিশ্বজাহানের নারীদের উপর নির্বাচিত করেছেন। (সূরা আলে ইমরানু ৪২)
তার উপর আল্লাহর কয়েকটি আদেশ :
يَا مَرْيَمُ اقْنُتِيْ لِرَبِّكِ وَاسْجُدِيْ وَارْكَعِيْ مَعَ الرَّاكِعِيْنَ
হে মারইয়াম! তুমি তোমার রবের অনুগত হও, সিজদা করো এবং রুকূকারীদের সাথে রুকূ করো।
(সূরা আলে ইমরানু ৪৩)
তার জীবনী ওহীর মাধ্যমে জানানো হয়েছে :
ذٰلِكَ مِنْ اَنْۢبَآءِ الْغَيْبِ نُوْحِيْهِ اِلَيْكَؕ وَمَا كُنْتَ لَدَيْهِمْ اِذْ يُلْقُوْنَ اَقْلَامَهُمْ اَيُّهُمْ يَكْفُلُ مَرْيَمَ۪ وَمَا كُنْتَ لَدَيْهِمْ اِذْ يَخْتَصِمُوْنَ
এসব গায়েবের সংবাদ আমি আপনাকে ওহীর মাধ্যমে জানিয়ে থাকি। কেননা আপনি তো সে সময় তাদের কাছে ছিলেন না, যখন মারইয়ামের অভিভাবক হওয়ার জন্য তারা লটারী করেছিল। আর আপনি তখনও তাদের কাছে ছিলেন না, যখন তারা তর্ক–বিতর্ক করছিল। (সূরা আলে ইমরানু ৪৪)
তিনি ও তার পুত্র একটি নিদর্শন :
وَجَعَلْنَا ابْنَ مَرْيَمَ وَاُمَّهٗۤ اٰيَةً وَّاٰوَيْنَاهُمَاۤ اِلٰى رَبْوَةٍ ذَاتِ قَرَارٍ وَّمَعِيْنٍ
আমি মারইয়ামের পুত্র ও তার জননীকে একটি নিদর্শন বানিয়ে নিয়েছিলাম। আর তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছিলাম এক নিরাপদ ও প্রস্রবণবিশিষ্ট উচ্চ ভূমিতে। (সূরা মু’মিনূনু ৫০)
তিনি ছিলেন আদর্শ নারীদের দৃষ্টান্ত :
وَمَرْيَمَ ابْنَتَ عِمْرَانَ الَّتِيْۤ اَحْصَنَتْ فَرْجَهَا فَنَفَخْنَا فِيْهِ مِنْ رُّوْحِنَا وَصَدَّقَتْ بِكَلِمَاتِ رَبِّهَا وَكُتُبِه وَكَانَتْ مِنَ الْقَانِتِيْنَ
(আল্লাহ আরো দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন) ইমরানের কন্যা মারইয়ামের, যিনি তাঁর সতীত্ব রক্ষা করেছিলেন, ফলে আমি তাঁর মধ্যে আমার রূহ ফুঁকে দিয়েছিলাম। অতঃপর তিনি তাঁর প্রতিপালকের বাণী ও তাঁর কিতাবসমূহকে সত্য বলে গ্রহণ করেছিলেন। আর তিনি ছিলেন অনুগতদের একজন। (সূরা তাহরীম- ১২)
اِذْ قَالَتِ امْرَاَتُ عِمْرَانَ رَبِّ اِنِّيْ نَذَرْتُ لَكَ مَا فِيْ بَطْنِيْ مُحَرَّرًا فَتَقَبَّلْ مِنِّيْۤ اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
স্মরণ করো, যখন ইমরানের স্ত্রী বলেছিল, হে আমার রব! আমার গর্ভের সন্তানকে আপনার জন্য মান্নত করলাম। সুতরাং আপনি আমার পক্ষ থেকে তা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি শ্রবণকারী ও মহাজ্ঞানী।
(সূরা আলে ইমরানু ৩৫)
জন্মের পর শয়তান থেকে বাঁচানোর দু‘আ করেন :
فَلَمَّا وَضَعَتْهَا قَالَتْ رَبِّ اِنِّيْ وَضَعْتُهَاۤ اُنْثٰىؕ وَاللهُ اَعْلَمُ بِمَا وَضَعَتْؕ وَلَيْسَ الذَّكَرُ كَالْاُنْثٰىؕ وَاِنِّيْ سَمَّيْتُهَا مَرْيَمَ وَاِنِّۤيْ اُعِيْذُهَا بِكَ وَذُرِّيَّتَهَا مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ
অতঃপর যখন তিনি (মারইয়ামের মাতা) তাকে প্রসব করলেন তখন বললেন, হে আমার রব! আমি এক কন্যাসন্তান প্রসব করেছি। আর সে যা প্রসব করেছে আল্লাহ সে সম্পর্কে অধিক অবগত। তাছাড়া পুরুষরা মহিলাদের মতো নয়। আমিই তার নাম রেখেছি মারইয়াম এবং আমি তাকে ও তার বংশধরকে বিতাড়িত শয়তান থেকে আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (সূরা আলে ইমরানু ৩৬)
আল্লাহ তার মায়ের দু‘আ কবুল করলেন :
فَتَقَبَّلَهَا رَبُّهَا بِقَبُوْلٍ حَسَنٍ وَّاَنْۢبَتَهَا نَبَاتًا حَسَنًا
অতঃপর তার রব মারইয়ামকে উত্তমভাবে কবুল করলেন এবং তাকে ভালোভাবে লালন-পালনের ব্যবস্থা করলেন। (সূরা আলে ইমরানু ৩৭)
পরে তিনি যাকারিয়া (আঃ) এর তত্ত্বাবধানে বড় হলেন :
وَكَفَّلَهَا زَكَرِيَّا
আর যাকারিয়াকে তার অভিভাবকের দায়িত্ব দিলেন। (সূরা আলে ইমরানু ৩৭)
তিনি অলৌকিকভাবে খাদ্য পেতেন :
كُلَّمَا دَخَلَ عَلَيْهَا زَكَرِيَّا الْمِحْرَابَ وَجَدَ عِنْدَهَا رِزْقًاۚ قَالَ يَا مَرْيَمُ اَنّٰى لَكِ هٰذَاؕ قَالَتْ هُوَ مِنْ عِنْدِ اللهِؕ اِنَّ اللهَ يَرْزُقُ مَنْ يَّشَآءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ
যখনই যাকারিয়া মারইয়ামের কক্ষে প্রবেশ করতেন তখনই তার কাছে রিযিক দেখতে পেতেন। তিনি প্রশ্ন করতেন, হে মারইয়াম! তোমার কাছে এসব কোথা থেকে আসে? তিনি জবাব দিতেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে। নিশ্চয় আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে অগণিত রিযিক দান করেন। (সূরা আলে ইমরানু ৩৭)
তিনি ছিলেন বিশ্বের মধ্যে একজন নির্বাচিত মহিলা :
وَاِذْ قَالَتِ الْمَلَآئِكَةُ يَا مَرْيَمُ اِنَّ اللهَ اصْطَفَاكِ وَطَهَّرَكِ وَاصْطَفَاكِ عَلٰى نِسَآءِ الْعَالَمِيْنَ
(স্মরণ করো) যখন ফেরেশতারা বলেছিলেন, হে মারইয়াম! নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে মনোনীত করেছেন এবং তোমাকে পবিত্র করেছেন। আর তোমাকে বিশ্বজাহানের নারীদের উপর নির্বাচিত করেছেন। (সূরা আলে ইমরানু ৪২)
তার উপর আল্লাহর কয়েকটি আদেশ :
يَا مَرْيَمُ اقْنُتِيْ لِرَبِّكِ وَاسْجُدِيْ وَارْكَعِيْ مَعَ الرَّاكِعِيْنَ
হে মারইয়াম! তুমি তোমার রবের অনুগত হও, সিজদা করো এবং রুকূকারীদের সাথে রুকূ করো।
(সূরা আলে ইমরানু ৪৩)
তার জীবনী ওহীর মাধ্যমে জানানো হয়েছে :
ذٰلِكَ مِنْ اَنْۢبَآءِ الْغَيْبِ نُوْحِيْهِ اِلَيْكَؕ وَمَا كُنْتَ لَدَيْهِمْ اِذْ يُلْقُوْنَ اَقْلَامَهُمْ اَيُّهُمْ يَكْفُلُ مَرْيَمَ۪ وَمَا كُنْتَ لَدَيْهِمْ اِذْ يَخْتَصِمُوْنَ
এসব গায়েবের সংবাদ আমি আপনাকে ওহীর মাধ্যমে জানিয়ে থাকি। কেননা আপনি তো সে সময় তাদের কাছে ছিলেন না, যখন মারইয়ামের অভিভাবক হওয়ার জন্য তারা লটারী করেছিল। আর আপনি তখনও তাদের কাছে ছিলেন না, যখন তারা তর্ক–বিতর্ক করছিল। (সূরা আলে ইমরানু ৪৪)
তিনি ও তার পুত্র একটি নিদর্শন :
وَجَعَلْنَا ابْنَ مَرْيَمَ وَاُمَّهٗۤ اٰيَةً وَّاٰوَيْنَاهُمَاۤ اِلٰى رَبْوَةٍ ذَاتِ قَرَارٍ وَّمَعِيْنٍ
আমি মারইয়ামের পুত্র ও তার জননীকে একটি নিদর্শন বানিয়ে নিয়েছিলাম। আর তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছিলাম এক নিরাপদ ও প্রস্রবণবিশিষ্ট উচ্চ ভূমিতে। (সূরা মু’মিনূনু ৫০)
তিনি ছিলেন আদর্শ নারীদের দৃষ্টান্ত :
وَمَرْيَمَ ابْنَتَ عِمْرَانَ الَّتِيْۤ اَحْصَنَتْ فَرْجَهَا فَنَفَخْنَا فِيْهِ مِنْ رُّوْحِنَا وَصَدَّقَتْ بِكَلِمَاتِ رَبِّهَا وَكُتُبِه وَكَانَتْ مِنَ الْقَانِتِيْنَ
(আল্লাহ আরো দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন) ইমরানের কন্যা মারইয়ামের, যিনি তাঁর সতীত্ব রক্ষা করেছিলেন, ফলে আমি তাঁর মধ্যে আমার রূহ ফুঁকে দিয়েছিলাম। অতঃপর তিনি তাঁর প্রতিপালকের বাণী ও তাঁর কিতাবসমূহকে সত্য বলে গ্রহণ করেছিলেন। আর তিনি ছিলেন অনুগতদের একজন। (সূরা তাহরীম- ১২)
ফেরেশতা ঈসা (আঃ) এর মাকে তাঁর জন্মের সুসংবাদ প্রদান করেন :
اِذْ قَالَتِ الْمَلَآئِكَةُ يَا مَرْيَمُ اِنَّ اللهَ يُبَشِّرُكِ بِكَلِمَةٍ مِّنْهُۗ اِسْمُهُ الْمَسِيْحُ عِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَ وَجِيْهًا فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ وَمِنَ الْمُقَرَّبِيْنَ
স্মরণ করো, যখন ফেরেশতারা বলেছিলেন, হে মারইয়াম! নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর পক্ষ থেকে তোমাকে এক কালিমার সুসংবাদ দিচ্ছেন। তার নাম হলো মাসীহ ঈসা ইবনে মারইয়াম। তিনি দুনিয়া এবং আখিরাতে সম্মানিত এবং নৈকট্যপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা আলে ইমরানু ৪৫)
অবিবাহিতা হওয়ায় তিনি অভিযোগ করলেন :
قَالَتْ رَبِّ اَنّٰى يَكُوْنُ لِيْ وَلَدٌ وَّلَمْ يَمْسَسْنِيْ بَشَرٌ
মারইয়াম বললেন, হে আমার রব! আমার সন্তান হবে কেমন করে ? আমাকে তো কোন পুরুষ স্পর্শ করেনি। (সূরা আলে ইমরানু ৪৭)
তিনি যিনাকারিনীও ছিলেন না :
قَالَتْ اَنّٰى يَكُوْنُ لِيْ غُلَامٌ وَّلَمْ يَمْسَسْنِيْ بَشَرٌ وَّلَمْ اَكُ بَغِيًّا
মারইয়াম বলল, কেমন করে আমার পুত্র হবে যখন আমাকে কোন পুরুষ স্পর্শ করেনি এবং আমি ব্যভিচারিণীও নই? (সূরা মারইয়াম– ২০)
আল্লাহ তার কথার উত্তর দিলেন :
قَالَ كَذٰلِكِ اللهُ يَخْلُقُ مَا يَشَآءُؕ اِذَا قَضٰۤى اَمْرًا فَاِنَّمَا يَقُوْلُ لَهٗ كُنْ فَيَكُوْنُ
আল্লাহ বললেন, এভাবেই আল্লাহ যা চান তাই সৃষ্টি করেন। তিনি যখন কোন কাজের ফায়সালা করেন, তখন কেবল ‘হও’ বলাতেই তা হয়ে যায়। (সূরা আলে ইমরানু ৪৭)
মারইয়াম (আঃ) এক নির্জন স্থানে আশ্রয় নিলেন :
وَاذْكُرْ فِى الْكِتَابِ مَرْيَمَ اِذِ انْتَبَذَتْ مِنْ اَهْلِهَا مَكَانًا شَرْقِيًّا – فَاتَّخَذَتْ مِنْ دُوْنِهِمْ حِجَابًا
এ কিতাবে উলেস্নখিত মারইয়ামের কথা বর্ণনা করো, যখন সে তার পরিবারবর্গ হতে পৃথক হয়ে নিরালায় পূর্ব দিকে এক স্থানে আশ্রয় নিল, অতঃপর সে তাদের হতে পর্দা করল। (সূরা মারইয়াম– ১৬, ১৭)
আল্লাহ তার কাছে মানবাকৃতিতে ফেরেশতা পাঠালেন :
فَاَرْسَلْنَاۤ اِلَيْهَا رُوْحَنَا فَتَمَثَّلَ لَهَا بَشَرًا سَوِيًّا
অতঃপর আমি তার নিকট আমার রূহকে পাঠালাম, সে তার নিকট পূর্ণ মানবাকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করল।
(সূরা মারইয়াম– ১৭)
মারইয়াম (আঃ) তাকে কাছে আসতে নিষেধ করলেন :
قَالَتْ اِنِّۤيْ اَعُوْذُ بِالرَّحْمٰنِ مِنْكَ اِنْ كُنْتَ تَقِيًّا
মারইয়াম বলল, যদি তুমি মুত্তাক্বী হয়ে থাক, তবে আল্লাহকে ভয় করো। আমি তোমার হতে দয়াময়ের আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (সূরা মারইয়াম– ১৮)
ফেরেশতা কর্তৃক সন্তানের সুসংবাদ পেলেন :
قَالَ اِنَّمَاۤ اَنَاْ رَسُوْلُ رَبِّكِۗ لِاَهَبَ لَكِ غُلَامًا زَكِيًّا
সে বলল, আমি তো তোমার প্রতিপালকের দূত। আমি তোমাকে এক পবিত্র পুত্র দান করার জন্য এসেছি। (সূরা মারইয়াম– ১৯)
قَالَ كَذٰلِكِۚ قَالَ رَبُّكِ هُوَ عَلَيَّ هَيِّنٌۚ وَلِنَجْعَلَهٗۤ اٰيَةً لِّلنَّاسِ وَرَحْمَةً مِّنَّاۚ وَكَانَ اَمْرًا مَّقْضِيًّا
সে বলল, এরূপই হবে। তোমার প্রতিপালক বলেছেন, এটা আমার জন্য খুবই সহজসাধ্য ব্যাপার। আর আমি এটা এজন্য করব যে, যাতে করে আমি তাকে মানুষের জন্য নিদর্শন ও আমার নিকট হতে এক অনুগ্রহ বানাতে পারি। তাছাড়া এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। (সূরা মারইয়াম– ২১)
প্রসবের সময় হলে তিনি দূরবর্তী স্থানে চলে গেলেন :
فَحَمَلَتْهُ فَانْتَبَذَتْ بِه مَكَانًا قَصِيًّا
অতঃপর সে তাকে গর্ভে ধারণ করল; এরপর সে এক দূরবর্তী স্থানে চলে গেল। (সূরা মারইয়াম– ২২)
একটি খেজুর গাছের নিচে আশ্রয় নিলেন :
فَاَجَآءَهَا الْمَخَاضُ اِلٰى جِذْعِ النَّخْلَةِ
অতঃপর প্রসব–বেদনা তাকে এক খেজুর বৃক্ষের নিচে আশ্রয় নিতে বাধ্য করল। (সূরা মারইয়াম– ২৩)
তিনি আফসোস করে নিজেকে ধিক্কার দিলেন :
قَالَتْ يَا لَيْتَنِيْ مِتُّ قَبْلَ هٰذَا وَكُنْتُ نَسْيًا مَّنْسِيًّا
সে বলল, হায়! এর পূর্বেই যদি আমি মরে যেতাম ও লোকের স্মৃতি হতে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যেতাম!
(সূরা মারইয়াম– ২৩)
আল্লাহ তাকে সান্ত্বনা দিয়ে পানির ব্যবস্থা করে দিলেন :
فَنَادَاهَا مِنْ تَحْتِهَاۤ اَ لَّا تَحْزَنِيْ قَدْ جَعَلَ رَبُّكِ تَحْتَكِ سَرِيًّا
ফেরেশতা তার নিম্ন পার্শ্ব হতে আহবান করে তাকে বলল, দুঃখ করো না- তোমার প্রতিপালক তোমার পাদদেশে একটি নহর তৈরি করে দিয়েছেন। (সূরা মারইয়াম– ২৪)
খেজুর ও পানি খাওয়ার নির্দেশ দিলেন :
وَهُزِّيْۤ اِلَيْكِ بِجِذْعِ النَّخْلَةِ تُسَاقِطْ عَلَيْكِ رُطَبًا جَنِيًّا – فَكُلِيْ وَاشْرَبِيْ وَقَرِّيْ عَيْنًا
তুমি খেজুর বৃক্ষের কান্ডে তোমার দিকে নাড়া দাও, তা তোমাকে সুপরিপক্ক তাজা খেজুর দান করবে। সুতরাং (তুমি তা হতে) আহার করো, পান করো ও চক্ষু শীতল করো। (সূরা মারইয়াম– ২৫, ২৬)
মানুষ দেখলে কী বলতে হবে তাও তিনি বলে দিলেন :
فَاِمَّا تَرَيِنَّ مِنَ الْبَشَرِ اَحَدًا فَقُوْلِۤيْ اِنِّيْ نَذَرْتُ لِلرَّحْمٰنِ صَوْمًا فَلَنْ اُكَلِّمَ الْيَوْمَ اِنْسِيًّا
যদি তুমি মানুষের মধ্যে কাউকে দেখতে পাও তখন বলে দিয়ো, আমি দয়াময়ের উদ্দেশ্যে (মৌনতা অবলম্বনের) রোযা মান্নত করেছি। সুতরাং আজ আমি কিছুতেই কোন মানুষের সাথে কথা বলব না। (সূরা মারইয়াম– ২৬)
মারইয়াম সন্তান নিয়ে জাতির কাছে আসলেন :
فَاَتَتْ بِه قَوْمَهَا تَحْمِلُهٗ
অতঃপর সে সন্তানকে নিয়ে তার সম্প্রদায়ের নিকট উপস্থিত হলো। (সূরা মারইয়াম– ২৭)
সন্তান দেখে লোকেরা তাকে দোষারোপ শুরু করল :
قَالُوْا يَا مَرْيَمُ لَقَدْ جِئْتِ شَيْئًا فَرِيًّا – يَاۤ اُخْتَ هَارُوْنَ مَا كَانَ اَبُوْكِ امْرَاَ سَوْءٍ وَّمَا كَانَتْ اُمُّكِ بَغِيًّا
তারা বলল, হে মারইয়াম! তুমি তো এক অদ্ভুত কান্ড করে বসেছ। হে হারূনের বোন, তোমার পিতা তো অসৎ ছিল না এবং তোমার মাতাও ব্যভিচারিণী ছিল না। (সূরা মারইয়াম– ২৭, ২৮)
তিনি কোলের বাচ্চার সাথে কথা বলতে ইঙ্গিত করলেন :
فَاَشَارَتْ اِلَيْهِؕ قَالُوْا كَيْفَ نُكَلِّمُ مَنْ كَانَ فِى الْمَهْدِ صَبِيًّا
অতঃপর মারইয়াম (কথা বলার জন্য) সন্তানের দিকে ইঙ্গিত করল। তখন তারা বলল, সে তো কোলের শিশুমাত্র; কীভাবে আমরা তার সাথে কথা বলব? (সূরা মারইয়াম– ২৯)
এবার ঈসা (আঃ) কথা বললেন :
قَالَ اِنِّيْ عَبْدُ اللهِؕ اٰتَانِيَ الْكِتَابَ وَجَعَلَنِيْ نَبِيًّا – وَجَعَلَنِيْ مُبَارَكًا اَيْنَ مَا كُنْتُ۪ وَاَوْصَانِيْ بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ مَا دُمْتُ حَيًّا – وَبَرًّا ۢبِوَالِدَتِيْؗ وَلَمْ يَجْعَلْنِيْ جَبَّارًا شَقِيًّا – وَالسَّلَامُ عَلَيَّ يَوْمَ وُلِدْتُّ وَيَوْمَ اَمُوْتُ وَيَوْمَ اُبْعَثُ حَيًّا
সে বলল, আমি আল্লাহর বান্দা। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে নবী বানিয়ে পাঠিয়েছেন। আমি যেখানেই থাকি না কেন তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন- যতদিন আমি জীবিত থাকি ততদিন যেন সালাত কায়েম করি এবং যাকাত আদায় করি। আর তিনি আমাকে আমার মায়ের প্রতি অনুগত করেছেন এবং তিনি আমাকে অহংকারী ও হতভাগা হিসেবে তৈরি করেননি। আমার প্রতি শান্তি, যেদিন আমি জন্মলাভ করেছি, যেদিন আমার মৃত্যু হবে এবং যেদিন আমি জীবিত অবস্থায় উত্থিত হব। (সূরা মারইয়াম, ৩০–৩৩)
তিনিই হলেন ঈসা ইবনে মারইয়াম :
ذٰلِكَ عِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَۚ قَوْلَ الْحَقِّ الَّذِيْ فِيْهِ يَمْتَرُوْنَ
এ–ই হলো মারইয়ামের পুত্র ঈসা। এটা এমন সত্য কথা, যে বিষয়ে তারা বিতর্ক করে। (সূরা মারইয়াম– ৩৪)
তাঁর জন্ম আদম (আঃ) এর সৃষ্টির মতো বিস্ময়কর :
اِنَّ مَثَلَ عِيْسٰى عِنْدَ اللهِ كَمَثَلِ اٰدَمَۚ خَلَقَهٗ مِنْ تُرَابٍ ثُمَّ قَالَ لَهٗ كُنْ فَيَكُوْنُ – اَلْحَقُّ مِنْ رَّبِّكَ فَلَا تَكُنْ مِّنَ الْمُمْتَرِيْنَ
নিশ্চয় ঈসার দৃষ্টান্ত আল্লাহর কাছে আদমের মতো। তিনি তাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর বললেন, ‘হও’ এতে তিনি হয়ে গেছেন। সত্য তোমার রবের পক্ষ থেকে আসে। সুতরাং তুমি সন্দেহকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সূরা আলে ইমরানু ৫৯, ৬০)
তিনি ছিলেন বিশ্ববাসীর জন্য নিদর্শনস্বরূপ :
وَالَّتِيْۤ اَحْصَنَتْ فَرْجَهَا فَنَفَخْنَا فِيْهَا مِنْ رُّوْحِنَا وَجَعَلْنَاهَا وَابْنَهَاۤ اٰيَةً لِّلْعَالَمِيْنَ
স্মরণ করো, সে নারীকে যে নিজ সতীত্বকে রক্ষা করেছিল। অতঃপর তার মধ্যে আমি আমার রূহ ফুঁকে দিয়েছিলাম এবং তাকে ও তার পুত্রকে বিশ্ববাসীর জন্য নিদর্শন হিসেবে নির্বাচন করেছিলাম।
(সূরা আম্বিয়া– ৯১)
ব্যাখ্যা : ঈসা (আঃ) এর জন্মবৃত্তান্ত সম্পর্কে আসলে ইয়াহুদি জাতির মধ্যে বিন্দুমাত্র সংশয় ছিল না। বরং যেদিন তার জন্ম হয়েছিল সেদিনই আল্লাহ সমগ্র জাতিকে এ মর্মে সাক্ষী বানিয়েছিলেন যে, এটি একটি অসাধারণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন শিশু। তাঁর জন্ম কোন অনৈতিক অপরাধের মাধ্যমে নয় বরং একটি মু‘জিযার ফলশ্রুতি। যখন বনী ইসরাঈলের সবচেয়ে ভদ্র ও খ্যাতনামা ধর্মীয় পরিবারের একটি কুমারী মেয়ে একটি শিশুপুত্র কোলে নিয়ে এগিয়ে এলেন এবং জাতির ছোট বড় অসংখ্য লোক তার ঘরে ভিড় জমাল, তখন কুমারী মেয়েটি তাদের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে নীরবে নবজাত সন্তানের দিকে ইশারা করলেন। লোকেরা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, একে আমরা কি জিজ্ঞেস করব, এ তো দোলনায় শুয়ে আছে? কিন্তু হঠাৎ শিশুটি সুস্পষ্ট ও বলিষ্ঠ কণ্ঠে বলে উঠলো-
اِنِّىْ عَبْدُ اللهِ اَتٰنِىَ الْكِتَابَ وَجَعَلَنِىْ نَبِيًّا
আমি আল্লাহর বান্দা, আল্লাহ আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে নবী হিসেবে নির্বাচন করেছেন।
(সূরা মারইয়াম- ৩০)
এভাবে ঈসা (আঃ) এর জন্ম সম্পর্কে যে সংশয় জমে উঠার সম্ভাবনা ছিল আল্লাহ নিজেই তার মূলোৎপাটন করেন। এজন্য ঈসা (আঃ) যৌবনে পদার্পণ করা পর্যন্ত কেউ কোন দিন মারইয়াম (আঃ) এর বিরুদ্ধে ব্যভিচারের অভিযোগ আনেনি। কিন্তু যখন তিনি নবুওয়াতের কাজ শুরু করলেন এবং যাবতীয় রিয়াকারীদের সমালোচনা করতে থাকলেন, মানুষকে তাদের নৈতিক ও চারিত্রিক অবনতির বিষয় সম্পর্কে সতর্ক করতে লাগলেন এবং আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নিজের জাতিকে ত্যাগ স্বীকার করার ও শয়তানি শক্তির সাথে লড়াই করার আহবান জানালেন, তখনই এই নির্লজ্জ অপরাধীরা সত্য ও সততার কণ্ঠ রোধ করার জন্য সবরকমের নিকৃষ্টতম অস্ত্র ব্যবহার করতে এগিয়ে আসল। তখন তারা এমনসব কথা বলতে থাকল, যা তারা ইতোপূর্বে আর কখনো বলেনি। অর্থাৎ তারা এসব বলতে লাগল যে, মারইয়াম (আঃ) একজন ব্যভিচারিনী এবং ঈসা (আঃ) তার অবৈধ সন্তান (নাউযুবিল্লাহ)। অথচ এ যালিমরা নিশ্চিতভাবেই জানত যে, এরা উভয়ই এ ধরনের কলুষতা থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত। তাদের মনে যথার্থই এ ধরনের কোন সন্দেহ পুঞ্জিভূত ছিল না, যার ভিত্তিতে তারা এই দোষারোপ করেছিল। মূলত এটা ছিল তাদের একটা স্বেচ্ছাকৃত দোষারোপ। জেনে বুঝে নিছক হকের বিরোধিতা করার জন্য তারা তাদের বিরুদ্ধে এ মিথ্যাটি তৈরি করেছিল। তাই আল্লাহ এ অন্যায়কে যুলুম ও মিথ্যার পরিবর্তে কুফরী হিসেবে গণ্য করেছেন। কারণ এই দোষারোপের মাধ্যমে তারা আসলে আল্লাহর দ্বীনের পথে বাধা সৃষ্টি করতে চাচ্ছিল।
اِذْ قَالَتِ الْمَلَآئِكَةُ يَا مَرْيَمُ اِنَّ اللهَ يُبَشِّرُكِ بِكَلِمَةٍ مِّنْهُۗ اِسْمُهُ الْمَسِيْحُ عِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَ وَجِيْهًا فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ وَمِنَ الْمُقَرَّبِيْنَ
স্মরণ করো, যখন ফেরেশতারা বলেছিলেন, হে মারইয়াম! নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর পক্ষ থেকে তোমাকে এক কালিমার সুসংবাদ দিচ্ছেন। তার নাম হলো মাসীহ ঈসা ইবনে মারইয়াম। তিনি দুনিয়া এবং আখিরাতে সম্মানিত এবং নৈকট্যপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা আলে ইমরানু ৪৫)
অবিবাহিতা হওয়ায় তিনি অভিযোগ করলেন :
قَالَتْ رَبِّ اَنّٰى يَكُوْنُ لِيْ وَلَدٌ وَّلَمْ يَمْسَسْنِيْ بَشَرٌ
মারইয়াম বললেন, হে আমার রব! আমার সন্তান হবে কেমন করে ? আমাকে তো কোন পুরুষ স্পর্শ করেনি। (সূরা আলে ইমরানু ৪৭)
তিনি যিনাকারিনীও ছিলেন না :
قَالَتْ اَنّٰى يَكُوْنُ لِيْ غُلَامٌ وَّلَمْ يَمْسَسْنِيْ بَشَرٌ وَّلَمْ اَكُ بَغِيًّا
মারইয়াম বলল, কেমন করে আমার পুত্র হবে যখন আমাকে কোন পুরুষ স্পর্শ করেনি এবং আমি ব্যভিচারিণীও নই? (সূরা মারইয়াম– ২০)
আল্লাহ তার কথার উত্তর দিলেন :
قَالَ كَذٰلِكِ اللهُ يَخْلُقُ مَا يَشَآءُؕ اِذَا قَضٰۤى اَمْرًا فَاِنَّمَا يَقُوْلُ لَهٗ كُنْ فَيَكُوْنُ
আল্লাহ বললেন, এভাবেই আল্লাহ যা চান তাই সৃষ্টি করেন। তিনি যখন কোন কাজের ফায়সালা করেন, তখন কেবল ‘হও’ বলাতেই তা হয়ে যায়। (সূরা আলে ইমরানু ৪৭)
মারইয়াম (আঃ) এক নির্জন স্থানে আশ্রয় নিলেন :
وَاذْكُرْ فِى الْكِتَابِ مَرْيَمَ اِذِ انْتَبَذَتْ مِنْ اَهْلِهَا مَكَانًا شَرْقِيًّا – فَاتَّخَذَتْ مِنْ دُوْنِهِمْ حِجَابًا
এ কিতাবে উলেস্নখিত মারইয়ামের কথা বর্ণনা করো, যখন সে তার পরিবারবর্গ হতে পৃথক হয়ে নিরালায় পূর্ব দিকে এক স্থানে আশ্রয় নিল, অতঃপর সে তাদের হতে পর্দা করল। (সূরা মারইয়াম– ১৬, ১৭)
আল্লাহ তার কাছে মানবাকৃতিতে ফেরেশতা পাঠালেন :
فَاَرْسَلْنَاۤ اِلَيْهَا رُوْحَنَا فَتَمَثَّلَ لَهَا بَشَرًا سَوِيًّا
অতঃপর আমি তার নিকট আমার রূহকে পাঠালাম, সে তার নিকট পূর্ণ মানবাকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করল।
(সূরা মারইয়াম– ১৭)
মারইয়াম (আঃ) তাকে কাছে আসতে নিষেধ করলেন :
قَالَتْ اِنِّۤيْ اَعُوْذُ بِالرَّحْمٰنِ مِنْكَ اِنْ كُنْتَ تَقِيًّا
মারইয়াম বলল, যদি তুমি মুত্তাক্বী হয়ে থাক, তবে আল্লাহকে ভয় করো। আমি তোমার হতে দয়াময়ের আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (সূরা মারইয়াম– ১৮)
ফেরেশতা কর্তৃক সন্তানের সুসংবাদ পেলেন :
قَالَ اِنَّمَاۤ اَنَاْ رَسُوْلُ رَبِّكِۗ لِاَهَبَ لَكِ غُلَامًا زَكِيًّا
সে বলল, আমি তো তোমার প্রতিপালকের দূত। আমি তোমাকে এক পবিত্র পুত্র দান করার জন্য এসেছি। (সূরা মারইয়াম– ১৯)
قَالَ كَذٰلِكِۚ قَالَ رَبُّكِ هُوَ عَلَيَّ هَيِّنٌۚ وَلِنَجْعَلَهٗۤ اٰيَةً لِّلنَّاسِ وَرَحْمَةً مِّنَّاۚ وَكَانَ اَمْرًا مَّقْضِيًّا
সে বলল, এরূপই হবে। তোমার প্রতিপালক বলেছেন, এটা আমার জন্য খুবই সহজসাধ্য ব্যাপার। আর আমি এটা এজন্য করব যে, যাতে করে আমি তাকে মানুষের জন্য নিদর্শন ও আমার নিকট হতে এক অনুগ্রহ বানাতে পারি। তাছাড়া এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। (সূরা মারইয়াম– ২১)
প্রসবের সময় হলে তিনি দূরবর্তী স্থানে চলে গেলেন :
فَحَمَلَتْهُ فَانْتَبَذَتْ بِه مَكَانًا قَصِيًّا
অতঃপর সে তাকে গর্ভে ধারণ করল; এরপর সে এক দূরবর্তী স্থানে চলে গেল। (সূরা মারইয়াম– ২২)
একটি খেজুর গাছের নিচে আশ্রয় নিলেন :
فَاَجَآءَهَا الْمَخَاضُ اِلٰى جِذْعِ النَّخْلَةِ
অতঃপর প্রসব–বেদনা তাকে এক খেজুর বৃক্ষের নিচে আশ্রয় নিতে বাধ্য করল। (সূরা মারইয়াম– ২৩)
তিনি আফসোস করে নিজেকে ধিক্কার দিলেন :
قَالَتْ يَا لَيْتَنِيْ مِتُّ قَبْلَ هٰذَا وَكُنْتُ نَسْيًا مَّنْسِيًّا
সে বলল, হায়! এর পূর্বেই যদি আমি মরে যেতাম ও লোকের স্মৃতি হতে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যেতাম!
(সূরা মারইয়াম– ২৩)
আল্লাহ তাকে সান্ত্বনা দিয়ে পানির ব্যবস্থা করে দিলেন :
فَنَادَاهَا مِنْ تَحْتِهَاۤ اَ لَّا تَحْزَنِيْ قَدْ جَعَلَ رَبُّكِ تَحْتَكِ سَرِيًّا
ফেরেশতা তার নিম্ন পার্শ্ব হতে আহবান করে তাকে বলল, দুঃখ করো না- তোমার প্রতিপালক তোমার পাদদেশে একটি নহর তৈরি করে দিয়েছেন। (সূরা মারইয়াম– ২৪)
খেজুর ও পানি খাওয়ার নির্দেশ দিলেন :
وَهُزِّيْۤ اِلَيْكِ بِجِذْعِ النَّخْلَةِ تُسَاقِطْ عَلَيْكِ رُطَبًا جَنِيًّا – فَكُلِيْ وَاشْرَبِيْ وَقَرِّيْ عَيْنًا
তুমি খেজুর বৃক্ষের কান্ডে তোমার দিকে নাড়া দাও, তা তোমাকে সুপরিপক্ক তাজা খেজুর দান করবে। সুতরাং (তুমি তা হতে) আহার করো, পান করো ও চক্ষু শীতল করো। (সূরা মারইয়াম– ২৫, ২৬)
মানুষ দেখলে কী বলতে হবে তাও তিনি বলে দিলেন :
فَاِمَّا تَرَيِنَّ مِنَ الْبَشَرِ اَحَدًا فَقُوْلِۤيْ اِنِّيْ نَذَرْتُ لِلرَّحْمٰنِ صَوْمًا فَلَنْ اُكَلِّمَ الْيَوْمَ اِنْسِيًّا
যদি তুমি মানুষের মধ্যে কাউকে দেখতে পাও তখন বলে দিয়ো, আমি দয়াময়ের উদ্দেশ্যে (মৌনতা অবলম্বনের) রোযা মান্নত করেছি। সুতরাং আজ আমি কিছুতেই কোন মানুষের সাথে কথা বলব না। (সূরা মারইয়াম– ২৬)
মারইয়াম সন্তান নিয়ে জাতির কাছে আসলেন :
فَاَتَتْ بِه قَوْمَهَا تَحْمِلُهٗ
অতঃপর সে সন্তানকে নিয়ে তার সম্প্রদায়ের নিকট উপস্থিত হলো। (সূরা মারইয়াম– ২৭)
সন্তান দেখে লোকেরা তাকে দোষারোপ শুরু করল :
قَالُوْا يَا مَرْيَمُ لَقَدْ جِئْتِ شَيْئًا فَرِيًّا – يَاۤ اُخْتَ هَارُوْنَ مَا كَانَ اَبُوْكِ امْرَاَ سَوْءٍ وَّمَا كَانَتْ اُمُّكِ بَغِيًّا
তারা বলল, হে মারইয়াম! তুমি তো এক অদ্ভুত কান্ড করে বসেছ। হে হারূনের বোন, তোমার পিতা তো অসৎ ছিল না এবং তোমার মাতাও ব্যভিচারিণী ছিল না। (সূরা মারইয়াম– ২৭, ২৮)
তিনি কোলের বাচ্চার সাথে কথা বলতে ইঙ্গিত করলেন :
فَاَشَارَتْ اِلَيْهِؕ قَالُوْا كَيْفَ نُكَلِّمُ مَنْ كَانَ فِى الْمَهْدِ صَبِيًّا
অতঃপর মারইয়াম (কথা বলার জন্য) সন্তানের দিকে ইঙ্গিত করল। তখন তারা বলল, সে তো কোলের শিশুমাত্র; কীভাবে আমরা তার সাথে কথা বলব? (সূরা মারইয়াম– ২৯)
এবার ঈসা (আঃ) কথা বললেন :
قَالَ اِنِّيْ عَبْدُ اللهِؕ اٰتَانِيَ الْكِتَابَ وَجَعَلَنِيْ نَبِيًّا – وَجَعَلَنِيْ مُبَارَكًا اَيْنَ مَا كُنْتُ۪ وَاَوْصَانِيْ بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ مَا دُمْتُ حَيًّا – وَبَرًّا ۢبِوَالِدَتِيْؗ وَلَمْ يَجْعَلْنِيْ جَبَّارًا شَقِيًّا – وَالسَّلَامُ عَلَيَّ يَوْمَ وُلِدْتُّ وَيَوْمَ اَمُوْتُ وَيَوْمَ اُبْعَثُ حَيًّا
সে বলল, আমি আল্লাহর বান্দা। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে নবী বানিয়ে পাঠিয়েছেন। আমি যেখানেই থাকি না কেন তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন- যতদিন আমি জীবিত থাকি ততদিন যেন সালাত কায়েম করি এবং যাকাত আদায় করি। আর তিনি আমাকে আমার মায়ের প্রতি অনুগত করেছেন এবং তিনি আমাকে অহংকারী ও হতভাগা হিসেবে তৈরি করেননি। আমার প্রতি শান্তি, যেদিন আমি জন্মলাভ করেছি, যেদিন আমার মৃত্যু হবে এবং যেদিন আমি জীবিত অবস্থায় উত্থিত হব। (সূরা মারইয়াম, ৩০–৩৩)
তিনিই হলেন ঈসা ইবনে মারইয়াম :
ذٰلِكَ عِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَۚ قَوْلَ الْحَقِّ الَّذِيْ فِيْهِ يَمْتَرُوْنَ
এ–ই হলো মারইয়ামের পুত্র ঈসা। এটা এমন সত্য কথা, যে বিষয়ে তারা বিতর্ক করে। (সূরা মারইয়াম– ৩৪)
তাঁর জন্ম আদম (আঃ) এর সৃষ্টির মতো বিস্ময়কর :
اِنَّ مَثَلَ عِيْسٰى عِنْدَ اللهِ كَمَثَلِ اٰدَمَۚ خَلَقَهٗ مِنْ تُرَابٍ ثُمَّ قَالَ لَهٗ كُنْ فَيَكُوْنُ – اَلْحَقُّ مِنْ رَّبِّكَ فَلَا تَكُنْ مِّنَ الْمُمْتَرِيْنَ
নিশ্চয় ঈসার দৃষ্টান্ত আল্লাহর কাছে আদমের মতো। তিনি তাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর বললেন, ‘হও’ এতে তিনি হয়ে গেছেন। সত্য তোমার রবের পক্ষ থেকে আসে। সুতরাং তুমি সন্দেহকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সূরা আলে ইমরানু ৫৯, ৬০)
তিনি ছিলেন বিশ্ববাসীর জন্য নিদর্শনস্বরূপ :
وَالَّتِيْۤ اَحْصَنَتْ فَرْجَهَا فَنَفَخْنَا فِيْهَا مِنْ رُّوْحِنَا وَجَعَلْنَاهَا وَابْنَهَاۤ اٰيَةً لِّلْعَالَمِيْنَ
স্মরণ করো, সে নারীকে যে নিজ সতীত্বকে রক্ষা করেছিল। অতঃপর তার মধ্যে আমি আমার রূহ ফুঁকে দিয়েছিলাম এবং তাকে ও তার পুত্রকে বিশ্ববাসীর জন্য নিদর্শন হিসেবে নির্বাচন করেছিলাম।
(সূরা আম্বিয়া– ৯১)
ব্যাখ্যা : ঈসা (আঃ) এর জন্মবৃত্তান্ত সম্পর্কে আসলে ইয়াহুদি জাতির মধ্যে বিন্দুমাত্র সংশয় ছিল না। বরং যেদিন তার জন্ম হয়েছিল সেদিনই আল্লাহ সমগ্র জাতিকে এ মর্মে সাক্ষী বানিয়েছিলেন যে, এটি একটি অসাধারণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন শিশু। তাঁর জন্ম কোন অনৈতিক অপরাধের মাধ্যমে নয় বরং একটি মু‘জিযার ফলশ্রুতি। যখন বনী ইসরাঈলের সবচেয়ে ভদ্র ও খ্যাতনামা ধর্মীয় পরিবারের একটি কুমারী মেয়ে একটি শিশুপুত্র কোলে নিয়ে এগিয়ে এলেন এবং জাতির ছোট বড় অসংখ্য লোক তার ঘরে ভিড় জমাল, তখন কুমারী মেয়েটি তাদের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে নীরবে নবজাত সন্তানের দিকে ইশারা করলেন। লোকেরা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, একে আমরা কি জিজ্ঞেস করব, এ তো দোলনায় শুয়ে আছে? কিন্তু হঠাৎ শিশুটি সুস্পষ্ট ও বলিষ্ঠ কণ্ঠে বলে উঠলো-
اِنِّىْ عَبْدُ اللهِ اَتٰنِىَ الْكِتَابَ وَجَعَلَنِىْ نَبِيًّا
আমি আল্লাহর বান্দা, আল্লাহ আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে নবী হিসেবে নির্বাচন করেছেন।
(সূরা মারইয়াম- ৩০)
এভাবে ঈসা (আঃ) এর জন্ম সম্পর্কে যে সংশয় জমে উঠার সম্ভাবনা ছিল আল্লাহ নিজেই তার মূলোৎপাটন করেন। এজন্য ঈসা (আঃ) যৌবনে পদার্পণ করা পর্যন্ত কেউ কোন দিন মারইয়াম (আঃ) এর বিরুদ্ধে ব্যভিচারের অভিযোগ আনেনি। কিন্তু যখন তিনি নবুওয়াতের কাজ শুরু করলেন এবং যাবতীয় রিয়াকারীদের সমালোচনা করতে থাকলেন, মানুষকে তাদের নৈতিক ও চারিত্রিক অবনতির বিষয় সম্পর্কে সতর্ক করতে লাগলেন এবং আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নিজের জাতিকে ত্যাগ স্বীকার করার ও শয়তানি শক্তির সাথে লড়াই করার আহবান জানালেন, তখনই এই নির্লজ্জ অপরাধীরা সত্য ও সততার কণ্ঠ রোধ করার জন্য সবরকমের নিকৃষ্টতম অস্ত্র ব্যবহার করতে এগিয়ে আসল। তখন তারা এমনসব কথা বলতে থাকল, যা তারা ইতোপূর্বে আর কখনো বলেনি। অর্থাৎ তারা এসব বলতে লাগল যে, মারইয়াম (আঃ) একজন ব্যভিচারিনী এবং ঈসা (আঃ) তার অবৈধ সন্তান (নাউযুবিল্লাহ)। অথচ এ যালিমরা নিশ্চিতভাবেই জানত যে, এরা উভয়ই এ ধরনের কলুষতা থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত। তাদের মনে যথার্থই এ ধরনের কোন সন্দেহ পুঞ্জিভূত ছিল না, যার ভিত্তিতে তারা এই দোষারোপ করেছিল। মূলত এটা ছিল তাদের একটা স্বেচ্ছাকৃত দোষারোপ। জেনে বুঝে নিছক হকের বিরোধিতা করার জন্য তারা তাদের বিরুদ্ধে এ মিথ্যাটি তৈরি করেছিল। তাই আল্লাহ এ অন্যায়কে যুলুম ও মিথ্যার পরিবর্তে কুফরী হিসেবে গণ্য করেছেন। কারণ এই দোষারোপের মাধ্যমে তারা আসলে আল্লাহর দ্বীনের পথে বাধা সৃষ্টি করতে চাচ্ছিল।
তাকে ইঞ্জিল কিতাব দেয়া হয়েছিল :
وَاٰتَيْنَاهُ الْاِنْجِيْلَ فِيْهِ هُدًى وَّنُوْرٌ وَّمُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ التَّوْرَاةِ وَهُدًى وَّمَوْعِظَةً لِّلْمُتَّقِيْنَ
আমি তাকে দিয়েছিলাম ইঞ্জিল, যাতে ছিল হেদায়াত ও আলো। তা ছিল আগের কিতাব তাওরাতের সত্যতা প্রমাণকারী এবং পরহেযগারদের জন্য হেদায়াত ও উপদেশবাণী। (সূরা মায়েদা– ৪৬)
ثُمَّ قَفَّيْنَا عَلٰۤى اٰثَارِهِمْ بِرُسُلِنَا وَقَفَّيْنَا بِعِيْسَى ابْنِ مَرْيَمَ وَاٰتَيْنَاهُ الْاِنْجِيْلَ
অতঃপর আমি একের পর এক আমার রাসূলদেরকে প্রেরণ করেছি এবং মারইয়ামের পুত্র ঈসাকেও প্রেরণ করেছি। আর তাকে ইঞ্জিল কিতাব দান করেছি। (সূরা হাদীদু ২৭)
আল্লাহ তাকে হেকমত দান করেন :
وَيُعَلِّمُهُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَالتَّوْرَاةَ وَالْاِنْجِيْلَ
আর তিনি তাকে কিতাব, হেকমত, তাওরাত এবং ইঞ্জিল শিক্ষা দেন। (সূরা আলে ইমরানু ৪৮)
জিবরাঈল (আঃ) এর মাধ্যমে তাকে সাহায্য করেন :
وَاٰتَيْنَا عِيْسَى ابْنَ مَرْيَمَ الْبَيِّنَاتِ وَاَيَّدْنَاهُ بِرُوْحِ الْقُدُسِ
আমি মারইয়ামের পুত্র ঈসাকে নিদর্শনসমূহ প্রদান করেছিলাম এবং পবিত্র আত্মা দ্বারা শক্তিশালী করেছিলাম। (সূরা বাক্বারা– ৮৭)
তিনি ছিলেন আল্লাহর বিশেষ বান্দা :
اِنْ هُوَ اِلَّا عَبْدٌ اَنْعَمْنَا عَلَيْهِ وَجَعَلْنَاهُ مَثَلًا لِّبَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ
সে ছিল আমারই এক বান্দা, যার প্রতি আমি অনুগ্রহ করেছিলাম এবং যাকে বনী ইসরাঈলের জন্য দৃষ্টান্তস্বরূপ নির্বাচন করেছিলাম। (সূরা যুখরুফু ৫৯)
তিনি শেষ নবীর আগমনের সুসংবাদ দিয়েছেন :
وَاِذْ قَالَ عِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَ يَا بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ اِنِّيْ رَسُوْلُ اللهِ اِلَيْكُمْ مُّصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيَّ مِنَ التَّوْرَاةِ وَمُبَشِّرًا ۢبِرَسُوْلٍ يَّأْتِيْ مِنْ ۢبَعْدِى اسْمُهٗۤ اَحْمَدُ
(স্মরণ করো) যখন মারইয়ামের পুত্র ঈসা বলেছিলেন, হে বনী ইসরাঈল! আমি তোমাদের নিকট আল্লাহর রাসূল এবং আমার পূর্ব হতে তোমাদের নিকট যে তাওরাত রয়েছে আমি তার সত্যায়নকারী। আর আমার পরে আহমাদ নামে যে রাসূল আসবেন আমি তাঁরও সুসংবাদদাতা। (সূরা সাফু ৬)
وَاٰتَيْنَاهُ الْاِنْجِيْلَ فِيْهِ هُدًى وَّنُوْرٌ وَّمُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ التَّوْرَاةِ وَهُدًى وَّمَوْعِظَةً لِّلْمُتَّقِيْنَ
আমি তাকে দিয়েছিলাম ইঞ্জিল, যাতে ছিল হেদায়াত ও আলো। তা ছিল আগের কিতাব তাওরাতের সত্যতা প্রমাণকারী এবং পরহেযগারদের জন্য হেদায়াত ও উপদেশবাণী। (সূরা মায়েদা– ৪৬)
ثُمَّ قَفَّيْنَا عَلٰۤى اٰثَارِهِمْ بِرُسُلِنَا وَقَفَّيْنَا بِعِيْسَى ابْنِ مَرْيَمَ وَاٰتَيْنَاهُ الْاِنْجِيْلَ
অতঃপর আমি একের পর এক আমার রাসূলদেরকে প্রেরণ করেছি এবং মারইয়ামের পুত্র ঈসাকেও প্রেরণ করেছি। আর তাকে ইঞ্জিল কিতাব দান করেছি। (সূরা হাদীদু ২৭)
আল্লাহ তাকে হেকমত দান করেন :
وَيُعَلِّمُهُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَالتَّوْرَاةَ وَالْاِنْجِيْلَ
আর তিনি তাকে কিতাব, হেকমত, তাওরাত এবং ইঞ্জিল শিক্ষা দেন। (সূরা আলে ইমরানু ৪৮)
জিবরাঈল (আঃ) এর মাধ্যমে তাকে সাহায্য করেন :
وَاٰتَيْنَا عِيْسَى ابْنَ مَرْيَمَ الْبَيِّنَاتِ وَاَيَّدْنَاهُ بِرُوْحِ الْقُدُسِ
আমি মারইয়ামের পুত্র ঈসাকে নিদর্শনসমূহ প্রদান করেছিলাম এবং পবিত্র আত্মা দ্বারা শক্তিশালী করেছিলাম। (সূরা বাক্বারা– ৮৭)
তিনি ছিলেন আল্লাহর বিশেষ বান্দা :
اِنْ هُوَ اِلَّا عَبْدٌ اَنْعَمْنَا عَلَيْهِ وَجَعَلْنَاهُ مَثَلًا لِّبَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ
সে ছিল আমারই এক বান্দা, যার প্রতি আমি অনুগ্রহ করেছিলাম এবং যাকে বনী ইসরাঈলের জন্য দৃষ্টান্তস্বরূপ নির্বাচন করেছিলাম। (সূরা যুখরুফু ৫৯)
তিনি শেষ নবীর আগমনের সুসংবাদ দিয়েছেন :
وَاِذْ قَالَ عِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَ يَا بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ اِنِّيْ رَسُوْلُ اللهِ اِلَيْكُمْ مُّصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيَّ مِنَ التَّوْرَاةِ وَمُبَشِّرًا ۢبِرَسُوْلٍ يَّأْتِيْ مِنْ ۢبَعْدِى اسْمُهٗۤ اَحْمَدُ
(স্মরণ করো) যখন মারইয়ামের পুত্র ঈসা বলেছিলেন, হে বনী ইসরাঈল! আমি তোমাদের নিকট আল্লাহর রাসূল এবং আমার পূর্ব হতে তোমাদের নিকট যে তাওরাত রয়েছে আমি তার সত্যায়নকারী। আর আমার পরে আহমাদ নামে যে রাসূল আসবেন আমি তাঁরও সুসংবাদদাতা। (সূরা সাফু ৬)
আল্লাহ তাকে অনেক মু‘জিযা দিয়েছেন :
وَاٰتَيْنَا عِيْسَى ابْنَ مَرْيَمَ الْبَيِّنَاتِ
আমি মারইয়ামের পুত্র ঈসাকে নিদর্শনসমূহ প্রদান করেছিলাম। (সূরা বাক্বারা– ৮৭)
দোলনায় থাকাবস্থায় কথা বলা :
وَيُكَلِّمُ النَّاسَ فِى الْمَهْدِ وَكَهْلًا وَّمِنَ الصَّالِحِيْنَ
আর তিনি শৈশবে এবং বার্ধক্যে মানুষের সাথে কথা বলবেন এবং নেককারদের অন্তর্ভুক্ত হবেন।
(সূরা আলে ইমরানু ৪৬)
মাটি থেকে পাখি তৈরি করা :
اَنِّيْۤ اَخْلُقُ لَكُمْ مِّنَ الطِّيْنِ كَهَيْئَةِ الطَّيْرِ فَاَنْفُخُ فِيْهِ فَيَكُوْنُ طَيْرًا ۢبِاِذْنِ اللهِ
তিনি (ঈসা আঃ) বলেন, আমি তোমাদের জন্য কাঁদামাটি দিয়ে পাখির আকৃতির ন্যায় এক অবয়ব তৈরি করব, তারপর তাতে ফুৎকার দেব, ফলে আল্লাহর নির্দেশে তা পাখিতে পরিণত হবে। (সূরা আলে ইমরানু ৪৯)
জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগীকে ভালো করা :
وَاُبْرِئُ الْاَ كْمَهَ وَالْاَبْرَصَ
আমি আল্লাহর নির্দেশে জন্মান্ধ ও শ্বেত রোগীকে ভালো করে দেব। (সূরা আলে ইমরানু ৪৯)
মৃতকে জীবিত করা :
وَاُحْيِى الْمَوْتٰى بِاِذْنِ اللهِ
আমি আল্লাহর নির্দেশে মৃতকে জীবিত করে দেব। (সূরা আলে ইমরানু ৪৯)
মানুষের ঘরে কি আছে তা বলে দেয়া :
وَاُنَبِّئُكُمْ بِمَا تَأْكُلُوْنَ وَمَا تَدَّخِرُوْنَ فِيْ بُيُوْتِكُمْؕ اِنَّ فِي ْذٰلِكَ لَاٰيَةً لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
তোমরা যা খাও এবং তোমাদের ঘরে যা জমা কর, তাও বলে দেব। এসবের মধ্যে অবশ্যই তোমাদের জন্য নিদর্শন রয়েছে, যদি তোমরা বিশ্বাসী হও। (সূরা আলে ইমরানু ৪৯)
এসব ছিল আল্লাহর অনুগ্রহ :
اِذْ قَالَ اللهُ يَا عِيْسَى ابْنَ مَرْيَمَ اذْكُرْ نِعْمَتِيْ عَلَيْكَ وَعَلٰى وَالِدَتِكَۘ اِذْ اَيَّدْتُّكَ بِرُوْحِ الْقُدُسِ تُكَلِّمُ النَّاسَ فِى المَهْدِ وَكَهْلًاۚ وَاِذْ عَلَّمْتُكَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَالتَّوْرَاةَ وَالْاِنْجِيْلَۚ وَاِذْ تَخْلُقُ مِنَ الطِّيْنِ كَهَيْئَةِ الطَّيْرِ بِاِذْنِيْ فَتَنْفُخُ فِيْهَا فَتَكُوْنُ طَيْرًا ۢبِاِذْنِيْ وَتُبْرِئُ الْاَكْمَهَ وَالْاَبْرَصَ بِاِذْنِيْۚ وَاِذْ تُخْرِجُ الْمَوْتٰى بِاِذْنِيْۚ وَاِذْ كَفَفْتُ بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ عَنْكَ اِذْ جِئْتَهُمْ بِالْبَيِّنَاتِ فَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنْهُمْ اِنْ هٰذَاۤ اِلَّا سِحْرٌ مُّبِيْنٌ
স্মরণ করো, যখন আল্লাহ বলেছিলেন, হে মারইয়ামের ছেলে ঈসা! তোমার প্রতি ও তোমার মায়ের প্রতি আমার অনুগ্রহকে স্মরণ করো। আমি তোমাকে পবিত্র আত্মা দ্বারা শক্তিশালী করেছিলাম এবং তুমি দোলনায় থাকাবস্থায় ও পরিণত বয়সে মানুষের সাথে কথা বলতে। তোমাকে কিতাব, হেকমত, তাওরাত ও ইঞ্জিল শিক্ষা দিয়েছিলাম, তুমি কাদামাটি দিয়ে আমার অনুমতিক্রমে পাখি সদৃশ আকৃতি গঠন করতে এবং তাতে ফুঁ দিতে, ফলে আমার অনুমতিক্রমে তা পাখি হয়ে যেত। তুমি আমার অনুমতিক্রমে জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগীকে নিরাময় করতে এবং আমার অনুমতিক্রমে মৃতকে জীবিত করতে। আর আমি তোমার হতে বনী ইসরাঈলকে নিবৃত্ত করে রেখেছিলাম। তুমি যখন তাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শন এনেছিলে তখন তাদের মধ্যে যারা কুফরী করেছিল তারা বলেছিল, এটা তো স্পষ্ট যাদু। (সূরা মায়েদা– ১১০)
وَاٰتَيْنَا عِيْسَى ابْنَ مَرْيَمَ الْبَيِّنَاتِ
আমি মারইয়ামের পুত্র ঈসাকে নিদর্শনসমূহ প্রদান করেছিলাম। (সূরা বাক্বারা– ৮৭)
দোলনায় থাকাবস্থায় কথা বলা :
وَيُكَلِّمُ النَّاسَ فِى الْمَهْدِ وَكَهْلًا وَّمِنَ الصَّالِحِيْنَ
আর তিনি শৈশবে এবং বার্ধক্যে মানুষের সাথে কথা বলবেন এবং নেককারদের অন্তর্ভুক্ত হবেন।
(সূরা আলে ইমরানু ৪৬)
মাটি থেকে পাখি তৈরি করা :
اَنِّيْۤ اَخْلُقُ لَكُمْ مِّنَ الطِّيْنِ كَهَيْئَةِ الطَّيْرِ فَاَنْفُخُ فِيْهِ فَيَكُوْنُ طَيْرًا ۢبِاِذْنِ اللهِ
তিনি (ঈসা আঃ) বলেন, আমি তোমাদের জন্য কাঁদামাটি দিয়ে পাখির আকৃতির ন্যায় এক অবয়ব তৈরি করব, তারপর তাতে ফুৎকার দেব, ফলে আল্লাহর নির্দেশে তা পাখিতে পরিণত হবে। (সূরা আলে ইমরানু ৪৯)
জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগীকে ভালো করা :
وَاُبْرِئُ الْاَ كْمَهَ وَالْاَبْرَصَ
আমি আল্লাহর নির্দেশে জন্মান্ধ ও শ্বেত রোগীকে ভালো করে দেব। (সূরা আলে ইমরানু ৪৯)
মৃতকে জীবিত করা :
وَاُحْيِى الْمَوْتٰى بِاِذْنِ اللهِ
আমি আল্লাহর নির্দেশে মৃতকে জীবিত করে দেব। (সূরা আলে ইমরানু ৪৯)
মানুষের ঘরে কি আছে তা বলে দেয়া :
وَاُنَبِّئُكُمْ بِمَا تَأْكُلُوْنَ وَمَا تَدَّخِرُوْنَ فِيْ بُيُوْتِكُمْؕ اِنَّ فِي ْذٰلِكَ لَاٰيَةً لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
তোমরা যা খাও এবং তোমাদের ঘরে যা জমা কর, তাও বলে দেব। এসবের মধ্যে অবশ্যই তোমাদের জন্য নিদর্শন রয়েছে, যদি তোমরা বিশ্বাসী হও। (সূরা আলে ইমরানু ৪৯)
এসব ছিল আল্লাহর অনুগ্রহ :
اِذْ قَالَ اللهُ يَا عِيْسَى ابْنَ مَرْيَمَ اذْكُرْ نِعْمَتِيْ عَلَيْكَ وَعَلٰى وَالِدَتِكَۘ اِذْ اَيَّدْتُّكَ بِرُوْحِ الْقُدُسِ تُكَلِّمُ النَّاسَ فِى المَهْدِ وَكَهْلًاۚ وَاِذْ عَلَّمْتُكَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَالتَّوْرَاةَ وَالْاِنْجِيْلَۚ وَاِذْ تَخْلُقُ مِنَ الطِّيْنِ كَهَيْئَةِ الطَّيْرِ بِاِذْنِيْ فَتَنْفُخُ فِيْهَا فَتَكُوْنُ طَيْرًا ۢبِاِذْنِيْ وَتُبْرِئُ الْاَكْمَهَ وَالْاَبْرَصَ بِاِذْنِيْۚ وَاِذْ تُخْرِجُ الْمَوْتٰى بِاِذْنِيْۚ وَاِذْ كَفَفْتُ بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ عَنْكَ اِذْ جِئْتَهُمْ بِالْبَيِّنَاتِ فَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنْهُمْ اِنْ هٰذَاۤ اِلَّا سِحْرٌ مُّبِيْنٌ
স্মরণ করো, যখন আল্লাহ বলেছিলেন, হে মারইয়ামের ছেলে ঈসা! তোমার প্রতি ও তোমার মায়ের প্রতি আমার অনুগ্রহকে স্মরণ করো। আমি তোমাকে পবিত্র আত্মা দ্বারা শক্তিশালী করেছিলাম এবং তুমি দোলনায় থাকাবস্থায় ও পরিণত বয়সে মানুষের সাথে কথা বলতে। তোমাকে কিতাব, হেকমত, তাওরাত ও ইঞ্জিল শিক্ষা দিয়েছিলাম, তুমি কাদামাটি দিয়ে আমার অনুমতিক্রমে পাখি সদৃশ আকৃতি গঠন করতে এবং তাতে ফুঁ দিতে, ফলে আমার অনুমতিক্রমে তা পাখি হয়ে যেত। তুমি আমার অনুমতিক্রমে জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগীকে নিরাময় করতে এবং আমার অনুমতিক্রমে মৃতকে জীবিত করতে। আর আমি তোমার হতে বনী ইসরাঈলকে নিবৃত্ত করে রেখেছিলাম। তুমি যখন তাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শন এনেছিলে তখন তাদের মধ্যে যারা কুফরী করেছিল তারা বলেছিল, এটা তো স্পষ্ট যাদু। (সূরা মায়েদা– ১১০)
জাতির লোকেরা মু’জিযাকে যাদু মনে করল :
فَلَمَّا جَآءَهُمْ بِالْبَيِّنَاتِ قَالُوْا هٰذَا سِحْرٌ مُّبِيْنٌ
যখন তিনি স্পষ্ট নিদর্শনাবলিসহ তাদের নিকট আসলেন তখন তারা বলতে লাগল যে, এটা তো এক স্পষ্ট যাদু। (সূরা সাফু ৬)
ঈসা (আঃ) জাতিকে বুঝালেন এবং তার অনুসরণ করার নির্দেশ দিলেন :
وَلَمَّا جَآءَ عِيْسٰى بِالْبَيِّنَاتِ قَالَ قَدْ جِئْتُكُمْ بِالْحِكْمَةِ وَلِاُبَيِّنَ لَكُمْ بَعْضَ الَّذِيْ تَخْتَلِفُوْنَ فِيْهِۚ فَاتَّقُوا اللهَ وَاَطِيْعُوْنِ
যখন ঈসা স্পষ্ট নিদর্শনাবলিসহ আসল তখন বলল, আমি তো তোমাদের নিকট প্রজ্ঞাসহ এসেছি, যাতে করে তোমরা যে বিষয়ে মতভেদ করছ, তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করি। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার অনুসরণ করো। (সূরা যুখরুফু ৬৩)
নবী তাকে অনুসরণ করার নির্দেশ দিলেন :
وَمُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيَّ مِنَ التَّوْرَاةِ وَلِاُحِلَّ لَكُمْ بَعْضَ الَّذِيْ حُرِّمَ عَلَيْكُمْ وَجِئْتُكُمْ بِاٰيَةٍ مِّنْ رَّبِّكُمْ فَاتَّقُوا اللهَ وَاَطِيْعُوْنِ
আমি এসেছি আমার সামনে যে তাওরাত রয়েছে তার সত্যায়নকারী হিসেবে এবং তোমাদের জন্য যেসব জিনিস হারাম করা হয়েছে তার কতিপয়কে হালাল করার জন্য। আর আমি এসেছি তোমাদের কাছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে নিদর্শন সহকারে। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার অনুসরণ করো। (সূরা আলে ইমরানু ৫০)
আল্লাহর ইবাদাতের দিকে আহবান জানালেন :
اِنَّ اللهَ رَبِّيْ وَرَبُّكُمْ فَاعْبُدُوْهُ ؕ هٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيْمٌ
নিশ্চয় আল্লাহ আমার এবং তোমাদের রব। অতএব তোমরা তারই ইবাদাত করো। এটাই সঠিক পথ।
(সূরা আলে ইমরানু ৫১)
একদল তাকে মানল এবং অন্যদল অস্বীকার করল :
فَاٰمَنَتْ طَّآئِفَةٌ مِّنْ ۢبَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ وَكَفَرَتْ طَّآئِفَةٌۚ فَاَيَّدْنَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا عَلٰى عَدُوِّهِمْ فَاَصْبَحُوْا ظَاهِرِيْنَ
অতঃপর বনী ইসরাঈলের একদল ঈমান আনল এবং একদল কুফরী করল। পরে আমি মুমিনদেরকে তাদের শত্রুদের মুকাবিলায় শক্তিশালী করলাম; ফলে তারা বিজয়ী হলো। (সূরা সাফু ১৪)
فَلَمَّا جَآءَهُمْ بِالْبَيِّنَاتِ قَالُوْا هٰذَا سِحْرٌ مُّبِيْنٌ
যখন তিনি স্পষ্ট নিদর্শনাবলিসহ তাদের নিকট আসলেন তখন তারা বলতে লাগল যে, এটা তো এক স্পষ্ট যাদু। (সূরা সাফু ৬)
ঈসা (আঃ) জাতিকে বুঝালেন এবং তার অনুসরণ করার নির্দেশ দিলেন :
وَلَمَّا جَآءَ عِيْسٰى بِالْبَيِّنَاتِ قَالَ قَدْ جِئْتُكُمْ بِالْحِكْمَةِ وَلِاُبَيِّنَ لَكُمْ بَعْضَ الَّذِيْ تَخْتَلِفُوْنَ فِيْهِۚ فَاتَّقُوا اللهَ وَاَطِيْعُوْنِ
যখন ঈসা স্পষ্ট নিদর্শনাবলিসহ আসল তখন বলল, আমি তো তোমাদের নিকট প্রজ্ঞাসহ এসেছি, যাতে করে তোমরা যে বিষয়ে মতভেদ করছ, তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করি। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার অনুসরণ করো। (সূরা যুখরুফু ৬৩)
নবী তাকে অনুসরণ করার নির্দেশ দিলেন :
وَمُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيَّ مِنَ التَّوْرَاةِ وَلِاُحِلَّ لَكُمْ بَعْضَ الَّذِيْ حُرِّمَ عَلَيْكُمْ وَجِئْتُكُمْ بِاٰيَةٍ مِّنْ رَّبِّكُمْ فَاتَّقُوا اللهَ وَاَطِيْعُوْنِ
আমি এসেছি আমার সামনে যে তাওরাত রয়েছে তার সত্যায়নকারী হিসেবে এবং তোমাদের জন্য যেসব জিনিস হারাম করা হয়েছে তার কতিপয়কে হালাল করার জন্য। আর আমি এসেছি তোমাদের কাছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে নিদর্শন সহকারে। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার অনুসরণ করো। (সূরা আলে ইমরানু ৫০)
আল্লাহর ইবাদাতের দিকে আহবান জানালেন :
اِنَّ اللهَ رَبِّيْ وَرَبُّكُمْ فَاعْبُدُوْهُ ؕ هٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيْمٌ
নিশ্চয় আল্লাহ আমার এবং তোমাদের রব। অতএব তোমরা তারই ইবাদাত করো। এটাই সঠিক পথ।
(সূরা আলে ইমরানু ৫১)
একদল তাকে মানল এবং অন্যদল অস্বীকার করল :
فَاٰمَنَتْ طَّآئِفَةٌ مِّنْ ۢبَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ وَكَفَرَتْ طَّآئِفَةٌۚ فَاَيَّدْنَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا عَلٰى عَدُوِّهِمْ فَاَصْبَحُوْا ظَاهِرِيْنَ
অতঃপর বনী ইসরাঈলের একদল ঈমান আনল এবং একদল কুফরী করল। পরে আমি মুমিনদেরকে তাদের শত্রুদের মুকাবিলায় শক্তিশালী করলাম; ফলে তারা বিজয়ী হলো। (সূরা সাফু ১৪)
হাওয়ারীরা আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে ঈমান আনল :
وَاِذْ اَوْحَيْتُ اِلَى الْحَوَارِيِّيْنَ اَنْ اٰمِنُوْا بِيْ وَبِرَسُوْلِيْۚ قَالُوْاۤ اٰمَنَّا وَاشْهَدْ بِاَنَّنَا مُسْلِمُوْنَ
স্মরণ করো, যখন আমি হাওয়ারীদেরকে এ আদেশ দিয়েছিলাম যে, তোমরা আমার প্রতি ও আমার রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন করো। তখন তারা বলেছিল, আমরা ঈমান আনলাম এবং তুমি সাক্ষী থেকো যে, নিশ্চয় আমরা মুসলিম। (সূরা মায়েদা– ১১১)
তারা দ্বীনের কাজে নবীর সাহায্যকারীতে পরিণত হলো :
قَالَ عِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَ لِلْحَوَارِيِّيْنَ مَنْ اَنْصَارِيْۤ اِلَى اللهِ قَالَ الْحَوَارِيُّوْنَ نَحْنُ اَنْصَارُ اللهِ
মারইয়ামের পুত্র ঈসা হাওয়ারীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, আল্লাহর পথে কে আমার সাহায্যকারী হবে? তখন হাওয়ারীগণ বলেছিল, আমরাই তো আল্লাহর পথে সাহায্যকারী। (সূরা সাফু ১৪)
فَلَمَّاۤ اَحَسَّ عِيْسٰى مِنْهُمُ الْكُفْرَ قَالَ مَنْ اَنْصَارِيْۤ اِلَى اللهِؕ قَالَ الْحَوَارِيُّوْنَ نَحْنُ اَنْصَارُ اللهِۚ اٰمَنَّا بِاللهِۚ وَاشْهَدْ بِاَنَّا مُسْلِمُوْنَ
অতঃপর ঈসা যখন তাদের মধ্যে কুফরী অনুভব করল তখন বলল, আল্লাহর পথে কে আমার সাহায্যকারী হবে? তখন হাওয়ারীরা বলেছিল, আমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হব, কেননা আমরা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছি। আর আপনি সাক্ষী থাকুন যে, নিশ্চয় আমরা মুসলিম। (সূরা আলে ইমরানু ৫২)
তারা আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করল :
رَبَّنَاۤ اٰمَنَّا بِمَاۤ اَنْزَلْتَ وَاتَّبَعْنَا الرَّسُوْلَ فَاكْتُبْنَا مَعَ الشَّاهِدِيْنَ
(তারা বলল) হে আমাদের রব! আপনি যা নাযিল করেছেন আমরা তাতে ঈমান এনেছি এবং রাসূলের আনুগত্য করেছি। সুতরাং আমাদেরকে সাক্ষ্যদানকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন। (সূরা আলে ইমরানু ৫৩)
হাওয়ারীরা নবীর নিকট আসমানী খাদ্য প্রার্থনা করল :
اِذْ قَالَ الْحَوَارِيُّوْنَ يَا عِيْسَى ابْنَ مَرْيَمَ هَلْ يَسْتَطِيْعُ رَبُّكَ اَنْ يُّنَزِّلَ عَلَيْنَا مَآئِدَةً مِّنَ السَّمَآءِؕ قَالَ اتَّقُوا اللهَ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
স্বরণ করো, যখন হাওয়ারীরা বলেছিল, হে মারইয়ামের ছেলে ঈসা! তোমার প্রতিপালক কি আমাদের জন্য আসমান হতে খাদ্যপূর্ণ খাঞ্চা প্রেরণ করতে সক্ষম? তখন সে বলেছিল, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক তবে আল্লাহকে ভয় করো। (সূরা মায়েদা– ১১২)
তারা তাদের উদ্দেশ্য ব্যক্ত করল :
قَالُوْا نُرِيْدُ اَنْ نَّأْكُلَ مِنْهَا وَتَطْمَئِنَّ قُلُوْبُنَا وَنَعْلَمَ اَنْ قَدْ صَدَقْتَنَا وَنَكُوْنَ عَلَيْهَا مِنَ الشَّاهِدِيْنَ
তারা বলেছিল, আমরা চাই যে, তা হতে কিছু খাব এবং আমাদের চিত্ত প্রশান্ত করব। আর আমরা জানতে চাই যে, তুমি আমাদেরকে সত্য বলছ এবং আমরাই তার সাক্ষী। (সূরা মায়েদা– ১১৩)
ঈসা (আঃ) আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন :
قَالَ عِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَ اللّٰهُمَّ رَبَّنَاۤ اَنْزِلْ عَلَيْنَا مَآئِدَةً مِّنَ السَّمَآءِ تَكُوْنُ لَنَا عِيْدًا لِّاَوَّلِنَا وَاٰخِرِنَا وَاٰيَةً مِّنْكَ وَارْزُقْنَا وَاَنْتَ خَيْرُ الرَّازِقِيْنَ
মারইয়ামের ছেলে ঈসা বলল, হে আল্লাহ! আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্য আসমান হতে খাদ্যপূর্ণ খাঞ্চা প্রেরণ করুন; এটা আমাদের ও আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য হবে আনন্দোৎসব এবং তোমার পক্ষ থেকে নিদর্শন। আর আমাদেরকে জীবিকা দান করো; তুমিই তো শ্রেষ্ঠ রিযিকদাতা। (সূরা মায়েদা– ১১৪)
আল্লাহ তাদেরকে সে খাবার দান করলেন এবং সতর্ক করলেন :
قَالَ اللهُ اِنِّيْ مُنَزِّلُهَا عَلَيْكُمْۚ فَمَنْ يَّكْفُرْ بَعْدُ مِنْكُمْ فَاِنِّۤيْ اُعَذِّبُهٗ عَذَابًا لَّاۤ اُعَذِّبُهٗۤ اَحَدًا مِّنَ الْعَالَمِيْنَ
আল্লাহ বললেন, আমিই তোমাদের নিকট তা প্রেরণ করব। কিন্তু এরপর তোমাদের মধ্যে কেউ কুফরী করলে তাকে এমন শাস্তি দেব, যা বিশ্বজগতের অপর কাউকে দেয়া হয়নি। (সূরা মায়েদা– ১১৫)
وَاِذْ اَوْحَيْتُ اِلَى الْحَوَارِيِّيْنَ اَنْ اٰمِنُوْا بِيْ وَبِرَسُوْلِيْۚ قَالُوْاۤ اٰمَنَّا وَاشْهَدْ بِاَنَّنَا مُسْلِمُوْنَ
স্মরণ করো, যখন আমি হাওয়ারীদেরকে এ আদেশ দিয়েছিলাম যে, তোমরা আমার প্রতি ও আমার রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন করো। তখন তারা বলেছিল, আমরা ঈমান আনলাম এবং তুমি সাক্ষী থেকো যে, নিশ্চয় আমরা মুসলিম। (সূরা মায়েদা– ১১১)
তারা দ্বীনের কাজে নবীর সাহায্যকারীতে পরিণত হলো :
قَالَ عِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَ لِلْحَوَارِيِّيْنَ مَنْ اَنْصَارِيْۤ اِلَى اللهِ قَالَ الْحَوَارِيُّوْنَ نَحْنُ اَنْصَارُ اللهِ
মারইয়ামের পুত্র ঈসা হাওয়ারীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, আল্লাহর পথে কে আমার সাহায্যকারী হবে? তখন হাওয়ারীগণ বলেছিল, আমরাই তো আল্লাহর পথে সাহায্যকারী। (সূরা সাফু ১৪)
فَلَمَّاۤ اَحَسَّ عِيْسٰى مِنْهُمُ الْكُفْرَ قَالَ مَنْ اَنْصَارِيْۤ اِلَى اللهِؕ قَالَ الْحَوَارِيُّوْنَ نَحْنُ اَنْصَارُ اللهِۚ اٰمَنَّا بِاللهِۚ وَاشْهَدْ بِاَنَّا مُسْلِمُوْنَ
অতঃপর ঈসা যখন তাদের মধ্যে কুফরী অনুভব করল তখন বলল, আল্লাহর পথে কে আমার সাহায্যকারী হবে? তখন হাওয়ারীরা বলেছিল, আমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হব, কেননা আমরা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছি। আর আপনি সাক্ষী থাকুন যে, নিশ্চয় আমরা মুসলিম। (সূরা আলে ইমরানু ৫২)
তারা আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করল :
رَبَّنَاۤ اٰمَنَّا بِمَاۤ اَنْزَلْتَ وَاتَّبَعْنَا الرَّسُوْلَ فَاكْتُبْنَا مَعَ الشَّاهِدِيْنَ
(তারা বলল) হে আমাদের রব! আপনি যা নাযিল করেছেন আমরা তাতে ঈমান এনেছি এবং রাসূলের আনুগত্য করেছি। সুতরাং আমাদেরকে সাক্ষ্যদানকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন। (সূরা আলে ইমরানু ৫৩)
হাওয়ারীরা নবীর নিকট আসমানী খাদ্য প্রার্থনা করল :
اِذْ قَالَ الْحَوَارِيُّوْنَ يَا عِيْسَى ابْنَ مَرْيَمَ هَلْ يَسْتَطِيْعُ رَبُّكَ اَنْ يُّنَزِّلَ عَلَيْنَا مَآئِدَةً مِّنَ السَّمَآءِؕ قَالَ اتَّقُوا اللهَ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
স্বরণ করো, যখন হাওয়ারীরা বলেছিল, হে মারইয়ামের ছেলে ঈসা! তোমার প্রতিপালক কি আমাদের জন্য আসমান হতে খাদ্যপূর্ণ খাঞ্চা প্রেরণ করতে সক্ষম? তখন সে বলেছিল, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক তবে আল্লাহকে ভয় করো। (সূরা মায়েদা– ১১২)
তারা তাদের উদ্দেশ্য ব্যক্ত করল :
قَالُوْا نُرِيْدُ اَنْ نَّأْكُلَ مِنْهَا وَتَطْمَئِنَّ قُلُوْبُنَا وَنَعْلَمَ اَنْ قَدْ صَدَقْتَنَا وَنَكُوْنَ عَلَيْهَا مِنَ الشَّاهِدِيْنَ
তারা বলেছিল, আমরা চাই যে, তা হতে কিছু খাব এবং আমাদের চিত্ত প্রশান্ত করব। আর আমরা জানতে চাই যে, তুমি আমাদেরকে সত্য বলছ এবং আমরাই তার সাক্ষী। (সূরা মায়েদা– ১১৩)
ঈসা (আঃ) আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন :
قَالَ عِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَ اللّٰهُمَّ رَبَّنَاۤ اَنْزِلْ عَلَيْنَا مَآئِدَةً مِّنَ السَّمَآءِ تَكُوْنُ لَنَا عِيْدًا لِّاَوَّلِنَا وَاٰخِرِنَا وَاٰيَةً مِّنْكَ وَارْزُقْنَا وَاَنْتَ خَيْرُ الرَّازِقِيْنَ
মারইয়ামের ছেলে ঈসা বলল, হে আল্লাহ! আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্য আসমান হতে খাদ্যপূর্ণ খাঞ্চা প্রেরণ করুন; এটা আমাদের ও আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য হবে আনন্দোৎসব এবং তোমার পক্ষ থেকে নিদর্শন। আর আমাদেরকে জীবিকা দান করো; তুমিই তো শ্রেষ্ঠ রিযিকদাতা। (সূরা মায়েদা– ১১৪)
আল্লাহ তাদেরকে সে খাবার দান করলেন এবং সতর্ক করলেন :
قَالَ اللهُ اِنِّيْ مُنَزِّلُهَا عَلَيْكُمْۚ فَمَنْ يَّكْفُرْ بَعْدُ مِنْكُمْ فَاِنِّۤيْ اُعَذِّبُهٗ عَذَابًا لَّاۤ اُعَذِّبُهٗۤ اَحَدًا مِّنَ الْعَالَمِيْنَ
আল্লাহ বললেন, আমিই তোমাদের নিকট তা প্রেরণ করব। কিন্তু এরপর তোমাদের মধ্যে কেউ কুফরী করলে তাকে এমন শাস্তি দেব, যা বিশ্বজগতের অপর কাউকে দেয়া হয়নি। (সূরা মায়েদা– ১১৫)
তিনি নিজেকে আল্লাহ বলে দাবী করেননি :
مَا كَانَ لِبَشَرٍ اَنْ يُّؤْتِيَهُ اللهُ الْكِتَابَ وَالْحُكْمَ وَالنُّبُوَّةَ ثُمَّ يَقُوْلَ لِلنَّاسِ كُوْنُوْا عِبَادًا لِّيْ مِنْ دُوْنِ اللهِ وَلٰكِنْ كُوْنُوْا رَبَّانِيِّيْنَ بِمَا كُنْتُمْ تُعَلِّمُوْنَ الْكِتَابَ وَبِمَا كُنْتُمْ تَدْرُسُوْنَ
কোন মানুষের জন্য এটা সমীচিন নয় যে, আল্লাহ তাকে কিতাব, জ্ঞান ও নবুওয়াত দান করবেন। অতঃপর সে মানুষদেরকে বলবে, তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে আমার বান্দা হয়ে যাও। বরং তার বলা উচিত, তোমরা আল্লাহওয়ালা হয়ে যাও। এ কারণে যে, তোমরা কিতাবের জ্ঞান শিক্ষা দিচ্ছ এবং তা পাঠ করছ। (সূরা আলে ইমরানু ৭৯)
যারা তাকে আল্লাহ বলেছে তারা কাফির :
لَقَدْ كَفَرَ الَّذِيْنَ قَالُوْاۤ اِنَّ اللهَ هُوَ الْمَسِيْحُ ابْنُ مَرْيَمَؕ قُلْ فَمَنْ يَّمْلِكُ مِنَ اللهِ شَيْئًا اِنْ اَرَادَ اَنْ يُّهْلِكَ الْمَسِيْحَ ابْنَ مَرْيَمَ وَاُمَّهٗ وَمَنْ فِى الْاَرْضِ
যারা বলে, মারইয়ামের ছেলে মাসীহই আল্লাহ, তারা তো কুফরী করেছে। বলো, আল্লাহ যদি মারইয়ামের ছেলে মাসীহ, তাঁর মা এবং দুনিয়ার সকলকে ধ্বংস করতে ইচ্ছা করেন, তবে তাঁকে বাধা দেয়ার মতো ক্ষমতা কারো আছে কি? (সূরা মায়েদা– ১৭)
তিনি তার জাতিকে শিরক করতে নিষেধ করেছেন :
وَقَالَ الْمَسِيْحُ يَا بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ اعْبُدُوا اللهَ رَبِّيْ وَرَبَّكُمْؕ اِنَّهٗ مَنْ يُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُؕ وَمَا لِلظَّالِمِيْنَ مِنْ اَنْصَارٍ
মাসীহ বলেছিল, হে বনী ইসরাঈল! তোমরা আমার প্রতিপালক ও তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহর ইবাদাত করো। কেউ আল্লাহর সাথে শরীক করলে অবশ্যই আল্লাহ তার জন্য জান্নাত নিষিদ্ধ (হারাম) করে দেবেন এবং তার আবাস হবে জাহান্নাম। আর যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। (সূরা মায়েদা– ৭২)
তিনি ছিলেন একজন রাসূল এবং তার মাতাও ছিলেন একজন সত্যনিষ্ঠা :
مَا الْمَسِيْحُ ابْنُ مَرْيَمَ اِلَّا رَسُوْلٌۚ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُؕ وَاُمُّهٗ صِدِّيْقَةٌ
মারইয়ামের ছেলে মাসীহ তো কেবল একজন রাসূল, তার পূর্বে বহু রাসূল গত হয়ে গেছে। আর তার মাতাও ছিল পরম সত্যনিষ্ঠা। (সূরা মায়েদা– ৭৫)
ঈসা (আঃ) অথবা তার মা ইলাহ্ নয় :
اِنَّمَا الْمَسِيْحُ عِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَ رَسُوْلُ اللهِ وَكَلِمَتُهۚٗ اَلْقَاهَاۤ اِلٰى مَرْيَمَ وَرُوْحٌ مِّنْهُؗ فَاٰمِنُوْا بِاللهِ وَرُسُلِه ۚ وَلَا تَقُوْلُوْا ثَلَاثَةٌؕ اِنْتَهُوْا خَيْرًا لَّكُمْ
নিশ্চয় মারইয়ামের ছেলে ঈসা মাসীহ আল্লাহর রাসূল এবং তাঁর বাণী, যা তিনি মারইয়ামের নিকট প্রেরণ করেছিলেন ও সে তাঁর রূহ (আদেশ)। সুতরাং তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনয়ন করো এবং (ইলাহের সংখ্যা) ‘তিন’ বলো না, বরং তা হতে নিবৃত্ত হও। আর এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর। (সূরা নিসা– ১৭১)
আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাকে প্রশ্ন করবেন এবং তিনি উত্তর দেবেন :
وَاِذْ قَالَ اللهُ يَا عِيْسَى ابْنَ مَرْيَمَ اَاَنْتَ قُلْتَ لِلنَّاسِ اتَّخِذُوْنِيْ وَاُمِّيَ اِلٰهَيْنِ مِنْ دُوْنِ اللهِؕ قَالَ سُبْحَانَكَ مَا يَكُوْنُ لِۤيْ اَنْ اَقُوْلَ مَا لَيْسَ لِيْۗ بِحَقٍّؕ اِنْ كُنْتُ قُلْتُهٗ فَقَدْ عَلِمْتَهٗؕ تَعْلَمُ مَا فِيْ نَفْسِيْ وَلَاۤ اَعْلَمُ مَا فِيْ نَفْسِكَؕ اِنَّكَ اَنْتَ عَلَّامُ الْغُيُوْبِ
যখন আল্লাহ বললেন, হে মারইয়ামের ছেলে ঈসা! তুমি কি লোকদেরকে বলেছিলে যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া আমাকে ও আমার মাকে দু‘জন ইলাহ্ হিসেবে গ্রহণ করো? তখন সে বলবে, তুমি মহিমান্বিত! যা বলার অধিকার আমার নেই তা বলা আমার পক্ষে শোভনীয় নয়। যদি আমি তা বলতাম, তবে তুমি তো তা জানতে। তাছাড়া আমার অন্তরের কথা তুমি তো অবগত আছই, কিন্তু তোমার অন্তরের কথা আমি অবগত নই। নিশ্চয় তুমি অদৃশ্য সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত। (সূরা মায়েদা– ১১৬)
ঈসা (আঃ) সত্য কথা প্রকাশ করে দেবেন :
مَا قُلْتُ لَهُمْ اِلَّا مَاۤ اَمَرْتَنِيْ بِه ۤ اَنِ اعْبُدُوا اللهَ رَبِّيْ وَرَبَّكُمْؕ وَكُنْتُ عَلَيْهِمْ شَهِيْدًا مَّا دُمْتُ فِيْهِمْۚ فَلَمَّا تَوَفَّيْتَنِيْ كُنْتَ اَنْتَ الرَّقِيْبَ عَلَيْهِمْؕ وَاَنْتَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ شَهِيْدٌ
তুমি আমাকে যে আদেশ করেছ তা ব্যতীত তাদেরকে আমি কিছুই বলিনি। আর তা হচ্ছে যে, তোমরা আমার ও তোমাদের প্রতিপালকের ইবাদাত করো এবং যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম ততদিন আমি ছিলাম তাদের কার্যকলাপের সাক্ষী। কিন্তু যখন তুমি আমাকে তুলে নিলে, তখন তুমিই তো ছিলে তাদের কার্যকলাপের তত্ত্বাবধায়ক এবং তুমিই ছিল সর্ববিষয়ে সাক্ষী। (সূরা মায়েদা– ১১৭)
তিনি কিয়ামতের দিন জাতির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবেন :
وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكُوْنُ عَلَيْهِمْ شَهِيْدًا
কিয়ামতের দিন সে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। (সূরা নিসা– ১৫৯)
مَا كَانَ لِبَشَرٍ اَنْ يُّؤْتِيَهُ اللهُ الْكِتَابَ وَالْحُكْمَ وَالنُّبُوَّةَ ثُمَّ يَقُوْلَ لِلنَّاسِ كُوْنُوْا عِبَادًا لِّيْ مِنْ دُوْنِ اللهِ وَلٰكِنْ كُوْنُوْا رَبَّانِيِّيْنَ بِمَا كُنْتُمْ تُعَلِّمُوْنَ الْكِتَابَ وَبِمَا كُنْتُمْ تَدْرُسُوْنَ
কোন মানুষের জন্য এটা সমীচিন নয় যে, আল্লাহ তাকে কিতাব, জ্ঞান ও নবুওয়াত দান করবেন। অতঃপর সে মানুষদেরকে বলবে, তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে আমার বান্দা হয়ে যাও। বরং তার বলা উচিত, তোমরা আল্লাহওয়ালা হয়ে যাও। এ কারণে যে, তোমরা কিতাবের জ্ঞান শিক্ষা দিচ্ছ এবং তা পাঠ করছ। (সূরা আলে ইমরানু ৭৯)
যারা তাকে আল্লাহ বলেছে তারা কাফির :
لَقَدْ كَفَرَ الَّذِيْنَ قَالُوْاۤ اِنَّ اللهَ هُوَ الْمَسِيْحُ ابْنُ مَرْيَمَؕ قُلْ فَمَنْ يَّمْلِكُ مِنَ اللهِ شَيْئًا اِنْ اَرَادَ اَنْ يُّهْلِكَ الْمَسِيْحَ ابْنَ مَرْيَمَ وَاُمَّهٗ وَمَنْ فِى الْاَرْضِ
যারা বলে, মারইয়ামের ছেলে মাসীহই আল্লাহ, তারা তো কুফরী করেছে। বলো, আল্লাহ যদি মারইয়ামের ছেলে মাসীহ, তাঁর মা এবং দুনিয়ার সকলকে ধ্বংস করতে ইচ্ছা করেন, তবে তাঁকে বাধা দেয়ার মতো ক্ষমতা কারো আছে কি? (সূরা মায়েদা– ১৭)
তিনি তার জাতিকে শিরক করতে নিষেধ করেছেন :
وَقَالَ الْمَسِيْحُ يَا بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ اعْبُدُوا اللهَ رَبِّيْ وَرَبَّكُمْؕ اِنَّهٗ مَنْ يُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُؕ وَمَا لِلظَّالِمِيْنَ مِنْ اَنْصَارٍ
মাসীহ বলেছিল, হে বনী ইসরাঈল! তোমরা আমার প্রতিপালক ও তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহর ইবাদাত করো। কেউ আল্লাহর সাথে শরীক করলে অবশ্যই আল্লাহ তার জন্য জান্নাত নিষিদ্ধ (হারাম) করে দেবেন এবং তার আবাস হবে জাহান্নাম। আর যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। (সূরা মায়েদা– ৭২)
তিনি ছিলেন একজন রাসূল এবং তার মাতাও ছিলেন একজন সত্যনিষ্ঠা :
مَا الْمَسِيْحُ ابْنُ مَرْيَمَ اِلَّا رَسُوْلٌۚ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُؕ وَاُمُّهٗ صِدِّيْقَةٌ
মারইয়ামের ছেলে মাসীহ তো কেবল একজন রাসূল, তার পূর্বে বহু রাসূল গত হয়ে গেছে। আর তার মাতাও ছিল পরম সত্যনিষ্ঠা। (সূরা মায়েদা– ৭৫)
ঈসা (আঃ) অথবা তার মা ইলাহ্ নয় :
اِنَّمَا الْمَسِيْحُ عِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَ رَسُوْلُ اللهِ وَكَلِمَتُهۚٗ اَلْقَاهَاۤ اِلٰى مَرْيَمَ وَرُوْحٌ مِّنْهُؗ فَاٰمِنُوْا بِاللهِ وَرُسُلِه ۚ وَلَا تَقُوْلُوْا ثَلَاثَةٌؕ اِنْتَهُوْا خَيْرًا لَّكُمْ
নিশ্চয় মারইয়ামের ছেলে ঈসা মাসীহ আল্লাহর রাসূল এবং তাঁর বাণী, যা তিনি মারইয়ামের নিকট প্রেরণ করেছিলেন ও সে তাঁর রূহ (আদেশ)। সুতরাং তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনয়ন করো এবং (ইলাহের সংখ্যা) ‘তিন’ বলো না, বরং তা হতে নিবৃত্ত হও। আর এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর। (সূরা নিসা– ১৭১)
আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাকে প্রশ্ন করবেন এবং তিনি উত্তর দেবেন :
وَاِذْ قَالَ اللهُ يَا عِيْسَى ابْنَ مَرْيَمَ اَاَنْتَ قُلْتَ لِلنَّاسِ اتَّخِذُوْنِيْ وَاُمِّيَ اِلٰهَيْنِ مِنْ دُوْنِ اللهِؕ قَالَ سُبْحَانَكَ مَا يَكُوْنُ لِۤيْ اَنْ اَقُوْلَ مَا لَيْسَ لِيْۗ بِحَقٍّؕ اِنْ كُنْتُ قُلْتُهٗ فَقَدْ عَلِمْتَهٗؕ تَعْلَمُ مَا فِيْ نَفْسِيْ وَلَاۤ اَعْلَمُ مَا فِيْ نَفْسِكَؕ اِنَّكَ اَنْتَ عَلَّامُ الْغُيُوْبِ
যখন আল্লাহ বললেন, হে মারইয়ামের ছেলে ঈসা! তুমি কি লোকদেরকে বলেছিলে যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া আমাকে ও আমার মাকে দু‘জন ইলাহ্ হিসেবে গ্রহণ করো? তখন সে বলবে, তুমি মহিমান্বিত! যা বলার অধিকার আমার নেই তা বলা আমার পক্ষে শোভনীয় নয়। যদি আমি তা বলতাম, তবে তুমি তো তা জানতে। তাছাড়া আমার অন্তরের কথা তুমি তো অবগত আছই, কিন্তু তোমার অন্তরের কথা আমি অবগত নই। নিশ্চয় তুমি অদৃশ্য সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত। (সূরা মায়েদা– ১১৬)
ঈসা (আঃ) সত্য কথা প্রকাশ করে দেবেন :
مَا قُلْتُ لَهُمْ اِلَّا مَاۤ اَمَرْتَنِيْ بِه ۤ اَنِ اعْبُدُوا اللهَ رَبِّيْ وَرَبَّكُمْؕ وَكُنْتُ عَلَيْهِمْ شَهِيْدًا مَّا دُمْتُ فِيْهِمْۚ فَلَمَّا تَوَفَّيْتَنِيْ كُنْتَ اَنْتَ الرَّقِيْبَ عَلَيْهِمْؕ وَاَنْتَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ شَهِيْدٌ
তুমি আমাকে যে আদেশ করেছ তা ব্যতীত তাদেরকে আমি কিছুই বলিনি। আর তা হচ্ছে যে, তোমরা আমার ও তোমাদের প্রতিপালকের ইবাদাত করো এবং যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম ততদিন আমি ছিলাম তাদের কার্যকলাপের সাক্ষী। কিন্তু যখন তুমি আমাকে তুলে নিলে, তখন তুমিই তো ছিলে তাদের কার্যকলাপের তত্ত্বাবধায়ক এবং তুমিই ছিল সর্ববিষয়ে সাক্ষী। (সূরা মায়েদা– ১১৭)
তিনি কিয়ামতের দিন জাতির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবেন :
وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكُوْنُ عَلَيْهِمْ شَهِيْدًا
কিয়ামতের দিন সে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। (সূরা নিসা– ১৫৯)
খ্রিস্টানরা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল :
وَمَكَرُوْا وَمَكَرَ اللهُؕ وَاللهُ خَيْرُ الْمَاكِرِيْنَ
তারা কৌশল করেছিল এবং আল্লাহও কৌশল গ্রহণ করলেন। মূলত আল্লাহই উত্তম কৌশলী। (সূরা আলে ইমরানু ৫৪)
ইয়াহুদিরা তাকে হত্যা করেছে বলে মনে করত :
اِنَّا قَتَلْنَا الْمَسِيْحَ عِيْسَى ابْنَ مَرْيَمَ رَسُوْلَ اللهِ
(ইয়াহুদিরা বলত) নিশ্চয় আমরা আল্লাহর রাসূল মারইয়ামের পুত্র ঈসা মাসীহকে হত্যা করেছি। (সূরা নিসা– ১৫৭)
ব্যাখ্যা : তাদের অপরাধ করার দুঃসাহস এতই বেড়ে গিয়েছিল, যার ফলে তারা আল্লাহর রাসূলকে রাসূল জেনেও তাকে হত্যা করার পদক্ষেপ নিয়েছিল এবং গর্ব করে বলেছিল, আমরা আল্লাহর রাসূলকে হত্যা করেছি। কোন জাতি এক ব্যক্তিকে নবী বলে জানার পরও তাকে হত্যা করেছে- এটা একটা বিস্ময়কর ব্যাপার মনে হলেও দুনিয়ার বিকৃত জাতিদের কাজকর্ম এমন বিস্ময়করই হয়ে থাকে। যে ব্যক্তি তাদের অন্যায় ও পাপকাজের সমালোচনা করে এবং তাদের অবৈধ কাজে বাধা দেয়, এমন কোন ব্যক্তিকে তারা সহ্য করতে পারে না। নবী হলেও এ ধরনের লোকেরা সর্বদা অসৎ, দুশ্চরিত্র ও পাপাচারী জাতিদের হাতে কারাযন্ত্রণা ও মৃত্যুদন্ড ভোগ করে এসেছেন।
আসলে তারা ঈসা (আঃ) কে হত্যা করতে পারেনি :
وَمَا قَتَلُوْهُ وَمَا صَلَبُوْهُ وَلٰكِنْ شُبِّهَ لَهُمْؕ وَاِنَّ الَّذِيْنَ اخْتَلَفُوْا فِيْهِ لَفِيْ شَكٍّ مِّنْهُؕ مَا لَهُمْ بِهٖ مِنْ عِلْمٍ اِلَّا اتِّبَاعَ الظَّنِّۚ وَمَا قَتَلُوْهُ يَقِيْنًا
তারা তাকে হত্যা করেনি এবং ক্রুশবিদ্ধও করেনি; কিন্তু তাদেরকে বিভ্রান্ত করা হয়েছিল। আর যারা তার সম্বন্ধে মতভেদ করেছিল, তারা এ সম্বন্ধে সংশয়যুক্ত ছিল; এ সম্পর্কে অনুমানের অনুসরণ ব্যতীত তাদের অন্য কোন জ্ঞানই ছিল না। তবে এটা নিশ্চিত যে, তারা তাকে হত্যা করেনি। (সূরা নিসা– ১৫৭)
আল্লাহ তাঁকে আকাশে উঠিয়ে নিয়েছেন :
اِذْ قَالَ اللهُ يَا عِيْسٰۤى اِنِّيْ مُتَوَفِّيْكَ وَرَافِعُكَ اِلَيَّ
স্মরণ করো, যখন আল্লাহ বললেন, হে ঈসা! নিশ্চয় আমি তোমাকে মৃত্যু দেব ও তোমাকে আমার দিকে তুলে নেব। (সূরা আলে ইমরানু ৫৫)
بَلْ رَّفَعَهُ اللهُ اِلَيْهِؕ وَكَانَ اللهُ عَزِيْزًا حَكِيْمًا
বরং আল্লাহ তাকে তাঁর নিকট তুলে নিয়েছেন। আর (এ ব্যাপারে) আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা– ১৫৮)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতটি দ্ব্যর্থহীনভাবে এ কথা প্রমাণ করে যে, ঈসা (আঃ) কে শূলে চড়ানোর আগেই উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল। আর ঈসা (আঃ) শূলবিদ্ধ হয়ে জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন বলে খ্রিস্টান ও ইয়াহুদিরা যে ধারণা পোষণ করে তা নিছক একটি ভুল বুঝাবুঝি ছাড়া আর কিছুই নয়। ইয়াহুদিরা যে ব্যক্তিকে শূলে চড়িয়েছিল সে ঈসা ইবনে মারইয়াম ছিল না। তাছাড়া ঈসা (আঃ) কে শূলে চড়ানোর ব্যাপারে তাদের কোন সর্বসম্মত মত বা বক্তব্য নেই। এ ব্যাপারে তাদের মধ্যে বহু মতের প্রচলন রয়েছে।
তাদের একদল বলে, যে ব্যক্তিকে শূলে চড়ানো হয়েছিল সে ঈসা মাসীহ ছিল না। ঈসার চেহারায় সে ছিল অন্য এক ব্যক্তি। ইয়াহুদি ও রোমীয় সৈন্যরা তাকে লাঞ্ছনার সাথে শূলে চড়িয়েছিল। আর ঈসা মাসীহ সেখানে কোন এক স্থানে দাঁড়িয়ে তাদের নির্বুদ্ধিতায় হাসছিলেন।
অন্য একদল বলে, ঈসা মাসীহকেই শূলে চড়ানো হয়েছিলো। কিন্তু এতে তার মৃত্যু হয়নি বরং নামিয়ে নেয়ার পরও তার মধ্যে প্রাণ ছিল।
আরেক দল বলে, তিনি শূলে মৃত্যুবরণ করেছিলেন আবার প্রাণ লাভ করেছিলেন। এরপর কমপক্ষে দশ বার নিজের হাওয়ারীদের সাথে সাক্ষাৎ করে তাদের সাথে আলাপ করেছিলেন।
আরেক দল বলে, মরার পর ঈসা মাসীহ (আঃ) এ জড়দেহসহ জীবিত হয়ে গিয়েছিলেন এবং তাকে সশরীরেই উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। তাদের এ অসংখ্য মতামতই প্রমাণ করে যে, আসল ব্যাপারটি তাদের কাছে সংশয়পূর্ণই রয়ে গেছে। আসল সত্য ঘটনাটি তাদের জানা থাকলে সে সম্পর্কে এতগুলো পরস্পর বিরোধী কথা ও মত তাদের মধ্যে প্রচলিত থাকত না।
وَمَكَرُوْا وَمَكَرَ اللهُؕ وَاللهُ خَيْرُ الْمَاكِرِيْنَ
তারা কৌশল করেছিল এবং আল্লাহও কৌশল গ্রহণ করলেন। মূলত আল্লাহই উত্তম কৌশলী। (সূরা আলে ইমরানু ৫৪)
ইয়াহুদিরা তাকে হত্যা করেছে বলে মনে করত :
اِنَّا قَتَلْنَا الْمَسِيْحَ عِيْسَى ابْنَ مَرْيَمَ رَسُوْلَ اللهِ
(ইয়াহুদিরা বলত) নিশ্চয় আমরা আল্লাহর রাসূল মারইয়ামের পুত্র ঈসা মাসীহকে হত্যা করেছি। (সূরা নিসা– ১৫৭)
ব্যাখ্যা : তাদের অপরাধ করার দুঃসাহস এতই বেড়ে গিয়েছিল, যার ফলে তারা আল্লাহর রাসূলকে রাসূল জেনেও তাকে হত্যা করার পদক্ষেপ নিয়েছিল এবং গর্ব করে বলেছিল, আমরা আল্লাহর রাসূলকে হত্যা করেছি। কোন জাতি এক ব্যক্তিকে নবী বলে জানার পরও তাকে হত্যা করেছে- এটা একটা বিস্ময়কর ব্যাপার মনে হলেও দুনিয়ার বিকৃত জাতিদের কাজকর্ম এমন বিস্ময়করই হয়ে থাকে। যে ব্যক্তি তাদের অন্যায় ও পাপকাজের সমালোচনা করে এবং তাদের অবৈধ কাজে বাধা দেয়, এমন কোন ব্যক্তিকে তারা সহ্য করতে পারে না। নবী হলেও এ ধরনের লোকেরা সর্বদা অসৎ, দুশ্চরিত্র ও পাপাচারী জাতিদের হাতে কারাযন্ত্রণা ও মৃত্যুদন্ড ভোগ করে এসেছেন।
আসলে তারা ঈসা (আঃ) কে হত্যা করতে পারেনি :
وَمَا قَتَلُوْهُ وَمَا صَلَبُوْهُ وَلٰكِنْ شُبِّهَ لَهُمْؕ وَاِنَّ الَّذِيْنَ اخْتَلَفُوْا فِيْهِ لَفِيْ شَكٍّ مِّنْهُؕ مَا لَهُمْ بِهٖ مِنْ عِلْمٍ اِلَّا اتِّبَاعَ الظَّنِّۚ وَمَا قَتَلُوْهُ يَقِيْنًا
তারা তাকে হত্যা করেনি এবং ক্রুশবিদ্ধও করেনি; কিন্তু তাদেরকে বিভ্রান্ত করা হয়েছিল। আর যারা তার সম্বন্ধে মতভেদ করেছিল, তারা এ সম্বন্ধে সংশয়যুক্ত ছিল; এ সম্পর্কে অনুমানের অনুসরণ ব্যতীত তাদের অন্য কোন জ্ঞানই ছিল না। তবে এটা নিশ্চিত যে, তারা তাকে হত্যা করেনি। (সূরা নিসা– ১৫৭)
আল্লাহ তাঁকে আকাশে উঠিয়ে নিয়েছেন :
اِذْ قَالَ اللهُ يَا عِيْسٰۤى اِنِّيْ مُتَوَفِّيْكَ وَرَافِعُكَ اِلَيَّ
স্মরণ করো, যখন আল্লাহ বললেন, হে ঈসা! নিশ্চয় আমি তোমাকে মৃত্যু দেব ও তোমাকে আমার দিকে তুলে নেব। (সূরা আলে ইমরানু ৫৫)
بَلْ رَّفَعَهُ اللهُ اِلَيْهِؕ وَكَانَ اللهُ عَزِيْزًا حَكِيْمًا
বরং আল্লাহ তাকে তাঁর নিকট তুলে নিয়েছেন। আর (এ ব্যাপারে) আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা– ১৫৮)
ব্যাখ্যা : এ আয়াতটি দ্ব্যর্থহীনভাবে এ কথা প্রমাণ করে যে, ঈসা (আঃ) কে শূলে চড়ানোর আগেই উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল। আর ঈসা (আঃ) শূলবিদ্ধ হয়ে জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন বলে খ্রিস্টান ও ইয়াহুদিরা যে ধারণা পোষণ করে তা নিছক একটি ভুল বুঝাবুঝি ছাড়া আর কিছুই নয়। ইয়াহুদিরা যে ব্যক্তিকে শূলে চড়িয়েছিল সে ঈসা ইবনে মারইয়াম ছিল না। তাছাড়া ঈসা (আঃ) কে শূলে চড়ানোর ব্যাপারে তাদের কোন সর্বসম্মত মত বা বক্তব্য নেই। এ ব্যাপারে তাদের মধ্যে বহু মতের প্রচলন রয়েছে।
তাদের একদল বলে, যে ব্যক্তিকে শূলে চড়ানো হয়েছিল সে ঈসা মাসীহ ছিল না। ঈসার চেহারায় সে ছিল অন্য এক ব্যক্তি। ইয়াহুদি ও রোমীয় সৈন্যরা তাকে লাঞ্ছনার সাথে শূলে চড়িয়েছিল। আর ঈসা মাসীহ সেখানে কোন এক স্থানে দাঁড়িয়ে তাদের নির্বুদ্ধিতায় হাসছিলেন।
অন্য একদল বলে, ঈসা মাসীহকেই শূলে চড়ানো হয়েছিলো। কিন্তু এতে তার মৃত্যু হয়নি বরং নামিয়ে নেয়ার পরও তার মধ্যে প্রাণ ছিল।
আরেক দল বলে, তিনি শূলে মৃত্যুবরণ করেছিলেন আবার প্রাণ লাভ করেছিলেন। এরপর কমপক্ষে দশ বার নিজের হাওয়ারীদের সাথে সাক্ষাৎ করে তাদের সাথে আলাপ করেছিলেন।
আরেক দল বলে, মরার পর ঈসা মাসীহ (আঃ) এ জড়দেহসহ জীবিত হয়ে গিয়েছিলেন এবং তাকে সশরীরেই উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। তাদের এ অসংখ্য মতামতই প্রমাণ করে যে, আসল ব্যাপারটি তাদের কাছে সংশয়পূর্ণই রয়ে গেছে। আসল সত্য ঘটনাটি তাদের জানা থাকলে সে সম্পর্কে এতগুলো পরস্পর বিরোধী কথা ও মত তাদের মধ্যে প্রচলিত থাকত না।
আল্লাহ তা‘আলা যুগে যুগে মানবজাতিকে হেদায়াত করার ও সঠিক পথের সন্ধান দানের জন্য যে সকল নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন তন্মধ্যে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল হলেন মুহাম্মাদ ﷺ। তিনি ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে মক্কা নগরীতে কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবদুল্লাহ ও মাতার নাম আমিনা। মানবজাতির জীবনবিধান হিসেবে তাঁর উপর অবর্তীণ হয়েছে আল কুরআন। আল্লাহর ঘোষণা অনুযায়ী মুহাম্মাদ ﷺ সর্বশেষ নবী। তাঁর পর আর কোন নবী আসবে না।
মুহাম্মাদ ﷺ সর্বশেষ নবী ও রাসূল :
مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ
মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। (সূরা ফাতহ- ২৯)
مَا كَانَ مُحَمَّدٌ اَبَاۤ اَحَدٍ مِّنْ رِّجَالِكُمْ وَلٰكِنْ رَّسُوْلَ اللهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّيْنَؕ وَكَانَ اللهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمًا
মুহাম্মাদ তোমাদের মধ্যকার কোন পুরুষের পিতা নন, বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং সর্বশেষ নবী। আল্লাহ সকল বিষয়ে সর্বজ্ঞ। (সূরা আহযাব- ৪০)
তাঁর আগমনের জন্য ইবরাহীম (আঃ) এর দু‘আ :
رَبَّنَا وَابْعَثْ فِيْهِمْ رَسُوْلًا مِّنْهُمْ يَتْلُوْا عَلَيْهِمْ اٰيَاتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُزَكِّيْهِمْؕ اِنَّكَ اَنْتَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
হে আমাদের রব! তাদের কাছে তাদেরই মধ্য হতে এমন একজন রাসূল প্রেরণ করুন, যিনি তাদেরকে আপনার আয়াতসমূহ পাঠ করে শুনাবেন, তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দেবেন এবং তাদেরকে পবিত্র করবেন। নিশ্চয় আপনি মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা বাক্বারা- ১২৯)
ঈসা (আঃ) মুহাম্মাদ ﷺ এর আগমনের সুসংবাদ দিয়েছিলেন :
وَاِذْ قَالَ عِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَ يَا بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ اِنِّيْ رَسُوْلُ اللهِ اِلَيْكُمْ مُّصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيَّ مِنَ التَّوْرَاةِ وَمُبَشِّرًا ۢبِرَسُوْلٍ يَّأْتِيْ مِنْ ۢ بَعْدِى اسْمُهٗۤ اَحْمَدُ
(স্মরণ করো) যখন মারইয়ামের পুত্র ঈসা বলেছিল, হে বনী ইসরাঈল! আমি তোমাদের নিকট আল্লাহর রাসূল এবং আমার পূর্ব হতে তোমাদের নিকট যে তাওরাত রয়েছে আমি তার সত্যায়নকারী। আর আমার পরে আহমাদ নামে যে রাসূল আসবেন আমি তাঁর সুসংবাদদাতা। (সূরা সাফ- ৬)
মুহাম্মাদ ﷺ কে পাঠানো আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ :
لَقَدْ مَنَّ اللهُ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ اِذْ بَعَثَ فِيْهِمْ رَسُوْلًا مِّنْ اَنْفُسِهِمْ يَتْلُوْا عَلَيْهِمْ اٰيَاتِه وَيُزَكِّيْهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَۚ وَاِنْ كَانُوْا مِنْ قَبْلُ لَفِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ
নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্বাসীদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, যখন তিনি তাদের নিজেদেরই মধ্য হতে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের নিকট তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও বিজ্ঞান শিক্ষা দান করেন। অথচ তারা (সবাই) ইতোপূর্বে প্রকাশ্য ভ্রান্তিতে নিমজ্জিত ছিল। (সূরা আলে ইমরান- ১৬৪)
مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ
মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। (সূরা ফাতহ- ২৯)
مَا كَانَ مُحَمَّدٌ اَبَاۤ اَحَدٍ مِّنْ رِّجَالِكُمْ وَلٰكِنْ رَّسُوْلَ اللهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّيْنَؕ وَكَانَ اللهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمًا
মুহাম্মাদ তোমাদের মধ্যকার কোন পুরুষের পিতা নন, বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং সর্বশেষ নবী। আল্লাহ সকল বিষয়ে সর্বজ্ঞ। (সূরা আহযাব- ৪০)
তাঁর আগমনের জন্য ইবরাহীম (আঃ) এর দু‘আ :
رَبَّنَا وَابْعَثْ فِيْهِمْ رَسُوْلًا مِّنْهُمْ يَتْلُوْا عَلَيْهِمْ اٰيَاتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُزَكِّيْهِمْؕ اِنَّكَ اَنْتَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
হে আমাদের রব! তাদের কাছে তাদেরই মধ্য হতে এমন একজন রাসূল প্রেরণ করুন, যিনি তাদেরকে আপনার আয়াতসমূহ পাঠ করে শুনাবেন, তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দেবেন এবং তাদেরকে পবিত্র করবেন। নিশ্চয় আপনি মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা বাক্বারা- ১২৯)
ঈসা (আঃ) মুহাম্মাদ ﷺ এর আগমনের সুসংবাদ দিয়েছিলেন :
وَاِذْ قَالَ عِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَ يَا بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ اِنِّيْ رَسُوْلُ اللهِ اِلَيْكُمْ مُّصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيَّ مِنَ التَّوْرَاةِ وَمُبَشِّرًا ۢبِرَسُوْلٍ يَّأْتِيْ مِنْ ۢ بَعْدِى اسْمُهٗۤ اَحْمَدُ
(স্মরণ করো) যখন মারইয়ামের পুত্র ঈসা বলেছিল, হে বনী ইসরাঈল! আমি তোমাদের নিকট আল্লাহর রাসূল এবং আমার পূর্ব হতে তোমাদের নিকট যে তাওরাত রয়েছে আমি তার সত্যায়নকারী। আর আমার পরে আহমাদ নামে যে রাসূল আসবেন আমি তাঁর সুসংবাদদাতা। (সূরা সাফ- ৬)
মুহাম্মাদ ﷺ কে পাঠানো আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ :
لَقَدْ مَنَّ اللهُ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ اِذْ بَعَثَ فِيْهِمْ رَسُوْلًا مِّنْ اَنْفُسِهِمْ يَتْلُوْا عَلَيْهِمْ اٰيَاتِه وَيُزَكِّيْهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَۚ وَاِنْ كَانُوْا مِنْ قَبْلُ لَفِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ
নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্বাসীদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, যখন তিনি তাদের নিজেদেরই মধ্য হতে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের নিকট তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও বিজ্ঞান শিক্ষা দান করেন। অথচ তারা (সবাই) ইতোপূর্বে প্রকাশ্য ভ্রান্তিতে নিমজ্জিত ছিল। (সূরা আলে ইমরান- ১৬৪)
মানুষের অভিযোগ খন্ডন করা :
وَلَوْ اَنَّاۤ اَهْلَكْنَاهُمْ بِعَذَابٍ مِّنْ قَبْلِه لَقَالُوْا رَبَّنَا لَوْلَاۤ اَرْسَلْتَ اِلَيْنَا رَسُوْلًا فَنَتَّبِعَ اٰيَاتِكَ مِنْ قَبْلِ اَنْ نَّذِلَّ وَنَخْزٰى
যদি আমি তাদেরকে ইতোপূর্বে শাস্তি দ্বারা ধ্বংস করে দিতাম তবে তারা বলত, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদের নিকট একজন রাসূল প্রেরণ করলে না কেন? তাহলে আমরা লাঞ্ছিত ও অপমানিত হওয়ার পূর্বে তোমার নিদর্শনসমূহ মেনে চলতাম।’ (সূরা ত্বা-হা- ১৩৪)
يَاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ قَدْ جَآءَكُمْ رَسُوْلُنَا يُبَيِّنُ لَكُمْ عَلٰى فَتْرَةٍ مِّنَ الرُّسُلِ اَنْ تَقُوْلُوْا مَا جَآءَنَا مِنْ ۢ بَشِيْرٍ وَّلَا نَذِيْرٍۘ فَقَدْ جَآءَكُمْ بَشِيْرٌ وَّنَذِيْرٌؕ وَاللهُ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
হে আহলে কিতাব! রাসূল প্রেরণের (দীর্ঘ) বিরতির পর আমার রাসূল তোমাদের নিকট এসেছে। সে তোমাদের নিকট স্পষ্ট ব্যাখ্যা করছে; যাতে তোমরা বলতে না পার যে, আমাদের নিকট তো কোন সুসংবাদবাহী ও সতর্ককারী আসেনি। সুতরাং (এখন তো) তোমাদের নিকট একজন সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী এসেছে। আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা মায়েদা- ১৯)
ব্যাখ্যা : যখন নবীদের শিক্ষা বিলুপ্ত হয়ে যায় অথবা মানুষ গোমরাহীর মধ্যে এমনভাবে জড়িত হয়ে যায় যে, তা থেকে হেদায়াত লাভের কোন উপায় থাকে না। তখন লোকদের জন্য এ ওজর পেশ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়ে যায় যে, আমাদেরকে হক ও বাতিলের পার্থক্য সম্পর্কে সচেতন করার ও সঠিক পথ দেখানোর জন্য কোন ব্যবস্থাই ছিল না। এ ধরনের অজুহাত দেখানোর পথ বন্ধ করার জন্য আল্লাহ তা‘আলা নবী পাঠানোর পথ অবলম্বন করেন।
সুসংবাদ দেয়া ও ভয় দেখানো :
اِنَّاۤ اَرْسَلْنَاكَ بِالْحَقِّ بَشِيْرًا وَّنَذِيْرًا
আমিই আপনাকে সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে সত্যসহ প্রেরণ করেছি। (সূরা ফাতির- ২৪)
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ اِنَّاۤ اَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَّمُبَشِّرًا وَّنَذِيْرًا
হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে প্রেরণ করেছি। (সূরা আহযাব- ৪৫)
ব্যাখ্যা : পৃথিবীর মানুষ কেউ ভালো কাজ করে আবার কেউ খারাপ কাজ করে। যারা ভালো কাজ করে নবীগণ তাদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ দেন। আর যারা পাপকাজ করে তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তির ভয় দেখান।
আল্লাহর কিতাব পাঠ করে শুনানো :
كَذٰلِكَ اَرْسَلْنَاكَ فِۤيْ اُمَّةٍ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهَاۤ اُمَمٌ لِّتَتْلُوَاْ عَلَيْهِمُ الَّذِيْۤ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ
এভাবে আমি তোমাকে এমন এক জাতির নিকট পাঠিয়েছি, যার পূর্বে বহু জাতি গত হয়েছে। এজন্য যে, যা আমি তোমার প্রতি ওহী করেছি তা তাদেরকে পাঠ করে শুনাবে। (সূরা রা‘দ- ৩০)
জাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে আনা :
رَسُوْلًا يَّتْلُوْا عَلَيْكُمْ اٰيَاتِ اللهِ مُبَيِّنَاتٍ لِّيُخْرِجَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ مِنَ الظُّلُمَاتِ اِلَى النُّوْرِ
(আল্লাহ প্রেরণ করেছেন) এমন এক রাসূল, যিনি তোমাদের নিকট আল্লাহর সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ পাঠ করেন। যাতে করে তিনি মুমিন ও সৎকর্মপরায়ণদেরকে অন্ধকার হতে আলোর দিকে নিয়ে আসতে পারেন। (সূরা তালাক্ব- ১১)
অজানা বিষয়ের জ্ঞান দান করা :
وَيُعَلِّمُكُمْ مَّا لَمْ تَكُوْنُوْا تَعْلَمُوْنَ
আর তোমরা যা জানতে না তিনি তোমাদেরকে তাও শিক্ষা দান করেন। (সূরা বাক্বারা- ১৫১)
পথভ্রষ্ট জাতিকে দ্বীনের প্রশিক্ষণ দেয়া :
هُوَ الَّذِيْ بَعَثَ فِى الْاُمِّيِّيْنَ رَسُوْلًا مِّنْهُمْ يَتْلُوْا عَلَيْهِمْ اٰيَاتِه وَيُزَكِّيْهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَۗ وَاِنْ كَانُوْا مِنْ قَبْلُ لَفِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ – وَاٰخَرِيْنَ مِنْهُمْ لَمَّا يَلْحَقُوْا بِهِمْؕ وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
তিনিই সেই সত্তা, যিনি নিরক্ষর জাতির মধ্যে তাদেরই একজনকে রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছেন, যিনি তাদের নিকট তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং কিতাব ও হেকমত (সুন্নাত) শিক্ষা দেন; যদিও তারা ইতোপূর্বে স্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত ছিল। আর তাদের মধ্য হতে অন্যান্য এমন লোকদের জন্যও (তাঁকে রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছেন) যারা এখনো তাদের সাথে মিলিত হয়নি। আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাবান। (সূরা জুমু‘আ- ২, ৩)
মানুষের জীবন পরিশুদ্ধ করা :
كَمَاۤ اَرْسَلْنَا فِيْكُمْ رَسُوْلًا مِّنْكُمْ يَتْلُوْا عَلَيْكُمْ اٰيَاتِنَا وَيُزَكِّيْكُمْ وَيُعَلِّمُكُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ
আমি তোমাদের মধ্য হতে এমন এক রাসূল প্রেরণ করেছি, যিনি তোমাদের নিকট আমার আয়াতসমূহ পাঠ করেন, তোমাদেরকে পবিত্র করেন এবং তোমাদেরকে কিতাব ও বিজ্ঞান শিক্ষা দেন। (সূরা বাক্বারা- ১৫১)
ব্যাখ্যা : জীবন পরিশুদ্ধ করে সুসজ্জিত করা বলতে চিন্তা-ভাবনা, আচার-আচরণ, নীতি-নৈতিকতা, সমাজ-সংস্কৃতি, রাজনীতি ইত্যাদি সবকিছুকেই সুসজ্জিত করা বুঝায়। ইসলাম মানুষের জীবনকে সুন্দর, পরিপাটি ও সুবিন্যস্ত করেছে। তাদের নৈতিক চরিত্র, রীতিনীতি, লেনদেন ও জীবনাচরণকে সবরকমের কলুষতা থেকে পবিত্র করেছে এবং উন্নতমানের নৈতিক মর্যাদায় ভূষিত করেছে। আর তাই ইসলাম কেবল আয়াতসমূহ পড়ে শুনানোকেই যথেষ্ট মনে করে না, বরং মানুষকে আল্লাহর কিতাবের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ বুঝানো এবং মানুষের জীবন পরিশুদ্ধ করার প্রতিও গুরুত্বারোপ করে। আর এটি রাসূল ﷺ কে প্রেরণ করার অন্যতম একটি উদ্দেশ্য।
আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করা :
هُوَ الَّذِيْۤ اَرْسَلَ رَسُوْلَهٗ بِالْهُدٰى وَدِيْنِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهٗ عَلَى الدِّيْنِ كُلِّه ؕ وَكَفٰى بِاللهِ شَهِيْدًا
তিনিই ঐ সত্তা, যিনি তাঁর রাসূলকে হেদায়াত ও সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন, যাতে তাকে (ঐ দ্বীনকে) অন্যসব দ্বীনের উপর বিজয়ী করা হয়। আর এ বিষয়ে সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। (সূরা ফাতহ- ২৮)
هُوَ الَّذِيْۤ اَرْسَلَ رَسُوْلَهٗ بِالْهُدٰى وَدِيْنِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهٗ عَلَى الدِّيْنِ كُلِّه وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُوْنَ
তিনিই ঐ সত্তা, যিনি তাঁর রাসূলকে হেদায়াত ও সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন, যাতে তাকে (ঐ দ্বীনকে) অন্যসব দ্বীনের উপর বিজয়ী করা হয়; যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে। (সূরা তাওবা- ৩৩)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ তা‘আলা রাসূল ﷺ কে যে সত্য দ্বীন ও হেদায়াত দিয়ে পাঠিয়েছেন তা শুধু ওয়াজ ও তাবলীগের জন্য নয়। শুধু দ্বীন প্রচার করাই মুহাম্মাদ ﷺ কে পাঠানোর উদ্দেশ্য ছিল না, বরং পৃথিবীর অন্যান্য সকল জীবনাদর্শের উপর বিজয়ী করাই ছিল আসল উদ্দেশ্য। আল্লাহর দ্বীন মানবরচিত বিধানের অধীনে কোন রকমে টিকে থাকার জন্য পাঠানো হয়নি; বরং জীবনের সমস্ত দিক ও বিভাগের উপর এ দ্বীনই হবে বিজয়ী জীবনাদর্শ। মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে নবী ﷺ এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করেছেন।
وَلَوْ اَنَّاۤ اَهْلَكْنَاهُمْ بِعَذَابٍ مِّنْ قَبْلِه لَقَالُوْا رَبَّنَا لَوْلَاۤ اَرْسَلْتَ اِلَيْنَا رَسُوْلًا فَنَتَّبِعَ اٰيَاتِكَ مِنْ قَبْلِ اَنْ نَّذِلَّ وَنَخْزٰى
যদি আমি তাদেরকে ইতোপূর্বে শাস্তি দ্বারা ধ্বংস করে দিতাম তবে তারা বলত, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদের নিকট একজন রাসূল প্রেরণ করলে না কেন? তাহলে আমরা লাঞ্ছিত ও অপমানিত হওয়ার পূর্বে তোমার নিদর্শনসমূহ মেনে চলতাম।’ (সূরা ত্বা-হা- ১৩৪)
يَاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ قَدْ جَآءَكُمْ رَسُوْلُنَا يُبَيِّنُ لَكُمْ عَلٰى فَتْرَةٍ مِّنَ الرُّسُلِ اَنْ تَقُوْلُوْا مَا جَآءَنَا مِنْ ۢ بَشِيْرٍ وَّلَا نَذِيْرٍۘ فَقَدْ جَآءَكُمْ بَشِيْرٌ وَّنَذِيْرٌؕ وَاللهُ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
হে আহলে কিতাব! রাসূল প্রেরণের (দীর্ঘ) বিরতির পর আমার রাসূল তোমাদের নিকট এসেছে। সে তোমাদের নিকট স্পষ্ট ব্যাখ্যা করছে; যাতে তোমরা বলতে না পার যে, আমাদের নিকট তো কোন সুসংবাদবাহী ও সতর্ককারী আসেনি। সুতরাং (এখন তো) তোমাদের নিকট একজন সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী এসেছে। আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা মায়েদা- ১৯)
ব্যাখ্যা : যখন নবীদের শিক্ষা বিলুপ্ত হয়ে যায় অথবা মানুষ গোমরাহীর মধ্যে এমনভাবে জড়িত হয়ে যায় যে, তা থেকে হেদায়াত লাভের কোন উপায় থাকে না। তখন লোকদের জন্য এ ওজর পেশ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়ে যায় যে, আমাদেরকে হক ও বাতিলের পার্থক্য সম্পর্কে সচেতন করার ও সঠিক পথ দেখানোর জন্য কোন ব্যবস্থাই ছিল না। এ ধরনের অজুহাত দেখানোর পথ বন্ধ করার জন্য আল্লাহ তা‘আলা নবী পাঠানোর পথ অবলম্বন করেন।
সুসংবাদ দেয়া ও ভয় দেখানো :
اِنَّاۤ اَرْسَلْنَاكَ بِالْحَقِّ بَشِيْرًا وَّنَذِيْرًا
আমিই আপনাকে সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে সত্যসহ প্রেরণ করেছি। (সূরা ফাতির- ২৪)
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ اِنَّاۤ اَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَّمُبَشِّرًا وَّنَذِيْرًا
হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে প্রেরণ করেছি। (সূরা আহযাব- ৪৫)
ব্যাখ্যা : পৃথিবীর মানুষ কেউ ভালো কাজ করে আবার কেউ খারাপ কাজ করে। যারা ভালো কাজ করে নবীগণ তাদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ দেন। আর যারা পাপকাজ করে তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তির ভয় দেখান।
আল্লাহর কিতাব পাঠ করে শুনানো :
كَذٰلِكَ اَرْسَلْنَاكَ فِۤيْ اُمَّةٍ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهَاۤ اُمَمٌ لِّتَتْلُوَاْ عَلَيْهِمُ الَّذِيْۤ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ
এভাবে আমি তোমাকে এমন এক জাতির নিকট পাঠিয়েছি, যার পূর্বে বহু জাতি গত হয়েছে। এজন্য যে, যা আমি তোমার প্রতি ওহী করেছি তা তাদেরকে পাঠ করে শুনাবে। (সূরা রা‘দ- ৩০)
জাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে আনা :
رَسُوْلًا يَّتْلُوْا عَلَيْكُمْ اٰيَاتِ اللهِ مُبَيِّنَاتٍ لِّيُخْرِجَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ مِنَ الظُّلُمَاتِ اِلَى النُّوْرِ
(আল্লাহ প্রেরণ করেছেন) এমন এক রাসূল, যিনি তোমাদের নিকট আল্লাহর সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ পাঠ করেন। যাতে করে তিনি মুমিন ও সৎকর্মপরায়ণদেরকে অন্ধকার হতে আলোর দিকে নিয়ে আসতে পারেন। (সূরা তালাক্ব- ১১)
অজানা বিষয়ের জ্ঞান দান করা :
وَيُعَلِّمُكُمْ مَّا لَمْ تَكُوْنُوْا تَعْلَمُوْنَ
আর তোমরা যা জানতে না তিনি তোমাদেরকে তাও শিক্ষা দান করেন। (সূরা বাক্বারা- ১৫১)
পথভ্রষ্ট জাতিকে দ্বীনের প্রশিক্ষণ দেয়া :
هُوَ الَّذِيْ بَعَثَ فِى الْاُمِّيِّيْنَ رَسُوْلًا مِّنْهُمْ يَتْلُوْا عَلَيْهِمْ اٰيَاتِه وَيُزَكِّيْهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَۗ وَاِنْ كَانُوْا مِنْ قَبْلُ لَفِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ – وَاٰخَرِيْنَ مِنْهُمْ لَمَّا يَلْحَقُوْا بِهِمْؕ وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
তিনিই সেই সত্তা, যিনি নিরক্ষর জাতির মধ্যে তাদেরই একজনকে রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছেন, যিনি তাদের নিকট তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং কিতাব ও হেকমত (সুন্নাত) শিক্ষা দেন; যদিও তারা ইতোপূর্বে স্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত ছিল। আর তাদের মধ্য হতে অন্যান্য এমন লোকদের জন্যও (তাঁকে রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছেন) যারা এখনো তাদের সাথে মিলিত হয়নি। আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাবান। (সূরা জুমু‘আ- ২, ৩)
মানুষের জীবন পরিশুদ্ধ করা :
كَمَاۤ اَرْسَلْنَا فِيْكُمْ رَسُوْلًا مِّنْكُمْ يَتْلُوْا عَلَيْكُمْ اٰيَاتِنَا وَيُزَكِّيْكُمْ وَيُعَلِّمُكُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ
আমি তোমাদের মধ্য হতে এমন এক রাসূল প্রেরণ করেছি, যিনি তোমাদের নিকট আমার আয়াতসমূহ পাঠ করেন, তোমাদেরকে পবিত্র করেন এবং তোমাদেরকে কিতাব ও বিজ্ঞান শিক্ষা দেন। (সূরা বাক্বারা- ১৫১)
ব্যাখ্যা : জীবন পরিশুদ্ধ করে সুসজ্জিত করা বলতে চিন্তা-ভাবনা, আচার-আচরণ, নীতি-নৈতিকতা, সমাজ-সংস্কৃতি, রাজনীতি ইত্যাদি সবকিছুকেই সুসজ্জিত করা বুঝায়। ইসলাম মানুষের জীবনকে সুন্দর, পরিপাটি ও সুবিন্যস্ত করেছে। তাদের নৈতিক চরিত্র, রীতিনীতি, লেনদেন ও জীবনাচরণকে সবরকমের কলুষতা থেকে পবিত্র করেছে এবং উন্নতমানের নৈতিক মর্যাদায় ভূষিত করেছে। আর তাই ইসলাম কেবল আয়াতসমূহ পড়ে শুনানোকেই যথেষ্ট মনে করে না, বরং মানুষকে আল্লাহর কিতাবের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ বুঝানো এবং মানুষের জীবন পরিশুদ্ধ করার প্রতিও গুরুত্বারোপ করে। আর এটি রাসূল ﷺ কে প্রেরণ করার অন্যতম একটি উদ্দেশ্য।
আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করা :
هُوَ الَّذِيْۤ اَرْسَلَ رَسُوْلَهٗ بِالْهُدٰى وَدِيْنِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهٗ عَلَى الدِّيْنِ كُلِّه ؕ وَكَفٰى بِاللهِ شَهِيْدًا
তিনিই ঐ সত্তা, যিনি তাঁর রাসূলকে হেদায়াত ও সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন, যাতে তাকে (ঐ দ্বীনকে) অন্যসব দ্বীনের উপর বিজয়ী করা হয়। আর এ বিষয়ে সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। (সূরা ফাতহ- ২৮)
هُوَ الَّذِيْۤ اَرْسَلَ رَسُوْلَهٗ بِالْهُدٰى وَدِيْنِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهٗ عَلَى الدِّيْنِ كُلِّه وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُوْنَ
তিনিই ঐ সত্তা, যিনি তাঁর রাসূলকে হেদায়াত ও সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন, যাতে তাকে (ঐ দ্বীনকে) অন্যসব দ্বীনের উপর বিজয়ী করা হয়; যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে। (সূরা তাওবা- ৩৩)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ তা‘আলা রাসূল ﷺ কে যে সত্য দ্বীন ও হেদায়াত দিয়ে পাঠিয়েছেন তা শুধু ওয়াজ ও তাবলীগের জন্য নয়। শুধু দ্বীন প্রচার করাই মুহাম্মাদ ﷺ কে পাঠানোর উদ্দেশ্য ছিল না, বরং পৃথিবীর অন্যান্য সকল জীবনাদর্শের উপর বিজয়ী করাই ছিল আসল উদ্দেশ্য। আল্লাহর দ্বীন মানবরচিত বিধানের অধীনে কোন রকমে টিকে থাকার জন্য পাঠানো হয়নি; বরং জীবনের সমস্ত দিক ও বিভাগের উপর এ দ্বীনই হবে বিজয়ী জীবনাদর্শ। মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে নবী ﷺ এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করেছেন।
তিনি বিশ্ববাসীর রাসূল :
قُلْ يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اِنِّيْ رَسُوْلُ اللّٰهِ اِلَيْكُمْ جَمِيْعًا
বলো, হে মানুষ! নিশ্চয় আমি তোমাদের সকলের জন্য আল্লাহর রাসূল। (সূরা আ‘রাফ- ১৫৮)
তিনি বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ :
وَمَاۤ اَرْسَلْنَاكَ اِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِيْنَ
আর আমি তো তোমাকে বিশ্ববাসীর প্রতি কেবল রহমত হিসেবেই প্রেরণ করেছি। (সূরা আম্বিয়া- ১০৭)
তিনি বিশ্ববাসীর জন্য ভীতি প্রদর্শনকারী :
تَبَارَكَ الَّذِيْ نَزَّلَ الْفُرْقَانَ عَلٰى عَبْدِه لِيَكُوْنَ لِلْعَالَمِيْنَ نَذِيْرًا
তিনি কতই না মহান, যিনি তাঁর বান্দার প্রতি ফুরক্বান (সত্য ও মিথ্যার পার্থক্যকারী) অবতীর্ণ করেছেন; যাতে সে বিশ্ববাসীর জন্য সতর্ককারী হতে পারে। (সূরা ফুরক্বান- ১)
وَاُوْحِيَ اِلَيَّ هٰذَا الْقُرْاٰنُ لِاُنْذِرَكُمْ بِه وَمَنْ ۢ بَلَغَ
এ কুরআন আমার নিকট প্রেরিত হয়েছে, যেন আমি এর দ্বারা তোমাদেরকে এবং যার নিকট তা পৌঁছবে তাদেরকে সতর্ক করতে পারি। (সূরা আন‘আম- ১৯)
তিনি বিশ্ববাসীর জন্য সুসংবাদদাতা :
وَمَاۤ اَرْسَلْنَاكَ اِلَّا كَآفَّةً لِّلنَّاسِ بَشِيْرًا وَّنَذِيْرًا وَّلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ
আমি তোমাকে সমগ্র মানবজাতির প্রতি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। (সূরা সাবা- ২৮)
তারা বিশ্বমানবের উপর সাক্ষী হবে :
لِيَكُوْنَ الرَّسُوْلُ شَهِيْدًا عَلَيْكُمْ وَتَكُوْنُوْا شُهَدَآءَ عَلَى النَّاسِ
যাতে রাসূল তোমাদের জন্য সাক্ষীস্বরূপ হন, আর তোমরাও মানবজাতির জন্য সাক্ষী হও। (সূরা হজ্জ- ৭৮)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ কে সাক্ষী বানানোর বাক্যটি ব্যাপক অর্থ বহন করে। তিন ধরনের সাক্ষ্য প্রদান এর অন্তর্ভুক্ত :
(এক) মৌখিক সাক্ষ্য। অর্থাৎ আল্লাহর দ্বীন যেসব সত্য ও মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত নবী ﷺ তার সত্যতার সাক্ষী হবেন এবং দুনিয়াবাসীকে বলে দেবেন, এটিই সত্য।
(দুই) কর্মের সাক্ষ্য। অর্থাৎ নবী ﷺ যে মতবাদ পেশ করার জন্য আবির্ভাব হয়েছেন তিনি নিজের জীবনের সমগ্র কর্মকান্ডের মাধ্যমে তা প্রদর্শন করবেন। তিনি যে জিনিসকে মন্দ বলেন, নিজে সে জিনিস থেকে মুক্ত থাকবেন। যে জিনিসকে ভালো বলেন তা নিজের জীবনে পূর্ণমাত্রায় বাস্তবায়ন করেন।
(তিন) পরকালীন সাক্ষ্য। অর্থাৎ আখিরাতে যখন আল্লাহর আদালত প্রতিষ্ঠিত হবে তখন নবী ﷺ এ মর্মে সাক্ষ্য দেবেন যে, তাঁকে যে বিধান দেয়া হয়েছিল তা তিনি কোন প্রকার কম বেশি না করে হুবহু মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন এবং তাদের সামনে নিজের কথা ও কর্মের মাধ্যমে সত্যকে সুস্পষ্ট করে তুলে ধরার ব্যাপারে সামান্যতম ত্রুটি করেননি।
قُلْ يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اِنِّيْ رَسُوْلُ اللّٰهِ اِلَيْكُمْ جَمِيْعًا
বলো, হে মানুষ! নিশ্চয় আমি তোমাদের সকলের জন্য আল্লাহর রাসূল। (সূরা আ‘রাফ- ১৫৮)
তিনি বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ :
وَمَاۤ اَرْسَلْنَاكَ اِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِيْنَ
আর আমি তো তোমাকে বিশ্ববাসীর প্রতি কেবল রহমত হিসেবেই প্রেরণ করেছি। (সূরা আম্বিয়া- ১০৭)
তিনি বিশ্ববাসীর জন্য ভীতি প্রদর্শনকারী :
تَبَارَكَ الَّذِيْ نَزَّلَ الْفُرْقَانَ عَلٰى عَبْدِه لِيَكُوْنَ لِلْعَالَمِيْنَ نَذِيْرًا
তিনি কতই না মহান, যিনি তাঁর বান্দার প্রতি ফুরক্বান (সত্য ও মিথ্যার পার্থক্যকারী) অবতীর্ণ করেছেন; যাতে সে বিশ্ববাসীর জন্য সতর্ককারী হতে পারে। (সূরা ফুরক্বান- ১)
وَاُوْحِيَ اِلَيَّ هٰذَا الْقُرْاٰنُ لِاُنْذِرَكُمْ بِه وَمَنْ ۢ بَلَغَ
এ কুরআন আমার নিকট প্রেরিত হয়েছে, যেন আমি এর দ্বারা তোমাদেরকে এবং যার নিকট তা পৌঁছবে তাদেরকে সতর্ক করতে পারি। (সূরা আন‘আম- ১৯)
তিনি বিশ্ববাসীর জন্য সুসংবাদদাতা :
وَمَاۤ اَرْسَلْنَاكَ اِلَّا كَآفَّةً لِّلنَّاسِ بَشِيْرًا وَّنَذِيْرًا وَّلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ
আমি তোমাকে সমগ্র মানবজাতির প্রতি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। (সূরা সাবা- ২৮)
তারা বিশ্বমানবের উপর সাক্ষী হবে :
لِيَكُوْنَ الرَّسُوْلُ شَهِيْدًا عَلَيْكُمْ وَتَكُوْنُوْا شُهَدَآءَ عَلَى النَّاسِ
যাতে রাসূল তোমাদের জন্য সাক্ষীস্বরূপ হন, আর তোমরাও মানবজাতির জন্য সাক্ষী হও। (সূরা হজ্জ- ৭৮)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ কে সাক্ষী বানানোর বাক্যটি ব্যাপক অর্থ বহন করে। তিন ধরনের সাক্ষ্য প্রদান এর অন্তর্ভুক্ত :
(এক) মৌখিক সাক্ষ্য। অর্থাৎ আল্লাহর দ্বীন যেসব সত্য ও মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত নবী ﷺ তার সত্যতার সাক্ষী হবেন এবং দুনিয়াবাসীকে বলে দেবেন, এটিই সত্য।
(দুই) কর্মের সাক্ষ্য। অর্থাৎ নবী ﷺ যে মতবাদ পেশ করার জন্য আবির্ভাব হয়েছেন তিনি নিজের জীবনের সমগ্র কর্মকান্ডের মাধ্যমে তা প্রদর্শন করবেন। তিনি যে জিনিসকে মন্দ বলেন, নিজে সে জিনিস থেকে মুক্ত থাকবেন। যে জিনিসকে ভালো বলেন তা নিজের জীবনে পূর্ণমাত্রায় বাস্তবায়ন করেন।
(তিন) পরকালীন সাক্ষ্য। অর্থাৎ আখিরাতে যখন আল্লাহর আদালত প্রতিষ্ঠিত হবে তখন নবী ﷺ এ মর্মে সাক্ষ্য দেবেন যে, তাঁকে যে বিধান দেয়া হয়েছিল তা তিনি কোন প্রকার কম বেশি না করে হুবহু মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন এবং তাদের সামনে নিজের কথা ও কর্মের মাধ্যমে সত্যকে সুস্পষ্ট করে তুলে ধরার ব্যাপারে সামান্যতম ত্রুটি করেননি।
সর্বপ্রথম রাসূল ﷺ এর নিকট ওহী আগমনের সূচনা হয় ঘুমের মধ্যে সত্য স্বপ্নরূপে। কিছুকাল এ অবস্থা চলার পর নিজ থেকেই তাঁর অন্তরে নির্জনে থাকার প্রেরণা উদিত হয়। ফলে তিনি মক্কা হতে তিন মাইল দূরে ‘হেরা’ নামক পর্বতগুহায় নির্জনে ইবাদাতের উদ্দেশ্যে একাকী অবস্থান করতে লাগলেন। তিনি সেথায় কয়েক রাত পর্যন্ত ইবাদাতে মগ্ন থাকতেন। এমনিভাবে হেরা গুহায় আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকাকালে হঠাৎ একদিন জিবরাঈল (আঃ) আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে ওহী নিয়ে রাসূল ﷺ এর সামনে হাজির হন।
জিবরাঈল (আঃ) কে তিনি আকাশে দেখেছেন :
وَلَقَدْ رَاٰهُ بِالْاُفُقِ الْمُبِيْنِ
তিনি (মুহাম্মদ সাঃ) তাঁকে (জিবরাঈলকে) দিগন্তে দেখেছিলেন। (সূরা তাকভীর- ২৩)
তিনি খুব শক্তিশালী ফেরেশতা :
عَلَّمَهٗ شَدِيْدُ الْقُوٰى – - ذُوْ مِرَّةٍ فَاسْتَوٰى – وَهُوَ بِالْاُفُقِ الْاَعْلٰى
তাকে শিক্ষা দান করে শক্তিশালী ও মহাশক্তিধর (ফেরেশতা)। তিনি প্রজ্ঞাসম্পন্ন, নিজ আকৃতিতে স্থির হয়েছিলেন। তখন তিনি ঊর্ধ্ব দিগন্তে ছিলেন। (সূরা নাজম, ৫-৭)
ফেরেশতা খুব কাছাকাছি হলেন :
ثُمَّ دَنَا فَتَدَلّٰى – فَكَانَ قَابَ قَوْسَيْنِ اَوْ اَدْنٰى
অতঃপর তিনি তার (রাসূল ﷺ এর) নিকটবর্তী হলেন এবং অতি নিকটে গেলেন। ফলে তিনি (তার থেকে) দু’ধনুক অথবা তার চেয়েও কম দূরত্বে (অবস্থান) নিলেন। (সূরা নাজম- ৮, ৯)
তিনি নবী ﷺ এর কাছে ওহী পৌঁছে দিলেন :
فَاَوْحٰۤى اِلٰى عَبْدِه مَاۤ اَوْحٰى
তখন আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি যা ওহী করার তা ওহী করলেন। (সূরা নাজম- ১০)
এতে নবী ﷺ এর কোন ভুল ধারণা সৃষ্টি হয়নি :
مَا كَذَبَ الْفُؤَادُ مَا رَاٰى
যা সে দেখেছে তার অন্তর তা অস্বীকার করেনি। (সূরা নাজম- ১১)
ব্যাখ্যা : তিনি চোখে যা দেখেছিলেন মনেও ঠিক তা-ই বুঝতে পেরেছিলেন। এ বিষয়ে তাঁর মনে বিন্দুমাত্র সন্দেহ ছিল না যে, তিনি যাঁকে দেখেছিলেন প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন জিবরাঈল (আঃ) এবং তিনি যে বাণী নিয়ে এসেছিলেন তা মূলত ছিল আল্লাহর পক্ষ হতে ওহী।
এ ফেরেশতাকে তিনি আরো একবার দেখেছিলেন :
اَفَتُمَارُوْنَهٗ عَلٰى مَا يَرٰى – وَلَقَدْ رَاٰهُ نَزْلَةً اُخْرٰى – عِنْدَ سِدْرَةِ الْمُنْتَهٰى – عِنْدَهَا جَنَّةُ الْمَأْوٰى
তিনি যা দেখেছেন তোমরা কি সে বিষয়ে তাঁর সঙ্গে বিতর্ক করবে? নিশ্চয় তিনি তাকে আরো একবার দেখেছিলেন। সিদরাতুল মুনতাহার নিকট, যার নিকট অবস্থিত জান্নাতুল মা’ওয়া। (সূরা নাজম, ১২-১৫)
জিবরাঈল (আঃ) কে তিনি আকাশে দেখেছেন :
وَلَقَدْ رَاٰهُ بِالْاُفُقِ الْمُبِيْنِ
তিনি (মুহাম্মদ সাঃ) তাঁকে (জিবরাঈলকে) দিগন্তে দেখেছিলেন। (সূরা তাকভীর- ২৩)
তিনি খুব শক্তিশালী ফেরেশতা :
عَلَّمَهٗ شَدِيْدُ الْقُوٰى – - ذُوْ مِرَّةٍ فَاسْتَوٰى – وَهُوَ بِالْاُفُقِ الْاَعْلٰى
তাকে শিক্ষা দান করে শক্তিশালী ও মহাশক্তিধর (ফেরেশতা)। তিনি প্রজ্ঞাসম্পন্ন, নিজ আকৃতিতে স্থির হয়েছিলেন। তখন তিনি ঊর্ধ্ব দিগন্তে ছিলেন। (সূরা নাজম, ৫-৭)
ফেরেশতা খুব কাছাকাছি হলেন :
ثُمَّ دَنَا فَتَدَلّٰى – فَكَانَ قَابَ قَوْسَيْنِ اَوْ اَدْنٰى
অতঃপর তিনি তার (রাসূল ﷺ এর) নিকটবর্তী হলেন এবং অতি নিকটে গেলেন। ফলে তিনি (তার থেকে) দু’ধনুক অথবা তার চেয়েও কম দূরত্বে (অবস্থান) নিলেন। (সূরা নাজম- ৮, ৯)
তিনি নবী ﷺ এর কাছে ওহী পৌঁছে দিলেন :
فَاَوْحٰۤى اِلٰى عَبْدِه مَاۤ اَوْحٰى
তখন আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি যা ওহী করার তা ওহী করলেন। (সূরা নাজম- ১০)
এতে নবী ﷺ এর কোন ভুল ধারণা সৃষ্টি হয়নি :
مَا كَذَبَ الْفُؤَادُ مَا رَاٰى
যা সে দেখেছে তার অন্তর তা অস্বীকার করেনি। (সূরা নাজম- ১১)
ব্যাখ্যা : তিনি চোখে যা দেখেছিলেন মনেও ঠিক তা-ই বুঝতে পেরেছিলেন। এ বিষয়ে তাঁর মনে বিন্দুমাত্র সন্দেহ ছিল না যে, তিনি যাঁকে দেখেছিলেন প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন জিবরাঈল (আঃ) এবং তিনি যে বাণী নিয়ে এসেছিলেন তা মূলত ছিল আল্লাহর পক্ষ হতে ওহী।
এ ফেরেশতাকে তিনি আরো একবার দেখেছিলেন :
اَفَتُمَارُوْنَهٗ عَلٰى مَا يَرٰى – وَلَقَدْ رَاٰهُ نَزْلَةً اُخْرٰى – عِنْدَ سِدْرَةِ الْمُنْتَهٰى – عِنْدَهَا جَنَّةُ الْمَأْوٰى
তিনি যা দেখেছেন তোমরা কি সে বিষয়ে তাঁর সঙ্গে বিতর্ক করবে? নিশ্চয় তিনি তাকে আরো একবার দেখেছিলেন। সিদরাতুল মুনতাহার নিকট, যার নিকট অবস্থিত জান্নাতুল মা’ওয়া। (সূরা নাজম, ১২-১৫)
পূর্ববর্তী জাতিসমূহের ইতিহাস বর্ণনা করা :
تِلْكَ الْقُرٰى نَقُصُّ عَلَيْكَ مِنْ اَنْۢبَآئِهَا
এসব জনপদের কিছু বর্ণনা আমি তোমার নিকট পেশ করেছি। (সূরা আ‘রাফ- ১০১)
ব্যাখ্যা : কুরআন যে আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল হওয়া কিতাব এবং মুহাম্মাদ ﷺ যে আল্লাহর রাসূল; তার একটি প্রমাণ এ ছিল যে, শত শত বছর আগে যেসব ঘটনা ঘটেছে তার বিস্তারিত বর্ণনা আসছে একজন নিরক্ষর ব্যক্তির মুখ থেকে, যা ওহী ছাড়া অন্য কোন উপায়ে জানা সম্ভব নয়।
রাসূলদের কাহিনী বর্ণনা করা :
وَكُلًّا نَّقُصُّ عَلَيْكَ مِنْ اَنْۢبَآءِ الرُّسُلِ مَا نُثَبِّتُ بِه فُؤَادَكَۚ وَجَآءَكَ فِيْ هٰذِهِ الْحَقُّ وَمَوْعِظَةٌ وَّذِكْرٰى لِلْمُؤْمِنِيْنَ
রাসূলদের ঐ সকল বিষয় আমি তোমার নিকট বর্ণনা করছি, যা দ্বারা আমি তোমার চিত্তকে দৃঢ় করি। এর মাধ্যমে তোমার নিকট এসেছে সত্য এবং মুমিনদের জন্য এসেছে উপদেশ ও সতর্কবাণী। (সূরা হুদ- ১২০)
নিরক্ষর নবীর কুরআন পাঠ :
وَمَا كُنْتَ تَتْلُوْا مِنْ قَبْلِه مِنْ كِتَابٍ وَّلَا تَخُطُّهٗ بِيَمِيْنِكَ اِذًا لَّارْتَابَ الْمُبْطِلُوْنَ
তুমি তো ইতোপূর্বে কোন কিতাব পাঠ করনি এবং স্বহস্তে কোন কিতাবও লেখনি যে, মিথ্যাচারীরা সন্দেহ পোষণ করবে। (সূরা আনকাবূত- ৪৮)
শপথের মাধ্যমে আল্লাহর ঘোষণা :
يٰسٓ – وَالْقُرْاٰنِ الْحَكِيْمِ – اِنَّكَ لَمِنَ الْمُرْسَلِيْنَ – عَلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
ইয়াসীন, কসম জ্ঞানগর্ভ কুরআনের। নিশ্চয় আপনি প্রেরিত রাসূলদের অন্তর্ভুক্ত। আপনি আছেন সরলসঠিক পথের উপর। (সূরা ইয়াসীন, ১-৪)
تِلْكَ الْقُرٰى نَقُصُّ عَلَيْكَ مِنْ اَنْۢبَآئِهَا
এসব জনপদের কিছু বর্ণনা আমি তোমার নিকট পেশ করেছি। (সূরা আ‘রাফ- ১০১)
ব্যাখ্যা : কুরআন যে আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল হওয়া কিতাব এবং মুহাম্মাদ ﷺ যে আল্লাহর রাসূল; তার একটি প্রমাণ এ ছিল যে, শত শত বছর আগে যেসব ঘটনা ঘটেছে তার বিস্তারিত বর্ণনা আসছে একজন নিরক্ষর ব্যক্তির মুখ থেকে, যা ওহী ছাড়া অন্য কোন উপায়ে জানা সম্ভব নয়।
রাসূলদের কাহিনী বর্ণনা করা :
وَكُلًّا نَّقُصُّ عَلَيْكَ مِنْ اَنْۢبَآءِ الرُّسُلِ مَا نُثَبِّتُ بِه فُؤَادَكَۚ وَجَآءَكَ فِيْ هٰذِهِ الْحَقُّ وَمَوْعِظَةٌ وَّذِكْرٰى لِلْمُؤْمِنِيْنَ
রাসূলদের ঐ সকল বিষয় আমি তোমার নিকট বর্ণনা করছি, যা দ্বারা আমি তোমার চিত্তকে দৃঢ় করি। এর মাধ্যমে তোমার নিকট এসেছে সত্য এবং মুমিনদের জন্য এসেছে উপদেশ ও সতর্কবাণী। (সূরা হুদ- ১২০)
নিরক্ষর নবীর কুরআন পাঠ :
وَمَا كُنْتَ تَتْلُوْا مِنْ قَبْلِه مِنْ كِتَابٍ وَّلَا تَخُطُّهٗ بِيَمِيْنِكَ اِذًا لَّارْتَابَ الْمُبْطِلُوْنَ
তুমি তো ইতোপূর্বে কোন কিতাব পাঠ করনি এবং স্বহস্তে কোন কিতাবও লেখনি যে, মিথ্যাচারীরা সন্দেহ পোষণ করবে। (সূরা আনকাবূত- ৪৮)
শপথের মাধ্যমে আল্লাহর ঘোষণা :
يٰسٓ – وَالْقُرْاٰنِ الْحَكِيْمِ – اِنَّكَ لَمِنَ الْمُرْسَلِيْنَ – عَلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
ইয়াসীন, কসম জ্ঞানগর্ভ কুরআনের। নিশ্চয় আপনি প্রেরিত রাসূলদের অন্তর্ভুক্ত। আপনি আছেন সরলসঠিক পথের উপর। (সূরা ইয়াসীন, ১-৪)
তিনি ছিলেন উন্নত চরিত্রের অধিকারী :
وَاِنَّكَ لَعَلٰى خُلُقٍ عَظِيْمٍ
নিশ্চয় তুমি মহান চরিত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছ। (সূরা ক্বালাম- ৪)
তিনি ছিলেন কোমল হৃদয়ের অধিকারী :
فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللهِ لِنْتَ لَهُمْۚ وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيْظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوْا مِنْ حَوْلِكَ
অতএব আল্লাহর অনুগ্রহ এই যে, তুমি তাদের প্রতি কোমলচিত্তের অধিকারী। (পক্ষান্তরে) তুমি যদি কর্কশ ভাষী ও কঠোর হৃদয়ের অধিকারী হতে, তবে নিশ্চয় তারা তোমার সংস্পর্শে আসা হতে বিরত থাকত। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৯)
তিনি ছিলেন সকলের জন্য কল্যাণকামী ও স্নেহপরায়ণ :
لَقَدْ جَآءَكُمْ رَسُوْلٌ مِّنْ اَنْفُسِكُمْ عَزِيْزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيْصٌ عَلَيْكُمْ بِالْمُؤْمِنِيْنَ رَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ
অবশ্যই তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের নিকট একজন রাসূল এসেছে। তোমাদেরকে যা কষ্ট দেয়, তা তার নিকট কষ্টদায়ক। সে তোমাদের মঙ্গলকামী এবং মুমিনদের প্রতি সে দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। (সূরা তাওবা- ১২৮)
তিনি মুমিনদের উপর বিশ্বাস রাখেন :
يُؤْمِنُ بِاللهِ وَيُؤْمِنُ لِلْمُؤْمِنِيْنَ وَرَحْمَةٌ لِّلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مِنْكُمْ
সে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে এবং মুমিনদেরকে বিশ্বাস করে, তোমাদের মধ্যে যারা মুমিন সে তাদের জন্য রহমতস্বরূপ। (সূরা তাওবা- ৬১)
তিনি মুমিনদের কাছে প্রাণের চেয়েও প্রিয় :
اَلنَّبِيُّ اَوْلٰى بِالْمُؤْمِنِيْنَ مِنْ اَنْفُسِهِمْ وَاَزْوَاجُهٗۤ اُمَّهَاتُهُمْ
তিনি এমন নবী, যিনি মুমিনদের কাছে তাদের নিজেদের চেয়েও অধিক ঘনিষ্ঠ এবং তাঁর স্ত্রীগণ তাদের মাতার মতো। (সূরা আহযাব- ৬)
তাঁর কতিপয় বিশেষ গুণাবলি :
اَلَّذِيْنَ يَتَّبِعُوْنَ الرَّسُوْلَ النَّبِيَّ الْاُمِّيَّ الَّذِيْ يَجِدُوْنَهٗ مَكْتُوْبًا عِنْدَهُمْ فِى التَّوْرَاةِ وَالْاِنْجِيْلِؗ يَأْمُرُهُمْ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَاهُمْ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَآئِثَ وَيَضَعُ عَنْهُمْ اِصْرَهُمْ وَالْاَغْلَالَ الَّتِيْ كَانَتْ عَلَيْهِمْؕ فَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا بِه وَعَزَّرُوْهُ وَنَصَرُوْهُ وَاتَّبَعُوا النُّوْرَ الَّذِيْۤ اُنْزِلَ مَعَهٗۤ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
যারা বার্তাবাহক নিরক্ষর নবীর অনুসরণ করে, যার ব্যাপারে উল্লেখ পাবে তাওরাত ও ইঞ্জিলে, যা তাদের নিকট রয়েছে। সে তাদেরকে সৎকাজের নির্দেশ দেয় ও অসৎকাজ হতে নিষেধ করে, সে তাদের জন্য পবিত্র বস্তুসমূহকে হালাল ঘোষণা করে আর অপবিত্র বস্তুসমূহকে হারাম ঘোষণা করে এবং সে তাদেরকে তাদের উপর অর্পিত বড় দায়িত্ব ও শৃঙ্খল হতে মুক্ত করে, যা তাদের উপর আরোপিত ছিল। সুতরাং যারা তার প্রতি ঈমান আনে, তাকে সম্মান করে, তাকে সাহায্য করে এবং ঐ নূরের অনুসরণ করে, যা তার উপর অবতীর্ণ করা হয়েছে- তারাই সফলকাম। (সূরা আ‘রাফ- ১৫৭)
তিনি সঠিক পথের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন :
اِنَّكَ لَمِنَ الْمُرْسَلِيْنَ – عَلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
নিশ্চয় আপনি প্রেরিত রাসূলদের অন্তর্ভুক্ত। আপনি আছেন সরলসঠিক পথের উপর। (সূরা ইয়াসীন - ৩, ৪)
তিনি মানুষকে সঠিক পথ দেখাতেন :
وَاِنَّكَ لَتَهْدِيْۤ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ – صِرَاطِ اللهِ الَّذِيْ لَهٗ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَرْضِؕ اَ لَاۤ اِلَى اللهِ تَصِيْرُ الْاُمُوْرُ
নিশ্চয় তুমি (মানুষকে) সরল পথপ্রদর্শন করে থাক। এটা ঐ আল্লাহর পথ, যাঁর আধিপত্য রয়েছে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে (সবকিছুর উপর)। সাবধান! সকল বিষয় আল্লাহর দিকেই প্রত্যাবর্তন করে। (সূরা শূরা- ৫২, ৫৩)
তিনি ইচ্ছেমতো কথা বলতেন না :
وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوٰى – اِنْ هُوَ اِلَّا وَحْيٌ يُّوْحٰى
তিনি প্রবৃত্তি হতে কোন কথা বলেন না। এটা তো এক ওহী, যা তাঁর প্রতি প্রত্যাদেশ করা হয়। (সূরা নাজম- ৩, ৪)
তিনি ওহীর মধ্যে কোন পরিবর্তন করতেন না :
وَاِذَا تُتْلٰى عَلَيْهِمْ اٰيَاتُنَا بَيِّنَاتٍ قَالَ الَّذِيْنَ لَا يَرْجُوْنَ لِقَآءَنَا ائْتِ بِقُرْاٰنٍ غَيْرِ هٰذَاۤ اَوْ بَدِّلْهُؕ قُلْ مَا يَكُوْنُ لِۤيْ اَنْ اُبَدِّلَهٗ مِنْ تِلْقَآءِ نَفْسِيْۚ اِنْ اَتَّبِعُ اِلَّا مَا يُوْحٰۤى اِلَيَّۚ اِنِّۤيْ اَخَافُ اِنْ عَصَيْتُ رَبِّيْ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيْمٍ
যখন তাদের নিকট আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন যারা আমার সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না তারা বলে, এটা ছাড়া অন্য একটি কুরআন নিয়ে আসো, অথবা এটাকে বদলাও। (হে নবী! তাদেরকে) বলো, নিজ হতে এটা বদলানো আমার কাজ নয়। আমার প্রতি যা ওহী করা হয়, আমি কেবল তারই অনুসরণ করি। আমি আমার প্রতিপালকের অবাধ্যতা করলে অবশ্যই আমি মহাদিবসের শাস্তির আশঙ্কা করি। (সূরা ইউনুস- ১৫)
তিনি মানুষের মনগড়া কথা শুনতেন না :
قُلْ لَّاۤ اَتَّبِعُ اَهْوَآءَكُمْ قَدْ ضَلَلْتُ اِذًا وَّمَاۤ اَنَاْ مِنَ الْمُهْتَدِيْنَ
(হে নবী) বলো, আমি তোমাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করি না, যদি করতাম তবে আমি বিপথগামী হয়ে যেতাম এবং সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত থাকতাম না। (সূরা আন‘আম- ৫৬)
তিনি কেবল ওহীর অনুসরণ করেন :
قُلْ مَا كُنْتُ بِدْعًا مِّنَ الرُّسُلِ وَمَاۤ اَدْرِيْ مَا يُفْعَلُ بِيْ وَلَا بِكُمْؕ اِنْ اَتَّبِعُ اِلَّا مَا يُوْحٰۤى اِلَيَّ وَمَاۤ اَنَا اِلَّا نَذِيْرٌ مُّبِيْنٌ
(হে রাসূল!) আপনি বলে দিন, আমি তো রাসূলদের মধ্যে নতুন নই। আর আমি জানি না যে, আমার সাথে ও তোমাদের সাথে কেমন আচরণ করা হবে। আমি তো শুধু তা-ই মেনে চলছি, যা আমার উপর ওহী করা হয়। আর আমি একজন স্পষ্ট সতর্ককারী ছাড়া আর কিছুই নই। (সূরা আহকাফ- ৯)
قُلْ اِنَّمَاۤ اَتَّبِعُ مَا يُوْحٰۤى اِلَيَّ مِنْ رَّبِّيْ
বলো, আমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আমার কাছে যা ওহী করা হয়, আমি তো শুধু তারই অনুসরণ করি। (সূরা আ‘রাফ- ২০৩)
ব্যাখ্যা : যে ব্যক্তি নিজের কোন স্বার্থ ছাড়াই দাওয়াতের জন্য এতো পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, তার বিশ্বাস অবশ্যই একটি শক্ত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। তিনি মানসিক প্রশান্তির এমন কোন উপকরণের অধিকারী, যার ভিত্তিতে সকল প্রকার আরাম-আয়েশ পরিত্যাগ করে ক্রমান্বয়ে নিজেকে মারাত্মক বিপদের মধ্যে নিক্ষেপ করেছেন। ফলে শত শত বছরের রচিত আকীদা-বিশ্বাস, রীতিনীতি ও জীবনধারার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন এবং এ কারণেই সারা দুনিয়ার শত্রুতার মুখোমুখি হয়েছেন। এ ধরনের মানুষের কথা আর যাই হোক এতটা হালকা হতে পারে না যে, না বুঝেই তা প্রত্যাখ্যান করা যায়।
মুসলিমদের জন্য তিনিই একমাত্র আদর্শ :
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيْ رَسُوْلِ اللهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَنْ كَانَ يَرْجُوا اللهَ وَالْيَوْمَ الْاٰخِرَ وَذَكَرَ اللهَ كَثِيْرًا
তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও কিয়ামতের দিনকে ভয় করে এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করে, নিশ্চয় তাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। (সূরা আহযাব- ২১)
নবী ﷺ দাওয়াতী কাজে কোন বিনিময় চাননি :
قُلْ لَّاۤ اَسْاَلُكُمْ عَلَيْهِ اَجْرًا اِلَّا الْمَوَدَّةَ فِى الْقُرْبٰى
বলো, আমি এর বিনিময়ে তোমাদের নিকট হতে আত্মীয়তার ভালোবাসা ব্যতীত অন্য কোন বিনিময় চাই না। (সূরা শূরা- ২৩)
তিনি শুধুমাত্র সওয়াবের আশা করতেন :
قُلْ مَا سَاَلْتُكُمْ مِّنْ اَجْرٍ فَهُوَ لَكُمْؕ اِنْ اَجْرِيَ اِلَّا عَلَى اللهِۚ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ شَهِيْدٌ
বলো, আমি তোমাদের কাছে যে পারিশ্রমিক চাই তা তো তোমাদের জন্যই (অর্থাৎ তোমরা দ্বীনদার হয়ে যাও)। আমার পুরস্কার তো আল্লাহর নিকট প্রস্তুত রয়েছে। আর তিনি সবকিছুর উপর সাক্ষী। (সূরা সাবা- ৪৭)
اَمْ تَسْاَلُهُمْ خَرْجًا فَخَرَاجُ رَبِّكَ خَيْرٌۗ وَهُوَ خَيْرُ الرَّازِقِيْنَ
অথবা তুমি কি তাদের নিকট কোন প্রতিদান চাও? তোমার প্রতিপালকের প্রতিদানই শ্রেষ্ঠ এবং তিনিই শ্রেষ্ঠ রিযিকদাতা। (সূরা মু’মিনূন- ৭২)
মানুষ আল্লাহমুখী হোক এটাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য :
قُلْ مَاۤ اَسْاَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ اَجْرٍ اِلَّا مَنْ شَآءَ اَنْ يَّتَّخِذَ اِلٰى رَبِّهٖ سَبِيْلًا
বলো, ‘আমি তোমাদের নিকট এটার জন্য কোন প্রতিদান চাই না, তবে যে ইচ্ছা করে সে তার প্রতিপালকের দিকে পথ অবলম্বন করুক।’ (সূরা ফুরক্বান- ৫৭)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ নিজের এ কাজে আপনি পুরোপুরি নিঃস্বার্থ। কোন ব্যক্তি সততার সাথে এ দোষারোপ করতে পারে না যে, কোন ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্য আপনার সামনে রয়েছে, তাই আপনি এ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ব্যবসা-বাণিজ্যে আপনার ভালোই উন্নতি হচ্ছিল। এখন দারিদ্র্য ও অর্থসংকটের সম্মুখীন হলেন। জাতির মধ্যে আপনাকে সম্মানের দৃষ্টিতে দেখা হতো। এখন গালাগালি ও মার খাচ্ছেন, এমনকি প্রাণনাশের পর্যায়েও পৌঁছে গেছেন। নিজের পরিবার-পরিজন নিয়ে নিশ্চিন্তে সুখে জীবন যাপন করছিলেন। এখন এমন একটি কঠিন দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মধ্যে পড়ে গেছেন, যার ফলে এক মুহূর্তের জন্যও শান্তিতে থাকতে পারছেন না। উপরন্তু এমন বিষয় নিয়ে সামনে এসেছেন, যার ফলে সারা দেশের লোক আপনার শত্রুতে পরিণত হয়েছে। এমনকি নিজের নিকটাত্মীয়রা পর্যন্ত আপনাকে হত্যা করার জন্য পাগলপারা হয়ে উঠেছে। কে বলতে পারে, এটা একজন স্বার্থবাদী লোকের কাজ?
وَاِنَّكَ لَعَلٰى خُلُقٍ عَظِيْمٍ
নিশ্চয় তুমি মহান চরিত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছ। (সূরা ক্বালাম- ৪)
তিনি ছিলেন কোমল হৃদয়ের অধিকারী :
فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللهِ لِنْتَ لَهُمْۚ وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيْظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوْا مِنْ حَوْلِكَ
অতএব আল্লাহর অনুগ্রহ এই যে, তুমি তাদের প্রতি কোমলচিত্তের অধিকারী। (পক্ষান্তরে) তুমি যদি কর্কশ ভাষী ও কঠোর হৃদয়ের অধিকারী হতে, তবে নিশ্চয় তারা তোমার সংস্পর্শে আসা হতে বিরত থাকত। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৯)
তিনি ছিলেন সকলের জন্য কল্যাণকামী ও স্নেহপরায়ণ :
لَقَدْ جَآءَكُمْ رَسُوْلٌ مِّنْ اَنْفُسِكُمْ عَزِيْزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيْصٌ عَلَيْكُمْ بِالْمُؤْمِنِيْنَ رَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ
অবশ্যই তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের নিকট একজন রাসূল এসেছে। তোমাদেরকে যা কষ্ট দেয়, তা তার নিকট কষ্টদায়ক। সে তোমাদের মঙ্গলকামী এবং মুমিনদের প্রতি সে দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। (সূরা তাওবা- ১২৮)
তিনি মুমিনদের উপর বিশ্বাস রাখেন :
يُؤْمِنُ بِاللهِ وَيُؤْمِنُ لِلْمُؤْمِنِيْنَ وَرَحْمَةٌ لِّلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مِنْكُمْ
সে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে এবং মুমিনদেরকে বিশ্বাস করে, তোমাদের মধ্যে যারা মুমিন সে তাদের জন্য রহমতস্বরূপ। (সূরা তাওবা- ৬১)
তিনি মুমিনদের কাছে প্রাণের চেয়েও প্রিয় :
اَلنَّبِيُّ اَوْلٰى بِالْمُؤْمِنِيْنَ مِنْ اَنْفُسِهِمْ وَاَزْوَاجُهٗۤ اُمَّهَاتُهُمْ
তিনি এমন নবী, যিনি মুমিনদের কাছে তাদের নিজেদের চেয়েও অধিক ঘনিষ্ঠ এবং তাঁর স্ত্রীগণ তাদের মাতার মতো। (সূরা আহযাব- ৬)
তাঁর কতিপয় বিশেষ গুণাবলি :
اَلَّذِيْنَ يَتَّبِعُوْنَ الرَّسُوْلَ النَّبِيَّ الْاُمِّيَّ الَّذِيْ يَجِدُوْنَهٗ مَكْتُوْبًا عِنْدَهُمْ فِى التَّوْرَاةِ وَالْاِنْجِيْلِؗ يَأْمُرُهُمْ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَاهُمْ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَآئِثَ وَيَضَعُ عَنْهُمْ اِصْرَهُمْ وَالْاَغْلَالَ الَّتِيْ كَانَتْ عَلَيْهِمْؕ فَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا بِه وَعَزَّرُوْهُ وَنَصَرُوْهُ وَاتَّبَعُوا النُّوْرَ الَّذِيْۤ اُنْزِلَ مَعَهٗۤ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
যারা বার্তাবাহক নিরক্ষর নবীর অনুসরণ করে, যার ব্যাপারে উল্লেখ পাবে তাওরাত ও ইঞ্জিলে, যা তাদের নিকট রয়েছে। সে তাদেরকে সৎকাজের নির্দেশ দেয় ও অসৎকাজ হতে নিষেধ করে, সে তাদের জন্য পবিত্র বস্তুসমূহকে হালাল ঘোষণা করে আর অপবিত্র বস্তুসমূহকে হারাম ঘোষণা করে এবং সে তাদেরকে তাদের উপর অর্পিত বড় দায়িত্ব ও শৃঙ্খল হতে মুক্ত করে, যা তাদের উপর আরোপিত ছিল। সুতরাং যারা তার প্রতি ঈমান আনে, তাকে সম্মান করে, তাকে সাহায্য করে এবং ঐ নূরের অনুসরণ করে, যা তার উপর অবতীর্ণ করা হয়েছে- তারাই সফলকাম। (সূরা আ‘রাফ- ১৫৭)
তিনি সঠিক পথের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন :
اِنَّكَ لَمِنَ الْمُرْسَلِيْنَ – عَلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
নিশ্চয় আপনি প্রেরিত রাসূলদের অন্তর্ভুক্ত। আপনি আছেন সরলসঠিক পথের উপর। (সূরা ইয়াসীন - ৩, ৪)
তিনি মানুষকে সঠিক পথ দেখাতেন :
وَاِنَّكَ لَتَهْدِيْۤ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ – صِرَاطِ اللهِ الَّذِيْ لَهٗ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَرْضِؕ اَ لَاۤ اِلَى اللهِ تَصِيْرُ الْاُمُوْرُ
নিশ্চয় তুমি (মানুষকে) সরল পথপ্রদর্শন করে থাক। এটা ঐ আল্লাহর পথ, যাঁর আধিপত্য রয়েছে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে (সবকিছুর উপর)। সাবধান! সকল বিষয় আল্লাহর দিকেই প্রত্যাবর্তন করে। (সূরা শূরা- ৫২, ৫৩)
তিনি ইচ্ছেমতো কথা বলতেন না :
وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوٰى – اِنْ هُوَ اِلَّا وَحْيٌ يُّوْحٰى
তিনি প্রবৃত্তি হতে কোন কথা বলেন না। এটা তো এক ওহী, যা তাঁর প্রতি প্রত্যাদেশ করা হয়। (সূরা নাজম- ৩, ৪)
তিনি ওহীর মধ্যে কোন পরিবর্তন করতেন না :
وَاِذَا تُتْلٰى عَلَيْهِمْ اٰيَاتُنَا بَيِّنَاتٍ قَالَ الَّذِيْنَ لَا يَرْجُوْنَ لِقَآءَنَا ائْتِ بِقُرْاٰنٍ غَيْرِ هٰذَاۤ اَوْ بَدِّلْهُؕ قُلْ مَا يَكُوْنُ لِۤيْ اَنْ اُبَدِّلَهٗ مِنْ تِلْقَآءِ نَفْسِيْۚ اِنْ اَتَّبِعُ اِلَّا مَا يُوْحٰۤى اِلَيَّۚ اِنِّۤيْ اَخَافُ اِنْ عَصَيْتُ رَبِّيْ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيْمٍ
যখন তাদের নিকট আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন যারা আমার সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না তারা বলে, এটা ছাড়া অন্য একটি কুরআন নিয়ে আসো, অথবা এটাকে বদলাও। (হে নবী! তাদেরকে) বলো, নিজ হতে এটা বদলানো আমার কাজ নয়। আমার প্রতি যা ওহী করা হয়, আমি কেবল তারই অনুসরণ করি। আমি আমার প্রতিপালকের অবাধ্যতা করলে অবশ্যই আমি মহাদিবসের শাস্তির আশঙ্কা করি। (সূরা ইউনুস- ১৫)
তিনি মানুষের মনগড়া কথা শুনতেন না :
قُلْ لَّاۤ اَتَّبِعُ اَهْوَآءَكُمْ قَدْ ضَلَلْتُ اِذًا وَّمَاۤ اَنَاْ مِنَ الْمُهْتَدِيْنَ
(হে নবী) বলো, আমি তোমাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করি না, যদি করতাম তবে আমি বিপথগামী হয়ে যেতাম এবং সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত থাকতাম না। (সূরা আন‘আম- ৫৬)
তিনি কেবল ওহীর অনুসরণ করেন :
قُلْ مَا كُنْتُ بِدْعًا مِّنَ الرُّسُلِ وَمَاۤ اَدْرِيْ مَا يُفْعَلُ بِيْ وَلَا بِكُمْؕ اِنْ اَتَّبِعُ اِلَّا مَا يُوْحٰۤى اِلَيَّ وَمَاۤ اَنَا اِلَّا نَذِيْرٌ مُّبِيْنٌ
(হে রাসূল!) আপনি বলে দিন, আমি তো রাসূলদের মধ্যে নতুন নই। আর আমি জানি না যে, আমার সাথে ও তোমাদের সাথে কেমন আচরণ করা হবে। আমি তো শুধু তা-ই মেনে চলছি, যা আমার উপর ওহী করা হয়। আর আমি একজন স্পষ্ট সতর্ককারী ছাড়া আর কিছুই নই। (সূরা আহকাফ- ৯)
قُلْ اِنَّمَاۤ اَتَّبِعُ مَا يُوْحٰۤى اِلَيَّ مِنْ رَّبِّيْ
বলো, আমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আমার কাছে যা ওহী করা হয়, আমি তো শুধু তারই অনুসরণ করি। (সূরা আ‘রাফ- ২০৩)
ব্যাখ্যা : যে ব্যক্তি নিজের কোন স্বার্থ ছাড়াই দাওয়াতের জন্য এতো পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, তার বিশ্বাস অবশ্যই একটি শক্ত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। তিনি মানসিক প্রশান্তির এমন কোন উপকরণের অধিকারী, যার ভিত্তিতে সকল প্রকার আরাম-আয়েশ পরিত্যাগ করে ক্রমান্বয়ে নিজেকে মারাত্মক বিপদের মধ্যে নিক্ষেপ করেছেন। ফলে শত শত বছরের রচিত আকীদা-বিশ্বাস, রীতিনীতি ও জীবনধারার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন এবং এ কারণেই সারা দুনিয়ার শত্রুতার মুখোমুখি হয়েছেন। এ ধরনের মানুষের কথা আর যাই হোক এতটা হালকা হতে পারে না যে, না বুঝেই তা প্রত্যাখ্যান করা যায়।
মুসলিমদের জন্য তিনিই একমাত্র আদর্শ :
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيْ رَسُوْلِ اللهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَنْ كَانَ يَرْجُوا اللهَ وَالْيَوْمَ الْاٰخِرَ وَذَكَرَ اللهَ كَثِيْرًا
তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও কিয়ামতের দিনকে ভয় করে এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করে, নিশ্চয় তাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। (সূরা আহযাব- ২১)
নবী ﷺ দাওয়াতী কাজে কোন বিনিময় চাননি :
قُلْ لَّاۤ اَسْاَلُكُمْ عَلَيْهِ اَجْرًا اِلَّا الْمَوَدَّةَ فِى الْقُرْبٰى
বলো, আমি এর বিনিময়ে তোমাদের নিকট হতে আত্মীয়তার ভালোবাসা ব্যতীত অন্য কোন বিনিময় চাই না। (সূরা শূরা- ২৩)
তিনি শুধুমাত্র সওয়াবের আশা করতেন :
قُلْ مَا سَاَلْتُكُمْ مِّنْ اَجْرٍ فَهُوَ لَكُمْؕ اِنْ اَجْرِيَ اِلَّا عَلَى اللهِۚ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ شَهِيْدٌ
বলো, আমি তোমাদের কাছে যে পারিশ্রমিক চাই তা তো তোমাদের জন্যই (অর্থাৎ তোমরা দ্বীনদার হয়ে যাও)। আমার পুরস্কার তো আল্লাহর নিকট প্রস্তুত রয়েছে। আর তিনি সবকিছুর উপর সাক্ষী। (সূরা সাবা- ৪৭)
اَمْ تَسْاَلُهُمْ خَرْجًا فَخَرَاجُ رَبِّكَ خَيْرٌۗ وَهُوَ خَيْرُ الرَّازِقِيْنَ
অথবা তুমি কি তাদের নিকট কোন প্রতিদান চাও? তোমার প্রতিপালকের প্রতিদানই শ্রেষ্ঠ এবং তিনিই শ্রেষ্ঠ রিযিকদাতা। (সূরা মু’মিনূন- ৭২)
মানুষ আল্লাহমুখী হোক এটাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য :
قُلْ مَاۤ اَسْاَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ اَجْرٍ اِلَّا مَنْ شَآءَ اَنْ يَّتَّخِذَ اِلٰى رَبِّهٖ سَبِيْلًا
বলো, ‘আমি তোমাদের নিকট এটার জন্য কোন প্রতিদান চাই না, তবে যে ইচ্ছা করে সে তার প্রতিপালকের দিকে পথ অবলম্বন করুক।’ (সূরা ফুরক্বান- ৫৭)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ নিজের এ কাজে আপনি পুরোপুরি নিঃস্বার্থ। কোন ব্যক্তি সততার সাথে এ দোষারোপ করতে পারে না যে, কোন ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্য আপনার সামনে রয়েছে, তাই আপনি এ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ব্যবসা-বাণিজ্যে আপনার ভালোই উন্নতি হচ্ছিল। এখন দারিদ্র্য ও অর্থসংকটের সম্মুখীন হলেন। জাতির মধ্যে আপনাকে সম্মানের দৃষ্টিতে দেখা হতো। এখন গালাগালি ও মার খাচ্ছেন, এমনকি প্রাণনাশের পর্যায়েও পৌঁছে গেছেন। নিজের পরিবার-পরিজন নিয়ে নিশ্চিন্তে সুখে জীবন যাপন করছিলেন। এখন এমন একটি কঠিন দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মধ্যে পড়ে গেছেন, যার ফলে এক মুহূর্তের জন্যও শান্তিতে থাকতে পারছেন না। উপরন্তু এমন বিষয় নিয়ে সামনে এসেছেন, যার ফলে সারা দেশের লোক আপনার শত্রুতে পরিণত হয়েছে। এমনকি নিজের নিকটাত্মীয়রা পর্যন্ত আপনাকে হত্যা করার জন্য পাগলপারা হয়ে উঠেছে। কে বলতে পারে, এটা একজন স্বার্থবাদী লোকের কাজ?
তিনি বিশ্বমানবের উপর সাক্ষ্য হবেন :
وَكَذٰلِكَ جَعَلْنَاكُمْ اُمَّةً وَّسَطًا لِّتَكُوْنُوْا شُهَدَآءَ عَلَى النَّاسِ وَيَكُوْنَ الرَّسُوْلُ عَلَيْكُمْ شَهِيْدًا
এভাবে আমি তোমাদেরকে মধ্যমপন্থী উম্মত হিসেবে মনোনীত করেছি; যেন তোমরা মানবজাতির জন্য (হেদায়াতের) সাক্ষী হও এবং রাসূলও তোমাদের জন্য সাক্ষী হয়। (সূরা বাক্বারা- ১৪৩)
وَيَوْمَ نَبْعَثُ فِيْ كُلِّ اُمَّةٍ شَهِيْدًا عَلَيْهِمْ مِّنْ اَنْفُسِهِمْ وَجِئْنَا بِكَ شَهِيْدًا عَلٰى هٰۤؤُلَآءِ
সেদিন আমি উত্থিত করব প্রত্যেক সম্প্রদায় থেকে তাদেরই মধ্য হতে তাদের বিষয়ে এক একজন সাক্ষী এবং তোমাকেও আমি এদের বিষয়ে সাক্ষী হিসেবে নিয়ে আসব। (সূরা নাহল- ৮৯)
فَكَيْفَ اِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ اُمَّةٍ ۢبِشَهِيْدٍ وَّجِئْنَا بِكَ عَلٰى هٰۤؤُلَآءِ شَهِيْدًا
যখন আমি প্রত্যেক উম্মত হতে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং তোমাকে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত করব তখন কী অবস্থা হবে? (সূরা নিসা- ৪১)
ব্যাখ্যা : প্রত্যেক যুগের নবী তাঁর যুগের লোকদের ব্যাপারে আল্লাহর আদালতে সাক্ষ্য দেবেন। তিনি এ মর্মে সাক্ষ্য দেবেন যে, হে আল্লাহ! মানবজাতিকে সহজসরল পথপ্রদর্শনের জন্য উন্নত চিন্তা-চেতনা ও কর্মের সঠিক পদ্ধতির যে শিক্ষা তুমি আমাকে দিয়েছিলে তা আমি এদের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলাম। তারপর এ সাক্ষ্য মুহাম্মাদ ﷺ তাঁর যুগের লোকদের ব্যাপারেও পেশ করবেন।
নবী ﷺ এর ফায়সালা না মানলে মুমিন হওয়া যায় না :
فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُوْنَ حَتّٰى يُحَكِّمُوْكَ فِيْمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوْا فِۤيْ اَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا
কিন্তু না, তোমার প্রতিপালকের শপথ! ততক্ষণ পর্যন্ত তারা মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের ঝগড়া-বিবাদের বিচারভার তোমার উপর অর্পণ না করে। অতঃপর তোমার সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে তাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে এবং তা মেনে না নেয়। (সূরা নিসা- ৬৫)
ব্যাখ্যা : এ নির্দেশটি কেবল রাসূল ﷺ এর জীবন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয় বরং এটি কিয়ামত পর্যন্ত কার্যকর হবে। নবী ﷺ আল্লাহর কাছ থেকে যা কিছু এনেছেন এবং আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী যে পদ্ধতিতে কাজ করেছেন, তা চিরস্থায়ীভাবে মুসলিমদের জন্য চূড়ান্ত ফায়সালাকারী সনদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ সনদটি মানা ও না মানার উপরই কোন ব্যক্তির মুমিন হওয়া না হওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে। যে ব্যক্তি এ সনদটি যতটুকু পালন করবে তার ঈমানের পরিমাণটাও ততটুকুই নির্ধারিত হবে।
নবী ﷺ এর উপস্থিতিতে আযাব আসে না :
وَمَا كَانَ اللهُ لِيُعَذِّبَهُمْ وَاَنْتَ فِيْهِمْؕ وَمَا كَانَ اللهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ
আল্লাহ এমন নন যে, তুমি তাদের মধ্যে থাকবে আর তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন। আর আল্লাহ এমনও নন যে, তারা ক্ষমাপ্রার্থনা করবে আর তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন। (সূরা আনফাল- ৩৩)
ব্যাখ্যা : দু’টি কারণ বিদ্যমান থাকলে আল্লাহ তা‘আলা কোন সম্প্রদায়ের উপর আযাব প্রেরণ করেন না। প্রথম কারণ হচ্ছে, যতদিন কোন নবী কোন জনবসতিতে উপস্থিত থাকেন এবং সত্যের দাওয়াত দিতে থাকেন ততদিন পর্যন্ত জনবসতির অধিবাসীদের অবকাশ দেয়া হয় এবং পূর্বাহ্নে আযাব পাঠিয়ে তাদের সংশোধিত হওয়ার সুযোগ কেড়ে নেয়া হয় না। আর দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, যতদিন পর্যন্ত কোন জনবসতি থেকে এমন ধরনের লোকেরা একের পর এক বের হয়ে আসতে থাকে, যারা নিজেদের পূর্ববর্তী ভুল কর্মনীতি সম্পর্কে সজাগ হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে থাকে এবং নিজেদের ভবিষ্যৎ কর্মনীতি সংশোধন করে নেয়, ততদিন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট জনবসতিকে মহান আল্লাহ ধ্বংস করেন না।
কেউ চাইলেই তাঁর ক্ষতি করতে পারত না :
وَلَوْلَا فَضْلُ اللهِ عَلَيْكَ وَرَحْمَتُهٗ لَهَمَّتْ طَّآئِفَةٌ مِّنْهُمْ اَنْ يُّضِلُّوْكَؕ وَمَا يُضِلُّوْنَ اِلَّاۤ اَنْفُسَهُمْ وَمَا يَضُرُّوْنَكَ مِنْ شَيْءٍ
তোমার প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে তাদের একদল তোমাকে পথভ্রষ্ট করতে চাইত। কিন্তু তারা নিজেদের ব্যতীত আর কাউকে পথভ্রষ্ট করে না এবং তোমার কোন ক্ষতিও করতে পারে না। (সূরা নিসা- ১১৩)
وَكَذٰلِكَ جَعَلْنَاكُمْ اُمَّةً وَّسَطًا لِّتَكُوْنُوْا شُهَدَآءَ عَلَى النَّاسِ وَيَكُوْنَ الرَّسُوْلُ عَلَيْكُمْ شَهِيْدًا
এভাবে আমি তোমাদেরকে মধ্যমপন্থী উম্মত হিসেবে মনোনীত করেছি; যেন তোমরা মানবজাতির জন্য (হেদায়াতের) সাক্ষী হও এবং রাসূলও তোমাদের জন্য সাক্ষী হয়। (সূরা বাক্বারা- ১৪৩)
وَيَوْمَ نَبْعَثُ فِيْ كُلِّ اُمَّةٍ شَهِيْدًا عَلَيْهِمْ مِّنْ اَنْفُسِهِمْ وَجِئْنَا بِكَ شَهِيْدًا عَلٰى هٰۤؤُلَآءِ
সেদিন আমি উত্থিত করব প্রত্যেক সম্প্রদায় থেকে তাদেরই মধ্য হতে তাদের বিষয়ে এক একজন সাক্ষী এবং তোমাকেও আমি এদের বিষয়ে সাক্ষী হিসেবে নিয়ে আসব। (সূরা নাহল- ৮৯)
فَكَيْفَ اِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ اُمَّةٍ ۢبِشَهِيْدٍ وَّجِئْنَا بِكَ عَلٰى هٰۤؤُلَآءِ شَهِيْدًا
যখন আমি প্রত্যেক উম্মত হতে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং তোমাকে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত করব তখন কী অবস্থা হবে? (সূরা নিসা- ৪১)
ব্যাখ্যা : প্রত্যেক যুগের নবী তাঁর যুগের লোকদের ব্যাপারে আল্লাহর আদালতে সাক্ষ্য দেবেন। তিনি এ মর্মে সাক্ষ্য দেবেন যে, হে আল্লাহ! মানবজাতিকে সহজসরল পথপ্রদর্শনের জন্য উন্নত চিন্তা-চেতনা ও কর্মের সঠিক পদ্ধতির যে শিক্ষা তুমি আমাকে দিয়েছিলে তা আমি এদের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলাম। তারপর এ সাক্ষ্য মুহাম্মাদ ﷺ তাঁর যুগের লোকদের ব্যাপারেও পেশ করবেন।
নবী ﷺ এর ফায়সালা না মানলে মুমিন হওয়া যায় না :
فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُوْنَ حَتّٰى يُحَكِّمُوْكَ فِيْمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوْا فِۤيْ اَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا
কিন্তু না, তোমার প্রতিপালকের শপথ! ততক্ষণ পর্যন্ত তারা মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের ঝগড়া-বিবাদের বিচারভার তোমার উপর অর্পণ না করে। অতঃপর তোমার সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে তাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে এবং তা মেনে না নেয়। (সূরা নিসা- ৬৫)
ব্যাখ্যা : এ নির্দেশটি কেবল রাসূল ﷺ এর জীবন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয় বরং এটি কিয়ামত পর্যন্ত কার্যকর হবে। নবী ﷺ আল্লাহর কাছ থেকে যা কিছু এনেছেন এবং আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী যে পদ্ধতিতে কাজ করেছেন, তা চিরস্থায়ীভাবে মুসলিমদের জন্য চূড়ান্ত ফায়সালাকারী সনদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ সনদটি মানা ও না মানার উপরই কোন ব্যক্তির মুমিন হওয়া না হওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে। যে ব্যক্তি এ সনদটি যতটুকু পালন করবে তার ঈমানের পরিমাণটাও ততটুকুই নির্ধারিত হবে।
নবী ﷺ এর উপস্থিতিতে আযাব আসে না :
وَمَا كَانَ اللهُ لِيُعَذِّبَهُمْ وَاَنْتَ فِيْهِمْؕ وَمَا كَانَ اللهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ
আল্লাহ এমন নন যে, তুমি তাদের মধ্যে থাকবে আর তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন। আর আল্লাহ এমনও নন যে, তারা ক্ষমাপ্রার্থনা করবে আর তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন। (সূরা আনফাল- ৩৩)
ব্যাখ্যা : দু’টি কারণ বিদ্যমান থাকলে আল্লাহ তা‘আলা কোন সম্প্রদায়ের উপর আযাব প্রেরণ করেন না। প্রথম কারণ হচ্ছে, যতদিন কোন নবী কোন জনবসতিতে উপস্থিত থাকেন এবং সত্যের দাওয়াত দিতে থাকেন ততদিন পর্যন্ত জনবসতির অধিবাসীদের অবকাশ দেয়া হয় এবং পূর্বাহ্নে আযাব পাঠিয়ে তাদের সংশোধিত হওয়ার সুযোগ কেড়ে নেয়া হয় না। আর দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, যতদিন পর্যন্ত কোন জনবসতি থেকে এমন ধরনের লোকেরা একের পর এক বের হয়ে আসতে থাকে, যারা নিজেদের পূর্ববর্তী ভুল কর্মনীতি সম্পর্কে সজাগ হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে থাকে এবং নিজেদের ভবিষ্যৎ কর্মনীতি সংশোধন করে নেয়, ততদিন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট জনবসতিকে মহান আল্লাহ ধ্বংস করেন না।
কেউ চাইলেই তাঁর ক্ষতি করতে পারত না :
وَلَوْلَا فَضْلُ اللهِ عَلَيْكَ وَرَحْمَتُهٗ لَهَمَّتْ طَّآئِفَةٌ مِّنْهُمْ اَنْ يُّضِلُّوْكَؕ وَمَا يُضِلُّوْنَ اِلَّاۤ اَنْفُسَهُمْ وَمَا يَضُرُّوْنَكَ مِنْ شَيْءٍ
তোমার প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে তাদের একদল তোমাকে পথভ্রষ্ট করতে চাইত। কিন্তু তারা নিজেদের ব্যতীত আর কাউকে পথভ্রষ্ট করে না এবং তোমার কোন ক্ষতিও করতে পারে না। (সূরা নিসা- ১১৩)
আল্লাহ মুহাম্মাদ ﷺ কে মে‘রাজ করিয়েছেন :
سُبْحَانَ الَّذِيْۤ اَسْرٰى بِعَبْدِه لَيْلًا مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ اِلَى الْمَسْجِدِ الْاَقْصَى الَّذِيْ بَارَكْنَا حَوْلَهٗ لِنُرِيَهٗ مِنْ اٰيَاتِنَاؕ اِنَّهٗ هُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ
পবিত্র ও মহিমাময় ঐ সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রজনীযোগে ভ্রমণ করিয়েছিলেন মাসজিদুল হারাম হতে মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত। যার পরিবেশকে আমি বরকতময় করে দিয়েছিলাম, যাতে আমি আমার নিদর্শনগুলো তাকে (ভালোভাবে) দেখাতে পারি। আর তিনিই সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। (সূরা বনী ইসরাঈল- ১)
ব্যাখ্যা : মে‘রাজের সারসংক্ষেপ হচ্ছে, এক রাতে জিবরাঈল (আঃ) নবী ﷺ কে উঠিয়ে বোরাকের পিঠে চড়িয়ে মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত নিয়ে যান। তারপর জিবরাঈল (আঃ) তাঁকে ঊর্ধবজগতে নিয়ে যান এবং সেখানে আকাশের বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন মর্যাদাশীল নবীর সাথে সাক্ষাৎ করেন। অবশেষে তিনি উচ্চতার সর্বশেষ পর্যায়ে পৌঁছেন এবং আল্লাহর সাথে কথা বলেন। এ সময় আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ ছাড়াও তাঁকে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয হওয়ার ব্যাপারে আদেশ দেয়া হয়। এরপর তিনি আবার বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে ফিরে আসেন। সেখান থেকে মসজিদে হারামে ফিরে আসেন। মে‘রাজের ব্যাপারে যে আসল কথাটি বুঝে নিতে হবে সেটি হচ্ছে, মহান আল্লাহ নবীদের মধ্য থেকে প্রত্যেককে তাঁদের পদমর্যাদানুসারে পৃথিবী ও আকাশের অদৃশ্য রাজত্ব দেখিয়ে দিয়েছেন। বস্তুজগতের অন্তরাল সরিয়ে এমনসব জিনিস দেখিয়েছেন, যেগুলোর উপর ঈমান আনার জন্য তাদেরকে নিযুক্ত করা হয়েছিল। মুহাম্মাদ ﷺ এর ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। আল্লাহ তা‘আলা অদৃশ্য জগতের কিছু বিষয় তাকে দেখানোর জন্য মে‘রাজ সংঘটিত করেছিলেন।
তিনি আল্লাহর বড় বড় নিদর্শনসমূহ দেখেছেন :
مَا زَاغَ الْبَصَرُ وَمَا طَغٰى – لَقَدْ رَاٰى مِنْ اٰيَاتِ رَبِّهِ الْكُبْرٰى
তার দৃষ্টি ভ্রষ্ট হয়নি এবং দৃষ্টি সীমালঙ্ঘনও করেনি। অবশ্যই তিনি তাঁর প্রতিপালকের মহান নিদর্শনাবলি দেখেছিলেন। (সূরা নাজম- ১৭, ১৮)
سُبْحَانَ الَّذِيْۤ اَسْرٰى بِعَبْدِه لَيْلًا مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ اِلَى الْمَسْجِدِ الْاَقْصَى الَّذِيْ بَارَكْنَا حَوْلَهٗ لِنُرِيَهٗ مِنْ اٰيَاتِنَاؕ اِنَّهٗ هُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ
পবিত্র ও মহিমাময় ঐ সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রজনীযোগে ভ্রমণ করিয়েছিলেন মাসজিদুল হারাম হতে মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত। যার পরিবেশকে আমি বরকতময় করে দিয়েছিলাম, যাতে আমি আমার নিদর্শনগুলো তাকে (ভালোভাবে) দেখাতে পারি। আর তিনিই সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। (সূরা বনী ইসরাঈল- ১)
ব্যাখ্যা : মে‘রাজের সারসংক্ষেপ হচ্ছে, এক রাতে জিবরাঈল (আঃ) নবী ﷺ কে উঠিয়ে বোরাকের পিঠে চড়িয়ে মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত নিয়ে যান। তারপর জিবরাঈল (আঃ) তাঁকে ঊর্ধবজগতে নিয়ে যান এবং সেখানে আকাশের বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন মর্যাদাশীল নবীর সাথে সাক্ষাৎ করেন। অবশেষে তিনি উচ্চতার সর্বশেষ পর্যায়ে পৌঁছেন এবং আল্লাহর সাথে কথা বলেন। এ সময় আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ ছাড়াও তাঁকে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয হওয়ার ব্যাপারে আদেশ দেয়া হয়। এরপর তিনি আবার বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে ফিরে আসেন। সেখান থেকে মসজিদে হারামে ফিরে আসেন। মে‘রাজের ব্যাপারে যে আসল কথাটি বুঝে নিতে হবে সেটি হচ্ছে, মহান আল্লাহ নবীদের মধ্য থেকে প্রত্যেককে তাঁদের পদমর্যাদানুসারে পৃথিবী ও আকাশের অদৃশ্য রাজত্ব দেখিয়ে দিয়েছেন। বস্তুজগতের অন্তরাল সরিয়ে এমনসব জিনিস দেখিয়েছেন, যেগুলোর উপর ঈমান আনার জন্য তাদেরকে নিযুক্ত করা হয়েছিল। মুহাম্মাদ ﷺ এর ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। আল্লাহ তা‘আলা অদৃশ্য জগতের কিছু বিষয় তাকে দেখানোর জন্য মে‘রাজ সংঘটিত করেছিলেন।
তিনি আল্লাহর বড় বড় নিদর্শনসমূহ দেখেছেন :
مَا زَاغَ الْبَصَرُ وَمَا طَغٰى – لَقَدْ رَاٰى مِنْ اٰيَاتِ رَبِّهِ الْكُبْرٰى
তার দৃষ্টি ভ্রষ্ট হয়নি এবং দৃষ্টি সীমালঙ্ঘনও করেনি। অবশ্যই তিনি তাঁর প্রতিপালকের মহান নিদর্শনাবলি দেখেছিলেন। (সূরা নাজম- ১৭, ১৮)
আল্লাহ তাঁর পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল গোনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন :
اِنَّا فَتَحْنَا لَكَ فَتْحًا مُّبِيْنًا – لِيَغْفِرَ لَكَ اللهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْۢبِكَ وَمَا تَاَخَّرَ وَيُتِمَّ نِعْمَتَهٗ عَلَيْكَ وَيَهْدِيَكَ صِرَاطًا مُّسْتَقِيْمًا
(হে রাসূল!) আমি আপনাকে সুস্পষ্ট বিজয় দান করেছি, যাতে আল্লাহ আপনার আগের ও পরের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করেন এবং আপনার প্রতি তাঁর নিয়ামতকে পরিপূর্ণ করেন আর আপনাকে সরলসঠিক পথ দেখান। (সূরা ফাতহ- ১, ২)
মুহাম্মাদ ﷺ কে কুরআন মাজীদ দান করেছেন :
وَلَقَدْ اٰتَيْنَاكَ سَبْعًا مِّنَ الْمَثَانِيْ وَالْقُرْاٰنَ الْعَظِيْمَ
নিশ্চয় আমি আপনাকে সাতটি আয়াত দান করেছি, যা বার বার পাঠ করা হয় এবং মহান কুরআনও দান করেছি। (সূরা হিজর- ৮৭)
মুহাম্মাদ ﷺ কে হাউজে কাওসার দান করেছেন :
اِنَّاۤ اَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ
(হে নবী!) আমি অবশ্যই তোমাকে (নিয়ামতের ভান্ডার) কাওসার দান করেছি। (সূরা কাওসার- ১)
ব্যাখ্যা : কাওসার জান্নাতের একটি নদী। নবী ﷺ এখান থেকে তাঁর পিপাসার্ত উম্মতকে পানি পান করাবেন। কিন্তু কিছু সংখ্যক ব্যক্তিকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়া হবে। তখন নবী ﷺ বলবেন, হে আমার প্রতিপালক! এরা তো আমার উম্মত! তখন তাঁকে বলা হবে, আপনি জানেন না, আপনার অবর্তমানে তারা দ্বীনের বহির্ভূত অনেক নতুন বিদ‘আত আবিষ্কার করেছে। (সহীহ বুখারী, হা/৬৫৭৬)
তাঁর জন্য রয়েছে অগণিত পুরস্কার :
وَاِنَّ لَكَ لَاَجْرًا غَيْرَ مَمْنُوْنٍ
নিশ্চয় তোমার জন্য রয়েছে অফুরন্ত পুরস্কার। (সূরা ক্বালাম- ৩)
তাঁর জন্য রয়েছে মাকামে মাহমুদ :
وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِه نَافِلَةً لَّكَۗ عَسٰۤى اَنْ يَّبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُوْدًا
রাত্রির কিছু অংশে তাহাজ্জুদ কায়েম করবে, এটা তোমার এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়, তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৭৯)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ দুনিয়া ও আখিরাতে তোমাকে এমন মর্যাদায় পৌঁছে দেবেন, যেখানে তুমি মানুষের কাছে প্রশংসিত হয়ে থাকবে। চারদিক থেকে তোমার উপর প্রশংসার স্রোত প্রবাহিত হতে থাকবে। আখিরাতেও তুমি সমগ্র সৃষ্টির প্রশংসার অধিকারী হবে। কিয়ামতের দিন নবী ﷺ এর শাফা‘আতকারীর মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হওয়াও এ প্রশংসনীয় মর্যাদারই একটি অংশ।
আল্লাহ নবী ﷺ এর আশা পূর্ণ করেন :
قَدْ نَرٰى تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِى السَّمَآءِۚ فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةً تَرْضَاهَا
নিশ্চয় আমি আকাশের দিকে তোমার চেহারা উঠানো দেখতে পাচ্ছি। তাই আমি তোমাকে ঐ কিবলামুখীই করব, যা তুমি কামনা করছ। (সূরা বাক্বারা- ১৪৪)
শানে নুযুল : হিজরতের পর প্রথম দিকে নবী ﷺ বায়তুল মুকাদ্দাস এর দিকে মুখ করে নামায আদায় করতেন। কিন্তু নবী ﷺ এর মনের টান ছিল কা‘বার দিকে। তাই তিনি বার বার আকাশের দিকে তাকাতেন এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে নির্দেশের আশায় থাকতেন। পরে আল্লাহ তা‘আলা নবী ﷺ এর এ আশা পূর্ণ করে উক্ত আয়াত নাযিল করেন।
আল্লাহ নবী ﷺ এর উপর কঠোরতা করেননি :
مَا كَانَ عَلَى النَّبِيِّ مِّنْ حَرَجٍ فِيْمَا فَرَضَ اللهُ لَهٗؕ سُنَّةَ اللهِ فِى الَّذِيْنَ خَلَوْا مِنْ قَبْلُؕ وَكَانَ اَمْرُ اللهِ قَدَرًا مَّقْدُوْرًا
আল্লাহ নবীর জন্য যা বিধিসম্মত করেছেন তা করতে তার জন্য কোন বাধা নেই। পূর্বে যেসব নবী গত হয়েছেন তাদের ক্ষেত্রেও এটাই ছিল আল্লাহর বিধান। আর আল্লাহর হুকুম তো পূর্ব থেকেই নির্ধারিত হয়ে আছে। (সূরা আহযাব- ৩৮)
বিধান পালনের ক্ষেত্রে নবী ﷺ কে সুবিধা প্রদান করেছেন :
وَامْرَاَةً مُّؤْمِنَةً اِنْ وَّهَبَتْ نَفْسَهَا لِلنَّبِيِّ اِنْ اَرَادَ النَّبِيُّ اَنْ يَّسْتَنْكِحَهَاۗ خَالِصَةً لَّكَ مِنْ دُوْنِ الْمُؤْمِنِيْنَ
কোন মুমিন নারী যদি নবীর কাছে নিজেকে সমর্পণ করে এবং নবী তাকে বিবাহ করতে চান, তবে তা হালাল। এ আদেশ শুধু আপনারই জন্য, অন্য মুমিনদের জন্য নয়। (সূরা আহযাব- ৫০)
ব্যাখ্যা : কিছু বিধান নবী ﷺ এর জন্য নির্দিষ্ট, উম্মতের অন্য কারো জন্য তা প্রযোজ্য নয়। কুরআন ও সুন্নাহর মধ্যে তাত্ত্বিক অনুসন্ধান চালিয়ে এ ধরনের বহু বিধানের কথা জানা যায়। যেমন নবী ﷺ এর জন্য তাহাজ্জুদের নামায ফরয ছিল, কিন্তু সমগ্র উম্মতের জন্য তা নফল। তাঁর ও তাঁর পরিবারবর্গের জন্য সাদাকা নেয়া হারাম, কিন্তু অন্য কারো জন্য তা হারাম নয়। তাঁর মীরাস বণ্টন হতে পারত না, কিন্তু অন্য সকলের মীরাস বণ্টন হওয়া ফরয। তাঁর জন্য চারজনের অধিক স্ত্রী হালাল করা হয়েছে। নিজেকে হিবাকারী নারীকে মোহর ছাড়াই বিয়ে করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। তাঁর ইন্তিকালের পর তাঁর পবিত্র স্ত্রীগণকে সমগ্র উম্মতের জন্য হারাম করে দেয়া হয়েছে। এসব বিশেষত্ব নবী ﷺ এর জন্য খাস।
এগারজন স্ত্রী গ্রহণের সুযোগ দিয়েছেন :
لَا يَحِلُّ لَكَ النِّسَآءُ مِنْ ۢبَعْدُ وَلَاۤ اَنْ تَبَدَّلَ بِهِنَّ مِنْ اَزْوَاجٍ وَّلَوْ اَعْجَبَكَ حُسْنُهُنَّ اِلَّا مَا مَلَكَتْ يَمِيْنُكَؕ وَكَانَ اللهُ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ رَّقِيْبًا
এরপর আপনার জন্য কোন নারী হালাল নয় এবং আপনার স্ত্রীদের পরিবর্তে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করাও হালাল নয়- যদিও তাদের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করে, তবে আপনার অধিকারভুক্ত দাসীদের ব্যাপারে স্বতন্ত্র। আল্লাহ সর্ববিষয়ের উপর সজাগ নজর রাখেন। (সূরা আহযাব- ৫২)
ব্যাখ্যা : মুহাম্মাদ ﷺ ২৫ বছর বয়সে এমন এক মহিলাকে বিয়ে করেন, যার বয়স ছিল ৪০ বছর। অতঃপর পুরো ২৫ বছর ধরে তিনি তাঁর সাথে অত্যন্ত সুখী দাম্পত্য জীবন যাপন করতে থাকেন। তাঁর ইন্তিকালের পর তিনি অন্য একজন অধিক বয়সের মহিলা সাওদা (রাঃ) কে বিয়ে করেন। পুরো চার বছর পর্যন্ত তিনি একাই ছিলেন তাঁর স্ত্রী। এখন কোন বিবেকবান ব্যক্তি কি এ কথা কল্পনা করতে পারে যে, ৫৩ বছর পার হয়ে যাওয়ার পর হঠাৎ তাঁর যৌন কামনা বেড়ে যায় এবং তাঁর অনেক স্ত্রীর প্রয়োজন হয়ে পড়ে? এ বিষয়টি বুঝতে হলে নবী ﷺ কে আল্লাহ যে মহান দায়িত্ব সম্পাদন করার জন্য নিযুক্ত করেছিলেন, তা অনুধাবন করা জরুরি। নবী ﷺ কে যে কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তা ছিল এই যে, তিনি এমন একটি জাতিকে শিক্ষা ও অনুশীলনের মাধ্যমে একটি উন্নত পর্যায়ের সুসভ্য ও পরিচ্ছন্ন জাতিতে পরিণত করবেন, যারা কেবল ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকেই নয় বরং সাধারণ সভ্যতা ও সংস্কৃতির দৃষ্টিতেও ছিল অসংগঠিত ও অপরিপক্ক। এ উদ্দেশ্যে কেবলমাত্র পুরুষদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া যথেষ্ট ছিল না। তাই মহিলাদের মধ্যেও কাজ করার কেবলমাত্র একটি পথই তাঁর জন্য খোলা ছিল। সেটি হচ্ছে, বিভিন্ন বয়সের ও বিভিন্ন বুদ্ধিবৃত্তিক যোগ্যতাসম্পন্ন মহিলাদেরকে বিয়ে করবেন এবং তাদেরকে প্রশিক্ষণ দান করে নিজের সাহায্যের জন্য প্রস্তুত করবেন। তারপর তাদের সাহায্যে নগরবাসী, যুবতী ও বৃদ্ধা সবধরনের নারীদেরকে দ্বীন ও নৈতিকতার নতুন নীতিসমূহ শিখানোর ব্যবস্থা করবেন।
এছাড়াও নবী ﷺ কে জাহেলী জীবনব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে তার জায়গায় ইসলামী জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্বও দেয়া হয়েছিল। এ দায়িত্ব সম্পাদন করার জন্য জাহেলী জীবনব্যবস্থার পতাকাবাহীদের সাথে যুদ্ধ অপরিহার্য ছিল। এ অবস্থায় অন্যান্য ব্যবস্থার সাথে বিভিন্ন পরিবারে বিয়ে করে বন্ধুত্বকে পাকাপোক্ত এবং বহুতর শত্রুতাকে খতম করার ব্যবস্থা করাও তাঁর জন্য জরুরি ছিল। তাই তিনি যেসব মহিলাকে বিয়ে করেন তাঁদের ব্যক্তিগত গুণাবলি ছাড়াও তাঁদের নির্বাচনের ক্ষেত্রে এসব বিষয়ও কমবেশি জড়িত ছিল। আয়েশা (রাঃ) ও হাফসা (রাঃ) কে বিয়ে করে তিনি আবু বকর (রাঃ) ও ওমর (রাঃ) এর সাথে নিজের সম্পর্ককে মজবুত করে নেন। উম্মে সালামা (রাঃ) ছিলেন এমন এক পরিবারের মেয়ে, যার সাথে ছিল আবু জেহেল ও খালেদ ইবনে ওয়ালীদের সম্পর্ক। উম্মে হাবীবা (রাঃ) ছিলেন আবু সুফিয়ানের মেয়ে। এ বিয়েগুলো সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোর শত্রুতার জের অনেকাংশ কমিয়ে দেয়। বরং উম্মে হাবীবার সাথে নবী ﷺ এর বিয়ে হওয়ার পর আবু সুফিয়ান আর কখনো তাঁর মুকাবিলায় অস্ত্র ধরেনি। সাফিয়া, জুওয়াইরিয়া ও রাইহানা (রাঃ) ইয়াহুদি পরিবারের মেয়ে ছিলেন। তাঁদেরকে যুদ্ধবন্ধি থেকে মুক্তি দিয়ে যখন নবী ﷺ নিজেই তাঁদেরকে বিয়ে করে নেন তখন তাঁর বিরুদ্ধে ইয়াহুদিদের তৎপরতা স্তিমিত হয়ে পড়ে। কারণ সে যুগের রীতি অনুযায়ী যে ব্যক্তির সাথে কোন গোত্রের মেয়ের বিয়ে হতো তাঁকে কেবল মেয়েটির পরিবারের নয় বরং সমগ্র গোত্রের জামাতা মনে করা হতো এবং জামাতার সাথে যুদ্ধ করা বড়ই লজ্জাকর ছিল। সমাজের কার্যকর সংশোধন এবং তার জাহেলী রসম রেওয়াজ নির্মূল করাও নবী ﷺ এর অন্যতম দায়িত্ব ছিল। কাজেই এ উদ্দেশ্যেও তাঁকে বিয়ে করতে হয়। জাহেলী যুগে পালক পুত্রের মেয়েকে বিয়ে করা বৈধ মনে করা হতো না। এ কুপ্রথাকে খতম করার জন্য তিনি তাঁর পালক পুত্র যায়েদের স্ত্রী যয়নাবকে বিয়ে করেন।
এসব কারণে বিয়ের ব্যাপারে নবী ﷺ এর জন্য কোন রকম সংকীর্ণতা ও অসুবিধা রাখা হয়নি। এর ফলে যে মহান দায়িত্ব তাঁর প্রতি অর্পিত হয়েছিল তার প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে তিনি একাধিক বিয়ে করেছেন। যারা মনে করেন একাধিক বিয়ে কেবলমাত্র কয়েকটি বিশেষ ব্যক্তিগত প্রয়োজনেই বৈধ এবং সেগুলো ছাড়া তা বৈধ হওয়ার পেছনে অন্য কোন উদ্দেশ্য থাকতে পারে না, এ বর্ণনা থেকে তাদের চিন্তার বিভ্রান্তিও সুস্পষ্ট হয়ে যায়। এ কথা সুস্পষ্ট যে, নবী ﷺ এর একাধিক বিয়ে করার পেছনে তাঁর স্ত্রীর রুগ্নতা, বন্ধ্যাত্ব বা সন্তানহীনতা অথবা ইয়াতীম প্রতিপালনের সমস্যা ছিল না। তিনি এ সমস্ত বিয়ে করেন প্রচার ও শিক্ষামূলক প্রয়োজনে এবং সামাজিক উদ্দেশ্যে।
স্ত্রীদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা কাছে রাখার সুবিধা প্রদান করেছেন :
تُرْجِيْ مَنْ تَشَآءُ مِنْهُنَّ وَتُؤْوِيْۤ اِلَيْكَ مَنْ تَشَآءُؕ وَمَنِ ابْتَغَيْتَ مِمَّنْ عَزَلْتَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكَؕ ذٰلِكَ اَدْنٰۤى اَنْ تَقَرَّ اَعْيُنُهُنَّ وَلَا يَحْزَنَّ وَيَرْضَيْنَ بِمَاۤ اٰتَيْتَهُنَّ كُلُّهُنَّؕ وَاللهُ يَعْلَمُ مَا فِيْ قُلُوْبِكُمْؕ وَكَانَ اللهُ عَلِيْمًا حَلِيْمًا
আপনি আপনার স্ত্রীদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা পৃথক রাখতে পারেন এবং যাকে ইচ্ছা কাছে রাখতে পারেন। আর আপনি যাকে পৃথক রেখেছেন তাকে আবার (কাছে রাখতে) চাইলে তাতে আপনার কোন গোনাহ নেই। এতে অধিক আশা করা যায় যে, তাদের চক্ষু শীতল থাকবে, তারা কষ্ট পাবে না এবং আপনি যা দেন তাতে তারা সবাই সন্তুষ্ট থাকবে। তোমাদের অন্তরে যা আছে আল্লাহ তা জানেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী ও সহনশীল। (সূরা আহযাব- ৫১)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ এর সংসার জীবনকে সংকটমুক্ত করাই ছিল এ আয়াতটির উদ্দেশ্য। যাতে তিনি পরিপূর্ণ নিশ্চিয়তার সাথে নিজের কাজ করতে পারেন। যখন আল্লাহ তাঁকে স্ত্রীদের সাথে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতা দান করেন, তখন তাকে এ ব্যাপারে কোন চিন্তা বা সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। কিন্তু আল্লাহর কাছ থেকে এ অধিকার লাভ করার পরও নবী ﷺ সকল স্ত্রীদের মধ্যে পূর্ণ সমতা ও ইনসাফ বজায় রেখেছেন, কাউকে কারো উপর প্রাধান্য দেননি এবং যথারীতি পালা নির্ধারণ করে সবার কাছে যেতেন। যখন নবী ﷺ তাঁর শেষ রোগে আক্রান্ত হন এবং চলাফেরা করা তাঁর জন্য কঠিন হয়ে পড়ে তখন তিনি সকল স্ত্রীদের থেকে এ মর্মে অনুমতি চান যে, আমাকে আয়েশার কাছে থাকতে দাও। যখন সবাই এ অনুমতি দেন তখন তিনি শেষ সময়ে আয়েশা (রাঃ) এর কাছে থাকেন এবং তার ঘরেই ইন্তিকাল করেন। নবী ﷺ এর পবিত্র স্ত্রীগণের জন্য এটা ছিল বিরাট মর্যাদার ব্যাপার। তাঁরা নবী ﷺ এর মতো মহান ব্যক্তিত্বের স্ত্রী হওয়ার মর্যাদা লাভ করেছিলেন। এরই বদৌলতে তাঁরা ইসলামী দাওয়াত ও সংস্কারের কাজে নবী ﷺ এর সহযোগী হতে সক্ষম হয়েছিলেন। এ উদ্দেশ্যে নবী ﷺ যেমন অসাধারণ ত্যাগ ও কুরবানীর পথ অবলম্বন করেছিলেন, ঠিক তেমনি ত্যাগ স্বীকার করা তাঁর পবিত্র স্ত্রীগণেরও কর্তব্য ছিল। তাই নবী ﷺ এর সকল স্ত্রী মহান আল্লাহর এ ফায়সালা সানন্দে গ্রহণ করেছিলেন।
নবী ﷺ এর উপর আল্লাহর বিরাট অনুগ্রহ ছিল :
وَاَنْزَلَ اللهُ عَلَيْكَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُنْ تَعْلَمُؕ وَكَانَ فَضْلُ اللهِ عَلَيْكَ عَظِيْمًا
আল্লাহ তোমার প্রতি কিতাব ও হেকমত নাযিল করেছেন এবং তুমি যা জানতে না তা তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন, তোমার প্রতি আল্লাহর মহা অনুগ্রহ রয়েছে। (সূরা নিসা- ১১৩)
اِنَّا فَتَحْنَا لَكَ فَتْحًا مُّبِيْنًا – لِيَغْفِرَ لَكَ اللهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْۢبِكَ وَمَا تَاَخَّرَ وَيُتِمَّ نِعْمَتَهٗ عَلَيْكَ وَيَهْدِيَكَ صِرَاطًا مُّسْتَقِيْمًا
(হে রাসূল!) আমি আপনাকে সুস্পষ্ট বিজয় দান করেছি, যাতে আল্লাহ আপনার আগের ও পরের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করেন এবং আপনার প্রতি তাঁর নিয়ামতকে পরিপূর্ণ করেন আর আপনাকে সরলসঠিক পথ দেখান। (সূরা ফাতহ- ১, ২)
মুহাম্মাদ ﷺ কে কুরআন মাজীদ দান করেছেন :
وَلَقَدْ اٰتَيْنَاكَ سَبْعًا مِّنَ الْمَثَانِيْ وَالْقُرْاٰنَ الْعَظِيْمَ
নিশ্চয় আমি আপনাকে সাতটি আয়াত দান করেছি, যা বার বার পাঠ করা হয় এবং মহান কুরআনও দান করেছি। (সূরা হিজর- ৮৭)
মুহাম্মাদ ﷺ কে হাউজে কাওসার দান করেছেন :
اِنَّاۤ اَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ
(হে নবী!) আমি অবশ্যই তোমাকে (নিয়ামতের ভান্ডার) কাওসার দান করেছি। (সূরা কাওসার- ১)
ব্যাখ্যা : কাওসার জান্নাতের একটি নদী। নবী ﷺ এখান থেকে তাঁর পিপাসার্ত উম্মতকে পানি পান করাবেন। কিন্তু কিছু সংখ্যক ব্যক্তিকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়া হবে। তখন নবী ﷺ বলবেন, হে আমার প্রতিপালক! এরা তো আমার উম্মত! তখন তাঁকে বলা হবে, আপনি জানেন না, আপনার অবর্তমানে তারা দ্বীনের বহির্ভূত অনেক নতুন বিদ‘আত আবিষ্কার করেছে। (সহীহ বুখারী, হা/৬৫৭৬)
তাঁর জন্য রয়েছে অগণিত পুরস্কার :
وَاِنَّ لَكَ لَاَجْرًا غَيْرَ مَمْنُوْنٍ
নিশ্চয় তোমার জন্য রয়েছে অফুরন্ত পুরস্কার। (সূরা ক্বালাম- ৩)
তাঁর জন্য রয়েছে মাকামে মাহমুদ :
وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِه نَافِلَةً لَّكَۗ عَسٰۤى اَنْ يَّبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُوْدًا
রাত্রির কিছু অংশে তাহাজ্জুদ কায়েম করবে, এটা তোমার এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়, তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৭৯)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ দুনিয়া ও আখিরাতে তোমাকে এমন মর্যাদায় পৌঁছে দেবেন, যেখানে তুমি মানুষের কাছে প্রশংসিত হয়ে থাকবে। চারদিক থেকে তোমার উপর প্রশংসার স্রোত প্রবাহিত হতে থাকবে। আখিরাতেও তুমি সমগ্র সৃষ্টির প্রশংসার অধিকারী হবে। কিয়ামতের দিন নবী ﷺ এর শাফা‘আতকারীর মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হওয়াও এ প্রশংসনীয় মর্যাদারই একটি অংশ।
আল্লাহ নবী ﷺ এর আশা পূর্ণ করেন :
قَدْ نَرٰى تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِى السَّمَآءِۚ فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةً تَرْضَاهَا
নিশ্চয় আমি আকাশের দিকে তোমার চেহারা উঠানো দেখতে পাচ্ছি। তাই আমি তোমাকে ঐ কিবলামুখীই করব, যা তুমি কামনা করছ। (সূরা বাক্বারা- ১৪৪)
শানে নুযুল : হিজরতের পর প্রথম দিকে নবী ﷺ বায়তুল মুকাদ্দাস এর দিকে মুখ করে নামায আদায় করতেন। কিন্তু নবী ﷺ এর মনের টান ছিল কা‘বার দিকে। তাই তিনি বার বার আকাশের দিকে তাকাতেন এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে নির্দেশের আশায় থাকতেন। পরে আল্লাহ তা‘আলা নবী ﷺ এর এ আশা পূর্ণ করে উক্ত আয়াত নাযিল করেন।
আল্লাহ নবী ﷺ এর উপর কঠোরতা করেননি :
مَا كَانَ عَلَى النَّبِيِّ مِّنْ حَرَجٍ فِيْمَا فَرَضَ اللهُ لَهٗؕ سُنَّةَ اللهِ فِى الَّذِيْنَ خَلَوْا مِنْ قَبْلُؕ وَكَانَ اَمْرُ اللهِ قَدَرًا مَّقْدُوْرًا
আল্লাহ নবীর জন্য যা বিধিসম্মত করেছেন তা করতে তার জন্য কোন বাধা নেই। পূর্বে যেসব নবী গত হয়েছেন তাদের ক্ষেত্রেও এটাই ছিল আল্লাহর বিধান। আর আল্লাহর হুকুম তো পূর্ব থেকেই নির্ধারিত হয়ে আছে। (সূরা আহযাব- ৩৮)
বিধান পালনের ক্ষেত্রে নবী ﷺ কে সুবিধা প্রদান করেছেন :
وَامْرَاَةً مُّؤْمِنَةً اِنْ وَّهَبَتْ نَفْسَهَا لِلنَّبِيِّ اِنْ اَرَادَ النَّبِيُّ اَنْ يَّسْتَنْكِحَهَاۗ خَالِصَةً لَّكَ مِنْ دُوْنِ الْمُؤْمِنِيْنَ
কোন মুমিন নারী যদি নবীর কাছে নিজেকে সমর্পণ করে এবং নবী তাকে বিবাহ করতে চান, তবে তা হালাল। এ আদেশ শুধু আপনারই জন্য, অন্য মুমিনদের জন্য নয়। (সূরা আহযাব- ৫০)
ব্যাখ্যা : কিছু বিধান নবী ﷺ এর জন্য নির্দিষ্ট, উম্মতের অন্য কারো জন্য তা প্রযোজ্য নয়। কুরআন ও সুন্নাহর মধ্যে তাত্ত্বিক অনুসন্ধান চালিয়ে এ ধরনের বহু বিধানের কথা জানা যায়। যেমন নবী ﷺ এর জন্য তাহাজ্জুদের নামায ফরয ছিল, কিন্তু সমগ্র উম্মতের জন্য তা নফল। তাঁর ও তাঁর পরিবারবর্গের জন্য সাদাকা নেয়া হারাম, কিন্তু অন্য কারো জন্য তা হারাম নয়। তাঁর মীরাস বণ্টন হতে পারত না, কিন্তু অন্য সকলের মীরাস বণ্টন হওয়া ফরয। তাঁর জন্য চারজনের অধিক স্ত্রী হালাল করা হয়েছে। নিজেকে হিবাকারী নারীকে মোহর ছাড়াই বিয়ে করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। তাঁর ইন্তিকালের পর তাঁর পবিত্র স্ত্রীগণকে সমগ্র উম্মতের জন্য হারাম করে দেয়া হয়েছে। এসব বিশেষত্ব নবী ﷺ এর জন্য খাস।
এগারজন স্ত্রী গ্রহণের সুযোগ দিয়েছেন :
لَا يَحِلُّ لَكَ النِّسَآءُ مِنْ ۢبَعْدُ وَلَاۤ اَنْ تَبَدَّلَ بِهِنَّ مِنْ اَزْوَاجٍ وَّلَوْ اَعْجَبَكَ حُسْنُهُنَّ اِلَّا مَا مَلَكَتْ يَمِيْنُكَؕ وَكَانَ اللهُ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ رَّقِيْبًا
এরপর আপনার জন্য কোন নারী হালাল নয় এবং আপনার স্ত্রীদের পরিবর্তে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করাও হালাল নয়- যদিও তাদের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করে, তবে আপনার অধিকারভুক্ত দাসীদের ব্যাপারে স্বতন্ত্র। আল্লাহ সর্ববিষয়ের উপর সজাগ নজর রাখেন। (সূরা আহযাব- ৫২)
ব্যাখ্যা : মুহাম্মাদ ﷺ ২৫ বছর বয়সে এমন এক মহিলাকে বিয়ে করেন, যার বয়স ছিল ৪০ বছর। অতঃপর পুরো ২৫ বছর ধরে তিনি তাঁর সাথে অত্যন্ত সুখী দাম্পত্য জীবন যাপন করতে থাকেন। তাঁর ইন্তিকালের পর তিনি অন্য একজন অধিক বয়সের মহিলা সাওদা (রাঃ) কে বিয়ে করেন। পুরো চার বছর পর্যন্ত তিনি একাই ছিলেন তাঁর স্ত্রী। এখন কোন বিবেকবান ব্যক্তি কি এ কথা কল্পনা করতে পারে যে, ৫৩ বছর পার হয়ে যাওয়ার পর হঠাৎ তাঁর যৌন কামনা বেড়ে যায় এবং তাঁর অনেক স্ত্রীর প্রয়োজন হয়ে পড়ে? এ বিষয়টি বুঝতে হলে নবী ﷺ কে আল্লাহ যে মহান দায়িত্ব সম্পাদন করার জন্য নিযুক্ত করেছিলেন, তা অনুধাবন করা জরুরি। নবী ﷺ কে যে কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তা ছিল এই যে, তিনি এমন একটি জাতিকে শিক্ষা ও অনুশীলনের মাধ্যমে একটি উন্নত পর্যায়ের সুসভ্য ও পরিচ্ছন্ন জাতিতে পরিণত করবেন, যারা কেবল ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকেই নয় বরং সাধারণ সভ্যতা ও সংস্কৃতির দৃষ্টিতেও ছিল অসংগঠিত ও অপরিপক্ক। এ উদ্দেশ্যে কেবলমাত্র পুরুষদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া যথেষ্ট ছিল না। তাই মহিলাদের মধ্যেও কাজ করার কেবলমাত্র একটি পথই তাঁর জন্য খোলা ছিল। সেটি হচ্ছে, বিভিন্ন বয়সের ও বিভিন্ন বুদ্ধিবৃত্তিক যোগ্যতাসম্পন্ন মহিলাদেরকে বিয়ে করবেন এবং তাদেরকে প্রশিক্ষণ দান করে নিজের সাহায্যের জন্য প্রস্তুত করবেন। তারপর তাদের সাহায্যে নগরবাসী, যুবতী ও বৃদ্ধা সবধরনের নারীদেরকে দ্বীন ও নৈতিকতার নতুন নীতিসমূহ শিখানোর ব্যবস্থা করবেন।
এছাড়াও নবী ﷺ কে জাহেলী জীবনব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে তার জায়গায় ইসলামী জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্বও দেয়া হয়েছিল। এ দায়িত্ব সম্পাদন করার জন্য জাহেলী জীবনব্যবস্থার পতাকাবাহীদের সাথে যুদ্ধ অপরিহার্য ছিল। এ অবস্থায় অন্যান্য ব্যবস্থার সাথে বিভিন্ন পরিবারে বিয়ে করে বন্ধুত্বকে পাকাপোক্ত এবং বহুতর শত্রুতাকে খতম করার ব্যবস্থা করাও তাঁর জন্য জরুরি ছিল। তাই তিনি যেসব মহিলাকে বিয়ে করেন তাঁদের ব্যক্তিগত গুণাবলি ছাড়াও তাঁদের নির্বাচনের ক্ষেত্রে এসব বিষয়ও কমবেশি জড়িত ছিল। আয়েশা (রাঃ) ও হাফসা (রাঃ) কে বিয়ে করে তিনি আবু বকর (রাঃ) ও ওমর (রাঃ) এর সাথে নিজের সম্পর্ককে মজবুত করে নেন। উম্মে সালামা (রাঃ) ছিলেন এমন এক পরিবারের মেয়ে, যার সাথে ছিল আবু জেহেল ও খালেদ ইবনে ওয়ালীদের সম্পর্ক। উম্মে হাবীবা (রাঃ) ছিলেন আবু সুফিয়ানের মেয়ে। এ বিয়েগুলো সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোর শত্রুতার জের অনেকাংশ কমিয়ে দেয়। বরং উম্মে হাবীবার সাথে নবী ﷺ এর বিয়ে হওয়ার পর আবু সুফিয়ান আর কখনো তাঁর মুকাবিলায় অস্ত্র ধরেনি। সাফিয়া, জুওয়াইরিয়া ও রাইহানা (রাঃ) ইয়াহুদি পরিবারের মেয়ে ছিলেন। তাঁদেরকে যুদ্ধবন্ধি থেকে মুক্তি দিয়ে যখন নবী ﷺ নিজেই তাঁদেরকে বিয়ে করে নেন তখন তাঁর বিরুদ্ধে ইয়াহুদিদের তৎপরতা স্তিমিত হয়ে পড়ে। কারণ সে যুগের রীতি অনুযায়ী যে ব্যক্তির সাথে কোন গোত্রের মেয়ের বিয়ে হতো তাঁকে কেবল মেয়েটির পরিবারের নয় বরং সমগ্র গোত্রের জামাতা মনে করা হতো এবং জামাতার সাথে যুদ্ধ করা বড়ই লজ্জাকর ছিল। সমাজের কার্যকর সংশোধন এবং তার জাহেলী রসম রেওয়াজ নির্মূল করাও নবী ﷺ এর অন্যতম দায়িত্ব ছিল। কাজেই এ উদ্দেশ্যেও তাঁকে বিয়ে করতে হয়। জাহেলী যুগে পালক পুত্রের মেয়েকে বিয়ে করা বৈধ মনে করা হতো না। এ কুপ্রথাকে খতম করার জন্য তিনি তাঁর পালক পুত্র যায়েদের স্ত্রী যয়নাবকে বিয়ে করেন।
এসব কারণে বিয়ের ব্যাপারে নবী ﷺ এর জন্য কোন রকম সংকীর্ণতা ও অসুবিধা রাখা হয়নি। এর ফলে যে মহান দায়িত্ব তাঁর প্রতি অর্পিত হয়েছিল তার প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে তিনি একাধিক বিয়ে করেছেন। যারা মনে করেন একাধিক বিয়ে কেবলমাত্র কয়েকটি বিশেষ ব্যক্তিগত প্রয়োজনেই বৈধ এবং সেগুলো ছাড়া তা বৈধ হওয়ার পেছনে অন্য কোন উদ্দেশ্য থাকতে পারে না, এ বর্ণনা থেকে তাদের চিন্তার বিভ্রান্তিও সুস্পষ্ট হয়ে যায়। এ কথা সুস্পষ্ট যে, নবী ﷺ এর একাধিক বিয়ে করার পেছনে তাঁর স্ত্রীর রুগ্নতা, বন্ধ্যাত্ব বা সন্তানহীনতা অথবা ইয়াতীম প্রতিপালনের সমস্যা ছিল না। তিনি এ সমস্ত বিয়ে করেন প্রচার ও শিক্ষামূলক প্রয়োজনে এবং সামাজিক উদ্দেশ্যে।
স্ত্রীদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা কাছে রাখার সুবিধা প্রদান করেছেন :
تُرْجِيْ مَنْ تَشَآءُ مِنْهُنَّ وَتُؤْوِيْۤ اِلَيْكَ مَنْ تَشَآءُؕ وَمَنِ ابْتَغَيْتَ مِمَّنْ عَزَلْتَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكَؕ ذٰلِكَ اَدْنٰۤى اَنْ تَقَرَّ اَعْيُنُهُنَّ وَلَا يَحْزَنَّ وَيَرْضَيْنَ بِمَاۤ اٰتَيْتَهُنَّ كُلُّهُنَّؕ وَاللهُ يَعْلَمُ مَا فِيْ قُلُوْبِكُمْؕ وَكَانَ اللهُ عَلِيْمًا حَلِيْمًا
আপনি আপনার স্ত্রীদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা পৃথক রাখতে পারেন এবং যাকে ইচ্ছা কাছে রাখতে পারেন। আর আপনি যাকে পৃথক রেখেছেন তাকে আবার (কাছে রাখতে) চাইলে তাতে আপনার কোন গোনাহ নেই। এতে অধিক আশা করা যায় যে, তাদের চক্ষু শীতল থাকবে, তারা কষ্ট পাবে না এবং আপনি যা দেন তাতে তারা সবাই সন্তুষ্ট থাকবে। তোমাদের অন্তরে যা আছে আল্লাহ তা জানেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী ও সহনশীল। (সূরা আহযাব- ৫১)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ এর সংসার জীবনকে সংকটমুক্ত করাই ছিল এ আয়াতটির উদ্দেশ্য। যাতে তিনি পরিপূর্ণ নিশ্চিয়তার সাথে নিজের কাজ করতে পারেন। যখন আল্লাহ তাঁকে স্ত্রীদের সাথে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতা দান করেন, তখন তাকে এ ব্যাপারে কোন চিন্তা বা সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। কিন্তু আল্লাহর কাছ থেকে এ অধিকার লাভ করার পরও নবী ﷺ সকল স্ত্রীদের মধ্যে পূর্ণ সমতা ও ইনসাফ বজায় রেখেছেন, কাউকে কারো উপর প্রাধান্য দেননি এবং যথারীতি পালা নির্ধারণ করে সবার কাছে যেতেন। যখন নবী ﷺ তাঁর শেষ রোগে আক্রান্ত হন এবং চলাফেরা করা তাঁর জন্য কঠিন হয়ে পড়ে তখন তিনি সকল স্ত্রীদের থেকে এ মর্মে অনুমতি চান যে, আমাকে আয়েশার কাছে থাকতে দাও। যখন সবাই এ অনুমতি দেন তখন তিনি শেষ সময়ে আয়েশা (রাঃ) এর কাছে থাকেন এবং তার ঘরেই ইন্তিকাল করেন। নবী ﷺ এর পবিত্র স্ত্রীগণের জন্য এটা ছিল বিরাট মর্যাদার ব্যাপার। তাঁরা নবী ﷺ এর মতো মহান ব্যক্তিত্বের স্ত্রী হওয়ার মর্যাদা লাভ করেছিলেন। এরই বদৌলতে তাঁরা ইসলামী দাওয়াত ও সংস্কারের কাজে নবী ﷺ এর সহযোগী হতে সক্ষম হয়েছিলেন। এ উদ্দেশ্যে নবী ﷺ যেমন অসাধারণ ত্যাগ ও কুরবানীর পথ অবলম্বন করেছিলেন, ঠিক তেমনি ত্যাগ স্বীকার করা তাঁর পবিত্র স্ত্রীগণেরও কর্তব্য ছিল। তাই নবী ﷺ এর সকল স্ত্রী মহান আল্লাহর এ ফায়সালা সানন্দে গ্রহণ করেছিলেন।
নবী ﷺ এর উপর আল্লাহর বিরাট অনুগ্রহ ছিল :
وَاَنْزَلَ اللهُ عَلَيْكَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُنْ تَعْلَمُؕ وَكَانَ فَضْلُ اللهِ عَلَيْكَ عَظِيْمًا
আল্লাহ তোমার প্রতি কিতাব ও হেকমত নাযিল করেছেন এবং তুমি যা জানতে না তা তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন, তোমার প্রতি আল্লাহর মহা অনুগ্রহ রয়েছে। (সূরা নিসা- ১১৩)
ইয়াহুদিদের মতো সম্বোধন করতে নিষেধ করা হয়েছে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَقُوْلُوْا رَاعِنَا وَقُوْلُوا انْظُرْنَا وَاسْمَعُوْاؕ وَلِلْكَافِرِيْنَ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
হে মুমিনগণ! তোমরা ‘রায়িনা’ বলো না, বরং ‘উনযুরনা’ বলো এবং (তিনি যা বলেন তা) শুনে নাও; আর কাফিরদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরা বাক্বারা- ১০৪)
ব্যাখ্যা : ইয়াহুদিরা কখনো নবী ﷺ এর মজলিসে এলে কথাবার্তার মধ্য দিয়ে নিজেদের মনের ঝাল মিটিয়ে নেয়ার চেষ্টা করত। ফলে রাসূল ﷺ যখন বক্তব্য দিতেন তখন তারা প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে প্রশ্ন করার জন্য তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলত ‘রায়িনা’, যার বাহ্যিক অর্থ হলো- ‘‘আমাদের কথা শুনুন’’। কিন্তু এর আরো কয়েকটি অর্থ রয়েছে। যেমন হিব্রু ভাষায় তার অর্থ হলো- ‘শোন্, তুই বধির হয়ে যা।’ আর আরবি ভাষায় এর আরো একটি অর্থ হলো, ‘ওহে, আমাদের রাখাল।’ কাফিররা এসব ব্যঙ্গার্থক অর্থের দিকে ইশারা করেই ‘রায়িনা’ শব্দটি ব্যবহার করত। আবার তারা মুখটাকে একটু বড় করে তিরস্কার করেও ‘রায়িনা’ বলার চেষ্টা করত। তাই আল্লাহ তা‘আলা কাফিরদের এ হঠকারিতা বন্ধ করার জন্য মুসলিমদেরকে হুকুম দিয়েছেন যে, তোমরা এ শব্দটি ব্যবহার না করে ‘উন্যুরনা’ বলো। এর অর্থ হয়, ‘আমাদের প্রতি দৃষ্টি দিন।’
খুঁটিনাটি বিষয়ে প্রশ্ন করা হতে বারণ করা হয়েছে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَسْاَلُوْا عَنْ اَشْيَآءَ اِنْ تُبْدَ لَكُمْ تَسُؤْكُمْۚ وَاِنْ تَسْاَلُوْا عَنْهَا حِيْنَ يُنَزَّلُ الْقُرْاٰنُ تُبْدَ لَكُمْؕ عَفَا اللهُ عَنْهَا وَاللهُ غَفُوْرٌ حَلِيْمٌ
হে মুমিনগণ! তোমরা সেসব বিষয়ে প্রশ্ন করো না, যা তোমাদের নিকট প্রকাশ হলে তা তোমাদেরকে কষ্ট দেবে। কুরআন নাযিলের সময় তোমরা যদি সেসব বিষয়ে প্রশ্ন কর তবে তা তোমাদের নিকট প্রকাশ করা হবে। (এ বিধান জারি হওয়ার পূর্বে যা কিছু গত হয়ে গেছে) আল্লাহ সেগুলো ক্ষমা করে দিয়েছেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও সহনশীল। (সূরা মায়েদা- ১০১)
ব্যাখ্যা : কোন কোন লোক নবী ﷺ কে বিভিন্ন অদ্ভূত প্রশ্ন করত, যার সাথে দ্বীনের কোন স্বার্থ জড়িত থাকত না। দুনিয়ার কোন প্রয়োজনের সাথেও এর সম্পর্ক থাকত না। যেমন, একবার এক ব্যক্তি প্রকাশ্য জনসমাবেশে তাঁকে জিজ্ঞেস করল, ‘আমার আসল পিতা কে? এমনিভাবে অনেক লোক শরীয়াতের বিধানের ব্যাপারে অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন করত; এমনকি এমনসব বিষয় নির্ধারণ করতে চাইত, যা সঙ্গত কারণেই শরীয়াতের বিধানদাতা নিজেই অনির্ধারিত করে রেখেছেন। এর কারণ এ নয় যে, বিধানদাতা সেগুলো বর্ণনা করতে ভুলে গেছেন অথবা এগুলো বিস্তারিত বর্ণনা করার প্রয়োজন ছিল কিন্তু তা করেননি। এর আসল কারণ হচ্ছে, বিধানদাতা এ বিষয়গুলোর বিস্তারিত রূপ সংকুচিত ও সীমাবদ্ধ করতে চান না; বরং এ বিধানগুলোর মধ্যে মানুষের জন্য প্রশস্ততা ও ব্যাপকতা রাখতে চান। এখন যে ব্যক্তি কোন বিষয়ে অযথা প্রশ্ন উত্থাপন করে এর বিস্তারিত রূপ ও সীমাবদ্ধতা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করে এবং অনুমান করে কোন সংক্ষিপ্ত বিষয়কে বিস্তারিত, ব্যাপকতাকে সীমাবদ্ধ এবং অনির্দিষ্টকে নির্দিষ্ট করে, তবে সে আসলে মুসলিমদেরকে বিরাট বিপদের মুখে ঠেলে দেয়। কারণ প্রাকৃতিক বিষয়াদি যতবেশি বিস্তারিত আকারে সামনে আসবে, আল্লাহর বিধানের সাথে ততবেশি শর্ত জড়িত হবে এবং ঈমানদারদের জন্য জটিলতা বেড়ে যাবে। এগুলোকে যতবেশি সীমাবদ্ধ করে দেয়া হবে আনুগত্যকারীদের জন্য নির্দেশ অমান্য করার সম্ভাবনা ততবেশি দেখা দেবে।
اَمْ تُرِيْدُوْنَ اَنْ تَسْأَلُوْا رَسُوْلَكُمْ كَمَا سُئِلَ مُوْسٰى مِنْ قَبْلُؕ وَمَنْ يَّتَبَدَّلِ الْكُفْرَ بِالْاِيْمَانِ فَقَدْ ضَلَّ سَوَآءَ السَّبِيْلِ
তোমরা কি চাও যে, তোমাদের রাসূলকে সেভাবে প্রশ্ন করবে যেভাবে ইতোপূর্বে প্রশ্ন করা হয়েছিল মূসাকে? আর যে ব্যক্তি ঈমানের পরিবর্তে কুফরী অবলম্বন করে, নিশ্চয় সে সঠিক পথ হতে দূরে সরে পড়ে। (সূরা বাক্বারা- ১০৮)
ব্যাখ্যা : ইয়াহুদিরা তিলকে তাল করে সূক্ষ্ম বিষয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন উত্থাপন করত। তাই এ ব্যাপারে আল্লাহ মুসলিমদেরকে ইয়াহুদিদের নীতি অবলম্বন করা থেকে দূরে থাকার জন্য সতর্ক করে দিয়েছেন। নবী ﷺও এ ব্যাপারে বলতেন, অনর্থক প্রশ্ন করা এবং তিলকে তাল করার কারণে পূর্ববর্তী অনেক উম্মত ধ্বংস হয়ে গেছে, কাজেই তোমরা এ পথে পা দিয়ো না। তোমাদেরকে যে নির্দেশ দেয়া হয় তা মেনে চলো এবং যে বিষয়গুলো থেকে নিষেধ করা হয় সেগুলো থেকে দূরে থাকো।
কথা বলার সময় সাদাকা দেয়ার নির্দেশ :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا نَاجَيْتُمُ الرَّسُوْلَ فَقَدِّمُوْا بَيْنَ يَدَيْ نَجْوَاكُمْ صَدَقَةً-ؕ ذٰلِكَ خَيْرٌ لَّكُمْ وَاَطْهَرُؕ فَاِنْ لَّمْ تَجِدُوْا فَاِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন রাসূলের সাথে চুপে চুপে কথা বলতে যাবে তখন তোমরা কথা বলার পূর্বে কিছু সাদাকা প্রদান করবে। এটা তোমাদের জন্য শ্রেয় এবং পবিত্র থাকার উত্তম উপায়। তবে যদি তোমরা তাতে সামর্থ্যবান না হও তাহলে আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল ও অসীম দয়ালু। (সূরা মুজাদালা- ১২)
ব্যাখ্যা : ইয়াহুদি ও মুনাফিকরা সাধারণ মুসলিমদের মনে কষ্ট প্রদান এবং নিজেদের প্রাধান্য বিস্তার করার উদ্দেশ্যে রাসূল ﷺ এর নিকট দীর্ঘালাপ জুড়ে দিত। কিন্তু তিনি এটা পছন্দ করতেন না। এতে সাধারণ মুসলিমদের মনেও কষ্ট অনুভূত হতো। আবার নবীর সাথে অনেকেই নির্জনে কথা বলতে চাইত, কিন্তু সবাইকে সময় দেয়া তার জন্য কষ্টকর হয়ে যায়। তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতটি নাযিল করে আলাপকারীদের উপর সাদাকা ধার্য করে দিলেন। একমাত্র আলী (রাঃ) এ বিধানের উপর আমল করেছিলেন। পরে এ বিধান মানসূখ (রহিত) করা হয়।
পরবর্তীতে এ আদেশ রহিত করা হয় :
اَ اَشْفَقْتُمْ اَنْ تُقَدِّمُوْا بَيْنَ يَدَيْ نَجْوَاكُمْ صَدَقَاتٍؕ فَاِذْ لَمْ تَفْعَلُوْا وَتَابَ اللهُ عَلَيْكُمْ فَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَ وَاَطِيْعُوا اللهَ وَرَسُوْلَهٗؕ وَاللهُ خَبِيْرٌ ۢبِمَا تَعْمَلُوْنَ
তোমরা কি চুপে চুপে কথা বলার পূর্বে সাদাকা প্রদান করতে ভয় পেয়েছ? অতএব যখন তোমরা সাদাকা দিতে পারলে না এবং আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিলেন, তখন তোমরা যথারীতি সালাত কায়েম করো, যাকাত প্রদান করো এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো। আর তোমরা যা কর আল্লাহ সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত। (সূরা মুজাদালা- ১৩)
তাঁকে সাধারণ লোকের মতো আহবান করতে নিষেধ করা হয়েছে :
لَا تَجْعَلُوْا دُعَآءَ الرَّسُوْلِ بَيْنَكُمْ كَدُعَآءِ بَعْضِكُمْ بَعْضًا
রাসূলের আহবানকে তোমরা তোমাদের একে অপরের প্রতি আহবানের মতো গণ্য করো না।
(সূরা নূর- ৬৩)
ব্যাখ্যা : আয়াতের তিনটি অর্থ হতে পারে এবং তিনটিই যুক্তিসংগত। (এক) রাসূলের আহবানকে কোন সাধারণ মানুষের আহবানের মতো মনে করো না। অর্থাৎ রাসূলের আহবান অস্বাভাবিক গুরুত্বের অধিকারী। (দুই) রাসূলের দু‘আকে সাধারণ মানুষের দু‘আর মতো মনে করো না। তিনি খুশী হয়ে দু‘আ করলে তোমাদের জন্য এর চেয়ে বড় আর কোন নিয়ামত নেই। আর নারাজ হয়ে বদ্দু‘আ করলে তার চেয়ে বড় আর কোন দুর্ভাগ্য তোমাদের জন্য থাকবে না। (তিন) রাসূলকে ডাকা সাধারণ মানুষের একে অপরকে ডাকার মতো হওয়া উচিত নয়। অর্থাৎ তোমরা সাধারণ লোকদেরকে যেভাবে তাদের নাম ধরে উচ্চৈঃস্বরে ডাক সেভাবে রাসূল ﷺ কে ডেকো না; বরং তাঁর সম্মান বজায় রেখে ডাকো।
অনুমতি ছাড়া নবীর মজলিস থেকে উঠা নিষেধ করা হয়েছে :
اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِه وَاِذَا كَانُوْا مَعَهٗ عَلٰۤى اَمْرٍ جَامِعٍ لَّمْ يَذْهَبُوْا حَتّٰى يَسْتَأْذِنُوْهُؕ اِنَّ الَّذِيْنَ يَسْتَأْذِنُوْنَكَ اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَرَسُوْلِه ۚ فَاِذَا اسْتَأْذَنُوْكَ لِبَعْضِ شَأْنِهِمْ فَأْذَنْ لِّمَنْ شِئْتَ مِنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمُ اللهَؕ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
মুমিন তো তারাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনে এবং রাসূলের সাথে সমষ্টিগত ব্যাপারে একত্র হলে তাঁর অনুমতি ব্যতীত সরে পড়ে না। আর যারা তোমার নিকট অনুমতি প্রার্থনা করে তারাই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাসী। অতএব তারা তাদের কোন কাজে বাইরে যাওয়ার জন্য তোমার অনুমতি চাইলে তাদের মধ্যে যাদেরকে ইচ্ছা অনুমতি দিয়ো এবং তাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করো। নিশ্চয় আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা নূর- ৬২)
নবী ﷺ এর সাথে উঁচু আওয়াজে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَرْفَعُوْاۤ اَصْوَاتَكُمْ فَوْقَ صَوْتِ النَّبِيِّ وَلَا تَجْهَرُوْا لَهٗ بِالْقَوْلِ كَجَهْرِ بَعْضِكُمْ لِبَعْضٍ اَنْ تَحْبَطَ اَعْمَالُكُمْ وَاَنْتُمْ لَا تَشْعُرُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমাদের আওয়াজ নবীর আওয়াজের চেয়ে উঁচু করো না এবং তোমরা নবীর সাথে সে রকম উঁচু আওয়াজে কথা বলো না, যেভাবে একে অপরের সাথে বলে থাক। (এ বিধান এজন্য যে) যাতে এমন যেন না হয়- তোমাদের আমল বরবাদ হয়ে গেল অথচ তোমরা টেরও পেলে না। (সূরা হুজুরাত- ২)
আওয়াজ নিচু করা তাক্বওয়ার পরিচয় :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَغُضُّوْنَ اَصْوَاتَهُمْ عِنْدَ رَسُوْلِ اللهِ اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ امْتَحَنَ اللهُ قُلُوْبَهُمْ لِلتَّقْوٰىؕ لَهُمْ مَّغْفِرَةٌ وَّاَجْرٌ عَظِيْمٌ
যারা আল্লাহর রাসূলের সাথে কথা বলার সময় নিজেদের আওয়াজ নিচু রাখে তারা আসলে ঐসব লোক, আল্লাহ যাদের অন্তর তাক্বওয়ার জন্য বাছাই করে নিয়েছেন। তাদের জন্য রয়েছে মাগফিরাত ও মহাপুরস্কার। (সূরা হুজুরাত- ৩)
ব্যাখ্যা : যারা রাসূল ﷺ এর মজলিসে ওঠাবসা ও যাতায়াত করতেন তাদেরকে এ আদব-কায়দা শিক্ষা দেয়া হয়েছিল যে, যেন তারা তাঁর সম্মান ও মর্যাদার প্রতি লক্ষ্য রাখেন এবং তাঁর সাথে উচ্চৈঃস্বরে কথা না বলেন। কেননা রাসূল ﷺ এর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের সামান্য শিথিলতাও এত বড় গোনাহ যে, তাতে ব্যক্তির সারা জীবনের নেক আমল ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
বাহির থেকে ডাকাডাকি করতে নিষেধ করা হয়েছে :
اِنَّ الَّذِيْنَ يُنَادُوْنَكَ مِنْ وَّرَآءِ الْحُجُرَاتِ اَكْثَرُهُمْ لَا يَعْقِلُوْنَ
(হে রাসূল!) যারা আপনাকে ঘরের বাইরে থেকে ডাকাডাকি করে তাদের বেশির ভাগ লোকই বুঝে না।
(সূরা হুজুরাত- ৪)
ব্যাখ্যা : কিছু লোক নবী ﷺ এর সাথে সাক্ষাৎ করতে আসলে নবীর স্ত্রীদের ঘরের চারদিক দিয়ে ঘুরে বাহির থেকেই তাঁকে ডাকতে থাকত। লোকজনের এ আচরণে রাসূল ﷺ এর খুব কষ্ট হতো। কিন্তু স্বভাবগত কারণে তিনি এসব সহ্য করে যাচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা এ নির্দেশ দান করলেন যে, যখন তারা তাঁকে পাবে না, তখন ধৈর্যের সাথে বসে সে সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করবে, যখন তিনি নিজেই তাদেরকে সাক্ষাৎ দানের জন্য বেরিয়ে আসবেন।
নবী ﷺ এর উপর দরূদ পাঠের নির্দেশ :
اِنَّ اللهَ وَمَلَآئِكَتَهٗ يُصَلُّوْنَ عَلَى النَّبِيِّؕ يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا صَلُّوْا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا
নিশ্চয় আল্লাহ নবীর প্রতি দরূদ (রহমত) প্রেরণ করেন এবং তাঁর ফেরেশতারাও নবীর জন্য রহমত প্রার্থনা করে। হে মুমিনগণ! তোমরাও নবীর জন্য রহমত প্রার্থনা করো এবং তার প্রতি প্রচুর পরিমাণে সালাম প্রেরণ করো। (সূরা আহযাব- ৫৬)
ব্যাখ্যা : এর অর্থ হচ্ছে, হে লোকেরা! মুহাম্মাদ ﷺ এর মাধ্যমে তোমরা সঠিক পথের সন্ধান পেয়েছো, তাই তাঁর মর্যাদা অনুধাবন করো এবং তাঁর মহা অনুগ্রহের হক আদায় করো। তোমরা মূর্খতার অন্ধকারে পথ ভুলে বিপথে চলছিলে। এ ব্যক্তি তোমাদেরকে জ্ঞানের আলোকবর্তিকা দান করেছেন, নৈতিক অধঃপতন থেকে উন্নত মর্যাদায় উন্নীত করেছেন। তাই তোমাদের কৃতজ্ঞতার অনিবার্য দাবী হচ্ছে, শত্রুরা এ ব্যক্তির প্রতি যে পরিমাণ হিংসা ও বিদ্বেষ পোষণ করে, তোমরা তাঁর প্রতি তার চেয়ে বেশি ভালোবাসা পোষণ করো। তারা তাঁর যতটা নিন্দা করে তোমরা তার চেয়ে বেশি তাঁর প্রশংসা করো। তাঁর পক্ষে সেই একই দু‘আ করো, যা আল্লাহর ফেরেশতারা দিনরাত তাঁর জন্য করে যাচ্ছে, হে আমাদের প্রতিপালক! তোমার নবী যেমন আমাদের প্রতি বিপুল অনুগ্রহ করেছেন তেমনি তুমিও তাঁর প্রতি অগণিত রহমত বর্ষণ করো এবং তাঁর মর্যাদা সবচেয়ে বেশি উন্নত করো।
এ আয়াতে মুসলিমদেরকে দু’টি বিষয়ের হুকুম দেয়া হয়েছে। একটি হচ্ছে, صَلُّوْا عَلَيْهِ (সাল্লূ আলাইহি) অর্থাৎ তাঁর প্রতি দরূদ পড়ো। অন্যটি হচ্ছে, وَسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا (ওয়া সাল্লিমূ তাসলীমা) অর্থাৎ তাঁর প্রতি সালাম ও প্রশান্তি প্রেরণ করো। صَلُّوْا عَلَيْهِ (সাল্লূ আলাইহি) এর অর্থ হচ্ছে, তোমরা তাঁর অনুরক্ত হয়ে যাও, তাঁর প্রশংসা করো এবং তাঁর জন্য দু‘আ করো। আর وَسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا (ওয়া সাল্লিমূ তাসলীমা) বলার অর্থ হচ্ছে, তোমরা তাঁর জন্য পূর্ণ নিরাপত্তার দু‘আ করো। তাঁর বিরোধিতা করা থেকে দূরে থাকো এবং তাঁর যথার্থ আদেশ পালনকারীতে পরিণত হও। এ হুকুমটি নাযিল হওয়ার পর বহু সাহাবী রাসূল ﷺ কে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি তো আমাদেরকে (সাধারণভাবে) সালামের পদ্ধতি সম্পর্কে বলে দিয়েছেন। কিন্তু আপনার প্রতি সালাম পাঠানোর পদ্ধতিটা কি? এর জবাবে নবী ﷺ দরূদে ইবরাহীম শিখিয়েছেন। (সহীহ বুখারী, হা/৬৩৫৭; সহীহ মুসলিম, হা/৯৩৫)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَقُوْلُوْا رَاعِنَا وَقُوْلُوا انْظُرْنَا وَاسْمَعُوْاؕ وَلِلْكَافِرِيْنَ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
হে মুমিনগণ! তোমরা ‘রায়িনা’ বলো না, বরং ‘উনযুরনা’ বলো এবং (তিনি যা বলেন তা) শুনে নাও; আর কাফিরদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরা বাক্বারা- ১০৪)
ব্যাখ্যা : ইয়াহুদিরা কখনো নবী ﷺ এর মজলিসে এলে কথাবার্তার মধ্য দিয়ে নিজেদের মনের ঝাল মিটিয়ে নেয়ার চেষ্টা করত। ফলে রাসূল ﷺ যখন বক্তব্য দিতেন তখন তারা প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে প্রশ্ন করার জন্য তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলত ‘রায়িনা’, যার বাহ্যিক অর্থ হলো- ‘‘আমাদের কথা শুনুন’’। কিন্তু এর আরো কয়েকটি অর্থ রয়েছে। যেমন হিব্রু ভাষায় তার অর্থ হলো- ‘শোন্, তুই বধির হয়ে যা।’ আর আরবি ভাষায় এর আরো একটি অর্থ হলো, ‘ওহে, আমাদের রাখাল।’ কাফিররা এসব ব্যঙ্গার্থক অর্থের দিকে ইশারা করেই ‘রায়িনা’ শব্দটি ব্যবহার করত। আবার তারা মুখটাকে একটু বড় করে তিরস্কার করেও ‘রায়িনা’ বলার চেষ্টা করত। তাই আল্লাহ তা‘আলা কাফিরদের এ হঠকারিতা বন্ধ করার জন্য মুসলিমদেরকে হুকুম দিয়েছেন যে, তোমরা এ শব্দটি ব্যবহার না করে ‘উন্যুরনা’ বলো। এর অর্থ হয়, ‘আমাদের প্রতি দৃষ্টি দিন।’
খুঁটিনাটি বিষয়ে প্রশ্ন করা হতে বারণ করা হয়েছে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَسْاَلُوْا عَنْ اَشْيَآءَ اِنْ تُبْدَ لَكُمْ تَسُؤْكُمْۚ وَاِنْ تَسْاَلُوْا عَنْهَا حِيْنَ يُنَزَّلُ الْقُرْاٰنُ تُبْدَ لَكُمْؕ عَفَا اللهُ عَنْهَا وَاللهُ غَفُوْرٌ حَلِيْمٌ
হে মুমিনগণ! তোমরা সেসব বিষয়ে প্রশ্ন করো না, যা তোমাদের নিকট প্রকাশ হলে তা তোমাদেরকে কষ্ট দেবে। কুরআন নাযিলের সময় তোমরা যদি সেসব বিষয়ে প্রশ্ন কর তবে তা তোমাদের নিকট প্রকাশ করা হবে। (এ বিধান জারি হওয়ার পূর্বে যা কিছু গত হয়ে গেছে) আল্লাহ সেগুলো ক্ষমা করে দিয়েছেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও সহনশীল। (সূরা মায়েদা- ১০১)
ব্যাখ্যা : কোন কোন লোক নবী ﷺ কে বিভিন্ন অদ্ভূত প্রশ্ন করত, যার সাথে দ্বীনের কোন স্বার্থ জড়িত থাকত না। দুনিয়ার কোন প্রয়োজনের সাথেও এর সম্পর্ক থাকত না। যেমন, একবার এক ব্যক্তি প্রকাশ্য জনসমাবেশে তাঁকে জিজ্ঞেস করল, ‘আমার আসল পিতা কে? এমনিভাবে অনেক লোক শরীয়াতের বিধানের ব্যাপারে অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন করত; এমনকি এমনসব বিষয় নির্ধারণ করতে চাইত, যা সঙ্গত কারণেই শরীয়াতের বিধানদাতা নিজেই অনির্ধারিত করে রেখেছেন। এর কারণ এ নয় যে, বিধানদাতা সেগুলো বর্ণনা করতে ভুলে গেছেন অথবা এগুলো বিস্তারিত বর্ণনা করার প্রয়োজন ছিল কিন্তু তা করেননি। এর আসল কারণ হচ্ছে, বিধানদাতা এ বিষয়গুলোর বিস্তারিত রূপ সংকুচিত ও সীমাবদ্ধ করতে চান না; বরং এ বিধানগুলোর মধ্যে মানুষের জন্য প্রশস্ততা ও ব্যাপকতা রাখতে চান। এখন যে ব্যক্তি কোন বিষয়ে অযথা প্রশ্ন উত্থাপন করে এর বিস্তারিত রূপ ও সীমাবদ্ধতা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করে এবং অনুমান করে কোন সংক্ষিপ্ত বিষয়কে বিস্তারিত, ব্যাপকতাকে সীমাবদ্ধ এবং অনির্দিষ্টকে নির্দিষ্ট করে, তবে সে আসলে মুসলিমদেরকে বিরাট বিপদের মুখে ঠেলে দেয়। কারণ প্রাকৃতিক বিষয়াদি যতবেশি বিস্তারিত আকারে সামনে আসবে, আল্লাহর বিধানের সাথে ততবেশি শর্ত জড়িত হবে এবং ঈমানদারদের জন্য জটিলতা বেড়ে যাবে। এগুলোকে যতবেশি সীমাবদ্ধ করে দেয়া হবে আনুগত্যকারীদের জন্য নির্দেশ অমান্য করার সম্ভাবনা ততবেশি দেখা দেবে।
اَمْ تُرِيْدُوْنَ اَنْ تَسْأَلُوْا رَسُوْلَكُمْ كَمَا سُئِلَ مُوْسٰى مِنْ قَبْلُؕ وَمَنْ يَّتَبَدَّلِ الْكُفْرَ بِالْاِيْمَانِ فَقَدْ ضَلَّ سَوَآءَ السَّبِيْلِ
তোমরা কি চাও যে, তোমাদের রাসূলকে সেভাবে প্রশ্ন করবে যেভাবে ইতোপূর্বে প্রশ্ন করা হয়েছিল মূসাকে? আর যে ব্যক্তি ঈমানের পরিবর্তে কুফরী অবলম্বন করে, নিশ্চয় সে সঠিক পথ হতে দূরে সরে পড়ে। (সূরা বাক্বারা- ১০৮)
ব্যাখ্যা : ইয়াহুদিরা তিলকে তাল করে সূক্ষ্ম বিষয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন উত্থাপন করত। তাই এ ব্যাপারে আল্লাহ মুসলিমদেরকে ইয়াহুদিদের নীতি অবলম্বন করা থেকে দূরে থাকার জন্য সতর্ক করে দিয়েছেন। নবী ﷺও এ ব্যাপারে বলতেন, অনর্থক প্রশ্ন করা এবং তিলকে তাল করার কারণে পূর্ববর্তী অনেক উম্মত ধ্বংস হয়ে গেছে, কাজেই তোমরা এ পথে পা দিয়ো না। তোমাদেরকে যে নির্দেশ দেয়া হয় তা মেনে চলো এবং যে বিষয়গুলো থেকে নিষেধ করা হয় সেগুলো থেকে দূরে থাকো।
কথা বলার সময় সাদাকা দেয়ার নির্দেশ :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا نَاجَيْتُمُ الرَّسُوْلَ فَقَدِّمُوْا بَيْنَ يَدَيْ نَجْوَاكُمْ صَدَقَةً-ؕ ذٰلِكَ خَيْرٌ لَّكُمْ وَاَطْهَرُؕ فَاِنْ لَّمْ تَجِدُوْا فَاِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন রাসূলের সাথে চুপে চুপে কথা বলতে যাবে তখন তোমরা কথা বলার পূর্বে কিছু সাদাকা প্রদান করবে। এটা তোমাদের জন্য শ্রেয় এবং পবিত্র থাকার উত্তম উপায়। তবে যদি তোমরা তাতে সামর্থ্যবান না হও তাহলে আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল ও অসীম দয়ালু। (সূরা মুজাদালা- ১২)
ব্যাখ্যা : ইয়াহুদি ও মুনাফিকরা সাধারণ মুসলিমদের মনে কষ্ট প্রদান এবং নিজেদের প্রাধান্য বিস্তার করার উদ্দেশ্যে রাসূল ﷺ এর নিকট দীর্ঘালাপ জুড়ে দিত। কিন্তু তিনি এটা পছন্দ করতেন না। এতে সাধারণ মুসলিমদের মনেও কষ্ট অনুভূত হতো। আবার নবীর সাথে অনেকেই নির্জনে কথা বলতে চাইত, কিন্তু সবাইকে সময় দেয়া তার জন্য কষ্টকর হয়ে যায়। তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতটি নাযিল করে আলাপকারীদের উপর সাদাকা ধার্য করে দিলেন। একমাত্র আলী (রাঃ) এ বিধানের উপর আমল করেছিলেন। পরে এ বিধান মানসূখ (রহিত) করা হয়।
পরবর্তীতে এ আদেশ রহিত করা হয় :
اَ اَشْفَقْتُمْ اَنْ تُقَدِّمُوْا بَيْنَ يَدَيْ نَجْوَاكُمْ صَدَقَاتٍؕ فَاِذْ لَمْ تَفْعَلُوْا وَتَابَ اللهُ عَلَيْكُمْ فَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَ وَاَطِيْعُوا اللهَ وَرَسُوْلَهٗؕ وَاللهُ خَبِيْرٌ ۢبِمَا تَعْمَلُوْنَ
তোমরা কি চুপে চুপে কথা বলার পূর্বে সাদাকা প্রদান করতে ভয় পেয়েছ? অতএব যখন তোমরা সাদাকা দিতে পারলে না এবং আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিলেন, তখন তোমরা যথারীতি সালাত কায়েম করো, যাকাত প্রদান করো এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো। আর তোমরা যা কর আল্লাহ সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত। (সূরা মুজাদালা- ১৩)
তাঁকে সাধারণ লোকের মতো আহবান করতে নিষেধ করা হয়েছে :
لَا تَجْعَلُوْا دُعَآءَ الرَّسُوْلِ بَيْنَكُمْ كَدُعَآءِ بَعْضِكُمْ بَعْضًا
রাসূলের আহবানকে তোমরা তোমাদের একে অপরের প্রতি আহবানের মতো গণ্য করো না।
(সূরা নূর- ৬৩)
ব্যাখ্যা : আয়াতের তিনটি অর্থ হতে পারে এবং তিনটিই যুক্তিসংগত। (এক) রাসূলের আহবানকে কোন সাধারণ মানুষের আহবানের মতো মনে করো না। অর্থাৎ রাসূলের আহবান অস্বাভাবিক গুরুত্বের অধিকারী। (দুই) রাসূলের দু‘আকে সাধারণ মানুষের দু‘আর মতো মনে করো না। তিনি খুশী হয়ে দু‘আ করলে তোমাদের জন্য এর চেয়ে বড় আর কোন নিয়ামত নেই। আর নারাজ হয়ে বদ্দু‘আ করলে তার চেয়ে বড় আর কোন দুর্ভাগ্য তোমাদের জন্য থাকবে না। (তিন) রাসূলকে ডাকা সাধারণ মানুষের একে অপরকে ডাকার মতো হওয়া উচিত নয়। অর্থাৎ তোমরা সাধারণ লোকদেরকে যেভাবে তাদের নাম ধরে উচ্চৈঃস্বরে ডাক সেভাবে রাসূল ﷺ কে ডেকো না; বরং তাঁর সম্মান বজায় রেখে ডাকো।
অনুমতি ছাড়া নবীর মজলিস থেকে উঠা নিষেধ করা হয়েছে :
اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِه وَاِذَا كَانُوْا مَعَهٗ عَلٰۤى اَمْرٍ جَامِعٍ لَّمْ يَذْهَبُوْا حَتّٰى يَسْتَأْذِنُوْهُؕ اِنَّ الَّذِيْنَ يَسْتَأْذِنُوْنَكَ اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَرَسُوْلِه ۚ فَاِذَا اسْتَأْذَنُوْكَ لِبَعْضِ شَأْنِهِمْ فَأْذَنْ لِّمَنْ شِئْتَ مِنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمُ اللهَؕ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
মুমিন তো তারাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনে এবং রাসূলের সাথে সমষ্টিগত ব্যাপারে একত্র হলে তাঁর অনুমতি ব্যতীত সরে পড়ে না। আর যারা তোমার নিকট অনুমতি প্রার্থনা করে তারাই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাসী। অতএব তারা তাদের কোন কাজে বাইরে যাওয়ার জন্য তোমার অনুমতি চাইলে তাদের মধ্যে যাদেরকে ইচ্ছা অনুমতি দিয়ো এবং তাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করো। নিশ্চয় আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা নূর- ৬২)
নবী ﷺ এর সাথে উঁচু আওয়াজে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَرْفَعُوْاۤ اَصْوَاتَكُمْ فَوْقَ صَوْتِ النَّبِيِّ وَلَا تَجْهَرُوْا لَهٗ بِالْقَوْلِ كَجَهْرِ بَعْضِكُمْ لِبَعْضٍ اَنْ تَحْبَطَ اَعْمَالُكُمْ وَاَنْتُمْ لَا تَشْعُرُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমাদের আওয়াজ নবীর আওয়াজের চেয়ে উঁচু করো না এবং তোমরা নবীর সাথে সে রকম উঁচু আওয়াজে কথা বলো না, যেভাবে একে অপরের সাথে বলে থাক। (এ বিধান এজন্য যে) যাতে এমন যেন না হয়- তোমাদের আমল বরবাদ হয়ে গেল অথচ তোমরা টেরও পেলে না। (সূরা হুজুরাত- ২)
আওয়াজ নিচু করা তাক্বওয়ার পরিচয় :
اِنَّ الَّذِيْنَ يَغُضُّوْنَ اَصْوَاتَهُمْ عِنْدَ رَسُوْلِ اللهِ اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ امْتَحَنَ اللهُ قُلُوْبَهُمْ لِلتَّقْوٰىؕ لَهُمْ مَّغْفِرَةٌ وَّاَجْرٌ عَظِيْمٌ
যারা আল্লাহর রাসূলের সাথে কথা বলার সময় নিজেদের আওয়াজ নিচু রাখে তারা আসলে ঐসব লোক, আল্লাহ যাদের অন্তর তাক্বওয়ার জন্য বাছাই করে নিয়েছেন। তাদের জন্য রয়েছে মাগফিরাত ও মহাপুরস্কার। (সূরা হুজুরাত- ৩)
ব্যাখ্যা : যারা রাসূল ﷺ এর মজলিসে ওঠাবসা ও যাতায়াত করতেন তাদেরকে এ আদব-কায়দা শিক্ষা দেয়া হয়েছিল যে, যেন তারা তাঁর সম্মান ও মর্যাদার প্রতি লক্ষ্য রাখেন এবং তাঁর সাথে উচ্চৈঃস্বরে কথা না বলেন। কেননা রাসূল ﷺ এর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের সামান্য শিথিলতাও এত বড় গোনাহ যে, তাতে ব্যক্তির সারা জীবনের নেক আমল ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
বাহির থেকে ডাকাডাকি করতে নিষেধ করা হয়েছে :
اِنَّ الَّذِيْنَ يُنَادُوْنَكَ مِنْ وَّرَآءِ الْحُجُرَاتِ اَكْثَرُهُمْ لَا يَعْقِلُوْنَ
(হে রাসূল!) যারা আপনাকে ঘরের বাইরে থেকে ডাকাডাকি করে তাদের বেশির ভাগ লোকই বুঝে না।
(সূরা হুজুরাত- ৪)
ব্যাখ্যা : কিছু লোক নবী ﷺ এর সাথে সাক্ষাৎ করতে আসলে নবীর স্ত্রীদের ঘরের চারদিক দিয়ে ঘুরে বাহির থেকেই তাঁকে ডাকতে থাকত। লোকজনের এ আচরণে রাসূল ﷺ এর খুব কষ্ট হতো। কিন্তু স্বভাবগত কারণে তিনি এসব সহ্য করে যাচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা এ নির্দেশ দান করলেন যে, যখন তারা তাঁকে পাবে না, তখন ধৈর্যের সাথে বসে সে সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করবে, যখন তিনি নিজেই তাদেরকে সাক্ষাৎ দানের জন্য বেরিয়ে আসবেন।
নবী ﷺ এর উপর দরূদ পাঠের নির্দেশ :
اِنَّ اللهَ وَمَلَآئِكَتَهٗ يُصَلُّوْنَ عَلَى النَّبِيِّؕ يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا صَلُّوْا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا
নিশ্চয় আল্লাহ নবীর প্রতি দরূদ (রহমত) প্রেরণ করেন এবং তাঁর ফেরেশতারাও নবীর জন্য রহমত প্রার্থনা করে। হে মুমিনগণ! তোমরাও নবীর জন্য রহমত প্রার্থনা করো এবং তার প্রতি প্রচুর পরিমাণে সালাম প্রেরণ করো। (সূরা আহযাব- ৫৬)
ব্যাখ্যা : এর অর্থ হচ্ছে, হে লোকেরা! মুহাম্মাদ ﷺ এর মাধ্যমে তোমরা সঠিক পথের সন্ধান পেয়েছো, তাই তাঁর মর্যাদা অনুধাবন করো এবং তাঁর মহা অনুগ্রহের হক আদায় করো। তোমরা মূর্খতার অন্ধকারে পথ ভুলে বিপথে চলছিলে। এ ব্যক্তি তোমাদেরকে জ্ঞানের আলোকবর্তিকা দান করেছেন, নৈতিক অধঃপতন থেকে উন্নত মর্যাদায় উন্নীত করেছেন। তাই তোমাদের কৃতজ্ঞতার অনিবার্য দাবী হচ্ছে, শত্রুরা এ ব্যক্তির প্রতি যে পরিমাণ হিংসা ও বিদ্বেষ পোষণ করে, তোমরা তাঁর প্রতি তার চেয়ে বেশি ভালোবাসা পোষণ করো। তারা তাঁর যতটা নিন্দা করে তোমরা তার চেয়ে বেশি তাঁর প্রশংসা করো। তাঁর পক্ষে সেই একই দু‘আ করো, যা আল্লাহর ফেরেশতারা দিনরাত তাঁর জন্য করে যাচ্ছে, হে আমাদের প্রতিপালক! তোমার নবী যেমন আমাদের প্রতি বিপুল অনুগ্রহ করেছেন তেমনি তুমিও তাঁর প্রতি অগণিত রহমত বর্ষণ করো এবং তাঁর মর্যাদা সবচেয়ে বেশি উন্নত করো।
এ আয়াতে মুসলিমদেরকে দু’টি বিষয়ের হুকুম দেয়া হয়েছে। একটি হচ্ছে, صَلُّوْا عَلَيْهِ (সাল্লূ আলাইহি) অর্থাৎ তাঁর প্রতি দরূদ পড়ো। অন্যটি হচ্ছে, وَسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا (ওয়া সাল্লিমূ তাসলীমা) অর্থাৎ তাঁর প্রতি সালাম ও প্রশান্তি প্রেরণ করো। صَلُّوْا عَلَيْهِ (সাল্লূ আলাইহি) এর অর্থ হচ্ছে, তোমরা তাঁর অনুরক্ত হয়ে যাও, তাঁর প্রশংসা করো এবং তাঁর জন্য দু‘আ করো। আর وَسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا (ওয়া সাল্লিমূ তাসলীমা) বলার অর্থ হচ্ছে, তোমরা তাঁর জন্য পূর্ণ নিরাপত্তার দু‘আ করো। তাঁর বিরোধিতা করা থেকে দূরে থাকো এবং তাঁর যথার্থ আদেশ পালনকারীতে পরিণত হও। এ হুকুমটি নাযিল হওয়ার পর বহু সাহাবী রাসূল ﷺ কে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি তো আমাদেরকে (সাধারণভাবে) সালামের পদ্ধতি সম্পর্কে বলে দিয়েছেন। কিন্তু আপনার প্রতি সালাম পাঠানোর পদ্ধতিটা কি? এর জবাবে নবী ﷺ দরূদে ইবরাহীম শিখিয়েছেন। (সহীহ বুখারী, হা/৬৩৫৭; সহীহ মুসলিম, হা/৯৩৫)
আল্লাহ তা‘আলা নবীর স্ত্রীদেরকে সাবধান করেছেন :
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِّاَزْوَاجِكَ اِنْ كُنْتُنَّ تُرِدْنَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا وَزِيْنَتَهَا فَتَعَالَيْنَ اُمَتِّعْكُنَّ وَاُسَرِّحْكُنَّ سَرَاحًا جَمِيْلًا
হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে বলুন, যদি তোমরা পার্থিব জীবন ও তার সৌন্দর্য চাও, তবে এসো আমি তোমাদের ভোগের ব্যবস্থা করে দেই এবং তোমাদেরকে সম্মানের সাথে বিদায় দেই। (সূরা আহযাব- ২৮)
ব্যাখ্যা : এ আয়াত নাযিল হওয়ার পর নবী ﷺ সর্বপ্রথম আয়েশা (রাঃ) এর সাথে আলোচনা করেন এবং বলেন, ‘‘আমি তোমাকে একটি কথা বলছি, জবাব দেয়ার ব্যাপারে তাড়াহুড়া করো না। প্রথমে তোমার পিতা-মাতার মতামত নাও, তারপর আমাকে তোমার সিদ্ধান্ত জানাও।’’ তারপর তিনি তাকে বলেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে এ হুকুম এসেছে। তখন আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে আমি কি আমার পিতা-মাতাকে জিজ্ঞেস করব? আমি তো আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও আখিরাতই চাই।’’ এরপর নবী ﷺ এক এক করে তাঁর অন্যান্য স্ত্রীদের প্রত্যেকের কাছে যান এবং তাদেরকে একই কথা বলেন। তারা প্রত্যেকে আয়েশার মতো একই জবাব দেন। (সহীহ বুখারী, হা/৪৭৮৫; সহীহ মুসলিম হা/৩৭৫৪)
পরকালের প্রতি তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় :
وَاِنْ كُنْتُنَّ تُرِدْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَالدَّارَ الْاٰخِرَةَ فَاِنَّ اللهَ اَعَدَّ لِلْمُحْسِنَاتِ مِنْكُنَّ اَجْرًا عَظِيْمًا
আর যদি তোমরা আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও পরকাল চাও, তবে তোমাদের মধ্যে যারা সৎ গুণসম্পন্ন আল্লাহ তাদের জন্য বিরাট পুরস্কার প্রস্তুত করে রেখেছেন। (সূরা আহযাব- ২৯)
পরপুরুষের সাথে কথা বলার নিয়ম শিক্ষা দান :
يَا نِسَآءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَاَحَدٍ مِّنَ النِّسَآءِ اِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِيْ فِيْ قَلْبِه مَرَضٌ وَّقُلْنَ قَوْلًا مَّعْرُوْفًا
হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা কোন সাধারণ স্ত্রীলোকের মতো নও, যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তবে (পরপুরুষের সাথে) কথা বলার সময় এমনভাবে কোমল কণ্ঠে কথা বলো না যাতে যার অন্তরে (কুপ্রবৃত্তির) রোগ রয়েছে সে লালায়িত হয়। আর তোমরা ন্যায়সঙ্গত কথা বলবে। (সূরা আহযাব- ৩২)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ প্রয়োজন হলে কোন পুরুষের সাথে কথা বলতে বাধা নেই। কিন্তু এ সময় নারীর কথা বলার ধরণ এমন হতে হবে, যাতে আলাপকারী পুরুষ এ নারীটির ব্যাপারে অন্য কিছু আশা করতে না পারে। তার বলার ভংগীতে কোন নমনীয়তা, কোন মনমাতানো ভাব থাকবে না। সে তার স্বরে মাধুর্য সৃষ্টি করবে না- যা শ্রবণকারী পুরুষকে প্ররোচনা দেবে ও সাহস যোগাবে। নারীরা যেন অযথা নিজেদের স্বর ও অলংকারের ধ্বনি অন্য পুরুষদেরকে না শোনায়। এজন্য নারীদের আযান দেয়া নিষেধ। তাছাড়া জামায়াতের সাথে নামায আদায় করার সময় যদি কোন নারী হাজির থাকে এবং ইমাম কোন ভুল করেন তাহলে পুরুষের মতো তার ‘সুবহানাল্লাহ’ বলার অনুমতি নেই, তার কেবলমাত্র হাতের উপর হাত মেরে আওয়াজ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে ইমাম সতর্ক হয়ে যান।
কয়েকটি বিশেষ কাজের নির্দেশ :
وَقَرْنَ فِيْ بُيُوْتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْاُوْلٰى وَاَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَاٰتِيْنَ الزَّكَاةَ وَاَطِعْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗؕ اِنَّمَا يُرِيْدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ اَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيْرًا – وَاذْكُرْنَ مَا يُتْلٰى فِيْ بُيُوْتِكُنَّ مِنْ اٰيَاتِ اللهِ وَالْحِكْمَةِؕ اِنَّ اللهَ كَانَ لَطِيْفًا خَبِيْرًا
আর তোমরা নিজেদের ঘরে অবস্থান করবে এবং প্রাথমিক অজ্ঞতা যুগের ন্যায় নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না, তোমরা সালাত আদায় করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে। হে নবীর পরিবার! আল্লাহ তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে চান এবং তোমাদেরকে পবিত্র রাখতে চান। তোমাদের বাড়িতে আল্লাহর যে আয়াতসমূহ ও জ্ঞানের কথা পাঠ করা হয় তা স্মরণ রাখো। নিশ্চয় আল্লাহ খুবই সূক্ষ্মদর্শী ও সর্বজ্ঞ। (সূরা আহযাব- ৩৩, ৩৪)
ব্যাখ্যা : নারীর জন্য اَلتَّبَرُّجُ (আত তাবাররুজু) শব্দ ব্যবহার করার অর্থ : ১. সে তার চেহারা ও দেহের সৌন্দর্য পরপুরুষদেরকে দেখায়। ২. সে তার পোশাক ও অলংকারের বহর লোকদের সামনে উন্মুক্ত করে। ৩. সে তার চালচলন ও চমকের মাধ্যমে নিজেকে অন্যদের সামনে তুলে ধরে। আল্লাহ নারীদেরকে আদেশ দেন, তাদের যদি বাইরে বের হওয়ার প্রয়োজন হয়, তাহলে এমনভাবে বের হবে না যেমনিভাবে জাহেলী যুগের নারীরা বের হতো। দেহসজ্জা করে, সুশোভন অলংকার ও আঁটসাঁট বা হালকা পোশাকে সজ্জিত হয়ে চেহারা ও দেহের সৌন্দর্যকে উন্মুক্ত করে এবং গর্বের সাথে চলা কোন মুসলিমসমাজের নারীদের কাজ নয়। এগুলো জাহেলিয়াতের রীতি। وَاذْكُرْنَ এর দু’টি অর্থ : ‘‘মনে রেখো’’ এবং ‘‘বর্ণনা করো’’। প্রথম অর্থের দৃষ্টিতে এর তাৎপর্য দাঁড়ায়, হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা কখনো ভুলে যেয়ো না যে, যেখান থেকে সারা দুনিয়াকে আল্লাহর আয়াত, জ্ঞান ও প্রজ্ঞার শিক্ষা দেয়া হয় সেটিই তোমাদের আসল গৃহ। লোকেরা যেন এ গৃহে জাহেলিয়াতের আদর্শ দেখতে না পায়। দ্বিতীয় অর্থটির দৃষ্টিতে এর তাৎপর্য হয়, হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা যা কিছু শোন এবং দেখ তা বর্ণনা করতে থাকো। কারণ তোমাদের ছাড়া ইসলামী বিধান অন্য লোকদের জানা সম্ভব হবে না। এ আয়াতগুলোতে নবী ﷺ এর স্ত্রীদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে। কিন্তু এখানে উদ্দেশ্য হচ্ছে সমস্ত মুসলিম পরিবারে এ সংশোধনীগুলো প্রবর্তন করা। যখন নবী ﷺ এর গৃহ থেকে এ পবিত্র জীবন ধারার সূচনা হবে তখন অন্যান্য সকল মুসলিম গৃহের মহিলারা আপনা আপনিই এর অনুসরণ করতে থাকবে। কারণ এ গৃহটিই তাদের জন্য আদর্শ ছিল।
মধু হারাম করাতে নবী ﷺ কে কাফফারা আদায়ের নির্দেশ :
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ لِمَ تُحَرِّمُ مَاۤ اَحَلَّ اللهُ لَكَۚ تَبْتَغِيْ مَرْضَاتَ اَزْوَاجِكَؕ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ – قَدْ فَرَضَ اللهُ لَكُمْ تَحِلَّةَ اَيْمَانِكُمْۚ وَاللهُ مَوْلَاكُمْۚ وَهُوَ الْعَلِيْمُ الْحَكِيْمُ
হে নবী! আল্লাহ তোমার জন্য যা হালাল করেছেন তুমি তা হারাম করছ কেন? তুমি কি তোমার স্ত্রীদের সন্তুষ্টি চাচ্ছ? নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। আল্লাহ তোমাদের জন্য শপথ হতে মুক্তি লাভের ব্যবস্থা করেছেন, আল্লাহ তোমাদের সহায়; তিনি সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাবান। (সূরা তাহ্রীম- ১, ২)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ নবী ﷺ কে যে কয়টি কাজের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন তার মধ্যে একটি হলো- নবী ﷺ তাঁর স্ত্রীদেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য হালাল মধুকে নিজের উপর হারাম করে নিয়েছিলেন, পরে আল্লাহ তাকে কাফফারা দিয়ে কসম ভঙ্গ করার নির্দেশ দেন। সূরা মায়েদার ৮৯ নং আয়াতে কসমের কাফফারার বিবরণ দেয়া হয়েছে।
গোপনীয়তা প্রকাশ করে দেয়ার কারণে স্ত্রীকে সংশোধন করা হয় :
وَاِذْ اَسَرَّ النَّبِيُّ اِلٰى بَعْضِ اَزْوَاجِه حَدِيْثًاۚ فَلَمَّا نَبَّاَتْ بِه وَاَظْهَرَهُ اللهُ عَلَيْهِ عَرَّفَ بَعْضَهٗ وَاَعْرَضَ عَنْ ۢبَعْضٍۚ فَلَمَّا نَبَّاَهَا بِه قَالَتْ مَنْ اَنْۢبَاَكَ هٰذَاؕ قَالَ نَبَّاَنِيَ الْعَلِيْمُ الْخَبِيْرُ – اِنْ تَتُوْبَاۤ اِلَى اللهِ فَقَدْ صَغَتْ قُلُوْبُكُمَاۚ وَاِنْ تَظَاهَرَا عَلَيْهِ فَاِنَّ اللهَ هُوَ مَوْلَاهُ وَجِبْرِيْلُ وَصَالِحُ الْمُؤْمِنِيْنَۚ وَالْمَلَآئِكَةُ بَعْدَ ذٰلِكَ ظَهِيْرٌ
(স্মরণ করো) যখন নবী তার স্ত্রীদের একজনকে গোপনে কিছু বলেছিলেন। অতঃপর যখন সে তা অন্যকে বলে দিয়েছিল এবং আল্লাহ নবীকে তা জানিয়ে দিয়েছিলেন তখন নবী এ বিষয়ে কিছু প্রকাশ করলেন এবং কিছু গোপন রাখলেন। যখন নবী তা তাঁর সেই স্ত্রীকে জানালেন তখন সে বলল, কে আপনাকে এটা অবহিত করল? নবী বললেন, আমাকে তিনিই অবহিত করেছেন যিনি সর্বজ্ঞ ও সম্যক অবহিত। যেহেতু তোমাদের হৃদয় সোজা পথ থেকে সরে পড়েছে তাই যদি তোমরা উভয়ে (অনুতপ্ত হয়ে) তাওবা কর (তবে আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন)। কিন্তু তোমরা যদি নবীর বিরুদ্ধে একে অপরকে সাহায্য কর তবে জেনে রেখো, আল্লাহ, জিবরাঈল ও সৎকর্মপরায়ণ মুমিনগণ তার বন্ধু, উপরন্তু সমস্ত ফেরেশতাগণও তার সাহায্যকারী। (সূরা তাহ্রীম- ৩, ৪)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ তাঁর স্ত্রী হাফসাকে কিছু কথা বলে তা গোপন রাখতে বলেছিলেন। কিন্তু তিনি তা অন্য স্ত্রী (আয়েশা) এর নিকট প্রকাশ করে দেন। এ কাজের জন্য তৎক্ষণাৎ তাঁকে তিরস্কার করা হয়। এতে শুধু নবী ﷺ এর স্ত্রীগণকেই নয় বরং মুসলিমসমাজের সমস্ত দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের স্ত্রীদেরকেও গোপনীয় বিষয় সংরক্ষণের প্রশিক্ষণ দেয়া যায়। কারণ, কোন দায়িত্বশীল ব্যক্তির পরিবারের লোকজনের মধ্যে যদি এরূপ দুর্বলতা বিদ্যমান থাকে তাহলে এ দুর্বলতা যে কোন সময় যে কোন বড় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
عَسٰى رَبُّهٗۤ اِنْ طَلَّقَكُنَّ اَنْ يُّبْدِلَهٗۤ اَزْوَاجًا خَيْرًا مِّنْكُنَّ مُسْلِمَاتٍ مُّؤْمِنَاتٍ قَانِتَاتٍ تَآئِبَاتٍ عَابِدَاتٍ سَآئِحَاتٍ ثَيِّبَاتٍ وَّاَبْكَارًا
যদি নবী ﷺ তোমাদের সকলকে পরিত্যাগ করেন তবে তার প্রতিপালক তাকে তোমাদের অপেক্ষা উৎকৃষ্টতর স্ত্রী দিতে পারেন, যারা আনুগত্যকারিণী, তাওবাকারিণী, ইবাদাতকারিণী, রোযা পালনকারিণী, অকুমারী এবং কুমারী (ইত্যাদি গুণের অধিকারী)। (সূরা তাহরীম- ৫)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ যদি তোমাদেরকে তালাক দেন তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের পরিবর্তে তাঁকে এমনসব স্ত্রী দান করবেন, যাদের মধ্যে এসব গুণাবলি থাকবে। নবী ﷺ এর পবিত্র স্ত্রীগণকে উদ্দেশ্য করে এ কথা বলার অর্থ এ নয় যে, তাদের মধ্যে এসব গুণাবলি ছিল না। বরং এর অর্থ হলো, তোমাদের ত্রুটিপূর্ণ আচরণের কারণে নবী ﷺ এর যে কষ্ট হচ্ছে তোমরা তা পরিত্যাগ করো এবং এসব গুণাবলির প্রতি একান্তভাবে মনোনিবেশ করো।
মুহাম্মাদ ﷺ এর স্ত্রীরা মুমিনদের মায়ের সমান :
اَلنَّبِيُّ اَوْلٰى بِالْمُؤْمِنِيْنَ مِنْ اَنْفُسِهِمْ وَاَزْوَاجُهٗۤ اُمَّهَاتُهُمْ
নবী মুমিনদের কাছে তাদের নিজেদের চেয়েও অধিক ঘনিষ্ঠ এবং তার স্ত্রীগণ তাদের মাতা। (সূরা আহযাব- ৬)
তাদেরকে কেউ বিয়ে করতে পারে না :
وَمَا كَانَ لَكُمْ اَنْ تُؤْذُوْا رَسُوْلَ اللهِ وَلَاۤ اَنْ تَنْكِحُوْاۤ اَزْوَاجَهٗ مِنْ ۢبَعْدِهۤ اَبَدًاؕ اِنَّ ذٰلِكُمْ كَانَ عِنْدَ اللهِ عَظِيْمًا
আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয়া এবং তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রীদেরকে বিবাহ করা তোমাদের কারো জন্য বৈধ নয়। এটা আল্লাহর কাছে গুরুতর অপরাধ। (সূরা আহযাব- ৫৩)
তারা নেক আমলের জন্য দ্বিগুণ সওয়াব পাবে :
وَمَنْ يَّقْنُتْ مِنْكُنَّ لِلّٰهِ وَرَسُوْلِه وَتَعْمَلْ صَالِحًا نُّؤْتِهَاۤ اَجْرَهَا مَرَّتَيْنِ وَاَعْتَدْنَا لَهَا رِزْقًا كَرِيْمًا
তোমাদের মধ্যে যে কেউ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে ও সৎকাজ করবে, তাকে দ্বিগুণ পুরস্কার দেব, আর তার জন্য আমি প্রস্তুত রেখেছি সম্মানজনক জীবিকা। (সূরা আহযাব- ৩১)
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِّاَزْوَاجِكَ اِنْ كُنْتُنَّ تُرِدْنَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا وَزِيْنَتَهَا فَتَعَالَيْنَ اُمَتِّعْكُنَّ وَاُسَرِّحْكُنَّ سَرَاحًا جَمِيْلًا
হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে বলুন, যদি তোমরা পার্থিব জীবন ও তার সৌন্দর্য চাও, তবে এসো আমি তোমাদের ভোগের ব্যবস্থা করে দেই এবং তোমাদেরকে সম্মানের সাথে বিদায় দেই। (সূরা আহযাব- ২৮)
ব্যাখ্যা : এ আয়াত নাযিল হওয়ার পর নবী ﷺ সর্বপ্রথম আয়েশা (রাঃ) এর সাথে আলোচনা করেন এবং বলেন, ‘‘আমি তোমাকে একটি কথা বলছি, জবাব দেয়ার ব্যাপারে তাড়াহুড়া করো না। প্রথমে তোমার পিতা-মাতার মতামত নাও, তারপর আমাকে তোমার সিদ্ধান্ত জানাও।’’ তারপর তিনি তাকে বলেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে এ হুকুম এসেছে। তখন আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে আমি কি আমার পিতা-মাতাকে জিজ্ঞেস করব? আমি তো আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও আখিরাতই চাই।’’ এরপর নবী ﷺ এক এক করে তাঁর অন্যান্য স্ত্রীদের প্রত্যেকের কাছে যান এবং তাদেরকে একই কথা বলেন। তারা প্রত্যেকে আয়েশার মতো একই জবাব দেন। (সহীহ বুখারী, হা/৪৭৮৫; সহীহ মুসলিম হা/৩৭৫৪)
পরকালের প্রতি তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় :
وَاِنْ كُنْتُنَّ تُرِدْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَالدَّارَ الْاٰخِرَةَ فَاِنَّ اللهَ اَعَدَّ لِلْمُحْسِنَاتِ مِنْكُنَّ اَجْرًا عَظِيْمًا
আর যদি তোমরা আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও পরকাল চাও, তবে তোমাদের মধ্যে যারা সৎ গুণসম্পন্ন আল্লাহ তাদের জন্য বিরাট পুরস্কার প্রস্তুত করে রেখেছেন। (সূরা আহযাব- ২৯)
পরপুরুষের সাথে কথা বলার নিয়ম শিক্ষা দান :
يَا نِسَآءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَاَحَدٍ مِّنَ النِّسَآءِ اِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِيْ فِيْ قَلْبِه مَرَضٌ وَّقُلْنَ قَوْلًا مَّعْرُوْفًا
হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা কোন সাধারণ স্ত্রীলোকের মতো নও, যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তবে (পরপুরুষের সাথে) কথা বলার সময় এমনভাবে কোমল কণ্ঠে কথা বলো না যাতে যার অন্তরে (কুপ্রবৃত্তির) রোগ রয়েছে সে লালায়িত হয়। আর তোমরা ন্যায়সঙ্গত কথা বলবে। (সূরা আহযাব- ৩২)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ প্রয়োজন হলে কোন পুরুষের সাথে কথা বলতে বাধা নেই। কিন্তু এ সময় নারীর কথা বলার ধরণ এমন হতে হবে, যাতে আলাপকারী পুরুষ এ নারীটির ব্যাপারে অন্য কিছু আশা করতে না পারে। তার বলার ভংগীতে কোন নমনীয়তা, কোন মনমাতানো ভাব থাকবে না। সে তার স্বরে মাধুর্য সৃষ্টি করবে না- যা শ্রবণকারী পুরুষকে প্ররোচনা দেবে ও সাহস যোগাবে। নারীরা যেন অযথা নিজেদের স্বর ও অলংকারের ধ্বনি অন্য পুরুষদেরকে না শোনায়। এজন্য নারীদের আযান দেয়া নিষেধ। তাছাড়া জামায়াতের সাথে নামায আদায় করার সময় যদি কোন নারী হাজির থাকে এবং ইমাম কোন ভুল করেন তাহলে পুরুষের মতো তার ‘সুবহানাল্লাহ’ বলার অনুমতি নেই, তার কেবলমাত্র হাতের উপর হাত মেরে আওয়াজ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে ইমাম সতর্ক হয়ে যান।
কয়েকটি বিশেষ কাজের নির্দেশ :
وَقَرْنَ فِيْ بُيُوْتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْاُوْلٰى وَاَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَاٰتِيْنَ الزَّكَاةَ وَاَطِعْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗؕ اِنَّمَا يُرِيْدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ اَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيْرًا – وَاذْكُرْنَ مَا يُتْلٰى فِيْ بُيُوْتِكُنَّ مِنْ اٰيَاتِ اللهِ وَالْحِكْمَةِؕ اِنَّ اللهَ كَانَ لَطِيْفًا خَبِيْرًا
আর তোমরা নিজেদের ঘরে অবস্থান করবে এবং প্রাথমিক অজ্ঞতা যুগের ন্যায় নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না, তোমরা সালাত আদায় করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে। হে নবীর পরিবার! আল্লাহ তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে চান এবং তোমাদেরকে পবিত্র রাখতে চান। তোমাদের বাড়িতে আল্লাহর যে আয়াতসমূহ ও জ্ঞানের কথা পাঠ করা হয় তা স্মরণ রাখো। নিশ্চয় আল্লাহ খুবই সূক্ষ্মদর্শী ও সর্বজ্ঞ। (সূরা আহযাব- ৩৩, ৩৪)
ব্যাখ্যা : নারীর জন্য اَلتَّبَرُّجُ (আত তাবাররুজু) শব্দ ব্যবহার করার অর্থ : ১. সে তার চেহারা ও দেহের সৌন্দর্য পরপুরুষদেরকে দেখায়। ২. সে তার পোশাক ও অলংকারের বহর লোকদের সামনে উন্মুক্ত করে। ৩. সে তার চালচলন ও চমকের মাধ্যমে নিজেকে অন্যদের সামনে তুলে ধরে। আল্লাহ নারীদেরকে আদেশ দেন, তাদের যদি বাইরে বের হওয়ার প্রয়োজন হয়, তাহলে এমনভাবে বের হবে না যেমনিভাবে জাহেলী যুগের নারীরা বের হতো। দেহসজ্জা করে, সুশোভন অলংকার ও আঁটসাঁট বা হালকা পোশাকে সজ্জিত হয়ে চেহারা ও দেহের সৌন্দর্যকে উন্মুক্ত করে এবং গর্বের সাথে চলা কোন মুসলিমসমাজের নারীদের কাজ নয়। এগুলো জাহেলিয়াতের রীতি। وَاذْكُرْنَ এর দু’টি অর্থ : ‘‘মনে রেখো’’ এবং ‘‘বর্ণনা করো’’। প্রথম অর্থের দৃষ্টিতে এর তাৎপর্য দাঁড়ায়, হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা কখনো ভুলে যেয়ো না যে, যেখান থেকে সারা দুনিয়াকে আল্লাহর আয়াত, জ্ঞান ও প্রজ্ঞার শিক্ষা দেয়া হয় সেটিই তোমাদের আসল গৃহ। লোকেরা যেন এ গৃহে জাহেলিয়াতের আদর্শ দেখতে না পায়। দ্বিতীয় অর্থটির দৃষ্টিতে এর তাৎপর্য হয়, হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা যা কিছু শোন এবং দেখ তা বর্ণনা করতে থাকো। কারণ তোমাদের ছাড়া ইসলামী বিধান অন্য লোকদের জানা সম্ভব হবে না। এ আয়াতগুলোতে নবী ﷺ এর স্ত্রীদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে। কিন্তু এখানে উদ্দেশ্য হচ্ছে সমস্ত মুসলিম পরিবারে এ সংশোধনীগুলো প্রবর্তন করা। যখন নবী ﷺ এর গৃহ থেকে এ পবিত্র জীবন ধারার সূচনা হবে তখন অন্যান্য সকল মুসলিম গৃহের মহিলারা আপনা আপনিই এর অনুসরণ করতে থাকবে। কারণ এ গৃহটিই তাদের জন্য আদর্শ ছিল।
মধু হারাম করাতে নবী ﷺ কে কাফফারা আদায়ের নির্দেশ :
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ لِمَ تُحَرِّمُ مَاۤ اَحَلَّ اللهُ لَكَۚ تَبْتَغِيْ مَرْضَاتَ اَزْوَاجِكَؕ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ – قَدْ فَرَضَ اللهُ لَكُمْ تَحِلَّةَ اَيْمَانِكُمْۚ وَاللهُ مَوْلَاكُمْۚ وَهُوَ الْعَلِيْمُ الْحَكِيْمُ
হে নবী! আল্লাহ তোমার জন্য যা হালাল করেছেন তুমি তা হারাম করছ কেন? তুমি কি তোমার স্ত্রীদের সন্তুষ্টি চাচ্ছ? নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। আল্লাহ তোমাদের জন্য শপথ হতে মুক্তি লাভের ব্যবস্থা করেছেন, আল্লাহ তোমাদের সহায়; তিনি সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাবান। (সূরা তাহ্রীম- ১, ২)
ব্যাখ্যা : আল্লাহ নবী ﷺ কে যে কয়টি কাজের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন তার মধ্যে একটি হলো- নবী ﷺ তাঁর স্ত্রীদেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য হালাল মধুকে নিজের উপর হারাম করে নিয়েছিলেন, পরে আল্লাহ তাকে কাফফারা দিয়ে কসম ভঙ্গ করার নির্দেশ দেন। সূরা মায়েদার ৮৯ নং আয়াতে কসমের কাফফারার বিবরণ দেয়া হয়েছে।
গোপনীয়তা প্রকাশ করে দেয়ার কারণে স্ত্রীকে সংশোধন করা হয় :
وَاِذْ اَسَرَّ النَّبِيُّ اِلٰى بَعْضِ اَزْوَاجِه حَدِيْثًاۚ فَلَمَّا نَبَّاَتْ بِه وَاَظْهَرَهُ اللهُ عَلَيْهِ عَرَّفَ بَعْضَهٗ وَاَعْرَضَ عَنْ ۢبَعْضٍۚ فَلَمَّا نَبَّاَهَا بِه قَالَتْ مَنْ اَنْۢبَاَكَ هٰذَاؕ قَالَ نَبَّاَنِيَ الْعَلِيْمُ الْخَبِيْرُ – اِنْ تَتُوْبَاۤ اِلَى اللهِ فَقَدْ صَغَتْ قُلُوْبُكُمَاۚ وَاِنْ تَظَاهَرَا عَلَيْهِ فَاِنَّ اللهَ هُوَ مَوْلَاهُ وَجِبْرِيْلُ وَصَالِحُ الْمُؤْمِنِيْنَۚ وَالْمَلَآئِكَةُ بَعْدَ ذٰلِكَ ظَهِيْرٌ
(স্মরণ করো) যখন নবী তার স্ত্রীদের একজনকে গোপনে কিছু বলেছিলেন। অতঃপর যখন সে তা অন্যকে বলে দিয়েছিল এবং আল্লাহ নবীকে তা জানিয়ে দিয়েছিলেন তখন নবী এ বিষয়ে কিছু প্রকাশ করলেন এবং কিছু গোপন রাখলেন। যখন নবী তা তাঁর সেই স্ত্রীকে জানালেন তখন সে বলল, কে আপনাকে এটা অবহিত করল? নবী বললেন, আমাকে তিনিই অবহিত করেছেন যিনি সর্বজ্ঞ ও সম্যক অবহিত। যেহেতু তোমাদের হৃদয় সোজা পথ থেকে সরে পড়েছে তাই যদি তোমরা উভয়ে (অনুতপ্ত হয়ে) তাওবা কর (তবে আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন)। কিন্তু তোমরা যদি নবীর বিরুদ্ধে একে অপরকে সাহায্য কর তবে জেনে রেখো, আল্লাহ, জিবরাঈল ও সৎকর্মপরায়ণ মুমিনগণ তার বন্ধু, উপরন্তু সমস্ত ফেরেশতাগণও তার সাহায্যকারী। (সূরা তাহ্রীম- ৩, ৪)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ তাঁর স্ত্রী হাফসাকে কিছু কথা বলে তা গোপন রাখতে বলেছিলেন। কিন্তু তিনি তা অন্য স্ত্রী (আয়েশা) এর নিকট প্রকাশ করে দেন। এ কাজের জন্য তৎক্ষণাৎ তাঁকে তিরস্কার করা হয়। এতে শুধু নবী ﷺ এর স্ত্রীগণকেই নয় বরং মুসলিমসমাজের সমস্ত দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের স্ত্রীদেরকেও গোপনীয় বিষয় সংরক্ষণের প্রশিক্ষণ দেয়া যায়। কারণ, কোন দায়িত্বশীল ব্যক্তির পরিবারের লোকজনের মধ্যে যদি এরূপ দুর্বলতা বিদ্যমান থাকে তাহলে এ দুর্বলতা যে কোন সময় যে কোন বড় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
عَسٰى رَبُّهٗۤ اِنْ طَلَّقَكُنَّ اَنْ يُّبْدِلَهٗۤ اَزْوَاجًا خَيْرًا مِّنْكُنَّ مُسْلِمَاتٍ مُّؤْمِنَاتٍ قَانِتَاتٍ تَآئِبَاتٍ عَابِدَاتٍ سَآئِحَاتٍ ثَيِّبَاتٍ وَّاَبْكَارًا
যদি নবী ﷺ তোমাদের সকলকে পরিত্যাগ করেন তবে তার প্রতিপালক তাকে তোমাদের অপেক্ষা উৎকৃষ্টতর স্ত্রী দিতে পারেন, যারা আনুগত্যকারিণী, তাওবাকারিণী, ইবাদাতকারিণী, রোযা পালনকারিণী, অকুমারী এবং কুমারী (ইত্যাদি গুণের অধিকারী)। (সূরা তাহরীম- ৫)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ যদি তোমাদেরকে তালাক দেন তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের পরিবর্তে তাঁকে এমনসব স্ত্রী দান করবেন, যাদের মধ্যে এসব গুণাবলি থাকবে। নবী ﷺ এর পবিত্র স্ত্রীগণকে উদ্দেশ্য করে এ কথা বলার অর্থ এ নয় যে, তাদের মধ্যে এসব গুণাবলি ছিল না। বরং এর অর্থ হলো, তোমাদের ত্রুটিপূর্ণ আচরণের কারণে নবী ﷺ এর যে কষ্ট হচ্ছে তোমরা তা পরিত্যাগ করো এবং এসব গুণাবলির প্রতি একান্তভাবে মনোনিবেশ করো।
মুহাম্মাদ ﷺ এর স্ত্রীরা মুমিনদের মায়ের সমান :
اَلنَّبِيُّ اَوْلٰى بِالْمُؤْمِنِيْنَ مِنْ اَنْفُسِهِمْ وَاَزْوَاجُهٗۤ اُمَّهَاتُهُمْ
নবী মুমিনদের কাছে তাদের নিজেদের চেয়েও অধিক ঘনিষ্ঠ এবং তার স্ত্রীগণ তাদের মাতা। (সূরা আহযাব- ৬)
তাদেরকে কেউ বিয়ে করতে পারে না :
وَمَا كَانَ لَكُمْ اَنْ تُؤْذُوْا رَسُوْلَ اللهِ وَلَاۤ اَنْ تَنْكِحُوْاۤ اَزْوَاجَهٗ مِنْ ۢبَعْدِهۤ اَبَدًاؕ اِنَّ ذٰلِكُمْ كَانَ عِنْدَ اللهِ عَظِيْمًا
আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয়া এবং তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রীদেরকে বিবাহ করা তোমাদের কারো জন্য বৈধ নয়। এটা আল্লাহর কাছে গুরুতর অপরাধ। (সূরা আহযাব- ৫৩)
তারা নেক আমলের জন্য দ্বিগুণ সওয়াব পাবে :
وَمَنْ يَّقْنُتْ مِنْكُنَّ لِلّٰهِ وَرَسُوْلِه وَتَعْمَلْ صَالِحًا نُّؤْتِهَاۤ اَجْرَهَا مَرَّتَيْنِ وَاَعْتَدْنَا لَهَا رِزْقًا كَرِيْمًا
তোমাদের মধ্যে যে কেউ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে ও সৎকাজ করবে, তাকে দ্বিগুণ পুরস্কার দেব, আর তার জন্য আমি প্রস্তুত রেখেছি সম্মানজনক জীবিকা। (সূরা আহযাব- ৩১)
আল্লাহ তা‘আলা উম্মতে মুহাম্মাদীকে বিশেষ মর্যাদা দান করেছেন :
وَكَذٰلِكَ جَعَلْنَاكُمْ اُمَّةً وَّسَطًا لِّتَكُوْنُوْا شُهَدَآءَ عَلَى النَّاسِ
আর এভাবে আমি তোমাদেরকে মধ্যমপন্থী ও ন্যায়পরায়ণ উম্মত হিসেবে মনোনীত করেছি, যেন তোমরা মানবজাতির জন্য সাক্ষী হও। (সূরা বাক্বারা- ১৪৩)
ব্যাখ্যা : ‘উম্মতে ওয়াসাত’ তথা ‘মধ্যমপন্থী উম্মত’ এর অর্থ হচ্ছে- এমন একটি আদর্শ ও মর্যাদাবান দল, যারা ন্যায়পরায়ণতা, সুবিচার ও মধ্যমপন্থার অনুসারী। যাদের আচার-আচরণে বাড়াবাড়ি নেই, যারা দুনিয়ার সকল জাতির নেতৃত্বের আসনে থাকবে এবং সবার সাথে সত্য ও ন্যায়ের ভিত্তিতে সম্পর্ক কায়েম রাখবে এবং কারো সাথেই অন্যায় ব্যবহার করবে না। তারা এমন একটি উৎকৃষ্ট ও উন্নত মর্যাদাসম্পন্ন দল, যারা নিজেরা ইনসাফ, ন্যায়-নিষ্ঠা ও ভারসাম্যের নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত; যারা দুনিয়ার সকল জাতির মধ্যে কেন্দ্রীয় আসন লাভের যোগ্যতা রাখে। মুহাম্মাদ ﷺ এর অনুসারীরা সত্য ও সরল পথের সন্ধান পেয়েছে। তারা উন্নতি করতে করতে এমন একটি মর্যাদায় উপনীত হয়েছে, যেখানে তাদেরকে ‘মধ্যমপন্থী উম্মত’ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
উম্মতে মুহাম্মাদীই শ্রেষ্ঠ উম্মত :
كُنْتُمْ خَيْرَ اُمَّةٍ اُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَتُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ
তোমরা হচ্ছ শ্রেষ্ঠ উম্মত, তোমাদেরকে মানুষের (কল্যাণের জন্য) সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমরা সৎকাজের আদেশ করবে, অসৎকাজ হতে নিষেধ করবে এবং আল্লাহর উপর ঈমান আনবে। (সূরা আলে ইমরান- ১১০)
وَكَذٰلِكَ جَعَلْنَاكُمْ اُمَّةً وَّسَطًا لِّتَكُوْنُوْا شُهَدَآءَ عَلَى النَّاسِ
আর এভাবে আমি তোমাদেরকে মধ্যমপন্থী ও ন্যায়পরায়ণ উম্মত হিসেবে মনোনীত করেছি, যেন তোমরা মানবজাতির জন্য সাক্ষী হও। (সূরা বাক্বারা- ১৪৩)
ব্যাখ্যা : ‘উম্মতে ওয়াসাত’ তথা ‘মধ্যমপন্থী উম্মত’ এর অর্থ হচ্ছে- এমন একটি আদর্শ ও মর্যাদাবান দল, যারা ন্যায়পরায়ণতা, সুবিচার ও মধ্যমপন্থার অনুসারী। যাদের আচার-আচরণে বাড়াবাড়ি নেই, যারা দুনিয়ার সকল জাতির নেতৃত্বের আসনে থাকবে এবং সবার সাথে সত্য ও ন্যায়ের ভিত্তিতে সম্পর্ক কায়েম রাখবে এবং কারো সাথেই অন্যায় ব্যবহার করবে না। তারা এমন একটি উৎকৃষ্ট ও উন্নত মর্যাদাসম্পন্ন দল, যারা নিজেরা ইনসাফ, ন্যায়-নিষ্ঠা ও ভারসাম্যের নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত; যারা দুনিয়ার সকল জাতির মধ্যে কেন্দ্রীয় আসন লাভের যোগ্যতা রাখে। মুহাম্মাদ ﷺ এর অনুসারীরা সত্য ও সরল পথের সন্ধান পেয়েছে। তারা উন্নতি করতে করতে এমন একটি মর্যাদায় উপনীত হয়েছে, যেখানে তাদেরকে ‘মধ্যমপন্থী উম্মত’ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
উম্মতে মুহাম্মাদীই শ্রেষ্ঠ উম্মত :
كُنْتُمْ خَيْرَ اُمَّةٍ اُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَتُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ
তোমরা হচ্ছ শ্রেষ্ঠ উম্মত, তোমাদেরকে মানুষের (কল্যাণের জন্য) সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমরা সৎকাজের আদেশ করবে, অসৎকাজ হতে নিষেধ করবে এবং আল্লাহর উপর ঈমান আনবে। (সূরা আলে ইমরান- ১১০)
নবী ﷺ এর আনুগত্য করার নির্দেশ :
وَاَطِيْعُوا اللهَ وَاَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَاحْذَرُوْاۚ فَاِنْ تَوَلَّيْتُمْ فَاعْلَمُوْاۤ اَنَّمَا عَلٰى رَسُوْلِنَا الْبَلَاغُ الْمُبِيْنُ
তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো ও রাসূলের আনুগত্য করো এবং সতর্ক হও। যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও তবে জেনে রেখো, স্পষ্ট প্রচারই আমার রাসূলের দায়িত্ব। (সূরা মায়েদা- ৯২)
وَاَطِيْعُوا اللهَ وَاَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ فَاِنْ تَوَلَّيْتُمْ فَاِنَّمَا عَلٰى رَسُوْلِنَا الْبَلَاغُ الْمُبِيْنُ
তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো এবং তাঁর রাসূল ﷺ এর আনুগত্য করো, যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও তবে আমার রাসূলের দায়িত্ব শুধু স্পষ্টভাবে প্রচার করা। (সূরা তাগাবুন- ১২)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَطِيْعُوا اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَلَا تَوَلَّوْا عَنْهُ وَاَنْتُمْ تَسْمَعُوْنَ
হে মুমিনগণ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো। যখন তোমরা তাঁর কথা শ্রবণ কর তখন তা হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না। (সূরা আনফাল- ২০)
মুহাম্মাদ ﷺ এর আনুগত্যই আল্লাহর আনুগত্য :
مَنْ يُّطِعِ الرَّسُوْلَ فَقَدْ اَطَاعَ اللهَۚ وَمَنْ تَوَلّٰى فَمَاۤ اَرْسَلْنَاكَ عَلَيْهِمْ حَفِيْظًا
যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করল সে তো আল্লাহরই আনুগত্য করল এবং যে ব্যক্তি মুখ ফিরিয়ে নিল তবে (মনে রেখো) তোমাকে তাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে প্রেরণ করিনি। (সূরা নিসা- ৮০)
নবী ﷺ এর ফায়সালা মেনে নেয়া বাধ্যতামূলক:
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَّلَا مُؤْمِنَةٍ اِذَا قَضَى اللهُ وَرَسُوْلُهٗۤ اَمْرًا اَنْ يَّكُوْنَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ اَمْرِهِمْؕ وَمَنْ يَّعْصِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُّبِيْنًا
কোন মুমিন পুরুষ কিংবা মুমিন নারীর জন্য এ অবকাশ নেই যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যখন কোন কাজের নির্দেশ দেন, তখন সে কাজে তাদের কোন নিজস্ব সিদ্ধান্তের অধিকার থাকবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করে সে তো প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় নিপতিত হয়। (সূরা আহযাব- ৩৬)
ব্যাখ্যা : যে বিষয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে কোন হুকুম প্রমাণিত হয়, সে বিষয়ে কোন মুসলিম ব্যক্তি, জাতি, প্রতিষ্ঠান, আদালত, পার্লামেন্ট বা রাষ্ট্রের নিজের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকে না। মুসলিম হওয়ার অর্থই হচ্ছে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সামনে নিজের স্বাধীন ইখতিয়ার বিসর্জন দেয়া। যে ব্যক্তি মুসলিম হিসেবে বেঁচে থাকতে চায় তাকে অবশ্যই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সামনে আনুগত্যের শির নত করতে হবে। আর যে নত করতে চায় না, সে মুসলিম নয়। যে ব্যক্তি তার কামনা-বাসনাকে রাসূল ﷺ এর আনীত দ্বীনের আয়ত্তে সীমাবদ্ধ করতে না পারবে, সে কখনই ঈমানদার হতে পারবে না। এটা ঈমানের প্রাথমিক ও মৌলিক দাবী। যে ব্যক্তি আল্লাহকে তার রব এবং আল্লাহর রাসূলকে তার পথপ্রদর্শনকারী হিসেবে মানে, সে নিজের মতামত ও ধ্যান-ধারণাকে কখনো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সিদ্ধান্তের উপর অগ্রাধিকার দিতে পারে না, সে বিভিন্ন ব্যাপারে স্বাধীন মতামত পোষণ করে না এবং ঐসব ব্যাপারে নিজেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে না। বরং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ঐসব ব্যাপারে কোন দিকনির্দেশনা দিয়েছেন কি না এবং দিয়ে থাকলে কী দিয়েছেন সে বিষয়ে আগে জানার চেষ্টা করবে। এ নির্দেশটি শুধু মুসলিমদের ব্যক্তিগত ব্যাপারসমূহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তাদের পুরো সামাজিক ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। মুসলিমদের সরকার, বিচারালয় এবং পার্লামেন্ট কোনকিছুই এ আইনের বাইরে নয়। যদি কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য থেকে মুক্ত হয়ে স্বেচ্ছাচারী হওয়ার নীতি গ্রহণ করে কিংবা নিজের মতামত ও ধ্যান-ধারণাকে তাদের নির্দেশের চেয়ে অগ্রাধিকার দান করে তাহলে তার বুঝা-পড়া হবে সেই আল্লাহর সাথে, যিনি তোমাদের সব কথা শুনছেন এবং মনের অভিপ্রায় সম্পর্কেও অবগত আছেন।
নবী ﷺ এর অনুসরণের মধ্যেই আল্লাহর ভালোবাসা নিহিত :
قُلْ اِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّوْنَ اللهَ فَاتَّبِعُوْنِيْ يُحْبِبْكُمُ اللهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْؕ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
তাদেরকে বলে দাও, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও তবে আমার অনুসরণ করো। (যদি কর) তাহলে আল্লাহও তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা আলে ইমরান- ৩১)
নবী ﷺ এর আদেশ-নিষেধ মেনে চলার নির্দেশ :
وَمَاۤ اٰتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُۗ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْاۚ وَاتَّقُوا اللهَؕ اِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
রাসূল তোমাদেরকে যা দেয় তা তোমরা গ্রহণ করো এবং যা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করে তা হতে বিরত থাকো। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো; নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি দানে খুবই কঠোর। (সূরা হাশর- ৭)
ব্যাখ্যা : মুসলিমগণ সবসময় সব ব্যাপারেই রাসূল ﷺ এর আনুগত্য করবে। রাসূল ﷺ বলেছেন, ‘‘আমি কোন বিষয়ে তোমাদের নির্দেশ দিলে তা যথাসাধ্য পালন করো। আর যে বিষয়ে বিরত থাকতে বলি তা থেকে দূরে থাকো।’’ (সহীহ বুখারী, হা/৭২৮৮; সহীহ মুসলিম, হা/৩৩২১)
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) একবার বক্তৃতাকালে বললেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা অমুক অমুক ফ্যাশনকারিণী মহিলাকে লানত করেছেন।’’ এটা শুনে এক মহিলা বলল, এ কথা আপনি কোথায় পেয়েছেন? তিনি বললেন, তুমি আল্লাহর কিতাব পড়ে থাকলে এ কথা অবশ্যই পেতে। তুমি কি এ আয়াত وَمَاۤ اٰتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا পড়েছ? সে বলল, হ্যাঁ- এ আয়াত তো আমি পড়েছি। আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, রাসূল ﷺ এ কাজ করতে নিষেধ করেছেন এবং জানিয়ে দিয়েছেন যে, এরূপ কাজে লিপ্ত নারীদের উপর আল্লাহ তা‘আলা লানত করেছেন। তখন মহিলাটি বলল, এখন আমি বুঝতে পারলাম। (সহীহ বুখারী, হা/৪৮৮৬, সহীহ মুসলিম, হা/৫৬৯৫)
নবী ﷺ এর আনুগত্যকারীরা হেদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত হবে :
فَاٰمِنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِهِ النَّبِيِّ الْاُمِّيِّ الَّذِيْ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَكَلِمَاتِه وَاتَّبِعُوْهُ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ
সুতরাং তোমরা ঈমান আনো আল্লাহর প্রতি ও তাঁর বার্তাবাহক উম্মী নবীর প্রতি, যিনি আল্লাহ ও তাঁর বাণীর প্রতি ঈমান আনেন। আর তোমরা তাঁর অনুসরণ করো, যাতে তোমরা সঠিক পথ পেতে পার। (সূরা আ‘রাফ- ১৫৮)
وَاِنْ تُطِيْعُوْهُ تَهْتَدُوْاؕ وَمَا عَلَى الرَّسُوْلِ اِلَّا الْبَلَاغُ الْمُبِيْنُ
যদি তোমরা তার আনুগত্য কর তবে সৎপথ পাবে; আর রাসূলের কাজ তো কেবল স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেয়া। (সূরা নূর- ৫৪)
তারা সফলকাম হবে :
وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَيَخْشَ اللهَ وَيَتَّقْهِ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَآئِزُوْنَ
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর অবাধ্যতা হতে সাবধান থাকে তারাই সফলকাম। (সূরা নূর- ৫২)
وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيْمًا
যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, সে তো মহাসাফল্য লাভ করবে। (সূরা আহযাব- ৭১)
তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে :
وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ يُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَاؕ وَذٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ
যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, তাকে তিনি এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহমান থাকবে। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে; আর এটাই তো মহাসাফল্য। (সূরা নিসা- ১৩)
وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ يُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُۚ وَمَنْ يَّتَوَلَّ يُعَذِّبْهُ عَذَابًا اَلِيْمًا
যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কথা মেনে চলবে আল্লাহ তাকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা বহমান থাকবে। আর যারা মুখ ফিরিয়ে নেবে তাদেরকে কষ্টদায়ক আযাব দেয়া হবে। (সূরা ফাতহ- ১৭)
তারা নবীগণ ও শ্রেষ্ঠ লোকদের সাথে থাকবেন :
وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَالرَّسُوْلَ فَاُولٰٓئِكَ مَعَ الَّذِيْنَ اَنْعَمَ اللهُ عَلَيْهِمْ مِّنَ النَّبِيِّيْنَ وَالصِّدِّيْقِيْنَ وَالشُّهَدَآءِ وَالصَّالِحِيْنَۚ وَحَسُنَ اُولٰٓئِكَ رَفِيْقًا
যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তার রাসূলের আনুগত্য করবে সে নবী, সত্যনিষ্ঠ, শহীদ ও সৎকর্মপরায়ণ লোকদের সঙ্গী হবে, যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন; আর তারা কতই না উত্তম সঙ্গী! (সূরা নিসা- ৬৯)
وَاَطِيْعُوا اللهَ وَاَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَاحْذَرُوْاۚ فَاِنْ تَوَلَّيْتُمْ فَاعْلَمُوْاۤ اَنَّمَا عَلٰى رَسُوْلِنَا الْبَلَاغُ الْمُبِيْنُ
তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো ও রাসূলের আনুগত্য করো এবং সতর্ক হও। যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও তবে জেনে রেখো, স্পষ্ট প্রচারই আমার রাসূলের দায়িত্ব। (সূরা মায়েদা- ৯২)
وَاَطِيْعُوا اللهَ وَاَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ فَاِنْ تَوَلَّيْتُمْ فَاِنَّمَا عَلٰى رَسُوْلِنَا الْبَلَاغُ الْمُبِيْنُ
তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো এবং তাঁর রাসূল ﷺ এর আনুগত্য করো, যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও তবে আমার রাসূলের দায়িত্ব শুধু স্পষ্টভাবে প্রচার করা। (সূরা তাগাবুন- ১২)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَطِيْعُوا اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَلَا تَوَلَّوْا عَنْهُ وَاَنْتُمْ تَسْمَعُوْنَ
হে মুমিনগণ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো। যখন তোমরা তাঁর কথা শ্রবণ কর তখন তা হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না। (সূরা আনফাল- ২০)
মুহাম্মাদ ﷺ এর আনুগত্যই আল্লাহর আনুগত্য :
مَنْ يُّطِعِ الرَّسُوْلَ فَقَدْ اَطَاعَ اللهَۚ وَمَنْ تَوَلّٰى فَمَاۤ اَرْسَلْنَاكَ عَلَيْهِمْ حَفِيْظًا
যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করল সে তো আল্লাহরই আনুগত্য করল এবং যে ব্যক্তি মুখ ফিরিয়ে নিল তবে (মনে রেখো) তোমাকে তাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে প্রেরণ করিনি। (সূরা নিসা- ৮০)
নবী ﷺ এর ফায়সালা মেনে নেয়া বাধ্যতামূলক:
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَّلَا مُؤْمِنَةٍ اِذَا قَضَى اللهُ وَرَسُوْلُهٗۤ اَمْرًا اَنْ يَّكُوْنَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ اَمْرِهِمْؕ وَمَنْ يَّعْصِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُّبِيْنًا
কোন মুমিন পুরুষ কিংবা মুমিন নারীর জন্য এ অবকাশ নেই যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যখন কোন কাজের নির্দেশ দেন, তখন সে কাজে তাদের কোন নিজস্ব সিদ্ধান্তের অধিকার থাকবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করে সে তো প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় নিপতিত হয়। (সূরা আহযাব- ৩৬)
ব্যাখ্যা : যে বিষয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে কোন হুকুম প্রমাণিত হয়, সে বিষয়ে কোন মুসলিম ব্যক্তি, জাতি, প্রতিষ্ঠান, আদালত, পার্লামেন্ট বা রাষ্ট্রের নিজের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকে না। মুসলিম হওয়ার অর্থই হচ্ছে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সামনে নিজের স্বাধীন ইখতিয়ার বিসর্জন দেয়া। যে ব্যক্তি মুসলিম হিসেবে বেঁচে থাকতে চায় তাকে অবশ্যই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সামনে আনুগত্যের শির নত করতে হবে। আর যে নত করতে চায় না, সে মুসলিম নয়। যে ব্যক্তি তার কামনা-বাসনাকে রাসূল ﷺ এর আনীত দ্বীনের আয়ত্তে সীমাবদ্ধ করতে না পারবে, সে কখনই ঈমানদার হতে পারবে না। এটা ঈমানের প্রাথমিক ও মৌলিক দাবী। যে ব্যক্তি আল্লাহকে তার রব এবং আল্লাহর রাসূলকে তার পথপ্রদর্শনকারী হিসেবে মানে, সে নিজের মতামত ও ধ্যান-ধারণাকে কখনো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সিদ্ধান্তের উপর অগ্রাধিকার দিতে পারে না, সে বিভিন্ন ব্যাপারে স্বাধীন মতামত পোষণ করে না এবং ঐসব ব্যাপারে নিজেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে না। বরং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ঐসব ব্যাপারে কোন দিকনির্দেশনা দিয়েছেন কি না এবং দিয়ে থাকলে কী দিয়েছেন সে বিষয়ে আগে জানার চেষ্টা করবে। এ নির্দেশটি শুধু মুসলিমদের ব্যক্তিগত ব্যাপারসমূহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তাদের পুরো সামাজিক ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। মুসলিমদের সরকার, বিচারালয় এবং পার্লামেন্ট কোনকিছুই এ আইনের বাইরে নয়। যদি কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য থেকে মুক্ত হয়ে স্বেচ্ছাচারী হওয়ার নীতি গ্রহণ করে কিংবা নিজের মতামত ও ধ্যান-ধারণাকে তাদের নির্দেশের চেয়ে অগ্রাধিকার দান করে তাহলে তার বুঝা-পড়া হবে সেই আল্লাহর সাথে, যিনি তোমাদের সব কথা শুনছেন এবং মনের অভিপ্রায় সম্পর্কেও অবগত আছেন।
নবী ﷺ এর অনুসরণের মধ্যেই আল্লাহর ভালোবাসা নিহিত :
قُلْ اِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّوْنَ اللهَ فَاتَّبِعُوْنِيْ يُحْبِبْكُمُ اللهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْؕ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
তাদেরকে বলে দাও, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও তবে আমার অনুসরণ করো। (যদি কর) তাহলে আল্লাহও তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা আলে ইমরান- ৩১)
নবী ﷺ এর আদেশ-নিষেধ মেনে চলার নির্দেশ :
وَمَاۤ اٰتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُۗ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْاۚ وَاتَّقُوا اللهَؕ اِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
রাসূল তোমাদেরকে যা দেয় তা তোমরা গ্রহণ করো এবং যা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করে তা হতে বিরত থাকো। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো; নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি দানে খুবই কঠোর। (সূরা হাশর- ৭)
ব্যাখ্যা : মুসলিমগণ সবসময় সব ব্যাপারেই রাসূল ﷺ এর আনুগত্য করবে। রাসূল ﷺ বলেছেন, ‘‘আমি কোন বিষয়ে তোমাদের নির্দেশ দিলে তা যথাসাধ্য পালন করো। আর যে বিষয়ে বিরত থাকতে বলি তা থেকে দূরে থাকো।’’ (সহীহ বুখারী, হা/৭২৮৮; সহীহ মুসলিম, হা/৩৩২১)
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) একবার বক্তৃতাকালে বললেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা অমুক অমুক ফ্যাশনকারিণী মহিলাকে লানত করেছেন।’’ এটা শুনে এক মহিলা বলল, এ কথা আপনি কোথায় পেয়েছেন? তিনি বললেন, তুমি আল্লাহর কিতাব পড়ে থাকলে এ কথা অবশ্যই পেতে। তুমি কি এ আয়াত وَمَاۤ اٰتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا পড়েছ? সে বলল, হ্যাঁ- এ আয়াত তো আমি পড়েছি। আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, রাসূল ﷺ এ কাজ করতে নিষেধ করেছেন এবং জানিয়ে দিয়েছেন যে, এরূপ কাজে লিপ্ত নারীদের উপর আল্লাহ তা‘আলা লানত করেছেন। তখন মহিলাটি বলল, এখন আমি বুঝতে পারলাম। (সহীহ বুখারী, হা/৪৮৮৬, সহীহ মুসলিম, হা/৫৬৯৫)
নবী ﷺ এর আনুগত্যকারীরা হেদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত হবে :
فَاٰمِنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِهِ النَّبِيِّ الْاُمِّيِّ الَّذِيْ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَكَلِمَاتِه وَاتَّبِعُوْهُ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ
সুতরাং তোমরা ঈমান আনো আল্লাহর প্রতি ও তাঁর বার্তাবাহক উম্মী নবীর প্রতি, যিনি আল্লাহ ও তাঁর বাণীর প্রতি ঈমান আনেন। আর তোমরা তাঁর অনুসরণ করো, যাতে তোমরা সঠিক পথ পেতে পার। (সূরা আ‘রাফ- ১৫৮)
وَاِنْ تُطِيْعُوْهُ تَهْتَدُوْاؕ وَمَا عَلَى الرَّسُوْلِ اِلَّا الْبَلَاغُ الْمُبِيْنُ
যদি তোমরা তার আনুগত্য কর তবে সৎপথ পাবে; আর রাসূলের কাজ তো কেবল স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেয়া। (সূরা নূর- ৫৪)
তারা সফলকাম হবে :
وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَيَخْشَ اللهَ وَيَتَّقْهِ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَآئِزُوْنَ
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর অবাধ্যতা হতে সাবধান থাকে তারাই সফলকাম। (সূরা নূর- ৫২)
وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيْمًا
যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, সে তো মহাসাফল্য লাভ করবে। (সূরা আহযাব- ৭১)
তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে :
وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ يُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَاؕ وَذٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ
যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, তাকে তিনি এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহমান থাকবে। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে; আর এটাই তো মহাসাফল্য। (সূরা নিসা- ১৩)
وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ يُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُۚ وَمَنْ يَّتَوَلَّ يُعَذِّبْهُ عَذَابًا اَلِيْمًا
যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কথা মেনে চলবে আল্লাহ তাকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা বহমান থাকবে। আর যারা মুখ ফিরিয়ে নেবে তাদেরকে কষ্টদায়ক আযাব দেয়া হবে। (সূরা ফাতহ- ১৭)
তারা নবীগণ ও শ্রেষ্ঠ লোকদের সাথে থাকবেন :
وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَالرَّسُوْلَ فَاُولٰٓئِكَ مَعَ الَّذِيْنَ اَنْعَمَ اللهُ عَلَيْهِمْ مِّنَ النَّبِيِّيْنَ وَالصِّدِّيْقِيْنَ وَالشُّهَدَآءِ وَالصَّالِحِيْنَۚ وَحَسُنَ اُولٰٓئِكَ رَفِيْقًا
যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তার রাসূলের আনুগত্য করবে সে নবী, সত্যনিষ্ঠ, শহীদ ও সৎকর্মপরায়ণ লোকদের সঙ্গী হবে, যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন; আর তারা কতই না উত্তম সঙ্গী! (সূরা নিসা- ৬৯)
নবী ﷺ এর বিরুদ্ধাচরণকারীরা লাঞ্ছিত হবে :
اِنَّ الَّذِيْنَ يُحَآدُّوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ كُبِتُوْا كَمَا كُبِتَ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ
যারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে তাদেরকে লাঞ্ছিত করা হবে, যেমন লাঞ্ছিত করা হয়েছে তাদের পূর্ববর্তীদেরকে। (সূরা মুজাদালা- ৫)
اِنَّ الَّذِيْنَ يُحَآدُّوْنَ اللهَ وَ رَسُوْلَهٗۤ اُولٰٓئِكَ فِى الْاَذَلِّيْنَ
নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে তারা লাঞ্ছিতদের দলভুক্ত হবে। (সূরা মুজাদালা- ২০)
তাঁর সাথে বিদ্রোহকারীরা জাহান্নামে যাবে :
اَلَمْ يَعْلَمُوْاۤ اَنَّهٗ مَنْ يُّحَادِدِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ فَاَنَّ لَهٗ نَارَ جَهَنَّمَ خَالِدًا فِيْهَاؕ ذٰلِكَ الْخِزْيُ الْعَظِيْمُ
তারা কি জানে না যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে তার জন্য (প্রস্তুত) আছে জাহান্নামের অগ্নি, যেখানে সে চিরস্থায়ী হবে? আর সেটাই চরম লাঞ্ছনা। (সূরা তাওবা- ৬৩)
তাঁর কথা না মানা মুনাফিকদের কাজ :
وَاِذَا قِيْلَ لَهُمْ تَعَالَوْا اِلٰى مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ وَاِلَى الرَّسُوْلِ رَاَيْتَ الْمُنَافِقِيْنَ يَصُدُّوْنَ عَنْكَ صُدُوْدًا
যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার দিকে এবং রাসূলের দিকে আসো, তখন মুনাফিকদেরকে তুমি তোমার নিকট হতে একেবারে মুখ ফিরিয়ে নিতে দেখবে। (সূরা নিসা- ৬১)
যারা তাঁর কথা মানে না তারা আল্লাহর ভালোবাসা পাবে না :
قُلْ اَطِيْعُوا اللهَ وَالرَّسُوْلَۚ فَاِنْ تَوَلَّوْا فَاِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْكَافِرِيْنَ
বলো, তোমরা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো। তবে যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে মনে রেখো, আল্লাহ কাফিরদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা আলে ইমরান- ৩২)
তাদের উপর বিপর্যয় বা আযাব আসবে :
فَلْيَحْذَرِ الَّذِيْنَ يُخَالِفُوْنَ عَنْ اَمْرِهٖۤ اَنْ تُصِيْبَهُمْ فِتْنَةٌ ا َوْ يُصِيْبَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা সতর্ক হোক যে, তাদের উপর বিপর্যয় পতিত হবে অথবা তাদের উপর পতিত হবে মর্মান্তিক শাস্তি। (সূরা নূর- ৬৩)
তাদের আমল নষ্ট হয়ে যাবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَطِيْعُوا اللهَ وَاَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَلَا تُبْطِلُوْاۤ اَعْمَالَكُمْ
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো এবং নিজেদের আমলকে নষ্ট করে দিয়ো না।
(সূরা মুহাম্মাদ- ৩৩)
তারা জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে :
وَمَنْ يَّعْصِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَيَتَعَدَّ حُدُوْدَهٗ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيْهَا۪ وَلَهٗ عَذَابٌ مُّهِيْنٌ
যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করবে এবং তাঁর সীমা লঙ্ঘন করবে তিনি তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন, সেখানে সে চিরকাল অবস্থান করবে। আর তার জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি। (সূরা নিসা- ১৪)
وَمَنْ يَّعْصِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ فَاِنَّ لَهٗ نَارَ جَهَنَّمَ خَالِدِيْنَ فِيْهَاۤ اَبَدًا
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। (সূরা জিন- ২৩)
তারা পরকালে আফসোস করবে :
يَوْمَئِذٍ يَّوَدُّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَعَصَوُا الرَّسُوْلَ لَوْ تُسَوّٰى بِهِمُ الْاَرْضُؕ وَلَا يَكْتُمُوْنَ اللهَ حَدِيْثًا
যারা কুফরী করেছে এবং রাসূলের অবাধ্য হয়েছে সেদিন তারা কামনা করবে, যদি তারা মাটির সঙ্গে মিশে যেত! আর তারা আল্লাহ হতে কোন কথাই গোপন করতে পারবে না। (সূরা নিসা- ৪২)
وَيَوْمَ يَعَضُّ الظَّالِمُ عَلٰى يَدَيْهِ يَقُوْلُ يَا لَيْتَنِى اتَّخَذْتُ مَعَ الرَّسُوْلِ سَبِيْلًا
সেদিন যালিম ব্যক্তি নিজ হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে, হায়! আমি যদি রাসূলের সাথে সৎপথ অবলম্বন করতাম! (সূরা ফুরক্বান- ২৭)
يَوْمَ تُقَلَّبُ وُجُوْهُهُمْ فِى النَّارِ يَقُوْلُوْنَ يَا لَيْتَنَاۤ اَطَعْنَا اللهَ وَاَطَعْنَا الرَّسُوْلَا
যেদিন তাদের চেহারা জাহান্নামে উলট-পালট হবে তখন তারা বলবে, হায় আফসুস! যদি আমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করতাম! (সূরা আহযাব- ৬৬)
اِنَّ الَّذِيْنَ يُحَآدُّوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ كُبِتُوْا كَمَا كُبِتَ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ
যারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে তাদেরকে লাঞ্ছিত করা হবে, যেমন লাঞ্ছিত করা হয়েছে তাদের পূর্ববর্তীদেরকে। (সূরা মুজাদালা- ৫)
اِنَّ الَّذِيْنَ يُحَآدُّوْنَ اللهَ وَ رَسُوْلَهٗۤ اُولٰٓئِكَ فِى الْاَذَلِّيْنَ
নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে তারা লাঞ্ছিতদের দলভুক্ত হবে। (সূরা মুজাদালা- ২০)
তাঁর সাথে বিদ্রোহকারীরা জাহান্নামে যাবে :
اَلَمْ يَعْلَمُوْاۤ اَنَّهٗ مَنْ يُّحَادِدِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ فَاَنَّ لَهٗ نَارَ جَهَنَّمَ خَالِدًا فِيْهَاؕ ذٰلِكَ الْخِزْيُ الْعَظِيْمُ
তারা কি জানে না যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে তার জন্য (প্রস্তুত) আছে জাহান্নামের অগ্নি, যেখানে সে চিরস্থায়ী হবে? আর সেটাই চরম লাঞ্ছনা। (সূরা তাওবা- ৬৩)
তাঁর কথা না মানা মুনাফিকদের কাজ :
وَاِذَا قِيْلَ لَهُمْ تَعَالَوْا اِلٰى مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ وَاِلَى الرَّسُوْلِ رَاَيْتَ الْمُنَافِقِيْنَ يَصُدُّوْنَ عَنْكَ صُدُوْدًا
যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার দিকে এবং রাসূলের দিকে আসো, তখন মুনাফিকদেরকে তুমি তোমার নিকট হতে একেবারে মুখ ফিরিয়ে নিতে দেখবে। (সূরা নিসা- ৬১)
যারা তাঁর কথা মানে না তারা আল্লাহর ভালোবাসা পাবে না :
قُلْ اَطِيْعُوا اللهَ وَالرَّسُوْلَۚ فَاِنْ تَوَلَّوْا فَاِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْكَافِرِيْنَ
বলো, তোমরা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো। তবে যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে মনে রেখো, আল্লাহ কাফিরদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা আলে ইমরান- ৩২)
তাদের উপর বিপর্যয় বা আযাব আসবে :
فَلْيَحْذَرِ الَّذِيْنَ يُخَالِفُوْنَ عَنْ اَمْرِهٖۤ اَنْ تُصِيْبَهُمْ فِتْنَةٌ ا َوْ يُصِيْبَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা সতর্ক হোক যে, তাদের উপর বিপর্যয় পতিত হবে অথবা তাদের উপর পতিত হবে মর্মান্তিক শাস্তি। (সূরা নূর- ৬৩)
তাদের আমল নষ্ট হয়ে যাবে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَطِيْعُوا اللهَ وَاَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَلَا تُبْطِلُوْاۤ اَعْمَالَكُمْ
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো এবং নিজেদের আমলকে নষ্ট করে দিয়ো না।
(সূরা মুহাম্মাদ- ৩৩)
তারা জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে :
وَمَنْ يَّعْصِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَيَتَعَدَّ حُدُوْدَهٗ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيْهَا۪ وَلَهٗ عَذَابٌ مُّهِيْنٌ
যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করবে এবং তাঁর সীমা লঙ্ঘন করবে তিনি তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন, সেখানে সে চিরকাল অবস্থান করবে। আর তার জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি। (সূরা নিসা- ১৪)
وَمَنْ يَّعْصِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ فَاِنَّ لَهٗ نَارَ جَهَنَّمَ خَالِدِيْنَ فِيْهَاۤ اَبَدًا
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। (সূরা জিন- ২৩)
তারা পরকালে আফসোস করবে :
يَوْمَئِذٍ يَّوَدُّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَعَصَوُا الرَّسُوْلَ لَوْ تُسَوّٰى بِهِمُ الْاَرْضُؕ وَلَا يَكْتُمُوْنَ اللهَ حَدِيْثًا
যারা কুফরী করেছে এবং রাসূলের অবাধ্য হয়েছে সেদিন তারা কামনা করবে, যদি তারা মাটির সঙ্গে মিশে যেত! আর তারা আল্লাহ হতে কোন কথাই গোপন করতে পারবে না। (সূরা নিসা- ৪২)
وَيَوْمَ يَعَضُّ الظَّالِمُ عَلٰى يَدَيْهِ يَقُوْلُ يَا لَيْتَنِى اتَّخَذْتُ مَعَ الرَّسُوْلِ سَبِيْلًا
সেদিন যালিম ব্যক্তি নিজ হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে, হায়! আমি যদি রাসূলের সাথে সৎপথ অবলম্বন করতাম! (সূরা ফুরক্বান- ২৭)
يَوْمَ تُقَلَّبُ وُجُوْهُهُمْ فِى النَّارِ يَقُوْلُوْنَ يَا لَيْتَنَاۤ اَطَعْنَا اللهَ وَاَطَعْنَا الرَّسُوْلَا
যেদিন তাদের চেহারা জাহান্নামে উলট-পালট হবে তখন তারা বলবে, হায় আফসুস! যদি আমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করতাম! (সূরা আহযাব- ৬৬)
তিনি রক্ত-মাংসের মানুষ ছিলেন :
قُلْ اِنَّمَاۤ اَنَاْ بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوْحٰۤى اِلَيَّ اَنَّمَاۤ اِلٰهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ
বলো, আমি তো তোমাদের মতোই একজন মানুষ। আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহ্ একমাত্র ইলাহ। (সূরা কাহফ- ১১০)
তিনি রাসূল ছাড়া অন্যকিছু ছিলেন না :
وَمَا مُحَمَّدٌ اِلَّا رَسُوْلٌؕ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُ
মুহাম্মাদ রাসূল ব্যতীত কিছুই নয়, নিশ্চয় তাঁর পূর্বে রাসূলগণ বিগত হয়ে গেছে। (সূরা আলে ইমরান- ১৪৪)
তাঁকেও মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে :
اِنَّكَ مَيِّتٌ وَّ اِنَّهُمْ مَّيِّتُوْنَ
নিশ্চয় আপনিও মৃত্যুবরণ করবেন এবং তারাও মৃত্যুবরণ করবে। (সূরা যুমার- ৩০)
তিনি আল্লাহর ইচ্ছাতেই ওহী পেয়েছেন :
قُلْ لَّوْ شَآءَ اللهُ مَا تَلَوْتُهٗ عَلَيْكُمْ وَلَاۤ اَدْرَاكُمْ بِهٖ فَقَدْ لَبِثْتُ فِيْكُمْ عُمُرًا مِّنْ قَبْلِهٖؕ اَفَلَا تَعْقِلُوْنَ
বলো, আল্লাহ যদি চাইতেন আমি তোমাদের নিকট এটা তিলাওয়াত করতাম না এবং তিনিও তোমাদেরকে এ বিষয়ে অবহিত করতেন না। আমি তো এটার পূর্বে তোমাদের মধ্যে জীবনের দীর্ঘকাল অবস্থান করেছি, তবুও কি তোমরা বুঝতে পার না? (সূরা ইউনুস- ১৬)
তিনি গায়েবের খবর জানতেন না :
وَلَوْ كُنْتُ اَعْلَمُ الْغَيْبَ لَاسْتَكْثَرْتُ مِنَ الْخَيْرِۚ وَمَا مَسَّنِيَ السُّوْٓءُۚ اِنْ اَنَاْ اِلَّا نَذِيْرٌ وَّبَشِيْرٌ لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ
(বলো) আমি যদি অদৃশ্যের খবর জানতাম তবে তো আমি প্রকৃতপক্ষে কল্যাণই লাভ করতাম এবং কোন অকল্যাণই আমাকে স্পর্শ করত না। আমি তো কেবল মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা। (সূরা আ‘রাফ- ১৮৮)
তিনি কোন ধনভান্ডারের মালিক ছিলেন না :
قُلْ لَّاۤ اَقُوْلُ لَكُمْ عِنْدِيْ خَزَآئِنُ اللهِ وَلَاۤ اَعْلَمُ الْغَيْبَ وَلَاۤ اَقُوْلُ لَكُمْ اِنِّيْ مَلَكٌۚ اِنْ اَتَّبِعُ اِلَّا مَا يُوْحٰۤى اِلَيَّ
বলো, আমি তোমাদেরকে এটা বলি না যে, আমার নিকট আল্লাহর ধনভান্ডার আছে। আর অদৃশ্য সম্বন্ধেও আমি কোনকিছু জানি না। আমি তোমাদেরকে এটাও বলি না যে, আমি ফেরেশতা; তবে আমার প্রতি যা ওহী করা হয় আমি কেবল তারই অনুসরণ করি। (সূরা আন‘আম- ৫০)
قُلْ اِنَّمَاۤ اَنَاْ بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوْحٰۤى اِلَيَّ اَنَّمَاۤ اِلٰهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ
বলো, আমি তো তোমাদের মতোই একজন মানুষ। আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহ্ একমাত্র ইলাহ। (সূরা কাহফ- ১১০)
তিনি রাসূল ছাড়া অন্যকিছু ছিলেন না :
وَمَا مُحَمَّدٌ اِلَّا رَسُوْلٌؕ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُ
মুহাম্মাদ রাসূল ব্যতীত কিছুই নয়, নিশ্চয় তাঁর পূর্বে রাসূলগণ বিগত হয়ে গেছে। (সূরা আলে ইমরান- ১৪৪)
তাঁকেও মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে :
اِنَّكَ مَيِّتٌ وَّ اِنَّهُمْ مَّيِّتُوْنَ
নিশ্চয় আপনিও মৃত্যুবরণ করবেন এবং তারাও মৃত্যুবরণ করবে। (সূরা যুমার- ৩০)
তিনি আল্লাহর ইচ্ছাতেই ওহী পেয়েছেন :
قُلْ لَّوْ شَآءَ اللهُ مَا تَلَوْتُهٗ عَلَيْكُمْ وَلَاۤ اَدْرَاكُمْ بِهٖ فَقَدْ لَبِثْتُ فِيْكُمْ عُمُرًا مِّنْ قَبْلِهٖؕ اَفَلَا تَعْقِلُوْنَ
বলো, আল্লাহ যদি চাইতেন আমি তোমাদের নিকট এটা তিলাওয়াত করতাম না এবং তিনিও তোমাদেরকে এ বিষয়ে অবহিত করতেন না। আমি তো এটার পূর্বে তোমাদের মধ্যে জীবনের দীর্ঘকাল অবস্থান করেছি, তবুও কি তোমরা বুঝতে পার না? (সূরা ইউনুস- ১৬)
তিনি গায়েবের খবর জানতেন না :
وَلَوْ كُنْتُ اَعْلَمُ الْغَيْبَ لَاسْتَكْثَرْتُ مِنَ الْخَيْرِۚ وَمَا مَسَّنِيَ السُّوْٓءُۚ اِنْ اَنَاْ اِلَّا نَذِيْرٌ وَّبَشِيْرٌ لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ
(বলো) আমি যদি অদৃশ্যের খবর জানতাম তবে তো আমি প্রকৃতপক্ষে কল্যাণই লাভ করতাম এবং কোন অকল্যাণই আমাকে স্পর্শ করত না। আমি তো কেবল মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা। (সূরা আ‘রাফ- ১৮৮)
তিনি কোন ধনভান্ডারের মালিক ছিলেন না :
قُلْ لَّاۤ اَقُوْلُ لَكُمْ عِنْدِيْ خَزَآئِنُ اللهِ وَلَاۤ اَعْلَمُ الْغَيْبَ وَلَاۤ اَقُوْلُ لَكُمْ اِنِّيْ مَلَكٌۚ اِنْ اَتَّبِعُ اِلَّا مَا يُوْحٰۤى اِلَيَّ
বলো, আমি তোমাদেরকে এটা বলি না যে, আমার নিকট আল্লাহর ধনভান্ডার আছে। আর অদৃশ্য সম্বন্ধেও আমি কোনকিছু জানি না। আমি তোমাদেরকে এটাও বলি না যে, আমি ফেরেশতা; তবে আমার প্রতি যা ওহী করা হয় আমি কেবল তারই অনুসরণ করি। (সূরা আন‘আম- ৫০)
যালিমদের ব্যাপারে তার কিছু করার অধিকার ছিল না :
لَيْسَ لَكَ مِنَ الْاَمْرِ شَيْءٌ اَوْ يَتُوْبَ عَلَيْهِمْ اَوْ يُعَذِّبَهُمْ فَاِنَّهُمْ ظَالِمُوْنَ
এ কাজে তোমার এ ধরনের কোন কর্তৃত্ব নেই যে, তিনি তাদেরকে ক্ষমা করেন অথবা শাস্তি প্রদান করেন, উপরমুত নিশ্চয় তারা অত্যাচারী। (সূরা আলে ইমরান- ১২৮)
কারো লাভ-লোকসান করার ক্ষমতা তাঁর নেই :
قُلْ اِنِّيْ لَاۤ اَمْلِكُ لَكُمْ ضَرًّا وَّلَا رَشَدًا
বলো, আমি তোমাদের অনিষ্টের ও পথপ্রদর্শনের ক্ষমতা রাখি না। (সূরা জিন- ২১)
নিজের লাভ-ক্ষতির মালিকও তিনি নন :
قُلْ لَّاۤ اَمْلِكُ لِنَفْسِيْ نَفْعًا وَّلَا ضَرًّا اِلَّا مَا شَآءَ اللهُ
বলো, আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত আমার নিজের ভালো-মন্দের উপরও আমার কোন অধিকার নেই। (সূরা আ‘রাফ- ১৮৮)
শিরক করলে তাঁর আমলও বরবাদ হয়ে যেত :
وَلَقَدْ اُوْحِيَ اِلَيْكَ وَاِلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكَۚ لَئِنْ اَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُوْنَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
নিশ্চয় তোমার প্রতি ও তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি ওহী করা হয়েছে যে, যদি তুমি আল্লাহর শরীক স্থির কর তবে নিঃসন্দেহে তোমার আমল ধ্বংস হয়ে যাবে এবং অবশ্যই তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
(সূরা যুমার- ৬৫)
তিনি হেদায়াতের মালিক নন :
اِنَّكَ لَا تَهْدِيْ مَنْ اَحْبَبْتَ وَلٰكِنَّ اللهَ يَهْدِيْ مَنْ يَّشَآءُۚ وَهُوَ اَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِيْنَ
তুমি যাকে ভালোবাস, ইচ্ছা করলেই তাকে সৎপথে আনতে পারবে না। তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সৎপথে আনয়ন করেন। আর সৎপথ অনুসারীদের সম্পর্কে তিনিই ভালো জানেন। (সূরা ক্বাসাস- ৫৬)
ব্যাখ্যা : কুরাইশরা রাসূল ﷺ এর আত্মীয় এবং ইয়াহুদি ও নাসারারা অনাত্মীয় ছিল। ফলে যখন রাসূল ﷺ অনাত্মীয় ইয়াহুদি ও নাসারাদের ঈমান আনতে দেখলেন, তখন স্বগোত্রীয়দের অবিশ্বাস ও বিরুদ্ধাচরণের জন্য মনে মনে খুবই দুঃখ পেলেন। বিশেষত চাচা আবু তালিবও তা কার্যকর না করায় তিনি আরো দুঃখ পেলেন। তাই অত্র আয়াত নাযিল করে আল্লাহ তা‘আলা তাকে সান্ত্বনা প্রদান করেন। সহীহ বুখারী ও মুসলিমের বর্ণনানুসারে এ আয়াতটি নবী ﷺ এর চাচা আবু তালেবের প্রসঙ্গে নাযিল হয়। তার শেষ সময় উপস্থিত হলে নবী ﷺ নিজের সামর্থ্যানুযায়ী কালিমা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’- এর প্রতি ঈমান আনার জন্য চূড়ান্ত চেষ্টা চালান। তিনি চাচ্ছিলেন, তাঁর চাচা ঈমানের মধ্য দিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করুক। কিন্তু চাচা তা গ্রহণ না করে আবদুল মুত্তালিবের অনুসৃত ধর্মে অবস্থান করে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করাকে অগ্রাধিকার দেন।
তিনি বধিরকে শুনাতে পারেন না :
اِنَّكَ لَا تُسْمِعُ الْمَوْتٰى وَلَا تُسْمِعُ الصُّمَّ الدُّعَآءَ اِذَا وَلَّوْا مُدْبِرِيْنَ
তুমি তো মৃতকে কথা শুনাতে পারবে না, বধিরকেও কোন আহবান শুনাতে পারবে না যখন তারা পিঠ ফিরিয়ে চলে যায়। (সূরা নামল- ৮০)
وَمِنْهُمْ مَّنْ يَّسْتَمِعُوْنَ اِلَيْكَؕ اَفَاَنْتَ تُسْمِعُ الصُّمَّ وَلَوْ كَانُوْا لَا يَعْقِلُوْنَ
তাদের মধ্যে কেউ কেউ তোমার দিকে কান পেতে রাখে। তুমি কি বধিরকে শুনাবে, তারা না বুঝলেও? (সূরা ইউনুস- ৪২)
তিনি অন্ধকে পথ দেখাতে পারেন না :
وَمِنْهُمْ مَّنْ يَّنْظُرُ اِلَيْكَؕ اَفَاَنْتَ تَهْدِى الْعُمْيَ وَلَوْ كَانُوْا لَا يُبْصِرُوْنَ
তাদের মধ্যে কেউ কেউ তোমার দিকে তাকিয়ে থাকে। তুমি কি অন্ধকে পথ দেখাবে, তারা না দেখলেও? (সূরা ইউনুস- ৪৩)
ব্যাখ্যা : এখানে এমনসব লোককে মৃত বলা হয়েছে, যাদের বিবেক মরে গেছে, যাদের মধ্যে নৈতিক চেতনা লুপ্ত হয়ে গেছে এবং প্রবৃত্তির দাসত্ব ও একগুঁয়েমি যাদের মানবীয় গুণাবলির অবসান ঘটিয়ে ফেলেছে। বধির হচ্ছে এমনসব লোক, যারা নিজেদের মনের দুয়ার এমনভাবে আবদ্ধ করেছে যে, তারা সবকিছু শুনেও কিছুই শুনে না। তারপর এ ধরনের লোকেরা এমন প্রচেষ্টা চালায়, যাতে সত্যের আহবানের ধ্বনি তাদের কানে পৌঁছতে না পারে এবং আহবানকারীর চেহারা দেখতেই দূরে সরে যেতে থাকে। তখন আর কে তাদেরকে শুনাবে এবং কী-ই বা শুনাবে? তাদেরকে অন্ধদের মতো হাত ধরে সারা জীবন সঠিক পথে চালানো তো নবীর কাজ নয়। তিনি তো কেবল সঠিক পথ দেখিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু যাদের দেখার চোখ অন্ধ হয়ে গেছে, তাদেরকে সঠিক পথ দেখানো নবীর ক্ষমতার বাইরে।
তিনি বল প্রয়োগকারী নন :
نَحْنُ اَعْلَمُ بِمَا يَقُوْلُوْنَ وَمَاۤ اَنْتَ عَلَيْهِمْ بِجَبَّارٍ فَذَكِّرْ بِالْقُرْاٰنِ مَنْ يَّخَافُ وَعِيْدِ
তারা যা বলে তা আমি জানি, তুমি তাদের উপর জবরদস্তকারী নও। সুতরাং যে শাস্তিকে ভয় করে তাকে কুরআনের সাহায্যে উপদেশ দান করো। (সূরা ক্বাফ- ৪৫)
لَسْتَ عَلَيْهِمْ بِمُصَيْطِرٍ
তুমি তাদের জিম্মাদার নও। (সূরা গাশিয়া- ২২)
فَاِنْ اَعْرَضُوْا فَمَاۤ اَرْسَلْنَاكَ عَلَيْهِمْ حَفِيْظًاؕ اِنْ عَلَيْكَ اِلَّا الْبَلَاغُ
তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তোমাকে তো আমি তাদের রক্ষক হিসেবে পাঠাইনি। তোমার দায়িত্ব শুধু প্রচার করে যাওয়া। (সূরা শূরা- ৪৮)
لَيْسَ لَكَ مِنَ الْاَمْرِ شَيْءٌ اَوْ يَتُوْبَ عَلَيْهِمْ اَوْ يُعَذِّبَهُمْ فَاِنَّهُمْ ظَالِمُوْنَ
এ কাজে তোমার এ ধরনের কোন কর্তৃত্ব নেই যে, তিনি তাদেরকে ক্ষমা করেন অথবা শাস্তি প্রদান করেন, উপরমুত নিশ্চয় তারা অত্যাচারী। (সূরা আলে ইমরান- ১২৮)
কারো লাভ-লোকসান করার ক্ষমতা তাঁর নেই :
قُلْ اِنِّيْ لَاۤ اَمْلِكُ لَكُمْ ضَرًّا وَّلَا رَشَدًا
বলো, আমি তোমাদের অনিষ্টের ও পথপ্রদর্শনের ক্ষমতা রাখি না। (সূরা জিন- ২১)
নিজের লাভ-ক্ষতির মালিকও তিনি নন :
قُلْ لَّاۤ اَمْلِكُ لِنَفْسِيْ نَفْعًا وَّلَا ضَرًّا اِلَّا مَا شَآءَ اللهُ
বলো, আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত আমার নিজের ভালো-মন্দের উপরও আমার কোন অধিকার নেই। (সূরা আ‘রাফ- ১৮৮)
শিরক করলে তাঁর আমলও বরবাদ হয়ে যেত :
وَلَقَدْ اُوْحِيَ اِلَيْكَ وَاِلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكَۚ لَئِنْ اَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُوْنَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
নিশ্চয় তোমার প্রতি ও তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি ওহী করা হয়েছে যে, যদি তুমি আল্লাহর শরীক স্থির কর তবে নিঃসন্দেহে তোমার আমল ধ্বংস হয়ে যাবে এবং অবশ্যই তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
(সূরা যুমার- ৬৫)
তিনি হেদায়াতের মালিক নন :
اِنَّكَ لَا تَهْدِيْ مَنْ اَحْبَبْتَ وَلٰكِنَّ اللهَ يَهْدِيْ مَنْ يَّشَآءُۚ وَهُوَ اَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِيْنَ
তুমি যাকে ভালোবাস, ইচ্ছা করলেই তাকে সৎপথে আনতে পারবে না। তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সৎপথে আনয়ন করেন। আর সৎপথ অনুসারীদের সম্পর্কে তিনিই ভালো জানেন। (সূরা ক্বাসাস- ৫৬)
ব্যাখ্যা : কুরাইশরা রাসূল ﷺ এর আত্মীয় এবং ইয়াহুদি ও নাসারারা অনাত্মীয় ছিল। ফলে যখন রাসূল ﷺ অনাত্মীয় ইয়াহুদি ও নাসারাদের ঈমান আনতে দেখলেন, তখন স্বগোত্রীয়দের অবিশ্বাস ও বিরুদ্ধাচরণের জন্য মনে মনে খুবই দুঃখ পেলেন। বিশেষত চাচা আবু তালিবও তা কার্যকর না করায় তিনি আরো দুঃখ পেলেন। তাই অত্র আয়াত নাযিল করে আল্লাহ তা‘আলা তাকে সান্ত্বনা প্রদান করেন। সহীহ বুখারী ও মুসলিমের বর্ণনানুসারে এ আয়াতটি নবী ﷺ এর চাচা আবু তালেবের প্রসঙ্গে নাযিল হয়। তার শেষ সময় উপস্থিত হলে নবী ﷺ নিজের সামর্থ্যানুযায়ী কালিমা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’- এর প্রতি ঈমান আনার জন্য চূড়ান্ত চেষ্টা চালান। তিনি চাচ্ছিলেন, তাঁর চাচা ঈমানের মধ্য দিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করুক। কিন্তু চাচা তা গ্রহণ না করে আবদুল মুত্তালিবের অনুসৃত ধর্মে অবস্থান করে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করাকে অগ্রাধিকার দেন।
তিনি বধিরকে শুনাতে পারেন না :
اِنَّكَ لَا تُسْمِعُ الْمَوْتٰى وَلَا تُسْمِعُ الصُّمَّ الدُّعَآءَ اِذَا وَلَّوْا مُدْبِرِيْنَ
তুমি তো মৃতকে কথা শুনাতে পারবে না, বধিরকেও কোন আহবান শুনাতে পারবে না যখন তারা পিঠ ফিরিয়ে চলে যায়। (সূরা নামল- ৮০)
وَمِنْهُمْ مَّنْ يَّسْتَمِعُوْنَ اِلَيْكَؕ اَفَاَنْتَ تُسْمِعُ الصُّمَّ وَلَوْ كَانُوْا لَا يَعْقِلُوْنَ
তাদের মধ্যে কেউ কেউ তোমার দিকে কান পেতে রাখে। তুমি কি বধিরকে শুনাবে, তারা না বুঝলেও? (সূরা ইউনুস- ৪২)
তিনি অন্ধকে পথ দেখাতে পারেন না :
وَمِنْهُمْ مَّنْ يَّنْظُرُ اِلَيْكَؕ اَفَاَنْتَ تَهْدِى الْعُمْيَ وَلَوْ كَانُوْا لَا يُبْصِرُوْنَ
তাদের মধ্যে কেউ কেউ তোমার দিকে তাকিয়ে থাকে। তুমি কি অন্ধকে পথ দেখাবে, তারা না দেখলেও? (সূরা ইউনুস- ৪৩)
ব্যাখ্যা : এখানে এমনসব লোককে মৃত বলা হয়েছে, যাদের বিবেক মরে গেছে, যাদের মধ্যে নৈতিক চেতনা লুপ্ত হয়ে গেছে এবং প্রবৃত্তির দাসত্ব ও একগুঁয়েমি যাদের মানবীয় গুণাবলির অবসান ঘটিয়ে ফেলেছে। বধির হচ্ছে এমনসব লোক, যারা নিজেদের মনের দুয়ার এমনভাবে আবদ্ধ করেছে যে, তারা সবকিছু শুনেও কিছুই শুনে না। তারপর এ ধরনের লোকেরা এমন প্রচেষ্টা চালায়, যাতে সত্যের আহবানের ধ্বনি তাদের কানে পৌঁছতে না পারে এবং আহবানকারীর চেহারা দেখতেই দূরে সরে যেতে থাকে। তখন আর কে তাদেরকে শুনাবে এবং কী-ই বা শুনাবে? তাদেরকে অন্ধদের মতো হাত ধরে সারা জীবন সঠিক পথে চালানো তো নবীর কাজ নয়। তিনি তো কেবল সঠিক পথ দেখিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু যাদের দেখার চোখ অন্ধ হয়ে গেছে, তাদেরকে সঠিক পথ দেখানো নবীর ক্ষমতার বাইরে।
তিনি বল প্রয়োগকারী নন :
نَحْنُ اَعْلَمُ بِمَا يَقُوْلُوْنَ وَمَاۤ اَنْتَ عَلَيْهِمْ بِجَبَّارٍ فَذَكِّرْ بِالْقُرْاٰنِ مَنْ يَّخَافُ وَعِيْدِ
তারা যা বলে তা আমি জানি, তুমি তাদের উপর জবরদস্তকারী নও। সুতরাং যে শাস্তিকে ভয় করে তাকে কুরআনের সাহায্যে উপদেশ দান করো। (সূরা ক্বাফ- ৪৫)
لَسْتَ عَلَيْهِمْ بِمُصَيْطِرٍ
তুমি তাদের জিম্মাদার নও। (সূরা গাশিয়া- ২২)
فَاِنْ اَعْرَضُوْا فَمَاۤ اَرْسَلْنَاكَ عَلَيْهِمْ حَفِيْظًاؕ اِنْ عَلَيْكَ اِلَّا الْبَلَاغُ
তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তোমাকে তো আমি তাদের রক্ষক হিসেবে পাঠাইনি। তোমার দায়িত্ব শুধু প্রচার করে যাওয়া। (সূরা শূরা- ৪৮)
নবুওয়াতের দায়িত্ব পাওয়ার পর নবী ﷺ যখন দ্বীনের প্রচার কাজ শুরু করলেন তখন অনেক বাধা ও কষ্টের সম্মুখীন হন। এমতাবস্থায় আল্লাহ তা‘আলা নবীর প্রতি তাঁর কিছু অনুগ্রহের বর্ণনা দিয়ে কতিপয় উপদেশ প্রদান করেন। সূরা ইন্শিরাহ, সূরা যোহা, সূরা মুয্যাম্মিল ও সূরা মুদ্দাসসির এর মধ্যে এ আলোচনা এসেছে।
সূরা ইনশিরাহ :
اَلَمْ نَشْرَحْ لَكَ صَدْرَكَ
আমি কি আপনার বক্ষ উন্মুক্ত করে দেইনি? (সূরা ইন্শিরাহ- ১)
وَوَضَعْنَا عَنْكَ وِزْرَكَ – اَلَّذِيْ اَنْقَضَ ظَهْرَكَ
আমি আপনার বোঝা লাঘব করেছি, যা ছিল আপনার জন্য অতিশয় দুঃসহ। (সূরা ইনশিরাহ- ২, ৩)।
ব্যাখ্যা : মানবসমাজের শান্তি ও কল্যাণের পথ না পেয়ে আপনি অনেক বছর যেরকম পেরেশান অবস্থায় কাটিয়েছেন সে পথ যখন পেয়ে গেছেন, তখন চিন্তার কোন কারণ নেই। সমাজকে সংশোধন করতে গেলে যাদের স্বার্থে আঘাত লাগে তারা বাধা দেবেই। আপনি এসব বাধার কারণে মন খারাপ করবেন না।
وَرَفَعْنَا لَكَ ذِكْرَكَ
আমি আপনার আলোচনাকে সুউচ্চ করেছি। (সূরা ইনশিরাহ- ৪)
ব্যাখ্যা : আমি আপনার সুনাম বৃদ্ধি করা এবং মানুষের মধ্যে আপনার মর্যাদা বাড়ানোর ব্যবস্থা করেছি। যারা আপনার উপর ঈমান আনবে তারাই আপনার নাম উঁচু করবে।
فَاِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا – اِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا
নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে, নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে। (সূরা ইনশিরাহ- ৫, ৬)
ব্যাখ্যা : দুঃখের পর পরই সুখ আসে। দুনিয়ায় কোন সুখই দুঃখ ছাড়া লাভ করা যায় না। আপনি যে বিরাট কাজে হাত দিয়েছেন, তার উপর মানবজাতির দুনিয়া ও আখিরাতের শান্তি নির্ভর করে। এত বড় সফলতা বিনা বাধা ও বিনা কষ্টে সম্ভব নয়।
فَاِذَا فَرَغْتَ فَانْصَبْ – وَاِلٰى رَبِّكَ فَارْغَبْ
অতএব যখন অবসর পান পরিশ্রম করুন এবং আপনার পালনকর্তার প্রতি মনোনিবেশ করুন। (সূরা ইনশিরাহ- ৭, ৮)
ব্যাখ্যা : কঠিন অবস্থার মধ্যে মনকে মজবুত করার জন্য দায়িত্ব পালনের ফাঁকে ফাঁকে যখনই একটু অবসর পান, তখনই আমার যিকির করুন। এতে আপনি মনে শক্তি পাবেন।
সূরা যোহা :
وَالضُّحٰى – وَاللَّيْلِ اِذَا سَجىٰ – مَا وَدَّعَكَ رَبُّكَ وَمَا قَلٰى
শপথ পূর্বাহ্নের, শপথ রাত্রির যখন তা গভীর হয়, আপনার পালনকর্তা আপনাকে ত্যাগ করেননি এবং আপনার প্রতি বিরূপও হননি। (সূরা যোহা, ১-৩)
ব্যাখ্যা : প্রথম দিকে ঘন ঘন ওহী নাযিল হতো না, বেশ কিছু দিন ওহী বন্ধ থাকায় নবী ﷺ চিন্তিত হয়ে পড়েন। এমতাবস্থায় আল্লাহ তা‘আলা দিনের আলো ও রাতের নিরবতার কসম খেয়ে বলেছেন, আপনার রব আপনাকে ত্যাগ করেননি এবং আপনার প্রতি নারাজও হননি।
وَلَلْاٰخِرَةُ خَيْرٌ لَّكَ مِنَ الْاُوْلٰى – وَلَسَوْفَ يُعْطِيْكَ رَبُّكَ فَتَرْضٰى
আপনার জন্য পরকাল ইহকালের চেয়ে উত্তম। আপনার পালনকর্তা অতি শীঘ্রই আপনাকে দান করবেন, এতে আপনি খুশি হয়ে যাবেন। (সূরা যোহা- ৪, ৫)
ব্যাখ্যা : এখানে রাসূল ﷺ কে বড় সুসংবাদ দিয়ে বলা হয়েছে, প্রথম অবস্থায় আপনাকে যেসব বাধা ও অসুবিধায় পড়তে হয়েছে এ অবস্থা বেশি দিন থাকবে না। আপনার রব শীঘ্রই আপনাকে এত কিছু দেবেন, যার ফলে আপনি খুশি হয়ে যাবেন। মক্কা থেকে মদিনায় পৌঁছার পর থেকেই এ ভবিষ্যদ্বাণী সত্যে পরিণত হতে শুরু হয়। মক্কা বিজয়ের পর গোটা আরবে ইসলামের মহাবিজয়ের মাধ্যমে এ সুসংবাদ পূর্ণতা লাভ করে।
اَلَمْ يَجِدْكَ يَتِيْمًا فَاٰوٰى – وَوَجَدَكَ ضَآلًّا فَهَدٰى – وَوَجَدَكَ عَآئِلًا فَاَغْنٰى – فَاَمَّا الْيَتِيْمَ فَلَا تَقْهَرْ – وَاَمَّا السَّآئِلَ فَلَا تَنْهَرْ – وَاَمَّا بِنِعْمَةِ رَبِّكَ فَحَدِّثْ
তিনি কি আপনাকে ইয়াতীমরূপে পাননি? অতঃপর তিনি আশ্রয় দিয়েছেন। তিনি আপনাকে পেয়েছেন পথহারা অবস্থায়, অতঃপর তিনি আপনাকে পথপ্রদর্শন করেছেন। তিনি আপনাকে পেয়েছেন নিঃস্ব অবস্থায়, অতঃপর তিনি আপনাকে অভাবমুক্ত করেছেন। সুতরাং আপনি ইয়াতীমের প্রতি কঠোর হবেন না, সওয়ালকারীকে ধমক দেবেন না এবং আপনার পালনকর্তার নিয়ামতের কথা প্রকাশ করুন। (সূরা যোহা, ৬-১১)
ব্যাখ্যা : আপনার প্রভু আপনার জন্ম থেকেই আপনার প্রতি অবিরাম ধারায় অনুগ্রহ বর্ষণ করে এসেছেন। আপনি জন্মলগ্ন থেকেই ইয়াতীম ছিলেন; তিনিই আপনাকে লালন-পালনের ব্যবস্থা করেছেন। আপনি তাঁর পছন্দনীয় পথ চিনতেন না; তিনিই আপনাকে সে পথ দেখিয়েছেন। আপনি গরীব ছিলেন; তিনিই আপনাকে ধনী বানিয়েছেন। তাই আপনার উপর তিনি যত নিয়ামত দিয়েছেন, তার বদলে আপনিও অন্যের উপর মেহেরবানী করুন। ইয়াতীমদেরকে দয়া করুন, গরীবদেরকে সাহায্য করুন এবং আল্লাহ আপনাকে যে নিয়ামত প্রদান করেছেন তার জন্য শুকরিয়া আদায় করুন।
সূরা মুয্যাম্মিল :
يَاۤ اَيُّهَا الْمُزَّمِّلُ – قُمِ اللَّيْلَ اِلَّا قَلِيْلًا – نِصْفَهٗۤ اَوِ انْقُصْ مِنْهُ قَلِيْلًا – اَوْ زِدْ عَلَيْهِ وَرَتِّلِ الْقُرْاٰنَ تَرْتِيْلًا – اِنَّا سَنُلْقِيْ عَلَيْكَ قَوْلًا ثَقِيْلًا – اِنَّ نَاشِئَةَ اللَّيْلِ هِيَ اَشَدُّ وَطْئًا وَّاَقْوَمُ قِيْلًا – اِنَّ لَكَ فِى النَّهَارِ سَبْحًا طَوِيْلًا – وَاذْكُرِ اسْمَ رَبِّكَ وَتَبَتَّلْ اِلَيْهِ تَبْتِيْلًا
হে বস্ত্রাবৃত! রাত্রি জাগরণ করো। রাতের কিছু অংশ অথবা অর্ধেক কিংবা তার চেয়ে কিছু কম অথবা কিছু বেশি। আর কুরআন পাঠ করো ধীরে ধীরে (থেমে থেমে সুন্দরভাবে)। অচিরেই আমি তোমার প্রতি অবতীর্ণ করব ভারী বাণী। নিশ্চয় রাত্রিজাগরণ প্রবৃত্তি দমনে অধিক সহায়ক এবং উত্তম বাক্য প্রয়োগে অধিক অনুকূল। আর দিনে তোমার জন্য রয়েছে দীর্ঘ কর্মব্যস্ততা। সুতরাং (রাতে) তুমি তোমার প্রতিপালকের নাম স্মরণ করো এবং (অন্যান্য ব্যস্ততা ছিন্ন করে) একনিষ্ঠভাবে তাতে (ইবাদাতে) মগ্ন হও। (সূরা মুয্যাম্মিল, ১-৮)
ব্যাখ্যা : উপরোক্ত আয়াতগুলোতে নবী ﷺ কে উপদেশ দিয়ে বলা হয়েছে যে, নবুওয়াতের যে বিরাট দায়িত্ব তোমার উপর দেয়া হয়েছে, তা পালন করার জন্য আধ্যাত্মিক শক্তির দরকার। আর তা অর্জিত হবে আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে। আর আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের একটি বড় উপায় হচ্ছে রাত্রের একটি অংশে তাহাজ্জুদের নামায আদায় করা এবং নামাযের মধ্যে মনোনিবেশ সহকারে কুরআন তিলাওয়াত করা।
رَبُّ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ فَاتَّخِذْهُ وَكِيْلًا – وَاصْبِرْ عَلٰى مَا يَقُوْلُوْنَ وَاهْجُرْهُمْ هَجْرًا جَمِيْلًا – وَذَرْنِيْ وَالْمُكَذِّبِيْنَ اُولِى النَّعْمَةِ وَمَهِّلْهُمْ قَلِيْلًا – اِنَّ لَدَيْنَاۤ اَنْكَالًا وَّجَحِيْمًا
তিনি পূর্ব ও পশ্চিমের প্রভু, তিনি ব্যতীত কোন (সত্য) মা‘বুদ নেই। অতএব তোমরা তাঁকেই কর্মবিধায়ক হিসেবে গ্রহণ করো। লোকেরা যা বলে, তাতে তুমি ধৈর্যধারণ করো এবং তাদেরকে উত্তম পন্থায় পরিহার করে চলো। আর আমাকে এবং প্রাচুর্য্যবান মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদেরকে ছেড়ে দাও এবং তাদেরকে কিছুকালের জন্য অবকাশ দাও। আমার নিকট আছে শক্ত বেড়ি ও জ্বলন্ত আগুন। (সূরা মুয্যাম্মিল, ৯-১২)
ব্যাখ্যা : বিরোধীদের কষ্টদায়ক আচরণে রাসূল ﷺ কে সবরের উপদেশ দিয়ে বলা হয়েছে, এরা আপনার সম্পর্কে যা কিছু বলছে তাতে বিচলিত হবেন না। তাদেরকে অত্যন্ত ভদ্রভাবে এড়িয়ে চলুন। তাদের কথায় মনে কষ্ট পাবেন না। তাদেরকে এ অবস্থায় অল্প কিছুদিন ছেড়ে দিন, তাদের শাস্তির পুরোপুরি ব্যবস্থা আমি করে রেখেছি।
সূরা মুদ্দাসসির :
يَاۤ اَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ – قُمْ فَاَنْذِرْ – وَرَبَّكَ فَكَبِّرْ – وَثِيَابَكَ فَطَهِّرْ – وَالرُّجْزَ فَاهْجُرْ – وَلَا تَمْنُنْ تَسْتَكْثِرُ – وَلِرَبِّكَ فَاصْبِرْ
হে কম্বলাচ্ছাদিত! ওঠো, অতঃপর ভীতি প্রদর্শন করো এবং তোমার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করো। তোমার পোশাক পবিত্র রাখো, অপবিত্রতা হতে দূরে থাকো এবং অধিক লাভের আশায় দান (ইহসান) করো না। আর তোমার প্রতিপালকের (সন্তুষ্টি লাভের) উদ্দেশ্যে ধৈর্যধারণ করো। (সূরা মুদ্দাসসির, ১-৭)
ব্যাখ্যা : নবুওয়াতের প্রাথমিক দায়িত্ব ও কর্মনীতি হিসেবে এখানে ছয়টি উপদেশ উল্লেখ করা হয়েছে :
১. আপনার এখন আর বসে থাকার সময় নেই। সুতরাং উঠুন এবং মানুষকে ভীতি প্রদর্শন করুন।
২. আপনার রব সবচেয়ে বড়, একথা প্রচার করুন। সবাই যেন আল্লাহকেই সবচেয়ে বড় বলে মেনে নেয়, সে দাওয়াতই দিন।
৩. আপনি এমন পোশাক পরিধান করুন, যা ভদ্র, শালীন ও পাক-পবিত্র।
৪. আপনার আচার-ব্যবহারের বাইরের দিকটা যেমন সুন্দর থাকা উচিত, তেমনি আপনার ভেতরটাও সবরকম অপবিত্রতা থেকে দূরে রাখুন।
৫. আপনি মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকার বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে কোন প্রতিদান আশা করবেন না।
৬. বিরোধীরা হাজারো ষড়যন্ত্র করে আপনার কাজে বাধা দিতে থাকবে। আপনাকে চরম ধৈর্যের সাথে তার মুকাবিলা করতে হবে।
আল্লাহর রাসূলকে ইকামাতে দ্বীনের দায়িত্ব দেয়ার সময় এ সাতটি কর্মনীতিসহ উপরোক্ত যেসব কর্মনীতি শিক্ষা দেয়া হয়েছে তা ইসলামী আন্দোলনের প্রত্যেক কর্মীর জন্যই বিশেষভাবে জরুরি। এ কর্মনীতি পালন না করে যারা এ কাজ করতে চেষ্টা করবে, তাদের দ্বারা ইসলামী আন্দোলনের উপকার হবে না। এ কর্মনীতি যারা মানতে পারবে না, তারা একসময় এ পথ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হবে।
সূরা ইনশিরাহ :
اَلَمْ نَشْرَحْ لَكَ صَدْرَكَ
আমি কি আপনার বক্ষ উন্মুক্ত করে দেইনি? (সূরা ইন্শিরাহ- ১)
وَوَضَعْنَا عَنْكَ وِزْرَكَ – اَلَّذِيْ اَنْقَضَ ظَهْرَكَ
আমি আপনার বোঝা লাঘব করেছি, যা ছিল আপনার জন্য অতিশয় দুঃসহ। (সূরা ইনশিরাহ- ২, ৩)।
ব্যাখ্যা : মানবসমাজের শান্তি ও কল্যাণের পথ না পেয়ে আপনি অনেক বছর যেরকম পেরেশান অবস্থায় কাটিয়েছেন সে পথ যখন পেয়ে গেছেন, তখন চিন্তার কোন কারণ নেই। সমাজকে সংশোধন করতে গেলে যাদের স্বার্থে আঘাত লাগে তারা বাধা দেবেই। আপনি এসব বাধার কারণে মন খারাপ করবেন না।
وَرَفَعْنَا لَكَ ذِكْرَكَ
আমি আপনার আলোচনাকে সুউচ্চ করেছি। (সূরা ইনশিরাহ- ৪)
ব্যাখ্যা : আমি আপনার সুনাম বৃদ্ধি করা এবং মানুষের মধ্যে আপনার মর্যাদা বাড়ানোর ব্যবস্থা করেছি। যারা আপনার উপর ঈমান আনবে তারাই আপনার নাম উঁচু করবে।
فَاِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا – اِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا
নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে, নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে। (সূরা ইনশিরাহ- ৫, ৬)
ব্যাখ্যা : দুঃখের পর পরই সুখ আসে। দুনিয়ায় কোন সুখই দুঃখ ছাড়া লাভ করা যায় না। আপনি যে বিরাট কাজে হাত দিয়েছেন, তার উপর মানবজাতির দুনিয়া ও আখিরাতের শান্তি নির্ভর করে। এত বড় সফলতা বিনা বাধা ও বিনা কষ্টে সম্ভব নয়।
فَاِذَا فَرَغْتَ فَانْصَبْ – وَاِلٰى رَبِّكَ فَارْغَبْ
অতএব যখন অবসর পান পরিশ্রম করুন এবং আপনার পালনকর্তার প্রতি মনোনিবেশ করুন। (সূরা ইনশিরাহ- ৭, ৮)
ব্যাখ্যা : কঠিন অবস্থার মধ্যে মনকে মজবুত করার জন্য দায়িত্ব পালনের ফাঁকে ফাঁকে যখনই একটু অবসর পান, তখনই আমার যিকির করুন। এতে আপনি মনে শক্তি পাবেন।
সূরা যোহা :
وَالضُّحٰى – وَاللَّيْلِ اِذَا سَجىٰ – مَا وَدَّعَكَ رَبُّكَ وَمَا قَلٰى
শপথ পূর্বাহ্নের, শপথ রাত্রির যখন তা গভীর হয়, আপনার পালনকর্তা আপনাকে ত্যাগ করেননি এবং আপনার প্রতি বিরূপও হননি। (সূরা যোহা, ১-৩)
ব্যাখ্যা : প্রথম দিকে ঘন ঘন ওহী নাযিল হতো না, বেশ কিছু দিন ওহী বন্ধ থাকায় নবী ﷺ চিন্তিত হয়ে পড়েন। এমতাবস্থায় আল্লাহ তা‘আলা দিনের আলো ও রাতের নিরবতার কসম খেয়ে বলেছেন, আপনার রব আপনাকে ত্যাগ করেননি এবং আপনার প্রতি নারাজও হননি।
وَلَلْاٰخِرَةُ خَيْرٌ لَّكَ مِنَ الْاُوْلٰى – وَلَسَوْفَ يُعْطِيْكَ رَبُّكَ فَتَرْضٰى
আপনার জন্য পরকাল ইহকালের চেয়ে উত্তম। আপনার পালনকর্তা অতি শীঘ্রই আপনাকে দান করবেন, এতে আপনি খুশি হয়ে যাবেন। (সূরা যোহা- ৪, ৫)
ব্যাখ্যা : এখানে রাসূল ﷺ কে বড় সুসংবাদ দিয়ে বলা হয়েছে, প্রথম অবস্থায় আপনাকে যেসব বাধা ও অসুবিধায় পড়তে হয়েছে এ অবস্থা বেশি দিন থাকবে না। আপনার রব শীঘ্রই আপনাকে এত কিছু দেবেন, যার ফলে আপনি খুশি হয়ে যাবেন। মক্কা থেকে মদিনায় পৌঁছার পর থেকেই এ ভবিষ্যদ্বাণী সত্যে পরিণত হতে শুরু হয়। মক্কা বিজয়ের পর গোটা আরবে ইসলামের মহাবিজয়ের মাধ্যমে এ সুসংবাদ পূর্ণতা লাভ করে।
اَلَمْ يَجِدْكَ يَتِيْمًا فَاٰوٰى – وَوَجَدَكَ ضَآلًّا فَهَدٰى – وَوَجَدَكَ عَآئِلًا فَاَغْنٰى – فَاَمَّا الْيَتِيْمَ فَلَا تَقْهَرْ – وَاَمَّا السَّآئِلَ فَلَا تَنْهَرْ – وَاَمَّا بِنِعْمَةِ رَبِّكَ فَحَدِّثْ
তিনি কি আপনাকে ইয়াতীমরূপে পাননি? অতঃপর তিনি আশ্রয় দিয়েছেন। তিনি আপনাকে পেয়েছেন পথহারা অবস্থায়, অতঃপর তিনি আপনাকে পথপ্রদর্শন করেছেন। তিনি আপনাকে পেয়েছেন নিঃস্ব অবস্থায়, অতঃপর তিনি আপনাকে অভাবমুক্ত করেছেন। সুতরাং আপনি ইয়াতীমের প্রতি কঠোর হবেন না, সওয়ালকারীকে ধমক দেবেন না এবং আপনার পালনকর্তার নিয়ামতের কথা প্রকাশ করুন। (সূরা যোহা, ৬-১১)
ব্যাখ্যা : আপনার প্রভু আপনার জন্ম থেকেই আপনার প্রতি অবিরাম ধারায় অনুগ্রহ বর্ষণ করে এসেছেন। আপনি জন্মলগ্ন থেকেই ইয়াতীম ছিলেন; তিনিই আপনাকে লালন-পালনের ব্যবস্থা করেছেন। আপনি তাঁর পছন্দনীয় পথ চিনতেন না; তিনিই আপনাকে সে পথ দেখিয়েছেন। আপনি গরীব ছিলেন; তিনিই আপনাকে ধনী বানিয়েছেন। তাই আপনার উপর তিনি যত নিয়ামত দিয়েছেন, তার বদলে আপনিও অন্যের উপর মেহেরবানী করুন। ইয়াতীমদেরকে দয়া করুন, গরীবদেরকে সাহায্য করুন এবং আল্লাহ আপনাকে যে নিয়ামত প্রদান করেছেন তার জন্য শুকরিয়া আদায় করুন।
সূরা মুয্যাম্মিল :
يَاۤ اَيُّهَا الْمُزَّمِّلُ – قُمِ اللَّيْلَ اِلَّا قَلِيْلًا – نِصْفَهٗۤ اَوِ انْقُصْ مِنْهُ قَلِيْلًا – اَوْ زِدْ عَلَيْهِ وَرَتِّلِ الْقُرْاٰنَ تَرْتِيْلًا – اِنَّا سَنُلْقِيْ عَلَيْكَ قَوْلًا ثَقِيْلًا – اِنَّ نَاشِئَةَ اللَّيْلِ هِيَ اَشَدُّ وَطْئًا وَّاَقْوَمُ قِيْلًا – اِنَّ لَكَ فِى النَّهَارِ سَبْحًا طَوِيْلًا – وَاذْكُرِ اسْمَ رَبِّكَ وَتَبَتَّلْ اِلَيْهِ تَبْتِيْلًا
হে বস্ত্রাবৃত! রাত্রি জাগরণ করো। রাতের কিছু অংশ অথবা অর্ধেক কিংবা তার চেয়ে কিছু কম অথবা কিছু বেশি। আর কুরআন পাঠ করো ধীরে ধীরে (থেমে থেমে সুন্দরভাবে)। অচিরেই আমি তোমার প্রতি অবতীর্ণ করব ভারী বাণী। নিশ্চয় রাত্রিজাগরণ প্রবৃত্তি দমনে অধিক সহায়ক এবং উত্তম বাক্য প্রয়োগে অধিক অনুকূল। আর দিনে তোমার জন্য রয়েছে দীর্ঘ কর্মব্যস্ততা। সুতরাং (রাতে) তুমি তোমার প্রতিপালকের নাম স্মরণ করো এবং (অন্যান্য ব্যস্ততা ছিন্ন করে) একনিষ্ঠভাবে তাতে (ইবাদাতে) মগ্ন হও। (সূরা মুয্যাম্মিল, ১-৮)
ব্যাখ্যা : উপরোক্ত আয়াতগুলোতে নবী ﷺ কে উপদেশ দিয়ে বলা হয়েছে যে, নবুওয়াতের যে বিরাট দায়িত্ব তোমার উপর দেয়া হয়েছে, তা পালন করার জন্য আধ্যাত্মিক শক্তির দরকার। আর তা অর্জিত হবে আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে। আর আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের একটি বড় উপায় হচ্ছে রাত্রের একটি অংশে তাহাজ্জুদের নামায আদায় করা এবং নামাযের মধ্যে মনোনিবেশ সহকারে কুরআন তিলাওয়াত করা।
رَبُّ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ فَاتَّخِذْهُ وَكِيْلًا – وَاصْبِرْ عَلٰى مَا يَقُوْلُوْنَ وَاهْجُرْهُمْ هَجْرًا جَمِيْلًا – وَذَرْنِيْ وَالْمُكَذِّبِيْنَ اُولِى النَّعْمَةِ وَمَهِّلْهُمْ قَلِيْلًا – اِنَّ لَدَيْنَاۤ اَنْكَالًا وَّجَحِيْمًا
তিনি পূর্ব ও পশ্চিমের প্রভু, তিনি ব্যতীত কোন (সত্য) মা‘বুদ নেই। অতএব তোমরা তাঁকেই কর্মবিধায়ক হিসেবে গ্রহণ করো। লোকেরা যা বলে, তাতে তুমি ধৈর্যধারণ করো এবং তাদেরকে উত্তম পন্থায় পরিহার করে চলো। আর আমাকে এবং প্রাচুর্য্যবান মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদেরকে ছেড়ে দাও এবং তাদেরকে কিছুকালের জন্য অবকাশ দাও। আমার নিকট আছে শক্ত বেড়ি ও জ্বলন্ত আগুন। (সূরা মুয্যাম্মিল, ৯-১২)
ব্যাখ্যা : বিরোধীদের কষ্টদায়ক আচরণে রাসূল ﷺ কে সবরের উপদেশ দিয়ে বলা হয়েছে, এরা আপনার সম্পর্কে যা কিছু বলছে তাতে বিচলিত হবেন না। তাদেরকে অত্যন্ত ভদ্রভাবে এড়িয়ে চলুন। তাদের কথায় মনে কষ্ট পাবেন না। তাদেরকে এ অবস্থায় অল্প কিছুদিন ছেড়ে দিন, তাদের শাস্তির পুরোপুরি ব্যবস্থা আমি করে রেখেছি।
সূরা মুদ্দাসসির :
يَاۤ اَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ – قُمْ فَاَنْذِرْ – وَرَبَّكَ فَكَبِّرْ – وَثِيَابَكَ فَطَهِّرْ – وَالرُّجْزَ فَاهْجُرْ – وَلَا تَمْنُنْ تَسْتَكْثِرُ – وَلِرَبِّكَ فَاصْبِرْ
হে কম্বলাচ্ছাদিত! ওঠো, অতঃপর ভীতি প্রদর্শন করো এবং তোমার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করো। তোমার পোশাক পবিত্র রাখো, অপবিত্রতা হতে দূরে থাকো এবং অধিক লাভের আশায় দান (ইহসান) করো না। আর তোমার প্রতিপালকের (সন্তুষ্টি লাভের) উদ্দেশ্যে ধৈর্যধারণ করো। (সূরা মুদ্দাসসির, ১-৭)
ব্যাখ্যা : নবুওয়াতের প্রাথমিক দায়িত্ব ও কর্মনীতি হিসেবে এখানে ছয়টি উপদেশ উল্লেখ করা হয়েছে :
১. আপনার এখন আর বসে থাকার সময় নেই। সুতরাং উঠুন এবং মানুষকে ভীতি প্রদর্শন করুন।
২. আপনার রব সবচেয়ে বড়, একথা প্রচার করুন। সবাই যেন আল্লাহকেই সবচেয়ে বড় বলে মেনে নেয়, সে দাওয়াতই দিন।
৩. আপনি এমন পোশাক পরিধান করুন, যা ভদ্র, শালীন ও পাক-পবিত্র।
৪. আপনার আচার-ব্যবহারের বাইরের দিকটা যেমন সুন্দর থাকা উচিত, তেমনি আপনার ভেতরটাও সবরকম অপবিত্রতা থেকে দূরে রাখুন।
৫. আপনি মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকার বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে কোন প্রতিদান আশা করবেন না।
৬. বিরোধীরা হাজারো ষড়যন্ত্র করে আপনার কাজে বাধা দিতে থাকবে। আপনাকে চরম ধৈর্যের সাথে তার মুকাবিলা করতে হবে।
আল্লাহর রাসূলকে ইকামাতে দ্বীনের দায়িত্ব দেয়ার সময় এ সাতটি কর্মনীতিসহ উপরোক্ত যেসব কর্মনীতি শিক্ষা দেয়া হয়েছে তা ইসলামী আন্দোলনের প্রত্যেক কর্মীর জন্যই বিশেষভাবে জরুরি। এ কর্মনীতি পালন না করে যারা এ কাজ করতে চেষ্টা করবে, তাদের দ্বারা ইসলামী আন্দোলনের উপকার হবে না। এ কর্মনীতি যারা মানতে পারবে না, তারা একসময় এ পথ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হবে।
বিপথগামীদের অনুসরণ করো না :
وَلَئِنِ اتَّبَعْتَ اَهْوَآءَهُمْ بَعْدَ الَّذِيْ جَآءَكَ مِنَ الْعِلْمِ مَا لَكَ مِنَ اللهِ مِنْ وَّلِيٍّ وَّلَا نَصِيْرٍ
তোমার নিকট জ্ঞান আসার পরও যদি তুমি তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ কর, তবে আল্লাহর পক্ষ হতে তোমার জন্য কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী থাকবে না। (সূরা বাক্বারা- ১২০)
মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদের দলে শামিল হয়ো না :
وَلَا تَكُوْنَنَّ مِنَ الَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِ اللهِ فَتَكُوْنَ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
যারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে মিথ্যাপ্রতিপন্ন করেছে তুমি কখনো তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না- তাহলে তুমিও ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা ইউনুস- ৯৫)
মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না :
وَاَنْ اَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّيْنِ حَنِيْفًاۚ وَلَا تَكُوْنَنَّ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
তুমি একনিষ্ঠভাবে নিজের চেহারাকে দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত করে দাও এবং কখনই মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সূরা ইউনুস- ১০৫)
ব্যাখ্যা : এর অর্থ, তুমি একই দিকে মুখ ফিরিয়ে থাকো। এদিক-ওদিক ফিরো না। সামনে, পেছনে, ডানে, বামে ঘুরে যেয়ো না। যে পথ তোমাকে দেখানো হয়েছে হুবহু সে পথে দৃষ্টি রেখে চলো। সব দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে শুধুমাত্র একদিকে মুখ করে থাকো। জীবন যাপনের ক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহ রাববুল আলামীনের দাসত্ব ও আনুগত্য করো এবং শুধুমাত্র তাঁরই হুকুম মেনে চলো।
দরিদ্র সাহাবীদের তাড়িয়ে দিয়ো না :
وَلَا تَطْرُدِ الَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيْدُوْنَ وَجْهَهٗؕ مَا عَلَيْكَ مِنْ حِسَابِهِمْ مِّنْ شَيْءٍ وَّمَا مِنْ حِسَابِكَ عَلَيْهِمْ مِّنْ شَيْءٍ فَتَطْرُدَهُمْ فَتَكُوْنَ مِنَ الظَّالِمِيْنَ
যারা তাদের প্রতিপালককে সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ডাকে তাদেরকে বিতাড়িত করো না। তাদের কর্মের জবাবদিহির দায়িত্ব তোমার নয় এবং তোমার কোন কর্মের জবাবদিহির দায়িত্ব তাদের নয় যে, তুমি তাদেরকে বিতাড়িত করবে; (যদি কর) তবে তুমি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা আন‘আম- ৫২)
লৌকিকতার আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করো না :
وَلَا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِه عِلْمٌؕ اِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ اُولٰٓئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُوْلًا
যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই তার অনুসরণ করো না। নিশ্চয় কর্ণ, চক্ষু ও হৃদয়- প্রত্যেকটি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩৬)
সন্দেহ পোষণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না :
اَلْحَقُّ مِنْ رَّبِّكَ فَلَا تَكُوْنَنَّ مِنَ الْمُمْتَرِيْنَ
সত্য তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে এসেছে; সুতরাং তুমি সন্দেহকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সূরা বাক্বারা- ১৪৭)
মানুষের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করো না :
وَاحْذَرْهُمْ اَنْ يَّفْتِنُوْكَ عَنْ ۢبَعْضِ مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ اِلَيْكَ
আর তুমি তাদের সম্পর্কে সাবধান থাকো, যেন তারা তোমার উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তার কোন বিষয়ে তোমাকে বিভ্রান্ত করতে না পারে। (সূরা মায়েদা- ৪৯)
অধিকাংশ লোকের অনুসারী হয়ো না :
وَاِنْ تُطِعْ اَكْثَرَ مَنْ فِى الْاَرْضِ يُضِلُّوْكَ عَنْ سَبِيْلِ اللهِؕ اِنْ يَّتَّبِعُوْنَ اِلَّا الظَّنَّ وَاِنْ هُمْ اِلَّا يَخْرُصُوْنَ
যদি তুমি দুনিয়ার অধিকাংশ লোকের কথামতো চল তবে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত করে দেবে। তারা তো শুধু অনুমানের অনুসরণ করে এবং অনুমানভিত্তিক কথা বলে। (সূরা আন‘আম- ১১৬)
কাফিরদের ভোগবিলাসের দিকে লক্ষ্য করো না :
لَا تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ اِلٰى مَا مَتَّعْنَا بِهٖۤ اَزْوَاجًا مِّنْهُمْ وَلَا تَحْزَنْ عَلَيْهِمْ وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِلْمُؤْمِنِيْنَ
আমি তাঁদের বিভিন্ন শ্রেণিকে ভোগবিলাসের যে উপকরণ দিয়েছি তার প্রতি তুমি কখনো তোমার চক্ষুদ্বয় প্রসারিত করো না। তাদের জন্য দুঃখ করো না; আর তুমি মুমিনদের জন্য তোমার বাহু অবনমিত করো। (সূরা হিজর- ৮৮)
وَلَا تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ اِلٰى مَا مَتَّعْنَا بِهٖۤ اَزْوَاجًا مِّنْهُمْ زَهْرَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا لِنَفْتِنَهُمْ فِيْهِؕ وَرِزْقُ رَبِّكَ خَيْرٌ وَّاَبْقٰى
আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণিকে পরীক্ষা করার জন্য পার্থিব জীবনের সৌন্দর্যস্বরূপ উপভোগের উপকরণ হিসেবে যা দিয়েছি, তার প্রতি তুমি তোমার চক্ষুদ্বয় কখনো প্রসারিত করো না। তোমার প্রতিপালক প্রদত্ত জীবনোপকরণ উৎকৃষ্ট ও অধিক স্থায়ী। (সূরা ত্বা-হা- ১৩১)
বিরোধীদের নির্যাতন উপেক্ষা করে চলো :
وَلَا تُطِعِ الْكَافِرِيْنَ وَالْمُنَافِقِيْنَ وَدَعْ اَذَاهُمْ وَتَوَكَّلْ عَلَى اللهِؕ وَكَفٰى بِاللهِ وَكِيْلًا
কখনো কাফির ও মুনাফিকদের অনুসরণ করো না। তাদের যাবতীয় নির্যাতন উপেক্ষা করে চলো এবং আল্লাহর উপর ভরসা করো; (কেননা) কর্মবিধায়ক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। (সূরা আহযাব- ৪৮)
ওহীকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরো :
فَاسْتَمْسِكْ بِالَّذِۤيْ اُوْحِيَ اِلَيْكَۚ اِنَّكَ عَلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
তোমার প্রতি যা ওহী করা হয়েছে তা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো। নিশ্চয় তুমি সরলসঠিক পথেই রয়েছ। (সূরা যুখরুফ- ৪৩)
اِتَّبِعْ مَاۤ اُوْحِيَ اِلَيْكَ مِنْ رَّبِّكَۚ لَا ۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَۚ وَاَعْرِضْ عَنِ الْمُشْرِكِيْنَ
তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে তোমার প্রতি যা ওহী হয় তুমি তারই অনুসরণ করো; (কেননা) তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই। আর তুমি মুশরিকদের হতে মুখ ফিরিয়ে নাও। (সূরা আন‘আম- ১০৬)
মন্দকে ভালো দ্বারা প্রতিহত করো :
وَلَا تَسْتَوِى الْحَسَنَةُ وَلَا السَّيِّئَةُؕ اِدْفَعْ بِالَّتِيْ هِيَ اَحْسَنُ فَاِذَا الَّذِيْ بَيْنَكَ وَبَيْنَهٗ عَدَاوَةٌ كَاَنَّهٗ وَلِيٌّ حَمِيْمٌ
ভালো এবং মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দকে প্রতিহত করো উৎকৃষ্ট দ্বারা। তাহলে তোমার সাথে যার শত্রুতা আছে সে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মতো হয়ে যাবে। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৩৪)
ক্ষমার নীতি অবলম্বন করো :
خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ وَاَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلِيْنَ
ক্ষমাপরায়ণতা অবলম্বন করো, সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং অজ্ঞদেরকে এড়িয়ে চলো। (সূরা আ‘রাফ- ১৯৯)
নিকটাত্মীয়দের নিকট দ্বীন প্রচার করো :
وَاَنْذِرْ عَشِيْرَتَكَ الْاَقْرَبِيْنَ
আর তুমি তোমার নিকটাত্মীয়দেরকে সতর্ক করে দাও। (সূরা শু‘আরা- ২১৪)
ব্যাখ্যা : আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়, তখন রাসূল ﷺ বললেন, হে কুরাইশ সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর (আযাব) থেকে নিজেদেরকে বাঁচাও। তোমাদেরকে আল্লাহর (আযাব) থেকে রক্ষা করার কোন ক্ষমতা আমার নেই। হে আবদুল মুত্তালিবের বংশধর! তোমাদেরকে আমি রক্ষা করতে পারব না। হে আববাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব! তোমাকেও আমি রক্ষা করতে পারব না। হে আল্লাহর রাসূলের ফুফু সাফিয়া! আমি আল্লাহর (আযাব) থেকে তোমার কোন উপকার করতে পারব না। হে আল্লাহর রাসূলের কন্যা ফাতিমা! তোমার যা ইচ্ছা চাও। আল্লাহর (আযাব) থেকে আমি তোমাকে রক্ষা করতে পারব না। (সহীহ মুসলিম, হা/৩৯২)
বিরোধীদের পরোয়া করো না :
يَاۤ اَيُّهَا الرَّسُوْلُ بَلِّغْ مَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكَ مِنْ رَّبِّكَؕ وَاِنْ لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهٗؕ وَاللهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ
হে রাসূল! তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা প্রচার করো; যদি না কর তবে (ধরে নেয়া হবে) তুমি তাঁর বার্তা প্রচারই করনি। আল্লাহ তোমাকে মানুষের (অনিষ্ঠ) হতে রক্ষা করবেন। (সূরা মায়েদা- ৬৭)
সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকো :
فَاسْتَقِمْ كَمَاۤ اُمِرْتَ وَمَنْ تَابَ مَعَكَ وَلَا تَطْغَوْاؕ اِنَّهٗ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
সুতরাং তুমি যেভাবে আদিষ্ট হয়েছ তাতে স্থির থাকো এবং তোমার সাথে যারা ঈমান এনেছে তারাও স্থির থাকুক; আর তোমরা সীমালঙ্ঘন করো না। তোমরা যা কর নিশ্চয় তিনি তার সম্যক দ্রষ্টা। (সূরা হুদ- ১১২)
তোমাকে যে শরীয়াত দিয়েছি তার অনুসরণ করো :
ثُمَّ جَعَلْنَاكَ عَلٰى شَرِيْعَةٍ مِّنَ الْاَمْرِ فَاتَّبِعْهَا وَلَا تَتَّبِعْ اَهْوَآءَ الَّذِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ
এরপর আমি তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করেছি দ্বীনের বিশেষ শরীয়াতের উপর। সুতরাং তুমি তার অনুসরণ করো; আর অজ্ঞদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। (সূরা জাসিয়া -১৮)
পূর্ববর্তী নবীদের পথে চলো :
اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ هَدَى اللهُ فَبِهُدَاهُمُ اقْتَدِهْ
আল্লাহ তাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করেছেন; সুতরাং তুমি তাদের পথের অনুসরণ করো। (সূরা আন‘আম- ৯০)
ধৈর্য অবলম্বন করো :
وَاتَّبِعْ مَا يُوْحٰۤى اِلَيْكَ وَاصْبِرْ حَتّٰى يَحْكُمَ اللهُۚ وَهُوَ خَيْرُ الْحَاكِمِيْنَ
তোমার প্রতি যে ওহী করা হয় তার অনুসরণ করো এবং ধৈর্যধারণ করো- যে পর্যন্ত না আল্লাহ কোন ফায়সালা দেন। আর আল্লাহই সর্বোত্তম ফায়সালাকারী। (সূরা ইউনুস- ১০৯)
রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা লাভের জন্য দু‘আ করো :
وَقُلْ رَّبِّ اَدْخِلْنِيْ مُدْخَلَ صِدْقٍ وَّاَخْرِجْنِيْ مُخْرَجَ صِدْقٍ وَّاجْعَلْ لِّيْ مِنْ لَّدُنْكَ سُلْطَانًا نَّصِيْرًا
বলো, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে প্রবেশ করাও কল্যাণের সাথে এবং আমাকে বের করাও কল্যাণের সাথে এবং তোমার নিকট হতে আমাকে দান করো সাহায্যকারী শক্তি। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৮০)
আল্লাহর বিধান অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করো :
فَاحْكُمْ بَيْنَهُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ وَلَا تَتَّبِعْ اَهْوَآءَهُمْ عَمَّا جَآءَكَ مِنَ الْحَقِّ
আপনি তাদের মধ্যে মীমাংসা করুন- আল্লাহ (আপনার উপর) যা অবতীর্ণ করেছেন সে অনুযায়ী এবং আপনার কাছে যে সত্য এসেছে তা ত্যাগ করে তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করবেন না। (সূরা মায়েদা- ৪৮)
সাথিদের সাথে পরামর্শ করো :
وَشَاوِرْهُمْ فِى الْاَمْرِۚ فَاِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللهِؕ اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِيْنَ
কাজের ক্ষেত্রে তাদের সাথে পরামর্শ করো। অতঃপর যখন কোন বিষয়ে স্থির হও তখন আল্লাহর প্রতি ভরসা করো। নিশ্চয় আল্লাহ নির্ভরশীলদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৯)
মুমিনদের সাথে অবস্থান করো :
وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيْدُوْنَ وَجْهَهٗ
তুমি নিজেকে ধৈর্য সহকারে তাদেরই সংস্পর্শে রাখবে, যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের প্রতিপালককে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ডাকে। (সূরা কাহফ- ২৮)
ব্যাখ্যা : কুরাইশ সরদাররা নবী ﷺ কে বলত- বেলাল, সুহাইব, আম্মার, খাববাব ও ইবনে মাসউদ (রাঃ) এদের মতো গরীব লোকেরা তোমার সাথে বসে। সুতরাং আমরা ওদের সাথে বসতে পারি না। আগে ওদেরকে সরাও, তাহলে আমরা তোমার মজলিসে আসতে পারি এবং তুমি কী বলতে চাও তা শুনতে পারি। এ প্রেক্ষিতে আল্লাহ তা‘আলা নবী ﷺ কে বললেন, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তোমার চারদিকে সমবেত হয়েছে এবং দিনরাত নিজেদের রবকে স্মরণ করছে, তাদেরকে তোমার কাছে থাকতে দাও এবং এ ব্যাপারে নিজের মনে কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব আসতে দিয়ো না। আর তাদের দিক থেকে কখনো দৃষ্টিও ফিরিয়ে নিয়ো না। তুমি কি চাও যে, এ আন্তরিকতাসম্পন্ন লোকদেরকে ত্যাগ করে পার্থিব জৌলুসের অধিকারী লোকদেরকে তোমার কাছে বসাতে? এ বাক্যেও বাহ্যত নবী ﷺ কে সম্বোধন করা হয়েছে, কিন্তু আসলে কুরাইশ সরদারদেরকে এ কথা শুনানোই এখানে মূল উদ্দেশ্য যে, তোমাদের এ লোক দেখানো জৌলুস- যার জন্য তোমরা অহংকার প্রকাশ কর, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কাছে এগুলোর কোন মূল্য নেই। যেসব গরীব লোকের মধ্যে আন্তরিকতা আছে এবং যারা নিজেদের রবের স্মরণ থেকে কখনো গাফিল হয় না, তারা তোমাদের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান। কেননা তোমরা যা কিছু নিয়ে অহংকার প্রকাশ কর, তার প্রকৃত মালিক তো তোমরা নও। এগুলোর প্রকৃত মালিক হচ্ছে আল্লাহ, যিনি তোমাদেরকে এগুলো নিজ অনুগ্রহে দান করেছেন। কাজেই পরের সম্পদ নিয়ে অহংকার করা বোকামী ছাড়া আর কিছুই নয়।
দুনিয়াবাসীদের ভোগবিলাসের দিকে দৃষ্টি দিয়ো না :
لَا تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ اِلٰى مَا مَتَّعْنَا بِهٖۤ اَزْوَاجًا مِّنْهُمْ وَلَا تَحْزَنْ عَلَيْهِمْ
আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণিকে ভোগবিলাসের যে উপকরণ দিয়েছি তার প্রতি কখনো তোমার চক্ষুদ্বয় প্রসারিত করো না, আর তাদের জন্য দুঃখও করো না। (সূরা হিজর - ৮৮)
মুমিনদের উপর সদয় হও :
وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِلْمُؤْمِنِيْنَ
তুমি মুমিনদের জন্য তোমার বাহুকে অবনমিত করো। (সূরা হিজর - ৮৮)
وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ
যারা তোমার অনুসরণ করে সে সমস্ত মুমিনদের প্রতি বিনয়ী হও। (সূরা শু‘আরা- ২১৫)
নিজের ও মুমিনদের জন্য মাগফিরাত কামনা করো :
فَاعْلَمْ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْۢبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِؕ وَاللهُ يَعْلَمُ مُتَقَلَّبَكُمْ وَمَثْوَاكُمْ
(হে নবী!) জেনে রেখো, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো (সত্যিকার) মা‘বুদ নেই। অতএব তুমি নিজের এবং মুমিন পুরুষ ও নারীদের গোনাহের জন্য (আল্লাহর নিকট) ক্ষমাপ্রার্থনা করো। আল্লাহ তোমাদের তৎপরতার খবর রাখেন এবং (শেষ) ঠিকানা সম্পর্কেও জানেন। (সূরা মুহাম্মাদ- ১৯)
ব্যাখ্যা : ইসলাম মানুষকে যেভাবে নৈতিকতার শিক্ষা দিয়েছে তার একটি হচ্ছে, বান্দা তার প্রভুর ইবাদাত করতে এবং তাঁর দ্বীনের জন্য জীবন উৎসর্গ করতে নিজের পক্ষ থেকে যত চেষ্টা-সাধনাই করুক না কেন, তার মধ্যে এমন ধারণা কখনো আসা উচিত নয় যে, তার যা করা উচিত ছিল তা সে করেছে। বরং তার মনে করা উচিত যে, তার উপর তার মালিকের যে দাবী ও অধিকার ছিল তা সে পালন করতে পারেনি। তার উচিত সবসময় দোষ-ত্রুটি স্বীকার করে আল্লাহর কাছে এ দু‘আ করা যে, ‘হে আল্লাহ! দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমার যে ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছে তা ক্ষমা করে দাও।’’ আল্লাহর এ আদেশের অর্থ এ নয় যে, নবী ﷺ জেনে বুঝে কোন অপরাধ করেছিলেন- নাউযুবিল্লাহ। বরং এর সঠিক অর্থ হচ্ছে, দ্বীনের কাজ বেশি করেও এ কাজের জন্য তাঁর অন্তরে গর্ব ও অহংকারের লেশমাত্র প্রবেশ করতে পারেনি। এ মহামূল্যবান খেদমত সত্ত্বেও প্রভুর সামনে নিজের অপরাধ স্বীকার করেছেন। এ অবস্থা ও মানসিকতার কারণেই রাসূল ﷺ সবসময় বেশি বেশি ক্ষমাপ্রার্থনা করতেন। রাসূল ﷺ বলেন, ‘‘আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে একশ’ বার ক্ষমাপ্রার্থনা করে থাকি।’’ (সহীহ মুসলিম, হা/৭০৩৩; আবু দাউদ, হা/১৫১৭)
وَلَئِنِ اتَّبَعْتَ اَهْوَآءَهُمْ بَعْدَ الَّذِيْ جَآءَكَ مِنَ الْعِلْمِ مَا لَكَ مِنَ اللهِ مِنْ وَّلِيٍّ وَّلَا نَصِيْرٍ
তোমার নিকট জ্ঞান আসার পরও যদি তুমি তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ কর, তবে আল্লাহর পক্ষ হতে তোমার জন্য কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী থাকবে না। (সূরা বাক্বারা- ১২০)
মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদের দলে শামিল হয়ো না :
وَلَا تَكُوْنَنَّ مِنَ الَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِ اللهِ فَتَكُوْنَ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
যারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে মিথ্যাপ্রতিপন্ন করেছে তুমি কখনো তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না- তাহলে তুমিও ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা ইউনুস- ৯৫)
মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না :
وَاَنْ اَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّيْنِ حَنِيْفًاۚ وَلَا تَكُوْنَنَّ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
তুমি একনিষ্ঠভাবে নিজের চেহারাকে দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত করে দাও এবং কখনই মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সূরা ইউনুস- ১০৫)
ব্যাখ্যা : এর অর্থ, তুমি একই দিকে মুখ ফিরিয়ে থাকো। এদিক-ওদিক ফিরো না। সামনে, পেছনে, ডানে, বামে ঘুরে যেয়ো না। যে পথ তোমাকে দেখানো হয়েছে হুবহু সে পথে দৃষ্টি রেখে চলো। সব দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে শুধুমাত্র একদিকে মুখ করে থাকো। জীবন যাপনের ক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহ রাববুল আলামীনের দাসত্ব ও আনুগত্য করো এবং শুধুমাত্র তাঁরই হুকুম মেনে চলো।
দরিদ্র সাহাবীদের তাড়িয়ে দিয়ো না :
وَلَا تَطْرُدِ الَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيْدُوْنَ وَجْهَهٗؕ مَا عَلَيْكَ مِنْ حِسَابِهِمْ مِّنْ شَيْءٍ وَّمَا مِنْ حِسَابِكَ عَلَيْهِمْ مِّنْ شَيْءٍ فَتَطْرُدَهُمْ فَتَكُوْنَ مِنَ الظَّالِمِيْنَ
যারা তাদের প্রতিপালককে সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ডাকে তাদেরকে বিতাড়িত করো না। তাদের কর্মের জবাবদিহির দায়িত্ব তোমার নয় এবং তোমার কোন কর্মের জবাবদিহির দায়িত্ব তাদের নয় যে, তুমি তাদেরকে বিতাড়িত করবে; (যদি কর) তবে তুমি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা আন‘আম- ৫২)
লৌকিকতার আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করো না :
وَلَا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِه عِلْمٌؕ اِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ اُولٰٓئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُوْلًا
যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই তার অনুসরণ করো না। নিশ্চয় কর্ণ, চক্ষু ও হৃদয়- প্রত্যেকটি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩৬)
সন্দেহ পোষণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না :
اَلْحَقُّ مِنْ رَّبِّكَ فَلَا تَكُوْنَنَّ مِنَ الْمُمْتَرِيْنَ
সত্য তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে এসেছে; সুতরাং তুমি সন্দেহকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সূরা বাক্বারা- ১৪৭)
মানুষের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করো না :
وَاحْذَرْهُمْ اَنْ يَّفْتِنُوْكَ عَنْ ۢبَعْضِ مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ اِلَيْكَ
আর তুমি তাদের সম্পর্কে সাবধান থাকো, যেন তারা তোমার উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তার কোন বিষয়ে তোমাকে বিভ্রান্ত করতে না পারে। (সূরা মায়েদা- ৪৯)
অধিকাংশ লোকের অনুসারী হয়ো না :
وَاِنْ تُطِعْ اَكْثَرَ مَنْ فِى الْاَرْضِ يُضِلُّوْكَ عَنْ سَبِيْلِ اللهِؕ اِنْ يَّتَّبِعُوْنَ اِلَّا الظَّنَّ وَاِنْ هُمْ اِلَّا يَخْرُصُوْنَ
যদি তুমি দুনিয়ার অধিকাংশ লোকের কথামতো চল তবে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত করে দেবে। তারা তো শুধু অনুমানের অনুসরণ করে এবং অনুমানভিত্তিক কথা বলে। (সূরা আন‘আম- ১১৬)
কাফিরদের ভোগবিলাসের দিকে লক্ষ্য করো না :
لَا تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ اِلٰى مَا مَتَّعْنَا بِهٖۤ اَزْوَاجًا مِّنْهُمْ وَلَا تَحْزَنْ عَلَيْهِمْ وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِلْمُؤْمِنِيْنَ
আমি তাঁদের বিভিন্ন শ্রেণিকে ভোগবিলাসের যে উপকরণ দিয়েছি তার প্রতি তুমি কখনো তোমার চক্ষুদ্বয় প্রসারিত করো না। তাদের জন্য দুঃখ করো না; আর তুমি মুমিনদের জন্য তোমার বাহু অবনমিত করো। (সূরা হিজর- ৮৮)
وَلَا تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ اِلٰى مَا مَتَّعْنَا بِهٖۤ اَزْوَاجًا مِّنْهُمْ زَهْرَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا لِنَفْتِنَهُمْ فِيْهِؕ وَرِزْقُ رَبِّكَ خَيْرٌ وَّاَبْقٰى
আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণিকে পরীক্ষা করার জন্য পার্থিব জীবনের সৌন্দর্যস্বরূপ উপভোগের উপকরণ হিসেবে যা দিয়েছি, তার প্রতি তুমি তোমার চক্ষুদ্বয় কখনো প্রসারিত করো না। তোমার প্রতিপালক প্রদত্ত জীবনোপকরণ উৎকৃষ্ট ও অধিক স্থায়ী। (সূরা ত্বা-হা- ১৩১)
বিরোধীদের নির্যাতন উপেক্ষা করে চলো :
وَلَا تُطِعِ الْكَافِرِيْنَ وَالْمُنَافِقِيْنَ وَدَعْ اَذَاهُمْ وَتَوَكَّلْ عَلَى اللهِؕ وَكَفٰى بِاللهِ وَكِيْلًا
কখনো কাফির ও মুনাফিকদের অনুসরণ করো না। তাদের যাবতীয় নির্যাতন উপেক্ষা করে চলো এবং আল্লাহর উপর ভরসা করো; (কেননা) কর্মবিধায়ক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। (সূরা আহযাব- ৪৮)
ওহীকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরো :
فَاسْتَمْسِكْ بِالَّذِۤيْ اُوْحِيَ اِلَيْكَۚ اِنَّكَ عَلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
তোমার প্রতি যা ওহী করা হয়েছে তা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো। নিশ্চয় তুমি সরলসঠিক পথেই রয়েছ। (সূরা যুখরুফ- ৪৩)
اِتَّبِعْ مَاۤ اُوْحِيَ اِلَيْكَ مِنْ رَّبِّكَۚ لَا ۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَۚ وَاَعْرِضْ عَنِ الْمُشْرِكِيْنَ
তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে তোমার প্রতি যা ওহী হয় তুমি তারই অনুসরণ করো; (কেননা) তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই। আর তুমি মুশরিকদের হতে মুখ ফিরিয়ে নাও। (সূরা আন‘আম- ১০৬)
মন্দকে ভালো দ্বারা প্রতিহত করো :
وَلَا تَسْتَوِى الْحَسَنَةُ وَلَا السَّيِّئَةُؕ اِدْفَعْ بِالَّتِيْ هِيَ اَحْسَنُ فَاِذَا الَّذِيْ بَيْنَكَ وَبَيْنَهٗ عَدَاوَةٌ كَاَنَّهٗ وَلِيٌّ حَمِيْمٌ
ভালো এবং মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দকে প্রতিহত করো উৎকৃষ্ট দ্বারা। তাহলে তোমার সাথে যার শত্রুতা আছে সে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মতো হয়ে যাবে। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৩৪)
ক্ষমার নীতি অবলম্বন করো :
خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ وَاَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلِيْنَ
ক্ষমাপরায়ণতা অবলম্বন করো, সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং অজ্ঞদেরকে এড়িয়ে চলো। (সূরা আ‘রাফ- ১৯৯)
নিকটাত্মীয়দের নিকট দ্বীন প্রচার করো :
وَاَنْذِرْ عَشِيْرَتَكَ الْاَقْرَبِيْنَ
আর তুমি তোমার নিকটাত্মীয়দেরকে সতর্ক করে দাও। (সূরা শু‘আরা- ২১৪)
ব্যাখ্যা : আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়, তখন রাসূল ﷺ বললেন, হে কুরাইশ সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর (আযাব) থেকে নিজেদেরকে বাঁচাও। তোমাদেরকে আল্লাহর (আযাব) থেকে রক্ষা করার কোন ক্ষমতা আমার নেই। হে আবদুল মুত্তালিবের বংশধর! তোমাদেরকে আমি রক্ষা করতে পারব না। হে আববাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব! তোমাকেও আমি রক্ষা করতে পারব না। হে আল্লাহর রাসূলের ফুফু সাফিয়া! আমি আল্লাহর (আযাব) থেকে তোমার কোন উপকার করতে পারব না। হে আল্লাহর রাসূলের কন্যা ফাতিমা! তোমার যা ইচ্ছা চাও। আল্লাহর (আযাব) থেকে আমি তোমাকে রক্ষা করতে পারব না। (সহীহ মুসলিম, হা/৩৯২)
বিরোধীদের পরোয়া করো না :
يَاۤ اَيُّهَا الرَّسُوْلُ بَلِّغْ مَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكَ مِنْ رَّبِّكَؕ وَاِنْ لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهٗؕ وَاللهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ
হে রাসূল! তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা প্রচার করো; যদি না কর তবে (ধরে নেয়া হবে) তুমি তাঁর বার্তা প্রচারই করনি। আল্লাহ তোমাকে মানুষের (অনিষ্ঠ) হতে রক্ষা করবেন। (সূরা মায়েদা- ৬৭)
সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকো :
فَاسْتَقِمْ كَمَاۤ اُمِرْتَ وَمَنْ تَابَ مَعَكَ وَلَا تَطْغَوْاؕ اِنَّهٗ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
সুতরাং তুমি যেভাবে আদিষ্ট হয়েছ তাতে স্থির থাকো এবং তোমার সাথে যারা ঈমান এনেছে তারাও স্থির থাকুক; আর তোমরা সীমালঙ্ঘন করো না। তোমরা যা কর নিশ্চয় তিনি তার সম্যক দ্রষ্টা। (সূরা হুদ- ১১২)
তোমাকে যে শরীয়াত দিয়েছি তার অনুসরণ করো :
ثُمَّ جَعَلْنَاكَ عَلٰى شَرِيْعَةٍ مِّنَ الْاَمْرِ فَاتَّبِعْهَا وَلَا تَتَّبِعْ اَهْوَآءَ الَّذِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ
এরপর আমি তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করেছি দ্বীনের বিশেষ শরীয়াতের উপর। সুতরাং তুমি তার অনুসরণ করো; আর অজ্ঞদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। (সূরা জাসিয়া -১৮)
পূর্ববর্তী নবীদের পথে চলো :
اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ هَدَى اللهُ فَبِهُدَاهُمُ اقْتَدِهْ
আল্লাহ তাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করেছেন; সুতরাং তুমি তাদের পথের অনুসরণ করো। (সূরা আন‘আম- ৯০)
ধৈর্য অবলম্বন করো :
وَاتَّبِعْ مَا يُوْحٰۤى اِلَيْكَ وَاصْبِرْ حَتّٰى يَحْكُمَ اللهُۚ وَهُوَ خَيْرُ الْحَاكِمِيْنَ
তোমার প্রতি যে ওহী করা হয় তার অনুসরণ করো এবং ধৈর্যধারণ করো- যে পর্যন্ত না আল্লাহ কোন ফায়সালা দেন। আর আল্লাহই সর্বোত্তম ফায়সালাকারী। (সূরা ইউনুস- ১০৯)
রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা লাভের জন্য দু‘আ করো :
وَقُلْ رَّبِّ اَدْخِلْنِيْ مُدْخَلَ صِدْقٍ وَّاَخْرِجْنِيْ مُخْرَجَ صِدْقٍ وَّاجْعَلْ لِّيْ مِنْ لَّدُنْكَ سُلْطَانًا نَّصِيْرًا
বলো, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে প্রবেশ করাও কল্যাণের সাথে এবং আমাকে বের করাও কল্যাণের সাথে এবং তোমার নিকট হতে আমাকে দান করো সাহায্যকারী শক্তি। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৮০)
আল্লাহর বিধান অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করো :
فَاحْكُمْ بَيْنَهُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ وَلَا تَتَّبِعْ اَهْوَآءَهُمْ عَمَّا جَآءَكَ مِنَ الْحَقِّ
আপনি তাদের মধ্যে মীমাংসা করুন- আল্লাহ (আপনার উপর) যা অবতীর্ণ করেছেন সে অনুযায়ী এবং আপনার কাছে যে সত্য এসেছে তা ত্যাগ করে তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করবেন না। (সূরা মায়েদা- ৪৮)
সাথিদের সাথে পরামর্শ করো :
وَشَاوِرْهُمْ فِى الْاَمْرِۚ فَاِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللهِؕ اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِيْنَ
কাজের ক্ষেত্রে তাদের সাথে পরামর্শ করো। অতঃপর যখন কোন বিষয়ে স্থির হও তখন আল্লাহর প্রতি ভরসা করো। নিশ্চয় আল্লাহ নির্ভরশীলদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৯)
মুমিনদের সাথে অবস্থান করো :
وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيْدُوْنَ وَجْهَهٗ
তুমি নিজেকে ধৈর্য সহকারে তাদেরই সংস্পর্শে রাখবে, যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের প্রতিপালককে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ডাকে। (সূরা কাহফ- ২৮)
ব্যাখ্যা : কুরাইশ সরদাররা নবী ﷺ কে বলত- বেলাল, সুহাইব, আম্মার, খাববাব ও ইবনে মাসউদ (রাঃ) এদের মতো গরীব লোকেরা তোমার সাথে বসে। সুতরাং আমরা ওদের সাথে বসতে পারি না। আগে ওদেরকে সরাও, তাহলে আমরা তোমার মজলিসে আসতে পারি এবং তুমি কী বলতে চাও তা শুনতে পারি। এ প্রেক্ষিতে আল্লাহ তা‘আলা নবী ﷺ কে বললেন, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তোমার চারদিকে সমবেত হয়েছে এবং দিনরাত নিজেদের রবকে স্মরণ করছে, তাদেরকে তোমার কাছে থাকতে দাও এবং এ ব্যাপারে নিজের মনে কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব আসতে দিয়ো না। আর তাদের দিক থেকে কখনো দৃষ্টিও ফিরিয়ে নিয়ো না। তুমি কি চাও যে, এ আন্তরিকতাসম্পন্ন লোকদেরকে ত্যাগ করে পার্থিব জৌলুসের অধিকারী লোকদেরকে তোমার কাছে বসাতে? এ বাক্যেও বাহ্যত নবী ﷺ কে সম্বোধন করা হয়েছে, কিন্তু আসলে কুরাইশ সরদারদেরকে এ কথা শুনানোই এখানে মূল উদ্দেশ্য যে, তোমাদের এ লোক দেখানো জৌলুস- যার জন্য তোমরা অহংকার প্রকাশ কর, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কাছে এগুলোর কোন মূল্য নেই। যেসব গরীব লোকের মধ্যে আন্তরিকতা আছে এবং যারা নিজেদের রবের স্মরণ থেকে কখনো গাফিল হয় না, তারা তোমাদের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান। কেননা তোমরা যা কিছু নিয়ে অহংকার প্রকাশ কর, তার প্রকৃত মালিক তো তোমরা নও। এগুলোর প্রকৃত মালিক হচ্ছে আল্লাহ, যিনি তোমাদেরকে এগুলো নিজ অনুগ্রহে দান করেছেন। কাজেই পরের সম্পদ নিয়ে অহংকার করা বোকামী ছাড়া আর কিছুই নয়।
দুনিয়াবাসীদের ভোগবিলাসের দিকে দৃষ্টি দিয়ো না :
لَا تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ اِلٰى مَا مَتَّعْنَا بِهٖۤ اَزْوَاجًا مِّنْهُمْ وَلَا تَحْزَنْ عَلَيْهِمْ
আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণিকে ভোগবিলাসের যে উপকরণ দিয়েছি তার প্রতি কখনো তোমার চক্ষুদ্বয় প্রসারিত করো না, আর তাদের জন্য দুঃখও করো না। (সূরা হিজর - ৮৮)
মুমিনদের উপর সদয় হও :
وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِلْمُؤْمِنِيْنَ
তুমি মুমিনদের জন্য তোমার বাহুকে অবনমিত করো। (সূরা হিজর - ৮৮)
وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ
যারা তোমার অনুসরণ করে সে সমস্ত মুমিনদের প্রতি বিনয়ী হও। (সূরা শু‘আরা- ২১৫)
নিজের ও মুমিনদের জন্য মাগফিরাত কামনা করো :
فَاعْلَمْ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْۢبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِؕ وَاللهُ يَعْلَمُ مُتَقَلَّبَكُمْ وَمَثْوَاكُمْ
(হে নবী!) জেনে রেখো, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো (সত্যিকার) মা‘বুদ নেই। অতএব তুমি নিজের এবং মুমিন পুরুষ ও নারীদের গোনাহের জন্য (আল্লাহর নিকট) ক্ষমাপ্রার্থনা করো। আল্লাহ তোমাদের তৎপরতার খবর রাখেন এবং (শেষ) ঠিকানা সম্পর্কেও জানেন। (সূরা মুহাম্মাদ- ১৯)
ব্যাখ্যা : ইসলাম মানুষকে যেভাবে নৈতিকতার শিক্ষা দিয়েছে তার একটি হচ্ছে, বান্দা তার প্রভুর ইবাদাত করতে এবং তাঁর দ্বীনের জন্য জীবন উৎসর্গ করতে নিজের পক্ষ থেকে যত চেষ্টা-সাধনাই করুক না কেন, তার মধ্যে এমন ধারণা কখনো আসা উচিত নয় যে, তার যা করা উচিত ছিল তা সে করেছে। বরং তার মনে করা উচিত যে, তার উপর তার মালিকের যে দাবী ও অধিকার ছিল তা সে পালন করতে পারেনি। তার উচিত সবসময় দোষ-ত্রুটি স্বীকার করে আল্লাহর কাছে এ দু‘আ করা যে, ‘হে আল্লাহ! দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমার যে ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছে তা ক্ষমা করে দাও।’’ আল্লাহর এ আদেশের অর্থ এ নয় যে, নবী ﷺ জেনে বুঝে কোন অপরাধ করেছিলেন- নাউযুবিল্লাহ। বরং এর সঠিক অর্থ হচ্ছে, দ্বীনের কাজ বেশি করেও এ কাজের জন্য তাঁর অন্তরে গর্ব ও অহংকারের লেশমাত্র প্রবেশ করতে পারেনি। এ মহামূল্যবান খেদমত সত্ত্বেও প্রভুর সামনে নিজের অপরাধ স্বীকার করেছেন। এ অবস্থা ও মানসিকতার কারণেই রাসূল ﷺ সবসময় বেশি বেশি ক্ষমাপ্রার্থনা করতেন। রাসূল ﷺ বলেন, ‘‘আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে একশ’ বার ক্ষমাপ্রার্থনা করে থাকি।’’ (সহীহ মুসলিম, হা/৭০৩৩; আবু দাউদ, হা/১৫১৭)
অশ্লীল কাজ করত :
وَاِذَا فَعَلُوْا فَاحِشَةً قَالُوْا وَجَدْنَا عَلَيْهَاۤ اٰبَآءَنَا وَاللهُ اَمَرَنَا بِهَاؕ قُلْ اِنَّ اللهَ لَا يَأْمُرُ بِالْفَحْشَآءِؕ اَتَقُوْلُوْنَ عَلَى اللهِ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ
যখন তারা কোন অশ্লীল আচরণ করে তখন বলে, আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে এ (আমলের) উপর পেয়েছি; আর আল্লাহও আমাদেরকে এটা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। বলো, আল্লাহ অশ্লীল আচরণের নির্দেশ দেন না। তোমরা কি আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কিছু বলছ, যা তোমরা জান না? (সূরা আ‘রাফ- ২৮)
হাততালি ও শিস দেয়া ছিল তাদের ইবাদাত :
وَمَا كَانَ صَلَاتُهُمْ عِنْدَ الْبَيْتِ اِلَّا مُكَآءً وَّتَصْدِيَةًؕ فَذُوْقُوا الْعَذَابَ بِمَا كُنْتُمْ تَكْفُرُوْنَ
কা‘বা ঘরের নিকট শুধু শিস ও হাততালি দেয়াই ছিল তাদের সালাত; সুতরাং তোমরা তোমাদের কুফরীর জন্য শাস্তি ভোগ করো। (সূরা আনফাল- ৩৫)
তারা সন্তান হত্যা করত :
وَكَذٰلِكَ زَيَّنَ لِكَثِيْرٍ مِّنَ الْمُشْرِكِيْنَ قَتْلَ اَوْلَادِهِمْ شُرَكَآؤُهُمْ لِيُرْدُوْهُمْ وَلِيَلْبِسُوْا عَلَيْهِمْ دِيْنَهُمْؕ وَلَوْ شَآءَ اللهُ مَا فَعَلُوْهُ فَذَرْهُمْ وَمَا يَفْتَرُوْنَ
এভাবে তাদের দেবতারা বহু মুশরিকদের দৃষ্টিতে তাদের সন্তানদের হত্যাকে শোভন করে দিয়েছে- তাদের নিজেদের ধ্বংস সাধনের জন্য এবং তাদের ধর্ম সম্বন্ধে তাদের বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য; তবে আল্লাহ ইচ্ছা করলে তারা এসব করত না। সুতরাং তাদেরকে তাদের মিথ্যা নিয়ে থাকতে দাও। (সূরা আন‘আম- ১৩৭)
قَدْ خَسِرَ الَّذِيْنَ قَتَلُوْاۤ اَوْلَادَهُمْ سَفَهًا ۢبِغَيْرِ عِلْمٍ وَّحَرَّمُوْا مَا رَزَقَهُمُ اللهُ افْتِرَآءً عَلَى اللهِؕ قَدْ ضَلُّوْا وَمَا كَانُوْا مُهْتَدِيْنَ
যারা নির্বুদ্ধিতার দরুন ও অজ্ঞতাবশত নিজেদের সন্তানদেরকে হত্যা করে এবং আল্লাহর সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করার উদ্দেশ্যে আল্লাহ প্রদত্ত জীবিকাকে নিষিদ্ধ করে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অবশ্যই তারা বিপথগামী হয়েছে; আর তারা সৎপথপ্রাপ্তও ছিল না। (সূরা আন‘আম- ১৪০)
وَاِذَا الْمَوْءُوْدَةُ سُئِلَتْ – بِاَيِّ ذَنْۢبٍ قُتِلَتْ
যখন জীবন্ত কবর দেয়া কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে, তাকে কী অপরাধে হত্যা করা হয়েছিল? (সূরা তাকভীর- ৮, ৯)
হালাল মাসকে হারাম ও হারাম মাসকে হালাল করে নিত :
اِنَّمَا النَّسِيْٓءُ زِيَادَةٌ فِى الْكُفْرِ يُضَلُّ بِهِ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا يُحِلُّوْنَهٗ عَامًا وَّيُحَرِّمُوْنَهٗ عَامًا لِّيُوَاطِئُوْا عِدَّةَ مَا حَرَّمَ اللهُ فَيُحِلُّوْا مَا حَرَّمَ اللهُؕ زُيِّنَ لَهُمْ سُوْٓءُ اَعْمَالِهِمْؕ وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الْكَافِرِيْنَ
মাসকে পিছিয়ে দেয়া তাদের কুফরীকেই বৃদ্ধি করে, যা দ্বারা কাফিরদেরকে বিভ্রান্ত করা হয়। তারা তাকে কোন বছর বৈধ করে এবং কোন বছর অবৈধ করে, যাতে তারা আল্লাহ যেগুলোকে নিষিদ্ধ করেছেন সেগুলোর গণনা পূর্ণ করতে পারে এবং আল্লাহ যা হারাম করেছেন তা হালাল করতে পারে। তাদের মন্দকাজগুলো তাদের জন্য শোভনীয় করা হয়েছে; আর আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে সৎপথ প্রদর্শন করেন না। (সূরা তাওবা- ৩৭)
মক্কার কাফিররা কোনভাবেই ঈমান আনতে চাইত না :
وَلَوْ اَنَّنَا نَزَّلْنَاۤ اِلَيْهِمُ الْمَلَآئِكَةَ وَكَلَّمَهُمُ الْمَوْتٰى وَحَشَرْنَا عَلَيْهِمْ كُلَّ شَيْءٍ قُبُلًا مَّا كَانُوْا لِيُؤْمِنُوْاۤ اِلَّاۤ اَنْ يَّشَآءَ اللهُ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَهُمْ يَجْهَلُوْنَ
আমি তাদের নিকট ফেরেশতা প্রেরণ করলেও এবং মৃতরা তাদের সাথে কথা বললেও অথবা সকল বস্তুকে তাদের সম্মুখে হাজির করলেও যদি আল্লাহ ইচ্ছা না করেন তবে তারা ঈমান আনবে না, কিন্তু তাদের অধিকাংশই অজ্ঞ। (সূরা আন‘আম- ১১১)
নিদর্শন দেখে ঈমান আনার জন্য কসম খেত :
وَاَقْسَمُوْا بِاللهِ جَهْدَ اَيْمَانِهِمْ لَئِنْ جَآءَتْهُمْ اٰيَةٌ لَّيُؤْمِنُنَّ بِهَاؕ قُلْ اِنَّمَا الْاٰيَاتُ عِنْدَ اللهِ وَمَا يُشْعِرُكُمْ اَنَّهَاۤ اِذَا جَآءَتْ لَا يُؤْمِنُوْنَ
তারা আল্লাহর নামে কঠিন শপথ করে বলে, তাদের নিকট যদি কোন নিদর্শন আসত তবে অবশ্যই তারা তাতে ঈমান আনত। (তাদেরকে) বলো, নিদর্শন তো কেবল আল্লাহর ইচ্ছাধীন। আর কিসে তোমাকে জানাবে যে, তাদের নিকট নিদর্শন আসলেও তারা যে ঈমান আনবে না। (সূরা আন‘আম- ১০৯)
ব্যাখ্যা : কাফিররা বলতে লাগল, হে মুহাম্মাদ! তুমি বলে থাক মূসা (আঃ) লাঠি দ্বারা পাথরের উপর আঘাত করলে বারটি ঝর্ণা প্রবাহিত হয়েছিল। ঈসা (আঃ) ফুঁ দিয়ে মৃতকে জীবিত করতেন। সুতরাং তুমিও যদি অনুরূপ কোন মু‘জিযা দেখাতে পার, তবে আমরা ঈমান আনব। রাসূল ﷺ বললেন, সত্যিই কি তাহলে ঈমান আনবে? তখন তারা কসম করে প্রতিশ্রুতি দিল। অতঃপর যখন রাসূল ﷺ দু‘আ করতে উদ্যত হলেন তখন জিবরাইল (আঃ) বললেন, এ মু‘জিযা না মানলে তারা সবাই ধ্বংস হয়ে যাবে। তখন এ প্রেক্ষাপটে উক্ত আয়াতটি নাযিল হয়।
আসলে তারা কোন নিদর্শনের প্রতিই ঈমান আনত না :
وَلَوْ اَنَّ قُرْاٰنًا سُيِّرَتْ بِهِ الْجِبَالُ اَوْ قُطِّعَتْ بِهِ الْاَرْضُ اَوْ كُلِّمَ بِهِ الْمَوْتٰىؕ بَلْ لِّلّٰهِ الْاَمْرُ جَمِيْعًا
যদি কোন কুরআন এমন হতো, যার দ্বারা পর্বতকে গতিশীল করা যেত অথবা পৃথিবীকে বিদীর্ণ করা যেত অথবা মৃতের সাথে কথা বলা যেত (তবুও তারা তাতে বিশ্বাস করত না।) সমস্ত বিষয়ই আল্লাহর ইচ্ছাধীন। (সূরা রা‘দ- ৩১)
وَمِنْهُمْ مَنْ يَّسْتَمِعُ اِلَيْكَۚ وَجَعَلْنَا عَلٰى قُلُوْبِهِمْ اَكِنَّةً اَنْ يَّفْقَهُوْهُ وَفِۤىْ اٰذَانِهِمْ وَقْرًاؕ وَاِنْ يَّرَوْا كُلَّ اٰيَةٍ لَّا يُؤْمِنُوْا بِهَاؕ حَتّٰۤى اِذَا جَآءُوْكَ يُجَادِلُوْنَكَ يَقُوْلُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اِنْ هٰذَاۤ اِلَّاۤ اَسَاطِيْرُ الْاَوَّلِيْنَ
তাদের মধ্যে কতক লোক এমনও আছে, যারা তোমার দিকে কান পেতে রাখে। কিন্তু আমি তাদের অন্তরের উপর আবরণ সৃষ্টি করে দিয়েছি, যেন তারা তা উপলদ্ধি করতে না পারে। তাদেরকে বধির করেছি, ফলে সমস্ত নিদর্শন প্রত্যক্ষ করলেও তারা তাতে ঈমান আনবে না। সুতরাং তারা যখন তোমার নিকট উপস্থিত হয়ে বিতর্কে লিপ্ত হয় তখন কাফিররা বলে, ‘এটা তো পূর্ববর্তীদের উপকথা ব্যতীত আর কিছুই নয়।’ (সূরা আন‘আম- ২৫)
তারা সবসময় নিদর্শনকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করত :
وَلَقَدْ ضَرَبْنَا لِلنَّاسِ فِيْ هٰذَا الْقُرْاٰنِ مِنْ كُلِّ مَثَلٍؕ وَلَئِنْ جِئْتَهُمْ بِاٰيَةٍ لَّيَقُوْلَنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اِنْ اَنْتُمْ اِلَّا مُبْطِلُوْنَ
আমি এ কুরআনে মানুষের জন্য প্রত্যেক প্রকার উদাহরণ বর্ণনা করেছি। আপনি যদি তাদের কাছে কোন দৃষ্টান্ত নিয়ে আসেন, তবুও যারা কুফরী করেছে তারা অবশ্যই বলবে, তোমরা সবাই বাতিলপন্থী ছাড়া আর কিছুই নও। (সূরা রূম- ৫৮)
নিদর্শনকে যাদু মনে করত :
وَاِذَا رَاَوْا اٰيَةً يَّسْتَسْخِرُوْنَ – وَقَالُوْاۤ اِنْ هٰذَاۤ اِلَّا سِحْرٌ مُّبِيْنٌ
তারা কোন নিদর্শন দেখলে উপহাস করে এবং বলে, এটা তো প্রকাশ্য যাদু ব্যতীত আর কিছু নয়। (সূরা সাফফাত - ১৪, ১৫)
وَاِنْ يَّرَوْا اٰيَةً يُّعْرِضُوْا وَيَقُوْلُوْا سِحْرٌ مُّسْتَمِرٌّ
তারা কোন নিদর্শন দেখলে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে এটা তো পূর্ব হতে চলে আসা (বড় ধরনের) যাদু। (সূরা ক্বামার- ২)
যে নিদর্শনই আসুক তারা মুখ ফিরিয়ে নিত :
وَكَاَيِّنْ مِّنْ اٰيَةٍ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ يَمُرُّوْنَ عَلَيْهَا وَهُمْ عَنْهَا مُعْرِضُوْنَ
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে অনেক নিদর্শন রয়েছে। তারা এগুলো প্রত্যক্ষ করে, কিন্তু তারা এগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। (সূরা ইউসুফ- ১০৫)
وَمَا تَأْتِيْهِمْ مِّنْ اٰيَةٍ مِّنْ اٰيَاتِ رَبِّهِمْ اِلَّا كَانُوْا عَنْهَا مُعْرِضِيْنَ
তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলির যে কোন নিদর্শনই তাদের কাছে আসে, তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। (সূরা ইয়াসীন- ৪৬)
তারা কোন উপদেশ গ্রহণ করত না :
وَاِذَا ذُكِّرُوْا لَا يَذْكُرُوْنَ
যখন তাদেরকে উপদেশ দেয়া হয় তখন তারা তা গ্রহণ করে না। (সূরা সাফফাত- ১৩)
وَمَا يَأْتِيْهِمْ مِّنْ ذِكْرٍ مِّنَ الرَّحْمٰنِ مُحْدَثٍ اِلَّا كَانُوْا عَنْهُ مُعْرِضِيْنَ
যখনই তাদের কাছে দয়াময়ের নিকট হতে কোন নতুন উপদেশ আসে, তখনই তারা সেটা হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়। (সূরা শু‘আরা- ৫)
বিপদের সময় মুমিন হওয়ার ওয়াদা করত :
رَبَّنَا اكْشِفْ عَنَّا الْعَذَابَ اِنَّا مُؤْمِنُوْنَ – اَنّٰى لَهُمُ الذِّكْرٰى وَقَدْ جَآءَهُمْ رَسُوْلٌ مُّبِيْنٌ
(তারা বলবে) হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এই শাস্তি হতে মুক্তি দিন, আমরা ঈমান আনব। (এখন) তারা আর কী করে উপদেশ গ্রহণ করবে? তাদের নিকট তো এসেছিলেন স্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রদানকারী এক রাসূল। (সূরা দুখান- ১২, ১৩)
বিপদ সরে গেলে আবার আগের অবস্থায় ফিরে যেত :
ثُمَّ تَوَلَّوْا عَنْهُ وَقَالُوْا مُعَلَّمٌ مَّجْنُوْنٌ – اِنَّا كَاشِفُو الْعَذَابِ قَلِيْلًا اِنَّكُمْ عَآئِدُوْنَ
অতঃপর তারা তাকে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে বলে, সে তো শিখানো (বুলি বলছে) সে তো এক পাগল। আমি (যদি) তোমাদের শাস্তি কিছুকালের জন্য সরিয়ে দেই, তাহলে তোমরা পুনরায় তা-ই করবে। (সূরা দুখান- ১৪, ১৫)
তারা আযাবের ব্যাপারে তাড়াহুড়া করত :
وَيَسْتَعْجِلُوْنَكَ بِالْعَذَابِؕ وَلَوْلَاۤ اَجَلٌ مُّسَمًّى لَّجَآءَهُمُ الْعَذَابُؕ وَلَيَأْتِيَنَّهُمْ بَغْتَةً وَّهُمْ لَا يَشْعُرُوْنَ – يَسْتَعْجِلُوْنَكَ بِالْعَذَابِؕ وَاِنَّ جَهَنَّمَ لَمُحِيْطَةٌ ۢبِالْكَافِرِيْنَ
তারা তোমাকে শাস্তি ত্বরান্বিত করতে বলে। যদি নির্ধারিত কাল না থাকত, তবে অবশ্যই তাদের উপর শাস্তি এসে যেত। নিশ্চয় তাদের উপর শাস্তি আসবে আকস্মিকভাবে, তাদের অজ্ঞাতসারে। তারা তোমাকে শাস্তি ত্বরান্বিত করতে বলে, (জেনে রেখো) জাহান্নাম কাফিরদেরকে পরিবেষ্টন করবেই।
(সূরা আনকাবূত- ৫৩, ৫৪)
وَلَوْ يُعَجِّلُ اللهُ لِلنَّاسِ الشَّرَّ اسْتِعْجَالَهُمْ بِالْخَيْرِ لَقُضِيَ اِلَيْهِمْ اَجَلُهُمْ فَنَذَرُ الَّذِيْنَ لَا يَرْجُوْنَ لِقَآءَنَا فِيْ طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُوْنَ
আল্লাহ যদি মানুষের অকল্যাণ ত্বরান্বিত করতেন, যেভাবে তারা তাদের কল্যাণ ত্বরান্বিত করতে চায়, তবে অবশ্যই তাদের মৃত্যু ঘটত। সুতরাং যারা আমার সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না, তাদেরকে আমি তাদের অবাধ্যতায় উদভ্রান্তের ন্যায় ঘুরে বেড়াতে দেই। (সূরা ইউনুস- ১১)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ যখনই তাদেরকে সত্য অমান্য করার কারণে ভয় দেখাতেন তখনই তারা বলত, তুমি আল্লাহর যে শাস্তির হুমকি দিচ্ছ তা আসছে না কেন? তা আসতে দেরি হচ্ছে কেন? এরই উত্তরে বলা হচ্ছে, মানুষের প্রতি দয়া ও করুণা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে আল্লাহ যতটা দ্রুতগামী হন, তাদের পাপের দরুন তাদেরকে পাকড়াও করার ব্যাপারে ততটা তড়িৎ গতি অবলম্বন করেন না। মানুষ যতই অবাধ্যতা ও বিদ্রোহ করুক না কেন, তাদেরকে পাকড়াও করার আগে তিনি তাদেরকে সংশোধন হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ দেন। একের পর এক সতর্কবাণী পাঠান। অবশেষে যখন অবকাশ শেষ সীমায় উপনীত হয়, তখনই কর্মফল প্রদানের নীতি অবলম্বন করেন।
তারা গোপনে শলা-পরামর্শ করত :
اَ لَّذِيْنَ ظَلَمُوْا هَلْ هٰذَاۤ اِلَّا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ اَفَتَأْتُوْنَ السِّحْرَ وَاَنْتُمْ تُبْصِرُوْنَ
যারা যালিম তারা গোপনে পরামর্শ করে যে, ‘এ তো তোমাদের মতোই একজন মানুষ, তবুও কি তোমরা দেখেশুনে যাদুর কবলে পড়বে?’ (সূরা আম্বিয়া, ১-৩)
আল্লাহর নিয়ামত জানার পরও অস্বীকার করত :
يَعْرِفُوْنَ نِعْمَتَ اللهِ ثُمَّ يُنْكِرُوْنَهَا وَاَكْثَرُهُمُ الْكَافِرُوْنَ
তারা আল্লাহর নিয়ামত চিনতে পারে তারপরও সেগুলো অস্বীকার করে; আর তাদের অধিকাংশই কাফির। (সূরা নাহল- ৮৩)
ব্যাখ্যা : নিয়ামত অস্বীকার করা বলতে বুঝায়- নিয়ামতকে নিয়ামতদাতা ছাড়া অন্য কারো দান মনে করা, অন্য কারো কাছে নিয়ামত লাভের আশা করা এবং নিয়ামতের অপব্যবহার করা। মুশরিক, কাফির ও মুনাফিকরা জীবজন্তুর সৃষ্টির ব্যাপারে অন্যের হাত আছে বলে দাবী করত না। কিন্তু তারা আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে দেবতাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করত, তাদের জন্য মান্নত করত এবং তাদের কাছে প্রার্থনা করত। তাই আল্লাহর কাছে তাদের মৌখিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ সম্পূর্ণ অর্থহীন হয়ে পড়ত। এজন্যই আল্লাহ তাদেরকে অস্বীকারকারী ও অকৃতজ্ঞ বলে অভিহিত করেছেন।
অনেকে আল্লাহকেই অস্বীকার করত :
وَهُمْ يَكْفُرُوْنَ بِالرَّحْمٰنِؕ قُلْ هُوَ رَبِّيْ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَۚ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَاِلَيْهِ مَتَابِ
তারা দয়াময় (আল্লাহ) কে অস্বীকার করে। (হে নবী! তাদেরকে) বলে দাও, ‘তিনিই আমার প্রতিপালক; তিনি ব্যতীত অন্য কোন সত্য ইলাহ্ নেই। আমি তাঁরই উপর নির্ভর করি এবং আমার প্রত্যাবর্তন তাঁরই নিকট।’ (সূরা রা‘দ- ৩০)
তারা আল্লাহকে সিজদা করতে চাইত না :
وَاِذَا قِيْلَ لَهُمُ اسْجُدُوْا لِلرَّحْمٰنِ قَالُوْا وَمَا الرَّحْمٰنُۗ اَنَسْجُدُ لِمَا تَأْمُرُنَا وَزَادَهُمْ نُفُوْرًا
যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘রাহমান’-এর প্রতি সিজদাবনত হও। তখন তারা বলে, ‘রহমান’ আবার কে? তুমি কাউকে সিজদা করতে বললেই কি আমরা তাকে সিজদা করব?’ অতঃপর এতে তাদের বিমুখতাই বৃদ্ধি পায়। (সূরা ফুরক্বান- ৬০)
অনেকে আল্লাহর সাথে শিরক করত :
وَمَا يُؤْمِنُ اَ كْثَرُهُمْ بِاللهِ اِلَّا وَهُمْ مُّشْرِكُوْنَ
তাদের অধিকাংশ আল্লাহকে বিশ্বাস করে, কিন্তু তারা তাঁর সাথে শরীক স্থাপন করে। (সূরা ইউসুফ- ১০৬)
তাওহীদের কথা শুনলে তাদের মন সংকুচিত হয়ে যেত :
وَاِذَا ذُ كِرَ اللهُ وَحْدَهُ اشْمَاَزَّتْ قُلُوْبُ الَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ بِالْاٰخِرَةِۚ وَاِذَا ذُ كِرَ الَّذِيْنَ مِنْ دُوْنِهٖۤ اِذَا هُمْ يَسْتَبْشِرُوْنَ
যখন আল্লাহর একত্ববাদের কথা উল্লেখ করা হয় তখন যারা আখিরাতকে বিশ্বাস করে না তাদের অন্তর ঘৃণায় ভরে যায় এবং যখন আল্লাহর পরিবর্তে (তাদের দেবতাগুলোর কোন বিষয়) উল্লেখ করা হয় তখন তারা আনন্দিত হয়। (সূরা যুমার- ৪৫)
তারা তাওহীদের কথা মানতে চাইত না :
اِنَّهُمْ كَانُوْاۤ اِذَا قِيْلَ لَهُمْ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ يَسْتَكْبِرُوْنَ – وَيَقُوْلُوْنَ اَئِنَّا لَتَارِكُوْاۤ اٰلِهَتِنَا لِشَاعِرٍ مَّجْنُوْنٍ
তাদেরকে বলা হতো, আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য মা‘বুদ নেই, তখন তারা অহংকার করত এবং বলত, আমরা কি এক পাগল কবির কথায় আমাদের ইলাহদেরকে পরিত্যাগ করব? (সূরা সাফফাত- ৩৫, ৩৬)
وَاِذَا ذَ كَرْتَ رَبَّكَ فِى الْقُرْاٰنِ وَحْدَهٗ وَلَّوْا عَلٰۤى اَدْبَارِهِمْ نُفُوْرًا
যখন তুমি কুরআন হতে আল্লাহর একত্ববাদ সম্পর্কে (কোনকিছু) পাঠ কর, তখন তারা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে সরে পড়ে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৪৬)
তারা পরকালকে ভয় করত না :
كَلَّا بَلْ لَّا يَخَافُوْنَ الْاٰخِرَةَ
কখনো নয়, বরং তারা আদৌ আখিরাতের ভয় করে না। (সূরা মুদ্দাসসির- ৫৩)
নবী ﷺ এর দাওয়াতকে স্বার্থপরতা মনে করত :
وَانْطَلَقَ الْمَلَاُ مِنْهُمْ اَنِ امْشُوْا وَاصْبِرُوْا عَلٰۤى اٰلِهَتِكُمْۚ اِنَّ هٰذَا لَشَيْءٌ يُّرَادُ – مَا سَمِعْنَا بِهٰذَا فِى الْمِلَّةِ الْاٰخِرَةِ ۚ اِنْ هٰذَاۤ اِلَّا اخْتِلَاقٌ
তাদের নেতারা এ কথা বলে চলে যায় যে, তোমরা চলে যাও এবং নিজেদের উপাস্যদের ব্যাপারে ধৈর্যধারণ করো, নিশ্চয় এটা এক উদ্দেশ্যমূলক ব্যাপার। এরূপ কথা তো আমরা পূর্ববর্তী ধর্মে শুনিনি। এটা তো মনগড়া উক্তি ছাড়া আর কিছুই নয়। (সূরা সোয়াদ, ৬-৭)
ব্যাখ্যা : যতদিন পর্যন্ত মুহাম্মাদ ﷺ তাঁর জাতিকে আল্লাহর আয়াত শুনাতে শুরু করেননি ততদিন পর্যন্ত তারা তাকে ‘আল আমীন’ বা সত্যবাদী মনে করত এবং তাঁর সততা ও বিশ্বস্ততার উপর পূর্ণ আস্থা রাখত। কিন্তু যখনই তিনি তাদের কাছে আল্লাহর বাণী পৌঁছাতে শুরু করেন, তখন থেকেই তারা তাঁকে মিথ্যাবাদী বলতে শুরু করল। অথচ তাদের মধ্যে এমন একজনও ছিল না যে, ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাঁকে মিথ্যাবাদী বলার সাহস করতে পারত। কোন কট্টর বিরোধীও তাঁর বিরুদ্ধে কখনো এ ধরনের দোষারোপ করেনি যে, দুনিয়াবী ব্যাপারে তিনি কখনো মিথ্যা কথা বলেছেন। নবী হওয়ার কারণে এবং নবুওয়াতের দায়িত্ব পালন করার জন্যই তারা তাঁকে মিথ্যাচারে অভিযুক্ত করেছে।
নবী ﷺ কে কুরআন থেকে পৃথক করতে চাইত :
وَاِنْ كَادُوْا لَيَفْتِنُوْنَكَ عَنِ الَّذِيْۤ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ لِتَفْتَرِيَ عَلَيْنَا غَيْرَهٗۗ وَاِذًا لَّاتَّخَذُوْكَ خَلِيْلًا – وَلَوْلَاۤ اَنْ ثَبَّتْنَاكَ لَقَدْ كِدْتَّ تَرْكَنُ اِلَيْهِمْ شَيْئًا قَلِيْلًا
আমি তোমার প্রতি যা প্রত্যাদেশ করেছি তারা তা হতে পদস্খলন ঘটানোর চেষ্টা প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছিল, যাতে তুমি আমার সম্বন্ধে তার বিপরীত মিথ্যা উদ্ভাবন কর। (এতে যদি তারা সফল হতো) তবে তারা অবশ্যই তোমাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করত। আমি তোমাকে অবিচল না রাখলে তুমি তাদের দিকে প্রায় কিছুটা ঝুঁকে পড়তে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৭৩, ৭৪)
কুরআনকে বিশ্বাস করতে চাইত না :
وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَنْ نُّؤْمِنَ بِهٰذَا الْقُرْاٰنِ وَلَا بِالَّذِيْ بَيْنَ يَدَيْهِ
কাফিররা বলে, আমরা এ কুরআন কখনো বিশ্বাস করব না এবং এর পূর্ববর্তী কিতাবসমূহও না। (সূরা সাবা- ৩১)
কুরআন শুনলে পাশ কাটিয়ে চলে যেত :
وَاِذَا تُتْلٰى عَلَيْهِ اٰيَاتُنَا وَلّٰى مُسْتَكْبِرًا كَاَنْ لَّمْ يَسْمَعْهَا كَاَنَّ فِۤىْ اُذُنَيْهِ وَقْرًاۚ فَبَشِّرْهُ بِعَذَابٍ اَلِيْمٍ
যখন তার কাছে আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হয়, তখন সে অহংকারবশত এমনভাবে ফিরে যায়, যেন সে কিছু শুনতেই পায়নি; যেন তার কর্ণদ্বয়ের মধ্যে ছিপি রয়েছে। অতএব তাকে বেদনাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও। (সূরা লুক্বমান- ৭)
আল্লাহর নিদর্শন নিয়ে বিতর্ক করত :
اَلَمْ تَرَ اِلَى الَّذِيْنَ يُجَادِلُوْنَ فِۤيْ اٰيَاتِ اللهِؕ اَنّٰى يُصْرَفُوْنَ
(হে নবী!) তুমি কি তাদের (অবস্থার) দিকে লক্ষ্য করনি, যারা আল্লাহর নিদর্শনাবলি সম্পর্কে নানা বিতর্কে লিপ্ত হচ্ছে; (তুমি কি বলতে পার আসলে) তারা কোন দিকে ধাবিত হচ্ছে? (সূরা মু’মিন- ৬৯)
কোন আসমানী কিতাবই মানতে চাইত না :
وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَنْ نُّؤْمِنَ بِهٰذَا الْقُرْاٰنِ وَلَا بِالَّذِيْ بَيْنَ يَدَيْهِ
কাফিররা বলে, আমরা এ কুরআন কখনো বিশ্বাস করব না এবং এর পূর্ববর্তী কিতাবসমূহও না। (সূরা সাবা- ৩১)
অথচ কিতাব আসার আগে তা মানবে বলে কসম করত :
وَاِنْ كَانُوْا لَيَقُوْلُوْنَ – لَوْ اَنَّ عِنْدَنَا ذِكْرًا مِّنَ الْاَوَّلِيْنَ – لَكُنَّا عِبَادَ اللهِ الْمُخْلَصِيْنَ
কাফিররা বলত, যদি পূর্ববর্তীদের কিতাবের ন্যায় আমাদের কাছেও কোন কিতাব থাকত, তবে অবশ্যই আমরাও আল্লাহর খাঁটি বান্দা হয়ে যেতাম। (সূরা সাফফাত, ১৬৭-১৬৯)
তারা মিথ্যা কথা বলে বেড়াত :
وَتَصِفُ اَلْسِنَتُهُمُ الْكَذِبَ اَنَّ لَهُمُ الْحُسْنٰىؕ لَا جَرَمَ اَنَّ لَهُمُ النَّارَ وَاَنَّهُمْ مُّفْرَطُوْنَ
তাদের জিহবা এ মিথ্যা বর্ণনা করে যে, মঙ্গল কেবল তাদেরই জন্য। নিঃসন্দেহে তাদের জন্য রয়েছে অগ্নি এবং তাদেরকেই তাতে নিক্ষেপ করা হবে। (সূরা নাহল- ৬২)
তারা ছিল বিভ্রান্ত সম্প্রদায় :
اَمْ تَحْسَبُ اَنَّ اَكْثَرَهُمْ يَسْمَعُوْنَ اَوْ يَعْقِلُوْنَؕ اِنْ هُمْ اِلَّا كَالْاَنْعَامِ بَلْ هُمْ اَضَلُّ سَبِيْلًا
তুমি কি মনে কর যে, তাদের অধিকাংশ শুনে ও বুঝে? তারা তো পশুর মতোই, বরং তার চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট! (সূরা ফুরক্বান- ৪৪)
তারা নবী ﷺ এর দাওয়াতকে উন্নতির অন্তরায় মনে করত :
وَقَالُوْاۤ اِنْ نَّتَّبِعِ الْهُدٰى مَعَكَ نُتَخَطَّفْ مِنْ اَرْضِنَا
তারা বলে, আমরা যদি তোমার সাথে সৎপথ অনুসরণ করি তবে আমাদেরকে দেশ হতে উৎখাত করা হবে। (সূরা ক্বাসাস- ৫৭)
তারা বাপ-দাদার ধর্মত্যাগ করতে চাইত না :
وَاِذَا قِيْلَ لَهُمُ اتَّبِعُوْا مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ قَالُوْا بَلْ نَتَّبِعُ مَا وَجَدْنَا عَلَيْهِ اٰبَآءَنَاؕ اَوَلَوْ كَانَ الشَّيْطَانُ يَدْعُوْهُمْ اِلٰى عَذَابِ السَّعِيْرِ
যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তোমরা তার আনুগত্য করো তখন তারা বলে, বরং আমরা তো তার আনুগত্য করব, যার উপর আমাদের বাপ-দাদাদেরকে পেয়েছি। যদিও শয়তান তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তির দিকে আহবান করতে থাকে তবুও কি (তারা তাদের অনুসরণ করবে)? (সূরা লুক্বমান- ২১)
তারা মুমিনদেরকে নিয়ে ব্যঙ্গ করত :
اِنَّ الَّذِيْنَ اَجْرَمُوْا كَانُوْا مِنَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا يَضْحَكُوْنَ – وَاِذَا مَرُّوْا بِهِمْ يَتَغَامَزُوْنَ
যারা অপরাধী তারা মুমিনদেরকে উপহাস করত এবং তারা যখন তাদের নিকট দিয়ে যেত তখন চোখ টিপে কটাক্ষ করত। (সূরা মুতাফ্ফিফীন- ২৯, ৩০)
নবীর বিরোধিতা করার কারণে তাদের অন্তরে মোহর পড়ে গেছে :
وَجَعَلْنَا عَلٰى قُلُوْبِهِمْ اَكِنَّةً اَنْ يَّفْقَهُوْهُ وَفِۤيْ اٰذَانِهِمْ وَقْرًا
আমি তাদের অন্তরের উপর আবরণ তৈরি করে দিয়েছি, যেন তারা তা উপলব্ধি করতে না পারে এবং তাদেরকে বধির করে দিয়েছি। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৪৬)
তারা নবীকে না মানার কারণে শাস্তি পেয়েছে :
وَلَقَدْ جَآءَهُمْ رَسُوْلٌ مِّنْهُمْ فَكَذَّبُوْهُ فَاَخَذَهُمُ الْعَذَابُ وَهُمْ ظَالِمُوْنَ
তাদের নিকট তাদেরই মধ্য হতে এক রাসূল এসেছিল, কিন্তু তারা তাকে অস্বীকার করেছিল। ফলে সীমালঙ্ঘন করা অবস্থায় শাস্তি (মৃত্যু) তাদেরকে গ্রাস করল। (সূরা নাহল- ১১৩)
وَاِذَا فَعَلُوْا فَاحِشَةً قَالُوْا وَجَدْنَا عَلَيْهَاۤ اٰبَآءَنَا وَاللهُ اَمَرَنَا بِهَاؕ قُلْ اِنَّ اللهَ لَا يَأْمُرُ بِالْفَحْشَآءِؕ اَتَقُوْلُوْنَ عَلَى اللهِ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ
যখন তারা কোন অশ্লীল আচরণ করে তখন বলে, আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে এ (আমলের) উপর পেয়েছি; আর আল্লাহও আমাদেরকে এটা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। বলো, আল্লাহ অশ্লীল আচরণের নির্দেশ দেন না। তোমরা কি আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কিছু বলছ, যা তোমরা জান না? (সূরা আ‘রাফ- ২৮)
হাততালি ও শিস দেয়া ছিল তাদের ইবাদাত :
وَمَا كَانَ صَلَاتُهُمْ عِنْدَ الْبَيْتِ اِلَّا مُكَآءً وَّتَصْدِيَةًؕ فَذُوْقُوا الْعَذَابَ بِمَا كُنْتُمْ تَكْفُرُوْنَ
কা‘বা ঘরের নিকট শুধু শিস ও হাততালি দেয়াই ছিল তাদের সালাত; সুতরাং তোমরা তোমাদের কুফরীর জন্য শাস্তি ভোগ করো। (সূরা আনফাল- ৩৫)
তারা সন্তান হত্যা করত :
وَكَذٰلِكَ زَيَّنَ لِكَثِيْرٍ مِّنَ الْمُشْرِكِيْنَ قَتْلَ اَوْلَادِهِمْ شُرَكَآؤُهُمْ لِيُرْدُوْهُمْ وَلِيَلْبِسُوْا عَلَيْهِمْ دِيْنَهُمْؕ وَلَوْ شَآءَ اللهُ مَا فَعَلُوْهُ فَذَرْهُمْ وَمَا يَفْتَرُوْنَ
এভাবে তাদের দেবতারা বহু মুশরিকদের দৃষ্টিতে তাদের সন্তানদের হত্যাকে শোভন করে দিয়েছে- তাদের নিজেদের ধ্বংস সাধনের জন্য এবং তাদের ধর্ম সম্বন্ধে তাদের বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য; তবে আল্লাহ ইচ্ছা করলে তারা এসব করত না। সুতরাং তাদেরকে তাদের মিথ্যা নিয়ে থাকতে দাও। (সূরা আন‘আম- ১৩৭)
قَدْ خَسِرَ الَّذِيْنَ قَتَلُوْاۤ اَوْلَادَهُمْ سَفَهًا ۢبِغَيْرِ عِلْمٍ وَّحَرَّمُوْا مَا رَزَقَهُمُ اللهُ افْتِرَآءً عَلَى اللهِؕ قَدْ ضَلُّوْا وَمَا كَانُوْا مُهْتَدِيْنَ
যারা নির্বুদ্ধিতার দরুন ও অজ্ঞতাবশত নিজেদের সন্তানদেরকে হত্যা করে এবং আল্লাহর সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করার উদ্দেশ্যে আল্লাহ প্রদত্ত জীবিকাকে নিষিদ্ধ করে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অবশ্যই তারা বিপথগামী হয়েছে; আর তারা সৎপথপ্রাপ্তও ছিল না। (সূরা আন‘আম- ১৪০)
وَاِذَا الْمَوْءُوْدَةُ سُئِلَتْ – بِاَيِّ ذَنْۢبٍ قُتِلَتْ
যখন জীবন্ত কবর দেয়া কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে, তাকে কী অপরাধে হত্যা করা হয়েছিল? (সূরা তাকভীর- ৮, ৯)
হালাল মাসকে হারাম ও হারাম মাসকে হালাল করে নিত :
اِنَّمَا النَّسِيْٓءُ زِيَادَةٌ فِى الْكُفْرِ يُضَلُّ بِهِ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا يُحِلُّوْنَهٗ عَامًا وَّيُحَرِّمُوْنَهٗ عَامًا لِّيُوَاطِئُوْا عِدَّةَ مَا حَرَّمَ اللهُ فَيُحِلُّوْا مَا حَرَّمَ اللهُؕ زُيِّنَ لَهُمْ سُوْٓءُ اَعْمَالِهِمْؕ وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الْكَافِرِيْنَ
মাসকে পিছিয়ে দেয়া তাদের কুফরীকেই বৃদ্ধি করে, যা দ্বারা কাফিরদেরকে বিভ্রান্ত করা হয়। তারা তাকে কোন বছর বৈধ করে এবং কোন বছর অবৈধ করে, যাতে তারা আল্লাহ যেগুলোকে নিষিদ্ধ করেছেন সেগুলোর গণনা পূর্ণ করতে পারে এবং আল্লাহ যা হারাম করেছেন তা হালাল করতে পারে। তাদের মন্দকাজগুলো তাদের জন্য শোভনীয় করা হয়েছে; আর আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে সৎপথ প্রদর্শন করেন না। (সূরা তাওবা- ৩৭)
মক্কার কাফিররা কোনভাবেই ঈমান আনতে চাইত না :
وَلَوْ اَنَّنَا نَزَّلْنَاۤ اِلَيْهِمُ الْمَلَآئِكَةَ وَكَلَّمَهُمُ الْمَوْتٰى وَحَشَرْنَا عَلَيْهِمْ كُلَّ شَيْءٍ قُبُلًا مَّا كَانُوْا لِيُؤْمِنُوْاۤ اِلَّاۤ اَنْ يَّشَآءَ اللهُ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَهُمْ يَجْهَلُوْنَ
আমি তাদের নিকট ফেরেশতা প্রেরণ করলেও এবং মৃতরা তাদের সাথে কথা বললেও অথবা সকল বস্তুকে তাদের সম্মুখে হাজির করলেও যদি আল্লাহ ইচ্ছা না করেন তবে তারা ঈমান আনবে না, কিন্তু তাদের অধিকাংশই অজ্ঞ। (সূরা আন‘আম- ১১১)
নিদর্শন দেখে ঈমান আনার জন্য কসম খেত :
وَاَقْسَمُوْا بِاللهِ جَهْدَ اَيْمَانِهِمْ لَئِنْ جَآءَتْهُمْ اٰيَةٌ لَّيُؤْمِنُنَّ بِهَاؕ قُلْ اِنَّمَا الْاٰيَاتُ عِنْدَ اللهِ وَمَا يُشْعِرُكُمْ اَنَّهَاۤ اِذَا جَآءَتْ لَا يُؤْمِنُوْنَ
তারা আল্লাহর নামে কঠিন শপথ করে বলে, তাদের নিকট যদি কোন নিদর্শন আসত তবে অবশ্যই তারা তাতে ঈমান আনত। (তাদেরকে) বলো, নিদর্শন তো কেবল আল্লাহর ইচ্ছাধীন। আর কিসে তোমাকে জানাবে যে, তাদের নিকট নিদর্শন আসলেও তারা যে ঈমান আনবে না। (সূরা আন‘আম- ১০৯)
ব্যাখ্যা : কাফিররা বলতে লাগল, হে মুহাম্মাদ! তুমি বলে থাক মূসা (আঃ) লাঠি দ্বারা পাথরের উপর আঘাত করলে বারটি ঝর্ণা প্রবাহিত হয়েছিল। ঈসা (আঃ) ফুঁ দিয়ে মৃতকে জীবিত করতেন। সুতরাং তুমিও যদি অনুরূপ কোন মু‘জিযা দেখাতে পার, তবে আমরা ঈমান আনব। রাসূল ﷺ বললেন, সত্যিই কি তাহলে ঈমান আনবে? তখন তারা কসম করে প্রতিশ্রুতি দিল। অতঃপর যখন রাসূল ﷺ দু‘আ করতে উদ্যত হলেন তখন জিবরাইল (আঃ) বললেন, এ মু‘জিযা না মানলে তারা সবাই ধ্বংস হয়ে যাবে। তখন এ প্রেক্ষাপটে উক্ত আয়াতটি নাযিল হয়।
আসলে তারা কোন নিদর্শনের প্রতিই ঈমান আনত না :
وَلَوْ اَنَّ قُرْاٰنًا سُيِّرَتْ بِهِ الْجِبَالُ اَوْ قُطِّعَتْ بِهِ الْاَرْضُ اَوْ كُلِّمَ بِهِ الْمَوْتٰىؕ بَلْ لِّلّٰهِ الْاَمْرُ جَمِيْعًا
যদি কোন কুরআন এমন হতো, যার দ্বারা পর্বতকে গতিশীল করা যেত অথবা পৃথিবীকে বিদীর্ণ করা যেত অথবা মৃতের সাথে কথা বলা যেত (তবুও তারা তাতে বিশ্বাস করত না।) সমস্ত বিষয়ই আল্লাহর ইচ্ছাধীন। (সূরা রা‘দ- ৩১)
وَمِنْهُمْ مَنْ يَّسْتَمِعُ اِلَيْكَۚ وَجَعَلْنَا عَلٰى قُلُوْبِهِمْ اَكِنَّةً اَنْ يَّفْقَهُوْهُ وَفِۤىْ اٰذَانِهِمْ وَقْرًاؕ وَاِنْ يَّرَوْا كُلَّ اٰيَةٍ لَّا يُؤْمِنُوْا بِهَاؕ حَتّٰۤى اِذَا جَآءُوْكَ يُجَادِلُوْنَكَ يَقُوْلُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اِنْ هٰذَاۤ اِلَّاۤ اَسَاطِيْرُ الْاَوَّلِيْنَ
তাদের মধ্যে কতক লোক এমনও আছে, যারা তোমার দিকে কান পেতে রাখে। কিন্তু আমি তাদের অন্তরের উপর আবরণ সৃষ্টি করে দিয়েছি, যেন তারা তা উপলদ্ধি করতে না পারে। তাদেরকে বধির করেছি, ফলে সমস্ত নিদর্শন প্রত্যক্ষ করলেও তারা তাতে ঈমান আনবে না। সুতরাং তারা যখন তোমার নিকট উপস্থিত হয়ে বিতর্কে লিপ্ত হয় তখন কাফিররা বলে, ‘এটা তো পূর্ববর্তীদের উপকথা ব্যতীত আর কিছুই নয়।’ (সূরা আন‘আম- ২৫)
তারা সবসময় নিদর্শনকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করত :
وَلَقَدْ ضَرَبْنَا لِلنَّاسِ فِيْ هٰذَا الْقُرْاٰنِ مِنْ كُلِّ مَثَلٍؕ وَلَئِنْ جِئْتَهُمْ بِاٰيَةٍ لَّيَقُوْلَنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اِنْ اَنْتُمْ اِلَّا مُبْطِلُوْنَ
আমি এ কুরআনে মানুষের জন্য প্রত্যেক প্রকার উদাহরণ বর্ণনা করেছি। আপনি যদি তাদের কাছে কোন দৃষ্টান্ত নিয়ে আসেন, তবুও যারা কুফরী করেছে তারা অবশ্যই বলবে, তোমরা সবাই বাতিলপন্থী ছাড়া আর কিছুই নও। (সূরা রূম- ৫৮)
নিদর্শনকে যাদু মনে করত :
وَاِذَا رَاَوْا اٰيَةً يَّسْتَسْخِرُوْنَ – وَقَالُوْاۤ اِنْ هٰذَاۤ اِلَّا سِحْرٌ مُّبِيْنٌ
তারা কোন নিদর্শন দেখলে উপহাস করে এবং বলে, এটা তো প্রকাশ্য যাদু ব্যতীত আর কিছু নয়। (সূরা সাফফাত - ১৪, ১৫)
وَاِنْ يَّرَوْا اٰيَةً يُّعْرِضُوْا وَيَقُوْلُوْا سِحْرٌ مُّسْتَمِرٌّ
তারা কোন নিদর্শন দেখলে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে এটা তো পূর্ব হতে চলে আসা (বড় ধরনের) যাদু। (সূরা ক্বামার- ২)
যে নিদর্শনই আসুক তারা মুখ ফিরিয়ে নিত :
وَكَاَيِّنْ مِّنْ اٰيَةٍ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ يَمُرُّوْنَ عَلَيْهَا وَهُمْ عَنْهَا مُعْرِضُوْنَ
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে অনেক নিদর্শন রয়েছে। তারা এগুলো প্রত্যক্ষ করে, কিন্তু তারা এগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। (সূরা ইউসুফ- ১০৫)
وَمَا تَأْتِيْهِمْ مِّنْ اٰيَةٍ مِّنْ اٰيَاتِ رَبِّهِمْ اِلَّا كَانُوْا عَنْهَا مُعْرِضِيْنَ
তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলির যে কোন নিদর্শনই তাদের কাছে আসে, তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। (সূরা ইয়াসীন- ৪৬)
তারা কোন উপদেশ গ্রহণ করত না :
وَاِذَا ذُكِّرُوْا لَا يَذْكُرُوْنَ
যখন তাদেরকে উপদেশ দেয়া হয় তখন তারা তা গ্রহণ করে না। (সূরা সাফফাত- ১৩)
وَمَا يَأْتِيْهِمْ مِّنْ ذِكْرٍ مِّنَ الرَّحْمٰنِ مُحْدَثٍ اِلَّا كَانُوْا عَنْهُ مُعْرِضِيْنَ
যখনই তাদের কাছে দয়াময়ের নিকট হতে কোন নতুন উপদেশ আসে, তখনই তারা সেটা হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়। (সূরা শু‘আরা- ৫)
বিপদের সময় মুমিন হওয়ার ওয়াদা করত :
رَبَّنَا اكْشِفْ عَنَّا الْعَذَابَ اِنَّا مُؤْمِنُوْنَ – اَنّٰى لَهُمُ الذِّكْرٰى وَقَدْ جَآءَهُمْ رَسُوْلٌ مُّبِيْنٌ
(তারা বলবে) হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এই শাস্তি হতে মুক্তি দিন, আমরা ঈমান আনব। (এখন) তারা আর কী করে উপদেশ গ্রহণ করবে? তাদের নিকট তো এসেছিলেন স্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রদানকারী এক রাসূল। (সূরা দুখান- ১২, ১৩)
বিপদ সরে গেলে আবার আগের অবস্থায় ফিরে যেত :
ثُمَّ تَوَلَّوْا عَنْهُ وَقَالُوْا مُعَلَّمٌ مَّجْنُوْنٌ – اِنَّا كَاشِفُو الْعَذَابِ قَلِيْلًا اِنَّكُمْ عَآئِدُوْنَ
অতঃপর তারা তাকে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে বলে, সে তো শিখানো (বুলি বলছে) সে তো এক পাগল। আমি (যদি) তোমাদের শাস্তি কিছুকালের জন্য সরিয়ে দেই, তাহলে তোমরা পুনরায় তা-ই করবে। (সূরা দুখান- ১৪, ১৫)
তারা আযাবের ব্যাপারে তাড়াহুড়া করত :
وَيَسْتَعْجِلُوْنَكَ بِالْعَذَابِؕ وَلَوْلَاۤ اَجَلٌ مُّسَمًّى لَّجَآءَهُمُ الْعَذَابُؕ وَلَيَأْتِيَنَّهُمْ بَغْتَةً وَّهُمْ لَا يَشْعُرُوْنَ – يَسْتَعْجِلُوْنَكَ بِالْعَذَابِؕ وَاِنَّ جَهَنَّمَ لَمُحِيْطَةٌ ۢبِالْكَافِرِيْنَ
তারা তোমাকে শাস্তি ত্বরান্বিত করতে বলে। যদি নির্ধারিত কাল না থাকত, তবে অবশ্যই তাদের উপর শাস্তি এসে যেত। নিশ্চয় তাদের উপর শাস্তি আসবে আকস্মিকভাবে, তাদের অজ্ঞাতসারে। তারা তোমাকে শাস্তি ত্বরান্বিত করতে বলে, (জেনে রেখো) জাহান্নাম কাফিরদেরকে পরিবেষ্টন করবেই।
(সূরা আনকাবূত- ৫৩, ৫৪)
وَلَوْ يُعَجِّلُ اللهُ لِلنَّاسِ الشَّرَّ اسْتِعْجَالَهُمْ بِالْخَيْرِ لَقُضِيَ اِلَيْهِمْ اَجَلُهُمْ فَنَذَرُ الَّذِيْنَ لَا يَرْجُوْنَ لِقَآءَنَا فِيْ طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُوْنَ
আল্লাহ যদি মানুষের অকল্যাণ ত্বরান্বিত করতেন, যেভাবে তারা তাদের কল্যাণ ত্বরান্বিত করতে চায়, তবে অবশ্যই তাদের মৃত্যু ঘটত। সুতরাং যারা আমার সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না, তাদেরকে আমি তাদের অবাধ্যতায় উদভ্রান্তের ন্যায় ঘুরে বেড়াতে দেই। (সূরা ইউনুস- ১১)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ যখনই তাদেরকে সত্য অমান্য করার কারণে ভয় দেখাতেন তখনই তারা বলত, তুমি আল্লাহর যে শাস্তির হুমকি দিচ্ছ তা আসছে না কেন? তা আসতে দেরি হচ্ছে কেন? এরই উত্তরে বলা হচ্ছে, মানুষের প্রতি দয়া ও করুণা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে আল্লাহ যতটা দ্রুতগামী হন, তাদের পাপের দরুন তাদেরকে পাকড়াও করার ব্যাপারে ততটা তড়িৎ গতি অবলম্বন করেন না। মানুষ যতই অবাধ্যতা ও বিদ্রোহ করুক না কেন, তাদেরকে পাকড়াও করার আগে তিনি তাদেরকে সংশোধন হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ দেন। একের পর এক সতর্কবাণী পাঠান। অবশেষে যখন অবকাশ শেষ সীমায় উপনীত হয়, তখনই কর্মফল প্রদানের নীতি অবলম্বন করেন।
তারা গোপনে শলা-পরামর্শ করত :
اَ لَّذِيْنَ ظَلَمُوْا هَلْ هٰذَاۤ اِلَّا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ اَفَتَأْتُوْنَ السِّحْرَ وَاَنْتُمْ تُبْصِرُوْنَ
যারা যালিম তারা গোপনে পরামর্শ করে যে, ‘এ তো তোমাদের মতোই একজন মানুষ, তবুও কি তোমরা দেখেশুনে যাদুর কবলে পড়বে?’ (সূরা আম্বিয়া, ১-৩)
আল্লাহর নিয়ামত জানার পরও অস্বীকার করত :
يَعْرِفُوْنَ نِعْمَتَ اللهِ ثُمَّ يُنْكِرُوْنَهَا وَاَكْثَرُهُمُ الْكَافِرُوْنَ
তারা আল্লাহর নিয়ামত চিনতে পারে তারপরও সেগুলো অস্বীকার করে; আর তাদের অধিকাংশই কাফির। (সূরা নাহল- ৮৩)
ব্যাখ্যা : নিয়ামত অস্বীকার করা বলতে বুঝায়- নিয়ামতকে নিয়ামতদাতা ছাড়া অন্য কারো দান মনে করা, অন্য কারো কাছে নিয়ামত লাভের আশা করা এবং নিয়ামতের অপব্যবহার করা। মুশরিক, কাফির ও মুনাফিকরা জীবজন্তুর সৃষ্টির ব্যাপারে অন্যের হাত আছে বলে দাবী করত না। কিন্তু তারা আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে দেবতাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করত, তাদের জন্য মান্নত করত এবং তাদের কাছে প্রার্থনা করত। তাই আল্লাহর কাছে তাদের মৌখিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ সম্পূর্ণ অর্থহীন হয়ে পড়ত। এজন্যই আল্লাহ তাদেরকে অস্বীকারকারী ও অকৃতজ্ঞ বলে অভিহিত করেছেন।
অনেকে আল্লাহকেই অস্বীকার করত :
وَهُمْ يَكْفُرُوْنَ بِالرَّحْمٰنِؕ قُلْ هُوَ رَبِّيْ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَۚ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَاِلَيْهِ مَتَابِ
তারা দয়াময় (আল্লাহ) কে অস্বীকার করে। (হে নবী! তাদেরকে) বলে দাও, ‘তিনিই আমার প্রতিপালক; তিনি ব্যতীত অন্য কোন সত্য ইলাহ্ নেই। আমি তাঁরই উপর নির্ভর করি এবং আমার প্রত্যাবর্তন তাঁরই নিকট।’ (সূরা রা‘দ- ৩০)
তারা আল্লাহকে সিজদা করতে চাইত না :
وَاِذَا قِيْلَ لَهُمُ اسْجُدُوْا لِلرَّحْمٰنِ قَالُوْا وَمَا الرَّحْمٰنُۗ اَنَسْجُدُ لِمَا تَأْمُرُنَا وَزَادَهُمْ نُفُوْرًا
যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘রাহমান’-এর প্রতি সিজদাবনত হও। তখন তারা বলে, ‘রহমান’ আবার কে? তুমি কাউকে সিজদা করতে বললেই কি আমরা তাকে সিজদা করব?’ অতঃপর এতে তাদের বিমুখতাই বৃদ্ধি পায়। (সূরা ফুরক্বান- ৬০)
অনেকে আল্লাহর সাথে শিরক করত :
وَمَا يُؤْمِنُ اَ كْثَرُهُمْ بِاللهِ اِلَّا وَهُمْ مُّشْرِكُوْنَ
তাদের অধিকাংশ আল্লাহকে বিশ্বাস করে, কিন্তু তারা তাঁর সাথে শরীক স্থাপন করে। (সূরা ইউসুফ- ১০৬)
তাওহীদের কথা শুনলে তাদের মন সংকুচিত হয়ে যেত :
وَاِذَا ذُ كِرَ اللهُ وَحْدَهُ اشْمَاَزَّتْ قُلُوْبُ الَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ بِالْاٰخِرَةِۚ وَاِذَا ذُ كِرَ الَّذِيْنَ مِنْ دُوْنِهٖۤ اِذَا هُمْ يَسْتَبْشِرُوْنَ
যখন আল্লাহর একত্ববাদের কথা উল্লেখ করা হয় তখন যারা আখিরাতকে বিশ্বাস করে না তাদের অন্তর ঘৃণায় ভরে যায় এবং যখন আল্লাহর পরিবর্তে (তাদের দেবতাগুলোর কোন বিষয়) উল্লেখ করা হয় তখন তারা আনন্দিত হয়। (সূরা যুমার- ৪৫)
তারা তাওহীদের কথা মানতে চাইত না :
اِنَّهُمْ كَانُوْاۤ اِذَا قِيْلَ لَهُمْ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ يَسْتَكْبِرُوْنَ – وَيَقُوْلُوْنَ اَئِنَّا لَتَارِكُوْاۤ اٰلِهَتِنَا لِشَاعِرٍ مَّجْنُوْنٍ
তাদেরকে বলা হতো, আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য মা‘বুদ নেই, তখন তারা অহংকার করত এবং বলত, আমরা কি এক পাগল কবির কথায় আমাদের ইলাহদেরকে পরিত্যাগ করব? (সূরা সাফফাত- ৩৫, ৩৬)
وَاِذَا ذَ كَرْتَ رَبَّكَ فِى الْقُرْاٰنِ وَحْدَهٗ وَلَّوْا عَلٰۤى اَدْبَارِهِمْ نُفُوْرًا
যখন তুমি কুরআন হতে আল্লাহর একত্ববাদ সম্পর্কে (কোনকিছু) পাঠ কর, তখন তারা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে সরে পড়ে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৪৬)
তারা পরকালকে ভয় করত না :
كَلَّا بَلْ لَّا يَخَافُوْنَ الْاٰخِرَةَ
কখনো নয়, বরং তারা আদৌ আখিরাতের ভয় করে না। (সূরা মুদ্দাসসির- ৫৩)
নবী ﷺ এর দাওয়াতকে স্বার্থপরতা মনে করত :
وَانْطَلَقَ الْمَلَاُ مِنْهُمْ اَنِ امْشُوْا وَاصْبِرُوْا عَلٰۤى اٰلِهَتِكُمْۚ اِنَّ هٰذَا لَشَيْءٌ يُّرَادُ – مَا سَمِعْنَا بِهٰذَا فِى الْمِلَّةِ الْاٰخِرَةِ ۚ اِنْ هٰذَاۤ اِلَّا اخْتِلَاقٌ
তাদের নেতারা এ কথা বলে চলে যায় যে, তোমরা চলে যাও এবং নিজেদের উপাস্যদের ব্যাপারে ধৈর্যধারণ করো, নিশ্চয় এটা এক উদ্দেশ্যমূলক ব্যাপার। এরূপ কথা তো আমরা পূর্ববর্তী ধর্মে শুনিনি। এটা তো মনগড়া উক্তি ছাড়া আর কিছুই নয়। (সূরা সোয়াদ, ৬-৭)
ব্যাখ্যা : যতদিন পর্যন্ত মুহাম্মাদ ﷺ তাঁর জাতিকে আল্লাহর আয়াত শুনাতে শুরু করেননি ততদিন পর্যন্ত তারা তাকে ‘আল আমীন’ বা সত্যবাদী মনে করত এবং তাঁর সততা ও বিশ্বস্ততার উপর পূর্ণ আস্থা রাখত। কিন্তু যখনই তিনি তাদের কাছে আল্লাহর বাণী পৌঁছাতে শুরু করেন, তখন থেকেই তারা তাঁকে মিথ্যাবাদী বলতে শুরু করল। অথচ তাদের মধ্যে এমন একজনও ছিল না যে, ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাঁকে মিথ্যাবাদী বলার সাহস করতে পারত। কোন কট্টর বিরোধীও তাঁর বিরুদ্ধে কখনো এ ধরনের দোষারোপ করেনি যে, দুনিয়াবী ব্যাপারে তিনি কখনো মিথ্যা কথা বলেছেন। নবী হওয়ার কারণে এবং নবুওয়াতের দায়িত্ব পালন করার জন্যই তারা তাঁকে মিথ্যাচারে অভিযুক্ত করেছে।
নবী ﷺ কে কুরআন থেকে পৃথক করতে চাইত :
وَاِنْ كَادُوْا لَيَفْتِنُوْنَكَ عَنِ الَّذِيْۤ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ لِتَفْتَرِيَ عَلَيْنَا غَيْرَهٗۗ وَاِذًا لَّاتَّخَذُوْكَ خَلِيْلًا – وَلَوْلَاۤ اَنْ ثَبَّتْنَاكَ لَقَدْ كِدْتَّ تَرْكَنُ اِلَيْهِمْ شَيْئًا قَلِيْلًا
আমি তোমার প্রতি যা প্রত্যাদেশ করেছি তারা তা হতে পদস্খলন ঘটানোর চেষ্টা প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছিল, যাতে তুমি আমার সম্বন্ধে তার বিপরীত মিথ্যা উদ্ভাবন কর। (এতে যদি তারা সফল হতো) তবে তারা অবশ্যই তোমাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করত। আমি তোমাকে অবিচল না রাখলে তুমি তাদের দিকে প্রায় কিছুটা ঝুঁকে পড়তে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৭৩, ৭৪)
কুরআনকে বিশ্বাস করতে চাইত না :
وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَنْ نُّؤْمِنَ بِهٰذَا الْقُرْاٰنِ وَلَا بِالَّذِيْ بَيْنَ يَدَيْهِ
কাফিররা বলে, আমরা এ কুরআন কখনো বিশ্বাস করব না এবং এর পূর্ববর্তী কিতাবসমূহও না। (সূরা সাবা- ৩১)
কুরআন শুনলে পাশ কাটিয়ে চলে যেত :
وَاِذَا تُتْلٰى عَلَيْهِ اٰيَاتُنَا وَلّٰى مُسْتَكْبِرًا كَاَنْ لَّمْ يَسْمَعْهَا كَاَنَّ فِۤىْ اُذُنَيْهِ وَقْرًاۚ فَبَشِّرْهُ بِعَذَابٍ اَلِيْمٍ
যখন তার কাছে আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হয়, তখন সে অহংকারবশত এমনভাবে ফিরে যায়, যেন সে কিছু শুনতেই পায়নি; যেন তার কর্ণদ্বয়ের মধ্যে ছিপি রয়েছে। অতএব তাকে বেদনাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও। (সূরা লুক্বমান- ৭)
আল্লাহর নিদর্শন নিয়ে বিতর্ক করত :
اَلَمْ تَرَ اِلَى الَّذِيْنَ يُجَادِلُوْنَ فِۤيْ اٰيَاتِ اللهِؕ اَنّٰى يُصْرَفُوْنَ
(হে নবী!) তুমি কি তাদের (অবস্থার) দিকে লক্ষ্য করনি, যারা আল্লাহর নিদর্শনাবলি সম্পর্কে নানা বিতর্কে লিপ্ত হচ্ছে; (তুমি কি বলতে পার আসলে) তারা কোন দিকে ধাবিত হচ্ছে? (সূরা মু’মিন- ৬৯)
কোন আসমানী কিতাবই মানতে চাইত না :
وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَنْ نُّؤْمِنَ بِهٰذَا الْقُرْاٰنِ وَلَا بِالَّذِيْ بَيْنَ يَدَيْهِ
কাফিররা বলে, আমরা এ কুরআন কখনো বিশ্বাস করব না এবং এর পূর্ববর্তী কিতাবসমূহও না। (সূরা সাবা- ৩১)
অথচ কিতাব আসার আগে তা মানবে বলে কসম করত :
وَاِنْ كَانُوْا لَيَقُوْلُوْنَ – لَوْ اَنَّ عِنْدَنَا ذِكْرًا مِّنَ الْاَوَّلِيْنَ – لَكُنَّا عِبَادَ اللهِ الْمُخْلَصِيْنَ
কাফিররা বলত, যদি পূর্ববর্তীদের কিতাবের ন্যায় আমাদের কাছেও কোন কিতাব থাকত, তবে অবশ্যই আমরাও আল্লাহর খাঁটি বান্দা হয়ে যেতাম। (সূরা সাফফাত, ১৬৭-১৬৯)
তারা মিথ্যা কথা বলে বেড়াত :
وَتَصِفُ اَلْسِنَتُهُمُ الْكَذِبَ اَنَّ لَهُمُ الْحُسْنٰىؕ لَا جَرَمَ اَنَّ لَهُمُ النَّارَ وَاَنَّهُمْ مُّفْرَطُوْنَ
তাদের জিহবা এ মিথ্যা বর্ণনা করে যে, মঙ্গল কেবল তাদেরই জন্য। নিঃসন্দেহে তাদের জন্য রয়েছে অগ্নি এবং তাদেরকেই তাতে নিক্ষেপ করা হবে। (সূরা নাহল- ৬২)
তারা ছিল বিভ্রান্ত সম্প্রদায় :
اَمْ تَحْسَبُ اَنَّ اَكْثَرَهُمْ يَسْمَعُوْنَ اَوْ يَعْقِلُوْنَؕ اِنْ هُمْ اِلَّا كَالْاَنْعَامِ بَلْ هُمْ اَضَلُّ سَبِيْلًا
তুমি কি মনে কর যে, তাদের অধিকাংশ শুনে ও বুঝে? তারা তো পশুর মতোই, বরং তার চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট! (সূরা ফুরক্বান- ৪৪)
তারা নবী ﷺ এর দাওয়াতকে উন্নতির অন্তরায় মনে করত :
وَقَالُوْاۤ اِنْ نَّتَّبِعِ الْهُدٰى مَعَكَ نُتَخَطَّفْ مِنْ اَرْضِنَا
তারা বলে, আমরা যদি তোমার সাথে সৎপথ অনুসরণ করি তবে আমাদেরকে দেশ হতে উৎখাত করা হবে। (সূরা ক্বাসাস- ৫৭)
তারা বাপ-দাদার ধর্মত্যাগ করতে চাইত না :
وَاِذَا قِيْلَ لَهُمُ اتَّبِعُوْا مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ قَالُوْا بَلْ نَتَّبِعُ مَا وَجَدْنَا عَلَيْهِ اٰبَآءَنَاؕ اَوَلَوْ كَانَ الشَّيْطَانُ يَدْعُوْهُمْ اِلٰى عَذَابِ السَّعِيْرِ
যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তোমরা তার আনুগত্য করো তখন তারা বলে, বরং আমরা তো তার আনুগত্য করব, যার উপর আমাদের বাপ-দাদাদেরকে পেয়েছি। যদিও শয়তান তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তির দিকে আহবান করতে থাকে তবুও কি (তারা তাদের অনুসরণ করবে)? (সূরা লুক্বমান- ২১)
তারা মুমিনদেরকে নিয়ে ব্যঙ্গ করত :
اِنَّ الَّذِيْنَ اَجْرَمُوْا كَانُوْا مِنَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا يَضْحَكُوْنَ – وَاِذَا مَرُّوْا بِهِمْ يَتَغَامَزُوْنَ
যারা অপরাধী তারা মুমিনদেরকে উপহাস করত এবং তারা যখন তাদের নিকট দিয়ে যেত তখন চোখ টিপে কটাক্ষ করত। (সূরা মুতাফ্ফিফীন- ২৯, ৩০)
নবীর বিরোধিতা করার কারণে তাদের অন্তরে মোহর পড়ে গেছে :
وَجَعَلْنَا عَلٰى قُلُوْبِهِمْ اَكِنَّةً اَنْ يَّفْقَهُوْهُ وَفِۤيْ اٰذَانِهِمْ وَقْرًا
আমি তাদের অন্তরের উপর আবরণ তৈরি করে দিয়েছি, যেন তারা তা উপলব্ধি করতে না পারে এবং তাদেরকে বধির করে দিয়েছি। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৪৬)
তারা নবীকে না মানার কারণে শাস্তি পেয়েছে :
وَلَقَدْ جَآءَهُمْ رَسُوْلٌ مِّنْهُمْ فَكَذَّبُوْهُ فَاَخَذَهُمُ الْعَذَابُ وَهُمْ ظَالِمُوْنَ
তাদের নিকট তাদেরই মধ্য হতে এক রাসূল এসেছিল, কিন্তু তারা তাকে অস্বীকার করেছিল। ফলে সীমালঙ্ঘন করা অবস্থায় শাস্তি (মৃত্যু) তাদেরকে গ্রাস করল। (সূরা নাহল- ১১৩)
মুহাম্মাদ ﷺ কোন রাসূল নন- এ কথার জবাব :
وَيَقُوْلُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَسْتَ مُرْسَلًاؕ قُلْ كَفٰى بِاللهِ شَهِيْدًاۢ بَيْنِيْ وَبَيْنَكُمْ وَمَنْ عِنْدَهٗ عِلْمُ الْكِتَابِ
যারা কুফরী করে তারা বলে, তুমি তো রাসূল নও। বলো, আল্লাহ এবং যাদের নিকট কিতাবের জ্ঞান রয়েছে, তারাই আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী হিসেবে যথেষ্ট। (সূরা রা‘দ- ৪৩)
তিনি আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করছেন- এ কথার জবাব :
اَمْ يَقُوْلُوْنَ افْتَرٰى عَلَى اللهِ كَذِبًاۚ فَاِنْ يَّشَاِ اللهُ يَخْتِمْ عَلٰى قَلْبِكَؕ وَيَمْحُ اللهُ الْبَاطِلَ وَيُحِقُّ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهٖؕ اِنَّهٗ عَلِيْمٌ ۢبِذَاتِ الصُّدُوْرِ
তারা কি বলে যে, সে (রাসূল) আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা বানিয়েছে। (অথচ) আল্লাহ ইচ্ছা করলে তোমার হৃদয়ে মোহর মেরে দিতে পারতেন। আল্লাহ মিথ্যাকে মুছে দেন এবং নিজ বাণী দ্বারা সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেন। নিশ্চয় তিনি (মানুষের) অন্তরে যা আছে সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত। (সূরা শূরা- ২৪)
নবী মানুষ হওয়াতে তাদের অভিযোগ ছিল :
وَاَسَرُّوا النَّجْوَى الَّذِيْنَ ظَلَمُوْاۗ هَلْ هٰذَاۤ اِلَّا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْۚ اَفَتَأْتُوْنَ السِّحْرَ وَاَنْتُمْ تُبْصِرُوْنَ
যারা যালিম তারা গোপনে পরামর্শ করে, এ তো তোমাদের মতোই একজন মানুষ, তবুও কি তোমরা দেখেশুনে যাদুর কবলে পড়বে? (সূরা আম্বিয়া- ৩)
নবী মানুষ হওয়াতে সকল যুগেই আপত্তি ছিল :
وَمَا مَنَعَ النَّاسَ اَنْ يُّؤْمِنُوْاۤ اِذْ جَآءَهُمُ الْهُدٰۤى اِلَّاۤ اَنْ قَالُوْاۤ اَبَعَثَ اللهُ بَشَرًا رَّسُوْلًا
যখনই মানুষের কাছে (আল্লাহর কাছ থেকে) হেদায়াত আসত তখন তাদের ঈমান আনা থেকে এ ছাড়া অন্য কোন জিনিসই বিরত রাখেনি যে, তারা বলত, আল্লাহ কি (আমাদের মতো) একজন মানুষকেই নবী করে পাঠালেন! (সূরা বনী ইসরাঈল- ৯৪)
এ অভিযোগের জবাব :
قُلْ لَّوْ كَانَ فِى الْاَرْضِ مَلَآئِكَةٌ يَّمْشُوْنَ مُطْمَئِنِّيْنَ لَنَزَّلْنَا عَلَيْهِمْ مِّنَ السَّمَآءِ مَلَكًا رَّسُوْلًا
বলো, ফেরেশতারা যদি নিশ্চিন্ত হয়ে পৃথিবীতে বিচরণ করত, তবে অবশ্যই আমি আকাশ থেকে কোন ফেরেশতাকে তাদের নিকট রাসূল করে পাঠাতাম। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৯৫)
وَمَاۤ اَرْسَلْنَا قَبْلَكَ اِلَّا رِجَالًا نُّوْحِيْۤ اِلَيْهِمْ فَاسْأَلُوْاۤ اَهْلَ الذِّكْرِ اِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ – وَمَا جَعَلْنَاهُمْ جَسَدًا لَّا يَأْكُلُوْنَ الطَّعَامَ وَمَا كَانُوْا خَالِدِيْنَ
তোমার পূর্বে যে সকল রাসূল প্রেরণ করেছিলাম এবং যাদের প্রতি ওহী করতাম তারা সকলেই মানুষ ছিল। (এ বিষয়ে) তোমরা যদি না জেনে থাক তবে (অবতীর্ণ) কিতাবের জ্ঞান যাদের কাছে আছে তাদেরকে জিজ্ঞেস করে নাও। (তাছাড়া) আমি তাদেরকে এমন দেহবিশিষ্ট করিনি যে, তারা খাদ্য খেত না। আর তারা চিরস্থায়ীও ছিল না। (সূরা আম্বিয়া- ৭, ৮)
ব্যাখ্যা : একজন মানুষকেই নবী বানিয়ে পাঠানোর পেছনে যে নিগূঢ় যৌক্তিকতা নিহিত ছিল মহান আল্লাহ সে যৌক্তিকতাও বর্ণনা করে দিয়েছেন। ‘যিকির’ বা আল্লাহর বাণী ফেরেশতাদের মাধ্যমেও পাঠানো যেত অথবা সরাসরি ছাপিয়ে প্রত্যেকটি মানুষের হাতেও পৌঁছানো যেত। কিন্তু ওহী অবতরণের মাধ্যমে আল্লাহ প্রকৃতপক্ষে যে উদ্দেশ্য পূর্ণ করতে চান তা হলো, একজন যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষ তা নিয়ে আসবেন। তিনি তাকে একটু একটু করে লোকদের সামনে পেশ করবেন। যারা এর কোন কথা বুঝতে পারবে না, তাদেরকে তার অর্থ বুঝিয়ে দেবেন। এর কোন ব্যাপারে যাদের সন্দেহ থাকবে, তাদের সন্দেহ দূর করে দেবেন। কোন ব্যাপারে যাদের আপত্তি ও প্রশ্ন থাকবে তাদের আপত্তি ও প্রশ্নের জবাব দিয়ে দেবেন। যারা তাকে মেনে নিতে অস্বীকার করবে এবং এর অগ্রগতিতে বাধা দিতে এগিয়ে আসবে তাদের মুকাবিলায় তিনি এমন মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গী অবলম্বন করবেন, যা এ যিকির বা আল্লাহর বাণীর ধারকদের জন্য উপযোগী। যারা মেনে নেবে তাদের জীবনের প্রত্যেকটি দিক ও বিভাগ সম্পর্কে পথনিদের্শনা দেবেন। নিজের জীবনকে তাদের সামনে আদর্শ হিসেবে পেশ করবেন। তাদেরকে ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক পর্যায়ে অনুশীলন দান করে সারা দুনিয়ার সামনে এমন একটি সমাজ আদর্শ হিসেবে তুলে ধরবেন, যার সমগ্র সামাজিক ব্যবস্থা হবে আল্লাহর কিতাবের বাস্তব প্রতিফলন।
নবী খাওয়া-দাওয়া ও বাজার করেন- এ ব্যাপারে অভিযোগ :
وَقَالُوْا مَالِ هٰذَا الرَّسُوْلِ يَأْكُلُ الطَّعَامَ وَيَمْشِيْ فِى الْاَسْوَاقِؕ لَوْلَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْهِ مَلَكٌ فَيَكُوْنَ مَعَهٗ نَذِيْرًا
তারা বলে, সে কেমন রাসূল যে আহার করে এবং হাট-বাজারে চলাফেরা করে। তার নিকট কোন ফেরেশতা কেন অবতীর্ণ করা হলো না, যে সতর্ককারী হিসেবে তার সঙ্গে থাকত? (সূরা ফুরক্বান- ৭)
ব্যাখ্যা : একজন রক্ত-মাংসের মানুষ, যে জীবিত থাকার জন্য খাদ্যের মুখাপেক্ষী হয়, সে কেমন করে আল্লাহর বাণী নিয়ে আসে? আর যদি মানুষকেই রাসূল বানানো হয়ে থাকে, তবে তাকে তো অন্তত বাদশাহ অথবা দুনিয়ার বড় লোকদের মতো উন্নত পর্যায়ের ব্যক্তিত্ব হওয়া উচিত ছিল, যাকে দেখার জন্য চোখ উন্মাদ হয়ে থাকত এবং অনেক সাধনার পর তার দরবারে হাজির হওয়ার সৌভাগ্য হতো। কিন্তু তা না হয়ে এমন একজন সাধারণ লোককে কীভাবে নবী বানিয়ে প্রেরণ করা হলো, যে বাজারের মধ্যে ঘুরে ঘুরে জুতোর তলা ক্ষয় করতে থাকে? একজন সাধারণ মানুষ যেভাবে চলাফেরা করে, সেও সেভাবে চলাফেরা করে এবং কোন দিক দিয়েই তার মধ্যে কোন অসাধারণত্বের সন্ধান পাওয়া যায় না। সুতরাং কীভাবে তাকে গ্রাহ্য করা যায়?
এ অভিযোগের জবাব :
وَمَاۤ اَرْسَلْنَا قَبْلَكَ مِنَ الْمُرْسَلِيْنَ اِلَّاۤ اِنَّهُمْ لَيَأْكُلُوْنَ الطَّعَامَ وَيَمْشُوْنَ فىِ الْاَسْوَاقِ
তোমার পূর্বে আমি যে সকল রাসূল প্রেরণ করেছি তারা সকলেই আহার করত ও হাট-বাজারে চলাফেরা করত। (সূরা ফুরক্বান- ২০)
নবীর স্ত্রী-সন্তান থাকবে কেন- এ অভিযোগের জবাব :
وَلَقَدْ اَرْسَلْنَا رُسُلًا مِّنْ قَبْلِكَ وَجَعَلْنَا لَهُمْ اَزْوَاجًا وَّذُرِّيَّةًؕ وَمَا كَانَ لِرَسُوْلٍ اَنْ يَّأْتِيَ بِاٰيَةٍ اِلَّا بِاِذْنِ اللهِؕ لِكُلِّ اَجَلٍ كِتَابٌ
তোমার পূর্বে আমি অনেক রাসূল প্রেরণ করেছিলাম এবং তাদেরকে স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দিয়েছিলাম। আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত কোন নিদর্শন উপস্থিত করা কোন রাসূলের কাজ নয়। প্রতিটি বিষয়ের জন্য নির্ধারিত কাল লিপিবদ্ধ রয়েছে। (সূরা রা‘দ- ৩৮)
নবী ﷺ এর ধনসম্পদ না থাকার কারণে অভিযোগ :
اَوْ يُلْقٰۤى اِلَيْهِ كَنْزٌ اَوْ تَكُوْنُ لَهٗ جَنَّةٌ يَّأْكُلُ مِنْهَاؕ وَقَالَ الظَّالِمُوْنَ اِنْ تَتَّبِعُوْنَ اِلَّا رَجُلًا مَّسْحُوْرًا
অথবা তাকে ধনভান্ডার দেয়া হয় না কেন অথবা তার একটি বাগান নেই কেন, যা হতে সে আহার সংগ্রহ করতে পারে? সীমালঙ্ঘনকারীরা আরো বলে, তোমরা তো এক যাদুগ্রস্ত ব্যক্তিরই অনুসরণ করছ। (সূরা ফুরক্বান- ৮)
এ অভিযোগের জবাব :
تَبَارَكَ الَّذِيْۤ اِنْ شَآءَ جَعَلَ لَكَ خَيْرًا مِّنْ ذٰلِكَ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ وَيَجْعَلْ لَّكَ قُصُوْرًا – بَلْ كَذَّبُوْا بِالسَّاعَةِ وَاَعْتَدْنَا لِمَنْ كَذَّبَ بِالسَّاعَةِ سَعِيْرًا
তিনি কতই না মহান, যিনি ইচ্ছা করলে তোমাকে এর চেয়ে উৎকৃষ্ট বস্তু দিতে পারেন- (যেমন) উদ্যানসমূহ, যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত হবে এবং তিনি তোমাকে (আরো) দিতে পারেন প্রাসাদসমূহ। কিন্তু তারা (কাফিররা) কিয়ামতকে অস্বীকার করেছে। আর যারা কিয়ামতকে অস্বীকার করে, তাদের জন্য আমি জ্বলন্ত অগ্নি প্রস্তুত করে রেখেছি। (সূরা ফুরক্বান- ১০, ১১)
এ নবীর অনুসরণ করলে তোমরা দেশ হতে উৎখাত হবে- এর জবাব :
وَقَالُوْاۤ اِنْ نَّتَّبِعِ الْهُدٰى مَعَكَ نُتَخَطَّفْ مِنْ اَرْضِنَاؕ اَوَلَمْ نُمَكِّنْ لَّهُمْ حَرَمًا اٰمِنًا يُّجْبٰۤى اِلَيْهِ ثَمَرَاتُ كُلِّ شَيْءٍ رِّزْقًا مِّنْ لَّدُنَّا وَلٰكِنَّ اَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ – وَكَمْ اَهْلَكْنَا مِنْ قَرْيَةٍ ۢبَطِرَتْ مَعِيْشَتَهَاۚ فَتِلْكَ مَسَاكِنُهُمْ لَمْ تُسْكَنْ مِّنْ ۢبَعْدِهِمْ اِلَّا قَلِيْلًاؕ وَكُنَّا نَحْنُ الْوَارِثِيْنَ
তারা বলে, আমরা যদি তোমার সাথে সৎপথ অনুসরণ করি তবে আমাদেরকে দেশ হতে উৎখাত করা হবে। আমি কি তাদেরকে এক নিরাপদ হারামে প্রতিষ্ঠিত করিনি, যেখানে আমার দেয়া রিযিকস্বরূপ সর্বপ্রকার ফলমূল আমদানী হয়? কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না। আমি কত জনপদকে ধ্বংস করেছি, যার বাসিন্দারা নিজেদের ভোগ-সম্পদের অহংকার করত! এগুলোই তো তাদের ঘরবাড়ি, তাদের পর এগুলোতে লোকজন সামান্যই বসবাস করছে। আর আমিই তো এগুলোর চূড়ান্ত মালিকানার অধিকারী। (সূরা ক্বাসাস- ৫৭, ৫৮)
ব্যাখ্যা : কুরাইশ বংশীয় কাফিররা ইসলাম গ্রহণ না করার অজুহাত হিসেবে এ কথাটি বলত। গভীরভাবে চিন্তা করে দেখলে জানা যাবে, এটিই ছিল তাদের কুফরীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক কারণ। যখন নবী ﷺ এর তাওহীদের দাওয়াত সম্প্রসারিত হতে লাগল তখন বাপ-দাদার ধর্মের প্রতি অন্ধপ্রীতির চেয়ে বড় হয়ে যে বিষয়টি কুরাইশদেরকে তার বিরুদ্ধে ক্ষেপে উঠার কারণ হয়ে দেখা দিল সেটি ছিল এই যে, এ দাওয়াতের ফলে তারা নিজেদের স্বার্থহানির আশঙ্কা করছিল। তারা মনে করছিল, যুক্তিপূর্ণ দলীল-প্রমাণের মাধ্যমে শিরক ও মূর্তিপূজা মিথ্যা। কিন্তু তা পরিত্যাগ করে একে গ্রহণ করে নেয়া আমাদের জন্য ধ্বংসের কারণ হবে। এমনটি করার সাথে সাথেই সমগ্র আরবের অধিবাসীরা তাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়বে। এভাবে এ দ্বীনটি তাদের ধর্মীয় প্রভাব-প্রতিপত্তি এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিরও অবসান ঘটাবে। রাসূল ﷺ বার বার তাদেরকে এ নিশ্চয়তা দান করছিলেন যে, তোমাদের সামনে আমি যে কালিমা পেশ করেছি তা মেনে নাও, তাহলে আরব ও অনারব সকলেই তোমাদের পদানত হয়ে যাবে। কিন্তু তারা এর মধ্যে নিজেদের বিপদ দেখতে পাচ্ছিল। তারা মনে করেছিল, আমরা আজ যে সম্পদ ও প্রভাব-প্রতিপত্তি লাভ করেছি এও নিঃশেষ হয়ে যাবে। এর জবাবে বলা হয়েছে, তোমরা যে ধন-দৌলত ও সমৃদ্ধির জন্য অহংকারী হয়ে উঠেছ, যার বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় বাতিলের উপরে টিকে থাকতে চাচ্ছ- এই জিনিসই এক সময় আদ, সামূদ, সাবা, মাদইয়ান ও লূত জাতির লোকদেরকে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেগুলোও কি তাদেরকে ধ্বংস থেকে রক্ষা করতে পেরেছিল? যেসব অসৎ ও ভ্রষ্টতামূলক কাজ অতীতের সমৃদ্ধশালী জাতিগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে তার উপর টিকে থাকার প্রচেষ্টা চালিয়ে তোমরা রক্ষা পেয়ে যাবে এবং তাদের মতো তোমাদের উপর কখনো ধ্বংস নেমে আসবে না- এর কোন গ্যারান্টি কি তোমাদের কাছে আছে?
নবী মানবীয় বৈশিষ্ট্যের ঊর্ধ্বে থাকবেন- এ ধারণার জবাব :
قُلْ لَّاۤ اَقُوْلُ لَكُمْ عِنْدِيْ خَزَآئِنُ اللهِ وَلَاۤ اَعْلَمُ الْغَيْبَ وَلَاۤ اَقُوْلُ لَكُمْ اِنِّيْ مَلَكٌۚ اِنْ اَتَّبِعُ اِلَّا مَا يُوْحٰۤى اِلَيَّؕ قُلْ هَلْ يَسْتَوِى الْاَعْمٰى وَالْبَصِيْرُؕ اَفَلَا تَتَفَكَّرُوْنَ
বলো, আমি তোমাদেরকে এটা বলি না যে, আমার নিকট আল্লাহর ধনভান্ডার আছে, অদৃশ্য সম্বন্ধেও আমি জানি না এবং তোমাদেরকে এটাও বলি না যে, আমি ফেরেশতা। আমার প্রতি যা ওহী হয় আমি শুধু তারই অনুসরণ করি। বলো, অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি সমান? তোমরা কি চিন্তা-ভাবনা কর না? (সূরা আন‘আম- ৫০)
মুহাম্মাদ ﷺ লেজকাটা- এ উক্তির জবাব :
اِنَّاۤ اَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ – فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ – اِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْاَبْتَرُ
(হে নবী!) অবশ্যই আমি তোমাকে কাওসার (নিয়ামতের ভান্ডার) দান করেছি। অতএব তুমি (আমাকে স্মরণের জন্য) নামায কায়েম করো এবং (আমারই উদ্দেশ্যে) কুরবানী করো, নিশ্চয় (পরিশেষে) তোমার নিন্দুকরাই হবে লেজকাটা (অসহায়)। (সূরা কাওসার)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ এর সকল পুত্রসন্তান ছোট কালেই মারা যায়। এতে কুরাইশ বংশের লোকেরা বলাবলি করতে লাগল - بَتِرَ مُحَمَّدٌ অর্থাৎ মুহাম্মাদ লেজকাটা (নির্বংশ) হয়ে গেছে। তখন আল্লাহ তা‘আলা এ সূরাটি নাযিল করেন। (ইবনে কাসীর) অপর বর্ণনায় রয়েছে, নবী ﷺ এর পুত্র ইবরাহীম মারা গেলে মক্কার মুশরিকরা একে অপরকে বলাবলি করতে লাগল, মুহাম্মাদ লেজকাটা হয়ে গেছে। মুশরিকদের এ সকল অশালীন উক্তির কারণে নবী ﷺ কষ্ট পেতেন। বিপদের সময় নিজের আত্মীয়স্বজন পাশে দাঁড়ানোর কথা, কিন্তু তারাই তাঁর কষ্টকে আরো বাড়িয়ে তুলছিল। এ বেদনাদায়ক পরিস্থিতিতে আল্লাহ তা‘আলা সূরা কাওসার নাযিল করে নবীকে সান্ত্বনা দিলেন।
নবী ﷺ এর মজলিস থেকে গরীবদেরকে তাড়িয়ে দিতে হবে- এ উক্তির জবাব :
وَلَا تَطْرُدِ الَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيْدُوْنَ وَجْهَهٗؕ مَا عَلَيْكَ مِنْ حِسَابِهِمْ مِّنْ شَيْءٍ وَّمَا مِنْ حِسَابِكَ عَلَيْهِمْ مِّنْ شَيْءٍ فَتَطْرُدَهُمْ فَتَكُوْنَ مِنَ الظَّالِمِيْنَ
যারা তাদের প্রতিপালককে সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ডাকে তুমি তাদেরকে বিতাড়িত করো না। তাদের কর্মের জবাবদিহির দায়িত্ব তোমার নয় এবং তোমার কোন কর্মের জবাবদিহির দায়িত্বও তাদের নয় যে, তুমি তাদেরকে বিতাড়িত করবে; যদি কর তবে তুমি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (সূরা আন‘আম- ৫২)
এ লোকটি কানপাতলা- এ উক্তির জবাব :
وَمِنْهُمُ الَّذِيْنَ يُؤْذُوْنَ النَّبِيَّ وَيَقُوْلُوْنَ هُوَ اُذُنٌؕ قُلْ اُذُنُ خَيْرٍ لَّكُمْ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَيُؤْمِنُ لِلْمُؤْمِنِيْنَ وَرَحْمَةٌ لِّلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مِنْكُمْؕ وَالَّذِيْنَ يُؤْذُوْنَ رَسُوْلَ اللهِ لَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
তাদের মধ্যে এমনও লোক আছে, যারা নবীকে কষ্ট দেয় এবং বলে, সে তো কর্ণপাতকারী। বলো, তার কান তোমাদের জন্য যা মঙ্গল তাই শুনে। সে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন করে এবং মুমিনদেরকে বিশ্বাস করে। তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে সে তাদের জন্য রহমতস্বরূপ; আর যারা আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয় তাদের জন্য রয়েছে মর্মান্তিক শাস্তি। (সূরা তাওবা- ৬১)
আমাদের মূর্তিগুলো তোমাকে ধ্বংস করবে- এ উক্তির জবাব :
اَلَيْسَ اللهُ بِكَافٍ عَبْدَهٗؕ وَيُخَوِّفُوْنَكَ بِالَّذِيْنَ مِنْ دُوْنِهٖؕ وَمَنْ يُّضْلِلِ اللهُ فَمَا لَهٗ مِنْ هَادٍ
আল্লাহ কি তাঁর বান্দার জন্য যথেষ্ট নন? অথচ তারা তোমাকে আল্লাহর পরিবর্তে অন্য কারো ভয় দেখায়। মূলত আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার জন্য কোন পথপ্রদর্শক নেই। (সূরা যুমার- ৩৬)
ব্যাখ্যা : মক্কার কাফিররা নবী ﷺ কে বলত, তুমি তো আমাদের উপাস্যদের সাথে বেআদবী কর এবং তাদের বিরুদ্ধে কথা বল। তারা কত বড় সম্মানিত সত্তা তা কি তুমি জান না। ইতোপূর্বে যে-ই তাদের অবমাননা ও অপমান করেছে সে-ই ধ্বংস হয়েছে। তুমি যদি এসব কথা থেকে বিরত না হও, তাহলে এরা তোমাকে ধ্বংস করে ছাড়বে। এটাও তাদের হেদায়াত থেকে বঞ্চিত হওয়ার ফলশ্রুতি। কারণ এসব উপাস্যদের শক্তি ও মর্যাদার প্রতি এসব নির্বোধদের ভালো খেয়াল আছে। কিন্তু এ খেয়াল তাদের কখনো আসে না যে, আল্লাহ এক মহাপরাক্রমশালী সত্তা, শিরক করে এরা তাঁকে যে অপমান করছে এজন্যও তাদের শাস্তি হতে পারে।
আমাদের উপাস্যদের দাসত্ব করো- এ আহবানের জবাব :
قُلْ اِنِّيْ نُهِيْتُ اَنْ اَعْبُدَ الَّذِيْنَ تَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِؕ قُلْ لَّاۤ اَتَّبِعُ اَهْوَآءَكُمْ قَدْ ضَلَلْتُ اِذًا وَّمَاۤ اَنَاْ مِنَ الْمُهْتَدِيْنَ
বলো, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে আহবান কর তাদের ইবাদাত করতে নিষেধ করা হয়েছে। বলো, আমি তোমাদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করি না; যদি করি তবে আমি বিপথগামী হয়ে যাব এবং সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত থাকব না। (সূরা আন‘আম- ৫৬)
قُلْ يَاۤ اَيُّهَا الْكَافِرُوْنَ – لَاۤ اَعْبُدُ مَا تَعْبُدُوْنَ – وَلَاۤ اَنْتُمْ عَابِدُوْنَ مَاۤ اَعْبُدُ – وَلَاۤ اَنَاْ عَابِدٌ مَّا عَبَدْتُّمْ – وَلَاۤ اَنْتُمْ عَابِدُوْنَ مَاۤ اَعْبُدُ – لَكُمْ دِيْنُكُمْ وَلِيَ دِيْنِ
(হে নবী!) তুমি বলে দাও, হে কাফিররা! আমি তাদের ইবাদাত করি না তোমরা যাদের ইবাদাত কর। আর তোমরা তার ইবাদাতকারী নও যার ইবাদাত আমি করি এবং আমিও তাদের ইবাদাতকারী নই যাদের ইবাদাত তোমরা কর। আর তোমরা তার ইবাদাতকারী নও যার ইবাদাত আমি করি। (এ দ্বীনের মধ্যে কোন মিশ্রণ সম্ভব নয়, অতএব) তোমাদের পথ তোমাদের জন্য, আর আমার পথ আমার জন্য। (সূরা কাফিরূন)
এখন আযাব আসেনা কেন- এ উক্তির জবাব :
قُلْ اِنِّيْ عَلٰى بَيِّنَةٍ مِّنْ رَّبِّيْ وَكَذَّبْتُمْ بِهٖؕ مَا عِنْدِيْ مَا تَسْتَعْجِلُوْنَ بِهٖؕ اِنِ الْحُكْمُ اِلَّا لِلّٰهِؕ يَقُصُّ الْحَقَّ وَهُوَ خَيْرُ الْفَاصِلِيْنَ – قُلْ لَّوْ اَنَّ عِنْدِيْ مَا تَسْتَعْجِلُوْنَ بِهٖ لَقُضِيَ الْاَمْرُ بَيْنِيْ وَبَيْنَكُمْؕ وَاللهُ اَعْلَمُ بِالظَّالِمِيْنَ
বলো, অবশ্যই আমি আমার প্রতিপালকের স্পষ্ট প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত; অথচ তোমরা তাকে প্রত্যাখ্যান করেছ। যা তোমরা খুব তাড়াতাড়ি পেতে চাও (অর্থাৎ আল্লাহর আযাব) তা আমার আয়ত্তে নেই। কর্তৃত্ব তো আল্লাহরই, তিনি সত্য বর্ণনা করেন; আর ফায়সালাকারীদের মধ্যে তিনিই শ্রেষ্ঠ। বলো, তোমরা যা তাড়াতাড়ি চাচ্ছ তা যদি আমার নিকট থাকত, তবে আমার ও তোমাদের মধ্যকার ব্যাপারে তো ফায়সালা হয়েই যেত। তথাপিও আল্লাহ যালিমদের সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত। (সূরা আন‘আম- ৫৭, ৫৮)
এ নবীকে শেষ করে দেব- এ চিন্তার জবাব :
وَمَا جَعَلْنَا لِبَشَرٍ مِّنْ قَبْلِكَ الْخُلْدَؕ اَفَاِنْ مِّتَّ فَهُمُ الْخَالِدُوْنَ – كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِؕ وَنَبْلُوْكُمْ بِالشَّرِّ وَالْخَيْرِ فِتْنَةًؕ وَاِلَيْنَا تُرْجَعُوْنَ
আমি তোমার পূর্বেও কোন মানুষকে অনন্ত জীবন দান করিনি; সুতরাং তোমার মৃত্যু হলে তারা কি চিরঞ্জীব হয়ে থাকবে? প্রতিটি জীবনই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে; আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভালো দ্বারা বিশেষভাবে পরীক্ষা করে থাকি। আর তোমাদেরকে আমারই দিকে প্রত্যাবর্তন করা হবে। (সূরা আম্বিয়া- ৩৪, ৩৫)
মুহাম্মাদকে তার রব পরিত্যাগ করেছে- এ উক্তির জবাব :
وَالضُّحٰى – وَاللَّيْلِ اِذَا سَجٰى – مَا وَدَّعَكَ رَبُّكَ وَمَا قَلٰى
শপথ পূর্বাহ্নের; শপথ রাত্রির, যখন তা গভীর হয়। আপনার পালনকর্তা আপনাকে ত্যাগ করেননি এবং আপনার প্রতি বিরূপও হননি। (সূরা যোহা, ১-৩)
এ নবী বিপথগামী হয়ে গেছে- এ উক্তির জবাব :
وَالنَّجْمِ اِذَا هَوٰى – مَا ضَلَّ صَاحِبُكُمْ وَمَا غَوٰى
শপথ তারকারাজির, যখন তা অস্তমিত হয়, তোমাদের সাথি পথভ্রষ্ট হয়নি এবং বিভ্রান্তও হয়নি। (সূরা নাজম- ১, ২)
এ নবী পাগল- এ উক্তির জবাব :
نٓ وَالْقَلَمِ وَمَا يَسْطُرُوْنَ – مَاۤ اَنْتَ بِنِعْمَةِ رَبِّكَ بِمَجْنُوْنٍ
নূন। শপথ কলমের এবং তারা (ফেরেশতাগণ) যা লিপিবদ্ধ করে তার, তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহে তুমি উন্মাদ নও। (সূরা ক্বালাম- ১, ২)
وَمَا صَاحِبُكُمْ بِمَجْنُوْنٍ
আর তোমাদের সাথি (মুহাম্মাদ) পাগল নয়। (সূরা তাকভীর- ২২)
এ নবী গণক- এ উক্তির জবাব :
فَذَكِّرْ فَمَاۤ اَنْتَ بِنِعْمَتِ رَبِّكَ بِكَاهِنٍ وَّلَا مَجْنُوْنٍ
অতএব তুমি উপদেশ দিতে থাক, তোমার প্রভুর অনুগ্রহে তুমি গণক নও এবং উন্মাদও নও। (সূরা তূর- ২৯)
তার উপর নিদর্শন নাযিল হয় না কেন- এ প্রশ্নের জবাব :
وَقَالُوْا لَوْلَا نُزِّلَ عَلَيْهِ اٰيَةٌ مِّنْ رَّبِّهٖؕ قُلْ اِنَّ اللهَ قَادِرٌ عَلٰۤى اَنْ يُّنَزِّلَ اٰيَةً وَّلٰكِنَّ اَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ
তারা বলে, তার প্রতিপালকের নিকট হতে তার নিকট কোন নিদর্শন নাযিল হয় না কেন? বলো, নিশ্চয় আল্লাহ নিদর্শন নাযিল করতে সক্ষম, কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না। (সূরা আন‘আম- ৩৭)
وَمَا كَانَ لِرَسُوْلٍ اَنْ يَّأْتِيَ بِاٰيَةٍ اِلَّا بِاِذْنِ اللهِؕ لِكُلِّ اَجَلٍ كِتَابٌ
আল্লাহর হুকুম ব্যতীত নিদর্শন হাজির করার শক্তি কোন রাসূলের নেই। যাবতীয় বিষয়ের নির্দিষ্ট সময় লিপিবদ্ধ আছে। (সূরা রা‘দ- ৩৮)
নবী ﷺ এর কাছে ফেরেশতা আসে না কেন- এ প্রশ্নের জবাব :
وَقَالُوْا لَوْلَاۤ اُنْزِلَ عَلَيْهِ مَلَكٌؕ وَلَوْ اَنْزَلْنَا مَلَكًا لَّقُضِيَ الْاَمْرُ ثُمَّ لَا يُنْظَرُوْنَ
তারা বলে, তার নিকট কোন ফেরেশতা প্রেরিত হয় না কেন? (তাদেরকে বলে দাও) যদি আমি ফেরেশতা প্রেরণ করতাম তাহলে তো চূড়ান্ত ফায়সালা হয়েই যেত, আর তাদেরকে কোন অবকাশ দেয়া হতো না।
(সূরা আন‘আম- ৮)
لَوْ مَا تَأْتِيْنَا بِالْمَلَآئِكَةِ اِنْ كُنْتَ مِنَ الصَّادِقِيْنَ – مَا نُنَزِّلُ الْمَلَآئِكَةَ اِلَّا بِالْحَقِّ وَمَا كَانُوْاۤ اِذًا مُّنْظَرِيْنَ
তুমি সত্যবাদী হলে আমাদের নিকট ফেরেশতাগণকে উপস্থিত করছ না কেন? আমি ফেরেশতাগণকে যথার্থ কারণ ব্যতীত প্রেরণ করি না; কেননা ফেরেশতাগণ উপস্থিত হলে তারা আর অবকাশ পাবে না। (সূরা হিজর- ৭, ৮)
আল্লাহ সরাসরি সাক্ষ্য দিতে আসেন না কেন- এ উক্তির জবাব :
وَقَالَ الَّذِيْنَ لَا يَرْجُوْنَ لِقَآءَنَا لَوْلَاۤ اُنْزِلَ عَلَيْنَا الْمَلَآئِكَةُ اَوْ نَرٰى رَبَّنَاؕ لَقَدِ اسْتَكْبَرُوْا فِۤيْ اَنْفُسِهِمْ وَعَتَوْا عُتُوًّا كَبِيْرًا
যারা আমার সাক্ষাৎ কামনা করে না তারা বলে, আমাদের নিকট ফেরেশতা অবতরণ করানো হয় না কেন? অথবা আমরা আমাদের প্রতিপালককে প্রত্যক্ষ করি না কেন? তারা তো তাদের অন্তরে অহংকার পোষণ করেছে এবং তারা ঘোরতরভাবে সীমালঙ্ঘন করেছে। (সূরা ফুরক্বান- ২১)
وَقَالَ الَّذِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ لَوْلَا يُكَلِّمُنَا اللهُ اَوْ تَأْتِيْنَاۤ اٰيَةٌؕ كَذٰلِكَ قَالَ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ مِّثْلَ قَوْلِهِمْؕ تَشَابَهَتْ قُلُوْبُهُمْؕ قَدْ بَيَّنَّا الْاٰيَاتِ لِقَوْمٍ يُّوْقِنُوْنَ
মূর্খরা বলে, আল্লাহ আমাদের সাথে কথা বলেন না কেন অথবা কেন আমাদের কাছে কোন নিদর্শন আসে না? এদের পূর্বে যারা ছিল তারাও এদের অনুরূপ কথা বলত। তাদের সকলের অন্তর পরস্পর সাদৃশ্যপূর্ণ। অথচ আমি বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শনসমূহ বর্ণনা করে দিয়েছি। (সূরা বাক্বারা- ১১৮)
তারা কত আশ্চর্যজনক দাবী করত :
وَقَالُوْا لَنْ نُّؤْمِنَ لَكَ حَتّٰى تَفْجُرَ لَنَا مِنَ الْاَرْضِ يَنْۢبُوْعًا – اَوْ تَكُوْنَ لَكَ جَنَّةٌ مِّنْ نَّخِيْلٍ وَّعِنَبٍ فَتُفَجِّرَ الْاَنْهَارَ خِلَالَهَا تَفْجِيْرًا – اَوْ تُسْقِطَ السَّمَآءَ كَمَا زَعَمْتَ عَلَيْنَا كِسَفًا اَوْ تَأْتِيَ بِاللهِ وَالْمَلَآئِكَةِ قَبِيْلًا – اَوْ يَكُوْنَ لَكَ بَيْتٌ مِّنْ زُخْرُفٍ اَوْ تَرْقٰى فِى السَّمَآءِ وَلَنْ نُّؤْمِنَ لِرُقِيِّكَ حَتّٰى تُنَزِّلَ عَلَيْنَا كِتَابًا نَّقْرَؤُهٗ قُلْ سُبْحَانَ رَبِّيْ هَلْ كُنْتُ اِلَّا بَشَرًا رَّسُوْلًا
তারা বলে, আমরা কখনই তোমার প্রতি ঈমান আনব না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তুমি আমাদের জন্য ভূমি হতে এক নদী প্রবাহিত করবে, অথবা তোমার খেজুরের ও আঙ্গুরের একটি বাগান হবে, যার ফাঁকে ফাঁকে অজস্র ধারায় প্রবাহিত করবে নদী-নালা, অথবা তুমি যেমন বলে থাক তদানুযায়ী আকাশকে খন্ড-বিখন্ড করে আমাদের উপর ফেলবে, অথবা আল্লাহ ও ফেরেশতাগণকে আমাদের সম্মুখে উপস্থিত করবে, অথবা তোমার একটি সবর্ণ নির্মিত গৃহ হবে, অথবা তুমি আকাশে আরোহণ করবে। কিন্তু তোমার আকাশে আরোহণ করাতেও আমরা কখনো ঈমান আনব না, যতক্ষণ না তুমি আমাদের প্রতি এক কিতাব অবতরণ করবে, যা আমরা পাঠ করব। বলো, আমার প্রতিপালক খুবই পবিত্র ও মহান! আমি তো একজন মানুষ ও একজন রাসূল মাত্র। (সূরা বনী ইসরাঈল, ৯০-৯৩)
সকল যুগে নবীদের বিরুদ্ধে একই ধারার অভিযোগ আনা হয়েছে :
كَذٰلِكَ مَاۤ اَتَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ مِّنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا قَالُوْا سَاحِرٌ اَوْ مَجْنُوْنٌ – اَتَوَاصَوْا بِهٖۚ بَلْ هُمْ قَوْمٌ طَاغُوْنَ
এভাবে, তাদের পূর্ববর্তীদের নিকট যখনই কোন রাসূল এসেছেন, তারা বলেছে, তুমি তো এক যাদুকর অথবা উন্মাদ। তারা কি একে অপরকে এ উপদেশই দিয়ে এসেছে? বস্তুত তারা এক সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়। (সূরা যারিয়াত- ৫২, ৫৩)
وَيَقُوْلُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَسْتَ مُرْسَلًاؕ قُلْ كَفٰى بِاللهِ شَهِيْدًاۢ بَيْنِيْ وَبَيْنَكُمْ وَمَنْ عِنْدَهٗ عِلْمُ الْكِتَابِ
যারা কুফরী করে তারা বলে, তুমি তো রাসূল নও। বলো, আল্লাহ এবং যাদের নিকট কিতাবের জ্ঞান রয়েছে, তারাই আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী হিসেবে যথেষ্ট। (সূরা রা‘দ- ৪৩)
তিনি আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করছেন- এ কথার জবাব :
اَمْ يَقُوْلُوْنَ افْتَرٰى عَلَى اللهِ كَذِبًاۚ فَاِنْ يَّشَاِ اللهُ يَخْتِمْ عَلٰى قَلْبِكَؕ وَيَمْحُ اللهُ الْبَاطِلَ وَيُحِقُّ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهٖؕ اِنَّهٗ عَلِيْمٌ ۢبِذَاتِ الصُّدُوْرِ
তারা কি বলে যে, সে (রাসূল) আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা বানিয়েছে। (অথচ) আল্লাহ ইচ্ছা করলে তোমার হৃদয়ে মোহর মেরে দিতে পারতেন। আল্লাহ মিথ্যাকে মুছে দেন এবং নিজ বাণী দ্বারা সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেন। নিশ্চয় তিনি (মানুষের) অন্তরে যা আছে সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত। (সূরা শূরা- ২৪)
নবী মানুষ হওয়াতে তাদের অভিযোগ ছিল :
وَاَسَرُّوا النَّجْوَى الَّذِيْنَ ظَلَمُوْاۗ هَلْ هٰذَاۤ اِلَّا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْۚ اَفَتَأْتُوْنَ السِّحْرَ وَاَنْتُمْ تُبْصِرُوْنَ
যারা যালিম তারা গোপনে পরামর্শ করে, এ তো তোমাদের মতোই একজন মানুষ, তবুও কি তোমরা দেখেশুনে যাদুর কবলে পড়বে? (সূরা আম্বিয়া- ৩)
নবী মানুষ হওয়াতে সকল যুগেই আপত্তি ছিল :
وَمَا مَنَعَ النَّاسَ اَنْ يُّؤْمِنُوْاۤ اِذْ جَآءَهُمُ الْهُدٰۤى اِلَّاۤ اَنْ قَالُوْاۤ اَبَعَثَ اللهُ بَشَرًا رَّسُوْلًا
যখনই মানুষের কাছে (আল্লাহর কাছ থেকে) হেদায়াত আসত তখন তাদের ঈমান আনা থেকে এ ছাড়া অন্য কোন জিনিসই বিরত রাখেনি যে, তারা বলত, আল্লাহ কি (আমাদের মতো) একজন মানুষকেই নবী করে পাঠালেন! (সূরা বনী ইসরাঈল- ৯৪)
এ অভিযোগের জবাব :
قُلْ لَّوْ كَانَ فِى الْاَرْضِ مَلَآئِكَةٌ يَّمْشُوْنَ مُطْمَئِنِّيْنَ لَنَزَّلْنَا عَلَيْهِمْ مِّنَ السَّمَآءِ مَلَكًا رَّسُوْلًا
বলো, ফেরেশতারা যদি নিশ্চিন্ত হয়ে পৃথিবীতে বিচরণ করত, তবে অবশ্যই আমি আকাশ থেকে কোন ফেরেশতাকে তাদের নিকট রাসূল করে পাঠাতাম। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৯৫)
وَمَاۤ اَرْسَلْنَا قَبْلَكَ اِلَّا رِجَالًا نُّوْحِيْۤ اِلَيْهِمْ فَاسْأَلُوْاۤ اَهْلَ الذِّكْرِ اِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ – وَمَا جَعَلْنَاهُمْ جَسَدًا لَّا يَأْكُلُوْنَ الطَّعَامَ وَمَا كَانُوْا خَالِدِيْنَ
তোমার পূর্বে যে সকল রাসূল প্রেরণ করেছিলাম এবং যাদের প্রতি ওহী করতাম তারা সকলেই মানুষ ছিল। (এ বিষয়ে) তোমরা যদি না জেনে থাক তবে (অবতীর্ণ) কিতাবের জ্ঞান যাদের কাছে আছে তাদেরকে জিজ্ঞেস করে নাও। (তাছাড়া) আমি তাদেরকে এমন দেহবিশিষ্ট করিনি যে, তারা খাদ্য খেত না। আর তারা চিরস্থায়ীও ছিল না। (সূরা আম্বিয়া- ৭, ৮)
ব্যাখ্যা : একজন মানুষকেই নবী বানিয়ে পাঠানোর পেছনে যে নিগূঢ় যৌক্তিকতা নিহিত ছিল মহান আল্লাহ সে যৌক্তিকতাও বর্ণনা করে দিয়েছেন। ‘যিকির’ বা আল্লাহর বাণী ফেরেশতাদের মাধ্যমেও পাঠানো যেত অথবা সরাসরি ছাপিয়ে প্রত্যেকটি মানুষের হাতেও পৌঁছানো যেত। কিন্তু ওহী অবতরণের মাধ্যমে আল্লাহ প্রকৃতপক্ষে যে উদ্দেশ্য পূর্ণ করতে চান তা হলো, একজন যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষ তা নিয়ে আসবেন। তিনি তাকে একটু একটু করে লোকদের সামনে পেশ করবেন। যারা এর কোন কথা বুঝতে পারবে না, তাদেরকে তার অর্থ বুঝিয়ে দেবেন। এর কোন ব্যাপারে যাদের সন্দেহ থাকবে, তাদের সন্দেহ দূর করে দেবেন। কোন ব্যাপারে যাদের আপত্তি ও প্রশ্ন থাকবে তাদের আপত্তি ও প্রশ্নের জবাব দিয়ে দেবেন। যারা তাকে মেনে নিতে অস্বীকার করবে এবং এর অগ্রগতিতে বাধা দিতে এগিয়ে আসবে তাদের মুকাবিলায় তিনি এমন মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গী অবলম্বন করবেন, যা এ যিকির বা আল্লাহর বাণীর ধারকদের জন্য উপযোগী। যারা মেনে নেবে তাদের জীবনের প্রত্যেকটি দিক ও বিভাগ সম্পর্কে পথনিদের্শনা দেবেন। নিজের জীবনকে তাদের সামনে আদর্শ হিসেবে পেশ করবেন। তাদেরকে ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক পর্যায়ে অনুশীলন দান করে সারা দুনিয়ার সামনে এমন একটি সমাজ আদর্শ হিসেবে তুলে ধরবেন, যার সমগ্র সামাজিক ব্যবস্থা হবে আল্লাহর কিতাবের বাস্তব প্রতিফলন।
নবী খাওয়া-দাওয়া ও বাজার করেন- এ ব্যাপারে অভিযোগ :
وَقَالُوْا مَالِ هٰذَا الرَّسُوْلِ يَأْكُلُ الطَّعَامَ وَيَمْشِيْ فِى الْاَسْوَاقِؕ لَوْلَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْهِ مَلَكٌ فَيَكُوْنَ مَعَهٗ نَذِيْرًا
তারা বলে, সে কেমন রাসূল যে আহার করে এবং হাট-বাজারে চলাফেরা করে। তার নিকট কোন ফেরেশতা কেন অবতীর্ণ করা হলো না, যে সতর্ককারী হিসেবে তার সঙ্গে থাকত? (সূরা ফুরক্বান- ৭)
ব্যাখ্যা : একজন রক্ত-মাংসের মানুষ, যে জীবিত থাকার জন্য খাদ্যের মুখাপেক্ষী হয়, সে কেমন করে আল্লাহর বাণী নিয়ে আসে? আর যদি মানুষকেই রাসূল বানানো হয়ে থাকে, তবে তাকে তো অন্তত বাদশাহ অথবা দুনিয়ার বড় লোকদের মতো উন্নত পর্যায়ের ব্যক্তিত্ব হওয়া উচিত ছিল, যাকে দেখার জন্য চোখ উন্মাদ হয়ে থাকত এবং অনেক সাধনার পর তার দরবারে হাজির হওয়ার সৌভাগ্য হতো। কিন্তু তা না হয়ে এমন একজন সাধারণ লোককে কীভাবে নবী বানিয়ে প্রেরণ করা হলো, যে বাজারের মধ্যে ঘুরে ঘুরে জুতোর তলা ক্ষয় করতে থাকে? একজন সাধারণ মানুষ যেভাবে চলাফেরা করে, সেও সেভাবে চলাফেরা করে এবং কোন দিক দিয়েই তার মধ্যে কোন অসাধারণত্বের সন্ধান পাওয়া যায় না। সুতরাং কীভাবে তাকে গ্রাহ্য করা যায়?
এ অভিযোগের জবাব :
وَمَاۤ اَرْسَلْنَا قَبْلَكَ مِنَ الْمُرْسَلِيْنَ اِلَّاۤ اِنَّهُمْ لَيَأْكُلُوْنَ الطَّعَامَ وَيَمْشُوْنَ فىِ الْاَسْوَاقِ
তোমার পূর্বে আমি যে সকল রাসূল প্রেরণ করেছি তারা সকলেই আহার করত ও হাট-বাজারে চলাফেরা করত। (সূরা ফুরক্বান- ২০)
নবীর স্ত্রী-সন্তান থাকবে কেন- এ অভিযোগের জবাব :
وَلَقَدْ اَرْسَلْنَا رُسُلًا مِّنْ قَبْلِكَ وَجَعَلْنَا لَهُمْ اَزْوَاجًا وَّذُرِّيَّةًؕ وَمَا كَانَ لِرَسُوْلٍ اَنْ يَّأْتِيَ بِاٰيَةٍ اِلَّا بِاِذْنِ اللهِؕ لِكُلِّ اَجَلٍ كِتَابٌ
তোমার পূর্বে আমি অনেক রাসূল প্রেরণ করেছিলাম এবং তাদেরকে স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দিয়েছিলাম। আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত কোন নিদর্শন উপস্থিত করা কোন রাসূলের কাজ নয়। প্রতিটি বিষয়ের জন্য নির্ধারিত কাল লিপিবদ্ধ রয়েছে। (সূরা রা‘দ- ৩৮)
নবী ﷺ এর ধনসম্পদ না থাকার কারণে অভিযোগ :
اَوْ يُلْقٰۤى اِلَيْهِ كَنْزٌ اَوْ تَكُوْنُ لَهٗ جَنَّةٌ يَّأْكُلُ مِنْهَاؕ وَقَالَ الظَّالِمُوْنَ اِنْ تَتَّبِعُوْنَ اِلَّا رَجُلًا مَّسْحُوْرًا
অথবা তাকে ধনভান্ডার দেয়া হয় না কেন অথবা তার একটি বাগান নেই কেন, যা হতে সে আহার সংগ্রহ করতে পারে? সীমালঙ্ঘনকারীরা আরো বলে, তোমরা তো এক যাদুগ্রস্ত ব্যক্তিরই অনুসরণ করছ। (সূরা ফুরক্বান- ৮)
এ অভিযোগের জবাব :
تَبَارَكَ الَّذِيْۤ اِنْ شَآءَ جَعَلَ لَكَ خَيْرًا مِّنْ ذٰلِكَ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ وَيَجْعَلْ لَّكَ قُصُوْرًا – بَلْ كَذَّبُوْا بِالسَّاعَةِ وَاَعْتَدْنَا لِمَنْ كَذَّبَ بِالسَّاعَةِ سَعِيْرًا
তিনি কতই না মহান, যিনি ইচ্ছা করলে তোমাকে এর চেয়ে উৎকৃষ্ট বস্তু দিতে পারেন- (যেমন) উদ্যানসমূহ, যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত হবে এবং তিনি তোমাকে (আরো) দিতে পারেন প্রাসাদসমূহ। কিন্তু তারা (কাফিররা) কিয়ামতকে অস্বীকার করেছে। আর যারা কিয়ামতকে অস্বীকার করে, তাদের জন্য আমি জ্বলন্ত অগ্নি প্রস্তুত করে রেখেছি। (সূরা ফুরক্বান- ১০, ১১)
এ নবীর অনুসরণ করলে তোমরা দেশ হতে উৎখাত হবে- এর জবাব :
وَقَالُوْاۤ اِنْ نَّتَّبِعِ الْهُدٰى مَعَكَ نُتَخَطَّفْ مِنْ اَرْضِنَاؕ اَوَلَمْ نُمَكِّنْ لَّهُمْ حَرَمًا اٰمِنًا يُّجْبٰۤى اِلَيْهِ ثَمَرَاتُ كُلِّ شَيْءٍ رِّزْقًا مِّنْ لَّدُنَّا وَلٰكِنَّ اَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ – وَكَمْ اَهْلَكْنَا مِنْ قَرْيَةٍ ۢبَطِرَتْ مَعِيْشَتَهَاۚ فَتِلْكَ مَسَاكِنُهُمْ لَمْ تُسْكَنْ مِّنْ ۢبَعْدِهِمْ اِلَّا قَلِيْلًاؕ وَكُنَّا نَحْنُ الْوَارِثِيْنَ
তারা বলে, আমরা যদি তোমার সাথে সৎপথ অনুসরণ করি তবে আমাদেরকে দেশ হতে উৎখাত করা হবে। আমি কি তাদেরকে এক নিরাপদ হারামে প্রতিষ্ঠিত করিনি, যেখানে আমার দেয়া রিযিকস্বরূপ সর্বপ্রকার ফলমূল আমদানী হয়? কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না। আমি কত জনপদকে ধ্বংস করেছি, যার বাসিন্দারা নিজেদের ভোগ-সম্পদের অহংকার করত! এগুলোই তো তাদের ঘরবাড়ি, তাদের পর এগুলোতে লোকজন সামান্যই বসবাস করছে। আর আমিই তো এগুলোর চূড়ান্ত মালিকানার অধিকারী। (সূরা ক্বাসাস- ৫৭, ৫৮)
ব্যাখ্যা : কুরাইশ বংশীয় কাফিররা ইসলাম গ্রহণ না করার অজুহাত হিসেবে এ কথাটি বলত। গভীরভাবে চিন্তা করে দেখলে জানা যাবে, এটিই ছিল তাদের কুফরীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক কারণ। যখন নবী ﷺ এর তাওহীদের দাওয়াত সম্প্রসারিত হতে লাগল তখন বাপ-দাদার ধর্মের প্রতি অন্ধপ্রীতির চেয়ে বড় হয়ে যে বিষয়টি কুরাইশদেরকে তার বিরুদ্ধে ক্ষেপে উঠার কারণ হয়ে দেখা দিল সেটি ছিল এই যে, এ দাওয়াতের ফলে তারা নিজেদের স্বার্থহানির আশঙ্কা করছিল। তারা মনে করছিল, যুক্তিপূর্ণ দলীল-প্রমাণের মাধ্যমে শিরক ও মূর্তিপূজা মিথ্যা। কিন্তু তা পরিত্যাগ করে একে গ্রহণ করে নেয়া আমাদের জন্য ধ্বংসের কারণ হবে। এমনটি করার সাথে সাথেই সমগ্র আরবের অধিবাসীরা তাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়বে। এভাবে এ দ্বীনটি তাদের ধর্মীয় প্রভাব-প্রতিপত্তি এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিরও অবসান ঘটাবে। রাসূল ﷺ বার বার তাদেরকে এ নিশ্চয়তা দান করছিলেন যে, তোমাদের সামনে আমি যে কালিমা পেশ করেছি তা মেনে নাও, তাহলে আরব ও অনারব সকলেই তোমাদের পদানত হয়ে যাবে। কিন্তু তারা এর মধ্যে নিজেদের বিপদ দেখতে পাচ্ছিল। তারা মনে করেছিল, আমরা আজ যে সম্পদ ও প্রভাব-প্রতিপত্তি লাভ করেছি এও নিঃশেষ হয়ে যাবে। এর জবাবে বলা হয়েছে, তোমরা যে ধন-দৌলত ও সমৃদ্ধির জন্য অহংকারী হয়ে উঠেছ, যার বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় বাতিলের উপরে টিকে থাকতে চাচ্ছ- এই জিনিসই এক সময় আদ, সামূদ, সাবা, মাদইয়ান ও লূত জাতির লোকদেরকে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেগুলোও কি তাদেরকে ধ্বংস থেকে রক্ষা করতে পেরেছিল? যেসব অসৎ ও ভ্রষ্টতামূলক কাজ অতীতের সমৃদ্ধশালী জাতিগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে তার উপর টিকে থাকার প্রচেষ্টা চালিয়ে তোমরা রক্ষা পেয়ে যাবে এবং তাদের মতো তোমাদের উপর কখনো ধ্বংস নেমে আসবে না- এর কোন গ্যারান্টি কি তোমাদের কাছে আছে?
নবী মানবীয় বৈশিষ্ট্যের ঊর্ধ্বে থাকবেন- এ ধারণার জবাব :
قُلْ لَّاۤ اَقُوْلُ لَكُمْ عِنْدِيْ خَزَآئِنُ اللهِ وَلَاۤ اَعْلَمُ الْغَيْبَ وَلَاۤ اَقُوْلُ لَكُمْ اِنِّيْ مَلَكٌۚ اِنْ اَتَّبِعُ اِلَّا مَا يُوْحٰۤى اِلَيَّؕ قُلْ هَلْ يَسْتَوِى الْاَعْمٰى وَالْبَصِيْرُؕ اَفَلَا تَتَفَكَّرُوْنَ
বলো, আমি তোমাদেরকে এটা বলি না যে, আমার নিকট আল্লাহর ধনভান্ডার আছে, অদৃশ্য সম্বন্ধেও আমি জানি না এবং তোমাদেরকে এটাও বলি না যে, আমি ফেরেশতা। আমার প্রতি যা ওহী হয় আমি শুধু তারই অনুসরণ করি। বলো, অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি সমান? তোমরা কি চিন্তা-ভাবনা কর না? (সূরা আন‘আম- ৫০)
মুহাম্মাদ ﷺ লেজকাটা- এ উক্তির জবাব :
اِنَّاۤ اَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ – فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ – اِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْاَبْتَرُ
(হে নবী!) অবশ্যই আমি তোমাকে কাওসার (নিয়ামতের ভান্ডার) দান করেছি। অতএব তুমি (আমাকে স্মরণের জন্য) নামায কায়েম করো এবং (আমারই উদ্দেশ্যে) কুরবানী করো, নিশ্চয় (পরিশেষে) তোমার নিন্দুকরাই হবে লেজকাটা (অসহায়)। (সূরা কাওসার)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ এর সকল পুত্রসন্তান ছোট কালেই মারা যায়। এতে কুরাইশ বংশের লোকেরা বলাবলি করতে লাগল - بَتِرَ مُحَمَّدٌ অর্থাৎ মুহাম্মাদ লেজকাটা (নির্বংশ) হয়ে গেছে। তখন আল্লাহ তা‘আলা এ সূরাটি নাযিল করেন। (ইবনে কাসীর) অপর বর্ণনায় রয়েছে, নবী ﷺ এর পুত্র ইবরাহীম মারা গেলে মক্কার মুশরিকরা একে অপরকে বলাবলি করতে লাগল, মুহাম্মাদ লেজকাটা হয়ে গেছে। মুশরিকদের এ সকল অশালীন উক্তির কারণে নবী ﷺ কষ্ট পেতেন। বিপদের সময় নিজের আত্মীয়স্বজন পাশে দাঁড়ানোর কথা, কিন্তু তারাই তাঁর কষ্টকে আরো বাড়িয়ে তুলছিল। এ বেদনাদায়ক পরিস্থিতিতে আল্লাহ তা‘আলা সূরা কাওসার নাযিল করে নবীকে সান্ত্বনা দিলেন।
নবী ﷺ এর মজলিস থেকে গরীবদেরকে তাড়িয়ে দিতে হবে- এ উক্তির জবাব :
وَلَا تَطْرُدِ الَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيْدُوْنَ وَجْهَهٗؕ مَا عَلَيْكَ مِنْ حِسَابِهِمْ مِّنْ شَيْءٍ وَّمَا مِنْ حِسَابِكَ عَلَيْهِمْ مِّنْ شَيْءٍ فَتَطْرُدَهُمْ فَتَكُوْنَ مِنَ الظَّالِمِيْنَ
যারা তাদের প্রতিপালককে সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ডাকে তুমি তাদেরকে বিতাড়িত করো না। তাদের কর্মের জবাবদিহির দায়িত্ব তোমার নয় এবং তোমার কোন কর্মের জবাবদিহির দায়িত্বও তাদের নয় যে, তুমি তাদেরকে বিতাড়িত করবে; যদি কর তবে তুমি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (সূরা আন‘আম- ৫২)
এ লোকটি কানপাতলা- এ উক্তির জবাব :
وَمِنْهُمُ الَّذِيْنَ يُؤْذُوْنَ النَّبِيَّ وَيَقُوْلُوْنَ هُوَ اُذُنٌؕ قُلْ اُذُنُ خَيْرٍ لَّكُمْ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَيُؤْمِنُ لِلْمُؤْمِنِيْنَ وَرَحْمَةٌ لِّلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مِنْكُمْؕ وَالَّذِيْنَ يُؤْذُوْنَ رَسُوْلَ اللهِ لَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
তাদের মধ্যে এমনও লোক আছে, যারা নবীকে কষ্ট দেয় এবং বলে, সে তো কর্ণপাতকারী। বলো, তার কান তোমাদের জন্য যা মঙ্গল তাই শুনে। সে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন করে এবং মুমিনদেরকে বিশ্বাস করে। তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে সে তাদের জন্য রহমতস্বরূপ; আর যারা আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয় তাদের জন্য রয়েছে মর্মান্তিক শাস্তি। (সূরা তাওবা- ৬১)
আমাদের মূর্তিগুলো তোমাকে ধ্বংস করবে- এ উক্তির জবাব :
اَلَيْسَ اللهُ بِكَافٍ عَبْدَهٗؕ وَيُخَوِّفُوْنَكَ بِالَّذِيْنَ مِنْ دُوْنِهٖؕ وَمَنْ يُّضْلِلِ اللهُ فَمَا لَهٗ مِنْ هَادٍ
আল্লাহ কি তাঁর বান্দার জন্য যথেষ্ট নন? অথচ তারা তোমাকে আল্লাহর পরিবর্তে অন্য কারো ভয় দেখায়। মূলত আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার জন্য কোন পথপ্রদর্শক নেই। (সূরা যুমার- ৩৬)
ব্যাখ্যা : মক্কার কাফিররা নবী ﷺ কে বলত, তুমি তো আমাদের উপাস্যদের সাথে বেআদবী কর এবং তাদের বিরুদ্ধে কথা বল। তারা কত বড় সম্মানিত সত্তা তা কি তুমি জান না। ইতোপূর্বে যে-ই তাদের অবমাননা ও অপমান করেছে সে-ই ধ্বংস হয়েছে। তুমি যদি এসব কথা থেকে বিরত না হও, তাহলে এরা তোমাকে ধ্বংস করে ছাড়বে। এটাও তাদের হেদায়াত থেকে বঞ্চিত হওয়ার ফলশ্রুতি। কারণ এসব উপাস্যদের শক্তি ও মর্যাদার প্রতি এসব নির্বোধদের ভালো খেয়াল আছে। কিন্তু এ খেয়াল তাদের কখনো আসে না যে, আল্লাহ এক মহাপরাক্রমশালী সত্তা, শিরক করে এরা তাঁকে যে অপমান করছে এজন্যও তাদের শাস্তি হতে পারে।
আমাদের উপাস্যদের দাসত্ব করো- এ আহবানের জবাব :
قُلْ اِنِّيْ نُهِيْتُ اَنْ اَعْبُدَ الَّذِيْنَ تَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِؕ قُلْ لَّاۤ اَتَّبِعُ اَهْوَآءَكُمْ قَدْ ضَلَلْتُ اِذًا وَّمَاۤ اَنَاْ مِنَ الْمُهْتَدِيْنَ
বলো, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে আহবান কর তাদের ইবাদাত করতে নিষেধ করা হয়েছে। বলো, আমি তোমাদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করি না; যদি করি তবে আমি বিপথগামী হয়ে যাব এবং সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত থাকব না। (সূরা আন‘আম- ৫৬)
قُلْ يَاۤ اَيُّهَا الْكَافِرُوْنَ – لَاۤ اَعْبُدُ مَا تَعْبُدُوْنَ – وَلَاۤ اَنْتُمْ عَابِدُوْنَ مَاۤ اَعْبُدُ – وَلَاۤ اَنَاْ عَابِدٌ مَّا عَبَدْتُّمْ – وَلَاۤ اَنْتُمْ عَابِدُوْنَ مَاۤ اَعْبُدُ – لَكُمْ دِيْنُكُمْ وَلِيَ دِيْنِ
(হে নবী!) তুমি বলে দাও, হে কাফিররা! আমি তাদের ইবাদাত করি না তোমরা যাদের ইবাদাত কর। আর তোমরা তার ইবাদাতকারী নও যার ইবাদাত আমি করি এবং আমিও তাদের ইবাদাতকারী নই যাদের ইবাদাত তোমরা কর। আর তোমরা তার ইবাদাতকারী নও যার ইবাদাত আমি করি। (এ দ্বীনের মধ্যে কোন মিশ্রণ সম্ভব নয়, অতএব) তোমাদের পথ তোমাদের জন্য, আর আমার পথ আমার জন্য। (সূরা কাফিরূন)
এখন আযাব আসেনা কেন- এ উক্তির জবাব :
قُلْ اِنِّيْ عَلٰى بَيِّنَةٍ مِّنْ رَّبِّيْ وَكَذَّبْتُمْ بِهٖؕ مَا عِنْدِيْ مَا تَسْتَعْجِلُوْنَ بِهٖؕ اِنِ الْحُكْمُ اِلَّا لِلّٰهِؕ يَقُصُّ الْحَقَّ وَهُوَ خَيْرُ الْفَاصِلِيْنَ – قُلْ لَّوْ اَنَّ عِنْدِيْ مَا تَسْتَعْجِلُوْنَ بِهٖ لَقُضِيَ الْاَمْرُ بَيْنِيْ وَبَيْنَكُمْؕ وَاللهُ اَعْلَمُ بِالظَّالِمِيْنَ
বলো, অবশ্যই আমি আমার প্রতিপালকের স্পষ্ট প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত; অথচ তোমরা তাকে প্রত্যাখ্যান করেছ। যা তোমরা খুব তাড়াতাড়ি পেতে চাও (অর্থাৎ আল্লাহর আযাব) তা আমার আয়ত্তে নেই। কর্তৃত্ব তো আল্লাহরই, তিনি সত্য বর্ণনা করেন; আর ফায়সালাকারীদের মধ্যে তিনিই শ্রেষ্ঠ। বলো, তোমরা যা তাড়াতাড়ি চাচ্ছ তা যদি আমার নিকট থাকত, তবে আমার ও তোমাদের মধ্যকার ব্যাপারে তো ফায়সালা হয়েই যেত। তথাপিও আল্লাহ যালিমদের সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত। (সূরা আন‘আম- ৫৭, ৫৮)
এ নবীকে শেষ করে দেব- এ চিন্তার জবাব :
وَمَا جَعَلْنَا لِبَشَرٍ مِّنْ قَبْلِكَ الْخُلْدَؕ اَفَاِنْ مِّتَّ فَهُمُ الْخَالِدُوْنَ – كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِؕ وَنَبْلُوْكُمْ بِالشَّرِّ وَالْخَيْرِ فِتْنَةًؕ وَاِلَيْنَا تُرْجَعُوْنَ
আমি তোমার পূর্বেও কোন মানুষকে অনন্ত জীবন দান করিনি; সুতরাং তোমার মৃত্যু হলে তারা কি চিরঞ্জীব হয়ে থাকবে? প্রতিটি জীবনই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে; আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভালো দ্বারা বিশেষভাবে পরীক্ষা করে থাকি। আর তোমাদেরকে আমারই দিকে প্রত্যাবর্তন করা হবে। (সূরা আম্বিয়া- ৩৪, ৩৫)
মুহাম্মাদকে তার রব পরিত্যাগ করেছে- এ উক্তির জবাব :
وَالضُّحٰى – وَاللَّيْلِ اِذَا سَجٰى – مَا وَدَّعَكَ رَبُّكَ وَمَا قَلٰى
শপথ পূর্বাহ্নের; শপথ রাত্রির, যখন তা গভীর হয়। আপনার পালনকর্তা আপনাকে ত্যাগ করেননি এবং আপনার প্রতি বিরূপও হননি। (সূরা যোহা, ১-৩)
এ নবী বিপথগামী হয়ে গেছে- এ উক্তির জবাব :
وَالنَّجْمِ اِذَا هَوٰى – مَا ضَلَّ صَاحِبُكُمْ وَمَا غَوٰى
শপথ তারকারাজির, যখন তা অস্তমিত হয়, তোমাদের সাথি পথভ্রষ্ট হয়নি এবং বিভ্রান্তও হয়নি। (সূরা নাজম- ১, ২)
এ নবী পাগল- এ উক্তির জবাব :
نٓ وَالْقَلَمِ وَمَا يَسْطُرُوْنَ – مَاۤ اَنْتَ بِنِعْمَةِ رَبِّكَ بِمَجْنُوْنٍ
নূন। শপথ কলমের এবং তারা (ফেরেশতাগণ) যা লিপিবদ্ধ করে তার, তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহে তুমি উন্মাদ নও। (সূরা ক্বালাম- ১, ২)
وَمَا صَاحِبُكُمْ بِمَجْنُوْنٍ
আর তোমাদের সাথি (মুহাম্মাদ) পাগল নয়। (সূরা তাকভীর- ২২)
এ নবী গণক- এ উক্তির জবাব :
فَذَكِّرْ فَمَاۤ اَنْتَ بِنِعْمَتِ رَبِّكَ بِكَاهِنٍ وَّلَا مَجْنُوْنٍ
অতএব তুমি উপদেশ দিতে থাক, তোমার প্রভুর অনুগ্রহে তুমি গণক নও এবং উন্মাদও নও। (সূরা তূর- ২৯)
তার উপর নিদর্শন নাযিল হয় না কেন- এ প্রশ্নের জবাব :
وَقَالُوْا لَوْلَا نُزِّلَ عَلَيْهِ اٰيَةٌ مِّنْ رَّبِّهٖؕ قُلْ اِنَّ اللهَ قَادِرٌ عَلٰۤى اَنْ يُّنَزِّلَ اٰيَةً وَّلٰكِنَّ اَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ
তারা বলে, তার প্রতিপালকের নিকট হতে তার নিকট কোন নিদর্শন নাযিল হয় না কেন? বলো, নিশ্চয় আল্লাহ নিদর্শন নাযিল করতে সক্ষম, কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না। (সূরা আন‘আম- ৩৭)
وَمَا كَانَ لِرَسُوْلٍ اَنْ يَّأْتِيَ بِاٰيَةٍ اِلَّا بِاِذْنِ اللهِؕ لِكُلِّ اَجَلٍ كِتَابٌ
আল্লাহর হুকুম ব্যতীত নিদর্শন হাজির করার শক্তি কোন রাসূলের নেই। যাবতীয় বিষয়ের নির্দিষ্ট সময় লিপিবদ্ধ আছে। (সূরা রা‘দ- ৩৮)
নবী ﷺ এর কাছে ফেরেশতা আসে না কেন- এ প্রশ্নের জবাব :
وَقَالُوْا لَوْلَاۤ اُنْزِلَ عَلَيْهِ مَلَكٌؕ وَلَوْ اَنْزَلْنَا مَلَكًا لَّقُضِيَ الْاَمْرُ ثُمَّ لَا يُنْظَرُوْنَ
তারা বলে, তার নিকট কোন ফেরেশতা প্রেরিত হয় না কেন? (তাদেরকে বলে দাও) যদি আমি ফেরেশতা প্রেরণ করতাম তাহলে তো চূড়ান্ত ফায়সালা হয়েই যেত, আর তাদেরকে কোন অবকাশ দেয়া হতো না।
(সূরা আন‘আম- ৮)
لَوْ مَا تَأْتِيْنَا بِالْمَلَآئِكَةِ اِنْ كُنْتَ مِنَ الصَّادِقِيْنَ – مَا نُنَزِّلُ الْمَلَآئِكَةَ اِلَّا بِالْحَقِّ وَمَا كَانُوْاۤ اِذًا مُّنْظَرِيْنَ
তুমি সত্যবাদী হলে আমাদের নিকট ফেরেশতাগণকে উপস্থিত করছ না কেন? আমি ফেরেশতাগণকে যথার্থ কারণ ব্যতীত প্রেরণ করি না; কেননা ফেরেশতাগণ উপস্থিত হলে তারা আর অবকাশ পাবে না। (সূরা হিজর- ৭, ৮)
আল্লাহ সরাসরি সাক্ষ্য দিতে আসেন না কেন- এ উক্তির জবাব :
وَقَالَ الَّذِيْنَ لَا يَرْجُوْنَ لِقَآءَنَا لَوْلَاۤ اُنْزِلَ عَلَيْنَا الْمَلَآئِكَةُ اَوْ نَرٰى رَبَّنَاؕ لَقَدِ اسْتَكْبَرُوْا فِۤيْ اَنْفُسِهِمْ وَعَتَوْا عُتُوًّا كَبِيْرًا
যারা আমার সাক্ষাৎ কামনা করে না তারা বলে, আমাদের নিকট ফেরেশতা অবতরণ করানো হয় না কেন? অথবা আমরা আমাদের প্রতিপালককে প্রত্যক্ষ করি না কেন? তারা তো তাদের অন্তরে অহংকার পোষণ করেছে এবং তারা ঘোরতরভাবে সীমালঙ্ঘন করেছে। (সূরা ফুরক্বান- ২১)
وَقَالَ الَّذِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ لَوْلَا يُكَلِّمُنَا اللهُ اَوْ تَأْتِيْنَاۤ اٰيَةٌؕ كَذٰلِكَ قَالَ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ مِّثْلَ قَوْلِهِمْؕ تَشَابَهَتْ قُلُوْبُهُمْؕ قَدْ بَيَّنَّا الْاٰيَاتِ لِقَوْمٍ يُّوْقِنُوْنَ
মূর্খরা বলে, আল্লাহ আমাদের সাথে কথা বলেন না কেন অথবা কেন আমাদের কাছে কোন নিদর্শন আসে না? এদের পূর্বে যারা ছিল তারাও এদের অনুরূপ কথা বলত। তাদের সকলের অন্তর পরস্পর সাদৃশ্যপূর্ণ। অথচ আমি বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শনসমূহ বর্ণনা করে দিয়েছি। (সূরা বাক্বারা- ১১৮)
তারা কত আশ্চর্যজনক দাবী করত :
وَقَالُوْا لَنْ نُّؤْمِنَ لَكَ حَتّٰى تَفْجُرَ لَنَا مِنَ الْاَرْضِ يَنْۢبُوْعًا – اَوْ تَكُوْنَ لَكَ جَنَّةٌ مِّنْ نَّخِيْلٍ وَّعِنَبٍ فَتُفَجِّرَ الْاَنْهَارَ خِلَالَهَا تَفْجِيْرًا – اَوْ تُسْقِطَ السَّمَآءَ كَمَا زَعَمْتَ عَلَيْنَا كِسَفًا اَوْ تَأْتِيَ بِاللهِ وَالْمَلَآئِكَةِ قَبِيْلًا – اَوْ يَكُوْنَ لَكَ بَيْتٌ مِّنْ زُخْرُفٍ اَوْ تَرْقٰى فِى السَّمَآءِ وَلَنْ نُّؤْمِنَ لِرُقِيِّكَ حَتّٰى تُنَزِّلَ عَلَيْنَا كِتَابًا نَّقْرَؤُهٗ قُلْ سُبْحَانَ رَبِّيْ هَلْ كُنْتُ اِلَّا بَشَرًا رَّسُوْلًا
তারা বলে, আমরা কখনই তোমার প্রতি ঈমান আনব না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তুমি আমাদের জন্য ভূমি হতে এক নদী প্রবাহিত করবে, অথবা তোমার খেজুরের ও আঙ্গুরের একটি বাগান হবে, যার ফাঁকে ফাঁকে অজস্র ধারায় প্রবাহিত করবে নদী-নালা, অথবা তুমি যেমন বলে থাক তদানুযায়ী আকাশকে খন্ড-বিখন্ড করে আমাদের উপর ফেলবে, অথবা আল্লাহ ও ফেরেশতাগণকে আমাদের সম্মুখে উপস্থিত করবে, অথবা তোমার একটি সবর্ণ নির্মিত গৃহ হবে, অথবা তুমি আকাশে আরোহণ করবে। কিন্তু তোমার আকাশে আরোহণ করাতেও আমরা কখনো ঈমান আনব না, যতক্ষণ না তুমি আমাদের প্রতি এক কিতাব অবতরণ করবে, যা আমরা পাঠ করব। বলো, আমার প্রতিপালক খুবই পবিত্র ও মহান! আমি তো একজন মানুষ ও একজন রাসূল মাত্র। (সূরা বনী ইসরাঈল, ৯০-৯৩)
সকল যুগে নবীদের বিরুদ্ধে একই ধারার অভিযোগ আনা হয়েছে :
كَذٰلِكَ مَاۤ اَتَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ مِّنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا قَالُوْا سَاحِرٌ اَوْ مَجْنُوْنٌ – اَتَوَاصَوْا بِهٖۚ بَلْ هُمْ قَوْمٌ طَاغُوْنَ
এভাবে, তাদের পূর্ববর্তীদের নিকট যখনই কোন রাসূল এসেছেন, তারা বলেছে, তুমি তো এক যাদুকর অথবা উন্মাদ। তারা কি একে অপরকে এ উপদেশই দিয়ে এসেছে? বস্তুত তারা এক সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়। (সূরা যারিয়াত- ৫২, ৫৩)
তারা মানুষের মধ্যে কুধারণা সৃষ্টি করত :
وَاَسَرُّوا النَّجْوَى الَّذِيْنَ ظَلَمُوْاۗ هَلْ هٰذَاۤ اِلَّا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْۚ اَفَتَأْتُوْنَ السِّحْرَ وَاَنْتُمْ تُبْصِرُوْنَ
যারা যালিম তারা গোপনে পরামর্শ করে (বলে), সে তো তোমাদের মতোই একজন মানুষ; তবুও কি তোমরা দেখেশুনে যাদুর কবলে পড়বে? (সূরা আম্বিয়া- ২, ৩)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ সম্পর্কে বিরোধীরা নানা ধরনের কথা বলত। কখনো বলত, এ ব্যক্তি যাদুকর। কখনো বলত, সে নিজেই কিছু বাণী রচনা করে বলছে- এটা আল্লাহর বাণী। কখনো বলত, কিছু কাব্যিক ছন্দকে সে আল্লাহর বাণী নাম দিয়ে রেখেছে। কখনো বলত, এগুলো আবার এমন কি বাণী! এগুলো তো পাগলের প্রলাপ এবং অহেতুক চিন্তা ধারার একটা আবর্জনার স্তূপ ছাড়া আর কিছুই নয়। মূলত এসব সমালোচনার উদ্দেশ্যই ছিল লোকদেরকে প্রতারিত করা। ফলে তারা কোন একটি কথার উপর অবিচল থেকে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পেশ করছিল না। কিন্তু মিথ্যা প্রচারণার ফল যা হলো তা হচ্ছে, তারা নিজেরাই নবী ﷺ এর নাম দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দিল। মুসলিমদের দীর্ঘ প্রচেষ্টায় যে প্রচার ও পরিচিতি হওয়া সম্ভব ছিল না, কুরাইশদের এ বিরোধিতার ফলে তা সামান্য কিছু সময়েই হয়ে গেল। প্রত্যেক ব্যক্তির মনে একটি প্রশ্ন জাগল, যার বিরুদ্ধে এ বিরাট অভিযান ও মারাত্মক অভিযোগ, কে সেই ব্যক্তি? অনেকে ভাবল, তার কথা তো শোনা উচিত। আমরা তো আর দুধের শিশু নই যে, অযথা তার কথায় পথভ্রষ্ট হয়ে যাব। তুফাইল ইবনে আমর (রাঃ) বলেন, আমি দাওস গোত্রের একজন কবি ছিলাম। একদা কোন কাজে মক্কায় গিয়েছিলাম। সেখানে পৌঁছতেই কুরাইশদের কয়েকজন লোক আমাকে ঘিরে ফেলল এবং নবী ﷺ এর বিরুদ্ধে আমাকে অনেক কথা বলল। ফলে তাঁর সম্পর্কে আমার মনে খারাপ ধারণা জন্মাল। আমি ভাবলাম, তাঁর কাছ থেকে দূরে থাকব। পর দিন আমি দেখলাম তিনি কা‘বাগৃহের কাছে নামায পড়ছেন। তাঁর মুখ নিঃসৃত কয়েকটি বাক্য আমার কানে পড়লে আমি অনুভব করলাম, বড় চমৎকার বাণী। মনে মনে বললাম, আমি কবি, যুবক ও বুদ্ধিমান। আমি কোন শিশু নই যে, ঠিক ও বেঠিকের মধ্যে পার্থক্য করতে পারব না। তাহলে এ ব্যক্তি কী বলেন, তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানার চেষ্টা করি না কেন? অতঃপর নবী ﷺ যখন নামায শেষ করে চলে যেতে লাগলেন তখন আমি তাঁর পিছু নিলাম। তাঁর গৃহে পৌঁছে তাঁকে বললাম, আপনার সম্প্রদায়ের লোকেরা আপনার সম্পর্কে আমাকে এসব কথা বলেছিল, ফলে আমি আপনার ব্যাপারে এতই খারাপ ধারণা করেছিলাম যে, নিজের কানে তুলা দিয়েছিলাম, যাতে আপনার কথা শুনতে না পাই। কিন্তু এখনই যে কয়েকটি বাক্য আমি আপনার মুখ থেকে শুনেছি তা আমার কাছে বড়ই চমৎকার মনে হয়েছে। আপনি কী বলেন, আমাকে একটু বিস্তারিত জানান। জবাবে নবী ﷺ আমাকে কুরআনের একটি অংশ শুনালেন। তাতে আমি এত বেশি প্রভাবিত হলাম যে, তখনই ইসলাম গ্রহণ করে ফেললাম। সেখান থেকে ফিরে গিয়ে আমি নিজের পিতা ও স্ত্রীকে মুসলিম বানালাম। এরপর নিজের গোত্রের মধ্যে অবিরাম ইসলাম প্রচারের কাজ করতে লাগলাম। এমনকি খন্দকের যুদ্ধের সময় পর্যন্ত আমার গোত্রের সত্তর আশিটি পরিবার ইসলাম গ্রহণ করে ফেলল। (ইবনে হিশাম, ২ খন্ড, ২২-২৪ পৃ:)
কুরআন প্রচারের সময় গোলমাল সৃষ্টি করত :
وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَا تَسْمَعُوْا لِهٰذَا الْقُرْاٰنِ وَالْغَوْا فِيْهِ لَعَلَّكُمْ تَغْلِبُوْنَ
কাফিররা বলে, তোমরা এ কুরআন শ্রবণ করো না; বরং তা তিলাওয়াতকালে শোরগোল সৃষ্টি করো, যাতে তোমরা বিজয়ী হতে পার। (সূরা সাজদা- ২৬)
ব্যাখ্যা : মক্কার কাফিররা যেসব পরিকল্পনার মাধ্যমে নবী ﷺ এর প্রচারকে ব্যর্থ করে দিতে চাচ্ছিল, এটি ছিল তার অন্যতম। তারা মনে করত, এরকম উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তির মুখ থেকে এমন হৃদয়গ্রাহী ভঙ্গিতে এই নজিরবিহীন বাণী যে-ই শুনবে সে-ই ঘায়েল হয়ে যাবে। অতএব তারা পরিকল্পনা করল যে, তারা এ বাণী নিজেরাও শুনবে না এবং অন্য কাউকেও শুনতে দেবে না। মুহাম্মাদ ﷺ যখনই তা শুনাতে আরম্ভ করবেন, তখনই তারা হৈ চৈ শুরু করে দেবে। তালি বাজাবে, বিদ্রূপ করবে, আপত্তি ও সমালোচনার ঝড় তুলবে এবং চিৎকার জুড়ে দেবে। তারা আশা করত, এ কৌশল অবলম্বন করে তারা আল্লাহর নবীকে ব্যর্থ করে দিতে সক্ষম হবে।
নিজেরা দূরে থাকত এবং অপরকেও দূরে রাখত :
وَهُمْ يَنْهَوْنَ عَنْهُ وَيَنْاَوْنَ عَنْهُؕ وَاِنْ يُّهْلِكُوْنَ اِلَّاۤ اَنْفُسَهُمْ وَمَا يَشْعُرُوْنَ
তারা অন্যকে তা শ্রবণ করা হতে বিরত রাখে এবং নিজেরাও তা থেকে দূরে থাকে। আর তারা শুধু নিজেরাই নিজেদেরকে ধ্বংস করে, অথচ তারা উপলদ্ধি করতে পারে না। (সূরা আন‘আম- ২৬)
গান-বাজনার আসর বসিয়ে মানুষকে ব্যস্ত রাখত :
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّشْتَرِيْ لَهْوَ الْحَدِيْثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ بِغَيْرِ عِلْمٍۗ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًاؕ اُولٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُّهِيْنٌ
মানুষের মধ্যে এমন লোকও আছে, যে লোকদেরকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার জন্য অজ্ঞতাবশত অমূলক কাহিনী ক্রয় করে নেয় এবং আল্লাহর দেখানো পথকে ঠাট্টা-বিদ্রূপের বস্তু বানিয়ে নেয়। এদেরই জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি। (সূরা লুক্বমান- ৬)
ব্যাখ্যা : لَهْوَ الْحَدِيْثِ ‘লাহওয়াল হাদীস’ এমন কথা, যা মানুষকে অন্য সবকিছু থেকে গাফিল করে দেয়। এ শব্দটি খারাপ ও অর্থহীন কথা অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন, কিসসা-কাহিনী, হাসি-ঠাট্টা এবং গান-বাজনা ইত্যাদি। ‘লাহওয়াল হাদীস’ কিনে নেয়ার অর্থ ঐ ব্যক্তি সত্য কথাকে বাদ দিয়ে মিথ্যা কথা গ্রহণ করে এবং সঠিক পথনির্দেশনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে এমন কথার প্রতি আগ্রহী হয়, যার মধ্যে দুনিয়াতেও কোন মঙ্গল নেই এবং আখিরাতেও নেই। ইবনে হিশাম উদ্ধৃত করেছেন, মক্কার কাফিরদের সমস্ত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও যখন এ দাওয়াত সম্প্রসারিত হয়েই চলছিল তখন নযর ইবনে হারেস কুরাইশ নেতাদেরকে বলল, তোমরা যেভাবে এ ব্যক্তির মুকাবিলা করছ, তাতে কোন কাজ হবে না। নৈতিক চরিত্রের দিক দিয়ে সে ছিল তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত লোক। এখন তোমরা বলছ, সে যাদুকর ও পাগল। এ কথা কে বিশ্বাস করবে? থামো, এ রোগের চিকিৎসা আমিই করব। এরপর সে মক্কা থেকে ইয়ামান চলে যায়। সেখান থেকে অনারব বাদশাহদের কিসসা-কাহিনী সংগ্রহ করে গল্পের আসর জমিয়ে তুলতে লাগল। তার উদ্দেশ্য ছিল এভাবে লোকেরা কুরআনের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে এবং এসব কাহিনীর মধ্যে ডুবে যাবে। (সীরাতে ইবনে হিশাম, ১ম খন্ড, ৩২০-৩২১ পৃঃ)
ইবনে আববাস (রাঃ) এতে আরো বৃদ্ধি করেছেন যে, নযর এ উদ্দেশ্যে গায়িকা ও বাঁদীদেরকে কিনে এনেছিল। ফলে কোন ব্যক্তি নবী ﷺ এর কথায় প্রভাবিত হতে চলেছে বলে তার কাছে খবর এলেই সে তার জন্য একজন বাঁদী নিযুক্ত করত এবং তাকে বলত ওকে খুব ভালো করে পানাহার করাও ও গান শুনাও এবং সবসময় তোমার সাথে জড়িয়ে রেখে ওদিক থেকে তার মন ফিরিয়ে আনো। বিভিন্ন জাতির বড় বড় অপরাধীরা প্রত্যেক যুগে যেসব ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিয়ে এসেছে, সেগুলো ছিল প্রায় একই ধরনের চালবাজি। তারা জনগণকে খেলতামাশা ও নাচগানে মশগুল করতে থাকে। এভাবে তাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার প্রতি নজর দেয়ার চেতনাই থাকে না এবং তারা এ কথা অনুভবই করতে পারে না যে, তাদেরকে এক ভয়াবহ ধ্বংসের দিকে ঠেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ মূর্খ লোক জানে না যে, সে কত মূল্যবান জিনিস বাদ দিয়ে ধ্বংসের জিনিস কিনে নিচ্ছে। একদিকে আছে জ্ঞান ও সঠিক পথনির্দেশনা সমৃদ্ধ আল্লাহর আয়াত, যা সে বিনামূল্যে লাভ করতে পারত; কিন্তু তবুও সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। অন্যদিকে রয়েছে সব অর্থহীন ও বাজে জিনিস, যেগুলো নিজের টাকা-পয়সা খরচ করে হলেও লাভ করছে। সে কোন ধরনের জ্ঞান ছাড়াই লোকদের পথ দেখাচ্ছে এবং আল্লাহর সৃষ্টিকে সরল পথ থেকে বিচ্যুত করছে। আর এভাবে সে নিজের ঘাড়ে কত বড় যুলুমের দায়ভার চাপিয়ে নিচ্ছে, তা জানে না। এ ব্যক্তি লোকদেরকে কিসসা-কাহিনী ও গান-বাজনায় মশগুল করে কুরআনের দাওয়াতকে ঠাট্টা-তামাশার মাধ্যমে উড়িয়ে দিতে চায়। লোকেরা এসব সাংস্কৃতিক অপতৎপরতায় ডুবে গিয়ে আল্লাহ, আখিরাত ও নৈতিক চরিত্রনীতির কথা শোনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এর পরিণামে আল্লাহ তাকে কঠিন লাঞ্ছনাকর শাস্তি দান করবেন।
গল্প-কাহিনীর আসর বসাত :
قَدْ كَانَتْ اٰيَاتِيْ تُتْلٰى عَلَيْكُمْ فَكُنْتُمْ عَلٰۤى اَعْقَابِكُمْ تَنْكِصُوْنَ – مُسْتَكْبِرِيْنَ بِه ۗ سَامِرًا تَهْجُرُوْنَ
আমার আয়াতসমূহ তোমাদের নিকট পাঠ করা হতো, কিন্তু তোমরা দম্ভভরে পেছনে সরে পড়তে এবং এ বিষয়ে অর্থহীন গল্প-গুজবে লিপ্ত হতে। (সূরা মু’মিনূন- ৬৬, ৬৭)
পরকালে অন্যের গোনাহের বোঝা নিজে বহন করার প্রতিশ্রুতি দিত :
وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّبِعُوْا سَبِيْلَنَا وَلْنَحْمِلْ خَطَايَاكُمْؕ وَمَا هُمْ بِحَامِلِيْنَ مِنْ خَطَايَاهُمْ مِّنْ شَيْءٍؕ اِنَّهُمْ لَكَاذِبُوْنَ – وَلَيَحْمِلُنَّ اَثْقَالَهُمْ وَاَثْقَالًا مَّعَ اَثْقَالِهِمْؗ وَلَيُسْاَلُنَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَمَّا كَانُوْا يَفْتَرُوْنَ
কাফিররা মুমিনদেরকে বলে, আমাদের পথ অনুসরণ করো তাহলে আমরা তোমাদের পাপভার বহন করব। কিন্তু তারা তো তাদের পাপভার কিছুই বহন করবে না; অবশ্যই তারা মিথ্যাবাদী। তারা নিজেদের পাপভার বহন করবে এবং সাথে আরো কিছু বোঝা। আর তারা যে মিথ্যা উদ্ভাবন করে সে সম্পর্কে কিয়ামতের দিন অবশ্যই তাদেরকে প্রশ্ন করা হবে। (সূরা আনকাবূত- ১২, ১৩)
নবী ﷺ এর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাত :
نَحْنُ اَعْلَمُ بِمَا يَسْتَمِعُوْنَ بِه ۤ اِذْ يَسْتَمِعُوْنَ اِلَيْكَ وَاِذْ هُمْ نَجْوٰۤى اِذْ يَقُوْلُ الظَّالِمُوْنَ اِنْ تَتَّبِعُوْنَ اِلَّا رَجُلًا مَّسْحُوْرًا
যখন তারা কান পেতে তোমার কথা শুনে, তখন তারা কেন কান পেতে শুনে তা আমি ভালো করে জানি এবং এটাও জানি যে, গোপনে আলোচনাকালে যালিমরা বলে, তোমরা তো এক যাদুগ্রস্ত ব্যক্তির অনুসরণ করছ। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৪৭)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ এর দাওয়াত প্রচারের জন্য কুরাইশ নেতারা প্রতিদিন তাঁকে হুমকি দিত এবং তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক ব্যক্তি তাঁকে হত্যা করে ফেলারও উপায় খোঁজত। অন্যদিকে যে গৃহের কোন একজন ইসলাম গ্রহণ করত সে গৃহের সবাই তার শত্রু হয়ে যেত। মেয়েরা তাকে অভিশাপ দিত ও বদ্দু‘আ করত। আর পুরুষরা তাকে ভয় দেখাত। বিশেষ করে হাবশায় হিজরতের পর মক্কার ঘরে ঘরে বিলাপ শুরু হয়ে গিয়েছিল। কারণ এমন একটি বাড়িও পাওয়া কঠিন ছিল যেখান থেকে একজন পুরুষ বা মেয়ে হিজরত করেনি। এরা সবাই নবী ﷺ এর নামে অভিযোগ করে বলত, এ লোকটি আমাদের পরিবার ধ্বংস করে দিয়েছে। এ আয়াতে এসব কথার জবাব দেয়া হয়েছে এবং একই সঙ্গে নবী ﷺ কেও উপদেশ দেয়া হয়েছে যে, ওদের কোন পরোয়া না করে তুমি নির্ভয়ে নিজের কাজ করে যাও। কারণ শত্রুরা যতই তোমার বিরোধিতা করুক না কেন মৃত্যুর হাত থেকে তারা নিজেদেরকে বাঁচাতে পারবে না।
তারা নবী ﷺ কে বিদ্রূপের পাত্র বানিয়ে নিয়েছিল :
وَاِذَا رَاَوْكَ اِنْ يَّتَّخِذُوْنَكَ اِلَّا هُزُوًاؕ اَهٰذَا الَّذِيْ بَعَثَ اللهُ رَسُوْلًا
যখন তারা তোমাকে দেখতে পায়, তখন তারা তোমাকে কেবল ঠাট্টা-বিদ্রূপের পাত্র হিসেবেই গ্রহণ করে এবং বলে, এ কি সে-ই, যাকে আল্লাহ রাসূল করে পাঠিয়েছেন? (সূরা ফুরক্বান- ৪১)
নবী ﷺ কে নামায পড়তেও বাধা দিত :
اَرَاَيْتَ الَّذِيْ يَنْهٰى – عَبْدًا اِذَا صَلّٰى – اَرَاَيْتَ اِنْ كَانَ عَلَى الْهُدٰى – اَوْ اَمَرَ بِالتَّقْوٰى
আপনি কি এমন এক বান্দাকে দেখেছেন, যখন সে নামায পড়ে তখন তারা (কাফিররা) তাকে নিষেধ করে? আপনি কি এটাও লক্ষ্য করেছেন যে, যদি সে সৎপথে থাকে, অথবা আল্লাহভীতি শিক্ষা দেয় তখনও (তাকে নিষেধ করে?) (সূরা আলাক্ব, ৯-১২)
وَاَنَّهٗ لَمَّا قَامَ عَبْدُ اللهِ يَدْعُوْهُ كَادُوْا يَكُوْنُوْنَ عَلَيْهِ لِبَدًا
যখন আল্লাহর বান্দা তাঁকে ডাকার জন্য দাঁড়ায়, তখন তারা (কাফিররা) তার নিকট ভিড় জমায় (যেন হট্টগোল সৃষ্টি করে বান্দার সেই দাওয়াতকে ব্যর্থ করে দিতে পারে)। (সূরা জিন- ১৯)
তারা নবী ﷺ কে দেশ হতে বিতাড়িত করতে চেয়েছে :
وَاِنْ كَادُوْا لَيَسْتَفِزُّوْنَكَ مِنَ الْاَرْضِ لِيُخْرِجُوْكَ مِنْهَا وَاِذًا لَّا يَلْبَثُوْنَ خِلَافَكَ اِلَّا قَلِيْلًا
তারা তোমাকে স্বদেশ হতে উৎখাত করার চূড়ান্ত চেষ্টা করেছিল, যাতে তারা তোমাকে তা থেকে বহিষ্কার করতে পারে। (আর যদি তারা তোমাকে বহিষ্কার করেই ফেলত) তাহলে তোমার পর তারাও সেখানে অল্পকাল টিকে থাকতে পারত। (অর্থাৎ তোমাকে বহিষ্কার করলে তারাও ধ্বংস হয়ে যেত)। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৭৬)
ব্যাখ্যা : বিরোধীরা নবী ﷺ কে নিজের জন্মভূমি থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য করল। এরপর আট বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হতে না হতেই তিনি বিজয়ীর বেশে জন্মভূমি মক্কায় প্রবেশ করলেন। তারপর দু’বছরের মধ্যেই সমগ্র আরব ভূখন্ডকে মুশরিক শূন্য করলেন। এরপর যারাই এ দেশে বসবাস করেছে মুসলিম হিসেবেই বসবাস করেছে, মুশরিক হিসেবে কেউ সেখানে বসবাস করতে পারেনি। আল্লাহ তা‘আলা সকল নবীর ব্যাপারে একই পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন। অর্থাৎ যে জাতি তাদেরকে হত্যা ও দেশান্তর করেছে, তারা আর বেশি দিন স্বস্থানে অবস্থান করতে পারেনি। হয় আল্লাহর আযাব তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছে অথবা কোন শত্রুভাবাপন্ন জাতিকে তাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে কিংবা সে নবীর অনুসারীদের দ্বারা তাদেরকে বিপর্যস্ত করা হয়েছে।
নবী ﷺ এর উপর যাদু করা হয়েছে :
قُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ – مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ – وَمِنْ شَرِّ غَاسِقٍ اِذَا وَقَبَ – وَمِنْ شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِى الْعُقَدِ – وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ اِذَا حَسَدَ
(হে নবী) আপনি বলুন, আমি উজ্জ্বল প্রভাতের মালিকের কাছে আশ্রয় চাই। (আশ্রয় চাই) তাঁর সৃষ্টি করা প্রতিটি জিনিসের অনিষ্ট থেকে। (আশ্রয় চাই) রাতের অন্ধকারে সংঘটিত অনিষ্ট থেকে, (বিশেষ করে) যখন রাত তার অন্ধকার বিছিয়ে দেয়। (আশ্রয় চাই) গিরায় ফুঁক দিয়ে যাদুটোনাকারিণীদের অনিষ্ট থেকে। (আমি আশ্রয় চাই) হিংসুকের অনিষ্ট থেকেও, যখন সে হিংসা করে। (সূরা ফালাক)
قُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ النَّاسِ – مَلِكِ النَّاسِ – اِلٰهِ النَّاسِ – مِنْ شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ – اَلَّذِيْ يُوَسْوِسُ فِيْ صُدُوْرِ النَّاسِ – مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ
(হে নবী) আপনি বলুন, আমি আশ্রয় চাই মানুষের প্রতিপালকের কাছে। (আশ্রয় চাই) মানুষের মালিকের কাছে। (আশ্রয় চাই) মানুষের একমাত্র ইলাহের কাছে। (আশ্রয় চাই) কুমন্ত্রণাকারীর অনিষ্ট থেকে, যে প্ররোচনা দিয়েই শরীর ঢাকা দেয়। যে মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়। জ্বিনের মধ্য থেকে হোক বা মানুষের মধ্য থেকে হোক। (সূরা নাস)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ যখন ইসলামের দাওয়াত দেয়া আরম্ভ করলেন, তখন কাফির-মুশরিক সবাই তাঁর শত্রুতে পরিণত হয়ে গেল। এ কাজ বন্ধ করার জন্য প্রথমে তারা নবীর সাথে সন্ধির প্রস্তাব জানাল। তখন সূরা কাফিরূন নাযিল করে জানিয়ে দেয়া হলো যে, শিরক ও তাওহীদ, ইসলাম ও কুফর একসাথে চলতে পারে না। এতে তারা ব্যর্থ হওয়ায় নবী ﷺ কে হত্যা করার জন্য গোপনে পরামর্শ করতে লাগল। নবীর বংশের মুসলিমরা যাতে হত্যাকারীকে চিনতে না পারে সেজন্য তারা রাত্রে নবীকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিল। এ সময় তারা নবী ﷺ এর উপর যাদু করারও চেষ্টা করল- যাতে তিনি যাদুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান অথবা অসুস্থ হয়ে যান অথবা পাগল হয়ে যান। কীভাবে তাঁকে এবং তাঁর আদর্শকে উৎখাত করা যায় এজন্য মানুষ শয়তান ও জিন শয়তান চতুর্দিক হতে উঠে পড়ে তার বিরুদ্ধে লাগল। এ সঙ্কটময় মুহূর্তে আল্লাহ তা‘আলা এ দু’টি সূরা নাযিল করে নবী ﷺ কে বলে দিলেন যে, এ অবস্থায় আপনি একমাত্র আল্লাহর সাহায্য কামনা করুন, তারই কাছে আশ্রয় চান। তিনিই আপনার হেফাজতকারী।
হুদায়বিয়া সন্ধির পর মহানবী ﷺ যখন মদিনায় আগমন করলেন, তখন ৭ম হিজরীর মুহাররম মাসে খায়বার হতে একদল ইয়াহুদি মদিনায় আগমন করে বিখ্যাত যাদুকর লাবীদের সাথে সাক্ষাৎ করল। তারা বলল, আমরা মুহাম্মাদকে ধ্বংস করার জন্য বহুবার যাদু করার চেষ্টা করেছি; কিন্তু তাতে সফল হতে পারিনি। আমরা তোমাকে তিনটি আশরাফি (স্বর্ণমূদ্রা) দিচ্ছি, তুমি তাঁর উপর খুব শক্ত আকারের যাদু করো। এ সময় এক ইয়াহুদি ছেলে মহানবীর খাদিম ছিল। তারা তার সাথে যোগাযোগ করে নবীর চিরুনির একটি অংশ সংগ্রহ করে নিল, যার সাথে নবী ﷺ এর চুলও লাগানো ছিল। লাবীদ বা অন্য বর্ণনানুযায়ী তার যাদুকর বোন এ চিরুনি ও চুলের সঙ্গে এগার গিরা বিশিষ্ট এক গাছি সূতা ও সূঁচ বিশিষ্ট একটি মোমের পুতলিসহ খেজুর গাছের ছড়ার আবরণে রেখে যারওয়ান কূপের নিচে একটি পাথরের তলায় চাপা দিয়ে রেখেছিল। নবী ﷺ এর উপর এ যাদুর প্রভাব পড়ল, তিনি শারীরিক দিক দিয়ে দুর্বল ও অসুস্থ হয়ে পড়লেন। মুসনাদে আহমদে বর্ণিত আছে, নবীর এ অসুস্থতা ছয় মাস পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। অবশেষে নবী ﷺ আয়েশা (রাঃ) এর ঘরে অবস্থান করে আল্লাহর নিকট পর পর দু‘আ করলেন। এক সময় তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। জেগে উঠে আয়েশা (রাঃ) কে বললেন, আমি আল্লাহর কাছে যা জানতে চেয়েছিলাম তা আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন। আয়েশা (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, সেটা কী? নবী ﷺ বললেন, আমি স্বপ্নে দেখলাম- দু’জন ফেরেশতা মানুষের আকৃতি ধারণ করে একজন আমার মাথার দিকে ও অপরজন পায়ের দিকে বসলেন। একজন জিজ্ঞেস করলেন, এর কী হয়েছে? অপরজন উত্তর দিলেন, তাঁর উপর যাদু করা হয়েছে। আবার জিজ্ঞেস করলেন, কে যাদু করেছে? বলা হলো লাবীদ। জিজ্ঞেস করা হলো, কিসে? বলা হলো- চিরুনি ও চুলে একটি পুরুষ খেজুর গাছের আবরণের মধ্যে। বলা হলো কোথায়? উত্তর হল, যারওয়ান কূপের তলায় পাথরের নিচে। বলা হলো, এখন কী করা যায়? উত্তর হলো, পানি শুকিয়ে তা বের করতে হবে। অতঃপর নবী ﷺ কয়েকজন সাহাবীকে সাথে নিয়ে কূপের কাছে গেলেন এবং পানি শুকিয়ে জিনিসটা বের করলেন। তারপর জিবরাঈল (আঃ) এসে নবী ﷺ কে বললেন, আপনি ফালাক ও নাস সূরা দু’টি পড়ুন। নবী ﷺ একটি করে আয়াত পড়তে লাগলেন- এতে একেকটি গিরা খুলতে লাগল, এভাবে এগারটি আয়াত পড়া শেষ করলেন এতে এগারটি গিরা খুলে গেল এবং সকল সূঁচ পুতলি হতে বের হয়ে গেল। এবার নবী ﷺ এর শরীরে শক্তি ফিরে আসল, তিনি সুস্থ হয়ে গেলেন। নবী ﷺ লাবীদকে ডেকে এনে কৈফিয়ত চাইলে সে তার দোষ স্বীকার করে নিল। তিনি তাকে ক্ষমা করে দিলেন। কারণ ব্যক্তিগত কারণে তিনি কখনো কারো কাছ থেকে প্রতিশোধ নিতেন না। কোন কোন সাহাবী আরজ করলেন, হে আল্লাহর নবী! আমরা এ খবীসকে হত্যা করব না কেন? তিনি বললেন, আল্লাহ আমাকে রোগমুক্ত করে দিয়েছেন- আমি কারো কষ্টের কারণ হতে চাই না। (ইবনে কাসীর, ৮ম খন্ড ৫৩৯ পৃঃ)
নবী ﷺ কে দাওয়াত দিয়ে হত্যা করতে চেয়েছে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اذْكُرُوْا نِعْمَتَ اللهِ عَلَيْكُمْ اِذْ هَمَّ قَوْمٌ اَنْ يَّبْسُطُوْاۤ اِلَيْكُمْ اَيْدِيَهُمْ فَكَفَّ اَيْدِيَهُمْ عَنْكُمْۚ وَاتَّقُوا اللهَؕ وَعَلَى اللهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করো, যখন এক সম্প্রদায় তোমাদের বিরুদ্ধে হাত উত্তোলন করতে চেয়েছিল, তখন আল্লাহ তাদের হাত তোমাদের দিক হতে নিবৃত্ত করেছিলেন। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, আর মুমিনদের তো আল্লাহর উপরই নির্ভর করা উচিত। (সূরা মায়েদা- ১১)
নবী ﷺ কে গ্রেফতার এবং হত্যা করার চেষ্টা করেছে :
وَاِذْ يَمْكُرُ بِكَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِيُثْبِتُوْكَ اَوْ يَقْتُلُوْكَ اَوْ يُخْرِجُوْكَؕ وَيَمْكُرُوْنَ وَيَمْكُرُ اللهُؕ وَاللهُ خَيْرُ الْمَاكِرِيْنَ
স্মরণ করো, যখন কাফিররা তোমাকে বন্দী করা বা হত্যা করা অথবা নির্বাসিত করার জন্য তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে। আর তারা ষড়যন্ত্র করে, অপরদিকে আল্লাহও ষড়যন্ত্র করেন; কিন্তু আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ ষড়যন্ত্রকারী। (সূরা আনফাল- ৩০)
ব্যাখ্যা : এটা এমন সময়ের কথা যখন কুরাইশদের এ আশঙ্কা নিশ্চিত বিশ্বাসে পরিণত হয়ে গিয়েছিল যে, এখন মুহাম্মাদ ﷺ মদিনায় চলে যাবেন। তখন তারা পরস্পর বলাবলি করতে লাগল যে, এ ব্যক্তি মক্কা থেকে বের হয়ে গেলে বিপদ আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। কাজেই তারা তাঁর ব্যাপারে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছার জন্য দারুন নাদওয়ায় জাতীয় নেতৃবৃন্দের একটি সভা ডাকল। কীভাবে এ বিপদের পথ রোধ করা যায়, এ ব্যাপারে তারা পরামর্শ করল। এক দলের মতামত ছিল, এ ব্যক্তির হাতে ও পায়ে লোহার বেড়ি পরিয়ে এক জায়গায় বন্দী করে রাখা হোক। মৃত্যুর পূর্বে আর তাকে মুক্তি দেয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু এ মত গৃহীত হলো না। কারণ তারা বলল, আমরা তাকে বন্দী করে রাখলেও তার যেসব সাথি কারাগারের বাইরে থাকবে, তারা কাজ করে যেতে থাকবে এবং সামান্য একটু শক্তি অর্জন করতে পারলেই তাঁকে মুক্ত করার জন্য প্রাণ উৎসর্গ করে দিতেও কুণ্ঠাবোধ করবে না। দ্বিতীয় দলের মত ছিল, একে আমাদের এখান থেকে বের করে দাও। তারপর যখন সে আমাদের মধ্যে থাকবে না তখন সে কোথায় থাকে ও কী করে তা নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই? কিন্তু এ মতটিও গৃহিত হলো না। তারা বলল, এ ব্যক্তি হচ্ছে কথার যাদুকর। কথার মাধ্যমে মানুষের মন গলিয়ে ফেলার ব্যাপারে তার জুড়ি নেই। সে এখান থেকে বের হয়ে গেলে না জানি আরবের অন্যান্য গোত্রকে নিজের অনুসারী বানিয়ে নেবে। তারপর প্রচুর পরিমাণ ক্ষমতা অর্জন করে আরবের কেন্দ্রস্থলে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তোমাদের উপর আক্রমণ করে বসবে। সবশেষে আবু জেহেল মত প্রকাশ করল যে, আমাদের প্রত্যেক গোত্র থেকে একজন করে উচ্চ বংশীয় তরবারি চালনায় পারদর্শী যুবক বাছাই করে নিতে হবে। তারা সবাই মিলে একই সঙ্গে মুহাম্মাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে এবং তাকে হত্যা করবে। এভাবে মুহাম্মাদকে হত্যা করার দায়িত্বটি সকল গোত্রের উপর ভাগাভাগি হয়ে যাবে। আর সবার সঙ্গে লড়াই করা বনু আবদে মানাফের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়বে। কাজেই বাধ্য হয়ে তারা রক্তমূল্য গ্রহণ করতে রাজী হয়ে যাবে। এ মতটি সবাই পছন্দ করল। হত্যা করার জন্য লোকদের নাম নির্ধারিত হলো। হত্যা করার সময়ও নির্ধারিত হলো। এমনকি যে রাতটি হত্যার জন্য নির্ধারিত করা হয়েছিল সে রাতে ঠিক সময়ে হত্যাকারীরাও যথাস্থানে পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু তার আগেই নবী ﷺ বের হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি আলী (রাঃ) কে নিজের বিছানায় শুইয়ে আবু বকর (রাঃ) কে সঙ্গে নিয়ে ‘‘সাওর’’ নামক গুহায় গিয়ে আশ্রয় নিলেন। এরপর মদিনায় চলে যান। ফলে একেবারে শেষ সময় তাদের পরিকল্পিত কৌশল বানচাল হয়ে যায়।
وَاَسَرُّوا النَّجْوَى الَّذِيْنَ ظَلَمُوْاۗ هَلْ هٰذَاۤ اِلَّا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْۚ اَفَتَأْتُوْنَ السِّحْرَ وَاَنْتُمْ تُبْصِرُوْنَ
যারা যালিম তারা গোপনে পরামর্শ করে (বলে), সে তো তোমাদের মতোই একজন মানুষ; তবুও কি তোমরা দেখেশুনে যাদুর কবলে পড়বে? (সূরা আম্বিয়া- ২, ৩)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ সম্পর্কে বিরোধীরা নানা ধরনের কথা বলত। কখনো বলত, এ ব্যক্তি যাদুকর। কখনো বলত, সে নিজেই কিছু বাণী রচনা করে বলছে- এটা আল্লাহর বাণী। কখনো বলত, কিছু কাব্যিক ছন্দকে সে আল্লাহর বাণী নাম দিয়ে রেখেছে। কখনো বলত, এগুলো আবার এমন কি বাণী! এগুলো তো পাগলের প্রলাপ এবং অহেতুক চিন্তা ধারার একটা আবর্জনার স্তূপ ছাড়া আর কিছুই নয়। মূলত এসব সমালোচনার উদ্দেশ্যই ছিল লোকদেরকে প্রতারিত করা। ফলে তারা কোন একটি কথার উপর অবিচল থেকে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পেশ করছিল না। কিন্তু মিথ্যা প্রচারণার ফল যা হলো তা হচ্ছে, তারা নিজেরাই নবী ﷺ এর নাম দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দিল। মুসলিমদের দীর্ঘ প্রচেষ্টায় যে প্রচার ও পরিচিতি হওয়া সম্ভব ছিল না, কুরাইশদের এ বিরোধিতার ফলে তা সামান্য কিছু সময়েই হয়ে গেল। প্রত্যেক ব্যক্তির মনে একটি প্রশ্ন জাগল, যার বিরুদ্ধে এ বিরাট অভিযান ও মারাত্মক অভিযোগ, কে সেই ব্যক্তি? অনেকে ভাবল, তার কথা তো শোনা উচিত। আমরা তো আর দুধের শিশু নই যে, অযথা তার কথায় পথভ্রষ্ট হয়ে যাব। তুফাইল ইবনে আমর (রাঃ) বলেন, আমি দাওস গোত্রের একজন কবি ছিলাম। একদা কোন কাজে মক্কায় গিয়েছিলাম। সেখানে পৌঁছতেই কুরাইশদের কয়েকজন লোক আমাকে ঘিরে ফেলল এবং নবী ﷺ এর বিরুদ্ধে আমাকে অনেক কথা বলল। ফলে তাঁর সম্পর্কে আমার মনে খারাপ ধারণা জন্মাল। আমি ভাবলাম, তাঁর কাছ থেকে দূরে থাকব। পর দিন আমি দেখলাম তিনি কা‘বাগৃহের কাছে নামায পড়ছেন। তাঁর মুখ নিঃসৃত কয়েকটি বাক্য আমার কানে পড়লে আমি অনুভব করলাম, বড় চমৎকার বাণী। মনে মনে বললাম, আমি কবি, যুবক ও বুদ্ধিমান। আমি কোন শিশু নই যে, ঠিক ও বেঠিকের মধ্যে পার্থক্য করতে পারব না। তাহলে এ ব্যক্তি কী বলেন, তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানার চেষ্টা করি না কেন? অতঃপর নবী ﷺ যখন নামায শেষ করে চলে যেতে লাগলেন তখন আমি তাঁর পিছু নিলাম। তাঁর গৃহে পৌঁছে তাঁকে বললাম, আপনার সম্প্রদায়ের লোকেরা আপনার সম্পর্কে আমাকে এসব কথা বলেছিল, ফলে আমি আপনার ব্যাপারে এতই খারাপ ধারণা করেছিলাম যে, নিজের কানে তুলা দিয়েছিলাম, যাতে আপনার কথা শুনতে না পাই। কিন্তু এখনই যে কয়েকটি বাক্য আমি আপনার মুখ থেকে শুনেছি তা আমার কাছে বড়ই চমৎকার মনে হয়েছে। আপনি কী বলেন, আমাকে একটু বিস্তারিত জানান। জবাবে নবী ﷺ আমাকে কুরআনের একটি অংশ শুনালেন। তাতে আমি এত বেশি প্রভাবিত হলাম যে, তখনই ইসলাম গ্রহণ করে ফেললাম। সেখান থেকে ফিরে গিয়ে আমি নিজের পিতা ও স্ত্রীকে মুসলিম বানালাম। এরপর নিজের গোত্রের মধ্যে অবিরাম ইসলাম প্রচারের কাজ করতে লাগলাম। এমনকি খন্দকের যুদ্ধের সময় পর্যন্ত আমার গোত্রের সত্তর আশিটি পরিবার ইসলাম গ্রহণ করে ফেলল। (ইবনে হিশাম, ২ খন্ড, ২২-২৪ পৃ:)
কুরআন প্রচারের সময় গোলমাল সৃষ্টি করত :
وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَا تَسْمَعُوْا لِهٰذَا الْقُرْاٰنِ وَالْغَوْا فِيْهِ لَعَلَّكُمْ تَغْلِبُوْنَ
কাফিররা বলে, তোমরা এ কুরআন শ্রবণ করো না; বরং তা তিলাওয়াতকালে শোরগোল সৃষ্টি করো, যাতে তোমরা বিজয়ী হতে পার। (সূরা সাজদা- ২৬)
ব্যাখ্যা : মক্কার কাফিররা যেসব পরিকল্পনার মাধ্যমে নবী ﷺ এর প্রচারকে ব্যর্থ করে দিতে চাচ্ছিল, এটি ছিল তার অন্যতম। তারা মনে করত, এরকম উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তির মুখ থেকে এমন হৃদয়গ্রাহী ভঙ্গিতে এই নজিরবিহীন বাণী যে-ই শুনবে সে-ই ঘায়েল হয়ে যাবে। অতএব তারা পরিকল্পনা করল যে, তারা এ বাণী নিজেরাও শুনবে না এবং অন্য কাউকেও শুনতে দেবে না। মুহাম্মাদ ﷺ যখনই তা শুনাতে আরম্ভ করবেন, তখনই তারা হৈ চৈ শুরু করে দেবে। তালি বাজাবে, বিদ্রূপ করবে, আপত্তি ও সমালোচনার ঝড় তুলবে এবং চিৎকার জুড়ে দেবে। তারা আশা করত, এ কৌশল অবলম্বন করে তারা আল্লাহর নবীকে ব্যর্থ করে দিতে সক্ষম হবে।
নিজেরা দূরে থাকত এবং অপরকেও দূরে রাখত :
وَهُمْ يَنْهَوْنَ عَنْهُ وَيَنْاَوْنَ عَنْهُؕ وَاِنْ يُّهْلِكُوْنَ اِلَّاۤ اَنْفُسَهُمْ وَمَا يَشْعُرُوْنَ
তারা অন্যকে তা শ্রবণ করা হতে বিরত রাখে এবং নিজেরাও তা থেকে দূরে থাকে। আর তারা শুধু নিজেরাই নিজেদেরকে ধ্বংস করে, অথচ তারা উপলদ্ধি করতে পারে না। (সূরা আন‘আম- ২৬)
গান-বাজনার আসর বসিয়ে মানুষকে ব্যস্ত রাখত :
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّشْتَرِيْ لَهْوَ الْحَدِيْثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ بِغَيْرِ عِلْمٍۗ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًاؕ اُولٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُّهِيْنٌ
মানুষের মধ্যে এমন লোকও আছে, যে লোকদেরকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার জন্য অজ্ঞতাবশত অমূলক কাহিনী ক্রয় করে নেয় এবং আল্লাহর দেখানো পথকে ঠাট্টা-বিদ্রূপের বস্তু বানিয়ে নেয়। এদেরই জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি। (সূরা লুক্বমান- ৬)
ব্যাখ্যা : لَهْوَ الْحَدِيْثِ ‘লাহওয়াল হাদীস’ এমন কথা, যা মানুষকে অন্য সবকিছু থেকে গাফিল করে দেয়। এ শব্দটি খারাপ ও অর্থহীন কথা অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন, কিসসা-কাহিনী, হাসি-ঠাট্টা এবং গান-বাজনা ইত্যাদি। ‘লাহওয়াল হাদীস’ কিনে নেয়ার অর্থ ঐ ব্যক্তি সত্য কথাকে বাদ দিয়ে মিথ্যা কথা গ্রহণ করে এবং সঠিক পথনির্দেশনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে এমন কথার প্রতি আগ্রহী হয়, যার মধ্যে দুনিয়াতেও কোন মঙ্গল নেই এবং আখিরাতেও নেই। ইবনে হিশাম উদ্ধৃত করেছেন, মক্কার কাফিরদের সমস্ত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও যখন এ দাওয়াত সম্প্রসারিত হয়েই চলছিল তখন নযর ইবনে হারেস কুরাইশ নেতাদেরকে বলল, তোমরা যেভাবে এ ব্যক্তির মুকাবিলা করছ, তাতে কোন কাজ হবে না। নৈতিক চরিত্রের দিক দিয়ে সে ছিল তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত লোক। এখন তোমরা বলছ, সে যাদুকর ও পাগল। এ কথা কে বিশ্বাস করবে? থামো, এ রোগের চিকিৎসা আমিই করব। এরপর সে মক্কা থেকে ইয়ামান চলে যায়। সেখান থেকে অনারব বাদশাহদের কিসসা-কাহিনী সংগ্রহ করে গল্পের আসর জমিয়ে তুলতে লাগল। তার উদ্দেশ্য ছিল এভাবে লোকেরা কুরআনের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে এবং এসব কাহিনীর মধ্যে ডুবে যাবে। (সীরাতে ইবনে হিশাম, ১ম খন্ড, ৩২০-৩২১ পৃঃ)
ইবনে আববাস (রাঃ) এতে আরো বৃদ্ধি করেছেন যে, নযর এ উদ্দেশ্যে গায়িকা ও বাঁদীদেরকে কিনে এনেছিল। ফলে কোন ব্যক্তি নবী ﷺ এর কথায় প্রভাবিত হতে চলেছে বলে তার কাছে খবর এলেই সে তার জন্য একজন বাঁদী নিযুক্ত করত এবং তাকে বলত ওকে খুব ভালো করে পানাহার করাও ও গান শুনাও এবং সবসময় তোমার সাথে জড়িয়ে রেখে ওদিক থেকে তার মন ফিরিয়ে আনো। বিভিন্ন জাতির বড় বড় অপরাধীরা প্রত্যেক যুগে যেসব ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিয়ে এসেছে, সেগুলো ছিল প্রায় একই ধরনের চালবাজি। তারা জনগণকে খেলতামাশা ও নাচগানে মশগুল করতে থাকে। এভাবে তাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার প্রতি নজর দেয়ার চেতনাই থাকে না এবং তারা এ কথা অনুভবই করতে পারে না যে, তাদেরকে এক ভয়াবহ ধ্বংসের দিকে ঠেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ মূর্খ লোক জানে না যে, সে কত মূল্যবান জিনিস বাদ দিয়ে ধ্বংসের জিনিস কিনে নিচ্ছে। একদিকে আছে জ্ঞান ও সঠিক পথনির্দেশনা সমৃদ্ধ আল্লাহর আয়াত, যা সে বিনামূল্যে লাভ করতে পারত; কিন্তু তবুও সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। অন্যদিকে রয়েছে সব অর্থহীন ও বাজে জিনিস, যেগুলো নিজের টাকা-পয়সা খরচ করে হলেও লাভ করছে। সে কোন ধরনের জ্ঞান ছাড়াই লোকদের পথ দেখাচ্ছে এবং আল্লাহর সৃষ্টিকে সরল পথ থেকে বিচ্যুত করছে। আর এভাবে সে নিজের ঘাড়ে কত বড় যুলুমের দায়ভার চাপিয়ে নিচ্ছে, তা জানে না। এ ব্যক্তি লোকদেরকে কিসসা-কাহিনী ও গান-বাজনায় মশগুল করে কুরআনের দাওয়াতকে ঠাট্টা-তামাশার মাধ্যমে উড়িয়ে দিতে চায়। লোকেরা এসব সাংস্কৃতিক অপতৎপরতায় ডুবে গিয়ে আল্লাহ, আখিরাত ও নৈতিক চরিত্রনীতির কথা শোনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এর পরিণামে আল্লাহ তাকে কঠিন লাঞ্ছনাকর শাস্তি দান করবেন।
গল্প-কাহিনীর আসর বসাত :
قَدْ كَانَتْ اٰيَاتِيْ تُتْلٰى عَلَيْكُمْ فَكُنْتُمْ عَلٰۤى اَعْقَابِكُمْ تَنْكِصُوْنَ – مُسْتَكْبِرِيْنَ بِه ۗ سَامِرًا تَهْجُرُوْنَ
আমার আয়াতসমূহ তোমাদের নিকট পাঠ করা হতো, কিন্তু তোমরা দম্ভভরে পেছনে সরে পড়তে এবং এ বিষয়ে অর্থহীন গল্প-গুজবে লিপ্ত হতে। (সূরা মু’মিনূন- ৬৬, ৬৭)
পরকালে অন্যের গোনাহের বোঝা নিজে বহন করার প্রতিশ্রুতি দিত :
وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّبِعُوْا سَبِيْلَنَا وَلْنَحْمِلْ خَطَايَاكُمْؕ وَمَا هُمْ بِحَامِلِيْنَ مِنْ خَطَايَاهُمْ مِّنْ شَيْءٍؕ اِنَّهُمْ لَكَاذِبُوْنَ – وَلَيَحْمِلُنَّ اَثْقَالَهُمْ وَاَثْقَالًا مَّعَ اَثْقَالِهِمْؗ وَلَيُسْاَلُنَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَمَّا كَانُوْا يَفْتَرُوْنَ
কাফিররা মুমিনদেরকে বলে, আমাদের পথ অনুসরণ করো তাহলে আমরা তোমাদের পাপভার বহন করব। কিন্তু তারা তো তাদের পাপভার কিছুই বহন করবে না; অবশ্যই তারা মিথ্যাবাদী। তারা নিজেদের পাপভার বহন করবে এবং সাথে আরো কিছু বোঝা। আর তারা যে মিথ্যা উদ্ভাবন করে সে সম্পর্কে কিয়ামতের দিন অবশ্যই তাদেরকে প্রশ্ন করা হবে। (সূরা আনকাবূত- ১২, ১৩)
নবী ﷺ এর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাত :
نَحْنُ اَعْلَمُ بِمَا يَسْتَمِعُوْنَ بِه ۤ اِذْ يَسْتَمِعُوْنَ اِلَيْكَ وَاِذْ هُمْ نَجْوٰۤى اِذْ يَقُوْلُ الظَّالِمُوْنَ اِنْ تَتَّبِعُوْنَ اِلَّا رَجُلًا مَّسْحُوْرًا
যখন তারা কান পেতে তোমার কথা শুনে, তখন তারা কেন কান পেতে শুনে তা আমি ভালো করে জানি এবং এটাও জানি যে, গোপনে আলোচনাকালে যালিমরা বলে, তোমরা তো এক যাদুগ্রস্ত ব্যক্তির অনুসরণ করছ। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৪৭)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ এর দাওয়াত প্রচারের জন্য কুরাইশ নেতারা প্রতিদিন তাঁকে হুমকি দিত এবং তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক ব্যক্তি তাঁকে হত্যা করে ফেলারও উপায় খোঁজত। অন্যদিকে যে গৃহের কোন একজন ইসলাম গ্রহণ করত সে গৃহের সবাই তার শত্রু হয়ে যেত। মেয়েরা তাকে অভিশাপ দিত ও বদ্দু‘আ করত। আর পুরুষরা তাকে ভয় দেখাত। বিশেষ করে হাবশায় হিজরতের পর মক্কার ঘরে ঘরে বিলাপ শুরু হয়ে গিয়েছিল। কারণ এমন একটি বাড়িও পাওয়া কঠিন ছিল যেখান থেকে একজন পুরুষ বা মেয়ে হিজরত করেনি। এরা সবাই নবী ﷺ এর নামে অভিযোগ করে বলত, এ লোকটি আমাদের পরিবার ধ্বংস করে দিয়েছে। এ আয়াতে এসব কথার জবাব দেয়া হয়েছে এবং একই সঙ্গে নবী ﷺ কেও উপদেশ দেয়া হয়েছে যে, ওদের কোন পরোয়া না করে তুমি নির্ভয়ে নিজের কাজ করে যাও। কারণ শত্রুরা যতই তোমার বিরোধিতা করুক না কেন মৃত্যুর হাত থেকে তারা নিজেদেরকে বাঁচাতে পারবে না।
তারা নবী ﷺ কে বিদ্রূপের পাত্র বানিয়ে নিয়েছিল :
وَاِذَا رَاَوْكَ اِنْ يَّتَّخِذُوْنَكَ اِلَّا هُزُوًاؕ اَهٰذَا الَّذِيْ بَعَثَ اللهُ رَسُوْلًا
যখন তারা তোমাকে দেখতে পায়, তখন তারা তোমাকে কেবল ঠাট্টা-বিদ্রূপের পাত্র হিসেবেই গ্রহণ করে এবং বলে, এ কি সে-ই, যাকে আল্লাহ রাসূল করে পাঠিয়েছেন? (সূরা ফুরক্বান- ৪১)
নবী ﷺ কে নামায পড়তেও বাধা দিত :
اَرَاَيْتَ الَّذِيْ يَنْهٰى – عَبْدًا اِذَا صَلّٰى – اَرَاَيْتَ اِنْ كَانَ عَلَى الْهُدٰى – اَوْ اَمَرَ بِالتَّقْوٰى
আপনি কি এমন এক বান্দাকে দেখেছেন, যখন সে নামায পড়ে তখন তারা (কাফিররা) তাকে নিষেধ করে? আপনি কি এটাও লক্ষ্য করেছেন যে, যদি সে সৎপথে থাকে, অথবা আল্লাহভীতি শিক্ষা দেয় তখনও (তাকে নিষেধ করে?) (সূরা আলাক্ব, ৯-১২)
وَاَنَّهٗ لَمَّا قَامَ عَبْدُ اللهِ يَدْعُوْهُ كَادُوْا يَكُوْنُوْنَ عَلَيْهِ لِبَدًا
যখন আল্লাহর বান্দা তাঁকে ডাকার জন্য দাঁড়ায়, তখন তারা (কাফিররা) তার নিকট ভিড় জমায় (যেন হট্টগোল সৃষ্টি করে বান্দার সেই দাওয়াতকে ব্যর্থ করে দিতে পারে)। (সূরা জিন- ১৯)
তারা নবী ﷺ কে দেশ হতে বিতাড়িত করতে চেয়েছে :
وَاِنْ كَادُوْا لَيَسْتَفِزُّوْنَكَ مِنَ الْاَرْضِ لِيُخْرِجُوْكَ مِنْهَا وَاِذًا لَّا يَلْبَثُوْنَ خِلَافَكَ اِلَّا قَلِيْلًا
তারা তোমাকে স্বদেশ হতে উৎখাত করার চূড়ান্ত চেষ্টা করেছিল, যাতে তারা তোমাকে তা থেকে বহিষ্কার করতে পারে। (আর যদি তারা তোমাকে বহিষ্কার করেই ফেলত) তাহলে তোমার পর তারাও সেখানে অল্পকাল টিকে থাকতে পারত। (অর্থাৎ তোমাকে বহিষ্কার করলে তারাও ধ্বংস হয়ে যেত)। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৭৬)
ব্যাখ্যা : বিরোধীরা নবী ﷺ কে নিজের জন্মভূমি থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য করল। এরপর আট বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হতে না হতেই তিনি বিজয়ীর বেশে জন্মভূমি মক্কায় প্রবেশ করলেন। তারপর দু’বছরের মধ্যেই সমগ্র আরব ভূখন্ডকে মুশরিক শূন্য করলেন। এরপর যারাই এ দেশে বসবাস করেছে মুসলিম হিসেবেই বসবাস করেছে, মুশরিক হিসেবে কেউ সেখানে বসবাস করতে পারেনি। আল্লাহ তা‘আলা সকল নবীর ব্যাপারে একই পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন। অর্থাৎ যে জাতি তাদেরকে হত্যা ও দেশান্তর করেছে, তারা আর বেশি দিন স্বস্থানে অবস্থান করতে পারেনি। হয় আল্লাহর আযাব তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছে অথবা কোন শত্রুভাবাপন্ন জাতিকে তাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে কিংবা সে নবীর অনুসারীদের দ্বারা তাদেরকে বিপর্যস্ত করা হয়েছে।
নবী ﷺ এর উপর যাদু করা হয়েছে :
قُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ – مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ – وَمِنْ شَرِّ غَاسِقٍ اِذَا وَقَبَ – وَمِنْ شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِى الْعُقَدِ – وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ اِذَا حَسَدَ
(হে নবী) আপনি বলুন, আমি উজ্জ্বল প্রভাতের মালিকের কাছে আশ্রয় চাই। (আশ্রয় চাই) তাঁর সৃষ্টি করা প্রতিটি জিনিসের অনিষ্ট থেকে। (আশ্রয় চাই) রাতের অন্ধকারে সংঘটিত অনিষ্ট থেকে, (বিশেষ করে) যখন রাত তার অন্ধকার বিছিয়ে দেয়। (আশ্রয় চাই) গিরায় ফুঁক দিয়ে যাদুটোনাকারিণীদের অনিষ্ট থেকে। (আমি আশ্রয় চাই) হিংসুকের অনিষ্ট থেকেও, যখন সে হিংসা করে। (সূরা ফালাক)
قُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ النَّاسِ – مَلِكِ النَّاسِ – اِلٰهِ النَّاسِ – مِنْ شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ – اَلَّذِيْ يُوَسْوِسُ فِيْ صُدُوْرِ النَّاسِ – مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ
(হে নবী) আপনি বলুন, আমি আশ্রয় চাই মানুষের প্রতিপালকের কাছে। (আশ্রয় চাই) মানুষের মালিকের কাছে। (আশ্রয় চাই) মানুষের একমাত্র ইলাহের কাছে। (আশ্রয় চাই) কুমন্ত্রণাকারীর অনিষ্ট থেকে, যে প্ররোচনা দিয়েই শরীর ঢাকা দেয়। যে মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়। জ্বিনের মধ্য থেকে হোক বা মানুষের মধ্য থেকে হোক। (সূরা নাস)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ যখন ইসলামের দাওয়াত দেয়া আরম্ভ করলেন, তখন কাফির-মুশরিক সবাই তাঁর শত্রুতে পরিণত হয়ে গেল। এ কাজ বন্ধ করার জন্য প্রথমে তারা নবীর সাথে সন্ধির প্রস্তাব জানাল। তখন সূরা কাফিরূন নাযিল করে জানিয়ে দেয়া হলো যে, শিরক ও তাওহীদ, ইসলাম ও কুফর একসাথে চলতে পারে না। এতে তারা ব্যর্থ হওয়ায় নবী ﷺ কে হত্যা করার জন্য গোপনে পরামর্শ করতে লাগল। নবীর বংশের মুসলিমরা যাতে হত্যাকারীকে চিনতে না পারে সেজন্য তারা রাত্রে নবীকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিল। এ সময় তারা নবী ﷺ এর উপর যাদু করারও চেষ্টা করল- যাতে তিনি যাদুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান অথবা অসুস্থ হয়ে যান অথবা পাগল হয়ে যান। কীভাবে তাঁকে এবং তাঁর আদর্শকে উৎখাত করা যায় এজন্য মানুষ শয়তান ও জিন শয়তান চতুর্দিক হতে উঠে পড়ে তার বিরুদ্ধে লাগল। এ সঙ্কটময় মুহূর্তে আল্লাহ তা‘আলা এ দু’টি সূরা নাযিল করে নবী ﷺ কে বলে দিলেন যে, এ অবস্থায় আপনি একমাত্র আল্লাহর সাহায্য কামনা করুন, তারই কাছে আশ্রয় চান। তিনিই আপনার হেফাজতকারী।
হুদায়বিয়া সন্ধির পর মহানবী ﷺ যখন মদিনায় আগমন করলেন, তখন ৭ম হিজরীর মুহাররম মাসে খায়বার হতে একদল ইয়াহুদি মদিনায় আগমন করে বিখ্যাত যাদুকর লাবীদের সাথে সাক্ষাৎ করল। তারা বলল, আমরা মুহাম্মাদকে ধ্বংস করার জন্য বহুবার যাদু করার চেষ্টা করেছি; কিন্তু তাতে সফল হতে পারিনি। আমরা তোমাকে তিনটি আশরাফি (স্বর্ণমূদ্রা) দিচ্ছি, তুমি তাঁর উপর খুব শক্ত আকারের যাদু করো। এ সময় এক ইয়াহুদি ছেলে মহানবীর খাদিম ছিল। তারা তার সাথে যোগাযোগ করে নবীর চিরুনির একটি অংশ সংগ্রহ করে নিল, যার সাথে নবী ﷺ এর চুলও লাগানো ছিল। লাবীদ বা অন্য বর্ণনানুযায়ী তার যাদুকর বোন এ চিরুনি ও চুলের সঙ্গে এগার গিরা বিশিষ্ট এক গাছি সূতা ও সূঁচ বিশিষ্ট একটি মোমের পুতলিসহ খেজুর গাছের ছড়ার আবরণে রেখে যারওয়ান কূপের নিচে একটি পাথরের তলায় চাপা দিয়ে রেখেছিল। নবী ﷺ এর উপর এ যাদুর প্রভাব পড়ল, তিনি শারীরিক দিক দিয়ে দুর্বল ও অসুস্থ হয়ে পড়লেন। মুসনাদে আহমদে বর্ণিত আছে, নবীর এ অসুস্থতা ছয় মাস পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। অবশেষে নবী ﷺ আয়েশা (রাঃ) এর ঘরে অবস্থান করে আল্লাহর নিকট পর পর দু‘আ করলেন। এক সময় তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। জেগে উঠে আয়েশা (রাঃ) কে বললেন, আমি আল্লাহর কাছে যা জানতে চেয়েছিলাম তা আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন। আয়েশা (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, সেটা কী? নবী ﷺ বললেন, আমি স্বপ্নে দেখলাম- দু’জন ফেরেশতা মানুষের আকৃতি ধারণ করে একজন আমার মাথার দিকে ও অপরজন পায়ের দিকে বসলেন। একজন জিজ্ঞেস করলেন, এর কী হয়েছে? অপরজন উত্তর দিলেন, তাঁর উপর যাদু করা হয়েছে। আবার জিজ্ঞেস করলেন, কে যাদু করেছে? বলা হলো লাবীদ। জিজ্ঞেস করা হলো, কিসে? বলা হলো- চিরুনি ও চুলে একটি পুরুষ খেজুর গাছের আবরণের মধ্যে। বলা হলো কোথায়? উত্তর হল, যারওয়ান কূপের তলায় পাথরের নিচে। বলা হলো, এখন কী করা যায়? উত্তর হলো, পানি শুকিয়ে তা বের করতে হবে। অতঃপর নবী ﷺ কয়েকজন সাহাবীকে সাথে নিয়ে কূপের কাছে গেলেন এবং পানি শুকিয়ে জিনিসটা বের করলেন। তারপর জিবরাঈল (আঃ) এসে নবী ﷺ কে বললেন, আপনি ফালাক ও নাস সূরা দু’টি পড়ুন। নবী ﷺ একটি করে আয়াত পড়তে লাগলেন- এতে একেকটি গিরা খুলতে লাগল, এভাবে এগারটি আয়াত পড়া শেষ করলেন এতে এগারটি গিরা খুলে গেল এবং সকল সূঁচ পুতলি হতে বের হয়ে গেল। এবার নবী ﷺ এর শরীরে শক্তি ফিরে আসল, তিনি সুস্থ হয়ে গেলেন। নবী ﷺ লাবীদকে ডেকে এনে কৈফিয়ত চাইলে সে তার দোষ স্বীকার করে নিল। তিনি তাকে ক্ষমা করে দিলেন। কারণ ব্যক্তিগত কারণে তিনি কখনো কারো কাছ থেকে প্রতিশোধ নিতেন না। কোন কোন সাহাবী আরজ করলেন, হে আল্লাহর নবী! আমরা এ খবীসকে হত্যা করব না কেন? তিনি বললেন, আল্লাহ আমাকে রোগমুক্ত করে দিয়েছেন- আমি কারো কষ্টের কারণ হতে চাই না। (ইবনে কাসীর, ৮ম খন্ড ৫৩৯ পৃঃ)
নবী ﷺ কে দাওয়াত দিয়ে হত্যা করতে চেয়েছে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اذْكُرُوْا نِعْمَتَ اللهِ عَلَيْكُمْ اِذْ هَمَّ قَوْمٌ اَنْ يَّبْسُطُوْاۤ اِلَيْكُمْ اَيْدِيَهُمْ فَكَفَّ اَيْدِيَهُمْ عَنْكُمْۚ وَاتَّقُوا اللهَؕ وَعَلَى اللهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُوْنَ
হে মুমিনগণ! তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করো, যখন এক সম্প্রদায় তোমাদের বিরুদ্ধে হাত উত্তোলন করতে চেয়েছিল, তখন আল্লাহ তাদের হাত তোমাদের দিক হতে নিবৃত্ত করেছিলেন। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, আর মুমিনদের তো আল্লাহর উপরই নির্ভর করা উচিত। (সূরা মায়েদা- ১১)
নবী ﷺ কে গ্রেফতার এবং হত্যা করার চেষ্টা করেছে :
وَاِذْ يَمْكُرُ بِكَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِيُثْبِتُوْكَ اَوْ يَقْتُلُوْكَ اَوْ يُخْرِجُوْكَؕ وَيَمْكُرُوْنَ وَيَمْكُرُ اللهُؕ وَاللهُ خَيْرُ الْمَاكِرِيْنَ
স্মরণ করো, যখন কাফিররা তোমাকে বন্দী করা বা হত্যা করা অথবা নির্বাসিত করার জন্য তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে। আর তারা ষড়যন্ত্র করে, অপরদিকে আল্লাহও ষড়যন্ত্র করেন; কিন্তু আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ ষড়যন্ত্রকারী। (সূরা আনফাল- ৩০)
ব্যাখ্যা : এটা এমন সময়ের কথা যখন কুরাইশদের এ আশঙ্কা নিশ্চিত বিশ্বাসে পরিণত হয়ে গিয়েছিল যে, এখন মুহাম্মাদ ﷺ মদিনায় চলে যাবেন। তখন তারা পরস্পর বলাবলি করতে লাগল যে, এ ব্যক্তি মক্কা থেকে বের হয়ে গেলে বিপদ আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। কাজেই তারা তাঁর ব্যাপারে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছার জন্য দারুন নাদওয়ায় জাতীয় নেতৃবৃন্দের একটি সভা ডাকল। কীভাবে এ বিপদের পথ রোধ করা যায়, এ ব্যাপারে তারা পরামর্শ করল। এক দলের মতামত ছিল, এ ব্যক্তির হাতে ও পায়ে লোহার বেড়ি পরিয়ে এক জায়গায় বন্দী করে রাখা হোক। মৃত্যুর পূর্বে আর তাকে মুক্তি দেয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু এ মত গৃহীত হলো না। কারণ তারা বলল, আমরা তাকে বন্দী করে রাখলেও তার যেসব সাথি কারাগারের বাইরে থাকবে, তারা কাজ করে যেতে থাকবে এবং সামান্য একটু শক্তি অর্জন করতে পারলেই তাঁকে মুক্ত করার জন্য প্রাণ উৎসর্গ করে দিতেও কুণ্ঠাবোধ করবে না। দ্বিতীয় দলের মত ছিল, একে আমাদের এখান থেকে বের করে দাও। তারপর যখন সে আমাদের মধ্যে থাকবে না তখন সে কোথায় থাকে ও কী করে তা নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই? কিন্তু এ মতটিও গৃহিত হলো না। তারা বলল, এ ব্যক্তি হচ্ছে কথার যাদুকর। কথার মাধ্যমে মানুষের মন গলিয়ে ফেলার ব্যাপারে তার জুড়ি নেই। সে এখান থেকে বের হয়ে গেলে না জানি আরবের অন্যান্য গোত্রকে নিজের অনুসারী বানিয়ে নেবে। তারপর প্রচুর পরিমাণ ক্ষমতা অর্জন করে আরবের কেন্দ্রস্থলে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তোমাদের উপর আক্রমণ করে বসবে। সবশেষে আবু জেহেল মত প্রকাশ করল যে, আমাদের প্রত্যেক গোত্র থেকে একজন করে উচ্চ বংশীয় তরবারি চালনায় পারদর্শী যুবক বাছাই করে নিতে হবে। তারা সবাই মিলে একই সঙ্গে মুহাম্মাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে এবং তাকে হত্যা করবে। এভাবে মুহাম্মাদকে হত্যা করার দায়িত্বটি সকল গোত্রের উপর ভাগাভাগি হয়ে যাবে। আর সবার সঙ্গে লড়াই করা বনু আবদে মানাফের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়বে। কাজেই বাধ্য হয়ে তারা রক্তমূল্য গ্রহণ করতে রাজী হয়ে যাবে। এ মতটি সবাই পছন্দ করল। হত্যা করার জন্য লোকদের নাম নির্ধারিত হলো। হত্যা করার সময়ও নির্ধারিত হলো। এমনকি যে রাতটি হত্যার জন্য নির্ধারিত করা হয়েছিল সে রাতে ঠিক সময়ে হত্যাকারীরাও যথাস্থানে পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু তার আগেই নবী ﷺ বের হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি আলী (রাঃ) কে নিজের বিছানায় শুইয়ে আবু বকর (রাঃ) কে সঙ্গে নিয়ে ‘‘সাওর’’ নামক গুহায় গিয়ে আশ্রয় নিলেন। এরপর মদিনায় চলে যান। ফলে একেবারে শেষ সময় তাদের পরিকল্পিত কৌশল বানচাল হয়ে যায়।
তোমাকে যা বলা হচ্ছে পূর্ববর্তী নবী-রাসূলদেরকেও তাই বলা হয়েছে :
مَا يُقَالُ لَكَ اِلَّا مَا قَدْ قِيْلَ لِلرُّسُلِ مِنْ قَبْلِكَؕ اِنَّ رَبَّكَ لَذُوْ مَغْفِرَةٍ وَّذُوْ عِقَابٍ اَلِيْمٍ
তোমার সম্বন্ধে তো তাই বলা হয়, যা তোমার পূর্ববর্তী রাসূলদের সম্পর্কে বলা হতো। নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক ক্ষমাশীল ও কঠিন শাস্তিদাতা। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৪৩)
তোমার আগেও অনেক নবীকে মিথ্যারোপ করা হয়েছে :
فَاِنْ كَذَّبُوْكَ فَقَدْ كُذِّبَ رُسُلٌ مِّنْ قَبْلِكَ جَآءُوْا بِالْبَيِّنَاتِ وَالزُّبُرِ وَالْكِتَابِ الْمُنِيْرِ
তারা যদি তোমার প্রতি মিথ্যারোপ করে, তবে (জেনে রেখো) তোমার পূর্বেও রাসূলগণকে মিথ্যারোপ করা হয়েছিল, যারা প্রকাশ্য নিদর্শনাবলি ও অনেক সহীফা এবং উজ্জ্বল গ্রন্থসহ আগমন করেছিল।
(সূরা আলে ইমরান- ১৮৪)
তোমার পূর্বেও সকল নবীর সাথে বিদ্রূপ করা হয়েছে :
وَلَقَدْ اَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ فِيْ شِيَعِ الْا َوَّلِيْنَ – وَمَا يَأْتِيْهِمْ مِّنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا كَانُوْا بِه يَسْتَهْزِئُوْنَ
তোমার পূর্ববর্তী জাতিগুলোর কাছেও আমি রাসূল প্রেরণ করেছিলাম। তাদের কাছে এমন কোন রাসূল আসেনি, যাকে নিয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেনি। (সূরা হিজর- ১০, ১১)
وَلَقَدِ اسْتُهْزِئَ بِرُسُلٍ مِّنْ قَبْلِكَ فَحَاقَ بِالَّذِيْنَ سَخِرُوْا مِنْهُمْ مَّا كَانُوْا بِهٖ يَسْتَهْزِئُوْنَ
তোমার পূর্বেও অনেক রাসূলকেই ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা হয়েছে। তারা যা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করছিল বিদ্রূপকারীদেরকে পরিণামে তাই পরিবেষ্টন করে নিয়েছিল। (সূরা আন‘আম- ১০)
প্রত্যেক নবীরই দুশমন ছিল :
وَكَذٰلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا شَيَاطِيْنَ الْاِنْسِ وَالْجِنِّ يُوْحِيْ بَعْضُهُمْ اِلٰى بَعْضٍ زُخْرُفَ الْقَوْلِ غُرُوْرًاؕ وَلَوْ شَآءَ رَبُّكَ مَا فَعَلُوْهُ فَذَرْهُمْؕ وَمَا يَفْتَرُوْنَ
এভাবে আমি মানব ও জিনদের মধ্যে শয়তানদেরকে প্রত্যেক নবীর শত্রু বানিয়ে দিয়েছিলাম, যারা (মুমিনদের সাথে) প্রতারণা করার উদ্দেশ্যে তাদের একে অন্যকে চমকপ্রদ কথা দ্বারা প্ররোচিত করত। যদি তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করতেন, তবে তারা এটা করত না; সুতরাং তুমি তাদেরকে ও তাদের মিথ্যা রচনাকে বর্জন করো। (সূরা আন‘আম- ১১২)
وَكَذٰلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا مِّنَ الْمُجْرِمِيْنَؕ وَكَفٰى بِرَبِّكَ هَادِيًا وَّنَصِيْرًا
এভাবেই আমি অপরাধীদেরকে প্রত্যেক নবীর শত্রু হিসেবে মনোনীত করেছিলাম। তবে পথপ্রদর্শক ও সাহায্যকারী হিসেবে তোমার প্রতিপালকই যথেষ্ট ছিল। (সূরা ফুরক্বান- ৩১)
প্রত্যেক নবীকে গ্রেফতার করার চেষ্টা করা হয়েছে :
وَهَمَّتْ كُلُّ اُمَّةٍ ۢبِرَسُوْلِهِمْ لِيَأْخُذُوْهُ وَجَادَلُوْا بِالْبَاطِلِ لِيُدْحِضُوْا بِهِ الْحَقَّ فَاَخَذْتُهُمْ فَكَيْفَ كَانَ عِقَابِ
প্রত্যেক সম্প্রদায় নিজ নিজ রাসূলকে গ্রেফতার করার জন্য চক্রান্ত করেছিল এবং তারা বাজে তর্কে লিপ্ত হয়েছিল, যেন তারা এর দ্বারা সত্যকে নষ্ট করে দিতে পারে। ফলে আমি তাদেরকে পাকড়াও করলাম; কতই না কঠোর ছিল আমার শাস্তি। (সূরা মু’মিন- ৫)
আল্লাহ বিরোধীদেরকে বেষ্টন করে আছেন :
وَاِذْ قُلْنَا لَكَ اِنَّ رَبَّكَ اَحَاطَ بِالنَّاسِ
স্মরণ করো, যখন আমি তোমাকে বলেছিলাম, নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক মানুষকে পরিবেষ্টন করে আছেন। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৬০)
তোমাকে রক্ষার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট :
وَاِنْ يُّرِيْدُوْاۤ اَنْ يَّخْدَعُوْكَ فَاِنَّ حَسْبَكَ اللهُ هُوَ الَّذِيْۤ اَيَّدَكَ بِنَصْرِهٖ وَبِالْمُؤْمِنِيْنَ
যদি তারা তোমাকে প্রতারিত করতে চায়, তবে তোমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। তিনি তোমাকে স্বীয় সাহায্য ও মুমিনদের দ্বারা শক্তিশালী করেছেন। (সূরা আনফাল- ৬২)
اَلَيْسَ اللهُ بِكَافٍ عَبْدَهٗؕ وَيُخَوِّفُوْنَكَ بِالَّذِيْنَ مِنْ دُوْنِهٖؕ وَمَنْ يُّضْلِلِ اللهُ فَمَا لَهٗ مِنْ هَادٍ
আল্লাহ কি তাঁর বান্দার জন্য যথেষ্ট নন? অথচ তারা তোমাকে আল্লাহর পরিবর্তে অন্য কারো ভয় দেখায়। বস্তুত আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার জন্য কোন পথপ্রর্দশক নেই। (সূরা যুমার- ৩৬)
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ حَسْبُكَ اللهُ وَمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ
হে নবী! তোমার জন্য ও তোমার অনুসারী মুমিনদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। (সূরা আনফাল- ৬৪)
আল্লাহ তোমার বিরোধীদের চেয়েও শক্তিশালী জনপদ ধ্বংস করেছেন :
وَكَاَيِّنْ مِّنْ قَرْيَةٍ هِيَ اَشَدُّ قُوَّةً مِّنْ قَرْيَتِكَ الَّتِيْۤ اَخْرَجَتْكَۚ اَهْلَكْنَاهُمْ فَلَا نَاصِرَ لَهُمْ
(হে রাসূল!) তারা যে এলাকা থেকে আপনাকে বের করে দিয়েছে এর চেয়েও শক্তিশালী কত এলাকা ছিল। আমি তাদেরকে এমনভাবে ধ্বংস করে দিয়েছি যে, তাদেরকে সাহায্য করার মতো কেউ ছিল না।
(সূরা মুহাম্মাদ- ১৩)
আল্লাহর শাস্তি কখন আসবে- এ নিয়ে চিন্তা করো না :
فَاصْبِرْ اِنَّ وَعْدَ اللهِ حَقٌّۚ فَاِمَّا نُرِيَنَّكَ بَعْضَ الَّذِيْ نَعِدُهُمْ اَوْ نَتَوَفَّيَنَّكَ فَاِلَيْنَا يُرْجَعُوْنَ
সুতরাং ধৈর্যধারণ করো, নিশ্চয় আল্লাহর অঙ্গীকার সত্য। আমি তাদেরকে যে অঙ্গীকার প্রদান করি তার কিছু যদি দেখিয়েই দেই অথবা তোমার মৃত্যু ঘটাই- তবে তাদেরকে তো আমার নিকটেই প্রত্যাবর্তন করতে হবে। (সূরা মু’মিন- ৭৭)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ যুলুম ও বেঈমানীর সাহায্যে ন্যায় ও সত্যের বিরোধীরা তাদের কৃতকর্মের শাস্তি কখন কী পায় তুমি সে বিষয়ে চিন্তা করো না। অথবা তোমার জীবদ্দশায় ইসলাম প্রসার লাভ করে কি না, সে চিন্তাও তুমি করবে না। তোমার জন্য সান্ত্বনা হিসেবে এতটুকুই যথেষ্ট যে, তুমি ন্যায় ও সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত আছ। অতএব ফলাফলের চিন্তা না করে নিজের দায়িত্ব পালন করতে থাকো। আল্লাহ বাতিলের মাথা কখন অবনত করান সেটা আল্লাহর উপরই ছেড়ে দাও।
আমি এদের থেকে প্রতিশোধ নেবই :
فَاِمَّا نَذْهَبَنَّ بِكَ فَاِنَّا مِنْهُمْ مُّنْتَقِمُوْنَ – اَوْ نُرِيَنَّكَ الَّذِيْ وَعَدْنَاهُمْ فَاِنَّا عَلَيْهِمْ مُّقْتَدِرُوْنَ
আমি যদিও তোমার মৃত্যু ঘটাই, তবুও আমি তাদের উপর প্রতিশোধ নেব! অথবা আমি তাদেরকে যে আযাবের ওয়াদা করেছি যদি আমি তোমাকে তা প্রত্যক্ষ করাই, তবে তাদের উপর অবশ্যই আমার পূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে। (সূরা যুখরুফ- ৪১, ৪২)
তোমার তাড়াহুড়া করার প্রয়োজন নেই :
فَاصْبِرْ كَمَا صَبَرَ اُولُو الْعَزْمِ مِنَ الرُّسُلِ وَلَا تَسْتَعْجِلْ لَّهُمْ
অতএব (হে রাসূল!) আপনি ধৈর্যধারণ করুন, যেমনিভাবে সাহসী রাসূলগণ ধৈর্যধারণ করেছেন। আর আপনি তাদের ব্যাপারে তাড়াহুড়া করবেন না। (সূরা আহকাফ- ৩৫)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ তোমাদের পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণ যেভাবে বছরের পর বছর ধরে ক্রমাগত ধৈর্য ও অক্লান্ত প্রচেষ্টার মাধ্যমে তাদের জাতির অসন্তুষ্টি, বিরোধিতা, বাধা-বিপত্তি ও নানা রকম উৎপীড়নের মুকাবিলা করেছেন তুমিও সে রকম করো এবং কখনো মনে এরূপ ধারণা স্থান দিয়ো না যে, এসব লোক অনতিবিলম্বে ঈমান আনুক, নয়তো আল্লাহ তাদের উপর আযাব নাযিল করুক।
ধৈর্যধারণ করো :
وَاصْبِرْ لِحُكْمِ رَبِّكَ فَاِنَّكَ بِاَعْيُنِنَا
তুমি তোমার প্রতিপালকের নির্দেশের অপেক্ষায় ধৈর্যধারণ করো; কেননা তুমি আমার চোখের সামনেই রয়েছ। (সূরা তূর- ৪৮)
ব্যাখ্যা : যারা জাহেলিয়াতের অবস্থা অপরিবর্তিত রাখার জন্য নিজেদের সকল প্রকার কর্মতৎপরতা নিয়োজিত করে, তারা সমস্ত নৈতিক বাঁধনমুক্ত হয়ে নবী ﷺ এর বিরুদ্ধে সবরকমের নিকৃষ্টতম চক্রান্ত চালাচ্ছিল। তারা অত্যন্ত অশ্লীলতা, প্রতারণা, জালিয়াতি ও মিথ্যার অস্ত্র ব্যবহার করে এমন এক নিষ্কলুষ ব্যক্তির কার্যক্রমকে পরাস্ত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছিল, যিনি নিঃস্বার্থভাবে সাধারণ মানুষের মঙ্গলের জন্য দিন-রাত সংগ্রাম করে যাচ্ছিলেন। তাদের এ তৎপরতা দেখে নবী ﷺ মনে মনে অত্যন্ত কষ্ট অনুভব করতেন। তাছাড়া একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তি একজন নিকৃষ্ট চরিত্রের অধিকারী লোকের মুখোমুখি হবেন এবং উক্ত নিকৃষ্ট চরিত্রের অধিকারী লোকে অসৎ কলা-কৌশল ও নির্যাতনের স্বীকার হবেন- এসব পর্যবেক্ষণ করে স্বাভাবিকভাবেই তিনি মনে ব্যথা পেতে পারে। কাজেই এখানে আল্লাহর বক্তব্যের উদ্দেশ্য এ নয় যে, তাদের ঐসব কর্মতৎপরতার কারণে রাসূল ﷺ এর মনে স্বাভাবিকভাবে যে ব্যথা ও মর্মবেদনা সৃষ্টি হয় তা না হওয়া উচিত বরং আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে, তিনি যেন মন খারাপ না করেন। তিনি যেন মনোবল না হারিয়ে ফেলেন এবং ধৈর্যের সাথে আল্লাহর বান্দাদের সংস্কার ও সংশোধনের কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। আর এসব লোকের ব্যাপারে বলা যায় যে, এরা যে ধরনের নিকৃষ্ট নৈতিক গুণাবলি নিজেদের মধ্যে লালন করেছে তাতে তাদের পক্ষ থেকে এ ধরনের ব্যবহারই আশা করা যেতে পারে। এদের থেকে কোন ভালো ব্যবহার আশাই করা যায় না।
তাদেরকে কিছু দিন উপেক্ষা করে চলো :
فَاصْفَحْ عَنْهُمْ وَقُلْ سَلَامٌؕ فَسَوْفَ يَعْلَمُوْنَ
সুতরাং তুমি তাদেরকে উপেক্ষা করো এবং বলো, সালাম; অতি শীঘ্রই তারা (তাদের পরিণতি সম্পর্কে) জানতে পারবে। (সূরা যুখরুফ- ৮৯)
وَتَوَلَّ عَنْهُمْ حَتّٰى حِيْنٍ
অতএব আপনি তাদেরকে কিছুকালের জন্য উপেক্ষা করুন। (সূরা সাফফাত- ১৭৮)
দুঃখে নিজেকে বিনাশ করে দিয়ো না :
لَعَلَّكَ بَاخِعٌ نَّفْسَكَ اَلَّا يَكُوْنُوْا مُؤْمِنِيْنَ – اِنْ نَّشَأْ نُنَزِّلْ عَلَيْهِمْ مِّنَ السَّمَآءِاٰيَةً فَظَلَّتْ اَعْنَاقُهُمْ لَهَا خَاضِعِيْنَ
তারা মুমিন হচ্ছে না বলে তুমি হয়তো মনোকষ্টে আত্মবিনাশী হয়ে পড়বে। (জেনে রেখো) আমি ইচ্ছা করলে আকাশ হতে তাদের নিকট এক নিদর্শন প্রেরণ করতে পারতাম, ফলে তারা এর সামনে নত হয়ে যেত। (সূরা শু‘আরা- ৩, ৪)
فَلَا تَذْهَبْ نَفْسُكَ عَلَيْهِمْ حَسَرَاتٍؕ اِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ ۢبِمَا يَصْنَعُوْنَ
অতএব আপনি তাদের জন্য অনুতাপ করে নিজেকে ধ্বংস করে দেবেন না। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা জানেন। (সূরা ফাতির- ৮)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ কে এ মর্মে সান্ত্বনা দেয়া হয়েছে যে, এদের ঈমান না আনার দায়দায়িত্ব তোমার উপর বর্তায় না। কাজেই তুমি কেন অনর্থক নিজেকে দুঃখে ও শোকে দগ্ধীভূত করছ? তোমার কাজ শুধুমাত্র সুখবর দেয়া ও ভয় দেখানো। লোকদেরকে মুমিন বানানো তোমার কাজ নয়। কাজেই তুমি কেবল নিজের প্রচারের দায়িত্ব পালন করে যাও। যে মেনে নেবে তাকে সুখবর দেবে এবং যে মেনে নেবে না তাকে তার অশুভ পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করে দেবে। নবী ﷺ ও তাঁর সাথিদেরকে যেসব কষ্ট দেয়া হচ্ছিল, সেজন্য তাঁর মনে কোন দুঃখ ছিল না। বরং যে দুঃখটি তাঁকে ভেতরে ভেতরে খাচ্ছিল সেটি ছিল এই যে, তিনি নিজের জাতিকে নৈতিক অধঃপতন ও ভ্রষ্টতা থেকে বের করে আনতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু তারা কোনক্রমেই এ পথে পা বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছিল না। তাঁর পূর্ণ বিশ্বাস ছিল, এ ভ্রষ্টতার অনিবার্য ফল ধ্বংস। আর এতে আল্লাহর আযাব ছাড়া আর কোনকিছুই লাভ করা যাবে না। তাই তিনি তাদেরকে এ পরিণতি থেকে রক্ষা করার জন্য দিন-রাত প্রাণান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তারা আল্লাহর আযাবের সম্মুখীন হওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল। নবী ﷺ নিজেই তাঁর এ মানসিক অবস্থাকে একটি হাদীসে এভাবে বর্ণনা করেছেন, আমার ও তোমাদের দৃষ্টান্ত এমন এক ব্যক্তির মতো, যে আলোর জন্য আগুন জ্বালাল। আর পতঙ্গরা পুড়ে মরার জন্য তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে শুরু করল। সে এদেরকে যে কোনক্রমে আগুন থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করে, কিন্তু এ পতঙ্গরা তার কোন প্রচেষ্টাকেই ফলপ্রসূ করতে দেয় না। আমার অবস্থাও অনুরূপ। আমি তোমাদের হাত ধরে টানছি; কিন্তু তোমরা আগুনে লাফিয়ে পড়ছ। (সহীহ বুখারী, হা/৩৪২৬; সহীহ মুসলিম, হা/৬০৯৭)
তুমি এদের কথায় ব্যথিত হয়ো না :
وَلَا يَحْزُنْكَ قَوْلُهُمْؕ اِنَّ الْعِزَّةَ لِلّٰهِ جَمِيْعًاؕ هُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
তাদের কথা তোমাকে যেন দুঃখ না দেয়। নিশ্চয় সমস্ত শক্তিই আল্লাহর; তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা ইউনুস- ৬৫)
فَلَا يَحْزُنْكَ قَوْلُهُمْؕ اِنَّا نَعْلَمُ مَا يُسِرُّوْنَ وَمَا يُعْلِنُوْنَ
অতএব এদের কথা যেন আপনাকে দুঃখ না দেয়। অবশ্যই আমি অবগত আছি সে সম্বন্ধে, যা তারা গোপন করে এবং যা তারা প্রকাশ করে। (সূরা ইয়াসীন- ৭৬)
তুমি দুর্বল হয়ো না :
فَاصْبِرْ اِنَّ وَعْدَ اللهِ حَقٌّ وَّلَا يَسْتَخِفَّنَّكَ الَّذِيْنَ لَا يُوْقِنُوْنَ
অতএব তুমি ধৈর্যধারণ করো। নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য। যারা দৃঢ় বিশ্বাসী নয় তারা যেন তোমাকে বিচলিত করতে না পারে। (সূরা রূম- ৬০)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ শত্রুরা যেন তোমাদেরকে এমন দুর্বল অবস্থায় না পায় যে, তাদের মিথ্যাচার দেখে তোমরা সাহস হারিয়ে ফেল অথবা তাদের হুমকি ও নির্যাতনে ভীত হয়ে পড়। বরং তারা যেন তোমাদেরকে ঈমানি চেতনায় ও সুপথ হাসিলের উদ্দেশ্যে এত বেশি মজবুত পায় যে, তোমাদেরকে কোন প্রকার ভয়ে ভীত করা সম্ভব নয়, কোন প্রতারণার জালে আবদ্ধ করে ও নির্যাতন চালিয়ে সুপথ থেকে সরানোও সম্ভব নয়। এমনকি তারা দ্বীনের ব্যাপারে মূল্য বিনিময়ের মাধ্যমে কোন প্রকার আপোষের সুযোগও নিতে না পারে। অবিশ্বাসীরা যেন তোমাকে গুরুত্বহীন মনে না করে। আল্লাহর এ ছোট্ট বাণীর মধ্যেই এসব বিষয়বস্তু লুকিয়ে রাখা হয়েছে। আল্লাহ তাঁর নবীকে যেমন শক্তিশালী ও গুরুত্ববহ দেখতে চাচ্ছিলেন, তিনি ঠিক তেমনটিই হতে পেরেছিলেন। তাঁর সাথে যে ব্যক্তিই যে ময়দানে শক্তি পরীক্ষা করেছে, সে-ই হেরে গেছে। শেষ পর্যন্ত এ মহান ব্যক্তিত্ব এমন বিপ্লব সৃষ্টি করেন, যার পথরোধ করার জন্য আরবের কাফির ও মুশরিকসমাজ নিজেদের সর্বশক্তি ও কৌশল প্রয়োগ করেও ব্যর্থ হয়ে গেছে।
কাফিরদের দাম্ভিকতা দেখে বিভ্রান্ত হয়ো না :
لَا يَغُرَّنَّكَ تَقَلُّبُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا فِى الْبِلَادِ
শহরসমূহে কাফিরদের চালচলন যেন তোমাকে প্রতারিত না করে। (সূরা আলে ইমরান- ১৯৬)
وَمَنْ كَفَرَ فَلَا يَحْزُنْكَ كُفْرُهٗؕ اِلَيْنَا مَرْجِعُهُمْ فَنُنَبِّئُهُمْ بِمَا عَمِلُوْاؕ اِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ ۢبِذَاتِ الصُّدُوْرِ – نُمَتِّعُهُمْ قَلِيْلًا ثُمَّ نَضْطَرُّهُمْ اِلٰى عَذَابٍ غَلِيْظٍ
কেউ যদি কুফরী করে ফেলে, তবে আপনি তার কুফরীর জন্য চিন্তিত হবেন না। তাদেরকে আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে। তখন আমি তাদেরকে অবহিত করব, যা কিছু তারা করত। নিশ্চয় আল্লাহ অন্তরের বিষয় সম্পর্কেও সবিশেষ অবহিত রয়েছেন। আমি অল্প সময়ের জন্য তাদেরকে সুখ-সম্ভোগ দেব, অতঃপর পুনরায় তাদেরকে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে বাধ্য করব। (সূরা লুক্বমান- ২৩, ২৪)
ওহীর জ্ঞানই তোমার জন্য উত্তম সম্পদ :
وَلَقَدْ اٰتَيْنَاكَ سَبْعًا مِّنَ الْمَثَانِيْ وَالْقُرْاٰنَ الْعَظِيْمَ – لَا تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ اِلٰى مَا مَتَّعْنَا بِهٖۤ اَزْوَاجًا مِّنْهُمْ وَلَا تَحْزَنْ عَلَيْهِمْ
আমি তো তোমাকে দিয়েছি সাত আয়াত বিশিষ্ট (সূরা ফাতিহা) যা পুনঃ পুনঃ পাঠ করা হয় এবং মহান কুরআন। আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণিকে ভোগবিলাসের যে উপকরণ দিয়েছি তার প্রতি তুমি কখনো তোমার চক্ষুদ্বয় প্রসারিত করো না এবং তাদের জন্য দুঃখও করো না। (সূরা হিজর- ৮৭, ৮৮)
ব্যাখ্যা : এ কথাটি নবী ﷺ এবং তাঁর সাথিদেরকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। তখন এমন একটা সময় ছিল যখন নবী ﷺ ও তাঁর সাথিরা সবাই চরম দুরবস্থার মধ্যে জীবন-যাপন করছিলেন। নবুওয়াতের দায়িত্ব কাঁধে নেয়ার সাথে সাথেই নবী ﷺ এর ব্যবসা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ওদিকে দশ বারো বছরের মধ্যে খাদীজা (রাঃ) এর সব সম্পদও খরচ হয়ে গিয়েছিল। মুসলিমদের মধ্যে কিছু উঠতি যুবক ছিলেন, তাদেরকে অভিভাবকরা ঘর থেকে বের করে দিয়েছিল। কতক ছিলেন ব্যবসায়ী ও কারিগর। অনবরত অর্থনৈতিক সংকটের আঘাতে তাদের কাজকর্ম একদম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আর কেউ আগে থেকেই ছিলেন দাস বা মুক্ত দাস। তাদের কোন অর্থনৈতিক ভিত্তিই ছিল না। তাছাড়া নবী ﷺ সহ সকল মুসলিম মক্কা ও তার চারপাশের পল্লীগুলোতে চরম নির্যাতনের মধ্যে জীবন-যাপন করছিলেন। তারা ছিলেন সবদিক থেকে নিন্দিত। সর্বত্রই তাঁরা লাঞ্ছনা ও হাসি-তামাশার খোরাক হয়েছিলেন। মানসিক ও আত্মিক মর্মজ্বালার সাথে সাথে তারা দৈহিক নিপীড়নের হাত থেকেও রেহাই পাননি। অন্যদিকে কুরাইশ নেতারা পার্থিব ধনসম্পদের ক্ষেত্রে সবরকমের প্রাচুর্যের অধিকারী ছিল। এ অবস্থায় বলা হচ্ছে, তোমার মন হতাশাগ্রস্ত কেন? তোমাকে আমি এমন সম্পদ দান করেছি যার তুলনায় দুনিয়ার সমস্ত সম্পদ তুচ্ছ।
مَا يُقَالُ لَكَ اِلَّا مَا قَدْ قِيْلَ لِلرُّسُلِ مِنْ قَبْلِكَؕ اِنَّ رَبَّكَ لَذُوْ مَغْفِرَةٍ وَّذُوْ عِقَابٍ اَلِيْمٍ
তোমার সম্বন্ধে তো তাই বলা হয়, যা তোমার পূর্ববর্তী রাসূলদের সম্পর্কে বলা হতো। নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক ক্ষমাশীল ও কঠিন শাস্তিদাতা। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৪৩)
তোমার আগেও অনেক নবীকে মিথ্যারোপ করা হয়েছে :
فَاِنْ كَذَّبُوْكَ فَقَدْ كُذِّبَ رُسُلٌ مِّنْ قَبْلِكَ جَآءُوْا بِالْبَيِّنَاتِ وَالزُّبُرِ وَالْكِتَابِ الْمُنِيْرِ
তারা যদি তোমার প্রতি মিথ্যারোপ করে, তবে (জেনে রেখো) তোমার পূর্বেও রাসূলগণকে মিথ্যারোপ করা হয়েছিল, যারা প্রকাশ্য নিদর্শনাবলি ও অনেক সহীফা এবং উজ্জ্বল গ্রন্থসহ আগমন করেছিল।
(সূরা আলে ইমরান- ১৮৪)
তোমার পূর্বেও সকল নবীর সাথে বিদ্রূপ করা হয়েছে :
وَلَقَدْ اَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ فِيْ شِيَعِ الْا َوَّلِيْنَ – وَمَا يَأْتِيْهِمْ مِّنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا كَانُوْا بِه يَسْتَهْزِئُوْنَ
তোমার পূর্ববর্তী জাতিগুলোর কাছেও আমি রাসূল প্রেরণ করেছিলাম। তাদের কাছে এমন কোন রাসূল আসেনি, যাকে নিয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেনি। (সূরা হিজর- ১০, ১১)
وَلَقَدِ اسْتُهْزِئَ بِرُسُلٍ مِّنْ قَبْلِكَ فَحَاقَ بِالَّذِيْنَ سَخِرُوْا مِنْهُمْ مَّا كَانُوْا بِهٖ يَسْتَهْزِئُوْنَ
তোমার পূর্বেও অনেক রাসূলকেই ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা হয়েছে। তারা যা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করছিল বিদ্রূপকারীদেরকে পরিণামে তাই পরিবেষ্টন করে নিয়েছিল। (সূরা আন‘আম- ১০)
প্রত্যেক নবীরই দুশমন ছিল :
وَكَذٰلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا شَيَاطِيْنَ الْاِنْسِ وَالْجِنِّ يُوْحِيْ بَعْضُهُمْ اِلٰى بَعْضٍ زُخْرُفَ الْقَوْلِ غُرُوْرًاؕ وَلَوْ شَآءَ رَبُّكَ مَا فَعَلُوْهُ فَذَرْهُمْؕ وَمَا يَفْتَرُوْنَ
এভাবে আমি মানব ও জিনদের মধ্যে শয়তানদেরকে প্রত্যেক নবীর শত্রু বানিয়ে দিয়েছিলাম, যারা (মুমিনদের সাথে) প্রতারণা করার উদ্দেশ্যে তাদের একে অন্যকে চমকপ্রদ কথা দ্বারা প্ররোচিত করত। যদি তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করতেন, তবে তারা এটা করত না; সুতরাং তুমি তাদেরকে ও তাদের মিথ্যা রচনাকে বর্জন করো। (সূরা আন‘আম- ১১২)
وَكَذٰلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا مِّنَ الْمُجْرِمِيْنَؕ وَكَفٰى بِرَبِّكَ هَادِيًا وَّنَصِيْرًا
এভাবেই আমি অপরাধীদেরকে প্রত্যেক নবীর শত্রু হিসেবে মনোনীত করেছিলাম। তবে পথপ্রদর্শক ও সাহায্যকারী হিসেবে তোমার প্রতিপালকই যথেষ্ট ছিল। (সূরা ফুরক্বান- ৩১)
প্রত্যেক নবীকে গ্রেফতার করার চেষ্টা করা হয়েছে :
وَهَمَّتْ كُلُّ اُمَّةٍ ۢبِرَسُوْلِهِمْ لِيَأْخُذُوْهُ وَجَادَلُوْا بِالْبَاطِلِ لِيُدْحِضُوْا بِهِ الْحَقَّ فَاَخَذْتُهُمْ فَكَيْفَ كَانَ عِقَابِ
প্রত্যেক সম্প্রদায় নিজ নিজ রাসূলকে গ্রেফতার করার জন্য চক্রান্ত করেছিল এবং তারা বাজে তর্কে লিপ্ত হয়েছিল, যেন তারা এর দ্বারা সত্যকে নষ্ট করে দিতে পারে। ফলে আমি তাদেরকে পাকড়াও করলাম; কতই না কঠোর ছিল আমার শাস্তি। (সূরা মু’মিন- ৫)
আল্লাহ বিরোধীদেরকে বেষ্টন করে আছেন :
وَاِذْ قُلْنَا لَكَ اِنَّ رَبَّكَ اَحَاطَ بِالنَّاسِ
স্মরণ করো, যখন আমি তোমাকে বলেছিলাম, নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক মানুষকে পরিবেষ্টন করে আছেন। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৬০)
তোমাকে রক্ষার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট :
وَاِنْ يُّرِيْدُوْاۤ اَنْ يَّخْدَعُوْكَ فَاِنَّ حَسْبَكَ اللهُ هُوَ الَّذِيْۤ اَيَّدَكَ بِنَصْرِهٖ وَبِالْمُؤْمِنِيْنَ
যদি তারা তোমাকে প্রতারিত করতে চায়, তবে তোমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। তিনি তোমাকে স্বীয় সাহায্য ও মুমিনদের দ্বারা শক্তিশালী করেছেন। (সূরা আনফাল- ৬২)
اَلَيْسَ اللهُ بِكَافٍ عَبْدَهٗؕ وَيُخَوِّفُوْنَكَ بِالَّذِيْنَ مِنْ دُوْنِهٖؕ وَمَنْ يُّضْلِلِ اللهُ فَمَا لَهٗ مِنْ هَادٍ
আল্লাহ কি তাঁর বান্দার জন্য যথেষ্ট নন? অথচ তারা তোমাকে আল্লাহর পরিবর্তে অন্য কারো ভয় দেখায়। বস্তুত আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার জন্য কোন পথপ্রর্দশক নেই। (সূরা যুমার- ৩৬)
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ حَسْبُكَ اللهُ وَمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ
হে নবী! তোমার জন্য ও তোমার অনুসারী মুমিনদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। (সূরা আনফাল- ৬৪)
আল্লাহ তোমার বিরোধীদের চেয়েও শক্তিশালী জনপদ ধ্বংস করেছেন :
وَكَاَيِّنْ مِّنْ قَرْيَةٍ هِيَ اَشَدُّ قُوَّةً مِّنْ قَرْيَتِكَ الَّتِيْۤ اَخْرَجَتْكَۚ اَهْلَكْنَاهُمْ فَلَا نَاصِرَ لَهُمْ
(হে রাসূল!) তারা যে এলাকা থেকে আপনাকে বের করে দিয়েছে এর চেয়েও শক্তিশালী কত এলাকা ছিল। আমি তাদেরকে এমনভাবে ধ্বংস করে দিয়েছি যে, তাদেরকে সাহায্য করার মতো কেউ ছিল না।
(সূরা মুহাম্মাদ- ১৩)
আল্লাহর শাস্তি কখন আসবে- এ নিয়ে চিন্তা করো না :
فَاصْبِرْ اِنَّ وَعْدَ اللهِ حَقٌّۚ فَاِمَّا نُرِيَنَّكَ بَعْضَ الَّذِيْ نَعِدُهُمْ اَوْ نَتَوَفَّيَنَّكَ فَاِلَيْنَا يُرْجَعُوْنَ
সুতরাং ধৈর্যধারণ করো, নিশ্চয় আল্লাহর অঙ্গীকার সত্য। আমি তাদেরকে যে অঙ্গীকার প্রদান করি তার কিছু যদি দেখিয়েই দেই অথবা তোমার মৃত্যু ঘটাই- তবে তাদেরকে তো আমার নিকটেই প্রত্যাবর্তন করতে হবে। (সূরা মু’মিন- ৭৭)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ যুলুম ও বেঈমানীর সাহায্যে ন্যায় ও সত্যের বিরোধীরা তাদের কৃতকর্মের শাস্তি কখন কী পায় তুমি সে বিষয়ে চিন্তা করো না। অথবা তোমার জীবদ্দশায় ইসলাম প্রসার লাভ করে কি না, সে চিন্তাও তুমি করবে না। তোমার জন্য সান্ত্বনা হিসেবে এতটুকুই যথেষ্ট যে, তুমি ন্যায় ও সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত আছ। অতএব ফলাফলের চিন্তা না করে নিজের দায়িত্ব পালন করতে থাকো। আল্লাহ বাতিলের মাথা কখন অবনত করান সেটা আল্লাহর উপরই ছেড়ে দাও।
আমি এদের থেকে প্রতিশোধ নেবই :
فَاِمَّا نَذْهَبَنَّ بِكَ فَاِنَّا مِنْهُمْ مُّنْتَقِمُوْنَ – اَوْ نُرِيَنَّكَ الَّذِيْ وَعَدْنَاهُمْ فَاِنَّا عَلَيْهِمْ مُّقْتَدِرُوْنَ
আমি যদিও তোমার মৃত্যু ঘটাই, তবুও আমি তাদের উপর প্রতিশোধ নেব! অথবা আমি তাদেরকে যে আযাবের ওয়াদা করেছি যদি আমি তোমাকে তা প্রত্যক্ষ করাই, তবে তাদের উপর অবশ্যই আমার পূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে। (সূরা যুখরুফ- ৪১, ৪২)
তোমার তাড়াহুড়া করার প্রয়োজন নেই :
فَاصْبِرْ كَمَا صَبَرَ اُولُو الْعَزْمِ مِنَ الرُّسُلِ وَلَا تَسْتَعْجِلْ لَّهُمْ
অতএব (হে রাসূল!) আপনি ধৈর্যধারণ করুন, যেমনিভাবে সাহসী রাসূলগণ ধৈর্যধারণ করেছেন। আর আপনি তাদের ব্যাপারে তাড়াহুড়া করবেন না। (সূরা আহকাফ- ৩৫)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ তোমাদের পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণ যেভাবে বছরের পর বছর ধরে ক্রমাগত ধৈর্য ও অক্লান্ত প্রচেষ্টার মাধ্যমে তাদের জাতির অসন্তুষ্টি, বিরোধিতা, বাধা-বিপত্তি ও নানা রকম উৎপীড়নের মুকাবিলা করেছেন তুমিও সে রকম করো এবং কখনো মনে এরূপ ধারণা স্থান দিয়ো না যে, এসব লোক অনতিবিলম্বে ঈমান আনুক, নয়তো আল্লাহ তাদের উপর আযাব নাযিল করুক।
ধৈর্যধারণ করো :
وَاصْبِرْ لِحُكْمِ رَبِّكَ فَاِنَّكَ بِاَعْيُنِنَا
তুমি তোমার প্রতিপালকের নির্দেশের অপেক্ষায় ধৈর্যধারণ করো; কেননা তুমি আমার চোখের সামনেই রয়েছ। (সূরা তূর- ৪৮)
ব্যাখ্যা : যারা জাহেলিয়াতের অবস্থা অপরিবর্তিত রাখার জন্য নিজেদের সকল প্রকার কর্মতৎপরতা নিয়োজিত করে, তারা সমস্ত নৈতিক বাঁধনমুক্ত হয়ে নবী ﷺ এর বিরুদ্ধে সবরকমের নিকৃষ্টতম চক্রান্ত চালাচ্ছিল। তারা অত্যন্ত অশ্লীলতা, প্রতারণা, জালিয়াতি ও মিথ্যার অস্ত্র ব্যবহার করে এমন এক নিষ্কলুষ ব্যক্তির কার্যক্রমকে পরাস্ত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছিল, যিনি নিঃস্বার্থভাবে সাধারণ মানুষের মঙ্গলের জন্য দিন-রাত সংগ্রাম করে যাচ্ছিলেন। তাদের এ তৎপরতা দেখে নবী ﷺ মনে মনে অত্যন্ত কষ্ট অনুভব করতেন। তাছাড়া একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তি একজন নিকৃষ্ট চরিত্রের অধিকারী লোকের মুখোমুখি হবেন এবং উক্ত নিকৃষ্ট চরিত্রের অধিকারী লোকে অসৎ কলা-কৌশল ও নির্যাতনের স্বীকার হবেন- এসব পর্যবেক্ষণ করে স্বাভাবিকভাবেই তিনি মনে ব্যথা পেতে পারে। কাজেই এখানে আল্লাহর বক্তব্যের উদ্দেশ্য এ নয় যে, তাদের ঐসব কর্মতৎপরতার কারণে রাসূল ﷺ এর মনে স্বাভাবিকভাবে যে ব্যথা ও মর্মবেদনা সৃষ্টি হয় তা না হওয়া উচিত বরং আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে, তিনি যেন মন খারাপ না করেন। তিনি যেন মনোবল না হারিয়ে ফেলেন এবং ধৈর্যের সাথে আল্লাহর বান্দাদের সংস্কার ও সংশোধনের কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। আর এসব লোকের ব্যাপারে বলা যায় যে, এরা যে ধরনের নিকৃষ্ট নৈতিক গুণাবলি নিজেদের মধ্যে লালন করেছে তাতে তাদের পক্ষ থেকে এ ধরনের ব্যবহারই আশা করা যেতে পারে। এদের থেকে কোন ভালো ব্যবহার আশাই করা যায় না।
তাদেরকে কিছু দিন উপেক্ষা করে চলো :
فَاصْفَحْ عَنْهُمْ وَقُلْ سَلَامٌؕ فَسَوْفَ يَعْلَمُوْنَ
সুতরাং তুমি তাদেরকে উপেক্ষা করো এবং বলো, সালাম; অতি শীঘ্রই তারা (তাদের পরিণতি সম্পর্কে) জানতে পারবে। (সূরা যুখরুফ- ৮৯)
وَتَوَلَّ عَنْهُمْ حَتّٰى حِيْنٍ
অতএব আপনি তাদেরকে কিছুকালের জন্য উপেক্ষা করুন। (সূরা সাফফাত- ১৭৮)
দুঃখে নিজেকে বিনাশ করে দিয়ো না :
لَعَلَّكَ بَاخِعٌ نَّفْسَكَ اَلَّا يَكُوْنُوْا مُؤْمِنِيْنَ – اِنْ نَّشَأْ نُنَزِّلْ عَلَيْهِمْ مِّنَ السَّمَآءِاٰيَةً فَظَلَّتْ اَعْنَاقُهُمْ لَهَا خَاضِعِيْنَ
তারা মুমিন হচ্ছে না বলে তুমি হয়তো মনোকষ্টে আত্মবিনাশী হয়ে পড়বে। (জেনে রেখো) আমি ইচ্ছা করলে আকাশ হতে তাদের নিকট এক নিদর্শন প্রেরণ করতে পারতাম, ফলে তারা এর সামনে নত হয়ে যেত। (সূরা শু‘আরা- ৩, ৪)
فَلَا تَذْهَبْ نَفْسُكَ عَلَيْهِمْ حَسَرَاتٍؕ اِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ ۢبِمَا يَصْنَعُوْنَ
অতএব আপনি তাদের জন্য অনুতাপ করে নিজেকে ধ্বংস করে দেবেন না। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা জানেন। (সূরা ফাতির- ৮)
ব্যাখ্যা : নবী ﷺ কে এ মর্মে সান্ত্বনা দেয়া হয়েছে যে, এদের ঈমান না আনার দায়দায়িত্ব তোমার উপর বর্তায় না। কাজেই তুমি কেন অনর্থক নিজেকে দুঃখে ও শোকে দগ্ধীভূত করছ? তোমার কাজ শুধুমাত্র সুখবর দেয়া ও ভয় দেখানো। লোকদেরকে মুমিন বানানো তোমার কাজ নয়। কাজেই তুমি কেবল নিজের প্রচারের দায়িত্ব পালন করে যাও। যে মেনে নেবে তাকে সুখবর দেবে এবং যে মেনে নেবে না তাকে তার অশুভ পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করে দেবে। নবী ﷺ ও তাঁর সাথিদেরকে যেসব কষ্ট দেয়া হচ্ছিল, সেজন্য তাঁর মনে কোন দুঃখ ছিল না। বরং যে দুঃখটি তাঁকে ভেতরে ভেতরে খাচ্ছিল সেটি ছিল এই যে, তিনি নিজের জাতিকে নৈতিক অধঃপতন ও ভ্রষ্টতা থেকে বের করে আনতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু তারা কোনক্রমেই এ পথে পা বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছিল না। তাঁর পূর্ণ বিশ্বাস ছিল, এ ভ্রষ্টতার অনিবার্য ফল ধ্বংস। আর এতে আল্লাহর আযাব ছাড়া আর কোনকিছুই লাভ করা যাবে না। তাই তিনি তাদেরকে এ পরিণতি থেকে রক্ষা করার জন্য দিন-রাত প্রাণান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তারা আল্লাহর আযাবের সম্মুখীন হওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল। নবী ﷺ নিজেই তাঁর এ মানসিক অবস্থাকে একটি হাদীসে এভাবে বর্ণনা করেছেন, আমার ও তোমাদের দৃষ্টান্ত এমন এক ব্যক্তির মতো, যে আলোর জন্য আগুন জ্বালাল। আর পতঙ্গরা পুড়ে মরার জন্য তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে শুরু করল। সে এদেরকে যে কোনক্রমে আগুন থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করে, কিন্তু এ পতঙ্গরা তার কোন প্রচেষ্টাকেই ফলপ্রসূ করতে দেয় না। আমার অবস্থাও অনুরূপ। আমি তোমাদের হাত ধরে টানছি; কিন্তু তোমরা আগুনে লাফিয়ে পড়ছ। (সহীহ বুখারী, হা/৩৪২৬; সহীহ মুসলিম, হা/৬০৯৭)
তুমি এদের কথায় ব্যথিত হয়ো না :
وَلَا يَحْزُنْكَ قَوْلُهُمْؕ اِنَّ الْعِزَّةَ لِلّٰهِ جَمِيْعًاؕ هُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
তাদের কথা তোমাকে যেন দুঃখ না দেয়। নিশ্চয় সমস্ত শক্তিই আল্লাহর; তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা ইউনুস- ৬৫)
فَلَا يَحْزُنْكَ قَوْلُهُمْؕ اِنَّا نَعْلَمُ مَا يُسِرُّوْنَ وَمَا يُعْلِنُوْنَ
অতএব এদের কথা যেন আপনাকে দুঃখ না দেয়। অবশ্যই আমি অবগত আছি সে সম্বন্ধে, যা তারা গোপন করে এবং যা তারা প্রকাশ করে। (সূরা ইয়াসীন- ৭৬)
তুমি দুর্বল হয়ো না :
فَاصْبِرْ اِنَّ وَعْدَ اللهِ حَقٌّ وَّلَا يَسْتَخِفَّنَّكَ الَّذِيْنَ لَا يُوْقِنُوْنَ
অতএব তুমি ধৈর্যধারণ করো। নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য। যারা দৃঢ় বিশ্বাসী নয় তারা যেন তোমাকে বিচলিত করতে না পারে। (সূরা রূম- ৬০)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ শত্রুরা যেন তোমাদেরকে এমন দুর্বল অবস্থায় না পায় যে, তাদের মিথ্যাচার দেখে তোমরা সাহস হারিয়ে ফেল অথবা তাদের হুমকি ও নির্যাতনে ভীত হয়ে পড়। বরং তারা যেন তোমাদেরকে ঈমানি চেতনায় ও সুপথ হাসিলের উদ্দেশ্যে এত বেশি মজবুত পায় যে, তোমাদেরকে কোন প্রকার ভয়ে ভীত করা সম্ভব নয়, কোন প্রতারণার জালে আবদ্ধ করে ও নির্যাতন চালিয়ে সুপথ থেকে সরানোও সম্ভব নয়। এমনকি তারা দ্বীনের ব্যাপারে মূল্য বিনিময়ের মাধ্যমে কোন প্রকার আপোষের সুযোগও নিতে না পারে। অবিশ্বাসীরা যেন তোমাকে গুরুত্বহীন মনে না করে। আল্লাহর এ ছোট্ট বাণীর মধ্যেই এসব বিষয়বস্তু লুকিয়ে রাখা হয়েছে। আল্লাহ তাঁর নবীকে যেমন শক্তিশালী ও গুরুত্ববহ দেখতে চাচ্ছিলেন, তিনি ঠিক তেমনটিই হতে পেরেছিলেন। তাঁর সাথে যে ব্যক্তিই যে ময়দানে শক্তি পরীক্ষা করেছে, সে-ই হেরে গেছে। শেষ পর্যন্ত এ মহান ব্যক্তিত্ব এমন বিপ্লব সৃষ্টি করেন, যার পথরোধ করার জন্য আরবের কাফির ও মুশরিকসমাজ নিজেদের সর্বশক্তি ও কৌশল প্রয়োগ করেও ব্যর্থ হয়ে গেছে।
কাফিরদের দাম্ভিকতা দেখে বিভ্রান্ত হয়ো না :
لَا يَغُرَّنَّكَ تَقَلُّبُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا فِى الْبِلَادِ
শহরসমূহে কাফিরদের চালচলন যেন তোমাকে প্রতারিত না করে। (সূরা আলে ইমরান- ১৯৬)
وَمَنْ كَفَرَ فَلَا يَحْزُنْكَ كُفْرُهٗؕ اِلَيْنَا مَرْجِعُهُمْ فَنُنَبِّئُهُمْ بِمَا عَمِلُوْاؕ اِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ ۢبِذَاتِ الصُّدُوْرِ – نُمَتِّعُهُمْ قَلِيْلًا ثُمَّ نَضْطَرُّهُمْ اِلٰى عَذَابٍ غَلِيْظٍ
কেউ যদি কুফরী করে ফেলে, তবে আপনি তার কুফরীর জন্য চিন্তিত হবেন না। তাদেরকে আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে। তখন আমি তাদেরকে অবহিত করব, যা কিছু তারা করত। নিশ্চয় আল্লাহ অন্তরের বিষয় সম্পর্কেও সবিশেষ অবহিত রয়েছেন। আমি অল্প সময়ের জন্য তাদেরকে সুখ-সম্ভোগ দেব, অতঃপর পুনরায় তাদেরকে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে বাধ্য করব। (সূরা লুক্বমান- ২৩, ২৪)
ওহীর জ্ঞানই তোমার জন্য উত্তম সম্পদ :
وَلَقَدْ اٰتَيْنَاكَ سَبْعًا مِّنَ الْمَثَانِيْ وَالْقُرْاٰنَ الْعَظِيْمَ – لَا تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ اِلٰى مَا مَتَّعْنَا بِهٖۤ اَزْوَاجًا مِّنْهُمْ وَلَا تَحْزَنْ عَلَيْهِمْ
আমি তো তোমাকে দিয়েছি সাত আয়াত বিশিষ্ট (সূরা ফাতিহা) যা পুনঃ পুনঃ পাঠ করা হয় এবং মহান কুরআন। আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণিকে ভোগবিলাসের যে উপকরণ দিয়েছি তার প্রতি তুমি কখনো তোমার চক্ষুদ্বয় প্রসারিত করো না এবং তাদের জন্য দুঃখও করো না। (সূরা হিজর- ৮৭, ৮৮)
ব্যাখ্যা : এ কথাটি নবী ﷺ এবং তাঁর সাথিদেরকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। তখন এমন একটা সময় ছিল যখন নবী ﷺ ও তাঁর সাথিরা সবাই চরম দুরবস্থার মধ্যে জীবন-যাপন করছিলেন। নবুওয়াতের দায়িত্ব কাঁধে নেয়ার সাথে সাথেই নবী ﷺ এর ব্যবসা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ওদিকে দশ বারো বছরের মধ্যে খাদীজা (রাঃ) এর সব সম্পদও খরচ হয়ে গিয়েছিল। মুসলিমদের মধ্যে কিছু উঠতি যুবক ছিলেন, তাদেরকে অভিভাবকরা ঘর থেকে বের করে দিয়েছিল। কতক ছিলেন ব্যবসায়ী ও কারিগর। অনবরত অর্থনৈতিক সংকটের আঘাতে তাদের কাজকর্ম একদম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আর কেউ আগে থেকেই ছিলেন দাস বা মুক্ত দাস। তাদের কোন অর্থনৈতিক ভিত্তিই ছিল না। তাছাড়া নবী ﷺ সহ সকল মুসলিম মক্কা ও তার চারপাশের পল্লীগুলোতে চরম নির্যাতনের মধ্যে জীবন-যাপন করছিলেন। তারা ছিলেন সবদিক থেকে নিন্দিত। সর্বত্রই তাঁরা লাঞ্ছনা ও হাসি-তামাশার খোরাক হয়েছিলেন। মানসিক ও আত্মিক মর্মজ্বালার সাথে সাথে তারা দৈহিক নিপীড়নের হাত থেকেও রেহাই পাননি। অন্যদিকে কুরাইশ নেতারা পার্থিব ধনসম্পদের ক্ষেত্রে সবরকমের প্রাচুর্যের অধিকারী ছিল। এ অবস্থায় বলা হচ্ছে, তোমার মন হতাশাগ্রস্ত কেন? তোমাকে আমি এমন সম্পদ দান করেছি যার তুলনায় দুনিয়ার সমস্ত সম্পদ তুচ্ছ।
তাদেরকে কিছুদিনের জন্য অবকাশ দেয়া হচ্ছে :
اِنَّهُمْ يَكِيْدُوْنَ كَيْدًا – وَاَكِيْدُ كَيْدًا – فَمَهِّلِ الْكَافِرِيْنَ اَمْهِلْهُمْ رُوَيْدًا
নিশ্চয় তারা (কাফিররা) ভীষণ ষড়যন্ত্র করেছে, আর আমি কৌশল করেছি। অতএব কাফিরদেরকে অবকাশ দাও; অবকাশ দাও কিছু কালের জন্য। (সূরা তারিক, ১৫-১৭)
فَذَرْهُمْ يَخُوْضُوْا وَيَلْعَبُوْا حَتّٰى يُلَاقُوْا يَوْمَهُمُ الَّذِيْ يُوْعَدُوْنَ
যেদিন সম্পর্কে তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তার সম্মুখীন হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদেরকে বাজে কথা ও খেলতামাশায় লিপ্ত থাকতে দাও। (সূরা মা‘আরিজ- ৪২)
ব্যাখ্যা : ব্যক্তিগত চরিত্রও সাক্ষ্য দিয়ে চলছে যে, তিনি একজন নির্ভরযোগ্য ও আস্থাভাজন ব্যক্তি। কিন্তু এ সত্ত্বেও লোকেরা শুধু যে বাপ-দাদাদের থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া বাতিলের মধ্যে নিমগ্ন রয়েছে তা নয়; বরং সুস্পষ্ট যুক্তি-প্রমাণ সহকারে যে সত্য পেশ করা হচ্ছে তাকে মেনে নিতে তারা প্রস্তুত হয়নি, এমনকি তারা সত্যের আহবায়কের পেছনেও লেগে যায় এবং তাঁর দাওয়াতকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য হঠকারিতা, অপবাদ, যুলুম, নিপীড়ন, মিথ্যাচার তথা যাবতীয় নিকৃষ্ট কৌশল অবলম্বন করার ক্ষেত্রেও পিছপা হয় না। সুতরাং এখন যদি তারা না মানে এবং নিজেদের ভ্রষ্টতার মধ্যে ডুবে থাকতে চায়, তাহলে তাদেরকে সেভাবেই থাকতে দাও।
তাদের উপর বিপর্যয় আসবেই :
وَلَا يَزَالُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا تُصِيْبُهُمْ بِمَا صَنَعُوْا قَارِعَةٌ اَوْ تَحُلُّ قَرِيْبًا مِّنْ دَارِهِمْ حَتّٰى يَأْتِيَ وَعْدُ اللهِؕ اِنَّ اللهَ لَا يُخْلِفُ الْمِيْعَادَ
যারা কুফরী করেছে তাদের কর্মফলের জন্য তাদের বিপর্যয় ঘটতেই থাকবে, অথবা বিপর্যয় তাদের আশেপাশে আপতিত হতেই থাকবে, এমনকি আল্লাহর প্রতিশ্রুতি এসে পড়বে। নিশ্চয় আল্লাহ প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম করেন না। (সূরা রা‘দ- ৩১)
তাদের শক্তি দুর্বল হয়ে যাবে :
بَلْ مَتَّعْنَا هٰۤؤُلَآءِ وَاٰبَآءَهُمْ حَتّٰى طَالَ عَلَيْهِمُ الْعُمُرُ اَفَلَا يَرَوْنَ اَنَّا نَأْتِى الْاَرْضَ نَنْقُصُهَا مِنْ اَطْرَافِهَاؕ اَفَهُمُ الْغَالِبُوْنَ
বস্তুত আমিই তাদেরকে এবং তাদের পিতৃ-পুরুষদেরকে ভোগ-সম্ভার দিয়েছিলাম; এমনকি তাদের বয়সও দীর্ঘায়িত করেছিলাম। তারা কি দেখছে না যে, আমি তাদের দেশকে চতুর্দিক হতে সংকুচিত করে এনেছি। তবুও কি তারা বিজয়ী হবে? (সূরা আম্বিয়া- ৪৪)
দুনিয়াতেও তারা কিছু শাস্তি পাবে :
وَلَنُذِيْقَنَّهُمْ مِّنَ الْعَذَابِ الْاَدْنٰى دُوْنَ الْعَذَابِ الْاَكْبَرِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُوْنَ
নিশ্চয় আমি তাদেরকে মহাশাস্তির পূর্বেই সামান্য কিছু শাস্তি ভোগ করাব, যাতে তারা ফিরে আসে। (সূরা সাজদা- ২১)
وَاِنَّ لِلَّذِيْنَ ظَلَمُوْا عَذَابًا دُوْنَ ذٰلِكَ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ
নিশ্চয় যালিমদের জন্য এ ছাড়া আরো শাস্তি রয়েছে; কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না। (সূরা তূর- ৪৭)
কার কী পরিণাম তারা জানতে পারবে :
قُلْ يَا قَوْمِ اعْمَلُوْا عَلٰى مَكَانَتِكُمْ اِنِّيْ عَامِلٌؕ فَسَوْفَ تَعْلَمُوْنَ – مَنْ يَّأْتِيْهِ عَذَابٌ يُّخْزِيْهِ وَيَحِلُّ عَلَيْهِ عَذَابٌ مُّقِيْمٌ
বলো, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা স্ব স্ব অবস্থানে আমল করতে থাকো, অবশ্য আমিও আমল করছি। তোমরা শীঘ্রই জানতে পারবে যে, কে সে ব্যক্তি যার প্রতি লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি আসবে এবং তার উপর পতিত হবে স্থায়ী আযাব। (সূরা যুমার- ৩৯, ৪০)
তাদের বিদ্রূপের পরিণাম তারা জানতে পারবে :
فَقَدْ كَذَّبُوْا بِالْحَقِّ لَمَّا جَآءَهُمْ فَسَوْفَ يَأْتِيْهِمْ اَنْۢبَآءُ مَا كَانُوْا بِهٖ يَسْتَهْزِئُوْنَ
অতঃপর যখন তাদের নিকট সত্য এসে গেল, তখন তারা তা প্রত্যাখ্যান করল। যা নিয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত তার যথার্থ সংবাদ অচিরেই তাদের নিকট পৌঁছবে। (সূরা আন‘আম- ৫)
অতীত জাতির মতো তারাও পরাজিত হবে :
قَدْ مَكَرَ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَاَتَى اللهُ بُنْيَانَهُمْ مِّنَ الْقَوَاعِدِ فَخَرَّ عَلَيْهِمُ السَّقْفُ مِنْ فَوْقِهِمْ وَاَتَاهُمُ الْعَذَابُ مِنْ حَيْثُ لَا يَشْعُرُوْنَ
তাদের পূর্ববর্তীগণও চক্রান্ত করেছিল; আল্লাহ তাদের ইমারতের ভিত্তিমূলে আঘাত করেছিলেন; ফলে ইমারতের ছাদ তাদের উপর ধ্বসে পড়ল এবং তাদের প্রতি শাস্তি নেমে আসল- এমন দিক হতে, যা ছিল তাদের ধারণাতীত। (সূরা নাহল- ২৬)
اَوَلَمْ يَهْدِ لَهُمْ كَمْ اَهْلَكْنَا مِنْ قَبْلِهِمْ مِّنَ الْقُرُوْنِ يَمْشُوْنَ فِيْ مَسَاكِنِهِمْؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍؕ اَفَلَا يَسْمَعُوْنَ
এটাও কি তাদেরকে পথ দেখাল না যে, আমি তো তাদের আগে কত মানব সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছি, যাদের বাসস্থানসমূহের মধ্যে এরা যাতায়াত করে থাকে? নিশ্চয় এতে রয়েছে স্পষ্ট নিদর্শন। তবুও কি তোমরা অনুধাবন করবে না? (সূরা সাজদা- ২৬)
পূর্ববর্তীদের তুলনায় এরা কিছুই নয় :
وَكَذَّبَ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ وَمَا بَلَغُوْا مِعْشَارَ مَاۤ اٰتَيْنَاهُمْ فَكَذَّبُوْا رُسُلِيْ فَكَيْفَ كَانَ نَكِيْرِ
এদের পূর্ববর্তীরাও মিথ্যারোপ করেছিল। তাদেরকে আমি যা দিয়েছিলাম এরা তার দশ ভাগের এক ভাগও পায়নি। তবুও তারা আমার রাসূলদেরকে অস্বীকার করেছিল। অতএব কেমন (ভয়ঙ্কর) ছিল আমার শাস্তি। (সূরা সাবা- ৪৫)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ মক্কার লোকদেরকে যা দেয়া হয়েছে, পূর্ববর্তী জাতিগুলোকে যা দেয়া হয়েছিল তার দশ ভাগের এক ভাগও হবে না। কিন্তু তাদের সে শক্তি ও প্রতিপত্তিও কোন কাজে আসেনি। যখনই তাদের নবীগণ তাদের সামনে সত্যের দাওয়াত পেশ করেছিলেন, তখনই তারা তা মেনে নিতে অস্বীকার করেছিল এবং মিথ্যার উপর নিজেদের জীবনব্যবস্থার ভীত রচনা করেছিল। ফলে তাদের পরিণতি কী হয়েছিল এবং কীভাবে তারা ধ্বংস হয়েছিল, তা তোমরা নিজেরাই দেখে নাও।
اِنَّهُمْ يَكِيْدُوْنَ كَيْدًا – وَاَكِيْدُ كَيْدًا – فَمَهِّلِ الْكَافِرِيْنَ اَمْهِلْهُمْ رُوَيْدًا
নিশ্চয় তারা (কাফিররা) ভীষণ ষড়যন্ত্র করেছে, আর আমি কৌশল করেছি। অতএব কাফিরদেরকে অবকাশ দাও; অবকাশ দাও কিছু কালের জন্য। (সূরা তারিক, ১৫-১৭)
فَذَرْهُمْ يَخُوْضُوْا وَيَلْعَبُوْا حَتّٰى يُلَاقُوْا يَوْمَهُمُ الَّذِيْ يُوْعَدُوْنَ
যেদিন সম্পর্কে তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তার সম্মুখীন হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদেরকে বাজে কথা ও খেলতামাশায় লিপ্ত থাকতে দাও। (সূরা মা‘আরিজ- ৪২)
ব্যাখ্যা : ব্যক্তিগত চরিত্রও সাক্ষ্য দিয়ে চলছে যে, তিনি একজন নির্ভরযোগ্য ও আস্থাভাজন ব্যক্তি। কিন্তু এ সত্ত্বেও লোকেরা শুধু যে বাপ-দাদাদের থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া বাতিলের মধ্যে নিমগ্ন রয়েছে তা নয়; বরং সুস্পষ্ট যুক্তি-প্রমাণ সহকারে যে সত্য পেশ করা হচ্ছে তাকে মেনে নিতে তারা প্রস্তুত হয়নি, এমনকি তারা সত্যের আহবায়কের পেছনেও লেগে যায় এবং তাঁর দাওয়াতকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য হঠকারিতা, অপবাদ, যুলুম, নিপীড়ন, মিথ্যাচার তথা যাবতীয় নিকৃষ্ট কৌশল অবলম্বন করার ক্ষেত্রেও পিছপা হয় না। সুতরাং এখন যদি তারা না মানে এবং নিজেদের ভ্রষ্টতার মধ্যে ডুবে থাকতে চায়, তাহলে তাদেরকে সেভাবেই থাকতে দাও।
তাদের উপর বিপর্যয় আসবেই :
وَلَا يَزَالُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا تُصِيْبُهُمْ بِمَا صَنَعُوْا قَارِعَةٌ اَوْ تَحُلُّ قَرِيْبًا مِّنْ دَارِهِمْ حَتّٰى يَأْتِيَ وَعْدُ اللهِؕ اِنَّ اللهَ لَا يُخْلِفُ الْمِيْعَادَ
যারা কুফরী করেছে তাদের কর্মফলের জন্য তাদের বিপর্যয় ঘটতেই থাকবে, অথবা বিপর্যয় তাদের আশেপাশে আপতিত হতেই থাকবে, এমনকি আল্লাহর প্রতিশ্রুতি এসে পড়বে। নিশ্চয় আল্লাহ প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম করেন না। (সূরা রা‘দ- ৩১)
তাদের শক্তি দুর্বল হয়ে যাবে :
بَلْ مَتَّعْنَا هٰۤؤُلَآءِ وَاٰبَآءَهُمْ حَتّٰى طَالَ عَلَيْهِمُ الْعُمُرُ اَفَلَا يَرَوْنَ اَنَّا نَأْتِى الْاَرْضَ نَنْقُصُهَا مِنْ اَطْرَافِهَاؕ اَفَهُمُ الْغَالِبُوْنَ
বস্তুত আমিই তাদেরকে এবং তাদের পিতৃ-পুরুষদেরকে ভোগ-সম্ভার দিয়েছিলাম; এমনকি তাদের বয়সও দীর্ঘায়িত করেছিলাম। তারা কি দেখছে না যে, আমি তাদের দেশকে চতুর্দিক হতে সংকুচিত করে এনেছি। তবুও কি তারা বিজয়ী হবে? (সূরা আম্বিয়া- ৪৪)
দুনিয়াতেও তারা কিছু শাস্তি পাবে :
وَلَنُذِيْقَنَّهُمْ مِّنَ الْعَذَابِ الْاَدْنٰى دُوْنَ الْعَذَابِ الْاَكْبَرِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُوْنَ
নিশ্চয় আমি তাদেরকে মহাশাস্তির পূর্বেই সামান্য কিছু শাস্তি ভোগ করাব, যাতে তারা ফিরে আসে। (সূরা সাজদা- ২১)
وَاِنَّ لِلَّذِيْنَ ظَلَمُوْا عَذَابًا دُوْنَ ذٰلِكَ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ
নিশ্চয় যালিমদের জন্য এ ছাড়া আরো শাস্তি রয়েছে; কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না। (সূরা তূর- ৪৭)
কার কী পরিণাম তারা জানতে পারবে :
قُلْ يَا قَوْمِ اعْمَلُوْا عَلٰى مَكَانَتِكُمْ اِنِّيْ عَامِلٌؕ فَسَوْفَ تَعْلَمُوْنَ – مَنْ يَّأْتِيْهِ عَذَابٌ يُّخْزِيْهِ وَيَحِلُّ عَلَيْهِ عَذَابٌ مُّقِيْمٌ
বলো, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা স্ব স্ব অবস্থানে আমল করতে থাকো, অবশ্য আমিও আমল করছি। তোমরা শীঘ্রই জানতে পারবে যে, কে সে ব্যক্তি যার প্রতি লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি আসবে এবং তার উপর পতিত হবে স্থায়ী আযাব। (সূরা যুমার- ৩৯, ৪০)
তাদের বিদ্রূপের পরিণাম তারা জানতে পারবে :
فَقَدْ كَذَّبُوْا بِالْحَقِّ لَمَّا جَآءَهُمْ فَسَوْفَ يَأْتِيْهِمْ اَنْۢبَآءُ مَا كَانُوْا بِهٖ يَسْتَهْزِئُوْنَ
অতঃপর যখন তাদের নিকট সত্য এসে গেল, তখন তারা তা প্রত্যাখ্যান করল। যা নিয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত তার যথার্থ সংবাদ অচিরেই তাদের নিকট পৌঁছবে। (সূরা আন‘আম- ৫)
অতীত জাতির মতো তারাও পরাজিত হবে :
قَدْ مَكَرَ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَاَتَى اللهُ بُنْيَانَهُمْ مِّنَ الْقَوَاعِدِ فَخَرَّ عَلَيْهِمُ السَّقْفُ مِنْ فَوْقِهِمْ وَاَتَاهُمُ الْعَذَابُ مِنْ حَيْثُ لَا يَشْعُرُوْنَ
তাদের পূর্ববর্তীগণও চক্রান্ত করেছিল; আল্লাহ তাদের ইমারতের ভিত্তিমূলে আঘাত করেছিলেন; ফলে ইমারতের ছাদ তাদের উপর ধ্বসে পড়ল এবং তাদের প্রতি শাস্তি নেমে আসল- এমন দিক হতে, যা ছিল তাদের ধারণাতীত। (সূরা নাহল- ২৬)
اَوَلَمْ يَهْدِ لَهُمْ كَمْ اَهْلَكْنَا مِنْ قَبْلِهِمْ مِّنَ الْقُرُوْنِ يَمْشُوْنَ فِيْ مَسَاكِنِهِمْؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍؕ اَفَلَا يَسْمَعُوْنَ
এটাও কি তাদেরকে পথ দেখাল না যে, আমি তো তাদের আগে কত মানব সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছি, যাদের বাসস্থানসমূহের মধ্যে এরা যাতায়াত করে থাকে? নিশ্চয় এতে রয়েছে স্পষ্ট নিদর্শন। তবুও কি তোমরা অনুধাবন করবে না? (সূরা সাজদা- ২৬)
পূর্ববর্তীদের তুলনায় এরা কিছুই নয় :
وَكَذَّبَ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ وَمَا بَلَغُوْا مِعْشَارَ مَاۤ اٰتَيْنَاهُمْ فَكَذَّبُوْا رُسُلِيْ فَكَيْفَ كَانَ نَكِيْرِ
এদের পূর্ববর্তীরাও মিথ্যারোপ করেছিল। তাদেরকে আমি যা দিয়েছিলাম এরা তার দশ ভাগের এক ভাগও পায়নি। তবুও তারা আমার রাসূলদেরকে অস্বীকার করেছিল। অতএব কেমন (ভয়ঙ্কর) ছিল আমার শাস্তি। (সূরা সাবা- ৪৫)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ মক্কার লোকদেরকে যা দেয়া হয়েছে, পূর্ববর্তী জাতিগুলোকে যা দেয়া হয়েছিল তার দশ ভাগের এক ভাগও হবে না। কিন্তু তাদের সে শক্তি ও প্রতিপত্তিও কোন কাজে আসেনি। যখনই তাদের নবীগণ তাদের সামনে সত্যের দাওয়াত পেশ করেছিলেন, তখনই তারা তা মেনে নিতে অস্বীকার করেছিল এবং মিথ্যার উপর নিজেদের জীবনব্যবস্থার ভীত রচনা করেছিল। ফলে তাদের পরিণতি কী হয়েছিল এবং কীভাবে তারা ধ্বংস হয়েছিল, তা তোমরা নিজেরাই দেখে নাও।
তাদেরকে দুর্ভিক্ষ দিয়ে পরীক্ষায় ফেলা হয়েছে :
وَضَرَبَ اللهُ مَثَلًا قَرْيَةً كَانَتْ اٰمِنَةً مُّطْمَئِنَّةً يَّأْتِيْهَا رِزْقُهَا رَغَدًا مِّنْ كُلِّ مَكَانٍ فَكَفَرَتْ بِاَنْعُمِ اللهِ فَاَذَاقَهَا اللهُ لِبَاسَ الْجُوْعِ وَالْخَوْفِ بِمَا كَانُوْا يَصْنَعُوْنَ
আল্লাহ দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন এক জনপদের, যা ছিল নিরাপদ ও প্রশান্ত; সেখানে সর্বদিক হতে প্রচুর জীবনোপকরণ আসত। অতঃপর তারা আল্লাহর অনুগ্রহকে অস্বীকার করল, ফলে তারা যা করত সেজন্য আল্লাহ তাদেরকে ক্ষুধা ও ভীতির স্বাদ গ্রহণ করালেন। (সূরা নাহল- ১১২)
তারপরও তারা সঠিক পথে ফিরে আসেনি :
وَلَقَدْ اَخَذْنَاهُمْ بِالْعَذَابِ فَمَا اسْتَكَانُوْا لِرَبِّهِمْ وَمَا يَتَضَرَّعُوْنَ
আমি তাদেরকে শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করলাম, কিন্তু তারা তাদের প্রতিপালকের প্রতি বিনিত হলো না এবং বিনয়ের সাথে প্রার্থনাও করল না। (সূরা মু’মিনূন- ৭৬)
শানে নুযূল : একদা মক্কার কাফিরদের অবাধ্য ও অসদাচরণের দরুন নবী ﷺ বদ্দু‘আ করলে মক্কায় ভীষণ দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। তখন আবু সুফিয়ান রাসূল ﷺ কে বলল, আপনি জগতের জন্য রহমত; কুরাইশরা আপনারই আত্মীয়। সুতরাং দুর্ভিক্ষ দূর হওয়ার জন্য দু‘আ করুন। অতঃপর রাসূল ﷺ দু‘আ করলে দুর্ভিক্ষ দূর হয়ে গেল। কিন্তু কুরাইশরা পুনরায় অবাধ্যতা শুরু করল। তখন এ সম্বন্ধে উক্ত আয়াতটি নাযিল হয়।
তাদের অন্তর আরো শক্ত হয়ে গেল :
فَلَوْلَاۤ اِذْ جَآءَهُمْ بَأْسُنَا تَضَرَّعُوْا وَلٰكِنْ قَسَتْ قُلُوْبُهُمْ وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
আমার শাস্তি যখন তাদের উপর আসল, তখন তারা কেন বিনীত হলো না? অধিকন্তু তাদের হৃদয় কঠিন হয়েছিল এবং তারা যা করছিল শয়তান তা তাদের দৃষ্টিতে শোভন করে দিয়েছিল। (সূরা আন‘আম- ৪৩)
তারা বদরের যুদ্ধে পরাজিত হলো :
يَوْمَ نَبْطِشُ الْبَطْشَةَ الْكُبْرٰۤى اِنَّا مُنْتَقِمُوْنَ
যেদিন আমি তোমাদেরকে প্রবলভাবে পাকড়াও করব, সেদিন আমি প্রতিশোধ নেবই। (সূরা দুখান- ১৬)
وَضَرَبَ اللهُ مَثَلًا قَرْيَةً كَانَتْ اٰمِنَةً مُّطْمَئِنَّةً يَّأْتِيْهَا رِزْقُهَا رَغَدًا مِّنْ كُلِّ مَكَانٍ فَكَفَرَتْ بِاَنْعُمِ اللهِ فَاَذَاقَهَا اللهُ لِبَاسَ الْجُوْعِ وَالْخَوْفِ بِمَا كَانُوْا يَصْنَعُوْنَ
আল্লাহ দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন এক জনপদের, যা ছিল নিরাপদ ও প্রশান্ত; সেখানে সর্বদিক হতে প্রচুর জীবনোপকরণ আসত। অতঃপর তারা আল্লাহর অনুগ্রহকে অস্বীকার করল, ফলে তারা যা করত সেজন্য আল্লাহ তাদেরকে ক্ষুধা ও ভীতির স্বাদ গ্রহণ করালেন। (সূরা নাহল- ১১২)
তারপরও তারা সঠিক পথে ফিরে আসেনি :
وَلَقَدْ اَخَذْنَاهُمْ بِالْعَذَابِ فَمَا اسْتَكَانُوْا لِرَبِّهِمْ وَمَا يَتَضَرَّعُوْنَ
আমি তাদেরকে শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করলাম, কিন্তু তারা তাদের প্রতিপালকের প্রতি বিনিত হলো না এবং বিনয়ের সাথে প্রার্থনাও করল না। (সূরা মু’মিনূন- ৭৬)
শানে নুযূল : একদা মক্কার কাফিরদের অবাধ্য ও অসদাচরণের দরুন নবী ﷺ বদ্দু‘আ করলে মক্কায় ভীষণ দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। তখন আবু সুফিয়ান রাসূল ﷺ কে বলল, আপনি জগতের জন্য রহমত; কুরাইশরা আপনারই আত্মীয়। সুতরাং দুর্ভিক্ষ দূর হওয়ার জন্য দু‘আ করুন। অতঃপর রাসূল ﷺ দু‘আ করলে দুর্ভিক্ষ দূর হয়ে গেল। কিন্তু কুরাইশরা পুনরায় অবাধ্যতা শুরু করল। তখন এ সম্বন্ধে উক্ত আয়াতটি নাযিল হয়।
তাদের অন্তর আরো শক্ত হয়ে গেল :
فَلَوْلَاۤ اِذْ جَآءَهُمْ بَأْسُنَا تَضَرَّعُوْا وَلٰكِنْ قَسَتْ قُلُوْبُهُمْ وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
আমার শাস্তি যখন তাদের উপর আসল, তখন তারা কেন বিনীত হলো না? অধিকন্তু তাদের হৃদয় কঠিন হয়েছিল এবং তারা যা করছিল শয়তান তা তাদের দৃষ্টিতে শোভন করে দিয়েছিল। (সূরা আন‘আম- ৪৩)
তারা বদরের যুদ্ধে পরাজিত হলো :
يَوْمَ نَبْطِشُ الْبَطْشَةَ الْكُبْرٰۤى اِنَّا مُنْتَقِمُوْنَ
যেদিন আমি তোমাদেরকে প্রবলভাবে পাকড়াও করব, সেদিন আমি প্রতিশোধ নেবই। (সূরা দুখান- ১৬)
মদিনা থেকে ৮০ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে বদর উপত্যকায় ১৩ মার্চ ৬২৪ খ্রিস্টাব্দ মুতাবেক দ্বিতীয় হিজরী ১৭ই রমাযান শুক্রবার দিন মুসলিম বাহিনীর সঙ্গে কুরাইশদের সংঘর্ষ হয়। এ যুদ্ধে মুসলিমদের সৈন্য সংখ্যা ছিল মাত্র ৩১৩ জন, যা শুধুমাত্র আনসার ও মুহাজিরদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল। আর এ যুদ্ধের নেতৃত্ব তথা যুদ্ধ পরিচালনার জন্য সেনাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন স্বয়ং আল্লাহর রাসূল ﷺ। অপরদিকে কুরাইশ বাহিনীর সৈন্যসংখ্যা ছিল এক হাজার, যার সেনাপতি ছিল আবু জাহেল। যুদ্ধের প্রথমেই আবু জাহেলের নেতৃত্বে কুরাইশরা মুসলিমদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা মুসলিমদের উপর প্রচন্ড আক্রমণ চালাতে থাকে, কিন্তু সুশৃঙ্খল মুসলিম বাহিনীর মুকাবিলা করা কুরাইশদের পক্ষে সম্ভবপর হয়ে উঠেনি। মুসলিম বাহিনী কুরাইশদেরকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করে। বদর যুদ্ধে মহান আল্লাহ হাজার হাজার ফেরেশতা পাঠিয়ে মুসলিম বাহিনীকে সাহায্য করেন। এ যুদ্ধে ৭০ জন কুরাইশ সৈন্য নিহত হয় ও ৭০ জন সৈন্য বন্দি হয়। অপরদিকে এ যুদ্ধে ১৪ জন মুসলিম সৈন্য শাহাদাতবরণ করেন। আর এ যুদ্ধেই মুসলিমদের সবচেয়ে বড় শত্রু আবু জাহেল লাঞ্ছনার সাথে নিহত হয়।
যুদ্ধের ভবিষ্যদ্বাণী :
اَمْ يَقُوْلُوْنَ نَحْنُ جَمِيْعٌ مُّنْتَصِرٌ – سَيُهْزَمُ الْجَمْعُ وَيُوَلُّوْنَ الدُّبُرَ
তারা কি বলে যে, আমরাই বিজয়ী দল? (জেনে রেখো) অতি শীঘ্রই এ দল পরাজিত হবে এবং পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে। (সূরা ক্বামার- ৪৪, ৪৫)
যুদ্ধের অনুমতি প্রদান :
اُذِنَ لِلَّذِيْنَ يُقَاتَلُوْنَ بِاَنَّهُمْ ظُلِمُوْاؕ وَاِنَّ اللهَ عَلٰى نَصْرِهِمْ لَقَدِيْرٌ – اَلَّذِيْنَ اُخْرِجُوْا مِنْ دِيَارِهِمْ بِغَيْرِ حَقٍّ اِلَّاۤ اَنْ يَّقُوْلُوْا رَبُّنَا اللهُ
যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হলো, কারণ তাদের প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে। নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে সাহায্য করতে সক্ষম। তাদেরকে তাদের ঘরবাড়ি হতে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে শুধুমাত্র এ কারণে যে, তারা বলে, ‘আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ।’ (সূরা হজ্জ- ৩৯, ৪০)
যুদ্ধের ভবিষ্যদ্বাণী :
اَمْ يَقُوْلُوْنَ نَحْنُ جَمِيْعٌ مُّنْتَصِرٌ – سَيُهْزَمُ الْجَمْعُ وَيُوَلُّوْنَ الدُّبُرَ
তারা কি বলে যে, আমরাই বিজয়ী দল? (জেনে রেখো) অতি শীঘ্রই এ দল পরাজিত হবে এবং পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে। (সূরা ক্বামার- ৪৪, ৪৫)
যুদ্ধের অনুমতি প্রদান :
اُذِنَ لِلَّذِيْنَ يُقَاتَلُوْنَ بِاَنَّهُمْ ظُلِمُوْاؕ وَاِنَّ اللهَ عَلٰى نَصْرِهِمْ لَقَدِيْرٌ – اَلَّذِيْنَ اُخْرِجُوْا مِنْ دِيَارِهِمْ بِغَيْرِ حَقٍّ اِلَّاۤ اَنْ يَّقُوْلُوْا رَبُّنَا اللهُ
যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হলো, কারণ তাদের প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে। নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে সাহায্য করতে সক্ষম। তাদেরকে তাদের ঘরবাড়ি হতে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে শুধুমাত্র এ কারণে যে, তারা বলে, ‘আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ।’ (সূরা হজ্জ- ৩৯, ৪০)
সত্যের বিজয় ও মিথ্যার ধ্বংস নিশ্চিত করা :
وَاِذْ يَعِدُكُمُ اللهُ اِحْدَى الطَّآئِفَتَيْنِ اَنَّهَا لَكُمْ وَتَوَدُّوْنَ اَنَّ غَيْرَ ذَاتِ الشَّوْكَةِ تَكُوْنُ لَكُمْ وَيُرِيْدُ اللهُ اَنْ يُّحِقَّ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهٖ وَيَقْطَعَ دَابِرَ الْكَافِرِيْنَ – لِيُحِقَّ الْحَقَّ وَيُبْطِلَ الْبَاطِلَ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُوْنَ
স্মরণ করো, যখন আল্লাহ তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেন যে, দু’টি দলের একদল তোমাদের আয়ত্তাধীন হবে; অথচ তোমরা চাচ্ছিলে যে, নিরস্ত্র দলটি তোমাদের আয়ত্তাধীন হোক। আর আল্লাহ চাচ্ছিলেন যে, তিনি সত্যকে তাঁর বাণী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত করবেন এবং কাফিরদেরকে নির্মূল করবেন। এটা এজন্য যে, তিনি সত্যকে সত্য ও অসত্যকে অসত্য প্রতিপন্ন করেন, যদিও অপরাধীরা এটা পছন্দ করে না। (সূরা আনফাল- ৭, ৮)
لِيَمِيْزَ اللهُ الْخَبِيْثَ مِنَ الطَّيِّبِ وَيَجْعَلَ الْخَبِيْثَ بَعْضَهٗ عَلٰى بَعْضٍ فَيَرْكُمَهٗ جَمِيْعًا فَيَجْعَلَهٗ فِيْ جَهَنَّمَ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ
এটা এজন্য যে, আল্লাহ খারাপ লোকদেরকে ভালো হতে পৃথক করবেন এবং খারাপ লোকদেরকে একে অপরের উপর রাখবেন। অতঃপর সকলকে একত্র করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন; মূলত এরাই ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরা আনফাল- ৩৭)
ফিতনা দূর করা :
وَاتَّقُوْا فِتْنَةً لَّا تُصِيْبَنَّ الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا مِنْكُمْ خَآصَّةًۚ وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
তোমরা এমন ফিতনাকে ভয় করো, যা বিশেষ করে তোমাদের মধ্যে যারা যালিম কেবল তাদেরকেই ক্লিষ্ট করবে না। জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে খুবই কঠোর। (সূরা আনফাল- ২৫)
জাহেলিয়াতকে দূর করা ও ইসলামকে বাঁচিয়ে রাখা :
لِيَهْلِكَ مَنْ هَلَكَ عَنْ ۢبَيِّنَةٍ وَّيَحْيٰ مَنْ حَيَّ عَنْ ۢبَيِّنَةٍؕ وَاِنَّ اللهَ لَسَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
যে ব্যক্তি ধ্বংস হবে, সে যেন সত্য স্পষ্টভাবে প্রকাশের পর ধ্বংস হয়। আর যে জীবিত থাকবে, সে যেন সত্যকে স্পষ্টভাবে প্রকাশের পর জীবিত থাকে; নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা আনফাল- ৪২)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ এতে প্রমাণ হয়ে যাবে যে, যে ব্যক্তি জীবিত আছে তার জীবিত থাকাই উচিত ছিল এবং যে ধ্বংস হয়ে গেছে তার ধ্বংস হয়ে যাওয়াই সমীচীন ছিল। এখানে জীবিত থাকা ও ধ্বংস হওয়া বলতে কোন ব্যক্তিদেরকে নয়, বরং ইসলাম ও জাহেলিয়াতকে বুঝানো হয়েছে। কুরাইশ সেনাদল অগ্রসর হওয়ার পর মূলত প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল, ইসলামী দাওয়াত ও জাহেলী ব্যবস্থা এ দু’য়ের মধ্যে আরব ভূখন্ডে কার বেঁচে থাকার অধিকার আছে? যদি মুসলিমরা সেসময় সাহসের সাথে মুকাবিলা করতে এগিয়ে না আসত, তাহলে এরপর ইসলামের জন্য আর বেঁচে থাকার কোন সুযোগ থাকত না। পক্ষান্তরে মুসলিমদের ঘর থেকে বের হয়ে পড়া এবং প্রথম পদক্ষেপেই কুরাইশ শক্তির উপর চূড়ান্ত আঘাত হানার কারণে এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল, যার ফলে ইসলাম দৃঢ়ভাবে পা রাখার জায়গা পেয়ে গিয়েছিল এবং এর পরের সমস্ত মুকাবিলায় জাহেলিয়াত একের পর এক পরাজয় বরণ করেছিল।
وَاِذْ يَعِدُكُمُ اللهُ اِحْدَى الطَّآئِفَتَيْنِ اَنَّهَا لَكُمْ وَتَوَدُّوْنَ اَنَّ غَيْرَ ذَاتِ الشَّوْكَةِ تَكُوْنُ لَكُمْ وَيُرِيْدُ اللهُ اَنْ يُّحِقَّ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهٖ وَيَقْطَعَ دَابِرَ الْكَافِرِيْنَ – لِيُحِقَّ الْحَقَّ وَيُبْطِلَ الْبَاطِلَ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُوْنَ
স্মরণ করো, যখন আল্লাহ তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেন যে, দু’টি দলের একদল তোমাদের আয়ত্তাধীন হবে; অথচ তোমরা চাচ্ছিলে যে, নিরস্ত্র দলটি তোমাদের আয়ত্তাধীন হোক। আর আল্লাহ চাচ্ছিলেন যে, তিনি সত্যকে তাঁর বাণী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত করবেন এবং কাফিরদেরকে নির্মূল করবেন। এটা এজন্য যে, তিনি সত্যকে সত্য ও অসত্যকে অসত্য প্রতিপন্ন করেন, যদিও অপরাধীরা এটা পছন্দ করে না। (সূরা আনফাল- ৭, ৮)
لِيَمِيْزَ اللهُ الْخَبِيْثَ مِنَ الطَّيِّبِ وَيَجْعَلَ الْخَبِيْثَ بَعْضَهٗ عَلٰى بَعْضٍ فَيَرْكُمَهٗ جَمِيْعًا فَيَجْعَلَهٗ فِيْ جَهَنَّمَ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ
এটা এজন্য যে, আল্লাহ খারাপ লোকদেরকে ভালো হতে পৃথক করবেন এবং খারাপ লোকদেরকে একে অপরের উপর রাখবেন। অতঃপর সকলকে একত্র করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন; মূলত এরাই ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরা আনফাল- ৩৭)
ফিতনা দূর করা :
وَاتَّقُوْا فِتْنَةً لَّا تُصِيْبَنَّ الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا مِنْكُمْ خَآصَّةًۚ وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
তোমরা এমন ফিতনাকে ভয় করো, যা বিশেষ করে তোমাদের মধ্যে যারা যালিম কেবল তাদেরকেই ক্লিষ্ট করবে না। জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে খুবই কঠোর। (সূরা আনফাল- ২৫)
জাহেলিয়াতকে দূর করা ও ইসলামকে বাঁচিয়ে রাখা :
لِيَهْلِكَ مَنْ هَلَكَ عَنْ ۢبَيِّنَةٍ وَّيَحْيٰ مَنْ حَيَّ عَنْ ۢبَيِّنَةٍؕ وَاِنَّ اللهَ لَسَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
যে ব্যক্তি ধ্বংস হবে, সে যেন সত্য স্পষ্টভাবে প্রকাশের পর ধ্বংস হয়। আর যে জীবিত থাকবে, সে যেন সত্যকে স্পষ্টভাবে প্রকাশের পর জীবিত থাকে; নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা আনফাল- ৪২)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ এতে প্রমাণ হয়ে যাবে যে, যে ব্যক্তি জীবিত আছে তার জীবিত থাকাই উচিত ছিল এবং যে ধ্বংস হয়ে গেছে তার ধ্বংস হয়ে যাওয়াই সমীচীন ছিল। এখানে জীবিত থাকা ও ধ্বংস হওয়া বলতে কোন ব্যক্তিদেরকে নয়, বরং ইসলাম ও জাহেলিয়াতকে বুঝানো হয়েছে। কুরাইশ সেনাদল অগ্রসর হওয়ার পর মূলত প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল, ইসলামী দাওয়াত ও জাহেলী ব্যবস্থা এ দু’য়ের মধ্যে আরব ভূখন্ডে কার বেঁচে থাকার অধিকার আছে? যদি মুসলিমরা সেসময় সাহসের সাথে মুকাবিলা করতে এগিয়ে না আসত, তাহলে এরপর ইসলামের জন্য আর বেঁচে থাকার কোন সুযোগ থাকত না। পক্ষান্তরে মুসলিমদের ঘর থেকে বের হয়ে পড়া এবং প্রথম পদক্ষেপেই কুরাইশ শক্তির উপর চূড়ান্ত আঘাত হানার কারণে এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল, যার ফলে ইসলাম দৃঢ়ভাবে পা রাখার জায়গা পেয়ে গিয়েছিল এবং এর পরের সমস্ত মুকাবিলায় জাহেলিয়াত একের পর এক পরাজয় বরণ করেছিল।
মুসলিমদের প্রতি আল্লাহর উপদেশ :
وَاَطِيْعُوا اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَلَا تَنَازَعُوْا فَتَفْشَلُوْا وَتَذْهَبَ رِيْحُكُمْ وَاصْبِرُوْاؕ اِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِيْنَ – وَلَا تَكُوْنُوْا كَالَّذِيْنَ خَرَجُوْا مِنْ دِيَارِهِمْ بَطَرًا وَّرِئَآءَ النَّاسِ وَيَصُدُّوْنَ عَنْ سَبِيْلِ اللهِؕ وَاللهُ بِمَا يَعْمَلُوْنَ مُحِيْطٌ
তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো এবং নিজেদের মধ্যে বিবাদ করো না; নতুবা তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলবে এবং তোমাদের শক্তি দুর্বল হয়ে যাবে। (সুতরাং) তোমরা ধৈর্যধারণ করো; নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথেই রয়েছেন। আর তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা দম্ভভরে ও লোক দেখানোর জন্য স্বীভয় গৃহ হতে বের হয়েছিল এবং লোকদেরকে আল্লাহর পথ হতে বিরত রেখেছিল। আর তারা যা করে নিশ্চয় আল্লাহ তা পরিবেষ্টন করে রয়েছেন। (সূরা আনফাল- ৪৬, ৪৭)
ব্যাখ্যা : নিজেদের আবেগ-অনুভূতি ও কামনা-বাসনাকে সংযত রাখো এবং তাড়াহুড়া করো না। ভীত-সন্ত্রস্ত হওয়া, লোভ-লালসা পোষণ করা এবং অসঙ্গত উৎসাহ-উদ্দীপনা প্রকাশ করা থেকে দূরে থাকো। স্থির মস্তিষ্কে এবং ভারসাম্যপূর্ণ ও যথার্থ বিচক্ষণতা ও ফায়সালা করার শক্তি সহকারে কাজ করে যাও। বিপদাপদ ও সমস্যার সম্মুখীন হলেও যেন তোমাদের পা না টলে। উত্তেজনাকর পরিস্থিতি দেখা দিলে ক্রোধ ও ক্ষোভের তরঙ্গে ভেসে গিয়ে তোমরা যেন কোন অর্থহীন কাজ করে না বস। বিপদের আক্রমণ চলতে থাকলে এবং অবস্থা সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে মোড় নিয়েছে দেখতে পেলে মানসিক অস্থিরতার কারণে তোমাদের চেতনাশক্তি যেন বিক্ষিপ্ত না হয়ে পড়ে। উদ্দেশ্য সফল হওয়ার আনন্দে অধীর হয়ে তোমাদের সংকল্প যেন তাড়াহুড়ার শিকার না হয়ে পড়ে। আল্লাহ বলছেন, এসব দিক দিয়ে যারা ধৈর্যশীল হবে তারাই আমার সাহায্য ও সমর্থন পাবে।
অস্ত্র প্রস্তুত রাখার নির্দেশ :
وَاَعِدُّوْا لَهُمْ مَّا اسْتَطَعْتُمْ مِّنْ قُوَّةٍ وَّمِنْ رِّبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُوْنَ بِهٖ عَدُوُّ اللهِ وَعَدُوَّكُمْ وَاٰخَرِيْنَ مِنْ دُوْنِهِمْۚ لَا تَعْلَمُوْنَهُمُۚ اَللهُ يَعْلَمُهُمْؕ وَمَا تُنْفِقُوْا مِنْ شَيْءٍ فِي ْسَبِيْلِ اللهِ يُوَفَّ اِلَيْكُمْ وَاَنْتُمْ لَا تُظْلَمُوْنَ
তোমরা তাদের মুকাবিলা করার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ববাহিনী প্রস্তুত রাখবে, তা দ্বারা তোমরা ভীত-সন্ত্রস্ত করবে আল্লাহর শত্রু, তোমাদের শত্রু এবং অন্যান্য এমন সম্প্রদায়কে, যাদের সম্পর্কে তোমরা অবগত নও, কিন্তু আল্লাহ তাদের সম্পর্কে অবগত। আল্লাহর পথে তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে তার পূর্ণ প্রতিদান তোমাদেরকে দেয়া হবে এবং (এতে) তোমাদের প্রতি কোন যুলুম করা হবে না। (সূরা আনফাল- ৬০)
ব্যাখ্যা : এর অর্থ হচ্ছে, তোমাদের কাছে যুদ্ধোপকরণ ও একটি স্থায়ী সেনাবাহিনী সর্বক্ষণ তৈরি থাকতে হবে। তাহলে প্রয়োজনের সময় সঙ্গে সঙ্গেই সামরিক পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হবে। এমন যেন না হয়, বিপদ মাথার উপর এসে পড়ার পর হতবুদ্ধি হয়ে তাড়াতাড়ি স্বেচ্ছাসেবক, অস্ত্রশস্ত্র ও অন্যান্য রসদপত্র যোগাড় করার চেষ্টা করা হবে এবং এভাবে প্রস্তুতিপর্ব সম্পন্ন হতে না হতেই শত্রুপক্ষ তার কাজ শেষ করে চলে যাবে।
মুসলিমদেরকে সাহস প্রদান :
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ حَرِّضِ الْمُؤْمِنِيْنَ عَلَى الْقِتَالِ
হে নবী! মুমিনদেরকে যুদ্ধের জন্য উদ্বুদ্ধ করো। (সূরা আনফাল- ৬৫)
কুরাইশ সেনাদের উপর বিজয় দানের ওয়াদা :
وَاِذْ يَعِدُكُمُ اللهُ اِحْدَى الطَّآئِفَتَيْنِ اَنَّهَا لَكُمْ
স্মরণ করো, যখন আল্লাহ তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেন যে, দু’টি দলের একটি দল তোমাদের আয়ত্তাধীন হবে। (সূরা আনফাল- ৭)
ব্যাখ্যা : এখানে দু’টি দলের একটি হলো, কুরাইশদের বাণিজ্য কাফেলা, যা কুরাইশদের জন্য প্রচুর ধনসম্পদ ও অস্ত্র-সস্ত্র বহন করে নিয়ে যাচ্ছিল। আর এসব সম্পদের সাথে কুরাইশদের প্রায় সকলেই জড়িত ছিল। দ্বিতীয় দলটি হচ্ছে, কুরাইশদের ঐ বাণিজ্য কাফেলাকে মুসলিমদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আগত সৈন্যবাহিনী, যাদের সাথে বদর যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।
কিছু মুমিনের অনিচ্ছা সত্ত্বেও নবী ﷺ বের হলেন :
كَمَاۤ اَخْرَجَكَ رَبُّكَ مِنْ ۢبَيْتِكَ بِالْحَقِّ۪ وَاِنَّ فَرِيْقًا مِّنَ الْمُؤْمِنِيْنَ لَكَارِهُوْنَ
এটা এরূপ যে, তোমার প্রতিপালক তোমাকে ন্যায়ভাবে তোমার গৃহ হতে বের করেছিলেন; অথচ মুমিনদের একটি দল এটা পছন্দ করেনি। (সূরা আনফাল- ৫)
স্বপ্নে কাফির সৈন্যদেরকে কম দেখানো হয় :
اِذْ يُرِيْكَهُمُ اللهُ فِيْ مَنَامِكَ قَلِيْلًاؕ وَلَوْ اَرَاكَهُمْ كَثِيْرًا لَّفَشِلْتُمْ وَلَتَنَازَعْتُمْ فِى الْاَمْرِ وَلٰكِنَّ اللهَ سَلَّمَؕ اِنَّهٗ عَلِيْمٌ ۢبِذَاتِ الصُّدُوْر
স্মরণ করো, যখন আল্লাহ তোমাকে স্বপ্নে দেখিয়েছিলেন যে, তারা সংখ্যায় অল্প। যদি তোমাকে দেখাতেন যে, তারা সংখ্যায় অধিক, তবে তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলতে এবং এ বিষয়ে নিজেদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করতে। কিন্তু আল্লাহ তোমাদেরকে রক্ষা করেছিলেন; নিশ্চয় তিনি অন্তরে যা আছে সে সম্বন্ধে বিশেষভাবে অবহিত। (সূরা আনফাল- ৪৩)
ব্যাখ্যা : এটা এমন এক সময়ের কথা, যখন নবী ﷺ মুসলিমদের নিয়ে মদিনা থেকে বের হচ্ছিলেন অথবা পথে কোন মনযিলে অবস্থান করছিলেন। আর তখনও কাফিরদের যথার্থ সৈন্যসংখ্যা জানা যায়নি। এ সময় নবী ﷺ স্বপ্নে কাফিরদের সেনাবাহিনী দেখলেন। তাঁর সামনে যে দৃশ্যপট পেশ করা হয়, তাতে শত্রু সেনাদের সংখ্যা খুব বেশি নয় বলে তিনি অনুমান করতে পারলেন। এ স্বপ্নের বিবরণ তিনি মুসলিমদেরকে শুনালেন। এতে মুসলিমদের সাহস আরো বেড়ে গেল এবং তারা তাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখল।
কাফিরদের চোখেও মুসলিম সৈন্যসংখ্যা কম দেখানো হয় :
وَاِذْ يُرِيْكُمُوْهُمْ اِذِ الْتَقَيْتُمْ فِۤيْ اَعْيُنِكُمْ قَلِيْلًا وَّيُقَلِّلُكُمْ فِۤيْ اَعْيُنِهِمْ لِيَقْضِيَ اللهُ اَمْرًا كَانَ مَفْعُوْلًا وَّاِلَى اللهِ تُرْجَعُ الْاُمُوْرُ
স্মরণ করো, যখন তোমরা পরস্পরের সম্মুখীন হয়েছিলে তখন তিনি তাদেরকে তোমাদের দৃষ্টিতে স্বল্প সংখ্যক দেখিয়েছিলেন এবং তোমাদেরকেও তাদের দৃষ্টিতে স্বল্প সংখ্যক দেখিয়েছিলেন, যাতে করে যা ঘটার ছিল তা আল্লাহ সম্পন্ন করেন। মূলত সমস্ত বিষয় আল্লাহর দিকেই প্রত্যাবর্তিত হয়। (সূরা আনফাল- ৪৪)
وَاَطِيْعُوا اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَلَا تَنَازَعُوْا فَتَفْشَلُوْا وَتَذْهَبَ رِيْحُكُمْ وَاصْبِرُوْاؕ اِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِيْنَ – وَلَا تَكُوْنُوْا كَالَّذِيْنَ خَرَجُوْا مِنْ دِيَارِهِمْ بَطَرًا وَّرِئَآءَ النَّاسِ وَيَصُدُّوْنَ عَنْ سَبِيْلِ اللهِؕ وَاللهُ بِمَا يَعْمَلُوْنَ مُحِيْطٌ
তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো এবং নিজেদের মধ্যে বিবাদ করো না; নতুবা তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলবে এবং তোমাদের শক্তি দুর্বল হয়ে যাবে। (সুতরাং) তোমরা ধৈর্যধারণ করো; নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথেই রয়েছেন। আর তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা দম্ভভরে ও লোক দেখানোর জন্য স্বীভয় গৃহ হতে বের হয়েছিল এবং লোকদেরকে আল্লাহর পথ হতে বিরত রেখেছিল। আর তারা যা করে নিশ্চয় আল্লাহ তা পরিবেষ্টন করে রয়েছেন। (সূরা আনফাল- ৪৬, ৪৭)
ব্যাখ্যা : নিজেদের আবেগ-অনুভূতি ও কামনা-বাসনাকে সংযত রাখো এবং তাড়াহুড়া করো না। ভীত-সন্ত্রস্ত হওয়া, লোভ-লালসা পোষণ করা এবং অসঙ্গত উৎসাহ-উদ্দীপনা প্রকাশ করা থেকে দূরে থাকো। স্থির মস্তিষ্কে এবং ভারসাম্যপূর্ণ ও যথার্থ বিচক্ষণতা ও ফায়সালা করার শক্তি সহকারে কাজ করে যাও। বিপদাপদ ও সমস্যার সম্মুখীন হলেও যেন তোমাদের পা না টলে। উত্তেজনাকর পরিস্থিতি দেখা দিলে ক্রোধ ও ক্ষোভের তরঙ্গে ভেসে গিয়ে তোমরা যেন কোন অর্থহীন কাজ করে না বস। বিপদের আক্রমণ চলতে থাকলে এবং অবস্থা সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে মোড় নিয়েছে দেখতে পেলে মানসিক অস্থিরতার কারণে তোমাদের চেতনাশক্তি যেন বিক্ষিপ্ত না হয়ে পড়ে। উদ্দেশ্য সফল হওয়ার আনন্দে অধীর হয়ে তোমাদের সংকল্প যেন তাড়াহুড়ার শিকার না হয়ে পড়ে। আল্লাহ বলছেন, এসব দিক দিয়ে যারা ধৈর্যশীল হবে তারাই আমার সাহায্য ও সমর্থন পাবে।
অস্ত্র প্রস্তুত রাখার নির্দেশ :
وَاَعِدُّوْا لَهُمْ مَّا اسْتَطَعْتُمْ مِّنْ قُوَّةٍ وَّمِنْ رِّبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُوْنَ بِهٖ عَدُوُّ اللهِ وَعَدُوَّكُمْ وَاٰخَرِيْنَ مِنْ دُوْنِهِمْۚ لَا تَعْلَمُوْنَهُمُۚ اَللهُ يَعْلَمُهُمْؕ وَمَا تُنْفِقُوْا مِنْ شَيْءٍ فِي ْسَبِيْلِ اللهِ يُوَفَّ اِلَيْكُمْ وَاَنْتُمْ لَا تُظْلَمُوْنَ
তোমরা তাদের মুকাবিলা করার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ববাহিনী প্রস্তুত রাখবে, তা দ্বারা তোমরা ভীত-সন্ত্রস্ত করবে আল্লাহর শত্রু, তোমাদের শত্রু এবং অন্যান্য এমন সম্প্রদায়কে, যাদের সম্পর্কে তোমরা অবগত নও, কিন্তু আল্লাহ তাদের সম্পর্কে অবগত। আল্লাহর পথে তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে তার পূর্ণ প্রতিদান তোমাদেরকে দেয়া হবে এবং (এতে) তোমাদের প্রতি কোন যুলুম করা হবে না। (সূরা আনফাল- ৬০)
ব্যাখ্যা : এর অর্থ হচ্ছে, তোমাদের কাছে যুদ্ধোপকরণ ও একটি স্থায়ী সেনাবাহিনী সর্বক্ষণ তৈরি থাকতে হবে। তাহলে প্রয়োজনের সময় সঙ্গে সঙ্গেই সামরিক পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হবে। এমন যেন না হয়, বিপদ মাথার উপর এসে পড়ার পর হতবুদ্ধি হয়ে তাড়াতাড়ি স্বেচ্ছাসেবক, অস্ত্রশস্ত্র ও অন্যান্য রসদপত্র যোগাড় করার চেষ্টা করা হবে এবং এভাবে প্রস্তুতিপর্ব সম্পন্ন হতে না হতেই শত্রুপক্ষ তার কাজ শেষ করে চলে যাবে।
মুসলিমদেরকে সাহস প্রদান :
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ حَرِّضِ الْمُؤْمِنِيْنَ عَلَى الْقِتَالِ
হে নবী! মুমিনদেরকে যুদ্ধের জন্য উদ্বুদ্ধ করো। (সূরা আনফাল- ৬৫)
কুরাইশ সেনাদের উপর বিজয় দানের ওয়াদা :
وَاِذْ يَعِدُكُمُ اللهُ اِحْدَى الطَّآئِفَتَيْنِ اَنَّهَا لَكُمْ
স্মরণ করো, যখন আল্লাহ তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেন যে, দু’টি দলের একটি দল তোমাদের আয়ত্তাধীন হবে। (সূরা আনফাল- ৭)
ব্যাখ্যা : এখানে দু’টি দলের একটি হলো, কুরাইশদের বাণিজ্য কাফেলা, যা কুরাইশদের জন্য প্রচুর ধনসম্পদ ও অস্ত্র-সস্ত্র বহন করে নিয়ে যাচ্ছিল। আর এসব সম্পদের সাথে কুরাইশদের প্রায় সকলেই জড়িত ছিল। দ্বিতীয় দলটি হচ্ছে, কুরাইশদের ঐ বাণিজ্য কাফেলাকে মুসলিমদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আগত সৈন্যবাহিনী, যাদের সাথে বদর যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।
কিছু মুমিনের অনিচ্ছা সত্ত্বেও নবী ﷺ বের হলেন :
كَمَاۤ اَخْرَجَكَ رَبُّكَ مِنْ ۢبَيْتِكَ بِالْحَقِّ۪ وَاِنَّ فَرِيْقًا مِّنَ الْمُؤْمِنِيْنَ لَكَارِهُوْنَ
এটা এরূপ যে, তোমার প্রতিপালক তোমাকে ন্যায়ভাবে তোমার গৃহ হতে বের করেছিলেন; অথচ মুমিনদের একটি দল এটা পছন্দ করেনি। (সূরা আনফাল- ৫)
স্বপ্নে কাফির সৈন্যদেরকে কম দেখানো হয় :
اِذْ يُرِيْكَهُمُ اللهُ فِيْ مَنَامِكَ قَلِيْلًاؕ وَلَوْ اَرَاكَهُمْ كَثِيْرًا لَّفَشِلْتُمْ وَلَتَنَازَعْتُمْ فِى الْاَمْرِ وَلٰكِنَّ اللهَ سَلَّمَؕ اِنَّهٗ عَلِيْمٌ ۢبِذَاتِ الصُّدُوْر
স্মরণ করো, যখন আল্লাহ তোমাকে স্বপ্নে দেখিয়েছিলেন যে, তারা সংখ্যায় অল্প। যদি তোমাকে দেখাতেন যে, তারা সংখ্যায় অধিক, তবে তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলতে এবং এ বিষয়ে নিজেদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করতে। কিন্তু আল্লাহ তোমাদেরকে রক্ষা করেছিলেন; নিশ্চয় তিনি অন্তরে যা আছে সে সম্বন্ধে বিশেষভাবে অবহিত। (সূরা আনফাল- ৪৩)
ব্যাখ্যা : এটা এমন এক সময়ের কথা, যখন নবী ﷺ মুসলিমদের নিয়ে মদিনা থেকে বের হচ্ছিলেন অথবা পথে কোন মনযিলে অবস্থান করছিলেন। আর তখনও কাফিরদের যথার্থ সৈন্যসংখ্যা জানা যায়নি। এ সময় নবী ﷺ স্বপ্নে কাফিরদের সেনাবাহিনী দেখলেন। তাঁর সামনে যে দৃশ্যপট পেশ করা হয়, তাতে শত্রু সেনাদের সংখ্যা খুব বেশি নয় বলে তিনি অনুমান করতে পারলেন। এ স্বপ্নের বিবরণ তিনি মুসলিমদেরকে শুনালেন। এতে মুসলিমদের সাহস আরো বেড়ে গেল এবং তারা তাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখল।
কাফিরদের চোখেও মুসলিম সৈন্যসংখ্যা কম দেখানো হয় :
وَاِذْ يُرِيْكُمُوْهُمْ اِذِ الْتَقَيْتُمْ فِۤيْ اَعْيُنِكُمْ قَلِيْلًا وَّيُقَلِّلُكُمْ فِۤيْ اَعْيُنِهِمْ لِيَقْضِيَ اللهُ اَمْرًا كَانَ مَفْعُوْلًا وَّاِلَى اللهِ تُرْجَعُ الْاُمُوْرُ
স্মরণ করো, যখন তোমরা পরস্পরের সম্মুখীন হয়েছিলে তখন তিনি তাদেরকে তোমাদের দৃষ্টিতে স্বল্প সংখ্যক দেখিয়েছিলেন এবং তোমাদেরকেও তাদের দৃষ্টিতে স্বল্প সংখ্যক দেখিয়েছিলেন, যাতে করে যা ঘটার ছিল তা আল্লাহ সম্পন্ন করেন। মূলত সমস্ত বিষয় আল্লাহর দিকেই প্রত্যাবর্তিত হয়। (সূরা আনফাল- ৪৪)
এ যুদ্ধে আল্লাহ মুসলিমদেরকে ব্যাপক সাহায্য করেন :
وَلَقَدْ نَصَرَكُمُ اللهُ بِبَدْرٍ وَّاَنْتُمْ اَذِلَّةٌۚ فَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে বদরে সাহায্য করেছিলেন যখন তোমরা দুর্বল ছিলে। অতএব আল্লাহকে ভয় করো, যাতে করে তোমরা কৃতজ্ঞ হতে পার। (সূরা আলে ইমরান- ১২৩)
মুসলিমগণ ভালো জায়গায় অবস্থান নেন :
اِذْ اَنْتُمْ بِالْعُدْوَةِ الدُّنْيَا وَهُمْ بِالْعُدْوَةِ الْقُصْوٰى وَالرَّكْبُ اَسْفَلَ مِنْكُمْ وَلَوْ تَوَاعَدْتُّمْ لَاخْتَلَفْتُمْ فِى الْمِيْعَادِ وَلٰكِنْ لِّيَقْضِيَ اللهُ اَمْرًا كَانَ مَفْعُوْلًا
স্মরণ করো, যখন তোমরা ছিলে উপত্যকার নিকট প্রান্তে এবং তারা ছিল দূর প্রান্তে; আর উষ্ট্রারোহী দল ছিল তোমাদের চেয়ে নিচুভূমিতে। (এমতাবস্থায়) যদি তোমরা পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ সম্পর্কে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চাইতে, তবে এ সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটত। কিন্তু যা ঘটার ছিল, আল্লাহ তা সম্পন্ন করলেন। (সূরা আনফাল- ৪২)
আল্লাহ বৃষ্টির মাধ্যমে মুসলিমদের জন্য অনুকূল পরিবেশ দান করেন :
اِذْ يُغَشِّيْكُمُ النُّعَاسَ اَمَنَةً مِّنْهُ وَيُنَزِّلُ عَلَيْكُمْ مِّنَ السَّمَآءِ مَآءً لِّيُطَهِّرَكُمْ بِهٖ وَيُذْهِبَ عَنْكُمْ رِجْزَ الشَّيْطَانِ وَلِيَرْبِطَ عَلٰى قُلُوْبِكُمْ وَيُثَبِّتَ بِهِ الْاَقْدَامَ
স্মরণ করো, তিনি তাঁর পক্ষ হতে স্বস্তির জন্য তোমাদেরকে তন্দ্রাচ্ছন্ন করেন এবং আকাশ হতে তোমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করেন; যেন তোমরা এর দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করতে পার, তোমাদের (অন্তর) হতে শয়তানের কুমন্ত্রণা অপসারণ করতে পার, তোমাদের হৃদয়ের মনোবল সুদৃঢ় করতে পার এবং (যুদ্ধের ময়দানে) নিজেদের পা স্থির রাখতে পার। (সূরা আনফাল- ১১)
ব্যাখ্যা : যে রাতটি শেষ হওয়ার পরের দিন সকালে বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, এটি ছিল সেই রাতের ঘটনা। এ বৃষ্টির সুফল ছিল তিনটি। তা হলো-
১. মুসলিমরা বিপুল পরিমাণ পানি পেয়ে গিয়েছিল। ফলে তারা সঙ্গে সঙ্গেই জলাধার তৈরি করে পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছিল।
২. মুসলিমরা উপত্যকার ওপরের দিকে অবস্থান করছিল। কাজেই বৃষ্টির ফলে বালি জমাট বেঁধে যথেষ্ট শক্ত হয়ে গিয়েছিল। তারপর দিনে মুসলিমদের জন্য বলিষ্ঠভাবে চলাফেরা করা সহজ হয়েছিল।
৩. কাফিরদের সেনা দল ছিল নিচের দিকে। বৃষ্টির পানি সেখানে জমে গিয়ে কাঁদা হয়ে গিয়েছিল। ফলে সেখানে হাঁটতে গেলেই পা দেবে যাচ্ছিল। অত্র আয়াতে মুসলিমদের মধ্যে প্রথম দিকে যে ভীতিকর অবস্থা বিরাজমান ছিল, তাকেই শয়তানের ছুঁড়ে দেয়া নাপাকী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
আল্লাহ ফেরেশতা পাঠিয়ে সাহায্য করলেন :
اِذْ تَسْتَغِيْثُوْنَ رَبَّكُمْ فَاسْتَجَابَ لَكُمْ اَنِّيْ مُمِدُّكُمْ بِاَلْفٍ مِّنَ الْمَلَآئِكَةِ مُرْدِفِيْنَ – وَمَا جَعَلَهُ اللهُ اِلَّا بُشْرٰى وَلِتَطْمَئِنَّ بِهٖ قُلُوْبُكُمْۚ وَمَا النَّصْرُ اِلَّا مِنْ عِنْدِ اللهِ اِنَّ اللهَ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
স্মরণ করো, যখন তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করেছিলে, তখন তিনি তোমাদেরকে জবাব দিয়েছিলেন, ‘আমি তোমাদেরকে সাহায্য করব এক হাজার ফেরেশতা দ্বারা, যারা একের পর এক আসবে।’ আল্লাহ এটা করেন কেবল শুভ সংবাদ দেয়ার জন্য এবং এ উদ্দেশ্যে যে, যাতে তোমাদের চিত্ত প্রশান্তি লাভ করে। (জেনে রেখো) সাহায্য শুধু আল্লাহর নিকট হতেই আসে; নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা আনফাল- ৯, ১০)
اِذْ يُوْحِيْ رَبُّكَ اِلَى الْمَلَآئِكَةِ اَنِّيْ مَعَكُمْ فَثَبِّتُوا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاؕ سَأُلْقِيْ فِيْ قُلُوْبِ الَّذِيْنَ كَفَرُوا الرُّعْبَ فَاضْرِبُوْا فَوْقَ الْاَعْنَاقِ وَاضْرِبُوْا مِنْهُمْ كُلَّ بَنَانٍ
স্মরণ করো, যখন তোমাদের প্রতিপালক ফেরেশতাদের প্রতি এ ওহী করেন যে, আমি তোমাদের সাথে আছি, সুতরাং মুমিনদেরকে অবিচল রাখো। যারা কুফরী করে আমি তাদের হৃদয়ে ভীতি সঞ্চার করব; সুতরাং তোমরা আঘাত করো তাদের কাঁধে, আর আঘাত করো তাদের প্রত্যেক আঙ্গুলের অগ্রভাগে।
(সূরা আনফাল- ১২)
মুসলিমদেরকে অটল থাকার নির্দেশ :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا لَقِيْتُمْ فِئَةً فَاثْبُتُوْا وَاذْكُرُوا اللهَ كَثِيْرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
হে মুমিনগণ! যখন তোমরা কোন দলের সম্মুখীন হবে, তখন অবিচল থাকবে এবং আল্লাহকে অধিক হারে স্মরণ করবে, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সূরা আনফাল- ৪৫)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا لَقِيْتُمُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا زَحْفًا فَلَا تُوَلُّوْهُمُ الْاَدْبَارَ
হে মুমিনগণ! যখন তোমরা কাফির বাহিনীর সম্মুখীন হবে, তখন তাদের পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে না। (সূরা আনফাল- ১৫)
ব্যাখ্যা : শত্রুদের প্রবল চাপের মুখে নিজেদের পেছনের কেন্দ্রে ফিরে আসা অথবা নিজেদেরই সেনাদলের অন্য কোন অংশের সাথে যোগ দেয়ার জন্য পেছনে আসা নাজায়েয নয়। তবে কাপুরুষতা ও পরাজিত মানসিকতার কারণে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ছত্রভংগ হয়ে পালানো হারাম। কারণ এ ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের তুলনায় মানুষের প্রাণটাই তার কাছে বেশি প্রিয় হয়ে ওঠে।
وَلَقَدْ نَصَرَكُمُ اللهُ بِبَدْرٍ وَّاَنْتُمْ اَذِلَّةٌۚ فَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে বদরে সাহায্য করেছিলেন যখন তোমরা দুর্বল ছিলে। অতএব আল্লাহকে ভয় করো, যাতে করে তোমরা কৃতজ্ঞ হতে পার। (সূরা আলে ইমরান- ১২৩)
মুসলিমগণ ভালো জায়গায় অবস্থান নেন :
اِذْ اَنْتُمْ بِالْعُدْوَةِ الدُّنْيَا وَهُمْ بِالْعُدْوَةِ الْقُصْوٰى وَالرَّكْبُ اَسْفَلَ مِنْكُمْ وَلَوْ تَوَاعَدْتُّمْ لَاخْتَلَفْتُمْ فِى الْمِيْعَادِ وَلٰكِنْ لِّيَقْضِيَ اللهُ اَمْرًا كَانَ مَفْعُوْلًا
স্মরণ করো, যখন তোমরা ছিলে উপত্যকার নিকট প্রান্তে এবং তারা ছিল দূর প্রান্তে; আর উষ্ট্রারোহী দল ছিল তোমাদের চেয়ে নিচুভূমিতে। (এমতাবস্থায়) যদি তোমরা পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ সম্পর্কে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চাইতে, তবে এ সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটত। কিন্তু যা ঘটার ছিল, আল্লাহ তা সম্পন্ন করলেন। (সূরা আনফাল- ৪২)
আল্লাহ বৃষ্টির মাধ্যমে মুসলিমদের জন্য অনুকূল পরিবেশ দান করেন :
اِذْ يُغَشِّيْكُمُ النُّعَاسَ اَمَنَةً مِّنْهُ وَيُنَزِّلُ عَلَيْكُمْ مِّنَ السَّمَآءِ مَآءً لِّيُطَهِّرَكُمْ بِهٖ وَيُذْهِبَ عَنْكُمْ رِجْزَ الشَّيْطَانِ وَلِيَرْبِطَ عَلٰى قُلُوْبِكُمْ وَيُثَبِّتَ بِهِ الْاَقْدَامَ
স্মরণ করো, তিনি তাঁর পক্ষ হতে স্বস্তির জন্য তোমাদেরকে তন্দ্রাচ্ছন্ন করেন এবং আকাশ হতে তোমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করেন; যেন তোমরা এর দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করতে পার, তোমাদের (অন্তর) হতে শয়তানের কুমন্ত্রণা অপসারণ করতে পার, তোমাদের হৃদয়ের মনোবল সুদৃঢ় করতে পার এবং (যুদ্ধের ময়দানে) নিজেদের পা স্থির রাখতে পার। (সূরা আনফাল- ১১)
ব্যাখ্যা : যে রাতটি শেষ হওয়ার পরের দিন সকালে বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, এটি ছিল সেই রাতের ঘটনা। এ বৃষ্টির সুফল ছিল তিনটি। তা হলো-
১. মুসলিমরা বিপুল পরিমাণ পানি পেয়ে গিয়েছিল। ফলে তারা সঙ্গে সঙ্গেই জলাধার তৈরি করে পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছিল।
২. মুসলিমরা উপত্যকার ওপরের দিকে অবস্থান করছিল। কাজেই বৃষ্টির ফলে বালি জমাট বেঁধে যথেষ্ট শক্ত হয়ে গিয়েছিল। তারপর দিনে মুসলিমদের জন্য বলিষ্ঠভাবে চলাফেরা করা সহজ হয়েছিল।
৩. কাফিরদের সেনা দল ছিল নিচের দিকে। বৃষ্টির পানি সেখানে জমে গিয়ে কাঁদা হয়ে গিয়েছিল। ফলে সেখানে হাঁটতে গেলেই পা দেবে যাচ্ছিল। অত্র আয়াতে মুসলিমদের মধ্যে প্রথম দিকে যে ভীতিকর অবস্থা বিরাজমান ছিল, তাকেই শয়তানের ছুঁড়ে দেয়া নাপাকী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
আল্লাহ ফেরেশতা পাঠিয়ে সাহায্য করলেন :
اِذْ تَسْتَغِيْثُوْنَ رَبَّكُمْ فَاسْتَجَابَ لَكُمْ اَنِّيْ مُمِدُّكُمْ بِاَلْفٍ مِّنَ الْمَلَآئِكَةِ مُرْدِفِيْنَ – وَمَا جَعَلَهُ اللهُ اِلَّا بُشْرٰى وَلِتَطْمَئِنَّ بِهٖ قُلُوْبُكُمْۚ وَمَا النَّصْرُ اِلَّا مِنْ عِنْدِ اللهِ اِنَّ اللهَ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
স্মরণ করো, যখন তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করেছিলে, তখন তিনি তোমাদেরকে জবাব দিয়েছিলেন, ‘আমি তোমাদেরকে সাহায্য করব এক হাজার ফেরেশতা দ্বারা, যারা একের পর এক আসবে।’ আল্লাহ এটা করেন কেবল শুভ সংবাদ দেয়ার জন্য এবং এ উদ্দেশ্যে যে, যাতে তোমাদের চিত্ত প্রশান্তি লাভ করে। (জেনে রেখো) সাহায্য শুধু আল্লাহর নিকট হতেই আসে; নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা আনফাল- ৯, ১০)
اِذْ يُوْحِيْ رَبُّكَ اِلَى الْمَلَآئِكَةِ اَنِّيْ مَعَكُمْ فَثَبِّتُوا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاؕ سَأُلْقِيْ فِيْ قُلُوْبِ الَّذِيْنَ كَفَرُوا الرُّعْبَ فَاضْرِبُوْا فَوْقَ الْاَعْنَاقِ وَاضْرِبُوْا مِنْهُمْ كُلَّ بَنَانٍ
স্মরণ করো, যখন তোমাদের প্রতিপালক ফেরেশতাদের প্রতি এ ওহী করেন যে, আমি তোমাদের সাথে আছি, সুতরাং মুমিনদেরকে অবিচল রাখো। যারা কুফরী করে আমি তাদের হৃদয়ে ভীতি সঞ্চার করব; সুতরাং তোমরা আঘাত করো তাদের কাঁধে, আর আঘাত করো তাদের প্রত্যেক আঙ্গুলের অগ্রভাগে।
(সূরা আনফাল- ১২)
মুসলিমদেরকে অটল থাকার নির্দেশ :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا لَقِيْتُمْ فِئَةً فَاثْبُتُوْا وَاذْكُرُوا اللهَ كَثِيْرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
হে মুমিনগণ! যখন তোমরা কোন দলের সম্মুখীন হবে, তখন অবিচল থাকবে এবং আল্লাহকে অধিক হারে স্মরণ করবে, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সূরা আনফাল- ৪৫)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا لَقِيْتُمُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا زَحْفًا فَلَا تُوَلُّوْهُمُ الْاَدْبَارَ
হে মুমিনগণ! যখন তোমরা কাফির বাহিনীর সম্মুখীন হবে, তখন তাদের পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে না। (সূরা আনফাল- ১৫)
ব্যাখ্যা : শত্রুদের প্রবল চাপের মুখে নিজেদের পেছনের কেন্দ্রে ফিরে আসা অথবা নিজেদেরই সেনাদলের অন্য কোন অংশের সাথে যোগ দেয়ার জন্য পেছনে আসা নাজায়েয নয়। তবে কাপুরুষতা ও পরাজিত মানসিকতার কারণে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ছত্রভংগ হয়ে পালানো হারাম। কারণ এ ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের তুলনায় মানুষের প্রাণটাই তার কাছে বেশি প্রিয় হয়ে ওঠে।
এ যুদ্ধে মুসলিমরা বিজয় লাভ করে :
وَاذْكُرُوْاۤ اِذْ اَنْتُمْ قَلِيْلٌ مُّسْتَضْعَفُوْنَ فِى الْاَرْضِ تَخَافُوْنَ اَنْ يَّتَخَطَّفَكُمُ النَّاسُ فَاٰوَاكُمْ وَاَيَّدَكُمْ بِنَصْرِهٖ وَرَزَقَكُمْ مِّنَ الطَّيِّبَاتِ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
স্মরণ করো, তোমরা ছিলে স্বল্প সংখ্যক, পৃথিবীতে তোমরা দুর্বলরূপে পরিগণিত হতে। তোমরা আশঙ্কা করতে যে, লোকেরা তোমাদেরকে আকস্মিকভাবে ধরে নিয়ে যাবে। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে আশ্রয় দেন, স্বীয় সাহায্য দ্বারা তোমাদেরকে শক্তিশালী করেন এবং তোমাদেরকে উত্তম বস্তুসমূহ জীবিকা হিসেবে প্রদান করেন, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পার। (সূরা আনফাল- ২৬)
বিজয়ের আসল অবদান আল্লাহর :
فَلَمْ تَقْتُلُوْهُمْ وَلٰكِنَّ اللهَ قَتَلَهُمْؕ وَمَا رَمَيْتَ اِذْ رَمَيْتَ وَلٰكِنَّ اللهَ رَمٰى
তোমরা তাদেরকে হত্যা করনি, বরং আল্লাহই তাদেরকে হত্যা করেছেন। যখন তুমি (এক মুঠো বালি) নিক্ষেপ করেছিলে, তখন মূলত তুমি নিক্ষেপ করনি; বরং আল্লাহই নিক্ষেপ করেছিলেন। (সূরা আনফাল- ১৭)
ব্যাখ্যা : বদর যুদ্ধে যখন মুসলিম ও কাফিরদের সেনাদল ময়দানে পরস্পরের মুখোমুখি হলো, তখন নবী ﷺ এক মুঠো বালি হাতে নিয়ে شَاهَتِ الْوُجُوْهُ (শত্রুদলের চেহারাগুলো বিগড়ে যাক) বলে কাফিরদের দিকে ছুড়ে দেন। এই সুযোগে তাঁর ইঙ্গিতে মুসলিমরা কাফিরদের উপর আক্রমণ করে। এখানে এ ঘটনাটির দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
কাফিরদের সূচনীয় পরাজয় :
اِنْ تَسْتَفْتِحُوْا فَقَدْ جَآءَكُمُ الْفَتْحُ ۚ وَاِنْ تَنْتَهُوْا فَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْۚ وَاِنْ تَعُوْدُوْا نَعُدْۚ وَلَنْ تُغْنِيَ عَنْكُمْ فِئَتُكُمْ شَيْئًا وَّلَوْ كَثُرَتْ وَاَنَّ اللهَ مَعَ الْمُؤْمِنِيْنَ
তোমরা ফায়সালা চেয়েছিলে, অতএব তোমাদের নিকট তা এসেছে, এবার যদি তোমরা বিরত হও তবে তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর যদি তোমরা পুনরায় তা কর তবে আমিও পুনরায় শাস্তি দেব এবং তোমাদের দল সংখ্যায় অধিক হলেও তা তোমাদের কোন কাজে আসবে না। নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের সাথে রয়েছেন। (সূরা আনফাল- ১৯)
ব্যাখ্যা : মক্কা থেকে রওয়ানা হওয়ার সময় মুশরিকরা কা‘বা শরীফের পর্দা দু’হাতে আঁকড়ে ধরে দু‘আ করেছিল যে, হে আল্লাহ! উভয় দলের মধ্যে যে দলটি ভালো তাকে বিজয় দান করো। বিশেষ করে আবু জাহেল বলেছিল, হে আল্লাহ! আমাদের মধ্যে যে দলটি সৎপথে আছে, তাকে বিজয় দান করো এবং যে দলটি যুলুমের পথ অবলম্বন করেছে, তাকে লাঞ্ছিত করো। ফলে আল্লাহ তাদের নিজ মুখে উচ্চারিত আবদার অক্ষরে অক্ষরে পূর্ণ করলেন এবং দু’টি দলের মধ্যে কোনটি ভালো ও সত্যপন্থী তার মীমাংসা করে দেন।
কাফিরদের পরাজয়ের কারণ :
ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ شَآقُّوا اللهَ وَرَسُوْلَهٗۚ وَمَنْ يُّشَاقِقِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ فَاِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
এটা এজন্য যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে, (সে জেনে রাখুক) আল্লাহ শাস্তিদানে খুবই কঠোর। (সূরা আনফাল- ১৩)
কাফিরদের সাথে শয়তানের প্রতারণা :
وَاِذْ زَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ اَعْمَالَهُمْ وَقَالَ لَا غَالِبَ لَكُمُ الْيَوْمَ مِنَ النَّاسِ وَاِنِّيْ جَارٌ لَّكُمْۚ فَلَمَّا تَرَآءَتِ الْفِئَتَانِ نَكَصَ عَلٰى عَقِبَيْهِ وَقَالَ اِنِّيْ بَرِيْٓءٌ مِّنْكُمْ اِنِّۤيْ اَرٰى مَا لَا تَرَوْنَ اِنِّۤيْ اَخَافُ اللهَؕ وَاللهُ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
স্মরণ করো, শয়তান তাদের কার্যাবলি তাদের দৃষ্টিতে শোভন করে দিয়েছিল এবং বলেছিল, আজ মানুষের মধ্যে কেউই তোমাদের উপর বিজয়ী হতে পারবে না, আমি তোমাদের পাশেই থাকব। অতঃপর যখন দু’দল পরস্পরের মুখোমুখি হলো, তখন সে পেছনে সরে গেল এবং বলল, তোমাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক রইল না, তোমরা যা দেখতে পাও না আমি তা দেখি। নিশ্চয় আমি আল্লাহকে ভয় করি, আর আল্লাহ শাস্তিদানে খুবই কঠোর। (সূরা আনফাল- ৪৮)
তাদের অবস্থা ফিরাউনের মতো হয়েছে :
كَدَاْبِ اٰلِ فِرْعَوْنَ وَالَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْؕ كَفَرُوْا بِاٰيَاتِ اللهِ فَاَخَذَهُمُ اللهُ بِذُنُوْبِهِمْؕ اِنَّ اللهَ قَوِيٌّ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
(তাদের অবস্থা) ফিরাউনের স্বজন ও তাদের পূর্ববর্তীদের অভ্যাসের ন্যায়। তারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে প্রত্যাখ্যান করে; সুতরাং আল্লাহ তাদের পাপের জন্য তাদেরকে শাস্তি দেন। নিশ্চয় আল্লাহ মহাশক্তিমান এবং শাস্তিদানে খুবই কঠোর। (সূরা আনফাল- ৫২)
মুনাফিকদের মন্তব্য :
اِذْ يَقُوْلُ الْمُنَافِقُوْنَ وَالَّذِيْنَ فِيْ قُلُوْبِهِمْ مَّرَضٌ غَرَّ هٰۤؤُلَآءِ دِيْنُهُمْ
স্মরণ করো, যখন মুনাফিকরা ও যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে তারা বলে, এ লোকগুলোকে তাদের দ্বীন ধোঁকায় ফেলে দিয়েছে। (সূরা আনফাল- ৪৯)
ব্যাখ্যা : মুনাফিক এবং আল্লাহর প্রতি গাফলতির রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিবর্গ যুদ্ধের সাজ-সরঞ্জামহীন মুষ্টিমেয় লোকের একটি দলকে কুরাইশদের মতো বিরাট শক্তির বিরুদ্ধে যাত্রা করতে দেখে নিজেদের মধ্যে এ মর্মে বলাবলি করছিল যে, এরা আসলে নিজেদের ধর্মীয় আবেগে উন্মাদ হয়ে গেছে। এ যুদ্ধে এদের ধ্বংস অনিবার্য। এ নবী এদের কানে এমন মন্ত্র ফুঁকে দিয়েছেন, যার ফলে এরা বুদ্ধিভ্রষ্ট হয়ে গেছে এবং সামনে মৃত্যু দেখেও তার মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ছে।
এ যুদ্ধে অনেক শিক্ষা রয়েছে :
قَدْ كَانَ لَكُمْ اٰيَةٌ فِيْ فِئَتَيْنِ الْتَقَتَاؕ فِئَةٌ تُقَاتِلُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَاُخْرٰى كَافِرَةٌ يَّرَوْنَهُمْ مِّثْلَيْهِمْ رَاْيَ الْعَيْنِؕ وَاللهُ يُؤَيِّدُ بِنَصْرِهٖ مَنْ يَّشَآءُؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَعِبْرَةً لِّاُولِى الْاَبْصَارِ
পরস্পর মুখোমুখি হওয়া দু’টি দলের মধ্যে তোমাদের জন্য নিদর্শন রয়েছে। একটি দল আল্লাহর পথে যুদ্ধ করেছিল, আর অপর দল ছিল কাফির। তারা তাদেরকে বাহ্যিক দৃষ্টিতে দ্বিগুণ দেখেছিল। আল্লাহ যাকে চান স্বীয় সাহায্যের দ্বারা তাকে সাহায্য করেন। নিশ্চয় এর মধ্যে জ্ঞানীদের জন্য রয়েছে শিক্ষা। (সূরা আলে ইমরান- ১৩)
যুদ্ধবন্দীদের ব্যাপারে নির্দেশ :
مَا كَانَ لِنَبِيٍّ اَنْ يَّكُوْنَ لَهٗۤ اَسْرٰى حَتّٰى يُثْخِنَ فِى الْاَرْضِ تُرِيْدُوْنَ عَرَضَ الدُّنْيَا وَاللهُ يُرِيْدُ الْاٰخِرَةَ وَاللهُ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
(কোন) দেশে শত্রুকে ব্যাপকভাবে পরাভূত না করা পর্যন্ত বন্দী রাখা কোন নবীর জন্য সঙ্গত নয়। তোমরা কামনা কর পার্থিব সম্পদ এবং আল্লাহ পরকালের কল্যাণ চান; আল্লাহ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা আনফাল- ৬৭, ৬৮)
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِّمَنْ فِۤيْ اَيْدِيْكُمْ مِّنَ الْاَسْرٰۤى اِنْ يَّعْلَمِ اللهُ فِيْ قُلُوْبِكُمْ خَيْرًا يُّؤْتِكُمْ خَيْرًا مِّمَاۤ اُخِذَ مِنْكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْؕ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
হে নবী! তোমাদের করায়ত্ত যুদ্ধবন্দীদেরকে বলো, আল্লাহ যদি তোমাদের হৃদয়ে ভালো কিছু দেখেন, তবে তোমাদের নিকট হতে যা নেয়া হয়েছে তার চেয়ে উত্তম কিছু তিনি তোমাদেরকে দান করবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন। (কেননা) আল্লাহ অতিব ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা আনফাল- ৭০)
গনিমতের মালকে হালাল করে দেয়া হয় :
فَكُلُوْا مِمَّا غَنِمْتُمْ حَلَالًا طَيِّبًاؗ وَاتَّقُوا اللهَؕ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
তোমরা যুদ্ধে যা লাভ করেছ তা বৈধ ও উত্তম হিসেবে ভোগ করো এবং আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা আনফাল- ৬৯)
গনিমত বণ্টনের পদ্ধতি :
يَسْاَلُوْنَكَ عَنِ الْاَنْفَالِؕ قُلِ الْاَنْفَالُ لِلّٰهِ وَالرَّسُوْلِ
লোকেরা তোমাকে যুদ্ধলব্ধ সম্পদ সম্বন্ধে প্রশ্ন করে। বলো, যুদ্ধলব্ধ সম্পদ আল্লাহ এবং তার রাসূলের।
(সূরা আনফাল- ১)
وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّمَا غَنِمْتُمْ مِّنْ شَيْءٍ فَاَنَّ لِلّٰهِ خُمُسَهٗ وَلِلرَّسُوْلِ وَلِذِى الْقُرْبٰى وَالْيَتَامٰى وَالْمَسَاكِيْنِ وَابْنِ السَّبِيْلِ اِنْ كُنْتُمْ اٰمَنْتُمْ بِاللهِ وَمَاۤ اَنْزَلْنَا عَلٰى عَبْدِنَا يَوْمَ الْفُرْقَانِ يَوْمَ الْتَقَى الْجَمْعَانِؕ وَاللهُ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
(হে মুমিনগণ!) জেনে রেখো, যুদ্ধে তোমরা যা লাভ কর তার এক-পঞ্চমাংশ আল্লাহ ও (তাঁর) রাসূলের জন্য, (রাসূলের) স্বজনদের জন্য, ইয়াতীমদের জন্য, মিসকীনদের জন্য এবং পথচারীদের জন্য, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখ এবং ঐ মীমাংসার দিনের প্রতি ঈমান রাখো, যেদিন তোমরা দু’দল পরস্পরের সম্মুখীন হয়েছিলে এবং সেদিন আমি আমার বান্দার প্রতি যা অবতরণ করেছিলাম তাতে ঈমান রাখো। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা আনফাল- ৪১)
ব্যাখ্যা : যুদ্ধের পর সকল সৈনিকের সবধরনের গনিমতের মাল এনে আমীর বা ইমামের কাছে জমা দিতে হবে। কোন একটি জিনিসও তারা লুকিয়ে রাখতে পারবে না। তারপর এ সম্পদ থেকে পাঁচ ভাগের একভাগ বের করে নিতে হবে। আয়াতে যাদের কথা বলা হয়েছে এ একভাগ দিয়ে তা পূর্ণ করতে হবে। বাকি চার অংশ যারা যুদ্ধে অংশ নিয়েছে তাদের মধ্যে বণ্টন করে দিতে হবে। এ বণ্টনে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অংশ একটিই। এ অংশটিকে আল্লাহর কালিমা উঁচু করা এবং সত্য দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে ব্যয় করাই মূল লক্ষ্য। কাজেই এ আয়াত অনুযায়ী নবী ﷺ সর্বদা যুদ্ধের পর ঘোষণা দিতেন : ‘‘এ গনিমতের সম্পদগুলো তোমাদের জন্যই। এক পঞ্চমাংশ ছাড়া এর মধ্যে আমার নিজের কোন অধিকার নেই। আর এই এক পঞ্চমাংশও তোমাদেরই সামগ্রিক কল্যাণার্থে ব্যয় হয়। কাজেই একটি সুঁই ও একটি সূতা হলেও এনে রেখে দাও। কোন ছোট বা বড় জিনিস লুকিয়ে রেখো না। কারণ এমনটি করা কলঙ্কের ব্যাপার এবং এর পরিণাম জাহান্নাম।’’
وَاذْكُرُوْاۤ اِذْ اَنْتُمْ قَلِيْلٌ مُّسْتَضْعَفُوْنَ فِى الْاَرْضِ تَخَافُوْنَ اَنْ يَّتَخَطَّفَكُمُ النَّاسُ فَاٰوَاكُمْ وَاَيَّدَكُمْ بِنَصْرِهٖ وَرَزَقَكُمْ مِّنَ الطَّيِّبَاتِ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
স্মরণ করো, তোমরা ছিলে স্বল্প সংখ্যক, পৃথিবীতে তোমরা দুর্বলরূপে পরিগণিত হতে। তোমরা আশঙ্কা করতে যে, লোকেরা তোমাদেরকে আকস্মিকভাবে ধরে নিয়ে যাবে। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে আশ্রয় দেন, স্বীয় সাহায্য দ্বারা তোমাদেরকে শক্তিশালী করেন এবং তোমাদেরকে উত্তম বস্তুসমূহ জীবিকা হিসেবে প্রদান করেন, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পার। (সূরা আনফাল- ২৬)
বিজয়ের আসল অবদান আল্লাহর :
فَلَمْ تَقْتُلُوْهُمْ وَلٰكِنَّ اللهَ قَتَلَهُمْؕ وَمَا رَمَيْتَ اِذْ رَمَيْتَ وَلٰكِنَّ اللهَ رَمٰى
তোমরা তাদেরকে হত্যা করনি, বরং আল্লাহই তাদেরকে হত্যা করেছেন। যখন তুমি (এক মুঠো বালি) নিক্ষেপ করেছিলে, তখন মূলত তুমি নিক্ষেপ করনি; বরং আল্লাহই নিক্ষেপ করেছিলেন। (সূরা আনফাল- ১৭)
ব্যাখ্যা : বদর যুদ্ধে যখন মুসলিম ও কাফিরদের সেনাদল ময়দানে পরস্পরের মুখোমুখি হলো, তখন নবী ﷺ এক মুঠো বালি হাতে নিয়ে شَاهَتِ الْوُجُوْهُ (শত্রুদলের চেহারাগুলো বিগড়ে যাক) বলে কাফিরদের দিকে ছুড়ে দেন। এই সুযোগে তাঁর ইঙ্গিতে মুসলিমরা কাফিরদের উপর আক্রমণ করে। এখানে এ ঘটনাটির দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
কাফিরদের সূচনীয় পরাজয় :
اِنْ تَسْتَفْتِحُوْا فَقَدْ جَآءَكُمُ الْفَتْحُ ۚ وَاِنْ تَنْتَهُوْا فَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْۚ وَاِنْ تَعُوْدُوْا نَعُدْۚ وَلَنْ تُغْنِيَ عَنْكُمْ فِئَتُكُمْ شَيْئًا وَّلَوْ كَثُرَتْ وَاَنَّ اللهَ مَعَ الْمُؤْمِنِيْنَ
তোমরা ফায়সালা চেয়েছিলে, অতএব তোমাদের নিকট তা এসেছে, এবার যদি তোমরা বিরত হও তবে তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর যদি তোমরা পুনরায় তা কর তবে আমিও পুনরায় শাস্তি দেব এবং তোমাদের দল সংখ্যায় অধিক হলেও তা তোমাদের কোন কাজে আসবে না। নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের সাথে রয়েছেন। (সূরা আনফাল- ১৯)
ব্যাখ্যা : মক্কা থেকে রওয়ানা হওয়ার সময় মুশরিকরা কা‘বা শরীফের পর্দা দু’হাতে আঁকড়ে ধরে দু‘আ করেছিল যে, হে আল্লাহ! উভয় দলের মধ্যে যে দলটি ভালো তাকে বিজয় দান করো। বিশেষ করে আবু জাহেল বলেছিল, হে আল্লাহ! আমাদের মধ্যে যে দলটি সৎপথে আছে, তাকে বিজয় দান করো এবং যে দলটি যুলুমের পথ অবলম্বন করেছে, তাকে লাঞ্ছিত করো। ফলে আল্লাহ তাদের নিজ মুখে উচ্চারিত আবদার অক্ষরে অক্ষরে পূর্ণ করলেন এবং দু’টি দলের মধ্যে কোনটি ভালো ও সত্যপন্থী তার মীমাংসা করে দেন।
কাফিরদের পরাজয়ের কারণ :
ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ شَآقُّوا اللهَ وَرَسُوْلَهٗۚ وَمَنْ يُّشَاقِقِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ فَاِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
এটা এজন্য যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে, (সে জেনে রাখুক) আল্লাহ শাস্তিদানে খুবই কঠোর। (সূরা আনফাল- ১৩)
কাফিরদের সাথে শয়তানের প্রতারণা :
وَاِذْ زَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ اَعْمَالَهُمْ وَقَالَ لَا غَالِبَ لَكُمُ الْيَوْمَ مِنَ النَّاسِ وَاِنِّيْ جَارٌ لَّكُمْۚ فَلَمَّا تَرَآءَتِ الْفِئَتَانِ نَكَصَ عَلٰى عَقِبَيْهِ وَقَالَ اِنِّيْ بَرِيْٓءٌ مِّنْكُمْ اِنِّۤيْ اَرٰى مَا لَا تَرَوْنَ اِنِّۤيْ اَخَافُ اللهَؕ وَاللهُ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
স্মরণ করো, শয়তান তাদের কার্যাবলি তাদের দৃষ্টিতে শোভন করে দিয়েছিল এবং বলেছিল, আজ মানুষের মধ্যে কেউই তোমাদের উপর বিজয়ী হতে পারবে না, আমি তোমাদের পাশেই থাকব। অতঃপর যখন দু’দল পরস্পরের মুখোমুখি হলো, তখন সে পেছনে সরে গেল এবং বলল, তোমাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক রইল না, তোমরা যা দেখতে পাও না আমি তা দেখি। নিশ্চয় আমি আল্লাহকে ভয় করি, আর আল্লাহ শাস্তিদানে খুবই কঠোর। (সূরা আনফাল- ৪৮)
তাদের অবস্থা ফিরাউনের মতো হয়েছে :
كَدَاْبِ اٰلِ فِرْعَوْنَ وَالَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْؕ كَفَرُوْا بِاٰيَاتِ اللهِ فَاَخَذَهُمُ اللهُ بِذُنُوْبِهِمْؕ اِنَّ اللهَ قَوِيٌّ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
(তাদের অবস্থা) ফিরাউনের স্বজন ও তাদের পূর্ববর্তীদের অভ্যাসের ন্যায়। তারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে প্রত্যাখ্যান করে; সুতরাং আল্লাহ তাদের পাপের জন্য তাদেরকে শাস্তি দেন। নিশ্চয় আল্লাহ মহাশক্তিমান এবং শাস্তিদানে খুবই কঠোর। (সূরা আনফাল- ৫২)
মুনাফিকদের মন্তব্য :
اِذْ يَقُوْلُ الْمُنَافِقُوْنَ وَالَّذِيْنَ فِيْ قُلُوْبِهِمْ مَّرَضٌ غَرَّ هٰۤؤُلَآءِ دِيْنُهُمْ
স্মরণ করো, যখন মুনাফিকরা ও যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে তারা বলে, এ লোকগুলোকে তাদের দ্বীন ধোঁকায় ফেলে দিয়েছে। (সূরা আনফাল- ৪৯)
ব্যাখ্যা : মুনাফিক এবং আল্লাহর প্রতি গাফলতির রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিবর্গ যুদ্ধের সাজ-সরঞ্জামহীন মুষ্টিমেয় লোকের একটি দলকে কুরাইশদের মতো বিরাট শক্তির বিরুদ্ধে যাত্রা করতে দেখে নিজেদের মধ্যে এ মর্মে বলাবলি করছিল যে, এরা আসলে নিজেদের ধর্মীয় আবেগে উন্মাদ হয়ে গেছে। এ যুদ্ধে এদের ধ্বংস অনিবার্য। এ নবী এদের কানে এমন মন্ত্র ফুঁকে দিয়েছেন, যার ফলে এরা বুদ্ধিভ্রষ্ট হয়ে গেছে এবং সামনে মৃত্যু দেখেও তার মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ছে।
এ যুদ্ধে অনেক শিক্ষা রয়েছে :
قَدْ كَانَ لَكُمْ اٰيَةٌ فِيْ فِئَتَيْنِ الْتَقَتَاؕ فِئَةٌ تُقَاتِلُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَاُخْرٰى كَافِرَةٌ يَّرَوْنَهُمْ مِّثْلَيْهِمْ رَاْيَ الْعَيْنِؕ وَاللهُ يُؤَيِّدُ بِنَصْرِهٖ مَنْ يَّشَآءُؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَعِبْرَةً لِّاُولِى الْاَبْصَارِ
পরস্পর মুখোমুখি হওয়া দু’টি দলের মধ্যে তোমাদের জন্য নিদর্শন রয়েছে। একটি দল আল্লাহর পথে যুদ্ধ করেছিল, আর অপর দল ছিল কাফির। তারা তাদেরকে বাহ্যিক দৃষ্টিতে দ্বিগুণ দেখেছিল। আল্লাহ যাকে চান স্বীয় সাহায্যের দ্বারা তাকে সাহায্য করেন। নিশ্চয় এর মধ্যে জ্ঞানীদের জন্য রয়েছে শিক্ষা। (সূরা আলে ইমরান- ১৩)
যুদ্ধবন্দীদের ব্যাপারে নির্দেশ :
مَا كَانَ لِنَبِيٍّ اَنْ يَّكُوْنَ لَهٗۤ اَسْرٰى حَتّٰى يُثْخِنَ فِى الْاَرْضِ تُرِيْدُوْنَ عَرَضَ الدُّنْيَا وَاللهُ يُرِيْدُ الْاٰخِرَةَ وَاللهُ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
(কোন) দেশে শত্রুকে ব্যাপকভাবে পরাভূত না করা পর্যন্ত বন্দী রাখা কোন নবীর জন্য সঙ্গত নয়। তোমরা কামনা কর পার্থিব সম্পদ এবং আল্লাহ পরকালের কল্যাণ চান; আল্লাহ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা আনফাল- ৬৭, ৬৮)
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِّمَنْ فِۤيْ اَيْدِيْكُمْ مِّنَ الْاَسْرٰۤى اِنْ يَّعْلَمِ اللهُ فِيْ قُلُوْبِكُمْ خَيْرًا يُّؤْتِكُمْ خَيْرًا مِّمَاۤ اُخِذَ مِنْكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْؕ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
হে নবী! তোমাদের করায়ত্ত যুদ্ধবন্দীদেরকে বলো, আল্লাহ যদি তোমাদের হৃদয়ে ভালো কিছু দেখেন, তবে তোমাদের নিকট হতে যা নেয়া হয়েছে তার চেয়ে উত্তম কিছু তিনি তোমাদেরকে দান করবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন। (কেননা) আল্লাহ অতিব ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা আনফাল- ৭০)
গনিমতের মালকে হালাল করে দেয়া হয় :
فَكُلُوْا مِمَّا غَنِمْتُمْ حَلَالًا طَيِّبًاؗ وَاتَّقُوا اللهَؕ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
তোমরা যুদ্ধে যা লাভ করেছ তা বৈধ ও উত্তম হিসেবে ভোগ করো এবং আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা আনফাল- ৬৯)
গনিমত বণ্টনের পদ্ধতি :
يَسْاَلُوْنَكَ عَنِ الْاَنْفَالِؕ قُلِ الْاَنْفَالُ لِلّٰهِ وَالرَّسُوْلِ
লোকেরা তোমাকে যুদ্ধলব্ধ সম্পদ সম্বন্ধে প্রশ্ন করে। বলো, যুদ্ধলব্ধ সম্পদ আল্লাহ এবং তার রাসূলের।
(সূরা আনফাল- ১)
وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّمَا غَنِمْتُمْ مِّنْ شَيْءٍ فَاَنَّ لِلّٰهِ خُمُسَهٗ وَلِلرَّسُوْلِ وَلِذِى الْقُرْبٰى وَالْيَتَامٰى وَالْمَسَاكِيْنِ وَابْنِ السَّبِيْلِ اِنْ كُنْتُمْ اٰمَنْتُمْ بِاللهِ وَمَاۤ اَنْزَلْنَا عَلٰى عَبْدِنَا يَوْمَ الْفُرْقَانِ يَوْمَ الْتَقَى الْجَمْعَانِؕ وَاللهُ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
(হে মুমিনগণ!) জেনে রেখো, যুদ্ধে তোমরা যা লাভ কর তার এক-পঞ্চমাংশ আল্লাহ ও (তাঁর) রাসূলের জন্য, (রাসূলের) স্বজনদের জন্য, ইয়াতীমদের জন্য, মিসকীনদের জন্য এবং পথচারীদের জন্য, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখ এবং ঐ মীমাংসার দিনের প্রতি ঈমান রাখো, যেদিন তোমরা দু’দল পরস্পরের সম্মুখীন হয়েছিলে এবং সেদিন আমি আমার বান্দার প্রতি যা অবতরণ করেছিলাম তাতে ঈমান রাখো। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা আনফাল- ৪১)
ব্যাখ্যা : যুদ্ধের পর সকল সৈনিকের সবধরনের গনিমতের মাল এনে আমীর বা ইমামের কাছে জমা দিতে হবে। কোন একটি জিনিসও তারা লুকিয়ে রাখতে পারবে না। তারপর এ সম্পদ থেকে পাঁচ ভাগের একভাগ বের করে নিতে হবে। আয়াতে যাদের কথা বলা হয়েছে এ একভাগ দিয়ে তা পূর্ণ করতে হবে। বাকি চার অংশ যারা যুদ্ধে অংশ নিয়েছে তাদের মধ্যে বণ্টন করে দিতে হবে। এ বণ্টনে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অংশ একটিই। এ অংশটিকে আল্লাহর কালিমা উঁচু করা এবং সত্য দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে ব্যয় করাই মূল লক্ষ্য। কাজেই এ আয়াত অনুযায়ী নবী ﷺ সর্বদা যুদ্ধের পর ঘোষণা দিতেন : ‘‘এ গনিমতের সম্পদগুলো তোমাদের জন্যই। এক পঞ্চমাংশ ছাড়া এর মধ্যে আমার নিজের কোন অধিকার নেই। আর এই এক পঞ্চমাংশও তোমাদেরই সামগ্রিক কল্যাণার্থে ব্যয় হয়। কাজেই একটি সুঁই ও একটি সূতা হলেও এনে রেখে দাও। কোন ছোট বা বড় জিনিস লুকিয়ে রেখো না। কারণ এমনটি করা কলঙ্কের ব্যাপার এবং এর পরিণাম জাহান্নাম।’’
মদিনার বনু কায়নুকা নামক গোত্রটি ছিল ইয়াহুদি সম্প্রদায়ের মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী। বদর যুদ্ধের অব্যাহতির পর সম্প্রদায়ের একজন ইয়াহুদি যুবক জনৈক মুসলিম তরুণীকে বাজারে প্রকাশ্যভাবে অপমান করে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একজন মুসলিম ও একজন ইয়াহুদি নিহত হলে উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রবল উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। মদিনা সনদের শর্ত ভঙ্গ করে ইয়াহুদিরা যুদ্ধের হুমকি দিলে ইয়াহুদি ও মুসলিমদের মধ্যে সংঘর্ষ অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠে। ফলে মুহাম্মাদ ﷺ বনু কায়নুকাকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ অথবা মদিনা ত্যাগ করার আদেশ প্রদান করেন। কিন্তু তারা এর কোনটিই মেনে নিল না। যার কারণে রাসূল ﷺ এর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী ২য় হিজরীর ১৫ শাওয়াল মাসে তাদেরকে অবরুদ্ধ করে ফেলে। আর তারা এভাবে পনের দিন নিজেদের দুর্গে অবরুদ্ধ থাকার পর মুসলিমদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। অতঃপর তাদেরকে মদিনা হতে বের করে দেয়া হয়; তবে তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রতিহিংসামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
বনু কায়নুকা নবী ﷺ এর সাথে কৃত চুক্তি ভঙ্গ করে :
اِنَّ شَرَّ الدَّوَآبِّ عِنْدَ اللهِ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا فَهُمْ لَا يُؤْمِنُوْنَ ু اَلَّذِيْنَ عَاهَدْتَّ مِنْهُمْ ثُمَّ يَنْقُضُوْنَ عَهْدَهُمْ فِيْ كُلِّ مَرَّةٍ وَّهُمْ لَا يَتَّقُوْنَ
আল্লাহর নিকট নিকৃষ্ট জীব তারাই, যারা কুফরী করে এবং ঈমান আনয়ন করে না। তাদের মধ্যে তুমি যাদের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ, তারা প্রত্যেকবার তাদের চুক্তি ভঙ্গ করে এবং তারা সাবধান হয় না। (সূরা আনফাল- ৫৫, ৫৬)
এতে নবী ﷺ কেও চুক্তি ভঙ্গের নির্দেশ দেয়া হয় :
وَاِمَّا تَخَافَنَّ مِنْ قَوْمٍ خِيَانَةً فَانْۢبِذْ اِلَيْهِمْ عَلٰى سَوَآءٍؕ اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْخَآئِنِيْنَ
যদি তুমি কোন সম্প্রদায়ের চুক্তি ভঙ্গের আশঙ্কা কর, তবে তোমার চুক্তিও তুমি যথাযথভাবে বাতিল করবে; নিশ্চয় আল্লাহ চুক্তি ভঙ্গকারীদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা আনফাল- ৫৮)
তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার নির্দেশ দেয়া হয় :
فَاِمَّا تَثْقَفَنَّهُمْ فِى الحَرْبِ فَشَرِّدْ بِهِمْ مَّنْ خَلْفَهُمْ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُوْنَ
যদি তোমরা যুদ্ধে তাদেরকে তোমাদের আয়ত্তে পাও, তবে তাদেরকে তাদের পশ্চাতে যারা আছে তাদের হতে বিচ্ছিন্ন করে এমনভাবে বিধ্বস্ত করবে, যাতে তারা শিক্ষা লাভ করে। (সূরা আনফাল- ৫৭)
অবশেষে তারা মুসলিমদের হাতে পরাজিত হয় :
كَمَثَلِ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ قَرِيْبًا ذَاقُوْا وَبَالَ اَمْرِهِمْۚ وَلَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
এরা তাদের মতো, যারা ইতোপূর্বেই নিজেদের কৃতকর্মের পরিণাম আস্বাদন করেছে। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরা হাশর- ১৫)
বনু কায়নুকা নবী ﷺ এর সাথে কৃত চুক্তি ভঙ্গ করে :
اِنَّ شَرَّ الدَّوَآبِّ عِنْدَ اللهِ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا فَهُمْ لَا يُؤْمِنُوْنَ ু اَلَّذِيْنَ عَاهَدْتَّ مِنْهُمْ ثُمَّ يَنْقُضُوْنَ عَهْدَهُمْ فِيْ كُلِّ مَرَّةٍ وَّهُمْ لَا يَتَّقُوْنَ
আল্লাহর নিকট নিকৃষ্ট জীব তারাই, যারা কুফরী করে এবং ঈমান আনয়ন করে না। তাদের মধ্যে তুমি যাদের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ, তারা প্রত্যেকবার তাদের চুক্তি ভঙ্গ করে এবং তারা সাবধান হয় না। (সূরা আনফাল- ৫৫, ৫৬)
এতে নবী ﷺ কেও চুক্তি ভঙ্গের নির্দেশ দেয়া হয় :
وَاِمَّا تَخَافَنَّ مِنْ قَوْمٍ خِيَانَةً فَانْۢبِذْ اِلَيْهِمْ عَلٰى سَوَآءٍؕ اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْخَآئِنِيْنَ
যদি তুমি কোন সম্প্রদায়ের চুক্তি ভঙ্গের আশঙ্কা কর, তবে তোমার চুক্তিও তুমি যথাযথভাবে বাতিল করবে; নিশ্চয় আল্লাহ চুক্তি ভঙ্গকারীদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা আনফাল- ৫৮)
তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার নির্দেশ দেয়া হয় :
فَاِمَّا تَثْقَفَنَّهُمْ فِى الحَرْبِ فَشَرِّدْ بِهِمْ مَّنْ خَلْفَهُمْ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُوْنَ
যদি তোমরা যুদ্ধে তাদেরকে তোমাদের আয়ত্তে পাও, তবে তাদেরকে তাদের পশ্চাতে যারা আছে তাদের হতে বিচ্ছিন্ন করে এমনভাবে বিধ্বস্ত করবে, যাতে তারা শিক্ষা লাভ করে। (সূরা আনফাল- ৫৭)
অবশেষে তারা মুসলিমদের হাতে পরাজিত হয় :
كَمَثَلِ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ قَرِيْبًا ذَاقُوْا وَبَالَ اَمْرِهِمْۚ وَلَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
এরা তাদের মতো, যারা ইতোপূর্বেই নিজেদের কৃতকর্মের পরিণাম আস্বাদন করেছে। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরা হাশর- ১৫)
কাফিরদেরকে লাঞ্ছিত করা :
لِيَقْطَعَ طَرَفًا مِّنَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اَوْ يَكْبِتَهُمْ فَيَنْقَلِبُوْا خَآئِبِيْنَ
যাতে কাফিরদের একাংশকে ধ্বংস করে দেন অথবা তাদেরকে লাঞ্ছিত করেন, যেন তারা বঞ্চিত হয়ে ফিরে যায়। (সূরা আলে ইমরান- ১২৭)
মুমিনদেরকে বাছাই করে কাফিরদেরকে নিশ্চিহ্ন করা :
وَلِيُمَحِّصَ اللهُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَيَمْحَقَ الْكَافِرِيْنَ
যেন আল্লাহ ঈমানদারদেরকে পবিত্র করেন এবং কাফিরদেরকে ধ্বংস করেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৪১)
مَا كَانَ اللهُ لِيَذَرَ الْمُؤْمِنِيْنَ عَلٰى مَاۤ اَنْتُمْ عَلَيْهِ حَتّٰى يَمِيْزَ الْخَبِيْثَ مِنَ الطَّيِّبِ
আল্লাহ এরূপ নন যে, তিনি পবিত্রতা হতে অপবিত্রতাকে পৃথক না করা পর্যন্ত তোমরা যে অবস্থায় আছ সে অবস্থায় মুমিনদেরকে ছেড়ে দেবেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৭৯)
মুনাফিকদেরকে বাছাই করা :
وَمَاۤ اَصَابَكُمْ يَوْمَ الْتَقَى الْجَمْعَانِ فَبِاِذْنِ اللهِ وَلِيَعْلَمَ الْمُؤْمِنِيْنَ – وَلِيَعْلَمَ الَّذِيْنَ نَافَقُوْاۚ وَقِيْلَ لَهُمْ تَعَالَوْا قَاتِلُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ اَوِ ادْفَعُوْاؕ قَالُوْا لَوْ نَعْلَمُ قِتَالًا لَّاتَّبَعْنَاكُمْؕ هُمْ لِلْكُفْرِ يَوْمَئِذٍ اَقْرَبُ مِنْهُمْ لِلْاِيْمَانِۚ يَقُوْلُوْنَ بِاَفْوَاهِهِمْ مَّا لَيْسَ فِيْ قُلُوْبِهِمْؕ وَاللهُ اَعْلَمُ بِمَا يَكْتُمُوْنَ
এ দু’দলের মুখোমুখি হওয়ার দিন তোমাদের উপর যা উপনীত হয়েছিল; তা আল্লাহরই ইচ্ছাক্রমে হয়েছিল, যাতে করে তিনি এর দ্বারা ঈমানদারদেরকে চিনে নেন এবং তাদেরকেও চিনে নেন, যারা মুনাফিকী করে। তাদেরকে বলা হয়েছিল- এসো, আল্লাহর পথে সংগ্রাম করো অথবা তাদেরকে প্রতিরোধ করো। তারা বলেছিল, যদি আমরা যুদ্ধ করতে জানতাম, তবে কি আমরা তোমাদের অনুসরণ করতাম না? সেদিন তারা বিশ্বাস অপেক্ষা অবিশ্বাসের অধিক নিকটবর্তী ছিল। মূলত তারা মুখে তাই বলে থাকে, যা তাদের অন্তরে নেই; তারা যে বিষয় গোপন করে, আল্লাহ সে সম্পর্কে অধিক পরিজ্ঞাত। (সূরা আলে ইমরান- ১৬৬, ১৬৭)
মুমিনদেরকে চূড়ান্তভাবে পরীক্ষার সম্মুখীন করা :
اَمْ حَسِبْتُمْ اَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ اللهُ الَّذِيْنَ جَاهَدُوْا مِنْكُمْ وَيَعْلَمَ الصَّابِرِيْنَ
তোমরা কি ধারণা করছ যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ তোমাদের মধ্য হতে যারা জিহাদ করে আল্লাহ তাদের ব্যাপারে অবগত হবেন না এবং ধৈর্যশীলদের সম্পর্কেও অবগত হবেন না? (সূরা আলে ইমরান- ১৪২)
কিছু লোককে শহীদের মর্যাদা দেয়া :
اِنْ يَّمْسَسْكُمْ قَرْحٌ فَقَدْ مَسَّ الْقَوْمَ قَرْحٌ مِّثْلُهٗؕ وَتِلْكَ الْاَيَّامُ نُدَاوِلُهَا بَيْنَ النَّاسِۚ وَلِيَعْلَمَ اللهُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَيَتَّخِذَ مِنْكُمْ شُهَدَآءَؕ وَاللهُ لَا يُحِبُّ الظَّالِمِيْنَ
যদি তোমাদের আঘাত লেগে থাকে, তবে নিশ্চয় সেই সম্প্রদায়েরও তদ্রূপ আঘাত লেগেছে। এ দিবসগুলো আমি মানুষদের মধ্যে চক্রাকারে পরিবর্তন করাই; যেন আল্লাহ মুমিনদেরকে জেনে নিতে পারেন এবং তোমাদের মধ্য হতে কতক লোককে শহীদ হিসেবে গ্রহণ করে নেন। আর আল্লাহ অত্যাচারীদেরকে ভালোবাসেন না। (সূরা আলে ইমরান- ১৪০)
মুমিনদের শাহাদাত লাভের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করা :
وَلَقَدْ كُنْتُمْ تَمَنَّوْنَ الْمَوْتَ مِنْ قَبْلِ اَنْ تَلْقَوْهُ۪ فَقَدْ رَاَيْتُمُوْهُ وَاَنْتُمْ تَنْظُرُوْنَ
তোমরা মৃত্যু আসার পূর্বেই মরণ কামনা করছিলে; কাজেই এখন তো তোমরা তা প্রত্যক্ষ করছ এবং দেখতে পাচ্ছ। (সূরা আলে ইমরান- ১৪৩)
ব্যাখ্যা : পূর্ববর্তী বছর বদর যুদ্ধে কতিপয় সাহাবী শহীদ হন। তাদের উচ্চমর্যাদা সম্বন্ধে অবহিত হয়ে কতিপয় সাহাবী সুযোগ আসলে শাহাদাতবরণ করার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন, কিন্তু ওহুদের যুদ্ধ সমাগত হলে তাদের মধ্যে অনেকেরই পদস্খলন হয়। আল্লাহ তা‘আলা এ সম্বন্ধে উক্ত আয়াতটি নাযিল করেন।
لِيَقْطَعَ طَرَفًا مِّنَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اَوْ يَكْبِتَهُمْ فَيَنْقَلِبُوْا خَآئِبِيْنَ
যাতে কাফিরদের একাংশকে ধ্বংস করে দেন অথবা তাদেরকে লাঞ্ছিত করেন, যেন তারা বঞ্চিত হয়ে ফিরে যায়। (সূরা আলে ইমরান- ১২৭)
মুমিনদেরকে বাছাই করে কাফিরদেরকে নিশ্চিহ্ন করা :
وَلِيُمَحِّصَ اللهُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَيَمْحَقَ الْكَافِرِيْنَ
যেন আল্লাহ ঈমানদারদেরকে পবিত্র করেন এবং কাফিরদেরকে ধ্বংস করেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৪১)
مَا كَانَ اللهُ لِيَذَرَ الْمُؤْمِنِيْنَ عَلٰى مَاۤ اَنْتُمْ عَلَيْهِ حَتّٰى يَمِيْزَ الْخَبِيْثَ مِنَ الطَّيِّبِ
আল্লাহ এরূপ নন যে, তিনি পবিত্রতা হতে অপবিত্রতাকে পৃথক না করা পর্যন্ত তোমরা যে অবস্থায় আছ সে অবস্থায় মুমিনদেরকে ছেড়ে দেবেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৭৯)
মুনাফিকদেরকে বাছাই করা :
وَمَاۤ اَصَابَكُمْ يَوْمَ الْتَقَى الْجَمْعَانِ فَبِاِذْنِ اللهِ وَلِيَعْلَمَ الْمُؤْمِنِيْنَ – وَلِيَعْلَمَ الَّذِيْنَ نَافَقُوْاۚ وَقِيْلَ لَهُمْ تَعَالَوْا قَاتِلُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ اَوِ ادْفَعُوْاؕ قَالُوْا لَوْ نَعْلَمُ قِتَالًا لَّاتَّبَعْنَاكُمْؕ هُمْ لِلْكُفْرِ يَوْمَئِذٍ اَقْرَبُ مِنْهُمْ لِلْاِيْمَانِۚ يَقُوْلُوْنَ بِاَفْوَاهِهِمْ مَّا لَيْسَ فِيْ قُلُوْبِهِمْؕ وَاللهُ اَعْلَمُ بِمَا يَكْتُمُوْنَ
এ দু’দলের মুখোমুখি হওয়ার দিন তোমাদের উপর যা উপনীত হয়েছিল; তা আল্লাহরই ইচ্ছাক্রমে হয়েছিল, যাতে করে তিনি এর দ্বারা ঈমানদারদেরকে চিনে নেন এবং তাদেরকেও চিনে নেন, যারা মুনাফিকী করে। তাদেরকে বলা হয়েছিল- এসো, আল্লাহর পথে সংগ্রাম করো অথবা তাদেরকে প্রতিরোধ করো। তারা বলেছিল, যদি আমরা যুদ্ধ করতে জানতাম, তবে কি আমরা তোমাদের অনুসরণ করতাম না? সেদিন তারা বিশ্বাস অপেক্ষা অবিশ্বাসের অধিক নিকটবর্তী ছিল। মূলত তারা মুখে তাই বলে থাকে, যা তাদের অন্তরে নেই; তারা যে বিষয় গোপন করে, আল্লাহ সে সম্পর্কে অধিক পরিজ্ঞাত। (সূরা আলে ইমরান- ১৬৬, ১৬৭)
মুমিনদেরকে চূড়ান্তভাবে পরীক্ষার সম্মুখীন করা :
اَمْ حَسِبْتُمْ اَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ اللهُ الَّذِيْنَ جَاهَدُوْا مِنْكُمْ وَيَعْلَمَ الصَّابِرِيْنَ
তোমরা কি ধারণা করছ যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ তোমাদের মধ্য হতে যারা জিহাদ করে আল্লাহ তাদের ব্যাপারে অবগত হবেন না এবং ধৈর্যশীলদের সম্পর্কেও অবগত হবেন না? (সূরা আলে ইমরান- ১৪২)
কিছু লোককে শহীদের মর্যাদা দেয়া :
اِنْ يَّمْسَسْكُمْ قَرْحٌ فَقَدْ مَسَّ الْقَوْمَ قَرْحٌ مِّثْلُهٗؕ وَتِلْكَ الْاَيَّامُ نُدَاوِلُهَا بَيْنَ النَّاسِۚ وَلِيَعْلَمَ اللهُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَيَتَّخِذَ مِنْكُمْ شُهَدَآءَؕ وَاللهُ لَا يُحِبُّ الظَّالِمِيْنَ
যদি তোমাদের আঘাত লেগে থাকে, তবে নিশ্চয় সেই সম্প্রদায়েরও তদ্রূপ আঘাত লেগেছে। এ দিবসগুলো আমি মানুষদের মধ্যে চক্রাকারে পরিবর্তন করাই; যেন আল্লাহ মুমিনদেরকে জেনে নিতে পারেন এবং তোমাদের মধ্য হতে কতক লোককে শহীদ হিসেবে গ্রহণ করে নেন। আর আল্লাহ অত্যাচারীদেরকে ভালোবাসেন না। (সূরা আলে ইমরান- ১৪০)
মুমিনদের শাহাদাত লাভের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করা :
وَلَقَدْ كُنْتُمْ تَمَنَّوْنَ الْمَوْتَ مِنْ قَبْلِ اَنْ تَلْقَوْهُ۪ فَقَدْ رَاَيْتُمُوْهُ وَاَنْتُمْ تَنْظُرُوْنَ
তোমরা মৃত্যু আসার পূর্বেই মরণ কামনা করছিলে; কাজেই এখন তো তোমরা তা প্রত্যক্ষ করছ এবং দেখতে পাচ্ছ। (সূরা আলে ইমরান- ১৪৩)
ব্যাখ্যা : পূর্ববর্তী বছর বদর যুদ্ধে কতিপয় সাহাবী শহীদ হন। তাদের উচ্চমর্যাদা সম্বন্ধে অবহিত হয়ে কতিপয় সাহাবী সুযোগ আসলে শাহাদাতবরণ করার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন, কিন্তু ওহুদের যুদ্ধ সমাগত হলে তাদের মধ্যে অনেকেরই পদস্খলন হয়। আল্লাহ তা‘আলা এ সম্বন্ধে উক্ত আয়াতটি নাযিল করেন।
বদরের যুদ্ধে কুরাইশরা আর্থিক, সামরিক ও রাজনৈতিক দিক দিয়ে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। কুরাইশদের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি আবু জাহেল ও উতবা নিহত হয়েছিল। বদরের যুদ্ধে পরাজিত হয়ে কুরাইশ দলপতি আবু সুফিয়ান প্রতিজ্ঞা করে যে, প্রতিশোধ গ্রহণ না করা পর্যমত্ম সে নারী অথবা তেল স্পর্শ করবে না। অতঃপর আবু সুফিয়ান ৬২৫ খ্রিস্টাব্দে, ৩য় হিজরীর শাওয়াল মাসে ৩০০ উষ্ট্রারোহী ও ২০০ অশ্বারোহীসহ ৩০০০ সশস্ত্র সৈন্য নিয়ে মদিনার পাঁচ মাইল পশ্চিমে ওহুদ উপত্যকায় সমবেত হয়। এদিকে মুহাম্মাদ ﷺ ১০০ জন বর্মধারী, ৫০ জন তীরন্দাজসহ মাত্র ১০০০ জন মুজাহিদ বাহিনী নিয়ে শত্রুর মুকাবিলা করার সিদ্ধামত্ম গ্রহণ করেন। পথিমধ্যে মুনাফিক নেতা আবদুল্লাহ বিন উবাই তার ৩০০ জন অনুচরসহ দল ত্যাগ করলে শেষ পর্যমত্ম ৭০০ জন মুসলিম এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মহানবী ﷺ ওহুদ পাহাড়ের গোলাকার অংশের বাইরে থেকে যুদ্ধ পরিচালনা করার মনস্থির করেন এবং সেভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। মুসলিম শিবিরের পশ্চাতে বাম পাশে একটি গিরিপথ ছিল। আর এ পথে শত্রুদের আক্রমণের ব্যাপক আশঙ্কা ছিল। কেননা এ পথটি ছিল মুসলিমদেরকে আক্রমণ করে কাবু করার সবচেয়ে সহজ পথ। আর তাই রাসূল ﷺ এ আক্রমণ ঠেকানোর উদ্দেশ্যে আবদুল্লাহ ইবনে যুবারের (রাঃ) এর নেতৃত্বে ৫০ জন তীরন্দাজকে নিযুক্ত করেন এবং সুস্পষ্ট নির্দেশ না পাওয়া পর্যমত্ম এ স্থান ত্যাগ করতে নিষেধ করেন। অতঃপর যখন যুদ্ধ আরম্ভ হয়, তখন শুরু থেকেই মুসলিম বাহিনী একের পর এক সাফল্য লাভ করতে থাকে এবং কুরাইশ বাহিনী পলায়ন করতে থাকে। যুদ্ধের প্রাথমিক সাফল্যের উল্লাসে মুসলিম সৈন্যবাহিনী শৃঙ্খলা হারিয়ে ফেলে এবং গিরিপথের রক্ষণাবেক্ষণের পরিবর্তে গনিমতের মাল সংগ্রহে নিয়োজিত হয়। মুসলিম বাহিনীর বিশৃঙ্খলার সুযোগে কুরাইশ সেনাপতি খালিদ ইবনে ওয়ালীদ পেছন থেকে অতর্কিত হামলা করে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয় এবং দ্রুত পলায়ন করতে বাধ্য করে। স্বয়ং মহানবী ﷺ প্রসত্মরাঘাতে আহত হন। তখন নবী ﷺ এর দু’টি দাঁত ভেঙ্গে যায়। এ যুদ্ধে বীর আমীর হামযা (রাঃ) সহ ৭০ জন মুসলিম যোদ্ধা শহীদ হন। ওহুদের যুদ্ধ ছিল মুসলিমদের জন্য ঈমান ও ধৈর্যের অগ্নি পরীক্ষা। বিজয়োল্লাসী বিধর্মী কুরাইশরা মুসলিম বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে সাময়িক জয়লাভ করলেও প্রকৃতপক্ষে তারা মানসিক ও শারীরিক শক্তি হারিয়ে ফেলে এবং এ কারণে তাদের বিজয় ছিল পরাজয়ের নামামত্মর। ওহুদের অগ্নি পরীক্ষা ইসলামের দৃঢ় সংকল্প ও আত্মনির্ভরশীলতার একটি জ্বলমত্ম উদাহরণ। বদরের প্রামত্মর ইসলামের সামরিক বিজয়ের প্রতীক ছিল; কিন্তু ওহুদের বিপর্যয় মুসলিমদের সুশৃঙ্খল সামরিক জাতিতে পরিণত করে। ওহুদের যুদ্ধের পরাজয় থেকে মুসলিমগণ যে শিক্ষা লাভ করেন, তা পরবর্তী সময়ের সকল যুদ্ধে তাদের বিজয় লাভের পথকে উন্মুক্ত করে দেয়।
নবী ﷺ মুসলিম সেনাদেরকে সঠিক স্থানে মোতায়েন করলেন :
وَاِذْ غَدَوْتَ مِنْ اَهْلِكَ تُبَوِّئُ الْمُؤْمِنِيْنَ مَقَاعِدَ لِلْقِتَالِؕ وَاللهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
আর যখন তুমি তোমার পরিবার থেকে সকালে বের হয়েছিলে, তখন মুমিনদেরকে যুদ্ধের জন্য ঘাটিতে নিয়োজিত করেছিলে। আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী। (সূরা আলে ইমরান- ১২১)
মুনাফিকদেরকেও যুদ্ধে যেতে বলা হলো :
وَقِيْلَ لَهُمْ تَعَالَوْا قَاتِلُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ اَوِ ادْفَعُوْا
তাদেরকে বলা হয়েছিল- এসো, আল্লাহর পথে সংগ্রাম করো অথবা তাদেরকে প্রতিরোধ করো। (সূরা আলে ইমরান- ১৬৭)
তারা মিথ্যা কথা বলে মাঝ পথ থেকে ফিরে এলো :
قَالُوْا لَوْ نَعْلَمُ قِتَالًا لَّاتَّبَعْنَاكُمْؕ هُمْ لِلْكُفْرِ يَوْمَئِذٍ اَقْرَبُ مِنْهُمْ لِلْاِيْمَانِۚ يَقُوْلُوْنَ بِاَفْوَاهِهِمْ مَّا لَيْسَ فِيْ قُلُوْبِهِمْؕ وَاللهُ اَعْلَمُ بِمَا يَكْتُمُوْنَ
সেদিন তারা ঈমানের চেয়ে কুফরীর অধিক নিকটবর্তী ছিল। আর তারা তাই বলে থাকে, যা তাদের অন্তরে নেই; তারা যে বিষয় গোপন করে, আল্লাহ সে সম্পর্কে অধিক পরিজ্ঞাত। (সূরা আলে ইমরান- ১৬৭)
এর ফলে বনু হারেসা ও বনু সালামা সাহস হারিয়ে ফেলে :
اِذْ هَمَّتْ طَّآئِفَتَانِ مِنْكُمْ اَنْ تَفْشَلَا وَاللهُ وَلِيُّهُمَاؕ وَعَلَى اللهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُوْنَ
যখন তোমাদের দু’টি দল ভীরুতা প্রকাশের সংকল্প করেছিল, অথচ আল্লাহ ছিলেন তাদের পৃষ্ঠপোষক। আর মুমিনগণ যেন আল্লাহর উপরই নির্ভর করে থাকে। (সূরা আলে ইমরান- ১২২)
আল্লাহ তাদেরকে সাহস যোগালেন :
وَلَقَدْ نَصَرَكُمُ اللهُ بِبَدْرٍ وَّاَنْتُمْ اَذِلَّةٌ ۚ فَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
আল্লাহ তোমাদেরকে বদরে সাহায্য করেছিলেন, যখন তোমরা দুর্বল ছিলে। অতএব আল্লাহকে ভয় করো, যেন তোমরা কৃতজ্ঞ হও। (সূরা আলে ইমরান- ১২৩)
ফেরেশতাদের মাধ্যমে সাহায্য করার আশ্বাস দেয়া হলো :
اِذْ تَقُوْلُ لِلْمُؤْمِنِيْنَ اَلَنْ يَّكْفِيَكُمْ اَنْ يُّمِدَّكُمْ رَبُّكُمْ بِثَلَاثَةِ اٰلَافٍ مِّنَ الْمَلَآئِكَةِ مُنْزَلِيْنَ – بَلٰۤى اِنْ تَصْبِرُوْا وَتَتَّقُوْا وَيَاْتُوْكُمْ مِّنْ فَوْرِهِمْ هٰذَا يُمْدِدْكُمْ رَبُّكُمْ بِخَمْسَةِ اٰلَافٍ مِّنَ الْمَلَآئِكَةِ مُسَوِّمِيْنَ
যখন মুমিনদেরকে বলেছিলে- এটা কি তোমাদের জন্য যথেষ্ট নয় যে, তোমাদের প্রতিপালক তিন হাজার ফেরেশতা প্রেরণ করে তোমাদেরকে সাহায্য করবেন? হ্যাঁ! যদি তোমরা ধৈর্যধারণ কর ও সংযমী হও। আর তারা যদি স্বেচ্ছায় তোমাদের উপর নিপতিত হয়, তবে তোমাদের প্রতিপালক পাঁচ সহস্র ফেরেশতার মাধ্যমে তোমাদেরকে সাহায্য করবেন। (সূরা আলে ইমরান- ১২৪, ১২৫)
আল্লাহ কাফিরদের অন্তরে ভয় সৃষ্টি করে দেন :
سَنُلْقِيْ فِيْ قُلُوْبِ الَّذِيْنَ كَفَرُوا الرُّعْبَ بِمَاۤ اَشْرَكُوْا بِاللهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهٖ سُلْطَانًا
যারা অবিশ্বাস করেছে, আমি অতিসত্বর তাদের অন্তরে ভীতি সঞ্চার করব, যেহেতু তারা আল্লাহর সাথে সে বিষয়ে অংশীদার স্থাপন করেছে, যে বিষয়ে তিনি কোন প্রমাণ অবতরণ করেননি। (সূরা আলে ইমরান- ১৫১)
প্রথম দিকে মুসলিমরা ভালো করলেও শেষের দিকে হেরে যায় :
وَلَقَدْ صَدَقَكُمُ اللهُ وَعْدَهٗۤ اِذْ تَحُسُّوْنَهُمْ بِاِذْنِهٖۚ حَتّٰۤى اِذَا فَشِلْتُمْ وَتَنَازَعْتُمْ فِى الْاَمْرِ وَعَصَيْتُمْ مِّنْ ۢبَعْدِ مَاۤ اَرَاكُمْ مَّا تُحِبُّوْنَؕ مِنْكُمْ مَّنْ يُّرِيْدُ الدُّنْيَا وَمِنْكُمْ مَّنْ يُّرِيْدُ الْاٰخِرَةَۚ ثُمَّ صَرَفَكُمْ عَنْهُمْ لِيَبْتَلِيَكُمْۚ وَلَقَدْ عَفَا عَنْكُمْؕ وَاللهُ ذُوْ فَضْلٍ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ
আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বীয় অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করেছেন যখন তাঁর নির্দেশে তোমরা তাদেরকে হত্যা করছিলে, কিন্তু পরে তোমরা ছত্রভঙ্গ হয়েছিলে ও কর্তব্য স্থির করার ব্যাপারে বিবাদে লিপ্ত হয়েছিলে এবং তোমরা যা ভালোবেসেছিলে, তা তিনি তোমাদেরকে দেখানোর পর তাঁর আদেশের অবাধ্য হয়েছিলে। আর তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ দুনিয়া কামনা করেছিলে এবং কেউ কেউ আখিরাত কামনা করেছিলে। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে তা হতে বিরত রাখলেন, যেন তিনি তোমাদেরকে পরীক্ষা করে নিতে পারেন। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিলেন; আর আল্লাহ বিশ্বাসীদের প্রতি খুবই অনুগ্রহশীল। (সূরা আলে ইমরান- ১৫২)
মুসলিমরা চরম দুঃখ-কষ্টের সম্মুখীন হয় :
اِذْ تُصْعِدُوْنَ وَلَا تَلْوُوْنَ عَلٰۤى اَحَدٍ وَّالرَّسُوْلُ يَدْعُوْكُمْ فِۤيْ اُخْرَاكُمْ فَاَثَابَكُمْ غَمًّا ۢبِغَمٍّ لِّكَيْلَا تَحْزَنُوْا عَلٰى مَا فَاتَكُمْ وَلَا مَاۤ اَصَابَكُمْؕ وَاللهُ خَبِيْرٌ ۢبِمَا تَعْمَلُوْنَ
যখন তোমরা ওপরের দিকে আরোহণ করে যাচ্ছিলে এবং কারো দিকে ফিরেও দেখছিলে না (ওহুদের যুদ্ধে কাফিরদের ভয়ে পাহাড়ে আরোহণপূর্বক পলায়ন করছিলে); আর রাসূল তোমাদেরকে পেছন হতে আহবান করছিলেন। অতঃপর আল্লাহ তোমাদেরকে দুঃখের উপর দুঃখ প্রদান করলেন, যাতে করে যা অতিক্রান্ত হয়েছে এবং তোমাদের উপর যা উপনীত হয়েছে সেজন্য তোমরা দুঃখ না করো। আর তোমরা যা করছ সে বিষয়ে আল্লাহ সম্মক অবগত। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৩)
ব্যাখ্যা : এ দুঃখ ছিল পরাজয়ের, নবী ﷺ এর মৃত্যু সংবাদের, নিজেদের বিপুল সংখ্যক নিহত ও আহত হওয়ার জন্য। তাদের দুঃখ এ চিন্তায় যে, এখন নিজেদের বাড়ি-ঘরেরও নিরাপত্তা নেই। সুতরাং এখন শত্রু সৈন্য পরাজিত সেনাদলকে গুঁড়িয়ে শহরের অলি-গলিতে ঢুকে পড়বে এবং নগরীর সবকিছু ধ্বংস করে দেবে।
পরে নিদ্রাছন্ন করে তাদেরকে প্রশান্তি দেয়া হয় :
ثُمَّ اَنْزَلَ عَلَيْكُمْ مِّنْ ۢبَعْدِ الْغَمِّ اَمَنَةً نُّعَاسًا يَّغْشٰى طَآئِفَةً
অনন্তর তিনি দুঃখের পরে তোমাদের উপর শান্তি অবতীর্ণ করলেন; তা ছিল তন্দ্রা, যা তোমাদের একদলকে আচ্ছন্ন করেছিল। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৪)
কিছু লোকের ভেতরে দুশ্চিন্তা ঢুকে পড়ে :
وَطَآئِفَةٌ قَدْ اَهَمَّتْهُمْ اَنْفُسُهُمْ يَظُنُّوْنَ بِاللهِ غَيْرَ الْحَقِّ ظَنَّ الْجَاهِلِيَّةِؕ يَقُوْلُوْنَ هَلْ لَّنَا مِنَ الْاَمْرِ مِنْ شَيْءٍ
একদল নিজের জীবনকে অধিক গুরুত্বারোপ করেছিল। তারা আল্লাহর ব্যাপারে সত্যের বিপরীতে অজ্ঞতার অনুরূপ ধারণা পোষণ করেছিল। তারা বলেছিল, এ বিষয়ে কি আমাদের কোন অধিকার নেই? (সূরা আলে ইমরান- ১৫৪)
এ দুশ্চিন্তার জবাব :
قُلْ اِنَّ الْاَمْرَ كُلَّهٗ لِلّٰهِؕ يُخْفُوْنَ فِۤيْ اَنْفُسِهِمْ مَّا لَا يُبْدُوْنَ لَكَؕ يَقُوْلُوْنَ لَوْ كَانَ لَنَا مِنَ الْاَمْرِ شَيْءٌ مَّا قُتِلْنَا هَاهُنَاؕ قُلْ لَّوْ كُنْتُمْ فِيْ بُيُوْتِكُمْ لَبَرَزَ الَّذِيْنَ كُتِبَ عَلَيْهِمُ الْقَتْلُ اِلٰى مَضَاجِعِهِمْۚ وَلِيَبْتَلِيَ اللهُ مَا فِيْ صُدُوْرِكُمْ وَلِيُمَحِّصَ مَا فِيْ قُلُوْبِكُمْؕ وَاللهُ عَلِيْمٌ ۢبِذَاتِ الصُّدُوْرِ
বলো, সব বিষয় আল্লাহর হাতে; তারা নিজেদের অন্তরে যা গোপন রাখে, তা তোমার নিকট প্রকাশ করে না। তারা বলে, যদি এ বিষয়ে আমাদের কোন অধিকার থাকত তবে আমরা এখানে নিহত হতাম না। তাদেরকে বলে দাও, যদি তোমরা তোমাদের গৃহের মধ্যে থাকতে, তবুও যাদের প্রতি হত্যা লিপিবদ্ধ হয়েছে তারা স্বীয় মৃত্যুস্থানে এসে উপস্থিত হতো। এটা এজন্য যে, তোমাদের অন্তরে যা আছে আল্লাহ তা পরীক্ষা করেন এবং তোমাদের হৃদয়ে যা আছে তা নির্মল করে থাকেন। আর আল্লাহ (সকলের) অন্তর্নিহিত ভাব সম্পর্কে সবিশেষ পরিজ্ঞাত। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৪)
মৃত্যুর ভয়ে জিহাদ থেকে দূরে থাকা ভুল :
وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ اَنْ تَمُوْتَ اِلَّا بِاِذْنِ اللهِ كِتَابًا مُّؤَجَّلًا ؕ وَمَنْ يُّرِدْ ثَوَابَ الدُّنْيَا نُؤْتِهٖ مِنْهَاۚ وَمَنْ يُّرِدْ ثَوَابَ الْاٰخِرَةِ نُؤْتِهٖ مِنْهَاؕ وَسَنَجْزِى الشَّاكِرِيْنَ
আল্লাহর আদেশে লিপিবদ্ধ নির্দিষ্ট সময় ব্যতীত কেউই মৃত্যুর মুখে পতিত হয় না। যদি কেউ দুনিয়ার প্রতিদান কামনা করে আমি তাকে তা হতে কিছু প্রদান করি। আর যদি কেউ পরকালের প্রতিদান কামনা করে, তবে আমি তাকে তা হতেই প্রদান করে থাকি। অচিরেই আমি কৃতজ্ঞদেরকে পুরস্কার প্রদান করব। (সূরা আলে ইমরান- ১৪৫)
ব্যাখ্যা : এ থেকে মুসলিমদের এ কথা বুঝানো হয়েছে যে, মৃত্যুর ভয়ে তোমাদের পালিয়ে যাওয়ার কোন অর্থ নেই। মৃত্যুর জন্য আল্লাহ যে সময় নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন তার আগে কেউ মরতে পারে না এবং তার পরেও কেউ জীবিত থাকতে পারে না।
নবী ﷺ মারা গেছেন- এ ভুল সংবাদের জবাব :
وَمَا مُحَمَّدٌ اِلَّا رَسُوْلٌۚ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُؕ اَفَاِنْ مَّاتَ اَوْ قُتِلَ انْقَلَبْتُمْ عَلٰۤى اَعْقَابِكُمْؕ وَمَنْ يَّنْقَلِبْ عَلٰى عَقِبَيْهِ فَلَنْ يَّضُرَّ اللهَ شَيْئًاؕ وَسَيَجْزِى اللهُ الشَّاكِرِيْنَ
মুহাম্মাদ একজন রাসূল ব্যতীত কিছুই নয়, নিশ্চয় তার পূর্বেও অনেক রাসূল বিগত হয়ে গেছে। অনন্তর যদি তিনি মৃত্যুবরণ করেন অথবা নিহত হন, তবে কি তোমরা পেছনে ফিরে যাবে? যে কেউ পেছনে ফিরে যায়, তাতে সে আল্লাহর কোন অনিষ্ট করবে না। অচিরেই আল্লাহ কৃতজ্ঞদেরকে পুরস্কার প্রদান করবেন।
(সূরা আলে ইমরান- ১৪৪)
ব্যাখ্যা : ওহুদ যুদ্ধে যখন মুসলিমগণ ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন এবং রাসূল ﷺ আহত হয়ে এক গর্তে পতিত হন, তখন শত্রুপক্ষ হতে সংবাদ রটল যে, রাসূল ﷺ শহীদ হয়েছেন। এ সংবাদ শ্রবণ করে অধিকাংশ সাহাবী মর্মাহত হয়ে পড়েন এবং কেউ কেউ পলায়ন করতে উদ্যত হন। অতঃপর যখন তাদেরকে এ কারণে তিরস্কার করা হয় তখন অজুহাত পেশ করল যে, আমরা রাসূল ﷺ এর নিহত হওয়ার সংবাদ শ্রবণ করে ভীত হয়ে পলায়ন করেছিলাম। তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতটি নাযিল করেন। নবী ﷺ এর শাহাদাতের গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর অধিকাংশ সাহাবী সাহস হারিয়ে ফেলেন। এ অবস্থায় মুনাফিকরা বলতে থাকে, চলো আমরা আমাদের নেতা আবদুল্লাহ ইবনে উবাই এর কাছে যাই। সে আমাদের জন্য আবু সুফিয়ানের কাছ থেকে নিরাপত্তা এনে দেবে। আবার কেউ কেউ এমন কথাও বলাবলি করতে থাকে যে, যদি মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর রাসূলই হতেন, তাহলে তিনি নিহত হলেন কেমন করে? চলো, আমাদের বাপ-দাদাদের ধর্মের দিকে ফিরে যাই। এসব কথার জবাবে বলা হচ্ছে, তোমাদের সত্যপ্রীতি যদি কেবল মুহাম্মাদ ﷺ এর ব্যক্তিত্বের সাথে সম্পর্কিত হয়ে থাকে এবং তোমাদের ঈমান যদি এতই দুর্বল ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে যে, মুহাম্মাদ ﷺ এর দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার সাথে সাথেই তোমরা আবার সে কুফরীর দিকে ফিরে যাবে, যা থেকে তোমরা বের হয়ে এসেছিলে, তাহলে আল্লাহর দ্বীন তোমাদের কোন প্রয়োজন অনুভব করে না।
গনিমত বণ্টনের ক্ষেত্রে নবী ﷺ এর ব্যাপারে কুধারণার জবাব :
وَمَا كَانَ لِنَبِيٍّ اَنْ يَّغُلَّؕ وَمَنْ يَّغْلُلْ يَاْتِ بِمَا غَلَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِۚ ثُمَّ تُوَفّٰى كُلُّ نَفْسٍ مَّا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُوْنَ
কোন নবীর পক্ষে আত্মসাৎকরণ শোভনীয় নয়। যে ব্যক্তি আত্মসাৎ করেছে, সে যা আত্মসাৎ করেছে তা নিয়ে কিয়ামতের দিন হাজির হবে; অনন্তর প্রত্যেক ব্যক্তি যা অর্জন করেছে তা পূর্ণরূপে প্রদত্ত হবে এবং তারা নির্যাতিত হবে না। (সূরা আলে ইমরান- ১৬১)
নবী ﷺ কর্তৃক বদ্দু‘আ করার জবাব :
لَيْسَ لَكَ مِنَ الْاَمْرِ شَيْءٌ اَوْ يَتُوْبَ عَلَيْهِمْ اَوْ يُعَذِّبَهُمْ فَاِنَّهُمْ ظَالِمُوْنَ – وَلِلّٰهِ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَرْضِؕ يَغْفِرُ لِمَنْ يَّشَآءُؕ وَيُعَذِّبُ مَنْ يَّشَآءُؕ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
তিনি (আল্লাহ) তাদেরকে ক্ষমা করেন অথবা শাস্তি প্রদান করেন- এ ব্যাপারে তোমার কোন কর্তৃত্ব নেই; নিশ্চয় তারা অত্যাচারী। আর নভোমন্ডলে যা রয়েছে ও ভূমন্ডলে যা আছে তা আল্লাহরই; তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন এবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি প্রদান করেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম করুণাময়। (সূরা আলে ইমরান- ১২৮, ১২৯)
ব্যাখ্যা : ওহুদ প্রান্তরে যুদ্ধ আরম্ভ হলে প্রথম আক্রমণেই কাফিরদের পরাজয় ঘটল। মুসলিমরা পলায়নরত কাফিরদের আসবাবপত্র সংগ্রহ করতে লাগল এবং গিরিপথ রক্ষী সৈন্যগণও আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রাঃ) এর নির্দেশ অমান্য করে চলে আসল। এদিকে গিরিপথ খালি পেয়ে কাফিররা পেছন দিক হতে প্রবল বেগে আক্রমণ করে বসল। ফলে হামযা (রাঃ) এর মতো বিশিষ্ট সাহাবীগণ শাহাদাতবরণ করেন এবং রাসূল ﷺ নিজেও আহত হন। অতঃপর প্রধান প্রধান সাহাবীগণ মুসলিম সৈন্যদেরকে দ্রুত একত্রিত করে বীর-বিক্রমে কাফিরদের উপর ঝাপিয়ে পড়েন এবং তাদেরকে রণাঙ্গণ থেকে পলায়ন করতে বাধ্য করেন। যুদ্ধ শেষে রাসূল ﷺ স্বীয় চাচা ও সাহাবীগণের লাশ দেখে অতিশয় মর্মাহত হয়ে কাফিরদের উদ্দেশ্যে বদ্দু‘আ করতে উদ্যত হলে এ আয়াতটি নাযিল হয়।
নবী ﷺ মুসলিম সেনাদেরকে সঠিক স্থানে মোতায়েন করলেন :
وَاِذْ غَدَوْتَ مِنْ اَهْلِكَ تُبَوِّئُ الْمُؤْمِنِيْنَ مَقَاعِدَ لِلْقِتَالِؕ وَاللهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
আর যখন তুমি তোমার পরিবার থেকে সকালে বের হয়েছিলে, তখন মুমিনদেরকে যুদ্ধের জন্য ঘাটিতে নিয়োজিত করেছিলে। আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী। (সূরা আলে ইমরান- ১২১)
মুনাফিকদেরকেও যুদ্ধে যেতে বলা হলো :
وَقِيْلَ لَهُمْ تَعَالَوْا قَاتِلُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ اَوِ ادْفَعُوْا
তাদেরকে বলা হয়েছিল- এসো, আল্লাহর পথে সংগ্রাম করো অথবা তাদেরকে প্রতিরোধ করো। (সূরা আলে ইমরান- ১৬৭)
তারা মিথ্যা কথা বলে মাঝ পথ থেকে ফিরে এলো :
قَالُوْا لَوْ نَعْلَمُ قِتَالًا لَّاتَّبَعْنَاكُمْؕ هُمْ لِلْكُفْرِ يَوْمَئِذٍ اَقْرَبُ مِنْهُمْ لِلْاِيْمَانِۚ يَقُوْلُوْنَ بِاَفْوَاهِهِمْ مَّا لَيْسَ فِيْ قُلُوْبِهِمْؕ وَاللهُ اَعْلَمُ بِمَا يَكْتُمُوْنَ
সেদিন তারা ঈমানের চেয়ে কুফরীর অধিক নিকটবর্তী ছিল। আর তারা তাই বলে থাকে, যা তাদের অন্তরে নেই; তারা যে বিষয় গোপন করে, আল্লাহ সে সম্পর্কে অধিক পরিজ্ঞাত। (সূরা আলে ইমরান- ১৬৭)
এর ফলে বনু হারেসা ও বনু সালামা সাহস হারিয়ে ফেলে :
اِذْ هَمَّتْ طَّآئِفَتَانِ مِنْكُمْ اَنْ تَفْشَلَا وَاللهُ وَلِيُّهُمَاؕ وَعَلَى اللهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُوْنَ
যখন তোমাদের দু’টি দল ভীরুতা প্রকাশের সংকল্প করেছিল, অথচ আল্লাহ ছিলেন তাদের পৃষ্ঠপোষক। আর মুমিনগণ যেন আল্লাহর উপরই নির্ভর করে থাকে। (সূরা আলে ইমরান- ১২২)
আল্লাহ তাদেরকে সাহস যোগালেন :
وَلَقَدْ نَصَرَكُمُ اللهُ بِبَدْرٍ وَّاَنْتُمْ اَذِلَّةٌ ۚ فَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
আল্লাহ তোমাদেরকে বদরে সাহায্য করেছিলেন, যখন তোমরা দুর্বল ছিলে। অতএব আল্লাহকে ভয় করো, যেন তোমরা কৃতজ্ঞ হও। (সূরা আলে ইমরান- ১২৩)
ফেরেশতাদের মাধ্যমে সাহায্য করার আশ্বাস দেয়া হলো :
اِذْ تَقُوْلُ لِلْمُؤْمِنِيْنَ اَلَنْ يَّكْفِيَكُمْ اَنْ يُّمِدَّكُمْ رَبُّكُمْ بِثَلَاثَةِ اٰلَافٍ مِّنَ الْمَلَآئِكَةِ مُنْزَلِيْنَ – بَلٰۤى اِنْ تَصْبِرُوْا وَتَتَّقُوْا وَيَاْتُوْكُمْ مِّنْ فَوْرِهِمْ هٰذَا يُمْدِدْكُمْ رَبُّكُمْ بِخَمْسَةِ اٰلَافٍ مِّنَ الْمَلَآئِكَةِ مُسَوِّمِيْنَ
যখন মুমিনদেরকে বলেছিলে- এটা কি তোমাদের জন্য যথেষ্ট নয় যে, তোমাদের প্রতিপালক তিন হাজার ফেরেশতা প্রেরণ করে তোমাদেরকে সাহায্য করবেন? হ্যাঁ! যদি তোমরা ধৈর্যধারণ কর ও সংযমী হও। আর তারা যদি স্বেচ্ছায় তোমাদের উপর নিপতিত হয়, তবে তোমাদের প্রতিপালক পাঁচ সহস্র ফেরেশতার মাধ্যমে তোমাদেরকে সাহায্য করবেন। (সূরা আলে ইমরান- ১২৪, ১২৫)
আল্লাহ কাফিরদের অন্তরে ভয় সৃষ্টি করে দেন :
سَنُلْقِيْ فِيْ قُلُوْبِ الَّذِيْنَ كَفَرُوا الرُّعْبَ بِمَاۤ اَشْرَكُوْا بِاللهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهٖ سُلْطَانًا
যারা অবিশ্বাস করেছে, আমি অতিসত্বর তাদের অন্তরে ভীতি সঞ্চার করব, যেহেতু তারা আল্লাহর সাথে সে বিষয়ে অংশীদার স্থাপন করেছে, যে বিষয়ে তিনি কোন প্রমাণ অবতরণ করেননি। (সূরা আলে ইমরান- ১৫১)
প্রথম দিকে মুসলিমরা ভালো করলেও শেষের দিকে হেরে যায় :
وَلَقَدْ صَدَقَكُمُ اللهُ وَعْدَهٗۤ اِذْ تَحُسُّوْنَهُمْ بِاِذْنِهٖۚ حَتّٰۤى اِذَا فَشِلْتُمْ وَتَنَازَعْتُمْ فِى الْاَمْرِ وَعَصَيْتُمْ مِّنْ ۢبَعْدِ مَاۤ اَرَاكُمْ مَّا تُحِبُّوْنَؕ مِنْكُمْ مَّنْ يُّرِيْدُ الدُّنْيَا وَمِنْكُمْ مَّنْ يُّرِيْدُ الْاٰخِرَةَۚ ثُمَّ صَرَفَكُمْ عَنْهُمْ لِيَبْتَلِيَكُمْۚ وَلَقَدْ عَفَا عَنْكُمْؕ وَاللهُ ذُوْ فَضْلٍ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ
আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বীয় অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করেছেন যখন তাঁর নির্দেশে তোমরা তাদেরকে হত্যা করছিলে, কিন্তু পরে তোমরা ছত্রভঙ্গ হয়েছিলে ও কর্তব্য স্থির করার ব্যাপারে বিবাদে লিপ্ত হয়েছিলে এবং তোমরা যা ভালোবেসেছিলে, তা তিনি তোমাদেরকে দেখানোর পর তাঁর আদেশের অবাধ্য হয়েছিলে। আর তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ দুনিয়া কামনা করেছিলে এবং কেউ কেউ আখিরাত কামনা করেছিলে। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে তা হতে বিরত রাখলেন, যেন তিনি তোমাদেরকে পরীক্ষা করে নিতে পারেন। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিলেন; আর আল্লাহ বিশ্বাসীদের প্রতি খুবই অনুগ্রহশীল। (সূরা আলে ইমরান- ১৫২)
মুসলিমরা চরম দুঃখ-কষ্টের সম্মুখীন হয় :
اِذْ تُصْعِدُوْنَ وَلَا تَلْوُوْنَ عَلٰۤى اَحَدٍ وَّالرَّسُوْلُ يَدْعُوْكُمْ فِۤيْ اُخْرَاكُمْ فَاَثَابَكُمْ غَمًّا ۢبِغَمٍّ لِّكَيْلَا تَحْزَنُوْا عَلٰى مَا فَاتَكُمْ وَلَا مَاۤ اَصَابَكُمْؕ وَاللهُ خَبِيْرٌ ۢبِمَا تَعْمَلُوْنَ
যখন তোমরা ওপরের দিকে আরোহণ করে যাচ্ছিলে এবং কারো দিকে ফিরেও দেখছিলে না (ওহুদের যুদ্ধে কাফিরদের ভয়ে পাহাড়ে আরোহণপূর্বক পলায়ন করছিলে); আর রাসূল তোমাদেরকে পেছন হতে আহবান করছিলেন। অতঃপর আল্লাহ তোমাদেরকে দুঃখের উপর দুঃখ প্রদান করলেন, যাতে করে যা অতিক্রান্ত হয়েছে এবং তোমাদের উপর যা উপনীত হয়েছে সেজন্য তোমরা দুঃখ না করো। আর তোমরা যা করছ সে বিষয়ে আল্লাহ সম্মক অবগত। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৩)
ব্যাখ্যা : এ দুঃখ ছিল পরাজয়ের, নবী ﷺ এর মৃত্যু সংবাদের, নিজেদের বিপুল সংখ্যক নিহত ও আহত হওয়ার জন্য। তাদের দুঃখ এ চিন্তায় যে, এখন নিজেদের বাড়ি-ঘরেরও নিরাপত্তা নেই। সুতরাং এখন শত্রু সৈন্য পরাজিত সেনাদলকে গুঁড়িয়ে শহরের অলি-গলিতে ঢুকে পড়বে এবং নগরীর সবকিছু ধ্বংস করে দেবে।
পরে নিদ্রাছন্ন করে তাদেরকে প্রশান্তি দেয়া হয় :
ثُمَّ اَنْزَلَ عَلَيْكُمْ مِّنْ ۢبَعْدِ الْغَمِّ اَمَنَةً نُّعَاسًا يَّغْشٰى طَآئِفَةً
অনন্তর তিনি দুঃখের পরে তোমাদের উপর শান্তি অবতীর্ণ করলেন; তা ছিল তন্দ্রা, যা তোমাদের একদলকে আচ্ছন্ন করেছিল। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৪)
কিছু লোকের ভেতরে দুশ্চিন্তা ঢুকে পড়ে :
وَطَآئِفَةٌ قَدْ اَهَمَّتْهُمْ اَنْفُسُهُمْ يَظُنُّوْنَ بِاللهِ غَيْرَ الْحَقِّ ظَنَّ الْجَاهِلِيَّةِؕ يَقُوْلُوْنَ هَلْ لَّنَا مِنَ الْاَمْرِ مِنْ شَيْءٍ
একদল নিজের জীবনকে অধিক গুরুত্বারোপ করেছিল। তারা আল্লাহর ব্যাপারে সত্যের বিপরীতে অজ্ঞতার অনুরূপ ধারণা পোষণ করেছিল। তারা বলেছিল, এ বিষয়ে কি আমাদের কোন অধিকার নেই? (সূরা আলে ইমরান- ১৫৪)
এ দুশ্চিন্তার জবাব :
قُلْ اِنَّ الْاَمْرَ كُلَّهٗ لِلّٰهِؕ يُخْفُوْنَ فِۤيْ اَنْفُسِهِمْ مَّا لَا يُبْدُوْنَ لَكَؕ يَقُوْلُوْنَ لَوْ كَانَ لَنَا مِنَ الْاَمْرِ شَيْءٌ مَّا قُتِلْنَا هَاهُنَاؕ قُلْ لَّوْ كُنْتُمْ فِيْ بُيُوْتِكُمْ لَبَرَزَ الَّذِيْنَ كُتِبَ عَلَيْهِمُ الْقَتْلُ اِلٰى مَضَاجِعِهِمْۚ وَلِيَبْتَلِيَ اللهُ مَا فِيْ صُدُوْرِكُمْ وَلِيُمَحِّصَ مَا فِيْ قُلُوْبِكُمْؕ وَاللهُ عَلِيْمٌ ۢبِذَاتِ الصُّدُوْرِ
বলো, সব বিষয় আল্লাহর হাতে; তারা নিজেদের অন্তরে যা গোপন রাখে, তা তোমার নিকট প্রকাশ করে না। তারা বলে, যদি এ বিষয়ে আমাদের কোন অধিকার থাকত তবে আমরা এখানে নিহত হতাম না। তাদেরকে বলে দাও, যদি তোমরা তোমাদের গৃহের মধ্যে থাকতে, তবুও যাদের প্রতি হত্যা লিপিবদ্ধ হয়েছে তারা স্বীয় মৃত্যুস্থানে এসে উপস্থিত হতো। এটা এজন্য যে, তোমাদের অন্তরে যা আছে আল্লাহ তা পরীক্ষা করেন এবং তোমাদের হৃদয়ে যা আছে তা নির্মল করে থাকেন। আর আল্লাহ (সকলের) অন্তর্নিহিত ভাব সম্পর্কে সবিশেষ পরিজ্ঞাত। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৪)
মৃত্যুর ভয়ে জিহাদ থেকে দূরে থাকা ভুল :
وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ اَنْ تَمُوْتَ اِلَّا بِاِذْنِ اللهِ كِتَابًا مُّؤَجَّلًا ؕ وَمَنْ يُّرِدْ ثَوَابَ الدُّنْيَا نُؤْتِهٖ مِنْهَاۚ وَمَنْ يُّرِدْ ثَوَابَ الْاٰخِرَةِ نُؤْتِهٖ مِنْهَاؕ وَسَنَجْزِى الشَّاكِرِيْنَ
আল্লাহর আদেশে লিপিবদ্ধ নির্দিষ্ট সময় ব্যতীত কেউই মৃত্যুর মুখে পতিত হয় না। যদি কেউ দুনিয়ার প্রতিদান কামনা করে আমি তাকে তা হতে কিছু প্রদান করি। আর যদি কেউ পরকালের প্রতিদান কামনা করে, তবে আমি তাকে তা হতেই প্রদান করে থাকি। অচিরেই আমি কৃতজ্ঞদেরকে পুরস্কার প্রদান করব। (সূরা আলে ইমরান- ১৪৫)
ব্যাখ্যা : এ থেকে মুসলিমদের এ কথা বুঝানো হয়েছে যে, মৃত্যুর ভয়ে তোমাদের পালিয়ে যাওয়ার কোন অর্থ নেই। মৃত্যুর জন্য আল্লাহ যে সময় নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন তার আগে কেউ মরতে পারে না এবং তার পরেও কেউ জীবিত থাকতে পারে না।
নবী ﷺ মারা গেছেন- এ ভুল সংবাদের জবাব :
وَمَا مُحَمَّدٌ اِلَّا رَسُوْلٌۚ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُؕ اَفَاِنْ مَّاتَ اَوْ قُتِلَ انْقَلَبْتُمْ عَلٰۤى اَعْقَابِكُمْؕ وَمَنْ يَّنْقَلِبْ عَلٰى عَقِبَيْهِ فَلَنْ يَّضُرَّ اللهَ شَيْئًاؕ وَسَيَجْزِى اللهُ الشَّاكِرِيْنَ
মুহাম্মাদ একজন রাসূল ব্যতীত কিছুই নয়, নিশ্চয় তার পূর্বেও অনেক রাসূল বিগত হয়ে গেছে। অনন্তর যদি তিনি মৃত্যুবরণ করেন অথবা নিহত হন, তবে কি তোমরা পেছনে ফিরে যাবে? যে কেউ পেছনে ফিরে যায়, তাতে সে আল্লাহর কোন অনিষ্ট করবে না। অচিরেই আল্লাহ কৃতজ্ঞদেরকে পুরস্কার প্রদান করবেন।
(সূরা আলে ইমরান- ১৪৪)
ব্যাখ্যা : ওহুদ যুদ্ধে যখন মুসলিমগণ ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন এবং রাসূল ﷺ আহত হয়ে এক গর্তে পতিত হন, তখন শত্রুপক্ষ হতে সংবাদ রটল যে, রাসূল ﷺ শহীদ হয়েছেন। এ সংবাদ শ্রবণ করে অধিকাংশ সাহাবী মর্মাহত হয়ে পড়েন এবং কেউ কেউ পলায়ন করতে উদ্যত হন। অতঃপর যখন তাদেরকে এ কারণে তিরস্কার করা হয় তখন অজুহাত পেশ করল যে, আমরা রাসূল ﷺ এর নিহত হওয়ার সংবাদ শ্রবণ করে ভীত হয়ে পলায়ন করেছিলাম। তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতটি নাযিল করেন। নবী ﷺ এর শাহাদাতের গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর অধিকাংশ সাহাবী সাহস হারিয়ে ফেলেন। এ অবস্থায় মুনাফিকরা বলতে থাকে, চলো আমরা আমাদের নেতা আবদুল্লাহ ইবনে উবাই এর কাছে যাই। সে আমাদের জন্য আবু সুফিয়ানের কাছ থেকে নিরাপত্তা এনে দেবে। আবার কেউ কেউ এমন কথাও বলাবলি করতে থাকে যে, যদি মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর রাসূলই হতেন, তাহলে তিনি নিহত হলেন কেমন করে? চলো, আমাদের বাপ-দাদাদের ধর্মের দিকে ফিরে যাই। এসব কথার জবাবে বলা হচ্ছে, তোমাদের সত্যপ্রীতি যদি কেবল মুহাম্মাদ ﷺ এর ব্যক্তিত্বের সাথে সম্পর্কিত হয়ে থাকে এবং তোমাদের ঈমান যদি এতই দুর্বল ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে যে, মুহাম্মাদ ﷺ এর দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার সাথে সাথেই তোমরা আবার সে কুফরীর দিকে ফিরে যাবে, যা থেকে তোমরা বের হয়ে এসেছিলে, তাহলে আল্লাহর দ্বীন তোমাদের কোন প্রয়োজন অনুভব করে না।
গনিমত বণ্টনের ক্ষেত্রে নবী ﷺ এর ব্যাপারে কুধারণার জবাব :
وَمَا كَانَ لِنَبِيٍّ اَنْ يَّغُلَّؕ وَمَنْ يَّغْلُلْ يَاْتِ بِمَا غَلَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِۚ ثُمَّ تُوَفّٰى كُلُّ نَفْسٍ مَّا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُوْنَ
কোন নবীর পক্ষে আত্মসাৎকরণ শোভনীয় নয়। যে ব্যক্তি আত্মসাৎ করেছে, সে যা আত্মসাৎ করেছে তা নিয়ে কিয়ামতের দিন হাজির হবে; অনন্তর প্রত্যেক ব্যক্তি যা অর্জন করেছে তা পূর্ণরূপে প্রদত্ত হবে এবং তারা নির্যাতিত হবে না। (সূরা আলে ইমরান- ১৬১)
নবী ﷺ কর্তৃক বদ্দু‘আ করার জবাব :
لَيْسَ لَكَ مِنَ الْاَمْرِ شَيْءٌ اَوْ يَتُوْبَ عَلَيْهِمْ اَوْ يُعَذِّبَهُمْ فَاِنَّهُمْ ظَالِمُوْنَ – وَلِلّٰهِ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَرْضِؕ يَغْفِرُ لِمَنْ يَّشَآءُؕ وَيُعَذِّبُ مَنْ يَّشَآءُؕ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
তিনি (আল্লাহ) তাদেরকে ক্ষমা করেন অথবা শাস্তি প্রদান করেন- এ ব্যাপারে তোমার কোন কর্তৃত্ব নেই; নিশ্চয় তারা অত্যাচারী। আর নভোমন্ডলে যা রয়েছে ও ভূমন্ডলে যা আছে তা আল্লাহরই; তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন এবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি প্রদান করেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম করুণাময়। (সূরা আলে ইমরান- ১২৮, ১২৯)
ব্যাখ্যা : ওহুদ প্রান্তরে যুদ্ধ আরম্ভ হলে প্রথম আক্রমণেই কাফিরদের পরাজয় ঘটল। মুসলিমরা পলায়নরত কাফিরদের আসবাবপত্র সংগ্রহ করতে লাগল এবং গিরিপথ রক্ষী সৈন্যগণও আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রাঃ) এর নির্দেশ অমান্য করে চলে আসল। এদিকে গিরিপথ খালি পেয়ে কাফিররা পেছন দিক হতে প্রবল বেগে আক্রমণ করে বসল। ফলে হামযা (রাঃ) এর মতো বিশিষ্ট সাহাবীগণ শাহাদাতবরণ করেন এবং রাসূল ﷺ নিজেও আহত হন। অতঃপর প্রধান প্রধান সাহাবীগণ মুসলিম সৈন্যদেরকে দ্রুত একত্রিত করে বীর-বিক্রমে কাফিরদের উপর ঝাপিয়ে পড়েন এবং তাদেরকে রণাঙ্গণ থেকে পলায়ন করতে বাধ্য করেন। যুদ্ধ শেষে রাসূল ﷺ স্বীয় চাচা ও সাহাবীগণের লাশ দেখে অতিশয় মর্মাহত হয়ে কাফিরদের উদ্দেশ্যে বদ্দু‘আ করতে উদ্যত হলে এ আয়াতটি নাযিল হয়।
নবীর নির্দেশ অমান্য করা :
حَتّٰۤى اِذَا فَشِلْتُمْ وَتَنَازَعْتُمْ فِى الْاَمْرِ وَعَصَيْتُمْ مِّنْ ۢبَعْدِ مَاۤ اَرَاكُمْ مَّا تُحِبُّوْنَ
এমনকি যখন তোমরা ছত্রভঙ্গ হয়েছিলে ও কর্তব্য স্থির করার ব্যাপারে বিবাদে লিপ্ত হয়েছিলে এবং তোমরা যা ভালোবেসেছিলে, তা তিনি তোমাদেরকে দেখানোর পরও তাঁর আদেশের অবাধ্য হয়েছিলে।
(সূরা আলে ইমরান- ১৫২)
গনিমতের মাল সংগ্রহের লোভ :
مِنْكُمْ مَّنْ يُّرِيْدُ الدُّنْيَا وَمِنْكُمْ مَّنْ يُّرِيْدُ الْاٰخِرَةَۚ ثُمَّ صَرَفَكُمْ عَنْهُمْ لِيَبْتَلِيَكُمْۚ وَلَقَدْ عَفَا عَنْكُمْؕ وَاللهُ ذُوْ فَضْلٍ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ
তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ দুনিয়া কামনা করছিলে, আবার কেউ কেউ আখিরাত কামনা করছিলে। তারপর তিনি তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য বিরত রাখলেন। অতঃপর তোমাদেরকে ক্ষমা করলেন; (কেননা) আল্লাহ মুমিনদের প্রতি অনুগ্রহশীল। (সূরা আলে ইমরান- ১৫২)
যুদ্ধক্ষেত্রে মুসলিমদের ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়া :
اِذْ تُصْعِدُوْنَ وَلَا تَلْوُوْنَ عَلٰۤى اَحَدٍ وَّالرَّسُوْلُ يَدْعُوْكُمْ فِۤيْ اُخْرَاكُمْ
যখন তোমরা উপরের দিকে আরোহণ করে যাচ্ছিলে এবং কারো দিকে ফিরেও দেখছিলে না (ওহুদের যুদ্ধে কাফিরদের ভয়ে পাহাড়ে আরোহণপূর্বক পলায়ন করেছিলে); আর রাসূল তোমাদেরকে পেছন থেকে আহবান করছিলেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৩)
কিছু দুর্বলতার কারণে শয়তান এ পদস্খলন ঘটায় :
اِنَّ الَّذِيْنَ تَوَلَّوْا مِنْكُمْ يَوْمَ الْتَقَى الْجَمْعَانِ اِنَّمَا اسْتَزَلَّهُمُ الشَّيْطَانُ بِبَعْضِ مَا كَسَبُوْاۚ وَلَقَدْ عَفَا اللهُ عَنْهُمْؕ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ حَلِيْمٌ
যেদিন দু’টি বাহিনী একে অপরের মুখোমুখি হয়েছিল, সেদিন যারা (ময়দান থেকে) পলায়ন করেছিল, তাদের একাংশের অর্জিত কাজের জন্য শয়তানই তাদের পদস্খলন ঘটিয়ে দিয়েছিল। অতঃপর (তারা অনুতপ্ত হলে) আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দিলেন; নিশ্চয় আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম ধৈর্যশীল। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৫)
حَتّٰۤى اِذَا فَشِلْتُمْ وَتَنَازَعْتُمْ فِى الْاَمْرِ وَعَصَيْتُمْ مِّنْ ۢبَعْدِ مَاۤ اَرَاكُمْ مَّا تُحِبُّوْنَ
এমনকি যখন তোমরা ছত্রভঙ্গ হয়েছিলে ও কর্তব্য স্থির করার ব্যাপারে বিবাদে লিপ্ত হয়েছিলে এবং তোমরা যা ভালোবেসেছিলে, তা তিনি তোমাদেরকে দেখানোর পরও তাঁর আদেশের অবাধ্য হয়েছিলে।
(সূরা আলে ইমরান- ১৫২)
গনিমতের মাল সংগ্রহের লোভ :
مِنْكُمْ مَّنْ يُّرِيْدُ الدُّنْيَا وَمِنْكُمْ مَّنْ يُّرِيْدُ الْاٰخِرَةَۚ ثُمَّ صَرَفَكُمْ عَنْهُمْ لِيَبْتَلِيَكُمْۚ وَلَقَدْ عَفَا عَنْكُمْؕ وَاللهُ ذُوْ فَضْلٍ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ
তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ দুনিয়া কামনা করছিলে, আবার কেউ কেউ আখিরাত কামনা করছিলে। তারপর তিনি তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য বিরত রাখলেন। অতঃপর তোমাদেরকে ক্ষমা করলেন; (কেননা) আল্লাহ মুমিনদের প্রতি অনুগ্রহশীল। (সূরা আলে ইমরান- ১৫২)
যুদ্ধক্ষেত্রে মুসলিমদের ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়া :
اِذْ تُصْعِدُوْنَ وَلَا تَلْوُوْنَ عَلٰۤى اَحَدٍ وَّالرَّسُوْلُ يَدْعُوْكُمْ فِۤيْ اُخْرَاكُمْ
যখন তোমরা উপরের দিকে আরোহণ করে যাচ্ছিলে এবং কারো দিকে ফিরেও দেখছিলে না (ওহুদের যুদ্ধে কাফিরদের ভয়ে পাহাড়ে আরোহণপূর্বক পলায়ন করেছিলে); আর রাসূল তোমাদেরকে পেছন থেকে আহবান করছিলেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৩)
কিছু দুর্বলতার কারণে শয়তান এ পদস্খলন ঘটায় :
اِنَّ الَّذِيْنَ تَوَلَّوْا مِنْكُمْ يَوْمَ الْتَقَى الْجَمْعَانِ اِنَّمَا اسْتَزَلَّهُمُ الشَّيْطَانُ بِبَعْضِ مَا كَسَبُوْاۚ وَلَقَدْ عَفَا اللهُ عَنْهُمْؕ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ حَلِيْمٌ
যেদিন দু’টি বাহিনী একে অপরের মুখোমুখি হয়েছিল, সেদিন যারা (ময়দান থেকে) পলায়ন করেছিল, তাদের একাংশের অর্জিত কাজের জন্য শয়তানই তাদের পদস্খলন ঘটিয়ে দিয়েছিল। অতঃপর (তারা অনুতপ্ত হলে) আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দিলেন; নিশ্চয় আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম ধৈর্যশীল। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৫)
পরাজয়ের পর মুমিনদের প্রতি সান্ত্বনা :
وَلَا تَهِنُوْا وَلَا تَحْزَنُوْا وَاَنْتُمُ الْاَعْلَوْنَ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
তোমরা দুর্বল হয়ো না এবং চিন্তিত হয়ো না। যদি তোমরা বিশ্বাসী হও, তবে তোমরাই বিজয়ী হবে।
(সূরা আলে ইমরান- ১৩৯)
اَوَلَمَّاۤ اَصَابَتْكُمْ مُّصِيْبَةٌ قَدْ اَصَبْتُمْ مِّثْلَيْهَا قُلْتُمْ اَنّٰى هٰذَاؕ قُلْ هُوَ مِنْ عِنْدِ اَنْفُسِكُمْؕ اِنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
হ্যাঁ, যখন তোমাদের উপর বিপদ উপস্থিত হলো, বস্তুত তোমরাও তাদের প্রতি অনুরূপ দ্বিগুণ বিপদ উপস্থিত করেছিলে। তোমরা বলছিলে, এটা কোথা হতে এল? বলো, ওটা তোমাদের নিজেদের নিকট হতেই এসেছে; নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ের উপর সর্বশক্তিমান। (সূরা আলে ইমরান- ১৬৫)
ব্যাখ্যা : ওহুদ যুদ্ধের পরাজয়ের বিষয়টি নেতৃস্থানীয় সাহাবীগণ অবশ্যই যথার্থভাবে অবগত ছিলেন এবং তাঁদের কোন প্রকার বিভ্রান্তির শিকার হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। তবে সাধারণ মুসলিমরা মনে করছিলেন, আল্লাহর রাসূল যখন আমাদের সঙ্গে আছেন এবং আল্লাহও আমাদেরকে সাহায্য করছেন, তখন কোন অবস্থাতেই কাফিররা আমাদের উপর বিজয় লাভ করতে পারবে না। কিন্তু বাস্তবে বিপরীত অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ভীষণভাবে হতাশ হয়ে পড়েন। ফলে তারা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন, এ কী হলো? আমরা আল্লাহর দ্বীনের জন্য লড়তে গেলাম, আর তাঁর প্রতিশ্রুতি ও সাহায্য আমাদের সঙ্গে ছিল এবং তাঁর রাসূলও সশরীরে যুদ্ধের ময়দানে উপস্থিত ছিলেন- এরপরও আমরা পরাজিত হলাম? আর এমন লোকদের হাতে পরাজিত হলাম, যারা আল্লাহর দ্বীনকে দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে এসেছিল। মুসলিমদের এ হতাশা দূর করার জন্য এ আয়াত নাযিল হয়।
ইতোপূর্বে মুমিনরা এ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন :
وَكَاَيِّنْ مِّنْ نَّبِيٍّ قَاتَلَ مَعَهٗ رِبِّيُّوْنَ كَثِيْرٌۚ فَمَا وَهَنُوْا لِمَاۤ اَصَابَهُمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَمَا ضَعُفُوْا وَمَا اسْتَكَانُوْاؕ وَاللهُ يُحِبُّ الصَّابِرِيْنَ
এমন অনেক নবী ছিলেন, যাদের সহযোগে প্রভুভক্ত লোকেরা যুদ্ধ করেছিল এবং আল্লাহর পথে যা সংঘটিত হয়েছিল তাতে তারা নিরুৎসাহ হয়নি, শক্তিহীন হয়ে যায়নি এবং বিচলিতও হয়নি। আর আল্লাহ ধৈর্যশীলদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৪৬)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ একদিকে নিজেদের সৈন্য সংখ্যা ও যুদ্ধের সাজ-সরঞ্জামের স্বল্পতা এবং অন্যদিকে কাফিরদের বিপুল সংখ্যক সৈন্য ও সাজ-সরঞ্জামের প্রাচুর্য দেখেও তারা বাতিলের কাছে আত্মসমর্পণ করেনি।
মুনাফিক ও ইয়াহুদিদের চক্রান্তে না পড়ার নির্দেশ :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنْ تُطِيْعُوا الَّذِيْنَ كَفَرُوْا يَرُدُّوْكُمْ عَلٰۤى اَعْقَابِكُمْ فَتَنْقَلِبُوْا خَاسِرِيْنَ – بَلِ اللهُ مَوْلَاكُمْۚ وَهُوَ خَيْرُ النَّاصِرِيْنَ
হে মুমিনগণ! যারা অবিশ্বাস করেছে যদি তোমরা তাদের অনুসরণ কর, তবে তারা তোমাদেরকে পেছনে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। ফলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রত্যাবর্তিত হবে। বরং আল্লাহই তোমাদের অভিভাবক এবং তিনিই শ্রেষ্ঠতম সাহায্যকারী। (সূরা আলে ইমরান- ১৪৯, ১৫০)
শহীদদের ব্যাপারে মুনাফিকদের মতো কথা বলা নিষেধ :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَكُوْنُوْا كَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَقَالُوْا لِاِخْوَانِهِمْ اِذَا ضَرَبُوْا فِى الْاَرْضِ اَوْ كَانُوْا غُزًّى لَّوْ كَانُوْا عِنْدَنَا مَا مَاتُوْا وَمَا قُتِلُوْاۚ لِيَجْعَلَ اللهُ ذٰلِكَ حَسْرَةً فِيْ قُلُوْبِهِمْؕ وَاللهُ يُحْيِيْ وَيُمِيْتُؕ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
হে মুমিনগণ! যারা অবিশ্বাস করেছে, তোমরা তাদের মতো হয়ো না। যখন তাদের ভাইয়েরা পৃথিবীতে বিচরণ করে অথবা যুদ্ধে নিহত হয় তখন তারা বলে, যদি ওরা আমাদের নিকট থাকত তবে মৃত্যুমুখে পতিত হতো না অথবা নিহত হতো না। এভাবেই আল্লাহ তাদের অন্তরে দুঃখ সঞ্চার করেন এবং আল্লাহই জীবন ও মৃত্যু দান করেন। আর তোমরা যা করছ, আল্লাহ সে ব্যাপারে প্রত্যক্ষকারী। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৬)
শহীদদের ব্যাপারে মুনাফিকদের সমালোচনার জবাব :
اَلَّذِيْنَ قَالُوْا لِاِخْوَانِهِمْ وَقَعَدُوْا لَوْ اَطَاعُوْنَا مَا قُتِلُوْاؕ قُلْ فَادْرَءُوْا عَنْ اَنْفُسِكُمُ الْمَوْتَ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ
যারা ঘরে বসে স্বীয় ভাইদের সম্পর্কে বলছিল, যদি তারা আমাদের কথা মানত তবে তারা নিহত হতো না। তাদেরকে বলে দাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক তবে নিজেদেরকে মৃত্যু হতে রক্ষা করো। (সূরা আলে ইমরান- ১৬৮)
আল্লাহ শহীদদেরকে বিশেষ মর্যাদা দান করেছেন :
وَلَئِنْ قُتِلْتُمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ اَوْ مُتُّمْ لَمَغْفِرَةٌ مِّنَ اللهِ وَرَحْمَةٌ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُوْنَ – وَلَئِنْ مُّتُّمْ اَوْ قُتِلْتُمْ لَاِلَى اللهِ تُحْشَرُوْنَ
আর যদি তোমরা আল্লাহর পথে নিহত অথবা মৃত্যুমুখে পতিত হও, তবে আল্লাহর পক্ষ হতে রয়েছে ক্ষমা। আর তারা যা সঞ্চয় করেছে তদপেক্ষা তাঁর করুণাই অতি উত্তম। তাছাড়া যদি তোমরা মৃত্যুবরণ কর বা নিহত হও, তবে অবশ্যই তোমাদেরকে আল্লাহর দিকে একত্রিত করা হবে। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৭, ১৫৮)
وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِيْنَ قُتِلُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ اَمْوَاتًاؕ بَلْ اَحْيَآءٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُوْنَ – فَرِحِيْنَ بِمَاۤ اٰتَاهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٖ وَيَسْتَبْشِرُوْنَ بِالَّذِيْنَ لَمْ يَلْحَقُوْا بِهِمْ مِّنْ خَلْفِهِمْ اَلَّا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ – يَسْتَبْشِرُوْنَ بِنِعْمَةٍ مِّنَ اللهِ وَفَضْلٍ وَّاَنَّ اللهَ لَا يُضِيْعُ اَجْرَ الْمُؤْمِنِيْنَ
যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে, তাদেরকে মৃত হিসেবে ধারণা করো না; বরং তারা জীবিত, তারা তাদের প্রতিপালক হতে জীবিকাপ্রাপ্ত হয়। আল্লাহ তাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহ হতে যা দান করেছেন তাতেই তারা সন্তুষ্ট। আর যারা এখনো তাদের পেছনে রয়ে গেছে এবং যারা এখনো তাদের সাথে মিলিত হতে পারেনি, তাদের ব্যাপারেও এরা খুশি; কেননা এমন ধরনের লোকদের জন্য এখানে কোন ভয় নেই এবং তারা (সেদিন কোন রকম) চিন্তাও করবে না। তারা আল্লাহর পক্ষ হতে অনুগ্রহ ও নিয়ামত লাভ করার কারণে আনন্দিত হয়। নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্বাসীদের প্রতিদান বিনষ্ট করেন না। (সূরা আলে ইমরান, ১৬৯-১৭১)
وَلَا تَهِنُوْا وَلَا تَحْزَنُوْا وَاَنْتُمُ الْاَعْلَوْنَ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ
তোমরা দুর্বল হয়ো না এবং চিন্তিত হয়ো না। যদি তোমরা বিশ্বাসী হও, তবে তোমরাই বিজয়ী হবে।
(সূরা আলে ইমরান- ১৩৯)
اَوَلَمَّاۤ اَصَابَتْكُمْ مُّصِيْبَةٌ قَدْ اَصَبْتُمْ مِّثْلَيْهَا قُلْتُمْ اَنّٰى هٰذَاؕ قُلْ هُوَ مِنْ عِنْدِ اَنْفُسِكُمْؕ اِنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
হ্যাঁ, যখন তোমাদের উপর বিপদ উপস্থিত হলো, বস্তুত তোমরাও তাদের প্রতি অনুরূপ দ্বিগুণ বিপদ উপস্থিত করেছিলে। তোমরা বলছিলে, এটা কোথা হতে এল? বলো, ওটা তোমাদের নিজেদের নিকট হতেই এসেছে; নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ের উপর সর্বশক্তিমান। (সূরা আলে ইমরান- ১৬৫)
ব্যাখ্যা : ওহুদ যুদ্ধের পরাজয়ের বিষয়টি নেতৃস্থানীয় সাহাবীগণ অবশ্যই যথার্থভাবে অবগত ছিলেন এবং তাঁদের কোন প্রকার বিভ্রান্তির শিকার হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। তবে সাধারণ মুসলিমরা মনে করছিলেন, আল্লাহর রাসূল যখন আমাদের সঙ্গে আছেন এবং আল্লাহও আমাদেরকে সাহায্য করছেন, তখন কোন অবস্থাতেই কাফিররা আমাদের উপর বিজয় লাভ করতে পারবে না। কিন্তু বাস্তবে বিপরীত অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ভীষণভাবে হতাশ হয়ে পড়েন। ফলে তারা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন, এ কী হলো? আমরা আল্লাহর দ্বীনের জন্য লড়তে গেলাম, আর তাঁর প্রতিশ্রুতি ও সাহায্য আমাদের সঙ্গে ছিল এবং তাঁর রাসূলও সশরীরে যুদ্ধের ময়দানে উপস্থিত ছিলেন- এরপরও আমরা পরাজিত হলাম? আর এমন লোকদের হাতে পরাজিত হলাম, যারা আল্লাহর দ্বীনকে দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে এসেছিল। মুসলিমদের এ হতাশা দূর করার জন্য এ আয়াত নাযিল হয়।
ইতোপূর্বে মুমিনরা এ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন :
وَكَاَيِّنْ مِّنْ نَّبِيٍّ قَاتَلَ مَعَهٗ رِبِّيُّوْنَ كَثِيْرٌۚ فَمَا وَهَنُوْا لِمَاۤ اَصَابَهُمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَمَا ضَعُفُوْا وَمَا اسْتَكَانُوْاؕ وَاللهُ يُحِبُّ الصَّابِرِيْنَ
এমন অনেক নবী ছিলেন, যাদের সহযোগে প্রভুভক্ত লোকেরা যুদ্ধ করেছিল এবং আল্লাহর পথে যা সংঘটিত হয়েছিল তাতে তারা নিরুৎসাহ হয়নি, শক্তিহীন হয়ে যায়নি এবং বিচলিতও হয়নি। আর আল্লাহ ধৈর্যশীলদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৪৬)
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ একদিকে নিজেদের সৈন্য সংখ্যা ও যুদ্ধের সাজ-সরঞ্জামের স্বল্পতা এবং অন্যদিকে কাফিরদের বিপুল সংখ্যক সৈন্য ও সাজ-সরঞ্জামের প্রাচুর্য দেখেও তারা বাতিলের কাছে আত্মসমর্পণ করেনি।
মুনাফিক ও ইয়াহুদিদের চক্রান্তে না পড়ার নির্দেশ :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنْ تُطِيْعُوا الَّذِيْنَ كَفَرُوْا يَرُدُّوْكُمْ عَلٰۤى اَعْقَابِكُمْ فَتَنْقَلِبُوْا خَاسِرِيْنَ – بَلِ اللهُ مَوْلَاكُمْۚ وَهُوَ خَيْرُ النَّاصِرِيْنَ
হে মুমিনগণ! যারা অবিশ্বাস করেছে যদি তোমরা তাদের অনুসরণ কর, তবে তারা তোমাদেরকে পেছনে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। ফলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রত্যাবর্তিত হবে। বরং আল্লাহই তোমাদের অভিভাবক এবং তিনিই শ্রেষ্ঠতম সাহায্যকারী। (সূরা আলে ইমরান- ১৪৯, ১৫০)
শহীদদের ব্যাপারে মুনাফিকদের মতো কথা বলা নিষেধ :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَكُوْنُوْا كَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَقَالُوْا لِاِخْوَانِهِمْ اِذَا ضَرَبُوْا فِى الْاَرْضِ اَوْ كَانُوْا غُزًّى لَّوْ كَانُوْا عِنْدَنَا مَا مَاتُوْا وَمَا قُتِلُوْاۚ لِيَجْعَلَ اللهُ ذٰلِكَ حَسْرَةً فِيْ قُلُوْبِهِمْؕ وَاللهُ يُحْيِيْ وَيُمِيْتُؕ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
হে মুমিনগণ! যারা অবিশ্বাস করেছে, তোমরা তাদের মতো হয়ো না। যখন তাদের ভাইয়েরা পৃথিবীতে বিচরণ করে অথবা যুদ্ধে নিহত হয় তখন তারা বলে, যদি ওরা আমাদের নিকট থাকত তবে মৃত্যুমুখে পতিত হতো না অথবা নিহত হতো না। এভাবেই আল্লাহ তাদের অন্তরে দুঃখ সঞ্চার করেন এবং আল্লাহই জীবন ও মৃত্যু দান করেন। আর তোমরা যা করছ, আল্লাহ সে ব্যাপারে প্রত্যক্ষকারী। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৬)
শহীদদের ব্যাপারে মুনাফিকদের সমালোচনার জবাব :
اَلَّذِيْنَ قَالُوْا لِاِخْوَانِهِمْ وَقَعَدُوْا لَوْ اَطَاعُوْنَا مَا قُتِلُوْاؕ قُلْ فَادْرَءُوْا عَنْ اَنْفُسِكُمُ الْمَوْتَ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ
যারা ঘরে বসে স্বীয় ভাইদের সম্পর্কে বলছিল, যদি তারা আমাদের কথা মানত তবে তারা নিহত হতো না। তাদেরকে বলে দাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক তবে নিজেদেরকে মৃত্যু হতে রক্ষা করো। (সূরা আলে ইমরান- ১৬৮)
আল্লাহ শহীদদেরকে বিশেষ মর্যাদা দান করেছেন :
وَلَئِنْ قُتِلْتُمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ اَوْ مُتُّمْ لَمَغْفِرَةٌ مِّنَ اللهِ وَرَحْمَةٌ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُوْنَ – وَلَئِنْ مُّتُّمْ اَوْ قُتِلْتُمْ لَاِلَى اللهِ تُحْشَرُوْنَ
আর যদি তোমরা আল্লাহর পথে নিহত অথবা মৃত্যুমুখে পতিত হও, তবে আল্লাহর পক্ষ হতে রয়েছে ক্ষমা। আর তারা যা সঞ্চয় করেছে তদপেক্ষা তাঁর করুণাই অতি উত্তম। তাছাড়া যদি তোমরা মৃত্যুবরণ কর বা নিহত হও, তবে অবশ্যই তোমাদেরকে আল্লাহর দিকে একত্রিত করা হবে। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৭, ১৫৮)
وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِيْنَ قُتِلُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ اَمْوَاتًاؕ بَلْ اَحْيَآءٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُوْنَ – فَرِحِيْنَ بِمَاۤ اٰتَاهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٖ وَيَسْتَبْشِرُوْنَ بِالَّذِيْنَ لَمْ يَلْحَقُوْا بِهِمْ مِّنْ خَلْفِهِمْ اَلَّا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ – يَسْتَبْشِرُوْنَ بِنِعْمَةٍ مِّنَ اللهِ وَفَضْلٍ وَّاَنَّ اللهَ لَا يُضِيْعُ اَجْرَ الْمُؤْمِنِيْنَ
যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে, তাদেরকে মৃত হিসেবে ধারণা করো না; বরং তারা জীবিত, তারা তাদের প্রতিপালক হতে জীবিকাপ্রাপ্ত হয়। আল্লাহ তাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহ হতে যা দান করেছেন তাতেই তারা সন্তুষ্ট। আর যারা এখনো তাদের পেছনে রয়ে গেছে এবং যারা এখনো তাদের সাথে মিলিত হতে পারেনি, তাদের ব্যাপারেও এরা খুশি; কেননা এমন ধরনের লোকদের জন্য এখানে কোন ভয় নেই এবং তারা (সেদিন কোন রকম) চিন্তাও করবে না। তারা আল্লাহর পক্ষ হতে অনুগ্রহ ও নিয়ামত লাভ করার কারণে আনন্দিত হয়। নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্বাসীদের প্রতিদান বিনষ্ট করেন না। (সূরা আলে ইমরান, ১৬৯-১৭১)
ওহুদ যুদ্ধে আবদুল্লাহ ইবনে উবাই বিশ্বাসঘাতকতা করে মদিনা সনদের শর্তভঙ্গ করলে মহানবী ﷺ বনু নাযীরের মহল্লায় উপস্থিত হয়ে মুক্তিপণ দিতে অনুরোধ জানান। এমতাবস্থায় আমর বিন জাহ্শ নামক এক ইয়াহুদি মহানবী ﷺ কে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করে। সৌভাগ্যক্রমে মহানবী ﷺ এ চক্রান্তের কথা জানতে পেরে তাদেরকে মদিনা ত্যাগ করার নির্দেশ দেন। কিন্তু নির্দেশ অমান্য করে তারা আবদুল্লাহর নেতৃত্বে যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করলে মহানবী ﷺ তাদেরকে অবরুদ্ধ করতে বাধ্য হন। অবশেষে তাদেরকে ৪র্থ হিজরীর রবিঊল আওয়াল মাসে মদিনা হতে বহিষ্কার করেন। অতঃপর তারা মদিনা হতে বিতাড়িত হয়ে সিরিয়া ও খায়বারে গিয়ে বসবাস করতে থাকে।
মুনাফিকরা বনু নাযীরকে মদিনা ছাড়তে বাধা দেয় :
اَلَمْ تَرَ اِلَى الَّذِيْنَ نَافَقُوْا يَقُوْلُوْنَ لِاِخْوَانِهِمُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنْ اَهْلِ الْكِتَابِ لَئِنْ اُخْرِجْتُمْ لَنَخْرُجَنَّ مَعَكُمْ وَلَا نُطِيْعُ فِيكُمْ اَحَدًا اَبَدًا وَاِنْ قُوْتِلْتُمْ لَنَنْصُرَنَّكُمْؕ وَاللهُ يَشْهَدُ اِنَّهُمْ لَكَاذِبُوْنَ
তুমি কি মুনাফিকদেরকে দেখনি? তারা আহলে কিতাবদের মধ্যে যারা কুফরী করেছে তাদের ঐ সব সঙ্গীকে বলে- তোমরা যদি বহিষ্কৃত হও, তবে অবশ্যই আমরাও তোমাদের সাথে দেশত্যাগী হব এবং আমরা তোমাদের ব্যাপারে কখনো কারো কথা মান্য করব না। আর যদি তোমরা আক্রান্ত হও, তবে অবশ্যই আমরা তোমাদেরকে সাহায্য করব; কিন্তু আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, তারা মিথ্যাবাদী। (সূরা হাশর- ১১)
মুনাফিকরা তাদেরকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছিল :
لَئِنْ اُخْرِجُوْا لَا يَخْرُجُوْنَ مَعَهُمْۚ وَلَئِنْ قُوْتِلُوْا لَا يَنْصُرُوْنَهُمْۚ وَلَئِنْ نَّصَرُوْهُمْ لَيُوَلُّنَّ الْاَدْبَارَ ثُمَّ لَا يُنْصَرُوْنَ
বস্তুত তারা বহিষ্কার হলে মুনাফিকরা তাদের সাথে দেশ ত্যাগ করবে না এবং তারা আক্রান্ত হলে মুনাফিকরা তাদেরকে সাহায্যও করবে না। আর যদি তারা সাহায্য করতে আসেও, তবে অবশ্যই তারা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে। অতঃপর তারা আর কোন সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না। (সূরা হাশর- ১২)
তারা শয়তানের মতোই প্রতারণামূলক আশ্বাস দিয়েছিল :
كَمَثَلِ الشَّيْطَانِ اِذْ قَالَ لِلْاِنْسَانِ اكْفُرْۚ فَلَمَّا كَفَرَ قَالَ اِنِّيْ بَرِيْٓءٌ مِّنْكَ اِنِّۤيْ اَخَافُ اللهَ رَبَّ الْعَالَمِيْنَ
তাদের দৃষ্টান্ত শয়তানের মতো- যে মানুষকে বলে, কুফরী করো। অতঃপর যখন সে কুফরী করে তখন শয়তান বলে- তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই, আমি জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করি। (সূরা হাশর- ১৬)
তাদের বাগানের গাছপালা কেটে ফেলা হয় :
مَا قَطَعْتُمْ مِّنْ لِّيْنَةٍ اَوْ تَرَكْتُمُوْهَا قَآئِمَةً عَلٰۤى اُصُوْلِهَا فَبِاِذْنِ اللهِ وَلِيُخْزِىَ الْفَاسِقِيْنَ
তোমরা যে খেজুর গাছগুলো কেটেছ এবং যেগুলো কান্ডের উপর স্থির রেখে দিয়েছ, তা তো আল্লাহর অনুমতিক্রমেই করেছ। এটা এজন্য যে, আল্লাহ পাপাচারীদেরকে লাঞ্ছিত করবেন। (সূরা হাশর- ৫)
ব্যাখ্যা : বনু নাযীর গোত্রের দুর্গ অবরোধকালে তাদের আত্মসমর্পণের জন্য তাদের বাগানগুলো নষ্ট করার অনুমতি থাকলেও কোন কোন মুসলিম এ মনে করে সেগুলো নষ্ট করেননি যে, অবরোধ শেষে এগুলো তো মুসলিমদেরই হবে। আবার কেউ কেউ ইয়াহুদিদের মনে কষ্ট দেয়ার জন্য কিছু গাছ কেটে দিয়েছিল। তখন আল্লাহ তা‘আলা উক্ত আয়াত নাযিল করে উভয় দলের কার্যক্রমকেই সঠিক বলে ঘোষণা করেন।
প্রথম আক্রমণেই তাদেরকে বহিষ্কার করা হয় :
هُوَ الَّذِيْۤ اَخْرَجَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنْ اَهْلِ الْكِتَابِ مِنْ دِيَارِهِمْ لِاَوَّلِ الْحَشْرِؕ مَا ظَنَنْتُمْ اَنْ يَّخْرُجُوْا وَظَنُّوْاۤ اَنَّهُمْ مَّانِعَتُهُمْ حُصُوْنُهُمْ مِّنَ اللهِ
তিনিই সেই সত্তা, যিনি আহলে কিতাবদের মধ্যে যারা কাফির তাদেরকে প্রথম সমাবেশেই তাদের আবাসভূমি হতে বিতাড়িত করেছিলেন। অথচ তোমরা কল্পনাও করনি যে, তারা নির্বাসিত হবে। তারা মনে করেছিল, তাদের দুর্ভেদ্য দুর্গগুলো তাদেরকে আল্লাহ হতে রক্ষা করবে। (সূরা হাশর- ২)
তাদের ঘরবাড়ি ভেঙ্গে তছনছ করে ফেলা হয় :
فَاَتَاهُمُ اللهُ مِنْ حَيْثُ لَمْ يَحْتَسِبُوْاۗ وَقَذَفَ فِيْ قُلُوْبِهِمُ الرُّعْبَ يُخْرِبُوْنَ بُيُوْتَهُمْ بِاَيْدِيْهِمْ وَاَيْدِى الْمُؤْمِنِيْنَۗ فَاعْتَبِرُوْا يَاۤ اُولِى الْاَبْصَارِ
কিন্তু আল্লাহ তাদের উপর এমন এক দিক হতে চড়াও হলেন, যা ছিল তাদের ধারণাতীত এবং তিনি তাদের অন্তরে ভয়ের সঞ্চার করলেন। ফলে তারা তাদের বাড়িঘর ধ্বংস করে ফেলল- নিজেদের হাতে এবং মুমিনদের হাতেও। অতএব হে চক্ষুষ্মান ব্যক্তিগণ! তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো। (সূরা হাশর- ২)
বহিষ্কার না হলেও তারা শাস্তি পেত :
وَلَوْلَاۤ اَنْ كَتَبَ اللهُ عَلَيْهِمُ الْجَلَآءَ لَعَذَّبَهُمْ فِى الدُّنْيَاؕ وَلَهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ عَذَابُ النَّارِ
আল্লাহ তাদের নির্বাসনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করলেও তাদেরকে পৃথিবীতে (অন্য) শাস্তি দিতেন; আর পরকালে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আযাব। (সূরা হাশর- ৩)
কারণ তারা ইসলামের বিরোধিতা করেছে :
ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ شَآقُّوا اللهَ وَرَسُوْلَهٗۚ وَمَنْ يُّشَآقِّ اللهَ فَاِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
এটা এজন্য যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করেছিল। আর কেউ যদি আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ করে, তবে (জেনে রেখো) নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি দানে খুবই কঠোর। (সূরা হাশর- ৪)
কষ্ট ছাড়াই তাদের সম্পদ মুসলিমদের হাতে চলে আসে :
وَمَاۤ اَفَآءَ اللهُ عَلٰى رَسُوْلِهٖ مِنْهُمْ فَمَاۤ اَوْجَفْتُمْ عَلَيْهِ مِنْ خَيْلٍ وَّلَا رِكَابٍ وَّلٰكِنَّ اللهَ يُسَلِّطُ رُسُلَهٗ عَلٰى مَنْ يَّشَآءُؕ وَاللهُ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
আল্লাহ তাদের (ইয়াহুদিদের) নিকট হতে যে ফাই (সম্পদ) তাঁর রাসূলকে দান করেছেন, তার জন্য তোমরা ঘোড়া কিংবা উষ্ট্রে আরোহণ করনি। আল্লাহ যার উপর ইচ্ছা তাঁর রাসূলদেরকে বিজয়ী করেন; আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা হাশর- ৬)
এ সম্পদ বণ্টনের নিয়ম বলে দেয়া হয় :
مَاۤ اَفَآءَ اللهُ عَلٰى رَسُوْلِهٖ مِنْ اَهْلِ الْقُرٰى فَلِلّٰهِ وَلِلرَّسُوْلِ وَلِذِى الْقُرْبٰى وَالْيَتَامٰى وَالْمَسَاكِيْنِ وَابْنِ السَّبِيْلِ كَيْ لَا يَكُوْنَ دُوْلَةً ۢبَيْنَ الْاَغْنِيَآءِ مِنْكُمْؕ وَمَاۤ اٰتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا وَاتَّقُوا اللهَؕ اِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
আল্লাহ এই জনপদবাসীর নিকট হতে তাঁর রাসূলকে যা কিছু দিয়েছেন, তা আল্লাহর, তাঁর রাসূলের, (রাসূল ﷺ এর) স্বজনদের, ইয়াতীমদের, অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরদের জন্য বরাদ্দ। (এ পদ্ধতি এজন্য যে) যাতে তোমাদের মধ্যে যারা ধনী শুধু তাদের মধ্যেই সম্পদ আবর্তন না করে। অতএব রাসূল তোমাদেরকে যা দেয়, তা গ্রহণ করো এবং যা হতে নিষেধ করে, তা হতে বিরত থাকো। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো; নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি দানে খুবই কঠোর। (সূরা হাশর- ৭)
মুনাফিকরা বনু নাযীরকে মদিনা ছাড়তে বাধা দেয় :
اَلَمْ تَرَ اِلَى الَّذِيْنَ نَافَقُوْا يَقُوْلُوْنَ لِاِخْوَانِهِمُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنْ اَهْلِ الْكِتَابِ لَئِنْ اُخْرِجْتُمْ لَنَخْرُجَنَّ مَعَكُمْ وَلَا نُطِيْعُ فِيكُمْ اَحَدًا اَبَدًا وَاِنْ قُوْتِلْتُمْ لَنَنْصُرَنَّكُمْؕ وَاللهُ يَشْهَدُ اِنَّهُمْ لَكَاذِبُوْنَ
তুমি কি মুনাফিকদেরকে দেখনি? তারা আহলে কিতাবদের মধ্যে যারা কুফরী করেছে তাদের ঐ সব সঙ্গীকে বলে- তোমরা যদি বহিষ্কৃত হও, তবে অবশ্যই আমরাও তোমাদের সাথে দেশত্যাগী হব এবং আমরা তোমাদের ব্যাপারে কখনো কারো কথা মান্য করব না। আর যদি তোমরা আক্রান্ত হও, তবে অবশ্যই আমরা তোমাদেরকে সাহায্য করব; কিন্তু আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, তারা মিথ্যাবাদী। (সূরা হাশর- ১১)
মুনাফিকরা তাদেরকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছিল :
لَئِنْ اُخْرِجُوْا لَا يَخْرُجُوْنَ مَعَهُمْۚ وَلَئِنْ قُوْتِلُوْا لَا يَنْصُرُوْنَهُمْۚ وَلَئِنْ نَّصَرُوْهُمْ لَيُوَلُّنَّ الْاَدْبَارَ ثُمَّ لَا يُنْصَرُوْنَ
বস্তুত তারা বহিষ্কার হলে মুনাফিকরা তাদের সাথে দেশ ত্যাগ করবে না এবং তারা আক্রান্ত হলে মুনাফিকরা তাদেরকে সাহায্যও করবে না। আর যদি তারা সাহায্য করতে আসেও, তবে অবশ্যই তারা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে। অতঃপর তারা আর কোন সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না। (সূরা হাশর- ১২)
তারা শয়তানের মতোই প্রতারণামূলক আশ্বাস দিয়েছিল :
كَمَثَلِ الشَّيْطَانِ اِذْ قَالَ لِلْاِنْسَانِ اكْفُرْۚ فَلَمَّا كَفَرَ قَالَ اِنِّيْ بَرِيْٓءٌ مِّنْكَ اِنِّۤيْ اَخَافُ اللهَ رَبَّ الْعَالَمِيْنَ
তাদের দৃষ্টান্ত শয়তানের মতো- যে মানুষকে বলে, কুফরী করো। অতঃপর যখন সে কুফরী করে তখন শয়তান বলে- তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই, আমি জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করি। (সূরা হাশর- ১৬)
তাদের বাগানের গাছপালা কেটে ফেলা হয় :
مَا قَطَعْتُمْ مِّنْ لِّيْنَةٍ اَوْ تَرَكْتُمُوْهَا قَآئِمَةً عَلٰۤى اُصُوْلِهَا فَبِاِذْنِ اللهِ وَلِيُخْزِىَ الْفَاسِقِيْنَ
তোমরা যে খেজুর গাছগুলো কেটেছ এবং যেগুলো কান্ডের উপর স্থির রেখে দিয়েছ, তা তো আল্লাহর অনুমতিক্রমেই করেছ। এটা এজন্য যে, আল্লাহ পাপাচারীদেরকে লাঞ্ছিত করবেন। (সূরা হাশর- ৫)
ব্যাখ্যা : বনু নাযীর গোত্রের দুর্গ অবরোধকালে তাদের আত্মসমর্পণের জন্য তাদের বাগানগুলো নষ্ট করার অনুমতি থাকলেও কোন কোন মুসলিম এ মনে করে সেগুলো নষ্ট করেননি যে, অবরোধ শেষে এগুলো তো মুসলিমদেরই হবে। আবার কেউ কেউ ইয়াহুদিদের মনে কষ্ট দেয়ার জন্য কিছু গাছ কেটে দিয়েছিল। তখন আল্লাহ তা‘আলা উক্ত আয়াত নাযিল করে উভয় দলের কার্যক্রমকেই সঠিক বলে ঘোষণা করেন।
প্রথম আক্রমণেই তাদেরকে বহিষ্কার করা হয় :
هُوَ الَّذِيْۤ اَخْرَجَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنْ اَهْلِ الْكِتَابِ مِنْ دِيَارِهِمْ لِاَوَّلِ الْحَشْرِؕ مَا ظَنَنْتُمْ اَنْ يَّخْرُجُوْا وَظَنُّوْاۤ اَنَّهُمْ مَّانِعَتُهُمْ حُصُوْنُهُمْ مِّنَ اللهِ
তিনিই সেই সত্তা, যিনি আহলে কিতাবদের মধ্যে যারা কাফির তাদেরকে প্রথম সমাবেশেই তাদের আবাসভূমি হতে বিতাড়িত করেছিলেন। অথচ তোমরা কল্পনাও করনি যে, তারা নির্বাসিত হবে। তারা মনে করেছিল, তাদের দুর্ভেদ্য দুর্গগুলো তাদেরকে আল্লাহ হতে রক্ষা করবে। (সূরা হাশর- ২)
তাদের ঘরবাড়ি ভেঙ্গে তছনছ করে ফেলা হয় :
فَاَتَاهُمُ اللهُ مِنْ حَيْثُ لَمْ يَحْتَسِبُوْاۗ وَقَذَفَ فِيْ قُلُوْبِهِمُ الرُّعْبَ يُخْرِبُوْنَ بُيُوْتَهُمْ بِاَيْدِيْهِمْ وَاَيْدِى الْمُؤْمِنِيْنَۗ فَاعْتَبِرُوْا يَاۤ اُولِى الْاَبْصَارِ
কিন্তু আল্লাহ তাদের উপর এমন এক দিক হতে চড়াও হলেন, যা ছিল তাদের ধারণাতীত এবং তিনি তাদের অন্তরে ভয়ের সঞ্চার করলেন। ফলে তারা তাদের বাড়িঘর ধ্বংস করে ফেলল- নিজেদের হাতে এবং মুমিনদের হাতেও। অতএব হে চক্ষুষ্মান ব্যক্তিগণ! তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো। (সূরা হাশর- ২)
বহিষ্কার না হলেও তারা শাস্তি পেত :
وَلَوْلَاۤ اَنْ كَتَبَ اللهُ عَلَيْهِمُ الْجَلَآءَ لَعَذَّبَهُمْ فِى الدُّنْيَاؕ وَلَهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ عَذَابُ النَّارِ
আল্লাহ তাদের নির্বাসনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করলেও তাদেরকে পৃথিবীতে (অন্য) শাস্তি দিতেন; আর পরকালে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আযাব। (সূরা হাশর- ৩)
কারণ তারা ইসলামের বিরোধিতা করেছে :
ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ شَآقُّوا اللهَ وَرَسُوْلَهٗۚ وَمَنْ يُّشَآقِّ اللهَ فَاِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
এটা এজন্য যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করেছিল। আর কেউ যদি আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ করে, তবে (জেনে রেখো) নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি দানে খুবই কঠোর। (সূরা হাশর- ৪)
কষ্ট ছাড়াই তাদের সম্পদ মুসলিমদের হাতে চলে আসে :
وَمَاۤ اَفَآءَ اللهُ عَلٰى رَسُوْلِهٖ مِنْهُمْ فَمَاۤ اَوْجَفْتُمْ عَلَيْهِ مِنْ خَيْلٍ وَّلَا رِكَابٍ وَّلٰكِنَّ اللهَ يُسَلِّطُ رُسُلَهٗ عَلٰى مَنْ يَّشَآءُؕ وَاللهُ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
আল্লাহ তাদের (ইয়াহুদিদের) নিকট হতে যে ফাই (সম্পদ) তাঁর রাসূলকে দান করেছেন, তার জন্য তোমরা ঘোড়া কিংবা উষ্ট্রে আরোহণ করনি। আল্লাহ যার উপর ইচ্ছা তাঁর রাসূলদেরকে বিজয়ী করেন; আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা হাশর- ৬)
এ সম্পদ বণ্টনের নিয়ম বলে দেয়া হয় :
مَاۤ اَفَآءَ اللهُ عَلٰى رَسُوْلِهٖ مِنْ اَهْلِ الْقُرٰى فَلِلّٰهِ وَلِلرَّسُوْلِ وَلِذِى الْقُرْبٰى وَالْيَتَامٰى وَالْمَسَاكِيْنِ وَابْنِ السَّبِيْلِ كَيْ لَا يَكُوْنَ دُوْلَةً ۢبَيْنَ الْاَغْنِيَآءِ مِنْكُمْؕ وَمَاۤ اٰتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا وَاتَّقُوا اللهَؕ اِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
আল্লাহ এই জনপদবাসীর নিকট হতে তাঁর রাসূলকে যা কিছু দিয়েছেন, তা আল্লাহর, তাঁর রাসূলের, (রাসূল ﷺ এর) স্বজনদের, ইয়াতীমদের, অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরদের জন্য বরাদ্দ। (এ পদ্ধতি এজন্য যে) যাতে তোমাদের মধ্যে যারা ধনী শুধু তাদের মধ্যেই সম্পদ আবর্তন না করে। অতএব রাসূল তোমাদেরকে যা দেয়, তা গ্রহণ করো এবং যা হতে নিষেধ করে, তা হতে বিরত থাকো। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো; নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি দানে খুবই কঠোর। (সূরা হাশর- ৭)
কুরাইশরা ওহুদ যুদ্ধে সাময়িকভাবে জয়লাভ করলেও এতে তাদের আশানুরূপ সাফল্য অর্জিত হয়নি। তারা মক্কার সাথে মদিনাকে অমত্মর্ভুক্ত করার জন্য এবং তাদের বাণিজ্য পথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কোন সেনাবাহিনী মদিনায় রেখে যায়নি। ফলে কুরাইশদের যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করার সঙ্গে সঙ্গে মুসলিমগণ নিজেদের সংগঠিত করে পূর্বের তুলনায় অধিকতর শক্তিশালী হয়ে উঠে। মদিনায় মুসলিমদের এ শক্তি বৃদ্ধিতে মক্কার কুরাইশরা ভীত সন্ত্রসত্ম হয়ে পড়ে। তারা মনে করে, মুসলিমদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে তাদের আর্থসামাজিক ও ধর্মীয় সুযোগসুবিধা চিরতরে নষ্ট হয়ে যাবে। তাই তারা শেষবারের মতো যুদ্ধের সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করল। ৬২৭ খ্রিস্টাব্দের ৩১ই মার্চ, (৫ম হিজরী, শাওয়াল মাস) আবু সুফিয়ান কুরাইশ, ইয়াহুদি ও বেদুঈনদের একটি সম্মিলিত বাহিনী প্রস্তুত করে ১০,০০০ সৈন্যসহ মদিনার দিকে অগ্রসর হয়। অপরদিকে মহানবী ﷺ ৩,০০০ সৈন্য সংগ্রহ করে এ সম্মিলিত বাহিনীকে প্রতিরোধ করার উপায় উদ্ভাবনের লক্ষ্যে পরামর্শ সভা আহবান করেন। সভায় পারস্যবাসী সালমান ফারসী (রাঃ) এর পরামর্শ গৃহীত হয়। প্রসত্মাব অনুযায়ী, শহরের চতুর্দিকের অরক্ষিত স্থানে পরিখা খনন করা হয়। মূলত পরিখা অথবা খন্দক হতেই এ যুদ্ধের নামকরণ করা হয়েছে ‘খন্দকের যুদ্ধ’। অতঃপর তারা মদিনা আক্রমণ করতে এসে আত্মরক্ষার এ অভিনব কৌশল দেখে খুবই বিস্মিত হয় এবং আপ্রাণ চেষ্টা করেও মদিনায় প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয়। এভাবে তিন সপ্তাহের অধিককাল অবস্থান করে অবশেষে পরাজয় বরণ করে নেয় এবং বেদুঈন, ইয়াহুদি ও বিধর্মী কুরাইশদের এ বিশাল সম্মিলিত শক্তিও ধ্বংস হয়ে যায়। পরিখার যুদ্ধ ইসলামী ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। কুরাইশরা এতদিন ধরে যে আক্রমণকারীর ভূমিকা গ্রহণ করে আসছিল, এবার তার বিলুপ্তি ঘটে। এ যুদ্ধে কুরাইশদের সামরিক শক্তির দুর্বলতা প্রকাশ পায়, তাদের সম্পদ নিঃশেষ হয়ে যায়, সম্মান বিনষ্ট হয়ে যায় এবং মিত্রশক্তিরা ঘৃণায় তাদের দল ত্যাগ করে চলে যায়। অপরদিকে এ যুদ্ধ মহানবী ﷺ তথা মুসলিমদের পদমর্যাদা আরো বৃদ্ধি করে দেয়। শত্রুদের কবল হতে মদিনাকে রক্ষা করায় মদিনাবাসীগণ মুহাম্মাদ ﷺ কে একচ্ছত্র অধিপতি বলে সম্মান করতে আরম্ভ করে। মুসলিমদের প্রতিপক্ষের বিরাট সৈন্য বাহিনীর উপর এ বিজয় পার্শ্ববর্তী জাতির উপরও ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং স্বেচ্ছায় তারা মুসলিমদের মিত্রতে পরিণত হতে থাকে। ফলে ইসলাম পার্শ্ববর্তী জাতিসমূহের মধ্যেও দ্রুত প্রসার লাভ করতে থাকে।
শত্রু বাহিনী মদিনাকে পুরোপুরিভাবে ঘেরাও করে ফেলে :
اِذْ جَآءُوْكُمْ مِّنْ فَوْقِكُمْ وَمِنْ اَسْفَلَ مِنْكُمْ وَاِذْ زَاغَتِ الْاَبْصَارُ وَبَلَغَتِ الْقُلُوْبُ الْحَنَاجِرَ وَتَظُنُّوْنَ بِاللهِ الظُّنُوْنَا
স্মরণ করো, যখন তারা তোমাদের উপর দিক থেকে ও নিম্ন দিক থেকে তোমাদের উপর আক্রমণ করেছিল এবং যখন তোমাদের চক্ষু বিস্ফোরিত হয়েছিল, এমনকি প্রাণ বের হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছিল। এমতাবস্থায় তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে নানা রকম ধারণা করতে শুরু করেছিলে। (সূরা আহযাব- ১০)
মুসলিমরা চরম বিপদ ও পরীক্ষার সম্মুখীন হয় :
هُنَالِكَ ابْتُلِيَ الْمُؤْمِنُوْنَ وَزُلْزِلُوْا زِلْزَالًا شَدِيْدًا
তখন মুমিনদেরকে পরীক্ষা করা হয়েছিল এবং তারা ভীষণভাবে প্রকম্পিত হয়ে পড়েছিল। (সূরা আহযাব- ১১)
শত্রু বাহিনী মদিনাকে পুরোপুরিভাবে ঘেরাও করে ফেলে :
اِذْ جَآءُوْكُمْ مِّنْ فَوْقِكُمْ وَمِنْ اَسْفَلَ مِنْكُمْ وَاِذْ زَاغَتِ الْاَبْصَارُ وَبَلَغَتِ الْقُلُوْبُ الْحَنَاجِرَ وَتَظُنُّوْنَ بِاللهِ الظُّنُوْنَا
স্মরণ করো, যখন তারা তোমাদের উপর দিক থেকে ও নিম্ন দিক থেকে তোমাদের উপর আক্রমণ করেছিল এবং যখন তোমাদের চক্ষু বিস্ফোরিত হয়েছিল, এমনকি প্রাণ বের হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছিল। এমতাবস্থায় তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে নানা রকম ধারণা করতে শুরু করেছিলে। (সূরা আহযাব- ১০)
মুসলিমরা চরম বিপদ ও পরীক্ষার সম্মুখীন হয় :
هُنَالِكَ ابْتُلِيَ الْمُؤْمِنُوْنَ وَزُلْزِلُوْا زِلْزَالًا شَدِيْدًا
তখন মুমিনদেরকে পরীক্ষা করা হয়েছিল এবং তারা ভীষণভাবে প্রকম্পিত হয়ে পড়েছিল। (সূরা আহযাব- ১১)
তারা বিজয়ের ওয়াদাকে ধোঁকা মনে করল :
وَاِذْ يَقُوْلُ الْمُنَافِقُوْنَ وَالَّذِيْنَ فِيْ قُلُوْبِهِمْ مَّرَضٌ مَّا وَعَدَنَا اللهُ وَرَسُوْلُهٗۤ اِلَّا غُرُوْرًا
স্মরণ করো, যখন মুনাফিকরা এবং যাদের অন্তরে রোগ ছিল তারা বলেছিল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আমাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। (সূরা আহযাব- ১২)
একদল যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে পালিয়ে গেল, আরেক দল মিথ্যা বাহানা জুড়ে পালাতে চাইল :
وَاِذْ قَالَتْ طَّآئِفَةٌ مِّنْهُمْ يَاۤ اَهْلَ يَثْرِبَ لَا مُقَامَ لَكُمْ فَارْجِعُوْاۚ وَيَسْتَاْذِنُ فَرِيْقٌ مِّنْهُمُ النَّبِيَّ يَقُوْلُوْنَ اِنَّ بُيُوْتَنَا عَوْرَةٌؕ وَمَا هِيَ بِعَوْرَةٍۚ اِنْ يُّرِيْدُوْنَ اِلَّا فِرَارًا
তাদের মধ্য থেকে একদল বলেছিল, হে ইয়াসরিববাসী! এখানে তোমাদের টিকে থাকার মতো কোন স্থান নেই, অতএব তোমরা ফিরে যাও। আর তাদের মধ্যে একদল নবীর কাছে অব্যাহতি চেয়ে বলেছিল, আমাদের বাড়িঘর অরক্ষিত। প্রকৃতপক্ষে তা অরক্ষিত ছিল না, বরং তারা পালানোর ইচ্ছা পোষণ করেছিল। (সূরা আহযাব- ১৩)
অথচ তারা পালাবে না বলে ওয়াদা করেছিল :
وَلَقَدْ كَانُوْا عَاهَدُوا اللهَ مِنْ قَبْلُ لَا يُوَلُّوْنَ الْاَدْبَارَؕ وَكَانَ عَهْدُ اللهِ مَسْئُوْلًا
অথচ ইতোপূর্বে তারাই আল্লাহর সাথে শপথ করেছিল যে, তারা পিছু হটবে না। (জেনে রেখো) আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকারের জবাবদিহি করতেই হবে। (সূরা আহযাব- ১৫)
কতক লোক বাড়িতে বসে অন্যদেরকে যুদ্ধে যেতে বাধা দেয় :
قَدْ يَعْلَمُ اللهُ الْمُعَوِّقِيْنَ مِنْكُمْ وَالْقَآئِلِيْنَ لِاِخْوَانِهِمْ هَلُمَّ اِلَيْنَاۚ وَلَا يَاْتُوْنَ الْبَاْسَ اِلَّا قَلِيْلًا
আল্লাহ খুব ভালো করে জানেন যে, তোমাদের মধ্যে কারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে বাধা দেয় এবং কারা তাদের ভাইদেরকে বলে, ‘আমাদের কাছে এসো’; তারা খুব কমই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। (সূরা আহযাব- ১৮)
শত্রুপক্ষ তাদেরকে ডাক দিলে তারা ঠিকই সেদিকে চলে যেত :
وَلَوْ دُخِلَتْ عَلَيْهِمْ مِّنْ اَقْطَارِهَا ثُمَّ سُئِلُوا الْفِتْنَةَ لَاٰتَوْهَا وَمَا تَلَبَّثُوْا بِهَاۤ اِلَّا يَسِيْرًا
আর যদি শত্রুরা নগরীর চারদিক থেকে প্রবেশ করে বিদ্রোহের জন্য তাদেরকে প্ররোচিত করত, তবে তারা তৎক্ষণাৎ তাই করত এবং তারা সেথায় খুব অল্পই অবস্থান করত। (সূরা আহযাব- ১৪)
তারা মুসলিমদেরকে সহযোগিতা করতে কৃপণতা করে :
اَشِحَّةً عَلَيْكُمْؕ فَاِذَا جَآءَ الْخَوْفُ رَاَيْتَهُمْ يَنْظُرُوْنَ اِلَيْكَ تَدُوْرُ اَعْيُنُهُمْ كَالَّذِىْ يُغْشٰى عَلَيْهِ مِنَ الْمَوْتِ
তারা তোমাদের প্রতি কার্পণ্য করে। আর যখন কোন ভয়ের কারণ সামনে আসে, তখন তুমি তাদেরকে দেখতে পাবে যে, তারা মৃত্যুর ভয়ে অচেতন ব্যক্তির ন্যায় চোখ উল্টিয়ে তোমার দিকে তাকিয়ে আছে। (সূরা আহযাব- ১৯)
বিপদ চলে গেলে গনিমতের লোভে ধারাল কথা বলে :
فَاِذَا ذَهَبَ الْخَوْفُ سَلَقُوْكُمْ بِاَلْسِنَةٍ حِدَادٍ اَشِحَّةً عَلَى الْخَيْرِؕ اُولٰٓئِكَ لَمْ يُؤْمِنُوْا فَاَحْبَطَ اللهُ اَعْمَالَهُمْؕ وَكَانَ ذٰلِكَ عَلَى اللهِ يَسِيْرًا
অতঃপর যখন সে ভয় চলে যায়, তখন তারা ধনসম্পদের লোভে তীব্র ভাষায় তোমাদেরকে আক্রমণ করে। মূলত তারাই ঈমান আনেনি; অতএব আল্লাহ তাদের আমলসমূহ ব্যর্থ করে দিয়েছেন। আর এরূপ করা আল্লাহর জন্য খুবই সহজ। (সূরা আহযাব- ১৯)
তারা দূরে বসে থেকে যুদ্ধের খবর শুনার অপেক্ষা করে :
يَحْسَبُوْنَ الْاَحْزَابَ لَمْ يَذْهَبُوْاۚ وَاِنْ يَّاْتِ الْاَحْزَابُ يَوَدُّوْا لَوْ اَنَّهُمْ بَادُوْنَ فِى الْاَعْرَابِ يَسْاَلُوْنَ عَنْ اَنْۢبَآئِكُمْؕ وَلَوْ كَانُوْا فِيْكُمْ مَّا قَاتَلُوْاۤ اِلَّا قَلِيْلًا
তারা ধারণা করে যে, এখনও সম্মিলিত শত্রুবাহিনী চলে যায়নি। আর যদি সে বাহিনী পুনরায় এসে পড়ে, তবে তারা মনে করবে যে, কত ভালো হতো যদি তারা মরুবাসীদের মধ্য থেকে তোমাদের সংবাদ জেনে নিত! (তাছাড়া) তারা যদি তোমাদের সাথে থেকেও যেত, তবুও তারা খুব অল্পসংখ্যক লোকই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করত। (সূরা আহযাব- ২০)
তাদের প্রতি সতর্কবাণী :
قُلْ لَّنْ يَّنْفَعَكُمُ الْفِرَارُ اِنْ فَرَرْتُمْ مِّنَ الْمَوْتِ اَوِ الْقَتْلِ وَاِذًا لَّا تُمَتَّعُوْنَ اِلَّا قَلِيْلًا – قُلْ مَنْ ذَا الَّذِيْ يَعْصِمُكُمْ مِّنَ اللهِ اِنْ اَرَادَ بِكُمْ سُوْٓءًا اَوْ اَرَادَ بِكُمْ رَحْمَةً ؕ وَلَا يَجِدُوْنَ لَهُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ وَلِيًّا وَّلَا نَصِيْرًا
আপনি বলে দিন, তোমরা যদি মৃত্যু অথবা হত্যার ভয়ে পলায়ন কর, তবে সে পলায়ন তোমাদের কোন উপকারে আসবে না; তখন তোমাদেরকে খুব অল্পই ভোগ করতে দেয়া হবে। বলুন, যদি তিনি (আল্লাহ) তোমাদের কোন ক্ষতি করতে ইচ্ছা করেন, তবে এমন কে আছে যে তোমাদেরকে আল্লাহ হতে রক্ষা করতে পারবে? অথবা যদি তিনি তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করতে ইচ্ছা করেন (তবে এমন কে আছে, যে তাঁর অনুগ্রহকে রোধ করতে পারে)? এমতাবস্থায় তারা আল্লাহ ব্যতীত নিজেদের জন্য অন্য কোন বন্ধু বা কোন সাহায্যকারীও পাবে না। (সূরা আহযাব- ১৬, ১৭)
নবী ﷺ এর আদর্শকে গ্রহণ করার নির্দেশ :
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيْ رَسُوْلِ اللهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَنْ كَانَ يَرْجُوا اللهَ وَالْيَوْمَ الْاٰخِرَ وَذَكَرَ اللهَ كَثِيْرًا
তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও কিয়ামতের দিনকে ভয় করে এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করে, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূলের মধ্যে তাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ। (সূরা আহযাব- ২১)
ব্যাখ্যা : যে প্রেক্ষাপটে এ আয়াতটি নাযিল হয়েছে সে দৃষ্টিতে বিচার করলে বলা যায়, যারা আহযাব যুদ্ধে পিঠ বাঁচানোর নীতি অবলম্বন করছিল, তাদেরকে শিক্ষা দেয়ার জন্য নবী ﷺ এর কর্মধারাকে এখানে আদর্শ হিসেবে পেশ করা হয়েছে। তাদেরকে বলা হচ্ছে, তোমরা ছিলে ঈমান, ইসলাম ও রাসূলের আনুগত্যের দাবীদার। তোমাদের দেখা উচিত ছিল, তোমরা যে রাসূলের অনুসারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়েছ তিনি এ অবস্থায় কোন্ ধরনের নীতি অবলম্বন করেছিলেন। যদি কোন দলের নেতা নিজেই নিরাপদ থাকার নীতি অবলম্বন করেন, বিপদের সময় নিজেই পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকেন, তাহলে তার অনুসারীদের পক্ষ থেকে এ দুর্বলতাগুলোর প্রকাশ যুক্তিসংগত হতে পারে। কিন্তু এখানে তো রাসূল ﷺ এর অবস্থা এই ছিল যে, অন্যদের কাছে তিনি যে কষ্ট স্বীকার করার জন্য দাবী জানান তিনি নিজেও সে কষ্ট স্বীকার করার ব্যাপারে সবার সাথে শরীক ছিলেন। এমন কোন কষ্ট ছিল না, যা অন্যরা সহ্য করেছিল কিন্তু তিনি করেননি। খন্দক খননকারীদের দলে তিনি নিজে শামিল ছিলেন। ক্ষুধা ও অন্যান্য কষ্ট সহ্য করার ক্ষেত্রে একজন সাধারণ মুসলিমের সাথে তিনি সমভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। অবরোধকালে তিনি সর্বক্ষণ যুদ্ধের ময়দানে হাজির ছিলেন এবং এক মুহূর্তের জন্যও শত্রুদের সামনে থেকে সরে যাননি। তিনি নিজের সন্তান ও পরিবারবর্গের হেফাজতের জন্য এমন কোন বিশেষ ব্যবস্থা করেননি, যা অন্য মুসলিমদের জন্য করেননি। যে মহান উদ্দেশ্যে তিনি মুসলিমদের কাছ থেকে ত্যাগ ও কুরবানীর দাবী করছিলেন, সে উদ্দেশ্যে সবার চেয়ে বেশি হারে নিজের সবকিছু ত্যাগ করতে প্রস্তুত ছিলেন। তাই যে কেউ তাঁর অনুসরণের দাবীদার ছিল, তাকে এ আদর্শ দেখে তাঁরই অনুসরণ করা উচিত ছিল। পরিবেশ ও পরিস্থিতি অনুযায়ী এ ছিল আয়াতের মূলকথা। কিন্তু এর শব্দগুলো ব্যাপক অর্থবোধক। কাজেই এ আয়াতের দাবী হচ্ছে, মুসলিমরা সকল বিষয়েই তাঁর (রাসূল ﷺ এর) জীবনকে নিজেদের জন্য আদর্শ মনে করবে এবং সে অনুযায়ী নিজেদের চরিত্র ও জীবন গড়ে তুলবে।
وَاِذْ يَقُوْلُ الْمُنَافِقُوْنَ وَالَّذِيْنَ فِيْ قُلُوْبِهِمْ مَّرَضٌ مَّا وَعَدَنَا اللهُ وَرَسُوْلُهٗۤ اِلَّا غُرُوْرًا
স্মরণ করো, যখন মুনাফিকরা এবং যাদের অন্তরে রোগ ছিল তারা বলেছিল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আমাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। (সূরা আহযাব- ১২)
একদল যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে পালিয়ে গেল, আরেক দল মিথ্যা বাহানা জুড়ে পালাতে চাইল :
وَاِذْ قَالَتْ طَّآئِفَةٌ مِّنْهُمْ يَاۤ اَهْلَ يَثْرِبَ لَا مُقَامَ لَكُمْ فَارْجِعُوْاۚ وَيَسْتَاْذِنُ فَرِيْقٌ مِّنْهُمُ النَّبِيَّ يَقُوْلُوْنَ اِنَّ بُيُوْتَنَا عَوْرَةٌؕ وَمَا هِيَ بِعَوْرَةٍۚ اِنْ يُّرِيْدُوْنَ اِلَّا فِرَارًا
তাদের মধ্য থেকে একদল বলেছিল, হে ইয়াসরিববাসী! এখানে তোমাদের টিকে থাকার মতো কোন স্থান নেই, অতএব তোমরা ফিরে যাও। আর তাদের মধ্যে একদল নবীর কাছে অব্যাহতি চেয়ে বলেছিল, আমাদের বাড়িঘর অরক্ষিত। প্রকৃতপক্ষে তা অরক্ষিত ছিল না, বরং তারা পালানোর ইচ্ছা পোষণ করেছিল। (সূরা আহযাব- ১৩)
অথচ তারা পালাবে না বলে ওয়াদা করেছিল :
وَلَقَدْ كَانُوْا عَاهَدُوا اللهَ مِنْ قَبْلُ لَا يُوَلُّوْنَ الْاَدْبَارَؕ وَكَانَ عَهْدُ اللهِ مَسْئُوْلًا
অথচ ইতোপূর্বে তারাই আল্লাহর সাথে শপথ করেছিল যে, তারা পিছু হটবে না। (জেনে রেখো) আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকারের জবাবদিহি করতেই হবে। (সূরা আহযাব- ১৫)
কতক লোক বাড়িতে বসে অন্যদেরকে যুদ্ধে যেতে বাধা দেয় :
قَدْ يَعْلَمُ اللهُ الْمُعَوِّقِيْنَ مِنْكُمْ وَالْقَآئِلِيْنَ لِاِخْوَانِهِمْ هَلُمَّ اِلَيْنَاۚ وَلَا يَاْتُوْنَ الْبَاْسَ اِلَّا قَلِيْلًا
আল্লাহ খুব ভালো করে জানেন যে, তোমাদের মধ্যে কারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে বাধা দেয় এবং কারা তাদের ভাইদেরকে বলে, ‘আমাদের কাছে এসো’; তারা খুব কমই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। (সূরা আহযাব- ১৮)
শত্রুপক্ষ তাদেরকে ডাক দিলে তারা ঠিকই সেদিকে চলে যেত :
وَلَوْ دُخِلَتْ عَلَيْهِمْ مِّنْ اَقْطَارِهَا ثُمَّ سُئِلُوا الْفِتْنَةَ لَاٰتَوْهَا وَمَا تَلَبَّثُوْا بِهَاۤ اِلَّا يَسِيْرًا
আর যদি শত্রুরা নগরীর চারদিক থেকে প্রবেশ করে বিদ্রোহের জন্য তাদেরকে প্ররোচিত করত, তবে তারা তৎক্ষণাৎ তাই করত এবং তারা সেথায় খুব অল্পই অবস্থান করত। (সূরা আহযাব- ১৪)
তারা মুসলিমদেরকে সহযোগিতা করতে কৃপণতা করে :
اَشِحَّةً عَلَيْكُمْؕ فَاِذَا جَآءَ الْخَوْفُ رَاَيْتَهُمْ يَنْظُرُوْنَ اِلَيْكَ تَدُوْرُ اَعْيُنُهُمْ كَالَّذِىْ يُغْشٰى عَلَيْهِ مِنَ الْمَوْتِ
তারা তোমাদের প্রতি কার্পণ্য করে। আর যখন কোন ভয়ের কারণ সামনে আসে, তখন তুমি তাদেরকে দেখতে পাবে যে, তারা মৃত্যুর ভয়ে অচেতন ব্যক্তির ন্যায় চোখ উল্টিয়ে তোমার দিকে তাকিয়ে আছে। (সূরা আহযাব- ১৯)
বিপদ চলে গেলে গনিমতের লোভে ধারাল কথা বলে :
فَاِذَا ذَهَبَ الْخَوْفُ سَلَقُوْكُمْ بِاَلْسِنَةٍ حِدَادٍ اَشِحَّةً عَلَى الْخَيْرِؕ اُولٰٓئِكَ لَمْ يُؤْمِنُوْا فَاَحْبَطَ اللهُ اَعْمَالَهُمْؕ وَكَانَ ذٰلِكَ عَلَى اللهِ يَسِيْرًا
অতঃপর যখন সে ভয় চলে যায়, তখন তারা ধনসম্পদের লোভে তীব্র ভাষায় তোমাদেরকে আক্রমণ করে। মূলত তারাই ঈমান আনেনি; অতএব আল্লাহ তাদের আমলসমূহ ব্যর্থ করে দিয়েছেন। আর এরূপ করা আল্লাহর জন্য খুবই সহজ। (সূরা আহযাব- ১৯)
তারা দূরে বসে থেকে যুদ্ধের খবর শুনার অপেক্ষা করে :
يَحْسَبُوْنَ الْاَحْزَابَ لَمْ يَذْهَبُوْاۚ وَاِنْ يَّاْتِ الْاَحْزَابُ يَوَدُّوْا لَوْ اَنَّهُمْ بَادُوْنَ فِى الْاَعْرَابِ يَسْاَلُوْنَ عَنْ اَنْۢبَآئِكُمْؕ وَلَوْ كَانُوْا فِيْكُمْ مَّا قَاتَلُوْاۤ اِلَّا قَلِيْلًا
তারা ধারণা করে যে, এখনও সম্মিলিত শত্রুবাহিনী চলে যায়নি। আর যদি সে বাহিনী পুনরায় এসে পড়ে, তবে তারা মনে করবে যে, কত ভালো হতো যদি তারা মরুবাসীদের মধ্য থেকে তোমাদের সংবাদ জেনে নিত! (তাছাড়া) তারা যদি তোমাদের সাথে থেকেও যেত, তবুও তারা খুব অল্পসংখ্যক লোকই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করত। (সূরা আহযাব- ২০)
তাদের প্রতি সতর্কবাণী :
قُلْ لَّنْ يَّنْفَعَكُمُ الْفِرَارُ اِنْ فَرَرْتُمْ مِّنَ الْمَوْتِ اَوِ الْقَتْلِ وَاِذًا لَّا تُمَتَّعُوْنَ اِلَّا قَلِيْلًا – قُلْ مَنْ ذَا الَّذِيْ يَعْصِمُكُمْ مِّنَ اللهِ اِنْ اَرَادَ بِكُمْ سُوْٓءًا اَوْ اَرَادَ بِكُمْ رَحْمَةً ؕ وَلَا يَجِدُوْنَ لَهُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ وَلِيًّا وَّلَا نَصِيْرًا
আপনি বলে দিন, তোমরা যদি মৃত্যু অথবা হত্যার ভয়ে পলায়ন কর, তবে সে পলায়ন তোমাদের কোন উপকারে আসবে না; তখন তোমাদেরকে খুব অল্পই ভোগ করতে দেয়া হবে। বলুন, যদি তিনি (আল্লাহ) তোমাদের কোন ক্ষতি করতে ইচ্ছা করেন, তবে এমন কে আছে যে তোমাদেরকে আল্লাহ হতে রক্ষা করতে পারবে? অথবা যদি তিনি তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করতে ইচ্ছা করেন (তবে এমন কে আছে, যে তাঁর অনুগ্রহকে রোধ করতে পারে)? এমতাবস্থায় তারা আল্লাহ ব্যতীত নিজেদের জন্য অন্য কোন বন্ধু বা কোন সাহায্যকারীও পাবে না। (সূরা আহযাব- ১৬, ১৭)
নবী ﷺ এর আদর্শকে গ্রহণ করার নির্দেশ :
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيْ رَسُوْلِ اللهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَنْ كَانَ يَرْجُوا اللهَ وَالْيَوْمَ الْاٰخِرَ وَذَكَرَ اللهَ كَثِيْرًا
তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও কিয়ামতের দিনকে ভয় করে এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করে, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূলের মধ্যে তাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ। (সূরা আহযাব- ২১)
ব্যাখ্যা : যে প্রেক্ষাপটে এ আয়াতটি নাযিল হয়েছে সে দৃষ্টিতে বিচার করলে বলা যায়, যারা আহযাব যুদ্ধে পিঠ বাঁচানোর নীতি অবলম্বন করছিল, তাদেরকে শিক্ষা দেয়ার জন্য নবী ﷺ এর কর্মধারাকে এখানে আদর্শ হিসেবে পেশ করা হয়েছে। তাদেরকে বলা হচ্ছে, তোমরা ছিলে ঈমান, ইসলাম ও রাসূলের আনুগত্যের দাবীদার। তোমাদের দেখা উচিত ছিল, তোমরা যে রাসূলের অনুসারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়েছ তিনি এ অবস্থায় কোন্ ধরনের নীতি অবলম্বন করেছিলেন। যদি কোন দলের নেতা নিজেই নিরাপদ থাকার নীতি অবলম্বন করেন, বিপদের সময় নিজেই পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকেন, তাহলে তার অনুসারীদের পক্ষ থেকে এ দুর্বলতাগুলোর প্রকাশ যুক্তিসংগত হতে পারে। কিন্তু এখানে তো রাসূল ﷺ এর অবস্থা এই ছিল যে, অন্যদের কাছে তিনি যে কষ্ট স্বীকার করার জন্য দাবী জানান তিনি নিজেও সে কষ্ট স্বীকার করার ব্যাপারে সবার সাথে শরীক ছিলেন। এমন কোন কষ্ট ছিল না, যা অন্যরা সহ্য করেছিল কিন্তু তিনি করেননি। খন্দক খননকারীদের দলে তিনি নিজে শামিল ছিলেন। ক্ষুধা ও অন্যান্য কষ্ট সহ্য করার ক্ষেত্রে একজন সাধারণ মুসলিমের সাথে তিনি সমভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। অবরোধকালে তিনি সর্বক্ষণ যুদ্ধের ময়দানে হাজির ছিলেন এবং এক মুহূর্তের জন্যও শত্রুদের সামনে থেকে সরে যাননি। তিনি নিজের সন্তান ও পরিবারবর্গের হেফাজতের জন্য এমন কোন বিশেষ ব্যবস্থা করেননি, যা অন্য মুসলিমদের জন্য করেননি। যে মহান উদ্দেশ্যে তিনি মুসলিমদের কাছ থেকে ত্যাগ ও কুরবানীর দাবী করছিলেন, সে উদ্দেশ্যে সবার চেয়ে বেশি হারে নিজের সবকিছু ত্যাগ করতে প্রস্তুত ছিলেন। তাই যে কেউ তাঁর অনুসরণের দাবীদার ছিল, তাকে এ আদর্শ দেখে তাঁরই অনুসরণ করা উচিত ছিল। পরিবেশ ও পরিস্থিতি অনুযায়ী এ ছিল আয়াতের মূলকথা। কিন্তু এর শব্দগুলো ব্যাপক অর্থবোধক। কাজেই এ আয়াতের দাবী হচ্ছে, মুসলিমরা সকল বিষয়েই তাঁর (রাসূল ﷺ এর) জীবনকে নিজেদের জন্য আদর্শ মনে করবে এবং সে অনুযায়ী নিজেদের চরিত্র ও জীবন গড়ে তুলবে।
এ কঠিন বিপদ তাদের ঈমানকে আরো বৃদ্ধি করে দিল :
وَلَمَّا رَاَى الْمُؤْمِنُوْنَ الْاَحْزَابَ قَالُوْا هٰذَا مَا وَعَدَنَا اللهُ وَرَسُوْلُهٗ وَصَدَقَ اللهُ وَرَسُوْلُهٗ وَمَا زَادَهُمْ اِلَّاۤ اِيْمَانًا وَّتَسْلِيْمًا
যখন মুমিনরা সম্মিলিত শত্রুবাহিনীকে দেখতে পেল তখন তারা বলে উঠল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তো আমাদেরকে এরই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং তাঁর রাসূল সত্যই বলেছেন। এতে তাদের ঈমান ও আনুগত্য আরো বৃদ্ধি পেল। (সূরা আহযাব- ২২)
ব্যাখ্যা : যখন যুদ্ধের চরম মুহূর্ত উপস্থিত হলো তখন মুনাফিক ও মুমিন উভয় দলেরই আল্লাহর অঙ্গীকারের কথা মনে পড়ে। এতে মুনাফিকদের কুফরী প্রকাশ পেয়ে গিয়েছিল এবং মুমিনদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পেয়েছিল। মুনাফিকরা বলেছিল, ‘‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ আমাদের সাথে যেসব অঙ্গীকার করেছিলেন, সেগুলো মিথ্যা।’’ কিন্তু প্রকৃত মুসলিমরা বিপদাপদের পাহাড় দেখেও নড়ে যাওয়া এবং আল্লাহর হুকুম পালন করা থেকে দূরে পালিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে তারা আরো বেশি দৃঢ় প্রত্যয় সহকারে নিজেদের সবকিছু তাঁর হাতে সোপর্দ করতে উদ্যোগী হয়ে উঠল। কেননা এ অঙ্গীকার এমন নয় যে, ঈমান আনার সাথে সাথেই তোমরা দুনিয়ার শাসন কর্তৃত্ব লাভ করবে এবং ফেরেশতারা এসে তোমাদের মাথায় রাজমুকুট পরিয়ে দেবে। বরং এ অঙ্গীকার হলো, কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে তোমাদের এগিয়ে যেতে হবে, বিপদের পাহাড় তোমাদের মাথায় ভেঙে পড়বে, তোমাদের চরম ত্যাগ স্বীকার করতে হবে, তবেই কোন এক পর্যায়ে আল্লাহর অনুগ্রহ তোমাদের প্রতি বর্ষিত হবে এবং তোমাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতের এমনসব সাফল্য দান করা হবে, যেগুলো দেয়ার অঙ্গীকার আল্লাহ মুমিন বান্দাদের সাথে করেছিলেন। উক্ত প্রেক্ষাপট থেকে একটি বিষয় শিক্ষণীয় যে, মুমিনের আন্তরিকতা যতবেশি বৃদ্ধি পেতে থাকে, আনুগত্য তত পূর্ণতা লাভ করে। তাদের মাঝে আল্লাহর সত্য দ্বীন প্রতিষ্ঠা করার চিন্তা-চেতনা, আকাঙ্ক্ষা ও আত্মনিমগ্নতা যত বৃদ্ধি পেতে থাকে, সে অনুপাতে তাদের ঈমানও বেড়ে যেতে থাকে। এভাবে এক সময় মানুষ সিদ্দীক তথা পূর্ণ সত্যবাদীর মর্যাদায় উন্নীত হয়।
তারা সংগ্রাম করার ওয়াদা বাস্তবায়ন করেন :
مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ رِجَالٌ صَدَقُوْا مَا عَاهَدُوا اللهَ عَلَيْهِ
মুমিনদের মধ্যে কতক লোক এমনও আছে, যারা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে। (সূরা আহযাব- ২৩)
ব্যাখ্যা : আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার চাচা আনাস ইবনে নায্র বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। তিনি (রাসূল সাঃ কে) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! মুশরিকদের সঙ্গে আপনি প্রথম যে যুদ্ধটি করলেন তাতে আমি অংশগ্রহণ করতে পারিনি। যদি কোন সময় আল্লাহ আমাকে মুশরিকদের বিপক্ষে যুদ্ধের সুযোগ দান করেন তবে তিনি দেখবেন, আমি কীভাবে যুদ্ধ করি। অতঃপর যেদিন ওহুদের যুদ্ধ আরম্ভ হলো এবং মুসলিমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ল, তখন আনাস ইবনে নায্র বলছিলেন, হে আল্লাহ! এদের (অর্থাৎ রাসূলের সাহাবীদের) কৃতকর্মের জন্য আমি তোমার কাছে অক্ষমতা প্রকাশ করছি; আর ওদের অর্থাৎ মুশরিকদের কার্যকলাপের সাথে আমার সম্পর্কহীনতা ঘোষণা করছি। অতঃপর তিনি অগ্রসর হলে সা‘দ ইবনে মু‘আয (রাঃ) এর সাথে তাঁর দেখা হলো। তখন তিনি তাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে সা‘দ ইবনে মু‘আয! নায্রের (আনাসের পিতা) প্রতিপালকের শপথ করে বলছি, এ মুহূর্তে জান্নাতই আমার একমাত্র আশা। আমি ওহুদের দিক থেকে জান্নাতের সুগন্ধি পাচ্ছি। পরবর্তীকালে সা‘দ (রাঃ) রাসূল ﷺ কে বলেছিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আনাস ইবনে নায্র যেমনটি করেছে, আমি তো তেমনটি করতে সক্ষম হইনি। আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) বলেন, যুদ্ধের পর আমরা তাঁকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি এবং তাঁর দেহে তলোয়ার, বর্শা ও তীরের আশিটিরও বেশি জখম দেখতে পেয়েছি। মুশরিকরা নাক, কান কেটে ও চোখ উপড়িয়ে তাঁর লাশকে আকার-আকৃতি পরিবর্তন করে ফেলার কারণে তাঁর বোন ছাড়া কেউ তাঁকে চিনতে পারেনি। সে আঙ্গুলের আগা দেখে তাঁকে চিনতে সক্ষম হয়েছিল। আনাস (রাঃ) বলেন, আমাদের ধারণা কুরআনের এ বাণীটি তাঁর ও অনুরূপ ব্যক্তিদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। (সহীহ বুখারী, হা/২৮০৫)
কেউ শহীদ হন এবং কেউ শাহাদাতের অপেক্ষায় থাকেন :
فَمِنْهُمْ مَّنْ قَضٰى نَحْبَهٗ وَمِنْهُمْ مَّنْ يَّنْتَظِرُؗ وَمَا بَدَّلُوْا تَبْدِيْلًا
তাদের মধ্যে কেউ কেউ শাহাদাতবরণ করেছে এবং কেউ কেউ অপেক্ষায় রয়েছে। তারা স্বীয় সংকল্প একটুও পরিবর্তন করেনি। (সূরা আহযাব- ২৩)
যে যেমন প্রতিদান পাওয়ার যোগ্য আল্লাহ তাকে তেমনই দিয়ে থাকেন :
لِيَجْزِيَ اللهُ الصَّادِقِيْنَ بِصِدْقِهِمْ وَيُعَذِّبَ الْمُنَافِقِيْنَ اِنْ شَآءَ اَوْ يَتُوْبَ عَلَيْهِمْؕ اِنَّ اللهَ كَانَ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا
এটা এজন্য যে, যাতে আল্লাহ সত্যবাদীদেরকে তাদের সত্যবাদীতার জন্য প্রতিদান দেন এবং ইচ্ছা করলে মুনাফিকদেরকে শাস্তি দেন অথবা তাদেরকে তাওবা করার সুযোগ দেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা আহযাব- ২৪)
পরে এক রাতে প্রচন্ড ঘূর্ণিঝড় শত্রুদেরকে আক্রমণ করে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اذْكُرُوْا نِعْمَةَ اللهِ عَلَيْكُمْ اِذْ جَآءَتْكُمْ جُنُوْدٌ فَاَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ رِيْحًا وَّجُنُوْدًا لَّمْ تَرَوْهَاؕ وَكَانَ اللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرًا
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহকে স্মরণ করো, যখন শত্রুবাহিনী তোমাদের উপর আক্রমণ করেছিল, তখন আমি তাদের উপর এক প্রচন্ড বায়ু প্রেরণ করেছিলাম। আর এমন একটি সৈন্য দল (প্রেরণ করেছিলাম) যাদেরকে তোমরা দেখতে পাওনি। (মনে রেখো) তোমরা যা কর আল্লাহ তা দেখেন। (সূরা আহযাব- ৯)
ব্যাখ্যা : শত্রুসেনারা যখন মদিনাবাসীর উপর চড়াও হয়েছিল ঠিক তখনই এ ধূলিঝড় আসেনি। বরং অবরোধের পর এ ধূলিঝড় আসে। অদৃশ্য সেনাবাহিনী বলতে এমনসব গোপন শক্তিকে বুঝানো হয়েছে, যা মানুষের বিভিন্ন বিষয়াবলিতে আল্লাহর ইশারায় কাজ করতে থাকে এবং মানুষ তার খবরই রাখে না। অধিকাংশ সময় এসব গোপন শক্তির কার্যকারিতা চূড়ান্ত প্রমাণিত হয়। এসব শক্তি যেহেতু আল্লাহর ফেরেশতাদের অধীনে কাজ করে, তাই সেনাবাহিনী অর্থে ফেরেশতাদেরকেও ধরা যেতে পারে; যদিও এখানে ফেরেশতাদের কথা স্পষ্টভাবে বলা হয়নি।
শত্রুরা বিফল হয়ে ময়দান ছেড়ে চলে যায় :
وَرَدَّ اللهُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِغَيْظِهِمْ لَمْ يَنَالُوْا خَيْرًا
আল্লাহ কাফিরদেরকে তাদের ক্রোধ সহকারে ফিরিয়ে দিলেন; ফলে তারা কোন কল্যাণ অর্জন করতে পারেনি। (সূরা আহযাব- ২৫)
আল্লাহই মুমিনদের জন্য যথেষ্ট হয়ে যান :
وَكَفَى اللهُ الْمُؤْمِنِيْنَ الْقِتَالَؕ وَكَانَ اللهُ قَوِيًّا عَزِيْزًا
আর যুদ্ধক্ষেত্রে মুমিনদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। আল্লাহ মহাক্ষমতাবান ও প্রবল প্রতাপশালী। (সূরা আহযাব- ২৫)
وَلَمَّا رَاَى الْمُؤْمِنُوْنَ الْاَحْزَابَ قَالُوْا هٰذَا مَا وَعَدَنَا اللهُ وَرَسُوْلُهٗ وَصَدَقَ اللهُ وَرَسُوْلُهٗ وَمَا زَادَهُمْ اِلَّاۤ اِيْمَانًا وَّتَسْلِيْمًا
যখন মুমিনরা সম্মিলিত শত্রুবাহিনীকে দেখতে পেল তখন তারা বলে উঠল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তো আমাদেরকে এরই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং তাঁর রাসূল সত্যই বলেছেন। এতে তাদের ঈমান ও আনুগত্য আরো বৃদ্ধি পেল। (সূরা আহযাব- ২২)
ব্যাখ্যা : যখন যুদ্ধের চরম মুহূর্ত উপস্থিত হলো তখন মুনাফিক ও মুমিন উভয় দলেরই আল্লাহর অঙ্গীকারের কথা মনে পড়ে। এতে মুনাফিকদের কুফরী প্রকাশ পেয়ে গিয়েছিল এবং মুমিনদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পেয়েছিল। মুনাফিকরা বলেছিল, ‘‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ আমাদের সাথে যেসব অঙ্গীকার করেছিলেন, সেগুলো মিথ্যা।’’ কিন্তু প্রকৃত মুসলিমরা বিপদাপদের পাহাড় দেখেও নড়ে যাওয়া এবং আল্লাহর হুকুম পালন করা থেকে দূরে পালিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে তারা আরো বেশি দৃঢ় প্রত্যয় সহকারে নিজেদের সবকিছু তাঁর হাতে সোপর্দ করতে উদ্যোগী হয়ে উঠল। কেননা এ অঙ্গীকার এমন নয় যে, ঈমান আনার সাথে সাথেই তোমরা দুনিয়ার শাসন কর্তৃত্ব লাভ করবে এবং ফেরেশতারা এসে তোমাদের মাথায় রাজমুকুট পরিয়ে দেবে। বরং এ অঙ্গীকার হলো, কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে তোমাদের এগিয়ে যেতে হবে, বিপদের পাহাড় তোমাদের মাথায় ভেঙে পড়বে, তোমাদের চরম ত্যাগ স্বীকার করতে হবে, তবেই কোন এক পর্যায়ে আল্লাহর অনুগ্রহ তোমাদের প্রতি বর্ষিত হবে এবং তোমাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতের এমনসব সাফল্য দান করা হবে, যেগুলো দেয়ার অঙ্গীকার আল্লাহ মুমিন বান্দাদের সাথে করেছিলেন। উক্ত প্রেক্ষাপট থেকে একটি বিষয় শিক্ষণীয় যে, মুমিনের আন্তরিকতা যতবেশি বৃদ্ধি পেতে থাকে, আনুগত্য তত পূর্ণতা লাভ করে। তাদের মাঝে আল্লাহর সত্য দ্বীন প্রতিষ্ঠা করার চিন্তা-চেতনা, আকাঙ্ক্ষা ও আত্মনিমগ্নতা যত বৃদ্ধি পেতে থাকে, সে অনুপাতে তাদের ঈমানও বেড়ে যেতে থাকে। এভাবে এক সময় মানুষ সিদ্দীক তথা পূর্ণ সত্যবাদীর মর্যাদায় উন্নীত হয়।
তারা সংগ্রাম করার ওয়াদা বাস্তবায়ন করেন :
مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ رِجَالٌ صَدَقُوْا مَا عَاهَدُوا اللهَ عَلَيْهِ
মুমিনদের মধ্যে কতক লোক এমনও আছে, যারা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে। (সূরা আহযাব- ২৩)
ব্যাখ্যা : আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার চাচা আনাস ইবনে নায্র বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। তিনি (রাসূল সাঃ কে) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! মুশরিকদের সঙ্গে আপনি প্রথম যে যুদ্ধটি করলেন তাতে আমি অংশগ্রহণ করতে পারিনি। যদি কোন সময় আল্লাহ আমাকে মুশরিকদের বিপক্ষে যুদ্ধের সুযোগ দান করেন তবে তিনি দেখবেন, আমি কীভাবে যুদ্ধ করি। অতঃপর যেদিন ওহুদের যুদ্ধ আরম্ভ হলো এবং মুসলিমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ল, তখন আনাস ইবনে নায্র বলছিলেন, হে আল্লাহ! এদের (অর্থাৎ রাসূলের সাহাবীদের) কৃতকর্মের জন্য আমি তোমার কাছে অক্ষমতা প্রকাশ করছি; আর ওদের অর্থাৎ মুশরিকদের কার্যকলাপের সাথে আমার সম্পর্কহীনতা ঘোষণা করছি। অতঃপর তিনি অগ্রসর হলে সা‘দ ইবনে মু‘আয (রাঃ) এর সাথে তাঁর দেখা হলো। তখন তিনি তাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে সা‘দ ইবনে মু‘আয! নায্রের (আনাসের পিতা) প্রতিপালকের শপথ করে বলছি, এ মুহূর্তে জান্নাতই আমার একমাত্র আশা। আমি ওহুদের দিক থেকে জান্নাতের সুগন্ধি পাচ্ছি। পরবর্তীকালে সা‘দ (রাঃ) রাসূল ﷺ কে বলেছিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আনাস ইবনে নায্র যেমনটি করেছে, আমি তো তেমনটি করতে সক্ষম হইনি। আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) বলেন, যুদ্ধের পর আমরা তাঁকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি এবং তাঁর দেহে তলোয়ার, বর্শা ও তীরের আশিটিরও বেশি জখম দেখতে পেয়েছি। মুশরিকরা নাক, কান কেটে ও চোখ উপড়িয়ে তাঁর লাশকে আকার-আকৃতি পরিবর্তন করে ফেলার কারণে তাঁর বোন ছাড়া কেউ তাঁকে চিনতে পারেনি। সে আঙ্গুলের আগা দেখে তাঁকে চিনতে সক্ষম হয়েছিল। আনাস (রাঃ) বলেন, আমাদের ধারণা কুরআনের এ বাণীটি তাঁর ও অনুরূপ ব্যক্তিদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। (সহীহ বুখারী, হা/২৮০৫)
কেউ শহীদ হন এবং কেউ শাহাদাতের অপেক্ষায় থাকেন :
فَمِنْهُمْ مَّنْ قَضٰى نَحْبَهٗ وَمِنْهُمْ مَّنْ يَّنْتَظِرُؗ وَمَا بَدَّلُوْا تَبْدِيْلًا
তাদের মধ্যে কেউ কেউ শাহাদাতবরণ করেছে এবং কেউ কেউ অপেক্ষায় রয়েছে। তারা স্বীয় সংকল্প একটুও পরিবর্তন করেনি। (সূরা আহযাব- ২৩)
যে যেমন প্রতিদান পাওয়ার যোগ্য আল্লাহ তাকে তেমনই দিয়ে থাকেন :
لِيَجْزِيَ اللهُ الصَّادِقِيْنَ بِصِدْقِهِمْ وَيُعَذِّبَ الْمُنَافِقِيْنَ اِنْ شَآءَ اَوْ يَتُوْبَ عَلَيْهِمْؕ اِنَّ اللهَ كَانَ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا
এটা এজন্য যে, যাতে আল্লাহ সত্যবাদীদেরকে তাদের সত্যবাদীতার জন্য প্রতিদান দেন এবং ইচ্ছা করলে মুনাফিকদেরকে শাস্তি দেন অথবা তাদেরকে তাওবা করার সুযোগ দেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা আহযাব- ২৪)
পরে এক রাতে প্রচন্ড ঘূর্ণিঝড় শত্রুদেরকে আক্রমণ করে :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اذْكُرُوْا نِعْمَةَ اللهِ عَلَيْكُمْ اِذْ جَآءَتْكُمْ جُنُوْدٌ فَاَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ رِيْحًا وَّجُنُوْدًا لَّمْ تَرَوْهَاؕ وَكَانَ اللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرًا
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহকে স্মরণ করো, যখন শত্রুবাহিনী তোমাদের উপর আক্রমণ করেছিল, তখন আমি তাদের উপর এক প্রচন্ড বায়ু প্রেরণ করেছিলাম। আর এমন একটি সৈন্য দল (প্রেরণ করেছিলাম) যাদেরকে তোমরা দেখতে পাওনি। (মনে রেখো) তোমরা যা কর আল্লাহ তা দেখেন। (সূরা আহযাব- ৯)
ব্যাখ্যা : শত্রুসেনারা যখন মদিনাবাসীর উপর চড়াও হয়েছিল ঠিক তখনই এ ধূলিঝড় আসেনি। বরং অবরোধের পর এ ধূলিঝড় আসে। অদৃশ্য সেনাবাহিনী বলতে এমনসব গোপন শক্তিকে বুঝানো হয়েছে, যা মানুষের বিভিন্ন বিষয়াবলিতে আল্লাহর ইশারায় কাজ করতে থাকে এবং মানুষ তার খবরই রাখে না। অধিকাংশ সময় এসব গোপন শক্তির কার্যকারিতা চূড়ান্ত প্রমাণিত হয়। এসব শক্তি যেহেতু আল্লাহর ফেরেশতাদের অধীনে কাজ করে, তাই সেনাবাহিনী অর্থে ফেরেশতাদেরকেও ধরা যেতে পারে; যদিও এখানে ফেরেশতাদের কথা স্পষ্টভাবে বলা হয়নি।
শত্রুরা বিফল হয়ে ময়দান ছেড়ে চলে যায় :
وَرَدَّ اللهُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِغَيْظِهِمْ لَمْ يَنَالُوْا خَيْرًا
আল্লাহ কাফিরদেরকে তাদের ক্রোধ সহকারে ফিরিয়ে দিলেন; ফলে তারা কোন কল্যাণ অর্জন করতে পারেনি। (সূরা আহযাব- ২৫)
আল্লাহই মুমিনদের জন্য যথেষ্ট হয়ে যান :
وَكَفَى اللهُ الْمُؤْمِنِيْنَ الْقِتَالَؕ وَكَانَ اللهُ قَوِيًّا عَزِيْزًا
আর যুদ্ধক্ষেত্রে মুমিনদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। আল্লাহ মহাক্ষমতাবান ও প্রবল প্রতাপশালী। (সূরা আহযাব- ২৫)
বনু কুরাইযা ছিল মদিনার ইয়াহুদিদের এক প্রভাবশালী গোত্র। খন্দকের যুদ্ধে এ গোত্রটি পৌত্তলিক, কুরাইশ ও বেদুঈনদের সঙ্গে মিলিত হয়ে ত্রিশক্তির সংঘ দেয় এবং ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করার সকল প্রকার ষড়যন্ত্র করে। কিন্তু ত্রি-শক্তি সংঘের শোচনীয় পরাজয়ের পর মুহাম্মাদ ﷺ এ বিশ্বাসঘাতক বনু কুরাইযাকে সমুচিত শিক্ষা প্রদানের জন্য মদিনা ত্যাগ করতে আদেশ দিলেন। কিন্তু তারা এ আদেশ অমান্য করে। ফলে তাদের দুর্গ অবরোধ করা হয়। অতঃপর যখন তারা আত্মসমর্পণ করে, তখন রাসূল ﷺ ইয়াহুদিদের ইচ্ছানুযায়ী আওস গোত্রের দলপতি সাদ বিন মুয়াজ (রাঃ) এর উপর বিশ্বাসঘাতকতার অপরাধের বিচারভার ন্যসত্ম করেন। তাঁর বিচারে ইসলামের বিরোধিতাকারী ইয়াহুদিদের প্রায় ২৫০ জন ব্যক্তিকে প্রাণদন্ড দেয়া হয় এবং নারী ও শিশুদেরকে দাসদাসীতে পরিণত করা হয়।
শত্রুদেরকে তাদের দুর্গ থেকে বের করে আনা হয় :
وَاَنْزَلَ الَّذِيْنَ ظَاهَرُوْهُمْ مِّنْ اَهْلِ الْكِتَابِ مِنْ صَيَاصِيْهِمْ وَقَذَفَ فِيْ قُلُوْبِهِمُ الرُّعْبَ
আহলে কিতাবের মধ্যে যারা মুশরিকদেরকে সাহায্য করেছিল, আল্লাহ তাদেরকে তাদের দুর্গসমূহ থেকে নামিয়ে দিলেন এবং তাদের অন্তরে ভীতি সঞ্চার করলেন। (সূরা আহযাব- ২৬)
কতককে হত্যা করা হয় এবং কতককে বন্দী করা হয় :
فَرِيْقًا تَقْتُلُوْنَ وَتَاْسِرُوْنَ فَرِيْقًا
তোমরা তাদের একদলকে হত্যা করেছ এবং একদলকে গ্রেফতার করেছ। (সূরা আহযাব- ২৬)
তাদের সকল ধনসম্পদ মুসলিমদের হাতে চলে আসে :
وَاَوْرَثَكُمْ اَرْضَهُمْ وَدِيَارَهُمْ وَاَمْوَالَهُمْ وَاَرْضًا لَّمْ تَطَئُوْهَا وَكَانَ اللهُ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرًا
আর তিনি তোমাদেরকে উত্তরাধিকারী করে দিলেন তাদের জমিন, বাড়িঘর, ধনসম্পদ এবং এমন জমিনের, যার উপর তোমরা এখনো পা রাখনি। কিন্তু আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা আহযাব- ২৭)
শত্রুদেরকে তাদের দুর্গ থেকে বের করে আনা হয় :
وَاَنْزَلَ الَّذِيْنَ ظَاهَرُوْهُمْ مِّنْ اَهْلِ الْكِتَابِ مِنْ صَيَاصِيْهِمْ وَقَذَفَ فِيْ قُلُوْبِهِمُ الرُّعْبَ
আহলে কিতাবের মধ্যে যারা মুশরিকদেরকে সাহায্য করেছিল, আল্লাহ তাদেরকে তাদের দুর্গসমূহ থেকে নামিয়ে দিলেন এবং তাদের অন্তরে ভীতি সঞ্চার করলেন। (সূরা আহযাব- ২৬)
কতককে হত্যা করা হয় এবং কতককে বন্দী করা হয় :
فَرِيْقًا تَقْتُلُوْنَ وَتَاْسِرُوْنَ فَرِيْقًا
তোমরা তাদের একদলকে হত্যা করেছ এবং একদলকে গ্রেফতার করেছ। (সূরা আহযাব- ২৬)
তাদের সকল ধনসম্পদ মুসলিমদের হাতে চলে আসে :
وَاَوْرَثَكُمْ اَرْضَهُمْ وَدِيَارَهُمْ وَاَمْوَالَهُمْ وَاَرْضًا لَّمْ تَطَئُوْهَا وَكَانَ اللهُ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرًا
আর তিনি তোমাদেরকে উত্তরাধিকারী করে দিলেন তাদের জমিন, বাড়িঘর, ধনসম্পদ এবং এমন জমিনের, যার উপর তোমরা এখনো পা রাখনি। কিন্তু আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা আহযাব- ২৭)
রাসূল ﷺ স্বপ্নে দেখলেন যে, তিনি সাহাবায়ে কেরামসহ মক্কায় গেলেন এবং ওমরা আদায় করেন। তাই রাসূল ﷺ ১৪০০ সাহাবী নিয়ে জিলকদ মাসের প্রথমদিকে সফর শুরু করলেন। যখন তিনি তাদেরকে নিয়ে হুদায়বিয়া নামক স্থানে আগমন করেন, তখন মক্কার কুরাইশ কর্তৃক বাধাপ্রাপ্ত হন। মক্কার কুরাইশ নেতারা ভেবেছিল, যদি বিনা বাধায় ওমরা করতে দেয়া হয় তাহলে কুরাইশদের ইজ্জত থাকবে না। আর বাধা দিলে সারা আরবে বদনাম হবে। তাই তারা দূতের মাধ্যমে রাসূল ﷺ কে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। এদিকে রাসূল ﷺ ওসমান (রাঃ) কে দূত হিসেবে মক্কায় পাঠান। যাতে করে তিনি তাদেরকে এ কথা বুঝাতে পারেন যে, তিনি যুদ্ধের সাজ-সরঞ্জাম নিয়ে আসেননি। শুধু ওমরার নিয়তে কুরবানীর পশু নিয়ে এসেছেন। তাই এতে বাধা দেয়ার কোন অধিকার নেই। কিন্তু তারা সে কথা মানতে রাজি হলো না; বরং ওসমান (রাঃ) কে আটক করে রাখল। এদিকে গুজব রটল যে, ওসমান (রাঃ) কে শহীদ করা হয়েছে। তিনি ফিরে না আসায় গুজবে সবাই বিশ্বাস করতে বাধ্য হলো। ফলে রাসূল ﷺ তাদের সাথে যুদ্ধ করার সংকল্প করেন এবং সাহাবায়ে কেরামদের থেকে এ শপথ নেন যে, আমরা সবাই জীবন দেব, তবুও পিছু হটব না। এ শপথটিই ইতিহাসে বাইআতে রিদওয়ান নামে পরিচিত। এরপরই দেখা গেল, ওসমান (রাঃ) ফিরে এলেন এবং সুহাইল বিন আমরের নেতৃত্বেও কুরাইশদের একটি প্রতিনিধি দল সন্ধি প্রস্তাব নিয়ে হাজির হয়। অতঃপর অনেক আলাপ-আলোচনার পর তাদের মাঝে একটি সন্ধিপত্র তৈরি হয়, যার কয়েকটি শর্ত নিন্মে উল্লেখ করা হলো :
১. দশ বছর পর্যন্ত উভয়পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ থাকবে এবং কোন পক্ষই প্রকাশ্যে বা গোপনে যুদ্ধের পক্ষে কোন কাজ করবে না।
২. এ সময়ের মধ্যে কুরাইশদের কোন লোক তার অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া মদিনায় পালিয়ে গেলে তাকে ফেরত দিতে হবে; কিন্তু মদিনা থেকে কোন মুসলিম মক্কায় চলে এলে তাকে মদিনায় ফেরত দেয়া হবে না।
৩. আরবের বিভিন্ন গোত্র এ দু’পক্ষের যে কোন এক পক্ষের সহযোগী হিসেবে এ সন্ধিতে শরীক হতে চাইলে হতে পারবে।
৪. রাসূল ﷺ এ বছর ওমরা না করেই ফিরে যাবেন এবং আগামী বছর ওমরার উদ্দেশ্যে তিন দিন মক্কায় থাকতে পারবেন। তবে শর্ত থাকবে যে, একটি করে তলোয়ার সাথে রাখা ছাড়া যুদ্ধের কোন অস্ত্র সাথে আনতে পারবেন না। যখন সন্ধির এসব শর্ত লেখা হচ্ছিল তখন কুরাইশরা এটাকে তাদের বিজয় মনে করছিল এবং সাহাবীগণ অপমানজনক মনে করে অস্থিরতা বোধ করছিলেন। প্রকৃতপক্ষে এসব শর্ত বাহ্যত মুসলিমদের স্বার্থের বিরোধী মনে হলেও এগুলো যে পরবর্তী বিজয়ের জন্য খুবই সহায়ক, তা রাসূল ﷺ ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারেননি।
নবী ﷺ স্বপ্নের মাধ্যমে ওমরা করার নির্দেশ পান :
لَقَدْ صَدَقَ اللهُ رَسُوْلَهُ الرُّؤْيَا بِالْحَقِّۚ لَتَدْخُلُنَّ الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ اِنْ شَآءَ اللهُ اٰمِنِيْنَ مُحَلِّقِيْنَ رُءُوْسَكُمْ وَمُقَصِّرِيْنَ لَا تَخَافُوْنَ
বাস্তবিকই আল্লাহ তাঁর রাসূলকে সঠিক স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, যা ছিল সস্পূর্ণ সত্য। যদি আল্লাহ চান তবে অবশ্যই তোমরা মাসজিদুল হারামে সম্পূর্ণ নিরাপদে প্রবেশ করবে- (কেউ কেউ) মাথা কামাবে, (কেউ কেউ) চুল ছোট করবে; এতে তোমাদের কোন ভয় থাকবে না। (সূরা ফাতহ- ২৭)
হুদায়বিয়া নামক স্থানে গেলে কাফিররা মুসলিমদেরকে বাধা দেয় :
هُمُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَصَدُّوْكُمْ عَنِ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَالْهَدْيَ مَعْكُوْفًا اَنْ يَّبْلُغَ مَحِلَّهٗ
তারাই তো ঐ সমস্ত কাফির, যারা কুফরী করেছে ও তোমাদেরকে মাসজিদুল হারাম থেকে ফিরিয়ে রেখেছে এবং কুরবানীর উটগুলোকে নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছতে বাধা প্রদান করেছে। (সূরা ফাতহ- ২৫)
সাহাবীরা জিহাদের জন্য নবী ﷺ এর কাছে বায়‘আত গ্রহণ করলেন :
اِنَّ الَّذِيْنَ يُبَايِعُوْنَكَ اِنَّمَا يُبَايِعُوْنَ اللهَؕ يَدُ اللهِ فَوْقَ اَيْدِيْهِمْۚ فَمَنْ نَّكَثَ فَاِنَّمَا يَنْكُثُ عَلٰى نَفْسِهٖۚ وَمَنْ اَوْفٰى بِمَا عَاهَدَ عَلَيْهُ اللهَ فَسَيُؤْتِيْهِ اَجْرًا عَظِيْمًا
(হে রাসূল!) যারা আপনার কাছে বায়‘আত গ্রহণ করছিল তারা (আসলে) আল্লাহর কাছেও বায়‘আত গ্রহণ করেছিল, তাদের হাতের উপর ছিল আল্লাহর হাত। এখন যে এ ওয়াদা ভঙ্গ করবে, এর কুফল তার উপরই পড়বে। আর আল্লাহর সাথে ওয়াদা করে যে তা পূরণ করবে, অচিরেই আল্লাহ তাকে বড় পুরস্কারে ভূষিত করবেন। (সূরা ফাতহ- ১০)
ব্যাখ্যা : মক্কায় ওসমান (রাঃ) এর শহীদ হয়ে যাওয়ার সংবাদ শুনে রাসূল ﷺ সাহাবায়ে কেরামের কাছ থেকে হুদায়বিয়া নামক স্থানে যে শপথ গ্রহণ করেছিলেন, এখানে তার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। সেখানে এ শপথ নেয়া হয়েছিল যে, ওসমান (রাঃ) এর শাহাদাত যদি সত্য প্রমাণিত হয়, তবে মুসলিমরা কুরাইশদের সাথে চরম বুঝাপড়া করে নেবে; তাতে যদি সবাই শহীদ হয় তাও মেনে নিতে হবে।
এমতাবস্থায় আল্লাহ তাদের উপর প্রশান্তি নাযিল করলেন :
اِذْ جَعَلَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا فِيْ قُلُوْبِهِمُ الْحَمِيَّةَ حَمِيَّةَ الْجَاهِلِيَّةِ فَاَنْزَلَ اللهُ سَكِيْنَتَهٗ عَلٰى رَسُوْلِهٖ وَعَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ وَاَلْزَمَهُمْ كَلِمَةَ التَّقْوٰى وَكَانُوْاۤ اَحَقَّ بِهَا وَاَهْلَهَاؕ وَكَانَ اللهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمًا
স্মরণ করো, যখন কাফিররা তাদের অন্তরে জাহেলী বিদ্বেষ পোষণ করল, তখন আল্লাহ তাঁর রাসূল ও মুমিনদের উপর প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাদেরকে তাক্বওয়ার নীতি মেনে চলতে বাধ্য করলেন। কেননা তারাই (এ নীতি মেনে চলার) সবচেয়ে বেশি হকদার ও উপযুক্ত। আর আল্লাহ সবকিছু সম্পর্কেই জ্ঞান রাখেন। (সূরা ফাতহ- ২৬)
ব্যাখ্যা : এখানে ‘সাকীনাহ’ অর্থ অন্তরের সেই অবস্থা, যার ভিত্তিতে একজন মানুষ পেরেশান না হয়ে ঠান্ডা মাথায় মনের পূর্ণ সন্তুষ্টি ও প্রশান্তিসহ নিজেকে বিপদের মধ্যে ফেলে দেয় এবং কোন ভয় ও অস্থিরতা ছাড়াই এ চরম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, যে কোন অবস্থায় এ কাজ করতেই হবে।
এ সময় তাদেরকে খায়বার বিজয়ের সুসংবাদও দেয়া হলো :
لَقَدْ رَضِيَ اللهُ عَنِ الْمُؤْمِنِيْنَ اِذْ يُبَايِعُوْنَكَ تَحْتَ الشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِيْ قُلُوْبِهِمْ فَاَنْزَلَ السَّكِيْنَةَ عَلَيْهِمْ وَاَثَابَهُمْ فَتْحًا قَرِيْبًا – وَمَغَانِمَ كَثِيْرَةً يَّاْخُذُوْنَهَاؕ وَكَانَ اللهُ عَزِيْزًا حَكِيْمًا
(হে রাসূল!), যখন তারা (মুমিনগণ) গাছের তলায় আপনার কাছে বায়‘আত গ্রহণ করেছিল, তখন আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট হয়ে গেলেন। তাদের অন্তরের অবস্থা তাঁর জানা ছিল। তাই তিনি তাদের উপর প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং পুরস্কার হিসেবে নিকটবর্তী একটি বিজয় দান করলেন। আর তাদেরকে আরো অনেক গনিমতের মাল দান করবেন, যা (শীঘ্রই) তারা লাভ করবে। আল্লাহ মহাশক্তিশালী ও সুকৌশলী। (সূরা ফাতহ- ১৮, ১৯)
আল্লাহ উভয়পক্ষকে যুদ্ধ থেকে বিরত রাখলেন :
وَهُوَ الَّذِيْ كَفَّ اَيْدِيَهُمْ عَنْكُمْ وَاَيْدِيَكُمْ عَنْهُمْ بِبَطْنِ مَكَّةَ مِنْ ۢبَعْدِ اَنْ اَظْفَرَكُمْ عَلَيْهِمْؕ وَكَانَ اللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرًا
তিনিই ঐ সত্তা, যিনি মক্কায় তাদের হাতকে তোমাদের উপর থেকে এবং তোমাদের হাতকে তাদের উপর থেকে ফিরিয়ে রেখেছিলেন। অথচ তিনি তোমাদেরকে তাদের উপর বিজয়ী করে দিয়েছিলেন। আর তোমরা যা কিছু করছিলে আল্লাহ তা প্রত্যক্ষ করছিলেন। (সূরা ফাতহ- ২৪)
যুদ্ধ থেকে বিরত রাখার কারণ :
وَلَوْلَا رِجَالٌ مُّؤْمِنُوْنَ وَنِسَآءٌ مُّؤْمِنَاتٌ لَّمْ تَعْلَمُوْهُمْ اَنْ تَطَئُوْهُمْ فَتُصِيْبَكُمْ مِّنْهُمْ مَّعَرَّةٌ ۢبِغَيْرِ عِلْمٍۚ لِيُدْخِلَ اللهُ فِيْ رَحْمَتِهٖ مَنْ يَّشَآءُ
যদি (মক্কায় কাফিরদের মাঝে) মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা না থাকত, যাদের (মুসলিম হওয়া) সম্পর্কে তোমরা জান না এবং অজ্ঞতাবশত তোমরা তাদেরকে পদদলিত করে ফেলবে, যার ফলে তোমাদেরকে দোষারোপ করা হবে- (তাহলে তোমাদেরকে যুদ্ধের আদেশ দেয়া হতো)। (এ আদেশ দেয়া হয়নি এজন্য যে) যাতে করে আল্লাহ যাকে চান তাকে তাঁর রহমতে প্রবেশ করাতে পারেন। (সূরা ফাতহ- ২৫)
ব্যাখ্যা : মক্কায় সে সময় এমন অনেক মুসলিম নারী-পুরুষ ছিলেন, যারা নিজেদের ঈমান গোপন রেখেছিলেন অথবা নিরুপায় হওয়ার কারণে হিজরত করতে পারেননি। এ অবস্থায় যদি যুদ্ধ ঘটত তাহলে অজ্ঞতাবশত কাফিরদের সাথে সাথে মুসলিমরাও মুসলিমদের হাতে মার খেত।
মুমিনরা যদি আলাদা থাকত তাহলে কাফিররা ঐ দিন শাস্তি পেত :
لَوْ تَزَيَّلُوْا لَعَذَّبْنَا الَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنْهُمْ عَذَابًا اَلِيْمًا
মুমিনরা যদি (কাফিরদের থেকে) পৃথক থাকত, তাহলে (মক্কায়) যারা কাফির ছিল তাদেরকে আমি কঠিন শাস্তি দিতাম। (সূরা ফাতহ- ২৫)
যুদ্ধ বাধলে কাফিররাই পরাজিত হতো :
وَلَوْ قَاتَلَكُمُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَوَلَّوُا الْاَدْبَارَ ثُمَّ لَا يَجِدُوْنَ وَلِيًّا وَّلَا نَصِيْرًا – سُنَّةَ اللهِ الَّتِيْ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلُۚ وَلَنْ تَجِدَ لِسُنَّةِ اللهِ تَبْدِيْلًا
কাফিররা যদি এ সময়ই তোমাদের সাথে লড়াই করত, তাহলে অবশ্যই তারা পিছু হটে যেত এবং তারা কোন অভিভাবক ও কোন সাহায্যকারীও পেত না। এটাই আল্লাহর বিধান, যা আগে থেকে চলে এসেছে। আর তোমরা আল্লাহর নিয়মে কোন পরিবর্তন পাবে না। (সূরা ফাতহ- ২২, ২৩)
এ সন্ধির মাধ্যমে মুসলিমরা উপস্থিত বিজয় লাভ করে :
وَعَدَكُمُ اللهُ مَغَانِمَ كَثِيْرَةً تَاْخُذُوْنَهَا فَعَجَّلَ لَكُمْ هٰذِهٖ وَكَفَّ اَيْدِيَ النَّاسِ عَنْكُمْۚ وَلِتَكُوْنَ اٰيَةً لِّلْمُؤْمِنِيْنَ وَيَهْدِيَكُمْ صِرَاطًا مُّسْتَقِيْمًا
আল্লাহ তোমাদেরকে অনেক গনিমতের মাল দেয়ার ওয়াদা করছেন, যা তোমরা লাভ করবে। এটা তিনি তোমাদেরকে খুব তাড়াতাড়িই দিয়ে দিলেন এবং মানুষের (কাফিরদের) হাতকে তোমাদের (ওপর ওঠানো) থেকে সংযত রাখলেন, যাতে মুমিনদের জন্য এটা নিদর্শন হয়ে থাকে এবং তিনি (আল্লাহ) তোমাদেরকে সরলসঠিক পথে পরিচালিত করেন। (সূরা ফাতহ- ২০)
১. দশ বছর পর্যন্ত উভয়পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ থাকবে এবং কোন পক্ষই প্রকাশ্যে বা গোপনে যুদ্ধের পক্ষে কোন কাজ করবে না।
২. এ সময়ের মধ্যে কুরাইশদের কোন লোক তার অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া মদিনায় পালিয়ে গেলে তাকে ফেরত দিতে হবে; কিন্তু মদিনা থেকে কোন মুসলিম মক্কায় চলে এলে তাকে মদিনায় ফেরত দেয়া হবে না।
৩. আরবের বিভিন্ন গোত্র এ দু’পক্ষের যে কোন এক পক্ষের সহযোগী হিসেবে এ সন্ধিতে শরীক হতে চাইলে হতে পারবে।
৪. রাসূল ﷺ এ বছর ওমরা না করেই ফিরে যাবেন এবং আগামী বছর ওমরার উদ্দেশ্যে তিন দিন মক্কায় থাকতে পারবেন। তবে শর্ত থাকবে যে, একটি করে তলোয়ার সাথে রাখা ছাড়া যুদ্ধের কোন অস্ত্র সাথে আনতে পারবেন না। যখন সন্ধির এসব শর্ত লেখা হচ্ছিল তখন কুরাইশরা এটাকে তাদের বিজয় মনে করছিল এবং সাহাবীগণ অপমানজনক মনে করে অস্থিরতা বোধ করছিলেন। প্রকৃতপক্ষে এসব শর্ত বাহ্যত মুসলিমদের স্বার্থের বিরোধী মনে হলেও এগুলো যে পরবর্তী বিজয়ের জন্য খুবই সহায়ক, তা রাসূল ﷺ ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারেননি।
নবী ﷺ স্বপ্নের মাধ্যমে ওমরা করার নির্দেশ পান :
لَقَدْ صَدَقَ اللهُ رَسُوْلَهُ الرُّؤْيَا بِالْحَقِّۚ لَتَدْخُلُنَّ الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ اِنْ شَآءَ اللهُ اٰمِنِيْنَ مُحَلِّقِيْنَ رُءُوْسَكُمْ وَمُقَصِّرِيْنَ لَا تَخَافُوْنَ
বাস্তবিকই আল্লাহ তাঁর রাসূলকে সঠিক স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, যা ছিল সস্পূর্ণ সত্য। যদি আল্লাহ চান তবে অবশ্যই তোমরা মাসজিদুল হারামে সম্পূর্ণ নিরাপদে প্রবেশ করবে- (কেউ কেউ) মাথা কামাবে, (কেউ কেউ) চুল ছোট করবে; এতে তোমাদের কোন ভয় থাকবে না। (সূরা ফাতহ- ২৭)
হুদায়বিয়া নামক স্থানে গেলে কাফিররা মুসলিমদেরকে বাধা দেয় :
هُمُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَصَدُّوْكُمْ عَنِ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَالْهَدْيَ مَعْكُوْفًا اَنْ يَّبْلُغَ مَحِلَّهٗ
তারাই তো ঐ সমস্ত কাফির, যারা কুফরী করেছে ও তোমাদেরকে মাসজিদুল হারাম থেকে ফিরিয়ে রেখেছে এবং কুরবানীর উটগুলোকে নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছতে বাধা প্রদান করেছে। (সূরা ফাতহ- ২৫)
সাহাবীরা জিহাদের জন্য নবী ﷺ এর কাছে বায়‘আত গ্রহণ করলেন :
اِنَّ الَّذِيْنَ يُبَايِعُوْنَكَ اِنَّمَا يُبَايِعُوْنَ اللهَؕ يَدُ اللهِ فَوْقَ اَيْدِيْهِمْۚ فَمَنْ نَّكَثَ فَاِنَّمَا يَنْكُثُ عَلٰى نَفْسِهٖۚ وَمَنْ اَوْفٰى بِمَا عَاهَدَ عَلَيْهُ اللهَ فَسَيُؤْتِيْهِ اَجْرًا عَظِيْمًا
(হে রাসূল!) যারা আপনার কাছে বায়‘আত গ্রহণ করছিল তারা (আসলে) আল্লাহর কাছেও বায়‘আত গ্রহণ করেছিল, তাদের হাতের উপর ছিল আল্লাহর হাত। এখন যে এ ওয়াদা ভঙ্গ করবে, এর কুফল তার উপরই পড়বে। আর আল্লাহর সাথে ওয়াদা করে যে তা পূরণ করবে, অচিরেই আল্লাহ তাকে বড় পুরস্কারে ভূষিত করবেন। (সূরা ফাতহ- ১০)
ব্যাখ্যা : মক্কায় ওসমান (রাঃ) এর শহীদ হয়ে যাওয়ার সংবাদ শুনে রাসূল ﷺ সাহাবায়ে কেরামের কাছ থেকে হুদায়বিয়া নামক স্থানে যে শপথ গ্রহণ করেছিলেন, এখানে তার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। সেখানে এ শপথ নেয়া হয়েছিল যে, ওসমান (রাঃ) এর শাহাদাত যদি সত্য প্রমাণিত হয়, তবে মুসলিমরা কুরাইশদের সাথে চরম বুঝাপড়া করে নেবে; তাতে যদি সবাই শহীদ হয় তাও মেনে নিতে হবে।
এমতাবস্থায় আল্লাহ তাদের উপর প্রশান্তি নাযিল করলেন :
اِذْ جَعَلَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا فِيْ قُلُوْبِهِمُ الْحَمِيَّةَ حَمِيَّةَ الْجَاهِلِيَّةِ فَاَنْزَلَ اللهُ سَكِيْنَتَهٗ عَلٰى رَسُوْلِهٖ وَعَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ وَاَلْزَمَهُمْ كَلِمَةَ التَّقْوٰى وَكَانُوْاۤ اَحَقَّ بِهَا وَاَهْلَهَاؕ وَكَانَ اللهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمًا
স্মরণ করো, যখন কাফিররা তাদের অন্তরে জাহেলী বিদ্বেষ পোষণ করল, তখন আল্লাহ তাঁর রাসূল ও মুমিনদের উপর প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাদেরকে তাক্বওয়ার নীতি মেনে চলতে বাধ্য করলেন। কেননা তারাই (এ নীতি মেনে চলার) সবচেয়ে বেশি হকদার ও উপযুক্ত। আর আল্লাহ সবকিছু সম্পর্কেই জ্ঞান রাখেন। (সূরা ফাতহ- ২৬)
ব্যাখ্যা : এখানে ‘সাকীনাহ’ অর্থ অন্তরের সেই অবস্থা, যার ভিত্তিতে একজন মানুষ পেরেশান না হয়ে ঠান্ডা মাথায় মনের পূর্ণ সন্তুষ্টি ও প্রশান্তিসহ নিজেকে বিপদের মধ্যে ফেলে দেয় এবং কোন ভয় ও অস্থিরতা ছাড়াই এ চরম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, যে কোন অবস্থায় এ কাজ করতেই হবে।
এ সময় তাদেরকে খায়বার বিজয়ের সুসংবাদও দেয়া হলো :
لَقَدْ رَضِيَ اللهُ عَنِ الْمُؤْمِنِيْنَ اِذْ يُبَايِعُوْنَكَ تَحْتَ الشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِيْ قُلُوْبِهِمْ فَاَنْزَلَ السَّكِيْنَةَ عَلَيْهِمْ وَاَثَابَهُمْ فَتْحًا قَرِيْبًا – وَمَغَانِمَ كَثِيْرَةً يَّاْخُذُوْنَهَاؕ وَكَانَ اللهُ عَزِيْزًا حَكِيْمًا
(হে রাসূল!), যখন তারা (মুমিনগণ) গাছের তলায় আপনার কাছে বায়‘আত গ্রহণ করেছিল, তখন আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট হয়ে গেলেন। তাদের অন্তরের অবস্থা তাঁর জানা ছিল। তাই তিনি তাদের উপর প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং পুরস্কার হিসেবে নিকটবর্তী একটি বিজয় দান করলেন। আর তাদেরকে আরো অনেক গনিমতের মাল দান করবেন, যা (শীঘ্রই) তারা লাভ করবে। আল্লাহ মহাশক্তিশালী ও সুকৌশলী। (সূরা ফাতহ- ১৮, ১৯)
আল্লাহ উভয়পক্ষকে যুদ্ধ থেকে বিরত রাখলেন :
وَهُوَ الَّذِيْ كَفَّ اَيْدِيَهُمْ عَنْكُمْ وَاَيْدِيَكُمْ عَنْهُمْ بِبَطْنِ مَكَّةَ مِنْ ۢبَعْدِ اَنْ اَظْفَرَكُمْ عَلَيْهِمْؕ وَكَانَ اللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرًا
তিনিই ঐ সত্তা, যিনি মক্কায় তাদের হাতকে তোমাদের উপর থেকে এবং তোমাদের হাতকে তাদের উপর থেকে ফিরিয়ে রেখেছিলেন। অথচ তিনি তোমাদেরকে তাদের উপর বিজয়ী করে দিয়েছিলেন। আর তোমরা যা কিছু করছিলে আল্লাহ তা প্রত্যক্ষ করছিলেন। (সূরা ফাতহ- ২৪)
যুদ্ধ থেকে বিরত রাখার কারণ :
وَلَوْلَا رِجَالٌ مُّؤْمِنُوْنَ وَنِسَآءٌ مُّؤْمِنَاتٌ لَّمْ تَعْلَمُوْهُمْ اَنْ تَطَئُوْهُمْ فَتُصِيْبَكُمْ مِّنْهُمْ مَّعَرَّةٌ ۢبِغَيْرِ عِلْمٍۚ لِيُدْخِلَ اللهُ فِيْ رَحْمَتِهٖ مَنْ يَّشَآءُ
যদি (মক্কায় কাফিরদের মাঝে) মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা না থাকত, যাদের (মুসলিম হওয়া) সম্পর্কে তোমরা জান না এবং অজ্ঞতাবশত তোমরা তাদেরকে পদদলিত করে ফেলবে, যার ফলে তোমাদেরকে দোষারোপ করা হবে- (তাহলে তোমাদেরকে যুদ্ধের আদেশ দেয়া হতো)। (এ আদেশ দেয়া হয়নি এজন্য যে) যাতে করে আল্লাহ যাকে চান তাকে তাঁর রহমতে প্রবেশ করাতে পারেন। (সূরা ফাতহ- ২৫)
ব্যাখ্যা : মক্কায় সে সময় এমন অনেক মুসলিম নারী-পুরুষ ছিলেন, যারা নিজেদের ঈমান গোপন রেখেছিলেন অথবা নিরুপায় হওয়ার কারণে হিজরত করতে পারেননি। এ অবস্থায় যদি যুদ্ধ ঘটত তাহলে অজ্ঞতাবশত কাফিরদের সাথে সাথে মুসলিমরাও মুসলিমদের হাতে মার খেত।
মুমিনরা যদি আলাদা থাকত তাহলে কাফিররা ঐ দিন শাস্তি পেত :
لَوْ تَزَيَّلُوْا لَعَذَّبْنَا الَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنْهُمْ عَذَابًا اَلِيْمًا
মুমিনরা যদি (কাফিরদের থেকে) পৃথক থাকত, তাহলে (মক্কায়) যারা কাফির ছিল তাদেরকে আমি কঠিন শাস্তি দিতাম। (সূরা ফাতহ- ২৫)
যুদ্ধ বাধলে কাফিররাই পরাজিত হতো :
وَلَوْ قَاتَلَكُمُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَوَلَّوُا الْاَدْبَارَ ثُمَّ لَا يَجِدُوْنَ وَلِيًّا وَّلَا نَصِيْرًا – سُنَّةَ اللهِ الَّتِيْ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلُۚ وَلَنْ تَجِدَ لِسُنَّةِ اللهِ تَبْدِيْلًا
কাফিররা যদি এ সময়ই তোমাদের সাথে লড়াই করত, তাহলে অবশ্যই তারা পিছু হটে যেত এবং তারা কোন অভিভাবক ও কোন সাহায্যকারীও পেত না। এটাই আল্লাহর বিধান, যা আগে থেকে চলে এসেছে। আর তোমরা আল্লাহর নিয়মে কোন পরিবর্তন পাবে না। (সূরা ফাতহ- ২২, ২৩)
এ সন্ধির মাধ্যমে মুসলিমরা উপস্থিত বিজয় লাভ করে :
وَعَدَكُمُ اللهُ مَغَانِمَ كَثِيْرَةً تَاْخُذُوْنَهَا فَعَجَّلَ لَكُمْ هٰذِهٖ وَكَفَّ اَيْدِيَ النَّاسِ عَنْكُمْۚ وَلِتَكُوْنَ اٰيَةً لِّلْمُؤْمِنِيْنَ وَيَهْدِيَكُمْ صِرَاطًا مُّسْتَقِيْمًا
আল্লাহ তোমাদেরকে অনেক গনিমতের মাল দেয়ার ওয়াদা করছেন, যা তোমরা লাভ করবে। এটা তিনি তোমাদেরকে খুব তাড়াতাড়িই দিয়ে দিলেন এবং মানুষের (কাফিরদের) হাতকে তোমাদের (ওপর ওঠানো) থেকে সংযত রাখলেন, যাতে মুমিনদের জন্য এটা নিদর্শন হয়ে থাকে এবং তিনি (আল্লাহ) তোমাদেরকে সরলসঠিক পথে পরিচালিত করেন। (সূরা ফাতহ- ২০)
তারা মিথ্যা অজুহাত পেশ করল :
سَيَقُوْلُ لَكَ الْمُخَلَّفُوْنَ مِنَ الْاَعْرَابِ شَغَلَتْنَاۤ اَمْوَالُنَا وَاَهْلُوْنَا فَاسْتَغْفِرْ لَنَاۚ يَقُوْلُوْنَ بِاَلْسِنَتِهِمْ مَّا لَيْسَ فِيْ قُلُوْبِهِمْ قُلْ فَمَنْ يَّمْلِكُ لَكُمْ مِّنَ اللهِ شَيْئًا اِنْ اَرَادَ بِكُمْ ضَرًّا اَوْ اَرَادَ بِكُمْ نَفْعًاؕ بَلْ كَانَ اللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِيْرًا
(হে রাসূল!) বেদুঈনদের মধ্যে যারা পেছনে রয়ে গিয়েছিল তারা এখন আপনাকে বলবে, আমাদের ধনসম্পদ ও সন্তানাদির চিন্তা আমাদেরকে ব্যস্ত করে রেখেছিল; সুতরাং আপনি আমাদের জন্য মাগফিরাতের দু‘আ করুন। (জেনে রাখুন) তারা মুখে ঐসব কথা বলে, যা তাদের অন্তরে নেই। (সুতরাং) তাদেরকে বলে দিন, আল্লাহ যদি তোমাদের কোন ক্ষতি বা উপকার করতে চান, তাহলে তোমাদের পক্ষে কে তাঁর ফায়সালাকে বাধা দেয়ার ক্ষমতা রাখে? আর তোমরা যা কিছু করছ তা তো আল্লাহ জানেন। (সূরা ফাতহ- ১১)
ব্যাখ্যা : রাসূল ﷺ ওমরার উদ্দেশ্যে প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য যাদেরকে আহবান করেছিলেন, এখানে সেসব লোকদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু ঈমানের দাবি সত্ত্বেও তারা কেবল নিজেদের প্রাণের মায়ার খাতিরে ঘর থেকে বের হয়নি। তারা মনে করেছিল, এমন সময় ওমরার জন্য কুরাইশদের গৃহে যাওয়ার অর্থ নিজেদেরকে মরণের মুখেই ফেলে দেয়া।
তারা ভেবেছিল মুসলিমরা ফিরে আসবে না :
بَلْ ظَنَنْتُمْ اَنْ لَّنْ يَّنْقَلِبَ الرَّسُوْلُ وَالْمُؤْمِنُوْنَ اِلٰۤى اَهْلِيْهِمْ اَبَدًا وَّزُيِّنَ ذٰلِكَ فِيْ قُلُوْبِكُمْ وَظَنَنْتُمْ ظَنَّ السَّوْءِ وَكُنْتُمْ قَوْمًا ۢبُوْرًا
(তোমরা যা বলছ তা আসল কথা নয়) বরং তোমরা এ ধারণা করেছিলে যে, রাসূল ও মুমিনগণ তাদের পরিবার-পরিজনের কাছে আর কখনো ফিরে আসতে পারবে না। এ ধারণাটা তোমাদের মনে খুব ভালোভাবেই গেঁথে গিয়েছিল। তোমরা খুবই খারাপ ধারণা করেছিলে, সুতরাং তোমরা বড়ই খারাপ মনের সম্প্রদায়। (সূরা ফাতহ- ১২)
তাদের এ কাজকে কুফরী কাজ বলা হয়েছে :
وَمَنْ لَّمْ يُؤْمِنْ ۢبِاللهِ وَرَسُوْلِهٖ فَاِنَّاۤ اَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِيْنَ سَعِيْرًا
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনয়ন করে না, এমন কাফিরদের জন্য আমি দাউ দাউ করে জ্বলন্ত আগুনের ব্যবস্থা করে রেখেছি। (সূরা ফাতহ- ১৩)
সংশোধন হয়ে গেলে ক্ষমা করে দেয়ার আশা দেয়া হয় :
وَلِلّٰهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِؕ يَغْفِرُ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيُعَذِّبُ مَنْ يَّشَآءُؕ وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا
আল্লাহই আসমানসমূহ ও জমিনের বাদশাহীর মালিক। তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন, যাকে চান শাস্তি দেন। তিনি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা ফাতহ- ১৪)
سَيَقُوْلُ لَكَ الْمُخَلَّفُوْنَ مِنَ الْاَعْرَابِ شَغَلَتْنَاۤ اَمْوَالُنَا وَاَهْلُوْنَا فَاسْتَغْفِرْ لَنَاۚ يَقُوْلُوْنَ بِاَلْسِنَتِهِمْ مَّا لَيْسَ فِيْ قُلُوْبِهِمْ قُلْ فَمَنْ يَّمْلِكُ لَكُمْ مِّنَ اللهِ شَيْئًا اِنْ اَرَادَ بِكُمْ ضَرًّا اَوْ اَرَادَ بِكُمْ نَفْعًاؕ بَلْ كَانَ اللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِيْرًا
(হে রাসূল!) বেদুঈনদের মধ্যে যারা পেছনে রয়ে গিয়েছিল তারা এখন আপনাকে বলবে, আমাদের ধনসম্পদ ও সন্তানাদির চিন্তা আমাদেরকে ব্যস্ত করে রেখেছিল; সুতরাং আপনি আমাদের জন্য মাগফিরাতের দু‘আ করুন। (জেনে রাখুন) তারা মুখে ঐসব কথা বলে, যা তাদের অন্তরে নেই। (সুতরাং) তাদেরকে বলে দিন, আল্লাহ যদি তোমাদের কোন ক্ষতি বা উপকার করতে চান, তাহলে তোমাদের পক্ষে কে তাঁর ফায়সালাকে বাধা দেয়ার ক্ষমতা রাখে? আর তোমরা যা কিছু করছ তা তো আল্লাহ জানেন। (সূরা ফাতহ- ১১)
ব্যাখ্যা : রাসূল ﷺ ওমরার উদ্দেশ্যে প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য যাদেরকে আহবান করেছিলেন, এখানে সেসব লোকদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু ঈমানের দাবি সত্ত্বেও তারা কেবল নিজেদের প্রাণের মায়ার খাতিরে ঘর থেকে বের হয়নি। তারা মনে করেছিল, এমন সময় ওমরার জন্য কুরাইশদের গৃহে যাওয়ার অর্থ নিজেদেরকে মরণের মুখেই ফেলে দেয়া।
তারা ভেবেছিল মুসলিমরা ফিরে আসবে না :
بَلْ ظَنَنْتُمْ اَنْ لَّنْ يَّنْقَلِبَ الرَّسُوْلُ وَالْمُؤْمِنُوْنَ اِلٰۤى اَهْلِيْهِمْ اَبَدًا وَّزُيِّنَ ذٰلِكَ فِيْ قُلُوْبِكُمْ وَظَنَنْتُمْ ظَنَّ السَّوْءِ وَكُنْتُمْ قَوْمًا ۢبُوْرًا
(তোমরা যা বলছ তা আসল কথা নয়) বরং তোমরা এ ধারণা করেছিলে যে, রাসূল ও মুমিনগণ তাদের পরিবার-পরিজনের কাছে আর কখনো ফিরে আসতে পারবে না। এ ধারণাটা তোমাদের মনে খুব ভালোভাবেই গেঁথে গিয়েছিল। তোমরা খুবই খারাপ ধারণা করেছিলে, সুতরাং তোমরা বড়ই খারাপ মনের সম্প্রদায়। (সূরা ফাতহ- ১২)
তাদের এ কাজকে কুফরী কাজ বলা হয়েছে :
وَمَنْ لَّمْ يُؤْمِنْ ۢبِاللهِ وَرَسُوْلِهٖ فَاِنَّاۤ اَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِيْنَ سَعِيْرًا
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনয়ন করে না, এমন কাফিরদের জন্য আমি দাউ দাউ করে জ্বলন্ত আগুনের ব্যবস্থা করে রেখেছি। (সূরা ফাতহ- ১৩)
সংশোধন হয়ে গেলে ক্ষমা করে দেয়ার আশা দেয়া হয় :
وَلِلّٰهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِؕ يَغْفِرُ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيُعَذِّبُ مَنْ يَّشَآءُؕ وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا
আল্লাহই আসমানসমূহ ও জমিনের বাদশাহীর মালিক। তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন, যাকে চান শাস্তি দেন। তিনি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা ফাতহ- ১৪)
নবী ﷺ এর জন্য বিজয়ের পথ উন্মুক্ত করা :
اِنَّا فَتَحْنَا لَكَ فَتْحًا مُّبِيْنًا ‐ لِيَغْفِرَ لَكَ اللهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْۢبِكَ وَمَا تَاَخَّرَ وَيُتِمَّ نِعْمَتَهٗ عَلَيْكَ وَيَهْدِيَكَ صِرَاطًا مُّسْتَقِيْمًا – وَيَنْصُرَكَ اللهُ نَصْرًا عَزِيْزًا
(হে রাসূল!) আমি আপনাকে সুস্পষ্ট বিজয় দান করেছি। যাতে আল্লাহ আপনার আগের ও পরের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দেন, আপনার উপর তাঁর নিয়ামত পূর্ণ করে দেন, আপনাকে সরলসঠিক পথ দেখান এবং আপনাকে বিরাট বিজয় ও সাহায্য দান করেন। (সূরা ফাতহ, ১-৩)
মুমিনদের ঈমান বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করা :
هُوَ الَّذِيْۤ اَنْزَلَ السَّكِيْنَةَ فِيْ قُلُوْبِ الْمُؤْمِنِيْنَ لِيَزْدَادُوْاۤ اِيْمَانًا مَّعَ اِيْمَانِهِمْؕ وَ لِلّٰهِ جُنُوْدُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِؕ وَكَانَ اللهُ عَلِيْمًا حَكِيْمًا
তিনিই সে সত্তা, যিনি মুমিনদের অন্তরে সান্ত্বনা দান করেছেন, যাতে তারা তাদের ঈমানের সাথে আরো ঈমান বাড়িয়ে নেয়। আসমানসমূহ ও জমিনের সব সেনাবাহিনী আল্লাহরই; আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী ও সুকৌশলী। (সূরা ফাতহ- ৪)
মুমিনদেরকে পুরস্কৃত করা :
لِيُدْخِلَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا وَيُكَفِّرَ عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْ وَكَانَ ذٰلِكَ عِنْدَ اللهِ فَوْزًا عَظِيْمًا
আল্লাহ মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার নিচ দিয়ে ঝর্ণাধারা বহমান রয়েছে; সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। আর তিনি তাদের সব দোষ-ত্রুটি দূর করে দেবেন। আল্লাহর কাছে এটাই হলো বড় সফলতা। (সূরা ফাতহ- ৫)
মুনাফিক ও মুশরিকদেরকে শাস্তির উপযুক্ত করা :
وَيُعَذِّبَ الْمُنَافِقِيْنَ وَالْمُنَافِقَاتِ وَالْمُشْرِكِيْنَ وَالْمُشْرِكَاتِ الظَّآنِّيْنَ بِاللهِ ظَنَّ السَّوْءِؕ عَلَيْهِمْ دَآئِرَةُ السَّوْءِؕ وَغَضِبَ اللهُ عَلَيْهِمْ وَلَعَنَهُمْ وَاَعَدَّ لَهُمْ جَهَنَّمَؕ وَسَآءَتْ مَصِيْرًا
আল্লাহ মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারী এবং মুশরিক পুরুষ ও মুশরিক নারীদেরকে শাস্তি দেবেন, যারা আল্লাহ সম্পর্কে খারাপ ধারণা রাখে। তারা নিজেরাই মন্দের খপ্পরে পড়ে গেছে। আল্লাহ তাদের উপর রাগ করেছেন এবং তাদের উপর লানত বর্ষণ করেছেন। আর তাদের জন্য জাহান্নামের ব্যবস্থা করেছেন, যা বড়ই মন্দ ঠিকানা। (সূরা ফাতহ- ৬)
اِنَّا فَتَحْنَا لَكَ فَتْحًا مُّبِيْنًا ‐ لِيَغْفِرَ لَكَ اللهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْۢبِكَ وَمَا تَاَخَّرَ وَيُتِمَّ نِعْمَتَهٗ عَلَيْكَ وَيَهْدِيَكَ صِرَاطًا مُّسْتَقِيْمًا – وَيَنْصُرَكَ اللهُ نَصْرًا عَزِيْزًا
(হে রাসূল!) আমি আপনাকে সুস্পষ্ট বিজয় দান করেছি। যাতে আল্লাহ আপনার আগের ও পরের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দেন, আপনার উপর তাঁর নিয়ামত পূর্ণ করে দেন, আপনাকে সরলসঠিক পথ দেখান এবং আপনাকে বিরাট বিজয় ও সাহায্য দান করেন। (সূরা ফাতহ, ১-৩)
মুমিনদের ঈমান বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করা :
هُوَ الَّذِيْۤ اَنْزَلَ السَّكِيْنَةَ فِيْ قُلُوْبِ الْمُؤْمِنِيْنَ لِيَزْدَادُوْاۤ اِيْمَانًا مَّعَ اِيْمَانِهِمْؕ وَ لِلّٰهِ جُنُوْدُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِؕ وَكَانَ اللهُ عَلِيْمًا حَكِيْمًا
তিনিই সে সত্তা, যিনি মুমিনদের অন্তরে সান্ত্বনা দান করেছেন, যাতে তারা তাদের ঈমানের সাথে আরো ঈমান বাড়িয়ে নেয়। আসমানসমূহ ও জমিনের সব সেনাবাহিনী আল্লাহরই; আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী ও সুকৌশলী। (সূরা ফাতহ- ৪)
মুমিনদেরকে পুরস্কৃত করা :
لِيُدْخِلَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا وَيُكَفِّرَ عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْ وَكَانَ ذٰلِكَ عِنْدَ اللهِ فَوْزًا عَظِيْمًا
আল্লাহ মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার নিচ দিয়ে ঝর্ণাধারা বহমান রয়েছে; সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। আর তিনি তাদের সব দোষ-ত্রুটি দূর করে দেবেন। আল্লাহর কাছে এটাই হলো বড় সফলতা। (সূরা ফাতহ- ৫)
মুনাফিক ও মুশরিকদেরকে শাস্তির উপযুক্ত করা :
وَيُعَذِّبَ الْمُنَافِقِيْنَ وَالْمُنَافِقَاتِ وَالْمُشْرِكِيْنَ وَالْمُشْرِكَاتِ الظَّآنِّيْنَ بِاللهِ ظَنَّ السَّوْءِؕ عَلَيْهِمْ دَآئِرَةُ السَّوْءِؕ وَغَضِبَ اللهُ عَلَيْهِمْ وَلَعَنَهُمْ وَاَعَدَّ لَهُمْ جَهَنَّمَؕ وَسَآءَتْ مَصِيْرًا
আল্লাহ মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারী এবং মুশরিক পুরুষ ও মুশরিক নারীদেরকে শাস্তি দেবেন, যারা আল্লাহ সম্পর্কে খারাপ ধারণা রাখে। তারা নিজেরাই মন্দের খপ্পরে পড়ে গেছে। আল্লাহ তাদের উপর রাগ করেছেন এবং তাদের উপর লানত বর্ষণ করেছেন। আর তাদের জন্য জাহান্নামের ব্যবস্থা করেছেন, যা বড়ই মন্দ ঠিকানা। (সূরা ফাতহ- ৬)
ইসলামের বিরুদ্ধে সর্বদা ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতায় লিপ্ত ইয়াহুদি সম্প্রদায় মদিনা হতে বিতাড়িত হয়ে সিরিয়া সীমামেত্মর নিকটবর্তী খায়বার নামক স্থানে বসতি স্থাপন করে। বনু নাযীর এবং বনু কুরাইযা গোত্রের ইয়াহুদিরা মুসলিমদেরকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে মুনাফিক দলের নেতা আবদুল্লাহ ইবনে উবাই এবং গাতফান ও অন্যান্য বেদুঈন গোত্রের সঙ্গে ষড়যন্ত্র শুরু করে। তারা খন্দকের যুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য বেদুঈন গোত্রের সহযোগিতায় ৪০০০ সৈন্যের একটি সশস্ত্র বাহিনী গঠন করে। এ সংবাদ শুনে ৬২৮ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে (৭ম হিজরী, মুহাররাম মাস) মুহাম্মাদ ﷺ ইয়াহুদিদের সমূলে ধ্বংস করার জন্য ২০০ অশ্বারোহীসহ ১৬০০ মুসলিম যোদ্ধা নিয়ে খায়বারের দিকে যাত্রা করেন। অতঃপর তিনি সেখানে পৌঁছে তাদেরকে অবরোধ করেন। খায়বার অভিযান ছিল ইসলামের সর্বপ্রথম আক্রমণাত্মক অভিযান। খায়বার মুসলিমদের প্রথম বিজিত ভূখন্ড। এ যুদ্ধের ফলশ্রুতিতে সর্বপ্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে অমুসলিমদেরকে জিম্মী করা হয়। খায়বার যুদ্ধে ইয়াহুদি বীর মোরাহহাবসহ ৯২ জন ইয়াহুদি নিহত হয়। প্রচুর ধনসম্পদ ও অস্ত্র-শস্ত্র মুসলিমদের হস্তগত হয়। ঐতিহাসিক ইয়াকূবীর মতে, বিশ হাজারের শক্তিশালী ইয়াহুদি বাহিনী মাত্র ১৬০০ মুজাহিদদের আক্রমণে পর্যুদস্ত হয়ে মদিনা রাষ্ট্রের আনুগত্য স্বীকার করে সন্ধির প্রস্তাব জানায়। খায়বার বিজয়ের ফলে ইয়াহুদিদের বড় ধরনের ষড়যন্ত্রের অবসান ঘটে। ফলে তারা পরবর্তীতে মুসলিমদেরকে প্রকাশ্য হামলা করতে সাহস হারিয়ে ফেলে, কোরা উপত্যকার শস্য-শ্যামল তায়মা ও ফাদাক অঞ্চল মুসলিমদের অধিকারে আসে। ফাদাকের ভূমি মহানবী ﷺ এর পরিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণের জন্য নির্ধারিত হয়। তাদের দুর্গসমূহে অনেক স্বর্ণ ও রৌপ্য পাওয়া যায়। কিন্তু মহানবী ﷺ সেগুলো হতে কোনকিছুই গ্রহণ না করে তাদের নিকট হতে কিছু পশু গ্রহণ করে তাদেরকে ছেড়ে দেন। মহানবী ﷺ এহেন বিশ্বাসঘাতক মারাত্মক শত্রুদেরকে পরাজিত করেও তাদের সাথে নিম্নলিখিত শর্তে সন্ধিতে আবদ্ধ হলেন-
১. তারা তাদের স্বধর্ম পূর্বের ন্যায় স্বাধীনভাবে পালন করতে পারবে। তাতে কোন বিধি-নিষেধ আনা হবে না।
২. তাদেরকে কোন প্রকার কর দিতে হবে না।
৩. তাদেরকে মুসলিমদের ন্যায় যুদ্ধক্ষেত্রে যোগদান করতে হবে না।
৪. উৎপন্ন ফসলের অর্ধেকাংশ রাজস্ব হিসেবে মদিনাতে পাঠাতে হবে।
৫. পূর্বের মতো সম্পূর্ণভাবে তাদের বাড়িঘর ও জমিজমা তাদের অধিকারে থাকবে।
হুদায়বিয়ার পরে এটা ছিল নগদ বিজয় :
فَعَلِمَ مَا لَمْ تَعْلَمُوْا فَجَعَلَ مِنْ دُوْنِ ذٰلِكَ فَتْحًا قَرِيْبًا
তিনি ঐ কথা জানতেন, যা তোমরা জানতে না। তাই তিনি (স্বপ্ন পূর্ণ হওয়ার আগে) তোমাদেরকে এ নিকটবর্তী বিজয় দান করেছেন। (সূরা ফাতহ- ২৭)
এ বিজয়ে তারা প্রচুর গনিমত লাভ করে :
وَمَغَانِمَ كَثِيْرَةً يَّاْخُذُوْنَهَاؕ وَكَانَ اللهُ عَزِيْزًا حَكِيْمًا
তাদেরকে অনেক গনিমতের মাল দান করলেন, যা (শীঘ্রই) তারা লাভ করবে। আল্লাহ মহাশক্তিশালী ও সুকৌশলী। (সূরা ফাতহ- ১৯)
যারা হুদায়বিয়ায় যায়নি তারা এ থেকে বঞ্চিত হয় :
سَيَقُوْلُ الْمُخَلَّفُوْنَ اِذَا انْطَلَقْتُمْ اِلٰى مَغَانِمَ لِتَاْخُذُوْهَا ذَرُوْنَا نَتَّبِعْكُمْۚ يُرِيْدُوْنَ اَنْ يُّبَدِّلُوْا كَلَامَ اللهِؕ قُلْ لَّنْ تَتَّبِعُوْنَا كَذٰلِكُمْ قَالَ اللهُ مِنْ قَبْلُ فَسَيَقُوْلُوْنَ بَلْ تَحْسُدُوْنَنَاؕ بَلْ كَانُوْا لَا يَفْقَهُوْنَ اِلَّا قَلِيْلًا
যখন তোমরা গনিমতের মাল হাসিল করতে যাবে, তখন পেছনে পড়ে থাকা লোকেরা (বেদুঈনরা) অবশ্যই তোমাদেরকে বলবে, আমাদেরকেও তোমাদের সাথে যেতে দাও। তারা আল্লাহর বিধান বদলে দিতে চায়। তাদেরকে বলে দিন, তোমরা কখনো আমাদের সাথে যেতে পারবে না, আল্লাহ আগেই এ কথা বলে দিয়েছেন। তখন তারা বলবে, না; বরং তোমরাই আমাদের সাথে হিংসা করছ (যদিও হিংসার কোন কথা নয়), বরং এরা সঠিক কথা কমই বুঝে। (সূরা ফাতহ- ১৫)
তবে পরবর্তী জিহাদে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয় :
قُلْ لِّلْمُخَلَّفِيْنَ مِنَ الْاَعْرَابِ سَتُدْعَوْنَ اِلٰى قَوْمٍ اُولِيْ بَاْسٍ شَدِيْدٍ تُقَاتِلُوْنَهُمْ اَوْ يُسْلِمُوْنَۚ فَاِنْ تُطِيْعُوْا يُؤْتِكُمُ اللهُ اَجْرًا حَسَنًاۚ وَاِنْ تَتَوَلَّوْا كَمَا تَوَلَّيْتُمْ مِّنْ قَبْلُ يُعَذِّبْكُمْ عَذَابًا اَلِيْمًا
(হে রাসূল!) পেছনে থেকে যাওয়া আরবদেরকে বলে দিন, শীঘ্রই তোমাদেরকে এমনসব লোকদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ডাকা হবে, যারা খুবই শক্তিশালী। তোমাদেরকে তাদের সাথে যুদ্ধ করতে হবে অথবা তারা আত্মসমর্পণ করবে। তখন যদি তোমরা জিহাদের হুকুম পালন কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে উত্তম বিনিময় দেবেন। আর যদি তোমরা আগের মতোই পেছনে পড়ে থাক, তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে কষ্টদায়ক শাস্তি দান করবেন। (সূরা ফাতহ- ১৬)
১. তারা তাদের স্বধর্ম পূর্বের ন্যায় স্বাধীনভাবে পালন করতে পারবে। তাতে কোন বিধি-নিষেধ আনা হবে না।
২. তাদেরকে কোন প্রকার কর দিতে হবে না।
৩. তাদেরকে মুসলিমদের ন্যায় যুদ্ধক্ষেত্রে যোগদান করতে হবে না।
৪. উৎপন্ন ফসলের অর্ধেকাংশ রাজস্ব হিসেবে মদিনাতে পাঠাতে হবে।
৫. পূর্বের মতো সম্পূর্ণভাবে তাদের বাড়িঘর ও জমিজমা তাদের অধিকারে থাকবে।
হুদায়বিয়ার পরে এটা ছিল নগদ বিজয় :
فَعَلِمَ مَا لَمْ تَعْلَمُوْا فَجَعَلَ مِنْ دُوْنِ ذٰلِكَ فَتْحًا قَرِيْبًا
তিনি ঐ কথা জানতেন, যা তোমরা জানতে না। তাই তিনি (স্বপ্ন পূর্ণ হওয়ার আগে) তোমাদেরকে এ নিকটবর্তী বিজয় দান করেছেন। (সূরা ফাতহ- ২৭)
এ বিজয়ে তারা প্রচুর গনিমত লাভ করে :
وَمَغَانِمَ كَثِيْرَةً يَّاْخُذُوْنَهَاؕ وَكَانَ اللهُ عَزِيْزًا حَكِيْمًا
তাদেরকে অনেক গনিমতের মাল দান করলেন, যা (শীঘ্রই) তারা লাভ করবে। আল্লাহ মহাশক্তিশালী ও সুকৌশলী। (সূরা ফাতহ- ১৯)
যারা হুদায়বিয়ায় যায়নি তারা এ থেকে বঞ্চিত হয় :
سَيَقُوْلُ الْمُخَلَّفُوْنَ اِذَا انْطَلَقْتُمْ اِلٰى مَغَانِمَ لِتَاْخُذُوْهَا ذَرُوْنَا نَتَّبِعْكُمْۚ يُرِيْدُوْنَ اَنْ يُّبَدِّلُوْا كَلَامَ اللهِؕ قُلْ لَّنْ تَتَّبِعُوْنَا كَذٰلِكُمْ قَالَ اللهُ مِنْ قَبْلُ فَسَيَقُوْلُوْنَ بَلْ تَحْسُدُوْنَنَاؕ بَلْ كَانُوْا لَا يَفْقَهُوْنَ اِلَّا قَلِيْلًا
যখন তোমরা গনিমতের মাল হাসিল করতে যাবে, তখন পেছনে পড়ে থাকা লোকেরা (বেদুঈনরা) অবশ্যই তোমাদেরকে বলবে, আমাদেরকেও তোমাদের সাথে যেতে দাও। তারা আল্লাহর বিধান বদলে দিতে চায়। তাদেরকে বলে দিন, তোমরা কখনো আমাদের সাথে যেতে পারবে না, আল্লাহ আগেই এ কথা বলে দিয়েছেন। তখন তারা বলবে, না; বরং তোমরাই আমাদের সাথে হিংসা করছ (যদিও হিংসার কোন কথা নয়), বরং এরা সঠিক কথা কমই বুঝে। (সূরা ফাতহ- ১৫)
তবে পরবর্তী জিহাদে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয় :
قُلْ لِّلْمُخَلَّفِيْنَ مِنَ الْاَعْرَابِ سَتُدْعَوْنَ اِلٰى قَوْمٍ اُولِيْ بَاْسٍ شَدِيْدٍ تُقَاتِلُوْنَهُمْ اَوْ يُسْلِمُوْنَۚ فَاِنْ تُطِيْعُوْا يُؤْتِكُمُ اللهُ اَجْرًا حَسَنًاۚ وَاِنْ تَتَوَلَّوْا كَمَا تَوَلَّيْتُمْ مِّنْ قَبْلُ يُعَذِّبْكُمْ عَذَابًا اَلِيْمًا
(হে রাসূল!) পেছনে থেকে যাওয়া আরবদেরকে বলে দিন, শীঘ্রই তোমাদেরকে এমনসব লোকদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ডাকা হবে, যারা খুবই শক্তিশালী। তোমাদেরকে তাদের সাথে যুদ্ধ করতে হবে অথবা তারা আত্মসমর্পণ করবে। তখন যদি তোমরা জিহাদের হুকুম পালন কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে উত্তম বিনিময় দেবেন। আর যদি তোমরা আগের মতোই পেছনে পড়ে থাক, তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে কষ্টদায়ক শাস্তি দান করবেন। (সূরা ফাতহ- ১৬)
হুদায়বিয়ার সন্ধি (মার্চ ৬২৮ খ্রিস্টাব্দ) থেকে মক্কা বিজয় (জানুয়ারী ৬৩০ খ্রিস্টাব্দ) পর্যমত্ম সময়ে মুসলিমগণ যে ১৭টি অভিযান পরিচালনা করেন তন্মধ্যে মুতা অভিযান ছিল অন্যতম। রোমান সম্রাট সুরাহবিল ইবনে আমর মহানবী ﷺ এর প্রেরিত দূত হারিস ইবনে উমাইয়াকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এ বিশ্বাসঘাতকতামূলক হত্যার উপযুক্ত প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য ৩০০০ সৈন্যের একটি বাহিনী গঠন করে মুহাম্মাদ ﷺ স্বয়ং যুদ্ধ পরিচালনা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি এতে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। ফলে এ বাহিনীর নেতৃত্ব প্রদান করা হয় তার পালকপুত্র যায়েদ ইবনে হারিসকে। আরব উপজাতি ও বায়জান্টাইনদের সমন্বয়ে গঠিত প্রায় এক লক্ষাধিক সৈন্যের বিশাল বাহিনীর সম্মুখীন হয়ে মুসলিমগণ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হন। একের পর এক তাদের প্রিয় সেনাপতি যায়েদ ইবনে হারিসা, জাফর ইবনে আবু তালিব ও আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা শহীদ হন। অতঃপর খালিদ ইবনে ওয়ালীদ (রাঃ) কে এ যুদ্ধের সেনাপতি করা হয়। তিনি অসীম বীরত্ব ও দক্ষতা প্রদর্শন করে মুতার যুদ্ধে ইসলামের বিজয় পতাকা উড্ডীন করেন। মুহাম্মাদ ﷺ তাঁর তেজস্বিতা ও বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে সাইফুল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর তরবারি নামে খেতাব প্রদান করেন।
মুহাম্মাদ ﷺ উপলব্ধি করেন যে, মদিনায় ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলেও মক্কা বিজয় ব্যতীত আরবে ইসলাম সুদৃঢ়রূপে প্রতিষ্ঠিত হবে না। অপরদিকে তারা ছিল মক্কাবাসীদের সাথে চুক্তিবদ্ধ। তাই সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন এবং একদিন তা এসেও পড়ে। মক্কাবাসীরা চুক্তি ভঙ্গ করে এবং চুক্তির বিপরীতমুখি কাজ পরিচালনা করতে শুরু করে। ফলে রাসূল ﷺ এ সুযোগে মক্কা আক্রমণ করার ইচ্ছা পোষণ করেন। ইতিমধ্যে মক্কাবাসীদের বিভেদ ও বৈষম্যের কথা উপলব্ধি করে আবু সুফিয়ান স্বয়ং মদিনায় গমন করে শামিত্ম প্রসত্মাব করলে মুহাম্মাদ ﷺ তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং ১০ হাজার সৈন্যের এক বিশাল বাহিনী নিয়ে ৬৩০ খ্রিস্টাব্দের ৬ই জানুয়ারী (১০ই রমাযান) মক্কা বিজয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। মহানবী ﷺ মক্কার উপকণ্ঠে শিবির স্থাপন করেন। তাঁর এই বিশাল বাহিনীকে কুরাইশরা সরাসরি বাধা প্রদান করতে সাহস পেল না। আবু সুফিয়ান দু’জন অনুচরসহ মুসলিম শিবিরের পরিস্থিতি দেখতে এসে উমর (রাঃ) এর হাতে বন্দী হয়ে মহানবী ﷺ এর নিকট প্রেরিত হন। মহানবী ﷺ তাকে ক্ষমা করে দিলে তিনি বিমুগ্ধ হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। অতঃপর মহানবী ﷺ তাঁর প্রিয় জন্মভূমি মক্কায় প্রবেশ করেন। আবু সুফিয়ান তাঁকে মক্কায় স্বাগত অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করেন। এদিকে সাফওয়ান, ইকরামা এবং সুহাইল একত্রিত হয়ে মাখজুম গোত্রের লোকজনসহ মুহাম্মাদ ﷺ কে বাধা প্রদান করতে অগ্রসর হয়। পথিমধ্যে আববাস (রাঃ) ইসলাম গ্রহণ করে মক্কায় গমন করেন এবং কুরাইশদের প্রতি সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেন, অবরুদ্ধ মক্কা নগরীর দক্ষিণাংশে খালিদ, উত্তরাংশে যুবায়ের এবং আল্লাহর রাসূল ﷺ স্বয়ং আনসার ও মুহাজির এবং বনু খোজায়া দ্বারা গঠিত সৈন্যবাহিনী পরিচালনা করছেন। আবু সুফিয়ান আত্মসমর্পণের জন্য কুরাইশদের উদ্ভুদ্ধ করেন। অতঃপর যখন মুসলিমগণ নগরে প্রবেশ করতে থাকেন, তখন ইকরামার নেতৃত্বে কিছু সংখ্যক কুরাইশ বিক্ষিপ্তভাবে মক্কার দক্ষিণ ফটকে বাধা প্রদান করেন। কিন্তু খালিদ (রাঃ) বীরবিক্রমে সমসত্ম প্রতিবন্ধকতা দূরীভূত করেন। প্রায় বিনা বাধায় ও বিনা রক্তপাতে মুসলিমগণ মক্কা বিজয় করেন। মহানবী ﷺ মক্কাবাসীদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। ইসলামকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দানে মক্কা বিজয় খুবই সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ইসলামের ইতিহাসে মক্কা বিজয় এক অসাধারণ বিজয়। মানবসমাজে আধ্যাত্মিক, নৈতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সর্বাত্মক বিপ্লবের বিজয়, তাছাড়াও এর ফলাফলস্বরূপ আরো কতগুলো সাফল্য লক্ষ্য করা যায়। যেমন-
১. আরব উপদ্বীপে মিল্লাতে ইবরাহীম পরিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
২. গোটা আরব দেশ মদিনার ইসলামী সরকারের অধীনে চলে আসে।
৩. আরবের সকল গোত্র ইসলামকে সত্য ধর্ম হিসেবে গ্রহণ করে নেয়।
মক্কা বিজয়ের পর লোকেরা দলে দলে ইসলামে প্রবেশ করে :
اِذَا جَآءَ نَصْرُ اللهِ وَالْفَتْحُ – وَرَاَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُوْنَ فِيْ دِيْنِ اللهِ اَفْوَاجًا – فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ اِنَّهٗ كَانَ تَوَّابًا
যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য ও বিজয় আসবে। তখন মানুষদেরকে দেখবে, তারা দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করছে। অতএব তুমি তোমার প্রতিপালকের প্রশংসা জ্ঞাপন করো এবং তাঁর কাছেই ক্ষমাপ্রার্থনা করো; নিশ্চয় তিনি তাওবা কবুলকারী। (সূরা নাসর, ১-৩)
১. আরব উপদ্বীপে মিল্লাতে ইবরাহীম পরিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
২. গোটা আরব দেশ মদিনার ইসলামী সরকারের অধীনে চলে আসে।
৩. আরবের সকল গোত্র ইসলামকে সত্য ধর্ম হিসেবে গ্রহণ করে নেয়।
মক্কা বিজয়ের পর লোকেরা দলে দলে ইসলামে প্রবেশ করে :
اِذَا جَآءَ نَصْرُ اللهِ وَالْفَتْحُ – وَرَاَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُوْنَ فِيْ دِيْنِ اللهِ اَفْوَاجًا – فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ اِنَّهٗ كَانَ تَوَّابًا
যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য ও বিজয় আসবে। তখন মানুষদেরকে দেখবে, তারা দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করছে। অতএব তুমি তোমার প্রতিপালকের প্রশংসা জ্ঞাপন করো এবং তাঁর কাছেই ক্ষমাপ্রার্থনা করো; নিশ্চয় তিনি তাওবা কবুলকারী। (সূরা নাসর, ১-৩)
৮ম হিজরীর শাওয়াল মাসে মক্কা ও তায়েফের মাঝখানে হুনাইন নামক উপত্যকায় এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। এ যুদ্ধে মুসলিমদের পক্ষে ছিল ১২ হাজার সৈন্য। এর আগে কোন যুদ্ধে মুসলিমদের এত বিপুল সংখ্যক সৈন্য সমবেত হয়নি। অন্যদিকে কাফিরদের সৈন্যসংখ্যা ছিল এর তুলনায় অনেক কম। কিন্তু এ সত্ত্বেও হাওয়াযিন গোত্রের তীরন্দাজরা যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিল। মুসলিম সেনাদলে মারাত্মক বিশৃঙ্খলা দেখা দিল। তারা বিক্ষিপ্ত হয়ে পিছু হটতে লাগল। এ সময় শুধুমাত্র নবী ﷺ এবং মুষ্টিমেয় কতিপয় মরণপণ সাহাবী যুদ্ধের ময়দানে দৃঢ়পদ ছিলেন। তাদের অবিচলতার ফলেই সেনাবাহিনী পুনর্বার সংগঠিত হলো এবং মুসলিমরা বিজয় লাভ করল। পরাজিত শত্রু সৈন্যরা তায়েফের দুর্গে আশ্রয় গ্রহণ করে পুনরায় মুসলিমদের বিরুদ্ধে অভিযানের পরিকল্পনায় মেতে উঠে। সংবাদ পেয়ে মুহাম্মাদ ﷺ আবু মুসার অধিনায়কত্বে এক বিশাল বাহিনী তায়েফে প্রেরণ করেন। তিন সপ্তাহ অবরুদ্ধ থাকার পর তায়েফবাসী মহানবী ﷺ এর নিকট আত্মসমর্পণ করে। অতঃপর মহানবী ﷺ তাদেরকে ক্ষমা করে দেন এবং সকলের সাথে সদয় ব্যবহার করেন। যে তায়েফবাসী একদিন মুহাম্মাদ ﷺ কে প্রসত্মর দ্বারা আঘাত করে রক্তাক্ত করেছিল, সেদিন তারাই মুসলিম বাহিনীর আক্রমণে ভীত ও জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছিল এবং মদিনার শাসনাধীনে মুহাম্মাদ ﷺ এর আনুগত্য স্বীকার করে নিল। তারপর তায়েফবাসীরা একে একে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হতে শুরু করল। এ যুদ্ধে কাফিরদের শোচনীয় পরাজয় ঘটে। এতে ৭০ জন কাফির নিহত হয় এবং ৬০০ জন বন্দি হয়। হুনাইন যুদ্ধে বিজয়ের ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী। প্রভাবশালী পৌত্তলিক গোত্র হাওয়াযিন ও সাকীফের পরাজয়ের ফলে অন্যান্য সকল পৌত্তলিক গোত্রও মুসলিমদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করতে সাহস হারিয়ে ফেলে। ফলে তারা ধীরে ধীরে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করে ইসলামী রাষ্ট্রের অনুগত নাগরিকে পরিণত হয়।
সৈন্যসংখ্যা অনেক হলেও প্রথম দিকে মুসলিমরা হেরে যায় :
لَقَدْ نَصَرَكُمُ اللهُ فِيْ مَوَاطِنَ كَثِيْرَةٍ وَّيَوْمَ حُنَيْنٍ اِذْ اَعْجَبَتْكُمْ كَثْرَتُكُمْ فَلَمْ تُغْنِ عَنْكُمْ شَيْئًا وَّضَاقَتْ عَلَيْكُمُ الْاَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ ثُمَّ وَلَّيْتُمْ مُّدْبِرِيْنَ
আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করেছেন বহু ক্ষেত্রে এবং হুনাইনের যুদ্ধের দিনেও, যখন তোমাদের সংখ্যাধিক্য তোমাদেরকে উৎফুল্ল করেছিল; কিন্তু সেটা তোমাদের কোন কাজে আসেনি এবং বিস্তৃত হওয়া সত্ত্বেও পৃথিবী তোমাদের জন্য সংকুচিত হয়ে গিয়েছিল এবং পরে তোমরা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পলায়ন করেছিলে। (সূরা তাওবা- ২৫)
পরে তারা আল্লাহর সাহায্যে বিজয় লাভ করে :
ثُمَّ اَنْزَلَ اللهُ سَكِيْنَتَهٗ عَلٰى رَسُوْلِهٖ وَعَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ وَاَنْزَلَ جُنُوْدًا لَّمْ تَرَوْهَا وَعَذَّبَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاؕ وَذٰلِكَ جَزَآءُ الْكَافِرِيْنَ
অতঃপর আল্লাহ তাঁর নিকট হতে তাঁর রাসূল ও মুমিনদের উপর প্রশান্তি বর্ষণ করেন এবং এমন এক সৈন্যবাহিনী অবতীর্ণ করেন, যা তোমরা দেখতে পাওনি। (এভাবেই) তিনি কাফিরদেরকে শাস্তি প্রদান করে থাকেন; আর এটাই কাফিরদের (উপযুক্ত) কর্মফল। (সূরা তাওবা- ২৬)
সৈন্যসংখ্যা অনেক হলেও প্রথম দিকে মুসলিমরা হেরে যায় :
لَقَدْ نَصَرَكُمُ اللهُ فِيْ مَوَاطِنَ كَثِيْرَةٍ وَّيَوْمَ حُنَيْنٍ اِذْ اَعْجَبَتْكُمْ كَثْرَتُكُمْ فَلَمْ تُغْنِ عَنْكُمْ شَيْئًا وَّضَاقَتْ عَلَيْكُمُ الْاَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ ثُمَّ وَلَّيْتُمْ مُّدْبِرِيْنَ
আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করেছেন বহু ক্ষেত্রে এবং হুনাইনের যুদ্ধের দিনেও, যখন তোমাদের সংখ্যাধিক্য তোমাদেরকে উৎফুল্ল করেছিল; কিন্তু সেটা তোমাদের কোন কাজে আসেনি এবং বিস্তৃত হওয়া সত্ত্বেও পৃথিবী তোমাদের জন্য সংকুচিত হয়ে গিয়েছিল এবং পরে তোমরা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পলায়ন করেছিলে। (সূরা তাওবা- ২৫)
পরে তারা আল্লাহর সাহায্যে বিজয় লাভ করে :
ثُمَّ اَنْزَلَ اللهُ سَكِيْنَتَهٗ عَلٰى رَسُوْلِهٖ وَعَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ وَاَنْزَلَ جُنُوْدًا لَّمْ تَرَوْهَا وَعَذَّبَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاؕ وَذٰلِكَ جَزَآءُ الْكَافِرِيْنَ
অতঃপর আল্লাহ তাঁর নিকট হতে তাঁর রাসূল ও মুমিনদের উপর প্রশান্তি বর্ষণ করেন এবং এমন এক সৈন্যবাহিনী অবতীর্ণ করেন, যা তোমরা দেখতে পাওনি। (এভাবেই) তিনি কাফিরদেরকে শাস্তি প্রদান করে থাকেন; আর এটাই কাফিরদের (উপযুক্ত) কর্মফল। (সূরা তাওবা- ২৬)
৬৩০ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে (৯ম হিজরী, রজব মাস) রোমান সম্রাট হিরাক্লিয়াস মদিনা আক্রমণের বিষয়টি চূড়ান্ত করে। রোম সাম্রাজ্যের অধীন লাখম, জুযাম, গাসসান, আমেলাহ প্রভৃতি কয়েকটি আরব গোত্রও প্রায় এক লক্ষ সৈন্য নিয়ে রোমান বাহিনীতে শামিল হয়। আরবের ইয়াহুদিরা মুহাম্মাদ ﷺ এর হাতে কয়েকবার পরাজয় বরণ করে সিরিয়া সংলগ্ন খায়বার অঞ্চলে নাশকতামূলক কার্যে লিপ্ত ছিল। হুদায়বিয়া সন্ধির পর মুহাম্মাদ ﷺ রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াসের নিকট দূত পাঠান। কিন্তু মক্কা বিজয়ের পর হুনাইন ও তায়েফ বিজয়ে হিরাক্লিয়াস ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়ে। তদুপরি মুতার যুদ্ধে খ্রিস্টানদের পরাজয় এবং ইয়াহুদিদের প্ররোচনা তাকে উত্তেজিত করে তুলে। গাসসানীদের সহযোগিতায় ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে নভেম্বর মাসে লক্ষাধিক সৈন্যসহ বায়জান্টাইন বাহিনী মদিনার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। মুহাম্মাদ ﷺ এ সংবাদ পেয়ে সিরিয়া গমনের বাণিজ্য পথটিকে নিরাপদ রাখার জন্য সিরিয়া সীমামেত্ম অবস্থিত তাবুক নামক স্থানে শত্রুপক্ষের গতিরোধ করেন। মুসলিম বাহিনীতে পদাতিক সৈন্য ছিল ৩০,০০০ এবং অশ্বারোহী ১০,০০০। এ যুদ্ধে আবু বকর (রাঃ) তাঁর সমসত্ম সম্পত্তি, উমর (রাঃ) তাঁর অর্ধেক সম্পত্তি এবং ওসমান (রাঃ) ১,০০০ স্বর্ণমুদ্রা, ১,০০০ উট এবং ৭০টি অশ্ব যুদ্ধ তহবিলে দান করেন। কিন্তু পরবর্তীতে এসব আয়োজন বিশেষ কোন কাজে আসেনি। কেননা আগত যুদ্ধে মুসলিমদের বিজয়লাভ অবশ্যম্ভাবী মনে করে বায়জান্টাইন বাহিনী সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ না হয়ে পলায়ন করে। মহানবী ﷺ ২০ দিন তাবুকে অবস্থান করে মদিনায় প্রত্যাবর্তন করেন। মুসলিম সৈন্যবাহিনী তাবুকে গমনকালে পথিমধ্যে গ্রীষ্মের সূর্যের প্রচন্ড কিরণ ও প্রখর তাপে এবং পানির অভাবে ভয়ানক কষ্ট পান। মুহাম্মাদ ﷺ এর জীবদ্দশায় ছোট বড় সর্বমোট ২৭টি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। তন্মধ্যে তাবুক ও অন্যান্য ৮টি যুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। নবম হিজরী সনে অনুষ্ঠিত এ অভিযানটিই ছিল মহানবী ﷺ এর জীবনের শেষ অভিযান।
পরিস্থিতি কঠিন হওয়া সত্ত্বেও যুদ্ধে বের হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয় :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَا لَكُمْ اِذَا قِيْلَ لَكُمُ انْفِرُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ اثَّاقَلْتُمْ اِلَى الْاَرْضِؕ اَرَضِيْتُمْ بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا مِنَ الْاٰخِرَةِۚ فَمَا مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا فِى الْاٰخِرَةِ اِلَّا قَلِيْلٌ
হে মুমিনগণ! তোমাদের কী হলো? যখন তোমাদেরকে আল্লাহর পথে অভিযানে বের হতে বলা হয় তখন তোমরা ভরাক্রান্ত হয়ে জমিনের দিকে ঝুঁকে পড়? তোমরা কি আখিরাতের পরিবর্তে পার্থিব জীবনেই পরিতুষ্ট হয়েছ? (জেনে রেখো) আখিরাতের তুলনায় পার্থিব জীবনের ভোগের উপকরণ অতি সামান্য। (সূরা তাওবা- ৩৮)
বের না হলে সতর্কবাণী শুনিয়ে দেয়া হয় :
اِلَّا تَنْفِرُوْا يُعَذِّبْكُمْ عَذَابًا اَلِيْمًا وَّيَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ وَلَا تَضُرُّوْهُ شَيْئًاؕ وَاللهُ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
যদি তোমরা অভিযানে বের না হও, তবে তিনি তোমাদেরকে মর্মান্তিক শাস্তি দেবেন এবং অন্য কোন জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন। আর তোমরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা তাওবা- ৩৯)
যে যেই অবস্থাতেই থাকুক না কেন বের হওয়ার নির্দেশ দেয়া হলো :
اِنْفِرُوْا خِفَافًا وَّثِقَالًا وَّجَاهِدُوْا بِاَمْوَالِكُمْ وَاَنْفُسِكُمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِؕ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
তোমরা অভিযানে বের হয়ে পড়ো, হালকা অবস্থায় হোক অথবা ভারি অবস্থায় এবং তোমাদের সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করো। আর এটাই তোমাদের জন্য উত্তম হবে, যদি তোমরা জানতে। (সূরা তাওবা- ৪১)
সত্যিকার মুমিনগণ কোন অজুহাত উপস্থিত করেননি :
لَا يَسْتَاْذِنُكَ الَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ اَنْ يُّجَاهِدُوْا بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْ وَاللهُ عَلِيْمٌ ۢبِالْمُتَّقِيْنَ
যারা আল্লাহর প্রতি ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান রাখে, তারা তোমার নিকট নিজ সম্পদ ও জীবন দ্বারা জিহাদ থেকে অব্যাহতি প্রার্থনা করে না। আল্লাহ মুত্তাক্বীদের সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত। (সূরা তাওবা- ৪৪)
তারা নবীর সাথে যুদ্ধে বের হয়ে যায় :
لٰكِنِ الرَّسُوْلُ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَعَهٗ جَاهَدُوْا بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْؕ وَاُولٰٓئِكَ لَهُمُ الْخَيْرَاتُؗ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
তবে রাসূল এবং যারা তাঁর সাথে ঈমান এনেছিল তারা নিজ সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে; তাদের জন্যই রয়েছে কল্যাণ এবং তারাই সফলকাম। (সূরা তাওবা- ৮৮)
মুনাফিকরা এ যুদ্ধে যেতে অক্ষমতা প্রকাশ করে :
لَوْ كَانَ عَرَضًا قَرِيْبًا وَّسَفَرًا قَاصِدًا لَّاتَّبَعُوْكَ وَلٰكِنْ ۢبَعُدَتْ عَلَيْهِمُ الشُّقَّةُؕ وَسَيَحْلِفُوْنَ بِاللهِ لَوِ اسْتَطَعْنَا لَخَرَجْنَا مَعَكُمْؕ يُهْلِكُوْنَ اَنْفُسَهُمْۚ وَاللهُ يَعْلَمُ اِنَّهُمْ لَكَاذِبُوْنَ
যদি তাড়াতাড়ি সম্পদ লাভের সম্ভাবনা থাকত এবং সফলতা আসাটা সহজ হতো, তাহলে অবশ্যই তারা তোমার অনুসরণ করত; কিন্তু তাদের নিকট যাত্রাপথ খুবই সুদীর্ঘ মনে হলো। (ফলে) অচিরেই তারা আল্লাহর নামে শপথ করে বলবে, ‘যদি পারতাম তবে আমরা অবশ্যই তোমাদের সঙ্গে বের হতাম।’ বস্তুত তারা নিজেরাই নিজেদেরকে ধ্বংস করে। আল্লাহ জানেন যে, নিশ্চয় তারা মিথ্যাবাদী। (সূরা তাওবা- ৪২)
তারা প্রচন্ড গরমের দিন বের না হওয়ার পরামর্শ দেয় :
وَقَالُوْا لَا تَنْفِرُوْا فِى الْحَرِّ ؕ قُلْ نَارُ جَهَنَّمَ اَشَدُّ حَرًّاؕ لَوْ كَانُوْا يَفْقَهُوْنَ
তারা বলল, গরমের মধ্যে অভিযানে বের হয়ো না। বলো, গরমের দিক থেকে জাহান্নামের আগুন প্রচন্ডতম, যদি তারা বুঝত। (সূরা তাওবা- ৮১)
তারা না যাওয়ার জন্য অজুহাত উপস্থিত করে :
وَمِنْهُمْ مَّنْ يَّقُوْلُ ائْذَنْ لِّيْ وَلَا تَفْتِنِّيْؕ اَ لَا فِى الْفِتْنَةِ سَقَطُوْاؕ وَاِنَّ جَهَنَّمَ لَمُحِيْطَةٌ ۢبِالْكَافِرِيْنَ
তাদের মধ্যে এমনও লোক আছে যারা বলে, আমাকে অব্যাহতি দিন এবং আমাকে ফিতনায় ফেলবেন না। সাবধান! তারাই ফিতনায় লিপ্ত রয়েছে। নিশ্চয় জাহান্নাম কাফিরদেরকে বেষ্টন করে আছে। (সূরা তাওবা- ৪৯)
তারা বের হওয়ার কোন প্রস্তুতিই নেয়নি :
وَلَوْ اَرَادُوا الْخُرُوْجَ لَاَعَدُّوْا لَهٗ عُدَّةً وَّلٰكِنْ كَرِهَ اللهُ انْۢبِعَاثَهُمْ فَثَبَّطَهُمْ وَقِيْلَ اقْعُدُوْا مَعَ الْقَاعِدِيْنَ
তারা বের হতে চাইলে নিশ্চয় তারা এর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করত, কিন্তু তাদের অভিযাত্রা আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় ছিল না। সুতরাং তিনি তাদেরকে বিরত রাখেন এবং তাদেরকে বলা হয়, ‘যারা বসে আছে তোমরা তাদের সাথে বসে থাকো।’ (সূরা তাওবা- ৪৬)
তারা বাড়িতে বসে থেকেই আনন্দ লাভ করল :
فَرِحَ الْمُخَلَّفُوْنَ بِمَقْعَدِهِمْ خِلَافَ رَسُوْلِ اللهِ وَكَرِهُوْاۤ اَنْ يُّجَاهِدُوْا بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ
যারা পশ্চাতে রয়ে গেল তারা আল্লাহর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে বসে থাকাতেই আনন্দ বোধ করল এবং তাদের ধনসম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করাকে অপছন্দ করল। (সূরা তাওবা- ৮১)
ধনীরা আরো বেশি পেছনে থাকার বাহানা জুড়েছিল :
وَاِذَاۤ اُنْزِلَتْ سُوْرَةٌ اَنْ اٰمِنُوْا بِاللهِ وَجَاهِدُوْا مَعَ رَسُوْلِهِ اسْتَاْذَنَكَ اُولُو الطَّوْلِ مِنْهُمْ وَقَالُوْا ذَرْنَا نَكُنْ مَّعَ الْقَاعِدِيْنَ
যখন এ মর্মে কোন সূরা অবতীর্ণ হয় যে, তোমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন করো এবং রাসূলের সাথি হয়ে জিহাদ করো, তখন তাদের মধ্যে যাদের শক্তি-সামর্থ্য রয়েছে, তারা তোমার নিকট অব্যাহতি চায় এবং বলে, আমাদেরকে অব্যাহতি দিন, যারা বসে থাকে আমরা তাদের সঙ্গেই থাকব। (সূরা তাওবা- ৮৬)
এদের অভিযোগ গ্রহণ করাতে নবীকে সতর্ক করা হয় :
عَفَا اللهُ عَنْكَۚ لِمَ اَذِنْتَ لَهُمْ حَتّٰى يَتَبَيَّنَ لَكَ الَّذِيْنَ صَدَقُوْا وَتَعْلَمَ الْكَاذِبِيْنَ
আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করেছেন। কারা সত্যবাদী তা তোমার নিকট স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত এবং কারা মিথ্যাবাদী তা না জানা পর্যন্ত তুমি কেন তাদেরকে অব্যাহতি দিলে? (সূরা তাওবা- ৪৩)
যুদ্ধ শেষ হলে মুনাফিকরা অজুহাত উপস্থিত করতে থাকে :
يَعْتَذِرُوْنَ اِلَيْكُمْ اِذَا رَجَعْتُمْ اِلَيْهِمْؕ قُلْ لَّا تَعْتَذِرُوْا لَنْ نُّؤْمِنَ لَكُمْ قَدْ نَبَّاَنَا اللهُ مِنْ اَخْبَارِكُمْؕ وَسَيَرَى اللهُ عَمَلَكُمْ وَرَسُوْلُهٗ ثُمَّ تُرَدُّوْنَ اِلٰى عَالِمِ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ فَيُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
তোমরা তাদের নিকট ফিরে আসলে তারা তোমাদের নিকট অজুহাত পেশ করবে। বলো, অজুহাত পেশ করো না, আমরা কখনো তোমাদেরকে বিশ্বাস করব না। আল্লাহ আমাদেরকে তোমাদের ব্যাপারে জানিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ অবশ্যই তোমাদের কার্যকলাপ লক্ষ্য করবেন এবং তাঁর রাসূলও। অতঃপর যিনি অদৃশ্য ও দৃশ্য সম্পর্কে পরিজ্ঞাত তোমাদেরকে তাঁর নিকট প্রত্যাবর্তিত করা হবে। তারপর তোমরা যা করতে তা তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দেবেন। (সূরা তাওবা- ৯৪)
আল্লাহ তাদের উপর কখনই সন্তুষ্ট নন :
يَحْلِفُوْنَ لَكُمْ لِتَرْضَوْا عَنْهُمْ فَاِنْ تَرْضَوْا عَنْهُمْؕ فَاِنَّ اللهَ لَا يَرْضٰى عَنِ الْقَوْمِ الْفَاسِقِيْنَ
তারা তোমাদের নিকট শপথ করবে যাতে তোমরা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হও। তোমরা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হলেও আল্লাহ (কখনো) সত্যত্যাগী সম্প্রদায়ের প্রতি সন্তুষ্ট হবেন না। (সূরা তাওবা- ৯৬)
পরবর্তীতে যুদ্ধে যাওয়ার সুযোগ বন্ধ করে দেয়া হয় :
فَاِنْ رَّجَعَكَ اللهُ اِلٰى طَآئِفَةٍ مِّنْهُمْ فَاسْتَاْذَنُوْكَ لِلْخُرُوْجِ فَقُلْ لَّنْ تَخْرُجُوْا مَعِيَ اَبَدًا وَّلَنْ تُقَاتِلُوْا مَعِيَ عَدُوًّا اِنَّكُمْ رَضِيْتُمْ بِالْقُعُوْدِ اَ وَّلَ مَرَّةٍ فَاقْعُدُوْا مَعَ الْخَالِفِيْنَ
আল্লাহ যদি তোমাকে তাদের কোন দলের নিকট ফেরত আনেন এবং তারা অভিযানে বের হওয়ার জন্য তোমার অনুমতি প্রার্থনা করে তবে তুমি তাদেরকে বলে দেবে যে, তোমরা তো কখনো আমার সাথে বের হবে না এবং আমার সাথি হয়ে শত্রুর সাথে যুদ্ধও করবে না। তোমরা তো প্রথমবার বসে থাকাকেই পছন্দ করেছিলে; সুতরাং যারা পেছনে থাকে তাদের সাথেই বসে থাকো। (সূরা তাওবা- ৮৩)
যারা যুদ্ধে শরীক হয়েছেন তাদের ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দেয়া হয় :
لَقَدْ تَّابَ اللهُ عَلَى النَّبِيِّ وَالْمُهَاجِرِيْنَ وَالْاَنْصَارِ الَّذِيْنَ اتَّبَعُوْهُ فِيْ سَاعَةِ الْعُسْرَةِ مِنْ ۢبَعْدِ مَا كَادَ يَزِيْغُ قُلُوْبُ فَرِيْقٍ مِّنْهُمْ ثُمَّ تَابَ عَلَيْهِمْؕ اِنَّهٗ بِهِمْ رَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ
আল্লাহ অনুগ্রহপরায়ণ হলেন নবীর প্রতি এবং মুহাজির ও আনসারদের প্রতি, যারা সংকটকালে তাঁর অনুসরণ করেছিল- এমনকি যখন তাদের এক দলের অন্তর বক্র হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। পরে আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করলেন; নিশ্চয় তিনি তাদের প্রতি দয়াদ্র ও পরম দয়ালু। (সূরা তাওবা- ১১৭)
পেছনে থাকা কিছু সাহাবী নিজেদের দোষ স্বীকার করে নেন :
وَاٰخَرُوْنَ اعْتَرَفُوْا بِذُنُوْبِهِمْ خَلَطُوْا عَمَلًا صَالِحًا وَّاٰخَرَ سَيِّئًاؕ عَسَى اللهُ اَنْ يَّتُوْبَ عَلَيْهِمْؕ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
অপর কতক লোক নিজেদের অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছে, তারা এক সৎকর্মের সাথে অপর অসৎকর্ম মিশ্রিত করেছে। সম্ভবত আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন; নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা তাওবা- ১০২)
তিনজনের তাওবা পিছিয়ে দেয়া হয় :
وَاٰخَرُوْنَ مُرْجَوْنَ لِاَمْرِ اللهِ اِمَّا يُعَذِّبُهُمْ وَاِمَّا يَتُوْبُ عَلَيْهِمْ ؕ وَاللهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ
আল্লাহর আদেশের প্রতীক্ষায় অপর কতকের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত স্থগিত রইল যে, তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন অথবা ক্ষমা করবেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা- ১০৬)
পঞ্চাশ দিন পর এ তিনজনের তাওবা কবুল হয় :
وَعَلَى الثَّلَاثَةِ الَّذِيْنَ خُلِّفُوْاؕ حَتّٰۤى اِذَا ضَاقَتْ عَلَيْهِمُ الْاَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ وَضَاقَتْ عَلَيْهِمْ اَنْفُسُهُمْ وَظَنُّوْاۤ اَنْ لَّا مَلْجَاَ مِنَ اللهِ اِلَّاۤ اِلَيْهِؕ ثُمَّ تَابَ عَلَيْهِمْ لِيَتُوْبُوْاؕ اِنَّ اللهَ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ
তিনি ক্ষমা করলেন অপর তিনজনকে, যাদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছিল; যে পর্যন্ত না পৃথিবী বিস্তৃত হওয়া সত্ত্বেও তাদের জন্য সেটা সংকুচিত হয়ে গিয়েছিল এবং তাদের জীবন তাদের জন্য দুর্বিসহ হয়ে পড়েছিল। তারা উপলব্ধি করেছিল যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন আশ্রয়স্থল নেই। অতঃপর তিনি তাদের তাওবা কবুল করে নিলেন, যাতে তারা তাওবায় স্থির থাকে। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
(সূরা তাওবা- ১১৮)
ব্যাখ্যা : যুদ্ধ হতে পশ্চাদপদ দশজনের মধ্যে যে তিনজন তাওবা করেননি, কেবল অপরাধ স্বীকার করেছিলেন, রাসূল ﷺ তাদের সঙ্গে মুসলিমদের কথাবার্তা বলতে নিষেধ করে চল্লিশ দিন পর বললেন, তারা নিজেদের স্ত্রী হতে দূরে থাকবে। এতে সমগ্র জগৎ যেন তাদের নিকট সংকীর্ণ হয়ে পড়ল। অতঃপর পঞ্চাশ দিন পর তাওবা কবুল হওয়ার খবর নিয়ে এ আয়াতটি নাযিল হয়। এ তিন সাহাবী ছিলেন কা‘ব ইবনে মালেক, হিলাল ইবনে উমাইয়া এবং মুরারা ইবনে রুবাই (রাঃ)।
পরিস্থিতি কঠিন হওয়া সত্ত্বেও যুদ্ধে বের হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয় :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَا لَكُمْ اِذَا قِيْلَ لَكُمُ انْفِرُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ اثَّاقَلْتُمْ اِلَى الْاَرْضِؕ اَرَضِيْتُمْ بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا مِنَ الْاٰخِرَةِۚ فَمَا مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا فِى الْاٰخِرَةِ اِلَّا قَلِيْلٌ
হে মুমিনগণ! তোমাদের কী হলো? যখন তোমাদেরকে আল্লাহর পথে অভিযানে বের হতে বলা হয় তখন তোমরা ভরাক্রান্ত হয়ে জমিনের দিকে ঝুঁকে পড়? তোমরা কি আখিরাতের পরিবর্তে পার্থিব জীবনেই পরিতুষ্ট হয়েছ? (জেনে রেখো) আখিরাতের তুলনায় পার্থিব জীবনের ভোগের উপকরণ অতি সামান্য। (সূরা তাওবা- ৩৮)
বের না হলে সতর্কবাণী শুনিয়ে দেয়া হয় :
اِلَّا تَنْفِرُوْا يُعَذِّبْكُمْ عَذَابًا اَلِيْمًا وَّيَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ وَلَا تَضُرُّوْهُ شَيْئًاؕ وَاللهُ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
যদি তোমরা অভিযানে বের না হও, তবে তিনি তোমাদেরকে মর্মান্তিক শাস্তি দেবেন এবং অন্য কোন জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন। আর তোমরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা তাওবা- ৩৯)
যে যেই অবস্থাতেই থাকুক না কেন বের হওয়ার নির্দেশ দেয়া হলো :
اِنْفِرُوْا خِفَافًا وَّثِقَالًا وَّجَاهِدُوْا بِاَمْوَالِكُمْ وَاَنْفُسِكُمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِؕ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
তোমরা অভিযানে বের হয়ে পড়ো, হালকা অবস্থায় হোক অথবা ভারি অবস্থায় এবং তোমাদের সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করো। আর এটাই তোমাদের জন্য উত্তম হবে, যদি তোমরা জানতে। (সূরা তাওবা- ৪১)
সত্যিকার মুমিনগণ কোন অজুহাত উপস্থিত করেননি :
لَا يَسْتَاْذِنُكَ الَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ اَنْ يُّجَاهِدُوْا بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْ وَاللهُ عَلِيْمٌ ۢبِالْمُتَّقِيْنَ
যারা আল্লাহর প্রতি ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান রাখে, তারা তোমার নিকট নিজ সম্পদ ও জীবন দ্বারা জিহাদ থেকে অব্যাহতি প্রার্থনা করে না। আল্লাহ মুত্তাক্বীদের সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত। (সূরা তাওবা- ৪৪)
তারা নবীর সাথে যুদ্ধে বের হয়ে যায় :
لٰكِنِ الرَّسُوْلُ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَعَهٗ جَاهَدُوْا بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْؕ وَاُولٰٓئِكَ لَهُمُ الْخَيْرَاتُؗ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
তবে রাসূল এবং যারা তাঁর সাথে ঈমান এনেছিল তারা নিজ সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে; তাদের জন্যই রয়েছে কল্যাণ এবং তারাই সফলকাম। (সূরা তাওবা- ৮৮)
মুনাফিকরা এ যুদ্ধে যেতে অক্ষমতা প্রকাশ করে :
لَوْ كَانَ عَرَضًا قَرِيْبًا وَّسَفَرًا قَاصِدًا لَّاتَّبَعُوْكَ وَلٰكِنْ ۢبَعُدَتْ عَلَيْهِمُ الشُّقَّةُؕ وَسَيَحْلِفُوْنَ بِاللهِ لَوِ اسْتَطَعْنَا لَخَرَجْنَا مَعَكُمْؕ يُهْلِكُوْنَ اَنْفُسَهُمْۚ وَاللهُ يَعْلَمُ اِنَّهُمْ لَكَاذِبُوْنَ
যদি তাড়াতাড়ি সম্পদ লাভের সম্ভাবনা থাকত এবং সফলতা আসাটা সহজ হতো, তাহলে অবশ্যই তারা তোমার অনুসরণ করত; কিন্তু তাদের নিকট যাত্রাপথ খুবই সুদীর্ঘ মনে হলো। (ফলে) অচিরেই তারা আল্লাহর নামে শপথ করে বলবে, ‘যদি পারতাম তবে আমরা অবশ্যই তোমাদের সঙ্গে বের হতাম।’ বস্তুত তারা নিজেরাই নিজেদেরকে ধ্বংস করে। আল্লাহ জানেন যে, নিশ্চয় তারা মিথ্যাবাদী। (সূরা তাওবা- ৪২)
তারা প্রচন্ড গরমের দিন বের না হওয়ার পরামর্শ দেয় :
وَقَالُوْا لَا تَنْفِرُوْا فِى الْحَرِّ ؕ قُلْ نَارُ جَهَنَّمَ اَشَدُّ حَرًّاؕ لَوْ كَانُوْا يَفْقَهُوْنَ
তারা বলল, গরমের মধ্যে অভিযানে বের হয়ো না। বলো, গরমের দিক থেকে জাহান্নামের আগুন প্রচন্ডতম, যদি তারা বুঝত। (সূরা তাওবা- ৮১)
তারা না যাওয়ার জন্য অজুহাত উপস্থিত করে :
وَمِنْهُمْ مَّنْ يَّقُوْلُ ائْذَنْ لِّيْ وَلَا تَفْتِنِّيْؕ اَ لَا فِى الْفِتْنَةِ سَقَطُوْاؕ وَاِنَّ جَهَنَّمَ لَمُحِيْطَةٌ ۢبِالْكَافِرِيْنَ
তাদের মধ্যে এমনও লোক আছে যারা বলে, আমাকে অব্যাহতি দিন এবং আমাকে ফিতনায় ফেলবেন না। সাবধান! তারাই ফিতনায় লিপ্ত রয়েছে। নিশ্চয় জাহান্নাম কাফিরদেরকে বেষ্টন করে আছে। (সূরা তাওবা- ৪৯)
তারা বের হওয়ার কোন প্রস্তুতিই নেয়নি :
وَلَوْ اَرَادُوا الْخُرُوْجَ لَاَعَدُّوْا لَهٗ عُدَّةً وَّلٰكِنْ كَرِهَ اللهُ انْۢبِعَاثَهُمْ فَثَبَّطَهُمْ وَقِيْلَ اقْعُدُوْا مَعَ الْقَاعِدِيْنَ
তারা বের হতে চাইলে নিশ্চয় তারা এর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করত, কিন্তু তাদের অভিযাত্রা আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় ছিল না। সুতরাং তিনি তাদেরকে বিরত রাখেন এবং তাদেরকে বলা হয়, ‘যারা বসে আছে তোমরা তাদের সাথে বসে থাকো।’ (সূরা তাওবা- ৪৬)
তারা বাড়িতে বসে থেকেই আনন্দ লাভ করল :
فَرِحَ الْمُخَلَّفُوْنَ بِمَقْعَدِهِمْ خِلَافَ رَسُوْلِ اللهِ وَكَرِهُوْاۤ اَنْ يُّجَاهِدُوْا بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ
যারা পশ্চাতে রয়ে গেল তারা আল্লাহর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে বসে থাকাতেই আনন্দ বোধ করল এবং তাদের ধনসম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করাকে অপছন্দ করল। (সূরা তাওবা- ৮১)
ধনীরা আরো বেশি পেছনে থাকার বাহানা জুড়েছিল :
وَاِذَاۤ اُنْزِلَتْ سُوْرَةٌ اَنْ اٰمِنُوْا بِاللهِ وَجَاهِدُوْا مَعَ رَسُوْلِهِ اسْتَاْذَنَكَ اُولُو الطَّوْلِ مِنْهُمْ وَقَالُوْا ذَرْنَا نَكُنْ مَّعَ الْقَاعِدِيْنَ
যখন এ মর্মে কোন সূরা অবতীর্ণ হয় যে, তোমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন করো এবং রাসূলের সাথি হয়ে জিহাদ করো, তখন তাদের মধ্যে যাদের শক্তি-সামর্থ্য রয়েছে, তারা তোমার নিকট অব্যাহতি চায় এবং বলে, আমাদেরকে অব্যাহতি দিন, যারা বসে থাকে আমরা তাদের সঙ্গেই থাকব। (সূরা তাওবা- ৮৬)
এদের অভিযোগ গ্রহণ করাতে নবীকে সতর্ক করা হয় :
عَفَا اللهُ عَنْكَۚ لِمَ اَذِنْتَ لَهُمْ حَتّٰى يَتَبَيَّنَ لَكَ الَّذِيْنَ صَدَقُوْا وَتَعْلَمَ الْكَاذِبِيْنَ
আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করেছেন। কারা সত্যবাদী তা তোমার নিকট স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত এবং কারা মিথ্যাবাদী তা না জানা পর্যন্ত তুমি কেন তাদেরকে অব্যাহতি দিলে? (সূরা তাওবা- ৪৩)
যুদ্ধ শেষ হলে মুনাফিকরা অজুহাত উপস্থিত করতে থাকে :
يَعْتَذِرُوْنَ اِلَيْكُمْ اِذَا رَجَعْتُمْ اِلَيْهِمْؕ قُلْ لَّا تَعْتَذِرُوْا لَنْ نُّؤْمِنَ لَكُمْ قَدْ نَبَّاَنَا اللهُ مِنْ اَخْبَارِكُمْؕ وَسَيَرَى اللهُ عَمَلَكُمْ وَرَسُوْلُهٗ ثُمَّ تُرَدُّوْنَ اِلٰى عَالِمِ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ فَيُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
তোমরা তাদের নিকট ফিরে আসলে তারা তোমাদের নিকট অজুহাত পেশ করবে। বলো, অজুহাত পেশ করো না, আমরা কখনো তোমাদেরকে বিশ্বাস করব না। আল্লাহ আমাদেরকে তোমাদের ব্যাপারে জানিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ অবশ্যই তোমাদের কার্যকলাপ লক্ষ্য করবেন এবং তাঁর রাসূলও। অতঃপর যিনি অদৃশ্য ও দৃশ্য সম্পর্কে পরিজ্ঞাত তোমাদেরকে তাঁর নিকট প্রত্যাবর্তিত করা হবে। তারপর তোমরা যা করতে তা তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দেবেন। (সূরা তাওবা- ৯৪)
আল্লাহ তাদের উপর কখনই সন্তুষ্ট নন :
يَحْلِفُوْنَ لَكُمْ لِتَرْضَوْا عَنْهُمْ فَاِنْ تَرْضَوْا عَنْهُمْؕ فَاِنَّ اللهَ لَا يَرْضٰى عَنِ الْقَوْمِ الْفَاسِقِيْنَ
তারা তোমাদের নিকট শপথ করবে যাতে তোমরা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হও। তোমরা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হলেও আল্লাহ (কখনো) সত্যত্যাগী সম্প্রদায়ের প্রতি সন্তুষ্ট হবেন না। (সূরা তাওবা- ৯৬)
পরবর্তীতে যুদ্ধে যাওয়ার সুযোগ বন্ধ করে দেয়া হয় :
فَاِنْ رَّجَعَكَ اللهُ اِلٰى طَآئِفَةٍ مِّنْهُمْ فَاسْتَاْذَنُوْكَ لِلْخُرُوْجِ فَقُلْ لَّنْ تَخْرُجُوْا مَعِيَ اَبَدًا وَّلَنْ تُقَاتِلُوْا مَعِيَ عَدُوًّا اِنَّكُمْ رَضِيْتُمْ بِالْقُعُوْدِ اَ وَّلَ مَرَّةٍ فَاقْعُدُوْا مَعَ الْخَالِفِيْنَ
আল্লাহ যদি তোমাকে তাদের কোন দলের নিকট ফেরত আনেন এবং তারা অভিযানে বের হওয়ার জন্য তোমার অনুমতি প্রার্থনা করে তবে তুমি তাদেরকে বলে দেবে যে, তোমরা তো কখনো আমার সাথে বের হবে না এবং আমার সাথি হয়ে শত্রুর সাথে যুদ্ধও করবে না। তোমরা তো প্রথমবার বসে থাকাকেই পছন্দ করেছিলে; সুতরাং যারা পেছনে থাকে তাদের সাথেই বসে থাকো। (সূরা তাওবা- ৮৩)
যারা যুদ্ধে শরীক হয়েছেন তাদের ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দেয়া হয় :
لَقَدْ تَّابَ اللهُ عَلَى النَّبِيِّ وَالْمُهَاجِرِيْنَ وَالْاَنْصَارِ الَّذِيْنَ اتَّبَعُوْهُ فِيْ سَاعَةِ الْعُسْرَةِ مِنْ ۢبَعْدِ مَا كَادَ يَزِيْغُ قُلُوْبُ فَرِيْقٍ مِّنْهُمْ ثُمَّ تَابَ عَلَيْهِمْؕ اِنَّهٗ بِهِمْ رَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ
আল্লাহ অনুগ্রহপরায়ণ হলেন নবীর প্রতি এবং মুহাজির ও আনসারদের প্রতি, যারা সংকটকালে তাঁর অনুসরণ করেছিল- এমনকি যখন তাদের এক দলের অন্তর বক্র হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। পরে আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করলেন; নিশ্চয় তিনি তাদের প্রতি দয়াদ্র ও পরম দয়ালু। (সূরা তাওবা- ১১৭)
পেছনে থাকা কিছু সাহাবী নিজেদের দোষ স্বীকার করে নেন :
وَاٰخَرُوْنَ اعْتَرَفُوْا بِذُنُوْبِهِمْ خَلَطُوْا عَمَلًا صَالِحًا وَّاٰخَرَ سَيِّئًاؕ عَسَى اللهُ اَنْ يَّتُوْبَ عَلَيْهِمْؕ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
অপর কতক লোক নিজেদের অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছে, তারা এক সৎকর্মের সাথে অপর অসৎকর্ম মিশ্রিত করেছে। সম্ভবত আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন; নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা তাওবা- ১০২)
তিনজনের তাওবা পিছিয়ে দেয়া হয় :
وَاٰخَرُوْنَ مُرْجَوْنَ لِاَمْرِ اللهِ اِمَّا يُعَذِّبُهُمْ وَاِمَّا يَتُوْبُ عَلَيْهِمْ ؕ وَاللهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ
আল্লাহর আদেশের প্রতীক্ষায় অপর কতকের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত স্থগিত রইল যে, তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন অথবা ক্ষমা করবেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা- ১০৬)
পঞ্চাশ দিন পর এ তিনজনের তাওবা কবুল হয় :
وَعَلَى الثَّلَاثَةِ الَّذِيْنَ خُلِّفُوْاؕ حَتّٰۤى اِذَا ضَاقَتْ عَلَيْهِمُ الْاَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ وَضَاقَتْ عَلَيْهِمْ اَنْفُسُهُمْ وَظَنُّوْاۤ اَنْ لَّا مَلْجَاَ مِنَ اللهِ اِلَّاۤ اِلَيْهِؕ ثُمَّ تَابَ عَلَيْهِمْ لِيَتُوْبُوْاؕ اِنَّ اللهَ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ
তিনি ক্ষমা করলেন অপর তিনজনকে, যাদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছিল; যে পর্যন্ত না পৃথিবী বিস্তৃত হওয়া সত্ত্বেও তাদের জন্য সেটা সংকুচিত হয়ে গিয়েছিল এবং তাদের জীবন তাদের জন্য দুর্বিসহ হয়ে পড়েছিল। তারা উপলব্ধি করেছিল যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন আশ্রয়স্থল নেই। অতঃপর তিনি তাদের তাওবা কবুল করে নিলেন, যাতে তারা তাওবায় স্থির থাকে। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
(সূরা তাওবা- ১১৮)
ব্যাখ্যা : যুদ্ধ হতে পশ্চাদপদ দশজনের মধ্যে যে তিনজন তাওবা করেননি, কেবল অপরাধ স্বীকার করেছিলেন, রাসূল ﷺ তাদের সঙ্গে মুসলিমদের কথাবার্তা বলতে নিষেধ করে চল্লিশ দিন পর বললেন, তারা নিজেদের স্ত্রী হতে দূরে থাকবে। এতে সমগ্র জগৎ যেন তাদের নিকট সংকীর্ণ হয়ে পড়ল। অতঃপর পঞ্চাশ দিন পর তাওবা কবুল হওয়ার খবর নিয়ে এ আয়াতটি নাযিল হয়। এ তিন সাহাবী ছিলেন কা‘ব ইবনে মালেক, হিলাল ইবনে উমাইয়া এবং মুরারা ইবনে রুবাই (রাঃ)।
মুহাম্মাদ ﷺ হজ্জ পালনের উদ্দেশ্যে ১০ম হিজরীর ২৫শে জিলকাদ, ৬৩২ খ্রিস্টাব্দের ২৩শে ফেব্রুয়ারী লক্ষাধিক সাহাবী সহকারে মক্কার পথে রওয়ানা হলেন। এটি ছিল মহানবী ﷺ এর জীবনের শেষ হজ্জ পালন। এজন্য এ হজ্জকে ‘হিজ্জাতুল বিদা’ বা ‘বিদায় হজ্জ’ বলা হয়। এ সফরে নবীর সকল সহধর্মিণী তাঁর সঙ্গে ছিলেন। কুরবানী দেয়ার জন্য তিনি ১০০টি উট সঙ্গে নেন। সফরের দশ দিন পর মুহাম্মাদ ﷺ ছয় মাইল অদূরে যুল হুলাইফা নামক স্থানে পৌঁছেন এবং সেখান হতে সাহাবীদের নিয়ে হজ্জের পোশাক পরিধান করে (ইহরাম বেধে) একাদশ দিনে মক্কায় প্রবেশ করেন। জিলহাজ্জ মাসের অষ্টম দিনে তিনি মীনায় এবং নবম দিনে আরাফার ময়দানে পৌঁছান। হজ্জ সম্পন্ন করে তিনি আরাফাতের পর্বত শিখরে দাঁড়িয়ে উপস্থিত মুসলিমদের উদ্দেশ্যে এক অবিস্মরণীয় ভাষণ প্রদান করেন, যা আমাদের কাছে বিদায় হজ্জের ভাষণ নামে পরিচিত। সে ভাষণে তিনি যা বলেছিলেন, তা হলো :
১. হে লোক সকল! তোমাদের রক্ত ও তোমাদের সম্পদ তোমাদের জন্য হারাম যেমন তা হারাম তোমাদের এ দিনে, তোমাদের এ মাসে এবং তোমাদের এ শহরে।
২. সাবধান! জাহেলী যুগের সকল ব্যাপার (অপসংস্কৃতি) আমার উভয় পায়ের নিচে (পদদলিত করা হলো)। জাহেলী যুগের রক্তের দাবিও বাতিল ঘোষণা করা হলো। আমি সর্বপ্রথম যে রক্তপণ বাতিল করছি, তা হলো আমাদের বংশের রবী‘আ ইবনে হারিসের পুত্রের রক্তপণ। সে শিশু অবস্থায় বনু সা‘দ এর দুগ্ধপোষ্য শিশু ছিল, তখন হুযায়ল গোত্রের লোকেরা তাকে হত্যা করে।
৩. জাহিলী যুগের সুদ প্রথাও বাতিল করা হলো। আমি প্রথম যে সুদ বাতিল করছি তা হলো আমাদের বংশের আববাস ইবনে আবদুল মুত্তালিবের সুদ। তার সমস্ত সুদ বাতিল করা হলো।
৪. তোমরা স্ত্রীলোকদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো। তোমরা তাদেরকে আল্লাহর আমানাত হিসেবে গ্রহণ করেছ এবং আল্লাহর কালিমার মাধ্যমে তাদের লজ্জাস্থান নিজেদের জন্য হালাল করেছ। তাদের উপর তোমাদের অধিকার এই যে, তারা যেন তোমাদের শয্যায় এমন কোন লোককে আশ্রয় না দেয় যাকে তোমরা অপছন্দ কর। যদি তারা এরূপ করে, তবে হালকাভাবে প্রহার করো। আর তোমাদের উপর তাদের ন্যায়সঙ্গত ভরণ-পোষণের ও পোশাক-পরিচ্ছদের হক রয়েছে।
৫. আমি তোমাদের মাঝে এমন এক জিনিস রেখে যাচ্ছি- যা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে থাকলে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। আর তা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব।
৬. (হে লোক সকল! কিয়ামতের দিন) তোমরা আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেসিত হলে কী বলবে? তখন তারা বলল, আমরা সাক্ষ্য দেব যে, আপনি (আল্লাহর বাণী) পৌঁছে দিয়েছেন, আপনার হক আদায় করেছেন এবং সদুপদেশ দিয়েছেন। অতঃপর তিনি তাঁর তর্জনী আঙ্গুল আকাশের দিকে তুলে ইশারা করে বললেন, ‘‘হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাকো’’- তিনবার এরূপ বললেন। (সহীহ মুসলিম, হা/৩০০৯)
বিদায় হজ্জের পর ইসলাম পরিপূর্ণ দ্বীন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় :
اَلْيَوْمَ اَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَاَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الْاِسْلَامَ دِيْنًا
আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম। (সূরা মায়েদা- ৩)
ব্যাখ্যা : বিদায় হজ্জের সময় আরাফার দিন শুক্রবারে এ আয়াতটি নাযিল হয়ছিল। দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দেয়ার অর্থ হচ্ছে, তাকে একটি স্বতন্ত্র জীবনব্যবস্থায় পরিণত করা। তার মধ্যে জীবনের সকল প্রশ্নের নীতিগত বা বিস্তারিত জবাব পাওয়া যায়। হেদায়াত ও পথনির্দেশ লাভ করার জন্য এর বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আর নিয়ামত পরিপূর্ণ করে দেয়ার অর্থ হচ্ছে, হেদায়াতের নিয়ামত পূর্ণ করা। আর ইসলামকে দ্বীন হিসেবে গ্রহণ করে নেয়ার অর্থ হচ্ছে, এখন মানুষের গলায় একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কারো আনুগত্যের শৃঙ্খল নেই। আল্লাহ যখন মানুষের উপর এ অনুগ্রহগুলো করেছেন তখন এর দাবী হচ্ছে, এখন মানুষ আল্লাহর আইনের সীমার মধ্যে অবস্থান করবে এবং তাঁর বিধিবিধান মেনে চলবে।
سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُوْنَ ‐ وَسَلَامٌ عَلَى الْمُرْسَلِيْنَ ‐ وَالْحَمْدُ لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
১. হে লোক সকল! তোমাদের রক্ত ও তোমাদের সম্পদ তোমাদের জন্য হারাম যেমন তা হারাম তোমাদের এ দিনে, তোমাদের এ মাসে এবং তোমাদের এ শহরে।
২. সাবধান! জাহেলী যুগের সকল ব্যাপার (অপসংস্কৃতি) আমার উভয় পায়ের নিচে (পদদলিত করা হলো)। জাহেলী যুগের রক্তের দাবিও বাতিল ঘোষণা করা হলো। আমি সর্বপ্রথম যে রক্তপণ বাতিল করছি, তা হলো আমাদের বংশের রবী‘আ ইবনে হারিসের পুত্রের রক্তপণ। সে শিশু অবস্থায় বনু সা‘দ এর দুগ্ধপোষ্য শিশু ছিল, তখন হুযায়ল গোত্রের লোকেরা তাকে হত্যা করে।
৩. জাহিলী যুগের সুদ প্রথাও বাতিল করা হলো। আমি প্রথম যে সুদ বাতিল করছি তা হলো আমাদের বংশের আববাস ইবনে আবদুল মুত্তালিবের সুদ। তার সমস্ত সুদ বাতিল করা হলো।
৪. তোমরা স্ত্রীলোকদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো। তোমরা তাদেরকে আল্লাহর আমানাত হিসেবে গ্রহণ করেছ এবং আল্লাহর কালিমার মাধ্যমে তাদের লজ্জাস্থান নিজেদের জন্য হালাল করেছ। তাদের উপর তোমাদের অধিকার এই যে, তারা যেন তোমাদের শয্যায় এমন কোন লোককে আশ্রয় না দেয় যাকে তোমরা অপছন্দ কর। যদি তারা এরূপ করে, তবে হালকাভাবে প্রহার করো। আর তোমাদের উপর তাদের ন্যায়সঙ্গত ভরণ-পোষণের ও পোশাক-পরিচ্ছদের হক রয়েছে।
৫. আমি তোমাদের মাঝে এমন এক জিনিস রেখে যাচ্ছি- যা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে থাকলে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। আর তা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব।
৬. (হে লোক সকল! কিয়ামতের দিন) তোমরা আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেসিত হলে কী বলবে? তখন তারা বলল, আমরা সাক্ষ্য দেব যে, আপনি (আল্লাহর বাণী) পৌঁছে দিয়েছেন, আপনার হক আদায় করেছেন এবং সদুপদেশ দিয়েছেন। অতঃপর তিনি তাঁর তর্জনী আঙ্গুল আকাশের দিকে তুলে ইশারা করে বললেন, ‘‘হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাকো’’- তিনবার এরূপ বললেন। (সহীহ মুসলিম, হা/৩০০৯)
বিদায় হজ্জের পর ইসলাম পরিপূর্ণ দ্বীন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় :
اَلْيَوْمَ اَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَاَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الْاِسْلَامَ دِيْنًا
আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম। (সূরা মায়েদা- ৩)
ব্যাখ্যা : বিদায় হজ্জের সময় আরাফার দিন শুক্রবারে এ আয়াতটি নাযিল হয়ছিল। দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দেয়ার অর্থ হচ্ছে, তাকে একটি স্বতন্ত্র জীবনব্যবস্থায় পরিণত করা। তার মধ্যে জীবনের সকল প্রশ্নের নীতিগত বা বিস্তারিত জবাব পাওয়া যায়। হেদায়াত ও পথনির্দেশ লাভ করার জন্য এর বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আর নিয়ামত পরিপূর্ণ করে দেয়ার অর্থ হচ্ছে, হেদায়াতের নিয়ামত পূর্ণ করা। আর ইসলামকে দ্বীন হিসেবে গ্রহণ করে নেয়ার অর্থ হচ্ছে, এখন মানুষের গলায় একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কারো আনুগত্যের শৃঙ্খল নেই। আল্লাহ যখন মানুষের উপর এ অনুগ্রহগুলো করেছেন তখন এর দাবী হচ্ছে, এখন মানুষ আল্লাহর আইনের সীমার মধ্যে অবস্থান করবে এবং তাঁর বিধিবিধান মেনে চলবে।
سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُوْنَ ‐ وَسَلَامٌ عَلَى الْمُرْسَلِيْنَ ‐ وَالْحَمْدُ لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন