hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

তাফসীরুল কুরআন বিল কুরআন

লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

৭৯
অধ্যায়- ৩ : সালাতের উপকারিতা
সালাত আল্লাহর স্মরণ লাভের মাধ্যম :

اِنَّنِيْۤ اَنَا اللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَاْ فَاعْبُدْنِيْ وَاَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِيْ

আমিই আল্লাহ, আমি ছাড়া আর কোন মা‘বুদ নেই। অতএব তুমি শুধু আমারই ইবাদাত করো এবং আমার স্মরণের জন্য সালাত প্রতিষ্ঠা করো। (সূরা ত্বা-হা- ১৪)

ব্যাখ্যা : এখানে সালাতের মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। মানুষ যেন আল্লাহ থেকে গাফিল না হয়ে যায় এবং দুনিয়ার দৃশ্যাবলি যেন তাকে এ সত্য বিমুখ না করে দেয় যে, সে কারো বান্দা নয়- এ চিন্তাকে জীবন্ত রাখার এবং আল্লাহর সাথে মানুষের সম্পর্ক জড়ানোর সবচেয়ে বড় মাধ্যম হচ্ছে সালাত। সালাত প্রতিদিন কয়েকবার মানুষকে দুনিয়ার কাজকর্ম থেকে সরিয়ে আল্লাহর দিকে নিয়ে যায়। কেউ কেউ এ অর্থও নিয়েছেন যে, সালাত কায়েম করো যাতে আমি তোমাকে স্মরণ করতে পারি। যেমন অন্যত্র বলা হয়েছে : فَذْكُرُوْنِىْ اَذْكُرْكُمْ অর্থাৎ ‘‘তোমরা আমাকে স্মরণ করো, তাহলে আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব।’’ (সূরা বাক্বারা- ১৫২)

সালাত আল্লাহর সাহায্য লাভের মাধ্যম :

يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اسْتَعِيْنُوْا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِؕ اِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِيْنَ

হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন। (সূরা বাক্বারা- ১৫৩)

ব্যাখ্যা : দ্বীনের কঠিন দায়িত্বের বোঝা বহন করার জন্য দু’টি আভ্যন্তরীণ শক্তির প্রয়োজন। একটি হচ্ছে, নিজের মধ্যে ধৈর্য ও সহিঞ্চুতার শক্তি লালন করতে হবে। দ্বিতীয়ত, সালাত আদায়ের মাধ্যমে নিজেকে নৈতিক দিক থেকে শক্তিশালী করতে হবে।

সালাত আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয় :

كَلَّاؕ لَا تُطِعْهُ وَاسْجُدْ وَاقْتَرِبْ

কখনো নয়! তুমি তার (কাফিরের) অনুসরণ করো না। বরং তুমি সিজদা করো এবং (আল্লাহর) নৈকট্য অর্জন করো। (সূরা আলাক্ব- ১৯)

সালাত উপদেশ গ্রহণের জন্য সহায়ক হয় :

اِنَّمَا تُنْذِرُ الَّذِيْنَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَيْبِ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَؕ وَمَنْ تَزَكّٰى فَاِنَّمَا يَتَزَكّٰى لِنَفْسِه ؕ وَاِلَى اللهِ الْمَصِيْرُ

আপনি তো কেবল তাদেরকে সতর্ক করতে পারেন, যারা তাদের প্রতিপালককে না দেখে ভয় করে এবং সালাত কায়েম করে। আর যে কেউ নিজেকে পরিশুদ্ধ করে, সে তো পরিশুদ্ধ করে নিজেরই কল্যাণের জন্য; (অবশেষে) সবাইকে আল্লাহরই কাছে ফিরে যেতে হবে। (সূরা ফাতির- ১৮)

সালাত আদায়কারীরাই কুরআনের হেদায়াত লাভ করে :

ذٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ فِيْهِۚ هُدًى لِّلْمُتَّقِيْنَ -‐ اَ لَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ

এটা ঐ গ্রন্থ যার মধ্যে কোন সন্দেহ নেই; আর মুত্তাক্বীদের জন্য এটা হেদায়াতস্বরূপ। (আর এটা তাদের জন্যও হেদায়াতস্বরূপ) যারা অদৃষ্ট বিষয়গুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদেরকে যে জীবনোপকরণ দান করেছি তা হতে ব্যয় করে। (সূরা বাক্বারা- ২, ৩)

সালাতের মাধ্যমে রুজিতে বরকত হয় :

وَاْمُرْ اَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَاؕ لَا نَسْاَلُكَ رِزْقًاؕ نَحْنُ نَرْزُقُكَؕ وَالْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوٰى

তুমি তোমার পরিবার-পরিজনকে সালাতের নির্দেশ দাও এবং তুমি নিজেও এর উপর অবিচল থাকো। আমি তোমার কাছে রিযিক চাই না, বরং আমিই তোমাকে রিযিক দেব। আর শুভ পরিণাম মুত্তাক্বীদের জন্য। (সূরা ত্বা-হা- ১৩২)

সালাতের মাধ্যমে মানসিক প্রশান্তি লাভ হয় :

وَلَقَدْ نَعْلَمُ اَنَّكَ يَضِيْقُ صَدْرُكَ بِمَا يَقُوْلُوْنَ - فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَكُنْ مِّنَ السَّاجِدِيْنَ

(হে নবী!) আমি অবশ্যই জানি যে, তারা (তোমার বিরোধীরা) যা বলছে, তাতে তোমার মন সংকীর্ণ হয়ে যায়। অতএব, তুমি প্রশংসার সাথে তোমার রবের তাসবীহ পাঠ করো এবং সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও। (সূরা হিজর- ৯৭, ৯৮)

ব্যাখ্যা : আমাদের নবী মুহাম্মাদ ﷺ যখন ইসলামের দাওয়াত দিতেন, তখন বিরোধীরা নবী ﷺ কে নানা ধরনের কষ্ট দিত। নবী ﷺ কে নিয়ে নানা ধরনের বিদ্রূপ করত, আজে-বাজে কথা বলত; এতে নবী ﷺ মানসিক অশান্তিতে ভোগতেন। এমতাবস্থায় আল্লাহ তা‘আলা নবী ﷺ কে প্রশান্তি লাভের উপায় হিসেবে তাসবীহ পাঠ করার ও সালাতে মশগুল হওয়ার নির্দেশ দিলেন। সত্যের বাণী প্রচার এবং প্রসারের প্রচেষ্টা চালানোর ক্ষেত্রে অশেষ কষ্ট ও বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। এগুলো মুকাবিলা করার শক্তি সালাত ও আল্লাহর ইবাদাত করার মাধ্যমেই অর্জন করতে হবে। এগুলো মনকে প্রশান্তিময় করে তুলবে, ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার জন্ম দেবে, সাহস বাড়িয়ে দেবে এবং এমন যোগ্যতাসম্পন্ন করে গড়ে তুলবে, যার ফলে দুনিয়ার সমস্ত মানুষের নিন্দাবাদ ও প্রতিরোধের মুখেও দৃঢ়ভাবে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হবে।

وَمِنْ اٰنَآءِاللَّيْلِ فَسَبِّحْ وَاَطْرَافَ النَّهَارِ لَعَلَّكَ تَرْضٰى

রাত্রিকালে পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো এবং দিবসের প্রান্তসমূহেও (তাসবীহ পাঠ করো); হয়তো তুমি সন্তুষ্ট লাভ করতে পারবে। (সূরা ত্বা-হা- ১৩০)

ব্যাখ্যা : ইসলামের দুশমনদের অবকাশের শেষ সময় পর্যন্ত তারা যে ধরনের আচরণই করুক না কেন, অবশ্যই তা সহ্য করতে হবে এবং ধৈর্যের সাথে তাদের যাবতীয় তিক্ত কথা শুনেও সত্যবাণী প্রচারের দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে। সালাত থেকে সহিষ্ণুতা ও সংযমের শক্তি লাভ করতে হবে। আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তন সহকারে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করার অর্থ হচ্ছে সালাত আদায় করা। যারা অন্যায়ভাবে বাড়াবাড়ি ও যুলুম করছে তাদেরকে এখনই শাস্তি দেয়া হবে না। ফলে তারা সত্যের আহবায়ককে কষ্ট দিতে থাকবে এবং পৃথিবীতে বুক ফুলিয়েও চলাফেরা করবে। তারা আল্লাহর পক্ষ হতে কোন বাধার সম্মুখীন হবে না। আল্লাহর এ ফায়সালায় সন্তুষ্ট হয়ে কাজ করে যেতে হবে। তাহলে এর এমন ফলাফল সামনে আসবে, যাতে হৃদয় উৎফুল্ল হয়ে উঠবে।

সালাত একটি লাভজনক ব্যবসা :

اِنَّ الَّذِيْنَ يَتْلُوْنَ كِتَابَ اللهِ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاَنْفَقُوْا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَّعَلَانِيَةً يَّرْجُوْنَ تِجَارَةً لَّنْ تَبُوْرَ

যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, সালাত কায়েম করে এবং যা কিছু আমি তাদেরকে রিযিক হিসেবে দান করেছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে। (এগুলোর দ্বারা) তারা এমন ব্যবসার আশা করে, যাতে কখনো লোকসান হবে না। (সূরা ফাতির- ২৯)

সালাতের প্রতিদান আল্লাহর নিকট পাওয়া যাবে :

اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ لَهُمْ اَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْۚ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ

নিশ্চয় যারা ঈমান আনে, সৎকাজ করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত আদায় করে তাদের প্রতিদান তাদের রবের কাছে প্রস্তুত রয়েছে। আর তাদের কোন ভয় নেই এবং কোন চিন্তাও নেই। (সূরা বাক্বারা- ২৭৭)

আল্লাহ সালাত আদায়কারীদের সওয়াব নষ্ট করবেন না :

وَالَّذِيْنَ يُمَسِّكُوْنَ بِالْكِتَابِ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَؕ اِنَّا لَا نُضِيْعُ اَجْرَ الْمُصْلِحِيْنَ

যারা কিতাবকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে এবং সালাত কায়েম করে, নিশ্চয় আমি এরূপ সৎকর্মপরায়ণদের প্রতিদান নষ্ট করি না। (সূরা আ‘রাফ- ১৭০)

সালাত আদায়কারীদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ :

وَبَشِّرِ الْمُخْبِتِيْنَ اَ لَّذِيْنَ اِذَا ذُكِرَ اللهُ وَجِلَتْ قُلُوْبُهُمْ وَالصَّابِرِيْنَ عَلٰى مَاۤ اَصَابَهُمْ وَالْمُقِيْمِى الصَّلَاةِ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ

সুসংবাদ দাও বিনীতদেরকে, আল্লাহর নাম স্মরণ করা হলে যাদের হৃদয় কম্পিত হয়, যারা বিপদাপদে ধৈর্যধারণ করে, সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যা কিছু রিযিক হিসেবে দিয়েছি তা হতে ব্যয় করে। (সূরা হজ্জ- ৩৪, ৩৫)

শুভ পরিণাম সালাত আদায়কারীদের জন্য :

وَالَّذِيْنَ صَبَرُوا ابْتِغَآءَ وَجْهِ رَبِّهِمْ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاَنْفَقُوْا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَّعَلَانِيَةً وَّيَدْرَءُوْنَ بِالْحَسَنَةِ السَّيِّئَةَ اُولٰٓئِكَ لَهُمْ عُقْبَى الدَّارِ

যারা তাদের প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য ধৈর্যধারণ করে, সালাত কায়েম করে, আমি তাদেরকে যে জীবনোপকরণ দিয়েছি তা হতে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে এবং যারা ভালো দ্বারা মন্দকে দূরীভূত করে, এদের জন্য রয়েছে শুভ পরিণাম। (সূরা রা‘দ- ২২)

সালাত জান্নাত লাভের মাধ্যম :

وَالَّذِيْنَ هُمْ عَلٰى صَلَاتِهِمْ يُحَافِظُوْنَ اُولٰٓئِكَ فِيْ جَنَّاتٍ مُّكْرَمُوْنَ

যারা নিজেদের সালাতে যত্নবান, তারা জান্নাতে সম্মানিতদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা মা‘আরিজ- ৩৪, ৩৫)

সালাত আদায়কারীরা জান্নাতুল ফিরদাউস লাভ করবে :

وَالَّذِيْنَ هُمْ عَلٰى صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُوْنَ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْوَارِثُوْنَ اَ لَّذِيْنَ يَرِثُوْنَ الْفِرْدَوْسَؕ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ

যারা নিজেদের সালাতে যত্নবান থাকে, তারাই হবে উত্তরাধিকারী। যারা হবে ফিরদাউসের উত্তরাধিকারী, তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। (সূরা মু’মিনূন, ৯-১১)

সালাত আদায়কারীরা ইসলামী রাষ্ট্রে বসবাসের অধিকার পায় :

فَاِنْ تَابُوْا وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ فَخَلُّوْا سَبِيْلَهُمْؕ اِنَّ اللّٰهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ

যদি তারা তাওবা করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয়, তবে তাদের পথ ছেড়ে দেবে; নিশ্চয় আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা তাওবা- ৫)

সালাত মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি করে :

فَاِنْ تَابُوْا وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ فَاِخْوَانُكُمْ فِى الدِّيْنِ

অতঃপর তারা যদি তাওবা করে, সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয়, তবে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই।

(সূরা তাওবা- ১১)

সালাত আদায়কারীরা একে অপরের বন্ধু :

اِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللهُ وَرَسُوْلُهٗ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوا الَّذِيْنَ يُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُوْنَ

তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুমিনগণ; যারা বিনীত হয়ে সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয়। (সূরা মায়েদা- ৫৫)

সালাত আদায়কারী মুমিনরাই আল্লাহর রহমত লাভ করে :

وَالْمُؤْمِنُوْنَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍ يَّاْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَيُطِيْعُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗؕ اُولٰٓئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللهُؕ اِنَّ اللهَ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ

মুমিন নারী-পুরুষ একে অপরের বন্ধু, এরা সৎকাজের নির্দেশ দেয় এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে; অচিরেই আল্লাহ তাদের প্রতি দয়া করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা- ৭১)

সালাত আদায়কারীরাই সফলতা লাভ করবে :

قَدْ اَفْلَحَ مَنْ تَزَكّٰى - وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهٖ فَصَلّٰى

নিশ্চয় সফলতা লাভ করেছে সে, যে নিজেকে পবিত্র করে নিয়েছে এবং তার মালিকের নাম স্মরণ করেছে, অতঃপর সালাত আদায় করেছে। (সূরা আ‘লা- ১৪, ১৫)

قَدْ اَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ - الَّذِيْنَ هُمْ فِيْ صَلَاتِهِمْ خَاشِعُوْنَ

নিশ্চয় ঐ সকল মুমিনরা সফলকাম হয়েছে, যারা বিনয়ের সাথে সালাত আদায় করে। (সূরা মু’মিনূন- ১, ২)

সালাত পাপকে মুছে দেয় :

وَاَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِّنَ اللَّيْلِؕ اِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِؕ ذٰلِكَ ذِكْرٰى لِلذَّاكِرِيْنَ

তুমি সালাত কায়েম করো দিবসের দু’প্রান্তভাগে ও রজনীর প্রথমাংশে। সৎকর্ম অবশ্যই অসৎকর্মকে মিটিয়ে দেয়। যারা উপদেশ গ্রহণ করে, এটা তাদের জন্য এক উপদেশ। (সূরা হুদ- ১১৪)

ব্যাখ্যা : যেসব অসৎকাজ দুনিয়ায় ছড়িয়ে আছে এবং সত্যের দাওয়াতের বিরোধিতায় ব্যবহৃত হচ্ছে- এসব দূর করার আসল পদ্ধতি হচ্ছে, নিজেদের সৎকাজের সাহায্যে অসৎকাজকে প্রতিহত করা। আর মানুষের সৎ হওয়ার সর্বোত্তম মাধ্যম হচ্ছে সালাত। সালাত আল্লাহর স্মরণকে তাজা করতে থাকে। এর শক্তির সাহায্যে হকপন্থিরা কেবল অসৎকাজের মুকাবিলা করতে পারবে তা নয় বরং দুনিয়ায় কার্যত সৎকাজ ও কল্যাণের ব্যবস্থাও কায়েম করতে পারবে। সালাত এমন একটি ইবাদাত, যা মানুষের মধ্যে আল্লাহর ভয়, সততা, সৎকর্মশীলতা ও পবিত্রতার আবেগ এবং আল্লাহর বিধানের আনুগত্যের ভাবধারা সৃষ্টি করে। সেই সাথে তাকে ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখে। মানুষের মধ্যে এ বিষয়গুলো না থাকলে সে কখনো আল্লাহর বিধানের আনুগত্য করার ক্ষেত্রে অবিচল নিষ্ঠার পরিচয় দিতে পারে না।

সালাত নৈতিক শক্তি অর্জনে সহায়ক হয় :

اُتْلُ مَاۤ اُوْحِيَ اِلَيْكَ مِنَ الْكِتَابِ وَاَقِمِ الصَّلَاةَ

তোমার কাছে ওহীর মাধ্যমে যে কিতাব পাঠানো হয়েছে তা পাঠ করো এবং সালাত কায়েম করো। (সূরা আনকাবূত- ৪৫)

ব্যাখ্যা : প্রচন্ড বাধা মুকাবিলা করার জন্য বস্তুগত শক্তির চেয়েও বেশি প্রয়োজন নৈতিক শক্তির। এ নৈতিক শক্তির বিকাশ সাধনের জন্য প্রথমত দু’টি ব্যবস্থা। একটি হচ্ছে, কুরআন তিলাওয়াত করা এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে, সালাত প্রতিষ্ঠা করা। সালাত প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে এমন একটি ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে দুষ্কৃতি থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। বিকৃত কোন সমাজের মধ্যে যদি এমন কোন আন্দোলন সৃষ্টি হয়, যার সাথে জড়িত হওয়ার সাথে সাথেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ নৈতিক দিক দিয়ে পরিবর্তিত হয়ে যায় এবং তাদের চরিত্র সংশোধিত হয়ে যায়, তখন অবশ্যই তা প্রভাব বিস্তার করবে। জাহেলিয়াতের যেসব দুষ্কৃতি শত শত বছর থেকে চলে আসছিল, তাকে প্রতিষ্ঠিত রাখার জন্য যারা সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের মুকাবিলা করার জন্য কুরআন মুসলিমদের বস্তুগত শক্তি সংগ্রহ করার পরিবর্তে সালাত কায়েম করার নির্দেশ দিয়েছে। এর ফলে তারা এমন চারিত্রিক শক্তির অধিকারী হবে, যার ফলে মানুষের মন জয় করা সম্ভব হবে এবং আল্লাহর সাহায্যে শত্রুকে পরাজিত করা যাবে।

সালাত মানুষকে পাপকাজ থেকে বিরত রাখে :

اِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهٰى عَنِ الْفَحْشَآءِ وَالْمُنْكَرِ

নিশ্চয় সালাত মানুষকে অশ্লীল ও গর্হিত কাজ থেকে দূরে রাখে। (সূরা আনকাবূত- ৪৫)

ব্যাখ্যা : সালাতের একটি অনিবার্য গুণ হলো, তা মানুষকে অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে। যে ব্যক্তিই সালাতের ব্যাপারে সামান্য চিন্তা করবে সে-ই স্বীকার করবে যে, মানুষকে খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য সালাত যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। যখন মানুষ শরীর ও পোশাকের পবিত্রতা অর্জন করে সালাতের আরকান-আহকামসহ দিনে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত প্রতিষ্ঠা করে, তখন তার অন্তরে প্রশান্তি সঞ্চারিত হয় এবং তার মধ্যে নিজ দায়িত্বের প্রতি অনুভূতি সৃষ্টি হয়। আর তার ঈমান প্রজ্জ্বলিত হয়, যার মাধ্যমে সে বুঝতে পারে যে তার সাথে কেউ থাক বা না থাক, গোপনে ও প্রকাশ্যে সকল অবস্থায় তাকে এক আল্লাহর আইন মেনে চলতেই হবে। নিয়মিত সুন্দরভাবে সালাত আদায় করলে শরীর ও মন পবিত্র থাকে, তখন ভালো কাজের দিকে মন আকৃষ্ট হয় এবং খারাপ কাজের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হয়। আর সালাতের দাবিও এটাই। দুনিয়ায় দ্বিতীয় এমন কোন অনুশীলন পদ্ধতি নেই, যা মানুষকে দুষ্কৃতি থেকে বিরত রাখার ক্ষেত্রে সালাতের চেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে।

তবে প্রশ্ন থেকে যায়, অনেক মানুষ নিয়মিত সালাত আদায় করার পরও খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকতে পারে না কেন? জবাবে বলা যায়, এটা নির্ভর করে তার আন্তরিকতা ও প্রচেষ্টার উপর। সে যদি এ থেকে উপকৃত হওয়ার সংকল্প করে এবং এজন্য প্রচেষ্টা চালায়, তাহলে সালাতের সংশোধনমূলক প্রভাব তার উপর পড়বেই। দুনিয়ার কোন সংশোধন ঐ ব্যক্তির উপর কার্যকর হতে পারে না, যে তার প্রভাব গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয় অথবা জেনে বুঝে তার প্রভাবকে দূরে সরিয়ে দেয়। যার সালাত তাকে অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে না, তার সালাতই ফলপ্রসূ হয় না।

সালাত মানুষের গোটা জীবনকে ইসলামের দিকে ঘুরিয়ে দেয় :

قَالُوْا يَا شُعَيْبُ اَصَلَاتُكَ تَاْمُرُكَ اَنْ نَّتْرُكَ مَا يَعْبُدُ اٰبَآؤُنَاۤ اَوْ اَنْ نَّفْعَلَ فِۤيْ اَمْوَالِنَا مَا نَشَآءُۚ اِنَّكَ لَاَنْتَ الْحَلِيْمُ الرَّشِيْدُ

তারা বলল, হে শুয়াইব! তোমার সালাত কি তোমাকে এ নির্দেশ দেয় যে, আমাদের পিতৃপুরুষরা যার ইবাদাত করত আমাদেরকে তা বর্জন করতে হবে, অথবা আমরা আমাদের ধনসম্পদ সম্পর্কে যা করি তাও (বর্জন করতে হবে)? তুমি তো অবশ্যই সহিষ্ণু ও ভালো মানুষ। (সূরা হুদ- ৮৭)

ব্যাখ্যা : সালাতের বৈশিষ্ট্য হলো, সালাত মানুষের গোটা জীবনকে ইসলামের দিকে ঘুরিয়ে দেয় এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুম পালনে অভ্যস্ত করে। এটি যার মধ্যে সৃষ্টি হয় সে কেবল নিজের সৎ ও পরিচ্ছন্ন কর্মধারার উপরই সন্তুষ্ট থাকে না বরং অন্যদেরকেও সংশোধন করতে চেষ্টা করে। ফলে সে শরীয়াত বিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সমালোচনা না করে স্থির থাকতে পারে না। আল্লাহর আনুগত্য শুধুমাত্র ইসলামের একটি অংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা উচিত নয় বরং সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক তথা জীবনের সকল বিভাগেই হওয়া উচিত। কারণ দুনিয়ায় মানুষের কাছে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর মালিকানাধীন। আল্লাহর ইচ্ছার সীমা ভেদ করে স্বাধীনভাবে কোন একটি জিনিসও ব্যবহার করার অধিকার মানুষের নেই। যে সমাজ আল্লাহকে ভুলে গেছে এবং ফাসিকী কার্যকলাপের মধ্যে ডুবে আছে, তারা সালাত নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। যেহেতু সালাত দ্বীনদারীর সবচেয়ে সুস্পষ্ট চিহ্ন, তাই এ ধরনের লোকদের সমাজে সালাত ইবাদাতের পরিবর্তে রোগ হিসেবে গণ্য হয়। নিজেদের মধ্যে কাউকে সালাত আদায় করতে দেখলে সাথে সাথেই তাদের মনে এ অনুভূতি জাগে যে, এ ব্যক্তির উপর দ্বীনদারীর আক্রমণ ঘটেছে।

সালাত শরীয়াতের অন্যান্য হুকুম পালনে সাহায্য করে :

قَدْ اَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ اَلَّذِيْنَ هُمْ فِيْ صَلَاتِهِمْ خَاشِعُوْنَ وَالَّذِيْنَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُوْنَ وَالَّذِيْنَ هُمْ لِلزَّكَاةِ فَاعِلُوْنَ وَالَّذِيْنَ هُمْ لِفُرُوْجِهِمْ حَافِظُوْنَ اِلَّا عَلٰۤى اَزْوَاجِهِمْ اَوْ مَا مَلَكَتْ اَيْمَانُهُمْ فَاِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُوْمِيْنَ فَمَنِ ابْتَغٰى وَرَآءَ ذٰلِكَ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْعَادُوْنَ وَالَّذِيْنَ هُمْ لِاَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُوْنَ وَالَّذِيْنَ هُمْ عَلٰى صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُوْنَ

অবশ্যই মুমিনগণ সফলকাম হয়েছে, যারা নিজেদের সালাতে বিনয়ী, যারা অনর্থক কাজকর্ম হতে বিরত থাকে, যারা যাকাত দানে সক্রিয়, যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে, তবে নিজ স্ত্রী অথবা অধিকারভুক্ত দাসী ব্যতীত; এতে তারা নিন্দনীয় হবে না। তবে কেউ তাদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তারা সীমালঙ্ঘনকারী হিসেবে গণ্য হবে। আর যারা নিজেদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে এবং যারা নিজেদের সালাতে যত্নবান থাকে। (সূরা মু’মিনূন, ১-৯)

ব্যাখ্যা : এখানে আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের বেশ কয়েকটি গুণাবলি উল্লেখ করেছেন। এতে শুরুতেই এসেছে সালাতের কথা আবার শেষেও বলা হয়েছে সালাতের কথা। অনুরূপভাবে সূরা মা‘আরিজ এর ১৯ থেকে ৩৫ আয়াতেও একই ধারা লক্ষ্য করা যায়। এ থেকে অতি সহজেই এটা বুঝা যাচ্ছে যে, বান্দা যদি সঠিকভাবে সালাত কায়েম করতে পারে, তাহলে ইসলামের অন্যান্য বিধান পালন করা তার জন্য সহজ হয়ে যাবে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন