hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

তাফসীরুল কুরআন বিল কুরআন

লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

৪১
অধ্যায়- ১৯ : কুরআনের বৈশিষ্ট্য ও শ্রেষ্ঠত্ব
কুরআন খুবই ভারী কালাম :

اِنَّا سَنُلْقِيْ عَلَيْكَ قَوْلًا ثَقِيْلًا

আমি অচিরেই তোমার প্রতি অবতীর্ণ করব ভারত্বপূর্ণ বাণী। (সূরা মুয্যাম্মিল- ৫)

لَوْ اَنْزَلْنَا هٰذَا الْقُرْاٰنَ عَلٰى جَبَلٍ لَّرَاَيْتَهٗ خَاشِعًا مُّتَصَدِّعًا مِّنْ خَشْيَةِ اللهِ

আমি যদি এ কুরআন পর্বতের উপর অবতীর্ণ করতাম তবে তুমি দেখতে যে, ওটা আল্লাহর ভয়ে বিনীত ও বিদীর্ণ হয়ে গেছে। (সূরা হাশর- ২১)

ব্যাখ্যা : কুরআন নবী ﷺ এর শ্রেষ্ঠ মু‘জিযা। কুরআন ভাষা ও সাহিত্যিক মূল্যবোধের বিচারেও মু‘জিযা আবার শিক্ষা ও জানার বিচারেও তা মু‘জিযা। কুরআন যে সময় নাযিল হয়েছিল সে সময় মানুষ কুরআনের বাণীর মতো বাণী বানিয়ে পেশ করতে অক্ষম ছিল এবং আজও অক্ষম। এর কোন কথা কখনো কোন যুগে ভুল প্রমাণ করা যায়নি এবং যাবেও না। বাতিল না পারে সামনে থেকে এর মুকাবিলা করতে, না পারে পেছন দিক থেকে আক্রমণ করে পরাজিত করতে। মানুষ কুরআন থেকে যতবেশি পথনির্দেশনা পাওয়ার চেষ্টা করে, এটা তাকে ততটাই পথনির্দেশনা দান করে। সুতরাং যে যতবেশি এর অনুসরণ করবে, দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ সে ততবেশি লাভ করবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, এমন কোন নবী ছিলেন না, যাকে কোন মু‘জিযা দেয়া হয়নি, যা দেখে লোকেরা ঈমান এনেছে। কিন্তু আমাকে যা দেয়া হয়েছে, তা হচ্ছে ওহী; যা আল্লাহ তা‘আলা আমার কাছে নাযিল করেছেন। সুতরাং আমি আশা করি, কিয়ামতের দিন তাঁদের অনুসারীদের তুলনায় আমার উম্মতের সংখ্যাই হবে সর্বাধিক। (সহীহ বুখারী, হা/৪৯৮১)

কুরআন বিজ্ঞানময় কিতাব :

تِلْكَ اٰيَاتُ الْكِتَابِ الْحَكِيْمِ

এগুলো বিজ্ঞানময় কিতাবের আয়াত। (সূরা লুক্বমান- ২)

يٰسٓ -– وَالْقُرْاٰنِ الْحَكِيْمِ

ইয়া-সীন। কসম বিজ্ঞানময় কুরআনের। (সূরা ইয়াসীন- ১, ২)

ব্যাখ্যা : এ কুরআনে যেসব কথা বলা হচ্ছে এগুলো কোন হালকা কথা নয়। এগুলো কোন মানুষের অনুমান ও মতামত ভিত্তিকও নয়, বরং এক জ্ঞানবান সত্তা এগুলো নাযিল করেছেন। তিনি নিজের সৃষ্টির প্রয়োজন ও কল্যাণ এবং এর অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে পুরোপুরিভাবে অবগত আছেন। বান্দাদের সংশোধন ও পথনির্দেশনার জন্য তিনি তাঁর জ্ঞান দ্বারা সর্বোত্তম কৌশল ও ব্যবস্থা অবলম্বন করেন।

এর আয়াতসমূহ স্পষ্ট ও সুবিন্যাস্ত :

الٓرٰ كِتَابٌ اُحْكِمَتْ اٰيَاتُهٗ ثُمَّ فُصِّلَتْ مِنْ لَّدُنْ حَكِيْمٍ خَبِيْرٍ

আলিফ-লাম-রা। এটা এমন কিতাব যার আয়াতসমূহকে সুস্পষ্ট করা হয়েছে, অতঃপর বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এ কিতাব প্রজ্ঞাময় ও সর্বজ্ঞ (আল্লাহর) নিকট হতে এসেছে। (সূরা হুদ- ১)

কুরআনের কথা সত্য :

وَمَنْ اَصْدَقُ مِنَ اللهِ قِيْلًا

কথার ক্ষেত্রে আল্লাহর চেয়ে অধিক সত্যবাদী আর কে আছে? (সূরা নিসা- ১২২)

কুরআনের আয়াতসমূহ সাদৃশ্যপূর্ণ :

اَللهُ نَزَّلَ اَحْسَنَ الْحَدِيْثِ كِتَابًا مُّتَشَابِهًا مَّثَانِيَ تَقْشَعِرُّ مِنْهُ جُلُوْدُ الَّذِيْنَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْۚ ثُمَّ تَلِيْنُ جُلُوْدُهُمْ وَقُلُوْبُهُمْ اِلٰى ذِكْرِ اللهِ ذٰلِكَ هُدَى اللهِ يَهْدِيْ بِهٖ مَنْ يَّشَآءُ وَمَنْ يُّضْلِلِ اللهُ فَمَا لَهٗ مِنْ هَادٍ

আল্লাহ সর্বোত্তম বাণী অবতীর্ণ করেছেন- এটা এমন কিতাব যা সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং যার বিষয়াবলি পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে, এতে তাদের দেহ শিহ্রে উঠে। তারপর তাদের দেহ ও অন্তর (প্রশান্ত হয়ে) আল্লাহর স্মরণের দিকে ঝুঁকে পড়ে। এটাই আল্লাহর হেদায়াত, এর দ্বারা তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে হেদায়াত দান করেন। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তার কোন পথপ্রদর্শক নেই। (সূরা যুমার- ২৩)

ব্যাখ্যা : কুরআনের কথার মধ্যে কোন বৈপরীত্য ও বিরোধ নেই। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত গোটা কিতাব একই দাবী, একই আকীদা-বিশ্বাস এবং একই আদর্শ পেশ করে। এর প্রতিটি অংশ অন্যসব অংশের এবং প্রতিটি বিষয় অন্যসব বিষয়ের সত্যায়ন, সমর্থন ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে। অর্থ ও বর্ণনা উভয় দিক দিয়েই এ গ্রন্থের পূর্ণ মিল ও সামঞ্জস্য বিদ্যমান।

কুরআনের মধ্যে কোন জটিলতা নেই :

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْۤ اَنْزَلَ عَلٰى عَبْدِهِ الْكِتَابَ وَلَمْ يَجْعَلْ لَّهٗ عِوَجًا

সমসত্ম প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি তাঁর বান্দার প্রতি এ কিতাব অবতীর্ণ করেছেন এবং তাতে (কোন) বক্রতা রাখেননি। (সূরা কাহফ- ১)

قُرْاٰنًا عَرَبِيًّا غَيْرَ ذِيْ عِوَجٍ لَّعَلَّهُمْ يَتَّقُوْنَ

এ কুরআন আরবি ভাষায় (অবতীর্ণ হয়েছে), এতে বিন্দুমাত্রও বক্রতা নেই। হয়তো তারা তাক্বওয়া অর্জন করতে পারবে। (সূরা যুমার- ২৮)

ব্যাখ্যা : কুরআনের মধ্যে এমন কোন বক্র বা জটিল কথা নেই যে, তা বুঝা সাধারণ মানুষের জন্য কঠিন হবে। বরং এর মধ্যে পরিষ্কারভাবে সহজসরল কথা বলা হয়েছে। ফলে প্রত্যেক ব্যক্তি খুব সহজে জেনে নিতে পারে যে, এ গ্রন্থ কোন জিনিসকে ভ্রান্ত বলে এবং কেন বলে, কোন জিনিসকে সঠিক বলে এবং কিসের ভিত্তিতে বলে, কী স্বীকার করাতে চায় এবং কোন জিনিস অস্বীকার করাতে চায়, কোন কোন কাজের নির্দেশ দেয় এবং কোন কোন কাজ হতে নিষেধ করে। এ কিতাবের আয়াতসমূহ অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এর কোন কথাই অস্পষ্ট ও জটিল নয়, এ কিতাবের বিষয়বস্তু যে কারো বোধগম্য হতে পারে। হক ও বাতিল, সঠিক আকীদা ও ভ্রান্ত আকীদা, ভালো চরিত্র ও মন্দ চরিত্র, সৎকাজ ও অসৎকাজ, কোন পথে মানুষের কল্যাণ এবং কোন পথে মানুষের ক্ষতি- এ সবকিছু এ গ্রন্থে পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করে দেয়া হয়েছে। এখন কেউ যদি এরূপ সুস্পষ্ট হেদায়াত প্রত্যাখ্যান করে কিংবা সেদিকে মনোযোগ না দেয়, তাহলে সে কোন অজুহাত পেশ করতে পারবে না। এ কিতাব তাদের জন্য যারা জ্ঞানের অধিকারী। অর্থাৎ কেবল জ্ঞানী লোকেরাই এর দ্বারা উপকৃত হতে পারে। অজ্ঞ লোকদের কাছে তা ঠিক তেমনি মূল্যহীন যেমন একটি মূল্যবান হীরকখন্ড এমন ব্যক্তির কাছে মূল্যহীন, যে সাধারণ পাথর ও হীরকখন্ডের মধ্যে পার্থক্য করতে জানে না।

কুরআন অন্তরের রোগের শিফা :

يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَآءَتْكُمْ مَّوْعِظَةٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَشِفَآءٌ لِّمَا فِى الصُّدُوْرِ وَهُدًى وَّرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ

হে মানুষ! তোমাদের প্রতি তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে এসেছে উপদেশ ও তোমাদের অন্তরে যা আছে তার আরোগ্য এবং মুমিনদের জন্য হেদায়াত ও রহমত। (সূরা ইউনুস- ৫৭)

قُلْ هُوَ لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا هُدًى وَّشِفَآءٌ

বলো, মুমিনদের জন্য এটা পথনির্দেশক ও ব্যাধির প্রতিকার। (সূরা হা-মীম সাজদা- ৪৪)

এটি বরকতময় ও জ্ঞানসমৃদ্ধ কিতাব :

وَهٰذَا كِتَابٌ اَنْزَلْنَاهُ مُبَارَكٌ فَاتَّبِعُوْهُ وَاتَّقُوْا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ

এ কিতাব আমি নাযিল করেছি, যা বরকতময়। সুতরাং তার অনুসরণ করো এবং সাবধান হও, হয়তো তোমাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা হবে। (সূরা আন‘আম- ১৫৫)

ব্যাখ্যা : بَرَكَةٌ (বারাকাত) এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে, কল্যাণ ও সৌভাগ্য বৃদ্ধি। কুরআন মাজীদকে বরকতময় কিতাব বলার অর্থ হচ্ছে, এটি মানুষের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি কিতাব। এ কিতাবটি মানুষের জীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য সর্বোত্তম বিধান দান করে। এর বিধান মেনে চলায় মানুষের শুধু লাভই হয়, এতে কোন প্রকার ক্ষতির আশঙ্কা নেই। যখনই ওহী ও রিসালাতের জীবনধারা এ পৃথিবীতে পৌঁছেছে, তখনই জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎকর্ষতা মূর্খতা ও জাহেলিয়াতের স্থানগুলো দখল করে নিয়েছে। যুলুম ও নিপীড়ণের জায়গায় ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ফাসিকী ও অশ্লীলতার জায়গায় নৈতিক ও চারিত্রিক মাহাত্মের ফুল ফুটেছে। এর ফলাফল যেদিকে যতটুকু পৌঁছেছে সেদিকেই অন্যায়-অত্যাচার কমে গেছে এবং সদাচার বৃদ্ধি পেয়েছে। নবীদের আগমন সবসময় একটি শুভ ও কল্যাণকর চিন্তা ও নৈতিক বিপ্লবের সূচনা করেছে। পক্ষান্তরে নবীদের বিধান ও নির্দেশাবলি প্রত্যাখ্যান করে বা তা থেকে বঞ্চিত হয়ে মানবজাতি সবসময় ক্ষতিগ্রস্তই হয়েছে। ইতিহাস এ দৃশ্য বার বার দেখিয়েছে এবং কুরআনও বার বার এদিকে ইশারা করেছে। কিন্তু এরপরও লোকেরা শিক্ষা নেয় না।

وَلَقَدْ جِئْنَاهُمْ بِكِتَابٍ فَصَّلْنَاهُ عَلٰى عِلْمٍ هُدًى وَّرَحْمَةً لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ

অবশ্যই আমি তাদের নিকট পৌঁছে দিয়েছিলাম এমন এক কিতাব, যা আমি পূর্ণ জ্ঞান দ্বারা বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছিলাম; আর তা ছিল মুমিনদের জন্য হেদায়াত ও রহমতস্বরূপ। (সূরা আ‘রাফ- ৫২)

ব্যাখ্যা : পরিপূর্ণ বিবরণসহ মানুষের জন্য দুনিয়ার জীবনের সঠিক জীবনপদ্ধতির মূল নীতিগুলো কী কী, তা বর্ণনা করা হয়েছে। আবার এ বিবরণগুলো নিছক অনুমান বা কল্পনার ভিত্তিতে দেয়া হয়নি; বরং নির্ভেজাল ও নির্ভুল জ্ঞানের ভিত্তিতে দেয়া হয়েছে। এ কিতাবের বিষয়বস্তু এত স্পষ্ট যে, এ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করলে যে কোন মানুষের সামনে সত্য পথ পরিষ্কারভাবে ভেসে উঠতে পারে। এর প্রভাব গ্রহণ করার সাথে সাথেই মানুষের মন-মানসিকতা ও আচরণে বৈপ্লবিক পরিবর্তন শুরু হয়ে যায়।

কুরআন দলীল-প্রমাণের কিতাব :

يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَآءَكُمْ بُرْهَانٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَاَنْزَلْنَاۤ اِلَيْكُمْ نُوْرًا مُّبِيْنًا

হে মানবমন্ডলী! তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে তোমাদের নিকট প্রমাণ এসেছে এবং আমি তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ করেছি স্পষ্ট নূর। (সূরা নিসা- ১৭৪)

দ্বীনের মৌলিক সকল মূলনীতির বর্ণনা এর মধ্যে রয়েছে :

وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَانًا لِّكُلِّ شَيْءٍ وَّهُدًى وَّرَحْمَةً وَّبُشْرٰى لِلْمُسْلِمِيْنَ

আমি তোমার প্রতি এ কিতাব নাযিল করেছি, যা প্রত্যেকটি বিষয়ের বর্ণনাস্বরূপ। আর তা হেদায়াত, রহমত এবং মুসলিমদের জন্য সুসংবাদস্বরূপ। (সূরা নাহল- ৮৯)

مَا كَانَ حَدِيْثًا يُّفْتَرٰى وَلٰكِنْ تَصْدِيْقَ الَّذِيْ بَيْنَ يَدَيْهِ وَتَفْصِيْلَ كُلِّ شَيْءٍ وَّهُدًى وَّرَحْمَةً لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ

এটা এমন বাণী, যা মিথ্যা রচনা নয়। বরং এটা পূর্ববর্তী কিতাবে যা আছে তার সমর্থক এবং মুমিনদের জন্য সবকিছুর বিশদ বিবরণ, হেদায়াত ও রহমত। (সূরা ইউসুফ- ১১১)

ব্যাখ্যা : ‘প্রত্যেকটি জিনিসের বিস্তারিত বিবরণ’ শব্দাবলি থেকে কেউ কেউ দুনিয়ার সমস্ত জিনিসের বিস্তারিত বিবরণ অর্থ করেন। কিন্তু আয়াতের প্রকৃত অর্থ হচ্ছে, মানুষের হেদায়াত পাওয়া ও পথ দেখার জন্য যেসব জিনিসের প্রয়োজন তার প্রত্যেকটির বিস্তারিত বিবরণ। এতে এমন প্রত্যেকটি বিষয় পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা হয়েছে, যার উপর হেদায়াত ও গোমরাহী এবং লাভ ও ক্ষতি নির্ভর করে। সঠিক পথে চলার জন্য যা জানা একান্ত প্রয়োজন এবং যার মাধ্যমে হক ও বাতিলের পার্থক্য সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে, তাও এতে বর্ণনা করে দেয়া হয়েছে।

কুরআন সকলের জন্য উপদেশস্বরূপ :

لَقَدْ اَنْزَلْنَاۤ اِلَيْكُمْ كِتَابًا فِيْهِ ذِكْرُكُمْؕ اَفَلَا تَعْقِلُوْنَ

আমি তোমাদের প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যাতে আছে তোমাদের জন্য উপদেশ; তবুও কি তোমরা বুঝবে না? (সূরা আম্বিয়া- ১০)

ব্যাখ্যা : কুরআনের মধ্যে মানুষের নিজেদের কথাই বলা হয়েছে। তাদেরই ব্যবহারিক জীবনের কথা আলোচনা করা হয়েছে। তাদের স্বভাব, গঠনাকৃতি এবং সূচনা ও পরিণামের কথা বলা হয়েছে। তাদেরই পরিবেশ থেকে এমনসব নিদর্শন বাছাই করে এতে পেশ করা হয়েছে, যা প্রকৃত সত্যের ইঙ্গিত প্রদান করে। এর মধ্যে এমন কোন জটিলতা নেই, যা মানুষ বুঝতে অক্ষম।

কুরআনের শিক্ষক স্বয়ং আল্লাহ :

اَلرَّحْمٰنُ - عَلَّمَ الْقُرْاٰنَ

পরম দয়াময় (আল্লাহ), তিনিই শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন। (সূরা আর রহমান- ১, ২)

ব্যাখ্যা : এখানে আল্লাহ কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন বলার পরিবর্তে রহমান কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন বলা হয়েছে। কারণ বান্দাদের হেদায়াতের জন্য কুরআন মাজীদ নাযিল করা সরাসরি আল্লাহর রহমত। যেহেতু তিনি তাঁর সৃষ্টির প্রতি অতীব দয়াবান; তাই তিনি তোমাদেরকে অন্ধকারে ছেড়ে দেয়া পছন্দ করেননি। তিনি তাঁর রহমতের দাবী অনুসারে এ কুরআন পাঠিয়ে তোমাদেরকে এমন জ্ঞান দান করেছেন- যার উপর পার্থিব জীবনে তোমাদের সত্যানুসরণ এবং পরকালীন জীবনের সফলতাও নির্ভরশীল। এ বাণী নাযিলকারী মহান আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির প্রতি অত্যন্ত দয়ালু ও মেহেরবান। তাঁর অন্যান্য গুণাবলির মধ্যে ‘রহমত’ গুণটি এ সত্যের প্রতি ইঙ্গিত করে যে, তিনি তাঁর দয়ার দাবী অনুসারে এ বাণী নাযিল করেছেন। এর দ্বারা শ্রোতাদেরকে এ মর্মে সাবধান করা হয়েছে যে, কেউ যদি এ বাণী প্রত্যাখ্যান করে তাহলে প্রকৃতপক্ষে সে নিজের সাথেই শত্রুতা করে। এটি একটি বিরাট নিয়ামত, যা আল্লাহ মানুষকে পথপ্রদর্শন এবং তার সাফল্যের জন্য সরাসরি নাযিল করেছেন। আল্লাহ যদি মানুষদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতেন, তাহলে তারা অন্ধকারে হাতড়িয়ে মরতো। কিন্তু সৃষ্টি করা ও খাদ্য সরবরাহ করার সাথে সাথে তার জীবনকে সুন্দর করে গোছানোর জন্য জ্ঞানের আলো দান করাও তিনি তাঁর কর্তব্য হিসেবে মনে করেন। আর সে কারণেই তাঁর এক বান্দার কাছে এ বাণী নাযিল করেছেন, যা ছিল বান্দাদের প্রতি তাঁর দয়া ও অনুগ্রহ। সুতরাং যে ব্যক্তি এ রহমত দ্বারা উপকৃত হওয়ার পরিবর্তে তাঁর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অগ্রসর হয়, তার চেয়ে বড় অকৃতজ্ঞ আর কে হতে পারে? যেহেতু আল্লাহ তা‘আলা মানুষের স্রষ্টা, তাই স্রষ্টার দায়িত্ব হচ্ছে নিজের সৃষ্টিকে পথপ্রদর্শন করা এবং যে পথের মাধ্যমে সে তার সৃষ্টির উদ্দেশ্য পূরণ করতে সক্ষম হবে সে পথ দেখানো। সুতরাং আল্লাহর পক্ষ থেকে কুরআনের এ শিক্ষা নাযিল হওয়া শুধু তাঁর অনুগ্রহ-পরায়ণতার দাবীই নয়, বরং তাঁর স্রষ্টা হওয়ার দাবীও বটে। স্রষ্টা যদি সৃষ্টিকে পথপ্রদর্শন না করেন, তাহলে আর কে তা করবে?

কুরআন আনন্দ ও গর্বের জিনিস :

يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَآءَتْكُمْ مَّوْعِظَةٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَشِفَآءٌ لِّمَا فِى الصُّدُوْرِ وَهُدًى وَّرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْمَتِهٖ فَبِذٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوْاؕ هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُوْنَ

হে মানুষ! তোমাদের প্রতি তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে এসেছে উপদেশ ও তোমাদের অন্তরে যা আছে তার আরোগ্য এবং মুমিনদের জন্য হেদায়াত ও রহমত। বলো, তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ ও তার রহমতের মাধ্যমে আনন্দ লাভ করো। (কারণ) তারা যা কিছু (সম্পদ) জমা করে- এটা তার চেয়ে উত্তম। (সূরা ইউনুস- ৫৭, ৫৮)

দুনিয়ার প্রাচুর্যের চেয়ে কুরআনের জ্ঞান লাভের মূল্য অনেক বেশি :

وَلَقَدْ اٰتَيْنَاكَ سَبْعًا مِّنَ الْمَثَانِيْ وَالْقُرْاٰنَ الْعَظِيْمَ - لَا تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ اِلٰى مَا مَتَّعْنَا بِهٖۤ اَزْوَاجًا مِّنْهُمْ وَلَا تَحْزَنْ عَلَيْهِمْ وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِلْمُؤْمِنِيْنَ

আমি তোমাকে বার বার পঠিত সাতটি আয়াত (সূরা ফাতেহা) এবং মহাগ্রন্থ কুরআন দিয়েছি। (সুতরাং) আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণিকে ভোগবিলাসের যে উপকরণ দিয়েছি, তার প্রতি তুমি কখনো তোমার চক্ষুদ্বয় প্রসারিত করো না এবং তাদের জন্য দুঃখও করো না। আর তুমি মুমিনদের জন্য তোমার বাহু অবনমিত করো। (সূরা হিজর- ৮৭, ৮৮)

ব্যাখ্যা : নবী ﷺ কুরআনের জ্ঞানকে মোহরানা হিসেবে নির্ধারণ করেছিলেন। সাহ্ল ইবনে সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক মহিলা নবী ﷺ এর কাছে উপস্থিত হয়ে বলল যে, সে নিজেকে আল্লাহ এবং রাসূলের জন্য উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। (এ কথা শুনে) নবী ﷺ বললেন, আমার কোন মহিলার প্রয়োজন নেই। তখন এক সাহাবী নবী ﷺ কে বললেন, তাকে আমার সাথে বিবাহ দিয়ে দিন। নবী ﷺ বললেন, তুমি তাকে (মোহরানাস্বরূপ) একটি কাপড় দাও। তিনি বললেন, তা আমার কাছে নেই। নবী ﷺ বললেন, তাহলে তাকে অন্তত একটি লোহার আংটি দাও। এবারও তিনি পূর্বের ন্যায় অপারগতা প্রকাশ করলেন। অতঃপর নবী ﷺ তাকে প্রশ্ন করলেন, তোমার কি কুরআনের কোন অংশ মুখস্থ‎ আছে? তিনি বললেন, কুরআনের অমুক অমুক অংশ আমার মুখস্থ‎ আছে। তখন নবী ﷺ বললেন, যে পরিমাণ কুরআন তোমার মুখস্থ‎ আছে এর বিনিময়ে তোমার সাথে এ মহিলার বিয়ে দিলাম। (সহীহ বুখারী, হা/৫০২৯)

يُؤْتِى الْحِكْمَةَ مَنْ يَّشَآءُۚ وَمَنْ يُّؤْتَ الْحِكْمَةَ فَقَدْ اُوْتِيَ خَيْرًا كَثِيْرًاؕ وَمَا يَذَّكَّرُ اِلَّاۤ اُولُو الْاَلْبَابِ

আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে হেকমত দান করেন। আর যাকে হেকমত দান করা হয় সে প্রচুর কল্যাণ লাভ করে। (কিন্তু) জ্ঞানী লোকেরা ব্যতীত অন্য কেউই উপদেশ গ্রহণ করে না। (সূরা বাক্বারা- ২৬৯)

ব্যাখ্যা : حِكْمَةٌ (হিকমাত) অর্থ হচ্ছে, গভীর অন্তর্দৃষ্টি ও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার শক্তি। এখানে এ কথা বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে, হেকমতের সম্পদ যার কাছে থাকবে সে কখনো শয়তানের দেখানো পথে চলতে পারবে না। বরং সে আল্লাহর দেখানো প্রশস্ত পথ অবলম্বন করবে। শয়তানের সংকীর্ণমনা অনুসারীদের দৃষ্টিতে নিজের ধনসম্পদ আঁকড়ে ধরে রাখা এবং সবসময় সম্পদ আহরণের নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করাই বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক। কিন্তু যারা আল্লাহর কাছ থেকে অন্তর্দৃষ্টি লাভ করেছে, তাদের মতে এটা বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক নয়। তাদের মতে, মানুষ যা কিছু উপার্জন করবে নিজের মাঝারি পর্যায়ের প্রয়োজন পূর্ণ করার পর সেগুলো প্রাণ খুলে সৎকাজে ব্যয় করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। যে ব্যক্তি দুনিয়ার ক্ষুদ্রতম অংশের সমৃদ্ধি ও সচ্ছলতার বিনিময়ে বৃহত্তম ও সীমাহীন জীবনের অসচ্ছলতা ও দারিদ্র্যতা কিনে নেয়, সে আসলে বোকা ছাড়া আর কিছুই নয়। যে ব্যক্তি এ সংক্ষিপ্ত জীবনকালের সুযোগ গ্রহণ করে সামান্য পুঁজির সহায়তায় নিজের ঐ চিরন্তন জীবনের সমৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে সক্ষম হয়েছে সে-ই প্রকৃত বুদ্ধিমান।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন