hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

তাফসীরুল কুরআন বিল কুরআন

লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

অধ্যায়- ৩ : আল্লাহ তা‘আলার নাম ও গুণাবলি
আল্লাহর রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম :

قُلِ ادْعُوا اللهَ اَوِ ادْعُوا الرَّحْمٰنَؕ اَيًّا مَّا تَدْعُوْا فَلَهُ الْاَ سْمَآءُ الْحُسْنٰى

বলো, তোমরা ‘আল্লাহ’ নামে আহবান করো অথবা ‘রাহ্মান’ নামে আহবান করো, তোমরা যে নামেই আহবান করো না কেন সকল সুন্দর নাম তো তাঁরই। (সূরা বনী ইসরাঈল- ১১০)

هُوَ اللهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْاَ سْمَآءُ الْحُسْنٰى

তিনিই আল্লাহ, সৃষ্টিকর্তা, উদ্ভাবনকর্তা ও রূপদাতা। আর সকল উত্তম নাম তাঁরই। (সূরা হাশর- ২৪)

আল্লাহকে এসব নাম দিয়েই ডাকতে হবে :

وَلِلّٰهِ الْاَ سْمَآءُ الْحُسْنٰى فَادْعُوْهُ بِهَا

আল্লাহর জন্য রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম। অতএব তোমরা তাঁকে সেসব নামেই ডাকো। (সূরা আ‘রাফ- ১৮০)

আল্লাহর নাম কত মহান :

تَبَارَكَ اسْمُ رَبِّكَ ذِى الْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ

কত মহান তোমার প্রতিপালকের নাম, যিনি মহাপ্রতাপশালী ও পরম অনুগ্রহশীল! (সূরা আর রহমান- ৭৮)

আল্লাহর নামের অমর্যাদা করা পাপ :

وَذَرُوا الَّذِيْنَ يُلْحِدُوْنَ فِۤي اَسْمَآئِهٖؕ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ

যারা তাঁর নাম বিকৃত করে তাদেরকে বর্জন করো; অচিরেই তাদের কৃতকর্মের ফল তাদেরকে দিয়ে দেয়া হবে। (সূরা আ‘রাফ- ১৮০)

ব্যাখ্যা : ‘ইলহাদ’ হচ্ছে, এমনভাবে আল্লাহর নামকরণ করা, যাতে তাঁর মর্যাদাহানি হয়। যার মাধ্যমে তাঁর প্রতি দোষ-ত্রুটি আরোপ করা হয় অথবা যার সাহায্যে তাঁর উন্নত ও পবিত্র সত্তা সম্পর্কে কোন ভুল আকীদা-বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটে থাকে। যে নাম একমাত্র আল্লাহর জন্য উপযোগী, সৃষ্টিজগতের কাউকে সে নামে ডাকাও ইলহাদের অন্তর্ভুক্ত। আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহর নামের ব্যাপারে যারা সত্য থেকে বিচ্যুত হয়ে যায় তাদেরকে বর্জন করো অর্থাৎ সহজভাবে বুঝানোর পরও যদি তারা না বুঝে, তাহলে তাদের সাথে অনর্থক বিতর্কে জড়িত হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। নিজেদের গোমরাহীর ফল তারা নিজেরাই ভোগ করবে।

আল্লাহর কতিপয় নাম :

هُوَ اللهُ الَّذِيْ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَؕ اَلْمَلِكُ الْقُدُّوْسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيْزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُؕ سُبْحَانَ اللهِ عَمَّا يُشْرِكُوْنَ - هُوَ اللهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْاَسْمَآءُ الْحُسْنٰىؕ يُسَبِّحُ لَهٗ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِۚ وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ

তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত (সত্য) কোন মা‘বুদ নেই। তিনিই অধিপতি, অতীব পবিত্র, পরিপূর্ণ শান্তিদাতা, নিরাপত্তা দানকারী, রক্ষক, পরাক্রমশালী, প্রবল, অতীব মহিমান্বিত; আর তারা (মুশরিকরা) তাঁর সাথে যা শরীক স্থাপন করেছে তিনি তা থেকে অনেক পবিত্র। তিনিই আল্লাহ সৃজনকর্তা, উদ্ভাবনকর্তা ও রূপদাতা, সকল উত্তম নাম তাঁরই। আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সবকিছুই তাঁর মহিমা ঘোষণা করে। তিনি অতি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাবান। (সূরা হাশর- ২৩, ২৪)

আল্লাহ চিরস্থায়ী :

هُوَ الْحَيُّ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ فَادْعُوْهُ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ ؕ اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ

তিনি চিরঞ্জীব, তিনি ব্যতীত (প্রকৃত) কোন ইলাহ্ নেই; সুতরাং তাঁর ইবাদাতে একনিষ্ঠ হয়ে তোমরা তাঁকেই আহবান করো। যাবতীয় প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য। (সূরা মু’মিন- ৬৫)

ব্যাখ্যা : অর্থাৎ তাঁর জীবনই বাস্তব ও প্রকৃত জীবন। একমাত্র তিনিই আপন ক্ষমতায় জীবিত। তাঁর জীবন ছাড়া আর কারো জীবনই চিরস্থায়ী নয়।

اَللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّوْمُ

আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী। (সূরা আলে ইমরান- ২)

كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ وَيَبْقٰى وَجْهُ رَبِّكَ ذُو الْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ

ভূপৃষ্ঠে যা কিছু আছে সবই ধ্বংসশীল। আর অবশিষ্ট থাকবে শুধু তোমার মহিমাময় ও মহানুভব প্রতিপালকের চেহারা (সত্তা)। (সূরা আর রহমান- ২৬, ২৭)

ব্যাখ্যা : এখানে জিন ও মানুষকে এক মহাসত্য সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। আর তা হলো, তোমরা নিজেরাও অবিনশ্বর নও এবং সেসব সাজ-সরঞ্জামও চিরস্থায়ী নয়, যা তোমরা এ পৃথিবীতে ভোগ করছ। অবিনশ্বর ও চিরস্থায়ী শুধুমাত্র সুমহান আল্লাহ। কোন নির্বোধ যদি তার ক্ষমতার ক্ষুদ্র গন্ডীর মধ্যে নিজের শ্রেষ্ঠত্বের ঢঙ্কা বাজায়, কিংবা কতিপয় মানুষকে তার কর্তৃত্ব স্বীকার করায় তাহলে তার এ মিথ্যা বেশি দিন চলতে পারে না। মহাবিশ্বের বিশাল বিস্তৃতির মধ্যে পৃথিবীর অনুপাত যেখানে মটরশুটির দানার মতোও নয়, তার এক নিভৃত কোণে দশ বিশ কিংবা পঞ্চাশ ষাট বছর যে কর্তৃত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব চলে এবং তারপরই অতীত কাহিনীতে রূপান্তরিত হতে হয়- তা এমন কোন কর্তৃত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব নয়, যার জন্য কেউ গর্ব করতে পারে।

আল্লাহ প্রশংসিত :

وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ غَنِيٌّ حَمِيْدٌ

জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ সম্পদশালী ও প্রশংসিত। (সূরা বাক্বারা- ২৬৭)

اِنَّهٗ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ

নিশ্চয় তিনি প্রচুর প্রশংসা ও বিপুল সম্মানের অধিকারী। (সূরা হুদ- ৭৩)

আল্লাহ সম্মানিত :

فَاِنَّ الْعِزَّةَ لِلّٰهِ جَمِيْعًا

নিশ্চয় সকল সম্মান আল্লাহরই জন্য। (সূরা নিসা- ১৩৯)

আল্লাহ হেকমতওয়ালা :

اِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ

নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা- ২৮; সূরা আন‘আম- ৮৩)

وَاللهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ

আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা নূর- ৫৮)

আল্লাহ গুণগ্রাহী :

وَاللهُ شَكُوْرٌ حَلِيْمٌ

আল্লাহ গুণগ্রাহী ও সহনশীল। (সূরা তাগাবুন- ১৭)

ব্যাখ্যা : যখন شُكْرٌ (শুকর) শব্দটি আল্লাহর পক্ষ হতে বান্দার প্রতি শুকরিয়া আদায় করার জন্য ব্যবহৃত হয় তখন তার অর্থ হয়, কাজের স্বীকৃতি দেয়া, মূল্যায়ন করা ইত্যাদি। আর যখন বান্দার পক্ষ থেকে আল্লাহর প্রতি শুকর করার কথা বলা হয় তখন এর অর্থ হয়, নিয়ামতের স্বীকৃতি দান করা। আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার শুকরিয়া আদায় করার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ বান্দার কাজের যথার্থ মূল্যায়ন করার ব্যাপারে কুণ্ঠিত নন। বান্দা তাঁর পথে যে ধরনের যতটুকু কাজ করে আল্লাহ তার যথার্থ মূল্যায়ন করেন। বান্দার কোন কাজ পারিশ্রমিক ও পুরস্কার লাভ থেকে বঞ্চিত থাকে না। বরং তিনি মুক্তহস্তে তার প্রত্যেকটি কাজের বিনিময় তার প্রাপ্যের চেয়ে অনেক বেশি দিয়ে থাকেন।

আল্লাহ ধৈর্যশীল :

وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ غَفُوْرٌ حَلِيْمٌ

জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও ধৈর্যশীল। (সূরা বাক্বারা- ২৩৫)

আল্লাহ সর্বশ্রোতা :

وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ

জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা বাক্বারা- ২৪৪)

وَلَه مَا سَكَنَ فِى اللَّيْلِ وَالنَّهَارِؕ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ

রাত ও দিনে যা কিছু থাকে তা তাঁরই, আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা আন‘আম- ১৩)

وَاِمَّا يَنْزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللهِؕ اِنَّهٗ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ

যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে তবে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাও, নিশ্চয় তিনি সবকিছু শুনেন ও জানেন। (সূরা আ‘রাফ- ২০০)

ব্যাখ্যা : আল্লাহ একই সময়ে সমগ্র বিশ্বজাহানের আওয়াজ আলাদা আলাদাভাবে শুনছেন এবং কোন আওয়াজ তাঁর শ্রবণে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না, যার ফলে একটি শুনলে অন্যটি শুনেন না। অনুরূপভাবে তিনি একই সময়ে সমগ্র বিশ্বজাহানের প্রতিটি জিনিস ও ঘটনা বিস্তারিত আকারে দেখছেন।

আল্লাহ সবই দেখেন :

اِعْمَلُوْا مَا شِئْتُمْ اِنَّهٗ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ

তোমরা যা ইচ্ছা তা আমল কর; নিশ্চয় তোমরা যা কর তিনি তা দেখেন। (সূরা হামীম সাজদা- ৪০)

اِنَّ رَبَّكَ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيَقْدِرُؕ اِنَّهٗ كَانَ بِعِبَادِهٖ خَبِيْرًا ۢبَصِيْرًا

তোমার প্রতিপালক যাকে চান তার রিযিক বাড়িয়ে দেন, আবার যাকে চান কমিয়ে দেন। তিনি তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে ভালোভাবেই জানেন এবং তাদেরকে পর্যবেক্ষণ করেন। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩০)

وَاتَّقُوا اللهَ وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ

আর আল্লাহকে ভয় করো এবং জেনে রেখো, তোমরা যা কর আল্লাহ তা অবশ্যই দেখেন। (সূরা বাক্বারা- ২৩৩)

আল্লাহ সবকিছু রক্ষণাবেক্ষণ করেন :

اِنَّ رَبِّيْ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ حَفِيْظٌ

নিশ্চয় আমার প্রতিপালক সমসত্ম কিছুর রক্ষণাবেক্ষণকারী। (সূরা হুদ- ৫৭)

فَاللهُ خَيْرٌ حَافِظًا وَّهُوَ اَرْحَمُ الرَّاحِمِيْنَ

আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ রক্ষণাবেক্ষণকারী এবং তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু। (সূরা ইউসুফ- ৬৪)

وَرَبُّكَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ حَفِيْظٌ

আপনার প্রতিপালক সর্ববিষয়ের রক্ষণাবেক্ষণকারী। (সূরা সাবা- ২১)

আল্লাহ বরকতময় :

تَبَارَكَ الَّذِيْ بِيَدِهِ الْمُلْكُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ

বরকতময় সেই সত্তা, যাঁর হাতে সার্বভৌমত্ব; তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। (সূরা মুলক- ১)

ব্যাখ্যা : تَبَارَكَ (তাবারাকা) শব্দটি বহু অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন-

(১) মহা অনুগ্রহকারী ও সর্বজ্ঞ।

(২) বড়ই মর্যাদাশীল ও সম্মানী। কারণ পৃথিবী ও আকাশের সকল রাজত্ব তাঁরই।

(৩) বড়ই পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন। কারণ তাঁর সত্তা সকল প্রকার শিরকের গন্ধমুক্ত। তাঁর সমজাতীয় কেউ নেই, ফলে তাঁর সত্তার সার্বভৌমত্বে স্থলাভিষিক্তের জন্য কোন পুত্রের প্রয়োজন নেই।

(৪) শক্তির পূর্ণতার দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠ। কারণ তিনি বিশ্বজাহানের প্রত্যেকটি জিনিসের সৃষ্টিকর্তা।

সকল বাদশাহী আল্লাহর হাতে :

اَلَمْ تَعْلَمْ اَنَّ اللهَ لَهٗ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِؕ وَمَا لَكُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ مِنْ وَّلِيٍّ وَّلَا نَصِيْرٍ

তুমি কি জান না যে, আকাশ ও পৃথিবীর আধিপত্য আল্লাহরই। আর আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন বন্ধু নেই এবং কোন সাহায্যকারীও নেই। (সূরা বাক্বারা- ১০৭)

আল্লাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা দেন এবং যার থেকে চান ক্ষমতা কেঁড়ে নেন :

قُلِ اللّٰهُمَّ مَالِكَ الْمُلْكِ تُؤْتِى الْمُلْكَ مَنْ تَشَآءُ وَتَنْزِعُ الْمُلْكَ مِمَّنْ تَشَآءُ وَتُعِزُّ مَنْ تَشَآءُ وَتُذِلُّ مَنْ تَشَآءُؕ بِيَدِكَ الْخَيْرُ ؕ اِنَّكَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ

বলো, হে আল্লাহ! আপনিই রাজত্বের মালিক। আপনি যাকে চান তাকে রাজত্ব দান করেন, আবার যার থেকে চান রাজত্ব কেঁড়ে নেন। আর যাকে চান সম্মানিত করেন, আবার যাকে চান অপদস্থ করেন। আপনার হাতেই কল্যাণ; নিশ্চয় আপনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। (সূরা আলে ইমরান- ২৬)

ব্যাখ্যা : আল্লাহ কোন একটি গোত্র বা জাতিকে স্থায়ী কর্তৃত্ব দান করেন না, এটা তাঁর বিরাট অনুগ্রহ। তিনি পৃথিবীতে বিভিন্ন সময় একটি দলকে দিয়ে অন্য একটি দলকে প্রতিহত করেন। অন্যথায় যদি কোন একটি নির্দিষ্ট দলকে কোথাও স্থায়ী কর্তৃত্ব দান করতেন, তাহলে তাদের প্রভাব ও ক্ষমতার বড়াইয়ের ফলে যে ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড শুরু হতো তাতে শুধু প্রাসাদ, রাজনীতি এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানই ধ্বংস হতো না, বরং ইবাদাতগৃহগুলোও বিধ্বস্ত হয়ে যেত।

কিয়ামত দিবসের বাদশাও একমাত্র আল্লাহ :

وَلَهُ الْمُلْكُ يَوْمَ يُنْفَخُ فِى الصُّوْرِؕ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِؕ وَهُوَ الْحَكِيْمُ الْخَبِيْرُ

যেদিন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে, সেদিন কর্তৃত্ব তাঁরই থাকবে। তিনি অদৃশ্য ও দৃশ্য সবকিছু সম্বন্ধে অবগত রয়েছেন। আর তিনিই প্রজ্ঞাময় ও সম্যক অবগত। (সূরা আন‘আম- ৭৩)

يَوْمَ هُمْ بَارِزُوْنَۚ لَا يَخْفٰى عَلَى اللهِ مِنْهُمْ شَيْءٌؕ لِمَنِ الْمُلْكُ الْيَوْمَ ؕ لِلّٰهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ

যেদিন তারা (কবর হতে) বের হয়ে পড়বে, সেদিন আল্লাহর নিকট তাদের কোনকিছুই গোপন থাকবে না। (আললাহ জিজ্ঞেস করবেন) আজ কর্তৃত্ব কার? (বলা হবে) প্রবল পরাক্রমশালী এক আল্লাহরই। (সূরা মু’মিন- ১৬)

ব্যাখ্যা : পৃথিবীতে বহু অহংকারী ও ভ্রান্ত লোক নিজেদের বাদশাহী ও শক্তিমত্তার অহংকার করে থাকে এবং বহু সংখ্যক লোকও তাদের বাদশাহী ও শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে নেয়, তাদের হুকুম পালন করে; এমনকি অনেকে তাদেরকেই নিজেদের প্রভু মনে করতে থাকে। কিন্তু পরকালে তাদের কাছে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে যাবে। তখন আল্লাহ বলবেন, এখন বলো! প্রকৃতপক্ষে বাদশাহী কার? ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের প্রকৃত মালিক কে? আর কার হুকুমে সবকিছু পরিচালিত হয়? এটা এমন একটা বিষয় যে, কোন ব্যক্তি যদি তা বুঝার চেষ্টা করে তাহলে সে যত বড় বাদশাহ কিংবা মহানায়কই হয়ে থাকুক না কেন সে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে এবং তার মন-মগজ থেকে শক্তিমত্তার সমস্ত অহংকার বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

সকল মালিকানা আল্লাহর :

وَلِلّٰهِ مِيْرَاثُ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِ

আসমান ও জমিনের মালিকানা আল্লাহরই। (সূরা হাদীদ- ১০)

আসমান ও জমিনের সকল বাহিনী আল্লাহর :

وَلِلّٰهِ جُنُوْدُ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضِؕ وَكَانَ اللهُ عَزِيْزًا حَكِيْمًا

আসমান ও জমিনের সকল সেনাবাহিনী আল্লাহর হাতেই রয়েছে। তিনি মহাশক্তিশালী ও সুকৌশলী। (সূরা ফাতহ- ৭)

আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী :

وَاِنَّ اللهَ لَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ

নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা আলে ইমরান- ৬২)

اِنَّ رَبَّكَ لَهُوَ الْعَزِيْزُ الرَّحِيْمُ

নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক মহাপরাক্রমশালী ও পরম দয়ালু। (সূরা শু‘আরা- ৬৮)

আল্লাহ মহাকৌশলী :

وَاُمْلِيْ لَهُمْ اِنَّ كَيْدِيْ مَتِيْنٌ

আমি তাদেরকে সুযোগ দিয়ে থাকি, নিশ্চয় আমার কৌশল অত্যন্ত বলিষ্ঠ। (সূরা আ‘রাফ- ১৮৩)

وَمَكَرُوْا وَمَكَرَ اللهُؕ وَاللهُ خَيْرُ الْمَاكِرِيْنَ

আর তারা কৌশল করেছিল ফলে আল্লাহও কৌশল গ্রহণ করলেন। মূলত আল্লাহই উত্তম কৌশলী।

(সূরা আলে ইমরান- ৫৪)

ব্যাখ্যা : আল্লাহর কৌশলের অর্থ হচ্ছে, যদি কেউ সত্যকে না মানে এবং সে অনুযায়ী নিজেদের মনোভাব পরিবর্তন না করে, তাহলে তিনি তাদেরকে বিদ্রোহাত্মক নীতি অবলম্বন করে চলার সুযোগ দেবেন। যতদিন তারা বেঁচে থাকবে ততদিন তিনি তাদেরকে নিজের পক্ষ থেকে রিযিক ও অনুগ্রহ দান করতে থাকবেন। ফলে তাদের জীবনসামগ্রী তাদেরকে অমনোযোগী করে রাখবে। আর তারা যা কিছু করবে আল্লাহর ফেরেশতারা নীরবে তা লিখতে থাকবেন। এভাবে হঠাৎ মৃত্যুর সময় এসে যাবে। তখন নিজেদের কৃতকর্মের হিসাব দেয়ার জন্য তাদেরকে ধরে নিয়ে যাওয়া হবে। এভাবে আল্লাহ এমন কৌশল অবলম্বন করেন- যার ফলে মানুষ সূচনায় কখনো তার পরিণামের কল্পনাও করতে পারে না। আল্লাহর পরিকল্পনা এমন সূক্ষ্ম ও অজ্ঞাত পদ্ধতিতে বাস্তবায়িত হয় যে, যতক্ষণ পর্যন্ত তা চূড়ান্ত পর্যায়ে না পৌঁছে ততক্ষণ পর্যন্ত মানুষ বিষয়টি সম্পর্কে বিন্দুমাত্রও অবগত হতে পারে না।

আল্লাহ হিসাব গ্রহণকারী :

اِنَّ اللهَ كَانَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ حَسِيْبًا

নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ের হিসাব গ্রহণকারী। (সূরা নিসা- ৮৬)

হিসাবের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট :

فَاِنَّمَا عَلَيْكَ الْبَلَاغُ وَعَلَيْنَا الْحِسَابُ

তোমার কর্তব্য তো কেবল প্রচার করা; আর হিসাব-নিকাশ তো আমার কাজ। (সূরা রা‘দ- ৪০)

اِنَّ اِلَيْنَاۤ اِيَابَهُمْ ثُمَّ اِنَّ عَلَيْنَا حِسَابَهُمْ

নিশ্চয় আমার দিকেই তাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর আমার উপরই তাদের হিসাব-নিকাশ (গ্রহণের ভার)। (সূরা গাশিয়া- ২৫, ২৬)

আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী :

وَهُوَ سَرِيْعُ الْحِسَابِ

তিনি দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী। (সূরা রা‘দ- ৪১)

اَلْيَوْمَ تُجْزٰى كُلُّ نَفْسٍ ۢبِمَا كَسَبَتْؕ لَا ظُلْمَ الْيَوْمَؕ اِنَّ اللهَ سَرِيْعُ الْحِسَابِ

আজ প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার কৃতকর্মের বিনিময় দেয়া হবে; আজ কারো প্রতি যুলুম করা হবে না। নিশ্চয় আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী। (সূরা মু’মিন- ১৭)

وَاللهُ سَرِيْعُ الْحِسَابِ

নিশ্চয় আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী। (সূরা নূর- ৩৯)

وَمَنْ يَّكْفُرْ بِاٰيَاتِ اللهِ فَاِنَّ اللهَ سَرِيْعُ الْحِسَابِ

আর যে আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করবে, (তার জেনে রাখা উচিত) আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।

(সূরা আলে ইমরান- ১৯)

ব্যাখ্যা : মানবজাতির হিসাব গ্রহণ করতে আল্লাহর কোন বিলম্ব হবে না। যেভাবে তিনি গোটা বিশ্বের সমস্ত সৃষ্টিকে একসাথে রিযিক দান করছেন এবং কাউকে রিযিক পৌঁছানোর ব্যবস্থাপনায় এমন ব্যস্ত নন যে, অন্যদের রিযিক দেয়ার অবকাশই তিনি পান না, যেভাবে তিনি গোটা বিশ্বের প্রতিটি ব্যক্তি বা বস্তুকে দেখছেন, সমস্ত শব্দ শুনছেন, প্রতিটি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর এবং বৃহৎ থেকে বৃহত্তর ব্যাপারের ব্যবস্থাপনাও করছেন, তেমনি তিনি প্রত্যেক ব্যক্তির হিসাব গ্রহণ করবেন। একটি বিচারের শুনানিতে তিনি এতটা ব্যস্ত হয়ে পড়বেন না যে, সে সময়ে অন্যান্য মামলার শুনানি করতে পারবেন না। তাছাড়া তাঁর আদালতে এ কারণেও কোন বিলম্ব হবে না যে, মামলার পটভূমি ও ঘটনাবলির বিচার-বিশ্লেষণ এবং তার সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহ করা কঠিন হবে। কেননা আদালতের বিচারক নিজেই সরাসরি বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে অবগত থাকবেন। মামলার বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষের সবকিছুই তাঁর জানা থাকবে। সমস্ত ঘটনার খুঁটি-নাটি অনস্বীকার্য সাক্ষ্য প্রমাণসহ সবিস্তারে পেশ করা হবে। আর এতে তাঁর একটুও বিলম্ব হবে না। ফলে সমস্ত মামলার ফায়সালা তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে।

আল্লাহ প্রতিশোধ গ্রহণকারী :

وَاللهُ عَزِيْزٌ ذُو انْتِقَامٍ

আর আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রতিশোধ গ্রহণকারী। (সূরা আলে ইমরান- ৪)

وَمَنْ عَادَ فَيَنْتَقِمُ اللهُ مِنْهُؕ وَاللهُ عَزِيْزٌ ذُو انْتِقَامٍ

কেউ তা (পাপ) পুনরায় করলে আল্লাহ তার কাছ থেকে প্রতিশোধ নেবেন; আর আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রতিশোধ গ্রহণে প্রবল শক্তিমান। (সূরা মায়েদা- ৯৫)

اِنَّا مِنَ الْمُجْرِمِيْنَ مُنْتَقِمُوْنَ

অবশ্যই আমি পাপীদের থেকে প্রতিশোধ নেব। (সূরা সাজদা- ২২)

اَلَيْسَ اللهُ بِعَزِيْزٍ ذِى انْتِقَامٍ

আল্লাহ কি মহাপরাক্রমশালী ও প্রতিশোধ গ্রহণকারী নন? (সূরা যুমার- ৩৭)

আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা :

وَاِنَّ رَبَّكَ لَشَدِيْدُ الْعِقَابِ

নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক কঠোর শাসিত্মদানকারী। (সূরা রা‘দ- ৬)

وَاعْلَمُوْا ۤاَنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ

জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে খুবই কঠোর। (সূরা আনফাল- ২৫)

وَاللهُ شَدِيْدُ الْعِقَابِ

আর আল্লাহ কঠোর শাস্তিদানকারী। (সূরা আলে ইমরান- ১১)

فَاِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ

নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা। (সূরা বাক্বারা- ২১১)

আল্লাহ দ্রুত শাস্তিদানকারী :

اِنَّ رَبَّكَ سَرِيْعُ الْعِقَابِ وَاِنَّهٗ لَغَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ

নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক শাস্তিদানে খুবই দ্রুততর, নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল ও দয়াময়। (সূরা আন‘আম- ১৬৫)

আল্লাহ বিশ্বের সবকিছু লালন-পালন করেন :

قُلْ اَغَيْرَ اللهِ اَبْغِيْ رَبًّا وَّهُوَ رَبُّ كُلِّ شَيْءٍ

বলো, আমি কি আল্লাহকে ছেড়ে অন্য কোন প্রতিপালককে খুঁজব? অথচ তিনিই সবকিছুর প্রতিপালক।

(সূরা আন‘আম- ১৬৪)

رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا وَرَبُّ الْمَشَارِقِ

তিনি আসমান ও জমিন এবং উভয়ের মাঝে অবস্থিত সবকিছুর প্রতিপালক এবং তিনি সকল উদয়স্থলের প্রতিপালক। (সূরা সাফফাত- ৫)

জীবন ও মৃত্যু আল্লাহর হাতে :

هُوَ الَّذِيْ يُحْيِيْ وَيُمِيْتُۚ فَاِذَا قَضٰۤى اَمْرًا فَاِنَّمَا يَقُوْلُ لَهٗ كُنْ فَيَكُوْنُ

তিনিই জীবিত করেন ও মৃত্যু ঘটান। যখন তিনি কোনকিছু করার সিদ্ধান্ত নেন তখন তিনি বলেন, হও অতঃপর তা হয়ে যায়। (সূরা মু’মিন- ৬৮)

لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ يُحْيِيْ وَيُمِيْتُ

তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই, তিনিই জীবিত করেন এবং মৃত্যু ঘটান। (সূরা আ‘রাফ- ১৫৮)

وَاللهُ يُحْيِيْ وَيُمِيْتُؕ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ

আল্লাহই জীবিত করেন ও মৃত্যু ঘটান; আর তোমরা যা কর আল্লাহ তা পর্যবেক্ষণ করেন। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৬)

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন