hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

তাফসীরুল কুরআন বিল কুরআন

লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

১৩৪
অধ্যায়- ৪ : মুসলিম জামা‘আতের সদস্যদের গুণাবলি
নেতার আনুগত্য করতে হবে :

يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَطِيْعُوا اللهَ وَاَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَاُولِى الْاَمْرِ مِنْكُمْ

হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর ও রাসূলের আনুগত্য করো এবং তাদের আনুগত্য করো, যারা তোমাদের মধ্যে ক্ষমতার অধিকারী। (সূরা নিসা- ৫৯)

প্রচুর ধৈর্য ও সাহস অর্জন করতে হবে :

يَا بُنَيَّ اَقِمِ الصَّلَاةَ وَاْمُرْ بِالْمَعْرُوْفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَاصْبِرْ عَلٰى مَاۤ اَصَابَكَؕ اِنَّ ذٰلِكَ مِنْ عَزْمِ الْاُمُوْرِ

হে আমার ছেলে! সালাত কায়েম করো, সৎকাজের আদেশ দাও, মন্দকাজ হতে নিষেধ করো এবং তোমার উপর যে বিপদ আসে তাতে ধৈর্যধারণ করো। নিশ্চয় এটা দৃঢ় সংকল্পের কাজ। (সূরা লুক্বমান- ১৭)

ব্যাখ্যা : সৎকাজের হুকুম দেয়া এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করার দায়িত্ব যে ব্যক্তি পালন করবে তাকেই অনিবার্যভাবে বিপদাপদের মুখোমুখি হতে হবে। এ ধরনের লোকের পেছনে দুনিয়া কোমর বেঁধে লেগে যাবে এবং তাকে সবধরনের কষ্টের সম্মুখীন হতে হবে; এটি বড়ই সাহসের কাজ। মানবতার সংশোধন এবং তার সংকট উত্তরণে সাহায্য করার কাজ কম সাহসের অধিকারী লোকদের পক্ষে সম্ভব নয়; বরং এসব কাজে অসীম সাহসী হতে হয়।

সাংগঠনিক কাজের ফাঁকে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করতে হবে :

اِنَّ لَكَ فِى النَّهَارِ سَبْحًا طَوِيْلًا وَاذْكُرِ اسْمَ رَبِّكَ وَتَبَتَّلْ اِلَيْهِ تَبْتِيْلًا

নিশ্চয় দিনে তোমার জন্য রয়েছে দীর্ঘ ব্যস্ততা। সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের নাম স্মরণ করো এবং (অন্যান্য ব্যস্ততা ছিন্ন করে) একনিষ্ঠভাবে তাতে মগ্ন হও। (সূরা মুয্যাম্মিল- ৭, ৮)

فَاِذَا فَرَغْتَ فَانْصَبْ وَاِلٰى رَبِّكَ فَارْغَبْ

অতএব যখন অবসর পাও পরিশ্রম করো এবং তোমার প্রতিপালকের প্রতি মনোনিবেশ করো। (সূরা ইনশিরাহ- ৭, ৮)

তাহাজ্জুদ সালাত আদায়ের অভ্যাস করতে হবে :

يَاۤ اَيُّهَا الْمُزَّمِّلُ قُمِ اللَّيْلَ اِلَّا قَلِيْلًا نِصْفَهٗۤ اَوِ انْقُصْ مِنْهُ قَلِيْلًا اَوْ زِدْ عَلَيْهِ

হে বস্ত্রাবৃত! রাত্রি জাগরণ (রাতে ইবাদাত) করো, (রাত্রির) কিছু অংশ। তার অর্ধেক কিংবা তদপেক্ষা কিছু কম অথবা তার চেয়ে কিছু বেশি। (সূরা মুয্যাম্মিল, ১-৪)

কুরআন অধ্যয়ন করতে হবে :

وَرَتِّلِ الْقُرْاٰنَ تَرْتِيْلًا

আর কুরআন পাঠ করো- ধীরে ধীরে (থেমে থেমে সুন্দরভাবে)। (সূরা মুয্যাম্মিল- ৪)

কোন নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় করা যাবে না :

يُجَاهِدُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَلَا يَخَافُوْنَ لَوْمَةَ لَآئِمٍ

তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে এবং তারা কোন নিন্দুকের নিন্দার ভয় করে না। (সূরা মায়েদা- ৫৪)

সাথিদের ব্যাপারে কোমল ও বিরোধীদের ব্যাপারে কঠোর হতে হবে :

يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَنْ يَّرْتَدَّ مِنْكُمْ عَنْ دِيْنِهٖ فَسَوْفَ يَاْتِى اللّٰهُ بِقَوْمٍ يُّحِبُّهُمْ وَيُحِبُّوْنَهٗۤ اَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ اَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِيْنَ

হে ঈমানদারগণ! তোমাদের মধ্যে যদি কেউ দ্বীন থেকে ফিরে যেতে চায়, তবে অচিরেই আল্লাহ এমন একটি সম্প্রদায়ের উত্থান ঘটাবেন যাদেরকে তিনি ভালোবাসবেন এবং তারাও তাঁকে ভালোবাসবে। আর তারা মুমিনদের প্রতি কোমল এবং কাফিরদের প্রতি কঠোরতা অবলম্বন করবে। (সূরা মায়েদা- ৫৪)

পরস্পরকে সহযোগিতা করতে হবে :

وَتَعَاوَنُوْا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوٰى وَلَا تَعَاوَنُوْا عَلَى الْاِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللهَؕ اِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ

তোমরা সৎকর্ম ও তাক্বওয়ার বিষয়ে পরস্পরকে সহযোগিতা করো এবং পাপ ও সীমালঙ্ঘনের বিষয়ে একে অন্যের সহযোগিতা করো না। আর আল্লাহকে ভয় করো; নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে খুবই কঠোর। (সূরা মায়েদা- ২)

ব্যাখ্যা : এখানে تَعَاوَنُوْا (তা‘আওয়ানু) বলতে সাহায্য, সহায়তা, সমর্থন, পৃষ্ঠপোষকতা, বন্ধুত্ব, আত্মীয়তা, অভিভাবকত্ব ইত্যাদি বিষয়সমূহকে বুঝানো হয়েছে। তাছাড়া এমন ধরনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও বুঝানো হয়েছে, যা একটি রাষ্ট্রের সাথে নাগরিকদের, নাগরিকদের সাথে রাষ্ট্রের এবং নাগরিকদের নিজেদের মধ্যে বিরাজ করে। এমনকি যদি কোথাও মুসলিমদের উপর যুলুম হতে থাকে এবং ইসলামী সমাজের সাথে সম্পর্কের কারণে তারা দারুল ইসলামের সরকার ও তার অধিবাসীদের কাছে সাহায্য চায়, তাহলে নিজেদের এ মজলুম ভাইদের সাহায্য করা তাদের জন্য ফরয হয়ে যাবে। যেভাবে কাফিররা পরস্পরের সাহায্য-সমর্থন করে, তোমরা (ঈমানদাররা) যদি সেভাবে পরস্পরের সাহায্য-সমর্থন না কর, তাহলে পৃথিবীতে বিরাট বিপর্যয় সৃষ্টি হবে।

পরস্পরের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ করা যাবে না :

وَاَطِيْعُوا اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَلَا تَنَازَعُوْا فَتَفْشَلُوْا وَتَذْهَبَ رِيْحُكُمْ وَاصْبِرُوْاؕ اِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِيْنَ

তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে ও নিজেদের মধ্যে বিবাদ করবে না, নতুবা তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলবে এবং তোমাদের শক্তি বিলুপ্ত হবে। অতএব তোমরা ধৈর্যধারণ করো; নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথেই রয়েছেন। (সূরা আনফাল- ৪৬)

কোন বিরোধ হয়ে গেলে মীমাংসা করে নিতে হবে :

فَاتَّقُوا اللهَ وَاَصْلِحُوْا ذَاتَ بَيْنِكُمْ وَاَطِيْعُوا اللهَ وَرَسُوْلَهٗۤ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ

আল্লাহকে ভয় করো এবং নিজেদের মধ্যে সংশোধন করে নাও। আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো, যদি তোমরা মুমিন হও। (সূরা আনফাল- ১)

মজলিস থেকে উঠার সময় অনুমতি নিতে হবে :

اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِه وَاِذَا كَانُوْا مَعَه عَلٰۤى اَمْرٍ جَامِعٍ لَّمْ يَذْهَبُوْا حَتّٰى يَسْتَاْذِنُوْهُ

নিশ্চয় মুমিন তো তারাই যারা আল্লাহর প্রতি এবং তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন করেছে। আর যখন তারা কোন সমষ্টিগত কাজে একত্রিত হয়, তখন তারা অনুমতি ছাড়া সেখান থেকে চলে যায় না। (সূরা নূর- ৬২)

বৈঠকের আদব রক্ষা করতে হবে :

يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا قِيْلَ لَكُمْ تَفَسَّحُوْا فِى الْمَجَالِسِ فَافْسَحُوْا يَفْسَحِ اللهُ لَكُمْۚ وَاِذَا قِيْلَ انْشُزُوْا فَانْشُزُوْا

হে ঈমানদারগণ! যখন তোমাদেরকে মজলিসের মধ্যে স্থান প্রশস্ত করে দিতে বলা হয়, তখন তোমরা তা প্রশস্ত করে দিয়ো; তাহলে আল্লাহও তোমাদের জন্য স্থান প্রশস্ত করে দেবেন। আর যখন তোমাদেরকে উঠে যেতে বলা হয়, তখন উঠে যেয়ো। (সূরা মুজাদালা- ১১)

শানে নুযূল : একদা রাসূল ﷺ মসজিদের বারান্দায় অবস্থান করছিলেন, তখন মজলিসে বহু লোক ছিল। এমন সময় কতিপয় বদরী সাহাবী আসলেন, কিন্তু মজলিসের লোকেরা একটু চেপে না বসায় সেখানে তাদের বসার স্থান হলো না; ফলে তারা দাঁড়িয়ে রইলেন। তা দেখে রাসূল ﷺ নাম ধরে কয়েকজন লোককে মজলিস ত্যাগ করতে বললেন। এ সুযোগে মুনাফিকরা এ বলে খোঁচা দিতে লাগল যে, এ কেমন বিচার! তখন রাসূল ﷺ বললেন, যারা নিজেদের ভাইদের জন্য স্থান ছেড়ে দেবে, আল্লাহ তাদেরকে রহম করবেন। তখন এ সম্পর্কে উক্ত আয়াতটি নাযিল হয়। (তাফসীরে ফাতহুল কাদীর; ৭ম খন্ড, ১৭৭ পৃঃ)

বিরোধীদের সমালোচনাকে এড়িয়ে চলতে হবে :

وَاصْبِرْ عَلٰى مَا يَقُوْلُوْنَ وَاهْجُرْهُمْ هَجْرًا جَمِيْلًا

লোকেরা যা বলে, তাতে তুমি ধৈর্যধারণ করো এবং উত্তম পন্থায় তাদেরকে পরিহার করে চলো। (সূরা মুয্যাম্মিল- ১০)

ব্যক্তিগত স্বার্থে কোন শত্রুর সাথে বন্ধুত্ব রাখা যাবে না :

يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوْا عَدُوِّيْ وَعَدُوَّكُمْ اَوْلِيَآءَ تُلْقُوْنَ اِلَيْهِمْ بِالْمَوَدَّةِ وَقَدْ كَفَرُوْا بِمَا جَآءَكُمْ مِّنَ الْحَقِّ

হে মুমিনগণ! আমার ও তোমাদের শত্রুকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তোমরা কি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করছ? অথচ তোমাদের নিকট যে সত্য এসেছে, তারা তা অস্বীকার করে। (সূরা মুমতাহিনা- ১)

শানে নুযূল : রাসূল ﷺ মক্কা বিজয়ের ইচ্ছা করলে হাতিব ইবনে আবি বালতা (রাঃ) নামক একজন বদরী সাহাবী জনৈক মহিলার হাতে গোপনে মক্কাবাসীদের নিকট এ সংবাদ লিখে পাঠালেন। অতঃপর রাসূল ﷺ বিষয়টি ওহীর মাধ্যমে অবগত হয়ে আলী (রাঃ) এর নেতৃত্বে কতিপয় সাহাবীকে পাঠিয়ে চিঠিটি উদ্ধার করেন। অতঃপর হাতিব (রাঃ) কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আমি জানতাম এতে ইসলামের কোন ক্ষতি হবে না, কেননা ইসলামের বিজয় অনিবার্য। তারপরও আমি মনে করলাম যে, এ চিঠি পেলে মক্কাবাসীরা আমার দ্বারা নিজেদেরকে উপকৃত মনে করে তথায় অবস্থিত আমার পরিবারের কোন ক্ষতি করবে না। এটা শুনে ওমর (রাঃ) তাকে হত্যা করার জন্য রাসূল ﷺ এর কাছে অনুমতি চাইলেন। কিন্তু রাসূল ﷺ বললেন, এ ব্যক্তি বদরী অর্থাৎ সে তো বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। আর আল্লাহ বদরীদের গোনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। তখন এ প্রেক্ষাপটে উক্ত আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (তাফসীরে ফাতহুল কাদীর; ৭ম খন্ড, ২০০ পৃঃ)

যারা শত্রুতা করে না তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করা :

لَا يَنْهَاكُمُ اللهُ عَنِ الَّذِيْنَ لَمْ يُقَاتِلُوْكُمْ فِى الدِّيْنِ وَلَمْ يُخْرِجُوْكُمْ مِّنْ دِيَارِكُمْ اَنْ تَبَرُّوْهُمْ وَتُقْسِطُوْاۤ اِلَيْهِمْؕ اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِيْنَ

যারা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে স্বদেশ হতে বহিষ্কারও করেনি, আল্লাহ তোমাদেরকে তাদের প্রতি সদ্ব্যবহার ও ন্যায়বিচার করতে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা মুমতাহিনা- ৮)

নিজেদেরকে বাদ দিয়ে অন্যদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না :

يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوْا بِطَانَةً مِّنْ دُوْنِكُمْ لَا يَاْلُوْنَكُمْ خَبَالًاؕ وَدُّوْا مَا عَنِتُّمْۚ قَدْ بَدَتِ الْبَغْضَآءُ مِنْ اَفْوَاهِهِمْۚ وَمَا تُخْفِيْ صُدُوْرُهُمْ اَكْبَرُؕ قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ الْاٰيَاتِ اِنْ كُنْتُمْ تَعْقِلُوْنَ هَاۤ اَنْتُمْ اُولَآءِ تُحِبُّوْنَهُمْ وَلَا يُحِبُّوْنَكُمْ

হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে বাদ দিয়ে অন্যদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তারা তোমাদের ব্যাপারে তাই কামনা করে, যা তোমাদের জন্য কষ্টদায়ক। কোন কোন সময় তাদের মুখ থেকেই এই বিদ্বেষ প্রকাশ পেয়ে যায়। আর তাদের অন্তরে যা লুকিয়ে রেখেছে, তা আরো জঘন্য। অবশ্যই আমি তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ বর্ণনা করে দিয়েছি, যদি তোমরা অনুধাবন করতে পার। তোমরা তো তাদেরকে ভালোবাস, কিন্তু তারা তোমাদেরকে ভালোবাসে না। (সূরা আলে ইমরান- ১১৮, ১১৯)

তাদের চক্রান্তকে ভয় করার কারণ নেই :

وَاِنْ تَصْبِرُوْا وَتَتَّقُوْا لَا يَضُرُّكُمْ كَيْدُهُمْ شَيْئًاؕ اِنَّ اللهَ بِمَا يَعْمَلُوْنَ مُحِيْطٌ

যদি তোমরা ধৈর্যধারণ কর এবং তাক্বওয়া অবলম্বন কর, তাহলে তাদের চক্রান্ত তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আর তোমরা যা কর নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু বেষ্টন করে আছেন। (সূরা আলে ইমরান- ১২০)

বিরোধীদের হুমকিকে ভয় করা যাবে না :

فَاُلْقِيَ السَّحَرَةُ سُجَّدًا قَالُوْاۤ اٰمَنَّا بِرَبِّ هَارُوْنَ وَمُوْسٰى قَالَ اٰمَنْتُمْ لَهٗ قَبْلَ اَنْ اٰذَنَ لَكُمْؕ اِنَّهٗ لَكَبِيْرُكُمُ الَّذِيْ عَلَّمَكُمُ السِّحْرَۚ فَلَاُقَطِّعَنَّ اَيْدِيَكُمْ وَاَرْجُلَكُمْ مِّنْ خِلَافٍ وَّلَاُصَلِّبَنَّكُمْ فِيْ جُذُوْعِ النَّخْلِ وَلَتَعْلَمُنَّ اَيُّنَاۤ اَشَدُّ عَذَابًا وَّاَبْقٰى قَالُوْا لَنْ نُّؤْثِرَكَ عَلٰى مَا جَآءَنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالَّذِيْ فَطَرَنَا فَاقْضِ مَاۤ اَنْتَ قَاضٍؕ اِنَّمَا تَقْضِيْ هٰذِهِ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا اِنَّاۤ اٰمَنَّا بِرَبِّنَا لِيَغْفِرَ لَنَا خَطَايَانَا وَمَاۤ اَ كْرَهْتَنَا عَلَيْهِ مِنَ السِّحْرِؕ وَاللهُ خَيْرٌ وَّاَبْقٰى

অতঃপর যাদুকররা সিজদাবনত হলো ও বলল, আমরা হারূন ও মূসার প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনয়ন করলাম। ফিরাউন বলল, কী- আমি তোমাদেরকে অনুমতি দেয়ার পূর্বেই তোমরা তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলে? আমি দেখতে পাচ্ছি, আসলে সে-ই হচ্ছে তোমাদের প্রধান গুরু, সে তোমাদেরকে যাদু শিক্ষা দিয়েছে। সুতরাং আমি তোমাদের হাত-পা বিপরীত দিক হতে কর্তন করবই এবং তোমাদেরকে খেজুর বৃক্ষের কান্ডে শূলবিদ্ধ করবই। তখন তোমরা জানতে পারবে যে, আমাদের মধ্যে কার শাস্তি অধিক কঠোরতর ও অধিক স্থায়ী। তারা বলল, আমাদের নিকট যে স্পষ্ট নিদর্শনাবলি এসেছে তার উপর এবং যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর উপর আমরা তোমাকে কিছুতেই প্রাধান্য দেব না। সুতরাং তুমি যা ইচ্ছা করতে পার। তুমি তো কেবল এ পার্থিব জীবনের উপরই কর্তৃত্ব করতে পার। নিশ্চয় আমরা আমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনয়ন করেছি, যাতে তিনি আমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দেন এবং তুমি আমাদেরকে যে যাদু করতে বাধ্য করেছ, তা হতেও ক্ষমা করে দেন। আর আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ ও স্থায়ী। (সূরা ত্বা-হা, ৭০-৭৩)

প্রাণের ভয় থাকলে, অন্তর ঠিক রেখে কুফরী কথা বলা যাবে :

مَنْ كَفَرَ بِاللهِ مِنْ ۢبَعْدِ اِيْمَانِهٖۤ اِلَّا مَنْ اُكْرِهَ وَقَلْبُهٗ مُطْمَئِنٌّ ۢبِالْاِيْمَانِ وَلٰكِنْ مَّنْ شَرَحَ بِالْكُفْرِ صَدْرًا فَعَلَيْهِمْ غَضَبٌ مِّنَ اللهِۚ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيْمٌ

যে ব্যক্তি ঈমান আনার পর আল্লাহকে অস্বীকার করল এবং তার হৃদয়কে কুফরীর জন্য উন্মুক্ত রাখল, তাঁর উপর আল্লাহর গযব পতিত হবে; আর তার জন্য রয়েছে মহাশাস্তি। তবে তার জন্য নয়, যাকে কুফরীর জন্য বাধ্য করা হয়, কিন্তু তার চিত্ত ঈমানের উপর অবিচল। (সূরা নাহল- ১০৬)

ব্যাখ্যা : অর্থাৎ যদি কোন মুমিন ইসলামের কোন শত্রুদলের ফাঁদে আটকা পড়ে যায় এবং সে তাদের পক্ষ থেকে চরম যুলুম-নির্যাতন, ভয়-ভীতি এমনকি প্রাণনাশের আশঙ্কা করে, তাহলে সে নিজের ঈমান গোপন রেখে কাফিরদের সাথে অবস্থান করতে পারবে। এমনকি চরম অবস্থায় কুফরী বাক্য পর্যন্ত মুখে উচ্চারণ করতে পারবে। তবে শর্ত হলো, তার অন্তর ঈমানের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে হবে। মানুষের ভয় যেন তাকে এমনভাবে আচ্ছন্ন না করে ফেলে, যার ফলে আল্লাহর ভয় মন থেকে ওঠে যায়। মানুষ বড়জোর তার পার্থিব ও বৈষয়িক স্বার্থের ক্ষতি করতে পারে, যার পরিসর দুনিয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু আল্লাহ তাকে চিরন্তন আযাবের মধ্যে নিক্ষেপ করতে পারেন। কাজেই নিজের প্রাণ বাঁচানোর জন্য যদি কখনো বাধ্য হয়ে কাফিরদের সাথে আত্মরক্ষামূলক বন্ধুত্বনীতি অবলম্বন করতে হয়, তাহলে তার পরিসর কেবলমাত্র ইসলামের স্বার্থ ও জান-মালের হেফাজত করা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। তবে লক্ষণীয় যে, ঐ কুফ্রী কথা বা কাজ যেন অন্য কোন মুসলিম ভাইয়ের প্রাণনাশের কারণ না হয়।

এ আয়াতে এমন মুসলিমদের কথা আলোচনা করা হয়েছে, যাদের উপর কঠোর নির্যাতন চালানো হয়েছিল এবং যাদেরকে অসহনীয় কষ্ট ও যন্ত্রণা দিয়ে কুফরী করতে বাধ্য করা হয়েছিল। তাদেরকে বলা হয়েছে, তোমরা যদি কখনো যুলুম-নিপীড়নের চাপে বাধ্য হয়ে নিছক প্রাণ বাঁচানোর জন্য কুফরী কথা মুখে উচ্চারণ কর এবং তোমাদের অন্তর কুফরী আকীদা থেকে মুক্ত থাকে, তাহলে তোমাদেরকে ÿমা করে দেয়া হবে। কিন্তু যদি তোমরা অন্তরে কুফরী গ্রহণ করে থাক, তাহলে দুনিয়ায় প্রাণে বেঁচে গেলেও আখিরাতে আল্লাহর আযাব থেকে বাঁচতে পারবে না। এর অর্থ এ নয় যে, প্রাণ বাঁচানোর জন্য কুফরী কথা বলা বাঞ্ছনীয়। বরং এটি নিছক একটি ‘রুখসাত’ তথা সুবিধা দান ছাড়া আর কিছুই নয়। যদি অন্তরে ঈমান অক্ষুণ্ণ রেখে মানুষ বাধ্য হয়ে এ ধরনের কথা বলে, তাহলে তাকে কোন জবাবদিহি করা হবে না। অন্যথায় দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ ঈমানের পরিচয় হচ্ছে, মানুষের এ রক্ত-মাংসের শরীরটাকে কেটে টুকরো টুকরো করা হলেও সে যেন সত্যের বাণীরই ঘোষণা দিয়ে যেতে থাকে। নবী ﷺ এর যুগে এ উভয় ধরনের ঘটনার দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়।

একদিকে আছেন খাববাব ইবনে আরাত (রাঃ)। তাঁকে জ্বলন্ত অঙ্গারের উপর শোয়ানো হয়। এমনকি তাঁর শরীরের চর্বি গলে পড়ার ফলে আগুন নিভে যায়। কিন্তু এরপরও তিনি দৃঢ়ভাবে ঈমানের উপর অটল থাকেন। আরো আছেন বিলাল (রাঃ)। তাঁকে লোহার বর্ম পরিয়ে উত্তপ্ত রোদে দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়। তারপর উত্তপ্ত বালুর প্রান্তরে শোইয়ে তার উপর দিয়ে তাঁকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু এরপরও তিনি ‘আহাদ, আহাদ’ (আল্লাহ এক, আল্লাহ এক) শব্দ উচ্চারণ করে নিজের ঈমানের উপর দৃঢ় অবস্থানের কথা জানাতে থাকেন। (ইবনে মাজাহ, হা/১৫০)

অন্যদিকে আছেন আম্মার ইবনে ইয়াসির (রাঃ)। তাঁর চোখের সামনে তাঁর পিতামাতাকে কঠিন শাস্তি দিয়ে শহীদ করা হয়। তারপর তাঁকে এমন কঠিন শাস্তি দেয়া হয় যে, শেষ পর্যন্ত নিজের প্রাণ বাঁচানোর জন্য তিনি কাফিরদের চাহিদামতো সবকিছু বললেন। এরপর তিনি কাঁদতে কাঁদতে নবী ﷺ এর কাছে উপস্থিত হয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল ﷺ ! আমি আপনাকে মন্দ এবং তাদের উপাস্যদেরকে ভালো না বলা পর্যন্ত তারা আমাকে ছাড়েনি। রাসূল ﷺ জিজ্ঞেস করলেন, তোমার মনের অবস্থা কী? তিনি জবাব দিলেন, مُطْمَئِنًّا بِالْاِيْمَانِ তথা ঈমানের উপর পরিপূর্ণ নিশ্চিন্ত। এ কথায় নবী ﷺ বললেন, যদি তারা আবারো এ ধরনের যুলুম করে, তাহলে তুমি তাদেরকে আবারো এসব কথা বলে দিয়ো। (সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৭৩৫০)

বিরোধীদের গোপন পরামর্শকে ভয় করতে নেই :

اِنَّمَا النَّجْوٰى مِنَ الشَّيْطَانِ لِيَحْزُنَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَلَيْسَ بِضَآرِّهِمْ شَيْئًا اِلَّا بِاِذْنِ اللهِؕ وَعَلَى اللهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُوْنَ

কানাঘুষা তো কেবল শয়তানের পক্ষ থেকে মুমিনদেরকে দুঃখ দেয়ার জন্যই হয়ে থাকে, তবে আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত তারা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। সুতরাং মুমিনরা যেন একমাত্র আল্লাহর উপরই ভরসা করে। (সূরা মুজাদালা- ১০)

বিরোধীদের জবাব দেয়ার জন্য উত্তেজিত না হওয়া :

وَقُلْ لِّعِبَادِيْ يَقُوْلُوا الَّتِيْ هِيَ اَحْسَنُؕ اِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْزَغُ بَيْنَهُمْؕ اِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلْاِنْسَانِ عَدُوًّا مُّبِيْنًا

আমার বান্দাদেরকে যা উত্তম তা বলতে বলো। কারণ শয়তান তাদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টির জন্য উস্কানি দেয়; নিশ্চয় শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৫৩)

শয়তানের দেখানো ভয়কে এড়িয়ে যেতে হবে :

اِنَّمَا ذٰلِكُمُ الشَّيْطَانُ يُخَوِّفُ اَوْلِيَآءَهٗ فَلَا تَخَافُوْهُمْ وَخَافُوْنِ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ

নিশ্চয় এ হচ্ছে তোমাদের সে শয়তান যে তার অনুসারীদেরকে ভয় প্রদর্শন করে; কিন্তু যদি তোমরা বিশ্বাসী হও, তবে তাদেরকে ভয় করো না; বরং আমাকেই ভয় করো। (সূরা আলে ইমরান- ১৭৫ )

ইসলাম বিরোধীদের কাছে দুর্বলতা প্রকাশ না করা :

يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا قَاتِلُوا الَّذِيْنَ يَلُوْنَكُمْ مِّنَ الْكُفَّارِ وَلْيَجِدُوْا فِيْكُمْ غِلْظَةًؕ وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ مَعَ الْمُتَّقِيْنَ

হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের নিকটবর্তী কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করো। তারা যেন তোমাদের মধ্যে কঠোরতা দেখতে পায়। জেনে রেখো, আল্লাহ মুত্তাক্বীদের সাথেই রয়েছেন। (সূরা তাওবা- ১২৩)

ব্যাখ্যা : যারা যুলুমের নীতি অবলম্বন করে তাদের সাথে তাদের যুলুমের প্রকৃতি বিবেচনা করে ভিন্ন নীতিও অবলম্বন করা যেতে পারে। সবসময় সবধরনের লোকদের মুকাবিলায় নরম স্বভাবের হয়ে থাকলে চলবে না। মানুষ যেন সত্যের আহবায়কের ভদ্রতাকে দুর্বলতা মনে করতে না পারে। ইসলাম তার অনুসারীদেরকে অবশ্যই ভদ্রতা, বিনয় ও যুক্তিবাদিতার শিক্ষা দেয়; কিন্তু তাদেরকে প্রত্যেক যালিমের যুলুমের সহজ শিকারে পরিণত হওয়ার শিক্ষা দেয় না।

বিরোধীদের হুমকি শুনলে উৎসাহ আরো বাড়াতে হবে :

اَ لَّذِيْنَ قَالَ لَهُمُ النَّاسُ اِنَّ النَّاسَ قَدْ جَمَعُوْا لَكُمْ فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ اِيْمَانًا وَّقَالُوْا حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الْوَكِيْلُ

লোকেরা তাদেরকে বলেছিল, নিশ্চয় তোমাদের বিরুদ্ধে লোকজন সমবেত হয়েছে, অতএব তোমরা তাদেরকে ভয় করো। কিন্তু এতে তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পেয়ে গিয়েছিল এবং তারা বলেছিল, আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং উত্তম কর্মবিধায়ক। (সূরা আলে ইমরান- ১৭৩)

শানু নুযূল : ওহুদের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফেরার পথে বেশ কয়েক মনযিল দূরে চলে যাওয়ার পর মুশরিকদের টনক নড়ল। তারা পরস্পর বলাবলি করতে লাগল, আমরা এটা কী করলাম! মুহাম্মাদের শক্তি ধ্বংস করার যে সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিলাম, তা হারিয়ে ফেললাম? কাজেই তারা এক জায়গায় গিয়ে পরামর্শ করতে বসল। সিদ্ধান্ত হলো, এখনই মদিনার উপর দ্বিতীয় আক্রমণ চালাতে হবে। তারা তড়িঘড়ি করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল। কিন্তু আক্রমণ করার আর সাহস হলো না। ফলে তারা মক্কায় ফিরে এলো। ওদিকে নবী ﷺ এরও আশঙ্কা ছিল যে, কাফিররা আবার ফিরে এসে মদিনার উপর আক্রমণ চালাতে পারে। তাই ওহুদ যুদ্ধের পরদিনই তিনি মুসলিমদেরকে একত্র করে বললেন, কাফিরদের পেছনে ধাওয়া করা উচিত। যদিও সময়টা ছিল অত্যন্ত নাজুক তবুও যারা প্রকৃত মুমিন ছিলেন তাঁরা প্রাণ উৎসর্গ করতে প্রস্তুত হয়ে গেলেন এবং নবী ﷺ এর সাথে হামরাউল আসাদ নামক স্থান পর্যন্ত ধাওয়া করলেন। এ জায়গাটি মদিনা থেকে আট মাইল দূরে অবস্থিত। এ আয়াতে প্রাণ উৎসর্গকারী এসব মুমিনদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।

বিরোধীদের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে :

وَاحْذَرْهُمْ اَنْ يَّفْتِنُوْكَ عَنْ ۢبَعْضِ مَاۤ اَنْزَلَ اللّٰهُ اِلَيْكَ

তাদের (এ ষড়যন্ত্র থেকে) সতর্ক থাকো যে, যেন তারা তোমার উপর আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার কোন কোন বিষয়ে তোমাকে ফেতনায় ফেলতে না পারে। (সূরা মায়েদা- ৪৯ )

বিরোধীদেরকে উত্তমভাবে বুঝাতে হবে :

فَلِذٰلِكَ فَادْعُۚ وَاسْتَقِمْ كَمَاۤ اُمِرْتَۚ وَلَا تَتَّبِعْ اَهْوَآءَهُمْۚ وَقُلْ اٰمَنْتُ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ مِنْ كِتَابٍۚ وَاُمِرْتُ لِاَعْدِلَ بَيْنَكُمُؕ اَللهُ رَبُّنَا وَرَبُّكُمْؕ لَنَاۤ اَعْمَالُنَا وَلَكُمْ اَعْمَالُكُمْؕ لَا حُجَّةَ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُؕ اَللهُ يَجْمَعُ بَيْنَنَاۚ وَاِلَيْهِ الْمَصِيْرُ

সুতরাং তুমি তার দিকে (সবাইকে) আহবান করো এবং তোমাকে যেভাবে আদেশ করা হয়েছে সেভাবেই দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকো; আর তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। তাদেরকে বলো, আললাহ যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন আমি তাতে ঈমান আনয়ন করেছি এবং আদিষ্ট হয়েছি যে, যেন আমি তোমাদের মধ্যে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করি। আল্লাহই আমাদের এবং তোমাদের প্রতিপালক। আমাদের আমল আমাদের এবং তোমাদের আমল তোমাদের; আমাদের মধ্যে কোন ঝগড়া-বিবাদ নেই। আল্লাহই আমাদের একত্র করবেন; আর (সকল) প্রত্যাবর্তন তো তাঁরই দিকে। (সূরা শূরা- ১৫)

মন্দকে ভালো দ্বারা প্রতিহত করতে হবে :

وَلَا تَسْتَوِى الْحَسَنَةُ وَلَا السَّيِّئَةُؕ اِدْفَعْ بِالَّتِيْ هِيَ اَحْسَنُ فَاِذَا الَّذِيْ بَيْنَكَ وَبَيْنَهٗ عَدَاوَةٌ كَاَنَّهٗ وَلِيٌّ حَمِيْمٌ

ভালো ও মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দকে প্রতিহত করো ভালো দ্বারা। তাহলে তোমার সাথে যার শত্রুতা আছে সে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মতো হয়ে যাবে। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৩৪)

ব্যাখ্যা : যে অবস্থায় নবী ﷺ ও তাঁর অনুসারীদেরকে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছিল তা ছিল এই যে, তখন চরম হঠকারিতা এবং আক্রমণাত্মক বিরোধিতার মাধ্যমে ইসলামী দাওয়াতের মুকাবিলা করা হচ্ছিল। সেখানে মানবতা এবং ভদ্রতার সমস্ত সীমা লঙ্ঘন করা হচ্ছিল। নবী ﷺ ও তাঁর সাথিদের বিরুদ্ধে সবরকমের মিথ্যারোপ করা হচ্ছিল। তাঁর বদনাম করা এবং তাঁর সম্পর্কে লোকের মনে খারাপ ধারণা সৃষ্টি করে দেয়ার জন্য সবরকমের অপবাদ আরোপ করা হচ্ছিল এবং একদল লোক তাঁর বিরুদ্ধে মানুষের মনে সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি করে যাচ্ছিল। তাঁকে ও তাঁর সাথিদেরকে সর্বপ্রকার কষ্ট দেয়া হচ্ছিল। তাতে অতিষ্ঠ হয়ে অনেক মুসলিম দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল। তাছাড়া ইসলাম প্রচারের ধারাকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য হট্টগোলকারী একদল লোককে সবসময় ওঁত পেতে থাকার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। যখনই তিনি ন্যায় ও সত্যের দাওয়াত দেয়ার জন্য কথা বলতে শুরু করবেন, তখনই তারা শোরগোল করবে ফলে কেউ তাঁর কথা শুনতে পাবে না। এটা এমনই পরিস্থিতি ছিল যে, বাহ্যিকভাবে ইসলামী দাওয়াতের সকল পথ রুদ্ধ বলে মনে হচ্ছিল। এসব বিরোধিতার মুকাবিলা করার জন্য সেসময় নবী ﷺ কে এসব পন্থা বলে দেয়া হয়েছিল।

প্রথম কথা বলা হয়েছে যে, সৎকর্ম ও দুষ্কর্ম সমান নয়। অর্থাৎ তোমাদের বিরোধীরা যত ভয়ানক তুফানই সৃষ্টি করুক না কেন, দুষ্কর্মের কারণে তাদের নিজের মধ্যেই এমন দুর্বলতা আছে, যা শেষ পর্যন্ত তাদেরকে ব্যর্থ করে দেয়। কারণ মানুষ যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ, ততক্ষণ পর্যন্ত তার স্বভাব দুষ্কর্মকে ঘৃণা না করে পারে না। দুষ্কর্মের সহযোগীরা মনে মনে জানে যে, সে মিথ্যাবাদী ও অত্যাচারী। এ জিনিসটি অন্যদের মনে তার প্রতি সম্মানবোধ সৃষ্টি করা তো দূরের কথা তাকে নিজের কাছেই খাটো করে দেয়। অপরদিকে সৎকর্ম নিজেই একটি শক্তি, যা হৃদয়-মনকে জয় করে। তাছাড়া নেকী ও দুষ্কর্ম উভয়টি যখন পুরোপুরিভাবে প্রকাশিত হয়, তখন দুষ্কর্মের প্রতি মানুষ ঘৃণা পোষণ করে এবং সৎকর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়।

দ্বিতীয় কথাটি বলা হয়েছে এই যে, দুষ্কর্মের মুকাবিলা শুধুমাত্র সৎকর্ম দিয়ে নয়, বরং অনেক উচ্চমানের সৎকর্ম দিয়ে করো। অর্থাৎ কেউ যদি তোমাদের সাথে খারাপ আচরণ করে আর তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও, তাহলে এটা হবে শুধু সৎকর্ম। উন্নত পর্যায়ের সৎকর্ম হচ্ছে, যে তোমার সাথে খারাপ আচরণ করবে, সুযোগ পেলে তুমি তাঁর প্রতি অনুগ্রহ করো। ফলে জঘন্যতম শত্রুও অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে যাবে। কারণ এটিই মানুষের প্রকৃতি। তবে এ সাধারণ নিয়মকে এ অর্থে গ্রহণ করা ঠিক নয় যে, উন্নত পর্যায়ের সৎকর্মের মাধ্যমে সবরকমের শত্রু অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে যাবে। পৃথিবীতে এমন জঘন্য মনের মানুষও আছে যে, তার অত্যাচার ক্ষমা করা হলেও তার দুষ্কৃতিতে কখনো ভাটা পড়বে না। তবে এ ধরনের খারাপ মানুষ কমই হয়।

এটা অত্যন্ত কার্যকর ব্যবস্থা হলেও তা কাজে লাগানো কোন ছেলেখেলা নয়। এজন্য দরকার সাহস, দৃঢ় সংকল্প এবং সহনশীলতা। সাময়িকভাবে কেউ কোন দুষ্কর্মের মুকাবিলায় সৎকর্ম করতে পারে। কিন্তু যে ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তিকে এমনসব বাতিলপন্থী দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে ন্যায় ও সত্যের জন্য লড়াই করতে হয়, যারা নৈতিকতার যে কোন সীমালঙ্ঘন করতে দ্বিধা করে না, সেখানে দুষ্কর্মের মুকাবিলায় সৎকর্ম করে যাওয়া কোন সাধারণ মানুষের কাজ নয়। কেবল সে ব্যক্তিই এ কাজ করতে পারে, যে বুঝে-শুনে ন্যায় ও সত্যকে সমুন্নত করার জন্য কাজ করার দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করেছে, যে তার প্রবৃত্তিকে সম্পূর্ণভাবে অনুগত করে নিয়েছে এবং যার মধ্যে সততা এমন গভীরভাবে শিকড় গেড়ে বসেছে যে, বিরোধীদের কোন অপকর্ম তাকে তার উচ্চাসন থেকে নিচে নামিয়ে আনতে পারে না। অত্যন্ত উঁচু মর্যাদার মানুষই কেবল এসব গুণাবলির অধিকারী হয়ে থাকে। আর এটাই প্রকৃতির বিধান। যে ব্যক্তি এসব গুণাবলির অধিকারী হয় দুনিয়ার কোন শক্তিই তাকে সাফল্যের মনযিলে পৌঁছা থেকে বিরত রাখতে পারে না। নীচু প্রকৃতির মানুষ তাদের হীন চক্রান্ত এবং জঘন্য আচরণ দ্বারা তাকে কোনভাবেই পরাস্ত করতে পারবে না।

শয়তানের উস্কানি থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইতে হবে :

وَاِمَّا يَنْزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللهِ اِنَّهٗ هُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ

যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে, তবে আল্লাহর আশ্রয় নেবে। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৩৬)

وَقُلْ رَّبِّ اَعُوْذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِيْنِ وَاَعُوْذُ بِكَ رَبِّ اَنْ يَّحْضُرُوْنِ

বলো, হে আমার প্রতিপালক! আমি তোমার নিকট শয়তানের প্ররোচনা হতে আশ্রয় প্রার্থনা করি এবং আমার নিকট তাদের উপস্থিতি হতেও তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি। (সূরা মু’মিনূন- ৯৭, ৯৮)

ব্যাখ্যা : শয়তান যখন দেখে হক ও বাতিলের লড়াইয়ে ভদ্রতা দ্বারা হীনতার এবং সুকৃতি দ্বারা দুষ্কৃতির মুকাবিলা করা হচ্ছে, তখন সে চরম অস্থিরতার মধ্যে পড়ে যায়। সে চায় যে কোনভাবে একবারের জন্য হলেও হকের পথে সংগ্রামকারীদের দ্বারা এমন কোন ত্রুটি সংঘটিত করিয়ে দিতে, যাতে সাধারণ মানুষকে বলা যায়, দেখুন! খারাপ কাজ এক তরফা হচ্ছে না, তারাও তো অমুক হীন আচরণ করেছে। এক পক্ষের অত্যাচার ও বাড়াবাড়ি এবং অপর পক্ষের জবাবী তৎপরতার মধ্যে ইনসাফের সাথে তুলনামূলক বিচারের যোগ্যতা সাধারণ মানুষের মধ্যে থাকে না। কোন বড় যুলুমের প্রতিবাদে হলেও তাদের দৃষ্টিতে উভয়ই সমান হয়ে যায়। এ কারণে বলা হয়েছে, শয়তানের প্রতারণার ব্যাপারে সাবধান থাকো। সে অত্যন্ত দরদী ও মঙ্গলকামী সেজে এই বলে তোমাদেরকে উত্তেজিত করবে যে, অমুক অত্যাচার কখনো বরদাশত করা উচিত নয়। অমুক কথার দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া উচিত। এ ধরনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তোমরা যখন নিজেদের মধ্যে কোন অযথা উত্তেজনা অনুভব করবে, তখন সাবধান হয়ে যাবে। কারণ তা শয়তানের প্ররোচনা। সে তোমাদেরকে উত্তেজিত করে কোন ভুল সংঘটিত করাতে চায়।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন