hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

তাফসীরুল কুরআন বিল কুরআন

লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

ভূমিকা / اَلْمُقَدَّمَةُ
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى رَسُوْلِهٖ مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِهٖ وَصَحْبِهٖ اَجْمَعِيْنَ

‘তাফসীরুল কুরআন বিল কুরআন’ গ্রন্থটি প্রকাশ করতে পেরে মহান আল্লাহর অগণিত শুকরিয়া আদায় করছি। অসংখ্য দরূদ ও সালাম পেশ করছি বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবায়ে কেরাম (রিদ্বওয়ানুল্লাহি ‘আলাইহিম আজমাঈন) এর উপর।

আল্লাহ তা‘আলা নিজ ক্ষমতায় এ বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করেছেন। তাঁর অসংখ্য সৃষ্টির মধ্যে মানবজাতিকে আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে নির্বাচিত করেছেন এবং তাদেরকে জানার, বুঝার এবং ভাল-মন্দের মধ্যে পার্থক্য করার ক্ষমতাও দিয়েছেন। মানুষকে খলিফা হিসেবে নিযুক্ত করার সময় আল্লাহ তা‘আলা আদম (আঃ) এর সকল বংশধর থেকে তাওহীদের সাক্ষ্য নিয়েছেন এবং জানিয়ে দিয়েছেন যে, একমাত্র তিনিই সকলের রব। আমাদেরকে কেবল তারই দাসত্ব করতে হবে। অন্য কারো দাসত্ব করার জন্য তিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেননি।

আদম ও হাওয়া (আঃ) কে সৃষ্টি করার পর আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে জান্নাতে বসবাস করতে দেন। পরে তাদেরকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেন। পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেয়ার সময় আল্লাহ তা‘আলা জানিয়ে দেন যে, একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তোমাদেরকে পৃথিবীতে অবস্থান করতে হবে। এখানে বসবাস করার জন্য যা কিছু লাগবে সবই তোমাদেরকে দেয়া হবে। এ পৃথিবী তোমাদের জন্য পরীক্ষাকেন্দ্র। পরীক্ষার সময় শেষ হলে তোমরা আবার আমার কাছে ফিরে আসবে। এ পৃথিবীতে আমার পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট হেদায়াতের বাণী আসবে। যারা এ হেদায়াতের অনুসরণ করবে তারা তাদের স্থায়ী ঠিকানা জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যারা আমার দেয়া হেদায়াতের অনুসরণ করবে না, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম। সেখানে তারা চিরকাল শাস্তি ভোগ করবে।

প্রাথমিক যুগের মানুষ আল্লাহপ্রদত্ত হেদায়াতের উপরই প্রতিষ্ঠিত ছিল। তাদের সকলের ধর্ম ছিল ইসলাম। তারা সবাই তাওহীদের অনুসারী ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে মানুষ এ সঠিক দ্বীন থেকে সরে গেছে। তারা বিভিন্ন সত্তাকে আল্লাহর সাথে শরীক করেছে এবং বিভিন্ন মতবাদ ও ধর্ম তৈরি করেছে। পথভোলা এই মানুষগুলোকে বাধ্য করে দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখার পদ্ধতি আল্লাহ গ্রহণ করেননি। কেননা তিনি মানুষকে ভালো-মন্দ দু’টিই করার স্বাধীনতা দিয়েছেন এবং পরীক্ষাস্বরূপ এ দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। আবার মানবজাতির কাছ থেকে সংশোধনের সুযোগ কেঁড়ে নিয়ে মুহূর্তেই তাদেরকে ধ্বংস করার নীতিও তিনি গ্রহণ করেননি। বরং তিনি মানবজাতির মধ্য থেকে কিছু মানুষকে নবী ও রাসূল হিসেবে নির্বাচিত করেছেন এবং তাদের নিকট হেদায়াতের বাণী পাঠিয়েছেন। এসব নবী-রাসূল এবং তাদের অনুসারীরা সেই মূল তাওহীদের দিকে মানবজাতিকে আহবান করেছেন। যারা নবীদের কথা মেনেছে তারা মুক্তি পেয়েছে। আর যারা মানেনি তারা পর্যায়ক্রমে ধ্বংস হয়েছে।

শেষ পর্যায়ে আল্লাহ তা‘আলা আরব দেশে মুহাম্মাদ ﷺ কে নবী হিসেবে পাঠালেন। পূর্বের নবীগণকে তিনি যে দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছিলেন, মুহাম্মাদ ﷺ এর উপরও সেই একই দায়িত্ব অর্পণ করেন। সর্বস্তরের মানুষকে তিনি আল্লাহর দ্বীনের দিকে আহবান জানান। সবাইকে তাওহীদের পথ গ্রহণের দাওয়াত দেন। সবার কাছে আল্লাহর হেদায়াত পৌঁছে দেয়া এবং এ হেদায়াত গ্রহণকারীদেরকে এমন একটি উম্মতে পরিণত করা ছিল তাঁর কাজ, যারা একদিকে আল্লাহর হেদায়াতের উপর নিজেদের জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করবে এবং অন্যদিকে সমগ্র দুনিয়ার সংশোধন ও সংস্কার সাধনের জন্য প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম চালাবে। এ দাওয়াত ও হেদায়াতের কিতাবটি হচ্ছে আল-কুরআন। মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর এ কিতাবটি অবতীর্ণ হয়েছে। কিয়ামত পর্যন্ত এ কিতাবটি মানবজাতির জন্য চূড়ান্ত সনদ হিসেবে বহাল থাকবে।

কুরআনই হেদায়াত লাভের মূল উৎস :

কুরআনের হেদায়াতই হচ্ছে আসল হেদায়াত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

تَرَكْتُ فِيْكُمْ اَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوْا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا كِتَابَ اللهِ وَسُنَّةَ نَبِيِّهٖ

‘‘আমি তোমাদের কাছে দু’টি জিনিস রেখে গেলাম। যতদিন পর্যন্ত তোমরা এ দু’টিকে আঁকড়ে ধরবে ততদিন পর্যন্ত তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। তা হলো, আল্লাহর কিতাব এবং তাঁর নবীর সুন্নাত।’’ [. মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৫৯৫; মিশকাত, হা/১৮৬; মুসনাদুল বাযযার, হা/৮৯৯৩; সুনানে দার কুতনী, হা/৪৬০৬।]

আবু শুরাইহ (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের মাঝে উপস্থিত হলেন এবং বললেন, তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ করো, তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ করো। তোমরা কি এ সাক্ষ্য দাও না যে, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল? আমরা বললাম, হ্যাঁ এরপর রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন,

اِنَّ هٰذَا الْقُرْاٰنَ سَبَبٌ طَرْفُهٗ بِيَدِ اللهِ وَطَرْفُهٗ بِاَيْدِيْكُمْ فَتَمَسَّكُوْا بِهٖ فَاِنَّكُمْ لَنْ تَضِلُّوْا وَلَنْ تُهْلِكُوْا بَعْدَهٗ اَبَدًا

‘‘এ কুরআন হলো একটি রশি। এর এক মাথা হচ্ছে আল্লাহর হাতে, আর অপর মাথা হচ্ছে তোমাদের হাতে। সুতরাং তোমরা এটাকে আঁকড়ে ধরো। তাহলে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না এবং ধ্বংসও হবে না।’’ [. সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/১২২।]

কুরআনের মধ্যে রয়েছে পূর্ববর্তীদের ইতিহাস, রয়েছে ভবিষ্যতের সংবাদ, এটা ফায়সালাদানকারী। এটাকে বাদ দিয়ে যে ব্যক্তি অন্য কোথাও হেদায়াত অনুসন্ধান করবে আল্লাহ তাকে পথভ্রষ্ট করে দেবেন। এটা আল্লাহর এক মজবুত রশি এবং জ্ঞানময় উপদেশ। আর এটাই সিরাতে মুস্তাকীম বা সোজা পথ। এর আশ্চর্যকারিতা কখনো শেষ হয় না। জ্ঞানার্জনকারীরা এর থেকে কখনো বিমুখ হয় না। এটা বার বার পাঠ করলেও বিরক্তি আসে না। জিনেরা এটা শোনার পর একথা না বলে পারেনি যে, ‘‘আমরা এমন এক আশ্চর্যজনক কুরআন শুনেছি, যা সঠিক পথের সন্ধান দেয়। ফলে আমরা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি।’’ [. সূরা জিন- ১, ২।] যে ব্যক্তি কুরআন দিয়ে কথা বলবে সে সত্য বলবে। যে কুরআনের উপর আমল করবে সে এর প্রতিদান পাবে। যে এর মাধ্যমে বিচার করবে সে ইনসাফ করবে। যে এটাকে আঁকড়ে ধরবে সে সঠিক পথের সন্ধান পাবে। [. মুসনাদুদ দারেমী, হা/৩৩৭৪; মুসনাদুল বাযযার, হা/৮৩৬; তিরমিযী, হা/২৯০৬।]

কুরআনের হেদায়াত পেতে হলে যা করণীয় :

একজন মানুষ বড় হওয়ার সাথে সাথে তার পরিবার ও সমাজের রীতিনীতি তার উপর প্রভাব বিস্তার করে। সে তার মাতাপিতা, পরিবার ও সমাজকে যে ধর্ম, দল ও মাযহাবের অনুসারী পায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে সে তারই অনুসরণ করে। যার ফলে বিশেষ কোন দল বা মতের চিন্তা-চেতনার আলোকে সে তার জীবন গড়ে তুলে। এজন্য চিন্তা ও কর্মের দিক থেকে যে মানুষ যে অবস্থানে রয়েছে সে অবস্থানে অনড় থেকেই যদি সে কুরআন পড়ে, তবে কুরআনের যেসব বিষয় তার বিশ্বাস ও কর্মের সাথে মিলে না, সেগুলো সে মেনে নিতে চায় না। পরিশেষে সে কুরআনের হেদায়াত থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়।

এ জন্য কুরআনকে প্রকৃত অর্থে বুঝতে হলে এবং এ থেকে হেদায়াত পেতে হলে যখনই কেউ কুরআন অধ্যয়ন শুরু করবে, তখন তাকে খোলা মন নিয়ে কুরআন অধ্যয়ন করতে হবে। কুরআন যে বিষয়ে যে রকম আকীদা পেশ করে সে রকম আকীদা নিজের মধ্যে গড়ে তুলতে হবে। কুরআন যে কাজের নির্দেশ দেয় তা পালন করতে হবে; আর যে কাজ করতে নিষেধ করে তা থেকে বিরত থাকতে হবে। এমনটি করতে পারলে যে কেউ কুরআন থেকে হেদায়াত পাবে এবং কুরআনের আলোকে তার জীবন গড়ে ওঠবে। কিন্তু যারা নিজেদের চিন্তা ও কর্মকে পরিবর্তন করে কুরআনের আলোকে গড়ে তুলতে চায় না; বরং কুরআনকে নিজেদের চিন্তা ও কর্মের আলোকে পরিবর্তন করতে চায়, তারা কখনো কুরআনের হেদায়াত পায় না। কুরআন পড়া সত্ত্বেও তারা গোমরাহীর দিকে এগিয়ে যায়।

কুরআনের মূল লক্ষ্য :

কুরআনের চূড়ান্ত লক্ষ্য ও বক্তব্য হচ্ছে, মানুষকে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মনীতি অবলম্বনের প্রতি আহবান জানানো। আল্লাহর হেদায়াতকে স্পষ্টভাবে মানবজাতির সামনে তুলে ধরা। কিসের মধ্যে মানুষের কল্যাণ ও সফলতা এবং কিসের মধ্যে তাদের অকল্যাণ ও ব্যর্থতা, সে বিষয়গুলো জানিয়ে দেয়াই হচ্ছে কুরআনের মূল লক্ষ্য।

কুরআনের আলোচ্য বিষয় :

কুরআনের মূল আলোচ্য বিষয় হলো মানুষ। মানুষ সৃষ্টির প্রক্রিয়া, পৃথিবী ও আকাশের গঠনাকৃতি, বিশ্বজগতের নিদর্শনসমূহ এবং অতীতের বিভিন্ন জাতির ঐতিহাসিক ঘটনাবলি কুরআনে আলোচনা করা হয়েছে। কুরআনে বিভিন্ন জাতির আকীদা-বিশ্বাস ও কর্মকান্ডের সমালোচনা করা হয়েছে। প্রকৃত সত্য সম্পর্কে মানুষের ভুল ধারণা দূর করা এবং যথার্থ সত্যটি মানুষের মনের মধ্যে গেঁথে দেয়াই এর উদ্দেশ্য। এ কারণেই এতে প্রতিটি বিষয়ের আলোচনা কেবলমাত্র ততটুকুই করা হয়েছে যতটুকু আলোচনা তার মূল লক্ষ্যের জন্য প্রয়োজন। নবীদের জীবনী বর্ণনার ক্ষেত্রে মূল শিক্ষণীয় অংশটুকুই কুরআন বর্ণনা করেছে। ইবাদাত সংক্রান্তত বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে এর মূল শিক্ষা কী এবং একেকটি ইবাদাত মানুষের মধ্যে কোন্ ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে চায়- কুরআন সেদিকে ইঙ্গিত করেছে। সেই সাথে কিছু কিছু বিধানও বর্ণনা করা হয়েছে। তবে ইবাদাতের বিস্তারিত বিধান নবী ﷺ এর বাস্তব শিক্ষার মাধ্যমে জানানো হয়েছে, যা হাদীস গ্রন্থগুলোতে মওজুদ রয়েছে।

সাধারণ বই ও কুরআনের মধ্যে পার্থক্য :

আমরা সাধারণত যেসব বই-পুস্তক পড়ে অভ্যস্ত এসব বই এক বা একাধিক বিষয় নিয়ে লেখা হয়ে থাকে। আবার ঐ বিষয়টি বিভিন্ন পর্ব ও অধ্যায়ে সাজানো থাকে এবং বইয়ের শুরুতে একটি বিষয়সূচী থাকে। ঐ সূচী দেখেই পাঠক তার কাঙ্ক্ষিত অধ্যায়টি পড়ে নিতে পারে। কিন্তু কুরআন মাজীদ এর ব্যতিক্রম। এর শুরুতে কোন বিষয়সূচী নেই। এর বক্তব্যসমূহ বিভিন্ন সূরায় বিভক্ত। এ সূরাগুলোর সূচীই কুরআনের শুরুতে রয়েছে। বিষয়কেন্দ্রিক কোন সূচী না থাকার কারণ হলো- কুরআন একসাথে কিতাব আকারে নাযিল হয়নি। এটি নাযিল হয়েছে ভাষণ আকারে। পরবর্তীতে এ ভাষণগুলো এক বা একাধিক ভাষণের সমন্বয়ে ১১৪টি সূরায় সন্নিবেশিত করা হয়েছে। যার ফলে একটি বিষয় সংক্রান্ত আলোচনা বিভিন্ন সূরায় কোথাও সংক্ষেপে কোথাও বিস্তারিত আকারে রয়েছে।

এজন্য যারা কুরআন অধ্যয়নের জন্য বেশি সময় দিতে পারেন না বা যারা আরবি ভাষা বুঝেন না তাদের জন্য বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে কুরআনের বক্তব্য জানা কষ্টকর হয়ে যায়। একটি বিষয় সম্পর্কিত সকল আয়াত একত্র করে ঐ বিষয়ে পূর্ণ ধারণা লাভ করা সম্ভব হয় না।

কেন এই তাফসীর :

আল্লাহ তা‘আলা মানবজাতির হেদায়াতের জন্য মহাগ্রন্থ আল-কুরআনুল কারীম নাযিল করেছেন। এজন্য তিনি এ কিতাবে জীবনের সকল বিভাগের প্রতিটি মৌলিক বিষয় সম্পর্কে সর্বোত্তম দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন। কুরআনের বক্তব্য বুঝার সুবিধার্থে এমন একটি গ্রন্থের অতীব প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছিলাম, যে গ্রন্থে কুরআনে বর্ণিত জ্ঞানসমূহ বিষয় আকারে সাজানো থাকবে। এতে করে সর্বস্তরের জনগণ বিভিন্ন বিষয়ে কুরআনের বিধান কী- তা সহজে জানতে পারবে। মহান আল্লাহর অশেষ মেহেরবানী যে, তিনি আমাকে এ বিষয়ে কিছু কাজ করার তাওফীক দান করেছেন। দীর্ঘদিন যাবৎ সাধনা ও গবেষণা করার পর কুরআনের উপর একটি বিষয়ভিত্তিক গ্রন্থ জনগণের হাতে তুলে দিতে পেরেছি, এজন্য মালিকের নিকট অসংখ্য শুকরিয়া আদায় করছি। আর দু‘আ করছি, তিনি যেন এ গ্রন্থের মাধ্যমে বিশ্ব-মানবতাকে উপকৃত করেন এবং কুরআনের জ্ঞান লাভ করে ইসলামী জীবন গড়ার তাওফীক দান করেন এবং এটাকে সকলের নাজাতের ওসীলা বানিয়ে দেন- আমীন

যেভাবে কাজটি করেছি :

ছাত্রজীবনে আমি নিজের জন্য একটি স্থায়ী রুটিন করে নিয়েছিলাম যে, প্রতিদিন দিনের কাজ শুরু করতাম কুরআনের তাফসীর পড়ার মাধ্যমে। নিয়মিত কুরআন পড়ার সময় একটি বিষয় আমাকে খুবই প্রভাবিত করত। আর তা হলো, যখন একটি সূরা পড়তে বসি তখন কোন বিষয় সম্পর্কে আলোচনা আসে, পরে আবার অন্য প্রসঙ্গ চলে আসে। আরেকটু সামনে বাড়লে বা অন্য সূরায় গেলে দেখা যায় পূর্বের বিষয়টির আলোচনা আবার এসেছে। তখন থেকেই একেকটি বিষয় সম্পর্কে আলোচনা যেখানে পেতাম তা নোট করতাম। তারপর যখন এ বিষয়গুলো কিতাব আকারে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিলাম, তখন একই বিষয় সংক্রান্ত আয়াতগুলো সামনে রেখে এসব আয়াত থেকে যেসব পয়েন্ট বের হয় তা লিখে পুরো বিষয়টিকে ধারাবাহিকভাবে সাজাতাম। এভাবে প্রতিটি বিষয়কে অধ্যায় আকারে সাজিয়ে গ্রন্থাকারে রূপদান করি। এ গ্রন্থটির কাজ সমাপ্ত করতে ২০০০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৫ বছর সময় লেগেছে।

যাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করলেই নয় :

সকল প্রশংসা মূলত আল্লাহরই। তিনি যাকে দিয়ে যে কাজ করানোর ইচ্ছা করেন তাকে দিয়ে সে কাজ করিয়ে নেন। আল্লাহ আমাকে দিয়ে এ কাজ করিয়েছেন, এজন্য আমি তাঁর শুকরিয়া আদায় করছি।

আল্লাহ তা‘আলার শুকরিয়া আদায়ের পর আমি যাদের কাছে কৃতজ্ঞ তাদের মধ্যে রয়েছেন-

প্রথমত আমার পিতামাতা। তারা আমাকে দ্বীনের ইলিম শিক্ষা করার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।

মাতাপিতার পর আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার শ্রদ্ধেয় উস্তাজ আল্লামা ইদ্রীস আহমদ সেবনগরী সাহেবের। তিনি একজন বিখ্যাত আলেমে দ্বীন ছিলেন। শেষ বয়সে চাকরি থেকে অবসর নিয়ে নিজ বাড়িতে অবস্থান করেই ইলিম শিক্ষাদান অব্যাহত রাখেন। ১৯৯৩ সালে কানাইঘাট মনসূরিয়া কামিল মাদরাসায় ভর্তি হওয়ার পর থেকে প্রায় দশ বছর আমি তাঁর কাছে ইলমে দ্বীন শিক্ষা করার সুযোগ লাভ করি। পার্থিব কোন বিনিময় ছাড়াই অতি গুরুত্বের সাথে তিনি আমাকে পড়াতেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে এর উত্তম বিনিময় দান করুন। আমীন

এরপর আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার সহধর্মিণী মাহমুদা খাতুনের। এ গ্রন্থের পান্ডলিপি তৈরি এবং প্রুফ দেখার কাজে তিনি যথেষ্ট শ্রম দিয়েছেন। তাছাড়া এ গ্রন্থের বিভিন্ন কাজে আমার অনেক ছাত্র পরিশ্রম করেছেন। আমি তাদের সকলের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

আমি আরো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার দ্বীনি ভাই মোহাম্মদ ইমাম হোসাইন কামরুল সাহেবের। তিনি অনেক সুপরামর্শ ও উপায়-উপকরণ দিয়ে আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন। যার ফলে আমি প্রশান্ত মনে এ গ্রন্থটির কাজ সমাপ্ত করতে পেরেছি। আল্লাহ সকলকে জাযায়ে খায়ের দান করুন। আমীন

কুরআনের শিক্ষাকে সহজ ও নির্ভুলভাবে তুলে ধরার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা হয়েছে। গ্রন্থের পান্ডলিপি প্রস্তুত হয়ে যাওয়ার পরও দীর্ঘদিন যাবৎ এর পরিমার্জন ও সংশোধনীর কাজ করা হয়েছে। তারপরও কোথাও কোন সংশোধনীর প্রয়োজন মনে হলে বা কোন পরামর্শ থাকলে তা জানানোর অনুরোধ রইল।

আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে কুরআন বুঝার এবং কুরআন অনুযায়ী জীবন গড়ার তাওফীক দান করুন- যাতে আমরা দুনিয়াতে শান্তি এবং পরকালে জান্নাত লাভ করতে পারি। আমীন

দু‘আপ্রার্থী

শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

তারিখ, ঢাকা।

১৮ই মুহররম- ১৪৩৬ হিজরী

১২ই নভেম্বর- ২০১৪ ইং

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন