hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

তাফসীরুল কুরআন বিল কুরআন

লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

৩৬৪
পর্ব- ৪৫ : কিয়ামতে মানুষের অবস্থা অধ্যায়- ১ : কিয়ামতের দিন মানুষের অবস্থা হবে করুন
সেদিন সবাই কবর থেকে উঠবে :

وَاِذَا الْقُبُوْرُ بُعْثِرَتْ

যখন কবরসমূহ উন্মোচন করা হবে। (সূরা ইনফিতার- ৪)

يَوْمَ يَسْمَعُوْنَ الصَّيْحَةَ بِالْحَقِّؕ ذٰلِكَ يَوْمُ الْخُرُوْجِ

যেদিন (মানুষ) এক বিকট আওয়াজ শ্রবণ করবে। আর এটাই হচ্ছে (কবর হতে মৃতদের) বের হওয়ার দিন। (সূরা ক্বাফ- ৪২)

তখন আল্লাহর দিকে ডাক পড়বে :

وَاسْتَمِعْ يَوْمَ يُنَادِ الْمُنَادِ مِنْ مَّكَانٍ قَرِيْبٍ

শ্রবণ করো, যেদিন এক আহবানকারী নিকটবর্তী স্থান হতে আহবান করবে। (সূরা ক্বাফ- ৪১)

اِلٰى رَبِّكَ يَوْمَئِذِنِ الْمَسَاقُ

আজ তোমার প্রতিপালকের নিকট যাওয়ার দিন। (সূরা ক্বিয়ামাহ- ৩০)

ব্যাখ্যা : যে ব্যক্তি যেখানেই মৃত্যুবরণ করবে কিংবা যেখানেই তার মৃত্যু সংঘটিত হয়েছিল সেখানেই তার কাছে আল্লাহর ঘোষকের এ আওয়াজ পৌঁছবে যে, উঠো! এখন তোমার রবের কাছে হিসাব দেয়ার জন্য চলো। এ আওয়াজ হবে এমন যে, ভূপৃষ্ঠের আনাচে-কানাচে যে যেখানেই জীবিত হয়ে উঠবে সে সেখানেই মনে করবে যে, আহবানকারী নিকটেই কোথাও থেকে তাকে আহবান করেছে। একই সময়ে গোটা পৃথিবীর সব জায়গায় সমানভাবে এ আওয়াজ শোনা যাবে।

দেহের সাথে প্রাণ মিলিত হবে :

وَاِذَا النُّفُوْسُ زُوِّجَتْ

যখন প্রাণসমূহকে (দেহে) মিলিত করা হবে। (সূরা তাকভীর- ৭)

মানুষ তাদের রবের দিকে ছুটবে :

وَنُفِخَ فِى الصُّوْرِ فَاِذَا هُمْ مِّنَ الْاَجْدَاثِ اِلٰى رَبِّهِمْ يَنْسِلُوْنَ

শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে এবং তৎক্ষণাৎ তারা কবর থেকে (পুনরুত্থিত হয়ে) নিজের প্রতিপালকের দিকে ছুটে যাবে। (সূরা ইয়াসীন- ৫১)

মানুষ দলে দলে আসবে :

يَوْمَ يُنْفَخُ فِى الصُّوْرِ فَتَاْتُوْنَ اَفْوَاجًا

যেদিন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে, তখন তোমরা দলে দলে আসবে। (সূরা নাবা- ১৮)

يَوْمَئِذٍ يَّصْدُرُ النَّاسُ اَشْتَاتًا لِّيُرَوْا اَعْمَالَهُمْ

সেদিন মানুষ বিভিনণ দলে প্রকাশ পাবে, যাতে তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম দেখানো হয়। (সূরা যিলযাল- ৬)

সবাই হতভম্ব হয়ে পড়বে :

قَالُوْا يَا وَيْلَنَا مَنْ ۢبَعَثَنَا مِنْ مَّرْقَدِنَا هٰذَاٚ مَا وَعَدَ الرَّحْمٰنُ وَصَدَقَ الْمُرْسَلُوْنَ

তারা বলবে, হায় আমাদের দুর্ভোগ! কে আমাদেরকে আমাদের কবর থেকে উঠাল? দয়াময় আল্লাহ তো এরই ওয়াদা দিয়েছিলেন এবং রাসূলগণ সত্যই বলেছিলেন। (সূরা ইয়াসীন- ৫২)

মানুষ দৌড়াতে শুরু করবে :

يَوْمَ يَخْرُجُوْنَ مِنَ الْاَجْدَاثِ سِرَاعًا كَاَنَّهُمْ اِلٰى نُصُبٍ يُّوْفِضُوْنَ

সেদিন তারা দ্রুতবেগে কবর হতে বের হবে। তখন মনে হবে, তারা যেন কোন একটি আস্তানার দিকে ছুটে আসছে। (সূরা মা‘আরিজ- ৪৩)

ফেরেশতারা মানুষকে আল্লাহর দিকে হাঁকিয়ে নেবে :

وَجَآءَتْ كُلُّ نَفْسٍ مَّعَهَا سَآئِقٌ وَّشَهِيْدٌ

সেদিন প্রত্যেক ব্যক্তি উপস্থিত হবে, তার সাথে থাকবে চালক ও সাক্ষী। (সূরা ক্বাফ- ২১)

ব্যাখ্যা : এর দ্বারা সেই দু’জন ফেরেশতাকে বুঝানো হয়েছে, যারা পৃথিবীতে ঐ ব্যক্তির সমস্ত কথা ও কাজের রেকর্ড প্রস্তুত করার কাজে নিযুক্ত ছিল। কিয়ামতের দিন সিঙ্গায় ফুৎকার দেয়ার সাথে সাথে প্রত্যেক মানুষ যখন তার কবর থেকে উঠবে তৎক্ষণাৎ উক্ত ফেরেশতাদ্বয় এসে তাকে নিজেদের তত্ত্বাবধানে নিয়ে নেবে। একজন তাকে আল্লাহ তা‘আলার আদালতের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাবে এবং অন্যজন ‘আমলনামা’ সাথে নিয়ে যাবে।

সবাইকে সমবেত করা হবে :

هٰذَا يَوْمُ الْفَصْلِۚ جَمَعْنَاكُمْ وَالْاَوَّلِيْنَ

এটা চূড়ান্ত ফায়সালার দিন, আমি একত্রিত করেছি তোমাদেরকে এবং পূর্ববর্তীদেরকে। (সূরা মুরসালাত- ৩৮)

قُلْ اِنَّ الْاَوَّلِيْنَ وَالْاٰخِرِيْنَ لَمَجْمُوْعُوْنَ اِلٰى مِيْقَاتِ يَوْمٍ مَّعْلُوْمٍ

বলো, অবশ্যই পূর্ববর্তীগণ এবং পরবর্তীগণ সকলকে একত্রিত করা হবে একটি নির্ধারিত দিনে নির্ধারিত সময়ে। (সূরা ওয়াক্বিয়া- ৪৯, ৫০)

একে একে সবাই উপস্থিত হবে :

اِنْ كُلُّ مَنْ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ اِلَّاۤ اٰتِى الرَّحْمٰنِ عَبْدًا

আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে কেউই এমন নয় যে, সে দয়াময়ের নিকট বান্দা হিসেবে উপস্থিত হবে না। (সূরা মারইয়াম- ৯৩)

যেখানেই থাকবে আল্লাহর কাছে আসবে :

اَيْنَ مَا تَكُوْنُوْا يَاْتِ بِكُمُ اللهُ جَمِيْعًاؕ اِنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ

তোমরা যেখানেই থাক না কেন আল্লাহ তোমাদের সকলকে একত্রিত করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে পূর্ণ ক্ষমতাবান। (সূরা বাক্বারা- ১৪৮)

রাসূলদেরকেও উপস্থিত করা হবে :

وَاِذَا الرُّسُلُ اُقِّتَتْ

আর রাসূলগণকেও নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত করা হবে। (সূরা মুরসালাত- ১১)

সবাই আল্লাহর প্রশংসা করবে :

يَوْمَ يَدْعُوْكُمْ فَتَسْتَجِيْبُوْنَ بِحَمْدِهٖ وَتَظُنُّوْنَ اِنْ لَّبِثْتُمْ اِلَّا قَلِيْلًا

যেদিন তিনি তোমাদেরকে আহবান করবেন। অতঃপর তোমরা তাঁর প্রশংসার সাথে তাঁর আহবানে সাড়া দেবে এবং তোমরা মনে করবে যে, তোমরা (পৃথিবীতে) খুব অল্প কালই অবস্থান করেছিলে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৫২)

সবাই কাতারবন্দী হয়ে আল্লাহর সামনে দাঁড়াবে :

وَعُرِضُوْا عَلٰى رَبِّكَ صَفًّاؕ لَقَدْ جِئْتُمُوْنَا كَمَا خَلَقْنَاكُمْ اَوَّلَ مَرَّةٍ

তাদেরকে তোমার প্রতিপালকের নিকট উপস্থিত করা হবে সারিবদ্ধভাবে এবং বলা হবে, তোমাদেরকে প্রথমবার যেভাবে সৃষ্টি করেছিলাম সেভাবেই তোমরা আমার নিকট উপস্থিত হয়েছ। (সূরা কাহফ- ৪৮)

يَوْمَ يَقُوْمُ النَّاسُ لِرَبِّ الْعَالَمِيْنَ

যেদিন সকল মানুষ জগতসমূহের প্রতিপালকের সামনে দাঁড়াবে। (সূরা মুতাফফিফীন- ৬)

সবাই নিরব ও নিস্তব্ধ হয়ে পড়বে :

يَوْمَئِذٍ يَّتَّبِعُوْنَ الدَّاعِيَ لَا عِوَجَ لَهٗ ۚ وَخَشَعَتِ الْاَصْوَاتُ لِلرَّحْمٰنِ فَلَا تَسْمَعُ اِلَّا هَمْسًا

সেদিন তারা আহবানকারীর অনুসরণ করবে, এ ব্যাপারে এদিক-সেদিক করতে পারবে না; তখন দয়াময়ের সম্মুখে সকল শব্দ সত্মব্ধ হয়ে যাবে। সুতরাং মৃদু পদধ্বনি ব্যতীত তুমি কিছুই শুনবে না।

(সূরা ত্বা-হা- ১০৮)

وَعَنَتِ الْوُجُوْهُ لِلْحَيِّ الْقَيُّوْمِ

চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী (আল্লাহর) নিকট সকলকেই নতশির হয়ে উপস্থিত হতে হবে। (সূরা ত্বা-হা- ১১১)

জমিন ভেতরের সবকিছু বের করে দেবে :

وَاِذَا الْاَرْضُ مُدَّتْ وَاَلْقَتْ مَا فِيْهَا وَتَخَلَّتْ

যখন পৃথিবীকে সম্প্রসারিত করা হবে এবং পৃথিবী তার অভ্যন্তরে যা আছে তা বাইরে নিক্ষেপ করবে; অতঃপর তা খালি হয়ে যাবে। (সূরা ইনশিক্বাক- ৩, ৪)

وَاَخْرَجَتِ الْاَرْضُ اَثْقَالَهَا

যখন পৃথিবী তার বোঝা বের করে দেবে। (সূরা যিলযাল- ২)

পৃথিবী সকল সংবাদ বলে দেবে :

يَوْمَئِذٍ تُحَدِّثُ اَخْبَارَهَا بِاَنَّ رَبَّكَ اَوْحٰى لَهَا

সেদিন পৃথিবী তার বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে। কারণ, আপনার পালনকর্তা তাকে আদেশ করবেন। (সূরা যিলযাল- ৪, ৫)

কোন জিনিস গোপন থাকবে না :

يَوْمَئِذٍ تُعْرَضُوْنَ لَا تَخْفٰى مِنْكُمْ خَافِيَةٌ

সেদিন তোমাদেরকে উপস্থিত করা হবে, তখন তোমাদের কিছুই গোপন থাকবে না। (সূরা হাক্কাহ- ১৮)

يَوْمَ هُمْ بَارِزُوْنَۚ لَا يَخْفٰى عَلَى اللهِ مِنْهُمْ شَيْءٌؕ لِمَنِ الْمُلْكُ الْيَوْمَؕ لِلّٰهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ

যেদিন তারা (কবর হতে) বের হয়ে পড়বে, তখন আল্লাহর নিকট তাদের কোনকিছুই গোপন থাকবে না। (আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন) আজ কর্তৃতব কার? (উত্তর হবে) এক পরাক্রমশালী আল্লাহর। (সূরা মু’মিন- ১৬)

মানুষের অন্তরের বিষয় প্রকাশ করে দেয়া হবে :

وَحُصِّلَ مَا فِى الصُّدُوْرِ

আর অন্তরে যা আছে, তা প্রকাশ করে দেয়া হবে। (সূরা আদিয়াহ- ১০)

মানুষ অদৃশ্য বিষয়াবলি দেখতে পাবে :

لَقَدْ كُنْتَ فِيْ غَفْلَةٍ مِّنْ هٰذَا فَكَشَفْنَا عَنْكَ غِطَآءَكَ فَبَصَرُكَ الْيَوْمَ حَدِيْدٌ

তুমি এই দিবস সম্বন্ধে গাফিল ছিলে। এখন তোমার সম্মুখ হতে আবরণ সরিয়ে দিয়েছি; সুতরাং আজ তোমার দৃষ্টি খুবই প্রখর। (সূরা ক্বাফ- ২২)

প্রত্যেকেই নিজের অবস্থা বুঝে নেবে :

بَلِ الْاِنْسَانُ عَلٰى نَفْسِهٖ بَصِيْرَةٌ وَلَوْ اَلْقٰى مَعَاذِيْرَهٗ

বরং মানুষ নিজের সম্বন্ধে ভালো করে জানে, যদিও সে নানা অজুহাত পেশ করে। (সূরা ক্বিয়ামাহ- ১৪, ১৫)

মানুষ তিন দলে বিভক্ত হবে :

وَكُنْتُمْ اَزْوَاجًا ثَلَاثَةً

আর তোমরা তিন শ্রেণিতে বিভক্ত হবে। (সূরা ওয়াক্বিয়া- ৭, ৮)

فَاَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ مَاۤ اَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ

অতঃপর ডান দল (ডান হাতে আমলনামাপ্রাপ্ত দল); কতই না ভাগ্যবান ডান দল। (সূরা ওয়াক্বিয়া- ৮)

وَالسَّابِقُوْنَ السَّابِقُوْنَ

আর অগ্রবর্তীগণ তো অগ্রবর্তীই। (সূরা ওয়াক্বিয়া- ১০)

وَاَصْحَابُ الشِّمَالِ مَاۤ اَصْحَابُ الشِّمَالِ

আর বাম দল (বাম হাতে আমলনামাপ্রাপ্ত দল); কতই না হতভাগা বাম দল! (সূরা ওয়াক্বিয়া- ৪১)

মানুষ হতভম্ব হয়ে পড়বে :

اِذَا زُلْزِلَتِ الْاَرْضُ زِلْزَالَهَا وَاَخْرَجَتِ الْاَرْضُ اَثْقَالَهَا وَقَالَ الْاِنْسَانُ مَا لَهَا

যখন পৃথিবী তাঁর কম্পনে প্রকম্পিত হবে এবং সে তাঁর বোঝা বের করে দেবে তখন মানুষ বলবে, এর কী হলো? (সূরা যিলযাল, ১-৩)

মানুষ পতঙ্গের মতো ভিড় জমাবে :

يَوْمَ يَكُوْنُ النَّاسُ كَالْفَرَاشِ الْمَبْثُوْثِ

সেদিন মানুষ বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের মতো হয়ে যাবে। (সূরা ক্বারিয়াহ- ৪)

فَتَوَلَّ عَنْهُمْ يَوْمَ يَدْعُ الدَّاعِ اِلٰى شَيْءٍ نُّكُرٍ خُشَّعًا اَبْصَارُهُمْ يَخْرُجُوْنَ مِنَ الْاَجْدَاثِ كَاَنَّهُمْ جَرَادٌ مُّنْتَشِرٌ

তুমি তাদেরকে উপেক্ষা করো। যেদিন আহবানকারী এক ভয়াবহ বস্তুর দিকে আহবান করবে, সেদিন তারা অপমানে শঙ্কিত হয়ে কবরসমূহ হতে বের হবে বিক্ষিপ্ত পঙ্গপালের ন্যায়। (সূরা ক্বামার, ৬-৮)

মানুষ পালানোর চেষ্টা করবে :

يَقُوْلُ الْاِنْسَانُ يَوْمَئِذٍ اَيْنَ الْمَفَرُّ كَلَّا لَا وَزَرَ اِلٰى رَبِّكَ يَوْمَئِذِنِ الْمُسْتَقَرُّ يُنَبَّاُ الْاِنْسَانُ يَوْمَئِذٍ ۢبِمَا قَدَّمَ وَاَخَّرَ

সেদিন মানুষ বলবে, আজ পালানোর স্থান কোথায়? কখনো না, কোন আশ্রয়স্থল নেই। সেদিন তোমার প্রতিপালকের নিকটেই দাঁড়াতে হবে। সেদিন মানুষকে অবহিত করা হবে, যা সে অগ্রে পাঠিয়েছে ও পশ্চাতে রেখে গেছে। (সূরা ক্বিয়ামাহ, ১০-১৩)

وَيَا قَوْمِ اِنِّۤيْ اَخَافُ عَلَيْكُمْ يَوْمَ التَّنَادِ يَوْمَ تُوَلُّوْنَ مُدْبِرِيْنَۚ مَا لَكُمْ مِّنَ اللهِ مِنْ عَاصِمٍ

হে আমার সম্প্রদায়! আমি তোমাদের জন্য ফরিয়াদ দিবসের আশঙ্কা করি। যেদিন তোমরা পশ্চাৎ ফিরে পলায়ন করতে চাইবে, কিন্তু আল্লাহর শাস্তি হতে তোমাদেরকে রক্ষা করার কেউ থাকবে না। (সূরা মু’মিন- ৩২, ৩৩)

সেদিন শিশু বৃদ্ধ হয়ে যাবে :

فَكَيْفَ تَتَّقُوْنَ اِنْ كَفَرْتُمْ يَوْمًا يَّجْعَلُ الْوِلْدَانَ شِيْبًا

অতএব কীভাবে তোমরা বাঁচতে পারবে, যদি তোমরা সেদিনকে অস্বীকার কর, যেদিন কিশোরকে বৃদ্ধ বানানো হবে। (সূরা মুয্যাম্মিল- ১৭)

চক্ষু স্থির হয়ে যাবে :

فَاِذَا بَرِقَ الْبَصَرُ

অতঃপর যখন চক্ষু স্থির হয়ে যাবে। (সূরা ক্বিয়ামাহ- ৭)

وَلَا تَحْسَبَنَّ اللهَ غَافِلًا عَمَّا يَعْمَلُ الظَّالِمُوْنَؕ اِنَّمَا يُؤَخِّرُهُمْ لِيَوْمٍ تَشْخَصُ فِيْهِ الْاَبْصَارُ

তুমি কখনো মনে করো না যে, যালিমরা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ গাফিল। তবে তিনি তাদেরকে সেদিন পর্যমত্ম অবকাশ দেন, যেদিন তাদের চক্ষু স্থির হয়ে যাবে। (সূরা ইবরাহীম- ৪২)

প্রাণ বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হবে :

وَاَنْذِرْهُمْ يَوْمَ الْاٰزِفَةِ اِذِ الْقُلُوْبُ لَدَى الْحَنَاجِرِ كَاظِمِيْنَ

তাদেরকে সতর্ক করে দাও আসন্ন দিন (কিয়ামত) সম্পর্কে, সেদিন দুঃখ-কষ্টে তাদের প্রাণ কণ্ঠাগত হয়ে পড়বে। (সূরা মু’মিন- ১৮)

مُهْطِعِيْنَ مُقْنِعِيْ رُءُوْسِهِمْ لَا يَرْتَدُّ اِلَيْهِمْ طَرْفُهُمْۚ وَاَفْئِدَتُهُمْ هَوَآءٌ

তারা ভীত-বিহবল চিত্তে আকাশের দিকে চেয়ে ছোটাছুটি করতে থাকবে; তখন তারা নিজেদের প্রতিও কোন ভ্রুক্ষেপ করবে না। আর তাদের অমত্মর হবে উদাস। (সূরা ইবরাহীম- ৪৩)

অন্তর কাঁপতে থাকবে :

قُلُوْبٌ يَّوْمَئِذٍ وَّاجِفَةٌ اَبْصَارُهَا خَاشِعَةٌ

সেদিন হৃদয়সমূহ ভীত থাকবে এবং তাদের দৃষ্টিসমূহ হবে অবনত। (সূরা নাযি‘আত- ৭, ৮)

সবাই নতজানু হয়ে পড়ে থাকবে :

وَتَرٰى كُلَّ اُمَّةٍ جَاثِيَةً كُلُّ اُمَّةٍ تُدْعٰۤى اِلٰى كِتَابِهَاؕ اَلْيَوْمَ تُجْزَوْنَ مَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ

প্রত্যেক সম্প্রদায়কে (ভয়ে) নতজানু অবস্থায় দেখতে পাবে। অতঃপর প্রত্যেক সম্প্রদায়কে তার আমলনামার প্রতি আহবান করা হবে- আজ তোমাদেরকে তারই বিনিময় দেয়া হবে, যা তোমরা করতে। (সূরা জাসিয়া- ২৮)

ব্যাখ্যা : অর্থাৎ সেখানে হাশরের ময়দান এবং আল্লাহর আদালতের এমন ভয় সৃষ্টি হবে, যার ফলে বড় বড় অহংকারীদের অহংকারও শেষ হয়ে যাবে। সেখানে সবাই অত্যন্ত বিনয়ের সাথে নতজানু হয়ে থাকবে।

মানুষ জেনে নেবে যে, সে কী নিয়ে এসেছে এবং কী রেখে গেছে :

عَلِمَتْ نَفْسٌ مَّاۤ اَحْضَرَتْ

তখন প্রত্যেক ব্যক্তি জানতে পারবে যে, সে কী নিয়ে এসেছে। (সূরা তাকভীর- ১৪)

عَلِمَتْ نَفْسٌ مَّا قَدَّمَتْ وَاَخَّرَتْ

তখন প্রত্যেকে জেনে নেবে, যা সে পূর্বে প্রেরণ করেছে এবং পশ্চাতে ছেড়ে এসেছে। (সূরা ইনফিতার- ৫)

يُنَبَّاُ الْاِنْسَانُ يَوْمَئِذٍ ۢبِمَا قَدَّمَ وَاَخَّرَ

সেদিন মানুষকে অবহিত করা হবে, যা সে অগ্রে প্রেরণ করেছে ও পশ্চাতে রেখে গেছে। (সূরা ক্বিয়ামাহ- ১৩)

মানুষ তার পাপ-পুণ্য সবই দেখতে পাবে :

فَمَنْ يَّعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَّرَهٗ وَمَنْ يَّعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَّرَهٗ

কেউ অণুপরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখতে পাবে এবং কেউ অণুপরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে। (সূরা যিলযাল- ৭, ৮)

يَوْمَ تَجِدُ كُلُّ نَفْسٍ مَّا عَمِلَتْ مِنْ خَيْرٍ مُّحْضَرًاۚ وَمَا عَمِلَتْ مِنْ سُوْٓءٍ

প্রত্যেক মানুষ যা ভালো করেছে এবং খারাপ করেছে, কিয়ামতের দিন সবই উপস্থিত পাবে। (সূরা আলে ইমরান- ৩০)

কিয়ামতের দিন মানুষ কোন প্রভাব খাটাতে পারবে না :

فَمَا لَهٗ مِنْ قُوَّةٍ وَّلَا نَاصِرٍ

সেদিন তার কোন শক্তি থাকবে না এবং সাহায্যকারীও থাকবে না। (সূরা তারিক- ১০)

কোন কৌশল কাজে লাগবে না :

فَذَرْهُمْ حَتّٰى يُلَاقُوْا يَوْمَهُمُ الَّذِيْ فِيْهِ يُصْعَقُوْنَ يَوْمَ لَا يُغْنِيْ عَنْهُمْ كَيْدُهُمْ شَيْئًا وَّلَا هُمْ يُنْصَرُوْنَ

তাদেরকে সেদিন পর্যন্ত উপেক্ষা করে চল, যেদিন তারা ধ্বংসের সম্মুখীন হবে। সেদিন তাদের কৌশল কোন কাজে আসবে না এবং তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না। (সূরা তূর- ৪৫, ৪৬)

কিয়ামতের দিন কেউ কাউকে বাঁচাতে পারবে না :

يَوْمَ لَا تَمْلِكُ نَفْسٌ لِّنَفْسٍ شَيْئًا وَالْاَمْرُ يَوْمَئِذٍ لِّلّٰهِ

সেদিন কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির জন্য কোন কিছু করার অধিকার রাখবে না; সেদিন সমস্ত কর্তৃত্ব হবে একমাত্র আল্লাহর। (সূরা ইনফিতার- ১৯)

اِنَّ يَوْمَ الْفَصْلِ مِيْقَاتُهُمْ اَجْمَعِيْنَ يَوْمَ لَا يُغْنِيْ مَوْلًى عَنْ مَّوْلًى شَيْئًا وَّلَا هُمْ يُنْصَرُوْنَ اِلَّا مَنْ رَّحِمَ اللهُؕ اِنَّهٗ هُوَ الْعَزِيْزُ الرَّحِيْمُ

সকলের জন্য নির্ধারিত রয়েছে বিচার দিবস- যেদিন এক বন্ধু অপর বন্ধুর কোন কাজে আসবে না এবং তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না; তবে আল্লাহ যার প্রতি দয়া করেন (তার কথা ভিন্ন।) নিশ্চয় তিনি পরাক্রমশালী ও পরম দয়ালু। (সূরা দুখান, ৪০-৪২)

সেদিন সকলেই আত্মীয়স্বজন থেকে পলায়ন করবে :

فَاِذَا نُفِخَ فِى الصُّوْرِ فَلَاۤ اَنْسَابَ بَيْنَهُمْ يَوْمَئِذٍ وَّلَا يَتَسَآءَلُوْنَ

যেদিন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে, সেদিন পরস্পরের মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধন থাকবে না এবং একে অপরের খোঁজখবর নেবে না। (সূরা মু’মিনূন- ১০১)

ব্যাখ্যা : এর অর্থ এ নয় যে, পিতা আর পিতা থাকবে না এবং ছেলে ছেলে থাকবে না। বরং এর অর্থ হচ্ছে, সে সময় পিতা ছেলের কোন কাজে লাগবে না এবং ছেলে পিতার কোন কাজে লাগবে না। প্রত্যেকে এমনভাবে নিজের অবস্থার শিকার হবে যে, একজন অন্যজনের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করা তো দূরের কথা কেউ কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করার মতো চেতনাও থাকবে না।

فَاِذَا جَآءَتِ الصَّآخَّةُ يَوْمَ يَفِرُّ الْمَرْءُ مِنْ اَخِيْهِ وَاُمِّهٖ وَاَبِيْهِ وَصَاحِبَتِهٖ وَبَنِيْهِ

যেদিন ঐ বিকট ধ্বনি এসে পড়বে; সেদিন মানুষ নিজের ভাই হতেও পলায়ন করবে এবং তার মাতা, পিতা, স্ত্রী ও সন্তান হতেও (পলায়ন করবে)। (সূরা আবাসা, ৩৩-৩৬)

সবাই আত্মরক্ষার চিন্তায় মগ্ন থাকবে :

لِكُلِّ امْرِئٍ مِّنْهُمْ يَوْمَئِذٍ شَاْنٌ يُّغْنِيْهِ

সেদিন তাদের প্রত্যেকের এমন গুরুতর অবস্থা হবে, যা তাকে সম্পূর্ণরূপে ব্যস্ত করে রাখবে। (সূরা আবাসা- ৩৭)

কেউ কারো পাপের বোঝা বহন করবে না :

وَلَا تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍ اِلَّا عَلَيْهَاؕ وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِّزْرَ اُخْرٰى

প্রত্যেকে স্বীয় কৃতকর্মের জন্য দায়ী এবং কেউ অন্য কারো ভার গ্রহণ করবে না। (সূরা আন‘আম- ১৬৪)

وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِّزْرَ اُخْرٰىؕ وَاِنْ تَدْعُ مُثْقَلَةٌ اِلٰى حِمْلِهَا لَا يُحْمَلْ مِنْهُ شَيْءٌ وَّلَوْ كَانَ ذَا قُرْبٰى

কোন বোঝা বহনকারী অপরের বোঝা বহন করবে না। যদি কোন বোঝা ভারাক্রান্ত ব্যক্তি কাউকে তার বোঝা বহন করতে ডাকে, তবে তা থেকে কিছুই বহন করা হবে না; যদিও সে তার নিকটাত্মীয় হয়। (সূরা ফাতির- ১৮)

ব্যাখ্যা : وِزْرٌ (ভিযরুন) অর্থ বোঝা অর্থাৎ কৃতকর্মের দায়-দায়িত্বের বোঝা। আল্লাহর কাছে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজেই তার কাজের জন্য দায়ী এবং প্রত্যেকের উপর কেবলমাত্র তার নিজের কাজের দায়-দায়িত্ব অর্পিত হয়। এক ব্যক্তির কাজের দায়-দায়িত্বের বোঝা আল্লাহর পক্ষ থেকে অন্য ব্যক্তির ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। কোন ব্যক্তি অন্যের দায়-দায়িত্বের বোঝা নিজের উপর চাপিয়ে নেবে এবং তাকে বাঁচানোর জন্য তার অপরাধে নিজেকে পাকড়াও করাবে- এরও কোন সম্ভাবনা নেই। এ কথা বলার কারণ হচ্ছে, যারা মক্কায় ইসলাম গ্রহণ করেছিল তাদেরকে তাদের মুশরিক আত্মীয়স্বজন ও গোত্রের লোকেরা বলেছিল, তোমরা এই নতুন ধর্মত্যাগ করো এবং নিজেদের বাপ-দাদার ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত হও। এজন্য কোন পাপ হলে আমরা তার বোঝা বহন করব। কিন্তু বাস্তবতা তার উল্টো। তারা এসব কথা বলেছিল আখিরাত সম্পর্কে তাদের সঠিক ধারণা না থাকার কারণে। কেননা যখন কিয়ামত আসবে এবং লোকেরা দেখে নেবে যে, নিজেদের কৃতকর্মের জন্য তারা কোন্ ধরনের পরিণামের সম্মুখীন হতে যাচ্ছে, তখন প্রত্যেকে নিজেকে বাঁচানোর চিন্তা করতে থাকবে। এমতাবস্থায় ভাই ভাই থেকে, পিতা পুত্র থেকে, স্বামী স্ত্রী থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। কেউ কারো সামান্যতম বোঝা নিজের উপর চাপিয়ে নিতে প্রস্তুত হবে না।

কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী থাকবে না :

وَمَا كَانَ لَهُمْ مِّنْ اَوْلِيَآءَ يَنْصُرُوْنَهُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِؕ وَمَنْ يُّضْلِلِ اللهُ فَمَا لَهٗ مِنْ سَبِيْلٍ

সেদিন তাদেরকে সাহায্য করার জন্য আল্লাহ ব্যতীত কোন অভিভাবক থাকবে না; আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার (আত্মরক্ষার) কোন পথ থাকে না। (সূরা শূরা- ৪৬)

সেদিন কোন আশ্রয়স্থলও থাকবে না :

مَا لَكُمْ مِّنْ مَّلْجَاٍ يَّوْمَئِذٍ وَّمَا لَكُمْ مِّنْ نَّكِيْرٍ

সেদিন তোমাদের জন্য কোন আশ্রয়স্থল থাকবে না এবং তোমাদের জন্য কোন প্রতিরোধকারীও থাকবে না। (সূরা শূরা- ৪৭)

কোন বিনিময় ও সুপারিশও কাজে আসবে না :

وَاتَّقُوْا يَوْمًا لَّا تَجْزِيْ نَفْسٌ عَنْ نَّفْسٍ شَيْئًا وَّلَا يُقْبَلُ مِنْهَا عَدْلٌ وَّلَا تَنْفَعُهَا شَفَاعَةٌ وَّلَا هُمْ يُنْصَرُوْنَ

তোমরা এমন এক দিনকে ভয় করো, যেদিন কেউ কারো হতে বিন্দুমাত্র উপকৃত হতে পারবে না এবং কারো নিকট হতে বিনিময়ও গ্রহণ করা হবে না। অতঃপর কারো শাফা‘আত (সুপারিশ) কাজে লাগবে না এবং তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না। (সূরা বাক্বারা- ১২৩)

কিয়ামতের দিন বন্ধু বন্ধুর খবর নেবে না :

وَلَا يَسْاَلُ حَمِيْمٌ حَمِيْمًا

সেদিন কোন বন্ধু কোন অন্তরঙ্গ বন্ধুর খোঁজ নেবে না। (সূরা মা‘আরিজ-১০)

ব্যাখ্যা : বড় বড় অপরাধীদের সকল শক্তি শেষ হয়ে যাবে। ফলে তারা কোন প্রকার প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই জাহান্নামের দিকে এগিয়ে যেতে থাকবে। কোথাও কোথাও তারা ধাক্কা খেতে থাকবে এবং কোন নেতা তাদের উদ্ধার করতে এগিয়ে আসবে না। সেখানে বিশ্ববিজয়ী ও ডিরেক্টরগণও চরম লাঞ্ছনা সহকারে যেতে থাকবে। তাদের শক্তিশালী সেনাদল নিজেরাই তাদেরকে দন্ড দেয়ার জন্য এগিয়ে দেবে। কোথাও কোন ভন্ডপীর জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে; কিন্তু তার মুরীদরা হুজুরের মর্যাদাহানির কথা ভাববে না। কোথাও কোন জাতীয় নেতা বড়ই হীনতার মধ্যে জাহান্নামের পথে যাত্রা করবে; কিন্তু দুনিয়ায় যেসব লোক তার ঝান্ডা উঁচু করে বেড়াতো তারা সবাই তার দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবে। এ অবস্থার চিত্র এঁকে মহান আল্লাহ এ কথা বুঝাতে চান যে, দুনিয়ায় মানুষের যেসব সম্পর্ক আল্লাহর নাফরমানির ভিত্তিতে গড়ে ওঠেছে তা আখিরাতে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে।

মুত্তাক্বীরা ব্যতীত অন্যান্য বন্ধুরা একে অপরের শত্রু হয়ে যাবে :

اَلْاَخِلَّآءُ يَوْمَئِذٍ ۢبَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ اِلَّا الْمُتَّقِيْنَ

সেদিন বন্ধুরা একে অপরের শত্রুতে পরিণত হবে, তবে মুত্তাক্বীরা ব্যতীত। (সূরা যুখরুফ- ৬৭)

ব্যাখ্যা : দুনিয়ার জীবনে সত্য-মিথ্যা নির্বিশেষে যে কোন আকীদার ভিত্তিতে লোকেরা একত্র হতে পারে। কিন্তু মিথ্যা আকীদার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত এ সামাজিক কাঠামো আখিরাতে প্রতিষ্ঠিত থাকবে না। সেখানে পারস্পরিক প্রীতি, ভালোবাসা, আত্মীয়তা এবং সহযোগিতার এমন ধরনের সম্পর্ক বজায় থাকবে, যা দুনিয়ায় সৎকর্মশীলতা ও আল্লাহভীতির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়। কুফর, শিরক এবং ভুল পথের সাথে জড়িত যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে। সকল ভালোবাসা শত্রুতায় পরিণত হবে। সমস্ত শ্রদ্ধা-ভক্তি ঘৃণায় রূপান্তরিত হবে। পিতা-পুত্র, স্বামী-স্ত্রী, নেতা ও তাদের অনুসারীরা পর্যন্ত একে অন্যের উপর লানত বর্ষণ করবে। প্রত্যেকে নিজের গোমরাহীর দায়-দায়িত্ব অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে বলবে, এই যালিম আমাকে ধ্বংস করেছে; কাজেই একে দ্বিগুণ শাস্তি দেয়া হোক।

সেদিন ক্রয়-বিক্রয় কিছুই থাকবে না :

يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَنْفِقُوْا مِمَّا رَزَقْنَاكُمْ مِّنْ قَبْلِ اَنْ يَّاْتِيَ يَوْمٌ لَّا بَيْعٌ فِيْهِ وَلَا خُلَّةٌ وَّلَا شَفَاعَةٌ

হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দান করেছি তোমরা তা হতে ব্যয় করো, এমন এক দিন আসার আগে যেদিন কোন বেচা-কেনা, বন্ধুত্ব ও সুপারিশ কাজে আসবে না। (সূরা বাক্বারা- ২৫৪)

ব্যাখ্যা : এখানে কুফরী নীতি অবলম্বনকারী বলতে এমনসব লোককে বুঝানো হয়েছে, যারা আল্লাহর হুকুম মেনে চলতে অস্বীকার করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের তুলনায় নিজের ধনসম্পদকে অধিক প্রিয় মনে করে। যারা সে দিনটির উপর আস্থা রাখে না, যে দিনটির আগমনের ভয় দেখানো হয়েছে। এখানে তাদেরকেও বুঝানো হতে পারে, যারা এ ভিত্তিহীন ধারণা পোষণ করে যে, আখিরাতে তারা যে কোনভাবে নাজাত কিনে নিতে সক্ষম হবে এবং বন্ধুত্ব ও সুপারিশের সাহায্যে নিজেদের কার্য উদ্ধার করতে সক্ষম হবে।

মাতাপিতা ও সন্তান-সন্ততি কেউ কারো উপকার করতে পারবে না :

يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوْا رَبَّكُمْ وَاخْشَوْا يَوْمًا لَّا يَجْزِيْ وَالِدٌ عَنْ وَّلَدِهٖؗ وَلَا مَوْلُوْدٌ هُوَ جَازٍ عَنْ وَّالِدِهٖ شَيْئًا اِنَّ وَعْدَ اللهِ حَقٌّ

হে মানুষ! তোমরা ভয় করো তোমাদের প্রতিপালককে এবং সেদিনকে, যেদিন পিতা সন্তানের কোন উপকারে আসবে না এবং সন্তানও পিতার কোন উপকারে আসবে না, নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য। (সূরা লুক্বমান- ৩৩)

ব্যাখ্যা : বন্ধু, নেতা, ভন্ডপীর ইত্যাদি সকল সম্পর্কই দূরের। তবে দুনিয়ায় সবচেয়ে নিকটতম সম্পর্ক হচ্ছে সন্তান ও পিতামাতার মধ্যে। কিন্তু সেখানে অবস্থা হবে এরকম যে, যদি পুত্র পাকড়াও হয়, তাহলে পিতা এগিয়ে এ কথা বলবে না যে, তার গোনাহের জন্য আমাকে পাকড়াও করা হোক। অন্যদিকে পিতার দুর্ভোগে পুত্রের এ কথা বলার সাহস হবে না যে, বাবাকে বাঁচিয়ে আমাকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দেয়া হোক। এ অবস্থায় নিকট সম্পর্কহীন ব্যক্তিরা সেখানে পরস্পরের কোন কাজে লাগবে- এ আশা কীভাবে করা যেতে পারে। কাজেই যে ব্যক্তি অপরের জন্য নিজের পরকাল হারায় অথবা অন্যের উপর ভরসা করে পাপের পথ অবলম্বন করে সে গন্ডমূর্খ ছাড়া আর কিছুই নয়।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন