hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

তাফসীরুল কুরআন বিল কুরআন

লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

৩৪০
পর্ব- ৪২ : দুনিয়ার জীবন অধ্যায়- ১ : দুনিয়ার জীবনের তাৎপর্য
দুনিয়া হলো খেলতামাশা :

وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَاۤ اِلَّا لَعِبٌ وَّلَهْوٌؕ وَلَلدَّارُ الْاٰخِرَةُ خَيْرٌ لِّلَّذِيْنَ يَتَّقُوْنَؕ اَفَلَا تَعْقِلُوْنَ

পার্থিব জীবন ক্রীড়া কৌতুক ব্যতীত আর কিছুই নয়। সুতরাং যারা তাক্বওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য আখিরাতের আবাসই শ্রেয়; তোমরা কি তা অনুধাবন কর না? (সূরা আন‘আম- ৩২)

وَمَا هٰذِهِ الْحَيَاةُ الدُّنْيَاۤ اِلَّا لَهْوٌ وَّلَعِبٌؕ وَاِنَّ الدَّارَ الْاٰخِرَةَ لَهِيَ الْحَيَوَانُۘ لَوْ كَانُوْا يَعْلَمُوْنَ

এ পার্থিব জীবন ক্রীড়া কৌতুক ব্যতীত কিছুই নয়। নিশ্চয় পরকালের জীবনই প্রকৃত জীবন, যদি তারা জানত! (সূরা আনকাবূত- ৬৪)

ব্যাখ্যা : আখিরাতের চিরন্তন জীবনের তুলনায় দুনিয়ার এ জীবন ঠিক তেমন, যেমন কোন ব্যক্তি কিছুক্ষণ খেলাধূলা করে আনন্দ লাভ করে; তারপর তার আসল ও গুরুত্বপূর্ণ কাজে মনোনিবেশ করে। তাছাড়া একে খেলাধূলার সাথে তুলনা করার কারণ হচ্ছে, এখানে প্রকৃত সত্য গোপন থাকার ফলে যারা ভেতরে দৃষ্টি না দিয়ে শুধুমাত্র বাইরের অংশটুকু দেখতে অভ্যস্ত, তাদের জন্য বিভ্রান্তির শিকার হওয়ার বহু কারণ বিদ্যমান রয়েছে। এসব বিভ্রান্তির শিকার হয়ে মানুষ প্রকৃত সত্যের বিরুদ্ধে এমনসব অদ্ভূত কর্মপদ্ধতি অবলম্বন করে, যার ফলে তাদের জীবন নিছক একটি খেলা ও তামাশার বস্তুতে পরিণত হয়। যে ব্যক্তি এ পৃথিবীতে রাজার আসনে বসে তার মর্যাদা আসলে নাট্যমঞ্চের সেই কৃত্রিম রাজার চেয়ে মোটেই ভিন্নতর নয়, যে সোনার মুকুট মাথায় দিয়ে সিংহাসনে বসে এবং এমনভাবে হুকুম চালাতে থাকে যেন সে সত্যিকারের একজন বাদশাহ। অথচ প্রকৃত বাদশাহীর সামান্যতম নামগন্ধও তার মধ্যে নেই। দুনিয়ার মাত্র কয়েকদিনের জীবনেই এসব অভিনয় চলছে। মৃত্যুর মুহূর্ত আসার সাথে সাথে এক নিমিষে সবকিছুই বন্ধ হয়ে যাবে। এ জীবনের সীমান্ত পার হওয়ার সাথে সাথেই মানুষ এমন এক জগতে পৌঁছে যাবে, যেখানে সবকিছু্ই হবে প্রকৃত সত্যের অনুরূপ এবং যেখানে এ দুনিয়ার জীবনের সমস্ত বিভ্রান্তির আবরণ খুলে দিয়ে মানুষকে দেখিয়ে দেয়া হবে যে, সে কী পরিমাণ সত্য নিয়ে এসেছে। অতঃপর সত্যের তুলাদন্ডে পরিমাপ করে তার মান নির্ধারণ করা হবে। যদি তারা এ কথা জানত যে, এ দুনিয়ার জীবন একটি পরীক্ষার অবকাশ মাত্র। মানুষের জন্য আসল জীবন হচ্ছে আখিরাতের জীবন, যা চিরকাল স্থায়ী হবে। তাহলে তারা এ পরীক্ষার সময়কালকে খেলতামাশায় নষ্ট না করে এমনসব কাজে ব্যবহার করত, যা তাদের পরকালের স্থায়ী জীবনকে সুখময় করে তুলত।

দুনিয়ার কয়েকটি শোভনীয় জিনিস :

زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَآءِ وَالْبَنِيْنَ وَالْقَنَاطِيْرِ الْمُقَنْطَرَةِ مِنَ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَالْخَيْلِ الْمُسَوَّمَةِ وَالْاَنْعَامِ وَالْحَرْثِؕ ذٰلِكَ مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَاۚ وَاللهُ عِنْدَهٗ حُسْنُ الْمَاٰبِ

নারী, সন্তান, সোনা-রুপার অঢেল ধনসম্পদ, চি ‎‎‎ হ্নত ঘোড়া, গবাদি পশু, ক্ষেতখামার- এসব জিনিসের ভালোবাসা মানুষের কাছে শোভনীয় করে দেয়া হয়েছে। এসব মূলত দুনিয়ার জীবনের ভোগের সামগ্রী মাত্র। আর আল্লাহর কাছে রয়েছে (এর চেয়েও) উত্তম বাসস্থান। (সূরা আলে ইমরান- ১৪)

দুনিয়ার জীবনের দৃষ্টান্ত :

اِنَّمَا مَثَلُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَآءٍ اَنْزَلْنَاهُ مِنَ السَّمَآءِ فَاخْتَلَطَ بِهٖ نَبَاتُ الْاَرْضِ مِمَّا يَاْكُلُ النَّاسُ وَالْاَنْعَامُؕ حَتّٰۤى اِذَاۤ اَخَذَتِ الْاَرْضُ زُخْرُفَهَا وَازَّيَّنَتْ وَظَنَّ اَهْلُهَاۤ اَنَّهُمْ قَادِرُوْنَ عَلَيْهَاۤ اَتَاهَاۤ اَمْرُنَا لَيْلًا اَوْ نَهَارًا فَجَعَلْنَاهَا حَصِيْدًا كَاَنْ لَّمْ تَغْنَ بِالْاَمْسِؕ كَذٰلِكَ نُفَصِّلُ الْاٰيَاتِ لِقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ

বস্তুত পার্থিব জীবনের দৃষ্টান্ত এরূপ যে, আমি আকাশ হতে বারি বর্ষণ করি, যা দ্বারা জমিনে উদগত উদ্ভিদসমূহ ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে উদগত হয়, যা হতে মানুষ ও জীবজন্তু আহার করে থাকে। অতঃপর যখন ভূমি তার শোভা ধারণ করে এবং নয়নাভিরাম হয়, অতঃপর সেটার অধিকারীগণ সেটাকে তাদের আয়ত্তাধীন মনে করে, তখন দিবসে অথবা রজনীতে আমার নির্দেশ এসে পড়ে। অতঃপর আমি সেটাকে এমনভাবে নির্মূল করে দেই, যেন গতকালও সেটার অস্তিত্ব ছিল না। এভাবে আমি নিদর্শনাবলি বিশদভাবে বিবৃত করি চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য। (সূরা ইউনুস- ২৪)

وَاضْرِبْ لَهُمْ مَّثَلَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَآءٍ اَنْزَلْنَاهُ مِنَ السَّمَآءِ فَاخْتَلَطَ بِهٖ نَبَاتُ الْاَرْضِ فَاَصْبَحَ هَشِيْمًا تَذْرُوْهُ الرِّيَاحُؕ وَكَانَ اللهُ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ مُّقْتَدِرًا

তাদের নিকট পার্থিব জীবনের উপমা পেশ করো। এটা পানির ন্যায়, যা আমি আকাশ হতে বর্ষণ করি, যা দ্বারা জমিনে উদগত উদ্ভিদসমূহ ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে উদগত হয়। অতঃপর তা শুষ্ক হয়ে এমন চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায় যে, বাতাস তাকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। আল্লাহ সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। (সূরা কাহফ- ৪৫)

ব্যাখ্যা : অর্থাৎ তিনি জীবন দান করেন, আবার মৃত্যুও দান করেন। তিনি উত্থান ঘটান, আবার পতনও ঘটান। তাঁর নির্দেশেই বসন্ত আসে এবং শীতও আসে। আজ যদি তুমি সচ্ছল ও আরামের জীবন-যাপন করে থাক, তাহলে এ অহংকারে মত্ত হয়ো না যে, এ অবস্থার পরিবর্তন নেই। যে আল্লাহর হুকুমে তুমি এসব লাভ করেছ তাঁরই হুকুমে এসব তোমার কাছ থেকে ছিনিয়েও নেয়া হতে পারে।

দুনিয়ার জীবনের প্রকৃতি :

اِعْلَمُوْاۤ اَنَّمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا لَعِبٌ وَّلَهْوٌ وَّزِيْنَةٌ وَّتَفَاخُرٌ ۢبَيْنَكُمْ وَتَكَاثُرٌ فِى الْاَمْوَالِ وَالْاَوْلَادِؕ كَمَثَلِ غَيْثٍ اَعْجَبَ الْكُفَّارَ نَبَاتُهٗ ثُمَّ يَهِيْجُ فَتَرَاهُ مُصْفَرًّا ثُمَّ يَكُوْنُ حُطَامًاؕ وَفِى الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ شَدِيْدٌ وَّمَغْفِرَةٌ مِّنَ اللهِ وَرِضْوَانٌؕ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَاۤ اِلَّا مَتَاعُ الْغُرُوْرِ

জেনে রেখো, দুনিয়ার জীবন খেলতামাশা, জাঁকজমক, পারস্পরিক অহংকার প্রকাশ, ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততির প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগিতা ব্যতীত আর কিছুই নয়। এর উপমা বৃষ্টির সাথে, যার দ্বারা উৎপন্ন শস্য কৃষকদের চমৎকৃত করে। অতঃপর তা শুকিয়ে যায়, ফলে তুমি তা হলুদ বর্ণ দেখতে পাও; অবশেষে তা খড়কুটায় পরিণত হয়। অতএব পরকালে রয়েছে কঠিন শাস্তি এবং আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। পক্ষান্তরে দুনিয়ার জীবন ছলনাময় ধোঁকা ব্যতীত আর কিছুই নয়। (সূরা হাদীদ- ২০)

ব্যাখ্যা : এ উপমা থেকে বুদ্ধিমান মানুষ এ শিক্ষা গ্রহণ করে যে, দুনিয়ার এ জীবন ও এর সব সৌন্দর্য ও চাকচিক্য অস্থায়ী। প্রতিটি যৌবনের পরিণাম বার্ধক্য ও মৃত্যু। প্রতিটি উত্থানই অবশেষে পতনের পরিণতি লাভ করে। সুতরাং এ পৃথিবী এমন জিনিস নয়, যার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে মানুষ আল্লাহ ও আখিরাতকে ভুলে যেতে পারে এবং এখানকার ক্ষণস্থায়ী বসন্তের মজা উপভোগ করার জন্য এমন আচরণ করবে, যা তার পরিণামকে ধ্বংস করে দেবে। তাছাড়া একজন বুদ্ধিমান লোক এসব দৃশ্য দেখে এ শিক্ষা গ্রহণ করে যে, এ দুনিয়ায় বসন্ত ও শরৎ আল্লাহর ইচ্ছাতেই আগমন করে। তিনি যাকে ইচ্ছা উত্থান ঘটান এবং যাকে ইচ্ছা তার পতন ঘটান। আল্লাহ যাকে সমৃদ্ধ ও উন্নত করেন তার বেড়ে ওঠা যেমন কেউ রোধ করতে পারে না, তেমনিভাবে তিনি যাকে ধ্বংস করতে চান তাকে রক্ষা করতে পারে এমন শক্তিও কারো নেই।

মানুষ দুনিয়ার ধোঁকায় পড়ে আছে:

وَغَرَّتْهُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا

বস্তুত পার্থিব জীবন তাদেরকে প্রতারিত করেছিল। (সূরা আন‘আম- ১৩০)

ব্যাখ্যা : দুনিয়ার জীবন স্থুলদর্শী লোকদেরকে নানা রকম ভুল ধারণায় নিমজ্জিত করে। কেউ মনে করে, বাঁচা-মরা শুধুমাত্র এ দুনিয়ায় সীমাবদ্ধ, এরপর দ্বিতীয় কোন জীবন নেই। কেউ ক্ষমতা, প্রতিপত্তি ও প্রাচুর্যের নেশায় মত্ত হয়ে নিজের মৃত্যুর কথা ভুলে যায় এবং এ ভুল ধারণা পোষণ করে যে, তার আরাম-আয়েশ ও কর্তৃত্ব চিরস্থায়ী, এর কোন ক্ষয় নেই। কেউ নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উদ্দেশ্য ভুলে গিয়ে কেবলমাত্র বৈষয়িক লাভ ও স্বাদকে জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য মনে করে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যকে কোন গুরুত্বই দেয় না। এর ফলে তার মনুষ্যত্বের মান যত নিচে নেমে যাক না কেন, তার কোন পরোয়াই সে করে না। কেউ মনে করে বৈষয়িক সমৃদ্ধিই ন্যায়-অন্যায় ও সত্য-মিথ্যার আসল মানদন্ড। এ সমৃদ্ধি যে পথেই অর্জিত হবে তা-ই সত্য এবং এর বিপরীত সবকিছুই মিথ্যা। কেউ এ সমৃদ্ধিকেই আল্লাহর নিকট অনুগৃহীত হওয়ার আলামত হিসেবে মনে করে। এর ফলে সে সাধারণভাবে মনে করতে থাকে, যে কোন উপায়েই হোক একজন লোক বিপুল সম্পদের অধিকারী হতে পারলেই সে আল্লাহর প্রিয়পাত্র। আর যার বৈষয়িক অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে, তার পরকাল ঝরঝরে হয়ে গেছে। এ ধরনের যত প্রকার ভুল ধারণা আছে সবগুলোই আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়ার জীবনের প্রতারণা বলে উল্লেখ করেছেন।

আল্লাহর সতর্কবাণী :

يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اِنَّ وَعْدَ اللهِ حَقٌّ فَلَا تَغُرَّنَّكُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا وَلَا يَغُرَّنَّكُمْ بِاللهِ الْغَرُوْرُ

হে মানুষ! নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য। সুতরাং পার্থিব জীবন যেন কিছুতেই তোমাদেরকে প্রতারিত না করে এবং প্রতারক (শয়তান) যেন কিছুতেই তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারিত না করে। (সূরা ফাতির- ৫)

وَذَرِ الَّذِيْنَ اتَّخَذُوْا دِيْنَهُمْ لَعِبًا وَّلَهْوًا وَّغَرَّتْهُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا

যারা তাদের দ্বীনকে খেলতামাশা হিসেবে গ্রহণ করে এবং পার্থিব জীবন যাদেরকে প্রতারিত করে তুমি তাদের সঙ্গ বর্জন করো। (সূরা আন‘আম- ৭০)

ব্যাখ্যা : اَلْغَرُوْرُ (আল গারুর) অর্থ প্রতারক। এখানে اَلْغَرُوْرُ (আল গারুর) বলতে শয়তানও হতে পারে, আবার একদল মানুষও হতে পারে, মানুষের মন ও প্রবৃত্তিও হতে পারে এবং অন্য কোন জিনিসও হতে পারে। কোন বিশেষ ব্যক্তি বা বিশেষ বস্তু নির্ধারণ না করে এ বহুমুখী অর্থের অধিকারী শব্দটিকে ব্যবহার করার কারণ হচ্ছে, বিভিন্ন রকম লোকের কাছে প্রতারিত হওয়ার মূল কারণ বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে। যে ব্যক্তি যে উপায়েই প্রতারণার শিকার হয়েছে তা-ই তার জন্য ‘গারূর’ বা প্রতারক। কাউকে তার প্রতারক এ নিশ্চয়তা দেয় যে, আল্লাহ বলতে কিছুই নেই। আবার কাউকে এ ভুল ধারণা দেয় যে, আল্লাহ এ দুনিয়া সৃষ্টি করে হাত-পা গুটিয়ে বসে আছেন এবং এখন তিনি এ দুনিয়া বান্দাদের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন। আল্লাহর এমন কিছু প্রিয়পাত্র আছে, যাদের নৈকট্য অর্জন করলে তুমি যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারবে। তুমি নিশ্চিতভাবেই ক্ষমার অধিকারী হবে। কাউকে এভাবে প্রতারণা দেয় যে, আল্লাহ তো ক্ষমাশীল ও করুণাময়। সুতরাং তোমরা পাপ করতে থাক, তিনি ক্ষমা করে যেতেই থাকবেন। আবার কারো মনে এ ভুল ধারণা সৃষ্টি করে দেয় যে, তোমাদের তো হাত-পা বাঁধা, তোমরা যত খারাপ কাজ করো সব আল্লাহই করান। সুতরাং তোমরা ভালো কাজ থেকে দূরে সরে যাও। কারণ আল্লাহ তা করার তাওফীক তোমাদের দেন না। যদি বিশ্লেষণ করে দেখা হয়, তাহলে শেষ পর্যন্ত প্রত্যেকটি গোনাহ ও অপরাধের মূল কারণ হিসেবে দেখা যাবে যে, মানুষ আল্লাহর ব্যাপারে কোন না কোনভাবে প্রতারণার শিকার হয়েছে। এর ফলেই তার বিশ্বাসে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে এবং সে নৈতিক চরিত্রহীনতার শিকার হয়েছে।

যে দুনিয়া চায় আল্লাহ তাকে দুনিয়া থেকে কিছু দেন :

وَمَنْ يُّرِدْ ثَوَابَ الدُّنْيَا نُؤْتِهٖ مِنْهَاۚ وَمَنْ يُّرِدْ ثَوَابَ الْاٰخِرَةِ نُؤْتِهٖ مِنْهَاؕ وَسَنَجْزِى الشَّاكِرِيْنَ

আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার প্রতিদান কামনা করে, আমি তাকে তা হতে কিছু প্রদান করি। আর যে ব্যক্তি পরকালের প্রতিদান কামনা করে, আমি তাকে তা হতেই প্রদান করে থাকি। অচিরেই আমি কৃতজ্ঞদেরকে পুরস্কার প্রদান করব। (সূরা আলে ইমরান- ১৪৫)

ব্যাখ্যা : পুরস্কার অর্থ কাজের ফল। দুনিয়ার পুরস্কার বলতে বুঝায়- মানুষ তার প্রচেষ্টা ও কাজের ফলস্বরূপ দুনিয়ার জীবনে যে মুনাফা অর্জন করে। আর আখিরাতের পুরস্কার বলতে বুঝায়- দুনিয়ার জীবনে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী চলার ফলস্বরূপ মানুষ আখিরাতের চিরন্তন জীবনে যে পুরস্কার লাভ করে। মানুষ যে প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে, সে ক্ষেত্রে তার দৃষ্টি ইহকালীন না পরকালীন ফলপ্রাপ্তির দিকে নিবদ্ধ থাকবে- ইসলামের দৃষ্টিতে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের বিষয়।

مَنْ كَانَ يُرِيْدُ الْعَاجِلَةَ عَجَّلْنَا لَهٗ فِيْهَا مَا نَشَآءُ لِمَنْ نُّرِيْدُ ثُمَّ جَعَلْنَا لَهٗ جَهَنَّمَۚ يَصْلَاهَا مَذْمُوْمًا مَّدْحُوْرًا

যে ব্যক্তি পার্থিব সুখ-সম্ভোগ কামনা করবে, আমি তাকে যা ইচ্ছা এখানেই দিয়ে থাকি। অতঃপর তার জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত করি, যেখানে সে প্রবেশ করবে নিন্দিত ও অনুগ্রহ হতে বঞ্চিত অবস্থায়। (সূরা বনী ইসরাইল- ১৮)

ব্যাখ্যা : এর অর্থ হচ্ছে, যে ব্যক্তি আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না অথবা আখিরাত পর্যন্ত সবর করতে প্রস্তুত নয় এবং শুধুমাত্র দুনিয়ার সাফল্য ও সমৃদ্ধিকেই নিজের যাবতীয় প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করে, সে যা কিছু পাবে এ দুনিয়াতেই পাবে। আখিরাতে সে কিছুই পাবে না। শুধু তাই নয় বরং দুনিয়ার বৈষয়িক স্বার্থপূজা ও আখিরাতে জবাবদিহির দায়িত্বের ব্যাপারে বেপরোয়া মনোভাব তার কর্মধারাকে মৌলিকভাবে ভ্রান্ত পথে পরিচালিত করবে। যার ফলে সে জাহান্নামের অধিবাসী হবে। যার উদ্দেশ্য শুধু দুনিয়ার জীবনের স্বার্থ ও সুখ লাভ করা সে এ বৈষয়িক স্বার্থ উদ্ধারের জন্য যেমন প্রচেষ্টা চালাবে তেমনি তার ফলও সে এখানে পাবে। আখিরাত যার লক্ষ্য নয় এবং সেজন্য যে কোন চেষ্টাও করে না তার দুনিয়ার প্রচেষ্টার ফল আখিরাত পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হবে না। জীবনের শেষ নিঃশ্বাসের সাথে সাথেই তাকে নিজের সমস্ত সরঞ্জাম এ দুনিয়ায় ছেড়ে চলে যেতে হবে। এর কোন একটি জিনিসও সে সঙ্গে নিয়ে যেতে পারবে না।

কিছু লোক পরকাল বিক্রি করে দুনিয়া ক্রয় করে :

اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ اشْتَرَوُا الْحَيَاةَ الدُّنْيَا بِالْاٰخِرَةِؗ فَلَا يُخَفَّفُ عَنْهُمُ الْعَذَابُ وَلَا هُمْ يُنْصَرُوْنَ

এরাই পরকালের বিনিময়ে পার্থিব জীবন ক্রয় করে নিয়েছে; অতএব তাদের দন্ড হালকা করা হবে না এবং তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না। (সূরা বাক্বারা- ৮৬)

মানুষ দুনিয়াকে প্রাধান্য দেয় :

بَلْ تُؤْثِرُوْنَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا

কিন্তু তোমরা তো পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাক। (সূরা আ‘লা- ১৬)

ذٰلِكَ بِاَنَّهُمُ اسْتَحَبُّوا الْحَيَاةَ الدُّنْيَا عَلَى الْاٰخِرَةِ وَاَنَّ اللهَ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الْكَافِرِيْنَ

এটা এজন্য যে, তারা দুনিয়ার জীবনকে আখিরাতের উপর প্রাধান্য দেয়। নিশ্চয় আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে হেদায়াত করেন না। (সূরা নাহল- ১০৭)

وَفَرِحُوْا بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَاؕ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا فِى الْاٰخِرَةِ اِلَّا مَتَاعٌ

এরা পার্থিব জীবন নিয়ে উল্লাসিত, অথচ দুনিয়ার জীবন আখিরাতের তুলনায় ক্ষণস্থায়ী ভোগমাত্র। (সূরা রা‘দ- ২৬)

ব্যাখ্যা : দুনিয়ার ভোগ এমন কোন রিযিক নয়, যার জন্য মানুষ গর্বিত হতে পারে। কোন মানুষ পৃথিবীতে সর্বাধিক সম্পদ লাভ করলেও স্বল্পতম সময়ের জন্যই লাভ করে। মাত্র কয়েক বছর সে তা ভোগ করে তারপর সবকিছু ছেড়ে খালি হাতে পৃথিবী থেকে বিদায় হয়ে যায়। তাছাড়া সে সম্পদ যত অঢেলই হোক না কেন বাস্তবে তার একটা ক্ষুদ্রতম অংশই ব্যক্তির ব্যবহারে আসে। এ ধরনের সম্পদের কারণে গর্বিত হওয়া এমন কোন মানুষের কাজ নয়, যে এ পৃথিবীর প্রকৃত অবস্থা উপলব্ধি করতে সক্ষম। কেননা আখিরাতের সম্পদ গুণগত ও অবস্থাগত দিক দিয়ে উন্নত মানের। এটি সাময়িক বা অস্থায়ীও নয় বরং চিরস্থায়ী। তাছাড়া রিযিক কমবেশি হওয়ার বিষয়টি আল্লাহর ইচ্ছার সাথে সম্পর্কিত, তাঁর সন্তুষ্টির সাথে নয়। আল্লাহর ইচ্ছা অনুসারে ভালো-মন্দ সবরকমের মানুষ রিযিক লাভ করছে। যারা আল্লাহকে মেনে নিয়েছে তারাও রিযিক পাচ্ছে আবার যারা অস্বীকার করেছে তারাও প্রচুর রিযিক লাভ করছে। তবে প্রচুর রিযিক লাভ করা আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার কথা প্রমাণ বহন করে না। আবার রিযিকের অভাব আল্লাহর ক্রোধান্বিত হওয়ার আলামতও পেশ করে না। আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী একজন যালিম এবং বেঈমান লোকও আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়। অথচ যুলুম ও বেঈমানী আল্লাহ পছন্দ করেন না। পক্ষান্তরে আল্লাহর ইচ্ছাতেই একজন ঈমানদার ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও কষ্ট সহ্য করতে থাকে, অথচ আল্লাহ সত্যবাদিতা ও ঈমানদারীকে পছন্দ করেন। কাজেই যে ব্যক্তি বস্তুগত স্বার্থ ও মুনাফা অর্জনকে ভালো-মন্দের মাপকাঠি হিসেবে গণ্য করে, সে বিরাট ভুলের মধ্যে রয়েছে। আসল ব্যাপারটি হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর এটি অর্জিত হয় এমনসব নৈতিক গুণাবলির মাধ্যমে, যা আল্লাহ পছন্দ করেন। এ গুণাবলির সাথে কেউ যদি দুনিয়ার নিয়ামতগুলোও লাভ করে, তাহলে নিঃসন্দেহে তা হবে আল্লাহর দান এবং এজন্য তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত। কিন্তু যদি কোন ব্যক্তি নৈতিক গুণাবলির দিক দিয়ে আল্লাহর নাফরমান বান্দা হয়ে থাকে এবং এর সাথে সাথে তাকে দুনিয়ার নিয়ামতও দান করা হয় তাহলে তার অর্থ দাঁড়ায়, সে কঠিন জবাবদিহি ও নিকৃষ্টতম শাস্তি ভোগের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

কাফিরদের জন্য দুনিয়ার জীবন স্বাচ্ছন্দ্যময় :

زُيِّنَ لِلَّذِيْنَ كَفَرُوا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا وَيَسْخَرُوْنَ مِنَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۘ وَالَّذِيْنَ اتَّقَوْا فَوْقَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِؕ وَاللهُ يَرْزُقُ مَنْ يَّشَآءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ

যারা কুফরী করেছে দুনিয়ার জীবনকে তাদের জন্য সুশোভিত করা হয়েছে। ফলে তারা মুমিনদেরকে উপহাস করে, অথচ কিয়ামতের দিন মুত্তাক্বীরাই তাদের উপরে থাকবে। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে অগণিত রিযিক দান করেন। (সূরা বাক্বারা- ২১২)

পরকালের তুলনায় দুনিয়া অতি অল্প :

يَا قَوْمِ اِنَّمَا هٰذِهِ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا مَتَاعٌؗ وَاِنَّ الْاٰخِرَةَ هِيَ دَارُ الْقَرَارِ

হে আমার সম্প্রদায়! এ পার্থিব জীবন (অস্থায়ী) উপভোগের উপকরণ মাত্র, নিশ্চয় আখিরাতই হচ্ছে চিরস্থায়ী আবাস। (সূরা মু’মিন- ৩৯)

وَمَاۤ اُوْتِيْتُمْ مِّنْ شَيْءٍ فَمَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَزِيْنَتُهَاۚ وَمَا عِنْدَ اللهِ خَيْرٌ وَّاَبْقٰۤى اَفَلَا تَعْقِلُوْنَ

তোমাদেরকে যা কিছু দেয়া হয়েছে, তা পার্থিব জীবনের ভোগ ও শোভা মাত্র। কিন্তু আল্লাহর নিকট যা আছে তা আরো উত্তম ও স্থায়ী। তবুও কি তোমরা অনুধাবন করবে না? (সূরা ক্বাসাস- ৬০)

ব্যাখ্যা : দুনিয়ার জীবনের আয়ুকাল কারো জন্যই অল্প কতকগুলো বছরের বেশি হয় না। এটি নিছক একটি সফরের সাময়িক পর্যায় মাত্র। আসল জীবনটি হবে চিরস্থায়ী, যা অচিরেই আগমন করবে। এ সাময়িক জীবনে মানুষ যতই সহায়-সম্পদ জমা করুক না কেন এবং যতই আরাম-আয়েশ করুক না কেন, এ জীবন একদিন শেষ হবেই এবং এখানকার সবকিছু এখানে রেখেই তাকে চলে যেতে হবে। এ সংক্ষিপ্ত জীবনকালের আরাম-আয়েশের বিনিময়ে যদি মানুষকে আগামীর অন্তহীন জীবন বিপদের মধ্যে কাটাতে হয়, তাহলে কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি এ ক্ষতি মেনে নিতে পারে না। এর মুকাবিলায় একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি এখানে কয়েক বছর বিপদাপদের মধ্যে জীবন কাটিয়ে দেয়াকে প্রাধান্য দেবে। সে এর মাধ্যমে এমনসব কল্যাণ ও নেকী উপার্জন করতে চাইবে, যা পরবর্তী অন্তহীন জীবনে তার চিরকালীন আরাম-আয়েশের জন্য সহায়ক হবে। আল্লাহর দ্বীন মানুষের কাছে এ দাবী করে না যে, সে এ দুনিয়ার জীবনোপকরণ থেকে লাভবান হতে পারবে না। এর দাবী শুধু এতটুকু যে, এ দুনিয়ার জীবনের উপর আখিরাতকে প্রাধান্য দিতে হবে। কারণ দুনিয়া ধ্বংসশীল এবং আখিরাত চিরস্থায়ী। দুনিয়ার ভোগ-তৃপ্তি নিম্ন পর্যায়ের। পক্ষান্তরে আখিরাতের ভোগ-তৃপ্তি উচ্চ ও উন্নত পর্যায়ের। তাই মানুষকে দুনিয়াতে এমন সম্পদ অর্জন করতে হবে, যা তাকে আখিরাতের চিরন্তন জীবনে সফলকাম করবে অথবা চিরন্তন ক্ষতি থেকে বাঁচাবে। কিন্তু যেখানে মুকাবিলার ব্যাপার এসে যায় অর্থাৎ দুনিয়ার সাফল্য ও আখিরাতের সাফল্য পরস্পর বিরোধী হয়ে দাঁড়ায় সেখানে মানুষের কাছে সত্য দ্বীনের দাবী এবং ভারসাম্যপূর্ণ বুদ্ধিবৃত্তির দাবীও এটিই যে, মানুষ দুনিয়াকে আখিরাতের জন্য উৎসর্গ করে দিক। এ দুনিয়ার সাময়িক সম্পদ ও সৌন্দর্যের জন্য সে কখনো এমন পথ অবলম্বন না করুক, যার ফলে সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

আল্লাহ এ কথা বলছেন না যে, তোমরা নিজেদের ব্যবসা গুটিয়ে নাও এবং আমার দ্বীনকে মেনে নিয়ে ফকির হয়ে যাও। বরং তিনি বলছেন, দুনিয়ার যে ধনসম্পদের জন্য তোমরা পাগলপারা, তা অতি সামান্য সম্পদ। আর তোমরা তা থেকে সামান্য ক’দিনের জন্য লাভবান হতে পার। অন্যদিকে আল্লাহর কাছে যা আছে তা এর তুলনায় গুণগত ও পরিমাণগত উভয় দিক দিয়ে ভালো এবং স্থায়ীত্বের অধিকারী। তাই যদি তোমরা এ সাময়িক জীবনের সীমাবদ্ধ নিয়ামত দ্বারা লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে এমন নীতি অবলম্বন কর, যার ফলে আখিরাতে চিরন্তন ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়, তাহলে এর চেয়ে বড় বোকামি আর কী হতে পারে? এক ব্যক্তি কঠোর পরিশ্রম করে নিজের রবের ইবাদাত করে। তারপর চিরকালের জন্য তাঁর পুরস্কার লাভ করে ধন্য হয়। আর অপর এক ব্যক্তি গ্রেফতার হয়ে আল্লাহর আদালতে অপরাধী হিসেবে উপস্থিত হয় এবং গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে সে নিছক কয়েকদিন হারাম সম্পদের মজা লুটার সুযোগ পায়। এ দু’জনের মধ্যে কে সফলকাম হলো? এটা প্রত্যেকেই সহজে বুঝতে পারে।

দুনিয়াপূজারীদের দিকে দৃষ্টি দেয়া নিষেধ :

وَلَا تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ اِلٰى مَا مَتَّعْنَا بِهٖۤ اَزْوَاجًا مِّنْهُمْ زَهْرَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا لِنَفْتِنَهُمْ فِيْهِؕ وَرِزْقُ رَبِّكَ خَيْرٌ وَّاَبْقٰى

তুমি তোমার চক্ষুদ্বয়কে কখনো ঐসব (বিষয়বস্তুর) দিকে প্রসারিত করো না, যা আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণিকে পার্থিব জীবনের সৌন্দর্যস্বরূপ উপভোগের উপকরণ হিসেবে দিয়েছি, যাতে আমি এর দ্বারা তাদেরকে পরীক্ষা করতে পারি। আর তোমার প্রতিপালক প্রদত্ত জীবনোপকরণ তো আরো উৎকৃষ্ট ও অধিক স্থায়ী। (সূরা ত্বা-হা- ১৩১)

পরকালের নিয়ামত ও পার্থিব ভোগ-সম্ভার সমান নয় :

اَفَمَنْ وَّعَدْنَاهُ وَعْدًا حَسَنًا فَهُوَ لَاقِيْهِ كَمَنْ مَّتَّعْنَاهُ مَتَاعَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ثُمَّ هُوَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنَ الْمُحْضَرِيْنَ

আমি যাকে উত্তম পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছি যা সে পাবে, সে কি ঐ ব্যক্তির সমান হবে, যাকে আমি পার্থিব জীবনের ভোগ-সম্ভার দিয়েছি; তারপর কিয়ামতের দিন তাকে হাযির করা হবে (জাহান্নামে)।

(সূরা ক্বাসাস- ৬১)

ব্যাখ্যা : দুনিয়াটা আসলে প্রতিদান পাওয়ার জায়গা নয় বরং পরীক্ষাগৃহ। এখানে শাস্তি ও পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকলেও তা সীমিত ও অসম্পূর্ণ পর্যায়ের। এ সত্যটি এড়িয়ে গিয়ে এ কথা মনে করার কোন সুযোগ নেই যে, এখানে যে ব্যক্তি নিয়ামত লাভ করছে তা লাভ করছে পুরস্কার হিসেবে, যা তার সৎ ও আল্লাহর প্রিয় হওয়ার প্রমাণ। আর যার উপর বিপদ আসছে তা হচ্ছে তার শাস্তি, যা তার অসৎ ও আল্লাহর অপ্রিয় হওয়ার প্রমাণ। এ ধরনের ধারণা করাটা বিভ্রান্তি এবং নির্বুদ্ধিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। যখন কোন ব্যক্তি বা জাতি একদিকে সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং অশ্লীল যুলুম ও সীমালঙ্ঘনমূলক কার্যক্রম করতে থাকে এবং অন্যদিকে তার উপর অনুগ্রহ বর্ষিত হতে থাকে তখন বুঝতে হবে, আল্লাহ তাকে কঠিনতর পরীক্ষার সম্মুখীন করেছেন এবং তার উপর আল্লাহর করুণা নয় বরং তাঁর ক্রোধ চেপে বসেছে। তার উপর যদি আঘাত আসত তাহলে বুঝা যেত যে, আল্লাহ তার প্রতি অনুগ্রহশীল হয়ে তাকে সতর্ক করছেন এবং সংশোধিত হওয়ার সুযোগ দিচ্ছেন। কিন্তু তাকে আরো পুরস্কৃত করার অর্থ হচ্ছে, তাকে কঠিন শাস্তি দেয়ার ফায়সালা হয়ে গেছে এবং তা পাওয়ার জন্য সে তার পাপের মাত্রা পূর্ণ করে নিচ্ছে। পক্ষান্তরে যার মধ্যে একদিকে থাকে আল্লাহর প্রতি সত্যিকার আনুগত্য, চারিত্রিক পবিত্রতা, পরিচ্ছন্ন লেনদেন, সৃষ্টির প্রতি সদাচার, দয়া ও স্নেহমমতা এবং অন্যদিকে তার প্রতি বিপদাপদের অবিরাম ধারা বর্ষিত হতে থাকে এবং আঘাতের পর আঘাতে জর্জরিত হতে থাকে, তার জন্য এটা আল্লাহর ক্রোধের নয় বরং তাঁর অনুগ্রহেরই আলামত।

দুনিয়াপূজারীরা পরকালের নিয়ামত পাবে না :

وَيَوْمَ يُعْرَضُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا عَلَى النَّارِؕ اَذْهَبْتُمْ طَيِّبَاتِكُمْ فِيْ حَيَاتِكُمُ الدُّنْيَا وَاسْتَمْتَعْتُمْ بِهَاۚ فَالْيَوْمَ تُجْزَوْنَ عَذَابَ الْهُوْنِ بِمَا كُنْتُمْ تَسْتَكْبِرُوْنَ فِى الْاَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَبِمَا كُنْتُمْ تَفْسُقُوْنَ

যখন কাফিরদেরকে জাহান্নামের সামনে নিয়ে দাঁড় করানো হবে (তখন তাদেরকে বলা হবে), তোমরা তোমাদের সব নিয়ামত দুনিয়ার জীবনেই শেষ করে ফেলেছ এবং এর মজা ভোগ করে ফেলেছ। তোমরা দুনিয়ায় অন্যায়ভাবে যে অহংকার করে বেড়াচ্ছিলে ও নাফরমানি করেছিলে, তার বদলায় আজ তোমাদেরকে অপমানজনক শাস্তি দেয়া হবে। (সূরা আহকাফ- ২০)

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন