hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

তাফসীরুল কুরআন বিল কুরআন

লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

৪০২
অধ্যায়- ২০ : জান্নাতীদের গুণাবলি
জান্নাতীদের গুণাবলি সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলার বাণী :

وَعِبَادُ الرَّحْمٰنِ الَّذِيْنَ يَمْشُوْنَ عَلَى الْاَرْضِ هَوْنًا وَّاِذَا خَاطَبَهُمُ الْجَاهِلُوْنَ قَالُوْا سَلَامًا وَالَّذِيْنَ يَبِيْتُوْنَ لِرَبِّهِمْ سُجَّدًا وَّقِيَامًا وَالَّذِيْنَ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا اصْرِفْ عَنَّا عَذَابَ جَهَنَّمَ اِنَّ عَذَابَهَا كَانَ غَرَامًا اِنَّهَا سَآءَتْ مُسْتَقَرًّا وَّمُقَامًا وَالَّذِيْنَ اِذَاۤ اَنْفَقُوْا لَمْ يُسْرِفُوْا وَلَمْ يَقْتُرُوْا وَكَانَ بَيْنَ ذٰلِكَ قَوَامًا وَالَّذِيْنَ لَا يَدْعُوْنَ مَعَ اللهِ اِلٰهًا اٰخَرَ وَلَا يَقْتُلُوْنَ النَّفْسَ الَّتِيْ حَرَّمَ اللهُ اِلَّا بِالْحَقِّ وَلَا يَزْنُوْنَ وَمَنْ يَّفْعَلْ ذٰلِكَ يَلْقَ اَثَامًا يُضَاعَفْ لَهُ الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيَخْلُدْ فِيْهٖ مُهَانًا اِلَّا مَنْ تَابَ وَاٰمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَاُولٰٓئِكَ يُبَدِّلُ اللهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍؕ وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا وَمَنْ تَابَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَاِنَّهٗ يَتُوْبُ اِلَى اللهِ مَتَابًا وَالَّذِيْنَ لَا يَشْهَدُوْنَ الزُّوْرَ وَاِذَا مَرُّوْا بِاللَّغْوِ مَرُّوْا كِرَامًا وَالَّذِيْنَ اِذَا ذُكِّرُوْا بِاٰيَاتِ رَبِّهِمْ لَمْ يَخِرُّوْا عَلَيْهَا صُمًّا وَّعُمْيَانًا وَالَّذِيْنَ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ اَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ اَعْيُنٍ وَّاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِيْنَ اِمَامًا اُولٰٓئِكَ يُجْزَوْنَ الْغُرْفَةَ بِمَا صَبَرُوْا وَيُلَقَّوْنَ فِيْهَا تَحِيَّةً وَّسَلَامًا خَالِدِيْنَ فِيْهَا حَسُنَتْ مُسْتَقَرًّا وَّمُقَامًا

রহমানের বান্দা (জান্নাতী) তো তারাই, যারা পৃথিবীতে বিনয়ের সাথে চলাফেরা করে। যখন অজ্ঞ ব্যক্তিরা তাদেরকে সম্বোধন করে তখন তারা বলে, সালাম। যারা তাদের প্রতিপালকের জন্য সিজদারত ও দন্ডায়মান অবস্থায় রাত্রিযাপন করে। যারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে দূরে রাখুন, কেননা এর শাস্তি ভীষণ যন্ত্রণাদায়ক। (জেনে রেখো) অবশ্যই জাহান্নাম আশ্রয়স্থল ও বাসস্থানের জন্য খুবই নিকৃষ্ট। (রহমানের বান্দাদের আরো বৈশিষ্ট্য হচ্ছে) যখন তারা ব্যয় করে, তখন অপচয় করে না এবং কৃপণতাও করে না; বরং তারা মধ্যমপন্থা অবলম্বন করে। যারা আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্যকে ডাকে না। যারা ন্যায়সঙ্গত কারণ ছাড়া আল্লাহ যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন তাকে হত্যা করে না এবং যারা ব্যভিচার করে না। যে এরূপ করবে সে কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হবেই। কিয়ামতের দিন তার শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে এবং সেখানে সে অনন্তকাল অপদস্থ হতে থাকবে। তবে তারা নয় যারা তাওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে; আল্লাহ এমন ব্যক্তির গোনাহসমূহকে নেকী দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। (কেননা) আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু। আর যে তাওবা করে এবং নেক কাজ করে, সে তো প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর দিকেই প্রত্যাবর্তন করে। (রহমানের বান্দাদের আরো বৈশিষ্ট্য হচ্ছে) যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না। যারা অনর্থক বিষয়ের সম্মুখীন হলে সম্মানের সাথে তা পরিহার করে। যাদেরকে তাদের প্রতিপালকের আয়াত স্মরণ করিয়ে দিলে বধির ও অন্ধের মতো আচরণ করে না এবং যারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তান দান করুন, যাদেরকে দেখলে আমাদের চোখ জুড়ায়। আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাক্বীদের ইমাম বানিয়ে দিন। এ সকল লোকদেরকে তাদের ধৈর্যের কারণে সুউচ্চ কক্ষ দেয়া হবে এবং তাদেরকে সেখানে সম্ভাষণ জানানো হবে অভিবাদন ও সালাম সহকারে; সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। আর তা কতই না উত্তম আশ্রয়স্থল ও সুন্দর আবাসস্থল!

(সূরা ফুরক্বান, ৬৩–৭৬)

ব্যাখ্যা : তারা কোন লোকের সাথে অশালীন আচরণ করে না এবং দোষারোপের জবাবে দোষারোপ করে না। তারা প্রত্যেক বেহুদাপনার জবাবে বেহুদাপনায় লিপ্ত হয় না। বরং যারাই তাদের সাথে এসব আচরণ করে, তাদেরকে সালাম দিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে চলে যায়। তাদের রাত আরাম-আয়েশে, নাচ-গানে, খেলতামাশায়, আড্ডাবাজী ও চুরি-চামারিতে অতিবাহিত হয় না। তারা জাহেলিয়াতের এসব পরিচিত খারাপ কাজগুলোর পরিবর্তে সমাজে এমনসব লোকদের মতো সৎকর্ম সম্পাদন করে, যাদের রাত কাটে আল্লাহর দরবারে দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে দু‘আ ও ইবাদাত করার মধ্য দিয়ে। ইবাদাত তাদের মধ্যে কোন অহংকারের জন্ম দেয় না। অধিক ইবাদাতের ফলে আগুন তাদেরকে স্পর্শ করতে পারবে না- এ ধরনের আত্মগর্বও তাদের মনে সৃষ্টি হয় না। বরং নিজেদের সমস্ত সৎকাজ ও ইবাদাত থাকা সত্ত্বেও তারা এ ভয়ে কাঁপতে থাকে যে, এসব আমল কবুল হলো কি না? আবার তারা আমলের বিনিময়ে জান্নাত ক্রয় করে নেয়ার অহংকারও করে না। বরং তারা নিজেদের মানবিক দুর্বলতার কথা চিন্তা করে সর্বদা আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহের উপর ভরসা করে। তাদের অবস্থা এ নয় যে, আরাম-আয়েশ, বিলাসিতা, মদ-জুয়া, বন্ধুবান্ধব, মেলা ও বিয়ে-শাদীর পেছনে অথবা নিজেদের সামর্থ্যের চেয়ে অনেক বেশি করে নিজেকে উপস্থাপনের জন্য খাবার-দাবার, পোশাক-পরিচ্ছদ, বাড়ি-গাড়ি, সাজ-গোজ ইত্যাদির পেছনে অঢেল সম্পদ ব্যয় করে চলে। আবার তারা এমন অর্থলোভীর মতোও নয় যে, যারা প্রতিটি পয়সা গুণে গুণে জমা রাখে; যারা নিজেও ভালোভাবে খায় না, নিজের সামর্থ্যানুযায়ী নিজের ছেলে-মেয়ে ও পরিবার-পরিজনের প্রয়োজনও সঠিকভাবে পূর্ণ করে না এবং কোন ভালো কাজে প্রাণ খুলে কোনকিছু ব্যয়ও করে না। বরং তারা ভারসাম্য রক্ষা করে চলে, যা আল্লাহর প্রকৃত সৎ বান্দাদের প্রধান বৈশিষ্ট্য।

তারা কোন মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না। এমন কোন জিনিসকে প্রকৃত ঘটনা হিসেবে গণ্য করে না, যাকে তারা সত্য বলে জানে না। তারা দাঁড়িয়ে মিথ্যাচার দেখে না এবং তা দেখার সংকল্পও করে না। তারা এমন লোক নয়, যারা আল্লাহর আয়াত শুনে একটুও নড়ে না। বরং তারা এর দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়। সংশ্লিষ্ট আয়াতগুলোতে যেসব নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তারা তা মেনে চলে। যা ফরয করা হয়েছে, তা অবশ্যই পালন করে। যে কাজের নিন্দা করা হয়েছে, তা থেকে বিরত থাকে। যে আযাবের ভয় দেখানো হয়েছে, তার কল্পনা করতেই তাদের হৃদয় কেঁপে ওঠে। তারা দু‘আ করার সময় কেবল নিজের জন্য দু‘আ করে না পরিবারের সকলের জন্যও দু‘আ করে। তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! তাদেরকে ঈমান ও সৎকাজের তাওফীক দান করো এবং পরিচ্ছন্ন চারিত্রিক গুণাবলির অধিকারী করো। কারণ একজন মুমিন তার স্ত্রী ও সন্তানদের দৈহিক সৌন্দর্য ও আরাম-আয়েশ থেকে নয়, বরং সদাচার ও সচ্চরিত্রতা থেকেই মানসিক প্রশান্তি লাভ করে। দুনিয়ায় যারা তার কাছে সবচেয়ে প্রিয়, তাদেরকে জাহান্নামের ইন্ধনে পরিণত হতে দেখার চেয়ে বেশি কষ্টকর বিষয় আর কী হতে পারে? তারা এমন লোক, যারা ধন-দৌলত ও মাহাত্ম্যের ক্ষেত্রে নয় বরং আল্লাহভীতি ও সৎকর্মশীলতার ক্ষেত্রে পরস্পরের অগ্রবর্তী হওয়ার চেষ্টা করে।

قَدْ اَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ اَ لَّذِيْنَ هُمْ فِيْ صَلَاتِهِمْ خَاشِعُوْنَ وَالَّذِيْنَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُوْنَ وَالَّذِيْنَ هُمْ لِلزَّكَاةِ فَاعِلُوْنَ وَالَّذِيْنَ هُمْ لِفُرُوْجِهِمْ حَافِظُوْنَ اِلَّا عَلٰۤى اَزْوَاجِهِمْ اَوْ مَا مَلَكَتْ اَيْمَانُهُمْ فَاِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُوْمِيْنَ فَمَنِ ابْتَغٰى وَرَآءَ ذٰلِكَ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْعَادُوْنَ وَالَّذِيْنَ هُمْ لِاَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُوْنَ وَالَّذِيْنَ هُمْ عَلٰى صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُوْنَ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْوَارِثُوْنَ اَ لَّذِيْنَ يَرِثُوْنَ الْفِرْدَوْسَ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ

অবশ্যই ঐ সকল ঈমানদারগণ সফলতা লাভ করবে, যারা বিনয়ের সাথে নিজেদের সালাত আদায় করে, যারা অনর্থক বিষয় থেকে দূরে থাকে, যারা সঠিকভাবে যাকাত দিয়ে থাকে এবং যারা নিজেদের লজ্জাস্থানকে হেফাজত করে, তবে তাদের স্ত্রী অথবা মালিকানাভুক্ত দাসীদের ব্যতীত; (কেননা) এতে তারা তিরস্কৃত হবে না। আর যারা এদেরকে বাদ দিয়ে অন্য (কাউকে) কামনা করে, তারাই সীমালঙ্ঘনকারী। (আর তারাও সফলতা লাভ করবে) যারা নিজেদের আমানত ও অঙ্গীকার রক্ষা করে এবং যারা নিজেদের সালাতের হেফাজত করে- তারাই হবে উত্তরাধিকারী। তারা জান্নাতুল ফিরদাউসের উত্তরাধিকারী হবে, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। (সূরা মু’মিনূন, ১–১১)

اَلَّذِيْنَ يُوْفُوْنَ بِعَهْدِ اللهِ وَلَا يَنْقُضُوْنَ الْمِيْثَاقَ وَالَّذِيْنَ يَصِلُوْنَ مَاۤ اَمَرَ اللهُ بِهٖۤ اَنْ يُّوْصَلَ وَيَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ وَيَخَافُوْنَ سُوْٓءَ الْحِسَابِ وَالَّذِيْنَ صَبَرُوا ابْتِغَآءَ وَجْهِ رَبِّهِمْ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاَنْفَقُوْا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَّعَلَانِيَةً وَّيَدْرَءُوْنَ بِالْحَسَنَةِ السَّيِّئَةَ اُولٰٓئِكَ لَهُمْ عُقْبَى الدَّارِ جَنَّاتُ عَدْنٍ يَّدْخُلُوْنَهَا وَمَنْ صَلَحَ مِنْ اٰبَآئِهِمْ وَاَزْوَاجِهِمْ وَذُرِّيَّاتِهِمْ وَالْمَلَآئِكَةُ يَدْخُلُوْنَ عَلَيْهِمْ مِّنْ كُلِّ بَابٍ سَلَامٌ عَلَيْكُمْ بِمَا صَبَرْتُمْ فَنِعْمَ عُقْبَى الدَّارِ

যারা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করে, যারা চুক্তি ভঙ্গ করে না এবং যারা সেসব সম্পর্ক ঠিক রাখে, যা ঠিক রাখার জন্য আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন। আর যারা নিজ প্রতিপালককে এবং কঠিন হিসাবকে ভয় করে, যারা তাদের প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের আশায় ধৈর্যধারণ করে, যারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে, যারা আমার দেয়া রিযিক হতে গোপনে ও প্রকাশ্যে দান করে, যারা ভালো দিয়ে মন্দকে দূরীভূত করে- তাদের জন্যই রয়েছে শুভ পরিণাম। (আর তা হচ্ছে) চিরস্থায়ী জান্নাত; সেখানে তারা প্রবেশ করবে এবং তাদের মাতা-পিতা, স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে তারাও। আর প্রত্যেক দরজা দিয়ে তাদের নিকট ফেরেশতারা প্রবেশ করবে। তারা বলবে, তোমাদের উপর সালাম (শান্তি বর্ষিত হোক)। কেননা তোমরা ধৈর্যধারণ করেছিলে। (অতএব লক্ষ করো) পরকালের এ গৃহ কতই না উত্তম!

(সূরা রা‘দ, ২০–২৪)

জান্নাতীদের আরো পরিচয় হচ্ছে :

اَلَّذِيْنَ هُمْ عَلٰى صَلَاتِهِمْ دَآئِمُوْنَ وَالَّذِيْنَ فِۤيْ اَمْوَالِهِمْ حَقٌّ مَّعْلُوْمٌ لِلسَّآئِلِ وَالْمَحْرُوْمِ وَالَّذِيْنَ يُصَدِّقُوْنَ بِيَوْمِ الدِّيْنِ وَالَّذِيْنَ هُمْ مِّنْ عَذَابِ رَبِّهِمْ مُّشْفِقُوْنَ اِنَّ عَذَابَ رَبِّهِمْ غَيْرُ مَاْمُوْنٍ وَالَّذِيْنَ هُمْ لِفُرُوْجِهِمْ حَافِظُوْنَ اِلَّا عَلٰۤى اَزْوَاجِهِمْ اَوْ مَا مَلَكَتْ اَيْمَانُهُمْ فَاِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُوْمِيْنَ فَمَنِ ابْتَغٰى وَرَآءَ ذٰلِكَ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْعَادُوْنَ وَالَّذِيْنَ هُمْ لِاَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُوْنَ وَالَّذِيْنَ هُمْ بِشَهَادَاتِهِمْ قَآئِمُوْنَ وَالَّذِيْنَ هُمْ عَلٰى صَلَاتِهِمْ يُحَافِظُوْنَ اُولٰٓئِكَ فِيْ جَنَّاتٍ مُّكْرَمُوْنَ

যারা নিজেদের সালাতে সর্বদা কায়েম থাকে। (যারা মনে করে) তাদের নিজেদের সম্পদে ভিক্ষুক ও বঞ্চিতদের হক রয়েছে। যারা কিয়ামতের দিনকে সত্য বলে বিশ্বাস করে। যারা তাদের প্রতিপালকের শাস্তি সম্পর্কে ভীত–সন্ত্রস্ত, (প্রকৃতপক্ষে) তাদের প্রতিপালকের শাস্তি থেকে নির্ভয় হওয়া যায় না। যারা তাদের স্ত্রী অথবা মালিকানাভুক্ত দাসী ব্যতীত নিজেদের লজ্জাস্থানকে হেফাজত করে, কেননা এতে তারা তিরস্কৃত হবে না। যারা এদেরকে বাদ দিয়ে অন্যকে কামনা করে তারাই সীমালঙ্ঘনকারী হবে। যারা নিজেদের আমানত এবং ওয়াদা রক্ষা করে। যারা যথাযথভাবে সাক্ষ্য প্রদান করে। আর যারা নিজেদের সালাতের প্রতি যত্নবান- তারা সম্মানের সাথে জান্নাতে অবস্থান করবে। (সূরা মা‘আরিজ, ২৩–৩৫)

জান্নাতী বান্দারা চার প্রকার :

وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَالرَّسُوْلَ فَاُولٰٓئِكَ مَعَ الَّذِيْنَ اَنْعَمَ اللهُ عَلَيْهِمْ مِّنَ النَّبِيِّيْنَ وَالصِّدِّيْقِيْنَ وَالشُّهَدَآءِ وَالصَّالِحِيْنَۚ وَحَسُنَ اُولٰٓئِكَ رَفِيْقًا

যারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে তারা সকলেই নবী, সিদ্দীক, শহীদ ও সালেহীনদের অন্তর্ভুক্ত; যারা নিয়ামতপ্রাপ্তদের সাথে থাকবে এবং তারাই একে অপরের উত্তম সঙ্গী হবে। (সূরা নিসা– ৬৯)

ব্যাখ্যা : সিদ্দিকীন : যারা আল্লাহর সকল বিধিবিধান মেনে চলেন এবং সৎকর্মে অগ্রগামী থাকেন। তাদেরকে আউলিয়াও বলা হয়।

শুহাদা : যারা আল্লাহর পথে শাহাদাতবরণ করেন।

সালেহীন : যারা ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নাতে মুয়াক্কাদার উপর আমল করেন এবং সকল প্রকার কবীরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকেন, তারা হলেন সাধারণ মুসলিম।

জান্নাতীদের আরো গুণ হচ্ছে- দ্বীনের হেফাজত করা :

وَاُزْلِفَتِ الْجَنَّةُ لِلْمُتَّقِيْنَ غَيْرَ بَعِيْدٍ هٰذَا مَا تُوْعَدُوْنَ لِكُلِّ اَوَّابٍ حَفِيْظٍ مَنْ خَشِيَ الرَّحْمٰنَ بِالْغَيْبِ وَجَآءَ بِقَلْبٍ مُّنِيْبٍ اُدْخُلُوْهَا بِسَلَامٍؕ ذٰلِكَ يَوْمُ الْخُلُوْدِ

জান্নাতকে নিকটবর্তী করা হবে মুত্তাক্বীদের জন্য, দূরত্বহীনভাবে। (বলা হবে) এ হলো সেই জান্নাত, যার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল প্রত্যেক আল্লাহ অভিমুখী ও হেফাজতকারীদের জন্য। যারা না দেখে দয়াময় (আল্লাহ) কে ভয় করে এবং (আল্লাহ) অভিমুখী অন্তর নিয়ে উপস্থিত হয়। (তাদেরকে বলা হবে) তোমরা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করো, এটা হলো চিরকাল অবস্থানের দিন। (সূরা ক্বাফ, ৩১–৩৪)

ব্যাখ্যা : اَوَّابٌ (আওয়াব) শব্দটি ব্যাপক অর্থবহ। এর অর্থ এমন ব্যক্তি যে নাফরমানি এবং প্রবৃত্তি চরিতার্থ করার পথ পরিহার করে আনুগত্য এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের পথ অবলম্বন করেছে। আল্লাহর পছন্দ নয় এমন প্রতিটি জিনিস পরিত্যাগ করে এবং আল্লাহ যা পছন্দ করেন তা গ্রহণ করে। আনুগত্যের পথ থেকে পা সামান্য বিচ্যুত হলেই সে বিচলিত হয়ে পড়ে এবং তাওবা করে আনুগত্যের পথে ফিরে আসে। যে অধিক মাত্রায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজের সমস্ত ব্যাপারে তাঁর স্মরণাপন্ন হয়।

حَفِيْظٌ (হাফিয) শব্দটির অর্থ রক্ষাকারী। এর দ্বারা এমন লোককে বুঝানো হয়েছে, যে আল্লাহ নির্ধারিত সীমারেখা তথা তাঁর ফরয এবং হারামসমূহ রক্ষা করে। যে আল্লাহর পক্ষ থেকে তার উপর আরোপিত অধিকারসমূহ সংরক্ষণ করে। ঈমান এনে তার রবের সাথে যে চুক্তি ও অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয়েছে তা রক্ষা করে। যে তার শক্তি, শ্রম ও সাধনার পাহারাদারী করে, যাতে এসবের কোনটি ভ্রান্ত কাজে নষ্ট না হয়। যে তাওবা করে তা রক্ষা করে। যে সর্বাবস্থায় আত্মসমালোচনা করতে থাকে যে, সে তার কথা ও কাজে কোথাও তার রবের নাফরমানি করছে কি না। সে কোথাও পরম দয়ালু আল্লাহর দেখা পেত না, তা সত্ত্বেও তাঁর নাফরমানি করতে ভয় পায়। প্রকাশ্যে দৃষ্টিগোচর হয় এমনসব শক্তি ও সত্তার তুলনায় তার মনে অদেখা রহমানের ভয় অধিক প্রবল ছিল। তিনি ‘রহমান’ বা দয়ালু এ কথা জানা সত্ত্বেও তাঁর রহমতের ভরসায় সে গোনাহের কাজে লিপ্ত হয়নি, বরং সবসময়ই তাঁর অসন্তুষ্টিকে ভয় পেয়েছে। শুধু শাস্তির আশঙ্কায় মুমিন বান্দার অন্তরে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি হয় না। বরং আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব, বড়ত্ব ও মর্যাদার অনুভূতি সবসময় তার মনে এক ভয়ানক ভীতিভাব জাগিয়ে রাখে।

مُنِيْبٌ (মুনীব) শব্দটির অর্থ একদিকে মুখ করা এবং বার বার সেদিকেই ফিরে যাওয়া। قَلْبٌ مُّنِيْبٌ (ক্বালবুম মুনীব) অর্থ এমন হৃদয়, যা সব দিক থেকে এক আল্লাহর দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। অতঃপর সারা জীবন তার উপর যে পরিস্থিতিই আসুক না কেন তাঁর দিকেই ফিরে এসেছে। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর কাছে প্রকৃত সম্মানের অধিকারী সে ব্যক্তি যে শুধু মুখে নয় বরং পূর্ণ নিষ্ঠার সাথে সরল মনে তাঁর একান্ত আপনজন হয়ে যায়। যে গুণাবলি থাকলে কোন ব্যক্তি জান্নাত লাভের উপযুক্ত হয় এসব আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা সে গুণাবলি বর্ণনা করেছেন। ঐগুলো হচ্ছে, (১) তাক্বওয়া, (২) আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন, (৩) আল্লাহর পথে নিজের সম্পর্কের স্বযত্ন পাহারাদারী, (৪) আল্লাহকে না দেখে এবং তাঁর ক্ষমা পরায়ণতায় বিশ্বাসী হয়েও তাঁকে ভয় করা এবং (৫) অনুরক্ত মন নিয়ে আল্লাহর কাছে পৌঁছা অর্থাৎ মৃত্যু পর্যন্ত অনুরক্ত আচরণ করে যাওয়া।

জানুমাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করা :

يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا هَلْ اَدُلُّكُمْ عَلٰى تِجَارَةٍ تُنْجِيْكُمْ مِّنْ عَذَابٍ اَلِيْمٍ تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَرَسُوْلِه وَتُجَاهِدُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ بِاَمْوَالِكُمْ وَاَنْفُسِكُمْؕ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ يَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ وَيُدْخِلْكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِيْ جَنَّاتِ عَدْنٍؕ ذٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ

হে ঈমানদারগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি ব্যবসার কথা বলে দেব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দেবে? আর তা হলো, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনবে এবং নিজেদের সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা জানতে। এর ফলে আল্লাহ তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়ে যাবে। সেটা স্থায়ী জান্নাত, যাতে রয়েছে উত্তম বাসস্থান। আর এটাই বিরাট সফলতা। (সূরা সাফ, ১০–১২)

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করা :

وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ يُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَاؕ وَذٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ

যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে, তিনি তাকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত থাকবে। সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে। আর এটাই মহাসাফল্য। (সূরা নিসা– ১৩)

দ্বীনের উপর অটল থাকা :

اِنَّ الَّذِيْنَ قَالُوْا رَبُّنَا اللهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوْا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَآئِكَةُ اَلَّا تَخَافُوْا وَلَا تَحْزَنُوْا وَاَبْشِرُوْا بِالْجَنَّةِ الَّتِيْ كُنْتُمْ تُوْعَدُوْنَ

যারা বলে– আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, অতঃপর এ কথার উপর অনড় থাকে; নিশ্চয় তাদের নিকট ফেরেশতা নাযিল হয়ে বলে, তোমরা ভয় করো না এবং কোন চিন্তাও করো না। তোমরা সেই জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ করো, যার ওয়াদা তোমাদেরকে দেয়া হয়েছিল। (সূরা হা-মীম সাজদা– ৩০)

ব্যাখ্যা : পরকালীন জীবনে তারা জান্নাত লাভ করবে। কারণ তারা পার্থিব জীবনে সত্য পথে চলেছে। জীবনের প্রতিটি বিভাগে, প্রতিটি ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক বিষয়ে তারা সত্য ও ন্যায়নিষ্ঠ পথ অবলম্বন করেছে এবং বাতিলের পথ পরিহার করেছে। সঠিক পথের উপর দৃঢ়তা এবং অন্যায় পথ থেকে দূরে থাকার শক্তি তাদের রবের পক্ষ থেকে তারা লাভ করেছে। তাদের রব তাদেরকে ঈমানের কারণে এ সুযোগ দেন। এগুলো এমন ঈমানের ফল নয়, যার অর্থ হয় নিছক বিশ্বাস করা; বরং এমন ঈমানের ফল, যা চরিত্র ও কর্মকান্ডের পরিচালক শক্তিতে শক্তিশালী হয়ে কর্ম ও চরিত্রে নেকীর প্রকাশ ঘটে। যে ব্যক্তি ঈমান এনেও বেঈমানের মতো জীবন-যাপন করে সে আল্লাহর উপর ঈমান আনয়নের পর সৎকর্মশীল হয়ে জীবন যাপনকারীর মতো পুরস্কার পাওয়ার আশা করতে পারে না। তারা আল্লাহকে রব বলে ঘোষণা করে থেমে যায়নি এবং তার সাথে অন্য কাউকে রব হিসেবেও গ্রহণ করেনি, আর এর সাথে কোন ভ্রান্ত আকীদার সংমিশ্রণও ঘটায়নি। বরং এ আকীদা পোষণ করার পর সারা জীবন তার উপর প্রতিষ্ঠিত থেকেছে, তার পরিপন্থী অন্য সকল আকীদা প্রত্যাখান করেছে এবং নিজের কর্মজীবনে তাওহীদের দাবীসমূহও পূরণ করেছে।

মুত্তাক্বী হওয়া :

اُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِيْنَ

আর তা (জান্নাত) প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে মুত্তাক্বীদের জন্য। (সূরা আলে ইমরানু ১৩৩)

اِنَّ الْمُتَّقِيْنَ فِيْ ظِلَالٍ وَّعُيُوْنٍ

নিশ্চয় মুত্তাক্বীরা থাকবে ছায়া ও ঝর্ণাবহুল স্থানে। (সূরা মুরসালাত– ৪১)

আল্লাহর সামনে হাজির হওয়াকে ভয় করা :

وَلِمَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهٖ جَنَّتَانِ فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ

আর যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের সামনে উপস্থিত হওয়াকে ভয় করে, তার জন্য রয়েছে দু’টি জান্নাত। অতএব হে জিন ও মানব! তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? (সূরা আর রহমান- ৪৬, ৪৭)

না দেখে আল্লাহকে ভয় করা :

اِنَّ الَّذِيْنَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَيْبِ لَهُمْ مَّغْفِرَةٌ وَّاَجْرٌ كَبِيْرٌ

নিশ্চয় যারা তাদের প্রতিপালককে না দেখে ভয় করে, তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার। (সূরা মুলক– ১২)

ধৈর্যধারণ করা :

وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَنُبَوِّئَنَّهُمْ مِّنَ الْجَنَّةِ غُرَفًا تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَاؕ نِعْمَ اَجْرُ الْعَامِلِيْنَ اَلَّذِيْنَ صَبَرُوْا وَعَلٰى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ

যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, নিশ্চয় আমি তাদেরকে জান্নাতের সুউচ্চ প্রাসাদসমূহে স্থান দেব, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হবে; সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। আর তা সৎকর্মশীলদের জন্য কতই না উত্তম পুরস্কার, যারা ধৈর্যধারণ করে এবং স্বীয় প্রতিপালকের উপর ভরসা করে। (সূরা আনকাবূত– ৫৮, ৫৯)

সৎকর্ম করা :

وَمَنْ يَّعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ مِنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَاُولٰٓئِكَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ وَلَا يُظْلَمُوْنَ نَقِيْرًا

পুরুষ অথবা নারীর মধ্যে ঈমানদার অবস্থায় যে কেউ সৎকাজ করবে, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি অণুপরিমাণও যুলুম করা হবে না। (সূরা নিসা– ১২৪)

শেষ রাত্রে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করা ও ক্ষমাপ্রার্থনা করা :

اِنَّ الْمُتَّقِيْنَ فِيْ جَنَّاتٍ وَّعُيُوْنٍ اٰخِذِيْنَ ماۤ اٰتَاهُمْ رَبُّهُمْ اِنَّهُمْ كَانُوْا قَبْلَ ذٰلِكَ مُحْسِنِيْنَ كَانُوْا قَلِيْلًا مِّنَ اللَّيْلِ مَا يَهْجَعُوْنَ وَبِالْاَسْحَارِ هُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ

নিশ্চয় মুত্তাক্বীরা থাকবে জান্নাতে ও ঝর্ণাসমূহের মধ্যে। তারা (আনন্দের সাথে) গ্রহণ করতে থাকবে, যা তাদের প্রতিপালক তাদেরকে দান করবেন। কেননা তারা ইতোপূর্বে নেককার ছিল। তারা রাত্রির খুব কম অংশই নিদ্রা যেত এবং রাতের শেষ প্রহরে (আল্লাহর কাছে) ক্ষমাপ্রার্থনা করত। (সূরা যারিয়াত, ১৫–১৮)

ব্যাখ্যা : তারা শুধু শুয়ে শুয়ে সারারাত কাটিয়ে দিত না বরং রাতের প্রারম্ভে, মধ্যভাগে বা শেষভাগে কম হোক বা বেশি হোক কিছু সময় জেগে আল্লাহর ইবাদাত করে কাটাত। যারা তাদের রাতসমূহ পাপ ও অশ্লীল কাজকর্মে কাটায় এবং তারপরও মাগফিরাত প্রার্থনা করার চিন্তাটুকু তাদের মনে জাগে না, এরা তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। এদের অবস্থা ছিল এই যে, তারা রাতের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আল্লাহর ইবাদাতে ব্যয় করত এবং এরপরেও রাতের শেষাংশে আপন প্রভুর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করত। هُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ (তারা ক্ষমাপ্রার্থনা করে) কথাটির মধ্যে এ বিষয়েও একটি ইঙ্গিত আছে যে, তাদের জন্য এ আচরণই শোভনীয় ছিল। তারাই ছিল আল্লাহর দাসত্বের এরূপ পরাকাষ্ঠা দেখানোর যোগ্য। যারা গোনাহ করার পরও গর্ব করে চলে, সে নির্লজ্জ পাপীদের আচরণ এরূপ হতে পারত না।

সবসময় দান খয়রাত করা :

اَلَّذِيْنَ يُنْفِقُوْنَ اَمْوَالَهُمْ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ سِرًّا وَّعَلَانِيَةً فَلَهُمْ اَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْۚ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ

যারা রাতে ও দিনে, গোপনে এবং প্রকাশ্যে তাদের মাল খরচ করে। তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে প্রতিদান। আর তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না। (সূরা বাক্বারা– ২৭৪)

ব্যাখ্যা : আল্লাহর বান্দাদের সাথে তাদের আচরণ ছিল এই যে, আল্লাহ তাদেরকে যা কিছুই দান করেছিলেন তাতে তারা কেবল নিজেদের অধিকার আছে বলে মনে করত না; বরং তাদের মধ্যে এ অনুভূতিও ছিল যে, তাদের সম্পদে আল্লাহর এমন প্রত্যেক বান্দার অধিকার আছে, যারা তাদের সাহায্যের মুখাপেক্ষী। ফলে যে ইয়াতীম শিশু অসহায় হয়ে পড়েছে, যে বিধবার কোন আশ্রয় নেই, যে অক্ষম ব্যক্তি নিজের রোজগারের জন্য চেষ্টা করতে পারে না, যে ব্যক্তি বেকার ও কর্মহীন হয়ে পড়েছে কিংবা যার উপার্জন প্রয়োজন পূরণে যথেষ্ট হচ্ছে না, যে ব্যক্তি কোন দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে এবং নিজে নিজের ক্ষতিপূরণে সক্ষম নয়, মোটকথা যে অভাবী ব্যক্তির অবস্থা তার নজরে পড়েছে সে তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে গেছে।

تَتَجَافٰى جُنُوْبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَّطَمَعًاؗ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ

তাদের দেহ বিছানা থেকে আলাদা হয়ে থাকে, তারা তাদের প্রতিপালককে আহবান করতে থাকে ভয় ও আশায় এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে। (সূরা সাজদা– ১৬)

ধৈর্যশীল, সত্যবাদী এবং বিনয়ী হওয়া :

لِلَّذِيْنَ اتَّقَوْا عِنْدَ رَبِّهِمْ جَنَّاتٌ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا وَاَزْوَاجٌ مُّطَهَّرَةٌ وَّرِضْوَانٌ مِّنَ اللهِؕ وَاللهُ بَصِيْرٌ ۢبِالْعِبَادِ اَلَّذِيْنَ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَاۤ اِنَّنَاۤ اٰمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ اَلصَّابِرِيْنَ وَالصَّادِقِيْنَ وَالْقَانِتِيْنَ وَالْمُنْفِقِيْنَ وَالْمُسْتَغْفِرِيْنَ بِالْاَسْحَارِ

মুত্তাক্বীদের জন্য তাদের রবের নিকট রয়েছে এমন জান্নাত, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়ে যাবে; সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। তাদের জন্য রয়েছে পবিত্র স্ত্রীগণ এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ব্যাপারে দৃষ্টিদানকারী। (এ লোকদের গুণাবলি হচ্ছে) তারা বলে, হে আমাদের রব! আমরা ঈমান এনেছি। অতএব আমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দিন এবং আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন। তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, বিনয়ী, দানকারী এবং শেষ রাত্রে ক্ষমা প্রার্থনাকারী। (সূরা আলে ইমরান, ১৫–১৭)

রাগ দমন করা ও মানুষের ভুল ক্ষমা করে দেয়া :

اُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِيْنَ اَلَّذِيْنَ يُنْفِقُوْنَ فِى السَّرَّآءِ وَالضَّرَّآءِ وَالْكَاظِمِيْنَ الْغَيْظَ وَالْعَافِيْنَ عَنِ النَّاسِؕ وَاللهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِيْنَ

জান্নাত প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে মুত্তাক্বীদের জন্য, যারা খরচ করে সচ্ছল–অসচ্ছল উভয় অবস্থায়; তারা রাগ দমনকারী ও মানুষের দোষ ক্ষমাকারী। আর আল্লাহ সদ্ব্যবহারকারীদেরকে ভালোবাসেন।

(সূরা আলে ইমরানু ১৩৩, ১৩৪)

কবীরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা :

اِنْ تَجْتَنِبُوْا كَبَآئِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَنُدْخِلْكُمْ مُّدْخَلًا كَرِيْمًا

যদি তোমরা কবীরা গোনাহসমূহ থেকে দূরে থাক, যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে, তবে আমি তোমাদের সগীরা গোনাহগুলো ক্ষমা করে দেব এবং তোমাদেরকে সম্মানজনক স্থানে প্রবেশ করাব। (সূরা নিসা– ৩১)

অহংকার না করা :

تِلْكَ الدَّارُ الْاٰخِرَةُ نَجْعَلُهَا لِلَّذِيْنَ لَا يُرِيْدُوْنَ عُلُوًّا فِى الْاَرْضِ وَلَا فَسَادًاؕ وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِيْنَ

এটা আখিরাতের আবাস যা আমি নির্ধারিত করি তাদের জন্য, যারা এ পৃথিবীতে উগ্রতা প্রকাশ করে না এবং বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায় না। আর শুভ পরিণাম মুত্তাক্বীদের জন্য। (সূরা ক্বাসাস– ৮৩)

কু–প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে বিরত থাকা :

وَاَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّه وَنَهَى النَّفْسَ عَنِ الْهَوٰى فَاِنَّ الْجَنَّةَ هِيَ الْمَاْوٰى

যে ব্যক্তি নিজ প্রতিপালকের সম্মুখে দন্ডায়মান হওয়ার ভয় করে এবং নিজেকে কু–প্রবৃত্তি থেকে বিরত রাখে তার বাসস্থান হবে জান্নাত। (সূরা নাযি‘আত– ৪১)

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন