hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

তাফসীরুল কুরআন বিল কুরআন

লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

৫৯৪
অধ্যায়- ২২ : মুহাম্মাদ ﷺ কে আল্লাহর সান্ত্বনা
তোমাকে যা বলা হচ্ছে পূর্ববর্তী নবী-রাসূলদেরকেও তাই বলা হয়েছে :

مَا يُقَالُ لَكَ اِلَّا مَا قَدْ قِيْلَ لِلرُّسُلِ مِنْ قَبْلِكَؕ اِنَّ رَبَّكَ لَذُوْ مَغْفِرَةٍ وَّذُوْ عِقَابٍ اَلِيْمٍ

তোমার সম্বন্ধে তো তাই বলা হয়, যা তোমার পূর্ববর্তী রাসূলদের সম্পর্কে বলা হতো। নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক ক্ষমাশীল ও কঠিন শাস্তিদাতা। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৪৩)

তোমার আগেও অনেক নবীকে মিথ্যারোপ করা হয়েছে :

فَاِنْ كَذَّبُوْكَ فَقَدْ كُذِّبَ رُسُلٌ مِّنْ قَبْلِكَ جَآءُوْا بِالْبَيِّنَاتِ وَالزُّبُرِ وَالْكِتَابِ الْمُنِيْرِ

তারা যদি তোমার প্রতি মিথ্যারোপ করে, তবে (জেনে রেখো) তোমার পূর্বেও রাসূলগণকে মিথ্যারোপ করা হয়েছিল, যারা প্রকাশ্য নিদর্শনাবলি ও অনেক সহীফা এবং উজ্জ্বল গ্রন্থসহ আগমন করেছিল।

(সূরা আলে ইমরান- ১৮৪)

তোমার পূর্বেও সকল নবীর সাথে বিদ্রূপ করা হয়েছে :

وَلَقَدْ اَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ فِيْ شِيَعِ الْا َوَّلِيْنَ وَمَا يَأْتِيْهِمْ مِّنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا كَانُوْا بِه يَسْتَهْزِئُوْنَ

তোমার পূর্ববর্তী জাতিগুলোর কাছেও আমি রাসূল প্রেরণ করেছিলাম। তাদের কাছে এমন কোন রাসূল আসেনি, যাকে নিয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেনি। (সূরা হিজর- ১০, ১১)

وَلَقَدِ اسْتُهْزِئَ بِرُسُلٍ مِّنْ قَبْلِكَ فَحَاقَ بِالَّذِيْنَ سَخِرُوْا مِنْهُمْ مَّا كَانُوْا بِهٖ يَسْتَهْزِئُوْنَ

তোমার পূর্বেও অনেক রাসূলকেই ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা হয়েছে। তারা যা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করছিল বিদ্রূপকারীদেরকে পরিণামে তাই পরিবেষ্টন করে নিয়েছিল। (সূরা আন‘আম- ১০)

প্রত্যেক নবীরই দুশমন ছিল :

وَكَذٰلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا شَيَاطِيْنَ الْاِنْسِ وَالْجِنِّ يُوْحِيْ بَعْضُهُمْ اِلٰى بَعْضٍ زُخْرُفَ الْقَوْلِ غُرُوْرًاؕ وَلَوْ شَآءَ رَبُّكَ مَا فَعَلُوْهُ فَذَرْهُمْؕ وَمَا يَفْتَرُوْنَ

এভাবে আমি মানব ও জিনদের মধ্যে শয়তানদেরকে প্রত্যেক নবীর শত্রু বানিয়ে দিয়েছিলাম, যারা (মুমিনদের সাথে) প্রতারণা করার উদ্দেশ্যে তাদের একে অন্যকে চমকপ্রদ কথা দ্বারা প্ররোচিত করত। যদি তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করতেন, তবে তারা এটা করত না; সুতরাং তুমি তাদেরকে ও তাদের মিথ্যা রচনাকে বর্জন করো। (সূরা আন‘আম- ১১২)

وَكَذٰلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا مِّنَ الْمُجْرِمِيْنَؕ وَكَفٰى بِرَبِّكَ هَادِيًا وَّنَصِيْرًا

এভাবেই আমি অপরাধীদেরকে প্রত্যেক নবীর শত্রু হিসেবে মনোনীত করেছিলাম। তবে পথপ্রদর্শক ও সাহায্যকারী হিসেবে তোমার প্রতিপালকই যথেষ্ট ছিল। (সূরা ফুরক্বান- ৩১)

প্রত্যেক নবীকে গ্রেফতার করার চেষ্টা করা হয়েছে :

وَهَمَّتْ كُلُّ اُمَّةٍ ۢبِرَسُوْلِهِمْ لِيَأْخُذُوْهُ وَجَادَلُوْا بِالْبَاطِلِ لِيُدْحِضُوْا بِهِ الْحَقَّ فَاَخَذْتُهُمْ فَكَيْفَ كَانَ عِقَابِ

প্রত্যেক সম্প্রদায় নিজ নিজ রাসূলকে গ্রেফতার করার জন্য চক্রান্ত করেছিল এবং তারা বাজে তর্কে লিপ্ত হয়েছিল, যেন তারা এর দ্বারা সত্যকে নষ্ট করে দিতে পারে। ফলে আমি তাদেরকে পাকড়াও করলাম; কতই না কঠোর ছিল আমার শাস্তি। (সূরা মু’মিন- ৫)

আল্লাহ বিরোধীদেরকে বেষ্টন করে আছেন :

وَاِذْ قُلْنَا لَكَ اِنَّ رَبَّكَ اَحَاطَ بِالنَّاسِ

স্মরণ করো, যখন আমি তোমাকে বলেছিলাম, নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক মানুষকে পরিবেষ্টন করে আছেন। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৬০)

তোমাকে রক্ষার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট :

وَاِنْ يُّرِيْدُوْاۤ اَنْ يَّخْدَعُوْكَ فَاِنَّ حَسْبَكَ اللهُ هُوَ الَّذِيْۤ اَيَّدَكَ بِنَصْرِهٖ وَبِالْمُؤْمِنِيْنَ

যদি তারা তোমাকে প্রতারিত করতে চায়, তবে তোমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। তিনি তোমাকে স্বীয় সাহায্য ও মুমিনদের দ্বারা শক্তিশালী করেছেন। (সূরা আনফাল- ৬২)

اَلَيْسَ اللهُ بِكَافٍ عَبْدَهٗؕ وَيُخَوِّفُوْنَكَ بِالَّذِيْنَ مِنْ دُوْنِهٖؕ وَمَنْ يُّضْلِلِ اللهُ فَمَا لَهٗ مِنْ هَادٍ

আল্লাহ কি তাঁর বান্দার জন্য যথেষ্ট নন? অথচ তারা তোমাকে আল্লাহর পরিবর্তে অন্য কারো ভয় দেখায়। বস্তুত আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার জন্য কোন পথপ্রর্দশক নেই। (সূরা যুমার- ৩৬)

يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ حَسْبُكَ اللهُ وَمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ

হে নবী! তোমার জন্য ও তোমার অনুসারী মুমিনদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। (সূরা আনফাল- ৬৪)

আল্লাহ তোমার বিরোধীদের চেয়েও শক্তিশালী জনপদ ধ্বংস করেছেন :

وَكَاَيِّنْ مِّنْ قَرْيَةٍ هِيَ اَشَدُّ قُوَّةً مِّنْ قَرْيَتِكَ الَّتِيْۤ اَخْرَجَتْكَۚ اَهْلَكْنَاهُمْ فَلَا نَاصِرَ لَهُمْ

(হে রাসূল!) তারা যে এলাকা থেকে আপনাকে বের করে দিয়েছে এর চেয়েও শক্তিশালী কত এলাকা ছিল। আমি তাদেরকে এমনভাবে ধ্বংস করে দিয়েছি যে, তাদেরকে সাহায্য করার মতো কেউ ছিল না।

(সূরা মুহাম্মাদ- ১৩)

আল্লাহর শাস্তি কখন আসবে- এ নিয়ে চিন্তা করো না :

فَاصْبِرْ اِنَّ وَعْدَ اللهِ حَقٌّۚ فَاِمَّا نُرِيَنَّكَ بَعْضَ الَّذِيْ نَعِدُهُمْ اَوْ نَتَوَفَّيَنَّكَ فَاِلَيْنَا يُرْجَعُوْنَ

সুতরাং ধৈর্যধারণ করো, নিশ্চয় আল্লাহর অঙ্গীকার সত্য। আমি তাদেরকে যে অঙ্গীকার প্রদান করি তার কিছু যদি দেখিয়েই দেই অথবা তোমার মৃত্যু ঘটাই- তবে তাদেরকে তো আমার নিকটেই প্রত্যাবর্তন করতে হবে। (সূরা মু’মিন- ৭৭)

ব্যাখ্যা : অর্থাৎ যুলুম ও বেঈমানীর সাহায্যে ন্যায় ও সত্যের বিরোধীরা তাদের কৃতকর্মের শাস্তি কখন কী পায় তুমি সে বিষয়ে চিন্তা করো না। অথবা তোমার জীবদ্দশায় ইসলাম প্রসার লাভ করে কি না, সে চিন্তাও তুমি করবে না। তোমার জন্য সান্ত্বনা হিসেবে এতটুকুই যথেষ্ট যে, তুমি ন্যায় ও সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত আছ। অতএব ফলাফলের চিন্তা না করে নিজের দায়িত্ব পালন করতে থাকো। আল্লাহ বাতিলের মাথা কখন অবনত করান সেটা আল্লাহর উপরই ছেড়ে দাও।

আমি এদের থেকে প্রতিশোধ নেবই :

فَاِمَّا نَذْهَبَنَّ بِكَ فَاِنَّا مِنْهُمْ مُّنْتَقِمُوْنَ اَوْ نُرِيَنَّكَ الَّذِيْ وَعَدْنَاهُمْ فَاِنَّا عَلَيْهِمْ مُّقْتَدِرُوْنَ

আমি যদিও তোমার মৃত্যু ঘটাই, তবুও আমি তাদের উপর প্রতিশোধ নেব! অথবা আমি তাদেরকে যে আযাবের ওয়াদা করেছি যদি আমি তোমাকে তা প্রত্যক্ষ করাই, তবে তাদের উপর অবশ্যই আমার পূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে। (সূরা যুখরুফ- ৪১, ৪২)

তোমার তাড়াহুড়া করার প্রয়োজন নেই :

فَاصْبِرْ كَمَا صَبَرَ اُولُو الْعَزْمِ مِنَ الرُّسُلِ وَلَا تَسْتَعْجِلْ لَّهُمْ

অতএব (হে রাসূল!) আপনি ধৈর্যধারণ করুন, যেমনিভাবে সাহসী রাসূলগণ ধৈর্যধারণ করেছেন। আর আপনি তাদের ব্যাপারে তাড়াহুড়া করবেন না। (সূরা আহকাফ- ৩৫)

ব্যাখ্যা : অর্থাৎ তোমাদের পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণ যেভাবে বছরের পর বছর ধরে ক্রমাগত ধৈর্য ও অক্লান্ত প্রচেষ্টার মাধ্যমে তাদের জাতির অসন্তুষ্টি, বিরোধিতা, বাধা-বিপত্তি ও নানা রকম উৎপীড়নের মুকাবিলা করেছেন তুমিও সে রকম করো এবং কখনো মনে এরূপ ধারণা স্থান দিয়ো না যে, এসব লোক অনতিবিলম্বে ঈমান আনুক, নয়তো আল্লাহ তাদের উপর আযাব নাযিল করুক।

ধৈর্যধারণ করো :

وَاصْبِرْ لِحُكْمِ رَبِّكَ فَاِنَّكَ بِاَعْيُنِنَا

তুমি তোমার প্রতিপালকের নির্দেশের অপেক্ষায় ধৈর্যধারণ করো; কেননা তুমি আমার চোখের সামনেই রয়েছ। (সূরা তূর- ৪৮)

ব্যাখ্যা : যারা জাহেলিয়াতের অবস্থা অপরিবর্তিত রাখার জন্য নিজেদের সকল প্রকার কর্মতৎপরতা নিয়োজিত করে, তারা সমস্ত নৈতিক বাঁধনমুক্ত হয়ে নবী ﷺ এর বিরুদ্ধে সবরকমের নিকৃষ্টতম চক্রান্ত চালাচ্ছিল। তারা অত্যন্ত অশ্লীলতা, প্রতারণা, জালিয়াতি ও মিথ্যার অস্ত্র ব্যবহার করে এমন এক নিষ্কলুষ ব্যক্তির কার্যক্রমকে পরাস্ত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছিল, যিনি নিঃস্বার্থভাবে সাধারণ মানুষের মঙ্গলের জন্য দিন-রাত সংগ্রাম করে যাচ্ছিলেন। তাদের এ তৎপরতা দেখে নবী ﷺ মনে মনে অত্যন্ত কষ্ট অনুভব করতেন। তাছাড়া একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তি একজন নিকৃষ্ট চরিত্রের অধিকারী লোকের মুখোমুখি হবেন এবং উক্ত নিকৃষ্ট চরিত্রের অধিকারী লোকে অসৎ কলা-কৌশল ও নির্যাতনের স্বীকার হবেন- এসব পর্যবেক্ষণ করে স্বাভাবিকভাবেই তিনি মনে ব্যথা পেতে পারে। কাজেই এখানে আল্লাহর বক্তব্যের উদ্দেশ্য এ নয় যে, তাদের ঐসব কর্মতৎপরতার কারণে রাসূল ﷺ এর মনে স্বাভাবিকভাবে যে ব্যথা ও মর্মবেদনা সৃষ্টি হয় তা না হওয়া উচিত বরং আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে, তিনি যেন মন খারাপ না করেন। তিনি যেন মনোবল না হারিয়ে ফেলেন এবং ধৈর্যের সাথে আল্লাহর বান্দাদের সংস্কার ও সংশোধনের কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। আর এসব লোকের ব্যাপারে বলা যায় যে, এরা যে ধরনের নিকৃষ্ট নৈতিক গুণাবলি নিজেদের মধ্যে লালন করেছে তাতে তাদের পক্ষ থেকে এ ধরনের ব্যবহারই আশা করা যেতে পারে। এদের থেকে কোন ভালো ব্যবহার আশাই করা যায় না।

তাদেরকে কিছু দিন উপেক্ষা করে চলো :

فَاصْفَحْ عَنْهُمْ وَقُلْ سَلَامٌؕ فَسَوْفَ يَعْلَمُوْنَ

সুতরাং তুমি তাদেরকে উপেক্ষা করো এবং বলো, সালাম; অতি শীঘ্রই তারা (তাদের পরিণতি সম্পর্কে) জানতে পারবে। (সূরা যুখরুফ- ৮৯)

وَتَوَلَّ عَنْهُمْ حَتّٰى حِيْنٍ

অতএব আপনি তাদেরকে কিছুকালের জন্য উপেক্ষা করুন। (সূরা সাফফাত- ১৭৮)

দুঃখে নিজেকে বিনাশ করে দিয়ো না :

لَعَلَّكَ بَاخِعٌ نَّفْسَكَ اَلَّا يَكُوْنُوْا مُؤْمِنِيْنَ اِنْ نَّشَأْ نُنَزِّلْ عَلَيْهِمْ مِّنَ السَّمَآءِاٰيَةً فَظَلَّتْ اَعْنَاقُهُمْ لَهَا خَاضِعِيْنَ

তারা মুমিন হচ্ছে না বলে তুমি হয়তো মনোকষ্টে আত্মবিনাশী হয়ে পড়বে। (জেনে রেখো) আমি ইচ্ছা করলে আকাশ হতে তাদের নিকট এক নিদর্শন প্রেরণ করতে পারতাম, ফলে তারা এর সামনে নত হয়ে যেত। (সূরা শু‘আরা- ৩, ৪)

فَلَا تَذْهَبْ نَفْسُكَ عَلَيْهِمْ حَسَرَاتٍؕ اِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ ۢبِمَا يَصْنَعُوْنَ

অতএব আপনি তাদের জন্য অনুতাপ করে নিজেকে ধ্বংস করে দেবেন না। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা জানেন। (সূরা ফাতির- ৮)

ব্যাখ্যা : নবী ﷺ কে এ মর্মে সান্ত্বনা দেয়া হয়েছে যে, এদের ঈমান না আনার দায়দায়িত্ব তোমার উপর বর্তায় না। কাজেই তুমি কেন অনর্থক নিজেকে দুঃখে ও শোকে দগ্ধীভূত করছ? তোমার কাজ শুধুমাত্র সুখবর দেয়া ও ভয় দেখানো। লোকদেরকে মুমিন বানানো তোমার কাজ নয়। কাজেই তুমি কেবল নিজের প্রচারের দায়িত্ব পালন করে যাও। যে মেনে নেবে তাকে সুখবর দেবে এবং যে মেনে নেবে না তাকে তার অশুভ পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করে দেবে। নবী ﷺ ও তাঁর সাথিদেরকে যেসব কষ্ট দেয়া হচ্ছিল, সেজন্য তাঁর মনে কোন দুঃখ ছিল না। বরং যে দুঃখটি তাঁকে ভেতরে ভেতরে খাচ্ছিল সেটি ছিল এই যে, তিনি নিজের জাতিকে নৈতিক অধঃপতন ও ভ্রষ্টতা থেকে বের করে আনতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু তারা কোনক্রমেই এ পথে পা বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছিল না। তাঁর পূর্ণ বিশ্বাস ছিল, এ ভ্রষ্টতার অনিবার্য ফল ধ্বংস। আর এতে আল্লাহর আযাব ছাড়া আর কোনকিছুই লাভ করা যাবে না। তাই তিনি তাদেরকে এ পরিণতি থেকে রক্ষা করার জন্য দিন-রাত প্রাণান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তারা আল্লাহর আযাবের সম্মুখীন হওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল। নবী ﷺ নিজেই তাঁর এ মানসিক অবস্থাকে একটি হাদীসে এভাবে বর্ণনা করেছেন, আমার ও তোমাদের দৃষ্টান্ত এমন এক ব্যক্তির মতো, যে আলোর জন্য আগুন জ্বালাল। আর পতঙ্গরা পুড়ে মরার জন্য তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে শুরু করল। সে এদেরকে যে কোনক্রমে আগুন থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করে, কিন্তু এ পতঙ্গরা তার কোন প্রচেষ্টাকেই ফলপ্রসূ করতে দেয় না। আমার অবস্থাও অনুরূপ। আমি তোমাদের হাত ধরে টানছি; কিন্তু তোমরা আগুনে লাফিয়ে পড়ছ। (সহীহ বুখারী, হা/৩৪২৬; সহীহ মুসলিম, হা/৬০৯৭)

তুমি এদের কথায় ব্যথিত হয়ো না :

وَلَا يَحْزُنْكَ قَوْلُهُمْؕ اِنَّ الْعِزَّةَ لِلّٰهِ جَمِيْعًاؕ هُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ

তাদের কথা তোমাকে যেন দুঃখ না দেয়। নিশ্চয় সমস্ত শক্তিই আল্লাহর; তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা ইউনুস- ৬৫)

فَلَا يَحْزُنْكَ قَوْلُهُمْؕ اِنَّا نَعْلَمُ مَا يُسِرُّوْنَ وَمَا يُعْلِنُوْنَ

অতএব এদের কথা যেন আপনাকে দুঃখ না দেয়। অবশ্যই আমি অবগত আছি সে সম্বন্ধে, যা তারা গোপন করে এবং যা তারা প্রকাশ করে। (সূরা ইয়াসীন- ৭৬)

তুমি দুর্বল হয়ো না :

فَاصْبِرْ اِنَّ وَعْدَ اللهِ حَقٌّ وَّلَا يَسْتَخِفَّنَّكَ الَّذِيْنَ لَا يُوْقِنُوْنَ

অতএব তুমি ধৈর্যধারণ করো। নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য। যারা দৃঢ় বিশ্বাসী নয় তারা যেন তোমাকে বিচলিত করতে না পারে। (সূরা রূম- ৬০)

ব্যাখ্যা : অর্থাৎ শত্রুরা যেন তোমাদেরকে এমন দুর্বল অবস্থায় না পায় যে, তাদের মিথ্যাচার দেখে তোমরা সাহস হারিয়ে ফেল অথবা তাদের হুমকি ও নির্যাতনে ভীত হয়ে পড়। বরং তারা যেন তোমাদেরকে ঈমানি চেতনায় ও সুপথ হাসিলের উদ্দেশ্যে এত বেশি মজবুত পায় যে, তোমাদেরকে কোন প্রকার ভয়ে ভীত করা সম্ভব নয়, কোন প্রতারণার জালে আবদ্ধ করে ও নির্যাতন চালিয়ে সুপথ থেকে সরানোও সম্ভব নয়। এমনকি তারা দ্বীনের ব্যাপারে মূল্য বিনিময়ের মাধ্যমে কোন প্রকার আপোষের সুযোগও নিতে না পারে। অবিশ্বাসীরা যেন তোমাকে গুরুত্বহীন মনে না করে। আল্লাহর এ ছোট্ট বাণীর মধ্যেই এসব বিষয়বস্তু লুকিয়ে রাখা হয়েছে। আল্লাহ তাঁর নবীকে যেমন শক্তিশালী ও গুরুত্ববহ দেখতে চাচ্ছিলেন, তিনি ঠিক তেমনটিই হতে পেরেছিলেন। তাঁর সাথে যে ব্যক্তিই যে ময়দানে শক্তি পরীক্ষা করেছে, সে-ই হেরে গেছে। শেষ পর্যন্ত এ মহান ব্যক্তিত্ব এমন বিপ্লব সৃষ্টি করেন, যার পথরোধ করার জন্য আরবের কাফির ও মুশরিকসমাজ নিজেদের সর্বশক্তি ও কৌশল প্রয়োগ করেও ব্যর্থ হয়ে গেছে।

কাফিরদের দাম্ভিকতা দেখে বিভ্রান্ত হয়ো না :

لَا يَغُرَّنَّكَ تَقَلُّبُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا فِى الْبِلَادِ

শহরসমূহে কাফিরদের চালচলন যেন তোমাকে প্রতারিত না করে। (সূরা আলে ইমরান- ১৯৬)

وَمَنْ كَفَرَ فَلَا يَحْزُنْكَ كُفْرُهٗؕ اِلَيْنَا مَرْجِعُهُمْ فَنُنَبِّئُهُمْ بِمَا عَمِلُوْاؕ اِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ ۢبِذَاتِ الصُّدُوْرِ نُمَتِّعُهُمْ قَلِيْلًا ثُمَّ نَضْطَرُّهُمْ اِلٰى عَذَابٍ غَلِيْظٍ

কেউ যদি কুফরী করে ফেলে, তবে আপনি তার কুফরীর জন্য চিন্তিত হবেন না। তাদেরকে আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে। তখন আমি তাদেরকে অবহিত করব, যা কিছু তারা করত। নিশ্চয় আল্লাহ অন্তরের বিষয় সম্পর্কেও সবিশেষ অবহিত রয়েছেন। আমি অল্প সময়ের জন্য তাদেরকে সুখ-সম্ভোগ দেব, অতঃপর পুনরায় তাদেরকে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে বাধ্য করব। (সূরা লুক্বমান- ২৩, ২৪)

ওহীর জ্ঞানই তোমার জন্য উত্তম সম্পদ :

وَلَقَدْ اٰتَيْنَاكَ سَبْعًا مِّنَ الْمَثَانِيْ وَالْقُرْاٰنَ الْعَظِيْمَ لَا تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ اِلٰى مَا مَتَّعْنَا بِهٖۤ اَزْوَاجًا مِّنْهُمْ وَلَا تَحْزَنْ عَلَيْهِمْ

আমি তো তোমাকে দিয়েছি সাত আয়াত বিশিষ্ট (সূরা ফাতিহা) যা পুনঃ পুনঃ পাঠ করা হয় এবং মহান কুরআন। আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণিকে ভোগবিলাসের যে উপকরণ দিয়েছি তার প্রতি তুমি কখনো তোমার চক্ষুদ্বয় প্রসারিত করো না এবং তাদের জন্য দুঃখও করো না। (সূরা হিজর- ৮৭, ৮৮)

ব্যাখ্যা : এ কথাটি নবী ﷺ এবং তাঁর সাথিদেরকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। তখন এমন একটা সময় ছিল যখন নবী ﷺ ও তাঁর সাথিরা সবাই চরম দুরবস্থার মধ্যে জীবন-যাপন করছিলেন। নবুওয়াতের দায়িত্ব কাঁধে নেয়ার সাথে সাথেই নবী ﷺ এর ব্যবসা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ওদিকে দশ বারো বছরের মধ্যে খাদীজা (রাঃ) এর সব সম্পদও খরচ হয়ে গিয়েছিল। মুসলিমদের মধ্যে কিছু উঠতি যুবক ছিলেন, তাদেরকে অভিভাবকরা ঘর থেকে বের করে দিয়েছিল। কতক ছিলেন ব্যবসায়ী ও কারিগর। অনবরত অর্থনৈতিক সংকটের আঘাতে তাদের কাজকর্ম একদম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আর কেউ আগে থেকেই ছিলেন দাস বা মুক্ত দাস। তাদের কোন অর্থনৈতিক ভিত্তিই ছিল না। তাছাড়া নবী ﷺ সহ সকল মুসলিম মক্কা ও তার চারপাশের পল্লীগুলোতে চরম নির্যাতনের মধ্যে জীবন-যাপন করছিলেন। তারা ছিলেন সবদিক থেকে নিন্দিত। সর্বত্রই তাঁরা লাঞ্ছনা ও হাসি-তামাশার খোরাক হয়েছিলেন। মানসিক ও আত্মিক মর্মজ্বালার সাথে সাথে তারা দৈহিক নিপীড়নের হাত থেকেও রেহাই পাননি। অন্যদিকে কুরাইশ নেতারা পার্থিব ধনসম্পদের ক্ষেত্রে সবরকমের প্রাচুর্যের অধিকারী ছিল। এ অবস্থায় বলা হচ্ছে, তোমার মন হতাশাগ্রস্ত কেন? তোমাকে আমি এমন সম্পদ দান করেছি যার তুলনায় দুনিয়ার সমস্ত সম্পদ তুচ্ছ।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন