hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

তাফসীরুল কুরআন বিল কুরআন

লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

৪২৯
অধ্যায়- ১২ : ইয়াহুদিদের আচরণ ও তাদের ভুল ধারণা
ইয়াহুদিরা উযাইর (আঃ) কে আল্লাহর পুত্র মনে করত :

وَقَالَتِ الْيَهُوْدُ عُزَيْرُنِ ابْنُ اللهِ

ইয়াহুদিরা বলে, উযাইর আল্লাহর পুত্র। (সূরা তাওবা- ৩০)

ব্যাখ্যা : উযাইর (আঃ) এর অপর নাম হলো ‘আয্রা’। ইয়াহুদিরা তাঁকে নিজেদের ধর্মের মুজাদ্দিদ বা সংস্কারক মনে করত। ইসরাঈলী বর্ণনা অনুযায়ী সুলায়মান (আঃ) এর পরে বনী ইসরাঈলদের উপর যে কঠিন দুর্যোগ নেমে আসে তার ফলে বেবিলনের বন্দি জীবন যাপন ইসরাঈলী জনগণকে তাদের শরীয়াত ও ঐতিহ্যের সাথে অপরিচিত করে দিয়েছিল। অবশেষে উযাইর (আঃ) এ শরীয়াতকে পুনরুজ্জীবিত করেন। এ কারণেই বনী ইসরাঈলরা তাকে অত্যাধিক ভক্তি করত। কোন কোন লোক তাঁকে আল্লাহর পুত্র পর্যন্ত মনে করত। নাউযুবিল্লাহ

তারা আল্লাহকে কৃপণ মনে করে :

وَقَالَتِ الْيَهُوْدُ يَدُ اللهِ مَغْلُوْلَةٌؕ غُلَّتْ اَيْدِيْهِمْ وَلُعِنُوْا بِمَا قَالُوْا بَلْ يَدَاهُ مَبْسُوْطَتَانِ يُنْفِقُ كَيْفَ يَشَآءُ

ইয়াহুদিরা বলে, আল্লাহর হাত রুদ্ধ। বস্তুত তাদের হাতই রুদ্ধ এবং তারা যা বলে সেজন্য তারা অভিশপ্ত। আর আল্লাহর উভয় হাতই প্রসারিত; সুতরাং তিনি যেভাবে ইচ্ছা দান করেন। (সূরা মায়েদা- ৬৪)

তারা বলে আল্লাহ ফকির হয়ে গেছেন :

لَقَدْ سَمِعَ اللهُ قَوْلَ الَّذِيْنَ قَالُوْاۤ اِنَّ اللهَ فَقِيْرٌ وَّنَحْنُ اَغْنِيَآءُ سَنَكْتُبُ مَا قَالُوْا وَقَتْلَهُمُ الْاَنْۢبِيَآءَ بِغَيْرِ حَقٍّۚ وَنَقُوْلُ ذُوْقُوْا عَذَابَ الْحَرِيْقِ

অবশ্যই আল্লাহ তাদের কথা শ্রবণ করেছেন যারা বলে, আল্লাহ দরিদ্র এবং আমরা ধনী। তারা যা বলেছে এবং অন্যায়ভাবে যেসব নবীদেরকে হত্যা করেছে, অচিরেই আমি এসবকিছুই লিপিবদ্ধ করব এবং তাদেরকে বলব, তোমরা প্রদাহকারী শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করো। (সূরা আলে ইমরান- ১৮১)

শানে নুযূল : ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘‘এমন ব্যক্তি কে আছে যে আল্লাহকে কারযে হাসানা প্রদান করবে’’- আয়াতটি নাযিল হলে ইয়াহুদিরা নবী ﷺ এর খেদমতে এসে বলল, হে মুহাম্মাদ! আপনার আল্লাহ কি দরিদ্র হয়ে পড়েছেন যে, বান্দার নিকট ভিক্ষা চাচ্ছেন? তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতটি নাযিল করেন।

তারা নিজেদেরকে হেদায়াতের উৎস মনে করে :

وَقَالُوْا كُوْنُوْا هُوْدًا اَوْ نَصَارٰى تَهْتَدُوْاؕ قُلْ بَلْ مِلَّةَ اِبْرَاهِيْمَ حَنِيْفًاؕ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ

তারা বলে, তোমরা ইয়াহুদি অথবা খ্রিস্টান হয়ে যাও, তবেই হেদায়াত পাবে। বলো, বরং আমরাই ইবরাহীমের সুদৃঢ় মিল্লাতের অনুসরণ করি, আর তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। (সূরা বাক্বারা- ১৩৫)

তারা নিজেদেরকে আল্লাহর প্রিয় পাত্র বলে মনে করে :

وَقَالَتِ الْيَهُوْدُ وَالنَّصَارٰى نَحْنُ اَبْنَآءُ اللهِ وَاَحِبَّآؤُهٗؕ قُلْ فَلِمَ يُعَذِّبُكُمْ بِذُنُوْبِكُمْؕ بَلْ اَنْتُمْ بَشَرٌ مِّمَّنْ خَلَقَؕ يَغْفِرُ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيُعَذِّبُ مَنْ يَّشَآءُ

ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানরা বলে থাকে, আমরা আল্লাহর পুত্র ও তাঁর প্রিয়। (হে নবী!) বলো, তবে কেন তিনি তোমাদের পাপের জন্য তোমাদেরকে শাস্তি দেন? বরং তোমরা তাদের মতোই সাধারণ মানুষ, যাদেরকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করেন এবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেন। (সূরা মায়েদা- ১৮)

ব্যাখ্যা : ইয়াহুদিরা একমাত্র ইয়াহুদি গোষ্ঠীকেই পরকালীন মুক্তির অধিকারী মনে করত। এ আয়াতে এ ধারণার প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। তারা এ ভুল ধারণা পোষণ করত যে, তাদের সাথে আল্লাহর কোন বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে- যা অন্য মানুষের সাথে নেই। কাজেই তাদের দলের সাথে যে-ই সম্পর্ক রাখবে তার আকীদা-বিশ্বাস, আমল-আখলাক যাই হোক না কেন সে নাজাত লাভ করবে। আর তাদের দলের বাইরের সমগ্র মানবজাতি কেবল জাহান্নামের ইন্ধন হওয়ার জন্যই সৃষ্টি হয়েছে। এ ভুল ধারণা দূর করার জন্য বলা হচ্ছে, আল্লাহর কাছে তোমাদের দল ও গোত্র বিভক্তিই আসল কথা নয় বরং সেখানে একমাত্র নির্ভরযোগ্য বিষয় হচ্ছে, তোমাদের ঈমান ও সৎকাজ। যে ব্যক্তি এগুলো নিয়ে আল্লাহর সামনে হাযির হবে, সে তার রবের কাছ থেকে প্রতিদান লাভ করবে। আল্লাহ সেখানে ফায়সালা করবেন মানুষের গুণাবলির ভিত্তিতে, জনসংখ্যার ভিত্তিতে নয়।

তারা নিজেদেরকে জান্নাতী বলে দাবী করে :

وَقَالُوْا لَنْ يَّدْخُلَ الْجَنَّةَ اِلَّا مَنْ كَانَ هُوْدًا اَوْ نَصَارٰىؕ تِلْكَ اَمَانِيُّهُمْؕ قُلْ هَاتُوْا بُرْهَانَكُمْ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ

তারা বলে, যারা ইয়াহুদি বা খ্রিস্টান, তারা ছাড়া আর কেউ-ই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, এটা তাদের আকাঙ্ক্ষা। বলো, যদি তোমরা সত্যবাদী হও, তবে তোমাদের প্রমাণ উপস্থিত করো। (সূরা বাক্বারা- ১১১)

তারা নিজেদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত মনে করে :

ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ قَالُوْا لَنْ تَمَسَّنَا النَّارُ اِلَّاۤ اَيَّامًا مَّعْدُوْدَاتٍ۪ وَغَرَّهُمْ فِيْ دِيْنِهِمْ مَّا كَانُوْا يَفْتَرُوْنَ

এটা এজন্য যে, তারা বলে, কয়েকটি নির্দিষ্ট দিন ছাড়া আগুন আমাদেরকে স্পর্শ করবে না। এভাবে তারা মনগড়া যা তৈরি করেছিল, তা তাদেরকে দ্বীনের ব্যাপারে ধোঁকায় ফেলে দিয়েছে। (সূরা আলে ইমরান- ২৪)

ব্যাখ্যা : তারা নিজেদেরকে আল্লাহর প্রিয়পাত্র মনে করে। কেননা তাদের মনে এ ভুল ধারণা বদ্ধমূল হয়ে গেছে যে, তারা যা কিছুই করুক না কেন জান্নাত তাদের নামে লিখে দেয়া হয়েছে, তারা অমুকের সন্তান, অমুকের উম্মত, অমুকের মুরীদ এবং অমুকের হাতে হাত রেখেছে, কাজেই জাহান্নামের আগুনের কোন ক্ষমতাই নেই তাদেরকে স্পর্শ করার। আর যদিও তাদেরকে কখনো জাহান্নামে দেয়া হয়, তাহলে তা হবে মাত্র কয়েক দিনের জন্য। গোনাহের যে দাগগুলো তাদের গায়ে লেগে গেছে সেগুলো মুছে ফেলে সেখান থেকে তাদেরকে সোজা জান্নাতে পাঠিয়ে দেয়া হবে। এ ধরনের চিন্তাধারা তাদেরকে এমনি নির্ভিক বানিয়ে দিয়েছিল, যার ফলে তারা নিশ্চিন্তে কঠিন থেকে কঠিনতর অপরাধ করে যেত, নিকৃষ্টতম গোনাহের কাজ করত, প্রকাশ্যে সত্যের বিরোধিতা করত; কিন্তু কখনো তাদের মনে সামান্যতম আল্লাহর ভয়ও জাগত না।

وَقَالُوْا لَنْ تَمَسَّنَا النَّارُ اِلَّاۤ اَيَّامًا مَّعْدُوْدَةًؕ قُلْ اَتَّخَذْتُمْ عِنْدَ اللهِ عَهْدًا فَلَنْ يُّخْلِفَ اللهُ عَهْدَهٗۤ اَمْ تَقُوْلُوْنَ عَلَى اللهِ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ

তারা বলে, নির্ধারিত কিছু দিন ব্যতীত (জাহান্নামের) অগ্নি আমাদেরকে স্পর্শ করবে না। বলো, তোমরা কি আল্লাহর নিকট হতে অঙ্গীকার নিয়েছ, ফলে আল্লাহ কখনই স্বীয় অঙ্গীকারের বিপরীত করবেন না? নাকি আল্লাহ সম্বন্ধে যা জান না, তাই বলছ? (সূরা বাক্বারা- ৮০)

তারা যাদুমন্ত্র ও তাগুতের উপর বিশ্বাস রাখত :

اَلَمْ تَرَ اِلَى الَّذِيْنَ اُوْتُوْا نَصِيْبًا مِّنَ الْكِتَابِ يُؤْمِنُوْنَ بِالْجِبْتِ وَالطَّاغُوْتِ وَيَقُوْلُوْنَ لِلَّذِيْنَ كَفَرُوْا هٰۤؤُلَآءِ اَهْدٰى مِنَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا سَبِيْلًا

তুমি কি তাদেরকে দেখনি যাদেরকে কিতাবের একাংশ দেয়া হয়েছিল, তারা যাদুমন্ত্র ও তাগুতের প্রতি ঈমান রাখত? আর তারা কাফিরদের সম্বন্ধে বলত, এদের পথই মুমিনদের চেয়ে বেশি উৎকৃষ্ট। (সূরা নিসা- ৫১)

ব্যাখ্যা : جِبْتٌ (জিব্ত) অর্থ অসত্য, অমূলক, ভিত্তিহীন ও অকল্যাণকর বস্তু ইত্যাদি। ইসলামের পরিভাষায় যাদু-টোনা, ভাগ্য গণনা, তন্ত্রমন্ত্র এসব কুসংস্কার ও অন্যান্য যাবতীয় কাল্পনিক ও বানোয়াট কথা ও ক্রিয়াকর্মকে জিব্ত বলা হয়েছে। অনুমানভিত্তিক সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য চিহ্নিত করার বিভিন্ন পদ্ধতিও জিব্ত এর অন্তর্ভুক্ত।

তারা ভুল আকিদা-বিশ্বাস থেকে ফিরতে চায় না :

وَقَالُوْا قُلُوْبُنَا غُلْفٌؕ بَلْ لَّعَنَهُمُ اللهُ بِكُفْرِهِمْ فَقَلِيْلًا مَّا يُؤْمِنُوْنَ

তারা বলে, আমাদের হৃদয় আচ্ছাদিত। বরং তাদের অবিশ্বাসের কারণে আল্লাহ তাদেরকে অভিসম্পাত করেছেন। ফলে তারা অতি অল্প সংখ্যকই ঈমান এনে থাকে। (সূরা বাক্বারা- ৮৮)

ব্যাখ্যা : অর্থাৎ আমাদের আকীদা-বিশ্বাস ও চিন্তা-চেতনা এতই পাকাপোক্ত যে, তোমরা যা কিছুই বল না কেন, আমাদের মনে তা কোন প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। যেসব লোকের মন-মস্তিষ্ক মূর্খতার বিদ্বেষে আচ্ছন্ন থাকে, তারাই এ ধরনের কথা বলে। উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া আকীদা-বিশ্বাস ও চিন্তার ভুল বলিষ্ঠ দলীল ও যুক্তির মাধ্যমে প্রমাণিত হওয়ার পরও তার উপর অবিচল থাকার চেয়ে বড় অন্যায় মানুষের আর কী হতে পারে?

তারা আখিরাতের বিনিময়ে দুনিয়ার সুযোগ লাভ করে :

اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ اشْتَرَوُا الْحَيَاةَ الدُّنْيَا بِالْاٰخِرَةِؗ فَلَا يُخَفَّفُ عَنْهُمُ الْعَذَابُ وَلَا هُمْ يُنْصَرُوْنَ

এরাই পরকালের বিনিময়ে পার্থিব জীবন ক্রয় করে নিয়েছে, অতএব তাদের দন্ড হালকা করা হবে না এবং তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না। (সূরা বাক্বারা- ৮৬)

তারা বিশ্বাসঘাতকতা করে :

وَلَا تَزَالُ تَطَّلِعُ عَلٰى خَآئِنَةٍ مِّنْهُمْ اِلَّا قَلِيْلًا مِّنْهُمْ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاصْفَحْؕ اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِيْنَ

(হে নবী) তুমি সর্বদা অল্প সংখ্যক ব্যতীত তাদের সকলকেই বিশ্বাসঘাতক হিসেবে দেখতে পাবে। সুতরাং তাদেরকে ক্ষমা করো এবং উপেক্ষা করো; নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্ম পরায়ণদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা মায়েদা- ১৩)

ব্যাখ্যা : এর একটি অর্থ হচ্ছে, এরা গোয়েন্দা হয়ে আসে। এরা নবী ﷺ ও মুসলিমদের মজলিসে ঘোরাফেরা করে। কোন গোপন কথা কানে আসলে তা মুসলিমদের শত্রুদের কাছে পৌঁছে দেয়। দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, এরা দোষারোপ ও নিন্দা করার জন্য তথ্য সংগ্রহ করে বেড়ায়। যেসব লোক সরাসরি নবী ﷺ ও মুসলিমদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি তাদের মধ্যে ভুল ধারণা সৃষ্টি করে। নবী ও ইসলাম সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার কাজে লিপ্ত হয়।

তারা তাওরাতের বিধান অমান্য করত :

اَلَمْ تَرَ اِلَى الَّذِيْنَ اُوْتُوْا نَصِيْبًا مِّنَ الْكِتَابِ يُدْعَوْنَ اِلٰى كِتَابِ اللهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ يَتَوَلّٰى فَرِيْقٌ مِّنْهُمْ وَهُمْ مُّعْرِضُوْنَ

আপনি কি তাদের ব্যাপারে লক্ষ্য করেছেন, যাদেরকে কিতাবের কিছু অংশ দেয়া হয়েছিল? তাদেরকে আল্লাহর কিতাবের দিকে ডাকা হয়েছিল, যাতে করে এটা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেয়। তারপরও তাদের একদল (এ থেকে) মুখ ফিরিয়ে নিল; মূলত তারাই অমান্যকারী। (সূরা আলে ইমরান- ২৩)

وَكَيْفَ يُحَكِّمُوْنَكَ وَعِنْدَهُمُ التَّوْرَاةُ فِيْهَا حُكْمُ اللهِ ثُمَّ يَتَوَلَّوْنَ مِنْ ۢبَعْدِ ذٰلِكَؕ وَمَاۤ اُولٰٓئِكَ بِالْمُؤْمِنِيْنَ

তারা কীভাবে আপনার উপর বিচার-ফায়সালার ভার অর্পণ করবে, অথচ তাদের কাছে রয়েছে তাওরাত? তাতে রয়েছে আল্লাহর নির্দেশ। তারপরও যারা পেছনে মুখ ফিরিয়ে নেয়; তারা কখনো মুমিন নয়। (সূরা মায়েদা- ৪৩)

তাদের মূর্খরা ধারণার উপর পরিচালিত হতো :

وَمِنْهُمْ اُمِّيُّوْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ الْكِتَابَ اِلَّاۤ اَمَانِيَّ وَاِنْ هُمْ اِلَّا يَظُنُّوْنَ

তাদের মধ্যে অনেক অশিক্ষিত লোক আছে, যারা প্রবৃত্তি ব্যতীত কোন গ্রন্থ সম্পর্কে অবগত নয়। আর তারা কেবল ধারণা করে থাকে। (সূরা বাক্বারা- ৭৮)

ব্যাখ্যা : তাদের জনগণের অবস্থা এমন ছিল যে, আল্লাহর কিতাবের কোন জ্ঞানই তাদের ছিল না। আল্লাহ তাঁর কিতাবে দ্বীনের কী কী মূলনীতি বর্ণনা করেছেন, শরীয়াত ও নৈতিকতার কী বিধান দিয়েছেন তার কিছুই তারা জানত না। এ জ্ঞান না থাকার কারণে তারা নিজেদের ইচ্ছা, আশা-আকাঙ্ক্ষা ও কল্পনানুসারে বিভিন্ন মনগড়া কথাকে দ্বীন মনে করত এবং এরই ভিত্তিতে গড়ে ওঠা মিথ্যা আশা বুকে নিয়ে জীবন ধারণ করত।

ইসমাঈলী বংশে জন্ম হওয়াতে মুহাম্মাদ ﷺ -কে মানত না :

اَمْ يَحْسُدُوْنَ النَّاسَ عَلٰى مَاۤ اٰتَاهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٖۚ فَقَدْ اٰتَيْنَاۤ اٰلَ اِبْرَاهِيْمَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَاٰتَيْنَاهُمْ مُّلْكًا عَظِيْمًا

তারা নাকি অন্যান্য মানব সন্তানদের ব্যাপারে বিদ্বেষ পোষণ করে, যাদেরকে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহ দান করেছেন। অথচ আমি তো ইবরাহীমের বংশধরকেও কিতাব ও হেকমত প্রদান করেছিলাম এবং তাদেরকে বিশাল রাজত্ব দান করেছিলাম। (সূরা নিসা- ৫৪)

তারা নবী ﷺ এর সাথে খারাপ আচরণ করত :

وَيَقُوْلُوْنَ سَمِعْنَا وَعَصَيْنَا وَاسْمَعْ غَيْرَ مُسْمَعٍ وَّرَاعِنَا لَيًّا ۢبِاَلْسِنَتِهِمْ وَطَعْنًا فِى الدِّيْنِؕ وَلَوْ اَنَّهُمْ قَالُوْا سَمِعْنَا وَاَطَعْنَا وَاسْمَعْ وَانْظُرْنَا لَكَانَ خَيْرًا لَّهُمْ وَاَقْوَمَ وَلٰكِنْ لَّعَنَهُمُ اللهُ بِكُفْرِهِمْ فَلَا يُؤْمِنُوْنَ اِلَّا قَلِيْلًا

তারা বলে, আমরা শ্রবণ করলাম ও অমান্য করলাম। তারা শুনেও না শুনার ভান করে এবং দ্বীনের প্রতি তাচ্ছিল্য করার উদ্দেশ্যে নিজেদের জিহবাকে কুঞ্চিত করে বলে, ‘রাইনা’। কিন্তু তারা যদি বলত, শ্রবণ করলাম ও আনুগত্য করলাম অথবা শ্রবণ করুন ও আমাদের প্রতি লক্ষ্য করুন, তবে এটাই তাদের জন্য ভালো হতো এবং সঙ্গতিপূর্ণ হতো। কিন্তু তাদের কুফরীর জন্য আল্লাহ তাদেরকে লানত করেছেন। ফলে তাদের অল্প সংখ্যকই ঈমান আনয়ন করে থাকে। (সূরা নিসা- ৪৬)

কোন বিপদ আসলে নবী ﷺ এর উপর দোষ চাপাত :

وَاِنْ تُصِبْهُمْ حَسَنَةٌ يَّقُوْلُوْا هٰذِهٖ مِنْ عِنْدِ اللهِۚ وَاِنْ تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌ يَّقُوْلُوْا هٰذِهٖ مِنْ عِنْدِكَؕ قُلْ كُلٌّ مِّنْ عِنْدِ اللهِؕ فَمَالِ هٰۤؤُلَآءِ الْقَوْمِ لَا يَكَادُوْنَ يَفْقَهُوْنَ حَدِيْثًا

যদি তাদের উপর কোন কল্যাণ পতিত হয় তবে তারা বলে, এটা আল্লাহর নিকট হতে। আর যদি তাদের উপর কোন অকল্যাণ পতিত হয় তবে তারা বলে, এটা তোমার নিকট হতে। (তাদেরকে) বলো, সবকিছুই আল্লাহর নিকট হতে। এ সম্প্রদায়ের কী হলো যে, এরা একেবারেই কোন কথা বুঝে না। (সূরা নিসা- ৭৮)

নবী ﷺ এর ফায়সালা তাদের পক্ষে হলে মানত নতুবা অমান্য করত :

يُحَرِّفُوْنَ الْكَلِمَ مِنْ ۢبَعْدِ مَوَاضِعِهٖۚ يَقُوْلُوْنَ اِنْ اُوْتِيْتُمْ هٰذَا فَخُذُوْهُ وَاِنْ لَّمْ تُؤْتَوْهُ فَاحْذَرُوْا

তারা আল্লাহর কালামকে তার সঠিক স্থান হতে বিচ্যুত করে বলত যে, এ নবী যদি তোমাদেরকে এরকম ফায়সালা দেন, তবে তোমরা তা গ্রহণ করবে। আর যদি এর বিপরীত কোন ফায়সালা দেন তাহলে একে এড়িয়ে যাবে। (সূরা মায়েদা- ৪১)

ব্যাখ্যা : তাওরাতের যেসব বিধান তাদের মনপূত নয়, সেগুলোর মধ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে রদবদল করে। শব্দের অর্থ পরিবর্তন করে সেখান থেকে নিজেদের ইচ্ছামতো বিধান তৈরি করে। একদা খায়বারের কোন ইয়াহুদি পরিবারের দু’জন বিবাহিত পুরুষ ও নারী যিনা করল। তাওরাতে এর শাস্তি ‘‘হত্যা’’। তারা মদিনায় এসে রাসূল ﷺ কে জিজ্ঞেস করল, আপনার নিকট এর বিধান কী? তিনি বললেন, ‘‘হত্যা’’। তারা বলল, তাওরাতের বিধান তো এরূপ নয়। বরং ৪০ বেত এবং মুখে কালি মেখে গাধার পিঠে চড়িয়ে শহরে ঘুরানো। জিবরাঈল (আঃ) এসে রাসূল ﷺ কে বললেন, এরা মিথ্যা কথা বলছে। আপনি ইয়াহুদি আলিম ইবনে সুরিয়াকে জিজ্ঞেস করুন। তাকে জিজ্ঞেস করা হলে সে বলল, তাওরাতেও মৃত্যু দন্ডেরই বিধান রয়েছে। অতঃপর রাসূল ﷺ রায় দিলেন, উভয়কে মসজিদের পাশে পাথর মেরে হত্যা করা হোক। তখন এ পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত আয়াতটি নাযিল হয়।

নবী ﷺ কে মানার ক্ষেত্রে মিথ্যা শর্ত জুড়ে দিত :

اَلَّذِيْنَ قَالُوْاۤ اِنَّ اللهَ عَهِدَ اِلَيْنَاۤ اَلَّا نُؤْمِنَ لِرَسُوْلٍ حَتّٰى يَاْتِيَنَا بِقُرْبَانٍ تَاْكُلُهُ النَّارُ قُلْ قَدْ جَآءَكُمْ رُسُلٌ مِّنْ قَبْلِيْ بِالْبَيِّنَاتِ وَبِالَّذِيْ قُلْتُمْ فَلِمَ قَتَلْتُمُوْهُمْ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ

যারা বলে, স্বয়ং আল্লাহই তো আমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন- যেন আমরা কোন রাসূলের উপর ঈমান না আনি, যতক্ষণ না সে আমাদের জন্য এমন একটা কুরবানী এনে হাযির করবে, যাকে গায়েব থেকে আসা এক আগুন এসে খেয়ে ফেলবে। হে মুহাম্মাদ! তুমি তাদেরকে বলে দাও, হ্যাঁ! আমার আগেও তোমাদের কাছে অনেক নবী-রাসূল এসেছে। তারা সবাই উজ্জল নিদর্শন নিয়েই এসেছিল। তোমরা আজ যে কথা বলছ, (ইতোপূর্বে) তাও তো তারা নিয়ে এসেছিল। তা সত্ত্বেও তোমরা তাদেরকে হত্যা করলে কেন? যদি তোমরা এতই সত্যবাদী হয়ে থাক। (সূরা আলে ইমরান- ১৮৩)

কুরআনকে মানতে অস্বীকার করত :

وَاِذَا قِيْلَ لَهُمْ اٰمِنُوْا بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ قَالُوْا نُؤْمِنُ بِمَاۤ اُنْزِلَ عَلَيْنَا وَيَكْفُرُوْنَ بِمَا وَرَآءَهٗۗ وَهُوَ الْحَقُّ مُصَدِّقًا لِّمَا مَعَهُمْ

যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তার উপর ঈমান আনয়ন করো। তখন তারা বলে, যা আমাদের প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে আমরা তার প্রতি ঈমান এনেছি; এছাড়া যা রয়েছে তা তারা অবিশ্বাস করে। অথচ এটা সত্য যে, তাদের সাথে যা রয়েছে এটা (কুরআন) তারই সত্যায়নকারী। (সূরা বাক্বারা- ৯১)

وَلَمَّا جَآءَهُمْ كِتَابٌ مِّنْ عِنْدِ اللهِ مُصَدِّقٌ لِّمَا مَعَهُمْ وَكَانُوْا مِنْ قَبْلُ يَسْتَفْتِحُوْنَ عَلَى الَّذِيْنَ كَفَرُوْاۚ فَلَمَّا جَآءَهُمْ مَّا عَرَفُوْا كَفَرُوْا بِهٖ فَلَعْنَةُ اللهِ عَلَى الْكَافِرِيْنَ

যখন আল্লাহর পক্ষ হতে তাদের নিকট যা আছে তার সত্যতার সমর্থক গ্রন্থ (কুরআন) উপস্থিত হলো, যদিও তারা ইতোপূর্বে কাফিরদের বিরুদ্ধে এর সাহায্যে বিজয় প্রার্থনা করত। অতঃপর যখন তাদের নিকট সেই পরিচিত কিতাব আসল, তখন তারা তাকে অস্বীকার করল। সুতরাং এরকম কাফিরদের উপর আল্লাহর লানত বর্ষিত হোক। (সূরা বাক্বারা- ৮৯)

ব্যাখ্যা : মদিনায় আসার পর নবী ﷺ সর্বপ্রথম ইয়াহুদিদের সাথে সৎ প্রতিবেশী সুলভ জীবন যাপন করার জন্য পারস্পরিক সাহায্য সহযোগিতার চুক্তি করেছিলেন। তাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য তিনি নিজের সামর্থ্যানুযায়ী পূর্ণ প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। তাছাড়া ধর্মীয় দিক দিয়েও তিনি ইয়াহুদিদেরকে মুশরিকদের তুলনায় নিজের অনেক কাছের মনে করতেন। প্রত্যেক ব্যাপারেই তিনি মুশরিকদের মুকাবিলায় আহলে কিতাবের মতকে অগ্রাধিকার দিতেন। কিন্তু নবী ﷺ নির্ভেজাল তাওহীদ ও সচ্চরিত্র নীতি সংক্রান্ত যেসব কথা প্রচার করছিলেন, গোমরাহীর বিরুদ্ধে যে সমালোচনা করছিলেন এবং ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য যে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছিলেন, ইয়াহুদি উলামা ও মাশায়েখরা তা একটুও পছন্দ করত না। এ নতুন আন্দোলন যাতে কোনভাবেই সাফল্য লাভ করতে না পারে, সেজন্য তারা অনবরত ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছিল।

তারা তাদের আলিমদেরকে প্রভু মনে করত :

اِتَّخَذُوْاۤ اَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ اَرْبَابًا مِّنْ دُوْنِ اللهِ وَالْمَسِيْحَ ابْنَ مَرْيَمَۚ وَمَاۤ اُمِرُوْاۤ اِلَّا لِيَعْبُدُوْاۤ اِلٰهًا وَّاحِدًاۚ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ سُبْحَانَهٗ عَمَّا يُشْرِكُوْنَ

তারা আল্লাহ ব্যতীত তাদের আলিম ও সংসারবিরাগীদেরকে তাদের প্রভু হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং মারইয়ামের পুত্র মাসীহকেও। অথচ তারা এক ইলাহের ইবাদাত করার জন্যই আদিষ্ট হয়েছিল। (কেননা) তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই। তারা যাকে শরীক করে তা হতে তিনি কতই না পবিত্র।

(সূরা তাওবা- ৩১)

ব্যাখ্যা : আদী ইবনে হাতেম ছিলেন খ্রিস্টান। ইসলাম গ্রহণ করার সময় তিনি নবী ﷺ কে কয়েকটি প্রশ্ন করেন। এর মধ্যে একটি ছিল, কুরআনের এ আয়াতটিতে আমাদের বিরুদ্ধে আমাদের উলামা ও দরবেশদেরকে উপাস্য বানিয়ে নেয়ার যে দোষারোপ করা হয়েছে তার প্রকৃত তাৎপর্য কী? জবাবে নবী ﷺ বলেন, তারা যেগুলোকে হারাম বলত তোমরাও সেগুলোকে হারাম বলে মেনে নিতে, এ কথা কি সত্য নয়? জবাবে আদী বলেন, হ্যাঁ। রাসূল ﷺ বলেন, এটিই হচ্ছে তাদেরকে প্রভু বানিয়ে নেয়া। সনদ ছাড়াই যারা মানব জীবনের জন্য জায়েয ও নাজায়েযের সীমানা নির্ধারণ করে, তারা নিজেদের ধারণা মতে নিজেরাই আল্লাহর মর্যাদায় সমাসীন হয়। আর যারা শরীয়াতের বিধান রচনার অধিকার তাদের জন্য স্বীকার করে নেয়, মূলত তারা তাদেরকে প্রভুতে পরিণত করে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন