hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

তাফসীরুল কুরআন বিল কুরআন

লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

১৪০
অধ্যায়- ৩ : প্রচার কাজের নিয়ম ও প্রচারকের গুণাবলি
ইখলাছ অর্জন করতে হবে :

وَجَآءَ مِنْ اَقْصَى الْمَدِيْنَةِ رَجُلٌ يَّسْعٰى قَالَ يَا قَوْمِ اتَّبِعُوا الْمُرْسَلِيْنَ - اِتَّبِعُوْا مَنْ لَّا يَسْاَلُكُمْ اَجْرًا وَّهُمْ مُّهْتَدُوْنَ

শহরের দূরপ্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি দৌড়ে এসে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা রাসূলদের অনুসরণ করো। আর তাদের অনুসরণ করো, যারা তোমাদের কাছে কোন বিনিময় চায় না এবং তারা নিজেরাও হেদায়াতপ্রাপ্ত। (সূরা ইয়াসীন- ২০, ২১)

قُلْ لَّاۤ اَسْاَلُكُمْ عَلَيْهِ اَجْرًا اِلَّا الْمَوَدَّةَ فِى الْقُرْبٰى

বলো, আমি এর বিনিময়ে তোমাদের নিকট হতে আত্মীয়তার ভালোবাসা ব্যতীত অন্য কোন বিনিময় চাই না। (সূরা শূরা- ২৩)

যোগ্যতা লাভের জন্য আল্লাহর কাছে দু‘আ করতে হবে :

رَبِّ اشْرَحْ لِيْ صَدْرِيْ - وَيَسِّرْ لِۤيْ اَمْرِيْ - وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِّنْ لِّسَانِيْ - يَفْقَهُوْا قَوْلِيْ

(মুসা আঃ বলেছিলেন) হে আমার প্রতিপালক! আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দাও এবং আমার কাজ সহজ করে দাও। আমার জিহবার জড়তা দূর করে দাও, যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে। (সূরা ত্বা-হা, ২৫-২৮)

যা প্রচার করবে তার উপর নিজে আমল করতে হবে :

يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لِمَ تَقُوْلُوْنَ مَا لَا تَفْعَلُوْنَ - كَبُرَ مَقْتًا عِنْدَ اللهِ اَنْ تَقُوْلُوْا مَا لَا تَفْعَلُوْنَ

হে মুমিনগণ! তোমরা যা কর না, তা কেন বল? তোমরা যা কর না তা বলা আল্লাহর নিকট অতিশয় অসন্তোষজনক। (সূরা সাফ- ২, ৩)

اَتَأْمُرُوْنَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَتَنْسَوْنَ اَنْفُسَكُمْ وَاَنْتُمْ تَتْلُوْنَ الْكِتَابَ ؕ اَفَلَا تَعْقِلُوْنَ

তোমরা কি লোকদেরকে সৎকাজের আদেশ দাও, আর নিজেদের ব্যাপারে ভুলে যাও; অথচ তোমরাই গ্রন্থ পাঠ কর। তবে কি তোমরা বুঝ না? (সূরা বাক্বারা- ৪৪)

ব্যাখ্যা : অর্থাৎ অন্যদেরকে যেসব কাজের নির্দেশ দেয়া হবে, প্রথমে নিজে তার উপর আমল করতে হবে। আর যেসব অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে, নিজেও সেগুলো থেকে দূরে থাকবে। যেসব কলঙ্ক থেকে মানুষকে মুক্ত দেখতে চাও, নিজের জীবনকেও তা থেকে মুক্ত রাখবে। যে পথের দিকে মানুষকে আহবান জানাবে, নিজের জন্যও সেই পথটিই পছন্দ করবে।

সংশোধনের উদ্দেশ্যে প্রচার করতে হবে :

قَالَ يَا قَوْمِ اَرَاَيْتُمْ اِنْ كُنْتُ عَلٰى بَيِّنَةٍ مِّنْ رَّبِّيْ وَرَزَقَنِيْ مِنْهُ رِزْقًا حَسَنًاؕ وَمَاۤ اُرِيْدُ اَنْ اُخَالِفَكُمْ اِلٰى مَاۤ اَنْهَاكُمْ عَنْهُؕ اِنْ اُرِيْدُ اِلَّا الْاِصْلَاحَ مَا اسْتَطَعْتُؕ وَمَا تَوْفِيْقِيْۤ اِلَّا بِاللهِؕ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَاِلَيْهِ اُنِيْبُ

(শুয়াইব আঃ) বললেন, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা ভেবে দেখেছ কি, আমি যদি আমার প্রতিপালক প্রেরিত স্পষ্ট প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকি এবং তিনি যদি তাঁর নিকট হতে আমাকে উৎকৃষ্ট জীবনোপকরণ দান করেন (তাহলে কেন আমি আমার কর্তব্য হতে বিরত থাকব?) আমি তোমাদেরকে যা থেকে নিষেধ করি নিজে তা করতে ইচ্ছা করি না। আমি তো আমার সাধ্যমতো সংস্কারই করতে চাই। আমার কার্যসাধন তো আল্লাহরই সাহায্যে (সংঘটিত হয়); আর আমি তাঁরই উপর নির্ভর করি এবং আমি তাঁরই অভিমুখী। (সূরা হুদ- ৮৮)

জাতির কল্যাণকামী হতে হবে :

اُبَلِّغُكُمْ رِسَالَاتِ رَبِّيْ وَاَنَاْ لَكُمْ نَاصِحٌ اَمِيْنٌ

আমি আমার প্রতিপালকের বাণী তোমাদের নিকট পৌঁছে দিচ্ছি। আর আমি তোমাদের জন্য একজন বিশ্বস্ত শুভাকাঙ্ক্ষী। (সূরা আ‘রাফ- ৬৮)

সমালোচনার ভয়ে কোন হক কথা গোপন রাখা যাবে না :

فَلَعَلَّكَ تَارِكٌ ۢبَعْضَ مَا يُوْحٰۤى اِلَيْكَ وَضَآئِقٌ ۢبِهٖ صَدْرُكَ اَنْ يَّقُوْلُوْا لَوْلَاۤ اُنْزِلَ عَلَيْهِ كَنْزٌ اَوْ جَآءَ مَعَهٗ مَلَكٌ اِنَّمَاۤ اَنْتَ نَذِيْرٌ وَّاللهُ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ وَّكِيْلٌ

(হে নবী) যখন তারা (কাফিররা) বলে, এ ব্যক্তির উপর কোন ধনভান্ডার অবতীর্ণ হলো না কেন, কিংবা তার সাথে (নবুওয়াতের সাক্ষ্য দেয়ার জন্য) কোন ফেরেশতা এলো না কেন? তখন সম্ভবত তোমার কাছে যে ওহী নাযিল হয় তার কিয়দাংশ তুমি ছেড়ে দাও এবং মনে কষ্ট পাও। আসলে তুমি তো কেবল (আযাবের) ভয় প্রদর্শনকারী (একজন রাসূল মাত্র); আর আল্লাহ সবকিছুর উপর কর্মবিধায়ক। (সূরা হুদ- ১২)

ব্যাখ্যা : কোন দেশ বা জাতির জীবনব্যবস্থা যদি কুফর ও শিরকের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে; আর সে অবস্থায় যদি কোন আল্লাহর বান্দা ব্যক্তিগত জীবন থেকে রাষ্ট্রীয় জীবন পর্যন্ত তাওহীদ বা আল্লাহর একত্ববাদ প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, তখন কতিপয় সুস্থ বিবেকসম্পন্ন ব্যক্তি ছাড়া বাকি সব লোকই তার বিরুদ্ধে লেগে যাবে- এতে কোন সন্দেহ নেই। কেউ যুলুম-নির্যাতনের মাধ্যমে তাকে দাবিয়ে দিতে চাইবে। কেউ মিথ্যা দোষারোপ এবং আজেবাজে প্রশ্ন-আপত্তি উত্থাপন করে তার সাহস কমাতে চাইবে। আবার কেউ ঠাট্টা-বিদ্রূপ ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে তার কথাকে গুরুত্বহীন করে দিতে চাইবে। এভাবে এ ব্যক্তির দাওয়াতকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করবে। নবী ﷺ এর সাথে যখন এসব আচরণ করা হয় তখন আল্লাহ তা‘আলা তাকে উপদেশ দিয়ে বলছেন, আমার দৃষ্টিতে যে ব্যক্তি নিজে সৎ হয় এবং সততার পথে ধৈর্য ও অবিচলতার সাথে অগ্রসর হয় প্রকৃতপক্ষে সে-ই মর্যাদার অধিকারী। কাজেই যে ধরনের বিদ্বেষ ও বিরূপ ব্যবহার দ্বারা তোমার মুকাবিলা করা হচ্ছে, তার ফলে তোমার দৃঢ়তা ও অবিচলতায় যেন ফাটল না ধরে। ওহীর মাধ্যমে তোমার সামনে যে মহাসত্যের দ্বার উন্মুক্ত করা হয়েছে, তার প্রতি আহবান জানাতে যেন তুমি একটুও কুণ্ঠিত না হও। কোন বিষয় শোনার সাথে সাথেই যখন লোকেরা তা নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করতে থাকে, তখন তা কেমন করে বলব বা কোন সত্য কথা যখন কেউ শুনতেই প্রস্তুত নয় তখন তা কীভাবে প্রকাশ করব- এসব নিয়ে চিন্তা করো না। কেউ মানুক বা না মানুক ওহীর বাণী নির্দ্বিধায় ও নির্ভয়ে এবং কোন প্রকার কম-বেশি না করে যথাযথভাবে প্রচার করতে থাকো।

মানুষের দেখানো ভয়কে উপেক্ষা করতে হবে :

اَلَيْسَ اللهُ بِكَافٍ عَبْدَهٗؕ وَيُخَوِّفُوْنَكَ بِالَّذِيْنَ مِنْ دُوْنِهٖؕ وَمَنْ يُّضْلِلِ اللهُ فَمَا لَهٗ مِنْ هَادٍ

আল্লাহ কি তাঁর বান্দার জন্য যথেষ্ট নন? অথচ তারা তোমাকে আল্লাহর পরিবর্তে অপরের ভয় দেখায়। (জেনে রেখো) আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তার জন্য কোন পথপ্রদর্শক নেই। (সূরা যুমার- ৩৬)

মনের মধ্যে কোন দুর্বলতাকে স্থান দেয়া যাবে না :

كِتَابٌ اُنْزِلَ اِلَيْكَ فَلَا يَكُنْ فِيْ صَدْرِكَ حَرَجٌ مِّنْهُ لِتُنْذِرَ بِهٖ وَذِكْرٰى لِلْمُؤْمِنِيْنَ

(হে নবী) এ মহাগ্রন্থ তোমার প্রতি নাযিল করা হয়েছে যেন তুমি এর দ্বারা (কাফিরদেরকে) ভয় দেখাতে পার, আর ঈমানদারের জন্য (এটি হচ্ছে) একটি স্মরণিকা। অতএব (এ ব্যাপারে) তোমার মনে যেন কোন প্রকারের সংকীর্ণতা না থাকে। (সূরা আ‘রাফ- ২)

ব্যাখ্যা : বিরোধিতা ও বাধা-বিপত্তির মধ্য দিয়ে নিজের পথ পরিষ্কার না দেখলে মানুষের মন সামনে এগিয়ে চলতে পারে না। এজন্য আল্লাহ বলেন, কোন প্রকার ইতস্ততবোধ ও ভীতি ছাড়াই কুরআনের দাওয়াত মানুষের কাছে পৌঁছে দাও। বিরোধীরা একে কীভাবে গ্রহণ করবে এর কোন পরোয়া করো না। তারা ক্ষেপে যায় যাক, বিদ্রূপ করে করুক, আজেবাজে কথা বলে বলুক এবং তাদের শত্রুতা আরো বেড়ে যায় যাক। তুমি নিশ্চিন্তে ও নিঃসংকোচে তাদের কাছে এ বাণী পৌঁছে দাও এবং এর প্রচারে একটুও গড়িমসি করো না।

ওহীর জ্ঞানই হবে দাওয়াতের বিষয়বস্তু :

قُلْ اِنَّمَاۤ اُنْذِرُكُمْ بِالْوَحْيِ

বলো, আমি তো তোমাদেরকে কেবল ওহী দ্বারাই সতর্ক করে থাকি। (সূরা আম্বিয়া- ৪৫)

মানুষকে কুরআনের মাধ্যমে উপদেশ দিতে হবে :

فَذَكِّرْ بِالْقُرْاٰنِ مَنْ يَّخَافُ وَعِيْدِ

যে আমার শাস্তিকে ভয় করে, তাকে কুরআনের মাধ্যমে উপদেশ দান করো। (সূরা ক্বাফ- ৪৫)

সত্য গোপন করা বা তাতে মিথ্যার সংমিশ্রণ করা যাবে না :

وَلَا تَلْبِسُوا الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ وَتَكْتُمُوا الْحَقَّ وَاَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ

তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনে বুঝে সত্যকে গোপন করো না। (সূরা বাক্বারা- ৪২)

আল্লাহর ব্যাপারে কেবল হক কথাই বলতে হবে :

اَلَمْ يُؤْخَذْ عَلَيْهِمْ مِّيْثَاقُ الْكِتَابِ اَنْ لَّا يَقُوْلُوْا عَلَى اللهِ اِلَّا الْحَقَّ

তাদের কাছ থেকে কি আল্লাহর কিতাবের এ প্রতিশ্রুতি নেয়া হয়নি যে, তারা আল্লাহ সম্বন্ধে সত্য ছাড়া কিছুই বলবে না! (সূরা আ‘রাফ- ১৬৯)

সূক্ষ্মদর্শিতার মাধ্যমে দাওয়াত দিতে হবে :

قُلْ هٰذِهٖ سَبِيْلِيْۤ اَدْعُوْاۤ اِلَى اللهِ عَلٰى بَصِيْرَةٍ اَنَاْ وَمَنِ اتَّبَعَنِيْؕ وَسُبْحَانَ اللهِ وَمَاۤ اَنَاْ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ

বলো, এটাই আমার পথ। আমি এবং আমার অনুসারীরা সূক্ষ্মদর্শিতার মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি মানুষকে আহবান করি। আল্লাহ মহিমান্বিত; আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। (সূরা ইউসুফ- ১০৮)

ক্ষমার নীতি অবলম্বন করতে হবে :

خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ وَاَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلِيْنَ

তুমি ক্ষমাপরায়ণতা অবলম্বন করো, সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং অজ্ঞদেরকে এড়িয়ে চলো। (সূরা আ‘রাফ- ১৯৯)

ব্যাখ্যা : এ আয়াতগুলোতে নবী ﷺ কে প্রচার, সংস্কার ও সংশোধনের কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ কৌশল জানিয়ে দেয়া হয়েছে। কেবল নবী ﷺ কে নয়, বরং নবী ﷺ এর স্থলাভিষিক্ত হয়ে যেসব লোক দুনিয়াবাসীকে সঠিক পথ দেখানোর দায়িত্ব পালন করার জন্য এগিয়ে আসবে, তাদেরকেও একই কৌশল শিখানো হয়েছে।

ইসলামের আহবায়কের জন্য যে গুণগুলো সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় সেগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে, তাকে কোমল স্বভাব, সহিষ্ণু ও উদার হৃদয়ের অধিকারী হতে হবে। তাকে হতে হবে নিজের সাথিদের জন্য স্নেহশীল, সাধারণ মানুষের জন্য দয়ার্দ্র এবং বিরোধীদের জন্য সহিষ্ণু। নিজের সাথিদের দুর্বলতাগুলোও সহ্য করে নিতে হবে এবং বিরোধীদের কঠোর ব্যবহারকেও সহ্য করতে হবে। চরম উত্তেজনাকর অবস্থার মধ্যেও নিজের আচরণে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। অত্যন্ত বিরক্তিকর ও অপছন্দনীয় কথাগুলোও উদার মনে এড়িয়ে যেতে হবে। বিরোধীদের পক্ষ থেকে যতই কড়া ভাষায় কথা বলা হোক, অথবা যতই বর্বরোচিত প্রতিরোধ গড়ে তুলা হোক না কেন, অবশ্যই তাকে এ সবকিছুকে উপেক্ষা করতে হবে। কঠোর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা, কর্কশ আচরণ করা, তিক্ত ও কড়া কথা বলা এবং প্রতিশোধমূলক মানসিক উত্তেজনায় ভোগা এ কাজের জন্য বিষতুল্য। এতে গোটা কাজ পন্ড হয়ে যায়। এ জিনিসটিকে নবী ﷺ এভাবে বর্ণনা করেছেন, ‘‘আমার রব আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, আমি যেন ক্রোধ ও সন্তুষ্টি উভয় অবস্থায়ই ইনসাফের কথা বলি, যে আমার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে আমি যেন তার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করি, যে আমাকে আমার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে আমি যেন তাকে তার অধিকার দান করি, যে আমার প্রতি যুলুম করে আমি যেন তাকে ÿমা করে দেই।’’ (মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৪৮৮)

সত্যের দাওয়াতের সাফল্যের মূলমন্ত্র হচ্ছে, দাওয়াত দানকারীরা সূক্ষ্ম বিষয় নিয়ে আলোচনা করার পরিবর্তে লোকদেরকে এমনসব সহজসরল সৎকাজের নির্দেশ দেবেন, যা সবার কাছে সৎকাজ হিসেবে পরিচিত এবং ব্যাপারটি বুঝার জন্য প্রত্যেক মানুষের সাধারণ জ্ঞানই যথেষ্ট হয়। এভাবে সত্যের আহবায়কের আবেদন সবাইকে প্রভাবিত করে। কারণ সাধারণ মানুষ যতই বিদ্বেষভাবাপন্ন হোক না কেন যখন তারা দেখে যে, সৎ, ভদ্র ও উন্নত নৈতিক চরিত্রের অধিকারী এক ব্যক্তি সরল সহজভাবে সৎকাজের দাওয়াত দিচ্ছে, তখন স্বাভাবিকভাবেই ধীরে ধীরে সত্য বিরোধীদের প্রতি তাদের মন বিরূপ হয়ে উঠতে থাকে এবং সত্যের আহবায়কের প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকে। এ কর্মকৌশলের ফলেই নবী ﷺ আরবে সাফল্য অর্জন করেন এবং কিছুকালের ব্যবধানে নিকটবর্তী দেশগুলোতেও ইসলাম বিস্তার লাভ করে।

দাওয়াতের ক্ষেত্রে ন্যায় ও কল্যাণ অনুসন্ধানীদেরকে সৎকাজের দিকে উদ্বুদ্ধ করা জরুরি। মূর্খদের সাথে কোন প্রকার সংঘর্ষ ও বিরোধে জড়িয়ে পড়া উচিত নয়। তারা সংঘর্ষ ও বিরোধ সৃষ্টি করার জন্য যত চেষ্টা করুক না কেন, যারা ন্যায়সঙ্গতভাবে বুদ্ধি-বিবেচনার সাথে বক্তব্য অনুধাবন করতে চায়- আহবায়কের উচিত তাদেরকেই সম্বোধন করা। অন্যদিকে যখন কোন ব্যক্তি নিরেট মূর্খের মতো ব্যবহার শুরু করে দেয় এবং কোন বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক ও গালি-গালাজের পর্যায়ে নেমে আসে, তখন আহবায়কের উচিত তার প্রতিদ্বন্দ্বীর ভূমিকায় অবতীর্ণ না হওয়া। কারণ এ ধরনের বিতর্ক ও ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হয়ে কোন লাভ নেই। বরং এতে বিরাট ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ আহবায়কের যে শক্তি ইসলামী দাওয়াত সম্প্রসারণ ও মানুষের চরিত্র সংশোধনের কাজে ব্যয় করা উচিত, তা অযথা এ বাজে কাজে ব্যয় হয়ে যায়।

শয়তানের উস্কানি থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাইতে হবে :

وَقُلْ رَّبِّ اَعُوْذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِيْنِ وَاَعُوْذُ بِكَ رَبِّ اَنْ يَّحْضُرُوْنِ

বলো, হে আমার প্রতিপালক! শয়তানের প্ররোচনা হতে আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি এবং আমার নিকট তাদের উপস্থিতি হতেও তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি। (সূরা মু’মিনূন- ৯৭, ৯৮)

وَاِمَّا يَنْزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللهِؕ اِنَّهٗ هُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ

যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে, তবে আল্লাহর আশ্রয় নেবে। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৩৬)

ব্যাখ্যা : সত্যের আহবায়ক যখনই বিরোধীদের যুলুম, নির্যাতন এবং তাদের অভিযোগ ও আপত্তির কারণে মানসিক উত্তেজনা অনুভব করবে তখনই তার বুঝে নিতে হবে যে, এটি শয়তানের উস্কানি ছাড়া আর কিছুই নয়। ফলে তখনই তাকে আল্লাহর কাছে এ মর্মে আশ্রয় চাওয়া উচিত যে, আল্লাহ যেন তাকে এ উত্তেজনার স্রোতে ভাসিয়ে না দেন, যার ফলে সে সত্যের দাওয়াত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার মতো কোন কাজ করে বসে। সত্যের দাওয়াতের কাজ ঠান্ডা মাথায় করতে হবে। উত্তেজনার বশবর্তী না হয়ে পরিবেশ-পরিস্থিতি এবং সময়-সুযোগ দেখে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করে যে পদক্ষেপ নেয়া হয়, সেটিই সঠিক হতে পারে। কিন্তু শয়তান যেহেতু এ কাজের উন্নতি কখনো দেখতে পারে না, তাই সে সর্বর্দা সত্যের আহবায়কের উপর নানা ধরনের আক্রমণ চালানোর চেষ্টা করে। আবার প্রত্যেকটি আক্রমণের পর সে আহবায়ককে এ বলে উত্তেজিত করতে থাকে যে, এ আক্রমণের জবাব অবশ্যই দেয়া দরকার। সুতরাং যারা আল্লাহকে ভয় করে কাজ করে এবং অসৎকাজ থেকে বিরত থাকতে চায়, তারা নিজেদের মনে কোন শয়তানী প্ররোচনার প্রভাব এবং কোন অসৎ চিন্তার ছোঁয়া অনুভব করতেই সাথে সাথে সজাগ হয়ে উঠে।

সময়-সুযোগ বুঝে দাওয়াত দিতে হবে :

وَاتَّبَعْتُ مِلَّةَ اٰبَآئِىْۤ اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَؕ مَا كَانَ لَنَاۤ اَنْ نُّشْرِكَ بِاللهِ مِنْ شَيْءٍؕ ذٰلِكَ مِنْ فَضْلِ اللهِ عَلَيْنَا وَعَلَى النَّاسِ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَشْكُرُوْنَ يَا صَاحِبَيِ السِّجْنِ اَاَرْبَابٌ مُّتَفَرِّقُوْنَ خَيْرٌ اَمِ اللهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ

আমি আমার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম, ইসহাক এবং ইয়াকূবের মতবাদ অনুসরণ করি। আল্লাহর সাথে কোন বস্তুকে শরীক করা আমাদের কাজ নয়। এটা আমাদের ও সমস্ত মানুষের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। হে কারাসঙ্গীদ্বয়! ভিন্ন ভিন্ন বহু প্রতিপালক শ্রেয়, না পরাক্রমশালী এক আল্লাহ? (সূরা ইউসুফু ৩৮, ৩৯)

ব্যাখ্যা : ইউসুফ (আঃ) কারাগারে এ দাওয়াত দিয়েছিলেন। তিনি নিজের বক্তব্য পেশ করার জন্য যেভাবে সুযোগ সৃষ্টি করেছেন তা থেকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা লাভ করতে পারি। দু’জন লোক তাদের স্বপ্ন বর্ণনা করছে এবং এর তা’বীর জিজ্ঞেস করছে। কিন্তু তিনি তা’বীর বলার পূর্বে তাদের কথার ভেতর সুযোগ সৃষ্টি করে তাদের সামনে নিজের দ্বীন পেশ করতে থাকেন। কোন ব্যক্তি যদি সত্য প্রচারে লেগে যায় এবং সে সূক্ষ্ম বুদ্ধিবৃত্তির অধিকারী হয়, তাহলে সে চমৎকারভাবে আলোচনার মোড় নিজের দিকে ফিরিয়ে নিতে পারে। যে ব্যক্তির দাওয়াত দেয়ার মানসিকতা থাকে না, তার সামনে সুযোগের পর সুযোগ আসতে থাকে কিন্তু কোন সুযোগই সে কাজে লাগাতে পারে না। আবার নির্বোধ প্রচারক পরিবেশ-পরিস্থিতির প্রতি দৃষ্টি না রেখে লোকদের কানে জোরপূর্বক নিজের দাওয়াত ঠেসে দেয়ার চেষ্টা করে। তারপর অনর্থক তর্ক-বিতর্ক ও বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে, এতে তাদের মনে উল্টো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ইউসুফ (আঃ) সুযোগ পেতেই ইসলামের বিস্তারিত বিধান ও নীতিমালা পেশ করতে শুরু করেননি। বরং শ্রোতাদের সামনে দ্বীনের এমন একটি সূচনাবিন্দু তুলে ধরেন যেখান থেকে সত্যপন্থী ও মিথ্যাপন্থীদের পথ পরস্পর আলাদা হয়ে গেছে। অর্থাৎ তাওহীদ ও শিরকের পার্থক্য তুলে ধরেছেন। আবার এ পার্থক্যকে এমন যুক্তিসঙ্গত পদ্ধতিতে সুস্পষ্ট করেছেন, যার ফলে সাধারণ বিবেকবুদ্ধিসম্পন্ন যে কোন ব্যক্তিই তা অনুভব করতে পারবে।

দাওয়াত দিতে হবে হেকমত ও সদুপদেশের মাধ্যমে :

اُدْعُ اِلٰى سَبِيْلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِيْ هِيَ اَحْسَنُؕ اِنَّ رَبَّكَ هُوَ اَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِيْلِهٖ وَهُوَ اَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِيْنَ

তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান করো হেকমত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সাথে তর্ক করবে উত্তম পন্থায়। পথ ছেড়ে কে বিপথগামী হয় সে সম্বন্ধে তোমার প্রতিপালক সবিশেষ অবহিত এবং কারা সৎপথে আছে তাও তিনি অধিক জানেন। (সূরা নাহল- ১২৫)

ব্যাখ্যা : দাওয়াত দেয়ার সময় দু’টি জিনিসের প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে। (এক) প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তা। (দুই) সদুপদেশ। জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তার অর্থ হচ্ছে, নির্বোধদের মতো চোখ বন্ধ করে দাওয়াত দেয়া যাবে না। বরং বুদ্ধি খাটিয়ে যাকে দাওয়াত দেয়া হচ্ছে তার মন-মানসিকতা, যোগ্যতা ও অবস্থার দিকে খেয়াল রেখে এবং পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝে কথা বলতে হবে। একই লাঠি দিয়ে সবাইকে তাড়িয়ে নেয়া যাবে না। যে কোন ব্যক্তি বা দলের মুখোমুখি হলে প্রথমে তার রোগ নির্ণয় করতে হবে, তারপর এমন যুক্তি-প্রমাণের সাহায্যে তার রোগ নিরসনের চেষ্টা করতে হবে, যা তার মন-মস্তিষ্কের গভীরে প্রবেশ করে তার রোগের শিকড় উপড়ে ফেলতে পারে।

সদুপদেশের দু’টি অর্থ হয় :

(এক) যাকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে তাকে শুধুমাত্র যুক্তি প্রমাণের সাহায্যে তৃপ্ত করে দিয়ে ক্ষান্ত হলে চলবে না; বরং তার আবেগ-অনুভূতির প্রতিও আবেদন জানাতে হবে। দুষ্কৃতি ও ভ্রষ্টতাকে শুধুমাত্র বুদ্ধিভিত্তিক দিক দিয়ে বাতিল করলে হবে না; বরং মানুষের প্রকৃতিতে এসবের বিরুদ্ধে যে জন্মগত ঘৃণা রয়েছে তাকেও জাগিয়ে তুলতে হবে এবং সেগুলোর অশুভ পরিণতির ভয় দেখাতে হবে। ইসলাম গ্রহণ ও সৎকাজে আত্মনিয়োগ শুধু যে ন্যায়সঙ্গত ও মহৎ গুণ তা যৌক্তিকভাবে প্রমাণ করলে চলবে না বরং সেগুলোর প্রতি আকর্ষণও সৃষ্টি করতে হবে।

(দুই) উপদেশ এমনভাবে দিতে হবে, যাতে আন্তরিকতা সুস্পষ্ট হয়ে উঠে। যাকে উপদেশ দান করা হচ্ছে সে যেন এ কথা মনে না করে যে, উপদেশদাতা তাকে তাচ্ছিল্য করছে এবং নিজের শ্রেষ্ঠত্বের অনুভূতির স্বাদ নিচ্ছে। বরং সে অনুভব করবে উপদেশদাতার মনে তার সংশোধনের প্রবল আকাঙ্ক্ষা রয়েছে এবং আসলে সে তার ভালো চায়।

প্রশংসা ও দরূদ পাঠের মাধ্যমে শুরু করতে হবে:

قُلِ الْحَمْدُ لِلّٰهِ وَسَلَامٌ عَلٰى عِبَادِهِ الَّذِيْنَ اصْطَفٰى

বলো, সকল প্রশংসা আল্লাহরই; অতঃপর তাঁর মনোনীত বান্দাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। (সূরা নামল- ৫৯)

ব্যাখ্যা : মুসলিমরা কীভাবে তাদের বক্তৃতা শুরু করবে এখানে তা শিক্ষা দেয়া হয়েছে। এরই ভিত্তিতে সঠিক ইসলামী চিন্তা ও মানসিকতাসম্পন্ন লোকেরা সবসময় আল্লাহর প্রশংসা এবং তাঁর সৎ বান্দাদের জন্য শান্তি ও নিরাপত্তার দু‘আ করে তাদের বক্তৃতা শুরু করে থাকেন। কিন্তু আজকাল এ যুগের বক্তারা এর মাধ্যমে বক্তৃতা শুরু করতে লজ্জাবোধ করেন।

আল্লাহর কাছে তাওফীক চাইতে হবে :

اِنْ اُرِيْدُ اِلَّا الْاِصْلَاحَ مَا اسْتَطَعْتُؕ وَمَا تَوْفِيْقِيْۤ اِلَّا بِاللهِؕ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَاِلَيْهِ اُنِيْبُ

আমি তো আমার সাধ্যমতো সংস্কারই করতে চাই। আমার কার্যসাধন তো আল্লাহরই সাহায্যে (সংঘটিত হয়), আর আমি তাঁরই উপর নির্ভর করি এবং তাঁরই অভিমুখী। (সূরা হুদ- ৮৮)

সাজিয়ে-গুছিয়ে উত্তম কথা বলতে হবে :

وَقُلْ لِّعِبَادِيْ يَقُوْلُوا الَّتِيْ هِيَ اَحْسَنُؕ اِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْزَغُ بَيْنَهُمْؕ اِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلْاِنْسَانِ عَدُوًّا مُّبِيْنًا

আমার বান্দাদেরকে বলো, তারা যেন উত্তম কথা বলে। নিশ্চয় শয়তান তাদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টির জন্য উস্কানি দেয়; নিশ্চয় শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। (বনী ইসরাঈল- ৫৩)

এমন কথা বলতে হবে, যা মানুষের হৃদয়ে পৌঁছে :

اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ يَعْلَمُ اللهُ مَا فِيْ قُلُوْبِهِمْۗ فَاَعْرِضْ عَنْهُمْ وَعِظْهُمْ وَقُلْ لَّهُمْ فِۤيْ اَنْفُسِهِمْ قَوْلًا ۢبَلِيْغًا

এরাই তারা, যাদের অন্তরে কী আছে আল্লাহ তা জানেন। সুতরাং তুমি তাদেরকে উপেক্ষা করো, তাদেরকে উপদেশ দাও এবং তাদেরকে মর্মস্পর্শী কথা বলো। (সূরা নিসা- ৬৩)

প্রতিপক্ষ যত বড় যালিমই হোক না কেন নরম ভাষায় বুঝাতে হবে :

اِذْهَبَاۤ اِلٰى فِرْعَوْنَ اِنَّهٗ طَغٰى فَقُوْلَا لَهٗ قَوْلًا لَّيِّنًا لَّعَلَّهٗ يَتَذَكَّرُ اَوْ يَخْشٰى

তোমরা উভয়ে ফিরাউনের নিকট যাও, সে তো সীমালঙ্ঘন করেছে। অতঃপর তোমরা তার সাথে নম্রভাবে কথা বলো; হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভয় করবে। (সূরা ত্বা-হা- ৪৩, ৪৪)

ব্যাখ্যা : অর্থাৎ কাফির, মুশরিক এবং ইসলাম বিরোধীদের সাথে আলাপ-আলোচনা ও বিতর্ক করার সময় কড়া কথা ও বাড়াবাড়ি বর্জন করতে হবে। বিরোধী পক্ষ যতই অপ্রীতিকর কথা বলুক না কেন, কোন ক্রমেই মুসলিমদের মুখ থেকে কোন ন্যায় ও সত্যবিরোধী কথা বের হওয়া উচিত নয়। তাদেরকে ঠান্ডা মাথায় এমনসব কথা বলতে হবে, যা যাচাই বাছাই করা এবং দাওয়াতের মর্যাদার সাথে সঙ্গতিশীল।

মাতৃভাষায় বুঝাতে হবে :

وَمَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهٖ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ

আমি প্রত্যেক রাসূলকেই তার স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি, যাতে করে তারা তাদের নিকট স্পষ্টভাবে বর্ণনা করতে পারে। (সূরা ইবরাহীম- ৪)

ব্যাখ্যা : আল্লাহ তা‘আলা যে সম্প্রদায়ের মধ্যে যে নবীকেই পাঠিয়েছেন, তার উপর তার নিজের ভাষাতেই ওহী অবতীর্ণ করেছেন। এর উদ্দেশ্য ছিল সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায় যেন তা ভালোভাবে বুঝতে পারে এবং পরবর্তী পর্যায়ে তারা এ ধরনের কোন অজুহাত পেশ করতে না পারে যে, আল্লাহর পাঠানো শিক্ষা তারা বুঝতে পারেনি। আল্লাহর দৃষ্টিতে শিক্ষা দান ও সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই যে কোন জাতিকে তার নিজের ভাষায় বাণী পৌঁছানো প্রয়োজন।

আল্লাহর নিয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে হবে :

فَاذْكُرُوْاۤ اٰلَآءَ اللهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ

তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহকে স্মরণ করো, হয়তো তোমরা সফলকাম হতে পারবে। (সূরা আ‘রাফ- ৬৯)

দুনিয়া ও আখিরাতের বাস্তবতা বুঝাতে হবে :

وَقَالَ الَّذِيْۤ اٰمَنَ يَا قَوْمِ اتَّبِعُوْنِ اَهْدِكُمْ سَبِيْلَ الرَّشَادِ يَا قَوْمِ اِنَّمَا هٰذِهِ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا مَتَاعٌ وَّاِنَّ الْاٰخِرَةَ هِيَ دَارُ الْقَرَارِ

যে ব্যক্তি ঈমান এনেছিল সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আমার অনুসরণ করো, আমি তোমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করব। হে আমার সম্প্রদায়! এ পার্থিব জীবন তো (অস্থায়ী) উপভোগের জন্য; নিশ্চয় আখিরাত হচ্ছে চিরস্থায়ী আবাস। (সূরা মু’মিন- ৩৮, ৩৯)

দ্বীন কায়েমের গুরুত্ব বুঝাতে হবে :

قُلْ يَاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ لَسْتُمْ عَلٰى شَيْءٍ حَتّٰى تُقِيْمُوا التَّوْرَاةَ وَالْاِنْجِيْلَ وَمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكُمْ مِّنْ رَّبِّكُمْ

বলো, হে আহলে কিতাব সম্প্রদায়! যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা তাওরাত, ইঞ্জিল এবং তোমাদের প্রতি তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যেসব বিধান নাযিল হয়েছে সেগুলো যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠিত না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা কোনকিছুর উপরই প্রতিষ্ঠিত নও। (সূরা মায়েদা- ৬৮)

শ্রোতাদেরকে খারাপভাবে সম্বোধন করা যাবে না :

قُلْ مَنْ يَّرْزُقُكُمْ مِّنَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِؕ قُلِ اللهُ وَاِنَّاۤ اَوْ اِيَّاكُمْ لَعَلٰى هُدًى اَوْ فِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ قُلْ لَّا تُسْاَلُوْنَ عَمَّاۤ اَجْرَمْنَا وَلَا نُسْاَلُ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ

বলো, আকাশ ও পৃথিবী থেকে কে তোমাদেরকে রিযিক প্রদান করেন? বলো, আল্লাহ। নিশ্চয় আমরা অথবা তোমরা (উভয়ের এক পক্ষ) হয় সৎপথের উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছি, কিংবা স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে রয়েছি। বলো, আমরা যে অপরাধ করেছি সেজন্য তোমরা জিজ্ঞেসিত হবে না এবং তোমরা যা কর তার জন্য আমরাও জিজ্ঞেসিত হব না। (সূরা সাবা- ২৪, ২৫)

ব্যাখ্যা : এ বাক্যাংশে প্রচার কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে। যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহর দাসত্ব ও আনুগত্য করবে সে সঠিক পথে থাকবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যদের আনুগত্য করবে সে স্পষ্ট ভ্রষ্টতায় লিপ্ত হবে। এ কারণে বাহ্যত এরপর এ কথাই বলা উচিত ছিল যে, আমরা সঠিক পথে আছি এবং তোমরা পথভ্রষ্ট। কিন্তু এ ধরনের স্পষ্ট উক্তি সত্যকথার দিক দিয়ে যতই সঠিক হোক না কেন, প্রচার কৌশলের দিক থেকে সঠিক হয় না। কারণ যখনই কেউ কোন ব্যক্তিকে সম্বোধন করে সরাসরি তাকে পথভ্রষ্ট বলে আখ্যায়িত করবে এবং নিজেকে সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত বলে দাবী করবে, তখনই ঐ ব্যক্তি জিদ ও হঠকারিতায় লিপ্ত হয়ে যাবে। আল্লাহ নবীকে যেহেতু শুধুমাত্র সত্য কথা বলার জন্যই পাঠাননি; বরং তাঁর প্রতি এ দায়িত্বও আরোপ করেছেন যে, তিনি সর্বাধিক কৌশল অবলম্বন করে বিভ্রান্ত লোকদেরকে সংশোধন করবেন। তাই আল্লাহ এ কথা বলেননি যে, হে নবী! তুমি লোকদেরকে বলে দাও যে, তোমরা পথভ্রষ্ট এবং একমাত্র আমিই সঠিক পথে আছি। বরং এর পরিবর্তে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, তাদেরকে এভাবে বুঝাও যে, আমাদের ও তোমাদের মধ্যকার পার্থক্য তো সুস্পষ্ট হয়ে গেছে। আমরা এমন মা‘বুদকে মানি যিনি রিযিক দেন। পক্ষান্তরে তোমরা এমনসব সত্তাকে মা‘বুদে পরিণত করেছ, যারা রিযিক দেয় না। এখন আমাদের ও তোমাদের একই সাথে সঠিক পথের অনুসারী হওয়া কোনক্রমেই সম্ভব নয়। আমাদের মধ্য থেকে এক পক্ষই সঠিক পথের অনুসারী হতে পারে এবং অন্য পক্ষ অবশ্যই পথভ্রষ্ট হবে। এবার তোমরা নিজেরাই চিন্তা করো- যুক্তি ও প্রমাণের ভিত্তিতে কারা সঠিক পথাবলম্বী এবং কারা পথভ্রষ্ট।

‘‘আমরা জান্নাতী এবং অমুক ব্যক্তি বা দল জাহান্নামী’’- এ ধরনের দাবী কখনো ঈমানদারদের মুখে উচ্চারিত হওয়া উচিত নয়। এ বিষয়টির ফায়সালা একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছাধীন। তিনিই মানুষের ভেতর-বাহির এবং বর্তমান-ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অবগত আছেন। কার প্রতি অনুগ্রহ করতে হবে এবং কাকে শাস্তি দিতে হবে- এ ফায়সালা তিনিই করবেন। আল্লাহর কিতাবের দৃষ্টিতে কোন্ ধরনের মানুষ রহমত লাভের অধিকার রাখে এবং কোন্ ধরনের মানুষ শাস্তি লাভের অধিকারী- নীতিগত দিক দিয়ে মানুষ অবশ্যই এ কথা বলার অধিকার রাখে। কিন্তু অমুক ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া হবে এবং অমুককে ÿমা করে দেয়া হবে- এ কথা বলার অধিকার কারো নেই।

গরীব লোকদেরকে অবহেলা করা যাবে না :

وَلَا تَطْرُدِ الَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيْدُوْنَ وَجْهَهٗ

যারা তাদের প্রতিপালককে সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ডাকে তাদেরকে বিতাড়িত করো না। (সূরা আন‘আম- ৫২)

শানে নুযূল : একদা কতিপয় নেতৃস্থানীয় কাফির রাসূল ﷺ এর কাছে নিবেদন করল- বেলাল, আম্মার এবং সালিম নিম্নস্তরের লোক। আমরা আপনার সঙ্গে দেখা করতে আসলে তারা যেন আপনার মজলিসে না থাকে। কেননা এমন হীন ও নীচ লোকদের সঙ্গে এক মজলিসে বসা আমরা আমাদের মর্যাদাহানী মনে করি। যেহেতু সামাজিক উচ্চমর্যাদা ও নেতৃত্ব অপেক্ষা আল্লাহর নিকট অকপট ও খাঁটি নিয়তই অধিক প্রিয় এবং এ দরিদ্র মুসলিমগণ সর্বদা খাঁটি মহববতের সঙ্গে নবী ﷺ এর মজলিসে উপস্থিত থাকতেন। সুতরাং এ সমস্ত নেতৃস্থানীয় কুরাইশ লোকদের কথাবার্তায় কর্ণপাত করতে নিষেধ করে আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতটি নাযিল করেন।

প্রথমে আত্মীয়দেরকে দাওয়াত দিতে হবে :

وَاَنْذِرْ عَشِيْرَتَكَ الْاَقْرَبِيْنَ

তুমি তোমার নিকটাত্মীয়দেরকে সতর্ক করে দাও। (সূরা শু‘আরা- ২১৪)

না মানলে দায় মুক্তির ঘোষণা দিতে হবে :

فَاِنْ عَصَوْكَ فَقُلْ اِنِّيْ بَرِيْٓءٌ مِّمَّا تَعْمَلُوْنَ

তারা যদি তোমার অবাধ্যতা করে তবে বলে দাও, তোমরা যা কর তা হতে আমি দায়মুক্ত। (সূরা শু‘আরা- ২১৬)

প্রতিপক্ষের অভিযোগের জবাব যুক্তির মাধ্যমে ভদ্র ভাষায় দিতে হবে :

وَلَا تُجَادِلُوْاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ اِلَّا بِالَّتِيْ هِيَ اَحْسَنُ اِلَّا الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا مِنْهُمْ وَقُوْلُوْاۤ اٰمَنَّا بِالَّذِيْۤ اُنْزِلَ اِلَيْنَا وَاُنْزِلَ اِلَيْكُمْ وَاِلٰهُنَا وَاِلٰهُكُمْ وَاحِدٌ وَّنَحْنُ لَهٗ مُسْلِمُوْنَ

তোমরা উত্তমপন্থা ব্যতীত আহলে কিতাবদের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হবে না; তবে তাদের মধ্যে যারা সীমালঙ্ঘন করেছে তাদের সাথে করতে পার। অতঃপর (তাদেরকে) বলো, আমাদের প্রতি ও তোমাদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে আমরা বিশ্বাস স্থাপন করি। আর (আমরা আরো বিশ্বাস স্থাপন করি যে) আমাদের ইলাহ্ ও তোমাদের ইলাহ্ একই (সত্তা)। আর আমরা তাঁরই প্রতি আত্মসমর্পণকারী। (সূরা আনকাবূত- ৪৬)

ব্যাখ্যা : বিতর্ক ও আলাপ-আলোচনা উপযুক্ত যুক্তি-প্রমাণ সহকারে, ভদ্র ও শালীন ভাষায় এবং বুঝার ও বুঝানোর ভাবধারায় উপস্থাপন করতে হবে। প্রচারকের চিন্তা করা উচিত, তিনি কীভাবে শ্রোতার হৃদয়ের দুয়ার উন্মুক্ত করে তার মধ্যে সত্য কথা ঢুকিয়ে দেবেন এবং তাকে সঠিক পথে নিয়ে আসবেন। একজন পালোয়ানের মতো তার লড়াই করা উচিত নয়- যার উদ্দেশ্যই হয় প্রতিপক্ষকে হারিয়ে দেয়া। বরং একজন ডাক্তারের মতো তাকে সবসময় উদ্বিগ্ন থাকতে হবে, যিনি তার রুগীর চিকিৎসা করার সময় এতটা গুরুত্ব দেন যে, তাঁর নিজের কোন ভুলের কারণে রোগীর রোগ যেন আরো বেড়ে না যায় এবং সর্বাধিক কম কষ্ট সহ্য করার মাধ্যমে তাঁর রোগীর রোগ নিরাময় করা সম্ভব হয়। আর এজন্য তিনি সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। দ্বীন প্রচারের ক্ষেত্রেও এমন পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। পেঁচিয়ে কথা বলা, দোষারোপ করা ও অমার্জিত বাক্য ব্যবহার করার প্রবণতা বর্জন করতে হবে। আলোচনায় মধুর বাক্য ব্যবহার করতে হবে। উন্নত পর্যায়ের ভদ্র আচরণ করতে হবে। যাকে উদ্দেশ্য করে বলা হচ্ছে তার মনে যেন জিদ ও একগুঁয়েমী সৃষ্টি হওয়ার অবকাশ দেখা না দেয়। তাকে সহজভাবে বুঝানোর চেষ্টা করতে হবে। যখন মনে হবে যে, সে জিদ ও হঠকারিতায় লিপ্ত হতে চাচ্ছে তখনই তাকে তার অবস্থার উপর ছেড়ে দিতে হবে।

যে ব্যক্তির সাথে বিতর্ক করতে হবে তার ভ্রষ্টতার বিষয়টি আলোচনার শুরুতেই উপস্থাপন করা যাবে না। বরং সত্য ও ন্যায়-নীতির যে অংশগুলো উভয়ের মধ্যে সমভাবে বিরাজ করছে, সেগুলো দিয়ে আলোচনা শুরু করতে হবে। অর্থাৎ বিরোধীয় বিন্দু থেকে আলোচনা শুরু না করে ঐক্যের বিন্দু থেকে শুরু করতে হবে। তারপর সেই সর্বসম্মত বিষয়াবলি থেকে যুক্তি পেশ করে শ্রোতাকে বুঝানোর চেষ্টা করতে হবে যে, যেসব বিষয়ে তোমার ও তার মধ্যে বিরোধ রয়েছে সেগুলোতে তোমার অভিমত সর্বসম্মত ভিত্তিগুলোর সাথে সামঞ্জস্য রাখে; কিন্তু তার অভিমত বিপরীতধর্মী। সুতরাং তার অভিমত ভিত্তিহীন।

দ্বীন প্রচার বাদ দেয়া যাবে না :

وَلَا يَصُدُّنَّكَ عَنْ اٰيَاتِ اللهِ بَعْدَ اِذْ اُنْزِلَتْ اِلَيْكَ وَادْعُ اِلٰى رَبِّكَ وَلَا تَكُوْنَنَّ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ

তোমার প্রতি আল্লাহর আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর তারা যেন তোমাকে কিছুতেই তা হতে বিমুখ না করে দেয়। সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের দিকে আহবান করো এবং কিছুতেই মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সূরা ক্বাসাস- ৮৭)

সমাজ সংস্কারের কাজ না করলে সবাই বিপদে পড়বে:

وَاتَّقُوْا فِتْنَةً لَّا تُصِيْبَنَّ الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا مِنْكُمْ خَآصَّةًۚ وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ

তোমরা এমন ফিতনাকে ভয় করো, যা বিশেষ করে তোমাদের মধ্যে যারা যালিম কেবল তাদেরকেই স্পর্শ করবে না (বরং সকলের মাঝে ছড়িয়ে যাবে)। জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে খুবই কঠোর। (সূরা আনফাল- ২৫)

নূহ (আঃ) দীর্ঘদিন দাওয়াত দিয়েও বিরক্ত হননি :

وَلَقَدْ اَرْسَلْنَا نُوْحًا اِلٰى قَوْمِهٖ فَلَبِثَ فِيْهِمْ اَلْفَ سَنَةٍ اِلَّا خَمْسِيْنَ عَامًا

আমি তো নূহকে তার সম্প্রদায়ের নিকট প্রেরণ করেছিলাম। সে তাদের মধ্যে অবস্থান করেছিল পঞ্চাশ কম এক হাজার বছর। (সূরা আনকাবূত- ১৪)

মানুষ উপকৃত হবে, অথবা নিজের দায়িত্ব আদায় হবে :

وَاِذْ قَالَتْ اُمَّةٌ مِّنْهُمْ لِمَ تَعِظُوْنَ قَوْمًانِ اللهُ مُهْلِكُهُمْ اَوْ مُعَذِّبُهُمْ عَذَابًا شَدِيْدًاؕ قَالُوْا مَعْذِرَةً اِلٰى رَبِّكُمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَّقُوْنَ

স্মরণ করো, যখন তাদের একদল বলেছিল, আল্লাহ যাদেরকে ধ্বংস করবেন কিংবা কঠোর শাস্তি দেবেন, তোমরা তাদেরকে উপদেশ দাও কেন? তারা বলেছিল, তোমাদের প্রতিপালকের নিকট দায়বদ্ধতা থেকে মুক্তির জন্য। হতে পারে তারা এর ফলে সাবধান হবে। (সূরা আ‘রাফ- ১৬৪)

ব্যাখ্যা : এ আয়াতে দ্বীনী তাবলীগের একটি নিয়ম বর্ণনা করা হয়েছে। হকের দাওয়াত পেশকারী যখন যুক্তিসঙ্গত প্রমাণাদ্বিসহ কারো সামনে সুস্পষ্টভাবে দাওয়াত পেশ করে এবং তার আপত্তি ও যুক্তি-প্রমাণের জবাব পেশ করে, তখন তার উপর সত্য প্রকাশ করার যে দায়িত্ব ও কর্তব্য থাকে তা থেকে সে অব্যাহতি লাভ করে। এরপরও যদি কেউ তার আকীদা-বিশ্বাস ও ধ্যান-ধারণার প্রতি অটল থাকে, তবে তার দায়-দায়িত্ব হকের দাওয়াত পেশকারীর উপর বর্তায় না। তাই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর পবিত্র কালামের মধ্যে সুস্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন যে, ‘‘এ ধরনের মানুষের প্রতি ভ্রূক্ষেপ করো না, তাদের প্রতি ভ্রূক্ষেপ না করায় তোমাকে তিরস্কার করা হবে না।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন