hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

তাফসীরুল কুরআন বিল কুরআন

লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

২৭০
অধ্যায়- ২ : মুনাফিকদের কার্যক্রম
মুনাফিকরা জিহাদ থেকে পিছিয়ে থাকে :

وَقِيْلَ لَهُمْ تَعَالَوْا قَاتِلُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ اَوِ ادْفَعُوْاؕ قَالُوْا لَوْ نَعْلَمُ قِتَالًا لَّاتَّبَعْنَاكُمْؕ هُمْ لِلْكُفْرِ يَوْمَئِذٍ اَقْرَبُ مِنْهُمْ لِلْاِيْمَانِۚ يَقُوْلُوْنَ بِاَفْوَاهِهِمْ مَّا لَيْسَ فِيْ قُلُوْبِهِمْؕ وَاللهُ اَعْلَمُ بِمَا يَكْتُمُوْنَ

মুনাফিকদেরকে বলা হয়েছিল- এসো, আল্লাহর পথে সংগ্রাম করো অথবা তাদেরকে প্রতিরোধ করো। তখন তারা বলেছিল, যদি আমরা যুদ্ধ করতে জানতাম তবে অবশ্যই তোমাদের আনুগত্য করতাম। সেদিন তারা বিশ্বাসের চেয়ে অবিশ্বাসেরই অধিক নিকটবর্তী ছিল। তারা মুখ দিয়ে তাই বলে, যা তাদের অন্তরে নেই। আর তারা যা গোপন করে, আল্লাহ সে সম্পর্কে অবহিত। (সূরা আলে ইমরান- ১৬৭)

তারা অন্যকেও জিহাদে বের হতে দেয় না :

فَرِحَ الْمُخَلَّفُوْنَ بِمَقْعَدِهِمْ خِلَافَ رَسُوْلِ اللهِ وَكَرِهُوْاۤ اَنْ يُّجَاهِدُوْا بِاَمْوَالِهِمْ وَاَنْفُسِهِمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَقَالُوْا لَا تَنْفِرُوْا فِى الْحَرِّؕ قُلْ نَارُ جَهَنَّمَ اَشَدُّ حَرًّاؕ لَوْ كَانُوْا يَفْقَهُوْنَ

যারা পশ্চাতে রয়ে গেল তারা আল্লাহর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে বসে থাকাতেই আনন্দ বোধ করল এবং তাদের ধনসম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করাকে অপছন্দ করল। তারা বলল, গরমের মধ্যে অভিযানে বের হয়ো না। বলো, জাহান্নামের আগুন আরো প্রচন্ড গরম, যদি তারা বুঝত! (সূরা তাওবা- ৮১)

তারা যুদ্ধে না গিয়ে খেলতামাশা করে :

وَيَقُوْلُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَوْلَا نُزِّلَتْ سُوْرَةٌۚ فَاِذَاۤ اُنْزِلَتْ سُوْرَةٌ مُّحْكَمَةٌ وَّذُكِرَ فِيْهَا الْقِتَالُ رَاَيْتَ الَّذِيْنَ فِيْ قُلُوْبِهِمْ مَّرَضٌ يَّنْظُرُوْنَ اِلَيْكَ نَظَرَ الْمَغْشِيِّ عَلَيْهِ مِنَ الْمَوْتِؕ فَاَوْلٰى لَهُمْ

যারা ঈমানদার তারা বলেছিল, (যুদ্ধের আদেশসহ) কোন সূরা নাযিল হচ্ছে না কেন? কিন্তু যখন যুদ্ধের কথা উল্লেখ করে একটি সুস্পষ্ট সূরা নাযিল হলো তখন আপনি দেখতে পেলেন যে, যাদের অন্তরে রোগ আছে তারা আপনার দিকে এমনভাবে তাকাচ্ছে, যেমন মৃত্যুর সময় কেউ বেহুশ অবস্থায় তাকায়। তাদের জন্য আফসোস! (সূরা মুহাম্মাদ- ২০)

ব্যাখ্যা : সে সময় মুসলিমরা যে পরিস্থিতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছিল এবং ইসলাম ও মুসলিমদের সাথে কাফিরদের যে আচরণ চলছিল তার কারণে যুদ্ধের নির্দেশ আসার পূর্বেই মুসলিমদের সাধারণ মতামত ছিল যে, এখন আমাদের যুদ্ধের অনুমতি পাওয়া উচিত। তারা ব্যাকুলচিত্তে আল্লাহর নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করছিল এবং বার বার জানতে চাচ্ছিল যে, এ যালিমদের বিরুদ্ধে তাদেরকে লড়াই করার অনুমতি দেয়া হচ্ছে না কেন? কিন্তু যারা মুনাফিকীর রোগ নিয়ে মুসলিমদের দলে শামিল হয়েছিল, তাদের অবস্থা ছিল মুমিনদের অবস্থা থেকে ভিন্ন। তারা তাদের প্রাণ ও অর্থ-সম্পদকে আল্লাহ ও তাঁর দ্বীনের চেয়ে অনেক বেশি প্রিয় মনে করত এবং সেক্ষেত্রে কোন রকম বিপদের ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত ছিল না। এ নির্দেশ না আসা পর্যন্ত তাদের ও ঈমানদারদের মধ্যে বাহ্যিক কোন পার্থক্য দেখা যেত না। তারা উভয় দলই এক সাথে নামায পড়ত। রোযা রাখতেও তাদের কোন দ্বিধা-সংকোচ ছিল না। ঠান্ডা প্রকৃতির ইসলাম তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল। কিন্তু যখন ইসলামের জন্য জীবন বাজি রাখার সময় আসল, তখন তাদের মুনাফিকী প্রকাশ হয়ে গেল এবং তারা যে ঈমানের মুখোশ পরেছিল তা খুলে গেল।

তারা মহিলাদের মতো ঘরে বসে থাকতে চায় :

رَضُوْا بِاَنْ يَّكُوْنُوْا مَعَ الْخَوَالِفِ وَطُبِعَ عَلٰى قُلُوْبِهِمْ فَهُمْ لَا يَفْقَهُوْنَ

তারা পেছনে থাকা লোকদের সঙ্গে অবস্থান করাই পছন্দ করেছে। সুতরাং তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেয়া হয়েছে; ফলে তারা বুঝতে পারে না। (সূরা তাওবা- ৮৭)

وَمِنْهُمْ مَّنْ يَّقُوْلُ ائْذَنْ لِّيْ وَلَا تَفْتِنِّيْؕ اَ لَا فِى الْفِتْنَةِ سَقَطُوْا وَاِنَّ جَهَنَّمَ لَمُحِيْطَةٌ ۢبِالْكَافِرِيْنَ

তাদের মধ্যে এমনও লোক আছে যারা বলে, আমাকে অব্যাহতি দাও এবং আমাকে ফিতনায় ফেলো না। সাবধান! তারা নিজেরাই ফিতনায় পড়ে আছে। নিশ্চয় জাহান্নাম কাফিরদেরকে বেষ্টন করে আছে। (সূরা তাওবা- ৪৯)

শানে নুযূল : তাবুক যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করার পক্ষে যাদ ইবনে কাইস নামক এক মুনাফিক ওজর পেশ করল যে, আমি সুন্দরী স্ত্রীলোক দেখলেই আকৃষ্ট হয়ে পড়ি, শুনেছি রোমান মহিলারা খুবই সুন্দরী। সুতরাং আমি সেখানে গেলে তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যেতে পারি। তখন উক্ত আয়াতটি নাযিল হয়।

তারা সুযোগের সন্ধানে থাকে :

اَلَّذِيْنَ يَتَرَبَّصُوْنَ بِكُمْؕ فَاِنْ كَانَ لَكُمْ فَتْحٌ مِّنَ اللهِ قَالُوْاۤ اَلَمْ نَكُنْ مَّعَكُمْ وَاِنْ كَانَ لِلْكَافِرِيْنَ نَصِيْبٌ قَالُوْاۤ اَلَمْ نَسْتَحْوِذْ عَلَيْكُمْ وَنَمْنَعْكُمْ مِّنَ الْمُؤْمِنِيْنَ

যারা তোমাদের অমঙ্গলের প্রতীক্ষায় থাকে তারা আল্লাহর পক্ষ হতে তোমাদের বিজয় হলে বলে, আমরা কি তোমাদের সঙ্গে ছিলাম না? আর যদি কাফিররা কিছুটা হলেও জয়লাভ করে, তবে তারা বলে আমরা কি তোমাদেরকে পরিবেষ্টন করে রেখেছিলাম না এবং আমরা কি তোমাদেরকে মুমিনদের হাত হতে রক্ষা করিনি? (সূরা নিসা- ১৪১)

ব্যাখ্যা : এটি প্রত্যেক যুগের মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য। মৌখিক স্বীকারোক্তি ও ইসলামের গন্ডির মধ্যে নামমাত্র প্রবেশের মাধ্যমে মুসলিম হিসেবে যতটুকু স্বার্থ ভোগ করা যায়, তা তারা ভোগ করে। আবার অন্যদিকে কাফির হিসেবে যে স্বার্থটুকু ভোগ করা সম্ভব, তা ভোগ করার জন্য তারা কাফিরদের সাথে যোগ দেয়। তারা সর্বোতভাবে কাফিরদের বিশ্বাসভাজন হওয়ার চেষ্টা করে। তারা তাদেরকে বলে, আমরা মোটেই গোঁড়া ও বিদ্বেষপরায়ণ মুসলিম নই। মুসলিমদের সাথে আমাদের কেবল নামের সম্পর্কটাই বিদ্যমান রয়েছে, কিন্তু আমাদের মানসিক ঝোঁক ও বিশ্বস্ততা রয়েছে তোমাদের প্রতি। চিন্তা-ভাবনা, আচার-ব্যবহার, রুচি-প্রকৃতি ইত্যাদি সবদিক দিয়ে তোমাদের সাথে আমাদের গভীর মিল রয়েছে। তাছাড়া ইসলাম ও কুফরীর সংঘর্ষে আমরা তোমাদের পক্ষই অবলম্বন করব।

সফর সুবিধাজনক হলে বের হতো, নতুবা নয় :

لَوْ كَانَ عَرَضًا قَرِيْبًا وَّسَفَرًا قَاصِدًا لَّاتَّبَعُوْكَ وَلٰكِنْ ۢبَعُدَتْ عَلَيْهِمُ الشُّقَّةُؕ وَسَيَحْلِفُوْنَ بِاللهِ لَوِ اسْتَطَعْنَا لَخَرَجْنَا مَعَكُمْۚ يُهْلِكُوْنَ اَنْفُسَهُمْۚ وَاللهُ يَعْلَمُ اِنَّهُمْ لَكَاذِبُوْنَ

আর যদি নগদ সম্পদ লাভের সম্ভাবনা থাকত এবং সফর সহজ মনে হতো, তবে নিশ্চয় তারা তোমার অনুসরণ করত, কিন্তু তাদের নিকট যাত্রাপথ সুদীর্ঘ মনে হলো। তারা অচিরেই আল্লাহর নামে শপথ করে বলবে, আমরা যদি সক্ষম হতাম তবে অবশ্যই আমরা তোমাদের সঙ্গে বের হতাম। এভাবে (মিথ্যা অজুহাতের মাধ্যমে) তারা নিজেদেরকেই ধ্বংস করেছে। আর আল্লাহ জানেন যে, অবশ্যই তারা মিথ্যাবাদী। (সূরা তাওবা- ৪২)

আসলে তাদের জিহাদে বের হওয়ার কোন ইচ্ছা থাকে না :

وَلَوْ اَرَادُوا الْخُرُوْجَ لَاَعَدُّوْا لَهٗ عُدَّةً وَّلٰكِنْ كَرِهَ اللهُ انْۢبِعَاثَهُمْ فَثَبَّطَهُمْ وَقِيْلَ اقْعُدُوْا مَعَ الْقَاعِدِيْنَ

যদি তারা (যুদ্ধের জন্য) বের হয়ে আসত তবে অবশ্যই তারা এটার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করত, কিন্তু তাদের অভিযাত্রা আল্লাহর অপছন্দ ছিল; সুতরাং তিনি তাদেরকে বিরত রাখেন। ফলে তাদেরকে বলা হয়, যারা বসে আছে তোমরা তাদের সাথে বসে থাকো। (সূরা তাওবা- ৪৬)

ব্যাখ্যা : যখন মুনাফিকরা শরীয়াত মেনে চলতে গিয়ে সামান্যতম ক্ষতি বা কষ্ট সহ্য করতে পারে না, তখন তাদের কাছ থেকে কোনক্রমেই বড় রকমের কোন ত্যাগ ও কুরবানীর আশা করা যায় না। তাদের কাছে যদি প্রাণদান বা ঘরবাড়ি পরিত্যাগ করার দাবী করা হয় তাহলে তারা সঙ্গে সঙ্গেই ছিটকে পড়বে এবং আনুগত্যের পরিবর্তে নাফরমানির পথ অবলম্বন করবে।

তারা প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টায় থাকে :

لَوْ يَجِدُوْنَ مَلْجَأً اَوْ مَغَارَاتٍ اَوْ مُدَّخَلًا لَّوَلَّوْا اِلَيْهِ وَهُمْ يَجْمَحُوْنَ

যদি তারা কোন আশ্রয়স্থল পেত অথবা গুহা কিংবা লুকিয়ে থাকার মতো একটু স্থান পেত, তবে অবশ্যই তারা দ্রুতগতিতে সেদিকেই অগ্রসর হতো। (সূরা তাওবা- ৫৭)

মুনাফিকরা মুমিনদের দোষ খুঁজে :

اَلَّذِيْنَ يَلْمِزُوْنَ الْمُطَّوِّعِيْنَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ فِى الصَّدَقَاتِ وَالَّذِيْنَ لَا يَجِدُوْنَ اِلَّا جُهْدَهُمْ فَيَسْخَرُوْنَ مِنْهُمْؕ سَخِرَ اللهُ مِنْهُمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ

মুমিনদের মধ্যে যারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাদাকা দেয় এবং যারা নিজ শ্রম ব্যতীত অন্য কিছুই পায় না, যারা তাদেরকে নিয়ে বিদ্রূপ করে, আল্লাহও তাদের সাথে বিদ্রূপ করেন। তাদের জন্য রয়েছে মর্মান্তিক শাস্তি। (সূরা তাওবা- ৭৯)

শানে নুযূল : আবু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন যাকাত ও দান-খয়রাতের ব্যাপারে আয়াত নাযিল হয়, তখন আমরা শ্রমের কাজ করতাম। এমন সময় আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রাঃ) এসে অনেক অর্থ-সম্পদ দান করেন। তখন মুনাফিকরা বলতে লাগল, এ মানুষটি রিয়াকার (অর্থাৎ সে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে দান করেছে)। তারপর অন্য এক ব্যক্তি (আবু আকীল আনসারী) উপস্থিত হয়ে মাত্র এক সা‘ (দুই সের এগার ছটাক) বস্তু দান করলেন। তখন মুনাফিকরা বলল, আল্লাহ তা‘আলা এ সামান্য বস্তুর প্রতি মুখাপেক্ষী নন। তখন উক্ত আয়াত নাযিল হয়। (সহীহ বুখারী, হা/১৪১৫)

যাকাতের মাল বণ্টনে আপত্তি করে :

وَمِنْهُمْ مَّنْ يَّلْمِزُكَ فِى الصَّدَقَاتِ فَاِنْ اُعْطُوْا مِنْهَا رَضُوْا وَاِنْ لَّمْ يُعْطَوْا مِنْهَاۤ اِذَا هُمْ يَسْخَطُوْنَ

তাদের মধ্যে এমনও লোক আছে, যে সাদাকা বণ্টন সম্পর্কে তোমাকে দোষারোপ করে। অতঃপর তার কিছু অংশ তাদেরকে দেয়া হলে তারা সন্তুষ্ট হয় এবং তা থেকে তাদেরকে কিছু না দেয়া হলে তৎক্ষণাৎ তারা ক্ষুব্ধ হয়। (সূরা তাওবা- ৫৮)

শানে নুযূল : রাসূল ﷺ গণিমতের মাল বণ্টন করার সময় এক মুনাফিক বলল, তোমাদের নবীর প্রতি লক্ষ্য করো, সে তোমাদের প্রাপ্য বকরীর রাখালদের মধ্যে বণ্টন করে দিচ্ছে এবং মনে করছে যে, সে খুব ন্যায় কাজই করেছে। তখন এ সম্পর্কে উক্ত আয়াতটি নাযিল হয়।

তারা তাগুতের কাছে বিচার চায় :

اَلَمْ تَرَ اِلَى الَّذِيْنَ يَزْعُمُوْنَ اَنَّهُمْ اٰمَنُوْا بِمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكَ وَمَاۤ اُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيْدُوْنَ اَنْ يَّتَحَاكَمُوْاۤ اِلَى الطَّاغُوْتِ وَقَدْ اُمِرُوْاۤ اَنْ يَّكْفُرُوْا بِهٖؕ وَيُرِيْدُ الشَّيْطَانُ اَنْ يُّضِلَّهُمْ ضَلَالًا ۢبَعِيْدًا

তুমি কি তাদেরকে দেখনি যারা দাবি করে যে, তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে তারা বিশ্বাস স্থাপন করে; অথচ তারা তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থী হতে চায়? যদিও তা প্রত্যাখ্যান করার জন্য তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মূলত শয়তান তাদেরকে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট করতে চায়। (সূরা নিসা- ৬০)

তারা কুরআন-সুন্নাহর সকল ফায়সালা মানতে চায় না :

وَاِذَا قِيْلَ لَهُمْ تَعَالَوْا اِلٰى مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ وَاِلَى الرَّسُوْلِ رَاَيْتَ الْمُنَافِقِيْنَ يَصُدُّوْنَ عَنْكَ صُدُوْدًا

যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার দিকে এবং রাসূলের দিকে এসো, তখন তুমি মুনাফিকদেরকে তোমার নিকট হতে মুখ ফিরিয়ে নিতে দেখবে। (সূরা নিসা- ৬১)

وَاِذَا دُعُوْاۤ اِلَى اللهِ وَرَسُوْلِهٖ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ اِذَا فَرِيْقٌ مِّنْهُمْ مُّعْرِضُوْنَ

যখন তাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেয়ার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে তাদেরকে আহবান করা হয়, তখন তাদের একদল মুখ ফিরিয়ে নেয়। (সূরা নূর- ৪৮)

ব্যাখ্যা : এ আয়াতগুলো পরিষ্কার জানিয়ে দিচ্ছে যে, রাসূল ﷺ এর ফায়সালা হচ্ছে আল্লাহর ফায়সালা এবং তাঁর হুকুম আল্লাহরই হুকুম। রাসূল ﷺ এর দিকে আহবান করা নিছক রাসূল ﷺ এর দিকেই আহবান করা নয়, বরং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল উভয়ের দিকেই আহবান করা। তাছাড়া এ আয়াতটি থেকে এ কথা নিঃসন্দেহে সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য ছাড়া ঈমানের দাবী অর্থহীন। সুতরাং প্রতিটি মুসলিমকে ব্যক্তি ও জাতি হিসেবে অবশ্যই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দেয়া আইনের আনুগত্য করতে হবে। নতুবা তার ঈমানের দাবী একটি মুনাফিকী দাবীতে পরিণত হবে। এ ব্যাপারটি কেবল নবী ﷺ এর জীবনের জন্যই ছিল না বরং পরবর্তীতে যিনিই ইসলামী রাষ্ট্রের বিচারকের পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন এবং আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাহ অনুযায়ী ফায়সালা দেবেন, তাঁর আদালতের রায়ই হচ্ছে আল্লাহ ও রাসূলের রায়। সুতরাং যে ব্যক্তি তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, সে মূলত আল্লাহ ও তাঁর রাসূল থেকেই মুখ ফিরিয়ে নেবে এবং সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্য হিসেবে বিবেচিত হবে। এ আয়াতটি পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করছে যে, যে ব্যক্তি শরীয়াতের লাভজনক কথাগুলোকে সানন্দে গ্রহণ করে নেয় কিন্তু যা কিছু তার স্বার্থ ও আশা-আকাঙ্ক্ষার বিরোধী হয় তাকে প্রত্যাখ্যান করে এবং তার বিপরীতে দুনিয়ার অন্যান্য আইনকে প্রাধান্য দেয়, সে মুমিন নয় বরং মুনাফিক। তার ঈমানের দাবী মিথ্যা।

মানুষের এ কর্মনীতি অবলম্বনের পেছনে তিনটি সম্ভাব্য কারণ থাকতে পারে : (এক) যে মানুষটি ঈমানের দাবীদার সে আসলে ঈমানই আনেনি। মুনাফিকী পদ্ধতিতে নিছক ধোঁকা দেয়ার এবং মুসলিমসমাজে প্রবেশ করে অবৈধ স্বার্থ লাভ করার জন্য মুসলিম হয়েছে। (দুই) ঈমান আনা সত্ত্বেও তার মনে এ মর্মে সন্দেহ রয়ে গেছে যে, রাসূল ﷺ আসলে আল্লাহর রাসূল কি না, কুরআন আল্লাহর কিতাব কি না এবং কিয়ামত বাস্তবিকই অনুষ্ঠিত হবে কি না? (তিন) সে আল্লাহকে আল্লাহ এবং রাসূলকে রাসূল বলে মেনে নেয়ার পরও তাঁদের পক্ষ থেকে যুলুমের আশঙ্কা করে। সে মনে করে আল্লাহর কিতাব অমুক হুকুমটি দিয়ে আমাদেরকে বিপদে ফেলে দিয়েছে এবং আল্লাহর রাসূলের অমুক উক্তি বা অমুক পদ্ধতি আমাদের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। এ তিনটি কারণের মধ্যে যেটিই সত্য হোক না কেন, মোটকথা এ ধরনের লোকদের যালেম হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। এ ধরনের চিন্তা সহকারে যে ব্যক্তি মুসলিমদের দলভুক্ত হয়ে ঈমানের দাবী করে এবং মুসলিমসমাজের একজন সদস্য সেজে বিভিন্ন ধরনের স্বার্থ হাসিল করতে থাকে, সে একজন বড় বিশ্বাসঘাতক। সে নিজের উপরও যুলুম করে। রাত-দিন মিথ্যাচারের মাধ্যমে নিজেকে সবচেয়ে নিকৃষ্ট স্বভাবের মানুষে পরিণত করতে থাকে। সে এমন ধরনের মুসলিমদের প্রতিও যুলুম করে, যারা তার বাহ্যিক কালিমা পাঠের উপর নির্ভর করে তাকে মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত বলে মেনে নেয় এবং তার সাথে সবধরনের সম্পর্ক স্থাপন করে।

মুনাফিকরা চারদিকে গুজব রটায় :

وَاِذَا جَآءَهُمْ اَمْرٌ مِّنَ الْاَمْنِ اَوِ الْخَوْفِ اَذَاعُوْا بِهٖ

যখন শান্তি অথবা শঙ্কার কোন সংবাদ তাদের নিকট আসে তখন তারা তা প্রচার করে থাকে। (সূরা নিসা- ৮৩)

তারা কুরআনের মজলিস থেকে চুপিচুপি সরে যায় :

وَاِذَا مَاۤ اُنْزِلَتْ سُوْرَةٌ نَّظَرَ بَعْضُهُمْ اِلٰى بَعْضٍؕ هَلْ يَرَاكُمْ مِّنْ اَحَدٍ ثُمَّ انْصَرَفُوْاؕ صَرَفَ اللهُ قُلُوْبَهُمْ بِاَنَّهُمْ قَوْمٌ لَّا يَفْقَهُوْنَ

যখনই কোন নতুন সূরা নাযিল হয়, তখন তারা একে অপরের দিকে তাকায় এবং (ইশারায় একে অপরকে জিজ্ঞেস করে) কেউ কি তোমাদেরকে দেখতে পাচ্ছে? অতঃপর তারা হেদায়াত থেকে ফিরে যায়। আর আল্লাহ তাদের অন্তরকে এভাবেই সত্য থেকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। কেননা তারা হচ্ছে এমন সম্প্রদায়, যারা কিছুই অনুধাবন করতে পারে না। (সূরা তাওবা- ১২৭)

তারা কসমকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে :

اِتَّخَذُوْاۤ اَيْمَانَهُمْ جُنَّةً فَصَدُّوْا عَنْ سَبِيْلِ اللهِؕ اِنَّهُمْ سَآءَ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ اٰمَنُوْا ثُمَّ كَفَرُوْا فَطُبِعَ عَلٰى قُلُوْبِهِمْ فَهُمْ لَا يَفْقَهُوْنَ

তারা তাদের শপথগুলোকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে এবং (মানুষকে) আল্লাহর পথ হতে বিরত রাখে। নিশ্চয় তারা যা করে তা কতই না মন্দ। এটা এজন্য যে, তারা ঈমান আনার পর কুফরী করেছে, ফলে তাদের হৃদয়ে মোহর মেরে দেয়া হয়েছে। অতএব তারা কিছুই বুঝে না। (সূরা মুনাফিকূন- ২, ৩)

তারা নিজেদেরকে সম্মানী মনে করে :

يَقُوْلُوْنَ لَئِنْ رَّجَعْنَاۤ اِلَى الْمَدِيْنَةِ لَيُخْرِجَنَّ الْاَعَزُّ مِنْهَا الْاَذَلَّ

তারা বলে, আমরা যদি মদিনায় প্রত্যাবর্তন করি, তবে সেখান থেকে সম্মানিতরা (মুনাফিকরা) হীনদেরকে (মুমিনদেরকে) বহিষ্কার করবে। (সূরা মুনাফিকূন- ৮)

কিন্তু প্রকৃত সম্মান কার- তাও তারা জানত না :

وَلِلّٰهِ الْعِزَّةُ وَلِرَسُوْلِهٖ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ وَلٰكِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ

কিন্তু (সমস্ত) মান-সম্মান তো আল্লাহর, তাঁর রাসূল ও মুমিনদের জন্যই; কিন্তু মুনাফিকরা এটা জানে না।

(সূরা মুনাফিকূন- ৮)

মুনাফিকদের দৃষ্টান্ত কাঠের সাথে :

وَاِذَا رَاَيْتَهُمْ تُعْجِبُكَ اَجْسَامُهُمْ ؕ وَاِنْ يَّقُوْلُوْا تَسْمَعْ لِقَوْلِهِمْؕ كَأَنَّهُمْ خُشُبٌ مُّسَنَّدَةٌ

তুমি যখন তাদেরকে দেখবে তখন তাদের দৈহিক গঠন তোমাকে খুশী করে দেবে। অতঃপর তারা যদি কোন কথা বলে, তবে তুমি (আগ্রহের সাথে) তাদের কথা শ্রবণ করবে, যেন তারা দেয়ালে ঠেকানো কাঠের স্তম্ভ সদৃশ। (সূরা মুনাফিকূন- ৪)

মুনাফিকদের দৃষ্টান্ত আগুন প্রজ্বলনকারীর সাথে :

مَثَلُهُمْ كَمَثَلِ الَّذِى اسْتَوْقَدَ نَارًا فَلَمَّاۤ اَضَآءَتْ مَا حَوْلَهٗ ذَهَبَ اللهُ بِنُوْرِهِمْ وَتَرَكَهُمْ فِيْ ظُلُمَاتٍ لَّا يُبْصِرُوْنَ صُمٌّ ۢ بُكْمٌ عُمْيٌ فَهُمْ لَا يَرْجِعُوْنَ

এদের দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যে আগুন জ্বালাল। অতঃপর অগ্নি যখন তার পার্শ্ববর্তী সমস্ত স্থান আলোকিত করল, তখন আল্লাহ তাদের আলো ছিনিয়ে নিলেন এবং তাদেরকে অন্ধকারের মধ্যে ছেড়ে দিলেন, ফলে তারা কিছুই দেখতে পায় না। তারা বধির, বোবা ও অন্ধ। অতএব তারা (সঠিক পথের দিকে) ফিরে আসবে না। (সূরা বাক্বারা- ১৭, ১৮)

ব্যাখ্যা : যখন আল্লাহর এক বান্দা আলো জ্বালালেন এবং হককে বাতিল থেকে, সত্যকে মিথ্যা থেকে এবং সরল পথকে বক্র পথ থেকে বাছাই করে সুস্পষ্টভাবে আলাদা করে ফেললেন, তখন সত্য সুস্পষ্ট দিবালোকের মতো উদ্ভাসিত হয়ে উঠল। কিন্তু প্রবৃত্তি পূজায় অন্ধ মুনাফিকরা এ আলোতে কিছুই দেখতে পেল না। সত্যের আলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে তারা নিজেরাই যখন বাতিলের অন্ধকারে হাতড়ে মরতে চায়, তখন আল্লাহও তাদেরকে সে সুযোগই দেন। সুতরাং তারা বধির, বোবা ও অন্ধ; কেননা তারা হক্ব কথা শোনতে চায় না, বলতে চায় না এবং যারা হক্ব কথা বলে তাদেরকে ও তাদের কর্মকে দেখতেও পারে না।

তাদের দৃষ্টান্ত গর্জন ও বিদ্যুৎ মিশ্রিত মেঘমালার সাথে :

اَوْ كَصَيِّبٍ مِّنَ السَّمَآءِ فِيْهِ ظُلُمَاتٌ وَّرَعْدٌ وَّبَرْقٌۚ يَجْعَلُوْنَ اَصَابِعَهُمْ فِۤيْ اٰذَانِهِمْ مِّنَ الصَّوَاعِقِ حَذَرَ الْمَوْتِؕ وَاللهُ مُحِيْطٌ ۢبِالْكَافِرِيْنَ يَكَادُ الْبَرْقُ يَخْطَفُ اَبْصَارَهُمْؕ كُلَّمَاۤ اَضَآءَ لَهُمْ مَّشَوْا فِيْهِ وَاِذَاۤ اَظْلَمَ عَلَيْهِمْ قَامُوْاؕ وَلَوْ شَآءَ اللهُ لَذَهَبَ بِسَمْعِهِمْ وَاَبْصَارِهِمْؕ اِنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ

অথবা তাদের দৃষ্টান্ত আকাশ হতে পানি বর্ষণের ন্যায়, যাতে রয়েছে অন্ধকার, গর্জন ও বিদ্যুৎ। তারা বজ্রধ্বনির কারণে মৃত্যুর ভয়ে তাদের কর্ণসমূহে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দেয়; আর আল্লাহ কাফিরদেরকে পরিবেষ্টনকারী। (তাদের অবস্থা দেখে) মনে হয়, যেন বিদ্যুৎ তাদের দৃষ্টি হরণ করে ফেলবে। অতঃপর যখন তিনি তাদের জন্য একটু আলো (বিদ্যুৎ) প্রজ্বলিত করেন, তখন তারা তাতে চলতে থাকে। অতঃপর আবার যখন তাদের উপর অন্ধকার চাপিয়ে দেন, তখন তারা দাঁড়িয়ে যায়। অথচ যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন, তবে অবশ্যই তিনি তাদের শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি হরণ করে নিতে পারেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা বাক্বারা- ১৯, ২০)

ব্যাখ্যা : তারা কানে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিয়ে ধ্বংসের হাত থেকে বেঁচে যাবে- এ ধারণায় কিছুক্ষণের জন্য ডুবে যেতে পারে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা এভাবে বাঁচতে পারবে না। কারণ আল্লাহ তাঁর শক্তি দিয়ে তাদেরকে ঘিরে রেখেছেন। এ দৃষ্টান্তটি সন্দেহ-সংশয় এবং দুর্বল ঈমানের অধিকারীদের জন্য। এরা কিছুটা সত্য স্বীকার করে নেয়, কিন্তু সেজন্য তারা বিপদাপদ বা কষ্ট ও নির্যাতন সহ্য করতে প্রস্তুত নয়। এখানে বৃষ্টি বলতে ইসলামকে বুঝানো হয়েছে। ইসলাম বিশ্বমানবতার জন্য একটি রহমত রূপে আবির্ভূত হয়েছে। অন্ধকার মেঘমালা, বিদ্যুৎচমক ও বজ্রের গর্জন বলে এখানে সেই ব্যাপক দুঃখ-কষ্ট, বিপদাপদ ও সংকটের কথা বুঝানো হয়েছে, যেগুলো ইসলামী আন্দোলনের মুকাবিলায় জাহেলী শক্তির প্রবল বিরোধিতার মুখে একের পর এক সামনে আসে। ব্যাপারটি একটু সহজ হয়ে গেলে তারা চলতে থাকে, আবার সমস্যা-সংকট দেখা দিলে থেমে যায়।

তারা তাদের মনের ঈর্ষা লুকিয়ে রাখতে পারবে না :

اَمْ حَسِبَ الَّذِيْنَ فِيْ قُلُوْبِهِمْ مَّرَضٌ اَنْ لَّنْ يُّخْرِجَ اللهُ اَضْغَانَهُمْ

যাদের অন্তরে রোগ আছে তারা কি মনে করছে যে, আল্লাহ তাদের অন্তরের বিরোধী মনোভাব প্রকাশ করে দেবেন না? (সূরা মুহাম্মাদ- ২৯)

ব্যাখ্যা : একজন মুনাফিক কয়েক দিনের জন্য দুনিয়ায় মানুষকে ধোঁকা দিতে পারে, কিন্তু চিরকাল তার এই ধোঁকাবাজি চলতে পারে না। অবশেষে একদিন তার মুনাফিকী ফাঁস হবেই। তখন সমাজে তার নুন্যতম সম্মানটুকুও অবশিষ্ট থাকবে না। আর আখিরাতে তো ঈমানের মৌলিক দাবীরই কোন মূল্য থাকবে না- যদি আমল তার বিপরীত হয়। অর্থাৎ ঈমানের সাথে যদি আমল না থাকে, তবে পরকালে মুক্তি পাওয়ার কোন সুযোগ থাকবে না।

আল্লাহ তাদের মনের খবর প্রকাশ করে দেন :

يَحْذَرُ الْمُنَافِقُوْنَ اَنْ تُنَزَّلَ عَلَيْهِمْ سُوْرَةٌ تُنَبِّئُهُمْ بِمَا فِيْ قُلُوْبِهِمْؕ قُلِ اسْتَهْزِئُوْاۚ اِنَّ اللهَ مُخْرِجٌ مَّا تَحْذَرُوْنَ

মুনাফিকরা ভয় করে যে, তাদের সম্পর্কে এমন কোন সূরা অবতীর্ণ হয় কি না, যা তাদের অন্তরের কথা ব্যক্ত করে দেবে। (তাদেরকে) বলো, তোমরা বিদ্রূপ করতে থাকো; (জেনে রেখো) তোমরা যে বিষয়ে ভয় কর, অবশ্যই আল্লাহ তা প্রকাশ করে দেবেন। (সূরা তাওবা- ৬৪)

শানে নুযূল : মুনাফিক সম্প্রদায়ের কতিপয় লোক ইসলাম সম্বন্ধে বিদ্রূপাত্মক উক্তি করছিল। সঙ্গে সঙ্গে তাদের এ আশঙ্কাও হচ্ছিল যে, যদি রাসূল ﷺ ওহীর মাধ্যমে এ ঘটনা জানতে পারেন, তবে বিষণ বিপদ হবে। কিন্তু বাস্তবে তা-ই হলো, রাসূল ﷺ ওহীর মাধ্যমে এ খবর জানতে পেরে তাদেরকে জিজ্ঞেস করলে তারা বলল, আমরা তো কেবল হাসি-তামাশা করছিলাম। তখন এ সম্পর্কে উক্ত আয়াতটি নাযিল হয়।

আল্লাহ তাদের অন্তরের অবস্থা জানেন :

اَوَلَيْسَ اللهُ بِاَعْلَمَ بِمَا فِيْ صُدُوْرِ الْعَالَمِيْنَ وَلَيَعْلَمَنَّ اللهُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَلَيَعْلَمَنَّ الْمُنَافِقِيْنَ

তারা কি মনে করে যে, বিশ্ববাসীর মনের মধ্যে যা রয়েছে আল্লাহ সে সম্পর্কে অবহিত নন? যারা ঈমান আনয়ন করেছে অবশ্যই আল্লাহ তাদের সম্পর্কে ভালো করে জানেন; আর তিনি মুনাফিকদের সম্পর্কেও ভালো করে অবগত আছেন। (সূরা আনকাবূত- ১০, ১১)

তারা তাওবা করলে আল্লাহ ক্ষমা করবেন :

وَلَوْ اَنَّهُمْ اِذْ ظَّلَمُوْاۤ اَنْفُسَهُمْ جَآءُوْكَ فَاسْتَغْفَرُوا اللهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُوْلُ لَوَجَدُوا اللهَ تَوَّابًا رَّحِيْمًا

যদি তারা নিজেদের উপর কোন যুলুম করে, অতঃপর তোমার কাছে ছুটে আসে এবং নিজেদের কৃতকর্মের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করে এবং আল্লাহর রাসূলও তাদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করেন, তাহলে তারা অবশ্যই আল্লাহকে পরম ক্ষমাশীল ও অতীব দয়ালু হিসেবেই পাবে। (সূরা নিসা- ৬৪)

আল্লাহর বিধান না মানলে শাস্তি পাবেই :

لِيُعَذِّبَ اللهُ الْمُنَافِقِيْنَ وَالْمُنَافِقَاتِ وَالْمُشْرِكِيْنَ وَالْمُشْرِكَاتِ وَيَتُوْبَ اللهُ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِؕ وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا

পরিণামে আল্লাহ মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারী এবং মুশরিক পুরুষ ও মুশরিক নারীকে শাস্তি দেবেন। পক্ষান্তরে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের প্রতি ক্ষমাপরবশ হবেন। আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল ও অত্যন্ত দয়ালু। (সূরা আহযাব- ৭৩)

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন